আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন। পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল, এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে অবস্থিতি করিতেছিলেন। পরে ঈশ্বর কহিলেন, দীপ্তি হউক; তাহাতে দীপ্তি হইল। তখন ঈশ্বর দীপ্তি উত্তম দেখিলেন, এবং ঈশ্বর অন্ধকার হইতে দীপ্তি পৃথক্ করিলেন। আর ঈশ্বর দীপ্তির নাম দিবস ও অন্ধকারের নাম রাত্রি রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে প্রথম দিবস হইল। [6-7] পরে ঈশ্বর কহিলেন, জলের মধ্যে বিতান হউক, ও জলকে দুই ভাগে পৃথক্‌ করুক। ঈশ্বর এইরূপে বিতান করিয়া বিতানের ঊর্দ্ধস্থিত জল হইতে বিতানের অধঃস্থিত জল পৃথক্ করিলেন; তাহাতে সেইরূপ হইল। *** পরে ঈশ্বর বিতানের নাম আকাশমণ্ডল রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে দ্বিতীয় দিবস হইল। পরে ঈশ্বর কহিলেন, আকাশমণ্ডলের নীচস্থ সমস্ত জল এক স্থানে সংগৃহীত হউক ও স্থল সপ্রকাশ হউক; তাহাতে সেইরূপ হইল। তখন ঈশ্বর স্থলের নাম ভূমি, ও জলরাশির নাম সমুদ্র রাখিলেন; আর ঈশ্বর দেখিলেন যে, তাহা উত্তম। পরে ঈশ্বর কহিলেন, ভূমি তৃণ, বীজোৎপাদক ওষধি, ও সবীজ স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী ফলের উৎপাদক ফলবৃক্ষ, ভূমির উপরে উৎপন্ন করুক; তাহাতে সেইরূপ হইল। ফলতঃ ভূমি তৃণ, স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী বীজোৎপাদক ওষধি, ও স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী সবীজ ফলের উৎপাদক বৃক্ষ, উৎপন্ন করিল; আর ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে তৃতীয় দিবস হইল। পরে ঈশ্বর কহিলেন, রাত্রি হইতে দিবসকে বিভিন্ন করণার্থে আকাশমণ্ডলের বিতানে জ্যোতির্গণ হউক; সে সমস্ত চিহ্নের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিবসের ও বৎসরের জন্য হউক; এবং পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য দীপ বলিয়া আকাশমণ্ডলের বিতানে থাকুক; তাহাতে সেইরূপ হইল। ফলতঃ ঈশ্বর দিনের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতে এক মহাজ্যোতিঃ, ও রাত্রির উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতে তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এক জ্যোতিঃ, এই দুই বৃহৎ জ্যোতিঃ, এবং নক্ষত্রসমূহ নির্ম্মাণ করিলেন। আর পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য, এবং দিবস ও রাত্রির উপরে কর্ত্তৃত্ব করণার্থে, এবং দীপ্তি হইতে অন্ধকার বিভিন্ন করণার্থে ঈশ্বর ঐ জ্যোতিঃসমূহকে আকাশমণ্ডলের বিতানে স্থাপন করিলেন, এবং ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম। আর ঈশ্বর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে চতুর্থ দিবস হইল। পরে ঈশ্বর কহিলেন, জল নানাজাতীয় জঙ্গম প্রাণিবর্গে প্রাণিময় হউক, এবং ভূমির ঊর্দ্ধে আকাশমণ্ডলের বিতানে পক্ষিগণ উড়ুক। তখন ঈশ্বর বৃহৎ তিমিগণের, ও যে নানাজাতীয় জঙ্গম প্রাণিবর্গে জল প্রাণিময় আছে, সে সকলের, এবং নানাজাতীয় পক্ষীর সৃষ্টি করিলেন। পরে ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম। আর ঈশ্বর সে সকলকে আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, সমুদ্রের জল পরিপূর্ণ কর, এবং পৃথিবীতে পক্ষিগণের বাহুল্য হউক। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে পঞ্চম দিবস হইল। পরে ঈশ্বর কহিলেন, ভূমি নানাজাতীয় প্রাণিবর্গ, অর্থাৎ স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী গ্রাম্য পশু, সরীসৃপ ও বন্য পশু উৎপন্ন করুক; তাহাতে সেইরূপ হইল। ফলতঃ ঈশ্বর স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী বন্য পশু ও স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী গ্রাম্য পশু ও স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী যাবতীয় ভূচর সরীসৃপ নির্ম্মাণ করিলেন; আর ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম। পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্ত্তৃত্ব করুক। পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন। পরে ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; ঈশ্বর কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর। ঈশ্বর আরও কহিলেন, দেখ, আমি সমস্ত ভূতলে স্থিত যাবতীয় বীজোৎপাদক ওষধি ও যাবতীয় সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ তোমাদিগকে দিলাম, তাহা তোমাদের খাদ্য হইবে। আর ভূচর যাবতীয় পশু ও আকাশের যাবতীয় পক্ষী ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় কীট, এই সকল প্রাণীর আহারার্থ হরিৎ ওষধি সকল দিলাম। তাহাতে সেইরূপ হইল। পরে ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে ষষ্ঠ দিবস হইল। এইরূপে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং তদুভয়স্থ সমস্ত বস্তুব্যূহ সমাপ্ত হইল। পরে ঈশ্বর সপ্তম দিনে আপনার কৃত কার্য্য হইতে নিবৃত্ত হইলেন, সেই সপ্তম দিনে আপনার কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন। আর ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন, কেননা সেই দিনে ঈশ্বর আপনার সৃষ্ট ও কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন। সৃষ্টিকালে যে দিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল নির্ম্মাণ করিলেন, তখনকার আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর বৃত্তান্ত এই। সেই সময়ে পৃথিবীতে ক্ষেত্রের কোন উদ্ভিজ্জ হইত না, আর ক্ষেত্রের কোন ওষধি উৎপন্ন হইত না, কেননা সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষান নাই, আর ভূমিতে কৃষিকর্ম্ম করিতে মনুষ্য ছিল না। আর পৃথিবী হইতে কুজ্‌ঝটিকা উঠিয়া সমস্ত ভূতলকে জলসিক্ত করিল। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে [অর্থাৎ মনুষ্যকে] নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্ব্বদিকে, এদনে, এক উদ্যান প্রস্তুত করিলেন, এবং সেই স্থানে আপনার নির্ম্মিত ঐ মনুষ্যকে রাখিলেন। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর ভূমি হইতে সর্ব্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্য-দায়ক বৃক্ষ, এবং সেই উদ্যানের মধ্যস্থানে জীবনবৃক্ষ ও সদসদ্-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষ, উৎপন্ন করিলেন। আর উদ্যানে জলসেচনার্থে এদন হইতে এক নদী নির্গত হইল, উহা তথা হইতে বিভিন্ন হইয়া চতুর্ম্মুখ হইল। প্রথম নদীর নাম পীশোন; ইহা সমস্ত হবীলা দেশ বেষ্টন করে, তথায় স্বর্ণ পাওয়া যায়, আর সেই দেশের স্বর্ণ উত্তম, এবং সেই স্থানে গুগ্‌গুলু ও গোমেদকমণি জন্মে। দ্বিতীয় নদীর নাম গীহোন; ইহা সমস্ত কূশ দেশ বেষ্টন করে। তৃতীয় নদীর নাম হিদ্দেকল, ইহা অশূরিয়া দেশের সম্মুখ দিয়া প্রবাহিত হয়। চতুর্থ নদী ফরাৎ। পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে লইয়া এদনস্থ উদ্যানের কৃষিকর্ম্ম ও রক্ষার্থে তথায় রাখিলেন। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে এই আজ্ঞা দিলেন, তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও; কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়, আমি তাহার জন্য তাহার অনুরূপ সহকারিণী নির্ম্মাণ করি। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকা হইতে সকল বন্য পশু ও আকাশের সকল পক্ষী নির্ম্মাণ করিলেন; পরে আদম তাহাদের কি কি নাম রাখিবেন, তাহা জানিতে সেই সকলকে তাঁহার নিকটে আনিলেন, তাহাতে আদম যে সজীব প্রাণীর যে নাম রাখিলেন, তাহার সেই নাম হইল। আদম যাবতীয় গ্রাম্য পশুর ও খেচর পক্ষীর ও যাবতীয় বন্য পশুর নাম রাখিলেন, কিন্তু মনুষ্যের জন্য তাঁহার অনুরূপ সহকারিণী পাওয়া গেল না। পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ঘোর নিদ্রায় মগ্ন করিলে তিনি নিদ্রিত হইলেন; আর তিনি তাঁহার একখান পঞ্জর লইয়া মাংস দ্বারা সেই স্থান পূরাইলেন। সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম হইতে গৃহীত সেই পঞ্জরে এক স্ত্রী নির্ম্মাণ করিলেন ও তাঁহাকে আদমের নিকটে আনিলেন। তখন আদম কহিলেন, এবার [হইয়াছে]; ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস; ইহাঁর নাম নারী হইবে, কেননা ইনি নর হইতে গৃহীত হইয়াছেন। এই কারণ মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে। ঐ সময়ে আদম ও তাঁহার স্ত্রী উভয়ে উলঙ্গ থাকিতেন, আর তাঁহাদের লজ্জা বোধ ছিল না। সদাপ্রভু ঈশ্বরের নির্ম্মিত ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সর্প সর্ব্বাপেক্ষা খল ছিল। সে ঐ নারীকে কহিল, ঈশ্বর কি বাস্তবিক বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না? নারী সর্পকে কহিলেন, আমরা এই উদ্যানস্থ বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি; কেবল উদ্যানের মধ্যস্থানে যে বৃক্ষ আছে, তাহার ফলের বিষয় ঈশ্বর বলিয়াছেন, তোমরা তাহা ভোজন করিও না, স্পর্শও করিও না, করিলে মরিবে। তখন সর্প নরীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না; কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। নারী যখন দেখিলেন, ঐ বৃক্ষ সুখাদ্যদায়ক ও চক্ষুর লোভজনক, আর ঐ বৃক্ষ জ্ঞানদায়ক বলিয়া বাঞ্ছনীয়, তখন তিনি তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিলেন; পরে আপনার মত নিজ স্বামীকে দিলেন, আর তিনিও ভোজন করিলেন। তাহাতে তাঁহাদের উভয়ের চক্ষু খুলিয়া গেল, এবং তাঁহারা বুঝিতে পারিলেন যে তাঁহারা উলঙ্গ; আর ডুমুরবৃক্ষের পত্র সিঙ্গাইয়া ঘাগ্‌রা প্রস্তুত করিয়া লইলেন। পরে তাঁহারা সদাপ্রভু ঈশ্বরের রব শুনিতে পাইলেন, তিনি দিবাবসানে উদ্যানে গমনাগমন করিতেছিলেন; তাহাতে আদম ও তাঁহার স্ত্রী সদাপ্রভু ঈশ্বরের সম্মুখ হইতে উদ্যানস্থ বৃক্ষসমূহের মধ্যে লুকাইলেন। তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি কোথায়? তিনি কহিলেন, আমি উদ্যানে তোমার রব শুনিয়া ভীত হইলাম, কারণ আমি উলঙ্গ, তাই আপনাকে লুকাইয়াছি। তিনি কহিলেন, তুমি যে উলঙ্গ, ইহা তোমাকে কে বলিল? যে বৃক্ষের ফল ভোজন করিতে তোমাকে নিষেধ করিয়াছিলাম, তুমি কি তাহার ফল ভোজন করিয়াছ? তাহাতে আদম কহিলেন, তুমি আমার সঙ্গিনী করিয়া যে স্ত্রী দিয়াছ, সে আমাকে ঐ বৃক্ষের ফল দিয়াছিল, তাই খাইয়াছি। তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর নারীকে কহিলেন, তুমি এ কি করিলে? নারী কহিলেন, সর্প আমাকে ভুলাইয়াছিল, তাই খাইয়াছি। পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর সর্পকে কহিলেন, তুমি এই কর্ম্ম করিয়াছ, এই জন্য গ্রাম্য ও বন্য পশুগণের মধ্যে তুমি সর্ব্বাপেক্ষা অধিক শাপগ্রস্ত; তুমি বুকে হাঁটিবে, এবং যাবজ্জীবন ধূলি ভোজন করিবে। আর আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে। পরে তিনি নারীকে কহিলেন, আমি তোমার গর্ভবেদনা অতিশয় বৃদ্ধি করিব, তুমি বেদনাতে সন্তান প্রসব করিবে; এবং স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে; ও সে তোমার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে। আর তিনি অাদমকে কহিলেন, যে বৃক্ষের ফলের বিষয়ে আমি তোমাকে বলিয়াছিলাম, তুমি তাহা ভোজন করিও না, তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনিয়া তাহার ফল ভোজন করিয়াছ, এই জন্য তোমার নিমিত্ত ভূমি অভিশপ্ত হইল; তুমি যাবজ্জীবন ক্লেশে উহা ভোগ করিবে; আর উহাতে তোমার জন্য কন্টক ও শেয়ালকাঁটা জন্মিবে, এবং তুমি ক্ষেত্রের ওষধি ভোজন করিবে। তুমি ঘর্ম্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্য্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে; তুমি ত তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে। পরে আদম আপন স্ত্রীর নাম হবা [জীবিত] রাখিলেন, কেননা তিনি জীবিত সকলের মাতা হইলেন। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম ও তাঁহার স্ত্রীর নিমিত্ত চর্ম্মের বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া তাঁহাদিগকে পরাইলেন। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, দেখ, মনুষ্য সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবার বিষয়ে আমাদের একের মত হইল; এখন পাছে সে হস্ত বিস্তার করিয়া জীবনবৃক্ষের ফলও পাড়িয়া ভোজন করে ও অনন্তজীবী হয়। এই নিমিত্ত সদাপ্রভু ঈশ্বর তাঁহাকে এদনের উদ্যান হইতে বাহির করিয়া দিলেন, যেন, তিনি যাহা হইতে গৃহীত, সেই মৃত্তিকাতে কৃষিকর্ম্ম করেন। এইরূপে ঈশ্বর মনুষ্যকে তাড়াইয়া দিলেন, এবং জীবনবৃক্ষের পথ রক্ষা করিবার জন্য এদনস্থ উদ্যানের পূর্ব্বদিকে করূবগণকে ও ঘূর্ণায়মান তেজোময় খড়গ রাখিলেন। পরে আদম আপন স্ত্রী হবার পরিচয় লইলে তিনি গর্ভবতী হইয়া কয়িনকে প্রসব করিয়া কহিলেন, সদাপ্রভুর সহায়তায় আমার নরলাভ হইল। পরে তিনি হেবল নামে তাহার সহোদরকে প্রসব করিলেন। হেবল মেষপালক ছিল, ও কয়িন ভূমিকর্ষক ছিল। পরে কালানুক্রমে কয়িন উপহাররূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ভূমির ফল উৎসর্গ করিল। আর হেবলও অাপন পালের প্রথমজাত কএকটি পশু ও তাহাদের মেদ উৎসর্গ করিল। তখন সদাপ্রভু হেবলকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন; কিন্তু কয়িনকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন না; এই নিমিত্ত কয়িন অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল, তাহার মুখ বিষণ্ণ হইল। তাহাতে সদাপ্রভু কয়িনকে কহিলেন, তুমি কেন ক্রোধ করিয়াছ? তোমার মুখ কেন বিষণ্ণ হইয়াছে? যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না? আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা থাকিবে, এবং তুমি তাহার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে। আর কয়িন আপন ভ্রাতা হেবলের সহিত কথোপকথন করিল; পরে তাহারা ক্ষেত্রে গেলে কয়িন আপন ভ্রাতা হেবলের বিরুদ্ধে উঠিয়া তাহাকে বধ করিল। পরে সদাপ্রভু কয়িনকে বলিলেন, তোমার ভ্রাতা হেবল কোথায়? সে উত্তর করিল, আমি জানি না; আমার ভ্রাতার রক্ষক কি আমি? তিনি কহিলেন, তুমি কি করিয়াছ? তোমার ভ্রাতার রক্ত ভূমি হইতে আমার কাছে ক্রন্দন করিতেছে। আর এখন, যে ভূমি তোমার হস্ত হইতে তোমার ভ্রাতার রক্ত গ্রহণার্থে আপন মুখ খুলিয়াছে, সেই ভূমিতে তুমি শাপগ্রস্ত হইলে। ভূমিতে কৃষিকর্ম করিলেও তাহা আপন শক্তি দিয়া তোমার সেবা আর করিবে না; তুমি পৃথিবীতে পলাতক ও ভ্রমণকারী হইবে। তাহাতে কয়িন সদাপ্রভুকে কহিল, আমার অপরাধের ভার অসহ্য। দেখ, অদ্য তুমি ভূতল হইতে আমাকে তাড়াইয়া দিলে, আর তোমার দৃষ্টি হইতে আমি লুক্কায়িত হইব। আমি পৃথিবীতে পলাতক ও ভ্রমণকারী হইব, আর আমাকে যে পাইবে, সেই বধ করিবে। তাহাতে সদাপ্রভু তাহাকে কহিলেন, এই জন্য কয়িনকে যে বধ করিবে, সে সাত গুণ প্রতিফল পাইবে। আর সদাপ্রভু কয়িনের নিমিত্ত এক চিহ্ন রাখিলেন, পাছে কেহ তাহাকে পাইলে বধ করে। পরে কয়িন সদাপ্রভুর সাক্ষাৎ হইতে প্রস্থান করিয়া এদনের পূর্ব্বদিকে নোদ দেশে বাস করিল। আর কয়িন আপন স্ত্রীর পরিচয় লইলে সে গর্ভবতী হইয়া হনোককে প্রসব করিল। আর কয়িন এক নগর পত্তন করিয়া আপন পুত্রের নামানুসারে তাহার নাম হনোক রাখিল। হনোকের পুত্র ঈরদ, ঈরদের পুত্র মহূয়ায়েল, মহূয়ায়েলের পুত্র মথূশায়েল ও মথূশায়েলের পুত্র লেমক। লেমক দুই স্ত্রী গ্রহণ করিল, এক স্ত্রীর নাম আদা, অন্যার নাম সিল্লা। আদার গর্ভে যাবল জন্মিল, সে তাম্বুবাসী পশুপালকদের আদিপুরুষ ছিল। তাহার ভ্রাতার নাম যূবল; সে বীণা ও বংশীধারী সকলের আদিপুরুষ ছিল। আর সিল্লার গর্ভে তূবল-কয়িন জন্মিল, সে পিত্তলের ও লৌহের নানা প্রকার অস্ত্র গঠন করিত; তূবল-কয়িনের ভগিনীর নাম নয়মা। আর লেমক আপন দুই স্ত্রীকে কহিল, আদে, সিল্লে, তোমরা আমার কথা শুন, লেমকের ভার্য্যাদ্বয়, আমার বাক্যে কর্ণপাত কর; কারণ আমি আঘাতের পরিশোধে পুরুষকে, প্রহারের পরিশোধে যুবাকে বধ করিয়াছি। যদি কয়িনের বধের প্রতিফল সাত গুণ হয়, লেমকের বধের প্রতিফল সাতাত্তর গুণ হইবে। আর আদম পুনর্ব্বার আপন স্ত্রীর পরিচয় লইলে তিনি পুত্র প্রসব করিলেন, ও তাহার নাম শেথ রাখিলেন। কেননা [তিনি কহিলেন,] কয়িন কর্ত্তৃক হত হেবলের পরিবর্ত্তে ঈশ্বর আমাকে আর এক সন্তান দিলেন। পরে শেথেরও পুত্র জন্মিল, আর তিনি তাহার নাম ইনোশ রাখিলেন। তৎকালে লোকেরা সদাপ্রভুর নামে ডাকিতে আরম্ভ করিল। আদমের বংশাবলি-পত্র এই। যে দিন ঈশ্বর মনুষ্যের সৃষ্টি করিলেন, সেই দিনে ঈশ্বরের সাদৃশ্যেই তাঁহাকে নির্ম্মাণ করিলেন; পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাঁহাদিগের সৃষ্টি করিলেন; এবং সেই সৃষ্টিদিনে তাঁহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিয়া আদম, এই নাম দিলেন। পরে আদম এক শত ত্রিশ বৎসর বয়সে আপনার সাদৃশ্যে ও প্রতিমূর্ত্তিতে পুত্রের জন্ম দিয়া তাহার নাম শেথ রাখিলেন। শেথের জন্ম দিলে পর আদম আট শত বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ আদমের নয় শত ত্রিশ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। শেথ এক শত পাঁচ বৎসর বয়সে ইনোশের জন্ম দিলেন। ইনোশের জন্ম দিলে পর শেথ আট শত সাত বৎসর জীবৎ থাকিয়া অারও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ শেথের নয় শত বারো বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। ইনোশ নব্বই বৎসর বয়সে কৈননের জন্ম দিলেন। কৈননের জন্ম দিলে পর ইনোশ আট শত পনের বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ ইনোশের নয় শত পাঁচ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। কৈনন সত্তর বৎসর বয়সে মহললেলের জন্ম দিলেন। মহললেলের জন্ম দিলে পর কৈনন আট শত চল্লিশ বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ কৈননের নয় শত দশ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। মহললেল পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে যেরদের জন্ম দিলেন। যেরদের জন্ম দিলে পর মহললেল আট শত ত্রিশ বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ মহললেলের আট শত পঁচানব্বই বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। যেরদ এক শত বাষট্টি বৎসর বয়সে হনোকের জন্ম দিলেন। হনোকের জন্ম দিলে পর যেরদ আট শত বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ যেরদের নয় শত বাষট্টি বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। হনোক পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে মথূশেলহের জন্ম দিলেন। মথূশেলহের জন্ম দিলে পর হনোক তিন শত বৎসর ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিলেন, এবং আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ হনোক তিন শত পঁয়ষট্টি বৎসর রহিলেন। হনোক ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন। পরে তিনি আর রহিলেন না, কেননা ঈশ্বর তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন। মথূশেলহ এক শত সাতাশী বৎসর বয়সে লেমকের জন্ম দিলেন। লেমকের জন্ম দিলে পর মথূশেলহ সাত শত বিরাশী বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ মথূশেলহের নয় শত ঊনসত্তর বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। লেমক এক শত বিরাশী বৎসর বয়সে পুত্রের জন্ম দিয়া তাহার নাম নোহ [বিশ্রাম] রাখিলেন; কেননা তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু কর্ত্তৃক অভিশপ্ত ভূমি হইতে আমাদের যে শ্রম ও হস্তের ক্লেশ হয়, তদ্বিষয়ে এ আমাদিগকে সাত্ত্বনা করিবে। নোহের জন্ম দিলে পর লেমক পাঁচ শত পঁচানব্বই বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ লেমকের সাত শত সাতাত্তর বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। পরে নোহ পাঁচ শত বৎসর বয়সে শেম, হাম ও যেফতের জন্ম দিলেন। এইরূপে যখন ভূমণ্ডলে মনুষ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল ও অনেক কন্যা জন্মিল, তখন ঈশ্বরের পুত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাগণকে সুন্দরী দেখিয়া, যাহার যাহাকে ইচ্ছা, সে তাহাকে বিবাহ করিতে লাগিল। তাহাতে সদাপ্রভু কহিলেন, আমার আত্মা মনুষ্যদের মধ্যে নিত্য অধিষ্ঠান করিবেন না, তাহাদের বিপথগমনে তাহারা মাংসমাত্র; পরন্তু তাহাদের সময় এক শত বিংশতি বৎসর হইবে। তৎকালে পৃথিবীতে মহাবীরগণ ছিল, এবং তৎপরেও ঈশ্বরের পুত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাদের কাছে গমন করিলে তাহাদের গর্ভে সন্তান জন্মিল, তাহারাই সেকালের প্রসিদ্ধ বীর। আর সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা বড় এবং তাহার অন্তঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ। তাই, সদাপ্রভু পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্ম্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন, ও মনঃপীড়া পাইলেন। আর সদাপ্রভু কহিলেন, আমি যে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিয়াছি, তাহাকে ভূমণ্ডল হইতে উচ্ছিন্ন করিব; মনুষ্যের সহিত পশু, সরীসৃপ জীব ও আকাশের পক্ষীিদগকেও উচ্ছিন্ন করিব; কেননা তাহাদের নির্ম্মাণ প্রযুক্ত আমার অনুশোচনা হইতেছে। কিন্তু নোহ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইলেন। [9-10] নোহের বংশ-বৃত্তান্ত এই। নোহ তাৎকালিক লোকদের মধ্যে ধার্ম্মিক ও সিদ্ধ লোক ছিলেন, নোহ ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন। নোহ শেম, হাম ও যেফৎ নামে তিন পুত্রের জন্ম দেন। *** তৎকালে পৃথিবী ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভ্রষ্ট, পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল। আর ঈশ্বর পৃথিবীতে দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, সে ভ্রষ্ট হইয়াছে, কেননা পৃথিবীস্থ সমুদয় প্রাণী ভ্রষ্টাচারী হইয়াছিল। তখন ঈশ্বর নোহকে কহিলেন, আমার গোচরে সকল প্রাণীর অন্তিমকাল উপস্থিত, কেননা তাহাদের দ্বারা পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ হইয়াছে; আর দেখ, আমি পৃথিবীর সহিত তাহাদিগকে বিনষ্ট করিব। তুমি গোফর কাষ্ঠ দ্বারা এক জাহাজ নির্ম্মাণ কর; সেই জাহাজের মধ্যে কুঠরী নির্ম্মাণ করিবে, ও তাহার ভিতরে ও বাহিরে ধূনা দিয়া লেপন করিবে। এই প্রকারে তাহা নির্ম্মাণ করিবে। জাহাজ দীর্ঘে তিন শত হাত, প্রস্থে পঞ্চাশ হাত ও উচ্চতায় ত্রিশ হাত হইবে। আর তাহার ছাদের এক হাত নীচে বাতায়ন প্রস্তুত করিয়া রাখিবে, ও জাহাজের পার্শ্বে দ্বার রাখিবে; তাহার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালা নির্ম্মাণ করিবে। আর দেখ, আকাশের নীচে প্রাণবায়ুবিশিষ্ট যত জীবজন্তু আছে, সকলকে বিনষ্ট করণার্থে আমি পৃথিবীর উপরে জলপ্লাবন আনিব, পৃথিবীস্থ সকলে প্রাণত্যাগ করিবে। কিন্তু তোমার সহিত আমি আপনার নিয়ম স্থির করিব; তুমি আপন পুত্রগণ, স্ত্রী ও পুত্রবধূদিগকে সঙ্গে লইয়া সেই জাহাজে প্রবেশ করিবে। আর মাংসবিশিষ্ট সমস্ত জীবজন্তুর স্ত্রীপুরুষ যোড়া যোড়া লইয়া তাহাদের প্রাণরক্ষার্থে আপনার সহিত সেই জাহাজে প্রবেশ করাইবে; সর্ব্বজাতীয় পক্ষী ও সর্ব্বজাতীয় পশু ও সর্ব্বজাতীয় ভূচর সরীসৃপ যোড়া যোড়া প্রাণরক্ষার্থে তোমার নিকটে প্রবেশ করিবে। আর তোমার ও তাহাদের আহারার্থে তুমি সর্ব্বপ্রকার খাদ্য সামগ্রী আনিয়া আপনার নিকটে সঞ্চয় করিবে। তাহাতে নোহ সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন। আর সদাপ্রভু নোহকে কহিলেন, তুমি সপরিবারে জাহাজে প্রবেশ কর, কেননা এই কালের লোকদের মধ্যে আমার সাক্ষাতে তোমাকেই ধার্ম্মিক দেখিয়াছি। তুমি শুচি পশুর স্ত্রীপুরুষ লইয়া প্রত্যেক জাতির সাত সাত যোড়া, এবং অশুচি পশুর স্ত্রীপুরুষ লইয়া প্রত্যেক জাতির এক এক যোড়া, এবং আকাশের পক্ষীদিগেরও স্ত্রীপুরুষ লইয়া প্রত্যেক জাতির সাত সাত যোড়া, সমস্ত ভূমণ্ডলে তাহাদের বংশ রক্ষার্থে আপনার সঙ্গে রাখ। কেননা সাত দিনের পর আমি পৃথিবীতে চল্লিশ দিবারাত্র বৃষ্টি বর্ষাইয়া আমার নির্ম্মিত যাবতীয় প্রাণীকে ভূমণ্ডল হইতে উচ্ছিন্ন করিব। তখন নোহ সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সকল কর্ম্ম করিলেন। নোহের ছয় শত বৎসর বয়সে পৃথিবীতে জলপ্লাবন হইল জলপ্লাবনের অপেক্ষাতে নোহ ও তাঁহার পুত্রগণ এবং তাঁহার স্ত্রী ও পুত্রবধূগণ জাহাজে প্রবেশ করিলেন। নোহের প্রতি ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে শুচি অশুচি পশুর, এবং পক্ষীর ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবের স্ত্রীপুরুষ যোড়া যোড়া জাহাজে নোহের নিকটে প্রবেশ করিল। পরে সেই সাত দিন গত হইলে পৃথিবীতে জলপ্লাবন হইল। নোহের বয়সের ছয় শত বৎসরের দ্বিতীয় মাসের সপ্তদশ দিনে মহাজলধির সমস্ত উনুই ভাঙ্গিয়া গেল, এবং আকাশের বাতায়ন সকল মুক্ত হইল; তাহাতে পৃথিবীতে চল্লিশ দিবারাত্র মহাবৃষ্টি হইল। সেই দিন নোহ, এবং শেম, হাম ও যেফৎ নামে নোহের পুত্রগণ, এবং তাঁহাদের সহিত নোহের স্ত্রী ও তিন পুত্রবধূ জাহাজে প্রবেশ করিলেন। আর তাঁহাদের সহিত সর্ব্বজাতীয় বন্য পশু, সর্ব্বজাতীয় গ্রাম্য পশু, সর্ব্বজাতীয় ভূচর সরীসৃপ জীব ও সর্ব্বজাতীয় পক্ষী, সর্ব্বজাতীয় খেচর, প্রাণবায়ুবিশিষ্ট সর্ব্বপ্রকার জীবজন্তু যোড়া যোড়া জাহাজে নোহের নিকটে প্রবেশ করিল। ফলতঃ তাঁহার প্রতি ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে সমস্ত প্রাণীর স্ত্রীপুরুষ প্রবেশ করিল। পরে সদাপ্রভু তাঁহার পশ্চাৎ দ্বার বদ্ধ করিলেন। আর চল্লিশ দিন পর্য্যন্ত পৃথিবীতে জলপ্লাবন হইল, তাহাতে জল বৃদ্ধি পাইয়া জাহাজ ভাসাইলে তাহা মৃত্তিকা ছাড়িয়া উঠিল। পরে জল প্রবল হইয়া পৃথিবীতে অতিশয় বৃদ্ধি পাইল, এবং জাহাজ জলের উপরে ভাসিয়া গেল। আর পৃথিবীতে জল অত্যন্ত প্রবল হইল, আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সকল মহাপর্ব্বত মগ্ন হইল। তাহার উপরে পনের হাত জল উঠিয়া প্রবল হইল, পর্ব্বত সকল মগ্ন হইল। তাহাতে ভূচর যাবতীয় প্রাণী—পক্ষী, গ্রাম্য ও বন্য পশু, ভূচর সরীসৃপ সকল এবং মনুষ্য সকল মরিল। স্থলচর যত প্রাণীর নাসিকাতে প্রাণবায়ুর সঞ্চার ছিল, সকলে মরিল। এইরূপে ভূমণ্ডল-নিবাসী সমস্ত প্রাণী—মনুষ্য, পশু, সরীসৃপ জীব ও আকাশীয় পক্ষী সকল উচ্ছিন্ন হইল, পৃথিবী হইতে উচ্ছিন্ন হইল, কেবল নোহ ও তাঁহার সঙ্গী জাহাজস্থ প্রাণীরা বাঁচিলেন। আর জল পৃথিবীর উপরে এক শত পঞ্চাশ দিন পর্য্যন্ত প্রবল থাকিল। আর ঈশ্বর নোহকে ও জাহাজে স্থিত তাঁহার সঙ্গী পশ্বাদি যাবতীয় প্রাণীকে স্মরণ করিলেন, ঈশ্বর পৃথিবীতে বায়ু বহাইলেন, তাহাতে জল থামিল। আর জলধির উনুই ও আকাশের বাতায়ন সকল বদ্ধ এবং আকাশের মহাবৃষ্টি নিবৃত্ত হইল। আর জল ক্রমশঃ ভূমির উপর হইতে সরিয়া গিয়া এক শত পঞ্চাশ দিনের শেষে হ্রাস পাইল। তাহাতে সপ্তম মাসে, সপ্তদশ দিনে অরারটের পর্ব্বতের উপরে জাহাজ লাগিয়া রহিল। পরে দশম মাস পর্য্যন্ত জল ক্রমশঃ সরিয়া হ্রাস পাইল; ঐ দশম মাসের প্রথম দিনে পর্ব্বতগণের শৃঙ্গ দেখা গেল। আর চল্লিশ দিত গত হইলে নোহ আপনার নির্ম্মিত জাহাজের বাতায়ন খুলিয়া, একটা দাঁড়কাক ছাড়িয়া দিলেন; তাহাতে সে উড়িয়া ভূমির উপরিস্থ জল শুষ্ক না হওয়া পর্য্যন্ত ইতস্ততঃ গতায়াত করিল। আর ভূমির উপরে জল হ্রাস পাইয়াছে কি না, তাহা জানিবার জন্য তিনি আপনার নিকট হইতে এক কপোত ছাড়িয়া দিলেন। তাহাতে সমস্ত পৃথিবী জলে আচ্ছাদিত থাকাতে কপোত পদার্পণের স্থান পাইল না, তাই জাহাজে তাঁহার নিকটে ফিরিয়া আসিল। তখন তিনি হাত বাড়াইয়া তাহাকে ধরিলেন ও জাহাজের ভিতরে আপনার নিকটে রাখিলেন। পরে তিনি আর সাত দিন বিলম্ব করিয়া জাহাজ হইতে সেই কপোত পুনর্ব্বার ছাড়িয়া দিলেন, এবং কপোতটি সন্ধ্যাকালে তাঁহার নিকটে ফিরিয়া আসিল; আর দেখ, তাহার চঞ্চুতে জিতবৃক্ষের একটী নবীন পত্র ছিল; ইহাতে নোহ বুঝিলেন, ভূমির উপরে জল হ্রাস পাইয়াছে। পরে তিনি আর সাত দিন বিলম্ব করিয়া সেই কপোত ছাড়িয়া দিলেন, তখন সে তাঁহার নিকটে আর ফিরিয়া আসিল না। [নোহের বয়সের] ছয় শত এক বৎসরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে পৃথিবীর উপরে জল শুষ্ক হইল; তাহাতে নোহ জাহাজের ছাদ খুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, ভূতল নির্জল। পরে দ্বিতীয় মাসের সাতাইশ দিনে ভূমি শুষ্ক হইল। [15,16] পরে ঈশ্বর নোহকে কহিলেন, তুমি আপনার স্ত্রী, পুত্রগণ ও পুত্রবধূগণকে সঙ্গে লইয়া জাহাজ হইতে বাহিরে যাও। *** আর তোমার সঙ্গী পশু, পক্ষী ও ভূচর সরীসৃপ প্রভৃতি মাংসময় যত জীবজন্তু আছে, সেই সকলকে তোমার সঙ্গে বাহিরে আন, তাহারা পৃথিবীকে প্রাণিময় করুক, এবং পৃথিবীতে প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হউক। তখন নোহ আপনার পুত্রগণ এবং আপনার স্ত্রী ও পুত্রবধূগণকে সঙ্গে লইয়া বাহির হইলেন। আর স্ব স্ব জাতি অনুসারে প্রত্যেক পশু, সরীসৃপ জীব ও পক্ষী, সমস্ত ভূচর প্রাণী জাহাজ হইতে বাহির হইল। পরে নোহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, এবং সর্ব্বপ্রকার শুচি পশুর ও সর্ব্বপ্রকার শুচি পক্ষীর মধ্যে কতকগুলি লইয়া বেদির উপরে হোম করিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু তাহার সৌরভ আঘ্রাণ করিলেন, আর সদাপ্রভু মনে মনে কহিলেন, আমি মনুষ্যের জন্য ভূমিকে আর অভিশাপ দিব না, কারণ বাল্যকাল অবধি মনুষ্যের মনস্কল্পনা দুষ্ট; যেমন করিলাম, তেমন আর কখনও সকল প্রাণীকে সংহার করিব না। যাবৎ পৃথিবী থাকিবে তাবৎ শস্য বপনের ও শস্য ছেদনের সময়, এবং শীত ও উত্তাপ, এবং গ্রীষ্মকাল ও হেমন্তকাল, এবং দিবা ও রাত্রি, এই সকলের নিবৃত্তি হইবে না। পরে ঈশ্বর নোহকে ও তাঁহার পুত্রগণকে এই আশীর্ব্বাদ করিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, পৃথিবী পরিপূর্ণ কর। পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণী ও আকাশের যাবতীয় পক্ষী তোমাদের হইতে ভীত ও ত্রাসযুক্ত হইবে; সমস্ত ভূচর জীব ও সমুদ্রের সমস্ত মৎস্যশুদ্ধ সে সকল তোমাদেরই হস্তে সমর্পিত। প্রত্যেক গমনশীল প্রাণী তোমাদের খাদ্য হইবে; আমি হরিৎ ওষধির ন্যায় সে সকল তোমাদিগকে দিলাম। কিন্তু সপ্রাণ অর্থাৎ সরক্ত মাংস ভোজন করিও না। আর তোমাদের রক্তপাত হইলে আমি তোমাদের প্রাণের পক্ষে তাহার পরিশোধ অবশ্য লইব; সকল পশুর নিকটে তাহার পরিশোধ লইব, এবং মনুষ্যের ভ্রাতা মনুষ্যের নিকটে আমি মনুষ্যের প্রাণের পরিশোধ লইব। যে কেহ মনুষ্যের রক্তপাত করিবে, মনুষ্য কর্ত্তৃক তাহার রক্তপাত করা যাইবে; কেননা ঈশ্বর আপন প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন। তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, পৃথিবীকে প্রাণিময় কর, ও তন্মধ্যে বর্দ্ধিষ্ণু হও। পরে ঈশ্বর নোহকে ও তাঁহার সঙ্গী পুত্রগণকে কহিলেন, দেখ, তোমাদের সহিত, তোমাদের ভাবী বংশের সহিত ও তোমাদের সঙ্গী যাবতীয় প্রাণীর সহিত, পক্ষী এবং গ্রাম্য ও বন্য পশু, পৃথিবীস্থ যত প্রাণী জাহাজ হইতে বাহির হইয়াছে, তাহাদের সহিত আমি আমার নিয়ম স্থির করি। আমি তোমাদের সহিত আমার নিয়ম স্থির করি; জলপ্লাবন দ্বারা সমস্ত প্রাণী আর উচ্ছিন্ন হইবে না; এবং পৃথিবীর বিনাশার্থ জলপ্লাবন আর হইবে না। ঈশ্বর আরও কহিলেন, আমি তোমাদের সহিত ও তোমাদের সঙ্গী যাবতীয় প্রাণীর সহিত চিরস্থায়ী পুরুষপরম্পরার জন্য যে নিয়ম স্থির করিলাম, তাহার চিহ্ন এই। অামি মেঘে আপন ধনু স্থাপন করি, তাহাই পৃথিবীর সহিত আমার নিয়মের চিহ্ন হইবে। যখন আমি পৃথিবীর ঊর্দ্ধে মেঘের সঞ্চার করিব, তখন সেই ধনু মেঘে দৃষ্ট হইবে; তাহাতে তোমাদের সহিত ও মাংসময় সমস্ত প্রাণীর সহিত আমার যে নিয়ম আছে, তাহা আমার স্মরণ হইবে, এবং সকল প্রাণীর বিনাশার্থ জলপ্লাবন আর হইবে না। আর মেঘধনুক হইলে আমি তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিব; তাহাতে মাংসময় যত প্রাণী পৃথিবীতে আছে, তাহাদের সহিত ঈশ্বরের যে চিরস্থায়ী নিয়ম, তাহা আমি স্মরণ করিব। ঈশ্বর নোহকে কহিলেন, পৃথিবীস্থ সমস্ত প্রাণীর সহিত আমার স্থাপিত নিয়মের এই চিহ্ন হইবে। নোহের যে পুত্রেরা জাহাজ হইতে বাহির হইলেন, তাঁহাদের নাম শেম, হাম ও যেফৎ; সেই হাম কনানের পিতা। এই তিন জন নোহের পুত্র; ইহাঁদেরই বংশ সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপ্ত হইল। পরে নোহ কৃষিকর্ম্মে প্রবৃত্ত হইয়া দ্রাক্ষাক্ষেত্র করিলেন। আর তিনি দ্রাক্ষারস পান করিয়া মত্ত হইলেন, এবং তাম্বুর মধ্যে বিবস্ত্র হইয়া পড়িলেন। তখন কনানের পিতা হাম আপন পিতার উলঙ্গতা দেখিয়া বাহিরে আপন দুই ভ্রাতাকে সমাচার দিল। তাহাতে শেম ও যেফৎ বস্ত্র লইয়া আপনাদের স্কন্ধে রাখিয়া পশ্চাৎ হাঁটিয়া পিতার উলঙ্গতা আচ্ছাদন করিলেন, পশ্চাদ্দিকে মুখ থাকাতে তাঁহারা পিতার উলঙ্গতা দেখিলেন না। পরে নোহ দ্রাক্ষারসের নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইয়া আপনার প্রতি কনিষ্ঠ পুত্রের আচরণ অবগত হইলেন। আর তিনি কহিলেন, কনান অভিশপ্ত হউক, সে আপন ভ্রাতাদের দাসানুদাস হইবে। তিনি আরও কহিলেন, শেমের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য; কনান তাহার দাস হউক। ঈশ্বর যেফৎকে বিস্তীর্ণ করুন; সে শেমের তাম্বুতে বাস করুক, আর কনান তাহার দাস হউক। জলপ্লাবনের পরে নোহ তিন শত পঞ্চাশ বৎসর জীবৎ থাকিলেন। সর্ব্বশুদ্ধ নোহের নয় শত পঞ্চাশ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল। নোহের পুত্র শেম, হাম ও যেফতের বংশবৃত্তান্ত এই। জলপ্লাবনের পরে তাঁহাদের সন্তান সন্ততি জন্মিল। যেফতের সন্তান—গোমর, মাগোগ, মাদয়, যবন, তূবল, মেশক ও তীরস। গোমরের সন্তান—অস্কিনস, রীফৎ ও তোগর্ম। যবনের সন্তান—ইলীশা, তর্শীশ, কিত্তীম ও দোদানীম। এই সকল হইতে জাতিগণের দ্বীপনিবাসীরা আপন আপন দেশে স্ব স্ব ভাষানুসারে আপন আপন জাতির নানা গোষ্ঠীতে বিভক্ত হইল। আর হামের সন্তান—কূশ, মিসর, পূট ও কনান। কূশের সন্তান—সবা, হবীলা, সপ্তা, রয়মা ও সপ্তকা। রয়মার সন্তান—শিবা ও দদান। নিম্রোদ কূশের পুত্র; তিনি পৃথিবীতে পরাক্রমী হইতে লাগিলেন। তিনি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে পরাক্রান্ত ব্যাধ হইলেন; তজ্জন্য লোকে বলে, সদাপ্রভুর সাক্ষাতে পরাক্রান্ত ব্যাধ নিম্রোদের তুল্য। শিনিয়র দেশে বাবিল, এরক, অক্কদ ও কল্‌নী, এই সকল স্থান তাঁহার রাজ্যের প্রথম অংশ ছিল। সেই দেশ হইতে তিনি অশূরে গিয়া নীনবী, রহোবোৎ-পুরী, কেলহ, এবং নীনবী ও কেলহের মধ্যস্থিত রেষণ পত্তন করিলেন; উহা মহানগর। আর লূদীয়, অনামীয়, লহাবীয়, নপ্তুহীয়, পথ্রোষীয়, পলেষ্টীয়দের আদিপুরুষ কস্‌লূহীয়, এবং কপ্তোরীয়, এই সকল মিসরের সন্তান। এবং কনানের জ্যেষ্ঠ পুত্র সীদোন, তাহার পর হেৎ, যিবূষীয়, ইমোরীয়, গির্গাশীয়, হিব্বীয়, অর্কীয়, সীনীয়, অর্বদীয়, সমারীয় ও হমাতীয়। পরে কনানীয়দের গোষ্ঠী সকল বিস্তারিত হইল। সীদোন হইতে গরারের দিকে ঘসা পর্য্যন্ত, এবং সদোম, ঘমোরা, অদ্‌মা ও সবোয়ীমের দিকে লাশা পর্য্যন্ত কনানীয়দের সীমা ছিল। আপন আপন গোষ্ঠী, ভাষা, দেশ ও জাতি অনুসারে এই সকল হামের সন্তান। যে শেম এবরের সকল সন্তানের আদিপুরুষ, আর যেফতের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, তাঁহারও সন্তান সন্ততি ছিল। শেমের এই সকল সন্তান—এলম, অশূর, অফক্‌ষদ, লূদ ও অরাম। অরামের সন্তান—ঊষ, হূল, গেথর ও মশ। আর অর্ফক্‌ষদ শেলহের জন্ম দিলেন, ও শেলহ এবরের জন্ম দিলেন। এবরের দুই পুত্র; একের নাম পেলগ [বিভাগ], কেননা তৎকালে পৃথিবী বিভক্ত হইল; তাঁহার ভ্রাতার নাম যক্তন। আর যক্তন অল্‌মোদদ, শেলফ, হৎসর্মাবৎ, যেরহ, হদোরাম ঊষল, দিক্ল, ওবল, অবীমায়েল, শিবা, ওফীর, হবীলা ও যোববের জন্ম দিলেন; এই সকলে যক্তনের সন্তান। মেষা অবধি পূর্ব্বদিকের সফার পর্ব্বত পর্য্যন্ত তাহাদের বসতি ছিল। আপন আপন গোষ্ঠী, ভাষা, দেশ, ও জাতি অনুসারে এই সকল শেমের সন্তান। আপন আপন বংশ ও জাতি অনুসারে ইহারা নোহের সন্তানদের গোষ্ঠী; এবং জলপ্লাবনের পরে ইহাদের হইতে উৎপন্ন নানা জাতি পৃথিবীতে বিভক্ত হইল। সমস্ত পৃথিবীতে এক ভাষা ও একরূপ কথা ছিল। পরে লোকেরা পূর্ব্বদিকে ভ্রমণ করিতে করিতে শিনিয়র দেশে এক সমস্থলী পাইয়া সে স্থানে বসতি করিল; আর পরস্পর কহিল, আইস, আমরা ইষ্টক নির্ম্মাণ করিয়া অগ্নিতে দগ্ধ করি; তাহাতে ইষ্টক তাহাদের প্রস্তর ও মেটিয়া তৈল চূণ হইল। পরে তাহারা কহিল, আইস, আমরা আপনাদের নিমিত্তে এক নগর ও গণনস্পর্শী এক উচ্চগৃহ নির্ম্মাণ করিয়া আপনাদের নাম বিখ্যাত করি, পাছে সমস্ত ভূমণ্ডলে ছিন্নভিন্ন হই। পরে মনুষ্য-সন্তানেরা যে নগর ও উচ্চগৃহ নির্ম্মাণ করিতেছিল, তাহা দেখিতে সদাপ্রভু নামিয়া আসিলেন। আর সদাপ্রভু কহিলেন, দেখ, তাহারা সকলে এক জাতি ও এক ভাষাবাদী; এখন এই কর্ম্মে প্রবৃত্ত হইল; ইহার পরে যে কিছু করিতে সঙ্কল্প করিবে, তাহা হইতে নিবারিত হইবে না। আইস, আমরা নীচে গিয়া, সেই স্থানে তাহাদের ভাষার ভেদ জন্মাই, যেন তাহারা এক জন অন্যের ভাষা বুঝিতে না পারে। অার সদাপ্রভু তথা হইতে সমস্ত ভূমণ্ডলে তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিলেন, এবং তাহারা নগর পত্তন হইতে নিবৃত্ত হইল। এই জন্য সেই নগরের নাম বাবিল [ভেদ] থাকিল; কেননা সেই স্থানে সদাপ্রভু সমস্ত পৃথিবীর ভাষার ভেদ জন্মাইয়াছিলেন, এবং তথা হইতে সদাপ্রভু তাহাদিগকে সমস্ত ভূমণ্ডলে ছিন্নভিন্ন করিয়াছিলেন। শেমের বংশ-বৃত্তান্ত এই। শেম এক শত বৎসর বয়সে, জলপ্লাবনের দুই বৎসর পরে, অর্ফক্‌ষদের জন্ম দিলেন। অর্ফক্‌ষদের জন্ম দিলে পর শেম পাঁচ শত বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। অর্ফক্‌ষদ পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়সে শেলহের জন্ম দিলেন। শেলহের জন্ম দিলে পর অর্ফক্‌ষদ চারি শত তিন বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। শেলহ ত্রিশ বৎসর বয়সে এবরের জন্ম দিলেন। এবরের জন্ম দিলে পর শেলহ চারি শত তিন বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। এবর চৌত্রিশ বৎসর বয়সে পেলগের জন্ম দিলেন। পেলগের জন্ম দিলে পর এবর চারি শত ত্রিশ বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। পেলগ ত্রিশ বৎসর বয়সে রিয়ূর জন্ম দিলেন। রিয়ূর জন্ম দিলে পর পেলগ দুই শত নয় বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। রিয়ূ বত্রিশ বৎসর বয়সে সরূগের জন্ম দিলেন। সরূগের জন্ম দিলে পর রিয়ূ দুই শত সপ্ত বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। সরূগ ত্রিশ বৎসর বয়সে নাহোরের জন্ম দিলেন। নাহোরের জন্ম দিলে পর সরূগ দুই শত বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। নাহোর ঊনত্রিশ বৎসর বয়সে তেরহের জন্ম দিলেন। তেরহের জন্ম দিলে পর নাহোর এক শত ঊনিশ বৎসর জীবৎ থাকিয়া আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। তেরহ সত্তর বৎসর বয়সে অব্রাম, নাহোর ও হারণের জন্ম দিলেন। তেরহের বংশ-বৃত্তান্ত এই। তেরহ অব্রাম, নাহোর ও হারণের জন্ম দিলেন। আর হারণ লোটের জন্ম দিলেন। কিন্তু হারণ আপন পিতা তেরহের সাক্ষাতে আপন জন্মস্থান কল্‌দীয় দেশের ঊরে প্রাণত্যাগ করিলেন। অব্রাম ও নাহোর উভয়েই বিবাহ করিলেন; অব্রামের স্ত্রীর নাম সারী, ও নাহোরের স্ত্রীর নাম মিল্‌কা। এই স্ত্রী হারণের কন্যা; হারণ মিল্‌কার ও যিষ্কার পিতা। সারী বন্ধ্যা ছিলেন, তাঁহার সন্তান হইল না। আর তেরহ আপন পুত্র অব্রামকে ও হারণের পুত্র আপন পৌত্র লোটকে এবং অব্রামের স্ত্রী সারী নাম্নী পুত্রবধূকে সঙ্গে লইলেন; তাঁহারা একসঙ্গে কনান দেশে যাইবার নিমিত্তে কল্‌দীয় দেশের ঊর হইতে যাত্রা করিলেন; আর হারণ নগর পর্য্যন্ত গিয়া তথায় বসতি করিলেন। পরে তেরহের দুই শত পাঁচ বৎসর বয়স হইলে ঐ হারণে তাঁহার মৃত্যু হইল। সদাপ্রভু অব্রামকে কহিলেন, তুমি আপন দেশ, জ্ঞাতিকুটুম্ব ও পৈতৃক বাটী পরিত্যাগ করিয়া, আমি যে দেশ তোমাকে দেখাই, সেই দেশে চল। আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব, এবং তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া তোমার নাম মহৎ করিব, তাহাতে তুমি আশীর্ব্বাদের আকর হইবে। যাহারা তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবে, তাহাদিগকে আমি আশীর্ব্বাদ করিব, যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দিবে, তাহাকে আমি অভিশাপ দিব; এবং তোমাতে ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠী আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে পরে অব্রাম সদাপ্রভুর সেই বাক্যানুসারে যাত্রা করিলেন; এবং লোটও তাঁহার সঙ্গে গেলেন। হারণ হইতে প্রস্থান কালে অব্রামের পঁচাত্তর বৎসর বয়স ছিল। অব্রাম আপন স্ত্রী সারীকে ও ভ্রাতুষ্পুত্র লোটকে এবং হারণে তাঁহারা যে ধন উপার্জ্জন করিয়াছিলেন, ও যে প্রাণিগণকে লাভ করিয়াছিলেন, সে সমস্ত লইয়া কনান দেশে গমনার্থে যাত্রা করিলেন, এবং কনান দেশে আসিলেন। আর অব্রাম দেশ দিয়া যাইতে যাইতে শিখিম স্থানে, মোরির এলোন বৃক্ষের নিকটে উপস্থিত হইলেন। তৎকালে কনানীয়েরা সেই দেশে বাস করিত। পরে সদাপ্রভু অব্রামকে দর্শন দিয়া কহিলেন, আমি তোমার বংশকে এই দেশ দিব; আর সেই স্থানে অব্রাম সেই সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, যিনি তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন। পরে তিনি ঐ স্থান ত্যাগ করিয়া পর্ব্বতে গিয়া বৈথেলের পূর্ব্বদিকে আপনার তাম্বু স্থাপন করিলেন; তাহার পশ্চিমে বৈথেল ও পূর্ব্বদিকে অয় ছিল; তিনি সে স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, ও সদাপ্রভুর নামে ডাকিলেন। পরে অব্রাম ক্রমে ক্রমে দক্ষিণে গমন করিলেন। আর দেশে দুর্ভিক্ষ হইল, তখন অব্রাম মিসরে প্রবাস করিতে যাত্রা করিলেন; কেননা [কনান] দেশে ভারী দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। আর অব্রাম যখন মিসরে প্রবেশ করিতে উদ্যত হন, তখন আপন স্ত্রী সারীকে কহিলেন, দেখ, আমি জানি, তুমি দেখিতে সুন্দরী; এ কারণ মিস্রীয়েরা যখন তোমাকে দেখিবে, তখন তুমি আমার স্ত্রী বলিয়া আমাকে বধ করিবে, আর তোমাকে জীবিত রাখিবে। বিনয় করি, এই কথা বলিও যে, তুমি আমার ভগিনী; যেন তোমার অনুরোধে আমার মঙ্গল হয়, ও তোমাহেতু আমার প্রাণ বাঁচে। পরে অব্রাম মিসরে প্রবেশ করিলে মিস্রীয়েরা ঐ স্ত্রীকে পরমসুন্দরী দেখিল। অার ফরৌণের অধ্যক্ষগণ তাঁহাকে দেখিয়া ফরৌণের সাক্ষাতে তাঁহার প্রশংসা করিলেন; তাঁহাতে সেই স্ত্রী ফরৌণের বাটীতে নীত হইলেন। আর তাঁহার অনুরোধে তিনি অব্রামকে আদর করিলেন; তাহাতে অব্রাম মেষ, গোরু, গর্দ্দভ এবং দাস দাসী, গর্দ্দভী ও উষ্ট্র পাইলেন। কিন্তু অব্রামের স্ত্রী সারীর জন্য সদাপ্রভু ফরৌণ ও তাঁহার পরিবারের উপরে ভারী ভারী উৎপাত ঘটাইলেন। তাহাতে ফরৌণ অব্রামকে ডাকিয়া কহিলেন, আপনি আমার সহিত এ কি ব্যবহার করিলেন? উনি আপনার স্ত্রী, এ কথা আমাকে কেন বলেন নাই? উহাঁকে আপনার ভগিনী কেন বলিলেন? আমি ত উহাঁকে বিবাহ করিতে লইয়াছিলাম। এখন আপনার স্ত্রীকে লইয়া চলিয়া যাউন। তখন ফরৌণ লোকদিগকে তাঁহার বিষয়ে আজ্ঞা দিলেন, আর তাহারা সর্ব্বস্বের সহিত তাঁহাকে ও তাঁহার স্ত্রীকে বিদায় করিল। পরে অব্রাম ও তাঁহার স্ত্রী সমস্ত সম্পত্তি লইয়া লোটের সঙ্গে মিসর হইতে [কনান দেশের] দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রা করিলেন। অব্রাম পশুধনে ও স্বর্ণ রৌপ্যে অতিশয় ধনবান্ ছিলেন। পরে তিনি দক্ষিণ হইতে বৈথেলের দিকে যাইতে যাইতে বৈথেলের ও অয়ের মধ্যবর্ত্তী যে স্থানে পূর্ব্বে তাঁহার তাম্বু স্থাপিত ছিল, সেই স্থানে আপনার পূর্ব্বনির্ম্মিত যজ্ঞবেদির নিকটে উপস্থিত হইলেন; তথায় অব্রাম সদাপ্রভুর নামে ডাকিলেন। আর অব্রামের সহযাত্রী লোটেরও অনেক মেষ ও গো এবং তাম্বু ছিল। আর সেই দেশে একত্র বাস সম্পোষ্য হইল না, কেননা তাঁহাদের প্রচুর সম্পত্তি থাকাতে তাঁহারা একত্র বাস করিতে পারিলেন না। আর অব্রামের পশুপালকদের ও লোটের পশুপালকদের পরস্পর বিবাদ হইল। —তৎকালে সেই দেশে কনানীয়েরা ও পরিষীয়েরা বসতি করিত। —তাহাতে অব্রাম লোটকে কহিলেন, বিনয় করি, তোমাতে ও আমাতে এবং তোমার পশুপালকগণে ও আমার পশুপালকগণে বিবাদ না হউক; কেননা আমরা পরস্পর জ্ঞাতি। তোমার সম্মুখে কি সমস্ত দেশ নাই? বিনয় করি, আমা হইতে পৃথক্‌ হও; হয়, তুমি বামে যাও, আমি দক্ষিণে যাই; নয়, তুমি দক্ষিণে যাও, আমি বামে যাই। তখন লোট চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, যর্দ্দনের সমস্ত অঞ্চল সোয়র পর্য্যন্ত সর্ব্বত্র সজল, সদাপ্রভুর উদ্যানের ন্যায়, মিসর দেশের ন্যায়, কেননা তৎকালে সদাপ্রভু সদোম ও ঘমোরা বিনষ্ট করেন নাই। অতএব লোট আপনার নিমিত্তে যর্দ্দনের সমস্ত অঞ্চল মনোনীত করিয়া পূর্ব্বদিকে প্রস্থান করিলেন; এইরূপে তাঁহারা পরস্পর পৃথক্ হইলেন। অব্রাম কনান দেশে থাকিলেন, এবং লোট সেই অঞ্চলস্থিত নগরসমূহের মধ্যে থাকিয়া সদোমের নিকট পর্য্যন্ত তাম্বু স্থাপন করিতে লাগিলেন। সদোমের লোকেরা অতি দুষ্ট ও সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে অতি পাপিষ্ঠ ছিল। অব্রাম হইতে লোট পৃথক্ হইলে পর সদাপ্রভু অব্রামকে কহিলেন, চক্ষু তুলিয়া এই যে স্থানে তুমি আছ, এই স্থান হইতে উত্তর দক্ষিণে ও পূর্ব্ব পশ্চিমে দৃষ্টিপাত কর; কেননা এই যে সমস্ত দেশ তুমি দেখিতে পাইতেছ, ইহা আমি তোমাকে ও যুগে যুগে তোমার বংশকে দিব। আর পৃথিবীস্থ ধূলির ন্যায় তোমার বংশবৃদ্ধি করিব; কেহ যদি পৃথিবীস্থ ধূলি গণিতে পারে, তবে তোমার বংশও গণা যাইবে। উঠ, এই দেশের দীর্ঘপ্রস্থে পর্য্যটন কর, কেননা আমি তোমাকেই ইহা দিব। তখন অব্রাম তাম্বু তুলিয়া হিব্রোণে স্থিত মম্রির এলোন বনের নিকটে গিয়া বাস করিলেন, এবং সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। শিনিয়রের অম্রাফল রাজা, ইল্লাসরের অরিয়োক রাজা, এলমের কদলায়োমর রাজা এবং গোয়ীমের তিদিয়ল রাজার সময়ে ঐ রাজগণ সদোমের রাজা বিরা, ঘমোরার রাজা বির্শা, অদ্‌মার রাজা শিনাব, সবোয়িমের রাজা শিমেবর ও বিলার অর্থাৎ সোয়রের রাজার সহিত যুদ্ধ করিলেন। ইহাঁরা সকলে সিদ্দীম তলভূমিতে অর্থাৎ লবণসমুদ্রে একত্র হইয়াছিলেন। ইহাঁরা দ্বাদশ বৎসর পর্য্যন্ত কদর্লায়োমরের দাসত্বে থাকিয়া ত্রয়োদশ বৎসরে বিদ্রোহী হন। পরে চতুর্দ্দশ বৎসরে কদর্লায়োমর ও তাঁহার সহায় রাজগণ আসিয়া অস্তরোৎ-কর্ণয়িমে রফায়ীয়দিগকে, হমে সুষীয়দিগকে, শাবিকিরিয়াথয়িমে এমীয়দিগকে ও প্রান্তরের পার্শ্বস্থ এল-পারণ পর্য্যন্ত সেয়ীর পর্ব্বতে তথাকার হোরীয়দিগকে আঘাত করিলেন। পরে তথা হইতে ফিরিয়া ঐনমিষ্পটে অর্থাৎ কাদেশে গিয়া অমালেকীয়দের সমস্ত দেশকে এবং হৎসসোন-তামর নিবাসী ইমোরীয়দিগকে আঘাত করিলেন। আর সদোমের রাজা, ঘমােরার রাজা, অদ্‌মার রাজা, সবোয়িমের রাজা ও বিলার অর্থাৎ সোয়রের রাজা বাহির হইয়া এলমের কদর্লায়োমর রাজার, গোয়ীমের তিদিয়ল রাজার, শিনিয়রের অম্রাফল রাজার ও ইলাসরের অরিয়োক রাজার সহিত, পাঁচ জন রাজা চারি জন রাজার সহিত, যুদ্ধ করণার্থে সিদ্দীম তলভূমিতে সেনা স্থাপন করিলেন। ঐ সিদ্দীম তলভূমিতে মেটিয়া তৈলের অনেক খাত ছিল; আর সদোম ও ঘমোরার রাজগণ পলায়ন করিলেন ও তাহার মধ্যে পতিত হইলেন, এবং অবশিষ্টেরা পর্ব্বতে পলায়ন করিলেন। আর শত্রুরা সদোম ও ঘমোরার সমস্ত সম্পত্তি ও ভক্ষ্য দ্রব্য লইয়া প্রস্থান করিলেন। বিশেষতঃ তাঁহারা অব্রামের ভ্রাতুষ্পুত্র লোটকে ও তাঁহার সম্পত্তি লইয়া গেলেন, কেননা তিনি সদোমে বাস করিতেছিলেন। তখন এক জন পলাতক ইব্রীয় অব্রামকে সমাচার দিল; ঐ সময়ে তিনি ইষ্কোলের ভ্রাতা ও আনেরের ভ্রাতা ইমোরীয় মম্রির এলোন বনে বাস করিতেছিলেন, এবং তাঁহারা অব্রামের সহায় ছিলেন। অব্রাম যখন শুনিলেন, তাঁহার জ্ঞাতি ধৃত হইয়াছেন, তখন তিনি আপন গৃহজাত তিন শত আঠার জন অভ্যস্ত দাসকে লইয়া দান পর্য্যন্ত ধাবমান হইয়া গেলেন। পরে রাত্রিকালে আপন দাসদিগকে দুই দল করিয়া তিনি শত্রুগণকে অাঘাত করিলেন, এবং দম্মেশকের উত্তরে স্থিত হোবা পর্য্যন্ত তাড়াইয়া দিলেন। এবং সকল সম্পত্তি, আর আপন জ্ঞাতি লোট ও তাঁহার সম্পত্তি এবং স্ত্রীলোকদিগকে ও লোক সকলকে ফিরাইয়া আনিলেন। অব্রাম কদলায়োমরকে ও তাঁহার সঙ্গী রাজগণকে জয় করিয়া ফিরিয়া আসিলে পর, সদোমের রাজা তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে শাবী তলভূমিতে অর্থাৎ রাজার তলভূমিতে গমন করিলেন। এবং শালেমের রাজা মল্কীষেদক রুটী ও দ্রাক্ষারস বাহির করিয়া আনিলেন, তিনি পরাৎপর ঈশ্বরের যাজক। তিনি অব্রামকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, বলিলেন, অব্রাম স্বর্গমর্ত্ত্যের অধিকারী পরাৎপর ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদপাত্র হউন, আর পরাৎপর ঈশ্বর ধন্য হউন, যিনি তোমার বিপক্ষগণকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন। তখন অব্রাম সমস্ত দ্রব্যের দশমাংশ তাহাকে দিলেন। আর সদোমের রাজা অব্রামকে কহিলেন, মনুষ্য সকল আমাকে দিউন, সম্পত্তি আপনার জন্য লউন। তখন অব্রাম সদোমের রাজাকে উত্তর করিলেন, আমি স্বর্গমর্ত্ত্যের অধিকারী পরাৎপর ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে হস্ত উঠাইয়া কহিতেছি, আমি আপনার কিছুই লইব না, এক গাছি সূতা কি পাদুকার বন্ধনীও লইব না; পাছে আপনি বলেন, আমি অব্রামকে ধনবান্ করিয়াছি। কেবল [আমার] যুবগণ যাহা খাইয়াছে তাহা লইব, এবং যে ব্যক্তিরা আমার সঙ্গে গিয়াছিলেন, আনের, ইষ্কোল ও মম্রি, তাঁহারা আপন আপন প্রাপ্তব্য অংশ গ্রহণ করুন। ঐ ঘটনার পরে দর্শনযোগে সদাপ্রভুর বাক্য অব্রামের নিকটে উপস্থিত হইল, তিনি বলিলেন, অব্রাম, ভয় করিও না, আমিই তোমার ঢাল ও তোমার মহা পুরস্কার। অব্রাম কহিলেন, হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আমাকে কি দিবে? আমি ত নিঃসন্তান হইয়া প্রয়াণ করিতেছি, এবং এই দম্মেশকীয় ইলীয়েষর আমার গৃহের ধনাধিকারী। আর অব্রাম কহিলেন, দেখ, তুমি আমাকে সন্তান দিলে না, এবং আমার গৃহজাত এক জন আমার উত্তরাধিকারী হইবে। তখন দেখ, তাঁহার কাছে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হইল, যথা, ঐ ব্যক্তি তোমার উত্তরাধিকারী হইবে না, কিন্তু যে তোমার ঔরসে জন্মিবে, সেই তোমার উত্তরাধিকারী হইবে। পরে তিনি তাঁহাকে বাহিরে আনিয়া কহিলেন, তুমি আকাশে দৃষ্টি করিয়া যদি তারা গণিতে পার, তবে গণিয়া বল; তিনি তাঁহাকে আরও বলিলেন, এইরূপ তোমার বংশ হইবে। তখন তিনি সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণনা করিলেন। আর তাঁহাকে কহিলেন, যিনি তোমার অধিকারার্থে এই দেশ দিবার জন্য কল্‌দীয় দেশের ঊর হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই সদাপ্রভু আমি। তখন তিনি কহিলেন, হে প্রভু সদাপ্রভু, আমি যে ইহার অধিকারী হইব, তাহা কিসে জানিব? তিনি তাঁহাকে কহিলেন, তুমি তিন বৎসরের এক গাভী, তিন বৎসরের এক ছাগী, তিন বৎসরের এক মেষ এবং এক ঘুঘু ও এক কপোতশাবক আমার নিকটে আন। পরে তিনি ঐ সকল তাঁহার নিকটে আনিয়া দুই দুই খণ্ড করিলেন, এবং এক এক খণ্ডের অগ্রে অন্য অন্য খণ্ড রাখিলেন, কিন্তু পক্ষিগণকে দ্বিখণ্ড করিলেন না। পরে হিংস্র পক্ষিগণ সেই মৃত পশুদের উপরে পড়িলে অব্রাম তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিলেন। পরে সূর্য্যের অস্তগমন সময়ে অব্রাম ঘোর নিদ্রাগত হইলেন; আর দেখ, তিনি ত্রাসে ও অন্ধকারে মগ্ন হইলেন। তখন তিনি অব্রামকে কহিলেন, নিশ্চয় জানিও, তোমার সন্তানগণ পরদেশে প্রবাসী থাকিবে, এবং বিদেশী লোকদের দাস্যকর্ম্ম করিবে, ও লোকে তাহাদিগকে দুঃখ দিবে—চারি শত বৎসর পর্য্যন্ত; আবার তাহারা যে জাতির দাস হইবে, আমিই তাহার বিচার করিব; তৎপরে তাহারা যথেষ্ট সম্পত্তি লইয়া বাহির হইবে। আর তুমি শান্তিতে আপন পূর্ব্বপুরুষদের নিকটে যাইবে, ও শুভ বৃদ্ধাবস্থায় কবর প্রাপ্ত হইবে। আর [তোমার বংশের] চতুর্থ পুরুষ এই দেশে ফিরিয়া আসিবে; কেননা ইমোরীয়দের অপরাধ এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই। পরে সূর্য্য অস্তগত ও অন্ধকার হইলে দেখ, ধূমযুক্ত চুলা ও অগ্নিময় উল্কা ঐ দুই খণ্ডশ্রেণীর মধ্য দিয়া চলিয়া গেল। সেই দিন সদাপ্রভু অব্রামের সিহত নিয়ম স্থির করিয়া কহিলেন, আমি মিসরের নদী অবধি মহানদী, ফরাৎ নদী পর্য্যন্ত এই দেশ তোমার বংশকে দিলাম; কেনীয়, কনিষীয় কদ্‌মোনীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, রফায়ীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, গির্গাশীয় ও যিবূষীয় লোকদের দেশ দিলাম। অব্রামের স্ত্রী সারী নিঃসন্তানা ছিলেন, এবং হাগার নামে তাঁহার এক মিস্রীয়া দাসী ছিল। তাহাতে সারী অব্রামকে কহিলেন, দেখ, সদাপ্রভু আমাকে বন্ধ্যা করিয়াছেন; বিনয় করি, তুমি আমার দাসীর কাছে গমন কর; কি জানি, ইহা দ্বারা আমি পুত্রবতী হইতে পারিব। তখন অব্রাম সারীর বাক্যে সম্মত হইলেন। এইরূপে কনান দেশে অব্রাম দশ বৎসর বাস করিলে পর অব্রামের স্ত্রী সারী আপন দাসী মিস্রীয়া হাগারকে লইয়া আপন স্বামী অব্রামের সহিত বিবাহ দিলেন। পরে অব্রাম হাগারের কাছে গমন করিলে সে গর্ভবতী হইল; এবং আপনার গর্ভ হইয়াছে দেখিয়া নিজ কর্ত্রীকে তুচ্ছজ্ঞান করিতে লাগিল। তাহাতে সারী অব্রামকে কহিলেন, আমার প্রতি কৃত এই অন্যায় তোমাতেই ফলুক; আমি আপনার দাসীকে তোমার ক্রোড়ে দিয়াছিলাম, সে আপনাকে গর্ভবতী দেখিয়া আমাকে তুচ্ছজ্ঞান করিতেছে; সদাপ্রভুই তোমার ও আমার বিচার করুন! তখন অব্রাম সারীকে কহিলেন, দেখ, তোমার দাসী তোমারই হাতে; তোমার যাহা ভাল বোধ হয়, তাহার প্রতি তাহাই কর। তাহাতে সারী হাগারকে দুঃখ দিলেন, আর সে তাঁহার নিকট হইতে পলায়ন করিল। পরে সদাপ্রভুর দূত প্রান্তরের মধ্যে এক জলের উনুইয়ের নিকটে, শূরের পথে যে উনুই আছে, তাহার নিকটে তাহাকে পাইয়া কহিলেন, হে সারীর দাসি হাগার, তুমি কোথা হইতে আসিলে? এবং কোথায় যাইবে? তাহাতে সে কহিল, আমি আপন কর্ত্রী সারীর নিকট হইতে পলাইতেছি। তখন সদাপ্রভুর দূত তাহাকে কহিলেন, তুমি আপন কর্ত্রীর নিকটে ফিরিয়া গিয়া নম্র ভাবে তাহার হস্তের বশীভূতা হও। সদাপ্রভুর দূত তাহাকে আরও বলিলেন, আমি তোমার বংশের এমন বৃদ্ধি করিব যে, বাহুল্য প্রযুক্ত অগণ্য হইবে। সদাপ্রভুর দূত তাহাকে আরও কহিলেন, দেখ, তোমার গর্ভ হইয়াছে, তুমি পুত্র প্রসব করিবে, ও তাহার নাম ইশ্মায়েল [ঈশ্বর শুনেন] রাখিবে, কেননা সদাপ্রভু তোমার দুঃখ শ্রবণ করিলেন। আর সে বনগর্দ্দভস্বরূপ মনুষ্য হইবে; তাহার হস্ত সকলের বিরুদ্ধ ও সকলের হস্ত তাহার বিরুদ্ধ হইবে; সে তাহার সকল ভ্রাতার সম্মুখে বসতি করিবে। পরে হাগার, যিনি তাহার সহিত কথা কহিলেন, সেই সদাপ্রভুর এই নাম রাখিল, তুমি দর্শনকারী ঈশ্বর; কেননা সে কহিল, যিনি আমাকে দর্শন করেন, আমি কি এই স্থানেই তাঁহার অনুদর্শন করিয়াছি? এই কারণ সেই কূপের নাম বের-লহয়-রোয়ী [জীবৎ-মদ্দর্শকের কূপ] হইল; দেখ, তাহা কাদেশ ও বেরদের মধ্যে রহিয়াছে। পরে হাগার অব্রামের নিমিত্তে পুত্র প্রসব করিল; আর অব্রাম হাগারের গর্ভজাত আপনার সেই পুত্রের নাম ইশ্মায়েল রাখিলেন। অব্রামের ছেয়াশী বৎসর বয়সে হাগার অব্রামের নিমিত্তে ইশ্মায়েলকে প্রসব করিল। অব্রামের নিরানব্বই বৎসর বয়সে সদাপ্রভু তাঁহাকে দর্শন দিলেন ও কহিলেন, আমি সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর, তুমি আমার সাক্ষাতে গমনাগমন করিয়া সিদ্ধ হও। আর আমি তোমার সহিত আপন নিয়ম স্থির করিব, ও তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব। তখন অব্রাম উবুড় হইয়া পড়িলেন, এবং ঈশ্বর তাঁহার সহিত আলাপ করিয়া কহিলেন, দেখ, আমিই তোমার সহিত আপন নিয়ম স্থির করিতেছি, তুমি বহুজাতির আদিপিতা হইবে। তোমার নাম অব্রাম [মহাপিতা] আর থাকিবে না, কিন্তু তোমার নাম অব্রাহাম [বহুলোকের পিতা] হইবে; কেননা আমি তোমাকে বহুজাতির আদিপিতা করিলাম। আমি তোমাকে অতিশয় ফলবান করিব, এবং তোমা হইতে বহু জাতি জন্মাইব; আর রাজারা তোমা হইতে উৎপন্ন হইবে। আমি তোমার সহিত ও পুরুষানুক্রমে তোমার ভাবী বংশের সহিত যে নিয়ম স্থাপন করিব, তাহা চিরকালের নিয়ম হইবে; ফলতঃ আমি তোমার ঈশ্বর ও তোমার ভাবী বংশের ঈশ্বর হইব। আর তুমি এই যে কনান দেশে প্রবাস করিতেছ, ইহার সমুদয় আমি তোমাকে ও তোমার ভাবী বংশকে চিরস্থায়ী অধিকারার্থে দিব, আর আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব। ঈশ্বর অব্রাহামকে আরও কহিলেন, তুমিও আমার নিয়ম পালন করিবে; তুমি ও তোমার ভাবী বংশ পুরুষানুক্রমে তাহা পালন করিবে। তোমাদের সহিত ও তোমার ভাবী বংশের সহিত কৃত আমার যে নিয়ম তোমরা পালন করিবে, তাহা এই, তোমাদের প্রত্যেক পুরুষের ত্বক্‌ছেদ হইবে। তোমরা আপন আপন লিঙ্গাগ্রচর্ম্ম ছেদন করিবে; তাহাই তোমাদের সহিত আমার নিয়মের চিহ্ন হইবে। পুরুষানুক্রমে তোমাদের প্রত্যেক পুত্রসন্তানের আট দিন বয়সে ত্বক্‌ছেদ হইবে, এবং যাহারা তোমার বংশ নয়, এমন পরজাতীয়দের মধ্যে তোমাদের গৃহে জাত কিম্বা মূল্য দ্বারা ক্রীত লোকেরও ত্বক্‌ছেদ হইবে। তোমার গৃহজাত কিম্বা মূল্য দ্বারা ক্রীত লোকের ত্বক্‌ছেদ অবশ্য কর্ত্তব্য; আর তোমাদের মাংসে বিদ্যমান আমার নিয়ম চিরকালের নিয়ম হইবে। কিন্তু যাহার লিঙ্গাগ্রচর্ম্ম ছেদন না হইবে, এমন অচ্ছিন্নত্বক্ পুরুষ আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে; সে আমার নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে। আর ঈশ্বর অব্রাহামকে কহিলেন, তুমি তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলিয়া ডাকিও না; তাহার নাম সারা [রাণী] হইল। আর আমি তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিব, এবং তাহা হইতে এক পুত্রও তোমাকে দিব; আমি তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিব, তাহাতে সে জাতিগণের [অাদিমাতা] হইবে, তাহা হইতে লোকবৃন্দের রাজগণ উৎপন্ন হইবে। তখন অব্রাহাম উবুড় হইয়া পড়িয়া হাসিলেন, মনে মনে কহিলেন, শতবর্ষবয়স্ক পুরুষের কি সন্তান হইবে? আর নব্বই বৎসর বয়স্কা সারা কি প্রসব করিবে? পরে অব্রাহাম ঈশ্বরকে কহিলেন, ইশ্মায়েলই তোমার গােচরে বাঁচিয়া থাকুক। তখন ঈশ্বর কহিলেন, তোমার স্ত্রী সারা অবশ্য তোমার নিমিত্তে পুত্র প্রসব করিবে, এবং তুমি তাহার নাম ইস্‌হাক [হাস্য] রাখিবে, আর আমি তাহার সহিত আমার নিয়ম স্থাপন করিব, তাহা তাহার ভাবী বংশের পক্ষে চিরস্থায়ী নিয়ম হইবে। আর ইশ্মায়েলের বিষয়েও তোমার প্রার্থনা শুনিলাম; দেখ, আমি তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিলাম, এবং তাহাকে ফলবান্ করিয়া তাহার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব; তাহা হইতে দ্বাদশ রাজা উৎপন্ন হইবে, ও আমি তাহাকে বড় জাতি করিব। কিন্তু আগামী বৎসরের এই ঋতুতে সারা তোমার নিমিত্তে যাহাকে প্রসব করিবে, সেই ইস্‌হাকের সহিত আমি আপন নিয়ম স্থাপন করিব। পরে কথোপকথন সাঙ্গ করিয়া ঈশ্বর অব্রাহামের নিকট হইতে ঊর্দ্ধগমন করিলেন। পরে অব্রাহাম আপন পুত্র ইশ্মায়েলকে ও আপন গৃহজাত ও মূল্য দ্বারা ক্রীত সকল লোককে, অব্রাহামের গৃহে যত পুরুষ ছিল, সেই সকলকে লইয়া ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে সেই দিনে তাহাদের লিঙ্গাগ্রচর্ম্ম ছেদন করিলেন। অব্রাহামের লিঙ্গাগ্রের ত্বক্‌ছেদন কালে তাঁহার বয়স নিরানব্বই বৎসর। আর তাঁহার পুত্র ইশ্মায়েলের লিঙ্গাগ্রের ত্বক্‌ছেদন কালে তাহার বয়স তের বৎসর। সেই দিনেই অব্রাহাম ও তাঁহার পুত্র ইশ্মায়েল, উভয়ের ত্বক্‌ছেদ হইল। আর তাঁহার গৃহজাত এবং পরজাতীয়দের নিকটে মূল্য দ্বারা ক্রীত তাঁহার গৃহের সকল পুরুষেরও ত্বক্‌ছেদ সেই সময়ে হইল। পরে সদাপ্রভু মম্রির এলোন বনের নিকটে তাঁহাকে দর্শন দিলেন। তিনি দিনের উত্তাপ সময়ে তাম্বুদ্বারে বসিয়াছিলেন; আর চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, তিনটী পুরুষ সম্মুখে দণ্ডায়মান। দেখিবামাত্র তিনি তাম্বুদ্বার হইতে তাঁহাদের নিকট দৌড়িয়া গিয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিয়া কহিলেন, হে প্রভো, বিনয় করি, যদি আমি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহের পাত্র হইয়া থাকি, তবে আপনার এই দাসের নিকট হইতে অগ্রসর হইবেন না। বিনয় করি, কিঞ্চিৎ জল আনাইয়া দিই, আপনারা পা ধুইয়া এই বৃক্ষতলে বিশ্রাম করুন, এবং কিছু খাদ্য আনিয়া দিই, তাহা দ্বারা প্রাণ আপ্যায়িত করুন, পরে পথে অগ্রসর হইবেন; কেননা ইহারই নিমিত্তে আপন দাসের নিকটে আগত হইলেন। তখন তাঁহারা কহিলেন, যাহা বলিলে, তাহাই কর। তাহাতে অব্রাহাম ত্বরা করিয়া তাম্বুতে সারার নিকটে গিয়া কহিলেন, শীঘ্র তিন মাণ উত্তম ময়দা লইয়া ছানিয়া পিষ্টক প্রস্তুত কর। পরে অব্রাহাম ত্বরায় বাথানে গিয়া উৎকৃষ্ট কোমল এক গোবৎস লইয়া দাসকে দিলে সে তাহা শীঘ্র পাক করিল। তখন তিনি দধি, দুগ্ধ ও পক্ব মাংস লইয়া তাঁহাদের সম্মুখে দিলেন, এবং তাঁহাদের নিকটে বৃক্ষতলে দাঁড়াইলেন, ও তাঁহারা ভোজন করিলেন। আর তাঁহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার স্ত্রী সারা কোথায়? তিনি কহিলেন, দেখুন, তিনি তাম্বুতে আছেন। তাহাতে তাঁহাদের এক ব্যক্তি কহিলেন, এই ঋতু পুনরায় উপস্থিত হইলে আমি অবশ্য তোমার কাছে ফিরিয়া আসিব; আর দেখ, তোমার স্ত্রী সারার এক পুত্র হইবে। এই কথা সারা তাম্বুদ্বারে তাঁহার পশ্চাৎ থাকিয়া শুনিলেন। সেই সময়ে অব্রাহাম ও সারা বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক ছিলেন; সারার স্ত্রীধর্ম্ম নিবৃত্ত হইয়াছিল। অতএব সারা মনে মনে হাসিয়া কহিলেন, আমার এই শীর্ণ দশার পরে কি এমন আনন্দ হইবে? আমার প্রভুও ত বৃদ্ধ। তখন সদাপ্রভু অব্রাহামকে কহিলেন, সারা কেন এই বলিয়া হাসিল যে, আমি কি সত্যই প্রসব করিব, আমি যে বুড়ী? কোন কর্ম্ম কি সদাপ্রভুর অসাধ্য? নিরূপিত সময়ে এই ঋতু আবার উপস্থিত হইলে আমি তোমার কাছে ফিরিয়া আসিব, আর সারার পুত্র হইবে। তাহাতে সারা অস্বীকার করিয়া কহিলেন, আমি হাসি নাই; কেননা তিনি ভয় পাইয়াছিলেন। কিন্তু তিনি কহিলেন, অবশ্য হাসিয়াছিলে। পরে সেই ব্যক্তিরা তথা হইতে উঠিয়া সদোমের দিকে দৃষ্টি করিলেন, আর অব্রাহাম তাঁহাদিগকে বিদায় দিতে তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু কহিলেন, আমি যাহা করিব, তাহা কি অব্রাহাম হইতে লুকাইব? অব্রাহাম হইতে মহতী ও বলবতী এক জাতি উৎপন্ন হইবে, এবং পৃথিবীর যাবতীয় জাতি তাহাতেই আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে। কেননা আমি তাহাকে জানিয়াছি, যেন সে আপন ভাবী সন্তানগণকে ও পরিবারদিগকে আদেশ করে, যেন তাহারা ধর্ম্মসঙ্গত ও ন্যায্য আচরণ করিতে করিতে সদাপ্রভুর পথে চলে; এইরূপে সদাপ্রভু যেন অব্রাহামের বিষয়ে কথিত আপনার বাক্য সফল করেন। পরে সদাপ্রভু কহিলেন, সদোমের ও ঘমোরার ক্রন্দন আত্যন্তিক, এবং তাহাদের পাপ অতিশয় ভারী; আমি নীচে গিয়া দেখিব, আমার নিকটে আগত ক্রন্দনানুসারে তাহারা সর্ব্বতোভাবে করিয়াছে কি না; যদি না করিয়া থাকে, তাহা জানিব। পরে সেই ব্যক্তিরা তথা হইতে ফিরিয়া সদোমের দিকে গমন করিলেন; কিন্তু অব্রাহাম তখনও সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দণ্ডায়মান থাকিলেন। পরে অব্রাহাম নিকটে গিয়া কহিলেন, আপনি কি দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিককেও সংহার করিবেন? সেই নগরের মধ্যে যদি পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিক পাওয়া যায়, তবে আপনি কি তথাকার পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিকের অনুরোধে সেই স্থানের প্রতি দয়া না করিয়া তাহা বিনষ্ট করিবেন? দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিকের বিনাশ করা, এই প্রকার কর্ম্ম আপনা হইতে দূরে থাকুক; ধার্ম্মিককে দুষ্টের সমান করা আপনা হইতে দূরে থাকুক। সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না? সদাপ্রভু কহিলেন, আমি যদি সদোমের মধ্যে পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিক দেখি, তবে তাহাদের অনুরোধে সেই সমস্ত স্থানের প্রতি দয়া করিব। অব্রাহাম উত্তর করিয়া কহিলেন, দেখুন ধূলি ও ভস্মমাত্র যে আমি, আমি প্রভুর সঙ্গে কথা কহিতে সাহসী হইয়াছি। কি জানি, পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিকের পাঁচ জন ন্যূন হইবে; সেই পাঁচ জনের অভাব প্রযুক্ত আপনি কি সমস্ত নগর বিনষ্ট করিবেন? তিনি কহিলেন, সেই স্থানে পঁয়তাল্লিশ জন পাইলে আমি তাহা বিনষ্ট করিব না। তিনি তাঁহাকে আবার কহিলেন, বলিলেন, সে স্থানে যদি চল্লিশ জন পাওয়া যায়? তিনি কহিলেন, সেই চল্লিশ জনের অনুরোধে তাহা করিব না। আবার তিনি কহিলেন, প্রভু বিরক্ত হইবেন না, আমি আরও কহি; যদি সেখানে ত্রিশ জন পাওয়া যায়? তিনি কহিলেন, সেখানে ত্রিশ জন পাইলে তাহা করিব না। তিনি কহিলেন, দেখুন, প্রভুর কাছে আমি সাহসী হইয়া পুনর্ব্বার বলি, যদি সেখানে বিংশতি জন পাওয়া যায়? তিনি কহিলেন, সেই বিংশতি জনের অনুরোধে তাহা বিনষ্ট করিব না। তিনি কহিলেন, প্রভু ক্রুদ্ধ হইবেন না, আমি কেবল আর এই এক বার বলি; যদি সেখানে দশ জন পাওয়া যায়? তিনি কহিলেন, সেই দশ জনের অনুরোধে তাহা বিনষ্ট করিব না। তখন সদাপ্রভু অব্রাহামের সহিত কথোপকথন সমাপন করিয়া প্রস্থান করিলেন; এবং অব্রাহাম স্বস্থানে ফিরিয়া আসিলেন। পরে সন্ধ্যাকালে ঐ দুই দূত সদোমে আসিলেন। তখন লোট সদোমের দ্বারে বসিয়া ছিলেন, আর তাঁহাদিগকে দেখিয়া তাঁহাদের নিকট যাইবার জন্য উঠিলেন, এবং ভূমিতে মুখ দিয়া প্রণিপাত করিয়া কহিলেন, হে আমার প্রভুরা, দেখুন, বিনয় করি, আপনাদের এই দাসের গৃহে পদার্পণ করিয়া রাত্রি বাস করুন ও পা ধুউন; পরে প্রত্যূষে উঠিয়া স্বযাত্রায় অগ্রসর হইবেন। তাঁহারা কহিলেন, না, আমরা চকেই রাত্রি যাপন করিব। কিন্তু লোট অতিশয় আগ্রহ দেখাইলে তাঁহারা তাঁহার সঙ্গে গেলেন, ও তাঁহার বাটীতে প্রবেশ করিলেন; তাহাতে তিনি তাঁহাদের জন্য ভোজ প্রস্তুত করিলেন, ও তাড়ীশূন্য রুটী পাক করিলেন, আর তাঁহারা ভোজন করিলেন। পরে তাঁহাদের শয়নের পূর্ব্বে ঐ নগরের পুরুষেরা, সদোমের আবাল বৃদ্ধ সমস্ত লোক চতুর্দ্দিক্‌ হইতে আসিয়া তাঁহার বাটী ঘেরিল, এবং লোটকে ডাকিয়া কহিল, অদ্য রাত্রিতে যে দুই ব্যক্তি তোমার বাটীতে আসিল, তাহারা কোথায়? তাহাদিগকে বাহির করিয়া আমাদের নিকটে আন, আমরা তাহাদের পরিচয় লইব। তখন লোট গৃহদ্বারের বাহিরে তাহাদের নিকটে আসিয়া আপনার পশ্চাৎ কবাট বন্ধ করিয়া কহিলেন, ভাই সকল, বিনয় করি, এমন কুব্যবহার করিও না। দেখ, পুরুষের পরিচয় অপ্রাপ্তা আমার দুইটি কন্যা আছে, তাহাদিগকে তোমাদের নিকটে আনি, তোমাদের দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তাহা কর, কিন্তু সেই ব্যক্তিদের প্রতি কিছুই করিও না, কেননা এই নিমিত্তে তাঁহারা আমার গৃহের ছায়া আশ্রয় করিলেন। তখন তাহারা কহিল, সরিয়া যা। আরও কহিল, এ একাকী প্রবাস করিতে আসিয়া আমাদের বিচারকর্ত্তা হইল; এখন তাহাদের অপেক্ষা তোর প্রতি আরও কুব্যবহার করিব। ইহা বলিয়া তাহারা লোটের উপরে ভারী চড়াউ হইয়া কবাট ভাঙ্গিতে গেল। তখন সেই দুই ব্যক্তি হস্ত বাড়াইয়া লোটকে গৃহের মধ্যে আপনাদের নিকটে টানিয়া লইয়া কবাট বন্ধ করিলেন; এবং গৃহদ্বারের নিকটবর্ত্তী ক্ষুদ্র ও মহান্ সকল লোককে অন্ধতায় আহত করিলেন; তাহাতে তাহারা দ্বার খুঁজিতে খুঁজিতে পরিশ্রান্ত হইল। পরে সেই ব্যক্তিরা লোটকে কহিলেন, এই স্থানে তোমার আর কে কে আছে? তোমার জামাতা ও পুত্র কন্যা যত জন এই নগরে আছে, সে সকলকে এই স্থান হইতে লইয়া যাও। কেননা আমরা এই স্থান উচ্ছিন্ন করিব; কারণ সদাপ্রভুর সাক্ষাতে এই লোকদের বিপরীতে মহাক্রন্দন উঠিয়াছে, তাই সদাপ্রভু ইহা উচ্ছিন্ন করিতে আমাদিগকে পাঠাইয়াছেন। তখন লোট বাহিরে গিয়া, যাহারা তাঁহার কন্যাদিগকে বিবাহ করিয়াছিল, আপনার সেই জামাতাদিগকে কহিলেন, উঠ, এ স্থান হইতে বাহির হও, কেননা সদাপ্রভু এই নগর উচ্ছিন্ন করিবেন। কিন্তু তাঁহার জামাতারা তাঁহাকে উপহাসকারী বলিয়া জ্ঞান করিল। পরে প্রভাত হইলে সেই দূতেরা লোটকে সত্বর করিলেন, কহিলেন, উঠ, তোমার স্ত্রীকে ও এই যে কন্যা দুইটী এখানে আছে, ইহাদিগকে লইয়া যাও, পাছে তোমরা নগরের অপরাধে বিনষ্ট হও। কিন্তু তিনি ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন; তাহাতে তাঁহার প্রতি সদাপ্রভুর স্নেহ প্রযুক্ত সেই ব্যক্তিরা তাঁহার ও তাঁহার স্ত্রীর ও কন্যা দুইটীর হস্ত ধরিয়া নগরের বাহিরে লইয়া রাখিলেন। এইরূপে তাঁহাদিগকে বাহির করিয়া তিনি লোটকে কহিলেন, প্রাণরক্ষার্থ পলায়ন কর, পশ্চাৎ দিকে দৃষ্টি করিও না; এই সমস্ত অঞ্চলের মধ্যেও দাঁড়াইয়া থাকিও না; পর্ব্বতে পলায়ন কর, পাছে বিনষ্ট হও। তাহাতে লোট তাঁহাদিগকে কহিলেন, হে আমার প্রভো, এমন না হউক। দেখুন, আপনার দাস আপনার কাছে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইয়াছে; আমার প্রাণরক্ষা করাতে আপনি আমার প্রতি আপনার মহাদয়া প্রকাশ করিয়াছেন; কিন্তু আমি পর্ব্বতে পলায়ন করিতে পারি না; কি জানি, সেই বিপদ আসিয়া পড়িলে আমিও মরিব। দেখুন, পলায়ন জন্য ঐ নগর নিকটবর্ত্তী, উহা ক্ষুদ্র; ওখানে পলাইবার অনুমতি দিউন, তাহা হইলে আমার প্রাণ বাঁচিবে; উহা কি ক্ষুদ্র নয়? তিনি কহিলেন, ভাল, আমি এ বিষয়েও তোমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়া, ঐ যে নগরের কথা কহিলে, উহা উৎপাটন করিব না। শীঘ্রই ঐ স্থানে পলায়ন কর, কেননা তুমি ঐ স্থানে না পঁহুছিলে আমি কিছু করিতে পারি না। এই হেতু সেই স্থানের নাম সোয়র, ক্ষুদ্র হইল। দেশের উপরে সূর্য্য উদিত হইলে লোট সোয়রে প্রবেশ করিলেন, এমন সময়ে সদাপ্রভু আপনার নিকট হইতে, গগন হইতে, সদোমের ও ঘমোরার উপরে গন্ধক ও অগ্নি বর্ষাইয়া সেই সমুদয় নগর, সমস্ত অঞ্চল নগরনিবাসী সকল লোক ও সেই ভূমিতে জাত সমস্ত বস্তু উৎপাটন করিলেন। আর লোটের স্ত্রী তাঁহার পিছন হইতে পশ্চাৎ দিকে দৃষ্টি করিল, আর লবণস্তম্ভ হইয়া গেল। আর অব্রাহাম প্রত্যূষে উঠিয়া, পূর্ব্বে যে স্থানে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দাঁড়াইয়াছিলেন, তথায় গমন করিলেন; এবং সদোম ও ঘমোরার দিকে ও সেই অঞ্চলের সমস্ত ভূমির দিকে চাহিয়া দেখিলেন, আর দেখ, ভাটীর ধূমের ন্যায় সেই দেশের ধূম উঠিতেছে। এইরূপে সেই অঞ্চলে স্থিত সমস্ত নগরের বিনাশকালে ঈশ্বর অব্রাহামকে স্মরণ করিয়া, যে যে নগরে লোট বাস করিতেন, সেই সেই নগরের উৎপাটনকালে উৎপাটনের মধ্য হইতে লোটকে প্রেরণ করিলেন। পরে লোট ও তাঁহার দুইটী কন্যা সোয়র হইতে পর্ব্বতে উঠিয়া গিয়া তথায় থাকিলেন; কেননা তিনি সোয়রে বাস করিতে ভয় করিলেন আর তিনি ও তাঁহার সেই দুই কন্যা গুহামধ্যে বসতি করিলেন। পরে তাঁহার জ্যেষ্ঠা কন্যা কনিষ্ঠাকে কহিল, আমাদের পিতা বৃদ্ধ, এবং জগৎসংসারের ব্যবহার অনুসারে আমাদিগকে উপগত হইতে এ দেশে কোন পুরুষ নাই; আইস, আমরা পিতাকে দ্রাক্ষারস পান করাইয়া তাঁহার সহিত শয়ন করি, এইরূপে পিতার বংশ রক্ষা করিব। তাহাতে তাহারা সেই রাত্রিতে আপনাদের পিতাকে দ্রাক্ষারস পান করাইল, পরে তাঁহার জ্যেষ্ঠা কন্যা পিতার সহিত শয়ন করিতে গেল; কিন্তু তাহার শয়ন ও উঠিয়া যাওয়া লোট টের পাইলেন না। আর পরদিন জ্যেষ্ঠা কনিষ্ঠাকে কহিল, দেখ, গত রাত্রিতে আমি পিতার সহিত শয়ন করিয়াছিলাম; আইস, আমরা অদ্য রাত্রিতেও পিতাকে দ্রাক্ষারস পান করাই; পরে তুমি যাইয়া তাঁহার সহিত শয়ন কর, এইরূপে পিতার বংশ রক্ষা করিব। এইরূপে তাহারা সেই রাত্রিতেও পিতাকে দ্রাক্ষারস পান করাইল; পরে কনিষ্ঠা উঠিয়া তাঁহার সহিত শয়ন করিল; কিন্তু তাহার শয়ন ও উঠিয়া যাওয়া লােট টের পাইলেন না। এইরূপে লোটের দুই কন্যাই আপনাদের পিতা হইতে গর্ভবতী হইল। পরে জ্যেষ্ঠা কন্যা পুত্র প্রসব করিয়া তাহার নাম মোয়াব রাখিল; সে এখনকার মোয়াবীয়দের আদিপিতা। আর কনিষ্ঠা কন্যাও পুত্র প্রসব করিয়া তাহার নাম বিন্-অম্মি রাখিল, সে এখনকার অম্মোন-সন্তানদের আদিপিতা। আর অব্রাহাম তথা হইতে দক্ষিণ দেশে যাত্রা করিয়া কাদেশ ও শূরের মধ্যস্থানে থাকিলেন, ও গরারে প্রবাস করিলেন। আর অব্রাহাম আপন স্ত্রী সারার বিষয়ে কহিলেন, এ আমার ভগিনী; তাহাতে গরারের রাজা অবীমেলক লোক পাঠাইয়া সারাকে গ্রহণ করিলেন। কিন্তু রাত্রিতে ঈশ্বর স্বপ্নযোগে অবীমেলকের নিকটে আসিয়া কহিলেন, দেখ, ঐ যে নারীকে গ্রহণ করিয়াছ, তাহার জন্য তুমি মৃত্যুর পাত্র, কেননা সে এক ব্যক্তির স্ত্রী। তখন অবীমেলক তাঁহার কাছে যান নাই; তাই তিনি কহিলেন, হে প্রভো, যে জাতি নির্দ্দোষ, তাহাকেও কি আপনি বধ করিবেন? সেই ব্যক্তি কি আমাকে বলে নাই, এ আমার ভগিনী? এবং সেই স্ত্রীও কি বলে নাই, এ আমার ভ্রাতা? আমি যাহা করিয়াছি, তাহা অন্তঃকরণের সরলতায় ও হস্তের নির্দ্দোষতায় করিয়াছি। তখন ঈশ্বর স্বপ্নযোগে তাঁহাকে কহিলেন, তুমি অন্তঃকরণের সরলতায় এ কর্ম্ম করিয়াছ, তাহা আমিও জানি, তাই আমার বিরুদ্ধে পাপ করিতে আমি তোমাকে বারণ করিলাম; এই জন্য তাহাকে স্পর্শ করিতে দিলাম না। অতএব এখন সেই ব্যক্তির স্ত্রী তাহাকে ফিরাইয়া দেও, কেননা সে ভাববাদী; আর সে তোমার জন্য প্রার্থনা করিবে, তাহাতে তুমি বাঁচিবে; কিন্তু যদি তাহাকে ফিরাইয়া না দেও, তবে জানিও, তুমি ও তোমার সকলেই নিশ্চয় মরিবে। পরে অবীমেলক প্রত্যূষে উঠিয়া আপনার সকল দাসকে ডাকিয়া ঐ সমস্ত বৃত্তান্ত তাহাদের কর্ণগোচরে কহিলেন; তাহাতে তাহারা অতিশয় ভীত হইল। পরে অবীমেলক অব্রাহামকে ডাকাইয়া কহিলেন, আপনি আমাদের সহিত এ কি ব্যবহার করিলেন? আমি আপনার কাছে কি দোষ করিয়াছি যে, আপনি আমাকে ও আমার রাজ্যকে এমন মহাপাপগ্রস্ত করিলেন? আপনি আমার প্রতি অনুচিত কর্ম্ম করিলেন। অবীমেলক অব্রাহামকে আরও কহিলেন, আপনি কি দেখিয়াছিলেন যে, এমন কর্ম্ম করিলেন? তখন অব্রাহাম কহিলেন, আমি ভাবিয়াছিলাম, এই স্থানে আদবে ঈশ্বর-ভয় নাই, অতএব ইহারা আমার স্ত্রীর লোভে আমাকে বধ করিবে। আর সে আমার ভগিনী, ইহাও সত্য বটে; কেননা সে আমার পিতৃকন্যা, কিন্তু মাতৃকন্যা নহে, পরে আমার ভার্য্যা হইল। আর যখন ঈশ্বর আমাকে পৈতৃক বাটী হইতে ভ্রমণ করাইয়াছিলেন, তখন আমি তাহাকে বলিয়াছিলাম, আমার প্রতি তোমার এই দয়া করিতে হইবে, আমরা যে যে স্থানে যাইব, সেই সেই স্থানে তুমি আমার বিষয়ে বলিও, এ আমার ভ্রাতা। তখন অবীমেলক মেষ, গোরু ও দাসদাসী আনাইয়া অব্রাহামকে দান করিলেন, এবং তাঁহার স্ত্রী সারাকেও ফিরাইয়া দিলেন; আর অবীমেলক কহিলেন, দেখুন, আমার দেশ আপনার সমক্ষে আছে আপনার যথা ইচ্ছা, বসতি করুন। আর তিনি সারাকে কহিলেন, দেখুন, আমি আপনার ভ্রাতাকে সহস্র থান রৌপ্য দিলাম; দেখুন, আপনার সঙ্গী সকলের নিকটে তাহা আপনার চক্ষুর আবরণস্বরূপ; সকল বিষয়ে আপনার বিচার নিষ্পত্তি হইল। পরে অব্রাহাম ঈশ্বেরর কাছে প্রার্থনা করিলেন, আর ঈশ্বর অবীমেলককে ও তাঁহার স্ত্রীকে ও তাঁহার দাসীগণকে সুস্থ করিলেন; তাহাতে তাহারা প্রসব করিল। কেননা অব্রাহামের স্ত্রী সারার নিমিত্ত সদাপ্রভু অবীমেলকের গৃহে সমস্ত গর্ভ রোধ করিয়াছিলেন। পরে সদাপ্রভু আপন বাক্যানুসারে সারার তত্ত্বাবধান করিলেন; সদাপ্রভু যাহা বলিয়াছিলেন, সারার প্রতি তাহা করিলেন। আর সারা গর্ভবতী হইয়া ঈশ্বরের উক্ত নিরূপিত সময়ে অব্রাহামের বৃদ্ধকালে তাঁহার নিমিত্ত পুত্র প্রসব করিলেন। তখন অব্রাহাম সারার গর্ভজাত নিজ পুত্রের নাম ইস্‌হাক, হাস্য, রাখিলেন। পরে ঐ পুত্র ইস্‌হাকের আট দিন বয়সে অব্রাহাম ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে তাহার ত্বক্‌ছেদ করিলেন। অব্রাহামের এক শত বৎসর বয়সে তাঁহার পুত্র ইস্‌হাকের জন্ম হয়। আর সারা কহিলেন, ঈশ্বর আমাকে হাস্য করাইলেন; যে কেহ ইহা শুনিবে, সে আমার সহিত হাস্য করিবে। তিনি আরও কহিলেন, সারা বালকদিগকে স্তন পান করাইবে, এমন কথা অব্রাহামকে কে বলিতে পারিত? কেননা আমি তাঁহার বৃদ্ধকালে তাঁহার নিমিত্ত পুত্র প্রসব করিলাম। পরে বালকটী বড় হইয়া স্তন পান ত্যাগ করিল; এবং যে দিন ইস্‌হাক স্তন পান ত্যাগ করিল, সেই দিন অব্রাহাম মহাভোজ প্রস্তুত করিলেন। আর মিস্রীয়া হাগার অব্রাহামের নিমিত্ত যে পুত্র প্রসব করিয়াছিল, সারা তাহাকে পরিহাস করিতে দেখিলেন। তাহাতে তিনি অব্রাহামকে কহিলেন, তুমি ঐ দাসীকে ও উহার পুত্রকে দূর করিয়া দেও; কেননা আমার পুত্র ইস্‌হাকের সহিত ঐ দাসীপুত্র উত্তরাধিকারী হইবে না। এই কথায় অব্রাহাম আপন পুত্রের বিষয়ে অতি অসন্তুষ্ট হইলেন। আর ঈশ্বর অব্রাহামকে কহিলেন, ঐ বালকের বিষয়ে ও তোমার ঐ দাসীর বিষয়ে অসন্তুষ্ট হইও না; সারা তোমাকে যাহা বলিতেছে, তাহার সেই কথা শুন; কেননা ইস্‌হাকেই তোমার বংশ আখ্যাত হইবে। আর ঐ দাসীপুত্র হইতেও আমি এক জাতি উৎপন্ন করিব, কারণ সে তোমার বংশীয়। পরে অব্রাহাম প্রত্যূষে উঠিয়া রুটী ও জলপূর্ণ কুপা লইয়া হাগারের স্কন্ধে দিয়া বালকটীকে সমর্পণ করিয়া তাহাকে বিদায় করিলেন। তাহাতে সে প্রস্থান করিয়া বের্‌-শেবা প্রান্তরে ঘূরিয়া বেড়াইল। পরে কুপার জল শেষ হইল, তাহাতে সে এক ঝোপের নীচে বালকটীকে ফেলিয়া রাখিল; আর আপনি তাহার সম্মুখ হইতে অনেকটা দূরে, অনুমান এক তীর দূরে গিয়া বসিল, কারণ সে কহিল, বালকটীর মৃত্যু আমি দেখিব না। আর সে তাহার সম্মুখ হইতে দূরে বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিল। তখন ঈশ্বর বালকটীর রব শুনিলেন; আর ঈশ্বরের দূত আকাশ হইতে ডাকিয়া হাগারকে কহিলেন, হাগার, তোমার কি হইল? ভয় করিও না, বালকটী যেখানে আছে, ঈশ্বর তথা হইতে উহার রব শুনিলেন; তুমি উঠিয়া বালকটীকে তুলিয়া তোমার হাতে ধর; কারণ আমি উহাকে এক মহাজাতি করিব। তখন ঈশ্বর তাহার চক্ষু খুলিয়া দিলেন, তাহাতে সে এক সজল কূপ দেখিতে পাইল, আর তথায় গিয়া কুপাতে জল পূরিয়া বালকটীকে পান করাইল। পরে ঈশ্বর বালকটীর সহবর্ত্তী হইলেন, আর সে বড় হইয়া উঠিল, এবং প্রান্তরে থাকিয়া ধনুর্দ্ধর হইল। সে পারণ প্রান্তরে বসতি করিল। আর তাহার মাতা তাহার বিবাহার্থে মিসর দেশ হইতে এক কন্যা আনিল। ঐ সময়ে অবীমেলক এবং তাঁহার সেনাপতি ফীখোল অব্রাহামকে কহিলেন, আপনি যে কিছু করেন, সে সকলেতেই ঈশ্বর আপনার সহবর্ত্তী। অতএব আপনি এখন এই স্থানে ঈশ্বরের দিব্য করিয়া আমাকে বলুন যে, আমার প্রতি ও আমার পুত্র পৌত্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিবেন না; এবং আমি আপনার প্রতি যেরূপ দয়া করিয়াছি, আপনিও আমার প্রতি ও আপনার প্রবাসস্থান এই দেশের প্রতি তদ্রূপ দয়া করিবেন। তখন অব্রাহাম কহিলেন, দিব্য করিব। কিন্তু অবীমেলকের দাসগণ এক সজল কূপ সবলে অধিকার করিয়াছিল, এই জন্য অব্রাহাম অবীমেলককে অনুযোগ করিলেন। তাহাতে অবীমেলক কহিলেন, এই কর্ম্ম কে করিয়াছে, তাহা আমি জানি না; আপনিও আমাকে জানান নাই, এবং অামিও কেবল অদ্য এ কথা শুনিলাম। পরে অব্রাহাম মেষ ও গোরু লইয়া অবীমেলককে দিলেন, এবং উভয়ে এক নিয়ম স্থির করিলেন। আর অব্রাহাম পাল হইতে সাতটা মেষবৎসা পৃথক্‌ করিয়া রাখিলেন। অবীমেলক তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি কি অভিপ্রায়ে এই সাত মেষবৎসা পৃথক্‌ করিয়া রাখিলেন? তিনি কহিলেন, আমি যে এই কূপ খনন করিয়াছি, তাহার প্রমাণার্থে আমা হইতে এই সাত মেষবৎসা আপনাকে গ্রহণ করিতে হইবে। এজন্য তিনি সেই স্থানের নাম বের‌্-শেবা [দিব্যের কূপ] রাখিলেন, কেননা সেই স্থানে তাঁহারা উভয়ে দিব্য করিলেন। এইরূপে তাঁহারা বের্‌-শেবাতে নিয়ম স্থির করিলেন; পরে অবীমেলক ও তাঁহার সেনাপতি ফীখোল উঠিয়া পলেষ্টীয়দের দেশে ফিরিয়া গেলেন। পরে অব্রাহাম বের্-শেবায় ঝাউ গাছ রোপন করিয়া সেই স্থানে অনাদি অনন্ত ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে ডাকিলেন। আর অব্রাহাম পলেষ্টীয়দের দেশে অনেক দিন প্রবাস করিলেন। এই সকল ঘটনার পরে ঈশ্বর অব্রাহামের পরীক্ষা করিলেন। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, হে অব্রাহাম; তিনি উত্তর করিলেন, দেখুন, এই আমি। তখন তিনি কহিলেন, তুমি আপন পুত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে, যাহাকে তুমি ভাল বাস, সেই ইস্‌হাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও, এবং তথাকার যে এক পর্ব্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব, তাহার উপরে তাহাকে হোমার্থে বলিদান কর। পরে অব্রাহাম প্রত্যূষে উঠিয়া গর্দ্দভ সাজাইয়া দুই জন দাস ও আপন পুত্র ইস্‌হাককে সঙ্গে লইলেন, হোমের নিমিত্তে কাষ্ঠ কাটিলেন, আর উঠিয়া ঈশ্বরের নির্দ্দিষ্ট স্থানের দিকে গমন করিলেন। তৃতীয় দিবসে অব্রাহাম চক্ষু তুলিয়া দূর হইতে সেই স্থান দেখিলেন তখন অব্রাহাম অাপন দাসদিগকে কহিলেন, তোমরা এই স্থানে গর্দ্দভের সহিত থাক; আমি ও যুবক, আমরা ঐ স্থানে গিয়া প্রণিপাত করি, পরে তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব। তখন অব্রাহাম হোমের কাষ্ঠ লইয়া আপন পুত্র ইস্‌হাকের স্কন্ধে দিলেন, এবং নিজ হস্তে অগ্নি ও খড়গ লইলেন; পরে উভয়ে একত্র চলিয়া গেলেন। আর ইস্‌হাক আপন পিতা অব্রাহামকে কহিলেন, হে আমার পিতঃ। তিনি কহিলেন, হে বৎস, দেখ, এই আমি। তখন তিনি কহিলেন, এই দেখুন, অগ্নি ও কাষ্ঠ, কিন্তু হোমের নিমিত্তে মেষশাবক কোথায়? অব্রাহাম কহিলেন, বৎস, ঈশ্বর আপনি হোমের জন্য মেষশাবক যোগাইবেন। পরে উভয়ে একসঙ্গে চলিয়া গেলেন। ঈশ্বরের নির্দ্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত হইলে অব্রাহাম সেখানে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়া কাষ্ঠ সাজাইলেন, পরে আপন পুত্র ইস্‌হাককে বাঁধিয়া বেদিতে কাষ্ঠের উপরে রাখিলেন। পরে অব্রাহাম হস্ত বিস্তার করিয়া আপন পুত্রকে বধ করণার্থে খড়গ গ্রহণ করিলেন। এমন সময়ে আকাশ হইতে সদাপ্রভুর দূত তাঁহাকে ডাকিলেন, কহিলেন, অব্রাহাম, অব্রাহাম। তিনি কহিলেন, দেখুন এই আমি। তখন তিনি বলিলেন, যুবকের প্রতি তোমার হস্ত বিস্তার করিও না, উহার প্রতি কিছুই করিও না, কেননা এখন আমি বুঝিলাম, তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্র দিতেও অসম্মত নও। তখন অব্রাহাম চক্ষু তুলিয়া চাহিলেন, আর দেখ, তাঁহার পশ্চাৎ দিকে একটী মেষ, তাহার শৃঙ্গ ঝোপে বদ্ধ; পরে অব্রাহাম গিয়া সেই মেষটি লইয়া আপন পুত্রের পরিবর্ত্তে হোমার্থ বলিদান করিলেন। আর অব্রাহাম সেই স্থানের নাম যিহোবা-যিরি [সদাপ্রভু যোগাইবেন] রাখিলেন। এই জন্য অদ্যাপি লোকে বলে, সদাপ্রভুর পর্ব্বতে যোগান হইবে। পরে সদাপ্রভুর দূত দ্বিতীয় বার আকাশ হইতে অব্রাহামকে ডাকিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু বলিতেছেন, তুমি এই কার্য্য করিলে, আমাকে আপনার অদ্বিতীয় পুত্র দিতে অসম্মত হইলে না, এই হেতু আমি আমারই দিব্য করিয়া কহিতেছি, আমি অবশ্য তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব, এবং আকাশের তারাগণের ও সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব; তোমার বংশ শত্রুগণের পুরদ্বার অধিকার করিবে; আর তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে; কারণ তুমি আমার বাক্যে অবধান করিয়াছ। পরে অব্রাহাম আপন দাসদের নিকটে ফিরিয়া গেলেন, আর সকলে উঠিয়া একত্র বের-শেবাতে গেলেন; এবং অব্রাহাম বের-শেবাতে বসতি করিলেন। ঐ ঘটনার পরে অব্রাহামের নিকটে এই সমাচার আসিল, দেখুন, আপনার ভ্রাতা নাহোরের জন্য মিল্কাও পুত্রগণকে প্রসব করিয়াছেন; তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র ঊষ ও তাহার ভ্রাতা বূষ ও অরামের পিতা কমূয়েল, এবং কেষদ, হসো, পিল্‌দশ, যিদ্‌লফ ও বথূয়েল। বথূয়েলের কন্যা রিবিকা। অব্রাহামের ভ্রাতা নাহোরের জন্য মিল্কা এই আট জনকে প্রসব করেন। আর রূমা নামে তাঁহার উপপত্নী টেবহ, গহম, তহশ এবং মাখা, এই সকলকে প্রসব করিল। সারার বয়স এক শত সাতাইশ বৎসর হইয়াছিল; সারার জীবনকাল এত বৎসর। পরে সারা কনান দেশস্থ কিরিয়থর্ব্বে অর্থাৎ হিব্রোণে মরিলেন। আর অব্রাহাম সারার নিমিত্তে শোক ও রোদন করিতে আসিলেন। পরে অব্রাহাম আপন মৃতের সম্মুখ হইতে উঠিয়া গিয়া হেতের সন্তানদিগকে কহিলেন, আমি আপনাদের মধ্যে বিদেশী ও প্রবাসী; আপনাদের মধ্যে আমাকে করবস্থানের অধিকার দিউন; আমি আমার সম্মুখ হইতে আমার মৃতকে কবর দিই। তখন হেতের সন্তানেরা অব্রাহামকে উত্তর করিলেন, হে প্রভো, আমাদের কথা শুনুন; আপনি আমাদের মধ্যে ঈশ্বরনিযুক্ত রাজাস্বরূপ; আপনার মৃতকে আমাদের কবরস্থানের মধ্যে আপনার অভীষ্ট কবরে রাখুন, অাপনার মৃতকে কবর দিবার জন্য আমাদের কেহ নিজ কবর অস্বীকার করিবে না। তখন অব্রাহাম উঠিয়া তদ্দেশীয় লোকদিগের, অর্থাৎ হেতের সন্তানগণের কাছে প্রণিপাত করিলেন, ও সম্ভাষণ করিয়া কহিলেন, আমার সম্মুখ হইতে আমার মৃতকে কবরে রাখিতে যদি আপনাদের সম্মতি হয়, তবে আমার কথা শুনুন। আপনারা আমার জন্য সােহরের পুত্র ইফ্রোণের কাছে নিবেদন করুন; তাঁহার ক্ষেত্রের প্রান্তে মক্‌পেলা গুহা আছে, আপনাদের মধ্যে আমার কবরস্থানের অধিকারার্থে তিনি আমাকে তাহাই দিউন; সম্পূর্ণ মূল্য লইয়া দিউন। তখন ইফ্রোণ হেতের সন্তানদের মধ্যে বসিয়া ছিলেন; আর হেতের যত সন্তান তাঁহার নগরদ্বারে প্রবেশ করিলেন, তাঁহাদের কর্ণগোচরে সেই হিত্তীয় ইফ্রোণ অব্রাহামকে উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভো, তাহা হইবে না, আমার করা শুনুন, আমি সেই ক্ষেত্র ও তথাকার গুহা আপনাকে দান করিলাম; আমি নিজ জাতির সন্তানদের সাক্ষাতেই আপনাকে তাহা দিলাম, আপনার মৃতকে কবর দিউন। তখন অব্রাহাম তদ্দেশীয় লোকদের সাক্ষাতে প্রণিপাত করিলেন, আর তদ্দেশীয় সকলের কর্ণগোচরে ইফ্রোণকে কহিলেন, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, নিবেদন করি, আমার কথা শুনুন, আমি সেই ক্ষেত্রের মূল্য দিই, আপনি আমার নিকটে তাহা গ্রহণ করুন, পরে আমি সে স্থানে আমার মৃতকে কবর দিব। তখন ইফ্রোণ উত্তর দিয়া অব্রাহামকে কহিলেন, হে আমার প্রভো, আমার কথা শুনুন, সেই ভূমির মূল্য চারি শত শেকল রৌপ্যমাত্র; ইহাতে আপনার ও আমার কি আইসে যায়? আপনি নিজ মৃতকে কবর দিউন। তখন অব্রাহাম ইফ্রোণের বাক্যে অবধান করিলেন; ইফ্রোণ হেতের সন্তানদের কর্ণগোচরে যে রৌপ্যের কথা বলিয়াছিলেন, অব্রাহাম তাহা, অর্থাৎ বণিক্‌দের মধ্যে প্রচলিত চারি শত শেকল রৌপ্য তৌল করিয়া ইফ্রোণকে দিলেন। এইরূপে মম্রির সম্মুখে মক্‌পেলায় ইফ্রোণের যে ক্ষেত্র ছিল, সেই ক্ষেত্র, তথাকার গুহা ও সেই ক্ষেত্রস্থ বৃক্ষ সকল, তাহার চতুঃসীমার অন্তর্গত বৃক্ষসমূহ, এই সকলেতে হেতের সন্তানদের সাক্ষাতে, তাঁহার নগরদ্বারে প্রবেশকারী সকলের সাক্ষাতে, অব্রাহামের স্বত্বাধিকার স্থিরীকৃত হইল। তৎপরে অব্রাহাম কনান দেশস্থ মম্রির, অর্থাৎ হিব্রোণের সম্মুখে মক্‌পেলা ক্ষেত্রে স্থিত গুহাতে আপন স্ত্রী সারার কবর দিলেন। এইরূপে কবরস্থানের অধিকারার্থে সেই ক্ষেত্রে ও তথাকার গুহাতে অব্রাহামের অধিকার হেতের সন্তানগণ কর্ত্তৃক স্থিরীকৃত হইল। তৎকালে অব্রাহাম বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক ছিলেন; এবং সদাপ্রভু অব্রাহামকে সর্ব্ববিষয়ে আশীর্ব্বাদ করিয়াছিলেন। তখন অব্রাহাম আপন দাসকে, তাঁহার সমস্ত বিষয়ের অধ্যক্ষ, গৃহের প্রাচীনকে কহিলেন, বিনয় করি, তুমি আমার জঙ্ঘার নীচে হস্ত দেও; আমি তোমাকে স্বর্গ মর্ত্ত্যের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে এই দিব্য করাই, যে কনানীয় লোকদের মধ্যে আমি বাস করিতেছি, তুমি আমার পুত্রের বিবাহের জন্য তাহাদের কোন কন্যা গ্রহণ করিবে না, কিন্তু আমার দেশে আমার জ্ঞাতিদের নিকটে গিয়া আমার পুত্র ইস্‌হাকের জন্য কন্যা আনিবে। তখন সেই দাস তাঁহাকে কহিলেন, কি জানি, আমার সহিত এই দেশে আসিতে কোন কন্যা সম্মত হইবে না; আপনি যে দেশ ছাড়িয়া আসিয়াছেন, আপনার পুত্রকে কি আবার সেই দেশে লইয়া যাইব? তখন অব্রাহাম তাঁহাকে কহিলেন, সাবধান, কোন ক্রমে আমার পুত্রকে আবার সেখানে লইয়া যাইও না। সদাপ্রভু, স্বর্গের ঈশ্বর, যিনি আমাকে পৈতৃক বাটী ও জন্মদেশের মধ্য হইতে আনিয়াছেন, আমার সহিত আলাপ করিয়াছেন, এবং এমন দিব্য করিয়াছেন যে, আমি তোমার বংশকে এই দেশ দিব, তিনিই তোমার অগ্রে আপন দূত পাঠাইবেন; তাহাতে তুমি আমার পুত্রের জন্য তথা হইতে একটী কন্যা আনিতে পারিবে। যদি কোন কন্যা তোমার সহিত আসিতে সম্মত না হয়, তবে তুমি আমার এই দিব্য হইতে মুক্ত হইবে; কিন্তু কোন ক্রমে আমার পুত্রকে আবার সে দেশে লইয়া যাইও না। তাহাতে সেই দাস আপন প্রভু অব্রাহামের জঙ্ঘার নীচে হস্ত দিয়া তদ্বিষয়ে দিব্য করিলেন। পরে সেই দাস আপন প্রভুর উষ্ট্রদের মধ্য হইতে দশটা উষ্ট্র ও আপন প্রভুর সর্ব্ববিধ উত্তম দ্রব্য হস্তে লইয়া প্রস্থান করিলেন, অরাম-নহরয়িম দেশে, নাহোরের নগরে যাত্রা করিলেন। আর সন্ধ্যাকালে যে সময়ে স্ত্রীলোকেরা জল তুলিতে বাহির হয়, তৎকালে তিনি নগরের বাহিরে সজল কূপের নিকটে উষ্ট্রদিগকে বসাইয়া রাখিলেন, এবং কহিলেন, হে সদাপ্রভো, আমার কর্ত্তা অব্রাহামের ঈশ্বর, বিনয় করি, অদ্য আমার সম্মুখে শুভফল উপস্থিত কর, আমার প্রভু অব্রাহামের প্রতি দয়া কর। দেখ, আমি এই সজল কূপের নিকটে দাঁড়াইয়া আছি, এবং এই নগরবাসীদের কন্যাগণ জল তুলিতে বাহিরে আসিতেছে; অতএব যে কন্যাকে আমি বলিব, আপনার কলশ নামাইয়া আমাকে জল পান করাউন, সে যদি বলে, পান কর, তোমার উষ্ট্রদিগকেও পান করাইব, তবে তোমার দাস ইস্‌হাকের জন্য তোমার নিরূপিত কন্যা সেই হউক; ইহাতে আমি জানিব যে, তুমি আমার প্রভুর প্রতি দয়া করিলে। এই কথা কহিতে না কহিতে, দেখ, রিবিকা কলশ স্কন্ধে করিয়া বাহিরে আসিলেন; তিনি অব্রাহামের নাহোর নামক ভ্রাতার স্ত্রী মিল্কার পুত্র বথূয়েলের কন্যা। সেই কন্যা দেখিতে বড়ই সুন্দরী এবং অবিবাহিতা ও পুরুষের পরিচয় অপ্রাপ্তা ছিলেন। তিনি কূপে নামিয়া কলশ পূরিয়া উঠিয়া আসিতেছেন, এমন সময়ে সেই দাস দৌড়িয়া তাঁহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া কহিলেন, বিনয় করি, আপনার কলশ হইতে আমাকে কিঞ্চিৎ জল পান করিতে দিউন। তিনি কহিলেন, মহাশয়, পান করুন; ইহা বলিয়া তিনি শীঘ্র কলশ হাতের উপরে নামাইয়া তাঁহাকে পান করিতে দিলেন। অার তাঁহাকে পান করাইবার পর কহিলেন, যাবৎ আপনার উষ্ট্র সকলের পান সমাপ্ত না হয়, তাবৎ আমি উহাদের জন্যও জল তুলিব। পরে তিনি শীঘ্র নিপানে কলশের জল ঢালিয়া পুনশ্চ জল তুলিতে কূপের নিকটে দৌড়িয়া গিয়া তাঁহার উষ্ট্র সকলের নিমিত্ত জল তুলিলেন। তাহাতে সেই পুরুষ তাঁহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া, সদাপ্রভু তাহার যাত্রা সফল করেন কি না, তাহা জানিবার জন্য নীরব রহিলেন। উষ্ট্র সকল জল পান করিলে পর সেই পুরুষ অর্দ্ধ তোলা পরিমিত সোণার নথ, এবং দশ তোলা পরিমিত দুই হাতের সোণার বালা লইয়া কহিলেন, আপনি কাহার কন্যা? বিনয় করি, আমাকে বলুন, আপনার পিতার বাটীতে কি আমাদের রাত্রি যাপনের স্থান আছে? তিনি উত্তর করিলেন, আমি সেই বথূয়েলের কন্যা, যিনি মিল্কার পুত্র, যাঁহাকে তিনি নাহোরের জন্য প্রসব করিয়াছিলেন। তিনি আরও কহিলেন, পোয়াল ও কলাই আমাদের কাছে যথেষ্ট আছে, এবং রাত্রি যাপনের স্থানও আছে। তখন সে ব্যক্তি মস্তক নমন করিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রণিপাত করিলেন, আর কহিলেন, আমার কর্ত্তা অব্রাহামের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য হউন, তিনি আমার কর্ত্তার সহিত আপন দয়া ও সত্য ব্যবহার নিবৃত্ত করেন নাই; সদাপ্রভু আমাকেও পথ-ঘটনাতে আমার কর্ত্তার জ্ঞাতিদের বাটীতে আনিলেন। পরে সেই কন্যা দৌড়িয়া গিয়া আপন মাতার গৃহের লোকদিগকে এই সকল কথা জানাইলেন। আর রিবিকার এক ভ্রাতা ছিলেন, তাঁহার নাম লাবন; সেই লাবন বাহিরে ঐ ব্যক্তির উদ্দেশে কূপের নিকটে দৌড়িয়া গেলেন। নথ ও ভগিনীর হাতে বালা দেখিয়া, এবং ‘সেই ব্যক্তি আমাকে এই এই কথা কহিলেন,’ আপন ভগিনী রিবিকার মুখে ইহা শুনিয়া, তিনি সেই পুরুষের নিকটে গেলেন, আর দেখ, তিনি কূপের নিকটে উষ্ট্রদের কাছে দাঁড়াইয়া ছিলেন; আর লাবণ কহিলেন, হে সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপাত্র, আইসুন, কেন বাহিরে দাঁড়াইয়া আছেন? আমি ত ঘর এবং উষ্ট্রদের জন্যও স্থান প্রস্তুত করিয়াছি। তখন ঐ ব্যক্তি বাটীতে প্রবেশ করিয়া উষ্ট্রদের সজ্জা খুলিলে তিনি উষ্ট্রদের জন্য পোয়াল ও কলাই দিলেন, এবং তাঁহার ও তৎসঙ্গী লোকদের পা ধুইবার জল দিলেন। পরে তাঁহার সম্মুখে আহারীয় দ্রব্য স্থাপন করা হইল, কিন্তু তিনি কহিলেন, বক্তব্য কথা না বলিয়া আমি আহার করিব না। লাবন কহিলেন, বলুন। তখন তিনি বলিতে লাগিলেন, আমি অব্রাহামের দাস; সদাপ্রভু আমার কর্ত্তাকে বিলক্ষণ আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন, আর তিনি বড় মানুষ হইয়াছেন, এবং [সদাপ্রভু] তাঁহাকে মেষ ও গবাদি পাল এবং রৌপ্য ও স্বর্ণ এবং দাস ও দাসী এবং উষ্ট্র ও গর্দ্দভ দিয়াছেন। আর আমার কর্ত্তার ভার্য্যা সারা বৃদ্ধকালে তাঁহার জন্য এক পুত্র প্রসব করিয়াছেন, তাঁহাকেই তিনি আপনার সর্ব্বস্ব দিয়াছেন। আর আমার কর্ত্তা আমাকে দিব্য করাইয়া কহিলেন, আমি যাহাদের দেশে বাস করিতেছি, তুমি আমার পুত্রের জন্য সেই কনানীয়দের কোন কন্যা আনিও না; কিন্তু আমার পিতৃকুলের ও আমার গোষ্ঠীর নিকটে গিয়া আমার পুত্রের জন্য কন্যা আনিও। তখন আমি কর্ত্তাকে কহিলাম, কি জানি, কোন কন্যা আমার সঙ্গে আসিবে না। তিনি কহিলেন, আমি যাঁহার সাক্ষাতে গমনাগমন করি, সেই সদাপ্রভু তোমার সঙ্গে আপন দূত পাঠাইয়া তোমার যাত্রা সফল করিবেন; এবং তুমি আমার গোষ্ঠী ও আমার পিতৃকুল হইতে আমার পুত্রের জন্য কন্যা আনিবে। তাহা করিলে এই দিব্য হইতে মুক্ত হইবে; আমার গোষ্ঠীর নিকটে গেলে যদি তাহারা [কন্যা] না দেয়, তবে তুমি এই দিব্য হইতে মুক্ত হইবে। আর অদ্য আমি ঐ কূপের নিকটে উপস্থিত হইলাম, আর বলিলাম, হে সদাপ্রভো, আমার কর্ত্তা অব্রাহামের ঈশ্বর, তুমি যদি আমার এই যাত্রা সফল কর, তবে দেখ, আমি এই সজল কূপের নিকটে দাঁড়াইয়া আছি; অতএব জল তুলিবার নিমিত্তে আগত যে কন্যাকে আমি বলিব, আপনার কলশ হইতে আমাকে কিঞ্চিৎ জল পান করিতে দিউন, তিনি যদি বলেন, তুমিও পান কর, এবং তোমার উষ্ট্রদের জন্যও আমি জল তুলিয়া দিব; তবে তিনি সেই কন্যা হউন, যাঁহাকে সদাপ্রভু আমার কর্ত্তার পুত্রের জন্য নিরূপণ করিয়াছেন। এই কথা আমি মনে মনে বলিতে না বলিতে, দেখ, রিবিকা কলশ স্কন্ধে করিয়া বাহিরে আসিলেন; পরে তিনি কূপে নামিয়া জল তুলিলে আমি কহিলাম, বিনয় করি, আমাকে জল পান করাউন। তখন তিনি শীঘ্র স্কন্ধ হইতে কলশ নামাইয়া কহিলেন, পান করুন, আমি আপনার উষ্ট্রদিগকেও পান করাইব। তখন আমি পান করিলাম; আর তিনি উষ্ট্রগণকেও পান করাইলেন। পরে আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি কাহার কন্যা? তিনি উত্তর করিলেন, আমি বথূয়েলের কন্যা, তিনি নাহোরের পুত্র, যাঁহাকে মিল্কা তাঁহার জন্য প্রসব করিয়াছিলেন। তখন আমি তাঁহার নাকে নথ ও হাতে বালা পরাইয়া দিলাম। আর মস্তক নমন করিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রণিপাত করিলাম, এবং যিনি আমার কর্ত্তার পুত্রের জন্য তাঁহার ভ্রাতৃকন্যা গ্রহণার্থে আমাকে প্রকৃত পথে আনিলেন, আমার কর্ত্তা অব্রাহামের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিলাম। অতএব আপনারা যদি এখন আমার কর্ত্তার সহিত দয়া ও সত্য ব্যবহার করিতে সম্মত হন, তাহা বলুন; আর যদি না হন, তাহাও বলুন; তাহাতে আমি দক্ষিণে কিম্বা বামে ফিরিতে পারিব। তখন লাবন ও বথূয়েল উত্তর করিলেন, কহিলেন, সদাপ্রভু হইতে এই ঘটনা হইল, আমরা ভাল মন্দ কিছুই বলিতে পারি না। ঐ দেখুন, রিবিকা আপনার সম্মুখে আছে; উহাকে লইয়া প্রস্থান করুন; এ আপনার কর্ত্তার পুত্রের ভার্য্যা হউক, যেমন সদাপ্রভু বলিয়াছেন। তাঁহাদের কথা শুনিবামাত্র অব্রাহামের দাস সদাপ্রভুর উদ্দেশে ভূমিতে প্রণিপাত করিলেন। পরে সেই দাস রৌপ্যের ও সুবর্ণের আভরণ ও বস্ত্র বাহির করিয়া রিবিকাকে দিলেন, এবং তাঁহার ভ্রাতাকে ও মাতাকে বহুমূল্য দ্রব্য দিলেন। আর তিনি ও তাঁহার সঙ্গিগণ ভোজন পান করিয়া তথায় রাত্রিবাস করিলেন; পরে তাঁহারা প্রাতঃকালে উঠিলে তিনি কহিলেন, আমার কর্ত্তার নিকটে যাইতে আমাকে বিদায় করুন। তাহাতে রিবিকার ভ্রাতা ও মাতা কহিলেন, কন্যাটী আমাদের নিকটে কিছু দিন থাকুক, ন্যূনকল্পে দশ দিন থাকুক, পরে যাইবে। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমাকে বিলম্ব করাইবেন না, কেননা সদাপ্রভু আমার যাত্রা সফল করিলেন; আমাকে বিদায় করুন; আমি নিজ কর্ত্তার নিকটে যাই। তাহাতে তাঁহারা কহিলেন, আমরা কন্যাকে ডাকিয়া তাহাকে সাক্ষাতে জিজ্ঞাসা করি। পরে তাঁহারা রিবিকাকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি কি এই ব্যক্তির সহিত যাইবে? তিনি কহিলেন, যাইব। তখন তাঁহারা আপনাদের ভগিনী রিবিকাকে ও তাঁহার ধাত্রীকে এবং অব্রাহামের দাসকে ও তাঁহার লোকদিগকে বিদায় করিলেন। আর রিবিকাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, তুমি আমাদের ভগিনী, সহস্র সহস্র অযুতের জননী হও; তোমার বংশ আপন শত্রুগণের পুরদ্বার অধিকার করুক। পরে রিবিকা ও তাঁহার দাসীগণ উঠিলেন, এবং উষ্ট্রে চড়িয়া সেই মনুষ্যের পশ্চাৎ গমন করিলেন। এইরূপে সেই দাস রিবিকাকে লইয়া প্রস্থান করিলেন। আর ইস্‌হাক বের্-লহয়্-রোয়ী নামক স্থানে গিয়া ফিরিয়া আসিয়াছিলেন, কেননা তিনি দক্ষিণ দেশে বাস করিতেছিলেন। ইস্‌হাক সন্ধ্যাকালে ধ্যান করিতে ক্ষেত্রে গিয়াছিলেন, পরে চক্ষু তুলিয়া চাহিলেন, আর দেখ, উষ্ট্র আসিতেছে। আর রিবিকা চক্ষু তুলিয়া যখন ইস্‌হাককে দেখিলেন, তখন উষ্ট্র হইতে নামিয়া সেই দাসকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে ক্ষেত্রের মধ্য দিয়া আসিতেছেন, ঐ পুরুষ কে? দাস কহিলেন, উনি আমার কর্ত্তা। তখন রিবিকা আবরক লইয়া আপনাকে আচ্ছাদন করিলেন। পরে সেই দাস ইস্‌হাককে আপনার কৃত সমস্ত কর্ম্মের বিবরণ কহিলেন। তখন ইস্‌হাক রিবিকাকে গ্রহণ করিয়া সারা মাতার তাম্বুতে লইয়া গিয়া তাঁহাকে বিবাহ করিলেন, এবং তাঁহাকে প্রেম করিলেন। তাহাতে ইস্‌হাক মাতৃবিয়োগের শোক হইতে সান্ত্বনা পাইলেন। আর অব্রাহাম কটুরা নাম্নী আর এক স্ত্রীকে বিবাহ করেন। তিনি তাঁহার জন্য সিম্রণ, যক্‌ষণ, মদান, মিদিয়ন, যিশ্‌বক ও শূহ, এই সকলকে প্রসব করিলেন। যক্‌ষণ হইতে শিবা ও দদান জন্মে। অশূরীয়, লটূশীয় ও লিয়ূম্মীয় লোকেরা দদানের সন্তান। এবং মিদিয়নের সন্তান ঐফা, এফর, হনোক, অবীদ ও ইল্‌দায়া; এই সকল কটূরার সন্তান। আর অব্রাহাম ইস্‌হাককে আপনার সর্ব্বস্ব দিলেন। কিন্তু আপন উপপত্নীদের সন্তানদিগকে অব্রাহাম ভিন্ন ভিন্ন দান দিয়া আপনার জীবদ্দশাতেই আপন পুত্র ইস্‌হাকের নিকট হইতে তাহাদিগকে পূর্ব্বদিকে, পূর্ব্বদেশে প্রেরণ করিলেন। অব্রাহামের জীবনকাল এক শত পঁচাত্তর বৎসর; তিনি এত বৎসর জীবিত ছিলেন। পরে অব্রাহাম বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইয়া শুভ বৃদ্ধাবস্থায় প্রাণত্যাগ করিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইলেন। আর তাঁহার পুত্র ইস্‌হাক ও ইশ্মায়েল মম্রির সম্মুখে হেতীয় সোহরের পুত্র ইফ্রোণের ক্ষেত্রস্থিত মক্‌পেলা গুহাতে তাঁহার কবর দিলেন। অব্রাহাম হেতের সন্তানদের কাছে সেই ক্ষেত্র ক্রয় করিয়াছিলেন। সেই স্থানে অব্রাহামের ও তাঁহার স্ত্রী সারার কবর দেওয়া হয়। অব্রাহামের মৃত্যু হইলে পর ঈশ্বর তাঁহার পুত্র ইস্‌হাককে আশীর্ব্বাদ করিলেন; এবং ইসহাক বের্-লহয়্‌-রোয়ীর নিকটে বসতি করিলেন। অব্রাহামের পুত্র ইশ্মায়েলের বংশবৃত্তান্ত এই। সারার দাসী মিস্রীয়া হাগার অব্রাহামের জন্য তাঁহাকে প্রসব করিয়াছিল। আপন আপন নাম ও গোষ্ঠী আনুসারে ইশ্মায়েলের সন্তানদের নাম এই। ইশ্মায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্র নবায়োৎ, পরে কেদর, অদ্‌বেল, মিব্‌সম, মিশ্‌ম, দূমা, মসা, হদদ, তেমা, যিটূর, নাফীশ ও কেদমা। এই সকল ইশ্মায়েলের সন্তান; এবং তাঁহাদের গ্রাম ও তাম্বুপল্লী অনুসারে তাঁহাদের এই এই নাম; তাঁহারা আপন আপন জাতি অনুসারে দ্বাদশ জন অধ্যক্ষ ছিলেন। ইশ্মায়েলের জীবনকাল এক শত সাঁইত্রিশ বৎসর ছিল; পরে তিনি প্রাণত্যাগ করিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইলেন। আর তাঁহার সন্তানগণ হবীলা অবধি অশূরিয়ার দিকে মিসরের সম্মুখস্থ শূর পর্য্যন্ত বসতি করিল; তিনি তাঁহার সকল ভ্রাতার সম্মুখে বসতিস্থান পাইলেন। অব্রাহামের পুত্র ইস্‌হাকের বংশ বৃত্তান্ত এই। অব্রাহাম ইস্‌হাকের জন্ম দিয়াছিলেন। চল্লিশ বৎসর বয়সে ইস্‌হাক অরামীয় বথূয়েলের কন্যা অরামীয় লাবনের ভগিনী রিবিকাকে পদ্দন্-অরাম হইতে আনাইয়া বিবাহ করেন। ইস্‌হাকের স্ত্রী বন্ধ্যা হওয়াতে তিনি তাঁহার নিমিত্তে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু তাঁহার প্রার্থনা শুনিলেন, তাঁহার স্ত্রী রিবিকা গর্ভবতী হইলেন। পরে তাঁহার গর্ভমধ্যে শিশুরা জড়াজড়ি করিল, তাহাতে তিনি কহিলেন, যদি এরূপ হয়, তবে আমি কেন বাঁচিয়া আছি? আর তিনি সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিতে গেলেন। তখন সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তোমার জঠরে দুই জাতি আছে, ও তোমার উদর হইতে দুই বংশ বিভিন্ন হইবে; এক বংশ অন্য বংশ অপেক্ষা বলবান্ হইবে, ও জ্যেষ্ঠ কনিষ্ঠের দাস হইবে। পরে প্রসবকাল সম্পূর্ণ হইল, আর দেখ, তাঁহার গর্ভে যমজ পুত্র। যে প্রথমে ভূমিষ্ঠ হইল, সে রক্তবর্ণ এবং তাহার সর্ব্বাঙ্গ লোমশ বস্ত্রের সদৃশ ছিল। তাহার নাম এষৌ [লোমশ] রাখা গেল। পরে তাহার ভ্রাতা ভূমিষ্ঠ হইল। তাহার হস্ত এষৌর পাদমূল ধরিয়াছিল, আর তাহার নাম যাকোব [পাদগ্রাহী] হইল; ইস্‌হাকের ষাট বৎসর বয়সে এই যমজ পুত্র হইল। পরে সেই বালকেরা বড় হইলে এষৌ নিপুণ শিকারী ও প্রান্তরবিহারী হইলেন; কিন্তু যাকোব শান্ত ছিলেন, তিনি তাম্বুতে বাস করিতেন। ইস্‌হাক এষৌকে ভাল বাসিতেন, কেননা তাঁহার মুখে মৃগমাংস ভাল লাগিত; কিন্তু রিবিকা যাকোবকে ভাল বাসিতেন। একদা যাকোব দাইল পাক করিয়াছেন, এমন সময়ে এষৌ ক্লান্ত হইয়া প্রান্তর হইতে আসিয়া যাকোবকে কহিলেন, আমি ক্লান্ত হইয়াছি, বিনয় করি, ঐ রাঙ্গা, ঐ রাঙ্গা দ্বারা অামার উদর পূর্ণ কর। এই জন্য তাঁহার নাম ইদোম [রাঙ্গা] খ্যাত হইল। তখন যাকোব কহিলেন, অদ্য তোমার জ্যেষ্ঠাধিকার আমার কাছে বিক্রয় কর। এষৌ বলিলেন, দেখ, আমি মৃতপ্রায়, জ্যেষ্ঠাধিকারে আমার কি লাভ? যাকোব কহিলেন, তুমি অদ্য আমার কাছে দিব্য কর। তাহাতে তিনি তাঁহার কাছে দিব্য করিলেন। এইরূপে তিনি আপন জ্যেষ্ঠাধিকার যাকোবের কাছে বিক্রয় করিলেন। আর যাকোব এষৌকে রুটী ও মসূরের রান্ধা দাইল দিলেন; এবং তিনি ভোজন পান করিলেন, পরে উঠিয়া চলিয়া গেলেন। এইরূপে এষৌ আপন জ্যেষ্ঠাধিকার তুচ্ছ করিলেন। পূর্ব্বে অব্রাহামের সময়ে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তাহা ছাড়া দেশে আর এক দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হইল। তখন ইস‌্হাক গরারে পলেষ্টীয়দের রাজা অবীমেলকের কাছে গেলেন। আর সদাপ্রভু তাঁহাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, তুমি মিসর দেশে নামিয়া যাইও না, আমি তোমাকে যে দেশের কথা বলিব। তথায় থাক। এই দেশে প্রবাস কর; আমি তোমার সহবর্ত্তী হইয়া তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব, কেননা আমি তোমাকে ও তোমার বংশকে এই সমস্ত দেশ দিব, এবং তোমার পিতা অব্রাহামের নিকটে যে দিব্য করিয়াছিলাম, তাহা সফল করিব। আমি আকাশের তারাগণের ন্যায় তোমার বংশ বৃদ্ধি করিব, তোমার বংশকে এই সকল দেশ দিব, ও তোমার বংশে পৃথিবীর যাবতীয় জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে। কারণ অব্রাহাম আমার বাক্য মানিয়া আমার আদেশ, আমার অাজ্ঞা, আমার বিধি ও আমার ব্যবস্থা সকল পালন করিয়াছে। পরে ইস্‌হাক গরারে বাস করিলেন। আর সে স্থানের লোকেরা তাঁহার স্ত্রীর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি কহিলেন, উনি আমার ভগিনী; কারণ, এ আমার স্ত্রী, এই কথা বলিতে তিনি ভীত হইলেন, ভাবিলেন, কি জানি এই স্থানের লোকেরা রিবিকার নিমিত্তে আমাকে বধ করিবে; কেননা তিনি দেখিতে সুন্দরী ছিলেন। কিন্তু সে স্থানে বহুকাল বাস করিলে পর কোন সময়ে পলেষ্টীয়দের রাজা অবীমেলক বাতায়ন দিয়া দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, ইস্‌হাক আপন স্ত্রী রিবিকার সহিত ক্রীড়া করিতেছেন। তখন অবীমেলক ইস্‌হাককে ডাকাইয়া কহিলেন, দেখুন, ঐ স্ত্রী অবশ্য আপনার ভার্য্যা; তবে আপনি ভগিনী বলিয়া তাঁহার পরিচয় কেন দিয়াছিলেন? ইস্‌হাক উত্তর করিলেন, আমি ভাবিয়াছিলাম, কি জানি, তাঁহার জন্য আমার মৃত্যু হইবে। তখন অবীমেলক কহিলেন, আপনি আমাদের সহিত এ কি ব্যবহার করিলেন? কোন লোক আপনার ভার্য্যার সহিত অনায়াসে শয়ন করিতে পারিত; তাহা হইলে আপনি আমাদিগকে দোষগ্রস্ত করিতেন। পরে অবীমেলক সকল লোককে এই আজ্ঞা দিলেন, যে কেহ এই ব্যক্তিকে কিম্বা ইহাঁর স্ত্রীকে স্পর্শ করিবে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। আর ইস্‌হাক সেই দেশে চাসকর্ম্ম করিয়া সেই বৎসর শত গুণ শস্য পাইলেন, এবং সদাপ্রভু তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। আর তিনি বর্দ্ধিষ্ণু হইলেন, এবং উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাইয়া অতি বড় লোক হইলেন; আর তাঁহার মেষধন ও গোধন এবং অনেক দাস দাসী হইল; আর পলেষ্টীয়েরা তাঁহার প্রতি ঈর্ষা করিতে লাগিল। এবং তাঁহার পিতা অব্রাহামের সময়ে তাঁহার দাসগণ যে যে কূপ খুঁড়িয়াছিল, পলেষ্টীয়েরা সে সমস্ত বুজাইয়া ফেলিয়াছিল ও ধূলিতে পরিপূর্ণ করিয়াছিল। পরে অবীমেলক ইস্‌হাককে কহিলেন, আমাদের নিকট হইতে প্রস্থান করুন, কেননা আপনি আমাদের অপেক্ষা অতি বলবান্ হইয়াছেন। পরে ইস্‌হাক তথা হইতে যাত্রা করিলেন, ও গরারের উপত্যকাতে তাম্বু স্থাপন করিয়া সে স্থানে বাস করিলেন। আর ইস্‌হাক আপনার পিতা অব্রাহামের সময়ে খনিত কূপ সকল আবার খুঁড়িলেন; কারণ অব্রাহামের মৃত্যুর পরে পলেষ্টীয়েরা সে সকল বুজাইয়া ফেলিয়াছিল; আর তাঁহার পিতা সেই সকলের যে যে নাম রাখিয়াছিলেন, তিনিও সেই সেই নাম রাখিলেন! সেই উপত্যকায় ইস্‌হাকের দাসগণ খুঁড়িয়া জলের উনুইবিশিষ্ট এক কূপ পাইল। তাহাতে গরারীয় পশুপালকেরা ইস্‌হাকের পশুপালকদের সহিত বিবাদ করিয়া কহিল, এ জল আমাদের; অতএব তিনি সেই কূপের নাম এষক [বিবাদ] রাখিলেন, যেহেতু তাহারা তাঁহার সহিত বিবাদ করিয়াছিল। পরে তাঁহার দাসগণ আর এক কূপ খনন করিলে তাহারা সেটীর জন্যও বিবাদ করিল; তাহাতে তিনি সেটীর নাম সিট্‌না [বিপক্ষতা] রাখিলেন। তিনি তথা হইতে প্রস্থান করিয়া অন্য এক কূপ খনন করিলেন; সেটির নিমিত্ত তাহারা বিবাদ করিল না; তাই তিনি সেটীর নাম রহোবোৎ [প্রশস্ত স্থান] রাখিয়া কহিলেন, এখন সদাপ্রভু আমাদিগকে প্রশস্ত স্থান দিলেন, আমরা দেশে ফলবন্ত হইব। পরে তিনি তথা হইতে বের্-শেবাতে উঠিয়া গেলেন। সেই রাত্রিতে সদাপ্রভু তাঁহাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, আমি তোমার পিতা অব্রাহামের ঈশ্বর, ভয় করিও না, কেননা আমি আপন দাস অব্রাহামের অনুরোধে তোমার সহবর্ত্তী, আমি তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব ও তোমার বংশ বৃদ্ধি করিব। পরে ইস্‌হাক সে স্থানে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়া সদাপ্রভুর নামে ডাকিলেন, আর সেই স্থানে তিনি তাম্বু স্থাপন করিলেন; ও তাঁহার দাসগণ তথায় এক কূপ খুঁড়িল। আর অবীমেলক আপন মিত্র অহূষৎকে ও সেনাপতি ফীকোলকে সঙ্গে লইয়া গরার হইতে ইস্‌হাকের নিকটে গমন করিলেন। তখন ইস্‌হাক তাঁহাদিগকে কহিলেন, আপনারা আমার কাছে কি নিমিত্ত আসিলেন? আপনারা ত আমাকে দ্বেষ করিয়া আপনাদের মধ্য হইতে দূর করিয়া দিয়াছেন। তাঁহারা বলিলেন, আমরা স্পষ্টই দেখিলাম, সদাপ্রভু আপনার সহবর্ত্তী, এই জন্য বলিলাম, আমাদের মধ্যে, অর্থাৎ আমাদের ও আপনার মধ্যে এক শপথ হউক, আর আমরা এক নিয়ম স্থির করি। আমরা যেমন আপনাকে স্পর্শ করি নাই, ও আপনার মঙ্গল ব্যতিরেকে আর কিছুই করি নাই, বরং আপনাকে শান্তিতে বিদায় করিয়াছি, তদ্রূপ আপনিও আমাদের উপর হিংসা করিবেন না; আপনিই এখন সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদের পাত্র। তখন ইস্‌হাক তাঁহাদের নিমিত্তে ভোজ প্রস্তুত করিলে তাঁহারা ভোজন পান করিলেন। পরে তাঁহারা প্রত্যূষে উঠিয়া পরস্পর দিব্য করিলেন; তখন ইস্‌হাক তাঁহাদিগকে বিদায় করিলে তাঁহারা শান্তিতে তাঁহার নিকট হইতে প্রস্থান করিলেন। সেই দিন ইস‌্হাকের দাসগণ আসিয়া আপনাদের খনিত কূপের বিষয়ে সংবাদ দিয়া তাঁহাকে কহিল, জল পাইয়াছি। আর তিনি তাহার নাম শিবিয়া [দিব্য] রাখিলেন, এই জন্য অদ্য পর্য্যন্ত সেই নগরের নাম বের্-শেবা রহিয়াছে। আর এষৌ চল্লিশ বৎসর বয়সে হিত্তীয় বেরির-যিহূদীৎ নাম্নী কন্যাকে এবং হিত্তীয় এলোনের বাসমৎ নাম্নী কন্যাকে বিবাহ করিলেন। ইহারা ইস‌্হাকের ও রিবিকার মনের দুঃখদায়িকা হইল। পরে ইস‌্হাক বৃদ্ধ হইলে চক্ষু নিস্তেজ হওয়ায় আর দেখিতে পাইতেন না; তখন তিনি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌকে ডাকিয়া কহিলেন, বৎস। তিনি উত্তর করিলেন, দেখুন, এই আমি। তখন ইস‌্হাক কহিলেন, দেখ, আমি বৃদ্ধ হইয়াছি; কোন্ দিন আমার মৃত্যু হয়, জানি না। এখন বিনয় করি, তোমার শস্ত্র, তোমার তূণ ও ধনুক লইয়া প্রান্তরে যাও, আমার জন্য মৃগ শিকার করিয়া আন। আর আমি যেরূপ ভাল বাসি, তদ্রূপ সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া আমার নিকটে আন, আমি ভোজন করিব; যেন মৃত্যুর পূর্ব্বে আমার প্রাণ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে। যখন ইস‌্হাক আপন পুত্র এষৌকে এই কথা বলেন, তখন রিবিকা তাহা শুনিয়াছিলেন। অতএব এষৌ মৃগ শিকার করিয়া আনিবার জন্য প্রান্তরে গমন করিলে পর রিবিকা আপন পুত্র যাকোবকে কহিলেন, দেখ, তোমার ভ্রাতা এষৌকে তোমার পিতা যাহা বলিয়াছেন, আমি শুনিয়াছি; তিনি বলিয়াছেন, তুমি আমার জন্য মৃগ শিকার করিয়া আনিয়া সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত কর, তাহাতে আমি ভোজন করিয়া মৃত্যুর পূর্ব্বে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব। হে আমার পুত্র, এখন আমি তোমাকে যাহা আজ্ঞা করি, আমার সেই কথা শুন। তুমি পালে গিয়া তথা হইতে উত্তম দুইটী ছাগ-বৎস আন, তোমার পিতা যেরূপ ভাল বাসেন, তদ্রূপ সুস্বাদু খাদ্য আমি প্রস্তুত করিয়া দিই; পরে তুমি আপন পিতার নিকটে তাহা লইয়া যাও, তিনি তাহা ভোজন করুন; যেন তিনি মৃত্যুর পূর্ব্বে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করেন। তখন যাকোব আপন মাতা রিবিকাকে কহিলেন, দেখ, আমার ভ্রাতা এষৌ লোমশ, কিন্তু আমি নির্লোম। কি জানি, পিতা আমাকে স্পর্শ করিবেন, আর আমি তাঁহার দৃষ্টিতে প্রবঞ্চক বলিয়া গণ্য হইব; তাহা হইলে আমি আমার প্রতি আশীর্ব্বাদ না বর্ত্তাইয়া অভিশাপ বর্ত্তাইব। কিন্তু তাঁহার মাতা কহিলেন, বৎস, সেই অভিশাপ আমাতেই বর্ত্তুক, কেবল আমার কথা শুন, ছাগ-বৎস লইয়া আইস। পরে যাকোব গিয়া তাহা লইয়া মাতার নিকটে আনিলেন, আর তাঁহার পিতা যেরূপ ভাল বাসিতেন, মাতা সেইরূপ সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিলেন, আর ঘরে আপনার কাছে জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌর যে যে মনোহর বস্ত্র ছিল, রিবিকা তাহা লইয়া কনিষ্ঠ পুত্র যাকোবকে পরাইয়া দিলেন। আর ঐ দুই ছাগ-বৎসের চর্ম্ম লইয়া তাঁহার হস্তে ও গলদেশের নির্লোম স্থানে জড়াইয়া দিলেন। আর তিনি যে সুস্বাদু খাদ্য ও রুটী পাক করিয়াছিলেন, তাহা তাঁহার পুত্র যাকোবের হস্তে দিলেন। পরে তিনি আপন পিতার নিকট গিয়া কহিলেন, পিতঃ। তিনি উত্তর করিলেন, দেখ, এই আমি; বৎস তুমি কে? যাকোব আপন পিতাকে কহিলেন, আমি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌ; আপনি আমাকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহা করিয়াছি। বিনয় করি, আপনি উঠিয়া বসিয়া আমার আনীত মৃগমাংস ভোজন করুন, যেন আপনার প্রাণ আমাকে আশীর্ব্বাদ করে। তখন ইস্‌হাক আপন পুত্রকে কহিলেন, বৎস, কেমন করিয়া এত শীঘ্র উহা পাইলে? তিনি কহিলেন, আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমার সম্মুখে শুভফল উপস্থিত করিলেন। ইস্‌হাক যাকোবকে কহিলেন, বৎস, নিকটে আইস, আমি তোমাকে স্পর্শ করিয়া বুঝি, তুমি নিশ্চয় আমার পুত্র এষৌ কি না। তখন যাকোব আপন পিতা ইস্‌হাকের নিকটে গেলে তিনি তাঁহাকে স্পর্শ করিয়া কহিলেন, স্বর ত যাকোবের স্বর, কিন্তু হস্ত এষৌর হস্ত। বাস্তবিক তিনি তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না, কারণ ভ্রাতা এষৌর হস্তের ন্যায় তাঁহার হস্ত লোমযুক্ত ছিল; অতএব তিনি তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। তিনি কহিলেন, তুমি কি নিশ্চয়ই আমার পুত্র এষৌ? তিনি কহিলেন, হাঁ। তখন ইস্‌হাক কহিলেন, আমার কাছে আন; আমি পুত্রের আনীত মৃগমাংস ভোজন করি, যেন আমার প্রাণ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে। তখন তিনি মাংস আনিলে ইস্‌হাক ভোজন করিলেন, এবং দ্রাক্ষারস আনিয়া দিলে তাহা পান করিলেন। পরে তাঁহার পিতা ইস্‌হাক কহিলেন, বৎস, বিনয় করি, নিকটে আসিয়া আমাকে চুম্বন কর। তখন তিনি নিকটে গিয়া চুম্বন করিলেন, আর ইস্‌হাক তাঁহার বস্ত্রের গন্ধ লইয়া তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, দেখ, আমার পুত্রের সুগন্ধ সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদযুক্ত ক্ষেত্রের সুগন্ধের ন্যায়। ঈশ্বর আকাশের শিশির হইতে ও ভূমির সরসতা হইতে তোমাকে দিউন; প্রচুর শস্য ও দ্রাক্ষারস তোমাকে দিউন। লোকবৃন্দ তোমার দাস হউক, জাতিগণ তোমার কাছে প্রণিপাত করুক; তুমি আপন জ্ঞাতিদের কর্ত্তা হও, তোমার মাতৃপুত্রেরা তোমার কাছে প্রণিপাত করুক। যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দেয়, সে অভিশপ্ত হউক; যে কেহ তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে, সে আশীর্ব্বাদযুক্ত হউক। ইস্‌হাক যখন যাকোবের প্রতি আশীর্ব্বাদ শেষ করিলেন, তখন যাকোব আপন পিতা ইস্‌হাকের সম্মুখ হইতে যাইতে না যাইতেই তাঁহার ভ্রাতা এষৌ মৃগয়া করিয়া ঘরে আসিলেন। তিনিও সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া পিতার নিকটে আনিয়া কহিলেন, পিতঃ আপনি উঠিয়া পুত্রের আনীত মৃগমাংস ভোজন করুন, যেন আপনার প্রাণ আমাকে আশীর্ব্বাদ করে। তখন তাঁহার পিতা ইস্‌হাক কহিলেন, তুমি কে? তিনি কহিলেন, আমি আপনার জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌ। তখন ইস্‌হাক মহাকম্পনে অতিশয় কম্পিত হইয়া কহিলেন, তবে সে কে, যে মৃগয়া করিয়া আমার নিকটে মৃগমাংস আনিয়াছিল? আমি তোমার আসিবার পূর্ব্বেই তাহা ভোজন করিয়া তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছি, আর সেই আশীর্ব্বাদযুক্ত থাকিবে। পিতার এই কথা শুনিবামাত্র এষৌ সাতিশয় ব্যাকুলচিত্তে মহাচিৎকার শব্দ করিতে লাগিলেন, এবং আপন পিতাকে কহিলেন, হে পিতঃ, আমাকে, আমাকেও আশীর্ব্বাদ করুন। ইস্‌হাক কহিলেন, তোমার ভ্রাতা ছল ভাবে আসিয়া তোমার আশীর্ব্বাদ হরণ করিয়াছে। এষৌ কহিলেন, তাহার নাম কি যাকোব [বঞ্চক] নয়? বাস্তবিক সে দুই বার আমাকে প্রবঞ্চনা করিয়াছে; সে আমার জ্যেষ্ঠাধিকার হরণ করিয়াছিল, এবং দেখুন, এখন আমার আশীর্ব্বাদও হরণ করিয়াছে। তিনি আবার কহিলেন, আপনি কি আমার জন্য কিছুই আশীর্ব্বাদ রাখেন নাই? তখন ইস্‌হাক উত্তর করিয়া এষৌকে কহিলেন, দেখ, আমি তাহাকে তোমার কর্ত্তা করিয়াছি, এবং তাহার জ্ঞাতি সকলকে তাহারই দাস করিয়াছি, এবং তাহাকে শস্য ও দ্রাক্ষারস দিয়া সবল করিয়াছি; বৎস, এখন তোমার জন্য আর কি করিতে পারি? এষৌ আবার আপন পিতাকে কহিলেন, হে পিতঃ আপনার কি কেবল ঐ একটী আশীর্ব্বাদ ছিল? হে পিতঃ আমাকে, আমাকেও আশীর্ব্বাদ করুন। ইহা বলিয়া এষৌ উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন। তখন তাঁহার পিতা ইস্‌হাক উত্তর করিয়া কহিলেন, দেখ, তোমার বসতি ভূমির সরসতা- বিহীন হইবে, উপরিস্থ আকাশের শিশিরবিহীন হইবে। তুমি খড়গজীবী এবং আপন ভ্রাতার দাস হইবে; কিন্তু যখন তুমি আস্ফালন করিবে, আপন গ্রীবা হইতে তাহার যোঁয়ালি ভাঙ্গিবে। যাকোব আপন পিতা হইতে আশীর্ব্বাদ পাইয়াছিলেন বলিয়া এষৌ যাকোবকে দ্বেষ করিতে লাগিলেন। আর এষৌ মনে মনে কহিলেন, আমার পিতৃশোকের কাল প্রায় উপস্থিত, তৎপরে আমার ভাই যাকোবকে বধ করিব। জ্যেষ্ঠ পুত্র এষৌর এরূপ কথা রিবিকার কর্ণগোচর হইল, তাহাতে তিনি লোক পাঠাইয়া কনিষ্ঠ পুত্র যাকোবকে ডাকাইলেন, কহিলেন, দেখ, তোমার ভ্রাতা এষৌ তোমাকে বধ করিবার আশাতেই মনকে প্রবোধ দিতেছে। এখন, হে বৎস, আমার কথা শুন; উঠ, হারণে আমার ভ্রাতা লাবনের নিকট পলাইয়া যাও; এবং সেখানে কিছু কাল থাক, যে পর্য্যন্ত তোমার ভ্রাতার ক্রোধ নিবৃত্ত না হয়। তোমার প্রতি ভ্রাতার ক্রোধ নিবৃত্ত হইলে, এবং তুমি তাহার প্রতি যাহা করিয়াছ, তাহা সে ভুলিয়া গেলে আমি লোক পাঠাইয়া তথা হইতে তোমাকে আনাইব; এক দিনে তোমাদের দুই জনকেই কেন হারাইব? আর রিবিকা ইস্‌হাককে কহিলেন, এই হিত্তীয়দের কন্যাদের বিষয় আমার প্রাণে ঘৃণা হইতেছে; যদি যাকোবও ইহাদের মত কোন হিত্তীয় কন্যাকে, এতদ্দেশীয় কন্যাদের মধ্যে কোন কন্যাকে বিবাহ করে, তবে প্রাণধারণে আমার কি লাভ? তখন ইস্‌হাক যাকোবকে ডাকিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং ইহা আজ্ঞা দিয়া তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কনান দেশীয় কোন কন্যাকে বিবাহ করিও না। উঠ, পদ্দন-অরামে আপন মাতামহ বথূয়েলের বাটীতে গিয়া সে স্থানে আপন মাতুল লাবনের কোন কন্যাকে বিবাহ কর। আর সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া ফলবান্ ও বহুপ্রজ করুন, যেন তুমি জাতিসমাজ হইয়া উঠ। তিনি অব্রাহামের আশীর্ব্বাদ তোমাকে ও তোমার সহিত তোমার বংশকে দিউন; যেন তোমার প্রবাসস্থান এই যে দেশ ঈশ্বর অব্রাহামকে দিয়াছেন, ইহাতে তোমার অধিকার হয়। পরে ইস্‌হাক যাকোবকে বিদায় করিলে তিনি পদ্দন-অরামে অরামীয় বথূয়েলের পুত্র লাবনের নিকট যাত্রা করিলেন; সেই ব্যক্তি যাকোবের ও এষৌর মাতা রিবিকার ভ্রাতা। এষৌ যখন দেখিলেন, ইস্‌হাক যাকোবকে আশীর্ব্বাদ করিয়া বিবাহার্থ কন্যা গ্রহণজন্য পদ্দন-অরামে বিদায় করিয়াছেন, এবং আশীর্ব্বাদের সময় কনানীয় কোন কন্যাকে বিবাহ করিতে নিষেধ করিয়াছেন, এবং যাকোব মাতা পিতার আজ্ঞা মানিয়া পদ্দন-অরামে যাত্রা করিয়াছেন, তখন এষৌ দেখিলেন যে, কনানীয় কন্যারা তাঁহার পিতা ইস্‌হাকের অসন্তোষপাত্রী; অতএব দুই স্ত্রী থাকিলেও এষৌ ইশ্মায়েলের নিকট গিয়া অব্রাহামের পুত্র ইশ্মায়েলের কন্যা, নবায়োতের ভগিনী, মহলৎকে বিবাহ করিলেন। আর যাকোব বের্-শেবা হইতে বাহির হইয়া হারণের দিকে যাত্রা করিলেন, এবং কোন এক স্থানে পঁহুছিলে সূর্য্য অস্তগত হওয়াতে তথায় রাত্রিযাপন করিলেন। আর তিনি তথাকার প্রস্তর লইয়া বালিশ করিয়া সেই স্থানে নিদ্রা যাইবার জন্য শয়ন করিলেন। পরে তিনি স্বপ্ন দেখিলেন, আর দেখ, পৃথিবীর উপরে এক সিড়ি স্থাপিত, তাহার মস্তক গগনস্পর্শী, আর দেখ, তাহা দিয়া ঈশ্বরের দূতগণ উঠিতেছেন ও নামিতেছেন। আর দেখ, সদাপ্রভু তাহার উপরে দণ্ডায়মান; তিনি কহিলেন, আমি সদাপ্রভু, তোমার পিতা অব্রাহামের ঈশ্বর ও ইস্‌হাকের ঈশ্বর; এই যে ভূমিতে তুমি শয়ন করিয়া আছ, ইহা আমি তোমাকে ও তোমার বংশকে দিব। তোমার বংশ পৃথিবীর ধূলির ন্যায় [অসংখ্য] হইবে, এবং তুমি পশ্চিম ও পূর্ব্ব, উত্তর ও দক্ষিণ চারিদিকে বিস্তীর্ণ হইবে, এবং তোমাতে ও তোমার বংশে পৃথিবীস্থ যাবতীয় গোষ্ঠী আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে। আর দেখ, আমি তোমার সহবর্ত্তী, যে যে স্থানে তুমি যাইবে, সেই সেই স্থানে তোমাকে রক্ষা করিব, ও পুনর্ব্বার এই দেশে আনিব; কেননা আমি তোমাকে যাহা যাহা বলিলাম, তাহা যাবৎ সফল না করি, তাবৎ তোমাকে ত্যাগ করিব না। পরে নিদ্রাভঙ্গ হইলে যাকোব কহিলেন, অবশ্য এই স্থানে সদাপ্রভু আছেন, আর আমি তাহা জ্ঞাত ছিলাম না। আর তিনি ভীত হইয়া কহিলেন, এ কেমন ভয়াবহ স্থান! এ নিতান্তই ঈশ্বরের গৃহ, এ স্বর্গের দ্বার। পরে যাকোব প্রত্যূষে উঠিয়া বালিশের নিমিত্ত যে প্রস্তর রাখিয়াছিলেন, তাহা লইয়া স্তম্ভরূপে স্থাপন করিয়া তাহার উপর তৈল ঢালিয়া দিলেন। আর সেই স্থানের নাম বৈথেল [ঈশ্বরের গৃহ] রাখিলেন, কিন্তু পূর্ব্বে ঐ নগরের নাম লূস ছিল। আর যাকোব মানত করিয়া এই প্রতিজ্ঞা করিলেন, যদি ঈশ্বর আমার সহবর্ত্তী হন, আমার এই গন্তব্য পথে আমাকে রক্ষা করেন, এবং আহারার্থ খাদ্য ও পরিধানার্থ বস্ত্র দেন, আর আমি যদি কুশলে পিত্রালয়ে ফিরিয়া আসিতে পাই, তবে সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর হইবেন, এবং এই যে প্রস্তর আমি স্তম্ভরূপে স্থাপন করিয়াছি, ইহা ঈশ্বরের গৃহ হইবে; আর তুমি আমাকে যে কিছু দিবে, তাহার দশমাংশ অামি তোমাকে অবশ্য দিব। পরে যাকোব চরণ তুলিয়া পূর্ব্বদিক্‌স্থ বংশীয়দের দেশে গমন করিলেন। তথায় দেখিলেন, মাঠের মধ্যে এক কূপ আছে, আর দেখ, তাহার নিকটে মেষের তিনটি পাল শয়ন করিয়া রহিয়াছে; কারণ লোকে মেষপাল সকলকে সেই কূপের জল পান করাইত; আর সেই কূপের মুখে এক বৃহৎ প্রস্তর ছিল। সেই স্থানে পাল সকল একত্র করা হইলে লোকে কূপের মুখ হইতে প্রস্তরখান সরাইয়া মেষগণকে জল পান করাইত, পরে পুনর্ব্বার কূপের মুখে যথাস্থানে সেই প্রস্তর রাখিত। আর যাকোব তাহাদিগকে বলিলেন, ভাই সকল, তোমরা কোন্ স্থানের লোক? তাহারা কহিল, আমরা হারণ-নিবাসী। তখন তিনি বলিলেন, নাহোরের পৌত্র লাবনকে চিন কি না? তাহারা কহিল, চিনি। তিনি বলিলেন, তাঁহার মঙ্গল ত? তাহারা কহিল, মঙ্গল; দেখ, তাঁহার কন্যা রাহেল মেষপাল লইয়া আসিতেছেন। তখন তিনি বলিলেন, দেখ, এখনও অনেক বেলা আছে; পশুপাল একত্র করণের সময় হয় নাই; তোমরা মেষগণকে জল পান করাইয়া পুনর্ব্বার চরাইতে লইয়া যাও। তাহারা কহিল, যতক্ষণ পাল সকল একত্র না হয়, ততক্ষণ আমরা তাহা করিতে পারি না; পরে কূপের মুখ হইতে প্রস্তরখান সরান যায়; তখন আমরা মেষদিগকে জল পান করাই। যাকোব তাহাদের সহিত এইরূপ কথাবার্ত্তা কহিতেছেন, এমন সময়ে রাহেল আপন পিতার মেষপাল লইয়া উপস্থিত হইলেন, কেননা তিনি মেষপালিকা ছিলেন। তখন যাকোব আপন মাতুল লাবনের কন্যা রাহেলকে ও মাতুলের মেষপালকে দেখিবামাত্র নিকটে গিয়া কূপের মুখ হইতে প্রস্তরখানা সরাইয়া তাঁহার মাতুল লাবনের মেষপালকে জল পান করাইলেন। পরে যাকোব রাহেলকে চুম্বন করিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন। আর আপনি যে তাঁহার পিতার কুটুম্ব ও রিবিকার পুত্র, যাকোব রাহেলকে এই পরিচয় দিলে রাহেল দৌড়িয়া গিয়া আপন পিতাকে সংবাদ দিলেন। তাহাতে লাবন আপন ভাগিনেয় যাকােবের সংবাদ পাইয়া দৌড়িয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন, তাঁহাকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করিলেন, ও আপন বাটীতে লইয়া গেলেন; পরে তিনি লাবনকে উক্ত সমস্ত বৃত্তান্ত জ্ঞাত করিলেন। তাহাতে লাবন কহিলেন, তুমি নিতান্তই আমার অস্থি ও আমার মাংস। পরে যাকোব তাঁহার গৃহে এক মাস কাল বাস করিলেন। পরে লাবন যাকোবকে কহিলেন, তুমি কুটুম্ব বলিয়া কি বিনা বেতনে আমার দাস্যকর্ম্ম করিবে? বল দেখি, কি বেতন লইবে? লাবনের দুই কন্যা ছিলেন; জ্যেষ্ঠার নাম লেয়া ও কনিষ্ঠার নাম রাহেল। লেয়া মৃদুলোচনা, কিন্তু রাহেল রূপবতী ও সুন্দরী ছিলেন। আর যাকোব রাহেলকে ভাল বাসিতেন, এজন্য তিনি উত্তর করিলেন, আপনার কনিষ্ঠা কন্যা রাহেলের জন্য আমি সাত বৎসর আপনার দাস্যকর্ম্ম করিব। লাবন কহিলেন, অন্য পাত্রকে দান করা অপেক্ষা তোমাকে দান করা উত্তম বটে; আমার নিকটে থাক। এইরূপে যাকোব রাহেলের জন্য সাত বৎসর দাস্যকর্ম্ম করিলেন; রাহেলের প্রতি তাঁহার অনুরাগ প্রযুক্ত এক এক বৎসর তাঁহার কাছে এক এক দিন মনে হইল। পরে যাকোব লাবনকে কহিলেন, আমার নিয়মিত কাল সম্পূর্ণ হইল, এখন আমার ভার্য্যা আমাকে দিউন, আমি তাহার কাছে গমন করিব। তখন লাবন ঐ স্থানের সকল লোককে একত্র করিয়া ভোজ প্রস্তুত করিলেন। আর সন্ধ্যাকালে তিনি আপন কন্যা লেয়াকে লইয়া তাঁহার নিকট আনিয়া দিলেন, আর যাকোব তাঁহার কাছে গমন করিলেন। আর লাবন সিল্পা নাম্নী আপন দাসীকে আপন কন্যা লেয়ার দাসী বলিয়া তাঁহাকে দিলেন। আর প্রভাত হইলে, দেখ, তিনি লেয়া। তাহাতে যাকোব লাবনকে কহিলেন, আপনি আমার সহিত এ কি ব্যবহার করিলেন? আমি কি রাহেলের জন্য আপনার দাস্যকর্ম্ম করি নাই? তবে কেন আমাকে প্রবঞ্চনা করিলেন? তখন লাবন কহিলেন, জ্যেষ্ঠার অগ্রে কনিষ্ঠাকে দান করা আমাদের এই স্থানে অকর্ত্তব্য। তুমি ইহার সপ্তাহ পূর্ণ কর; পরে আরও সাত বৎসর আমার দাস্যকর্ম্ম স্বীকার করিবে, সেজন্য আমরা উহাকেও তোমাকে দান করিব। তাহাতে যাকোব সেই প্রকার করিলেন, তাঁহার সপ্তাহ পূর্ণ করিলেন; পরে লাবন তাঁহার সহিত আপন কন্যা রাহেলের বিবাহ দিলেন। আর লাবন বিল্‌হা নাম্নী আপন দাসীকে রাহেলের দাসী বলিয়া তাঁহাকে দিলেন। তখন তিনি রাহেলের কাছেও গমন করিলেন, এবং লেয়া অপেক্ষা রাহেলকে অধিক ভাল বাসিলেন; এবং আর সাত বৎসর লাবনের নিকট দাস্যকর্ম্ম করিলেন। পরে সদাপ্রভু লেয়াকে অবজ্ঞাতা দেখিয়া তাঁহার গর্ভ মুক্ত করিলেন, কিন্তু রাহেল বন্ধ্যা হইলেন। আর লেয়া গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিলেন, ও তাহার নাম রূবেণ [পুত্রকে দেখ] রাখিলেন; কেননা তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু আমার দুঃখ দেখিয়াছেন; এখন আমার স্বামী আমাকে ভাল বাসিবেন। পরে তিনি পুনর্ব্বার গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু শুনিয়াছেন যে, আমি ঘৃণার পাত্রী, তাই আমাকে এই পুত্রও দিলেন; আর তাহার নাম শিমিয়োন [শ্রবণ] রাখিলেন। আবার তিনি গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিয়া কহিলেন, এ বার আমার স্বামী আমাতে আসক্ত হইবেন, কেননা আমি তাঁহার জন্য তিন পুত্র প্রসব করিয়াছি; অতএব তাহার নাম লেবি [আসক্ত] রাখা গেল। পরে পুনর্ব্বার তাঁহার গর্ভ হইলে তিনি পুত্র প্রসব করিয়া কহিলেন, এ বার আমি সদাপ্রভুর স্তব গান করি; অতএব তিনি তাহার নাম যিহূদা [স্তব] রাখিলেন। তৎপরে তাঁহার গর্ভনিবৃত্তি হইল। রাহেল যখন দেখিলেন, তাঁহা হইতে যাকোবের সন্তান জন্মে নাই, তখন তিনি ভগিনীর প্রতি ঈর্ষা করিলেন, ও যাকোবকে কহিলেন, আমাকে সন্তান দেও, নতুবা আমি মরিব। তাহাতে রাহেলের প্রতি যাকোবের ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল; তিনি কহিলেন, আমি কি ঈশ্বরের প্রতিনিধি? তিনিই তোমাকে গর্ভফল দিতে অস্বীকার করিয়াছেন। তখন রাহেল কহিলেন, দেখ, আমার দাসী বিল্‌হা আছে, উহার কাছে গমন কর; যেন ও পুত্র প্রসব করিয়া আমার কোলে দেয়, এবং উহার দ্বারা আমিও পুত্রবতী হই। ইহা বলিয়া তিনি তাঁহার সহিত আপন দাসী বিল্‌হার বিবাহ দিলেন। তখন যাকোব তাহার কাছে গমন করিলেন, আর বিল্‌হা গর্ভবতী হইয়া যাকোবের জন্য পুত্র প্রসব করিল। তখন রাহেল কহিলেন, ঈশ্বর আমার বিচার করিলেন, এবং আমার রবও শুনিয়া আমাকে পুত্র দিলেন; অতএব তিনি তাহার নাম দান [বিচার] রাখিলেন। পরে রাহেলের বিল্‌হা দাসী পুনর্ব্বার গর্ভধারণ করিয়া যাকোবের জন্য দ্বিতীয় পুত্র প্রসব করিল। তখন রাহেল কহিলেন, আমি ভগিনীর সহিত ঈশ্বর সম্বন্ধীয় মল্লযুদ্ধ করিয়া জয়লাভ করিলাম; আর তিনি তাহার নাম নপ্তালি [মল্লযুদ্ধ] রাখিলেন। পরে লেয়া আপনার গর্ভনিবৃত্তি হইল বুঝিয়া আপনার দাসী সিল্পাকে লইয়া যাকোবের সহিত বিবাহ দিলেন। তাহাতে লেয়ার দাসী সিল্পা যাকোবের জন্য এক পুত্র প্রসব করিল। তখন লেয়া কহিলেন, সৌভাগ্য হইল; আর তাহার নাম গাদ [সৌভাগ্য] রাখিলেন। পরে লেয়ার দাসী সিল্পা যাকোবের জন্য দ্বিতীয় পুত্র প্রসব করিল। তখন লেয়া কহিলেন, আমি ধন্যা, যুবতীগণ আমাকে ধন্যা বলিবে; আর তিনি তাহার নাম আশের [ধন্য] রাখিলেন। আর গোম কাটার সময়ে রূবেণ বাহিরে গিয়া ক্ষেত্রে দূদাফল পাইয়া আপন মাতা লেয়াকে আনিয়া দিল; তাহাতে রাহেল লেয়াকে কহিলেন, তোমার পুত্রের কতকগুলি দূদাফল আমাকে দেও না। তাহাতে তিনি কহিলেন, তুমি আমার স্বামীকে হরণ করিয়াছ, এ কি ক্ষুদ্র বিষয়? আমার পুত্রের দূদাফলও কি হরণ করিবে? তখন রাহেল কহিলেন, তবে তোমার পুত্রের দূদাফলের পরিবর্ত্তে তিনি অদ্য রাত্রিতে তোমার সহিত শয়ন করিবেন। পরে সন্ধ্যাকালে ক্ষেত্র হইতে যাকোবের আগমন সময়ে লেয়া বাহিরে তাঁহার কাছে গিয়া কহিলেন, আমার কাছে আসিতে হইবে, কেননা আমি আপন পুত্রের দূদাফল দিয়া তোমাকে ভাড়া করিয়াছি; তাই সেই রাত্রিতে তিনি তাঁহার সহিত শয়ন করিলেন। আর ঈশ্বর লেয়ার প্রার্থনা শ্রবণ করাতে তিনি গর্ভবতী হইয়া যাকোবের জন্য পঞ্চম পুত্র প্রসব করিলেন। তখন লেয়া কহিলেন, আমি স্বামীকে আপন দাসী দিয়াছিলাম, তাহার বেতন ঈশ্বর আমাকে দিলেন; আর তিনি তাহার নাম ইষাখর [বেতন] রাখিলেন। পরে লেয়া পুনর্ব্বার গর্ভধারণ করিয়া যাকোবের জন্য ষষ্ঠ পুত্র প্রসব করিলেন। তখন লেয়া কহিলেন, ঈশ্বর আমাকে উত্তম যৌতুক দিলেন, এখন আমার স্বামী আমার সহিত বাস করিবেন, কেননা আমি তাঁহার জন্য ছয় পুত্র প্রসব করিয়াছি; আর তিনি তাহার নাম সবূলূন [বাস] রাখিলেন। তৎপরে তাঁহার এক কন্যা জন্মিল, আর তিনি তাহার নাম দীণা রাখিলেন। আর ঈশ্বর রাহেলকে স্মরণ করিলেন, ঈশ্বর তাঁহার প্রার্থনা শুনিলেন, তাঁহার গর্ভ মুক্ত করিলেন। তখন তাঁহার গর্ভ হইলে তিনি পুত্র প্রসব করিয়া কহিলেন, ঈশ্বর আমার অপযশ হরণ করিয়াছেন। আর তিনি তাহার নাম যোষেফ [বৃদ্ধি] রাখিলেন, কহিলেন, সদাপ্রভু আমাকে আরও এক পুত্র দিউন। আর রাহেলের গর্ভে যোষেফ জন্মিলে পর যাকোব লাবনকে কহিলেন, আমাকে বিদায় করুন, আমি স্বস্থানে, নিজ দেশে, প্রস্থান করি; আমি যাহাদের জন্য আপনার দাস্যকর্ম্ম করিয়াছি, আমার সেই স্ত্রীদিগকে ও সন্তানগণকে আমার হস্তে সমর্পণ করিয়া আমাকে যাইতে দিউন; কেননা আমি যেরূপ পরিশ্রমে আপনার দাস্যকর্ম্ম করিয়াছি, তাহা আপনি জ্ঞাত আছেন। তখন লাবন তাঁহাকে কহিলেন, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি [তবে থাক]; কেননা আমি অনুভবে জানিলাম, তোমার অনুরোধে সদাপ্রভু আমাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। তিনি আরও কহিলেন, তোমার বেতন স্থির করিয়া আমাকে বল, আমি দিব। তখন যাকোব তাঁহাকে কহিলেন, আমি যেরূপ আপনার দাস্যকর্ম্ম করিয়াছি, এবং আমার নিকটে আপনার যেরূপ পশুধন হইয়াছে, তাহা আপনি জানেন। কেননা আমার আসিবার পূর্ব্বে আপনার অল্প সম্পত্তি ছিল, এখন বৃদ্ধি পাইয়া প্রচুর হইয়াছে; আমার যত্নে সদাপ্রভু আপনাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন; কিন্তু আমি নিজ পরিবারের জন্য কবে সঞ্চয় করিব? তাহাতে লাবন কহিলেন, আমি তোমাকে কি দিব? যাকোব কহিলেন, আপনি আমাকে আর কিছুই না দিয়া যদি আমার জন্য এক কর্ম্ম করেন, তবে আমি আপনার পশুদিগকে পুনর্ব্বার চরাইব ও পালন করিব। অদ্য আমি আপনার সমস্ত পশুপালের মধ্য দিয়া গমন করিব; আমি মেষদের মধ্যে বিন্দুচিহ্নিত ও চিত্রাঙ্গ ও কৃষ্ণবর্ণ সকল, এবং ছাগদের মধ্যে চিত্রাঙ্গ ও বিন্দুচিহ্নিত সকলকে পৃথক্‌ করি; সেইগুলি আমার বেতন হইবে। ইহার পরে যখন আপনার সম্মুখে উপস্থিত বেতনের নিমিত্ত আপনি আসিবেন, তখন আমার ধার্ম্মিকতা আমার পক্ষে উত্তর দিবে; ফলতঃ ছাগদের বিন্দুচিহ্নিত কি চিত্রাঙ্গ ভিন্ন ও মেষদের মধ্যে কৃষ্ণবর্ণ ভিন্ন যাহা থাকিবে, তাহা আমার চৌর্য্যরূপে গণ্য হইবে। তখন লাবন কহিলেন, দেখ, তোমার বাক্যানুসারেই হউক। পরে তিনি সেই দিন রেখাঙ্কিত ও চিত্রাঙ্গ ছাগ সকল এবং বিন্দুচিহ্নিত ও চিত্রাঙ্গ, যাহাতে যাহাতে কিঞ্চিৎ শুক্লবর্ণ ছিল, এমন ছাগী সকল এবং কৃষ্ণবর্ণ মেষ সকল পৃথক্‌ করিয়া আপন পুত্রদের হস্তে সমর্পণ করিলেন, এবং আপনার ও যাকোবের মধ্যে তিন দিনের পথ ব্যবধান রাখিলেন। আর যাকোব লাবনের অবশিষ্ট পশুপাল চরাইতে লাগিলেন। আর যাকোব লিব্‌নী, লূস ও আমোণ বৃক্ষের সরস শাখা কাটিয়া তাহার ছাল খুলিয়া কাষ্ঠের শুক্ল রেখা বাহির করিলেন। পরে যে স্থানে পশুপাল জল পানার্থে আইসে, সেই স্থানে পালের সম্মুখে নিপানের মধ্যে ঐ ত্বক্‌শূন্য রেখাবিশিষ্ট শাখা সকল রাখিতে লাগিলেন, তাহাতে জল পান করিবার সময়ে তাহারা গর্ভ ধারণ করিত। আর সেই শাখার নিকটে তাহাদের গর্ভধারণ প্রযুক্ত রেখাঙ্কিত ও বিন্দুচিহ্নিত ও চিত্রাঙ্গ বৎস জন্মিত। পরে যাকোব সেই সকল বৎস পৃথক্ করিতেন, এবং লাবনের রেখাঙ্কিত ও কৃষ্ণবর্ণ মেষের প্রতি মেষীদের দৃষ্টি রাখিতেন; এইরূপে তিনি লাবনের পালের সহিত না রাখিয়া আপন পালকে পৃথক্‌ করিতেন। আর বলবান্‌ পশুগণ যেন শাখার নিকটে গর্ভধারণ করে, এই জন্য নিপানের মধ্যে পশুদের সম্মুখে ঐ শাখা রাখিতেন; কিন্তু দুর্ব্বল পশুদের সম্মুখে রাখিতেন না। তাহাতে দুর্ব্বল পশুগণ লাবনের ও বলবান্ পশুগণ যাকোবের হইত। আর যাকোব অতি বর্দ্ধিষ্ণু হইলেন, এবং তাঁহার পশু ও দাস দাসী এবং উষ্ট্র ও গর্দ্দভ যথেষ্ট হইল। পরে তিনি লাবনের পুত্রদের এই কথা শুনিতে পাইলেন, যাকোব আমাদের পিতার সর্ব্বস্ব হরণ করিয়াছে, আমাদের পিতার ধন হইতে তাহার এই সমস্ত ঐশ্বর্য্য হইয়াছে। আর যাকোব লাবনের মুখ দেখিলেন, আর দেখ, উহা আর তাঁহার প্রতি পূর্ব্বকার মত নয়। আর সদাপ্রভু যাকোবকে কহিলেন, তুমি আপন পৈতৃক দেশে জ্ঞাতিদের নিকটে ফিরিয়া যাও, আমি তোমার সহবর্ত্তী হইব। অতএব যাকোব লোক পাঠাইয়া মাঠে পশুদের নিকটে রাহেল ও লেয়াকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি তোমাদের পিতার মুখ দেখিয়া বুঝিতে পারিতেছি, উহা আর আমার প্রতি পূর্ব্বকার মত নয়, কিন্তু আমার পিতার ঈশ্বর আমার সহবর্ত্তী রহিয়াছেন। আর তোমরা আপনারা জান, আমি যথাশক্তি তোমাদের পিতার দাস্যকর্ম্ম করিয়াছি। তথাপি তোমাদের পিতা আমাকে প্রবঞ্চনা করিয়া দশ বার আমার বেতন অন্যথা করিয়াছেন; কিন্তু ঈশ্বর তাঁহাকে আমার ক্ষতি করিতে দেন নাই। কেননা যখন তিনি কহিতেন, বিন্দুচিহ্নিত পশুগণ তোমার বেতনস্বরূপ হইবে, তখন সমস্ত পাল বিন্দুচিহ্নিত শাবক প্রসব করিত; এবং যখন কহিতেন, রেখাঙ্কিত পশু সকল তোমার বেতনস্বরূপ হইবে, তখন মেষাদি সকলে রেখাঙ্কিত শাবক প্রসব করিত। এইরূপে ঈশ্বর তোমাদের পিতার পশুধন লইয়া আমাকে দিয়াছেন। পশুদের গর্ভধারণকালে আমি স্বপ্নে চক্ষু তুলিয়া দেখিলাম, আর দেখ, পালের মধ্যে স্ত্রীপশুদের উপরে যত পুংপশু উঠিতেছে, সকলেই রেখাঙ্কিত, বিন্দুচিহ্নিত ও চিত্রবিচিত্র। তখন ঈশ্বরের দূত স্বপ্নে আমাকে বলিলেন, হে যাকোব; আর আমি কহিলাম, দেখুন, এই আমি। তিনি বলিলেন, তোমার চক্ষু তুলিয়া দেখ, স্ত্রীপশুদের উপরে যত পুংপশু উঠিতেছে, সকলেই রেখাঙ্কিত, চিত্রাঙ্গ ও চিত্রবিচিত্র; কেননা, লাবন তোমার প্রতি যাহা যাহা করে, তাহা সকলই আমি দেখিলাম। যে স্থানে তুমি স্তম্ভের অভিষেক ও আমার নিকটে মানত করিয়াছ, সেই বৈথেলের ঈশ্বর আমি; এখন উঠ, এই দেশ ত্যাগ করিয়া আপন জন্মভূমিতে ফিরিয়া যাও। তখন রাহেল ও লেয়া উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, পিতার বাটীতে আমাদের কি আর কিছু অংশ ও অধিকার আছে? আমরা কি তাঁহার কাছে বিদেশিনীরূপে গণ্য নহি? তিনি ত আমাদিগকে বিক্রয় করিয়াছেন এবং আমাদের রৌপ্য আপনি ভোগ করিয়াছেন। ঈশ্বর আমাদের পিতা হইতে যে সকল ধন হরণ করিয়াছেন, সে সকলই আমাদের ও আমাদের সন্তানদের। অতএব ঈশ্বর তোমাকে যাহা কিছু বলিয়াছেন, তুমি তাহাই কর। [17-18] তখন যাকোব উঠিয়া আপন সন্তানগণ ও স্ত্রীদিগকে উটে চড়াইয়া আপনার উপার্জ্জিত পশ্বাদি সকল ধন, অর্থাৎ পদ্দন-অরামে যে পশু ও যে সম্পত্তি উপার্জ্জন করিয়াছিলেন, তাহা লইয়া কনান দেশে আপন পিতা ইস্‌হাকের নিকটে যাত্রা করিলেন। *** তৎকালে লাবন মেষলোম ছেদন করিতে গিয়াছিলেন; তখন রাহেল আপন পিতার ঠাকুরগুলাকে হরণ করিলেন। আর যাকোব আপন পলায়নের কোন সংবাদ না দিয়া অরামীয় লাবনকে বঞ্চনা করিলেন। তিনি আপনার সর্ব্বস্ব লইয়া পলায়ন করিলেন, এবং উঠিয়া [ফরাৎ] নদী পার হইয়া গিলিয়দ পর্ব্বত সম্মুখে রাখিয়া চলিলেন। পরে তৃতীয় দিনে লাবন যাকোবের পলায়নের সংবাদ পাইলেন, এবং আপন কুটুম্বদিগকে সঙ্গে লইয়া সাত দিনের পথ তাঁহার পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন, ও গিলিয়দ পর্ব্বতে তাঁহার দেখা পাইলেন। কিন্তু ঈশ্বর রাত্রিতে স্বপ্নযোগে অরামীয় লাবনের নিকটে উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে কহিলেন, সাবধান, যাকোবকে ভাল মন্দ কিছুই বলিও না। লাবন যখন যাকোবের দেখা পাইলেন, তখন যাকোবের তাম্বু পর্ব্বতের উপরে স্থাপিত ছিল; তাহাতে লাবনও কুটুম্বদের সহিত গিলিয়দ পর্ব্বতের উপরে তাম্বু স্থাপন করিলেন। পরে লাবন যাকোবকে কহিলেন, তুমি কেন এমন কর্ম্ম করিলে? আমাকে বঞ্চনা করিয়া আমার কন্যাদিগকে কেন খড়গধৃত বন্দিগণের ন্যায় লইয়া আসিলে? তুমি আমাকে বঞ্চনা করিয়া কেন গোপনে পলাইলে? কেন আমাকে সংবাদ দিলে না? দিলে আমি তোমাকে আহলাদ ও গান এবং তবলের ও বীণার বাদ্য পুরঃসর বিদায় করিতাম। তুমি আমার পুত্র কন্যাগণকে চুম্বন করিতেও আমাকে দিলে না; এ অজ্ঞানের কর্ম্ম করিয়াছ। তোমাদের হিংসা করিতে আমার হস্ত সমর্থ; কিন্তু গত রাত্রিতে তোমাদের পৈতৃক ঈশ্বর আমাকে কহিলেন, সাবধান, যাকোবকে ভাল মন্দ কিছুই বলিও না। এখন পিত্রালয়ে যাইবার আকাঙ্ক্ষায় ম্লানবদন হওয়াতে তুমি যাত্রা করিলে বটে; কিন্তু আমার দেবতাদিগকে কেন চুরি করিলে? যাকোব লাবনকে উত্তর করিলেন, আমি ভীত হইয়াছিলাম; কারণ ভাবিয়াছিলাম, পাছে আপনি আমা হইতে আপনার কন্যাগণকে বলে কাড়িয়া লন। আপনি যাহার কাছে আপনার দেবতাদিগকে পাইবেন, সে বাঁচিবে না। আমাদের কুটুম্বদের সাক্ষাতে অন্বেষণ করিয়া আমার কাছে আপনার যাহা আছে, তাহা লউন। বাস্তবিক যাকোব জানিতেন না যে, রাহেল সেগুলা চুরি করিয়াছেন। তখন লাবন যাকোবের তাম্বুতে ও লেয়ার তাম্বুতে ও দুই দাসীর তাম্বুতে প্রবেশ করিলেন, কিন্তু পাইলেন না। পরে তিনি লেয়ার তাম্বু হইতে রাহেলের তাম্বুতে প্রবেশ করিলেন। কিন্তু রাহেল সেই ঠাকুরগুলাকে লইয়া উষ্ট্রের গদীর ভিতরে রাখিয়া তাহাদের উপরে বসিয়াছিলেন; সেই জন্য লাবন তাঁহার তাম্বুর সকল স্থান হাঁতড়াইলেও তাহাদিগকে পাইলেন না। তখন রাহেল পিতাকে কহিলেন, কর্ত্তা, আপনার সাক্ষাতে আমি উঠিতে পারিলাম না, ইহাতে বিরক্ত হইবেন না, কেননা আমি স্ত্রীধর্ম্মিণী আছি। এইরূপে তিনি অন্বেষণ করিলেও সেই ঠাকুরগুলাকে পাইলেন না। তখন যাকোব ক্রুদ্ধ হইয়া লাবনের সহিত বিবাদ করিতে লাগিলেন। যাকোব লাবনকে কহিলেন, আমার অধর্ম্ম কি, ও আমার পাপ কি যে, তুমি প্রজ্বলিত হইয়া আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ দৌড়িয়া আসিয়াছ? তুমি আমার সকল সামগ্রী হাঁতড়াইয়া তোমার বাটীর কোন্ দ্রব্য পাইলে? আমার ও তোমার এই কুটুম্বদের সাক্ষাতে তাহা রাখ, ইহাঁরা উভয় পক্ষের বিচার করুন। এই বিংশতি বৎসর আমি তোমার নিকটে আছি; তোমার মেষীদের কি ছাগীদের গর্ভপাত হয় নাই, এবং আমি তোমার পালের মেষদিগকে খাই নাই; বিদীর্ণ মেষ তোমার নিকটে আনিতাম না; সে ক্ষতি আপনি স্বীকার করিতাম; দিনে কিম্বা রাত্রিতে যাহা চুরি হইত, তাহার পরিবর্ত্ত তুমি আমা হইতে লইতে। আমার এরূপ দশা হইত, আমি দিবাতে উত্তাপের ও রাত্রিতে শীতের গ্রাসে পতিত হইতাম; নিদ্রা আমার চক্ষু হইতে দূরে পলায়ন করিত। এই বিংশতি বৎসর আমি তোমার বাটীতে রহিয়াছি; তোমার দুই কন্যার জন্য চৌদ্দ বৎসর, ও তোমার পশুপালের জন্য ছয় বৎসর দাস্যবৃত্তি করিয়াছি; ইহার মধ্যে তুমি দশ বার আমার বেতন অন্যথা করিয়াছ। আমার পৈতৃক ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর ও ইস্‌হাকের ভয়স্থান যদি আমার পক্ষ না হইতেন, তবে অবশ্য এখন তুমি আমাকে রিক্তহস্তে বিদায় করিতে। ঈশ্বর আমার দুঃখ ও হস্তের পরিশ্রম দেখিয়াছেন, এই জন্য গত রাত্রিতে তোমাকে ধম্‌কাইলেন। তখন লাবন উত্তর করিয়া যাকোবকে কহিলেন, এই কন্যাগণ আমারই কন্যা, এই বালকেরা আমারই বালক, এবং এই পশুপাল আমারই পশুপাল; যাহা যাহা দেখিতেছ, এ সকলই আমার। এখন আমার এই কন্যাদিগকে ও ইহাদের প্রসূত এই বালকদিগকে আমি কি করিব? আইস, তোমাতে ও আমাতে নিয়ম স্থির করি, তাহা তোমার ও আমার সাক্ষী থাকিবে। তখন যাকোব এক প্রস্তর লইয়া স্তম্ভরূপে স্থাপন করিলেন। আর যাকোব আপন কুটুম্বদিগকে কহিলেন, আপনারাও প্রস্তর সংগ্রহ করুন। তাহাতে তাঁহারা প্রস্তর আনিয়া এক রাশি করিলেন, এবং সেই স্থানে ঐ রাশির নিকটে ভোজন করিলেন। আর লাবন তাহার নাম যিগর্-সাহদূথা [সাক্ষি-রাশি] রাখিলেন, কিন্তু যাকোব তাহার নাম গল্-এদ [সাক্ষি-রাশি] রাখিলেন। তখন লাবন কহিলেন, এই রাশি অদ্য তোমার ও আমার সাক্ষী থাকিল। এই জন্য তাহার নাম গিলিয়দ, এবং মিস্পা [প্রহরি-স্থান] রাখা গেল; কেননা তিনি কহিলেন, আমরা পরস্পর অদৃশ্য হইলে সদাপ্রভু আমার ও তোমার প্রহরী থাকিবেন। তুমি যদি আমার কন্যাদিগকে দুঃখ দেও, আর যদি আমার কন্যা ব্যতিরেকে অন্য স্ত্রীকে বিবাহ কর, তবে কোন মনুষ্য আমাদের নিকটে থাকিবে না বটে, কিন্তু দেখ, ঈশ্বর আমার ও তোমার সাক্ষী হইবেন। লাবন যাকোবকে আরও কহিলেন, এই রাশি দেখ, এবং এই স্তম্ভ দেখ, আমার ও তোমার মধ্যে আমি ইহা স্থাপন করিলাম। হিংসাভাবে আমিও এই রাশি পার হইয়া তোমার নিকটে যাইব না, এবং তুমিও এই রাশি ও এই স্তম্ভ পার হইয়া আমার নিকটে আসিবে না, ইহার সাক্ষী এই রাশি ও ইহার সাক্ষী এই স্তম্ভ; অব্রাহামের ঈশ্বর, নাহোরের ঈশ্বর ও তাঁহাদের পিতার ঈশ্বর আমাদের মধ্যে বিচার করিবেন। তখন যাকোব আপন পিতা ইস্‌হাকের ভয়স্থানের দিব্য করিলেন। পরে যাকোব সেই পর্ব্বতে বলিদান করিয়া আহার করিতে আপন কুটুম্বদিগকে নিমন্ত্রণ করিলেন, তাহাতে তাঁহারা ভোজন করিয়া পর্ব্বতে রাত্রি যাপন করিলেন। পরে লাবন প্রত্যূষে উঠিয়া আপন পুত্র কন্যাগণকে চুম্বনপূর্ব্বক আশীর্ব্বাদ করিলেন। আর লাবন স্বস্থানে ফিরিয়া গেলেন। আর যাকোব আপন পথে অগ্রসর হইলে ঈশ্বরের দূতগণ তাঁহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। তখন যাকোব তাঁহাদিগকে দেখিয়া কহিলেন, এ ঈশ্বরের সেনাদল, অতএব সেই স্থানের নাম মহনয়িম [দুই সেনাদল] রাখিলেন। তাহার পর যাকোব আপনার অগ্রে সেয়ীর দেশের ইদোম অঞ্চলে তাঁহার ভ্রাতা এষৌর নিকটে দূতগণকে পাঠাইলেন। তিনি তাহাদিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, তোমরা আমার প্রভু এষৌকে বলিবে, আপনার দাস যাকোব আপনাকে জানাইলেন, আমি লাবনের কাছে প্রবাস করিতেছিলাম, এ পর্য্যন্ত অবস্থিতি করিয়াছি। আমার গোরু, গর্দ্দভ, মেষপাল ও দাস দাসী আছে, আর আমি প্রভুর অনুগ্রহদৃষ্টি পাইবার জন্য আপনাকে সংবাদ পাঠাইলাম। পরে দূতগণ যাকোবের নিকটে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, আমরা আপনার ভ্রাতা এষৌর কাছে গিয়াছিলাম; আর তিনি চারি শত লোক সঙ্গে লইয়া আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিতেছেন। তখন যাকোব অতিশয় ভীত ও উদ্বিগ্ন হইলেন, আর যে সকল লোক তাঁহার সঙ্গে ছিল, তাহাদিগকে ও গোমেষাদির সমস্ত পাল ও উষ্ট্রগণকে বিভক্ত করিয়া দুই দল করিলেন, কহিলেন, এষৌ আসিয়া যদ্যপি এক দলকে প্রহার করেন, তথাপি অন্য দল অবশিষ্ট থাকিয়া রক্ষা পাইবে। তখন যাকোব কহিলেন, হে আমার পিতা অব্রাহামের ঈশ্বর ও আমার পিতা ইস্‌হাকের ঈশ্বর, তুমি সদাপ্রভু আপনি আমাকে বলিয়াছিলে, তোমার দেশে জ্ঞাতিদের নিকটে ফিরিয়া যাও, তাহাতে আমি তোমার মঙ্গল করিব। তুমি এই দাসের প্রতি যে সমস্ত দয়া ও যে সমস্ত সত্যাচরণ করিয়াছ, আমি তাহার কিছুরই যোগ্য নই; কেননা আমি নিজ যষ্টিখানি লইয়া এই যর্দ্দন পার হইয়াছিলাম, এখন দুই দল হইয়াছি। বিনয় করি, আমার ভ্রাতার হস্ত হইতে, এষৌর হস্ত হইতে আমাকে রক্ষা কর, কেননা আমি তাহাকে ভয় করি, পাছে সে আসিয়া আমাকে, ছেলেদের সহিত মাতাকে বধ করে। তুমিই ত বলিয়াছ, আমি অবশ্য তোমার মঙ্গল করিব, এবং সমুদ্রতীরস্থ যে বালি বাহুল্য প্রযুক্ত গণনা করা যায় না, তাহার ন্যায় তোমার বংশ বৃদ্ধি করিব। পরে যাকোব সেই স্থানে রাত্রি যাপন করিলেন, ও তাঁহার নিকটে যাহা ছিল, তাহার কতক লইয়া তাঁহার ভ্রাতা এষৌর জন্য এই উপঢৌকন প্রস্তুত করিলেন; দুই শত ছাগী ও বিংশতি ছাগ, দুই শত মেষী ও বিংশতি মেষ, সবৎসা দুগ্ধবতী ত্রিশ উষ্ট্রী, চল্লিশ গাভী ও দশ বৃষ, এবং বিংশতি গর্দ্দভী ও দশ গর্দ্দভশাবক। পরে তিনি আপনার এক এক দাসের হস্তে এক এক পাল সমর্পণ করিয়া দাসদিগকে এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা আমার অগ্রে পার হইয়া যাও, এবং মধ্যে মধ্যে স্থান রাখিয়া প্রত্যেক পাল পৃথক্ কর। পরে তিনি অগ্রবর্ত্তী দাসকে এই আজ্ঞা দিলেন, আমার ভ্রাতা এষৌর সহিত তোমার সাক্ষাৎ হইলে তিনি যখন জিজ্ঞাসা করিবেন, তুমি কাহার দাস? কোথায় যাইতেছ? আর তোমার অগ্রস্থিত এই সমস্ত কাহার? তখন তুমি উত্তর করিবে, এই সকল আপনার দাস যাকোবের; তিনি উপঢৌকনরূপে এই সকল আমার প্রভু এষৌর জন্য প্রেরণ করিলেন; আর দেখুন, তিনিও আমাদের পশ্চাৎ আসিতেছেন। পরে তিনি দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রভৃতি পালের পশ্চাদ্‌গামী দাস সকলকেও আজ্ঞা দিয়া কহিলেন, এষৌর সহিত দেখা হইলে তোমরা এই এই প্রকার কথা বলিও। আরও বলিও, দেখুন, আপনার দাস যাকোবও আমাদের পশ্চাৎ আসিতেছেন। কেননা তিনি বলিলেন, আমি অগ্রে উপঢৌকন পাঠাইয়া তাঁহাকে শান্ত করিব, পশ্চাৎ তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিব, তাহাতে তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করিলেও করিতে পারেন। অতএব তাঁহার অগ্রে উপঢৌকন দ্রব্য পার হইয়া গেল, কিন্তু আপনি সেই রাত্রিতে দলের মধ্যে থাকিলেন। পরে তিনি রাত্রিতে উঠিয়া আপনার দুই স্ত্রী, দুই দাসী ও একাদশ পুত্রকে লইয়া তরণস্থানে যব্বোক নদী পার হইলেন। তিনি তাঁহাদিগকে নদী পার করাইয়া আপনার সমস্ত দ্রব্য পারে পাঠাইয়া দিলেন। আর যাকোব তথায় একাকী রহিলেন, এবং এক পুরুষ প্রভাত পর্য্যন্ত তাঁহার সহিত মল্লযুদ্ধ করিলেন; কিন্তু তাঁহাকে জয় করিতে পারিলেন না দেখিয়া, তিনি যাকোবের শ্রোণিফলকে আঘাত করিলেন। তাঁহার সহিত এইরূপ মল্লযুদ্ধ করাতে যাকোবের ঊরুফলক স্থানচ্যুত হইল। পরে সেই পুরুষ কহিলেন, আমাকে ছাড়, কেননা প্রভাত হইল। যাকোব কহিলেন, আপনি আমাকে আশীর্ব্বাদ না করিলে আপনাকে ছাড়িব না। পুনশ্চ তিনি কহিলেন, তোমার নাম কি? তিনি উত্তর করিলেন, যাকোব। তিনি কহিলেন, তুমি যাকোব নামে আর আখ্যাত হইবে না, কিন্তু ইস্রায়েল [ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধকারী] নামে আখ্যাত হইবে; কেননা তুমি ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের সহিত যুদ্ধ করিয়া জয়ী হইয়াছ। তখন যাকোব জিজ্ঞাসা করিয়া কহিলেন, বিনয় করি, আপনার নাম কি? বলুন। তিনি বলিলেন, কি জন্য আমার নাম জিজ্ঞাসা কর? পরে তথায় যাকোবকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। তখন যাকোব সেই স্থানের নাম পনূয়েল [ঈশ্বরের মুখ] রাখিলেন; কেননা তিনি কহিলেন, আমি ঈশ্বরকে সম্মুখাসম্মুখি হইয়া দেখিলাম, তথাপি আমার প্রাণ বাঁচিল। পরে তিনি পনূয়েল পার হইলে সুর্য্যোদয় হইল। আর তিনি ঊরুতে খোঁড়াইতে লাগিলেন। এই কারণ ইস্রায়েল সন্তানেরা অদ্যাপি শ্রোণিফলকের উপরিস্থ ঊরুসন্ধির শিরা ভোজন করে না, কেননা তিনি যাকোবের শ্রোণিফলক অর্থাৎ ঊরুসন্ধির শিরা স্পর্শ করিয়াছিলেন। পরে যাকোব চক্ষু তুলিয়া চাহিলেন, আর দেখ, এষৌ আসিতেছেন, ও তাঁহার সহিত চারি শত লোক। তখন তিনি বালকদিগকে বিভাগ করিয়া লেয়াকে, রাহেলকে ও দুই দাসীকে সমর্পণ করিলেন; সকলের অগ্রে দুই দাসী ও তাহাদের সন্তানদিগকে, তৎপশ্চাৎ লেয়া ও তাঁহার সন্তানদিগকে, সকলের পশ্চাৎ রাহেল ও যোষেফকে রাখিলেন। পরে আপনি সকলের অগ্রে গিয়া সাত বার ভূমিতে প্রণিপাত করিতে করিতে আপন ভ্রাতার নিকটে উপস্থিত হইলেন। তখন এষৌ তাঁহার সঙ্গে দেখা করিতে দৌড়িয়া আসিয়া তাঁহার গলা ধরিয়া আলিঙ্গন ও চুম্বন করিলেন, এবং উভয়েই রোদন করিলেন। পরে এষৌ চক্ষু তুলিয়া নারীগণকে ও বালকগণকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহারা তোমার কে? তিনি কহিলেন, ঈশ্বর অনুগ্রহ করিয়া আপনার দাসকে এই সকল সন্তান দিয়াছেন। তখন দাসীরা ও তাহাদের সন্তানগণ নিকটে আসিয়া প্রণিপাত করিল; পরে লেয়া ও তাঁহার সন্তানগণ নিকটে আসিয়া প্রণিপাত করিলেন; শেষে যোষেফ ও রাহেল নিকটে আসিয়া প্রণিপাত করিলেন। পরে এষৌ জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি যে সকল সমারোহের সহিত মিলিলাম, সে সমস্ত কিসের নিমিত্ত? তিনি কহিলেন, প্রভুর দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইবার জন্য। তখন এষৌ কহিলেন, আমার যথেষ্ট আছে, ভাই, তোমার যাহা তাহা তোমার থাকুক। যাকোব কহিলেন, তাহা নয়, বিনয় করি, আমি যদি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে আমার হস্ত হইতে উপঢৌকন গ্রহণ করুন; কেননা আমি ঈশ্বরের মুখ দর্শনের ন্যায় আপনার মুখ দর্শন করিলাম, আপনিও আমার প্রতি প্রসন্ন হইলেন। বিনয় করি, আপনার কাছে যে উপঢৌকন আনা হইয়াছে, তাহা গ্রহণ করুন; কেননা ঈশ্বর আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন, এবং আমার সকলই আছে। এইরূপ সাধ্যসাধনা করিলে এষৌ তাহা গ্রহণ করিলেন। পরে এষৌ কহিলেন, আইস, আমরা যাই; আমি তোমার অগ্রে অগ্রে যাইব। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমার প্রভু জানেন, এই বালকগণ কোমল, এবং দুগ্ধবতী মেষী ও গাভী সকল আমার সঙ্গে আছে; এক দিন মাত্র বেগে চালাইলে সকল পালই মরিবে। নিবেদন করি, হে আমার প্রভু, আপনি আপন দাসের অগ্রে গমন করুন; আর আমি যাবৎ সেয়ীরে আমার প্রভুর নিকটে উপস্থিত না হই, তাবৎ আমার অগ্রবর্ত্তী পশুগণের চলিবার শক্তি অনুসারে এবং এই বালকগণের চলিবার শক্তি অনুসারে ধীরে ধীরে চালাই। এষৌ কহিলেন, তবে আমার সঙ্গী কতক লোক তোমার নিকটে রাখিয়া যাই। তিনি কহিলেন, তাহাতেই বা প্রয়োজন কি? আমার প্রভুর দৃষ্টিতে আমি অনুগ্রহ পাইলেই হইল। আর এষৌ সেই দিন সেয়ীরের পথে ফিরিয়া গেলেন। কিন্তু যাকোব সুক্কোতে গমন করিয়া আপনার জন্য গৃহ ও পশুদের জন্য কয়েকটী কুটীর নির্ম্মাণ করিলেন, এই জন্য সেই স্থান সুক্কোৎ [কুটীর সকল] নাম আখ্যাত আছে। পরে যাকোব পদ্দন্‌-অরাম হইতে আসিয়া, কুশলে কনান দেশস্থ শিখিমের নগরে উপস্থিত হইয়া, নগরের বাহিরে তাম্বু স্থাপন করিলেন। পরে শিখিমের পিতা যে হমোর, তাহার সন্তানদিগকে রৌপ্যের এক শত কসীতা [মুদ্রা] দিয়া তিনি আপন তাম্বু স্থাপনের ভূমিখণ্ড ক্রয় করিলেন; এবং তথায় এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়া তাহার নাম এল্-ইলোহে-ইস্রায়েল [ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর] রাখিলেন। আর লেয়ার কন্যা দীণা, যাহাকে তিনি যাকোবের জন্য প্রসব করিয়াছিলেন, সেই দেশের কন্যাদের সঙ্গে দেখা করিতে বাহিরে গেল। আর হিব্বীয় হমোর নামক দেশাধিপতির পুত্র শিখিম তাহাকে দেখিতে পাইল, এবং তাহাকে হরণ করিয়া তাহার সহিত শয়ন করিল, তাহাকে ভ্রষ্ট করিল। আর যাকোবের কন্যা দীণার প্রতি তাহার প্রাণ অনুরক্ত হওয়াতে সে সেই যুবতীকে প্রেম করিল ও তাহাকে মিষ্ট কথা বলিল। পরে শিখিম আপন পিতা হমোরকে কহিল, তুমি আমার সহিত বিবাহ দিবার জন্য এই কন্যাকে গ্রহণ কর। আর যাকোব শুনিলেন, সে তাঁহার কন্যা দীণাকে ভ্রষ্ট করিয়াছে; ঐ সময়ে তাঁহার পুত্রগণ মাঠে পশুপালের সঙ্গে ছিল; আর যাকোব তাহাদের আগমন পর্য্যন্ত মৌনী থাকিলেন। পরে শিখিমের পিতা হমোর যাকোবের সহিত কথোপকথন করিতে গেল। যাকোবের পুত্রগণও ঐ সংবাদ পাইয়া মাঠ হইতে আসিয়াছিল; তাহারা ক্ষুব্ধ ও অতি ক্রোধান্বিত হইয়াছিল, কেননা যাকোবের কন্যার সহিত শয়ন করাতে শিখিম ইস্রায়েলের মধ্যে মূঢ়তার ক্রিয়া ও অকর্ত্তব্য কর্ম্ম করিয়াছিল। তখন হমোর তাহাদের সহিত কথোপকথন করিয়া কহিল, তোমাদের সেই কন্যার প্রতি আমার পুত্র শিখিমের প্রাণ আসক্ত হইয়াছে; নিবেদন করি, আমার পুত্রের সহিত তাহার বিবাহ দেও। এবং আমাদের সহিত কুটুম্বতা কর; তোমাদের কন্যাগণ আমাদিগকে দান কর, এবং আমাদের কন্যাদিগকে তোমরা গ্রহণ কর। আর আমাদের সহিত বাস কর; এই দেশ তোমাদের সম্মুখে রহিল, তোমরা এখানে বসতি ও বাণিজ্য কর, এখানে অধিকার গ্রহণ কর। আর শিখিম দীণার পিতাকে ও ভ্রাতৃগণকে কহিল, আমার প্রতি তোমাদের অনুগ্রহদৃষ্টি হউক; তাহা হইলে যাহা বলিবে, তাহাই দিব। যৌতুক ও দান যত অধিক চাহিবে, তোমাদের কথানুসারে তাহাই দিব; কোন মতে আমার সহিত ঐ কন্যার বিবাহ দেও। কিন্তু সে তাহাদের ভগিনী দীণাকে ভ্রষ্ট করিয়াছিল বলিয়া যাকোবের পুত্রগণ ছলপূর্ব্বক আলাপ করিয়া শিখিমকে ও তাহার পিতা হমোরকে উত্তর দিল; তাহারা তাহাদিগকে কহিল, অচ্ছিন্নত্বক লোককে যে আমাদের ভগিনী দিই, এমন কর্ম্ম আমরা করিতে পারি না, করিলে আমাদের দুর্নাম হইবে। কেবল এই কর্ম্মটী করিলে আমরা তোমাদের কথায় সম্মত হইব; আমাদের ন্যায় তোমরা প্রত্যেক পুরুষ যদি ছিন্নত্বক হও, তবে আমরা তোমাদিগকে আপনাদের কন্যাগণ দিব, এবং তোমাদের কন্যাগণকে গ্রহণ করিব, ও তোমাদের সহিত বাস করিয়া এক জাতি হইব। কিন্তু যদি ত্বক্‌ছেদের বিষয়ে আমাদের কথা না শুন, তবে আমরা আপনাদের ঐ কন্যাকে লইয়া চলিয়া যাইব। তখন তাহাদের এই কথায় হমোর ও তাহার পুত্র শিখিম সন্তুষ্ট হইল। আর সেই যুবা অবিলম্বে সেই কর্ম্ম করিল, কেননা সে যাকোবের কন্যাতে প্রীত হইয়াছিল, আর সে আপন পিতৃকুলে সর্ব্বাপেক্ষা সম্ভ্রান্ত ছিল। পরে হমোর ও তাহার পুত্র শিখিম আপন নগরের দ্বারে আসিয়া নগরনিবাসীদের সহিত কথোপকথন করিয়া কহিল, সেই লোকেরা আমাদের সহিত নির্ব্বিরোধে রহিয়াছে; অতএব তাহারা এই দেশে বাস ও বাণিজ্য করুক; কেননা দেখ, তাহাদের সম্মুখে দেশটী সুপ্রশস্ত; আইস, আমরা তাহাদের কন্যাগণকে গ্রহণ করি, ও আমাদের কন্যাগণ তাহাদিগকে দিই। কিন্তু তাহাদের এই এক পণ আছে, আমাদের মধ্যে প্রত্যেক পুরুষ যদি তাহাদের মত ছিন্নত্বক হয়, তবে তাহারা আমাদের সহিত বাস করিয়া এক জাতি হইতে সম্মত আছে। আর তাহাদের ধন, সম্পত্তি ও পশু সকল কি আমাদের হইবে না? আমরা তাহাদের কথায় সম্মত হইলেই তাহারা আমাদের সহিত বাস করিবে। তখন হমোরের ও তাহার পুত্র শিখিমের কথায় তাহার নগরের দ্বার দিয়া যে সকল লোক বাহিরে যাইত, তাহারা সম্মত হইল, আর তাহার নগরদ্বার দিয়া যে সকল পুরুষ বাহিরে যাইত, তাহাদের ত্বক‌্ছেদ করা হইল। পরে তৃতীয় দিবসে তাহারা পীড়িত হইলে দীণার সহোদর শিমিয়োন ও লেবি, যাকোবের এই দুই পুত্র আপন আপন খড়গ গ্রহণ করিয়া নির্ভয়ে নগর আক্রমণ করতঃ সকল পুরুষকে বধ করিল। এবং হমোর ও তাহার পুত্র শিখিমকে খড়গাঘাতে বধ করিয়া শিখিমের বাটী হইতে দীণাকে লইয়া চলিয়া আসিল। উহারা তাহাদের ভগিনীকে ভ্রষ্ট করিয়াছিল, এই জন্য যাকোবের পুত্রগণ হত লোকদের নিকটে গিয়া নগর লুট করিল। তাহারা উহাদের মেষ, গোরু ও গর্দ্দভ সকল এবং নগরস্থ ও ক্ষেত্রস্থ যাবতীয় দ্রব্য হরণ করিল; আর উহাদের শিশু ও স্ত্রীগণকে বন্দি করিয়া উহাদের সমস্ত ধন ও গৃহের সর্ব্বস্ব লুট করিল। তখন যাকোব শিমিয়োন ও লেবিকে কহিলেন, তোমরা এই দেশনিবাসী কনানীয় ও পরিষীয়দের নিকটে আমাকে দুর্গন্ধস্বরূপ করিয়া ব্যাকুল করিলে; আমার লোক অল্প, তাহারা আমার বিরুদ্ধে একত্র ইহয়া আমাকে আঘাত করিবে; আর আমি সপরিবারে বিনষ্ট হইব। তাহারা উত্তর করিল, যেমন বেশ্যার সহিত, তেমনি আমাদের ভগিনীর সহিত ব্যবহার করা কি তাহার উচিত ছিল? পরে ঈশ্বর যাকোবকে কহিলেন, তুমি উঠ, বৈথেলে গিয়া সে স্থানে বাস কর; এবং তোমার ভ্রাতা এষৌর সম্মুখ হইতে তোমার পলায়নকালে যে ঈশ্বর তোমাকে দর্শন দিয়াছিলেন, তাঁহার উদ্দেশে সেই স্থানে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ কর। তখন যাকোব আপন পরিজন ও সঙ্গী লোক সকলকে কহিলেন, তোমাদের কাছে যে সকল ইতর দেবতা আছে, তাহাদিগকে দূর কর, এবং শুচি হও, ও অন্য বস্ত্র পর। আর আইস, আমরা উঠিয়া বৈথেলে যাই; যে ঈশ্বর আমার সঙ্কটের দিনে আমাকে প্রার্থনার উত্তর দিয়াছিলেন, এবং আমার গমনপথে সহবর্ত্তী ছিলেন, তাঁহার উদ্দেশে আমি সেই স্থানে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিব। তাহাতে তাহারা আপনাদের হস্তগত ইতর দেবতা ও কর্ণকুণ্ডল সকল যাকোবকে দিল, এবং তিনি ঐ সকল শিখিমের নিকটবর্ত্তী এলা বৃক্ষের তলে পুঁতিয়া রাখিলেন। পরে তাঁহারা তথা হইতে যাত্রা করিলেন। তখন চারি দিকের নগরসমূহে ঈশ্বর হইতে ত্রাস উপস্থিত হইল, তাই তথাকার লোকেরা যাকোবের পুত্রদের পশ্চাৎ ধাবমান হইল না। পরে যাকোব ও তাঁহার সঙ্গীরা সকলে কনান দেশস্থ লূসে অর্থাৎ বৈথেলে উপস্থিত হইলেন। তথায় তিনি এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়া সেই স্থানের নাম এল্-বৈথেল [বৈথেলের ঈশ্বর] রাখিলেন; কারণ ভ্রাতার সম্মুখ হইতে তাঁহার পলায়নকালে ঈশ্বর সেই স্থানে তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন। আর রিবিকার দবোরা নাম্নী ধাত্রীর মৃত্যু হইল, এবং বৈথেলের অধঃস্থিত অলোন বৃক্ষের তলে তাহার কবর হইল, এবং সেই স্থানের নাম অলোন্-বাখুৎ [রোদন-বৃক্ষ] হইল। পদ্দন্-অরাম হইতে যাকোব ফিরিয়া আসিলে ঈশ্বর তাঁহাকে পুনর্ব্বার দর্শন দিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন। ফলতঃ ঈশ্বর তাঁহাকে কহিলেন, তোমার নাম যাকোব; লোকে তোমাকে আর যাকোব বলিবে না, তোমার নাম ইস্রায়েল হইবে; আর তিনি তাঁহার নাম ইস্রায়েল রাখিলেন। ঈশ্বর তাঁহাকে আরও কহিলেন, আমিই সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর, তুমি প্রজাবান্ ও বহুবংশ হও; তোমা হইতে এক জাতি, এমন কি, জাতিসমাজ উৎপন্ন হইবে, আর তোমার কটি হইতে রাজগণ উৎপন্ন হইবে। আর আমি অব্রাহামকে ও ইস্‌হাককে যে দেশ দান করিয়াছি, সেই দেশ তোমাকে ও তোমার ভাবী বংশকে দিব। সেই স্থানে তাঁহার সহিত কথোপকথন করিয়া ঈশ্বর তাঁহার নিকট হইতে ঊর্দ্ধগমন করিলেন। আর যাকোব সেই কথোপকথন স্থানে এক স্তম্ভ, প্রস্তরের স্তম্ভ, স্থাপন করিয়া তাহার উপরে পেয় নৈবেদ্য উৎসর্গ করিলেন ও তৈল ঢালিয়া দিলেন। এবং যে স্থানে ঈশ্বর তাঁহার সহিত কথা কহিলেন, যাকোব সেই স্থানের নাম বৈথেল রাখিলেন। পরে তাঁহারা বৈথেল হইতে প্রস্থান করিলেন, আর ইফ্রাথে উপস্থিত হইবার অল্প পথ অবশিষ্ট থাকিতে রাহেলের প্রসব-বেদনা হইল; এবং তাঁহার প্রসব করিতে বড় কষ্ট হইল। আর প্রসব-ব্যথা কঠিন হইলে ধাত্রী তাঁহাকে কহিল, ভয় করিও না, কারণ এ বারও তোমার পুত্রসন্তান হইবে। পরে তাঁহার মৃত্যু হইল, আর প্রাণবিয়োগ সময়ে তিনি পুত্রের নাম বিনোনী [আমার কষ্টের পুত্র] রাখিলেন, কিন্তু তাহার পিতা তাহার নাম বিন্যামীন [দক্ষিণ হস্তের পুত্র] রাখিলেন। এইরূপে রাহেলের মৃত্যু হইল, এবং ইফ্রাথ্ অর্থাৎ বৈৎলেহমের পথের পার্শ্বে তাঁহার কবর হইল। পরে যাকোব তাঁহার কবরের উপরে এক স্তম্ভ স্থাপন করিলেন, রাহেলের সেই কবর-স্তম্ভ অদ্যাপি আছে। পরে ইস্রায়েল তথা হইতে যাত্রা করিলেন, এবং মিগ্‌দল-এদরের এপার্শ্বে তাম্বু স্থাপন করিলেন। সেই দেশে ইস্রায়েলের অবস্থিতি কালে রূবেণ গিয়া আপন পিতার বিল্‌হা নাম্নী উপপত্নীর সহিত শয়ন করিল, এবং ইস্রায়েল তাহা শুনিতে পাইলেন। যাকোবের দ্বাদশ পুত্র। লেয়ার সন্তান; যাকোবের জ্যেষ্ঠ পুত্র রূবেণ, এবং শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন। রাহেলের সন্তান; যোষেফ ও বিন্যামীন। রাহেলের দাসী বিল্‌হার সন্তান; দান ও নপ্তালি। লেয়ার দাসী সিল্পার সন্তান; গাদ ও আশের। ইহারা যাকোবের পুত্র, পদ্দন্‌-অরামে জন্মে। পরে কিরিয়থর্ব্বের অর্থাৎ হিব্রোণের নিকটবর্ত্তী মম্রি নামক যে স্থানে অব্রাহাম ও ইস্‌হাক প্রবাস করিয়াছিলেন, সেই স্থানে যাকোব আপন পিতা ইস্‌হাকের নিকটে উপস্থিত হইলেন। ইস্‌হাকের বয়স এক শত আশী বৎসর হইয়াছিল। পরে ইস্‌হাক বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইয়া প্রাণত্যাগ করিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহিত হইলেন; এবং তাঁহার পুত্র এষৌ ও যাকোব তাঁহার কবর দিলেন। এষৌর অর্থাৎ ইদোমের বংশ-বৃত্তান্ত এই। এষৌ কনানীয়দের দুই কন্যাকে, অর্থাৎ হিত্তীয় এলোনের কন্যা আদাকে, ও হিব্বীয় সিবিয়োনের পৌত্রী অনার কন্যা অহলীবামাকে, তদ্ভিন্ন নবায়োতের ভগিনীকে, অর্থাৎ ইশ্মায়েলের বাসমৎ নাম্নী কন্যাকে বিবাহ করিলেন। আর এষৌর জন্য আদা ইলীফসকে, ও বাসমৎরূয়েলকে প্রসব করে। এবং অহলীবামা যিয়ূশ, যালম ও কোরহকে প্রসব করে; ইহারা এষৌর পুত্র, কনান দেশে জন্মে। পরে এষৌ আপন স্ত্রী পুত্র কন্যাগণ ও গৃহস্থিত অন্য সকল প্রাণীকে, এবং আপন পশ্বাদি সমস্ত ধন ও কনান দেশে উপার্জ্জিত সমস্ত সম্পত্তি লইয়া যাকোব ভ্রাতার সম্মুখ হইতে আর এক দেশে প্রস্থান করিলেন। কেননা তাঁহাদের প্রচুর সম্পত্তি থাকাতে একত্র বাস সম্পোষ্য হইল না, এবং পশুধন প্রযুক্ত তাঁহাদের সেই প্রবাস দেশে স্থান কুলাইল না। এইরূপে এষৌ সেয়ীর পর্ব্বতে বাস করিলেন; তিনিই ইদোম। সেয়ীর পর্ব্বতস্থ ইদোমীয়দের পূর্ব্বপুরুষ এষৌর বংশ-বৃত্তান্ত এই। এষৌর সন্তানদের নাম এই এই। এষৌর স্ত্রী আদার পুত্র ইলীফস, ও এষৌর স্ত্রী বাসমতের পুত্র রূয়েল। আর ইলীফসের পুত্র তৈমন, ওমার, সফো, গয়িতম ও কনস। আর এষৌর পুত্র ইলীফসের তিম্না নাম্নী এক উপপত্নী ছিল, সে ইলীফসের জন্য অমালেককে প্রসব করিল। ইহারা এষৌর স্ত্রী আদার সন্তান। আর রূয়েলের পুত্র নহৎ, সেরহ, শম্ম ও মিসা; ইহারা এষৌর স্ত্রী বাসমতের সন্তান। আর সিবিয়োনের পৌত্রী অনার কন্যা যে অহলীবামা এষৌর স্ত্রী ছিল, তাহার সন্তান যিয়ূশ, যালম ও কোরহ। এষৌর সন্তানদের দলপতিগণ এই। এষৌর জ্যেষ্ঠ পুত্র যে ইলীফস, তাহার পুত্র দলপতি তৈমন, দলপতি ওমার, দলপতি সফো, দলপতি কনস, দলপতি কোরহ, দলপতি গয়িতম ও দলপতি অমালেক; ইদোম দেশের ইলীফস বংশীয় এই দলপতিগণ আদার সন্তান। এষৌর পুত্র রূয়েলের সন্তান দলপতি নহৎ, দলপতি সেরহ, দলপতি শম্ম ও দলপতি মিসা; ইদোম দেশের রূয়েল বংশীয় এই দলপতিগণ এষৌর স্ত্রী বাসমতের সন্তান। আর এষৌর স্ত্রী অহলীবামার সন্তান দলপতি যিয়ুশ, দলপতি যালম ও দলপতি কোরহ; অনার কন্যা যে অহলীবামা এষৌর স্ত্রী ছিল, এই দলপতিরা তাহার সন্তান। ইহারা এষৌর অর্থাৎ ইদোমের সন্তান, ও ইহারা তাহাদের দলপতি। তদ্দেশনিবাসী হোরীয় সেয়ীরের সন্তান লোটন, শোবল, শিবিয়োন, অনা, দিশোন, এৎসর ও দীশন; সেয়ীরের এই পুত্রগণ ইদোম দেশের হোরীয় বংশোদ্ভব দলপতি ছিলেন। লোটনের পুত্র হোরি ও হেমম, এবং তিম্না লোটনের ভগিনী ছিল। আর শোবলের পুত্র অল্‌বন, মানহৎ, এবল, শফো ও ওনম। আর সিবিয়োনের পুত্র অয়া ও অনা; এই অনা আপন পিতা সিবিয়োনের গর্দ্দভ চরাইবার সময়ে প্রান্তরে উষ্ণজলের উনুই আবিষ্কার করিয়াছিল। অনার পুত্র দিশোন ও অনার কন্যা অহলীবামা। আর দিশোনের পুত্র হিম্‌দন, ইশ্‌বন, যিত্রণ ও করাণ। আর এৎসরের পুত্র বিল্‌হন, সাবন ও আকন। আর দীশনের পুত্র ঊষ ও অরাণ। হোরীয় বংশোদ্ভব দলপতিগণ এই; দলপতি লোটন দলপতি শোবল, দলপতি সিবিয়োন, দলপতি অনা, দলপতি দিশোন, দলপতি এৎসর ও দলপতি দীশন। ইহাঁরা সেয়ীর দেশের হোরীয় বংশোদ্ভব দলপতি। ইস্রায়েল-সন্তানদের উপরে কোন রাজা রাজত্ব করিবার পূর্ব্বে ইহাঁরা ইদোম দেশের রাজা ছিলেন। বিয়োরের পুত্র বেলা ইদোম দেশে রাজত্ব করেন, তাঁহার রাজধানীর নাম দিন্‌হাবা। আর বেলা মরিলে পর তাঁহার পদে বস্রা-নিবাসী সেরহের পুত্র যোবব রাজত্ব করেন। আর যোবব মরিলে পর তৈমন দেশীয় হূশম তাঁহার পদে রাজত্ব করেন। আর হূশম মরিলে পর বদদের পুত্র যে হদদ মোয়াব ক্ষেত্রে মিদিয়নকে আঘাত করিয়াছিলেন, তিনি তাঁহার পদে রাজত্ব করেন; তাঁহার রাজধানীর নাম অবীৎ। আর হদদ মরিলে পর মস্রেকা-নিবাসী সম্ল তাঁহার পদে রাজত্ব করেন। আর সম্ল মরিলে পর [ফরাৎ] নদীর নিকটবর্ত্তী রহোবোৎ-নিবাসী শৌল তাঁহার পদে রাজত্ব করেন। আর শৌল মরিলে পর অক্‌বোরের পুত্র বাল্‌হানন তাঁহার পদে রাজত্ব করেন। আর অক্‌বোরের পুত্র বাল্‌হানন মরিলে পর হদর তাঁহার পদে রাজত্ব করেন; তাঁহার রাজধানীর নাম পায়ূ, ও ভার্য্যার নাম মহেটবেল, সে মট্রেদের কন্যা ও মেষাহবের দৌহিত্রী। গোষ্ঠী, স্থান ও নাম ভেদে এষৌ হইতে উৎপন্ন যে সকল দলপতি ছিলেন, তাঁহাদের নাম এই এই; দলপতি তিম্ন, দলপতি অল্‌বা, দলপতি যিথেৎ, দলপতি অহলীবামা, দলপতি এলা, দলপতি পীনোন, দলপতি কনস, দলপতি তৈমন, দলপতি মিব্‌সর, দলপতি মগ্দীয়েল ও দলপতি ঈরম। ইহাঁরা আপন আপন অধিকার দেশে, আপন আপন বসতিস্থান ভেদে ইদোমের দলপতি ছিলেন। ইদোমীয়দের আদিপুরুষ এষৌর বৃত্তান্ত সমাপ্ত। তৎকালে যাকোব আপন পিতার প্রবাস-দেশে, কনান দেশে বাস করিতেছিলেন। যাকোবের বংশ-বৃত্তান্ত এই। যোষেফ সতের বৎসর বয়সে আপন ভ্রাতৃগণের সহিত পশুপাল চরাইত; সে বাল্যকালে আপন পিতৃভার্য্যা বিল্‌হার ও সিল্পার পুত্রগণের সহচর ছিল, এবং যোষেফ তাহাদের কুব্যবহারের বার্ত্তা পিতার নিকটে আনিত। যোষেফ ইস্রায়েলের বৃদ্ধাবস্থার সন্তান, এই জন্য ইস্রায়েল সকল পুত্র অপেক্ষা তাহাকে অধিক ভাল বাসিতেন, এবং তাহাকে একখানি চোগা প্রস্তুত করিয়া দিয়াছিলেন। কিন্তু পিতা তাহার সকল ভ্রাতা অপেক্ষা তাহাকে অধিক ভাল বাসেন, ইহা দেখিয়া তাহার ভ্রাতৃগণ তাহাকে দ্বেষ করিত, তাহার সঙ্গে প্রণয়ভাবে কথা কহিতে পারিত না। আর যোষেফ স্বপ্ন দেখিয়া আপন ভ্রাতাদিগকে তাহা কহিল; ইহাতে তাহারা তাহাকে আরও অধিক দ্বেষ করিল। সে তাহাদিগকে কহিল, আমি এক স্বপ্ন দেখিয়াছি, নিবেদন করি, তাহা শুন। দেখ, আমরা ক্ষেত্রে আটি বাঁধিতেছিলাম, আর দেখ, আমার আটি উঠিয়া দাঁড়াইয়া রহিল, এবং দেখ, তোমাদের আটি সকল আমার আটিকে চারিদিকে ঘেরিয়া তাহার কাছে প্রণিপাত করিল। ইহাতে তাহার ভ্রাতৃগণ তাহাকে কহিল, তুই কি বাস্তবিক আমাদের রাজা হইবি? আমাদের উপরে বাস্তবিক কর্ত্তৃত্ব করিবি? ফলে তাহারা তাহার স্বপ্ন ও তাহার বাক্য প্রযুক্ত তাহাকে আরও দ্বেষ করিল। পরে সে আরও এক স্বপ্ন দেখিয়া ভ্রাতৃগণকে তাহার বৃত্তান্ত কহিল। সে বলিল, দেখ, আমি আর এক স্বপ্ন দেখিলাম; দেখ, সূর্য্য, চন্দ্র, ও একাদশ নক্ষত্র আমাকে প্রণিপাত করিল। সে আপন পিতা ও ভ্রাতৃগণকে ইহার বৃত্তান্ত কহিল, তাহাতে তাহার পিতা তাহাকে ধম্‌কাইয়া কহিলেন, তুমি এ কেমন স্বপ্ন দেখিলে? আমি, তোমার মাতা ও তোমার ভ্রাতৃগণ, আমরা কি বাস্তবিক তোমার কাছে ভূমিতে প্রণিপাত করিতে আসিব? আর তাহার ভ্রাতৃগণ তাহার প্রতি ঈর্ষা করিল, কিন্তু তাহার পিতা সেই কথা মনে রাখিলেন। একদা তাহার ভ্রাতৃগণ পিতার পশুপাল চরাইতে শিখিমে গিয়াছিল। তখন ইস্রায়েল যোষেফকে কহিলেন, তোমার ভ্রাতৃগণ কি শিখিমে পশুপাল চরাইতেছে না? আইস, আমি তাহাদের কাছে তোমাকে পাঠাই। সে কহিল, দেখুন, এই আমি। তখন তিনি তাহাকে কহিলেন, তুমি গিয়া তোমার ভ্রাতৃগণের কুশল ও পশুপালের কুশল জানিয়া আমাকে সংবাদ আনিয়া দেও। এইরূপে তিনি হিব্রোণের তলভূমি হইতে যোষেফকে পাঠাইলে সে শিখিমে উপস্থিত হইল। তখন এক জন লোক তাহাকে দেখিতে পাইল, আর দেখ, সে প্রান্তরে ভ্রমণ করিতেছে; সেই লোকটী তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, কিসের অন্বেষণ করিতেছ? সে কহিল, আমার ভ্রাতৃগণের অন্বেষণ করিতেছি; অনুগ্রহ করিয়া আমাকে বল, তাঁহারা কোথায় পাল চরাইতেছেন। সে ব্যক্তি কহিল, তাহারা এ স্থান হইতে চলিয়া গিয়াছে, কেননা ‘চল, দোথনে যাই’, তাহাদের এই কথা শুনিয়াছিলাম। পরে যোষেফ আপন ভ্রাতাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ গিয়া দোথনে তাহাদের উদ্দেশ পাইল। তাহারা দূর হইতে তাহাকে দেখিতে পাইল, এবং সে নিকটে উপস্থিত হইবার পূর্ব্বে তাহাকে বধ করিবার জন্য ষড়যন্ত্র করিল। তাহারা পরস্পর কহিল, ঐ দেখ, স্বপ্নদর্শক মহাশয় আসিতেছেন; এখন আইস, আমরা উহাকে বধ করিয়া একটা গর্ত্তে ফেলিয়া দিই; পরে বলিব, কোন হিংস্র জন্তু তাহাকে খাইয়া ফেলিয়াছে; তাহাতে দেখিব, উহার স্বপ্নের কি হয়। রূবেণ ইহা শুনিয়া তাহাদের হস্ত হইতে তাহাকে উদ্ধার করিল, কহিল, না, আমরা উহাকে প্রাণে মারিব না। আর রূবেণ তাহাদিগকে কহিল, তোমরা রক্তপাত করিও না, উহাকে প্রান্তরের এই গর্ত্তমধ্যে ফেলিয়া দেও, কিন্তু উহার উপরে হস্ত তুলিও না। এইরূপে রূবেণ তাহাদের হস্ত হইতে তাহাকে উদ্ধার করিয়া পিতার নিকটে ফিরিয়া পাঠাইবার চেষ্টা করিল। পরে যোষেফ আপন ভ্রাতৃগণের নিকটে আসিলে তাহারা তাহার গাত্র হইতে সেই বস্ত্র, সেই চোগাখানি খুলিয়া লইল; আর তাহাকে ধরিয়া গর্ত্তমধ্যে ফেলিয়া দিল; সেই গর্ত্ত শূন্য ছিল, তাহাতে জল ছিল না। পরে তাহারা আহার করিতে বসিল; এবং চক্ষু তুলিয়া চাহিল, আর দেখ, গিলিয়দ হইতে এক দল ইশ্মায়েলীয় ব্যবসায়ী লোক আসিতেছে; তাহারা উষ্ট্রবাহনে সুগন্ধি দ্রব্য, গুগ্‌গুলু ও গন্ধরস লইয়া মিসর দেশে যাইতেছিল। তখন যিহূদা আপন ভ্রাতৃগণকে কহিল, আমাদের ভ্রাতাকে বধ করিয়া তাহার রক্ত গোপন করিলে আমাদের কি লাভ? আইস, আমরা ঐ ইশ্মায়েলীয়দের কাছে তাহাকে বিক্রয় করি, আমরা তাহার উপরে হাত তুলিব না; কেননা সে আমাদের ভ্রাতা, আমাদের মাংস। ইহাতে তাহার ভ্রাতৃগণ সম্মত হইল। পরে মিদিয়নীয় বণিকেরা নিকটে আসিলে উহারা যোষেফকে গর্ত্ত হইতে টানিয়া তুলিল; এবং বিংশতি রৌপ্যমুদ্রায় সেই ইশ্মায়েলীয়দের কাছে যোষেফকে বিক্রয় করিল; আর তাহারা যোষেফকে মিসর দেশে লইয়া গেল। পরে রূবেণ গর্ত্তের নিকটে ফিরিয়া গেল, আর দেখ, যোষেফ সেখানে নাই; তখন সে আপন বস্ত্র চিরিল, আর ভ্রাতাদের নিকটে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, যুবকটী নাই, আর আমি! আমি কোথায় যাই? পরে তাহারা যোষেফের বস্ত্র লইয়া একটা ছাগ মারিয়া তাহার রক্তে তাহা ডুবাইল; আর লোক পাঠাইয়া সেই চোগাখানি পিতার নিকটে উপস্থিত করিয়া কহিল, আমরা এইমাত্র পাইলাম, নিরীক্ষণ করিয়া দেখ, ইহা তোমার পুত্রের বস্ত্র কি না? তিনি চিনিতে পারিয়া কহিলেন, এ ত আমার পুত্রেরই বস্ত্র; কোন হিংস্র জন্তু তাহাকে খাইয়া ফেলিয়াছে, যোষেফ অবশ্য খণ্ড খণ্ড হইয়াছে। তখন যাকোব আপন বস্ত্র চিরিয়া কটিদেশে চট পরিধান করিয়া পুত্রের জন্য অনেক দিন পর্য্যন্ত শোক করিলেন। আর তাঁহার সমস্ত পুত্রকন্যা উঠিয়া তাঁহাকে সান্ত্বনা করিতে যত্ন করিলেও তিনি প্রবোধ না মানিয়া কহিলেন, আমি শোক করিতে করিতে পুত্রের নিকটে পাতালে নামিব। এইরূপে তাহার পিতা তাহার জন্য রোদন করিলেন। আর ঐ মিদিয়নীয়েরা যোষেফকে মিসরে লইয়া গিয়া ফরৌণের কর্ম্মচারী রক্ষক-সেনাপতি পোটীফরের নিকটে বিক্রয় করিল। ঐ সময়ে যিহূদা আপন ভ্রাতৃগণের নিকট হইতে প্রস্থান করিয়া অদুল্লমীয় হীরা নামে একটি লোকের কাছে গেল। সে স্থানে শূয় নামে এক কনানীয় পুরুষের কন্যাকে দেখিয়া যিহূদা তাহাকে গ্রহণ করিয়া তাহার কাছে গমন করিল। পরে সে গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিল, ও যিহূদা তাহার নাম এর রাখিল। পরে পুনর্ব্বার তাহার গর্ভ হইলে সে পুত্র প্রসব করিয়া তাহার নাম ওনন রাখিল। পনর্ব্বার তাহার গর্ভ হইলে সে পুত্র প্রসব করিয়া তাহার নাম শেলা রাখিল; ইহার জন্মকালে যিহূদা কষীবে ছিল। পরে যিহূদা তামর নাম্নী একটী কন্যাকে আনিয়া আপন জ্যেষ্ঠ পুত্র এরের সঙ্গে বিবাহ দিল। কিন্তু যিহূদার জ্যেষ্ঠ পুত্র এর সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দুষ্ট হওয়াতে সদাপ্রভু তাহাকে মারিয়া ফেলিলেন। তাহাতে যিহূদা ওননকে কহিল, তুমি আপন ভ্রাতার স্ত্রীর কাছে গমন কর, ও তাহার প্রতি দেবরের কর্ত্তব্য সাধন করিয়া নিজ ভ্রাতার জন্য বংশ উৎপন্ন কর। কিন্তু ঐ বংশ আপনার হইবে না, ইহা বুঝিয়া ওনন ভ্রাতৃজায়ার কাছে গমন করিলেও ভ্রাতৃবংশ উৎপন্ন করিবার অনিচ্ছাতে ভূমিতে রেতঃপাত করিল। তাহার সেই কার্য্য সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ হওয়াতে তিনি তাহাকেও বধ করিলেন। তখন যিহূদা পুত্রবধূ তামরকে কহিল, যে পর্য্যন্ত আমার পুত্র শেলা বড় না হয়, তাবৎ তুমি আপন পিত্রালয়ে গিয়া বিধবাই থাক। কেননা সে বলিল, পাছে ভ্রাতাদের ন্যায় সেও মরে। অতএব তামর পিত্রালয়ে গিয়া বাস করিল। পরে বহু দিবস গত হইলে শূয়ের কন্যা যিহূদার স্ত্রী মরিয়া গেল, পরে যিহূদা সান্ত্বনাযুক্ত হইয়া আপন বন্ধু অদুল্লমীয় হীরার সহিত তিম্নায়, যাহারা তাঁহার মেষগণের লোম কাটিতেছিল, তাহাদের নিকটে চলিল। তখন কেহ তামরকে বলিল, দেখ, তোমার শ্বশুর আপন মেষগণের লোম কাটিতে তিম্নায় যাইতেছেন। তখন সে বৈধব্য বস্ত্র ত্যাগ করিয়া আবরণ দ্বারা আপনাকে আচ্ছাদন করিল, ও গায়ে কাপড় দিয়া তিম্নার পথের পার্শ্বস্থিত ঐনয়িমের প্রবেশস্থানে বসিয়া রহিল; কারণ সে দেখিল, শেলা বড় হইলেও তাহার সহিত তাহার বিবাহ হইল না। পরে যিহূদা তাহাকে দেখিয়া বেশ্যা মনে করিল, কেননা সে মুখ আচ্ছাদন করিয়াছিল। অতএব সে পুত্রবধূকে চিনিতে না পারাতে পথের পার্শ্বে তাহার নিকটে গিয়া কহিল, আইস, আমি তোমার কাছে গমন করি। তামর কহিল, আমার কাছে আসিবার জন্য আমাকে কি দিবে? সে কহিল, পাল হইতে একটী ছাগবৎস পাঠাইয়া দিব। তামর কহিল, যাবৎ তাহা না পাঠাও, তাবৎ আমার কাছে কি কিছু বন্ধক রাখিবে? সে কহিল, কি বন্ধক রাখিব? তামর কহিল, তোমার এই মোহর ও সূত্র ও হস্তের যষ্টি। তখন সে তাহাকে সেইগুলি দিয়া তাহার কাছে গমন করিল; তাহাতে সে তাহা হইতে গর্ভবতী হইল। পরে সে উঠিয়া চলিয়া গেল, এবং সেই আবরণ ত্যাগ করিয়া আপনার বৈধব্য বস্ত্র পরিধান করিল। পরে যিহূদা সেই স্ত্রীলোকের নিকট হইতে বন্ধক দ্রব্য লইবার জন্য আপন অদুল্লমীয় বন্ধুর হাতে ছাগবৎসটী পাঠাইয়া দিল, কিন্তু সে তাহাকে পাইল না। তখন সে তথাকার লোকদিগকে জিজ্ঞাসা করিল, ঐনয়িমে পথের পার্শ্বে যে বেশ্যা ছিল, সে কোথায়? তাহারা কহিল, এ স্থানে কোন বেশ্যা আইসে নাই। পরে সে যিহূদার নিকটে ফিরিয়া গিয়া কহিল, আমি তাহাকে পাইলাম না, এবং তথাকার লোকেরাও বলিল, এ স্থানে কোন বেশ্যা আইসে নাই। তখন যিহূদা কহিল, তাহার কাছে যাহা আছে, সে তাহা রাখুক, নতুবা আমরা লজ্জায় পড়িব। দেখ, আমি এই ছাগবৎসটী পাঠাইয়াছিলাম, কিন্তু তুমি তাহাকে পাইলে না। প্রায় তিন মাস পরে কেহ যিহূদাকে কহিল, তোমার পুত্রবধূ তামর ব্যভিচারিণী হইয়াছে, আরও দেখ, ব্যভিচারহেতু তাহার গর্ভ হইয়াছে। তখন যিহূদা কহিল, তাহাকে বাহিরে আনিয়া পোড়াইয়া দেও। পরে বাহিরে আনীত হইবার সময়ে সে শ্বশুরকে বলিয়া পাঠাইল, যাহার এই সকল বস্তু, সেই পুরুষ হইতে আমার গর্ভ হইয়াছে। সে আরও কহিল, এই মোহর, সূত্র ও যষ্টি কাহার? চিনিয়া দেখ। তখন যিহূদা সেগুলি চিনিয়া কহিল, সে আমা হইতেও অধিক ধার্ম্মিকা, কেননা আমি তাহাকে আপন পুত্র শেলাকে দিই নাই। আর যিহূদা তাহাতে আর উপগত হইল না। পরে তামরের প্রসবকাল উপস্থিত হইল, আর দেখ, তাহার উদরে যমজ সন্তান। তাহার প্রসবকালে একটী বালক হস্ত বাহির করিল; তাহাতে ধাত্রী তাহার সেই হস্ত করিয়া রক্তবর্ণ সূত্র বাঁধিয়া কহিল, এই প্রথমে ভূমিষ্ঠ হইল। কিন্তু সে আপন হস্ত টানিয়া লইলে দেখ, তাহার ভ্রাতা ভূমিষ্ঠ হইল; তখন ধাত্রী কহিল, তুমি কি প্রকারে আপনার জন্য ভেদ করিয়া আসিলে? অতএব তাহার নাম পেরস [ভেদ] হইল। পরে হস্তে রক্তবর্ণ সূত্রবদ্ধ তাহার ভ্রাতা ভূমিষ্ঠ হইলে তাহার নাম সেরহ হইল। যোষেফ মিসর দেশে আনীত হইলে পর, যে ইশ্মায়েলীয়েরা তাঁহাকে তথায় লইয়া গিয়াছিল, তাহাদের নিকটে ফরৌণের কর্ম্মচারী পোটীফর তাঁহাকে ক্রয় করিলেন; ইনি রক্ষক-সেনাপতি, এক জন মিস্রীয় লোক। আর সদাপ্রভু যোষেফের সহবর্ত্তী ছিলেন, এবং তিনি সফলকর্ম্মা হইলেন, ও আপন মিস্রীয় প্রভুর গৃহে রহিলেন। আর সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী আছেন, এবং তিনি যে কিছু করেন, সদাপ্রভু তাঁহার হস্তে তাহা সফল করিতেছেন, ইহা তাঁহার প্রভু দেখিলেন। অতএব যোষেফ তাঁহার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইলেন, ও তাঁহার পরিচারক হইলেন, এবং তিনি যোষেফকে আপন বাটীর অধ্যক্ষ করিয়া তাঁহার হস্তে আপনার সর্ব্বস্ব সমর্পণ করিলেন। যে অবধি তিনি যোষেফকে আপন বাটীর ও সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ করিলেন, সেই অবধি সদাপ্রভু যোষেফের অনুরোধে সেই মিস্রীয় ব্যক্তির বাটীর প্রতি আশীর্ব্বাদ করিলেন; বাটীতে ও ক্ষেত্রে স্থিত তাঁহার সমস্ত সম্পদের প্রতি সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদ বর্ত্তিল। অতএব তিনি যোষেফের হস্তে আপনার সর্ব্বস্বের ভার দিলেন, আপনি নিজ আহারীয় দ্রব্য ব্যতীত আর কিছুরই তত্ত্ব লইতেন না। যোষেফ রূপবান্‌ ও সুন্দর ছিলেন। এই সকল ঘটনার পর তাঁহার প্রভুর স্ত্রী যোষেফের প্রতি দৃষ্টিপাত করিল; আর তাঁহাকে কহিল, আমার সহিত শয়ন কর। কিন্তু তিনি অস্বীকার করতঃ আপন প্রভুর স্ত্রীকে কহিলেন, দেখুন, এই বাটীতে আমার হস্তে কি কি আছে, আমার প্রভু তাহা জানেন না; আমারই হস্তে সর্ব্বস্ব রাখিয়াছেন। এই বাটীতে আমা অপেক্ষা বড় কেহই নাই; তিনি সমুদয়ের মধ্যে কেবল আপনাকেই আমার অধীনা করেন নাই, কারণ আপনি তাঁহার ভার্য্যা। অতএব আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি? সে দিন দিন যোষেফকে সেই কথা কহিলেও তিনি তাহার সহিত শয়ন করিতে কিম্বা সঙ্গে থাকিতে তাহার কথায় সম্মত হইতেন না। পরে এক দিন যোষেফ কার্য্য করিবার জন্য গৃহমধ্যে গেলেন, বাটীর লোকদের মধ্যে অন্য কেহ তথায় ছিল না, তখন সে যোষেফের বস্ত্র ধরিয়া বলিল, আমার সহিত শয়ন কর; কিন্তু যোষেফ তাহার হস্তে আপন বস্ত্র ফেলিয়া বাহিরে পলাইয়া গেলেন। তখন যোষেফ তাহার হস্তে বস্ত্র ফেলিয়া বাহিরে পলাইলেন দেখিয়া, সে নিজ ঘরের লোকদিগকে ডাকিয়া কহিল, দেখ, তিনি আমাদের সহিত ঠাট্টা করিতে এক জন ইব্রীয় পুরুষকে আনিয়াছেন; সে আমার সঙ্গে শয়ন করিবার জন্য আমার নিকটে আসিয়াছিল। তাহাতে আমি চীৎকার করিয়া উঠিলাম; আমার চীৎকার শুনিয়া সে আমার নিকটে নিজ বস্ত্রখানি ফেলিয়া বাহিরে পলাইয়া গেল। আর যে পর্য্যন্ত তাঁহার কর্ত্তা ঘরে না আসিলেন, সে পর্য্যন্ত সেই স্ত্রীলোক তাঁহার বস্ত্র আপনার কাছে রাখিয়া দিল। পরে সেই বাক্যানুসারে তাঁহাকে কহিল, তুমি যে ইব্রীয় দাসকে আমাদের কাছি আনিয়াছ, সে আমার সহিত ঠাট্টা করিতে আমার কাছে আসিয়াছিল; পরে আমি চীৎকার করিয়া উঠিলে সে আমার নিকটে তাহার বস্ত্রখানি ফেলিয়া বাহিরে পলাইয়া গেল। তাঁহার প্রভু যখন আপন স্ত্রীর এই কথা শুনিলেল যে, ‘তোমার দাস আমার প্রতি এইরূপ ব্যবহার করিয়াছে’, তখন ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিলেন। অতএব যোষেফের প্রভু তাঁহাকে লইয়া কারাগারে রাখিলেন, যে স্থানে রাজার বন্দিগণ বদ্ধ থাকিত; তাহাতে তিনি সেখানে, সেই কারাগারে থাকিলেন। কিন্তু সদাপ্রভু যোষেফের সহবর্ত্তী ছিলেন, এবং তাঁহার প্রতি দয়া করিলেন; ও তাঁহাকে কারারক্ষকের দৃষ্টিতে অনুগ্রহপাত্র করিলেন। তাহাতে কারারক্ষক কারাস্থিত সমস্ত বন্দির ভার যোষেফের হস্তে সমর্পণ করিলেন, এবং তথাকার লোকদের সমস্ত কর্ম্ম যোষেফের আজ্ঞানুসারে চলিতে লাগিল। কারারক্ষক তাঁহার হস্তগত কোন বিষয়ে দৃষ্টিপাত করিতেন না, কেননা সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন, এবং তিনি যাহা কিছু করিতেন, সদাপ্রভু তাহা সফল করিতেন। ঐ সকল ঘটনার পরে মিসর-রাজের পানপাত্রবাহক ও মোদক আপনাদের প্রভু মিসর-রাজের বিরুদ্ধে দোষ করিল। তাহাতে ফরৌণ আপনার সেই দুই কর্ম্মচারীর প্রতি, ঐ প্রধান পানপাত্রবাহকের ও প্রধান মোদকের প্রতি, ক্রুদ্ধ হইলেন, এবং তাহাদিগকে বন্দি করিয়া রক্ষক-সেনাপতির বাটীতে, কারাগারে, যোষেফ যে স্থানে বদ্ধ ছিলেন, সেই স্থানে রাখিলেন। তাহাতে রক্ষক-সেনাপতি তাহাদের কাছে যোষেফকে নিযুক্ত করিলেন, আর তিনি তাহাদের পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন। এইরূপে তাহারা কিছু দিন কারাগারে রহিল। পরে মিসর-রাজের পানপাত্রবাহক ও মোদক, যাহারা কারাবদ্ধ হইয়াছিল, সেই দুই জনে এক রাত্রিতে দুই প্রকার অর্থবিশিষ্ট দুই স্বপ্ন দেখিল। আর যোষেফ প্রত্যূষে তাহাদের নিকটে আসিয়া তাহাদিগকে দেখিলেন, আর দেখ, তাহারা বিষণ্ণ। তখন তাঁহার সঙ্গে ফরৌণের ঐ যে দুই কর্মচারী তাঁহার প্রভুর বাটীতে কারাবদ্ধ ছিল, তাহাদিগকে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, অদ্য আপনাদের মুখ বিষণ্ণ কেন? তাহারা উত্তর করিল, আমরা স্বপ্ন দেখিয়াছি, কিন্তু অর্থকারক কেহ নাই। যোষেফ তাহাদিগকে কহিলেন, অর্থ করিবার শক্তি কি ঈশ্বর হইতে হয় না? বিনয় করি, স্বপ্নবৃত্তান্ত আমাকে বলুন। তখন প্রধান পানপাত্রবাহক যোষেফকে আপন স্বপ্নবৃত্তান্ত জানাইল, তাঁহাকে কহিল, আমার স্বপ্নে, দেখ, আমার সম্মুখে এক দ্রাক্ষালতা। সেই দ্রাক্ষালতার তিনটী শাখা; তাহা যেন পল্লবিত হইল ও তাহাতে পুষ্প হইল, এবং স্তবকে স্তবকে তাহার ফল হইয়া পক্ক হইল। তখন আমার হস্তে ফরৌণের পানপাত্র ছিল, আর আমি সেই দ্রাক্ষাফল লইয়া ফরৌণের পাত্রে নিঙ্গড়াইয়া ফরৌণের হস্তে সেই পাত্র দিলাম। যোষেফ তাহাকে কহিলেন, ইহার অর্থ এই; ঐ তিন শাখায় তিন দিন বুঝায়। তিন দিনের মধ্যে ফরৌণ আপনার মস্তক উঠাইয়া আপনাকে পূর্ব্বপদে নিযুক্ত করিবেন; আর আপনি পূর্ব্বরীতি অনুসারে পানপাত্রবাহক হইয়া পুনর্ব্বার ফরৌণের হস্তে পানপাত্র দিবেন। কিন্তু বিনয় করি, যখন আপনার মঙ্গল হইবে, তখন আমাকে স্মরণে রাখিবেন, এবং আমার প্রতি দয়া করিয়া ফরৌণের কাছে আমার কথা বলিয়া আমাকে এই গৃহ হইতে উদ্ধার করিবেন। কেননা ইব্রীয়দের দেশ হইতে আমাকে নিতান্তই চুরি করিয়া আনা হইয়াছে; আর এ স্থানেও আমি কিছুই করি নাই, যাহার জন্য এই কারাকূপে বদ্ধ হই। প্রধান মোদক যখন দেখিল, অর্থ ভাল, তখন সে যোষেফকে কহিল, আমিও স্বপ্ন দেখিয়াছি; দেখ, আমার মস্তকের উপরে শুক্ল পিষ্টকের তিনটী ডালী। তাহার উপরের ডালীতে ফরৌণের জন্য সকল প্রকার পক্কান্ন ছিল; আর পক্ষিগণ আমার মস্তকের উপরিস্থ ডালী হইতে তাহা লইয়া খাইয়া ফেলিল। যোষেফ উত্তর করিলেন, ইহার অর্থ এই, সেই তিন ডালীতে তিন দিন বুঝায়। তিন দিনের মধ্যে ফরৌণ আপনার দেহ হইতে মস্তক উঠাইয়া আপনাকে গাছে টাঙ্গাইয়া দিবেন, এবং পক্ষিগণ আপনার দেহ হইতে মাংস ভক্ষণ করিবে। পরে তৃতীয় দিনে ফরৌণের জন্মদিন হইল, আর তিনি আপনার সকল দাসের জন্য ভোজ প্রস্তুত করিলেন, এবং আপনার দাসগণের মধ্যে প্রধান পানপাত্রবাহকের ও প্রধান মোদকের মস্তক উঠাইলেন। তিনি প্রধান পানপাত্রবাহককে তাহার নিজ পদে পুনর্ব্বার নিযুক্ত করিলেন, তাহাতে সে ফরৌণের হস্তে পানপাত্র দিতে লাগিল; কিন্তু তিনি প্রধান মোদককে টাঙ্গাইয়া দিলেন; যেমন যোষেফ তাহাদিগকে অর্থ বলিয়াছিলেন। তথাপি প্রধান পানপাত্রবাহক যোষেফকে স্মরণ করিল না, ভুলিয়া গেল। দুই বৎসর পরে ফরৌণ স্বপ্ন দেখিলেন। দেখ, তিনি নদীকূলে দাঁড়াইয়া আছেন, আর দেখ, নদী হইতে সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভী উঠিল, ও খাগড়া বনে চরিতে লাগিল। সেগুলির পরে, দেখ, আর সাতটা কৃশ ও বিশ্রী গাভী নদী হইতে উঠিল, ও নদীর তীরে ঐ গাভীদের নিকটে দাঁড়াইল। পরে সেই কৃশ বিশ্রী গাভীরা ঐ সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভীকে খাইয়া ফেলিল। তখন ফরৌণের নিদ্রাভঙ্গ হইল। তাহার পরে তিনি নিদ্রিত হইয়া দ্বিতীয় বার স্বপ্ন দেখিলেন; দেখ, এক বোঁটাতে সাতটী স্থূলাকার উত্তম শীষ উঠিল। সেগুলির পরে, দেখ, পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত অন্য সাতটী ক্ষীণ শীষ উঠিল। আর এই ক্ষীণ শীষগুলি ঐ সাতটা স্থূলাকার পূর্ণ শীষ গ্রাস করিল। পরে ফরৌণের নিদ্রাভঙ্গ হইল, আর দেখ, উহা স্বপ্নমাত্র। পরে প্রাতঃকালে তাঁহার মন অস্থির হইল; আর তিনি লোক পাঠাইয়া মিসরের সকল মন্ত্রবেত্তা ও তথাকার সকল জ্ঞানীকে ডাকাইলেন; আর ফরৌণ তাঁহাদের কাছে সেই স্বপ্নবৃত্তান্ত কহিলেন, কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে কেহই ফরৌণকে তাহার অর্থ বলিতে পারিলেন না। তখন প্রধান পানপাত্রবাহক ফরৌণকে নিবেদন করিল, অদ্য আমার দোষ মনে পড়িতেছে। ফরৌণ আপন দুই দাসের প্রতি, আমার ও প্রধান মোদকের প্রতি, ক্রোধান্বিত হইয়া আমাদিগকে রক্ষক-সেনাপতির বাটীতে কারাবদ্ধ করিয়াছিলেন। আর সে ও আমি এক রাত্রিতে স্বপ্ন দেখিয়াছিলাম; এবং দুই জনের স্বপ্নের দুই প্রকার অর্থ হইল। তখন সে স্থানে রক্ষক-সেনাপতির দাস এক জন ইব্রীয় যুবক আমাদের সহিত ছিল; তাহাকে স্বপ্নবৃত্তান্ত কহিলে সে আমাদিগকে তাহার অর্থ বলিল; উভয়েরই স্বপ্নের অর্থ বলিল। আর সে আমাদিগকে যেরূপ অর্থ বলিয়াছিল, তদ্রূপই ঘটিল; মহারাজ আমাকে পূর্ব্বপদে নিযুক্ত করিলেন, ও তাহাকে টাঙ্গাইয়া দিলেন। তখন ফরৌণ যোষেফকে ডাকিয়া পাঠাইলে লোকেরা কারাকূপ হইতে তাঁহাকে শীঘ্র আনিল। পরে তিনি ক্ষৌরী হইয়া অন্য বস্ত্র পরিধান করিয়া ফরৌণের নিকটে উপস্থিত হইলেন। তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, আমি এক স্বপ্ন দেখিয়াছি, তাহার অর্থ করিতে পারে, এমন কেহ নাই। কিন্তু তোমার বিষয়ে আমি শুনিয়াছি যে, তুমি স্বপ্ন শুনিলে অর্থ করিতে পার। যোষেফ ফরৌণকে উত্তর করিলেন, তাহা আমার অসাধ্য, ঈশ্বরই ফরৌণকে মঙ্গলযুক্ত উত্তর দিবেন। তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, দেখ, আমি স্বপ্নে নদীর তীরে দাঁড়াইয়াছিলাম। আর দেখ, নদী হইতে সাতটা হৃষ্টপুষ্ট সুন্দর গাভী উঠিয়া খাগড়া বনে চরিতে লাগিল। সেগুলির পরে, দেখ, কৃশ ও অতিশয় বিশ্রী ও শুষ্কাঙ্গ অন্য সাতটা গাভী উঠিল; আমি সমস্ত মিসর দেশে তাদৃশ বিশ্রী গাভী কখনও দেখি নাই। আর এই কৃশ ও বিশ্রী গাভীরা সেই পূর্ব্বের হৃষ্টপুষ্ট সাতটা গাভীকে খাইয়া ফেলিল। কিন্তু তাহারা ইহাদের উদরস্থ হইলে পর, উদরস্থ যে হইয়াছে, এমন বোধ হইল না, কেননা ইহারা পূর্ব্বকার ন্যায় বিশ্রীই রহিল। তখন আমার নিদ্রাভঙ্গ হইল। পরে আমি আর এক স্বপ্ন দেখিলাম; আর দেখ, এক বোঁটায় স্থূলাকার উত্তম সাতটী শীষ উঠিল। আর দেখ, সেগুলির পরে ম্লান, ক্ষীণ ও পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত সাতটী শীষ উঠিল। আর এই ক্ষীণ শীষগুলি সেই উত্তম সাতটী শীষকে গ্রাস করিল। এই স্বপ্ন আমি মন্ত্রবেত্তাদিগকে কহিলাম, কিন্তু কেহই ইহার অর্থ আমাকে বলিতে পারিল না। তখন যোষেফ ফরৌণকে বলিলেন, ফরৌণের স্বপ্ন এক; ঈশ্বর যাহা করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তাহাই ফরৌণকে জ্ঞাত করিয়াছেন। ঐ সাতটী উত্তম গাভী সাত বৎসর, এবং ঐ সাতটী উত্তম শীষও সাত বৎসর; স্বপ্ন এক। আর তাহার পশ্চাৎ যে সাতটি কৃশ ও বিশ্রী গাভী উঠিল, তাহারাও সাত বৎসর; এবং পূর্ব্বীয় বায়ুতে শোষিত যে সাতটী কৃশ শীষ উঠিল, তাহা দুর্ভিক্ষের সাত বৎসর হইবে। আমি ফরৌণকে ইহাই বলিলাম; ঈশ্বর যাহা করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তাহা ফরৌণকে দেখাইয়াছেন। দেখুন, সমস্ত মিসর দেশে সাত বৎসর অতিশয় শস্যবাহুল্য হইবে। তাহার পরে সাত বৎসর এমন দুর্ভিক্ষ হইবে যে, মিসর দেশে সমস্ত শস্যবাহুল্যের বিস্মৃতি হইবে, এবং সেই দুর্ভিক্ষে দেশ নষ্ট হইবে। আর সেই পশ্চাদ্বর্ত্তী দুর্ভিক্ষ প্রযুক্ত দেশে পূর্ব্বকার শস্যবাহুল্যের কথা মনে পড়িবে না; কারণ তাহা অতীব কষ্টকর হইবে। আর ফরৌণের নিকটে দুই বার স্বপ্ন দেখাইবার ভাব এই; ঈশ্বর ইহা স্থির করিয়াছেন, এবং ঈশ্বর ইহা শীঘ্র ঘটাইবেন। অতএব এখন ফরৌণ এক জন সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান্‌ পুরুষের চেষ্টা করিয়া তাঁহাকে মিসর দেশের উপরে নিযুক্ত করুন। আর ফরৌণ এই কর্ম্ম করুন; দেশে অধ্যক্ষগণ নিযুক্ত করিয়া যে সাত বৎসর শস্যবাহুল্য হইবে, সেই সময়ে মিসর দেশ হইতে শস্যের পঞ্চমাংশ গ্রহণ করুন। তাঁহারা সেই আগামী শুভ বৎসরসমূহের ভক্ষ্য সংগ্রহ করুন, ও ফরৌণের অধীনে নগরে নগরে খাদ্যের জন্য শস্য সঞ্চয় করুন, ও রক্ষা করুন। এইরূপে মিসর দেশে যে দুর্ভিক্ষ হইবে, সেই দুর্ভিক্ষের সাত বৎসরের নিমিত্ত সেই ভক্ষ্য দেশের জন্য সঞ্চিত থাকিবে, তাহাতে দুর্ভিক্ষে দেশ উচ্ছিন্ন হইবে না। তখন ফরৌণের ও তাঁহার সকল দাসের দৃষ্টিতে এই কথা উত্তম বোধ হইল। আর ফরৌণ আপন দাসদিগকে কহিলেন, ইহাঁর তুল্য পুরুষ, যাঁহার অন্তরে ঈশ্বরের আত্মা আছেন, এমন আর কাহাকে পাইব? তখন ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, ঈশ্বর তোমাকে এই সকল জ্ঞাত করিয়াছেন, অতএব তোমার তুল্য সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান্ কেহই নাই। তুমিই আমার বাটীর অধ্যক্ষ হও; আমার সমস্ত প্রজা তোমার বাক্য শিরোধার্য্য করিবে, কেবল সিংহাসনে আমি তোমা হইতে বড় থাকিব। ফরৌণ যোষেফকে আরও কহিলেন, দেখ, আমি তোমাকে সমস্ত মিসর দেশের উপরে নিযুক্ত করিলাম। পরে ফরৌণ হস্ত হইতে নিজ অঙ্গুরীয় খুলিয়া যোষেফের হস্তে দিলেন, তাঁহাকে কার্পাসের শুভ্র বসন পরিধান করাইলেন, এবং তাঁহার কণ্ঠদেশে সুবর্ণহার দিলেন। আর তাঁহাকে আপনার দ্বিতীয় রথে আরোহণ করাইলেন এবং লোকেরা তাঁহার অগ্রে অগ্রে ‘হাঁটু পাত, হাঁটু পাত’ বলিয়া ঘোষণা করিল। এইরূপে তিনি সমস্ত মিসর দেশের অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত হইলেন। আর ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, আমি ফরৌণ, তোমার আজ্ঞা ব্যতিরেকে সমস্ত মিসর দেশে কোন লোক হাত কি পা তুলিতে পারিবে না। আর ফরৌণ যোষেফের নাম সাফনৎ-পানেহ রাখিলেন। এবং তাঁহার সঙ্গে ওন নগর-নিবাসী পোটীফেরঃ নামক যাজকের আসনৎ নাম্নী কন্যার বিবাহ দিলেন। পরে যোষেফ মিসর দেশের মধ্যে যাতায়াত করিতে লাগিলেন। যোষেফ ত্রিশ বৎসর বয়সে মিসর-রাজ ফরৌণের সাক্ষাতে দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। পরে যোষেফ ফরৌণের নিকট হইতে প্রস্থান করিয়া মিসর দেশের সর্ব্বত্র ভ্রমণ করিলেন। আর সেই শস্যবাহুল্যের সপ্ত বৎসর ভূমিতে অপর্য্যাপ্ত শস্য জন্মিল। মিসর দেশে উপস্থিত সেই সপ্ত বৎসরে সকল শস্য সংগ্রহ করিয়া তিনি প্রতিনগরে সঞ্চয় করিলেন; যে নগরের চারি সীমায় যে শস্য হইল, সেই নগরে তাহা সঞ্চয় করিলেন। এইরূপে যোষেফ সমুদ্রের বালুকার ন্যায় এমন প্রচুর শস্য সংগ্রহ করিলেন যে, তাহা মাপিতে নিবৃত্ত হইলেন, কেননা তাহা অপরিমেয় ছিল। দুর্ভিক্ষ বৎসরের পূর্ব্বে যোষেফের দুই পুত্র জন্মিল; ওন্-নিবাসী পোটীফেরঃ যাজকের কন্যা আসনৎ তাঁহার জন্য তাহাদিগকে প্রসব করিলেন। আর যোষেফ তাহাদের জ্যেষ্ঠের নাম মনঃশি [বিস্মৃতিজনক] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, ঈশ্বর আমার সমস্ত ক্লেশের ও আমার সমস্ত পিতৃকুলের বিস্মৃতি জন্মাইয়াছেন। পরে দ্বিতীয় পুত্রের নাম ইফ্রয়িম [ফলবান্] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, আমার দুঃখভোগের দেশে ঈশ্বর আমাকে ফলবান্ করিয়াছেন। পরে মিসর দেশে উপস্থিত শস্যবাহুল্যের সাত বৎসর শেষ হইল, এবং যোষেফ যেমন বলিয়াছিলেন, তদনুসারে দুর্ভিক্ষের সাত বৎসর আরম্ভ হইল। সকল দেশে দুর্ভিক্ষ হইল, কিন্তু সমস্ত মিসর দেশে ভক্ষ্য ছিল। পরে সমস্ত মিসর দেশে দুর্ভিক্ষ হইলে প্রজারা ফরৌণের নিকটে ভক্ষ্যের জন্য ক্রন্দন করিল তাহাতে ফরৌণ মিস্রীয়দের সকলকে কহিলেন, তোমরা যোষেফের নিকটে যাও; তিনি তোমাদিগকে যাহা বলেন, তাহাই কর। তখন সমস্ত দেশেই দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। আর যোষেফ সকল স্থানের গোলা খুলিয়া মিস্রীয়দের কাছে শস্য বিক্রয় করিতে লাগিলেন; আর মিসর দেশে দুর্ভিক্ষ প্রবল হইয়া উঠিল। এবং সর্ব্বদেশীয় লোকে মিসর দেশে যোষেফের নিকটে শস্য ক্রয় করিতে আসিল, কেননা সর্ব্বদেশেই দুর্ভিক্ষ প্রবল হইয়াছিল। আর যাকোব দেখিলেন যে, মিসর দেশে শস্য আছে, তাই যাকোব আপন পুত্রদিগকে কহিলেন, তোমরা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করিতেছ কেন? তিনি আরও কহিলেন, দেখ, আমি শুনিলাম, মিসরে শস্য আছে, তোমরা তথায় যাও, আমাদের জন্য শস্য ক্রয় করিয়া আন; তাহা হইলে আমরা বাঁচিব, মরিব না। পরে যোষেফের দশ জন ভ্রাতা শস্য ক্রয় করিতে মিসরে নামিয়া গেলেন। কিন্তু যাকোব যোষেফের সহোদর বিন্যামীনকে ভাইদের সঙ্গে পাঠাইলেন না; কেননা তিনি কহিলেন, পাছে ইহার বিপদ ঘটে। যাহারা তথায় গিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে ইস্রায়েলের পুত্রগণও শস্য কিনিবার জন্য গেলেন, কেননা কনান দেশেও দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। তৎকালে যোষেফই ঐ দেশের অধ্যক্ষ ছিলেন, তিনিই দেশীয় লোক সকলের নিকটে শস্য বিক্রয় করিতেছিলেন; অতএব যোষেফের ভ্রাতারা তাঁহার কাছে গিয়া ভূমিতে মুখ দিয়া প্রণিপাত করিলেন। তখন যোষেফ আপন ভ্রাতাদিগকে দেখিয়া চিনিলেন, কিন্তু তাঁহাদের কাছে অপরিচিতের ন্যায় ব্যবহার করিলেন, ও কর্কশভাবে তাঁহাদের সঙ্গে কথা কহিলেন; তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমরা কোথা হইতে আসিয়াছ? তাঁহারা কহিলেন, কনান দেশ হইতে খাদ্য দ্রব্য কিনিতে আসিয়াছি। বাস্তবিক যোষেফ আপন ভ্রাতাদিগকে চিনিলেন, কিন্তু তাঁহারা তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না। আর যোষেফ তাঁহাদের বিষয়ে যে যে স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, তাহা তাঁহার স্মরণ হইল; এবং তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা চর, দেশের ছিদ্র দেখিতে আসিয়াছ। তাঁহারা কহিলেন, না, প্রভো, আপনার এই দাসেরা খাদ্য দ্রব্য কিনিতে আসিয়াছে; আমরা সকলে এক পিতার সন্তান; আমরা সৎলোক, আপনার এই দাসেরা চর নহে। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, না না, তোমরা দেশের ছিদ্র দেখিতে আসিয়াছ। তাঁহারা কহিলেন, আপনার এই দাসেরা বারো ভাই, কনান দেশনিবাসী এক জনের পুত্র; দেখুন, আমাদের ছোট ভাই অদ্য পিতার কাছে আছে, এবং এক জন নাই। তখন যোষেফ তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি যে তোমাদিগকে বলিলাম, তোমরা চর, তাহাই বটে। ইহা দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করা যাইবে; আমি ফরৌণের প্রাণের দিব্য করিয়া কহিতেছি, তোমাদের ছোট ভাই এখানে না আসিলে তোমরা এখান হইতে বাহির হইতে পারিবে না। তোমাদের এক জনকে পাঠাইয়া তোমাদের সেই ভাইকে আনাও, তোমরা বদ্ধ থাক; এইরূপে তোমাদের কথার পরীক্ষা হইবে, তোমরা সত্যবাদী কি না, তাহা জানা যাইবে; নতুবা আমি ফরৌণের প্রাণের দিব্য করিয়া কহিতেছি, তোমরা অবশ্যই চর। পরে তিনি তাঁহাদিগকে তিন দিন কারাগারে বদ্ধ রাখিলেন। পরে তৃতীয় দিনে যোষেফ তাঁহাদিগকে কহিলেন, এই কর্ম্ম কর, তাহাতে বাঁচিবে; আমি ঈশ্বরকে ভয় করি। তোমরা যদি সৎলোক হও, তবে তোমাদের এক ভাই তোমাদের এই কারাগারে বদ্ধ থাকুক; তোমরা আপন আপন গৃহের দুর্ভিক্ষের জন্য শস্য লইয়া যাও; পরে তোমাদের ছোট ভাইকে আমার নিকটে আনিও; এইরূপে তোমাদের কথা সপ্রমাণ হইলে তোমরা মারা যাইবে না। তাঁহারা তাহাই করিলেন। আর তাঁহারা পরস্পর কহিলেন, নিশ্চয়ই আমরা আপনাদের ভাইয়ের বিষয়ে অপরাধী, কেননা সে আমাদের কাছে বিনতি করিলে আমরা তাহার প্রাণের কষ্ট দেখিয়াও তাহা শুনি নাই; এই জন্য আমাদের উপরে এই সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছে। তখন রূবেণ উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি না তোমাদিগকে বলিয়াছিলাম, বালকটীর বিরুদ্ধে পাপ করিও না? কিন্তু তোমরা তাহা শুন নাই, দেখ, এখন তাহার রক্তেরও নিকাশ দিতে হইতেছে। কিন্তু যোষেফ যে তাঁহাদের এই কথা বুঝিলেন, ইহা তাঁহারা জানিতে পারিলেন না, কেননা দ্বিভাষী দ্বারা উভয় পক্ষের মধ্যে কথাবার্ত্তা হইতেছিল। তখন তিনি তাঁহাদের নিকট হইতে সরিয়া গিয়া রোদন করিলেন; পরে ফিরিয়া আসিয়া তাঁহাদের সঙ্গে কথা বলিলেন, ও তাঁহাদের মধ্যে শিমিয়োনকে ধরিয়া তাঁহাদের সাক্ষাতেই বাঁধিলেন। পরে যোষেফ তাঁহাদের সকল ছালায় শস্য ভরিতে, প্রত্যেক জনের ছালায় টাকা ফিরাইয়া দিতে ও তাঁহাদিগকে পাথেয় দ্রব্য দিতে আজ্ঞা দিলেন; আর তাঁহাদের জন্য তদ্রূপ করা গেল। পরে তাঁহারা আপন আপন গর্দ্দভের উপরে শস্য চাপাইয়া তথা হইতে প্রস্থান করিলেন। কিন্তু উত্তরণ স্থানে যখন এক জন আপন গর্দ্দভকে আহার দিতে ছালা খুলিলেন, তখন আপনার টাকা দেখিলেন, আর দেখ, ছালার মুখেই টাকা। তাহাতে তিনি ভাইদের কহিলেন, আমার টাকা ফিরিয়াছে; দেখ, আমার ছালাতেই রহিয়াছে। তখন তাঁহাদের প্রাণ উড়িয়া গেল, ও সকলে ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে কহিলেন, ঈশ্বর আমাদের প্রতি এ কি করিলেন? পরে তাঁহারা কনান দেশে আপনাদের পিতা যাকোবের নিকটে উপস্থিত হইলেন, ও তাঁহাদের প্রতি যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, সে সমস্ত তাঁহাকে জ্ঞাত করিলেন, কহিলেন, যে ব্যক্তি সেই দেশের অধ্যক্ষ, তিনি আমাদিগকে কর্কশ কথা কহিলেন, আর দেশ অনুসন্ধানকারী চর মনে করিলেন। আমরা তাঁহাকে বলিলাম, আমরা সৎলোক, চর নহি; আমরা বারো ভাই, সকলেই এক পিতার সন্তান; কিন্তু এক জন নাই, এবং ছোটটী অদ্য কনান দেশে পিতার কাছে আছে। তখন সেই ব্যক্তি, সেই দেশাধ্যক্ষ আমাদিগকে কহিলেন, ইহাতেই জানিতে পারিব যে, তোমরা সৎলোক; তোমাদের এক ভাইকে আমার নিকটে রাখিয়া তোমাদের গৃহের দুর্ভিক্ষের জন্য শস্য লইয়া যাও। পরে তোমাদের ছোট ভাইকে আমার নিকটে আনিও, তাহাতে বুঝিতে পারিব যে, তোমরা চর নও, তোমরা সৎলোক; আর আমি তোমাদের ভাইকে তোমাদের কাছে দিব, এবং তোমরা দেশে বাণিজ্য করিতে পাইবে। পরে তাঁহারা ছালা হইতে শস্য ঢালিলে দেখ, প্রত্যেক জন আপন আপন ছালায় আপন আপন টাকার গ্রন্থি পাইলেন। তখন সেই সকল টাকার গ্রন্থি দেখিয়া তাঁহারা ও তাঁহাদের পিতা ভীত হইলেন। আর তাঁহাদের পিতা যাকোব কহিলেন, তোমরা আমাকে পুত্রহীন করিয়াছ; যোষেফ নাই, শিমিয়োন নাই, আবার বিন্যামীনকেও লইয়া যাইতে চাহিতেছ; এই সকলই আমার প্রতিকূল। তখন রূবেণ আপন পিতাকে কহিলেন, আমি যদি তোমার নিকটে তাহাকে না আনি, তবে আমার দুই পুত্রকে বধ করিও; আমার হস্তে তাহাকে সমর্পণ কর; আমি তোমার কাছে তাহাকে পুনর্ব্বার আনিয়া দিব। তখন তিনি কহিলেন, আমার পুত্র তোমাদের সঙ্গে যাইবে না, কেননা তাহার সহোদর মরিয়া গিয়াছে, সে একা রহিয়াছে; তোমরা যে পথে যাইবে, সেই পথে যদি ইহার কোন বিপদ ঘটে, তবে শোকে এই পাকা চুলে আমাকে পাতালে নামাইয়া দিবে। তখন দেশে অতিশয় দুর্ভিক্ষ ছিল। আর তাঁহারা মিসর হইতে যে শস্য আনিয়াছিলেন, সে সমস্ত ভক্ষিত হইলে তাঁহাদের পিতা তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আবার যাও, আমাদের জন্য কিছু ভক্ষ্য কিনিয়া আন। তখন যিহূদা তাঁহাকে কহিলেন, সেই ব্যক্তি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করিয়া আমাদিগকে বলিয়াছেন, তোমাদের ভাই তোমাদের সঙ্গে না আসিলে তোমরা আমার মুখ দেখিতে পাইবে না। যদি তুমি আমাদের সঙ্গে আমাদের ভাইকে পাঠাও, তবে আমরা গিয়া তোমার জন্য ভক্ষ্য কিনিয়া আনিব। কিন্তু যদি না পাঠাও, তবে যাইব না; কেননা সে ব্যক্তি আমাদিগকে বলিয়াছেন, তোমাদের ভাই তোমাদের সঙ্গে না আসিলে তোমরা আমার মুখ দেখিতে পাইবে না। তখন ইস্রায়েল কহিলেন, আমার সহিত এমন কুব্যবহার কেন করিয়াছ? ঐ ব্যক্তিকে কেন বলিয়াছ যে, তোমাদের আর এক ভাই আছে? তাঁহারা কহিলেন, তিনি আমাদের বিষয়ে ও আমাদের বংশের বিষয়ে সূক্ষ্মরূপে জিজ্ঞাসা করিলেন, বলিলেন, তোমাদের পিতা কি এখনও জীবিত আছেন? তোমাদের কি আরও ভাই আছে? তাহাতে আমরা সেই কথা অনুসারে উত্তর করিয়াছিলাম। আমরা কি প্রকারে জানিব যে, তিনি বলিবেন, তোমাদের ভাইকে এখানে আন? যিহূদা আপন পিতা ইস্রায়েলকে আরও কহিলেন, বালকটীকে আমার সঙ্গে পাঠাইয়া দেও; আমরা উঠিয়া প্রস্থান করি, তাহাতে তুমি ও আমাদের বালকেরা ও আমরা বাঁচিব; কেহ মরিব না। আমিই তাহার জামিন হইলাম, আমারই হস্ত হইতে তাহাকে লইও, আমি যদি তোমার কাছে তাহাকে না আনি, তোমার সম্মুখে তাহাকে উপস্থিত না করি, তবে আমি যাবজ্জীবন তোমার নিকটে অপরাধী থাকিব। এত বিলম্ব না করিলে আমরা ইহার মধ্যে দ্বিতীয় বার ফিরিয়া আসিতে পারিতাম। তখন তাঁহাদের পিতা ইস্রায়েল তাঁহাদিগকে কহিলেন, যদি তাহাই হয়, তবে এক কর্ম্ম কর; তোমরা আপন আপন পাত্রে এই দেশের প্রশংসিত দ্রব্য,—গুগ্‌গুলু, মধু, সুগন্ধি দ্রব্য, গন্ধরস, পেস্তা ও বাদাম কিছু কিছু লইয়া গিয়া সেই ব্যক্তিকে উপঢৌকন দেও। আর আপন আপন হস্তে দ্বিগুণ টাকা লও, এবং তোমাদের ছালার মুখে যে টাকা ফিরিয়া আসিয়াছে, তাহাও হস্তে করিয়া পুনরায় লইয়া যাও; কি জানি বা ভ্রান্তি হইয়াছিল। আর তোমাদের ভাইকে লও, উঠ, পুনর্ব্বার সেই ব্যক্তির নিকটে যাও। সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর তোমাদিগকে সেই ব্যক্তির কাছে করুণার পাত্র করুন, যেন তিনি তোমাদের অন্য ভাইকে ও বিন্যামীনকে ছাড়িয়া দেন। আর যদি আমাকে পুত্রহীন হইতে হয়, তবে পুত্রহীন হইলাম। তখন তাঁহারা সেই উপঢৌকন দ্রব্য লইলেন, আর হাতে দ্বিগুণ টাকা ও বিন্যামীনকে লইয়া যাত্রা করিলেন, এবং মিসরে গিয়া যোষেফের সম্মুখে দাঁড়াইলেন। যোষেফ তাঁহাদের সঙ্গে বিন্যামীনকে দেখিয়া আপন গৃহাধ্যক্ষকে কহিলেন, এই কয়েকটী লোককে বাটীর ভিতরে লইয়া যাও, আর পশু মারিয়া আয়োজন কর; কেননা ইহারা মধ্যাহ্নে আমার সঙ্গে আহার করিবে। তাহাতে সেই ব্যক্তি; যোষেফ যেমন বলিলেন, সেইরূপ করিল, তাঁহাদিগকে যোষেফের বাটীতে লইয়া গেল। কিন্তু যোষেফের বাটীতে নীত হওয়াতে তাঁহারা ভীত হইলেন, ও পরস্পর কহিলেন, পূর্ব্বে আমাদের ছালায় যে টাকা ফিরিয়া গিয়াছিল, তাহারই জন্য ইনি আমাদিগকে এখানে আনিতেছেন; এখন আমাদের উপরে পড়িয়া আক্রমণ করিবেন ও আমাদের গর্দ্দভ লইয়া আমাদিগকে দাস করিয়া রাখিবেন। অতএব তাঁহারা যোষেফের গৃহাধ্যক্ষের কাছে গিয়া বাটীর দ্বারে তাহার সঙ্গে কথা কহিলেন, বলিলেন, মহাশয়, আমরা পূর্ব্বে ভক্ষ্য কিনিতে আসিয়াছিলাম; পরে উত্তরণ স্থানে গিয়া আপন আপন ছালা খুলিলাম, আর দেখুন, প্রত্যেক জনের ছালার মুখে তাহার টাকা, যথাতৌল আমাদের টাকা আছে; তাহা আমরা পুনরায় হস্তে করিয়া আনিয়াছি; এবং ভক্ষ্য কিনিবার নিমিত্তে আরও টাকা আনিয়াছি; আমাদের সেই টাকা আমাদের ছালায় কে রাখিয়াছিল, তাহা আমরা জানি না। সেই ব্যক্তি কহিল, তোমাদের মঙ্গল হউক, ভয় করিও না; তোমাদের ঈশ্বর, তোমাদের পৈতৃক ঈশ্বর তোমাদের ছালায় তোমাদিগকে গুপ্ত ধন দিয়াছেন; আমি তোমাদের টাকা পাইয়াছি। পরে সে শিমিয়োনকে তাঁহাদের নিকটে আনিল। আর সে তাঁহাদিগকে যোষেফের বাটীর ভিতরে লইয়া গিয়া জল দিল, তাহাতে তাঁহারা পা ধুইলেন, এবং সে তাঁহাদের গর্দ্দভদিগকে আহার দিল। আর মধ্যাহ্নে যোষেফ আসিবেন বলিয়া তাঁহারা উপঢৌকন সাজাইলেন, কেননা তাঁহারা শুনিয়াছিলেন যে, সেখানে তাঁহাদিগকে আহার করিতে হইবে। পরে যোষেফ গৃহে আসিলে তাঁহারা হস্তস্থিত উপঢৌকন গৃহমধ্যে তাঁহার কাছে আনিলেন, ও তাঁহার সাক্ষাতে ভূমিতে প্রণিপাত করিলেন। তখন তিনি কুশল জিজ্ঞাসা করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের যে বৃদ্ধ পিতার কথা বলিয়াছিলে, তাঁহার কুশল ত? তিনি কি এখনও জীবিত আছেন? তাঁহারা কহিলেন, আপনার দাস আমাদের পিতা কুশলে আছেন, তিনি এখনও জীবিত আছেন। পরে তাঁহারা মস্তক নমনপূর্ব্বক প্রণিপাত করিলেন। তখন যোষেফ চক্ষু তুলিয়া আপন ভাই বিন্যামীনকে, আপন সহোদরকে দেখিয়া কহিলেন, তোমাদের যে ছোট ভাইয়ের কথা আমাকে বলিয়াছিলে, সে কি এই? আর তিনি কহিলেন, বৎস, ঈশ্বর তোমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। তখন যোষেফ ত্বরা করিলেন, কেননা তাঁহার ভাইয়ের জন্য তাঁহার প্রাণ কাঁদিতেছিল, তাই তিনি রোদন করিবার স্থান অন্বেষণ করিলেন, আর আপন কুঠরীতে প্রবেশ করিয়া সেখানে রোদন করিলেন। পরে তিনি মুখ ধুইয়া বাহিরে আসিলেন, ও আত্মসম্বরণপূর্ব্বক খাদ্য পরিবেষণ করিতে আজ্ঞা করিলেন। তখন তাঁহার জন্য পৃথক্ ও তাঁহার ভ্রাতৃগণের জন্য পৃথক্‌, এবং তাঁহার সঙ্গে ভোজনকারী মিস্রীয়দের জন্য পৃথক্‌ পরিবেষণ করা হইল, কেননা ইব্রীয়দের সহিত মিস্রীয়েরা আহার ব্যবহার করে না; কারণ তাহা মিস্রীয়দের ঘৃণিত কর্ম্ম। আর তাঁহারা যোষেফের সম্মুখে জ্যেষ্ঠ জ্যেষ্ঠের স্থানে ও কনিষ্ঠ কনিষ্ঠের স্থানে বসিলেন; তখন তাঁহারা পরস্পর আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন। আর তিনি আপনার সম্মুখ হইতে ভক্ষ্যের অংশ তুলিয়া তাঁহাদিগকে পরিবেষণ করাইলেন; কিন্তু সকলের অংশ হইতে বিন্যামীনের অংশ পাঁচ গুণ অধিক ছিল। পরে তাঁহারা পান করিলেন, ও তাঁহার সহিত হৃষ্টচিত্ত হইলেন। আর যোষেফ আপন গৃহাধ্যক্ষকে আজ্ঞা করিলেন, এই লোকদের ছালায় যত শস্য ধরে, ভরিয়া দেও, এবং প্রতিজনের টাকা তাহার ছালার মুখে রাখ। আর কনিষ্ঠের ছালার মুখে তাহার শস্যক্রয়ের টাকার সহিত আমার বাটি অর্থাৎ রৌপ্যের বাটি রাখ। তখন সে যোষেফের উক্ত কথানুসারে কার্য্য করিল। আর প্রভাত হইবামাত্র তাঁহারা গর্দ্দভদিগের সহিত বিদায় পাইলেন। তাঁহারা নগর হইতে বাহির হইয়া বিস্তর দূরে যাইতে না যাইতে যোষেফ আপন গৃহাধ্যক্ষকে কহিলেন, উঠ, ঐ লোকদের পশ্চাৎ দৌড়িয়া গিয়া তাহাদের সঙ্গ ধরিয়া বল, তোমরা উপকারের পরিবর্ত্তে কেন অপকার করিলে? আমার প্রভু যাহাতে পান করেন ও যদ্দ্বারা গণনা করেন, এ কি সেই বাটি নয়? এই কর্ম্ম করায় তোমরা দোষ করিয়াছ। পরে সে তাঁহাদিগের লাগাইল পাইয়া সেই কথা কহিল। তাঁহারা বলিলেন, মহাশয়, কেন এমন কথা বলেন? আপনার দাসেরা যে এমন কর্ম্ম করিবে, তাহা দূরে থাকুক। দেখুন, আমরা আপন আপন ছালার মুখে যে টাকা পাইয়াছিলাম, তাহা কনান দেশ হইতে পুনর্ব্বার আপনার কাছে আনিয়াছি; তবে আমরা কি কোন মতে আপনার প্রভুর গৃহ হইতে রৌপ্য বা স্বর্ণ চুরি করিব? আপনার দাসদের মধ্যে যাহার নিকটে তাহা পাওয়া যায়, সে মরুক, এবং আমরাও প্রভুর দাস হইব। সে কহিল, ভাল, এক্ষণে তোমাদের কথানুসারেই হউক; যাহার কাছে তাহা পাওয়া যাইবে, সে আমার দাস হইবে, কিন্তু আর সকলে নির্দ্দোষ হইবে। তখন তাঁহারা শীঘ্র করিয়া আপনাদের ছালাগুলি ভূমিতে নামাইয়া প্রত্যেকে আপন আপন ছালা খুলিলেন। আর সে জ্যেষ্ঠ অবধি আরম্ভ করিয়া কনিষ্ঠ পর্য্যন্ত খুঁজিল; আর বিন্যামীনের ছালায় সেই বাটি পাওয়া গেল। তখন তাঁহারা আপন আপন বস্ত্র চিরিলেন, ও আপন আপন গর্দ্দভে ছালা চাপাইয়া নগরে ফিরিয়া গেলেন। পরে যিহূদা ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ যোষেফের বাটীতে আসিলেন; তিনি তখনও তথায় ছিলেন; আর তাঁহারা তাঁহার অগ্রে ভূতলে পড়িলেন। তখন যোষেফ তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা এ কেমন কার্য্য করিলে? আমার মত পুরুষ অবশ্য গণনা করিতে পারে, ইহা কি তোমরা জান না? যিহূদা কহিলেন, আমরা প্রভুর নিকটে কি উত্তর দিব? কি কথা কহিব? কিসেই বা আপনাদিগকে নির্দ্দোষ দেখাইব? ঈশ্বর আপনার দাসদের অপরাধ প্রকাশ করিয়াছেন, দেখুন, আমরা ও যাহার কাছে বাটি পাওয়া গিয়াছে, সকলেই প্রভুর দাস হইলাম। যোষেফ কহিলেন, এমন কর্ম্ম আমা হইতে দূরে থাকুক; যাহার কাছে বাটি পাওয়া গিয়াছে, সেই আমার দাস হইবে, কিন্তু তোমরা কুশলে পিতার নিকটে প্রস্থান কর। তখন যিহূদা নিকটে গিয়া কহিলেন, হে প্রভো, বিনয় করি, আপনার দাসকে প্রভুর কর্ণগোচরে একটি কথা বলিতে অনুমতি দিউন; এই দাসের প্রতি আপনার ক্রোধ প্রজ্বলিত না হউক, কারণ আপনি ফরৌণের তুল্য। প্রভু এই দাসদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, তোমাদের পিতা কি ভ্রাতা আছে? আমরা প্রভুকে উত্তর করিয়াছিলাম, আমাদের বৃদ্ধ পিতা আছেন, এবং তাঁহার বৃদ্ধাবস্থার এক কনিষ্ঠ পুত্র আছে; তাহার সহোদর মরিয়াছে; সেইমাত্র তাহার মাতার অবশিষ্ট পুত্র; এবং তাহার পিতা তাহাকে স্নেহ করেন। পরে আপনি এই দাসদিগকে বলিয়াছিলেন, তোমরা আমার কাছে তাহাকে আন, আমি তাহাকে স্বচক্ষে দেখিব। তখন আমরা প্রভুকে বলিয়াছিলাম, সেই যুবক পিতাকে ছাড়িয়া আসিতে পারিবে না, সে পিতাকে ছাড়িয়া আসিলে পিতা মরিয়া যাইবেন। তাহাতে আপনি এই দাসদিগকে বলিয়াছিলেন, সেই ছোট ভাইটী তোমাদের সঙ্গে না আসিলে তোমরা আমার মুখ আর দেখিতে পাইবে না। আমরা আপনার দাস যে আমার পিতা, তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহাকে প্রভুর সেই সকল কথা কহিলাম। পরে আমাদের পিতা কহিলেন, তোমরা আবার যাও, আমাদের জন্য কিছু ভক্ষ্য কিনিয়া আন। আমরা কহিলাম, যাইতে পারিব না; যদি ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে থাকে, তবে যাই; কেননা ছোট ভাইটী সঙ্গে না থাকিলে আমরা সেই ব্যক্তির মুখ দেখিতে পাইব না। তাহাতে আপনার দাস আমার পিতা কহিলেন, তোমরা জান, আমার সেই স্ত্রী হইতে দুইটী মাত্র সন্তান জন্মে। তাহাদের মধ্যে এক জন আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিল, আর আমি কহিলাম, সে নিশ্চয় খণ্ড খণ্ড হইয়াছে, এবং সেই অবধি আমি তাহাকে আর দেখিতে পাই নাই। এখন আমার নিকট হইতে ইহাকেও লইয়া গেলে যদি ইহার কোন বিপদ ঘটে, তবে তোমরা শোকে এই পাকা চুলে আমাকে পাতালে নামাইয়া দিবে। অতএব আপনার দাস যে আমার পিতা, আমি তাঁহার কাছে উপস্থিত হইলে আমাদের সঙ্গে যদি এই যুবক না থাকে, তবে এই যুবকের প্রাণে তাঁহার প্রাণ বাঁধা আছে বলিয়া, যুবকটী নাই দেখিলে তিনি মারা পড়িবেন; এইরূপে আপনার এই দাসেরা শোকে পাকা চুলে আপনার দাস আমাদের পিতাকে পাতালে নামাইয়া দিবে। আবার আপনার দাস আমি পিতার নিকটে এই যুবকটীর জামিন হইয়া বলিয়াছিলাম, আমি যদি তাহাকে তোমার নিকটে না আনি, তবে যাবজ্জীবন পিতার কাছে অপরাধী থাকিব। অতএব বিনয় করি, প্রভুর নিকটে এই যুবকটীর পরিবর্ত্তে আপনার দাস আমি প্রভুর দাস হইয়া থাকি, কিন্তু এই যুবককে আপনি তাহার ভাইদের সঙ্গে যাইতে দিউন। কেননা এই যুবকটী আমার সহিত না থাকিলে আমি কি প্রকারে পিতার নিকটে যাইতে পারি? পাছে পিতার যে আপদ ঘটিবে, তাহাই আমাকে দেখিতে হয়। তখন যোষেফ আপনার নিকটে দণ্ডায়মান লোকদের সাক্ষাতে আত্মসম্বরণ করিতে পারিলেন না; তিনি উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, আমার সম্মুখ হইতে সব লোককে বাহির কর। তাহাতে কেহ তাঁহার কাছে দাঁড়াইল না, আর তখনই যোষেফ ভাইদের কাছে আপনার পরিচয় দিতে লাগিলেন। তিনি উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিলেন; মিস্রীয়েরা তাহা শুনিতে পাইল ও ফরৌণের গৃহস্থিত লোকেরাও শুনিতে পাইল। পরে যোষেফ আপন ভাইদের কহিলেন, আমি যোষেফ; আমার পিতা কি এখনও জীবিত আছেন? ইহাতে তাঁহার ভাইরা তাঁহার সাক্ষাতে বিহ্বল হইয়া পড়িলেন, উত্তর করিতে পারিলেন না। পরে যোষেফ আপন ভাইদের কহিলেন, বিনয় করি, আমার নিকটে আইস। তাঁহারা নিকটে গেলেন। তিনি কহিলেন, আমি যোষেফ, তোমাদের ভাই, যাহাকে তোমরা মিসরগামীদের কাছে বিক্রয় করিয়াছিলে। কিন্তু তোমরা আমাকে এই স্থানে বিক্রয় করিয়াছ বলিয়া এখন দুঃখিত কি বিরক্ত হইও না; কেননা প্রাণ রক্ষা করিবার জন্যই ঈশ্বর তোমাদের অগ্রে আমাকে পাঠাইয়াছেন। কারণ দুই বৎসরাবধি দেশে দুর্ভিক্ষ হইয়াছে; আরও পাঁচ বৎসর পর্য্যন্ত চাস কি ফসল হইবে না। আর ঈশ্বর পৃথিবীতে তোমাদের বংশ রক্ষা করিতে ও মহৎ উদ্ধারের দ্বারা তোমাদিগকে বাঁচাইতে তোমাদের অগ্রে আমাকে পাঠাইয়াছেন। অতএব তোমরাই আমাকে এই স্থানে পাঠাইয়াছ, তাহা নয়, ঈশ্বর পাঠাইয়াছেন, এবং আমাকে ফরৌণের পিতৃস্থানীয়, তাঁহার সমস্ত বাটীর প্রভু ও সমস্ত মিসর দেশের উপরে শাসনকর্ত্তা করিয়াছেন। তোমরা শীঘ্র করিয়া আমার পিতার নিকটে যাও, তাঁহাকে বল, ‘তোমার পুত্র যোষেফ এইরূপ কহিল, ঈশ্বর আমাকে সমস্ত মিসর দেশের কর্ত্তা করিয়াছেন; তুমি আমার নিকটে চলিয়া আইস, বিলম্ব করিও না। তুমি পুত্র পৌত্রাদির ও গোমেষাদি সর্ব্বস্বের সহিত গোশন প্রদেশে বাস করিবে; তুমি আমার নিকটেই থাকিবে। সে স্থানে আমি তোমাকে প্রতিপালন করিব, কেননা আর পাঁচ বৎসর দুর্ভিক্ষ থাকিবে; পাছে তোমার ও তোমার পরিজনের ও তোমার সকল লোকের দৈন্যদশা ঘটে।’ আর দেখ, তোমরা ও আমার সহোদর বিন্যামীন চাক্ষুষ দেখিতেছ যে, আমি নিজ মুখে তোমাদের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতেছি। অতএব এই মিসর দেশে আমার প্রতাপ ও তোমরা যাহা যাহা দেখিয়াছ, সে সকল আমার পিতাকে জ্ঞাত করিবে, এবং তাঁহাকে শীঘ্র এই স্থানে আনিবে। পরে যোষেফ আপন ভাই বিন্যামীনের গলা ধরিয়া রোদন করিলেন, এবং বিন্যামীনও তাঁহার গলা ধরিয়া রোদন করিলেন। আর যোষেফ অন্য সকল ভাইকেও চুম্বন করিলেন, ও তাঁহাদের গলা ধরিয়া রোদন করিলেন; তাহার পরে তাঁহার ভ্রাতারা তাঁহার সহিত আলাপ করিতে লাগিলেন। আর যোষেফের ভাইরা আসিয়াছে, ফরৌণের বাটীতে এই কথা উপস্থিত হইলে ফরৌণ ও তাঁহার দাসগণ সকলে সন্তুষ্ট হইলেন। আর ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, তুমি তোমার ভাইদের বল, তোমরা এই কর্ম্ম কর; তোমাদের পশুগণের পৃষ্ঠে শস্য চাপাইয়া কনান দেশে গমন কর, এবং তোমাদের পিতাকে ও আপন আপন পরিবারকে আমার নিকটে লইয়া আইস; আমি তোমাদিগকে মিসর দেশের উৎকৃষ্ট দ্রব্য দিব, আর তোমরা দেশের সারাংশ ভোগ করিবে। এখন তোমার প্রতি আমার আজ্ঞা এই, তোমরা এই কর্ম্ম কর, তোমরা আপন আপন বালক বালিকা ও স্ত্রীদের নিমিত্তে মিসর দেশ হইতে শকট লইয়া গিয়া তাহাদিগকে ও আপনাদের পিতাকে লইয়া আইস; আর আপন আপন দ্রব্য সামগ্রীর মমতা করিও না, কেননা সমুদয় মিসর দেশের উৎকৃষ্ট দ্রব্য তোমাদেরই। তখন ইস্রায়েলের পুত্রগণ তাহাই করিলেন। এবং যোষেফ ফরৌণের আজ্ঞানুসারে তাহাদিগকে শকট দিলেন, এবং পাথেয় দ্রব্যও দিলেন; তিনি প্রত্যেক জনকে এক এক যোড়া বস্ত্র দিলেন, কিন্তু বিন্যামীনকে তিন শত রৌপ্যমুদ্রা ও পাঁচ যোড়া বস্ত্র দিলেন। আর পিতার জন্য এই সকল দ্রব্য পাঠাইলেন, দশ গর্দ্দভে চাপাইয়া মিসরের উৎকৃষ্ট দ্রব্য এবং পিতার পাথেয়ের জন্য দশ গর্দ্দভীতে চাপাইয়া শস্য ও রুটী প্রভৃতি ভক্ষ্য দ্রব্য। এইরূপে তিনি আপন ভ্রাতাদিগকে বিদায় করিলে তাঁহারা প্রস্থান করিলেন; তিনি তাঁহাদিগকে বলিয়া দিলেন, পথে বিবাদ করিও না। পরে তাঁহারা মিসর হইতে যাত্রা করিয়া কনান দেশে তাঁহাদের পিতা যাকোবের নিকটে উপস্থিত হইলেন, ও তাঁহাকে কহিলেন, যোষেফ এখনও জীবিত আছে, আবার সমস্ত মিসর দেশের উপরে সেই শাসনকর্ত্তা হইয়াছে। তথাপি তাঁহার হৃদয় জড়বৎ থাকিল, কারণ তাঁহাদের কথায় তাঁহার বিশ্বাস জন্মিল না। কিন্তু যোষেফ তাঁহাদিগকে যে সকল কথা বলিয়াছিলেন, সে সকল যখন তাঁহারা তাঁহাকে বলিলেন, এবং তাঁহাকে লইয়া যাইবার নিমিত্তে যোষেফ যে সকল শকট পাঠাইয়াছিলেন, তাহাও যখন তিনি দেখিলেন, তখন তাঁহাদের পিতা যাকোবের আত্মা পুনর্জীবিত হইয়া উঠিল। আর ইস্রায়েল কহিলেন, এই যথেষ্ট; আমার পুত্র যোষেফ এখনও জীবিত আছে; আমি গিয়া মরিবার পূর্ব্বে তাহাকে দেখিব। পরে ইস্রায়েল আপনার সর্ব্বস্বের সহিত যাত্রা করিয়া বের্-শেবাতে আসিলেন, এবং আপন পিতা ইস্‌হাকের ঈশ্বরের উদ্দেশে বলিদান করিলেন। পরে ঈশ্বর রাত্রিতে ইস্রায়েলকে দর্শন দিয়া কহিলেন, হে যাকোব, হে যাকোব। তিনি উত্তর করিলেন, দেখ, এই আমি। তখন তিনি কহিলেন, আমি ঈশ্বর, তোমার পিতার ঈশ্বর; তুমি মিসরে যাইতে ভয় করিও না, কেননা আমি সেই স্থানে তোমাকে বৃহৎ জাতি করিব। আমিই তোমার সঙ্গে মিসরে যাইব, এবং আমিই তথা হইতে তোমাকে ফিরাইয়াও আনিব, আর যোষেফ তোমার চক্ষে হস্তার্পণ করিবে। পরে যাকোব বের্-শেবা হইতে যাত্রা করিলেন। ইস্রায়েলের পুত্রগণ আপনাদের পিতা যাকোবকে এবং আপন আপন বালক বালিকা ও স্ত্রীদিগকে সেই সকল শকটে করিয়া লইয়া গেলেন, যাহা ফরৌণ তাঁহাদের বহনার্থে পাঠাইয়াছিলেন। পরে তাঁহারা, যাকোব ও তাঁহার সমস্ত বংশ, আপনাদের পশুগণ ও কনান দেশে উপার্জ্জিত সকল সম্পত্তি লইয়া মিসর দেশে পঁহুছিলেন। এইরূপে যাকোব আপন পুত্র পৌত্র, পুত্রী পৌত্রী প্রভৃতি সমস্ত বংশকে সঙ্গে করিয়া মিসরে লইয়া গেলেন। ইস্রায়েল-সন্তানগণ, যাকোব ও তাঁহার সন্তানগণ, যাঁহারা মিসরে গেলেন, তাঁহাদের নাম। যাকোবের জ্যেষ্ঠ পুত্র রূবেণ। রূবেণের পুত্র হনোক, পল্‌লু, হিষ্রোণ ও কর্মি। শিমিয়োনের পুত্র যিমূয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর ও তাহার কনানীয়া স্ত্রীজাত পুত্র শৌল। লেবির পুত্র গের্শোন, কহাৎ ও মরারি। যিহূদার পুত্র এর, ওনন, শেলা, পেরস ও সেরহ। কিন্তু এর ও ওনন কনান দেশে মরিয়াছিল; এবং পেরসের পুত্র হিষ্রোণ ও হামূল। ইষাখরের পুত্র তোলয়, পূয়, যোব ও শিম্রোণ। আর সবূলূনের পুত্র সেরদ, এলোন ও যহলেল। ইহারা লেয়ার সন্তান; তিনি পদ্দন্-অরামে যাকোবের জন্য ইহাদিগকে ও তাঁহার কন্যা দীণাকে প্রসব করেন। যাকোবের এই পুত্র কন্যারা সর্ব্বশুদ্ধ তেত্রিশ প্রাণী। আর গাদের পুত্র সিফিয়োন, হগি, শূনী, ইষ্‌বোন, এরি, অরোদী ও অরেলী। আশেরের পুত্র যিম্না, যিশ্‌বা, যিশ্‌বি, বরিয় ও তাহাদের ভগিনী সেরহ। বরিয়ের পুত্র হেবর ও মল্কীয়েল। ইহারা সেই সিল্পার সন্তান, যাহাকে লাবন আপন কন্যা লেয়াকে দিয়াছিলেন; সে যাকোবের জন্য ইহাদিগকে প্রসব করিয়াছিল। ইহারা ষোল প্রাণী। আর যাকোবের স্ত্রী রাহেলের পুত্র যোষেফ ও বিন্যামীন। যোষেফের পুত্র মনঃশি ও ইফ্রয়িম মিসর দেশে জন্মিয়াছিল; ওন নগরের পোটীফেরঃ যাজকের কন্যা আসনৎ তাঁহার জন্য তাহাদিগকে প্রসব করিয়াছিলেন। বিন্যামীনের পুত্র বেলা, বেখর, অস্‌বেল, গেরা, নামন, এহী, রোশ, মুপ্‌পীম, হুপ্‌পীম ও অর্দ। এই চৌদ্দ প্রাণী যাকোব হইতে জাত রাহেলের সন্তান। আর দানের পুত্র হূশীম। নপ্তালির পুত্র যহসিয়েল, গূনি, যেৎসর ও শিল্লেম। ইহারা সেই বিল্‌হার সন্তান, যাহাকে লাবন আপন কন্যা রাহেলকে দিয়াছিলেন। সে যাকোবের জন্য ইহাদিগকে প্রসব করিয়াছিল; ইহারা সর্ব্বশুদ্ধ সাত প্রাণী। যাকোবের কটি হইতে উৎপন্ন যে প্রাণিগণ তাঁহার সঙ্গে মিসরে উপস্থিত হইল, যাকোবের পুত্রবধূরা ছাড়া তাহারা সর্ব্বশুদ্ধ ছেষট্টি প্রাণী। মিসরে যোষেফের যে পুত্রেরা জন্মিয়াছিল, তাহারা দুই প্রাণী। যাকোবের পরিজন, যাহারা মিসরে গেল, তাহারা সর্ব্বশুদ্ধ সত্তর প্রাণী। পরে আগে আগে গোশনের পথ দেখাইবার নিমিত্তে যাকোব আপনার অগ্রে যিহূদাকে যোষেফের নিকটে পাঠাইলেন; আর তাঁহারা গোশন প্রদেশে পঁহুছিলেন। তখন যোষেফ আপন রথ সাজাইয়া গোশনে আপন পিতা ইস্রায়েলের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন; আর তাঁহাকে দেখা দিয়া তাঁহার গলা ধরিয়া অনেকক্ষণ রোদন করিলেন। তখন ইস্রায়েল যোষেফকে কহিলেন, এখন স্বচ্ছন্দে মরিব, কেননা তোমার মুখ দেখিতে পাইলাম, তুমি এখনও জীবিত আছ। পরে যোষেফ আপন ভ্রাতাদিগকে ও পিতার পরিজনকে কহিলেন, আমি গিয়া ফরৌণকে সংবাদ দিব, তাঁহাকে বলিব, আমার ভ্রাতারা ও পিতার সমস্ত পরিজন কনান দেশ হইতে আমার নিকটে আসিয়াছেন; তাঁহারা মেষপালক, তাঁহারা পশুপাল রাখিয়া থাকেন; আর তাঁহাদের গোমেষাদি পাল এবং সর্ব্বস্ব আনিয়াছেন। তাহাতে ফরৌণ তোমাদিগকে ডাকিয়া যখন জিজ্ঞাসা করিবেন, তোমাদের ব্যবসায় কি? তখন তোমরা বলিবে, আপনার এই দাসগণ পিতৃপুরুষানুক্রমে বাল্যাবধি অদ্য পর্য্যন্ত পশুপাল রাখিয়া আসিতেছে; তাহাতে তোমরা গোশন প্রদেশে বাস করিতে পাইবে; কেননা পশুপালক মাত্রেই মিস্রীয়দের ঘৃণাস্পদ। পরে যোষেফ গিয়া ফরৌণকে সংবাদ দিলেন, বলিলেন, আমার পিতা ও ভ্রাতারা আপন আপন গোমেষাদির পাল এবং সর্ব্বস্ব কনান দেশ হইতে লইয়া আসিয়াছেন; আর দেখুন, তাঁহারা গোশন প্রদেশে আছেন। আর তিনি আপন ভ্রাতাদের মধ্যে পাঁচ জনকে লইয়া ফরৌণের সম্মুখে, উপস্থিত করিলেন। তাহাতে ফরৌণ যোষেফের ভ্রাতাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদের ব্যবসায় কি? তাঁহারা ফরৌণকে কহিলেন, আপনার এই দাসগণ পিতৃপুরুষানুক্রমে পশুপালক। তাঁহারা ফরৌণকে আরও কহিলেন, আমরা এই দেশে প্রবাস করিতে আসিয়াছি, কারণ আপনার এই দাসদের পশুপালের চরাণী হয় না, কারণ কনান দেশে অতি ভারী দুর্ভিক্ষ হইয়াছে; অতএব বিনয় করি, আপনার এই দাসদিগকে গোশন প্রদেশে বাস করিতে দিউন। ফরৌণ যোষেফকে কহিলেন, তোমার পিতা ও ভ্রাতারা তোমার কাছে আসিয়াছে; মিসর দেশ তোমার সম্মুখে রহিয়াছে; দেশের উত্তম স্থানে আপন পিতা ও ভ্রাতাদিগকে বাস করাও; তাহারা গোশন প্রদেশে বাস করুক; আর যদি তাহাদের মধ্যে কাহাকেও কাহাকেও কার্য্যদক্ষ লোক বলিয়া জান, তবে তাহাদিগকে আমার পশুপালের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত কর। পরে যোষেফ আপন পিতা যাকোবকে আনাইয়া ফরৌণের সম্মুখে উপস্থিত করিলেন, আর যাকোব ফরৌণকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। তখন ফরৌণ যাকোবকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার কত বৎসর বয়স হইয়াছে? যাকোব ফরৌণকে কহিলেন, আমার প্রবাসকালের এক শত ত্রিশ বৎসর হইয়াছে; আমার আয়ুর দিন আল্প ও কষ্টকর হইয়াছে, এবং আমার পিতৃপুরুষদের প্রবাসকালের আয়ুর তুল্য হয় নাই। পরে যাকোব ফরৌণকে আশীর্ব্বাদ করিয়া তাঁহার সম্মুখ হইতে বিদায় হইলেন। তখন যোষেফ ফরৌণের আজ্ঞানুসারে মিসর দেশের উত্তম অঞ্চলে, রামিষেষ প্রদেশে, অধিকার দিয়া আপন পিতা, ও ভ্রাতাদিগকে বসাইয়া দিলেন। আর যোষেফ আপন পিতা ও ভ্রাতাদিগকে এবং পিতার সমস্ত পরিজনকে তাঁহাদের পরিবারানুসারে ভক্ষ্য দ্রব্য দিয়া প্রতিপালন করিলেন। তৎকালে সমগ্র দেশে ভক্ষ্য দ্রব্য ছিল না, কারণ অতি ভারী দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল, তাহাতে মিসর দেশ ও কনান দেশ দুর্ভিক্ষপ্রযুক্ত অবসন্ন হইয়া পড়িল। আর মিসর দেশে ও কনান দেশে যত রৌপ্য ছিল, লোকে তাহা দিয়া শস্য ক্রয় করাতে যোষেফ সেই সমস্ত রৌপ্য সংগ্রহ করিয়া ফরৌণের ভাণ্ডারে আনিলেন। মিসর দেশে ও কনান দেশে রৌপ্য ব্যয় হইয়া গেলে মিস্রীয়েরা সকলে যোষেফের নিকটে আসিয়া কহিল, আমাদিগকে খাদ্য দ্রব্য দিউন, আমাদের রৌপ্য শেষ হইয়া গিয়াছে বলিয়া আমরা কি আপনার সম্মুখে মরিব? যোষেফ কহিলেন, তোমাদের পশু দেও; যদি রৌপ্য শেষ হইয়া থাকে, তবে তোমাদের পশুর পরিবর্ত্তে তোমাদিগকে ভক্ষ্য দিব। তখন তাহারা যোষেফের কাছে আপন আপন পশু আনিলে যোষেফ অশ্ব, মেষপাল, গোপাল ও গর্দ্দভদিগকে পরিবর্ত্ত লইয়া তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিতে লাগিলেন; এইরূপে যোষেফ তাহাদের সমস্ত পশু লইয়া সেই বৎসর ভক্ষ্য দিয়া তাহাদের চালাইয়া দিলেন। আর সেই বৎসর অতীত হইলে দ্বিতীয় বৎসরে তাহারা তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিল, আমরা প্রভু হইতে কিছু গোপন করিব না; আমাদের সমস্ত রৌপ্য শেষ হইয়া গিয়াছে, এবং পশুধনও প্রভুরই হইয়াছে; এখন প্রভুর সাক্ষাতে আর কিছুই অবশিষ্ট নাই, কেবল আমাদের শরীর ও ভূমি রহিয়াছে। আমরা আপন আপন ভূমির সহিত আপনার চক্ষুর্গোচরে কেন মারা যাইব? আপনি ভক্ষ্য দিয়া আমাদিগকে ও আমাদের ভূমি ক্রয় করিয়া লউন; আমরা আপন আপন ভূমির সহিত ফরৌণের দাস হইব; আর আমাদিগকে বীজ দিউন, তাহা হইলে আমরা বাঁচিব, মারা পড়িব না, ভূমিও নষ্ট হইবে না। তখন যোষেফ মিসরের সমস্ত ভূমি ফরৌণের নিমিত্তে ক্রয় করিলেন, কেননা দুর্ভিক্ষ তাহাদের অসহ্য হওয়াতে মিস্রীয়েরা প্রত্যেকে আপন আপন ক্ষেত্র বিক্রয় করিল। অতএব মাটি ফরৌণের হইল। আর তিনি মিসরের এক সীমা অবধি অন্য সীমা পর্য্যন্ত প্রজাদিগকে নগরে নগরে প্রবাস করাইলেন। তিনি কেবল যাজকদের ভূমি ক্রয় করিলেন না, কারণ ফরৌণ যাজকদিগকে বৃত্তি দিতেন, এবং তাহারা ফরৌণের দত্ত বৃত্তি ভোগ করিত; এই জন্য আপন আপন ভূমি বিক্রয় করিল না। পরে যোষেফ প্রজাগণকে কহিলেন, দেখ, আমি অদ্য তোমাদিগকে ও তোমাদের ভূমি ফরৌণের নিমিত্তে ক্রয় করিলাম। দেখ, এই বীজ লইয়া ভূমিতে বপন কর; তাহাতে যাহা যাহা উৎপন্ন হইবে, তাহার পঞ্চমাংশ ফরৌণকে দিও, অন্য চারি অংশ ক্ষেত্রের বীজের নিমিত্তে এবং আপনাদের ও পরিজনদের ও শিশুগণের খাদ্যের নিমিত্তে তোমাদেরই থাকিবে। তাহাতে তাহারা কহিল, আপনি আমাদের প্রাণ রক্ষা করিলেন; আমাদের প্রতি আপনার অনুগ্রহদৃষ্টি হউক, আমরা ফরৌণের দাস হইব। মিসরের ভূমির সম্বন্ধে যোষেফ এই ব্যবস্থা স্থাপন করেন, আর ইহা অদ্যাবধি চলিতেছে যে, পঞ্চমাংশ ফরৌণ পাইবেন; কেবল যাজকদের ভূমি ফরৌণের হয় নাই। আর ইস্রায়েল মিসর দেশে, গোশন অঞ্চলে, বাস করিল, তাহারা তথায় অধিকার পাইয়া ফলবন্ত ও অতি বহুবংশ হইয়া উঠিল। মিসর দেশে যাকোব সতের বৎসর জীবিত রহিলেন; যাকোবের আয়ুর পরিমাণ এক শত সাতচল্লিশ বৎসর হইল। পরে ইস্রায়েলের মরণ দিন সন্নিকট হইল। তখন তিনি আপন পুত্র যোষেফকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে বিনয় করি, তুমি আমার জঙ্ঘার নীচে হস্ত দেও, এবং আমার প্রতি সদয় ও সত্য ব্যবহার কর; মিসরে আমাকে কবর দিও না। আমি যখন আপন পিতৃপুরুষদের নিকটে শয়ন করিব, তখন তুমি আমাকে মিসর হইতে লইয়া গিয়া তাঁহাদের করবস্থানে কবরশায়ী করিও। যোষেফ কহিলেন, আপনি যাহা বলিলেন, তাহাই করিব। আর যাকোব তাঁহাকে দিব্য করিতে কহিলে তিনি তাঁহার নিকটে দিব্য করিলেন। তখন ইস্রায়েল শয্যার শিয়রের দিকে প্রণিপাত করিলেন। এই সকল ঘটনা হইলে পর কেহ যোষেফকে বলিল, দেখুন, আপনার পিতা পীড়িত; তাহাতে তিনি আপনার দুই পুত্র মনঃশি ও ইফ্রয়িমকে সঙ্গে লইয়া গেলেন। তখন কেহ যাকোবকে সংবাদ দিয়া কহিল, দেখুন, আপনার পুত্র যোষেফ আসিয়াছেন; তাহাতে ইস্রায়েল আপনাকে সবল করিয়া শয্যায় উঠিয়া বসিলেন। আর যাকোব যোষেফকে কহিলেন, কনান দেশে, লূস নামক স্থানে, সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাকে দর্শন দিয়া আশীর্ব্বাদ করিয়াছিলেন, ও বলিয়াছিলেন, দেখ, আমি তোমাকে ফলবান্ ও বহুবংশ করিব, আর তোমা হইতে জাতিসমাজ উৎপন্ন করিব, এবং তোমার ভাবী বংশকে চিরস্থায়ী অধিকারার্থে এই দেশ দিব। আর মিসরে তোমার কাছে আমার আসিবার পূর্ব্বে তোমার যে দুই পুত্র মিসর দেশে জন্মিয়াছে, তাহারা আমারই; রূবেণ ও শিমিয়োনের ন্যায় ইফ্রয়িম ও মনঃশিও আমারই হইবে। কিন্তু তুমি ইহাদের পরে যাহাদের জন্ম দিয়াছ, তোমার সেই সন্তানেরা তোমারই হইবে, এবং এই দুই ভ্রাতার নামে ইহাদেরই অধিকারে আখ্যাত হইবে। আর পদ্দন হইতে আমার আসিবার সময়ে কনান দেশে রাহেল ইফ্রাথে পঁহুছিবার অল্প পথ থাকিতে পথিমধ্যে আমার কাছে মরিলেন; তাহাতে আমি তথায়, ইফ্রাথের, অর্থাৎ বৈৎলেহমের, পথের পার্শ্বে তাঁহার কবর দিলাম। পরে ইস্রায়েল যোষেফের দুই পুত্রকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহারা কে? যোষেফ পিতাকে কহিলেন, ইহারা আমার পুত্র, যাহাদিগকে ঈশ্বর এই দেশে আমাকে দিয়াছেন। তখন তিনি কহিলেন, বিনয় করি, ইহাদিগকে আমার কাছে আন, আমি ইহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিব। তখন ইস্রায়েল বার্দ্ধক্য প্রযুক্ত ক্ষীণ দৃষ্টি হওয়াতে দেখিতে পাইলেন না; আর তাহারা নিকটে আনীত হইলে তিনি তাহাদিগকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করিলেন। পরে ইস্রায়েল যোষেফকে কহিলেন, আমি ভাবিয়াছিলাম, তোমার মুখ আর দেখিতে পাইব না; কিন্তু দেখ, ঈশ্বর আমাকে তোমার বংশও দেখাইলেন। তখন যোষেফ দুই জানুর মধ্য হইতে তাহাদিগকে বাহির করিলেন, ও ভূমিতে মুখ দিয়া প্রণিপাত করিলেন। পরে যোষেফ দুই জনকে লইয়া আপন দক্ষিণ হস্ত দ্বারা ইফ্রয়িমকে ধরিয়া ইস্রায়েলের বামদিকে, ও বাম হস্ত দ্বারা মনঃশিকে ধরিয়া ইস্রায়েলের দক্ষিণদিকে তাঁহার নিকটে উপস্থিত করিলেন। তখন ইস্রায়েল দক্ষিণ হস্ত বাড়াইয়া কনিষ্ঠ ইফ্রয়িমের মস্তকে দিলেন, এবং বাম হস্ত মনঃশির মস্তকে রাখিলেন। এ তাঁহার বিবেচনাসিদ্ধ বাহুচালন, কারণ মনঃশি প্রথমজাত। পরে তিনি যোষেফকে আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, সেই ঈশ্বর, যাঁহার সাক্ষাতে আমার পিতৃপুরুষ অব্রাহাম ও ইস্‌হাক গমনাগমন করিতেন—সেই ঈশ্বর, যিনি প্রথমাবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমার পালক হইয়া আসিতেছেন—সেই দূত, যিনি আমাকে সমস্ত আপদ হইতে মুক্ত করিয়াছেন—তিনিই এই বালক দুইটীকে আশীর্ব্বাদ করুন। ইহাদের দ্বারা আমার নাম ও আমার পিতৃপুরুষ অব্রাহামের ও ইস্‌হাকের নাম আখ্যাত হউক, এবং ইহারা দেশের মধ্যে বহুগোষ্ঠীক হউক। তখন ইফ্রয়িমের মস্তকে পিতা দক্ষিণ হস্ত দিয়াছেন দেখিয়া যোষেফ অসন্তুষ্ট হইলেন, আর তিনি ইফ্রয়িমের মস্তক হইতে মনঃশির মস্তকে স্থাপনার্থে পিতার হস্ত তুলিয়া ধরিলেন। যোযেফ পিতাকে কহিলেন, পিতঃ, এমন নয়, এই প্রথমজাত, ইহারই মস্তকে দক্ষিণ হস্ত দিউন। কিন্তু তাঁহার পিতা অসম্মত হইয়া কহিলেন, বৎস, তাহা আমি জানি, আমি জানি; এও এক জাতি হইবে, এবং মহান্ও হইবে, তথাপি ইহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ইহা অপেক্ষাও মহান্‌ হইবে, ও তাহার বংশ বহুগোষ্ঠীক হইবে। সেই দিন তিনি তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল তোমার নাম করিয়া আশীর্ব্বাদ করিবে, বলিবে, ঈশ্বর তোমাকে ইফ্রয়িমের ও মনঃশির তুল্য করুন। এইরূপে তিনি মনঃশি হইতে ইফ্রয়িমকে অগ্রগণ্য করিলেন। পরে ইস্রায়েল যোষেফকে কহিলেন, দেখ, আমি মরিতেছি; কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী থাকিবেন, ও তোমাদিগকে আবার তোমাদের পিতৃপুরুষদের দেশে লইয়া যাইবেন। আর তোমার ভ্রাতাদের অপেক্ষা এক অংশ তোমাকে বেশী দিলাম; তাহা আমি আপন খড়গ ও ধনুর দ্বারা ইমোরীয়দের হস্ত হইতে লইয়াছি। পরে যাকোব আপন পুত্রগণকে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা একত্র হও, উত্তর কালে তোমাদের প্রতি যাহা ঘটিবে, তাহা তোমাদিগকে বলিতেছি। যাকোবের পুত্রগণ, সমবেত হও, শুন, তোমাদের পিতা ইস্রায়েলের বাক্য শুন। রূবেণ, তুমি আমার প্রথমজাত, আমার বল ও আমার শক্তির প্রথম ফল, মহিমার প্রাধান্য ও পরাক্রমের প্রাধান্য। তুমি [তপ্ত] জলবৎ চপল, তোমার প্রাধান্য থাকিবে না; কেননা তুমি আপন পিতার শয্যায় গিয়াছিলে; তখন অপবিত্র কর্ম্ম করিয়াছিলে; সে আমার শয্যায় গিয়াছিল। শিমিয়োন ও লেবি দুই সহোদর; তাহাদের খড়গ দৌরাত্ম্যের অস্ত্র। হে মম প্রাণ! তাহাদের সভায় যাইও না; হে মম গৌরব! তাহাদের সমাজে যোগ দিও না; কেননা তাহারা ক্রোধে নরহত্যা করিল, স্বেচ্ছাচারিতায় বৃষের শিরা ছেদন করিল। অভিশপ্ত তাহাদের ক্রোধ, কেননা তাহা প্রচণ্ড; তাহাদের কোপ, কেননা তাহা নিষ্ঠুর; আমি তাহাদিগকে যাকোবের মধ্যে বিভাগ করিব; ইস্রায়েলের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিব। যিহূদা, তোমার ভ্রাতৃগণ তোমারই স্তব করিবে; তোমার হস্ত তোমার শত্রুগণের ঘাড় ধরিবে; তব পিতৃসন্তানেরা তোমার সম্মুখে প্রণিপাত করিবে। যিহূদা সিংহশাবক; বৎস, তুমি মৃগবিদারণ হইতে উঠিয়া আসিলে; সে শয়ন করিল, গুঁড়ি মারিল, সিংহের ন্যায়, ও সিংহীর ন্যায়; কে তাহাকে উঠাইবে? যিহূদা হইতে রাজদণ্ড যাইবে না, তাহার চরণযুগলের মধ্য হইতে বিচারদণ্ড যাইবে না, যে পর্য্যন্ত শীলো না আইসেন; জাতিগণ তাঁহারই আজ্ঞাবহতা স্বীকার করিবে। সে দ্রাক্ষালতায় আপন গর্দ্দভ বাঁধিবে, উত্তম দ্রাক্ষালতায় আপন খরশাবক বাঁধিবে; সে দ্রাক্ষারসে আপন পরিচ্ছদ কাচিয়াছে, দ্রাক্ষার রক্তে আপন কাপড় কাচিয়াছে। তাহার চক্ষু দ্রাক্ষারসে রক্তবর্ণ, তাহার দন্ত দুগ্ধে শ্বেতবর্ণ। সবূলূন সমুদ্র-তীরে বাস করিবে, তাহা পোতাশ্রয়ের তীর হইবে, সীদোন পর্য্যন্ত তাহার সীমা হইবে। ইষাখর বলবান্ গর্দ্দভ, সে খোঁয়াড়ের মধ্যে শয়ন করে। সে দেখিল, বিশ্রামস্থান উত্তম, দেখিল, এই দেশ রমণীয়, তাই ভার বহিতে কাঁধ পাতিয়া দিল, আর করাধীন দাস হইল। দান আপন প্রজাবৃন্দের বিচার করিবে, ইস্রায়েলের এক বংশের ন্যায়। দান পথে অবস্থিত সর্প, সে মার্গে অবস্থিত ফণী, যে ঘোটকের চরণে দংশন করে, আর তদারূঢ় ব্যক্তি পশ্চাতে পতিত হয়। সদাপ্রভো, আমি তোমার পরিত্রাণের অপেক্ষায় রহিয়াছি। গাদকে সৈন্যদল আঘাত করিবে; কিন্তু সে তাহাদের পশ্চাদ্ভাগে আঘাত করিবে। আশের হইতে অতি উত্তম খাদ্য জন্মিবে; সে রাজার উপাদেয় ভক্ষ্য যোগাইয়া দিবে। নপ্তালি উন্মুক্তা হরিণী, সে মনোহর বাক্য বলে। যোষেফ ফলবান্ তরু-পল্লব, জলপ্রবাহের পার্শ্বস্থিত ফলবান্ তরু পল্লব; তাহার শাখা সকল প্রাচীর অতিক্রম করে। ধনুর্দ্ধরেরা তাহাকে কঠোর ক্লেশ দিয়াছিল, বাণাঘাতে তাহাকে উৎপীড়ন করিয়াছিল; কিন্তু তাহার ধনুক দৃঢ় থাকিল, তাহার হস্তের বাহুযুগল বলবান্ রহিল, যাকোবের একবীরের হস্ত দ্বারা, যিনি ইস্রায়েলের পালক ও শৈল, তাঁহার দ্বারা, তোমার পিতার সেই ঈশ্বরের দ্বারা, —যিনি তোমাকে সাহায্য করিবেন, —সেই সর্ব্বশক্তিমানের দ্বারা,—যিনি তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন, উপরিস্থ আকাশ হইতে নিঃসৃত আশীর্ব্বাদে, অধোবিস্তীর্ণ জলধি হইলে নিঃসৃত আশীর্ব্বাদে, স্তন ও গর্ভ হইতে নিঃসৃত আশীর্ব্বাদে। আমার পিতৃপুরুষদের আশীর্ব্বাদ অপেক্ষা তোমার পিতার আশীর্ব্বাদ উৎকৃষ্ট। তাহা চিরন্তন গিরিমালার সীমা পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত; তাহা বর্ত্তিবে যোষেফের মস্তকে, ভ্রাতৃগণ হইতে পৃথক্‌কৃতের মস্তকের তালুতে। বিন্যামীন বিদারক নেকড়িয়ার তুল্য; প্রাতঃকালে সে শিকার ভক্ষণ করিবে, সন্ধ্যাকালে সে লুট দ্রব্য বন্টন করিবে। ইহাঁরা সকলে ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশ; ইহাঁদের পিতা আশীর্ব্বাদ করিবার সময়ে এই কথা কহিলেন; ইহাঁদের প্রত্যেক জনকে বিশেষ বিশেষ আশীর্ব্বাদ করিলেন। পরে যাকোব তাঁহাদিগকে আদেশ দিয়া কহিলেন, আমি আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইতে উদ্যত। হেতীয় ইফ্রোণের ক্ষেত্রস্থিত গুহাতে আমার পিতৃপুরুষদের নিকটে আমার কবর দিও; সেই গুহা কনান দেশে মম্রির সম্মুখস্থ মক্‌পেলা ক্ষেত্রে স্থিত; অব্রাহাম হেতীয় ইফ্রোণের কাছে তাহা কবরস্থানের অধিকার জন্য কিনিয়াছিলেন। সেই স্থানে অব্রাহামের ও তাঁহার ভার্য্যা সারার কবর হইয়াছে, সেই স্থানে ইস্‌হাকের ও তাঁহার ভার্য্যা রিবিকার কবর হইয়াছে, এবং সেই স্থানে আমিও লেয়ার কবর দিয়াছি; সেই ক্ষেত্র ও তাহার মধ্যবর্ত্তী গুহা হেতের সন্তানদের কাছে কেনা হইয়াছিল। যাকোব আপন পুত্রদের প্রতি আদেশ সমাপ্ত করিলে পর শয্যাতে দুই চরণ একত্র করিলেন, ও প্রাণত্যাগ করিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইলেন। তখন যোষেফ আপন পিতার মুখে মুখ দিয়া রোদন করিলেন, ও তাঁহাকে চুম্বন করিলেন। আর যোষেফ আপন পিতার দেহে ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দিতে আপন দাস চিকিৎসকগণকে আজ্ঞা করিলেন, তাহাতে চিকিৎসকেরা ইস্রায়েলের দেহে ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দিল। তাহারা সেই কার্য্যে চল্লিশ দিন যাপন করিল, কেননা সেই ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দিতে চল্লিশ দিবস লাগে; আর মিস্রীয়েরা তাঁহার নিমিত্তে সত্তর দিন যাবৎ শোক করিল। সেই শোকের দিন অতীত হইলে যোষেফ ফরৌণের পরিজনকে কহিলেন, যদি আমি আপনাদের দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে ফরৌণের কর্ণগোচরে এই কথা বলুন, আমার পিতা আমাকে দিব্য করাইয়া বলিয়াছেন, দেখ, আমি মরিতেছি, কনান দেশে আমার জন্য যে কবর খনন করিয়াছি, তুমি আমাকে সেই কবরে রাখিও। অতএব বিনয় করি, আমাকে যাইতে দিউন; আমি পিতাকে কবর দিয়া আবার আসিব। ফরৌণ কহিলেন, যাও, তোমার পিতা তোমাকে যে দিব্য করাইয়াছেন, তুমি তদনুসারে তাঁহার কবর দেও। পরে যোষেফ আপন পিতার কবর দিতে যাত্রা করিলেন; আর ফরৌণের দাসগণ সকলে—তাঁহার গৃহের প্রাচীনগণ ও মিসর দেশের প্রাচীনেরা সকলে— এবং যোষেফের সকল পরিবার, তাঁহার ভ্রাতৃগণ ও তাঁহার পিতৃকুল তাঁহার সঙ্গে গমন করিলেন; তাঁহারা গোশন প্রদেশে কেবল তাঁহাদের বালক বালিকাগণ, মেষপাল ও গোপাল রাখিয়া গেলেন। তাঁহার সহিত রথ ও অশ্বারোহিগণ গমন করিল; অতি ভারী সমারোহ হইল। পরে তাঁহারা যর্দ্দনের পারস্থ আটদের খামারে উপস্থিত হইয়া তথায় মহাবিলাপ করিয়া রোদন করিলেন; যোষেফ সেই স্থানে পিতার উদ্দেশে সাত দিন শোক করিলেন। আটদের খামারে তাঁহাদের তাদৃশ শোক দেখিয়া সেই দেশনিবাসী কনানীয়েরা কহিল, মিস্রীয়দের এ অতি দারুণ শোক; এই নিমিত্তে যর্দ্দনপারস্থ সেই স্থান আবেল্-মিস্রয়ীম [মিস্রীয়দের শোক] নামে আখ্যাত হইল। যাকোব আপন পুত্রগণকে যেরূপ আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তাঁহারা তদনুসারে তাঁহার সৎকার করিলেন। ফলতঃ তাঁহার পুত্রগণ তাঁহাকে কনান দেশে লইয়া গেলেন, এবং মম্রির সম্মুখস্থ মক্‌পেলা ক্ষেত্রের মধ্যবর্ত্তী গুহাতে তাঁহার কবর দিলেন, যাহা অব্রাহাম ক্ষেত্রসহ কবরস্থানের অধিকারার্থে হেতীয় ইফ্রোণের কাছে ক্রয় করিয়াছিলেন। পিতার কবর হইলে পর যোষেফ, তাঁহার ভ্রাতৃগণ, এবং যত লোক তাঁহার পিতার কবর দিতে তাঁহার সঙ্গে গিয়াছিলেন, সকলে মিসরে ফিরিয়া আসিলেন। আর পিতার মৃত্যু হইল দেখিয়া যোষেফের ভ্রাতৃগণ কহিলেন, হয় ত যোষেফ আমাদিগকে ঘৃণা করিবে, আর আমরা তাহার যে সকল অপকার করিয়াছি, তাহার সম্পূর্ণ প্রতিফল আমাদিগকে দিবে। আর তাঁহারা যোষেফের নিকটে এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন, তোমার পিতা মৃত্যুর পূর্ব্বে এই আদেশ দিয়াছিলেন, তোমরা যোষেফকে এই কথা বলিও, তোমার ভ্রাতৃগণ তোমার অপকার করিয়াছে, কিন্তু বিনয় করি, তুমি তাহাদের সেই অধর্ম্ম ও পাপ ক্ষমা কর। অতএব এখন আমরা বিনয় করি, তোমার পিতার ঈশ্বরের এই দাসদের অধর্ম্ম ক্ষমা কর। তাঁহাদের এই কথায় যোষেফ রোদন করিতে লাগিলেন। পরে তাঁহার ভ্রাতৃগণ আপনারা গিয়া তাঁহার সম্মুখে প্রণিপাত করিয়া কহিলেন, দেখ, আমরা তোমার দাস। তখন যোষেফ তাঁহাদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না, আমি কি ঈশ্বরের প্রতিনিধি? তোমরা আমার বিরুদ্ধে অনিষ্ট কল্পনা করিয়াছিলে বটে, কিন্তু ঈশ্বর তাহা মঙ্গলের কল্পনা করিলেন; অদ্য যেরূপ দেখিতেছ, এইরূপে অনেক লোকের প্রাণ রক্ষা করাই তাঁহার অভিপ্রায় ছিল। তোমরা এখন ভীত হইও না, আমিই তোমাদিগকে ও তোমাদের বালক বালিকাগণকে প্রতিপালন করিব। এইরূপে তিনি তাঁহাদিগকে সান্ত্বনা করিলেন, ও চিত্ততোষক কথা কহিলেন। পরে যোষেফ ও তাঁহার পিতৃকুল মিসরে বাস করিতে থাকিলেন; এবং যোষেফ এক শত দশ বৎসর জীবিত রহিলেন। যোষেফ ইফ্রয়িমের পৌত্র পর্য্যন্ত দেখিলেন; মনঃশির মাখীর নামক পুত্রের শিশুসন্তানেরাও যোষেফের ক্রোড়ে ভূমিষ্ঠ হইল। পরে যোষেফ আপন ভ্রাতৃগণকে কহিলেন, আমি মরিতেছি, কিন্তু ঈশ্বর অবশ্য তোমাদের তত্ত্বাবধান করিবেন, এবং অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের নিকটে যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছেন, তোমাদিগকে এই দেশ হইতে সেই দেশে লইয়া যাইবেন। আর যোষেফ ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই দিব্য করাইলেন, কহিলেন, ঈশ্বর অবশ্য তোমাদের তত্ত্বাবধান করিবেন, আর তোমরা এ স্থান হইতে আমার অস্থি লইয়া যাইবে। যোষেফ এক শত দশ বৎসর বয়সে মরিলেন; আর লোকেরা তাঁহার দেহে ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দিয়া তাহা মিসর দেশে এক শবাধারের মধ্যে রাখিল। ইস্রায়েলের পুত্রগণ, যাঁহারা মিসর দেশে গিয়াছিলেন, সপরিবারে যাকোবের সহিত গিয়াছিলেন, তাঁহাদের নাম এই এই; —রূবেণ, শিমিয়োন, লেবি ও [3-4] যিহূদা, ইষাখর, সবূলূন ও বিন্যামীন, দান ও নপ্তালি, গাদ ও আশের। *** যাকোবের কটি হইতে উৎপন্ন প্রাণী সর্ব্বশুদ্ধ সত্তর জন ছিল; আর যোষেফ মিসরেই ছিলেন। পরে যোষেফ, তাঁহার ভ্রাতৃগণ ও তাৎকালিক সমস্ত লোক মরিয়া গেলেন। আর ইস্রায়েল-সন্তানেরা ফলবন্ত, অতি বর্দ্ধিষ্ণু ও বহুবংশ হইয়া উঠিল, ও অতিশয় প্রবল হইল এবং তাহাদের দ্বারা দেশ পরিপূর্ণ হইল। পরে মিসরের উপরে এক নূতন রাজা উঠিলেন, তিনি যোষেফকে জানিতেন না। তিনি আপন প্রজাদিগকে কহিলেন, দেখ, আমাদের অপেক্ষা ইস্রায়েল-সন্তানদের জাতি বহুসংখ্যক ও বলবান্‌; আইস, আমরা তাহাদের সহিত বিবেচনাপূর্ব্বক ব্যবহার করি, পাছে তাহারা বাড়িয়া উঠে, এবং যুদ্ধ উপস্থিত হইলে তাহারাও শত্রুপক্ষে যোগ দিয়া আমাদের সহিত যুদ্ধ করে, এবং এ দেশ হইতে প্রস্থান করে। অতএব তাহারা ভার বহন দ্বারা উহাদিগকে দুঃখ দিবার জন্য উহাদের উপরে কার্য্যশাসকদিগকে নিযুক্ত করিল। আর উহারা ফরৌণের নিমিত্ত ভাণ্ডারের নগর পিথোম ও রামিষেষ গাঁথিল। কিন্তু উহারা তাহাদের দ্বারা যত দুঃখ পাইল, ততই বৃদ্ধি পাইতে ও ব্যাপ্ত হইতে লাগিল; তাই ইস্রায়েল-সন্তানদের বিষয়ে তাহারা অতিশয় উদ্বিগ্ন হইল। আর মিস্রীয়েরা নির্দ্দয়তাপূর্ব্বক ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে দাস্যকর্ম্ম করাইল; তাহারা কর্দ্দম, ইষ্টক ও ক্ষেত্রের সমস্ত কার্য্যে কঠিন দাস্যকর্ম্ম দ্বারা উহাদের প্রাণ তিক্ত করিতে লাগিল। তাহারা উহাদের দ্বারা যে যে দাস্যকর্ম্ম করাইত, সে সমস্ত নির্দ্দয়তাপূর্ব্বক করাইত। পরে মিসরের রাজা শিফ্রা নামে ও পূয়া নামে দুই ইব্রীয়া ধাত্রীকে এই কথা কহিলেন, যে সময়ে তোমরা ইব্রীয় স্ত্রীলোকদের ধাত্রীকার্য্য করিবে, ও তাহাদিগকে প্রসব-আধারে দেখিবে, যদি পুত্র সন্তান হয়, তাহাকে বধ করিবে; আর যদি কন্যা হয়, তাহাকে জীবিত রাখিবে। কিন্তু ঐ ধাত্রীরা ঈশ্বরকে ভয় করিত, সুতরাং মিসর-রাজের আজ্ঞানুসারে না করিয়া পুত্রসন্তানদিগকে জীবিত রাখিত। তাই মিসর রাজ সেই ধাত্রীদিগকে ডাকাইয়া কহিলেন, এ কর্ম্ম কেন করিয়াছ? পুত্রসন্তানগণকে কেন জীবিত রাখিয়াছ? ধাত্রীরা ফরৌণকে উত্তর করিল, ইব্রীয় স্ত্রীলোকেরা মিস্রীয় স্ত্রীলোকদের ন্যায় নহে; তাহারা বলবতী, তাহাদের কাছে ধাত্রী যাইবার পূর্ব্বেই তাহারা প্রসব হয়। অতএব ঈশ্বর ঐ ধাত্রীদের মঙ্গল করিলেন; এবং লোকেরা বৃদ্ধি পাইয়া অতিশয় বলবান্ হইল। সেই ধাত্রীরা ঈশ্বরকে ভয় করিত বলিয়া তিনি তাহাদের বংশবৃদ্ধি করিলেন। পরে ফরৌণ আপনার সকল প্রজাকে এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা [ইব্রীয়দের] নবজাত প্রত্যেক পুত্রসন্তানকে নদীতে নিক্ষেপ করিবে, কিন্তু প্রত্যেক কন্যাকে জীবিত রাখিবে। আর লেবির কুলের এক পুরুষ গিয়া এক লেবীয় কন্যাকে বিবাহ করিলেন। আর সেই স্ত্রী গর্ভ ধারণ করিয়া পুত্র প্রসব করিলেন, ও শিশুটিকে সুশ্রী দেখিয়া তিন মাস গোপনে রাখিলেন। পরে আর গোপন করিতে না পারাতে তিনি এক নলের পেটরা লইয়া মেটিয়া তৈল ও আলকাতারা লেপন করিয়া তাহার মধ্যে বালকটীকে রাখিলেন, ও নদীতীরস্থ নলবনে তাহা স্থাপন করিলেন। আর তাহার কি দশা ঘটে, তাহা দেখিবার জন্য তাহার ভগিনী দূরে দাঁড়াইয়া রহিল। পরে ফরৌণের কন্যা স্নানার্থে নদীতে আসিলেন, এবং তাঁহার সহচরীগণ নদীতীরে বেড়াইতেছিল; আর তিনি নলবনের মধ্যে ঐ পেটরা দেখিয়া আপন দাসীকে তাহা আনিতে পাঠাইলেন। পরে পেটরা খুলিয়া শিশুটীকে দেখিলেন; আর দেখ, ছেলেটী কাঁদিতেছে; তিনি তাহার প্রতি সদয় হইয়া বলিলেন, এটী ইব্রীয়দের ছেলে। তখন তাহার ভগিনী ফরৌণের কন্যাকে কহিল, আমি গিয়া কি আপনার নিমিত্ত এই ছেলেকে দুদ দিবার জন্য স্তন্যদাত্রী একটী ইব্রীয় স্ত্রীলোককে আপনার নিকটে ডাকিয়া আনিব? ফরৌণের কন্যা কহিলেন, যাও। তখন সেই মেয়েটী গিয়া ছেলের মাকে ডাকিয়া আনিল। ফরৌণের কন্যা তাঁহাকে কহিলেন, তুমি এই ছেলেটিকে লইয়া আমার নিমিত্ত দুগ্ধ পান করাও; আমি তোমাকে বেতন দিব। তাহাতে সেই স্ত্রী ছেলেটীকে লইয়া দুগ্ধ পান করাইতে লাগিলেন। পরে ছেলেটী বড় হইলে তিনি তাহাকে লইয়া ফরৌণের কন্যাকে দিলেন; তাহাতে সে তাঁহারই পুত্র হইল; আর তিনি তাহার নাম মোশি [টানিয়া তোলা] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, আমি তাহাকে জল হইতে টানিয়া তুলিয়াছি। সেকালে এই ঘটনা হইল; মোশি বড় হইলে পর এক দিন আপন ভ্রাতৃগণের নিকটে গিয়া তাহাদিগের ভার বহন দেখিতে লাগিলেন; আর দেখিলেন, এক জন মিস্রীয় এক জন ইব্রীয়কে, তাঁহার ভ্রাতৃগণের মধ্যে এক জনকে মারিতেছে। তখন তিনি এদিক্ ওদিক্ চাহিয়া কাহাকেও দেখিতে না পাওয়াতে ঐ মিস্রীয়কে বধ করিয়া বালির মধ্যে পুতিয়া রাখিলেন। পরে দ্বিতীয় দিন তিনি বাহিরে গেলেন, আর দেখ, দুই জন ইব্রীয় পরস্পর বিবাদ করিতেছে; তিনি দোষী ব্যক্তিকে কহিলেন, তোমার ভাইকে কেন মারিতেছ? সে কহিল, তোমাকে অধ্যক্ষ ও বিচারকর্ত্তা করিয়া আমাদের উপরে কে নিযুক্ত করিয়াছে? তুমি যেমন সেই মিস্রীয়কে বধ করিয়াছ, তদ্রূপ কি আমাকেও বধ করিতে চাহ? তখন মোশি ভীত হইয়া কহিলেন, কথাটা অবশ্যই প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। পরে ফরৌণ ঐ কথা শুনিয়া মোশিকে বধ করিতে চেষ্টা করিলেন। কিন্তু মোশি ফরৌণের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিলেন, এবং মিদিয়ন দেশে বাস করিতে গিয়া এক কূপের নিকটে বসিলেন। মিদিয়নীয় যাজকের সাতটী কন্যা ছিল; তাহারা সেই স্থানে আসিয়া পিতার মেষপালকে জল পান করাইবার জন্য জল তুলিয়া নিপানগুলি পরিপূর্ণ করিল। তখন মেষপালকেরা আসিয়া তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিল, কিন্তু মোশি উঠিয়া তাহাদের সাহায্য করিলেন, ও তাহাদের মেষপালকে জল পান করাইলেন। পরে তাহারা আপনাদের পিতা রূয়েলের কাছে গেলে তিনি তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, অদ্য তোমরা কি প্রকারে এত শীঘ্র আসিলে? তাহারা কহিল, এক জন মিস্রীয় আমাদিগকে মেষপালকদের হস্ত হইতে উদ্ধার করিলেন, আরও তিনি আমাদের নিমিত্তে যথেষ্ট জল তুলিয়া মেষপালকে জল পান করাইলেন। তখন তিনি আপন কন্যাদিগকে কহিলেন, সে লোকটী কোথায়? তোমরা তাঁহাকে কেন ছাড়িয়া আসিলে? তাঁহাকে ডাক; তিনি আহার করুন। পরে মোশি ঐ ব্যক্তির সঙ্গে বাস করিতে সম্মত হইলেন, আর তিনি মোশির সহিত আপন কন্যা সিপ্পোরার বিবাহ দিলেন। পরে ঐ স্ত্রী পুত্র প্রসব করিলেন, আর মোশি তাহার নাম গের্শোম [তত্রপ্রবাসী] রাখিলেন, কেননা তিনি কহিলেন, আমি বিদেশে প্রবাসী হইয়াছি। অনেক দিন পরে মিসর-রাজের মৃত্যু হইল, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণ দাস্যকর্ম্ম প্রযুক্ত কাতরোক্তি ও ক্রন্দন করিল, এবং দাস্যকর্ম্ম জন্য তাহাদের আর্ত্তনাদ ঈশ্বরের নিকটে উঠিল। আর ঈশ্বর তাহাদের আর্ত্তস্বর শুনিলেন, এবং ঈশ্বর অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের সহিত কৃত আপনার নিয়ম স্মরণ করিলেন; ফলতঃ ঈশ্বর ইস্রায়েল-সন্তানদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন; আর ঈশ্বর তাহাদের তত্ত্ব লইলেন। মোশি আপন শ্বশুর যিথ্রো নামক মিদিয়নীয় যাজকের মেষপাল চরাইতেন। একদা তিনি প্রান্তরের পশ্চাদ্ভাগে মেষপাল লইয়া গিয়া হোরেবে, ঈশ্বরের পর্ব্বতে উপস্থিত হইলেন। আর ঝোপের মধ্য হইতে অগ্নিশিখাতে সদাপ্রভুর দূত তাঁহাকে দর্শন দিলেন; তখন তিনি দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, ঝোপ অগ্নিতে জ্বলিতেছে, তথাপি ঝোপ বিনষ্ট হইতেছে না। তাই মোশি কহিলেন আমি এক পার্শ্বে গিয়া এই মহাশ্চর্য্য দৃশ্য দেখি, ঝোপ দগ্ধ হয় না, ইহার কারণ কি? কিন্তু সদাপ্রভু যখন দেখিলেন যে, তিনি দেখিবার জন্য এক পার্শ্বে যাইতেছেন, তখন ঝোপের মধ্য হইতে ঈশ্বর তাঁহাকে ডাকিয়া কহিলেন, মোশি, মোশি। তিনি কহিলেন, দেখুন, এই আমি। তখন তিনি কহিলেন, এ স্থানের নিকটবর্ত্তী হইও না, তোমার পদ হইতে জুতা খুলিয়া ফেল; কেননা যে স্থানে তুমি দাঁড়াইয়া আছ, উহা পবিত্র ভূমি। তিনি আরও কহিলেন, আমি তোমার পিতার ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর। তখন মোশি আপন মুখ আচ্ছাদন করিলেন, কেননা তিনি ঈশ্বরের প্রতি দৃষ্টি করিতে ভীত হইয়াছিলেন। পরে সদাপ্রভু কহিলেন, সত্যই আমি মিসরস্থ আপন প্রজাদের কষ্ট দেখিয়াছি, এবং কার্য্যশাসকদের সমক্ষে তাহাদের ক্রন্দনও শুনিয়াছি; ফলতঃ আমি তাহাদের দুঃখ জানি। আর মিস্রীয়দের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিবার জন্য, এবং সেই দেশ হইতে উঠাইয়া লইয়া উত্তম ও প্রশস্ত এক দেশে, অর্থাৎ কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয় লোকেরা যে স্থানে থাকে, সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে তাহাদিগকে আনিবার জন্য নামিয়া আসিয়াছি। এখন দেখ, ইস্রায়েল-সন্তানগণের ক্রন্দন আমার নিকটে উপস্থিত হইয়াছে, এবং মিস্রীয়েরা তাহাদের প্রতি যে দৌরাত্ম্য করে, তাহা আমি দেখিয়াছি। অতএব এখন আইস, আমি তোমাকে ফরৌণের নিকটে প্রেরণ করি, তুমি মিসর হইতে আমার প্রজা ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বাহির করিও। মোশি ঈশ্বরকে কহিলেন, আমি কে, যে ফরৌণের নিকটে যাই, ও মিসর হইতে ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বাহির করি? তিনি কহিলেন, নিশ্চয় আমি তোমার সহবর্ত্তী হইব; এবং আমি যে তোমাকে প্রেরণ করিলাম, তোমার পক্ষে তাহার এই চিহ্ন হইবে; তুমি মিসর হইতে লোকসমূহকে বাহির করিয়া আনিলে পর তোমরা এই পর্ব্বতে ঈশ্বরের সেবা করিবে। পরে মোশি ঈশ্বরকে কহিলেন, দেখ, আমি যখন ইস্রায়েল-সন্তানদের নিকটে গিয়া বলিব, তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তোমাদের নিকটে আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তখন যদি তাহারা জিজ্ঞাসা করে, তাঁহার নাম কি? তবে তাহাদিগকে কি বলিব? ঈশ্বর মোশিকে কহিলেন, “আমি যে আছি সেই আছি”; আরও কহিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে এইরূপ বলিও, “আছি” তোমাদের নিকটে আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। ঈশ্বর মোশিকে আরও কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে এই কথা বলিও, যিহোবা [সদাপ্রভু], তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর তোমাদের নিকটে আমাকে পাঠাইয়াছেন; আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী, এবং এতদ্দ্বারা আমি পুরুষে পুরুষে স্মরণীয়। তুমি যাও, ইস্রায়েলের প্রাচীনগণকে একত্র কর, তাহাদিগকে এই কথা বল, সদাপ্রভু, তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের ঈশ্বর আমাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, সত্যই আমি তোমাদিগের তত্ত্ব লইয়াছি, এবং মিসরে তোমাদের প্রতি যাহা করা হইতেছে, তাহা দেখিয়াছি। আর আমি বলিয়াছি, আমি মিসরের কষ্ট হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়া কনানীয়দের, হিত্তীয়দের, ইমোরীয়দের, পরিষীয়দের, হিব্বীয়দের, ও যিবূষীয়দের দেশে, দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে, লইয়া যাইব। তাহারা তোমার রবে মনোযোগ করিবে; তখন তুমি ও ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ মিসরের রাজার নিকটে যাইবে, তাহাকে বলিবে, সদাপ্রভু, ইব্রীয়দের ঈশ্বর আমাদিগকে দেখা দিয়াছেন; অতএব বিনয় করি, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞ করণার্থে আমাদিগকে তিন দিনের পথ প্রান্তরে যাইবার অনুমতি দিউন। কিন্তু আমি জানি, মিসরের রাজা তোমাদিগকে যাইতে দিবে না, পরাক্রান্ত হস্ত দেখাইলেও দিবে না। পরন্তু আমি হস্ত বিস্তার করিব, এবং দেশের মধ্যে যে সমস্ত আশ্চর্য্য কার্য্য করিব, তদ্দ্বারা মিসরকে আঘাত করিব, তৎপরে সে তোমাদিগকে যাইতে দিবে। আর আমি মিস্রীয়দের দৃষ্টিতে এই লোকদিগকে অনুগ্রহের পাত্র করিব; তাহাতে তোমরা যাত্রাকালে রিক্ত হস্তে যাইবে না; কিন্তু প্রত্যেক স্ত্রী আপন আপন প্রতিবাসিনী কিম্বা গৃহে প্রবাসিনী স্ত্রীর কাছে রৌপ্যালঙ্কার, স্বর্ণালঙ্কার ও বস্ত্র চাহিবে; এবং তোমরা তাহা আপন আপন পুত্রদের ও কন্যাদের গাত্রে পরাইবে; এইরূপে তোমরা মিস্রীয়দের দ্রব্য হরণ করিবে। মোশি উত্তর করিলেন, কিন্তু দেখুন, তাহারা আমাকে বিশ্বাস করিবে না, ও আমার রবে মনোযোগ করিবে না, কেননা তাহারা বলিবে, সদাপ্রভু তোমাকে দর্শন দেন নাই। তখন সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তোমার হস্তে ওখানি কি? তিনি বলিলেন, যষ্টি। তখন তিনি কহিলেন, উহা ভূমিতে ফেল। পরে তিনি ভূমিতে ফেলিলে তাহা সর্প হইল; আর মোশি তাহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, ‘হস্ত বিস্তার করিয়া উহার লেজ ধর’,—তাহাতে তিনি হস্ত বিস্তার করিয়া ধরিলে উহা তাঁহার হস্তে যষ্টি হইল,— ‘যেন তাহারা বিশ্বাস করে যে, সদাপ্রভু, তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর তোমাকে দর্শন দিয়াছেন।’ পরে সদাপ্রভু তাঁহাকে আরও কহিলেন, তুমি তোমার হস্ত বক্ষঃস্থলে দেও; তিনি বক্ষঃস্থলে হস্ত দিলেন; পরে তাহা বাহির করিলে দেখ, তাঁহার হস্ত হিমের ন্যায় কুষ্ঠযুক্ত হইয়াছে। পরে তিনি কহিলেন, ‘তোমার হস্ত আবার বক্ষঃস্থলে দেও’। তিনি আবার বক্ষঃস্থলে হস্ত দিলেন, পরে বক্ষঃস্থল হইতে হস্ত বাহির করিলে দেখ, তাহা পুনরায় তাঁহার মাংসের ন্যায় হইল। ‘তাহারা যদি তোমাকে বিশ্বাস না করে, এবং ঐ প্রথম চিহ্নেও মনোযোগ না করে, তবে দ্বিতীয় চিহ্নে বিশ্বাস করিবে। আর এই দুই চিহ্নেও যদি বিশ্বাস না করে, ও তোমার রবে মনোযোগ না করে, তবে তুমি নদীর কিছু জল লইয়া শুষ্ক ভূমিতে ঢালিয়া দিও; তাহাতে তুমি নদী হইতে যে জল তুলিবে, তাহা শুষ্ক ভূমিতে রক্ত হইয়া যাইবে।’ পরে মোশি সদাপ্রভুকে কহিলেন, হায় প্রভু! আমি বাক্‌পটু নহি, ইহার পূর্ব্বেও ছিলাম না, বা এই দাসের সহিত তোমার আলাপ করিবার পরেও নহি; কারণ আমি জড়মুখ ও জড়জিহ্ব। সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, মনুষ্যের মুখ কে নির্ম্মাণ করিয়াছে? আর বোবা,বধির, মুক্তচক্ষু বা অন্ধকে কে নির্ম্মাণ করে? আমি সদাপ্রভুই কি করি না? এখন তুমি যাও; আমি তোমার মুখের সহবর্ত্তী হইব, ও কি বলিতে হইবে, তোমাকে জানাইব। তিনি কহিলেন, হে আমার প্রভু, বিনয় করি, যাহার হাতে পাঠাইতে চাও, পাঠাও। তখন মোশির প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল; তিনি কহিলেন, তোমার ভ্রাতা লেবীয় হারোণ কি নাই? আমি জানি, সে সুবক্তা; আরও দেখ, সে তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিতেছে; তোমাকে দেখিয়া হৃষ্টচিত্ত হইবে। তুমি তাহাকে বলিবে, ও তাহার মুখে বাক্য দিবে; এবং আমি তোমার মুখের ও তাহার মুখের সহবর্ত্তী হইব, ও কি করিতে হইবে, তোমাদিগকে জানাইব। তোমার পরিবর্ত্তে সে লোকদের কাছে বক্তা হইবে; ফলতঃ সে তোমার মুখস্বরূপ হইবে, এবং তুমি তাহার ঈশ্বরস্বরূপ হইবে। আর তুমি এই যষ্টি হস্তে করিবে, ইহা দ্বারাই তোমাকে সেই সকল চিহ্ন-কার্য্য করিতে হইবে। পরে মোশি আপন শ্বশুর যিথ্রোর নিকটে ফিরিয়া আসিয়া কহিলেন, বিনয় করি, মিসরে স্থিত আমার ভ্রাতৃগণের নিকটে ফিরিয়া যাইতে, এবং তাহারা এখনও জীবিত আছে কি না, তাহা দেখিতে আমাকে বিদায় দিউন। যিথ্রো মোশিকে কহিলেন, কুশলে যাও। আর সদাপ্রভু মিদিয়নে মোশিকে বলিলেন, তুমি মিসরে ফিরিয়া যাও; কেননা যে লোকেরা তোমার প্রাণনাশের চেষ্টায় ছিল, তাহারা সকলে মরিয়া গিয়াছে। তখন মোশি আপন স্ত্রী ও পুত্রদিগকে গর্দ্দভে চড়াইয়া মিসর দেশে ফিরিয়া গেলেন, এবং মোশি আপন হস্তে ঈশ্বরের সেই যষ্টি লইলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি যখন মিসরে ফিরিয়া যাইবে, দেখিও, আমি তোমার হস্তে যে সকল অদ্ভুত কর্ম্মের ভার দিয়াছি, ফরৌণের সাক্ষাতে সে সকল করিও; কিন্তু আমি তাহার হৃদয় কঠিন করিব, সে লোকদিগকে ছাড়িয়া দিবে না। আর তুমি ফরৌণকে কহিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েল আমার পুত্র, আমার প্রথমজাত। আর আমি তোমাকে বলিয়াছি, আমার সেবা করণার্থে আমার পুত্রকে ছাড়িয়া দেও; কিন্তু তুমি তাহাকে ছাড়িয়া দিতে অসম্মত হইলে; দেখ, আমি তোমার পুত্রকে, তোমার প্রথমজাতকে, বধ করিব। পরে পথে পান্থশালায় সদাপ্রভু তাঁহার কাছে গিয়া তাঁহাকে বধ করিতে চেষ্টা করিলেন। তখন সিপ্পোরা একখানি পাথরের ছুরি লইয়া আপন পুত্রের ত্বক্ ছেদন করিলেন ও তাঁহার চরণের নিকটে তাহা ফেলিয়া দিয়া কহিলেন, আমার পক্ষে তুমি রক্তের বর। আর ঈশ্বর তাঁহাকে ছাড়িয়া দিলেন; তখন সিপ্পোরা কহিলেন, ত্বক্‌ছেদ সম্বন্ধে তুমি রক্তের বর। আর সদাপ্রভু হারোণকে বলিলেন, তুমি মোশির সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রান্তরে যাও। তাহাতে তিনি গিয়া ঈশ্বরের পর্ব্বতে তাঁহার দেখা পাইলেন, ও তাঁহাকে চুম্বন করিলেন। তখন মোশি প্রেরণকর্ত্তা সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্য ও তাঁহার আজ্ঞাপিত সমস্ত চিহ্নের বিষয় হারোণকে জ্ঞাত করিলেন। পরে মোশি ও হারোণ গিয়া ইস্রায়েল- সন্তানদের সমস্ত প্রাচীনকে একত্র করিলেন। আর হারোণ মোশির প্রতি সদাপ্রভুর কথিত সমস্ত বাক্য তাহাদিগকে জ্ঞাত করিলেন, এবং তিনি লোকদের দৃষ্টিতে সেই সকল চিহ্ন-কার্য্য করিলেন। তাহাতে লোকেরা বিশ্বাস করিল; এবং সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানদিগের তত্ত্বাবধান করিয়াছেন, ও তাহাদের দুঃখ দেখিয়াছেন, ইহা শুনিয়া তাহারা মস্তক নমনপূর্ব্বক প্রণিপাত করিল। পরে মোশি ও হারোণ গিয়া ফরৌণকে কহিলেন, সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, প্রান্তরে আমার উদ্দেশে উৎসব করণার্থে আমার প্রজাদিগকে ছাড়িয়া দেও। ফরৌণ কহিলেন, সদাপ্রভু কে, যে আমি তাহার কথা শুনিয়া ইস্রায়েলকে ছাড়িয়া দিব? আমি সদাপ্রভুকে জানি না, ইস্রায়েলকেও ছাড়িয়া দিব না। তাঁহারা কহিলেন, ইব্রীয়দের ঈশ্বর আমাদিগকে দর্শন দিয়াছেন; আমরা বিনয় করি, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞ করণার্থে আমাদিগকে তিন দিনের পথ প্রান্তরে যাইতে দিউন, পাছে তিনি মহামারী কি খড়গ দ্বারা আমাদিগকে আক্রমণ করেন। মিসররাজ তাঁহাদিগকে কহিলেন, ওহে মোশি ও হারোণ, তোমরা লোকদিগকে কেন তাহাদের কার্য্য হইতে নিবৃত্ত কর? যাও, তোমাদের ভার বহন কর গিয়া। ফরৌণ আরও কহিলেন, দেখ, দেশের লোক এখন অনেক, আর তোমরা তাহাদিগকে ভার বহন হইতে নিবৃত্ত করিতেছ। আর ফরৌণ সেই দিন লোকদের কার্য্যশাসক ও অধ্যক্ষগণকে এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা ইষ্টক নির্ম্মাণার্থে পূর্ব্বের মত এই লোকদিগকে আর পলাল দিও না; তাহারা গিয়া আপনারাই আপনাদের পলাল সংগ্রহ করুক। কিন্তু পূর্ব্বে তাহাদের যত ইষ্টক নির্ম্মাণের ভার ছিল, এখনও সেই ভার দেও; তাহার কিছুই কম করিও না; কেননা তাহারা অলস, এই জন্য ক্রন্দন করিয়া বলিতেছে, আমরা আপনাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে যজ্ঞ করিতে যাই। সেই লোকদের উপরে আরও কঠিন কার্য্য চাপান হউক, তাহারা তাহাতেই ব্যস্ত থাকুক, এবং মিথ্যা কথায় অবধান না করুক। আর লোকদের কার্য্যশাসকেরা ও অধ্যক্ষেরা বাহিরে গিয়া তাহাদিগকে কহিল, ফরৌণ এই কথা কহেন, আমি তোমাদিগকে পলাল দিব না। আপনারা যেখানে পাও, সেইখানে গিয়া পলাল সংগ্রহ কর; কিন্তু তোমাদের কার্য্য কিছুই কম হইবে না। তাহাতে লোকেরা পলালের চেষ্টায় নাড়া সংগ্রহ করিতে সমস্ত মিসর দেশে ছড়াইয়া পড়িল। আর কার্য্যশাসকেরা ত্বরা করাইয়া কহিল, পলাল পাইলে যেমন করিতে, তদ্রূপ এখনও তোমাদের কার্য্য, নিরূপিত দৈবসিক কর্ম্ম, প্রতিদিন সম্পূর্ণ কর। আর ফরৌণের কার্য্যশাসকেরা ইস্রায়েল-সন্তানদের যে অধ্যক্ষদিগকে তাহাদের উপরে রাখিয়াছিল, তাহারাও প্রহারিত হইল, আর বলিয়া দেওয়া হইল, তোমরা পূর্ব্বের ন্যায় ইষ্টক গঠন বিষয়ে নিরূপিত কর্ম্ম আজকাল কেন সম্পূর্ণ কর না? তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানদের অধ্যক্ষেরা আসিয়া ফরৌণের নিকটে ক্রন্দন করিয়া কহিল, আপনার দাসদের সহিত আপনি এমন ব্যবহার কেন করিতেছেন? লোকেরা আপনার দাসদিগকে পলাল দেয় না, তথাপি আমাদিগকে বলে, ইষ্টক নির্ম্মাণ কর; আর দেখুন, আপনার এই দাসেরা প্রহারিত হয়, কিন্তু আপনারই লোকদের দোষ। ফরৌণ কহিলেন, তোমরা অলস, তাই বলিতেছ, আমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞ করিতে যাই। এখন যাও, কর্ম্ম কর, তোমাদিগকে পলাল দেওয়া যাইবে না, তথাপি ইষ্টকের পূর্ণ সংখ্যা দিতে হইবে। তখন ইস্রায়েল-সন্তানদের অধ্যক্ষেরা দেখিল, তাহারা বিপাকে পড়িয়াছে, কারণ বলা হইয়াছিল, তোমরা প্রত্যেক দিনের কার্য্যের, নিরূপিত ইষ্টকের, কিছু কম করিতে পাইবে না। পরে ফরৌণের নিকট হইতে বাহির হইয়া আসিবার সময়ে তাহারা মোশির ও হারোণের সাক্ষাৎ পাইল, তাঁহারা পথে দাঁড়াইয়াছিলেন। তাহারা তাঁহাদিগকে কহিল, সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া বিচার করুন, কেননা তোমরা ফরৌণের দৃষ্টিতে ও তাঁহার দাসগণের দৃষ্টিতে আমাদিগকে দুর্গন্ধস্বরূপ করিয়া আমাদের প্রাণনাশার্থে তাহাদের হস্তে খড়গ দিয়াছ। পরে মোশি সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, হে প্রভু, তুমি এই লোকদিগের অমঙ্গল কেন করিলে? আমাকে কেন পাঠাইলে? যে অবধি আমি তোমার নামে কথা কহিতে ফরৌণের কাছে উপস্থিত হইয়াছি, সেই অবধি তিনি এই লোকদের অমঙ্গল করিতেছেন, আর তুমি আপন প্রজাদের উদ্ধার কিছুই কর নাই। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, আমি ফরৌণের প্রতি যাহা করিব, তাহা তুমি এখন দেখিবে; কেননা পরাক্রান্ত হস্ত দেখান হইলে সে লোকদিগকে ছাড়িয়া দিবে, এবং পরাক্রান্ত হস্ত দেখান হইলে আপন দেশ হইতে তাহাদিগকে দূর করিয়া দিবে। ঈশ্বর মোশির সহিত আলাপ করিয়া আরও কহিলেন, আমি যিহোবা [সদাপ্রভু]; আমি অব্রাহামকে, ইস্‌হাককে ও যাকোবকে ‘সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর’ বলিয়া দর্শন দিতাম, কিন্তু আমার যিহোবা [সদাপ্রভু] নাম লইয়া তাহাদিগকে আমার পরিচয় দিতাম না। আর আমি তাহাদের সহিত এই নিয়ম স্থির করিয়াছি, আমি তাহাদিগকে কনান দেশ দিব, যে দেশে তাহারা প্রবাস করিত, তাহাদের সেই প্রবাস-দেশ দিব। অধিকন্তু মিস্রীয়দের দ্বারা দাসত্বে নিযুক্ত ইস্রায়েল-সন্তানদের কাতরোক্তি শুনিয়া আমার সেই নিয়ম স্মরণ করিলাম। অতএব ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বল, আমি যিহোবা, আমি তোমাদিগকে মিস্রীয়দের ভারের নীচে হইতে বাহির করিয়া আনিব, ও তাহাদের দাসত্ব হইতে উদ্ধার করিব, এবং প্রসারিত বাহু ও মহৎ শাসন দ্বারা তোমাদিগকে মুক্ত করিব। আর আমি তোমাদিগকে আপন প্রজারূপে গ্রাহ্য করিব, ও তোমাদের ঈশ্বর হইব; তাহাতে তোমরা জানিতে পারিবে যে, আমি যিহোবা, তোমাদের ঈশ্বর, যিনি তোমাদিগকে মিস্রীয়দের ভারের নীচে হইতে বাহির করিয়া আনিতেছেন। আর আমি অব্রাহামকে, ইস্‌হাককে ও যাকোবকে দিবার জন্য যে দেশের বিষয়ে হস্ত উঠাইয়াছি, সেই দেশে তোমাদিগকে লইয়া যাইব, ও তোমাদের অধিকারার্থে তাহা দিব; আমিই সদাপ্রভু। পরে মোশি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে তদনুসারে কহিলেন, কিন্তু তাহারা মনের অধৈর্য্য ও কঠিন দাস্যকর্ম্ম হেতু মোশির বাক্যে মনোযোগ করিল না। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি যাও, মিসর-রাজ ফরৌণকে বল, যেন সে আপন দেশ হইতে ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে ছাড়িয়া দেয়। তখন মোশি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে কহিলেন, দেখ, ইস্রায়েল-সন্তানেরা আমার বাক্যে মনোযোগ করিল না; তবে ফরৌণ কি প্রকারে শুনিবেন? আমি ত অচ্ছিন্নত্বক-ওষ্ঠ। আর সদাপ্রভু মোশির ও হারোণের সহিত আলাপ করিলেন, এবং ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিবার জন্য ইস্রায়েল-সন্তানদিগের নিকটে এবং মিসর-রাজ ফরৌণের নিকটে যাহা বক্তব্য, তাঁহাদিগকে আদেশ করিলেন। এই সকল লোক আপন আপন পিতৃকুলের পতি। ইস্রায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্র রূবেণের সন্তান হনোক, পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্ম্মি; ইহারা রূবেণের গোষ্ঠী। শিমিয়োনের পুত্র যিমূয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর ও কনানীয় স্ত্রীর পুত্র শৌল; ইহারা শিমিয়োনের গোষ্ঠী। বংশাবলি অনুসারে লেবির পুত্রদের নাম গের্শোন, কহাৎ ও মরারি; লেবির বয়স এক শত সাঁইত্রিশ বৎসর হইয়াছিল। আর আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে গের্শোনের সন্তান লিব্‌নি ও শিমিয়ি। কহাতের সন্তান অম্রম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল; কহাতের বয়স এক শত তেত্রিশ বৎসর হইয়াছিল। মরারির সন্তান মহলি ও মূশি; ইহারা বংশাবলি অনুসারে লেবির গোষ্ঠী। আর অম্রম আপন পিসী যোকেবদকে বিবাহ করিলেন, আর ইনি তাঁহার জন্য হারোণকে ও মোশিকে প্রসব করিলেন। অম্রমের বয়স এক শত সাঁইত্রিশ বৎসর হইয়াছিল। যিষ্‌হরের সন্তান কোরহ, নেফগ ও সিখ্রি। আর উষীয়েলের সন্তান মীশায়েল, ইল্‌সাফন ও সিথ্রি। আর হারোণ অম্মীনাদবের কন্যা নহোশনের ভগিনী ইলীশেবাকে বিবাহ করিলেন, আর ইনি তাঁহার জন্য নাদব, অবীহূ, ইলিয়াসর ও ঈথামরকে প্রসব করিলেন। আর কোরহের সন্তান অসীর, ইল্‌কানা অবীয়াসফ; ইহারা কোরহীয়দের গোষ্ঠী। আর হারোণের পুত্র ইলিয়াসর পূটীয়েলের এক কন্যাকে বিবাহ করিলে তিনি তাঁহার জন্য পীনহসকে প্রসব করিলেন; ইহাঁরা লেবীয়দের গোষ্ঠী অনুসারে তাহাদের পিতৃকুলপতি ছিলেন। এই যে হারোণ ও মোশি, ইহাঁদিগকেই সদাপ্রভু কহিলেন, তোমরা ইস্রায়েল সন্তানদিগকে সৈন্যশ্রেণীক্রমে মিসর দেশ হইতে বাহির কর। ইহাঁরাই ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিবার জন্য মিসর-রাজ ফরৌণের সহিত আলাপ করিলেন। ইহাঁরা সেই মোশি ও হারোণ। আর মিসর দেশে যে দিন সদাপ্রভু মোশির সহিত আলাপ করেন, সেই দিন সদাপ্রভু মোশিকে বলিলেন, আমিই সদাপ্রভু, আমি তোমাকে যাহা যাহা বলি, সে সকলই তুমি মিসর-রাজ ফরৌণকে বলিও। আর মোশি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে বলিলেন, দেখ, আমি অচ্ছিন্নত্বক-ওষ্ঠ, ফরৌণ কি প্রকারে আমার কথা শুনিবেন? তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, আমি ফরৌণের কাছে তোমাকে ঈশ্বরস্বরূপ করিয়া নিযুক্ত করিলাম, আর তোমার ভ্রাতা হারোণ তোমার ভাববাদী হইবে। আমি তোমাকে যাহা যাহা আদেশ করি, সে সকলই তুমি বলিবে; এবং তোমার ভ্রাতা হারোণ ফরৌণকে তাহা বলিবে, যেন সে ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে আপন দেশ হইতে ছাড়িয়া দেয়। কিন্তু আমি ফরৌণের হৃদয় কঠিন করিব, এবং মিসর দেশে আমি বহুসংখ্যক চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইব। তথাপি ফরৌণ তোমাদের কথায় মনোযোগ করিবে না; আর আমি মিসরে হস্তার্পণ করিয়া মহাশাসন দ্বারা মিসর দেশ হইতে আপন সৈন্যসামন্তকে, আপন প্রজা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে, বাহির করিব। আমি মিসরের উপরে আপন হস্ত বিস্তার করিয়া মিস্রীয়দের মধ্য হইতে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বাহির করিয়া আনিলে, উহারা জানিবে, আমিই সদাপ্রভু। পরে মোশি ও হারোণ সেইরূপ করিলেন; সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিলেন। ফরৌণের সহিত আলাপ করিবার সময়ে মোশির আশী ও হারোণের তিরাশী বৎসর বয়স হইয়াছিল। পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, ফরৌণ যখন তোমাদিগকে বলে, তোমরা আপনাদের পক্ষে কোন অদ্ভুত লক্ষণ দেখাও, তখন তুমি হারোণকে বলিও, তোমার যষ্টি লইয়া ফরৌণের সম্মুখে নিক্ষেপ কর; তাহাতে তাহা সর্প হইবে। তখন মোশি ও হারোণ ফরৌণের নিকটে গিয়া সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিলেন; হারোণ ফরৌণের ও তাঁহার দাসগণের সম্মুখে আপন যষ্টি নিক্ষেপ করিলেন, তাহাতে তাহা সর্প হইল। তখন ফরৌণও বিদ্বান্‌দিগকে ও গুণিগণকে ডাকিলেন; তাহাতে তাহারা অর্থাৎ মিস্রীয় মন্ত্রবেত্তারাও আপনাদের মায়াবলে সেইরূপ করিল। ফলতঃ তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন যষ্টি নিক্ষেপ করিলে সে সকল সর্প হইল, কিন্তু হারোণের যষ্টি তাহাদের সকল যষ্টিকে গ্রাস করিল। আর ফরৌণের হৃদয় কঠিন হইল, তিনি তাঁহাদের কথায় মনোযোগ করিলেন না; যেমন সদাপ্রভু বলিয়াছিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, ফরৌণের হৃদয় ভারী হইয়াছে; সে লোকদিগকে ছাড়িয়া দিতে অস্বীকার করে। তুমি প্রাতঃকালে ফরৌণের নিকটে যাও; দেখ, সে জলের দিকে যাইবে; তুমি তাহার সঙ্গে দেখা করিতে নদীতীরে দাঁড়াইও; এবং যে যষ্টি সর্প হইয়া গিয়াছিল, তাহাও হস্তে গ্রহণ করিও। আর তাহাকে বলিও, সদাপ্রভু, ইব্রীয়দের ঈশ্বর আমাকে দিয়া, আপনাকে বলিয়া পাঠাইয়াছেন, তুমি আমার প্রজাদিগকে প্রান্তরে আমার সেবা করণার্থে ছাড়িয়া দেও; কিন্তু দেখ, তুমি এ পর্য্যন্ত মনোযোগ কর নাই। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যে সদাপ্রভু, তাহা তুমি ইহাতে জ্ঞাত হইবে; দেখ, আমি আপন হস্তস্থিত যষ্টি দ্বারা নদীর জলে প্রহার করিব, তাহাতে তাহা রক্ত হইয়া যাইবে; আর নদীতে যে সকল মৎস্য আছে; তাহারা মরিয়া যাইবে, এবং নদীতে দুর্গন্ধ হইবে; আর নদীর জল পান করিতে মিস্রীয়দের ঘৃণা জন্মিবে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, হারোণকে এই কথা বল, তুমি আপন যষ্টি লইয়া মিসরের জলের উপরে, দেশের নদী, খাল, বিল ও সমস্ত জলাশয়ের উপরে তোমার হস্ত বিস্তার কর; তাহাতে সে সকল জল রক্ত হইবে, এবং মিসর দেশের সর্ব্বত্র কাষ্ঠময় ও প্রস্তরময় পাত্রেও রক্ত হইবে। তখন মোশি ও হারোণ সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সেইরূপ করিলেন, তিনি যষ্টি তুলিয়া ফরৌণের ও তাঁহার দাসগণের সম্মুখে নদীর জলে প্রহার করিলেন; তাহাতে নদীর সমস্ত জল রক্ত হইল। আর নদীর মৎস্য সকল মরিল, ও নদীতে দুর্গন্ধ হইল; তাহাতে মিস্রীয়েরা নদীর জল পান করিতে পারিল না, এবং মিসর দেশের সর্ব্বত্র রক্ত হইল। আর মিস্রীয় মন্ত্রবেত্তারাও আপনাদের মায়াবলে সেইরূপ করিল; তাহাতে ফরৌণের হৃদয় কঠিন হইল, এবং তিনি তাঁহাদের কথায় মনোযোগ করিলেন না; যেমন সদাপ্রভু বলিয়াছিলেন। পরে ফরৌণ আপন গৃহে ফিরিয়া গেলেন, ইহাতেও মনোযোগ করিলেন না। আর মিস্রীয়েরা সকলে নদীর জল পান করিতে না পারাতে পানীয় জলের চেষ্টায় নদীর আশে পাশে চারিদিকে খনন করিল। নদীতে সদাপ্রভুর আঘাত করিবার পর সাত দিন গত হইল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ফরৌণের নিকটে যাও, তাহাকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার সেবা করণার্থে আমার প্রজাদিগকে ছাড়িয়া দেও। যদি ছাড়িয়া দিতে অসম্মত হও, তবে দেখ, আমি ভেক দ্বারা তোমার সমস্ত প্রদেশকে আঘাত করিব। নদী ভেকে পরিপূর্ণ হইবে; সে সকল ভেক উঠিয়া তোমার গৃহে, শয়নাগারে ও শয্যায়, এবং তোমার দাসগণের গৃহে, তোমার প্রজাদের মধ্যে, তোমার তুন্দুরে ও তোমার আটা ছানিবার কাঠুয়াতে প্রবেশ করিবে; আর তোমার, তোমার প্রজাদের ও দাসগণের অঙ্গে ভেক উঠিবে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, হারোণকে বল, তুমি নদী, খাল ও বিল সকলের উপরে যষ্টিসহ হস্ত বিস্তার করিয়া মিসর দেশের উপরে ভেক আনাও। তাহাতে হারোণ মিসরের সকল জলের উপরে আপন হস্ত বিস্তার করিলে ভেকেরা উঠিয়া মিসর দেশ ব্যাপিল। আর মন্ত্রবেত্তারাও মায়াবলে সেইরূপ করিয়া মিসর দেশের উপরে ভেক আনিল। পরে ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডাকাইয়া কহিলেন, সদাপ্রভুর কাছে বিনতি কর, যেন তিনি আমা হইতে ও আমার প্রজাদিগের হইতে এই সকল ভেক দূর করিয়া দেন, তাহাতে আমি লোকদিগকে ছাড়িয়া দিব, যেন তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞ করিতে পারে। তখন মোশি ফরৌণকে কহিলেন, আমার উপরে দর্প করিয়া বলুন; ভেক সকল যেন আপনা হইতে ও আপনার গৃহ সকল হইতে উচ্ছিন্ন হয়, কেবল নদীতে থাকে, আপনার ও আপনার দাসগণের ও প্রজা সকলের নিমিত্তে কোন্ সময়ের জন্য এমন বিনতি করিব? তিনি কহিলেন, কল্যকার জন্য। তখন মোশি কহিলেন, আপনার বাক্যানুসারেই হউক, যেন আপনি জানিতে পারেন যে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর তুল্য কেহ নাই; ভেকেরা আপনা হইতে ও আপনার গৃহ, দাস ও প্রজা সকল হইতে দূর হইয়া কেবল নদীতেই থাকিবে। পরে মোশি ও হারোণ ফরৌণের নিকট হইতে বাহিরে গেলেন, এবং মোশি ফরৌণের বিরুদ্ধে যে সকল ভেক আনিয়াছিলেন, সেই সকলের বিষয়ে সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিলেন। আর সদাপ্রভু মোশির বাক্যানুসারে করিলেন, তাহাতে গৃহে, প্রাঙ্গণে ও ক্ষেত্রে সকল ভেক মরিল। তখন লোকেরা সে সকল একত্র করিয়া ঢিবি করিলে দেশে দুর্গন্ধ হইল। কিন্তু ফরৌণ যখন দেখিলেন, নিবৃত্তি হইল, তখন আপন হৃদয় ভারী করিলেন, তাঁহাদের বাক্যে মনোযোগ করিলেন না; যেমন সদাপ্রভু বলিয়াছিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, হারোণকে বল, তুমি আপন যষ্টি বিস্তার করিয়া ভূমির ধূলিতে প্রহার কর, তাহাতে সমুদয় মিসর দেশে পিশু হইবে। তখন তাঁহারা সেইরূপ করিলেন; হারোণ আপন যষ্টিসহ হস্ত বিস্তার করিয়া ভূমির ধূলিতে প্রহার করিলেন, তাহাতে মনুষ্যে ও পশুতে পিশু হইল, মিসর দেশের সর্ব্বত্র ভূমির সকল ধূলি পিশু হইয়া গেল। তখন মন্ত্রবেত্তারা আপনাদের মায়াবলে পিশু উৎপন্ন করিবার জন্য সেইরূপ করিল বটে, কিন্তু পারিল না, আর মনুষ্যে ও পশুতে পিশু হইল। তখন মন্ত্রবেত্তারা ফরৌণকে কহিল, এ ঈশ্বরের অঙ্গুলি। তথাপি ফরৌণের হৃদয় কঠিন হইল, তিনি তাঁহাদের কথায় মনোযোগ করিলেন না; যেমন সদাপ্রভু বলিয়াছিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি প্রত্যূষে উঠিয়া গিয়া ফরৌণের সম্মুখে দাঁড়াও; দেখ, সে জলের কাছে আসিবে; তুমি তাহাকে এই কথা বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার সেবা করণার্থে আমার প্রজাদিগকে ছাড়িয়া দেও। যদি আমার প্রজাদিগকে ছাড়িয়া না দেও, তবে দেখ, আমি তোমাতে, তোমার দাসগণে, প্রজাদিগেতে ও গৃহ সকলে দংশকের ঝাঁক প্রেরণ করিব; মিস্রীয়দের গৃহ সকল, এমন কি, তাহাদের বাসভূমিও দংশকে পরিপূর্ণ হইবে। কিন্তু আমি সেই দিন আমার প্রজাদের নিবাসস্থান গোশন প্রদেশ ভিন্ন করিব; সে স্থানে দংশক হইবে না; যেন তুমি জানিতে পার যে, পৃথিবীর মধ্যে আমিই সদাপ্রভু। আমি আমার প্রজাদের ও তোমার প্রজাদের মধ্যে প্রভেদ করিব; কল্য এই চিহ্ন হইবে। পরে সদাপ্রভু সেইরূপ করিলেন, ফরৌণের ও তাঁহার দাসগণের গৃহে দংশকের বৃহৎ ঝাঁক উপস্থিত হইল; তাহাতে সমস্ত মিসর দেশে দংশকের ঝাঁক হেতু দেশ উৎসন্ন হইল। তখন ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডাকাইয়া কহিলেন, তোমরা যাও, দেশের মধ্যে তোমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে যজ্ঞ কর। মোশি কহিলেন, তাহা করা উপযুক্ত নয়, কেননা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে মিস্রীয়দের ঘৃণাজনক বলিদান করিতে হইবে; দেখুন, মিস্রীয়দের সাক্ষাতে তাহাদের ঘৃণাজনক বলিদান করিলে তাহারা কি আমাদিগকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে না? আমরা তিন দিনের পথ প্রান্তরে গিয়া, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে আজ্ঞা দিবেন, তদনুসারে তাঁহার উদ্দেশে যজ্ঞ করিব। ফরৌণ কহিলেন, আমি তোমাদিগকে ছাড়িয়া দিতেছি; তোমরা প্রান্তরে গিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞ কর; কিন্তু বহুদূর যাইও না; তোমরা আমার জন্য বিনতি কর। তখন মোশি কহিলেন, দেখুন, আমি আপনার নিকট হইতে গিয়া সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিব, তাহাতে ফরৌণের, তাঁহার দাসগণের ও তাঁহার প্রজাদের নিকট হইতে কল্য দংশকের ঝাঁক সকল দূরে যাইবে; কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞ করণার্থে লোকদিগকে ছাড়িয়া দিবার বিষয়ে ফরৌণ পুনর্ব্বার প্রবঞ্চনা না করুন। পরে মোশি ফরৌণের নিকট হইতে বাহিরে গিয়া সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন। আর সদাপ্রভু মোশির বাক্যানুসারে করিলেন; ফরৌণ, তাঁহার দাসগণ ও প্রজা সকল হইতে দংশকের সমস্ত ঝাঁক দূর করিলেন; একটীও অবশিষ্ট রহিল না। আর এবারও ফরৌণ আপন হৃদয় ভারী করিলেন, লোকদিগকে ছাড়িয়া দিলেন না। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ফরৌণের নিকটে গিয়া তাহাকে বল, সদাপ্রভু, ইব্রীয়দের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, আমার সেবা করণার্থে আমার প্রজাদিগকে ছাড়িয়া দেও। যদি তাহাদিগকে ছাড়িয়া দিতে অসম্মত হও, এখনও বাধা দেও, তবে দেখ, ক্ষেত্রস্থ তোমার পশুধনের উপর, অশ্বদের, গর্দ্দভদের, উষ্ট্রদের, গোপালের ও মেষপালের উপর সদাপ্রভুর হস্ত রহিয়াছে; ভারী মহামারী হইবে। কিন্তু সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পশুতে ও মিসরের পশুতে প্রভেদ করিবেন; তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানদের কোন পশু মরিবে না। আর সদাপ্রভু সময় নিরূপণ করিয়া কহিলেন, কল্য সদাপ্রভু দেশে এই কর্ম্ম করিবেন। পরদিন সদাপ্রভু তাহাই করিলেন, তাহাতে মিসরের সকল পশু মরিল, কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানদের পশুদের মধ্যে একটীও মরিল না। তখন ফরৌণ লোক পাঠাইলেন, আর দেখ, ইস্রায়েলের একটী পশুও মরে নাই; তথাপি ফরৌণের হৃদয় ভারী হইল, এবং তিনি লোকদিগকে ছাড়িয়া দিলেন না। পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা মুষ্টি পূর্ণ করিয়া ভাটীর ভস্ম লও, পরে মোশি ফরৌণের সাক্ষাতে তাহা আকাশের দিকে ছড়াইয়া দিউক। তাহা সমস্ত মিসর দেশব্যাপী সূক্ষ্ম ধূলি হইয়া মিসর দেশের সর্ব্বত্র মনুষ্য ও পশুদের গাত্রে ক্ষতযুক্ত স্ফোটক জন্মাইবে। তখন তাঁহারা ভাটীর ভস্ম লইয়া ফরৌণের সম্মুখে দাঁড়াইলেন, এবং মোশি আকাশের দিকে তাহা ছড়াইয়া দিলেন, তাহাতে মনুষ্যদের ও পশুদের গাত্রে ক্ষতযুক্ত স্ফোটক হইল। সেই স্ফোটক প্রযুক্ত মন্ত্রবেত্তারা মোশির সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিল না, কারণ মন্ত্রবেত্তাদের ও সমস্ত মিস্রীয়ের গাত্রে স্ফোটক জন্মিল। আর সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করিলেন। তিনি তাঁহাদের কথায় মনোযোগ করিলেন না, যেমন সদাপ্রভু মোশিকে বলিয়াছিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি প্রত্যূষে উঠিয়া ফরৌণের সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাহাকে এই কথা বলিও, সদাপ্রভু, ইব্রীয়দের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, আমার সেবা করণার্থে আমার প্রজাদিগকে ছাড়িয়া দেও; নতুবা এই বার আমি তোমার হৃদয়ের বিরুদ্ধে এবং তোমার দাসগণের ও প্রজাদের মধ্যে আমার সর্ব্বপ্রকার আঘাত প্রেরণ করিব; যেন তুমি জানিতে পার, সমস্ত পৃথিবীতে আমার তুল্য কেহই নাই। কেননা এত দিন আমি আপন হস্ত বিস্তার করিয়া মহামারী দ্বারা তোমাকে ও তোমার প্রজাদিগকে আঘাত করিতে পারিতাম; তাহা করিলে তুমি পৃথিবী হইতে উচ্ছিন্ন হইতে। কিন্তু বাস্তবিক আমি এই জন্যই তোমাকে স্থাপন করিয়াছি, যেন আমার প্রভাব তোমাকে দেখাই ও সমস্ত পৃথিবীতে আমার নাম কীর্ত্তিত হয়। এখনও তুমি আমার প্রজাগণের উপর দর্প করিয়া তাহাদিগকে ছাড়িয়া দিতে চাহিতেছ না। দেখ, মিসরের পত্তনাবধি অদ্য পর্য্যন্ত যাদৃশ কখন হয় নাই, এমন অতিশয় ভারী শিলাবৃষ্টি আমি কল্য এই সময়ে বর্ষাইব। অতএব তুমি এখন লোক পাঠাইয়া ক্ষেত্রে তোমার পশু ও আর যাহা কিছু আছে, সে সকল ত্বরায় আনাও; যে মনুষ্য ও পশু গৃহমধ্যে আনিত না হইয়া ক্ষেত্রে থাকিবে, তাহাদের উপরে শিলাবৃষ্টি হইবে, আর তাহারা মরিবে। তখন ফরৌণের দাসগণের মধ্যে যে কেহ সদাপ্রভুর বাক্যে ভীত হইল, সে শীঘ্র আপন দাস ও পশুদিগকে গৃহমধ্যে আনিল; আর যে কেহ সদাপ্রভুর বাক্যে মনোযোগ করিল না, সে আপন দাস ও পশুদিগকে ক্ষেত্রে থাকিতে দিল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি আকাশের দিকে আপন হস্ত বিস্তার কর, তাহাতে মিসর দেশের সর্ব্বত্র শিলাবৃষ্টি হইবে, মিসর দেশের মনুষ্য, পশু ও ক্ষেত্রস্থ সমস্ত ওষধির উপরে তাহা হইবে। পরে মোশি আপন যষ্টি আকাশের দিকে বিস্তার করিলে সদাপ্রভু মেঘগর্জ্জন করাইলেন, ও শিলাবৃষ্টি বর্ষাইলেন, এবং অগ্নি ভূমির উপরে বেগে আসিয়া পড়িল; এইরূপে সদাপ্রভু মিসর দেশে শিলাবৃষ্টি বর্ষাইলেন। তাহাতে শিলা, এবং শিলার সহিত মিশ্রিত অগ্নিবৃষ্টিও হওয়াতে তাহা অতি দুঃসহ হইল; এরূপ শিলাবৃষ্টি মিসর দেশে রাজ্য স্থাপনাবধি কখনও হয় নাই। তাহাতে সমস্ত মিসর দেশের ক্ষেত্রস্থ মনুষ্য ও পশু সকলই শিলা দ্বারা আহত হইল, ও ক্ষেত্রের সমস্ত ওষধি শিলাবৃষ্টি দ্বারা আহত হইল, আর ক্ষেত্রের সমস্ত বৃক্ষ ভগ্ন হইল। কেবল ইস্রায়েল-সন্তানদের বাসস্থান গোশন প্রদেশে শিলাবৃষ্টি হইল না। পরে ফরৌণ লোক পাঠাইয়া মোশি ও হারোণকে ডাকাইয়া কহিলেন, এই বার আমি পাপ করিয়াছি; সদাপ্রভু ধর্ম্মময়, কিন্তু আমি ও আমার প্রজারা দোষী। তোমরা সদাপ্রভুর কাছে বিনতি কর; দেবগর্জ্জন ও শিলাবৃষ্টি যথেষ্ট হইয়াছে? আমি তোমাদিগকে ছাড়িয়া দিব, তোমাদের আর বিলম্ব হইবে না। তখন মোশি তাঁহাকে কহিলেন, আমি নগর হইতে বাহিরে গিয়াই সদাপ্রভুর দিকে অঞ্জলি বিস্তার করিব, তাহাতে মেঘগর্জ্জন নিবৃত্ত হইবে ও শিলাবৃষ্টি আর হইবে না, যেন আপনি জানিতে পারেন যে, পৃথিবী সদাপ্রভুরই। কিন্তু আমি জানি, আপনি ও আপনার দাসগণ, আপনারা এখনও সদাপ্রভু ঈশ্বর হইতে ভীত হইবেন না। তৎকালে মসিনা ও যব সকলই আহত হইল, কেননা যব শীষযুক্ত ও মসিনা পুষ্পিত হইয়াছিল। কিন্তু গোম ও জনার বড় না হওয়াতে আহত হইল না। পরে মোশি ফরৌণের নিকট হইতে নগরের বাহিরে গিয়া সদাপ্রভুর দিকে অঞ্জলি বিস্তার করিলেন, তাহাতে মেঘগর্জ্জন ও শিলাপতন নিবৃত্ত হইল, এবং ভূমিতে আর জলধারা বর্ষিল না। তখন বৃষ্টি, শিলাপাত ও মেঘগর্জ্জন নিবৃত্ত দেখিয়া ফরৌণ আরও পাপ করিলেন, তিনি ও তাঁহার দাসগণ আপন আপন হৃদয় ভারী করিলেন। আর ফরৌণের হৃদয় কঠিন হওয়াতে তিনি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে যাইতে দিলেন না; যেমন সদাপ্রভু মোশি দ্বারা বলিয়াছিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ফরৌণের নিকটে যাও; কেননা আমি তাহার ও তাহার দাসগণের হৃদয় ভারী করিলাম, যেন আমি তাহাদের মধ্যে আমার এই সকল চিহ্ন প্রদর্শন করি, এবং আমি মিস্রীয়দের প্রতি যাহা যাহা করিয়াছি, ও তাহাদের মধ্যে আমার যে যে চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছি, তাহার বৃত্তান্ত যেন তুমি আপন পুত্রের ও পৌত্রের কর্ণগোচরে বল, এবং আমি যে সদাপ্রভু, ইহা তোমরা জ্ঞাত হও। তখন মোশি ও হারোণ ফরৌণের নিকটে গিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু, ইব্রীয়দের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তুমি আমার সম্মুখে নম্র হইতে কত কাল অসম্মত থাকিবে? আমার সেবা করণার্থে আমার প্রজাদিগকে ছাড়িয়া দেও। কিন্তু যদি আমার প্রজাদিগকে ছাড়িয়া দিতে অসম্মত হও, তবে দেখ, আমি কল্য তোমার সীমাতে পঙ্গপাল আনিব। তাহারা ভূতল এমন আচ্ছন্ন করিবে যে, কেহ ভূমি দেখিতে পাইবে না; এবং শিলাবৃষ্টি হইতে রক্ষিত ও অবশিষ্ট তোমাদের যাহা কিছু আছে, তাহা তাহারা খাইয়া ফেলিবে, এবং ক্ষেত্রোৎপন্ন তোমাদের বৃক্ষ সকলও খাইবে। আর তোমার গৃহ ও তোমার সমস্ত দাসের গৃহ ও সমস্ত মিস্রীয় লোকের গৃহ সকল পরিপূর্ণ হইবে; পৃথিবীতে তোমার পিতৃপুরুষদের ও তাহাদের পিতৃপুরুষদের জন্মাবধি অদ্য পর্য্যন্ত কখনও তদ্রূপ দেখা যায় নাই। তখন তিনি মুখ ফিরাইয়া ফরৌণের নিকট হইতে বাহিরে গেলেন। আর ফরৌণের দাসগণ তাঁহাকে কহিল, এ ব্যক্তি কত কাল আমাদের ফাঁদ হইয়া থাকিবে? এই লোকদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা করণার্থে ইহাদিগকে ছাড়িয়া দিউন; আপনি কি এখনও বুঝিতেছেন না যে, মিসর দেশ ছারখার হইল? তখন মোশি ও হারোণ ফরৌণের নিকটে পুনর্ব্বার আনীত হইলেন; আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, যাও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা কর গিয়া; কিন্তু কে কে যাইবে? মোশি কহিলেন, আমরা আমাদের শিশু ও বৃদ্ধদিগকে, আমাদের পুত্রকন্যাগণকে এবং গোমেষাদি পালও সঙ্গে লইয়া যাইব, কেননা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমাদের উৎসব করিতে হইবে। তখন ফরৌণ তাঁহাদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু তোমাদের সেইরূপ সহবর্ত্তী হউন, যেরূপ আমি তোমাদিগকে ও তোমাদের শিশুগণকে ছাড়িয়া দিব; দেখ, অনিষ্ট তোমাদের সম্মুখে। তাহা হইবে না; তোমাদের পুরুষেরা গিয়া সদাপ্রভুর সেবা করুক; কারণ তোমরা ত ইহাই চাহিতেছ। পরে তাঁহারা ফরৌণের সম্মুখ হইতে দূরীকৃত হইলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি মিসর দেশের উপরে পঙ্গপালের জন্য হস্ত বিস্তার কর, তাহাতে তাহারা মিসর দেশে আসিয়া ভূমির সমস্ত ওষধি খাইবে, শিলাবৃষ্টি যাহা কিছু রাখিয়া গিয়াছে, সকলই খাইবে। তখন মোশি মিসর দেশের উপরে আপন যষ্টি বিস্তার করিলেন, তাহাতে সদাপ্রভু সমস্ত দিন ও সমস্ত রাত্রি দেশে পূর্ব্বীয় বায়ু বহাইলেন; আর প্রাতঃকাল হইলে পূর্ব্বীয় বায়ু পঙ্গপাল উঠাইয়া আনিল। তাহাতে সমুদয় মিসর দেশের উপরে পঙ্গপাল ব্যাপ্ত হইল; ও মিসরের সমস্ত সীমাতে পঙ্গপাল পড়িল। তাহা অত্যন্ত ভয়ানক হইল, তদ্রূপ পঙ্গপাল পূর্ব্বে কখনও হয় নাই, এবং পরেও কখনও হইবে না। তাহারা সমস্ত ভূমিতল আচ্ছন্ন করিল, তাহাতে দেশ অন্ধকার হইল, এবং ভূমির যে ওষধি ও বৃক্ষাদির যে ফল শিলাবৃষ্টি হইতে রক্ষা পাইয়াছিল, সে সমস্ত তাহারা খাইয়া ফেলিল; সমস্ত মিসর দেশে বৃক্ষ বা ক্ষেত্রের ওষধি, হরিদ্বর্ণ কিছুই রহিল না। তখন ফরৌণ সত্বর মোশি ও হারোণকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে ও তোমাদের বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। বিনয় করি, কেবল এই বার আমার পাপ ক্ষমা কর, এবং আমা হইতে এই কালস্বরূপকে দূর করিবার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বিনতি কর। তখন তিনি ফরৌণের নিকট হইতে বাহিরে গিয়া সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন; আর সদাপ্রভু অতি প্রবল পশ্চিম বায়ু আনিলেন; তাহা পঙ্গপালদিগকে উঠাইয়া লইয়া সূফসাগরে তাড়াইয়া দিল, তাহাতে মিসরের সমস্ত সীমাতে একটাও পঙ্গপাল থাকিল না। কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করিলেন, আর তিনি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে ছাড়িয়া দিলেন না। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি আকাশের দিকে হস্ত বিস্তার কর; তাহাতে মিসর দেশে অন্ধকার হইবে ও সেই অন্ধকার স্পর্শনীয় হইবে। পরে মোশি আকাশের দিকে হস্ত বিস্তার করিলে তিন দিন পর্য্যন্ত সমস্ত মিসর দেশে গাঢ় অন্ধকার হইল। তিন দিন পর্য্যন্ত কেহ কাহারও মুখ দেখিতে পাইল না, এবং কেহ আপন স্থান হইতে উঠিল না; কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তান সকলের নিমিত্তে তাহাদের বাসস্থানে আলো ছিল। তখন ফরৌণ মোশিকে ডাকাইয়া কহিলেন, যাও, সদাপ্রভুর সেবা কর গিয়া; কেবল তোমাদের মেষপাল ও গোপাল থাকুক; তোমাদের শিশুগণও তোমাদের সঙ্গে যাউক। মোশি কহিলেন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করণার্থে আমাদের হস্তে বলি ও হোমদ্রব্য সমর্পণ করা আপনার কর্ত্তব্য। আমাদের সহিত আমাদের পশুগণও যাইবে, একটী খুরও অবশিষ্ট থাকিবে না; কেননা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবার্থে তাহাদের মধ্য হইতে বলি লইতে হইবে, এবং কি কি দিয়া সদাপ্রভুর সেবা করিব, তাহা সে স্থানে উপস্থিত না হইলে আমরা জানিতে পারি না। কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করিলেন, আর তিনি তাহাদিগকে ছাড়িয়া দিতে সম্মত হইলেন না। তখন ফরৌণ তাঁহাকে কহিলেন, আমার সম্মুখ হইতে দূর হও; সাবধান, আমার মুখ আর কখনও দেখিও না; কেননা যে দিন আমার মুখ দেখিবে, সেই দিন মরিবে। মোশি কহিলেন, ভালই বলিয়াছেন, আমি আপনার মুখ আর কখনও দেখিব না। আর সদাপ্রভু মোশিকে বলিলেন, আমি ফরৌণের ও মিসরের উপরে আর এক উৎপাত আনিব, তৎপরে সে তোমাদিগকে এ স্থান হইতে ছাড়িয়া দিবে, এবং ছাড়িয়া দিবার সময়ে তোমাদিগকে নিশ্চয়ই এখান হইতে একেবারে তাড়াইয়া দিবে। তুমি লোকদের কর্ণগোচরে বল, আর প্রত্যেক পুরুষ আপন আপন প্রতিবাসী হইতে, ও প্রত্যেক স্ত্রী আপন আপন প্রতিবাসিনী হইতে রৌপ্যালঙ্কার ও স্বর্ণালঙ্কার চাহিয়া লউক। আর সদাপ্রভু মিস্রীয়দের দৃষ্টিতে লোকদিগকে অনুগ্রহের পাত্র করিলেন। আবার মিসর দেশে মোশি ফরৌণের দাসদের ও প্রজাদের দৃষ্টিতে অতি মহান্‌ ব্যক্তি হইয়া উঠিলেন। মোশি আরও কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি অর্দ্ধরাত্রে মিসরের মধ্য দিয়া গমন করিব। তাহাতে সিংহাসনে উপবিষ্ট ফরৌণের প্রথমজাত অবধি যাঁতা পেষণকারিণী দাসীর প্রথমজাত পর্য্যন্ত মিসর দেশস্থিত সকল প্রথমজাত মরিবে, এবং পশুদেরও সকল প্রথমজাত মরিবে। আর যাদৃশ কখনও হয় নাই ও হইবে না, সমস্ত মিসর দেশে এমন মহাক্রন্দন হইবে। কিন্তু সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের মধ্যে মনুষ্যের কি পশুর বিরুদ্ধে একটা কুকুরও জিহ্বা দোলাইবে না, যেন আপনারা জানিতে পারেন যে, সদাপ্রভু মিস্রীয়দিগেতে ও ইস্রায়েলে প্রভেদ করেন। আর আপনার এই দাসেরা সকলে আমার নিকটে নামিয়া আসিবে, ও প্রণিপাত করিয়া আমাকে বলিবে, তুমি ও তোমার অনুগামী সকল প্রজা বাহির হও; তাহার পর আমি বাহির হইব। তখন তিনি মহা ক্রোধভরে ফরৌণের নিকট হইতে বাহিরে গেলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে বলিয়াছিলেন, ফরৌণ তোমার কথায় মনোযোগ করিবে না, যেন মিসর দেশে আমার অদ্ভুত লক্ষণ বহুসংখ্যক হয়। ফলে মোশি ও হারোণ ফরৌণের সাক্ষাতে এই সকল অদ্ভুত কর্ম্ম করিয়াছিলেন; আর সদাপ্রভু ফরৌণের হৃদয় কঠিন করিলেন, আর তিনি আপন দেশ হইতে ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে ছাড়িয়া দিলেন না। আর মিসর দেশে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, এই মাস তোমাদের আদি মাস হইবে; বৎসরের সকল মাসের মধ্যে প্রথম হইবে। সমস্ত ইস্রায়েল-মণ্ডলীকে এই কথা বল, তোমরা এই মাসের দশম দিনে তোমাদের পিতৃকুলানুসারে প্রত্যেক গৃহস্থ এক এক বাটীর জন্য এক একটী মেষশাবক লইবে। আর মেষশাবক ভোজন করিতে যদি কাহারও পরিজন অল্প হয়, তবে সে ও তাহার গৃহের নিকটবর্ত্তী প্রতিবাসী প্রাণিগণের সংখ্যানুসারে একটী মেষশাবক লইবে। তোমরা এক এক জনের ভোজনশক্তি অনুসারে মেষশাবকের জন্য গণনা করিবে। তোমাদের সেই শাবকটী নির্দ্দোষ ও প্রথম বৎসরের পুংশাবক হইবে; তোমরা মেষপালের কিম্বা ছাগপালের মধ্য হইতে তাহা লইবে; আর এই মাসের চতুর্দ্দশ দিন পর্য্যন্ত রাখিবে; পরে ইস্রায়েল-মণ্ডলীর সমস্ত সমাজ সন্ধ্যাকালে সেই শাবকটী হনন করিবে। আর তাহারা তাহার কিঞ্চিৎ রক্ত লইবে, এবং যে যে গৃহমধ্যে মেষশাবক ভোজন করিবে, সেই সেই গৃহের দ্বারের দুই বাজুতে ও কপালীতে তাহা লেপিয়া দিবে। পরে সেই রাত্রিতে তাহার মাংস ভোজন করিবে; অগ্নিতে দগ্ধ করিয়া তাড়ীশূন্য রুটী ও তিক্ত শাকের সহিত তাহা ভোজন করিবে। তোমরা তাহার মাংস কাঁচা কিম্বা জলে সিদ্ধ করিয়া খাইও না, কিন্তু অগ্নিতে দগ্ধ করিও; তাহার মুণ্ড, জঙ্ঘা ও অন্তরস্থ ভাগ। আর প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত তাহার কিছুই রাখিও না; কিন্তু প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত যাহা অবশিষ্ট থাকে, তাহা অগ্নিতে পোড়াইয়া ফেলিও। আর তোমরা এইরূপে তাহা ভোজন করিবে; কটিবন্ধন করিবে, চরণে পাদুকা দিবে, হস্তে যষ্টি লইবে ও ত্বরান্বিত হইয়া তাহা ভোজন করিবে; ইহা সদাপ্রভুর নিস্তারপর্ব্ব। কেননা সেই রাত্রিতে আমি মিসর দেশের মধ্য দিয়া যাইব, এবং মিসর দেশস্থ মনুষ্যের ও পশুর যাবতীয় প্রথমজাতকে আঘাত করিব, এবং মিসরের যাবতীয় দেবের বিচার করিয়া দণ্ড দিব; আমিই সদাপ্রভু। অতএব তোমরা যে যে গৃহে থাক, তোমাদের পক্ষে ঐ রক্ত চিহ্নস্বরূপে সেই সেই গৃহের উপরে থাকিবে; তাহাতে আমি যখন মিসর দেশকে আঘাত করিব, তখন সেই রক্ত দেখিলে তোমাদিগকে ছাড়িয়া অগ্রে যাইব, সংহারের আঘাত তোমাদের উপরে পড়িবে না। আর এই দিন তোমাদের স্মরণীয় হইবে, এবং তোমরা এই দিনকে সদাপ্রভুর উৎসব বলিয়া পালন করিবে; পুরুষানুক্রমে চিরস্থায়ী বিধিমতে এই উৎসব পালন করিবে। তোমরা সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটী খাইবে; প্রথম দিনেই আপন আপন গৃহ হইতে তাড়ী দূর করিবে, কেননা যে কেহ প্রথম দিন হইতে সপ্তম দিন পর্য্যন্ত তাড়ীযুক্ত ভক্ষ্য খাইবে, সেই প্রাণী ইস্রায়েল হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর প্রথম দিনে তোমাদের পবিত্র সভা হইবে, এবং সপ্তম দিনেও তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; সেই দুই দিন প্রত্যেক প্রাণীর খাদ্য আয়োজন ব্যতিরেকে অন্য কোন কর্ম্ম করিবে না, কেবল সেই কর্ম্ম করিতে পারিবে। এইরূপে তোমরা তাড়ীশূন্য রুটীর পর্ব্ব পালন করিবে, কেননা এই দিনে আমি তোমাদের বাহিনীদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিলাম; অতএব তোমরা পুরুষানুক্রমে চিরস্থায়ী বিধিমতে এই দিন পালন করিবে। তোমরা প্রথম মাসের চতুর্দ্দশ দিনের সন্ধ্যাকাল হইতে একবিংশ দিনের সন্ধ্যাকাল পর্য্যন্ত তাড়ীশূন্য রুটী ভোজন করিও। সাত দিন তোমাদের গৃহে যেন তাড়ীর লেশ না থাকে; কেননা কি প্রবাসী কি দেশজাত, যে কোন প্রাণী তাড়ীমিশ্রিত দ্রব্য খাইবে, সে ইস্রায়েল-মণ্ডলী হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। তোমরা তাড়ীযুক্ত কোন দ্রব্য খাইও না; তোমরা আপনাদের সমস্ত বাসস্থানে তাড়ীশূন্য রুটী খাইও। তখন মোশি ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনবর্গকে ডাকাইয়া কহিলেন, তোমরা আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে এক একটী মেষশাবক বাহির করিয়া লও, নিস্তারপর্ব্বীয় বলি হনন কর। আর এক আটি এসোব লইয়া ডাবরে স্থিত রক্তে ডুবাইয়া দ্বারের কপালীতে ও দুই বাজুতে ডাবরে স্থিত রক্তের কিঞ্চিৎ লাগাইয়া দিবে, এবং প্রভাত পর্য্যন্ত তোমরা কেহই গৃহদ্বারের বাহিরে যাইবে না। কেননা সদাপ্রভু মিস্রীয়দিগকে আঘাত করিবার জন্য তোমাদের নিকট দিয়া গমন করিবেন, তাহাতে দ্বারের কপালীতে ও দুই বাজুতে সেই রক্ত দেখিলে সদাপ্রভু সেই দ্বার ছাড়িয়া অগ্রে যাইবেন, তোমাদের গৃহে সংহারকর্ত্তাকে প্রবেশ করিয়া আঘাত করিতে দিবেন না। আর তোমরা ও যুগানুক্রমে তোমাদের সন্তানেরা বিধি বলিয়া এই রীতি পালন করিবে। আর সদাপ্রভু আপন প্রতিজ্ঞানুসারে তোমাদিগকে যে দেশ দিবেন, সেই দেশে যখন প্রবিষ্ট হইবে, তখনও এই সেবার অনুষ্ঠান করিবে। আর তোমাদের সন্তানগণ যখন তোমাদিগকে বলিবে, তোমাদের এই সেবার তাৎপর্য্য কি? তোমরা কহিবে, ইহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্বীয় যজ্ঞ, মিস্রীয়দিগকে আঘাত করিবার সময়ে তিনি মিসরে ইস্রায়েল-সন্তানদের গৃহ সকল ছাড়িয়া অগ্রে গিয়াছিলেন, আমাদের গৃহ রক্ষা করিয়াছিলেন। তখন লোকেরা মস্তক নমনপূর্ব্বক প্রণিপাত করিল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানেরা গিয়া, সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, সেইরূপ করিল। পরে অর্দ্ধরাত্রে এই ঘটনা হইল, সদাপ্রভু সিংহাসনে উপবিষ্ট ফরৌণের প্রথমজাত সন্তান অবধি কারাকূপস্থ বন্দির প্রথমজাত সন্তান পর্য্যন্ত মিসর দেশস্থ সমস্ত প্রথমজাত সন্তানকে ও পশুদের প্রথমজাত শাবকগণকে নিহনন করিলেন। তাহাতে ফরৌণ ও তাঁহার দাসগণ এবং সমস্ত মিস্রীয় লোক রাত্রিতে উঠিল, এবং মিসরে মহাক্রন্দন হইল; কেননা যে ঘরে কেহ মরে নাই, এমন ঘরই ছিল না। তখন রাত্রিকালেই ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডাকাইয়া কহিলেন, তোমরা উঠ, ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে লইয়া আমার প্রজাদের মধ্য হইতে বাহির হও, তোমরা যাও, তোমাদের কথানুসারে সদাপ্রভুর সেবা কর গিয়া। তোমাদের কথানুসারে মেষপাল ও গোপাল সকল সঙ্গে লইয়া চলিয়া যাও, এবং আমাকেও আশীর্ব্বাদ কর। তখন লোকদিগকে শীঘ্র দেশ হইতে বিদায় করণার্থে মিস্রীয়েরা ব্যগ্র হইল; কেননা তাহারা কহিল, আমরা সকলে মারা পড়িলাম। তাহাতে ময়দার তালে তাড়ী মিশাইবার পূর্ব্বে লোকেরা তাহা লইয়া কাঠুয়া সকল আপন আপন বস্ত্রে বাঁধিয়া স্কন্ধে করিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানেরা মোশির বাক্যানুসারে কার্য্য করিল; ফলে তাহারা মিস্রীয়দের কাছে রৌপ্যালঙ্কার, স্বর্ণালঙ্কার ও বস্ত্র চাহিল; আর সদাপ্রভু মিস্রীয়দের দৃষ্টিতে তাহাদিগকে অনুগ্রহপাত্র করিলেন, তাই তাহারা যাহা চাহিল, মিস্রীয়েরা তাহাদিগকে তাহাই দিল। এইরূপে তাহারা মিস্রীয়দের ধন হরণ করিল। তখন ইস্রায়েল-সন্তানেরা বালক ছাড়া কমবেশ ছয় লক্ষ পদাতিক পুরুষ রামিষেষ হইতে সুক্কোতে যাত্রা করিল। আর তাহাদের সহিত মিশ্রিত লোকদের মহাজনতা এবং মেষ ও গো, অতি বিস্তর পশু প্রস্থান করিল। পরে তাহারা মিসর হইতে আনীত ছানা ময়দার তাল দিয়া তাড়ীশূন্য পিষ্টক প্রস্তুত করিল, কেননা তাহাতে তাড়ী মিশান হয় নাই, কারণ তাহারা মিসর হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছিল সুতরাং বিলম্ব করিতে না পারাতে আপনাদের জন্য খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুত করে নাই। ইস্রায়েল-সন্তানেরা চারি শত ত্রিশ বৎসর কাল মিসরে প্রবাস করিয়াছিল সেই চারি শত ত্রিশ বৎসরের শেষে, ঐ দিনে, সদাপ্রভুর সমস্ত বাহিনী মিসর দেশ হইতে বাহির হইল। মিসর দেশ হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনা হেতু এ সদাপ্রভুর উদ্দেশে অতীব পালনীয় রাত্রি। সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের পুরুষানুক্রমে এই রাত্রি সদাপ্রভুর উদ্দেশে অতীব পালনীয়। আর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, নিস্তারপর্ব্বীয় বলির বিধি এই; অন্য জাতীয় কোন লোক তাহা ভোজন করিবে না। কিন্তু কোন ব্যক্তির যে দাস রৌপ্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছে, সে যদি ছিন্নত্বক হয়, তবে খাইতে পাইবে। প্রবাসী কিম্বা বেতনজীবী তাহা খাইতে পাইবে না। তোমরা এক গৃহমধ্যে তাহা ভোজন করিও; সেই মাংসের কিছুই গৃহের বাহিরে লইয়া যাইও না; এবং তাহার এক অস্থিও ভগ্ন করিও না। সমস্ত ইস্রায়েল-মণ্ডলী ইহা পালন করিবে। আর তোমার সহিত প্রবাসী কোন বিদেশী লোক যদি সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিতে চাহে, তবে সে নিজ পুরুষ পরিবারের সহিত ছিন্নত্বক হইয়া ইহা পালনার্থে আগমন করুক, সে দেশজাত লোকের তুল্য হইবে; কিন্তু অচ্ছিন্নত্বক কোন লোক তাহা ভোজন করিবে না। দেশজাত লোকের নিমিত্তে ও তোমাদের মধ্যে প্রবাসকারী বিদেশীয় লোকের নিমিত্তে একই বিধি হইবে। সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তান সেইরূপ করিল, সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারেই করিল। এইরূপে সদাপ্রভু সেই দিন বাহিনীক্রমে ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে মনুষ্য হউক কিম্বা পশু হউক, গর্ভ উন্মোচক সমস্ত প্রথমজাত ফল আমার উদ্দেশে পবিত্র কর; তাহা আমারই। আর মোশি লোকদিগকে কহিলেন, এই দিন স্মরণে রাখিও, যে দিনে তোমরা মিসর হইতে, দাসগৃহ হইতে, বহির্গত হইলে, কারণ সদাপ্রভু পরাক্রান্ত হস্ত দ্বারা তথা হইতে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন; কোন তাড়ীযুক্ত ভক্ষ্য খাওয়া হইবে না। আবীব মাসের এই দিনে তোমরা বাহির হইলে। আর কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়ের যে দেশ তোমাকে দিতে সদাপ্রভু তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছেন, সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে যখন তিনি তোমাকে আনিবেন, তখন তুমি এই মাসে এই সেবার অনুষ্ঠান করিবে। সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটী খাইও, ও সপ্তম দিনে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসব করিও। সেই সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটী খাইতে হইবে, তোমার নিকটে তাড়ীযুক্ত ভক্ষ্য দৃষ্ট না হউক, তোমার সমস্ত সীমার মধ্যে তাড়ী দৃষ্ট না হউক। সেই দিনে তুমি আপন পুত্রকে ইহা জ্ঞাত করিও, মিসর হইতে আমার বাহির হইবার সময়ে সদাপ্রভু আমার প্রতি যাহা করিলেন, ইহা সেই জন্য। আর ইহা চিহ্নের জন্য তোমার হস্তে ও স্মরণের জন্য তোমার দুই চক্ষুর মধ্যস্থানে থাকিবে; যেন সদাপ্রভুর ব্যবস্থা তোমার মুখে থাকে, কেননা সদাপ্রভু পরাক্রান্ত হস্ত দ্বারা মিসর হইতে তোমাকে বাহির করিয়াছেন। অতএব তুমি বৎসর বৎসর যথাসময়ে এই বিধি পালন করিবে। সদাপ্রভু তোমার কাছে ও তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে যে দিব্য করিয়াছেন, তদনুসারে যখন কনানীয়ের দেশে প্রবেশ করাইয়া তোমাকে সেই দেশ দিবেন, তখন তুমি গর্ভ উন্মোচক সমস্ত প্রথম ফল সদাপ্রভুর নিকটে উপস্থিত করিবে; এবং তোমার পশুগণেরও সকল প্রথম গর্ভফলের মধ্যে পুংসন্তান সদাপ্রভুর হইবে। আর গর্দ্দভের প্রত্যেক প্রথম ফলের মুক্তির জন্য তাহার পরিবর্ত্তে মেষশাবক দিবে; যদি মুক্ত না কর, তবে তাহার গলা ভাঙ্গিবে; তোমার পুত্রগণের মধ্যে মনুষ্যের প্রথমজাত সকলকে মুক্ত করিতে হইবে। আর তোমার পুত্র ভাবিকালে যখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করিবে, এ কি? তুমি বলিবে, সদাপ্রভু পরাক্রান্ত হস্ত দ্বারা আমাদিগকে মিসর হইতে, দাস-গৃহ হইতে বাহির করিলেন। তৎকালে ফরৌণ আমাদিগকে ছাড়িয়া দিবার বিষয়ে নিষ্ঠুর হইলে সদাপ্রভু মিসর দেশে সমস্ত প্রথমজাত ফলকে, মনুষ্যের প্রথমজাত ও পশুর প্রথমজাত ফল সকলকে বধ করিলেন, এই নিমিত্তে আমি গর্ভ উন্মোচক পুংসন্তান সকলকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করি, কিন্তু আমার প্রথমজাত পুত্র সকলকে মুক্ত করি। ইহা চিহ্নস্বরূপ তোমার হস্তে ও ভূষণস্বরূপ তোমার দুই চক্ষুর মধ্যস্থানে থাকিবে, কেননা সদাপ্রভু পরাক্রান্ত হস্ত দ্বারা আমাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিলেন। আর ফরৌণ লোকদিগকে ছাড়িয়া দিলে, পলেষ্টীয়দের দেশ দিয়া সোজা পথ থাকিলেও ঈশ্বর সেই পথে তাহাদিগকে চালাইলেন না, কেননা ঈশ্বর কহিলেন, যুদ্ধ দেখিলে পাছে লোকেরা অনুতাপ করিয়া মিসরে ফিরিয়া যায়। অতএব ঈশ্বর লোকদিগকে সূফসাগরের প্রান্তরময় পথ দিয়া গমন করাইলেন; আর ইস্রায়েল-সন্তানেরা সসজ্জ হইয়া মিসর দেশ হইতে যাত্রা করিল। আর মোশি যোষেফের অস্থি আপনার সঙ্গে লইলেন, কেননা তিনি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে দৃঢ় দিব্য করাইয়া বলিয়াছিলেন, ঈশ্বর অবশ্য তোমাদের তত্ত্বাবধান করিবেন, আর তোমরা আপনাদের সঙ্গে আমার অস্থি এ স্থান হইতে লইয়া যাইবে। পরে তাহারা সুক্কোৎ হইতে যাত্রা করিয়া প্রান্তরের প্রান্তে স্থিত এথমে শিবির স্থাপন করিল। আর সদাপ্রভু দিবাতে পথ দেখাইবার জন্য মেঘস্তম্ভে থাকিয়া, এবং রাত্রিতে দীপ্তি দিবার জন্য অগ্নিস্তম্ভে থাকিয়া তাহাদের অগ্রে অগ্রে গমন করিতেন, যেন তাহারা দিবারাত্র গমন করিতে পারে। লোকদের সম্মুখ হইতে দিবাতে মেঘস্তম্ভ ও রাত্রিতে অগ্নিস্তম্ভ স্থানান্তর হইত না। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বল, তোমরা ফির, পী-হহীরোতের অগ্রে মিগ্‌দোলের ও সমুদ্রের মধ্যস্থলে বাল্‌সফোনের অগ্রে শিবির স্থাপন কর; তোমরা তাহার সম্মুখে সমুদ্রের নিকটে শিবির স্থাপন কর। তাহাতে ফরৌণ ইস্রায়েল-সন্তানদের বিষয়ে কহিবে, তাহারা দেশের মধ্যে অবরুদ্ধ হইল, প্রান্তর তাহাদের পথ রুদ্ধ করিল। আর আমি ফরৌণের হৃদয় কঠিন করিব, আর সে তোমাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইবে, এবং আমি ফরৌণ ও তাহার সমস্ত সৈন্য দ্বারা গৌরবান্বিত হইব; আর মিস্রীয়েরা জানিতে পারিবে যে; আমিই সদাপ্রভু। তখন তাহারা সেইরূপ করিল। পরে লোকেরা পলাইয়াছে, মিসর রাজকে এই সংবাদ দেওয়া হইলে লোকদের বিষয়ে ফরৌণ ও তাঁহার দাসগণের অন্তঃকরণ বিকারপ্রাপ্ত হইল; তাঁহারা কহিলেন, আমরা এ কি করিলাম? আমাদের দাসত্ব হইতে ইস্রায়েলকে কেন ছাড়িয়া দিলাম? তখন তিনি আপন রথ প্রস্তুত করাইলেন, ও আপন লোকদিগকে সঙ্গে লইলেন। আর মনোনীত ছয় শত রথ, এবং মিসরের সমস্ত রথ ও তৎসমুদয়ের উপরে নিযুক্ত সেনানীদিগকে লইলেন। আর সদাপ্রভু মিসর-রাজ ফরৌণের হৃদয় কঠিন করিলেন, তাহাতে তিনি ইস্রায়েল-সন্তানদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইলেন; তখন ইস্রায়েল-সন্তানেরা ঊর্দ্ধহস্তে বহির্গমন করিতেছিল। আর মিস্রীয়েরা, ফরৌণের সকল অশ্ব ও রথ, এবং তাঁহার অশ্বারূঢ়গণ ও সৈন্যগণ তাহাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইল; আর উহারা বাল্‌-সফোনের সম্মুখে পী-হহীরোতের নিকটে সমুদ্রতীরে শিবির স্থাপন করিলে তাহাদের নিকটে উপস্থিত হইল। ফরৌণ যখন নিকটবর্ত্তী হইলেন, তখন ইস্রায়েল-সন্তানেরা চক্ষু তুলিয়া চাহিল, আর দেখ, তাহাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ মিস্রীয়েরা আসিতেছে; তাই তাহারা অতিশয় ভীত হইল, আর ইস্রায়েল সন্তানেরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে ক্রন্দন করিল। আর তাহারা মোশিকে কহিল, মিসরে কবর নাই বলিয়া তুমি কি আমাদিগকে লইয়া আসিলে, যেন আমরা প্রান্তরে মরিয়া যাই? তুমি আমাদের সহিত এ কেমন ব্যবহার করিলে? কেন আমাদিগকে মিসর হইতে বাহির করিলে? আমরা কি মিসর দেশে তোমাকে এই কথা কহি নাই, আমাদিগকে থাকিতে দেও, আমরা মিস্রীয়দের দাস্যকর্ম্ম করি? কেননা প্রান্তরে মরণাপেক্ষা মিস্রীয়দের দাস্যকর্ম্ম করা আমাদের মঙ্গল। তখন মোশি লোকদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না, সকলে স্থির হইয়া দাঁড়াও। সদাপ্রভু অদ্য তোমাদের যে নিস্তার করেন, তাহা দেখ; কেননা এই যে মিস্রীয়দিগকে অদ্য দেখিতেছ, ইহাদিগকে আর কখনই দেখিবে না। সদাপ্রভু তোমাদের পক্ষ হইয়া যুদ্ধ করিবেন, তোমরা নীরব থাকিবে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি আমার কাছে কেন ক্রন্দন করিতেছ? ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে অগ্রসর হইতে বল। আর তুমি আপন যষ্টি তুলিয়া সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার কর, সমুদ্রকে দুই ভাগ কর; তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্রমধ্যে প্রবেশ করিবে। আর দেখ, আমিই মিস্রীয়দের হৃদয় কঠিন করিব, তাহাতে তাহারা ইহাদের পশ্চাৎ প্রবেশ করিবে, এবং আমি ফরৌণের, তাহার সকল সৈন্যের, তাহার রথ সকলের ও তাহার অশ্বারূঢ়গণের দ্বারা গৌরবান্বিত হইব। আর ফরৌণ ও তাহার রথ সকল ও তাহার অশ্বারূঢ়গণ দ্বারা আমার গৌরবলাভ হইলে মিস্রীয়েরা জানিতে পারিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তখন ইস্রায়েলীয় সৈন্যের অগ্রগামী ঈশ্বরের দূত সরিয়া গিয়া তাহাদের পশ্চাৎ গমন করিলেন, এবং মেঘস্তম্ভ তাহাদের অগ্র হইতে সরিয়া গিয়া তাহাদের পশ্চাৎ দাঁড়াইল; তাহা মিসরের শিবির ও ইস্রায়েলের শিবির, এই উভয়ের মধ্যে আসিল; আর সেই মেঘ ও অন্ধকার থাকিল, তথাপি উহা রাত্রিতে আলোক প্রদান করিল; এবং সমস্ত রাত্রি এক দল অন্য দলের নিকটে আসিল না। মোশি সমুদ্রের উপরে আপন হস্ত বিস্তার করিলেন, তাহাতে সদাপ্রভু সেই সমস্ত রাত্রি প্রবল পূর্ব্বীয় বায়ু দ্বারা সমুদ্রকে সরাইয়া দিলেন, ও তাহা শুষ্ক ভূমি করিলেন, তাহাতে জল দুই ভাগ হইল। আর ইস্রায়েল-সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্রমধ্যে প্রবেশ করিল, এবং তাহাদের দক্ষিণে ও বামে জল প্রাচীরস্বরূপ হইল। পরে মিস্রীয়েরা, ফরৌণের সকল অশ্ব ও রথ এবং অশ্বারূঢ়গণ ধাবমান হইয়া তাহাদের পশ্চাৎ পশ্চাৎ সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করিল। কিন্তু রাত্রির শেষ প্রহরে সদাপ্রভু অগ্নি ও মেঘস্তম্ভে থাকিয়া মিস্রীয়দের সৈন্যের উপরে দৃষ্টিপাত করিলেন, ও মিস্রীয়দের সৈন্যকে উদ্বিগ্ন করিলেন। আর তিনি তাহাদের রথের চক্র সরাইলেন, তাহাতে তাহারা অতি কষ্টে রথ চালাইল; তখন মিস্রীয়েরা কহিল, চল, আমরা ইস্রায়েলের সম্মুখ হইতে পলায়ন করি, কেননা সদাপ্রভু তাহাদের পক্ষে মিস্রীয়দের বিপক্ষে যুদ্ধ করিতেছেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার কর; তাহাতে জল ফিরিয়া মিস্রীয়দের উপরে ও তাহাদের রথের উপরে ও অশ্বারূঢ়দের উপরে আসিবে। তখন মোশি সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার করিলেন, আর প্রাতঃকাল হইতে না হইতে সমুদ্র পুনরায় সমান হইয়া গেল; তাহাতে মিস্রীয়েরা তাহার দিকেই পলায়ন করিল; আর সদাপ্রভু সমুদ্রের মধ্যে মিস্রীয়দিগকে ঠেলিয়া দিলেন। জল ফিরিয়া আসিল, ও তাহাদের রথ ও অশ্বারূঢ়দিগকে আচ্ছাদন করিল, তাহাতে ফরৌণের যে সকল সৈন্য তাহাদের পশ্চাৎ সমুদ্রে প্রবিষ্ট হইয়াছিল, তাহাদের এক জনও অবশিষ্ট রহিল না। কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্রের মধ্য দিয়া চলিল, এবং তাহাদের দক্ষিণে ও বামে জল প্রাচীরস্বরূপ হইল। এইরূপে সেই দিন সদাপ্রভু মিস্রীয়দের হস্ত হইতে ইস্রায়েলকে নিস্তার করিলেন, ও ইস্রায়েল মিস্রীয়দিগকে সমুদ্রের ধারে মৃত দেখিল। আর ইস্রায়েল মিস্রীয়দের প্রতি কৃত সদাপ্রভুর মহৎ কর্ম্ম দেখিল; তাহাতে লোকেরা সদাপ্রভুকে ভয় করিল, এবং সদাপ্রভুতে ও তাঁহার দাস মোশিতে বিশ্বাস করিল। তখন মোশি ও ইস্রায়েল-সন্তানেরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই গীত গান করিলেন; তাঁহারা বলিলেন, আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান করিব; কেননা তিনি মহিমান্বিত হইলেন, তিনি অশ্ব ও তদারোহীকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলেন। সদাপ্রভু আমার বল ও গান, তিনি আমার পরিত্রাণ হইলেন; এই আমার ঈশ্বর, আমি তাঁহার প্রশংসা করিব; আমার পৈতৃক ঈশ্বর, আমি তাঁহার প্রতিষ্ঠা করিব। সদাপ্রভু যুদ্ধবীর; সদাপ্রভু তাঁহার নাম। তিনি ফরৌণের রথসমূহ ও সৈন্যদলকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলেন; তাঁহার মনোনীত সেনানিগণ সূফসাগরে নিমগ্ন হইল। জলরাশি তাহাদিগকে আচ্ছাদন করিল; তাহারা অগাধ জলে প্রস্তরবৎ তলাইয়া গেল। হে সদাপ্রভু, তোমার দক্ষিণ হস্ত বলে গৌরবান্বিত; হে সদাপ্রভু, তোমার দক্ষিণ হস্ত শত্রু চূর্ণকারী। তুমি নিজ মহিমার মহত্ত্বে, যাহারা তোমার বিরুদ্ধে উঠে, তাহাদিগকে নিপাত করিয়া থাক; তোমার প্রেরিত কোপাগ্নি নাড়ার ন্যায় তাহাদিগকে ভক্ষণ করে। তোমার নাসিকার নিশ্বাসে জল রাশীকৃত হইল; স্রোত সকল স্তূপের ন্যায় দণ্ডায়মান হইল; সমুদ্র-গর্ভে জলরাশি ঘনীভূত হইল। শত্রু বলিয়াছিল, আমি পশ্চাৎ ধাবিত হইব, উহাদের সঙ্গ ধরিব, লুট বিভাগ করিয়া লইব; উহাদিগেতে আমার অভিলাষ পূর্ণ হইবে; আমি খড়গ নিষ্কোষ করিব, আমার হস্ত উহাদিগকে বিনাশ করিবে। তুমি নিজ বায়ু দ্বারা ফুঁ দিলে, সমুদ্র তাহাদিগকে আচ্ছাদন করিল; তাহারা প্রবল জলে সীসাবৎ তলাইয়া গেল। হে সদাপ্রভু, দেবগণের মধ্যে কে তোমার তুল্য? কে তোমার ন্যায় পবিত্রতায় আদরণীয়, প্রশংসায় ভয়ার্হ, আশ্চর্য্য ক্রিয়াকারী? তুমি আপন দক্ষিণ হস্ত বিস্তার করিলে, পৃথিবী উহাদিগকে গ্রাস করিল। তুমি যে লোকদিগকে মুক্ত করিয়াছ, তাহাদিগকে নিজ দয়াতে চালাইতেছ, তুমি নিজ পরাক্রমে তাহাদিগকে তোমার পবিত্র নিবাসে লইয়া যাইতেছ। জাতি সকল ইহা শুনিল, কম্পান্বিত হইল, পলেষ্টিয়া-বাসিগণ ব্যথাগ্রস্ত হইয়া পড়িল। তখন ইদোমের দলপতিগণ বিহ্বল হইল; মোয়াবের মেড়ারা কম্পগ্রস্ত হইল; কনান-নিবাসী সকলে গলিয়া গেল। ত্রাস ও আশঙ্কা তাহাদের উপরে পড়িতেছে; তোমার বাহুবলে তাহারা প্রস্তরবৎ স্তব্ধ হইয়া আছে; যাবৎ, হে সদাপ্রভু, তোমার প্রজাগণ উত্তীর্ণ না হয়, যাবৎ তোমার ক্রীত প্রজাগণ উত্তীর্ণ না হয়। তুমি তাহাদিগকে লইয়া যাইবে, আপন অধিকার-পর্ব্বতে রোপন করিবে; হে সদাপ্রভু, তথায় তুমি আপন নিবাসার্থ স্থান প্রস্তুত করিয়াছ; হে প্রভু তথায় তোমার হস্ত ধর্ম্মধাম স্থাপন করিয়াছে। সদাপ্রভু যুগে যুগে অনন্তকাল রাজত্ব করিবেন। কেননা ফরৌণের অশ্বগণ তাঁহার রথ সকল ও অশ্বারোহিগণসহ সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করিল, আর সদাপ্রভু সমুদ্রের জল তাহাদের উপরে ফিরাইয়া আনিলেন; কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানেরা শুষ্ক পথে সমুদ্রের মধ্য দিয়া গমন করিল। পরে হারোণের ভগিনী মরিয়ম ভাববাদিনী হস্তে মৃদঙ্গ লইলেন, এবং তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ অন্য স্ত্রীলোকেরা সকলে মৃদঙ্গ লইয়া নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইল। তখন মরিয়ম লোকদের কাছে এই ধুয়া গাইলেন,—তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান কর; কেননা তিনি মহামহিমান্বিত হইলেন, তিনি অশ্ব ও তদারোহীকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করিলেন। আর মোশি ইস্রায়েলকে সূফসাগর হইতে অগ্রে চালাইলেন, তাহাতে তাহারা শূর প্রান্তরে গমন করিল; আর তিন দিন প্রান্তরে যাইতে যাইতে জল পাইল না। পরে তাহারা মারাতে উপস্থিত হইল, কিন্তু মারার জল পান করিতে পারিল না, কারণ সেই জল তিক্ত; এই জন্য তাহার নাম মারা [তিক্ততা] রাখা হইল। তখন লোকেরা মোশির বিরুদ্ধে বচসা করিয়া কহিল, আমরা কি পান করিব? তাহাতে তিনি সদাপ্রভুর উদ্দেশে ক্রন্দন করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহাকে একটা গাছ দেখাইলেন; তিনি তাহা লইয়া জলে নিক্ষেপ করিলে জল মিষ্ট হইল। সেই স্থানে সদাপ্রভু ইস্রায়েলের নিমিত্ত বিধি ও শাসন নিরূপণ করিলেন, এবং তাহার পরীক্ষা লইলেন, আর কহিলেন, তুমি যদি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে মনোযোগ কর, তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য তাহাই কর, তাঁহার আজ্ঞাতে কর্ণ দেও, ও তাঁহার বিধি সকল পালন কর, তবে আমি মিস্রীয়দিগকে যে সকল রোগে আক্রান্ত করিলাম, সেই সকলেতে তোমাকে আক্রমণ করিতে দিব না; কেননা আমি সদাপ্রভু তোমার আরোগ্যকারী। পরে তাহারা এলীমে উপস্থিত হইল। সেই স্থানে জলের বারোটী উনুই ও সত্তরটী খর্জ্জুরবৃক্ষ ছিল; তাহারা সেই স্থানে জলের নিকটে শিবির স্থাপন করিল। পরে তাহারা এলীম হইতে যাত্রা করিল। আর মিসর দেশ হইতে প্রস্থান করিবার পর দ্বিতীয় মাসের পঞ্চদশ দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী সীন প্রান্তরে উপস্থিত হইল, তাহা এলীমের ও সীনয়ের মধ্যবর্ত্তী। তখন ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলী মোশির ও হারোণের বিরুদ্ধে প্রান্তরে বচসা করিল; আর ইস্রায়েল-সন্তানেরা তাঁহাদিগকে কহিল, হায়, হায়, আমরা মিসর দেশে সদাপ্রভুর হস্তে কেন মরি নাই? তখন মাংসের হাঁড়ীর কাছে বসিতাম, তৃপ্তি পর্য্যন্ত রুটী ভোজন করিতাম; তোমরা ত এই সমস্ত সমাজকে ক্ষুধায় মারিয়া ফেলিতে আমাদিগকে বাহির করিয়া এই প্রান্তরে আনিয়াছ। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, আমি তোমাদের নিমিত্ত স্বর্গ হইতে খাদ্য দ্রব্য বর্ষণ করিব; লোকেরা বাহিরে গিয়া প্রতিদিন দিনের খাদ্য কুড়াইবে; যেন আমি তাহাদের এই পরীক্ষা লই যে, তাহারা আমার ব্যবস্থাতে চলিবে কি না। ষষ্ঠ দিনে তাহারা যাহা আনিবে, তাহা প্রস্তুত করিলে প্রতিদিন যাহা কুড়ায়, তাহার দ্বিগুণ হইবে। পরে মোশি ও হারোণ সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানকে কহিলেন, সায়ংকাল হইলে তোমরা জানিবে যে, সদাপ্রভু তোমাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। আর প্রাতঃকাল হইলে তোমরা সদাপ্রভুর প্রতাপ দেখিতে পাইবে, কেননা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তোমাদের যে বচসা, তাহা তিনি শুনিয়াছেন। আমরা কে যে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে বচসা কর? পরে মোশি কহিলেন, সদাপ্রভু সায়ংকালে ভোজনার্থে তোমাদিগকে মাংস দিবেন, ও প্রাতঃকালে তৃপ্তি পর্য্যন্ত অন্ন দিবেন; সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তোমরা যে বচসা করিতেছ, তাহা তিনি শুনিতেছেন; আমরা কে? তোমরা যে বচসা করিতেছ, উহা আমাদের বিরুদ্ধে নয়, সদাপ্রভুরই বিরুদ্ধে করা হইতেছে। পরে মোশি হারোণকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলীকে বল, তোমরা সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হও; কেননা তিনি তোমাদের বচসা শুনিয়াছেন। পরে হারোণ যখন ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলীকে ইহা কহিতেছিলেন, তখন তাহারা প্রান্তরের দিকে মুখ ফিরাইল; আর দেখ, মেঘস্তম্ভের মধ্যে সদাপ্রভুর প্রতাপ দৃষ্ট হইল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, আমি ইস্রায়েল-সন্তানদের বচসা শুনিয়াছি; তুমি তাহাদিগকে বল, সায়ংকালে তোমরা মাংস ভোজন করিবে, ও প্রাতঃকালে অন্নে তৃপ্ত হইবে; তখন জানিতে পারিবে যে, আমি সদাপ্রভু, তোমাদের ঈশ্বর। পরে সন্ধ্যাকালে ভারুই পক্ষী উড়িয়া আসিয়া শিবিরস্থান আচ্ছাদন করিল, এবং প্রাতঃকালে শিবিরের চারিদিকে শিশির পড়িল। পরে পতিত শিশির ঊর্দ্ধগত হইলে, দেখ, ভূমিস্থিত নীহারের ন্যায় সরু বীজাকার সূক্ষ্ম বস্তুবিশেষ প্রান্তরের উপরে পড়িয়া রহিল। আর তাহা দেখিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণ পরস্পর কহিল, উহা কি? কেননা তাহা কি, তাহারা জানিল না। তখন মোশি কহিলেন, উহা সেই অন্ন, যাহা সদাপ্রভু তোমাদিগকে আহারার্থে দিয়াছেন। উহারই বিষয়ে সদাপ্রভু এই আজ্ঞা দিয়াছেন, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন ভোজনশক্তি অনুসারে তাহা কুড়াও; তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন তাম্বুতে স্থিত লোকদের সংখ্যানুসারে এক এক জনের নিমিত্তে এক এক ওমর পরিমাণে উহা কুড়াও। তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানেরা সেইরূপ করিল; কেহ অধিক, কেহ অল্প কুড়াইল। পরে ওমরে তাহা পরিমাণ করিলে, যে অধিক সংগ্রহ করিয়াছিল, তাহার অতিরিক্ত হইল না, এবং যে অল্প সংগ্রহ করিয়াছিল, তাহার অভাব হইল না, তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন ভোজনশক্তি অনুসারে কুড়াইয়াছিল। আর মোশি কহিলেন, তোমরা কেহ প্রাতঃকালের জন্য ইহার কিছু রাখিও না। তথাপি কেহ কেহ মোশির কথা না মানিয়া প্রাতঃকালের নিমিত্তে কিছু কিছু রাখিল, তখন তাহাতে কীট জন্মিল ও দুর্গন্ধ হইল; আর মোশি তাহাদের উপরে ক্রোধ করিলেন। আর প্রতিদিন প্রাতঃকালে তাহারা আপন আপন ভোজনশক্তি অনুসারে কুড়াইত, কিন্তু প্রখর রৌদ্র হইলে তাহা গলিয়া যাইত। পরে ষষ্ঠ দিনে তাহারা দ্বিগুণ খাদ্য, প্রতিজনের নিমিত্তে দুই দুই ওমর, কুড়াইল, আর মণ্ডলীর অধ্যক্ষেরা সকলে আসিয়া মোশিকে জ্ঞাত করিলেন। তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু তাহাই বলিয়াছিলেন; কল্য বিশ্রামপর্ব্ব, সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র বিশ্রামবার; তোমাদের যাহা ভাজিবার ভাজ, ও যাহা পাক করিবার পাক কর; এবং যাহা অতিরিক্ত, তাহা প্রাতঃকালের জন্য তুলিয়া রাখ। তাহাতে তাহারা মোশির আজ্ঞানুসারে প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত তাহা রাখিল, তখন তাহাতে দুর্গন্ধ হইল না, কীটও জন্মিল না। পরে মোশি কহিলেন, অদ্য তোমরা ইহা ভোজন কর, কেননা অদ্য সদাপ্রভুর বিশ্রামবার; অদ্য মাঠে ইহা পাইবে না। তোমরা ছয় দিন তাহা কুড়াইবে, কিন্তু সপ্তম দিন বিশ্রামবার, সে দিন তাহা মিলিবে না। তথাচ সপ্তম দিনেও লোকদের মধ্যে কেহ কেহ তাহা কুড়াইবার জন্য বাহির হইল; কিন্তু কিছুই পাইল না। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তোমরা আমার আজ্ঞা ও ব্যবস্থা পালন করিতে কত কাল অসম্মত থাকিবে? দেখ, সদাপ্রভুই তোমাদিগকে বিশ্রামবার দিয়াছেন, তাই তিনি ষষ্ঠ দিনে দুই দিনের খাদ্য তোমাদিগকে দিয়া থাকেন; তোমরা প্রতিজন স্ব স্ব স্থানে থাক; সপ্তম দিনে কেহ নিজ স্থান হইতে বাহিরে না যাউক। তাহাতে লোকেরা সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিল। আর ইস্রায়েল-কুল ঐ খাদ্যের নাম মান্না রাখিল; তাহা ধনিয়া বীজের মত, শুক্লবর্ণ, এবং তাহার আস্বাদ মধুমিশ্রিত পিষ্টকের ন্যায় ছিল। পরে মোশি কহিলেন, সদাপ্রভু এই আজ্ঞা করিয়াছেন, তোমরা পুরুষপরম্পরার জন্য উহার এক ওমর পরিমাণ তুলিয়া রাখিও, যেন আমি তোমাদিগকে মিসর দেশ হইতে আনয়নকালে প্রান্তরের মধ্যে যে অন্ন ভোজন করাইতাম, তাহারা তাহা দেখিতে পায়। তখন মোশি হারোণকে কহিলেন, তুমি একটা পাত্র লইয়া পূর্ণ এক ওমর পরিমাণ মান্না সদাপ্রভুর সম্মুখে রাখ; তাহা তোমাদের পুরুষপরম্পরার নিমিত্ত রাখা যাইবে। তখন, সদাপ্রভু মোশিকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারে হারোণ সাক্ষ্যসিন্দুকের নিকটে থাকিবার জন্য তাহা তুলিয়া রাখিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানেরা চল্লিশ বৎসর, যাবৎ নিবাস-দেশে উপস্থিত না হইল, তাবৎ সেই মান্না ভোজন করিল; কনান দেশের সীমাতে উপস্থিত না হওয়া পর্য্যন্ত তাহারা মান্না খাইত। এক ওমর ঐফার দশমাংশ। পরে ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলী সীন প্রান্তর হইতে যাত্রা করিয়া সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে নিরূপিত সকল উত্তরণস্থান দিয়া রফীদীমে গিয়া শিবির স্থাপন করিল; আর সে স্থানে লোকদের পানার্থ জল ছিল না। এই জন্য লোকেরা মোশির সহিত বিবাদ করিয়া কহিল, আমাদিগকে জল দেও, আমরা পান করিব। মোশি তাহাদিগকে কহিলেন, কেন আমার সহিত বিবাদ করিতেছ? কেন সদাপ্রভুর পরীক্ষা করিতেছ? তখন লোকেরা সেই স্থানে জলপিপাসায় ব্যাকুল হইল, আর মোশির বিরুদ্ধে বচসা করিয়া কহিল, তুমি আমাদিগকে এবং আমাদের সন্তানগণকে ও পশুগণকে তৃষ্ণা দ্বারা বধ করিতে মিসর হইতে কেন আনিলে? আর মোশি সদাপ্রভুর কাছে কাঁদিয়া কহিলেন, আমি এই লোকদের নিমিত্ত কি করিব? ক্ষণকালের মধ্যে ইহারা আমাকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি লোকদের অগ্রে যাও, ইস্রায়েলের জন কতক প্রাচীনকে সঙ্গে লইয়া, আর যাহা দিয়া নদীতে আঘাত করিয়াছিলে, সেই যষ্টি হস্তে লইয়া যাও। দেখ, আমি হোরেবে সেই শৈলের উপরে তোমার সম্মুখে দাঁড়াইব; তুমি শৈলে আঘাত করিবে, তাহাতে তাহা হইতে জল নির্গত হইবে, আর লোকেরা পান করিবে। তখন মোশি ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের দৃষ্টিতে সেইরূপ করিলেন। তিনি সেই স্থানের নাম মঃসা ও মরীবা [পরীক্ষা ও বিবাদ] রাখিলেন, কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ বিবাদ করিয়াছিল, এবং সদাপ্রভুর পরীক্ষা করিয়াছিল, বলিয়াছিল, ‘সদাপ্রভু আমাদের মধ্যে আছেন কি না?’ ঐ সময়ে অমালেক আসিয়া রফীদীমে ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিল। তাহাতে মোশি যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি আমাদের জন্য লোক মনোনীত করিয়া লও, যাও, অমালেকের সহিত যুদ্ধ কর; কল্য আমি ঈশ্বরের যষ্টি হস্তে লইয়া পর্ব্বতের শিখরে দাঁড়াইব। পরে যিহোশূয় মোশির আজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিলেন, অমালেকের সহিত যুদ্ধ করিলেন; এবং মোশি, হারোণ ও হূর পর্ব্বতের শৃঙ্গে উঠিলেন। আর এইরূপ হইল, মোশি যখন আপন হস্ত তুলিয়া ধরেন, তখন ইস্রায়েল জয়ী হয়, কিন্তু মোশি আপন হস্ত নামাইলে অমালেক জয়ী হয়। আর মোশির হস্ত ভারী হইতে লাগিল, তখন উহাঁরা একখানি প্রস্তর আনিয়া তাঁহার নীচে রাখিলেন, আর তিনি তাহার উপরে বসিলেন; এবং হারোণ ও হূর এক জন এক দিকে ও অন্য জন অন্য দিকে তাঁহার হস্ত ধরিয়া রাখিলেন, তাহাতে সূর্য্য অস্তগত না হওয়া পর্য্যন্ত তাঁহার হস্ত স্থির থাকিল। আর যিহোশূয় অমালেককে ও তাহার লোকদিগকে খড়গধারে পরাজয় করিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, এই কথা স্মরণার্থে পুস্তকে লিখ, এবং যিহোশূয়ের কর্ণগোচরে শুনাইয়া দেও; কেননা আমি আকাশের নীচে হইতে অমালেকের নাম নিঃশেষে লোপ করিব। পরে মোশি এক বেদি নির্ম্মাণ করিয়া তাহার নাম যিহোবা-নিঃষি [সদাপ্রভু আমার পতাকা] রাখিলেন। আর তিনি কহিলেন, সদাপ্রভুর সিংহাসনের উপরে হস্ত [উত্তোলিত হইয়াছে]; পুরুষানুক্রমে অমালেকের সহিত সদাপ্রভুর যুদ্ধ হইবে। আর, ঈশ্বর মোশির পক্ষে ও আপন প্রজা ইস্রায়েলের পক্ষে যে সকল কর্ম্ম করিয়াছেন, সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, এই সকল কথা মোশির শ্বশুর মিদিয়নীয় যাজক যিথ্রো শুনিতে পাইলেন। তখন মোশির শ্বশুর যিথ্রো মোশির স্ত্রীকে, পিত্রালয়ে প্রেরিতা সিপপোরাকে, ও তাঁহার দুই পুত্রকে সঙ্গে লইলেন। ঐ দুই পুত্রের মধ্যে এক জনের নাম গের্শোম [তত্রপ্রবাসী], কেননা তিনি বলিয়াছিলেন, আমি পরদেশে প্রবাসী হইয়াছি। আর এক জনের নাম ইলীয়েষর [ঈশ্বর সহকারী], কেননা তিনি বলিয়াছিলেন, আমার পিতার ঈশ্বর আমার সহকারী হইয়া ফরৌণের খড়গ হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন। মোশির শ্বশুর যিথ্রো তাঁহার দুই পুত্র ও স্ত্রীকে সঙ্গে লইয়া প্রান্তরে মোশির নিকটে, ঈশ্বরের পর্ব্বতে যে স্থানে তিনি শিবির স্থাপন করিয়াছিলেন, সেই স্থানে আসিলেন। আর তিনি মোশিকে কহিলেন, তোমার শ্বশুর যিথ্রো আমি, এবং তোমার স্ত্রী ও তাঁহার সহিত তাঁহার দুই পুত্র, আমরা তোমার নিকটে আসিয়াছি। তখন মোশি আপন শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করিতে বাহিরে গেলেন, ও প্রণিপাতপূর্ব্বক তাঁহাকে চুম্বন করিলেন, এবং পরস্পর মঙ্গল জিজ্ঞাসা করিলেন, পরে তাঁহারা তাম্বুতে প্রবেশ করিলেন। আর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের জন্য ফরৌণের প্রতি ও মিস্রীয়দের প্রতি যাহা যাহা করিয়াছিলেন, এবং পথে তাহাদের যে যে ক্লেশ ঘটিয়াছিল, ও সদাপ্রভু যে প্রকারে তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়াছিলেন, সেই সকল বৃত্তান্ত মোশি আপন শ্বশুরকে কহিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু মিস্রীয়দের হস্ত হইতে ইস্রায়েলকে উদ্ধার করিয়া তাহাদের যে সকল মঙ্গল করিয়াছিলেন, তন্নিমিত্ত যিথ্রো আহ্লাদিত হইলেন। আর যিথ্রো কহিলেন, ধন্য সদাপ্রভু, যিনি মিস্রীয়দের হস্ত হইতে ও ফরৌণের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছেন, যিনি মিস্রীয়দের হস্তের অধীনতা হইতে এই লোকদিগকে উদ্ধার করিয়াছেন। এখন আমি জানি, সকল দেব হইতে সদাপ্রভু মহান্; সেই বিষয়ে মহান্‌, যে বিষয়ে উহারা ইহাদের বিপক্ষে গর্ব্ব করিত। পরে মোশির শ্বশুর যিথ্রো ঈশ্বরের উদ্দেশে হোমদ্রব্য ও বলি উপস্থিত করিলেন, এবং হারোণ ও ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনবর্গ আসিয়া ঈশ্বরের সম্মুখে মোশির শ্বশুরের সহিত আহার করিলেন। পরদিন মোশি লোকদের বিচার করিতে বসিলেন, আর প্রাতঃকাল অবধি সন্ধ্যা পর্য্যন্ত লোকেরা মোশির কাছে দাঁড়াইয়া রহিল। তখন লোকদের প্রতি মোশি যাহা যাহা করিতেছেন, তাঁহার শ্বশুর তাহা দেখিয়া কহিলেন, তুমি লোকদের প্রতি ও কেমন ব্যবহার করিতেছ? কেন তুমি একাকী বসিয়া থাক, আর সমস্ত লোক প্রাতঃকাল অবধি সন্ধ্যা পর্য্যন্ত তোমার কাছে দাঁড়াইয়া থাকে? মোশি আপন শ্বশুরকে কহিলেন, লোকেরা ঈশ্বরীয় বিচার জিজ্ঞাসা করিতে আমার কাছে আইসে; তাহাদের কোন বিবাদ হইলে তাহা আমার কাছে উপস্থিত হয়; আর আমি বাদী প্রতিবাদীর বিচার করি, এবং ঈশ্বরের বিধি ও ব্যবস্থা সকল তাহাদিগকে জ্ঞাত করি। তখন মোশির শ্বশুর কহিলেন, তোমার এই কর্ম্ম ভাল নয়। ইহাতে তুমি এবং তোমার সঙ্গী এই লোকেরাও ক্ষীণবল হইবে, কেননা এ কার্য্য তোমার ক্ষমতা হইতে গুরুতর; ইহা একাকী সম্পন্ন করা তোমার অসাধ্য। এখন আমার কথায় মনোযোগ কর; আমি তোমাকে পরামর্শ দিই, আর ঈশ্বর তোমার সহবর্ত্তী হউন; তুমি ঈশ্বরের সম্মুখে লোকদের পক্ষে হও, এবং তাহাদের বিচার ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত কর, আর তাহাদিগকে বিধি ও ব্যবস্থার উপদেশ দেও, এবং তাহাদের গন্তব্য পথ ও কর্ত্তব্য কর্ম্ম জ্ঞাত কর। অধিকন্তু তুমি এই লোকসমূহের মধ্য হইতে কার্য্যদক্ষ পুরুষদিগকে, ঈশ্বরভীত, সত্যবাদী ও অন্যায়-লাভ- ঘৃণাকারী ব্যক্তিদিগকে মনোনীত করিয়া লোকদের উপরে সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশৎপতি ও দশপতি করিয়া নিযুক্ত কর। তাঁহারা সকল সময়ে লোকদের বিচার করিবেন; বড় বড় বিচার সকল তোমার নিকটে আনিবেন, কিন্তু ক্ষুদ্র বিচার সকল তাঁহারাই করিবেন; তাহাতে তোমার কর্ম্ম লঘু হইবে, আর তাঁহারা তোমার সহিত ভার বহিবেন। তুমি যদি এরূপ কর, এবং ঈশ্বর তোমাকে এরূপ আজ্ঞা দেন, তবে তুমি সহিতে পারিবে, এবং এই সকল লোকও কুশলে আপনাদের স্থানে গমন করিবে। তাহাতে মোশি আপন শ্বশুরের কথায় মনোযোগ করিয়া, তিনি যাহা কিছু বলিলেন, তদনুসারে কর্ম্ম করিলেন। ফলতঃ মোশি সমস্ত ইস্রায়েল হইতে কার্য্যদক্ষ পুরুষদিগকে মনোনীত করিয়া লোকদের উপরে প্রধান, অর্থাৎ সহস্রপতি, শতপতি, পঞ্চাশৎপতি ও দশপতি করিয়া নিযুক্ত করিলেন। তাঁহারা সকল সময়ে লোকদের বিচার করিতেন; কঠিন বিচার সকল মোশির কাছে আনিতেন, কিন্তু ক্ষুদ্র কথা সকলের বিচার আপনারাই করিতেন। পরে মোশি আপন শ্বশুরকে বিদায় করিলে তিনি স্বদেশে প্রস্থান করিলেন। মিসর দেশ হইতে ইস্রায়েল-সন্তানদের বাহির হইবার পর তৃতীয় মাসে, [প্রথম] দিনেই তাহারা সীনয় প্রান্তরে উপস্থিত হইল। তাহারা রফীদীম হইতে যাত্রা করিয়া সীনয় প্রান্তরে উপস্থিত হইলে সেই প্রান্তরে শিবির স্থাপন করিল; ইস্রায়েল সেই স্থানে পর্ব্বতের সম্মুখে শিবির স্থাপন করিল। পরে মোশি ঈশ্বরের নিকটে উঠিয়া গেলেন, আর সদাপ্রভু পর্ব্বত হইতে তাঁহাকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি যাকোবের কুলকে এই কথা কহ, ও ইস্রায়েল সন্তানগণকে ইহা জ্ঞাত কর। আমি মিস্রীয়দের প্রতি যাহা করিয়াছি, এবং যেমন ঈগল পক্ষী পক্ষ দ্বারা, তেমনি তোমাদিগকে বহিয়া আপনার নিকটে আনিয়াছি, তাহা তোমরা দেখিয়াছ। এখন যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে। এই সকল কথা তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বল। তখন মোশি আসিয়া লোকদের প্রাচীনবর্গকে ডাকাইলেন ও সদাপ্রভু তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, সেই সকল কথা তাহাদের সম্মুখে প্রস্তাব করিলেন। তাহাতে লোকেরা সকলেই এক সঙ্গে উত্তর করিয়া কহিল, সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব। তখন মোশি সদাপ্রভুর কাছে লোকদের কথা নিবেদন করিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, আমি নিবিড় মেঘে তোমার নিকটে আসিব, যেন লোকেরা তোমার সহিত আমার আলাপ শুনিতে পায়, এবং তোমাতেও চিরকাল বিশ্বাস করে। পরে মোশি লোকদের কথা সদাপ্রভুকে বলিলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি লোকদের নিকটে গিয়া অদ্য ও কল্য তাহাদিগকে পবিত্র কর, এবং তাহারা আপন আপন বস্ত্র ধৌত করুক, আর তৃতীয় দিনের জন্য সকলে প্রস্তুত হউক; কেননা তৃতীয় দিনে সদাপ্রভু সকল লোকের সাক্ষাতে সীনয় পর্ব্বতের উপরে নামিয়া আসিবেন। আর তুমি লোকদের চারিদিকে সীমা নিরূপণ করিয়া এই কথা বলিও, তোমরা সাবধান, পর্ব্বতে আরোহন কিম্বা তাহার সীমা স্পর্শ করিও না; যে কেহ পর্ব্বত স্পর্শ করিবে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। কোন হস্ত তাহাকে স্পর্শ করিবে না, কিন্তু সে অবশ্য প্রস্তরাঘাতে হত, কিম্বা বাণ দ্বারা বিদ্ধ হইবে; পশু হউক কি মনুষ্য হউক, সে বাঁচিবে না। অধিকক্ষণ তূরীবাদ্য হইলে তাহারা পর্ব্বতে উঠিবে। পরে মোশি পর্ব্বত হইতে নামিয়া লোকদের নিকটে আসিয়া লোকদিগকে পবিত্র করিলেন, এবং তাহারা আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিল। পরে তিনি লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা তৃতীয় দিনের জন্য প্রস্তুত হও; কোন স্ত্রী লোকের কাছে যাইও না। পরে তৃতীয় দিন প্রভাত হইলে মেঘগর্জ্জন ও বিদ্যুৎ এবং পর্ব্বতের উপরে নিবিড় মেঘ হইল, আর অতিশয় উচ্চরবে তূরীধ্বনি হইতে লাগিল; তাহাতে শিবিরস্থ সমস্ত লোক কাঁপিতে লাগিল। পরে মোশি ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবার জন্য লোকদিগকে শিবির হইতে বাহির করিলেন, আর তাহারা পর্ব্বতের তলে দণ্ডায়মান হইল। তখন সমস্ত সীনয় পর্ব্বত ধূমময় ছিল; কেননা সদাপ্রভু অগ্নিসহ তাহার উপরে নামিয়া আসিলেন, আর ভাটীর ধূমের ন্যায় তাহা হইতে ধূম উঠিতে লাগিল, এবং সমস্ত পর্ব্বত অতিশয় কাঁপিতে লাগিল। আর তূরীর শব্দ ক্রমশঃ অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল; তখন মোশি কথা কহিলেন, এবং ঈশ্বর বাণী দ্বারা তাঁহাকে উত্তর দিলেন। আর সদাপ্রভু সীনয় পর্ব্বতে, পর্ব্বতের শিখরে, নামিয়া আসিলেন, এবং সদাপ্রভু মোশিকে সেই পর্ব্বত-শিখরে ডাকিলেন; তাহাতে মোশি উঠিয়া গেলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি নামিয়া গিয়া লোকদিগকে দৃঢ় আদেশ কর, পাছে তাহারা দেখিবার জন্য সীমা লঙ্ঘন করিয়া সদাপ্রভুর দিকে যায়, ও তাহাদের অনেকে পতিত হয়। আর যাজকগণ, যাহারা সদাপ্রভুর নিকটবর্ত্তী হইয়া থাকে, তাহারাও আপনাদিগকে পবিত্র করুক, পাছে সদাপ্রভু তাহাদিগকে আক্রমণ করেন। তখন মোশি সদাপ্রভুকে কহিলেন, লোকেরা সীনয় পর্ব্বতে উঠিয়া আসিতে পারে না, কেননা তুমি দৃঢ় আজ্ঞা দিয়া আমাদিগকে বলিয়াছ, পর্ব্বতের সীমা নিরূপণ কর, ও তাহা পবিত্র কর। আর সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, যাও, নাম গিয়া; পরে হারোণকে সঙ্গে করিয়া তুমি উঠিয়া আসিও, কিন্তু যাজকগণ ও লোকেরা সদাপ্রভুর নিকটে উঠিয়া আসিবার জন্য সীমা লঙ্ঘন না করুক, পাছে তিনি তাহাদিগকে আক্রমণ করেন। তখন মোশি লোকদের কাছে নামিয়া গিয়া তাহাদিগকে এই সকল কথা বলিলেন। আর ঈশ্বর এই সকল কথা কহিলেন, আমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর দেশ হইতে, দাস-গৃহ হইতে, তোমাকে বাহির করিয়া আনিলেন। আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক। তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিও না; তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না, এবং তাহাদের সেবা করিও না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্‌যোগী ঈশ্বর; আমি পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল সন্তানদিগের উপরে বর্ত্তাই, যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, তাহাদের তৃতীয় চতুর্থ পুরুষ পর্য্যন্ত বর্ত্তাই; কিন্তু যাহারা আমাকে প্রেম করে ও আমার আজ্ঞা সকল পালন করে, আমি তাহাদের সহস্র [পুরুষ] পর্য্যন্ত দয়া করি। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম অনর্থক লইও না, কেননা যে কেহ তাঁহার নাম অনর্থক লয়, সদাপ্রভু তাহাকে নির্দ্দোষ করিবেন না। তুমি বিশ্রামদিন স্মরণ করিয়া পবিত্র করিও। ছয় দিন শ্রম করিও, আপনার সমস্ত কার্য্য করিও; কিন্তু সপ্তম দিন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামদিন; সে দিন তুমি কি তোমার পুত্র কি কন্যা, কি তোমার দাস কি দাসী, কি তোমার পশু, কি তোমার পুরদ্বারের মধ্যবর্ত্তী বিদেশী, কেহ কোন কার্য্য করিও না; কেননা সদাপ্রভু আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী, সমুদ্র ও সেই সকলের মধ্যবর্ত্তী সমস্ত বস্তু ছয় দিনে নির্ম্মাণ করিয়া সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিলেন; এই জন্য সদাপ্রভু বিশ্রামদিনকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, ও পবিত্র করিলেন। তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও, যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিবেন, সেই দেশে তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয়। নরহত্যা করিও না। ব্যভিচার করিও না। চুরি করিও না। তোমার প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না। তোমার প্রতিবাসীর গৃহে লোভ করিও না; প্রতিবাসীর স্ত্রীতে, কিম্বা তাহার দাসে কি দাসীতে, কিম্বা তাহার গোরুতে কি গর্দ্দভে, প্রতিবাসীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না। তখন সমস্ত লোক মেঘগর্জ্জন, বিদ্যুৎ, তূরীধ্বনি ও ধূমময় পর্ব্বত দেখিল; দেখিয়া লোকেরা ত্রাসযুক্ত হইল, এবং দূরে দাঁড়াইয়া রহিল। আর তাহারা মোশিকে কহিল, তুমিই আমাদের সহিত কথা বল, আমরা শুনিব; কিন্তু ঈশ্বর আমাদের সহিত কথা না বলুন, পাছে আমরা মারা পড়ি। মোশি লোকদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না; কেননা তোমাদের পরীক্ষা করণার্থে, এবং তোমরা যেন পাপ না কর, এই নিমিত্তে আপন ভয়ানকতা তোমাদের চক্ষুর্গোচর করণার্থে ঈশ্বর আসিয়াছেন। তখন লোকেরা দূরে দাঁড়াইয়া রহিল; আর মোশি সেই ঘোর অন্ধকারের নিকটে গমন করিলেন, যেখানে ঈশ্বর ছিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই কথা কহ, তোমরা আপনারাই দেখিলে, আমি আকাশ হইতে তোমাদের সহিত কথা কহিলাম। তোমরা আমার প্রতিযোগী কিছু নির্ম্মাণ করিও না; আপনাদের নিমিত্তে রৌপ্যময় দেবতা কি স্বর্ণময় দেবতা নির্ম্মাণ করিও না। তুমি আমার নিমিত্তে মৃত্তিকার এক বেদি নির্ম্মাণ করিবে, এবং তাহার উপরে তোমার হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি, তোমার মেষ ও তোমার গোরু উৎসর্গ করিবে। আমি যে যে স্থানে আপন নাম স্মরণ করাইব, সেই সেই স্থানে তোমার নিকটে আসিয়া তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব। তুমি যদি আমার নিমিত্তে প্রস্তরের বেদি নির্ম্মাণ কর, তবে খোদিত প্রস্তরে তাহা নির্ম্মাণ করিও না, কেননা তাহার উপরে অস্ত্র তুলিলে তুমি তাহা অপবিত্র করিবে। আর আমার বেদির উপরে সোপান দিয়া উঠিও না, পাছে তাহার উপরে তোমার উলঙ্গতা অনাবৃত হয়। আর তুমি এই সকল শাসন তাহাদের সম্মুখে রাখিবে। তুমি ইব্রীয় দাস ক্রয় করিলে সে ছয় বৎসর দাসত্ব করিবে, পরে সপ্তম বৎসরে বিনামূল্যে মুক্ত হইয়া চলিয়া যাইবে। সে যদি একাকী আইসে, তবে একাকী যাইবে; আর যদি সস্ত্রীক আইসে, তবে তাহার স্ত্রীও তাহার সহিত যাইবে। যদি তাহার প্রভু তাহার বিবাহ দেয়, এবং সেই স্ত্রী তাহার জন্য পুত্র কি কন্যা প্রসব করে, তবে সেই স্ত্রীতে ও তাহার সন্তানগণে তাহার প্রভুর স্বত্ব থাকিবে, সে একাকী চলিয়া যাইবে। কিন্তু ঐ দাস যদি স্পষ্টরূপে বলে, আমি আপন প্রভুকে এবং আপন স্ত্রী ও সন্তানগণকে ভালবাসি, মুক্ত হইয়া চলিয়া যাইব না, তাহা হইলে তাহার প্রভু তাহাকে ঈশ্বরের নিকটে লইয়া যাইবে, এবং সে তাহাকে কপাটের কিম্বা বাজুর নিকটে উপস্থিত করিবে, তথায় তাহার প্রভু গুঁজি দ্বারা তাহার কর্ণ বিদ্ধ করিবে; তাহাতে সে চিরকাল সেই প্রভুর দাস থাকিবে। আর কেহ যদি আপন কন্যাকে দাসীরূপে বিক্রয় করে, তবে দাসেরা যেমন যায়, সে তদ্রূপ যাইবে না। তাহার প্রভু তাহাকে আপনার জন্য নিরূপণ করিলেও যদি তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়, তবে সে তাহাকে মুক্ত হইতে দিবে; তাহার সঙ্গে প্রবঞ্চনা করাতে অন্য জাতির কাছে তাহাকে বিক্রয় করিবার অধিকার তাহার হইবে না। আর যদি সে আপন পুত্রের জন্য তাহাকে নিরূপণ করে, তবে সে তাহার প্রতি কন্যাগণ সম্বন্ধীয় নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করিবে। যদি সে অন্য স্ত্রীর সহিত তাহার বিবাহ দেয়, তবে উহার অন্নের ও বস্ত্রের এবং সহবাসের বিষয়ে ত্রুটি করিতে পারিবে না। আর যদি সে তাহার প্রতি এই তিনটী কর্ত্তব্য না করে, তবে সে স্ত্রী অমনি মুক্ত হইয়া চলিয়া যাইবে; রৌপ্য লাগিবে না। কেহ যদি কোন মনুষ্যকে এমন আঘাত করে যে, তাহার মৃত্যু হয়, তবে অবশ্য প্রাণদণ্ড হইবে। আর যদি কোন ব্যক্তি অন্যকে বধ করিতে চেষ্টা না পায়, কিন্তু ঈশ্বর তাহাকে তাহার হস্তে সমর্পণ করেন, তবে যে স্থানে সে পলাইতে পারে, এমন স্থান তোমার নিমিত্ত আমি নিরূপণ করিব। কিন্তু যদি কেহ দুঃসাহস করিয়া ছলে আপন প্রতিবাসীকে বধ করণার্থ তাহার উপর চড়াউ হয়, তবে সে ব্যক্তির প্রাণদণ্ড করণার্থে তাহাকে আমার বেদির নিকট হইতেও লইয়া যাইবে। আর যে কেহ আপন পিতাকে কি আপন মাতাকে প্রহার করে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। আর কেহ যদি কোন মনুষ্যকে চুরি করিয়া বিক্রয় করে, কিম্বা তাহার হস্তে যদি তাহাকে পাওয়া যায়, তবে তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। আর যে কেহ আপন পিতাকে কি আপন মাতাকে শাপ দেয়, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। আর মনুষ্যেরা বিবাদ করিয়া এক জন অন্যকে প্রস্তরাঘাত কিম্বা মুষ্ট্যাঘাত করিলে সে যদি না মরিয়া শয্যাগত হয়, পশ্চাৎ উঠিয়া যষ্টি অবলম্বন করিয়া বাহিরে বেড়ায়, তবে সেই প্রহারক দণ্ড পাইবে না; কেবল তাহার কর্ম্মক্ষতির ও চিকিৎসার ব্যয় তাহাকে দিতে হইবে। আর কেহ আপন দাসকে কিম্বা দাসীকে যষ্টি দ্বারা প্রহার করিলে সে যদি তাহার হস্তে মরে, তবে সে অবশ্য দণ্ডনীয় হইবে। কিন্তু সে যদি দুই এক দিন বাঁচে, তবে তাহার প্রভু দণ্ডার্হ হইবে না, কেননা সে তাহার রৌপ্যস্বরূপ। আর পুরুষেরা বিবাদ করিয়া কোন গর্ভবতী স্ত্রীকে প্রহার করিলে যদি তাহার গর্ভপাত হয়, কিন্তু পরে আর কোন আপদ না ঘটে, তবে ঐ স্ত্রীর স্বামীর দাবী অনুসারে তাহার অর্থদণ্ড অবশ্য হইবে, ও সে বিচারকর্ত্তাদের বিচারমতে টাকা দিবে। কিন্তু যদি কোন আপদ ঘটে, তবে তোমাকে এই পরিশোধ দিতে হইবে; প্রাণের পরিশোধে প্রাণ, চক্ষুর পরিশোধে চক্ষু, দন্তের পরিশোধে দন্ত, হস্তের পরিশোধে হস্ত, চরণের পরিশোধে চরণ, দাহের পরিশোধে দাহ, ক্ষতের পরিশোধে ক্ষত, কালশিরার পরিশোধে কালশিরা। আর কেহ আপন দাস কি দাসীর চক্ষুতে আঘাত করিলে যদি তাহা নষ্ট হয়, তবে তাহার চক্ষুনাশের জন্য সে তাহাকে মুক্ত করিবে। আর আঘাত দ্বারা আপন দাস কিম্বা দাসীর দন্ত ভাঙ্গিয়া ফেলিলে ঐ দন্তের জন্য সে তাহাকে মুক্ত করিবে। আর গোরু কোন পুরুষ কি স্ত্রীকে শৃঙ্গাঘাত করিলে সে যদি মরে, তবে ঐ গোরু অবশ্য প্রস্তরাঘাতে বধ্য হইবে, এবং তাহার মাংস অখাদ্য হইবে; কিন্তু গোরুর স্বামী দণ্ড পাইবে না। পরন্তু ঐ গোরু পূর্ব্বে শৃঙ্গাঘাত করিত, ইহার প্রমাণ পাইলেও তাহার স্বামী তাহাকে সাবধানে না রাখাতে যদি সে কোন পুরুষকে কিম্বা স্ত্রীকে বধ করে, তবে সে গোরু প্রস্তরাঘাতে বধ করা যাইবে; এবং তাহার স্বামীরও প্রাণদণ্ড হইবে। যদি তাহার নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত নিরূপিত হয়, তবে সে প্রাণমুক্তির নিমিত্তে নিরূপিত সমস্ত মূল্য দিবে। তাহার গোরু যদি কাহারও পুত্রকে কি কন্যাকে শৃঙ্গাঘাত করে, তবে ঐ বিচারানুসারে তাহার প্রতি করা যাইবে। আর তাহার গোরু যদি কাহারও দাস কিম্বা দাসীকে শৃঙ্গাঘাত করে, তবে সে তাহার প্রভুকে ত্রিশ শেকল রৌপ্য দিবে; এবং গোরু প্রস্তরাঘাতে বধ্য হইবে। আর কেহ যদি কোন কূপ অনাবৃত করে, কিম্বা কূপ খনন করিয়া তাহা আবৃত না করে, তবে তাহার মধ্যে কোন গোরু কিম্বা গর্দ্দভ পড়িলে সেই কূপের স্বামী ক্ষতিপূরণ করিবে, সে পশুর স্বামীকে রৌপ্যমূল্য দিবে, কিন্তু ঐ মৃত পশু তাহারই হইবে। আর, এক জনের গোরু অন্য জনের গোরুকে শৃঙ্গাঘাত করিলে সেটা যদি মরে, তবে তাহারা জীবিত গোরু বিক্রয় করিয়া তাহার মূল্য দুই অংশ করিবে, এবং ঐ মৃত গোরুও দুই অংশ করিয়া লইবে। কিন্তু যদি জানা যায়, সেই গোরু পূর্ব্বে শৃঙ্গাঘাত করিত, ও তাহার স্বামী তাহাকে সাবধানে রাখে নাই, তবে সে তাহার পরিবর্ত্তে অন্য গোরু দিবে, কিন্তু মৃত গোরু তাহারই হইবে। যে কেহ গোরু কিম্বা মেষ চুরি করিয়া বধ করে, কিম্বা বিক্রয় করে, সে এক গোরুর পরিশোধে পাঁচ গোরু, ও এক মেষের পরিশোধে চারি মেষ দিবে। আর চোর যদি সিঁধ কাটিবার সময়ে ধরা পড়িয়া আহত হয়, ও মারা পড়ে, তবে তাহার জন্য রক্তপাতের দোষ হইবে না। যদি তাহার উপরে সূর্য্য উদিত হয়, তবে রক্তপাতের দোষ হইবে; ক্ষতিপূরণ করা চোরের কর্ত্তব্য; যদি তাহার কিছু না থাকে, তবে চৌর্য্য হেতু সে বিক্রীত হইবে। গোরু, গর্দ্দভ বা মেষ, চুরির কোন বস্তু যদি চোরের হস্তে জীবৎ পাওয়া যায়, তবে সে তাহার দ্বিগুণ দিবে। কেহ যদি শস্যক্ষেত্রে কিম্বা দ্রাক্ষাক্ষেত্রে পশু চরায়, আর আপন পশু ছাড়িয়া দিলে যদি তাহা অন্যের ক্ষেত্রে চরে, তবে সে ব্যক্তি আপন ক্ষেত্রের উত্তম শস্য কিম্বা আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রের উত্তম ফল দিয়া ক্ষতিপূরণ করিবে। অগ্নি ধরিয়া উঠিয়া কন্টকবনে লাগিলে যদি কাহারও শস্যরাশি কিম্বা শস্যের ঝাড় কিম্বা ক্ষেত্র দগ্ধ হয়, তবে সেই দাহকারী অবশ্য ক্ষতিপূরণ করিবে। কেহ মুদ্রা কিম্বা জিনিসপত্র আপন প্রতিবাসীর কাছে গচ্ছিত রাখিলে যদি তাহার গৃহ হইতে কেহ তাহা চুরি করে, এবং সেই চোর ধরা পড়ে, তবে সে তাহার দ্বিগুণ দিবে। যদি চোর ধরা না পড়ে, তবে গৃহস্বামী প্রতিবাসীর দ্রব্যে হাত দিয়াছে কি না, তাহা জানিবার জন্য সে ঈশ্বরের সাক্ষাতে আনীত হইবে। সর্ব্বপ্রকার অপরাধের বিষয়ে, অর্থাৎ গোরু কিম্বা গর্দ্দভ কিম্বা মেষ কিম্বা বস্ত্র, বা কোন হারাণ বস্তুর বিষয়ে যদি কেহ বলে, এ সেই দ্রব্য, তবে উভয়ের কথা ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হইবে; ঈশ্বর যাহাকে দোষী করিবেন, সে আপন প্রতিবাসীকে তাহার দ্বিগুণ দিবে। কেহ যদি আপন গর্দ্দভ কিম্বা গোরু কিম্বা মেষ কিম্বা কোন পশু প্রতিবাসীর কাছে পালনার্থে রাখে, এবং লোকের অগোচরে সে পশু মরিয়া যায়, বা ভগ্নাঙ্গ হয়, কিম্বা তাড়িত হয়, তবে ‘আমি প্রতিবাসীর দ্রব্যে হস্তার্পণ করি নাই’, ইহা বলিয়া এক জন অন্য জনের কাছে সদাপ্রভুর নামে দিব্য করিবে; আর পশুর স্বামী সেই দিব্য গ্রাহ্য করিবে, ঐ ব্যক্তি ক্ষতিপূরণ করিবে না। কিন্তু যদি তাহার নিকট হইতে উহা চুরি যায়, তবে সে তাহার স্বামীর কাছে ক্ষতিপূরণ করিবে। যদি সেটী বিদীর্ণ হয়, তবে সে প্রমাণার্থে তাহা উপস্থিত করুক; সেই বিদীর্ণ পশুর জন্য সে ক্ষতিপূরণ করিবে না। আর কেহ যদি আপন প্রতিবাসীর পশু চাহিয়া লয়, ও তাহার স্বামী তাহার সহিত না থাকিবার সময়ে সে ভগ্নাঙ্গ হয় কিম্বা মরিয়া যায়, তবে সে অবশ্য ক্ষতিপূরণ করিবে। যদি তাহার স্বামী তাহার কাছে থাকে, তবে সে ক্ষতিপূরণ করিবে না; তাহা যদি ভাড়া করা পশু হয়, তবে তাহার ভাড়াতে শোধ হইল। আর কেহ যদি অবাগ্দত্তা কুমারীকে ভুলাইয়া তাহার সহিত শয়ন করে, তবে সে অবশ্য কন্যাপণ দিয়া তাহাকে বিবাহ করিবে। যদি সেই ব্যক্তির সহিত আপন কন্যার বিবাহ দিতে পিতা নিতান্ত অসম্মত হয়, তবে কন্যাপণের ব্যবস্থানুসারে তাহাকে রৌপ্য দিতে হইবে। তুমি মায়াবিনীকে জীবিত রাখিও না। পশুর সহিত শৃঙ্গারকারী ব্যক্তির প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। যে ব্যক্তি কেবল সদাপ্রভু ব্যতিরেকে কোন দেবতার কাছে বলিদান করে, সে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হইবে। তুমি বিদেশীর প্রতি অন্যায় করিও না, তাহার প্রতি উপদ্রব করিও না, কেননা মিসর দেশে তোমরা বিদেশী ছিলে। তোমরা কোন বিধবাকে কিম্বা পিতৃহীনকে দুঃখ দিও না। তাহাদিগকে কোন মতে দুঃখ দিলে যদি তাহারা আমার নিকটে ক্রন্দন করে, তবে আমি অবশ্য তাহাদের ক্রন্দন শুনিব; আর আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, এবং আমি তোমাদিগকে খড়গ দ্বারা বধ করিব, তাহাতে তোমাদের স্ত্রীরা বিধবা ও তোমাদের সন্তানগণ পিতৃহীন হইবে। তুমি যদি আমার প্রজাদের মধ্যে তোমার স্বজাতীয় কোন দীন দুঃখীকে টাকা ধার দেও, তবে তাহার কাছে সুদগ্রাহীর ন্যায় হইও না; তোমরা তাহার উপরে সুদ চাপাইবে না। যদি তুমি আপন প্রতিবাসীর বস্ত্র বন্ধক রাখ, তবে সুর্য্যাস্তের পূর্ব্বে তাহা ফিরাইয়া দিও; কেননা তাহা তাহার একমাত্র আচ্ছাদন, তাহার গাত্রের বস্ত্র; সে কিসে শয়ন করিবে? আর যদি সে আমার কাছে ক্রন্দন করে, তবে আমি তাহা শুনিব, কেননা আমি কৃপাবান্। তুমি ঈশ্বরকে ধিক্কার দিও না, এবং স্বজাতীয় লোকদের অধ্যক্ষকে শাপ দিও না। তোমার পক্ক শস্য ও দ্রাক্ষারস নিবেদন করিতে বিলম্ব করিও না। তোমার প্রথমজাত পুত্রগণ আমাকে দিও। তোমার গো ও মেষ সম্বন্ধেও তদ্রূপ করিও; তাহা সাত দিন আপন মাতার সহিত থাকিবে, অষ্টম দিনে তুমি তাহা আমাকে দিও। আর তোমরা আমার উদ্দেশে পবিত্র লোক হইবে; ক্ষেত্রে বিদীর্ণ কোন মাংস খাইবে না; তাহা কুকুরদের কাছে ফেলিয়া দিবে। তুমি মিথ্যা জনরব উত্থাপন করিও না; অন্যায় সাক্ষী হইয়া দুর্জনের সহায়তা করিও না। তুমি দুষ্কর্ম্ম করিতে বহু লোকের পশ্চাদ্বর্ত্তী হইও না, এবং বিচারে অন্যায় করণার্থে বহু লোকের পক্ষ হইয়া প্রতিবাদ করিও না। দরিদ্রের বিচারে তাহারও পক্ষপাত করিও না। তোমার শত্রুর গোরু কিম্বা গর্দ্দভকে পথহারা দেখিলে তুমি অবশ্য তাহার নিকটে তাহাকে লইয়া যাইবে। তুমি আপন শত্রুর গর্দ্দভকে ভারের নীচে পতিত দেখিলে যদ্যপি তাহাকে ভারমুক্ত করিতে অনিচ্ছুক হও, তথাপি অবশ্য উহার সঙ্গে তাহাকে ভারমুক্ত করিবে। দরিদ্র প্রতিবাসীর বিচারে তাহার প্রতি অন্যায় করিও না। মিথ্যা বিষয় হইতে দূরে থাকিও, এবং নির্দ্দোষের কি ধার্ম্মিকের প্রাণ নষ্ট করিও না, কেননা আমি দুষ্টকে নির্দ্দোষ করিব না। আর তুমি উৎকোচ গ্রহণ করিও না, কেননা উৎকোচ মুক্তচক্ষুদিগকে অন্ধ করে, এবং ধার্ম্মিকদের কথা সকল উল্টায়। আর তুমি বিদেশীর প্রতি উপদ্রব করিও না; তোমরা ত বিদেশীর হৃদয় জান, কেননা তোমরা মিসর দেশে বিদেশী ছিলে। তুমি আপন ভূমিতে ছয় বৎসর যাবৎ বীজ বপন করিও, ও উৎপন্ন শস্য সংগ্রহ করিও। কিন্তু সপ্তম বৎসরে তাহাকে বিশ্রাম দিও, ফেলিয়া রাখিও; তাহাতে তোমার স্বজাতীয় দরিদ্রগণ খাইতে পাইবে, আর তাহারা যাহা অবশিষ্ট রাখে, তাহা বনপশুতে খাইবে; এবং তোমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের ও জিতবৃক্ষের বিষয়েও সেইরূপ করিও। তুমি ছয় দিন আপন কর্ম্ম করিও, কিন্তু সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিও; যেন তোমার গোরু ও গর্দ্দভ বিশ্রাম পায়, এবং তোমার দাসীপুত্র ও বিদেশী লোক প্রাণ জুড়ায়। আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা কহিলাম, সকল বিষয়ে সাবধান থাকিও; ইতর দেবগণের নাম উল্লেখ করিও না, তোমাদের মুখে যেন তাহা শুনা না যায়। তুমি বৎসরের মধ্যে তিন বার আমার উদ্দেশে উৎসব করিও। তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসব পালন করিও; আমার আজ্ঞানুসারে, নিরূপিত সময়ে, আবীব মাসে, সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটী ভোজন করিও, কেননা এই মাসে তুমি মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছ। আর কেহ রিক্তহস্তে আমার নিকটে উপস্থিত না হউক। আর তুমি শস্যচ্ছেদনের উৎসব, অর্থাৎ ক্ষেত্রে যাহা যাহা বুনিয়াছ, তাহার আশুপক্ব ফলের উৎসব পালন করিও। আর বৎসরের শেষে ক্ষেত্র হইতে ফল সংগ্রহ করণ কালে ফলসঞ্চয়ের উৎসব পালন করিও। বৎসরের মধ্যে তিন বার তোমার সমস্ত পুংজাতি, প্রভু সদাপ্রভুর সাক্ষাতে উপস্থিত হইবে। তুমি আমার বলির রক্ত তাড়ীযুক্ত দ্রব্যের সহিত নিবেদন করিও না; আর আমার উৎসব সম্পর্কীয় মেদ প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত সমস্ত রাত্রি না থাকুক। তোমার ভূমির আশুপক্ব ফলের অগ্রিমাংশ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহে আনিও। ছাগবৎসকে তাহার মাতার দুগ্ধে পাক করিও না। দেখ, আমি পথে তোমাকে রক্ষা করিতে, এবং আমি যে স্থান প্রস্তুত করিয়াছি, সেই স্থানে তোমাকে লইয়া যাইতে তোমার অগ্রে অগ্রে এক দূত প্রেরণ করিতেছি। তাঁহা হইতে সাবধান থাকিও, এবং তাঁহার রবে অবধান করিও, তাঁহার অসন্তোষ জন্মাইও না; কেননা তিনি তোমাদের অধর্ম্ম ক্ষমা করিবেন না; কারণ তাঁহার অন্তরে আমার নাম রহিয়াছে। কিন্তু তুমি যদি নিশ্চয় তাঁহার রবে অবধান কর, এবং আমি যাহা যাহা বলি, সে সমস্ত কর, তবে আমি তোমার শত্রুদের শত্রু ও তোমার বিপক্ষদের বিপক্ষ হইব। কেননা আমার দূত তোমার অগ্রে অগ্রে যাইবেন, এবং ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, কনানীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়ের দেশে তোমাকে প্রবেশ করাইবেন; আর আমি তাহাদিগকে উচ্ছিন্ন করিব। তুমি তাহাদের দেবগণের কাছে প্রণিপাত করিও না, এবং তাহাদের সেবা করিও না, ও তাহাদের ক্রিয়ার ন্যায় ক্রিয়া করিও না; কিন্তু তাহাদিগকে সমূলে উৎপাটন করিও, এবং তাহাদের স্তম্ভ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিও। তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা করিও; তাহাতে তিনি তোমার অন্নজলে আশীর্ব্বাদ করিবেন, এবং আমি তোমার মধ্য হইতে রোগ দূর করিব। তোমার দেশে কাহারও গর্ভপাত হইবে না, এবং কেহ বন্ধ্যা হইবে না; আমি তোমার আয়ুর পরিমাণ পূর্ণ করিব। আমি তোমার অগ্রে অগ্রে আমাবিষয়ক ত্রাস প্রেরণ করিব; এবং তুমি যে সকল জাতির নিকটে উপস্থিত হইবে, তাহাদিগকে ব্যাকুল করিব, ও তোমার শত্রুগণকে তোমা হইতে ফিরাইয়া দিব। আর আমি তোমার অগ্রে অগ্রে ভিমরুল পাঠাইব; তাহারা হিব্বীয়, কনানীয় ও হিত্তীয়কে তোমার সম্মুখ হইতে খেদাইয়া দিবে। কিন্তু দেশ যেন ধ্বংসস্থান না হয়, ও তোমার বিরুদ্ধে বন্য পশুর সংখ্যা যেন বৃদ্ধি না পায়, এই জন্য আমি এক বৎসরেই তোমার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে খেদাইয়া দিব না। তুমি যে পর্য্যন্ত বর্দ্ধিত হইয়া দেশ অধিকার না কর, তাবৎ তোমার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে ক্রমে ক্রমে খেদাইয়া দিব। আর সূফসাগর অবধি পলেষ্টীয়দের সমুদ্র পর্য্যন্ত, এবং প্রান্তর অবধি [ফরাৎ] নদী পর্য্যন্ত তোমার সীমা নিরূপণ করিব; কেননা আমি সেই দেশনিবাসীদিগকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব, এবং তুমি তোমার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে খেদাইয়া দিবে। তাহাদের সহিত কিম্বা তাহাদের দেবগণের সহিত কোন নিয়ম স্থির করিবে না। তাহারা তোমার দেশে বাস করিবে না, পাছে তাহারা আমার বিরুদ্ধে তোমাকে পাপ করায়; কেননা তুমি যদি তাহাদের দেবগণের সেবা কর, তবে তাহা অবশ্য তোমার ফাঁদস্বরূপ হইবে। আর তিনি মোশিকে কহিলেন, তুমি ও হারোণ, নাদব ও অবীহূ এবং ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের সত্তর জন, তোমরা সদাপ্রভুর নিকটে উঠিয়া আইস, আর দূরে থাকিয়া প্রণিপাত কর। কেবল মোশি সদাপ্রভুর নিকটে আসিবে, কিন্তু উহারা নিকটে আসিবে না; আর লোকেরা তাহার সহিত উপরে উঠিবে না। তখন মোশি আসিয়া লোকদিগকে সদাপ্রভুর সকল বাক্য ও সকল শাসন কহিলেন, তাহাতে সমস্ত লোক একস্বরে উত্তর করিল, সদাপ্রভু যে যে কথা কহিলেন, আমরা সমস্তই পালন করিব। পরে মোশি সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্য লিখিলেন, এবং প্রত্যূষে উঠিয়া পর্ব্বতের তলে এক যজ্ঞবেদি ও ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশানুসারে দ্বাদশ স্তম্ভ নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি ইস্রায়েল-সন্তানগণের যুবকদিগকে পাঠাইলে তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমার্থক ও মঙ্গলার্থক বলিরূপে বৃষদিগকে বলিদান করিল। তখন মোশি তাহার অর্দ্ধেক রক্ত লইয়া থালে রাখিলেন, এবং অর্দ্ধেক রক্ত বেদির উপরে প্রক্ষেপ করিলেন। আর তিনি নিয়মপুস্তকখানি লইয়া লোকদের কর্ণগোচরে পাঠ করিলেন; তাহাতে তাহারা কহিল, সদাপ্রভু যাহা যাহা কহিলেন, আমরা সমস্তই পালন করিব ও আজ্ঞাবহ হইব। পরে মোশি সেই রক্ত লইয়া লোকদের উপরে প্রক্ষেপ করিয়া কহিলেন, দেখ, এ সেই নিয়মের রক্ত, যাহা সদাপ্রভু তোমাদের সহিত এই সকল বাক্য সম্বন্ধে স্থির করিয়াছেন। তখন মোশি ও হারোণ, নাদব ও অবীহূ, এবং ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের মধ্যে সত্তর জন উঠিয়া গেলেন; আর তাঁহারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে দর্শন করিলেন; তাঁহার চরণতলের স্থান নীলকান্তমণি-নির্ম্মিত শিলাস্তরের কার্য্যবৎ, এবং নির্ম্মলতায় সাক্ষাৎ আকাশের তুল্য ছিল। আর তিনি ইস্রায়েল-সন্তানদের অধ্যক্ষগণের উপরে হস্তার্পণ করিলেন না, বরং তাঁহারা ঈশ্বরকে দর্শন করিয়া ভোজন পান করিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি পর্ব্বতে আমার নিকটে উঠিয়া আসিয়া এই স্থানে থাক, তাহাতে আমি দুই খানা প্রস্তরফলক, এবং আমার লিখিত ব্যবস্থা ও আজ্ঞা তোমাকে দিব, যেন তুমি লোকদিগকে শিক্ষা দিতে পার। পরে মোশি ও তাঁহার পরিচারক যিহোশূয় উঠিলেন, এবং মোশি ঈশ্বরের পর্ব্বতে উঠিলেন। আর তিনি প্রাচীনবর্গকে কহিলেন, আমরা যাবৎ তোমাদের নিকটে ফিরিয়া না আসি, তাবৎ তোমরা আমাদের অপেক্ষায় এই স্থানে থাক; আর দেখ, হারোণ ও হূর তোমাদের কাছে রহিলেন; কাহারও কোন বিবাদের কথা উপস্থিত হইলে সে তাঁহাদের কাছে যাউক। মোশি যখন পর্ব্বতে উঠিলেন, তখন মেঘে পর্ব্বত আচ্ছন্ন ছিল। আর সীনয় পর্ব্বতের উপরে সদাপ্রভুর প্রতাপ অবস্থিতি করিতেছিল; উহা ছয় দিন মেঘাচ্ছন্ন রহিল; পরে সপ্তম দিনে তিনি মেঘের মধ্য হইতে মোশিকে ডাকিলেন। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণের দৃষ্টিতে সদাপ্রভুর প্রতাপ পর্ব্বতশৃঙ্গে গ্রাসকারী অগ্নির ন্যায় প্রকাশিত হইল। আর মোশি মেঘের মধ্যে প্রবেশ করিয়া পর্ব্বতে উঠিলেন। মোশি চল্লিশ দিবারাত্র সেই পর্ব্বতে অবস্থিতি করিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে আমার নিমিত্তে উপহার সংগ্রহ করিতে বল; হৃদয়ের ইচ্ছায় যে নিবেদন করে, তাহা হইতে তোমরা আমার সেই উপহার গ্রহণ করিও। এই সকল উপহার তাহাদের হইতে গ্রহণ করিবে; স্বর্ণ, রৌপ্য, পিত্তল; এবং নীল, বেগুনে ও লাল, এবং সাদা মসীনা সূত্র ও ছাগলোম; ও রক্তীকৃত মেষচর্ম্ম, তহশ চর্ম্ম, ও শিটীম কাষ্ঠ; দীপার্থ তৈল, এবং অভিষেকার্থ তৈলের ও সুগন্ধি ধূপের নিমিত্তে গন্ধদ্রব্য; এবং এফোদের ও বুকপাটার জন্য গোমেদক মণি প্রভৃতি খচনীয় প্রস্তর। আর তাহারা আমার নিমিত্তে এক ধর্ম্মধাম নির্ম্মাণ করুক, তাহাতে আমি তাহাদের মধ্যে বাস করিব। আবাসের ও তাহার সকল দ্রব্যের যে আদর্শ আমি তোমাকে দেখাই, তদনুসারে তোমরা সকলই করিবে। তাহারা শিটীম কাষ্ঠের এক সিন্দুক নির্ম্মাণ করিবে; তাহা আড়াই হস্ত দীর্ঘ, দেড় হস্ত প্রস্থ ও দেড় হস্ত উচ্চ হইবে। পরে তুমি নির্ম্মল সুবর্ণে তাহা মুড়িবে; তাহার ভিতর ও বাহির মুড়িবে, এবং তাহার উপরে চারিদিকে স্বর্ণের নিকাল গড়িয়া দিবে। আর তাহার জন্য সুবর্ণের চারি কড়া ছাঁচে ঢালিয়া তাহার চারি পায়াতে দিবে; তাহার এক পার্শ্বে দুই কড়া, ও অন্য পার্শ্বে দুই কড়া থাকিবে। আর তুমি শিটীম কাষ্ঠের দুইটী বহন-দণ্ড করিয়া স্বর্ণে মুড়িবে। আর সিন্দুক বহনার্থে ঐ বহন-দণ্ড সিন্দুকের দুই পার্শ্বস্থ কড়াতে দিবে। সেই বহন-দণ্ড সিন্দুকের কড়াতে থাকিবে, তাহা হইতে বহিষ্কৃত হইবে না। আর আমি তোমাকে যে সাক্ষ্যপত্র দিব, তাহা ঐ সিন্দুকে রাখিবে। পরে তুমি নির্ম্মল স্বর্ণে আড়াই হস্ত দীর্ঘ ও দেড় হস্ত প্রস্থ পাপাবরণ প্রস্তুত করিবে। আর তুমি স্বর্ণের দুই করূব নির্ম্মাণ করিবে; পাপাবরণের দুই মুড়াতে পিটান কার্য্য দ্বারা তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিবে। এক মুড়াতে এক করূব ও অন্য মুড়াতে অন্য করূব, পাপাবরণের দুই মুড়াতে তৎসহিত অখণ্ড দুই করূব করিবে। আর সেই দুই করূব ঊর্দ্ধে পক্ষ বিস্তার করিয়া ঐ পক্ষ দ্বারা পাপাবরণকে আচ্ছাদন করিবে, এবং তাহাদের মুখ পরস্পরের দিকে থাকিবে, করূবদের দৃষ্টি পাপাবরণের দিকে থাকিবে। তুমি এই পাপাবরণ সেই সিন্দুকের উপরে রাখিবে, এবং আমি তোমাকে যে সাক্ষ্যপত্র দিব, তাহা ঐ সিন্দুকের মধ্যে রাখিবে। আর আমি সেই স্থানে তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিব, এবং পাপাবরণের উপরিভাগ হইতে, সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরিস্থ দুই করূবের মধ্য হইতে তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণের প্রতি আমার সমস্ত আজ্ঞা তোমাকে জ্ঞাত করিব। আর তুমি শিটীম কাষ্ঠের এক মেজ নির্ম্মাণ করিবে; তাহা দুই হস্ত দীর্ঘ, এক হস্ত প্রস্থ ও দেড় হস্ত উচ্চ হইবে। আর নির্ম্মল স্বর্ণে তাহা মুড়িবে, এবং তাহার চারিদিকে স্বর্ণের নিকাল গড়িয়া দিবে। আর তাহার চারিদিকে চারি অঙ্গুলি পরিমিত এক পার্শ্বকাষ্ঠ করিবে, এবং পার্শ্বকাষ্ঠের চারিদিকে স্বর্ণের নিকাল গড়িয়া দিবে। আর স্বর্ণের চারিটী কড়া করিয়া চারি পায়ার চারি কোণে রাখিবে। মেজ বহনার্থ বহন-দণ্ডের ঘর হইবার নিমিত্তে ঐ কড়া পার্শ্বকাষ্ঠের নিকটে থাকিবে। আর ঐ মেজ বহনার্থে শিটীম কাষ্ঠের দুই বহন-দণ্ড করিয়া তাহা স্বর্ণে মুড়িবে। আর মেজের থাল, চমস, শ্রুব ও ঢালিবার জন্য সেকপাত্র গড়িবে; এই সকল নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা গড়িবে। আর তুমি সেই মেজের উপরে আমার সম্মুখে নিয়ত দর্শন-রুটী রাখিবে। আর তুমি নির্ম্মল স্বর্ণের এক দীপবৃক্ষ প্রস্তুত করিবে; পিটান কার্য্যে সেই দীপবৃক্ষ প্রস্তুত হইবে; তাহার কাণ্ড, শাখা, গোলাধার, কলিকা ও পুষ্প তৎসহিত অখণ্ড হইবে। দীপবৃক্ষের এক পার্শ্ব হইতে তিন শাখা ও দীপবৃক্ষের অন্য পার্শ্ব হইতে তিন শাখা, এই ছয় শাখা তাহার পার্শ্ব হইতে নির্গত হইবে। এক শাখায় বাদামপুষ্পের ন্যায় তিন গোলাধার, এক কলিকা ও এক পুষ্প থাকিবে; এবং অন্য শাখায় বাদামপুষ্পের ন্যায় তিন গোলাধার, এক কলিকা ও এক পুষ্প থাকিবে; দীপবৃক্ষ হইতে নির্গত ছয় শাখায় এইরূপ হইবে। দীপবৃক্ষে বাদামপুষ্পের ন্যায় চারি গোলাধার, ও তাহাদের কলিকা ও পুষ্প থাকিবে। আর দীপবৃক্ষের যে ছয়টী শাখা নির্গত হইবে, তাহাদের এক শাখাদ্বয়ের নীচে তৎসহ অখণ্ড এক কলিকা, অন্য শাখাদ্বয়ের নীচে তৎসহ অখণ্ড এক কলিকা ও অপর শাখাদ্বয়ের নীচে তৎসহ অখণ্ড এক কলিকা থাকিবে। কলিকা ও শাখা তৎসহ অখণ্ড হইবে; সমস্তই পিটান নির্ম্মল স্বর্ণের একই বস্তু হইবে। আর তুমি তাহার সাতটী প্রদীপ নির্ম্মাণ করিবে; এবং লোকেরা সেই সকল প্রদীপ জ্বালাইলে তাহার সম্মুখে আলো হইবে। আর তাহার চিমটা ও গুলতরাশ সকল নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা নির্ম্মাণ করিতে হইবে। এই দীপবৃক্ষ এবং ঐ সমস্ত সামগ্রী এক তালন্ত পরিমিত নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা নির্ম্মিত হইবে। দেখিও, পর্ব্বতে তোমাকে এই সকলের যেরূপ আদর্শ দেখান গেল, সেইরূপ সকলই করিও। আর তুমি দশ যবনিকা দ্বারা এক আবাস প্রস্তুত করিবে; সেগুলি পাকান সাদা মসীনা এবং নীল, বেগুনে ও লাল সূত্রে নির্ম্মাণ করিবে; সেই যবনিকা সমূহে শিল্পিত করূবগণের আকৃতি থাকিবে। প্রত্যেক যবনিকা দীর্ঘে আটাইশ হস্ত ও প্রত্যেক যবনিকা প্রস্থে চারি হস্ত হইবে; সমস্ত যবনিকার এক পরিমাণ হইবে। আর একত্র পাঁচ যবনিকার পরস্পর যোগ থাকিবে, এবং অন্য পাঁচ যবনিকার পরস্পর যোগ থাকিবে। আর যোড়স্থানে প্রথম অন্ত্য যবনিকার মুড়াতে নীলসূত্রের ঘুন্টিঘরা করিয়া দিবে, এবং যোড়স্থানে দ্বিতীয় অন্ত্য যবনিকার মুড়াতেও তদ্রূপ করিবে। প্রথম যবনিকাতে পঞ্চাশ ঘুন্টিঘরা করিয়া দিবে; এবং যোড়স্থানের দ্বিতীয় যবনিকার মুড়াতেও পঞ্চাশ ঘুন্টিঘরা করিয়া দিবে; সেই দুই ঘুন্টিঘরাশ্রেণী পরস্পর সম্মুখীন হইবে। আর পঞ্চাশ স্বর্ণঘুন্টি গড়িয়া ঘুন্টিতে যবনিকা সকল পরস্পর বদ্ধ করিবে; তাহাতে তাহা একই আবাস হইবে। আর তুমি আবাসের উপরে আচ্ছাদনার্থ তাম্বুর নিমিত্তে ছাগলোমজাত যবনিকা সকল প্রস্তুত করিবে, একাদশ যবনিকা প্রস্তুত করিবে। প্রত্যেক যবনিকা দীর্ঘে ত্রিশ হস্ত ও প্রত্যেক যবনিকা প্রস্থে চারি হস্ত হইবে; এই একাদশ যবনিকার একই পরিমাণ হইবে। পরে পাঁচ যবনিকা পরস্পর যোড়া দিয়া পৃথক্ রাখিবে, অন্য ছয় যবনিকাও পৃথক্‌ রাখিবে, এবং ইহাদের ষষ্ঠ যবনিকা দোহারা করিয়া তাম্বুর সম্মুখে রাখিবে। আর যোড়স্থানে প্রথম অন্ত্য যবনিকার মুড়াতে পঞ্চাশ ঘুন্টিঘরা করিয়া দিবে, এবং সংযোক্তব্য দ্বিতীয় যবনিকার মুড়াতেও পঞ্চাশ ঘুন্টিঘরা করিয়া দিবে। পরে পিত্তলের পঞ্চাশ ঘুন্টি গড়িয়া সেই ঘুন্টিঘরাতে তাহা প্রবেশ করাইয়া তাম্বু সংযুক্ত করিবে; তাহাতে তাহা একই তাম্বু হইবে; তাম্বুর যবনিকার অতিরিক্ত অংশ, অর্থাৎ যে অর্দ্ধযবনিকা অতিরিক্ত থাকিবে, তাহা আবাসের পশ্চাৎপার্শ্বে ঝুলিয়া থাকিবে। আর তাম্বুর যবনিকার দীর্ঘতার যে অংশ এপার্শ্বে এক হস্ত, ওপার্শ্বে এক হস্ত অতিরিক্ত থাকিবে, তাহা আচ্ছাদন জন্য আবাসের উপরে এপার্শ্বে ওপার্শ্বে ঝুলিয়া থাকিবে। পরে তুমি তাম্বুর জন্য রক্তীকৃত মেষচর্ম্মের এক ছাদ প্রস্তুত করিবে, আবার তাহার উপরে তহশচর্ম্মের এক ছাদ প্রস্তুত করিবে। পরে তুমি আবাসের জন্য শিটীম কাষ্ঠের দাঁড় করান তক্তা প্রস্তুত করিবে। প্রত্যেক তক্তা দীর্ঘে দশ হস্ত ও প্রস্থে দেড় হস্ত হইবে। প্রত্যেক তক্তার পরস্পর সংযুক্ত দুই দুই পায়া থাকিবে; এইরূপে আবাসের সকল তক্তা প্রস্তুত করিবে। আবাসের নিমিত্তে তক্তা প্রস্তুত করিবে, দক্ষিণদিকে দক্ষিণ পার্শ্বের নিমিত্তে বিংশতি তক্তা। আর সেই বিংশতি তক্তার নীচে চল্লিশ রৌপ্যের চুঙ্গি গড়িয়া দিবে; এক তক্তার নীচে তাহার দুই পায়ার নিমিত্তে দুই চুঙ্গি, এবং অন্য অন্য তক্তার নীচেও তাহাদের দুই দুই পায়ার নিমিত্তে দুই দুই চুঙ্গি হইবে। আর আবাসের দ্বিতীয় পার্শ্বের নিমিত্তে উত্তরদিকে বিংশতি তক্তা; আর সেইগুলির জন্য রৌপ্যের চল্লিশ চুঙ্গি; এক তক্তার নীচে দুই চুঙ্গি ও অন্য অন্য তক্তার নীচেও দুই দুই চুঙ্গি; আর আবাসের পশ্চিমদিকের পশ্চাদ্ভাগের নিমিত্তে ছয়খানি তক্তা করিবে। আর আবাসের সেই পশ্চাদ্ভাগের দুই কোণের জন্য দুইখানি তক্তা করিবে। সেই দুই তক্তার নীচে যোড় হইবে, এবং সেইরূপ মাথাতেও প্রথম কড়ার নিকটে যোড় হইবে; এইরূপ উভয়েতেই হইবে; তাহা দুই কোণের নিমিত্ত হইবে। তক্তা আটখানা হইবে, ও সেইগুলির রৌপ্যের চুঙ্গি ষোলটী হইবে; এক তক্তার নীচে দুই চুঙ্গি, ও অন্য তক্তার নীচে দুই চুঙ্গি থাকিবে। আর তুমি শিটীম কাষ্ঠের অর্গল প্রস্তুত করিবে, আবাসের এক পার্শ্বের তক্তাতে পাঁচ অর্গল, ও আবাসের অন্য পার্শ্বের তক্তাতে পাঁচ অর্গল, এবং আবাসের পশ্চিমদিকের পশ্চাদ্ভাগের তক্তাতে পাঁচ অর্গল দিবে। এবং মধ্যবর্ত্তী অর্গল তক্তাগুলির মধ্যস্থান দিয়া এক প্রান্ত অবধি অন্য প্রান্ত পর্য্যন্ত যাইবে। আর ঐ তক্তাগুলি স্বর্ণে মুড়িবে, এবং অর্গলের ঘর হইবার জন্য স্বর্ণকড়া গড়িবে, এবং অর্গল সকল স্বর্ণ দিয়া মুড়িবে। আবাসের যে আদর্শ পর্ব্বতে তোমাকে দেখান গেল, তদনুসারে তাহা স্থাপন করিবে। আর তুমি নীল, বেগুনে ও লাল এবং পাকান সাদা মসীনা সূত্র দ্বারা এক তিরস্করিণী প্রস্তুত করিবে; তাহা শিল্পকারের কর্ম্ম হইবে, তাহাতে করূবগণের আকৃতি থাকিবে। তুমি তাহা স্বর্ণে মুড়ান শিটীম কাষ্ঠের চারি স্তম্ভের উপরে খাটাইবে; সেইগুলির আঁকড়া স্বর্ণময় হইবে, এবং সেইগুলি রৌপ্যের চারি চুঙ্গির উপরে বসিবে। আর ঘুন্টি সকলের নীচে তিরস্করিণী খাটাইয়া দিবে, এবং তথায় তিরস্করিণীর ভিতরে সাক্ষ্যসিন্দুক আনিবে; এবং সেই তিরস্করিণী পবিত্র স্থানের ও অতি পবিত্র স্থানের মধ্যে তোমাদের জন্য প্রভেদ রাখিবে। আর অতি পবিত্র স্থানে সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরে পাপাবরণ রাখিবে। আর তিরস্করিণীর বাহিরে মেজ রাখিবে, ও মেজের সম্মুখে আবাসের পার্শ্বে, দক্ষিণদিকে দীপবৃক্ষ রাখিবে; এবং উত্তরদিকে মেজ রাখিবে। আর তাম্বুর দ্বারের নিমিত্তে নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্রনির্ম্মিত শিল্পকারের কৃত এক পর্দ্দা প্রস্তুত করিবে। আর সেই পর্দ্দার নিমিত্তে শিটীম কাষ্ঠের পাঁচটী স্তম্ভ নির্ম্মাণ করিয়া স্বর্ণে মুড়িবে, ও স্বর্ণ দ্বারা তাহার আঁকড়া প্রস্তুত করিবে, এবং তাহার নিমিত্তে পিত্তলের পাঁচ চুঙ্গি ঢালিবে। আর তুমি শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা পাঁচ হস্ত দীর্ঘ, পাঁচ হস্ত প্রস্থ বেদি নির্ম্মাণ করিবে। সেই বেদি চতুষ্কোণ এবং তিন হস্ত উচ্চ হইবে। আর তাহার চারি কোণের উপরে শৃঙ্গ করিবে, সেই বেদির শৃঙ্গ সকল তৎসহ অখণ্ড হইবে, এবং তুমি তাহা পিত্তলে মুড়িবে। আর তাহার ভস্ম লইবার নিমিত্তে হাঁড়ী প্রস্তুত করিবে, এবং তাহার হাতা, বাটি, ত্রিশূল ও অঙ্গারধানী গড়িবে; তাহার সমস্ত পাত্র পিত্তল দিয়া গড়িবে। আর জালের ন্যায় পিত্তলের এক ঝাঁঝরী গড়িবে, এবং সেই ঝাঁঝরীর উপরে চারি কোণে পিত্তলের চারি কড়া প্রস্তুত করিবে। এই ঝাঁঝরী নিম্নভাগে বেদির বেড়ের নীচে রাখিবে, এবং ঝাঁঝরী বেদির মধ্য পর্য্যন্ত থাকিবে। আর বেদির নিমিত্তে শিটীম কাষ্ঠের বহন-দণ্ড করিবে, ও তাহা পিত্তলে মুড়িবে। আর কড়ার মধ্যে ঐ বহন-দণ্ড দিবে; বেদি বহনকালে তাহার দুই পার্শ্বে সেই বহন-দণ্ড থাকিবে। তুমি ফাঁপা করিয়া তক্তা দিয়া তাহা গড়িবে; পর্ব্বতে তোমাকে যেরূপ দেখান গেল, লোকেরা সেইরূপে তাহা করিবে। আর তুমি আবাসের প্রাঙ্গণ নির্ম্মাণ করিবে; দক্ষিণ পার্শ্বে, দক্ষিণদিকে পাকান সাদা মসীনা সূত্রনির্ম্মিত যবনিকা থাকিবে; তাহার এক পার্শ্বের দীর্ঘতা এক শত হস্ত হইবে। তাহার বিংশতি স্তম্ভ ও বিংশতি চুঙ্গি পিত্তলের হইবে, এবং স্তম্ভের আঁকড়া ও শলাকা সকল রৌপ্যের হইবে। তদ্রূপ উত্তর পার্শ্বে এক শত হস্ত দীর্ঘ যবনিকা হইবে, আর তাহার বিংশতি স্তম্ভ ও বিংশতি চুঙ্গি পিত্তলের হইবে; এবং স্তম্ভের আঁকড়া ও শলাকা সকল রৌপ্যের হইবে। আর প্রাঙ্গণের প্রস্থের নিমিত্তে পশ্চিমদিকে পঞ্চাশ হস্ত যবনিকা ও তাহার দশ স্তম্ভ ও দশ চুঙ্গি হইবে। আর প্রাঙ্গণের প্রস্থ পূর্ব্ব পার্শ্বে পূর্ব্বদিকে পঞ্চাশ হস্ত হইবে। [দ্বারের] এক পার্শ্বের জন্য পনর হস্ত যবনিকা, তিন স্তম্ভ ও তিন চুঙ্গি হইবে। আর অন্য পার্শ্বের জন্যও পনর হস্ত যবনিকা, তিন স্তম্ভ ও তিন চুঙ্গি হইবে। আর প্রাঙ্গণের দ্বারের নিমিত্তে নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্রে শিল্পকারের কৃত বিংশতি হস্ত এক পর্দ্দা ও তাহার চারি স্তম্ভ ও চারি চুঙ্গি হইবে। প্রাঙ্গণের চারিদিকের স্তম্ভ সকল রৌপ্যশলাকাতে বদ্ধ হইবে, ও সেগুলির আঁকড়া রৌপ্যময়, ও চুঙ্গি পিত্তলের হইবে। প্রাঙ্গণের দীর্ঘতা এক শত হস্ত, প্রস্থ সর্ব্বত্র পঞ্চাশ হস্ত, এবং উচ্চতা পাঁচ হস্ত হইবে, সকলই পাকান সাদা মসীনা সূত্রে করা যাইবে, ও তাহার পিত্তলের চুঙ্গি হইবে। আবাসের যাবতীয় কার্য্য সম্বন্ধীয় সমস্ত দ্রব্য ও গোঁজ এবং প্রাঙ্গণের সকল গোঁজ পিত্তলের হইবে। আর তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই আদেশ করিবে, যেন তাহারা আলোর জন্য উখলিতে প্রস্তুত জিততৈল তোমার নিকটে আনে, যাহাতে নিয়ত প্রদীপ জ্বালান থাকে। আর সমাগম-তাম্বুতে সাক্ষ্য-সিন্দুকের সম্মুখে স্থিত তিরস্করিণীর বাহিরে হারোণ ও তাহার পুত্রগণ সন্ধ্যা অবধি প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা প্রস্তুত রাখিবে; ইহা ইস্রায়েল-সন্তানদের পুরুষানুক্রমে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি। আর তুমি আমার যাজনার্থে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্য হইতে তোমার ভ্রাতা হারোণকে ও তাহার সঙ্গে তাহার পুত্রগণকে আপনার নিকটে উপস্থিত করিবে; হারোণ এবং হারোণের পুত্র নাদব, অবীহূ, ইলীয়াসর ও ঈথামরকে উপস্থিত করিবে। আর তোমার ভ্রাতা হারোণের জন্য, গৌরব ও শোভার নিমিত্তে তুমি পবিত্র বস্ত্র প্রস্তুত করিবে। আর আমি যাহাদিগকে বিজ্ঞতার আত্মায় পূর্ণ করিয়াছি, সেই সকল বিজ্ঞমনা লোকদিগকে বল; যেন আমার যাজনার্থে হারোণকে পবিত্র করিতে তাহারা তাহার বস্ত্র প্রস্তুত করে। এই সকল বস্ত্র তাহারা প্রস্তুত করিবে; বুকপাটা, এফোদ, পরিচ্ছদ, চিত্রিত অঙ্গরক্ষক বস্ত্র, উষ্ণীষ ও কটিবন্ধন; তাহারা আমার যাজনার্থে তোমার ভ্রাতা হারোণের ও তাহার পুত্রগণের নিমিত্তে পবিত্র বস্ত্র প্রস্তুত করিবে। তাহারা স্বর্ণ এবং নীল, বেগুনে ও লাল এবং সাদা মসীনা সূত্র লইবে। আর তাহারা স্বর্ণ এবং নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্রে শিল্পকারের কর্ম্ম দ্বারা এফোদ প্রস্তুত করিবে। তাহার দুই মুড়াতে পরস্পর সংযুক্ত দুই স্কন্ধপটি থাকিবে; এইরূপে তাহা যুক্ত হইবে; এবং তাহা বদ্ধ করিবার জন্য বুনানি করা যে পটুকা তাহার উপরে থাকিবে, তাহা তৎসহিত অখণ্ড এবং সেই বস্ত্রের তুল্য হইবে; অর্থাৎ স্বর্ণে এবং নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্রে হইবে। পরে তুমি দুই গোমেদক মণি লইয়া তাহার উপরে ইস্রায়েলের পুত্রদের নাম খুদিবে। তাহাদের জন্মক্রম অনুসারে ছয় নাম এক মণির উপরে, ও অবশিষ্ট ছয় নাম অন্য মণির উপরে খুদিবে। শিল্পকর্ম্ম ও মুদ্রা খুদনের ন্যায় সেই দুই মণির উপরে ইস্রায়েলের পুত্রদের নাম খুদিবে, এবং তাহা দুই স্বর্ণস্থালীতে বদ্ধ করিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানদের স্মরণার্থক মণিস্বরূপে তুমি সেই দুই মণি এফোদের দুই স্কন্ধপটিতে দিবে; তাহাতে হারোণ স্মরণ করাইবার নিমিত্তে সদাপ্রভুর সম্মুখে আপনার দুই স্কন্ধে তাহাদের নাম বহিবে। আর তুমি দুই স্বর্ণস্থালী করিবে, এবং নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা পাকান দুই মাল্যবৎ শৃঙ্খল করিয়া সেই পাকান শৃঙ্খল সেই দুই স্থালীতে বদ্ধ করিবে। আর শিল্পকারের কর্ম্মে বিচারার্থক বুকপাটা করিবে; এফোদের কর্ম্মানুসারে করিবে; স্বর্ণ এবং নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্রের দ্বারা তাহা প্রস্তুত করিবে। তাহা চতুষ্কোণ ও দোহারা হইবে; তাহার দীর্ঘতা এর বিঘত ও প্রস্থ এক বিঘত হইবে। আর তাহা চারি পংক্তি মণিতে খচিত করিবে; তাহার প্রথম পংক্তিতে চুণী, পীতমণি ও মরকত; দ্বিতীয় পংক্তিতে পদ্মরাগ, নীলকান্ত ও হীরক; তৃতীয় পংক্তিতে পেরোজ, যিস্ম ও কটাহেলা; এবং চতুর্থ পংক্তিতে বৈদূর্য্য, গোমেদক ও সূর্য্যকান্ত; এই সকল স্ব স্ব পংক্তিতে স্বর্ণে আঁটা হইবে। এই মণি ইস্রায়েলের পুত্রদের নামানুযায়ী হইবে, তাহাদের নামানুসারে দ্বাদশটী হইবে; মুদ্রার ন্যায় খোদিত প্রত্যেক মণিতে ঐ দ্বাদশ বংশের জন্য এক এক পুত্রের নাম থাকিবে। আর তুমি নির্ম্মল স্বর্ণ দিয়া বুকপাটার উপরে মাল্যবৎ পাকান দুই শৃঙ্খল নির্ম্মাণ করিয়া দিবে। আর বুক পাটার উপরে স্বর্ণের দুই কড়া গড়িয়া দিবে, এবং বুকপাটার দুই প্রান্তে ঐ দুই কড়া বাঁধিবে। আর বুকপাটার দুই প্রান্তস্থিত দুই কড়ার মধ্যে পাকান স্বর্ণের ঐ দুই শৃঙ্খল রাখিবে। আর পাকান শৃঙ্খলের দুই মুড়া সেই দুই স্থালীতে বদ্ধ করিয়া এফোদের সম্মুখে দুই স্কন্ধপটির উপরে রাখিবে। তুমি স্বর্ণের দুই কড়া গড়িয়া বুকপাটার দুই প্রান্তে এফোদের সম্মুখস্থ ভিতরভাগে রাখিবে। আরও দুই স্বর্ণকড়া গড়িয়া এফোদের দুই স্কন্ধপটির নীচে তাহার সম্মুখভাগে যোড়স্থানে এফোদের বুনানি করা পটুকার উপরে তাহা রাখিবে। তাহাতে বুকপাটা যেন এফোদের বুনানি করা পটুকার উপরে থাকে, এফোদ হইতে খসিয়া না পড়ে, এই জন্য তাহারা কড়াতে নীলসূত্র দিয়া এফোদের কড়ার সহিত বুকপাটা বদ্ধ করিয়া রাখিবে। সে সময়ে হারোণ পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিবে, তৎকালে সদাপ্রভুর সম্মুখে নিয়ত স্মরণ করাইবার জন্য সে বিচারার্থক বুকপাটাতে ইস্রায়েলের পুত্রদের নাম আপন হৃদয়ের উপরে বহন করিবে। আর সেই বিচারার্থক বুকপাটায় তুমি ঊরীম ও তুম্মীম [দীপ্তি ও সিদ্ধতা] দিবে; তাহাতে হারোণ যে সময়ে সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রবেশ করিবে, তৎকালে হারোণের হৃদয়ের উপরে তাহা থাকিবে, এবং হারোণ সদাপ্রভুর সম্মুখে ইস্রায়েল-সন্তানদের বিচার নিয়ত আপন হৃদয়ের উপরে বহিবে। আর তুমি এফোদের সমুদয় পরিচ্ছদ নীলবর্ণ করিবে। তাহার মধ্যস্থলে শিরঃপ্রবেশার্থে এক ছিদ্র থাকিবে; বর্ম্মের গলার ন্যায় সেই ছিদ্রের চারিদিকে তন্তুবায়ের কৃত ধারি থাকিবে, তাহাতে তাহা ছিঁড়িবে না। আর তুমি তাহার আঁচলায় চারিদিকে নীল, বেগুনে ও লাল দাড়িম করিবে, এবং চারিদিকে তাহার মধ্যে মধ্যে স্বর্ণের কিঙ্কিণী থাকিবে। ঐ পরিচ্ছদের আঁচলায় চারিদিকে এক স্বর্ণকিঙ্কিণী ও এক দাড়িম এবং এক স্বর্ণকিঙ্কিণী ও এক দাড়িম থাকিবে। আর হারোণ পরিচর্য্যা করিবার নিমিত্তে তাহা পরিধান করিবে; তাহাতে সে যখন সদাপ্রভুর সম্মুখে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিবে, ও সেখান হইতে যখন বাহির হইবে, তখন কিঙ্কিণীর শব্দ শুনা যাইবে; তাহাতে সে মরিবে না। আর তুমি নির্ম্মল স্বর্ণের এক পাত প্রস্তুত করিয়া মুদ্রার ন্যায় তাহার উপরে ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র’ এই কথা খুদিবে। তুমি তাহা নীল সূত্রে বদ্ধ করিয়া রাখিবে; তাহা উষ্ণীষের উপরে থাকিবে, উষ্ণীষের সম্মুখভাগেই থাকিবে। আর তাহা হারোণের কপালের উপরে থাকিবে, তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানেরা আপনাদের সমস্ত পবিত্র দানে যে সকল দ্রব্য পবিত্র করিবে, হারোণ সেই সকল পবিত্র দ্রব্যের অপরাধ বহন করিবে, এবং তাহারা যেন সদাপ্রভুর কাছে গ্রাহ্য হয়, এই জন্য উহা নিয়ত তাহার কপালের উপরে থাকিবে। আর তুমি চিত্রিত সাদা মসীনা সূত্র দ্বারা অঙ্গরক্ষিণী বুনিবে, এবং সাদা মসীনা সূত্র দ্বারা উষ্ণীষ প্রস্তুত করিবে; এবং কটিবন্ধন সূচী দ্বারা শিল্পিত করিবে। আর হারোণের পুত্রগণের জন্য অঙ্গরক্ষক বস্ত্র ও কটিবন্ধন প্রস্তুত করিবে, এবং গৌরব ও শোভার জন্য শিরোভূষণ করিয়া দিবে। আর তোমার ভ্রাতা হারোণের ও তাহার পুত্রগণের গাত্রে সে সকল পরাইবে, এবং তাহাদের অভিষেক ও হস্তপূরণ করিয়া তাহাদিগকে পবিত্র করিবে, তাহাতে তাহারা আমার যাজনকর্ম্ম করিবে। তুমি তাহাদের উলঙ্গতার আচ্ছাদনার্থে কটি অবধি জঙ্ঘা পর্য্যন্ত শুক্ল জাঙ্ঘিয়া প্রস্তুত করিবে। আর যখন হারোণ ও তাহার পুত্রগণ সমাগমতাম্বুতে প্রবেশ করিবে, কিম্বা পবিত্র স্থানে পরিচর্য্যা করণার্থে বেদির নিকটবর্ত্তী হইবে, তৎকালে যেন অপরাধ বহিয়া না মরে, এই জন্য তাহারা এই বস্ত্র পরিধান করিবে; ইহা হারোণ ও তাহার ভাবী বংশের পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি। আর আমার যাজন কর্ম্ম করণার্থে তাহাদিগকে পবিত্র করিবার জন্য তুমি তাহাদের প্রতি এই সকল কর্ম্ম করিবে; নির্দ্দোষ একটী পুংগোবৎস ও দুইটী মেষ লইবে; আর তাড়ীশূন্য রুটী, তৈলমিশ্রিত তাড়ীশূন্য পিষ্টক ও তৈলাক্ত তাড়ীশূন্য সরুচাকলী গোমের ময়দা দ্বারা প্রস্তুত করিবে; এবং সেইগুলি এক ডালিতে রাখিবে, আর সেই ডালিতে করিয়া আনিবে, এবং ঐ গোবৎস ও দুই মেষ আনিবে। আর হারোণকে ও তাহার পুত্রগণকে সমাগম-তাম্বুর দ্বার-সমীপে আনিয়া জলে স্নান করাইবে। আর সেই সকল বস্ত্র লইয়া হারোণকে অঙ্গরক্ষিণী, এফোদের পরিচ্ছদ, এফোদ ও বুকপাটা পরাইবে, এবং এফোদের বুনানি করা পটুকা তাহাতে আবদ্ধ করিবে। আর তাহার মস্তকে উষ্ণীষ দিবে, ও উষ্ণীষের উপরে পবিত্র মুকুট দিবে। পরে অভিষেকার্থ তৈল লইয়া তাহার মস্তকের উপরে ঢালিয়া তাহাকে অভিষিক্ত করিবে। আর তুমি তাহার পুত্রগণকে আনিয়া অঙ্গরক্ষক বস্ত্র পরাইবে। আর হারোণকে ও তাহার পুত্রগণকে কটিবন্ধন পরাইবে, ও তাহাদের মস্তকে শিরোভূষণ বাঁধিয়া দিবে; তাহাতে যাজকত্বপদে তাহাদের চিরস্থায়ী অধিকার থাকিবে। আর তুমি হারোণের ও তাহার পুত্রগণের হস্তপূরণ করিবে। পরে তুমি সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে সেই গোবৎসকে আনাইবে, এবং হারোণ ও তাহার পুত্রগণ গোবৎসটীর মস্তকে হস্তার্পণ করিবে। তখন তুমি সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সদাপ্রভুর সম্মুখে ঐ গোবৎস হনন করিবে। পরে গোবৎসের কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া অঙ্গুলি দ্বারা বেদির শৃঙ্গের উপরে দিবে, এবং বেদির মূলে সমস্ত রক্ত ঢালিয়া দিবে। আর তাহার অন্ত্রের উপরিস্থিত সমস্ত মেদ ও যকৃতের উপরিস্থ অন্ত্রাপ্লাবক ও দুই মেটিয়া ও তদুপরিস্থ মেদ লইয়া বেদিতে দগ্ধ করিবে। কিন্তু গোবৎসটীর মাংস ও তাহার চর্ম্ম ও গোময় শিবিরের বাহিরে অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে; তাহা পাপার্থক বলি। পরে তুমি প্রথম মেষটী আনিবে, এবং হারোণ ও তাহার পুত্রগণ সেই মেষের মস্তকে হস্তার্পণ করিবে। পরে তুমি সেই মেষ হনন করিয়া তাহার রক্ত লইয়া বেদির উপরে চারিদিকে ছিটাইয়া দিবে। পরে তুমি মেষটী খণ্ড খণ্ড করিবে, তাহার অন্ত্র ও পদ ধৌত করিবে, আর ঐ খণ্ড সকলের ও মস্তকের উপরে রাখিবে। পরে সমস্ত মেষটী বেদিতে দগ্ধ করিবে; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলি, সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার। পরে তুমি দ্বিতীয় মেষটী লইবে, এবং হারোণ ও তাহার পুত্রগণ ঐ মেষের মস্তকে হস্তার্পণ করিবে। পরে তুমি সেই মেষ হনন করিয়া তাহার কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া হারোণের দক্ষিণ কর্ণের প্রান্তে ও তাহার পুত্রগণের দক্ষিণ কর্ণের প্রান্তে ও তাহাদের দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠের উপরে ও দক্ষিণ পদের অঙ্গুষ্ঠের উপরে দিবে, এবং বেদির উপরে চারিদিকে রক্ত ছিটাইয়া দিবে। পরে বেদির উপরিস্থিত রক্তের ও অভিষেকার্থ তৈলের কিঞ্চিৎ লইয়া হারোণের উপরে ও তাহার বস্ত্রের উপরে এবং তাহার সহিত তাহার পুত্রদের উপরে ও তাহাদের বস্ত্রের উপরে ছিটাইয়া দিবে; তাহাতে সে ও তাহার বস্ত্র এবং তাহার সহিত তাহার পুত্রগণ ও তাহাদের বস্ত্র পবিত্র হইবে। পরে তুমি সেই মেষের মেদ, লাঙ্গুল ও অন্ত্রের উপরিস্থ মেদ ও যকৃতের উপরিস্থ অন্ত্রাপ্লাবক ও দুই মেটিয়া ও তদুপরিস্থ মেদ ও দক্ষিণ জঙ্ঘা লইবে, কেননা সে হস্তপূরণার্থক মেষ। পরে তুমি সদাপ্রভুর সম্মুখস্থিত তাড়ীশূন্য রুটীর ডালি হইতে এক রুটী ও তৈলমিশ্রিত এক পিষ্টক ও এক সরুচাকলী লইবে; এবং হারোণের হস্তে ও তাহার পুত্রগণের হস্তে তৎসমুদয় দিয়া দোলনীয় উপহারার্থে সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা দোলাইবে। পরে তুমি তাহাদের হস্ত হইতে তাহা লইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে সৌরভার্থে বেদিতে হোমার্থক বলির উপরে দগ্ধ করিবে; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার। পরে তুমি হারোণের হস্তপূরণার্থক মেষের বক্ষঃস্থল লইয়া দোলনীয় উপহারার্থে সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলাইবে; তাহা তোমার অংশ হইবে। পরে হারোণের ও তাহার পুত্রগণের হস্তপূরণার্থক মেষের যে দোলনীয় উপহার বক্ষঃস্থল দোলায়িত ও যে, উত্তোলনীয় উপহার জঙ্ঘা উত্তোলিত হইল, তাহা তুমি পবিত্র করিবে। তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে তাহা হারোণের ও তাহার সন্তানগণের চিরস্থায়ী অধিকার হইবে, কেননা তাহাই উত্তোলনীয় উপহার; ইস্রায়েল-সন্তানগণের এই উত্তোলনীয় উপহার তাহাদের মঙ্গলার্থক বলি হইতে দেয়; ইহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাহাদের উত্তোলনীয় উপহার। আর হারোণের পরে তাহার পবিত্র বস্ত্র সকল তাহার পুত্রগণের হইবে; অভিষেক ও হস্তপূরণ সময়ে তাহারা তাহা পরিধান করিবে। তাহার পুত্রদের মধ্যে যে তাহার পদে যাজক হইয়া পবিত্র স্থানে পরিচর্য্যা করিতে সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিবে, সে সেই বস্ত্র সাত দিন পরিবে। পরে তুমি সেই হস্তপূরণার্থক মেষের মাংস লইয়া কোন পবিত্র স্থানে পাক করিবে, এবং হারোণ ও তাহার পুত্রগণ সমাগম-তাম্বুর দ্বারে সেই মেষমাংস ও ডালিতে স্থিত সেই রুটী ভোজন করিবে। আর হস্তপূরণ দ্বারা তাহাদিগকে পবিত্র করণার্থে যাহা দিয়া প্রায়শ্চিত্ত করা হইল, তাহা তাহারা ভোজন করিবে; কিন্তু অপর কোন লোক তাহা ভোজন করিবে না, কারণ সে সকল পবিত্র বস্তু। আর ঐ হস্তপূরণার্থক মাংস ও রুটী হইতে যদি প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবে সেই অবশিষ্ট অংশ অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে; কেহ তাহা ভোজন করিবে না, কারণ তাহা পবিত্র বস্তু। আমি তোমাকে এই যে সকল আজ্ঞা করিলাম, তদনুসারে হারোণের প্রতি ও তাহার পুত্রগণের প্রতি করিবে; সাত দিন তাহাদের হস্তপূরণ করিবে। আর তুমি প্রায়শ্চিত্তের জন্য প্রতিদিন পাপার্থক বলিরূপে এক একটী পুংগোবৎস উৎসর্গ করিবে, এবং প্রায়শ্চিত্ত করিয়া বেদিকে মুক্ত-পাপ করিবে, আর তাহা পবিত্র করণার্থে অভিষেক করিবে। তুমি বেদির নিমিত্তে সাত দিন প্রায়শ্চিত্ত করিয়া তাহা পবিত্র করিবে; তাহাতে বেদি অতি পবিত্র হইবে; যে কেহ বেদি স্পর্শ করে, তাহার পবিত্র হওয়া চাই। সেই বেদির উপরে তুমি এই বলি উৎসর্গ করিবে; নিয়ত প্রতিদিন একবর্ষীয় দুইটী মেষশাবক; একটী মেষশাবক প্রাতঃকালে উৎসর্গ করিবে, ও অন্যটী সন্ধ্যাকালে উৎসর্গ করিবে। আর প্রথম মেষশাবকের সহিত উখলিতে প্রস্তুত হিন পাত্রের চতুর্থাংশ তৈলে মিশ্রিত [ঐফা] পাত্রের দশমাংশ ময়দা, এবং পেয় নৈবেদ্যের কারণ হিনের চতুর্থাংশ দ্রাক্ষারস দিবে। পরে দ্বিতীয় মেষশাবকটী সন্ধ্যাকালে উৎসর্গ করিবে, এবং প্রাতঃকালের মতানুসারে ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্যের সহিত তাহাও সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া উৎসর্গ করিবে। ইহা তোমাদের পুরুষানুক্রমে নিয়ত [কর্ত্তব্য] হোম; সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সদাপ্রভুর সম্মুখে, যে স্থানে আমি তোমার সহিত আলাপ করিতে তোমাদের কাছে দেখা দিব, সেই স্থানে [ইহা কর্ত্তব্য]। সেখানে আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের কাছে দেখা দিব, এবং আমার প্রতাপে তাম্বু পবিত্রীকৃত হইবে। আর আমি সদামগ-তাম্বু ও বেদি পবিত্র করিব, এবং আমার যাজনকর্ম্ম করণার্থে হারোণকে ও তাহার পুত্রগণকে পবিত্র করিব। আর আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে বাস করিব, ও তাহাদের ঈশ্বর হইব। তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমি সদাপ্রভু, তাহাদের ঈশ্বর, আমি তাহাদের মধ্যে বাস করণার্থে মিসর দেশ হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছি; আমিই সদাপ্রভু, তাহাদের ঈশ্বর। আর তুমি ধূপদাহ করিবার জন্য এক বেদি নির্ম্মাণ করিবে; শিটীম কাষ্ঠ দিয়া তাহা নির্ম্মাণ করিবে। তাহা এক হস্ত দীর্ঘ ও এক হস্ত প্রস্থ চতুষ্কোণ হইবে, এবং দুই হস্ত উচ্চ হইবে, তাহার শৃঙ্গ সকল তাহার সহিত অখণ্ড হইবে। আর তুমি সেই বেদি, তাহার পৃষ্ঠ ও চারি পার্শ্ব ও শৃঙ্গ নির্ম্মল স্বর্ণে মুড়িবে, এবং তাহার চারিদিকে স্বর্ণের নিকাল গড়িয়া দিবে। আর তাহার নিকালের নীচে দুই কোণের নিকটে স্বর্ণের দুই দুই কড়া গড়িয়া দিবে, দুই পার্শ্বে গড়িয়া দিবে; তাহা বেদি বহনার্থ বহন-দণ্ডের ঘর হইবে। আর ঐ বহন-দণ্ড শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা প্রস্তুত করিয়া স্বর্ণ দিয়া মুড়িবে। আর সাক্ষ্য-সিন্দুকের নিকটস্থ তিরস্করিণীর অগ্রদিকে, সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরিস্থ পাপাবরণের সম্মুখে তাহা রাখিবে, সেই স্থানে আমি তোমার কাছে দেখা দিব। আর হারোণ তাহার উপরে সুগন্ধি ধূপ জ্বালাইবে; প্রতি প্রভাতে প্রদীপ পরিষ্কার করিবার সময়ে সে ঐ ধূপ জ্বালাইবে। আর সন্ধ্যাকালে প্রদীপ জ্বালাইবার সময়ে হারোণ ধূপ জ্বালাইবে, তাহাতে তোমাদের পুরুষানুক্রমে সদাপ্রভুর সম্মুখে নিয়ত ধূপদাহ হইবে। তোমরা তাহার উপরে ইতর ধূপ, কিম্বা হোমবলি, কিম্বা ভক্ষ্য নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও না ও তাহার উপরে পেয় নৈবেদ্য ঢালিও না। আর বৎসরের মধ্যে এক বার হারোণ তাহার শৃঙ্গের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তোমাদের পুরুষানুক্রমে বৎসরের মধ্যে এক বার প্রায়শ্চিত্তার্থক পাপবলির রক্ত দিয়া তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে; এই বেদি সদাপ্রভুর উদ্দেশে অতি পবিত্র। পরে সদাপ্রভু মোশিকে এই কথা কহিলেন, তুমি যখন ইস্রায়েল-সন্তানদের সংখ্যা গ্রহণ কর, তখন যাহাদিগকে গণনা করা যায়, তাহারা প্রত্যেকে গণনাকালে সদাপ্রভুর কাছে আপন আপন প্রাণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, যেন তাহাদের মধ্যে গণনাকালে আঘাত না হয়। তাহাদের দেয় এই; যে কেহ গণিত লোকদের মধ্যে আসিবে, সে পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে অর্দ্ধশেকল দিবে; বিংশতি গেরাতে এক শেকল হয়; সেই অর্দ্ধশেকল সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার হইবে। বিংশতি বৎসর বয়স্ক কিম্বা তাহার অধিক বয়স্ক যে কেহ গণিত লোকদের মধ্যে আসিবে, সে সদাপ্রভুকে ঐ উপহার দিবে। তোমাদের প্রাণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে সদাপ্রভুকে সেই উপহার দিবার সময়ে ধনবান্ অর্দ্ধ শেকলের অধিক দিবে না, এবং দরিদ্র তাহার কম দিবে না। আর তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে সেই প্রায়শ্চিত্তের রৌপ্য লইয়া সমাগম-তাম্বুর কার্য্যের জন্য দিবে; তোমাদের প্রাণের প্রায়শ্চিত্তের নিমিত্তে তাহা ইস্রায়েল-সন্তানদের স্মরণার্থে সদাপ্রভুর সম্মুখে থাকিবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি প্রক্ষালন কার্য্যের জন্য পিত্তলময় এক প্রক্ষালন-পাত্র ও তাহার পিত্তলময় খুরা প্রস্তুত করিবে; এবং সমাগম-তাম্বুর ও বেদির মধ্যস্থানে রাখিবে, ও তাহার মধ্যে জল দিবে। হারোণ ও তাহার পুত্রগণ তাহাতে আপন আপন হস্ত ও পদ ধৌত করিবে। তাহারা যেন না মরে, এই জন্য সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ কালে জলে আপনাদিগকে ধৌত করিবে; কিম্বা পরিচর্য্যা করণার্থে, সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার দগ্ধ করণার্থে বেদির নিকটে আগমন কালে আপন আপন হস্ত ও পদ ধৌত করিবে, তাহারা যেন না মরে, এই জন্য করিবে; ইহা তাহাদের পক্ষে চিরস্থায়ী বিধি, পুরুষানুক্রমে হারোণ ও তাহার বংশের নিমিত্ত। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি আপনার নিকটে উত্তম উত্তম সুগন্ধি দ্রব্য, অর্থাৎ পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে পাঁচ শত শেকল নির্ম্মল গন্ধরস, তাহার অর্দ্ধ অর্থাৎ আড়াই শত শেকল সুগন্ধি দারুচিনি, আড়াই শত শেকল সুগন্ধি বচ, পাঁচ শত শেকল সূক্ষ্ম দারুচিনি ও এক হিন জিততৈল লইবে। এই সকলের দ্বারা তুমি অভিষেকার্থ পবিত্র তৈল গন্ধবণিকের প্রক্রিয়া মতে কৃত তৈল, প্রস্তুত করিবে, তাহা অভিষেকার্থ পবিত্র তৈল হইবে। আর তদ্দ্বারা তুমি সমাগম-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক, মেজ ও তাহার সকল পাত্র, দীপবৃক্ষ ও তাহার সকল পাত্র, ধূপবেদি, হোমবেদি ও তাহার সকল পাত্র, এবং প্রক্ষালন-পাত্র ও তাহার খুরা অভিষেক করিবে। আর এই সকল বস্তু পবিত্র করিবে, তাহাতে তাহা অতি পবিত্র হইবে; যে কেহ তাহা স্পর্শ করে, তাহার পবিত্র হওয়া চাই। আর তুমি হারোণকে ও তাহার পুত্রগণকে আমার যাজনকর্ম্ম করণার্থে অভিষেক করিয়া পবিত্র করিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বলিবে, তোমাদের পুরুষানুক্রমে আমার নিমিত্তে তাহা পবিত্র অভিষেকার্থ তৈল হইবে। মনুষ্যের গাত্রে তাহা ঢালা যাইবে না; এবং তোমরা তাহার দ্রব্যের পরিমাণানুসারে তৎসদৃশ আর কোন তৈল প্রস্তুত করিবে না; তাহা পবিত্র, তোমাদের পক্ষে পবিত্র হইবে। যে কেহ তাহার মত তৈল প্রস্তুত করে, ও যে কেহ পরের গাত্রে তাহার কিঞ্চিৎ দেয়, সে আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি আপনার নিকটে সুগন্ধি দ্রব্য লইবে,—গুগ্‌গুলু, নখী, কুন্দুরু; এই সকল সুগন্ধি দ্রব্যের ও নির্ম্মল লবানের প্রত্যেকটী সমভাগ করিয়া লইবে। আর উহা দ্বারা গন্ধবণিকের প্রক্রিয়া মতে কৃত ও লবণমিশ্রিত এক নির্ম্মল পবিত্র সুগন্ধি ধূপ প্রস্তুত করিবে। তাহার কিঞ্চিৎ চূর্ণ করিয়া, যে সমাগম-তাম্বুতে আমি তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিব, তাহার মধ্যে সাক্ষ্য-সিন্দুকের সম্মুখে তাহা রাখিবে; তাহা তোমাদের জ্ঞানে অতি পবিত্র হইবে। এবং তুমি যে সুগন্ধি ধূপ প্রস্তুত করিবে, তাহার দ্রব্যের পরিমাণানুসারে তোমরা আপনাদের জন্য তাহা করিও না, তাহা তোমার জ্ঞানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হইবে। যে কেহ আঘ্রাণ জন্য তাহার সদৃশ ধূপ প্রস্তুত করিবে, সে আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, আমি যিহূদা-বংশীয় হূরের পৌত্র ঊরির পুত্র বৎসলেলের নাম ধরিয়া ডাকিলাম। আর আমি তাহাকে ঈশ্বরের আত্মায়—জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, বিদ্যায় ও সর্ব্বপ্রকার শিল্প কৌশলে—পরিপূর্ণ করিলাম; যাহাতে সে কৌশলের কার্য্য কল্পনা করিতে পারে, স্বর্ণ, রৌপ্য ও পিত্তলের কার্য্য করিতে পারে, খচনার্থক মণি কাটিতে, কাষ্ঠ খুদিতে ও সর্ব্বপ্রকার শিল্পকার্য্য করিতে পারে। আর দেখ, আমি দান-বংশজাত অহীষামকের পুত্র অহলীয়াবকে তাহার সহকারী করিয়া দিলাম, এবং সকল বিজ্ঞমনা লোকের হৃদয়ে বিজ্ঞতা দিলাম; অতএব আমি তোমাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত তাহারা নির্ম্মাণ করিবে; সমাগম-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক, তাহার উপরিস্থ পাপাবরণ, এবং তাম্বুর সমস্ত পাত্র; আর মেজ ও তাহার পাত্র সকল, নির্ম্মল দীপবৃক্ষ ও তাহার পাত্র সকল, এবং ধূপবেদি; আর হোমবেদি ও তাহার পাত্র সকল, এবং প্রক্ষালন-পাত্র ও তাহার খুরা; এবং সূক্ষ্মশিল্পিত বস্ত্র, যাজনকর্ম্ম করণার্থে হারোণ যাজকের পবিত্র বস্ত্র, ও তাহার পুত্রদের বস্ত্র; এবং অভিষেকার্থ তৈল ও পবিত্র স্থানের জন্য সুগন্ধি ধূপ; আমি তোমাকে যেমন আজ্ঞা করিয়াছি, তদনুসারে তাহারা সমস্তই করিবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আরও এই কথা বল, তোমরা অবশ্য আমার বিশ্রামদিন পালন করিবে; কেননা তোমাদের পুরুষানুক্রমে আমার ও তোমাদের মধ্যে ইহা এক চিহ্ন রহিল, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমিই তোমাদের পবিত্রকারী সদাপ্রভু। অতএব তোমরা বিশ্রামদিন পালন করিবে, কেননা তোমাদের নিমিত্তে সেই দিন পবিত্র; যে কেহ সেই দিন অপবিত্র করিবে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; কারণ যে কেহ ঐ দিনে কার্য্য করিবে, সে আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। ছয় দিন কার্য্য করা হইবে, কিন্তু সপ্তম দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামার্থক পবিত্র বিশ্রামদিন, সেই বিশ্রামদিনে যে কেহ কার্য্য করিবে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। ইস্রায়েল-সন্তানগণ চিরস্থায়ী নিয়ম বলিয়া পুরুষানুক্রমে বিশ্রামদিন মান্য করিবার জন্য বিশ্রামদিন পালন করিবে। আমার ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে ইহা চিরস্থায়ী চিহ্ন; কেননা সদাপ্রভু ছয় দিনে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিয়া আপ্যায়িত হইয়াছিলেন। পরে তিনি সীনয় পর্ব্বতে মোশির সহিত কথা সাঙ্গ করিয়া সাক্ষ্যের দুই ফলক, ঈশ্বরের অঙ্গুলি দ্বারা লিখিত দুই প্রস্তরফলক, তাঁহাকে দিলেন। পর্ব্বত হইতে নামিতে মোশির বিলম্ব হইতেছে দেখিয়া লোকেরা হারোণের নিকটে একত্র হইয়া তাঁহাকে কহিল, উঠুন, আমাদের অগ্রগামী হইবার জন্য আমাদের নিমিত্ত দেবতা নির্ম্মাণ করুন, কেননা যে মোশি মিসর দেশ হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই ব্যক্তির কি হইল, তাহা আমরা জানি না। তখন হারোণ তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আপন আপন স্ত্রী ও পুত্রকন্যাগণের কর্ণের সুবর্ণ কুণ্ডল খুলিয়া আমার কাছে আন। তাহাতে সমস্ত লোক তাহাদের কর্ণ হইতে সুবর্ণ কুণ্ডল সকল খুলিয়া হারোণের নিকটে আনিল। তখন তিনি তাহাদের হস্ত হইতে তাহা গ্রহণ করিয়া শিল্পাস্ত্রে গঠন করিলেন, এবং একটী ঢালা গোবৎস নির্ম্মাণ করিলেন; তখন লোকেরা বলিতে লাগিল, হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। আর হারোণ তাহা দেখিয়া তাহার সম্মুখে এক বেদি নির্ম্মাণ করিলেন, এবং হারোণ ঘোষণা করিয়া দিলেন, বলিলেন, কল্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসব হইবে। আর লোকেরা পরদিন প্রত্যূষে উঠিয়া হোমবলি উৎসর্গ করিল, এবং মঙ্গলার্থক নৈবেদ্য আনিল; আর লোকেরা ভোজন পান করিতে বসিল, পরে ক্রীড়া করিতে উঠিল। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি নামিয়া যাও, কেননা তোমার যে লোকদিগকে তুমি মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছ, তাহারা ভ্রষ্ট হইয়াছে। আমি তাহাদিগকে যে পথে চলিবার আজ্ঞা দিয়াছি, তাহারা শীঘ্রই সেই পথ হইতে ফিরিয়াছে; তাহারা আপনাদের নিমিত্তে এক ছাঁচে ঢালা গোবৎস নির্ম্মাণ করিয়া তাহার কাছে প্রণিপাত করিয়াছে, এবং তাহার উদ্দেশে বলিদান করিয়াছে ও বলিয়াছে, হে ইস্রায়েল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। সদাপ্রভু মোশিকে আরও কহিলেন, আমি সেই লোকদিগকে দেখিলাম; দেখ, তাহারা শক্তগ্রীব জাতি। এখন তুমি ক্ষান্ত হও, তাহাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হউক, আমি তাহাদিগকে সংহার করি, আর তোমা হইতে এক বড় জাতি উৎপন্ন করি। তখন মোশি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে বিনয় করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, তোমার যে প্রজাদিগকে তুমি মহাপরাক্রম ও বলবান্ হস্ত দ্বারা মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়াছ, তাহাদের বিরুদ্ধে তোমার ক্রোধ কেন প্রজ্বলিত হইবে? মিস্রীয়েরা কেন বলিবে, অনিষ্টের নিমিত্তে, পর্ব্বতময় অঞ্চলে তাহাদিগকে নষ্ট করিতে ও ভূতল হইতে লোপ করিতে, তিনি তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন? তুমি নিজ প্রচণ্ড ক্রোধ সংবরণ কর, ও আপন প্রজাদের অনিষ্টকরণ বিষয়ে ক্ষান্ত হও। তুমি নিজ দাস অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে স্মরণ কর, যাহাদের কাছে তুমি নিজ নামের দিব্য করিয়া বলিয়াছিলে, আমি আকাশের তারাগণের ন্যায় তোমাদের বংশবৃদ্ধি করিব, এবং এই যে সমস্ত দেশের কথা কহিলাম, ইহা তোমাদের বংশকে দিব, তাহারা চিরকালের জন্য ইহা অধিকার করিবে। তখন সদাপ্রভু আপন প্রজাদের যে অনিষ্ট করিবার কথা বলিয়াছিলেন, তাহা হইতে ক্ষান্ত হইলেন। পরে মোশি মুখ ফিরাইলেন, সাক্ষ্যের সেই দুই প্রস্তরফলক হস্তে লইয়া পর্ব্বত হইতে নামিলেন; সেই প্রস্তরফলকের এপৃষ্ঠে ওপৃষ্ঠে, দুই পৃষ্ঠেই লেখা ছিল। সেই প্রস্তরফলক ঈশ্বরের নির্ম্মিত, এবং সেই লেখা ঈশ্বরের লেখা, ফলকে খোদিত। পরে যিহোশূয় কোলাহলকারী লোকদের রব শুনিয়া মোশিকে কহিলেন, শিবিরে যুদ্ধের শব্দ হইতেছে। তিনি কহিলেন, উহা ত জয়ধ্বনির শব্দ নয়, পরাজয়ধ্বনিরও শব্দ নয়; আমি গানের শব্দ শুনিতে পাইতেছি। পরে তিনি শিবিরের নিকটবর্ত্তী হইলে ঐ গোবৎস এবং নৃত্য দেখিলেন; তাহাতে মোশি ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া পর্ব্বতের তলে আপন হস্ত হইতে সেই দুইখানা প্রস্তরফলক নিক্ষেপ করিয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। আর তাহাদের নির্ম্মিত গোবৎস লইয়া আগুনে পোড়াইয়া দিলেন, এবং তাহা ধূলিবৎ পিষিয়া জলের উপরে ছড়াইয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণকে পান করাইলেন। পরে মোশি হারোণকে কহিলেন, ঐ লোকেরা তোমার কি করিয়াছিল যে, তুমি উহাদের উপরে এমন মহাপাপ বর্ত্তাইলে? হারোণ কহিলেন, আমার প্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত না হউক। আপনি লোকদিগকে জানেন যে, তাহারা দুষ্টতায় আসক্ত। তাহারা আমাকে কহিল, আমাদের অগ্রগামী হইবার জন্য আমাদের নিমিত্তে দেবতা নির্ম্মাণ করুন, কেননা যে মোশি মিসর দেশ হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই ব্যক্তির কি হইল, তাহা আমরা জানি না। তখন আমি কহিলাম, তোমাদের মধ্যে যাহার যে স্বর্ণ থাকে, সে তাহা খুলিয়া দিউক; তাহারা আমাকে দিল; পরে আমি তাহা অগ্নিতে নিক্ষেপ করিলে ঐ বৎসটী নির্গত হইল। পরে মোশি দেখিলেন, লোকেরা স্বেচ্ছাচারী হইয়াছে, কেননা হারোণ শত্রুদের মধ্যে বিদ্রূপের জন্য তাহাদিগকে স্বেচ্ছাচারী হইতে দিয়াছিলেন। তখন মোশি শিবিরের দ্বারে দাঁড়াইয়া কহিলেন, সদাপ্রভুর পক্ষ কে? সে আমার নিকটে আইসুক। তাহাতে লেবির সন্তানেরা সকলে তাঁহার নিকটে একত্র হইল। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন ঊরুতে খড়গ বাঁধ, ও শিবিরের মধ্য দিয়া এক দ্বার অবধি অন্য দ্বার পর্য্যন্ত যাতায়াত কর, এবং প্রতিজন আপন আপন ভ্রাতা, মিত্র ও প্রতিবাসীকে বধ কর। তাহাতে লেবির সন্তানেরা মোশির বাক্যানুসারে তদ্রূপ করিল, আর সেই দিন লোকদের মধ্যে ন্যূনাধিক তিন সহস্র লোক মারা পড়িল। কেননা মোশি বলিয়াছিলেন, অদ্য তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন পুত্র ও ভ্রাতার বিপক্ষ হইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপনাদের হস্তপূরণ কর, তাহাতে তিনি এই দিনে তোমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবেন। পরদিন মোশি লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা মহাপাপ করিলে, এখন আমি সদাপ্রভুর নিকটে উঠিয়া যাইতেছি; যদি সম্ভব হয়, তোমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিব। পরে মোশি সদাপ্রভুর নিকটে ফিরিয়া গিয়া কহিলেন, হায় হায়, এই লোকেরা মহাপাপ করিয়াছে, আপনাদের জন্য স্বর্ণ-দেবতা নির্ম্মাণ করিয়াছে। আহা! এখন যদি ইহাদের পাপ ক্ষমা কর—; আর যদি না কর, তবে আমি বিনয় করিতেছি, তোমার লিখিত পুস্তক হইতে আমার নাম কাটিয়া ফেল। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, যে ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে, তাহারই নাম আমি আপন পুস্তক হইতে কাটিয়া ফেলিব। এখন যাও, আমি যে দেশের বিষয়ে তোমাকে বলিয়াছি; সেই দেশে লোকদিগকে লইয়া যাও; দেখ, আমার দূত তোমার অগ্রে অগ্রে যাইবেন, কিন্তু আমি প্রতিফলের দিনে তাহাদের পাপের প্রতিফল দিব। সদাপ্রভু লোকদিগকে আঘাত করিলেন, কেননা লোকেরা হারোণের কৃত সেই গোবৎস নির্ম্মাণ করাইয়াছিল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, আমি অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের কাছে দিব্য করিয়া যে দেশ তাহাদের বংশকে দিতে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম, সেই দেশে যাও, তুমি মিসর দেশ হইতে যে লোকদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছ, তাহাদের সহিত এখান হইতে প্রস্থান কর। আমি তোমার অগ্রে এক দূত পাঠাইয়া দিব, এবং কনানীয়, ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়কে দূর করিয়া দিব। দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে যাও; কিন্তু আমি তোমার মধ্যবর্ত্তী হইয়া যাইব না, কেননা তুমি শক্তগ্রীব জাতি; পাছে পথের মধ্যে তোমাকে সংহার করি। এই অশুভ বাক্য শুনিয়া লোকেরা শোক করিল, কেহ গাত্রে আভরণ পরিধান করিল না। সদাপ্রভু মোশিকে বলিয়াছিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই কথা বল, তোমরা শক্তগ্রীব জাতি, এক নিমিষের জন্য তোমাদের মধ্যে গেলে আমি তোমাদিগকে সংহার করিতে পারি, তোমরা এখন আপন আপন গাত্র হইতে আভরণ দূর কর, তাহাতে জানিতে পারিব, তোমাদের বিষয়ে আমার কি করা কর্ত্তব্য। তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ হোরেব পর্ব্বত অবধি যাত্রাপথে আপন আপন সমস্ত আভরণ দূর করিল। আর মোশি তাম্বু লইয়া শিবিরের বাহিরে ও শিবির হইতে দূরে স্থাপন করিলেন, এবং সেই তাম্বুর নাম সমাগম-তাম্বু রাখিলেন; আর সদাপ্রভুর অন্বেষণকারী প্রত্যেক জন শিবিরের বাহিরে স্থিত সেই সমাগম-তাম্বুর নিকটে গমন করিত। আর মোশি যখন বাহির হইয়া সেই তাম্বুর নিকটে যাইতেন, তখন সমস্ত লোক উঠিয়া প্রত্যেকে আপন আপন তাম্বুর দ্বারে দাঁড়াইত, এবং যাবৎ মোশি ঐ তাম্বুতে প্রবেশ না করিতেন, তাবৎ তাঁহার পশ্চাৎ দৃষ্টি করিতে থাকিত। আর মোশি তাম্বুতে প্রবেশ করিলে পর মেঘস্তম্ভ নামিয়া তাম্বুর দ্বারে অবস্থিতি করিত, এবং [সদাপ্রভু] মোশির সহিত আলাপ করিতেন। সমস্ত লোক তাম্বুর দ্বারে অবস্থিত মেঘস্তম্ভ দেখিত; ও সমস্ত লোক উঠিয়া প্রত্যেকে আপন আপন তাম্বুর দ্বারে থাকিয়া প্রণিপাত করিত। আর মনুষ্য যেমন মিত্রের সহিত আলাপ করে, তদ্রূপ সদাপ্রভু মোশির সহিত সম্মুখাসম্মুখি হইয়া আলাপ করিতেন। পরে মোশি শিবিরে ফিরিয়া আসিতেন, কিন্তু নূনের পুত্র যিহোশূয় নামে তাঁহার যুব পরিচারক তাম্বুর মধ্য হইতে বাহিরে যাইতেন না। আর মোশি সদাপ্রভুকে কহিলেন, দেখ, তুমি আমাকে বলিতেছ, এই লোকদিগকে লইয়া যাও, কিন্তু আমার সঙ্গী করিয়া যাঁহাকে প্রেরণ করিবে, তাঁহার পরিচয় আমাকে দেও নাই; তথাপি বলিতেছ, আমি নাম দ্বারা তোমাকে জানি, এবং তুমি আমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইয়াছ। ভাল, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইয়া থাকি, তবে বিনয় করি, আমি যেন তোমাকে জানিয়া তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাই, এই জন্য আমাকে তোমার পথ সকল জ্ঞাত কর; এবং এই জাতি যে তোমার প্রজা, ইহা বিবেচনা কর। তখন তিনি কহিলেন, আমার শ্রীমুখ তোমার সহিত গমন করিবেন, এবং আমি তোমাকে বিশ্রাম দিব। তাহাতে তিনি তাঁহাকে কহিলেন, তোমার শ্রীমুখ যদি সঙ্গে না যান, তবে এখান হইতে আমাদিগকে লইয়া যাইও না। কেননা আমি ও তোমার এই প্রজাগণ যে তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইয়াছি, ইহা কিসে জানা যাইবে? আমাদের সহিত তোমার গমন দ্বারা কি নয়? তদ্দ্বারাই আমি ও তোমার প্রজাগণ ভূমণ্ডলস্থ যাবতীয় জাতি হইতে বিশিষ্ট। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, এই যে কথা তুমি বলিলে তাহাও আমি করিব, কেননা তুমি আমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইয়াছ, এবং আমি নাম দ্বারা তোমাকে জানি। তখন তিনি কহিলেন, বিনয় করি, তুমি আমাকে তোমার প্রতাপ দেখিতে দেও। ঈশ্বর কহিলেন, আমি তোমার সম্মুখ দিয়া আপনার সমস্ত উত্তমতা গমন করাইব, ও তোমার সম্মুখে সদাপ্রভুর নাম ঘোষণা করিব; আর আমি যাহাকে দয়া করি, তাহাকে দয়া করিব; ও যাহার প্রতি করুণা করি, তাহার প্রতি করুণা করিব। আরও কহিলেন, তুমি আমার মুখ দেখিতে পাইবে না, কেননা মনুষ্য আমাকে দেখিলে বাঁচিতে পারে না। সদাপ্রভু কহিলেন, দেখ, আমার নিকটে এক স্থান আছে; তুমি ঐ শৈলের উপরে দাঁড়াইবে। তাহাতে তোমার নিকট দিয়া আমার প্রতাপের গমন সময়ে আমি তোমাকে শৈলের এক ফাটালে রাখিব, ও আমার গমনের শেষ পর্য্যন্ত করতল দিয়া তোমাকে আচ্ছন্ন করিব; পরে আমি করতল উঠাইলে তুমি আমার পশ্চাদ্ভাগ দেখিতে পাইবে, কিন্তু আমার মুখের দর্শন পাওয়া যাইবে না। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি পূর্ব্বের ন্যায় দুই প্রস্তরফলক খুদ; প্রথম যে দুই ফলক তুমি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছ, তাহাতে যাহা যাহা লিখিত ছিল, সেই সকল কথা আমি এই দুই ফলকে লিখিব। আর তুমি প্রাতঃকালে প্রস্তুত হইও, প্রাতঃকালে সীনয় পর্ব্বতে উঠিয়া আসিও, ও তথায় পর্ব্বতশৃঙ্গে আমার নিকটে উপস্থিত হইও। কিন্তু তোমার সহিত কোন মনুষ্য উপরে না আইসুক, এবং এই পর্ব্বতে কোথাও কোন মনুষ্য দৃষ্ট না হউক, আর গোমেষাদি পালও এই পর্ব্বতের সম্মুখে না চরুক। পরে মোশি প্রথম প্রস্তরের ন্যায় দুই প্রস্তরফলক খুদিলেন, এবং সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে প্রাতঃকালে উঠিয়া সীনয় পর্ব্বতের উপরে গেলেন, ও সেই দুই প্রস্তরফলক হস্তে করিয়া লইলেন। তখন সদাপ্রভু মেঘে নামিয়া সে স্থানে তাঁহার সহিত দণ্ডায়মান হইয়া সদাপ্রভুর নাম ঘোষণা করিলেন। ফলতঃ সদাপ্রভু তাঁহার সম্মুখ দিয়া গমন করতঃ এই ঘোষণা করিলেন, ‘সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্; সহস্র সহস্র [পুরুষ] পর্য্যন্ত দয়ারক্ষক, অপরাধের, অধর্ম্মের ও পাপের ক্ষমাকারী; তথাপি তিনি অবশ্য [পাপের] দণ্ড দেন; পুত্র পৌত্রদের উপরে, তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্য্যন্ত, তিনি পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল বর্ত্তান।’ তখন মোশি ত্বরা করিলেন, ভূমিতে নতমস্তক হইয়া প্রণিপাত করিলেন, আর কহিলেন, হে প্রভু, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে বিনয় করি, প্রভু, আমাদের মধ্যবর্ত্তী হইয়া গমন করুন, কারণ ইহারা শক্তগ্রীব জাতি; আপনি আমাদের অপরাধ ও পাপ মোচন করিয়া আমাদিগকে আপন অধিকারার্থে গ্রহণ করুন। তখন তিনি কহিলেন, দেখ, আমি এক নিয়ম করি; সমস্ত পৃথিবীতে ও যাবতীয় জাতির মধ্যে যাদৃশ কখনও করা হয় নাই, এমন আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য কার্য্য আমি তোমার সমস্ত লোকের সাক্ষাতে করিব; তাহাতে যে সকল লোকের মধ্যে তুমি আছ, তাহারা সদাপ্রভুর কার্য্য দেখিবে, কেননা তোমার নিকটে যাহা করিব, তাহা ভয়ঙ্কর। অদ্য আমি তোমাকে যাহা আজ্ঞা করি, তাহাতে মনোযোগ কর; দেখ, আমি ইমোরীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়কে তোমার সম্মুখ হইতে খেদাইয়া দিব। সাবধান, যে দেশে তুমি যাইতেছ, সেই দেশনিবাসীদের সহিত নিয়ম স্থির করিও না, পাছে তাহা তোমার মধ্যবর্ত্তী ফাঁদস্বরূপ হয়। কিন্তু তোমরা তাহাদের বেদি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, তাহাদের স্তম্ভ সকল খণ্ড খণ্ড করিবে, ও তথাকার আশেরা-মূর্ত্তি সকল কাটিয়া ফেলিবে। তুমি অন্য দেবতার কাছে প্রণিপাত করিও না, কেননা সদাপ্রভু স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী নাম ধারণ করেন; তিনি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর। কি জানি, তুমি তদ্দেশনিবাসী লোকদের সহিত নিয়ম করিবে; করিলে যে সময়ে তাহারা নিজ দেবগণের অনুগমনে ব্যভিচার করে, ও নিজ দেবগণের কাছে বলিদান করে, সে সময়ে কেহ তোমাকে ডাকিলে তুমি তাহার বলিদ্রব্য খাইবে; কিম্বা তুমি আপন পুত্রদের জন্য তাহাদের কন্যাগণকে গ্রহণ করিলে তাহাদের কন্যারা নিজ দেবতাদের অনুগমনে ব্যভিচার করিয়া তোমার পুত্রদিগকে আপনাদের দেবগণের অনুগামী করিয়া ব্যভিচার করাইবে। তুমি আপনার নিমিত্তে ছাঁচে ঢালা কোন দেবতা নির্ম্মাণ করিও না। তুমি তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসব পালন করিবে। আবীব মাসের যে নিরূপিত সময়ে যেরূপ করিতে তোমাকে আজ্ঞা করিয়াছি, সেইরূপে তুমি সেই সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটী খাইবে, কেননা সেই আবীব মাসে তুমি মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিলে। গর্ভ উন্মোচক সকলে এবং গোমেষাদি পালের মধ্যে প্রথমজাত পুংপশু সকল আমার। প্রথমজাত গর্দ্দভের পরিবর্ত্তে তুমি মেষের বৎস দিয়া তাহাকে মুক্ত করিবে; যদি মুক্ত না কর, তবে তাহার গলা ভাঙ্গিবে। তোমার প্রথমজাত পুত্র সকলকে তুমি মুক্ত করিবে। আর কেহ রিক্তহস্তে আমার সম্মুখে উপস্থিত হইবে না। তুমি ছয় দিন পরিশ্রম করিবে, কিন্তু সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিবে; চাসের ও ফসল কাটিবার সময়েও বিশ্রাম করিবে। তুমি সাত সপ্তাহের উৎসব, অর্থাৎ কাটা গোমের আশুপক্ব ফলের উৎসব, এবং বৎসরের শেষভাগে ফলসংগ্রহের উৎসব পালন করিবে। বৎসরের মধ্যে তিন বার তোমাদের সমস্ত পুরুষলোক ইস্রায়েলের ঈশ্বর প্রভু সদাপ্রভুর সাক্ষাতে উপস্থিত হইবে। কেননা আমি তোমার সম্মুখ হইতে জাতিগণকে দূর করিয়া দিব, ও তোমার সীমা বিস্তার করিব, এবং তুমি বৎসরের মধ্যে তিন বার আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হইবার জন্য গমন করিলে তোমার ভূমিতে কেহ লোভ করিবে না। তুমি আমার বলির রক্ত তাড়ীযুক্ত ভক্ষ্যের সহিত উৎসর্গ করিবে না, ও নিস্তারপর্ব্বীয় উৎসবের বলিদ্রব্য প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত রাখা যাইবে না। তুমি নিজ ভূমির আশুপক্ব ফলের অগ্রিমাংশ আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহে আনিবে। তুমি ছাগবৎসকে তাহার মাতার দুগ্ধে সিদ্ধ করিবে না। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি এই সকল বাক্য লিপিবদ্ধ কর, কেননা আমি এই সকল বাক্যানুসারে তোমার ও ইস্রায়েলের সহিত নিয়ম স্থির করিলাম। সেই সময়ে মোশি চল্লিশ দিবারাত্র সেখানে সদাপ্রভুর সহিত অবস্থিতি করিলেন, অন্ন ভোজন ও জল পান করিলেন না। আর তিনি সেই দুই প্রস্তরে নিয়মের বাক্যগুলি অর্থাৎ দশ আজ্ঞা লিখিলেন। পরে মোশি দুই সাক্ষ্যপ্রস্তর হস্তে লইয়া সীনয় পর্ব্বত হইতে নামিলেন; যখন পর্ব্বত হইতে নামিলেন, তখন, সদাপ্রভুর সহিত আলাপে তাঁহার মুখের চর্ম্ম যে উজ্জ্বল হইয়াছিল, তাহা মোশি জানিতে পারিলেন না। পরে যখন হারোণ ও সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তান মোশিকে দেখিতে পাইল, তখন দেখ, তাঁহার মুখের চর্ম্ম উজ্জ্বল, আর তাহারা তাঁহার নিকটে আসিতে ভীত হইল। কিন্তু মোশি তাহাদিগকে ডাকিলে হারোণ ও মণ্ডলীর অধ্যক্ষ সকল তাঁহার নিকটে ফিরিয়া আসিলেন, আর মোশি তাঁহাদের সহিত আলাপ করিলেন। তৎপরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সকলে তাঁহার নিকটে আসিল; তাহাতে তিনি সীনয় পর্ব্বতে কথিত সদাপ্রভুর আজ্ঞা সকল তাহাদিগকে জানাইলেন। পরে তাহাদের সহিত কথোপকথন সমাপ্ত হইলে মোশি আপন মুখে আবরণ দিলেন। কিন্তু মোশি যখন সদাপ্রভুর সহিত কথা কহিতে ভিতরে তাঁহার সম্মুখে যাইতেন, তখন, যাবৎ বাহিরে আসিতেন, তাবৎ সেই আবরণ খুলিয়া রাখিতেন; পরে যে সকল আজ্ঞা পাইতেন, বাহির হইয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণকে তাহা বলিতেন। মোশির মুখের চর্ম্ম উজ্জ্বল, ইহা ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাঁহার মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিত; পরে মোশি সদাপ্রভুর সহিত কথা কহিতে যে পর্য্যন্ত না যাইতেন, তাবৎ আপন মুখে পুনর্ব্বার আবরণ দিয়া রাখিতেন। পরে মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীকে একত্র করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই সকল বাক্য পালন করিতে আজ্ঞা দিয়াছেন। ছয় দিন কার্য্য করা যাইবে, কিন্তু সপ্তম দিন তোমাদের পক্ষে পবিত্র দিন হইবে; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামার্থক বিশ্রামদিন হইবে; যে কেহ সেই দিনে কার্য্য করিবে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে। তোমরা বিশ্রামদিনে আপনাদের কোন বাসস্থানে অগ্নি জ্বালিও না। আর মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীকে কহিলেন, সদাপ্রভু এই আজ্ঞা দিয়াছেন; —তোমরা সদাপ্রভুর নিমিত্তে আপনাদের নিকট হইতে উপহার লও; যে কেহ মনে ইচ্ছুক, সে সদাপ্রভুর উপহারস্বরূপ এই সকল দ্রব্য আনিবে; স্বর্ণ, রৌপ্য ও পিত্তল, এবং নীল, বেগুনে, লাল ও সাদা মসীনা সূত্র ও ছাগের লোম, এবং রক্তীকৃত মেষচর্ম্ম ও তহশচর্ম্ম, শিটীম কাষ্ঠ, এবং দীপার্থ তৈল, আর অভিষেকার্থ তৈলের ও সুগন্ধি ধূপের নিমিত্তে গন্ধদ্রব্য, এবং এফোদের ও বুকপাটার জন্য গোমেদকাদি খচনার্থক মণি। আর তোমাদের প্রত্যেক বিজ্ঞমনা লোক আসিয়া সদাপ্রভুর আজ্ঞাপিত সকল বস্তু নির্ম্মাণ করুক;— আবাস, আবাসের তাম্বু, ছাদ, ঘুন্টী, তক্তা, অর্গল, স্তম্ভ ও চুঙ্গী, আর সিন্দুক ও তাহার বহন-দণ্ড, পাপাবরণ ও ব্যবধানের তিরস্করিণী, মেজ, তাহার বহন-দণ্ড ও সমস্ত পাত্র, দর্শন-রুটী, এবং দীপ্তির জন্য দীপ-বৃক্ষ ও তাহার পাত্র সকল, প্রদীপ ও দীপার্থ তৈল, এবং ধূপের বেদি ও তাহার বহন-দণ্ড, এবং অভিষেকার্থ তৈল ও সুগন্ধি ধূপ, আবাসের প্রবেশদ্বারের পর্দ্দা, হোমবেদি, তাহার পিত্তলের জাল, বহন-দণ্ড ও সমস্ত পাত্র, এবং প্রক্ষালন-পাত্র ও তাহার খুরা, প্রাঙ্গণের যবনিকা, তাহার স্তম্ভ ও চুঙ্গি এবং প্রাঙ্গণের দ্বারের পর্দ্দা, এবং আবাসের গোঁজ, প্রাঙ্গণের গোঁজ ও উভয়ের রজ্জু, এবং পবিত্র স্থানে পরিচর্য্যা করিবার নিমিত্তে সূক্ষ্মশিল্পিত বস্ত্র, অর্থাৎ হারোণ যাজকের জন্য পবিত্র বস্ত্র ও যাজন-কর্ম্ম করণার্থে তাহার পুত্রদের বস্ত্র। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী মোশির সম্মুখ হইতে প্রস্থান করিল। আর যাহাদের হৃদয়ে প্রবৃত্তি ও মনে ইচ্ছা হইল, তাহারা সকলে সমাগম-তাম্বু নির্ম্মাণ জন্য এবং তৎসম্বন্ধীয় সমস্ত কার্য্যের ও পবিত্র বস্ত্রের জন্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার আনিল। পুরুষ ও স্ত্রী যত লোক মনে ইচ্ছুক হইল, তাহারা সকলে আসিয়া বলয়, কুণ্ডল, অঙ্গুরীয়ক ও হার, স্বর্ণময় সর্ব্বপ্রকার অলঙ্কার আনিল। যে কেহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে স্বর্ণের উপহার আনিতে চাহিল, সে আনিল। আর যাহাদের নিকটে নীল, বেগুনে, লাল ও সাদা মসীনা সূত্র, ছাগলোম, রক্তীকৃত মেষচর্ম্ম ও তহশচর্ম্ম ছিল, তাহারা প্রত্যেকে তাহা আনিল। যে কেহ রৌপ্য ও পিত্তলের উপহার উপস্থিত করিল, সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে সেই উপহার আনিল; এবং যাহার নিকটে কোন কার্য্যে প্রয়োগের নিমিত্তে শিটীম কাষ্ঠ ছিল, সে তাহা আনিল। আর বিজ্ঞমনা স্ত্রীলোকেরা আপন আপন হস্তে সূতা কাটিয়া, তাহাদের কাটা নীল, বেগুনে, লাল ও সাদা মসীনা সূত্র আনিল। আর বিজ্ঞানে প্রবৃত্তমনা স্ত্রীলোকেরা সকলে ছাগলোমের সূতা কাটিল। আর অধ্যক্ষগণ এফোদের ও বুকপাটার জন্য গোমেদকাদি খচনার্থক মণি, এবং দীপের, অভিষেকার্থ তৈলের ও সুগন্ধি ধূপের নিমিত্ত গন্ধদ্রব্য ও তৈল আনিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানগণ ইচ্ছাপূর্ব্বক সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার আনিল, সদাপ্রভু মোশি দ্বারা যাহা যাহা করিতে আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহার কোন প্রকার কর্ম্ম করণার্থে যে পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগের হৃদয়ে ইচ্ছা হইল, তাহারা প্রত্যেকে উপহার আনিল। পরে মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলেন, দেখ, সদাপ্রভু যিহূদা-বংশীয় হূরের পৌত্র ঊরির পুত্র বৎসলেলের নাম ধরিয়া ডাকিলেন; আর তিনি তাঁহাকে ঈশ্বরের আত্মায়—জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, বিদ্যায়, ও সর্ব্বপ্রকার শিল্প-কৌশলে পরিপূর্ণ করিলেন, যাহাতে তিনি কৌশলের কার্য্য কল্পনা করিতে, স্বর্ণ, রৌপ্য ও পিত্তলের কার্য্য করিতে, খচনার্থক মণি কাটিতে, কাষ্ঠ খুদিতে ও সর্ব্বপ্রকার কৌশলযুক্ত শিল্পকর্ম্ম করিতে পারেন। আর এই সকলের শিক্ষা দিতে তাঁহার ও দানবংশীয় অহীষামকের পুত্র অহলীয়াবের হৃদয়ে প্রবৃত্তি দিলেন। তিনি খুদিতে ও শিল্পকর্ম্ম করিতে এবং নীল, বেগুনে, লাল ও সাদা মসীনা সূত্রে সূচিকর্ম্ম করিতে ও তাঁতির কর্ম্ম করিতে, অর্থাৎ যাবতীয় শিল্পকর্ম্ম ও চিত্রকর্ম্ম করিতে তাঁহাদের হৃদয় বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ করিলেন। অতএব সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞানুসারে পবিত্র স্থানের কার্য্য সকল কিরূপে করিতে হইবে, তাহা জানিতে সদাপ্রভু বৎসলেল ও অহলীয়াব এবং আর যাঁহাদিগকে বিজ্ঞতা ও বুদ্ধি দিয়াছেন, সেই সকল বিজ্ঞমনা লোক কর্ম্ম করিবেন। পরে মোশি বৎসলেল ও অহলীয়াবকে এবং সদাপ্রভু যাঁহাদের হৃদয়ে বিজ্ঞতা দিয়াছিলেন, সেই অন্য সকল বিজ্ঞমনা লোককে ডাকিলেন, অর্থাৎ সেই কর্ম্ম করিবার নিমিত্তে উপস্থিত হইতে যাঁহাদের মনে প্রবৃত্তি জন্মিল, তাঁহাদিগকে ডাকিলেন। তাহাতে তাঁহারা পবিত্র স্থানের কার্য্যের উপাদান সম্পন্ন করণার্থে ইস্রায়েল-সন্তানগণের আনীত সমস্ত উপহার মোশির নিকট হইতে গ্রহণ করিলেন। আর লোকেরা তখনও প্রতি-প্রভাতে তাঁহার নিকটে ইচ্ছাপূর্ব্বক আরও দ্রব্য আনিতেছিল। তখন পবিত্র স্থানের সমস্ত কার্য্যে ব্যাপৃত বিজ্ঞ লোক সকল আপন আপন কর্ম্ম হইতে আসিয়া মোশিকে কহিলেন, সদাপ্রভু যাহা যাহা রচনা করিতে আজ্ঞা করিয়াছিলেন, লোকেরা সেই রচনাকার্য্যের জন্য অতিরিক্ত অধিক বস্তু আনিতেছে। তাহাতে মোশি আজ্ঞা দিয়া শিবিরের সর্ব্বত্র এই ঘোষণা করিয়া দিলেন যে, পুরুষ কিম্বা স্ত্রীলোক পবিত্র স্থানের জন্য আর উপহার প্রস্তুত না করুক। তাহাতে লোকেরা আনিতে নিবৃত্ত হইল। কেননা সকল কর্ম্ম করণার্থে তাহাদের যথেষ্ট, এমন কি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত দ্রব্য প্রস্তুত ছিল। পরে কর্ম্মকারী বিজ্ঞমনা লোক সকল পাকান সাদা মসীনা সূত্র, নীল, বেগুনে ও লাল সূত্রনির্ম্মিত দশ যবনিকা দ্বারা আবাস প্রস্তুত করিলেন; এবং সেই যবনিকা সমূহে শিল্পকারের কৃত করূবগণের আকৃতি ছিল। প্রত্যেক যবনিকা আটাইশ হস্ত দীর্ঘ, ও প্রত্যেক যবনিকা চারি হস্ত প্রস্থ, সমস্ত যবনিকার একই পরিমাণ ছিল। পরে তিনি তাহার পাঁচ যবনিকা একত্র যোগ করিলেন, এবং অন্য পাঁচ যবনিকাও একত্র যোগ করিলেন। আর যোড়স্থানে প্রথম অন্ত্য যবনিকার মুড়াতে নীলবর্ণ ঘুন্টীঘরা করিলেন, এবং যোড়স্থানের দ্বিতীয় অন্ত্য যবনিকার মুড়াতেও তদ্রূপ করিলেন। প্রথম যবনিকাতে পঞ্চাশ ঘুন্টীঘরা করিলেন, এবং যোড়স্থানের দ্বিতীয় যবনিকার মুড়াতেও পঞ্চাশ ঘুন্টীঘরা করিলেন; সেই দুই ঘুন্টীঘরাশ্রেণী পরস্পর সম্মুখীন হইল। পরে তিনি স্বর্ণের পঞ্চাশটী ঘুন্টী গড়িয়া সেই ঘুন্টীতে যবনিকা সকল পরস্পর যোড়া দিলেন, তাহাতে একই আবাস হইল। পরে তিনি আবাসের উপরে আচ্ছাদনার্থক তাম্বুর নিমিত্তে ছাগলোমজাত যবনিকা সকল প্রস্তুত করিলেন; একাদশ যবনিকা প্রস্তুত করিলেন। তাহার প্রত্যেক যবনিকা ত্রিশ হস্ত দীর্ঘ, ও প্রত্যেক যবনিকা চারি হস্ত প্রস্থ; একাদশ যবনিকার একই পরিমাণ ছিল। পরে তিনি পাঁচ যবনিকা পৃথক্ যোড়া দিলেন, ও ছয় যবনিকা পৃথক্ যোড়া দিলেন। আর যোড়স্থানের অন্ত্য যবনিকার মুড়াতে পঞ্চাশ ঘুন্টীঘরা করিলেন, এবং দ্বিতীয় যোড়স্থানের অন্ত্য যবনিকার মুড়াতেও পঞ্চাশ ঘুন্টীঘরা করিলেন। আর যোড় দিয়া একই তাম্বু করণার্থে পিত্তলের পঞ্চাশ ঘুন্টী গড়িলেন। পরে রক্তীকৃত মেষচর্ম্মে তাম্বুর এক ছাদ, আবার তাহার উপরে তহশচর্ম্মের এক ছাদ প্রস্তুত করিলেন। পরে তিনি আবাসের জন্য শিটীম কাষ্ঠের দাঁড় করান তক্তা সকল নির্ম্মাণ করিলেন। এক এক তক্তা দীর্ঘে দশ হস্ত ও প্রত্যেক তক্তা প্রস্থে দেড় হস্ত। প্রত্যেক তক্তাতে পরস্পর সংযুক্ত দুই দুই পায়া ছিল; এইরূপে তিনি আবাসের সকল তক্তা প্রস্তুত করিলেন। তিনি আবাসের নিমিত্তে তক্তা প্রস্তুত করিলেন, দক্ষিণদিকে দক্ষিণ পার্শ্বের নিমিত্তে বিংশতি তক্তা; আর সেই বিংশতি তক্তার নীচে রৌপ্যের চল্লিশ চুঙ্গি গড়িলেন, এক তক্তার নীচে তাহার দুই পায়ার নিমিত্তে দুই চুঙ্গি, এবং অন্য অন্য তক্তার নীচেও তাহাদের দুই দুই পায়ার নিমিত্তে দুই দুই চুঙ্গি গড়িলেন। আর আবাসের দ্বিতীয় পার্শ্বের নিমিত্তে উত্তরদিকে বিংশতি তক্তা করিলেন, ও সেইগুলির জন্য চল্লিশটী রৌপ্যের চুঙ্গি গড়িয়া দিলেন; এক তক্তার নীচে দুই দুই চুঙ্গি, ও অন্য অন্য তক্তার নীচেও দুই দুই চুঙ্গি হইল। আর পশ্চিমদিকে আবাসের পশ্চাৎ পার্শ্বের নিমিত্তে ছয় খানি তক্তা করিলেন। আর আবাসের সেই পশ্চাৎ ভাগে দুই কোণে দুই খানি তক্তা রাখিলেন। সেই দুই তক্তার নীচে দোহারা ছিল, এবং সেইরূপে মাথাতেও প্রথম কড়ার নিকটে অখণ্ড ছিল; এইরূপে তিনি দুই কোণের তক্তা বদ্ধ করিলেন। তাহাতে আটখানি তক্তা, এবং সে গুলির রৌপ্যের ষোলটী চুঙ্গি হইল, এক এক তক্তার নীচে দুই দুই চুঙ্গি হইল। পরে তিনি শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা অর্গল প্রস্তুত করিলেন; আবাসের এক পার্শ্বের তক্তার জন্য পাঁচ অর্গল, আবাসের অন্য পার্শ্বের তক্তার জন্য পাঁচ অর্গল, এবং পশ্চিমদিকে আবাসের পশ্চাৎ পার্শ্বের তক্তার জন্য পাঁচ অর্গল। আর মধ্যবর্ত্তী অর্গলটীকে তক্তাগুলির মধ্যস্থান দিয়া এক প্রান্ত অবধি অন্য প্রান্ত পর্য্যন্ত বিস্তার করিলেন। পরে তিনি তক্তাগুলি স্বর্ণে মুড়িলেন, এবং অর্গলের ঘর হইবার জন্য স্বর্ণের কড়া গড়িয়া অর্গলও স্বর্ণে মুড়িলেন। আর তিনি নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্র দিয়া তিরস্করিণী প্রস্তুত করিলেন, তাহাতে করূবাকৃতি করিলেন, তাহা শিল্পকারের কর্ম্ম। আর তাহার নিমিত্তে শিটীম কাষ্ঠের চারি স্তম্ভ নির্ম্মাণ করিয়া স্বর্ণে মুড়িলেন, এবং তাহাদের আঁকড়াও স্বর্ণের করিলেন, এবং তাহার জন্য রৌপ্যের চারি চুঙ্গি ঢালিলেন। পরে তিনি তাম্বুর দ্বারের নিমিত্তে নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্র দ্বারা সূচি-ক্রিয়াবিশিষ্ট এক পর্দ্দা নির্ম্মাণ করিলেন। আর তাহার পাঁচ স্তম্ভ ও সেগুলির আঁকড়া করিলেন এবং ঐ সকলের মাথলা ও শলাকা স্বর্ণে মুড়িলেন, কিন্তু সেগুলির পাঁচ চুঙ্গি পিত্তল দিয়া গড়িলেন। আর বৎসলেল শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা সিন্দুক নির্ম্মাণ করিলেন; তাহা আড়াই হস্ত দীর্ঘ, দেড় হস্ত প্রস্থ ও দেড় হস্ত উচ্চ করা হইল; আর ভিতর ও বাহির নির্ম্মল স্বর্ণে মুড়িলেন, এবং তাহার চারিদিকে স্বর্ণের নিকাল গড়িয়া দিলেন। আর তাহার চারি পায়ার জন্য স্বর্ণের চারি কড়া ঢালিলেন; তাহার এক পার্শ্বে দুই কড়া ও অন্য পার্শ্বে দুই কড়া দিলেন। আর তিনি শিটীম কাষ্ঠের দুইটী বহন-দণ্ড করিয়া স্বর্ণে মুড়িলেন, এবং সিন্দুক বহনার্থে ঐ বহন-দণ্ড সিন্দুকের দুই পার্শ্বস্থ কড়াতে প্রবেশ করাইলেন। পরে তিনি নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা পাপাবরণ প্রস্তুত করিলেন; তাহা আড়াই হস্ত দীর্ঘ ও দেড় হস্ত প্রস্থ করা হইল। আর পিটান স্বর্ণ দ্বারা দুই করূব নির্ম্মাণ করিয়া পাপাবরণের দুই মুড়াতে দিলেন। তাহার এক মুড়াতে এক করূব ও অন্য মুড়াতে অন্য করূব, পাপাবরণের দুই মুড়াতে তৎসহিত অখণ্ড দুই করূব দিলেন। তাহাতে সেই দুই করূব ঊর্দ্ধে পক্ষ বিস্তার করিয়া ঐ পক্ষ দ্বারা পাপাবরণ আচ্ছাদন করিল, এবং তাহাদের মুখ পরস্পরের দিকে রহিল, করূবদের দৃষ্টি পাপাবরণের দিকে রহিল। পরে তিনি শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা মেজ নির্ম্মাণ করিলেন; তাহা দুই হস্ত দীর্ঘ, এক হস্ত প্রস্থ ও দেড় হস্ত উচ্চ করা হইল। আর তাহা নির্ম্মল স্বর্ণে মুড়িলেন, ও তাহার চারি দিকে স্বর্ণের নিকাল গড়িয়া দিলেন। আর তিনি তাহার নিমিত্তে চারিদিকে চারি অঙ্গুলি পরিমিত এক পার্শ্বকাষ্ঠ করিলেন, ও পার্শ্বকাষ্ঠের চারিদিকে স্বর্ণের নিকাল গড়িয়া দিলেন। আর তাহার জন্য স্বর্ণের চারি কড়া ঢালিয়া তাহার চারি পায়ার চারি কোণে রাখিলেন। সেই কড়া পার্শ্বকাষ্ঠের নিকটে ছিল, এবং মেজ বহনার্থ বহন-দণ্ডের ঘর হইল। পরে তিনি মেজ বহনার্থ শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা দুই বহন-দণ্ড করিয়া স্বর্ণে মুড়িলেন। আর মেজের উপরিস্থিত পাত্র সকল নির্ম্মাণ করিলেন, অর্থাৎ তাহার থাল, চমস, ঢালিবার জন্য সেকপাত্র ও শ্রুব সকল নির্ম্মল স্বর্ণ দিয়া নির্ম্মাণ করিলেন। পরে তিনি নির্ম্মল পিটান স্বর্ণ দ্বারা দীপবৃক্ষ নির্ম্মাণ করিলেন; তাহার কাণ্ড, শাখা, গোলাধার, কলিকা ও পুষ্প তৎসহিত অখণ্ড ছিল। সেই দীপবৃক্ষের এক পার্শ্ব হইতে তিন শাখা, ও দীপবৃক্ষের অন্য পার্শ্ব হইতে তিন শাখা, এই ছয় শাখা তাহার পার্শ্ব হইতে নির্গত হইল। এক শাখায় বাদাম পুষ্পের ন্যায় তিন গোলাধার, এক কলিকা ও এক পুষ্প, এবং অন্য শাখায় বাদাম পুষ্পের ন্যায় তিন গোলাধার, এক কলিকা ও এক পুষ্প, দীপবৃক্ষ হইতে নির্গত ছয় শাখায় এইরূপ হইল। আর দীপবৃক্ষের বাদাম পুষ্পের ন্যায় চারি গোলাধার ও তাহাদের কলিকা ও পুষ্প ছিল। আর দীপবৃক্ষের যে ছয়টী শাখা নির্গত হইল, সেগুলির এক শাখাদ্বয়ের নীচে তৎসহ অখণ্ড এক কলিকা, অন্য শাখাদ্বয়ের নীচে তৎসহ অখণ্ড এক কলিকা, ও অপর শাখাদ্বয়ের নীচে তৎসহ অখণ্ড এক কলিকা ছিল। এই কলিকা ও শাখা তৎসহিত অখণ্ড ছিল, এবং সমস্তই পিটান নির্ম্মল সুবর্ণের একই বস্তু ছিল। আর তিনি তাহার সাতটী প্রদীপ এবং তাহার চিমটা ও শীষধানী নির্ম্মল স্বর্ণ দিয়া নির্ম্মাণ করিলেন। তিনি এই দীপবৃক্ষ এবং ঐ সমস্ত সামগ্রী এক তালন্ত পরিমিত নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা নির্ম্মাণ করিলেন। পরে তিনি শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা ধূপবেদি নির্ম্মাণ করিলেন; তাহা এক হস্ত দীর্ঘ, এক হস্ত প্রস্থ ও দুই হস্ত উচ্চ চতুষ্কোণ; তাহার শৃঙ্গ সকল তাহার সহিত অখণ্ড ছিল। পরে সেই বেদি, তাহার পৃষ্ঠ, তাহার চারি পার্শ্ব ও তাহার শৃঙ্গ সকল নির্ম্মল স্বর্ণে মুড়িলেন, এবং তাহার চারিদিকে স্বর্ণের নিকাল গড়িয়া দিলেন। আর তাহা বহিবার জন্য বহন-দণ্ডের ঘর করিয়া দিতে তাহার নিকালের নীচে দুই পার্শ্বের দুই কোণের নিকটে স্বর্ণের দুই দুই কড়া গড়িয়া দিলেন। আর শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা বহন-দণ্ড প্রস্তুত করিলেন ও তাহা স্বর্ণে মুড়িলেন। পরে তিনি গন্ধবণিকের প্রক্রিয়ানুসারে অভিষেকার্থ পবিত্র তৈল ও সুগন্ধি দ্রব্যের নির্ম্মল ধূপ প্রস্তুত করিলেন। আর তিনি শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা হোমবেদি নির্ম্মাণ করিলেন; তাহা পাঁচ হস্ত দীর্ঘ, পাঁচ হস্ত প্রস্থ ও তিন হস্ত উচ্চ চতুষ্কোণ করা হইল। আর তাহার চারি কোণের উপরে শৃঙ্গ নির্ম্মাণ করিলেন; সেই শৃঙ্গ সকল তাহার সহিত অখণ্ড ছিল; তিনি তাহা পিত্তলে মুড়িলেন। পরে তিনি বেদির সমস্ত পাত্র, অর্থাৎ হাঁড়ী, হাতা, বাটি, ত্রিশূল ও অঙ্গারধানী, এই সকল পাত্র পিত্তল দিয়া গড়িলেন। আর বেদির জন্য বেড়ের নীচে অধঃ অবধি মধ্য পর্য্যন্ত জালবৎ কাজ করা পিত্তলের ঝাঁঝরী প্রস্তুত করিলেন। তিনি বহন-দণ্ডের ঘর করিয়া দিতে সেই পিত্তলময় ঝাঁঝরীর চারি কোণে চারি কডা ঢালিলেন। পরে তিনি শিটীম কাষ্ঠ দ্বারা বহন-দণ্ড নির্ম্মাণ করিয়া পিত্তলে মুড়িলেন। আর বেদি বহনার্থে তাহার পার্শ্বস্থ কড়াতে ঐ বহন-দণ্ড পরাইলেন; তিনি ফাঁপা রাখিয়া তাহা দিয়া বেদি নির্ম্মাণ করিলেন। আর যাহারা সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সেবার্থে শ্রেণীভূত হইত, সেই শ্রেণীভূত স্ত্রীলোকদের পিত্তলনির্ম্মিত দর্পণ দ্বারা তিনি প্রক্ষালণ-পাত্র ও তাহার খুরা নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি প্রাঙ্গণ প্রস্তুত করিলেন; দক্ষিণদিকে প্রাঙ্গণের দক্ষিণ পার্শ্বে পাকান সাদা মসীনা সূত্রে এক শত হস্ত পরিমিত যবনিকা ছিল। তাহার বিংশতি স্তম্ভ ও বিংশতি চুঙ্গি পিত্তলের এবং সেই স্তম্ভের আঁকড়া ও শলাকা সকল রৌপ্যের ছিল। আর উত্তর দিকের যবনিকা এক শত হস্ত, ও তাহার বিংশতি স্তম্ভ ও বিংশতি চুঙ্গি পিত্তলের, এবং স্তম্ভের আঁকড়া ও শলাকা সকল রৌপ্যের ছিল। আর পশ্চিম পার্শ্বের যবনিকা পঞ্চাশ হস্ত, ও তাহার দশ স্তম্ভ ও দশ চুঙ্গি, এবং স্তম্ভের আঁকড়া ও শলাকা সকল রৌপ্যের ছিল। আর পূর্ব্বদিকে পূর্ব্ব পার্শ্বের দীর্ঘতা পঞ্চাশ হস্ত ছিল। প্রাঙ্গণের দ্বারের এক পার্শ্বের নিমিত্তে পনর হস্ত যবনিকা, তাহার তিন স্তম্ভ ও তিন চুঙ্গি, এবং অন্য পার্শ্বের জন্যও সেইরূপ; প্রাঙ্গণের দ্বারের এদিক্ ওদিক্ পনর হস্ত যবনিকা ও তাহার তিন স্তম্ভ ও তিন চুঙ্গি ছিল। প্রাঙ্গণের চারিদিকের সকল যবনিকা পাকান সাদা মসীনা সূত্রে নির্ম্মিত। আর স্তম্ভের চুঙ্গি সকল পিত্তলময়, স্তম্ভের আঁকড়া ও শলাকা সকল রৌপ্যময়, ও তাহার মাথলা রৌপ্যমণ্ডিত, এবং প্রাঙ্গণের সকল স্তম্ভ রৌপ্যের শলাকায় সংযুক্ত ছিল। আর প্রাঙ্গণের দ্বারের পর্দ্দা নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্রের সূচিকর্ম্মে-প্রস্তুত, এবং তাহার দীর্ঘতা বিংশতি হস্ত, আর প্রাঙ্গণের যবনিকার ন্যায় উচ্চতা প্রস্থপরিমাণে পঞ্চ হস্ত। আর তাহার চারি স্তম্ভ ও চারি চুঙ্গি পিত্তলের ও আঁকড়া রৌপ্যের, এবং তাহার মাথলা রৌপ্যমণ্ডিত ও শলাকা রৌপ্যময় ছিল। আর আবাসের ও প্রাঙ্গণের চারিদিকের গোঁজ সকল পিত্তলময় ছিল। আবাসের, সাক্ষ্যের আবাসের, দ্রব্য সংখ্যার বিবরণ এই। মোশির আজ্ঞানুসারে সেই সমস্ত গণনা করা হইল; লেবীয়দের কার্য্য বলিয়া তাহা হারোণ যাজকের পুত্র ঈথামরের দ্বারা করা হইল। আর সদাপ্রভু মোশিকে যে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তদনুসারে যিহূদা বংশজাত হূরের পৌত্র ঊরির পুত্র বৎসলেল সকলই নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। আর দান-বংশজাত অহীষামকের পুত্র অহলীয়াব তাঁহার সহকারী ছিলেন; তিনি খোদক ও শিল্পকুশল, এবং নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্রের শিল্পকার ছিলেন। পবিত্র আবাস নির্ম্মাণের সমস্ত কর্ম্মে এই সকল স্বর্ণ লাগিল, উপহারের সমস্ত স্বর্ণ পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে ঊনত্রিশ তালন্ত সাত শত ত্রিশ শেকল ছিল। আর মণ্ডলীর গণিত লোকদের রৌপ্য পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত তালন্ত এক সহস্র সাত শত পঁচাত্তর শেকল ছিল। গণিত প্রত্যেক লোকের জন্য, অর্থাৎ যাহারা বিংশতি বৎসর বয়স্ক কিম্বা তদপেক্ষা অধিক বয়স্ক ছিল, সেই ছয় লক্ষ তিন সহস্র সাড়ে পাঁচ শত লোকের মধ্যে প্রত্যেক জনের জন্য এক এক বেকা, অর্থাৎ পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে অর্দ্ধ অর্দ্ধ শেকল দিতে হইয়াছিল। সেই এক শত তালন্ত রৌপ্যে পবিত্র স্থানের চুঙ্গি ও তিরস্করিণীর চুঙ্গি ঢালা গিয়াছিল; এক শত চুঙ্গির কারণ এক শত তালন্ত, এক এক চুঙ্গির কারণ এক এক তালন্ত ব্যয় হইয়াছিল। আর ঐ এক সহস্র সাত শত পঁচাত্তর শেকলে তিনি স্তম্ভ সকলের জন্য আঁকড়া নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, ও তাহাদের মাথলা মণ্ডিত ও শলাকায় সংযুক্ত করিয়াছিলেন। আর উপহারের পিত্তল সত্তর তালন্ত দুই সহস্র চারি শত শেকল ছিল। তাহা দ্বারা তিনি সমাগম-তাম্বুর দ্বারের চুঙ্গি, পিত্তলময় বেদি ও তাহার পিত্তলময় ঝাঁঝরি ও বেদির সকল পাত্র, এবং প্রাঙ্গণের চারিদিকের চুঙ্গি ও প্রাঙ্গণের দ্বারের চুঙ্গি ও আবাসের সকল গোঁজ ও প্রাঙ্গণের চারিদিকের গোঁজ নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। পরে শিল্পীরা নীল, বেগুনে ও লাল সূত্র দ্বারা পবিত্র স্থানে পরিচর্য্যা করণার্থ সূক্ষ্মশিল্পিত বস্ত্র প্রস্তুত করিলেন, বিশেষতঃ হারোণের জন্য পবিত্র বস্ত্র প্রস্তুত করিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। তিনি স্বর্ণ দ্বারা এবং নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্র দ্বারা এফোদ নির্ম্মাণ করিলেন। ফলতঃ তাঁহারা স্বর্ণ পিটাইয়া পাত করিয়া শিল্পকর্ম্মের নীল, বেগুনে, লাল ও সাদা মসীনা সূত্রের মধ্যে বুনিবার জন্য তাহা কাটিয়া তার প্রস্তুত করিলেন। আর তাঁহারা যোড়া দিবার জন্য তাহার দুই স্কন্ধপটি প্রস্তুত করিলেন; দুই মুড়াতে পরস্পর যোড়া দেওয়া গেল; আর তাহা বন্ধ করিবার জন্য শিল্পকর্ম্মে বোনা যে পটুকা তাহার উপরে ছিল, তাহা তৎসহিত অখণ্ড, এবং সেই বস্ত্রের তুল্য ছিল, তাহা স্বর্ণ দ্বারা এবং নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্র দ্বারা প্রস্তুত হইল; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তাঁহারা ক্ষোদিত মুদ্রার ন্যায় ইস্রায়েলের পুত্রদের নামে ক্ষোদিত স্বর্ণময় স্থালীতে খচিত দুই গোমেদক মণি খুদিলেন। আর এফোদের দুই স্কন্ধপটির উপরে ইস্রায়েলের পুত্রদের স্মরণার্থক মণিস্বরূপে তাহা বসাইলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে এফোদের কর্ম্মের ন্যায় তিনি স্বর্ণ দ্বারা এবং নীল, বেগুনে, লাল ও পাকান সাদা মসীনা সূত্র দ্বারা শিল্পকর্ম্মের বুকপাটা প্রস্তুত করিলেন। তাহা চতুষ্কোণ; তাঁহার সেই বুকপাটা দোহারা করিলেন; তাহা এক বিঘত দীর্ঘ ও এক বিঘত প্রস্থ ও দোহারা করিলেন। আর তাহা চারি পঙ্‌ক্তি মণিতে খচিত করিলেন; তাহার প্রথম পঙ্‌ক্তিতে চুণী, পীতমণি ও মরকত, দ্বিতীয় উঙ্‌ক্তিতে পদ্মরাগ, নীলকান্ত ও হীরক, তৃতীয় পঙ্‌ক্তিতে পেরোজ, যিস্ম ও কটাহেলা, এবং চতুর্থ পঙ্‌ক্তিতে বৈদূর্য্য, গোমেদক ও সূর্য্যকান্ত ছিল; স্বর্ণস্থালী এই সকল মণিতে খচিত হইল। এই সকল মণি ইস্রায়েলের পুত্রদের নামানুসারে হইল, তাঁহাদের নামানুসারে দ্বাদশটী হইল; মুদ্রার ন্যায় ক্ষোদিত প্রত্যেক মণিতে দ্বাদশ বংশের জন্য এক এক পুত্রের নাম হইল। পরে তাঁহারা বুকপাটায় নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা মালাবৎ পাকান দুই শৃঙ্খল গড়িলেন। আর স্বর্ণের দুই স্থালী ও স্বর্ণের দুই কড়া নির্ম্মাণ করিয়া বুকপাটার দুই প্রান্তে সেই দুই কড়া বদ্ধ করিলেন। আর বুকপাটার প্রান্তস্থিত দুই কড়ার মধ্যে পাকান স্বর্ণের সেই দুই শৃঙ্খল রাখিলেন। এবং পাকান শৃঙ্খলের দুই মুড়া দুই স্থালীতে বদ্ধ করিয়া এফোদের সম্মুখে দুই স্কন্ধপটির উপরে রাখিলেন। আর স্বর্ণের দুইটি কড়া গড়িয়া বুকপাটার দুই প্রান্তে ভিতরভাগে এফোদের সম্মুখস্থ মুড়াতে রাখিলেন। এবং স্বর্ণের দুইটি কড়া গড়িয়া এফোদের দুই স্কন্ধপটির নীচে তাহার সম্মুখভাগে তাহার যোড়ের স্থানে এফোদের বুনানি করা পটুকার উপরে রাখিলেন। আর বুকপাটা যেন এফোদের শিল্পিত পটুকার উপরে থাকে, এফোদ হইতে খসিয়া না যায়, এই জন্য তাঁহারা কড়াতে নীল সূত্র দিয়া এফোদের কড়ার সহিত বুকপাটা বদ্ধ করিয়া রাখিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি এফোদের পরিচ্ছদ বুনিলেন; তাহা তন্তুবায়ের কৃত ও সমুদয় নীলবর্ণ। আর সেই পরিচ্ছদের গলা তাহার মধ্যস্থানে ছিল; তাহা বর্ম্মের গলার সদৃশ; তাহা যেন ছিঁড়িয়া না যায়, এই জন্য সেই গলার চারিদিকে ধারি ছিল। আর তাঁহারা ঐ পরিচ্ছদের আঁচলে নীল, বেগুনে ও লাল পাকান সূত্রে দাড়িম নির্ম্মাণ করিলেন। পরে তাঁহারা নির্ম্মল স্বর্ণের কিঙ্কিণী গড়িলেন ও সেই কিঙ্কিণীগুলি দাড়িমের মধ্যে মধ্যে পরিচ্ছদের আঁচলের চারিদিকে দাড়িমের মধ্যে মধ্যে দিলেন। পরিচর্য্যার্থক পরিচ্ছদের আঁচলে চারিদিকে এক কিঙ্কিণী ও এক দাড়িম, এক কিঙ্কিণী ও এক দাড়িম, এইরূপ করিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তাঁহারা হারোণের ও তাঁহার পুত্রগণের জন্য সাদা মসীনা সূত্র দ্বারা তন্তুবায়ের নির্ম্মিত অঙ্গরক্ষিণী, ও সাদা মসীনা সূত্রনির্ম্মিত উষ্ণীষ ও সাদা মসীনা সূত্রনির্ম্মিত শিরোভূষণ ও পাকান সাদা মসীনা সূত্রনির্ম্মিত শুক্ল জাঙ্ঘিয়া প্রস্তুত করিলেন। আর পাকান সাদা মসীনা সূত্রে, এবং নীল, বেগুনে ও লাল সূত্রে সূচিকর্ম্ম দ্বারা এক কটিবন্ধন প্রস্তুত করিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তাঁহারা নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা পবিত্র মুকুটের পাত প্রস্তুত করিলেন, এবং ক্ষোদিত মুদ্রার ন্যায় তাহার উপরে লিখিলেন, ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র’। পরে ঊর্দ্ধে উষ্ণীষের উপরে রাখিবার জন্য তাহা নীল সূত্র দিয়া বাঁধিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। এই প্রকারে সমাগম তাম্বুরূপ আবাসের সমস্ত কার্য্য সমাপ্ত হইল; মোশির প্রতি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সমস্ত কর্ম্ম করিল। পরে তাহারা মোশির নিকটে ঐ আবাস আনিল, তাম্বু, তৎসংক্রান্ত সমস্ত দ্রব্য, এবং ঘুন্টী, তক্তা, অর্গল, স্তম্ভ ও চুঙ্গি, রক্তীকৃত মেষ-চর্ম্মনির্ম্মিত ছাদ, তহশ-চর্ম্মনির্ম্মিত ছাদ ও ব্যবধানের তিরস্করিণী, এবং সাক্ষ্য-সিন্দুক ও তাহার বহন-দণ্ড, পাপাবরণ এবং মেজ, তাহার সমস্ত পাত্র ও দর্শন-রুটী, নির্ম্মল দীপবৃক্ষ, তাহার প্রদীপ সকল অর্থাৎ প্রদীপাবলি, তাহার সমস্ত পাত্র ও দীপার্থ তৈল, এবং স্বর্ণময় বেদি, অভিষেকার্থ তৈল, ধূপার্থ সুগন্ধি দ্রব্য ও তাম্বু-দ্বারের পর্দ্দা, পিত্তলময় বেদি, তাহার পিত্তলময় ঝাঁঝরী, তাহার বহন-দণ্ড ও সমস্ত পাত্র, প্রক্ষালন-পাত্র ও তাহার খুরা, এবং প্রাঙ্গণের যবনিকা, তাহার স্তম্ভ ও চুঙ্গি এবং প্রাঙ্গণ-দ্বারের পর্দ্দা, ও তাহার রজ্জু, গোঁজ ও সমাগম-তাম্বুর জন্য আবাসের কার্য্যের সমস্ত পাত্র, পবিত্র স্থানে পরিচর্য্যা করণার্থ সূক্ষ্মশিল্পিত বস্ত্র, হারোণ যাজকের পবিত্র বস্ত্র ও তাঁহার পুত্রদের যাজনকর্ম্ম সম্বন্ধীয় বস্ত্র। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সমস্তই সম্পন্ন করিল। পরে মোশি ঐ সকল কার্য্যের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, তাহারা করিয়াছে; সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারেই করিয়াছে; আর মোশি তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি প্রথম মাসের প্রথম দিনে সমাগম-তাম্বুরূপ আবাস স্থাপন করিবে। আর তাহার মধ্যে সাক্ষ্য-সিন্দুক রাখিয়া তিরস্করিণী টাঙ্গাইয়া সেই সিন্দুক আড়াল করিবে। পরে মেজ ভিতরে আনিয়া তাহার উপরে সাজাইবার দ্রব্য সাজাইয়া রাখিবে, এবং দীপবৃক্ষ ভিতরে আনিয়া তাহার প্রদীপ সকল জ্বালিয়া দিবে। আর স্বর্ণময় ধূপবেদি সাক্ষ্য-সিন্দুকের সম্মুখে রাখিবে, এবং আবাস-দ্বারের পর্দ্দা টাঙ্গাইবে। আর সমাগম-তাম্বুরূপ আবাসের দ্বারের সম্মুখে হোমবেদি রাখিবে। আর সমাগম-তাম্বু ও বেদির মধ্যে প্রক্ষালন পাত্র রাখিয়া তাহার মধ্যে জল দিবে। আর চারিদিকে প্রাঙ্গণ প্রস্তুত করিবে ও প্রাঙ্গণের দ্বারে পর্দ্দা টাঙ্গাইবে। পরে অভিষেকার্থ তৈল লইয়া আবাস ও তাহার মধ্যবর্ত্তী সমস্ত বস্তু অভিষেক করিয়া তাহা ও তৎসংক্রান্ত সকল দ্রব্য পবিত্র করিবে; তাহাতে তাহা পবিত্র হইবে। আর তুমি হোমবেদি ও তৎসংক্রান্ত সমস্ত পাত্র অভিষেক করিয়া, হোমবেদি পবিত্র করিবে; তাহাতে সেই বেদি অতি পবিত্র হইবে। আর তুমি প্রক্ষালন-পাত্র ও তাহার খুরা অভিষেক করিয়া পবিত্র করিবে। পরে তুমি হারোণকে ও তাহার পুত্রগণকে সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে আনিয়া জলে স্নান করাইবে। আর হারোণকে পবিত্র বস্ত্র সকল পরাইবে এবং অভিষেক করিয়া পবিত্র করিবে, তাহাতে তাহারা আমার যাজনকর্ম্ম করিবে। আর তাহার পুত্রগণকে আনিয়া অঙ্গরক্ষিণী পরাইবে। আর তাহাদের পিতাকে যেমন অভিষেক করিয়াছ, তদ্রূপ তাহাদিগকেও অভিষেক করিবে, তাহাতে তাহারা আমার যাজনকর্ম্ম করিবে; তাহাদের সেই অভিষেক পুরুষানুক্রমে চিরস্থায়ী যাজকত্বের জন্য হইবে। মোশি এইরূপ করিলেন; তিনি সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞানুসারে কার্য্য করিলেন। পরে দ্বিতীয় বৎসরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে আবাস স্থাপিত হইল। মোশি আবাস স্থাপন করিলেন, তাহার চুঙ্গি দিলেন, তক্তা বসাইলেন, অর্গল ভিতরে দিলেন ও তাহার স্তম্ভ সকল তুলিলেন। পরে ঐ আবাসের উপরে তাম্বু বিস্তার করিলেন, এবং তাম্বুর উপরে ছাদ দিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি সাক্ষ্যলিপি লইয়া সিন্দুকের মধ্যে রাখিলেন, সিন্দুকে বহন-দণ্ড দিলেন, এবং সিন্দুকের উপরে পাপাবরণ রাখিলেন, আর আবাসের মধ্যে সিন্দুক আনিলেন এবং ব্যবধানের তিরস্করিণী টাঙ্গাইয়া সাক্ষ্য-সিন্দুক আড়াল করিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি আবাসের উত্তর পার্শ্বে তিরস্করিণীর বাহিরে সমাগম-তাম্বুতে মেজ রাখিলেন, এবং তাহার উপরে সদাপ্রভুর সম্মুখে রুটী সাজাইয়া রাখিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি সমাগম-তাম্বুতে মেজের সম্মুখে আবাসের পার্শ্বে দক্ষিণদিকে দীপবৃক্ষ রাখিলেন, এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রদীপ জ্বালিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি সমাগম-তাম্বুতে তিরস্করিণীর সম্মুখে স্বর্ণবেদি রাখিলেন, এবং তাহার উপরে সুগন্ধি ধূপ জ্বালাইলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি আবাসের দ্বারে পর্দ্দা টাঙ্গাইলেন। আর তিনি সমাগম-তাম্বুরূপ আবাসের দ্বারসমীপে হোমবেদি রাখিয়া তাহার উপরে হোমবলি ও ভক্ষ্য নৈবেদ্য উৎসর্গ করিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি সমাগম-তাম্বু ও বেদির মধ্যস্থানে প্রক্ষালন-পাত্র রাখিয়া তাহার মধ্যে প্রক্ষালনার্থ জল দিলেন। তাহা হইতে মোশি, হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণ আপন আপন হস্ত পদ ধৌত করিতেন; যখন তাঁহারা সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিতেন, কিম্বা বেদির নিকটবর্ত্তী হইতেন, তৎকালে ধৌত করিতেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি আবাসের ও বেদির চারিদিকে প্রাঙ্গণ প্রস্তুত করিলেন, এবং প্রাঙ্গণের দ্বারের পর্দ্দা টাঙ্গাইলেন। এইরূপে মোশি কার্য্য সমাপ্ত করিলেন। তখন মেঘ সমাগম-তাম্বু আচ্ছাদন করিল, এবং সদাপ্রভুর প্রতাপ আবাস পরিপূর্ণ করিল। তাহাতে মোশি সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিতে পারিলেন না, কারণ মেঘ তাহার উপরে অবস্থিতি করিতেছিল, এবং সদাপ্রভুর প্রতাপ আবাস পরিপূর্ণ করিয়াছিল। আর আবাসের উপর হইতে মেঘ নীত হইলে, ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের প্রত্যেক যাত্রায় অগ্রসর হইত। কিন্তু মেঘ যদি ঊর্দ্ধে নীত না হইত, তবে যে দিন ঊর্দ্ধে নীত না হইত, সে দিন পর্য্যন্ত তাহারা যাত্রা করিত না। কেননা সমস্ত ইস্রায়েল-কুলের দৃষ্টিগোচরে তাহাদের সমস্ত যাত্রাতে দিবাতে সদাপ্রভুর মেঘ এবং রাত্রিতে অগ্নি আবাসের উপরে অবস্থিতি করিত। পরে সদাপ্রভু মোশিকে ডাকিয়া সমাগম-তাম্বু হইতে এই কথা কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, তোমাদের কেহ যদি সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার উৎসর্গ করে, তবে সে পশুপাল হইতে অর্থাৎ গোরু কিম্বা মেষপাল হইতে আপন উপহার লইয়া উৎসর্গ করুক। সে যদি গোপাল হইতে হোমবলির উপহার দেয়, তবে নির্দ্দোষ এক পুংপশু আনিবে; সদাপ্রভুর সম্মুখে গ্রাহ্য হইবার জন্য সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে আনয়ন করিবে। পরে হোমবলির মস্তকে হস্তার্পণ করিবে; আর তাহা তাহার প্রায়শ্চিত্তরূপে তাহার পক্ষে গ্রাহ্য হইবে। পরে সে সদাপ্রভুর সম্মুখে সেই গোবৎস হনন করিবে, ও হারোণের পুত্র যাজকগণ তাহার রক্ত নিকটে আনিবে, এবং সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে স্থিত বেদির উপরে সেই রক্ত চারিদিকে প্রক্ষেপ করিবে। আর সে ঐ হোমবলির চর্ম্ম খুলিয়া তাহাকে খণ্ড খণ্ড করিবে। পরে হারোণ যাজকের পুত্রগণ বেদির উপরে অগ্নি রাখিবে, ও অগ্নির উপরে কাষ্ঠ সাজাইবে। আর হারোণের পুত্র যাজকেরা সেই বেদির উপরিস্থ অগ্নির ও কাষ্ঠের উপরে তাহার খণ্ড সকল এবং মস্তক ও মেদ রাখিবে। কিন্তু তাহার অন্ত্র ও পদ জলে ধৌত করিবে; পরে যাজক বেদির উপরে সে সমস্ত দগ্ধ করিবে; ইহা হোমবলি, সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার। আর যদি সে মেষের কিম্বা ছাগের পাল হইতে হোমবলিরূপে উপহার দেয়, তবে নির্দ্দোষ এক পুংপশু আনিবে। আর তাহা বেদির পার্শ্বে উত্তরদিকে সদাপ্রভুর সম্মুখে হনন করিবে, এবং হারোণের পুত্র যাজকেরা বেদির উপরে চারিদিকে তাহার রক্ত প্রক্ষেপ করিবে। পরে সে তাহা খণ্ড খণ্ড করিবে, আর যাজক মস্তক ও মেদশুদ্ধ তাহা বেদির উপরিস্থ অগ্নির ও কাষ্ঠের উপরে সাজাইবে। কিন্তু তাহার অন্ত্র ও পদ জলে ধৌত করিবে; পরে যাজক সমস্তটা উৎসর্গ করিয়া বেদির উপরে দগ্ধ করিবে; তাহা হোমবলি, সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার। আর যদি সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পক্ষিগণ হইতে হোমবলির উপহার দেয়, তবে ঘুঘু কিম্বা কপোতশাবকদের মধ্য হইতে আপন উপহার দিবে। পরে যাজক তাহা বেদির নিকটে আনিয়া তাহার মস্তক মুচড়াইয়া তাহাকে বেদিতে দগ্ধ করিবে, এবং তাহার রক্ত বেদির পার্শ্বে নিষ্পীড়ন করিবে। পরে সে তাহার মলের সহিত আমাশয় লইয়া বেদির পূর্ব্ব পার্শ্বে ভস্মের স্থানে নিক্ষেপ করিবে। পরে উহার পক্ষ ভাঙ্গিবে, কিন্তু পক্ষীটী ছিঁড়িয়া ফেলিবে না; এবং যাজক বেদির উপরে, অগ্নির উপরিস্থ কাষ্ঠের উপরে তাহাকে দগ্ধ করিবে; তাহা হোমবলি, সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার। আর কেহ যখন সদাপ্রভুর উদ্দেশে ভক্ষ্য-নৈবেদ্য উপহার দেয়, তখন সূক্ষ্ম সূজি তাহার উপহার হইবে, এবং সে তাহার উপরে তৈল ঢালিবে ও কুন্দুরু দিবে; আর হারোণের পুত্র যাজকদের নিকটে সে তাহা আনিবে, এবং সে তাহা হইতে এক মুষ্টি সূক্ষ্ম সূজি ও তৈল এবং সমস্ত কুন্দুরু লইবে; পরে যাজক সেই নৈবেদ্যের স্মরণার্থক অংশ বলিয়া তাহা বেদির উপরে দগ্ধ করিবে; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার। এই ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের অবশিষ্ট অংশ হারোণের ও তাহার পুত্রগণের হইবে; সদাপ্রভুর অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া ইহা অতি পবিত্র। আর যদি তুমি তুন্দুরে পক্ব ভক্ষ্য-নৈবেদ্য উপহার দেও, তবে তৈলমিশ্রিত তাড়ীশূন্য সূক্ষ্ম সূজির পিষ্টক বা তৈলাক্ত তাড়ীশূন্য সরুচাকলী দিতে হইবে। আর যদি তুমি ভর্জ্জনপাত্রে ভর্জ্জিত ভক্ষ্য-নৈবেদ্য উপহার দেও, তবে তৈলমিশ্রিত তাড়ীশূন্য সূক্ষ্ম সূজি দিতে হইবে। তুমি তাহা খণ্ড খণ্ড করিয়া তাহার উপরে তৈল ঢালিবে; ইহা ভক্ষ্য-নৈবেদ্য। আর যদি তুমি কটাহে পক্ব ভক্ষ্য-নৈবেদ্য উপহার দেও, তবে তৈলপক্ব সূক্ষ্ম সূজি দিতে হইবে। এই সকল দ্রব্যের যে ভক্ষ্য-নৈবেদ্য তুমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে দিবে; তাহা আনিয়া যাজককে দিও, সে তাহা বেদির নিকটে আনিবে। এবং যাজক সেই ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের স্মরণার্থক অংশ লইয়া বেদিতে দগ্ধ করিবে; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার। আর সেই ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের অবশিষ্ট অংশ হারোণের ও তাহার পুত্রগণের হইবে; সদাপ্রভুর অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া তাহা অতি পবিত্র। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে যে কোন ভক্ষ্য-নৈবেদ্য আনিবে, তাহা তাড়ীতে প্রস্তুত হইবে না, কেননা তোমরা তাড়ী কিম্বা মধু, ইহার কিছুই সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া দগ্ধ করিবে না। তোমরা অগ্রিমাংশের উপহার বলিয়া তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিতে পার, কিন্তু সৌরভার্থে বেদির উপরে তাহা রাখা যাইবে না। আর তুমি আপন ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের প্রত্যেক উপহার লবণাক্ত করিবে; তুমি আপন ভক্ষ্য-নৈবেদ্যে আপন ঈশ্বরের নিয়মের লবণদানে ত্রুটি করিবে না; তোমার যাবতীয় উপহারের সহিত লবণ দিবে। আর যদি তুমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে আশুপক্ব শস্যের ভক্ষ্য-নৈবেদ্য নিবেদন কর, তবে তোমার আশুপক্ব শস্যের ভক্ষ্য-নৈবেদ্যরূপে অগ্নিতে ঝল্‌সান শীষ অর্থাৎ মর্দ্দিত কোমল শীষ নিবেদন করিবে। এবং তাহার উপরে তৈল দিবে ও কুন্দুরু রাখিবে; ইহা ভক্ষ্য-নৈবেদ্য। পরে যাজক তাহার স্মরণার্থক অংশরূপে কিছু মর্দ্দিত শস্য, কিছু তৈল ও সমস্ত কুন্দুরু দগ্ধ করিবে; ইহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার। কাহারও উপহার যদি মঙ্গলার্থক বলিদান হয়, এবং সে গোপাল হইতে পুং কিম্বা স্ত্রী গোরু দেয়, তবে সে সদাপ্রভুর সম্মুখে নির্দ্দোষ পশু আনিবে। সে আপন উপহারের মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে তাহাকে হনন করিবে; পরে হারোণের পুত্র যাজকগণ তাহার রক্ত বেদির উপরে চারিদিকে প্রক্ষেপ করিবে। পরে সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে সেই মঙ্গলার্থক বলি সম্বন্ধীয় অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিবে, তাহার আঁতড়িঢাকা মেদ ও অন্ত্রোপরিস্থিত সমস্ত মেদ, এবং দুই মেটিয়া, তদুপরিস্থিত পার্শ্বস্থ মেদ ও যকৃতের উপরিস্থ অন্ত্রাপ্লাবক মেটিয়ার সহিত ছাড়াইয়া লইবে। পরে হারোণের পুত্রগণ বেদির উপরিস্থ অগ্নির, কাষ্ঠের ও হব্যের উপরে তাহা দগ্ধ করিবে; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার। আর যদি সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে মঙ্গলার্থক বলিদানের উপহার মেষাদিপাল হইতে দেয়, তবে সে নির্দ্দোষ পুং কিম্বা স্ত্রী পশু উৎসর্গ করিবে। কেহ যদি উপহারার্থে মেষশাবক দেয়, তবে সে সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা আনিবে; আর আপন উপহারের মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে তাহাকে হনন করিবে, এবং হারোণের পুত্রগণ বেদির উপরে চারিদিকে তাহার রক্ত প্রক্ষেপ করিবে। আর মঙ্গলার্থক বলি হইতে কিছু লইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিবে; ফলতঃ তাহার মেদ ও সমস্ত লাঙ্গুল মেরুদণ্ডের নিকট হইতে ছাড়াইয়া লইবে, আর আঁতড়িঢাকা মেদ ও অন্ত্রের উপরিস্থ সমস্ত মেদ, এবং দুই মেটিয়া ও তদুপরিস্থিত পার্শ্বস্থ মেদ, এবং যকৃতের উপরিস্থিত অন্ত্রাপ্লাবক মেটিয়ার সহিত ছাড়াইয়া লইবে। পরে যাজক তাহা বেদির উপরে দগ্ধ করিবে; ইহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহাররূপ ভক্ষ্য। আর যদি সে উপহারার্থে ছাগল দেয়, তবে সে তাহা সদাপ্রভুর সম্মুখে আনিবে; তাহার মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে তাহাকে হনন করিবে, এবং হারোণের পুত্রগণ বেদির উপরে চারিদিকে তাহার রক্ত প্রক্ষেপ করিবে। পরে সে তাহা হইতে আপনার উপহার, সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিবে, অর্থাৎ আঁতড়িঢাকা মেদ ও অন্ত্রের উপরিস্থ সমস্ত মেদ এবং দুই মেটিয়া, তাহার উপরিস্থিত পার্শ্বস্থ মেদ, ও যকৃতের উপরিস্থিত অন্ত্রাপ্লাবক মেটিয়ার সহিত ছাড়াইয়া লইবে। পরে যাজক বেদির উপরে সে সমস্ত দগ্ধ করিবে; তাহা সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহাররূপ ভক্ষ্য; সমস্ত মেদ সদাপ্রভুর। তোমাদের পুরুষানুক্রমে তোমাদের সকল নিবাসে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি এই, তোমরা মেদ ও রক্ত কিছুই ভোজন করিবে না। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, কেহ যদি প্রমাদবশতঃ পাপ করে, অর্থাৎ সদাপ্রভুর আজ্ঞানিষিদ্ধ কর্ম্মের কোন এক কর্ম্ম যদি করে; বিশেষতঃ, অভিষিক্ত যাজক যদি এমন পাপ করে, যাহাতে লোকদের উপরে দোষ অর্শে, তবে সে স্বকৃত পাপের জন্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে নির্দ্দোষ এক গোবৎস পাপার্থক বলিরূপে উৎসর্গ করিবে। পরে সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সদাপ্রভুর সম্মুখে সেই গোবৎস আনিবে; তাহার মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাকে হনন করিবে। আর অভিষিক্ত যাজক সেই গোবৎসের কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া সমাগম-তাম্বুর মধ্যে আনিবে। আর যাজক সেই রক্তে আপন অঙ্গুলি ডুবাইয়া পবিত্র স্থানের তিরস্করিণীর অগ্রভাগে সদাপ্রভুর সম্মুখে সাত বার তাহার কিঞ্চিৎ রক্ত ছিটাইয়া দিবে। পরে যাজক সেই রক্তের কিছু লইয়া সমাগম-তাম্বুর মধ্যে সদাপ্রভুর সম্মুখে স্থিত সুগন্ধি ধূপের বেদির শৃঙ্গে দিবে, পরে গোবৎসের সমস্ত রক্ত লইয়া সমাগম-তাম্বুর দ্বারে স্থিত হোমবেদির মূলে ঢালিবে। আর পাপার্থক বলির গোবৎসের সমস্ত মেদ, অর্থাৎ আঁতড়িঢাকা মেদ, অন্ত্রের উপরিস্থিত সমস্ত মেদ, এবং দুই মেটিয়া ও তদুপরিস্থিত পার্শ্বস্থ মেদ ও যকৃতের উপরিস্থ অন্ত্রাপ্লাবক মেটিয়ার সহিত ছাড়াইয়া লইবে। মঙ্গলার্থক বলির গোবৎস হইতে যেমন লইতে হয়, তদ্রূপ লইবে; এবং যাজক হোমবেদির উপরে তাহা দগ্ধ করিবে। পরে ঐ গোবৎসের চর্ম্ম, সমস্ত মাংস, মস্তক ও পদ, অন্ত্র ও গোময়, সর্ব্বশুদ্ধ বৎসটী লইয়া শিবিরের বাহিরে কোন শুচি স্থানে, ভস্ম ফেলিয়া দিবার স্থানে, আনিয়া কাষ্ঠের উপরে অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে; ভস্ম ফেলিয়া দিবার স্থানেই তাহা পোড়াইতে হইবে। আর ইস্রায়েলের সমস্ত মণ্ডলী যদি প্রমাদবশতঃ পাপ করে, এবং তাহা সমাজের দৃষ্টির অগোচর থাকে, এবং সদাপ্রভুর আজ্ঞানিষিদ্ধ কোন কর্ম্ম করিয়া যদি দোষী হয়, তবে তাহাদের কৃত সেই পাপ যখন জ্ঞাত হইবে, তৎকালে সমাজ পাপর্থক বলিরূপে এক গোবৎস উৎসর্গ করিবে; লোকেরা সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে তাহাকে আনিবে। পরে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গ সদাপ্রভুর সম্মুখে সেই গোবৎসের মস্তকে হস্তার্পণ করিবে, এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাকে হনন করা যাইবে। পরে অভিষিক্ত যাজক সেই গোবৎসের কিঞ্চিৎ রক্ত সমাগম-তাম্বুমধ্যে আনিবে। আর যাজক সেই রক্তে আপন অঙ্গুলি ডুবাইয়া তাহার কিঞ্চিৎ তিরস্করিণীর অগ্রে, সদাপ্রভুর সম্মুখে সাত বার ছিটাইবে। এবং সেই রক্তের কিঞ্চিৎ লইয়া সমাগম-তাম্বুর মধ্যে সদাপ্রভুর সম্মুখে স্থিত বেদির শৃঙ্গের উপরে দিবে; পরে সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে স্থিত হোমবেদির মূলে অন্য সমস্ত রক্ত ঢালিয়া দিবে। আর বলি হইতে তাহার সমস্ত মেদ লইয়া বেদির উপরে দগ্ধ করিবে। সে ঐ পাপার্থক বলির বৎসকে যেরূপ করে, ইহাকেও তদ্রূপ করিবে; এইরূপে যাজক তাহাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে তাহাদের পাপের ক্ষমা হইবে। পরে সে গোবৎসকে শিবিরের বাহিরে লইয়া গিয়া প্রথম বৎসটী যেমন পোড়াইয়াছিল, তেমনি তাহাকেও পোড়াইয়া দিবে; ইহা সমাজের পাপর্থক বলিদান। আর যদি কোন অধ্যক্ষ পাপ করে, অর্থাৎ প্রমাদবশতঃ আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানিষিদ্ধ কোন কর্ম্ম করিয়া দোষী হয়, তবে তাহার কৃত সেই পাপ যখন সে জ্ঞাত হইবে, তৎকালে আপনার উপহার বলিয়া এক নির্দ্দোষ পুংছাগ আনিবে। পরে ঐ ছাগের মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া হোমবলি হননের স্থানে সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাকে হনন করিবে; ইহা পাপার্থক বলিদান। পরে যাজক আপন অঙ্গুলি দ্বারা সেই পাপর্থক বলির কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া হোমবেদির শৃঙ্গের উপরে দিবে, এবং তাহার রক্ত হোমবেদির মূলে ঢালিয়া দিবে। আর মঙ্গলার্থক বলিদানের মেদের ন্যায় তাহার সমস্ত মেদ লইয়া বেদিতে দগ্ধ করিবে; এইরূপে যাজক তাহার পাপমোচনার্থ প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে। আর সাধারণ লোকদের মধ্যে যদি কেহ প্রমাদবশতঃ সদাপ্রভুর কোন আজ্ঞানিষিদ্ধ কর্ম্ম দ্বারা পাপ করিয়া দোষী হয়, তবে সে যখন আপনার কৃত পাপ জ্ঞাত হইবে, তখন আপনার কৃত সেই পাপের জন্য আপনার উপহার বলিয়া পালের মধ্য হইতে এক নির্দ্দোষ ছাগী আনিবে। পরে ঐ পাপার্থক বলির মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া হোমবলিস্থানে সেই পাপার্থক বলি হনন করিবে। পরে যাজক অঙ্গুলি দ্বারা তাহার কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া হোমবেদির শৃঙ্গের উপরে দিবে, এবং তাহার সমস্ত রক্ত বেদির মূলে ঢালিয়া দিবে। আর মঙ্গলার্থক বলি হইতে নীত মেদের ন্যায় তাহার সকল মেদ ছাড়াইয়া লইবে; পরে যাজক সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থে বেদির উপরে তাহা দগ্ধ করিবে; এইরূপে যাজক তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে। যদি সে পাপার্থক বলির উপহারার্থে মেষশাবক আনে, তবে একটী নির্দ্দোষ মেষবৎসা আনিবে। আর সেই পাপার্থক বলির মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া হোমবলি হননের স্থানে সেই পাপার্থক বলি হনন করিবে। পরে যাজক অঙ্গুলি দ্বারা সেই পাপার্থক বলির কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া হোমবেদির শৃঙ্গগুলির উপরে দিবে, ও সমস্ত রক্ত বেদির মূলে ঢালিবে। পরে মঙ্গলার্থক বলির যে মেষশাবক, তাহার মেদ যেমন ছাড়ান যায়, তেমনি যাজক ইহার সকল মেদ ছাড়াইয়া লইবে, এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহারের রীতি অনুসারে তাহা বেদিতে দগ্ধ করিবে; এইরূপে যাজক তাহার কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে। আর যদি কেহ এইরূপে পাপ করে, সাক্ষী হইয়া, দিব্য করাইবার কথা শুনিলেও, যাহা দেখিয়াছে কিম্বা জানে, তাহা সে প্রকাশ না করে, তবে সে আপন অপরাধ বহন করিবে। কিম্বা যদি কেহ কোন অশুচি দ্রব্য স্পর্শ করে, অশুচি জন্তুর শব হউক, কিম্বা অশুচি গোমেষাদির শব হউক, কিম্বা অশুচি সরীসৃপের শব হউক, যদি সে তাহা জানিতে না পায় ও অশুচি হয়, তবে সে দোষী হইবে। কিম্বা মনুষ্যের কোন অশৌচ, অর্থাৎ যাহা দ্বারা মনুষ্য অশুচি হয়, এমন কিছু যদি কেহ স্পর্শ করে, ও তাহা জানিতে না পায়, তবে সে তাহা জ্ঞাত হইলে দোষী হইবে। আর কেহ অবিবেচনাপূর্ব্বক যে কোন বিষয়ে শপথ করুক না কেন, যদি কেহ আপন ওষ্ঠে অবিবেচনাপূর্ব্বক ভাল বা মন্দ কার্য্য করিব বলিয়া শপথ করে, ও তাহা জানিতে না পায়, তবে সে তাহা জ্ঞাত হইলে তদ্বিষয়ে দোষী হইবে। আর তদ্রূপ কোন বিষয়ে দোষী হইলে সে নিজকৃত পাপ স্বীকার করিবে। পরে সে পাপার্থক বলির নিমিত্তে পাল হইতে মেষবৎসা কিম্বা ছাগবৎসা লইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপনার কৃত পাপের উপযুক্ত দোষার্থক বলি উৎসর্গ করিবে; তাহাতে যাজক তাহার পাপমোচনার্থ প্রায়শ্চিত্ত করিবে। আর সে যদি মেষবৎসা আনিতে অসমর্থ হয়, তবে আপনার কৃত পাপের জন্য দুই ঘুঘু কিম্বা দুই কপোতশাবক, এই দোষার্থক বলি সদাপ্রভুর নিকটে আনিবে; তাহার একটী পাপার্থ, অন্যটী হোমার্থ হইবে। সে তাহাদিগকে যাজকের নিকটে আনিবে, ও যাজক অগ্রে পাপার্থক বলি উৎসর্গ করিয়া তাহার গলা মুচড়াইবে, কিন্তু ছিঁড়িয়া ফেলিবে না। পরে পাপার্থক বলির কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া বেদির গাত্রে ছিটাইবে, এবং অবশিষ্ট রক্ত বেদির মূলে ঢালিয়া দেওয়া যাইবে; ইহা পাপার্থক বলি। পরে সে বিধিমতে দ্বিতীয়টী হোমার্থে উৎসর্গ করিবে; এইরূপে যাজক তাহার কৃত পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে। আর সে যদি দুই ঘুঘু কিম্বা দুই কপোতশাবক আনিতেও অসমর্থ হয়, তবে তাহার কৃত পাপের জন্য তাহার উপহার বলিয়া ঐফার দশমাংশ সূজি পাপার্থক বলিরূপে আনিবে; তাহার উপরে তৈল দিবে না, ও কুন্দুরু রাখিবে না, কেননা তাহা পাপার্থক বলি। পরে সে তাহা যাজকের নিকটে আনিলে যাজক তাহার স্মরণার্থক অংশ বলিয়া তাহা হইতে এক মুষ্টি লইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহারের রীতি অনুসারে বেদিতে দগ্ধ করিবে; ইহা পাপার্থক বলি। যাজক এই সকলের মধ্যে তাহার কৃত কোন পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে; এবং [অবশিষ্ট দ্রব্য] ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের মত যাজকের হইবে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, যদি কেহ সদাপ্রভুর পবিত্র বস্তুর বিষয়ে প্রমাদবশতঃ সত্য লঙ্ঘন করিয়া পাপ করে, তবে সে সদাপ্রভুর নিকটে দোষার্থক বলি আনিবে, পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে তোমার নিরূপিত পরিমাণে রৌপ্য দিয়া পাল হইতে এক নির্দ্দোষ মেষ আনিয়া দোষার্থক বলি উপস্থিত করিবে। আর সে পবিত্র বস্তুর বিষয়ে যে পাপ করিয়াছে, তাহার পরিশোধ করিবে, তদ্ভিন্ন পাঁচ অংশের এক অংশও দিবে, এবং যাজকের নিকটে তাহা আনিবে; পরে যাজক সেই দোষার্থক মেষবলি দ্বারা তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে। আর যদি কেহ সদাপ্রভুর আজ্ঞানিষিদ্ধ কোন কর্ম্ম করিয়া পাপ করে, তবে সে তাহা না জানিলেও দোষী, সে আপন অপরাধ বহন করিবে। সে তোমার নিরূপিত মূল্য দিয়া পাল হইতে এক নির্দ্দোষ মেষ আনিয়া দোষার্থক বলিরূপে যাজকের নিকটে উপস্থিত করিবে, এবং সে প্রমাদবশতঃ অজ্ঞাতসারে যে দোষ করিয়াছে, যাজক তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে তাহার পাপের ক্ষমা হইবে। ইহাই দোষার্থক বলি, সে অবশ্য সদাপ্রভুর কাছে দোষী। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, কেহ যদি পাপ করিয়া সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে সত্য লঙ্ঘন করে, যদি গচ্ছিত অথবা বন্ধকরূপে দত্ত কিম্বা অপহৃত বস্তুর বিষয়ে সজাতীয়ের কাছে মিথ্যা কথা কহে, কিম্বা সজাতীয়ের প্রতি অন্যায় করে, কিম্বা হারাণ দ্রব্য পাইয়া তদ্বিষয়ে মিথ্যা কথা কহে ও মিথ্যা দিব্য করে, ইহার যে কোন কর্ম্ম দ্বারা কোন ব্যক্তি তদ্বিষয়ে পাপ করে, যদি সে এরূপ পাপ করিয়া দোষী হইয়া থাকে, তবে সে যাহা সবলে হরণ করিয়াছে, অথবা অন্যায় দ্বারা পাইয়াছে, কিম্বা যে গচ্ছিত বস্তু তাহার কাছে সমর্পিত হইয়াছে, কিম্বা সে যে হারাণ বস্তু পাইয়া রাখিয়াছে, কিম্বা যে কোন বিষয়ে সে মিথ্যা দিব্য করিয়াছে, সেই বস্তু সম্পূর্ণ ফিরাইয়া দিবে, এবং তাহার পাঁচ অংশের এক অংশ অধিক ফিরাইয়া দিবে; তাহার দোষ প্রকাশের দিবসে সে দ্রব্যস্বামীকে তাহা দিবে। আর সে সদাপ্রভুর নিকটে আপনার দোষার্থক বলি উপস্থিত করিবে, ফলতঃ তোমার নিরূপিত মূল্য দিয়া পাল হইতে এক নির্দ্দোষ মেষবলি দোষার্থে যাজকের নিকটে আনিবে। পরে যাজক সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহার নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাহাতে যে কোন কর্ম্ম দ্বারা সে দোষী হইয়াছে, তাহার ক্ষমা পাইবে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে এই আজ্ঞা কর। হোমের এই ব্যবস্থা; হোম বলি প্রভাত পর্য্যন্ত সমস্ত রাত্রি বেদির অগ্নিকুণ্ডের উপরে থাকিবে, এবং বেদির অগ্নি প্রজ্বলিত থাকিবে। আর যাজক নিজ গাত্রীয় মসীনা-বস্ত্র পরিবে, ও মসীনা-বস্ত্রের জাঙ্ঘিয়া শরীরে পরিধান করিবে, এবং বেদির উপরে অগ্নিকৃত হোমের যে ভস্ম আছে, তাহা তুলিয়া বেদির পার্শ্বে রাখিবে। পরে সে আপনার বস্ত্র ত্যাগ করিয়া অন্য বস্ত্র পরিধানপূর্ব্বক শিবিরের বাহিরে কোন শুচি স্থানে ভস্ম লইয়া যাইবে। আর বেদির উপরিস্থ অগ্নি প্রজ্বলিত থাকিবে, নির্ব্বাণ হইবে না; যাজক প্রতিদিন প্রাতঃকালে তাহার উপরে কাষ্ঠ দিয়া জ্বালিবে, এবং তাহার উপরে হোমবলি সাজাইয়া দিবে, ও মঙ্গলার্থক বলির মেদ তাহাতে দগ্ধ করিবে। বেদির উপরে অগ্নি সর্ব্বদা জ্বালিয়া রাখিতে হইবে; নির্ব্বাণ হইবে না। আর ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের এই ব্যবস্থা; হারোণের পুত্রগণ বেদির অগ্রে সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা আনিবে। পরে যাজক তাহা হইতে আপন মুষ্টি পূর্ণ করিয়া, নৈবেদ্যের কিঞ্চিৎ সূজি ও কিঞ্চিৎ তৈল এবং নৈবেদ্যের উপরিস্থ সমস্ত কুন্দুরু লইয়া তাহার স্মরণার্থক অংশরূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থে বেদিতে দগ্ধ করিবে। আর হারোণ ও তাহার পুত্রগণ তাহার অবশিষ্ট অংশ ভোজন করিবে; বিনা তাড়ীতে কোন পবিত্র স্থানে তাহা ভোজন করিতে হইবে; তাহারা সমাগম-তাম্বুর প্রাঙ্গণে তাহা ভোজন করিবে। তাড়ীর সহিত তাহা পাক করা হইবে না। আমি আপনার অগ্নিকৃত উপহার হইতে তাহাদের প্রাপ্য অংশ বলিয়া তাহা দিলাম; পাপার্থক বলির ও দোষার্থক বলির ন্যায় তাহা অতি পবিত্র। হারোণের সন্তানগণের মধ্যে সমস্ত পুরুষ তাহা ভোজন করিবে; সদাপ্রভুর অগ্নিকৃত উপহার হইতে ইহা পুরুষানুক্রমে চিরকাল তোমাদের অধিকার; যে কেহ তাহা স্পর্শ করিবে, তাহার পবিত্র হওয়া চাই। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, অভিষেক দিনে হারোণ ও তাহার পুত্রগণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই উপহার উৎসর্গ করিবে, নিত্য ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের জন্য ঐফার দশমাংশ সূক্ষ্ম সূজি, প্রাতঃকালে অর্দ্ধেক ও সন্ধ্যাকালে অর্দ্ধেক। তাহারা ভর্জ্জন-পাত্রে তৈল দিয়া তাহা ভাজিবে; উহা তৈলসিক্ত হইলে তুমি তাহা আনিয়া ঐ ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের খণ্ড খণ্ড পক্বান্ন সকল সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থে উৎসর্গ করিবে। পরে হারোণের পুত্রগণের মধ্যে যে তাহার পদে অভিষিক্ত যাজক হইবে, সে তাহা উৎসর্গ করিবে; চিরস্থায়ী বিধিমতে তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে সম্পূর্ণরূপে দগ্ধ হইবে। আর যাজকের প্রত্যেক ভক্ষ্য-নৈবেদ্য সম্পূর্ণরূপে দগ্ধ করিতে হইবে; তাহার কিছু খাইতে হইবে না। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে বল, পাপার্থক বলির এই ব্যবস্থা; যে স্থানে হোমবলির হনন হয়, সেই স্থানে সদাপ্রভুর সম্মুখে পাপার্থক বলিরও হনন হইবে; তাহা অতি পবিত্র। যে যাজক পাপার্থে তাহা উৎসর্গ করে, সে তাহা ভোজন করিবে; সমাগম-তাম্বুর প্রাঙ্গণে কোন পবিত্র স্থানে তাহা খাইতে হইবে। যে কেহ তাহার মাংস স্পর্শ করে, তাহার পবিত্র হওয়া চাই; এবং তাহার রক্তের ছিটা যদি কোন বস্ত্রে লাগে, তবে তুমি, যাহাতে ঐ রক্তের ছিটা লাগে, তাহা পবিত্র স্থানে ধৌত করিবে। আর যে মৃৎপাত্রে তাহা পাক করা যায়, তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিতে হইবে; যদি পিত্তলের পাত্রে তাহা পাক করা যায়, তবে তাহা জলে মাজিয়া পরিষ্কার করিতে হইবে। যাজকদের মধ্যে সমস্ত পুরুষ তাহা ভোজন করিতে পারিবে; তাহা অতি পবিত্র। কিন্তু পবিত্র স্থানে প্রায়শ্চিত্ত করিতে যে কোন পাপার্থক বলির রক্ত সমাগম-তাম্বুর ভিতরে আনীত হইবে, তাহা ভোজন করিতে হইবে না, অগ্নিতে পোড়াইয়া দিতে হইবে। আর দোষার্থক বলির এই ব্যবস্থা; তাহা অতি পবিত্র। যে স্থানে লোকেরা হোমবলি হনন করে, সেই স্থানে দোষার্থক বলি হনন করিবে, এবং যাজক বেদির উপরে চারিদিকে তাহার রক্ত প্রক্ষেপ করিবে। আর বলির সমস্ত মেদ উৎসর্গ করিবে, লাঙ্গুল ও আঁতড়িঢাকা মেদ, এবং দুই মেটিয়া ও তদুপরিস্থিত পার্শ্বস্থ মেদ, ও দুই মেটিয়ার সহিত যকৃতের উপরিস্থ অন্ত্রাপ্লাবক ছাড়াইয়া লইবে। আর যাজক সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহারার্থে বেদির উপরে এই সকল দগ্ধ করিবে; ইহা দোষার্থক বলি। যাজকগণের মধ্যে সমস্ত পুরুষ তাহা ভোজন করিবে, কোন পবিত্র স্থানে তাহা ভোজন করিতে হইবে; তাহা অতি পবিত্র। পাপার্থক বলি যেরূপ, দোষার্থক বলিও সেইরূপ; উভয়েরই এক ব্যবস্থা; যে যাজক তাহা দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত করে, তাহা তাহারই হইবে। আর যে যাজক কাহারও হোমবলি উৎসর্গ করে, সেই যাজক তাহার উৎসৃষ্ট হোমবলির চর্ম্ম পাইবে। এবং তুন্দুরে কিম্বা কটাহে কিম্বা ভর্জ্জনপাত্রে পক্ব যত ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, সে সকল উৎসর্গকারী যাজকের হইবে। তৈলমিশ্রিত কিম্বা শুষ্ক ভক্ষ্য-নৈবেদ্য সকল সমানরূপে হারোণের সকল পুত্রের হইবে। আর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসৃজ্য মঙ্গলার্থক বলির এই ব্যবস্থা। কেহ যদি স্তবার্থক বলি আনে, তবে সে স্তববলির সহিত তৈলমিশ্রিত তাড়ীশূন্য রুটী, তৈলাক্ত তাড়ীশূন্য সরুচাকলী, তৈলসিক্ত সূক্ষ্ম সূজি ও তৈলাক্ত পিষ্টক নিবেদন করিবে। সে মঙ্গলার্থক স্তববলির সহিত তাড়ীযুক্ত রুটী লইয়া উপহার দিবে। আর সে তাহা হইতে, অর্থাৎ প্রত্যেক উপহার, হইতে, এক একখানি পিষ্টক লইয়া উত্তোলনীয় উপহাররূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিবে; যে যাজক মঙ্গলার্থক বলির রক্ত প্রক্ষেপ করে, সে তাহা পাইবে। আর মঙ্গলার্থক স্তববলির মাংস উৎসর্গের দিনেই ভোজন করিতে হইবে; তাহার কিছুই প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত রাখিতে হইবে না। কিন্তু তাহার উপহারের বলি যদি মানত অথবা স্বেচ্ছাকৃত উপহার হয়, তবে বলি উৎসর্গের দিনে তাহা ভোজন করিতে হইবে, এবং পরদিনেও তাহার অবশিষ্ট অংশ ভোজন করা যাইবে। কিন্তু তৃতীয় দিনে বলির অবশিষ্ট মাংস অগ্নিতে পোড়াইয়া দিতে হইবে। যদি তৃতীয় দিনে তাহার মঙ্গলার্থক বলির কিঞ্চিৎ মাংস ভোজন করা যায়, তবে সেই বলি গ্রাহ্য হইবে না, এবং সেই বলি উৎসর্গকারীর পক্ষে গণ্য হইবে না, তাহা ঘৃণার্হ হইবে; এবং যে জন তাহা ভোজন করে, সে আপন অপরাধ বহন করিবে। আর কোন অশুচি বস্তুতে যে মাংস স্পৃষ্ট হয়, তাহা ভক্ষ্য হইবে না, অগ্নিতে পোড়াইয়া দিতে হইবে। অন্য মাংস প্রত্যেক শুচি লোকের খাদ্য। কিন্তু যে কেহ অশুচি থাকিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসৃষ্ট মঙ্গলার্থক বলির মাংস ভোজন করে, সেই প্রাণী আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর যদি কেহ কোন অশুচি বস্তু, অর্থাৎ মনুষ্যের অশুটি বস্তু কিম্বা অশুচি পশু কিম্বা কোন অশুচি ঘৃণার্হ বস্তু স্পর্শ করিয়া সদাপ্রভু সম্বন্ধীয় মঙ্গলার্থক বলির মাংস ভোজন করে, তবে সেই প্রাণী আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, তোমরা গোরুর কিম্বা মেষের কিম্বা ছাগের মেদ ভোজন করিও না। এবং স্বয়ংমৃত কিম্বা পশু দ্বারা বিদীর্ণ পশুর মেদ অন্যান্য কর্ম্মে ব্যবহার করিবে; কিন্তু কোন মতে তাহা ভোজন করিবে না; কেননা যে কোন পশু হইতে সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করা যায়, সেই পশুর মেদ যে কেহ ভোজন করিবে সেই ভোক্তা আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর তোমাদের কোন বাসস্থানে তোমরা কোন পশুর কিম্বা পক্ষীর রক্ত ভোজন করিও না। যে কেহ কোন প্রকারের রক্ত ভোজন করে, সেই প্রাণী আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, যে ব্যক্তি সদাপ্রভুর উদ্দেশে মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করে, সেই ব্যক্তি আপন মঙ্গলার্থক বলি হইতে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিজ উপহার আনিবে। ফলতঃ সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার অর্থাৎ বক্ষের সহিত মেদ স্বহস্তে আনিবে; তাহাতে সেই বক্ষঃ দোলনীয় নৈবেদ্যার্থে সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলায়িত হইবে। আর যাজক বেদির উপরে সেই মেদ দগ্ধ করিবে, কিন্তু বক্ষঃ হারোণের ও তাহার পুত্রগণের হইবে। আর তোমরা আপন আপন মঙ্গলার্থক বলির দক্ষিণ জঙ্ঘা উত্তোলনীয় উপহাররূপে যাজককে দিবে। হারোণের পুত্রগণের মধ্যে যে কেহ মঙ্গলার্থক বলির রক্ত ও মেদ উৎসর্গ করে, সে আপন অংশরূপে তাহার দক্ষিণ জঙ্ঘা পাইবে। কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে আমি মঙ্গলার্থক বলির দোলনীয় নৈবেদ্যার্থে বক্ষঃ ও উত্তোলনীয় নৈবেদ্যার্থে জঙ্ঘা লইয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণের দেয় বলিয়া চিরস্থায়ী অধিকাররূপে তাহা হারোণ যাজক ও তাহার পুত্রগণকে দিলাম। যে দিনে তাহারা সদাপ্রভুর যাজনকর্ম্ম করিতে নিযুক্ত হয়, সেই দিনাবধি সদাপ্রভুর অগ্নিকৃত উপহার হইতে ইহাই হারোণের ও তাহার পুত্রগণের অভিষেক জন্য অধিকার। সদাপ্রভু তাহাদের অভিষেক দিনে পুরুষানুক্রমে ইস্রায়েল-সন্তানগণের দেয় বলিয়া চিরস্থায়ী অধিকাররূপে ইহা তাহাদিগকে দিতে আজ্ঞা করিলেন। হোমের, ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের, পাপার্থক বলির, দোষার্থক বলির, হস্তপূরণের ও মঙ্গলার্থক বলির এই ব্যবস্থা। সদাপ্রভু যে দিন সীনয় প্রান্তরে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপন আপন উপহার উৎসর্গ করিতে আজ্ঞা দিলেন, সেই দিন সীনয় পর্ব্বতে মোশিকে এই বিষয়ের আজ্ঞা দিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণকে ও তাহার সহিত তাহার পুত্রগণকে, এবং বস্ত্র সকল, অভিষেকার্থক তৈল ও পাপার্থক বলির গোবৎস, দুই মেষ ও তাড়ীশূন্য রুটীর ডালি সঙ্গে লও, আর সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সমস্ত মণ্ডলীকে একত্র কর। তাহাতে মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সেইরূপ করিলেন; এবং সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে মণ্ডলী সমবেত হইল। তখন মোশি মণ্ডলীকে কহিলেন, সদাপ্রভু এই কর্ম্ম করিতে আজ্ঞা করিলেন। পরে মোশি হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণকে নিকটে আনিয়া জলে স্নান করাইলেন। আর হারোণকে অঙ্গরক্ষিণী পরাইলেন, কটিবন্ধনে বদ্ধকটি করিলেন, তাঁহার গাত্রে পরিচ্ছদ, ও তাঁহার উপরে এফোদ দিলেন, এবং এফোদের বুনানি করা পটুকাতে গাত্র বেষ্টন করিয়া তাহার সঙ্গে এফোদখানি বদ্ধ করিলেন। আর তাঁহার বক্ষে বুকপাটা দিলেন, এবং বুকপাটায় ঊরীম ও তুম্মীম বদ্ধ করিলেন। আর তাঁহার মস্তকে উষ্ণীষ দিলেন, ও তাঁহার কপালে উষ্ণীষের উপরে স্বর্ণময় পাতের পবিত্র মুকুট দিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে মোশি অভিষেকার্থ তৈল লইয়া আবাস ও তাহার মধ্যস্থিত সকল বস্তু অভিষেক করিয়া পবিত্র করিলেন। আর তাহার কিছু লইয়া বেদির উপরে সাত বার ছিটাইয়া দিলেন, এবং বেদি ও তৎসংক্রান্ত সকল পাত্র, প্রক্ষালনপাত্র ও তাহার খুরা পবিত্র করণার্থে অভিষেক করিলেন। পরে অভিষেকার্থ তৈলের কিঞ্চিৎ হারোণের মস্তকে ঢালিয়া তাঁহাকে পবিত্র করণার্থে অভিষেক করিলেন। পরে মোশি হারোণের পুত্রগণকে নিকটে আনিয়া তাহাদিগকেও অঙ্গরক্ষিণী পরাইলেন, কটিবন্ধনে বদ্ধকটি করিলেন, ও তাহাদের মাথায় শিরোভূষণ বাঁধিয়া দিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে মোশি পাপার্থক বলির গোবৎস আনিলেন, এবং হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণ সেই পাপার্থক বলির গোবৎসের মস্তকে হস্তার্পণ করিলেন। তখন তিনি তাহা হনন করিলেন, এবং মোশি তাহার রক্ত লইয়া, অঙ্গুলি দ্বারা বেদির চারিদিকে শৃঙ্গে দিয়া বেদিকে মুক্তপাপ করিলেন, এবং বেদির মূলে রক্ত ঢালিয়া দিলেন, ও তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে তাহা পবিত্র করিলেন। পরে তিনি অন্ত্রের উপরিস্থ সমস্ত মেদ, ও যকৃতের অন্ত্রাপ্লাবক এবং দুই মেটিয়া ও তাহার মেদ লইলেন, ও মোশি তাহা বেদির উপরে দগ্ধ করিলেন। আর তিনি চর্ম্ম, মাংস ও গোময়শুদ্ধ গোবৎসটী লইয়া গিয়া শিবিরের বাহিরে অগ্নিতে পোড়াইয়া দিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি হোমার্থক মেষটী আনিলেন; আর হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণ সেই মেষের মস্তকে হস্তার্পণ করিলেন। আর তিনি তাহা হনন করিলেন, এবং মোশি বেদির উপরে চারিদিকে তাহার রক্ত প্রক্ষেপ করিলেন। আর তিনি মেষটী খণ্ড খণ্ড করিলেন, এবং মোশি তাহার মস্তক, মাংসখণ্ডসমূহ ও মেদ দগ্ধ করিলেন। পরে তিনি তাহার অন্ত্র ও পদ জলে ধৌত করিলেন, এবং মোশি সমস্ত মেষটী বেদির উপরে দগ্ধ করিলেন; ইহা সৌরভার্থক হোমবলি; ইহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে তিনি দ্বিতীয় মেষ অর্থাৎ হস্তপূরণার্থক মেষটী আনিলেন; এবং হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণ ঐ মেষের মস্তকে হস্তার্পণ করিলেন। আর তিনি তাহাকে হনন করিলেন, এবং মোশি তাহার কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া হারোণের দক্ষিণ কর্ণের প্রান্তে ও দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠের উপরে ও দক্ষিণ পাদের অঙ্গুষ্ঠের উপরে দিলেন। পরে তিনি হারোণের পুত্রগণকে নিকটে আনিলেন, ও মোশি সেই রক্তের কিঞ্চিৎ লইয়া তাহাদের দক্ষিণ কর্ণের প্রান্তে, দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠের উপরে ও দক্ষিণ পাদের অঙ্গুষ্ঠের উপরে দিলেন, এবং মোশি অবশিষ্ট রক্ত বেদির উপরে চারিদিকে প্রক্ষেপ করিলেন। পরে তিনি মেদ ও লাঙ্গুল এবং অন্ত্রোপরিস্থ সমস্ত মেদ ও যকৃতের উপরিস্থ অন্ত্রাপ্লাবক এবং দুই মেটিয়া, তাহার মেদ ও দক্ষিণ জঙ্ঘা লইলেন। পরে সদাপ্রভুর সম্মুখে স্থিত তাড়ীশূন্য রুটীর ডালি হইতে একখানি তাড়ীশূন্য পিষ্টক, তৈলপক্ব রুটীর একখানি পিষ্টক ও একখানি সরুচাকলী লইয়া ঐ মেদের ও দক্ষিণ জঙ্ঘার উপরে রাখিলেন। আর হারোণের ও তাঁহার পুত্রগণের হস্তে সে সকল দিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলনীয় নৈবেদ্যের জন্য দোলাইলেন। পরে মোশি তাঁহাদের হস্ত হইতে সে সকল লইয়া বেদিতে হোমবলির উপরে দগ্ধ করিলেন; এই সকল সৌরভার্থক, হস্তপূরণের নৈবেদ্য, ইহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার হইল। পরে মোশি বক্ষঃ লইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলনীয় নৈবেদ্যের জন্য দোলাইলেন; ইহা হস্তপূরণার্থক মেষ হইতে মোশির অংশ হইল; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে মোশি অভিষেকার্থ তৈল হইতে ও বেদির উপরিস্থ রক্ত হইতে কিঞ্চিৎ লইয়া হারোণের উপরে, তাঁহার বস্ত্রের উপরে, এবং সেই সঙ্গে তাঁহার পুত্রগণের উপরে ও তাঁহাদের বস্ত্রের উপরে ছিটাইয়া দিয়া হারোণকে ও তাঁহার বস্ত্র সকল এবং সেই সঙ্গে তাঁহার পুত্রগণকে ও তাঁহাদের বস্ত্র সকল পবিত্র করিলেন। পরে মোশি হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণকে কহিলেন, তোমরা সমাগম-তাম্বুর দ্বারে [বলির] মাংস সিদ্ধ কর; এবং “হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণ তাহা ভোজন করিবেন,” আমার এই আজ্ঞানুসারে তোমরা সেই স্থানে তাহা এবং হস্তপূরণার্থক ডালিতে স্থিত রুটী ভোজন কর। পরে অবশিষ্ট মাংস ও রুটী লইয়া অগ্নিতে পোড়াইয়া দেও। আর তোমরা সাত দিন, অর্থাৎ তোমাদের হস্তপূরণের সমাপ্তিদিন পর্য্যন্ত, সমাগম-তাম্বুর দ্বার হইতে বাহির হইও না; কারণ তিনি সাত দিন তোমাদের হস্তপূরণ করিবেন। অদ্য যেরূপ করা গিয়াছে, তোমাদের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে তদ্রূপ করিবার আজ্ঞা সদাপ্রভু দিয়াছেন। তোমরা যেন মারা না পড়, এই জন্য সাত দিন পর্য্যন্ত সমাগম-তাম্বুর দ্বারে দিবারাত্র থাকিবে; এবং সদাপ্রভুর রক্ষণীয় রক্ষা করিবে; কেননা আমি এইরূপ আজ্ঞা পাইয়াছি। সদাপ্রভু মোশি দ্বারা যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণ সে সমস্তই পালন করিলেন। পরে অষ্টম দিনে মোশি হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণকে এবং ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গকে ডাকিলেন। তখন তিনি হারোণকে কহিলেন, তুমি পাপার্থক বলির নিমিত্তে নির্দ্দোষ এক পুংগোবৎস, ও হোমবলির নিমিত্তে নির্দ্দোষ এক মেষ লইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত কর। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, তোমরা সদাপ্রভুর সম্মুখে বলিদানার্থে পাপার্থক বলির নিমিত্তে এক ছাগ, হোমবলির নিমিত্তে একবর্ষীয় নির্দ্দোষ এক গোবৎস ও এক মেষবৎস, এবং মঙ্গলার্থক বলির নিমিত্তে এক বৃষ ও এক মেষ, এবং তৈলমিশ্রিত ভক্ষ্য-নৈবেদ্য লইবে; কেননা অদ্য সদাপ্রভু তোমাদিগকে দর্শন দিবেন। তখন তাহারা মোশির আজ্ঞানুসারে এই সকল সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে আনিল, আর সমস্ত মণ্ডলী নিকটবর্ত্তী হইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইল। পরে মোশি কহিলেন, সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই কর্ম্ম করিতে আজ্ঞা করিয়াছেন, ইহা করিলে তোমাদের প্রতি সদাপ্রভুর প্রতাপ প্রকাশ পাইবে। তখন মোশি হারোণকে কহিলেন, তুমি বেদির নিকটে যাও, তোমার পাপার্থক ও হোমবলি উৎসর্গ কর, আপনার ও লোকদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত কর; আর লোকদের উপহার নিবেদন করিয়া তাহাদের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত কর; যেমন সদাপ্রভু আজ্ঞা দিয়াছিলেন। তাহাতে হারোণ বেদির নিকটে গিয়া আপনার জন্য পাপার্থক বলির গোবৎস হনন করিলেন। পরে হারোণের পুত্রগণ তাঁহার নিকটে তাহার রক্ত আনিলেন; ও তিনি আপন অঙ্গুলি রক্তে ডুবাইয়া বেদির শৃঙ্গের উপরে দিলেন, এবং অবশিষ্ট রক্ত বেদির মূলে ঢালিলেন। আর পাপার্থক বলির মেদ, মেটিয়া ও যকৃতের উপরিস্থ অন্ত্রাপ্লাবক বেদির উপরে দগ্ধ করিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। কিন্তু তাহার মাংস ও চর্ম্ম শিবিরের বাহিরে অগ্নিতে পোড়াইয়া দিলেন। পরে তিনি হোমার্থক বলি হনন করিলেন এবং হারোণের পুত্রগণ তাঁহার নিকটে তাহার রক্ত আনিলে তিনি বেদির উপরে চারিদিকে তাহা প্রক্ষেপ করিলেন। পরে তাঁহার হোমবলির মাংসখণ্ড সকল ও মস্তক তাঁহার নিকটে আনিলেন; ও তিনি সেই সকল বেদির উপরে দগ্ধ করিলেন। পরে তাহার অন্ত্র ও পদ ধৌত করিয়া বেদিতে হোমবলির উপরে দগ্ধ করিলেন। পরে তিনি লোকদের উপহার নিকটে আনিলেন, এবং লোকদের জন্য পাপার্থক বলির ছাগ লইয়া প্রথমটীর ন্যায় হনন করিয়া পাপের জন্য উৎসর্গ করিলেন। পরে তিনি হোমবলি আনিয়া বিধিমতে উৎসর্গ করিলেন। আর ভক্ষ্য-নৈবেদ্য আনিয়া তাহার এক মুষ্টি লইয়া বেদির উপরে দগ্ধ করিলেন। ইহা ছাড়া তিনি প্রাতঃকালীয় হোমবলি দান করিলেন। পরে তিনি লোকদের জন্য মঙ্গলার্থক বলি ঐ বৃষ ও মেষ হনন করিলেন, এবং হারোণের পুত্রগণ তাঁহার নিকটে তাহার রক্ত আনিলে তিনি বেদির উপরে চারিদিকে তারা প্রক্ষেপ করিলেন। পরে বৃষের মেদ ও মেষের লাঙ্গুল এবং অন্ত্রের ও মেটিয়ার উপরিস্থ মেদ ও যকৃতের উপরিস্থ অন্ত্রাপ্লাবক, এই সমস্ত মেদ লইয়া দুই বক্ষের উপরে রাখিলেন, ও বেদির উপরে সেই মেদ দগ্ধ করিলেন। আর হারোণ সদাপ্রভুর সম্মুখে দুই বক্ষঃ ও দক্ষিণ জঙ্ঘা দোলনীয় নৈবেদ্যরূপে দোলাইলেন; যেমন মোশি আজ্ঞা দিয়াছিলেন। পরে হারোণ লোকদের দিকে আপন হস্ত বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; আর তিনি পাপার্থক বলি, হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিয়া নামিয়া আসিলেন। আর মোশি ও হারোণ সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিলেন, পরে বাহির হইয়া লোকদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; তখন সমস্ত লোকের কাছে সদাপ্রভুর প্রতাপ প্রকাশ পাইল। আর সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া বেদির উপরিস্থ হোমবলি ও মেদ ভস্ম করিল; তাহা দেখিয়া সমস্ত লোক আনন্দ-রব করিয়া উবুড় হইয়া পড়িল। আর হারোণের পুত্র নাদব ও অবীহূ আপন আপন অঙ্গারধানী লইয়া তাহাতে অগ্নি রাখিল, ও তাহার উপরে ধূপ দিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে তাঁহার আজ্ঞার বিপরীতে ইতর অগ্নি উৎসর্গ করিল। তাহাতে সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া তাহাদিগকে গ্রাস করিল, তাহারা সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রাণত্যাগ করিল। তখন মোশি হারোণকে কহিলেন, সদাপ্রভু ত ইহাই বলিয়াছিলেন, তিনি কহিয়াছিলেন, যাহারা আমার নিকটবর্ত্তী হয়, তাহাদের মধ্যে আমি অবশ্য পবিত্ররূপে মান্য হইব, ও সকল লোকের সম্মুখে গৌরবান্বিত হইব। তখন হারোণ নীরব হইয়া রহিলেন। পরে মোশি হারোণের পিতৃব্য উষীয়েলের পুত্র মীশায়েল ও ইলীষাফণকে ডাকিয়া কহিলেন, নিকটে আসিয়া তোমাদের ঐ দুই জন জ্ঞাতিকে তুলিয়া পবিত্র স্থানের সম্মুখ হইতে শিবিরের বাহিরে লইয়া যাও। তাহাতে তাহারা নিকটে গিয়া অঙ্গরক্ষিণী সমেত তাহাদিগকে তুলিয়া শিবিরের বাহিরে লইয়া গেল; যেমন মোশি বলিয়াছিলেন। পরে মোশি হারোণকে ও তাঁহার দুই পুত্র ইলীয়াসর ও ঈথামরকে কহিলেন, তোমরা যেন মারা না পড়, ও সমস্ত মণ্ডলীর প্রতি যেন ক্রোধ প্রজ্বলিত না হয়, এই জন্য তোমরা আপন আপন মস্তক মুক্তকেশ করিও না, ও আপন আপন বস্ত্র চিরিও না; কিন্তু তোমাদের ভ্রাতৃগণ, অর্থাৎ সমস্ত ইস্রায়েল-কুল, সদাপ্রভুর কৃত দাহ প্রযুক্ত রোদন করুক। আর তোমরা যেন মারা না পড়, এই জন্য সমাগম-তাম্বুর দ্বারের বাহির হইও না, কেননা তোমাদের গাত্রে সদাপ্রভুর অভিষেক-তৈল আছে। তাহাতে তাঁহারা মোশির বাক্যানুসারে সেইরূপ করিলেন। পরে সদাপ্রভু হারোণকে কহিলেন, তোমরা যেন মারা না পড়, এই জন্য যে সময়ে তুমি কিম্বা তোমার পুত্রগণ সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিবে, তৎকালে দ্রাক্ষারস কি মদ্য পান করিও না; ইহা পুরুষানুক্রমে তোমাদের পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি। তাহাতে তোমরা পবিত্র ও সামান্য বিষয়ের এবং শুচি ও অশুচি বিষয়ের প্রভেদ করিতে, এবং সদাপ্রভু মোশি দ্বারা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে সকল বিধি দিয়াছেন, তাহা তাহাদিগকে শিক্ষা দিতে পারিবে। পরে মোশি হারোণকে ও তাঁহার অবশিষ্ট দুই পুত্র ইলীয়াসর ও ঈথামরকে কহিলেন, সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহারের অবশিষ্ট যে ভক্ষ্য-নৈবেদ্য আছে, তাহা লইয়া গিয়া তোমরা বেদির পার্শ্বে বিনা তাড়ীতে ভোজন কর, কেননা তাহা অতি পবিত্র। কোন পবিত্র স্থানে তাহা ভোজন করিবে; কেননা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহারের মধ্যে তাহাই তোমার ও তোমার পুত্রগণের প্রাপ্তব্য অংশ; কারণ আমি এই আজ্ঞা পাইয়াছি। আর দোলনীয় বক্ষঃ ও উত্তোলনীয় জঙ্ঘা তুমি ও তোমার পুত্র কন্যাগণ কোন শুচি স্থানে ভোজন করিবে, কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণের মঙ্গলার্থক বলিদান হইতে তাহা তোমার ও তোমার সন্তানগণের প্রাপ্তব্য অংশ বলিয়া দত্ত হইয়াছে। তাহারা হবনীয় মেদের সহিত উত্তোলনীয় জঙ্ঘা ও দোলনীয় বক্ষঃ দোলনীয় নৈবেদ্য বলিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলাইবার জন্য আনিবে; তাহা তোমার ও তোমার সন্তানগণের চিরস্থায়ী অধিকার হইবে; যেমন সদাপ্রভু আজ্ঞা করিয়াছেন। পরে মোশি যত্নপূর্ব্বক পাপার্থক ছাগের অন্বেষণ করিলেন, আর দেখ, তাহা পোড়াইয়া দেওয়া হইয়াছিল; সেই জন্য তিনি হারোণের অবশিষ্ট দুই পুত্র ইলীয়াসর ও ঈথামরের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, সেই পাপার্থক বলি তোমরা পবিত্র স্থানে ভোজন কর নাই কেন? তাহা ত অতি পবিত্র, এবং মণ্ডলীর অপরাধ বহন করতঃ সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে তাহা তিনি তোমাদিগকে দিয়াছেন। দেখ, ভিতরে পবিত্র স্থানে তাহার রক্ত আনীত হয় নাই; আমার আজ্ঞানুসারে পবিত্র স্থানে তাহা ভোজন করা তোমাদের কর্ত্তব্য ছিল। তখন হারোণ মোশিকে কহিলেন, দেখ, উহারা অদ্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপন আপন পাপার্থক বলি ও আপন আপন হোমবলি উৎসর্গ করিয়াছে, আর আমার প্রতি এরূপ ঘটিল; যদি আমি অদ্য পাপার্থক বলি ভোজন করিতাম, তবে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে তাহা কি ভাল বোধ হইত? মোশি যখন ইহা শুনিলেন, তাঁহার দৃষ্টিতে ভাল বোধ হইল। আর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, ভূচর সমস্ত পশুর মধ্যে এই সকল জীব তোমাদের খাদ্য হইবে। পশুগণের মধ্যে যে কোন পশু সম্পূর্ণ দ্বিখণ্ড খুর-বিশিষ্ট ও জাওর কাটে, তাহা তোমরা ভোজন করিতে পার। কিন্তু যাহারা জাওর কাটে, কিম্বা দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট, তাহাদের মধ্যে তোমরা এই এই পশু ভোজন করিবে না। উষ্ট্র তোমাদের পক্ষে অশুচি, কেননা সে জাওর কাটে বটে, কিন্তু দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট নয়। আর শাফন তোমাদের পক্ষে অশুচি, কেননা সে জাওর কাটে, কিন্তু দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট নয়। আর শশক তোমাদের পক্ষে অশুচি, কেননা সে জাওর কাটে, কিন্তু দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট নয়। আর শূকর তোমাদের পক্ষে অশুচি, কেননা সে সম্পূর্ণরূপে দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট বটে, কিন্তু জাওর কাটে না। তোমরা তাহাদের মাংস ভোজন করিও না, এবং তাহাদের শবও স্পর্শ করিও না; তাহারা তোমাদের পক্ষে অশুচি। জলজন্তুদের মধ্যে তোমরা এই সকল ভোজন করিতে পার; জলাশয়ে, সমুদ্রে কি নদীতে স্থিত জন্তুর মধ্যে ডানা ও আঁইসবিশিষ্ট জন্তু তোমাদের খাদ্য। কিন্তু সমুদ্রে কি নদীতে স্থিত জলচরদের মধ্যে, জলে অবস্থিত যাবতীয় প্রাণীর মধ্যে যাহারা ডানা ও আঁইসবিশিষ্ট নয়, তাহারা তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ। তাহারা তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ হইবে; তোমরা তাহাদের মাংস ভোজন করিবে না, তাহাদের শবও ঘৃণা করিবে। জলজন্তুর মধ্যে যাহাদের ডানা ও আঁইস নাই, সে সকলই তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ। আর পক্ষিগণের মধ্যে এই সকল তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ হইবে; এ সকল অখাদ্য, এ সকল ঘৃণার্হ; ঈগল, হাড়গিলা, ও কুরল, চিল, ও আপন আপন জাতি অনুসারে গৃধ্র, এবং আপন আপন জাতি অনুসারে যাবতীয় কাক, উষ্ট্রপক্ষী, রাত্রিশ্যেন ও গাংচিল এবং আপন আপন জাতি অনুসারে শ্যেন, পেচক, মাছরাঙ্গা ও মহাপেচক, দীর্ঘগল হংস, পানিভেলা ও শকুনী, সারস এবং আপন আপন জাতি আনুসারে বক, টিট্টিভ ও বাদুড়। চারি চরণে গমনশীল পতঙ্গ সকল তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ। তথাপি চারি চরণে গমনশীল পক্ষবিশিষ্ট জন্তুর মধ্যে ভূমিতে উল্লম্ফনের নিমিত্তে যাহাদের পদের নলী দীর্ঘ, তাহারা তোমাদের খাদ্য হইবে। ফলতঃ আপন আপন জাতি অনুসারে পঙ্গপাল, আপন আপন জাতি অনুসারে বাঘাফড়িঙ্গ, আপন আপন জাতি অনুসারে, ঝিঁঝি, এবং আপন আপন জাতি অনুসারে অন্য ফড়িঙ্গ, এই সকল তোমাদের খাদ্য হইবে। কিন্তু আর সমস্ত চতুষ্পদ উড্ডীয়মান পতঙ্গ তোমাদের পক্ষে ঘৃণার্হ। এই সকল দ্বারা তোমরা অশুচি হইবে; যে কেহ তাহাদের শব স্পর্শ করিবে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে কেহ তাহাদের শবের কোন অংশ বহন করিবে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। যে সকল জন্তু কিঞ্চিৎ ছিন্ন খুরবিশিষ্ট, সম্পূর্ণরূপে দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট নয়, এবং জাওর কাটে না, তাহারা তোমাদের পক্ষে অশুচি; যে কেহ তাহাদিগকে স্পর্শ করে, সে অশুচি হইবে। আর সমস্ত চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে যে যে জন্তু থাবা দ্বারা চলে, তাহারা তোমাদের পক্ষে অশুচি; যে কেহ তাহাদের শব স্পর্শ করিবে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। যে কেহ তাহাদের শব বহন করিবে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে; তাহারা তোমাদের পক্ষে অশুচি। আর ভূচর সরীসৃপের মধ্যে এই সকল তোমাদের পক্ষে অশুচি; আপন আপন জাতি অনুসারে বেজি, ইন্দুর ও টিকটিকী, এবং গোসাপ, নীল টিকটিকী, মেটে গিড়গিড়ি, হরিৎ টিকটিকী ও কাঁকলাশ। সরীসৃপের মধ্যে এই সকল তোমাদের পক্ষে অশুচি; এই সকল মরিলে যে কেহ তাহাদিগকে স্পর্শ করিবে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর তাহাদের মধ্যে কাহারও শব যে দ্রব্যের উপরে পড়িবে, তাহাও অশুচি হইবে; কাষ্ঠের পাত্র কিম্বা বস্ত্র কিম্বা চর্ম্ম কিম্বা ছালা, যে কোন কর্ম্মযোগ্য পাত্র হউক, তাহা জলে ডুবাইতে হইবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে; পরে শুচি হইবে। কোন মৃৎপাত্রের মধ্যে তাহাদের শব পড়িলে তাহার মধ্যস্থিত সকল বস্তু অশুচি হইবে, ও তোমরা তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিবে। [তাহার মধ্যস্থিত] যে কোন খাদ্য সামগ্রীর উপরে জল দেওয়া যায়, তাহা অশুচি হইবে; এবং এই প্রকার সকল পাত্রে সর্ব্ব প্রকার পানীয় দ্রব্য অশুচি হইবে। যে কোন দ্রব্যের উপরে তাহাদের শবের কিঞ্চিৎ পড়ে, তাহা অশুচি হইবে; এবং যদি তুন্দুরে কিম্বা চুলাতে পড়ে, তবে তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিতে হইবে; তাহা অশুচি, তোমাদের পক্ষে অশুচি থাকিবে। কেবল উনুই কিম্বা যে কূপে অনেক জল থাকে, তাহা শুচি হইবে; কিন্তু যাহাতে তাহাদের শব স্পৃষ্ট হইবে, তাহাই অশুচি হইবে। আর তাহাদের শবের কিঞ্চিৎ যদি কোন বপনীয় বীজে পড়ে, তবে তাহা শুচি থাকিবে। কিন্তু বীজের উপরে জল থাকিলে যদি তাহাদের শবের কিঞ্চিৎ তাহার উপরে পড়ে, তবে তাহা তোমাদের পক্ষে অশুচি। আর তোমাদের খাদ্য কোন পশু মরিলে, যে কেহ তাহার শব স্পর্শ করিবে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে কেহ তাহার শবের মাংস ভক্ষণ করিবে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে; আর যে কেহ সেই শব বহন করিবে, সেও আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর ভূচর প্রত্যেক কীট ঘৃণার্হ; তাহা অখাদ্য হইবে। উরোগামী হউক কিম্বা চারি পদে কিম্বা ততোধিক পদে গমনকারী হউক, যে কোন ভূচর কীট হউক, তোমরা তাহা ভোজন করিও না, তাহা ঘৃণার্হ। কোন উরোগামী কীট দ্বারা তোমরা আপনাদিগকে ঘৃণার্হ করিও না, ও সেই সকলের দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না, পাছে তদ্দ্বারা অশুচি হও। কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর; অতএব তোমরা আপনাদিগকে পবিত্র কর; পবিত্র হও, কেননা আমি পবিত্র; তোমরা ভূমির উপরে গমনশীল কোন প্রকার উরোগামী জীব দ্বারা আপনাদিগকে অপবিত্র করিও না। কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর হইবার জন্য মিসর দেশ হইতে তোমাদিগকে আনিয়াছি; অতএব তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র। পশু, পক্ষী, জলচর সমস্ত প্রাণীর ও উরোগামী ভূচর সমস্ত প্রাণীর বিষয়ে এই ব্যবস্থা; ইহাতে শুচি অশুচি দ্রব্যের ও খাদ্য অখাদ্য প্রাণীর প্রভেদ জানা যায়। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, যে স্ত্রী গর্ভধারণ করিয়া পুত্র প্রসব করে, সে সাত দিন অশুচি থাকিবে, যেমন রজস্বলার অশৌচকালে, তেমনি সে অশুচি থাকিবে। পরে অষ্টম দিনে বালকটীর পুরুষাঙ্গের ত্বক্‌ছেদ হইবে। আর সে স্ত্রী তেত্রিশ দিন পর্য্যন্ত আপনার শৌচার্থ রক্তস্রাব অবস্থায় থাকিবে; যাবৎ শৌচার্থ দিন পূর্ণ না হয়, তাবৎ সে কোন পবিত্র বস্তু স্পর্শ করিবে না, এবং ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিবে না। আর যদি সে কন্যা প্রসব করে, তবে যেমন অশৌচকালে, তেমনি দুই সপ্তাহ অশুচি থাকিবে; পরে সে ছেষট্টি দিবস আপনার শৌচার্থ রক্তস্রাব অবস্থায় থাকিবে। পরে পুত্র কিম্বা কন্যা প্রসবের শৌচার্থক দিন সম্পূর্ণ হইলে সে হোমবলির জন্য এক বর্ষীয় একটী মেষবৎস, এবং পাপার্থক বলির জন্য একটী কপোতশাবক কিম্বা একটী ঘুঘু সমাগম-তাম্বুর দ্বারে যাজকের নিকটে আনিবে। আর যাজক সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা উৎসর্গ করিয়া সেই স্ত্রীর নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে সে আপন রক্তস্রাব হইতে শুচি হইবে। পুত্র কিম্বা কন্যা প্রসবকারিণীর জন্য এই ব্যবস্থা। যদি সে মেষবৎস আনিতে অক্ষম হয়, তবে দুইটী ঘুঘু কিম্বা দুইটী কপোতশাবক লইয়া তাহার একটী হোমার্থে, অন্যটী পাপার্থে দিবে; আর যাজক তাহার নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহাতে সে শুচি হইবে। আর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, যদি কোন মনুষ্যের শরীরের চর্ম্মে শোথ কিম্বা পামা কিম্বা চিক্কণ চিহ্ন হয়, আর তাহা শারীরের চর্ম্মে কুষ্ঠরোগের ঘায়ের ন্যায় হয়, তবে সে হারোণ যাজকের নিকটে কিম্বা তাহার পুত্র যাজকগণের মধ্যে কাহারও নিকটে আনীত হইবে। পরে যাজক তাহার শারীরের চর্ম্মস্থিত ঘা দেখিবে; যদি ঘায়ের লোম শুক্লবর্ণ হইয়া থাকে, এবং ঘা যদি দেখিতে শরীরের চর্ম্মপেক্ষা নিম্ন বোধ হয়, তবে তাহা কুষ্ঠরোগের ঘা, তাহা দেখিয়া যাজক তাহাকে অশুচি বলিবে। আর চিক্কণ চিহ্ন যদি তাহার শরীরের চর্ম্মে শুক্লবর্ণ হয়, কিন্তু দেখিতে চর্ম্মাপেক্ষা নিম্ন না হয়, এবং তাহার লোম শুক্লবর্ণ না হইয়া থাকে, তবে যাহার ঘা হইয়াছে, যাজক তাহাকে সাত দিন রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। পরে সপ্তম দিবসে যাজক তাহাকে দেখিবে; আর দেখ, যদি তাহার দৃষ্টিতে ঘা সেইরূপ থাকে, চর্ম্মে ঘা ব্যাপিয়া না থাকে, তবে যাজক তাহাকে আরও সাত দিন রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। আর সপ্তম দিনে যাজক তাহাকে পুনর্ব্বার দেখিবে; আর দেখ, যদি সেই ঘা মলিন হইয়া থাকে, ও চর্ম্মে ব্যাপিয়া না থাকে, তবে যাজক তাহাকে শুচি বলিবে; সে পামা; পরে সে আপন বস্ত্র ধৌত করিয়া শুচি হইবে। কিন্তু তাহার শৌচার্থে যাজককে দেখান হইলে পর যদি তাহার পামা চর্ম্মে ব্যাপিয়া থাকে, তবে আবার যাজককে দেখাইতে হইবে। তাহাতে যাজক দেখিবে, আর দেখ, যদি তাহার পামা চর্ম্মে ব্যাপিয়া থাকে, তবে যাজক তাহাকে অশুচি বলিবে তাহা কুষ্ঠরোগ। কোন মনুষ্যে কুষ্ঠরোগের ঘা হইলে সে যাজকের নিকটে আনীত হইবে। পরে যাজক দেখিবে; যদি তাহার চর্ম্মে শুক্লবর্ণ শোথ থাকে, এবং তাহার লোম শুক্লবর্ণ হইয়া থাকে, ও শোথে কাঁচা মাংস থাকে, তবে তাহা তাহার শরীরের চর্ম্মে পুরাতন কুষ্ঠ, আর যাজক তাহাকে অশুচি কহিবে; রুদ্ধ করিবে না; কেননা সে অশুচি। আর চর্ম্মের সর্ব্বত্র কুষ্ঠরোগ ব্যাপিলে যদি যাজকের দৃষ্টিগোচরে ঘা বিশিষ্ট ব্যক্তির মস্তকাবধি পাদ পর্য্যন্ত সমস্ত চর্ম্ম কুষ্ঠরোগে আচ্ছন্ন হইয়া থাকে, তবে যাজক তাহা দেখিবে; আর দেখ, যদি তাহার সর্ব্বাঙ্গ কুষ্ঠরোগে আচ্ছন্ন হইয়া থাকে, তবে সে, যাহার ঘা হইয়াছে, তাহাকে শুচি কহিবে; তাহার সর্ব্বাঙ্গই শুক্ল হইল, সে শুচি। কিন্তু যখন তাহার শরীরে কাঁচা মাংস প্রকাশ পায়, তখন সে অশুচি হইবে। যাজক তাহার কাঁচা মাংস দেখিয়া তাহাকে অশুচি কহিবে; সেই কাঁচা মাংস অশুচি; তাহা কুষ্ঠ। আর সে কাঁচা মাংস যদি পুনর্ব্বার শ্বেতবর্ণ হয়, তবে সে যাজকের কাছে যাইবে, আর যাজক তাহাকে দেখিবে; আর দেখ, যদি তাহার ঘা শ্বেতবর্ণ হইয়া থাকে, তবে যাজক, যাহার ঘা হইয়াছে, তাহাকে শুচি বলিবে; সে শুচি। আর শরীরের চর্ম্মে স্ফোটক হইয়া ভাল হইলে পর, যদি সেই স্ফোটকের স্থানে শ্বেতবর্ণ শোথ কিম্বা শ্বেত ও ঈষৎ রক্তবর্ণ চিক্কণ চিহ্ন হয়, তবে যাজকের নিকটে তাহা দেখাইতে হইবে। আর যাজক তাহা দেখিবে, আর দেখ, যদি তাহার দৃষ্টিতে তাহা চর্ম্মাপেক্ষা নিম্ন বোধ হয়, ও তাহার লোম শ্বেতবর্ণ হইয়া থাকে, তবে, যাজক তাহাকে অশুচি বলিবে; তাহা স্ফোটকে উৎপন্ন কুষ্ঠরোগের ঘা। কিন্তু যদি যাজক তাহাকে শ্বেতবর্ণ লোম না দেখে, এবং তাহা চর্ম্মাপেক্ষা নিম্ন বোধ না হয়, ও মলিন হয়, তবে যাজক তাহাকে সাত দিন রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। পরে তাহা যদি চর্ম্মে ব্যাপে, তবে যাজক তাহাকে অশুচি বলিবে; উহা ঘা। কিন্তু যদি চিক্কণ চিহ্ন স্বস্থানে থাকে, ও না বাড়ে, তবে তাহা স্ফোটকের দাগ; যাজক তাহাকে শুচি বলিবে। আর যদি শরীরের চর্ম্মে অগ্নিদাহ হয়, ও সেই দাহের কাঁচা স্থানে ঈষৎ রক্তমিশ্রিত শ্বেতবর্ণ কিম্বা কেবল শ্বেতবর্ণ চিক্কণ চিহ্ন হয়, তবে যাজক তাহা দেখিবে; আর দেখ, চিক্কণ চিহ্নে স্থিত লোম যদি শ্বেতবর্ণ হয়, ও দেখিতে চর্ম্মাপেক্ষা নিম্ন বোধ হয়, তবে তাহা অগিদাহে উৎপন্ন কুষ্ঠরোগ; অতএব যাজক তাহাকে অশুচি বলিবে, তাহা কুষ্ঠরোগের ঘা। কিন্তু যদি যাজক দেখে, চিক্কণ চিহ্নে স্থিত লোম শ্বেতবর্ণ নয়, ও চিহ্ন চর্ম্মাপেক্ষা নিম্ন নয়, কিন্তু মলিন, তবে যাজক তাহাকে সাত দিন রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। পরে সপ্তম দিনে যাজক তাহাকে দেখিবে; যদি চর্ম্মে ঐ রোগ ব্যাপিয়া থাকে, তবে যাজক তাহাকে অশুচি বলিবে; তাহা কুষ্ঠরোগের ঘা। আর যদি চিক্কণ চিহ্ন স্বস্থানে থাকে, চর্ম্মে বৃদ্ধি না পায়, কিন্তু মলিন হয়, তবে তাহা দগ্ধ স্থানের শোথ; যাজক তাহাকে শুচি বলিবে, কেননা তাহা অগ্নিকৃত ক্ষতের চিহ্ন। আর পুরুষের কিম্বা স্ত্রীর মস্তকে বা দাড়িতে ঘা হইলে যাজক সেই ঘা দেখিবে; আর দেখ, যদি তাহা দেখিতে চর্ম্মাপেক্ষা নিম্ন বোধ হয়, ও হরিদ্রাবর্ণ সূক্ষ্ম লোম থাকে, তবে যাজক তাহাকে অশুচি বলিবে; উহা ছুলি, উহা মস্তকের বা দাড়ির কুষ্ঠ। আর যাজক যদি ছুলির ঘা দেখে, আর দেখ, তাহার দৃষ্টিতে তাহা চর্ম্মাপেক্ষা নিম্ন না হয়, ও তাহাতে কৃষ্ণবর্ণ লোম নাই, তবে যাজক সেই ছুলির ঘা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাত দিন রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। পরে সপ্তম দিনে যাজক ঘা দেখিবে; আর দেখ, যদি সেই ছুলি বাড়িয়া না থাকে, ও তাহাতে হরিদ্রাবর্ণ লোম না হইয়া থাকে, এবং দেখিতে চর্ম্মাপেক্ষা ছুলি নিম্ন বোধ না হয়, তবে সে মুণ্ডিত হইবে, কিন্তু ছুলির স্থান মুণ্ডন করা যাইবে না; পরে যাজক ঐ ছুলি বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আর সাত দিন রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। আর সপ্তম দিনে যাজক সেই ছুলি দেখিবে; আর দেখ, যদি সেই ছুলি চর্ম্মে বাড়িয়া না থাকে, ও দেখিতে চর্ম্মাপেক্ষা নিম্ন না হইয়া থাকে, তবে যাজক তাহাকে শুচি বলিবে; পরে সে আপন বস্ত্র ধৌত করিয়া শুচি হইবে। আর শুচি হইলে পর যদি তাহার চর্ম্মে সেই ছুলি ব্যাপিয়া যায়, তবে যাজক তাহাকে দেখিবে; আর দেখ, যদি তাহার চর্ম্মে ছুলি বৃদ্ধি পাইয়া থাকে, তবে যাজক হরিদ্রাবর্ণ লোমের অন্বেষণ করিবে না; সে অশুচি। কিন্তু তাহার দৃষ্টিতে যদি ছুলি না বাড়িয়া থাকে, ও তাহাতে কৃষ্ণবর্ণ লোম উঠিয়া থাকে, তবে সেই ছুলির উপশম হইয়াছে, সে শুচি; যাজক তাহাকে শুচি বলিবে। আর যদি কোন পুরুষের কিম্বা স্ত্রীর শরীরের চর্ম্মে স্থানে স্থানে চিক্কণ চিহ্ন অর্থাৎ শ্বেতবর্ণ চিক্কণ চিহ্ন হয়, তবে যাজক তাহা দেখিবে; আর দেখ, যদি তাহার চর্ম্মনির্গত চিক্কণ চিহ্ন মলিন শ্বেতবর্ণ হয়, তবে তাহা চর্ম্মে উৎপন্ন নির্দ্দোষ স্ফোটক; সে শুচি। আর যে মনুষ্যের কেশ মস্তক হইতে খসিয়া পড়ে, সে নেড়া, সে শুচি। আর যাহার কেশ মস্তকের প্রান্ত হইতে খসিয়া পড়ে, সে কপালে নেড়া, সে শুচি। কিন্তু যদি নেড়া মাথায় কি নেড়া কপালে ঈষৎ রক্তমিশ্রিত শ্বেতবর্ণ ঘা হয়, তবে তাহা তাহার নেড়া মাথায় কিম্বা নেড়া কপালে উৎপন্ন কুষ্ঠ। যাজক তাহাকে দেখিবে; আর দেখ, যদি শরীরের চর্ম্মস্থিত কুষ্ঠের ন্যায় নেড়া মাথায় কিম্বা নেড়া কপালে ঈষৎ রক্তমিশ্রিত শ্বেতবর্ণ ঘা হইয়া থাকে, তবে সে কুষ্ঠী, সে অশুচি; যাজক তাহাকে অবশ্য অশুচি বলিবে; তাহার ঘা তাহার মস্তকে। আর যে কুষ্ঠীর ঘা হইয়াছে, তাহার বস্ত্র চেরা যাইবে, ও তাহার মস্তক মুক্তকেশ থাকিবে, ও সে আপনার ওষ্ঠ বস্ত্র দ্বারা ঢাকিয়া ‘অশুচি, অশুচি’ এই শব্দ করিবে। যত দিন তাহার গাত্রে থাকিবে, তত দিন সে অশুচি থাকিবে; সে অশুচি; সে একাকী বাস করিবে, শিবিরের বাহিরে তাহার বাসস্থান হইবে। আর লোমের বস্ত্রে কিম্বা মসীনার বস্ত্রে কুষ্ঠরোগের কলঙ্ক হয়, লোমের কিম্বা মসীনার তানাতে বা পড়িয়ানেতে যদি হয়, কিম্বা চর্ম্মে কি চর্ম্মনির্ম্মিত কোন দ্রব্যে যদি হয়; এবং বস্ত্রে কিম্বা চর্ম্মে কিম্বা তানাতে বা পড়িয়ানেতে কিম্বা চর্ম্মনির্ম্মিত কোন দ্রব্যে যদি ঈষৎ শ্যামবর্ণ কিম্বা ঈষৎ লোহিতবর্ণ কলঙ্ক হয়, তবে তাহা কুষ্ঠরোগের কলঙ্ক; তাহা যাজককে দেখাইতে হইবে; পরে যাজক ঐ কলঙ্ক দেখিয়া কলঙ্কযুক্ত বস্তু সাত দিন রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। পরে সপ্তম দিনে যাজক ঐ কলঙ্ক দেখিবে, যদি বস্ত্রে কিম্বা তানাতে কিম্বা পড়িয়ানেতে কিম্বা চর্ম্মে কিম্বা চর্ম্মনির্ম্মিত দ্রব্যে সেই কলঙ্ক বাড়িয়া থাকে, তবে তাহা সংহারক কুষ্ঠ; তাহা অশুচি। অতএব বস্ত্র কিম্বা লোমকৃত কি মসীনাকৃত তানা বা পড়িয়ান কিম্বা চর্ম্মনির্ম্মিত দ্রব্য, যে কিছুতে সেই কলঙ্ক হয়, তাহা সে পোড়াইয়া দিবে; কারণ তাহা সংহারক কুষ্ঠ, তাহা অগ্নিতে পোড়াইয়া দিতে হইবে। কিন্তু যাজক দেখিবে; আর দেখ, যদি সেই কলঙ্ক বস্ত্রে কিম্বা তানাতে বা পড়িয়ানেতে কিম্বা চর্ম্মের কোন দ্রব্যে বাড়িয়া না উঠে, তবে যাজক সেই কলঙ্কবিশিষ্ট দ্রব্য ধৌত করিতে আজ্ঞা দিবে, এবং আর সাত দিন তাহা রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। ধৌত হইলে পর যাজক সেই কলঙ্ক দেখিবে; আর দেখ, সেই কলঙ্ক যদি অন্যবর্ণ না হইয়া থাকে ও সেই কলঙ্ক যদি বাড়িয়া না থাকে, তবে তাহা অশুচি, তুমি তাহা অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে; উহা ভিতরে কিম্বা বাহিরে উৎপন্ন ক্ষত। কিন্তু যদি যাজক দেখে, আর দেখ, ধৌত করিবার পরে যাজকের দৃষ্টিতে যদি সেই কলঙ্ক মলিন হয়, তবে সে ঐ বস্ত্র হইতে কিম্বা চর্ম্ম হইতে কিম্বা তানা বা পড়িয়ান হইতে তাহা ছিঁড়িয়া ফেলিবে। তথাপি যদি সেই বস্ত্রে কিম্বা তানাতে বা পড়িয়ানেতে কিম্বা চর্ম্মনির্ম্মিত কোন দ্রব্যে তাহা পুনরায় দৃষ্ট হয়, তবে তাহা ব্যাপক কুষ্ঠ; যাহাতে সেই কলঙ্ক থাকে, তাহা তুমি অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে। আর যে বস্ত্র কিম্বা বস্ত্রের তানা বা পড়িয়ান কিম্বা চর্ম্মের যে কোন দ্রব্য ধৌত করিবে, তাহা হইতে যদি সেই কলঙ্ক দূর হয়, তবে দ্বিতীয় বার তাহা ধৌত করিবে; তাহাতে তাহা শুচি হইবে। লোমের কিম্বা মসীনাকৃত বস্ত্রের কিম্বা তানার বা পডিয়ানের কিম্বা চর্ম্মনির্ম্মিত কোন পাত্রের শৌচাশৌচ কথন বিষয়ে কুষ্ঠ জন্য কলঙ্কের এই ব্যবস্থা। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, কুষ্ঠরোগীর শুচি হইবার দিবসে তাহার পক্ষে এই ব্যবস্থা হইবে; সে যাজকের নিকটে আনীত হইবে। যাজক শিবিরের বাহিরে গিয়া দেখিবে; আর দেখ, যদি কুষ্ঠীর কুষ্ঠরোগের ঘায়ের উপশম হইয়া থাকে, তবে যাজক সেই শোধ্যমান ব্যক্তির নিমিত্তে দুইটী জীবৎ শুচি পক্ষী, এরস কাষ্ঠ, লোহিতবর্ণ লোম ও এসোব, এই সকল লইতে আজ্ঞা করিবে। আর যাজক মাটীর পাত্রে স্রোতোজলের উপরে একটী পক্ষী হনন করিতে আজ্ঞা করিবে। পরে সে ঐ জীবিত পক্ষী, এরস কাষ্ঠ, লোহিতবর্ণ লোম ও এসোব লইয়া ঐ স্রোতোজলের উপরে হত পক্ষীর রক্তে জীবিত পক্ষীর সহিত সে সকল ডুবাইবে, এবং কুষ্ঠ হইতে শোধ্যমান ব্যক্তির উপরে সাত বার ছিটাইয়া তাহাকে শুচি বলিবে, এবং ঐ জীবিত পক্ষীকে মাঠের দিকে ছাড়িয়া দিবে। তখন সেই শোধ্যমান ব্যক্তি আপন বস্ত্র ধৌত করিয়া ও সমস্ত কেশ মুণ্ডন করিয়া জলে স্নান করিবে, তাহাতে সে শুচি হইবে; তৎপরে সে শিবিরে প্রবেশ করিত পারিবে, কিন্তু সাত দিন আপন তাম্বুর বাহিরে থাকিবে। পরে সপ্তম দিনে সে আপন মস্তকের কেশ, দাড়ি, ভ্রূ ও সর্ব্বাঙ্গের লোম মুণ্ডন করিবে, এবং আপন বস্ত্র ধৌত করিয়া আপনি জলে স্নান করিয়া শুচি হইবে। পরে অষ্টম দিনে সে নির্দ্দোষ দুইটী মেষশাবক, একবর্ষীয়া নির্দ্দোষ একটী মেষবৎসা ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের জন্য তৈলমিশ্রিত [এক ঐফা] সূজির দশ অংশের তিন অংশ ও এক লোগ তৈল লইবে। পরে শুচিকারী যাজক ঐ শোধ্যমান লোকটীকে এবং ঐ সকল বস্তু লইয়া সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সদাপ্রভুর সম্মুখে স্থাপন করিবে। পরে যাজক একটী মেষশাবক লইয়া দোষার্থক বলিরূপে উৎসর্গ করিবে, এবং তাহা ও সেই এক লোগ তৈল দোলনীয় নৈবেদ্যরূপে সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলাইবে। যে স্থানে পাপার্থক বলি ও হোমবলি হনন করা যায়, সেই পবিত্র স্থানে ঐ মেষশাবকটীকে হনন করিবে, কেননা দোষার্থক বলি পাপার্থক বলির ন্যায় যাজকের অংশ; তাহা অতি পবিত্র। পরে যাজক ঐ দোষার্থক বলির কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া ঐ শোধ্যমান ব্যক্তির দক্ষিণ কর্ণের প্রান্তে, দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠে ও দক্ষিণ পাদের অঙ্গুষ্ঠে দিবে। আর যাজক সেই এক লোগ তৈলের কিয়দংশ লইয়া আপনার বাম হস্তের তালুতে ঢালিবে। পরে যাজক সেই বাম হস্তস্থিত তৈলে আপন দক্ষিণ হস্তাঙ্গুলি ডুবাইয়া অঙ্গুলি দ্বারা সেই তৈল হইতে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ সাত বার সদাপ্রভুর সম্মুখে ছিটাইয়া দিবে। আর আপন হস্তস্থিত অবশিষ্ট তৈলের কিয়দংশ লইয়া যাজক শোধ্যমান ব্যক্তির দক্ষিণ কর্ণের প্রান্তে, দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠে ও দক্ষিণ পাদের অঙ্গুষ্ঠে ঐ দোষার্থক বলির রক্তের উপরে দিবে। পরে যাজক আপন হস্তস্থিত অবশিষ্ট তৈল লইয়া ঐ শোধ্যমান ব্যক্তির মস্তকে দিবে, এবং যাজক সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহার নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিবে। আর যাজক পাপার্থক বলিদান করিবে, এবং সেই শোধ্যমান ব্যক্তির অশৌচের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তৎপরে হোমবলি হনন করিবে। আর যাজক হোমবলি ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্য বেদিতে উৎসর্গ করিবে, এবং যাজক তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাহাতে সে শুচি হইবে। আর সে ব্যক্তি যদি দরিদ্র হয়, এত আনিতে তাহার সঙ্গতি না থাকে, তবে সে আপনার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে দোলনীয় দোষার্থক বলির নিমিত্তে একটী মেষবৎস, ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, তৈলমিশ্রিত [এক ঐফা] সূজির দশ অংশের এক অংশ ও এক লোগ তৈল; এবং আপন সঙ্গতি অনুসারে দুইটী ঘুঘু কিম্বা দুইটী কপোতশাবক আনিবে; তাহার একটী পাপার্থক বলি, অন্যটী হোমবলি হইবে। পরে অষ্টম দিনে সে আপনার শৌচার্থে সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সদাপ্রভুর সম্মুখে যাজকের কাছে তাহাদিগকে আনিবে। পরে যাজক দোষার্থক বলির মেষশাবক ও উক্ত এক লোগ তৈল লইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলনীয় নৈবেদ্যার্থে তাহা দোলাইবে। পরে সে দোষার্থক বলির মেষশাবক হনন করিবে, এবং যাজক দোষার্থক বলির কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া শোধ্যমান ব্যক্তির দক্ষিণ কর্ণের প্রান্তে ও তাহার দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠে ও দক্ষিণ পাদের অঙ্গুষ্ঠে দিবে। পরে যাজক সেই তৈল হইতে কিঞ্চিৎ লইয়া আপন বাম হস্তের তালুতে ঢালিবে। আর যাজক দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুলি দিয়া বাম হস্তস্থিত তৈল হইতে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ সাত বার সদাপ্রভুর সম্মুখে ছিটাইয়া দিবে। আর যাজক আপন হস্তস্থিত তৈল হইতে কিঞ্চিৎ লইয়া শোধ্যমান ব্যক্তির দক্ষিণ কর্ণের প্রান্তে, দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠে ও দক্ষিণ পাদের অঙ্গুষ্ঠে দোষার্থক বলির রক্তের স্থানের উপরে দিবে। আর যাজক শোধ্যমান ব্যক্তির নিমিত্তে সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য আপন হস্তস্থিত অবশিষ্ট তৈল তাহার মস্তকে দিবে। পরে সে সঙ্গতি অনুসারে [দত্ত] দুইটী ঘুঘুর কিম্বা দুইটী কপোতশাবকের মধ্যে একটী উৎসর্গ করিবে; অর্থাৎ তাহার সঙ্গতি অনুসারে ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের সহিত একটী পাপর্থক বলি, অন্যটী হোমবলিরূপে উৎসর্গ করিবে, এবং যাজক শোধ্যমান ব্যক্তির নিমিত্তে সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রায়শ্চিত্ত করিবে। কুষ্ঠরোগের ঘা বিশিষ্ট যে ব্যক্তি আপন শুদ্ধির সম্বন্ধে সঙ্গতিহীন, তাহার জন্য এই ব্যবস্থা। পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, আমি যে দেশ অধিকারার্থে তোমাদিগকে দিব, সেই কনান দেশে তোমাদের প্রবেশের পর যদি আমি তোমাদের অধিকৃত দেশের কোন গৃহে কুষ্ঠরোগের কলঙ্ক উৎপন্ন করি, তবে সে গৃহের স্বামী আসিয়া যাজককে এই সংবাদ দিবে, আমার দৃষ্টিতে গৃহে কলঙ্কের মত দেখা দিতেছে। তৎপরে গৃহের সকল বস্তু যেন অশুচি না হয়, এই নিমিত্তে ঐ কলঙ্ক দেখিবার জন্য যাজকের প্রবেশের পূর্ব্বে গৃহ শূন্য করিতে যাজক আজ্ঞা করিবে; পরে যাজক গৃহ দেখিতে প্রবেশ করিবে। আর সে সেই কলঙ্ক দেখিবে; আর দেখ, যদি গৃহের ভিত্তিতে কলঙ্ক নিম্ন ও ঈষৎ হরিৎ কিম্বা লোহিতবর্ণ হয়, এবং তাহার দৃষ্টিতে ভিত্তি অপেক্ষা নিম্ন বোধ হয়, তবে যাজক গৃহ হইতে বাহির হইয়া গৃহদ্বারে গিয়া সাত দিন ঐ গৃহ রুদ্ধ করিয়া রাখিবে। সপ্তম দিনে যাজক পুনর্ব্বার আসিয়া দৃষ্টি করিবে; আর দেখ, গৃহের ভিত্তিতে সেই কলঙ্ক যদি বাড়িয়া থাকে, তবে যাজক আজ্ঞা করিবে, যেন কলঙ্কবিশিষ্ট প্রস্তর সকল উৎপাটন করিয়া লোকেরা নগরের বাহিরে অশুচি স্থানে নিক্ষেপ করে। পরে সে গৃহের ভিতরের চারিদিক্‌ ঘর্ষণ করাইবে, ও তাহারা সেই ঘর্ষণের ধূলা নগরের বাহিরে অশুচি স্থানে ফেলিয়া দিবে। আর তাহারা অন্য প্রস্তর লইয়া সেই প্রস্তরের স্থানে বসাইবে, ও অন্য প্রলেপ লইয়া গৃহ লেপন করিবে। এইরূপে প্রস্তর উৎপাটন এবং গৃহ ঘর্ষণ ও লেপন করিলে পর যদি পুনর্ব্বার কলঙ্ক জন্মিয়া গৃহে বিস্তৃত হয়, তবে যাজক আসিয়া দেখিবে; আর দেখ, যদি ঐ গৃহে কলঙ্ক বাড়িয়া থাকে, তবে সেই গৃহে সংহারক কুষ্ঠ আছে, সেই গৃহ অশুচি। লোকেরা ঐ গৃহ ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, এবং গৃহের প্রস্তর, কাষ্ঠ ও প্রলেপ সকল নগরের বাহিরে অশুচি স্থানে লইয়া যাইবে। আর ঐ গৃহ যাবৎ রুদ্ধ থাকে, তাবৎ যে কেহ তাহার ভিতরে যায়, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে কেহ সেই গৃহে শয়ন করে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে; এবং যে কেহ সেই গৃহে আহার করে, সেও আপন বস্ত্র ধৌত করিবে। আর যদি যাজক প্রবেশ করিয়া দেখে, আর দেখ, সেই গৃহ লেপনের পর কলঙ্ক আর বাড়ে নাই, তবে যাজক সেই গৃহকে শুচি বলিবে, কেননা কলঙ্কের উপশম হইয়াছে। পরে সে ঐ গৃহ মুক্তপাপ করণার্থে দুইটী পক্ষী, এরসকাষ্ঠ, লোহিতবর্ণ লোম ও এসোব লইবে; এবং মাটীর পাত্রে স্রোতোজলের উপরে একটী পক্ষী হনন করিবে। পরে সে ঐ এরসকাষ্ঠ, এসোব, লোহিতবর্ণ লোম ও জীবিত পক্ষী, এই সকল লইয়া হত পক্ষীর রক্তে ও স্রোতোজলে ডুবাইয়া সাত বার গৃহে ছিটাইয়া দিবে। এইরূপে পক্ষীর রক্ত, স্রোতোজল, জীবিত পক্ষী, এরসকাষ্ঠ, এসোব ও লোহিতবর্ণ লোম, এই সকলের দ্বারা সেই গৃহ মুক্তপাপ করিবে। পরে ঐ জীবিত পক্ষীকে নগরের বাহিরে মাঠের দিকে ছাড়িয়া দিবে, এবং গৃহের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাহাতে তাহা শুচি হইবে। এই ব্যবস্থা সর্ব্বপ্রকার কুষ্ঠরোগের, শ্বিত্ররেগের, বস্ত্রস্থিত কুষ্ঠের, ও গৃহের, এবং শোথ, পামা ও চিক্কণ চিহ্নের; এই সকল কোন্‌ দিনে অশুচি ও কোন্‌ দিনে শুচি, তাহা জানাইবার জন্য; কুষ্ঠরোগের এই ব্যবস্থা। আর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে এই কথা বল, পুরুষের শরীরে প্রমেহ হইলে সেই প্রমেহে সে অশুচি হইবে। তাহার প্রমেহ জন্য অশৌচের বিধি এই, তাহার শরীর হইতে প্রমেহ ক্ষরুক, কিম্বা শরীরে বদ্ধ হউক, এ তাহার অশৌচ। প্রমেহী লোক যে কোন শয্যায় শয়ন করে, তাহা অশুচি; ও যাহা কিছুর উপরে বসে, তাহা অশুচি হইবে। আর যে কেহ তাহার শয্যা স্পর্শ করে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে কোন বস্তুর উপরে প্রমেহী বসে, তাহার উপরে যদি কেহ বসে, তবে সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে কেহ প্রমেহীর গাত্র স্পর্শ করে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর প্রমেহী যদি শুচি ব্যক্তির গাত্রে থুথু ফেলে, তবে সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর প্রমেহী যে কোন যানের উপরে আরোহণ করে, তাহা অশুচি হইবে। আর যে কেহ তাহার নীচস্থ কোন বস্তু স্পর্শ করে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে; এবং যে কেহ তাহা তুলে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর প্রমেহী আপন হস্ত জলে ধৌত না করিয়া যাহাকে স্পর্শ করে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর প্রমেহী যে কোন মাটীর পাত্র স্পর্শ করে, তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিতে হইবে, ও সকল কাষ্ঠপাত্র জলে ধৌত হইবে। আর প্রমেহী যখন আপন প্রমেহ হইতে শুচি হয়, তখন সে আপন শুচিত্বের নিমিত্তে সাত দিন গণনা করিবে, এবং আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, ও স্রোতোজলে স্নান করিবে; পরে শুচি হইবে। আর অষ্টম দিবসে সে আপনার নিমিত্তে দুইটী ঘুঘু কিম্বা দুইটী কপোতশাবক লইয়া সমাগম-তাম্বুর দ্বারে সদাপ্রভুর সম্মুখে আসিয়া তাহাদিগকে যাজকের হস্তে দিবে। যাজক তাহার একটী পাপার্থক বলি, অন্যটী হোমবলিরূপে উৎসর্গ করিবে, এইরূপে যাজক তাহার প্রমেহ হেতু তাহার জন্য সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রায়শ্চিত্ত করিবে। আর যদি কোন পুরুষের রেতঃপাত হয়, তবে সে আপনার সমস্ত শরীর জলে ধৌত করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে কোন বস্ত্রে কি চর্ম্মে রেতঃপাত হয়, তাহা জলে ধৌত করিতে হইবে; এবং তাহা সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর স্ত্রীর সহিত পুরুষ রেতঃশুদ্ধ শয়ন করিলে তাহারা উভয়ে জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে স্ত্রী রজস্বলা হয়, তাহার শরীরস্থ রক্ত ক্ষরিলে সাত দিবস তাহার অশৌচ থাকিবে, এবং যে কেহ তাহাকে স্পর্শ করে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর অশৌচকালে সে যে কোন শয্যায় শয়ন করিবে তাহা অশুচি হইবে; ও যাহার উপরে বসিবে, তাহা অশুচি হইবে। আর যে কেহ তাহার শয্যা স্পর্শ করিবে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে কেহ তাহার বসিবার কোন আসন স্পর্শ করে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর তাহার শয্যার কিম্বা আসনের উপরে কোন কিছু থাকিলে যে কেহ তাহা স্পর্শ করে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর অশৌচকালে যে পুরুষ তাহার সহিত শয়ন করে, ও তাহার রজঃ তাহার গাত্রে লাগে, সে সাত দিবস অশুচি থাকিবে; এবং যে কোন শয্যায় সে শয়ন করিবে, তাহাও অশুচি হইবে। আর অশৌচকাল ব্যতিরেকে যদি কোন স্ত্রীলোকের বহুদিন পর্য্যন্ত রক্তস্রাব হয়, কিম্বা অশৌচকালের পর যদি রক্ত ক্ষরে, তবে সেই অশুচি রক্তস্রাবের সকল দিন সে অশৌচকালের ন্যায় থাকিবে, সে অশুচি। সেই রক্তস্রাবের সমস্ত কাল যে কোন শয্যায় সে শয়ন করিবে, তাহা তাহার পক্ষে অশৌচকালের শয্যার ন্যায় হইবে; এবং যে কোন আসনের উপরে সে বসিবে, তাহা অশৌচকালের মত অশুচি হইবে। আর যে কেহ সেই সকল স্পর্শ করিবে, সে অশুচি হইবে, বস্ত্র ধৌত করিয়া জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর সেই স্ত্রীর রক্তস্রাব রহিত হইলে সে আপনার নিমিত্তে সাত দিন গণনা করিবে, তৎপরে সে শুচি হইবে। পরে অষ্টম দিবসে সে আপনার জন্য দুইটী ঘুঘু কিম্বা দুইটী কপোতশাবক লইয়া সমাগম-তাম্বুর দ্বারে যাজকের নিকটে আসিবে। যাজক তাহার একটী পাপার্থক বলি ও অন্যটী হোমবলিরূপে উৎসর্গ করিবে, তাহার রক্তস্রাবের অশৌচ প্রযুক্ত যাজক সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে। এই প্রকারে তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে তাহাদের অশৌচ হইতে পৃথক্‌ করিবে, পাছে তাহাদের মধ্যবর্ত্তী আমার আবাস অশুচি করিলে তাহারা আপন আপন অশৌচ প্রযুক্ত মারা পড়ে। প্রমেহী ও রেতঃপাতে অশুচি ব্যক্তি, এবং অশৌচার্ত্তা স্ত্রী, প্রমেহবিশিষ্ট পুরুষ ও স্ত্রী এবং অশুচি স্ত্রীর সহিত সংসর্গকারী পুরুষ, এই সকলের জন্য এই ব্যবস্থা। হারোণের দুই পুত্র সদাপ্রভুর নিকটে উপস্থিত হইয়া মারা পড়িলে পর, সদাপ্রভু মোশির সহিত আলাপ করিলেন। সদাপ্রভু মোশিকে এই কথা কহিলেন, তুমি আপন ভ্রাতা হারোণকে বল, যেন সে অতি পবিত্র স্থানে তিরস্করিণীর ভিতরে, সিন্দুকের উপরিস্থ পাপাবরণের সম্মুখে সর্ব্ব সময়ে প্রবেশ না করে, পাছে তাহার মৃত্যু হয়; কেননা আমি পাপাবরণের উপরে মেঘে দর্শন দিব। হারোণ পাপার্থে একটী গোবৎস ও হোমার্থে একটী মেষ সঙ্গে লইয়া, এইরূপে অতি পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিবে। সে মসীনার পবিত্র অঙ্গরক্ষিণী পরিধান করিবে, মসীনার জাঙ্ঘিয়া পরিধান করিবে, মসীনার কটিবন্ধন পরিবে, এবং মসীনার উষ্ণীষে বিভূষিত হইবে; এ সকল পবিত্র বস্ত্র; সে জলে আপন শরীর ধৌত করিয়া এই সকল পরিধান করিবে। পরে সে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মণ্ডলীর নিকটে পাপার্থক বলিরূপে দুইটী ছাগ ও হোমার্থে একটী মেষ লইবে। আর হারোণ আপনার জন্য পাপার্থক বলির গোবৎস আনয়ন করিয়া নিজের ও নিজ কুলের নিমিত্ত প্রায়শ্চিত্ত করিবে। পরে সেই দুইটী ছাগ লইয়া সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত করিবে। পরে হারোণ ঐ দুইটী ছাগের বিষয়ে গুলিবাঁট করিবে; এক গুলি সদাপ্রভুর নিমিত্তে, ও অন্য গুলি ত্যাগের নিমিত্তে হইবে। গুলিবাঁট দ্বারা যে ছাগ সদাপ্রভুর নিমিত্তে হয়, হারোণ তাহাকে লইয়া পাপার্থে বলিদান করিবে। কিন্তু গুলিবাঁট দ্বারা যে ছাগ ত্যাগের নিমিত্তে হয়, সে যেন ত্যাগের নিমিত্তে প্রান্তরে প্রেরিত হইতে পারে, তন্নিমিত্ত তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাকে জীবিত উপস্থিত করিতে হইবে। পরে হারোণ আপনার পাপার্থক বলির গোবৎস আনিয়া নিজের ও নিজ কুলের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিবে, ফলতঃ সে আপনার পাপার্থক বলি সেই গোবৎসকে হনন করিবে; আর সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে, বেদির উপর হইতে, প্রজ্বলিত অঙ্গারে পূর্ণ অঙ্গারধানী ও এক মুষ্টি চূর্ণীকৃত সুগন্ধি ধূপ লইয়া তিরস্করিণীর ভিতরে যাইবে। আর ঐ ধূপ সদাপ্রভুর সম্মুখে অগ্নিতে দিবে; তাহাতে সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরিস্থ পাপাবরণ ধূপের ধূমমেঘে আচ্ছন্ন হইলে সে মরিবে না। পরে সে ঐ গোবৎসের কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া পাপাবরণের পূর্ব্বপার্শ্বে অঙ্গুলি দ্বারা ছিটাইয়া দিবে, এবং অঙ্গুলি দ্বারা পাপাবরণের সম্মুখে ঐ রক্ত সাত বার ছিটাইয়া দিবে। পরে সে লোকদের পাপার্থক বলির ছাগটী হনন করিয়া তাহার রক্ত তিরস্করিণীর ভিতরে আনিয়া যেমন গোবৎসের রক্ত ছিটাইয়া দিয়াছিল, সেইরূপ তাহারও রক্ত লইয়া করিবে, পাপাবরণের উপরে ও পাপাবরণের সম্মুখে তাহা ছিটাইয়া দিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণের নানাবিধ অশুচিতা ও অধর্ম্ম, অর্থাৎ সর্ব্ববিধ পাপপ্রযুক্ত সে পবিত্র স্থানের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, এবং যে সমাগম-তাম্বু তাহাদের সহিত, তাহাদের নানাবিধ অশৌচের মধ্যে বসতি করে, তাহার নিমিত্তে সে তদ্রূপ করিবে। আর প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য পবিত্র স্থানে প্রবেশ করা অবধি যে পর্য্যন্ত সে বাহির না হয়, এবং আপনার ও নিজ কুলের এবং সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত সমাপ্ত না করে, সেই পর্য্যন্ত সমাগম-তাম্বুতে কোন মনুষ্য থাকিবে না। সে নির্গত হইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখবর্ত্তী বেদীর নিকটে গিয়া তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, এবং সেই গোবৎসের কিঞ্চিৎ রক্ত ও ছাগের কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া বেদির চারিদিকে শৃঙ্গের উপরে দিবে। আর সে রক্তের কিয়দংশ লইয়া আপন অঙ্গুলি দ্বারা তাহার উপরে সাত বার ছিটাইয়া দিয়া তাহা শুচি করিবে, ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের অশৌচ হইতে তাহা পবিত্র করিবে। এইরূপে সে পবিত্র স্থানের, সমাগম-তাম্বুর ও বেদির জন্য প্রায়শ্চিত্তকার্য্য সমাপ্ত করিলে পর সেই জীবিত ছাগটী আনিবে; পরে হারোণ সেই জীবিত ছাগের মস্তকে আপনার দুই হস্ত অর্পণ করিবে, এবং ইস্রায়েল সন্তানগণের সমস্ত অপরাধ ও তাহাদের সমস্ত অধর্ম্ম অর্থাৎ তাহাদের সর্ব্ববিধ পাপ তাহার উপরে স্বীকার করিয়া সে সমস্ত ঐ ছাগের মস্তকে অর্পণ করিবে; পরে যে প্রস্তুত হইয়াছে, এমন লোকের হস্ত দ্বারা তাহাকে প্রান্তরে পাঠাইয়া দিবে। আর ঐ ছাগ নিজের উপরে তাহাদের সমস্ত অপরাধ বিচ্ছিন্ন ভূমিতে বহিয়া লইয়া যাইবে; আর সেই ব্যক্তি ছাগটীকে প্রান্তরে ছাড়িয়া দিবে। আর হারোণ সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিবে, এবং পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিবার সময়ে যে সকল মসীনা-বস্ত্র পরিধান করিয়াছিল, তাহা ত্যাগ করিয়া সেই স্থানে রাখিবে। পরে সে কোন পবিত্র স্থানে আপন শরীর জলে ধৌত করিয়া নিজ বস্ত্র পরিধান করতঃ বাহিরে আসিবে, এবং আপনার হোমবলি ও লোকদের হোমবলি উৎসর্গ করিয়া আপনার নিমিত্তে ও লোকদের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিবে। আর সে পাপার্থক বলির মেদ বেদিতে দগ্ধ করিবে। আর যে ব্যক্তি ত্যাগের ছাগটী ছাড়িয়া দিয়াছিল, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, ও আপন গাত্র জলে ধৌত করিবে, তৎপরে শিবিরে আসিবে। আর পাপার্থক বলির গোবৎস ও পাপার্থক বলির ছাগ, যাহাদের রক্ত প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে পবিত্র স্থানে আনীত হইয়াছিল, লোকেরা তাহাদিগকে শিবিরের বাহিরে লইয়া গিয়া তাহাদের চর্ম্ম, মাংস ও মল অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে। আর যে জন তাহা পোড়াইয়া দিবে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, ও আপন গাত্র জলে ধৌত করিবে, তৎপরে শিবিরে আসিবে। তোমাদের নিমিত্ত ইহা চিরস্থায়ী বিধি হইবে; সপ্তম মাসের দশম দিনে স্বদেশী কিম্বা তোমাদের মধ্যে প্রবাসকারী বিদেশী, তোমরা আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিবে ও কোন ব্যবসায় কর্ম্ম করিবে না। কেননা সেই দিন তোমাদিগকে শুচি করণার্থে তোমাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা যাইবে; তোমরা সদাপ্রভুর সম্মুখে আপনাদের সকল পাপ হইতে শুচি হইবে। তাহা তোমাদের বিশ্রামার্থক বিশ্রামদিন; এবং তোমরা আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিবে; ইহা চিরস্থায়ী বিধি। পিতার স্থানে যাজন কর্ম্ম করিতে যাহাকে অভিষেক ও হস্তপূরণ দ্বারা নিযুক্ত করা যাইবে, সেই যাজক প্রায়শ্চিত্ত করিবে, এবং মসীনা বস্ত্র অর্থাৎ পবিত্র বস্ত্র সকল পরিধান করিবে। আর সে পবিত্র ধর্ম্মধামের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, এবং সমাগম-তাম্বুর ও বেদির জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, এবং যাজকগণের ও সমাজের সমস্ত লোকের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে। ইস্রায়েল-সন্তানগণের জন্য তাহাদের সমস্ত পাপপ্রযুক্ত বৎসরের মধ্যে এক বার প্রায়শ্চিত্ত করা তোমাদের পক্ষে চিরস্থায়ী বিধি হইবে। তখন [হারোণ] মোশির প্রতি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে এবং সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানকে কহ, তাহাদিগকে এই কথা বল, সদাপ্রভু এই আজ্ঞা করেন; ইস্রায়েল-কুলজাত যে কেহ শিবিরের মধ্যে কিম্বা শিবিরের বাহিরে গোরু কিম্বা মেষ কিম্বা ছাগ হনন করে, কিন্তু সদাপ্রভুর আবাসের সম্মুখে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার উৎসর্গ করিতে সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে তাহা না আনে, তাহার উপর রক্তপাতের পাপ গণিত হইবে; সে রক্তপাত করিয়াছে, সে ব্যক্তি আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের যে যে যজ্ঞীয় পশু মাঠে লইয়া গিয়া বলিদান করে, সে সমস্ত সদাপ্রভুর উদ্দেশে সমাগম-তাম্বুর দ্বারে যাজকের নিকটে আনিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে মঙ্গলার্থক বলি বলিয়া বলিদান করিতে হইবে। আর যাজক সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সদাপ্রভুর বেদির উপরে তাহাদের রক্ত প্রক্ষেপ করিবে, এবং মেদ সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থে দগ্ধ করিবে। তাহাতে তাহারা যে ছাগদের অনুগমনে ব্যভিচার করিয়া আসিতেছে, তাহাদের উদ্দেশে আর বলিদান করিবে না। ইহা তাহাদের পুরুষানুক্রমে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি হইবে। আর তুমি তাহাদিগকে বল, ইস্রায়েল-কুলজাত কোন ব্যক্তি কিম্বা তাহাদের মধ্যে প্রবাসকারী কোন বিদেশী লোক যদি হোম কিম্বা বলিদান করে, কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করিবার জন্য তাহা সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে না আনে, তবে সে আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর ইস্রায়েল-কুলজাত কোন ব্যক্তি, কিম্বা তাহাদের মধ্যে প্রবাসকারী কোন বিদেশী লোক যদি কোন প্রকার রক্ত ভোজন করে, তবে আমি সেই রক্তভোক্তার প্রতি বিমুখ হইব, ও তাহার লোকদের মধ্য হইতে তাহাকে উচ্ছিন্ন করিব। কেননা রক্তের মধ্যেই শরীরের প্রাণ থাকে, এবং তোমাদের প্রাণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থ আমি তাহা বেদির উপরে তোমাদিগকে দিয়াছি; কারণ প্রাণের গুণে রক্তই প্রায়শ্চিত্তসাধক। এই জন্য আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলাম, তোমাদের মধ্যে কেহ রক্ত ভোজন করিবে না, ও তোমাদের মধ্যে প্রবাসকারী কোন বিদেশীও রক্ত ভোজন করিবে না। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে কোন ব্যক্তি কিম্বা তাহাদের মধ্যে প্রবাসকারী কোন বিদেশী লোক যদি মৃগয়াতে কোন খাদ্য পশু কিম্বা পক্ষী বধ করে, তবে সে তাহার রক্ত ঢালিয়া দিয়া ধূলাতে আচ্ছাদন করিবে। কেননা প্রত্যেক প্রাণীর রক্তই প্রাণ, তাহাই তাহার প্রাণস্বরূপ; এই জন্য আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলাম, তোমরা কোন প্রাণীর রক্ত ভোজন করিবে না, কেননা প্রত্যেক প্রাণীর রক্তই তাহার প্রাণ; যে কেহ তাহা ভোজন করিবে, সে উচ্ছিন্ন হইবে। আর স্বদেশী কি বিদেশীর মধ্যে যে কেহ স্বয়ংমৃত কিম্বা বিদীর্ণ পশু ভোজন করে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, জলে স্নান করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে; পরে শুচি হইবে। কিন্তু যদি বস্ত্র ধৌত না করে ও স্নান না করে, তবে সে আপন অপরাধ বহন করিবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে এই কথা বল, আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা যেখানে বাস করিয়াছ, সেই মিসর দেশের আচারানুযায়ী আচরণ করিও না; এবং যে কনান দেশে আমি তোমাদিগকে লইয়া যাইতেছি, তথাকারও আচারানুযায়ী আচরণ করিও না, ও তাহাদের বিধি অনুসারে চলিও না। তোমরা আমারই শাসন সকল মান্য করিও, আমারই বিধি সকল পালন করিও, এবং সেই পথে চলিও; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। অতএব তোমরা আমার বিধি সকল ও আমার শাসন সকল পালন করিবে; যে কেহ এই সকল পালন করে, সে এই সকলের দ্বারা বাঁচিবে; আমি সদাপ্রভু। তোমরা কেহ আত্মীয় কোন ব্যক্তির আবরণীয় অনাবৃত করিবার জন্য তাহার নিকটে যাইও না; আমি সদাপ্রভু। তুমি আপন পিতার আবরণীয় অর্থাৎ আপন মাতার আবরণীয় অনাবৃত করিও না; সে তোমার মাতা; তাহার আবরণীয় অনাবৃত করিও না। তোমার পিতৃভার্য্যার আবরণীয় অনাবৃত করিও না। তাহা তোমার পিতার আবরণীয়। তোমার ভগিনী, তোমার পিতৃকন্যা কিম্বা তোমার মাতৃকন্যা, গৃহজাতা হউক কিম্বা অন্যত্র জাতা হউক, তাহাদের আবরণীয় অনাবৃত করিও না। তোমার পৌত্রীর কিম্বা দৌহিত্রীর আবরণীয় অনাবৃত করিও না; কেননা তাহা তোমারই আবরণীয়। তোমার বিমাতৃকন্যার আবরণীয়, যে তোমার পিতা হইতে জন্মিয়াছে, যে তোমার ভগিনী, তাহার আবরণীয় অনাবৃত করিও না। তোমার পিতৃষ্বসার আবরণীয় অনাবৃত করিও না, সে তোমার পিতার আত্মীয়া। তোমার মাতৃষ্বসার আবরণীয় অনাবৃত করিও না, সে তোমার মাতার আত্মীয়া। তোমার পিতৃব্যের আবরণীয় অনাবৃত করিও না, তাহার পত্নীর নিকট গমন করিও না, সে তোমার পিতৃব্যা। তোমার পুত্রবধূর আবরণীয় অনাবৃত করিও না, সে তোমার পুত্রের ভার্য্যা, তাহার আবরণীয় অনাবৃত করিও না। তোমার ভ্রাতৃপত্নীর আবরণীয় অনাবৃত করিও না; তাহা তোমার ভ্রাতার আবরণীয়। কোন স্ত্রীর ও তাহার কন্যার আবরণীয় অনাবৃত করিও না, এবং আবরণীয় অনাবৃত করিবার জন্য তাহার পৌত্রীকে বা দৌহিত্রীকে লইও না; তাহারা পরস্পর আত্মীয়া; এ কুকর্ম্ম। আর স্ত্রীর সপত্নী হইবার জন্য তাহার জীবৎকালে আবরণীয় অনাবৃত করণার্থে তাহার ভগিনীকে বিবাহ করিও না। এবং কোন স্ত্রীর অশৌচকালে তাহার আবরণীয় অনাবৃত করিতে তাহার নিকটে যাইও না। আর তুমি আপন স্বজাতীয়ের স্ত্রীতে গমন করিয়া আপনাকে অশুচি করিও না। আর তোমার বংশজাত কাহাকেও মোলক দেবের উদ্দেশে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাইও না, এবং তোমার ঈশ্বরের নাম অপবিত্র করিও না; আমি সদাপ্রভু। স্ত্রীর ন্যায় পুরুষের সহিত সংসর্গ করিও না, তাহা ঘৃণার্হ কর্ম্ম। আর তুমি কোন পশুর সহিত শয়ন করিয়া আপনাকে অশুচি করিও না; এবং কোন স্ত্রী কোন পশুর সহিত শয়ন করিতে তাহার সম্মুখে দাঁড়াইবে না; ইহা বিপরীত কর্ম্ম। তোমরা এ সমস্ত দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না; কেননা যে যে জাতিকে আমি তোমাদের সম্মুখ হইতে দূর করিব, তাহারা এই সমস্ত দ্বারা অশুচি হইয়াছে; এবং দেশও অশুচি হইয়াছে; অতএব আমি উহার অপরাধ উহাকে ভোগ করাইব, এবং দেশ আপন নিবাসীদিগকে উদগীরণ করিবে। অতএব তোমরা আমার বিধি ও আমার শাসন সকল পালন করিও; স্বদেশীয় কিম্বা তোমাদের মধ্যে প্রবাসকারী বিদেশীয় হউক, তোমরা ঐ সকল ঘৃণার্হ ক্রিয়ার মধ্যে কোন কার্য্য করিও না। কেননা তোমাদের পূর্ব্বে যাহারা ছিল, ঐ দেশের সেই লোকেরা এইরূপ ঘৃণার্হ ক্রিয়া করাতে দেশ অশুচি হইয়াছে। —সেই দেশ যেমন তোমাদের পূর্ব্ববর্ত্তী ঐ জাতিকে উদগীরণ করিল, তদ্রূপ যেন তোমাদের কর্ত্তৃক অশুচি হইয়া তোমাদিগকেও উদগীরণ না করে। কেননা যে কেহ ঐ সকলের মধ্যে কোন ঘৃণার্হ ক্রিয়া করে, সেই প্রাণী আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। অতএব তোমরা আমার আদেশ পালন করিও; তোমাদের পূর্ব্বে যে সকল ঘৃণার্হ কার্য্য প্রচলিত ছিল, তাহার কিছুই তোমরা করিও না, এবং তদ্দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীকে কহ তাহাদিগকে বল, তোমরা পবিত্র হও, কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর পবিত্র। তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন মাতাকে ও আপন আপন পিতাকে ভয় করিও, এবং আমার বিশ্রামদিন সকল পালন করিও; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা অবস্তু প্রতিমাগণের অভিমুখ হইও না, ও আপনাদের নিমিত্তে ছাঁচে ঢালা দেবতা নির্ম্মাণ করিও না; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। আর যখন তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে মঙ্গলার্থক বলিদান কর, তখন গ্রাহ্য হইবার নিমিত্ত বলিদান করিও। তোমাদের বলিদানের দিবসে ও তাহার পর দিবসে তাহা ভোজন করিতে হইবে; তৃতীয় দিন পর্য্যন্ত যাহা অবশিষ্ট থাকে, তাহা অগ্নিতে পোড়াইতে হইবে। তৃতীয় দিবসে যদি কেহ তাহার কিঞ্চিৎ ভোজন করে, তবে তাহা ঘৃণার্হ; তাহা অগ্রাহ্য হইবে; এবং যে তাহা খায়, তাহাকে নিজ অপরাধ বহন করিতে হইবে; কেননা সে সদাপ্রভুর পবিত্র বস্তু অপবিত্র করিয়াছে; সেই প্রাণী আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর তোমরা যখন আপন আপন ভূমির শস্য কাট, তখন তুমি ক্ষেত্রের কোণস্থ শস্য নিঃশেষে কাটিও না, এবং তোমার ক্ষেত্রে পতিত শস্য কুড়াইও না। আর তুমি আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পরিত্যক্ত দ্রাক্ষাফল চয়ন করিও না, এবং দ্রাক্ষাক্ষেত্রে পতিত দ্রাক্ষাফল কুড়াইও না; তুমি দুঃখী ও বিদেশীদের জন্য তাহা ত্যাগ করিও; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা চুরি করিও না, এবং আপন আপন স্বজাতীয়কে বঞ্চনা করিও না, ও মিথ্যা কথা কহিও না। আর আমার নাম লইয়া মিথ্যা দিব্য করিও না, করিলে তোমার ঈশ্বরের নাম অপবিত্র করা হয়; আমি সদাপ্রভু। তুমি আপন প্রতিবাসীর উপর অত্যাচার করিও না, এবং তাহার দ্রব্য অপহরণ করিও না। বেতনজীবীর বেতন প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত সমস্ত রাত্রি রাখিও না। তুমি বধিরকে শাপ দিও না, ও অন্ধের সম্মুখে বাধাজনক বস্তু রাখিও না, কিন্তু তোমার ঈশ্বরকে ভয় করিও; আমি সদাপ্রভু। তোমরা বিচারে অন্যায় করিও না। তুমি দরিদ্রের মুখাপেক্ষা করিও না, ও ধনবানের সমাদর করিও না; তুমি ধার্ম্মিকতায় স্বজাতীয়ের বিচার নিষ্পন্ন করিও। তুমি কর্ণেজপ হইয়া আপন লোকদের মধ্যে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিও না, এবং তোমার প্রতিবাসীর রক্তপাতের জন্য উঠিয়া দাঁড়াইও না; আমি সদাপ্রভু। তুমি হৃদয়মধ্যে আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করিও না; তুমি অবশ্য আপন স্বজাতীয়কে অনুযোগ করিবে, তাহাতে তাহার জন্য পাপ বহন করিবে না। তুমি আপন জাতির সন্তানদের উপরে প্রতিহিংসা কি দ্বেষ করিও না, বরং আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে; আমি সদাপ্রভু। তোমরা আমার বিধি সকল পালন করিও। তুমি ভিন্ন ভিন্ন প্রকার পশুর সহিত আপন পশুদিগকে সংসর্গ করিতে দিও না; তোমার এক ক্ষেত্রে দুই প্রকার বীজ বুনিও না; এবং দুই প্রকার সূত্রে মিশ্রিত বস্ত্র গাত্রে দিও না। আর মূল্য দ্বারা কিম্বা অন্যরূপে মুক্তা হয় নাই, এমন যে বাগ্দত্তা দাসী, তাহার সহিত যদি কেহ সংসর্গ করে, তবে তাহারা দণ্ডনীয় হইবে; তাহাদের প্রাণদণ্ড হইবে না, কেননা সে মুক্তা নহে। আর সেই পুরুষ সমাগম-তাম্বুর দ্বারে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপনার দোষার্থক বলি অর্থাৎ দোষার্থক বলির জন্য মেষ আনিবে; আর যাজক সদাপ্রভুর সম্মুখে সেই দোষার্থক বলির মেষ দ্বারা তাহার কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাহাতে তাহার কৃত পাপের ক্ষমা হইবে। আর তোমরা দেশে প্রবেশ করিলে যখন ফল ভক্ষণার্থ সকল প্রকার বৃক্ষ রোপন করিবে, তখন তাহার ফল অচ্ছিন্নত্বক বলিয়া গণ্য করিবে; তিন বৎসর কাল তাহা তোমাদের জ্ঞানে অচ্ছিন্নত্বক থাকিবে, তাহা ভোজন করিও না। পরে চতুর্থ বৎসরে তাহার সমস্ত ফল সদাপ্রভুর প্রশংসার্থক উপহাররূপে পবিত্র হইবে। আর পঞ্চম বৎসরে তোমরা তাহার ফল ভোজন করিবে; তাহাতে তোমাদের নিমিত্তে প্রচুর ফল উৎপন্ন হইবে; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা রক্তের সহিত কোন বস্তু ভোজন করিও না; মোহকের কিম্বা গণকের বিদ্যা ব্যবহার করিও না। তোমরা আপন আপন মস্তকপ্রান্তের কেশ মণ্ডলাকার করিও না, ও আপন আপন দাড়ির কোণ মুণ্ডন করিও না। মৃত লোকের জন্য আপন আপন অঙ্গে অস্ত্রাঘাত করিও না, ও শরীরে গোদানী দিও না; আমি সদাপ্রভু। তুমি আপন কন্যাকে বেশ্যা হইতে দিয়া অপবিত্র করিও না, পাছে দেশ ব্যভিচারী হইয়া পাড়ে, ও দেশ কুকার্য্যে পূর্ণ হয়। তোমরা আমার বিশ্রামদিন সকল পালন করিও, এবং আমার ধর্ম্মধামের সমাদর করিও; আমি সদাপ্রভু। তোমরা ভূতড়িয়াদের ও গুণীদের অভিমুখ হইও না, তাহাদের কাছে অন্বেষণ করিও না, করিলে আপনাদিগকে অশুচি করিবে; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তুমি পক্বকেশ প্রাচীনের সম্মুখে উঠিয়া দাঁড়াইবে, বৃদ্ধ লোককে সমাদর করিবে, ও আপন ঈশ্বরের প্রতি ভয় রাখিবে; আমি সদাপ্রভু। আর কোন বিদেশী লোক যদি তোমাদের দেশে তোমাদের সহিত বাস করে, তোমরা তাহার প্রতি উপদ্রব করিও না। তোমাদের নিকটে তোমাদের স্বদেশীয় লোক যেমন, তোমাদের সহপ্রবাসী বিদেশী লোকও তেমনি হইবে; তুমি তাহাকে আপনার মত প্রেম করিও; কেননা মিসর দেশে তোমরাও বিদেশী ছিলে; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা বিচার কিম্বা পরিমাণ কিম্বা বাটখারা কিম্বা কাঠার বিষয়ে অন্যায় করিও না। তোমরা ন্যায্য দাঁড়ি, ন্যায্য বাটখারা, ন্যায্য ঐফা ও ন্যায্য হিন রাখিবে; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। আর তোমরা আমার সমস্ত বিধি ও আমার সমস্ত শাসন মান্য করিও, পালন করিও; আমি সদাপ্রভু। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আরও বল, ইস্রায়েল-সন্তানগণের কোন ব্যক্তি কিম্বা ইস্রায়েলের মধ্যে প্রবাসকারী কোন বিদেশী লোক যদি আপন বংশের কাহাকেও মোলক দেবের উদ্দেশে উৎসর্গ করে, তবে তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে, দেশের লোকেরা তাহাকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে। আর আমিও সেই ব্যক্তির প্রতি বিমুখ হইয়া তাহার লোকদের মধ্য হইতে তাহাকে উচ্ছিন্ন করিব; কেননা মোলক দেবের উদ্দেশে আপন বংশজাতকে দেওয়াতে সে আমার ধর্ম্মধাম অশুচি করে, ও আমার পবিত্র নাম অপবিত্র করে। আর যে সময়ে সেই ব্যক্তি আপন বংশের কাহাকেও মোলক দেবের উদ্দেশে উৎসর্গ করে, তৎকালে যদি দেশীয় লোকেরা চক্ষু মুদ্রিত করে, তাহাকে বধ না করে, তবে আমি সেই ব্যক্তির প্রতি ও তাহার গোষ্ঠীর প্রতি বিমুখ হইয়া তাহাকে ও মোলক দেবের সহিত ব্যভিচার করণার্থে তাহার অনুগামী ব্যভিচারী সকলকে তাহাদের লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিব। আর যে কোন প্রাণী ভূতড়িয়া কিম্বা গুণীদের অনুগমনে ব্যভিচার করিবার জন্য তাহাদের অভিমুখ হয়, আমি সেই প্রাণীর প্রতি বিমুখ হইয়া তাহার লোকদের মধ্য হইতে তাহাকে উচ্ছিন্ন করিব। তোমরা আপনাদিগকে পবিত্র কর, পবিত্র হও; কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। আর তোমরা আমার বিধি মান্য করিও, পালন করিও; আমি সদাপ্রভু তোমাদের পবিত্রকারী। যে কেহ আপন পিতাকে কিম্বা মাতাকে শাপ দেয়, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; পিতামাতাকে শাপ দেওয়াতে তাহার রক্ত তাহারই উপরে বর্ত্তিবে। আর যে ব্যক্তি পরের ভার্য্যার সহিত ব্যভিচার করে, যে ব্যক্তি প্রতিবাসীর ভার্য্যার সহিত ব্যভিচার করে, সেই ব্যভিচারী ও সেই ব্যভিচারিণী, উভয়ের প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। আর যে ব্যক্তি আপন পিতৃভার্য্যার সহিত শয়ন করে, সে আপন পিতার আবরণীয় অনাবৃত করে; তাহাদের দুই জনেরই প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে, তাহাদের রক্ত তাহাদের উপরে বর্ত্তিবে। এবং যদি কেহ নিজ পুত্রবধূর সহিত শয়ন করে, তবে তাহাদের দুই জনের প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; তাহারা বিপরীত কর্ম্ম করিয়াছে; তাহাদের রক্ত তাহাদের উপরে বর্ত্তিবে। আর যেমন স্ত্রীর সহিত, তেমনি পুরুষ যদি পুরুষের সহিত শয়ন করে, তবে তাহারা দুই জন ঘৃণার্হ ক্রিয়া করে; তাহাদের প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; তাহাদের রক্ত তাহাদের উপরে বর্ত্তিবে। আর যদি কেহ কোন স্ত্রীকে ও তাহার মাতাকে রাখে, তবে তাহা কুকর্ম্ম; তাহাদিগকে অগ্নিতে পোড়াইয়া দিতে হইবে, তাহাকে ও তাহাদের উভয়কে দিতে হইবে; যেন তোমাদের মধ্যে কুকার্য্য না হয়। আর যে কেহ কোন পশুর সহিত শয়ন করে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; এবং তোমরা সেই পশুকেও বধ করিবে। আর কোন স্ত্রী যদি পশুর কাছে গিয়া তাহার সহিত শয়ন করে, তবে তুমি সেই স্ত্রীকে ও সেই পশুকে বধ করিবে; তাহাদের প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে, তাহাদের রক্ত তাহাদের উপরে বর্ত্তিবে। আর যদি কেহ আপন ভগিনীকে, পিতৃকন্যাকে কিম্বা মাতৃকন্যাকে, গ্রহণ করে, ও উভয়ে উভয়ের আবরণীয় দেখে, তবে তাহা লজ্জাকর বিষয়; তাহারা আপন জাতির সন্তানদের সাক্ষাতে উচ্ছিন্ন হইবে; আপন ভগিনীর আবরণীয় অনাবৃত করাতে সে আপন অপরাধ বহন করিবে। আর যদি কেহ রজস্বলা স্ত্রীর সহিত শয়ন করে ও তাহার আবরণীয় অনাবৃত করে, তবে সেই পুরুষ তাহার রক্তাকর প্রকাশ করাতে, ও সেই স্ত্রী আপন রক্তাকর অনাবৃত করাতে তাহারা উভয়ে আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর তুমি আপন মাসীর কিম্বা পিসির আবরণীয় অনাবৃত করিও না; তাহা করিলে আপনার নিকটবর্ত্তী কুটুম্বের আবরণীয় অনাবৃত করা হয়, তাহারা উভয়েই আপন আপন অপরাধ বহন করিবে। আর যদি কেহ আপন পিতৃব্যার সহিত শয়ন করে, তবে আপন পিতৃব্যের আবরণীয় অনাবৃত করে; তাহারা আপন আপন পাপ বহন করিবে, নিঃসন্তান হইয়া মরিবে। আর যদি কেহ আপন ভ্রাতৃপত্নীকে গ্রহণ করে, তাহা অশুচি কর্ম্ম; আপন ভ্রাতৃপত্নীর আবরণীয় অনাবৃত করাতে তাহারা নিঃসন্তান থাকিবে। তোমরা আমার সমস্ত বিধি ও আমার সমস্ত শাসন মান্য করিও, পালন করিও; যেন আমি তোমাদের বাসার্থে তোমাদিগকে যে দেশে লইয়া যাইতেছি, সেই দেশ তোমাদিগকে উদগীরণ না করে। আর আমি তোমাদের সম্মুখ হইতে যে জাতিকে দূর করিতে উদ্যত, তাহার আচারানুযায়ী আচরণ করিও না; কেননা তাহারা ঐ সকল ক্রিয়া করিত, এই জন্য আমি তাহাদিগকে ঘৃণা করিলাম। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি, তোমরাই তাহাদের দেশ অধিকার করিবে, আমি তোমাদিগকে অধিকারার্থে সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ দিব; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর; আমি অন্য জাতি সকল হইতে তোমাদিগকে পৃথক্‌ করিয়াছি। অতএব তোমরা শুচি অশুচি পশুর ও শুচি অশুচি পক্ষীর প্রভেদ করিবে; আমি যে যে পশু, পক্ষী ও ভূচর কীটাদি জন্তুকে অশুচি বলিয়া তোমাদের হইতে পৃথক্‌ করিলাম, সে সকলের দ্বারা তোমরা আপনাদের প্রাণকে ঘৃণার্হ করিও না। আর তোমরা আমার উদ্দেশে পবিত্র হও, কেননা আমি সদাপ্রভু পবিত্র, এবং আমি তোমাদিগকে জাতিগণ হইতে পৃথক্ করিয়াছি, যেন তোমরা আমারই হও। আর পুরুষের কিম্বা স্ত্রীর মধ্যে যে কেহ ভূতড়িয়া কিম্বা গুণী হয়, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; লোকে তাহাদিগকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে; তাহাদের রক্ত তাহাদের প্রতি বর্ত্তিবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণের পুত্র যাজকগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, স্বজাতীয় মৃতের জন্য তাহারা কেহ অশুচি হইবে না। কেবল আপনার নিকটবর্ত্তী গোত্র অর্থাৎ আপন মাতা, কি পিতা, কি পুত্র, কি কন্যা, কি ভ্রাতা মরিলে অশুচি হইবে। আর নিকটস্থ যে অনূঢ়া ভগিনীর স্বামী হয় নাই, এমন ভগিনী মরিলে সে অশুচি হইবে। আপন লোকদের মধ্যে প্রধান বলিয়া সে আপনাকে অপবিত্র করণার্থে অশুচি হইবে না। তাহারা আপন আপন মস্তক মুণ্ডন করিবে না, আপন আপন দাড়ির কোণও মুণ্ডন করিবে না, ও আপন আপন শরীরে অস্ত্রাঘাত করিবে না। তাহারা আপন ঈশ্বরের উদ্দেশে পবিত্র হইবে, ও আপন ঈশ্বরের নাম অপবিত্র করিবে না; কেননা তাহারা সদাপ্রভুর অগ্নিকৃত উপহার, আপনাদের ঈশ্বরের ভক্ষ্য, উৎসর্গ করে; অতএব তাহারা পবিত্র হইবে। তাহারা বেশ্যা কিম্বা ভ্রষ্টা স্ত্রীকে বিবাহ করিবে না, এবং স্বামিত্যক্তা স্ত্রীকেও বিবাহ করিবে না, কেননা যাজক আপন ঈশ্বরের উদ্দেশে পবিত্র। অতএব তুমি তাহাকে পবিত্র রাখিবে; কারণ সে তোমার ঈশ্বরের ভক্ষ্য উৎসর্গ করে; সে তোমার নিকটে পবিত্র হইবে; কেননা তোমাদের পবিত্রকারী সদাপ্রভু আমি পবিত্র। আর কোন যাজকের কন্যা যদি ব্যভিচার ক্রিয়া দ্বারা আপনাকে অপবিত্রা করে, তবে সে আপন পিতাকে অপবিত্র করে; তাহাকে অগ্নিতে পোড়াইয়া দিতে হইবে। আর আপন ভ্রাতাদের মধ্যে প্রধান যাজক, যাহার মস্তকে অভিষেক-তৈল ঢালা গিয়াছে, যে ব্যক্তি হস্তপূরণ দ্বারা পবিত্র বস্ত্র পরিধান করিবার অধিকারী হইয়াছে, সে আপন মস্তক মুক্তকেশ করিবে না ও আপন বস্ত্র চিরিবে না। আর সে কোন শবের নিকটে যাইবে না, আপন পিতার কি আপন মাতার জন্যও সে আপনাকে অশুচি করিবে না, এবং ধর্ম্মধাম হইতে বাহিরে যাইবে না, এবং আপন ঈশ্বরের ধর্ম্মধাম অপবিত্র করিবে না, কেননা তাহার ঈশ্বরের অভিষেক-তৈলের সংস্কার তাহার উপরে আছে; আমি সদাপ্রভু। আর সে কেবল অনূঢ়াকে বিবাহ করিবে। বিধবা, কি ত্যক্তা, কি ভ্রষ্টা স্ত্রী, কি বেশ্যা, ইহাদের কাহাকেও বিবাহ করিবে না; সে আপন লোকদের মধ্যে এক কুমারীকে বিবাহ করিবে। সে আপন লোকদের মধ্যে আপন বংশ অপবিত্র করিবে না, কেননা আমি সদাপ্রভু তাহার পবিত্রকারী। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণকে বল, পুরুষানুক্রমে তোমার বংশের মধ্যে যাহার গাত্রে দোষ থাকে, সে আপন ঈশ্বরের ভক্ষ্য উৎসর্গ করিতে নিকটবর্ত্তী না হউক। যে কোন ব্যক্তির দোষ আছে, সে নিকটবর্ত্তী হইবে না; অন্ধ, কি খঞ্জ, কি খাঁদা, কি অধিকাঙ্গ, কি ভগ্নপদ, কি ভগ্নহস্ত, কি কুব্জ, কি বামন, কি ছানিপড়া, কি শ্বিত্ররোগী, কি পামাবিশিষ্ট, কি ভগ্নমুষ্ক; কোন দোষবিশিষ্ট যে পুরুষ হারোণ যাজকের বংশের মধ্যে আছে, সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিতে নিকটবর্ত্তী হইবে না; তাহার দোষ আছে, সে আপন ঈশ্বরের ভক্ষ্য উৎসর্গ করিতে নিকটবর্ত্তী হইবে না। সে আপন ঈশ্বরের ভক্ষ্য, অতি পবিত্র বস্তু ও পবিত্র বস্তু ভোজন করিতে পারিবে; কিন্তু তিরস্করিণীর নিকটে প্রবেশ করিবে না, ও বেদির নিকটবর্ত্তী হইবে না, কেননা তাহার দোষ আছে; সে আমার পবিত্র স্থান সকল অপবিত্র করিবে না, কেননা আমি সদাপ্রভু সে সকলের পবিত্রকারী। মোশি হারোণকে, তাঁহার পুত্রগণকে ও সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানকে এই কথা কহিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে বল, ইস্রায়েল-সন্তানগণ আমার উদ্দেশে যাহা পবিত্র করে, তাহাদের সেই পবিত্র বস্তু সকল হইতে যেন উহারা স্বতন্ত্র থাকে, এবং যেন আমার পবিত্র নাম অপবিত্র না করে; আমি সদাপ্রভু। তুমি উহাদিগকে বল, পুরুষানুক্রমে তোমাদের বংশের মধ্যে যে কেহ অশুচি হইয়া পবিত্র বস্তুর নিকটে, অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণ কর্ত্তৃক সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্রীকৃত বস্তুর নিকটে যাইবে, সেই প্রাণী আমার সম্মুখ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে; আমি সদাপ্রভু। হারোণ বংশের যে কেহ কুষ্ঠী কিম্বা প্রমেহী হয়, সে শুচি না হওয়া পর্য্যন্ত পবিত্র বস্তু ভোজন করিবে না। আর যে কেহ মৃত দেহঘটিত অশুচি বস্তু, কিম্বা যাহার রেতঃপাত হয় তাহাকে, স্পর্শ করে, কিম্বা যে ব্যক্তি অশৌচজনক কীটাদি জন্তুকে কিম্বা কোন প্রকার অশৌচবিশিষ্ট মনুষ্যকে স্পর্শ করে, সেই স্পর্শকারী ব্যক্তি সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে, এবং জলে আপন গাত্র ধৌত না করিলে পবিত্র বস্তু ভোজন করিবে না। সূর্য্য অস্তগত হইলে সে শুচি হইবে; পরে পবিত্র বস্তু ভোজন করিবে, কেননা তাহা তাহার আহারীয় দ্রব্য। যাজক স্বয়ংমৃত কিম্বা বিদীর্ণ পশুর মাংস ভোজন করিবে না; আমি সদাপ্রভু। অতএব তাহারা আমার আদেশ পালন করুক; পাছে তাহা অপবিত্র করিলে তাহারা তৎপ্রযুক্ত পাপ বহন করে ও মারা পড়ে; আমি সদাপ্রভু তাহাদের পবিত্রকারী। অন্য বংশীয় কোন লোক পবিত্র বস্তু ভোজন করিবে না; যাজকের গৃহপ্রবাসী কিম্বা বেতনজীবী কেহ পবিত্র বস্তু ভোজন করিবে না; কিন্তু যাজক নিজ রৌপ্য দিয়া যে কোন ব্যক্তিকে ক্রয় করে, সে তাহা ভোজন করিবে; এবং তাহার গৃহজাত লোকেরাও তাহার অন্ন ভোজন করিবে। আর যাজকের কন্যা যদি অন্য বংশীয় লোকের সহিত বিবাহিতা হয়, তবে সে পবিত্র বস্তুর উত্তোলনীয় উপহার ভোজন করিবে না। কিন্তু যাজকের কন্যা যদি বিধবা কিম্বা ত্যক্তা হয়, আর তাহার সন্তান না থাকে, এবং সে পুনর্ব্বার আসিয়া বাল্যাবস্থার ন্যায় পিতৃগৃহে বাস করে, তবে সে পিতার অন্ন ভোজন করিবে, কিন্তু অন্য বংশীয় কোন লোক তাহা ভোজন করিবে না। আর যদি কেহ প্রমাদ বশতঃ পবিত্র বস্তু ভোজন করে, তবে সে সেইরূপ পবিত্র বস্তু ও তাহার পঞ্চমাংশ অধিক করিয়া যাজককে দিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের যে যে পবিত্র বস্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করে, [যাজকেরা] তাহা অপবিত্র করিবে না; এবং তাহাদিগকে উহাদের পবিত্র বস্তু ভক্ষণ দ্বারা দোষজনক অপরাধরূপ ভারে ভারগ্রস্থ করিবে না; কেননা আমি সদাপ্রভু তাহাদের পবিত্রকারী। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণকে, তাহার পুত্রগণকে ও সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানকে কহ, তাহাদিগকে বল, ইস্রায়েল-জাত কিম্বা ইস্রায়েলের মধ্যে প্রবাসকারী যে কেহ আপন উপহার উৎসর্গ করে, তাহাদের কোন মানতের বলি হউক, বা স্ব ইচ্ছায় দত্ত বলি হউক, যাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলিরূপে উৎসর্গ করে; যেন তোমরা গ্রাহ্য হইতে পার, তাই গোরুর কিম্বা মেষের কিম্বা ছাগের মধ্য হইতে নির্দ্দোষ পুংপশু উৎসর্গ করিবে। তোমরা সদোষ কিছু উৎসর্গ করিও না, কেননা তাহা তোমাদের পক্ষে গ্রাহ্য হইবে না। আর কোন লোক যদি মানত পূর্ণ করিবার জন্য কিম্বা স্ব ইচ্ছায় দত্ত উপহারের জন্য গোমেষাদি পাল হইতে মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করে, তবে গ্রাহ্য হইবার নিমিত্তে তাহা নির্দ্দোষ হইবে; তাহাতে কোন দোষ থাকিবে না। অন্ধ, কি ভগ্ন, কি ক্ষতবিক্ষত, কি আবযুক্ত কি শ্বিত্রযুক্ত, কি পামাযুক্ত হইলে তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাহা উৎসর্গ করিও না, এবং তাহার কিছুই সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া বেদির উপরে স্থাপন করিও না। আর তুমি অধিকাঙ্গ কি হীনাঙ্গ গোরু কিম্বা মেষ স্ব ইচ্ছায় দত্ত উপহাররূপে উৎসর্গ করিতে পার, কিন্তু মানতের কারণ তাহা গ্রাহ্য হইবে না। আর মর্দ্দিত কিম্বা পিষিত কিম্বা ভগ্ন কিম্বা ছিন্নমুষ্ক কিছুই সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করিও না; তোমাদের দেশে এইরূপ করিও না। আর বিদেশীর হস্ত হইতেও এ সকলের মধ্যে কিছু লইয়া ঈশ্বরের ভক্ষ্যরূপে উৎসর্গ করিও না, কেননা তাহাদের অঙ্গের দোষ আছে, সুতরাং তাহাদের মধ্যে দোষ আছে; তাহারা তোমাদের পক্ষে গ্রাহ্য হইবে না। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, গোরু, কি মেষ, কি ছাগল জন্মিলে পর সাত দিন পর্য্যন্ত মাতার সহিত থাকিবে; পরে অষ্টম দিবসাবধি তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহারের নিমিত্তে গ্রাহ্য হইবে। গাভী কিম্বা মেষী হউক, তাহাকে ও তাহার বৎসকে এক দিনে হনন করিও না। আর যে সময়ে তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে স্তবার্থক বলি উৎসর্গ করিবে, তৎকালে গ্রাহ্য হইবার জন্যই তাহা উৎসর্গ করিও। সেই দিনে তাহা ভোজন করিতে হইবে; তোমরা প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত তাহার কিছু অবশিষ্ট রাখিও না; আমি সদাপ্রভু। অতএব তোমরা আমার আজ্ঞা সকল মান্য করিবে, পালন করিবে; আমি সদাপ্রভু। আর তোমরা আমার পবিত্র নাম অপবিত্র করিও না; কিন্তু আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে পবিত্ররূপে মান্য হইব; আমি সদাপ্রভু তোমাদের পবিত্রকারী; আমি তোমাদের ঈশ্বর হইবার জন্য মিসর দেশ হইতে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছি; আমি সদাপ্রভু। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, তোমরা সদাপ্রভুর যে সকল পর্ব্ব পবিত্র সভা বলিয়া ঘোষণা করিবে, আমার সেই সকল পর্ব্ব এই। ছয় দিন কার্য্য করিতে হইবে, কিন্তু সপ্তম দিবসে বিশ্রামার্থক বিশ্রামপর্ব্ব, পবিত্র সভা হইবে, তোমরা কোন কার্য্য করিবে না; সে দিন তোমাদের সকল নিবাসে সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামদিন। তোমরা নিরূপিত সময়ে যে সকল পবিত্র সভা ঘোষণা করিবে, সদাপ্রভুর সেই সকল পর্ব্ব এই। প্রথম মাসে, মাসের চতুর্দ্দশ দিবস সন্ধ্যাকালে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্ব হইবে। এবং সেই মাসের পঞ্চদশ দিবসে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসব হইবে; তোমরা সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটী ভোজন করিবে। প্রথম দিবসে তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না। কিন্তু সাত দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার নিবেদন করিবে; সপ্তম দিবসে পবিত্র সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, আমি তোমাদিগকে যে দেশ দিব, সেই দেশে প্রবিষ্ট হইয়া তোমরা যখন তদুৎপন্ন শস্য ছেদন করিবে, তখন তোমাদের কাটা শস্যের অগ্রিমাংশ বলিয়া এক আটি যাজকের নিকটে আনিবে। সে সদাপ্রভুর সম্মুখে ঐ আটি দোলাইবে, যেন তোমাদের জন্য তাহা গ্রাহ্য হয়; বিশ্রামবারের পরদিন যাজক তাহা দোলাইবে। আর যে দিন তোমরা ঐ আটি দোলাইবে, সে দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমার্থে একবর্ষীয় নির্দ্দোষ এক মেষশাবক উৎসর্গ করিবে। তাহার ভক্ষ্য-নৈবেদ্য [এক ঐফার] দুই দশমাংশ তৈল মিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজি; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার হইবে; ও তাহার পেয় নৈবেদ্য এক হিন দ্রাক্ষারসের চতুর্থাংশ হইবে। আর তোমরা যাবৎ আপন ঈশ্বরের উদ্দেশে এই উপহার না আন, সেই দিন পর্য্যন্ত রুটী কি ভাজা শস্য কি তাজা শীষ ভোজন করিবে না; তোমাদের সকল নিবাসে ইহা পুরুষানুক্রমে পালনীয় সকল চিরস্থায়ী বিধি। আর সেই বিশ্রামবারের পরদিন হইতে, দোলনীয় নৈবেদ্যরূপ আটি আনিবার দিন হইতে, তোমরা পূর্ণ সাত বিশ্রামবার গণনা করিবে। এইরূপে সপ্তম বিশ্রামবারের পরদিন পর্য্যন্ত তোমরা পঞ্চাশ দিবস গণনা করিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে নূতন ভক্ষ্যের উপহার নিবেদন করিবে। তোমরা আপন আপন নিবাস হইতে দোলনীয় নৈবেদ্যার্থে [এক ঐফার] দুই দশমাংশের দুই খান রুটী আনিবে; সূক্ষ্ম সূজি দ্বারা তাহা প্রস্তুত করিও, ও তাড়ীতে পাক করিও; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আশুপক্বাংশ হইবে। আর তোমরা সেই রুটীর সহিত একবর্ষীয় নির্দ্দোষ সাত মেষশাবক, এক যুব বৃষ ও দুই মেষ উৎসর্গ করিবে; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলি হইবে, এবং তৎসম্বন্ধীয় ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের ও পেয় নৈবেদ্যের সহিত সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার হইবে। পরে তোমরা পাপার্থক বলির জন্য এক ছাগবৎস, ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য একবর্ষীয় দুই মেষশাবক বলিদান করিবে। আর যাজক ঐ আশুপক্বাংশের রুটীর সহিত ও দুই মেষশাবকের সহিত সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোলনীয় নৈবেদ্যরূপে তাহাদিগকে দোলাইবে; সে সকল যাজকের জন্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হইবে। আর সেই দিনেই তোমরা ঘোষণা করিবে; তোমাদের পবিত্র সভা হইবে তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না; ইহা তোমাদের সকল নিবাসে পুরুষানুক্রমে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি। আর তোমাদের ভূমির শস্য ছেদন কালে তোমরা কেহ আপন ক্ষেত্রের কোণস্থ শস্য নিঃশেষে ছেদন করিবে না, ও আপন শস্য ছেদনের পরে পতিত শস্য সংগ্রহ করিবে না; তাহা দুঃখী ও বিদেশীর জন্য ত্যাগ করিবে; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, সপ্তম মাসে, সেই মাসের প্রথম দিনে তোমাদের বিশ্রামপর্ব্ব এবং তূরীধ্বনিসহযুক্ত স্মরণার্থক পবিত্র সভা হইবে। তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না, কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, আবার ঐ সপ্তম মাসের দশম দিন প্রায়শ্চিত্তদিন; সেই দিন তোমাদের পবিত্র সভা হইবে, ও তোমরা আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিবে, এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিবে। আর সেই দিন তোমরা কোন কার্য্য করিবে না; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে তোমাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে তাহা প্রায়শ্চিত্তদিন হইবে। সেই দিন যে কেহ আপন প্রাণকে দুঃখ না দেয়, সে আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। আর সেই দিন যে কোন প্রাণী কোন কার্য্য করে, তাহাকে আমি তাহার লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিব। তোমরা কোন কার্য্য করিও না; ইহা তোমাদের সমস্ত নিবাসে পুরুষানুক্রমে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি। সেই দিন তোমাদের বিশ্রামার্থক বিশ্রামদিন হইবে, আর তোমরা আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিবে; মাসের নবম দিবস সন্ধ্যাকালে, এক সন্ধ্যা অবধি অপর সন্ধ্যা পর্য্যন্ত, আপনাদের বিশ্রামদিন পালন করিবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, ঐ সপ্তম মাসের পঞ্চদশ দিবসাবধি সাত দিন পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর উদ্দেশে কুটীরোৎসব হইবে। প্রথম দিবসে পবিত্র সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না। সাত দিন তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিবে; পরে অষ্টম দিবসে তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; আর তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার উৎসর্গ করিবে; এটী পর্ব্বসভা; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না। এই সকল সদাপ্রভুর পর্ব্ব। এই সকল পর্ব্ব তোমরা পবিত্র সভা বলিয়া ঘোষণা করিবে, এবং প্রতিদিন যেমন কর্ত্তব্য, তদনুসারে সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার, হোমবলি, ভক্ষ্য-নৈবেদ্য এবং বলি ও পেয় নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবে। সদাপ্রভুর বিশ্রামদিন হইতে, সদাপ্রভুর উদ্দেশে দাতব্য তোমাদের দান হইতে, তোমাদের সমস্ত মানত হইতে ও তোমাদের স্ব ইচ্ছায় দত্ত সমস্ত নৈবেদ্য হইতে এই সকল ভিন্ন। আবার সপ্তম মাসের পঞ্চদশ দিবসে ভূমির ফল সংগ্রহ করিলে পর তোমরা সাত দিন সদাপ্রভুর উৎসব পালন করিবে; প্রথম দিবস বিশ্রামপর্ব্ব ও অষ্টম দিবস বিশ্রামপর্ব্ব হইবে। আর প্রথম দিবসে তোমরা শোভাদায়ক বৃক্ষের ফল, খর্জ্জুর-পত্র, জড়ান গাছের শাখা এবং নদীতীরস্থ বাইসী-বৃক্ষ লইয়া তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে সাত দিন আনন্দ করিবে। আর তোমরা বৎসরের মধ্যে সাত দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে সেই উৎসব পালন করিবে; ইহা তোমাদের পুরুষানুক্রমে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি; সপ্তম মাসে তোমরা সেই উৎসব পালন করিবে। তোমরা সাত দিন কুটীরে বাস করিও; ইস্রায়েল-বংশজাত সকলে কুটীরে বাস করিবে। ইহাতে তোমাদের ভাবী বংশ জানিতে পারিবে যে, আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়া কুটীরে বাস করাইয়াছিলাম; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তখন মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণের কাছে সদাপ্রভুর পর্ব্বগুলির কথা কহিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই আজ্ঞা কর; তাহারা আলোর জন্য তোমার নিকটে উখলিতে প্রস্তুত নির্ম্মল জিততৈল আনিবে, তদ্দ্বারা নিয়ত প্রদীপ জ্বালান থাকিবে। হারোণ সমাগম-তাম্বুর মধ্যে সাক্ষ্য-সিন্দুকের তিরস্করিণীর বাহিরে সন্ধ্যা অবধি প্রভাত পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর সম্মুখে নিয়ত তাহা সাজাইয়া রাখিবে; ইহা তোমাদের পুরুষানুক্রমে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি। সে নির্ম্মল দীপবৃক্ষের উপরে সদাপ্রভুর সম্মুখে নিয়ত ঐ প্রদীপ সকল সাজাইয়া রাখিবে। আর তুমি সূক্ষ্ম সূজি লইয়া বারখানি পিষ্টক পাক করিবে; তাহার প্রত্যেক পিষ্টক [এক ঐফার] দুই দশমাংশ হইবে। পরে তুমি এক এক পংক্তিতে ছয় ছয়খানি, এইরূপে দুই পংক্তি করিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে নির্ম্মল মেজের উপরে তাহা রাখিবে। প্রত্যেক পংক্তির উপরে বিশুদ্ধ কুন্দুরু দিবে; তাহা সেই রুটীর স্মরণার্থক অংশ বলিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার হইবে। যাজক নিয়ত প্রতি বিশ্রামবারে সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা সাজাইয়া রাখিবে, তাহা ইস্রায়েল-সন্তানগণের পক্ষে চিরস্থায়ী নিয়ম। আর তাহা হারোণের ও তাহার পুত্রগণের হইবে; তাহারা কোন পবিত্র স্থানে তাহা ভোজন করিবে; কেননা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহারের মধ্যে তাহা তাহার জন্য অতি পবিত্র; এ চিরস্থায়ী বিধি। আর ইস্রায়েলীয়েরা স্ত্রীর, কিন্তু মিস্রীয় পুরুষের এক পুত্র বাহির হইয়া ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে গেল, এবং শিবিরের মধ্যে সেই ইস্রায়েলীয়া স্ত্রীর পুত্র ও ইস্রায়েলের কোন পুরুষ বিবাদ করিল। তখন সেই ইস্রায়েলীরা স্ত্রীর পুত্র [সদাপ্রভুর] নামের নিন্দা করিয়া শাপ দিল, তাহাতে লোকেরা তাহাকে মোশির নিকটে লইয়া গেল। তাহার মাতার নাম শালোমীৎ, সে দান-বংশীয় দিব্রির কন্যা। লোকেরা সদাপ্রভুর মুখে স্পষ্ট আদেশ পাইবার অপেক্ষায় তাহাকে রুদ্ধ করিয়া রাখিল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ঐ শাপদায়ীকে শিবিরের বাহিরে লইয়া যাও; পরে যাহারা তাহার কথা শুনিয়াছে, তাহারা সকলে তাহার মস্তকে হস্তার্পণ করুক, এবং সমস্ত মণ্ডলী প্রস্তরাঘাতে তাহাকে বধ করুক। আর তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, যে কেহ আপন ঈশ্বরকে শাপ দেয়, সে আপন পাপ বহন করিবে। আর যে সদাপ্রভুর নামের নিন্দা করে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; সমস্ত মণ্ডলী তাহাকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে; বিদেশীয় হউক বা স্বদেশীয় হউক, সেই নামের নিন্দা করিলে উহার প্রাণদণ্ড হইবে। আর যে কেহ কোন মনুষ্যকে বধ করে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; আর যে কেহ পশু বধ করে, সে তাহার শোধ দিবে; প্রাণের পরিশোধে প্রাণ। যদি কেহ স্বজাতীয়ের গাত্রে ক্ষত করে, তবে সে যেমন করিয়াছে, তাহার প্রতি তেমনি করা যাইবে। ভঙ্গের পরিশোধে ভঙ্গ, চক্ষুর পরিশোধে চক্ষু, দন্তের পরিশোধে দন্ত; মনুষ্যের যে যেমন ক্ষত করে, তাহার প্রতি তেমনি করা যাইবে। যে জন পশু বধ করে, সে তাহার শোধ দিবে; কিন্তু যে জন মনুষ্যকে বধ করে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে। তোমাদের স্বদেশীয় ও বিদেশীয় উভয়েরই জন্য একরূপ শাসন হইবে; কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। পরে মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই কথা বলিলেন, তাহাতে তাহারা সেই শাপদায়ীকে শিবিরের বাহিরে লইয়া গিয়া প্রস্তরাঘাতে বধ করিল; মোশিকে সদাপ্রভু যেমন আজ্ঞা দিয়াছিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ সেইরূপ করিল। আর সদাপ্রভু সীনয় পর্ব্বতে মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, আমি তোমাদিগকে যে দেশ দিব, তোমরা সেই দেশে প্রবেশ করিলে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ভূমি বিশ্রাম ভোগ করিবে। ছয় বৎসর কাল তুমি আপন ক্ষেত্রে বীজ বপন করিবে, ছয় বৎসর কাল আপন দ্রাক্ষালতা ঝুড়িবে, ও তাহার ফল সংগ্রহ করিবে। কিন্তু সপ্তম বৎসর ভূমির বিশ্রামার্থক বিশ্রামকাল, সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামকাল হইবে; তুমি আপন ক্ষেত্রে বীজ বপন করিও না, ও আপন দ্রাক্ষালতা ঝুড়িও না; তুমি আপন ক্ষেত্রের স্বতঃ উৎপন্ন শস্য কাটিবে না, ও আঝোড়া দ্রাক্ষালতার ফল সংগ্রহ করিবে না; উহা ভূমির বিশ্রামার্থক বৎসর হইবে। আর ভূমির বিশ্রাম তোমাদের ভক্ষ্যের জন্য হইবে; ভূমির সমস্ত দ্রব্যই তোমার, তোমার দাসের ও দাসীর, তোমার বেতনজীবী ভৃত্যের ও তোমার সহবাসী বিদেশীর, এবং তোমার পশুর ও তোমার দেশের বনপশুর ভক্ষ্যের জন্য হইবে। আর তুমি আপনার জন্য সাত বিশ্রামবৎসর, সাত গুণ সাত বৎসর, গণনা করিবে; তাহাতে তোমার গণিত সেই সাত গুণ সাত বিশ্রামবৎসরে ঊনপঞ্চাশ বৎসর হইবে। তখন সপ্তম মাসের দশম দিনে তুমি জয়ধ্বনির তুরীবাদ্য করিবে; প্রায়শ্চিত্তদিনে তোমাদের সমস্ত দেশে তূরী বাজাইবে। আর তোমরা পঞ্চাশত্তম বৎসরকে পবিত্র করিবে, এবং সমস্ত দেশে তথাকার সমস্ত নিবাসীর কাছে মুক্তি ঘোষণা করিবে; উহা তোমাদের জন্য যোবেল [তূরীধ্বনির মহোৎসব] হইবে; এবং তোমরা প্রতিজন আপন আপন অধিকারে ফিরিয়া যাইবে, ও প্রতিজন আপন আপন গোষ্ঠীর নিকটে ফিরিয়া যাইবে। তোমাদের নিমিত্ত পঞ্চাশত্তম বৎসর যোবেল হইবে; তোমরা বীজ বুনিও না, স্বতঃ উৎপন্ন শস্য ছেদন করিও না, এবং আঝোড়া দ্রাক্ষালতার ফল সংগ্রহ করিও না। কেননা উহাই যোবেল, উহা তোমাদের পক্ষে পবিত্র হইবে; তোমরা ক্ষেত্রোৎপন্ন শস্যাদি ভক্ষণ করিতে পারিবে। ঐ যোবেল বৎসরে তোমরা প্রতিজন আপন আপন অধিকারে ফিরিয়া যাইবে। যদি তুমি সজাতীয়ের নিকটে কোন কিছু বিক্রয় কর, কিম্বা আপন সজাতীয়ের হস্ত হইতে ক্রয় কর, তবে তোমরা পরস্পর অন্যায় করিও না। তুমি যোবেলের পরে বৎসর-সংখ্যানুসারে সজাতীয় হইতে ক্রয় করিবে, এবং ফলোৎপত্তির বৎসর সংখ্যানুসারে তোমার কাছে সে বিক্রয় করিবে। তুমি বৎসরের আধিক্য অনুসারে তাহার মূল্য অধিক করিবে, ও বৎসরের ন্যূনতা অনুসারে মূল্য ন্যূন করিবে; কেননা সে তোমার কাছে ফলোৎপত্তি-কালের সংখ্যানুসারে বিক্রয় করে। তোমরা তোমাদের সজাতীয়ের প্রতি অন্যায় করিও না, কিন্তু আপন ঈশ্বরকে ভয় করিও, কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। আর তোমরা আমার বিধি অনুসারে আচরণ করিবে, আমার শাসন সকল মানিবে, ও তাহা পালন করিবে; তাহাতে দেশে নির্ভয়ে বাস করিবে। আর ভূমি নিজ ফল উৎপন্ন করিবে, তাহাতে তোমরা তৃপ্তি পর্য্যন্ত ভোজন করিবে, ও দেশে নির্ভয়ে বাস করিবে। আর যদি তোমরা বল, দেখ, আমরা সপ্তম বৎসরে কি খাইব? দেখ, আমরা ত ক্ষেত্রে বপন করিব না, ও উৎপন্ন ফল সংগ্রহ করিব না; তবে আমি ষষ্ঠ বৎসরে তোমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিব; তাহাতে তিন বৎসরের জন্য শস্য উৎপন্ন হইবে। পরে অষ্টম বৎসরে তোমরা বপন করিবে, ও নবম বৎসর পর্য্যন্ত পুরাতন শস্য ভোজন করিবে; যাবৎ ফল না হয়, তাবৎ পুরাতন শস্য ভোজন করিবে। আর ভূমি চিরকালের নিমিত্ত বিক্রীত হইবে না, কেননা ভূমি আমারই; তোমরা ত আমার সহিত বিদেশী ও প্রবাসী। আর তোমরা আপনাদের অধিকৃত দেশের সর্ব্বত্র ভূমি মুক্ত করিতে দিও। তোমার ভ্রাতা যদি দরিদ্র হইয়া আপন অধিকারের কিঞ্চিৎ বিক্রয় করে, তবে তাহার মুক্তিকর্ত্তা নিকটস্থ জ্ঞাতি আসিয়া আপন ভ্রাতার বিক্রীত ভূমি মুক্ত করিয়া লইবে। যাহার মুক্তিকর্ত্তা নাই, সে যদি ধনবান্‌ হইয়া আপনি তাহা মুক্ত করিতে সমর্থ হয়, তবে সে তাহার বিক্রয়ের বৎসর গণনা করিয়া তদনুসারে অতিরিক্ত মূল্য ক্রেতাকে ফিরাইয়া দিবে; এইরূপে সে আপন অধিকারে ফিরিয়া যাইবে। কিন্তু যদি সে তাহা ফিরাইয়া লইতে অসমর্থ হয়, তবে সেই বিক্রীত অধিকার যোবেল বৎসর পর্য্যন্ত ক্রেতার হস্তে থাকিবে; যোবেলে তাহা মুক্ত হইবে, এবং সে আপন অধিকারে ফিরিয়া যাইবে। আর যদি কেহ প্রাচীরবেষ্টিত নগরের মধ্যস্থিত বাসগৃহ বিক্রয় করে, তবে সে বিক্রয়-বৎসরের শেষ পর্য্যন্ত তাহা মুক্ত করিতে পারিবে, পূর্ণ এক বৎসরের মধ্যে তাহা মুক্ত করিবার অধিকারী থাকিবে। কিন্তু যদি সম্পূর্ণ এক বৎসর কালের মধ্যে তাহা মুক্ত না হয়, তবে প্রাচীরবেষ্টিত নগরে স্থিত সেই গৃহ পুরুষপরম্পরায় ক্রয়কর্ত্তার চিরস্থায়ী অধিকার হইবে; তাহা যোবেলে মুক্ত হইবে না। কিন্তু প্রাচীরহীন গ্রামে স্থিত গৃহ দেশের ভূমির মধ্যে গণ্য হইবে; তাহা মুক্ত করা যাইতে পারে, এবং যোবেলে তাহা মুক্ত হইবে। কিন্তু লেবীয়দের নগর সকল, তাহাদের অধিকৃত নগরের গৃহ সকল মুক্ত করিবার অধিকার লেবীয়দের সর্ব্বদাই থাকিবে। যদি লেবীয়দের কেহ মুক্ত করে, তবে সেই বিক্রীত গৃহ এবং তাহার অধিকারস্থ নগর যোবেলে মুক্ত হইবে; কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে লেবীয়দের নগরস্থ গৃহ সকল তাহাদের অধিকার। আর তাহাদের নগরের চরাণিভূমি বিক্রীত হইবে না; কেননা তাহাই তাহাদের চিরস্থায়ী অধিকার। আর তোমার ভ্রাতা যদি দরিদ্র হয়, ও তোমার নিকটে শূন্যহস্ত হয়, তবে তুমি তাহার উপকার করিবে; সে বিদেশী ও প্রাবাসীর ন্যায় তোমার সহিত জীবন ধারণ করিবে। তুমি তাহা হইতে সুদ কিম্বা বৃদ্ধি লইবে না, কিন্তু আপন ঈশ্বরকে ভয় করিবে, তোমার ভ্রাতাকে তোমার সহিত জীবন ধারণ করিতে দিবে। তুমি সুদের জন্য তাহাকে টাকা দিবে না, ও বৃদ্ধির জন্য তাহাকে অন্ন দিবে না। আমি সদাপ্রভু তোমাদের সেই ঈশ্বর, যিনি তোমাদিগকে কনান দেশ দিবার জন্য ও তোমাদের ঈশ্বর হইবার জন্য তোমাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। আর তোমার ভ্রাতা যদি দরিদ্র হইয়া তোমার নিকটে আপনাকে বিক্রয় করে, তবে তুমি তাহাকে দাসের ন্যায় দাস্যকর্ম্ম করাইও না। সে বেতনজীবী ভৃত্যের ন্যায় কিম্বা প্রবাসীর ন্যায় তোমার সঙ্গে থাকিবে, যোবেল বৎসর পর্য্যন্ত তোমার দাস্যকর্ম্ম করিবে। পরে সে আপন সন্তানগণের সহিত তোমার নিকট হইতে মুক্ত হইয়া আপন গোষ্ঠীর কাছে ফিরিয়া যাইবে, ও আপন পৈতৃক অধিকারে ফিরিয়া যাইবে। কেননা তাহারা আমারই দাস, যাহাদিগকে আমি মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছি; তাহারা দাসের ন্যায় বিক্রীত হইবে না। তুমি তাহার উপরে কঠিন কর্ত্তৃত্ব করিও না, কিন্তু আপন ঈশ্বরকে ভয় করিও। তোমাদের চতুর্দ্দিকস্থ জাতিগণের মধ্য হইতে তোমরা দাস ও দাসী রাখিতে পারিবে; তাহাদের হইতেই তোমরা দাস ও দাসী ক্রয় করিও। আর তোমাদের মধ্যে প্রবাসী বিদেশীদের সন্তানগণের হইতে, এবং তোমাদের দেশে তাহাদের হইতে উৎপন্ন তাহাদের যে যে গোষ্ঠী তোমাদের সঙ্গে আছে, তাহাদের হইতেও ক্রয় করিও; তাহারা তোমাদের অধিকার হইবে। আর তোমরা আপন আপন ভাবী সন্তানদের অধিকারের নিমিত্তে দায়ভাগ দ্বারা তাহাদিগকে দিতে পার, এবং নিত্য আপনাদের দাস্যকর্ম্ম তাহাদিগকে দিয়া করাইতে পার; কিন্তু তোমাদের ভ্রাতা ইস্রায়েল-সন্তানদিগের মধ্যে তোমরা কেহ কাহারও উপরে কঠিন কর্ত্তৃত্ব করিবে না। আর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিদেশী কিম্বা প্রবাসী ধনবান্‌ হয়, এবং তাহার নিকটবর্ত্তী তোমার ভ্রাতা দরিদ্র হইয়া যদি তোমার সহবর্ত্তী প্রবাসী, বিদেশী কিম্বা বিদেশীয় গোত্রস্থ কোন লোকের কাছে আপনাকে বিক্রয় করে, তবে সে বিক্রীত হইবার পরে মুক্ত হইতে পারিবে; তাহার জ্ঞাতির মধ্যে কেহ তাহাকে মুক্ত করিতে পারিবে; তাহার পিতৃব্য কিম্বা পিতৃব্যের পুত্র তাহাকে মুক্ত করিবে, কিম্বা তাহার গোষ্ঠীভুক্ত নিকটবর্ত্তী কোন জ্ঞাতি তাহাকে মুক্ত কিরবে; কিম্বা যদি সে ধনবান্‌ হইয়া উঠে, তবে আপনাকে মুক্ত করিবে। তাহাতে তাহার বিক্রয়-বৎসর অবধি যোবেল বৎসর পর্য্যন্ত ক্রেতার সহিত হিসাব হইলে বৎসরের সংখ্যানুসারে তাহার মূল্য হইবে; উহার কাছে তাহার থাকিবার সময় বেতনজীবীর দিনের ন্যায় হইবে। যদি অনেক বৎসর অবশিষ্ট থাকে, তবে তদনুসারে সে ক্রয়-মূল্য হইতে আপনার মোচনের মূল্য ফিরাইয়া দিবে। যদি যোবেল বৎসরের অল্প বৎসর অবশিষ্ট থাকে, তবে সে তাহার সহিত হিসাব করিয়া সেই কয়েক বৎসরানুসারে আপনার মোচনের মূল্য ফিরাইয়া দিবে। বৎসর-বৈতনিক ভৃত্যের ন্যায় সে তাহার সহিত থাকিবে; তোমার সাক্ষাতে সে তাহার উপরে কঠিন কর্ত্তৃত্ব করিবে না। আর যদি সে ঐ সকল বৎসরে মুক্ত না হয়, তবে যোবেল বৎসরে আপন সন্তানগণের সহিত মুক্ত হইয়া যাইবে। কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ আমারই দাস; তাহারা আমার দাস, যাহাদিগকে আমি মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছি; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা আপনাদের জন্য অবস্তু প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না, এবং ক্ষোদিত প্রতিমা কিম্বা স্তম্ভ স্থাপন করিও না, ও তাহার কাছে প্রণিপাত করিবার নিমিত্তে তোমাদের দেশে কোন ক্ষোদিত প্রস্তর রাখিও না; কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা আমার বিশ্রামবার সকল পালন করিও, ও আমার ধর্ম্মধামের সমাদর করিও; আমি সদাপ্রভু। যদি তোমরা আমার বিধিপথে চল, আমার আজ্ঞা সকল মান ও সে সমস্ত পালন কর, তবে আমি যথাকালে তোমাদিগকে বৃষ্টি দান করিব; তাহাতে ভূমি শস্য উৎপন্ন করিবে, ও ক্ষেত্রের বৃক্ষ সকল স্ব স্ব ফল দিবে। তোমাদের শস্যমর্দ্দনকাল দ্রাক্ষাচয়নকাল পর্য্যন্ত থাকিবে, ও দ্রাক্ষাচয়নকাল বীজবপনকাল পর্য্যন্ত থাকিবে; এবং তোমরা তৃপ্তি পর্য্যন্ত অন্ন ভোজন করিবে, ও নিরাপদে নিজ দেশে বাস করিবে। আর আমি দেশে শান্তি প্রদান করিব; তোমরা শয়ন করিলে কেহ তোমাদিগকে ভয় দেখাইবে না; এবং আমি তোমাদের দেশ হইতে হিংস্র জন্তুদিগকে দূর করিয়া দিব; ও তোমাদের দেশে খড়গ ভ্রমণ করিবে না। আর তোমরা আপনাদের শত্রুগণকে তাড়াইয়া দিবে, ও তাহারা তোমাদের সম্মুখে খড়েগ পতিত হইবে। আর তোমাদের পাঁচ জন তাহাদের এক শত জনকে তাড়াইয়া দিবে, তোমাদের এক শত জন দশ সহস্র লোককে তাড়াইয়া দিবে, এবং তোমাদের শত্রুগণ তোমাদের সম্মুখে খড়েগ পতিত হইবে। আর আমি তোমাদের প্রতি প্রসন্নবদন হইব, তোমাদিগকে ফলবন্ত ও বহুবংশ করিব, ও তোমাদের সহিত আমার নিয়ম স্থির করিব। আর তোমরা সঞ্চিত পুরাতন শস্য ভোজন করিবে, ও নূতনের সম্মুখ হইতে পুরাতন শস্য বাহির করিবে। আর আমি তোমাদের মধ্যে আপন আবাস রাখিব, আমার প্রাণ তোমাদিগকে ঘৃণা করিবে না। আর আমি তোমাদের মধ্যে গমনাগমন করিব, ও তোমাদের ঈশ্বর হইব, এবং তোমরা আমার প্রজা হইবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর, আমি মিসর দেশ হইতে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছি, তাহাদের দাস থাকিতে দিই নাই; আমি তোমাদের যোঁয়ালি-কাষ্ঠ ভাঙ্গিয়া সোজা ভাবে তোমাদিগকে গমন করাইয়াছি। কিন্তু যদি তোমরা আমার কথা না শুন, আমার এই সকল আজ্ঞা পালন না কর, যদি আমার বিধি অগ্রাহ্য কর, ও তোমাদের প্রাণ আমার শাসন সকল ঘৃণা করে, এইরূপে তোমরা আমার আজ্ঞা পালন না করিয়া আমার নিয়ম ভঙ্গ কর, তবে আমিও তোমাদের প্রতি এই ব্যবহার করিব; তোমাদের জন্য বিহ্বলতা, যক্ষ্মা ও কম্পজ্বর নিরূপণ করিব, যাহাতে তোমাদের চক্ষু ক্ষীণ হইয়া পড়িবে, ও প্রাণ ব্যথা পাইবে, এবং তোমাদের বীজ বপন বৃথা হইবে, কেননা তোমাদের শত্রুগণ তাহা ভক্ষণ করিবে। আর আমি তোমাদের প্রতি বিমুখ হইব; তাহাতে তোমরা আপন শত্রুগণের সম্মুখে আহত হইবে; যাহারা তোমাদিগকে দ্বেষ করে, তাহারা তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে, এবং কেহ তোমাদিগকে না তাড়াইলেও তোমরা পলায়ন করিবে। আর যদি তোমরা ইহাতেও আমার বাক্যে মনোযোগ না কর, তবে আমি তোমাদের পাপপ্রযুক্ত তোমাদিগকে সাত গুণ অধিক শাস্তি দিব। আমি তোমাদের বলের গর্ব্ব চূর্ণ করিব, ও তোমাদের আকাশ লৌহের মত ও তোমাদের ভূমি পিত্তলের মত করিব। তাহাতে তোমাদের বল নিরর্থক নিঃশেষিত হইবে, কেননা তোমাদের ভূমি শস্য উৎপন্ন করিবে না, ও দেশস্থ বৃক্ষ সকল স্ব স্ব ফল দিবে না। আর যদি তোমরা আমার বিপরীত আচরণ কর, ও আমার কথা শুনিতে না চাও, তবে আমি তোমাদের পাপানুসারে তোমাদিগকে আরও সাত গুণ আঘাত করিব। আর তোমাদের মধ্যে বনপশু পাঠাইব; তাহারা তোমাদের সন্তান হরণ করিবে, তোমাদের পশুপাল বিনষ্ট করিবে; তোমাদিগকে সংখ্যায় ন্যূন করিবে; আর তোমাদের রাজপথ সকল ধ্বংসিত হইবে। ইহাতেও যদি আমার উদ্দেশে শাসিত না হও, কিন্তু আমার বিপরীত আচরণ কর, তবে আমিও তোমাদের বিপরীত আচরণ করিব, ও তোমাদের পাপপ্রযুক্ত আমিই তোমাদিগকে সাত বার আঘাত করিব। আমি নিয়মলঙ্ঘনের প্রতিফল দিবার জন্য তোমাদের উপরে খড়গ আনিব, তোমরা আপন আপন নগরমধ্যে একত্রীভূত হইবে, আমি তোমাদের মধ্য মহামারী পাঠাইব, এবং তোমরা শত্রুহস্তে সমর্পিত হইবে। আমি তোমাদের অন্নরূপ যষ্টি ভাঙ্গিলে দশ জন স্ত্রীলোক এক তুন্দুরে তোমাদের রুটী পাক করিবে, ও তোমাদের রুটী তৌল করিয়া তোমাদিগকে দিবে, কিন্তু তোমরা তাহা খাইয়া তৃপ্ত হইবে না। আর এই সকলেতেও যদি তোমরা আমার কথা না শুন, আমার বিপরীত আচরণ কর, তবে আমি ক্রোধে তোমাদের বিপরীত আচরণ করিব, এবং আমিই তোমাদের পাপপ্রযুক্ত তোমাদিগকে সাত গুণ শাস্তি দিব। আর তোমরা আপন আপন পুত্রগণের মাংস ভোজন করিবে, ও আপন আপন কন্যাগণের মাংস ভোজন করিবে। আর আমি তোমাদের উচ্চস্থল সকল ভগ্ন করিব, তোমাদের সূর্য্যপ্রতিমা সকল নষ্ট করিব, ও তোমাদের পুত্তলিকাদের শবের উপরে তোমাদের শব ফেলিয়া দিব; এবং আমার প্রাণ তোমাদিগকে ঘৃণা করিবে। আর আমি তোমাদের নগর সকল উৎসন্ন করিব, তোমাদের ধর্ম্মধাম সকল ধ্বংস করিব, ও তোমাদের সৌরভের আঘ্রাণ লইব না। আর আমি দেশ ধ্বংস করিব, ও তত্রবাসী তোমাদের শত্রুগণ তদ্বিষয়ে চমৎকৃত হইবে। আর আমি তোমাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিব, ও তোমাদের পশ্চাতে খড়গ নিষ্কোষ করিব, তাহাতে তোমাদের দেশ সকল ধ্বংসস্থান ও তোমাদের নগর সকল উৎসন্ন হইবে। তখন যত দিন দেশ ধ্বংসস্থান থাকিবে ও তোমরা শত্রুগণের দেশে বাস করিবে, তত দিন ভূমি স্বীয় বিশ্রামকাল ভোগ করিবে; তৎকালে ভূমি বিশ্রাম পাইবে, ও স্বীয় বিশ্রামকাল ভোগ করিবে। যত কাল দেশ ধ্বংসস্থান হইয়া থাকিবে, তত কাল বিশ্রাম করিবে; কেননা যখন তোমরা দেশে বাস করিতে, তখন দেশ তোমাদের বিশ্রামকালে বিশ্রাম ভোগ করিত না। আর তোমাদের মধ্যে যাহারা অবশিষ্ট থাকিবে, আমি শত্রুদেশে তাহাদের হৃদয়ে বিষণ্ণতা প্রেরণ করিব, এবং চালিত পত্রের শব্দ তাহাদিগকে তাড়াইয়া লইয়া যাইবে; লোকে যেমন খড়েগর মুখ হইতে পলায়, তাহারা তদ্রূপ পলাইবে, এবং কেহ না তাড়াইলেও পতিত হইবে। কেহ না তাড়াইলেও তাহারা যেমন খড়েগর সম্মুখে, তেমনি এক জন অন্যের উপরে পতিত হইবে; এবং শত্রুদের সম্মুখে দাঁড়াইতে তোমাদের ক্ষমতা হইবে না। আর তোমরা জাতিগণের মধ্যে বিনষ্ট হইবে, ও তোমাদের শত্রুদের দেশ তোমাদিগকে গ্রাস করিবে। আর তোমাদের মধ্যে যাহারা অবশিষ্ট থাকিবে, তাহারা আপন আপন অপরাধে শত্রুদেশে ক্ষয় পাইবে; এবং আপনাদের পিতৃপুরুষদেরও অপরাধে তাহাদের সহিত ক্ষয় পাইবে। আর তাহাদিগকে স্বীকার করিতে হইবে যে, আমার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন এবং আমার বিপরীত আচরণ করাতে তাহাদের অপরাধ ও তাহাদের পিতৃপুরুষদের অপরাধ হইয়াছে, এবং আমিও তাহাদের বিপরীত আচরণ করিয়াছি, আর তাহাদিগকে শত্রুদেশে আনিয়াছি। তখন যদি তাহাদের অচ্ছিন্নত্বক হৃদয় নম্র হয়, ও তাহারা আপন আপন অপরাধের দণ্ড গ্রাহ্য করে, তবে আমি যাকোবের সহিত কৃত আমার নিয়ম স্মরণ করিব, এবং ইস্‌হাকের সহিত কৃত আমার নিয়ম ও অব্রাহামের সহিত কৃত আমার নিয়মও স্মরণ করিব, আর দেশকেও স্মরণ করিব। দেশও তাহাদের কর্ত্তৃত্ব পরিত্যক্ত থাকিবে, ও তাহাদের অবর্ত্তমানে ধ্বংসস্থান হইয়া আপন বিশ্রাম ভোগ করিবে, এবং তাহারা আপনাদের অপরাধের দণ্ড গ্রাহ্য করিবে; কারণ এই যে, তাহারা আমার শাসন অগ্রাহ্য করিত ও তাহাদের প্রাণ আমার বিধি ঘৃণা করিত। তথাপি যখন তাহারা শত্রুদের দেশে থাকিবে, তখন আমি নিঃশেষে বিনাশ জন্য কিম্বা তাহাদের সহিত আমার নিয়ম ভঙ্গ করণার্থে তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিব না, এবং ঘৃণাও করিব না; কেননা আমি সদাপ্রভু তাহাদের ঈশ্বর। আর আমি তাহাদের ঈশ্বর হইবার জন্য যাহাদিগকে জাতিগণের সাক্ষাতে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছি, তাহাদের সেই পিতৃপুরুষদের সহিত কৃত আমার নিয়ম তাহাদের জন্য স্মরণ করিব; আমি সদাপ্রভু। সীনয় পর্ব্বতে সদাপ্রভু মোশির-হস্ত দ্বারা আপনার ও ইস্রায়েল-সন্তানগেণর মধ্যে এই সকল বিধি, শাসন ও ব্যবস্থা স্থির করিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, যদি কেহ বিশেষ মানত করে, তবে তোমার নিরূপণীয় মূল্যানুসারে প্রাণী সকল সদাপ্রভুর হইবে। তোমার নিরূপণীয় মূল্য এই; বিংশতি বৎসর বয়স অবধি ষাট বৎসর বয়স পর্য্যন্ত পুরুষ হইলে তোমার নিরূপণীয় মূল্য পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে পঞ্চাশ শেকল রৌপ্য। কিন্তু যদি স্ত্রীলোক হয়, তবে তোমার নিরূপণীয় মূল্য ত্রিশ শেকল হইবে। যদি পাঁচ বৎসর বয়স অবধি বিংশতি বৎসর বয়স পর্য্যন্ত হয়, তবে তোমার নিরূপণীয় মূল্য পুরুষের পক্ষে বিংশতি শেকল ও স্ত্রীর পক্ষে দশ শেকল হইবে। যদি এক মাস বয়স অবধি পাঁচ বৎসর বয়স পর্য্যন্ত হয়, তবে তোমার নিরূপণীয় মূল্য পুরুষের পক্ষে পাঁচ শেকল রৌপ্য, ও তোমার নিরূপণীয় মূল্য স্ত্রীর পক্ষে তিন শেকল রৌপ্য হইবে। যদি ষাট বৎসর কিম্বা তাহার অধিক বয়স হয়, তবে তোমার নিরূপণীয় মূল্য পুরুষের পক্ষে পনর শেকল ও স্ত্রীর পক্ষে দশ শেকল হইবে। কিন্তু যদি দরিদ্রতা প্রযুক্ত তোমার নিরূপণীয় মূল্য দিতে সে অক্ষম হয়, তবে যাজকের নিকটে আনীত হইবে, এবং যাজক তাহার মূল্য নিরূপণ করিবে; মানতকারী ব্যক্তির সংস্থান অনুসারে যাজক তাহার মূল্য নিরূপণ করিবে। আর যদি কেহ সদাপ্রভুর কাছে উৎসর্গের জন্য পশু দান করে, তবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে দত্ত তাদৃশ সমস্ত পশু পবিত্র বস্তু হইবে। সে তাহার অন্যথা কি পরিবর্তন করিবে না, মন্দের পরিবর্ত্তে ভাল, কিম্বা ভালর পরিবর্ত্তে মন্দ দিবে না; যদি সে কোন প্রকারে পশুর সহিত পশুর পরিবর্ত্তন করে, তবে তাহা এবং তাহার বিনিময় উভয়ই পবিত্র হইবে। আর যাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহাররূপে উৎসর্গ করা যায় না, এমন কোন অশুচি পশু যদি কেহ দান করে, তবে সে ঐ পশুকে যাজকের সম্মুখে উপস্থিত করিবে। ঐ পশু ভাল কিম্বা মন্দ হউক, যাজক তাহার মূল্য নিরূপণ করিবে; তোমার অর্থাৎ যাজকের নিরূপণানুসারেই মূল্য হইবে। কিন্তু যদি সে কোন প্রকারে তাহা মুক্ত করিতে চাহে, তবে সে তোমার নিরূপিত মূল্যের পঞ্চমাংশ অধিক দিবে। আর যদি কোন ব্যক্তি সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপন গৃহ পবিত্র করে, তবে তাহা ভাল কিম্বা মন্দ হউক, যাজক তাহার মূল্য নিরূপণ করিবে; যাজক তাহার যে মূল্য নিরূপণ করিবে, তাহাই স্থির হইবে। আর যে তাহা পবিত্র করিয়াছে, সে যদি আপন গৃহ মুক্ত করিতে চাহে, তবে সে তোমার নিরূপিত মূল্যের পঞ্চমাংশ অধিক দিবে; তাহা করিলে গৃহ তাহার হইবে। আর যদি কেহ আপনার অধিকৃত ক্ষেত্রের কোন অংশ সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র করে, তবে তাহার বপনীয় বীজানুসারে তাহার মূল্য তোমার নিরূপণীয় হইবে; এক এক হোমর পরিমিত যবের বীজের প্রতি পঞ্চাশ পঞ্চাশ শেকল করিয়া রৌপ্য। যদি সে যোবেল বৎসরাবধি আপন ক্ষেত্র পবিত্র করে, তবে তোমার নিরূপণীয় সেই মূল্যানুসারে তাহা স্থির হইবে। কিন্তু যদি সে যোবেলের পরে আপন ক্ষেত্র পবিত্র করে, তবে যাজক আগামী যোবেল পর্য্যন্ত অবশিষ্ট বৎসরের সংখ্যানুসারে তাহার দেয় রৌপ্য গণনা করিবে, এবং তদনুসারে তোমার নিরূপণীয় মূল্য ন্যূন করা যাইবে। আর যে তাহা পবিত্র করিয়াছে, সে যদি কোন প্রকারে আপন ক্ষেত্র মুক্ত করিতে চাহে, তবে সে তোমার নিরূপণীয় রৌপ্যের পঞ্চমাংশ অধিক দিলে তাহা তাহারই হইবে। কিন্তু যদি সে সেই ক্ষেত্র মুক্ত না করে, কিম্বা যদি অন্য কাহারও কাছে সেই ক্ষেত্র বিক্রয় করে, তবে তাহা আর কখনও মুক্ত হইবে না; সেই ক্ষেত্র যোবেল বৎসরে ক্রেতার হস্ত হইতে গিয়া বর্জ্জিত ভূমির ন্যায় সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হইবে, তাহাতে যাজকেরই অধিকার হইবে। আর যদি কেহ আপন পৈতৃক ক্ষেত্র ব্যতিরেকে আপনার ক্রীত ক্ষেত্র সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র করে, তবে যাজক তোমার নিরূপণীয় মূল্যানুসারে যোবেল বৎসর পর্য্যন্ত তাহার দেয় রৌপ্য গণনা করিবে, আর সেই দিনে সে তোমার নিরূপিত মূল্য দিবে; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। যোবেল বৎসরে সেই ক্ষেত্র বিক্রেতার হস্তে, অর্থাৎ সেই ভূমি যাহার পৈতৃক অধিকার, তাহার হস্তে ফিরিয়া আসিবে। আর তোমার নিরূপণীয় সমস্ত মূল্য পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে হইবে; বিংশতি গেরাতে এক শেকল হয়। কেবল প্রথমজাত পশুবৎস সকল সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রথমজাত হওয়াতে কেহই তাহা পবিত্র করিতে পারিবে না; গোরু হউক, মেষ হউক, তাহা সদাপ্রভুর। যদি সেই পশু অশুচি হয়, তবে সে তোমার নিরূপণীয় মূল্যের পঞ্চমাংশ অধিক দিয়া তাহা মুক্ত করিতে পারে, মুক্ত না হইলে তাহা তোমার নিরূপণীয় মূল্যে বিক্রয় করা যাইবে। আর কোন ব্যক্তি আপনার সর্ব্বস্ব হইতে, মনুষ্য কি পশু কি অধিকৃত ক্ষেত্র হইতে, যে কিছু সদাপ্রভুর উদ্দেশে বর্জ্জিত করে, তাহা বিক্রীত কিম্বা মুক্ত হইবে না; প্রত্যেক বর্জ্জিত বস্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে অতি পবিত্র। মনুষ্যদের মধ্যে যে কেহ বর্জ্জিত হয়, তাহাকে মুক্ত করা যাইবে না; সে নিতান্ত বধ্য হইবে। আর ভূমির শস্য কিম্বা বৃক্ষের ফল হউক, ভূমির উৎপন্ন সমস্ত দ্রব্যের দশমাংশ সদাপ্রভুর; তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। আর যদি কেহ আপন দশমাংশ হইতে কিঞ্চিৎ মুক্ত করিতে চাহে, তবে সে তাহার পঞ্চমাংশ অধিক দিবে। আর গোমেষপালের দশমাংশ, পাঁচনির নীচে দিয়া যাহা কিছু যায়, তাহার মধ্যে প্রত্যেক দশম পশু সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হইবে। তাহা ভাল কি মন্দ, ইহার অনুসন্ধান সে করিবে না, ও তাহার পরিবর্ত্তন করিবে না; কিন্তু যদি সে কোন প্রকারে তাহার পরিবর্ত্তন করে, তবে তাহা ও তাহার বিনিময় উভয়ই পবিত্র হইবে; তাহা মুক্ত করা যাইবে না। সদাপ্রভু সীনয় পর্ব্বতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের জন্য মোশিকে এই সকল আদেশ করিলেন। মিসর দেশ হইতে লোকদের বাহির হইয়া আসিবার পর দ্বিতীয় বৎসরের দ্বিতীয় মাসের প্রথম দিবসে সদাপ্রভু সীনয় প্রান্তরে সমাগম-তাম্বুতে মোশিকে কহিলেন, তোমরা লোকদের গোষ্ঠী অনুসারে, পিতৃকুলানুসারে, নাম-সংখ্যানুসারে ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলীর, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকের সংখ্যা গ্রহণ কর। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যত পুরুষ ইস্রায়েলের মধ্যে যুদ্ধে গমনযোগ্য, তাহাদের সৈন্য অনুসারে তুমি ও হারোণ তাহাদিগকে গণনা কর। আর প্রত্যেক বংশ হইতে এক এক জন, আপন আপন পিতৃকুলের প্রধান ব্যক্তি, তোমাদের সহকারী হইবে। আর যে ব্যক্তিরা তোমাদের সহকারী হইবে, তাহাদের এই এই নাম। রূবেণের পক্ষে শদেয়ূরের পুত্র ইলীষূর। শিমিয়োনের পক্ষে সূরীশদ্দয়ের পুত্র শলুমীয়েল। যিহূদার পক্ষে অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন। ইষাখরের পক্ষে সূয়ারের পুত্র নথনেল। সবূলূনের পক্ষে হেলোনের পুত্র ইলীয়াব। যোষেফের পুত্রদের মধ্যে ইফ্রয়িমের পক্ষে অম্মীহূদের পুত্র ইলীশামা, মনঃশির পক্ষে পদাহসূরের পুত্র গমলীয়েল। বিন্যামীনের পক্ষে গিদিয়োনির পুত্র অবীদান। দানের পক্ষে অম্মীশদ্দয়ের পুত্র অহীয়েষর। আশেরের পক্ষে অক্রণের পুত্র পগীয়েল। গাদের পক্ষে দ্যূয়েলের পুত্র ইলীয়াসফ। নপ্তালীর পক্ষে ঐননের পুত্র অহীরঃ। ইহারা মণ্ডলীর সমাহূত লোক, আপন আপন পিতৃবংশের অধ্যক্ষ; ইহারা ইস্রায়েলের সহস্রপতি ছিল। তখন মোশি ও হারোণ উল্লিখিত নামা ব্যক্তিদিগকে সঙ্গে লইলেন। আর দ্বিতীয় মাসের প্রথম দিবসে সমস্ত মণ্ডলীকে একত্র করিয়া মস্তকের সংখ্যামতে বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লোকদের নাম-সংখ্যানুসারে তাহাদের গোষ্ঠী ও পিতৃকুল লিখিলেন। এইরূপে মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সীনয় প্রান্তরে তাহাদিগকে গণনা করিলেন। ইস্রায়েলের প্রথমজাত যে রূবেণ, তাহার সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের মস্তক ও নাম-সংখ্যানুসারে রূবেণ বংশের গণিত লোক ছেচল্লিশ সহস্র পাঁচ শত। শিমিয়োন-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের মস্তক ও নাম-সংখ্যানুসারে শিমিয়োন বংশের গণিত লোক ঊনষাট সহস্র তিন শত। গাদ-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে গাদ বংশের গণিত লোক পঁয়তাল্লিশ সহস্র ছয় শত পঞ্চাশ। যিহূদা-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে যিহূদা বংশের গণিত লোক চুয়াত্তর সহস্র ছয় শত। ইষাখর-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে ইষাখর বংশের গণিত লোক চুয়ান্ন সহস্র চারি শত। সবূলূন-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে সবূলূন বংশের গণিত লোক সাতান্ন সহস্র চারি শত। যোষেফ-সন্তানগণের মধ্যে ইফ্রয়িম-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে ইফ্রয়িম-বংশের গণিত লোক চল্লিশ সহস্র পাঁচ শত। মনঃশি-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে মনঃশি বংশের গণিত লোক বত্রিশ সহস্র দুই শত। বিন্যামীন-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে বিন্যামীন বংশের গণিত লোক পঁয়ত্রিশ সহস্র চারি শত। দান-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে দান বংশের গণিত লোক বাষট্টি সহস্র সাত শত। আশের-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে আশের বংশের গণিত লোক একচল্লিশ সহস্র পাঁচ শত। নপ্তালি-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে সংখ্যানির্ণয়। বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষের নাম-সংখ্যানুসারে নপ্তালি বংশের গণিত লোক তিপান্ন সহস্র চারি শত। এই সকল লোক মোশি ও হারোণ কর্ত্তৃক, এবং ইস্রায়েলের বারো জন অধ্যক্ষ অর্থাৎ আপন আপন পিতৃকুলের এক এক জন অধ্যক্ষ কর্ত্তৃক গণিত হইল। স্ব স্ব পিতৃকুলানুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, অর্থাৎ বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক ইস্রায়েলের মধ্যে যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত পুরুষ গণিত হইলে গণিত লোকদের সংখ্যা ছয় লক্ষ তিন সহস্র পাঁচ শত পঞ্চাশ হইল। আর লেবীয়েরা আপন পিতৃবংশানুসারে তাহাদিগের মধ্যে গণিত হইল না। কেননা সদাপ্রভু মোশিকে বলিয়াছিলেন, তুমি কেবল লেবি বংশের গণনা করিও না, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে তাহাদের সংখ্যা গ্রহণ করিও না। কিন্তু সাক্ষ্যের আবাস ও তাহার সকল দ্রব্য ও তৎসংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধান জন্য লেবীয়দিগকে নিযুক্ত করিও; তাহারা আবাস ও তাহার সমস্ত দ্রব্য বহিবে, এবং তাহারা তৎসংক্রান্ত পরিচর্য্যা করিবে, ও আবাসের চারিদিকে সন্নিবেশিত হইবে। আর আবাস তুলিবার সময়ে লেবীয়েরা তাহা ভাঙ্গিবে; এবং আবাস স্থাপনের সময়ে লেবীয়েরা তাহা স্থাপন করিবে; অন্য গোষ্ঠীর লোক তাহার নিকটে গেলে তাহার প্রাণদণ্ড হইবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপন আপন সৈন্য অনুসারে আপন আপন শিবিরে আপন আপন পতাকার সমীপে সন্নিবেশিত হইবে। কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানগণের মণ্ডলীর প্রতি যেন ক্রোধ না বর্ত্তে, এই নিমিত্ত সাক্ষ্যের আবাসের চতুর্দ্দিকে লেবীয়েরা সন্নিবেশিত হইবে, এবং লেবীয়েরা সাক্ষ্যের আবাসের রক্ষণীয় রক্ষা করিবে। ইস্রায়েল-সন্তানগণ সেইরূপ করিল; সদাপ্রভু মোশিকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারে তাহারা সকলই করিল। আর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ প্রত্যেকে স্ব স্ব পিতৃকুলের চিহ্নের সহিত পতাকার নিকটে সন্নিবেশিত হইবে; তাহারা সমাগম-তাম্বুর অভিমুখে চতুর্দ্দিকে সন্নিবেশিত হইবে। পূর্ব্ব পার্শ্বে সূর্য্যোদয়ের দিকে আপন সৈন্য অনুসারে যিহূদার শিবিরের পতাকা সম্বন্ধীয় লোকেরা সন্নিবেশিত হইবে; এবং অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন যিহূদা-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক চুয়াত্তর সহস্র ছয় শত জন। তাহার পার্শ্বে ইষাখর বংশ সন্নিবেশিত হইবে, এবং সূয়ারের পুত্র নথনেল ইষাখর-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহার গণিত লোক চুয়ান্ন সহস্র চারি শত জন। আর সবূলূন বংশ তথায় থাকিবে; হেলোনের পুত্র ইলীয়াব সবূলূন-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহার গণিত লোক সাতান্ন সহস্র চারি শত জন। যিহূদার শিবিরের গণিত লোকেরা আপন আপন সৈন্য অনুসারে সর্ব্বশুদ্ধ এক লক্ষ ছেয়াশী সহস্র চারি শত জন। তাহারা প্রথমতঃ অগ্রসর হইবে। দক্ষিণ পার্শ্বে আপন সৈন্য অনুসারে রূবেণের শিবিরের পতাকা থাকিবে, এবং শদেয়ূরের পুত্র ইলীষূর রূবেণ-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহার গণিত লোক ছেচল্লিশ সহস্র পাঁচ শত জন। তাহার পার্শ্বে শিমিয়োন বংশ সন্নিবেশিত হইবে, এবং সূরীশদ্দয়ের পুত্র শলুমীয়েল শিমিয়োনের সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক ঊনষাট সহস্র তিন শত জন। গাদ বংশও তথায় থাকিবে, এবং দ্যূয়েলের পুত্র ইলীয়াসফ গাদ-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক পঁয়তাল্লিশ সহস্র ছয় শত পঞ্চাশ জন। রূবেণের শিবিরের গণিত লোকেরা আপন আপন সৈন্য অনুসারে সর্ব্বশুদ্ধ এক লক্ষ একান্ন সহস্র চারি শত পঞ্চাশ জন। তাহারা দ্বিতীয়তঃ অগ্রসর হইবে। পরে সমাগম-তাম্বু লেবীয়দের শিবিরের সহিত সমস্ত শিবিরের মধ্যবর্ত্তী হইয়া অগ্রসর হইবে; যাহারা যেমন সন্নিবেশিত হয়, তাহারা তেমনি আপন আপন শ্রেণীতে আপন আপন পতাকার পার্শ্বে পার্শ্বে থাকিয়া চলিবে। পশ্চিম পার্শ্বে আপন সৈন্য অনুসারে ইফ্রয়িমের শিবিরের পতাকা থাকিবে, এবং অম্মীহূদের পুত্র ইলীশামা ইফ্রয়িম-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক চল্লিশ সহস্র পাঁত শত জন। তাহাদের পার্শ্বে মনঃশি বংশ থাকিবে, এবং পদাহসূরের পুত্র গমলীয়েল মনঃশি-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক বত্রিশ সহস্র দুই শত জন। আর বিন্যামীন বংশ তথায় থাকিবে, এবং গিদিয়োনির পুত্র অবীদান বিন্যামীন-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক পঁয়ত্রিশ সহস্র চারি শত জন। ইফ্রয়িমের শিবিরের গণিত লোকেরা আপন আপন সৈন্য অনুসারে সর্ব্বশুদ্ধ এক লক্ষ আট সহস্র এক শত জন। তাহারা তৃতীয়তঃ অগ্রসর হইবে। উত্তর পার্শ্বে আপন সৈন্য অনুসারে দানের শিবিরের পতাকা থাকিবে, এবং অম্মীশদ্দয়ের পুত্র অহীয়েষর দান-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক বাষট্টি সহস্র সাত শত জন। তাহাদের পার্শ্বে আশের বংশ সন্নিবেশিত হইবে, এবং অক্রণের পুত্র পগীয়েল আশের-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক একচল্লিশ সহস্র পাঁচ শত জন। নপ্তালি বংশও তথায় থাকিবে, এবং ঐননের পুত্র অহীরঃ নপ্তালি-সন্তানগণের অধ্যক্ষ হইবে। তাহার সৈন্য, তাহাদের গণিত লোক তিপান্ন সহস্র চারি শত জন। দানের শিবিরের গণিত লোকেরা সর্ব্বশুদ্ধ এক লক্ষ সাতান্ন সহস্র ছয় শত জন। তাহারা আপন আপন পতাকা লইয়া শেষে অগ্রসর হইবে। ইহারা ইস্রায়েল-সন্তানগণের পিতৃকুলানুসারে গণিত লোক; সৈন্য অনুসারে শিবিরের গণিত লোক সর্ব্বশুদ্ধ ছয় লক্ষ তিন সহস্র সাড়ে পাঁচ শত। কিন্তু লেবীয়েরা ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে গণিত হইল না, যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা করিয়াছিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানগণ মোশির প্রতি দত্ত সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিত, আপন আপন গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে আপন আপন পতাকার নিকটে সন্নিবেশিত হইত ও যাত্রা করিত। সীনয় পর্ব্বতে যে দিন সদাপ্রভু মোশির সঙ্গে কথা কহিলেন, সেই দিন হারোণের ও মোশির বংশাবলি এই। হারোণের পুত্রগণের এই এই নাম; প্রথমজাত নাদব, পরে অবীহূ, ইলীয়াসর ও ঈথামর। হারোণের যে পুত্রেরা অভিষিক্ত যাজক এবং হস্তপূরণ দ্বারা যাজনকর্ম্মে নিযুক্ত হইল, তাহাদের এই এই নাম। কিন্তু নাদব ও অবীহূ সীনয় প্রান্তরে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ইতর অগ্নি নিবেদন করাতে সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রাণত্যাগ করিয়াছিল। তাহাদের সন্তান ছিল না; আর ইলীয়াসর ও ঈথামর তাহাদের পিতা হারোণের সাক্ষাতে যাজনকর্ম্ম করিত। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি লেবি বংশকে আনিয়া হারোণ যাজকের সম্মুখে উপস্থিত কর; তাহারা তাহার পরিচর্য্যা করিবে; আর আবাসের সেবাকর্ম্ম করিবার জন্য সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে তাহার ও সমস্ত মণ্ডলীর রক্ষণীয় রক্ষা করিবে। আর আবাসের সেবাকর্ম্ম করিবার জন্য সমাগম-তাম্বুর সমস্ত দ্রব্য ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের রক্ষণীয় রক্ষা করিবে। আর তুমি লেবীয়দিগকে হারোণের ও তাহার পুত্রগণের হস্তে প্রদান করিবে; তাহারা দত্ত, ইস্রায়েল-সন্তানগণের পক্ষে তাহাকে দত্ত। আর তুমি হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে নিযুক্ত করিবে, এবং তাহারা আপনাদের যাজকত্বপদ রক্ষা করিবে। অন্য গোষ্ঠীভুক্ত যে কেহ নিকটবর্ত্তী হইবে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে গর্ভ উন্মোচক সমস্ত প্রথমজাতের পরিবর্ত্তে আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্য হইতে লেবীয়দিগকে গ্রহণ করিলাম; অতএব লেবীয়েরা আমারই হইবে। কেননা প্রথমজাত সকলে আমার; যে দিন আমি মিসর দেশে সমস্ত প্রথমজাতকে আঘাত করি, সেই দিন মনুষ্য অবধি পশু পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের সমস্ত প্রথমজাতকে আমার উদ্দেশে পবিত্র করিয়াছি; তাহারা আমারই হইবে; আমি সদাপ্রভু। আর সীনয় প্রান্তরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি লেবির সন্তানগণকে তাহাদের পিতৃকুল অনুসারে ও গোষ্ঠী অনুসারে গণনা কর; এক মাস ও ততোধিক বয়স্ক সমস্ত পুরুষকেই গণনা কর। তখন মোশি যেমন আদেশ পাইলেন, তেমনি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাহাদিগকে গণনা করিলেন। লেবির সন্তানদের নাম গের্শোন, কহাৎ ও মরারি। আর আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে গের্শোনের সন্তানদের নাম লিন্‌বি ও শিমিয়ি। আর আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে কহাতের সন্তানদের নাম অম্রাম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল। আর আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে মরারির সন্তানদের নাম মহলি ও মূশি। এই সকলে স্ব স্ব পিতৃকুলানুসারে লেবীয়দের গোষ্ঠী। গের্শোন হইতে লিব্‌নি-গোষ্ঠী ও শিমিয়ি-গোষ্ঠী উৎপন্ন হইল; ইহারা গের্শোনীয়দের গোষ্ঠী। এক মাস ও ততোধিক বয়স্ক সমস্ত পুরুষকে গণনা করিলে ইহাদের গণিত লোক সংখ্যায় সাত সহস্র পাঁচ শত জন হইল। গের্শোনীয়দের গোষ্ঠী সকল পশ্চিমদিকে আবাসের পশ্চাদ্ভাগে সন্নিবেশিত হইত। লায়েলের পুত্র ইলীয়াসফ গের্শোনীয়দের পিতৃকুলাধ্যক্ষ ছিলেন। সমাগম-তাম্বুর এই সমস্ত গের্শোনের সন্তানদিগের রক্ষণীয় হইল; আবাস,তাম্বু, তাম্বুর আবরণ, সমাগম-তাম্বু-দ্বারের পর্দ্দা, প্রাঙ্গনের পর্দ্দা, আবাসের ও বেদীর চতুর্দ্দিক্‌স্থ প্রাঙ্গণ-দ্বারের পর্দ্দা এবং সমস্ত সেবাকার্য্য নিমিত্তক রজ্জু। আর কহাৎ হইতে অম্রামীয় গোষ্ঠী, যিষ্‌হরীয় গোষ্ঠী, হিব্রোণীয় গোষ্ঠী ও উষীয়েলীয় গোষ্ঠী উৎপন্ন হইল; ইহারা কহাতীয়দের গোষ্ঠী। এক মাস ও ততোধিক বয়স্ক সমস্ত পুরুষের সংখ্যানুসারে ইহারা আট সহস্র ছয় শত জন, ইহারা পবিত্র স্থানের রক্ষক। কহাতের সন্তানগণের গোষ্ঠী সকল দক্ষিণদিকে আবাসের পার্শ্বে সন্নিবেশিত হইত। আর উষীয়েলের পুত্র ইলীষাফণ কহাতীয় গোষ্ঠী সকলের পিতৃকুলাধ্যক্ষ ছিলেন। আর এই সকল তাহাদের রক্ষণীয়; সিন্দুক, মেজ, দীপবৃক্ষ, দুই বেদি, পবিত্র স্থানের পরিচর্য্যার্থক সমস্ত পাত্র, তিরস্করিণী ও তৎসম্বন্ধীয় সমস্ত সেবাকর্ম্ম। হারোণ যাজকের পুত্র ইলীয়াসর লেবীয়দের অধ্যক্ষগণের অধ্যক্ষ হইয়া পবিত্র স্থানের রক্ষণীয় রক্ষকদের উপরে নিযুক্ত ছিলেন। মরারি হইতে মহলীয় গোষ্ঠী ও মূশীয় গোষ্ঠী উৎপন্ন হইল; ইহারা মরারীয়দের গোষ্ঠী। এক মাস ও ততোধিক বয়স্ক সমস্ত পুরুষ গণনা করিলে ইহাদের গণিত লোক সংখ্যায় ছয় সহস্র দুই শত জন হইল। আর অবীহয়িলের পুত্র সূরীয়েল মরারি-গোষ্ঠী সকলের পিতৃকুলাধ্যক্ষ ছিলেন; তাহারা আবাসের উত্তরদিকে সন্নিবেশিত হইত। আর মরারির সন্তানগণ এই সকলের রক্ষায় নিযুক্ত হইল; আবাসের তক্তা, অর্গল, স্তম্ভ, চুঙ্গি ও তাহার সমস্ত দ্রব্য, এবং তৎসম্বন্ধীয় সমস্ত সেবাকর্ম্ম, আর প্রাঙ্গণের চতুর্দ্দিক্‌স্থিত স্তম্ভ সকল ও তাহাদের চুঙ্গি, গোঁজ ও রজ্জু। আর সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে, পূর্ব্ব পার্শ্বে, সূর্য্যোদয়ের দিকে, মোশি, হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণ সন্নিবেশিত ছিলেন; তাঁহারা ইস্রায়েল-সন্তানগণের রক্ষণীয় বলিয়া ধর্ম্মধামের রক্ষণীয় রক্ষা করিতেন; কিন্তু অন্য গোষ্ঠীভুক্ত যে কোন ব্যক্তি তাহার নিকটবর্ত্তী হইত, সে বধ্য হইত। মোশি ও হারোণ সদাপ্রভুর আজ্ঞাক্রমে লেবীয়দিগকে স্ব স্ব গোষ্ঠী অনুসারে গণনা করিলে তাহাদের গণিত এক মাস ও ততোধিক বয়স্ক পুরুষ সর্ব্বশুদ্ধ বাইশ সহস্র জন হইল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে এক মাস ও ততোধিক বয়স্ক প্রথমজাত সমস্ত পুরুষকে গণনা কর, ও তাহাদের নামের সংখ্যা গ্রহণ কর। আমি সদাপ্রভু, আমারই অধিকারার্থে তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত প্রথমজাতের পরিবর্ত্তে লেবীয়দিগকে, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত প্রথমজাত পশুর পরিবর্ত্তে লেবীয়দের পশুধন গ্রহণ কর। তাহাতে মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত প্রথমজাতকে গণনা করিলেন; তাহাদের এক মাস ও ততোধিক বয়স্ক সমস্ত প্রথমজাত পুরুষ নামসংখ্যানুসারে বাইশ সহস্র দুই শত তেয়াত্তর জন গণিত হইল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত প্রথমজাতের পরিবর্ত্তে লেবীয়দিগকে, ও তাহাদের পশুধনের পরিবর্ত্তে লেবীয়দের পশুধন গ্রহণ কর; লেবীয়েরা আমারই হইবে; আমি সদাপ্রভু। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণের প্রথমজাতদের মধ্যে লেবীয়দের সংখ্যাতিরিক্ত যে দুই শত তেয়াত্তর জন মোক্তব্য লোক, তাহাদের এক এক জনের নিমিত্তে পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে পাঁচ পাঁচ শেকল লইবে; বিংশতি গেরাতে এক শেকল হয়। আর তাহাদের সংখ্যাতিরিক্ত সেই মোক্তব্য লোকদের রৌপ্যমূল্য তুমি হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে দিবে। তাহাতে লেবীয়দের দ্বারা মুক্ত লোক ব্যতিরেকে যাহারা অবশিষ্ট থাকিল, তাহাদের মুক্তির মূল্য মোশি লইলেন। তিনি ইস্রায়েল-সন্তানগণের প্রথমজাত লোক হইতে পবিত্র স্থানের শেকলের পরিমাণে এক সহস্র তিন শত পঁয়ষট্টি [শেকল] রৌপ্য লইলেন। সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে মোশি সেই মুক্ত লোকদের রৌপ্য লইয়া হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে দিলেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। আর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা লেবির সন্তানগণের মধ্যে আপন আপন গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে কহাতের সন্তানগণকে, ত্রিশ বৎসর বয়স্ক অবধি পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক পর্য্যন্ত যত লোক সমাগম-তাম্বুতে কর্ম্মচারীদের শ্রেণীভুক্ত হয়, তাহাদিগকে গণনা কর। সমাগম-তাম্বুতে কহাতের সন্তানগণের সেবাকর্ম্ম অতি পবিত্র স্থান [সংক্রান্ত]। যখন শিবির অগ্রসর হইবে, তখন হারোণ ও তাহার পুত্রগণ ভিতরে যাইবে, এবং ব্যবধানের তিরস্করিণী নামাইয়া তদ্দ্বারা সাক্ষ্য-সিন্দুক ঢাকিবে, তাহার উপরে তহশ-চর্ম্মের আচ্ছাদন দিবে, ও তাহার উপরে সম্পূর্ণ নীলবর্ণ এক বস্ত্র পাতিবে, এবং তাহার বহন-দণ্ড পরাইবে। আর দর্শন-রুটীর মেজের উপরে এক নীলবর্ণ বস্ত্র পাতিবে, ও তাহার উপরে থাল, চমস, সেকপাত্র ও ঢালিবার জন্য শ্রুব সকল রাখিবে, এবং নিত্য রুটী তাহার উপরে থাকিবে। সেই সকলের উপরে তাহারা এক লোহিতবর্ণ বস্ত্র পাতিবে, এবং তহশ-চর্ম্মের আচ্ছাদন দিয়া তাহা ঢাকিবে, এবং তাহার বহন-দণ্ড পরাইবে। আর এক নীলবর্ণ বস্ত্র লইয়া দীপবৃক্ষ ও তাহার দীপ সকল, চিমটা এবং গুল্‌তরাশ ও সেই সমস্তের পরিচর্য্যার্থক সমস্ত তৈলপাত্র আচ্ছাদন করিবে। আর তাহা ও তৎসংক্রান্ত সমস্ত পাত্র তহশ-চর্ম্মের এক আচ্ছাদনে রাখিয়া দণ্ডের উপরে রাখিবে। পরে তাহারা স্বর্ণময় বেদীর উপরে নীলবর্ণ বস্ত্র পাতিয়া তাহার উপরে তহশ-চর্ম্মের আচ্ছাদন দিবে, এবং তাহার বহন-দণ্ড পরাইবে। আর তাহারা পবিত্র স্থানের পরিচর্য্যার্থক সমস্ত পাত্র লইয়া নীলবর্ণ বস্ত্রের মধ্যে রাখিবে, এবং তহশ-চর্ম্ম দিয়া তাহা ঢাকিয়া দণ্ডের উপরে রাখিবে। আর বেদি হইতে ভস্ম ফেলিয়া তাহার উপরে বেগুনে রঙ্গের বস্ত্র পাতিবে। আর তাহার উপরে তাহার পরিচর্য্যার্থক সমস্ত পাত্র, অঙ্গারধানী, ত্রিশূল, হাতা ও বাটি, বেদির সমস্ত পাত্র রাখিবে; আর তাহারা তাহার উপরে তহশ-চর্ম্মের আচ্ছাদন দিবে, এবং তাহার বহন-দণ্ড পরাইবে। এইরূপে শিবিরের অগ্রসর হইবার সময়ে হারোণ ও তাহার পুত্রগণ পবিত্র স্থান ও পবিত্র স্থানের সমস্ত পাত্রের আচ্ছাদন সাঙ্গ করিলে পর কহাতের সন্তানগণ তাহা বহন করিতে আসিবে; কিন্তু তাহারা পবিত্র বস্তু স্পর্শ করিবে না, পাছে তাহাদের মৃত্যু হয়। এই সকল সমাগম-তাম্বুতে কহাতের সন্তানগণের বহনীয় হইবে। আর দীপার্থক তৈল ও ধূপার্থক সুগন্ধি দ্রব্য, নিত্য ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ও অভিষেকার্থ তৈলের তত্ত্বাবধান, সমস্ত আবাস এবং যে কিছু তাহার মধ্যে আছে, পবিত্র স্থান ও তাহার দ্রব্য সকলের তত্ত্বাবধান করা হারোণের পুত্র ইলীয়াসর যাজকের কার্য্য হইবে। আর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা লেবীয়দের মধ্য হইতে কহাতীয় গোষ্ঠীসমূহের বংশকে উচ্ছেদ করিও না। কিন্তু যখন তাহারা অতি পবিত্র বস্তুর নিকটবর্ত্তী হয়, তখন তাহারা যেন বাঁচিয়া থাকে, মারা না পড়ে, এই নিমিত্ত তোমরা তাহাদের প্রতি এইরূপ করিও; হারোণ ও তাহার পুত্রগণ ভিতরে গিয়া উহাদের প্রত্যেক জনকে আপন আপন সেবাকর্ম্মে ও ভার বহনে নিযুক্ত করিবে। কিন্তু উহারা এক নিমিষের জন্যও পবিত্র বস্তু দেখিতে ভিতরে যাইবে না, পাছে মারা পড়ে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি গের্শোন-সন্তানগণের পিতৃকুল ও গোষ্ঠী অনুসারে তাহাদেরও সংখ্যা গ্রহণ কর। ত্রিশ বৎসর বয়স্ক অবধি পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক পর্য্যন্ত যাহারা সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্ম করণার্থে শ্রেণীভুক্ত হয়, তাহাদিগকে গণনা কর। সেবাকর্ম্মের ও ভার বহনের মধ্যে গের্শোনীয় গোষ্ঠীদের সেবাকর্ম্ম এই। তাহারা আবাসের পর্দ্দা সকল, এবং সমাগম-তাম্বু, তাম্বুর আবরণ, তদুপরিস্থিত তহশ-চর্ম্মের ছাদ, সমাগম-তাম্বুদ্বারের আচ্ছাদনবস্ত্র; প্রাঙ্গণের পর্দ্দা সকল, এবং আবাসের ও বেদির চতুর্দ্দিক্‌স্থিত প্রাঙ্গণের দ্বারের আচ্ছাদনবস্ত্র, তাহার রজ্জু ও সেবার্থক সমস্ত দ্রব্য বহিবে; এবং এই সকলের সম্বন্ধে যে কিছু করিতে হয়, তাহাও করিবে। হারোণের ও তাহার পুত্রগণের আজ্ঞানুসারে গের্শোন-সন্তানগণ আপন আপন ভার বহন ও সেবাকর্ম্ম সম্বন্ধীয় সমস্ত কর্ম্ম করিবে; তোমরা তাহাদের সমস্ত ভার বহনে তাহাদিগকে নিযুক্ত করিবে। সমাগম-তাম্বুতে ইহাই গের্শোন-সন্তানগণের গোষ্ঠীদের সেবাকর্ম্ম; এবং তাহাদের রক্ষণীয় হারোণ যাজকের পুত্র ঈথামরের হস্তগত হইবে। আর তুমি মরারি-সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে তাহাদিগকে গণনা কর। ত্রিশ বৎসর বয়স্ক অবধি পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক পর্য্যন্ত যাহারা সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্ম করণার্থে শ্রেণীভুক্ত হয়, তাহাদিগকে গণনা কর। আর সমাগম-তাম্বুতে তাহাদের সমস্ত সেবাকর্ম্ম সম্বন্ধীয় এই ভার তাহাদের বহনীয় হইবে; আবাসের তক্তা সকল, সে সকলের অর্গল, স্তম্ভ ও চুঙ্গি এবং প্রাঙ্গণের চতুর্দ্দিক্‌স্থিত স্তম্ভ সকল, সে সকলের চুঙ্গি, গোঁজ, রজ্জু ও তৎসম্বন্ধীয় সমস্ত দ্রব্য ও কার্য্য। তোমরা নামে নামে তাহাদের বহনীয় ভারের সমস্ত দ্রব্য গণনা করিবে। সমাগম-তাম্বুতে ইহা মরারি-সন্তানদের গোষ্ঠীদের সমস্ত সেবাকর্ম্ম সম্বন্ধীয় কার্য্য; ইহা হারোণ যাজকের পুত্র ঈথামরের হস্তগত হইবে। পরে মোশি, হারোণ ও মণ্ডলীর অধ্যক্ষগণ, কহাতীয় সন্তানগণের গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে তাহাদের মধ্যে ত্রিশ বৎসর বয়স্ক অবধি পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক পর্য্যন্ত যাহারা সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্ম করিবার জন্য শ্রেণীভুক্ত হইল, তাহাদিগকে গণনা করিলেন। আর তাহাদের গোষ্ঠী অনুসারে গণিত লোক দুই সহস্র সাত শত পঞ্চাশ জন হইল। ইহারা কহাতীয় গোষ্ঠীদের গণিত এবং সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্মে নিযুক্ত লোক; মোশির দ্বারা দত্ত সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে মোশি ও হারোণ ইহাদিগকে গণনা করিলেন। আর গের্শোন-সন্তানগণের মধ্যে যাহারা আপন আপন গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে গণিত হইল, ত্রিশ বৎসর বয়স্ক অবধি পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক পর্য্যন্ত যাহারা সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্ম করিবার জন্য শ্রেণীভুক্ত হইল, তাহারা আপন আপন গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে গণিত হইলে দুই সহস্র ছয় শত ত্রিশ জন হইল। ইহারা গের্শোন-সন্তানগণের গোষ্ঠীদের গণিত এবং সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্মে নিযুক্ত লোক; মোশি ও হারোণ সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে ইহাদিগকে গণনা করিলেন। আর মরারি-সন্তানগণের গোষ্ঠীদের মধ্যে যাহারা আপন আপন গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে গণিত হইল, ত্রিশ বৎসর বয়স্ক অবধি পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক পর্য্যন্ত যাহারা সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্মার্থে শ্রেণীভুক্ত হইল, তাহারা আপন আপন গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে গণিত হইলে তিন সহস্র দুই শত জন হইল। ইহারা মরারি-সন্তানগণের গোষ্ঠীদের গণিত লোক; মোশির দ্বারা দত্ত সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে মোশি ও হারোণ ইহাদিগকে গণনা করিলেন। এইরূপে মোশি, হারোণ ও ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণ কর্ত্তৃক যে লেবীয়েরা আপন আপন গোষ্ঠী ও পিতৃকুলানুসারে গণিত হইল, ত্রিশ বৎসর বয়স্ক অবধি পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক পর্য্যন্ত যাহারা সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্ম ও ভার বহন কার্য্য করিতে প্রবেশ করিত, তাহারা গণিত হইলে আট সহস্র পাঁচ শত আশী জন হইল। সদাপ্রভুর আজ্ঞা অনুসারেই তাহারা প্রত্যেক জন মোশি দ্বারা আপন আপন সেবাকর্ম্ম ও ভার বহন অনুসারে গণিত হইল; এইরূপে মোশির প্রতি দত্ত সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাহারা তাঁহার দ্বারা গণিত হইল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আদেশ কর, যেন তাহারা প্রত্যেক কুষ্ঠীকে, প্রত্যেক প্রমেহীকে ও মৃতের দ্বারা অশুচি প্রত্যেক জনকে শিবির হইতে বাহির করিয়া দেয়। তোমরা পুরুষ ও স্ত্রীলোককে বাহির কর, তাহাদিগকে শিবির হইতে বাহির কর। উহাদের যে শিবিরের মধ্যে আমি বাস করি, তাহারা তাহা অশুচি না করুক। তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ সেইরূপ কর্ম্ম করিল, তাহাদিগকে শিবিরের বাহির করিয়া দিল; সদাপ্রভু মোশিকে যেমন বলিয়াছিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ সেইরূপ করিল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, পুরুষ কিম্বা স্ত্রী হউক, যখন কেহ মনুষ্যদের মধ্যে চলিত কোন পাপ করিয়া সদাপ্রভুর কাছে সত্যলঙ্ঘন করে, আর সেই প্রাণী দণ্ডনীয় হয়, তখন সে যে পাপ করিয়াছে, তাহা স্বীকার করিবে, ও আপন দোষপ্রযুক্ত তাহার মূল দ্রব্য ও তাহার পঞ্চমাংশের এক অংশ অধিক, যাহার বিরুদ্ধে দোষ করিয়াছে, তাহাকে দিবে। কিন্তু যাহাকে দোষের পরিশোধ দেওয়া যাইতে পারে, এমন মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতি যদি সেই ব্যক্তির না থাকে, তবে দোষের পরিশোধ সদাপ্রভুর উদ্দেশে যাজককে দিতে হইবে; তদ্ভিন্ন যদ্দ্বারা তাহার প্রায়শ্চিত্ত হয়, সেই প্রায়শ্চিত্তার্থক মেষও দিতে হইবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের পবিত্র বস্তুর মধ্যে যত উত্তোলনীয় উপহার যাজকের কাছে আনে, সেই সকল তাহার হইবে। যে পবিত্র বস্তু যাহা কর্ত্তৃক নিবেদিত হয়, তাহা তাহারই হইবে; কোন ব্যক্তি যে কোন বস্তু যাজককে দেয়, তাহা তাহার হইবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, কোন ব্যক্তির স্ত্রী যদি বিপথগামিনী হইয়া তাহার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করে, সে যদি স্বামীর দৃষ্টির অগোচরে কোন পুরুষের সহিত সংসর্গ করিয়া গোপনে অশুচি হয়, ও তাহার বিপক্ষে কোন সাক্ষী না থাকে, ও সে ধরা না পড়ে; এবং স্ত্রী অশুচি হইলে স্বামী যদি অন্তর্জ্বালাজনক আত্মার আবেশে তাহার প্রতি অন্তর্জ্বালাবিশিষ্ট হয়; অথবা স্ত্রী অশুচি না হইলেও যদি সে অন্তর্জ্বালাজনক আত্মার আবেশে তাহার প্রতি অন্তর্জ্বালাবিশিষ্ট হয়; তবে সেই স্বামী আপন স্ত্রীকে যাজকের কাছে আনিবে, এবং তাহার নিমিত্তে তাহার উপহার, অর্থাৎ এক ঐফার দশমাংশ যবের সূজি আনিবে, কিন্তু তাহার উপরে তৈল ঢালিবে না ও কুন্দুরু দিবে না; কেননা তাহা অন্তর্জ্বালার ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, স্মরণার্থক ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, যদ্দ্বারা অপরাধ স্মরণ হয়। পরে যাজক সেই স্ত্রীকে লইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত করিবে। আর যাজক মাটির পাত্রে পবিত্র জল রাখিয়া আবাসের মেঝিয়ার কিঞ্চিৎ ধূলি লইয়া সেই জলে দিবে। পরে যাজক ঐ স্ত্রীকে সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত করিবে, ও তাহার মস্তকের চুল খুলিয়া দিয়া ঐ স্মরণার্থক ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, অর্থাৎ অন্তর্জ্বালার ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, তাহার হস্তে দিবে; এবং যাজকের হস্তে শাপজনক তিক্ত জল থাকিবে। আর যাজক ঐ স্ত্রীকে দিব্য করাইয়া বলিবে, কোন পুরুষ যদি তোমার সহিত শয়ন না করিয়া থাকে, এবং তুমি আপন স্বামীর অধীনা থাকিয়া থাক, ও বিপথ-গমনপূর্ব্বক যদি অশুচি ক্রিয়া না করিয়া থাক, তবে এই শাপজনক তিক্ত জল তোমাতে নিষ্ফল হউক। কিন্তু তুমি আপন স্বামীর অধীনা হইয়াও যদি বিপথগামিনী হইয়া থাক, যদি অশুচি ক্রিয়া করিয়া থাক, ও তোমার স্বামী ভিন্ন অন্য কোন পুরুষ যদি তোমার সহিত শয়ন করিয়া থাকে— তবে যাজক শাপজনক দিব্যে সেই স্ত্রীকে দিব্য করাইবে, ও যাজক সেই স্ত্রীকে বলিবে—সদাপ্রভু তোমার ঊরু অবশ ও তোমার উদর স্ফীত করিয়া তোমার লোকদের মধ্যে তোমাকে শাপের ও দিব্যের আস্পদ করিবেন; আর এই শাপজনক জল তোমার উদরে প্রবেশ করিয়া তোমার উদর স্ফীত ও ঊরু অবশ করিবে। তখন সে স্ত্রীকে কহিবে, “আমেন, আমেন”। আর যাজক সেই শাপের কথা পুস্তকে লিখিয়া ঐ তিক্ত জলে মুছিয়া ফেলিবে। পরে সেই শাপজনক তিক্ত জল ঐ স্ত্রীকে পান করাইবে; তাহাতে সেই শাপজনক জল তিক্তরূপে তাহার মধ্যে প্রবিষ্ট হইবে। আর যাজক ঐ স্ত্রীর হস্ত হইতে সেই অন্তর্জ্বালার ভক্ষ্যনৈবেদ্য লইবে, এবং সেই ভক্ষ্য-নৈবেদ্য সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলাইয়া বেদির উপরে উপস্থিত করিবে। এবং যাজক তৎস্মরণার্থে সেই ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের এক মুষ্টি গ্রহণ করিয়া বেদির উপরে দগ্ধ করিবে, তৎপরে ঐ স্ত্রীকে সেই জল পান করাইবে। আর সেই স্ত্রীকে জল পান করাইলে সে যদি আপন স্বামীর বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়া অশুচি হইয়া থাকে, তবে সেই শাপজনক জল তাহার মধ্যে তিক্তরূপে প্রবিষ্ট হইবে, এবং তাহার উদর স্ফীত ও ঊরু অবশ হইয়া পড়িবে; এইরূপে সেই স্ত্রী আপন লোকদের মধ্যে শাপের আস্পদ হইবে। আর যদি সেই স্ত্রী অশুচি না হইয়া শুচি থাকে, তবে সে মুক্তা হইবে, ও গর্ভধারন করিবে। ইহা অন্তর্জ্বালা বিষয়ক ব্যবস্থা; স্ত্রীলোক স্বামীর অধীনা হইয়াও বিপথ-গমনপূর্ব্বক অশুচি হইলে, কিম্বা স্বামী অন্তর্জ্বালাজনক আত্মার আবেশে আপন স্ত্রীর প্রতি অন্তর্জ্বালাবিশিষ্ট হইলে সে সেই স্ত্রীকে সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত করিবে, এবং যাজক তদ্বিষয়ে এই সমস্ত ব্যবস্থা পালন করিবে। তাহাতে স্বামী অপরাধ হইতে মুক্ত হইবে, এবং সেই স্ত্রী আপন অপরাধ বহন করিবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, কোন পুরুষ কিম্বা স্ত্রীলোক সদাপ্রভুর উদ্দেশে পৃথক্‌কৃত হইবার জন্য যখন বিশেষ ব্রত, নাসরীয় ব্রত, করিবে, তখন সে দ্রাক্ষারস ও সুরা হইতে পৃথক্‌ থাকিবে, দ্রাক্ষারসের সিরকা বা সুরার সিরকা পান করিবে না, এবং দ্রাক্ষাফলোৎপন্ন কোন পেয় পান করিবে না, আর কাঁচা কি শুষ্ক দ্রাক্ষাফল খাইবে না। তাহার পৃথক্‌স্থিতির সমস্ত কাল সে বীজ অবধি ত্বক্‌ পর্য্যন্ত দ্রাক্ষাফলে প্রস্তুত কিছুই খাইবে না। তাহার পৃথক্‌স্থিতি-ব্রতের সমস্ত কাল তাহার মস্তকে ক্ষুর স্পর্শ হইবে না; সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাহার পৃথক্‌স্থিতির দিন-সংখ্যা যাবৎ সম্পূর্ণ না হয়, তাবৎ সে পবিত্র থাকিবে, সে আপন কেশগুচ্ছ বৃদ্ধি পাইতে দিবে। সে যাবৎ সদাপ্রভুর উদ্দেশে পৃথক্‌ থাকে, তাবৎ কোন শবের নিকটে যাইবে না। যদ্যপি তাহার পিতা কিম্বা মাতা কিম্বা ভ্রাতা কিম্বা ভগিনী মরে, তথাপি সে তাহাদের জন্য আপনাকে অশুচি করিবে না; কেননা তাহার মস্তকে তাহার ঈশ্বরের উদ্দেশে পৃথক্‌স্থিতির চিহ্ন আছে। তাহার পৃথক্‌স্থিতির সমস্ত কাল সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। আর যদি কোন মনুষ্য হঠাৎ তাহার নিকটে মরাতে সে আপনার পৃথক্‌স্থিতির চিহ্নবিশিষ্ট মস্তক অশুচি করে, তবে সে শুচি হইবার দিনে আপন মস্তক মুণ্ডন করিবে, সপ্তম দিবসে তাহা মুণ্ডন করিবে। আর অষ্টম দিবসে সে দুই ঘুঘু কিম্বা দুই কপোতশাবক সমাগম-তাম্বুর দ্বারে যাজকের কাছে আনিবে। যাজক তাহাদের একটী পাপার্থে, অন্যটী হোমার্থে নিবেদন করিয়া শব জন্য তাহার কৃত পাপপ্রযুক্ত প্রায়শ্চিত্ত করিবে; আর সেই দিনে তাহার মস্তক পবিত্র করিবে। আবার সে আপনার পৃথক্‌স্থিতির কালে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পৃথক্‌ থাকিবে; এবং দোষার্থক বলিরূপে একবর্ষীয় এক মেষবৎস আনিবে। আর তাহার পৃথক্‌স্থিতি অশুচি হওয়াতে তাহার পূর্ব্বগত দিন সকল নিরর্থক হইবে। আর নাসরীয়ের এই ব্যবস্থা; তাহার পৃথক্‌স্থিতির দিন সম্পূর্ণ হইলে পর সে সমাগম-তাম্বুর দ্বারে আনীত হইবে। পরে সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপন উপহার উৎসর্গ করিবে; হোমার্থে একবর্ষীয় নির্দ্দোষ এক মেষবৎস, ও পাপার্থে একবর্ষীয়া নির্দ্দোষ এক মেষবৎসা ও মঙ্গলার্থে নির্দ্দোষ এক মেষ, আর এক চুপড়ি তাড়ীশূন্য রুটী, তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজির পিষ্টক, তাড়ীশূন্য তৈলাক্ত সরুচাকলী ও তাহার উপযুক্ত ভক্ষ্য এবং পেয় নৈবেদ্য, এই সকল আনিবে। আর যাজক সদাপ্রভুর সম্মুখে এই সকল উপস্থিত করিয়া তাহার পাপার্থক বলি ও হোমবলি উৎসর্গ করিবে। পরে তাড়ীশূন্য রুটীর চুপড়ির সহিত মঙ্গলার্থক মেষবলি সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করিবে; এবং যাজক তৎসম্বন্ধীয় ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য নিবেদন করিবে। পরে নাসরীয় সমাগম-তাম্বুর দ্বারে তাহার পৃথক্‌স্থিতির চিহ্নস্বরূপ মস্তক মুণ্ডন করিবে, ও তাহার পৃথক্‌স্থিতির চিহ্ন যে মস্তকের কেশ, তাহা লইয়া মঙ্গলার্থক বলির অধঃস্থিত অগ্নিতে রাখিবে। আর নাসরীয়ের পৃথক্‌স্থিতির মস্তক মুণ্ডনের পরে যাজক ঐ মেষের জলসিদ্ধ স্কন্ধ ও চুপড়ি হইতে তাড়ীশূন্য একখান পিষ্টক ও একখান তাড়ীশূন্য সরুচাকলী লইয়া তাহার হস্তে দিবে। আর যাজক সে সকল দোলনীয় নৈবেদ্যার্থে সদাপ্রভুর সম্মুখে দোলাইবে; তাহাতে দোলনীয় বক্ষঃ ও উত্তোলনীয় জঙ্ঘা সমেত তাহা যাজকের জন্য পবিত্র হইবে; তৎপরে নাসরীয় ব্যক্তি দ্রাক্ষারস পান করিতে পারিবে। ব্রতকারী নাসরীয়ের এবং পৃথক্‌স্থিতির জন্য সদাপ্রভুকে দেয় তাহার উপহারের এই ব্যবস্থা; ইহা ছাড়া সে আপন সংস্থান অনুসারে দিবে; যে কিছু দিতে মানত করিয়াছে তাহা দিবে, তাহার পৃথক্‌স্থিতির ব্যবস্থানুসারে করিবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে বল; তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এইরূপে আশীর্ব্বাদ করিবে; তাহাদিগকে বলিবে, সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্ব্বাদ করুন ও তোমাকে রক্ষা করুন; সদাপ্রভু তোমার প্রতি আপন মুখ উজ্জ্বল করুন, ও তোমাকে অনুগ্রহ করুন; সদাপ্রভু তোমার প্রতি আপন মুখ উত্তোলন করুন, ও তোমাকে শান্তি দান করুন। এইরূপে তাহারা ইস্রায়েল-সন্তানগণের উপরে আমার নাম স্থাপন করিবে; আর আমি তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিব। আর যে দিন মোশি আবাস স্থাপন সমাপ্ত করিলেন, এবং তাহা অভিষেক ও পবিত্র করিলেন, আর তৎসংক্রান্ত সকল দ্রব্য এবং বেদি ও তৎসংক্রান্ত সকল পাত্র অভিষেক ও পবিত্র করিলেন, সেই দিন ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণ, পিতৃকুলপতিগণ উপহার আনিলেন; ইহাঁরা বংশ সকলের অধ্যক্ষ, ইহাঁরা গণিত লোকদের উপরে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহারার্থে ছয়টী আচ্ছাদিত শকট ও বারটী বলদ, দুই দুই অধ্যক্ষ এক এক শকট ও এক এক জন এক একটী বলদ আনিয়া আবাসের সম্মুখে উপস্থিত করিলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি তাহাদের হইতে উহা গ্রহণ কর; সে সকল সমাগম-তাম্বুর সেবাকর্ম্ম করিবার জন্য হইবে, আর তুমি সে সকল লেবীয়দিগকে দিবে; এক এক জনকে আপন আপন সেবাকর্ম্মানুসারে দিবে। পরে মোশি সেই সমস্ত শকট ও বলদ গ্রহণ করিয়া লেবীয়দিগকে দিলেন। গের্শোনের সন্তানগণকে তাহাদের সেবাকর্ম্মানুসারে দুই শকট ও চারি বলদ, এবং মরারির সন্তানগণকে তাহাদের সেবাকর্ম্মানুসারে চারি শকট ও আট বলদ দিয়া হারোণ যাজকের পুত্র ঈথামরের হস্তে সমর্পণ করিলেন। কিন্তু কহাতের সন্তানগণকে কিছুই দিলেন না, কেননা পবিত্র স্থানের সেবাকর্ম্মের ভার তাহাদের উপরে ছিল; তাহারা স্কন্ধে করিয়া ভার বহন করিত। পরে বেদির অভিষেক-দিনে অধ্যক্ষগণ বেদি-প্রতিষ্ঠার উপহার আনিলেন; ফলতঃ সেই অধ্যক্ষগণ বেদির সম্মুখে আপন আপন উপহার আনিলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, এক এক জন অধ্যক্ষ এক এক দিন বেদি-প্রতিষ্ঠার্থক আপন আপন উপহার আনিবে। প্রথম দিবসে যিহূদা বংশজাত অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন আপন উপহার আনিলেন। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা অম্মীনাদবের পুত্র নহশোনের উপহার। দ্বিতীয় দিবসে ঈষাখরের অধ্যক্ষ সূয়ারের পুত্র নথনেল উপহার আনিলেন। তিনি আপন উপহার বলিয়া পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা সূয়ারের পুত্র নথনেলের উপহার। তৃতীয় দিবসে সবূলূন-সন্তানদের অধ্যক্ষ হেলোনের পুত্র ইলীয়াব। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা হেলোনের পুত্র ইলীয়াবের উপহার। চতুর্থ দিবসে রূবেণ-সন্তানদের অধ্যক্ষ শদেয়ুরের পুত্র ইলীষুর। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা শদেয়ুরের পুত্র ইলীষুরের উপহার। পঞ্চম দিবসে শিমিয়োন-সন্তানদের অধ্যক্ষ সূরীশদ্দয়ের পুত্র শলুমীয়েল। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা সূরীশদ্দয়ের পুত্র শলুমীয়েলের উপহার। ষষ্ঠ দিবসে গাদ-সন্তানদের অধ্যক্ষ দ্যূয়েলের পুত্র ইলীয়াসফ। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা দ্যূয়েলের পুত্র ইলীয়াসফের উপহার। সপ্তম দিবসে ইফ্রয়িম-সন্তানদের অধ্যক্ষ অম্মীহূদের পুত্র ইলীশামা। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা অম্মীহূদের পুত্র ইলীশামার উপহার। অষ্টম দিবসে মনঃশি-সন্তানদের অধ্যক্ষ পদাহসূরের পুত্র গমলীয়েল। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা পদাহসূরের পুত্র গমলীয়েলের উপহার। নবম দিবসে বিন্যামীন-সন্তানদের অধ্যক্ষ গিদিয়োনির পুত্র অবীদান। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ। ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা গিদিয়োনির পুত্র অবীদানের উপহার। দশম দিবসে দান-সন্তানদের অধ্যক্ষ অম্মীশদ্দয়ের পুত্র অহীয়েষর। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা অম্মীশদ্দয়ের পুত্র অহীয়েষরের উপহার। একাদশ দিবসে আশের-সন্তানদের অধ্যক্ষ অক্রণের পুত্র পগীয়েল। তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস; এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা অক্রণের পুত্র পগীয়েলের উপহার। দ্বাদশ দিবসে নপ্তালি-সন্তানদের অধ্যক্ষ ঐননের পুত্র অহীরঃ তাঁহার উপহার পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে এক শত ত্রিশ [শেকল] পরিমাণ রৌপ্যের এক থাল, ও সত্তর শেকল পরিমাণ রৌপ্যের এক বাটি, এই দুই পাত্র ভক্ষ্য-নৈবেদ্যার্থে তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজিতে পূর্ণ; ধূপে পরিপূর্ণ দশ [শেকল] পরিমাণ স্বর্ণের এক চমস; হোমের জন্য এক গোবৎস, এক মেষ, একবর্ষীয় এক মেষবৎস; পাপার্থক বলিদানের জন্য এক ছাগ; ও মঙ্গলার্থক বলির জন্য দুই গোরু, পাঁচ মেষ, পাঁচ ছাগ, একবর্ষীয় পাঁচ মেষবৎস; ইহা ঐননের পুত্র অহীরের উপহার। বেদির অভিষেক দিনে বেদি-প্রতিষ্ঠার জন্য এই উপহার ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণ কর্ত্তৃক দত্ত হইল; রৌপ্যের বারো থাল, রৌপ্যের বারো বাটি, স্বর্ণের বারো চমস। তাহার প্রত্যেক থাল এক শত ত্রিশ [শেকল], এবং প্রত্যেক বাটি সত্তর [শেকল]; সর্ব্বশুদ্ধ এই সকল পাত্রের রৌপ্য পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে দুই সহস্র চারি শত [শেকল] পরিমিত। ধূপে পরিপূর্ণ স্বর্ণের বারো চমস, প্রত্যেক চমস পবিত্র স্থানের শেকল অনুসারে দশ [শেকল] পরিমিত; সর্ব্বশুদ্ধ এই সকল চমসের স্বর্ণ এক শত বিংশতি [শেকল] পরিমিত। হোমার্থে সাকল্যে বারো গোরু, বারো মেষ, একবর্ষীয় বারো মেষবৎস, ও তাহাদের ভক্ষ্য-নৈবেদ্য; এবং পাপার্থক বলিদানের নিমিত্তে বারো ছাগ। আর মঙ্গলার্থক বলির নিমিত্তে সর্ব্বশুদ্ধ চব্বিশ গোরু, ষাট মেষ, ষাট ছাগ, একবর্ষীয় ষাট মেষবৎস; ইহা বেদির অভিষেকের পরে বেদি-প্রতিষ্ঠার উপহার। আর মোশি যখন ঈশ্বরের সহিত কথা কহিতে সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিতেন, তখন তিনি সেই রব শুনিতেন; তাহা সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরিস্থ পাপাবরণ হইতে, সেই দুই করূবের মধ্য হইতে, তাঁহার কাছে কথা কহিত; আর তিনি তাঁহার সহিত কথা কহিতেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণকে কহ, তাহাকে বল, তুমি প্রদীপগুলি জ্বালিলে সেই সাতটী প্রদীপ যেন দীপবৃক্ষের সম্মুখদিকে আলো দেয়। তাহাতে হারোণ সেইরূপ করিলেন, দীপবৃক্ষের সম্মুখদিকে [আলো দিবার জন্য] সেই সকল প্রদীপ জ্বালিলেন, যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা করিয়াছিলেন। ঐ দীপবৃক্ষের গঠন এই, উহা পিটান স্বর্ণে নির্ম্মিত; কাণ্ড অবধি পুষ্প পর্য্যন্ত তাহা পিটান কর্ম্ম ছিল। সদাপ্রভু মোশিকে যে আকার দেখাইয়াছিলেন, তদনুসারে তিনি দীপবৃক্ষটী নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্য হইতে লেবীয়দিগকে লইয়া শুচি কর। তাহাদিগকে শুচি করণার্থে এইরূপ কর, তাহাদের উপরে পাপমোচনের জল ছিটাইয়া দেও, এবং তাহারা আপনাদের সমস্ত গাত্রে ক্ষুর বুলাইয়া বস্ত্র ধৌত করিয়া আপনাদিগকে শুচি করুক। পরে তাহারা এক গোবৎস ও তৎসম্বন্ধীয় তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজির ভক্ষ্য-নৈবেদ্য আনয়ন করুক, এবং তুমি পাপার্থক বলিদান জন্য আর এক গোবৎস গ্রহণ কর। আর লেবীয়দিগকে সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে আন, ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীকে একত্র কর। আর তুমি লেবীয়দিগকে সদাপ্রভুর সম্মুখে আনিলে ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহাদের গাত্রে হস্তার্পণ করুক। পরে হারোণ ইস্রায়েল-সন্তানগণের দোলনীয় নৈবেদ্য বলিয়া লেবীয়দিগকে সদাপ্রভুর সম্মুখে নিবেদন করিবে; তাহাতে তাহারা সদাপ্রভুর সেবাকর্ম্মে নিযুক্ত হইবে। পরে লেবীয়েরা ঐ দুই গোবৎসের মস্তকে হস্তার্পণ করিবে, আর তুমি লেবীয়দের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটী গোবৎস পাপার্থক বলিরূপে, এবং অন্যটী হোমার্থক বলিরূপে উৎসর্গ করিবে। আর হারোণের ও তাহার পুত্রগণের সম্মুখে লেবীয়দিগকে সংস্থাপন করিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোলনীয় নৈবেদ্য বলিয়া তাহাদিগকে নিবেদন করিবে। এইরূপে তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে লেবীয়দিগকে পৃথক্‌ করিও; তাহাতে লেবীয়েরা আমারই হইবে। তাহার পরে লেবীয়েরা সমাগম-তাম্বুর সেবাকর্ম্ম করিতে প্রবেশ করিবে। এইরূপে তুমি তাহাদিগকে শুচি করিয়া দোলনীয় নৈবেদ্য বলিয়া নিবেদন করিবে; কেননা তাহারা দত্ত হইয়াছে, ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্য হইতে তাহারা আমার উদ্দেশে দত্ত হইয়াছে; আমি যাবতীয় গর্ভ উন্মোচকের, সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের প্রথমজাতদের পরিবর্ত্তে তাহাদিগকে আপনার জন্য গ্রহণ করিয়াছি। কেননা মনুষ্য হউক কিম্বা পশু হউক, ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত প্রথমজাত আমার; যে দিবসে আমি মিসর দেশের সমস্ত প্রথমজাতকে আঘাত করিয়াছিলাম, সেই দিবসে আপনার নিমিত্তে তাহাদিগকে পবিত্র করিয়াছিলাম। আর আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত প্রথমজাতের পরিবর্ত্তে লেবীয়দিগকে গ্রহণ করিয়াছি। আর সমাগম-তাম্বুতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের করণীয় সেবাকর্ম্ম করিতে ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিতে লেবীয়দিগকে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্য হইতে হারোণ ও তাহার পুত্রগণকে দানরূপে দিয়াছি; যেন ইস্রায়েল-সন্তানগণ পবিত্র স্থানের নিকটবর্ত্তী হওয়া প্রযুক্ত মারী ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে না হয়। পরে মোশি, হারোণ ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী লেবীয়দের প্রতি তদ্রূপ করিল; সদাপ্রভু লেবীয়দের বিষয়ে মোশিকে যে সমস্ত আদেশ করিয়াছিলেন, তদনুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহাদের প্রতি করিল। ফলতঃ লেবীয়েরা আপনাদিগকে মুক্তপাপ করিল, ও আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিল, এবং হারোণ তাহাদিগকে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দোলনীয় নৈবেদ্যরূপে নিবেদন করিলেন, আর হারোণ তাহাদিগকে শুচি করণার্থে তাহাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিলেন। তাহার পর লেবীয়েরা হারোণের সম্মুখে ও তাঁহার পুত্রগণের সম্মুখে আপন আপন সেবাকর্ম্ম করণার্থে সমাগম-তাম্বুতে প্রবেশ করিতে লাগিল। লেবীয়দের বিষয়ে সদাপ্রভু মোশিকে যেরূপ আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তদনুসারে তাহাদের প্রতি করা হইল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, লেবীয়দের বিষয়ে এই ব্যবস্থা। পঁচিশ বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লেবীয়েরা সমাগম-তাম্বুতে সেবাকর্ম্ম করিবার জন্য শ্রেণীভুক্ত হইবে; আর পঞ্চাশ বৎসর বয়স্ক হইলে পর সেই সেবাকর্ম্মকারীদের শ্রেণী হইতে ফিরিয়া আসিবে, আর সেবাকর্ম্ম করিবে না। রক্ষণীয় রক্ষা করণার্থে তাহারা সমাগম-তাম্বুতে আপন আপন ভ্রাতাদের সঙ্গে পরিচর্য্যা করিবে, সেবাকর্ম্ম আর করিবে না। লেবীয়দের রক্ষণীয় বিষয়ে তাহাদের প্রতি তুমি এইরূপ করিবে। ইস্রায়েল মিসর দেশ হইতে বাহির হইলে পর দ্বিতীয় বৎসরের প্রথম মাসে সীনয় প্রান্তরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ যথাসময়ে নিস্তারপর্ব্ব পালন করুক। এই মাসের চতুর্দ্দশ দিবসের সন্ধ্যাকালে যথাসময়ে তোমরা তাহা পালন করিও, পর্ব্বের সমস্ত বিধি ও সমস্ত শাসন অনুসারে তাহা পালন করিবে। তখন মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিতে আজ্ঞা করিলেন। তাহাতে তাহারা প্রথম মাসের চতুর্দ্দশ দিবসে সন্ধ্যাকালে সীনয় প্রান্তরে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিল; সদাপ্রভু মোশিকে যে সমস্ত আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারেই ইস্রায়েল-সন্তানগণ করিল। কিন্তু কয়েক জন লোক একটী মানুষের শব স্পর্শ করায় অশুচি হওয়া প্রযুক্ত সেই দিন নিস্তারপর্ব্ব পালন করিতে পারিল না; অতএব তাহারা সেই দিন মোশির ও হারোণের সম্মুখে উপস্থিত হইল। আর সেই লোকগুলি তাঁহাকে কহিল, আমরা একটী মানুষের শব স্পর্শ করিয়া অশুচি হইয়াছি, ইহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে যথাসময়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার নিবেদন করিতে কেন নিবারিত হইতেছি? মোশি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা দাঁড়াও, তোমাদের বিষয়ে সদাপ্রভু কি আজ্ঞা করেন, তাহা শুনি। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, তোমাদের মধ্যে কিম্বা তোমাদের ভাবী সন্তানদের মধ্যে যদ্যপি কেহ শব স্পর্শ করিয়া অশুচি হয়, কিম্বা দূরস্থ পথে থাকে, তথাপি সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিবে। দ্বিতীয় মাসে চতুর্দ্দশ দিবসের সন্ধ্যাকালে তাহারা তাহা পালন করিবে; তাহারা তাড়ীশূন্য রুটী ও তিক্ত শাকের সহিত [মেষশাবক] ভক্ষণ করিবে; তাহারা প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত তাহার কিছুই অবশিষ্ট রাখিবে না, ও তাহার কোন অস্থি ভাঙ্গিবে না; নিস্তারপর্ব্বের সমস্ত বিধি অনুসারে তাহারা তাহা পালন করিবে। কিন্তু যে কেহ শুচি থাকে, ও পথিক না হয়, সে যদি নিস্তারপর্ব্ব পালন না করে, তবে সেই প্রাণী আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে; কারণ যথাসময়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার না আনাতে সে আপনার পাপ আপনি বহন করিবে। আর যদি কোন বিদেশীয় লোক তোমাদের মধ্যে প্রবাস করে, আর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তার পর্ব্ব পালন করে; তবে সে নিস্তারপর্ব্বের বিধিমতে ও পর্ব্বের শাসনানুসারে তাহা পালন করিবে; বিদেশীয় কি দেশজাত উভয়েরই জন্য তোমাদের পক্ষে একমাত্র বিধি হইবে। আর যে দিন আবাস স্থাপিত হইল, সেই দিন মেঘ আবাস অর্থাৎ সাক্ষ্য-তাম্বু আচ্ছাদন করিল; এবং সন্ধ্যাকালে উহা আবাসের উপরে অগ্নির আকারবৎ রহিল, উহা প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত থাকিল। এইরূপ নিত্য হইত; মেঘ উহা আচ্ছাদন করিত, আর রাত্রিতে অগ্নির আকার দেখা যাইত। আর যে কোন সময়ে তাম্বুর উপর হইতে মেঘ ঊর্দ্ধে নীত হইত, তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ যাত্রা করিত; এবং মেঘ যে স্থানে অবস্থিতি করিত, ইস্রায়েল-সন্তানগণ সেই স্থানে শিবির স্থাপন করিত। সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারেই ইস্রায়েল সন্তানগণ যাত্রা করিত, সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারেই শিবির স্থাপন করিত; মেঘ যাবৎ আবাসের উপরে অবস্থিতি করিত, তাবৎ তাহারা শিবিরে থাকিত। আর মেঘ যখন আবাসের উপরে অধিক দিন বিলম্ব করিত, তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর আদেশ পালন করিত; যাত্রা করিত না। আর মেঘ কখন কখন আবাসের উপরে অল্প দিন থাকিত; তখন সদাপ্রভুর আজ্ঞাতে তাহারা শিবিরে থাকিত, আর সদাপ্রভুর আজ্ঞাতেই যাত্রা করিত। আর কখন কখন মেঘ সন্ধ্যাকাল অবধি প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত থাকিত; আর মেঘ প্রাতঃকালে ঊর্দ্ধে নীত হইলে তাহারা যাত্রা করিত; অথবা দিবা কি রাত্রি হউক, মেঘ ঊর্দ্ধে নীত হইলেই তাহারা যাত্রা করিত। দুই দিন কিম্বা এক মাস কিম্বা সম্বৎসর হউক, আবাসের উপরে মেঘ যত কাল অবস্থিতি করিত, ইস্রায়েল-সন্তানগণও তত কাল শিবিরে বাস করিত; যাত্রা করিত না; কিন্তু উহা ঊর্দ্ধে নীত হইলেই তাহারা যাত্রা করিত। সদাপ্রভুর আজ্ঞাতেই তাহারা শিবিরে থাকিত, সদাপ্রভুর আজ্ঞাতেই যাত্রা করিত; তাহারা মোশির দ্বারা দত্ত সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সদাপ্রভুর আদেশ পালন করিত। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি দুইটী রৌপ্যময় তূরী নির্ম্মাণ কর; পিটান রৌপ্যে তাহা নির্ম্মাণ কর; তুমি তাহা মণ্ডলীকে আহ্বান করিবার জন্য ও শিবির সকলের যাত্রার জন্য ব্যবহার করিবে। সেই দুই তূরী বাজিলে সমস্ত মণ্ডলী সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে তোমার নিকটে একত্র হইবে। কিন্তু একটী তূরী বাজাইলে অধ্যক্ষগণ, ইস্রায়েলের সহস্রপতিগণ, তোমার নিকটে একত্র হইবে। তোমরা রণবাদ্য বাজাইলে পূর্ব্বদিক্‌স্থিত শিবিরের লোকেরা শিবির উঠাইবে। তোমরা দ্বিতীয় বার রণবাদ্য বাজাইলে দক্ষিণদিক্‌স্থিত শিবিরের লোকেরা শিবির উঠাইবে; তাহাদের প্রস্থানার্থ রণবাদ্য বাজাইতে হইবে। কিন্তু সমাজের সমাগমার্থে তূরী বাজাইবার সময়ে তোমরা রণবাদ্য বাজাইও না। হারোণের সন্তান যাজকেরা সেই তূরী বাজাইবে, তোমাদের পুরুষানুক্রমে চিরস্থায়ী বিধির নিমিত্ত তোমরা তাহা রাখিবে। আর যে সময়ে তোমরা আপন দেশে তোমাদের ক্লেশদায়ক বিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে যাইবে, তৎকালে এই তূরীতে রণবাদ্য বাজাইবে; তাহাতে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে তোমাদিগকে স্মরণ করা যাইবে, ও তোমরা আপনাদের শত্রুগণ হইতে নিস্তার পাইবে। আর তোমাদের আনন্দের দিনে, পর্ব্বদিনে ও মাসারম্ভে তোমাদের হোমের ও তোমাদের মঙ্গলার্থক বলিদানের উপলক্ষে তোমরা সেই তূরী বাজাইবে; তাহাতে তাহা তোমাদের ঈশ্বরের সম্মুখে তোমাদের স্মরণার্থক হইবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। পরে দ্বিতীয় বৎসর দ্বিতীয় মাসে, মাসের বিংশতিতম দিবসে সেই মেঘ সাক্ষ্যের আবাসের উপর হইতে ঊর্দ্ধে নীত হইল। তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের যাত্রার নিয়মানুসারে সীনয় প্রান্তর হইতে যাত্রা করিল, পরে সেই মেঘ পারণ প্রান্তরে অবস্থিতি করিল। মোশি দ্বারা দত্ত সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাহারা এই প্রথম বার যাত্রা করিল। প্রথমে আপন সৈন্যগণের সহিত যিহূদা-সন্তানগণের শিবিরের পতাকা চলিল; অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন তাহাদের সেনাপতি ছিলেন। আর সূয়ারের পুত্র নথনেল ইষাখর-সন্তানগণের বংশের সেনাপতি ছিলেন। আর হেলোনের পুত্র ইলীয়াব সবূলূন-সন্তানগণের বংশের সেনাপতি ছিলেন। পরে আবাস তোলা হইল, এবং গের্শোনের সন্তানগণ ও মরারির সন্তানগণ সেই আবাস বহন করিয়া অগ্রসর হইল। তৎপরে আপন সৈন্যগণের সহিত রূবেণের শিবিরের পতাকা চলিল; শদেয়ূরের পুত্র ইলীষূর তাহাদের সেনাপতি ছিলেন। আর সূরীশদ্দয়ের পুত্র শলুমীয়েল শিমিয়োন-সন্তানগণের বংশের সেনাপতি ছিলেন। দ্যূয়েলের পুত্র ইলীয়াসফ গাদ-সন্তানগণের বংশের সেনাপতি ছিলেন। পরে কহাতীয়েরা ধর্ম্মধাম বহন করতঃ যাত্রা করিল; এবং গন্তব্য স্থানে উহাদের উপস্থিত হইবার পূর্ব্বে আবাস স্থাপিত হইল। পরে আপন সৈন্যগণের সহিত ইফ্রয়িম-সন্তানগণের শিবিরের পতাকা চলিল; অম্মীহূদের পুত্র ইলীশামা তাহাদের সেনাপতি ছিলেন। আর পদাহসূরের পুত্র গমলীয়েল মনঃশি-সন্তানগণের বংশের সেনাপতি ছিলেন। গিদিয়োনির পুত্র অবীদান বিন্যামীন-সন্তানগণের বংশের সেনাপতি ছিলেন। পরে সমস্ত শিবিরের পশ্চাতে আপন সৈন্যের সহিত দান-সন্তানগণের শিবিরের পতাকা চলিল; অম্মীশদ্দয়ের পুত্র অহীয়েষর তাহাদের সেনাপতি ছিলেন। আর অক্রণের পুত্র পগীয়েল আশের-সন্তানগণের বংশের সেনাপতি ছিলেন। ঐননের পুত্র অহীরঃ নপ্তালি-সন্তানগণের বংশের সেনাপতি ছিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানগণের যাত্রার এই নিয়ম ছিল; তাহারা এইরূপে যাত্রা করিত। আর মোশি আপন শ্বশুর মিদিয়োনীয় রূয়েলের পুত্র হোববকে কহিলেন, সদাপ্রভু আমাদিগকে যে স্থান দিতে প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, আমরা সেই স্থানে যাত্রা করিতেছি; তুমিও আমাদের সহিত আইস, আমরা তোমার মঙ্গল করিব, কেননা সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে মঙ্গল প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমি যাইব না, আমি আপন দেশে ও আপন জ্ঞাতিদের নিকটে যাইব। মোশি কহিলেন, বিনয় করি, আমাদিগকে ত্যাগ করিও না, কেননা প্রান্তরের মধ্যে আমাদের শিবির স্থাপনের বিষয় তুমি জান, আর তুমি আমাদের চক্ষুঃস্বরূপ হইবে। আর যদি তুমি আমাদের সঙ্গে যাও, তবে এই ফল হইবে, সদাপ্রভু আমাদের প্রতি যে মঙ্গল করিবেন, আমরা তোমার প্রতি তাহাই করিব। পরে তাহারা সদাপ্রভুর পর্ব্বত হইতে তিন দিনের পথ গমন করিল, এবং সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক তাহাদের জন্য বিশ্রাম-স্থানের অন্বেষণার্থে তিন দিনের পথ তাহাদের অগ্রগামী হইল। আর শিবির হইতে স্থানান্তরে গমন সময়ে সদাপ্রভুর মেঘ দিবসে তাহাদের উপরে থাকিত। আর সিন্দুকের অগ্রসর হইবার সময়ে মোশি বলিতেন, হে সদাপ্রভু, উঠ, তোমার শত্রুগণ ছিন্নভিন্ন হউক, তোমার বিদ্বেষিগণ তোমার সম্মুখ হইতে পলায়ন করুক। আর উহার বিশ্রামকালে তিনি বলিতেন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের সহস্র সহস্রের অযুত অযুতের কাছে ফিরিয়া আইস। আর লোকেরা বচসাকারীদের মত সদাপ্রভুর কর্ণগোচরে মন্দ কথা কহিতে লাগিল; আর সদাপ্রভু তাহা শুনিলেন, ও তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল; তাহাতে তাহাদের মধ্যে সদাপ্রভুর অগ্নি জ্বলিয়া উঠিয়া শিবিরের প্রান্তভাগ গ্রাস করিতে লাগিল। তখন লোকেরা মোশির নিকটে ক্রন্দন করিল; তাহাতে মোশি সদাপ্রভুর নিকটে প্রার্থনা করিলে সেই অগ্নি নির্ব্বাণ হইল। তখন তিনি ঐ স্থানের নাম তবেরা [জ্বলন] রাখিলেন, কেননা সদাপ্রভুর অগ্নি তাহাদের মধ্যে জ্বলিয়াছিল। আর তাহাদের মধ্যবর্ত্তী মিশ্রিত লোকেরা লোভাক্রান্ত হইয়া উঠিল; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণও পুনর্ব্বার রোদন করিয়া কহিল, কে আমাদিগকে ভক্ষণার্থে মাংস দিবে? আমরা মিসর দেশে বিনামূল্যে যে যে মাছ খাইতাম, তাহা এবং সশা, খরবুজ, পরু, পলাণ্ডু ও লশুন মনে পড়িতেছে। এখন আমাদের প্রাণ শুষ্ক হইল; কিছুই নাই; আমাদের সম্মুখে এই মান্না ব্যতীত আর কিছু নাই। —ঐ মান্না ধনিয়া বীজের ন্যায়, ও তাহা দেখিতে গুগ্‌গুলের ন্যায় ছিল। লোকেরা ভ্রমণ করিয়া তাহা কুড়াইত, এবং যাঁতায় পিষিয়া কিম্বা উখ্‌লিতে চূর্ণ করিয়া বহুগুণাতে সিদ্ধ করিত, ও তদ্দ্বারা পিষ্টক প্রস্তুত করিত; তৈলপক্ব পিষ্টকের ন্যায় তাহার আস্বাদ ছিল। রাত্রিতে শিবিরের উপরে শিশির পড়িলে ঐ মান্না তাহার উপরে পড়িয়া থাকিত। —মোশি লোকদের রোদন শুনিলেন, তাহারা গোষ্ঠী সকলের মধ্যে প্রত্যেকে আপন আপন তাম্বু-দ্বারে কাঁদিতেছিল; আর সদাপ্রভুর ক্রোধ অতিশয় প্রজ্বলিত হইল; মোশিও অসন্তুষ্ট হইলেন। আর মোশি সদাপ্রভুকে কহিলেন, তুমি কি নিমিত্ত আপন দাসকে এত ক্লেশ দিয়াছ? কি নিমিত্তই বা আমি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাই নাই যে, তুমি এই সকল লোকের ভার আমার উপরে দিতেছ? আমি কি এই সমস্ত লোক গর্ভে ধারণ করিয়াছি? আমি কি ইহাদিগকে প্রসব করিয়াছি? সেই জন্য তুমি ইহাদের পূর্ব্বপুরুষদের কাছে যে দেশের বিষয়ে দিব্য করিয়াছিলে, সেই দেশ পর্য্যন্ত আমাকে কি দুগ্ধপোষ্য শিশু বহনকারী পালকের ন্যায় ইহাদিগকে বক্ষে করিয়া বহন করিতে বলিতেছ? এই সমস্ত লোককে দিবার জন্য আমি কোথায় মাংস পাইব? ইহারা ত আমার কাছে রোদন করিয়া বলিতেছে, আমাদিগকে মাংস দেও, আমরা খাইব। এত লোকের ভার সহ্য করা একাকী আমার অসাধ্য; কেননা তাহা আমার শক্তির অতিরিক্ত। তুমি যদি আমার প্রতি এরূপ ব্যবহার কর, তবে বিনয় করি, আমি তোমার দৃষ্টিতে যদি অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, আমাকে একবারে বধ কর; আমি যেন আমার দুর্গতি না দেখি। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি যাহাদিগকে লোকদের প্রাচীন ও অধ্যক্ষ বলিয়া জান, ইস্রায়েলের এমন সত্তর জন প্রাচীন লোককে আমার কাছে সংগ্রহ কর; তাহাদিগকে সমাগম-তাম্বুর নিকটে আন; তাহারা তোমার সহিত সেই স্থানে দাঁড়াইবে। পরে আমি সেই স্থানে নামিয়া তোমার সহিত কথা কহিব, এবং তোমার উপরে যে আত্মা অধিষ্ঠান করেন, তাঁহার কিয়দংশ লইয়া তাহাদের উপরে অধিষ্ঠান করাইব, তাহাতে তুমি যেন একাকী লোকদের ভার বহন না কর, এই জন্য তাহারা তোমার সহিত লোকদের ভার বহিবে। আর তুমি লোকদিগকে বল, তোমরা কল্যের জন্য আপনাদিগকে পবিত্র কর, মাংস ভোজন করিতে পাইবে; কেননা তোমরা সদাপ্রভুর কর্ণগোচরে রোদন করিয়াছ, বলিয়াছ, ‘আমাদিগকে মাংস ভোজন করিতে কে দিবে? বরং মিসর দেশে আমাদের মঙ্গল ছিল;’ অতএব সদাপ্রভু তোমাদিগকে মাংস দিবেন, তোমরা খাইবে। এক দিন কি দুই দিন কি পাঁচ দিন কি দশ দিন কি বিশ দিন তাহা খাইবে, এমন নয়; সম্পূর্ণ এক মাস পর্য্যন্ত, যাবৎ তাহা তোমাদের নাসিকা হইতে নির্গত না হয় ও তোমাদের ঘৃণিত না হয়, তাবৎ খাইবে; কেননা তোমরা আপনাদের মধ্যবর্ত্তী সদাপ্রভুকে অগ্রাহ্য করিয়াছ, এবং তাঁহার সম্মুখে রোদন করিয়া এই কথা বলিয়াছ, ‘আমরা কেন মিসর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি?’ তখন মোশি কহিলেন, আমি যে লোকদের মধ্যে আছি, তাহারা ছয় লক্ষ পদাতিক; আর তুমি কহিতেছ, আমি সম্পূর্ণ এক মাস খাইবার মাংস তাহাদিগকে দিব। তাহাদের পর্য্যাপ্তি জন্য কি মেষপাল ও গোপাল মারিতে হইবে? না তাহাদের পর্য্যাপ্তি জন্য সমুদ্রের সমস্ত মৎস্য সংগ্রহ করিতে হইবে? সদাপ্রভু, মোশিকে কহিলেন, সদাপ্রভুর হস্ত কি সঙ্কুচিত হইয়াছে? তোমার কাছে আমার বাক্য ফলিবে কি না, এখন দেখিবে। তখন মোশি বাহিরে গিয়া সদাপ্রভুর বাক্য লোকদিগকে কহিলেন; এবং লোকদের প্রাচীনবর্গের মধ্যে সত্তর জনকে একত্র করিয়া তাম্বুর চতুষ্পার্শ্বে উপস্থিত করিলেন। আর সদাপ্রভু মেঘে নামিয়া তাঁহার সহিত কথা কহিলেন, এবং যে আত্মা তাঁহার উপরে ছিলেন, তাঁহার কিয়দংশ লইয়া সেই সত্তর জন প্রাচীনের উপরে অধিষ্ঠান করাইলেন; তাহাতে আত্মা তাঁহাদের উপরে অধিষ্ঠান করিলে তাঁহারা ভাবোক্তি প্রচার করিলেন, কিন্তু তৎপশ্চাৎ আর করিলেন না। কিন্তু শিবিরমধ্যে দুইটী লোক অবশিষ্ট ছিলেন, এক জনের নাম ইল্‌দদ, আর এক জনের নাম মেদদ; আত্মা তাঁহাদের উপরে অধিষ্ঠান করিলেন; তাঁহারা ঐ লিখিত লোকদের মধ্যে ছিলেন বটে, কিন্তু বাহিরে তাম্বুর নিকটে যান নাই; তাঁহারা শিবিরমধ্যে ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিলেন। তাহাতে এক যুবা দৌড়িয়া গিয়া মোশিকে কহিল, ইল্‌দদ ও মেদদ শিবিরে ভাবোক্তি প্রচার করিতেছে। তখন নূনের পুত্র যিহোশূয়, মোশির পরিচারক, যিনি তাঁহার এক জন মনোনীত লোক, তিনি কহিলেন, হে আমার প্রভু মোশি, তাহাদিগকে বারণ করুন। মোশি তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কি আমার পক্ষে ঈর্ষা করিতেছ? সদাপ্রভুর যাবতীয় প্রজা ভাববাদী হউক, ও সদাপ্রভু তাহাদের উপরে আপন আত্মা অধিষ্ঠান করাউন। পরে মোশি ও ইস্রায়েলের প্রাচীনগণ শিবিরে প্রস্থান করিলেন। পরে সদাপ্রভুর নিকট হইতে বায়ু নির্গত হইয়া সমুদ্র হইতে ভারুই পক্ষী আনিয়া শিবিরের উপরে ফেলিল; শিবিরের চারিদিকে এপার্শ্বে এক দিবসের পথ, ওপার্শ্বে এক দিবসের পথ পর্য্যন্ত ফেলিল, সেগুলি ভূমির উপরে দুই হস্ত ঊর্দ্ধ হইয়া রহিল। আর লোকেরা সেই সমস্ত দিবারাত্র ও পরদিন সমস্ত দিবস উঠিয়া ভারুই পক্ষী সংগ্রহ করিল; তাহাদের মধ্যে কেহ দশ হোমরের ন্যূন সংগ্রহ করিল না; পরে আপনাদের নিমিত্তে শিবিরের চারিদিকে তাহা ছড়াইয়া রাখিল। কিন্তু মাংস তাহাদের দন্তের মধ্যে থাকিতে, কাটিবার পূর্ব্বেই লোকদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল; আর সদাপ্রভু লোকদিগকে ভারী মহামারী দ্বারা আঘাত করিলেন। আর [মোশি] সেই স্থানের নাম কিব্রোৎ-হত্তাবা [লোভের কবরসমূহ] রাখিলেন, কেননা সেই স্থানে তাহারা লোভীদিগকে করব দিল। কিব্রোৎ-হত্তাবা হইতে লোকেরা হৎসেরোতে যাত্রা করিল; এবং তাহারা হৎসেরোতে অবস্থিতি করিল। মোশি যে কূশীয়া স্ত্রীকে বিবাহ করিয়াছিলেন, তাহার নিমিত্তে মরিয়ম ও হারোণ মোশির বিপরীতে কথা কহিতে লাগিলেন, কেননা তিনি এক কূশীয়া স্ত্রীকে বিবাহ করিয়াছিলেন। তাঁহারা কহিলেন, সদাপ্রভু কি কেবল মোশির সহিত কথা কহিয়াছেন? আমাদের সহিত কি কহেন নাই? আর এ কথা সদাপ্রভু শুনিলেন। ভূমণ্ডলস্থ মনুষ্যদের মধ্যে সকল অপেক্ষা মোশি লোকটী অতিশয় মৃদুশীল ছিলেন। পরে সদাপ্রভু হঠাৎ মোশি, হারোণ ও মরিয়মকে কহিলেন, তোমরা তিন জন বাহির হইয়া সমাগম-তাম্বুর নিকটে আইস; তাঁহারা তিন জন বাহির হইয়া আসিলেন। তখন প্রভু মেঘস্তম্ভে নামিয়া তাম্বুর দ্বারে দাঁড়াইলেন, এবং হারোণ ও মরিয়মকে ডাকিলেন; তাহাতে তাঁহারা উভয়ে বাহির হইয়া আসিলেন। তিনি কহিলেন, তোমরা আমার বাক্য শুন; তোমাদের মধ্যে যদি কেহ ভাববাদী হয়, তবে আমি সদাপ্রভু তাহার নিকটে কোন দর্শন দ্বারা আপনার পরিচয় দিব, স্বপ্নে তাহার সহিত কথা কহিব। আমার দাস মোশি তদ্রূপ নয়, সে আমার সমস্ত বাটীর মধ্যে বিশ্বাসের পাত্র। তাহার সহিত আমি সম্মুখাসম্মুখি হইয়া কথা কহি, গূঢ় বাক্য দ্বারা নয়, কিন্তু প্রকাশ্যরূপে; এবং সে সদাপ্রভুর মূর্ত্তি দর্শন করিবে; অতএব আমার দাসের প্রতিকূলে, মোশির প্রতিকূলে, কথা কহিতে তোমরা কেন ভীত হইলে না? ফলে তাঁহাদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল; ও তিনি প্রস্থান করিলেন। আর তাম্বুর উপর হইতে মেঘ প্রস্থান করিল; আর দেখ, মরিয়মের হিমবৎ কুষ্ঠ হইয়াছে; এবং হারোণ মরিয়মের দিকে মুখ ফিরাইলেন, আর দেখ, তিনি কুষ্ঠগ্রস্তা। তখন হারোণ মোশিকে কহিলেন, হায়, আমার প্রভু, বিনয় করি, পাপের ফল আমাদিগকে দিবেন না, এ বিষয়ে আমরা নির্ব্বোধের কর্ম্ম করিয়াছি, এ বিষয়ে পাপ করিয়াছি। মাতৃগর্ভ হইতে নিঃসরণ কালে যাহার মাংস অর্দ্ধনষ্ট, তাদৃশ মৃতের ন্যায় এ যেন না হয়। পরে মোশি সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়া কহিলেন, হে ঈশ্বর, বিনয় করি, ইহাকে সুস্থ কর। সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, যদি ইহার পিতা ইহার মুখে থুথু দিত, তাহা হইলে এ কি সাত দিবস লজ্জিত থাকিত না? এ সাত দিবস পর্য্যন্ত শিবিরের বাহিরে রুদ্ধা থাকুক; তৎপরে পুনর্ব্বার ভিতরে আনীতা হইবে। তাহাতে মরিয়ম সাত দিবস শিবিরের বাহিরে রুদ্ধা থাকিলেন, এবং যাবৎ মরিয়ম ভিতরে আনীতা না হইলেন, তাবৎ লোকেরা যাত্রা করিল না। পরে লোকেরা হৎসেরোৎ হইতে যাত্রা করিয়া পারণ প্রান্তরে শিবির স্থাপন করিল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে কনান দেশ দিব, তুমি তাহা নিরীক্ষণ করিবার জন্য কয়েক ব্যক্তিকে প্রেরণ কর; তাহাদের স্ব স্ব পিতৃকুল সম্পর্কীয় এক এক বংশের মধ্যে এক এক জন অধ্যক্ষকে প্রেরণ কর। তাহাতে সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে মোশি পারণ প্রান্তর হইতে তাঁহাদিগকে প্রেরণ করিলেন; তাঁহারা সকলে ইস্রায়েল-সন্তানগণের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাঁহাদের নাম এই এই; রূবেণ বংশের মধ্যে সক্কূরের পুত্র শম্মুয়; শিমিয়োন বংশের মধ্যে হোরির পুত্র শাফট; যিহূদা বংশের মধ্যে যিফুন্নির পুত্র কালেব; ইষাখর বংশের মধ্যে যোষেফের পুত্র যিগাল; ইফ্রয়িম বংশের মধ্যে নূনের পুত্র হোশেয়; বিন্যামীন বংশের মধ্যে রাফূর পুত্র পল্‌টি; সবূলূন বংশের মধ্যে সোদির পুত্র গদ্দীয়েল; যোষেফ বংশের অর্থাৎ মনঃশি বংশের মধ্যে সূষির পুত্র গদ্দি; দান বংশের মধ্যে গমল্লির পুত্র অম্মীয়েল; আশের বংশের মধ্যে মীখায়েলের পুত্র সথুর; নপ্তালি বংশের মধ্যে বপ্সির পুত্র নহ্‌বি; গাদ বংশের মধ্যে মাখির পুত্র গ্যূয়েল। মোশি যাঁহাদিগকে দেশ নিরীক্ষণ করিতে পাঠাইলেন, সেই লোকদের নাম এই। আর মোশি নূনের পুত্র হোশেয়ের নাম যিহোশূয় রাখিলেন। কনান দেশ নিরীক্ষণ করিতে পাঠাইবার সময়ে মোশি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা দক্ষিণদিক্‌ দিয়া এই পথে গিয়া উঠ, পাহাড় অঞ্চলে গিয়া উঠ; এবং গিয়া দেখ, সে দেশ কেমন, ও তথাকার নিবাসী লোকেরা বলবান্‌ কি দুর্ব্বল, অল্প কি অনেক; এবং তাহারা যে দেশে বাস করে সে দেশ কেমন, ভাল কি মন্দ; ও যে সকল নগরে বাস করে, সে সকল কি প্রকার; তাহারা তাম্বুতে কি গড়ে, কিসে বাস করে; এবং ভূমি কি প্রকার, সতেজ কি নিস্তেজ, তাহাতে বৃক্ষ আছে কি না। আর তোমরা সাহসী হইয়া সেই দেশের কিছু ফল সঙ্গে করিয়া আনিও। তখন আশুপক্ক দ্রাক্ষাফলের সময় ছিল। তাঁহারা যাত্রা করিয়া সীন প্রান্তর অবধি হমাতের প্রবেশ স্থানে স্থিত রহোব পর্য্যন্ত সমস্ত দেশ নিরীক্ষণ করিলেন। বিশেষতঃ দক্ষিণদিক্‌ দিয়া উঠিয়া গেলেন, ও হিব্রোণে উপস্থিত হইলেন; সেই স্থানে অহীমান, শেশয় ও তল্‌ময়, অনাকের এই তিন সন্তান ছিল। মিসরস্থ সোয়নের পত্তনের সাত বৎসর পূর্ব্বে হিব্রোণের পত্তন হইয়াছিল। পরে তাঁহারা ইষ্কোল উপত্যকাতে উপস্থিত হইয়া সে স্থানে এক থলুয়া ফলযুক্ত দ্রাক্ষালতার এক শাখা কাটিয়া তাহা দণ্ডে করিয়া দুই জন বহিলেন, এবং তাঁহারা কতকগুলি দাড়িম ও ডুমুরফলও সঙ্গে আনিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানেরা ঐ স্থানে সেই দ্রাক্ষার থলুয়া কাটিয়াছিলেন, এই জন্য সেই উপত্যকা ইষ্কোল [থলুয়া] নামে খ্যাত হইল। তাঁহারা দেশ নিরীক্ষণ করিয়া চল্লিশ দিনের পর ফিরিয়া আসিলেন। পরে তাঁহারা আসিয়া পারণ প্রান্তরস্থ কাদেশ নামক স্থানে মোশির ও হারোণের এবং ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলীর নিকটে উপস্থিত হইয়া উহাদিগকে ও সমস্ত মণ্ডলীকে সংবাদ দিলেন; এবং সেই দেশের ফল তাহাদিগকে দেখাইলেন। আর তাঁহাকে বৃত্তান্ত কহিলেন, বলিলেন, আপনি আমাদিগকে যে দেশে প্রেরণ করিয়াছিলেন, আমরা তথায় গিয়াছিলাম; দেশটী দুগ্ধমধুপ্রবাহী বটে; আর এই দেখুন, তাহার ফল। যাহা হউক, তদ্দেশনিবাসী লোকেরা বলবান্, ও তথাকার নগর সকল প্রাচীরবেষ্টিত ও অতি বৃহৎ; এবং সে স্থানে আমরা অনাকের সন্তানগণকেও দেখিয়াছি। দক্ষিণ দেশে অমালেক বাস করে; এবং পাহাড় অঞ্চলে হিত্তীয়, যিবূষীয় ও ইমোরীয়েরা বাস করে; এবং সমুদ্রের নিকটে এ যর্দ্দনের তীরে কনানীয়েরা বাস করে। আর কালেব মোশির সাক্ষাতে লোকদিগকে ক্ষান্ত করণার্থে কহিলেন, আইস, আমরা একেবারে উঠিয়া গিয়া দেশ অধিকার করি; কেননা আমরা উহা জয় করিতে সমর্থ। কিন্তু যে ব্যক্তিরা তাঁহার সহিত গিয়াছিলেন, তাঁহারা কহিলেন, আমরা সেই লোকদের বিরুদ্ধে যাইতে সমর্থ নহি, কেননা আমাদের অপেক্ষা তাহারা বলবান্‌। এইরূপে তাঁহারা যে দেশ নিরীক্ষণ করিতে গিয়াছিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণের সাক্ষাতে সেই দেশের অখ্যাতি করিয়া কহিলেন, আমরা যে দেশ নিরীক্ষণ করিতে স্থানে স্থানে গিয়াছিলাম, সে দেশ আপন অধিবাসীদিগকে গ্রাস করে; এবং তাহার মধ্যে আমরা যত লোককে দেখিয়াছি, তাহারা সকলে ভীমকায়। বিশেষতঃ তথায় বীরজাত অনাকের সন্তান বীরদিগকে দেখিয়া আমরা আপনাদের দৃষ্টিতে ফড়িঙ্গের ন্যায়, এবং তাহাদের দৃষ্টিতেও তদ্রূপ হইলাম। পরে সমস্ত মণ্ডলী উচ্চৈঃস্বরে কলরব করিল, এবং লোকেরা সেই রাত্রিতে রোদন করিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ সকলে মোশির বিপরীতে ও হারোণের বিপরীতে বচসা করিল, ও সমস্ত মণ্ডলী তাঁহাদিগকে কহিল, হায় হায়, আমরা কেন মিসর দেশে মরি নাই; এই প্রান্তরেই বা কেন মরি নাই? সদাপ্রভু আমাদিগকে খড়গ-ধারে নিপাত করাইতে এ দেশে কেন আনিলেন? আমাদের স্ত্রী ও বালকগণ ত লুটিত হইবে। মিসরে ফিরিয়া যাওয়া কি আমাদের ভাল নয়? পরে তাহারা পরস্পর বলাবলি করিল, আইস, আমরা এক জনকে সেনাপতি করিয়া মিসরে ফিরিয়া যাই। তাহাতে মোশি ও হারোণ ইস্রায়েল-সন্তানগণের মণ্ডলীর সমস্ত সমাজের সম্মুখে উবুড় হইয়া পড়িলেন। আর যাঁহারা দেশ নিরীক্ষণ করিয়া আসিয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে নূনের পুত্র যিহোশূয় ও যিফূন্নির পুত্র কালেব আপন আপন বস্ত্র চিরিলেন, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীকে কহিলেন, আমরা যে দেশ নিরীক্ষণ করিতে গিয়াছিলাম, সে যার পর নাই উত্তম দেশ। সদাপ্রভু যদি আমাদিগেতে প্রীত হন, তবে তিনি আমাদিগকে সেই দেশে প্রবেশ করাইবেন, ও সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ আমাদিগকে দিবেন। কিন্তু তোমরা কোন মতে সদাপ্রভুর বিদ্রোহী হইও না, ও সে দেশের লোকদিগকে ভয় করিও না; কেননা তাহারা আমাদের ভক্ষ্যস্বরূপ, তাহাদের আশ্রয়-ছত্র তাহাদের উপর হইতে নীত হইল, সদাপ্রভু আমাদের সহবর্ত্তী; তাহাদিগকে ভয় করিও না। কিন্তু সমস্ত মণ্ডলী সেই দুই জনকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিতে বলিল। তখন সমাগম-তাম্বুতে সদাপ্রভুর প্রতাপ সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের প্রত্যক্ষ হইল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, এই লোকেরা কত কাল আমাকে অবজ্ঞা করিবে? এবং আমি ইহাদের মধ্যে যে সকল চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছি, তাহা দেখিয়াও ইহারা কত কাল আমার প্রতি অবিশ্বাসী থাকিবে? আমি মহামারী দ্বারা ইহাদিগকে আঘাত করিব, ইহাদিগকে অধিকার-বঞ্চিত করিব, এবং তোমাকেই ইহাদের অপেক্ষা বৃহৎ ও বলবান্‌ জাতি করিব। তাহাতে মোশি সদাপ্রভুকে কহিলেন, তাহা করিলে মিস্রীয়েরা তাহা শুনিবে, কেননা তাহাদেরই মধ্য হইতে তুমি আপন শক্তি দ্বারা এই লোকদিগকে আনিয়াছ; আর তাহারা এই দেশনিবাসী লোকদিগকেও তাহার সংবাদ দিবে। তাহারা শুনিয়াছে যে, তুমি সদাপ্রভু এই লোকদের মধ্যবর্ত্তী, কারণ তুমি সদাপ্রভু ইহাদিগকে প্রত্যক্ষে দর্শন দিয়া থাক, আর তোমার মেঘ ইহাদের উপরে অবস্থিতি করিতেছে, এবং তুমি দিবাতে মেঘস্তম্ভে ও রাত্রিতে অগ্নিস্তম্ভে থাকিয়া ইহাদের অগ্রে অগ্রে গমন করিতেছ। এখন যদি তুমি এই লোকদিগকে এক ব্যক্তির ন্যায় বধ কর, তবে ঐ যে জাতিগণ তোমার খ্যাতি শুনিয়াছে, তাহারা বলিবে, সদাপ্রভু এই লোকদিগকে যে দেশ দিতে শপথ করিয়াছিলেন, সেই দেশে তাহাদিগকে প্রবেশ করাইতে অপারক হইলেন; এই জন্য প্রান্তরে তাহাদিগকে সংহার করিলেন। এখন নিবেদন করি, তোমার বাক্যানুসারে প্রভুর প্রভাব মহিমান্বিত হউক; তুমি ত বলিয়াছ, সদাপ্রভু ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্‌, এবং অধর্ম্মের ও অপরাধের ক্ষমাকারী, তথাপি অবশ্য [পাপের] দণ্ড দেন, তিনি তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্য্যন্ত সন্তানদের উপরে পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল বর্ত্তান। বিনয় করি, তোমার দয়ার মহত্ত্বানুসারে, এবং মিসর দেশ হইতে এ পর্য্যন্ত এই লোকদিগকে যেমন ক্ষমা করিয়া আসিতেছ, তদনুসারে এই লোকদের অপরাধ ক্ষমা কর। তখন সদাপ্রভু কহিলেন, তোমার বাক্যানুসারে আমি ক্ষমা করিলাম। সত্যই আমি জীবন্ত, এবং সমস্ত পৃথিবী সদাপ্রভুর প্রতাপে পরিপূর্ণ হইবে; তাই যত লোক আমার প্রতাপ এবং মিসরে ও প্রান্তরে কৃত আমার চিহ্ন-কার্য্যসমূহ দেখিয়াছে, তথাচ এই দশ বার আমার পরীক্ষা করিয়াছে ও আমার রব মনোযোগ করে নাই; আমি তাহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে দেশের বিষয়ে দিব্য করিয়াছি, তাহারা সেই দেশ দেখিতে পাইবেই না; যাহারা আমাকে অবজ্ঞা করিয়াছে, তাহাদের মধ্যে কেহই তাহা দেখিতে পাইবে না। কিন্তু আমার দাস কালেবের অন্তরে অন্য আত্মা ছিল, এবং সে সম্পূর্ণরূপে আমার অনুগত হইয়া চলিয়াছে, এই নিমিত্তে সে যে দেশে গিয়াছিল, সেই দেশে আমি তাহাকে প্রবেশ করাইব, ও তাহার বংশ তাহা অধিকার করিবে। পরন্তু অমালেকীয়েরা ও কনানীয়েরা তলভূমিতে রহিয়াছে; কল্য তোমরা ফিরিয়া সূফসাগরের পথ দিয়া প্রান্তরে গমন কর। পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, আমার প্রতিকূলে বচসাকারী এই দুষ্ট মণ্ডলীর ভার আমি কত কাল সহ্য করিব? ইস্রায়েল-সন্তানগণ আমার প্রতিকূলে যে যে বচসা করে, তাহা আমি শুনিয়াছি। তুমি তাহাদিগকে বল, সদাপ্রভু কহেন, আমি জীবন্ত, আমার কর্ণগোচরে তোমরা যাহা বলিয়াছ, তাহাই আমি তোমাদের প্রতি করিব; এই প্রান্তরে তোমাদের শব পতিত হইবে; তোমাদের সম্পূর্ণ সংখ্যানুসারে গণিত বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক তোমরা যে সমস্ত লোক আমার বিপরীতে বচসা করিয়াছ, আমি তোমাদিগকে যে দেশে বাস করাইব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, সেই দেশে তোমরা প্রবেশ করিবে না, কেবল যিফূন্নির পুত্র কালেব ও নূনের পুত্র যিহোশূয় প্রবেশ করিবে। কিন্তু তোমরা আপনাদের যে বালকদের বিষয়ে বলিয়াছিলে, ইহারা লুটিত হইবে, তাহাদিগকে আমি তথায় প্রবেশ করাইব; ও তোমরা যে দেশ অগ্রাহ্য করিয়াছ, তাহারা তাহার পরিচয় পাইবে। কিন্তু তোমাদের শব এই প্রান্তরে পতিত হইবে। আর তোমাদের সন্তানগণ চল্লিশ বৎসর এই প্রান্তরে পশু চরাইবে, এবং এই প্রান্তরে তোমাদের শবের সংখ্যা যে পর্য্যন্ত সম্পূর্ণ না হয়, সে পর্য্যন্ত তাহারা তোমাদের ব্যভিচারের ফল ভোগ করিবে। তোমরা যে চল্লিশ দিন দেশ নিরীক্ষণ করিয়াছ, সেই দিনের সংখ্যানুসারে চল্লিশ বৎসর, এক এক দিনের জন্য এক এক বৎসর, তোমরা আপনাদের অপরাধ বহন করিবে, আর আমার বিপক্ষতা কেমন, তাহা জ্ঞাত হইবে। আমি সদাপ্রভু বলিয়াছি, আমার বিপরীতে চক্রান্তকারী এই সমগ্র দুষ্ট মণ্ডলীর প্রতি আমি ইহা অবশ্য করিব; এই প্রান্তরে তাহারা নিঃশেষিত হইবে, এখানেই তাহারা মরিবে। [36-37] আর দেশ নিরীক্ষণ করিতে মোশি যে লোকদিগকে পাঠাইয়াছিলেন, যাহারা ফিরিয়া আসিয়া ঐ দেশের অখ্যাতি করিয়া তাঁহার প্রতিকূলে সমস্ত মণ্ডলীকে দিয়া বচসা করাইয়াছিল, দেশের অখ্যাতিকারী সেই ব্যক্তিরা সদাপ্রভুর সম্মুখে মহামারীতে মরিল। *** যে ব্যক্তিরা দেশ নিরীক্ষণ করিতে গিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে কেবল নূনের পুত্র যিহোশূয় ও যিফূন্নির পুত্র কালেব জীবিত থাকিলেন। তখন মোশি সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানকে সেই কথা কহিলেন, এবং লোকেরা অতিশয় শোক করিল। পরে তাহারা প্রত্যূষে উঠিয়া পর্ব্বতের শৃঙ্গে আরোহণ করিতে উদ্যত হইয়া কহিল, দেখ, এই আমরা, সদাপ্রভু যে স্থানের কথা বলিয়াছেন, আমরা সেই স্থানে যাই, কেননা আমরা পাপ করিয়াছি। তাহাতে মোশি কহিলেন, এখন সদাপ্রভুর আজ্ঞালঙ্ঘন কেন করিতেছ? ইহা ত সফল হইবে না। তোমরা উঠিয়া যাইও না, কারণ সদাপ্রভু তোমাদের মধ্যে নাই গেলে তোমরা শত্রুসম্মুখে পরাস্ত হইবে। কেননা অমালেকীয়েরা ও কনানীয়েরা সে স্থানে তোমাদের সম্মুখে আছে; তোমরা খড়েগ পতিত হইবে, কেননা তোমরা সদাপ্রভুর পশ্চাৎ হইতে ফিরিয়াছ, তাই সদাপ্রভু তোমাদের সহবর্ত্তী হইবেন না। তথাপি তাহারা দুঃসাহসী হইয়া পর্ব্বতশৃঙ্গে অরোহণ করিতে লাগিল; কিন্তু সদাপ্রভুর সাক্ষ্যসিন্দুক ও মোশি শিবির হইতে সরিলেন না। তখন ঐ পর্ব্বতবাসী অমালেকীয়েরা ও কনানীয়েরা নামিয়া আসিয়া তাহাদিগকে আঘাত করিল ও হর্মা পর্য্যন্ত তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, আমি তোমাদিগকে যে দেশ দিব, তোমাদের সেই নিবাসদেশে প্রবেশ করিলে পর যখন তোমরা মানত পূর্ণ করণার্থে কিম্বা স্ব ইচ্ছায় দত্ত নৈবেদ্যার্থে কিম্বা তোমাদের নিরূপিত পর্ব্বে গোমেষাদি পাল হইতে সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভ করিবার জন্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহাররূপে হোম কিম্বা বলি উৎসর্গ করিবে; তখন উপহার উৎসর্গকারী ব্যক্তি সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক হিনের চতুর্থাংশ তৈলে মিশ্রিত সূজির [এক ঐফার] দশমাংশ ভক্ষ্য-নৈবেদ্য আনিবে, এবং তুমি হোমবলির সহিত অথবা বলির জন্য, প্রত্যেক মেষশাবকের জন্য, পেয় নৈবেদ্য বলিয়া এক হিনের চতুর্থাংশ দ্রাক্ষারস প্রস্তুত করিবে। অথবা এক মেষের জন্য তুমি ভক্ষ্য-নৈবেদ্য বলিয়া এক হিনের তৃতীয়াংশ তৈলমিশ্রিত সূক্ষ্ম সূজির [এক ঐফার] দুই দশমাংশ প্রস্তুত করিবে, এবং পেয় নৈবেদ্যের জন্য এক হিনের তৃতীয়াংশ দ্রাক্ষারস সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থে উৎসর্গ করিবে। আর যখন তুমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলির জন্য বা মানত পূরণ জন্য বলিদানার্থে, কিম্বা মঙ্গলার্থক বলির জন্য গোবৎস উৎসর্গ করিবে, তখন গোবৎসের সহিত অর্দ্ধ হিন তৈলে মিশ্রিত [এক ঐফার] তিন দশমাংশ সূজির ভক্ষ্য-নৈবেদ্য আনিবে। আর পেয় নৈবেদ্যার্থে সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার জন্য অর্দ্ধ হিন দ্রাক্ষারস আনিবে। এক এক গোবৎস, মেষ, মেষবৎস ও ছাগবৎসের জন্য এইরূপ করিতে হইবে। তোমরা যত পশু উৎসর্গ করিবে, তাহাদের সংখ্যানুসারে প্রত্যেকের জন্য এইরূপ করিবে। দেশজাত লোক সকল সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার নিবেদন করিবার সময়ে এই নিয়মানুসারে এই সকল প্রস্তুত করিবে। আর তোমাদের মধ্যে প্রবাসকারী কোন বিদেশী কিম্বা তোমাদের মধ্যে তোমাদের পুরুষানুক্রমে বাসকারী কোন ব্যক্তি যদি সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থে অগ্নিকৃত উপহার নিবেদন করিতে চাহে, তবে তোমরা যেরূপ, সেও তদ্রূপ করিবে। সমাজের জন্য, তোমরা এবং তোমাদের মধ্যে প্রবাসকারী বিদেশী লোক, উভয়ের জন্য একই ব্যবস্থা হইবে; ইহা তোমাদের পুরুষানুক্রমে পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি; সদাপ্রভুর সমক্ষে তোমরা ও বিদেশীয়েরা, উভয়ে সমান। তোমাদের ও তোমাদের মধ্যে প্রবাসকারী বিদেশীয়দের জন্য একই ব্যবস্থা ও একই শাসন হইবে। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, আমি তোমাদিগকে যে দেশে লইয়া যাইতেছি, সে দেশে প্রবেশ করিলে পর তোমরা সেই দেশের খাদ্য ভক্ষণ কালে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উত্তোলনীয় উপহার নিবেদন করিবে। তোমরা উত্তোলনীয় উপহারের জন্য তোমাদের ছানা ময়দার অগ্রিমাংশ বলিয়া এক এক পিষ্টক নিবেদন করিবে; যেমন খামারের উত্তোলনীয় উপহার উত্তোলন করিয়া থাক, ইহাও সেইরূপ করিবে। তোমরা পুরুষানুক্রমে আপন আপন ছানা ময়দার অগ্রিমাংশ হইতে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উত্তোলনীয় উপহার নিবেদন করিবে। আর তোমরা যদি প্রমাদবশতঃ পাপ কর, মোশির কাছে সদাপ্রভু এই যে সকল আজ্ঞা দিয়াছেন, এই সকল যদি পালন না কর, এমন কি, সদাপ্রভু যে দিনে তোমাদিগকে আজ্ঞা দিয়াছেন, তদবধি তোমাদের পুরুষপরম্পরার জন্য সদাপ্রভু মোশির হস্তে তোমাদিগকে যত আজ্ঞা করিয়াছেন, সেই সকল যদি পালন না কর, এবং তাহা যদি মণ্ডলীর অগোচরে প্রমাদবশতঃ হইয়া থাকে, তবে সমস্ত মণ্ডলী সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক হোমের জন্য এক গোবৎস ও বিধিমতে তাহার সহিত ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলির জন্য এক ছাগ উৎসর্গ করিবে। আর যাজক ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীর জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাহাতে তাহাদিগকে ক্ষমা করা যাইবে, কেননা উহা প্রমাদ, এবং তাহারা সেই প্রমাদ প্রযুক্ত আপনাদের উপহার, ও সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার, ও সদাপ্রভুর সম্মুখে পাপার্থক বলি আনিল। তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীকে ও তাহাদের মধ্যে প্রবাসী বিদেশীদিগকে ক্ষমা করা যাইবে; কেননা সকল লোক প্রমাদবশতঃ ঐ কর্ম্ম করিল। আর যদি কোন এক ব্যক্তি প্রমাদবশতঃ পাপ করে, তবে সে পাপার্থক বলিরূপে একবর্ষীয়া এক ছাগবৎসা আনিবে। আর যাজক সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ঐ প্রমাদী ব্যক্তির জন্য তাহার প্রমাদকৃত পাপপ্রযুক্ত প্রায়শ্চিত্ত করিবে; তাহাতে তাহার প্রায়শ্চিত্ত হইলে তাহার পাপ ক্ষমা হইবে। ইস্রায়েল-সন্তানগণের স্বজাতীয় হউক, কিম্বা তাহাদের মধ্যে প্রবাসী বিদেশী হউক, তোমাদের জন্য প্রমাদীর একই ব্যবস্থা হইবে। কিন্তু স্বজাতীয় কি বিদেশী যে ব্যক্তি ঊর্দ্ধহস্তে পাপ করে, সে সদাপ্রভুর নিন্দা করে; সেই ব্যক্তি আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। কেননা সে সদাপ্রভুর বাক্য অবজ্ঞা করিল ও তাঁহার আজ্ঞা লঙ্ঘন করিল; সেই ব্যক্তি একেবারে উচ্ছিন্ন হইবে, তাহার অপরাধ তাহারই উপরে বর্ত্তিবে। ইস্রায়েল-সন্তানগণ যখন প্রান্তরে ছিল, তখন বিশ্রামদিনে এক জনকে কাষ্ঠ সংগ্রহ করিতে দেখিল। যাহারা তাহাকে কাষ্ঠ সংগ্রহ করিতে দেখিয়াছিল, তাহারা মোশি, হারোণ ও সমস্ত মণ্ডলীর নিকটে তাহাকে আনিল। আর তাহারা তাহাকে রুদ্ধ করিয়া রাখিল; কেননা তাহার প্রতি কি কর্ত্তব্য, তাহা ব্যক্ত হয় নাই। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, সেই ব্যক্তির প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; সমস্ত মণ্ডলী তাহাকে শিবিরের বাহিরে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে। পরে মোশির প্রতি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সমস্ত মণ্ডলী তাহাকে শিবিরের বাহিরে লইয়া গিয়া প্রস্তরাঘাত করিল; তাহাতে সে মরিয়া গেল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, তাহারা পুরুষানুক্রমে আপন আপন বস্ত্রের কোণে থোপ দিউক, ও কোণস্থ থোপে নীল সূত্র বদ্ধ করুক। তোমাদের জন্য সেই থোপ থাকিবে, যেন তাহা দেখিয়া তোমরা সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞা স্মরণ করিয়া পালন কর, এবং আপনাদের যে হৃদয় ও চক্ষুর অনুগমনে তোমরা ব্যভিচারী হইয়া থাক, তদনুগমনে ভ্রমণ না কর; যেন আমার সমস্ত আজ্ঞা স্মরণ কর, ও পালন কর, এবং আপন ঈশ্বরের উদ্দেশে পবিত্র হও। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর; আমি তোমাদের ঈশ্বর হইবার জন্য তোমাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছি; আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। লেবির সন্তান কহাৎ, তাঁহার সন্তান যিষ্‌হর, সেই যিষ্‌হরের সন্তান যে কোরহ, সে এবং রূবেণ-সন্তানগণের মধ্যে ইলীয়াবের পুত্র দাথন ও অবীরাম, এবং পেলতের পুত্র ওন দল বাঁধিল; আর ইস্রায়েল-সন্তানদের দুই শত পঞ্চাশ জনের সহিত মোশির সম্মুখে উঠিল; ইহারা মণ্ডলীর অধ্যক্ষ, সমাজে সমাহূত ও প্রসিদ্ধ লোক ছিল। তাহারা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে একত্র হইয়া তাঁহাদিগকে কহিল, তোমরা বড়ই অভিমানী; কেননা সমস্ত মণ্ডলীর প্রত্যেক জনই পবিত্র, এবং সদাপ্রভু তাহাদের মধ্যবর্ত্তী; তবে তোমরা কেন সদাপ্রভুর সমাজের উপরে আপনাদিগকে উন্নত করিতেছ? তখন মোশি তাহা শুনিয়া উবুড় হইয়া পড়িলেন। আর তিনি কোরহকে ও তাহার দলস্থ সকলকে কহিলেন, কে সদাপ্রভুর লোক, ও কে পবিত্র, কাহাকে তিনি আপনার নিকটবর্ত্তী করেন, তাহা সদাপ্রভু প্রাতঃকালে জানাইবেন; তিনি যাহাকে মনোনীত করিবেন, তাহাকেই আপনার নিকটবর্ত্তী করিবেন। হে কোরহ ও কোরহের দলস্থ সকলে, এক কর্ম্ম কর; তোমরা অঙ্গারধানী লও, এবং তাহাতে অগ্নি দিয়া কল্য সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহার উপরে ধূপ দেও, তাহাতে সদাপ্রভু যাহাকে মনোনীত করিবেন, সেই ব্যক্তি পবিত্র হইবে; হে লেবির সন্তানগণ, তোমরা বড়ই অভিমানী। পরে মোশি কোরহকে কহিলেন, হে লেবির সন্তানগণ, বিনয় করি, আমার কথা শুন। ইহা কি তোমাদের কাছে ক্ষুদ্র বিষয় যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাদিগকে ইস্রায়েল-মণ্ডলী হইতে পৃথক্‌ করিয়া সদাপ্রভুর আবাসের সেবাকর্ম্ম করণার্থে ও মণ্ডলীর সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাহার পরিচর্য্যা করণার্থে আপনার নিকটবর্ত্তী করিয়াছেন; আর তোমাকে ও তোমার সহিত তোমার সমস্ত ভ্রাতাকে অর্থাৎ লেবির সন্তানগণকে আপনার নিকটবর্ত্তী করিয়াছেন? আর তোমরা কি যাজকত্বেরও চেষ্টা করিতেছ? অতএব তুমি ও তোমার সমস্ত দল সদাপ্রভুরই প্রতিকূলে একত্র হইয়াছ; আর হারোণ কে যে তোমরা তাঁহার প্রতিকূলে বচসা কর? পরে মোশি ইলীয়াবের পুত্র দাথন ও অবীরামকে ডাকিতে লোক পাঠাইলেন, কিন্তু তাহারা কহিল, আমরা যাইব না; ইহা কি ক্ষুদ্র বিষয় যে, তুমি আমাদিগকে প্রান্তরে মারিবার জন্য দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ হইতে আনিয়াছ? তুমি কি আমাদের উপরে সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তৃত্বও করিবে? আর, তুমি ত আমাদিগকে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে আন নাই, শস্যক্ষেত্রের ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের অধিকারও দেও নাই। তুমি কি এই লোকদের চক্ষু উৎপাটন করিবে? আমরা যাইব না। তখন মোশি অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া সদাপ্রভুকে কহিলেন, উহাদের নৈবেদ্য গ্রাহ্য করিও না; আমি উহাদের হইতে একটী গর্দ্দভও লই নাই, আর উহাদের এক জনেরও হিংসা করি নাই। পরে মোশি কোরহকে কহিলেন, তুমি ও তোমার দলস্থ সকলে, তোমরা কল্য হারোণের সহিত সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হইবে; প্রত্যেক জন অঙ্গারধানী লইয়া তাহার উপরে ধূপ দিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে আপন আপন অঙ্গারধানী উপস্থিত করিবে; দুই শত পঞ্চাশটী অঙ্গারধানী উপস্থিত করিবে; এবং তুমি ও হারোণ আপন আপন অঙ্গারধানী লইবে। পরে তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন অঙ্গারধানী লইয়া তাহার মধ্যে অগ্নি রাখিয়া ধূপ দিয়া মোশি ও হারোণের সহিত সমাগম-তাম্বুর দ্বারে দাঁড়াইল। আর কোরহ সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে তাঁহাদের প্রতিকূলে সমস্ত মণ্ডলীকে সমবেত করিল। তখন সদাপ্রভুর প্রতাপ সমস্ত মণ্ডলীর প্রত্যক্ষ হইল। পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা এই মণ্ডলীর মধ্য হইতে পৃথক্‌ হও; আমি এক নিমিষে ইহাদিগকে সংহার করি। তাঁহারা উবুড় হইয়া পড়িলেন, ও কহিলেন, হে ঈশ্বর, হে যাবতীয় শরীরস্থ আত্মার ঈশ্বর, এক জন পাপ করিলে তুমি কি সমস্ত মণ্ডলীর উপরে কোপাবিষ্ট হইবে? তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি মণ্ডলীকে বল, তোমরা কোরহের, দাথনের ও অবীরামের আবাসের চতুর্দ্দিক্‌ হইতে উঠিয়া যাও। আর মোশি উঠিয়া দাথনের ও অবীরামের নিকটে গেলেন, এবং ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ তাঁহার পশ্চাৎ গেলেন। পরে তিনি মণ্ডলীকে কহিলেন, বিনয় করি, তোমরা এই দুষ্ট লোকদের তাম্বুর নিকট হইতে উঠিয়া যাও, ইহাদের কিছুই স্পর্শ করিও না, পাছে ইহাদের সমস্ত পাপে বিনষ্ট হও। তাহাতে তাহারা কোরহের, দাথনের ও অবীরামের আবাসের চারিদিক্‌ হইতে উঠিয়া গেল, আর দাথন ও অবীরাম বাহির হইয়া আপন আপন স্ত্রী, পুত্র ও শিশুগণের সহিত আপন আপন তাম্বুদ্বারে দাঁড়াইয়া রহিল। পরে মোশি কহিলেন, সদাপ্রভু আমাকে এই সমস্ত কার্য্য করিতে পাঠাইয়াছেন, আমি স্বেচ্ছানুসারে করি নাই, তাহা তোমরা ইহাতেই জানিতে পারিবে। সাধারণ লোকদের মরণের ন্যায় যদি এই মনুষ্যেরা মরে, কিম্বা সাধারণ লোকের শাস্তির ন্যায় যদি ইহাদের শাস্তি হয়, তবে সদাপ্রভু আমাকে পাঠান নাই। কিন্তু সদাপ্রভু যদি অঘটন ঘটান এবং ভূমি আপন মুখ বিস্তার করিয়া ইহাদিগকে ও ইহাদের সর্ব্বস্ব গ্রাস করে, আর ইহারা জীবদ্দশায় পাতালে নামে, তবে ইহারা যে সদাপ্রভুকে অবজ্ঞা করিয়াছে, তাহা তোমরা জানিতে পারিবে। পরে মোশির এই সমস্ত কথা সমাপ্ত হইবামাত্র তাহাদের অধঃস্থিত ভূমি বিদীর্ণ হইল, আর পৃথিবী আপন মুখ বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে, তাহাদের পরিজনগণকে ও কোরহের সপক্ষ সমস্ত লোককে এবং তাহাদের সকল সম্পত্তি গ্রাস করিল। তাহাতে তাহারা ও তাহাদের সমস্ত পরিজন জীবদ্দশায় পাতালে নামিল, এবং পৃথিবী তাহাদের উপরে চাপিয়া পড়িল; এইরূপে তাহারা সমাজের মধ্য হইতে লুপ্ত হইল। আর তাহাদের রবে চারিদিকের সমস্ত ইস্রায়েল পলায়ন করিল, কেননা তাহারা বলিল, পাছে পৃথিবী আমাদিগকে গ্রাস করে। আর সদাপ্রভু হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া যাহারা ধূপ নিবেদন করিয়াছিল, সেই দুই শত পঞ্চাশ জন লোককে গ্রাস করিল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণ যাজকের পুত্র ইলীয়াসরকে বল, সে দাহস্থান হইতে ঐ সকল অঙ্গারধানী উঠাইয়া লউক, এবং তাহার অগ্নি দূরে ঝাড়িয়া ফেলুক, কেননা সেই সকল অঙ্গারধানী পবিত্র। আর ঐ যে পাপীরা আপন আপন প্রাণের প্রতিকূলে পাপ করিয়াছিল, তাহাদের অঙ্গারধানী সকল পিটাইয়া যজ্ঞবেদির আচ্ছাদনার্থ পাত প্রস্তুত করা হউক, কেননা তাহারা সদাপ্রভুর সম্মুখে সে সকল নিবেদন করিয়াছিল; অতএব সে সকল পবিত্র; আর সে সকল ইস্রায়েল-সন্তানগণের পক্ষে চিহ্ন হইবে। তাহাতে যাহারা পুড়িয়া মরিল, তাহারা পিত্তলের যে যে অঙ্গারধানী নিবেদন করিয়াছিল, ইলীয়াসর যাজক সে সকল গ্রহণ করিলেন; এবং তাহা পিটাইয়া যজ্ঞবেদির আচ্ছাদনার্থ পাত প্রস্তুত করা গেল; উহা ইস্রায়েল-সন্তানগণের স্মরণার্থে হইল, যেন হারোণ বংশজাত ভিন্ন অন্য গোষ্ঠীভূক্ত কোন মনুষ্য সদাপ্রভুর সম্মুখে ধূপ উৎসর্গ করিতে নিকটে না যায়, এবং কোরহের ও তাহার দলের মত না হয়; সদাপ্রভু মোশির দ্বারা তাহাকে এইরূপ আজ্ঞা দিয়াছিলেন। তথাপি পর দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী মোশির ও হারোণের প্রতিকূলে বচসা করিয়া কহিল, তোমরাই সদাপ্রভুর প্রজাদিগকে বধ করিলে। আর মণ্ডলী মোশির ও হারোণের প্রতিকূলে একত্র হইলে তাহারা সমাগম-তাম্বুর দিকে মুখ ফিরাইল, আর দেখ, মেঘ তাহা আচ্ছাদন করিয়াছে, এবং সদাপ্রভুর প্রতাপ প্রত্যক্ষ হইয়াছে। তখন মোশি ও হারোণ সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তোমরা এই মণ্ডলীর মধ্য হইতে উঠিয়া যাও, আমি এক নিমিষে ইহাদিগকে সংহার করিব। তখন তাঁহারা উবুড় হইয়া পড়িলেন। আর মোশি হারোণকে কহিলেন, তোমার অঙ্গারধানী লও, ও যজ্ঞবেদির উপর হইতে অগ্নি লইয়া তাহার মধ্যে দেও, এবং তাহাতে ধূপ দিয়া শীঘ্র মণ্ডলীর নিকটে গিয়া তাহাদের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত কর; কেননা সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে ক্রোধ নির্গত হইল, মহামারী আরম্ভ হইল। আর মোশি যেমন বলিলেন, অমনি হারোণ [অঙ্গারধানী] লইয়া সমাজের মধ্যে দৌড়িয়া গেলেন; আর দেখ, লোকদের মধ্যে মহামারী আরম্ভ হইয়াছিল, কিন্তু তিনি ধূপ দিয়া লোকদের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিলেন। তিনি মৃত ও জীবিত লোকদের মধ্যে দাঁড়াইলেন; তাহাতে মহামারী নিবৃত্ত হইল। যাহারা কোরহের ব্যাপারে মারা পড়ে, তাহারা ছাড়া আর চৌদ্দ সহস্র সাত শত লোক ঐ মহামারীতে মারা পড়িল। পরে হারোণ সমাগম-তাম্বুর দ্বারে মোশির নিকটে ফিরিয়া আসিলেন। এইরূপে মহামারী নিবৃত্ত হইল। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বলিয়া তাহাদের পিতৃকুলানুসারে সমস্ত অধ্যক্ষ হইতে এক এক পিতৃকুলের জন্য এক এক যষ্টি, এইরূপে বারো যষ্টি গ্রহণ কর; প্রত্যেকের যষ্টিতে তাহার নাম লেখ। আর লেবির যষ্টিতে হারোণের নাম লেখ; কেননা তাহাদের এক এক পিতৃকুলাধ্যক্ষের নিমিত্ত এক এক যষ্টি হইবে। আর সমাগম-তাম্বুতে যে স্থানে আমি তোমাদের সহিত সাক্ষাৎ করি, সেই স্থানে সাক্ষ্য-সিন্দুকের সম্মুখে সে সকল রাখিবে। পরে এইরূপ হইবে, যে ব্যক্তি আমার মনোনীত, তাহার যষ্টি মুকুলিত হইবে, তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণ তোমাদের প্রতিকূলে যে যে বচসা করে, তাহা আমি আপনার নিকট হইতে নিবৃত্ত করিব। পরে মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই সকল কহিলে তাহাদের বংশাধ্যক্ষগণ তাহাদের পিতৃকুলানুসারে এক এক অধ্যক্ষের নিমিত্তে এক এক যষ্টি এইরূপে বারো যষ্টি, তাঁহাকে দিলেন; এবং হারোণের যষ্টি, তাঁহাদের যষ্টি সকলের মধ্যে ছিল। তাহাতে মোশি ঐ সকল যষ্টি লইয়া সাক্ষ্য-তাম্বুতে সদাপ্রভুর সম্মুখে রাখিলেন। পরদিবসে মোশি সাক্ষ্য-তাম্বুতে প্রবেশ করিলেন, আর দেখ, লেবি বংশ সম্পর্কীয় হারোণের যষ্টি অঙ্কুরিত, মুকুলিত ও পুষ্পিত হইয়া বাদাম ফল ধরিয়াছে। তখন মোশি সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে ঐ সকল যষ্টি বাহির করিয়া সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের সাক্ষাতে আনিলেন, এবং তাঁহারা তাহা দেখিয়া প্রত্যেকে আপন আপন যষ্টি গ্রহণ করিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি হারোণের যষ্টি পুনর্ব্বার সাক্ষ্য-সিন্দুকের সম্মুখে রাখ, তাহা বিদ্রোহ-সন্তানদের বিরুদ্ধে চিহ্নের জন্য রাখা যাউক; এইরূপে আমার বিরুদ্ধে ইহাদের বচসা নিবৃত্ত কর, যেন ইহারা না মরে। মোশি তাহা করিলেন; সদাপ্রভু তাঁহাকে যেরূপ আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তিনি সেইরূপই করিলেন। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ মোশিকে কহিল, দেখ, আমরা মারা পড়ি, বিনষ্ট হই, সকলেই বিনষ্ট হই। যে কেহ নিকটে যায়, সদাপ্রভুর আবাসের নিকটে যায়, সেই মরে; আমরা কি সকলেই মারা পড়িব? তখন সদাপ্রভু হারোণকে কহিলেন, তুমি ও তোমার সহিত তোমার পুত্রগণ ও তোমার পিতৃকুল, তোমরা ধর্ম্মধামঘটিত অপরাধ বহন করিবে, এবং তুমি ও তোমার সহিত তোমার পুত্রগণ তোমাদের যাজকত্বপদ ঘটিত অপরাধ বহন করিবে। আর তোমার ভ্রাতৃগণ, যে লেবি বংশ তোমার পিতৃবংশ, তাহাদিগকেও সঙ্গে আনিবে, তাহারা তোমার সহিত যোগ দিয়া তোমার পরিচর্য্যা করিবে; কিন্তু তুমি ও তোমার সহিত তোমার পুত্রগণ, তোমরা সাক্ষ্য-তাম্বুর সম্মুখে থাকিবে। আর তাহারা তোমার রক্ষণীয় ও সমস্ত তাম্বুর রক্ষণীয় রক্ষা করিবে; কিন্তু তাহাদের ও তোমাদের যেন মৃত্যু না হয়, এই জন্য তাহারা পবিত্র স্থানের পাত্রের ও বেদির নিকটে যাইবে না। তাহারা তোমার সহিত যোগ দিয়া তাম্বুর সমস্ত সেবাকর্ম্মের জন্য সমাগম-তাম্বুর রক্ষণীয় রক্ষা করিবে, এবং অন্য গোষ্ঠীভুক্ত কেহ তোমাদের নিকটে যাইবে না। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণের প্রতি যেন আর ক্রোধ উপস্থিত না হয়, এই জন্য তোমরা পবিত্র স্থানের রক্ষণীয় ও বেদির রক্ষণীয় রক্ষা করিবে। আর দেখ, ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্য হইতে আমি তোমাদের ভ্রাতা লেবীয়দিগকে গ্রহণ করিলাম; তাহারা তোমাদের জন্য দানরূপে সমাগম-তাম্বুর সেবাকর্ম্ম করণার্থে সদাপ্রভুকে দত্ত হইয়াছে। অতএব তুমি ও তোমার সহিত তোমার পুত্রগণ তোমরা বেদি সম্পর্কীয় সকল বিষয়ে ও তিরস্করিণীর ভিতরের বিষয়ে নিজ যাজকত্ব পালন করিবে ও সেবাকর্ম্ম করিবে, আমি দানরূপে যাজকত্বপদ তোমাদিগকে দিলাম, কিন্তু যে অন্য গোষ্ঠীভুক্ত লোক নিকটবর্ত্তী হইবে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে। আর সদাপ্রভু হারোণকে কহিলেন, দেখ, আমার উত্তোলনীয় উপহারের, এমন কি, ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত পবিত্রীকৃত দ্রব্যের ভার আমি তোমাকে দিলাম; অভিষেক প্রযুক্ত তোমাকে ও তোমার সন্তানগণকে চিরস্থায়ী অধিকারার্থে সে সমস্ত দিলাম। অগ্নিকৃত অতি পবিত্র উপহারের মধ্যে এই সকল তোমার হইবে; আমার উদ্দেশে তাহাদের আনীত প্রত্যেক ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, প্রত্যেক পাপার্থক বলি ও দোষার্থক বলি সকল তোমার ও তোমার পুত্রগণের পক্ষে অতি পবিত্র হইবে। তুমি তাহা অতি পবিত্র বস্তু বলিয়া ভক্ষণ করিবে, প্রত্যেক পুরুষ তাহা ভক্ষণ করিবে, তাহা তোমার পক্ষে পবিত্র হইবে। এই সমস্তও তোমার হইবে; ইস্রায়েল-সন্তানগণের দানরূপ উত্তোলনীয় উপহার, তাহাদের সমস্ত দোলনীয় উপহার; আমি চিরস্থায়ী অধিকারার্থে যে সমস্ত তোমাকে ও তোমার পুত্রগণকে ও তোমার কন্যাগণকে দিলাম; তোমার কুলের প্রত্যেক শুচি ব্যক্তি তাহা ভক্ষণ করিবে। তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপনাদের সকল উত্তম তৈল, দ্রাক্ষারস ও গোম প্রভৃতি যে যে অগ্রিমাংশ উৎসর্গ করে, তাহা আমি তোমাকে দিলাম। তাহাদের দেশোৎপন্ন সর্ব্বপ্রকার ফলের যে আশুপক্বাংশ তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপস্থিত করে, সে সমস্ত তোমার হইবে। ইস্রায়েলের মধ্যে বর্জ্জিত বস্তু সকল তোমার হইবে। মনুষ্য হউক কিম্বা পশু হউক, যাবতীয় প্রাণীর মধ্যে গর্ভ উন্মোচক যে সকল অপত্য, তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিবে, সে সকলই তোমার হইবে; কিন্তু মনুষ্যের প্রথমজাতকে তুমি অবশ্য মুক্ত করিবে, এবং অশুচি পশুর প্রথমজাতকেও মুক্ত করিবে। তুমি এক মাস বয়স্ক অবধি মোচনীয় সকলকে মুক্ত করিবে, তোমার নিরূপণীয় মূল্যে পবিত্র স্থানের বিংশতি গেরা পরিমিত শেকল অনুসারে পাঁচ শেকল রৌপ্য দিবে। কিন্তু গোরুর প্রথমজাতকে কিম্বা মেষের প্রথমজাতকে কিম্বা ছাগলের প্রথমজাতকে তুমি মুক্ত করিবে না, তাহারা পবিত্র; তুমি বেদির উপরে তাহাদের রক্ত প্রক্ষেপ করিবে, এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহারের নিমিত্তে তাহাদের মেদ দগ্ধ করিবে; পরে দোলনীয় বক্ষঃ ও দক্ষিণ জঙ্ঘা যেমন তোমার, তেমনি তাহাদের মাংসও তোমার হইবে। ইস্রায়েল-সন্তানগণ যে সমস্ত পবিত্র বস্তু উত্তোলনীয় উপহাররূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করে, সে সকল আমি চিরস্থায়ী অধিকারার্থে তোমাকে ও তোমার পুত্রগণকে ও তোমার কন্যাগণকে দিলাম; তোমার ও তোমার বংশের পক্ষে ইহা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে চিরস্থায়ী লবণ-নিয়ম। পরে সদাপ্রভু হারোণকে কহিলেন, তাহাদের ভূমিতে তোমার কোন অধিকার থাকিবে না, ও তাহাদের মধ্যে তোমার কোন অংশ থাকিবে না; ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আমিই তোমার অংশ ও অধিকার। আর দেখ, লেবির সন্তানগণ যে সেবাকর্ম্ম করিতেছে, সমাগম-তাম্বু সম্বন্ধীয় তাহাদের সেই সেবাকর্ম্মের বেতনরূপে আমি তাহাদের অধিকারার্থে ইস্রায়েলের মধ্যে সমস্ত দশমাংশ দিলাম। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ পাপ বহন করতঃ যেন না মরে, এই জন্য তাহারা আর সমাগম-তাম্বুর নিকটে আসিবে না। কিন্তু লেবীয়েরাই সমাগম-তাম্বু সম্বন্ধীয় সেবাকর্ম্ম করিবে, এবং তাহারা আপন আপন অপরাধ বহন করিবে, ইহা তোমাদের পুরুষানুক্রমিক চিরস্থায়ী বিধি; ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে তাহারা কোন অধিকার পাইবে না। কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে উত্তোলনীয় উপহাররূপে যে দশমাংশ উৎসর্গ করে, তাহা আমি লেবীয়দিগকে অধিকারার্থে দিলাম; এই জন্য তাহাদের উদ্দেশে কহিলাম, ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে তাহারা কোন অধিকার পাইবে না। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, আবার তুমি লেবীয়দিগকে কহিবে, তাহাদিগকে বলিবে, আমি তোমাদের অধিকারার্থে ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে যে দশমাংশ তোমাদিগকে দিলাম, তাহা যখন তোমরা তাহাদের হইতে গ্রহণ করিবে, তৎকালে তোমরা সদাপ্রভুর জন্য উত্তোলনীয় উপহাররূপে সেই দশমাংশের দশমাংশ নিবেদন করিবে। তোমাদের উত্তোলনীয় উপহার খামারের শস্যের ন্যায় ও দ্রাক্ষাকুণ্ডের পূর্ণতার ন্যায় তোমাদের পক্ষে গণিত হইবে। এইরূপে, তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে যে সমস্ত দশমাংশ গ্রহণ করিবে, তাহা হইতে তোমরাও সদাপ্রভুর উদ্দেশে উত্তোলনীয় উপহার নিবেদন করিবে; এবং তাহা হইতে সদাপ্রভুর সেই উত্তোলনীয় উপহার হারোণ যাজককে দিবে। তোমাদের প্রাপ্ত সমস্ত দান হইতে তোমরা সদাপ্রভুর সেই উত্তোলনীয় উপহার, তাহার সমস্ত উত্তম বস্তু হইতে তাহার পবিত্র অংশ, নিবেদন করিবে। অতএব, তুমি তাহাদিগকে বলিবে, তোমরা যখন তাহা হইতে উত্তম বস্তু উত্তোলনীয় উপহাররূপে নিবেদন করিবে, তৎকালে তাহা লেবীয়দের পক্ষে খামারের উৎপন্ন দ্রব্য ও দ্রাক্ষাকুণ্ডের উৎপন্ন দ্রব্য বলিয়া গণিত হইবে। আর তোমরা ও তোমাদের পরিজনগণ সর্ব্বস্থানে তাহা ভক্ষণ করিবে; কেননা তাহা সমাগম-তাম্বুতে কৃত কর্ম্মের জন্য তোমাদের বেতনস্বরূপ। আর তাহা হইতে সেই উত্তম বস্তু উপহাররূপে নিবেদন করিলে তোমরা তদঘটিত পাপ বহন করিবে না; এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের পবিত্র বস্তু অপবিত্র করিবে না, ও মারা পড়িবে না। আর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, সদাপ্রভু যে শাস্ত্রীয় বিধি আজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা এই, ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, তাহারা নির্দ্দোষা ও নিষ্কলঙ্কা, যোঁয়ালি বহন করে নাই, এমন এক রক্তবর্ণা গাভী তোমার নিকটে আনুক। পরে তোমরা ইলীয়াসর যাজককে সেই গাভী দিবে, এবং সে তাহাকে শিবিরের বাহিরে লইয়া যাইবে, এবং তাহার সম্মুখে তাহাকে হনন করা যাইবে। পরে ইলীয়াসর যাজক আপন অঙ্গুলি দ্বারা তাহার কিঞ্চিৎ রক্ত লইয়া সমাগম-তাম্বুর সম্মুখে সাত বার সেই রক্ত ছিটাইয়া দিবে। আর তাহার দৃষ্টিগোচরে সেই গাভী পোড়াইয়া দেওয়া যাইবে; তাহার গোময়ের সহিত চর্ম্ম, মাংস ও রক্ত পোড়াইয়া দেওয়া যাইবে। পরে যাজক এরসকাষ্ঠ, এসোব ও লালবর্ণ লোম লইয়া ঐ গোদাহের অগ্নিমধ্যে ফেলিয়া দিবে। পরে যাজক আপন বস্ত্র ধৌত করিবে ও শরীর জলে ধুইবে; পরে শিবিরে প্রবেশ করিতে পারিবে; তথাপি যাজক সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর যে ব্যক্তি সেই গাভী পোড়াইয়া দিবে, সেও আপন বস্ত্র জলে ধৌত করিবে ও শরীর জলে ধুইবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। পরে কোন শুচি ব্যক্তি ঐ গাভীর ভস্ম সংগ্রহ করিয়া শিবিরের বাহিরে কোন শুচি স্থানে রাখিবে; তাহা ইস্রায়েল-সন্তানগণের মণ্ডলীর কারণ অশৌচঘ্ন জলের নিমিত্তে রাখা যাইবে; এটী পাপার্থক বলি। আর যে ব্যক্তি ঐ গাভীর ভস্ম সংগ্রহ করিবে, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে, এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে; ইহা ইস্রায়েল-সন্তানগণের এবং তাহাদের মধ্যে প্রবাসকারী বিদেশীর পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি হইবে। যে কেহ কোন মনুষ্যের মৃত দেহ স্পর্শ করে, সে সাত দিন অশুচি থাকিবে। সে তৃতীয় দিবসে ও সপ্তম দিবসে ঐ জল দ্বারা আপনাকে মুক্তপাপ করিবে, পরে শুচি হইবে; কিন্তু যদি তৃতীয় দিবসে ও সপ্তম দিবসে আপনাকে মুক্তপাপ না করে, তবে শুচি হইবে না। যে কেহ কোন মনুষ্যের মৃত দেহ স্পর্শ করিয়া আপনাকে মুক্তপাপ না করে, সে সদাপ্রভুর আবাস অশুচি করে; সেই প্রাণী ইস্রায়েলের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে; কেননা তাহার উপরে অশৌচঘ্ন জল প্রক্ষিপ্ত হয় নাই, এই নিমিত্তে সে অশুচি হইবে; তাহার অশুচিতা তাহাতে লগ্ন রহিয়াছে। ব্যবস্থা এই; কোন মনুষ্য যখন তাম্বুর মধ্যে মরে, তখন সেই তাম্বুতে প্রবেশকারী সমস্ত লোক এবং সেই তাম্বুর মধ্যস্থিত সমস্ত লোক সাত দিন অশুচি থাকিবে। আর যাবতীয় খোলা পাত্র, সূত্রাবদ্ধ ঢাকনীরহিত পাত্র, অশুচি হইবে। আর যে কেহ ক্ষেত্রে খড়গহত কিম্বা মৃত লোকের দেহ কিম্বা মনুষ্যের অস্থি কিম্বা কবর স্পর্শ করে, সে সাত দিন অশুচি থাকিবে। লোকেরা সেই অশুচি ব্যক্তির জন্য পাপার্থক বলি দাহনের কিঞ্চিৎ ভস্ম লইয়া পাত্রে রাখিয়া তাহার উপরে স্রোতের জল দিবে। পরে কোন শুচি ব্যক্তি এসোব লইয়া সেই জলে মগ্ন করিয়া ঐ তাম্বুর উপরে, ও সেই স্থানের সমস্ত সামগ্রীর ও সমস্ত প্রাণীর উপরে, এবং অস্থির কিম্বা হত বা মৃত লোকের দেহ কিম্বা কবর স্পর্শকারী ব্যক্তির উপরে তাহা ছিটাইয়া দিবে। আর ঐ শুচি ব্যক্তি তৃতীয় দিবসে ও সপ্তম দিবসে অশুচির উপরে সেই জল ছিটাইয়া দিবে; পরে সপ্তম দিবসে সে তাহাকে মুক্তপাপ করিবে, এবং ঐ ব্যক্তি আপন বস্ত্র ধৌত করিবে ও জলে স্নান করিবে; পরে সন্ধ্যাকালে শুচি হইবে। কিন্তু যে ব্যক্তি অশুচি হইয়া আপনাকে মুক্তপাপ না করে, সে সমাজের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে, কেননা সে সদাপ্রভুর ধর্ম্মধাম অশুচি করিয়াছে; তাহার উপরে অশৌচঘ্ন জল প্রক্ষিপ্ত হয় নাই, সে অশুচি। ইহা তাহাদের পালনীয় চিরস্থায়ী বিধি হইবে; এবং যে কেহ সেই অশৌচঘ্ন জল ছিটাইয়া দেয়, সে আপন বস্ত্র ধৌত করিবে; এবং যে জন সেই অশৌচঘ্ন জল স্পর্শ করে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর সেই অশুচি ব্যক্তি যে কিছু স্পর্শ করে তাহা অশুচি হইবে; এবং যে প্রাণী তাহা স্পর্শ করে, সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অশুচি থাকিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ, অর্থাৎ সমস্ত মণ্ডলী প্রথম মাসে সীন প্রান্তরে উপস্থিত হইল, এবং লোকেরা কাদেশে বাস করিল; আর সেই স্থানে মরিয়মের মৃত্যু হইল ও সেই স্থানে তাঁহার কবর হইল। সেই স্থানে মণ্ডলীর জন্য জল ছিল না; তাহাতে লোকেরা মোশির ও হারোণের প্রতিকূলে একত্র হইল। আর তাহারা মোশির সহিত বিবাদ করিয়া কহিল, হায়, আমাদের ভ্রাতৃগণ যখন সদাপ্রভুর সম্মুখে মরিয়া গেল, তখন কেন আমাদের মৃত্যু হইল না? আর তোমরা আমাদের ও আমাদের পশুদের মৃত্যুর জন্য সদাপ্রভুর সমাজকে কেন এই প্রান্তরে আনিলে? এই কুস্থানে আনিবার জন্য আমাদিগকে মিসর হইতে কেন বাহির করিয়া লইয়া আসিলে? এই স্থানে চাস কি ডুমুর কি দ্রাক্ষা কি দাড়িম্ব হয় না, এবং পান করিবার জলও নাই। তখন মোশি ও হারোণ সমাজের সাক্ষাৎ হইতে সমাগম-তাম্বুর দ্বারে গিয়া উবুড় হইয়া পড়িলেন; আর সদাপ্রভুর প্রতাপ তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি যষ্টি লও, এবং তুমি ও তোমার ভ্রাতা হারোণ মণ্ডলীকে একত্র করিয়া তাহাদের সাক্ষাতে ঐ শৈলকে বল, তাহাতে সে নিজ জল প্রদান করিবে; এইরূপে তুমি তাহাদের নিমিত্তে শৈল হইতে জল বাহির করিয়া মণ্ডলীকে ও তাহাদের পশুগণকে পান করাইবে। তখন মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাঁহার সম্মুখ হইতে ঐ যষ্টি লইলেন। আর মোশি ও হারোণ সেই শৈলের সম্মুখে সমাজকে একত্র করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, হে বিদ্রোহিগণ, শুন; আমরা তোমাদের নিমিত্তে কি এই শৈল হইতে জল বাহির করিব? পরে মোশি আপন হস্ত তুলিয়া ঐ যষ্টি দ্বারা শৈলে দুই বার আঘাত করিলেন, তাহাতে প্রচুর জল বাহির হইল, এবং মণ্ডলী ও তাহাদের পশুগণ পান করিল। পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণের সাক্ষাতে আমাকে পবিত্র বলিয়া মান্য করিতে আমার বাক্যে বিশ্বাস করিলে না, এই জন্য আমি তাহাদিগকে যে দেশ দিয়াছি, সেই দেশে তোমরা এই মণ্ডলীকে প্রবেশ করাইবে না। সেই জলের নাম মরীবা [বিবাদ]; যেহেতুক ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর সহিত বিবাদ করিল, আর তিনি তাহাদের মধ্যে পবিত্ররূপে মান্য হইলেন। পরে মোশি কাদেশ হইতে ইদোমীয় রাজার নিকটে দূত দ্বারা বলিয়া পাঠাইলেন, তোমার ভ্রাতা ইস্রায়েল কহিতেছে, আমাদের যে সমস্ত কষ্ট ঘটিয়াছে, তাহা তুমি জ্ঞাত আছ। আমাদের পিতৃপুরুষেরা মিসরে নামিয়া গিয়াছিলেন, সেই মিসরে আমরা অনেক দিন বাস করিয়াছিলাম; পরে মিস্রীয়েরা আমাদের প্রতি ও আমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি অসদ্‌ব্যবহার করিতে লাগিল। তখন আমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে ক্রন্দন করিলাম, আর তিনি আমাদের রব শুনিলেন, এবং দূত প্রেরণ করিয়া আমাদিগকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিলেন; আর দেখ, আমরা তোমার দেশের প্রান্তস্থিত কাদেশ নগরে আছি। আমি বিনয় করি, তুমি আপন দেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে যাইতে দেও; আমরা শস্যক্ষেত্র কি দ্রাক্ষাক্ষেত্র দিয়া যাইব না, কূপের জলও পান করিব না; কেবল রাজপথ দিয়া যাইব; যাবৎ তোমার সীমা উত্তীর্ণ না হই, তাবৎ দক্ষিণে কি বামে ফিরিব না। ইদোম তাঁহাকে কহিল, তুমি আমার [দেশের] মধ্য দিয়া যাইতে পাইবে না, গেলে আমি খগড় লইয়া তোমার বিরুদ্ধে বাহির হইব। তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহাকে কহিল, আমরা রাজপথ দিয়া যাইব; আমি কি আমার পশুগণ, আমরা যদি তোমার জল পান করি, তবে আমি তাহার মূল্য দিব; আর কিছু নয়, কেবল আমাকে পায়ে হাঁটিয়া যাইতে দেও। সে উত্তর করিল, তুমি যাইতে পাইবে না। পরে ইদোম অনেক লোক সঙ্গে লইয়া মহাবলে তাহাদের প্রতিকূলে বাহির হইল। এইরূপে ইদোম ইস্রায়েলকে আপন সীমার মধ্য দিয়া যাইতে দিতে অসম্মত হইল; অতএব ইস্রায়েল তাহার নিকট হইতে অন্য পথে গমন করিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ অর্থাৎ সমস্ত মণ্ডলী কাদেশ হইতে প্রস্থান করিয়া হোর পর্ব্বতে উপস্থিত হইল। তখন ইদোম দেশের সীমার নিকটস্থ হোর পর্ব্বতে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, হারোণ আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইবে; কেননা আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে দেশ দিয়াছি, সেই দেশে সে প্রবেশ করিবে না; কারণ মরীবা জলের নিকটে তোমরা আমার আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারী হইয়াছিলে। তুমি হারোণকে ও তাহার পুত্র ইলীয়াসরকে হোর পর্ব্বতের উপরে লইয়া যাও। আর হারোণকে তাহার বস্ত্র ত্যাগ করাইয়া তাহার পুত্র ইলীয়াসরকে তাহা পরিধান করাও; হারোণ সে স্থানে [আপন লোকদের কাছে] সংগৃহীত হইবে, সেখানে মরিবে। তখন মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুযায়ী কর্ম্ম করিলেন; তাঁহারা সমস্ত মণ্ডলীর সাক্ষাতে হোর পর্ব্বতে উঠিলেন। পরে মোশি হারোণকে তাঁহার বস্ত্র ত্যাগ করাইয়া তাঁহার পুত্র ইলীয়াসরকে তাহা পরিধান করাইলেন; এবং হারোণ সে স্থানে পর্ব্বতশৃঙ্গে মরিলেন; পরে মোশি ও ইলীয়াসর পর্ব্বত হইতে নামিয়া আসিলেন। আর যখন সমস্ত মণ্ডলী দেখিল যে, হারোণ মরিয়া গিয়াছেন, তখন সমস্ত ইস্রায়েল-কুল হারোণের জন্য ত্রিশ দিন পর্য্যন্ত শোক করিল। আর দক্ষিণ প্রদেশনিবাসী কনান বংশীয় অরাদের রাজা শুনিতে পাইলেন যে, ইস্রায়েল অথারীমের পথ দিয়া আসিতেছে; তখন তিনি ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিলেন, ও তাহাদের কতকগুলি লোককে ধরিয়া বন্দি করিলেন। তাহাতে ইস্রায়েল সদাপ্রভুর উদ্দেশে মানত করিয়া কহিল, যদি তুমি এই লোকদিগকে আমার হস্তে সমর্পণ কর, তবে আমি তাহাদের নগর সকল নিঃশেষে বিনষ্ট করিব। তখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলের রবে কর্ণপাত করিয়া সেই কনানীয়দিগকে সমর্পণ করিলেন; তাহাতে ইস্রায়েল তাহাদিগকে ও তাহাদের সমস্ত নগর নিঃশেষে বিনষ্ট করিল, এবং সেই স্থানের নাম হর্মা [বিনষ্ট] রাখিল। পরে তাহারা হোর পর্ব্বত হইতে প্রস্থান করিয়া ইদোম দেশ প্রদক্ষিণ জন্য সূফসাগরের দিকে যাত্রা করিল; আর পথের মধ্যে লোকদের প্রাণ বিরক্ত হইল। আর লোকেরা ঈশ্বরের প্রতিকূলে ও মোশির প্রতিকূলে কহিতে লাগিল, তোমরা কেন আমাদিগকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিলে, যেন আমরা প্রান্তরে মরিয়া যাই? রুটীও নাই, জলও নাই; আর আমাদের প্রাণ এই লঘু ভক্ষ্য ঘৃণা করে। তখন সদাপ্রভু লোকদের মধ্যে জ্বালাদায়ী সর্প প্রেরণ করিলেন; তাহারা লোকদিগকে দংশন করিলে ইস্রায়েলের অনেক লোক মারা পড়িল। আর লোকেরা মোশির নিকটে আসিয়া কহিল, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে ও তোমার বিরুদ্ধে কথা বলিয়া আমরা পাপ করিয়াছি; তুমি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা কর, যেন তিনি আমাদের নিকট হইতে এই সকল সর্প দূর করেন। তাহাতে মোশি লোকদের জন্য প্রার্থনা করিলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি এক জ্বালাদায়ী সর্প নির্ম্মাণ করিয়া পতাকার ঊর্দ্ধে রাখ; সর্পদষ্ট যে কোন ব্যক্তি তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে, সে বাঁচিবে। তখন মোশি পিত্তলের এক সর্প নির্ম্মাণ করিয়া পতাকার ঊর্দ্ধে রাখিলেন; তাহাতে এইরূপ হইল, সর্প কোন মনুষ্যকে দংশন করিলে যখন সে ঐ পিত্তলময় সর্পের প্রতি দৃষ্টি করিল, তখন বাঁচিল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ যাত্রা করিয়া ওবোতে শিবির স্থাপন করিল। আর ওবোৎ হইতে যাত্রা করিয়া সূর্য্যোদয়ের দিকে মোয়াবের সম্মুখস্থিত প্রান্তরে ইয়ীঅবারীমে শিবির স্থাপন করিল। তথা হইতে যাত্রা করিয়া সেরদ উপত্যকাতে শিবির স্থাপন করিল। তথা হইতে যাত্রা করিয়া ইমোরীয়দের সীমা হইতে নির্গত অর্ণোনের অন্য পারে প্রান্তরে শিবির স্থাপন করিল; কেননা মোয়াবের ও ইমোরীয়দের মধ্যবর্ত্তী অর্ণোন মোয়াবের সীমা। এই জন্য সদাপ্রভুর যুদ্ধপুস্তকে উক্ত আছে, শূফাতে বাহেব, আর অর্ণোনের উপত্যকা সকল, এবং উপত্যকা সকলের পার্শ্ব-ভূমি, যাহা আর্‌ নামক লোকালয়ের অভিমুখী, এই মোয়াবের সীমার পার্শ্বে অবস্থিত। তথা হইতে তাহারা বের [কূপ] নামক স্থানে আসিল। এ সেই কূপ, যাহার বিষয়ে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি লোকদিগকে একত্র কর, আমি তাহাদিগকে জল দিব। তৎকালে ইস্রায়েল এই গীত গান করিল, হে কূপ, উত্থিত হও; তোমরা ইহার উদ্দেশে গান কর; এ অধ্যক্ষগণের খনিত কূপ, রাজদণ্ড ও আপনাদের যষ্টি দিয়া লোকদের কুলীনেরা ইহা খনন করিয়াছেন। পরে তাহারা প্রান্তর হইতে মত্তানায়, ও মত্তানা হইতে নহলীয়েলে, ও নহলীয়েল হইতে বামোতে, ও বামোৎ হইতে মোয়াব-ক্ষেত্রস্থ উপত্যকা দিয়া মরুভূমির অভিমুখ পিস্‌গা শৃঙ্গে গমন করিল। আর ইস্রায়েল দূত পাঠাইয়া ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে বলিল, তোমার দেশের মধ্য দিয়া আমাকে যাইতে দেও; আমরা পথ ছাড়িয়া শস্যক্ষেত্রে কি দ্রাক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ করিব না, কূপের জলও পান করিব না; যাবৎ তোমার সীমা উত্তীর্ণ না হই, তাবৎ রাজপথ দিয়া যাইব। তথাপি সীহোন আপন সীমা দিয়া ইস্রায়েলকে যাইতে দিল না; কিন্তু সীহোন আপনার সমস্ত প্রজাকে একত্র করিয়া ইস্রায়েলের প্রতিকূলে প্রান্তরে বাহির হইল, এবং যহসে উপস্থিত হইয়া ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিল। তাহাতে ইস্রায়েল খড়গধারে তাহাকে আঘাত করিয়া অর্ণোন অবধি যব্বোক পর্য্যন্ত অর্থাৎ অম্মোন-সন্তানদের নিকট পর্য্যন্ত তাহার দেশ অধিকার করিল; কারণ অম্মোন-সন্তানদের সীমা দৃঢ় ছিল। ইস্রায়েল ঐ সমস্ত নগর হস্তগত করিল; এবং ইস্রায়েল ইমোরীয়দের সমস্ত নগরে, হিষ্‌বোনে ও তথাকার সমস্ত উপনগরে, বাস করিতে লাগিল। কেননা হিষ্‌বোন ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের নগর ছিল; তিনি মোয়াবের পূর্ব্ববর্ত্তী রাজার প্রতিকূলে যুদ্ধ করিয়া তাহার হস্ত হইতে অর্ণোন পর্য্যন্ত তাহার সমস্ত দেশ লইয়াছিলেন। এই জন্য কবিগণ কহেন, তোমরা হিষ্‌বোনে আইস, সীহোনের নগর নির্ম্মিত ও দৃঢ়ীকৃত হউক; কেননা হিষ্‌বোন হইতে অগ্নি, সীহোনের নগর হইতে অগ্নিশিখা নির্গত হইয়াছে; তাহা মোয়াবের আর নগরকে, অর্ণোনস্থ উচ্চস্থলীর নাথগণকে গ্রাস করিয়াছে। হে মোয়াব, ধিক্‌ তোমাকে। হে কমোশের প্রজাগণ, তোমরা বিনষ্ট হইলে। সে আপন পুত্রগণকে পলাতকরূপে, আপন কন্যাগণকে বন্দিত্বে সমর্পণ করিল,— ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের হস্তে। আমরা তাহাদিগকে বাণ মারিয়াছি; হিষ্‌বোন দীবোন পর্য্যন্ত বিনষ্ট হইয়াছে; আর আমরা নোফঃ পর্য্যন্ত ধ্বংস করিয়াছি, যাহা মেদবা পর্য্যন্ত বিস্তৃত। এইরূপে ইস্রায়েল ইমোরীয়দের দেশে বাস করিতে লাগিল। পরে মোশি যাসের অনুসন্ধান করিতে লোক প্রেরণ করিলেন, আর তাহারা তথাকার পুরী সকল হস্তগত করিল, এবং সেখানে যে ইমোরীয়েরা ছিল, তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিল। পরে তাহারা ফিরিয়া বাশনের পথ দিয়া উঠিয়া গেল; তাহাতে বাশনের রাজা ওগ ও তাহার সমস্ত প্রজা বাহির হইয়া তাহাদের সহিত ইদ্রিয়ীতে যুদ্ধ করিতে গমন করিল। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইহা হইতে ভীত হইও না, কেননা আমি ইহাকে, ইহার সমস্ত প্রজাকে ও ইহার দেশ তোমার হস্তে সমর্পণ করিলাম; তুমি হিষ্‌বোনবাসী ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের প্রতি যেমন করিলে, ইহার প্রতি তদ্রূপ করিবে। পরে যাবৎ তাহার কেহ অবশিষ্ট না থাকিল, তাবৎ তাহারা তাহাকে, তাহার পুত্রগণকে ও তাহার সমস্ত লোককে আঘাত করিল, আর তাহার দেশ অধিকার করিয়া লইল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ যাত্রা করিয়া যিরীহোর নিকটস্থিত যর্দ্দনের পরপারে মোয়াবের তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিল। আর ইস্রায়েল ইমোরীয়দের প্রতি যাহা যাহা করিয়াছিল, সে সমস্ত সিপ্পোরের পুত্র বালাক দেখিয়াছিলেন। আর লোকদের বহুত্ব প্রযুক্ত মোয়াব তাহাদের হইতে অতিশয় ভীত হইল; ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে মোয়াব উদ্বিগ্ন হইল। পরে মোয়াব মিদিয়নের প্রাচীনগণকে কহিল, গোরু যেমন মাঠের নবীন তৃণ চাটিয়া খায়, তেমনি এই জনসমাজ আমাদের চারিদিকের সকলই চাটিয়া খাইবে। তৎকালে সিপ্পোরের পুত্র বালাক মোয়াবের রাজা ছিলেন। অতএব তিনি বিয়োরের পুত্র বিলিয়মকে ডাকিয়া আনিতে তাহার স্বজাতীয় লোকদের দেশে [ফরাৎ] নদীতীরে অবস্থিত পথোর নগরে দূত পাঠাইয়া তাহাকে কহিলেন, দেখুন, মিসর হইতে এক জাতি বাহির হইয়া আসিয়াছে, দেখুন, তাহারা ভূতল আচ্ছন্ন করিয়া আমার সম্মুখে অবস্থিতি করিতেছে। এখন নিবেদন করি, আপনি আসিয়া আমার নিমিত্তে সেই লোকদিগকে শাপ দিউন; কেননা আমা হইতে তাহারা বলবান্‌; হয় ত আমি তাহাদিগকে আঘাত করিয়া দেশ হইতে দূর করিয়া দিতে পারিব; কেননা আমি জানি, আপনি যাহাকে আশীর্ব্বাদ করেন, সে আশীঃপ্রাপ্ত হয়, ও যাহাকে শাপ দেন, সে শাপগ্রস্ত হয়। পরে মোয়াবের প্রাচীনবর্গ ও মিদিয়নের প্রাচীনবর্গ মন্ত্রের পুরস্কার হস্তে লইয়া প্রস্থান করিল, এবং বিলিয়মের নিকটে উপস্থিত হইয়া বালাকের কথা তাহাকে কহিল। সে তাহাদিগকে কহিল, তোমরা এই স্থানে রাত্রি যাপন কর; পরে সদাপ্রভু আমাকে যাহা বলিবেন, তদনুযায়ী কথা আমি তোমাদিগকে বলিব; তাহাতে মোয়াবের অধ্যক্ষগণ বিলিয়মের সহিত রাত্রিবাস করিল। পরে ঈশ্বর বিলিয়মের নিকটে উপস্থিত হইয়া কহিলেন, তোমার সঙ্গে এই লোকেরা কে? তাহাতে বিলিয়ম ঈশ্বরকে কহিল, মোয়াবের রাজা সিপ্পোরের পুত্র বালাক আমার নিকটে বলিয়া পাঠাইয়াছেন; দেখ, মিসর হইতে বহির্গত ঐ জাতি ভূতল আচ্ছন্ন করিয়াছে। এখন তুমি আসিয়া আমার নিমিত্তে তাহাদিগকে শাপ দেও, হয় ত আমি তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে দূর করিয়া দিতে পারিব। তাহাতে ঈশ্বর বিলিয়মকে কহিলেন, তুমি তাহাদের সঙ্গে যাইও না, সেই জাতিকে শাপ দিও না, কেননা তাহারা আশীর্ব্বাদযুক্ত। পরে বিলিয়ম প্রাতঃকালে উঠিয়া বালাকের অধ্যক্ষগণকে কহিল, তোমরা স্বদেশে চলিয়া যাও, কেননা তোমাদের সহিত আমার যাত্রায় সদাপ্রভু অসম্মত হইলেন। তাহাতে মোয়াবের অধ্যক্ষগণ উঠিয়া বালাকের নিকটে গিয়া কহিল, আমাদের সহিত আসিতে বিলিয়ম অসম্মত হইলেন। পরে বালাক আবার তাহাদের অপেক্ষা বহুসংখ্যক ও সম্ভ্রান্ত অন্য অধ্যক্ষগণকে প্রেরণ করিলেন। তাহারা বিলিয়মের নিকটে আসিয়া তাহাকে কহিল, সিপ্পোরের পুত্র বালাক এই কথা বলেন, বিনয় করি, আমার নিকটে আসিতে আপনি কিছুতেই নিবারিত হইবেন না। কেননা আমি আপনাকে অতিশয় সম্মানিত করিব; আপনি আমাকে যাহা যাহা বলিবেন; আমি সকলই করিব; অতএব বিনয় করি, আপনি আসিয়া আমার নিমিত্তে সেই লোকদিগকে শাপ দিউন। তখন বিলিয়ম বালাকের দাসদিগকে উত্তর করিল, যদ্যপি বালাক রৌপ্যে ও স্বর্ণে পরিপূর্ণ আপন গৃহ আমাকে দেন, তথাপি আমি অল্প কি অধিক কিছু করিবার জন্য আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞা লঙ্ঘন করিতে পারিব না। এক্ষণে বিনয় করি, তোমরাও এই স্থানে রাত্রি যাপন কর, সদাপ্রভু আমাকে আবার যাহা বলিবেন, তাহা আমি জানিব। পরে ঈশ্বর রাত্রিকালে বিলিয়মের নিকটে আসিয়া তাহাকে কহিলেন, ঐ লোকেরা যদি তোমাকে ডাকিতে আসিয়া থাকে, তুমি উঠ, তাহাদের সহিত যাও; কিন্তু আমি তোমাকে যাহা বলিব, কেবল তাহাই তুমি করিবে। তাহাতে বিলিয়ম প্রাতঃকালে উঠিয়া আপন গর্দ্দভী সাজাইয়া মোয়াবের অধ্যক্ষদের সহিত গমন করিল। পরে তাহার গমনে ঈশ্বরের ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, এবং সদাপ্রভুর দূত তাহার বিপক্ষরূপে পথের মধ্যে দাঁড়াইলেন। সে আপন গর্দ্দভীতে চড়িয়া যাইতেছিল, এবং তাহার দুই দাস তাহার সঙ্গে ছিল। আর সেই গর্দ্দভী দেখিল, সদাপ্রভুর দূত নিষ্কোষ খড়গহস্তে পথের মধ্যে দাঁড়াইয়া আছেন; অতএব গর্দ্দভী পথ ছাড়িয়া ক্ষেত্রে গমন করিল; তাহাতে বিলিয়ম গর্দ্দভীকে পথে আনিবার জন্য প্রহার করিল। পরে সদাপ্রভুর দূত দুই দ্রাক্ষাক্ষেত্রের গলি পথে দাঁড়াইলেন, এ পার্শ্বে প্রাচীর, ও পার্শ্বে প্রাচীর ছিল। তখন গর্দ্দভী সদাপ্রভুর দূতকে দেখিয়া প্রাচীরে গাত্র ঘেঁষিয়া গেল, আর প্রাচীরে বিলিয়মের পদঘর্ষণ হইল; তাহাতে সে আবার তাহাকে প্রহার করিল। পরে সদাপ্রভুর দূত আরও কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়া, দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার পথ নাই, এমন এক সঙ্কুচিত স্থানে দাঁড়াইলেন। তখন গর্দ্দভী সদাপ্রভুর দূতকে দেখিয়া বিলিয়মের নীচে ভূমিতে বসিয়া পড়িল; তাহাতে বিলিয়মের ক্রোধ প্রজ্বলিত হইলে সে গর্দ্দভীকে যষ্টি দ্বারা প্রহার করিল। তখন সদাপ্রভু গর্দ্দভীর মুখ খুলিয়া দিলেন, এবং সে বিলিয়মকে কহিল, আমি তোমার কি করিলাম যে তুমি এই তিন বার আমাকে প্রহার করিলে? বিলিয়ম গর্দ্দভীকে কহিল, তুমি আমাকে বিদ্রূপ করিয়াছ; আমার হস্তে যদি খড়গ থাকিত, তবে আমি এখনই তোমাকে বধ করিতাম। পরে গর্দ্দভী বিলিয়মকে কহিল, তুমি জন্মাবধি অদ্য পর্য্যন্ত যাহার উপরে চড়িয়া থাক, আমি কি তোমার সেই গর্দ্দভী নহি? আমি কি তোমার প্রতি এমন ব্যবহার করিয়া থাকি? সে কহিল, না। তখন সদাপ্রভু বিলিয়মের চক্ষু খুলিয়া দিলেন, তাহাতে সে দেখিল, সদাপ্রভুর দূত নিষ্কোষ খড়গহস্তে পথের মধ্যে দাঁড়াইয়া আছেন; তখন সে মস্তক নমনপূর্ব্বক উবুড় হইয়া পড়িল। তখন সদাপ্রভুর দূত তাহাকে কহিলেন, তুমি এই তিন বার তোমার গর্দ্দভীকে কেন প্রহার করিলে? দেখ, আমি তোমার বিপক্ষরূপে বাহির হইয়াছি, কেননা আমার সাক্ষাতে তুমি বিপথে যাইতেছ; আর গর্দ্দভী আমাকে দেখিয়া এই তিন বার আমার সম্মুখ হইতে ফিরিল; সে যদি আমার সম্মুখ হইতে না ফিরিত, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে বধ করিতাম, আর উহাকে জীবিত রাখিতাম। তাহাতে বিলিয়ম সদাপ্রভুর দূতকে কহিল, আমি পাপ করিয়াছি; কেননা আপনি যে আমার বিপরীতে পথে দাঁড়াইয়া আছেন, তাহা আমি জানি নাই, কিন্তু এক্ষণে যদি ইহাতে আপনার অসন্তোষ হয়, তবে আমি ফিরিয়া যাই। তাহাতে সদাপ্রভুর দূত বিলিয়মকে কহিলেন, ঐ লোকদের সঙ্গে যাও, কিন্তু আমি যে কথা তোমাকে বলিব, তুমি কেবল তাহাই বলিবে। পরে বিলিয়ম বালাকের অধ্যক্ষদের সহিত গমন করিল। বিলিয়ম আসিয়াছে শুনিয়া বালাক তাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে মোয়াবের নগরে গমন করিলেন। তাহা দেশসীমার প্রান্তস্থিত অর্ণোনের সীমায় অবস্থিত। আর বালাক বিলিয়মকে কহিলেন, আমি আপনাকে ডাকিয়া আনিতে কি অতি যত্নপূর্ব্বক লোক পাঠাই নাই? আপনি আমার নিকটে কেন আইসেন নাই? আপনাকে সম্মানিত করিতে আমি কি সত্যই অসমর্থ? তাহাতে বিলিয়ম বালাককে কহিল, দেখুন, আমি আপনার নিকটে আসিলাম, কিন্তু এখনও কোন কথা কহিতে কি আমার ক্ষমতা আছে? ঈশ্বর আমার মুখে যে বাক্য দেন, তাহাই বলিব। পরে বিলিয়ম বালাকের সহিত গমন করিল, আর তাঁহারা কিরিয়ৎহুষোতে উপস্থিত হইলেন। আর বালাক কতকগুলি গোরু ও মেষ বলিদান করিয়া বিলিয়মের ও তাহার সঙ্গী অধ্যক্ষদের নিকটে পাঠাইয়া দিলেন। পরে প্রত্যূষে বালাক বিলিয়মকে লইয়া গিয়া বালের উচ্চস্থলীতে উঠাইলেন; তথা হইতে সে [ইস্রায়েল] জাতির প্রান্তভাগ দেখিতে পাইল। আর বিলিয়ম বালাককে কহিল, আপনি এই স্থানে আমার জন্য সাতটী বেদি নির্ম্মাণ করুন, এবং এই স্থানে আমার নিমিত্তে সাতটী গোবৎসের ও সাতটী মেষের আয়োজন করুন। তাহাতে বালাক বিলিয়মের বাক্যানুসারে সেইরূপ করিলেন; তখন বালাক ও বিলিয়ম এক এক বেদিতে এক একটী গোবৎস ও এক একটী মেষ উৎসর্গ করিলেন। পরে বিলিয়ম বালাককে কহিল, আপনি আপনার হোমবলির নিকটে দাঁড়াইয়া থাকুন। আমি যাই, হয় ত সদাপ্রভু আমার কাছে দেখা দিবেন; তাহা হইলে তিনি আমাকে যাহা জ্ঞাত করিবেন, তাহা আমি আপনাকে বলিব। পরে সে পর্ব্বতাগ্রে গমন করিল। তখন ঈশ্বর বিলিয়মের কাছে দেখা দিলেন, আর সে তাঁহাকে কহিল, আমি সাতটী বেদি প্রস্তুত করিয়াছি; আর এক এক বেদিতে এক একটী গোবৎস ও এক একটী মেষ উৎসর্গ করিয়াছি। তখন সদাপ্রভু বিলিয়মের মুখে এই বাক্য দিলেন, আর কহিলেন, তুমি বালাকের নিকটে ফিরিয়া গিয়া এইরূপ কথা বল। তাহাতে সে তাঁহার নিকটে ফিরিয়া গেল; আর দেখ, মোয়াবের অধ্যক্ষগণের সহিত বালাক আপন হোমের নিকটে দাঁড়াইয়া ছিলেন; তখন সে আপন মন্ত্র গ্রহণ করিয়া বলিল, বালাক অরাম হইতে আমাকে আনাইলেন, মোয়াব-রাজ পূর্ব্বদিকের পর্ব্বতমালা হইতে আনাইলেন; আইস, আমার নিমিত্ত যাকোবকে শাপ দেও, আইস, ইস্রায়েলের উপর কুপিত হও। ঈশ্বর যাহাকে শাপ দেন নাই, আমি কিরূপে তাহাকে শাপ দিব? সদাপ্রভু যাহার উপর কুপিত হন নাই, আমি কি প্রকারে তাহার উপর কুপিত হইব? আমি শৈলের শৃঙ্গ হইতে উহাকে দেখিতেছি, গিরিমালা হইতে উহাকে দর্শন করিতেছি; দেখ, ঐ লোকসমূহ স্বতন্ত্র বাস করে, উহারা জাতিগণের মধ্যে গণিত হইবে না। যাকোবের ধূলি কে গণনা করিতে পারে? ইস্রায়েলের চতুর্থাংশের সংখ্যা কে করিতে পারে? ধার্ম্মিকের মৃত্যুর ন্যায় আমার মৃত্যু হউক, তাহার শেষ গতির তুল্য আমার শেষ গতি হউক। তখন বালাক বিলিয়মকে কহিলেন, আপনি আমার প্রতি এ কি করিলেন? আমার শত্রুগণকে শাপ দিতে আপনাকে আনাইলাম; কিন্তু দেখুন, আপনি তাহাদিগকে সর্ব্বতোভাবে আশীর্ব্বাদ করিলেন। সে উত্তর করিল, সদাপ্রভু আমার মুখে যে কথা দেন, সাবধান হইয়া তাহাই বলা কি আমার উচিত নহে? বালাক কহিলেন, বিনয় করি, অন্য স্থানে আমার সহিত আইসুন, আপনি সে স্থান হইতে তাহাদিগকে দেখিতে পাইবেন; আপনি তাহাদের প্রান্তভাগমাত্র দেখিতে পাইবেন, সকলই দেখিতে পাইবেন না; ঐ স্থানে থাকিয়া আমার নিমিত্তে তাহাদিগকে শাপ দিউন। তখন বালাক তাহাকে পিস্‌গার শৃঙ্গস্থিত সোফীমক্ষেত্রে লইয়া গিয়া সেই স্থানে সাতটী বেদি নির্ম্মাণ করিলেন, আর প্রত্যেক বেদিতে এক একটী গোবৎস ও এক একটী মেষ উৎসর্গ করিলেন। পরে সে বালাককে কহিল, আমি যাবৎ ঐ স্থানে [সদাপ্রভুর সহিত] সাক্ষাৎ করি, তাবৎ আপনি এই স্থানে আপনার হোমবলির নিকটে দাঁড়াইয়া থাকুন। পরে সদাপ্রভু বিলিয়মের কাছে দেখা দিয়া তাহার মুখে এক বাক্য দিলেন, এবং কহিলেন, তুমি বালাকের নিকটে ফিরিয়া গিয়া এইরূপ কথা বল। তাহাতে সে তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইল; আর দেখ, মোয়াবের অধ্যক্ষগণের সহিত বালাক আপন হোমবলির নিকটে দাঁড়াইয়া ছিলেন। আর বালাক তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, সদাপ্রভু কি কহিলেন? তখন সে আপন মন্ত্র গ্রহণ করিয়া কহিল, উঠ, বালাক, শ্রবণ কর; হে সিপ্পোরের পুত্র, আমার কথায় কর্ণ দেও; ঈশ্বর মনুষ্য নহেন যে মিথ্যা বলিবেন; তিনি মনুষ্য-সন্তান নহেন যে অনুশোচনা করিবেন; তিনি কহিয়া কি কার্য্য করিবেন না? তিনি বলিয়া কি সিদ্ধ করিবেন না? দেখ, আমি আশীর্ব্বাদ করিবার আজ্ঞা পাইলাম, তিনি আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন, আমি অন্যথা করিতে পারি না। তিনি যাকোবে অধর্ম্ম দেখিতে পান নাই, ইস্রায়েলে উপদ্রব দেখেন নাই; উহার ঈশ্বর সদাপ্রভু উহার সহবর্ত্তী, বাজার জয়ধ্বনি উহাদের মধ্যবর্ত্তী। ঈশ্বর মিসর হইতে উহাদিগকে আনিতেছেন; সে গবয়ের ন্যায় শক্তিশালী। নিশ্চয়ই যাকোবে* মায়াশক্তি নাই, ইস্রায়েলে মন্ত্র নাই; এক্ষণে যাকোবের ও ইস্রায়েলের বিষয় বলা যাইবে, ঈশ্বর কি না সাধন করিয়াছেন। দেখ, ঐ জাতি সিংহীর ন্যায় উঠিতেছে, সে সিংহের ন্যায় গাত্রোত্থান করিতেছে; সে শয়ন করিবে না, যাবৎ বিদীর্ণ পশু ভোজন না করে, যাবৎ হত লোকদের রক্ত পান না করে। তখন বালাক বিলিয়মকে কহিলেন, আপনি উহাদিগকে শাপও দিবেন না, আশীর্ব্বাদও করিবেন না। কিন্তু বিলিয়ম উত্তর করিয়া বালাককে কহিল,সদাপ্রভু আমাকে যে কিছু কহিবেন, তাহাই করিব, এ কথা কি আপনাকে বলি নাই? পরে বালাক বিলিয়মকে কহিলেন, বিনয় করি, আইসুন, আমি আপনাকে অন্য স্থানে লইয়া যাই; হয় ত সেই স্থানে থাকিয়া আমার নিমিত্তে তাহাদিগকে আপনার শাপ দেওয়া ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তুষ্টিকর হইবে। পরে বালাক মরুভূমির অভিমুখে পিয়োর-শৃঙ্গে বিলিয়মকে লইয়া গেলেন। বিলিয়ম বালাককে কহিল, এই স্থানে আমার নিমিত্তে সাতটী বেদি নির্ম্মাণ করুন, এবং এই স্থানে আমার জন্য সাতটী গোবৎসের ও সাতটী মেষের আয়োজন করুন। তখন বালাক বিলিয়মের কথানুযায়ী কর্ম্ম করিলেন, এবং প্রত্যেক বেদিতে এক একটী গোবৎস ও এক একটী মেষ উৎসর্গ করিলেন। বিলিয়ম যখন দেখিল, ইস্রায়েলকে আশীর্ব্বাদ করিতে সদাপ্রভুর তুষ্টি আছে, তখন আর পূর্ব্বের ন্যায় মন্ত্র পাইবার জন্য গমন করিল না, কিন্তু প্রান্তরের দিকে মুখ করিল। আর বিলিয়ম চক্ষু তুলিয়া দেখিল, ইস্রায়েল বংশশ্রেণীক্রমে বাস করিতেছে; এবং ঈশ্বরের আত্মা তাহার উপরে আসিলেন। তখন সে আপন মন্ত্র গ্রহণ করিয়া কহিল, বিয়োরের পুত্র বিলিয়ম কহিতেছে, যাহার চক্ষু মুদ্রিত ছিল, সেই পুরুষ কহিতেছে; যে ঈশ্বরের বাক্য সকল শুনে, যে সর্ব্বশক্তিমানের দর্শন পায়, সে পতিত ও উন্মীলিতচক্ষু হইয়া কহিতেছে; হে যাকোব, তোমার তাম্বু সকল, হে ইস্রায়েল, তোমার আবাস সকল কেমন মনোহর। সেগুলি উপত্যকার ন্যায় বিস্তারিত, নদী তীরস্থ উদ্যানের তুল্য, সদাপ্রভুর রোপিত অগুরু বৃক্ষ-রাজির সদৃশ, জল-পার্শ্বস্থ এরস বৃক্ষ-রাজির ন্যায়। উহার কলস হইতে জল উথলিয়া উঠিবে, উহার বীজ অনেক জলে সিক্ত হইবে, উহার রাজা অগাগ অপেক্ষাও উচ্চ হইবেন, উহার রাজ্য উন্নত হইবে। ঈশ্বর মিসর হইতে উহাকে আনিতেছেন, সে গবয়ের ন্যায় শক্তিশালী; সে আপনার বিপক্ষ জাতিগণকে গ্রাস করিবে, তাহাদের অস্থি চূরমার করিবে, আপন বাণ দ্বারা তাহাদিগকে ভেদ করিবে। সে শয়ন করিল, গুঁড়ি মারিল, সিংহের ন্যায়, ও সিংহীর ন্যায়; কে তাহাকে উঠাইবে? যে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করে, সে আশীঃপ্রাপ্ত, যে তোমাকে শাপ দেয়, সে শাপগ্রস্ত। তখন বিলিয়মের প্রতি বালাকের ক্রোধ প্রজ্বলিত হইলে তিনি আপন করে করপ্রহার করিলেন; বালাক বিলিয়মকে কহিলেন, আমার শত্রুগণকে শাপ দিতে আমি আপনাকে আনাইয়াছিলাম, আর দেখুন, এই তিন বার আপনি সর্ব্বতোভাবে তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। এখন স্বস্থানে পলায়ন করুন; আমি বলিয়াছিলাম, আপনাকে অতিশয় গৌরবান্বিত করিব, কিন্তু দেখুন, সদাপ্রভু আপনাকে গৌরব বিরহিত করিলেন। তাহাতে বিলিয়ম বালাককে কহিল, আমি কি আপনার প্রেরিত দূতগণের সাক্ষাতেই বলি নাই, যদ্যপি বালাক স্বর্ণ ও রৌপ্যে পরিপূর্ণ আপন গৃহ আমাকে দেন, তথাপি আমি আপন ইচ্ছায় ভাল কি মন্দ করিবার জন্য সদাপ্রভুর আজ্ঞা লঙ্ঘন করিতে পারিব না, সদাপ্রভু যাহা বলিবেন, আমি তাহাই বলিব; এখন দেখুন, আমি স্বজাতীয়দের নিকটে যাই; আইসুন, এই জাতি উত্তরকালে আপনার জাতির প্রতি কি করিবে, তাহা আপনাকে জ্ঞাত করি। পরে সে আপন মন্ত্র গ্রহণ করিয়া কহিল; বিয়োরের পুত্র বিলিয়ম কহিতেছে, যাহার চক্ষু মুদ্রিত ছিল, সেই পুরুষ কহিতেছে; যে ঈশ্বরের বাক্য সকল শুনে, যে পরাৎপরের তত্ত্ব জানে, যে সর্ব্বশক্তিমানের দর্শন পায়, সে পতিত ও উন্মীলিতচক্ষু হইয়া কহিতেছে; আমি তাঁহাকে দেখিব, কিন্তু এক্ষণে নয়, তাঁহাকে দর্শন করিব কিন্তু নিকটে নয়; যাকোব হইতে এক তারা উদিত হইবে, ইস্রায়েল হইতে এর রাজদণ্ড উঠিবে, তাহা মোয়াবের দুই পার্শ্ব ভগ্ন করিবে, কলহের সন্তান সকলকে সংহার করিবে। আর ইদোম এক অধিকার হইবে, তাহার শত্রু সেয়ীরও এক অধিকার হইবে আর ইস্রায়েল বীরের কর্ম্ম করিবে। যাকোব হইতে উৎপন্ন এক জন কর্ত্তৃত্ব করিবেন, নগরের অবশিষ্ট লোকদিগকে বিনষ্ট করিবেন। পরে সে অমালেকের প্রতি দৃষ্টি করিল, এবং আপন মন্ত্র গ্রহণ করিয়া কহিল, অমালেক জাতিগণের মধ্যে প্রথম ছিল, কিন্তু বিনাশ ইহার শেষ দশা হইবে। পরে সে কেনীয়দের প্রতি দৃষ্টি করিল এবং আপন মন্ত্র গ্রহণ করিয়া কহিল, তোমার নিবাস অতি দৃঢ়, তোমার বাসা শৈলে স্থাপিত। তথাপি কেন ক্ষয় পাইবে, শেষে অশূর তোমাকে বন্দি করিয়া লইয়া যাইবে, পরে সে আপন মন্ত্র গ্রহণ করিয়া কহিল, হায়, যখন ঈশ্বর ইহা করেন, তখন কে বাঁচিবে? কিন্তু কিত্তীমের তীর হইতে জাহাজ আসিবে, তাহারা অশূরকে দুঃখ দিবে, এবরকে দুঃখ দিবে, কিন্তু তাহারও বিনাশ ঘটিবে। পরে বিলিয়ম উঠিয়া স্বস্থানে ফিরিয়া গেল, এবং বালাকও আপন পথে চলিয়া গেলেন। পরে ইস্রায়েল শিটীমে বাস করিল, আর লোকেরা মোয়াবের কন্যাদের সহিত ব্যভিচার করিতে প্রবৃত্ত হইল। সেই কন্যারা তাহাদিগকে আপনাদের দেবপ্রসাদ ভোজনের নিমন্ত্রণ করিল, এবং লোকেরা ভোজন করিয়া তাহাদের দেবগণের কাছে প্রণিপাত করিল। আর ইস্রায়েল বাল্-পিয়োর [দেবের] প্রতি আসক্ত হইতে লাগিল; অতএব ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল। সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি লোকদের সমস্ত অধ্যক্ষকে সঙ্গে লইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে সূর্য্যের সম্মুখে উহাদিগকে টাঙ্গাইয়া দেও; তাহাতে ইস্রায়েল হইতে সদাপ্রভুর প্রচণ্ড ক্রোধ নিবৃত্ত হইবে। তখন মোশি ইস্রায়েলের বিচারকর্ত্তৃগণকে কহিলেন, তোমরা প্রত্যেকে বাল্‌-পিয়োরের প্রতি আসক্ত আপন আপন লোকদিগকে বধ কর। আর দেখ, মোশির ও ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত মণ্ডলীর সাক্ষাতে ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে এক পুরুষ আপন জ্ঞাতিগণের নিকটে এক মিদিয়নীয়া স্ত্রীকে আনিল, তৎকালে লোকেরা সমাগম-তাম্বুর দ্বারে রোদন করিতেছিল। তাহা দেখিয়া হারোণ যাজকের পৌত্র ইলিয়াসরের পুত্র পীনহস মণ্ডলীর মধ্য হইতে উঠিয়া হস্তে বড়শা লইলেন; আর সেই ইস্রায়েলীয় পুরুষের পশ্চাৎ পশ্চাৎ কুঠরীতে প্রবেশ করিয়া ঐ দুই জনকে, সেই ইস্রায়েলীয় পুরুষকে এবং পেট দিয়া সেই স্ত্রীকে, বিদ্ধ করিলেন; তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে মারী নিবৃত্ত হইল। যাহারা ঐ মারীতে মরিয়াছিল, তাহারা চব্বিশ সহস্র লোক। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, লোকদের মধ্যে আমার পক্ষে অন্তর্জ্বালা প্রকাশ করাতে হারোণ যাজকের পৌত্র ইলিয়াসরের পুত্র পীনহস ইস্রায়েল-সন্তানগণ হইতে আমার ক্রোধ নিবৃত্ত করিল; এই জন্য আমি অন্তর্জ্বালায় ইস্রায়েল-সন্তানগণকে সংহার করিলাম না। অতএব তুমি এই কথা বল, দেখ, আমি তাহাকে আমার শান্তিকর নিয়ম দিয়াছি; তাহা তাহার পক্ষে ও তাহার ভাবী বংশের পক্ষে চিরস্থায়ী যাজকত্বের নিয়ম হইবে; কেননা সে আপন ঈশ্বরের পক্ষে অন্তর্জ্বালা প্রকাশ করিয়াছে, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিমিত্তে প্রায়শ্চিত্ত করিয়াছে। ইস্রায়েলীয় যে পুরুষ ঐ মিদিয়নীয়া স্ত্রীর সহিত হত হইয়াছিল, তাহার নাম সিম্রি, সে সালূর পুত্র; সে শিমিয়োনীয়দের এক জন পিতৃকুলাধ্যক্ষ ছিল। আর ঐ হতা মিদিয়নীয়া স্ত্রীর নাম কস্‌বী, সে সূরের কন্যা; ঐ সূর মিদিয়নের মধ্যে এক পিতৃকুলস্থ লোকদিগের অধ্যক্ষ ছিল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি মিদিয়নীয়দিগকে ক্লেশ দেও ও আঘাত কর। কেননা পিয়োর বিষয়ক ছলে এবং সেই পিয়োর জন্য মারীর দিবসে হতা তাহাদের আত্মীয়া কস্‌বী নাম্নী মিদিয়নীয়া অধ্যক্ষের কন্যা বিষয়ক ছলে তাহারা তোমাদিগকে প্রবঞ্চনা করিয়া ক্লেশ দিয়াছে। মারীর পরে সদাপ্রভু মোশিকে ও হারোণের পুত্র ইলিয়াসর যাজককে কহিলেন, তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীর মধ্যে আপন আপন পিতৃকুলানুসারে বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লোকদিগকে, ইস্রায়েলের যুদ্ধে গমনযোগ্য সমস্ত লোককে, গণনা কর। তাহাতে মোশি ও ইলিয়াসর যাজক যিরীহোর নিকটস্থ যর্দ্দন-সমীপে মোয়াবের তলভূমিতে তাহাদিগকে কহিলেন, বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লোকদিগকে [গণনা কর]; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে ও মিসর দেশ হইতে নির্গত ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। রূবেণ ইস্রায়েলের প্রথমজাত। রূবেণের সন্তানগণ; হনোক হইতে হনোকীয় গোষ্ঠী; পল্লু হইতে পল্লুয়ীয় গোষ্ঠী; হিষ্রোণ হইতে হিষ্রোণীয় গোষ্ঠী; কর্ম্মি হইতে কর্ম্মীয় গোষ্ঠী। ইহারা রূবেণীয় গোষ্ঠী; ইহাদের মধ্যে গণিত লোক তেতাল্লিশ সহস্র সাত শত ত্রিশ জন। আর পল্লূর সন্তান ইলীয়াব। ইলীয়াবের সন্তান নমূয়েল, দাথন ও অবীরাম; কোরহের দল যখন সদাপ্রভুর সহিত বিবাদ করিয়াছিল, তৎকালে তাহার মধ্যে মণ্ডলীর সমাহূত লোক যে দাথন ও অবীরাম মোশির ও হারোণের সহিত বিবাদ করিয়াছিল, তাহারা এই দুই জন। সেই সময়ে পৃথিবী মুখ খুলিয়া তাহাদিগকে ও কোরহকে গ্রাস করিয়াছিল, তাহাতে সেই দল মারা পড়িল, এবং অগ্নি দুই শত পঞ্চাশ জনকে গ্রাস করিল, আর তাহারা নিদর্শনস্বরূপ হইল। কিন্তু কোরহের সন্তানেরা মরে নাই। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে শিমিয়োনের সন্তানগণ; নমূয়েল হইতে নমূয়েলীয় গোষ্ঠী; যামীন হইতে যামীনীয় গোষ্ঠী; যাখীন হইতে যাখীনীয় গোষ্ঠী; সেরহ হইতে সেরহীয় গোষ্ঠী; শৌল হইতে শৌলীয় গোষ্ঠী। শিমিয়োনীয়দের এই সকল গোষ্ঠীতে বাইশ সহস্র দুই শত লোক ছিল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে গাদের সন্তানগণ; সিফোন হইতে সিফোনীয় গোষ্ঠী; হগি হইতে হগীয় গোষ্ঠী; শূনি হইতে শূনীয় গোষ্ঠী; ওষ্ণি হইতে ওষ্ণীয় গোষ্ঠী; এরি হইতে এরীয় গোষ্ঠী; আরোদ হইতে আরোদীয় গোষ্ঠী; অরেলি হইতে অরেলীয় গোষ্ঠী। গাদের সন্তানদের এই সকল গোষ্ঠী গণিত হইলে চল্লিশ সহস্র পাঁচ শত লোক হইল। যিহূদার পুত্র এর ও ওনন; এর ও ওনন কনান দেশে মরিয়াছিল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে যিহূদার সন্তানগণ; শেলা হইতে শেলায়ীয় গোষ্ঠী; পেরস হইতে পেরসীয় গোষ্ঠী; সেরহ হইতে সেরহীয় গোষ্ঠী। আর পেরসের এই সকল সন্তান; হিষ্রোণ হইতে হিষ্রোণীয় গোষ্ঠী; হামূল হইতে হামূলীয় গোষ্ঠী। যিহূদার এই সকল গোষ্ঠী গণিত হইলে ছেয়াত্তর সহস্র পাঁচ শত লোক হইল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে ইষাখরের সন্তানগণ; তোলয় হইতে তোলয়ীয় গোষ্ঠী; পূয় হইতে পূনীয় গোষ্ঠী; যাশূব হইতে যাশূবীয় গোষ্ঠী; শিম্রোণ হইতে শিম্রোণীয় গোষ্ঠী। ঈষাখরের এই সকল গোষ্ঠী গণিত হইলে চৌষট্টি সহস্র তিন শত লোক হইল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে সবূলূনের সন্তানগণ; সেরদ হইতে সেরদীয় গোষ্ঠী; এলোন হইতে এলোনীয় গোষ্ঠী; যহলেল হইতে যহলেলীয় গোষ্ঠী। সবূলূনীয়দের এই সকল গোষ্ঠী গণিত হইলে যষ্টি সহস্র পাঁচ শত লোক হইল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে যোষেফের পুত্র মনঃশি ও ইফ্রয়িম। মনঃশির সন্তানগণ; মাখীর হইতে মাখীরীয় গোষ্ঠী; মাখীরের পুত্র গিলিয়দ; গিলিয়দ হইতে গিলিয়দীয় গোষ্ঠী। গিলিয়দের সন্তানগণ; ঈয়েষর হইতে ঈয়েষরীয় গোষ্ঠী; হেলক হইতে হেলকীয় গোষ্ঠী; অস্রীয়েল হইতে অস্রীয়েলীয় গোষ্ঠী; শেখম হইতে শেখমীয় গোষ্ঠী; শিমীদা হইতে শিমীদায়ীয় গোষ্ঠী; হেফর হইতে হেফরীয় গোষ্ঠী। হেফরের পুত্র যে সলফাদ, তাহার পুত্র ছিল না, কেবল কন্যা ছিল; সেই সলফাদের কন্যাদের নাম মহলা, নোয়া, হগ্‌লা, মিল্‌কা ও তির্সা। ইহারা মনঃশির গোষ্ঠী; ইহাদের গণিত লোক বাহান্ন সহস্র সাত শত জন। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে ইফ্রয়িমের সন্তানগণ এই; শূথলহ হইতে শূথলহীয় গোষ্ঠী; বেখর হইতে বেখরীয় গোষ্ঠী; তহন হইতে তহনীয় গোষ্ঠী। আর ইহারা শূথলহের সন্তান; এরণ হইতে এরণীয় গোষ্ঠী। ইফ্রয়িমের সন্তানদের এই সকল গোষ্ঠী গণিত হইলে বত্রিশ সহস্র পাঁচ শত লোক হইল; আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে ইহারা যোষেফের সন্তান। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে বিন্যামীনের সন্তানগণ; বেলা হইতে বেলায়ীয় গোষ্ঠী; অস্‌বেল হইতে অস্‌বেলীয় গোষ্ঠী; অহীরাম হইতে অহীরামীয় গোষ্ঠী; শূফম হইতে শূফমীয় গোষ্ঠী; হূফম হইতে হূফমীয় গোষ্ঠী; আর বেলার সন্তান অর্দ ও নামান; [অর্দ হইতে] অর্দীয় গোষ্ঠী; নামান হইতে নামানীয় গোষ্ঠী। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে ইহারা বিন্যামীনের সন্তান। ইহাদের গণিত লোক পঁয়তাল্লিশ সহস্র ছয় শত জন। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে দানের এই সকল সন্তান; শূহম হইতে শূহমীয় গোষ্ঠী; ইহারা আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে দানের গোষ্ঠী। শূহমীয় সমস্ত গোষ্ঠী গণিত হইলে চৌষট্টি সহস্র চারি শত লোক হইল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে আশেরের সন্তানগণ; যিম্ন হইতে যিম্নীয় গোষ্ঠী; যিস্‌বি হইতে যিস্‌বীয় গোষ্ঠী; বরিয় হইতে বরিয়ীয় গোষ্ঠী। ইহারা বরিয়ের সন্তান; হেবর হইতে হেবরীয় গোষ্ঠী; মল্কীয়েল হইতে মল্কীয়েলীয় গোষ্ঠী। আশেরের কন্যার নাম সারহ। আশেরের সন্তানদের এই সকল গোষ্ঠী গণিত হইলে তিপান্ন সহস্র চারি শত লোক হইল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে নপ্তালির সন্তানগণ; যহসীয়েল হইতে যহসীয়েলীয় গোষ্ঠী; গূনি হইতে গূনীয় গোষ্ঠী; যেৎসর হইতে যেৎসরীয় গোষ্ঠী; শিল্লেম হইতে শিল্লেমীয় গোষ্ঠী। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে এই সকল নপ্তালির গোষ্ঠী। ইহাদের গণিত লোক পঁয়তাল্লিশ সহস্র চারি শত জন। ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে গণিত এই সকল লোকের সংখ্যা ছয় লক্ষ এক সহস্র সাত শত ত্রিশ। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, নাম-সংখ্যানুসারে অধিকারার্থে ইহাদের মধ্যে দেশ বিভক্ত হইবে। যাহার লোক অধিক, তুমি তাহাকে অধিক অধিকার দিবে, ও যাহার লোক অল্প, তাহাকে অল্প অধিকার দিবে, যাহার যত গণিত লোক, তাহাকে তত অধিকার দেওয়া যাইবে। তথাপি দেশ গুলিবাঁট দ্বারা বিভক্ত হইবে; তাহারা আপন আপন পিতৃবংশের নামানুসারে অধিকার পাইবে। অধিকার অধিক কি অল্প হউক, গুলিবাঁট দ্বারাই বিভক্ত হইবে। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে লেবীয়দের মধ্যে এই সকল লোক গণিত হইল; গের্শোণ হইতে গের্শোনীয় গোষ্ঠী, কহাৎ হইতে কহাতীয় গোষ্ঠী, মরারি হইতে মরারীয় গোষ্ঠী। লেবীয় গোষ্ঠী এই সকল; লিব্‌নীয় গোষ্ঠী, হিব্রোণীয় গোষ্ঠী, মহলীয় গোষ্ঠী, মূশীয় গোষ্ঠী, কোরহীয় গোষ্ঠী। ঐ কহাতের পুত্র অম্রাম। অম্রামের স্ত্রীর নাম যোকেবদ, তিনি লেবির কন্যা, মিসরে লেবির ঔরসে তাঁহার জন্ম হয়। তিনি অম্রামের জন্য হারোণ, মোশি ও তাঁহাদের ভগিনী মরিয়মকে প্রসব করিয়াছিলেন। হারোণ হইতে নাদব ও অবীহূ, এবং ইলিয়াসর ও ঈথামর জন্মিয়াছিল। কিন্তু সদাপ্রভুর সম্মুখে ইতর অগ্নি নিবেদন করাতে নাদব ও অবীহূ মারা পড়ে। এই সকলের মধ্যে এক মাস ও ততোধিক বয়স্ক পুরুষ গণিত হইলে তেইশ সহস্র জন হইল; ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে তাহাদিগকে কোন অধিকার দত্ত না হওয়াতে তাহারা ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে গণিত হয় নাই। এই সকল লোক মোশি ও ইলিয়াসর যাজক কর্ত্তৃক গণিত হইল। তাঁহারা যিরীহোর নিকটস্থ যর্দ্দন-সমীপে মোয়াবের তলভূমিতে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে গণনা করিলেন। কিন্তু মোশি ও হারোণ যাজক যখন সীনয় প্রান্তরে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে গণনা করিয়াছিলেন, তখন যাহারা তাঁহাদের কর্ত্তৃক গণিত হইয়াছিল, তাহাদের এক জনও ইহাদের মধ্যে ছিল না। কারণ সদাপ্রভু তাহাদের বিষয়ে বলিয়াছিলেন, তাহারা প্রান্তরে মরিবেই মরিবে; আর তাহাদের মধ্যে যিফূন্নির পুত্র কালেব ও নূনের পুত্র যিহোশূয় ব্যতিরেকে এক জনও অবশিষ্ট রহিল না। পরে যোষেফের পুত্র মনঃশির গোষ্ঠীভূক্ত সলফাদের কন্যাগণ আসিল। সলফাদ হেফরের সন্তান, হেফর গিলিয়দের সন্তান, গিলিয়দ মাখীরের সন্তান, মাখীর মনঃশির সন্তান। সেই কন্যাদের নাম এই এই, মহলা, নোয়া, হগ্‌লা, মিল্কা ও তির্সা। তাহারা মোশির সম্মুখে ও ইলিয়াসর যাজকের সম্মুখে এবং অধ্যক্ষগণের ও সমস্ত মণ্ডলীর সম্মুখে সমাগম-তাম্বুর দ্বারে দাঁড়াইয়া এই কথা কহিল; আমাদের পিতা প্রান্তরে মরিয়াছেন; তিনি কোরহের দলের মধ্যে, সদাপ্রভুর প্রতিকূলে চক্রান্তকারীদের দলের মধ্যে ছিলেন না; কিন্তু তিনি নিজ পাপে মরিয়াছেন, এবং তাঁহার পুত্র হয় নাই। আমাদের পিতার পুত্র নাই বলিয়া তাঁহার গোষ্ঠী হইতে তাঁহার নাম কেন লোপ পাইবে? আমাদের পিতৃকুলের ভ্রাতৃগণের মধ্যে আমাদিগকে অধিকার দিউন। তখন মোশি সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাদের বিচার উপস্থিত করিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, সলফাদের কন্যাগণ যথার্থ কহিতেছে; তুমি উহাদের পিতৃকুলের ভ্রাতাদিগের মধ্যে অবশ্য উহাদিগকে স্বত্বাধিকার দিবে, ও উহাদের পিতার অধিকার উহাদিগকে সমর্পণ করিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, কেহ যদি অপুত্রক হইয়া মরে, তবে তোমরা তাহার অধিকার তাহার কন্যাকে দিবে। যদি তাহার কন্যা না থাকে, তবে তাহার ভ্রাতৃগণকে তাহার অধিকার দিবে। যদি তাহার ভ্রাতা না থাকে, তবে তাহার পিতৃব্যদিগকে তাহার অধিকার দিবে। যদি তাহার পিতৃব্য না থাকে, তবে তাহার গোষ্ঠীর মধ্যে নিকটস্থ জ্ঞাতিকে তাহার অধিকার দিবে, সে তাহা অধিকার করিবে; সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তদনুসারে ইহা ইস্রায়েল-সন্তানগণের পক্ষে বিচার বিধি হইবে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি এই অবারীম পর্ব্বতে উঠ, আর যে দেশ আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে দিয়াছি, তাহা দেখ। দেখিলে পর তোমার ভ্রাতা হারোণের ন্যায় তুমিও আপন পিতৃগণের নিকটে সংগৃহীত হইবে। কেননা সীন প্রান্তরে মণ্ডলীর বিবাদে তোমরা জলের বিষয়ে লোকদের সাক্ষাতে আমাকে পবিত্ররূপে মান্য না করিয়া আমার কথার বিদ্রোহাচরণ করিয়াছিলে। এ সীন প্রান্তরের কাদেশস্থ মরীবার জল। আর মোশি সদাপ্রভুকে কহিলেন, সর্ব্বশরীরস্থ আত্মাদিগের ঈশ্বর সদাপ্রভু মণ্ডলীর উপরে এমন এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করুন, যে তাহাদের সম্মুখে বাহিরে যায়, ও তাহাদের সম্মুখে ভিতরে আইসে, এবং তাহাদিগকে বাহিরে লইয়া যায়, ও ভিতরে লইয়া আইসে; যেন সদাপ্রভুর মণ্ডলী অরক্ষক মেষপালের ন্যায় না হয়। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, নূনের পুত্র যিহোশূয় আত্মাবিষ্ট লোক; তুমি তাহাকে লইয়া তাহার মস্তকে হস্তার্পণ কর; এবং ইলিয়াসর যাজকের ও সমস্ত মণ্ডলীর সম্মুখে তাহাকে উপস্থিত করিয়া তাহাদের সাক্ষাতে তাহাকে আদেশ দেও। আর তাহাকে তোমার সম্মানের ভাগী কর, যেন ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী আজ্ঞাবহ হয়। আর সে ইলিয়াসর যাজকের সম্মুখে দাঁড়াইবে, এবং ইলিয়াসর তাহার জন্য সদাপ্রভুর সম্মুখে ঊরীমের বিচার দ্বারা জিজ্ঞাসা করিবে; সে ও তাহার সহিত সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তান, অর্থাৎ সমস্ত মণ্ডলী তাহার আজ্ঞায় বাহিরে যাইবে, ও তাহার আজ্ঞায় ভিতরে আসিবে। পরে মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞামত কর্ম্ম করিলেন, তিনি যিহোশূয়কে লইয়া ইলিয়াসর যাজকের সম্মুখে ও সমস্ত মণ্ডলীর সম্মুখে উপস্থিত করিলেন, এবং তাঁহার মস্তকে হস্তার্পণ করিয়া তাঁহাকে আদেশ দিলেন; যেমন মোশির দ্বারা সদাপ্রভু বলিয়াছিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আজ্ঞা কর, তাহাদিগকে বল, আমার উপহার, আমার উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত আমার ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, যথাসময়ে আমার উদ্দেশে নিবেদন করিতে হইবে। আর তুমি তাহাদিগকে এই কথা বল, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া এই সকল নিবেদন করিবে; প্রতিদিন নিত্যহোমার্থে একবর্ষীয় নির্দ্দোষ দুইটী মেষবৎস; একটী মেষবৎস প্রাতঃকালে উৎসর্গ করিবে, আর একটী মেষবৎস সন্ধ্যাকালে উৎসর্গ করিবে। আর ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের জন্য হিনের চতুর্থাংশ উখলিতে প্রস্তুত তৈলে মিশ্রিত ঐফার দশমাংশ সূজি দিবে। ইহা নিত্য হোমবলি; সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া ইহা সীনয় পর্ব্বতে নিরূপিত হইয়াছিল। আর তাহার একটী মেষবৎসের জন্য হিনের চতুর্থাংশ পেয় নৈবেদ্য হইবে; তুমি পবিত্র স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে মদিরার পেয় নৈবেদ্য ঢালিয়া দিবে। আর একটী মেষবৎস সন্ধ্যাকালে উৎসর্গ করিবে; প্রাতঃকালের ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্যের ন্যায় তাহাও সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া উৎসর্গ করিবে। আর বিশ্রামদিনে একবর্ষীয় নির্দ্দোষ দুইটী মেষবৎস ও তৈলমিশ্রিত [এক ঐফার] দুই দশমাংশ সূজির ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ও তৎসম্বন্ধীয় পেয় নৈবেদ্য নিবেদন করিবে। নিত্য হোম ও তৎসংক্রান্ত পেয় নৈবেদ্য ভিন্ন প্রতিবিশ্রামবারের হোম এই। আর প্রতিমাসের আরম্ভে তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমের জন্য নির্দ্দোষ দুইটী পুংগোবৎস, একটী মেষ ও একবর্ষীয় সাতটী মেষবৎস উৎসর্গ করিবে। এক একটী গোবৎসের জন্য তিন দশমাংশ তৈলমিশ্রিত সূজির ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, এবং সেই মেষের জন্য দুই দশমাংশ তৈলমিশ্রিত সূজির ভক্ষ্য-নৈবেদ্য; এবং এক একটী মেষবৎসের জন্য এক এক দশমাংশ তৈলমিশ্রিত সূজির ভক্ষ্য-নৈবেদ্য হইবে; তাহাতে সেই হোমবলি সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার হইবে। এক একটী গোবৎসের জন্য হিনের অর্দ্ধেক, ও সেই মেষের জন্য হিনের তৃতীয়াংশ, ও এক একটী মেষবৎসের জন্য হিনের চতুর্থাংশ দ্রাক্ষারস তাহার পেয় নৈবেদ্য হইবে। ইহা সম্বৎসরের প্রতিমাসের মাসিক হোম। আর পাপার্থক বলির জন্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটী ছাগ; নিত্য হোম ও তাহার পেয় নৈবেদ্য ভিন্ন ইহা উৎসর্গ করিতে হইবে। আর প্রথম মাসের চতুর্দ্দশ দিবসে সদাপ্রভুর নিস্তারপর্ব্ব। এই মাসের পঞ্চদশ দিবসে উৎসব হইবে; সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটী ভোজন করিতে হইবে। প্রথম দিবসে পবিত্র সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না। কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া হোমার্থে দুইটী পুংগোবৎস, একটী মেষ ও একবর্ষীয় সাতটী মেষবৎস উৎসর্গ করিবে, তোমাদের জন্য সেগুলি নির্দ্দোষ হওয়া চাই; এবং এক একটী গোবৎসের জন্য তিন দশমাংশ, ও সেই মেষের জন্য দুই দশমাংশ, এবং সাতটী মেষবৎসের মধ্যে এক এক বৎসের জন্য এক এক দশমাংশ তৈলমিশ্রিত সূজির ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, এবং তোমাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবার নিমিত্ত পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত তোমরা নিত্য হোমের প্রাতঃকালীন হোম ভিন্ন নিবেদন করিবে। এই বিধি অনুসারে তোমরা সাত দিন যাবৎ প্রতিদিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহাররূপ ভক্ষ্য নিবেদন করিবে; নিত্য হোম ও তাহার পেয় নৈবেদ্য ভিন্ন ইহা নিবেদিত হইবে। আর সপ্তম দিবসে তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না। আবার অগ্রিমাংশের দিবসে, যখন তোমরা আপনাদের সাত সপ্তাহের উৎসবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নূতন ভক্ষ্য-নৈবেদ্য আনিবে, তখন তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না। কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক হোমবলিরূপে দুইটী পুংগোবৎস, একটী মেষ ও একবর্ষীয় সাতটী মেষবৎস উৎসর্গ করিবে; এবং তাহাদের ভক্ষ্য-নৈবেদ্য বলিয়া এক এক গোবৎসের জন্য তিন দশমাংশ, এক মেষের জন্য দুই দশমাংশ, এবং সাতটী মেষবৎসের মধ্যে এক এক বৎসের জন্য এক এক দশমাংশ তৈলমিশ্রিত সূজি; তোমাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে একটী ছাগ। এই সমস্ত তোমরা নিত্য হোম ও তাহার ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ভিন্ন নিবেদন করিবে; এই সকল নির্দ্দোষ এবং স্ব স্ব পেয় নৈবেদ্যযুক্ত হওয়া চাই। আর সপ্তম মাসে, মাসের প্রথম দিবসে তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না; সেই দিন তোমাদের তূরীধ্বনির দিন হইবে। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক হোমবলিরূপে নির্দ্দোষ একটী পুংগোবৎস, একটী মেষ ও একবর্ষীয় সাতটী মেষবৎস, এবং তাহাদের ভক্ষ্য-নৈবেদ্য বলিয়া সেই গোবৎসের জন্য তিন দশমাংশ, মেষের জন্য দুই দশমাংশ, ও সাতটী মেষবৎসের মধ্যে এক এক বৎসের জন্য এক এক দশমাংশ তৈলমিশ্রিত সূজি; এবং তোমাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবার নিমিত্ত পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত নিবেদন করিবে। অমাবস্যার হোম ও তাহার ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, এবং নিত্য হোম ও তাহার ভক্ষ্য-নৈবেদ্য এবং বিধিমতে উভয়ের পেয় নৈবেদ্য ভিন্ন তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত উপহার বলিয়া এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। আর সেই সপ্তম মাসের দশম দিবসে তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; আর তোমরা আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিবে, এবং কোন কার্য্য করিবে না। কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক হোমবলিরূপে তোমরা একটী পুংগোবৎস, একটী মেষ ও একবর্ষীয় সাতটী মেষবৎস উৎসর্গ করিবে; তোমাদের জন্য এই সকল নির্দ্দোষ হওয়া চাই; এবং তাহাদের ভক্ষ্য-নৈবেদ্য বলিয়া সেই গোবৎসের জন্য তিন দশমাংশ, সেই মেষের জন্য দুই দশমাংশ, ও সাতটী মেষবৎসের মধ্যে এক এক বৎসের জন্য এক এক দশমাংশে তৈলমিশ্রিত সূজি; এবং পাপার্থক বলিরূপে এক ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। পাপার্থক প্রায়শ্চিত্তবলি, নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। আর সপ্তম মাসের পঞ্চদশ দিবসে তোমাদের পবিত্র সভা হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না; এবং সাত দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসব পালন করিবে। আর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত হোমবলিরূপে তেরটী পুংগোবৎস, দুইটী মেষ, ও একবর্ষীয় চৌদ্দটী মেষবৎস উৎসর্গ করিবে; এই সকল নির্দ্দোষ হওয়া চাই; এবং তাহাদের ভক্ষ্য-নৈবেদ্য বলিয়া তেরটী পুংগোবৎসের মধ্যে প্রত্যেক বৎসের জন্য তিন তিন দশমাংশ, দুইটী মেষের মধ্যে এক এক মেষের জন্য দুই দুই দশমাংশ, এবং চৌদ্দটী মেষবৎসের মধ্যে এক এক বৎসের জন্য এক এক দশমাংশ তৈলমিশ্রিত সূজি, এবং পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। আর দ্বিতীয় দিবসে তোমরা নির্দ্দোষ বারটী পুংগোবৎস, দুইটী মেষ ও একবর্ষীয় চৌদ্দটী মেষবৎস, এবং গোবৎসের, মেষের ও মেষবৎসের জন্য তাহাদের সংখ্যানুসারে বিধিমতে তাহাদের ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। আর তৃতীয় দিবসে তোমরা নির্দ্দোষ এগারটী গোবৎস, দুইটী মেষ ও একবর্ষীয় চৌদ্দটী মেষবৎস, এবং গোবৎসের, মেষের ও মেষবৎসের জন্য তাহাদের সংখ্যানুসারে বিধিমতে তাহাদের ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। আর চতুর্থ দিবসে তোমরা নির্দ্দোষ দশটী গোবৎস, দুইটী মেষ ও একবর্ষীয় চৌদ্দটী মেষবৎস, এবং গোবৎসের, মেষের ও মেষবৎসের জন্য তাহাদের সংখ্যানুসারে বিধিমতে তাহাদের ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। আর পঞ্চম দিবসে তোমরা নির্দ্দোষ নয়টী গোবৎস, দুইটী মেষ ও একবর্ষীয় চৌদ্দটী মেষবৎস, এবং গোবৎসের, মেষের ও মেষবৎসের জন্য তাহাদের সংখ্যানুসারে বিধিমতে তাহাদের ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। আর ষষ্ঠ দিবসে তোমরা নির্দ্দোষ আটটী গোবৎস, দুইটী মেষ ও একবর্ষীয় চৌদ্দটী মেষবৎস, এবং গোবৎসের, মেষের ও মেষবৎসের জন্য তাহাদের সংখ্যানুসারে বিধিমতে তাহাদের ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। আর সপ্তম দিবসে তোমরা নির্দ্দোষ সাতটী গোবৎস, দুইটী মেষ ও একবর্ষীয় চৌদ্দটী মেষবৎস, এবং গোবৎসের, মেষের ও মেষবৎসের জন্য তাহাদের সংখ্যানুসারে বিধিমতে তাহাদের ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। আর অষ্টম দিবসে তোমাদের উৎসব হইবে; তোমরা কোন শ্রমসাধ্য কর্ম্ম করিবে না। কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক অগ্নিকৃত হোমবলিরূপে নির্দ্দোষ একটী গোবৎস, একটী মেষ ও একবর্ষীয় সাতটী মেষবৎস, এবং গোবৎসের, মেষের ও মেষবৎসের জন্য তাহাদের সংখ্যানুসারে বিধিমতে তাহাদের ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য, এবং পাপার্থক বলিরূপে একটী ছাগ, এই সমস্ত উৎসর্গ করিবে। নিত্য হোম এবং তাহার ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য হইতে ইহা ভিন্ন। এই সমস্ত তোমরা আপনাদের নিরূপিত পর্ব্বসমূহে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করিবে। তোমাদের হোম, ভক্ষ্য ও পেয় নৈবেদ্য এবং মঙ্গলার্থক বলিদানযুক্ত যে মানত ও স্বইচ্ছায় দত্ত উপহার, তাহা হইতে ইহা ভিন্ন। মোশি সদাপ্রভু হইতে প্রাপ্ত আজ্ঞানুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে সকল কথা কহিলেন। পরে মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণের বংশাধ্যক্ষগণকে কহিলেন, সদাপ্রভু এই বিষয় আজ্ঞা করিয়াছেন। কোন পুরুষ যদি সদাপ্রভুর উদ্দেশে মানত করে, কিম্বা ব্রতবন্ধনে আপন প্রাণকে বদ্ধ করিবার জন্য দিব্য করে, তবে সে আপন বাক্য ব্যর্থ না করুক, আপন মুখ হইতে নির্গত সমস্ত বাক্যানুসারে কার্য্য করুক। আর কোন স্ত্রীলোক যদি যৌবন কালে আপন পিতৃগৃহে বাস করিবার সময়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে মানত করে ও ব্রতবন্ধনে আপনাকে বদ্ধ করে, এবং তাহার পিতা যদি তাহার মানত, ও যদ্দ্বারা সে আপন প্রাণকে বদ্ধ করিয়াছে, সেই ব্রতবন্ধনের কথা শুনিয়া তাহাকে কিছু না বলে, তবে তাহার সকল মানত স্থির থাকিবে, এবং যদ্দ্বারা সে আপন প্রাণকে বদ্ধ করিয়াছে, সেই ব্রতবন্ধন স্থির থাকিবে। কিন্তু শ্রবণদিনে যদি তাহার পিতা তাহাকে নিষেধ করে, তবে তাহার কোন মানত, ও যদ্দ্বারা সে আপন প্রাণকে বদ্ধ করিয়াছে, সেই ব্রতবন্ধন স্থির থাকিবে না; আর তাহার পিতার নিষেধ প্রযুক্ত সদাপ্রভু তাহাকে ক্ষমা করিবেন। আর যদি সে কোন পুরুষের স্ত্রী হইয়া মানতের অধীনা হয়, কিম্বা যদ্দ্বারা সে আপন প্রাণকে বদ্ধ করিয়াছে, ওষ্ঠ-নির্গত এমন চপল বাক্যের অধীনা হয়, এবং যদি তাহার স্বামী তাহা শুনিলেও শ্রবণদিনে তাহাকে কিছু না বলে, তবে তাহার মানত স্থির থাকিবে, এবং যদ্দ্বারা সে আপন প্রাণকে বদ্ধ করিয়াছে, সেই ব্রতবন্ধন স্থির থাকিবে। কিন্তু শ্রবণদিনে যদি তাহার স্বামী তাহাকে নিষেধ করে, তবে সে যে মানত করিয়াছে, ও আপন ওষ্ঠ নির্গত যে চপল বাক্য দ্বারা আপন প্রাণকে বদ্ধ করিয়াছে, [স্বামী] তাহা ব্যর্থ করিবে, আর সদাপ্রভু তাহাকে ক্ষমা করিবেন। কিন্তু বিধবা কিম্বা স্বামীত্যক্তা স্ত্রী যদ্দ্বারা আপন প্রাণকে বদ্ধ করিয়াছে, সেই ব্রতের সমস্ত বাক্য তাহার নিমিত্তে স্থির থাকিবে। আর সে যদি স্বামীর গৃহে থাকিবার সময়ে মানত করিয়া থাকে, কিম্বা দিব্য দ্বারা আপন প্রাণকে ব্রতবন্ধনে বদ্ধ করিয়া থাকে, এবং তাহার স্বামী তাহা শুনিয়া তাহাকে নিষেধ না করিয়া নীরব হইয়া থাকে, তবে তাহার সমস্ত মানত স্থির থাকিবে; এবং সে যদ্দ্বারা আপন প্রাণকে বদ্ধ করিয়াছে, সেই সমস্ত ব্রতবন্ধন স্থির থাকিবে। কিন্তু শ্রবণদিনে তাহার স্বামী যদি সে সকল ব্যর্থ করিয়া থাকে, তবে তাহার মানত বিষয়ে ও তাহার ব্রতবন্ধন বিষয়ে তাহার ওষ্ঠ হইতে যে বাক্য নির্গত হইয়াছিল, তাহা স্থির থাকিবে না; তাহার স্বামী তাহা ব্যর্থ করিয়াছে; আর সদাপ্রভু সেই স্ত্রীকে ক্ষমা করিবেন। স্ত্রীর প্রত্যেক মানত ও প্রাণকে দুঃখ দিবার প্রতিজ্ঞাযুক্ত প্রত্যেক দিব্য তাহার স্বামী স্থির করিতেও পারে, তাহার স্বামী ব্যর্থ করিতেও পারে। তাহার স্বামী যদি অনেক দিন পর্য্যন্ত তাহার প্রতি সর্ব্বতোভাবে নীরব থাকে, তবে সে তাহার সমস্ত মানত কিম্বা সমস্ত ব্রতবন্ধন স্থির করে; শ্রবণদিনে নীরব থাকাতেই সে তাহা স্থির করিয়াছে। কিন্তু তাহা শুনিলে পর যদি কোন প্রকারে স্বামী তাহা ব্যর্থ করে, তবে স্ত্রীর অপরাধ বহন করিবে। পুরুষ ও স্ত্রীর বিষয়ে এবং পিতা ও যৌবন কালে পিতৃগৃহস্থিত কন্যার বিষয়ে সদাপ্রভু মোশিকে এই সকল আজ্ঞা করিলেন। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের জন্য মিদিয়নীয়দিগকে প্রতিফল দেও; তৎপরে তুমি আপন লোকদের নিকটে সংগৃহিত হইবে। তখন মোশি লোকদিগকে কহিলেন, তোমাদের কতক লোক যুদ্ধার্থে সজ্জিত হউক, সদাপ্রভুর জন্য মিদিয়নকে প্রতিফল দিতে মিদিয়নের বিরুদ্ধে যাত্রা করুক। তোমরা ইস্রায়েল-বংশসমূহের প্রত্যেক বংশ হইতে এক এক সহস্র লোক যুদ্ধে প্রেরণ করিবে। তাহাতে ইস্রায়েলের সহস্র সহস্রের মধ্যে এক এক বংশ হইতে এক এক সহস্র মনোনীত হইলে যুদ্ধার্থে বারো সহস্র লোক সজ্জিত হইল। এইরূপে মোশি এক এক বংশের এক এক সহস্র লোককে এবং ইলিয়াসর যাজকের পুত্র পীনহসকে যুদ্ধে প্রেরণ করিলেন; এবং পবিত্র স্থানের পাত্র সকল ও রণবাদ্যের তূরী পীনহসের হস্তগত ছিল। পরে মোশির প্রতি সদাপ্রভুর দত্ত আজ্ঞানুসারে তাহারা মিদিয়নের সহিত যুদ্ধ করিল, ও সমস্ত পুরুষকে বধ করিল। আর তাহারা মিদিয়নের রাজগণকে তাহাদের অন্য নিহত লোকদের সহিত বধ করিল; ইবি, রেকম, সূর, হূর ও রেবা, মিদিয়নের এই পাঁচ রাজাকে বধ করিল; বিয়োরের পুত্র বিলিয়মকেও খড়গ দ্বারা বধ করিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ মিদিয়নের সকল স্ত্রীলোক ও বালকবালিকাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া গেল, এবং তাহাদের সমস্ত পশু, সমস্ত মেষপাল ও সমস্ত সম্পত্তি লুটিয়া লইল; আর তাহাদের সমস্ত নিবাস-নগর ও সমস্ত ছাউনী পোড়াইয়া দিল। আর তাহারা লুটিত দ্রব্য, এবং মনুষ্য কি পশু, সমস্ত ধৃত জীব সঙ্গে লইয়া চলিল। তাহারা যিরীহোর নিকটবর্ত্তী যর্দ্দনতীরস্থ মোয়াবের তলভূমিতে মোশির, ইলিয়াসর যাজকের ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলীর নিকটে বন্দিগণকে ও যুদ্ধে ধৃত জীবগণকে এবং লুটিত দ্রব্য সকল শিবিরে লইয়া গেল। আর মোশি, ইলিয়াসর যাজক ও মণ্ডলীর সমস্ত অধ্যক্ষ তাহাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে শিবিরের বাহিরে গেলেন। তখন যুদ্ধ হইতে প্রত্যাগত সেনাপতিদের, অর্থাৎ সহস্রপতিদের ও শতপতিদের উপরে মোশি ক্রুদ্ধ হইলেন। মোশি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি সমস্ত স্ত্রীলোককে জীবিত রাখিয়াছ? দেখ, বিলিয়মের পরামর্শে তাহারাই পিয়োর দেবের বিষয়ে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে সদাপ্রভুর বিপরীতে সত্যলঙ্ঘন করাইয়াছিল, তন্নিমিত্তই সদাপ্রভুর মণ্ডলীতে মহামারী হইয়াছিল। অতএব তোমরা এখন বালকবালিকাদের মধ্যে সমস্ত বালককে বধ কর, এবং শয়নে পুরুষের পরিচয় প্রাপ্ত সমস্ত স্ত্রীলোককেও বধ কর; কিন্তু যে বালিকারা শয়নে পুরুষের পরিচয় পায় নাই, তাহাদিগকে আপনাদের জন্য জীবিত রাখ। আর তোমরা সাত দিন শিবিরের বাহিরে ছাউনী করিয়া থাক; তোমরা যত লোক মনুষ্যহত্যা করিয়াছ ও হত লোককে স্পর্শ করিয়াছ, সকলে তৃতীয় দিবসে ও সপ্তম দিবসে আপনাদিগকে ও আপন আপন বন্দিগণকে মুক্তপাপ কর; আর যাবতীয় বস্ত্র, চর্ম্মনির্ম্মিত যাবতীয় বস্তু, ছাগলোম নির্ম্মিত যাবতীয় বস্তু ও কাষ্ঠনির্ম্মিত যাবতীয় বস্তুর বিষয় আপনাদিগকে মুক্তপাপ কর। আর যাহারা যুদ্ধে গিয়াছিল, ইলিয়াসর যাজক সেই যোদ্ধাদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু কর্ত্তৃক মোশিকে দত্ত ব্যবস্থার এই বিধি; কেবল স্বর্ণ, রৌপ্য, পিত্তল, লৌহ, রাঙ্গ এ সীসা প্রভৃতি যে সকল দ্রব্য অগ্নিতে নষ্ট হয় না, সে সকল অগ্নির মধ্য দিয়া চালাইবে, তাহাতে তাহা শুচি হইবে; তথাপি তাহা অশৌচঘ্ন জলে মুক্তপাপ করিতে হইবে; কিন্তু যে যে দ্রব্য অগ্নিতে নষ্ট হয়, তাহা তোমরা জলের মধ্য দিয়া চালাইবে। আর সপ্তম দিবসে তোমরা আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিবে; তাহাতে শুচি হইবে; পরে শিবিরে প্রবেশ করিবে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ও ইলিয়াসর যাজক এবং মণ্ডলীর পিতৃকুলপতিগণ যুদ্ধে ধৃত জীবগণের, অর্থাৎ বন্দি মনুষ্যদের ও পশুদের সংখ্যা গ্রহণ কর। আর যুদ্ধে ধৃত সেই জীবগণকে দুই অংশ করিয়া, যে যোদ্ধারা যুদ্ধে গিয়াছিল, তাহাদের ও সমস্ত মণ্ডলীর মধ্যে বিভাগ কর। আর যুদ্ধে গমনকারী যোদ্ধাদের নিকট হইতে সদাপ্রভুর নিমিত্তে কর গ্রহণ কর; মনুষ্য, গোরু, গর্দ্দভ ও মেষ, এই সকলের মধ্যে পাঁচ পাঁচ শত জীবের প্রতি এক এক জীব তাহাদের অর্দ্ধাংশ হইতে লইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে উত্তোলনীয় উপহার বলিয়া ইলিয়াসর যাজককে দেও। আর তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের অর্দ্ধাংশের মধ্যে মনুষ্য, গোরু, গর্দ্দভ ও মেষাদি সমস্ত পশুর মধ্য হইতে পঞ্চাশ পঞ্চাশ জীবের প্রতি এক এক জীব লও, এবং সদাপ্রভুর আবাসের রক্ষণীয় রক্ষাকারী লেবীয়দিগকে দেও। মোশিকে সদাপ্রভু যেমন আজ্ঞা করিলেন, মোশি ও ইলিয়াসর যাজক সেইরূপ করিলেন। যোদ্ধৃগণ কর্ত্তৃক লুটিত বস্তু সকল ছাড়া ঐ ধৃত জীবসমূহ ছয় লক্ষ পঁচাত্তর সহস্র মেষ, [33-35] ও বাহাত্তর সহস্র গোরু, ও একষট্টি সহস্র গর্দ্দভ, আর বত্রিশ সহস্র মনুষ্য, অর্থাৎ শয়নে পুরুষের পরিচয় অপ্রাপ্ত স্ত্রীলোক ছিল। *** *** তাহাতে যাহারা যুদ্ধে গিয়াছিল, তাহাদের প্রাপ্য অর্দ্ধাংশের সংখ্যা হইল তিন লক্ষ সাঁইত্রিশ সহস্র পাঁচ শত মেষ; সেই মেষ হইতে সদাপ্রভুর লভ্য কর হইল ছয় শত পঁচাত্তরটী মেষ। আর গোরু ছিল ছত্রিশ সহস্র, তাহাদের মধ্যে সদাপ্রভুর কর হইল বাহাত্তরটী। আর গর্দ্দভ ছিল ত্রিশ সহস্র পাঁচ শত, তাহাদের মধ্যে সদাপ্রভুর কর হইল একষট্টিটী। আর মনুষ্য ছিল ষোল সহস্র, তাহাদের মধ্যে সদাপ্রভুর কর হইল বত্রিশটী প্রাণী। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আজ্ঞা করিলেন, তদনুসারে মোশি সেই কর অর্থাৎ সদাপ্রভুর উত্তোলনীয় উপহার ইলিয়াসর যাজককে দিলেন। আর মোশি যে অর্দ্ধাংশ যোদ্ধাদের নিকট হইতে লইয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণকে দিয়াছিলেন, মণ্ডলীর সেই অর্দ্ধাংশ সংখ্যাতে তিন লক্ষ সাঁইত্রিশ সহস্র পাঁচ শত মেষ, ছত্রিশ সহস্র গোরু, [45-46] ত্রিশ সহস্র পাঁচ শত গর্দ্দভ, ও ষোল সহস্র মনুষ্য ছিল। *** পরে মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সেই অর্দ্ধাংশ হইতে মনুষ্যের ও পশুর মধ্যে পঞ্চাশ পঞ্চাশ জীবের প্রতি এক এক জীব লইয়া সদাপ্রভুর আবাসের রক্ষণীয় রক্ষাকারী লেবীয়দিগকে দিলেন, যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা করিলেন। পরে সৈন্যসাহস্রের উপরে কর্ত্তৃত্বকারী সহস্রপতিরা ও শতপতিরা মোশির নিকটে আসিলেন; আর তাঁহারা মোশিকে কহিলেন, আপনার এই দাসগণ আমাদের অধীন যোদ্ধাদের সংখ্যা গ্রহণ করিয়াছে, আমাদের মধ্যে এক জনও কমে নাই। আর আমরা প্রতিজন স্বর্ণাভরণ, নূপুর, বলয়, অঙ্গুরীয়ক, কুণ্ডল ও হার, এই যে সকল পাইয়াছি, তাহা হইতে সদাপ্রভুর সম্মুখে আমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রায়শ্চিত্ত করিতে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার আনিয়াছি। তখন মোশি ও ইলিয়াসর যাজক তাঁহাদের হইতে সেই স্বর্ণ, শিল্পিকৃত আভরণ, লইলেন। আর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদিত, সহস্রপতিদের ও শতপতিদের উত্তোলনীয় উপহারের সমস্ত স্বর্ণ ষোল সহস্র সাত শত পঞ্চাশ শেকল পরিমিত হইল। যোদ্ধারা প্রত্যেকে আপনাদের নিমিত্ত লুটিত দ্রব্য লইয়াছিল। পরে মোশি ও ইলিয়াসর যাজক সহস্রপতিদের ও শতপতিদের নিকট হইতে সেই স্বর্ণ গ্রহণ করিলেন, এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে ইস্রায়েল-সন্তানগণের স্মরণার্থক চিহ্নরূপে তাহা সমাগম-তাম্বুতে আনিলেন। রূবেণ-সন্তানগণের ও গাদ-সন্তানগণের অতি বিস্তর পশুধন ছিল; তাহারা যাসের দেশ ও গিলিয়দ দেশ নিরীক্ষণ করিল, আর দেখ, সে স্থান পশুপালনের স্থান। পরে গাদ-সন্তানগণ ও রূবেণ-সন্তানগণ আসিয়া মোশিকে, ইলিয়াসর যাজককে ও মণ্ডলীর অধ্যক্ষগণকে কহিল, অটারোৎ, দীবোন, যাসের, নিম্রা, হিষ্‌বোন, ইলিয়ালী, সেবাম, নবো ও বিয়োন, এই যে দেশকে সদাপ্রভু ইস্রায়েল-মণ্ডলীর সম্মুখে আঘাত করিয়াছেন, ইহা পশুপালনের উপযুক্ত দেশ, আর আপনার এই দাসগণের পশু আছে। তাহারা আরও বলিল, আমরা যদি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে আপনার দাসদিগকে অধিকারার্থে এই দেশ দিতে আজ্ঞা হউক, আমাদিগকে যর্দ্দনের পারে লইয়া যাইবেন না। তখন মোশি গাদ-সন্তানগণকে ও রূবেণ-সন্তানগণকে কহিলেন, তোমাদের ভ্রাতৃগণ যুদ্ধ করিতে যাইবে, আর তোমরা কি এই স্থানে বসিয়া থাকিবে? আর সদাপ্রভুর দত্ত দেশে পার হইয়া যাইতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মন কেন নিরাশ করিতেছ? তোমাদের পিতারা, যখন আমি দেশ দেখিতে কাদেশ-বর্ণেয় হইতে তাহাদিগকে পাঠাইয়াছিলাম, তখন তাহাই করিয়াছিল; তাহারা ইষ্কোলের উপত্যকা পর্য্যন্ত গমন করিয়া দেশ দেখিয়া সদাপ্রভুর দত্ত দেশে যাইতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মন নিরাশ করিয়াছিল। আর সেই দিন সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইলে তিনি শপথ করিয়া বলিয়াছিলেন, আমি অব্রাহামকে, ইস্‌হাককে ও যাকোবকে যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছি, মিসর হইতে আগত পুরুষদের মধ্যে বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক কেহই সেই দেশ দেখিতে পাইবে না; কেননা তাহারা সম্পূর্ণরূপে আমার অনুগত হয় নাই; কেবল কনিসীয় যিফূন্নির পুত্র কালেব ও নূনের পুত্র যিহোশূয় উহা দেখিবে, কারণ তাহারাই সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগত হইয়াছে। তখন ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, আর তিনি চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত, সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে কুকর্ম্মকারী সমস্ত লোকের নিঃশেষ না হওয়া পর্য্যন্ত, তাহাদিগকে প্রান্তরে ভ্রমণ করাইলেন। আর দেখ, ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ভয়ানক ক্রোধ আরও বৃদ্ধি করিবার জন্য, পাপিষ্ঠ লোকদিগের বংশ যে তোমরা, তোমরা আপনাদের পিতৃগণের স্থলে উঠিয়াছ। কেননা যদি তোমরা তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া যাও, তবে তিনি পুনর্ব্বার ইস্রায়েলকে প্রান্তরে পরিত্যাগ করিবেন, তাহাতে তোমরা এই সকল লোককে বিনষ্ট করিবে। তখন তাহারা তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিল, আমরা এই স্থানে আমাদের পশুগণের জন্য মেষবাথান ও আমাদের বালকবালিকাদের জন্য নগর নির্ম্মাণ করিব। আর আমরা যাবৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণকে স্বস্থানপ্রাপ্ত না করি, তাবৎ সসজ্জ হইয়া তাহাদের অগ্রে অগ্রে গমন করিব; কেবল আমাদের বালকবালিকারা দেশনিবাসীদের ভয়ে প্রাচীরবেষ্টিত নগরে বাস করিবে। ইস্রায়েল-সন্তানগণ প্রত্যেকে যাবৎ আপন আপন অধিকার না পায়, তাবৎ আমরা আপন আপন পরিবারের নিকটে ফিরিয়া আসিব না। কিন্তু আমরা যর্দ্দনের পারে বা তাহার ওদিকে উহাদের সহিত অধিকার গ্রহণ করিব না, কারণ যর্দ্দনের এই পূর্ব্বপারে আমাদের অধিকার মিলিয়াছে। মোশি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা যদি এই কার্য্য কর, যদি সসজ্জ হইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে যুদ্ধার্থে গমন কর; এবং তিনি যাবৎ আপন শত্রুগণকে আপনার সম্মুখ হইতে অধিকারচ্যুত না করেন, তাবৎ যদি তোমরা প্রত্যেকে সসজ্জ হইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে যর্দ্দন পার হও; তবে দেশ সদাপ্রভুর বশীভূত হইলে পর তোমরা ফিরিয়া আসিবে, এবং সদাপ্রভুর ও ইস্রায়েলের নিকটে নির্দ্দোষ হইবে, আর সদাপ্রভুর সম্মুখে এই দেশ তোমাদের অধিকার হইবে। কিন্তু যদি তদ্রূপ না কর, তবে, দেখ, তোমরা সদাপ্রভুর কাছে পাপ করিলে, এবং নিশ্চয় জানিও, তোমাদের পাপ তোমাদিগকে ধরিবে। তোমরা আপন আপন বালকবালিকাদের জন্য নগর, ও মেষদের জন্য বাথান নির্ম্মাণ কর, এবং আপনাদের ওষ্ঠ-নির্গত বাক্যানুসারে কর্ম্ম কর। তখন গাদ-সন্তানগণ ও রূবেণ-সন্তানগণ মোশিকে কহিল, আমাদের প্রভু যে আজ্ঞা করিলেন, আপনার দাস আমরা তাহাই করিব। আমাদের বালকবালিকারা, আমাদের স্ত্রীলোকেরা, আমাদের পাল সকল ও আমাদের সমস্ত পশুধন এই স্থানে গিলিয়দের নগরসমূহে থাকিবে। আর আমাদের প্রভুর বাক্যানুসারে আপনার এই দাসেরা, সসজ্জ প্রত্যেক জন যুদ্ধ করিতে সদাপ্রভুর সম্মুখে পার হইয়া যাইবে। তখন মোশি তাহাদের বিষয়ে ইলিয়াসর যাজককে, নূনের পুত্র যিহোশূয়কে ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের বংশ সকলের পিতৃকুলপতিগণকে আজ্ঞা করিলেন। মোশি তাহাদিগকে কহিলেন, গাদ-সন্তানগণ ও রূবেণ-সন্তানগণ, যুদ্ধের নিমিত্ত সসজ্জ প্রত্যেক জন যদি তোমাদের সহিত সদাপ্রভুর সম্মুখে যর্দ্দন পার হয়, তবে তোমাদের সম্মুখে দেশ বশীভূত হইলে পর তোমরা অধিকারার্থে তাহাদিগকে গিলিয়দ দেশ দিবে। কিন্তু যদি তাহারা সসজ্জ হইয়া তোমাদের সহিত পার না হয়, তবে তাহারা তোমাদের মধ্যে কনান দেশে অধিকার পাইবে। পরে গাদ-সন্তানগণ ও রূবেণ-সন্তানগণ উত্তর করিল, সদাপ্রভু আপনার এই দাসদিগকে যাহা বলিয়াছেন, তাহাই আমরা করিব। আমরা সসজ্জ হইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে পার হইয়া কনান দেশে যাইব; আর যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে আমাদের অধিকারে আমাদের স্বত্ব স্থির রহিল। পরে মোশি তাহাদিগকে, অর্থাৎ গাদ-সন্তানগণকে, রূবেণ-সন্তানগণকে ও যোষেফের পুত্র মনঃশির অর্দ্ধ বংশকে ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের রাজ্য ও বাশনের রাজা ওগের রাজ্য, সেই দেশ, পরিসীমাশুদ্ধ তথাকার নগর সকল অর্থাৎ দেশের চতুর্দ্দিক্‌স্থ নগরসমূহ দিলেন। আর গাদ-সন্তানগণ দীবোন, অটারোৎ ও অরোয়ের, এবং অট্‌রোৎ-শোফন, যাসের ও যগ্‌বিহ, এবং বৈৎ-নিম্রা ও বৈৎ-হারণ, এই সকল প্রাচীরবেষ্টিত নগর ও মেষবাথান নির্ম্মাণ করিল। আর রূবেণ-সন্তানগণ হিষ্‌বোন, ইলিয়ালী ও কিরিয়াথয়িম, এবং পরিবর্ত্তিতনামা নবো ও বাল্‌-মিয়োন, এবং সিব্‌মা, এই সকল নগর নির্ম্মাণ করিয়া আপনাদের নির্ম্মিত নগরগুলির অন্য নাম রাখিল। আর মনঃশির পুত্র মাখীরের সন্তানগণ গিলিয়দে গিয়া তাহা হস্তগত করিল, এবং সেই স্থাননিবাসী ইমোরীয়দিগকে অধিকারচ্যুত করিল। আর মোশি মনঃশির পুত্র মাখীরকে গিলিয়দ দিলেন, এবং সে তথায় বাস করিল। আর মনঃশির সন্তান যায়ীর গিয়া তথাকার গ্রাম সকল হস্তগত করিল, এবং তাহাদের নাম হব্বোৎ-যায়ীর [যায়ীরের গ্রামসমূহ] রাখিল। আর নোবহ গিয়া কনাৎ ও তাহার পল্লী সকল হস্তগত করিল, এবং আপন নামানুসারে তাহার নাম নোবহ রাখিল। ইস্রায়েল-সন্তানগণ মোশির ও হারোণের অধীনে আপন আপন সৈন্য শ্রেণী ক্রমে মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিল, তাহাদের উত্তরণ-স্থান সকলের বিবরণ এই। মোশি সদাপ্রভুর আজ্ঞায় তাহাদের যাত্রানুসারে সেই উত্তরণ-স্থানগুলির বিবরণ লিখিলেন। তাহাদের যাত্রানুসারে উত্তরণ-স্থান সকলের বিবরণ এই। প্রথম মাসে, প্রথম মাসের পঞ্চদশ দিবসে তাহারা রামিষেষ হইতে প্রস্থান করিল; নিস্তার পর্ব্বের পরদিন ইস্রায়েল-সন্তানগণ মিস্রীয় সকল লোকের সাক্ষাতে ঊর্দ্ধহস্তে বাহির হইল। সেই সময়ে মিস্রীয়েরা, তাহাদের মধ্যে যাহাদিগকে সদাপ্রভু আঘাত করিয়াছিলেন, সেই সমুদয় প্রথমজাতকে কবর দিতেছিল; আর সদাপ্রভু তাহাদের দেবগণকেও দণ্ড দিয়াছিলেন। রামিষেষ হইতে যাত্রা করিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণ সুক্কোতে শিবির স্থাপন করিল। সুক্কোৎ হইতে যাত্রা করিয়া প্রান্তরের সীমাস্থিত এথমে শিবির স্থাপন করিল। এথম হইতে যাত্রা করিয়া বাল-সফোনের সম্মুখস্থ পী-হহীরোতে ফিরিয়া মিগ্‌দোলের সম্মুখে শিবির স্থাপন করিল। হহীরোতের সম্মুখ হইতে যাত্রা করিয়া সমুদ্রের মধ্য দিয়া প্রান্তরে প্রবেশ করিল, এবং এথম প্রান্তরে তিন দিবসের পথ গিয়া মারাতে শিবির স্থাপন করিল। মারা হইতে যাত্রা করিয়া এলীমে উপস্থিত হইল; এলীমে জলের বারোটী উনুই ও সত্তরটী খর্জ্জুর বৃক্ষ ছিল; তাহারা সে স্থানে শিবির স্থাপন করিল। এলীম হইতে যাত্রা করিয়া সূফসাগরের সমীপে শিবির স্থাপন করিল। সূফসাগর হইতে যাত্রা করিয়া সীন প্রান্তরে শিবির স্থাপন করিল। সীন প্রান্তর হইতে যাত্রা করিয়া দপ্‌কাতে শিবির স্থাপন করিল। দপ্‌কা হইতে যাত্রা করিয়া আলূশে শিবির স্থাপন করিল। আলূশ হইতে যাত্রা করিয়া রফীদীমে শিবির স্থাপন করিল; সে স্থানে লোকদের পানার্থে জল ছিল না। তাহারা রফীদীম হইতে যাত্রা করিয়া সীনয় প্রান্তরে শিবির স্থাপন করিল। সীনয় প্রান্তর হইতে যাত্রা করিয়া কিব্রোৎ-হত্তাবাতে শিবির স্থাপন করিল। কিব্রোৎ-হত্তাবা হইতে যাত্রা করিয়া হৎসেরোতে শিবির স্থাপন করিল। হৎসেরোৎ হইতে যাত্রা করিয়া রিৎমাতে শিবির স্থাপন করিল। রিৎমা হইতে যাত্রা করিয়া রিম্মোণ-পেরসে শিবির স্থাপন করিল। রিম্মোণ-পেরস হইতে যাত্রা করিয়া লিব্‌নাতে শিবির স্থাপন করিল। লিব্‌না হইতে যাত্রা করিয়া রিস্‌সাতে শিবির স্থাপন করিল। রিস্‌সা হইতে যাত্রা করিয়া কহেলাথায় শিবির স্থাপন করিল। কহেলাথা হইতে যাত্রা করিয়া শেফর পর্ব্বতে শিবির স্থাপন করিল। শেফর পর্ব্বত হইতে যাত্রা করিয়া হরাদাতে শিবির স্থাপন করিল। হরাদা হইতে যাত্রা করিয়া মখেলোতে শিবির স্থাপন করিল। মখেলোৎ হইতে যাত্রা করিয়া তহতে শিবির স্থাপন করিল। তহৎ হইতে যাত্রা করিয়া তেরহে শিবির স্থাপন করিল। তেরহ হইতে যাত্রা করিয়া মিৎকাতে শিবির স্থাপন করিল। মিৎকা হইতে যাত্রা করিয়া হশ্‌মোনাতে শিবির স্থাপন করিল। হশ্‌মোনা হইতে যাত্রা করিয়া মোষেরোতে শিবির স্থাপন করিল। মোষেরোৎ হইতে যাত্রা করিয়া বনেয়াকনে শিবির স্থাপন করিল। বনেয়াকন হইতে যাত্রা করিয়া হোর্‌-হগিদ্‌গদে শিবির স্থাপন করিল। হোর্‌-হগিদ্‌গদ হইতে যাত্রা করিয়া যট্‌বাথানে শিবির স্থাপন করিল। যট্‌বাথা হইতে যাত্রা করিয়া অব্রোণাতে শিবির স্থাপন করিল। অব্রোণা হইতে যাত্রা করিয়া ইৎসিয়োন-গেবরে শিবির স্থাপন করিল। ইৎসিয়োন-গেবর হইতে যাত্রা করিয়া সিন প্রান্তরে অর্থাৎ কাদেশে শিবির স্থাপন করিল। কাদেশ হইতে যাত্রা করিয়া ইদোম দেশের প্রান্তস্থিত হোর পর্ব্বতে শিবির স্থাপন করিল। আর হারোণ যাজক সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে হোর পর্ব্বতে উঠিয়া মিসর হইতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের বাহির হইবার চল্লিশ বৎসরের পঞ্চম মাসে, সেই মাসের প্রথম দিনে সে স্থানে মরিলেন। হোর পর্ব্বতে হারোণের মৃত্যুকালে তাঁহার এক শত তেইশ বৎসর বয়স হইয়াছিল। আর কনান দেশের দক্ষিণ অঞ্চলনিবাসী কনানীয় অরাদের রাজা ইস্রায়েল-সন্তানগণের আগমন সংবাদ শুনিলেন। পরে তাহারা হোর পর্ব্বত হইতে যাত্রা করিয়া সল্‌মোনাতে শিবির স্থাপন করিল। সল্‌মোনা হইতে যাত্রা করিয়া পূনোনে শিবির স্থাপন করিল। পূনোন হইতে যাত্রা করিয়া ওবোতে শিবির স্থাপন করিল। ওবোৎ হইতে যাত্রা করিয়া মোয়াবের প্রান্তস্থিত ইয়ী-অবারীমে শিবির স্থাপন করিল। ইয়ীম হইতে যাত্রা করিয়া দীবোন-গাদে শিবির স্থাপন করিল। দীবোন-গাদ হইতে যাত্রা করিয়া অল্‌মোন-দিব্লাথয়িমে শিবির স্থাপন করিল। অল্‌মোন-দিব্লাথয়িম হইতে যাত্রা করিয়া নবোর সম্মুখস্থিত পর্ব্বতময় অবারীম অঞ্চলে শিবির স্থাপন করিল। পর্ব্বতময় অবারীম অঞ্চল হইতে যাত্রা করিয়া যিরীহোর নিকটবর্ত্তী যর্দ্দনসমীপস্থ মোয়াবের তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিল; আর তথায় যর্দ্দনের নিকটে বৈৎ-যিশীমোৎ অবধি আবেল-শিটীম পর্য্যন্ত মোয়াবের তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিয়া রহিল। তখন যিরীহোর নিকটবর্ত্তী যর্দ্দনসমীপস্থ মোয়াবের তলভূমিতে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, তোমরা যখন যর্দ্দন পার হইয়া কনান দেশে উপস্থিত হইবে, তখন তোমাদের সম্মুখ হইতে সেই দেশনিবাসী সকলকে অধিকারচ্যুত করিবে, এবং তাহাদের সমস্ত প্রতিমা ভগ্ন করিবে, সমস্ত ছাঁচে ঢালা বিগ্রহ বিনষ্ট করিবে, ও সমস্ত উচ্চস্থলী উচ্ছিন্ন করিবে। তোমরা সেই দেশ অধিকার করিয়া তাহার মধ্যে বাস করিবে; কেননা আমি অধিকারার্থে সেই দেশ তোমাদিগকে দিয়াছি। আর তোমরা গুলিবাঁট দ্বারা আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে দেশাধিকার বিভাগ করিয়া লইবে; অধিক লোককে অধিক অংশ, ও অল্প লোককে অল্প অংশ দিবে; যাহার অংশ যে স্থানে পড়ে, তাহার অংশ সেই স্থানে হইবে; তোমরা আপন আপন পিতৃবংশানুসারে অধিকার পাইবে। কিন্তু যদি তোমরা আপনাদের সম্মুখ হইতে সেই দেশনিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত না কর, তবে যাহাদিগকে অবশিষ্ট রাখিবে তাহারা তোমাদের চক্ষে কন্টক ও তোমাদের কক্ষে অঙ্কুশস্বরূপ হইবে, এবং তোমাদের সেই নিবাসদেশে তোমাদিগকে ক্লেশ দিবে। আর আমি তাহাদের প্রতি যাহা করিতে মনস্থ করিয়াছিলাম, তাহা তোমাদের প্রতি করিব। আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আজ্ঞা কর, তাহাদিগকে বল, তোমরা কনান দেশে প্রবেশ করিতে উদ্যত আছ; তোমরা অধিকারার্থে যে দেশ পাইবে, চতুঃসীমানুসারে সেই কনান দেশ এই। ইদোমের নিকটস্থিত সিন প্রান্তর অবধি তোমাদের দক্ষিণ অঞ্চল হইবে, ও পূর্ব্বদিকে লবণসমুদ্রের প্রান্ত হইতে তোমাদের দক্ষিণ সীমা হইবে। আর তোমাদের সীমা অক্রব্বীম আরোহণ-পথের দক্ষিণদিকে ফিরিয়া সিন পর্য্যন্ত যাইবে, ও তথা হইতে কাদেশ-বর্ণেয়ের দক্ষিণদিকে যাইবে; এবং হৎসর-অদরে আসিয়া অস্‌মোন পর্য্যন্ত যাইবে। পরে ঐ সীমা অস্‌মোন হইতে মিসরের নদী পর্য্যন্ত বেড়িয়া আসিবে, এবং সমুদ্র পর্য্যন্ত এই সীমার শেষ হইবে। পশ্চিম সীমার জন্য মহাসমুদ্র তোমাদের পক্ষে রহিল, ইহাই তোমাদের পশ্চিম সীমা হইবে। আর তোমাদের উত্তর সীমা এই; তোমরা মহাসমুদ্র হইতে আপনাদের জন্য হোর পর্ব্বত লক্ষ্য করিবে। হোর পর্ব্বত হইতে হমাতের প্রবেশস্থান লক্ষ্য করিবে। তথা হইতে সেই সীমা সদাদ পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইবে। আর সেই সীমা সিফ্রোণ পর্য্যন্ত যাইবে, ও হৎসর-ঐনন পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইবে; ইহাই তোমাদের উত্তর সীমা হইবে। আর পূর্ব্ব সীমার নিমিত্ত তোমরা হৎসর-ঐনন হইতে শফাম লক্ষ্য করিবে। পরে সে সীমা শফাম হইতে ঐনের পূর্ব্বদিক্‌ হইয়া রিব্লা পর্য্যন্ত নামিয়া যাইবে; সে সীমা নামিয়া পূর্ব্বদিকে কিন্নেরৎ হ্রদের তট পর্য্যন্ত যাইবে। পরে সে সীমা যর্দ্দন দিয়া যাইবে, এবং লবণসমুদ্র পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইবে; চতুঃসীমানুসারে এই তোমাদের দেশ হইবে। আর মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই আজ্ঞা করিলেন, যে দেশ তোমরা গুলিবাঁট দ্বারা অধিকার করিবে, সদাপ্রভু সাড়ে নয় বংশকে যে দেশ দিতে আজ্ঞা করিয়াছেন, এ সেই দেশ। কেননা আপন আপন পিতৃকুলানুসারে রূবেণ-সন্তানদের বংশ, আপন আপন পিতৃকুলানুসারে গাদ-সন্তানদের বংশ আপন অধিকার পাইয়াছে ও মনঃশির অর্দ্ধবংশও পাইয়াছে। যিরীহোর নিকটস্থ যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে সূর্য্যোদয়-দিকে সেই আড়াই বংশ আপন আপন অধিকার পাইয়াছে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, যাহারা তোমাদের অধিকারের জন্য দেশ বিভাগ করিয়া দিবে, তাহাদের এই এই নাম; ইলিয়াসর যাজক ও নূনের পুত্র যিহোশূয়। আর তোমরা প্রত্যেক বংশ হইতে এক এক জন অধ্যক্ষকে দেশ বিভাগ করণার্থে গ্রহণ করিবে। সেই ব্যক্তিদের নাম এই এই, যিহূদা বংশের যিফূন্নির পুত্র কালেব। শিমিয়োন-সন্তানদের বংশের অম্মীহূদের পুত্র শমূয়েল। বিন্যামীন বংশের কিশ্‌লোনের পুত্র ইলীদদ। দান-সন্তানদের বংশাধ্যক্ষ যগ্‌লির পুত্র বুক্কি। যোষেফের পুত্রদের মধ্যে মনঃশি-সন্তানদের বংশাধ্যক্ষ এফোদের পুত্র হন্নীয়েল। ইফ্রয়িম-সন্তানদের বংশাধ্যক্ষ শিপ্তনের পুত্র কমূয়েল। সবূলূন-সন্তানদের বংশাধ্যক্ষ পর্ণকের পুত্র ইলীষাফণ। ইষাখর-সন্তানদের বংশাধ্যক্ষ অস্‌সনের পুত্র পল্‌টিয়েল। আশের-সন্তানদের বংশাধ্যক্ষ শলোমির পুত্র অহীহূদ। নপ্তালি-সন্তানদের বংশাধ্যক্ষ অম্মীহূদের পুত্র পদহেল। কনান দেশে ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিমিত্ত অধিকার বিভাগ করিয়া দিতে সদাপ্রভু এই সকল লোককে আজ্ঞা করিলেন। পরে সদাপ্রভু মোয়াবের তলভূমিতে যিরীহোর নিকটস্থ যর্দ্দনের নিকটে মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আজ্ঞা কর, যেন তাহারা আপন আপন অধিকৃত অংশ হইতে বাস করিবার জন্য কতকগুলি নগর লেবীয়দিগকে দেয়; তোমরা সেই সকল নগরের সহিত চারিদিকের পরিসরভূমিও লেবীয়দিগকে দিবে। সে সকল নগর তাহাদের নিবাসের জন্য হইবে, ও নগরগুলির পরিসরভূমি তাহাদের পশুগণ, সম্পত্তি ও জীব সকলের নিমিত্ত হইবে। আর তোমরা নগরগুলির যে সকল পরিসরভূমি লেবীয়দিগকে দিবে, তাহার পরিমাণ নগর-প্রাচীরের বাহিরে চতুর্দ্দিকে সহস্র হস্ত হইবে। আর তোমরা নগরের বাহিরে তাহার পূর্ব্ব সীমা দুই সহস্র হস্ত, দক্ষিণ সীমা দুই সহস্র হস্ত, পশ্চিম সীমা দুই সহস্র হস্ত ও উত্তর সীমা দুই সহস্র হস্ত পরিমাণ করিবে; মধ্যস্থলে নগরটী থাকিবে। তাহাদের জন্য উহা নগরের পরিসরভূমি হইবে। নরহন্তাদের পলায়নার্থে যে ছয়টী আশ্রয় নগর তোমরা দিবে, সেই সকল এবং তাহা ছাড়া আরও বেয়াল্লিশটী নগর তোমরা লেবীয়দিগকে দিবে। সর্ব্বশুদ্ধ আটচল্লিশ নগর ও সেইগুলির পরিসরভূমি লেবীয়দিগকে দিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণের অধিকার হইতে সেই সকল নগর দিবার সময়ে তোমরা অধিক হইতে অধিক ও অল্প হইতে অল্প লইবে; প্রত্যেক বংশ আপনার প্রাপ্ত অধিকারানুসারে কতকগুলি নগর লেবীয়দিগকে দিবে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহ, তাহাদিগকে বল, যখন তোমরা যর্দ্দন পার হইয়া কনান দেশে উপস্থিত হইবে, তখন তোমাদের আশ্রয়-নগর হইবার জন্য কতকগুলি নগর নিরূপণ করিবে; যে জন প্রমাদবশতঃ কাহারও প্রাণ নষ্ট করে, এমন নরহন্তা যেন তথায় পলায়ন করিতে পারে। ফলতঃ সেই সকল নগর প্রতিশোধদাতার হস্ত হইতে তোমাদের আশ্রয়স্থান হইবে; যেন নরহন্তা বিচারার্থে মণ্ডলীর সম্মুখে উপস্থিত হইবার পূর্ব্বে মারা না পড়ে। তোমরা যে সকল নগর দিবে, তাহার মধ্যে ছয়টী আশ্রয় নগর হইবে। তোমরা যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে তিন নগর ও কনান দেশে তিন নগর দিবে; সেগুলি আশ্রয় নগর হইবে। ইস্রায়েল-সন্তানদের জন্য, এবং তাহাদের মধ্যে প্রবাসী ও বিদেশীর জন্য এই ছয়টী নগর আশ্রয়স্থান হইবে; যেন কেহ প্রমাদবশতঃ মনুষ্যকে বধ করিলে সেই স্থানে পলাইতে পারে। পরন্তু যদি কেহ লৌহাস্ত্র দ্বারা কাহাকেও এমন আঘাত করে যে, তাহাতে সে মরে, তবে সেই ব্যক্তি নরহন্তা; সেই নরহন্তার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। আর যাহা দ্বারা মরিতে পারে, এমন প্রস্তর হস্তে লইয়া যদি সে কাহাকেও আঘাত করে, ও তাহাতে সে মরে, তবে সে নরহন্তা; সেই নরহন্তার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। কিম্বা যাহা দ্বারা মরিতে পারে, এমন কোন কাষ্ঠময় বস্তু হস্তে লইয়া যদি সে কাহাকেও আঘাত করে, আর তাহাতে সে মরে, তবে সে নরহন্তা; সেই নরহন্তার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। রক্তের প্রতিশোধদাতা আপনি নরহন্তাকে বধ করিবে; তাহার দেখা পাইলেই তাহাকে বধ করিবে। আর যদি দ্বেষ করিয়া কেহ কাহাকেও আঘাত করে, কিম্বা লক্ষ্য করিয়া তাহার উপরে অস্ত্র নিক্ষেপ করে ও তাহাতে সে মরে; কিম্বা শত্রুতা করিয়া যদি কেহ কাহাকেও আপন হস্তে আঘাত করে ও তাহাতে সে মরে; তবে যে তাহাকে আঘাত করিয়াছে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; সে নরহন্তা; রক্তের প্রতিশোধদাতা তাহার দেখা পাইলেই সেই নরহন্তাকে বধ করিবে। কিন্তু যদি শত্রুতা ব্যতিরেকে হঠাৎ কেহ কাহাকেও আঘাত করে, কিম্বা লক্ষ্য না করিয়া তাহার গাত্রে অস্ত্র নিক্ষেপ করে, কিম্বা যাহা দ্বারা মরিতে পারে, এমন প্রস্তর কাহারও উপরে না দেখিয়া ফেলে, আর তাহাতেই সে মরে, অথচ সে তাহার শত্রু বা অনিষ্টচেষ্টাকারী ছিল না; তবে মণ্ডলী সেই নরহন্তার এবং রক্তের প্রতিশোধদাতার বিষয়ে এই সকল বিচারমতে বিচার করিবে; আর মণ্ডলী রক্তের প্রতিশোধদাতার হস্ত হইতে সেই নরহন্তাকে উদ্ধার করিবে; এবং সে যেখানে পলাইয়াছিল, তাহার সেই আশ্রয়-নগরে মণ্ডলী তাহাকে পুনর্ব্বার পৌঁছাইয়া দিবে; আর যে পর্য্যন্ত পবিত্র তৈলে অভিষিক্ত মহাযাজকের মৃত্যু না হয়, তাবৎ সে সেই নগরে থাকিবে। কিন্তু সেই নরহন্তা যে আশ্রয়-নগরে পলাইয়াছে, কোন সময়ে যদি তাহার সীমার বহির্ভূত হয়, এবং রক্তের প্রতিশোধদাতা আশ্রয়নগরের সীমার বাহিরে তাহাকে পায়, তবে সেই রক্তের প্রতিশোধদাতা তাহাকে বধ করিলেও রক্তপাতের অপরাধী হইবে না। কেননা মহাযাজকের মৃত্যু পর্য্যন্ত আপন আশ্রয়-নগরে থাকা তাহার উচিত ছিল; কিন্তু মহাযাজকের মৃত্যু হইলে পর সেই নরহন্তা আপন অধিকার-ভূমিতে ফিরিয়া যাইতে পারিবে। তোমাদের পুরুষানুক্রমে তোমাদের সকল নিবাসে এই সমস্ত তোমাদের পক্ষে বিচার-বিধি হইবে। যে ব্যক্তি কোন লোককে বধ করে, সেই নরহন্তা সাক্ষীদের কথায় হত হইবে; কিন্তু কোন লোকের প্রতিকূলে একমাত্র সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রাণদণ্ডার্থে গ্রাহ্য হইবে না। আর প্রাণদণ্ডের অপরাধী নরহন্তার প্রাণের জন্য তোমরা কোন প্রায়শ্চিত্ত গ্রহণ করিবে না; তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। আর যে কেহ আপন আশ্রয়-নগরে পলাইয়াছে, সে যেন যাজকের মরণের পূর্ব্বে পুনর্ব্বার দেশে আসিয়া বাস করিতে পায়, এই জন্য তাহা হইতে কোন প্রায়শ্চিত্ত গ্রহণ করিবে না। এইরূপে তোমরা আপনাদের নিবাস-দেশ অপবিত্র করিবে না; কেননা রক্ত দেশকে অপবিত্র করে; এবং তথায় যে রক্তপাত হয়, তাহার জন্য রক্তপাতীর রক্তপাত ব্যতিরেকে দেশের প্রায়শ্চিত্ত হইতে পারে না। আর তোমরা যে দেশ অধিকার করিবে, ও যাহার মধ্যে আমি বাস করি, তুমি তাহা অশুচি করিবে না; কেননা আমি সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে বাস করি। পরে যোষেফ-সন্তানদের গোষ্ঠী সকলের মধ্যে মনঃশির পৌত্র মাখীরের পুত্র গিলিয়দের সন্তানদের গোষ্ঠীর পিতৃকুলপতিগণ আসিয়া মোশির ও অধ্যক্ষগণের সম্মুখে, ইস্রায়েল-সন্তানদের পিতৃকুলপতিগণের সম্মুখে, কথা কহিলেন। তাঁহারা বলিলেন, সদাপ্রভু গুলিবাঁট দ্বারা অধিকারার্থে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে দেশ দিতে আমার প্রভুকে আজ্ঞা করিয়াছেন, এবং আপনি আমাদের ভ্রাতা সলফাদের অধিকার তাঁহার কন্যাদিগকে দিবার আজ্ঞা সদাপ্রভু হইতে পাইয়াছেন। কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানগণের অন্য কোন বংশের সন্তানদের মধ্যে কাহারও সহিত যদি তাহাদের বিবাহ হয়, তবে আমাদের পিতৃগণের অধিকার হইতে তাহাদের অধিকার কাটা যাইবে, ও তাহারা যে বংশে গৃহীতা হইবে, সেই বংশের অধিকারে তাহা যুক্ত হইবে; এইরূপে তাহা আমাদের অধিকারের অংশ হইতে কাটা যাইবে। আর যখন ইস্রায়েল-সন্তানগণের যোবেল উপস্থিত হইবে, তৎকালে তাহারা যাহাদের মধ্যে গৃহীতা, সেই বংশের অধিকারে তাহাদের অধিকার যুক্ত হইবে; এইরূপে আমাদের পিতৃবংশের অধিকার হইতে তাহাদের অধিকার কাটা যাইবে। তখন মোশি সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আজ্ঞা করিলেন, বলিলেন, যোষেফ-সন্তানদের বংশ যথার্থ কহিতেছে। সদাপ্রভু সলফাদের কন্যাগণের বিষয়ে এই আজ্ঞা করিতেছেন, তাহারা যাহাকে মনোনীত করিবে, তাহাকে বিবাহ করিতে পারিবে; কিন্তু কেবল আপনাদের পিতৃবংশের কোন গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ করিবে। এইরূপে ইস্রায়েল-সন্তানগণের অধিকার এক বংশ হইতে অন্য বংশে যাইবে না; ইস্রায়েল-সন্তানগণ প্রত্যেকে আপন আপন পিতৃবংশের অধিকারভুক্ত থাকিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ প্রত্যেকে যেন আপন আপন পৈতৃক অধিকার ভোগ করে, এই জন্য ইস্রায়েল-সন্তানগণের কোন বংশের মধ্যে অধিকারিণী প্রত্যেক কন্যা আপন পিতৃবংশীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কোন এক পুরুষের স্ত্রী হইবে। এইরূপে এক বংশ হইতে অন্য বংশে অধিকার যাইবে না, কারণ ইস্রায়েল-সন্তানগণের প্রত্যেক বংশ আপন আপন অধিকারভুক্ত থাকিবে। মোশিকে সদাপ্রভু যেরূপ আজ্ঞা করিলেন, সলফাদের কন্যাগণ তদ্রূপ কর্ম্ম করিল। ফলতঃ মহলা, তির্সা, হগ্‌লা মিল্কা ও নোয়া, সলফাদের এই কন্যাগণ আপন আপন পিতৃব্য-পুত্রদের সহিত বিবাহিতা হইল। যোষেফের পুত্র মনঃশির সন্তানদের গোষ্ঠীর মধ্যে তাহাদের বিবাহ হইল; তাহাতে তাহাদের অধিকার তাহাদের পিতৃগোষ্ঠীর সম্পর্কীয় বংশেই রহিল। সদাপ্রভু যিরীহোর নিকটস্থ যর্দ্দনের সমীপে মোয়াবের তলভূমিতে মোশি দ্বারা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই সমস্ত আজ্ঞা ও বিচার আদেশ করিলেন। যর্দ্দনের পূর্ব্বপারস্থিত প্রান্তরে, সূফের সম্মুখস্থিত অরাবা তলভূমিতে, পারণ, তোফল, লাবন, হৎসেরোৎ ও দীষাহবের মধ্যস্থানে মোশি সমস্ত ইস্রায়েলকে এই সকল কথা কহিলেন। সেয়ীর পর্ব্বত দিয়া হোরেব অবধি কাদেশ-বর্ণেয় পর্য্যন্ত যাইতে এগার দিন লাগে। সদাপ্রভু যে যে কথা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বলিতে মোশিকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তদনুসারে মোশি চল্লিশ বৎসরের একাদশ মাসে, মাসের প্রথম দিনে তাহাদিগকে কহিতে লাগিলেন। হিষ্‌বোন-নিবাসী ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে, এবং ইদ্রিয়ীতে অষ্টারোৎ-নিবাসী বাশনের রাজা ওগকে আঘাত করিলে পর, যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে মোয়াব দেশে মোশি এই ব্যবস্থা ব্যাখ্যা করিতে লাগিলেন; তিনি বলিলেন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হোরেবে আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, তোমরা এই পর্ব্বতে অনেক দিন অবস্থিতি করিয়াছ; এখন ফির, তোমরা যাত্রা কর, ইমোরীয়দের পর্ব্বতময় দেশ এবং তন্নিকটবর্ত্তী সকল স্থান, অরাবা তলভূমি, পাহাড় অঞ্চল, নিম্নভূমি, দক্ষিণ প্রদেশ ও সমুদ্রতীর, মহানদী ফরাৎ নদী পর্য্যন্ত কনানীয়দের দেশে ও লিবানোনে প্রবেশ কর। দেখ, আমি সেই দেশ তোমাদের সম্মুখে দিয়াছি; তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে এবং তাহাদের পরে তাহাদের বংশকে যে দেশ দিতে সদাপ্রভু দিব্য করিয়াছিলেন, তোমরা সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার কর। তৎকালে আমি তোমাদিগকে এই কথা বলিয়াছিলাম, তোমাদের ভার বহন করা একা আমার অসাধ্য। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বৃদ্ধি করিয়াছেন, আর দেখ, তোমরা অদ্য আকাশের তারার ন্যায় বহুসংখ্যক হইয়াছ; তোমরা যেরূপ আছ, তোমাদের পিতৃগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা হইতে তোমাদের আরও সহস্র গুণ বৃদ্ধি করুন, আর তোমাদিগকে যেরূপ বলিয়াছেন, তদ্রূপ আশীর্ব্বাদ করুন। আমি কেমন করিয়া একা তোমাদের বোঝা, তোমাদের ভার ও তোমাদের বিবাদ সহ্য করিতে পারি? তোমরা আপন আপন বংশের মধ্যে জ্ঞানবান্‌, বুদ্ধিমান্‌ ও পরিচিত লোকদিগকে মনোনীত কর, আমি তাহাদিগকে তোমাদের অধ্যক্ষরূপে নিযুক্ত করিব। তোমরা আমাকে উত্তর করিলে, বলিলে, তুমি যাহা বলিতেছ, তাহাই করা ভাল। তাই আমি তোমাদের বংশসমূহের প্রধান, জ্ঞানবান্‌ ও পরিচিত লোকদিগকে গ্রহণ করিয়া তোমাদের উপরে প্রধান, তোমাদের বংশানুসারে সহস্রপতি, শতপতি পঞ্চাশৎপতি, দশপতি ও কর্ম্মচারী করিয়া নিযুক্ত করিলাম। আর তৎকালে তোমাদের বিচারকর্ত্তাদিগকে এই আজ্ঞা করিলাম, তোমরা তোমাদের ভ্রাতাদের কথা শুনিয়া বাদীর ও তাহার ভ্রাতার কি সহবাসী বিদেশীর মধ্যে ন্যায্য বিচার করিও। তোমরা বিচারে কাহারও মুখাপেক্ষা করিবে না; সমভাবে ক্ষুদ্র ও মহান্‌ উভয়ের কথা শুনিবে; মনুষ্যের মুখ দেখিয়া ভয় করিবে না, কেননা বিচার ঈশ্বরের; এবং যে কথা তোমাদের পক্ষে কঠিন, তাহা আমার কাছে আনিবে, আমি তাহা শুনিব। সেই সময়ে তোমাদের সমস্ত কর্ত্তব্য কর্ম্মের বিষয়ে আমি আজ্ঞা করিয়াছিলাম। পরে আমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে হোরেব হইতে প্রস্থান করিলাম, এবং ইমোরীয়দের পর্ব্বতময় দেশে যাইবার পথে তোমরা সেই যে বৃহৎ ও ভয়ঙ্কর প্রান্তর দেখিয়াছ, তাহার মধ্য দিয়া যাত্রা করিয়া কাদেশবর্ণেয়ে পৌঁছিলাম। পরে আমি তোমাদিগকে কহিলাম, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, ইমোরীয়দের সেই পর্ব্বতময় দেশে তোমরা উপস্থিত হইলে। দেখ, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু সেই দেশ তোমার সম্মুখে দিয়াছেন; তুমি আপন পিতৃপুরুষগণের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে উঠিয়া উহা অধিকার কর; ভীত ও নিরাশ হইও না। তখন তোমরা সকলে আমার নিকটে আসিয়া কহিলে, অগ্রে আমরা সে স্থানে লোক পাঠাই; তাহারা আমাদের জন্য দেশ অনুসন্ধান করুক, এবং আমাদিগকে কোন্‌ পথ দিয়া উঠিয়া যাইতে হইবে, ও কোন্‌ কোন্‌ নগরে উপস্থিত হইতে হইবে, তাহার সংবাদ লইয়া আইসুক। তখন আমি সে কথায় সন্তুষ্ট হইয়া তোমাদের প্রত্যেক বংশ হইতে এক এক জন করিয়া বারো জনকে গ্রহণ করিলাম। পরে তাহারা যাত্রা করিয়া পর্ব্বতে উঠিল, এবং ইষ্কোল উপত্যকায় উপস্থিত হইয়া দেশ অনুসন্ধান করিল। আর সেই দেশের কতকগুলি ফল হস্তে লইয়া আমাদের নিকটে আসিয়া সংবাদ দিল, কহিল, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, সে উত্তম দেশ। তথাপি তোমরা সেই স্থানে যাইতে অসম্মত হইলে; ও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারী হইলে; আর আপন আপন তাম্বুতে বচসা করিয়া কহিলে, সদাপ্রভু আমাদিগকে ঘৃণা করিলেন বলিয়া আমরা যেন বিনষ্ট হই, তাই ইমোরীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবার নিমিত্ত আমাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিলেন। আমরা কোথায় যাইতেছি? আমাদের ভ্রাতৃগণ আমাদের মনোভঙ্গ করিল, বলিল, আমাদের অপেক্ষা সেই জাতি মহৎ ও দীর্ঘকায়, এবং নগরগুলি অতি বৃহৎ ও গগনস্পর্শী প্রাচীরে বেষ্টিত; আরও সে স্থানে আমরা অনাকীয়দের সন্তানদিগকেও দেখিয়াছি। তখন আমি তোমাদিগকে কহিলাম, উদ্বিগ্ন হইও না, তাহাদের হইতে ভীত হইও না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যিনি তোমাদের অগ্রগামী, তিনি মিসর দেশে তোমাদের চক্ষুর্গোচরে তোমাদের জন্য যে সমস্ত কার্য্য করিয়াছিলেন, তদনুসারে তোমাদের জন্য যুদ্ধ করিবেন। এই প্রান্তরেও তুমি তদ্রূপ দেখিয়াছ; যেহেতুক পিতা যেমন আপন পুত্রকে বহন করে, তেমনি এই স্থানে তোমাদের আগমন পর্য্যন্ত যে পথে তোমরা আসিয়াছ, সেই সমস্ত পথে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে বহন করিয়াছেন। তথাপি এই কথায় তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলে না, যিনি তোমাদের শিবির রাখিবার স্থান অন্বেষণ করণার্থে যাত্রাকালে তোমাদের অগ্রগামী হইয়া রাত্রিতে অগ্নি দ্বারা ও দিবসে মেঘ দ্বারা তোমাদের গন্তব্য পথ প্রদর্শন করিতেন। আর সদাপ্রভু তোমাদের বাক্যের রব শুনিয়া ক্রুদ্ধ হইলেন, ও এই দিব্য করিলেন, আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিতে শপথ করিয়াছি, এই দুষ্ট বংশীয় মনুষ্যদের মধ্যে কেহই সেই উত্তম দেশ দেখিতে পাইবে না, কেবল যিফন্নির পুত্র কালেব তাহা দেখিবে; এবং সে যে ভূমিতে পদার্পণ করিয়া আসিয়াছে, সেই ভূমি আমি তাহাকে ও তাহার সন্তানগণকে দিব; কেননা সে সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগমন করিয়াছে। (সদাপ্রভু তোমাদের নিমিত্ত আমার প্রতিও ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি আমাকে এই কথা কহিলেন, তুমিও সে স্থানে প্রবেশ করিবে না। তোমার সম্মুখে দণ্ডায়মান নূনের পুত্র যিহোশূয় সেই দেশে প্রবেশ করিবে; তুমি তাহাকেই আশ্বাস দেও, কেননা সে ইস্রায়েলকে তাহা অধিকার করাইবে।) আর ইহারা লুটিত হইবে, এই কথা তোমরা আপনাদের যে বালকগণের বিষয়ে কহিলে, এবং তোমাদের যে সন্তানগণের ভাল মন্দ জ্ঞান অদ্যাপি হয় নাই, তাহারাই সেই স্থানে প্রবেশ করিবে; তাহাদিগকেই আমি সেই দেশ দিব, এবং তাহারাই তাহা অধিকার করিবে। কিন্তু তোমরা ফির, সূফসাগরের পথ দিয়া প্রান্তরে গমন কর। তখন তোমরা উত্তর করিয়া আমাকে বলিলে, আমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি; আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞানুসারে উঠিয়া গিয়া যুদ্ধ করিব। পরে তোমরা প্রত্যেক জন যুদ্ধাস্ত্রে সসজ্জ হইলে, এবং পর্ব্বতে উঠা লঘু বিষয় মনে করিলে। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি তাহাদিগকে বল, তোমরা উঠিও না, যুদ্ধ করিও না, কেননা আমি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী নহি; পাছে শত্রুদের সম্মুখে আহত হও। আমি তোমাদিগকে সেই কথা কহিলাম, কিন্তু তোমরা সে কথায় কান দিলে না; বরং সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারী ও দুঃসাহসী হইয়া পর্ব্বতে উঠিতেছিলে। আর সেই পর্ব্বতবাসী ইমোরীয়েরা তোমাদের বিরুদ্ধে বাহির হইয়া, মধুমক্ষিকা যেমন করে, তেমনি তোমাদিগকে তাড়া করিল, এবং সেয়ীরে হর্মা পর্য্যন্ত আঘাত করিল। তখন তোমরা ফিরিয়া আসিলে ও সদাপ্রভুর কাছে রোদন করিলে; কিন্তু সদাপ্রভু তোমাদের রবে কর্ণপাত করিলেন না, তোমাদের কথায় কান দিলেন না। আর তোমরা অবস্থিতি-কালানুসারে কাদেশে অনেক দিন বাস করিলে। পরে সদাপ্রভু আমাকে যেরূপ বলিয়াছিলেন, তদনুসারে আমরা ফিরিয়া সূফসাগরের পথে প্রান্তর দিয়া যাত্রা করিলাম, এবং অনেক দিন যাবৎ সেয়ীর পর্ব্বত প্রদক্ষিণ করিলাম। পরে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তোমরা অনেক দিন এই পর্ব্বত প্রদক্ষিণ করিতেছ; এখন উত্তরদিকে ফির। আর তুমি লোকসমূহকে এই আজ্ঞা কর, সেয়ীর-নিবাসী তোমাদের ভ্রাতৃগণের অর্থাৎ এষৌ-সন্তানদের সীমার নিকট দিয়া তোমাদিগকে যাইতে হইবে, আর তাহারা তোমাদের হইতে ভীত হইবে; অতএব তোমরা অতি সাবধান হইবে। তাহাদের সহিত বিরোধ করিও না, কেননা আমি তোমাদিগকে তাহাদের দেশের অংশ দিব না, এক পাদ পরিমিত ভূমিও দিব না; কেননা সেয়ীর পর্ব্বত অধিকারার্থে আমি এষৌকে দিয়াছি। তোমরা তাহাদের নিকটে টাকা দিয়া খাদ্য ক্রয় করিয়া ভোজন করিবে; ও টাকা দিয়া জলও ক্রয় করিয়া পান করিবে। কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার হস্তের সমস্ত কর্ম্মে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন; এই মহাপ্রান্তরে তোমার গমন তিনি জানেন; এই চল্লিশ বৎসর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী আছেন; তোমার কিছুরই অভাব হয় নাই। পরে আমরা অরাবা তলভূমির পথ হইতে, এলৎ ও ইৎসিয়োন-গেবর হইতে, সেয়ীর-নিবাসী আমাদের ভ্রাতৃগণ এষৌ-সন্তানদের সম্মুখ দিয়া গমন করিলাম। আর আমরা মোয়াবের প্রান্তরের পথে ফিরিয়া যাত্রা করিলাম। আর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি মোয়াবীয়দিগকে ক্লেশ দিও না, এবং যুদ্ধ দ্বারা তাহাদের সহিত বিরোধ করিও না; কারণ আমি অধিকারার্থে তাহাদের দেশের কোন অংশ তোমাকে দিব না; কেননা আমি লোটের সন্তানগণকে আর্‌ নগর অধিকার করিতে দিয়াছি। (পূর্ব্বে ঐ স্থানে এমীয়েরা বাস করিত, তাহারা অনাকীয়দের ন্যায় মহৎ, বহুসংখ্যক ও দীর্ঘকায় জাতি। অনাকীয়দের ন্যায় তাহারাও রফায়ীয়দের মধ্যে গণিত, কিন্তু মোয়াবীয়েরা তাহাদিগকে এমীয় বলে। আর পূর্ব্বে হোরীয়েরাও সেয়ীরে বাস করিত, কিন্তু এষৌর সন্তানগণ তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত ও আপনাদের সম্মুখ হইতে বিনষ্ট করিয়া তাহাদের স্থানে বাস করিল; যেমন ইস্রায়েল সদাপ্রভুর দত্ত আপন অধিকার-ভূমিতে করিল।) এক্ষণে তোমরা উঠ সেরদ নদী পার হও। তখন আমরা সেরদ নদী পার হইলাম। কাদেশ-বর্ণেয় অবধি সেরদ নদী পার হওয়া পর্য্যন্ত আমাদের যাত্রাকাল আটত্রিশ বৎসর ব্যাপী; সেই সময়ের মধ্যে শিবিরের মধ্য হইতে তৎকালীন যোদ্ধৃগণ সকলে উচ্ছিন্ন হইল, যেমন সদাপ্রভু তাহাদের সম্বন্ধে শপথ করিয়াছিলেন। আবার শিবিরের মধ্য হইতে তাহাদিগকে নিঃশেষে লোপ করণার্থে সদাপ্রভুর হস্ত তাহাদের বিরুদ্ধে ছিল। সেই সমস্ত যোদ্ধা মরিয়া লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইলে পর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, অদ্য তুমি মোয়াবের সীমা অর্থাৎ আর পার হইতেছ; যখন তুমি অম্মোন-সন্তানগণের সম্মুখে উপস্থিত হও, তখন তাহাদিগকে ক্লেশ দিও না, তাহাদের সহিত বিরোধ করিও না; কারণ আমি তোমাকে অধিকারার্থে অম্মোন-সন্তানদের দেশের অংশ দিব না, কেননা আমি লোটের সন্তানগণকে তাহা অধিকার করিতে দিয়াছি। (সেই দেশও রফায়ীয়দের দেশ বলিয়া গণিত; রফায়ীয়েরা পূর্ব্বকালে সে স্থানে বাস করিত; কিন্তু অম্মোনীয়েরা তাহাদিগকে সম্‌সুম্মীয় বলে। তাহারা অনাকীয়দের ন্যায় মহৎ, বহুসংখ্যক ও দীর্ঘকায় এক জাতি ছিল, কিন্তু সদাপ্রভু উহাদের সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে বিনষ্ট করিলেন; আর উহারা তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়া তাহাদের স্থানে বসতি করিল। তিনি সেয়ীর-নিবাসী এষৌর সন্তানগণের নিমিত্তও তদ্রূপ কর্ম্ম করিলেন, ফলতঃ তাহাদের সম্মুখ হইতে হোরীয়দিগকে বিনষ্ট করিলেন, তাহাতে উহারা তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়া অদ্যাপি তাহাদের স্থানে বাস করিতেছে। আর অব্বীয়গণ, যাহারা ঘসা পর্য্যন্ত গ্রামসমূহে বাস করিত, তাহাদিগকে কপ্তোর হইতে আগত কপ্তোরীয়েরা বিনষ্ট করিয়া তাহাদের স্থানে বাস করিল।) তোমরা উঠ, যাত্রা কর, অর্ণোন উপত্যকা পার হও; দেখ, আমি হিষ্‌বোনের রাজা ইমোরীয় সীহোনকে ও তাহার দেশ তোমার হস্তে সমর্পণ করিলাম; তুমি উহা অধিকার করিতে আরম্ভ কর, ও যুদ্ধ দ্বারা তাহার সহিত বিরোধ কর। অদ্যাবধি আমি সমস্ত আকাশমণ্ডলের নীচে স্থিত জাতিগণের উপরে তোমা হইতে আশঙ্কা ও ভয় স্থাপন করিতে আরম্ভ করিব; তাহারা তোমার সমাচার পাইবে, ও তোমার ভয়ে কম্পমান ও ব্যথিত হইবে। পরে আমি কদেমোৎ প্রান্তর হইতে হিষ্‌বোনের রাজা সীহোনের নিকটে দূত দ্বারা এই শান্তির বাক্য বলিয়া পাঠাইলাম, তুমি আপন দেশের মধ্য দিয়া আমাকে যাইতে দেও, আমি পথ ধরিয়াই যাইব, দক্ষিণে কি বামে ফিরিব না। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, আমরা যর্দ্দন পার হইয়া যাবৎ সেই দেশে উপস্থিত না হই, তাবৎ তুমি টাকা লইয়া আমাকে ভোজনার্থ খাদ্য দিবে, ও টাকা লইয়া পানার্থক জল দিবে; আমি কেবল পদব্রজে পার হইয়া যাইব; সেয়ীর-নিবাসী এষৌ-সন্তানগণ ও আর্‌-নিবাসী মোয়াবীয়েরাও আমার প্রতি সেইরূপ করিয়াছে। কিন্তু হিষ্‌বোনের রাজা সীহোন তাঁহার নিকট দিয়া যাইবার অনুমতি আমাদিগকে দেন নাই, কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁহার মন কঠিন করিলেন ও তাঁহার হৃদয় শক্ত করিলেন, যেন তোমার হস্তে তাঁহাকে সমর্পণ করেন, যেমন অদ্য পর্য্যন্ত রহিয়াছে। আর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, দেখ, আমি সীহোনকে ও তাহার দেশকে তোমার সম্মুখে দিতে আরম্ভ করিলাম; তুমিও তাহার দেশ অধিকারার্থে লইতে আরম্ভ কর। তখন সীহোন ও তাঁহার সমস্ত প্রজা আমাদের প্রতিকূলে বাহির হইয়া যহসে যুদ্ধ করিতে আসিলেন। আর আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের সম্মুখে তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন; আমরা তাঁহাকে, তাঁহার পুত্রগণকে ও সমস্ত প্রজাকে আঘাত করিলাম। আর সেই সময়ে তাঁহার সমস্ত নগর হস্তগত করিলাম, এবং স্ত্রীলোক ও বালকবালিকা শুদ্ধ সমস্ত বসতি-নগর নিঃশেষে বিনষ্ট করিলাম; কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলাম না; কেবল পশুগণকে ও যে যে নগর হস্তগত করিয়াছিলাম, তাহার লুটিত বস্তু সকল আমরা আপনাদের জন্য গ্রহণ করিলাম। অর্ণোন উপত্যকার সীমাস্থ অরোয়ের অবধি ও উপত্যকার মধ্যস্থিত নগর অবধি গিলিয়দ পর্য্যন্ত এক নগরও আমাদের অজেয় হইল না; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সে সমস্ত আমাদের সম্মুখে দিলেন। কেবল অম্মোন-সন্তানদের দেশ, যব্বোক নদীর পার্শ্বস্থ সকল প্রদেশ ও পর্ব্বতময় দেশস্থ নগর সকল, এবং যে কোন স্থানের বিষয়ে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিষেধ করিয়াছিলেন, সেই সকলের নিকটে তুমি উপস্থিত হইলে না। পরে আমরা ফিরিয়া বাশনের পথে উঠিয়া চলিলাম; তাহাতে বাশনের রাজা ওগ এবং তাঁহার সমস্ত প্রজা আমাদের সহিত যুদ্ধ করণার্থে বাহির হইয়া ইদ্রিয়ীতে আসিলেন। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি উহাকে ভয় করিও না, কেননা আমি উহাকে, উহার সমস্ত প্রজাকে ও উহার দেশ তোমার হস্তে সমর্পণ করিলাম; তুমি যেমন হিষ্‌বোন-নিবাসী ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের প্রতি করিয়াছ, তেমনি উহার প্রতিও করিবে। এইরূপে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু বাশনের রাজা ওগকে ও তাঁহার সমস্ত প্রজাকে আমাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন; তাহাতে আমরা তাঁহাকে এমন আঘাত করিলাম যে, তাঁহার কেহ অবশিষ্ট থাকিল না। সেই সময়ে আমরা তাঁহার সমস্ত নগর হস্তগত করিলাম; এমন এক নগরও থাকিল না, যাহা তাহাদের হইতে লই নাই; ষষ্টি নগর, অর্গোবের সমস্ত অঞ্চল, বাশনস্থ ওগের রাজ্য লইলাম। সেই সমস্ত নগর উচ্চ প্রাচীর, দ্বার ও অর্গল দ্বারা সুরক্ষিত ছিল; আর প্রাচীরবিহীন অনেক নগরও ছিল। আমরা হিষ্‌বোনের রাজা সীহোনের প্রতি যেমন করিয়াছিলাম, সেইরূপ তাহাদিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলাম, স্ত্রীলোক ও বালকবালিকা শুদ্ধ তাহাদের সমস্ত বসতি নগর বিনষ্ট করিলাম। কিন্তু তাহাদের সমস্ত পশু ও নগরের দ্রব্যাদি লুট করিয়া আপনাদের জন্য গ্রহণ করিলাম। সেই সময়ে আমরা যর্দ্দনের পূর্ব্বপারস্থ ইমোরীয়দের দুই রাজার হস্ত হইতে অর্ণোন উপত্যকা অবধি হর্মোণ পর্ব্বত পর্য্যন্ত সমস্ত দেশ হস্তগত করিলাম। (সীদোনীয়েরা ঐ হর্মোণকে সিরিয়োণ বলে, এবং ইমোরীয়েরা তাহাকে সনীর বলে।) আমরা সমভূমির সমস্ত নগর, সল্‌খা ও ইদ্রিয়ী পর্য্যন্ত সমস্ত গিলিয়দ এবং সমস্ত বাশন, বাশনস্থিত ওগ-রাজ্যের নগরসমূহ হস্তগত করিলাম। (ফলতঃ অবশিষ্ট রফায়ীয়দের মধ্যে কেবল বাশনের রাজা ওগ মাত্র অবশিষ্ট ছিলেন; দেখ, তাঁহার খট্টা লৌহময়; তাহা কি অম্মোন-সন্তানগণের রব্বা নগরে নাই? মনুষ্যের হস্তের পরিমাণানুসারে তাহা দীর্ঘে নয় হস্ত ও প্রস্থে চারি হস্ত।) সেই সময়ে আমরা এই দেশ অধিকার করিলাম; অর্ণোন উপত্যকাস্থ অরোয়ের অবধি, এবং পর্ব্বতময় গিলিয়দ দেশের অর্দ্ধেক ও তথাকার নগর সকল রূবেণীয় ও গাদীয়দিগকে দিলাম। আর গিলিয়দের অবশিষ্ট অংশ ও সমস্ত বাশন অর্থাৎ ওগের রাজ্য, সমস্ত বাশনের সহিত অর্গোবের সমস্ত অঞ্চল আমি মনঃশির অর্দ্ধ বংশকে দিলাম। (তাহাই রফায়ীয় দেশ বলিয়া বিখ্যাত। মনঃশির সন্তান যায়ীর গশূরীয়দের ও মাখাথীয়দের সীমা পর্য্যন্ত অর্গোবের সমস্ত অঞ্চল লইয়া আপন নামানুসারে বাশন দেশের সেই সকল স্থানের নাম হব্বোৎ-যায়ীর রাখিল; অদ্য পর্য্যন্ত [সেই নাম চলিত আছে]।) আর আমি মাখীরকে গিলিয়দ দিলাম। আর গিলিয়দ হইতে অর্ণোন উপত্যকা পর্য্যন্ত, উপত্যকার মধ্যস্থান ও তৎপরিসীমা, এবং অম্মোন-সন্তানগণের সীমা যব্বোক নদী পর্য্যন্ত; আর অরাবা তলভূমি, যর্দ্দন ও তৎপরিসীমা, কিন্নেরৎ হইতে অরাবার সমুদ্র, অর্থাৎ পূর্ব্বদিকে পিস্‌গা-পার্শ্বের নীচে লবণসমুদ্র পর্য্যন্ত রূবেণীয় ও গাদীয়দিগকে দিলাম। আর সেই সময়ে তোমাদিগকে এই আজ্ঞা করিলাম, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে এই দেশ তোমাদিগকে দিয়াছেন। তোমাদের সমস্ত যোদ্ধা সসজ্জ হইয়া তোমাদের ভ্রাতৃগণের অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে পার হইয়া যাইবে। আমি তোমাদিগকে যে সকল নগর দিলাম, তোমাদের সেই সকল নগরে তোমাদের স্ত্রীলোক, বালকবালিকা ও পশুগণ বাস করিবে; আমি জানি, তোমাদের অনেক পশু আছে। পরে সদাপ্রভু তোমাদের ভ্রাতৃগণকে তোমাদের ন্যায় বিশ্রাম দিলে, যর্দ্দনের ওপারে যে দেশ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে দিতেছেন, তাহারাও সেই দেশ অধিকার করিবে; তখন তোমরা প্রত্যেকে আমার দত্ত আপন আপন অধিকারে ফিরিয়া আসিবে। আর সেই সময়ে আমি যিহোশূয়কে আজ্ঞা করিলাম, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সেই দুই রাজার প্রতি যাহা করিয়াছেন, তাহা তুমি স্বচক্ষে দেখিয়াছ; তুমি পার হইয়া যে যে রাজ্যের বিরুদ্ধে যাইবে, সে সমস্ত রাজ্যের প্রতি সদাপ্রভু তদ্রূপ করিবেন। তোমরা তাহাদিগকে ভয় করিও না; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি তোমাদের জন্য যুদ্ধ করিবেন। সেই সময়ে আমি সদাপ্রভুকে সাধ্যসাধনা করিয়া কহিলাম, হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আপন দাসের কাছে আপন মহিমা ও বলবান হস্ত প্রকাশ করিতে আরম্ভ করিলে; তোমার কার্য্যের মত কার্য্য ও তোমার বিক্রম-কর্ম্মের মত কর্ম্ম করিতে পারে, স্বর্গে কি পৃথিবীতে এমন ঈশ্বর কে আছে? বিনয় করি, আমাকে ওপারে গিয়া যর্দ্দনপারস্থ সেই উত্তম দেশ, সেই রমণীয় গিরিপ্রদেশ ও লিবানোন দেখিতে দেও। কিন্তু সদাপ্রভু তোমাদের জন্য আমার প্রতিকূলে ক্রুদ্ধ হওয়াতে আমার কথা শুনিলেন না; সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তোমার পক্ষে এই যথেষ্ট, এ বিষয়ের কথা আমাকে আর বলিও না। পিস্‌গার শৃঙ্গে উঠ, এবং পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব্ব দিকে দৃষ্টিপাত কর; আপন চক্ষে নিরীক্ষণ কর, কেননা তুমি এই যর্দ্দন পার হইতে পাইবে না। কিন্তু তুমি যিহোশূয়কে আজ্ঞা কর, তাহাকে আশ্বাস দেও, এবং তাহাকে বীর্য্যবান্‌ কর, কেননা সে এই লোকদের অগ্রগামী হইয়া পার হইবে, আর যে দেশ তুমি দেখিবে, সেই দেশ সে তাহাদিগকে অধিকার করাইবে। এইরূপে আমরা বৈৎ-পিয়োরের সম্মুখস্থিত উপত্যকায় বাস করিলাম। এক্ষণে, হে ইস্রায়েল, আমি যে যে বিধি ও শাসন পালন করিতে তোমাদিগকে শিক্ষা দিই, তাহা শ্রবণ কর; যেন তোমরা বাঁচিতে পার, এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করিতে পার। আমি তোমাদিগকে যাহা আজ্ঞা করি, সেই বাক্যে তোমরা আর কিছু যোগ করিবে না, এবং তাহার কিছু হ্রাস করিবে না। আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আদেশ করিতেছি, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেই সকল আজ্ঞা পালন করিবে। বাল-পিয়োরের বিষয়ে সদাপ্রভু যাহা করিয়াছিলেন, তাহা তোমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছ; ফলতঃ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু বাল-পিয়োরের অনুগামী প্রত্যেক জনকে তোমার মধ্য হইতে বিনষ্ট করিয়াছিলেন; কিন্তু তোমরা যত লোক তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে আসক্ত ছিলে, সকলেই অদ্য জীবিত আছ। দেখ, আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, আমি তোমাদিগকে সেইরূপ বিধি ও শাসন শিক্ষা দিয়াছি; যেন, তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, সেই দেশের মধ্যে তদনুসারে ব্যবহার কর। অতএব তোমরা সে সমস্ত মান্য করিও, ও পালন করিও; কেননা জাতি সকলের সমক্ষে তাহাই তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিস্বরূপ হইবে; এই সকল বিধি শুনিয়া তাহারা বলিবে, সত্যই, এই মহাজাতি জ্ঞানবান্‌ ও বুদ্ধিমান্‌ লোক; কেননা কোন্‌ বড় জাতির এমন নিকটবর্ত্তী ঈশ্বর আছেন, যেমন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু? যখনই আমরা তাঁহাকে ডাকি, তিনি নিকটবর্ত্তী। আর আমি অদ্য তোমাদের সাক্ষাতে যে সমস্ত ব্যবস্থা দিতেছি, তাহার মত যথার্থ বিধি ও শাসন কোন্‌ বড় জাতির আছে? কিন্তু তুমি নিজের বিষয়ে সাবধান, তোমার প্রাণের বিষয়ে অতি সাবধান থাক; পাছে তুমি যে সকল ব্যাপার স্বচক্ষে দেখিয়াছ, তাহা ভুলিয়া যাও; আর পাছে জীবন থাকিতে তোমার হৃদয় হইতে তাহা লুপ্ত হয়; তুমি আপন পুত্র পৌত্রদিগকে তাহা শিক্ষা দেও। সেই দিন, যে দিন তুমি হোরেবে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলে, সেই দিন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি আমার নিকটে লোকদিগকে একত্র কর, আমি আপন বাক্য সকল তাহাদিগকে শুনাইব; তাহারা পৃথিবীতে যত দিন জীবিত থাকে, তত দিন যেন আমাকে ভয় করে, এই বিষয় তাহারা শিখিবে, এবং আপন সন্তানগণকেও শিখাইবে। তাহাতে তোমরা নিকটবর্ত্তী হইয়া পর্ব্বতের তলে দাঁড়াইয়াছিলে; এবং সেই পর্ব্বত গগণের অভ্যন্তর পর্য্যন্ত অগ্নিতে জ্বলিতেছিল, অন্ধকার, মেঘ ও ঘোর তিমির ব্যাপ্ত ছিল। তখন অগ্নির মধ্য হইতে সদাপ্রভু তোমাদের কাছে কথা কহিলেন; তোমরা বাক্যের রব শুনিতেছিলে, কিন্তু কোন মূর্ত্তি দেখিতে পাইলে না, কেবল রব হইতেছিল। আর তিনি আপনার যে নিয়ম পালন করিতে তোমাদিগকে আজ্ঞা করিলেন, সেই নিয়ম অর্থাৎ দশ আজ্ঞা তোমাদিগকে আদেশ করিলেন, এবং দুইখান প্রস্তরফলকে লিখিলেন। তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে তোমাদের পালনীয় বিধি ও শাসন সকল তোমাদিগকে শিক্ষা দিতে সদাপ্রভু সেই সময়ে আমাকে আজ্ঞা করিলেন। যে দিন সদাপ্রভু হোরেবে অগ্নির মধ্য হইতে তোমাদের সহিত কথা কহিতেছিলেন, সেই দিন তোমরা কোন মূর্ত্তি দেখ নাই; অতএব আপন আপন প্রাণের বিষয়ে অতিশয় সাবধান হও; পাছে তোমরা ভ্রষ্ট হইয়া আপনাদের জন্য কোন আকারের মূর্ত্তিতে ক্ষোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ কর; পাছে পুরুষের বা স্ত্রীর প্রতিকৃতি, পৃথিবীস্থ কোন পশুর প্রতিকৃতি, আকাশে উড্ডীয়মান কোন পক্ষীর প্রতিকৃতি, ভূচর কোন সরীসৃপের প্রতিকৃতি, অথবা ভূমির নীচস্থ জলচর কোন জন্তুর প্রতিকৃতি নির্ম্মাণ কর। আর আকাশের প্রতি চক্ষু তুলিয়া সূর্য্য, চন্দ্র ও তারা, আকাশের সমস্ত বাহিনী দেখিলে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যাহাদিগকে সমস্ত আকাশমণ্ডলের নীচে স্থিত সমস্ত জাতির জন্য বন্টন করিয়াছেন, পাছে ভ্রান্ত হইয়া তাহাদের কাছে প্রণিপাত কর ও তাহাদের সেবা কর। কিন্তু সদাপ্রভু তোমাদিগকে গ্রহণ করিয়াছেন, লৌহের হাফর হইতে, মিসর হইতে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার অধিকাররূপ প্রজা হও, যেমন অদ্য আছ। আর তোমাদের জন্য সদাপ্রভু আমার প্রতিও ক্রুদ্ধ হইয়া এই দিব্য করিয়াছেন যে, তিনি আমাকে যর্দ্দন পার হইতে দিবেন না, এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ অধিকারার্থে দিতেছেন, সেই উত্তম দেশে আমাকে প্রবেশ করিতে দিবেন না। বাস্তবিক এই দেশেই আমাকে মরিতে হইবে; আমি যর্দ্দন পার হইয়া যাইব না; কিন্তু তোমরা পার হইয়া সেই উত্তম দেশ অধিকার করিবে। তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সহিত যে নিয়ম স্থির করিয়াছেন, তাহা ভুলিয়া যাইও না, কোন বস্তুর মূর্ত্তিবিশিষ্ট ক্ষোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না; উহা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিষিদ্ধ। কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু গ্রাসকারী অগ্নিস্বরূপ; তিনি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর। সেই দেশে পুত্র পৌত্রগণের জন্ম দিয়া বহুকাল বাস করিলে পর যদি তোমরা ভ্রষ্ট হও, ও কোন বস্তুর মূর্ত্তিবিশিষ্ট ক্ষোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ কর, এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহা করিয়া তাঁহাকে অসন্তুষ্ট কর; তবে, আমি অদ্য তোমাদের বিরুদ্ধে স্বর্গ মর্ত্ত্যকে সাক্ষী মানিয়া কহিতেছি, তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশ হইতে শীঘ্র নিঃশেষে বিনষ্ট হইবে, তথায় বহুকাল অবস্থিতি করিবে না, কিন্তু নিঃশেষে উচ্ছিন্ন হইবে। আর সদাপ্রভু জাতিগণের মধ্যে তোমাদিগকে ছিন্ন ভিন্ন করিবেন; যেখানে সদাপ্রভু তোমাদিগকে লইয়া যাইবেন, সেই জাতিগণের মধ্যে তোমরা অল্পসংখ্যক হইয়া অবশিষ্ট থাকিবে। আর তোমরা সেখানে মনুষ্যের হস্তকৃত দেবগণের—দর্শনে, শ্রবণে, ভোজনে ও আঘ্রাণে অসমর্থ কাষ্ঠ ও প্রস্তরখণ্ডের—সেবা করিবে। কিন্তু সেখানে থাকিয়া যদি তোমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, তবে তাঁহার উদ্দেশ পাইবে; সমস্ত হৃদয়ের সহিত ও সমস্ত প্রাণের সহিত তাঁহার অন্বেষণ করিলেই পাইবে। যখন তোমার সঙ্কট উপস্থিত হয়, এবং এই সমস্ত তোমার প্রতি ঘটে, তখন সেই ভাবী কালে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিবে, ও তাঁহার রবে অবধান করিবে। কারণ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু কৃপাময় ঈশ্বর; তিনি তোমাকে ত্যাগ করিবেন না, তোমাকে বিনাশ করিবেন না, এবং দিব্য দ্বারা তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে যে নিয়ম করিয়াছেন, তাহা ভুলিয়া যাইবেন না। কারণ, পৃথিবীতে ঈশ্বর কর্ত্তৃক মনুষ্যের সৃষ্টিদিনাবধি তোমার পূর্ব্বে যে কাল গিয়াছে, সেই পুরাতন কালকে এবং আকাশমণ্ডলের এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্তকে জিজ্ঞাসা কর, এই মহাকার্য্যের তুল্য কার্য্য কি আর কখনও হইয়াছে? কিম্বা এমন কি শুনা গিয়াছে? তোমার মত কি আর কোন জাতি অগ্নির মধ্য হইতে বাক্যবাদী ঈশ্বরের রব শুনিয়া বাঁচিয়াছে? কিম্বা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু মিসরে তোমাদের সাক্ষাতে যে সকল কর্ম্ম করিয়াছেন, ঈশ্বর কি তদনুসারে গিয়া পরীক্ষাসিদ্ধ প্রমাণ, চিহ্ন, অদ্ভুত লক্ষণ, যুদ্ধ, বলবান্‌ হস্ত, বিস্তারিত বাহু ও ভয়ঙ্কর মহামহাকর্ম্ম দ্বারা অন্য জাতির মধ্য হইতে আপনার জন্য এক জাতি গ্রহণ করিতে উপক্রম করিয়াছেন? সদাপ্রভুই ঈশ্বর, তিনি ব্যতীত আর কেহ নাই, ইহা যেন তুমি জ্ঞাত হও, তন্নিমিত্তে ঐ সকল তোমাকেই প্রদর্শিত হইল। উপদেশ দিবার জন্য তিনি স্বর্গ হইতে তোমাকে আপন রব শুনাইলেন, ও পৃথিবীতে তোমাকে আপন মহা অগ্নি দেখাইলেন, এবং তুমি অগ্নির মধ্য হইতে তাঁহার বাক্য শুনিতে পাইলে। তিনি তোমার পিতৃপুরুষদিগকে প্রেম করিতেন, তাই তাঁহাদের পরে তাঁহাদের বংশকেও মনোনীত করিলেন, এবং আপন শ্রীমুখ ও মহাপরাক্রম দ্বারা তোমাকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিলেন; যেন তোমা অপেক্ষা মহান্‌ ও বিক্রমী জাতিদিগকে তোমার সম্মুখ হইতে দূর করিয়া তাহাদের দেশে তোমাকে প্রবেশ করান, ও অধিকারার্থে তোমাকে সে দেশ দেন, যেমন অদ্য [দেখিতেছ]। অতএব অদ্য জ্ঞাত হও, মনে রাখ যে, উপরিস্থ স্বর্গে ও নীচস্থ পৃথিবীতে সদাপ্রভুই ঈশ্বর, অন্য কেহ নাই। আর তোমার মঙ্গল ও তোমার ভাবী সন্তানগণের মঙ্গল যেন হয়, এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে ভূমি চিরকালের জন্য দিতেছেন, তাহার উপরে যেন তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয়, এই জন্য আমি তাঁহার যে সকল বিধি ও আজ্ঞা অদ্য তোমাকে আদেশ করিলাম, তাহা পালন করিও। তৎকালে মোশি যর্দ্দনের পারে সূর্য্যোদয়ের দিকে তিনটী নগর পৃথক করিলেন; যেন নরহন্তা সেখানে পলায়ন করিতে পারে; যে কেহ আপন প্রতিবাসীকে পূর্ব্বে দ্বেষ না করিয়া অজ্ঞানতঃ বধ করে, সে যেন এই সকলের মধ্যে কোন নগরে পলাইয়া বাঁচিতে পারে; নগর তিনটী এই এই, রূবেণীয়দের জন্য সমভূমিতে প্রান্তরস্থ বেৎসর, গাদীয়দের জন্য গিলিয়দস্থিত রামোৎ, এবং মনঃশীয়দের জন্য বাশনস্থিত গোলন। মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে এই ব্যবস্থা স্থাপন করিয়াছিলেন; মিসর হইতে বাহির হইয়া আসিলে মোশি যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে, বৈৎ-পিয়োরের সম্মুখস্থ উপত্যকাতে, হিষ্‌বোন-নিবাসী ইমোরীয় রাজা সীহোনের দেশে ইস্রায়েল-সন্তানগণের কাছে এই সকল প্রমাণবাক্য, বিধি ও শাসন বিবৃত করিয়াছিলেন। মিসর হইতে বাহির হইয়া আসিলে মোশি ও ইস্রায়েল-সন্তানগণ সেই রাজাকে আঘাত করিয়াছিলেন; এবং তাঁহার ও বাশনের রাজা ওগের দেশ, যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে সূর্য্যোদয়ের দিকে ইমোরীয়দের এই দুই রাজার দেশ, অর্ণোন উপত্যকার সীমাস্থ অরোয়ের অবধি সীওন পর্ব্বত অর্থাৎ হর্মোণ পর্য্যন্ত সমস্ত দেশ, এবং পিস্‌গা-পার্শ্বের অধঃস্থিত অরাবা তলভূমির সমুদ্র পর্য্যন্ত যর্দ্দনের পূর্ব্বপারস্থ সমস্ত অরাবা তলভূমি অধিকার করিয়াছিলেন। তখন মোশি সমস্ত ইস্রায়েলকে ডাকিলেন, ও তাহাদিগকে কহিলেন, হে ইস্রায়েল, আমি তোমাদের কর্ণগোচরে অদ্য যে সকল বিধি ও শাসন বলি, সে সকল শুন, তোমরা তাহা শিক্ষা কর, ও যত্নপূর্ব্বক পালন কর। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হোরেবে আমাদের সহিত এক নিয়ম করিয়াছেন। সদাপ্রভু আমাদের পিতৃপুরুষদের সহিত সেই নিয়ম করেন নাই, কিন্তু অদ্য এই স্থানে সকলে জীবিত আছি যে আমরা, আমাদেরই সহিত করিয়াছেন। সদাপ্রভু পর্ব্বতে অগ্নির মধ্য হইতে তোমাদের সহিত সম্মুখাসম্মুখি হইয়া কথা বলিলেন। সেই সময়ে আমিই তোমাদিগকে সদাপ্রভুর বাক্য জ্ঞাত করিবার জন্য সদাপ্রভুর ও তোমাদের মধ্যে দণ্ডায়মান ছিলাম; কেননা অগ্নি হইতে ভীত হওয়াতে তোমরা পর্ব্বতে উঠ নাই। তিনি বলিলেন, আমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর দেশ হইতে, দাস-গৃহ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিলেন। আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক। তুমি আপনার নিমিত্তে ক্ষোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলে, যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিও না; তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না, এবং তাহাদের সেবা করিও না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর; আমি পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল সন্তানদিগের উপরে বর্ত্তাই, যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, তাহাদের তৃতীয় চতুর্থ পুরুষ পর্য্যন্ত বর্ত্তাই; কিন্তু যাহারা আমাকে প্রেম করে, ও আমার আজ্ঞা সকল পালন করে, আমি তাহাদের সহস্র [পুরুষ] পর্য্যন্ত দয়া করি। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম অনর্থক লইও না, কেননা যে কেহ তাঁহার নাম অনর্থক লয়, সদাপ্রভু তাহাকে নির্দ্দোষ করিবেন না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে বিশ্রামদিন পালন করিয়া পবিত্র করিও। ছয় দিন শ্রম করিও, আপনার সমস্ত কার্য্য করিও; কিন্তু সপ্তম দিন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামদিন; সেই দিন তুমি, কি তোমার পুত্র, কি কন্যা, কি তোমার দাস কি দাসী, কি তোমার গোরু, কি গর্দ্দভ, কি অন্য কোন পশু, কি তোমার পুরদ্বারের মধ্যবর্ত্তী বিদেশী, কেহ কোন কার্য্য করিও না; তোমার দাস ও তোমার দাসী যেন তোমার ন্যায় বিশ্রাম পায়। স্মরণে রাখিও, মিসর দেশে তুমি দাস ছিলে, কিন্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু বলবান্‌ হস্ত ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা তথা হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিলেন; এই জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু বিশ্রামদিন পালন করিতে তোমাকে আজ্ঞা করিয়াছেন। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও; যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দেন, সেই দেশে তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয় ও তুমি মঙ্গল প্রাপ্ত হও। নরহত্যা করিও না। ব্যভিচার করিও না। চুরি করিও না। তুমি প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না। তোমার প্রতিবাসীর স্ত্রীতে লোভ করিও না; প্রতিবাসীর গৃহে কি ক্ষেত্রে, কিম্বা তাহার দাসে কি দাসীতে, কিম্বা তাহার গোরুতে কি গর্দ্দভে, প্রতিবাসীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না। সদাপ্রভু পর্ব্বতে অগ্নির, মেঘের ও ঘোর অন্ধকারের মধ্য হইতে তোমাদের সমস্ত সমাজের নিকটে এই সমস্ত বাক্য মহারবে বলিয়াছিলেন, আর কিছুই বলেন নাই। পরে তিনি এই সমস্ত কথা দুইখান প্রস্তরফলকে লিখিয়া আমাকে দিয়াছিলেন। কিন্তু যখন তোমরা অন্ধকারের মধ্য হইতে সেই রব শুনিতে পাইলে, এবং অগ্নিতে পর্ব্বত জ্বলিতেছিল, তখন তোমরা, তোমাদের বংশাধ্যক্ষগণ ও প্রাচীনগণ সকলে আমার নিকটে আসিয়া কহিলে, দেখ, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের কাছে আপন প্রতাপ ও মহিমা প্রদর্শন করিলেন, এবং আমরা অগ্নির মধ্য হইতে তাঁহার রব শুনিতে পাইলাম; মনুষ্যের সহিত ঈশ্বর কথা কহিলেও সে বাঁচিতে পারে, ইহা আমরা অদ্য দেখিলাম। কিন্তু আমরা এখন কেন মরিব? ঐ মহা-অগ্নি ত আমাদিগকে গ্রাস করিবে; আমরা যদি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রব আবার শুনি, তবে মারা পড়িব। কেননা যাহারা মাংসময়, তাহাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, আমাদের ন্যায় অগ্নির মধ্য হইতে বাক্যবাদী জীবৎ ঈশ্বরের রব শুনিয়া বাঁচিয়াছে? তুমিই নিকটে গিয়া আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে সমস্ত কথা কহেন, তাহা শুন; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যাহ যাহা বলিবেন, সেই সমস্ত কথা তুমি আমাদিগকে বলিও; আমরা তাহা শুনিয়া পালন করিব। তোমরা যখন আমাকে এই কথা কহিলে, তখন সদাপ্রভু তোমাদের সেই বাক্যের রব শুনিলেন; আর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, এই লোকেরা তোমাকে যাহা যাহা বলিয়াছে, সেই বাক্যের রব আমি শুনিলাম; উহারা যাহা যাহা বলিয়াছে, সে সমস্ত ভালই বলিয়াছে। আহা, সর্ব্বদা আমাকে ভয় করিতে ও আমার আজ্ঞা সকল পালন করিতে যদি উহাদের এইরূপ মন থাকে, তবে উহাদের ও উহাদের সন্তানদের চিরস্থায়ী মঙ্গল হইবে। তুমি যাও, উহাদিগকে আপন আপন তাম্বুতে ফিরিয়া যাইতে বল। কিন্তু তুমি আমার নিকটে এই স্থানে দাঁড়াও, তুমি উহাদিগকে যাহা যাহা শিক্ষা দিবে, আমি তোমাকে সেই সমস্ত আজ্ঞা, বিধি ও শাসন বলিয়া দিই; যেন আমি যে দেশ অধিকারার্থে উহাদিগকে দিতেছি, সেই দেশে উহারা তাহা পালন করে। অতএব তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যেমন আজ্ঞা করিলেন, তাহা যত্নপূর্ব্বক পালন করিবে, তাহার দক্ষিণে কি বামে ফিরিবে না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে যে পথে চলিবার আজ্ঞা দিলেন, সেই সমস্ত পথে চলিবে; যেন তোমরা বাঁচিতে পার ও তোমাদের মঙ্গল হয়, এবং যে দেশ তোমরা অধিকার করিবে, তথায় তোমাদের দীর্ঘ পরমায়ু হয়। তোমাদিগকে শিক্ষা দিবার নিমিত্তে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাকে এই আজ্ঞা, ও এই এই বিধি ও শাসন আদেশ করিয়াছেন; যেন তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে সে সমস্ত পালন কর; যেন আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিয়া তুমি, তোমার পুত্র ও তোমার পৌত্রাদি যাবজ্জীবন আমার আজ্ঞাপিত তাঁহার এই আজ্ঞা ও বিধি সকল পালন কর, এইরূপে যেন তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয়। অতএব হে ইস্রায়েল, শুন, এ সমস্ত যত্নপূর্ব্বক পালন করিও, তাহাতে তোমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যেরূপ বলিয়াছেন, তদনুসারে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে তোমার মঙ্গল হইবে ও তোমরা অতিশয় বর্দ্ধিষ্ণু হইবে। হে ইস্রায়েল শুন; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই সদাপ্রভু; আর তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে। আর এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে। আর তোমার হস্তে চিহ্নস্বরূপে সে সকল বাঁধিয়া রাখিবে, ও সে সকল ভূষণস্বরূপে তোমার দুই চক্ষুর মধ্যস্থানে থাকিবে। আর তোমার গৃহদ্বারের কপালে ও তোমার বহির্দ্বারে তাহা লিখিয়া রাখিবে। তোমার পিতৃপুরুষ অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের কাছে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতে শপথ করিয়াছেন, সেই দেশে তিনি তোমাকে উপস্থিত করিলে পর তুমি যাহা গাঁথ নাই, এমন বৃহৎ বৃহৎ ও সুন্দর সুন্দর নগর, এবং যাহাতে কিছুই সঞ্চয় কর নাই, উত্তম উত্তম দ্রব্যে পরিপূর্ণ এমন সকল গৃহ, ও যাহা খুদ নাই, এমন সকল খনিত কূপ, এবং যাহা প্রস্তুত কর নাই, এমন সকল দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও জিতক্ষেত্র পাইয়া যখন তুমি ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইবে, তৎকালে আপনার বিষয়ে সাবধান থাকিও, যিনি মিসর দেশ হইতে, দাস-গৃহ হইতে, তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই সদাপ্রভুকে ভুলিয়া যাইও না। তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকেই ভয় করিবে, তাঁহারই সেবা করিবে, ও তাঁহারই নাম লইয়া দিব্য করিবে। তোমরা অন্য দেবগণের, চারিদিকের জাতিদের দেবগণের অনুগামী হইও না; কেননা তোমার মধ্যবর্ত্তী তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর। সাবধান, পাছে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ক্রোধ তোমার প্রতিকূলে প্রজ্বলিত হয়, আর তিনি ভূমণ্ডল হইতে তোমাকে উচ্ছিন্ন করেন। তোমরা মঃসাতে যেমন করিয়াছিলে, তেমনি আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর পরীক্ষা করিও না। তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদিষ্ট আজ্ঞা, প্রমাণ বাক্য ও বিধি সকল যত্নপূর্ব্বক পালন করিবে। আর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য ও উত্তম, তাহাই করিবে, যেন তোমার মঙ্গল হয়; এবং সদাপ্রভু যে দেশের বিষয়ে তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে এই দিব্য করিয়াছেন যে, তিনি তোমার সম্মুখ হইতে তোমার সমুদয় শত্রু দূরীকৃত করিবেন, যেন তুমি সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে সেই উত্তম দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করিতে পার। ভাবী কালে যখন তোমার সন্তান জিজ্ঞাসা করিবে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে সকল প্রমাণবাক্য, বিধি ও শাসন দিয়াছেন, সে সকল কি? তখন তুমি আপন সন্তানকে বলিবে, আমরা মিসর দেশে ফরৌণের দাস ছিলাম, আর সদাপ্রভু বলবান্‌ হস্ত দ্বারা মিসর হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন; এবং আমাদের সাক্ষাতে সদাপ্রভু মিসরে, ফরৌণে ও তাঁহার সমস্ত কুলে মহৎ ও ক্লেশদায়ক নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইলেন। আর তিনি আমাদিগকে তথা হইতে বাহির করিয়া আনিলেন, যেন আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে দেশের বিষয় দিব্য করিয়াছিলেন, সেই দেশ আমাদিগকে দিবার জন্য তথায় পৌঁছাইয়া দেন। আর সদাপ্রভু আমাদিগকে এই সমস্ত বিধি পালন করিতে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে আজ্ঞা করিলেন, যেন যাবজ্জীবন আমাদের মঙ্গল হয়, আর তিনি অদ্যকার মত যেন আমাদিগকে জীবিত রাখেন। আর আমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাঁহার সম্মুখে এই সমস্ত বিধি যত্নপূর্ব্বক পালন করিলে আমাদের ধার্ম্মিকতা হইবে। তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, সেই দেশে যখন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে লইয়া যাইবেন, ও তোমার সম্মুখ হইতে অনেক জাতিকে, হিত্তীয়, গির্গাশীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়, তোমা হইতে বৃহৎ ও বলবান্‌ এই সাত জাতিকে, দূর করিবেন; আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন তোমার সম্মুখে তাহাদিগকে সমর্পণ করিবেন, এবং তুমি তাহাদিগকে আঘাত করিবে, তখন তাহাদিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিবে; তাহাদের সহিত কোন নিয়ম করিবে না, বা তাহাদের প্রতি দয়া করিবে না। আর তাহাদের সহিত বিবাহ-সম্বন্ধ করিবে না; তুমি তাহার পুত্রকে আপনার কন্যা দিবে না, ও আপন পুত্রের জন্য তাহার কন্যা গ্রহণ করিবে না। কেননা সে তোমার সন্তানকে আমার অনুগমন হইতে ফিরাইবে, আর তাহারা অন্য দেবগণের সেবা করিবে; তাই তোমাদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, এবং তিনি তোমাকে শীঘ্র বিনষ্ট করিবেন। কিন্তু তোমরা তাহাদের প্রতি এইরূপ ব্যবহার করিবে; তাহাদের যজ্ঞবেদি সকল উৎপাটন করিবে, তাহাদের স্তম্ভ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, তাহাদের আশেরামূর্ত্তি সকল ছেদন করিবে, এবং তাহাদের ক্ষোদিত প্রতিমা সকল অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে। কেননা তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পবিত্র প্রজা; ভূতলে যত জাতি আছে, সে সকলের মধ্যে আপনার নিজস্ব প্রজা করিবার জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকেই মনোনীত করিয়াছেন। অন্য সকল জাতি অপেক্ষা তোমরা সংখ্যাতে অধিক, এই জন্য যে সদাপ্রভু তোমাদিগকে স্নেহ করিয়াছেন ও মনোনীত করিয়াছেন, তাহা নয়; কেননা সমস্ত জাতির মধ্যে তোমরা অল্পসংখ্যক ছিলে। কিন্তু সদাপ্রভু তোমাদিগকে প্রেম করেন, এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে দিব্য করিয়াছেন, তাহা রক্ষা করেন, তন্নিমিত্তে সদাপ্রভু বলবান্‌ হস্ত দ্বারা তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, এবং দাসগৃহ হইতে, মিসর-রাজ ফরৌণের হস্ত হইতে, তোমাদিগকে মুক্ত করিয়াছেন। অতএব তুমি জ্ঞাত হও, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুই ঈশ্বর; তিনি বিশ্বসনীয় ঈশ্বর, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, ও তাঁহার আজ্ঞা পালন করে, তাহাদের পক্ষে সহস্র পুরুষ পর্য্যন্ত নিয়ম ও দয়া রক্ষা করেন। কিন্তু যাহারা তাঁহাকে দ্বেষ করে, তাহাদিগকে সংহার করিতে তাহাদের সাক্ষাতেই তাহাদিগকে প্রতিফল দেন; তিনি তাঁহার বিদ্বেষীর বিষয়ে বিলম্ব করেন না, তাহার সাক্ষাতেই তাহাকে প্রতিফল দেন। অতএব আমি অদ্য তোমাকে যে আজ্ঞা, ও যে সকল বিধি ও ব্যবস্থা বলি, সে সকল যত্নপূর্ব্বক পালন করিবে। তোমরা যদি এই সকল শাসন শুন, এ সমস্ত রক্ষা ও পালন কর, তবে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে যে নিয়ম ও দয়ার বিষয়ে দিব্য করিয়াছেন, তোমার পক্ষে তাহা রক্ষা করিবেন; এবং তিনি তোমাকে প্রেম করিবেন, আশীর্ব্বাদ করিবেন ও বর্দ্ধিষ্ণু করিবেন; আর তিনি যে দেশ তোমাকে দিতে তোমার পিতৃপরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছেন, সেই দেশে তোমার শরীরের ফল, তোমার ভূমির ফল, তোমার শস্য, তোমার দ্রাক্ষারস, তোমার তৈল, তোমার গোরুদের বৎস ও তোমার মেষীদের শাবক, এই সকলেতে আশীর্ব্বাদ করিবেন। সকল জাতির মধ্যে তুমি আশীঃপ্রাপ্ত হইবে, তোমার মধ্যে কি তোমার পশুগণের মধ্যে কোন পুরুষ কিম্বা কোন স্ত্রী নিঃসন্তান হইবে না। আর সদাপ্রভু তোমা হইতে সমস্ত ব্যাধি দূর করিবেন; এবং মিস্রীয়দের যে সকল উৎকট রোগ তুমি জ্ঞাত আছ, তাহা তোমাকে দিবেন না, কিন্তু তোমার সমুদয় বিদ্বেষীকে দিবেন। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার হস্তে যে সমস্ত জাতিকে সমর্পণ করিবেন, তুমি তাহাদিগকে কবলিত করিবে; তোমার চক্ষু তাহাদের প্রতি দয়া না করুক, এবং তুমি তাহাদের দেবগণের সেবা করিও না, কেননা তাহা তোমার ফাঁদস্বরূপ। যদি তুমি মনে মনে বল, এই জাতিগণ আমা হইতেও বহুসংখ্যক, আমি কেমন করিয়া ইহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিব? তুমি তাহাদের হইতে ভীত হইও না; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু ফরৌণের ও সমস্ত মিসরের প্রতি যাহা করিয়াছেন, আর পরীক্ষাসিদ্ধ যে সকল প্রমাণ তুমি স্বচক্ষে দেখিয়াছ, এবং যে সকল চিহ্ন, অদ্ভুত লক্ষণ, এবং যে বলবান্‌ হস্ত ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই সকল নিশ্চয়ই স্মরণে রাখিবে; তুমি যাহাদিগকে ভয় করিতেছ, সেই সমস্ত জাতির প্রতি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তদ্রূপ করিবেন। তদ্ভিন্ন যাহারা অবশিষ্ট থাকিয়া তোমা হইতে আপনাদিগকে গোপন করিবে, যাবৎ তাহাদের বিনাশ না হয়, তাবৎ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদের মধ্যে ভিমরুল প্রেরণ করিবেন। তুমি তাহাদের হইতে ত্রাসযুক্ত হইও না, কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী, তিনি মহান্‌ ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সম্মুখ হইতে ঐ জাতিগণকে অল্পে অল্পে দূর করিবেন; তুমি তাহাদিগকে সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করিতে পারিবে না, পাছে তোমার প্রতিকূলে বন্যপশুগণ বর্দ্ধিত হয়। কিন্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সম্মুখে তাহাদিগকে সমর্পণ করিবেন; এবং যে পর্য্যন্ত তাহারা বিনষ্ট না হয়, তাবৎ মহাব্যাকুলতায় তাহাদিগকে ব্যাকুল করিবেন। আর তিনি তাহাদের রাজগণকে তোমার হস্তগত করিবেন, এবং তুমি আকাশমণ্ডলের নীচ হইতে তাহাদের নাম লোপ করিবে; যে পর্য্যন্ত তাহাদিগকে বিনষ্ট না করিবে, তাবৎ তোমার সম্মুখে কেহ দাঁড়াইতে পারিবে না। তোমরা তাহাদের ক্ষোদিত দেবপ্রতিমা সকল অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে; তুমি যেন ফাঁদে না পড়, এই জন্য তাহাদের গাত্রের রৌপ্য কি স্বর্ণে লোভ করিবে না, ও আপনার জন্য তাহা গ্রহণ করিবে না, কেননা তাহা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘৃণিত বস্তু; আর তুমি ঘৃণিত বস্তু আপন গৃহে আনিবে না, পাছে তাহার মত বর্জ্জিত হও; কিন্তু তাহা অতিশয় ঘৃণা করিবে, ও অতিশয় অবজ্ঞা করিবে, যেহেতুক তাহা বর্জ্জনীয় বস্তু। অদ্য আমি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিতেছি, তোমরা যত্নপূর্ব্বক সে সকল পালন করিবে, যেন বাঁচিতে পার ও বৃদ্ধি পাও, এবং সদাপ্রভু যে দেশের বিষয়ে তোমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছেন, সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার কর। আর তুমি সেই সমস্ত পথ স্মরণে রাখিবে, যে পথে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে এই চল্লিশ বৎসর প্রান্তরে যাত্রা করাইয়াছেন, যেন তোমার পরীক্ষা করিবার নিমিত্তে, অর্থাৎ তুমি তাঁহার আজ্ঞা পালন করিবে কি না, এই বিষয়ে তোমার মনে কি আছে জানিবার নিমিত্তে তোমাকে নত করেন। তিনি তোমাকে নত করিলেন, ও তোমাকে ক্ষুধিত করিয়া তোমার অজ্ঞাত ও তোমার পিতৃপুরুষদের অজ্ঞাত মান্না দিয়া প্রতিপালন করিলেন; যেন তিনি তোমাকে জানাইতে পারেন যে, মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচে না, কিন্তু সদাপ্রভুর মুখ হইতে যাহা যাহা নির্গত হয়, তাহাতেই মনুষ্য বাঁচে। এই চল্লিশ বৎসর তোমার গাত্রে তোমার বস্ত্র জীর্ণ হয় নাই, ও তোমার পা ফুলে নাই। আর মনে বুঝিয়া দেখ, মনুষ্য যেমন আপন পুত্রকে শাসন করে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে তদ্রূপ শাসন করেন। আর তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞা সকল পালন করিয়া তাঁহার পথে গমন করিবে, ও তাঁহাকে ভয় করিবে। কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে এক উত্তম দেশে লইয়া যাইতেছেন, সেই দেশে উপত্যকা ও পর্ব্বত হইতে নির্গত জলস্রোত, উনুই ও গভীর জলাশয় আছে; সেই দেশে গোধূম, যব, দ্রাক্ষালতা, ডুমুর গাছ ও দাড়িম্ব, এবং তৈলদায়ক জিতবৃক্ষ ও মধু উৎপন্ন হয়; সেই দেশে আহারের বিষয়ে ব্যয়কুণ্ঠ হইতে হইবে না, তোমার কোন বস্তুর অভাব হইবে না; সেই দেশের প্রস্তর লৌহ, ও তথাকার পর্ব্বত হইতে তুমি পিত্তল খুদিবে। আর তুমি ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইবে, এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত সেই উত্তম দেশের নিমিত্ত তাঁহার ধন্যবাদ করিবে। সাবধান, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া যাইও না; আমি অদ্য তাঁহার যে সকল আজ্ঞা, শাসন ও বিধি তোমাকে দিতেছি, সে সকল পালন করিতে ত্রুটি করিও না। তুমি ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইলে, উত্তম গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া বাস করিলে, তোমার গোমেষাদির পাল বৃদ্ধি পাইলে, তোমার স্বর্ণ ও রৌপ্য বৃদ্ধি পাইলে, এবং তোমার সকল সম্পত্তি বৃদ্ধি পাইলে, তোমার চিত্তকে দর্পিত হইতে দিও না; এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া যাইও না, যিনি মিসর দেশ হইতে, দাস-গৃহ হইতে, তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন; যিনি সেই ভয়ানক মহাপ্রান্তর দিয়া, জ্বালাদায়ী বিষধর ও বৃশ্চিকে পরিপূর্ণ নির্জল মরুভূমি দিয়া তোমাকে গমন করাইলেন, এবং চক্‌মকিপ্রস্তরময় শৈল হইতে তোমার নিমিত্তে জল নির্গত করিলেন; যিনি তোমার পিতৃপুরুষদের অজ্ঞাত মান্না দ্বারা প্রান্তরে তোমাকে প্রতিপালন করিলেন; যেন তিনি তোমার ভাবী মঙ্গলার্থে তোমাকে নত করিতে ও তোমার পরীক্ষা করিতে পারেন। আর মনে মনে বলিও না যে, আমারই পরাক্রমে ও বাহুবলে আমি এই সকল ঐশ্বর্য্য পাইয়াছি। কিন্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে স্মরণে রাখিবে, কেননা তিনি তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে আপনার যে নিয়ম বিষয়ক দিব্য করিয়াছেন, তাহা অদ্যকার মত স্থির করণার্থে তিনিই তোমাকে ঐশ্বর্য্য লাভের সামর্থ্য দিলেন। আর যদি তুমি কোন প্রকারে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া যাও, অন্য দেবগণের পশ্চাদগামী হও, তাহাদের সেবা কর, ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত কর, তবে আমি তোমাদের বিরুদ্ধে অদ্য এই সাক্ষ্য দিতেছি, তোমরা নিশ্চয়ই বিনষ্ট হইবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত না করিলে, তোমাদের সম্মুখে সদাপ্রভু যে জাতিগণকে বিনষ্ট করিতেছেন, তাহাদেরই ন্যায় তোমরা বিনষ্ট হইবে। হে ইস্রায়েল, শুন, তুমি আপনা হইতে মহান্‌ ও বলবান্‌ জাতিগণকে, গগনস্পর্শী প্রাচীরে বেষ্টিত বৃহৎ নগর সকলকে,অধিকারচ্যুত করিতে অদ্য যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ; সেই জাতি বৃহৎ ও দীর্ঘকায়, তাহারা অনাকীয়দের সন্তান; তুমি তাহাদিগকে জান, আর তাহাদের বিষয়ে তুমি ত এ কথা শুনিয়াছ যে, অনাক-সন্তানদের সম্মুখে কে দাঁড়াইতে পারে? কিন্তু অদ্য তুমি ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি গ্রাসকারী অগ্নিস্বরূপে তোমার অগ্রে অগ্রে যাইতেছেন; তিনি তাহাদিগকে সংহার করিবেন, তাহাদিগকে তোমার সম্মুখে নত করিবেন; তাহাতে সদাপ্রভু তোমাকে যেমন বলিয়াছেন, তেমনি তুমি তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত ও ত্বরায় বিনষ্ট করিবে। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন তোমার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিবেন, তখন মনে মনে এমন ভাবিও না যে, আমার ধার্ম্মিকতা প্রযুক্ত সদাপ্রভু আমাকে এই দেশ অধিকার করাইতে আনিয়াছেন। বাস্তবিক সেই জাতিদের দুষ্টতা প্রযুক্তই সদাপ্রভু তাহাদিগকে তোমার সম্মুখে অধিকারচ্যুত করিবেন। তোমার ধার্ম্মিকতা কিম্বা হৃদয়ের সরলতা প্রযুক্ত তুমি যে তাহাদের দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, তাহা নয়; কিন্তু সেই জাতিদের দুষ্টতা প্রযুক্ত, এবং তোমার পিতৃপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে দিব্য দ্বারা প্রতিশ্রুত আপনার বাক্য সফল করিবার অভিপ্রায়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সম্মুখে তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিবেন। অতএব জানিও যে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে তোমার ধার্ম্মিকতার জন্য অধিকারার্থে তোমাকে এই উত্তম দেশ দিবেন, তাহা নয়; কেননা তুমি শক্তগ্রীব জাতি। তুমি প্রান্তরের মধ্যে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে যেরূপ অসন্তুষ্ট করিয়াছিলে, তাহা স্মরণে রাখিও, ভুলিয়া যাইও না; মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিবার দিন অবধি এই স্থানে আগমন পর্য্যন্ত তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হইয়া আসিতেছ। তোমরা হোরেবেও সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিয়াছিলে, এবং সদাপ্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া তোমাদিগকে বিনাশ করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন। যখন আমি সেই দুই প্রস্তরফলক, অর্থাৎ তোমাদের সহিত সদাপ্রভুর কৃত নিয়মের দুই প্রস্তরফলক, গ্রহণার্থে পর্ব্বতে উঠিয়াছিলাম, তখন চল্লিশ দিবারাত্র পর্ব্বতে অবস্থিতি করিয়াছিলাম, অন্ন ভক্ষণ কি জল পান করি নাই। আর সদাপ্রভু আমাকে ঈশ্বরের অঙ্গুলি দ্বারা লিখিত সেই দুই প্রস্তর ফলক দিয়াছিলেন; পর্ব্বতে সমাজের দিবসে অগ্নির মধ্য হইতে সদাপ্রভু তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, সেই সমস্ত বাক্য ঐ দুই প্রস্তরে লিখিত ছিল। সেই চল্লিশ দিবারাত্রের শেষে সদাপ্রভু ঐ দুইখান প্রস্তরফলক অর্থাৎ নিয়মের প্রস্তরফলক আমাকে দিলেন। আর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উঠ, এ স্থান হইতে শীঘ্র নামিয়া যাও; কেননা তোমার যে প্রজাদিগকে তুমি মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছ, তাহারা ভ্রষ্ট হইয়াছে; আমার আজ্ঞাপিত পথ হইতে শীঘ্রই বিপথগামী হইয়াছে, আপনাদের জন্য ছাঁচে ঢালা এক প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়াছে। সদাপ্রভু আমাকে আরও কহিলেন, আমি এই লোকদিগকে দেখিয়াছি, আর দেখ, ইহারা শক্তগ্রীব জাতি; তুমি আমার নিকট হইতে সর, আমি ইহাদিগকে বিনষ্ট করিয়া আকাশমণ্ডলের নীচে হইতে ইহাদের নাম লোপ করি; আর আমি তোমাকে ইহাদের অপেক্ষা বলবান্‌ ও বৃহৎ জাতি করিব। তখন আমি ফিরিয়া পর্ব্বত হইতে নামিয়া আসিলাম, পর্ব্বত অগ্নিতে জ্বলিতেছিল। তখন আমার দুই হস্তে নিয়মের দুইখানা প্রস্তরফলক ছিল। পরে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছিলে, আপনাদের জন্য ছাঁচে ঢালা এক গোবৎস নির্ম্মাণ করিয়াছিলে; সদাপ্রভুর আজ্ঞাপিত পথ হইতে শীঘ্রই বিপথগামী হইয়াছিলে। তাহাতে আমি সেই দুইখান প্রস্তরফলক ধরিয়া আপনার দুই হস্ত হইতে ফেলিয়া তোমাদের সাক্ষাতে ভাঙ্গিলাম। আর তোমরা সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহা করিয়া যে পাপ করিয়াছিলে, তাঁহার অসন্তোষজনক তোমাদের সেই সমস্ত পাপের জন্য আমি পূর্ব্বকার ন্যায় চল্লিশ দিবারাত্র সদাপ্রভুর সম্মুখে উবুড় ইহয়া রহিলাম, অন্ন ভক্ষণ কি জল পান করি নাই। কেননা সদাপ্রভু তোমাদিগকে বিনষ্ট করিতে কোপাবিষ্ট হওয়াতে আমি তাঁহার ক্রোধে ও প্রচণ্ডতায় ভীত হইয়াছিলাম; কিন্তু সেই বারেও সদাপ্রভু আমার নিবেদন শুনিলেন। আর সদাপ্রভু হারোণকে বিনষ্ট করণার্থে তাঁহার উপরে অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন, কিন্তু আমি সেই সময়ে হারোণের জন্যও প্রার্থনা করিলাম। আর তোমাদের পাপ, সেই যে গোবৎস তোমরা নির্ম্মাণ করিয়াছিলে, তাহা লইয়া অগ্নিতে পোড়াইয়া দিলাম, ও যে পর্য্যন্ত তাহা ধূলিবৎ সূক্ষ্ম না হইল, তাবৎ পিষিয়া উত্তমরূপে চূর্ণ করিলাম; পরে পর্ব্বত হইতে প্রবাহিত জলস্রোতে তাহার ধূলি নিক্ষেপ করিলাম। আর তোমরা তবিয়েরাতে, মঃসাতে ও কিব্রোৎহত্তাবাতে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিলে। তাহার পর সদাপ্রভু যে সময়ে কাদেশ-বর্ণেয় হইতে তোমাদিগকে প্রেরণ করিয়া কহিলেন, তোমরা উঠিয়া যাও, আমি তোমাদিগকে যে দেশ দিয়াছি, তাহা অধিকার কর; তৎকালে তোমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারী হইলে, তাঁহাতে বিশ্বাস করিলে না, ও তাঁহার রবে কর্ণপাত করিলে না। তোমাদের সহিত আমার পরিচয়-দিন অবধি তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হইয়া আসিতেছ। যাহা হউক, আমি উবুড় হইয়া রহিলাম; ঐ চল্লিশ দিবারাত্র আমি সদাপ্রভুর সম্মুখে উবুড় হইয়া রহিলাম; কেননা সদাপ্রভু তোমাদিগকে বিনষ্ট করিবার কথা বলিয়াছিলেন। আর আমি সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করিলাম, হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আপনার অধিকারস্বরূপ যে প্রজাদিগকে আপন মহত্ত্বে মুক্ত করিয়াছ ও বলবান্‌ হস্ত দ্বারা মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছ, তাহাদিগকে বিনষ্ট করিও না। তোমার দাসগণকে, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে স্মরণ কর; এই লোকদের কঠিনতার, দুষ্টতার ও পাপের প্রতি দৃষ্টিপাত করিও না; পাছে তুমি আমাদিগকে যে দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছ, সেই দেশীয় লোকেরা এই কথা বলে, সদাপ্রভু উহাদিগকে যে দেশ দিতে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, সে দেশে লইয়া যাইতে পারেন নাই, এবং তাহাদিগকে ঘৃণা করিয়াছেন বলিয়াই তিনি প্রান্তরে বধ করিবার নিমিত্তে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। ইহারাই ত তোমার প্রজা ও তোমার অধিকার; ইহাদিগকে তুমি আপন মহাশক্তি ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা বাহির করিয়া আনিয়াছ। সেই সময়ে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি প্রথমের মত দুইখান প্রস্তরফলক তক্ষণ করিয়া আমার নিকটে পর্ব্বতে উঠিয়া আইস, এবং কাষ্ঠের এক সিন্দুক নির্ম্মাণ কর। তোমা কর্ত্তৃক ভগ্ন প্রথম দুই প্রস্তরফলকে যে যে বাক্য ছিল, তাহা আমি এই দুই প্রস্তরফলকে লিখিব, পরে তুমি তাহা সেই সিন্দুকে রাখিবে। তাহাতে আমি শিটীম কাষ্ঠের এক সিন্দুক নির্ম্মাণ করিলাম, এবং প্রথমের ন্যায় দুইখান প্রস্তরফলক তক্ষণ করিয়া সেই দুইখান প্রস্তরফলক হস্তে লইয়া পর্ব্বতে উঠিলাম। আর সদাপ্রভু সমাজের দিবসে পর্ব্বতে অগ্নির মধ্য হইতে যে দশ আজ্ঞা তোমাদিগকে বলিয়াছিলেন, তাহা প্রথম লিখনানুসারে ঐ দুইখান প্রস্তরফলকে লিখিয়া আমাকে দিলেন। পরে আমি মুখ ফিরাইয়া পর্ব্বত হইতে নামিয়া আমার প্রতি সদাপ্রভুর দত্ত অজ্ঞানুসারে সেই দুই প্রস্তরফলক আমার নির্ম্মিত সেই সিন্দুকে রাখিলাম, তদবধি তাহা সেই স্থানে রহিয়াছে। (ইস্রায়েল-সন্তানগণ বেরোৎ-বেনেয়াকন হইতে মোষেরোতে যাত্রা করিলে হারোণ সে স্থানে মরিলেন, এবং সেই স্থানে তাঁহার কবর হইল; এবং তাঁহার পুত্র ইলিয়াসর তাঁহার পরিবর্ত্তে যাজক হইলেন। সে স্থান হইতে তাহারা গুধগোদায় যাত্রা করিল, এবং গুধগোদা হইতে যট্‌বাথায় প্রস্থান করিল; এই স্থান জলস্রোতের দেশ। সেই সময়ে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক বহন করিতে, সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা করিবার জন্য তাঁহার সাক্ষাতে দাঁড়াইতে এবং তাঁহার নামে আশীর্ব্বাদ করিতে সদাপ্রভু লেবির বংশকে পৃথক্‌ করিলেন, অদ্যাপি সেইরূপ চলিয়া আসিতেছে। এই জন্য আপন ভ্রাতৃগণের মধ্যে লেবীয়দের কোন অংশ কিম্বা অধিকার হয় নাই; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে যাহা বলিয়াছেন, তদনুসারে সদাপ্রভুই তাহাদের অধিকার।) আর আমি প্রথম বারের ন্যায় চল্লিশ দিবারাত্র পর্ব্বতে থাকিলাম; এবং সেই বারেও সদাপ্রভু আমার নিবেদন শুনিলেন; সদাপ্রভু তোমাকে বিনষ্ট করিতে চাহিলেন না। পরে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উঠ, তুমি যাত্রার নিমিত্তে লোকদের অগ্রগামী হও, আমি তাহাদিগকে যে দেশ দিতে তাহাদের পিতৃপুরুষের কাছে দিব্য করিয়াছি, তাহারা সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করুক। এখন হে ইস্রায়েল, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার কাছে কি চাহেন? কেবল এই, যেন তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় কর, তাঁহার সকল পথে চল ও তাঁহাকে প্রেম কর, এবং তোমার সমস্ত হৃদয় ও তোমার সমস্ত প্রাণের সহিত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা কর, অদ্য আমি তোমার মঙ্গলার্থে সদাপ্রভুর যে যে আজ্ঞা ও বিধি তোমাকে দিতেছি, সেই সকল যেন পালন কর। দেখ, স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ এবং পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থ যাবতীয় বস্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর। কেবল তোমার পিতৃপুরুষদিগকে প্রেম করিতে সদাপ্রভুর সন্তোষ ছিল, আর তিনি তাহাদের পরে তাহাদের বংশকে অর্থাৎ অদ্যকার মত সর্ব্বজাতির মধ্যে তোমাদগিকে মনোনীত করিলেন। অতএব তোমরা আপন আপন হৃদয়ের ত্বগগ্র ছেদন কর, এবং আর শক্তগ্রীব হইও না। কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই ঈশ্বরগণের ঈশ্বর ও প্রভুদের প্রভু, তিনিই মহান্‌ বীর্য্যবান্‌ ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর; তিনি কাহারও মুখাপেক্ষা করেন না, ও উৎকোচ গ্রহণ করেন না। তিনি পিতৃহীনের ও বিধবার বিচার নিষ্পন্ন করেন, এবং বিদেশীকে প্রেম করিয়া অন্ন বস্ত্র দেন। অতএব তোমরা বিদেশীকে প্রেম করিও, কেননা মিসর দেশে তোমরাও বিদেশী ছিলে। তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিবে; তাঁহারই সেবা করিবে, তাঁহাতেই আসক্ত থাকিবে, ও তাঁহারই নামে দিব্য করিবে। তিনি তোমার প্রশংসা-ভূমি, তিনি তোমার ঈশ্বর; তুমি স্বচক্ষে যাহা যাহা দেখিয়াছ, সেই মহৎ ও ভয়ঙ্কর কর্ম্ম সকল তিনিই তোমার জন্য করিয়াছেন। তোমার পিতৃপুরুষেরা কেবল সত্তর প্রাণী মিসরে নামিয়া গিয়াছিল, কিন্তু এখন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে আকাশের তারার মত বহুসংখ্যক করিয়াছেন। অতএব তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে, এবং তাঁহার রক্ষণীয়, তাঁহার বিধি, তাঁহার শাসন ও তাঁহার আজ্ঞা সকল নিত্য নিত্য পালন করিবে। আর অদ্য জ্ঞাত হও, যেহেতুক তোমাদের বালকগণকে বলিতেছি না; তাহারা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কৃত শাস্তি জানে নাই ও দেখে নাই; তাঁহার মহত্ত্ব, তাঁহার বলবান্‌ হস্ত ও বিস্তারিত বাহু, এবং তাঁহার চিহ্ন সকল ও মিসরের মধ্যে মিসর-রাজ ফরৌণের প্রতি ও তাঁহার সমস্ত দেশের প্রতি তিনি যাহা যাহা করিলেন, তাঁহার সেই সকল কার্য্য; এবং মিস্রীয় সৈন্যের, অশ্বের ও রথের প্রতি তিনি যাহা করিলেন, তাহারা যখন তোমাদের পশ্চাতে ধাবিত হইল, তিনি যেরূপে সূফসাগরের জল তাহাদের উপরে বহাইলেন, এবং সদাপ্রভু তাহাদিগকে বিনষ্ট করিলেন, অদ্য তাহারা নাই; এবং এ স্থানে তোমাদের আগমন পর্য্যন্ত তোমাদের প্রতি তিনি প্রান্তরে যাহা যাহা করিয়াছেন; আর তিনি রূবেণের পুত্র ইলীয়াবের সন্তান দাথন ও অবীরামের প্রতি যাহা যাহা করিয়াছেন, ফলতঃ পৃথিবী যেরূপে আপন মুখ বিস্তার করিয়া সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্যে তাহাদিগকে, তাহাদের পরিজনগণকে, তাহাদের তাম্বু ও তাহাদের অধিকৃত সমস্ত সম্পত্তি গ্রাস করিল, এ সকল তাহারা দেখে নাই; কিন্তু সদাপ্রভুর কৃত সমস্ত মহৎ কর্ম্ম তোমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছ। অতএব অদ্য আমি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিতেছি, সেই সমস্ত আজ্ঞা পালন করিও, যেন তোমরা বলবান্‌ হও, এবং যে দেশ অধিকার করিবার জন্য পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার কর; আর যেন সদাপ্রভু তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে ও তাঁহাদের বংশকে যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছিলেন, সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে তোমাদের দীর্ঘকাল অবস্থিতি হয়। কারণ তোমরা যে মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছ, সেই দেশে তুমি বীজ বুনিয়া শাকের উদ্যানের ন্যায় পদ দ্বারা জল সেচন করিতে; কিন্তু তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, তাহা তদ্রূপ নয়। তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে পার হইয়া যাইতেছ, সে পর্ব্বত ও উপত্যকা-বিশিষ্ট দেশ, এবং আকাশের বৃষ্টির জল পান করে; সেই দেশের প্রতি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোযোগ আছে; বৎসরের আরম্ভ অবধি বৎসরের শেষ পর্য্যন্ত তাহার প্রতি নিরন্তর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টি থাকে। আর আমি অদ্য তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিতেছি, তোমরা যদি যত্নপূর্ব্বক তাহা শুনিয়া তোমাদের সমস্ত হৃদয় ও সমস্ত প্রাণের সহিত তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম ও তাঁহার সেবা কর, তবে আমি যথাসময়ে অর্থাৎ প্রথম ও শেষ বর্ষায় তোমাদের দেশে বৃষ্টি দান করিব, তাহাতে তুমি আপন শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈল সংগ্রহ করিতে পারিবে। আর আমি তোমার পশুগণের জন্য তোমার ক্ষেত্রে তৃণ দিব, এবং তুমি ভক্ষণ করিয়া তৃপ্ত হইবে। আপনাদের বিষয়ে সাবধান, পাছে তোমাদের হৃদয় ভ্রান্ত হয়, এবং তোমরা পথ ছাড়িয়া অন্য দেবগণের সেব কর ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত কর; করিলে তোমাদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, ও তিনি আকাশ রোধ করিবেন, তাহাতে বৃষ্টি হইবে না, ও ভূমি নিজ ফল প্রদান করিবে না, এবং সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, সেই উত্তম দেশ হইতে তোমরা ত্বরায় উচ্ছিন্ন হইবে। অতএব তোমরা আমার এই সকল বাক্য আপন আপন হৃদয়ে ও প্রাণে রাখিও, এবং চিহ্নরূপে আপন আপন হস্তে বাঁধিয়া রাখিও, এবং সে সকল ভূষণরূপে তোমাদের দুই চক্ষুর মধ্যে থাকিবে। আর তোমরা গৃহে উপবেশন ও পথে গমন কালে এবং শয়ন ও গাত্রোত্থান কালে ঐ সকল কথার প্রসঙ্গ করিয়া আপন আপন সন্তানদিগকে শিক্ষা দিও। আর তুমি আপন গৃহ-দ্বারের পার্শ্বকাষ্ঠে ও আপন দ্বারে তাহা লিখিয়া রাখিও। তাহাতে সদাপ্রভু তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে ভূমি দিতে দিব্য করিয়াছেন, সেই ভূমিতে তোমাদের আয়ুঃ ও তোমাদের সন্তানদের আয়ুঃ ভূমণ্ডলের উপরে আকাশমণ্ডলের আয়ুর ন্যায় বৃদ্ধি পাইবে। এই যে সমস্ত আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা যদি যত্নপূর্ব্বক তাহা পালন করিয়া তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার সমস্ত পথে চল, ও তাঁহাতে আসক্ত থাক; তবে সদাপ্রভু তোমাদের সম্মুখ হইতে এই সমস্ত জাতিকে অধিকারচ্যুত করিবেন; এবং তোমরা আপনাদের হইতে বৃহৎ ও বলবান্‌ জাতিদের উত্তরাধিকারী হইবে। তোমাদের পা যে যে স্থানে পড়িবে, সেই সেই স্থান তোমাদের হইবে; প্রান্তর ও লিবানোন অবধি, নদী অর্থাৎ ফরাৎ নদী অবধি পশ্চিম সমুদ্র পর্য্যন্ত তোমাদের সীমা হইবে। তোমাদের সম্মুখে কেহই দাঁড়াইতে পারিবে না; তোমরা যে দেশে পাদবিক্ষেপ করিবে, সেই দেশের সর্ব্বত্র তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন বাক্যানুসারে তোমাদের হইতে লোকদের ভয় ও ত্রাস উপস্থিত করিবেন। দেখ, অদ্য আমি তোমাদের সম্মুখে আশীর্ব্বাদ ও অভিশাপ রাখিলাম। অদ্য আমি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা জানাইলাম, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেই সকল আজ্ঞাতে যদি কর্ণপাত কর, তবে আশীর্ব্বাদ পাইবে। আর যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞাতে কর্ণপাত না কর, এবং আমি অদ্য তোমাদিগকে যে পথের বিষয়ে আজ্ঞা করিলাম, যদি সেই পথ ছাড়িয়া তোমাদের অজ্ঞাত অন্য দেবগণের পশ্চাতে গমন কর, তবে অভিশাপগ্রস্ত হইবে। আর তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, সেই দেশে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন তোমাকে প্রবেশ করাইবেন, তখন তুমি গরিষীম পর্ব্বতে ঐ আশীর্ব্বাদ, এবং এবল পর্ব্বতে ঐ অভিশাপ স্থাপন করিবে। সেই দুই পর্ব্বত যর্দ্দনের ওপারে, সূর্য্যাস্তপথের ওদিকে, অরাবা তলভূমিনিবাসী কনানীয়দের দেশে, গিল্‌গলের সম্মুখে, মোরির এলোন বনের নিকটে কি নয়? কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, সে দেশ অধিকার করণার্থে তোমরা তথায় প্রবেশ করিবার জন্য যর্দ্দন পার হইয়া যাইবে, দেশ অধিকার করিবে, ও তথায় বাস করিবে। আর আমি অদ্য তোমাদের সম্মুখে যে সকল বিধি ও শাসন রাখিলাম সে সকল যত্নপূর্ব্বক পালন করিবে। তোমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ অধিকারার্থে দিয়াছেন, সেই দেশে এই সকল বিধি ও শাসন, যত দিন পৃথিবীতে জীবিত থাকিবে, যত্নপূর্ব্বক পালন করিতে হইবে। তোমরা যে যে জাতিকে অধিকারচ্যুত করিবে, তাহারা উচ্চ পর্ব্বতের উপরে, পাহাড়ের উপরে ও হরিৎপর্ণ প্রত্যেক বৃক্ষের তলে যে যে স্থানে আপন আপন দেবতাদের সেবা করিয়াছে, সেই সকল স্থান তোমরা একেবারে বিনষ্ট করিবে। তোমরা তাহাদের যজ্ঞবেদি সকল উৎপাটন করিবে, তাহাদের স্তম্ভ সকল ভগ্ন করিবে, তাহাদের আশেরা-মূর্ত্তি সকল অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে, তাহাদের ক্ষোদিত দেবপ্রতিমা সকল ছেদন করিবে, এবং সেই স্থান হইতে তাহাদের নাম লোপ করিবে। তোমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি তদ্রূপ করিবে না। কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন নাম স্থাপনার্থে তোমাদের সমস্ত বংশের মধ্যে যে স্থান মনোনীত করিবেন, তাঁহার সেই নিবাসস্থান তোমরা অন্বেষণ করিবে, ও সেই স্থানে উপস্থিত হইবে। আর আপন আপন হোম, বলি, দশমাংশ, হস্তের উত্তোলনীয় উপহার, মানতের দ্রব্য, স্ব-ইচ্ছায় দত্ত নৈবেদ্য ও গোমেষাদি পালের প্রথমজাতদিগকে সেই স্থানে আনয়ন করিবে; আর সেই স্থানে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে ভোজন করিবে; এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হইতে প্রাপ্ত আশীর্ব্বাদানুসারে যে কিছুতে হস্তার্পণ করিবে, তাহাতেই সপরিবারে আনন্দ করিবে। এই স্থানে আমরা এখন প্রত্যেকে আপন আপন দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহা করিতেছি, তোমরা তদ্রূপ করিবে না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে বিশ্রামস্থান ও অধিকার দিতেছেন, তথায় তোমরা এখনও উপস্থিত হও নাই। কিন্তু যখন তোমরা যর্দ্দন পার হইয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত অধিকৃত দেশে বাস করিবে, এবং চারিদিকের সমস্ত শত্রু হইতে তিনি বিশ্রাম দিলে যখন তোমরা নির্ভয়ে বাস করিবে; তৎকালে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন নামের বাসার্থে যে স্থান মনোনীত করিবেন, সেই স্থানে তোমরা আমার আদিষ্ট সমস্ত দ্রব্য, আপন আপন হোম, বলি, দশমাংশ, হস্তের উত্তোলনীয় উপহার ও সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রতিশ্রুত মানতের উৎকৃষ্ট দ্রব্য সকল আনিবে। আর তোমরা, তোমাদের পুত্রকন্যাগণ ও তোমাদের দাসদাসীগণ, আর তোমাদের নগরদ্বারের মধ্যবর্ত্তী লেবীয়, যাহার অংশ ও অধিকার তোমাদের মধ্যে নাই, তোমরা সকলে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে আনন্দ করিবে। সাবধান, যে কোন স্থান দেখ, সেই স্থানেই তোমার হোমবলি উৎসর্গ করিও না; কিন্তু তোমার কোন এক বংশের মধ্যে যে স্থান সদাপ্রভু মনোনীত করিবেন, সেই স্থানেই তোমার হোমবলি উৎসর্গ করিবে ও সেই স্থানে আমার আদিষ্ট সকল কর্ম্ম করিবে। তথাপি যখন তোমার প্রাণের অভিলাষ হইবে, তখন তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত আশীর্ব্বাদানুসারে আপনার সমস্ত নগর-দ্বারের ভিতরে পশু বধ করিয়া মাংস ভোজন করিতে পারিবে; অশুচি কি শুচি লোক সকলেই কৃষ্ণসারের ও হরিণের মাংসের মত তাহা ভোজন করিতে পারিবে। কেবল তোমরা রক্ত ভোজন করিবে না; তুমি তাহা জলের ন্যায় ভূমিতে ঢালিয়া ফেলিবে। তোমার শস্যের, দ্রাক্ষারসের ও তৈলের দশমাংশ, গোমেষাদির প্রথমজাত, এবং যাহা মানত করিবে, সেই মানত-দ্রব্য, স্ব-ইচ্ছায় দত্ত নৈবেদ্য ও হস্তের উত্তোলনীয় উপহার, এই সকল তুমি আপন নগর-দ্বারের মধ্যে ভোজন করিতে পারিবে না। কিন্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে স্থান মনোনীত করিবেন, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে তুমি, তোমার পুত্রকন্যা, তোমার দাসদাসী ও তোমার নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী লেবীয়, সকলে তাহা ভোজন করিবে, এবং তুমি যে কিছুতে হস্তার্পণ করিবে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাতেই আনন্দ করিবে। সাবধান, তোমার দেশে যতকাল জীবিত থাক, লেবীয়কে ত্যাগ করিও না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন অঙ্গীকার করিয়াছেন, তদনুসারে যখন তোমার সীমা বিস্তার করিবেন, এবং মাংস ভক্ষণে তোমার প্রাণের অভিলাষ হইলে তুমি বলিবে, মাংস ভক্ষণ করিব, তখন তুমি প্রাণের অভিলাষানুসারে মাংস ভক্ষণ করিবে। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন নাম স্থাপনার্থে যে স্থান মনোনীত করিবেন, তাহা যদি তোমা হইতে বহু দূর হয়, তবে আমি যেমন বলিয়াছি, তদনুসারে তুমি সদাপ্রভুর দত্ত গোমেষাদি পাল হইতে পশু লইয়া বধ করিবে, ও আপন প্রাণের অভিলাষানুসারে নগর-দ্বারের ভিতরে ভোজন করিতে পারিবে। যেমন কৃষ্ণসার ও হরিণ ভক্ষণ করা যায়, তেমনি তাহা ভক্ষণ করিবে; অশুচি কি শুচি লোক, সকলেই তাহা ভক্ষণ করিবে। কেবল রক্তভোজন হইতে অতি সাবধান থাকিও, কেননা রক্তই প্রাণ; তুমি মাংসের সহিত প্রাণ ভোজন করিবে না। তুমি তাহা ভোজন করিবে না, জলের ন্যায় ভূমিতে ঢালিয়া ফেলিবে। তুমি তাহা ভোজন করিবে না; যেন সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহা করিলে তোমার মঙ্গল ও তোমার ভাবী সন্তানদের মঙ্গল হয়। কেবল তোমার যত পবিত্র বস্তু থাকে, এবং তোমার যত মানতের বস্তু থাকে, সেই সকল লইয়া সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে যাইবে; আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যজ্ঞবেদির উপরে তোমার হোমবলি, মাংস ও রক্ত উৎসর্গ করিবে, আর তোমার বলিসমূহের রক্ত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির উপরে ঢালা যাইবে, পরে তাহার মাংস ভোজন করিতে পারিবে। সাবধান হইয়া আমার আদিষ্ট এই সমস্ত বাক্য মান্য করিও, যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গোচরে যাহা উত্তম ও ন্যায্য, তাহা করিলে তোমার ও যুগানুক্রমে তোমার ভাবী সন্তানদের মঙ্গল হয়। তুমি যে জাতিগণকে অধিকারচ্যুত করিতে যাইতেছ, তাহাদিগকে যখন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সম্মুখ হইতে উচ্ছিন্ন করিবেন, ও তুমি তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়া তাহাদের দেশে বাস করিবে; তখন সাবধান থাকিও, পাছে তোমার সম্মুখ হইতে তাহাদের বিনাশ হইলে পর তুমি তাহাদের অনুগামী হইয়া ফাঁদে পড়; এবং পাছে তাহাদের দেবগণের অন্বেষণ করিয়া বল, এই জাতিগণ আপন আপন দেবগণের সেবা কিরূপে করে? আমিও সেইরূপ করিব। তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি তদ্রূপ করিবে না; কেননা তাহারা আপন আপন দেবগণের উদ্দেশে সদাপ্রভুর ঘৃণিত যাবতীয় কুকার্য্য করিয়া আসিয়াছে; এমন কি, তাহারা সেই দেবগণের উদ্দেশে আপন আপন পুত্রকন্যাগণকেও অগ্নিতে পোড়ায়। আমি যে কোন বিষয় তোমাদিগকে আজ্ঞা করি, তোমরা তাহাই যত্নপূর্ব্বক পালন করিবে; তুমি তাহাতে আর কিছু যোগ করিবে না, এবং তাহা হইতে কিছু হ্রাস করিবে না। তোমার মধ্যে কোন ভাববাদী কিম্বা স্বপ্নদর্শক উঠিয়া যদি তোমার জন্য কোন চিহ্ন কিম্বা অদ্ভুত লক্ষণ নিরূপণ করে; এবং সেই চিহ্ন কিম্বা অদ্ভুত লক্ষণ সফল হয়, যাহার সম্বন্ধে সে তোমার অজ্ঞাত অন্য দেবতাদের বিষয়ে তোমাদিগকে বলিয়াছিল, আইস, আমরা তাহাদের অনুগামী হই, ও তাহাদের সেবা করি, তবে তুমি সেই ভাববাদীর কিম্বা সেই স্বপ্নদর্শকের বাক্যে কর্ণপাত করিও না; কেননা তোমরা তোমাদের সমস্ত হৃদয়ের ও তোমাদের সমস্ত প্রাণের সহিত আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর কি না, তাহা জানিবার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের পরীক্ষা করেন। তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই অনুগামী হও, তাঁহাকেই ভয় কর, তাঁহারই আজ্ঞা পালন কর, তাঁহারই রবে অবধান কর, তাঁহারই সেবা কর, ও তাঁহাতেই আসক্ত থাক। আর সেই ভাববাদীর কিম্বা সেই স্বপ্নদর্শকের প্রাণদণ্ড করিতে হইবে; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, দাসগৃহ হইতে তোমাকে মুক্ত করিয়াছেন, তাঁহার বিরুদ্ধে সে বিপথগমনের কথা কহিয়াছে; এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে পথে গমন করিতে তোমাকে আজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা হইতে তোমাকে ভ্রষ্ট করা তাহার অভিপ্রায়। অতএব তুমি আপনার মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে। তোমার ভ্রাতা, তোমার সহোদর কিম্বা তোমার পুত্র কি কন্যা কিম্বা তোমার বক্ষের ভার্য্যা কিম্বা তোমার প্রাণতুল্য মিত্র যদি গোপনে তোমাকে প্রবৃত্তি দিয়া বলে, আইস, আমরা গিয়া অন্য দেবতাদের সেবা করি, তোমার অজ্ঞাত ও তোমার পিতৃপুরুষদের অজ্ঞাত কোন দেবতা, তোমার চতুর্দ্দিক্‌স্থিত নিকটবর্ত্তী কিম্বা তোমা হইতে দূরবর্ত্তী, পৃথিবীর এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত যে কোন জাতির যে কোন দেবতা হউক, তাহার বিষয়ে যদি এই কথা বলে, তবে তুমি সেই ব্যক্তির প্রস্তাবে সম্মত হইও না, তাহার কথায় কাণ দিও না; তোমার চক্ষু তাহার প্রতি দয়া করিবে না, তাহাকে কৃপা করিবে না, তাহাকে লুকাইয়া রাখিবে না। কিন্তু অবশ্য তুমি তাহাকে বধ করিবে; তাহাকে বধ করিবার জন্য প্রথমে তুমিই তাহার উপরে হস্তার্পণ করিবে, পরে সমস্ত লোক হস্তার্পণ করিবে। তুমি তাহাকে প্রস্তরাঘাত করিবে, যেন সে মরিয়া যায়; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর দেশ হইতে, দাসগৃহ হইতে, তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, তাঁহার অনুগমন হইতে সে তোমাকে ভ্রষ্ট করিতে চেষ্টা করিয়াছে। তাহাতে সমস্ত ইস্রায়েল তাহা শুনিবে, ভয় পাইবে, এবং তোমার মধ্যে তাদৃশ দুষ্কর্ম্ম আর করিবে না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে যে নিবাসনগর দিবেন, তাহার কোন নগর সম্বন্ধে যদি শুনিতে পাও যে, কতকগুলি পাষণ্ড তোমার মধ্য হইতে নির্গত হইয়া এই কথা বলিয়া আপন নগরনিবাসীদিগকে ভ্রষ্ট করিয়াছে, আইস, আমরা গিয়া অন্য দেবতাদের সেবা করি, যাহাদিগকে তোমরা জান না, তবে তুমি জিজ্ঞাসা করিবে, অনুসন্ধান করিবে, ও যত্নপূর্ব্বক প্রশ্ন করিবে; আর দেখ, তোমার মধ্যে ঈদৃশ ঘৃণার্হ দুষ্কর্ম্ম হইয়াছে, ইহা যদি সত্য ও নিশ্চিত হয়, তবে তুমি খড়গাধারে সেই নগরের নিবাসীদিগকে আঘাত করিবে, এবং নগর ও তাহার মধ্যস্থিত পশুশুদ্ধ সকলই খড়গধারে নিঃশেষে বিনষ্ট করিবে; আর তাহার লুটিত দ্রব্য সকল তাহার চকের মধ্যে সংগ্রহ করিয়া সেই নগর ও সেই সকল দ্রব্য সর্ব্বতোভাবে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবে; তাহাতে সেই নগর চিরকালীন ঢিবি হইয়া থাকিবে, তাহা পুনর্ব্বার নির্ম্মিত হইবে না। আর সেই বর্জ্জিত দ্রব্যের কিছুই তোমার হস্তে লগ্ন না থাকুক; যেন সদাপ্রভু আপন প্রচণ্ড ক্রোধ হইতে ফিরেন, এবং তিনি তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে যে শপথ করিয়াছেন, তদনুসারে তোমার প্রতি কৃপা ও করুণা করেন, ও তোমার বৃদ্ধি করেন; যখন তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিয়া, আমি অদ্য তোমাকে যে যে আজ্ঞা দিতেছি, তাঁহার সেই সমস্ত আজ্ঞা পালন করিবে, ও তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যথার্থ আচরণ করিবে। তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সন্তান; তোমরা মৃত লোকদের জন্য আপন আপন শরীর কাটকুট করিবে না, এবং ভ্রূমধ্যস্থল ক্ষৌরি করিবে না। কেননা তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পবিত্র প্রজা; ভূমণ্ডলস্থ সমস্ত জাতির মধ্য হইতে সদাপ্রভু আপনার নিজস্ব প্রজা করণার্থে তোমাকেই মনোনীত করিয়াছেন। তুমি কোন ঘৃণার্হ দ্রব্য ভোজন করিবে না। এই সকল পশু ভোজন করিতে পার; গোরু, মেষ এবং ছাগল, হরিণ, কৃষ্ণসার এবং বনগোরু, বনছাগল, বাতপ্রমী, পৃষত এবং সম্বর। আর পশুগণের মধ্যে যত পশু সম্পূর্ণ দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট ও জাওর কাটে, সেই সকল তোমরা ভোজন করিতে পার। কিন্তু যাহারা জাওর কাটে, কিম্বা দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট, তাহাদের মধ্যে এইগুলি ভোজন করিবে না; উষ্ট্র, শশক ও শাফন; কেননা তাহারা জাওর কাটে বটে, কিন্তু দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট নয়, তাহারা তোমাদের পক্ষে অশুচি; আর শূকর দ্বিখণ্ড খুরবিশিষ্ট বটে, কিন্তু জাওর কাটে না, সে তোমাদের পক্ষে অশুচি; তোমরা তাহাদের মাংস ভোজন করিবে না, তাহাদের শব স্পর্শও করিবে না। জলচর সকলের মধ্যে এই সকল তোমাদের খাদ্য; যাহাদের ডেনা ও আঁইস আছে, তাহাদিগকে ভোজন করিতে পার। কিন্তু যাহাদের ডেনা ও আঁইস নাই, তাহাদিগকে ভোজন করিবে না, তাহারা তোমাদের পক্ষে অশুচি। তোমরা সকল প্রকার শুচি পক্ষী ভোজন করিতে পার। কিন্তু এইগুলি ভোজন করিবে না; ঈগল, হাড়গিলা ও কূরল, গৃধ্র, চিল ও আপন আপন জাতি অনুসারে শঙ্করচিল, আর আপন আপন জাতি অনুসারে সকল প্রকার কাক, আর উষ্ট্রপক্ষী, রাত্রিশ্যেন, গাংচিল ও আপন আপন জাতি অনুসারে শ্যেন, এবং পেচক মহাপেচক ও দীর্ঘগল হংস; ক্ষুদ্র পানিভেলা, শকুনী ও মাছরাঙ্গা, এবং সারস ও আপন আপন জাতি অনুসারে বক, টিট্টিভ ও বাদুড়। আর পক্ষবিশিষ্ট যাবতীয় পোকাও তোমাদের পক্ষে অশুচি; এ সকল অখাদ্য। তোমরা সমস্ত শুচি পক্ষী ভোজন করিতে পার। তোমরা স্বয়ংমৃত কোন প্রাণীর মাংস ভোজন করিবে না; তোমার নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী কোন বিদেশীকে ভোজনার্থে তাহা দিতে পার, কিম্বা বিজাতীয় লোকের কাছে বিক্রয় করিতে পার; কেননা তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পবিত্র প্রজা। তুমি ছাগবৎসকে তাহার মাতার দুগ্ধে পাক করিবে না। তুমি তোমার বীজ হইতে উৎপন্ন যাবতীয় শস্যের, বৎসর বৎসর যাহা ক্ষেত্রে উৎপন্ন হয়, তাহার দশমাংশ পৃথক্‌ করিবে। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন নামের বাসার্থে যে স্থান মনোনীত করিবেন, সে স্থানে তুমি আপন শস্যের, দ্রাক্ষারসের, ও তৈলের দশমাংশ, এবং গোমেষাদি পালের প্রথমজাতদিগকে তাঁহার সম্মুখে ভোজন করিবে; এইরূপে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে সর্ব্বদা ভয় করিতে শিক্ষা করিবে। সেই যাত্রা যদি তোমার পক্ষে বড় দীর্ঘ হয় তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন নাম স্থাপনার্থে যে স্থান মনোনীত করিবেন, তাহার দূরত্ব প্রযুক্ত যদি তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদে প্রাপ্ত দ্রব্য তথায় লইয়া যাইতে না পার, তবে সেই দ্রব্যে টাকা করিয়া সেই টাকা বাঁধিয়া হস্তে লইয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে যাইবে। পরে সেই টাকা দিয়া তোমার প্রাণের অভিলষিত গোরু কি মেষ কি দ্রাক্ষারস কি মদ্য, বা যে কোন দ্রব্যে তোমার প্রাণের বাঞ্ছা হয়, তাহা ক্রয় করিয়া সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে ভোজন করিয়া সপরিবারে আনন্দ করিবে। আর তোমার নগরদ্বারের মধ্যবর্ত্তী লেবীয়কে ত্যাগ করিবে না, কেননা তোমার সহিত তাহার কোন অংশ কি অধিকার নাই। তৃতীয় বৎসরের শেষে তুমি সেই বৎসরে উৎপন্ন আপন শস্যাদির যাবতীয় দশমাংশ বাহির করিয়া আনিয়া আপন নগর-দ্বারের ভিতরে সঞ্চয় করিয়া রাখিবে; তাহাতে তোমার সহিত যাহার কোন অংশ কি অধিকার নাই, সেই লেবীয় এবং বিদেশী, পিতৃহীন ও বিধবা, তোমার নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী এই সকল লোক আসিয়া ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইবে; এইরূপে যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার হস্তকৃত সমস্ত কর্ম্মে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করেন। তুমি সাত বৎসরের শেষে ঋণ ক্ষমা করিবে। সেই ঋণক্ষমার এই ব্যবস্থা; যে কোন মহাজন আপন প্রতিবাসীকে ঋণ দিয়াছে, সে আপনার দত্ত সেই ঋণ ক্ষমা করিবে, আপন প্রতিবাসী কিম্বা ভ্রাতার নিকট হইতে ঋণ আদায় করিবে না, কেননা সদাপ্রভুর [আদেশে] ঋণক্ষমার ঘোষণা হইয়াছে। তুমি বিজাতীয়ের কাছে আদায় করিতে পার; কিন্তু তোমার ভ্রাতার নিকটে তোমার যাহা আছে, তাহা তোমার হস্ত ক্ষমা করিবে। বাস্তবিক তোমার মধ্যে কাহারও দরিদ্র হওয়া অনুপযুক্ত; কারণ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার অধিকারার্থে যে দেশ দিতেছেন, সেই দেশে সদাপ্রভু তোমাকে নিশ্চয়ই আশীর্ব্বাদ করিবেন; কেবল আমি অদ্য তোমাকে এই যে সমস্ত আজ্ঞা দিতেছি, ইহা যত্নপূর্ব্বক পালনার্থে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিতে হইবে। কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন তোমার কাছে অঙ্গীকার করিয়াছেন, তেমনি তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন; আর তুমি অনেক জাতিকে ঋণ দিবে, কিন্তু আপনি ঋণ লইবে না; এবং অনেক জাতির উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে, কিন্তু তাহারা তোমার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতেছেন, তথাকার কোন নগরদ্বারের ভিতরে যদি তোমার নিকটস্থ কোন ভ্রাতা দরিদ্র হয়, তবে তুমি আপন হৃদয় কঠিন করিও না, বা দরিদ্র ভ্রাতার প্রতি আপন হস্ত রুদ্ধ করিও না; কিন্তু তাহার প্রতি মুক্তহস্ত হইয়া তাহার অভাবজন্য প্রয়োজনানুসারে তাহাকে অবশ্য ঋণ দিও। সাবধান, সপ্তম বৎসর অর্থাৎ ক্ষমার বৎসর নিকটবর্ত্তী, ইহা বলিয়া তোমার হৃদয়ে যেন অধম চিন্তার উদয় না হয়; তুমি যদি আপন দরিদ্র ভ্রাতার প্রতি অশুভ দৃষ্টি করিয়া তাহাকে কিছু না দেও, তবে সে তোমার বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলে তোমার পাপ হইবে। তুমি তাহাকে অবশ্য দিবে, দিবার সময়ে হৃদয়ে দুঃখিত হইবে না; কেননা এই কার্য্য প্রযুক্ত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সমস্ত কর্ম্মে, এবং তুমি যাহাতে যাহাতে হস্তক্ষেপ করিবে, সেই সকলেতে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন। কেননা তোমার দেশমধ্যে দরিদ্রের অভাব হইবে না; অতএব আমি তোমাকে এই আজ্ঞা দিতেছি, তুমি আপন দেশে তোমার ভ্রাতার প্রতি, তোমার দুঃখী ও দীনহীনের প্রতি, তোমার হাত অবশ্য খুলিয়া রাখিবে। তোমার ভ্রাতা অর্থাৎ কোন ইব্রীয় পুরুষ কিম্বা ইব্রীয় স্ত্রীলোক যদি তোমার নিকটে বিক্রীত হয়, এবং ছয় বৎসর পর্য্যন্ত তোমার দাস্যকর্ম্ম করে; তবে সপ্তম বৎসরে তুমি তাহাকে মুক্ত করিয়া আপনার নিকট হইতে বিদায় দিবে। আর মুক্ত করিয়া তোমার নিকট হইতে বিদায় দিবার সময়ে তুমি তাহাকে রিক্তহস্তে বিদায় করিবে না; তুমি আপন পাল, শস্য ও দ্রাক্ষারস হইতে তাহাকে প্রচুর পুরস্কার দিবে; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যেমন আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন, তদনুসারে তাহাকে দিবে। আর স্মরণে রাখিবে, তুমি মিসর দেশে দাস ছিলে, এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে মুক্ত করিয়াছেন; এই জন্য আমি অদ্য তোমাকে এই আজ্ঞা দিতেছি। পরন্তু তোমার নিকটে সুখে থাকাতে সে তোমাকে ও তোমার পরিজনগণকে ভালবাসে বলিয়া যদি বলে, আমি তোমাকে ছাড়িয়া যাইব না; তবে তুমি এক গুঁজি লইয়া কপাটের সহিত তাহার কর্ণ বিঁধিয়া দিবে, তাহাতে সে নিত্য তোমার দাস থাকিবে; আর দাসীর প্রতিও তদ্রূপ করিবে। ছয় বৎসর পর্য্যন্ত সে তোমার কাছে বেতনজীবীর বেতন অপেক্ষা দ্বিগুণ দাস্যকর্ম্ম করিয়াছে, এই কারণ তাহাকে মুক্ত করিয়া বিদায় দেওয়া কঠিন মনে করিবে না; তাহাতে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সকল কার্য্যে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন। তুমি আপন গোমেষাদি পশুপাল হইতে উৎপন্ন সমস্ত প্রথমজাত পুংপশুকে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র করিবে; তুমি গোরুর প্রথমজাত দ্বারা কোন কর্ম্ম করিবে না, এবং তোমার প্রথমজাত মেষের লোম ছেদন করিবে না। সদাপ্রভু যে স্থান মনোনীত করিবেন, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে তুমি সপরিবারে প্রতি বৎসর তাহা ভোজন করিবে। যদি তাহাতে কোন দোষ থাকে, অর্থাৎ সে যদি খঞ্জ কিম্বা অন্ধ হয়, কোন প্রকারে দোষযুক্ত হয়, তবে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাহা বলিদান করিবে না। আপন নগর-দ্বারের ভিতরে তাহা ভোজন করিও; অশুচি কি শুচি উভয় লোকই কৃষ্ণসারের কিম্বা হরিণের ন্যায় তাহা ভোজন করিতে পারে। তুমি কেবল তাহার রক্ত ভোজন করিবে না, তাহা জলের ন্যায় ভূমিতে ঢালিয়া ফেলিবে। তুমি আবীব মাস পালন করিবে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিবে; কেননা আবীব মাসে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে রাত্রিকালে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলেন। আর সদাপ্রভু আপন নামের বাসার্থে যে স্থান মনোনীত করিবেন, সেই স্থানে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে মেষাদি পাল ও গোপাল হইতে পশু লইয়া নিস্তারপর্ব্বের বলিদান করিবে। তুমি তাহার সহিত তাড়ীযুক্ত রুটী খাইবে না; কেননা তুমি ত্বরান্বিত হইয়াই মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়াছিলে; এই জন্য সাত দিবস সেই বলির সহিত তাড়ীশূন্য রুটী, দুঃখাবস্থার রুটী, ভোজন করিবে; যেন মিসর দেশ হইতে তোমার নির্গমনের দিন যাবজ্জীবন তোমার স্মরণে থাকে। সাত দিন তোমার সীমার মধ্যে তাড়ী দৃষ্ট না হউক; এবং প্রথম দিবসের সন্ধ্যাকালে তুমি যে বলিদান কর, তাহার মাংস কিছুই, সমস্ত রাত্রি প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত অবশিষ্ট না থাকুক। [5-6] তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে সকল নগর দিবেন, তাহার কোন নগরের দ্বারের ভিতরে নিস্তারপর্ব্বের বলিদান করিতে পারিবে না; কিন্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন নামের বাসার্থে যে স্থান মনোনীত করিবেন, সেই স্থানে মিসর দেশ হইতে তোমার বাহির হইয়া আসিবার ঋতুতে, সন্ধ্যাকালে, সূর্য্যাস্ত সময়ে নিস্তারপর্ব্বের বলিদান করিবে। *** আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে তাহা পাক করিয়া ভোজন করিবে; পরে প্রাতঃকালে আপন তাম্বুতে ফিরিয়া যাইবে। তুমি ছয় দিন তাড়ীশূন্য রুটী খাইবে, এবং সপ্তম দিবসে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পর্ব্বসভা হইবে; তুমি কোন কার্য্য করিবে না। তুমি সাত সপ্তাহ গণনা করিবে; ক্ষেত্রস্থ শস্যে প্রথম কাস্ত্যা দেওয়া অবধি সাত সপ্তাহ গণনা করিতে আরম্ভ করিবে। পরে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদানুযায়ী সঙ্গতি হইতে স্ব-ইচ্ছায় দত্ত উপহার দ্বারা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সাত সপ্তাহের উৎসব পালন করিবে। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন নামের বাসার্থে যে স্থান মনোনীত করিবেন, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে তুমি, তোমার পুত্রকন্যা, তোমার দাসদাসী, তোমার নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী লেবীয় ও তোমার মধ্যনিবাসী বিদেশী, পিতৃহীন ও বিধবা সকলে আনন্দ করিবে। আর তুমি স্মরণে রাখিবে যে, তুমি মিসর দেশে দাস ছিলে, এবং এই সকল বিধি যত্নপূর্ব্বক পালন করিবে। তোমার খামার ও দ্রাক্ষাকুণ্ড হইতে যাহা সংগ্রহ করিবার, তাহা সংগ্রহ করিলে পর তুমি সাত দিন কুটীরের উৎসব পালন করিবে। আর সেই উৎসবে তুমি, তোমার পুত্রকন্যা, তোমার দাসদাসী ও তোমার নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী লেবীয় ও বিদেশী এবং পিতৃহীন ও বিধবা সকলে আনন্দ করিবে। সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সাত দিন উৎসব পালন করিবে; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সমস্ত উৎপন্ন দ্রব্যে ও হস্তকৃত সমস্ত কর্ম্মে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন, আর তুমি সম্পূর্ণরূপে আনন্দিত হইবে। তোমার প্রত্যেক পুরুষ বৎসরের মধ্যে তিন বার তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে তাঁহার মনোনীত স্থানে দেখা দিবে; তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসবে, সাত সপ্তাহের উৎসবে ও কুটীরের উৎসবে; আর তাহারা সদাপ্রভুর সম্মুখে রিক্তহস্তে দেখা দিবে না; প্রত্যেক জন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত আশীর্ব্বাদানুসারে আপন আপন সঙ্গতি অনুযায়ী উপহার দিবে। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সকল বংশানুসারে তোমাকে যে সমস্ত নগর দিবেন, সেই সকল নগরের দ্বারদেশে তুমি আপনার জন্য বিচারকর্ত্তৃগণকে ও শাসনকর্ত্তৃগণকে নিযুক্ত করিবে; আর তাহারা ন্যায্য বিচারে লোকদের বিচার করিবে। তুমি অন্যায় বিচার করিবে না, কাহারও মুখাপেক্ষা করিবে না, ও উৎকোচ লইবে না; কেননা উৎকোচ জ্ঞানীদের চক্ষু অন্ধ করে ও ধার্ম্মিকদের বাক্য বিপরীত করে। সর্ব্বতোভাবে যাহা ন্যায্য, তাহারই অনুগামী হইবে, তাহাতে তুমি জীবিত থাকিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত দেশ অধিকার করিবে। তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে যে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিবে, তাহার কাছে কোন প্রকার কাষ্ঠের আশেরা মূর্ত্তি স্থাপন করিবে না। কোন স্তম্ভও উত্থাপন করিবে না, কেননা তাহা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ। তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোষযুক্ত, কোন প্রকার কলঙ্কযুক্ত গোরু কিম্বা মেষ বলিদান করিবে না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা ঘৃণা করেন। তোমার মধ্যে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে সকল নগর দিবেন, তাহার কোন নগরের দ্বারের ভিতরে যদি এমন কোন পুরুষ কিম্বা স্ত্রীলোক পাওয়া যায়, যে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিয়ম লঙ্ঘন দ্বারা তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিয়াছে; গিয়া অন্য দেবতাদের সেবা করিয়াছে, ও আমার আজ্ঞার বিরুদ্ধে তাহাদের কাছে অথবা সূর্য্যের বা চন্দ্রের কিম্বা আকাশবাহিনীর কাহারো কাছে প্রণিপাত করিয়াছে; আর তোমাকে তাহা বলা হইয়াছে, ও তুমি শুনিয়াছ, তবে যত্নপূর্ব্বক অনুসন্ধান করিবে, আর দেখ, যদি ইহা সত্য ও নিশ্চিত হয় যে, ইস্রায়েলের মধ্যে এইরূপ ঘৃণার্হকার্য্য হইয়াছে, তবে তুমি সেই দুষ্কর্ম্মকারী পুরুষ কিম্বা স্ত্রীলোককে বাহির করিয়া আপন নগর-দ্বারের সমীপে আনিবে; পুরুষ হউক বা স্ত্রীলোক হউক, তুমি প্রস্তরাঘাত দ্বারা তাহার প্রাণদণ্ড করিবে। প্রাণদণ্ডের যোগ্য ব্যক্তির প্রাণদণ্ড দুই সাক্ষীর কিম্বা তিন সাক্ষীর প্রমাণে হইবে; একমাত্র সাক্ষীর প্রমাণে তাহার প্রাণদণ্ড হইবে না। তাহাকে বধ করিতে প্রথমে সাক্ষীরা, পশ্চাতে সমস্ত প্রজা তাহার উপরে হাত উঠাইবে। এইরূপে তুমি আপনার মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে। রক্তপাতের কিম্বা বিরোধের কিম্বা আঘাতের বিষয়ে দুই জনের বিবাদ তোমার কোন নগর-দ্বারে উপস্থিত হইলে যদি তাহার বিচার তোমার পক্ষে অতি কঠিন হয়, তবে তুমি উঠিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে যাইবে; আর লেবীয় যাজকদের ও তাৎকালিক বিচারকর্ত্তার নিকটে গিয়া জিজ্ঞাসা করিবে, তাহাতে তাহারা তোমাকে বিচারাজ্ঞা জ্ঞাত করিবে। পরে সদাপ্রভুর মনোনীত সেই স্থানে তাহারা যে বিচারাজ্ঞা তোমাকে জ্ঞাত করিবে, তুমি সেই আজ্ঞার মর্ম্মানুসারে কর্ম্ম করিবে; তাহারা তোমাকে যাহা শিক্ষা দিবে, সমস্তই যত্নপূর্ব্বক করিবে। তাহারা তোমাকে যে ব্যবস্থা শিক্ষা দিবে, তাহার মর্ম্মানুসারে ও তোমাকে যে বিচার বলিবে, তদনুসারে তুমি করিবে; তাহাদের আদিষ্ট বাক্যের দক্ষিণে কি বামে ফিরিবে না; কিন্তু যে ব্যক্তি দুঃসাহসপূর্ব্বক আচরণ করে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর পরিচর্য্যার্থে সেই স্থানে দণ্ডায়মান যাজকের কিম্বা বিচারকর্ত্তার কথায় কর্ণপাত না করে, সেই মনুষ্য হত হইবে; ফলে তুমি ইস্রায়েলের মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে। তাহাতে সমস্ত প্রজা তাহা শুনিয়া ভয় পাইবে, এবং দুঃসাহসের কার্য্য আর করিবে না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতেছেন, তুমি যখন তথায় গিয়া দেশ অধিকারপূর্ব্বক সেখানে বাস করিবে; আর বলিবে, আমার চারিদিকের সকল জাতির ন্যায় আমিও আপনার উপরে এক জন রাজা নিযুক্ত করিব, তখন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যাহাকে মনোনীত করিবেন, তাহাকেই আপনার উপরে রাজা নিযুক্ত করিবে; তোমার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে আপনার উপরে রাজা নিযুক্ত করিবে; যে তোমার ভ্রাতা নয়, এমন বিজাতীয় ব্যক্তিকে আপনার উপরে রাজা করিতে পারিবে না। আর সেই রাজা আপনার জন্য অনেক অশ্ব রাখিবে না, এবং অনেক অশ্বের চেষ্টায় প্রজাদিগকে পুনর্ব্বার মিসর দেশে গমন করাইবে না; কেননা সদাপ্রভু তোমাদিগকে বলিয়াছেন, ইহার পরে তোমরা সেই পথে আর ফিরিয়া যাইবে না। আর সে অনেক স্ত্রী গ্রহণ করিবে না, পাছে তাহার হৃদয় বিপথগামী হয়; এবং সে আপনার জন্য রৌপ্য কিম্বা স্বর্ণ অতিশয় বৃদ্ধি করিবে না। আর স্বীয় রাজ্যের সিংহাসনে উপবেশন কালে সে আপনার নিমিত্ত একখানি পুস্তকে লেবীয় যাজকদের সম্মুখস্থিত এই ব্যবস্থার অনুলিপি লিখিবে। তাহা তাহার নিকটে থাকিবে, এবং সে যাবজ্জীবন তাহা পাঠ করিবে; যেন সে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে ও এই ব্যবস্থার সমস্ত বাক্য ও এই সকল বিধি পালন করিতে শিখে; যেন আপন ভ্রাতাদের উপরে তাহার চিত্ত উদ্ধত না হয়, এবং সে আজ্ঞার দক্ষিণে কি বামে না ফিরে; এইরূপে যেন ইস্রায়েলের মধ্যে তাহার ও তাহার সন্তানদের রাজত্ব দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়। লেবীয় যাজকগণ, লেবির সমস্ত বংশ, ইস্রায়েলের সহিত কোন অংশ কি অধিকার পাইবে না, তাহারা সদাপ্রভুর অগ্নিকৃত উপহার ও তাঁহার অধিকৃত বস্তু ভোগ করিবে। তাহারা আপন ভ্রাতাদের মধ্যে কোন অধিকার পাইবে না; সদাপ্রভুই তাহাদের অধিকার, যেমন তিনি তাহাদিগকে বলিয়াছেন। আর প্রজাদের হইতে যাজকগণের প্রাপ্য বিষয়ের এই বিধি; যাহারা গোরু কিম্বা মেষ বলিদান করে, তাহারা বলির স্কন্ধ, দুই গাল ও পাকস্থলী যাজককে দিবে। তুমি আপন শস্যের, দ্রাক্ষারসের ও তৈলের অগ্রিমাংশ, এবং মেষলোমের অগ্রিমাংশ তাহাকে দিবে। কেননা সদাপ্রভুর নামে পরিচর্য্যা করিতে নিত্য দণ্ডায়মান হইবার জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সকল বংশের মধ্য হইতে তাহাকে ও তাহার সন্তানগণকে মনোনীত করিয়াছেন। আর সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্যে তোমার কোন নগর-দ্বারে যে লেবীয় প্রবাস করে, সে যদি আপন প্রাণের সম্পূর্ণ বাসনায় তথা হইতে সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে আইসে, তবে সে সদাপ্রভুর সম্মুখে দণ্ডায়মান আপন লেবীয় ভ্রাতাদের ন্যায় আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে পরিচর্য্যা করিবে। তাহারা ভোজনার্থে সমান অংশ পাইবে; তাহা ছাড়া সে আপন পৈতৃক অধিকার বিক্রয়ের মূল্যও ভোগ করিবে। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতেছেন, সেই দেশে উপস্থিত হইলে তুমি তথাকার জাতিগণের ঘৃণার্হ কার্য্যের ন্যায় কার্য্য করিতে শিখিও না। তোমার মধ্যে যেন এমন কোন লোক পাওয়া না যায়, যে পুত্র বা কন্যাকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করায়, যে মন্ত্র ব্যবহার করে, বা গণক, বা মোহক, বা মায়াবী, বা ঐন্দ্রজালিক, বা ভূতড়িয়া, বা গুণী বা প্রেতসাধক। কেননা সদাপ্রভু এই সকল কার্য্যকারীকে ঘৃণা করেন; আর সেই ঘৃণার্হ কার্য্য প্রযুক্ত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিবেন। তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সিদ্ধ হও। কেননা তুমি যে জাতিগণকে অধিকারচ্যুত করিবে, তাহারা গণক ও মন্ত্রব্যবহারীদের কথায় কর্ণপাত করে, কিন্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকেই তাহা করিতে দেন নাই। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্য হইতে, তোমার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে, তোমার জন্য আমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিবেন, তাঁহারই কথায় তোমরা কর্ণপাত করিবে। কেননা হোরেবে সমাজের দিবসে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনাই ত করিয়াছিলে, যথা, আমি যেন আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রব পুনর্ব্বার শুনিতে ও এই মহাগ্নি আর দেখিতে না পাই, পাছে আমি মারা পড়ি। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উহারা ভালই বলিয়াছে। আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন। আর আমার নামে তিনি আমার যে সকল বাক্য বলিবেন, তাহাতে যে কেহ কর্ণপাত না করিবে, তাহার কাছে আমি পরিশোধ লইব। কিন্তু আমি যে বাক্য বলিতে আজ্ঞা করি নাই, আমার নামে যে কোন ভাববাদী দুঃসাহসপূর্ব্বক তাহা বলে, কিম্বা অন্য দেবতাদের নামে যে কেহ কথা বলে, সেই ভাববাদীকে মরিতে হইবে। আর তুমি যদি মনে মনে বল, সদাপ্রভু যে বাক্য বলেন নাই, তাহা আমরা কি প্রকারে জানিব? [তবে শুন,] কোন ভাববাদী সদাপ্রভুর নামে কথা কহিলে যদি সেই বাক্য পরে সিদ্ধ না হয়, ও তাহার ফল উপস্থিত না হয়, তবে সেই বাক্য সদাপ্রভু বলেন নাই; ঐ ভাববাদী দুঃসাহসপূর্ব্বক তাহা বলিয়াছে, তুমি তাহা হইতে উদ্বিগ্ন হইও না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে জাতিগণের দেশ তোমাকে দিতেছেন, তাহাদিগকে তিনি উচ্ছিন্ন করিলে পর যখন তুমি তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়া তাহাদের নগরে ও গৃহে বাস করিবে, তৎকালে, যে দেশ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে তোমাকে দিতেছেন, তোমার সেই দেশের মধ্যে তুমি আপনার জন্য তিনটী নগর পৃথক্‌ করিবে। তুমি আপনার জন্য পথ প্রস্তুত করিবে, এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশের অধিকার তোমাকে দেন, তোমার সেই দেশের ভূমি তিন ভাগ করিবে; তাহাতে প্রত্যেক নরহন্তা সেই নগরে পলাইয়া যাইতে পারিবে। যে নরহন্তা সেই স্থানে পলাইয়া বাঁচিতে পারে, তাহার বিবরণ এই; কেহ যদি পূর্ব্বে প্রতিবাসীকে দ্বেষ না করিয়া অজ্ঞানতঃ তাহাকে বধ করে; যথা, কেহ আপন প্রতিবাসীর সহিত কাষ্ঠ কাটিতে বনে গিয়া গাছ কাটিবার জন্য কুড়ালি তুলিলে যদি ফলক বাঁট হইতে খসিয়া প্রতিবাসীর গায় এমন লাগে যে, তাহাতেই সে মারা পড়ে, তবে সে ঐ তিনটীর মধ্যে কোন একটী নগরে পলাইয়া বাঁচিতে পারিবে; পাছে রক্তের প্রতিশোধদাতা অন্তরে উষ্ণ হওয়াতে নরহন্তার পশ্চাৎ ধাবমান্‌ হইয়া পথের দূরত্ব প্রযুক্ত তাহাকে ধরিয়া সাংঘাতিক আঘাত করে। সে লোক ত প্রাণদণ্ডের যোগ্য নয়, কারণ সে পূর্ব্বে উহাকে দ্বেষ করে নাই। এই হেতু আমি তোমাকে আজ্ঞা করিতেছি, তুমি তোমার জন্য তিনটী নগর পৃথক্‌ করিবে। আর আমি অদ্য তোমাকে যে সকল আজ্ঞা দিতেছি, তুমি তাহা পালন করিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিলে ও যাবজ্জীবন তাঁহার পথে চলিলে যদি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে কৃত আপন দিব্যানুসারে তোমার সীমা বৃদ্ধি করেন, ও তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে প্রতিজ্ঞাত সমস্ত দেশ তোমাকে দেন; তবে তুমি সেই তিন নগর ভিন্ন আরও তিনটী নগর নিরূপণ করিবে; যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে তোমাকে যে দেশ দিতেছেন, তোমার সেই দেশের মধ্যে নির্দ্দোষের রক্তপাত না হয়, আর তোমার উপরে রক্তপাতের অপরাধ না বর্ত্তে। কিন্তু যদি কেহ আপন প্রতিবাসীকে দ্বেষ করিয়া তাহার জন্য ঘাঁটি বসায় ও তাহার প্রতিকূলে উঠিয়া তাহাকে সাংঘাতিক আঘাত করে, আর সে মরিয়া যায়, পরে ঐ ব্যক্তি যদি ঐ সকল নগরের মধ্যে কোন একটী নগরে পলায়ন করে; তবে তাহার নিবাস-নগরের প্রাচীনবর্গ লোক পাঠাইয়া তথা হইতে তাহাকে আনাইবে, ও তাহাকে বধ করিবার জন্য রক্তের প্রতিশোধদাতার হস্তে সমর্পণ করিবে। তোমার চক্ষু তাহার প্রতি দয়া না করুন, কিন্তু তুমি ইস্রায়েলের মধ্য হইতে নিরপরাধের রক্তপাতের দোষ দূর করিবে; তাহাতে তোমার মঙ্গল হইবে। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে যে দেশ তোমাকে দিতেছেন, সেই দেশে তোমার প্রাপ্য ভূমিতে পূর্ব্বকালের লোকেরা যে সীমার চিহ্ন নিরূপণ করিয়াছে, তোমার প্রতিবাসীর সেই চিহ্ন স্থানান্তর করিবে না। কেহ কোন প্রকার অপরাধ কি পাপ, যে কোন পাপ করিলে, তাহার বিরুদ্ধে একমাত্র সাক্ষী উঠিবে না; দুই কিম্বা তিন সাক্ষীর প্রমাণ দ্বারা বিচার নিষ্পন্ন হইবে। কোন অন্যায়ী সাক্ষী যদি কাহারো বিরুদ্ধে উঠিয়া তাহার বিষয়ে অন্যায় কার্য্যের সাক্ষ্য দেয়, তবে সেই বাদী প্রতিবাদী উভয়ে সদাপ্রভুর সম্মুখে, তৎকালিক যাজকদের ও বিচারকর্ত্তাদের সম্মুখে, দাঁড়াইবে। পরে বিচারকর্ত্তারা সযত্নে অনুসন্ধান করিবে, আর দেখ, সে সাক্ষী যদি মিথ্যাসাক্ষী হয়, ও তাহার ভ্রাতার বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষ্য দিয়া থাকে; তবে সে তাহার ভ্রাতার প্রতি যেরূপ করিতে কল্পনা করিয়াছিল, তাহার প্রতি তোমরা তদ্রূপ করিবে; এইরূপে তুমি আপনার মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে। তাহা শুনিয়া অবশিষ্ট লোকেরা ভয় পাইয়া তোমার মধ্যে সেরূপ দুষ্কর্ম্ম আর করিবে না। তোমার চক্ষু দয়া না করুক; প্রাণের পরিশোধ প্রাণ, চক্ষুর পরিশোধ চক্ষু, দন্তের পরিশোধ দন্ত, হস্তের পরিশোধ হস্ত, পদের পরিশোধ পদ। তুমি তোমার শত্রুদের প্রতিকূলে যুদ্ধ করিতে গিয়া যদি আপনার অপেক্ষা অধিক অশ্ব, রথ ও লোক দেখ, তবে সেই সকল হইতে ভীত হইও না, কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে উঠাইয়া আনিয়াছেন, তিনিই তোমার সহবর্ত্তী। আর তোমরা যুদ্ধার্থে নিকটবর্ত্তী হইলে যাজক আসিয়া লোকদের কাছে কথা কহিবে, তাহাদিগকে বলিবে, হে ইস্রায়েল, শুন, তোমরা অদ্য তোমাদের শত্রুগণের সহিত যুদ্ধ করিতে নিকটে যাইতেছ; তোমাদের হৃদয় দুর্ব্বল না হউক; ভয় করিও না, কম্পমান হইও না, বা উহাদের হইতে মহাভয়ে ভীত হইও না। কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তোমাদের নিস্তারার্থে তোমাদের পক্ষে তোমাদের শত্রুগণের সহিত যুদ্ধ করিতে তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে যাইতেছেন। পরে অধ্যক্ষগণ লোকদিগকে এই কথা কহিবে, তোমাদের মধ্যে কে নূতন গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার প্রতিষ্ঠা করে নাই? সে যুদ্ধে মরিলে পাছে অন্য লোক তাহার প্রতিষ্ঠা করে, এই জন্য সে আপন গৃহে ফিরিয়া যাউক। আর কে দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার প্রথম ফল ভোগ করে নাই? সে যুদ্ধে মরিলে পাছে অন্য লোক তাহার প্রথম ফল ভোগ করে, এই জন্য সে আপন গৃহে ফিরিয়া যাউক। আর বাগ্‌দান হইলেও কে বিবাহ করে নাই? সে যুদ্ধে মরিলে পাছে অন্য লোক সেই কন্যাকে গ্রহণ করে, এই জন্য সে আপন গৃহে ফিরিয়া যাউক। অধ্যক্ষগণ লোকদের কাছে আরও কথা কহিবে, তাহারা বলিবে, ভীত ও দুর্ব্বলহৃদয় লোক কে আছে? সে আপন গৃহে ফিরিয়া যাউক, পাছে তাহার হৃদয়ের ন্যায় তাহার ভ্রাতাদের হৃদয় গলিয়া যায়। পরে অধ্যক্ষগণ লোকদের কাছে কথা সাঙ্গ করিলে পর তাহারা লোকদের উপরে সেনাপতিদিগকে নিযুক্ত করিবে। যখন তুমি কোন নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে তাহার নিকটে উপস্থিত হইবে, তখন তাহার কাছে সন্ধির কথা ঘোষণা করিবে। তাহাতে যদি সে সন্ধি করিতে সম্মত হইয়া তোমার জন্য দ্বার খুলিয়া দেয়, তবে সেই নগরে যে সমস্ত লোক পাওয়া যায়, তাহারা তোমাকে কর দিবে, ও তোমার দাস হইবে। কিন্তু যদি সে সন্ধি না করিয়া তোমার সহিত যুদ্ধ করে, তবে তুমি সেই নগর অবরোধ করিবে। পরে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা তোমার হস্তগত করিলে তুমি তাহার সমস্ত পুরুষকে খড়গধারে আঘাত করিবে, কিন্তু স্ত্রীলোক, বালক-বালিকা ও পশুগণ প্রভৃতি নগরের সর্ব্বস্ব, সমস্ত লুটদ্রব্য আপনার জন্য লুটস্বরূপে গ্রহণ করিবে, আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত শত্রুদের লুট ভোগ করিবে। এই নিকটবর্ত্তী জাতিদের নগর ব্যতিরেকে যে সকল নগর তোমাহইতে অতি দূরে আছে, তাহাদেরই প্রতি এইরূপ করিবে। কিন্তু এই জাতিদের যে সকল নগর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে তোমাকে দিবেন, সেই সকলের মধ্যে শ্বাসবিশিষ্ট কাহাকেও জীবিত রাখিবে না; তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাহাদিগকে—হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দিগকে—নিঃশেষে বিনষ্ট করিবে; পাছে তাহারা আপন আপন দেবতাদের উদ্দেশে যে সকল ঘৃণার্হ কর্ম্ম করে, তদ্রূপ করিতে তোমাদিগকেও শিখায়, আর পাছে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ কর। যখন তুমি কোন নগর হস্তগত করণার্থে যুদ্ধ করিয়া বহুকাল পর্য্যন্ত তাহা অবরোধ কর, তখন কুড়ালি দিয়া তথাকার বৃক্ষ ছেদন করিবে না; তুমি তাহার ফল খাইতে পার, কিন্তু তাহা কাটিবে না; কেননা ক্ষেত্রের বৃক্ষ কি মানুষ যে, তাহাও তোমার অবরোধের যোগ্য হইবে? কিন্তু এই এই বৃক্ষ হইতে খাদ্য জন্মে না, ইহা যে সকল বৃক্ষের বিষয়ে জ্ঞাত আছ, সে সকল তুমি নষ্ট করিতে ও কাটিতে পারিবে; এবং তোমার সহিত যুদ্ধকারী নগর যাবৎ পতিত না হয়, তাবৎ সেই নগরের বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধিতে পারিবে। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে যে দেশ তোমাকে দিতেছেন, তাহার মধ্যে যদি ক্ষেত্রে পতিত কোন হত লোককে পাওয়া যায়, এবং তাহাকে কে বধ করিল, তাহা জানা না যায়; তবে তোমার প্রাচীনবর্গ ও বিচারকর্ত্তৃগণ বাহিরে গিয়া সেই শবের চারিদিকে কোন্‌ নগর কত দূর, তাহা মাপিবে। তাহাতে যে নগর ঐ হত লোকের নিকটস্থ হইবে, তথাকার প্রাচীনবর্গ পাল হইতে এমন একটী গোবৎসা লইবে, যাহা দ্বারা কোন কার্য্য হয় নাই, যে যোঁয়ালি বহন করে নাই। পরে সেই নগরের প্রাচীনবর্গ সেই গোবৎসাকে এমন কোন একটী উপত্যকায় আনিবে, যেখানে জলস্রোত নিত্য বহে, এবং চাস বা বীজবপন হয় না, ও সেই উপত্যকায় তাহার গ্রীবা ভাঙ্গিয়া ফেলিবে। পরে লেবির সন্তান যাজকেরা নিকটে আসিবে, কেননা তাহাদিগকেই তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনার পরিচর্য্যার্থে ও সদাপ্রভুর নামে আশীর্ব্বাদ করণার্থে মনোনীত করিয়াছেন; এবং তাহাদের বাক্যানুসারে প্রত্যেক বিবাদের ও আঘাতের বিচার হইবে। পরে শবের নিকটস্থ ঐ নগরের সমস্ত প্রাচীন উপত্যকাতে ভগ্নগ্রীবা গোবৎসার উপরে আপন আপন হস্ত ধুইয়া দিবে। আর তাহারা উত্তর করিয়া বলিবে, আমাদের হস্ত এই রক্তপাত করে নাই, আমাদের চক্ষু ইহা দেখে নাই; হে সদাপ্রভু, তুমি আপনার প্রজা যে ইস্রায়েলকে মুক্ত করিয়াছ, তাহাকে ক্ষমা কর; আপনার প্রজা ইস্রায়েলের মধ্যে নিরপরাধের রক্তপাতজন্য দোষ থাকিতে দিও না। তাহাতে তাহাদের পক্ষে সেই রক্তপাতের দোষ ক্ষমা হইবে। এইরূপে তুমি আপনার মধ্য হইতে নিরপরাধের রক্তপাতের দোষ দূর করিবে; কেননা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা যথার্থ, তাহাই তুমি করিবে। তুমি আপন শত্রুগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিলে যদি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে তোমার হস্তে সমর্পণ করেন, ও তুমি তাহাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া যাও; এবং সেই বন্দিদের মধ্যে কোন সুন্দরী স্ত্রী দেখিয়া প্রেমাসক্ত হইয়া যদি তুমি তাহাকে বিবাহ করিতে চাও; তবে তাহাকে আপন গৃহমধ্যে আনিবে, এবং সে আপন মস্তক মুণ্ডন করিবে, ও নখ কাটিবে; আর আপনার বন্দিত্বদশার বস্ত্র ত্যাগ করিবে; পরে তোমার গৃহে থাকিয়া আপন পিতামাতার জন্য সম্পূর্ণ এক মাস বিলাপ করিবে; তাহার পরে তুমি তাহার কাছে গমন করিতে পারিবে, তুমি তাহার স্বামী হইবে ও সে তোমার স্ত্রী হইবে। আর যদি তাহাতে তোমার প্রীতি না হয়, তবে যে স্থানে তাহার ইচ্ছা, সেই স্থানে তাহাকে যাইতে দিবে; কিন্তু কোন প্রকারে টাকা লইয়া তাহাকে বিক্রয় করিবে না; তাহার প্রতি দাসবৎ ব্যবহার করিবে না, কেননা তুমি তাহাকে মানভ্রষ্টা করিয়াছ। যদি কোন পুরুষের প্রিয়া অপ্রিয়া দুই স্ত্রী থাকে, এবং প্রিয়া ও অপ্রিয়া উভয়ে তাহার জন্য পুত্র প্রসব করে, আর জ্যৈষ্ঠ পুত্র অপ্রিয়ার সন্তান হয়; তবে আপন পুত্রদিগকে সর্ব্বস্বের অধিকার দিবার সময়ে অপ্রিয়াজাত জ্যৈষ্ঠ পুত্র থাকিতে সে প্রিয়াজাত পুত্রকে জ্যৈষ্ঠাধিকার দিতে পারিবে না। কিন্তু সে অপ্রিয়ার পুত্রকে জ্যৈষ্ঠরূপে স্বীকার করিয়া আপন সর্ব্বস্বের দুই অংশ তাহাকে দিবে; কারণ সে তাহার শক্তির প্রথম ফল, জ্যৈষ্ঠাধিকার তাহারই। যদি কাহারো পুত্র অবাধ্য ও বিরোধী হয়, পিতামাতার কথা না শুনে, এবং শাসন করিলেও তাহাদিগকে অমান্য করে; তবে তাহার পিতামাতা তাহাকে ধরিয়া নগরের প্রাচীনবর্গের নিকটে ও তাহার নিবাস-স্থানের নগর-দ্বারে লইয়া যাইবে; আর তাহারা নগরের প্রাচীনবর্গকে বলিবে, আমাদের এই পুত্র অবাধ্য ও বিরোধী, আমাদের কথা মানে না, সে অপব্যয়ী ও মদ্যপায়ী। তাহাতে সেই নগরের সমস্ত পুরুষ তাহাকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে; এইরূপে তুমি আপনার মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে, আর সমস্ত ইস্রায়েল শুনিয়া ভয় পাইবে। যদি কোন মনুষ্য প্রাণদণ্ডের যোগ্য পাপ করে, আর তাহার প্রাণদণ্ড হয়, এবং তুমি তাহাকে গাছে টাঙ্গাইয়া দেও, তবে তাহার শব রাত্রিতে গাছের উপরে থাকিতে দিবে না, কিন্তু নিশ্চয় সেই দিনই তাহাকে কবর দিবে; কেননা যে ব্যক্তিকে টাঙ্গান যায়, সে ঈশ্বরের শাপগ্রস্ত; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে যে ভূমি তোমাকে দিতেছেন, তুমি তোমার সেই ভূমি অশুচি করিবে না। তোমার কোন ভ্রাতার বলদ কিম্বা মেষকে পথহারা হইতে দেখিলে তুমি তাহাদের হইতে গা ঢাকা দিও না; অবশ্য আপন ভ্রাতার নিকটে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিবে। যদি তোমার সেই ভ্রাতা তোমার নিকটস্থ কিম্বা পরিচিত না হয়, তবে তুমি সেই পশুকে আপন বাটীতে আনিয়া যাবৎ সেই ভ্রাতা তাহার অন্বেষণ না করে, তাবৎ আপনার নিকটে রাখিবে, পরে তাহা ফিরাইয়া দিবে। তুমি তাহার গর্দ্দভের সম্বন্ধেও তদ্রূপ করিবে, এবং তাহার বস্ত্রের সম্বন্ধেও তদ্রূপ করিবে, তোমার ভ্রাতার হারাণ যে কোন দ্রব্য তুমি পাও, সেই সকলের বিষয়ে তদ্রূপ করিবে; তোমার গা ঢাকা দেওয়া অকর্ত্তব্য। তোমার ভ্রাতার গর্দ্দভ কিম্বা বলদকে পথে পতিত দেখিলে তাহাদের হইতে গা ঢাকা দিও না; অবশ্য তুমি তাহাদিগকে তুলিতে তাহার সাহায্য করিবে। স্ত্রীলোক পুরুষের পরিধেয়, কিম্বা পুরুষ স্ত্রীলোকের বস্ত্র পরিধান করিবে না; কেননা যে কেহ তাহা করে, সে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘৃণার পাত্র। পথের পার্শ্বস্থ কোন বৃক্ষে কিম্বা ভূমির উপরে তোমার সম্মুখে যদি কোন পক্ষীর বাসাতে শাবক কিম্বা ডিম্ব থাকে, এবং সেই শাবকের কিম্বা ডিম্বের উপরে পক্ষিণী বসিয়া থাকে, তবে তুমি শাবকগণের সহিত পক্ষিণীকে ধরিও না। তুমি আপনার জন্য শাবকগুলিকে লইতে পার, কিন্তু নিশ্চয় পক্ষিণীকে ছাড়িয়া দিবে; যেন তোমার মঙ্গল ও দীর্ঘ পরমায়ু হয়। নূতন গৃহ প্রস্তুত করিলে তাহার ছাদে আলিসিয়া নির্ম্মাণ করিবে, পাছে তাহার উপর হইতে কোন মনুষ্য পড়িলে তুমি আপন গৃহে রক্তপাতের অপরাধ বর্ত্তাও। তোমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রে মিশ্রিত বীজ বপন করিবে না; পাছে সমস্ত ফলে—তোমার উপ্ত বীজে ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের ফলে—তুমি স্বত্বহীন হও। বলদে ও গর্দ্দভে একত্র যুড়িয়া চাস করিবে না। লোম ও মসীনা-মিশ্রিত সূত্রনির্ম্মিত বস্ত্র পরিধান করিও না। আপনার আবরণার্থক গাত্রীয় বস্ত্রের চারি কোণে থোপ দিও। কোন পুরুষ যদি বিবাহ করিয়া স্ত্রীর কাছে গমন করে, পরে তাহাকে ঘৃণা করে, এবং তাহার নামে অপবাদ দেয়, ও তাহার দুর্নাম করিয়া বলে, আমি এই স্ত্রীকে বিবাহ করিয়াছি বটে, কিন্তু সঙ্গকালে ইহার কৌমার্য্যের চিহ্ন পাইলাম না; তবে সেই কন্যার পিতামাতা তাহার কৌমার্য্যের চিহ্ন লইয়া নগরের প্রাচীনবর্গের নিকটে নগর-দ্বারে উপস্থিত করিবে। আর কন্যার পিতা প্রাচীনবর্গকে বলিবে, আমি এই ব্যক্তির সহিত আপন কন্যার বিবাহ দিয়াছিলাম, কিন্তু এ তাহাকে ঘৃণা করে; আর দেখ, এ অপবাদ দিয়া বলে, আমি তোমার কন্যার কৌমার্য্যের চিহ্ন পাই নাই; কিন্তু আমার কন্যার কৌমার্য্যের চিহ্ন এই দেখুন। আর তাহারা নগরের প্রাচীনবর্গের সাক্ষাতে সেই বস্ত্র বিস্তার করিবে। পরে নগরের প্রাচীনবর্গ সেই পুরুষকে ধরিয়া শাস্তি দিবে। আর তাহার এক শত [শেকল] রৌপ্য দণ্ড করিয়া কন্যার পিতাকে দিবে, কেননা সেই ব্যক্তি ইস্রায়েলীয় এক কুমারীর উপরে দুর্নাম আনিয়াছে; আর সে তাহার স্ত্রী হইবে, ঐ পুরুষ যাবজ্জীবন তাহাকে ত্যাগ করিতে পারিবে না। কিন্তু সেই কথা যদি সত্য হয়, কন্যার কৌমার্য্যের চিহ্ন যদি না পাওয়া যায়; তবে তাহারা সেই কন্যাকে বাহির করিয়া তাহার পিতৃগৃহের দ্বারসমীপে আনিবে, এবং সেই কন্যার নগরের পুরুষেরা প্রস্তরাঘাতে তাহাকে বধ করিবে; কেননা পিতৃগৃহে ব্যভিচার করাতে সে ইস্রায়েলের মধ্যে মূঢ়তার কর্ম্ম করিয়াছে; এইরূপে তুমি আপনার মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে। কোন পুরুষ যদি পরস্ত্রীর সহিত শয়ন কালে ধরা পড়ে, তবে পরস্ত্রীর সহিত শয়নকারী সেই পুরুষ ও সেই স্ত্রী উভয়ে হত হইবে; এইরূপে তুমি ইস্রায়েলের মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে। যদি কেহ পুরুষের প্রতি বাগ্দত্তা কোন কুমারীকে নগরমধ্যে পাইয়া তাহার সহিত শয়ন করে; তবে তোমরা সেই দুই জনকে বাহির করিয়া নগরদ্বারের নিকটে আনিয়া প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে; সেই কন্যাকে বধ করিবে, কেননা নগরের মধ্যে থাকিলেও সে চীৎকার করে নাই, এবং সেই পুরুষকে বধ করিবে, কেননা সে আপন প্রতিবাসীর স্ত্রীকে মানভ্রষ্টা করিয়াছে; এইরূপে তুমি আপনার মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে। কিন্তু যদি কোন পুরুষ বাগ্দত্তা কন্যাকে মাঠে পাইয়া বলপূর্ব্বক তাহার সহিত শয়ন করে, তবে তাহার সহিত শয়নকারী সেই পুরুষমাত্র হত হইবে; কিন্তু কন্যার প্রতি তুমি কিছুই করিবে না; সে কন্যাতে প্রাণদণ্ডের যোগ্য পাপ নাই; ফলতঃ যেমন কোন মনুষ্য আপন প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে উঠিয়া তাহাকে প্রাণে বধ করে, ইহাও তদ্রূপ। কেননা সেই পুরুষ মাঠে তাহাকে পাইয়াছিল, ঐ বাগ্দত্তা কন্যা চীৎকার করিলেও তাহার নিস্তারকর্ত্তা কেহ ছিল না। যদি কেহ অবাগ্দত্তা কুমারী কন্যাকে পাইয়া তাহাকে ধরিয়া তাহার সহিত শয়ন করে, ও তাহারা ধরা পড়ে, তবে তাহার সহিত শয়নকারী সেই পুরুষ কন্যার পিতাকে পঞ্চাশ [শেকল] রৌপ্য দিবে, এবং তাহাকে মানভ্রষ্টা করিয়াছে বলিয়া সে তাহার স্ত্রী হইবে; সেই পুরুষ তাহাকে যাবজ্জীবন ত্যাগ করিতে পারিবে না। কোন পুরুষ আপন পিতৃভার্য্যাকে গ্রহণ করিবে না, ও আপন পিতার আবরণীয় অনাবৃত করিবে না। চূর্ণাণ্ড কিম্বা ছিন্নলিঙ্গ ব্যক্তি সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিবে না। জারজ ব্যক্তি সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিবে না; তাহার দশম পুরুষ পর্য্যন্তও সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিতে পাইবে না। অম্মোনীয় কিম্বা মোয়াবীয় কেহ সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিতে পাইবে না; দশম পুরুষ পর্য্যন্ত তাহাদের কেহ সদাপ্রভুর সমাজে কখনও প্রবেশ করিতে পাইবে না। কেননা মিসর হইতে তোমাদের আসিবার সময়ে তাহারা পথে অন্ন জল লইয়া তোমাদের সহিত সাক্ষাৎ করে নাই; আবার তোমাকে শাপ দিবার জন্য তোমার বিরুদ্ধে অরাম-নহরয়িমস্থ পথোরনিবাসী বিয়োরের পুত্র বিলিয়মকে উৎকোচ দিয়াছিল। তথাপি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু বিলিয়মের কথায় কর্ণপাত করিতে সম্মত হন নাই; বরং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার পক্ষে সেই অভিশাপ আশীর্ব্বাদে পরিণত করিলেন; কারণ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে প্রেম করেন। তুমি যাবজ্জীবন কখনও তাহাদের শান্তি কি মঙ্গল অন্বেষণ করিবে না। তুমি ইদোমীয়কে ঘৃণা করিবে না, কেননা সে তোমার ভ্রাতা; মিস্রীয়কে ঘৃণা করিবে না, কেননা তুমি তাহার দেশে প্রবাসী ছিলে। তাহাদের হইতে যে সন্তানগণ উৎপন্ন হইবে, তাহারা তৃতীয় পুরুষে সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিতে পাইবে। তোমার শত্রুগণের বিরুদ্ধে শিবিরে যাত্রাকালে যাবতীয় মন্দ বিষয়ে সাবধান থাকিবে। তোমার মধ্যে যদি কোন ব্যক্তি রাত্রিঘটিত কোন অশুচিতায় অশুচি হয়, তবে সে শিবির হইতে বাহিরে যাইবে, শিবিরের মধ্যে প্রবেশ করিবে না। পরে বেলা অবসান হইলে সে জলে স্নান করিবে, ও সূর্য্যের অস্তগমন সময়ে শিবিরের মধ্যে প্রবেশ করিবে। তুমি শিবিরের বাহিরে এক স্থান নিরূপণ করিয়া বহির্দেশ বলিয়া সেই স্থানে যাইবে; আর তোমার অস্ত্রশস্ত্র মধ্যে একখানি খুন্তি থাকিবে; বহির্দেশে গমন সময়ে তুমি তদ্দ্বারা গর্ত্ত করিয়া ফিরিয়া আপনার নির্গত মল ঢাকিয়া ফেলিবে। কেননা তোমাকে রক্ষা করিতে ও তোমার শত্রুগণকে তোমার সম্মুখে সমর্পণ করিতে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার শিবিরের মধ্যে গমনাগমন করেন; অতএব তোমার শিবির পবিত্র হউক; পাছে তোমাতে কোন অশুচি বিষয় দেখিয়া তিনি তোমা হইতে বিমুখ হন। যে দাস আপন স্বামীর নিকট হইতে পলাইয়া তোমার নিকটে আইসে, তুমি তাহাকে সেই স্বামীর হস্তে সমর্পণ করিবে না। সে তোমার কোন এক নগর-দ্বারের ভিতরে, যেখানে তাহার ভাল লাগে, সেই মনোনীত স্থানে তোমার সঙ্গে তোমার মধ্যে বাস করিবে; তুমি তাহার উপরে দৌরাত্ম্য করিবে না। ইস্রায়েল-বংশীয়া কোন কন্যা যেন বেশ্যা না হয়, আর ইস্রায়েল-বংশীয় কোন পুরুষ যেন পুংগামী না হয়। কোন মানতের জন্য বেশ্যার বেতন কিম্বা কুকুরের মূল্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহে আনিবে না, কেননা সে উভয়ই তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ঘৃণার্হ। তুমি সুদের জন্য, রৌপ্যের সুদ, খাদ্য সামগ্রীর সুদ, কোন দ্রব্যের সুদ পাইবার জন্য, আপন ভ্রাতাকে ঋণ দিবে না। সুদের জন্য বিদেশীকে ঋণ দিতে পার, কিন্তু সুদের জন্য আপন ভ্রাতাকে ঋণ দিবে না; যেন তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, সে দেশে তোমার হস্তকৃত সমস্ত কর্ম্মে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্ব্বাদ করেন। তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে কিছু মানত করিলে তাহা দিতে বিলম্ব করিও না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অবশ্য তাহা তোমা হইতে আদায় করিবেন; না দিলে তোমার পাপ হইবে। কিন্তু যদি মানত না কর, তবে তাহাতে তোমার পাপ হইবে না। তোমার ওষ্ঠ নির্গত বাক্য সযত্নে পালন করিবে; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমার মুখ হইতে যেমন স্ব-ইচ্ছায় দত্ত মানতের কথা নির্গত হয়, তদনুসারে করিবে। প্রতিবাসীর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে গেলে তুমি আপন ইচ্ছানুসারে তৃপ্তি পর্য্যন্ত দ্রাক্ষাফল ভোজন করিতে পারিবে, কিন্তু পাত্রে করিয়া কিছু লইবে না। প্রতিবাসীর শস্যক্ষেত্রে গেলে তুমি আপন হস্তে শীষ ছিঁড়িতে পারিবে, কিন্তু আপন প্রতিবাসীর শস্যক্ষেত্রে কাস্ত্যা দিবে না। কোন পুরুষ কোন স্ত্রীকে গ্রহণ করিয়া বিবাহ করিবার পর যদি তাহাতে কোন প্রকার অনুপযুক্ত ব্যবহার দেখিতে পায়, আর সেই জন্য সে স্ত্রী তাহার দৃষ্টিতে প্রীতিপাত্র না হয়, তবে সেই পুরুষ তাহার জন্য এক ত্যাগপত্র লিখিয়া তাহার হস্তে দিয়া আপন বাটী হইতে তাহাকে বিদায় করিতে পারিবে। আর সে স্ত্রী তাহার বাটী হইতে বাহির হইবার পর গিয়া অন্য পুরুষের ভার্য্যা হইতে পারে। আর ঐ পশ্চাতের স্বামীও যদি তাহাকে ঘৃণা করে, এবং তাহার জন্য ত্যাগপত্র লিখিয়া তাহার হস্তে দিয়া আপন বাটী হইতে তাহাকে বিদায় করে, কিম্বা বিবাহকারী ঐ পশ্চাতের স্বামী যদি মরিয়া যায়; তবে যে প্রথম স্বামী তাহাকে বিদায় করিয়াছিল, সে তাহার অশুচি হইবার পরে তাহাকে পুনর্ব্বার বিবাহ করিতে পারিবে না; কেননা তাহা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ঘৃণার্হ কর্ম্ম; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে যে দেশ তোমাকে দিতেছেন, তুমি তাহা পাপলিপ্ত করিবে না। কোন ব্যক্তি নূতন বিবাহ করিলে সৈন্যদলে গমন করিবে না, এবং তাহাকে কোন কর্ম্মের ভার দেওয়া যাইবে না; সে এক বৎসর পর্য্যন্ত আপন গৃহে নিষ্কর্ম্মা থাকিয়া, যে স্ত্রীকে সে গ্রহণ করিয়াছে, তাহার চিত্তরঞ্জন করিবে। কেহ কাহারো যাঁতা কিম্বা তাহার উপরের পাট বন্ধক রাখিবে না; তাহা করিলে প্রাণ বন্ধক রাখা হয়। কোন মনুষ্য যদি আপন ভ্রাতৃগণের—ইস্রায়েল-সন্তানদের—মধ্যে কোন প্রাণীকে চুরি করে, এবং তাহার প্রতি দাসবৎ ব্যবহার করে, বা বিক্রয় করে, এবং ধরা পড়ে, তবে সেই চোর হত হইবে; এইরূপে তুমি আপনার মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে। তুমি কুষ্ঠরোগের ঘায়ের বিষয়ে সাবধান হইয়া, লেবীয় যাজকেরা যে সকল উপদেশ দিবে, অতিশয় যত্নপূর্ব্বক তদনুসারে কর্ম্ম করিও; আমি তাহাদিগকে যে যে আজ্ঞা দিয়াছি, তাহা পালন করিতে যত্ন করিবে। মিসর হইতে তোমাদের বাহির হইয়া আসিবার সময়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু পথে মরিয়মের প্রতি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা স্মরণে রাখিবে। তোমার প্রতিবাসীকে কোন প্রকার কিছু ঋণ দিলে তুমি বন্ধকী দ্রব্য লইবার জন্য তাহার গৃহে প্রবেশ করিবে না। তুমি বাহিরে দাঁড়াইয়া থাকিবে, এবং ঋণী ব্যক্তি বন্ধকী দ্রব্য বাহির করিয়া তোমার নিকটে আনিবে। আর সে যদি দরিদ্র হয়, তবে তুমি তাহার বন্ধকী দ্রব্য রাখিয়া নিদ্রা যাইবে না। সূর্য্যাস্তকালে তাহার বন্ধকী দ্রব্য তাহাকে অবশ্য ফিরাইয়া দিবে; তাহাতে সে আপন বস্ত্রে শয়ন করিয়া তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবে; আর তাহা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমার ধার্ম্মিকতার কার্য্য হইবে। তোমার ভ্রাতা হউক, কিম্বা তোমার দেশের নগরদ্বারের মধ্যবর্ত্তী বিদেশী হউক, দীন দুঃখী বেতনজীবীর প্রতি উপদ্রব করিবে না। কার্য্যের দিবসে তাহার বেতন তাহাকে দিবে; সূর্য্যের অস্তগমন পর্য্যন্ত তাহা রাখিবে না; কেননা সে দরিদ্র, এবং সেই বেতনের উপরে তাহার মন পড়িয়া থাকে; পাছে সে তোমার বিরুদ্ধে সদাপ্রভুকে ডাকে, আর এই বিষয়ে তোমার পাপ হয়। সন্তানের জন্য পিতার, কিম্বা পিতার জন্য সন্তানের প্রাণদণ্ড করা যাইবে না; প্রতিজন আপন আপন পাপপ্রযুক্তই প্রাণদণ্ড ভোগ করিবে। বিদেশীর কিম্বা পিতৃহীনের বিচারে অন্যায় করিবে না, এবং বিধবার বস্ত্র বন্ধক লইবে না। স্মরণে রাখিবে, তুমি মিসর দেশে দাস ছিলে, কিন্তু তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তথা হইতে তোমাকে মুক্ত করিয়াছেন, এই জন্য আমি তোমাকে এই কর্ম্ম করিবার আজ্ঞা দিতেছি। তুমি ক্ষেত্রে আপন শস্য ছেদন কালে যদি এক আটি ক্ষেত্রে ফেলিয়া রাখিয়া আসিয়া থাক, তবে তাহা লইয়া আসিতে ফিরিয়া যাইও না; তাহা বিদেশীর, পিতৃহীনের ও বিধবার জন্য থাকিবে; যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার হস্তকৃত সমস্ত কর্ম্মে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করেন। যখন তোমার জিতবৃক্ষের ফল পাড়, তখন শাখাতে আবার অবশিষ্টের অন্বেষণ করিবে না; তাহা বিদেশীর, পিতৃহীনের ও বিধবার জন্য থাকিবে। যখন তোমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দ্রাক্ষাফল চয়ন কর, তখন চয়নের পরে আবার কুড়াইও না; তাহা বিদেশীর, পিতৃহীনের ও বিধবার জন্য থাকিবে। স্মরণে রাখিবে, তুমি মিসর দেশে দাস ছিলে, এই জন্য আমি তোমাকে এই কর্ম্ম করিবার আজ্ঞা দিতেছি। মনুষ্যদের মধ্যে বিবাদ উপস্থিত হইলে উহারা যদি বিচারকর্ত্তাদের নিকটে যায়, আর তাহারা বিচার করে, তবে নির্দ্দোষকে নির্দ্দোষ ও দোষীকে দোষী করিবে। আর যদি দুষ্টলোক প্রহারের যোগ্য হয়, তবে বিচারকর্ত্তা তাহাকে শয়ন করাইয়া তাহার অপরাধানুসারে আঘাতের সংখ্যা নিশ্চয় করিয়া আপনার সাক্ষাতে তাহাকে প্রহার করাইবে। সে চল্লিশ আঘাত করিতে পারে, তাহার অধিক নয়; পাছে সে অধিক আঘাত দ্বারা ভারী প্রহার করাইলে তোমার ভ্রাতা তোমার সাক্ষাতে তুচ্ছনীয় হয়। শস্যমর্দ্দন কালে বলদের মুখে জাল্‌তি বান্ধিবে না। যদি ভ্রাতৃগণ একত্র হইয়া বাস করে, এবং তাহাদের মধ্যে এক জন অপুত্রক হইয়া মরে, তবে সেই মৃত ব্যক্তির স্ত্রী বাহিরের অন্য গোষ্ঠীভুক্ত পুরুষকে বিবাহ করিবে না; তাহার দেবর তাহার কাছে যাইবে, তাহাকে বিবাহ করিবে, এবং তাহার প্রতি দেবরের কর্ত্তব্য সাধন করিবে। পরে সেই স্ত্রী যে প্রথম পুত্র প্রসব করিবে, সে ঐ মৃত ভ্রাতার নামে উত্তরাধিকারী হইবে; তাহাতে ইস্রায়েল হইতে তাহার নাম লুপ্ত হইবে না। আর সেই পুরুষ যদি আপন ভ্রাতৃপত্নীকে গ্রহণ করিতে সম্মত না হয়, তবে সেই ভ্রাতৃপত্নী নগরদ্বারে প্রাচীনবর্গের কাছে গিয়া বলিবে, আমার দেবর ইস্রায়েলের মধ্যে আপন ভ্রাতার নাম রক্ষা করিতে অসম্মত, সে আমার প্রতি দেবরের কর্ত্তব্য সাধন করিতে চাহে না। তখন তাহার নগরের প্রাচীনবর্গ তাহাকে ডাকিয়া তাহার সঙ্গে কথা বলিবে; যদি সে দাঁড়াইয়া বলে, উহাকে গ্রহণ করিতে আমার ইচ্ছা নাই; তবে তাহার ভ্রাতৃপত্নী প্রাচীনবর্গের সাক্ষাতে তাহার নিকটে আসিয়া তাহার পদ হইতে পাদুকা খুলিবে, এবং তাহার মুখে থুথু দিবে, আর উত্তমরূপে এই কথা কহিবে, যে কেহ আপন ভ্রাতার কুল রক্ষা না করে, তাহার প্রতি এইরূপ করা যাইবে। আর ইস্রায়েলের মধ্যে তাহার নাম হইবে, ‘মুক্তপাদুকের কুল’। পুরুষেরা পরস্পর বিরোধ করিলে তাহাদের এক জনের স্ত্রী যদি প্রহারকের হস্ত হইতে আপন স্বামীকে মুক্ত করিতে আসিয়া হস্ত বিস্তারপূর্ব্বক প্রহারকের পুরুষাঙ্গ ধরে, তবে তুমি তাহার হস্ত কাটিয়া ফেলিবে, চক্ষুলজ্জা করিবে না। তোমার থলিয়াতে ছোট বড় দুই প্রকার বাট্‌খারা না থাকুক। তোমার গৃহে ছোট বড় দুই প্রকার পরিমাণপাত্র না থাকুক। তুমি যথার্থ ও ন্যায্য বাট্‌খারা রাখিবে, যথার্থ ও ন্যায্য পরিমাণপাত্র রাখিবে; যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতেছেন, সেই দেশে তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয়। কারণ যে কেহ ঐ প্রকার কার্য্য করে, যে কেহ অন্যায় করে, সে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘৃণিত। স্মরণে রাখিও, মিসর হইতে তোমরা যখন বাহির হইয়া আসিয়াছিলে, তখন পথে তোমার প্রতি অমালেক কি করিল; তোমার শ্রান্তি ও ক্লান্তির সময়ে সে কি প্রকারে তোমার সহিত পথে মিলিয়া তোমার পশ্চাদ্বর্ত্তী দুর্ব্বল লোক সকলকে আক্রমণ করিল; আর সে ঈশ্বরকে ভয় করিল না। অতএব তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ স্বত্বাধিকারের জন্য তোমাকে দিতেছেন, সেই দেশে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু চারিদিকের সকল শত্রু হইতে তোমাকে বিশ্রাম দিলে পর তুমি আকাশ-মণ্ডলের নীচে হইতে অমালেকের স্মৃতি লোপ করিবে; ইহা ভুলিয়া যাইও না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে যে দেশ তোমাকে দিতেছেন, তুমি যখন সেই দেশে প্রবিষ্ট হইয়া তাহা অধিকার করিবে, ও তথায় বাস করিবে; তৎকালে তুমি ভূমির যাবতীয় ফলের, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ তোমাকে দিতেছেন, সেই দেশে উৎপন্ন ফলের অগ্রিমাংশ হইতে কিছু কিছু লইয়া চুপড়িতে করিয়া তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন নামের বাসার্থে যে স্থান মনোনীত করিবেন, সেই স্থানে গমন করিবে। আর তাৎকালিক যাজকের কাছে গিয়া তাহাকে বলিবে, সদাপ্রভু আমাদিগকে যে দেশ দিতে আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছিলেন, সেই দেশে আমি আসিয়াছি; ইহা অদ্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে নিবেদন করিতেছি। আর যাজক তোমার হস্ত হইতে সেই চুপড়ি লইয়া তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির সম্মুখে রাখিবে। আর তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে এই কথা কহিবে, এক জন নষ্টকল্প অরামীয় আমার পিতৃপুরুষ ছিলেন; তিনি অল্প সংখ্যায় মিসরে নামিয়া গিয়া প্রবাস করিলেন; এবং সে স্থানে মহৎ, পরাক্রান্ত ও বহুপ্রজ জাতি হইয়া উঠিলেন। পরে মিস্রীয়েরা আমাদের প্রতি দৌরাত্ম্য করিল, আমাদিগকে দুঃখ দিল ও কঠিন দাসত্ব করাইল; তাহাতে আমরা আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিলাম; আর সদাপ্রভু আমাদের রব শুনিয়া আমাদের কষ্ট, শ্রম ও উপদ্রবের প্রতি দৃষ্টি করিলেন। সদাপ্রভু বলবান্‌ হস্ত, বিস্তারিত বাহু ও মহাভয়ঙ্করতা এবং নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দ্বারা মিসর হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন। আর তিনি আমাদিগকে এই স্থানে আনিয়াছেন, এবং এই দেশ, দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ দিয়াছেন। এখন, হে সদাপ্রভু, দেখ, তুমি আমাকে যে ভূমি দিয়াছ, তাহার ফলের অগ্রিমাংশ আমি আনিয়াছি। এই বলিয়া তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা রাখিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রণিপাত করিবে। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে ও তোমার পরিবারকে যে যে মঙ্গল দান করিয়াছেন, সেই সকলেতে তুমি ও লেবীয় ও তোমার মধ্যবর্ত্তী বিদেশী, তোমরা সকলে আনন্দ করিবে। তৃতীয় বৎসরে, অর্থাৎ দশমাংশের বৎসরে, তোমার উৎপন্ন দ্রব্যের সমস্ত দশমাংশ পৃথক্‌করণ সমাপ্ত করিলে পর তুমি লেবীয়কে, বিদেশীকে, পিতৃহীনকে ও বিধবাকে তাহা দিবে, তাহাতে তাহারা তোমার নগরদ্বারের মধ্যে ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইবে। পরে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে এই কথা কহিবে, তোমার আজ্ঞাপিত সমস্ত বাক্যানুসারে আমি আপন গৃহ হইতে পবিত্র বস্তু বাহির করিয়া লেবীয়কে, বিদেশীকে, পিতৃহীনকে ও বিধবাকে দিয়াছি; তোমার কোন আজ্ঞা লঙ্ঘন করি নাই ও ভুলিয়া যাই নাই; আমার শোকের সময় আমি তাহার কিছুই ভোজন করি নাই, অশুচি অবস্থায় তাহার কিছুই বাহির করি নাই, এবং মৃত লোকের উদ্দেশে তাহার কিছুই দিই নাই, আমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিয়াছি; তোমার আজ্ঞানুসারেই সমস্ত কর্ম্ম করিয়াছি। তুমি আপন পবিত্র নিবাস হইতে, স্বর্গ হইতে, দৃষ্টিপাত কর, তোমার প্রজা ইস্রায়েলকে আশীর্ব্বাদ কর, এবং আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে কৃত তোমার দিব্যানুসারে যে ভূমি আমাদিগকে দিয়াছ, সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশকেও আশীর্ব্বাদ কর। এই সকল বিধি ও শাসন পালন করিতে অদ্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে আজ্ঞা করিতেছেন, তুমি যত্নপূর্ব্বক তোমার সমস্ত হৃদয় ও তোমার সমস্ত প্রাণের সহিত এ সমস্ত রক্ষা ও পালন করিবে। অদ্য তুমি এই অঙ্গীকার করিয়াছ যে, সদাপ্রভুই তোমার ঈশ্বর হইবেন, এবং তুমি তাঁহার পথে চলিবে, তাঁহার বিধি, তাঁহার আজ্ঞা ও তাঁহার শাসন সকল পালন করিবে, এবং তাঁহার রবে কর্ণপাত করিবে। আর অদ্য সদাপ্রভুও এই অঙ্গীকার করিয়াছেন যে, তাঁহার প্রতিজ্ঞানুসারে তুমি তাঁহার নিজস্ব প্রজা হইবে ও তাঁহার সমস্ত আজ্ঞা পালন করিবে; আর তিনি আপনার রচিত সমস্ত জাতি অপেক্ষা তোমাকে শ্রেষ্ঠ করিয়া প্রশংসা, কীর্ত্তি ও মর্য্যাদাস্বরূপ করিবেন, এবং তিনি যেমন বলিয়াছেন, তদনুসারে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র প্রজা হইবে। পরে মোশি ও ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ লোকদিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, বলিলেন, অদ্য আমি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিই, তোমরা সে সমস্ত পালন করিও। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতেছেন, তুমি যখন যর্দ্দন পার হইয়া সেই দেশে উপস্থিত হইবে, তখন আপনার জন্য কতকগুলি বৃহৎ প্রস্তর স্থাপন করিবে ও তাহা চূণ দিয়া লেপন করিবে। আর পার হইলে পর তুমি সেই প্রস্তরগুলির উপরে এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা লিখিবে; যেন তোমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার কাছে যে অঙ্গীকার করিয়াছেন, তদনুসারে যে দেশ, দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে দিতেছেন, তথায় প্রবেশ করিতে পার। আর আমি অদ্য যে প্রস্তরগুলির বিষয়ে তোমাদিগকে আদেশ করিলাম, তোমরা যর্দ্দন পার হইলে পর এবল পর্ব্বতে সেই সকল প্রস্তর স্থাপন করিবে, ও তাহা চূণ দিয়া লেপন করিবে। আর সে স্থানে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি, প্রস্তরের এক বেদি গাঁথিবে, তাহার উপরে লৌহাস্ত্র তুলিবে না। তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেই বেদি অতক্ষিত প্রস্তর দিয়া গাঁথিবে; এবং তাহার উপরে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলি উৎসর্গ করিবে; এবং মঙ্গলার্থক বলি দান করিবে, আর সেই স্থানে ভোজন করিবে; এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে আনন্দ করিবে। আর সেই প্রস্তরের উপরে এই ব্যবস্থার সমস্ত বাক্য অতি স্পষ্টরূপে লিখিবে। আর মোশি ও লেবীয় যাজকগণ সমস্ত ইস্রায়েলকে কহিলেন, হে ইস্রায়েল, নীরব হও, শ্রবণ কর, অদ্য তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রজা হইলে। অতএব তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে অবধান করিবে; এবং অদ্য আমি তোমাদিগকে তাঁহার যে সকল আজ্ঞা ও বিধি আদেশ করিলাম, সে সকল পালন করিবে। সেই দিবসে মোশি লোকদিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, বলিলেন, তোমরা যর্দ্দন পার হইলে পর শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর, যোষেফ ও বিন্যামীন, ইহারা লোকদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবার জন্য গরিষীম পর্ব্বতে দাঁড়াইবে। আর রূবেণ, গাদ, আশের, সবূলূন, দান ও নপ্তালি, ইহারা শাপ দিবার জন্য এবল পর্ব্বতে দাঁড়াইবে। পরে লেবীয়গণ কথা আরম্ভ করিয়া ইস্রায়েলের সমস্ত লোককে উচ্চৈঃস্বরে বলিবে, যে ব্যক্তি কোন ক্ষোদিত কিম্বা ছাঁচে ঢালা প্রতিমা, সদাপ্রভুর ঘৃণিত বস্তু, শিল্পকরের হস্তনির্ম্মিত বস্তু নির্ম্মাণ করিয়া গোপনে স্থাপন করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক উত্তর করিয়া বলিবে, আমেন। যে কেহ আপন পিতাকে কি মাতাকে অবজ্ঞা করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ আপন প্রতিবাসীর ভূমিচিহ্ন স্থানান্তর করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ অন্ধকে পথভ্রষ্ট করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ বিদেশীর, পিতৃহীনের, কি বিধবার বিচারে অন্যায় করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ পিতৃভার্য্যার সহিত শয়ন করে, আপন পিতার আবরণীয় আনাবৃত করাতে সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ কোন পশুর সহিত শয়ন করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ আপন ভগিনীর সহিত, অর্থাৎ পিতৃকন্যার কিম্বা মাতৃকন্যার সহিত শয়ন করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ আপন শাশুড়ীর সহিত শয়ন করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ আপন প্রতিবাসীকে গোপনে বধ করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ নিরপরাধের প্রাণ হত্যা করিবার জন্য উৎকোচ গ্রহণ করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। যে কেহ এই ব্যবস্থার কথা সকল পালন করিবার জন্য সেই সকল অটল না রাখে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন। আমি তোমাকে অদ্য যে সকল আজ্ঞা আদেশ করিতেছি, যত্নপূর্ব্বক সেই সকল পালন করিবার জন্য যদি তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে মনোযোগ সহকারে কর্ণপাত কর, তবে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির উপরে তোমাকে উন্নত করিবেন; আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিলে এই সকল আশীর্ব্বাদ তোমার উপরে বর্ত্তিবে ও তোমাকে আশ্রয় করিবে। তুমি নগরে আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে ও ক্ষেত্রে আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে। তোমার শরীরের ফল, তোমার ভূমির ফল, তোমার পশুর ফল, তোমার গোরুদের বৎস ও তোমার মেষীদের শাবক আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে। তোমার চুপড়ি ও তোমার ময়দার কাঠুয়া আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে। ভিতরে আসিবার সময়ে তুমি আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে, এবং বাহিরে যাইবার সময়ে তুমি আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে। তোমার যে শত্রুগণ তোমার বিরুদ্ধে উঠে, তাহাদিগকে সদাপ্রভু তোমার সম্মুখে আঘাত করাইবেন; তাহারা এক পথ দিয়া তোমার বিরুদ্ধে আসিবে, কিন্তু সাত পথ দিয়া তোমার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিবে। সদাপ্রভু আজ্ঞা করিয়া তোমার গোলাঘর সম্বন্ধে ও তুমি যে কোন কার্য্যে হস্তক্ষেপ কর, তৎসম্বন্ধে আশীর্ব্বাদকে তোমার সহচর করিবেন; এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতেছেন, তথায় তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন। সদাপ্রভু আপন দিব্যানুসারে তোমাকে আপন পবিত্র প্রজা বলিয়া স্থাপন করিবেন; কেবল তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞা পালন ও তাঁহার পথে গমন করিতে হইবে। আর পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতি দেখিতে পাইবে যে, তোমার উপরে সদাপ্রভুর নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, এবং তাহারা তোমা হইতে ভীত হইবে। আর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতে তোমার পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছেন, সেই দেশে তিনি মঙ্গলার্থেই তোমার শরীরের ফলে, তোমার পশুর ফলে ও তোমার ভূমির ফলে তোমাকে ঐশ্বর্য্যশালী করিবেন। যথাকালে তোমার ভূমির জন্য বৃষ্টি দিতে ও তোমার হস্তের সমস্ত কর্ম্মে আশীর্ব্বাদ করিতে সদাপ্রভু আপনার আকাশরূপ মঙ্গল-ভাণ্ডার খুলিয়া দিবেন; এবং তুমি অনেক জাতিকে ঋণ দিবে, কিন্তু আপনি ঋণ লইবে না। আর সদাপ্রভু তোমাকে মস্তকস্বরূপ করিবেন, পুচ্ছস্বরূপ করিবেন না; তুমি অবনত না হইয়া কেবল উন্নত হইবে; কেবল তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর এই যে সকল আজ্ঞা যত্নপূর্ব্বক পালন করিতে আমি তোমাকে অদ্য আদেশ করিতেছি, এই সকলেতে কর্ণপাত করিতে হইবে; আর অদ্য আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা আজ্ঞা করিতেছি, অন্য দেবগণের সেবা করণার্থে তাহাদের অনুগামী হইবার জন্য তোমাকে সেই সকল কথার দক্ষিণে কি বামে ফিরিতে হইবে না। কিন্তু যদি তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত না কর, আমি অদ্য তোমাকে তাঁহার যে সমস্ত আজ্ঞা ও বিধি আদেশ করিতেছি, যত্নপূর্ব্বক সেই সকল পালন না কর, তবে এই সমস্ত অভিশাপ তোমার প্রতি বর্ত্তিবে ও তোমাকে আশ্রয় করিবে। তুমি নগরে শাপগ্রস্ত হইবে ও ক্ষেত্রে শাপগ্রস্ত হইবে। তোমার চুপড়ি ও তোমার ময়দার কাঠুয়া শাপগ্রস্ত হইবে। তোমার শরীরের ফল, তোমার ভূমির ফল এবং তোমার গোরুর বৎস ও তোমার মেষীদের শাবক শাপগ্রস্ত হইবে। ভিতরে আসিবার সময়ে তুমি শাপগ্রস্ত হইবে, ও বাহিরে যাইবার সময়ে তুমি শাপগ্রস্ত হইবে। যে পর্য্যন্ত তোমার সংহার ও হঠাৎ বিনাশ না হয়, তাবৎ যে কোন কার্য্যে তুমি হস্তক্ষেপ কর, সেই কার্য্যে সদাপ্রভু তোমার উপরে অভিশাপ, উদ্বেগ ও ভর্ৎসনা প্রেরণ করিবেন; ইহার কারণ তোমার দুষ্ট কার্য্য সকল, যদ্দ্বারা তুমি আমাকে পরিত্যাগ করিয়াছ। তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, সেই দেশ হইতে যাবৎ উচ্ছিন্ন না হও, তাবৎ সদাপ্রভু তোমাকে মহামারীর আশ্রয় করিবেন। সদাপ্রভু ক্ষয়রোগ, জ্বর, জ্বালা, প্রচণ্ড উত্তাপ ও খড়গ এবং শস্যের শোষ ও ম্লানি দ্বারা তোমাকে আঘাত করিবেন; তোমার বিনাশ না হওয়া পর্য্যন্ত সে সকল তোমার অনুধাবন করিবে। আর তোমার মস্তকের উপরিস্থিত আকাশ পিত্তল, ও নিম্নস্থিত ভূমি লৌহস্বরূপ হইবে। সদাপ্রভু তোমার দেশে জলের পরিবর্ত্তে ধূলি ও বালি বর্ষণ করিবেন; যে পর্য্যন্ত তোমার বিনাশ না হয়, তাবৎ তাহা আকাশ হইতে নামিয়া তোমার উপরে পড়িবে। সদাপ্রভু তোমার শত্রুদের সম্মুখে তোমাকে আঘাত করাইবেন; তুমি এক পথ দিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে যাইবে, কিন্তু সাত পথ দিয়া তাহাদের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিবে; এবং পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের মধ্যে ভাসিয়া বেড়াইবে। আর তোমার শব খেচর পক্ষীসমূহের ও ভূচর পশুগণের ভক্ষ্য হইবে; কেহ তাহাদিগকে খেদাইয়া দিবে না। সদাপ্রভু তোমাকে মিস্রীয় স্ফোটক, এবং মহামারীর স্ফোটক, পামা ও খুজলি, এই সকল রোগ দ্বারা এমন আঘাত করিবেন যে, তুমি আরোগ্য পাইতে পারিবে না। সদাপ্রভু উন্মাদ, অন্ধতা ও চিত্তের স্তব্ধতাদ্বারা তোমাকে আঘাত করিবেন। অন্ধ যেমন অন্ধকারে হাঁতড়িয়া বেড়ায়, তদ্রূপ তুমি মধ্যাহ্নকালে হাঁতড়িয়া বেড়াইবে, ও আপন পথে কৃতকার্য্য হইবে না, এবং সর্ব্বদা কেবল উপদ্রুত ও লুন্ঠিত হইবে, কেহ তোমাকে নিস্তার করিবে না। তোমার প্রতি কন্যার বাগ্‌দান হইবে, কিন্তু অন্য পুরুষ তাহাতে উপগত হইবে; তুমি গৃহ নির্ম্মাণ করিবে, কিন্তু তাহাতে বাস করিতে পাইবে না; দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিবে, কিন্তু তাহার ফল ভোগ করিবে না। তোমার গোরু তোমার সম্মুখে হত হইবে, আর তুমি তাহার মাংস ভোজন করিতে পাইবে না; তোমার গর্দ্দভ তোমার সাক্ষাতে সবলে অপহৃত হইবে, তাহা তোমাকে ফিরাইয়া দেওয়া যাইবে না; তোমার মেষপাল তোমার শত্রুগণকে দত্ত হইবে, তোমার পক্ষে নিস্তারকর্ত্তা কেহ থাকিবে না। তোমার পুত্রকন্যাগণ অন্য এক জাতিকে দত্ত হইবে, ও সমস্ত দিন তাহাদের অপেক্ষায় চাহিতে চাহিতে তোমার চক্ষু ক্ষীণ হইবে, এবং তোমার হস্তের কোন শক্তি থাকিবে না। তোমার অজ্ঞাত এক জাতি তোমার ভূমির ফল ও তোমার শ্রমের সমস্ত ফল ভোগ করিবে; এবং তুমি সর্ব্বদা কেবল উপদ্রুত ও চূর্ণ হইবে; আর তোমার চক্ষু যাহা দেখিবে, তৎপ্রযুক্ত তুমি উন্মত্ত হইবে। সদাপ্রভু তোমার জানু, জংঘা ও পায়ের তলা হইতে মাথার তালু পর্য্যন্ত অপ্রতীকার্য্য দুষ্ট স্ফোটক দ্বারা আঘাত করিবেন। সদাপ্রভু তোমাকে এবং যে রাজাকে তুমি আপনার উপরে নিযুক্ত করিবে, তাহাকে তোমার অজ্ঞাত এবং তোমার পিতৃপুরুষদের অজ্ঞাত এক জাতির কাছে লইয়া যাইবেন; সেইস্থানে তুমি অন্য দেবগণের, কাষ্ঠ ও প্রস্তরের, সেবা করিবে। আর সদাপ্রভু তোমাকে যে সকল জাতির মধ্যে লইয়া যাইবেন, তাহাদের কাছে তুমি বিস্ময়ের, প্রবাদের ও উপহাসের আস্পদ হইবে। তুমি বহু বীজ বহিয়া ক্ষেত্রে লইয়া যাইবে, কিন্তু অল্প সংগ্রহ করিবে; কেননা পঙ্গপাল তাহা বিনষ্ট করিবে। তুমি দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার পাইট করিবে, কিন্তু দ্রাক্ষারস পান করিতে কি দ্রাক্ষাফল চয়ন করিতে পাইবে না; কেননা কীটে তাহা খাইয়া ফেলিবে। তোমার সকল অঞ্চলে জিতবৃক্ষ হইবে, কিন্তু তুমি তৈল মর্দ্দন করিতে পাইবে না; কেননা তোমার জিতবৃক্ষের ফল ঝরিয়া পড়িবে। তুমি পুত্রকন্যাগণের জন্ম দিবে, কিন্তু তাহারা তোমার হইবে না; কেননা তাহারা বন্দি হইয়া যাইবে। পঙ্গপাল তোমার সমস্ত বৃক্ষ ও ভূমির ফল অধিকার করিবে। তোমার মধ্যবর্ত্তী বিদেশী তোমা হইতে উত্তর উত্তর উন্নত হইবে, ও তুমি উত্তর উত্তর অবনত হইবে। সে তোমাকে ঋণ দিবে, কিন্তু তুমি তাহাকে ঋণ দিবে না; সে মস্তক স্বরূপ হইবে, ও তুমি পুচ্ছস্বরূপ হইবে। এই সমস্ত অভিশাপ তোমার উপরে আসিবে, তোমার অনুধাবন করিয়া তোমার বিনাশ পর্য্যন্ত তোমাকে আশ্রয় করিবে; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে সকল আজ্ঞা ও বিধি দিয়াছেন, তুমি সে সকল পালনার্থে তাঁহার রবে কর্ণপাত করিলে না। এ সমস্ত তোমার ও যুগে যুগে তোমার বংশের উপরে চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণস্বরূপ থাকিবে। যেহেতুক সর্ব্বপ্রকার সম্পত্তির বাহুল্যপ্রযুক্ত তুমি আনন্দপূর্ব্বক প্রফুল্লচিত্তে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর দাসত্ব করিতে না; এই জন্য সদাপ্রভু তোমার বিরুদ্ধে যে শত্রুগণকে পাঠাইবেন, তুমি ক্ষুধায়, তৃষ্ণায়, উলঙ্গতায়, ও সকল বিষয়ের অভাব ভোগ করিতে করিতে তাহাদের দাসত্ব করিবে; এবং যে পর্য্যন্ত তিনি তোমার বিনাশ না করেন, সে পর্য্যন্ত তোমার গ্রীবাতে লৌহের যোঁয়ালি দিয়া রাখিবেন। সদাপ্রভু তোমার বিরুদ্ধে অতি দূর হইতে, পৃথিবীর প্রান্ত হইতে এক জাতিকে আনিবেন; যেমন ঈগল পক্ষী উড়িয়া আইসে, [সে সেইরূপ আসিবে]; সেই জাতির ভাষা তুমি বুঝিতে পারিবে না। সেই জাতি ভয়ঙ্কর-বদন, সে বৃদ্ধের মুখাপেক্ষা করিবে না, ও বালকের প্রতি কৃপা করিবে না। আর যে পর্য্যন্ত তোমার বিনাশ না হইবে, তাবৎ সে তোমার পশুর ফল ও তোমার ভূমির ফল ভোজন করিবে; যাবৎ সে তোমার বিনাশ সাধন না করিবে, তাবৎ তোমার জন্য শস্য, দ্রাক্ষারস কিম্বা তৈল, তোমার গোরুর বৎস কিম্বা তোমার মেষীর শাবক অবশিষ্ট রাখিবে না। আর তোমার সমস্ত দেশে যে সকল উচ্চ ও সুরক্ষিত প্রাচীরে তুমি বিশ্বাস করিতে, সে সকল যাবৎ ভূমিসাৎ না হইবে, তাবৎ সে তোমার সমস্ত নগর-দ্বারে তোমাকে অবরোধ করিবে; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত তোমার সমস্ত দেশে সমস্ত নগরদ্বারে সে তোমাকে অবরোধ করিবে। আর যখন তোমার শত্রুগণ কর্ত্তৃক তুমি অবরুদ্ধ ও ক্লিষ্ট হইবে, তখন তুমি আপন শরীরের ফল, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত নিজ পুত্রকন্যাদিগের মাংস, ভোজন করিবে। যখন সমস্ত নগরদ্বারে শত্রুগণকর্ত্তৃক তুমি অবরুদ্ধ ও ক্লিষ্ট হইবে, তখন তোমার মধ্যে যে পুরুষ কোমল ও অতিশয় সুখভোগী, আপন ভ্রাতার, বক্ষঃস্থিতা ভার্য্যার ও অবশিষ্ট সন্তানদের প্রতি তাহার এমন চক্ষু টাটাইবে যে, সে তাহাদের কাহাকেও আপন সন্তানদের মাংসের কিছুই দিবে না; তাহার কিছুমাত্র অবশিষ্ট না থাকা প্রযুক্ত সে তাহাদিগকে খাইবে। যখন সমস্ত নগর-দ্বারে শত্রুগণকর্ত্তৃক তুমি অবরুদ্ধ ও ক্লিষ্ট হইবে, তখন যে স্ত্রী কোমলতা ও সুখভোগ প্রযুক্ত আপন পদতল ভূমিতে রাখিতে সাহস করিত না, তোমার মধ্যবর্ত্তিনী এমন কোমলাঙ্গী ও সুখভোগিনী মহিলার চক্ষু আপন বক্ষঃস্থিত স্বামীর, আপন পুত্রের ও কন্যার উপরে, এমন কি, আপনার দুই পায়ের মধ্য হইতে নির্গত গর্ভপুষ্পের ও আপনার প্রসবিত শিশুদের উপরে টাটাইবে; কারণ সমস্তের অভাব প্রযুক্ত সে ইহাদিগকে গোপনে খাইবে। তুমি যদি এই পুস্তকে লিখিত ব্যবস্থার সমস্ত কথা যত্নপূর্ব্বক পালন না কর; এইরূপে যদি “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু” এই গৌরবান্বিত ও ভয়াবহ নামকে ভয় না কর; তবে সদাপ্রভু তোমাকে ও তোমার বংশকে আশ্চর্য্য আঘাত করিবেন; ফলতঃ বহুকালস্থায়ী মহাঘাত ও বহুকালস্থায়ী ব্যথাজনক রোগ দ্বারা আঘাত করিবেন। আর তুমি যাহা হইতে উদ্বিগ্ন হইতে, সেই মিস্রীয় সমস্ত ব্যাধি আবার তোমার উপরে আনিবেন; সে সকল তোমার সঙ্গের সাথী হইবে। আর‍ও যাহা এই ব্যবস্থাপুস্তকে লিখিত নাই, এমন প্রত্যেক রোগ ও আঘাত সদাপ্রভু তোমার বিনাশ না হওয়া পর্য্যন্ত তোমার উপরে আনিবেন। তাহাতে আকাশের তারার ন্যায় বহুসংখ্যক ছিলে যে তোমরা, তোমার অল্পসংখ্যক অবশিষ্ট থাকিবে; কেননা তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিতে না। আর তোমাদের মঙ্গল ও বৃদ্ধি করিতে যেমন সদাপ্রভু তোমাদের সম্বন্ধে আনন্দ করিতেন, সেইরূপ তোমাদের বিনাশ ও লোপ করিতে সদাপ্রভু তোমাদের সম্বন্ধে আনন্দ করিবেন; এবং তুমি যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, তথা হইতে তোমরা উন্মূলিত হইবে। আর সদাপ্রভু তোমাকে পৃথিবীর এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত সমস্ত জাতির মধ্যে ছিন্নিভন্ন করিবেন; সেই স্থানে তুমি আপনার ও আপন পিতৃপুরুষদের অজ্ঞাত অন্য দেবগণের, কাষ্ঠ ও প্রস্তরের, সেবা করিবে। আর তুমি সেই জাতিগণের মধ্যে কিছু সুখ পাইবে না, ও তোমার পদতলের জন্য বিশ্রামস্থান থাকিবে না, কিন্তু সদাপ্রভু সেই স্থানে তোমাকে হৃৎকম্প, চক্ষুর ক্ষীণতা ও প্রাণের শুষ্কতা দিবেন। আর তোমার জীবন তোমার দৃষ্টিতে সংশয়ে দোলায়মান হইবে, এবং তুমি দিবারাত্র শঙ্কা করিবে, ও আপন জীবনের বিষয়ে তোমার বিশ্বাস থাকিবে না। তুমি হৃদয়ে যে শঙ্কা করিবে ও চক্ষুতে যে ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখিবে, তৎপ্রযুক্ত প্রাতঃকালে বলিবে, হায় হায়, কখন্‌ সন্ধ্যা হইবে? এবং সন্ধ্যাকালে বলিবে, হায় হায়, কখন্‌ প্রাতঃকাল হইবে? আর যে পথের বিষয়ে আমি তোমাকে বলিয়াছি, তুমি তাহা আর দেখিবে না, সদাপ্রভু সেই মিসর দেশের পথে জাহাজে করিয়া তোমাকে পুনর্ব্বার লইয়া যাইবেন; এবং সেই স্থানে তোমরা দাসদাসীরূপে আপন শত্রুদের কাছে বিক্রীত হইতে চাহিবে; কিন্তু কেহ তোমাদিগকে ক্রয় করিবে না। সদাপ্রভু হোরেবে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত যে নিয়ম স্থির করিয়াছিলেন, তদ্ভিন্ন মোয়াব দেশে তাহাদের সহিত যে নিয়ম স্থির করিতে মোশিকে আজ্ঞা করিলেন, এই সকল সেই নিয়মের বাক্য। মোশি সমস্ত ইস্রায়েলকে ডাকিলেন, এবং তাহাদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু মিসর দেশে ফরৌণের, তাঁহার সমস্ত দাসের ও সমস্ত দেশের প্রতি যে সকল কর্ম্ম তোমাদের দৃষ্টিগোচরে করিয়াছিলেন, তাহা তোমরা দেখিয়াছ; পরীক্ষাসিদ্ধ সেই সকল মহৎ প্রমাণ, সেই সকল চিহ্ন ও সেই সকল মহৎ অদ্ভুত লক্ষণ তোমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছ; তথাচ সদাপ্রভু অদ্যাপি তোমাদিগকে জানিবার হৃদয়, দেখিবার চক্ষু ও শুনিবার কর্ণ দেন নাই। আমি চল্লিশ বৎসর প্রান্তরে তোমাদিগকে গমন করাইয়াছি; তোমাদের গাত্রে তোমাদের বস্ত্র জীর্ণ হয় নাই, ও তোমার পায়ে তোমার জুতা পুরাতন হয় নাই; তোমরা রুটী ভোজন কর নাই, এবং দ্রাক্ষারস কি সুরা পান কর নাই; যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। আর তোমরা যখন এই স্থানে উপস্থিত হইলে, তখন হিষ্‌বোনের রাজা সীহোন ও বাশনের রাজা ওগ আমাদের সহিত যুদ্ধ করিতে বাহির হইলে আমরা তাঁহাদিগকে আঘাত করিলাম; আর তাঁহাদের দেশ লইয়া অধিকারার্থে রূবেণীয় ও গাদীয়দিগকে এবং মনঃশীয়দের অর্দ্ধ বংশকে দিলাম। অতএব তোমরা যাহা যাহা করিবে, সমস্ত বিষয়ে যেন বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতে পার, এই নিমিত্ত এই নিয়মের কথা সকল পালন করিও, এবং তদনুসারে কর্ম্ম করিও। তোমরা সকলে অদ্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছ—তোমাদের অধ্যক্ষগণ, তোমাদের বংশ সকল, তোমাদের প্রাচীনগণ, তোমাদের শাসকগণ, এমন কি, ইস্রায়েলের সমস্ত পুরুষ, তোমাদের বালক বালিকারা, তোমাদের স্ত্রীরা, এবং তোমার শিবিরের মধ্যবর্ত্তী তোমার কাষ্ঠচ্ছেদক অবধি জলবাহক পর্য্যন্ত বিদেশী, সকলেই আছ; যেন তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেই নিয়মে ও সেই দিব্যে আবদ্ধ হও, যাহা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অদ্য তোমার সহিত করিতেছেন; এই জন্য করিতেছেন, যেন তিনি অদ্য তোমাকে আপন প্রজারূপে স্থাপন করেন, ও তোমার ঈশ্বর হন, যেমন তিনি তোমাকে বলিয়াছেন, আর যেমন তিনি তোমার পিতৃপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে দিব্য করিয়াছেন। আর আমি এই নিয়ম ও এই দিব্য কেবল তোমাদেরই সহিত করিতেছি, তাহা নয়; বরং আমাদের সঙ্গে অদ্য এই স্থানে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে যে কেহ দাঁড়াইয়া আছে, ও আমাদের সঙ্গে অদ্য যে নাই, সেই সকলের সহিত করিতেছি।— (কেননা আমরা মিসর দেশে যেরূপে বাস করিয়াছি, এবং জাতিগণের মধ্য দিয়া যেরূপে আসিয়াছি, তাহা তোমরা জ্ঞাত আছ; এবং তাহাদের ঘৃণার্হ বস্তু সকল, তাহাদের মধ্যবর্ত্তী কাষ্ঠময়, পাষাণময়, রৌপ্যময় ও স্বর্ণময় পুত্তলি সকল দেখিয়াছ।)— এই জাতিদের দেবগণের সেবা করিতে যাইবার জন্য অদ্য আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হইতে যাহার হৃদয় পরাঙ্মুখ হয়, এমন কোন পুরুষ, কিম্বা স্ত্রী, কিম্বা গোষ্ঠী, কিম্বা বংশ তোমাদের মধ্যে যেন না থাকে, বিষবৃক্ষের কি নাগদানার মূল তোমাদের মধ্যে যেন না থাকে; এবং এই শাপের কথা শ্রবণকালে কেহ যেন মনে মনে আপনার ধন্যবাদ করিয়া না বলে, আমি সিক্তের সহিত শুষ্কের ধ্বংস করিবার জন্য আপন হৃদয়ের কঠিনতায় চলিলেও আমার শান্তি হইবে। সদাপ্রভু তাহাকে ক্ষমা করিতে সম্মত হইবেন না, কিন্তু সেই মনুষ্যের উপরে তখন সদাপ্রভুর ক্রোধ ও তাঁহার অন্তর্জ্বালা প্রধূমিত হইবে, এবং এই পুস্তকে লিখিত সমস্ত শাপ তাহার উপরে শুইয়া থাকিবে, এবং সদাপ্রভু আকাশমণ্ডলের নীচে হইতে তাহার নাম লোপ করিবেন। আর এই ব্যবস্থাপুস্তকে লিখিত নিয়মের সমস্ত শাপানুসারে সদাপ্রভু তাহাকে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশ হইতে অমঙ্গলের জন্য পৃথক্‌ করিবেন। আর সদাপ্রভু সেই দেশের উপরে যে সকল আঘাত ও রোগ আনিবেন, তাহা যখন ভাবী বংশ, তোমাদের পরে উৎপন্ন তোমাদের সন্তানগণ, এবং দূরদেশ হইতে আগত বিদেশী দেখিবে; ফলতঃ সদাপ্রভু আপন ক্রোধে ও রোষে যে সদোম, ঘমোরা, অদ্‌মা ও সবোয়িম নগর উৎসন্ন করিয়াছিলেন, তাহার মত এই দেশের সমস্ত ভূমি গন্ধক, লবণ ও দহনে পরিপূর্ণ হইয়াছে, তাহাতে কিছুই বুনা যায় না, ও তাহা ফল উৎপন্ন করে না, ও তাহাতে কোন তৃণ হয় না, এ সকল যখন দেখিবে; তখন তাহারা বলিবে, এমন কি, সকল জাতি বলিবে, সদাপ্রভু এ দেশের প্রতি কেন এমন করিলেন? এরূপ মহাক্রোধ প্রজ্বলিত হইবার কারণ কি? তখন লোকে বলিবে, কারণ এই, তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু মিসর দেশ হইতে সেই পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিবার সময়ে তাহাদের সহিত যে নিয়ম স্থির করেন, সেই নিয়ম তাহারা ত্যাগ করিয়াছিল; আর গিয়া অন্য দেবগণের সেবা করিয়াছিল, যে দেবগণকে তাহারা জানিত না, যাহাদিগকে তিনি তাহাদের জন্য নিরূপণ করেন নাই, সেই দেবগণের কাছে প্রণিপাত করিয়াছিল; তাই এই পুস্তকে লিখিত সমস্ত শাপ দেশের উপর আনিতে এই দেশের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, এবং সদাপ্রভু ক্রোধে, রোষে ও মহাকোপে তাহাদিগকে তাহাদের দেশ হইতে উৎপাটনপূর্ব্বক অন্য দেশে নিক্ষেপ করিয়াছেন, যেমন অদ্য দেখা যাইতেছে। নিগূঢ় বিষয় সকল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অধিকার; কিন্তু প্রকাশিত বিষয় সকল আমাদের ও যুগে যুগে আমাদের সন্তানদের অধিকার, যেন এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা আমরা পালন করিতে পারি। আমি তোমার সম্মুখে এই যে আশীর্ব্বাদ ও অভিশাপ স্থাপন করিলাম, ইহার সমস্ত কথা যখন তোমাতে ফলিবে, তখন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে সকল জাতির মধ্যে তোমাকে দূর করিবেন, সেখানে যদি তুমি মনে চেতনা পাও, এবং তুমি ও তোমার সন্তানগণ যদি সমস্ত হৃদয়ের ও সমস্ত প্রাণের সহিত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে ফিরিয়া আইস, এবং অদ্য আমি তোমাকে যে সকল আজ্ঞা দিতেছি, তদনুসারে যদি তাঁহার রবে অবধান কর; তবে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার বন্দিত্ব ফিরাইবেন, তোমার প্রতি করুণা করিবেন, ও যে সকল জাতির মধ্যে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছিলেন, তথা হইতে আবার তোমাকে সংগ্রহ করিবেন। যদ্যপি তোমরা কেহ দূরীকৃত হইয়া আকাশমণ্ডলের প্রান্তে থাক, তথাপি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তথা হইতে তোমাকে সংগ্রহ করিবেন, ও তথা হইতে লইয়া আসিবেন। আর তোমার পিতৃপুরুষেরা যে দেশ অধিকার করিয়াছিল, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু সেই দেশে তোমাকে আনিবেন, ও তুমি তাহা অধিকার করিবে, এবং তিনি তোমার মঙ্গল করিবেন, ও তোমার পিতৃপুরুষদের অপেক্ষাও তোমার বৃদ্ধি করিবেন। আর তুমি যেন সমস্ত হৃদয় ও সমস্ত প্রাণের সহিত আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিয়া জীবন লাভ কর, এই জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার হৃদয় ও তোমার বংশের হৃদয় ছিন্নত্বক্‌ করিবেন। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার শত্রুগণের উপরে, ও যাহারা তোমাকে দ্বেষপূর্ব্বক তাড়না করিয়াছে, তাহাদের উপরে এই সমস্ত শাপ বর্ত্তাইবেন। আর তুমি ফিরিয়া সদাপ্রভুর রবে অবধান করিবে, এবং আমি অদ্য তোমাকে তাঁহার যে সমস্ত আজ্ঞা জানাইতেছি, তাহা পালন করিবে। আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু মঙ্গলার্থেই তোমার হস্তকৃত সকল কর্ম্মে, তোমার শরীরের ফলে, তোমার পশুর ফলে ও তোমার ভূমির ফলে তোমাকে ঐশ্বর্য্যশালী করিবেন; যেহেতুক সদাপ্রভু তোমার পিতৃপুরুষদিগেতে যেমন আনন্দ করিতেন, মঙ্গলার্থে আবার তোমাতে তদ্রূপ আনন্দ করিবেন; কেবল যদি তুমি এই ব্যবস্থাপুস্তকে লিখিত তাঁহার আজ্ঞা সকল ও তাঁহার বিধি সকল পালনার্থে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে অবধান কর, যদি সমস্ত হৃদয় ও সমস্ত প্রাণের সহিত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ফির। কারণ আমি অদ্য তোমাকে এই যে আজ্ঞা দিতেছি, তাহা তোমার বোধের অগম্য নয়, এবং দূরবর্ত্তীও নয়। তাহা স্বর্গে নয় যে, তুমি বলিবে, আমরা যেন তাহা পালন করি, এই জন্য কে আমাদের নিমিত্ত স্বর্গারোহণ করিয়া তাহা আনিয়া আমাদিগকে শুনাইবে? আর তাহা সমুদ্রপারেও নয় যে, তুমি বলিবে, আমরা যেন তাহা পালন করি, এই জন্য কে আমাদের নিমিত্ত সমুদ্র পার হইয়া তাহা আনিয়া আমাদিগকে শুনাইবে? কিন্তু সেই বাক্য তোমার অতি নিকটবর্ত্তী, তাহা তোমার মুখে ও তোমার হৃদয়ে, যেন তুমি তাহা পালন করিতে পার। দেখ, আমি অদ্য তোমার সম্মুখে জীবন ও মঙ্গল এবং মৃত্যু ও অমঙ্গল রাখিলাম; ফলতঃ আমি অদ্য তোমাকে এই আজ্ঞা দিতেছি যে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিতে, তাঁহার পথে চলিতে এবং তাঁহার আজ্ঞা, তাঁহার বিধি ও তাঁহার শাসন পালন করিতে হইবে; তাহা করিলে তুমি বাঁচিবে ও বৃদ্ধি পাইবে; এবং যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, সেই দেশে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবেন। কিন্তু যদি তোমার হৃদয় পরাঙ্মুখ হয়, ও তুমি কথা না শুনিয়া ভ্রষ্ট হইয়া অন্য দেবগণের কাছে প্রণিপাত কর ও তাহাদের সেবা কর; তবে অদ্য আমি তোমাদিগকে জ্ঞাত করিতেছি, তোমরা একেবারে বিনষ্ট হইবে, তোমরা অধিকারার্থে যে দেশে প্রবেশ করিতে যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে তোমাদের জীবনকাল দীর্ঘ হইবে না। আমি অদ্য তোমাদের বিরুদ্ধে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি যে, আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার রবে অবধান কর, ও তাঁহাতে আসক্ত হও; কেননা তিনিই তোমার জীবন ও তোমার দীর্ঘ পরমায়ুস্বরূপ; তাহা হইলে সদাপ্রভু তোমার পিতৃপুরুষদিগকে, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে, যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছিলেন, সেই দেশে তুমি বাস করিতে পাইবে। পরে মোশি গিয়া সমস্ত ইস্রায়েলকে এই সকল কথা কহিলেন। আর তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, অদ্য আমার বয়স এক শত বিংশতি বৎসর, আমি আর বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে পারি না; এবং সদাপ্রভু আমাকে বলিয়াছেন, তুমি এই যর্দ্দন পার হইবে না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি তোমার অগ্রগামী হইয়া পার হইয়া যাইবেন; তিনিই তোমার সম্মুখ হইতে সেই জাতিগণকে বিনষ্ট করিবেন, তাহাতে তুমি তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিবে; সদাপ্রভু যেমন বলিয়াছেন, তেমনি যিহোশূয়ই তোমার অগ্রগামী হইয়া পার হইবে। আর সদাপ্রভু ইমোরীয়দের সীহোন ও ওগ নামক দুই রাজাকে বিনাশ করিয়া তাহাদের প্রতি ও তাহাদের দেশের প্রতি যেমন করিয়াছেন, উহাদের প্রতিও তদ্রূপ করিবেন। সদাপ্রভু তাহাদিগকে তোমাদের সম্মুখে সমর্পণ করিবেন, তখন তোমরা আমার আদিষ্ট সমস্ত আজ্ঞানুসারে তাহাদের প্রতি ব্যবহার করিবে। তোমরা বলবান হও ও সাহস কর, ভয় করিও না, তাহাদের হইতে মহাভয়ে ভীত হইও না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি তোমার সহিত যাইতেছেন, তিনি তোমাকে ছাড়িবেন না, তোমাকে ত্যাগ করিবেন না। আর মোশি যিহোশূয়কে ডাকিয়া সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে কহিলেন, তুমি বলবান হও, ও সাহস কর, কেননা সদাপ্রভু ইহাদিগকে যে দেশ দিতে ইহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছেন, সেই দেশে এই লোকদের সহিত তুমি প্রবেশ করিবে, এবং তুমি ইহাদিগকে সেই দেশ অধিকার করাইবে। আর সদাপ্রভু আপনি তোমার অগ্রে অগ্রে যাইতেছেন; তিনিই তোমার সহবর্ত্তী থাকিবেন; তিনি তোমাকে ছাড়িবেন না, তোমাকে ত্যাগ করিবেন না; ভয় করিও না, নিরাশ হইও না। পরে মোশি এই ব্যবস্থা লিখিলেন, এবং লেবি-বংশজাত যাজকগণ, যাহারা সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক বহন করিত, তাহাদিগকে ও ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনবর্গকে সমর্পণ করিলেন। আর মোশি তাহাদিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, সাত সাত বৎসরের পরে, মোচন বৎসরের কালে, কুটীরোৎসব পর্ব্বে, যখন সমস্ত ইস্রায়েল তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইবে, তৎকালে তুমি সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে তাহাদের কর্ণগোচরে এই ব্যবস্থা পাঠ করিবে। তুমি লোকদিগকে, পুরুষ, স্ত্রী, বালক-বালিকা ও তোমার নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী বিদেশী সকলকে একত্র করিবে, যেন তাহারা শুনিয়া শিক্ষা পায়, ও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করে, এবং এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা যত্নপূর্ব্বক পালন করে; আর তাহাদের যে সন্তানগণ এই সকল জানে না, তাহারা যেন শুনে, এবং যে দেশ অধিকার করিতে তোমরা যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে যতকাল প্রাণধারণ করে, তাহারা তত কাল যেন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে শিখে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, তোমার মৃত্যুদিন আসন্ন, তুমি যিহোশূয়কে ডাক, এবং তোমরা উভয়ে সমাগম-তাম্বুতে উপস্থিত হও, আমি তাহাকে আজ্ঞা দিব। তাহাতে মোশি ও যিহোশূয় গিয়া সমাগম-তাম্বুতে উপস্থিত হইলেন। আর সদাপ্রভু সেই তাম্বুতে মেঘস্তম্ভে দর্শন দিলেন; সেই মেঘস্তম্ভ তাম্বুদ্বারের উপরে স্থির থাকিল। তখন সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, দেখ, তুমি আপন পিতৃপুরুষদের সহিত শয়ন করিবে, আর এই লোকেরা উঠিবে, এবং যে দেশে প্রবেশ করিতে যাইতেছে, সেই দেশের বিজাতীয় দেবগণের অনুগমনে ব্যভিচার করিবে, এবং আমাকে ত্যাগ করিবে, ও তাহাদের সহিত কৃত আমার নিয়ম ভঙ্গ করিবে। সেই সময়ে তাহাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, আমি তাহাদিগকে ত্যাগ করিব ও তাহাদের হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিব; আর তাহারা কবলিত হইবে, এবং তাহাদের উপরে বহুবিধ অমঙ্গল ও সঙ্কট ঘটিবে; সেই সময়ে তাহারা বলিবে, আমাদের উপর এই সমস্ত অমঙ্গল ঘটিয়াছে, ইহার কারণ কি ইহাই নয়, যে আমাদের ঈশ্বর আমাদের মধ্যবর্ত্তী নহেন? বাস্তবিক তাহারা অন্য দেবগণের কাছে ফিরিয়া যে সকল অপকর্ম্ম করিবে, তন্নিমিত্ত সেই সময়ে আমি অবশ্য তাহাদের হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিব। এখন তোমরা আপনাদের জন্য এই গীত লিপিবদ্ধ কর, এবং তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে ইহা শিক্ষা দেও, ও তাহাদিগকে মুখস্থ করাও; যেন এই গীত ইস্রায়েল-সন্তানগণের বিরুদ্ধে আমার সাক্ষী হয়। কেননা আমি যে দেশ দিতে তাহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছি, সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে তাহাদিগকে লইয়া গেলে পর যখন তাহারা ভোজন করিয়া তৃপ্ত ও হৃষ্টপুষ্ট হইবে, তখন অন্য দেবগণের কাছে ফিরিবে, এবং তাহাদের সেবা করিবে, আমাকে অবজ্ঞা করিবে, ও আমার নিয়ম ভঙ্গ করিবে। আর যখন তাহাদের উপরে বহুবিধ অমঙ্গল ও সঙ্কট ঘটিবে, তৎকালে এই গীত সাক্ষিস্বরূপে তাহাদের সম্মুখে সাক্ষ্য দিবে; কেননা তাহাদের বংশ মুখের এই গান বিস্মৃত হইবে না; বাস্তবিক আমি যে দেশের বিষয়ে দিব্য করিয়াছি, সেই দেশে তাহাদিগকে আনিবার পূর্ব্বেও এক্ষণে তাহারা যে মনস্কল্পনা করিতেছে, তাহা আমি জানি। পরে মোশি সেই দিবসে ঐ গীত লিপিবদ্ধ করিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণকে শিক্ষা দিলেন। আর তিনি নূনের পুত্র যিহোশূয়কে আজ্ঞা দিয়া কহিলেন, তুমি বলবান হও ও সাহস কর; কেননা আমি ইস্রায়েল সন্তানগণকে যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছি, সেই দেশে তুমি তাহাদিগকে লইয়া যাইবে, এবং আমি তোমার সহবর্ত্তী হইব। আর মোশি সমাপ্তি পর্য্যন্ত এই ব্যবস্থার কথা সকল পুস্তকে লিখিবার পর সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকবাহী লেবীয়দিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, তোমরা এই ব্যবস্থাপুস্তক লইয়া তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকের পার্শ্বে রাখ; ইহা তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীর জন্য সেই স্থানে থাকিবে। কেননা তোমার বিরুদ্ধাচারিতা ও তোমার শক্তগ্রীবতা আমি জানি; দেখ, তোমাদের সহিত আমি জীবিত থাকিতেই অদ্য তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হইলে, তবে আমার মরণের পরে কি না করিবে? তোমরা আপন আপন বংশের সমস্ত প্রাচীনবর্গকে ও কর্ম্মচারীকে আমার নিকটে একত্র কর; আমি তাহাদের কর্ণগোচরে এই সকল কথা বলি, এবং তাহাদের বিরুদ্ধে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে সাক্ষী করি। কেননা আমি জানি, আমার মরণের পরে তোমরা একেবারে ভ্রষ্ট হইয়া পড়িবে, এবং আমার আদিষ্ট পথ হইতে বিপথগামী হইবে; আর উত্তরকালে তোমাদের অমঙ্গল ঘটিবে, কারণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহা করিয়া তোমরা আপনাদের হস্তকৃত কার্য্য দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিবে। পরে মোশি সমাপ্তি পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের সমস্ত সমাজের কর্ণগোচরে এই গীতের কথাগুলি বলিতে লাগিলেন। আকাশমণ্ডল। কর্ণ দেও, আমি বলি; পৃথিবীও আমার মুখের কথা শুনুক। আমার উপদেশ বৃষ্টির ন্যায় বর্ষিবে, আমার কথা শিশিরের ন্যায় ক্ষরিবে, তৃণের উপরে পতিত বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ন্যায়, শাকের উপরে পতিত জলধারার ন্যায়। কেননা আমি সদাপ্রভুর নাম প্রচার করিব; তোমরা আমাদের ঈশ্বরের মহিমা কীর্ত্তন কর। তিনি শৈল, তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর,তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল। ইহারা তাঁহার সম্বন্ধে ভ্রষ্টাচারী, তাঁহার সন্তান নয়, এই ইহাদের কলঙ্ক; ইহারা বিপথগামী ও কুটিল বংশ। তোমরা কি সদাপ্রভুকে এই প্রতিশোধ দিতেছ? হে মূঢ় ও অজ্ঞান জাতি। তিনি কি তোমার পিতা নহেন, যিনি তোমাকে লাভ করিলেন। তিনিই তোমার নির্ম্মাতা ও স্থিতিকর্ত্তা। পুরাকালের দিন সকল স্মরণ কর, বহুপুরুষের বৎসর সকল আলোচনা কর; তোমার পিতাকে জিজ্ঞাসা কর, সে জানাইবে; তোমার প্রাচীনদিগকে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা বলিবে। পরাৎপর যখন জাতিগণকে অধিকার প্রদান করিলেন, যখন মনুষ্য-সন্তানগণকে পৃথক্‌ করিলেন, তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণের সংখ্যানুসারেই সেই লোকবৃন্দের সীমা নিরূপণ করিলেন। কেননা সদাপ্রভুর প্রজাই তাঁহার দায়াংশ; যাকোবই তাঁহার রিক্‌থ অধিকার। তিনি তাহাকে পাইলেন প্রান্তর-দেশে, পশুগর্জ্জনময় ঘোর মরুভূমিতে; তিনি তাহাকে বেষ্টন করিলেন, তাহার তত্ত্ব লইলেন, নয়ন-তারার ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিলেন। ঈগল যেমন আপন বাসা জাগাইয়া তুলে, আপন শাবকগণের উপরে পাখা দোলায়, পক্ষ বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে তুলে, পালখের উপরে তাহাদিগকে বহন করে; তদ্রূপ সদাপ্রভু একাকী তাহাকে লইয়া গেলেন; তাঁহার সহিত কোন বিজাতীয় দেবতা ছিল না। তিনি পৃথিবীর উচ্চস্থলী সকলের উপর দিয়া তাহাকে আরোহণ করাইলেন, সে ক্ষেত্রের শস্য ভোজন করিল; তিনি তাহাকে পাষাণ হইতে মধু পান করাইলেন, চক্‌মকি প্রস্তরময় শৈল হইতে তৈল [দিলেন]; তিনি গোরুর নবনীত, মেষীর দুগ্ধ, মেষশাবকের মেদ সহ, বাশন দেশজাত মেষ, ও ছাগ, এবং উত্তম গোমের সার তাহাকে দিলেন; তুমি দ্রাক্ষার রক্ত দ্রাক্ষারস পান করিলে। কিন্তু যিশুরূণ হৃষ্টপুষ্ট হইয়া পদাঘাত করিল। তুমি হৃষ্টপুষ্ট, স্থূল ও তৃপ্ত হইলে; অমনি সে আপন নির্ম্মাতা ঈশ্বরকে ছাড়িল, আপন পরিত্রাণের শৈলকে লঘু জ্ঞান করিল। তাহারা বিজাতীয় দেবগণ দ্বারা তাঁহার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল, ঘৃণার্হ বস্তু দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিল। তাহারা বলিদান করিল ভূতগণের উদ্দেশে, যাহারা ঈশ্বর নয়, দেবগণের উদ্দেশে, যাহাদিগকে তাহারা জানিত না, নূতন, নবজাত দেবগণের উদ্দেশে, যাহাদিগকে তোমাদের পিতৃগণ ভয় করিত না। তুমি আপন জন্মদাতা শৈলের প্রতি উদাসীন, আপন জনক ঈশ্বরকে বিস্মৃত হইলে। সদাপ্রভু দেখিলেন, ঘৃণা করিলেন, নিজ পুত্রকন্যাদের কৃত অসন্তোষজনক কার্য্য প্রযুক্ত। তিনি কহিলেন, আমি উহাদের হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিব; উহাদের শেষদশা কি হইবে, দেখিব; কেননা উহারা বিপরীতাচারী বংশ, উহারা বিশ্বাসঘাতক সন্তান। উহারা অনীশ্বর দ্বারা আমার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল, স্ব স্ব অসার বস্তু দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিল; আমিও নজাতি দ্বারা উহাদের অন্তর্জ্বালা জন্মাইব, মূঢ় জাতি দ্বারা উহাদিগকে অসন্তুষ্ট করিব। কেননা আমার ক্রোধে অগ্নি প্রজ্বলিত হইল, তাহা অধঃস্থ পাতাল পর্য্যন্ত দগ্ধ করে, পৃথিবী ও তদুৎপন্ন বস্তু গ্রাস করে, পর্ব্বত সকলের মূলে আগুন লাগায়। আমি তাহাদের উপরে অমঙ্গল রাশি করিব, তাহাদের প্রতি আমার বাণ সকল ছুড়িব। তাহারা ক্ষুধাতে ক্ষীণ হইবে, জ্বলন্ত অঙ্গারে ও উগ্র সংহারে কবলিত হইবে; আমি তাহাদের কাছে জন্তুদের দন্ত পাঠাইব, ধূলিস্থ উরোগামীদের বিষ সহকারে। বাহির খড়গ, গৃহমধ্যে মহাভয় বিনাশ করিবে; যুবক ও কুমারীকে, দগ্ধপোষ্য শিশু ও শুক্লকেশ বৃদ্ধকে মারিবে। আমি বলিলাম, তাহাদিগকে উড়াইয়া দিব, মনুষ্যদের মধ্য হইতে তাহাদের স্মৃতি লোপ করিব। কিন্তু ভয় করি, পাছে শত্রু বিরক্ত করে, পাছে তাহাদের বিপক্ষগণ বিপরীত বিচার করে, পাছে তাহারা বলে, আমাদেরই হস্ত উন্নত, এ সকল কার্য্য সদাপ্রভু করেন নাই। কেননা উহারা যুক্তিবিহীন জাতি, উহাদের মধ্যে বিবেচনা নাই। আহা, কেন তাহারা জ্ঞানবান হইয়া এই কথা বুঝে না? কেন আপনাদের শেষদশা বিবেচনা করে না? এক জন কিরূপে সহস্র লোককে তাড়াইয়া দেয়, দুই জন দশ সহস্রকে পলাতক করে? না, তাহাদের শৈল তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন, সদাপ্রভু তাহাদিগকে সমর্পণ করিলেন। কেননা উহাদের শৈল আমাদের শৈলের তুল্য নয়, আমাদের শত্রুরাও এইরূপ বিচার করে। কারণ তাহাদের দ্রাক্ষালতা সদোমের দ্রাক্ষালতা হইতে উৎপন্ন; ঘমোরার ক্ষেত্রস্থ দ্রাক্ষালতা হইতে উৎপন্ন; তাহাদের দ্রাক্ষাফল বিষময়, তাহাদের গুচ্ছ তিক্ত; তাহাদের দ্রাক্ষারস নাগদিগের গরল, তাহা কালসর্পের উৎকট হলাহল। ইহা কি আমার কাছে সঞ্চিত নহে? আমার ধনাগারে মুদ্রাঙ্ক দ্বারা রক্ষিত নহে? প্রতিশোধ ও প্রতিফলদান আমারই কর্ম্ম, যে সময়ে তাহাদের পা পিছলিয়া যাইবে; কেননা তাহাদের বিপদের দিন নিকটবর্ত্তী, তাহাদের জন্য যাহা যাহা নিরূপিত, শীঘ্রই আসিবে। কারণ সদাপ্রভু আপন প্রজাদের বিচার করিবেন, আপন দাসদের উপরে সদয় হইবেন; যেহেতু তিনি দেখিবেন, তাহাদের শক্তি গিয়াছে, বদ্ধ কি মুক্ত কেহই নাই। তিনি বলিবেন, কোথায় তাহাদের দেবগণ, কোথায় সেই শৈল, যাহার শরণ লইয়াছিল, যাহা তাহাদের বলির মেদ ভোজন করিত, তাহাদের পেয় নৈবেদ্যের দ্রাক্ষারস পান করিত? তাহারাই উঠিয়া তোমাদের সাহায্য করুক, তাহারাই তোমাদের আশ্রয় হউক। এখন দেখ, আমি, আমিই তিনি; আমি ব্যতীত কোন ঈশ্বর নাই; আমি বধ করি, আমিই সজীব করি; আমি আঘাত করিয়াছি, আমিই সুস্থ করি; আমার হস্ত হইতে উদ্ধারকারী কেহই নাই। কেননা আমি আকাশের দিকে হস্ত উঠাই, আর বলি, আমি অনন্তজীবী, আমি যদি আপন খড়গবজ্রে শাণ দিই, যদি বিচারসাধনে হস্তক্ষেপ করি, তবে আমার বিপক্ষগণের প্রতিশোধ লইব, আমার বিদ্বেষীদিগকে প্রতিফল দিব। আমি নিজ বাণ সকল মত্ত করিব রক্তপানে, হত ও বন্দি লোকদের রক্তপানে; আমার খড়গ মাংস ভক্ষণ করিবে, শত্রু-সেনানিগণের মস্তক [খাইবে]। জাতিগণ, তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর; কেননা তিনি আপন দাসদের রক্তের প্রতিফল দিবেন, আপন বিপক্ষগণের প্রতিশোধ লইবেন, আপন দেশের জন্য, আপন প্রজাগণের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবেন। আর মোশি ও নূনের পুত্র হোশেয় আসিয়া লোকদের কর্ণগোচরে এই গীতের সমস্ত কথা কহিলেন। মোশি সমস্ত ইস্রায়েলের কাছে এই সকল কথা সমাপ্ত করিলেন; আর তাহাদিগকে কহিলেন, আমি অদ্য তোমাদের কাছে সাক্ষ্যরূপে যাহা যাহা কহিলাম, তোমরা সেই সমস্ত কথায় মনোযোগ কর, আর তোমাদের সন্তানগণ যেন এই ব্যবস্থার সকল কথা পালন করিতে যত্নবান হয়, এই জন্য তাহাদিগকে তাহা আদেশ করিতে হইবে। বস্তুতঃ ইহা তোমাদের পক্ষে নিরর্থক বাক্য নহে, কেননা ইহা তোমাদের জীবন, এবং তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যর্দ্দন পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে এই বাক্য দ্বারা দীর্ঘায়ু হইবে। সেই দিবসে সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি এই অবারীম পর্ব্বতে, অর্থাৎ যিরীহোর সম্মুখে অবস্থিত মোয়াব দেশস্থ নবো পর্ব্বতে উঠ, এবং আমি অধিকারার্থে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে দেশ দিতেছি, সেই কনান দেশ দর্শন কর। আর তোমার ভ্রাতা হারোণ যেমন হোর পর্ব্বতে মরিয়া আপন লোকদের নিকট সংগৃহিত হইল, তদ্রূপ তুমি যে পর্ব্বতে উঠিবে, তোমাকে তথায় মরিয়া আপন লোকদের নিকটে সংগৃহীত হইতে হইবে; কেননা সিন প্রান্তরে কাদেশস্থ মরীবা জলের নিকটে তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছিলে, ফলতঃ ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আমাকে পবিত্র বলিয়া মান্য কর নাই। তুমি আপনার সম্মুখে দেশ দেখিবে, কিন্তু আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে দেশ দিতেছি, তথায় প্রবেশ করিতে পাইবে না। আর ঈশ্বরের লোক মোশি মৃত্যুর পূর্ব্বে ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যে আশীর্ব্বাদে আশীর্ব্বাদ করিলেন, তাহা এই। তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু সীনয় হইতে আসিলেন, সেয়ীর হইতে তাহাদের প্রতি উদিত হইলেন; পারণ পর্ব্বত হইতে আপন তেজ-প্রকাশ করিলেন, অযুত অযুত পবিত্রের নিকট হইতে আসিলেন; তাহাদের জন্য তাঁহার দক্ষিণ হস্তে অগ্নিময় ব্যবস্থা ছিল। নিশ্চয় তিনি গোষ্ঠীদিগকে প্রেম করেন, তাঁহার পবিত্রগণ সকলে তোমার হস্তগত; তাহারা তোমার চরণতলে বসিল, প্রত্যেকে তোমার বাক্য গ্রহণ করিল। মোশি আমাদিগকে ব্যবস্থা আদেশ করিলেন। তাহা যাকোবের সমাজের অধিকার। যখন জনাধ্যক্ষেরা সমাগত হইল, ইস্রায়েলের সমস্ত বংশ একত্র হইল, তখন যিশুরূণে এক রাজা ছিলেন। রূবেণ বাঁচিয়া থাকুক, তাহার মৃত্যু না হউক, তথাপি তাহার লোক অল্পসংখ্যক হউক। আর যিহূদার বিষয়ে তিনি কহিলেন, হে সদাপ্রভু, যিহূদার রব শুন, তাহার লোকদের নিকটে তাহাকে আন; সে স্বহস্তে আপনার পক্ষে যুদ্ধ করিল, তুমি শত্রুদের বিরুদ্ধে তাহার সাহায্যকারী হইবে। আর লেবির বিষয়ে তিনি কহিলেন, তোমার সেই সাধুর সহিত তোমার তুম্মীম ও ঊরীম রহিয়াছে; যাহার পরীক্ষা তুমি মঃসাতে করিলে, যাহার সহিত মরীবায় জল সমীপে বিবাদ করিলে। সে আপন পিতার ও আপন মাতার বিষয়ে বলিল, আমি তাহাকে দেখি নাই; সে আপন ভ্রাতাদিগকে স্বীকার করিল না, আপন সন্তানগণকেও চিনিল না; কেননা তাহারা তোমার বাক্য রক্ষা করিয়াছে, এবং তোমার নিয়ম পালন করে। তাহারা যাকোবকে তোমার শাসন, ইস্রায়েলকে তোমার ব্যবস্থা শিক্ষা দিবে; তাহারা তোমার সম্মুখে ধূপ রাখিবে, তোমার বেদির উপরে পূর্ণাহুতি রাখিবে। সদাপ্রভো, তাহার সম্পত্তিতে আশীর্ব্বাদ কর, তাহার হস্তের কর্ম্ম গ্রাহ্য কর; তাহাদের কটিদেশ আঘাত কর, যাহারা তাহার বিরুদ্ধে উঠে, যাহারা তাহাকে দ্বেষ করে, যেন তাহারা আর উঠিতে না পারে। বিন্যামীনের বিষয়ে তিনি কহিলেন, সদাপ্রভুর প্রিয় জন তাঁহার নিকটে নির্ভয়ে বাস করিবে; তিনি সমস্ত দিন তাহাকে আচ্ছাদন করেন, সে তাঁহার বগলে বাস করে। আর যোষেফের বিষয়ে তিনি কহিলেন, তাহার দেশ সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদযুক্ত হউক, আকাশের উত্তম উত্তম দ্রব্য ও শিশির দ্বারা, অধোবিস্তীর্ণ জলধি দ্বারা, সূর্য্যপক্ব ফলের উত্তম উত্তম দ্রব্য দ্বারা, চান্দ্রমাসের পালায় পক্ব উত্তম উত্তম দ্রব্য দ্বারা, পুরাতন পর্ব্বতগণের প্রধান প্রধান দ্রব্য দ্বারা, চিরন্তন গিরিমালার উত্তম উত্তম দ্রব্য দ্বারা, পৃথিবীর উত্তম উত্তম দ্রব্য ও তৎপূর্ণতা দ্বারা; আর যিনি ঝোপবাসী, তাঁহার সন্তোষ হউক; সেই আশীর্ব্বাদ বর্ত্তুক যোষেফের মস্তকে; ভ্রাতৃগণ হইতে পৃথক্‌কৃতের মস্তকের তালুতে। তাহার প্রথমজাত বৃষভ শোভাযুক্ত, তাহার শৃঙ্গযুগল গবয়ের শৃঙ্গ; তদ্দ্বারা সে পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত সমস্ত জাতিকে গুতাইবে; সেই শৃঙ্গযুগল ইফ্রয়িমের অযুত অযুত লোক, মনঃশির সহস্র সহস্র লোক। আর সবূলূনের বিষয়ে তিনি কহিলেন, সবূলূন! তুমি আপন যাত্রাতে আনন্দ কর, ইষাখর! তুমি আপন তাম্বুতে আনন্দ কর। ইহারা গোষ্ঠীদিগকে পর্ব্বতে আহ্বান করিবে; সে স্থানে ধার্ম্মিকতার বলি উৎসর্গ করিবে, কেননা ইহারা সমুদ্রের বহুল দ্রব্য, এবং বালুকার গুপ্ত ধন সকল শোষণ করিবে। আর গাদের বিষয়ে তিনি কহিলেন, ধন্য তিনি, যিনি গাদকে বিস্তার করেন; সে সিংহীর ন্যায় বসতী করে, সে বাহু এবং মস্তকের তালুও বিদীর্ণ করে। সে আপনার জন্য অগ্রিমাংশ নিরীক্ষণ করিল; কারণ তথায় অধিপতির অধিকার রক্ষিত হইল; আর সে লোকদের অধ্যক্ষগণের সঙ্গে আসিল; সদাপ্রভুর ধার্ম্মিকতা সিদ্ধ করিল, ইস্রায়েল সম্বন্ধে তাঁহার শাসন সিদ্ধ করিল। আর দানের বিষয়ে তিনি কহিলেন, দান সিংহশাবক, যে বাশন হইতে লম্ফ দেয়। আর নপ্তালির বিষয়ে তিনি কহিলেন, নপ্তালি! তুমি অনুগ্রহে তৃপ্ত, আর সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদে পরিপূর্ণ; তুমি সমুদ্র ও দক্ষিণ অধিকার কর। আর আশেরের বিষয়ে তিনি কহিলেন, পুত্রগণে আশের আশীর্ব্বাদযুক্ত হউক, সে আপন ভ্রাতাদের কাছে অনুগৃহীত হউক, সে আপন চরণ তৈলে মগ্ন করুক। তোমার অর্গল লৌহ ও পিত্তলময় হইবে, তোমার যেমন দিন, তেমনি শক্তি হইবে। হে যিশুরূণ, ঈশ্বরের তুল্য কেহ নাই; তিনি তোমার সাহায্যার্থে আকাশরথে, নিজ গৌরবে গগনরথে যাতায়াত করেন। অনাদি ঈশ্বর তোমার বাসস্থান, নিম্নে অনন্তস্থায়ী বাহুযুগল; তিনি তোমার সম্মুখ হইতে শত্রুকে দূর করিলেন, আর বলিলেন, বিনাশ কর। তাই ইস্রায়েল নির্ভয়ে বাস করে, যাকোবের উৎস একাকী থাকে, শস্যের ও দ্রাক্ষারসের দেশে বাস করে; আর তাহার আকাশ হইতেও শিশির ক্ষরে। হে ইস্রায়েল! ধন্য তুমি, তোমার তুল্য কে? তুমি সদাপ্রভু কর্ত্তৃক নিস্তারপ্রাপ্ত জাতি, তিনি তোমার সাহায্যের ঢাল, তোমার ঔৎকর্ষ্যের খড়গ। তোমার শত্রুগণ তোমার কর্ত্তৃত্ব স্বীকার করিবে, আর তুমিই তাহাদের উচ্চস্থলী সকল দলন করিবে। পরে মোশি মোয়াবের তলভূমি হইতে নবো পর্ব্বতে, যিরীহোর সম্মুখস্থিত পিস্‌গা-শৃঙ্গে, উঠিলেন। আর সদাপ্রভু তাঁহাকে সমস্ত দেশ, দান পর্য্যন্ত গিলিয়দ, এবং সমস্ত নপ্তালি, আর ইফ্রয়িম ও মনঃশির দেশ, এবং পশ্চিম সমুদ্র পর্য্যন্ত যিহূদার সমস্ত দেশ, এবং দক্ষিণ দেশ, ও সোয়র পর্য্যন্ত খর্জ্জুরপুর যিরীহোর তলভূমির অঞ্চল দেখাইলেন। আর সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, আমি যে দেশের বিষয়ে শপথ করিয়া অব্রাহামকে, ইস্‌হাসকে ও যাকোবকে বলিয়াছিলাম, আমি তোমার বংশকে সেই দেশ দিব, এ সেই দেশ; আমি উহা তোমাকে চাক্ষুষ দেখাইলাম, কিন্তু তুমি পার হইয়া ঐ স্থানে যাইবে না। তখন সদাপ্রভুর দাস মোশি সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে সেই স্থানে মোয়াব দেশে মরিলেন। আর তিনি মোয়াব দেশে বৈৎপিয়োরের সম্মুখস্থ উপত্যকাতে তাঁহাকে কবর দিলেন; কিন্তু তাঁহার কবরস্থান অদ্যাপি কেহ জানে না। মরণকালে মোশির বয়স এক শত বিংশতি বৎসর হইয়াছিল; তাঁহার চক্ষু ক্ষীণ হয় নাই, ও তাঁহার তেজের হ্রাস হয় নাই। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ মোশির নিমিত্ত মোয়াবের তলভূমিতে ত্রিশ দিন রোদন করিল; এইরূপে মোশির শোকে তাহাদের রোদনের দিন সম্পূর্ণ হইল। আর নূনের পুত্র যিহোশূয় বিজ্ঞতার আত্মায় পরিপূর্ণ ছিলেন, কারণ মোশি তাঁহার উপরে হস্তার্পণ করিয়াছিলেন; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাঁহার কথায় মনোযোগ করিয়া মোশির প্রতি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিতে লাগিল। মোশির তুল্য কোন ভাববাদী ইস্রায়েলের মধ্যে আর উৎপন্ন হয় নাই; সদাপ্রভু তাঁহার সঙ্গে সম্মুখাসম্মুখি হইয়া আলাপ করিতেন; বস্তুতঃ সদাপ্রভু তাঁহাকে পাঠাইলে তিনি মিসর দেশে, ফরৌণের, তাঁহার সমস্ত দাসের ও তাঁহার সমস্ত দেশের প্রতি সর্ব্বপ্রকার চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ প্রদর্শন করিলেন, এবং সমস্ত ইস্রায়েলের দৃষ্টিতে মোশি পরাক্রান্ত হস্তের ও ভয়ঙ্করতার কত না কর্ম্ম করিয়াছিলেন। সদাপ্রভুর দাস মোশির মৃত্যু হইলে পর সদাপ্রভু নূনের পুত্র যিহোশূয় নামে মোশির পরিচারককে কহিলেন, আমার দাস মোশির মৃত্যু হইয়াছে; এখন উঠ, তুমি এই সমস্ত লোক লইয়া এই যর্দ্দন পার হও, এবং তাহাদিগকে অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আমি যে দেশ দিতেছি, সেই দেশে যাত্রা কর। যে সকল স্থানে তোমরা পদার্পণ করিবে, আমি মোশিকে যেমন বলিয়াছিলাম, তদনুসারে সেই সকল স্থান তোমাদিগকে দিয়াছি। প্রান্তর ও এই লিবানোন হইতে মহানদী, ফরাৎ নদী পর্য্যন্ত হিত্তীয়দের সমস্ত দেশ, এবং সূর্য্যের অস্তগমনের দিকে মহাসমুদ্র পর্য্যন্ত তোমাদের সীমা হইবে। তোমার সমস্ত জীবনকালে কেহ তোমার সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিবে না; আমি যেমন মোশির সহবর্ত্তী ছিলাম, তদ্রূপ তোমার সহবর্ত্তী থাকিব; আমি তোমাকে ছাড়িব না, তোমাকে ত্যাগ করিব না। বলবান হও ও সাহস কর; কেননা যে দেশ দিতে ইহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে আমি দিব্য করিয়াছি, তাহা তুমি এই লোকদিগকে অধিকার করাইবে। তুমি কেবল বলবান হও ও অতিশয় সাহস কর; আমার দাস মোশি তোমাকে যে ব্যবস্থা আদেশ করিয়াছে, তুমি সেই সমস্ত ব্যবস্থা যত্নপূর্ব্বক পালন কর; তাহা হইতে দক্ষিণে কি বামে ফিরিও না; যেন তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতে পার। তোমার মুখ হইতে এই ব্যবস্থাপুস্তক বিচলিত না হউক; তন্মধ্যে যাহা যাহা লিখিত আছে, যত্নপূর্ব্বক সেই সকলের অনুযায়ী কর্ম্ম করণার্থে তুমি দিবারাত্র তাহা ধ্যান কর; কেননা তাহা করিলে তোমার শুভগতি হইবে ও তুমি বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিবে। আমি কি তোমাকে আজ্ঞা দিই নাই? তুমি বলবান হও ও সাহস কর, মহাভয়ে ভীত কি নিরাশ হইও না; কেননা তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী। তখন যিহোশূয় লোকদের অধ্যক্ষগণকে আজ্ঞা করিলেন, তোমরা শিবিরের মধ্য দিয়া যাও, লোকদিগকে এই কথা বল, তোমরা আপনাদের জন্য পাথেয় সামগ্রী প্রস্তুত কর; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে তোমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করিবার জন্য তিন দিনের মধ্যে তোমাদিগকে এই যর্দ্দন পার হইয়া যাইতে হইবে। পরে যিহোশূয় রূবেণীয়দিগকে, গাদীয়দিগকে ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশকে কহিলেন, সদাপ্রভুর দাস মোশি তোমাদিগকে যে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ কর; তিনি বলিয়াছিলেন, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে বিশ্রাম দিতেছেন, আর এই দেশ তোমাদিগকে দিবেন। মোশি যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে তোমাদিগকে যে দেশ দিয়াছেন, তোমাদের স্ত্রীলোক, বালকবালিকা ও পশুগণ সেই দেশে থাকিবে; কিন্তু তোমরা, সমস্ত বলবান বীর, সসজ্জ হইয়া তোমাদের ভ্রাতৃগণের অগ্রে অগ্রে পার হইয়া যাইবে ও তাহাদের সাহায্য করিবে। পরে যখন সদাপ্রভু তোমাদের ন্যায় তোমাদের ভ্রাতৃগণকে বিশ্রাম দিবেন, অর্থাৎ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, তাহারাও যখন সেই দেশ অধিকার করিবে, তখন তোমরা যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে সূর্য্যোদয়-দিকে সদাপ্রভুর দাস মোশির দত্ত আপনাদের অধিকারে ফিরিয়া আসিয়া তাহা ভোগ করিবে। তাহারা যিহোশূয়কে উত্তর করিল, আপনি আমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছেন, সে সকল আমরা করিব; আপনি আমাদিগকে যে কোন স্থানে পাঠাইবেন, সেইখানে আমরা যাইব। আমরা সর্ব্ববিষয়ে যেমন মোশির কথা শুনিতাম, তেমনি আপনার কথা শুনিব; কেবল আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন মোশির সহবর্ত্তী ছিলেন, তেমনি আপনারও সহবর্ত্তী হউন। যে কেহ আপনার আজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ করিবে, এবং আপনার আজ্ঞাপিত সকল কথা না শুনিবে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে; আপনি কেবল বলবান হউন ও সাহস করুন। আর নূনের পুত্র যিহোশূয় শিটীম হইতে দুই জন চরকে গোপনে এই কথা বলিয়া পাঠাইয়া দিলেন, তোমরা যাও, ঐ দেশ ও যিরীহো নগর নিরীক্ষণ কর। তখন তাহারা গিয়া রাহব নাম্নী এক বেশ্যার গৃহে প্রবেশ করিয়া সেই স্থানে শয়ন করিল। আর লোকেরা যিরীহোর রাজাকে কহিল, দেখুন, দেশ অনুসন্ধান করিতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে কয়েকটী লোক আজ রাত্রিতে এস্থানে আসিয়াছে। তখন যিরীহোর রাজা রাহবের নিকটে এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন, যে লোকেরা তোমার কাছে আসিয়া তোমার গৃহে প্রবেশ করিয়াছে, তাহাদিগকে বাহির করিয়া আন, কেননা তাহারা সমস্ত দেশ অনুসন্ধান করিতে আসিয়াছে। তখন সে স্ত্রীলোকটী ঐ দুই জনকে লইয়া লুকাইয়া রাখিল, আর বলিল, সত্য, সেই লোকেরা আমার কাছে আসিয়াছিল বটে; কিন্তু তাহারা কোথাকার লোক, তাহা আমি জানিতাম না। অন্ধকার হইলে নগর-দ্বার বন্ধ করিবার একটু আগে সেই লোকেরা চলিয়া গিয়াছে; তাহারা কোথায় গিয়াছে, আমি জানি না; শীঘ্র তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে যাও, গেলে তাহাদের সঙ্গ ধরিবে। কিন্তু স্ত্রীলোকটী তাহাদিগকে ছাদের উপরে লইয়া গিয়া ছাদের উপরে আপনার সাজান মসিনার ডাঁটার মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়াছিল। ঐ লোকেরা তাহাদের পশ্চাতে যর্দ্দনের পথে পারঘাটা পর্য্যন্ত দৌড়িয়া গেল; এবং যাহারা তাহাদের পশ্চাতে দৌড়িয়া গেল, সেই লোকেরা বাহির হইবামাত্র নগর-দ্বার বন্ধ হইল। সেই দুই জন চর শয়ন করিবার পূর্ব্বে ঐ স্ত্রীলোকটী ছাদের উপরে তাহাদের নিকটে আসিল, আর তাহাদিগকে কহিল, আমি জানি, সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই দেশ দিয়াছেন, আর তোমাদের হইতে আমাদের উপরে মহাভয় উপস্থিত হইয়াছে, ও তোমাদের সম্মুখে এই দেশনিবাসী সমস্ত লোক গলিয়া গিয়াছে। কেননা মিসর হইতে তোমরা বাহির হইয়া আসিলে সদাপ্রভু তোমাদের সম্মুখে কি প্রকারে সূফসাগরের জল শুষ্ক করিয়াছিলেন, এবং তোমরা যর্দ্দনের ওপারস্থ সীহোন ও ওগ নামে ইমোরীয়দের দুই রাজার প্রতি যাহা করিয়াছ, তাহাদিগকে যে নিঃশেষে বিনষ্ট করিয়াছ, তাহা আমরা শুনিলাম; আর শুনিবামাত্র আমাদের হৃদয় গলিয়া গেল; তোমাদের হেতু কাহারো মনে সাহস রহিল না, কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু উপরিস্থ স্বর্গে ও নীচস্থ পৃথিবীতে ঈশ্বর। অতএব এখন, বিনয় করি, তোমরা আমার কাছে সদাপ্রভুর নামে দিব্য কর; আমি তোমাদের উপরে দয়া করিলাম, এই জন্য তোমরাও আমার পিতৃকুলের উপরে দয়া করিবে, এবং একটী সত্য চিহ্ন আমাকে দেও; ফলতঃ তোমরা আমার পিতামাতা, ভ্রাতাভগিনীগণ ও তাহাদের সমস্ত পরিজনকে বাঁচাইবে, ও মৃত্যু হইতে আমাদের প্রাণ উদ্ধার করিবে। সেই দুই জন তাহাকে বলিল, তোমরা যদি আমাদের এই কার্য্য প্রকাশ না কর, তোমাদের পরিবর্ত্তে আমাদের প্রাণ যাউক; যে সময়ে সদাপ্রভু আমাদিগকে এই দেশ দিবেন, তৎকালে আমরা তোমার প্রতি দয়া ও সত্য ব্যবহার করিব। পরে সে বাতায়ন দিয়া রজ্জু দ্বারা তাহাদিগকে নামাইয়া দিল, কেননা তাহার গৃহ নগরপ্রাচীরের গাত্রে ছিল, সে প্রাচীরের উপরে বাস করিত। আর সে তাহাদিগকে কহিল, যাহারা পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়াছে, তাহারা যেন তোমাদের সঙ্গ না ধরে, এই জন্য তোমরা পর্ব্বতে যাও, তিন দিন সে স্থানে লুকাইয়া থাক, তাহার পর যাহারা পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়াছে, তাহারা ফিরিয়া আসিলে তোমরা আপন পথে চলিয়া যাইও। সেই লোকেরা তাহাকে কহিল, তুমি আমাদিগকে যে দিব্য করাইয়াছ, সে বিষয়ে আমরা নির্দ্দোষ হইব। দেখ, তুমি যে বাতায়ন দিয়া আমাদিগকে নামাইয়া দিলে, আমাদের এই দেশে আসিবার সময়ে সেই বাতায়নে এই সিন্দুরবর্ণ সূত্রনির্ম্মিত রজ্জু বাঁধিয়া রাখিবে, এবং তোমার পিতামাতা ও ভ্রাতৃগণ এবং তোমার সমস্ত পিতৃকুলকে তোমার গৃহে একত্র করিবে। তখন এইরূপ হইবে, যে কেহ তোমার গৃহদ্বার হইতে বাহির হইয়া পথে যাইবে, তাহার রক্তপাতের অপরাধ তাহার মস্তকে বর্ত্তিবে, এবং আমরা নির্দ্দোষ হইব; কিন্তু যে কেহ তোমার সহিত গৃহমধ্যে থাকে, তাহার উপরে যদি কেহ হস্তার্পণ করে, তবে তাহার রক্তপাতের অপরাধ আমাদের মস্তকে বর্ত্তিবে। কিন্তু তুমি যদি আমাদের এই কার্য্য প্রকাশ কর, তবে তুমি আমাদিগকে যে দিব্য করাইয়াছ, তাহা হইতে আমরা নির্দ্দোষ হইব। তখন সে কহিল, তোমরা যেমন বলিলে, তেমনি হউক। পরে সে তাহাদিগকে বিদায় করিলে তাহারা প্রস্থান করিল, এবং সে ঐ সিন্দূরবর্ণ রজ্জু বাতায়নে বাঁধিয়া রাখিল। আর তাহারা গিয়া পর্ব্বতে উপস্থিত হইল, যাহারা পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়াছিল, তাহাদের ফিরিয়া আসা পর্য্যন্ত তিন দিন তথায় রহিল; তাহাতে যাহারা পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়াছিল, তাহারা সমস্ত পথে অন্বেষণ করিলেও তাহাদের উদ্দেশ পাইল না। পরে ঐ দুই ব্যক্তি ফিরিয়া পর্ব্বত হইতে নামিয়া আসিল, ও পার হইয়া নূনের পুত্র যিহোশূয়ের নিকটে আসিল, এবং আপনাদের প্রতি যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, তাহার সমস্ত বৃত্তান্ত তাঁহাকে কহিল, তাহারা যিহোশূয়কে কহিল, সত্যই সদাপ্রভু এই সমস্ত দেশ আমাদের হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন, আবার দেশের সমস্ত লোক আমাদের সম্মুখে গলিয়া গিয়াছে। পরে যিহোশূয় প্রত্যূষে উঠিয়া সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের সহিত শিটীম হইতে যাত্রা করিয়া যর্দ্দন সমীপে উপস্থিত হইলেন, কিন্তু তখন পার না হইয়া সে স্থানে রাত্রি যাপন করিলেন। তিন দিনের পর অধ্যক্ষগণ শিবিরের মধ্য দিয়া গেলেন; তাঁহারা লোকদিগকে এই আজ্ঞা করিলেন; তোমরা যে সময়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক, ও লেবীয় যাজকগণকে তাহা বহন করিতে দেখিবে, তৎকালে আপন আপন স্থান হইতে যাত্রা করিয়া তাহারা পশ্চাতে পশ্চাতে গমন করিবে। তথাপি তাহার ও তোমাদের মধ্যে অনুমান দুই সহস্র হস্ত পরিমিত ভূমি ব্যবধান থাকিবে; তাহার আর নিকটবর্ত্তী হইবে না; যেন তোমরা আপনাদের গন্তব্য পথ জানিতে পার, কেননা ইতিপূর্ব্বে তোমরা এই পথ দিয়া যাও নাই। পরে যিহোশূয় লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা আপনাদিগকে পবিত্র কর, কেননা কল্য সদাপ্রভু তোমাদের মধ্যে আশ্চর্য্য ক্রিয়া করিবেন। পরে যিহোশূয় যাজকদিগকে বলিলেন, তোমরা নিয়ম-সিন্দুক তুলিয়া লইয়া লোকদের অগ্রে অগ্রে চল; তাহাতে তাহারা নিয়ম-সিন্দুক তুলিয়া লইয়া লোকদের অগ্রে অগ্রে গমন করিতে লাগিল। তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, অদ্য আমি সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে তোমাকে মহিমান্বিত করিতে আরম্ভ করিব, যেন তাহারা জানিতে পারে যে আমি যেমন মোশির সহবর্ত্তী ছিলাম, তেমনি তোমার সহবর্ত্তী থাকিব। তুমি নিয়ম-সিন্দুকবাহক যাজকগণকে এই আজ্ঞা কর, যর্দ্দনের জলের ধারে উপস্থিত হইলে তোমরা যর্দ্দনে দাঁড়াইয়া থাকিবে। তখন যিহোশূয় ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলেন, তোমরা এখানে আইস, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাক্য শুন। আর যিহোশূয় কহিলেন, জীবন্ত ঈশ্বর যে তোমাদের মধ্যে বিদ্যমান, এবং কনানীয়, হিত্তীয়, হিব্বীয়, পরিষীয়, গির্গাশীয়, ইমোরীয় ও যিবূষীয়দিগকে তোমাদের সম্মুখ হইতে নিশ্চয়ই অধিকারচ্যুত করিবেন, তাহা তোমরা ইহা দ্বারা জানিতে পারিবে। দেখ, সমস্ত ভূমণ্ডলের প্রভুর নিয়ম-সিন্দুক তোমাদের অগ্রে অগ্রে যর্দ্দনে যাইতেছে। এখন তোমরা ইস্রায়েলের এক এক বংশ হইতে এক এক জন, এইরূপে বারো বংশ হইতে বারো জনকে গ্রহণ কর। পরে এইরূপ হইবে, সমস্ত ভূমণ্ডলের প্রভু সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকবাহক যাজকদের পদতল যর্দ্দনের জলে প্রবিষ্ট হইবামাত্র যর্দ্দনের জল, অর্থাৎ উপর হইতে যে জল বহিয়া আসিতেছে, তাহা ছিন্ন হইবে, এবং এক রাশি হইয়া দাঁড়াইয়া থাকিবে। তখন লোকেরা যর্দ্দন পার হইবার জন্য আপন আপন তাম্বু হইতে যাত্রা করিল, আর যাজকগণ নিয়ম-সিন্দুক বহন করতঃ লোকদের অগ্রবর্ত্তী হইল। আর সিন্দুকবাহকেরা যখন যর্দ্দন-সমীপে উপস্থিত হইল, এবং জলের ধারে সিন্দুকবাহক যাজকগণের চরণ জলমগ্ন হইল,—বাস্তবিক ফসল কাটার সমস্ত সময় যর্দ্দনের জল সমস্ত তীরের উপরে থাকে, —তখন উপর হইতে আগত সমস্ত জল দাঁড়াইল, অতিদূরে সর্ত্তনের নিকটবর্ত্তী আদম নগরের কাছে এক রাশি হইয়া উঠিয়া রহিল, এবং অরাবা তলভূমির সমুদ্রে অর্থাৎ লবণ সমুদ্রে যে জল নামিয়া যাইতেছিল, তাহা সম্পূর্ণ ছিন্ন হইল; তাহাতে লোকেরা যিরীহোর সম্মুখেই পার হইল। আর যে পর্য্যন্ত সমস্ত লোক নিঃশেষে যর্দ্দন পার না হইল, সেই পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকবাহক যাজকগণ যর্দ্দন-মধ্যে শুষ্কভূমিতে দাঁড়াইয়া থাকিল; এবং সমস্ত ইস্রায়েল ক্রমশঃ শুষ্ক ভূমি দিয়া পার হইয়া গেল। এইরূপে সমস্ত লোক নিঃশেষে যর্দ্দন পার হইলে পর সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তোমরা এক এক বংশের মধ্য হইতে এক এক জন, এইরূপে লোকদের বারো জনকে গ্রহণ কর, আর তাহাদিগকে এই আজ্ঞা কর, তোমরা যর্দ্দনের মধ্যবর্ত্তী ঐ স্থান হইতে, যে স্থানে যাজকদের চরণ স্থির ছিল, তথা হইতে বারোখানি প্রস্তর গ্রহণ করিয়া আপনাদের সঙ্গে পারে লইয়া যাও, অদ্য যে স্থানে রাত্রি যাপন করিবে, সেই স্থানে সেগুলি রাখিও। তাহাতে যিহোশূয় ইস্রায়েল-সন্তানগণের প্রত্যেক বংশ হইতে এক এক জন করিয়া যে বারো জনকে নিরূপণ করিয়াছিলেন, তাহাদিগকে ডাকিলেন; আর যিহোশূয় তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সিন্দুকের সম্মুখে যর্দ্দন-মধ্যে গিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণের বংশ-সংখ্যানুসারে প্রত্যেক জন এক একখানি প্রস্তর তুলিয়া স্কন্ধে কর; যেন তাহা চিহ্নরূপে তোমাদের মধ্যে থাকিতে পারে; ভাবী কালে যখন তোমাদের সন্তানগণ জিজ্ঞাসা করিবে, এই প্রস্তরগুলির তাৎপর্য্য কি? তোমরা তাহাদিগকে বলিবে, সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকের সম্মুখে যর্দ্দনের জল ছিন্ন হইয়াছিল, সিন্দুক যখন যর্দ্দন পার হয়, সেই সময়ে যর্দ্দনের জল ছিন্ন হইয়াছিল; তাই এই প্রস্তরগুলি চিরকাল ইস্রায়েল-সন্তানগণের স্মরণার্থে থাকিবে। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ যিহোশূয়ের আজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিল, সদাপ্রভু যিহোশূয়কে যেমন বলিয়াছিলেন, তেমনি ইস্রায়েল-সন্তানগণের বংশ-সংখ্যানুসারে যর্দ্দনের মধ্য হইতে বারোখানি প্রস্তর তুলিয়া লইল; এবং আপনাদের সঙ্গে পারে রাত্রি যাপনের স্থানে লইয়া গিয়া সেখানে রাখিল। আর যে স্থানে নিয়ম-সিন্দুক বাহক যাজকগণের চরণ স্থির ছিল, সেই স্থানে যর্দ্দন-মধ্যে যিহোশূয় বারোখানি প্রস্তর স্থাপন করিলেন; সে সকল অদ্যাপি সে স্থানে আছে। যিহোশূয়ের প্রতি মোশির আদেশানুযায়ী যে সমস্ত কথা লোকদিগকে বলিবার আজ্ঞা সদাপ্রভু যিহোশূয়কে দিয়াছিলেন, তাহা সমাপ্ত না হওয়া পর্য্যন্ত সিন্দুক-বাহক যাজকগণ যর্দ্দন-মধ্যে দাঁড়াইয়া থাকিল, এবং লোকেরা ত্বরা করিয়া পার হইয়া গেল। এইরূপে সমস্ত লোক নিঃশেষে পার হইলে পর সদাপ্রভুর সিন্দুক ও যাজকগণ লোকদের সাক্ষাতে পার হইয়া গেল। আর রূবেণ-সন্তানগণ, গাদ-সন্তানগণ ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশ তাহাদের প্রতি মোশির বাক্যানুসারে সসজ্জ হইয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে পার হইয়া গেল; যুদ্ধার্থে প্রস্তুত অনুমান চল্লিশ সহস্র লোক যুদ্ধের জন্য সদাপ্রভুর সম্মুখে পার হইয়া যিরীহোর তলভূমিতে গেল। সেই দিবসে সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে যিহোশূয়কে মহিমান্বিত করিলেন; তাহাতে লোকেরা যেমন মোশিকে ভয় করিত, তদ্রূপ যিহোশূয়ের জীবন কালে তাঁহাকেও ভয় করিতে লাগিল। সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বলিয়াছিলেন, তুমি সাক্ষ্য-সিন্দুকবাহক যাজকগণকে যর্দ্দন হইতে উঠিয়া আসিতে আজ্ঞা কর। তাহাতে যিহোশূয় যাজকগণকে এই আজ্ঞা করিলেন, তোমরা যর্দ্দন হইতে উঠিয়া আইস। পরে যর্দ্দনের মধ্য হইতে সদাপ্রভুর নিয়ম সিন্দুকবাহক যাজকগণের উঠিয়া আসিবার সময়ে যখন যাজকদের পদতল শুষ্কভূমি স্পর্শ করিল, তখনই যর্দ্দনের জল স্বস্থানে ফিরিয়া আসিয়া পূর্ব্বের ন্যায় সমস্ত তীরের উপরে উঠিল। এইরূপে লোকেরা প্রথম মাসের দশম দিবসে যর্দ্দন হইতে উঠিয়া আসিয়া যিরীহোর পূর্ব্ব-সীমায়, গিল্‌গলে শিবির স্থাপন করিল। আর তাহারা যে বারোখানি প্রস্তর যর্দ্দন হইতে আনিয়াছিল, সে সকল যিহোশূয় গিল্‌গলে স্থাপন করিলেন। আর তিনি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলেন, ভাবী কালে যখন তোমাদের সন্তানগণ আপন আপন পিতৃগণকে জিজ্ঞাসা করিবে, এই প্রস্তরগুলির তাৎপর্য্য কি? তখন তোমরা আপন আপন সন্তানগণকে জ্ঞাত করিবে, বলিবে, ইস্রায়েল শুষ্কভূমি দিয়া এই যর্দ্দন পার হইয়া আসিয়াছিল। কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সূফসাগরের প্রতি যেমন করিয়াছিলেন, আমাদের পার না হওয়া পর্য্যন্ত যেমন তাহা শুষ্ক করিয়াছিলেন, তেমনি তোমাদের পার না হওয়া পর্য্যন্ত তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সম্মুখে যর্দ্দনের জল শুষ্ক করিলেন; যেন পৃথিবীর সমস্ত জাতি জানিতে পায় যে, সদাপ্রভুর হস্ত বলবান, এবং তাহারা যেন সর্ব্বদা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় কর। আর যখন যর্দ্দনের পশ্চিম পারস্থ ইমোরীয়দের সকল রাজা ও সমুদ্রের নিকটস্থ কনানীয়দের সকল রাজা শুনিতে পাইলেন যে, আমরা যাবৎ পার না হইলাম, তাবৎ সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে যর্দ্দনের জল শুষ্ক করিলেন তখন তাঁহাদের হৃদয় গলিয়া গেল, ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের হেতু তাঁহাদের আর সাহস রহিল না। সেই সময়ে সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি চকমকি পাথরের কতকগুলি ছুরী প্রস্তুত করিয়া দ্বিতীয় বার ইস্রায়েল-সন্তানগণের ত্বক্‌ছেদ করাও। তাহাতে যিহোশূয় চকমকি পাথরের ছুরী প্রস্তুত করিয়া ত্বক্‌-পর্ব্বতের সমীপে ইস্রায়েল-সন্তানগণের ত্বক্‌ছেদ করাইলেন। যিহোশূয় যে ত্বক্‌ছেদ করাইলেন, তাহার কারণ এই; মিসর হইতে যে সমস্ত পুরুষ লোক, যত যোদ্ধা বাহির হইয়া আসিয়াছিল, তাহারা মিসর হইতে বাহির হইবার পর পথের মধ্যে প্রান্তরে মরিয়াছিল। যাহারা বাহির হইয়া আসিয়াছিল, তাহারা সকলে ছিন্নত্বক্‌ ছিল বটে, কিন্তু মিসর হইতে বাহির হইবার পর যে সকল লোক পথের মধ্যে প্রান্তরে জন্মিয়াছিল, তাহাদের ত্বক্‌ছেদ হয় নাই। ফলতঃ যে সমস্ত লোক, যে যোদ্ধারা মিসর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিল, তাহারা সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিত না, তজ্জন্য তাহাদের সংহার না হওয়া পর্য্যন্ত ইস্রায়েল-সন্তানগণ চল্লিশ বৎসর প্রান্তরে ভ্রমণ করিয়াছিল; কেননা আমাদিগকে দুগ্ধমধুপ্রবাহী যে দেশ দিবার বিষয়ে সদাপ্রভু উহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছিলেন, সদাপ্রভু উহাদিগকে সেই দেশ দেখিতে দিবেন না, এমন দিব্য উহাদের কাছে করিয়াছিলেন। উহাদের স্থানে উহাদের যে সন্তানদিগকে তিনি উৎপন্ন করিলেন, যিহোশূয় তাহাদেরই ত্বক্‌ছেদ করাইলেন; কেননা আহারা অচ্ছিন্নত্বক্‌ ছিল; কারণ পথের মধ্যে তাহাদের ত্বক্‌ছেদ করা যায় নাই। সেই সমস্ত লোকের ত্বক্‌ছেদ সমাপ্ত হইলে পর যাবৎ তাহারা সুস্থ না হইল, তাবৎ শিবিরের মধ্যে স্ব স্ব স্থানে থাকিল। পরে সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, অদ্য আমি তোমাদের হইতে মিসরের দুর্নাম গড়াইয়া দিলাম। আর অদ্য পর্য্যন্ত সেই স্থানের নাম গিল্‌গল [গড়ান] আখ্যাত হইয়াছে। ইস্রায়েল-সন্তানগণ গিল্‌গলে শিবির স্থাপন করিল; আর সেই মাসের চতুর্দ্দশ দিনের সায়ংকালে যিরীহোর তলভূমিতে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিল। সেই নিস্তারপর্ব্বের পরদিবসে তাহারা দেশোৎপন্ন শস্য ভোজন করিতে লাগিল, সেই দিনে তাড়ীশূন্য রুটী ও ভাজা শস্য ভোজন করিল। আর সেই পরদিবসে তাহাদের দেশোৎপন্ন শস্য ভোজনের পরে মান্না নিবৃত্ত হইল; সেই অবধি ইস্রায়েল-সন্তানগণ আর মান্না পাইল না, কিন্তু সেই বৎসরে তাহারা কনান দেশের ফল ভোজন করিল। যিরীহোর নিকটে অবস্থিতি-কালে যিহোশূয় চক্ষু তুলিয়া চাহিলেন, আর দেখ, এক পুরুষ তাঁহার সম্মুখে দণ্ডায়মান, তাঁহার হস্তে একখানা নিষ্কোষ খড়গ; যিহোশূয় তাঁহার কাছে গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি আমাদের পক্ষ, কি আমাদের শত্রুদের পক্ষ? তিনি কহিলেন, না; কিন্তু আমি সদাপ্রভুর সৈন্যের অধ্যক্ষ, এখনই আসিলাম। তখন যিহোশূয় ভূমিতে উবুড় হইয়া পড়িয়া প্রণিপাত করিলেন, ও তাঁহাকে কহিলেন, হে আমার প্রভু, আপনার এ দাসকে কি আজ্ঞা করেন? সদাপ্রভুর সৈন্যের অধ্যক্ষ যিহোশূয়কে কহিলেন, তোমার পদ হইতে পাদুকা খুলিয়া ফেল, কেননা যে স্থানে তুমি দাঁড়াইয়া আছ, ঐ স্থান পবিত্র। তখন যিহোশূয় সেইরূপ করিলেন। (সেই সময়ে ইস্রায়েল-সন্তানগণের হেতু যিরীহো নগর রুদ্ধ ও সংরুদ্ধ ছিল, কেহ ভিতরে আসিত না, কেহ বাহিরে যাইত না।) আর সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, দেখ, আমি যিরীহো, ইহার রাজাকে ও বলবান বীর সকলকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিলাম। তোমরা সমস্ত যোদ্ধা এই নগর বেষ্টন করিয়া এক এক বার প্রদক্ষিণ করিবে; এইরূপ ছয় দিন করিবে। আর সাত জন যাজক সিন্দুকের অগ্রে অগ্রে মহাশব্দকারী সাত তূরী বহন করিবে; পরে সপ্তম দিবসে তোমরা সাত বার নগর প্রদক্ষিণ করিবে, ও যাজকগণ তূরী বাজাইবে। আর তাহারা উচ্চৈঃস্বরে মহাশব্দকারী শিঙ্গা বাজাইলে যখন তোমরা সেই তূরীধ্বনি শুনিবে, তখন সমস্ত লোক অতি উচ্চৈঃস্বরে সিংহনাদ করিয়া উঠিবে, তাহাতে নগরের প্রাচীর স্বস্থানে পড়িয়া যাইবে, এবং লোকেরা প্রত্যেক জন সম্মুখপথে উঠিয়া যাইবে। পরে নূনের পুত্র যিহোশূয় যাজকগণকে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা নিয়ম-সিন্দুক তুল, এবং সাত জন যাজক সদাপ্রভুর সিন্দুকের অগ্রে অগ্রে মহাশব্দকারী সাত তূরী বহন করুক। আর তিনি লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা অগ্রসর হইয়া নগর বেষ্টন কর, এবং সসজ্জ সৈন্য সদাপ্রভুর সিন্দুকের অগ্রে অগ্রে গমন করুক। তখন লোকদের কাছে যিহোশূয়ের বাক্য সাঙ্গ হইলে সেই সাত জন যাজক সদাপ্রভুর অগ্রে অগ্রে মহাশব্দকারী সাত তূরী বহন করতঃ তূরী বাজাইতে বাজাইতে চলিতে লাগিল, ও সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে চলিল। আর সসজ্জ সৈন্য তূরীবাদক যাজকদের অগ্রে অগ্রে চলিল, এবং পশ্চাদ্দিকের সৈন্য সিন্দুকের পশ্চাতে পশ্চাতে গমন করিল, [যাজকগণ] তূরীধ্বনি করিতে করিতে চলিল। আর যিহোশূয় লোকদিগকে বলিলেন, তোমরা সিংহনাদ করিও না, আপন আপন রব শুনাইও না, তোমাদের মুখ হইতে বাক্য নির্গত না হউক; পরে আমি যে দিন সিংহনাদ করিতে তোমাদিগকে আজ্ঞা করিব, সেই দিন তোমরা সিংহনাদ করিবে। এইরূপে তিনি নগরের চারিদিকে এক বার সদাপ্রভুর সিন্দুক প্রদক্ষিণ করাইলেন; আর তাহারা শিবিরে আসিয়া শিবিরে রাত্রি যাপন করিল। আর যিহোশূয় প্রত্যূষে উঠিলেন, এবং যাজকগণ সদাপ্রভুর সিন্দুক তুলিয়া লইল। আর সেই সাত জন যাজক সদাপ্রভুর সিন্দুকের অগ্রে অগ্রে মহাশব্দকারী সাত তূরী বহন করিতে করিতে, অনবরত চলিল ও তূরী বাজাইতে লাগিল; এবং সসজ্জ সৈন্য তাহাদের অগ্রে অগ্রে চলিল, এবং পশ্চাদ্দিকের সৈন্য সদাপ্রভুর সিন্দুকের পশ্চাতে পশ্চাতে গমন করিল, [যাজকগণ] তূরীধ্বনি করিতে করিতে চলিল। আর তাহারা দ্বিতীয় দিবসে এক বার নগর প্রদক্ষিণ করিয়া শিবিরে ফিরিয়া আসিল; তাহারা ছয় দিন এইরূপ করিল। পরে সপ্তম দিবসে তাহারা প্রত্যূষে অরুণোদয় কালে উঠিয়া সাত বার সেই প্রকারে নগর প্রদক্ষিণ করিল; কেবল সেই দিবসে সাত বার নগর প্রদক্ষিণ করিল। পরে যাজকগণ সপ্তম বার তূরী বাজাইলে যিহোশূয় লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা সিংহনাদ কর, কেননা সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই নগর দিয়াছেন। আর নগর ও তথাকার সমস্ত বস্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে বর্জ্জিত হইবে; কেবল রাহব বেশ্যা ও তাহার সহিত যাহারা গৃহে আছে, সমস্ত লোক বাঁচিবে, কেননা সে আমাদের প্রেরিত দূতগণকে লুকাইয়া রাখিয়াছিল। আর তোমরা সেই বর্জ্জিত দ্রব্য হইতে আপনাদিগকে সাবধানে রক্ষা করিও, নতুবা বর্জ্জিত করিবার পর বর্জ্জিত দ্রব্যের কিছু লইলে তোমরা ইস্রায়েলের শিবির বর্জ্জিত করিয়া ব্যাকুল করিবে। কিন্তু সমুদয় রৌপ্য ও স্বর্ণ এবং পিত্তলের ও লৌহের সমস্ত পাত্র সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র; সে সকল সদাপ্রভুর ভাণ্ডারে যাইবে। পরে লোকেরা সিংহনাদ করিল; ও [যাজকেরা] তূরী বাজাইল; আর লোকেরা তূরীধ্বনি শুনিয়া অতি উচ্চৈঃস্বরে সিংহনাদ করিয়া উঠিল, তাহাতে প্রাচীর স্বস্থানে পড়িয়া গেল; পরে লোকেরা প্রত্যেক জন সম্মুখপথে নগরে উঠিয়া গিয়া নগর হস্তগত করিল। আর তাহারা খড়গধারে নগরের স্ত্রী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ এবং গো, মেষ ও গর্দ্দভ সকলই নিঃশেষে বিনষ্ট করিল। কিন্তু যে দুই ব্যক্তি দেশ নিরীক্ষণ করিয়াছিল, যিহোশূয় তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা সেই বেশ্যার গৃহে গমন কর, এবং তাহার কাছে যে দিব্য করিয়াছ, তদনুসারে সেই স্ত্রীলোককে ও তাহার সমস্ত লোককে বাহির করিয়া আন। তাহাতে সেই দুই যুবা চর প্রবেশ করিয়া রাহবকে এবং তাহার পিতামাতা ও ভ্রাতৃগণ ও তাহার সমস্ত লোককে বাহির করিয়া আনিল; তাহার সমস্ত গোষ্ঠীকেও বাহির করিয়া আনিল; তাহারা ইস্রায়েলের শিবিরের বাহিরে তাহাদিগকে রাখিল। আর লোকেরা নগর ও তথাকার সমস্ত বস্তু আগুনে পোড়াইয়া দিল, কেবল রৌপ্য ও স্বর্ণ, এবং পিত্তলের ও লৌহের পাত্র সকল সদাপ্রভুর গৃহের ভাণ্ডারে রাখিল। কিন্তু যিহোশূয় রাহব বেশ্যাকে, তাহার পিতৃকুলকে ও তাহার স্বজন সকলকে জীবিত রাখিলেন; সে অদ্যাপি ইস্রায়েলের মধ্যে বসতি করিতেছে; কারণ যিরীহো নিরীক্ষণ করিবার জন্য যিহোশূয়ের প্রেরিত দুই দূতকে সে লুকাইয়া রাখিয়াছিল। সেই সময়ে যিহোশূয় শপথ করিয়া লোকদিগকে কহিলেন, যে কেহ উঠিয়া এই যিরীহো নগর পত্তন করিবে, সে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে শাপগ্রস্ত হউক; নগরের ভিত্তিমূল স্থাপনের দণ্ডরূপে সে আপন জ্যেষ্ঠ পুত্রকে, ও নগরদ্বার সকল স্থাপনের দণ্ডরূপে আপন কনিষ্ঠ পুত্রকে দিবে। এইরূপে সদাপ্রভু যিহোশূয়ের সহবর্ত্তী ছিলেন, আর তাঁহার যশ সমুদয় দেশে ব্যাপিল। কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানগণ বর্জ্জিত বস্তু সম্বন্ধে সত্যলঙ্ঘন করিল; ফলতঃ যিহূদা বংশীয় সেরহের সন্তান সব্দির সন্তান কর্ম্মির পুত্র আখন বর্জ্জিত বস্তুর কিছু হরণ করিল; তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল। আর যিহোশূয় যিরীহো হইতে বৈথেলের পূর্ব্বদিক্‌স্থিত বৈৎ-আবনের পার্শ্বস্থ অয়ে লোক প্রেরণ করিলেন, তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা উঠিয়া গিয়া দেশ নিরীক্ষণ কর। তাহাতে তাহারা গিয়া অয় নিরীক্ষণ করিল। পরে তাহারা যিহোশূয়ের নিকটে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, সে স্থানে সকল লোক না গেলেও হয়, দুই কিম্বা তিন সহস্র লোক উঠিয়া গিয়া অয় পরাজয় করুক; সে স্থানে সকল লোক কষ্ট না করিলেও হয়, কেননা তথাকার লোক অল্প। অতএব লোকদের মধ্য হইতে অনুমান তিন সহস্র জন সে স্থানে যাত্রা করিল, কিন্তু তাহারা অয়ের লোকদের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল; আর অয়ের লোকেরা তাহাদের মধ্যে প্রায় ছত্রিশ জনকে আঘাত করিল; নগর-দ্বার হইতে শবারীম পর্য্যন্ত তাহাদিগকে তাড়না করিয়া অবরোহণের পথে আঘাত করিল, তাহাতে লোকদের হৃদয় গলিয়া গিয়া জলের ন্যায় হইল। তখন যিহোশূয় ও ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ আপন আপন বস্ত্র চিরিয়া সদাপ্রভুর সিন্দুকের সম্মুখে অধোমুখ হইয়া সন্ধ্যা পর্য্যন্ত ভূমিতে পড়িয়া থাকিলেন, এবং আপন আপন মস্তকে ধূলা ছড়াইলেন। আর যিহোশূয় কহিলেন, হায় হায়, হে প্রভু সদাপ্রভু, বিনাশার্থে ইমোরীয়দের হস্তে আমাদিগকে সমর্পণ করিবার জন্য তুমি কেন এই লোকদিগকে যর্দ্দন পার করিয়া আনিলে? হায় হায়, আমরা কেন সন্তুষ্ট হইয়া যর্দ্দনের ওপারে থাকি নাই! হে প্রভু, ইস্রায়েল আপন শত্রুগণের সম্মুখে হটিয়া গেলে পর আমি কি বলিব? কনানীয়েরা এবং দেশ নিবাসী সমস্ত লোক এই কথা শুনিবে, আর আমাদিগকে বেষ্টন করিয়া পৃথিবী হইতে আমাদের নাম উচ্ছেদ করিবে, তাহা হইলে তুমি আপন মহা-নামের নিমিত্ত কি করিবে? তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি উঠ, কেন তুমি অধোমুখ হইয়া পড়িয়া আছ? ইস্রায়েল পাপ করিয়াছে, এমন কি, তাহারা আমার আজ্ঞাপিত নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছে; এমন কি তাহারা সেই বর্জ্জিত দ্রব্যের কিছু লইয়াছে; আবার চুরি করিয়াছে, আবার প্রতারণা করিয়াছে, আবার আপনাদের সামগ্রীর মধ্যে তাহা রাখিয়াছে। এই জন্য ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপন শত্রুগণের সম্মুখে দাঁড়াইতে পারে না, শত্রুগণের সম্মুখ হইতে হটিয়া যায়, কেননা তাহারা বর্জ্জিত হইয়াছে; তোমাদের মধ্য হইতে সেই বর্জ্জিত বস্তু উৎপাটন না করিলে আমি আর তোমাদের সঙ্গে থাকিব না। উঠ, লোকদিগকে পবিত্র কর, বল, তোমরা কল্যের জন্য পবিত্র হও, কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে ইস্রায়েল, তোমার মধ্যে বর্জ্জিত বস্তু আছে; আপনাদের মধ্য হইতে সেই বর্জ্জিত বস্তু দূর না করিলে তুমি আপন শত্রুদের সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিবে না। অতএব প্রাতঃকালে আপন আপন বংশানুসারে তোমরা নিকটে আনীত হইবে; তাহাতে সদাপ্রভু কর্ত্তৃক যে বংশ নির্ণীত হইবে, সেই বংশের এক এক গোষ্ঠী নিকটে আসিবে; ও সদাপ্রভু কর্ত্তৃক যে গোষ্ঠী নির্ণীত হইবে, তাহার এক এক কুল নিকটে আসিবে; ও সদাপ্রভু কর্ত্তৃক যে কুল নির্ণীত হইবে, তাহার এক এক পুরুষ নিকটে আসিবে। আর যে ব্যক্তি বর্জ্জিত দ্রব্য রাখিয়াছে বলিয়া ধরা পড়িবে, তাহাকে ও তাহার সম্পর্কীয় সকলকেই আগুনে পোড়াইয়া দিতে হইবে, কেননা সে সদাপ্রভুর নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছে, ও ইস্রায়েলের মধ্যে মূঢ়তার কার্য্য করিয়াছে। পরে যিহোশূয় প্রত্যূষে উঠিয়া ইস্রায়েলকে স্ব স্ব বংশানুসারে নিকটে আনাইলেন; তাহাতে যিহূদা-বংশ ধরা পড়িল; পরে তিনি যিহূদার গোষ্ঠী সকলকে নিকটে আনাইলে সেরহীয় গোষ্ঠী ধরা পড়িল; পরে তিনি সেরহীয় গোষ্ঠীকে পুরুষানুসারে আনাইলে সব্দি ধরা পড়িল। পরে তিনি তাহার কুলকে পুরুষানুসারে আনাইলে যিহূদা-বংশীয় সেরহের সন্তান সব্দির সন্তান কর্ম্মির পুত্র আখন ধরা পড়িল। তখন যিহোশূয় আখনকে কহিলেন, হে আমার বৎস, বিনয় করি, তুমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর মহিমা স্বীকার কর, তাঁহার স্তব কর; এবং তুমি কি করিয়াছ, আমাকে বল; আমা হইতে গোপন করিও না। আখন উত্তর করিয়া যিহোশূয়কে কহিল, সত্য, আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি, আমি এই এই কার্য্য করিয়াছি; আমি লুটিত দ্রব্যের মধ্যে উত্তম একখানি বাবিলীয় শাল, দুই শত শেকল রৌপ্য ও পঞ্চাশ শেকল পরিমিত এক থান স্বর্ণ দেখিয়া লোভে পড়িয়া হরণ করিয়াছি; আর দেখুন, সে সকল আমার তাম্বুর মধ্যে ভূমিতে লুকান রহিয়াছে, আর নীচে রৌপ্য আছে। তখন যিহোশূয় দূত প্রেরণ করিলে তাহারা তাহার তাম্বুতে দৌড়িয়া গেল, আর দেখ, তাহার তাম্বুর মধ্যে তাহা লুকান রহিয়াছে, আর নীচে রৌপ্য ছিল। আর তাহারা তাম্বুর মধ্য হইতে সে সকল লইয়া যিহোশূয়ের ও সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের কাছে আনিল, এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা বিস্তার করিল। পরে যিহোশূয় ও সমস্ত ইস্রায়েল সেরহের সন্তান আখনকে ও সেই রৌপ্য, শাল, স্বর্ণের থান ও তাহার পুত্রকন্যাগণ এবং তাহার গোরু, গর্দ্দভ, মেষ ও তাম্বু, এবং তাহার যাহা কিছু ছিল, সমস্তই লইলেন; আর আখোর তলভূমিতে আনিলেন। পরে যিহোশূয় কহিলেন, তুমি আমাদিগকে কেন ব্যাকুল করিলে? অদ্য সদাপ্রভু তোমাকে ব্যাকুল করিবেন। পরে সমস্ত ইস্রায়েল তাহাকে প্রস্তরাঘাত করিল; তাহারা তাহাদিগকে আগুনে পোড়াইল ও প্রস্তরাঘাত করিল। পরে তাহারা তাহার উপরে প্রস্তরের বৃহৎ রাশি করিল, তাহা অদ্যাপি রহিয়াছে। এইরূপে সদাপ্রভু আপন প্রচণ্ড ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হইলেন। অতএব সেই স্থান অদ্যাপি আখোর [ব্যাকুলতা] তলভূমি নামে আখ্যাত রহিয়াছে। পরে সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি ভীত কি নিরাশ হইও না; সমস্ত সৈন্যকে সঙ্গে করিয়া লও, উঠ, অয়ে যাত্রা কর; দেখ, আমি অয়ের রাজাকে ও তাহার প্রজাদিগকে এবং তাহার নগর ও তাহার দেশ তোমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছি। তুমি যিরীহোর ও তথাকার রাজার প্রতি যেরূপ করিলে, অয়ের ও তথাকার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিবে, কিন্তু তাহার লুটদ্রব্য ও পশু তোমরা আপনাদের জন্য লইবে। তুমি নগরের বিরুদ্ধে পশ্চাৎ দিকে আপনার এক দল সৈন্য গোপনে রাখ। তখন যিহোশূয় ও সমস্ত যোদ্ধা উঠিয়া অয়ের বিরুদ্ধে যাত্রা করিলেন; যিহোশূয় তিন সহস্র বলবান বীর মনোনীত করিলেন, এবং তাহাদিগকে রাত্রিতে পাঠাইয়া দিলেন। তিনি এই আজ্ঞা করিলেন, দেখ, তোমরা নগরের পশ্চাতে নগরের বিরুদ্ধে লুকাইয়া থাকিবে; নগর হইতে বেশী দূরে যাইবে না, কিন্তু সকলেই প্রস্তুত থাকিবে। পরে আমি ও আমার সঙ্গী সমস্ত লোক নগরের নিকটে উপস্থিত হইব; আর তাহারা যখন পূর্ব্বের ন্যায় আমাদের বিরুদ্ধে বাহির হইয়া আসিবে, তখন আমরা তাহাদের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিব। আর তাহারা বাহির হইয়া আমাদের পশ্চাতে পশ্চাতে আসিবে, শেষে আমরা তাহাদিগকে নগর হইতে দূরে আকর্ষণ করিব; কেননা তাহারা বলিবে, ইহারা পূর্ব্বের ন্যায় আমাদের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিতেছে; এইরূপে আমরা তাহাদের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিব; আর তোমরা গুপ্ত স্থান হইতে উঠিয়া নগর অধিকার করিবে; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা তোমাদের হস্তে সমর্পণ করিবেন। নগর আক্রমণ করিবামাত্র তোমরা নগরে আগুন লাগাইয়া দিবে; তোমরা সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে কার্য্য করিবে; দেখ, আমি তোমাদিগকে আজ্ঞা করিলাম। এইরূপে যিহোশূয় তাহাদিগকে প্রেরণ করিলেন; আর তাহারা গিয়া অয়ের পশ্চিমে বৈথেলের ও অয়ের মধ্যস্থানে লুকাইয়া থাকিল; কিন্তু যিহোশূয় লোকদের মধ্যে সেই রাত্রি যাপন করিলেন। পরে যিহোশূয় প্রত্যূষে উঠিয়া লোক সংগ্রহ করিলেন, আর তিনি ও ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ লোকদের অগ্রে অগ্রে অয়ে যাত্রা করিলেন। আর তাঁহার সঙ্গী সমস্ত যোদ্ধা চলিল, এবং নিকটবর্ত্তী হইয়া নগরের সম্মুখে উপস্থিত হইল, আর অয়ের উত্তরদিকে শিবির স্থাপন করিল; তাঁহার ও অয়ের মধ্যস্থানে এক উপত্যকা ছিল। আর তিনি অনুমান পাঁচ সহস্র লোক লইয়া নগরের পশ্চিমদিকে বৈথেলের ও অয়ের মধ্যস্থানে লুকাইয়া রাখিলেন। এইরূপে লোকেরা নগরের উত্তরদিক্‌স্থ সমস্ত শিবিরকে ও নগরের পশ্চিমদিকে আপনাদের গুপ্ত দলকে স্থাপন করিল; এবং যিহোশূয় ঐ রাত্রিতে তলভূমির মধ্যে গমন করিলেন। পরে যখন অয়ের রাজা তাহা দেখিলেন, তখন নগরস্থ লোকেরা, রাজা ও তাঁহার সকল লোক, সত্বর প্রত্যূষে উঠিয়া ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে বাহির হইয়া নিরূপিত স্থানে অরাবা তলভূমির সম্মুখে গেলেন; কিন্তু তাঁহার বিরুদ্ধে এক দল সৈন্য নগরের পশ্চাতে লুকাইয়া আছে, ইহা তিনি জানিতেন না। যিহোশূয় ও সমস্ত ইস্রায়েল তাঁহাদের সম্মুখে আপনাদিগকে পরাজিতের ন্যায় দেখাইয়া প্রান্তরের পথ দিয়া পলায়ন করিলেন। তাহাতে নগরে অবস্থিত সকল লোককে ডাকা হইল, যেন তাহারা তাহাদের পশ্চাতে দৌড়িয়া যায়। আর তাহারা যিহোশূয়ের পশ্চাতে পশ্চাতে গমন করিতে করিতে নগর হইতে দূরে আকর্ষিত হইল; বাহির হইয়া ইস্রায়েলের পশ্চাতে না গেল, এমন এক জনও অয়ে বা বৈথেলে অবশিষ্ট থাকিল না; সকলে, নগরের দ্বার খোলা রাখিয়া ইস্রায়েলের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িল। তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি আপন হস্তস্থিত শল্য অয়ের দিকে বিস্তার কর; কেননা আমি সেই নগর তোমার হস্তে দিব। তখন যিহোশূয় আপন হস্তস্থিত শল্য নগরের দিকে বিস্তার করিলেন। তিনি হস্ত বিস্তার করিবামাত্র গোপনে স্থিত সৈন্যদল অমনি স্বস্থান হইতে উঠিয়া বেগে গমন করিল, ও নগরে প্রবেশ করিয়া তাহা হস্তগত করিল, এবং শীঘ্র করিয়া নগরে আগুন লাগাইয়া দিল। পরে অয়ের লোকেরা পশ্চাতে ফিরিয়া চাহিয়া দেখিল, আর দেখ, নগরের ধূম আকাশে উঠিতেছে, কিন্তু তাহারা এদিকে কি ওদিকে কোন দিকেই পলাইবার উপায় পাইল না; আর প্রান্তরে পলায়মান লোকেরা তাহাদের পশ্চাতে ধাবমান লোকদের দিকে ফিরিয়া আক্রমণ করিতে লাগিল। ফলতঃ গোপনে স্থিত সৈন্যদল নগর হস্তগত করিয়াছে ও নগরের ধূম উঠিতেছে, ইহা দেখিয়া যিহোশূয় ও সমস্ত ইস্রায়েল ফিরিয়া অয়ের লোকদিগকে সংহার করিতে লাগিলেন; আর অন্য দলও নগর হইতে তাহাদের বিরুদ্ধে আসিতেছিল; সুতরাং তাহারা ইস্রায়েলের মধ্যে পড়িল, কতক এপার্শ্বে কতক ওপার্শ্বে; আর তাহারা তাহাদিগকে এমন আঘাত করিল যে, তাহাদের অবশিষ্ট বা রক্ষাপ্রাপ্ত কেহ রহিল না। আর তাহারা অয়ের রাজাকে জীবিত ধরিয়া যিহোশূয়ের নিকটে আনিল। এইরূপে ইস্রায়েল তাহাদের সকলকে ক্ষেত্রে, অর্থাৎ যে প্রান্তরে অয়নিবাসিগণ তাহাদের পশ্চাতে ধাবমান হইয়াছিল, সেখানে তাহাদিগকে সম্পূর্ণরূপে সংহার করিল; তাহারা সকলে নিঃশেষে খড়গধারে পতিত হইল, পরে সমস্ত ইস্রায়েল ফিরিয়া অয়ে আসিয়া খড়গধারে তথাকার লোকদিগকেও আঘাত করিল। সেই দিবসে অয়নিবাসী সমস্ত লোক অর্থাৎ স্ত্রী, পুরুষ সর্ব্বশুদ্ধ বারো সহস্র লোক পতিত হইল। কেননা অয়নিবাসী সকলে যাবৎ নিঃশেষে বিনষ্ট না হইল, তাবৎ যিহোশূয় আপনার বিস্তারিত শল্যধারী হস্ত সঙ্কুচিত করিলেন না। যিহোশূয়ের প্রতি সদাপ্রভুর আদিষ্ট বাক্যানুসারে ইস্রায়েল কেবল ঐ নগরের পশু ও লুটদ্রব্য সকল আপনাদের জন্য গ্রহণ করিল। আর যিহোশূয় অয় নগর পোড়াইয়া দিয়া চিরস্থায়ী ঢিবি এবং উৎসন্ন স্থান করিলেন, তাহা অদ্যাপি সেইরূপ আছে। আর তিনি অয়ের রাজাকে সন্ধ্যাকাল পর্য্যন্ত গাছে টাঙ্গাইয়া রাখিলেন, পরে সূর্য্যাস্ত সময়ে লোকেরা যিহোশূয়ের আজ্ঞাতে তাঁহার শব গাছ হইতে নামাইয়া নগরের দ্বার-প্রবেশের স্থানে ফেলিয়া তাহার উপরে প্রস্তরের এক বৃহৎ ঢিবি করিল; তাহা অদ্যাপি রহিয়াছে। তৎকালে যিহোশূয় এবল পর্ব্বতে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। সদাপ্রভুর দাস মোশি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে যেমন আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তেমনি তাহারা মোশির ব্যবস্থাগ্রন্থে লিখিত আদেশানুসারে অতক্ষিত প্রস্তরে, যাহার উপরে কেহ লৌহ উঠায় নাই, এমন প্রস্তরে ঐ যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিল, এবং তাহার উপরে সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোম করিল, ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিল। আর তথায় প্রস্তরগুলির উপরে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে তিনি মোশির লিখিত ব্যবস্থার এক অনুলিপি লিখিলেন। আর ইস্রায়েল লোকদিগকে সর্ব্বপ্রথমে আশীর্ব্বাদ করণার্থে, সদাপ্রভুর দাস মোশি যেরূপ আদেশ করিয়াছিলেন, তদ্রূপ সমস্ত ইস্রায়েল, তাহাদের প্রাচীনগণ, কর্ম্মচারিগণ ও বিচারকর্ত্তৃগণ, স্বজাতীয় কি প্রবাসী সমস্ত লোক সিন্দুকের এদিকে ওদিকে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক-বাহক লেবীয় যাজকগণের সম্মুখে দাঁড়াইল; তাহাদের অর্দ্ধাংশ গরিষীম পর্ব্বতের সম্মুখে, অর্দ্ধাংশ এবল পর্ব্বতের সম্মুখে রহিল। পরে ব্যবস্থাগ্রন্থে যাহা যাহা লিখিত আছে, তদনুসারে তিনি ব্যবস্থার সমস্ত কথা, আশীর্ব্বাদের ও শাপের কথা পাঠ করিলেন। মোশি যাহা যাহা আদেশ করিয়াছিলেন, যিহোশূয় ইস্রায়েলের সমস্ত সমাজের এবং স্ত্রীলোকদের, বালক-বালিকাদের ও তাহাদের মধ্যবর্ত্তী প্রবাসিগণের সম্মুখে সেই সমস্ত পাঠ করিলেন, একটী বাক্যেরও ত্রুটি করিলেন না। আর যর্দ্দনের পারস্থ সমুদয় রাজা, পর্ব্বতময় প্রদেশ ও নিম্নভূমিনিবাসী এবং লিবানোনের সম্মুখস্থ মহাসমুদ্রের সমস্ত তীরনিবাসী হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয় রাজগণ এই কথা শুনিতে পাইয়া, একযোগে যিহোশূয়ের ও ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করণার্থে একত্র হইলেন। কিন্তু যিরীহোর প্রতি ও অয়ের প্রতি যিহোশূয় যাহা করিয়াছিলেন, তাহা যখন গিবিয়োন-নিবাসীরা শুনিল, তখন তাহারাও চতুরতার সহিত কার্য্য করিল; ফলতঃ তাহারা গিয়া রাজদূতের বেশ ধারণ করিয়া আপন আপন গর্দ্দভের উপরে পুরাতন ছালা এবং দ্রাক্ষারসের পুরাতন, জীর্ণ ও তালীযুক্ত কুপা চাপাইল। আর পায়ে পুরাতন ও তালীযুক্ত পাদুকা ও গাত্রে পুরাতন বস্ত্র দিল, এবং সমস্ত শুষ্ক ও ছাতাপড়া রুটী পাথেয় লইল। পরে তাহারা গিল্‌গলস্থিত শিবিরে যিহোশূয়ের নিকটে গিয়া তাঁহাকে ও ইস্রায়েল লোকদিগকে কহিল, আমরা দূরদেশ হইতে আসিলাম; অতএব এখন আপনারা আমাদের সহিত নিয়ম স্থির করুন। তখন ইস্রায়েল লোকেরা সেই হিব্বীয়দিগকে কহিল, কি জানি, তোমরা আমাদেরই মধ্যে বাস করিতেছ, তাহা হইলে আমরা তোমাদের সহিত কি প্রকারে নিয়ম স্থিত করিতে পারি? তাহারা যিহোশূয়কে কহিল, আমরা আপনার দাস। তখন যিহোশূয় জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কাহারা? কোথা হইতে আসিলে? তাহারা কহিল, আপনার দাস আমরা আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম শুনিয়া অতি দূরদেশ হইতে আসিলাম, কেননা তাঁহার কীর্ত্তি, এবং তিনি মিসর দেশে যে কার্য্য করিয়াছেন, আর যর্দ্দনের ওপারস্থ দুই ইমোরীয় রাজার প্রতি, হিষ্‌বোনের রাজা সীহোনের ও বাশনের রাজা অষ্টারোৎ-নিবাসী ওগের প্রতি যে কার্য্য করিয়াছেন, সমস্তই আমরা শুনিয়াছি। আর আমাদের প্রাচীনবর্গ ও দেশনিবাসী লোক সকল আমাদিগকে কহিল, তোমরা যাত্রার জন্য হস্তে পাথেয় দ্রব্য লইয়া তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাও, এবং তাহাদিগকে বল, আমরা আপনাদের দাস; অতএব এখন আপনারা আমাদের সহিত নিয়ম স্থির করুন। আপনাদের নিকটে আসিবার নিমিত্ত যে দিন যাত্রা করি, সেই দিন আমরা গৃহ হইতে যে তপ্ত রুটী পাথেয় আনিয়াছিলাম, এই দেখুন, আমাদের সেই রুটী এখন শুষ্ক ও ছাতাপড়া। আর যে সকল কুপা দ্রাক্ষারসে পূর্ণ করিয়াছিলাম, সেগুলি নূতন ছিল, এই দেখুন, সে সকল ছিঁড়িয়া গিয়াছে। আর আমাদের এই সকল বস্ত্র ও পাদুকা পুরাতন হইয়াছে, কেননা পথ অতি দূর। তাহাতে লোকেরা তাহাদের খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করিল, কিন্তু সদাপ্রভুর অভিমত জিজ্ঞাসা করিল না, আর যিহোশূয় তাহাদের সহিত সন্ধি করিয়া যাহাতে তাহারা বাঁচে, এমন নিয়ম করিলেন, এবং মণ্ডলীর অধ্যক্ষগণ তাহাদের কাছে শপথ করিলেন। এইরূপে তাহাদের সহিত নিয়ম স্থির করিবার পরে তিন দিন গত হইলে উহারা শুনিতে পাইল, তাহারা আমাদের নিকটস্থ এবং আমাদের মধ্যে বাস করিতেছে। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ যাত্রা করিয়া তৃতীয় দিবসে তাহাদের নগর সকলের কাছে উপস্থিত হইল। সেই সকল নগরের নাম গিবিয়োন, কফীরা, বেরোৎ ও কিরিয়ৎ-যিয়ারীম। মণ্ডলীর অধ্যক্ষগণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে তাহাদের কাছে দিব্য করিয়াছিলেন বলিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহাদিগকে আঘাত করিল না, কিন্তু সমস্ত মণ্ডলী অধ্যক্ষগণের বিরুদ্ধে বচসা করিতে লাগিল। তাহাতে অধ্যক্ষেরা সকলে সমস্ত মণ্ডলীকে কহিলেন, আমরা উহাদের কাছে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে দিব্য করিয়াছি, অতএব এখন উহাদিগকে স্পর্শ করিতে পারি না। আমরা উহাদের প্রতি ইহাই করিব, উহাদিগকে জীবিত রাখিব, নতুবা উহাদের কাছে যে দিব্য করিয়াছি, তৎপ্রযুক্ত আমাদের প্রতি ক্রোধ উপস্থিত হইবে। অতএব অধ্যক্ষগণ তাহাদিগকে কহিলেন, উহারা জীবিত থাকুক; কিন্তু অধ্যক্ষগণের কথানুসারে তাহারা সমস্ত মণ্ডলীর নিমিত্ত কাষ্ঠছেদক ও জলবাহক হইল। আর যিহোশূয় তাহাদিগকে ডাকাইয়া কহিলেন, তোমরা ত আমাদেরই মধ্যে বাস করিতেছ; তবে আমরা তোমাদের হইতে অতি দূরে থাকি, এই কথা বলিয়া কেন আমাদিগকে প্রবঞ্চনা করিলে? এই নিমিত্ত তোমরা শাপগ্রস্ত হইলে; আমার ঈশ্বরের গৃহের নিমিত্তে কাষ্ঠছেদন ও জলবহন, এই দাস্যকর্ম্ম হইতে তোমরা কখনও মুক্তি পাইবে না। তাহারা যিহোশূয়কে উত্তর করিয়া বলিল, আপনাদিগকে এই সমস্ত দেশ দিবার জন্য ও আপনাদের সম্মুখ হইতে এই দেশনিবাসী সমস্ত লোককে বিনাশ করিবার জন্য আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে আপন দাস মোশিকে আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহার নিশ্চিত সংবাদ আপনার দাস আমরা পাইয়াছিলাম, তজ্জন্য আমরা আপনাদের হইতে প্রাণভয়ে অতিশয় ভীত হইয়া এই কার্য্য করিয়াছি। এখন দেখুন, আমরা আপনারই হস্তগত, আমাদের প্রতি যাহা করা আপনার ভাল ও ন্যায্য বোধ হয়, তাহাই করুন। পরে তিনি তাহাদের প্রতি তাহাই করিলেন, ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের হস্ত হইতে তাহাদিগকে রক্ষা করিলেন, তাহাতে তাহারা তাহাদিগকে বধ করিল না। আর সদাপ্রভুর মনোনীত স্থানে মণ্ডলীর ও সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির নিমিত্ত কাষ্ঠছেদন ও জলবহন কর্ম্মে যিহোশূয় সেই দিবসে তাহাদিগকে নিযুক্ত করিলেন; তাহারা অদ্য পর্য্যন্ত তাহা করিতেছে। যিরূশালেমের রাজা অদোনী-ষেদক যখন শুনিলেন, যিহোশূয় অয় হস্তগত করিয়া নিঃশেষে বিনষ্ট করিয়াছেন, যিরীহো ও তথাকার রাজার প্রতি যেমন করিয়াছিলেন, অয়ের ও তথাকার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিয়াছেন, এবং গিবিয়োন-নিবাসীরা ইস্রায়েলের সহিত সন্ধি করিয়া তাহাদের মধ্যবর্ত্তী হইয়াছে; তখন লোকেরা অতিশয় ভীত হইল, কেননা গিবিয়োন নগর রাজধানীর ন্যায় বৃহৎ এবং অয় অপেক্ষাও বড়, আর তথাকার সমস্ত লোক বলবান ছিল। আর যিরূশালেমের রাজা অদোনী-ষেদক হিব্রোণের রাজা হোহমের, যর্মুতের রাজা পিরামের, লাখীশের রাজা যাফিয়ের ও ইগ্লোনের রাজা দবীরের নিকটে দূত পাঠাইয়া এই কথা কহিলেন; আমার কাছে উঠিয়া আইসুন, আমার সাহায্য করুন, চলুন আমরা গিবিয়োনীয়দিগকে আঘাত করি; কেননা তাহারা যিহোশূয়ের ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত সন্ধি করিয়াছে। অতএব ইমোরীয়দের ঐ পাঁচ রাজা, অর্থাৎ যিরূশালেমের রাজা, হিব্রোণের রাজা, যর্মূতের রাজা, লাখীশের রাজা ও ইগ্লোনের রাজা আপন আপন সমস্ত সৈন্যের সহিত একত্র হইলেন, এবং উঠিয়া গিয়া গিবিয়োনের সম্মুখে শিবির স্থাপন করিয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিলেন। তাহাতে গিবিয়োনীয়েরা গিল্‌গলস্থিত শিবিরে যিহোশূয়ের নিকটে লোক পাঠাইয়া কহিল, আপনার এই দাসদের প্রতি হস্ত শিথিল করিবেন না, ত্বরায় আসিয়া আমাদের নিস্তার ও সাহায্য করুন, কেননা পর্ব্বতময় প্রদেশনিবাসী ইমোরীয়দের সমস্ত রাজা আমাদের বিরুদ্ধে একত্র হইয়াছেন। তখন যিহোশূয় সমস্ত যোদ্ধা ও সমস্ত বলবান বীর সঙ্গে লইয়া গিল্‌গল হইতে যাত্রা করিলেন। তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি তাহাদিগকে ভয় করিও না; কেননা আমি তোমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিয়াছি, তাহাদের কেহ তোমার সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিবে না। পরে যিহোশূয় হঠাৎ তাহাদের নিকটে উপস্থিত হইলেন; তিনি সমস্ত রাত্রি গিল্‌গল হইতে উপরের দিকে উঠিতেছিলেন। তখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সাক্ষাতে তাহাদিগকে ক্ষুব্ধ করিলেন, তাহাতে তিনি গিবিয়োনে মহাসংহারে তাহাদিগকে সংহার করিয়া বৈৎহোরোণের আরোহণ-পথ দিয়া তাহাদিগকে তাড়না করিলেন, এবং অসেকা ও মক্কেদা পর্য্যন্ত তাহাদিগকে আঘাত করিলেন। আর ইস্রায়েলের সম্মুখ হইতে পলায়নকালে যখন তাহারা বৈৎহোরোণের অবরোহণ পথে ছিল, তখন সদাপ্রভু অসেকা পর্য্যন্ত আকাশ হইতে তাহাদের উপরে মহাশিলা বর্ষাইলেন, তাহাতে তাহারা মারা পড়িল; ইস্রায়েল-সন্তানগণ যাহাদিগকে খড়গ দ্বারা বধ করিল, তদপেক্ষা অধিক লোক শিলাপাতে মরিল। তৎকালে যে দিন সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে ইমোরীয়দিগকে সমর্পণ করেন, সেই দিন যিহোশূয় সদাপ্রভুর কাছে নিবেদন করিলেন; আর তিনি ইস্রায়েলের সাক্ষাতে কহিলেন, সূর্য্য, তুমি স্থগিত হও গিবিয়োনে, আর চন্দ্র, তুমি অয়ালোন তলভূমিতে। তখন সূর্য্য স্থগিত হইল, ও চন্দ্র স্থির থাকিল, যাবৎ সেই জাতি শত্রুদিগের প্রতিশোধ না লইল। এই কথা কি যাশের গ্রন্থে লিখিত নাই? আর আকাশের মধ্যস্থানে সূর্য্য স্থির থাকিল, অস্তগমন করিতে প্রায় সম্পূর্ণ এক দিবস ত্বরা করিল না। তাহার পূর্ব্বে কি পরে সদাপ্রভু যে মনুষ্যের রবে এইরূপ কর্ণপাত করিলেন, এমন আর কোন দিন হয় নাই; কেননা সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করিতেছিলেন। পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া গিল্‌গলস্থ শিবিরে ফিরিয়া আসিলেন। আর ঐ পাঁচ রাজা পলায়ন করিয়া মক্কেদার গুহাতে লুকাইয়াছিলেন। পরে সেই পাঁচ রাজাকে মক্কেদার গুহাতে লুক্কায়িত পাওয়া গিয়াছে, এই সংবাদ যিহোশূয়কে দেওয়া হইল। যিহোশূয় কহিলেন, তোমরা সেই গুহার মুখে কয়েকখানা বড় বড় পাথর গড়াইয়া দিয়া সেগুলি রক্ষা করিবার জন্য তথায় লোক নিযুক্ত কর, কিন্তু আপনারা বিলম্ব করিও না, শত্রগণের পশ্চাতে ধাবমান হও, ও তাহাদের সৈন্যের পশ্চাদ্ভাগে আঘাত কর, তাহাদিগকে আপন আপন নগরে প্রবেশ করিতে দিও না; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে তোমাদের হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন। পরে যিহোশূয় ও ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহাদের সর্ব্বনাশ পর্য্যন্ত মহাসংহারে তাহাদিগকে সংহার করিলেন, উহাদের কতিপয় মাত্র অবশিষ্ট লোক পলাইয়া প্রাচীর-বেষ্টিত কোন কোন নগরে প্রবেশ করিল। পরে সমস্ত লোক মক্কেদায় যিহোশূয়ের নিকটে শিবিরে কুশলে ফিরিয়া আসিল; ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে কাহারো বিরুদ্ধে কেহ জিহ্বা দোলাইল না। পরে যিহোশূয় বলিলেন, তোমরা ঐ গুহার মুখ খুল, এবং তথা হইতে সেই পাঁচ জন রাজাকে বাহির করিয়া আমার নিকটে আন। তাহারা সেইরূপ করিল, ফলতঃ যিরূশালেমের রাজা, হিব্রোণের রাজা, যর্মূতের রাজা, লাখীশের রাজা ও ইগ্লোনের রাজা, এই পাঁচ জন রাজাকে সেই গুহা হইতে বাহির করিয়া তাঁহার নিকটে আনিল। এইরূপে তাহারা ঐ রাজগণকে যিহোশূয়ের নিকটে আনিলে পর যিহোশূয় ইস্রায়েলের সমস্ত পুরুষকে ডাকিলেন, এবং যাহারা তাঁহার সঙ্গে যুদ্ধে গিয়াছিল, তাহাদের অধ্যক্ষদিগকে বলিলেন, তোমরা কাছে আইস, এই রাজগণের ঘাড়ে পা দেও; তাহাতে তাহারা নিকটে আসিয়া তাহাদের ঘাড়ে পা দিল। আর যিহোশূয় তাহাদিগকে কহিলেন, ভীত ও নিরাশ হইও না, বলবান হও, ও সাহস কর; কেননা তোমরা যে শত্রুগণের সহিত যুদ্ধ করিবে, তাহাদের সকলের প্রতি সদাপ্রভু এইরূপ করিবেন। তৎপরে যিহোশূয় আঘাত করিয়া সেই পাঁচ জন রাজাকে বধ করিলেন, ও পাঁচটা গাছে টাঙ্গাইয়া দিলেন; তাহাতে তাঁহারা সন্ধ্যাকাল পর্য্যন্ত গাছে টাঙ্গান রহিলেন। পরে সূর্য্যাস্ত সময়ে লোকেরা যিহোশূয়ের আজ্ঞাতে তাঁহাদিগকে গাছ হইতে নামাইয়া, যে গুহাতে তাঁহারা লুকাইয়াছিলেন, সেই গুহায় নিক্ষেপ করিল, ও গুহার মুখে কয়েকখানা বড় বড় পাথর দিয়া রাখিল; তাহা অদ্যাপি রহিয়াছে। আর সেই দিবসে যিহোশূয় মক্কেদা হস্তগত করিলেন, এবং মক্কেদা ও তথাকার রাজাকে খড়গধারে আঘাত করিলেন; তথাকার সমস্ত প্রাণীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন, কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না; যেমন যিরীহোর রাজার প্রতি করিয়াছিলেন, মক্কেদার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিলেন। পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে করিয়া মক্কেদা হইতে লিব্‌নাতে গিয়া লিব্‌নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু লিব্‌না ও তথাকার রাজাকে ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিলেন; তাহারা লিব্‌না ও তথাকার সমস্ত প্রাণীকে খড়গধারে আঘাত করিল, তাহার মধ্যে কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিল না; যেমন যিরীহোর রাজার প্রতি করিয়াছিল, তথাকার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিল। পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া লিব্‌না হইতে লাখীশে গিয়া তাহার বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করিয়া যুদ্ধ করিলেন। আর সদাপ্রভু লাখীশকে ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিলেন, ও তাহারা দ্বিতীয় দিবসে তাহা হস্তগত করিয়া যেমন লিব্‌নার প্রতি করিয়াছিল, তদ্রূপ লাখীশ ও তথাকার সমস্ত প্রাণীকে খড়গধারে আঘাত করিল। তৎকালে গেষরের রাজা হোরম লাখীশের সহায়তা করিতে আসিয়াছিলেন; আর যিহোশূয় তাঁহাকে ও তাঁহার লোকদিগকে আঘাত করিলেন; তাঁহার কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না। পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া লাখীশ হইতে ইগ্লোনে যাত্রা করিলেন, আর তাহারা সেই স্থানের সম্মুখে শিবির স্থাপন করিয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল। আর সেই দিন তাহা হস্তগত করিয়া, যেমন লাখীশের প্রতি করিয়াছিল, তদ্রূপ খড়গধারে তাহা আঘাত করিয়া সেই দিন তথাকার সমস্ত প্রাণীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিল। পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া ইগ্লোন হইতে হিব্রোণে যাত্রা করিলেন, আর তাহারা তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল। আর তাহা হস্তগত করিয়া সেই নগর ও তথাকার রাজাকে ও অধীন নগর সকলকে ও সমস্ত প্রাণীকে খড়গধারে আঘাত করিল; যেমন তিনি ইগ্লোনের প্রতি করিয়াছিলেন, সেইরূপ কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না; হিব্রোণ ও তথাকার সমস্ত প্রাণীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন। পরে যিহোশূয় ফিরিয়া সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া দবীরে আসিয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিলেন। আর সেই নগর ও তথাকার রাজাকে ও অধীন নগর সকল হস্তগত করিলেন; এবং তাহারা খড়গধারে আঘাত করিয়া তথাকার সমস্ত প্রাণীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিল; তিনি কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না; যেমন তিনি হিব্রোণের প্রতি এবং লিব্‌নার ও তথাকার রাজার প্রতি করিয়াছিলেন, দবীরের ও তথাকার রাজার প্রতিও তদ্রূপ করিলেন। এইরূপে যিহোশূয় সমস্ত দেশ, পর্ব্বতময় প্রদেশ, দক্ষিণ অঞ্চল, নিম্নভূমি ও পর্ব্বত-পার্শ্ব, এবং সেই সকল অঞ্চলের সমস্ত রাজাকে আঘাত করিলেন, কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না; তিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে শ্বাসবিশিষ্ট সকলকেই নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন। এইরূপে যিহোশূয় কাদেশবর্ণেয় হইতে ঘসা পর্য্যন্ত তাহাদিগকে এবং গিবিয়োন পর্য্যন্ত গোশনের সমস্ত দেশকে আঘাত করিলেন। যিহোশূয় এই সমস্ত দেশ ও রাজগণকে এক কালেই হস্তগত করিলেন, কারণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করিতেছিলেন। পরে যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে সঙ্গে লইয়া গিল্‌গলস্থিত শিবিরে ফিরিয়া আসিলেন। পরে যখন হাৎসোরের রাজা যাবীন সেই সংবাদ পাইলেন, তখন তিনি মাদোনের রাজা যোববের, শিম্রোণের রাজার ও অক্‌ষফের রাজার নিকটে, এবং উত্তরে, পর্ব্বতময় প্রদেশে, কিন্নেরতের দক্ষিণস্থ অরাবা তলভূমিতে, নিম্নভূমিতে ও পশ্চিমে দোর নামক উপগিরিতে স্থিত রাজগণের নিকটে; পূর্ব্ব ও পশ্চিম দেশীয় কনানীয়দের, এবং পর্ব্বতময় প্রদেশস্থ ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয় ও যিবূষীয়দের, এবং হার্মোণের অধঃস্থিত মিস্পাদেশীয় হিব্বীয়দের নিকটে দূত প্রেরণ করিলেন। তাহাতে তাঁহারা আপন আপন সমস্ত সৈন্য, সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় অসংখ্য লোক এবং অতি বিস্তর অশ্ব ও রথ সঙ্গে লইয়া বাহির হইলেন। আর এই রাজারা সকলে নিরূপণানুসারে একত্র হইলেন; তাঁহারা ইস্রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করিবার জন্য মেরোম জলাশয়ের নিকটে আসিয়া একত্র শিবির স্থাপন করিলেন। তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি উহাদের হইতে ভীত হইও না; কেননা কল্য এমন সময়ে আমি ইস্রায়েলের সম্মুখে উহাদের সকলকেই নিহত করিয়া সমর্পণ করিব; তুমি উহাদের ঘোড়ার পায়ের শিরা ছেদন করিবে ও রথ সকল আগুনে পোড়াইয়া দিবে। তখন যিহোশূয় সমস্ত সৈন্য সঙ্গে লইয়া মেরোম জলাশয়ের নিকটে তাহাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ উপস্থিত হইয়া তাহাদিগকে আক্রমণ করিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু তাহাদিগকে ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিলেন, এবং তাহারা তাহাদিগকে আঘাত করিল, আর মহাসীদোন ও মিষ্রফোৎ-ময়িম পর্য্যন্ত ও পূর্ব্বদিকে মিস্পীর তলভূমি পর্য্যন্ত তাহাদিগকে তাড়াইয়া লইয়া গেল; এবং তাহাদিগকে আঘাত করিয়া কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিল না। আর যিহোশূয় তাহাদের প্রতি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিলেন; তিনি তাহাদের ঘোড়ার পায়ের শিরা ছেদন করিলেন, ও তাহাদের রথ সকল আগুনে পোড়াইয়া দিলেন। ঐ সময়ে যিহোশূয় ফিরিয়া আসিয়া হাৎসোর হস্তগত করিলেন, ও খড়গ দ্বারা তথাকার রাজাকে আঘাত করিলেন, কেননা পূর্ব্বাবধি হাৎসোর সেই সকল রাজ্যের মস্তক ছিল। আর লোকেরা তথাকার সমস্ত প্রাণীকে খড়গধারে আঘাত করিয়া নিঃশেষে বিনষ্ট করিল; তাহার মধ্যে শ্বাসবিশিষ্ট কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিল না; এবং তিনি হাৎসোর আগুনে পোড়াইয়া দিলেন। আর যিহোশূয় ঐ রাজগণের সমস্ত নগর ও সেই সকল নগরের সমস্ত রাজাকে হস্তগত করিলেন, এবং সদাপ্রভুর দাস মোশির আজ্ঞানুসারে খড়গধারে তাহাদিগকে আঘাত করিয়া নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন। কিন্তু যে সকল নগর আপন আপন টিকরের উপরে স্থাপিত ছিল, ইস্রায়েল সেগুলির একটীও পোড়াইল না; কেবল যিহোশূয় হাৎসোর পোড়াইয়া দিলেন। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ সেই সকল নগরের সমস্ত দ্রব্য ও পশুগণকে আপনাদের নিমিত্ত লুট করিয়া লইল, কিন্তু প্রত্যেক মনুষ্যকে খড়গধারে আঘাত করিয়া সংহার করিল; তাহাদের মধ্যে শ্বাসবিশিষ্ট কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিল না। সদাপ্রভু আপন দাস মোশিকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, মোশি যিহোশূয়কে সেইরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, আর যিহোশূয় সেইরূপ কর্ম্ম করিলেন; তিনি মোশির প্রতি উক্ত সদাপ্রভুর সমস্ত আদেশের একটী কথাও অন্যথা করিলেন না। এইরূপে যিহোশূয় সেই সমস্ত প্রদেশ, পর্ব্বতময় প্রদেশ, সমস্ত দক্ষিণ অঞ্চল, সমস্ত গোশন দেশ, নিম্নভূমি, অরাবা তলভূমি, ইস্রায়েলের পর্ব্বতময় প্রদেশ ও তাহার নিম্নভূমি, সেয়ীরগামী হালক পর্ব্বত হইতে হর্মোণ পর্ব্বতের তলস্থ লিবানোনের তলভূমিতে স্থিত বাল্‌গাদ পর্য্যন্ত হস্তগত করিলেন, এবং তাহাদের সমস্ত রাজাকে ধরিয়া আঘাতপূর্ব্বক বধ করিলেন। যিহোশূয় বহুকাল পর্য্যন্ত সেই রাজগণের সহিত যুদ্ধ করিলেন। গিবিয়োন-নিবাসী হিব্বীয়েরা ব্যতিরেকে আর কোন নগরের লোক ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত সন্ধি করিল না; ইহারা সমস্তকেই যুদ্ধে হস্তগত করিল। কারণ তাহাদের হৃদয়ের কঠিনীকরণ সদাপ্রভু হইতে হইয়াছিল, যেন তাহারা ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করে, আর তিনি তাহাদিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট করেন, তাহাদের প্রতি দয়া না করেন, কিন্তু তাহাদিগকে সংহার করেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা করিয়াছিলেন। আর সেই সময়ে যিহোশূয় আসিয়া পর্ব্বতময় প্রদেশ হইতে—হিব্রোণ, দবীর ও অনাব হইতে, যিহূদার সমস্ত পর্ব্বতময় প্রদেশ হইতে, আর ইস্রায়েলের সমস্ত পর্ব্বতময় প্রদেশ হইতে—অনাকীয়দিগকে উচ্ছেদ করিলেন; যিহোশূয় তাহাদের নগরগুলির সহিত তাহাদিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানগণের দেশে অনাকীয়দের কেহ অবশিষ্ট থাকিল না; কেবল ঘসাতে, গাতে ও অস্‌দোদে কতকগুলি অবশিষ্ট থাকিল। এইরূপে মোশির প্রতি সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্যানুসারে যিহোশূয় সমস্ত দেশ হস্তগত করিলেন; আর যিহোশূয় প্রত্যেক বংশানুযায়ী বিভাগানুসারে তাহা অধিকার জন্য ইস্রায়েলকে দিলেন। পরে দেশে যুদ্ধবিরাম হইল। যর্দ্দনের পারে সূর্য্যোদয়ের দিকে ইস্রায়েল-সন্তানগণ দেশের যে দুই রাজাকে আঘাত করিয়া তাঁহাদের দেশ, অর্থাৎ অর্ণোন উপত্যকা অবধি হর্মোণ পর্ব্বত পর্য্যন্ত, এবং পূর্ব্বদিক্‌স্থিত সমস্ত অরাবা তলভূমি, এই দেশ অধিকার করিয়াছিল, সেই দুই রাজা এই। হিষ্‌বোন-নিবাসী ইমোরীরদের সীহোন রাজা; তিনি অর্ণোন উপত্যকার সীমাস্থ অরোয়ের উপত্যকার মধ্যস্থিত নগর অবধি, এবং অর্দ্ধ গিলিয়দ, অম্মোন-সন্তানদের সীমা যব্বোক নদী পর্য্যন্ত, এবং কিন্নেরৎ হ্রদ পর্য্যন্ত অরাবা তলভূমিতে, পূর্ব্বদিকে, ও বৈৎ-যিশীমোতের পথে আরাবা তলভূমিস্থ লবণসমুদ্র পর্য্যন্ত, পূর্ব্ব দিকে, এবং পিস্‌গা-পার্শ্বের নিম্নস্থিত দক্ষিণ দেশে কর্ত্তৃত্ব করিতেছিলেন। আর বাশনের রাজা ওগের অঞ্চল; তিনি অবশিষ্ট রফায়ীয় বংশোদ্ভব ছিলেন, এবং অষ্টারোতে ও ইদ্রিয়ীতে বাস করিতেন; আর হর্মোণ পর্ব্বতে সল্‌খাতে এবং গশূরীয়দের ও মাখাথীয়দের সীমা পর্য্যন্ত সমুদয় বাশন দেশে, এবং হিষ্‌বোনের সীহোন রাজার সীমা পর্য্যন্ত অর্দ্ধ গিলিয়দ দেশে কর্ত্তৃত্ব করিতেছিলেন। সদাপ্রভুর দাস মোশি ও ইস্রায়েল-সন্তানগণ ইহাঁদিগকে আঘাত করিয়াছিলেন, এবং সদাপ্রভুর দাস মোশি সেই দেশ অধিকারার্থে রূবেণীয় ও গাদীয়দিগকে এবং মনঃশির অর্দ্ধ বংশকে দিয়াছিলেন। যর্দ্দনের এপারে পশ্চিমদিকে লিবানোনের তলভূমিতে স্থির বাল্‌গাদ হইতে সেয়ীরগামী হালক পর্ব্বত পর্য্যন্ত যিহোশূয় ও ইস্রায়েল-সন্তানগণ দেশের যে যে রাজাকে আঘাত করিলেন, ও যিহোশূয় যাহাদের দেশ অধিকারার্থে স্ব স্ব বিভাগানুসারে ইস্রায়েলের বংশসমূহকে দিলেন, সেই সকল রাজা, অর্থাৎ পর্ব্বতময় দেশ, নিম্নভূমি, অরাবা তলভূমি, পর্ব্বত-পার্শ্ব, প্রান্তর ও দক্ষিণাঞ্চল-নিবাসী হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরীষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয় [সকল রাজা] এই এই। যিরীহোর এক রাজা, বৈথেলের নিকটস্থ অয়ের এক রাজা, যিরূশালেমের এক রাজা, হিব্রোণের এক রাজা, যর্মূতের এক রাজা, লাখীশের এক রাজা, ইগ্লোনের এক রাজা, গেষরের এক রাজা, দবীরের এক রাজা, গেদরের এক রাজা, হর্মার এক রাজা, অরাদের এক রাজা, লিব্নার এক রাজা, অদুল্লমের এক রাজা, মক্কেদার এক রাজা, বৈথেলের এক রাজা, তপূহের এক রাজা, হেফরের এক রাজা, অফেকের এক রাজা, লশারোণের এক রাজা, মাদোনের এক রাজা, হাৎসোরের এক রাজা, শিম্রোণ-মরোণের এক রাজা, অক্‌ষফের এক রাজা, তানকের এক রাজা, মগিদ্দোর এক রাজা, কেদশের এক রাজা, কর্ম্মিলস্থ যক্নিয়ামের এক রাজা, দোর উপগিরিতে স্থিত দোরের এক রাজা, গিল্‌গলস্থ গোয়ীমের এক রাজা, তির্সার এক রাজা; সর্ব্বশুদ্ধ একত্রিশ রাজা। যিহোশূয় বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক হইয়াছিলেন; আর সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি বৃদ্ধ ও গতবয়স্ত হইলে; কিন্তু এখনও অধিকার করিতে বিস্তর দেশ অবশিষ্ট আছে। এই দেশ এখনও অবশিষ্ট রহিল—পলেষ্টীয়দের সমস্ত প্রদেশ এবং গশূরীয়দের সমস্ত অঞ্চল; মিসরের সম্মুখস্থ সীহোর নদী হইতে ইক্রোণের উত্তরসীমা পর্য্যন্ত, যাহা কনানীয়দের অধিকাররূপে গণনীয়; ঘসাতীয়, অস্‌দোদীয়, অস্কিলোনীয়, গাতীয় ও ইক্রোণীয়, পলেষ্টীয়দের এই পাঁচ ভূপালের দেশ, আর দক্ষিণদিক্‌স্থ অব্বীয়দের দেশ, কনানীয়দের সমস্ত দেশ, ও ইমোরীয়দের সীমাস্থিত অফেক পর্য্যন্ত সীদোনীয়দের অধীন মিয়ারা; গিব্‌লীয়দের দেশ ও হর্মোণ পর্ব্বতের তলস্থিত বাল্‌গাদ হইতে হমাতের প্রবেশস্থান পর্য্যন্ত, সূর্য্যোদয় দিক্‌স্থ সমস্ত লিবানোন; লিবানোন হইতে মিষ্রফোৎময়িম পর্য্যন্ত পর্ব্বতময় প্রদেশ-নিবাসী সীদোনীয়দের সমস্ত দেশ। আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিব; তুমি কেবল তাহা অধিকারার্থে ইস্রায়েলের জন্য নিরূপণ কর, যেমন আমি তোমাকে আজ্ঞা করিলাম। এক্ষণে অধিকারার্থে নয় বংশকে ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশকে এই দেশ অংশ করিয়া দেও। মনঃশির সহিত রূবেণীয় ও গাদীয়েরা যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে মোশির দত্ত আপন আপন অধিকার পাইয়াছিল, যেমন সদাপ্রভুর দাস মোশি তাহাদিগকে দান করিয়াছিলেন; অর্থাৎ অর্ণোন উপত্যকার সীমাস্থ আরোয়ের ও উপত্যকার মধ্যস্থিত নগর অবধি, এবং দীবোন পর্য্যন্ত মেদবার সমস্ত সমভূমি; এবং অম্মোন-সন্তানগণের সীমা পর্য্যন্ত হিষ্‌বোনে রাজত্বকারী ইমোরীয়দের সীহোন রাজার সমস্ত নগর; এবং গিলিয়দ ও গশূরীয়দের ও মাখাথীয়দের অঞ্চল ও সমস্ত হর্মোণ পর্ব্বত এবং সল্‌খা পর্য্যন্ত সমস্ত বাশন, অর্থাৎ রফায়ীয়দের মধ্যে অবশিষ্ট যে ওগ অষ্টারোতে ও ইদ্রিয়ীতে রাজত্ব করিতেন, তাঁহার সমস্ত বাশন রাজ্য দিয়াছিলেন; কেননা মোশি ইহাদিগকে আঘাত করিয়া অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন। তথাপি ইস্রায়েল-সন্তানগণ গশূরীয়দিগকে ও মাখাথীয়দিগকে অধিকারচ্যুত করে নাই; গশূর ও মাখাথ্‌ অদ্যাপি ইস্রায়েলের মধ্যে বাস করিতেছে। কেবল লেবি বংশকে মোশি কিছু অধিকার দেন নাই; ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অগ্নিকৃত উপহার তাহার অধিকার, যেমন তিনি মোশিকে বলিয়াছিলেন। মোশি রূবেণ-সন্তানগণের বংশকে তাহাদের গোষ্ঠী অনুসারে অধিকার দিয়াছিলেন। অর্ণোন উপত্যকার সীমাস্থ অরোয়ের অবধি তাহাদের সীমা ছিল, এবং উপত্যকার মধ্যস্থিত নগর ও মেদবার নিকটস্থ সমস্ত সমভূমি; হিষ্‌বোন ও সমভূমিস্থ তাহার সমস্ত নগর, দীবোন, বামোৎ-বাল ও বৈৎ-বাল্‌-মিয়োন, যহস, কদেমোৎ ও মেফাৎ, কিরিয়াথয়িম, সিব্‌মা ও তলভূমির পর্ব্বতস্থ সেরৎশহর, বৈৎ-পিয়োর, পিস্‌গা-পার্শ্ব ও বৈৎ-যিশীমোৎ; এবং সমভূমিস্থ সমস্ত নগর ও হিষ্‌বোনে রাজত্বকারী ইমোরীয়দের সীহোন রাজার সমুদয় রাজ্য; মোশি তাঁহাকে এবং মিদিয়নের অধ্যক্ষগণকে, অর্থাৎ সেই দেশনিবাসী ইবি, রেকম, সুর, হূর ও রেবা নামে সীহোনের রাজন্যদিগকে আঘাত করিয়াছিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানগণ খড়গ দ্বারা যাহাদিগকে বধ করিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে বিয়োরের পুত্র মন্ত্রজ্ঞ বিলিয়মকেও বধ করিয়াছিল। আর যর্দ্দন ও তাহার সীমা রূবেণ-সন্তানদের সীমা ছিল; রূবেণ-সন্তানদের গোষ্ঠী অনুসারে স্ব স্ব গ্রামের সহিত এই সকল নগর তাহাদের অধিকার হইল। আর মোশি গাদ-সন্তানদের গোষ্ঠী অনুসারে গাদ বংশকে অধিকার দিয়াছিলেন। যাসের ও গিলিয়দের সমস্ত নগর, এবং রব্বার সম্মুখস্থ অরোয়ের পর্য্যন্ত অম্মোন-সন্তানগণের অর্দ্ধ দেশ তাহাদের অঞ্চল হইল। আর হিষ্‌বোন হইতে রামৎ-মিস্‌পী ও বটোনীম পর্য্যন্ত এবং মহনয়িম হইতে দবীরের সীমা পর্য্যন্ত; আর তলভূমিতে বৈৎ-হারম, বৈৎ-নিম্রা, সুক্কোৎ, সাফোন, হিষ্‌বোনের সীহোন রাজার অবশিষ্ট রাজ্য, এবং যর্দ্দনের পূর্ব্বতীর অর্থাৎ কিন্নেরৎ হ্রদের প্রান্ত পর্য্যন্ত যর্দ্দন ও তাহার অঞ্চল। গাদ-সন্তানগণের গোষ্ঠী অনুসারে স্ব স্ব গ্রামের সহিত এই সকল নগর তাহাদের অধিকার হইল। আর মোশি মনঃশির অর্দ্ধ বংশকে অধিকার দিয়াছিলেন; তাহা মনঃশি-সন্তানগণের অর্দ্ধ বংশের জন্য তাহাদের গোষ্ঠী অনুসারে দেওয়া হইয়াছিল। তাহাদের সীমা মহনয়িম অবধি সমস্ত বাশন, বাশনের রাজা ওগের সমস্ত রাজ্য ও বাশনস্থ যায়ীরের সমস্ত নগর অর্থাৎ ষাইট নগর; এবং অর্দ্ধ গিলিয়দ, অষ্টারোৎ ও ইদ্রিয়ী, ওগের বাশনস্থ রাজ্যের এই সকল নগর মনঃশির পুত্র মাখীরের সন্তানগণের, অর্থাৎ গোষ্ঠী অনুসারে মাখীরের সন্তানগণের অর্দ্ধ-সংখ্যার অধিকার হইল। যিরীহোর সমীপে যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে মোয়াবের তলভূমিতে মোশি এই সকল অধিকার অংশ করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু লেবির বংশকে মোশি কোন অধিকার দেন নাই; ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদের অধিকার, যেমন তিনি তাহাদিগকে বলিয়াছিলেন। কনান দেশে ইস্রায়েল-সন্তানগণ এই এই অধিকার গ্রহণ করিল; ইলীয়াসর যাজক ও নূনের পুত্র যিহোশূয় এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের বংশসমূহের পিতৃকুলপতিগণ এই সকল তাহাদিগকে অংশ করিয়া দিলেন; সদাপ্রভু মোশি দ্বারা যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারে তাঁহারা গুলিবাঁট দ্বারা সাড়ে নয় বংশের অংশ নিরূপণ করিলেন। কেননা যর্দ্দনের ওপারে মোশি আড়াই বংশকে অধিকার দিয়াছিলেন, কিন্তু লেবীয়দিগকে লোকদের মধ্যে অধিকার দেন নাই। কেননা যোষেফ-সন্তানগণ দুই বংশ হইল, মনঃশি ও ইফ্রয়িম; আর লেবীয়দিগকে দেশে কোন অংশ দেওয়া গেল না, কেবল বাস করিবার জন্য কতকগুলি নগর, এবং তাহাদের পশুপালের ও তাহাদের সম্পত্তির জন্য সেই সকল নগরের পরিসরভূমি দেওয়া গেল। সদাপ্রভু মোশিকে যে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ তদনুসারে কার্য্য করিল, এবং দেশ বিভাগ করিয়া লইল। আর যিহূদা-সন্তানগণ গিল্‌গলে যিহোশূয়ের নিকটে আসিল; আর কনিসীয় যিফুন্নির পুত্র কালেব তাঁহাকে কহিলেন, সদাপ্রভু আমার ও তোমার বিষয়ে কাদেশ-বর্ণেয়ে ঈশ্বরের লোক মোশিকে যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহা তুমি জ্ঞাত আছ। আমার চল্লিশ বৎসর বয়সের সময়ে সদাপ্রভুর দাস মোশি দেশ অনুসন্ধান করিতে কাদেশ-বর্ণেয় হইতে আমাকে প্রেরণ করিয়াছিলেন, আর আমি সরল অন্তঃকরণে তাঁহার নিকটে সংবাদ আনিয়া দিয়াছিলাম। আমার যে ভ্রাতৃগণ আমার সহিত গিয়াছিল, তাহারা লোকদের হৃদয় [ভয়ে] গলাইয়া দিয়াছিল; কিন্তু আমি সম্পূর্ণরূপে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগামী ছিলাম। আর মোশি ঐ দিবসে দিব্য করিয়া বলিয়াছিলেন, যে ভূমির উপরে তোমার পাদবিক্ষেপ হইয়াছে, সেই ভূমি তোমার ও চিরকাল তোমার সন্তানগণের অধিকার হইবে; কেননা তুমি সম্পূর্ণরূপে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগমন করিয়াছ। আর এখন, দেখ, প্রান্তরে ইস্রায়েলের ভ্রমণকালে যে সময়ে সদাপ্রভু মোশিকে সেই কথা বলিয়াছিলেন, সেই অবধি সদাপ্রভু আপন বাক্যানুসারে এই পঁয়তাল্লিশ বৎসর আমাকে জীবিত রাখিয়াছেন; আর এখন, দেখ, অদ্য আমার বয়স পঁচাশী বৎসর। মোশি যে দিন আমাকে প্রেরণ করিয়াছিলেন, সেই দিন আমি যেমন বলবান ছিলাম, অদ্যাপি তদ্রূপ আছি; যুদ্ধের জন্য এবং বাহিরে যাইবার ও ভিতরে আসিবার জন্য আমার তখন যেমন শক্তি ছিল, এখনও সেইরূপ শক্তি আছে। অতএব সেই দিন সদাপ্রভু এই যে পর্ব্বতের বিষয় বলিয়াছিলেন, এখন ইহা আমাকে দেও; কেননা তুমি সেই দিন শুনিয়াছিলে যে, অনাকীয়েরা সেখানে থাকে, এবং নগর সকল বৃহৎ ও প্রাচীরবেষ্টিত; হয় ত, সদাপ্রভু আমার সহবর্ত্তী থাকিবেন, আর আমি সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিব। তখন যিহোশূয় তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং যিফুন্নির পুত্র কালেবকে অধিকারার্থে হিব্রোণ দিলেন। এই জন্য অদ্য পর্য্যন্ত হিব্রোণে কনিসীয় যিফুন্নীর পুত্র কালেবের অধিকার রহিয়াছে; কেননা তিনি সম্পূর্ণরূপে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগামী ছিলেন। পূর্ব্বকালে হিব্রোণের নাম কিরিয়ৎ-অর্ব [অর্বপুর] ছিল, ঐ অর্ব অনাকীয়দের মধ্যে মহল্লোক ছিলেন। পরে দেশে যুদ্ধবিরাম হইল। পরে গুলিবাঁটক্রমে আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে যিহূদা-সন্তানগণের বংশের অংশ নিরূপিত হইল; ইদোমের সীমা পর্য্যন্ত, অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে, সর্ব্ব দক্ষিণ প্রান্তে সিন প্রান্তর পর্য্যন্ত। আর তাহাদের দক্ষিণ সীমা লবণসমুদ্রের প্রান্ত হইতে অর্থাৎ দক্ষিণাভিমুখ বঙ্ক হইতে আরম্ভ হইল; আর তাহা দক্ষিণদিকে অক্রব্বীম আরোহণ-পথ দিয়া সিন পর্য্যন্ত গেল, এবং কাদেশ-বর্ণেয়ের দক্ষিণ দিক্‌ হইয়া ঊর্দ্ধগামী হইল; পরে হিষ্রোণে গিয়া অদ্দরের দিকে ঊর্দ্ধগামী হইয়া কর্ক্কা পর্য্যন্ত ঘুরিয়া গেল। পরে অস্‌মোন হইয়া মিসরের স্রোত পর্য্যন্ত বাহির হইয়া গেল; আর ঐ সীমার অন্তভাগ সমুদ্রে ছিল; এই তোমাদের দক্ষিণ সীমা হইবে। আর পূর্ব্ব সীমা যর্দ্দনের মুহানা পর্য্যন্ত লবণসমুদ্র। আর উত্তর দিকের সীমা যর্দ্দনের মুহানায় সমুদ্রের বঙ্ক হইতে বৈৎ-হগ্লায় ঊর্দ্ধগমন করিয়া বৈৎঅরাবায় উত্তর দিক্‌ হইয়া গেল, পরে সে সীমা রূবেণ-সন্তান বোহনের প্রস্তর পর্য্যন্ত উঠিয়া গেল। পরে সে সীমা আখোর তলভূমি হইতে দবীরের দিকে গেল; পরে স্রোতের দক্ষিণ পারস্থ অদুম্মীম আরোহণ-পথের সম্মুখস্থ গিল্‌গলের দিকে মুখ করিয়া উত্তর দিকে গেল, ও ঐন্‌-শেমশ নামক জলাশয়ের দিকে চলিয়া গেল, আর তাহার অন্তভাগ ঐন্‌-রোগেলে ছিল। সে সীমা হিন্নোম্‌-সন্তানের উপত্যকা দিয়া উঠিয়া যিবূষের অর্থাৎ যিরূশালেমের দক্ষিণ পার্শ্বে গেল; পরে ঐ সীমা পশ্চিমে হিন্নোম উপত্যকার সম্মুখস্থ অথচ রফায়ীম তলভূমির উত্তরপ্রান্তে স্থিত পর্ব্বত-শৃঙ্গ পর্য্যন্ত গেল। পরে ঐ সীমা সেই পর্ব্বত-শৃঙ্গ অবধি নিপ্তোহের জলের উনুই পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইল, এবং ইফ্রোণ পর্ব্বতস্থ নগরগুলি পর্য্যন্ত বাহির হইয়া গেল। আর সে সীমা বালা অর্থাৎ কিরিয়ৎ-যিয়ারীম পর্য্যন্ত গেল; পরে সে সীমা বালা হইতে সেয়ীর পর্ব্বত পর্য্যন্ত পশ্চিম দিকে ঘুরিয়া যিয়ারীম পর্ব্বতের উত্তর পার্শ্ব অর্থাৎ কসালোন পর্য্যন্ত গেল; পরে বৈৎ-শেমশে অধোগামী হইয়া তিম্নার নিকট দিয়া গেল। আর সে সীমা ইক্রোণের উত্তর পার্শ্ব পর্য্যন্ত গমন করিল; পরে সে সীমা শিক্করোণ পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইল, এবং বালা পর্ব্বত হইয়া যব্‌নিয়েলে গেল; ঐ সীমার অন্তভাগ সমুদ্রে ছিল। আর পশ্চিম সীমা মহা সমুদ্র ও তাহার অঞ্চল পর্য্যন্ত। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে যিহূদা-সন্তানগণের চতুর্দ্দিক্‌স্থিত সীমা এই। আর যিহোশূয়ের প্রতি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তিনি যিহূদা-সন্তানগণের মধ্যে যিফুন্নির পুত্র কালেবের অংশ কিরিয়ৎ-অর্ব [অর্বপুর] অর্থাৎ হিব্রোণ দিলেন, ঐ অর্ব অনাকের পিতা। আর কালেব তথা হইতে অনাকের সন্তানগণকে, শেশয়, অহীমান ও তল্‌ময় নামে অনাকের তিন পুত্রকে অধিকারচ্যুত করিলেন। তথা হইতে তিনি দবীরনিবাসীদের বিরুদ্ধে গমন করিলেন; পূর্ব্বে দবীরের নাম কিরিয়ৎ-সেফর ছিল। আর কালেব বলিলেন, যে কেহ কিরিয়ৎ-সেফরকে আঘাত করিয়া হস্তগত করিবে, তাহার সহিত আমি আপন কন্যা অক্‌ষার বিবাহ দিব। আর কালেবের ভ্রাতা কনষের পুত্র অৎনীয়েল তাহা হস্তগত করিলে তিনি তাঁহার সহিত আপন কন্যা অক্‌ষার বিবাহ দিলেন। আর ঐ কন্যা আসিয়া তাহার পিতার কাছে একটী ক্ষেত্র চাহিতে স্বামীকে প্রবৃত্তি দিল; এবং সে আপন গর্দ্দভ হইতে নামিল; কালেব তাহাকে কহিলেন, তুমি কি চাও? সে বলিল, আপনি আমাকে এক উপহার দিউন, দক্ষিণাঞ্চলস্থ ভূমি আমাকে দিয়াছেন, জলের উনুইগুলিও আমাকে দিউন। তাহাতে তিনি তাহাকে উচ্চতর উনুইগুলি ও নিম্নতর উনুইগুলি দিলেন। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে যিহূদা-সন্তানদের বংশের এই অধিকার। দক্ষিণ অঞ্চলে ইদোমের সীমার নিকটে যিহূদা-সন্তানদের বংশের প্রান্তস্থিত নগর কব্‌সেল, এদর, যাগুর, কীনা, দীমোনা, অদাদা কেদশ, হাৎসোর, যিৎনন, সীফ, টেলম, বালোৎ, হাৎসোর-হদত্তা, করিয়োৎ-হিষ্রোণ অর্থাৎ-হাৎসোর, অমাম, শমা, মোলদা, হৎসর-গদ্দা, হিষ্‌মোন, বৈৎ-পেলট, হৎসর-শূয়াল, বের্‌-শেবা, বিষিয়োথিয়া, বালা ইয়ীম, এৎসম, ইল্‌তোলদ, কসীল, হর্মা, সিক্লগ, মদ্‌মন্না ও সন্‌সন্না, লবায়োৎ, শিল্‌হীম, ঐন ও রিম্মোণ; স্ব স্ব গ্রামের সহিত সর্ব্বশুদ্ধ ঊনত্রিশটী নগর। নিম্নভূমিতে ইষ্টায়োল, সরা, অশ্‌না, সানোহ, ঐন্‌-গন্নীম, তপূহ, ঐনম, যর্মুৎ, অদুল্লম, সোখো, অসেকা, শারয়িম, অদীথয়িম, গদেরা ও গদেরোথয়িম; স্ব স্ব গ্রামের সহিত চৌদ্দটী নগর। সনান, হদাশা, মিগ্দল্‌-গাদ, দিলিয়ন, মিস্‌পী, যক্তেল, লাখীশ, বস্কৎ, ইগ্লোন, কব্বোন, লহমম, কিৎলীশ, গদেরোৎ, বৈৎ-দাগোন, নয়মা ও মক্কেদা; স্ব স্ব গ্রামের সহিত ষোলটী নগর। লিব্‌না, এথর, আশন, যিপ্তহ, অশ্‌না, নৎসীব, কিয়িলা, অক্‌ষীব ও মারেশা; স্ব স্ব গ্রামের সহিত নয়টী নগর। ইক্রোণ, এবং তথাকার উপনগর ও গ্রাম সকল; ইক্রোণ অবধি সমুদ্র পর্য্যন্ত অস্‌দোদের নিকটস্থ সমস্ত স্থান ও গ্রাম। অস্‌দোদ, তাহার উপনগর ও গ্রাম সকল; ঘসা, তাহার উপনগর ও গ্রাম সকল; মিসরের স্রোত ও মহাসমুদ্র ও তাহার সীমা পর্য্যন্ত। আর পর্ব্বতময় দেশে শামীর, যত্তীর, সোখো, দন্না, কিরিয়ৎ-সন্না অর্থাৎ দবীর, অনাব, ইষ্টিমোয়, আনীম, গোশন, হোলোন ও গীলো; স্ব স্ব গ্রামের সহিত এগারটী নগর। অরাব, দূমা, ইশিয়ন, যানীম, বৈৎতপূহ। অফেকা, হুমটা, কিরিয়ৎ-অর্ব অর্থাৎ হিব্রোণ ও সীয়োর; স্ব স্ব গ্রামের সহিত নয়টী নগর। মায়োন, কর্মিল, সীফ, যুটা যিষ্রিয়েল, যক্‌দিয়াম, সানোহ, কয়িন, গিবিয়া ও তিম্না; স্ব স্ব গ্রামের সহিত দশটী নগর। হল্‌হূল, বৈৎ-সূর, গদোর, মারৎ, বৈৎ-অনোৎ ও ইল্‌তকোন; স্ব স্ব গ্রামের সহিত ছয়টী নগর। কিরিয়ৎ-বাল অর্থাৎ কিরিয়ৎ-যিয়ারিম, ও রব্বা; স্ব স্ব গ্রামের সহিত দুইটী নগর। প্রান্তরে বৈৎ-অরাবা, মিদ্দীন, সকাখা, নিব্‌শন লবণ-নগর ও ঐন্‌-গদী; স্ব স্ব গ্রামের সহিত ছয়টী নগর। পরন্তু যিহূদা-সন্তানগণ যিরূশালেম-নিবাসী যিবূষীয়দিগকে অধিকারচ্যুত করিতে পারিল না; যিবূষীয়েরা অদ্যাপি যিহূদা-সন্তানগণের সহিত যিরূশালেমে বাস করিতেছে। আর গুলিবাঁটক্রমে যোষেফ-সন্তানদের অংশ যিরীহোর নিকটস্থ যর্দ্দন, অর্থাৎ পূর্ব্ব দিক্‌স্থিত যিরীহোর জল অবধি, যিরীহো হইতে পর্ব্বতময় দেশ দিয়া ঊর্দ্ধগামী প্রান্তরে বৈথেলে গেল; আর বৈথেল হইতে লূসে গমন করিল, এবং সেই স্থান হইয়া অর্কীয়দের সীমা পর্য্যন্ত অটারোতে গমন করিল। আর পশ্চিম দিকে যফ্‌লেটীয়দের সীমার দিকে নিম্নতর বৈৎ-হোরোণের সীমা পর্য্যন্ত, গেষর পর্য্যন্ত গমন করিল, এবং তাহার সীমান্তভাগ সমুদ্রে ছিল। এইরূপে যোষেফ-সন্তান মনঃশি ও ইফ্রয়িম আপন আপন অধিকার গ্রহণ করিল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে ইফ্রয়িম-সন্তানগণের সীমা এই; পূর্ব্ব দিকে উচ্চতর বৈৎ-হোরোণ পর্য্যন্ত অটারোৎ-অদ্দর তাহাদের অধিকারের সীমা হইল; পরে ঐ সীমা পশ্চিম দিকে মিক্‌মথতের উত্তরে নির্গত হইল; পরে সে সীমা পূর্ব্ব দিকে ঘুরিয়া তানৎ-শীলো পর্য্যন্ত গিয়া তাহার নিকট হইয়া যানোহের পূর্ব্ব দিকে গেল। পরে যানোহ হইতে অটারোৎ ও নারঃ হইয়া যিরীহো পর্য্যন্ত গিয়া যর্দ্দনে নির্গত হইল। পরে সে সীমা তপূহ হইতে পশ্চিম দিক্‌ হইয়া কান্না স্রোতে গেল, ও তাহার সীমান্তভাগ সমুদ্রে ছিল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে ইফ্রয়িম-সন্তানগণের বংশের এই অধিকার। ইহা ছাড়া মনঃশি-সন্তানগণের অধিকারের মধ্যে ইফ্রয়িম-সন্তানগণের জন্য পৃথক্‌কৃত নানা নগর ও সে সকলের গ্রাম ছিল। কিন্তু তাহারা গেষরবাসী কনানীয়দিগকে অধিকারচ্যুত করিল না, কিন্তু কনানীয়েরা অদ্য পর্যন্ত ইফ্রয়িমের মধ্যে বাস করিয়া তাহাদের কর্ম্মাধীন দাস হইয়া রহিয়াছে। আর গুলিবাঁটক্রমে মনঃশি বংশের অংশ নিরূপিত হইল, সে যোষেফের জ্যেষ্ঠ পুত্র। কিন্তু গিলিয়দের পিতা, অর্থাৎ মনঃশির জ্যেষ্ঠ পুত্র মাখীর যোদ্ধা বলিয়া গিলিয়দ ও বাশন পাইয়াছিল। আর [ঐ অংশ] আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে মনঃশির অন্য অন্য সন্তানদের হইল; তাহারা এই এই, অবীয়েষরের সন্তানগণ, হেলকের সন্তানগণ, অস্রীয়েলের সন্তানগণ, শেখমের সন্তানগণ, হেফরের সন্তানগণ ও শমীদার সন্তানগণ; ইহারা আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে যোষেফর পুত্র মনঃশির পুত্রসন্তান। পরন্তু মনঃশির সন্তান মাখীরের সন্তান গিলিয়দের সন্তান হেফরের পুত্র সল্‌ফাদের পুত্রসন্তান ছিল না; কেবল কতিপয় কন্যা ছিল; তাহার কন্যাদের নাম মহলা, নোয়া, হগ্‌লা, মিল্কা ও তির্সা। ইহারা ইলিয়াসর যাজকের, নূনের পুত্র যিহোশূয়ের সম্মুখে ও অধ্যক্ষগণের সম্মুখে আসিয়া কহিল, আমাদের ভ্রাতৃগণের মধ্যে আমাদিগকে এক অধিকার দিতে সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা করিয়াছিলেন। অতএব সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তিনি তাহাদের পিতার ভ্রাতৃগণের মধ্যে তাহাদিগকে এক অধিকার দেন। তাহাতে যর্দ্দনের পরপারস্থ গিলিয়দ ও বাশন দেশ ভিন্ন মনঃশির দিকে দশ ভাগ পড়িল; কেননা মনঃশির পুত্রদের মধ্যে তাহার কন্যাদেরও অধিকার ছিল; এবং মনঃশির অবশিষ্ট পুত্রগণ গিলিয়দ দেশ পাইল। মনঃশির সীমা আশের হইতে শিখিমের সম্মুখস্থ মিক্‌মথৎ পর্য্যন্ত ছিল; পরে ঐ সীমা দক্ষিণ পার্শ্বে ঐন্‌-তপূহ-নিবাসীদের নিকট পর্য্যন্ত গেল। মনঃশি তপূহ দেশ পাইল, কিন্তু মনঃশির সীমাস্থ তপূহ [নগর] ইফ্রয়িম-সন্তানগণের অধিকার হইল; ঐ সীমা কান্না স্রোত পর্য্যন্ত, স্রোতের দক্ষিণ তীরে নামিয়া গেল; মনঃশির নগর সকলের মধ্যে স্থিত এই সকল নগর ইফ্রয়িমের ছিল; মনঃশির সীমা স্রোতের উত্তরদিকে ছিল, এবং তাহার সীমান্তভাগ সমুদ্রে ছিল। দক্ষিণদিকে ইফ্রয়িমের ও উত্তরদিকে মনঃশির অধিকার ছিল, এবং সমুদ্র তাহার সীমা ছিল; তাহারা উত্তরদিকে আশেরের ও পূর্ব্বদিকে ইষাখরের পার্শ্ববর্ত্তী ছিল। আর ইষাখরের ও আশেরের মধ্যে উপনগরের সহিত বৈৎ-শান ও উপনগরের সহিত যিব্‌লিয়ম ও উপনগরের সহিত দোর-নিবাসীরা এবং উপনগরের সহিত ঐন্‌-দোর-নিবাসীরা ও উপনগরের সহিত তানক-নিবাসীরা ও উপনগরের সহিত মগিদ্দো-নিবাসীরা, এই তিনটী উপগিরি মনঃশির অধিকার ছিল। তথাপি মনঃশি-সন্তানগণ সেই সেই নগরনিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত করিতে পারিল না; কনানীয়েরা সেই দেশে বাস করিতে স্থিরসঙ্কল্প ছিল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ যখন প্রবল হইল, তখন কনানীয়দিগকে কর্ম্মাধীন দাস করিল, সম্পূর্ণরূপে অধিকারচ্যুত করিল না। পরে যোষেফ-সন্তানগণ যিহোশূয়কে কহিল, আপনি অধিকারার্থে আমাকে কেবল এক অংশ ও এক ভাগ কেন দিলেন? এ যাবৎ সদাপ্রভু আমাকে আশীর্ব্বাদ করাতে আমি বড় জাতি হইয়াছি। যিহোশূয় তাহাদিগকে কহিলেন, যদি তুমি বড় জাতি হইয়া থাক, তবে ঐ অরণ্যে উঠিয়া যাও; ঐ স্থানে পরিষীয়দের ও রফায়ীয়দের দেশে আপনার জন্যে বন কাটিয়া ফেল, কেননা পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশ তোমার পক্ষে সঙ্কীর্ণ। যোষেফ-সন্তানগণ কহিল, এই পর্ব্বতময় দেশে আমাদের সম্পোষ্য হয় না, এবং যে সমস্ত কনানীয় তলভূমিতে বাস করে, বিশেষতঃ বৈৎ-শানে ও তথাকার উপনগরসমূহে এবং যিষ্রিয়েল তলভূমিতে বাস করে, তাহাদের লৌহরথ আছে। তখন যিহোশূয় যোষেফকুলকে অর্থাৎ ইফ্রয়িম ও মনঃশিকে কহিলেন, তুমি বড় জাতি, তোমার পরাক্রমও মহৎ; তুমি কেবল এক অংশ পাইবে না; কিন্তু পর্ব্বতময় দেশ তোমার হইবে; উহা বনাকীর্ণ বটে, কিন্তু সেই বন কাটিয়া ফেলিলে তাহার নীচের ভাগ তোমার হইবে; কেননা কনানীয়দের লৌহরথ থাকিলেও এবং তাহারা পরাক্রান্ত হইলেও তুমি তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিবে। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী শীলোতে সমাগত হইয়া সেই স্থানে সমাগম-তাম্বু স্থাপন করিল; দেশ তাহাদের সম্মুখে পরাজিত ছিল। ঐ সময়ে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে সাত বংশ অবশিষ্ট ছিল, যাহারা আপন আপন অধিকার ভাগ করিয়া লয় নাই। যিহোশূয় ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলেন, তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে দেশ দিয়াছেন, সেই দেশে গিয়া তাহা অধিকার করিতে তোমরা আর কত কাল শিথিল থাকিবে? তোমরা আপনাদের এক এক বংশের মধ্য হইতে তিন তিন জনকে দেও; আমি তাহাদিগকে প্রেরণ করিব, তাহারা উঠিয়া দেশের সর্ব্বত্র ভ্রমণ করিবে, এবং প্রত্যেকের অধিকারানুসারে তাহার বর্ণনা লিখিয়া লইয়া আমার নিকটে ফিরিয়া আসিবে। তাহারা তাহা সাত অংশ করিবে; দক্ষিণদিকে আপন সীমাতে যিহূদা থাকিবে, এবং উত্তরদিকে আপন সীমাতে যোষেফের কুল থাকিবে। তোমরা দেশটী সাত অংশ করিয়া তাহার বর্ণনা লিখিয়া আমার কাছে আনিবে; আমি এই স্থানে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমাদের নিমিত্তে গুলিবাঁট করিব। কারণ তোমাদের মধ্যে লেবীয়দের কোন অংশ নাই, কেননা সদাপ্রভুর যাজকত্বপদ তাহাদের অধিকার; আর গাদ ও রূবেণ, এবং মনঃশির অর্দ্ধ বংশ যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে সদাপ্রভুর দাস মোশির দত্ত আপনাদের অধিকার পাইয়াছে। পরে সেই লোকেরা উঠিয়া যাত্রা করিল; আর যাহারা সেই দেশের বর্ণনা লিখিতে গেল, যিহোশূয় তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা গিয়া দেশের সর্ব্বত্র ভ্রমণ করিয়া দেশের বর্ণনা লিখিয়া লইয়া আমার নিকটে ফিরিয়া আইস; তাহাতে আমি এই শীলোতে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমাদের জন্য গুলিবাঁট করিব। পরে ঐ লোকেরা গিয়া দেশের সর্ব্বত্র ভ্রমণ করিল, এবং নগরানুসারে সাত অংশ করিয়া পুস্তকে তাহার বর্ণনা লিখিল; পরে শীলোস্থিত শিবিরে যিহোশূয়ের নিকটে ফিরিয়া আসিল। আর যিহোশূয় শীলোতে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তাহাদের জন্য গুলিবাঁট করিলেন; যিহোশূয় সেই স্থানে ইস্রায়েল-সন্তানগণের বিভাগানুসারে দেশ তাহাদিগকে অংশ করিয়া দিলেন। আর গুলিবাঁটক্রমে এক অংশ আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে বিন্যামীন-সন্তানগণের বংশের নামে উঠিল। গুলিবাঁটে নির্দ্দিষ্ট তাহাদের সীমা যিহূদা-সন্তানগণের ও যোষেফ-সন্তানগণের মধ্যে হইল। তাহাদের উত্তর পার্শ্বের সীমা যর্দ্দন হইতে যিরীহোর উত্তর পার্শ্ব দিয়া গেল, পরে পর্ব্বতময় প্রদেশের মধ্য দিয়া পশ্চিমদিকে বৈৎ-আবনের প্রান্তর পর্য্যন্ত গেল। তথা হইতে ঐ সীমা লূসে, দক্ষিণদিকে লূসের অর্থাৎ বৈথেলের পার্শ্ব পর্য্যন্ত গেল; এবং নিম্নতর বৈৎ-হোরোণের দক্ষিণে স্থিত পর্ব্বত দিয়া অটারোৎ-অদ্দরের দিকে নামিয়া গেল। তথা হইতে ঐ সীমা ফিরিয়া পশ্চিম পার্শ্বে, বৈৎ-হোরোণের দক্ষিণে স্থিত পর্ব্বত হইতে দক্ষিণদিকে গেল; আর যিহূদা-সন্তানগণের কিরিয়ৎ-বাল অর্থাৎ কিরিয়ৎ-যিয়ারীম নামক নগর পর্য্যন্ত গেল; ইহা পশ্চিম পার্শ্ব। আর দক্ষিণ পার্শ্ব কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের প্রান্ত হইতে আরম্ভ হইল, এবং সে সীমা পশ্চিমদিকে নির্গত হইয়া নিপ্তোহের জলের উনুই পর্য্যন্ত গমন করিল। আর ঐ সীমা হিম্নোম-সন্তানের উপত্যকার সম্মুখস্থ ও রফায়ীম তলভূমির উত্তরদিক্‌স্থ পর্ব্বতের প্রান্ত পর্য্যন্ত নামিয়া গেল, এবং হিম্নোমের উপত্যকায়, যিবূষের দক্ষিণ পার্শ্বে নামিয়া আসিয়া ঐন্‌-রোগেলে গেল। আর উত্তরদিকে ফিরিয়া ঐন্‌-শেমশে গমন করিল, এবং অদুম্মীম আরোহণ-পথের সম্মুখস্থ গলীলোতের দিকে নির্গত হইয়া রূবেণ-সন্তান বোহনের প্রস্তর পর্য্যন্ত নামিয়া গেল। আর উত্তরদিকে অরাবা তলভূমির সম্মুখস্থ পার্শ্বে গিয়া অরাবা তলভূমিতে নামিয়া গেল। আর ঐ সীমা উত্তরদিকে বৈৎ-হগ্লার পার্শ্ব পর্য্যন্ত গেল; যর্দ্দনের দক্ষিণ প্রান্তস্থ লবণ-সমুদ্রের উত্তর খাড়ী সেই সীমার প্রান্ত ছিল; ইহা দক্ষিণ সীমা। আর পূর্ব্ব পার্শ্বে যর্দ্দন তাহার সীমা ছিল। চারিদিকে আপন সীমা অনুসারে, আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে, বিন্যামীন-সন্তানগণের এই অধিকার ছিল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে বিন্যামীন-সন্তানগণের বংশের নগর যিরীহো বৈৎ-হগ্লা, এমক-কশিশ, বৈৎ-অরাবা, সমারয়িম, বৈথেল, অব্বীম, পারা, অফ্রা, কফরঅম্মোনী, অফ্‌নি ও গেবা; স্ব স্ব গ্রামের সহিত বারোটি নগর। গিবিয়োন, রামা, বেরোৎ, মিস্‌পী, কফীরা, মোৎসা, রেকম, [27,28] যির্পেল, তরলা, সেলা, এলফ, যিবূষ অর্থাৎ যিরূশালেম, গিবিয়াৎ ও কিরিয়ৎ; স্ব স্ব গ্রামের সহিত চৌদ্দটী নগর। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে বিন্যামীন-সন্তানগণের এই অধিকার। আর গুলিবাঁটক্রমে দ্বিতীয় অংশ শিমিয়োনের নামে, আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে শিমিয়োন-সন্তানগণের বংশের নামে উঠিল; তাহাদের অধিকার যিহূদা-সন্তানগণের অধিকারের মধ্যে হইল। তাহাদের অধিকার হইল বের্‌-শেবা, (বা শেবা), মোলাদা, হৎসর-শূয়াল, বালা, এৎসম, ইল্‌তোলদ, বথূল, হর্মা, [5,6] সিক্লগ, বৈৎ-মর্কাবোৎ, হৎসর-সুষা, বৈৎ-লবায়োৎ ও শারূহণ; *** স্ব স্ব গ্রামের সহিত তেরটী নগর। ঐন, রিম্মোণ, এথর ও আশন; স্ব স্ব গ্রামের সহিত চারিটী নগর; আর বালৎ-বের, [অর্থাৎ] দক্ষিণ দেশস্থ রামা পর্য্যন্ত ঐ ঐ নগরের চারিদিকের সমস্ত গ্রাম। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে শিমিয়োন-সন্তানগণের বংশের এই অধিকার। শিমিয়োন-সন্তানগণের অধিকার যিহূদা-সন্তানগণের অধিকারের এক ভাগ ছিল, কেননা যিহূদা-সন্তানগণের অংশ তাহাদের প্রয়োজন অপেক্ষা অধিক ছিল; অতএব শিমিয়োন-সন্তানগণ তাহাদের অধিকারের মধ্যে অধিকার পাইল। পরে গুলিবাঁটক্রমে তৃতীয় অংশ আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে সবূলূন-সন্তানদের নামে উঠিল; সারীদ পর্য্যন্ত তাহাদের অধিকারের সীমা হইল। তাহাদের সীমা পশ্চিমদিকে অর্থাৎ মারালায় উঠিয়া গেল, এবং দব্বেশৎ পর্য্যন্ত গেল, যক্নিয়ামের সম্মুখস্থ স্রোত পর্য্যন্ত গেল। আর সারীদ হইতে পূর্ব্বদিকে, সূর্য্যোদয় দিকে ফিরিয়া কিশ্‌লোৎ-তাবোরের সীমা পর্য্যন্ত গেল; পরে দাবরৎ পর্য্যন্ত নির্গত হইয়া যাফিয়ে উঠিয়া গেল। আর তথা হইতে পূর্ব্বদিক, সূর্য্যোদয়ের দিক, হইয়া গাৎ-হেফর দিয়া এৎ-কাৎসীন পর্য্যন্ত গেল; এবং নেয়ের দিকে বিস্তৃত রিম্মোণে গেল। আর ঐ সীমা হন্নাথোনের উত্তরদিকে উহা বেষ্টন করিল, আর যিপ্তহেল উপত্যকা পর্য্যন্ত গেল। আর কটৎ, নহলাল, শিম্রোণ, যিদালা ও বৈৎ-লেহম; স্ব স্ব গ্রামের সহিত বারোটী নগর। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে সবূলূন-সন্তানদের এই অধিকার; স্ব স্ব গ্রামের সহিত এই সকল নগর। পরে গুলিবাঁটক্রমে চতুর্থ অংশ ইষাখরের নামে, আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে ইষাখর-সন্তানগণের নামে উঠিল। [18,19] যিষ্রিয়েল, কসুল্লোৎ, শূনেম, হফারয়িম, *** শীয়োন, অনহরৎ, রব্বীৎ, কিশিয়োন, এবস, রেমৎ, ঐন্‌-গন্নীম, ঐন্‌-হদ্দা ও বৈৎ-পৎসেস তাহাদের অধিকার হইল। আর সে সীমা তাবোর, শহৎসূমা ও বৈৎ-শেমশ পর্য্যন্ত গেল, আর যর্দ্দন তাহাদের সীমার প্রান্ত হইল; স্ব স্ব গ্রামের সহিত ষোলটী নগর। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে ইষাখর-সন্তানগণের বংশের এই অধিকার; স্ব স্ব গ্রামের সহিত এই সকল নগর। পরে গুলিবাঁটক্রমে পঞ্চম অংশ আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে আশের-সন্তানগণের বংশের নামে উঠিল। তাহাদের সীমা হিল্‌কৎ, হলী, বেটন, অক্‌ষফ, অলম্মেলক, অমাদ ও মিশাল, এবং পশ্চিমদিকে কর্মিল, ও শীহোর-লিব্‌নৎ পর্য্যন্ত গেল। আর সূর্য্যোদয় দিকে বৈৎ-দাগোনের অভিমুখে ঘুরিয়া সবূলুন ও উত্তরদিকে যিপ্তহেল উপত্যকা, বৈৎ-এমক ও ন্যীয়েল পর্য্যন্ত গেল, পরে বামদিকে কাবূলে, এবং এব্রোণে, রহোবে, হম্মোনে ও কান্নাতে, এবং মহাসীদোন পর্য্যন্ত গেল। পরে সে সীমা ঘুরিয়া রামায় ও প্রাচীর-বেষ্টিত সোর নগরে গেল, পরে সে সীমা ঘুরিয়া হোষাতে গেল, এবং অক্‌ষীব প্রদেশস্থ সমুদ্রতীর, আর উম্মা, অফেক ও রহোব তাহার প্রান্ত হইল; স্ব স্ব গ্রামের সহিত বাইশটী নগর। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে আশের-সন্তানগণের বংশের এই অধিকার; স্ব স্ব গ্রামের সহিত এই সকল নগর। পরে গুলিবাঁটক্রমে ষষ্ঠ অংশ নপ্তালি-সন্তানগণের নামে, আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে নপ্তালি-সন্তানগণের নামে উঠিল। তাহাদের সীমা হেলফ অবধি, সানন্নীমস্থ অলোন বৃক্ষ অবধি, অদামীনেকব ও যব্‌নিয়েল দিয়া লক্কুম পর্য্যন্ত গেল, ও তাহার অন্তভাগ যর্দ্দনে ছিল। আর ঐ সীমা পশ্চিমদিকে ফিরিয়া অস্‌নোৎ-তাবোর পর্য্যন্ত গেল, এবং তথা হইতে হুক্কোক পর্য্যন্ত গেল; আর দক্ষিণে সবূলূন পর্য্যন্ত, ও পশ্চিমে আশের পর্য্যন্ত, ও সূর্য্যোদয় দিকে যর্দ্দন সমীপস্থ যিহূদা পর্য্যন্ত গেল। আর প্রাচীরবেষ্টিত নগর সিদ্দীম, সের, হম্মৎ, রক্কৎ, কিন্নেরৎ, অদামা, রামা, হাৎসোর, কেদশ, ইদ্রিয়ী, ঐন্‌-হাৎসোর, যিরোণ, মিগ্দলএল, হোরেম, বৈৎ-অনাৎ ও বৈৎশেমশ; স্ব স্ব গ্রামের সহিত ঊনিশটী নগর। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে নপ্তালি-সন্তানগণের বংশের এই অধিকার; স্ব স্ব গ্রামের সহিত এই সকল নগর। আর গুলিবাঁটক্রমে সপ্তম অংশ আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে দান-সন্তানগণের বংশের নামে উঠিল। তাহাদের অধিকারের সীমা সরা, ইষ্টায়োল, ঈর্‌-শেমশ, শালবীন, অয়ালোন, যিৎলা, এলোন, তিম্না, ইক্রোণ, ইল্‌তকী, গিব্বথোন, বালৎ, যিহূদ, বনে-বরক, গাৎ-রিম্মোণ, মেয়র্কোন, রক্বোন ও যাফোর সম্মুখস্থ অঞ্চল। আর দান-সন্তানগণের সীমা সেই সকল স্থান অতিক্রম করিল; কারণ দান-সন্তানগণ লেশম নগরের বিরুদ্ধে গিয়া যুদ্ধ করিল, এবং তাহা হস্তগত করিয়া খড়গ-ধারে আঘাত করিল, আর অধিকারপূর্ব্বক তাহার মধ্যে বাস করিল, এবং আপনাদের পিতৃপুরুষ দানের নামানুসারে লেশমের নাম দান রাখিল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে দান-সন্তানগণের বংশের এই অধিকার; স্ব স্ব গ্রামের সহিত এই সকল নগর। এইরূপে আপন আপন সীমানুসারে অধিকার জন্য তাহারা দেশ বিভাগ কার্য্য সমাপ্ত করিল; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের মধ্যে নূনের পুত্র যিহোশূয়কে এক অধিকার দিল। তাহারা সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তাঁহার যাচিত নগর অর্থাৎ পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ তিম্নৎ-সেরহ তাঁহাকে দিল; তাহাতে তিনি ঐ নগর নির্ম্মাণ করিয়া তথায় বাস করিলেন। এই সকল অধিকার ইলিয়াসর যাজক, নূনের পুত্র যিহোশূয় ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের বংশ সকলের পিতৃকুলপতিগণ শীলোতে সদাপ্রভুর সম্মুখে সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে গুলিবাঁট দ্বারা দিলেন। এইরূপে তাঁহারা দেশ বিভাগ কার্য্য সমাপ্ত করিলেন। পরে সদাপ্রভু যিহোশূয়কে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বল, আমি মোশি দ্বারা তোমাদের কাছে যে যে নগরের কথা বলিয়াছি, তোমরা আপনাদের জন্য সেই সকল আশ্রয়-নগর নিরূপণ কর। তাহাতে যে ব্যক্তি প্রমাদবশতঃ অজ্ঞাতসারে কাহাকেও বধ করে, সেই নরহন্তা তথায় পলাইতে পারিবে, এবং সেই নগরগুলি রক্তের প্রতিশোধদাতা হইতে তোমাদের রক্ষার স্থান হইবে। আর সে তাহার মধ্যে কোন এক নগরে পলায়ন করিবে, এবং নগরদ্বারের প্রবেশ স্থানে দাঁড়াইয়া নগরের প্রাচীনবর্গের কর্ণগোচরে আপনার কথা বলিবে; পরে তাহারা নগরমধ্যে আপনাদের নিকটে তাহাকে আনিয়া আপনাদের মধ্যে বাস করিতে স্থান দিবে। আর রক্তের প্রতিশোধদাতা দৌড়িয়া তাহার পশ্চাৎ আসিলে তাহারা তাহার হস্তে সেই নরহন্তাকে সমর্পণ করিবে না; কেননা সে অজ্ঞাতসারে আপন প্রতিবাসীকে আঘাত করিয়াছিল, সে পূর্ব্বে তাহার প্রতি দ্বেষ করে নাই। অতএব যাবৎ সে বিচারার্থে মণ্ডলীর সাক্ষাতে না দাঁড়ায়, এবং তাৎকালিক মহাযাজকের মৃত্যু না হয়, তাবৎ সে ঐ নগরে বাস করিবে; পরে সেই নরহন্তা আপন নগরে ও আপন বাটীতে, যে নগর হইতে পলায়ন করিয়াছিল, সেই স্থানে ফিরিয়া যাইবে। তাহাতে তাহারা পর্ব্বতময় নপ্তালি প্রদেশস্থ গালীলের কেদশ, পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ শিখিম, ও পর্ব্বতময় যিহূদা প্রদেশস্থ কিরিয়ৎ-অর্ব অর্থাৎ হিব্রোণ পৃথক্‌ করিল। আর যিরীহোর নিকটস্থ যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে আহারা রূবেণ বংশের অধিকার হইতে সমভূমির প্রান্তরে স্থিত বেৎসর, গাদ বংশের অধিকার হইতে গিলিয়দস্থিত রামোৎ, ও মনঃশি বংশের অধিকার হইতে বাশনস্থ গোলন নিরূপণ করিল। কেহ প্রমাদবশতঃ নরহত্যা করিলে যাবৎ মণ্ডলীর সম্মুখে না দাঁড়ায়, তাবৎ সেই স্থানে যেন পলাইতে পারে ও রক্তের প্রতিশোধদাতার হস্তে না মরে, এই জন্য সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের নিমিত্তে ও তাহাদের মধ্যে প্রবাসকারী বিদেশীর নিমিত্তে এই সকল নগর নিরূপিত হইল। পরে লেবীয়দের পিতৃকুলপতিগণ ইলিয়াসর যাজকের, নূনের পুত্র যিহোশূয়ের ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের বংশ সকলের পিতৃকুলপতিগণের নিকটে আসিলেন, ও কনান দেশের শীলোতে তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমাদের বাসার্থ নগর ও পশুগণের জন্য পরিসরভূমি দিবার আজ্ঞা সদাপ্রভু মোশি দ্বারা দিয়াছিলেন। তাহাতে সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপন আপন অধিকার হইতে লেবীয়দিগকে এই এই নগর ও সেগুলির পরিসরভূমি দিল। কহাতীয় গোষ্ঠীদের নামে গুলি উঠিল; তাহাতে লেবীয়দের মধ্যে হারোণ যাজকের সন্তানগণ গুলিবাঁট দ্বারা যিহূদা বংশ, শিমিয়োনীয়দের বংশ ও বিন্যামীন বংশ হইতে তেরটী নগর পাইল। আর কহাতের অবশিষ্ট সন্তানগণ গুলিবাঁট দ্বারা ইফ্রয়িম বংশের গোষ্ঠীসমূহ হইতে, এবং দান বংশ ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশ হইতে দশটী নগর পাইল। আর গের্শোন-সন্তানগণ গুলিবাঁট দ্বারা ইষাখর বংশের গোষ্ঠীসমূহ হইতে, এবং আশের বংশ, নপ্তালি বংশ ও বাশনস্থ মনঃশির অর্দ্ধ বংশ হইতে তেরটী নগর পাইল। আর মরারি-সন্তানগণ আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে রূবেণ বংশ, গাদ বংশ ও সবূলূন বংশ হইতে বারোটী নগর পাইল। এইরূপে ইস্রায়েল-সন্তানগণ গুলিবাঁট করিয়া লেবীয়দিগকে এই সকল নগর ও সেগুলির পরিসরভূমি দিল, যেমন সদাপ্রভু মোশির দ্বারা আজ্ঞা দিয়াছিলেন। তাহারা যিহূদা-সন্তানগণের বংশের ও শিমিয়োন-সন্তানগণের বংশের অধিকার হইতে এই এই নামবিশিষ্ট নগর দিল। লেবির সন্তান কহাতীয় গোষ্ঠীদের মধ্যবর্ত্তী হারোণ-সন্তানদের সে সকল হইল; কেননা তাহাদের নামে প্রথম গুলি উঠিল। ফলতঃ তাহারা অনাকের পিতা অর্বের কিরিয়ৎ-অর্ব, অর্থাৎ পর্ব্বতময় যিহূদা প্রদেশস্থ হিব্রোণ ও তাহার চারিদিকের পরিসর তাহাদিগকে দিল। কিন্তু ঐ নগরের ক্ষেত্র ও গ্রাম সকল তাহারা অধিকারার্থে যিফুন্নির পুত্র কালেবকে দিল। তাহারা হারোণ যাজকের সন্তানগণকে পরিসরের সহিত নরহন্তার আশ্রয়-নগর হিব্রোণ দিল; এবং পরিসরের সহিত লিব্‌না, পরিসরের সহিত যত্তীর, পরিসরের সহিত ইষ্টমোয়, পরিসরের সহিত হোলোন, পরিসরের সহিত দবীর, পরিসরের সহিত ঐন, পরিসরের সহিত যুটা ও পরিসরের সহিত বৈৎ-শেমশ, ঐ দুই বংশের অধিকার হইতে এই নয়টী নগর দিল। আর বিন্যামীন বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত গিবিয়োন, পরিসরের সহিত গেবা, পরিসরের সহিত অনাথোৎ ও পরিসরের সহিত অল্‌মোন, এই চারিটী নগর দিল। সাকল্যে পরিসরের সহিত তেরটী নগর হারোণ-সন্তান যাজকদের অধিকার হইল। আর কহাতের অবশিষ্ট সন্তানগণ অর্থাৎ কহাৎ-সন্তান লেবীয়দের গোষ্ঠী সকল ইফ্রয়িম বংশের অধিকার হইতে আপনাদের অধিকার-নগর পাইল। ফলতঃ নরহন্তার আশ্রয়-নগর পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ শিখিম, ও তাহার পরিসর, এবং পরিসরের সহিত গেষর; ও পরিসরের সহিত কিবসয়িম, ও পরিসরের সহিত বৈৎ-হোরোণ; এই চারিটী নগর তাহারা তাহাদিগকে দিল। আর দান বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত ইল্‌তকী, পরিসরের সহিত গিব্বথোন, পরিসরের সহিত অয়ালোন, ও পরিসরের সহিত গাৎ-রিম্মোণ, এই চারিটী নগর দিল। আর মনঃশি অর্দ্ধ বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত তানক, ও পরিসরের সহিত গাৎ-রিম্মোণ, এই দুইটী নগর দিল। কহাতের অবশিষ্ট সন্তানগণের গোষ্ঠীদের নিমিত্তে সর্ব্বশুদ্ধ পরিসরের সহিত এই দশটি নগর দিল। পরে তাহারা লেবীয়দের গোষ্ঠীদের মধ্যে গের্শোন-সন্তানগণকে মনঃশির অর্দ্ধ বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত নরহন্তার আশ্রয়-নগর বাশনস্থ গোলন, এবং পরিসরের সহিত বীষ্টরা, এই দুইটী নগর দিল। আর ইষাখর বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত কিশিয়োন, পরিসরের সহিত দাবরৎ, পরিসরের সহিত যর্মূৎ, ও পরিসরের সহিত ঐন্‌-গন্নীম; এই চারিটী নগর দিল। আর আশের বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত মিশাল, পরিসরের সহিত আব্দোন, পরিসরের সহিত হিল্‌কৎ, ও পরিসরের সহিত রহোব; এই চারিটী নগর দিল। আর নপ্তালি বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত নরহন্তার আশ্রয়-নগর গালীলস্থ কেদশ, এবং পরিসরের সহিত হম্মোৎ-দোর, ও পরিসরের সহিত কর্ত্তন, এই তিনটী নগর দিল। আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে গের্শোনীয়েরা সর্ব্বশুদ্ধ পরিসরের সহিত এই তেরোটী নগর পাইল। পরে তাহারা মরাবি-সন্তানগণের গোষ্ঠীদিগকে অর্থাৎ অবশিষ্ট লেবীয়দিগকে সবূলূন বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত যক্নিয়াম, পরিসরের সহিত কার্ত্তা, পরিসরের সহিত দিম্না, ও পরিসরের সহিত নহলোল এই চারিটী নগর দিল। আর রূবেণ বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত বেৎসর, পরিসরের সহিত যহস, পরিসরের সহিত কদেমোৎ ও পরিসরের সহিত মেফাৎ, এই চারিটী নগর দিল। আর গাদ বংশের অধিকার হইতে পরিসরের সহিত নরহন্তার আশ্রয়-নগর গিলিয়দস্থ রামোৎ, এবং পরিসরের সহিত মহনয়িম, পরিসরের সহিত হিষ্‌বোণ ও পরিসরের সহিত যাসের, সাকল্যে এই চারিটী নগর দিল। এইরূপে লেবীয়দের অবশিষ্ট গোষ্ঠী সকল, অর্থাৎ মরারি-সন্তানগণ আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে গুলিবাঁট দ্বারা সর্ব্বশুদ্ধ বারোটী নগর পাইল। ইস্রায়েল-সন্তানগণের অধিকারের মধ্যে পরিসরের সহিত সর্ব্বশুদ্ধ আটচল্লিশটী নগর লেবীয়দের হইল। সেই সকল নগরের মধ্যে প্রত্যেক নগরের চারিদিকে পরিসর ছিল; সেই সমস্ত নগরেরই এইরূপ ছিল। সদাপ্রভু লোকদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে দেশের বিষয় দিব্য করিয়াছিলেন, সেই সমগ্র দেশ তিনি ইস্রায়েলকে দিলেন, এবং তাহারা তাহা অধিকার করিয়া তথায় বাস করিল। সদাপ্রভু তাহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে কৃত আপনার সমস্ত দিব্যানুসারে চারিদিকে তাহাদিগকে বিশ্রাম দিলেন; তাহাদের সমস্ত শত্রুর মধ্যে কেহই তাহাদের সম্মুখে দাঁড়াইতে পারিল না; সদাপ্রভু তাহাদের সমস্ত শত্রুকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন। সদাপ্রভু ইস্রায়েলকুলের কাছে যে সকল মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটী বাক্যও নিষ্ফল হইল না; সকলই সফল হইল। তৎকালে যিহোশূয় রূবেণীয় ও গাদীয়দিগকে এবং মনঃশির অর্দ্ধ বংশকে ডাকিয়া কহিলেন; সদাপ্রভুর দাস মোশি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছিলেন, সে সমস্তই তোমরা পালন করিয়াছ; এবং আমি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছি, তাহাতে আমার কথায়ও কর্ণপাত করিয়াছ। বহুদিন হইতে অদ্য পর্য্যন্ত তোমরা আপন আপন ভ্রাতৃগণকে ছাড়িয়া যাও নাই, কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞা পালন করিয়া আসিয়াছ। সম্প্রতি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন প্রতিজ্ঞানুসারে তোমাদের ভ্রাতৃগণকে বিশ্রাম দিয়াছেন; অতএব এখন তোমরা আপন আপন তাম্বুতে, অর্থাৎ সদাপ্রভুর দাস মোশি যর্দ্দনের পরপারে যে দেশ তোমাদিগকে দিয়াছেন, আপনাদের সেই অধিকার দেশে ফিরিয়া যাও। কেবল এই এই বিষয়ে খুব যত্নবান্‌ থাকিও, সদাপ্রভুর দাস মোশি তোমাদিগকে যে আজ্ঞা ও ব্যবস্থা দিয়াছেন, তাহা পালন করিও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিও, তাঁহার সমস্ত পথে চলিও, তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করিও, তাঁহাতে আসক্ত থাকিও, এবং সমস্ত হৃদয় ও সমস্ত প্রাণের সহিত তাঁহার সেবা করিও। পরে যিহোশূয় তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিয়া বিদায় করিলেন; তাহারা আপন আপন তাম্বুতে প্রস্থান করিল। মোশি মনঃশির অর্দ্ধ বংশকে বাশনে অধিকার দিয়াছিলেন, এবং যিহোশূয় তাহার অন্য অর্দ্ধ বংশকে যর্দ্দনের পশ্চিম পারে তাহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্যে অধিকার দিয়াছিলেন। আর আপন আপন তাম্বুতে বিদায় করিবার সময়ে যিহোশূয় তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, আর কহিলেন, তোমরা প্রচুর সম্পত্তি, পাল পাল পশু এবং রৌপ্য, স্বর্ণ, পিত্তল, লৌহ ও অনেক বস্ত্র সঙ্গে লইয়া আপন আপন তাম্বুতে ফিরিয়া যাও, তোমাদের শত্রুগণ হইতে লুটিত দ্রব্য তোমাদের ভ্রাতাদের সহিত বিভাগ করিয়া লও। পরে রূবেণ-সন্তানগণ, গাদ-সন্তানগণ ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশ কনান দেশস্থ শীলোতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিকট হইতে ফিরিয়া গেল, মোশি দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে প্রাপ্ত গিলিয়দ দেশের, তাহাদের অধিকার-দেশের দিকে যাইবার জন্য যাত্রা করিল। আর কনান দেশস্থ যর্দ্দন অঞ্চলে উপস্থিত হইলে রূবেণ-সন্তানগণ, গাদ-সন্তানগণ ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশ সেই স্থানে যর্দ্দনের ধারে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিল, সেই বেদি দেখিতে বৃহৎ। তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ শুনিতে পাইল, দেখ, রূবেণ-সন্তানগণ, গাদ-সন্তানগণ ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশ কনান দেশের সম্মুখে যর্দ্দন অঞ্চলে, ইস্রায়েল-সন্তানগণের পারে, এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়াছে। ইস্রায়েল-সন্তানগণ যখন এই কথা শুনিল, তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গমন করিতে শীলোতে একত্র হইল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ রূবেণ-সন্তানগণের, গাদ-সন্তানগণের ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশের নিকটে গিলিয়দ দেশে ইলিয়াসর যাজকের পুত্র পীনহসকে, এবং তাঁহার সঙ্গে দশ জন অধ্যক্ষকে, ইস্রায়েলের প্রত্যেক বংশ হইতে এক এক জন পিতৃকুলাধ্যক্ষকে, প্রেরণ করিল; তাঁহারা এক এক জন ইস্রায়েলের সহস্রগণের মধ্যে আপন আপন পিতৃকুলের পতি ছিলেন। তাঁহারা গিলিয়দ দেশে রূবেণ-সন্তানগণের, গাদ-সন্তানগণের ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশের নিকটে আসিয়া তাহাদিগকে এই কথা কহিলেন, সদাপ্রভুর সমস্ত মণ্ডলী এই কথা বলিতেছে, অদ্য সদাপ্রভুর বিপরীতে বিদ্রোহী হইবার জন্য আপনাদের নিমিত্তে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করাতে তোমরা অদ্য সদাপ্রভুর অনুগমন হইতে ফিরিবার জন্য ইস্রায়েলের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এই যে সত্যলঙ্ঘন করিলে, এ কি? যে অপরাধ প্রযুক্ত সদাপ্রভুর মণ্ডলীর মধ্যে মহামারী হইয়াছিল, এবং যাহা হইতে আমরা অদ্যাপি শুচীকৃত হই নাই, পিয়োর-বিষয়ক সেই অপরাধ কি আমাদের পক্ষে ক্ষুদ্র? এই কারণ কি অদ্য সদাপ্রভুর পশ্চাদ্‌গমন হইতে ফিরিয়া যাইতে চাহ? তোমরা অদ্য সদাপ্রভুর বিদ্রোহী হইলে তিনি কল্য ইস্রায়েলের সমস্ত মণ্ডলীর প্রতি ক্রুদ্ধ হইবেন। যাহা হউক, তোমাদের অধিকার-দেশ যদি অশুচি হয়, তবে পার হইয়া সদাপ্রভুর অধিকার দেশে, যেখানে সদাপ্রভুর আবাস রহিয়াছে, সেখানে আসিয়া আমাদেরই মধ্যে অধিকার গ্রহণ কর; কিন্তু আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদি ভিন্ন আপনাদের জন্য অন্য যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ দ্বারা সদাপ্রভুর বিদ্রোহী ও আমাদের বিদ্রোহী হইও না। সেরহের পুত্র আখন বর্জ্জিত বস্তু সম্বন্ধে সত্যলঙ্ঘন করিলে ঈশ্বরের ক্রোধ কি ইস্রায়েলের সমস্ত মণ্ডলীর প্রতি উপস্থিত হইল না? সে ব্যক্তি ত আপন অপরাধে একাকী বিনষ্ট হয় নাই। তখন রূবেণ-সন্তানগণ, গাদ-সন্তানগণ ও মনঃশির অর্দ্ধ বংশ ইস্রায়েলের সেই সহস্রপতিদিগকে এই উত্তর দিল; ঈশ্বরদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, ঈশ্বরদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তিনিই জানেন, এবং ইস্রায়েল, সেও জানিবে; যদি আমরা সদাপ্রভুর বিপরীতে বিদ্রোহ-ভাবে কিম্বা সত্যলঙ্ঘনের ভাবে ইহা করিয়া থাকি, তবে অদ্য আমাদিগকে রক্ষা করিও না। আমরা আপনাদের জন্য যে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়াছি, তাহা যদি সদাপ্রভুর পশ্চাদ্‌গমন হইতে ফিরিয়া যাইবার জন্য, কিম্বা তাহার উপরে হোম বা ভক্ষ্য-নৈবেদ্য উৎসর্গ করণার্থে অথবা মঙ্গলার্থক বলিদান উৎসর্গ করণার্থে নির্ম্মাণ করিয়া থাকি, তবে সদাপ্রভু স্বয়ং তাহার প্রতিফল দিউন। আমরা বরং ভয় করিয়া, একটী বিশেষ উদ্দেশ্যে ইহা করিয়াছি, ফলতঃ কি জানি, ভাবী কালে তোমাদের সন্তানগণ আমাদের সন্তানগণকে এই কথা কহিবে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সহিত তোমাদের সম্পর্ক কি? হে রূবেণ-সন্তানগণ, গাদ-সন্তানগণ, তোমাদের ও আমাদের উভয়ের মধ্যে সদাপ্রভু যর্দ্দনকে সীমা করিয়া রাখিয়াছেন; সদাপ্রভুতে তোমাদের কোন অধিকার নাই। এইরূপে পাছে তোমাদের সন্তানগণ আমাদের সন্তানগণকে সদাপ্রভুর ভয় ত্যাগ করায়। এই জন্য আমরা কহিলাম, আইস, আমরা এক বেদি নির্ম্মাণের উদ্‌যোগ করি, হোমের বা বলিদানের জন্য নয়; কিন্তু আমাদের হোম, আমাদের বলি ও আমাদের মঙ্গলার্থক উপহার দ্বারা সদাপ্রভুর সম্মুখে তাঁহার সেবা করিতে আমাদের অধিকার আছে, ইহার প্রমাণার্থে তাহা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এবং আমাদের পরে আমাদের ভাবী বংশের মধ্যে সাক্ষী হইবে; তাহাতে ভাবী কালে তোমাদের সন্তানগণ আমাদের সন্তানগণকে বলিতে পারিবে না যে, সদাপ্রভুতে তোমাদের কোন অংশ নাই। আর আমরা কহিলাম, তাহারা যদি ভাবী কালে আমাদিগকে কিম্বা আমাদের বংশকে এই কথা বলে, তবে আমরা বলিব, তোমরা সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির ঐ প্রতিরূপ দেখ, আমাদের পিতৃপুরুষগণ উহা নির্ম্মাণ করিয়াছে; হোমের বা বলিদানের জন্য নয়, কিন্তু উহা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী। আমরা যে হোমের, ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের কিম্বা বলিদানের নিমিত্তে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আবাসের সম্মুখস্থিত তাঁহার যজ্ঞবেদি ব্যতীত অন্য যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ দ্বারা সদাপ্রভুর বিদ্রোহী হইব, কিম্বা আমরা যে সদাপ্রভুর পশ্চাদ্‌গমন হইতে অদ্য ফিরিয়া যাইব, তাহা দূরে থাকুক। তখন পীনহস যাজক, তাঁহার সহবর্ত্তী মণ্ডলীর অধ্যক্ষগণ ও ইস্রায়েলের সহস্রপতিগণ রূবেণ-সন্তানগণের, গাদ-সন্তানগণের ও মনঃশি-সন্তানগণের এই কথা শুনিয়া সন্তুষ্ট হইলেন। আর ইলিয়াসর যাজকের পুত্র পীনহস রূবেণ-সন্তানগণকে, গাদ-সন্তানগণকে ও মনঃশি-সন্তানগণকে কহিলেন, অদ্য আমরা জানিলাম যে, সদাপ্রভু আমাদের মধ্যে আছেন, কেননা তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে এই সত্যলঙ্ঘন কর নাই; এখন তোমরা ইস্রায়েল-সন্তানগণকে সদাপ্রভুর হস্ত হইতে উদ্ধার করিলে। পরে ইলিয়াসর যাজকের পুত্র পীনহস ও অধ্যক্ষগণ রূবেণ-সন্তানগণের ও গাদ-সন্তানগণের নিকট হইতে, গিলিয়দ দেশ হইতে, কনান দেশে ইস্রায়েল সন্তানগণের কাছে ফিরিয়া আসিয়া তাহাদিগকে সংবাদ দিলেন। তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ ঐ বিষয়ে সন্তুষ্ট হইল; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিল, এবং রূবেণ-সন্তানগণের ও গাদ-সন্তানগণের নিবাসদেশ বিনাশ করিবার জন্য যুদ্ধে যাইবার সম্বন্ধে আর কিছু কহিল না। পরে রূবেণ-সন্তানগণ ও গাদ-সন্তানগণ সেই বেদির নাম [এদ] রাখিল, কেননা [তাহারা কহিল], সদাপ্রভুই যে ঈশ্বর, ইহা আমাদের মধ্যে তাহার সাক্ষী [এদ] ইহবে। অনেক দিন পরে, যখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে তাহাদের চারিদিকের সমস্ত শত্রু হইতে বিশ্রাম দিলেন, এবং যিহোশূয় বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক হইলেন; তখন যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলকে, তাহাদের প্রাচীনবর্গ, অধ্যক্ষগণ, বিচারকর্ত্তৃগণ ও শাসকগণকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক হইয়াছি। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের নিমিত্তে এই সকল জাতির প্রতি যে যে কর্ম্ম করিয়াছেন, তাহা তোমরা দেখিয়াছ; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি তোমাদের পক্ষে যুদ্ধ করিয়াছেন। দেখ, যে যে জাতি অবশিষ্ট আছে, এবং যর্দ্দন অবধি সূর্য্যাস্তগমনের দিকে মহাসমুদ্র পর্য্যন্ত যে সকল জাতিকে আমি উচ্ছিন্ন করিয়াছি, তাহাদের দেশ আমি তোমাদের বংশ সকলের অধিকারার্থে গুলিবাঁট দ্বারা বিভাগ করিয়াছি। আর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনি তোমাদের সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিবেন, তোমাদের দৃষ্টিগোচর হইতে তাড়াইয়া দিবেন, তাহাতে তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তাহাদের দেশ অধিকার করিবে। অতএব তোমরা মোশির ব্যবস্থাগ্রন্থে লিখিত সমস্ত বাক্য পালন ও রক্ষণ করিবার জন্য সাহস কর; তাহার দক্ষিণে কিম্বা বামে ফিরিও না। আর এই জাতিগণের যে অবশিষ্ট লোক তোমাদের মধ্যে রহিল, তাহাদের মধ্যে প্রবেশ করিও না, তাহাদের দেবতাদের নাম লইও না, তাহাদের নামে দিব্য করিও না, এবং তাহাদের সেবা ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না; কিন্তু অদ্য পর্য্যন্ত যেমন করিয়া আসিতেছ, তদ্রূপ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে আসক্ত থাক। কেননা সদাপ্রভু তোমাদের সম্মুখ হইতে বৃহৎ ও বলবান্‌ জাতিদিগকে তাড়াইয়া দিয়াছেন; কিন্তু তোমাদের সম্মুখে অদ্য পর্য্যন্ত কেহ দাঁড়াইতে পারে নাই। তোমাদের এক জন সহস্র জনকে তাড়াইয়া দেয়; কেননা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যেমন বলিয়াছেন, তদনুসারে তিনি আপনি তোমাদের পক্ষে যুদ্ধ করিতেছেন। অতএব তোমরা আপন আপন প্রাণের বিষয়ে অতি সাবধান হইয়া আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিও। নতুবা যদি কোন প্রকারে পশ্চাতে ফিরিয়া যাও, এবং এই জাতিগণের শেষ যে লোকেরা তোমাদের অবশিষ্ট আছে, তাহাদিগেতে আসক্ত হও, তাহাদের সঙ্গে বিবাহ সম্বন্ধ স্থাপন কর, এবং তাহাদের নিকটে তোমাদের ও তোমাদের নিকটে তাহাদের সমাগম হয়; তবে নিশ্চয় জানিবে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দৃষ্টিগোচর হইতে এই জাতিদিগকে আর তাড়াইয়া দিবেন না, কিন্তু তাহারা তোমাদের ফাঁদ ও পাশ এবং তোমাদের কক্ষে কশাঘাত ও তোমাদের চক্ষুর কন্টকস্বরূপ হইয়া থাকিবে, যে পর্য্যন্ত তোমরা এই উত্তম ভূমি হইতে বিনষ্ট না হও, যে ভূমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে দিয়াছেন। আর দেখ, সমস্ত জগতের যে পথ, অদ্য আমি সেই পথে যাইতেছি; আর তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণে ও সমস্ত প্রাণে ইহা জ্ঞাত হও যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; তোমাদের পক্ষে সকলই সফল হইয়াছে, তাহার একটীও বিফল হয় নাই। কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের কাছে যে সকল মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহা যেমন তোমাদের পক্ষে সফল হইল, সেইরূপ সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি সমস্ত অমঙ্গলবাক্যও সফল করিবেন, যে পর্য্যন্ত না তিনি তোমাদিগকে এই উত্তম ভূমি হইতে বিনষ্ট করেন, যে ভূমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে দিয়াছেন। তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদিষ্ট নিয়ম লঙ্ঘন কর, গিয়া অন্য দেবগণের সেবা কর ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত কর, তবে তোমাদের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, এবং তাঁহার দত্ত এই উত্তম দেশ হইতে তোমরা ত্বরায় বিনষ্ট হইবে। যিহোশূয় ইস্রায়েলের সকল বংশকে শিখিমে একত্র করিলেন, ও ইস্রায়েলের প্রচীনবর্গ, অধ্যক্ষগণ, বিচারকর্ত্তৃগণ ও শাসকগণকে ডাকাইলেন, তাহাতে তাঁহারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে উপস্থিত হইলেন। তখন যিহোশূয় সকল লোককে কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, পুরাকালে তোমাদের পিতৃপুরুষেরা, অব্রাহামের পিতা ও নাহোরের পিতা তেরহ [ফরাৎ] নদীর ওপারে বাস করিত; আর তাহারা অন্য দেবগণের সেবা করিত। পরে আমি তোমাদের পিতা অব্রাহামকে সেই নদীর ওপার হইতে আনিয়া কনান দেশের সর্ব্বত্র ভ্রমণ করাইলাম, এবং তাহার বংশ বৃদ্ধি করিলাম, আর তাহাকে ইস্‌হাককে দিলাম। আর ইস্‌হাককে যাকোব ও এষৌকে দিলাম; আর আমি এষৌকে অধিকারার্থে সেয়ীর পর্ব্বত দিলাম; কিন্তু যাকোব ও তাহার সন্তানগণ মিসরে নামিয়া গেল। পরে আমি মোশি ও হারোণকে প্রেরণ করিলাম, এবং মিসরের মধ্যে যে কার্য্য করিলাম, তদ্দ্বারা সেই দেশকে দণ্ড দিলাম; তৎপরে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিলাম। আমি মিসর হইতে তোমাদের পিতৃপুরুষগণকে বাহির করিলে পর তোমরা সমুদ্রের কাছে উপস্থিত হইলে; তখন মিস্রীয়গণ অনেক রথ ও অশ্বারোহী সৈন্য লইয়া সূফসাগর পর্য্যন্ত তোমাদের পিতৃপুরুষগণের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবমান হইয়া আসিল। তাহাতে তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে ক্রন্দন করিল, ও তিনি মিস্রীয়দের ও তোমাদের মধ্যে অন্ধকার স্থাপন করিলেন, এবং তাহাদের উপরে সমুদ্রকে আনিয়া তাহাদিগকে আচ্ছন্ন করিলেন; আমি মিসরে কি করিয়াছি, তাহা তোমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছ; পরে বহুকাল প্রান্তরে বাস করিলে। তাহার পর আমি তোমাদিগকে যর্দ্দনের পরপার নিবাসী ইমোরীয়দের দেশে আনিলাম; তাহারা তোমাদের সহিত যুদ্ধ করিল; আর আমি তোমাদের হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিলাম, তাহাতে তোমরা তাহাদের দেশ অধিকার করিলে; এইরূপে আমি তোমাদের সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে বিনষ্ট করিলাম। পরে সিপ্পোরের পুত্র মোয়াবরাজ বালাক উঠিয়া ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিল, এবং লোক পাঠাইয়া তোমাদিগকে শাপ দিবার জন্য বিয়োরের পুত্র বিলিয়মকে ডাকাইয়া আনিল। কিন্তু আমি বিলিয়মের কথায় কর্ণপাত করিতে অসম্মত হইলাম, তাহাতে সে তোমাদিগকে কেবল আশীর্ব্বাদই করিল; এইরূপে আমি তাহার হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিলাম। পরে তোমরা যর্দ্দন পার হইয়া যিরীহোতে উপস্থিত হইলে; আর যিরীহোর লোকেরা, ইমোরীয়, পরিষীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, গির্গাশীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়েরা তোমাদের সহিত যুদ্ধ করিল, আর আমি তোমাদের হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিলাম। আর তোমাদের অগ্রে অগ্রে ভিমরুল প্রেরণ করিলাম; তাহারা তোমাদের সম্মুখ হইতে সেই জনগণকে, ইমোরীয়দের সেই দুই রাজাকে দূর করিয়া দিল; তোমার খড়েগ বা ধনুকে উহা হইল না। আর তোমরা যে স্থানে শ্রম কর নাই, এমন এক দেশ, ও যাহার পত্তন কর নাই, এমন অনেক নগর আমি তোমাদিগকে দিলাম; তোমরা তথায় বাস করিতেছ; তোমরা যে দ্রাক্ষালতা ও জিতবৃক্ষ রোপন কর নাই, তাহার ফল ভোগ করিতেছ। অতএব এখন তোমরা সদাপ্রভুকে ভয় কর, সরলতায় ও সত্যে তাঁহার সেবা কর, আর তোমাদের পিতৃপুরুষেরা [ফরাৎ] নদীর ওপারে ও মিসরে যে দেবগণের সেবা করিত, তাহাদিগকে দূর করিয়া দেও; এবং সদাপ্রভুর সেবা কর। যদি সদাপ্রভুর সেবা করা তোমাদের মন্দ বোধ হয়, তবে যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর; নদীর ওপারস্থ তোমাদের পিতৃপুরুষদের সেবিত দেবগণ হয় হউক, কিম্বা যাহাদের দেশে তোমরা বাস করিতেছ, সেই ইমোরীয়দের দেবগণ হয় হউক; কিন্তু আমি ও আমার পরিজন আমরা সদাপ্রভুর সেবা করিব। লোকেরা উত্তর করিল, আমরা যে সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া অন্য দেবগণের সেবা করিব, তাহা দূরে থাকুক। কেননা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তিনিই আমাদিগকে ও আমাদের পিতৃপুরুষগণকে মিসর দেশ হইতে, দাসগৃহ হইতে, বাহির করিয়া আনিয়াছেন, ও আমাদের দৃষ্টিগোচরে সেই সকল মহৎ চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছেন, এবং আমরা যে পথে আসিয়াছি, সেই সমুদয় পথে ও যে সমস্ত জাতির মধ্য দিয়া আসিয়াছি, তাহাদের মধ্যে আমাদিগকে রক্ষা করিয়াছেন; আর সদাপ্রভু এ দেশনিবাসী ইমোরীয় প্রভৃতি সমস্ত জাতিকে আমাদের সম্মুখ হইতে দূর করিয়া দিয়াছেন; অতএব আমরাও সদাপ্রভুর সেবা করিব; কেননা তিনিই আমাদের ঈশ্বর। যিহোশূয় লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা সদাপ্রভুর সেবা করিতে পার না; কেননা তিনি পবিত্র ঈশ্বর, স্বগৌরবরক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর; তিনি তোমাদের অধর্ম্ম ও পাপ ক্ষমা করিবেন না। তোমরা যদি সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া বিজাতীয় দেবগণের সেবা কর, তবে পূর্ব্বে তোমাদের মঙ্গল করিলেও পশ্চাৎ তিনি ফিরিয়া দাঁড়াইবেন, তোমাদের অমঙ্গল করিবেন, ও তোমাদিগকে সংহার করিবেন। তখন লোকেরা যিহোশূয়কে কহিল, না, আমরা সদাপ্রভুরই সেবা করিব। যিহোশূয় লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা আপনাদের বিষয়ে আপনারা সাক্ষী হইলে যে, তোমরা সদাপ্রভুর সেবা করণার্থে তাঁহাকেই মনোনীত করিয়াছ। তাহারা বলিল, সাক্ষী হইলাম। [তিনি কহিলেন,] তবে এখন আপনাদের মধ্যস্থিত বিজাতীয় দেবগণকে দূর করিয়া দেও, ও আপন আপন হৃদয় ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিকে রাখ। তখন লোকেরা যিহোশূয়কে কহিল, আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই সেবা করিব, ও তাঁহার রবে কর্ণপাত করিব। তাহাতে যিহোশূয় সেই দিনে লোকদের সহিত নিয়ম স্থির করিলেন, তিনি শিখিমে তাহাদের জন্য বিধি ও শাসন স্থাপন করিলেন। পরে যিহোশূয় ঐ সকল কথা ঈশ্বরের ব্যবস্থা গ্রন্থে লিখিলেন, এবং একখানি বৃহৎ প্রস্তর লইয়া সদাপ্রভুর ধর্ম্মধামের নিকটবর্ত্তী এলা বৃক্ষের তলে স্থাপন করিলেন। পরে যিহোশূয় সমস্ত লোককে কহিলেন, দেখ, এই প্রস্তরখানি আমাদের বিষয়ে সাক্ষী হইবে; কেননা সদাপ্রভু আমাদিগকে যে যে কথা কহিলেন, তাঁহার সেই সকল কথা এ শুনিল; অতএব এ তোমাদের বিষয়ে সাক্ষী হইবে, পাছে তোমরা আপনাদের ঈশ্বরকে অস্বীকার কর। পরে যিহোশূয় লোকদিগকে আপন আপন অধিকারে বিদায় করিলেন। এই সকল ঘটনার পরে নূনের পুত্র, সদাপ্রভুর দাস যিহোশূয় এক শত দশ বৎসর বয়সে মরিলেন। পরে লোকেরা গাশ পর্ব্বতের উত্তরে পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ তিন্নৎ-সেরহে তাঁহার অধিকারের অঞ্চলে তাঁহার কবর দিল। যিহোশূয়ের সমস্ত জীবনকালে, এবং যে প্রাচীনবর্গ যিহোশূয়ের মরণের পরে জীবিত ছিলেন, ও ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভুর কৃত সমস্ত কার্য্য জ্ঞাত ছিলেন, তাঁহাদেরও সমস্ত জীবনকালে ইস্রায়েল সদাপ্রভুর সেবা করিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ যোষেফের অস্থি, যাহা মিসর হইতে আনিয়াছিল, তাহা শিখিমে সেই ভূমিখণ্ডে পুঁতিল, যাহা যাকোব এক শত রৌপ্য-মুদ্রায় শিখিমের পিতা হমোরের সন্তানগণের কাছে ক্রয় করিয়াছিলেন; আর তাহা যোষেফ-সন্তানগণের অধিকার হইল। পরে হারোণের পুত্র ইলিয়াসর মরিলেন; আর লোকেরা তাঁহাকে তাঁহার পুত্র পীনহসের পাহাড়ে কবর দিল, পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের সেই পাহাড় তাঁহাকে দত্ত হইয়াছিল। যিহোশূয়ের মৃত্যুর পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর কাছে এই কথা জিজ্ঞাসা করিল, কনানীয়দের বিরুদ্ধে, তাহাদের সহিত যুদ্ধ করণার্থে, প্রথমে আমাদের কে যাইবে? সদাপ্রভু কহিলেন; যিহূদা যাইবে; দেখ, আমি তাহার হস্তে দেশ সমর্পণ করিয়াছি। পরে যিহূদা আপন ভ্রাতা শিমিয়োনকে কহিল, তুমি আমার অংশে আমার সহিত আইস, আমরা কনানীয়দের সহিত যুদ্ধ করি; পরে আমিও তোমার অংশে তোমার সহিত যাইব। তাহাতে শিমিয়োন তাহার সঙ্গে গেল। যিহূদা যাত্রা করিল, আর সদাপ্রভু তাহাদের হস্তে কনানীয় ও পরিষীয়দিগকে সমর্পণ করিলেন; আর তাহারা বেষকে তাহাদের দশ সহস্র লোককে বধ করিল। তাহারা বেষকে অদোনী-বেষককে পাইয়া তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিল, এবং কনানীয় ও পরিষীয়দিগকে আঘাত করিল। তখন অদোনী-বেষক পলায়ন করিলেন; আর তাহারা তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়া তাঁহাকে ধরিল, এবং তাঁহার হস্তপদের বৃদ্ধাঙ্গুলি ছেদন করিল। তখন অদোনী-বেষক কহিলেন, যাঁহাদের হস্তপদের বৃদ্ধাঙ্গুলি ছিন্ন করা হইয়াছিল, এমন সত্তর জন রাজা আমার মেজের নীচে খাদ্য কুড়াইতেন; আমি যেমন কর্ম্ম করিয়াছি, ঈশ্বর আমাকে তদনুরূপ প্রতিফল দিয়াছেন। পরে লোকেরা তাঁহাকে যিরূশালেমে আনিলে তিনি সেই স্থানে মরিলেন। আর যিহূদা-সন্তানগণ যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া তাহা হস্তগত করিল ও খড়গধারে আঘাত করিল, এবং আগুন দিয়া নগর পোড়াইয়া দিল। পরে যিহূদা-সন্তানগণ পর্ব্বতময় দেশ, দক্ষিণ দেশ ও নিম্নভূমিনিবাসী কনানীয়দের সহিত যুদ্ধ করিতে নামিয়া গেল। আর যিহূদা হিব্রোণ-বাসী কনানীয়দের বিরুদ্ধে যাত্রা করিয়া শেশয়, অহীমান ও তল্‌ময়কে আঘাত করিল; পূর্ব্বে ঐ হিব্রোণের নাম কিরিয়ৎ-অর্ব ছিল। তথা হইতে সে দবীর-নিবাসীদের বিরুদ্ধে যাত্রা করিল; পূর্ব্বে দবীরের নাম কিরিয়ৎ-সেফর ছিল। আর কালেব বলিলেন, যে কেহ কিরিয়ৎ-সেফরকে আঘাত করিয়া হস্তগত করিবে, তাহার সহিত আমি আপন কন্যা অক্‌ষার বিবাহ দিব। আর কালেবের কনিষ্ঠ ভ্রাতা কনসের পুত্র অৎনিয়েল তাহা হস্তগত করিলে তিনি তাঁহার সহিত আপন কন্যা অক্‌ষার বিবাহ দিলেন। আর ঐ কন্যা আসিয়া তাহার পিতার কাছে একখানি ক্ষেত্র চাহিতে স্বামীকে প্রবৃত্তি দিল; এবং সে আপন গর্দ্দভ হইতে নামিল; কালেব তাহাকে কহিলেন, তুমি কি চাও? সে তাঁহাকে বলিল, আপনি আমাকে এক উপহার দিউন; দক্ষিণাঞ্চলস্থ ভূমি আমাকে দিয়াছেন, জলের উনুইগুলিও আমাকে দিউন। তাহাতে কালেব তাহাকে উচ্চতর উনুইগুলি ও নিম্নতর উনুইগুলি দিলেন। পরে মোশির সম্বন্ধী কেনীয়ের সন্তানগণ যিহূদার সন্তানগণের সহিত খর্জ্জুরপুর হইতে অরাদের দক্ষিণদিক্‌স্থিত যিহূদা প্রান্তরে উঠিয়া গেল; তাহারা গিয়া লোকদের মধ্যে বসতি করিল। আর যিহূদা আপন ভ্রাতা শিমিয়োনের সহিত গমন করিল এবং তাহারা সফাৎবাসী কনানীয়দিগকে আঘাত করিয়া ঐ নগর নিঃশেষে বিনষ্ট করিল। আর সেই নগরের নাম হর্মা [বিনষ্ট] হইল। আর যিহূদা ঘসা ও তাহার অঞ্চল, অস্কিলোন ও তাহার অঞ্চল, এবং ইক্রোণ ও তাহার অঞ্চল হস্তগত করিল। সদাপ্রভু যিহূদার সহবর্ত্তী ছিলেন, সে পর্ব্বতময় দেশের নিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত করিল; কারণ সে তলভূমি-নিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত করিতে পারিল না, কেননা তাহাদের লৌহরথ ছিল। আর মোশি যেমন বলিয়াছিলেন, তদনুসারে তাহারা কালেবকে হিব্রোণ দিল, এবং তিনি তথা হইতে অনাকের তিন পুত্রকে অধিকারচ্যুত করিলেন। পরন্তু বিন্যামীন-সন্তানগণ যিরূশালেম-নিবাসী যিবূষীয়দিগকে অধিকারচ্যুত করিল না; যিবূষীয়েরা অদ্যাপি যিরূশালেমে বিন্যামীন-সন্তানদের সহিত বাস করিতেছে। আর যোষেফের কুলও বৈথেলের বিরুদ্ধে যাত্রা করিল; এবং সদাপ্রভু তাহাদের সহবর্ত্তী ছিলেন। তখন যোষেফের কুল বৈথেল নিরীক্ষণ করিতে লোক প্রেরণ করিল। পূর্ব্বে ঐ নগরের নাম লূস ছিল। আর সেই প্রহরীরা ঐ নগর হইতে এক জনকে বাহিরে আসিতে দেখিয়া তাহাকে কহিল, বিনয় করি, নগরপ্রবেশের পথ আমাদিগকে দেখাইয়া দেও; তাহা হইলে আমরা তোমার প্রতি দয়া করিব। তাহাতে সে তাহাদিগকে নগর-প্রবেশের পথ দেখাইয়া দিল, আর তাহারা খড়গধারে সেই নগরবাসীদিগকে আঘাত করিল, কিন্তু ঐ ব্যক্তিকে ও তাহার সমস্ত গোষ্ঠীকে ছাড়িয়া দিল। পরে ঐ ব্যক্তি হিত্তীয়দের দেশে গিয়া এক নগর পত্তন করিয়া তাহার নাম লূস রাখিল; তাহা অদ্য পর্য্যন্ত সেই নামে আখ্যাত আছে। আর মনঃশি উপনগরের সহিত বৈৎশান, উপনগরের সহিত তানক, উপনগরের সহিত দোর, উপনগরের সহিত যিব্লিয়ম, ও উপনগরের সহিত মগিদ্দো, এই সকল স্থান-নিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত করিল না; কনানীয়েরা সেই দেশে বাস করিতে স্থিরসঙ্কল্প ছিল। পরে ইস্রায়েল যখন প্রবল হইল, তখন সেই কনানীয়দিগকে কর্ম্মাধীন দাস করিল, কিন্তু সম্পূর্ণরূপে অধিকারচ্যুত করিল না। আর ইফ্রয়িম গেষর-নিবাসী কনানীয়দিগকে অধিকারচ্যুত করিল না; কনানীয়েরা গেষরে তাহাদের মধ্যে বাস করিতে থাকিল। সবূলূন কিট্‌রোণ ও নহলোল নিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত করিল না; কনানীয়েরা তাহাদের মধ্যে বাস করিতে থাকিল, আর কর্ম্মাধীন দাস হইল। আশের অক্কো, সীদোন, অহলব, অক্‌ষীব, হেল্‌বা, অফীক ও রহোব-নিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত করিল না। আশেরীয়েরা দেশ-নিবাসী কনানীয়দের মধ্যে বাস করিল, কেননা তাহারা তাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করে নাই। নপ্তালি বৈৎ-শেমশের ও বৈৎ-অনাতের নিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত করিল না; তাহারা দেশ-নিবাসী কনানীয়দের মধ্যে বাস করিল, আর বৈৎ-শেমশের ও বৈৎ-অনাতের নিবাসীরা তাহাদের কর্ম্মাধীন দাস হইল। আর ইমোরীয়েরা দানের সন্তানগণকে পর্ব্বতময় দেশে রোধ করিল, তলভূমিতে নামিয়া আসিতে দিল না; ইমোরীয়েরা হেরস পর্ব্বতে, অয়ালোনে ও শাল্‌বীমে বাস করিতে থাকিল; কিন্তু যোষেফকুলের হস্ত বলবৎ হইয়া উঠিল, তাহাতে উহারা কর্ম্মাধীন দাস হইল। অক্রব্বীম আরোহণ-স্থান এবং সেলা অবধি উপরের দিকে ইমোরীয়দের অঞ্চল ছিল। আর সদাপ্রভুর দূত গিল্‌গল হইতে বোখীমে উঠিয়া আসিলেন। তিনি কহিলেন, আমি তোমাদিগকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছি; যে দেশ দিতে তোমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছিলাম, সেই দেশে তোমাদিগকে আনিয়াছি, আর এই কথা বলিয়াছি, আমি তোমাদের সহিত আপন নিয়ম কখনও ভঙ্গ করিব না; তোমরাও এই দেশ-নিবাসীদের সহিত নিয়ম স্থির করিবে না, তাহাদের যজ্ঞবেদি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবে। কিন্তু তোমরা আমার রবে কর্ণপাত কর নাই; কেন এমন কর্ম্ম করিয়াছ? এই জন্য আমিও কহিলাম, তোমাদের সম্মুখ হইতে আমি এই লোকদিগকে দূর করিব না; তাহারা তোমাদের পার্শ্বে কন্টকস্বরূপ, ও তাহাদের দেবগণ তোমাদের ফাঁদস্বরূপ হইবে। তখন সদাপ্রভুর দূত ইস্রায়েল-সন্তান সকলকে এই কথা কহিলে লোকেরা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিল। আর তাহারা সেই স্থানের নাম বোখীম [রোদনকারিগণ] রাখিল; পরে তাহারা সেই স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিল। যিহোশূয় লোকিদগকে বিদায় করিলে পর ইস্রায়েল-সন্তানগণ দেশ অধিকার করিবার জন্য প্রত্যেকে আপন আপন অধিকারে গিয়াছিল। আর যিহোশূয়ের সমস্ত জীবনকালে, এবং যে প্রাচীনবর্গ যিহোশূয়ের মরণের পর জীবিত ছিলেন, ও ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভুর কৃত সমস্ত মহাকার্য্য দেখিয়াছিলেন, তাঁহাদেরও সমস্ত জীবনকালে লোকেরা সদাপ্রভুর সেবা করিল। পরে নূনের পুত্র সদাপ্রভুর দাস যিহোশূয় এক শত দশ বৎসর বয়সে মরিলেন। তাহাতে লোকেরা গাশ পর্ব্বতের উত্তর পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ তিম্নৎ-হেরসে তাঁহার অধিকারের অঞ্চলে তাঁহার কবর দিল। আর সেই কালের অন্য সকল লোকও পিতৃলোকদের নিকটে সংগৃহীত হইল, এবং তাহাদের পরে নূতন বংশ উৎপন্ন হইল, ইহারা সদাপ্রভুকে জানিত না, এবং ইস্রায়েলের জন্য তাঁহার কৃত কার্য্য জ্ঞাত ছিল না। ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতে লাগিল; এবং বাল দেবগণের সেবা করিতে লাগিল। আর যিনি তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, যিনি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলেন, সেই সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া অন্য দেবগণের, অর্থাৎ আপনাদের চতুর্দ্দিক্‌স্থিত লোকদের দেবগণের অনুগামী হইয়া তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিতে লাগিল, এইরূপে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিল। তাহারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া বাল দেবের ও অষ্টারোৎ দেবীদের সেবা করিত। তাহাতে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, আর তিনি তাহাদিগকে লুটকারিগণের হস্তে সমর্পণ করিলেন, তাহারা তাহাদের দ্রব্য লুট করিল; আর তিনি তাহাদের চতুর্দ্দিক্‌স্থ শত্রুগণের হস্তে তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন, তাহাতে তাহারা আপন শত্রুগণের সম্মুখে আর দাঁড়াইতে পারিল না। সদাপ্রভু যেমন বলিয়াছিলেন, ও তাহাদের কাছে যেমন দিব্য করিয়াছিলেন, তদনুসারে তাহারা যে কোন স্থানে যাইত, সেই স্থানে অমঙ্গলার্থে সদাপ্রভুর হস্ত তাহাদের বিরোধী ছিল; এইরূপে তাহারা অতিশয় ক্লিষ্ট হইত। তখন সদাপ্রভু বিচারকর্ত্তৃগণকে উৎপন্ন করিতেন, আর তাঁহারা লুটকারিগণের হস্ত হইতে তাহাদিগকে নিস্তার করিতেন; তথাপি তাহারা আপনাদের বিচারকর্ত্তাদের বাক্যেও কর্ণপাত করিত না, কিন্তু অন্য দেবগণের অনুগমনে ব্যভিচার করিত, ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিত; এইরূপে তাহাদের পিতৃপুরুষেরা সদাপ্রভুর আজ্ঞা পালন করিয়া যে পথে গমন করিতেন, তাহারা তদনুসারে না করিয়া সেই পথ হইতে শীঘ্রই ফিরিল। আর সদাপ্রভু যখন তাহাদের জন্য বিচারকর্ত্তা উৎপন্ন করিতেন, তখন সদাপ্রভু বিচারকর্ত্তার সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া বিচারকর্ত্তার সমস্ত জীবনকালে শত্রুদের হস্ত হইতে তাহাদিগকে নিস্তার করিতেন, কারণ উপদ্রব ও তাড়নাকারিগণের সমক্ষে তাহাদের কাতরোক্তি প্রযুক্ত সদাপ্রভু করুণাবিষ্ট হইতেন। কিন্তু সেই বিচারকর্ত্তা মরিলেই তাহারা ফিরিত, পিতৃপুরুষদের অপেক্ষা আরও ভ্রষ্ট হইয়া পড়িত, অন্য দেবগণের অনুগামী হইয়া তাহাদের সেবা করিত, ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিত; আপন আপন কর্ম্ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কিছুই ছাড়িত না। তাহাতে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, তিনি কহিলেন, আমি ইহাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে নিয়ম পালনের আজ্ঞা দিয়াছিলাম, এই জাতি তাহা লঙ্ঘন করিয়াছে, আমার রবে কর্ণপাত করে নাই; অতএব যিহোশূয় মরণকালে যে যে জাতিকে অবশিষ্ট রাখিয়াছে, আমিও ইহাদের সম্মুখ হইতে তাহাদের কাহাকেও অধিকারচ্যুত করিব না। তাহাদের পিতৃপুরুষেরা যেমন সদাপ্রভুর পথে গমন করিয়া তাঁহার আজ্ঞা পালন করিত, তাহারাও তদ্রূপ করিবে কি না, এই বিষয়ে ঐ জাতিগণের দ্বারা ইস্রায়েলের পরীক্ষা লইব। এই জন্য সদাপ্রভু সেই জাতিদিগকে শীঘ্র অধিকারচ্যুত না করিয়া অবশিষ্ট রাখিলেন; যিহোশূয়ের হস্তেও সমর্পণ করেন নাই। ইস্রায়েলের মধ্যে যাহারা কনানের যুদ্ধ সকল জ্ঞাত ছিল না, সেই লোকদের পরীক্ষা লইবার নিমিত্তে, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের পুরুষপরম্পরাকে শিক্ষা দানার্থে, অর্থাৎ যাহারা অগ্রে যুদ্ধ জানিত না, তাহাদিগকে তাহা শিখাইবার নিমিত্তে সদাপ্রভু এই সকল জাতিকে অবশিষ্ট রাখিয়াছিলেন; পলেষ্টীয়দের পাঁচ ভূপাল, এবং বাল্‌-হর্ম্মোণ পর্ব্বত অবধি হমাতে প্রবেশের পথ পর্য্যন্ত লিবানোন পর্ব্বত-নিবাসী সমস্ত কনানীয়, সীদোনীয় ও হিব্বীয়গণ। ইহারা ইস্রায়েলের পরীক্ষার্থে, অর্থাৎ সদাপ্রভু তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে মোশি দ্বারা যে সকল আজ্ঞা দিয়াছিলেন, সেই সকলেতে তাহারা কর্ণপাত করিবে কি না, তাহা যেন জানা যায়, এই জন্য অবশিষ্ট রহিল। ফলে ইস্রায়েল-সন্তানগণ কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়গণের মধ্যে বসতি করিল; আর তাহারা তাহাদের কন্যাগণকে বিবাহ করিত, তাহাদের পুত্রগণের সহিত আপন আপন কন্যাদের বিবাহ দিত ও তাহাদের দেবগণের সেবা করিত। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিল, ও আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গিয়া বাল দেবগণের ও আশেরা দেবীদের সেবা করিল। অতএব ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, আর তিনি অরাম-নহরয়িমের রাজা কূশন-রিশিয়াথয়িমের হস্তে তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন, আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ আট বৎসর পর্য্যন্ত কূশন-রিশিয়াথয়িমের দাসত্ব করিল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে ক্রন্দন করিল। তাহাতে সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের জন্য এক নিস্তারকর্ত্তাকে-কালেবের কনিষ্ঠ ভ্রাতা কনসের পুত্র অৎনীয়েলকে-উৎপন্ন করিলেন; তিনি তাহাদিগকে নিস্তার করিলেন। সদাপ্রভুর আত্মা তাঁহার উপরে আসিলেন, আর তিনি ইস্রায়েলের বিচার করিতে লাগিলেন; তিনি যুদ্ধার্থে বাহির হইলেন, আর সদাপ্রভু অরাম-রাজ কূশন-রিশিয়াথয়িমকে তাঁহার হস্তে সমর্পণ করিলেন; আর কূশন-রিশিয়াথয়িমের বিরুদ্ধে তাঁহার হস্ত প্রবল থাকিল। এইরূপে চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত দেশ নিষ্কন্টকে রহিল; পরে কনসের পুত্র অৎনীয়েলের মৃত্যু হইল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, পুনর্ব্বার তাহা করিল; অতএব সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহা করায় সদাপ্রভু ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে মোয়াব-রাজ ইগ্লোনকে সবল করিলেন। রাজা অম্মোন-সন্তানগণকে ও অমালেককে আপনার নিকটে একত্র করিলেন, এবং যাত্রা করিয়া ইস্রায়েলকে আঘাত করিলেন ও খর্জ্জুরপুর অধিকার করিলেন। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ আঠার বৎসর পর্য্যন্ত মোয়াব-রাজ ইগ্লোনের দাসত্ব করিল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিল; আর সদাপ্রভু তাহাদের জন্য এক নিস্তারকর্ত্তাকে, বিন্যামীন বংশীয় গেরার পুত্র এহূদকে, উৎপন্ন করিলেন; তিনি নেটা ছিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাঁহার দ্বারা মোয়াব-রাজ ইগ্লোনের নিকটে উপঢৌকন প্রেরণ করিল। এহূদ আপনার জন্য এক হস্ত দীর্ঘ একখানি দ্বিধার খড়গ নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন, তাহা আপন দক্ষিণ ঊরুদেশে বস্ত্রের ভিতরে বাঁধিয়া রাখিলেন। পরে মোয়াব-রাজ ইগ্লোনের নিকটে উপঢৌকন লইয়া গেলেন; ঐ ইগ্লোন অতি স্থূলকায় লোক ছিলেন। পরে উপঢৌকন দেওয়া হইয়া গেলে তিনি ঐ উপঢৌকনবাহক লোকদিগকে বিদায় করিলেন। কিন্তু আপনি গিল্‌গলস্থ প্রস্তরাকর হইতে ফিরিয়া আসিয়া কহিলেন, হে রাজন্‌, আপনার নিকটে আমার একটী গোপনীয় কথা আছে। রাজা বলিলেন, চুপ চুপ; তখন যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহারা সকলে তাঁহার নিকট হইতে বাহিরে গেল। আর এহূদ তাঁহার নিকটে আসিলেন; তখন রাজা একাকী আপনার উপর তালার শীতল বাটিকাতে বসিয়াছিলেন; এহূদ কহিলেন, আপনার কাছে ঈশ্বরের একটী বাক্য আমার বক্তব্য আছে; তাহাতে তিনি আপন আসন হইতে উঠিলেন। তখন এহূদ আপন বাম হস্ত বাড়াইয়া দক্ষিণ ঊরু হইতে ঐ খড়গ লইয়া তাঁহার উদর বিদ্ধ করিলেন, আর খড়েগর সহিত বাঁটও উদরে প্রবিষ্ট হইল, এবং খড়গ মেদে রুদ্ধ হইল, কেননা তিনি উদর হইতে তাহা বাহির করিলেন না; আর তাহা পশ্চাৎ-দেশে বাহির হইল। পরে এহূদ বাহির হইয়া বারাণ্ডায় আসিলেন; এবং পশ্চাতে শীতল বাটিকার কবাট বন্ধ করিয়া কুলুপ লাগাইয়া দিলেন। তিনি বাহির হইয়া গেলে রাজার দাসগণ উপস্থিত হইল, ও চাহিয়া দেখিল, আর দেখ, ঐ শীতল বাটিকার কবাট বন্ধ। তাহারা বলিল, রাজা অবশ্য শীতল বাটিকার কুঠরীতে পা ঢাকিতেছেন। পরে তাহারা লজ্জিত হওয়া পর্য্যন্ত বিলম্ব করিল; আর দেখ, তিনি শীতল বাটিকার কবাট খুলিলেন না; অতএব তাহারা চাবি লইয়া দ্বার খুলিল, আর দেখ, তাহাদের প্রভু মরিয়া ভূতলে পতিত রহিয়াছেন। তাহারা যখন বিলম্ব করিতেছিল, তখন এহূদ পলাইয়া সেই প্রস্তরাকর পশ্চাতে ফেলিয়া সিয়ীরাতে উপস্থিত হইয়াছিলেন। তিনি উপস্থিত হইয়া পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে তূরী বাজাইলেন; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাঁহার সহিত পর্ব্বতময় দেশ হইতে নামিয়া গেল, তিনি তাহাদের অগ্রগামী হইয়া চলিলেন। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ আইস, কেননা সদাপ্রভু তোমাদের শত্রু মোয়াবীয়দিগকে তোমাদের হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন। তখন তাহারা তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে নামিয়া মোয়াবের বিরুদ্ধে যর্দ্দনের পারঘাটা সকল হস্তগত করিল, এক প্রাণীকেও পার হইতে দিল না। আর ঐ সময়ে তাহারা মোয়াবের অনুমান দশ সহস্র লোককে আঘাত করিল; তাহারা সকলে বৃহৎকায় ও বলবান বীর, কিন্তু তাহাদের কেহ নিস্তার পাইল না। এই প্রকারে মোয়াব সেই দিন ইস্রায়েলের হস্তের বশীভূত হইল। আর আশী বৎসর দেশ নিষ্কন্টকে থাকিল। তাঁহার পরে অনাতের পুত্র শম্‌গর গোচারণের পাঁচনী দ্বারা পলেষ্টীয়দের ছয় শত লোককে আঘাত করিলেন; ইনিও ইস্রায়েলকে নিস্তার করিলেন। এহূদের মৃত্যুর পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, পুনর্ব্বার তাহাই করিল। তাহাতে সদাপ্রভু হাৎ-সোরে রাজত্বকারী কনান-রাজ যাবীনের হস্তে তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন। জাতিগণের হরোশৎ-নিবাসী সীষরা তাঁহার সেনাপতি ছিলেন। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিল, কেননা তাঁহার নয় শত লৌহরথ ছিল; এবং তিনি বিংশতি বৎসর পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের প্রতি কঠোর দৌরাত্ম্য করিয়াছিলেন। তৎকালে লপ্পীদোতের স্ত্রী দবোরা, এক জন ভাববাদিনী ইস্রায়েলের বিচার করিতেন। তিনি পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে রামার ও বৈথেলের মধ্যে স্থিত দবোরার খর্জ্জুর বৃক্ষ তলে অবস্থিতি করিতেন, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণ বিচারার্থে তাঁহার নিকটে উঠিয়া আসিত। পরে তিনি লোক পাঠাইয়া কেদশ-নপ্তালি হইতে অবীনোয়মের পুত্র বারককে ডাকাইয়া কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু কি এই আজ্ঞা করেন নাই, তাবোর পর্ব্বতে লোক লইয়া যাও, নপ্তালি-সন্তানগণের ও সবূলূন-সন্তানগণের দশ সহস্র লোক সঙ্গে করিয়া লও; তাহাতে আমি যাবীনের সেনাপতি সীষরাকে এবং তাহার রথ সকল ও লোকসমূহকে কীশোন নদীর সমীপে তোমার নিকটে আকর্ষণ করিব; এবং তাহাকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব? তখন বারক তাঁহাকে কহিলেন, তুমি যদি আমার সঙ্গে যাও, তবে আমি যাইব; কিন্তু তুমি আমার সঙ্গে না গেলে আমি যাইব না। দবোরা কহিলেন, আমি অবশ্য তোমার সঙ্গে যাইব, কিন্তু এই যাত্রায় তোমার যশ হইবে না; কেননা সদাপ্রভু সীষরাকে একটী স্ত্রীলোকের হস্তে বিক্রয় করিবেন। পরে দবোরা উঠিয়া বারকের সহিত কেদশে গমন করিলেন। পরে বারক কেদশে সবূলূন ও নপ্তালিকে ডাকাইলেন; আর দশ সহস্র লোক তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে যাত্রা করিল, এবং দবোরাও তাঁহার সহিত গেলেন। ঐ সময়ে কেনীয় হেবর কেনীয়দের হইতে, মোশির সম্বন্ধী হোববের সন্তানদের হইতে, পৃথক্‌ হইয়া কেদশের নিকটবর্ত্তী সানন্নীমস্থ এলোন বৃক্ষ পর্য্যন্ত তাম্বু স্থাপন করিয়াছিলেন। পরে সীষরা এই সংবাদ পাইলেন যে, অবীনোয়মের পুত্র বারক তাবোর পর্ব্বতে উঠিয়াছে। তখন সীষরা আপন সমস্ত রথ অর্থাৎ নয় শত লৌহরথ এবং আপন সঙ্গী লোক সকলকে একত্র ডাকাইয়া জাতিগণের হরোশৎ হইতে কীশোন নদীর সমীপে গমন করিলেন। তখন দবোরা বারককে কহিলেন, উঠ, কেননা অদ্যই সদাপ্রভু তোমার হস্তে সীষরাকে সমর্পণ করিয়াছেন; সদাপ্রভু কি তোমার অগ্রে অগ্রে যান নাই? তখন বারক ও তাঁহার অনুগামী দশ সহস্র লোক তাবোর পর্ব্বত হইতে নামিলেন। পরে সদাপ্রভু বারকের সম্মুখে সীষরাকে এবং তাঁহার সমস্ত রথ ও সমস্ত সৈন্যকে খড়গধারে ছিন্ন ভিন্ন করিলেন; আর সীষরা রথ হইতে নামিয়া পদব্রজে পলায়ন করিলেন। এবং বারক জাতিগণের হরোশৎ পর্য্যন্ত তাঁহার রথ সমূহের ও সৈন্যগণের পশ্চাতে ধাবমান হইলে সীষরার সমস্ত সৈন্য খড়গধারে পতিত হইল; এক জনও অবশিষ্ট রহিল না। কিন্তু সীষরা পদব্রজে পলাইয়া কেনীয় হেবরের স্ত্রী যায়েলের তাম্বুর দিকে গেলেন; কেননা হাৎসোরের যাবীন রাজাতে ও কেনীয় হেবরের কুলে তখন ঐক্য ছিল। আর যায়েল সীষরার সঙ্গে দেখা করিতে বাহির হইয়া তাঁহাকে কহিলেন, হে আমার প্রভু, ফিরিয়া আইসুন, আমার এখানে আইসুন, ভীত হইবেন না। তখন তিনি তাঁহার দিকে ফিরিয়া তাম্বুমধ্যে গেলে সেই স্ত্রী এক কম্বল দিয়া তাঁহাকে ঢাকিয়া রাখিলেন। আর সীষরা তাঁহাকে কহিলেন, বিনয় করি, আমাকে একটু খাবার জল দেও, আমি পিপাসিত হইয়াছি। তাহাতে তিনি দুগ্ধের কুপা খুলিয়া পান করিতে দিলেন ও তাঁহাকে ঢাকিয়া রাখিলেন। পরে সীষরা তাঁহাকে কহিলেন, তুমি তাম্বুদ্বারে দাঁড়াইয়া থাক; যদি কেহ আসিয়া জিজ্ঞাসা করে, এখানে কি কোন মানুষ আছে? তবে বলিও, কেহ নাই। পরে হেবরের স্ত্রী যায়েল তাম্বুর এক গোঁজ লইলেন, ও মুদগর হস্তে করিয়া ধীরে ধীরে তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহার কর্ণমূলে গোঁজ এমন বিদ্ধ করিলেন যে, তাহা মৃত্তিকায় প্রবেশ করিল; কারণ তিনি নিদ্রাগত ছিলেন; এইরূপে তিনি মূর্চ্ছিত হইয়া মরিয়া গেলেন। আর দেখ, বারক সীষরার পশ্চাতে তাড়া করিয়া যাইতে ছিলেন; তখন যায়েল তাঁহার সঙ্গে দেখা করিতে বাহিরে আসিয়া কহিলেন, আইস, তুমি যাহার অন্বেষণ করিতেছ, সেই মানুষ আমি তোমাকে দেখাই, তাহাতে তিনি তাঁহার তাম্বুতে প্রবেশ করিলেন, আর দেখ, সীষরা মৃত পড়িয়া আছেন, ও তাঁহার কর্ণমূলে গোঁজ বিদ্ধ রহিয়াছে। এইরূপে ঈশ্বর সেই দিন কনান-রাজ যাবীনকে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সাক্ষাতে নত করিলেন। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ যে পর্য্যন্ত কনান-রাজ যাবীনকে বিনষ্ট না করিল, সে পর্য্যন্ত কনান-রাজ যাবীনের বিরুদ্ধে তাহাদের হস্ত উত্তর উত্তর প্রবল হইয়া উঠিল। সেই দিন দবোরা ও অবীনোয়মের পুত্র বারক এই গান করিলেন। ইস্রায়েলে নায়কগণ নেতৃত্ব করিলেন, প্রজারা স্ব-ইচ্ছায় আপনাদিগকে উৎসর্গ করিল, এজন্য তোমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। রাজগণ, শ্রবণ কর; নৃপগণ, কর্ণ দেও; আমি, আমিই সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান করিব, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সঙ্গীত করিব, হে সদাপ্রভু, তুমি যখন সেয়ীর হইতে নির্গমন করিলে, ইদোম-ক্ষেত্র হইতে অগ্রসর হইলে, ভূমি কাঁপিল, আকাশও বর্ষিল, মেঘমালা জল বরিষণ করিল। সদাপ্রভুর সাক্ষাতে পর্ব্বতগণ কম্পমান হইল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ঐ সীনয় কম্পমান হইল। অনাতের পুত্র শম্‌গরের সময়ে, যায়েলের সময়ে, রাজপথ শূন্য হইল, পথিকেরা বক্র পথ দিয়া গমন করিত। নায়কগণ ইস্রায়েলের মধ্যে ক্ষান্ত ছিলেন, তাঁহারা ক্ষান্ত ছিলেন; শেষে আমি দবোরা উঠিলাম, ইস্রায়েলের মধ্যে মাতৃস্থানীয় হইয়া উঠিলাম। তাহারা নূতন দেবতা মনোনীত করিয়াছিল; তৎকালে নগরদ্বারে যুদ্ধ হইল; ইস্রায়েলের চল্লিশ সহস্র লোকের মধ্যে কি একখানা ঢাল বা শল্য দৃষ্ট হইল? আমার হৃদয় ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণের অভিমুখ, যাঁহারা প্রজাদের মধ্যে স্ব-ইচ্ছায় আপনাদিগকে উৎসর্গ করিলেন; তোমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। তোমরা যাহারা শুভ্র গর্দ্দভীতে চড়িয়া থাক, যাহারা দুলিচার উপরে বসিয়া থাক, যাহারা পথে ভ্রমণ কর, তোমরাই উহার সংবাদ দেও। ধনুর্দ্ধরদের রব হইতে দূরে, জল তুলিবার স্থান সকলে, সেখানে কীর্ত্তিত হইতেছে সদাপ্রভুর ধর্ম্মক্রিয়া, ইস্রায়েলে তাঁহার শাসন সংক্রান্ত ধর্ম্মক্রিয়া সমূহ; তখন সদাপ্রভুর প্রজাগণ নগরদ্বারে নামিয়া যাইত। দবোরে, জাগ্রত হও, জাগ্রত হও; জাগ্রত হও, জাগ্রত হও, গীত গান কর; বারক, উঠ; অবীনোয়মের পুত্র, তোমার বন্দিগণকে বন্দি কর। তখন নরেন্দ্রদের অবশিষ্টেরা ও জনগণ নামিল; সদাপ্রভু আমার পক্ষে সেই বিক্রমীদের বিরুদ্ধে নামিলেন। ইফ্রয়িম হইতে অমালেক-নিবাসীরা [আসিল]; বিন্যামীন তোমার লোকদের মধ্যে তোমার পশ্চাতে [আসিল]; মাখীর হইতে অধ্যক্ষগণ নামিলেন, সবূলূন হইতে রণ-দণ্ডধারিগণ নামিলেন। ইষাখরের অধ্যক্ষগণ দবোরার সঙ্গী ছিলেন, ইষাখর যেমন বারকও তেমনি, তাঁহার পশ্চাতে তাঁহারা বেগে তলভূমিতে গেলেন। রূবেণের স্রোতঃসমূহের নিকটে গুরুতর চিত্তসংঙ্কল্প হইল। তুমি কেন মেষবাথানের মধ্যে বসিলে? কি মেষপালকগণের বংশীবাদ্য শুনিবার জন্য? রূবেণের স্রোতঃসমূহের নিকটে গুরুতর চিত্তপরীক্ষা হইল। গিলিয়দ যর্দ্দনের ওপারে বাস করিল, আর দান কেন জাহাজে রহিল? আশের সমুদ্রের পোতাশ্রয়ে বসিয়া থাকিল, নিজ খালের ধারে বাস করিল। সবূলূন-প্রজাগণ প্রাণ তুচ্ছ করিল মৃত্যু পর্য্যন্ত, নপ্তালিও করিল ক্ষেত্রের উচ্চ উচ্চ স্থানে। রাজগণ আসিয়া যুদ্ধ করিলেন, তখন কনানের রাজগণ যুদ্ধ করিলেন, মগিদ্দোর জলতীরস্থ তানকে যুদ্ধ করিলেন; তাঁহারা একখণ্ড রৌপ্যও লইলেন না। আকাশমণ্ডল হইতে যুদ্ধ হইল, স্ব স্ব অয়নে তারাগণ সীষরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল। কীশোন নদী তাহাদিগকে ভাসাইয়া লইয়া গেল; সেই প্রাচীন নদী, কীশোন নদী। হে আমার প্রাণ, সবলে অগ্রসর হও। তখন অশ্বদের খুর ভূমি পেষণ করিল ধাবন হেতু, তাহাদের পরাক্রমীদের ধাবন হেতু। সদাপ্রভুর দূত বলেন, মেরোসকে শাপ দেও, তথাকার নিবাসীদিগকে দারুণ শাপ দেও; কেননা তাহারা আসিল না সদাপ্রভুর সাহায্যের জন্য, সদাপ্রভুর সাহায্যের জন্য, বিক্রমীদের বিরুদ্ধে। মহিলাদের মধ্যে যায়েল ধন্যা, কেনীয় হেবরের পত্নী ধন্যা, তাম্বুবাসিনী স্ত্রীলোকদের মধ্যে তিনি ধন্যা। সে জল চাহিল, তিনি তাহাকে দুগ্ধ দিলেন। রাজোপযোগী পাত্রে ক্ষীর আনিয়া দিলেন। তিনি গোঁজে হস্ত দিলেন। কর্ম্মকারের মুদগরে দক্ষিণ হস্ত দিলেন; তিনি সীষরাকে মুদগর মারিলেন, তাহার মস্তক বিদ্ধ করিলেন, তাহার কাণপাটি ভাঙ্গিলেন, বিদ্ধ করিলেন। সে তাঁহার চরণে হেঁট হইয়া পড়িল, লম্বমান হইল; তাঁহার চরণে হেঁট হইয়া পড়িল; যেখানে হেঁট হইল, তথায় মরিয়া পড়িল। সীষরার মাতা গবাক্ষ দিয়া চাহিল, সে বাতায়ন হইতে ডাকিয়া কহিল, তাহার রথ আসিতে কেন বিলম্ব করে? তাহার রথচক্র কেন মন্দ মন্দ চলে? তাহার জ্ঞানবতী সহচরীগণ উত্তর করিল, সে আপনিও আপনার কথার উত্তর দিল, তাহারা কি পায় নাই? লুট অংশ করিয়া লয় নাই? প্রত্যেক পুরুষ একটী কামিনী, দুইটী কামিনী, আর সীষরা চিত্রিত বস্ত্র পাইয়াছে, চিত্রিত সূচিকার্য্যের বস্ত্র পাইয়াছে, চিত্রিত দুই ধারি বাঁধা বস্ত্র লুটকারীর কণ্ঠে। হে সদাপ্রভু, তোমার সর্ব্ব শত্রু এইরূপে বিনষ্ট হউক, কিন্তু তোমার প্রেমকারিগণ সপ্রতাপে গমনকারী সূর্য্যের সদৃশ হউক। পরে চল্লিশ বৎসর দেশ নিষ্কন্টকে থাকিল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা মন্দ, তাহাই করিল, আর সদাপ্রভু তাহাদিগকে সাত বৎসর পর্য্যন্ত মিদিয়নের হস্তে সমর্পণ করিলেন। আর ইস্রায়েলের উপরে মিদিয়নের হস্ত প্রবল হইল, তাই ইস্রায়েল-সন্তানগণ মিদিয়নের ভয়ে পর্ব্বতে গহ্বর, এবং গুহা ও দুর্গম স্থান প্রস্তুত করিল। আর এইরূপ হইত, ইস্রায়েল বীজ বপন করিলে পর মিদিয়নীয় ও অমালেকীয়েরা এবং পূর্ব্বদেশের লোকেরা আসিত, তাহাদের বিরুদ্ধে আসিত, এবং তাহাদের বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করিয়া ঘসার নিকট পর্য্যন্ত ভূমির ফসল বিনষ্ট করিত, আর ইস্রায়েলের জন্য খাদ্য দ্রব্য, কিম্বা মেষ, গরু বা গর্দ্দভ কিছুই রাখিত না। কারণ তাহারা আপনাদের পশুপাল ও তাম্বু সঙ্গে করিয়া আসিত, বাহুল্যপ্রযুক্ত পঙ্গপালের ন্যায় আসিত; তাহারা ও তাহাদের উষ্ট্র অগণ্য ছিল; আর তাহারা দেশ উচ্ছিন্ন করিবার জন্যই তথায় আসিত। তাহাতে ইস্রায়েল মিদিয়নের সম্মুখে অতিশয় ক্ষীণ হইল, আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিল। যখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ মিদিয়নের ভয়ে সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিল, তখন সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের কাছে এক জন ভাববাদীকে প্রেরণ করিলেন। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তোমাদিগকে মিসর হইতে উঠাইয়া আনিয়াছি, দাস-গৃহ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছি, এবং মিস্রীয়দের হস্ত হইতে ও যাহারা তোমাদের উপরে উপদ্রব করিত, তাহাদের সকলের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছি, আর তোমাদের সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিয়া তাহাদের দেশ তোমাদিগকে দিয়াছি। আর আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি, আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর; তোমরা যে ইমোরীয়দের দেশে বাস করিতেছ, তাহাদের দেবগণকে ভয় করিও না। কিন্তু তোমরা আমার রবে কর্ণপাত কর নাই। পরে সদাপ্রভুর দূত আসিয়া অবীয়েষ্রীয় যোয়াশের অধিকারভুক্ত অফ্রাতে স্থিত এলা গাছের তলে বসিলেন; আর তাঁহার পুত্র গিদিয়োন দ্রাক্ষা মাড়িবার কুণ্ডে গোম মাড়িতেছিলেন, যেন মিদিয়নীয়দের হইতে তাহা লুকাইতে পারেন। তখন সদাপ্রভুর দূত তাঁহাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, হে বলবান বীর, সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী। গিদিয়োন তাঁহাকে বলিলেন, নিবেদন করি, হে আমার প্রভু, যদি সদাপ্রভু আমাদের সহবর্ত্তী হন, তবে আমাদের প্রতি এ সমস্ত কেন ঘটিল? এবং আমাদের পিতৃপুরুষেরা তাঁহার যে সমস্ত আশ্চর্য্য কার্য্যের বৃত্তান্ত আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, সে সমস্ত কোথায়? তাঁহারা কহিতেন, সদাপ্রভু কি আমাদিগকে মিসর হইতে আনয়ন করে নাই? কিন্তু সম্প্রতি সদাপ্রভু আমাদিগকে ত্যাগ করিয়াছেন, মিদিয়নের হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন। তখন সদাপ্রভু তাঁহার দিকে ফিরিয়া কহিলেন, তুমি তোমার এই বলেতেই গমন কর, মিদিয়নের হস্ত হইতে ইস্রায়েলকে নিস্তার কর; আমি কি তোমাকে প্রেরণ করি নাই? তিনি তাঁহাকে কহিলেন, বিনয় করি, হে প্রভু, ইস্রায়েলকে কিরূপে নিস্তার করিব? দেখুন, মনঃশির মধ্যে আমার গোষ্ঠী সর্ব্বপেক্ষা ক্ষুদ্র, এবং আমার পিতৃকুলে আমি কনিষ্ঠ। তখন সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমার সহবর্ত্তী হইব; আর তুমি মিদিয়নীয়দিগকে এক মনুষ্যবৎ আঘাত করিবে। তিনি কহিলেন, আমি যদি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে আপনিই যে আমার সঙ্গে কথা কহিতেছেন, তাহার কোন চিহ্ন আমাকে দেখাউন। বিনয় করি, আমি যাবৎ আমার নৈবেদ্য আনিয়া আপনার সম্মুখে উপস্থিত না করি, তাবৎ আপনি এখান হইতে যাইবেন না। তাহাতে তিনি কহিলেন, তুমি যাবৎ ফিরিয়া না আসিবে, তাবৎ আমি বিলম্ব করিব। তখন গিদিয়োন ভিতরে গিয়া এক ছাগবৎস ও এক ঐফা পরিমিত সূজির তাড়ীশূন্য পিষ্টক প্রস্তুত করিলেন, এবং মাংস ডালিতে রাখিয়া ঝোল বহুগুণাতে করিয়া লইয়া বাহির হইয়া সেই এলা গাছের তলে তাঁহার কাছে আনিয়া উপস্থিত করিলেন। ঈশ্বরের দূত তাঁহাকে কহিলেন, মাংস ও তাড়ীশূন্য পিষ্টকগুলি লইয়া এই শৈলের উপরে রাখ, এবং ঝোল ঢালিয়া দেও। তিনি তাহাই করিলেন। তখন সদাপ্রভুর দূত আপন হস্তস্থিত দণ্ডের অগ্রভাগ বাড়াইয়া দিয়া সেই মাংস ও তাড়ীশূন্য পিষ্টকগুলি স্পর্শ করিলেন; তখন শৈল হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া সেই মাংস ও তাড়ীশূন্য পিষ্টকগুলি গ্রাস করিল; আর সদাপ্রভুর দূত তাঁহার দৃষ্টিগোচর হইতে প্রস্থান করিলেন। তখন গিদিয়োন দেখিলেন যে তিনি সদাপ্রভুর দূত; আর গিদিয়োন কহিলেন, হায় হায়, হে প্রভু সদাপ্রভু, কারণ আমি সম্মুখাসম্মুখি হইয়া সদাপ্রভুর দূতকে দেখিলাম। সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তোমার শান্তি হউক, ভয় করিও না; তুমি মরিবে না। পরে গিদিয়োন সে স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, ও তাহার নাম যিহোবাশালোম [সদাপ্রভু শান্তি] রাখিলেন; তাহা অবীয়েষ্রীয়দের অফ্রাতে অদ্যাপি আছে। পরে সেই রাত্রিতে সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি তোমার পিতার বৃষ, অর্থাৎ সাত বৎসর বয়স্ক দ্বিতীয় বৃষটী গ্রহণ কর, এবং বাল দেবের যে যজ্ঞবেদি তোমার পিতার আছে, তাহা ভাঙ্গিয়া ফেল, ও তাহার পার্শ্বস্থ আশেরা ছেদন কর; আর এই দুর্গের শিখরদেশে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পরিপাটীরূপে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ কর, আর সেই দ্বিতীয় বৃষটী লইয়া, যে আশেরা ছেদন করিবে, তাহারই কাষ্ঠ দ্বারা হোম কর। পরে গিদিয়োন আপন দাসগণের মধ্যে দশ জনকে সঙ্গে লইয়া, সদাপ্রভু তাঁহাকে যেরূপ বলিয়াছিলেন, সেইরূপ করিলেন; কিন্তু আপন পিতৃকুল ও নগরস্থ লোকদিগকে ভয় করাতে তিনি দিবাভাগে তাহা না করিয়া রাত্রিতে করিলেন। পরে প্রত্যূষে যখন নগরের লোকেরা উঠিল, তখন, দেখ, বালের যজ্ঞবেদি ভগ্ন ও তাহার পার্শ্বস্থ আশেরা ছিন্ন হইয়াছে, এবং নূতন যজ্ঞবেদির উপরে দ্বিতীয় বৃষটী উৎসর্গ করা হইয়াছে। তখন তাহারা পরস্পর কহিল, এ কাজ কে করিল? পরে অনুসন্ধান করিয়া জিজ্ঞাসা করিলে লোকেরা কহিল, যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন উহা করিয়াছে। তাহাতে নগরের লোকেরা যোয়াশকে কহিল, তোমার পুত্রকে বাহির করিয়া আন, সে হত হউএক; কেননা সে বালের যজ্ঞবেদি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে, ও তাহার পার্শ্বস্থ আশেরা ছেদন করিয়াছে। তখন যোয়াশ আপনার প্রতিকূলে দণ্ডায়মান লোক সকলকে কহিলেন, তোমরাই কি বালের পক্ষে বিবাদ করিবে? তোমরাই কি তাহাকে নিস্তার করিবে? যে কেহ তাহার পক্ষে বিবাদ করে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে; প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত [থাক]; বাল যদি দেবতা হয়, তবে সে আপনার পক্ষে আপনি বিবাদ করুক; যেহেতুক তাহারই যজ্ঞবেদি ভগ্ন হইয়াছে। অতএব তিনি সেই দিন তাঁহার নাম যিরুব্বাল [বাল বিবাদ করুক] রাখিলেন, বলিলেন, বাল তাহার সহিত বিবাদ করুক, কারণ সে তাহার বেদি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে। ঐ সময়ে সমস্ত মিদিয়নীয়, অমালেকীয় ও পূর্ব্বদেশের লোকেরা একত্র হইল, এবং পার হইয়া যিষ্রিয়েলের তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিল। কিন্তু সদাপ্রভুর আত্মা গিদিয়োনে আবেশ করিলেন, ও তিনি তূরি বাজাইলেন, আর অবীয়েষ্রীয়েরা তাঁহার পশ্চাতে সমাগত হইল। আর তিনি মনঃশি প্রদেশের সর্ব্বত্র লোক পাঠাইলেন, আর তাহারাও তাঁহার পশ্চাতে সমাগত হইল; পরে তিনি আশের, সবূলূন ও নপ্তালির কাছে দূত প্রেরণ করিলেন, আর তাহারা উহাদের কাছে আসিল। পরে গিদিয়োন ঈশ্বরকে কহিলেন, আপনার বাক্য অনুসারে আপনি যদি আমার হস্ত দ্বারা ইস্রায়েলকে নিস্তার করেন, তবে দেখুন, আমি খামারে ছিন্ন মেষলোম রাখিব, যদি কেবল সেই লোমের উপরে শিশির পড়ে, এবং সমস্ত ভূমি শুষ্ক থাকে, তবে আমি জানিব যে, আপনার বাক্যানুসারে আপনি আমার হস্ত দ্বারা ইস্রায়েলকে নিস্তার করিবেন। পরে সেইরূপ ঘটিল, পরদিন তিনি প্রত্যূষে উঠিয়া সেই লোম চাপিয়া তাহা হইতে শিশিরপূর্ণ এক বাটি জল নিঙ্গড়িয়া ফেলিলেন। আর গিদিয়োন ঈশ্বরকে কহিলেন, আমার প্রতিকূলে আপনার ক্রোধ প্রজ্বলিত না হউক, আমি কেবল আর একটী বার কথা কহি; বিনয় করি, লোম দ্বারা আমাকে আর একটী বার পরীক্ষা লইতে দিউন; এখন কেবল লোমের উপরে শুষ্কতা হউক, আর সকল ভূমির উপরে শিশির পড়ুক। পরে ঈশ্বর সেই রাত্রিতে তদ্রূপ করিলেন; তাহাতে কেবল লোমের উপর শুষ্কতা হইল, আর সকল ভূমিতে শিশির পড়িল। পরে যিরুব্বাল অর্থাৎ গিদিয়োন ও তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোক প্রত্যূষে উঠিয়া হারোদ নামক উনুইর নিকটে শিবির স্থাপন করিলেন; তখন মিদিয়নের শিবির তাঁহাদের উত্তরদিকে মোরি পর্ব্বতের নিকটে তলভূমিতে ছিল। পরে সদাপ্রভু গিদিয়োনকে কহিলেন, তোমার সঙ্গী লোকদের সংখ্যা এত অধিক যে, আমি মিদিয়নীয়দিগকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিব না; পাছে ইস্রায়েল আমার প্রতিকূলে গর্ব্ব করিয়া বলে, আমি আপন বাহুবলে নিস্তার পাইলাম। অতএব তুমি এক্ষণে লোকদের কর্ণগোচরে এই কথা ঘোষণা কর, যে কেহ ভীত ও ত্রাসযুক্ত, সে ফিরিয়া গিদিয়দ পর্ব্বত হইতে প্রস্থান করুক, তাহাতে লোকদের মধ্য হইতে বাইশ সহস্র লোক ফিরিয়া গেল, দশ সহস্র অবশিষ্ট থাকিল। পরে সদাপ্রভু গিদিয়োনকে কহিলেন, লোক এখনও অধিক আছে; তুমি তাহাদিগকে লইয়া ঐ জলের কাছে নামিয়া যাও; সেখানে আমি তোমার জন্য তাহাদের পরীক্ষা লইব; তাহাতে যাহার বিষয়ে তোমাকে বলি, এ তোমার সহিত যাইবে, সেই তোমার সহিত যাইবে; এবং যাহার বিষয়ে তোমাকে বলি, এ তোমার সহিত যাইবে না, সে যাইবে না। পরে তিনি লোকদিগকে জলের নিকটে লইয়া গেলে সদাপ্রভু গিদিয়োনকে কহিলেন, যে কেহ কুকুরের ন্যায় জিহ্বা দ্বারা জল চাটিয়া খায়, তাহাকে, ও যে কেহ জল পান করিবার জন্য হাঁটুর উপরে উবুড় হয়, তাহাকে পৃথক্‌ করিয়া রাখ। তাহাতে সংখ্যায় তিন শত লোক মুখে অঞ্জলি তুলিয়া জল চাটিয়া খাইল, কিন্তু অন্য সমস্ত লোক পান করিবার জন্য হাঁটুর উপরে উবুড় হইল। তখন সদাপ্রভু গিদিয়োনকে কহিলেন, এই যে তিন শত লোক জল চাটিয়া খাইল, ইহাদের দ্বারা আমি তোমাদিগকে নিস্তার করিব, ও মিদিয়নীয়দিগকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব; অন্য সমস্ত লোক স্ব স্ব স্থানে গমন করুক। পরে লোকেরা আপন আপন হস্তে খাদ্য দ্রব্য ও তূরী গ্রহণ করিল, আর তিনি ইস্রায়েলের লোকসমূহকে স্ব স্ব তাম্বুতে বিদায় করিয়া ঐ তিন শত লোককে রাখিলেন; তৎকালে মিদিয়নের শিবির তাঁহার নীচে তলভূমিতে ছিল। আর সেই রাত্রিতে সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, উঠ, তুমি নামিয়া শিবিরের মধ্যে যাও; কেননা আমি তোমার হস্তে তাহা সমর্পণ করিয়াছি। আর যদি তুমি যাইতে ভীত হও, তবে তোমার চাকর ফুরাকে সঙ্গে লইয়া নামিয়া শিবিরে যাও, এবং উহারা যাহা বলে, তাহা শুন; তাহার পরে তোমার হস্ত বলবান হইবে, তাহাতে তুমি ঐ শিবিরের বিরুদ্ধে নামিয়া যাইবে। তখন তিনি আপন চাকর ফুরাকে সঙ্গে করিয়া শিবিরস্থ সসজ্জ লোকদের প্রান্তভাগ পর্য্যন্ত নামিয়া গেলেন। তখন মিদিয়নীয়, অমালেকীয় ও পূর্ব্বদেশের সমস্ত লোক বাহুল্য প্রযুক্ত পঙ্গপালের ন্যায় তলভূমিতে পড়িয়াছিল, এবং তাহাদের উষ্ট্রও বাহুল্য প্রযুক্ত সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় অসংখ্য ছিল। পরে গিদিয়োন আসিলেন, আর দেখ, তাহাদের মধ্যে এক জন আপন বন্ধুকে এই স্বপ্নকথা বলিল, দেখ, আমি একটা স্বপ্ন দেখিয়াছি, আর দেখ, যেন যবের একখান রুটী মিদিয়নের শিবিরের মধ্য দিয়া গড়াইয়া গেল, এবং তাম্বুর নিকটে উপস্থিত হইয়া আঘাত করিল; তাহাতে তাম্বুখানি উল্টিয়া লম্বমান হইয়া পড়িল। তখন তাহার বন্ধু উত্তর করিল, উহা আর কিছু নয়, ইস্রায়েলীয় যোয়াশের পুত্র গিদিয়োনের খড়গ; ঈশ্বর মিদিয়নকে ও সমস্ত শিবিরকে তাহার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন। তখন গিদিয়োন ঐ স্বপ্নের কথা ও তাহার অর্থ শুনিয়া প্রণিপাত করিলেন; পরে ইস্রায়েলের শিবিরে ফিরিয়া আসিয়া কহিলেন, উঠ, কেননা সদাপ্রভু তোমাদের হস্তে মিদিয়নের শিবির সমর্পণ করিয়াছেন। পরে তিনি ঐ তিন শত লোককে তিন দলে বিভাগ করিয়া প্রত্যেকের হস্তে এক এক তূরী, এবং এক এক শূন্য ঘট, ও ঘটের মধ্যে মশাল দিলেন। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আমার প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া আমার মত কর্ম্ম কর; দেখ, আমি শিবিরের প্রান্তভাগে উপস্থিত হইলে যেরূপ করিব, তোমরাও সেইরূপ করিবে। আমি ও আমার সঙ্গীরা সকলে তূরী বাজাইলে তোমরাও সমস্ত শিবিরের চারিদিকে থাকিয়া তূরী বাজাইবে, আর বলিবে, “সদাপ্রভুর জন্য ও গিদিয়োনের জন্য।” পরে মধ্যপ্রহরের প্রথমে নূতন প্রহরী স্থাপিত হইবামাত্র গিদিয়োন ও তাঁহার সঙ্গী এক শত লোক শিবিরের প্রান্তভাগে উপস্থিত হইয়া তূরী বাজাইলেন, এবং আপন আপন হস্তস্থিত ঘট ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। এইরূপে তিন দলেই তূরী বাজাইল ও ঘট ভাঙ্গিয়া ফেলিল, এবং বাম হস্তে মশাল ও দক্ষিণ হস্তে বাজাইবার তূরী ধরিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, “সদাপ্রভুর ও গিদিয়োনের খড়গ।” আর শিবিরের চারিদিকে প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে দাঁড়াইয়া রহিল; তাহাতে শিবিরের সমস্ত লোক দৌড়াদৌড়ি করিয়া চীৎকার শব্দ করিতে করিতে পলায়ন করিতে লাগিল। তখন উহারা ঐ তিন শত তূরী বাজাইল, আর সদাপ্রভু শিবিরের প্রত্যেক জনের খড়গ তাহার বন্ধুর ও সমস্ত সৈন্যের বিরুদ্ধে চালনা করাইলেন; তাহাতে সৈন্যগণ সরোরার দিকে বৈৎ-শিট্টা পর্য্যন্ত, টব্বতের নিকটবর্ত্তী আবেল-মহোলার সীমা পর্য্যন্ত পলায়ন করিল। পরে নপ্তালি, আশের ও সমস্ত মনঃশি হইতে ইস্রায়েলের লোকেরা সমাহূত হইয়া মিদিয়নের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেল। আর গিদিয়োন পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের সর্ব্বত্র দূত প্রেরণ করিয়া এই কথা কহিলেন, তোমরা মিদিয়নের বিরুদ্ধে নামিয়া আইস, এবং তাহাদের অগ্রে বৈৎ-বারা ও যর্দ্দন পর্য্যন্ত জলাশয় সকল হস্তগত কর। তাহাতে ইফ্রয়িমের সমস্ত লোক সমাহূত হইয়া বৈৎ-বারা ও যর্দ্দন পর্য্যন্ত জলাশয় সকল হস্তগত করিল। আর তাহারা ওরেব ও সেব নামে মিদিয়নের দুই অধ্যক্ষকে ধরিল; আর ওরেব নামক শৈলে ওরেবকে বধ করিল, এবং সেব নামক দ্রাক্ষাকুণ্ডের নিকটে সেবকে বধ করিল, এবং মিদিয়নের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেল; আর ওরেবের ও সেবের মস্তক যর্দ্দন-পারে গিদিয়নের নিকটে লইয়া গেল। পরে ইফ্রয়িমের লোকেরা তাঁহাকে কহিল, তুমি মিদিয়নের সহিত যুদ্ধ করিতে যাইবার সময়ে আমাদিগকে যে আহ্বান কর নাই, আমাদের প্রতি এ কেমন ব্যবহার করিলে? এইরূপে তাহারা তাঁহার সহিত অত্যন্ত বিবাদ করিল। তখন তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, এখন তোমাদের কর্ম্মের তুল্য কোন কর্ম্ম আমি করিয়াছি? অবীয়েষরের দ্রাক্ষা চয়ন অপেক্ষা ইফ্রয়িমের পরিত্যক্ত দ্রাক্ষাফল কুড়ান কি ভাল নয়? তোমাদেরই হস্তে ত ঈশ্বর মিদিয়নের দুই রাজাকে, ওরেব ও সেবকে, সমর্পণ করিয়াছেন; আমি তোমাদের এই কর্ম্মের তুল্য কোন কর্ম্ম করিতে পারিয়াছি? তখন তাঁহার এই কথায় তাঁহার প্রতি তাহাদের ক্রোধ নিবৃত্ত হইল। গিদিয়োন ও তাঁহার সঙ্গী তিন শত লোক যর্দ্দনে আসিয়া পার হইলেন; তাঁহারা শ্রান্ত হইলেও তাড়া করিয়া যাইতেছিলেন। আর তিনি সুক্কোতের লোকদিগকে কহিলেন, বিনয় করি, তোমরা আমার অনুগামী লোকদিগকে রুটী দেও, কেননা তাহারা শ্রান্ত হইয়াছে; আর আমি সেবহ ও সল্‌মুন্নের, মিদিয়নের দুই রাজার পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া যাইতেছি। তাহাতে সুক্কোতের অধ্যক্ষগণ কহিল, সেবহের ও সল্‌মুন্নের হস্ত কি এখন তোমার হস্তগত হইয়াছে যে, আমরা তোমার সৈন্যগণকে রুটী দিব? গিদিয়োন কহিলেন, ভাল, যখন সদাপ্রভু সেবহকে ও সল্‌মুন্নকে আমার হস্তে সমর্পণ করিবেন, তখন আমি প্রান্তরের কন্টক ও শ্যাকুল দ্বারা তোমাদের মাংস ছিঁড়িব। পরে তিনি তথা হইতে পনূয়েল উঠিয়া গিয়া তথাকার লোকদের কাছেও সেইরূপ কহিলেন, তাহাতে সুক্কোতের লোকেরা যেরূপ উত্তর করিয়াছিল, পনূয়েলের লোকেরাও তাঁহাকে সেইরূপ উত্তর করিল। তখন তিনি পনূয়েলের লোকদিগকে কহিলেন, আমি যখন কুশলে ফিরিয়া আসিব, তখন এই দুর্গ ভাঙ্গিয়া ফেলিব। সেবহ ও সল্‌মুন্ন কর্কোরে ছিলেন, এবং তাঁহাদের সঙ্গী সৈন্য অনুমান পনের হাজার লোক ছিল; পূর্ব্বদেশের লোকদের সমস্ত সৈন্যের মধ্যে ইহারাই মাত্র অবশিষ্ট ছিল; আর খড়গধারী এক লক্ষ বিংশতি সহস্র লোক নিপতিত হইয়াছিল। পরে গিদিয়োন নোবহের ও যগ্‌বিহের পূর্ব্বদিকে তাম্বুনিবাসীদের পথ দিয়া উঠিয়া গিয়া সেই সৈন্যগণকে আঘাত করিলেন, যেহেতু সৈন্যগণ নিশ্চিন্ত ছিল। তখন সেবহ ও সল্‌মুন্ন পলায়ন করিলেন, কিন্তু তিনি তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেলেন; এবং সেবহ ও সল্‌মুন্নকে, মিদিয়নের সেই দুই রাজাকে, ধরিলেন; আর সমস্ত সৈন্যকে ত্রাসযুক্ত করিলেন। পরে যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন হেরসের আরোহন পথ দিয়া যুদ্ধ হইতে ফিরিয়া আসিতেছিলেন, এমন সময়ে সুক্কোৎ-নিবাসীদের এক যুবককে ধরিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন; তাহাতে সে সুক্কোতের অধ্যক্ষগণের ও তথাকার প্রাচীনদের সাতাত্তর জনের নাম লিখাইয়া দিল। পরে তিনি সুক্কোতের লোকদের নিকটে উপস্থিত হইয়া কহিলেন, সেবহ ও সল্‌মুন্নকে দেখ, যাহাদের বিষয়ে তোমরা আমাকে ঠাট্টা করিয়া বলিয়াছিলে, সেবহের ও সল্‌মুন্নের হস্ত কি এখন তোমার হস্তগত যে, আমরা তোমার শ্রান্ত লোকদিগকে রুটী দিব? আর তিনি ঐ নগরের প্রাচীনগণকে ধরিলেন, এবং প্রান্তরের কন্টক ও শ্যাকুল লইয়া তাহা দ্বারা সুক্কোতের লোকদিগকে শিক্ষা দিলেন। পরে তিনি পনূয়েলের দুর্গ ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, ও নগরের লোকদিগকে বধ করিলেন। আর তিনি সেবহ ও সল্‌মুন্নকে কহিলেন, তোমরা তাবোরে যে পুরুষদিগকে বধ করিয়াছিলে, তাহারা কি প্রকার লোক? তাঁহারা উত্তর করিলেন, আপনি যেমন, তাহারাও সেইরূপ, প্রত্যেকে রাজপুত্র সদৃশ ছিল। তিনি কহিলেন, তাহারা আমার ভ্রাতা, আমারই সহোদর; জীবিত সদাপ্রভুর দিব্য, তোমরা যদি তাহাদিগকে জীবিত রাখিতে, আমি তোমাদিগকে বধ করিতাম না। পরে তিনি আপন জ্যেষ্ঠ পুত্র যেথরকে কহিলেন, উঠ, ইহাদিগকে বধ কর। কিন্তু সেই বালক আপন খড়গ বাহির করিল না, কারণ সে ভয় করিল, কেননা তখনও সে বালক। তখন সেবহ ও সল্‌মুন্ন কহিলেন, আপনি উঠিয়া আমাদিগকে আঘাত করুন, কেননা যে যেমন পুরুষ, তাহার তেমনি বীরত্ব। তাহাতে গিদিয়োন উঠিয়া সেবহ ও সল্‌মুন্নকে বধ করিলেন, এবং তাঁহাদের উষ্ট্রগুলির গলার সমস্ত চন্দ্রহার লইলেন। পরে ইস্রায়েলের লোকেরা গিদিয়োনকে কহিল, আপনি পুত্রপৌত্রাদিক্রমে আমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করুন, কেননা আপনি আমাদিগকে মিদিয়নের হস্ত হইতে নিস্তার করিয়াছেন। তখন গিদিয়োন কহিলেন, আমি তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিব না, এবং আমার পুত্রও তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না; সদাপ্রভুই তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবেন। আর গিদিয়োন তাহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদের কাছে একটী নিবেদন করি, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন লুটিত কর্ণকুণ্ডল আমাকে দেও; কেননা শত্রুরা ইশ্মায়েলীয়, এই জন্য তাহাদের সুবর্ণ কর্ণকুণ্ডল ছিল। তাহারা উত্তর করিল, অবশ্য দিব; পরে তাহারা একখানি বস্ত্র পাতিয়া প্রত্যেকে তাহাতে আপন আপন লুটিত কর্ণকুণ্ডল ফেলিল; তাহাতে তাঁহার যাচিত কর্ণকুণ্ডলের পরিমাণ এক সহস্র সাত শত [শেকল] সুবর্ণ হইল। ইহা ছাড়া চন্দ্রহার, ঝুম্‌কা ও মিদিয়নীয় রাজাদের পরিধেয় বেগুনে রঙ্গের বস্ত্র ও তাঁহাদের উষ্ট্রের গলার হার ছিল। পরে গিদিয়োন তাহা দিয়া এক এফোদ প্রস্তুত করিয়া আপন বসতি-নগর অফ্রাতে রাখিলেন; তাহাতে সমস্ত ইস্রায়েল সে স্থানে সেই এফোদের অনুগমনে ব্যভিচারী হইল; আর তাহা গিদিয়োনের ও তাঁহার কুলের ফাঁদস্বরূপ হইল। এইরূপে মিদিয়ন ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে নত হইল, আর মাথা তুলিতে পারিল না। আর গিদিয়োনের সময়ে চল্লিশ বৎসর দেশ নিষ্কন্টকে রহিল। পরে যোয়াশের পুত্র যিরুব্বাল আপন বাটীতে গিয়া বাস করিলেন। গিদিয়োনের ঔরসজাত সত্তরটী পুত্র ছিল, কেননা তাঁহার অনেক স্ত্রী ছিল। আর শিখিমে তাঁহার যে এক উপপত্নি ছিল, সেও তাঁহার জন্য এক পুত্র প্রসব করিল, আর তিনি তাহার নাম অবীমেলক রাখিলেন। পরে যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন শুভ বৃদ্ধাবস্থায় প্রাণত্যাগ করিলেন, আর অবীয়েষ্রীয়দের অফ্রাতে তাঁহার পিতা যোয়াশের কবরে তাঁহার কবর হইল। গিদিয়োনের মৃত্যুর পরেই ইস্রায়েল-সন্তানগণ পুনর্ব্বার বাল দেবগণের অনুগমনে ব্যভিচারী হইল, আর বাল্‌বরীৎকে আপনাদের ইষ্ট দেবতা করিল। আর যিনি চারিদিকের সমস্ত শত্রুর হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়াছিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গেল। আর যিরুব্বাল [গিদিয়োন] ইস্রায়েলের যেরূপ মঙ্গল করিয়াছিলেন, তাহারা তদনুসারে তাঁহার কুলের প্রতি সদয় ব্যবহার করিল না। পরে যিরুব্বালের পুত্র অবীমেলক শিখিমে আপন মাতার আত্মীয়দের নিকটে গিয়া তাহাদিগকে এবং নিজ মাতার পিতৃকুলের সমস্ত গোষ্ঠীকে এই কথা কহিল; নিবেদন করি, তোমরা শিখিমের সমস্ত গৃহস্থের কর্ণগোচরে এই কথা বল, তোমাদের পক্ষে ভাল কি? তোমাদের উপরে যিরুব্বালের সমুদয় পুত্রের অর্থাৎ সত্তর জনের কর্ত্তৃত্ব ভাল, না এক জনের কর্ত্তৃত্ব ভাল? আর ইহাও স্মরণ কর, আমি তোমাদের অস্থি ও তোমাদের মাংস। আর তাহার মাতার আত্মীয়েরা তাহার পক্ষে শিখিমের সকল গৃহস্থের কর্ণগোচরে ঐ সমস্ত কথা কহিলে অবীমেলকের অনুগামী হইতে তাহাদের মনে প্রবৃত্তি হইল; কেননা তাহারা বলিল, উনি আমাদের আত্মীয়। আর তাহারা বাল্‌-বরীতের মন্দির হইতে তাহাকে সত্তর [থান] রৌপ্য দিল; তাহাতে অবীমেলক অসার ও চপলমতি লোকদিগকে ঐ রৌপ্য বেতন দিলে তাহারা তাহার অনুগামী হইল। পরে সে অফ্রার পিতার বাটীতে গিয়া আপন ভ্রাতৃগণকে অর্থাৎ যিরুব্বালের সত্তর জন পুত্রকে এক প্রস্তরের উপরে বধ করিল; কেবল যিরুব্বালের কনিষ্ঠ পুত্র যোথম লুকাইয়া থাকাতে অবশিষ্ট রহিল। পরে শিখিমের সমস্ত গৃহস্থ এবং মিল্লোর সমস্ত লোক একত্র হইয়া শিখিমস্থ স্তম্ভের এলোন বৃক্ষের কাছে গিয়া অবীমেলককে রাজা করিল। আর লোকেরা যোথমকে এই সংবাদ দিলে সে গিয়া গরিষীম পর্ব্বতের চূড়াতে দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিয়া তাহাদিগকে কহিল, হে শিখিমের গৃহস্থ সকল, আমার কথায় কর্ণপাত কর, করিলে ঈশ্বর তোমাদের কথায় কর্ণপাত করিবেন। একদা বৃক্ষগণ আপনাদের উপরে অভিষেক করণার্থে রাজার অন্বেষণে গমন করিল। তাহারা জিতবৃক্ষকে কহিল, তুমি আমাদের উপরে রাজত্ব কর। জিতবৃক্ষ তাহাদিগকে কহিল, আমার যে তৈলের নিমিত্ত ঈশ্বর ও মনুষ্যগণ আমার গৌরব করেন, তাহা ত্যাগ করিয়া আমি কি বৃক্ষগণের উপরে দুলিতে থাকিব? পরে বৃক্ষগণ ডুমুরবৃক্ষকে বলিল, তুমি আসিয়া আমাদের উপরে রাজত্ব কর। ডুমুরবৃক্ষ তাহাদিগকে কহিল, আমি কি আপন মিষ্টতা ও উত্তম ফল ত্যাগ করিয়া বৃক্ষগণের উপরে দুলিতে থাকিব? পরে বৃক্ষগণ দ্রাক্ষালতাকে বলিল, তুমি আসিয়া আমাদের উপরে রাজত্ব কর। দ্রাক্ষালতা তাহাদিগকে কহিল, আমার যে রস ঈশ্বর ও মনুষ্যগণকে প্রসন্ন করে, তাহা ত্যাগ করিয়া আমি কি বৃক্ষগণের উপরে দুলিতে থাকিব? পরে সমস্ত বৃক্ষ কন্টকবৃক্ষকে বলিল, তুমি আসিয়া আমাদের উপরে রাজত্ব কর। কন্টকবৃক্ষ সেই বৃক্ষগণকে কহিল, তোমরা যদি আপনাদের উপরে বাস্তবিক আমাকে রাজা বলিয়া অভিষেক কর, তবে আসিয়া আমার ছায়ার শরণ লও; যদি না লও, তবে এই কন্টকবৃক্ষ হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া লিবানোনের এরস বৃক্ষগণকে গ্রাস করুক। এখন অবীমেলককে রাজা করাতে তোমরা যদি সত্য ও যথার্থ আচরণ করিয়া থাক, এবং যদি যিরুব্বালের ও তাঁহার কুলের প্রতি সদাচরণ করিয়া থাক, ও তাঁহার হস্তকৃত উপকারানুসারে তাঁহার প্রতি ব্যবহার করিয়া থাক; —কারণ আমার পিতা তোমাদের নিমিত্ত যুদ্ধ করিয়াছিলেন, ও প্রাণপণ করিয়া মিদিয়নের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছিলেন; কিন্তু তোমরা অদ্য আমার পিতৃকুলের বিরুদ্ধে উঠিয়া এক প্রস্তরের উপরে তাঁহার সত্তর জন পুত্রকে বধ করিলে, ও তাঁহার দাসীপুত্র অবীমেলককে আপনাদের ভ্রাতা বলিয়া শিখিমের গৃহস্থদের উপরে রাজা করিলে; —অদ্য যদি তোমরা যিরুব্বালের ও তাঁহার কুলের প্রতি সত্য ও যথার্থ আচরণ করিয়া থাক, তবে অবীমেলকের বিষয়ে আনন্দ কর, এবং সেও তোমাদের বিষয়ে আনন্দ করুক। কিন্তু তাহা যদি না হয়, তবে অবীমেলক হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া শিখিমের গৃহস্থদিগকে ও মিল্লোর লোকদিগকে গ্রাস করুক; আবার শিখিমের গৃহস্থগণ হইতে ও মিল্লোর লোকদের হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া অবীমেলককে গ্রাস করুক। পরে যোথম দৌড়িয়া পলায়ন করিল, সে বেরে গেল, এবং তাহার ভ্রাতা অবীমেলকের ভয়ে সেই স্থানে বাস করিল। অবীমেলক ইস্রায়েলের উপরে তিন বৎসর কর্ত্তৃত্ব করিল। পরে ঈশ্বর অবীমেলকের ও শিখিমের গৃহস্থদের মধ্যে এক মন্দ আত্মা প্রেরণ করিলেন, তাহাতে শিখিমের গৃহস্থেরা অবীমেলকের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিল; যেন যিরুব্বালের সত্তরটী পুত্রের প্রতি কৃত অত্যাচারের প্রতিফল ঘটে, এবং তাহাদের ভ্রাতা অবীমেলক, যে তাহাদিগকে বধ করিয়াছিল, তাহার উপরে, এবং ভ্রাতৃবধে যাহারা তাহার হস্ত সবল করিয়াছিল, সেই শিখিমস্থ গৃহস্থদের উপরে ঐ রক্তপাতের অপরাধ যেন বর্ত্তে। আর শিখিমের গৃহস্থেরা তাহার নিমিত্ত কোন কোন পর্ব্বত-শৃঙ্গে গোপনে লোক বসাইয়া দিল, তাহাতে যত লোক তাহাদের নিকটস্থ পথ দিয়া গেল, সকলেরই দ্রব্যাদি তাহারা লুটিয়া লইল; আর অবীমেলক তাহার সংবাদ পাইল। পরে এবদের পুত্র গাল আপন ভ্রাতৃগণকে সঙ্গে লইয়া শিখিমে আসিল; আর শিখিমের গৃহস্থেরা তাহাকে বিশ্বাস করিল। আর তাহারা বাহির হইয়া আপন আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রে ফল চয়ন করিল ও তাহা মাড়িল এবং উৎসব করিল, আর আপনাদের দেবতার মন্দিরে গিয়া ভোজন পান করিয়া অবীমেলককে শাপ দিল। আর এবদের পুত্র গাল কহিল, অবীমেলক কে, সে শিখিমীয় কে, যে আমরা তাহার দাসত্ব করিব? সে কি যিরুব্বালের পুত্র নহে? সবূল কি তাহার সেনাপতি নহে? তোমরা বরং শিখিমের পিতা হমোরের লোকদের দাসত্ব কর; আমরা উহার দাসত্ব কেন স্বীকার করিব? আহা, এই সকল লোক আমার হস্তগত হইলে আমি অবীমেলককে দূর করিয়া দিই। পরে সে অবীমেলকের উদ্দেশে কহিল, তুমি দলবল বৃদ্ধি করিয়া বাহির হইয়া আইস দেখি। এবদের পুত্র গালের সেই কথা নগরের কর্ত্তা সবূলের কর্ণগোচর হইলে সে ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল; আর সে কৌশলক্রমে অবীমেলকের নিকটে দূত পাঠাইয়া কহিল, দেখুন, এবদের পুত্র গাল ও তাহার ভ্রাতৃগণ শিখিমে আসিয়াছে; আর দেখুন, তাহারা আপনার বিরুদ্ধে নগরে কুপ্রবৃত্তি দিতেছে। অতএব আপনি ও আপনার সঙ্গে যে সকল লোক আছে, আপনারা রাত্রিতে উঠিয়া ক্ষেত্রে লুকাইয়া থাকুন। পরে প্রাতঃকালে সূর্য্যোদয় হইবামাত্র আপনি উঠিয়া নগর আক্রমণ করিবেন; আর দেখুন, সে ও তাহার সঙ্গী লোকেরা আপনার বিরুদ্ধে নির্গত হইবে, তখন আপনার হস্ত যাহা করিতে পারিবে, তাহা করিবেন। পরে অবীমেলক ও তাহার সঙ্গী সমস্ত লোক রাত্রিতে উঠিয়া চারি দল হইয়া শিখিমের বিরুদ্ধে লুকাইয়া রহিল। আর এবদের পুত্র গাল বাহিরে গিয়া নগরদ্বার-প্রবেশের স্থানে দাঁড়াইল; পরে অবীমেলক ও তাহার সঙ্গী লোকেরা গুপ্তস্থান হইতে উঠিল। আর গাল সেই লোকদিগকে দেখিয়া সবূলকে কহিল, দেখ, পর্ব্বতশৃঙ্গ হইতে লোকসমূহ নামিয়া আসিতেছে। সবূল তাহাকে কহিল, তুমি মনুষ্যভ্রমে পর্ব্বতের ছায়া দেখিতেছ। পরে গাল পুনর্ব্বার কহিল, দেখ, উচ্চ দেশ হইতে লোকসমূহ নামিয়া আসিতেছে, এবং গণকদের এলোন বৃক্ষের পথ দিয়া এক দল আসিতেছে। সবূল তাহাকে কহিল, কোথায় এখন তোমার সেই মুখ, যে মুখে বলিয়াছিলে, অবীমেলক কে যে আমরা তাহার দাসত্ব স্বীকার করি? তুমি যে লোকদিগকে তুচ্ছ করিয়াছিলে, উহারা কি সেই লোক নয়? এখন যাও, বাহির হইয়া উহার সহিত যুদ্ধ কর। পরে গাল শিখিমের গৃহস্থদের অগ্রে অগ্রে বাহিরে গিয়া অবীমেলকের সহিত যুদ্ধ করিল। তাহাতে অবীমেলক তাহাকে তাড়া করিল, ও সে তাহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল, এবং দ্বার-প্রবেশ-স্থান পর্য্যন্ত অনেক লোক আহত হইয়া পড়িল। পরে অবীলেমক অরূমায় রহিল, এবং সবূল গালকে ও তাহার ভ্রাতৃগণকে তাড়াইয়া দিল, তাহারা আর শিখিমে বাস করিতে পারিল না। পর দিন লোকেরা বাহির হইয়া ক্ষেত্রে যাইতেছিল, আর অবীমেলক তাহার সংবাদ পাইল। সে লোকদিগকে লইয়া তিন দল করিয়া ক্ষেত্রমধ্যে লুকাইয়া রহিল; পরে সে চাহিয়া দেখিল, আর দেখ, লোকেরা নগর হইতে বাহির হইয়া আসিতেছিল; তখন সে তাহাদের বিরুদ্ধে উঠিয়া তাহাদিগকে আঘাত করিল। পরে অবীমেলক ও তাহার সঙ্গিদল সকল ত্বরায় অগ্রসর হইয়া নগর-দ্বার-প্রবেশের স্থানে দাঁড়াইয়া রহিল, এবং দুই দল ক্ষেত্রস্থ সকল লোককে আক্রমণ করিয়া আঘাত করিল। আর অবীমেলক সেই সমস্ত দিন ঐ নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল; আর নগর হস্তগত করিয়া তথাকার লোকদিগকে বধ করিল, এবং নগর সমভূমি করিয়া তাহার উপরে লবণ ছড়াইয়া দিল। পরে শিখিমের দুর্গস্থিত গৃহস্থ সকল এই কথা শুনিয়া এল্‌-বরীৎ দেবের মন্দিরস্থ এক দৃঢ় গৃহে প্রবেশ করিল। পরে শিখিমের দুর্গস্থিত সমস্ত গৃহস্থ একত্র হইয়াছে, এই কথা অবীমেলকের কর্ণগোচর হইল। তখন অবীমেলক ও তাহার সঙ্গিগণ সকলে সল্‌মোন পর্ব্বতে উঠিল। আর অবীমেলক কুঠার হস্তে লইয়াছিল; সে বৃক্ষ হইতে এক শাখা কাটিয়া লইয়া আপন স্কন্ধে রাখিল, এবং আপন সঙ্গী লোকদিগকে কহিল, তোমরা আমাকে যাহা করিতে দেখিলে, শীঘ্র সেইরূপ কর। তাহাতে সমস্ত লোক প্রত্যেক জন এক এক শাখা কাটিয়া লইয়া অবীমেলকের পশ্চাতে পশ্চাতে চলিল; পরে সেই সকল শাখা ঐ দৃঢ় গৃহের গাত্রে রাখিয়া সেই গৃহে আগুন লাগাইয়া দিল; এইরূপে শিখিমের দুর্গস্থিত সমস্ত লোকও মরিল; তাহারা স্ত্রী ও পুরুষ অনুমান সহস্র লোক ছিল। পরে অবীমেলক তেবেসে গমন করিল, ও তেবেসের বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করিয়া তাহা হস্তগত করিল। কিন্তু ঐ নগরের মধ্যে দুরাক্রম এক দুর্গ ছিল, অতএব সমস্ত পুরুষ ও স্ত্রী, এবং নগরের সকল গৃহস্থ পলাইয়া তাহার মধ্যে গিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া দুর্গের ছাদের উপরে উঠিল। পরে অবীমেলক সেই দুর্গের কাছে উপস্থিত হইয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল, এবং তাহা অগ্নি দ্বারা পোড়াইয়া দিবার জন্য দুর্গের দ্বার পর্য্যন্ত গেল। তখন একটী স্ত্রীলোক যাঁতার উপরের পাট লইয়া অবীমেলকের মস্তকের উপরে নিক্ষেপ করিয়া তাহার মাথার খুলি ভগ্ন করিল। তাহাতে সে শীঘ্র আপন অস্ত্রবাহক যুবককে ডাকিয়া কহিল, তুমি খড়গ খুলিয়া আমাকে বধ কর; পাছে লোকে আমার বিষয়ে বলে, একটা স্ত্রীলোক উহাকে বধ করিয়াছে। তখন সে যুবক তাহাকে বিদ্ধ করিলে সে মরিয়া গেল। পরে অবীমেলক মরিয়াছে দেখিয়া ইস্রায়েলের লোকেরা প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে প্রস্থান করিল। এইরূপে অবীমেলক আপনার সত্তর জন ভ্রাতাকে বধ করিয়া আপন পিতার বিরুদ্ধে যে দুষ্কর্ম্ম করিয়াছিল, ঈশ্বর তাহার সমুচিত দণ্ড তাহাকে দিলেন; আবার শিখিমের লোকদের মস্তকে ঈশ্বর তাহাদের সমস্ত দুষ্কর্ম্মের প্রতিফল বর্ত্তাইলেন; তাহাতে যিরুব্বালের পুত্র যোথমের শাপ তাহাদের উপরে পড়িল। অবীমেলকের পরে তোলয় ইস্রায়েলের নিস্তারার্থে উৎপন্ন হইলেন; তিনি ইষাখর বংশীয় দোদয়ের পৌত্র পূয়ার পুত্র; তিনি পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ শামীরে বাস করিতেন। তিনি তেইশ বৎসর ইস্রায়েলের বিচার করিলেন; পরে তিনি মরিয়া গেলেন, এবং শামীরে তাঁহার কবর হইল। তাঁহার পরে গিলিয়দীয় যায়ীর উৎপন্ন হইয়া বাইশ বৎসর পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। তাঁহার ত্রিশটী পুত্র ছিল, তাহারা ত্রিশ গর্দ্দভে চড়িয়া বেড়াইত; এবং তাহাদের ত্রিশ নগর ছিল; গিলিয়দ দেশস্থ সেই সকল নগরকে অদ্যাপি হবোৎ-যায়ীর বলা যায়। পরে যায়ীর মরিয়া গেলেন, এবং কামোনে তাঁহার কবর হইল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই পুনর্ব্বার করিল, এবং বাল দেবগণের, অষ্টারোৎ দেবীদের, অরামের দেবগণের, সীদোনের দেবগণের, মোয়াবের দেবগণের, অম্মোন-সন্তানদের দেবগণের ও পলেষ্টীয়দের দেবগণের সেবা করিতে লাগিল; তাহারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিল, তাঁহার সেবা করিল না। তখন ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, আর তিনি পলেষ্টীয়দের হস্তে ও অম্মোন-সন্তানদের হস্তে তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন। আর ইহারা ঐ বৎসর ইস্রায়েল-সন্তানগণকে পীড়ন ও চূর্ণ করিল; আঠার বৎসর পর্য্যন্ত যর্দ্দন-পারস্থ গিলিয়দের অন্তঃপাতী ইমোরীয় দেশনিবাসী সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানকে চূর্ণ করিল। আর অম্মোন-সন্তানগণ যিহূদার ও বিন্যামীনের এবং ইফ্রয়িম কুলের সহিত যুদ্ধ করিতে যর্দ্দন পার হইয়া আসিত; এইরূপে ইস্রায়েল অতিশয় কষ্ট পাইতে লাগিল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়া কহিল, আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি, কেননা আমরা আপনাদের ঈশ্বরকে ত্যাগ এবং বাল দেবগণের সেবা করিয়াছি। তাহাতে সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলেন, মিস্রীয়দের হইতে, ইমোরীয়দের হইতে, অম্মোন-সন্তানদের হইতে ও পলেষ্টীয়দের হইতে আমি কি তোমাদিগকে [নিস্তার করি] নাই? আর সীদোনীয়, অমালেকীয় ও মায়োনীয়গণ তোমাদের উপরে উপদ্রব করিয়াছিল, এবং তোমরা আমার কাছে ক্রন্দন করিলে আমি তাহাদের হস্ত হইতে তোমাদিগকে নিস্তার করিলাম। তথাপি তোমরা আমাকে ত্যাগ করিয়া অন্য দেবগণের সেবা করিলে, অতএব আমি আর তোমাদের নিস্তার করিব না; যাও; আপনাদের মনোনীত ঐ দেবগণের কাছে ক্রন্দন কর; সঙ্কটের সময়ে তাহারাই তোমাদিগকে নিস্তার করুক। তখন ইস্রায়েল সন্তানগণ সদাপ্রভুকে কহিল, আমরা পাপ করিয়াছি; এখন তোমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই আমাদের প্রতি কর; বিনয় করি, কেবল অদ্য আমাদিগকে উদ্ধার কর। পরে তাহারা আপনাদের মধ্য হইতে বিজাতীয় দেবগণকে দূর করিয়া সদাপ্রভুর সেবা করিল; তাহাতে ইস্রায়েলের কষ্টে তাঁহার প্রাণ দুঃখিত হইল। ঐ সময়ে অম্মোন-সন্তানগণ সমাহূত হইয়া গিলিয়দে শিবির স্থাপন করিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ একত্র হইয়া মিস্‌পাতে শিবির স্থাপন করিল। তাহাতে লোকেরা, গিলিয়দের অধ্যক্ষগণ, পরস্পর কহিল, অম্মোন-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করিতে কোন ব্যক্তি আরম্ভ করিবে? সে গিলিয়দ-নিবাসী সমস্ত লোকের প্রধান হইবে। ঐ সময়ে গিলিয়দীয় যিপ্তহ বলবান বীর ছিলেন; তিনি এক বেশ্যার পুত্র; গিলিয়দ তাঁহার জন্ম দিয়াছিলেন। আর গিলিয়দের স্ত্রী তাঁহার জন্য কয়েকটী পুত্র প্রসব করিল; পরে সেই স্ত্রীজাত পুত্রেরা যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হইল, তখন যিপ্তহকে তাড়াইয়া দিল, কহিল, আমাদের পিতৃকুলের মধ্যে তুমি অধিকার পাইবে না, কেননা তুমি অপর এক স্ত্রীর পুত্র। তাহাতে যিপ্তহ আপন ভ্রাতাদের সম্মুখ হইতে পলাইয়া গিয়া টোব দেশে প্রবাস করিলেন; এবং কতকগুলিন অসারচিত্ত লোক যিপ্তহের কাছে একত্র হইল, তাহারা তাঁহার সঙ্গে বাহিরে যাইত। কিছু কাল পরে অম্মোন-সন্তানগণ ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিল। তখন ইস্রায়েলের সহিত অম্মোন-সন্তানগণ যুদ্ধ করাতে গিলিয়দের প্রাচীনবর্গ যিপ্তহকে টোব দেশ হইতে আনিতে গেল। তাহারা যিপ্তহকে কহিল, আইস, তুমি আমাদের অধ্যক্ষ হও, আমরা অম্মোন-সন্তানদের সহিত যুদ্ধ করিব। যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনবর্গকে কহিলেন, তোমরাই কি আমাকে ঘৃণা করিয়া আমার পিতৃকুল হইতে আমাকে তাড়াইয়া দেও নাই? এখন বিপদ্‌গ্রস্ত হইয়াছ বলিয়া আমার কাছে কেন আসিলে? তখন গিলিয়দের প্রাচীনবর্গ যিপ্তহকে কহিল, এখন আমরা তোমার নিকটে ফিরিয়া আসিয়াছি, যেন তুমি আমাদের সঙ্গে গিয়া অম্মোন-সন্তানদের সহিত যুদ্ধ করিতে পার, এবং আমাদের অর্থাৎ গিলিয়দ-নিবাসী সমস্ত লোকের প্রধান হও। তখন যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনবর্গকে কহিলেন, তোমরা যদি অম্মোন-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করণার্থে আমাকে পুনর্ব্বার স্বদেশে লইয়া যাও, আর সদাপ্রভু যদি আমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করেন, তবে আমিই কি তোমাদের প্রধান হইব? তখন গিলিয়দের প্রাচীনবর্গ যিপ্তহকে কহিল, সদাপ্রভু আমাদের মধ্যে সাক্ষী; আমরা অবশ্য তোমার কথা অনুসারে কার্য্য করিব। পরে যিপ্তহ গিলিয়দের প্রাচীনবর্গের সহিত গেলেন; তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে আপনাদের প্রধান ও শাসনকর্ত্তা করিল; পরে যিপ্তহ মিস্‌পাতে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আপনার সমস্ত কথা কহিলেন। পরে যিপ্তহ অম্মোন-সন্তানদের রাজার নিকটে দূত পাঠাইয়া কহিলেন, আমার সহিত তোমার বিষয় কি যে, তুমি আমার সহিত যুদ্ধ করিতে আমার দেশে আসিলে? তাহাতে অম্মোন-সন্তানগণের রাজা যিপ্তহের দূতগণকে কহিলেন, কারণ এই, ইস্রায়েল যখন মিসর হইতে আইসে, তখন, অর্ণোন অবধি যব্বোক ও যর্দ্দন পর্য্যন্ত আমার ভূমি হরণ করিয়াছিল; অতএব এখন নির্ব্বিরোধে তাহা ফিরাইয়া দেও। তাহাতে যিপ্তহ অম্মোন-সন্তানগণের রাজার নিকটে পুনর্ব্বার দূত পাঠাইলেন; তিনি তাঁহাকে কহিলেন, যিপ্তহ এই কথা কহেন, মোয়াবের ভূমি কিম্বা অম্মোন-সন্তানগণের ভূমি ইস্রায়েল হরণ করে নাই। কিন্তু মিসর হইতে আসিবার সময়ে ইস্রায়েল সূফসাগর পর্য্যন্ত প্রান্তরের মধ্যে ভ্রমণ করিয়া যখন কাদেশে উপস্থিত হয়, তখন ইদোমের রাজার নিকটে দূত পাঠাইয়া বলিয়াছিল, বিনয় করি, আপনি নিজ দেশের মধ্য দিয়া আমাকে যাইতে দিউন, কিন্তু ইদোমের রাজা সে কথায় কাণ দিলেন না; আর সেইরূপ মোয়াবের রাজার নিকটে বলিয়া পাঠাইলে তিনিও সম্মত হইলেন না; অতএব ইস্রায়েল কাদেশে রহিল। পরে তাহারা প্রান্তরের মধ্য দিয়া গিয়া ইদোম দেশ ও মোয়াব দেশ প্রদক্ষিণপূর্ব্বক মোয়াব দেশের পূর্ব্বদিক্‌ দিয়া আসিয়া অর্ণোনের ওপারে শিবির স্থাপন করিল, মোয়াবের সীমার মধ্যে প্রবেশ করিল না, কেননা অর্ণোন মোয়াবের সীমা। পরে ইস্রায়েল হিষ্‌বোনের রাজা, ইমোরীয়দের রাজা, সীহোনের নিকটে দূত পাঠাইল; ইস্রায়েল তাঁহাকে কহিল, বিনয় করি, আপনি নিজ দেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে নিজ স্থানে যাইতে দিউন। কিন্তু সীহোন ইস্রায়েলকে বিশ্বাস করিয়া আপন সীমার মধ্য দিয়া যাইতে দিলেন না; সীহোন আপনার সমস্ত লোক একত্র করিয়া যহসে শিবির স্থাপন করিলেন; ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিলেন। আর ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু সীহোনকে ও তাঁহার সমস্ত লোককে ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিলেন, ও তাহারা তাহাদিগকে আঘাত করিল; এইরূপে ইস্রায়েল সেই দেশনিবাসী ইমোরীয়দের সমস্ত দেশ অধিকার করিল। তাহারা অর্ণোন অবধি যব্বোক পর্য্যন্ত ও প্রান্তর অবধি যর্দ্দন পর্য্যন্ত ইমোরীয়দের সমস্ত অঞ্চল অধিকার করিল। সুতরাং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন প্রজা ইস্রায়েলের সম্মুখে ইমোরীয়দিগকে অধিকারচ্যুত করিলেন; এখন আপনি কি তাহাদের দেশ অধিকার করিবেন? আপনার কমোশ দেব আপনাকে অধিকারার্থে যাহা দেন, আপনি কি তাহারই অধিকারী নহেন? আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের সম্মুখে যাহাদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়াছেন, সে সমস্তের অধিকারী আমরাই আছি। বলুন দেখি, মোয়াবের রাজা সিপ্পোরের পুত্র বালাক হইতে আপনি কি শ্রেষ্ঠ? তিনি কি ইস্রায়েলের সহিত বিবাদ করিয়াছিলেন, না তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন? হিষ্‌বোনে ও তাহার উপনগরসমূহে, অরোয়েরে ও তাহার উপনগরসমূহে এবং অর্ণোন তটসমীপস্থ সমস্ত নগরে তিন শত বৎসরাবধি ইস্রায়েল বাস করিতেছে; এত দিনের মধ্যে আপনারা কেন সে সমস্ত ফিরাইয়া লন নাই? আমি ত আপনাদের বিরুদ্ধে কোন দোষ করি নাই; কিন্তু আমার সহিত যুদ্ধ করাতে আপনি আমার প্রতি অন্যায় করিতেছেন; বিচারকর্ত্তা সদাপ্রভু অদ্য ইস্রায়েল-সন্তানগণের ও অম্মোন-সন্তানগণের মধ্যে বিচার করুন। কিন্তু যিপ্তহের প্রেরিত এই সকল কথায় অম্মোন-সন্তানগণের রাজা কাণ দিলেন না। পরে সদাপ্রভুর আত্মা যিপ্তহের উপরে আসিলেন, আর তিনি গিলিয়দ ও মনঃশি প্রদেশ দিয়া গিলিয়দের মিস্‌পীতে গমন করিলেন; এবং গিলিয়দের মিস্‌পী হইতে অম্মোন-সন্তানগণের নিকটে গেলেন। আর যিপ্তহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে মানত করিয়া কহিলেন, তুমি যদি অম্মোন-সন্তানগণকে নিশ্চয় আমার হস্তে সমর্পণ কর, তবে অম্মোন-সন্তানগণের নিকট হইতে যখন আমি কুশলে ফিরিয়া আসিব, তখন যে কিছু আমার গৃহের কবাট হইতে নির্গত হইয়া আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিবে, তাহা নিশ্চয় সদাপ্রভুরই হইবে, আর আমি তাহা হোমবলিরূপে উৎসর্গ করিব। পরে যিপ্তহ অম্মোন-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করণার্থে তাহাদের নিকটে পার হইয়া গেলে সদাপ্রভু তাহাদিগকে তাঁহার হস্তে সমর্পণ করিলেন। তাহাতে তিনি অরোয়ের অবধি মিন্নীতের নিকট পর্য্যন্ত বিংশতি নগরে এবং আবেল-করামীম পর্য্যন্ত অতি মহাসংহারে তাহাদিগকে সংহার করিলেন। এইরূপে অম্মোন-সন্তানগণ ইস্রায়েল-সন্তানগণের সাক্ষাতে নত হইল। পরে যিপ্তহ মিস্‌পায় আপন বাটীতে আসিলেন, আর দেখ, তাঁহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবার জন্য তাঁহার কন্যা তবল হস্তে করিয়া নৃত্য করিতে করিতে বাহিরে আসিতেছিল। সে তাঁহার একমাত্র সন্ততি, সে ছাড়া তাঁহার পুত্র কি কন্যা ছিল না। তখন তাহাকে দেখিবামাত্র তিনি বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, হায় হায়, আমার বৎসে, তুমি আমাকে বড় ব্যাকুল করিলে; আমার কষ্টদায়কদের মধ্যে তুমি এক জন হইলে; কিন্তু আমি সদাপ্রভুর কাছে মুখ খুলিয়াছি, আর অন্যথা করিতে পারিব না। সে তাঁহাকে কহিল, হে আমার পিতঃ, তুমি সদাপ্রভুর কাছে মুখ খুলিয়াছ, তোমার মুখ দিয়া যে কথা বাহির হইয়াছে, তদনুসারে আমার প্রতি কর, কেননা সদাপ্রভু তোমার জন্য তোমার শত্রুগণের, অম্মোন-সন্তানগণের, কাছে প্রতিশোধ লইয়াছেন। পরে সে আপন পিতাকে কহিল, আমার জন্য একটী কাজ করা হউক; দুই মাসের জন্য আমাকে বিদায় দেও; আমি যাই, পর্ব্বতে গমন করি, এবং আমার কুমারীত্বের বিষয়ে সখীগণকে লইয়া বিলাপ করি। তিনি কহিলেন, যাও; আর তাহাকে দুই মাসের জন্য পাঠাইয়া দিলেন; তখন সে আপন সখীগণের সহিত গিয়া পর্ব্বতের উপরে আপন কুমারীত্ব বিষয়ে বিলাপ করিল। পরে দুই মাস গত হইলে সে পিতার নিকটে ফিরিয়া আসিল; পিতা যে মানত করিয়াছিলেন, তদনুসারে তাহার প্রতি করিলেন; সে পুরুষের পরিচয় পায় নাই। আর ইস্রায়েলের মধ্যে এই রীতি প্রচলিত হইল যে, বৎসর বৎসর গিলিয়দীয় যিপ্তহের কন্যার যশঃকীর্ত্তন করিতে ইস্রায়েলীয় কন্যাগণ বৎসরের মধ্যে চারি দিবস গমন করে। পরে ইফ্রয়িমের লোকেরা সমাহূত হইয়া সাফোনে গমন করিল; তাহারা যিপ্তহকে কহিল, তোমার সহিত গমন করিতে আমাদিগকে না ডাকিয়া তুমি অম্মোন-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করিতে কেন পার হইয়া গিয়াছিলে? আমরা তোমাকে শুদ্ধ তোমার বাটী আগুন দিয়া পোড়াইয়া দিব। যিপ্তহ তাহাদিগকে কহিলেন, অম্মোন-সন্তানগণের সহিত আমার ও আমার লোকদের বড় বিরোধ ছিল, তাই আমি তোমাদিগকে ডাকিয়াছিলাম, কিন্তু তোমরা তাহাদের হস্ত হইতে আমাকে নিস্তার কর নাই। তোমরা আমাকে নিস্তার করিলে না দেখিয়া আমি প্রাণ হাতে করিয়া অম্মোন-সন্তানগণের বিরুদ্ধে পার হইয়া গিয়াছিলাম, আর সদাপ্রভু আমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিলেন, অতএব তোমরা আমার সহিত যুদ্ধ করিতে অদ্য কেন আমার নিকটে আসিলে? পরে যিপ্তহ গিলিয়দের সমস্ত লোককে একত্র করিয়া ইফ্রয়িমের সহিত যুদ্ধ করিলেন, তাহাতে গিলিয়দের লোকেরা ইফ্রয়িমের লোকদিগকে আঘাত করিল; কেননা তাহারা বলিয়াছিল, রে গিলিয়দীয়েরা, তোরা ইফ্রয়িমের মধ্যে ও মনঃশির মধ্যে ইফ্রয়িমের পলাতক। পরে গিলিয়দীয়েরা ইফ্রয়িমীয়দের বিরুদ্ধে যর্দ্দনের পার ঘাট সকল হস্তগত করিল; তাহাতে ইফ্রয়িমের কোন পলাতক যখন বলিত, আমাকে পার হইতে দেও, তখন গিলিয়দের লোকেরা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিত, তুমি কি ইফ্রয়িমীয়? যে যদি বলিত, না, তবে তাহারা বলিত, “শিব্বোলেৎ” বল দেখি; সে বলিত, “ সিব্বোলেৎ” কারণ সে শুদ্ধরূপে তাহা উচ্চারণ করিতে পারিত না; তখন তাহারা তাহাকে ধরিয়া লইয়া যর্দ্দনের পার ঘাটে বধ করিত। সেই সময়ে ইফ্রয়িমের বিয়াল্লিশ সহস্র লোক হত হইল। যিপ্তহ ছয় বৎসর পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। পরে গিলিয়দীয় যিপ্তহ মরিয়া গেলেন, এবং গিলিয়দের এক নগরে তাঁহার কবর হইল। তাঁহার পরে বৈৎলেহমীয় ইব্‌সন ইস্রায়েলের বিচারকর্ত্তা হইলেন। তাঁহার ত্রিশটী পুত্র ছিল, এবং তিনি ত্রিশটী কন্যা বাহিরে দিলেন, ও নিজ পুত্রগণের জন্য বাহির হইতে ত্রিশটী কন্যা আনিলেন; তিনি সাত বৎসর ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। পরে ইব্‌সন মরিয়া গেলেন, এবং বৈৎলেহমে তাঁহার কবর হইল। তাঁহার পরে সবূলূনীয় এলোন ইস্রায়েলের বিচারকর্ত্তা হইলেন; তিনি দশ বৎসর ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। পরে সবূলূনীয় এলোন মরিয়া গেলেন, এবং সবূলূন দেশস্থ অয়ালোনে তাঁহার কবর হইল। তাঁহার পরে পিরিয়াথোনীয় হিল্লেলের পুত্র অব্দোন ইস্রায়েলের বিচারকর্ত্তা হইলেন। তাঁহার চল্লিশটী পুত্র ও ত্রিশটী পৌত্র সত্তরটী গর্দ্দভে চড়িয়া বেড়াইত; তিনি আট বৎসর ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। পরে পিরিয়াথোনীয় হিল্লেলের পুত্র অব্দোন মরিয়া গেলেন, এবং ইফ্রয়িম দেশে অমালেকীয়দের পর্ব্বতময় প্রদেশে পিরিয়াথোনে তাঁহার কবর হইল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই পুনর্ব্বার করিল; তাহাতে সদাপ্রভু চল্লিশ বৎসর তাহাদিগকে পলেষ্টীয়দের হস্তে সমর্পণ করিলেন। তৎকালে দানীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সরানিবাসী মানোহ নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, তাঁহার স্ত্রী বন্ধ্যা হওয়াতে সন্তান হয় নাই। পরে সদাপ্রভুর দূত সেই স্ত্রীকে দর্শন দিয়া কহিলেন, দেখ, তুমি বন্ধ্যা, তোমার সন্তান হয় না, কিন্তু গর্ভধারণ করিয়া পুত্র প্রসব করিবে। অতএব সাবধান, দ্রাক্ষারস কি সুরা পান করিও না, এবং কোন অশুচি বস্তু ভোজন করিও না। কারণ দেখ, তুমি গর্ভধারণ করিয়া পুত্র প্রসব করিবে; আর তাহার মস্তকে ক্ষুর উঠিবে না, কেননা সেই বালক গর্ভহইতেই ঈশ্বরের উদ্দেশে নাসরীয় হইবে, এবং সে পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে ইস্রায়েলকে নিস্তার করিতে আরম্ভ করিবে। তখন সেই স্ত্রী আসিয়া আপন স্বামীকে কহিলেন, ঈশ্বরের এক জন লোক আমার কাছে আসিয়াছিলেন, তাঁহার রূপ ঈশ্বরীয় দূতের রূপের ন্যায়, অতি ভয়ঙ্কর; তিনি কোথা হইতে আসিলেন, তাহা আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করি নাই, আর তিনিও আমাকে তাঁহার নাম বলেন নাই। কিন্তু তিনি আমাকে কহিলেন, দেখ, তুমি গর্ভধারণ করিয়া পুত্র প্রসব করিবে; এখন দ্রাক্ষারস কিম্বা সুরা পান করিও না, এবং কোন অশুচি বস্তু ভোজন করিও না, কেননা সেই বালক গর্ভহইতে মরণ দিন পর্য্যন্ত ঈশ্বরের উদ্দেশে নাসরীয় হইবে। তখন মানোহ সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিয়া কহিলেন, হে প্রভু, ঈশ্বরের যে লোককে আপনি আমাদের কাছে পাঠাইয়াছিলেন, তাঁহাকে পুনর্ব্বার আমাদের কাছে আসিতে দিউন, এবং যে বালকটী জন্মিবে, তাহার প্রতি আমাদের কি কর্ত্তব্য, তাহা আমাদিগকে বুঝাইয়া দিউন। তখন ঈশ্বর মানোহের রবে কর্ণপাত করিলেন; ঈশ্বরের সেই দূত পুনর্ব্বার সেই স্ত্রীর কাছে আসিলেন; সেই সময়ে তিনি ক্ষেত্রে বসিয়াছিলেন; তখন তাঁহার স্বামী মানোহ তাঁহার সঙ্গে ছিলেন না। সেই স্ত্রী শীঘ্র দৌড়িয়া গিয়া আপন স্বামীকে সংবাদ দিলেন, তাঁহাকে কহিলেন, দেখ, সে দিন যে লোকটী আমার কাছে আসিয়াছিলেন, তিনি আমাকে দর্শন দিয়াছেন। মানোহ উঠিয়া আপন স্ত্রীর পশ্চাতে পশ্চাতে গেলেন, এবং সেই ব্যক্তির কাছে গিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এই স্ত্রীর সঙ্গে যিনি কথা বলিয়াছিলেন, আপনি কি সেই ব্যক্তি? তিনি কহিলেন, আমিই সেই। মানোহ কহিলেন, এখন আপনার বাক্য সফল হউক; সেই বালকের প্রতি কি বিধি ও কি কর্ত্তব্য? সদাপ্রভুর দূত মানোহকে কহিলেন, আমি ঐ স্ত্রীকে যে সমস্ত কথা বলিয়াছি সে সকল বিষয়ে সে সাবধান থাকুক। সে দ্রাক্ষালতাজাত কোন বস্তু ভোজন করিবে না, দ্রাক্ষারস কি সুরা পান করিবে না, এবং কোন অশুচি দ্রব্য ভোজন করিবে না; আমি তাহাকে যাহা কিছু আজ্ঞা করিয়াছি, সে তাহা পালন করুক। পরে মানোহ সদাপ্রভুর দূতকে কহিলেন, বিনয় করি, কিঞ্চিৎ বিলম্ব করুন, আমরা আপনার জন্য একটী ছাগবৎস প্রস্তুত করি। সদাপ্রভুর দূত মানোহকে কহিলেন, তুমি আমাকে বিলম্ব করাইলেও আমি তোমার খাদ্য দ্রব্য ভোজন করিব না; আর তুমি যদি হোমবলি উৎসর্গ কর, তবে সদাপ্রভুরই উদ্দেশে তাহা কর। বস্তুতঃ তিনি যে সদাপ্রভুর দূত, তাহা মানোহ জানিতে পারেন নাই। পরে মানোহ সদাপ্রভুর দূতকে কহিলেন, আপনার নাম কি? আপনার বাক্য সফল হইলে আমরা আপনার গৌরব করিব। সদাপ্রভুর দূত কহিলেন, কেন আমার নাম জিজ্ঞাসা করিতেছ? তাহা ত আশ্চর্য্য। পরে মানোহ ঐ ছাগবৎস ও ভক্ষ্য নৈবেদ্য লইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে শৈলের উপরে উৎসর্গ করিলেন; তাহাতে ঐ দূত, আশ্চর্য্য ব্যাপার সাধন করিলেন, মানোহ ও তাঁহার স্ত্রী তাহা দেখিতেছিলেন। যখন অগ্নিশিখা বেদি হইতে আকাশের দিকে উঠিল, তখন সদাপ্রভুর দূত ঐ বেদির শিখাতে উঠিলেন; আর মানোহ ও তাঁহার স্ত্রী দৃষ্টিপাত করিলেন; এবং তাঁহারা ভূমিতে উবুড় হইয়া পড়িলেন। তৎপরে সদাপ্রভুর দূত মানোহকে ও তাঁহার স্ত্রীকে আর দর্শন দিলেন না; তখন তিনি যে সদাপ্রভুর দূত, ইহা মানোহ জানিতে পারিলেন। পরে মানোহ আপন স্ত্রীকে কহিলেন আমরা অবশ্য মারা পড়িব, কারণ ঈশ্বরকে দেখিয়াছি। কিন্তু তাঁহার স্ত্রী কহিলেন, আমাদিগকে বধ করা যদি সদাপ্রভুর অভিরুচি হইত, তবে তিনি আমাদের হস্ত হইতে হোম ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্য গ্রহণ করিতেন না, এবং এই সকল আমাদিগকে দেখাইতেন না, আর এই সময় আমাদিগকে এমন সকল কথাও শুনাইতেন না। পরে ঐ স্ত্রী পুত্র প্রসব করিয়া তাঁহার নাম শিম্‌শোন রাখিলেন। আর বালকটী বাড়িয়া উঠিলেন, ও সদাপ্রভু তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। আর সদাপ্রভুর আত্মা প্রথমে সরার ও ইষ্টায়োলের মধ্যস্থানে, মহনেদানে, তাঁহাকে চালাইতে লাগিলেন। আর শিম্‌মোন তিম্নায় নামিয়া গেলেন, ও তিম্নায় পলেষ্টীয়দের কন্যাদের মধ্যে একটী রমণীকে দেখিতে পাইলেন। পরে ফিরিয়া আসিয়া আপন পিতামাতাকে সংবাদ দিয়া কহিলেন, আমি তিম্নায় পলেষ্টীয়দের কন্যাদের মধ্যে একটী রমণীকে দেখিয়াছি; তোমরা তাহাকে আনিয়া আমার সহিত বিবাহ দেও। তখন তাঁহার পিতামাতা তাঁহাকে কহিলেন, তোমার জ্ঞাতিগণের মধ্যে ও আমার সমস্ত স্বজাতির মধ্যে কি কন্যা নাই যে, তুমি অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টিয়দের কন্যা বিবাহ করিতে যাইতেছ? শিম্‌শোন পিতাকে কহিলেন, তুমি আমার জন্য তাহাকেই আনাও, কেননা আমার দৃষ্টিতে সে মনোহরা। কিন্তু তাঁহার পিতামাতা জানিতেন না যে, উহা সদাপ্রভু হইতে হইয়াছে, কারণ তিনি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে সুযোগ অন্বেষণ করিতেছিলেন। তৎকালে পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিত। পরে শিম্‌শোন ও তাঁহার পিতামাতা তিম্নায় নামিয়া গেলেন, তিম্নাস্থ দ্রাক্ষাক্ষেত্রে উপস্থিত হইলে দেখ, এক যুবা সিংহ শিম্‌শোনের সম্মুখবর্ত্তী হইয়া গর্জ্জিয়া উঠিল। তখন সদাপ্রভুর আত্মা তাঁহার উপরে সবলে আসিলেন, তাহাতে তাঁহার হস্তে কিছু না থাকিলেও তিনি ছাগবৎস ছিঁড়িবার মত ঐ সিংহকে ছিঁড়িয়া ফেলিলেন, কিন্তু কি করিয়াছেন, তাহা পিতামাতাকে কহিলেন না। পরে তিনি গিয়া সেই কন্যার সহিত আলাপ করিলেন; আর সে শিম্‌শোনের দৃষ্টিতে মনোহরা হইল। কিছুকাল পরে তিনি তাহাকে বিবাহ করিতে সেই স্থানে ফিরিয়া গেলেন, এবং সেই সিংহের শব দেখিবার জন্য পথ ছাড়িয়া গেলেন; আর দেখ, সিংহের দেহে এক ঝাঁক মধুমক্ষিকা ও মধুর চাক রহিয়াছে। তখন তিনি তাহা হস্তে লইয়া চলিলেন, ভোজন করিতে করিতে চলিলেন, এবং পিতামাতার নিকটে গিয়া তাঁহাদিগকেও কিছু দিলে তাঁহারাও ভোজন করিলেন; কিন্তু সেই মধু যে সিংহের দেহ হইতে আনিয়াছেন, ইহা তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন না। পরে তাঁহার পিতা সেই রমণীর নিকটে গেলে শিম্‌শোন সে স্থানে ভোজ প্রস্তুত করিলেন, কেননা যুবালোকদের তদ্রূপ ব্যবহার ছিল। আর তাঁহাকে দেখিয়া পলেষ্টীয়েরা তাঁহার নিকটে থাকিতে ত্রিশ জন সহচরকে আনিল। শিম্‌শোন তাহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদের কাছে একটী প্রহেলিকা বলি, তোমরা যদি এই উৎসবের সাত দিনের মধ্যে তাহার অর্থ বুঝিয়া আমাকে বলিয়া দিতে পার, তবে আমি তোমাদিগকে ত্রিশটী জামা ও ত্রিশ যোড়া বস্ত্র দিব। কিন্তু যদি আমাকে তাহার অর্থ বলিতে না পার, তবে তোমরা আমাকে ত্রিশটী জামা ও ত্রিশ যোড়া বস্ত্র দিবে। তাহারা কহিল, তোমার প্রহেলিকাটী বল, আমরা শুনি। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, “খাদক হইতে নির্গত হইল খাদ্য, বলবান হইতে নির্গত হইল মিষ্ট দ্রব্য।” তাহারা তিন দিনে সেই প্রহেলিকার অর্থ করিতে পারিল না। পরে সপ্তম দিবস হইলে তাহারা শিম্‌শোনের স্ত্রীকে কহিল, তুমি আপনার স্বামীকে ফুস্‌লাও, যাহাতে তিনি প্রহেলিকার অর্থ আমাদিগকে বলেন; নতুবা আমরা তোমাকে ও তোমার পিতৃকুলকে আগুনে পোড়াইয়া মারিব। তোমরা কি আমাদিগকে দরিদ্র করণার্থেই এ স্থানে নিমন্ত্রণ করিয়াছ? ইহাই কি নয়? তখন শিম্‌শোনের স্ত্রী স্বামীর কাছে রোদন করিয়া কহিল, তুমি আমাকে কেবল ঘৃণা করিতেছ, ভালবাস না; আমার স্বজাতীয়দিগকে একটী প্রহেলিকা বলিলে, কিন্তু আমাকে তাহা বুঝাইয়া দিলে না। তিনি তাহাকে কহিলেন দেখ, আমার পিতামাতাকেও তাহা বুঝাইয়া দিই নাই, তবে তোমাকে কি বুঝাইব? তাঁহার স্ত্রী উৎসব-সপ্তাহের শেষ পর্য্যন্ত তাঁহার কাছে রোদন করিল; পরে তিনি সপ্তম দিবসে তাহাকে বলিয়া দিলেন; কেননা সে তাঁহাকে পীড়াপীড়ি করিয়াছিল। পরে ঐ স্ত্রী স্বজাতীয়দিগকে প্রহেলিকার অর্থ বলিয়া দিল। পরে সপ্তম দিবসে সূর্য্য অস্তগত হইবার পূর্ব্বে ঐ নগরস্থ লোকেরা তাঁহাকে কহিল, মধু অপেক্ষা মিষ্ট কি? আর সিংহ অপেক্ষা বলবান কি? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা যদি আমার গাভী দ্বারা চাষ না করিতে, আমার প্রহেলিকার অর্থ খুঁজিয়া পাইতে না। পরে সদাপ্রভুর আত্মা তাঁহার উপরে সবলে আসিলেন, আর তিনি অস্কিলোনে নামিয়া গিয়া তথাকার ত্রিশ জনকে আঘাত করিয়া তাহাদের বস্ত্র খুলিয়া লইয়া প্রহেলিকার অর্থকারীদিগকে যোড়া যোড়া বস্ত্র দিলেন। আর তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল; তিনি পিতার বাটীতে উঠিয়া গেলেন। পরে শিম্‌শোনের যে সখা তাঁহার মিত্র ছিল, তাহাকে তাঁহার স্ত্রী দত্তা হইল। কিছু কাল পরে গোম কাটার সময়ে শিম্‌শোন এক ছাগবৎস সঙ্গে লইয়া আপন স্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন; তিনি কহিলেন, আমি আপন স্ত্রীর নিকটে অন্তঃপুরে যাইব; কিন্তু সেই স্ত্রীর পিতা তাঁহাকে ভিতরে যাইতে দিল না। তাহার পিতা কহিল, আমি নিশ্চয় মনে করিয়াছিলাম, তুমি তাহাকে নিতান্তই ঘৃণা করিলে, তাই আমি তাহাকে তোমার সখাকে দিয়াছি; তাহার কনিষ্ঠা ভগিনী কি তাহা হইতে সুন্দরী নয়? বিনয় করি, ইহার পরিবর্ত্তে তাহাকেই গ্রহণ কর। শিম্‌শোন তাহাদিগকে কহিলেন, এবার আমি পলেষ্টীয়দের অনিষ্ট করিলেও তাহাদের সম্বন্ধে নির্দ্দোষ হইব। পরে শিম্‌শোন গিয়া তিন শত শৃগাল ধরিয়া মশাল লইয়া তাহাদের লেজে লেজে যোগ করিয়া দুই দুই লেজে এক এক মশাল বাঁধিলেন। পরে সেই মশালে অগ্নি দিয়া পলেষ্টীয়দের শস্যক্ষেত্রে ছাড়িয়া দিলেন; তাহাতে বাঁধা আটি, ক্ষেত্রের শস্য ও জিতবৃক্ষের উদ্যান সকলই পুড়িয়া গেল। তখন পলেষ্টীয়েরা জিজ্ঞাসা করিল, এ কাজ কে করিল? লোকেরা কহিল, তিম্নায়ীয়ের জামাতা শিম্‌শোন করিয়াছে; যেহেতু তাহার শ্বশুর তাহার স্ত্রীকে লইয়া তাহার সখাকে দিয়াছে। তাহাতে পলেষ্টীয়েরা আসিয়া সেই স্ত্রীকে ও তাহার পিতাকে আগুনে পোড়াইয়া মারিল। শিম্‌শোন তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা যদি এ প্রকার কাজ কর, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিশোধ লইব, তাহার পর ক্ষান্ত হইব। পরে তিনি তাহাদিগকে আঘাত করিলেন, কটিদেশের উপরে জঙ্ঘায় মহা আঘাত করিলেন; আর নামিয়া গিয়া ঐটম শৈলের ফাটালে বাস করিলেন। আর পলেষ্টীয়েরা উঠিয়া গিয়া যিহূদা দেশে শিবির স্থাপন করিয়া লিহীতে ব্যাপিয়া রহিল। তাহাতে যিহূদার লোকেরা জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে কেন আসিলে? তাহারা কহিল, শিম্‌শোনকে বাঁধিতে আসিয়াছি; সে আমাদের প্রতি যেমন করিয়াছে, আমরাও তাহার প্রতি তদ্রূপ করিব। তখন যিহূদার তিন সহস্র লোক ঐটম শৈলের ফাটালে নামিয়া গিয়া শিম্‌শোনকে কহিল, পলেষ্টীয়েরা যে আমাদের কর্ত্তা, তাহা তুমি কি জান না? তবে আমাদের প্রতি তুমি এ কি করিলে? তিনি কহিলেন, তাহারা আমার প্রতি যেরূপ করিয়াছে, আমিও তাহাদের প্রতি তদ্রূপ করিয়াছি। তাহারা তাঁহাকে কহিল, আমরা পলেষ্টীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবার জন্য তোমাকে বাঁধিতে আসিয়াছি। শিম্‌শোন তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আমাকে আক্রমণ করিবে না, আমার কাছে এই দিব্য কর। তাহারা কহিল, না, কেবল তোমাকে দৃঢ়রূপে বাঁধিয়া তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিব; কিন্তু আমরা যে তোমাকে বধ করিব, তাহা নয়, পরে তাহারা দুই গাছা নূতন রজ্জু দ্বারা তাঁহাকে বাঁধিয়া ঐ শৈল হইতে লইয়া গেল। তিনি লিহীতে উপস্থিত হইলে পলেষ্টীয়েরা তাঁহার কাছে গিয়া জয়ধ্বনি করিল। তখন সদাপ্রভুর আত্মা সবলে তাঁহার উপরে আসিলেন, আর তাঁহার দুই বাহুস্থিত দুই রজ্জু অগ্নিদগ্ধ শণের ন্যায় হইল, এবং তাঁহার দুই হস্ত হইতে বেড়ি খসিয়া পড়িল। পরে তিনি এক গর্দ্দভের কাঁচা হনূ দেখিতে পাইয়া হস্ত বিস্তারপূর্ব্বক তাহা লইয়া তদ্দ্বারা সহস্র লোককে আঘাত করিলেন। আর শিম্‌শোন কহিলেন, গর্দ্দভের হনূ দ্বারা রাশির উপরে রাশি হইল, গর্দ্দভের হনূ দ্বারা সহস্র জনকে হানিলাম। পরে তিনি কথা সমাপ্ত করিয়া হস্ত হইতে ঐ হনূ নিক্ষেপ করিলেন, আর সেই স্থানের নাম রামৎ-লিহী [হনূগিরি] রাখিলেন। পরে তিনি অতিশয় তৃষ্ণাতুর হওয়াতে সদাপ্রভুকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি আপন দাসের হস্ত দ্বারা এই মহানিস্তার সাধন করিয়াছ, এখন আমি তৃষ্ণা হেতু মারা পড়ি, ও অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদের হাতে পড়ি। তাহাতে ঈশ্বর লিহীস্থিত শূন্যগর্ভ স্থান বিদীর্ণ করিলেন, ও তাহা হইতে জল নির্গত হইল; তখন তিনি জল পান করিলে তাঁহার প্রাণ ফিরিয়া আসিল, ও তিনি সজীব হইলেন; অতএব তাহার নাম ঐন্‌-হক্কোরী [আহ্বানকারীর উনুই] রাখা হইল; তাহা অদ্যাপি লিহীতে আছে। পলেষ্টীয়দের সময়ে তিনি বিংশতি বৎসর পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। আর শিম্‌শোন ঘসাতে গিয়া সেখানে একটা বেশ্যাকে দেখিয়া তাহার কাছে গমন করিলেন। তাহাতে, শিম্‌শোন এই স্থানে আসিয়াছে, এই কথা শুনিয়া ঘসাতীয়েরা তাঁহাকে বেষ্টন করিয়া সমস্ত রাত্রি তাঁহার জন্য নগর-দ্বারে লুকাইয়া থাকিল, সমস্ত রাত্রি চুপ করিয়া রহিল, বলিল, প্রাতঃকালে দিন হইলে আমরা তাহাকে বধ করিব। কিন্তু শিম্‌শোন অর্দ্ধরাত্র পর্য্যন্ত শয়ন করিলেন, অর্দ্ধরাত্রে উঠিয়া তিনি নগর-দ্বারের অর্গলশুদ্ধ দুই কবাট ও দুই বাজু ধরিয়া উপড়াইলেন, এবং স্কন্ধে করিয়া হিব্রোণের সম্মুখস্থ পর্ব্বত-শৃঙ্গে লইয়া গেলেন। তৎপরে তিনি সোরেক উপত্যকার একটা স্ত্রীলোককে ভালবাসিলেন, তাহার নাম দলীলা। তাহাতে পলেষ্টীয়দের ভূপালেরা সেই স্ত্রীর নিকটে আসিয়া তাহাকে কহিলেন, তুমি তাহাকে ফুস্‌লাইয়া দেখ, কিসে তাহার এমন মহাবল হয়, ও কিসে আমরা তাহাকে জয় করিয়া ক্লেশ দিবার জন্য রাখিতে পারিব; তাহাতে আমরা প্রত্যেকে তোমাকে এগার শত রৌপ্য মুদ্রা দিব। তখন দলীলা শিম্‌শোনকে কহিল, বিনয় করি, তোমার এমন মহাবল কিসে হয়, আর ক্লেশ দিবার জন্য কিসে তোমাকে বাঁধিতে পারা যায়, তাহা আমাকে বল। শিম্‌শোন তাহাকে কহিলেন, শুষ্ক হয় নাই, এমন সাত গাছা কাঁচা তাঁইত দিয়া যদি তাহারা আমাকে বাঁধে, তবে আমি দুর্ব্বল হইয়া অন্য লোকের সমান হইব। পলেষ্টীয়দের ভূপালেরা অশুষ্ক সাত গাছা কাঁচা তাঁইত আনিয়া সেই স্ত্রীকে দিলেন; আর সে তাহা দ্বারা তাঁহাকে বাঁধিল। তখন তাহার অন্তরাগারে গুপ্তভাবে লোক বসিয়াছিল। পরে দলীলা তাঁহাকে কহিল, হে শিম্‌শোন, পলেষ্টীয়েরা তোমাকে ধরিল। তাহাতে অগ্নির গন্ধে শণসূত্র যেমন ছিন্ন হয়, তদ্রূপ তিনি ঐ তাঁইত সকল ছিঁড়িয়া ফেলিলেন; এইরূপে তাঁহার বল জানা গেল না। পরে দলীলা শিম্‌শোনকে কহিল, দেখ, তুমি আমাকে উপহাস করিলে, আমাকে মিথ্যা কথা কহিলে; এক্ষণে বিনয় করি, কিসে তোমাকে বাঁধিতে পারা যায়, তাহা আমাকে বল। তিনি তাহাকে কহিলেন, যে রজ্জু দিয়া কোন কর্ম্ম করা হয় নাই, এমন কয়েক গাছা নূতন রজ্জু দ্বারা যদি তাহারা আমাকে বাঁধে, তবে আমি দুর্ব্বল হইয়া অন্য লোকের সমান হইব। তাহাতে দলীলা নূতন রজ্জু লইয়া তাহা দ্বারা তাঁহাকে বাঁধিল; পরে তাঁহাকে কহিল, হে শিম্‌শোন, পলেষ্টীয়েরা তোমাকে ধরিল। তখন অন্তরাগারে গুপ্তভাবে লোক বসিয়াছিল। কিন্তু তিনি আপন বাহু হইতে সূত্রের ন্যায় ঐ সকল ছিঁড়িয়া ফেলিলেন। পরে দলীলা শিম্‌শোনকে কহিল, এ যাবৎ তুমি আমাকে উপহাস করিলে, আমাকে মিথ্যা কথা কহিলে; কিসে তোমাকে বাঁধিতে পারা যায়, আমাকে বল না। তিনি কহিলেন, তুমি যদি আমার মাথার সাত গুচ্ছ চুল তানার সহিত বুন, তবে হইতে পারে। তাহাতে সে তাঁতের গোঁজের সহিত তাহা বদ্ধ করিয়া তাঁহাকে কহিল, হে শিম্‌শোন, পলেষ্টীয়েরা তোমাকে ধরিল। তখন তিনি নিদ্রা হইতে জাগরিত হইয়া তানা শুদ্ধ তাঁতের গোঁজ উপড়াইয়া ফেলিলেন। পরে দলীলা তাঁহাকে কহিল, তুমি কি প্রকারে বলিতে পার যে, তুমি আমাকে ভালবাস? তোমার মন ত আমাতে নাই; এই তিন বার তুমি আমাকে উপহাস করিলে; কিসে তোমার এমন মহাবল হয়, তাহা আমাকে কহিলে না। এইরূপে সে প্রতিদিন বাক্য দ্বারা তাঁহাকে পীড়াপীড়ি করিয়া এমন ব্যস্ত করিয়া তুলিল যে, প্রাণধারণে তাঁহার বিরক্তি বোধ হইল। তাই তিনি মনের সমস্ত কথা ভাঙ্গিয়া বলিলেন, তাহাকে কহিলেন, আমার মস্তকে কখনও ক্ষুর উঠে নাই, কেননা মাতার গর্ভহইতে আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে নাসরীয়; ক্ষৌরি হইলে আমার বল আমাকে ছাড়িয়া যাইবে, এবং আমি দুর্ব্বল হইয়া অন্য সকল লোকের সমান হইব। তখন, এ আমাকে মনের সমস্ত কথা ভাঙ্গিয়া বলিয়াছে বুঝিয়া, দলীলা লোক পাঠাইয়া পলেষ্টীয়দের ভূপালদিগকে ডাকাইয়া কহিল, এই বার আইসুন, কেননা সে আমাকে মনের সমস্ত কথা ভাঙ্গিয়া বলিয়াছে। তাহাতে পলেষ্টীয়দের ভূপালেরা টাকা হাতে করিয়া তাহার নিকটে আসিলেন। পরে সে আপনার জানুর উপরে তাঁহাকে নিদ্রিত করিল, এবং এক জনকে ডাকাইয়া তাঁহার মস্তকের সাত গুচ্ছ কেশ ক্ষৌরি করাইল; এইরূপে সে তাঁহাকে ক্লেশ দিতে আরম্ভ করিল, আর তাঁহার বল তাঁহাকে ছাড়িয়া গেল। পরে সে কহিল, হে শিম্‌শোন, পলেষ্টীয়েরা তোমাকে ধরিল। তখন তিনি নিদ্রা হইতে জাগরিত হইয়া কহিলেন, অন্যান্য সময়ের ন্যায় বাহিরে গিয়া গা ঝাড়া দিব। কিন্তু সদাপ্রভু যে তাঁহাকে ত্যাগ করিয়াছেন, তাহা তিনি বুঝিলেন না। তখন পলেষ্টীয়েরা তাঁহাকে ধরিয়া তাঁহার দুই চক্ষু উৎপাটন করিল; এবং তাঁহাকে ঘসাতে আনিয়া পিত্তলের দুই শৃঙ্খলে বদ্ধ করিল; তিনি কারাগারে যাঁতা পেষণ করিতে থাকিলেন। তথাপি ক্ষৌরি হইবার পর তাঁহার মস্তকের কেশ পুনর্ব্বার বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। পরে পলেষ্টীয়দের ভূপালেরা আপনাদের দেবতা দাগোনের উদ্দেশে মহাযজ্ঞ ও আমোদ প্রমোদ করিতে একত্র হইলেন; কেননা তাঁহারা কহিলেন, আমাদের দেবতা আমাদের শত্রু শিম্‌শোনকে আমাদের হস্তে দিয়াছেন। আর তাঁহাকে দেখিয়া লোকেরা আপনাদের দেবতার প্রশংসা করিতে লাগিল; কেননা তাহারা কহিল, এই যে ব্যক্তি আমাদের শত্রু ও আমাদের দেশনাশক, যে আমাদের অনেক লোক বধ করিয়াছে, ইহাকে আমাদের দেবতা আমাদের হস্তে দিয়াছেন। তাহাদের অন্তঃকরণ প্রফুল্ল হইলে তাহারা কহিল, শিম্‌শোনকে ডাক, সে আমাদের কাছে কৌতুক করুক। তাহাতে লোকেরা কারাগৃহ হইতে শিম্‌শোনকে ডাকিয়া আনিল, আর তিনি তাহাদের সম্মুখে কৌতুক করিতে লাগিলেন। তাহারা স্তম্ভ সকলের মধ্যে তাঁহাকে দাঁড় করাইয়াছিল। পরে যে বালক হস্ত দিয়া শিম্‌শোনকে ধরিয়াছিল, তিনি তাহাকে কহিলেন, আমাকে ছাড়িয়া দেও, যে দুই স্তম্ভের উপরে গৃহের ভার আছে, তাহা আমাকে স্পর্শ করিতে দেও; আমি উহাতে হেলান দিয়া দাঁড়াইব। পুরুষে ও স্ত্রীলোকে সেই গৃহ পরিপূর্ণ ছিল, আর পলেষ্টীয়দের সমস্ত ভূপাল সেখানে ছিলেন, এবং ছাদের উপরে স্ত্রী পুরুষ প্রায় তিন সহস্র লোক শিম্‌শোনের কৌতুক দেখিতেছিল। তখন শিম্‌শোন সদাপ্রভুকে ডাকিয়া কহিলেন, হে প্রভু সদাপ্রভু, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে স্মরণ করুন; হে ঈশ্বর, অনুগ্রহ করিয়া কেবল এই একটী বার আমাকে বলবান করুন, যেন আমি পলেষ্টীয়দিগকে আমার দুই চক্ষুর নিমিত্ত একেবারেই প্রতিশোধ দিতে পারি। পরে শিম্‌শোন, মধ্যস্থিত যে দুই স্তম্ভের উপরে গৃহের ভার ছিল, তাহা ধরিয়া তাহার একটীর উপরে দক্ষিণ বাহু দ্বারা, অন্যটীর উপরে বাম বাহু দ্বারা নির্ভর করিলেন। আর পলেষ্টীয়দের সহিত আমার প্রাণ যাউক, ইহা বলিয়া শিম্‌শোন আপনার সমস্ত বলে নত হইয়া পড়িলেন; তাহাতে ঐ গৃহ ভূপালগণের ও যত লোক ভিতরে ছিল, সমস্ত লোকের উপরে পড়িল; এইরূপে তিনি জীবনকালে যত লোক বধ করিয়াছিলেন, মরণকালে তদপেক্ষা অধিক লোককে বধ করিলেন। পরে তাঁহার ভ্রাতৃগণ ও তাঁহার সমস্ত পিতৃকুল নামিয়া আসিয়া তাঁহাকে লইয়া সরা ও ইষ্টায়োলের মধ্যস্থানে তাঁহার পিতা মানোহের কবরস্থানে তাঁহার কবর দিল। তিনি বিংশতি বৎসর ইস্রায়েলের বিচার করিয়াছিলেন। পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে মীখা নামে এক ব্যক্তি ছিল। সে আপন মাতাকে কহিল, যে এগার শত রৌপ্য মুদ্রা তোমার নিকট হইতে চুরি গিয়াছিল, যে বিষয়ে তুমি শাপ দিয়াছিলে ও আমার কাণে তুলিয়াছিলে, দেখ, সেই রৌপ্য আমার কাছে, আমিই তাহা লইয়াছিলাম। তাহার মাতা কহিল, বৎস, তুমি সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপাত্র হও। পরে সে ঐ এগার শত রৌপ্য মুদ্রা মাতাকে ফিরাইয়া দিলে তাহার মাতা কহিল, আমি এই রৌপ্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র করিতেছি, আমার পুত্র ইহা আমার হস্ত হইতে লইয়া এক ছাঁচে ঢালা ও এক ক্ষোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করুক। অতএব এখন ইহা তোমাকে ফিরাইয়া দিলাম। সে আপন মাতাকে ঐ রৌপ্য ফিরাইয়া দিলে তাহার মাতা দুই শত রৌপ্য মুদ্রা লইয়া স্বর্ণকারকে দিল; আর সে এক ছাঁচে ঢালা ও এক ক্ষোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিলে তাহা মীখার গৃহে থাকিল। ঐ মীখার এক দেবালয় ছিল; আর সে এক এফোদ ও কয়েকটী ঠাকুর নির্ম্মাণ করিল, এবং আপনার এক পুত্রের হস্তপূরণ করিলে সে তাহার পুরোহিত হইল। ঐ সময়ে ইস্রায়েলের মধ্যে রাজা ছিল না, যাহার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হইত, সে তাহাই করিত। তৎকালে যিহূদা গোষ্ঠীর বৈৎলেহম-যিহূদার একটী লোক ছিল, সে লেবীয়, ও সে তথায় প্রবাস করিতেছিল। সেই ব্যক্তি যেখানে স্থান পাইতে পারে, তথায় প্রবাস করিবার জন্য নগর হইতে, বৈৎলেহম-যিহূদা হইতে, প্রস্থানপূর্ব্বক গমন করিতে করিতে পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে ঐ মীখার বাটীতে উপস্থিত হইল। মীখা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তুমি কোথা হইতে আসিলে? সে তাহাকে কহিল, আমি বৈৎলেহম-যিহূদার এক জন লেবীয়; যেখানে স্থান পাই, তথায় প্রবাস করিতে যাইতেছি। মীখা তাহাকে কহিল, তুমি আমার এখানে থাক, আমার পিতা ও পুরোহিত হও, আমি বৎসরে তোমাকে দশটী রৌপ্য মুদ্রা, এক যোড়া বস্ত্র ও তোমার খাদ্য দ্রব্য দিব। তাহাতে সেই লেবীয় ভিতরে গেল। সেই লেবীয় তাহার সেখানে থাকিতে সম্মত হইল; আর এই যুবক তাহার এক পুত্রের ন্যায় হইল। পরে মীখা সেই লেবীয়ের হস্তপূরণ করিল, আর সেই যুবক মীখার পুরোহিত হইয়া তাহার বাটীতে থাকিল। তখন মীখা কহিল, এখন আমি জানিলাম যে, সদাপ্রভু আমার মঙ্গল করিবেন, যেহেতু এক জন লেবীয় আমার পুরোহীত হইয়াছে। তৎকালে ইস্রায়েলের মধ্যে রাজা ছিল না; আর তৎকালে দানীয় বংশ আপনাদের বাসার্থ অধিকারের চেষ্টা করিতেছিল, কেননা সেই দিন পর্য্যন্ত ইস্রায়েল-বংশ সমূহের মধ্যে তাহারা অধিকার প্রাপ্ত হয় নাই। তখন দান-সন্তানগণ আপনাদের পূর্ণ সংখ্যা হইতে আপনাদের গোষ্ঠীর পাঁচ জন বীর পুরুষকে দেশ নিরীক্ষণ ও অনুসন্ধান করিবার জন্য সরা ও ইষ্টায়োল হইতে প্রেরণ করিল; তাহাদিগকে বলিল, তোমরা যাও; দেশ অনুসন্ধান কর; তাহাতে তাহারা পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে মীখার বাটী পর্য্যন্ত গিয়া সেই স্থানে রাত্রি যাপন করিল। তাহারা যখন মীখার বাটীতে ছিল, তখন সেই লেবীয় যুবকের স্বর চিনিয়া নিকটে গিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, এখানে তোমাকে কে আনিয়াছে? এবং এ স্থানে তুমি কি করিতেছ? আর এখানে তোমার কি আছে? সে তাহাদিগকে কহিল, মীখা আমার প্রতি এই এই প্রকার ব্যবহার করিয়াছেন, তিনি আমাকে বেতন দিতেছেন, আর আমি তাঁহার পুরোহিত হইয়াছি। তখন তাহারা কহিল, বিনয় করি, ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা কর, যেন আমাদের গন্তব্য পথে মঙ্গল হইবে কি না, তাহা আমরা জানিতে পারি। পুরোহিত তাহাদিগকে কহিল, কুশলে যাও, তোমরা যেখানে যাইবে, তোমাদের পথ সদাপ্রভুর সম্মুখবর্ত্তী। পরে সেই পাঁচ জন যাত্রা করিয়া লয়িশে আসিল। তাহারা দেখিল তথাকার লোকেরা সীদোনীয়দের রীতি অনুসারে সুস্থির ও নিশ্চিত হইয়া নির্ব্বিঘ্নে বাস করিতেছে, এবং সে দেশে কোন বিষয়ে তাহাদিগকে অপ্রতিভ করিতে পারে, কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট এমন কেহ নাই, আর সীদোনীয়দের হইতে তাহারা দূরস্থ, এবং অন্য কাহারও সহিত তাহাদের সম্বন্ধ নাই। পরে উহারা সরা ও ইষ্টায়োলে আপন ভ্রাতৃগণের নিকটে আসিল; তাহাদের ভ্রাতৃগণ জিজ্ঞাসা করিল, তোমরা কি বল? তাহারা কহিল, উঠ, আমরা সেই লোকদের বিরুদ্ধে যাই; আমরা সেই দেশ দেখিয়াছি; আর দেখ, তাহা অতি উত্তম, তোমরা কেন চুপ করিয়া আছ? সেই দেশ অধিকার করিবার জন্য সেখানে যাইতে আলস্য করিও না। তোমরা গেলেই নির্ব্বিঘ্ন এক লোক সমাজের কাছে পৌঁছিবে, আর দেশ বিস্তীর্ণ; ঈশ্বর তোমাদের হস্তে সেই দেশ সমর্পণ করিয়াছেন; আর তথায় পৃথিবীস্থ কোন বস্তুর অভাব নাই। তখন দানীয় গোষ্ঠীয় ছয় শত লোক যুদ্ধাস্ত্রে সসজ্জ হইয়া তথা হইতে অর্থাৎ সরা ও ইষ্টায়োল হইতে যাত্রা করিল। তাহারা যিহূদার কিরিয়ৎ-যিয়ারীমে উঠিয়া গিয়া তথায় শিবির স্থাপন করিল। এই কারণ অদ্য পর্য্যন্ত সেই স্থানকে মহনেদান [দানের শিবির] বলে; দেখ, তাহা কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের পশ্চাতে আছে। পরে তাহারা তথা হইতে পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে গেল, ও মীখার বাটী পর্য্যন্ত আসিল। তখন, যে পাঁচ জন লয়িশ প্রদেশ অনুসন্ধান করিতে আসিয়াছিল, তাহারা আপন ভ্রাতৃগণকে কহিল, তোমরা কি জান যে, এই বাটীতে এক এফোদ, কয়েকটি ঠাকুর, এক ক্ষোদিত প্রতিমা ও ছাঁচে ঢালা এক প্রতিমা আছে? এখন তোমাদের যাহা কর্ত্তব্য, তাহা বিবেচনা কর। পরে তাহারা সেই দিকে ফিরিয়া মীখার বাটীতে ঐ লেবীয় যুবকের গৃহে আসিয়া তাহার মঙ্গল জিজ্ঞাসা করিল। আর দান-সন্তানগণের মধ্যে যুদ্ধাস্ত্রে সসজ্জ সেই ছয় শত পুরুষ দ্বার-প্রবেশ-স্থানে দাঁড়াইয়া রহিল। আর দেশ নিরীক্ষণার্থে যাহারা গিয়াছিল, সেই পাঁচ জন উঠিয়া গেল; তাহারা তথায় প্রবেশ করিয়া ঐ ক্ষোদিত প্রতিমা, এফোদ, ঠাকুরগুলা ও ছাঁচে ঢালা প্রতিমা তুলিয়া লইল; এবং ঐ পুরোহিত যুদ্ধাস্ত্রে সসজ্জ ঐ ছয় শত পুরুষের সঙ্গে দ্বার প্রবেশ-স্থানে দাঁড়াইয়া ছিল। যখন উহারা মীখার বাটীতে প্রবেশ করিয়া সেই ক্ষোদিত প্রতিমা, এফোদ, ঠাকুরগুলা ও ছাঁচে ঢালা প্রতিমা তুলিয়া লইল, তখন পুরোহিত তাহাদিগকে কহিল, তোমরা কি করিতেছ? তাহারা উত্তর করিল, চুপ কর, মুখে হাত দিয়া আমাদের সঙ্গে সঙ্গে চল, এবং আমাদের পিতা ও পুরোহিত হও। তোমার পক্ষে কোনটা ভাল, এক জনের কুলের পুরোহিত হওয়া, না ইস্রায়েলের এক বংশের ও গোষ্ঠীর পুরোহিত হওয়া? তাহাতে পুরোহিতের মন প্রফুল্ল হইল, সে ঐ এফোদ, ঠাকুরগুলা ও ক্ষোদিত প্রতিমা লইয়া সেই লোকদের মধ্যবর্ত্তী হইল। আর তাহারা মুখ ফিরাইয়া প্রস্থান করিল, এবং বালকবালিকা, পশু ও দ্রব্য সামগ্রী আপনাদের সম্মুখে রাখিল। তাহারা মীখার বাটী হইতে কিঞ্চিৎ দূরে গেলে পর মীখার বাটীর নিকটস্থ বাটীসমূহের লোকেরা একত্র হইয়া দান-সন্তানগণের কাছে গিয়া উপস্থিত হইল; এবং দান-সন্তানদিগকে ডাকিতে লাগিল। তাহাতে তাহারা মুখ ফিরাইয়া মীখাকে কহিল, তোমার কি হইয়াছে যে, তুমি এত লোক সঙ্গে করিয়া আসিতেছ? সে কহিল, তোমরা আমার নির্ম্মিত দেবগণ ও পুরোহিতকে চুরি করিয়া লইয়া যাইতেছ, এখন আমার আর কি আছে? অতএব “তোমার কি হইয়াছে?” ইহা আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করিতেছ? দান-সন্তানগণ তাহাকে কহিল, আমাদের মধ্যে যেন তোমার রব শুনা না যায়; পাছে গোঁয়ারেরা তোমাদের উপর পড়ে, এবং তুমি সপরিবারে প্রাণ হারাও। পরে দান-সন্তানগণ আপন পথে গমন করিল, এবং মীখা তাহাদিগকে আপনা হইতে অধিক বলবান দেখিয়া ফিরিল, আপন বাটীতে ফিরিয়া আসিল। পরে তাহারা মীখার নির্ম্মিত বস্তু সকল ও তাহার পুরোহিতকে সঙ্গে লইয়া লয়িশে সেই সুস্থির ও নিশ্চিন্ত লোক-সমাজের নিকটে উপস্থিত হইল; এবং খড়্‌গধারে তাহাদিগকে বধ করিল, আর নগর আগুনে পোড়াইয়া দিল। উদ্ধারকর্ত্তা কেহ ছিল না, কেননা সেই নগর সীদোন হইতে দূরে ছিল, এবং অন্য কাহারও সহিত তাহাদের সম্বন্ধ ছিল না। আর তাহা বৈৎ-রহোবের নিকটস্থ তলভূমিতে ছিল। পরে তাহারা ঐ নগর নির্ম্মাণ করিয়া তথায় বাস করিল। আর তাহাদের পিতৃপুরুষ যে দান ইস্রায়েলের পুত্র, তাঁহার নামানুসারে সেই নগরের নাম দান রাখিল; কিন্তু পূর্ব্বে সেই নগরের নাম লয়িশ ছিল। আর দান-সন্তানগণ আপনাদের জন্য সেই ক্ষোদিত প্রতিমা স্থাপন করিল, এবং তদ্দেশীয় লোকদের বন্দিত্বের সময় পর্য্যন্ত মোশির পুত্র গের্শোমের সন্তান যোনাথন এবং তাহার সন্তানগণ দানীয় বংশের পুরোহিত হইল। আর যত দিন শীলোতে ঈশ্বরের গৃহ থাকিল, তাহারা আপনাদের জন্য মীখার নির্ম্মিত ঐ ক্ষোদিত প্রতিমা স্থাপন করিয়া রাখিল। তৎকালে ইস্রায়েলের মধ্যে রাজা ছিল না। আর পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের প্রান্তভাগে এক জন লেবীয় প্রবাস করিত; সে বৈৎলহেম-যিহূদা হইতে এক উপপত্নি গ্রহণ করিয়াছিল। পরে সেই উপপত্নী তাহার বিরুদ্ধে বেশ্যাচার করিল, এবং তাহাকে ত্যাগ করিয়া বৈৎলেহম-যিহূদায় আপন পিতার বাটীতে গিয়া চারি মাস কাল সে স্থানে থাকিল। পরে তাহার পুরুষ উঠিয়া তাহাকে চিত্তপ্রবোধক কথা কহিতে ও ফিরাইয়া আনিতে তাহার কাছে গেল, তাহার সঙ্গে তাহার চাকর ও দুইটী গর্দ্দভ ছিল। তাহার উপপত্নী তাহাকে পিতার বাটীর মধ্যে লইয়া গেলে সেই যুবতীর পিতা তাহাকে দেখিয়া আনন্দ সহকারে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিল; তাহার শ্বশুর ঐ যুবতীর পিতা আগ্রহ করিয়া তাহাকে রাখিলে সে তাহার সহিত তিন দিন বাস করিল; এবং তাহারা সেই স্থানে ভোজন পান ও রাত্রি যাপন করিল। পরে চতুর্থ দিবসে তাহারা প্রত্যূষে গাত্রোত্থান করিল, আর সে যাইবার জন্য উঠিল। তখন সেই যুবতীর পিতা জামাতাকে কহিল, কিঞ্চিৎ আহার করিয়া তোমার অন্তঃকরণ সুস্থির কর, পরে আপন পথে যাইও। তাহাতে তাহারা দুই জন একত্র বসিয়া ভোজন পান করিল; পরে যুবতীর পিতা সেই ব্যক্তিকে কহিল, বিনয় করি, সম্মত হও, এই রাত্রিটুকু বিলম্ব কর, প্রফুল্লচিত্ত হও। তথাপি সেই ব্যক্তি যাইবার জন্য উঠিল; কিন্তু তাহার শ্বশুর তাহাকে সাধ্যসাধনা করিলে সে সেই রাত্রিও তথায় যাপন করিল। পরে পঞ্চম দিবসে সে যাইবার জন্য প্রত্যূষে উঠিল; আর যুবতীর পিতা তাহাকে কহিল, বিনয় করি, তোমার অন্তঃকরণ সুস্থির কর, বৈকাল পর্য্যন্ত তোমরা বিলম্ব কর, তাহাতে তাহারা উভয়ে আহার করিল। পরে সেই পুরুষ, তাহার উপপত্নী ও চাকর যাইবার জন্য উঠিলে তাহার শ্বশুর ঐ যুবতীর পিতা তাহাকে কহিল, দেখ, প্রায় দিবাবসান হইল, বিনয় করি, তোমরা এই রাত্রিটুকু বিলম্ব কর; দেখ, বেলা শেষ হইয়াছে; তুমি এই স্থানে রাত্রিবাস কর, প্রফুল্লচিত্ত হও; কল্য তোমরা প্রত্যূষে উঠিলেই তুমি তোমার তাম্বুতে যাইতে পারিবে। কিন্তু ঐ ব্যক্তি সেই রাত্রি বিলম্ব করিতে অসম্মত হইল; সে উঠিয়া যাত্রা করিয়া যিবূষের অর্থাৎ যিরূশালেমের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল; তাহার সঙ্গে দুইটী সজ্জিত গর্দ্দভ ছিল; আর তাহার উপপত্নীও সঙ্গে ছিল। যিবূষের কাছে উপস্থিত হইলে দিবা প্রায় একেবারে অবসান হইল; তাহাতে চাকরটী আপন কর্ত্তাকে কহিল, বিনয় করি, আইসুন, আমরা যিবূষীয়দের এই নগরে প্রবেশ করিয়া রাত্রি যাপন করি। কিন্তু তাহার কর্ত্তা তাহাকে কহিল, যাহারা ইস্রায়েল-সন্তান নয়, এমন বিজাতীয়দের নগরে আমরা প্রবেশ করিব না; আমরা বরং অগ্রসর হইয়া গিবিয়াতে যাইব। সে চাকরটীকে আরও কহিল, আইস, আমরা এই অঞ্চলের কোন স্থানে যাই, গিবিয়াতে কিম্বা রামাতে রাত্রি যাপন করি। এইরূপে তাহারা অগ্রসর হইয়া চলিল; পরে বিন্যামীনের অধিকারস্থ গিবিয়ার নিকটে উপস্থিত হইলে সূর্য্য অস্তগত হইল। তখন তাহারা গিবিয়াতে প্রবেশ ও রাত্রিবাস করণার্থে পথ ছাড়িয়া তথায় গেল; সে প্রবেশ করিয়া ঐ নগরের চকে বসিয়া রহিল; কোন ব্যক্তি তাহাদিগকে আপন বাটীতে রাত্রিবাসার্থে গ্রহণ করিল না। আর দেখ, এক জন বৃদ্ধ সন্ধ্যাকালে ক্ষেত্র হইতে কর্ম্ম করিয়া আসিতেছিলেন; সেই ব্যক্তি পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম দেশের লোক; আর তিনি গিবিয়াতে প্রবাস করিতেছিলেন, কিন্তু নগরের লোকেরা বিন্যামীনীয় ছিল। সেই ব্যক্তি চক্ষু তুলিয়া নগরের চকে ঐ পথিককে দেখিলেন; আর বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কোথায় যাইতেছ? কোথা হইতে আসিতেছ? সে তাঁহাকে কহিল, আমরা বৈৎলেহম-যিহূদা হইতে পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের প্রান্তভাগে যাইতেছি; আমি সেই স্থানের লোক; বৈৎলেহম-যিহূদা পর্য্যন্ত গিয়াছিলাম; আমি সদাপ্রভুর গৃহে যাইতেছি। আর আমাকে কোন ব্যক্তি বাটীতে গ্রহণ করে না। আমাদের সঙ্গে গর্দ্দভদের জন্য পোয়াল ও কলাই, এবং আমার জন্য, আপনার এই দাসীর জন্য এবং আপনার দাসদাসীর সঙ্গী এই যুবকের জন্য রুটী ও দ্রাক্ষারস আছে, কোন দ্রব্যের অভাব নাই। বৃদ্ধ কহিলেন, তোমার শান্তি হউক, তোমার যাহা কিছু প্রয়োজনীয়, তাহার ভার আমার উপরে থাকুক; তুমি কোন ক্রমে এই চকে রাত্রি যাপন করিও না। পরে বৃদ্ধ তাহাকে আপন বাটীতে আনিয়া গর্দ্দভদিগকে তৃণ দিলেন, এবং তাহারা পা ধুইয়া ভোজন পান করিল। তাহারা আপন আপন অন্তঃকরণ আপ্যায়িত করিতেছে, এমন সময়ে, দেখ, নগরের লোকেরা, কতকগুলি পাষণ্ড, সেই বাটীর চারিদিকে ঘেরিয়া কবাটে আঘাত করিতে লাগিল, এবং বাটীর কর্ত্তাকে, ঐ বৃদ্ধকে, কহিল, তোমার বাটীতে যে পুরুষ আসিয়াছে, তাহাকে বাহির করিয়া আন; আমরা তাহার পরিচয় লইব। তাহাতে সেই ব্যক্তি, বাটীর কর্ত্তা, বাহির হইয়া তাহাদের নিকটে গিয়া কহিলেন, হে আমার ভ্রাতৃগণ, না, না; বিনয় করি, এমন দুষ্কর্ম্ম করিও না; ঐ পুরুষ আমার বাটীতে আসিয়াছে, অতএব এমন মূঢ়তার কর্ম্ম করিও না। দেখ, আমার অনূঢ়া কন্যা এবং তাহার উপপত্নী; ইহাদিগকে বাহির করিয়া আনি; তোমরা তাহাদিগকে মানভ্রষ্ট কর, ও তাহাদের প্রতি তোমাদের যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই কর; কিন্তু সেই পুরুষের প্রতি এমন মূঢ়তার কর্ম্ম করিও না। তথাপি তাহারা তাঁহার কথা শুনিতে অস্বীকার করিল; তখন ঐ পুরুষ আপন উপপত্নীকে ধরিয়া তাহাদের নিকটে বাহির করিয়া আনিল; আর তাহারা তাহার পরিচয় লইল, এবং প্রভাত পর্য্যন্ত সমস্ত রাত্রি তাহার প্রতি অত্যাচার করিল; পরে আলো হইয়া আসিলে তাহাকে ছাড়িয়া দিল। তখন রাত্রি পোহাইলে ঐ স্ত্রী পতির আতিথ্যকারী বৃদ্ধের বাটীর দ্বারে আসিয়া সূর্য্যোদয় পর্য্যন্ত পড়িয়া রহিল। প্রাতঃকাল হইলে তাহার পতি উঠিয়া পথে যাইবার জন্য গৃহের কবাট খুলিয়া বাহির হইল, আর দেখ, সেই স্ত্রীলোক, তাহার উপপত্নী, গৃহের দ্বারে গোবরাটের উপরে হস্ত রাখিয়া পড়িয়া রহিয়াছে। তাহাতে সে তাহাকে কহিল, গা তুল, চল, আমরা যাই; কিন্তু সে কিছুই উত্তর দিল না। পরে ঐ পুরুষ গর্দ্দভের উপরে তাহাকে তুলিয়া লইল, এবং উঠিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিল। পরে সে আপন বাটীতে আসিয়া একখানা ছুরী লইয়া আপনার উপপত্নীকে ধরিয়া অস্থি অনুসারে দ্বাদশ খণ্ড করিয়া ইস্রায়েলের সমস্ত অঞ্চলে পাঠাইয়া দিল। যাহারা তাহা দেখিল সকলে কহিল, ইস্রায়েল-সন্তানগণের মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিবার দিন হইতে অদ্য পর্য্যন্ত এমন কর্ম্ম কখনও হয় নাই, দেখাও যায় নাই; এ বিষয়ে বিবেচনা কর, মন্ত্রণা কর, কি কর্ত্তব্য বল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ সকলে বাহির হইল, দান অবধি বের্‌-শেবা পর্য্যন্ত ও গিলিয়দ দেশ সমেত সমস্ত মণ্ডলী এক মানুষের ন্যায় মিস্‌পাতে সদাপ্রভুর কাছে সমবেত হইল। ঈশ্বরের প্রজাদের সেই সমাজে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের সমস্ত জনসমাজের অধ্যক্ষ ও চারি লক্ষ খড়্‌গধারী পদাতিক উপস্থিত হইল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ মিস্‌পাতে উঠিয়া গিয়াছে, এই কথা বিন্যামীন-সন্তানগণ শুনিতে পাইল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ কহিল, বল দেখি, এই দুষ্কর্ম্ম কি প্রকারে হইল? সেই লেবীয়, নিহতা স্ত্রীর পুরুষ উত্তর করিয়া কহিল, আমি ও আমার উপপত্নী রাত্রি যাপন করিবার জন্য বিন্যামীনের অধিকারস্থ গিবিয়াতে প্রবেশ করিয়াছিলাম। আর গিবিয়ার গৃহস্থেরা আমার বিরুদ্ধে উঠিয়া রাত্রিকালে আমার জন্য গৃহের চারিদিক্‌ বেষ্টন করিল। তাহারা আমাকে বধ করিবার কল্পনা করিয়াছিল, আর আমার উপপত্নীকে বলাৎকার করায় সে মরিয়া গেল। পরে আমি নিজ উপপত্নীকে লইয়া খণ্ড খণ্ড করিয়া ইস্রায়েলের অধিকারস্থ প্রদেশের সর্ব্বত্র পাঠাইলাম, কেননা তাহারা ইস্রায়েলের মধ্যে কুকর্ম্ম ও মূঢ়তার কার্য্য করিয়াছে। দেখ, তোমরা সকলেই ইস্রায়েল-সন্তান; অতএব এ বিষয়ে আপন আপন মত বলিয়া মন্ত্রণা স্থির কর। তখন সকল লোক এক মানুষের ন্যায় উঠিয়া কহিল, আমরা কেহ আপন তাম্বুতে যাইব না, কেহ আপন বাটীতে ফিরিয়া যাইব না; কিন্তু এখন গিবিয়ার প্রতি এই কার্য্য করিব, আমরা গুলিবাঁটপূর্ব্বক তাহার বিরুদ্ধে যাইব। আর আমরা লোকদের জন্য খাদ্য দ্রব্য আনিতে ইস্রায়েল-বংশসমূহের মধ্যে এক শত লোকের প্রতি দশ, এক সহস্রের প্রতি এক শত, ও দশ সহস্রের প্রতি এক সহস্র লোক সংগ্রহ করিব, যেন আমরা বিন্যামীনের গিবিয়াতে গিয়া ইস্রায়েলের মধ্যে কৃত সমস্ত মূঢ়তার কর্ম্ম অনুসারে প্রতিফল দিতে পারি। এইরূপে ইস্রায়েলের সমস্ত লোক এক মানুষের ন্যায় একযোগ হইয়া ঐ নগরের প্রতিকূলে একত্র হইল। পরে ইস্রায়েলের বংশসমূহ বিন্যামীন বংশের সর্ব্বত্র লোক প্রেরণ করিয়া কহিল, তোমাদের মধ্যে এ কি দুষ্কর্ম্ম হইয়াছে? তোমরা এখন ঐ লোকদিগকে, গিবিয়া-নিবাসী পাষণ্ডদিগকে, সমর্পণ কর, আমরা তাহাদিগকে বধ করিয়া ইস্রায়েল হইতে দুষ্টাচার লোপ করিব। কিন্তু বিন্যামীন আপন ভ্রাতাদের অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণের কথা শুনিতে সম্মত হইল না। বরং ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করণার্থে বিন্যামীন-সন্তানগণ নানা নগর হইতে গিবিয়াতে গিয়া একত্র হইল। সেই দিন নানা নগর হইতে আগত বিন্যামীন-সন্তানদের ছাব্বিশ সহস্র খড়্‌গধারী লোক গণিত হইল; ইহারা গিবিয়া-নিবাসীগণ হইতে ভিন্ন; তাহারাও সাত শত মনোনীত লোক গণিত হইল। আবার এই সকল লোকের মধ্যে সাত শত মনোনীত লোক নেটা ছিল; তাহাদের প্রত্যেক জন কেশ লক্ষ্যে ফিঙ্গার পাথর মারিতে পারিত, লক্ষ্যচ্যুত হইত না। বিন্যামীন ভিন্ন ইস্রায়েলের খড়্‌গধারী চারি লক্ষ লোক গণিত হইল; ইহারা সকলেই যোদ্ধা ছিল। ইস্রায়েল-সন্তানগণ উঠিয়া বৈথেলে গিয়া ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করিল; তাহারা কহিল, বিন্যামীন-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করিতে আমাদের মধ্যে প্রথমে কে যাইবে? সদাপ্রভু কহিলেন, প্রথমে যিহূদা যাইবে। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ প্রাতঃকালে উঠিয়া গিবিয়ার সম্মুখে শিবির স্থাপন করিল। পরে ইস্রায়েল-লোকেরা বিন্যামীনের সহিত যুদ্ধ করিতে বাহির হইয়া গেল; তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিতে ইস্রায়েল-লোকেরা গিবিয়ার সমীপে সৈন্য রচনা করিল। তখন বিন্যামীন-সন্তানগণ গিবিয়া হইতে বাহির হইয়া ঐ দিবসে ইস্রায়েলের মধ্যে বাইশ সহস্র লোককে সংহার করিয়া ভূতলশায়ী করিল। পরে ইস্রায়েল-লোকেরা আপনাদিগকে আশ্বাস দিয়া, প্রথম দিবসে যে স্থানে সৈন্য রচনা করিয়াছিল, পুনর্ব্বার সেই স্থানে সৈন্য রচনা করিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ উঠিয়া গিয়া সন্ধ্যাকাল পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর সাক্ষাতে রোদন করিল, এবং সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিল, আমরা আপন ভ্রাতা বিন্যামীন-সন্তানদের সহিত যুদ্ধ করিতে কি পুনর্ব্বার যাইব? সদাপ্রভু কহিলেন, তাহার বিরুদ্ধে যাও। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ দ্বিতীয় দিবসে বিন্যামীন-সন্তানগণের প্রতিকূলে উপস্থিত হইল। আর বিন্যামীন সেই দ্বিতীয় দিবসে তাহাদের বিরুদ্ধে গিবিয়া হইতে নির্গত হইয়া পুনর্ব্বার ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আঠার সহস্র লোককে সংহার করিয়া ভূতলশায়ী করিল, ইহারা সকলেই খড়্‌গধারী ছিল। পরে সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তান, সমস্ত লোক, গিয়া বৈথেলে উপস্থিত হইল, এবং সেই স্থানে সদাপ্রভুর সম্মুখে রোদন করিল ও বসিয়া রহিল, এবং সেই দিন সন্ধ্যা পর্য্যন্ত উপবাস করিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে হোম ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিল। সেই সময়ে ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুক ঐস্থানে ছিল, এবং হারোণের পৌত্র ইলিয়াসরের পুত্র পীনহস তৎসম্মুখে দণ্ডায়মান ছিলেন; অতএব ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুকে এই কথা জিজ্ঞাসা করিল, আমরা আপন ভ্রাতা বিন্যামীন-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করিতে এখনও কি পূনর্ব্বার যাইব? না ক্ষান্ত হইব? সদাপ্রভু কহিলেন, যাও, কেননা কল্য আমি তোমাদের হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিব। পরে ইস্রায়েল গিবিয়ার চারিদিকে ঘাঁটি বসাইল। পরে তৃতীয় দিবসে ইস্রায়েল-সন্তানগণ বিন্যামীন-সন্তানগণের বিরুদ্ধে উঠিয়া গিয়া অন্যান্য সময়ের ন্যায় গিবিয়ার নিকটে সৈন্য রচনা করিল। তখন বিন্যামীন-সন্তানগণ ঐ লোকদের বিরুদ্ধে বাহির হইল, এবং নগর হইতে দূরে আকর্ষিত হইয়া প্রথম বারের ন্যায় লোকদিগকে আঘাত ও বধ করিতে লাগিল, বিশেষতঃ বৈথেলে যাইবার ও ক্ষেত্রস্থ গিবিয়াতে যাইবার দুই রাজপথে তাহারা ইস্রায়েলের মধ্যে অনুমান ত্রিশ জনকে বধ করিল। তাহাতে বিন্যামীন-সন্তানগণ কহিল, উহারা আমাদের সম্মুখে পূর্ব্বমত পরাজিত হইতেছে। কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানগণ বলিয়াছিল, আইস, আমরা পলাইয়া উহাদিগকে নগর হইতে রাজপথে আকর্ষণ করি। অতএব ইস্রায়েলের সমস্ত লোক আপন আপন স্থান হইতে উঠিয়া গিয়া বাল্‌-তামরে সৈন্য রচনা করিল; ইতিমধ্যে ইস্রায়েলের লুক্কায়িত লোকেরা আপনাদের স্থান হইতে অর্থাৎ মারে-গেবা হইতে নির্গত হইল। পরে সমস্ত ইস্রায়েল হইতে দশ সহস্র মনোনীত লোক গিবিয়ার সম্মুখে আসিল, তাহাতে ঘোরতর সংগ্রাম হইল; কিন্তু উহারা জানিত না যে, অমঙ্গল উহাদের নিকটবর্ত্তী। তখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সম্মুখে বিন্যামীনকে আঘাত করিলেন, আর সেই দিন ইস্রায়েল-সন্তানগণ বিন্যামীনের পঁচিশ সহস্র এক শত লোককে সংহার করিল, ইহারা সকলেই খড়্‌গধারী ছিল। এইরূপে বিন্যামীন-সন্তানগণ দেখিল যে, তাহারা আহত হইয়াছে; কারণ ইস্রায়েলের লোকেরা বিন্যামীনের নিকট হইতে পলায়ন করিয়াছিল, যেহেতু তাহারা যাহাদিগকে গিবিয়ার বিরুদ্ধে স্থাপন করিয়াছিল, সেই লুক্কায়িত লোকদের উপরে নির্ভর করিতেছিল। ইতিমধ্যে ঐ লুক্কায়িত লোকেরা সত্বর গিবিয়া আক্রমণ করিল, আর প্রবেশ করিয়া খড়্‌গধারে সমস্ত নগরকে আঘাত করিল। ইস্রায়েল-লোকদের ও লুক্কায়িত লোকদের মধ্যে এই চিহ্ন স্থির করা হইয়াছিল যে, লুক্কায়িত লোকেরা নগর হইতে ধূমের মেঘ উঠাইবে। অতএব ইস্রায়েল-লোকেরা সংগ্রাম করিতে করিতে মুখ ফিরাইল। তখন বিন্যামীন তাহাদের অনুমান ত্রিশ জনকে আঘাত ও বধ করিয়াছিল, কেননা তাহারা বলিয়াছিল, প্রথম যুদ্ধের ন্যায় এবারেও উহারা আমাদের সম্মুখে আহত হইল। কিন্তু যখন নগর হইতে স্তম্ভাকারে ধূমময় মেঘ উঠিতে লাগিল, তখন বিন্যামীন পশ্চাতে চাহিয়া দেখিল, আর দেখ, সমস্ত নগর ধূমময় হইয়া আকাশে উড়িয়া যাইতেছে। আর ইস্রায়েল-লোকেরাও মুখ ফিরাইল; তাহাতে অমঙ্গল আমাদের উপরে আসিয়া পড়িল দেখিয়া বিন্যামীনের লোকেরা বিহ্বল হইল। অতএব তাহারা ইস্রায়েল-লোকদের সম্মুখে প্রান্তরের পথের দিকে ফিরিল; কিন্তু সেই স্থানেও যুদ্ধ তাহাদের অনুবর্ত্তী হইল; এবং নগর সকল হইতে আগত লোকেরা তথায় তাহাদিগকে সংহার করিল। তাহারা চারিদিকে বিন্যামীনকে ঘেরিয়া তাড়াইতে লাগিল, এবং সূর্য্যোদয়-দিকে গিবিয়ার সম্মুখস্থ স্থান পর্য্যন্ত তাহাদের বিশ্রামস্থানে তাহাদিগকে দলিত করিতে লাগিল। তাহাতে বিন্যামীনের আঠার সহস্র লোক হত হইল, তাহারা সকলেই যোদ্ধা ছিল। পরে অবশিষ্ট লোকেরা প্রান্তরের দিকে ফিরিয়া রিম্মোণ শৈলে পলায়ন করিতে লাগিল, আর উহারা রাজপথে তাহাদের অন্য পাঁচ সহস্র লোককে বধ করিল; পরে বেগে তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গিদোম পর্য্যন্ত গিয়া তাহাদের দুই সহস্র লোককে আঘাত করিল। অতএব সেই দিন বিন্যামীনের মধ্যে খড়্‌গধারী পঁচিশ সহস্র লোক হত হইল; তাহারা সকলেই বলবান লোক ছিল। কিন্তু ছয় শত লোক প্রান্তরের দিকে ফিরিয়া রিম্মোণ শৈলে পলায়ন করিয়া সেই রিম্মোন শৈলে চারি মাস বাস করিল। পরে ইস্রায়েল-লোকেরা বিন্যামীন-সন্তানগণের প্রতিকূলে ফিরিয়া নগরস্থ মনুষ্য ও পশু প্রভৃতি যাহা যাহা পাওয়া গেল, সে সকলকে খড়্‌গধারে আঘাত করিল; তাহারা যত নগর পাইল, সে সকল আগুনে পোড়াইয়া দিল। মিস্‌পাতে ইস্রায়েল-লোকেরা এই দিব্য করিয়াছিল, আমরা কেহ বিন্যামীনের মধ্যে কাহারও সহিত আপন কন্যার বিবাহ দিব না। পরে লোকেরা বৈথেলে আসিয়া সন্ধ্যা পর্য্যন্ত সেই স্থানে ঈশ্বরের সম্মুখে বসিয়া উচ্চৈঃস্বরে অতিশয় রোদন করিল। তাহারা কহিল, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, অদ্য ইস্রায়েলের মধ্যে এক বংশের লোপ হইল, ইস্রায়েলের মধ্যে কেন এমন ঘটিল? পরদিবসে লোকেরা প্রত্যূষে উঠিয়া সেই স্থানে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিল, এবং হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ কহিল, সমাজে সদাপ্রভুর নিকটে আইসে নাই, ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্যে এমন কে আছে? কেননা মিস্‌পাতে সদাপ্রভুর নিকটে যে না আসিবে, সে অবশ্য হত হইবে, এই মহাদিব্য তাহারা করিয়াছিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের ভ্রাতা বিন্যামীনের জন্য অনুতাপ করিয়া কহিল, ইস্রায়েলের মধ্য হইতে অদ্য এক বংশ উচ্ছিন্ন হইল। এখন তাহার অবশিষ্ট লোকদের বিবাহের বিষয়ে কি কর্ত্তব্য? আমরা ত সদাপ্রভুর নামে এই দিব্য করিয়াছি যে, আমরা তাহাদের সহিত আমাদের কন্যাদের বিবাহ দিব না। অতএব তাহারা কহিল, মিস্‌পাতে সদাপ্রভুর নিকটে আইসে নাই, ইস্রায়েলের এমন কোন বংশ কি আছে? আর দেখ, যাবেশ-গিলিয়দ হইতে কেহ শিবিরস্থ ঐ সমাজে আইসে নাই। লোক সকল গণিত হইল, কিন্তু দেখ, যাবেশ-গিলিয়দ-নিবাসীদের এক জনও সে স্থানে নাই। তাহাতে মণ্ডলী বলবান লোকদের মধ্য হইতে বারো সহস্র লোককে সেই স্থানে পাঠাইল, আর তাহাদিগকে এই আজ্ঞা করিল, তোমরা যাও, যাবেশ-গিলিয়দ-নিবাসীদিগকে স্ত্রীলোক ও বালকবালিকাশুদ্ধ খড়্‌গধারে আঘাত কর। আর এই কর্ম্ম করিবে; প্রত্যেক পুরুষকে এবং পুরুষের সহিত শয়নজ্ঞাতা প্রত্যেক স্ত্রীকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিবে। আর তাহারা যাবেশ-গিলিয়দ-নিবাসীদের মধ্যে এমন চারি শত কুমারী পাইল, যাহারা পুরুষের সহিত শয়ন করিয়া তাহার পরিচয় প্রাপ্ত হয় নাই। তাহারা কনান দেশস্থ শীলোর শিবিরে তাহাদিগকে আনিল। পরে সমস্ত মণ্ডলী লোক পাঠাইয়া রিম্মোণ শৈলে অবস্থিত বিন্যামীন-সন্তানদের সহিত আলাপ করিল ও তাহাদের কাছে সন্ধি ঘোষণা করিল। সেই সময়ে বিন্যামীনের লোকেরা ফিরিয়া আসিল, আর তাহারা যাবেশ-গিলিয়দস্থ যে কন্যাদিগকে জীবিত রাখিয়াছিল, উহাদের সহিত তাহাদের বিবাহ দিল; তথাপি উহাদের অকুলান হইল। আর সদাপ্রভু ইস্রায়েল-বংশসমূহের মধ্যে ছিদ্র করিয়াছিলেন; এই কারণ লোকেরা বিন্যামীনের জন্য অনুতাপ করিল। পরে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গ কহিলেন, বিন্যামীন হইতে স্ত্রীজাতি উচ্ছিন্ন হইয়াছে, অতএব অবশিষ্ট লোকদের বিবাহ দিবার জন্য আমাদের কি কর্ত্তব্য? আরও কহিলেন ইস্রায়েলের মধ্যে এক বংশের লোপ যেন না হয়, তজ্জন্য বিন্যামীনের ঐ রক্ষাপ্রাপ্ত লোকদের একটী অধিকার থাকা আবশ্যক। কিন্তু আমরা উহাদের সহিত আমাদের কন্যাদের বিবাহ দিতে পারি না; কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ এই দিব্য করিয়াছে, যে কেহ বিন্যামীনকে কন্যা দিবে, সে শাপগ্রস্ত হইবে। শেষে তাঁহারা কহিলেন, দেখ, শীলোতে প্রতিবৎসর সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক উৎসব হইয়া থাকে। উহা বৈথেলের উত্তরদিকে, বৈথেল হইতে যে রাজপথ শিখিমের দিকে গিয়াছে, তাহার পূর্ব্বদিকে, এবং লবোনার দক্ষিণদিকে অবস্থিত। তাহাতে তাঁহারা বিন্যামীন-সন্তানগণকে আজ্ঞা করিলেন, তোমরা গিয়া দ্রাক্ষাক্ষেত্রে লুকাইয়া থাক; নিরীক্ষণ কর, আর দেখ, যদি শীলোর কন্যাগণ দলের মধ্যে নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইয়া আইসে, তবে তোমরা দ্রাক্ষাক্ষেত্র হইতে বাহির হইয়া প্রত্যেকে শীলোর কন্যাদের মধ্য হইতে আপন আপন স্ত্রী ধরিয়া লইয়া বিন্যামীন দেশে প্রস্থান করিও। আর তাহাদের পিতা কিম্বা ভ্রাতৃগণ যদি বিবাদ করিবার জন্য আমাদের নিকটে আইসে, তবে আমরা তাহাদিগকে বলিব, তোমরা আমাদের অনুরোধে তাহাদিগকে দান কর; কেননা যুদ্ধের সময়ে আমরা তাহাদের প্রত্যেক জনের জন্য স্ত্রী পাই নাই; আর তোমরাও তাহাদিগকে দেও নাই, দিলে এখন অপরাধী হইতে। তখন বিন্যামীন-সন্তানগণ তদ্রূপ করিয়া আপনাদের সংখ্যানুসারে নৃত্যকারিণী কন্যাদের মধ্য হইতে স্ত্রী ধরিয়া গ্রহণ করিল; পরে আপন আপন অধিকারে ফিরিয়া গেল, এবং পুনর্ব্বার নগরগুলি নির্ম্মাণ করিয়া তাহাদের মধ্যে বাস করিল। আর সেই সময়ে ইস্রায়েল-সন্তানগণ তথা হইতে প্রত্যেকে আপন আপন বংশের ও গোষ্ঠীর কাছে প্রস্থান করিল; তাহারা তথা হইতে বাহির হইয়া আপন আপন অধিকারে গেল। তৎকালে ইস্রায়েলের মধ্যে রাজা ছিল না; যাহার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হইত, সে তাহাই করিত। আর বিচারকর্ত্তৃগণের কর্ত্তৃত্বকালে দেশে এক বার দুর্ভিক্ষ হয়। আর বৈৎলেহম-যিহূদার একটী পুরুষ, তাহার স্ত্রী ও দুই পুত্র মোয়াব দেশে প্রবাস করিতে যায়। সেই পুরুষটীর নাম ইলীমেলক, তাহার স্ত্রীর নাম নয়মী, এবং তাহার দুই পুত্রের নাম মহলোন ও কিলিয়োন; ইহারা বৈৎলেহম-যিহূদানিবাসী ইফ্রাথীয়। ইহারা মোয়াব দেশে গিয়া সেখানে থাকিয়া গেল। পরে নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মরিল, তাহাতে সে ও তাহার দুই পুত্র অবশিষ্ট থাকিল। পরে সেই দুই জনে দুই মোয়াবীয়া কন্যাকে বিবাহ করিল। এক জনের নাম অর্পা, আর এক জনের নাম রূৎ। আর তাহারা অনুমান দশ বৎসর কাল সেই স্থানে বাস করিল। পরে মহলোন ও কিলিয়োন এই দুই জনও মরিয়া গেল, তাহাতে নয়মী পতিহীনা ও উভয়পুত্রবিহীনা হইয়া অবশিষ্টা রহিল। তখন সে দুইটী পুত্রবধূকে সঙ্গে লইয়া মোয়াব দেশ হইতে ফিরিয়া যাইবার জন্য উঠিল; কারণ সে মোয়াব দেশে শুনিতে পাইয়াছিল যে, সদাপ্রভু আপন প্রজাদের তত্ত্বাবধান করিয়া তাহাদিগকে খাদ্য দ্রব্য দিয়াছেন। সে ও তাহার দুই পুত্রবধূ আপনাদের বাসস্থান হইতে বাহির হইল, এবং যিহূদা দেশে ফিরিয়া যাইবার জন্য পথে চলিতে লাগিল। তখন নয়মী দুই পুত্রবধূকে কহিল, তোমরা আপন আপন মাতার বাটীতে ফিরিয়া যাও; মৃতদের প্রতি ও আমার প্রতি তোমরা যেরূপ দয়া করিয়াছ, সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি তদ্রূপ দয়া করুন। তোমরা উভয়ে যেন স্বামীর বাটীতে বিশ্রাম পাও, সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই বর দিউন। পরে সে তাহাদিগকে চুম্বন করিল; তাহাতে তাহারা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিল। আর তাহারা তাহাকে কহিল, না, আমরা তোমারই সহিত তোমার লোকদের নিকটে ফিরিয়া যাইব। নয়মী কহিল, হে আমার বৎসারা, ফিরিয়া যাও; তোমরা আমার সহিত কেন যাইবে? তোমাদের স্বামী হইবার জন্য এখনও কি আমার গর্ভে সন্তান আছে? হে আমার বৎসারা, ফির, চলিয়া যাও; কেননা আমি বৃদ্ধা, পুনরায় বিবাহ করিতে পারি না; আর আমার প্রত্যাশা আছে, ইহা বলিয়া যদি আমি অদ্য রাত্রিতে বিবাহ করি, আর যদি পুত্রও প্রসব করি, তবে তোমরা কি তাহাদের বয়ঃপ্রাপ্তি পর্য্যন্ত অপেক্ষা করিবে? তোমরা কি সে জন্য বিবাহ করিতে নিবৃত্তা থাকিবে? হে আমার বৎসারা, তাহা নয়, তোমাদের জন্য আমার বড়ই দুঃখ হইয়াছে; কেননা সদাপ্রভুর হস্ত আমার বিরুদ্ধে প্রসারিত হইয়াছে। পরে তাহারা পুনর্ব্বার উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিল, এবং অর্পা আপন শাশুড়ীকে চুম্বন করিল, কিন্তু রূৎ তাহার প্রতি অনুরক্তা রহিল। তখন সে কহিল, ঐ দেখ, তোমার যা আপন লোকদের ও আপন দেবতার নিকটে ফিরিয়া গেল, তুমিও তোমার যার পিছে পিছে ফিরিয়া যাও। কিন্তু রূৎ কহিল, তোমাকে ত্যাগ করিয়া যাইতে, তোমার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া যাইতে, আমাকে অনুরোধ করিও না; তুমি যেখানে যাইবে, আমিও তথায় যাইব; এবং তুমি যেখানে থাকিবে, আমিও তথায় থাকিব; তোমার লোকই আমার লোক, তোমার ঈশ্বরই আমার ঈশ্বর; তুমি যেখানে মরিবে, আমিও তথায় মরিব, সেই স্থানেই কবরপ্রাপ্ত হইব; কেবল মৃত্যু ব্যতীত আর কিছুই যদি আমাকে ও তোমাকে পৃথক্‌ করিতে পারে, তবে সদাপ্রভু আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। যখন সে দেখিল, তাহার সহিত যাইতে রূতের দৃঢ় মনস্থ আছে, তখন সে তাহাকে আর কিছু বলিল না। পরে তাহারা দুই জন চলিতে চলিতে শেষে বৈৎলেহমে উপস্থিত হইল। যখন বৈৎলেহমে উপস্থিত হইল, তখন তাহাদের বিষয়ে সমস্ত নগরে জনরব হইল; স্ত্রীলোকেরা কহিল, এ কি নয়মী? সে তাহাদিগকে কহিল, আমাকে নয়মী [মনোরমা] বলিও না; বরং মারা [তিক্তা] বলিয়া ডাক, কেননা সর্ব্বশক্তিমান আমার প্রতি অতিশয় তিক্ত ব্যবহার করিয়াছেন। আমি পরিপূর্ণা হইয়া যাত্রা করিয়াছিলাম, এখন সদাপ্রভু আমাকে শূন্যা করিয়া ফিরাইয়া আনিলেন। তোমরা কেন আমাকে নয়মী বলিয়া ডাকিতেছ? সদাপ্রভু ত আমার বিপক্ষে প্রমাণ দিয়াছেন, সর্ব্বশক্তিমান আমাকে নিগ্রহ করিয়াছেন। এইরূপে নয়মী ফিরিয়া আসিল, তাহার সঙ্গে তাহার পুত্রবধূ মোয়াবীয়া রূৎ মোয়াব দেশ হইতে আসিল; যব কাটা আরম্ভ হইলেই তাহারা বৈৎলেহমে উপস্থিত হইল। নয়মীর স্বামী ইলীমেলকের গোষ্ঠীর এক জন ভদ্র ধনবান জ্ঞাতি ছিলেন; তাঁহার নাম বোয়স। পরে মোয়াবীয়া রূৎ নয়মীকে কহিল, নিবেদন করি, আমি ক্ষেত্রে গিয়া যাহার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাই, তাহার পিছে পিছে শস্যের পতিত শীষ কুড়াই। নয়মী কহিল, বৎসে, যাও। পরে সে গিয়া এক ক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া ছেদকদের পশ্চাতে পশ্চাতে পতিত শীষ কুড়াইতে লাগিল; আর ঘটনাক্রমে সে ইলীমেলকের গোষ্ঠীর ঐ বোয়সের ভূমিখণ্ডেই গিয়া পড়িল। আর দেখ, বোয়স বৈৎলেহম হইতে আসিয়া ছেদকদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু তোমাদের সহবর্ত্তী হউন। তাহারা উত্তর করিল, সদাপ্রভু আপনাকে আশীর্ব্বাদ করুন। পরে বোয়স ছেদকদের উপরে নিযুক্ত আপন চাকরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এ যুবতী কাহার? তখন ছেদকদের উপরে নিযুক্ত চাকর কহিল, এ সেই মোয়াবীয়া যুবতী, যে নয়মীর সহিত মোয়াব দেশ হইতে আসিয়াছে; সে বলিল, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে ছেদকদের পশ্চাতে পশ্চাতে আটির মধ্যে মধ্যে শীষ কুড়াইয়া সংগ্রহ করিতে দেও; অতএব সে আসিয়া প্রাতঃকাল অবধি এখন পর্য্যন্ত রহিয়াছে; কেবল ঘরে অল্পক্ষণ ছিল। পরে বোয়স রূৎকে কহিলেন, বৎসে, বলি শুন; তুমি কুড়াইতে অন্য ক্ষেত্রে যাইও না, এখান হইতে চলিয়া যাইও না, কিন্তু এখানে আমার যুবতী দাসীদের সঙ্গে সঙ্গে থাক। ছেদকেরা যে ক্ষেত্রের শস্য কাটীবে, তাহার প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া তুমি দাসীদের পশ্চাতে যাইও; তোমাকে স্পর্শ করিতে আমি কি যুবকদিগকে নিষেধ করি নাই? আর পিপাসা পাইলে তুমি পাত্রের নিকটে গিয়া, যুবকগণ যে জল তুলিয়াছে, তাহা হইতে পান করিও। তাহাতে সে উবুড় হইয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিয়া তাঁহাকে কহিল, আমি বিদেশিনী, আপনি আমার তত্ত্ব লইতেছেন, আপনার দৃষ্টিতে এ অনুগ্রহ আমি কিসে পাইলাম? বোয়স উত্তর করিলেন, তোমার স্বামীর মৃত্যুর পরে তুমি তোমার শাশুড়ীর সহিত যেরূপ ব্যবহার করিয়াছ, এবং আপন পিতামাতা ও জন্মদেশ ছাড়িয়া, পূর্ব্বে যাহাদিগকে জানিতে না, এমন লোকদের নিকটে আসিয়াছ, এ সকল কথা আমার শুনা হইয়াছে। সদাপ্রভু তোমার কর্ম্মের উপযোগী ফল দিউন; তুমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর যে সদাপ্রভুর পক্ষের নীচে শরণ লইতে আসিয়াছ, তিনি তোমাকে সম্পূর্ণ পুরস্কার দিউন। সে কহিল, হে আমার প্রভু, আপনার দৃষ্টিতে যেন আমি অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই; আপনি আমাকে সান্ত্বনা করিলেন, এবং আপনার এই দাসীর কাছে চিত্তপ্রবোধক কথা কহিলেন; আমি ত আপনার একটী দাসীর তুল্যাও নহি। পরে ভোজন সময়ে বোয়স তাহাকে কহিলেন, তুমি এই স্থানে আসিয়া রুটী ভোজন কর, এবং তোমার রুটীখণ্ড সিরকায় ডুবাইয়া লও। তখন সে ছেদকদের পার্শ্বে বসিলে তাহারা তাহাকে ভাজা শস্য দিল; তাহাতে সে ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইল, এবং কিছু অবশিষ্ট রাখিল। পরে সে কুড়াইতে উঠিলে বোয়স আপন চাকরদিগকে আজ্ঞা করিলেন, উহাকে আটির মধ্যেও কুড়াইতে দেও, এবং উহাকে তিরস্কার করিও না; আবার উহার জন্য বাঁধা আটি হইতে কতক টানিয়া রাখিয়া দেও, উহাকে কুড়াইতে দেও, ধমকাইও না। আর সে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত সেই ক্ষেত্রে কুড়াইল; পরে সে আপনার কুড়ান শস্য মাড়িলে প্রায় এক ঐফা যব হইল। পরে সে তাহা তুলিয়া লইয়া নগরে গেল, এবং তাহার শাশুড়ী তাহার কুড়ান শস্য দেখিল; আর সে আহার করিয়া তৃপ্ত হইলে পর যাহা রাখিয়াছিল, তাহা বাহির করিয়া তাহাকে দিল। তখন তাহার শাশুড়ী তাহাকে কহিল, তুমি অদ্য কোথায় কুড়াইয়াছ? কোথায় কর্ম্ম করিয়াছ? যে ব্যক্তি তোমার তত্ত্ব লইয়াছেন, তিনি ধন্য হউন। তখন সে কাহার নিকটে কর্ম্ম করিয়াছিল, তাহা শাশুড়ীকে জানাইয়া কহিল, যে ব্যক্তির নিকটে অদ্য কর্ম্ম করিয়াছি, তাঁহার নাম বোয়স। তাহাতে নয়মী আপন পুত্রবধূকে কহিল, তিনি সেই সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদ লাভ করুন, যিনি জীবিত ও মৃতদের প্রতি দয়া নিবৃত্ত করেন নাই। নয়মী আরও কহিল, সেই ব্যক্তি আমাদের নিকট-সম্বন্ধীয়, তিনি আমাদের মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতিদের মধ্যে এক জন। আর মোয়াবীয়া রূৎ কহিল, তিনি আমাকে ইহাও কহিলেন, আমার সমস্ত ফসল কাটা সাঙ্গ না হওয়া পর্য্যন্ত তুমি আমার চাকরদের সঙ্গে সঙ্গে থাক। তাহাতে নয়মী আপন পুত্রবধূ রূৎকে কহিল, বৎসে, তুমি যে তাঁহার দাসীদের সহিত যাও, এবং অন্য কোন ক্ষেত্রে কেহ যে তোমার দেখা না পায়, সে ভাল। অতএব যব ও গোম কাটা শেষ হওয়া পর্য্যন্ত সে কুড়াইবার জন্য বোয়সের দাসীদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিল, এবং আপন শাশুড়ীর সহিত বাস করিল। পরে তাহার শাশুড়ী নয়মী তাহাকে কহিল, বৎসে, তোমার যাহাতে মঙ্গল হয়, এমন বিশ্রামস্থান আমি কি তোমার জন্য চেষ্টা করিব না? সম্প্রতি যে বোয়সের দাসীদের সহিত তুমি ছিলে, তিনি কি আমাদের জ্ঞাতি নহেন? দেখ, তিনি অদ্য রাত্রিতে খামারে যব ঝাড়িবেন। অতএব তুমি এখন স্নান কর, তৈল মর্দ্দন কর, তোমার পরিচ্ছদ পরিধান কর, এবং সেই খামারে নামিয়া যাও; কিন্তু সেই ব্যক্তি ভোজন পান সমাপ্ত না করিলে তাঁহাকে আপনার পরিচয় দিও না। তিনি যখন শয়ন করিবেন, তখন তুমি তাঁহার শয়ন স্থান দেখিয়া নিশ্চয় করিও; পরে সেই স্থানে গিয়া তাঁহার চরণ অনাবৃত করিয়া শয়ন করিও; তাহাতে তিনি আপনি তোমার কর্ত্তব্য তোমাকে কহিবেন। সে উত্তর করিল, তুমি যাহা বলিতেছ, সে সমস্তই আমি করিব। পরে সে ঐ খামারে নামিয়া গিয়া তাহার শাশুড়ী যাহা যাহা আদেশ করিয়াছিল, সমস্তই করিল। ফলত বোয়স ভোজন পান করিলেন, ও তাঁহার অন্তঃকরণ প্রফুল্ল হইলে তিনি শস্যরাশির প্রান্তে শয়ন করিতে গেলেন; আর রূৎ ধীরে ধীরে আসিয়া তাঁহার চরণ অনাবৃত করিয়া শয়ন করিল। পরে মধ্যরাত্রে ঐ পুরুষ চকিত হইয়া পার্শ্ব পরিবর্ত্তন করিলেন; আর দেখ, এক স্ত্রী তাঁহার চরণসমীপে শুইয়া আছে। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কে গা? সে উত্তর করিল, আমি আপনার দাসী রূৎ; আপনার এই দাসীর উপরে আপনি নিজ পক্ষ বিস্তার করুন, কারণ আপনি মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতি। তিনি কহিলেন, অয়ি বৎসে, তুমি সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপাত্রী, কেননা ধনবান কি দরিদ্র কোন যুবা পুরুষের অনুগামিনী না হওয়াতে তুমি প্রথমাপেক্ষা শেষে অধিক সুশীলতা দেখাইলে। এখন বৎসে, ভয় করিও না, তুমি যাহা বলিবে, আমি তোমার জন্য সে সমস্ত করিব; কেননা তুমি যে সাধ্বী, ইহা আমার স্বজাতীয়দের নগর-দ্বারের সকলেই জানে। আর আমি মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতি, ইহা সত্য; কিন্তু আমা হইতেও নিকট-সম্পর্কীয় আর এক জন জ্ঞাতি আছে। অদ্য রাত্রি থাক, প্রাতঃকালে সে যদি তোমাকে মুক্ত করে, তবে ভাল, সে মুক্ত করুক; কিন্তু তোমাকে মুক্ত করিতে যদি তাহার ইচ্ছা না হয়, তবে জীবিত সদাপ্রভুর দিব্য, আমিই তোমাকে মুক্ত করিব; তুমি প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত শুইয়া থাক। তাহাতে রূৎ প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত তাঁহার চরণসমীপে শুইয়া রহিল, পরে কেহ তাহাকে চিনিতে পারে, এমন সময় না হইতে উঠিল; কারণ বোয়স কহিলেন, খামারে ও স্ত্রীলোকটী যে আসিয়াছে, ইহা লোকে জ্ঞাত না হউক। তিনি আরও কহিলেন, তোমার আবরণীয় বস্ত্র আন, পাতিয়া ধর; রূৎ তাহা পাতিয়া ধরিলে তিনি ছয় [মাণ] যব মাপিয়া তাহার মস্তকে দিয়া নগরে চলিয়া গেলেন। পরে রূৎ আপন শাশুড়ীর নিকটে আসিলে তাহার শাশুড়ী কহিল, বৎসে, কি হইল? তাহাতে সে আপনার প্রতি সেই ব্যক্তির কৃত সমস্ত কর্ম্ম তাহাকে জ্ঞাত করিল। আরও কহিল, শাশুড়ীর কাছে সুধু হাতে যাইও না; ইহা বলিয়া তিনি আমাকে এই ছয় [মাণ] যব দিয়াছেন। পরে তাহার শাশুড়ী তাহাকে কহিল, হে বৎসে, এ বিষয়ে কি হয়, তাহা যে পর্য্যন্ত জানিতে না পার, সে পর্য্যন্ত বসিয়া থাক; কেননা সে ব্যক্তি অদ্য এ কর্ম্ম সাঙ্গ না করিয়া বিশ্রাম করিবেন না। পরে বোয়স নগর-দ্বারে উঠিয়া গিয়া সেই স্থানে বসিলেন। আর দেখ, যে মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতির কথা বোয়স বলিয়াছিলেন, সেই ব্যক্তি পথ দিয়া আসিতেছিল; তাহাতে বোয়স তাহাকে বলিলেন, ওহে অমুক, পথ ছাড়িয়া এই স্থানে আসিয়া বস; তখন সে পথ ছাড়িয়া আসিয়া বসিল। পরে বোয়স নগরের দশ জন প্রাচীনকে লইয়া কহিলেন, আপনারাও এই স্থানে বসুন। তাঁহারা বসিলেন। তখন বোয়স ঐ মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতিকে কহিলেন, আমাদের ভ্রাতা ইলীমেলকের যে ভূমিখণ্ড ছিল, তাহা মোয়াব দেশ হইতে আগতা নয়মী বিক্রয় করিতেছেন। অতএব আমি তোমাকে এই কথা জানাইতে মনস্থ করিয়াছি; তুমি এই সমাসীন লোকদের সাক্ষাতে ও আমার স্বজাতীয়দের প্রাচীনবর্গের সাক্ষাতে তাহা ক্রয় কর। যদি তুমি মুক্ত করিতে চাও, মুক্ত কর; কিন্তু যদি মুক্ত করিতে না চাও, আমাকে বল, আমি জানিতে চাই; কেননা তুমি মুক্ত করিলে আর কেহ করিতে পারে না; কিন্তু তোমার পরে আমি পারি। সে কহিল, আমি মুক্ত করিব। তখন বোয়স কহিলেন, তুমি যে দিবসে নয়মীর হস্ত হইতে সেই ক্ষেত্র ক্রয় করিবে, সেই দিবসে মৃত ব্যক্তির অধিকারে তাহার নাম উদ্ধারার্থে তাহার স্ত্রী মোয়াবীয়া রূৎ হইতেও তাহা ক্রয় করিতে হইবে। তখন ঐ মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতি কহিল, আমি আপনার জন্য তাহা মুক্ত করিতে পারি না, করিলে নিজ অধিকার নষ্ট করিব; আমার মুক্ত করিবার বস্তু তুমি মুক্ত কর, কেননা আমি মুক্ত করিতে পারি না। মুক্তি ও বিনিময় বিষয়ক সকল কথা স্থির করিবার জন্য পূর্ব্বকালে ইস্রায়েলের মধ্যে এইরূপ রীতি ছিল; লোকে আপন পাদুকা খুলিয়া প্রতিবাসীকে দিত; ইহা ইস্রায়েলের মধ্যে সাক্ষ্যস্বরূপ হইত। অতএব সেই মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতি যখন বোয়সকে কহিল, তুমি আপনি তাহা ক্রয় কর, তখন সে আপনার পাদুকা খুলিয়া দিল। পরে বোয়স প্রাচীনবর্গকে ও সকল লোককে কহিলেন, অদ্য আপনারা সাক্ষী হইলেন, ইলীমেলকের যাহা যাহা ছিল, এবং কিলিয়োনের ও মহলোনের যাহা যাহা ছিল, সে সমস্ত আমি নয়মীর হস্ত হইতে ক্রয় করিলাম। আর আপন ভ্রাতৃগণের মধ্যে ও আপন বসতিস্থানের দ্বারে সেই মৃত ব্যক্তির নাম যেন লুপ্ত না হয়, এই জন্য সেই মৃত ব্যক্তির অধিকারে তাহার নাম উদ্ধারার্থে আমি আপন স্ত্রীরূপে মহলোনের স্ত্রী মোয়াবীয়া রূৎকেও ক্রয় করিলাম; অদ্য আপনারা সাক্ষী হইলেন। তাহাতে নগরদ্বারবর্ত্তী সমস্ত লোক ও প্রাচীনবর্গ কহিলেন, আমরা সাক্ষী হইলাম। যে স্ত্রী তোমার কুলে প্রবিষ্ট হইল, সদাপ্রভু তাহাকে রাহেল ও লেয়ার তুল্যা করুন, যে দুই জন ইস্রায়েলের কুল নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন; আর ইফ্রাথায় তোমার ঐশ্বর্য্য ও বৈৎলেহমে তোমার সুখ্যাতি হউক। সদাপ্রভু সেই যুবতীর গর্ভ হইতে যে সন্তান তোমাকে দিবেন, তাহা দ্বারা তামরের গর্ভজাত যিহূদার পুত্র পেরসের কুলের ন্যায় তোমার কুল হউক। পরে বোয়স রূৎকে বিবাহ করিলে তিনি তাঁহার স্ত্রী হইলেন, এবং বোয়স তাঁহার কাছে গমন করিলে তিনি সদাপ্রভু হইতে গর্ভধারণশক্তি পাইয়া পুত্র প্রসব করিলেন। পরে স্ত্রীলোকেরা নয়মীকে কহিল, ধন্য সদাপ্রভু, তিনি অদ্য তোমাকে মুক্তিকর্ত্তা জ্ঞাতি হইতে বঞ্চিত করেন নাই; তাঁহার নাম ইস্রায়েলের মধ্যে বিখ্যাত হউক। [এই বালকটী] তোমার প্রাণ পুনরায় স্বস্থ করিবে, ও বৃদ্ধাবস্থায় তোমার প্রতিপালক হইবে; কেননা যে তোমাকে ভালবাসে ও তোমার পক্ষে সাত পুত্র হইতেও উত্তমা, তোমার সেই পুত্রবধূই ইহাকে প্রসব করিয়াছে। তখন নয়মী বালকটীকে লইয়া নিজের কোলে রাখিল, ও তাহার ধাত্রী হইল। পরে ‘নয়মীর এক পুত্র জন্মিল’, এই বলিয়া তাহার প্রতিবাসিনীগণ তাহার নাম রাখিল; তাহারা তাহার নাম ওবেদ রাখিল। সে যিশয়ের পিতা, আর যিশয় দায়ুদের পিতা। পেরসের বংশাবলি এই। পেরসের পুত্র হিষ্রোণ; হিষ্রোণের পুত্র রাম; রামের পুত্র অম্মীনাদব; অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন; নহশোনের পুত্র সল্‌মোন; সল্‌মোনের পুত্র বোয়স; বোয়সের পুত্র ওবেদ; ওবেদের পুত্র যিশয়; ও যিশয়ের পুত্র দায়ূদ। পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ রামাথয়িম-সোফীম-নিবাসী ইল্‌কানা নামে এক জন ইফ্রয়িমীয় ছিলেন; তিনি সুফের বৃদ্ধ প্রপৌত্র, তোহের প্রপৌত্র, ইলীহূর পৌত্র, যিরোহমের পুত্র। তাঁহার দুই স্ত্রী; এক জনের নাম হান্না, আর এক জনের নাম পনিন্না; পনিন্নার সন্তান হইয়াছিল, কিন্তু হান্নার সন্তান হয় নাই। এই ব্যক্তি প্রতিবৎসর আপন নগর হইতে শীলোতে গিয়া বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রণিপাত ও বলিদান করিতেন। সেই স্থানে এলির দুই পুত্র হফ্‌নি ও পীনহস সদাপ্রভুর যাজক ছিল। আর যজ্ঞের দিনে ইল্‌কানা আপন স্ত্রী পনিন্নাকে ও তাঁহার সমস্ত পুত্রকন্যাকে অংশ দিতেন; কিন্তু হান্নাকে দ্বিগুণ অংশ দিতেন; কেননা তিনি হান্নাকে ভালবাসিতেন, কিন্তু সদাপ্রভু হান্নার গর্ভ রুদ্ধ করিয়াছিলেন। সদাপ্রভু তাঁহার গর্ভ রুদ্ধ করাতে সপত্নী তাঁহার মনস্তাপ জন্মাইবার চেষ্টায় তাঁহাকে বিরক্ত করিতেন। বৎসর বৎসর যখন হান্না সদাপ্রভুর গৃহে যাইতেন, তখন তাঁহার স্বামী ঐরূপ করিতেন, এবং পনিন্নাও ঐ প্রকারে তাঁহাকে বিরক্ত করিতেন; তাই তিনি ভোজন না করিয়া ক্রন্দন করিতেন। তাহাতে তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা তাঁহাকে কহিতেন, হান্না, কেন কাঁদিতেছ? কেন ভোজন করিতেছ না? তোমার মন শোকাকুল কেন? তোমার কাছে দশ পুত্র হইতেও কি আমি উত্তম নহি? একদা শীলোতে ভোজন পান সাঙ্গ হইলে হান্না উঠিলেন। তখন সদাপ্রভুর মন্দির-দ্বারের কাছে এলি যাজক আসনের উপরে বসিয়া ছিলেন। আর হান্না তিক্তপ্রাণা হইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রার্থনা করিতে ও অনেক রোদন করিতে লাগিলেন। তিনি মানত করিয়া কহিলেন, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যদি তুমি তোমার এই দাসীর দুঃখের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, আমাকে স্মরণ কর, ও আপন দাসীকে ভুলিয়া না গিয়া আপন দাসীকে পুত্রসন্তান দেও, তবে আমি চিরদিনের জন্য তাহাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিব; তাহার মস্তকে ক্ষুর উঠিবে না। যতক্ষণ হান্না সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দীর্ঘ প্রার্থনা করিলেন, ততক্ষণ এলি তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন। কেননা হান্না মনে মনে কথা কহিতেছিলেন, কেবল তাঁহার ওষ্ঠাধর নড়িতেছিল, কিন্তু তাঁহার স্বর শুনা গেল না; এই জন্য এলি তাঁহাকে মত্তা জ্ঞান করিলেন। তাই এলি তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কতক্ষণ মত্ত হইয়া থাকিবে? তোমার দ্রাক্ষারস তোমা হইতে দূর কর। হান্না উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, তাহা নয়, আমি দুঃখিনী স্ত্রী, দ্রাক্ষারস কিম্বা সুরা পান করি নাই, কিন্তু সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আমার মনের কথা ভাঙ্গিয়া বলিয়াছি। আপনার এই দাসীকে আপনি পাষণ্ড মনে করিবেন না; বস্তুতঃ আমার চিন্তার ও মনস্তাপের বাহুল্য প্রযুক্ত আমি এই পর্য্যন্ত কথা কহিতেছিলাম। তখন এলি উত্তর করিলেন, তুমি শান্তিতে যাও; ইস্রায়েলের ঈশ্বরের কাছে যাহা যাচ্ঞা করিলে, তাহা তিনি তোমাকে দিউন। হান্না কহিলেন, আপনার দৃষ্টিতে আপনার এই দাসী অনুগ্রহ প্রাপ্ত হউক। পরে সেই স্ত্রী আপন পথে চলিয়া গেলেন, এবং ভোজন করিলেন; তাঁহার মুখ আর বিষণ্ণ রহিল না। পরে তাঁহারা প্রত্যূষে উঠিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রণিপাত করিলেন, এবং ফিরিয়া রামায় আপন বাটীতে আসিলেন। আর ইল্‌কানা আপন স্ত্রী হান্নার পরিচয় লইলে সদাপ্রভু তাঁহাকে স্মরণ করিলেন। তাহাতে নিরূপিত সময়ের মধ্যে হান্না গর্ভধারণ করিয়া পুত্র প্রসব করিলেন; আর ‘আমি সদাপ্রভুর কাছে ইহাকে যাচ্ঞা করিয়া লইয়াছি’ এই বলিয়া তাহার নাম শমূয়েল রাখিলেন। পরে তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা ও তাঁহার সমস্ত পরিবার সদাপ্রভুর উদ্দেশে বার্ষিক বলিদান ও মানত নিবেদন করিতে গেলেন; কিন্তু হান্না গেলেন না; কারণ তিনি স্বামীকে কহিলেন, বালকটী স্তন্য ত্যাগ করিলেই আমি তাহাকে লইয়া যাইব, তাহাতে সে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নীত হইয়া নিত্য সে স্থানে থাকিবে। তাঁহার স্বামী ইল্‌কানা তাঁহাকে কহিলেন, তোমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই কর; তাহার স্তন্য ত্যাগ পর্য্যন্ত বিলম্ব কর; সদাপ্রভু কেবল আপন বাক্য স্থির করুন। অতএব সে স্ত্রী গৃহে রহিলেন, এবং বালকটী যাবৎ স্তন্য ত্যাগ না করিল, তাবৎ তাহাকে স্তন্যপান করাইলেন। পরে তাহার স্তন্য ত্যাগ হইলে তিনি তিনটী বৃষ, এক ঐফা সূজী ও এক কূপা দ্রাক্ষারসের সহিত তাহাকে শীলোতে সদাপ্রভুর গৃহে লইয়া গেলেন; তখন বালকটী অল্পবয়স্ক ছিল। পরে তাঁহারা বৃষ বলিদান করিলেন ও বালকটীকে এলির কাছে আনিলেন। আর হান্না কহিলেন, হে আমার প্রভু, আপনার প্রাণের দিব্য, হে আমার প্রভু, যে স্ত্রী সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রার্থনা করিতে করিতে এই স্থানে আপনার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিল, সে আমি। আমি এই বালকের জন্য প্রার্থনা করিয়াছিলাম; আর সদাপ্রভুর কাছে যাহা চাহিয়াছিলাম, তাহা তিনি আমাকে দিয়াছেন। এই জন্য আমিও ইহাকে সদাপ্রভুকে দিলাম; এ চিরজীবনের জন্য সদাপ্রভুকে দত্ত। পরে তাঁহারা সেই স্থানে সদাপ্রভুকে প্রণিপাত করিলেন। পরে হান্না প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, আমার অন্তঃকরণ সদাপ্রভুতে উল্লাসিত, আমার শৃঙ্গ সদাপ্রভুতে উন্নত হইল; শত্রুগণের কাছে আমার মুখ বিকশিত হইল; কারণ তোমার পরিত্রাণে আমি আনন্দিতা। সদাপ্রভুর ন্যায় পবিত্র কেহ নাই, তুমি ব্যতীত আর কেহ নাই, আমাদের ঈশ্বরের তুল্য শৈল নাই। তোমরা এমন মহাশ্লাঘার কথা আর কহিও না, তোমাদের মুখ হইতে দর্প নির্গত না হউক; কেননা সদাপ্রভু জ্ঞানের ঈশ্বর, তাঁহাকর্ত্তৃক কর্ম্ম সকল তুলাতে পরিমিত হয়। বিক্রমীদের ধনুক ভগ্ন হইল, স্খলিতেরা পরাক্রমে বদ্ধকটি হইল। পরিতৃপ্তেরা খাদ্যের জন্য বেতনগ্রাহী হইল, ক্ষুধিতেরা বিশ্রাম প্রাপ্ত হইল; এমন কি, বন্ধ্যা স্ত্রী সপ্ত পুত্র প্রসব করিল, আর বহুপুত্রা ক্ষীণা হইল। সদাপ্রভু মারেন ও বাঁচান, তিনি পাতালে নামান ও ঊর্দ্ধে তুলেন। সদাপ্রভু দরিদ্র করেন ও ধনী করেন, তিনি নত করেন ও উন্নত করেন। তিনি ধূলি হইতে দীনহীনকে তুলেন, সারের ঢিবি হইতে দরিদ্রকে উঠান, কুলীনদের সঙ্গে বসাইয়া দেন, প্রতাপ-সিংহাসনের অধিকারী করেন। কেননা পৃথিবীর স্তম্ভ সকল সদাপ্রভুর; তিনি সেই সকলের উপরে জগৎ স্থাপন করিয়াছেন। তিনি আপন সাধুদিগের চরণ রক্ষা করিবেন, কিন্তু দুষ্টগণ অন্ধকারে স্তব্ধীকৃত হইবে; কেননা বলে কোন মনুষ্য জয়ী হইবে না। সদাপ্রভুর সহিত বিবাদকারিগণ ভগ্ন হইবে; তিনি স্বর্গে থাকিয়া তাহাদের উপরে বজ্রনাদ করিবেন; সদাপ্রভু পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত শাসন করিবেন, তিনি আপন রাজাকে বল দিবেন, আপন অভিষিক্ত ব্যক্তির শৃঙ্গ উন্নত করিবেন। পরে ইল্‌কানা রামায় আপন বাটীতে গেলেন। আর বালকটী এলি যাজকের সম্মুখে সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন। এলির দুই পুত্র পাষণ্ড ছিল, তাহারা সদাপ্রভুকে জানিত না। বাস্তবিক ঐ যাজকেরা লোকদের সহিত এইরূপ ব্যবহার করিত; কেহ বলিদান করিলে যখন তাহার মাংস সিদ্ধ করা যাইত, তখন যাজকের চাকর ত্রিকন্টক শূল হস্তে করিয়া আসিত; এবং ডাবরে কিম্বা হাঁড়িতে কিম্বা কটাহে কিম্বা বহুগুণাতে তাহা মারিত; আর সেই শূলে যাহা উঠিত, তাহা সকলই যাজক শূলে করিয়া লইয়া যাইত; ইস্রায়েলের যত লোক শীলোতে আসিত, সেই সকলের প্রতি তাহারা এইরূপ ব্যবহার করিত। আবার মেদ দগ্ধ না হইতে যাজকের চাকর আসিয়া যজমানকে কহিত, যাজককে শূল্য মাংস দেও; সে তোমা হইতে সিদ্ধ মাংস লইবে না, কাঁচাই লইবে। আর ঐ ব্যক্তি যখন বলিত, প্রথমে মেদ দগ্ধ করিতে হইবে, তৎপরে তোমার প্রাণের অভিলাষ অনুসারে গ্রহণ করিও, তখন সে উত্তর করিয়া বলিত, না, এখনই দেও, নতুবা কাড়িয়া লইব। এইরূপে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ঐ যুবকদের পাপ অতিশয় ভারী হইল, কেননা লোকেরা সদাপ্রভুর নৈবেদ্য অবজ্ঞা করিত। কিন্তু বালক শমূয়েল মসীনা-সূত্রের এফোদ পরিহিত হইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে পরিচর্য্যা করিতেন। আর তাঁহার মাতা প্রতিবৎসর এক একখানি ক্ষুদ্র বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া স্বামির সহিত বার্ষিক বলিদানার্থে আসিবার সময়ে তাহা আনিয়া তাঁহাকে দিতেন। আর এলি ইল্‌কানাকে ও তাঁহার স্ত্রীকে এই আশীর্ব্বাদ করিলেন, সদাপ্রভুকে যাহা দেওয়া হইয়াছিল, তাহার পরিবর্ত্তে তিনি এই স্ত্রী হইতে তোমাকে আরও সন্তান দিউন। পরে তাঁহারা স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। আর সদাপ্রভু হান্নার তত্ত্বাবধান করিলেন; তাহাতে তিনি গর্ভবতী হইলেন, আর তিনি তিন পুত্র ও দুই কন্যা প্রসব করিলেন। ইতিমধ্যে বালক শমূয়েল সদাপ্রভুর সাক্ষাতে বাড়িয়া উঠিতে লাগিলেন। আর এলি অতিশয় বৃদ্ধ হইলেন, এবং সমস্ত ইস্রায়েলের প্রতি তাঁহার পুত্রেরা যাহা যাহা করে, সে সমস্ত কথা, এবং সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে সেবার্থে শ্রেণীভূতা স্ত্রীলোকদের সহিত তাহারা শয়ন করে, সে কথা তিনি শুনিতে পাইলেন। তখন তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা কেন এমন ব্যবহার করিতেছ? আমি এই সমস্ত লোকের নিকটে তোমাদের মন্দ আচরণের কথা শুনিতেছি। হে আমার পুত্রগণ, না না, আমি যে জনরব শুনিতে পাইতেছি, তাহা ভাল নয়; তোমরা সদাপ্রভুর প্রজাদিগকে আজ্ঞালঙ্ঘন করাইতেছ। মনুষ্য যদি মনুষ্যের বিরুদ্ধে পাপ করে, তবে ঈশ্বর তাহার বিচার করিবেন; কিন্তু মনুষ্য যদি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করে, তবে তাহার জন্য কে বিনতি করিবে? তথাপি তাহারা পিতার বাক্যে কর্ণপাত করিত না, কেননা তাহাদিগকে বধ করা সদাপ্রভুর অভিপ্রেত ছিল। কিন্তু বালক শমূয়েল উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাইয়া সদাপ্রভুর কাছে ও মনুষ্যদের কাছে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইতেন। পরে ঈশ্বরের এক জন লোক এলির নিকটে আসিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে সময়ে তোমার পিতার কুল মিসরে ফরৌণ-কুলের অধীন ছিল, তখন আমি না প্রত্যক্ষরূপে তাহাদিগকে দর্শন দিয়াছিলাম? আমার যাজক হইতে, আমার যজ্ঞবেদির উপরে বলি উৎসর্গ করিতে ও ধূপ জ্বালাইতে, আমার সাক্ষাতে এফোদ পরিধান করিতে আমি না ইস্রায়েলের সমস্ত বংশ হইতে তাহাকে মনোনীত করিয়াছিলাম? আর ইস্রায়েল-সন্তানগণের অগ্নিকৃত সমস্ত উপহার না তোমার পিতৃকুলকে দিয়াছিলাম? অতএব আমি [আপন] নিবাসে যাহা উৎসর্গ করিতে আজ্ঞা করিয়াছি, আমার সেই বলি ও নৈবেদ্যের উপরে তোমরা কেন পদাঘাত করিতেছ? এবং আমার প্রজা ইস্রায়েলের সমস্ত নৈবেদ্যের অগ্রিমাংশ দ্বারা যাহাতে তোমরা হৃষ্টপুষ্ট হও, এই আশয়ে তুমি কেন আমা অপেক্ষা আপন পুত্রদিগকে অধিক গৌরবান্বিত করিতেছ? অতএব ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু কহেন, আমি নিশ্চয় বলিয়াছিলাম; তোমার কুল ও তোমার পিতৃকুল যুগে যুগে আমার সম্মুখে গমনাগমন করিবে, কিন্তু এখন সদাপ্রভু কহেন, তাহা আমা হইতে দূরে থাকুক। কেননা যাহারা আমাকে গৌরবান্বিত করে, তাহাদিগকে আমি গৌরবান্বিত করিব; কিন্তু যাহারা আমাকে তুচ্ছ করে, তাহারা তুচ্ছীকৃত হইবে। দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি তোমার বাহু ও তোমার পিতৃকুলের বাহু ছেদন করিব, তোমার কুলে একটী বৃদ্ধও থাকিবে না। আর ঈশ্বর ইস্রায়েলকে যে সমস্ত মঙ্গল দিবেন, তাহাতে তুমি [আমার] নিবাসের সঙ্কট দেখিবে, এবং তোমার কুলে কেহ কখনও বৃদ্ধ হইবে না। আর আমি আপন যজ্ঞবেদি হইতে তোমার যে লোককে ছেদন না করিব, সে তোমার চক্ষুর ক্ষয় ও প্রাণের ব্যথা জন্মাইবার জন্য থাকিবে, এবং তোমার কুলে উৎপন্ন সমস্ত লোক যৌবনাবস্থায় মরিবে। আর তোমার দুই পুত্রের উপরে, হফ্‌নি ও পীনহসের উপরে যাহা ঘটিবে, তাহা তোমার জন্য চিহ্ন হইবে; তাহারা দুই জন এক দিবসে মরিবে। আর আমি আপনার নিমিত্ত এক বিশ্বস্ত যাজককে উৎপন্ন করিব, সে আমার হৃদয়ের ও আমার মনের মত কর্ম্ম করিবে; আর আমি তাহার এক স্থায়ী কুল প্রতিষ্ঠিত করিব; সে নিয়ত আমার অভিষিক্ত ব্যক্তির সম্মুখে গমনাগমন করিবে। আর তোমার কুলের মধ্যে অবশিষ্ট প্রত্যেক জন এক রৌপ্যমুদ্রা ও এক খণ্ড রুটীর নিমিত্ত তাহার কাছে প্রণিপাত করিতে আসিবে, আর বলিবে, বিনয় করি, আমি যাহাতে এক খণ্ড রুটী খাইতে পাই, সে জন্য একটী যাজকের পদে আমাকে নিযুক্ত করুন। আর বালক শমূয়েল এলির সম্মুখে সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা করিতেন। আর তৎকালে সদাপ্রভুর বাক্য দুর্লভ ছিল, দর্শন যখন তখন হইত না। আর তৎকালে ক্ষীণদৃষ্টি হওয়াতে এলি আর দেখিতে পাইতেন না। এক দিন এলি স্বস্থানে শয়ন করিয়া আছেন, ঈশ্বরীয় প্রদীপ নির্ব্বাণ হয় নাই, এবং ঈশ্বরীয় সিন্দুক যে স্থানে ছিল, শমূয়েল সেই স্থানে অর্থাৎ সদাপ্রভুর মন্দিরমধ্যে শুইয়া আছেন; এমন সময়ে সদাপ্রভু শমূয়েলকে ডাকিলেন; আর তিনি উত্তর করিলেন, এই যে আমি। পরে তিনি এলির নিকটে দৌড়িয়া গিয়া কহিলেন, এই যে আমি; আপনি ত আমাকে ডাকিয়াছেন। তিনি কহিলেন, আমি ডাকি নাই, তুমি ফিরিয়া গিয়া শয়ন কর। তখন তিনি গিয়া শয়ন করিলেন। পরে সদাপ্রভু পুনর্ব্বার ডাকিলেন, শমূয়েল; তাহাতে শমূয়েল উঠিয়া এলির নিকটে গিয়া কহিলেন, এই যে আমি; আপনি ত আমাকে ডাকিয়াছেন। তিনি উত্তর করিলেন, বৎস, আমি ডাকি নাই, তুমি ফিরিয়া গিয়া শয়ন কর। সেই সময়ে শমূয়েল সদাপ্রভুর পরিচয় পান নাই, এবং তাঁহার কাছে সদাপ্রভুর বাক্যও প্রকাশিত হয় নাই। পরে সদাপ্রভু তৃতীয় বার শমূয়েলকে ডাকিলেন; তাহাতে তিনি উঠিয়া এলির নিকটে গিয়া কহিলেন, এই যে আমি; আপনি ত আমাকে ডাকিয়াছেন। তখন এলি বুঝিলেন, সদাপ্রভুই বালককে ডাকিতেছেন। অতএব এলি শমূয়েলকে কহিলেন, তুমি গিয়া শয়ন কর; যদি তিনি আবার তোমাকে ডাকেন, তবে বলিও, হে সদাপ্রভু, বলুন, আপনার দাস শুনিতেছে। তখন শমূয়েল গিয়া স্বস্থানে শয়ন করিলেন। পরে সদাপ্রভু আসিয়া দাঁড়াইলেন, এবং অন্য অন্য বারের ন্যায় ডাকিয়া কহিলেন, শমূয়েল, শমূয়েল; আর শমূয়েল উত্তর করিলেন, বলুন, আপনার দাস শুনিতেছে। তখন সদাপ্রভু শমূয়েলকে কহিলেন, দেখ, আমি ইস্রায়েলের মধ্যে এক কর্ম্ম করিব, তাহা যে শুনিবে, তাহার দুই কর্ণ শিহরিয়া উঠিবে। আমি এলির কুলের বিষয়ে যাহা যাহা বলিয়াছি, যে সমস্ত সেই দিন তাহার বিরুদ্ধে প্রথমাবধি শেষ পর্য্যন্ত সফল করিব। বস্তুতঃ আমি তাহাকে বলিয়াছি, সে যে অপরাধ জানে, সেই অপরাধের জন্য আমি যুগানুক্রমে তাহার কুলকে দণ্ড দিব; কেননা তাহার পুত্রেরা আপনাদিগকে শাপগ্রস্ত করিতেছে, তথাপি সে তাহাদিগকে নিবৃত্ত করে নাই। অতএব এলির কুলের বিষয়ে আমি এই শপথ করিয়াছি যে, এলির কুলের অপরাধ বলিদান কি নৈবেদ্য দ্বারা কখনই পরিষ্কৃত হইবে না। শমূয়েল প্রভাত পর্য্যন্ত শুইয়া রহিলেন, পরে সদাপ্রভুর গৃহের কবাট মুক্ত করিলেন, কিন্তু শমূয়েল এলিকে ঐ দর্শনের বিষয় জানাইতে ভীত হইলেন। পরে এলি শমূয়েলকে ডাকিলেন, কহিলেন, হে আমার বৎস, শমূয়েল! তিনি উত্তর করিলেন, এই যে আমি। এলি জিজ্ঞাসা করিলেন, তিনি তোমাকে কি কথা কহিলেন? বিনয় করি, আমা হইতে তাহা গোপন করিও না; ঈশ্বর যে যে কথা তোমাকে বলিয়াছেন, তাহার কোন কথা যদি আমা হইতে গোপন কর, তবে তিনি তোমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। তখন শমূয়েল তাঁহাকে সেই সমস্ত কথা কহিলেন, কিছুই গোপন করিলেন না। তখন এলি কহিলেন, তিনি সদাপ্রভু; তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই করুন। পরে শমূয়েল বাড়িয়া উঠিতে লাগিলেন, এবং সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন, তাঁহার কোন কথা ভূমিতে পড়িতে দিতেন না। তাহাতে দান অবধি বের্‌-শেবা পর্য্যন্ত সমস্ত ইস্রায়েল জানিতে পাইল যে, শমূয়েল সদাপ্রভুর ভাববাদী হইবার জন্য বিশ্বাসের পাত্র হইয়াছেন। আর সদাপ্রভু শীলোতে পুনরায় দর্শন দিলেন, কেননা সদাপ্রভু শীলোতে শমূয়েলের কাছে সদাপ্রভুর বাক্য দ্বারা আপনাকে প্রকাশ করিতেন। আর সমস্ত ইস্রায়েলের কাছে শমূয়েলের বাক্য উপস্থিত হইত। পরে ইস্রায়েল যুদ্ধার্থে পলেষ্টীয়দের বিপরীতে বাহির হইয়া এবন্‌-এষরে শিবির স্থাপন করিল, এবং পলেষ্টীয়েরা অফেকে শিবির স্থাপন করিল। আর পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সৈন্যরচনা করিল; যখন যুদ্ধ বাধিয়া গেল, তখন ইস্রায়েল পলেষ্টীয়দের সম্মুখে আহত হইল; তাহারা ঐ যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যশ্রেণীর অনুমান চারি সহস্র লোককে নিহনন করিল। পরে লোকেরা শিবিরে প্রবেশ করিলে ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ কহিলেন, সদাপ্রভু অদ্য পলেষ্টীয়দের সম্মুখে আমাদিগকে কেন আঘাত করিলেন? আইস, আমরা শীলো হইতে আপনাদের নিকটে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক আনাই, যেন তাহা আমাদের মধ্যে আসিয়া শত্রুগণের হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার করে। অতএব লোকেরা শীলোতে দূত পাঠাইয়া বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যিনি করূবদ্বয়ে আসীন, তাঁহার নিয়ম-সিন্দুক তথা হইতে আনাইল। তখন এলির দুই পুত্র, হফ্‌নি ও পীনহস, সে স্থানে ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুকের সহিত ছিল। পরে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক শিবিরে উপস্থিত হইলে সমস্ত ইস্রায়েল এমন মহাসিংহনাদ করিয়া উঠিল যে, পৃথিবী কাঁপিতে লাগিল। তখন পলেষ্টীয়েরা ঐ সিংহনাদের ধ্বনি শুনিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ইব্রীয়দের শিবিরে মহাসিংহনাদের ঐ ধ্বনি হইতেছে কেন? পরে তাহারা বুঝিল, সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক শিবিরে আসিয়াছে। তখন পলেষ্টীয়েরা ভীত হইয়া কহিল, শিবিরে ঈশ্বর আসিয়াছেন। আরও কহিল, হায় হায়, ইহার পূর্ব্বে ত কখনও এমন হয় নাই। হায়, হায়, এই পরাক্রমী দেবগণের হস্ত হইতে আমাদিগকে কে উদ্ধার করিবে? ইহাঁরা সেই দেবতা, যাঁহারা প্রান্তরে সর্ব্বপ্রকার আঘাতে মিস্রীয়দিগকে বধ করিয়াছিলেন। হে পলেষ্টীয়েরা, বলবান হও, পুরুষত্ব দেখাও; ঐ ইব্রীয়েরা যেমন তোমাদের দাস হইল, তদ্রূপ তোমরা যেন উহাদের দাস না হও; পুরুষত্ব দেখাও, যুদ্ধ কর। তখন পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করিলেন, এবং ইস্রায়েল আহত হইয়া প্রত্যেক জন আপন আপন তাম্বুতে পলায়ন করিল। আর মহাসংহার হইল, কেননা ইস্রায়েলের মধ্যে ত্রিশ সহস্র পদাতিক মারা পড়িল। আর ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুহস্তগত হইল, এবং এলির দুই পুত্র, হফ্‌নি ও পীনহস, মারা পড়িল। তখন বিন্যামীনীয় এক জন লোক সৈন্যশ্রেণী হইতে দৌড়িয়া গিয়া সেই দিবসে শীলোতে উপস্থিত হইল; তাহার বস্ত্র ছিন্ন ও মস্তকে মৃত্তিকা ছিল। যখন সে আসিতেছিল, দেখ, পথের পার্শ্বে এলি আপন আসনে বসিয়া প্রতীক্ষা করিতেছিলেন; কেননা তাঁহার অন্তঃকরণ ঈশ্বরের সিন্দুকের জন্য থরথর করিয়া কাঁপিতেছিল। পরে সেই লোকটী নগরে উপস্থিত হইয়া ঐ সংবাদ দিলে নগরস্থ সকল লোক ক্রন্দন করিতে লাগিল। আর এলি সেই ক্রন্দনের শব্দ শুনিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এই কলরবের কারণ কি? তখন সেই লোকটী শীঘ্র আসিয়া এলিকে সংবাদ দিল। ঐ সময়ে এলি আটানব্বই বৎসর বয়স্ক ছিলেন, এবং ক্ষীণদৃষ্টি হওয়াতে দেখিতে পাইতেন না। সেই ব্যক্তি এলিকে বলিল, আমি সৈন্যশ্রেণী হইতে আসিয়াছি; অদ্যই সৈন্যশ্রেণী হইতে পলাইয়া আসিয়াছি। এলি জিজ্ঞাসা করিলেন, বৎস, সমাচার কি? যে সংবাদ আনিয়াছিল, সে উত্তর করিল, ইস্রায়েল পলেষ্টীয়দের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিয়াছে, আবার লোকদের মধ্যে মহাসংহার হইয়াছে; আবার আপনার দুই পুত্র হফ্‌নি ও পীনহসও মরিয়াছে, এবং ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুহস্তগত হইয়াছে। তখন সে ঈশ্বরের সিন্দুকের নাম করিবামাত্র এলি দ্বারের পার্শ্বে আসন হইতে পশ্চাতে পতিত হইলেন; এবং তাঁহার ঘাড় ভাঙ্গিয়া গেল, তিনি মরিয়া গেলেন, কেননা তিনি বৃদ্ধ ও ভারী ছিলেন। তিনি চল্লিশ বৎসর ইস্রায়েলের বিচার করিয়াছিলেন। তখন তাঁহার পুত্রবধূ, পীনহসের স্ত্রী, গর্ভবতী ছিল, প্রসবকাল সন্নিকট হইয়াছিল; ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুহস্তগত হইয়াছে, এবং তাহার শ্বশুর ও স্বামী মরিয়াছেন, এই সংবাদ শুনিয়া সে নত হইয়া প্রসব করিল; কারণ তাহার প্রসববেদনা হঠাৎ উপস্থিত হইয়াছিল। তখন তাহার মরণ সময়ে যে স্ত্রীলোকেরা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহারা কহিল, ভয় নাই, তুমি ত পুত্র প্রসব করিলে। কিন্তু সে কিছুই উত্তর দিন না, কিছুই মনোযোগ করিল না। পরে সে বালকটীর নাম ঈখাবোদ [হীনপ্রতাপ] রাখিয়া কহিল, ইস্রায়েল হইতে প্রতাপ গেল; কেননা ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুহস্তগত হইয়াছিল, এবং তাহার শ্বশুরের ও স্বামীর মৃত্যু হইয়াছিল। সে কহিল, ইস্রায়েল হইতে প্রতাপ গেল, কারণ ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুহস্তগত হইয়াছে। পলেষ্টীয়েরা ঈশ্বরের সিন্দুক লইয়া এবন্‌-এষর হইতে অস্‌দোদে আনিয়াছিল। পরে পলেষ্টীয়েরা ঈশ্বরের সিন্দুক দাগোন দেবের গৃহে লইয়া গিয়া দাগোনের পার্শ্বে স্থাপন করিল। পরদিবসে অস্‌দোদের লোকেরা প্রত্যূষে উঠিল, আর দেখ, সদাপ্রভুর সিন্দুকের সম্মুখে দাগোন ভূমিতে উবুড় হইয়া পড়িয়া আছে; তাহাতে তাহারা দাগোনকে তুলিয়া পুনর্ব্বার স্বস্থানে স্থাপন করিল। তাহার পরদিবসেও লোকেরা প্রত্যূষে উঠিল, আর দেখ, সদাপ্রভুর সিন্দুকের সম্মুখে দাগোন ভূমিতে উবুড় হইয়া পড়িয়া আছে, এবং গোবরাটে দাগোনের মুণ্ড ও দুই কর ছিন্ন হইয়া পতিত আছে, কেবল দেহমাত্র অবশিষ্ট আছে। এই নিমিত্ত দাগোনের পুরোহিত এবং আর যত লোক দাগোনের মন্দিরে প্রবেশ করে, তাহাদের মধ্যে অদ্য পর্য্যন্ত কেহ অস্‌দোদে স্থিত দাগোনের গোবরাটে পা দেয় না। আর অস্‌দোদীয়দের উপরে সদাপ্রভুর হস্ত ভারী হইল, এবং তিনি তাহাদিগকে সংহার করিলেন, অস্‌দোদের ও আসপাশের লোকদিগকে স্ফোটক দ্বারা আঘাত করিলেন। পরে অস্‌দোদীয়েরা এইরূপ দেখিয়া কহিল, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিন্দুক আমাদের কাছে থাকিবে না; কেননা আমাদের উপরে ও আমাদের দেবতা দাগোনের উপরে তাঁহার হস্ত ক্লেশদায়ক হইয়াছে। অতএব তাহারা লোক পাঠাইয়া পলেষ্টীয়দের ভূপালদিগকে আপনাদের নিকটে একত্র করিয়া কহিল, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিন্দুকের বিষয়ে আমাদের কি কর্ত্তব্য? ভূপালেরা কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিন্দুক গাতে নীত হউক। তাহাতে তাহারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিন্দুক তথায় লইয়া গেল। তাহারা লইয়া গেলে পর ঐ নগরের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর হস্ত অত্যন্ত ত্রাসজনক হইল, এবং তিনি নগরের ছোট কি বড় সকল লোককে আঘাত করিলেন, তাহাদের স্ফোটক হইল। পরে তাহারা ঈশ্বরের সিন্দুক ইক্রোণে প্রেরণ করিল। কিন্তু ঈশ্বরের সিন্দুক ইক্রোণে উপস্থিত হইলে ইক্রোণীয়েরা ক্রন্দন করিয়া কহিল, আমাদিগকে ও আমাদের লোকদিগকে বধ করিবার জন্য উহারা আমাদের কাছে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিন্দুক আনিয়াছে। পরে তাহারা লোক পাঠাইয়া পলেষ্টীয়দের সমস্ত ভূপালকে একত্র করিয়া কহিল, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিন্দুক পাঠাইয়া দিউন, তাহা স্বস্থানে ফিরিয়া যাউক, আমাদিগকে ও আমাদের লোকদিগকে বধ না করুক। কারণ মারীভয়ে নগরের সর্ব্বত্র ত্রাস হইয়াছিল; সেই স্থানে ঈশ্বরের হস্ত অতিশয় ভারী হইয়াছিল। যে লোকেরা মারা না পড়িল, তাহারা স্ফোটকে আহত হইল; আর নগরের আর্ত্তনাদ গগন পর্য্যন্ত উঠিল। সদাপ্রভুর সিন্দুক পলেষ্টীয়দের দেশে সাত মাস থাকিল। পরে পলেষ্টীয়েরা যাজক ও মন্ত্রজ্ঞদিগকে ডাকাইয়া কহিল, সদাপ্রভুর সিন্দুকের বিষয়ে আমাদের কি কর্ত্তব্য? বল দেখি, আমরা কি দিয়া তাহা স্বস্থানে পাঠাইয়া দিব? তাহারা কহিল, তোমরা যদি ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিন্দুক পাঠাইয়া দেও, তবে শূন্য পাঠাইও না, কোন প্রকারে দোষার্থক উপহার তাঁহার কাছে পাঠাইয়া দেও; তাহাতে সুস্থ হইতে পারিবে, এবং তোমাদের হইতে তাঁহার হস্ত কেন অন্তরিত হইতেছে না, তাহা জানিতে পারিবে। তাহারা জিজ্ঞাসা করিল, দোষার্থক উপহাররূপে তাঁহার কাছে কি পাঠাইয়া দিব? তাহারা কহিল, পলেষ্টীয়দের ভূপালগণের সংখ্যানুসারে স্বর্ণময় পাঁচটা স্ফোটক ও স্বর্ণময় পাঁচটা মূষিক দেও, কেননা তোমাদের সকলের উপরে ও তোমাদের ভূপালগণের উপরে একই রূপ আঘাত পড়িয়াছে। অতএব তোমরা আপনাদের স্ফোটকের প্রতিমা ও দেশনাশকারী মূষিকের প্রতিমা নির্ম্মাণ কর, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বরের গৌরব স্বীকার কর; হয় ত তিনি তোমাদের উপর হইতে, তোমাদের দেবগণের ও দেশের উপর হইতে, আপনার হস্ত লঘু করিবেন। আর তোমরা কেন আপন আপন হৃদয় ভারী করিবে? মিস্রীয়েরা ও ফরৌণ এইরূপে আপন আপন হৃদয় ভারী করিয়াছিল; তিনি যখন তাহাদের মধ্যে মহৎ কার্য্য করিলেন, তখন তাহারা কি লোকদিগকে বিদায় করিয়া চলিয়া যাইতে দিল না? অতএব সম্প্রতি [কাষ্ঠ] লইয়া এক নূতন শকট নির্ম্মাণ কর, এবং কখনও যোঁয়ালি বহন করে নাই, এমন দুইটী দুগ্ধবতী গাভী লইয়া সেই শকটে যুড়, কিন্তু তাহাদের বৎস, তাহাদের নিকট হইতে ঘরে লইয়া আইস। আর সদাপ্রভুর সিন্দুক লইয়া সেই শকটের উপরে রাখ, এবং ঐ যে স্বর্ণময় বস্তুগুলি দোষার্থক উপহাররূপে তাঁহাকে দিবে, তাহা তাহার পার্শ্বে আধারে রাখ; পরে বিদায় কর, তাহা যাউক। আর দেখিও, সিন্দুক যদি নিজ সীমার পথ দিয়া বৈৎ-শেমশে যায়, তবে তিনিই আমাদের এই মহৎ অমঙ্গল ঘটাইয়াছেন; নতুবা জানিব, আমাদিগকে যে হস্ত আঘাত করিয়াছে সে তাঁহার নয়, কিন্তু আমাদের প্রতি আকস্মিক ঘটনা হইয়াছে। লোকেরা সেইরূপ করিল; দুগ্ধবতী দুইটী গাভী লইয়া শকটে যুড়িল, ও তাহাদের বৎস দুইটী ঘরে বদ্ধ করিয়া রাখিল। পরে সদাপ্রভুর সিন্দুক এবং ঐ স্বর্ণময় মূষিক ও স্ফোটক প্রতিমাধারী আধার লইয়া শকটের উপরে স্থাপন করিল। আর সেই দুই গাভী বৈৎ-শেমশের সোজা পথ ধরিয়া চলিল, রাজপথ দিয়া হাম্বারব করিতে করিতে চলিল, দক্ষিণে কি বামে ফিরিল না; এবং পলেষ্টীয়দের ভূপালগণ বৈৎ-শেমশের অঞ্চল পর্য্যন্ত তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে গেলেন। ঐ সময়ে বৈৎ-শেমশ নিবাসীরা তলভূমিতে গোম কাটিতেছিল; তাহারা চক্ষু তুলিয়া সিন্দুকটী দেখিল, দেখিয়া আহ্লাদিত হইল। পরে ঐ শকট বৈৎ-শেমশীয় যিহোশূয়ের ক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া স্থগিত হইল; সেই স্থানে একখানা বৃহৎ প্রস্তর ছিল; পরে তাহারা শকটের কাষ্ঠ চিরিয়া ঐ গাভীদিগকে হোমার্থে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করিল। আর লেবীয়েরা সদাপ্রভুর সিন্দুর এবং তৎসহ ঐ স্বর্ণময় বস্তুগুলি সম্বলিত আধার নামাইয়া ঐ মহৎ প্রস্তরের উপরে রাখিল, এবং বৈৎ-শেমশের লোকেরা সেই দিবসে সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোম ও বলিদান করিল। তখন পলেষ্টীয়দের সেই পাঁচ জন ভূপাল তাহা দেখিয়া সেই দিবসে ইক্রোণে ফিরিয়া গেলেন। পলেষ্টীয়েরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোষার্থক উপহার বলিয়া এই এই স্বর্ণময় স্ফোটক উৎসর্গ করিয়াছিল, অস্‌দোদের জন্য এক, ঘসার জন্য এক, অস্কিলোনের জন্য এক, গাতের জন্য এক, ও ইক্রোণের জন্য এক, এবং প্রাচীরবেষ্টিত নগর হউক, কিম্বা পল্লীগ্রাম হউক, পাঁচ জন ভূপালের অধীন পলেষ্টীয়দের যত নগর ছিল, তত স্বর্ণমূষিক। সদাপ্রভুর সিন্দুক যাহার উপরে স্থাপিত হইয়াছিল, সেই বৃহৎ প্রস্তর সাক্ষী, তাহা বৈৎ-শেমশীয় যিহোশূয়ের ক্ষেত্রে অদ্যাপি বিদ্যমান আছে। পরে তিনি বৈৎ-শেমশের লোকদের মধ্যে কাহাকে কাহাকে আঘাত করিলেন, কারণ তাহারা সদাপ্রভুর সিন্দুকে দৃষ্টিপাত করিয়াছিল, ফলতঃ তিনি লোকদের মধ্যে সত্তর জনকে, [এবং] পঞ্চাশ সহস্র জনকে আঘাত করিলেন, তাহাতে লোকেরা বিলাপ করিল, কেননা সদাপ্রভু মহা আঘাতে লোকদিগকে আঘাত করিয়াছিলেন। আর বৈৎ-শেমশের লোকেরা কহিল, সদাপ্রভুর সাক্ষাতে, এই পবিত্র ঈশ্বরের সাক্ষাতে, কে দাঁড়াইতে পারে? আর তিনি আমাদের হইতে কাহার কাছে যাইবেন? পরে তাহারা কিরিয়ৎ-যিয়ারীম-নিবাসীদের কাছে দূত পাঠাইয়া বলিল, পলেষ্টীয়েরা সদাপ্রভুর সিন্দুক ফিরাইয়া আনিয়াছে, তোমরা নামিয়া আইস, আপনাদের নিকটে তাহা তুলিয়া লইয়া যাও। তাহাতে কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের লোকেরা আসিয়া সদাপ্রভুর সিন্দুক তুলিয়া লইয়া গিয়া পর্ব্বতস্থিত অবীনাদবের বাটীতে রাখিল, এবং সদাপ্রভুর সিন্দুক রক্ষার্থে তাহার পুত্র ইলিয়াসরকে পবিত্র করিল। সদাপ্রভুর সিন্দুক কিরিয়ৎ-যিয়ারীমে স্থাপন দিনাবধি দীর্ঘকাল গেল, বিংশতি বৎসর গেল, আর সমস্ত ইস্রায়েল-কুল সদাপ্রভুর পশ্চাতে বিলাপ করিতে লাগিল। তাহাতে শমূয়েল সমস্ত ইস্রায়েল-কুলকে কহিলেন, তোমরা যদি সর্ব্বান্তঃকরণে সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস, তবে আপনাদের মধ্য হইতে বিজাতীয় দেবগণকে ও অষ্টারোৎ দেবীগণকে দূর কর, ও সদাপ্রভুর দিকে আপন আপন অন্তঃকরণ সুস্থির কর, কেবল তাঁহারই সেবা কর; তাহা হইলে তিনি পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিবেন। তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ বাল দেবগণকে ও অষ্টারোৎ দেবীগণকে দূর করিয়া কেবল সদাপ্রভুর সেবা করিতে লাগিল। পরে শমূয়েল কহিলেন, তোমরা সমস্ত ইস্রায়েলকে মিস্‌পাতে একত্র কর; আমি তোমাদের জন্য সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিব। তাহাতে তাহারা মিস্‌পাতে একত্র হইয়া জল তুলিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে ঢালিল, এবং সেই দিবস উপবাস করিয়া সে স্থানে কহিল, আমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। আর শমূয়েল মিস্‌পাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের বিচার করিতে লাগিলেন। পরে পলেষ্টীয়েরা যখন শুনিতে পাইল যে, ইস্রায়েল-সন্তানগণ মিস্‌পাতে একত্র হইয়াছে, তখন পলেষ্টীয়দের ভূপালগণ ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে উঠিয়া আসিলেন; তাহা শুনিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণ পলেষ্টীয়দের হইতে ভীত হইল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ শমূয়েলকে কহিল, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে যেন আমাদিগকে নিস্তার করেন, এই জন্য আপনি তাঁহার কাছে আমাদের নিমিত্ত ক্রন্দন করিতে বিরত হইবেন না। তখন শমূয়েল দুগ্ধপোষ্য এক মেষবৎস লইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে সর্ব্বাঙ্গ হোমবলি উৎসর্গ করিলেন, এবং শমূয়েল ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিলেন; আর সদাপ্রভু তাঁহাকে উত্তর দিলেন। যে সময়ে শমূয়েল ঐ হোমবলি উৎসর্গ করিতেছিলেন, তখন পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য নিকটবর্ত্তী হইল। কিন্তু ঐ দিবসে সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের উপরে মহাবজ্রনাদে গর্জ্জন করিয়া তাহাদিগকে ব্যাকুল করিলেন; তাহাতে তাহারা ইস্রায়েলের সম্মুখে আহত হইল। আর ইস্রায়েল লোকেরা মিস্‌পা হইতে বাহির হইয়া পলেষ্টীয়দের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া বৈৎ-করের নীচে পর্য্যন্ত তাহাদিগকে আঘাত করিল। তখন শমূয়েল একখানা প্রস্তর লইয়া মিস্‌পার ও শেনের মধ্যস্থানে স্থাপন করিলেন, এবং এ পর্য্যন্ত সদাপ্রভু আমাদের সাহায্য করিয়াছেন, এই বলিয়া তাহার নাম এবন-এষর [সাহায্যের প্রস্তর] রাখিলেন। এই প্রকারে পলেষ্টীয়েরা নত হইল, এবং ইস্রায়েলের অঞ্চলে আর আসিল না। আর শমূয়েলের সমস্ত কালে সদাপ্রভুর হস্ত পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে ছিল। আর পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েল হইতে যে সমস্ত নগর হরণ করিয়াছিল, ইক্রোণ অবধি গাৎ পর্য্যন্ত সেই সকল পুনর্ব্বার ইস্রায়েলের হাতে ফিরিয়া আসিল; এবং ইস্রায়েল সেই সমস্তের অঞ্চল পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে উদ্ধার করিল। আর ইমোরীয়দের সহিত ইস্রায়েলের সন্ধি হইল। শমূয়েল যাবজ্জীবন ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। তিনি প্রতিবৎসর বৈথেলে, গিল্‌গলে ও মিস্‌পাতে পরিভ্রমণ করিয়া সেই সকল স্থানে ইস্রায়েলের বিচার করিতেন। পরে তিনি রামাতে ফিরিয়া আসিতেন, কেননা সেই স্থানে তাঁহার বাটী ছিল, এবং সেই স্থানে তিনি ইস্রায়েলের বিচার করিতেন; আর তিনি সেই স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করেন। পরে শমূয়েল যখন বৃদ্ধ হইলেন, তখন আপন পুত্রদিগকে বিচারকর্ত্তা করিয়া ইস্রায়েলের উপরে নিযুক্ত করিলেন। তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম যোয়েল, দ্বিতীয় পুত্রের নাম অবিয়; তাহারা বের্‌-শেবাতে বিচার করিত। কিন্তু তাঁহার পুত্রেরা তাঁহার পথে চলিত না; তাহারা ধনলোভে বিপথে গেল, উৎকোচ লইত, ও বিচার বিপরীত করিত। অতএব ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনবর্গ একত্র হইয়া রামাতে শমূয়েলের নিকটে আসিলেন; আর তাঁহাকে কহিলেন, দেখুন, আপনি বৃদ্ধ হইয়াছেন, এবং আপনার পুত্রেরা আপনার পথে চলে না; এখন অন্য সকল জাতির ন্যায় আমাদের বিচার করিতে আপনি আমাদের উপরে এক জন রাজা নিযুক্ত করুন। কিন্তু, ‘আমাদের বিচার করিতে আমাদিগকে এক জন রাজা দিউন;’ তাঁহাদের এই কথা শমূয়েলের মন্দ বোধ হইল; তাহাতে শমূয়েল সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন। তখন সদাপ্রভু শমূয়েলকে কহিলেন, এই লোকেরা তোমার কাছে যাহা যাহা বলিতেছে, সেই সমস্ত বিষয়ে তাহাদের বাক্যে কর্ণপাত কর; কেননা তাহারা তোমাকে অগ্রাহ্য করিল; এমন নয়, আমাকেই অগ্রাহ্য করিল, যেন আমি তাহাদের উপরে রাজত্ব না করি। যে দিন মিসর হইতে আমি তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম, সেই দিন অবধি অদ্য পর্য্যন্ত তাহারা যেরূপ ব্যবহার করিয়া আসিতেছে, অন্য দেবগণের সেবা করণার্থে আমাকে ত্যাগ করিয়া আসিতেছে, তদ্রূপ ব্যবহার তোমার প্রতিও করিতেছে। এখন তাহাদের বাক্যে কর্ণপাত কর; কিন্তু তাহাদের বিপক্ষে দৃঢ়রূপে সাক্ষ্য দেও, এবং তাহাদের উপরে যে রাজত্ব করিবে, সেই রাজার নিয়ম তাহাদিগকে জ্ঞাত কর। পরে যে লোকেরা শমূয়েলের কাছে রাজা যাচ্ঞা করিয়াছিল, তাহাদিগকে তিনি সদাপ্রভুর ঐ সমস্ত কথা কহিলেন। আরও কহিলেন, তোমাদের উপরে রাজত্বকারী রাজার এইরূপ নিয়ম হইবে; তিনি তোমাদের পুত্রগণকে লইয়া আপনার রথের ও অশ্বের উপরে নিযুক্ত করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার রথের অগ্রে অগ্রে দৌড়িবে। আর তিনি তাহাদিগকে আপনার সহস্রপতি ও পঞ্চাশৎপতি নিযুক্ত করিবেন, এবং কাহাকে কাহাকে তাঁহার ভূমি চাষ ও শস্য ছেদন করিতে এবং যুদ্ধের অস্ত্র ও রথের সজ্জা নির্ম্মাণ করিতে নিযুক্ত করিবেন। আর তিনি তোমাদের কন্যাগণকে লইয়া সুগন্ধিদ্রব্য-প্রস্তুতকারিণী, পাচিকা ও রুটীওয়ালী করিবেন। আর তিনি তোমাদের উৎকৃষ্ট শস্যক্ষেত্র, দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও জিতবৃক্ষ সকল লইয়া আপন দাসদিগকে দিবেন। আর তোমাদের শস্যের ও দ্রাক্ষার দশমাংশ লইয়া আপন কর্ম্মচারীদিগকে ও দাসদিগকে দিবেন। আর তিনি তোমাদের দাস দাসী ও সর্ব্বোত্তম যুবা পুরুষদিগকে ও তোমাদের গর্দ্দভ সকল লইয়া আপন কার্য্যে নিযুক্ত করিবেন। তিনি তোমাদের মেষগণের দশমাংশ লইবেন ও তোমরা তাঁহার দাস হইবে। সেই দিন তোমরা আপনাদের মনোনীত রাজা হেতু ক্রন্দন করিবে; কিন্তু সদাপ্রভু সেই দিন তোমাদিগকে উত্তর দিবেন না। তথাপি লোকেরা শমূয়েলের বাক্যে কর্ণপাত করিতে অসম্মত হইয়া কহিল, না, আমাদের উপরে এক জন রাজা চাই; তাহাতে আমরাও আর সকল জাতির সমান হইব, এবং আমাদের রাজা আমাদের বিচার করিবেন ও আমাদের অগ্রগামী হইয়া যুদ্ধ করিবেন। তখন শমূয়েল লোকদের সমস্ত কথা শুনিয়া সদাপ্রভুর কর্ণগোচরে নিবেদন করিলেন। তাহাতে সদাপ্রভু শমূয়েলকে কহিলেন, তুমি তাহাদের বাক্যে কর্ণপাত কর, তাহাদের নিমিত্ত এক জনকে রাজা কর। পরে শমূয়েল ইস্রায়েল লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন নগরে যাও। আর বিন্যামীন বংশীয় এক লোক ছিলেন, তাঁহার নাম কীশ। তিনি অবীয়েলের পুত্র, ইনি সরোরের পুত্র, ইনি বখোরতের পুত্র, ইনি অফীহের পুত্র। কীশ এক জন বিন্যামীনীয় বলবান বীর ছিলেন। আর শৌল নামে তাঁহার এক পুত্র ছিলেন; তিনি সুন্দর যুবা পুরুষ; ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে তদপেক্ষা সুন্দর কোন পুরুষ ছিল না, এবং তিনি অন্য সমস্ত লোক হইতে এক মস্তক দীর্ঘ ছিলেন। একদা শৌলের পিতা কীশের গর্দ্দভীগুলি হারাইয়া গিয়াছিল, তাহাতে কীশ আপন পুত্র শৌলকে কহিলেন, তুমি এক জন চাকর সঙ্গে লও, উঠ, গর্দ্দভীদের অন্বেষণ করিতে যাও। তাহাতে তিনি পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশ দিয়া ভ্রমণ করিয়া শালিশা প্রদেশ দিয়া গমন করিলেন; কিন্তু তাঁহারা তাহাদের উদ্দেশ পাইলেন না। পরে তাঁহারা শালীম প্রদেশ দিয়া গমন করিলেন; সেখানেও নাই। পরে তিনি বিন্যামীনীয়দের দেশ দিয়া গমন করিলেন, কিন্তু তাঁহারা সেখানেও পাইলেন না। পরে সূফ প্রদেশে উপস্থিত হইলে শৌল আপনার সঙ্গী চাকরটীকে কহিলেন, আইস, আমরা ফিরিয়া যাই; কি জানি, আমার পিতা গর্দ্দভীদের ভাবনা ছাড়িয়া দিয়া আমাদের জন্য ভাবিত হইবেন। সে তাঁহাকে কহিল, দেখুন, এই নগরে ঈশ্বরের এক জন লোক আছেন; তিনি অতি সম্মানিত; তিনি যাহা যাহা বলেন, সকলই সিদ্ধ হয়; চলুন, আমরা এখন সেই স্থানে যাই; হয় ত তিনি আমাদের গন্তব্য পথ বলিয়া দিতে পারিবেন। তখন শৌল আপন চাকরকে কহিলেন, কিন্তু দেখ, যদি আমরা যাই, তবে সেই ব্যক্তির কাছে কি লইয়া যাইব? আমাদের পাত্রে ত খাদ্যের শেষ হইয়াছে; ঈশ্বরের লোকের কাছে লইয়া যাইবার জন্য আমাদের উপহার নাই; আমাদের কাছে কি আছে? তখন চাকরটী শৌলকে উত্তর করিল, দেখুন, আমার হস্তে শেকলের চতুর্থাংশ রৌপ্য আছে; আমি ঈশ্বরের লোককে ইহাই দিব, আর তিনি আমাদিগকে পথ বলিয়া দিবেন। —পূর্ব্বকালে ইস্রায়েলের মধ্যে ঈশ্বরের নিকটে জিজ্ঞাসা করণার্থে যাইতে হইলে লোকে এইরূপ বলিত, চল, আমরা দর্শকের নিকটে যাই; কেননা সম্প্রতি যাঁহাকে ভাববাদী বলা যায়, পূর্ব্বকালে তাঁহাকে দর্শক বলা যাইত। —তখন শৌল আপন চাকরটীকে কহিলেন, ভালই বলিলে; চল, আমরা যাই। আর ঈশ্বরের লোক যেখানে ছিলেন, সেই নগরে তাঁহারা গমন করিলেন। যখন তাঁহারা নগরের দিকে ঊর্দ্ধগামী পথে উঠিতেছিলেন, তখন জল তুলিবার জন্য কয়েকটী যুবতী বাহিরে আসিয়াছিল, তাঁহারা তাহাদিগকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, দর্শক কি এই স্থানে আছেন? তাহারা তাঁহাদিগকে উত্তর করিয়া কহিল, হাঁ, আছেন; দেখ তিনি তোমাদের সম্মুখে আছেন; শীঘ্র এখনই যাও, তিনি অদ্য নগরে আসিয়াছেন, কারণ ঐ উচ্চস্থলীতে অদ্য লোকদের এক যজ্ঞ হইবে। তোমরা নগরমধ্যে প্রবেশ করিবামাত্র, তিনি উচ্চস্থলীতে আহার করিতে যাইবার পূর্ব্বে, তাঁহার দেখা পাইবে; কেননা তিনি যাবৎ উপস্থিত না হইবেন, তাবৎ লোকেরা ভোজন করিবে না, কারণ তিনি যজ্ঞীয় দ্রব্যে আশীর্ব্বাদ করেন, পরে নিমন্ত্রিত লোকেরা ভোজন করে; অতএব তোমরা এক্ষণে গিয়া উঠ; এই সময়ে তাঁহার দেখা পাইবে। তখন তাঁহারা নগরে উঠিলেন; তাঁহারা নগরমধ্যে উপস্থিত হইলে দেখ, শমূয়েল উচ্চস্থলীতে যাইবার জন্য বাহির হইয়া তাঁহাদের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন। আর শৌলের উপস্থিত হইবার পূর্ব্ব দিবসে সদাপ্রভু শমূয়েলের কর্ণগোচরে প্রকাশ করিয়াছিলেন, কল্য এমন সময়ে আমি বিন্যামীন প্রদেশ হইতে এক জন লোককে তোমার নিকটে প্রেরণ করিব; তুমি তাহাকে আমার প্রজা ইস্রায়েলের নায়ক করিবার জন্য অভিষেক করিবে; আর সে পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে আমার প্রজাদিগকে নিস্তার করিবে; কেননা আমার প্রজাদের ক্রন্দন আমার কর্ণগোচর হওয়াতে আমি তাহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম। পরে শমূয়েল শৌলকে দেখিলে সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, দেখ, এ সেই ব্যক্তি, যাহার বিষয়ে আমি তোমার কাছে বলিয়াছিলাম, সেই আমার প্রজাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে। তখন শৌল দ্বারদেশে শমূয়েলের নিকটে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, বিনয় করি, দর্শকের গৃহ কোথায়, আমাকে বলিয়া দিউন। তখন শমূয়েল শৌলকে উত্তর করিলেন, আমিই দর্শক, আমার অগ্রে অগ্রে উচ্চস্থলীতে চল; কেননা অদ্য তোমরা আমার সহিত ভোজন করিবে; প্রাতে আমি তোমাকে বিদায় করিব, এবং তোমার মনের সমস্ত কথা তোমাকে জ্ঞাত করিব। আর অদ্য তিন দিন হইল, তোমার যে সকল গর্দ্দভী হারাইয়াছে, তাহাদের জন্য মনে ভাবিত হইও না; সে সকল পাওয়া গিয়াছে। আর ইস্রায়েলের সমস্ত বাঞ্ছনীয় দ্রব্য কাহার? সে সকল কি তোমার এবং তোমার সমস্ত পিতৃকুলের নয়? শৌল উত্তর করিলেন, আমি কি ইস্রায়েল-বংশ সকলের মধ্যে ক্ষুদ্রতম বিন্যামীন বংশীয় নহি? আবার বিন্যামীন বংশের মধ্যে আমার গোষ্ঠী কি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র নয়? তবে আপনি আমাকে কেন এই প্রকার কথা কহেন? পরে শমূয়েল শৌলকে ও তাঁহার চাকরটীকে লইয়া ভোজনশালায় গেলেন, অনুমান ত্রিশ জন নিমন্ত্রিত-লোকদের মধ্যে তাঁহাদিগকে উত্তম স্থানে বসাইলেন। পরে শমূয়েল পাচককে কহিলেন, আমি যে অংশ তোমাকে দিয়া তোমার কাছে রাখিতে বলিয়াছিলাম, তাহা আন। তাহাতে পাচক ঊরু ও তাহার উপরে যাহা ছিল, তাহা আনিয়া শৌলের সম্মুখে স্থাপন করিল। আর [শমূয়েল] কহিলেন, দেখ, ইহা রাখা গিয়াছিল; তুমি ইহা আপনার সম্মুখে রাখ, ভোজন কর; কেননা নির্দ্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষাতে ইহা তোমার জন্য রাখা গিয়াছে, আমি বলিয়াছিলাম যে, আমি লোকদিগকে নিমন্ত্রণ করিয়াছি। তাহাতে সে দিন শৌল শমূয়েলের সহিত আহার করিলেন। পরে তাঁহারা উচ্চস্থলী হইতে নগরে নামিয়া গেলে শমূয়েল গৃহের ছাদের উপরে শৌলের সহিত কথোপকথন করিলেন। পরে তাঁহারা প্রভাতে উঠিলেন, আর আলো হইয়া আসিলে শমূয়েল গৃহের ছাদের উপরে শৌলকে ডাকিয়া কহিলেন, উঠ, আমি তোমাকে বিদায় করি। তখন শৌল উঠিলেন, আর তিনি ও শমূয়েল দুই জন বাহিরে গেলেন। পরে তাঁহারা নামিয়া নগরের প্রান্তভাগ দিয়া গমন করিতেছিলেন, এমন সময়ে শমূয়েল শৌলকে কহিলেন, তোমার চাকরটীকে অগ্রে যাইতে বল, কিন্তু তুমি কিছু কাল দাঁড়াও, আমি তোমাকে ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করাই। তাহাতে চাকর অগ্রে চলিল। আর শমূয়েল তৈলের শিশি লইয়া তাঁহার মস্তকে ঢালিলেন, এবং তাঁহাকে চুম্বন করিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু কি তোমাকে আপন অধিকারের নায়ক করিবার জন্য অভিষেক করিলেন না? অদ্য তুমি যখন আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিবে, তখন বিন্যামীনের সীমাস্থিত সেল্‌সহে রাহেলের কবরের নিকটে দুই জন পুরুষের দেখা পাইবে; তাহারা তোমাকে বলিবে, তুমি যে সকল গর্দ্দভীর অন্বেষণে গিয়াছিলে, সে সকল পাওয়া গিয়াছে; আর দেখ, তোমার পিতা গর্দ্দভীদের ভাবনা ছাড়িয়া দিয়া তোমার জন্য চিন্তা করিতেছেন, বলিতেছেন, আমার পুত্রের জন্য কি করিব? পরে তুমি তথা হইতে অগ্রসর হইয়া তাবোরের এলোন বৃক্ষের নিকটে আসিবে, সে স্থানে বৈথেলে ঈশ্বরের নিকট যাইতেছে, এমন তিন জন পুরুষের দেখা পাইবে, দেখিবে, তাহাদের মধ্যে এক জন তিনটী ছাগবৎস, আর এক জন তিনখানা রুটী, আর এক জন এক কূপা দ্রাক্ষারস বহন করিতেছে। তাহারা তোমাকে মঙ্গলবাদ করিবে ও দুইখানা রুটী তোমাকে দিবে, এবং তুমি তাহাদের হস্ত হইতে তাহা গ্রহণ করিবে। পরে পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদল যেখানে আছে, তুমি ঈশ্বরের সেই পর্ব্বতে উপস্থিত হইবে, তথায় নগরে পৌঁছিলে, এমন এক দল ভাববাদীর সহিত সাক্ষাৎ হইবে, যাহারা নেবল, তবল, বাঁশী ও বীণা লইয়া উচ্চস্থলী হইতে নামিয়া আসিতেছে, আর ভাবোক্তি প্রচার করিতেছে। তখন সদাপ্রভুর আত্মা সবলে তোমার উপরে আসিবেন, তাহাতে তুমিও তাহাদের সহিত ভাবোক্তি প্রচার করিবে, এবং অন্য প্রকার মনুষ্য হইয়া উঠিবে। এই সকল চিহ্ন তোমার প্রতি ঘটিলে পর তোমার হস্ত যাহা করিতে পায়, তাহা করিও, কেননা ঈশ্বর তোমার সহবর্ত্তী। আর তুমি আমার অগ্রে অগ্রে গিল্‌গলে নামিয়া যাইবে, আর দেখ, হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিবার জন্য আমি তোমার নিকটে যাইব; আমি যাবৎ তোমার নিকটে উপস্থিত হইয়া তোমার কর্ত্তব্য তোমাকে জ্ঞাত না করি, তাবৎ সাত দিন বিলম্ব করিবে। পরে তিনি শমূয়েলের নিকট হইতে যাইবার জন্য ফিরিয়া দাঁড়াইলে ঈশ্বর তাঁহাকে অন্য মন দিলেন, এবং সেই দিন ঐ সমস্ত চিহ্ন সফল হইল। তাঁহারা সেখানে, সেই পর্ব্বতে, উপস্থিত হইলে, দেখ, এক দল ভাববাদী তাঁহার সম্মুখে পড়িলেন; এবং ঈশ্বরের আত্মা সবলে তাঁহার উপরে আসিলেন, ও তাঁহাদের মধ্যে তিনি ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিলেন। আর যাহারা পূর্ব্বে তাঁহাকে জানিত, তাহারা সকলে যখন দেখিল, দেখ, তিনি ভাববাদীদের সহিত ভাবোক্তি প্রচার করিতেছেন, তখন লোকেরা পরস্পর কহিল, কীশের পুত্রের কি হইল? শৌলও কি ভাববাদিগণের মধ্যে এক জন? তাহাতে তথাকার এক জন উত্তর করিল, ভাল, উহাদের পিতা কে? এইরূপে, ‘শৌলও কি ভাববাদিগণের মধ্যে এক জন?’ এই কথা প্রবাদ হইয়া উঠিল। পরে তিনি ভাবোক্তি প্রচার সাঙ্গ করিয়া উচ্চস্থলীতে গেলেন। পরে শৌলের পিতৃব্য তাঁহাকে ও তাঁহার চাকরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কোথায় গিয়াছিলে? তিনি কহিলেন, গর্দ্দভীদের অন্বেষণে; কিন্তু গর্দ্দভীরা কোন স্থানে নাই, ইহা দেখিয়া আমরা শমূয়েলের নিকটে গিয়াছিলাম। শৌলের পিতৃব্য কহিলেন, বল দেখি, শমূয়েল তোমাদিগকে কি কহিলেন? তখন শৌল আপন পিতৃব্যকে বলিলেন, তিনি আমাদিগকে স্পষ্টরূপে কহিলেন, গর্দ্দভী সকল পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু রাজত্বের বিষয় যে কথা শমূয়েল বলিয়াছিলেন, তাহা তিনি তাঁহাকে বলিলেন না। পরে শমূয়েল লোকদিগকে মিস্‌পাতে সদাপ্রভুর নিকটে ডাকাইলেন; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলেন, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এইরূপ কহেন, আমিই ইস্রায়েলকে মিসর হইতে আনিয়াছি, এবং মিস্রীয়দের হস্ত হইতে, ও তোমাদের প্রতি যে সমস্ত রাজ্য উপদ্রব করিত, তাহাদের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছি। কিন্তু তোমরা অদ্য তোমাদের ঈশ্বরকে, যিনি সমস্ত দুর্দ্দশা ও সঙ্কট হইতে তোমাদের নিস্তার করিয়া আসিতেছেন, তাঁহাকেই অগ্রাহ্য করিলে, এবং তাঁহাকে বলিলে যে, আমাদের উপরে এক জন রাজা নিযুক্ত কর; অতএব তোমরা এখন আপন আপন বংশ অনুসারে ও সহস্র সহস্র অনুসারে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে উপস্থিত হও। পরে শমূয়েল ইস্রায়েলের সমস্ত বংশকে নিকটে আনাইলে বিন্যামীন বংশ নিশ্চিত হইল। আর এক এক গোষ্ঠী অনুসারে বিন্যামীন বংশকে নিকটে আনাইলে মট্রীয়দের গোষ্ঠী নিশ্চিত হইল, এবং তাহার মধ্যে কীশের পুত্র শৌল নিশ্চিত হইলেন; কিন্তু অন্বেষণ করিলে তাঁহার উদ্দেশ পাওয়া গেল না। অতএব তাহারা পুনরায় সদাপ্রভুর নিকটে জিজ্ঞাসা করিল, আর কেহ কি এই স্থানে আসিয়াছে? সদাপ্রভু কহিলেন, দেখ, সেই ব্যক্তি জিনিসপত্রের মধ্যে লুকাইয়া আছে। পরে তাহারা দৌড়িয়া তথা হইতে তাঁহাকে আনিল। আর তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়াইলে অন্য সকল লোক অপেক্ষা এক মস্তক দীর্ঘ হইলেন। পরে শমূয়েল সমস্ত লোককে কহিলেন, তোমরা কি ইহাঁকে দেখিতেছ? ইনি সদাপ্রভুর মনোনীত; সমস্ত লোকের মধ্যে ইহাঁর তুল্য কেহ নাই। তখন সমস্ত লোক জয়ধ্বনি করিয়া কহিল, রাজা চিরজীবী হউন। পরে শমূয়েল লোকদিগকে রাজনীতি কহিলেন, এবং তাহা পুস্তকে লিখিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে রাখিলেন। আর শমূয়েল সমস্ত লোককে আপন আপন বাটীতে বিদায় করিলেন। আর শৌলও গিবিয়ায় আপন বাটীতে গেলেন; এবং ঈশ্বর যাহাদের হৃদয় স্পর্শ করিলেন, এমন এক দল সৈন্য তাঁহার সহিত গমন করিল। কিন্তু পাষণ্ডেরা কেহ কেহ বলিল, এই ব্যক্তি আমাদিগকে কিরূপে নিস্তার করিবে? তাহারা তাঁহাকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া দর্শনীয় দিল না; তথাপি তিনি বধিরের ন্যায় থাকিলেন। পরে অম্মোনীয় নাহশ আসিয়া যাবেশ-গিলিয়দের সম্মুখে শিবির স্থাপন করিলেন; আর যাবেশের সমস্ত লোক নাহশকে কহিল, আপনি আমাদের সহিত নিয়ম স্থির করুন; আমরা আপনার দাস হইব। অম্মোনীয় নাহশ তাহাদিগকে এই উত্তর দিলেন, আমি এই পণে তোমাদের সহিত নিয়ম স্থির করিব যে, তোমাদের সকলের দক্ষিণ চক্ষু উৎপাটন করিতে হইবে, এবং তদ্দ্বারা আমি সমস্ত ইস্রায়েলে কলঙ্ক লাগাইব। তখন যাবেশের প্রাচীনবর্গ কহিলেন, আপনি সাত দিবস আমাদের প্রতি ক্ষান্ত থাকুন; আমরা ইস্রায়েল দেশের সকল অঞ্চলে দূত প্রেরণ করি; তাহাতে কেহ যদি আমাদিগকে নিস্তার না করে, তবে আমরা বাহির হইয়া আপনার নিকটে যাইব। পরে দূতগণ শৌলের [বাসস্থান] গিবিয়ায় আসিয়া লোকদের কর্ণগোচরে ঐ কথা কহিল, তাহাতে সমস্ত লোক উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিল। পরে দেখ, শৌল ক্ষেত্র হইতে বলদের পশ্চাতে পশ্চাতে আসিতেছেন। শৌল জিজ্ঞাসা করিলেন, লোকদের কি হইয়াছে? উহারা কেন রোদন করিতেছে? লোকেরা যাবেশের লোকদের কথা তাঁহাকে কহিল। ঐ কথা শুনিলে পর ঈশ্বরের আত্মা শৌলের উপরে সবলে আসিলেন, এবং তাঁহার ক্রোধ অতিশয় প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। আর তিনি এক জোড়া বলদ লইয়া খণ্ড খণ্ড করিয়া ঐ দূতগণ দ্বারা ইস্রায়েল দেশের সকল অঞ্চলে পাঠাইয়া দিয়া কহিলেন, যে কেহ শৌলের ও শমূয়েলের পশ্চাতে বাহিরে না আসিবে, তাহার বদল সকলের প্রতি এইরূপ করা যাইবে; তাহাতে সদাপ্রভুর প্রতি লোকদের ভয় উপস্থিত হওয়াতে তাহারা এক মনুষ্যের ন্যায় বাহির হইল। পরে তিনি বেষকে তাহাদিগকে গণনা করিলেন; তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের তিন লক্ষ ও যিহূদার ত্রিশ সহস্র লোক হইল। পরে তাহারা সেই আগত দূতগণকে কহিল, তোমরা যাবেশ-গিলিয়দের লোকদিগকে বলিবে, কল্য প্রখর রৌদ্রের সময়ে তোমরা উদ্ধার পাইবে। তখন দূতগণ আসিয়া যাবেশের লোকদিগকে ঐ সমাচার দিল, ও তাহারা আনন্দিত হইল। পরে যাবেশের লোকেরা [নাহশকে] কহিল, কল্য আমরা আপনাদের কাছে বাহির হইয়া যাইব; আপনাদের দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, আমাদের প্রতি তাহাই করিবেন। পর দিবসে শৌল আপন লোকদিগকে তিন দল করিয়া প্রভাতীয় প্রহরে [শত্রুদের] শিবিরমধ্যে আসিয়া প্রচণ্ড রৌদ্র পর্য্যন্ত অম্মোনীয়দিগকে সংহার করিলেন; আর তাহাদের অবশিষ্ট লোকেরা এমন ছিন্নভিন্ন হইল যে, তাহাদের দুই জন এক স্থানে থাকিল না। পরে লোকেরা শমূয়েলকে কহিল, কে বলিয়াছে, শৌল কি আমাদের উপরে রাজা হইবে? সেই লোকদিগকে আন, আমরা তাহাদিগকে বধ করি। কিন্তু শৌল কহিলেন, অদ্য কাহারও প্রাণদণ্ড হইবে না, কেননা অদ্য সদাপ্রভু ইস্রায়েলের মধ্যে নিস্তার সাধন করিলেন। পরে শমূয়েল লোকদিগকে কহিলেন, চল, আমরা গিল্‌গলে গিয়া সেখানে রাজত্ব পুনর্ব্বার স্থির করি। তাহাতে সমস্ত লোক গিল্‌গলে গিয়া সেই গিল্‌গলে সদাপ্রভুর সম্মুখে শৌলকে রাজা করিল, এবং সে স্থানে সদাপ্রভুর সম্মুখে মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিল; আর সে স্থানে শৌল ও ইস্রায়েলের সমস্ত লোক মহা আনন্দ করিল। পরে শমূয়েল সমস্ত ইস্রায়েলকে কহিলেন, দেখ, তোমরা আমাকে যাহা যাহা কহিলে, আমি তোমাদের সেই সমস্ত বাক্যে কর্ণপাত করিয়া তোমাদের উপরে এক জনকে রাজা করিলাম। এখন দেখ, রাজা তোমাদের সম্মুখে গমনাগমন করিতেছেন; কিন্তু আমি বৃদ্ধ ও পক্বকেশ হইয়াছি; আর দেখ, আমার পুত্রগণ তোমাদের সহিত আছে, এবং আমি বাল্যকাল অবধি অদ্য পর্য্যন্ত তোমাদের সম্মুখে গমনাগমন করিয়া আসিতেছি। আমি এই স্থানে আছি; তোমরা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির সাক্ষাতে আমার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়া বল দেখি, আমি কাহার গোরু লইয়াছি? কাহার গর্দ্দভ লইয়াছি? কাহার প্রতি দৌরাত্ম্য করিয়াছি? কাহার উপরেই বা উৎপীড়ন করিয়াছি? কিম্বা আপন চক্ষু অন্ধ করিবার জন্য কাহার হস্ত হইতে উৎকোচ গ্রহণ করিয়াছি? আমি তোমাদিগকে তাহা ফিরাইয়া দিব। তাহারা কহিল, আপনি আমাদের প্রতি দৌরাত্ম্য করেন নাই, আমাদের উপরে উৎপীড়ন করেন নাই, কাহারও হস্ত হইতে কিছু গ্রহণ করেন নাই। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আমার হস্তে কোন দ্রব্য পাও নাই, এ বিষয়ে অদ্য তোমাদের বিপক্ষে সদাপ্রভু সাক্ষী, এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তি সাক্ষী। তাহারা উত্তর করিল, তিনি সাক্ষী। পরে শমূয়েল লোকদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভুই মোশি ও হারোণকে উৎপন্ন করিয়াছিলেন, এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। তোমরা এখন দাঁড়াও; তোমাদের প্রতি ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি সদাপ্রভু যে সমস্ত সাধু কার্য্য করিয়াছেন, তদ্বিষয়ে আমি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমাদের সহিত আলোচনা করিব। যাকোব মিসরে গেলে পর যখন তোমাদের পিতৃপুরুষেরা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়াছিল, তখন সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে প্রেরণ করেন; আর তাঁহারা মিসর হইতে তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন, এবং এই স্থানে তাহাদিগকে বাস করাইলেন। কিন্তু লোকেরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গেল, আর তিনি হাৎসোরের সেনাপতি সীষরার হস্তে, পলেষ্টীয়দের হস্তে ও মোয়াবরাজের হস্তে তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন, এবং ইহারা তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিল। তখন তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়া কহিল, আমরা পাপ করিয়াছি, আমরা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া বালদেবগণের ও অষ্টারোৎ দেবীগণের সেবা করিয়াছি; কিন্তু এখন তুমি শত্রুগণের হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার কর, আমরা তোমার সেবা করিব। পরে সদাপ্রভু যিরুব্বাল, বদান, যিপ্তহ ও শমূয়েলকে প্রেরণ করিয়া তোমাদের চতুর্দ্দিকস্থ শত্রুদের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিলেন; তাহাতে তোমরা নির্ভয়ে বাস করিলে। পরে যখন তোমরা দেখিলে অম্মোন-সন্তানদের রাজা নাহশ তোমাদের বিরুদ্ধে বাহির হইয়া আসিতেছে, তখন, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের রাজা থাকিতেও তোমরা আমাকে কহিলে, না, আমাদের উপরে এক জন রাজা রাজত্ব করুন। অতএব এই দেখ, সেই রাজা, যাঁহাকে তোমরা মনোনীত করিয়াছ ও যাচ্ঞা করিয়াছ; দেখ, সদাপ্রভু তোমাদের উপরে এক জন রাজা নিযুক্ত করিয়াছেন। যদি তোমরা সদাপ্রভুকে ভয় কর, তাঁহার সেবা কর, ও তাঁহার রবে কর্ণপাত কর, এবং সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরূদ্ধাচরণ না কর, আর তোমরা ও তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্বপ্রাপ্ত রাজা, উভয়ে যদি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুবর্ত্তী হও, [তবে ভাল]। কিন্তু তোমরা যদি সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত না কর, এবং সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ কর, তবে সদাপ্রভুর হস্ত যেমন তোমাদের পিতৃপুরুষদের বিরুদ্ধ ছিল, তদ্রূপ তোমাদেরও বিরুদ্ধ হইবে। অতএব তোমরা দাঁড়াও; সদাপ্রভু তোমাদের সাক্ষাতে যে মহৎ কর্ম্ম করিবেন, তাহা দেখ। অদ্য কি গোম কাটার সময় নয়? আমি সদাপ্রভুকে ডাকিব, যেন তিনি মেঘগর্জ্জন ও বৃষ্টি দেন; তাহাতে তোমরা জানিবে ও বুঝিবে যে, তোমরা আপনাদের জন্য রাজা যাচ্ঞা করিয়া সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ভারী দুষ্কার্য্য করিয়াছ। তখন শমূয়েল সদাপ্রভুকে ডাকিলে সদাপ্রভু ঐ দিবসে মেঘগর্জ্জন ও বৃষ্টি দিলেন; তাহাতে সমস্ত লোক সদাপ্রভু হইতে ও শমূয়েল হইতে অতিশয় ভীত হইল। আর সমস্ত লোক শমূয়েলকে কহিল, আমরা যেন না মরি, এই জন্য আপনি আপন দাসদের নিমিত্ত আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন; কেননা আমরা আমাদের সকল পাপের উপরে এই দুষ্কার্য্য করিয়াছি যে, আমাদের জন্য রাজা যাচ্ঞা করিয়াছি। পরে শমূয়েল লোকদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না; তোমরা এই সমস্ত দুষ্কার্য্য করিয়াছ বটে, কিন্তু কোন মতে সদাপ্রভুর পশ্চাৎ হইতে সরিয়া যাইও না, সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সদাপ্রভুর সেবা কর। সরিয়া যাইও না, গেলে সেই সকল অবস্তুর অনুগামী হইবে, যাহারা অবস্তু বলিয়া উপকার ও উদ্ধার করিতে পারে না। কারণ সদাপ্রভু আপন মহানামের গুণে আপন প্রজাদিগকে ত্যাগ করিবেন না; কেননা তোমাদিগকে আপন প্রজা করিতে সদাপ্রভুর অভিমত হইয়াছে। আর আমিই যে তোমাদের জন্য প্রার্থনা করিতে বিরত হইয়া সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিব, তাহা দূরে থাকুক; আমি তোমাদিগকে উত্তম ও সরল পথ শিক্ষা দিব; তোমরা কেবল সদাপ্রভুকে ভয় কর, ও সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সত্যে তাঁহার সেবা কর; কেননা দেখ, তিনি তোমাদের জন্য কেমন মহৎ মহৎ কর্ম্ম করিলেন। কিন্তু তোমরা যদি মন্দ আচরণ কর, তবে তোমরা ও তোমাদের রাজা উভয়ে বিনষ্ট হইবে। শৌল [ত্রিশ] বৎসর বয়সে রাজা হন। দুই বৎসর ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিলে পর শৌল আপনার জন্য ইস্রায়েলের মধ্যে তিন সহস্র লোক মনোনীত করিলেন; তাহার দুই সহস্র মিক্‌মসে ও বৈথেল পর্ব্বতে শৌলের সহিত থাকিল; এবং এক সহস্র বিন্যামীন প্রদেশস্থ গিবিয়াতে যোনাথনের সহিত থাকিল; আর অন্য সকল লোককে তিনি আপন আপন তাম্বুতে বিদায় করিলেন। পরে যোনাথন গেবাতে স্থিত পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদলকে আঘাত করিলেন, ও পলেষ্টীয়েরা তাহা শুনিল; তখন শৌল দেশের সর্ব্বত্র তূরী বাজাইয়া কহিলেন, ইব্রীয়েরা শুনুক। তখন সমস্ত ইস্রায়েল এই কথা শুনিল যে, শৌল পলেষ্টীয়দের সেই প্রহরী সৈন্যদলকে আঘাত করিয়াছেন, আর ইস্রায়েল পলেষ্টীয়দের নিকটে ঘৃণাস্পদ হইয়াছে। পরে লোকেরা শৌলের পশ্চাতে গিল্‌গলে সমাহূত হইল। পরে পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে একত্র হইল; ত্রিশ সহস্র রথ, ছয় সহস্র অশ্বারোহী ও সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় অসংখ্য লোক আসিল; তাহারা আসিয়া বৈৎ-আবনের পূর্ব্বদিকে মিক্‌মসে শিবির স্থাপন করিল। তখন ইস্রায়েল লোকেরা আপনাদিগকে বিপদ্‌গ্রস্ত দেখিল, কেননা লোকেরা উপদ্রুত হইতেছিল; তখন লোকেরা গুহাতে, ঝোপে, শৈলে, দৃঢ় গৃহে ও গর্ত্তে লুকাইল। আর কতকগুলি ইব্রীয় যর্দ্দন পার হইয়া গাদ ও গিলিয়দ দেশে গেল। কিন্তু তৎকালেও শৌল গিল্‌গলে ছিলেন; এবং তাঁহার পশ্চাদগামী লোক সকল কম্পান্বিত হইতে লাগিল। পরে শৌল শমূয়েলের নিরূপিত সময়ানুসারে সাত দিন অপেক্ষা করিলেন; কিন্তু শমূয়েল গিল্‌গলে আগমন করিলেন না, এবং লোকেরা তাঁহার নিকট হইতে ছিন্নভিন্ন হইতে লাগিল। তাহাতে শৌল কহিলেন, এই স্থানে আমার নিকটে হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি আন। পরে তিনি হোমবলি উৎসর্গ করিলেন। হোমবলির উৎসর্গ সমাপ্ত করিবামাত্র দেখ, শমূয়েল উপস্থিত হইলেন; তাহাতে শৌল তাঁহাকে মঙ্গলবাদ করণার্থে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন। পরে শমূয়েল কহিলেন, তুমি কি করিলে? শৌল কহিলেন, আমি দেখিলাম, লোকেরা আমার নিকট হইতে ছিন্নভিন্ন হইতেছে, এবং নিরূপিত দিনের মধ্যে আপনিও আইসেন নাই, আর পলেষ্টীয়েরা মিক্‌মসে একত্র হইয়াছে; তাই আমি মনে মনে কহিলাম, পলেষ্টীয়েরা এখনই আমার বিরুদ্ধে গিল্‌গলে নামিয়া আসিবে, আর আমি সদাপ্রভুর অনুগ্রহ যাচ্ঞা করি নাই; এই জন্য ইচ্ছা না থাকিলেও আমি হোমবলি উৎসর্গ করিলাম। শমূয়েল শৌলকে কহিলেন, তুমি অজ্ঞানের কর্ম্ম করিয়াছ; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে আজ্ঞা দিয়াছেন, তাহা পালন কর নাই; করিলে সদাপ্রভু এখন ইস্রায়েলের উপরে তোমার রাজত্ব চিরকাল স্থায়ী করিতেন। কিন্তু এখন তোমার রাজত্ব স্থির থাকিবে না; সদাপ্রভু আপন মনের মত এক জনের অন্বেষণ করিয়া তাহাকেই আপন প্রজাদের অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত করিয়াছেন; কেননা সদাপ্রভু তোমাকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তুমি তাহা পালন কর নাই। পরে শমূয়েল উঠিয়া গিল্‌গল হইতে বিন্যামীনের গিবিয়াতে প্রস্থান করিলেন; তখন শৌল আপনার নিকটে বর্ত্তমান লোকদিগকে গণনা করিলেন, তাহারা অনুমান ছয় শত। শৌল, তাঁহার পুত্র যোনাথন ও তাঁহাদের নিকটে বর্ত্তমান লোকেরা বিন্যামীনের গেবাতে থাকিলেন, এবং পলেষ্টীয়েরা মিক্‌মসে শিবির স্থাপন করিয়া রহিল। পরে পলেষ্টীয়দের শিবির হইতে তিন দল বিনাশক সৈন্য বাহির হইল, তাহার এক দল অফ্রার পথে গমন করিয়া শূয়াল প্রদেশে গেল। আর এক দল বৈৎ-হোরোণের পথের দিকে ফিরিল; এবং আর এক দল প্রান্তরের দিকে সিবোয়িম উপত্যকার অভিমুখী সীমার পথ দিয়া গমন করিল। ঐ সময়ে সমস্ত ইস্রায়েল দেশে কর্ম্মকার পাওয়া যাইত না; কারণ পলেষ্টীয়েরা কহিত, পাছে ইব্রীয়েরা আপনাদের জন্য খড়্‌গ কি বড়শা নির্ম্মাণ করে। এই জন্য আপন আপন হলমুখ বা ফাল বা কুড়ালি বা কুদাল শাণ দিবার জন্য ইস্রায়েলের সমস্ত লোককে পলেষ্টীয়দের কাছে নামিয়া যাইতে হইত। সুতরাং সকলের কুদাল, ফাল, বিদা, কুড়ালির ধার এবং শস্ত্রের কাঁটা ভোঁতা ছিল; আর যুদ্ধের দিনে শৌলের ও যোনাথনের সঙ্গী লোকদের কাহারও হস্তে খড়্‌গ বা বড়শা পাওয়া গেল না, কেবল শৌলের ও তাঁহার পুত্র যোনাথনের হস্তে পাওয়া গেল। পরে পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদল বাহির হইয়া মিক্‌মসের গিরিপথে আসিল। এক দিবস এই ঘটনা হইল, শৌলের পুত্র যোনাথন আপন অস্ত্রবাহক যুবককে কহিলেন, চল, আমরা ঐ দিকে পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদলের নিকটে যাই; কিন্তু তিনি এ কথা আপন পিতাকে জ্ঞাত করিলেন না। তখন শৌল গিবিয়ার প্রান্তভাগে মিগ্রোণস্থ দাড়িম্ব বৃক্ষের তলে অবস্থিতি করিতেছিলেন, এবং তাঁহার সঙ্গে অনুমান ছয় শত লোক ছিল। আর এলি, যিনি শীলোতে সদাপ্রভুর যাজক ছিলেন, তাঁহার সন্তান পীনহসের সন্তান ঈখাবোদের ভ্রাতা অহীটুবের পুত্র যে অহিয়, তিনি এফোদ বস্ত্রধারী ছিলেন। আর যোনাথন যে বাহির হইয়া গিয়াছেন, সে কথা লোকেরা জানিত না। যোনাথন যে গিরিপথ দিয়া পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদলের নিকটে যাইতে চেষ্টা করিলেন, সেই ঘাটের মধ্যস্থলে এক পার্শ্বে দম্ভাকার এক শৈল, এবং অন্য পার্শ্বে দম্ভাকার আর এক শৈল ছিল; তাহার একটীর নাম বোৎসেস ও আর একটীর নাম সেনি। তাহার মধ্যে একটী শৈল উত্তরদিকে মিক্‌মসের অভিমুখে, আর একটী দক্ষিণদিকে গেবার অভিমুখে ছিল। আর যোনাথন আপন অস্ত্রবাহক যুবককে কহিলেন, চল, আমরা ঐ দিকে অচ্ছিন্নত্বক্‌দের প্রহরিদলের নিকটে যাই; হয় ত সদাপ্রভু আমাদের অন্য কর্ম্ম করিবেন; কেননা অনেকের দ্বারা হউক বা অল্পের দ্বারা হউক, নিস্তার করিতে সদাপ্রভুর কোন প্রতিবন্ধক নাই। তখন তাঁহার অস্ত্রবাহক কহিল, আপনার যাহা মনে লয়, তাহাই করুন; সেই দিকে ফিরুন, দেখুন, আপনার মনের বাঞ্ছানুসারে আমি আপনার সঙ্গে সঙ্গে আছি। যোনাথন কহিলেন, দেখ, আমরা ঐ লোকদের দিকে অগ্রসর হইব, উহাদের কাছে দেখা দিব। যদি তাহারা আমাদিগকে এই কথা বলে, থাক, আমরা তোমাদের নিকটে আসিব, তবে আমরা আপনাদের স্থানে দাঁড়াইয়া থাকিব, তাহাদের কাছে উঠিয়া যাইব না। কিন্তু যদি এই কথা বলে, আমাদের নিকটে উঠিয়া আইস, তবে আমরা উঠিয়া যাইব, কেননা সদাপ্রভু আমাদের হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিয়াছেন; ইহাই আমাদের চিহ্ন হইবে। পরে তাঁহারা দুই জন পলেষ্টীয়দের প্রহরিদলের নিকটে দেখা দিলে পলেষ্টীয়েরা কহিল, দেখ, ইব্রীয়গণ যে সকল গর্ত্তে লুকাইয়া ছিল, তাহা হইতে এখন বাহির হইয়া আসিতেছে। পরে সেই প্রহরিদলের লোকেরা যোনাথনকে ও তাঁহার অস্ত্রবাহককে কহিল, আমাদের নিকটে উঠিয়া আইস, আমরা তোমাদিগকে কিছু দেখাইব। যোনাথন আপন অস্ত্রবাহককে কহিলেন, আমার পশ্চাতে আইস, কারণ সদাপ্রভু উহাদিগকে ইস্রায়েলের হস্তগত করিয়াছেন। পরে যোনাথন হামাগুড়ি দিয়া উঠিয়া গেলেন, এবং তাঁহার অস্ত্রবাহক তাঁহার পশ্চাতে গেল; তাহাতে সেই লোকেরা যোনাথনের সম্মুখে পতিত হইতে লাগিল, এবং তাঁহার অস্ত্রবাহক তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে তাহাদিগকে বধ করিতে লাগিল। যোনাথনের ও তাঁহার অস্ত্রবাহকের কৃত এই প্রথম হত্যাকাণ্ডে এক বিঘার প্রায় অর্দ্ধ হালখাত পরিমিত ভূমিতে কমবেশ বিশ জন হত হইল। আর শিবিরমধ্যে, ক্ষেত্রে, ও সমস্ত সৈন্যের মধ্যে কম্প উপস্থিত হইল, প্রহরী ও বিনাশক-দল সকলও কম্পান্বিত হইল; আর ভূমিকম্প হইল; এইরূপে ঈশ্বর হইতে মহাকম্প উপস্থিত হইল। তখন বিন্যামীনের গিবিয়াতে স্থিত শৌলের প্রহরিগণ চাহিয়া দেখিল; আর দেখ, লোকের ভিড় ভাঙ্গিয়া গেল, তাহারা ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল। তখন শৌল আপন সঙ্গীদিগকে কহিলেন, এক বার লোক গণনা করিয়া দেখ, আমাদের মধ্য হইতে কে গিয়াছে? পরে তাহারা লোকদিগকে গণনা করিল, আর দেখ, যোনাথন ও তাঁহার অস্ত্রবাহক তথায় নাই। তখন শৌল অহিয়কে কহিলেন, ঈশ্বরের সিন্দুক এই স্থানে আন; কেননা সেই দিনে ঈশ্বরের সিন্দুক ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে ছিল। পরে যখন শৌল যাজকের সহিত কথা কহিতেছিলেন, তখন পলেষ্টীয়দের সৈন্যমধ্যে উত্তর উত্তর কোলাহল বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তাহাতে শৌল যাজককে কহিলেন, হাত টানিয়া লও। আর শৌল ও তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোক সমাগত হইয়া যুদ্ধে গমন করিলেন; আর দেখ, প্রত্যেক জনের খড়্‌গ তাহার বন্ধুর প্রতিকূল হওয়াতে অতিশয় কোলাহল হইতেছিল। আর যে ইব্রীয়গণ পূর্ব্বে পলেষ্টীয়দের পক্ষ হইয়াছিল, যাহারা চারিদিক্‌ হইতে তাহাদের সঙ্গে শিবিরের মধ্যে আসিয়াছিল, তাহারাও শৌলের ও যোনাথনের সঙ্গী ইস্রায়েলের পক্ষ হইল। আর ইস্রায়েলের যে সমস্ত লোক পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে লুকাইয়া ছিল, তাহারাও পলেষ্টীদের পলায়ন সংবাদ শুনিয়া যুদ্ধে তাহাদের পশ্চাতে ধাবমান হইতে লাগিল। এই প্রকারে সদাপ্রভু ঐ দিবসে ইস্রায়েলকে নিস্তার করিলেন, এবং বৈৎ-আবনের পার পর্য্যন্ত যুদ্ধ ব্যাপিয়া গেল। ঐ দিবসে ইস্রায়েল লোকেরা দুর্দ্দশাপন্ন হইয়াছিল, কিন্তু শৌল লোকদিগকে এই দিব্য করাইয়াছিলেন, সায়ংকালের পূর্ব্বে, আমি যে পর্য্যন্ত আমার শত্রুগণকে প্রতিফল না দিই, সে পর্য্যন্ত যে কেহ খাদ্য গ্রহণ করিবে, সে শাপগ্রস্ত হইক। এই জন্য লোকদের মধ্যে কেহই খাদ্য দ্রব্য স্পর্শ করিল না। পরে সকলে বনমধ্যে গেল, সেখানে ভূমির উপরে মধু ছিল। আর লোকেরা যখন বনে উপস্থিত হইল, দেখ, মধু ক্ষরিতেছে, কিন্তু কেহ মুখে হস্ত তুলিল না; কারণ লোকেরা ঐ দিব্যে ভীত হইয়াছিল; কিন্তু যোনাথনের পিতা লোকদিগকে যে দিব্য করাইয়াছিলেন, যোনাথন তাহা শুনেন নাই, তাই তিনি আপন হস্তস্থিত দণ্ডের অগ্রভাগ বাড়াইয়া দিয়া এক মধুর চাকে ডুবাইয়া হাতে করিয়া মুখে দিলেন; তাহাতে তাঁহার চক্ষু সতেজ হইল। তখন লোকদের মধ্যে এক জন কহিল, তোমার পিতা শপথসহকারে লোকদিগকে এই দৃঢ় আজ্ঞা দিয়াছেন, যে ব্যক্তি অদ্য খাদ্য গ্রহণ করিবে, সে শাপগ্রস্থ হইক; কিন্তু লোক সকল ক্লান্ত হইয়াছে। যোনাথন কহিলেন, আমার পিতা লোকদিগকে ব্যাকুল করিয়াছেন; বিনয় করি, দেখ, এই যৎকিঞ্চিৎ মধু আস্বাদন করাতে আমার চক্ষু কেমন সতেজ হইল। অদ্য যদি লোকেরা শত্রুদের হইতে প্রাপ্ত লুটদ্রব্য হইতে যথেষ্ট আহার করিতে পাইত, তবে আরও সতেজ হইত। কেননা এখন পলেষ্টীয়দের মধ্যে মহাহত্যা হয় নাই। ঐ দিবসে তাহারা মিক্‌মস অবধি অয়ালোন পর্য্যন্ত পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিল; আর লোকেরা অতিশয় ক্লান্ত হইয়া পড়িল। পরে লোকেরা লুটদ্রব্যের দিকে দৌড়িয়া মেষ, গোরু ও বাছুর ধরিয়া ভূমিতে বধ করিতে ও রক্তশুদ্ধ খাইতে লাগিল। তখন কেহ কেহ শৌলকে বলিল, দেখুন, লোকেরা রক্তশুদ্ধ ভোজন করিয়া সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিতেছে। তাহাতে তিনি কহিলেন, তোমরা সত্যলঙ্ঘন করিয়াছ; আজ আমার নিকটে একখানা বৃহৎ প্রস্তর গড়াইয়া আন। শৌল আরও কহিলেন, তোমরা লোকদের মধ্যে চারিদিকে গিয়া তাহাদিগকে বল, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন গোরু ও প্রত্যেক জন আপন আপন মেষ আমার নিকটে আন, আর এই স্থানে বধ করিয়া ভোজন কর; রক্তশুদ্ধ ভোজন করিয়া সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিও না। তাহাতে সমস্ত লোক সেই রাত্রিতে প্রত্যেকে আপন আপন গোরু সঙ্গে করিয়া আনিয়া সেই স্থানে বধ করিল। আর শৌল সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাঁহার নির্ম্মিত প্রথম বেদি। পরে শৌল কহিলেন, চল, আমরা রাত্রিতে পলেষ্টীয়দের পশ্চাতে নামিয়া গিয়া প্রভাত পর্য্যন্ত তাহাদের দ্রব্য লুট করি, এবং তাহাদের এক জনকেও অবশিষ্ট রাখিব না। তাহারা কহিল, আপনার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই করুন। পরে যাজক কহিল, আইস, আমরা এই স্থানে ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হই। তাহাতে শৌল ঈশ্বরের নিকটে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কি পলেষ্টীয়দের পশ্চাতে নামিয়া যাইব? তুমি কি তাহাদিগকে ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিবে? কিন্তু সেই দিন তিনি তাঁহাকে উত্তর দিলেন না। তখন শৌল কহিলেন, হে লোকদের অধ্যক্ষ সকল, তোমরা নিকটে আইস, এবং অদ্যকার এই পাপ কিসে হইল, তাহা জ্ঞাত হও, বুঝিয়া দেখ। ইস্রায়েলের নিস্তারকর্ত্তা জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যদ্যপি আমার পুত্র যোনাথনেরই দোষে তাহা হইয়া থাকে, তবু সে অবশ্য মরিবে। কিন্তু সমস্ত লোকের মধ্যে কেহই তাঁহাকে উত্তর দিল না। পরে তিনি সমস্ত ইস্রায়েলকে কহিলেন, তোমরা এক দিকে থাক, এবং আমি ও আমার পুত্র যোনাথন অন্য দিকে থাকি। তাহাতে লোকেরা শৌলকে কহিল, আপনার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই করুন। পরে শৌল সদাপ্রভুকে কহিলেন, হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর, যথার্থ কি, দেখাইয়া দিউন; তখন যোনাথন ও শৌল ধরা পড়িলেন, কিন্তু লোকেরা মুক্ত হইল। পরে শৌল কহিলেন, আমার ও আমার পুত্র যোনাথনের মধ্যে গুলিবাঁট কর; তাহাতে যোনাথন ধরা পড়িলেন। তখন শৌল যোনাথনকে কহিলেন, বল দেখি, তুমি কি করিয়াছ? যোনাথন বলিলেন, আমি আপন হস্তস্থিত দণ্ডের অগ্রভাগে একটু মধু লইয়া চাকিয়াছিলাম; দেখুন, আমি মরিব। শৌল কহিলেন, ঈশ্বর অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন; যোনাথন, তুমি অবশ্য মরিবে। কিন্তু লোকেরা শৌলকে কহিল, ইস্রায়েলের মধ্যে যিনি এমন মহানিস্তার সাধন করিয়াছেন, সেই যোনাথন কি মরিবেন? এমন না হউক, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, উহাঁর মস্তকের একটী কেশও মৃত্তিকাতে পড়িবে না, কেননা উনি অদ্য ঈশ্বরের সহিত কার্য্য করিয়াছেন। এইরূপে লোকেরা যোনাথনকে রক্ষা করিল, তাঁহার মৃত্যু হইল না। পরে শৌল পলেষ্টীয়দের পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া আসিলেন, আর পলেষ্টীয়েরা স্বস্থানে গমন করিল। ইস্রায়েলের উপর রাজত্ব গ্রহণ করিবার পর শৌল সকল দিকে সমস্ত শত্রুর সহিত, মোয়াবের, অম্মোন-সন্তানগণের, ইদোমের, সোবার রাজগণের ও পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ করিলেন; তিনি যে কোন দিকে ফিরিতেন, ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিতেন। তিনি বীরত্বের সহিত কার্য্য করিতেন, অমালেককে আঘাত করিলেন, এবং লুটকারীদের হস্ত হইতে ইস্রায়েলকে উদ্ধার করিলেন। যোনাথন, যিশ্‌বি ও মল্কীশূয় নামে শৌলের তিন পুত্র ছিলেন; আর তাঁহার দুইটী কন্যার নাম এই, জ্যেষ্ঠার নাম মেরব, কনিষ্ঠার নাম মীখল; আর শৌলের স্ত্রীর নাম অহীনোয়ম, তিনি অহীমাসের কন্যা; এবং তাঁহার সেনাপতির নাম অব্‌নের; ইনি শৌলের পিতৃব্য নেরের পুত্র। আর কীশ শৌলের পিতা, এবং অব্‌নেরের পিতা নের অবীয়েলের পুত্র। শৌলের জীবন কাল ব্যাপিয়া পলেষ্টীয়দের সহিত ঘোরতর যুদ্ধ হইল। আর শৌল কোন বলবান পুরুষ বা কোন বীর পুরুষকে দেখিলে গ্রহণ করিতেন। আর শমূয়েল শৌলকে কহিলেন, সদাপ্রভু আপন প্রজাদের উপরে, ইস্রায়েলের উপরে তোমাকে রাজপদে অভিষেক করিতে আমাকেই প্রেরণ করিয়াছিলেন; অতএব এখন তুমি সদাপ্রভুর বাক্যের রবে কর্ণপাত কর। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েলের প্রতি অমালেক যাহা করিয়াছিল, মিসর হইতে উহার আসিবার সময়ে সে পথের মধ্যে উহার বিরূদ্ধে যেরূপ ঘাঁটি বসাইয়াছিল, আমি তাহা লক্ষ্য করিয়াছি। এখন তুমি গিয়া অমালেককে আঘাত কর, ও তাহার যাহা কিছু আছে, নিঃশেষে বিনষ্ট কর, তাহার প্রতি দয়া করিও না; স্ত্রী ও পুরুষ, বালকবালিকা ও স্তন্যপায়ী শিশু, গোরু ও মেষ, উষ্ট্র ও গর্দ্দভ সকলকেই বধ কর। পরে শৌল লোকদিগকে ডাকাইয়া টলায়ীমে তাহাদিগকে গণনা করিলেন; দুই লক্ষ পদাতিক ও যিহূদার দশ সহস্র লোক হইল। পরে শৌল অমালেকের নগর পর্য্যন্ত গিয়া উপত্যকায় লুকাইয়া থাকিলেন। আর শৌল কেনীয়দিগকে কহিলেন, যাও, স্থানান্তরে যাও, অমালেকীয়দের মধ্য হইতে প্রস্থান কর, পাছে আমি তাহাদের সহিত তোমাদিগকেও বিনষ্ট করি; যখন মিসর হইতে সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তান বাহির হইয়া আসিয়াছিল, তখন তোমরা তাহাদের প্রতি দয়া করিয়াছিলে। অতএব কেনীয়গণ অমালেকের মধ্য হইতে প্রস্থান করিল। পরে শৌল হবীলা অবধি মিসরের সম্মুখস্থ শূর পর্য্যন্ত অমালেককে আঘাত করিলেন। তিনি অমালেকের রাজা অগাগকে জীবিত ধরিলেন, এবং সমস্ত প্রজাকে খড়্‌গধারে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন। কিন্তু শৌল ও লোকেরা অগাগের প্রতি এবং উত্তম উত্তম মেষ ও গোরুর প্রতি ও পুষ্ট গোবৎসের এবং মেষশাবকগুলির প্রতি ও সমস্ত উত্তম বস্তুর প্রতি দয়া করিলেন, সেই সকলকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিতে চাহিলেন না; কিন্তু যে কিছু তুচ্ছনীয় ও রোগা, তাহাই নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন। পরে শমূয়েলের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, আমি শৌলকে রাজা করিয়াছি বলিয়া আমার অনুশোচনা হইতেছে, যেহেতু সে আমার অনুগমন হইতে ফিরিয়া আসিয়াছে, আমার বাক্য পালন করে নাই। তখন শমূয়েল ক্রুদ্ধ হইলেন, এবং সমস্ত রাত্রি সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিলেন। পরে শমূয়েল শৌলের সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রত্যূষে উঠিলেন; তখন শমূয়েলকে এই সংবাদ দেওয়া হইল, শৌল কর্মিলে আসিয়াছিলেন, আর দেখুন, তিনি নিজের জন্য একটি স্তম্ভ প্রস্তুত করাইয়াছেন, পরে তথা হইতে ফিরিয়া, ঘুরিয়া গিল্‌গলে নামিয়া গেলেন। আর শমূয়েল শৌলের নিকটে আসিলে শৌল তাঁহাকে কহিলেন, আপনি সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদের পাত্র; আমি সদাপ্রভুর বাক্য পালন করিয়াছি। শমূয়েল কহিলেন, তবে আমার কর্ণগোচরে এই মেষের রব হইতেছে কেন? আর এই গোরুর ডাক আমি শুনিতেছি কেন? শৌল কহিলেন, সে সকল অমালেকীয়দের হইতে আনীত হইয়াছে; ফলতঃ আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিবার জন্য লোকেরা উত্তম উত্তম মেষের ও গোরুর প্রতি দয়া করিয়াছে; কিন্তু আমরা অবশিষ্ট লোকসকলকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিয়াছি। তখন শমূয়েল শৌলকে কহিলেন, ক্ষান্ত হও; গত রাত্রিতে সদাপ্রভু আমাকে যাহা বলিয়াছেন, তাহা তোমাকে বলি। শৌল কহিলেন, বলুন। শমূয়েল কহিলেন, যদিও তুমি আপনার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ছিলে, তথাপি তোমাকে কি ইস্রায়েল বংশ সকলের মস্তক করা হয় নাই? আর সদাপ্রভু তোমাকে ইস্রায়েলের উপরে রাজপদে অভিষিক্ত করিলেন। পরে সদাপ্রভু তোমাকে যাত্রাপথে পাঠাইলেন, কহিলেন, যাও, সেই পাপিষ্ট অমালেকীয়দিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট কর; এবং যে পর্য্যন্ত তাহারা উচ্ছিন্ন না হয়, তাবৎ তাহাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর। তবে তুমি সদাপ্রভুর রবে অবধান না করিয়া কেন লুটের উপরে পড়িয়া সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিয়াছ? শৌল শমূয়েলকে কহিলেন, আমি ত সদাপ্রভুর রবে অবধান করিয়াছি, যে পথে সদাপ্রভু আমাকে পাঠাইয়াছেন, সেই পথে গিয়াছি, আর অমালেকের রাজা অগাগকে আনিয়াছি, ও অমালেকীয়দিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিয়াছি। কিন্তু গিল্‌গলে আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিবার জন্য লোকেরা বর্জ্জিত দ্রব্যের অগ্রিমাংশ বলিয়া লুটের মধ্য হইতে কতকগুলি মেষ ও গোরু আনিয়াছে। শমূয়েল কহিলেন, সদাপ্রভুর রবে অবধান করিলে যেমন, তেমন কি হোমে ও বলিদানে সদাপ্রভু প্রসন্ন হন? দেখ, বলিদান অপেক্ষা আজ্ঞাপালন উত্তম, এবং মেষের মেদ অপেক্ষা অবধান করা উত্তম। কারণ আজ্ঞালঙ্ঘন করা মন্ত্রপাঠ জন্য পাপের তুল্য, এবং অবাধ্যতা, পৌত্তলিকতা ও ঠাকুরপূজার সমান। তুমি সদাপ্রভুর বাক্য অগ্রাহ্য করিয়াছ, এই জন্য তিনি তোমাকে অগ্রাহ্য করিয়া রাজ্যচ্যুত করিয়াছেন। তখন শৌল শমূয়েলকে কহিলেন, আমি পাপ করিয়াছি; ফলতঃ সদাপ্রভুর আজ্ঞা ও আপনার বাক্য লঙ্ঘন করিয়াছি; কারণ আমি লোকদিগকে ভয় করিয়া তাহাদের বাক্যে অবধান করিয়াছি। এখন বিনয় করি, আমার পাপ ক্ষমা করুন, ও আমার সঙ্গে ফিরিয়া আইসুন; আমি সদাপ্রভুকে প্রণিপাত করিব। শমূয়েল শৌলকে কহিলেন, আমি তোমার সঙ্গে ফিরিয়া যাইব না; কেননা তুমি সদাপ্রভুর বাক্য অগ্রাহ্য করিয়াছ, আর সদাপ্রভু তোমাকে অগ্রাহ্য করিয়া ইস্রায়েলের রাজ্যচ্যুত করিয়াছেন। এই বলিয়া শমূয়েল চলিয়া যাইবার জন্য ফিরিয়া দাঁড়াইলেন, তখন শৌল তাঁহার বস্ত্রের অঞ্চল ধরিলেন, তাহাতে তাহা ছিঁড়িয়া গেল। তখন শমূয়েল তাঁহাকে কহিলেন, সদাপ্রভু অদ্য তোমা হইতে ইস্রায়েলের রাজ্য টানিয়া ছিঁড়িলেন, এবং তোমা হইতে উত্তম তোমার এক প্রতিবাসীকে তাহা দিলেন। আবার ইস্রায়েলের বিশ্বাসভূমি মিথ্যাকথা কহেন না ও অনুশোচনা করেন না; কেননা তিনি মনুষ্য নহেন যে, অনুশোচনা করিবেন। তখন শৌল কহিলেন, আমি পাপ করিয়াছি; তবু বিনয় করি, এখন আমার প্রজাদের প্রাচীনবর্গের ও ইস্রায়েলের সম্মুখে আমার সম্মান রাখুন, আমার সঙ্গে ফিরিয়া আইসুন; আমি আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রণিপাত করিব। তাহাতে শমূয়েল শৌলের পশ্চাতে ফিরিয়া গেলেন; আর শৌল সদাপ্রভুকে প্রণিপাত করিলেন। পরে শমূয়েল কহিলেন, তোমরা অমালেকের রাজা অগাগকে এই স্থানে আমার নিকটে আন। তাহাতে অগাগ পুলকিত মনে তাঁহার নিকটে আসিলেন, তিনি বলিলেন, অবশ্য মৃত্যুর তিক্ততা অতীত হইল। কিন্তু শমূয়েল কহিলেন, তোমার খড়্‌গ দ্বারা স্ত্রীলোকেরা যেমন সন্তানহীনা হইয়াছে, তদ্রূপ স্ত্রীলোকদের মধ্যে তোমার মাতাও সন্তানহীনা হইবে; তখন শমূয়েল গিল্‌গলে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে অগাগকে খণ্ডবিখণ্ড করিলেন। পরে শমূয়েল রামাতে গেলেন, এবং শৌল শৌলের গিবিয়াস্থিত আপন বাটীতে গেলেন। আর মরণ দিন পর্য্যন্ত শমূয়েল শৌলের সহিত আর সাক্ষাৎ করিলেন না। শমূয়েল শৌলের জন্য শোক করিতেন। আর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপরে শৌলকে রাজা করিয়াছেন বলিয়া অনুশোচনা করিলেন। পরে সদাপ্রভু শমূয়েলকে কহিলেন, তুমি কত কাল শৌলের জন্য শোক করিবে? আমি ত তাহাকে অগ্রাহ্য করিয়া ইস্রায়েলের রাজ্যচ্যুত করিয়াছি। তুমি তোমার শৃঙ্গ তৈলে পূর্ণ কর, যাও, আমি তোমাকে বৈৎলেহমীয় যিশয়ের নিকটে প্রেরণ করি, কেননা তাহার পুত্রগণের মধ্যে আমি আপনার জন্য এক রাজাকে দেখিয়া রাখিয়াছি। শমূয়েল কহিলেন, আমি কি প্রকারে যাইতে পারি? শৌল যদি এই কথা শুনে, তবে আমাকে বধ করিবে। সদাপ্রভু কহিলেন, তুমি এক গোবৎসা সঙ্গে লইয়া বল, সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞ করিতে আসিলাম। আর যিশয়কে সেই যজ্ঞে নিমন্ত্রিত করিও, পরে তুমি কি করিবে, তাহা আমি তোমাকে জানাইব; এবং আমি তোমার কাছে যাহার নাম করিব, তুমি আমার জন্য তাহাকে অভিষেক করিবে। পরে শমূয়েল সদাপ্রভুর সেই বাক্যানুসারে কর্ম্ম করিলেন, তিনি বৈৎলেহমে উপস্থিত হইলেন। তখন নগরের প্রাচীনবর্গ কাঁপিতে কাঁপিতে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন, আর বলিলেন, আপনি শান্তিভাবে আসিয়াছেন ত? তিনি কহিলেন, শান্তিভাবে আসিয়াছি; আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞ করিতে আসিয়াছি; তোমরা আপনাদিগকে পবিত্র করিয়া আমার সহিত যজ্ঞে আইস। আর তিনি যিশয়কে ও তাঁহার পুত্রগণকে পবিত্র করিয়া যজ্ঞে নিমন্ত্রণ করিলেন। পরে তাঁহারা আসিলে তিনি ইলীয়াবের প্রতি দৃষ্টি করিয়া মনে মনে কহিলেন, অবশ্য সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তি তাঁহার সম্মুখে। কিন্তু সদাপ্রভু শমূয়েলকে কহিলেন, তুমি উহার মূখশ্রীর বা কায়িক দীর্ঘতার প্রতি দৃষ্টি করিও না; কারণ আমি উহাকে অগ্রাহ্য করিলাম। কেননা মনুষ্য যাহা দেখে, তাহা কিছু নয়; যেহেতু মনুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে, কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন। পরে যিশয় অবীনাদবকে ডাকিয়া শমূয়েলের সম্মুখ দিয়া গমন করাইলেন; শমূয়েল কহিলেন, সদাপ্রভু ইহাকেও মনোনীত করেন নাই; পরে যিশয় শম্মকে তাঁহার সম্মুখ দিয়া গমন করাইলেন; তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু ইহাকেও মনোনীত করেন নাই। এইরূপে যিশয় আপনার সাত পুত্রকে শমূয়েলের সম্মুখ দিয়া গমন করাইলেন। পরে শমূয়েল যিশয়কে কহিলেন, সদাপ্রভু ইহাদিগকে মনোনীত করেন নাই। পরে শমূয়েল যিশয়কে কহিলেন, এই কি তোমার সমস্ত সন্তান? তিনি কহিলেন, কেবল কনিষ্ঠ অবশিষ্ট আছে, দেখুন, সে মেষ চরাইতেছে। তখন শমূয়েল যিশয়কে কহিলেন, লোক পাঠাইয়া তাহাকে আনাও; সে না আসিলে আমরা ভোজনে বসিব না। পরে তিনি লোক পাঠাইয়া তাঁহাকে আনাইলেন। তিনি ঈষৎ রক্তবর্ণ, সুনয়ন ও দেখিতে সুন্দর ছিলেন। তখন সদাপ্রভু কহিলেন, উঠ, ইহাকে অভিষেক কর, কেননা এ সেই ব্যক্তি। অতএব শমূয়েল তৈলশৃঙ্গ লইয়া তাঁহার ভ্রাতৃগণের মধ্যে তাঁহাকে অভিষেক করিলেন। আর সেই দিন হইতে সদাপ্রভুর আত্মা দায়ূদের উপরে আসিলেন। পরে শমূয়েল উঠিয়া রামাতে চলিয়া গেলেন। তখন সদাপ্রভুর আত্মা শৌলকে ত্যাগ করিয়াছিলেন, আর সদাপ্রভু হইতে এক দুষ্ট আত্মা আসিয়া তাঁহাকে উদ্বিগ্ন করিতে লাগিল। পরে শৌলের দাসগণ তাঁহাকে কহিল, দেখুন, ঈশ্বর হইতে এক দুষ্ট আত্মা আসিয়া আপনাকে উদ্বিগ্ন করিতেছে। আমাদের প্রভু আজ্ঞা করুন, যেন আপনার সম্মুখস্থ এই দাসেরা এক জন নিপুন বীণাবাদকের অন্বেষণ করে; পরে যে সময়ে ঈশ্বর হইতে সেই দুষ্ট আত্মা আপনার উপরে আসিবে, তৎকালে সেই ব্যক্তি হস্ত দ্বারা বীণা বাজাইলে আপনি উপশম পাইবেন। তখন শৌল আপন দাসদিগকে আজ্ঞা করিলেন, ভাল, তোমরা এক জন নিপুণ বাদকের অন্বেষণ করিয়া আমার নিকটে তাহাকে আন। যুবকদের এক জন কহিল, দেখুন, আমি বৈৎলেহমীয় যিশয়ের এক পুত্রকে দেখিয়াছি; সে বীণা বাদনে নিপুণ, বলবান বীর, যোদ্ধা, বাক্‌পটু ও রূপবান, আর সদাপ্রভু তাহার সহবর্ত্তী। পরে শৌল যিশয়ের নিকটে দূত পাঠাইয়া কহিলেন, তোমার পুত্র দায়ূদ, যে মেষ চরাইতেছে, তাহাকে আমার কাছে পাঠাইয়া দেও। তখন যিশয় একটা গর্দ্দভে রুটী ও এক কুপা দ্রাক্ষারস চাপাইয়া, এবং একটী ছাগবৎস লইয়া আপন পুত্র দায়ূদের হস্তে দিয়া শৌলের কাছে পাঠাইয়া দিলেন। পরে দায়ূদ শৌলের নিকটে আসিয়া তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইলে তিনি তাঁহাকে অতিশয় ভালবাসিতে লাগিলেন, আর তিনি তাঁহার শস্ত্রবাহক হইলেন। পরে শৌল যিশয়কে বলিয়া পাঠাইলেন, বিনয় করি, দায়ূদকে আমার সম্মুখে দাঁড়াইতে দেও; কেননা সে আমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়াছে। পরে ঈশ্বর হইতে সেই আত্মা যখন শৌলের কাছে আসিত, তখন দায়ূদ বীণা লইয়া আপন হস্তে বাজাইতেন; তাহাতে শৌল স্বস্থ হইতেন, উপশম পাইতেন, এবং সেই দুষ্ট আত্মা তাঁহাকে ছাড়িয়া যাইত। পরে পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করিবার জন্য সৈন্যসামন্ত সংগ্রহ করিয়া যিহূদার অধিকারস্থ সোখোতে একত্র হইল, এবং সোখোর ও অসেকার মধ্যে এফস্‌দম্মীমে শিবির স্থাপন করিল। আর শৌল ও ইস্রায়েল লোকেরা একত্র হইয়া এলা তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিয়া পলেষ্টীয়দের প্রতিকূলে সৈন্য রচনা করিলেন। এইরূপে পলেষ্টীয়েরা এক দিকে এক পর্ব্বতে, ও ইস্রায়েল অন্য দিকে অন্য পর্ব্বতে দাঁড়াইল; উভয়ের মধ্যে একটী উপত্যকা ছিল। পরে গাৎ-নিবাসী এক বীর পলেষ্টীয়দের শিবির হইতে বাহির হইল, তাহার নাম গলিয়াৎ, সে সাড়ে ছয় হস্ত দীর্ঘ। তাহার মস্তকে পিত্তলের শিরস্ত্র ছিল, এবং সে আঁইসের মত বর্ম্মে সজ্জিত ছিল; সেই বর্ম্ম পিত্তলময়, তাহার পরিমাণ পাঁচ সহস্র শেকল। আর তাহার পা পিত্তলের পত্রে আবৃত, ও তাহার স্কন্ধে পিত্তলের শল্য ছিল। তাহার বড়শার দণ্ড তন্তুবায়ের নরাজের সমান, ও বড়শার ফলা ছয় শত শেকল লৌহময় ছিল, এবং তাহার ঢালী তাহার অগ্রে অগ্রে চলিত। সে দাঁড়াইয়া ইস্রায়েলের সৈন্যশ্রেণীকে লক্ষ্য করিয়া চেঁচাইয়া বলিল, তোমরা কেন যুদ্ধার্থে সৈন্য রচনা করিতে বাহির হইয়া আসিয়াছ? আমি কি পলেষ্টীয় নহি, আর তোমরা কি শৌলের দাস নহ? তোমরা আপনাদের জন্য এক জনকে মনোনীত কর; সে আমার নিকটে নামিয়া আইসুক। সে যদি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া জয়ী হয়, আমাকে বধ করে, তবে আমরা তোমাদের দাস হইব; কিন্তু যদি আমি তাহাকে পরাজয় করিয়া বধ করিতে পারি, তবে তোমরা আমাদের দাস হইবে, আমাদের দাস্যকর্ম্ম করিবে। সেই পলেষ্টীয় আরও কহিল, অদ্য আমি ইস্রায়েলের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিতেছি; তোমরা এক জনকে দেও, আমরা পরস্পর যুদ্ধ করি। তখন শৌল ও সমস্ত ইস্রায়েল সেই পলেষ্টীয়ের এই সকল কথা শুনিয়া হতাশ ও অতিশয় ভীত হইলেন। দায়ূদ বৈৎলেহম-যিহূদা-নিবাসী সেই ইফ্রাথীয় পুরুষের পুত্র, যাঁহার নাম যিশয়; সেই ব্যক্তির আটটী পুত্র, আর শৌলের সময়ে তিনি বৃদ্ধ, মনুষ্যদের মধ্যে গতবয়স্ক হইয়াছিলেন। সেই যিশয়ের বড় তিন পুত্র শৌলের পশ্চাতে যুদ্ধে গমন করিয়াছিলেন। যুদ্ধে গত তাঁহার তিন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম ইলীয়াব; দ্বিতীয়ের নাম অবীনাদব; আর তৃতীয়ের নাম শম্ম। দায়ূদ কনিষ্ঠ ছিলেন; আর সেই বড় তিন জন শৌলের অনুগামী হইয়াছিলেন। কিন্তু দায়ূদ শৌলের নিকট হইতে বৈৎলেহমে আপন পিতার মেষ চরাইবার জন্য যাতায়াত করিতেন। আর সেই পলেষ্টীয় চল্লিশ দিন পর্য্যন্ত প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে নিকটে আসিয়া আপনাকে দেখাইত। আর যিশয় আপন পুত্র দায়ূদকে কহিলেন, তুমি আপন ভ্রাতাদের জন্য এই এক ঐফা ভাজা শস্য ও দশখানা রুটী লইয়া শিবিরে ভ্রাতাদের কাছে দৌড়িয়া যাও। আর এই দশ তাল পনীর তাহাদের সহস্রপতির নিকটে লইয়া যাও; এবং তোমার ভ্রাতারা কেমন আছে, দেখিয়া আইস, তাহাদের হইতে কোন চিহ্ন আনিও। শৌল ও তাহারা এবং সমস্ত ইস্রায়েল এলা তলভূমিতে আছে, পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ করিতেছে। পরে দায়ূদ প্রত্যূষে উঠিয়া মেষগণকে এক জন রক্ষকের হস্তে সমর্পণ করিলেন, এবং যিশয়ের আজ্ঞানুসারে ঐ সকল দ্রব্য লইয়া গমন করিলেন। তিনি যে সময়ে শকটমণ্ডলের নিকটে উপস্থিত হইলেন, সেই সময়ে সৈন্যগণ যুদ্ধে যাইবার জন্য বাহির হইতেছিল, এবং সংগ্রামের জন্য সিংহনাদ করিতেছিল। পরে ইস্রায়েল এবং পলেষ্টীয়েরা পরস্পর সম্মুখাসম্মুখি হইয়া সৈন্য রচনা করিল। তখন দায়ূদ দ্রব্যরক্ষকের হস্তে আপনার দ্রব্য সকল রাখিয়া সৈন্যশ্রেণীর মধ্যে দৌড়িয়া গিয়া আপন ভ্রাতৃগণের মঙ্গল জিজ্ঞাসা করিলেন। তিনি তাঁহাদের সহিত কথা কহিতেছেন, ইতিমধ্যে দেখ, গাৎ-নিবাসী পলেষ্টীয় গলিয়াৎ নামক সেই বীর পলেষ্টীয়দের সৈন্যশ্রেণী হইতে উঠিয়া আসিয়া পূর্ব্বমত কথা কহিল; আর দায়ূদ তাহা শুনিলেন। কিন্তু ইস্রায়েলের সমস্ত লোক সেই ব্যক্তিকে দেখিয়া তাহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল, তাহারা অতিশয় ভীত হইয়াছিল। আর ইস্রায়েল লোকেরা পরস্পর কহিল, এই যে ব্যক্তি উঠিয়া আসিল, ইহাকে তোমরা দেখিতেছ ত? এ ত ইস্রায়েলকে টিট্‌কারি দিতে আসিয়াছে। ইহাকে যে বধ করিবে, রাজা তাহাকে প্রচুর ধনে ধনবান করিবেন, ও তাহাকে আপন কন্যা দিবেন, এবং ইস্রায়েলের মধ্যে তাহার পিতৃকুলকে নিষ্কর করিবেন। তখন দায়ূদ, নিকটে যে লোকেরা দাঁড়াইয়াছিল, তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এই পলেষ্টীয়কে বধ করিয়া যে ব্যক্তি ইস্রায়েলের কলঙ্ক খণ্ডন করিবে, তাহার প্রতি কি করা যাইবে? এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয়টা কে যে, জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিয়াছে? তাহাতে লোকেরা এই প্রকারে তাঁহাকে উত্তর করিল, উহাকে যে বধ করিবে, সে অমুক পুরস্কার পাইবে। সেই লোকদের সহিত তাঁহার কথোপকথন কালে তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইলীয়াব সকলই শুনিলেন; তাই ইলীয়াব দায়ূদের উপরে ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া কহিলেন, তুই কেন নামিয়া আসিলি? প্রান্তরের মধ্যে সেই মেষকয়টী কার কাছে রাখিয়া আসিলি? তোর অহঙ্কার ও তোর মনের দুষ্টতা আমি জানি; তুই যুদ্ধ দেখিতে আসিয়াছিস্‌। দায়ূদ কহিলেন, আমি কি করিলাম? এ কি বাক্যমাত্র নহে? পরে তিনি তাঁহার নিকট হইতে আর এক জনের দিকে ফিরিয়া সেইরূপ কথা কহিলেন; তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে পূর্ব্বমত উত্তর দিল। তখন দায়ূদ যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা রাষ্ট্র হইয়া পড়িল, ও শৌলের কাছে তাহার সংবাদ উপস্থিত হইল; তাহাতে তিনি আপনার নিকটে তাঁহাকে ডাকিয়া আনাইলেন। তখন দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, উহার জন্য কাহারও অন্তঃকরণ হতাশ না হউক; আপনার এই দাস গিয়া এই পলেষ্টীয়ের সহিত যুদ্ধ করিবে। তখন শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে গিয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে পারিবে না, কেননা তুমি বালক, এবং সে বাল্যকাল অবধি যোদ্ধা। দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আপনার এই দাস পিতার মেষ রক্ষা করিতেছিল, ইতিমধ্যে এক সিংহ ও এক ভল্লুক আসিয়া পালের মধ্য হইতে মেষ ধরিয়া লইল; আমি তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে গিয়া তাহাকে প্রহার করিয়া তাহার মুখ হইতে তাহা উদ্ধার করিলাম; পরে সে আমার বিরুদ্ধে উঠিয়া দাঁড়াইলে আমি তাহার দাড়ি ধরিয়া প্রহার করিয়া তাহাকে বধ করিলাম। আপনার দাস সেই সিংহ ও সেই ভল্লুক উভয়কেই বধ করিয়াছে; আর এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয় সেই দুইয়ের মধ্যে একের মত হইবে, কারণ এ জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিয়াছে। দায়ূদ আরও কহিলেন, যে সদাপ্রভু সিংহের থাবা ও ভল্লুকের থাবা হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন, তিনি এই পলেষ্টীয়ের হস্ত হইতে আমাকে উদ্ধার করিবেন। তখন শৌল দায়ূদকে কহিলেন, যাও, সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী হইবেন। পরে শৌল আপনার সজ্জায় দায়ূদকে সাজাইয়া তাঁহার মস্তকে পিত্তলের শিরস্ত্র ও গাত্রে বর্ম্ম দিলেন। তখন দায়ূদ সজ্জার উপরে তাঁহার খড়্‌গ বাঁধিয়া চলিতে চেষ্টা করিলেন; কেননা পূর্ব্বে তাহা অভ্যাস করেন নাই। তখন দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, এই বেশে আমি যাইতে পারিব না, কেননা ইহা অভ্যাস করি নাই। পরে দায়ূদ তাহা খুলিয়া রাখিলেন। আর তিনি আপন যষ্টি হস্তে লইলেন, এবং স্রোতোমার্গ হইতে পাঁচখানি চিক্কণ পাথর বাছিয়া লইয়া, আপনার যে মেষপালকের পাত্র অর্থাৎ ঝুলি ছিল, তাহাতে রাখিলেন, এবং নিজের ফিঙ্গাটী হস্তে করিয়া ঐ পলেষ্টীয়ের নিকটে গমন করিলেন। আর সেই পলেষ্টীয় আসিতে লাগিল, এবং দায়ূদের নিকটবর্ত্তী হইল, আর সেই ঢালবাহী লোকটী তাহার অগ্রে অগ্রে চলিল। পরে পলেষ্টীয় চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, আর দায়ূদকে দেখিতে পাইয়া তুচ্ছজ্ঞান করিল; কেননা তিনি বালক, ঈষৎ রক্তবর্ণ ও দেখিতে সুন্দর ছিলেন। পরে ঐ পলেষ্টীয় দায়ূদকে কহিল, আমি কি কুকুর যে, তুই দণ্ড লইয়া আমার কাছে আসিতেছিস্‌? আর সেই পলেষ্টীয় আপন দেবগণের নাম লইয়া দায়ূদকে শাপ দিল। পলেষ্টীয় দায়ূদকে আরও কহিল, তুই আমার কাছে আয়, আমি তোর মাংস আকাশের পক্ষিগণকে ও মাঠের পশুদিগকে দিই। তখন দায়ূদ ঐ পলেষ্টীয়কে কহিলেন, তুমি খড়্‌গ, বড়শা ও শল্য লইয়া আমার কাছে আসিতেছ, কিন্তু আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, ইস্রায়েলের সৈন্যগণের ঈশ্বরের নামে, তুমি যাঁহাকে টিট্‌কারি দিয়াছ তাঁহারই নামে, তোমার নিকটে আসিতেছি। অদ্য সদাপ্রভু তোমাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিবেন; আর আমি তোমাকে আঘাত করিব, তোমার দেহ হইতে মুণ্ড তুলিয়া লইব, এবং পলেষ্টীয়দের সৈন্যের শব অদ্য শূন্যের পক্ষিগণকে ও ভূমির পশুদিগকে দিব; তাহাতে ইস্রায়েলে এক ঈশ্বর আছেন, ইহা সমস্ত পৃথিবী জানিতে পারিবে। আর সদাপ্রভু খড়্‌গ ও বড়শা দ্বারা নিস্তার করেন না, ইহাও এই সমস্ত সমাজ জানিবে; কেননা এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর, আর তিনি তোমাদিগকে আমাদের হস্তে সমর্পণ করিবেন। পরে ঐ পলেষ্টীয় উঠিয়া দায়ূদের সম্মুখীন হইবার জন্য আসিয়া নিকটবর্ত্তী হইলে দায়ূদ সত্বর ঐ পলেষ্টীয়ের সম্মুখীন হইবার জন্য সৈন্যশ্রেণীর দিকে দৌড়িলেন। পরে দায়ূদ আপন ঝুলিতে হস্ত দিয়া একখানি পাথর বাহির করিলেন, এবং ফিঙ্গাতে পাক দিয়া ঐ পলেষ্টীয়ের কপালে আঘাত করিলেন; সেই পাথরখানি তাহার কপালে বসিয়া গেল; তাহাতে সে ভূমিতে অধোমুখ হইয়া পড়িল। এই প্রকারে দায়ূদ ফিঙ্গা ও পাথর দিয়া ঐ পলেষ্টীয়কে পরাজয় করিলেন, এবং তাহাকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন; কিন্তু দায়ূদের হস্তে খড়্‌গ ছিল না। তাই দায়ূদ দৌড়িয়া ঐ পলেষ্টীয়ের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাহারই খড়্‌গ লইয়া খাপ খুলিয়া তাহাকে বধ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা তাহার মাথা কাটিয়া ফেলিলেন। পলেষ্টীয়েরা যখন দেখিতে পাইল, তাহাদের বীর মরিয়া গিয়াছে, তখন তাহারা পলায়ন করিল। আর ইস্রায়েলের ও যিহূদার লোকেরা উঠিয়া জয়ধ্বনি করিল, এবং গয় পর্য্যন্ত ও ইক্রোণের দ্বার পর্য্যন্ত পলেষ্টীয়দের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেল; তাহাতে পলেষ্টীয়দের আহতগণ শারয়িমের পথে গাৎ ও ইক্রোণ পর্য্যন্ত পড়িল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ পলেষ্টীয়দের পশ্চাৎ ধাবন হইতে ফিরিয়া আসিয়া তাহাদের শিবির লুট করিল। পরে দায়ূদ সেই পলেষ্টীয়ের মুণ্ড তুলিয়া যিরূশালেমে লইয়া গেলেন, কিন্তু তাহার সজ্জা আপনার তাম্বুতে রাখিলেন। আর শৌল যখন ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে দায়ূদকে যাইতে দেখিয়াছিলেন, তখন সেনাপতি অব্‌নেরকে বলিয়াছিলেন, অব্‌নের এ যুবক কাহার পুত্র? অব্‌নের বলিয়াছিলেন, হে রাজন্‌! আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি তাহা বলিতে পারি না। পরে রাজা বলিয়াছিলেন, তুমি জিজ্ঞাসা কর, ঐ বালকটী কাহার পুত্র? পরে দায়ূদ যখন পলেষ্টীয়কে বধ করিয়া ফিরিয়া আসিতেছেন, তখন অব্‌নের তাঁহাকে ধরিয়া শৌলের কাছে লইয়া গেলেন; তাঁহার হস্তে ঐ পলেষ্টীয়ের মুণ্ড ছিল। শৌল তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে যুবক, তুমি কাহার পুত্র? দায়ূদ উত্তর করিলেন, আমি আপনার দাস বৈৎলেহমীয় যিশয়ের পুত্র। শৌলের সহিত তাঁহার কথা সাঙ্গ হইলে যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন। আর শৌল ঐ দিবসে তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন, তাঁহার পিতার বাটীতে ফিরিয়া যাইতে দিলেন না। আর যোনাথন ও দায়ূদ এক নিয়ম করিলেন, কেননা যোনাথন তাঁহাকে প্রাণতুল্য ভালবাসিলেন। আর যোনাথন আপন গাত্রের পরিচ্ছদ খুলিয়া দায়ূদকে দিলেন, নিজের সজ্জা, এমন কি, নিজের খড়্‌গ, ধনুক ও কটিবন্ধনও দিলেন। পরে শৌল দায়ূদকে যে কোন স্থানে প্রেরণ করেন, দায়ূদ সেই স্থানে যান ও বুদ্ধিপূর্ব্বক চলেন, এই জন্য শৌল যোদ্ধাদের উপরে কর্ত্তৃত্বপদে তাঁহাকে নিযুক্ত করিলেন, আর তাহা সমস্ত লোকের দৃষ্টিতে এবং শৌলের দাসগণের দৃষ্টিতেও ভাল বোধ হইল। পরে লোকেরা ফিরিয়া আসিলে যখন দায়ূদ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিয়া ফিরিয়া আসিতেছিলেন, তখন শৌল রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে ইস্রায়েলের সমস্ত নগর হইতে স্ত্রীলোকেরা তবলধ্বনি, আমোদ ও ত্রিতন্ত্রীবাদ্য পুরঃসর গান ও নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইয়া আসিল। সেই স্ত্রীলোকেরা অভিনয়ক্রমে পরস্পর গান করিয়া বলিল, শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র, আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত। তাহাতে শৌল অতি ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি এই কথায় অসন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, উহারা দায়ূদের বিষয়ে অযুত অযুতের কথা বলিল, ও আমার বিষয়ে কেবল সহস্র সহস্রের কথা বলিল; ইহাতে রাজত্ব ব্যতীত সে আর কি পাইবে? সেই দিন অবধি শৌল দায়ূয়ের উপরে দৃষ্টি রাখিলেন। পরদিবসে ঈশ্বর হইতে এক দুষ্ট আত্মা সবলে শৌলের উপরে আসিল, এবং তিনি গৃহমধ্যে প্রলাপ বকিতে লাগিলেন, আর দায়ূদ প্রত্যহ যেমন করিতেন, সেইরূপ হস্ত দ্বারা বাদ্য বাজাইতেছিলেন; তখন শৌলের হস্তে তাঁহার বড়শা ছিল। শৌল সেই বড়শা নিক্ষেপ করিলেন, বলিলেন, আমি দায়ূদকে ভিত্তির সঙ্গে গাঁথিব; কিন্তু দায়ূদ দুই বার তাঁহার সম্মুখ হইতে সরিয়া গেলেন। আর শৌল দায়ূদের বিষয়ে ভীত হইতে লাগিলেন, কারণ সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্ত্তী ছিলেন, কিন্তু শৌলকে ত্যাগ করিয়াছিলেন। সেই জন্য শৌল আপনার নিকট হইতে তাঁহাকে দূর করিয়া দিলেন, ও সহস্রপতি পদে নিযুক্ত করিলেন; তাহাতে তিনি লোকদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগমন করিতে লাগিলেন। আর দায়ূদ আপন সমস্ত পথে বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতেন, এবং সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন। তিনি বেশ বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতেছেন দেখিয়া শৌল তাঁহার বিষয়ে ত্রাসযুক্ত হইলেন। কিন্তু সমস্ত ইস্রায়েল ও যিহূদা দায়ূদকে ভালবাসিত, কেননা তিনি তাহাদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগণন করিতেন। পরে শৌল দায়ূদকে কহিলেন, দেখ, আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা মেরব, আমি তোমার সহিত তাহার বিবাহ দিব; তুমি কেবল আমার পক্ষে বিক্রমী হইয়া সদাপ্রভুর জন্য সংগ্রাম কর। কারণ শৌল কহিলেন, আমার হস্ত তাহার উপরে না উঠুক, কিন্তু পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। আর দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আমি কে, এবং আমার প্রাণ কি, ইস্রায়েলের মধ্যে আমার পিতার গোষ্ঠীই বা কি যে, আমি রাজার জামাতা হই? কিন্তু শৌলের কন্যা মেরবকে দায়ূদের সহিত বিবাহ দিবার সময় উপস্থিত হইলে সে মহোলাতীয় অদ্রীয়েলকে দত্তা হইল। পরে শৌলের কন্যা মীখল দায়ূদকে প্রেম করিতে লাগিলেন; তখন লোকেরা শৌলকে তাহা জানাইলে তিনি তাহাতে সন্তুষ্ট হইলেন। শৌল কহিলেন, আমি তাহাকে সেই কন্যা দিব; সে তাহার ফাঁদস্বরূপ হউক, ও পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। অতএব শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি অদ্য দ্বিতীয় বার আমার জামাতা হও। পরে শৌল আপন দাসগণকে আজ্ঞা দিলেন, তোমরা গোপনে দায়ূদের সহিত আলাপ করিয়া এই কথা বল, দেখ, তোমার প্রতি রাজা সন্তুষ্ট, এবং তাঁহার সমস্ত দাস তোমাকে ভালবাসে; অতএব এখন তুমি রাজার জামাতা হও। শৌলের দাসগণ দায়ূদের কর্ণগোচরে এই কথা কহিল। দায়ূদ কহিলেন, রাজার জামাতা হওয়া কি তোমাদের কাছে লঘু বিষয় বোধ হয়? আমি ত দরিদ্র লোক, তুচ্ছের পাত্র। পরে শৌলের দাসগণ তাঁহাকে সমাচার দিয়া কহিল, দায়ূদ এই প্রকার কথা বলেন। শৌল কহিলেন, তোমরা দায়ূদকে এই কথা বল, রাজা কিছু পণ চাহেন না, কেবল রাজার শত্রুদের প্রতিশোধের জন্য পলেষ্টীয়দের এক শত লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ চাহেন। শৌল মনে করিলেন, পলেষ্টীয়দের হস্ত দ্বারা দায়ূদকে নিপাত করা যাইবে। পরে তাঁহার দাসগণ দায়ূদকে সেই কথা জানাইলে দায়ূদ রাজ-জামাতা হইতে তুষ্ট হইলেন। তখন কাল সম্পূর্ণ হয় নাই; দায়ূদ আপন লোকদের সহিত উঠিয়া গিয়া পলেষ্টীয়দের দুই শত জনকে বধ করিলেন, এবং রাজার জামাতা হইবার জন্য দায়ূদ পূর্ণ সংখ্যানুসারে তাহাদের লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ আনিয়া রাজাকে দিলেন; পরে শৌল তাঁহার সহিত আপন কন্যা মীখলের বিবাহ দিলেন। আর শৌল দেখিয়া জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্ত্তী, এবং শৌলের কন্যা মীখল তাঁহাকে প্রেম করেন। তাহাতে শৌল দায়ূদের বিষয়ে আরও ভীত হইলেন, আর শৌল সর্ব্বদাই দায়ূদের শত্রু থাকিলেন। পরে পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ বাহির হইতে লাগিলেন; কিন্তু যত বার বাহির হইলেন, তত বার শৌলের দাসগণের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা দায়ূদ অধিক বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিলেন, তাহাতে তাঁহার নাম অতিশয় সম্মানিত হইল। পরে শৌল আপন পুত্র যোনাথনকে ও আপনার সমস্ত দাসকে বলিয়া দিলেন, যেন তাহারা দায়ূদকে বধ করে। কিন্তু শৌলের পুত্র যোনাথন দায়ূদের প্রতি অতিশয় অনুরক্ত ছিলেন। যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, আমার পিতা শৌল তোমাকে বধ করিতে চেষ্টা করিতেছেন; অতএব বিনয় করি, তুমি প্রাতঃকালে সাবধান হইবে, একটী গুপ্ত স্থান আশ্রয় করিয়া লুকাইয়া থাকিও। তুমি যে ক্ষেত্রে থাকিবে, সেই স্থানে আমি গিয়া আপন পিতার পার্শ্বে দাঁড়াইব, ও তোমার বিষয়ে পিতার সহিত কথোপকথন করিব, আর যদি তেমন কিছু বুঝিতে পারি, তোমাকে বলিয়া দিব। পরে যোনাথন আপন পিতা শৌলের কাছে দায়ূদের পক্ষে ভাল কথা কহিলেন, তিনি বলিলেন, রাজা আপন দাস দায়ূদের বিষয়ে পাপ না করুন, কেননা সে আপনার বিরুদ্ধে পাপ করে নাই, বরং তাহার কর্ম্ম সকল আপনার পক্ষে অতি মঙ্গলজনক। সে ত প্রাণ হাতে করিয়া সেই পলেষ্টীয়কে আঘাত করিল, আর সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলের পক্ষে মহানিস্তার সাধন করিলেন; আপনি তাহা দেখিয়া আনন্দ করিয়াছিলেন; অতএব এখন অকারণে দায়ূদকে বধ করিয়া কেন নির্দ্দোষের রক্তপাতরূপ পাপ করিবেন? তখন শৌল যোনাথনের রবে কর্ণপাত করিলেন, এবং শৌল দিব্য করিয়া কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, সে হত হইবে না। পরে যোনাথন দায়ূদকে ডাকিলেন, এবং যোনাথন ঐ সমস্ত কথা তাঁহাকে জ্ঞাত করিলেন। আর যোনাথন দায়ূদকে শৌলের কাছে আনিলেন, তাহাতে তিনি পূর্ব্বের মত তাঁহার কাছে থাকিলেন। পরে পুনর্ব্বার যুদ্ধ উপস্থিত হইলে দায়ূদ বাহির হইয়া পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ করিলেন, তিনি মহাসংহারে তাহাদিগকে সংহার করিলেন, এবং তাহারা তাঁহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল। আর সদাপ্রভু হইতে এক দুষ্ট আত্মা সবলে শৌলের উপরে আসিল; তখন শৌল আপন গৃহে বসিয়াছিলেন, তাঁহার হস্তে তাঁহার বড়শা ছিল; আর দায়ূদ হস্ত দ্বারা বাদ্য করিতেছিলেন। এমন সময় শৌল বড়শা দিয়া দায়ূদকে ভিত্তির সঙ্গে গাঁথিতে চেষ্টা করিলেন; কিন্তু তিনি শৌলের সম্মুখ হইতে সরিয়া যাওয়াতে তাঁহার বড়শা ভিত্তিতে ঢুকিয়া গেল, এবং দায়ূদ সে রাত্রিতে পলাইয়া রক্ষা পাইলেন। পরে শৌল দায়ূদের গৃহের নিকটে দূতগণকে পাঠাইলেন, যেন তাহারা তাঁহার উপরে চক্ষু রাখে, আর প্রাতঃকালে তাঁহাকে বধ করে। কিন্তু দায়ূদের স্ত্রী মীখল তাঁহাকে সংবাদ দিয়া কহিলেন, তুমি যদি এই রাত্রিতে আপন প্রাণ রক্ষা না কর, তবে কাল মারা পড়িবে। আর মীখল বাতায়ন দিয়া দায়ূদকে নামাইয়া দিলেন; তাহাতে তিনি গিয়া পলায়ন করিয়া রক্ষা পাইলেন। আর মীখল ঠাকুর-প্রতিমা লইয়া শয্যাতে শয়ন করাইলেন, এবং ছাগলোমের একটা লেপ তাহার মস্তকে দিয়া বস্ত্র দ্বারা তাহা ঢাকিয়া রাখিলেন। পরে শৌল দায়ূদকে ধরিতে দূতগণকে পাঠাইলে মীখল কহিলেন, তিনি পীড়িত আছেন। তাহাতে শৌল দায়ূদকে দেখিবার জন্য সেই দূতগণকে পাঠাইয়া দিলেন, কহিলেন, তাহাকে খট্টাতে করিয়া আমার কাছে আন, আমি তাহাকে বধ করিব। পরে দূতগণ যখন ভিতরে গেল, দেখ, খট্টাতে সেই ঠাকুর-প্রতিমা ও তাহার মস্তকে ছাগলোমের লেপ রহিয়াছে। তখন শৌল মীখলকে কহিলেন, তুমি আমাকে কেন এইরূপে প্রবঞ্চনা করিলে? তুমি আমার শত্রুকে ছাড়িয়া দেওয়াতে সে পলায়ন করিয়াছে। তাহাতে মীখল শৌলকে উত্তর করিলেন, তিনি বলিয়াছিলেন, আমাকে যাইতে দেও, আমি তোমাকে কেন বধ করিব? ইতিমধ্যে দায়ূদ পলায়ন করিয়া রক্ষা পাইলেন, এবং রামাতে শমূয়েলের কাছে গিয়া আপনার প্রতি শৌলের কৃত সমস্ত ব্যবহারের কথা জানাইলেন; পরে তিনি ও শমূয়েল গিয়া নায়োতে বাস করিলেন। পরে কেহ শৌলকে কহিল, দেখুন, দায়ূদ রামাস্থ নায়োতে আছেন। তখন শৌল দায়ূদকে ধরিবার জন্য দূতগণকে পাঠাইলেন; তাহাতে যখন দূতগণ ভাবোক্তি প্রচারকারী ভাববাদীর দলকে ও তাহাদের অধ্যক্ষরূপে দণ্ডায়মান শমূয়েলকে দেখিল, তখন ঈশ্বরের আত্মা শৌলের দূতগণের উপরে আসিলেন, তাহাতে তাহারাও ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিল। এই সংবাদ শৌলকে দেওয়া হইলে তিনি অন্য দূতদিগকে প্রেরণ করিলেন, আর তাহারাও ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিল। পরে শৌল তৃতীয় বার দূতগণকে প্রেরণ করিলেন, আর তাহারাও ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিল। তখন শৌল আপনিও রামাতে গমন করিলেন; আর সেখূস্থ বৃহৎ কূপের নিকটে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, শমূয়েল ও দায়ূদ কোথায়? এক জন কহিল, দেখুন, তাঁহারা রামাস্থ নায়োতে রহিয়াছেন। তখন শৌল রামাস্থিত নায়োতে গেলেন। আর ঈশ্বরের আত্মা তাঁহার উপরেও আসিলেন, তাহাতে তিনি রামাস্থিত নায়োতে উপস্থিত না হওয়া পর্য্যন্ত যাইতে যাইতে ভাবোক্তি প্রচার করিলেন। আর তিনিও আপন বস্ত্র খুলিয়া ফেলিলেন, এবং তিনিও শমূয়েলের সম্মুখে ভাবোক্তি প্রচার করিলেন, আর সমস্ত দিবারাত্রি বিবস্ত্র হইয়া পড়িয়া রহিলেন। এই জন্য লোকে বলে, শৌলও কি ভাববাদীদের মধ্যে এক জন? পরে দায়ূদ রামাস্থ নায়োৎ হইতে পলাইয়া যোনাথনের নিকটে আসিয়া কহিলেন, আমি কি করিয়াছি? আমার অপরাধ কি? তোমার পিতার কাছে আমার দোষ কি যে, তিনি আমার প্রাণ লইতে চেষ্টা করিতেছেন? যোনাথন তাঁহাকে কহিলেন, এমন না হউক, তুমি মরিবে না; দেখ, আমার পিতা আমার কর্ণগোচর না করিয়া ক্ষুদ্র কি মহৎ কোন কর্ম্ম করেন না; তবে আমার পিতা আমা হইতে এই কথা কেন গোপন করিবেন? এ কথা কিছু নয়। তাহাতে দায়ূদ দিব্য করিয়া পুনর্ব্বার কহিলেন, আমি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়াছি, ইহা তোমার পিতা বিলক্ষণ জানেন; এই জন্য কহিলেন, যোনাথন এ বিষয় জ্ঞাত না হউক, পাছে দুঃখিত হয়। কিন্তু জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, ও তোমার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমার ও মৃত্যুর মধ্যে নিতান্ত এক পাদমাত্র অন্তর। যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, তোমার প্রাণে যাহা বলে, আমি তোমার জন্য তাহাই করিব। তখন দায়ূদ যোনাথনকে কহিলেন, দেখ, কাল অমাবস্যা, আমাকে রাজার সহিত ভোজনে বসিতেই হইবে; কিন্তু তুমি আমাকে যাইতে দেও, আমি তৃতীয় দিবস সায়ংকাল পর্য্যন্ত ক্ষেত্রে লুকাইয়া থাকি। যদি তোমার পিতা আমার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করেন, তবে তুমি বলিবে, দায়ূদ আপন নগর বৈৎলেহমে তাড়াতাড়ি যাইবার জন্য আমার অনুমতি যাচ্ঞা করিল, কেননা সে স্থানে তাহাদের সমস্ত গোষ্ঠীর জন্য বার্ষিক যজ্ঞ হইতেছে। তিনি যদি বলেন, ভাল, তবে তোমার এই দাসের কুশল; নতুবা যদি বাস্তবিক তিনি ক্রুদ্ধ হন, তবে তুমি জানিবে, তিনি অমঙ্গল করিবেন, স্থির করিয়াছেন। অতএব, তুমি তোমার এই দাসের প্রতি সদয় ব্যবহার কর, কেননা তুমি তোমার সহিত তোমার এই দাসকে সদাপ্রভুর এক নিয়মে বদ্ধ করিয়াছ। কিন্তু যদি আমার কোন অপরাধ থাকে, তবে তুমিই আমাকে বধ কর; তুমি কেন তোমার পিতার নিকটে আমাকে লইয়া যাইবে? যোনাথন কহিলেন, তোমার প্রতি এমন না ঘটুক; বরঞ্চ আমার পিতা তোমার প্রতি অমঙ্গল ঘটাইতে স্থির করিয়াছেন, ইহা যদি আমি নিশ্চয় জানিতে পারি, তবে কি তোমাকে বলিয়া দিব না? দায়ূদ যোনাথনকে কহিলেন, তোমার পিতা যদি তোমাকে কর্কশ ভাবে উত্তর দেন, কে আমাকে জানাইবে? যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, চল, আমরা বাহির হইয়া ক্ষেত্রে যাই। তাহাতে তাঁহারা দুই জন বাহির হইয়া ক্ষেত্রে গেলেন। পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু [সাক্ষী], কল্য বা পরশ্ব অনুমান এই সময়ে পিতার কাছে কথা পাড়িয়া দেখিব; দেখ, দায়ূদের পক্ষে ভাল বুঝিলে আমি কি তখনই তোমার কাছে লোক পাঠাইয়া তাহা তোমার কর্ণগোচর করিব না? যদি তোমার অমঙ্গল করিতে আমার পিতার মনোরথ থাকে, আর আমি তাহা তোমার কর্ণগোচর না করি, সদাপ্রভু যোনাথনকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন; আর আমি তোমাকে পাঠাইয়া দিব, তাহাতে তুমি কুশলে যাইবে; সদাপ্রভু যেমন আমার পিতার সহবর্ত্তী হইয়াছেন, তদ্রূপ তোমারও সহবর্ত্তী থাকুন। আর আমি যেন না মরি, এই জন্য আমি যত দিন জীবিত থাকি, তুমি কেবল আমাকেই সদাপ্রভুর দয়া দেখাইবে, এমন নয়, কিন্তু তুমি আমার কুলের প্রতিও দয়ার ত্রুটি কখন করিবে না; যখন সদাপ্রভু দায়ূদের প্রত্যেক শত্রুকে ভূতল হইতে উচ্ছিন্ন করিবেন, তখনও করিবে না। এইরূপে যোনাথন দায়ূদের কুলের সহিত নিয়ম করিলেন; বলিলেন, আর সদাপ্রভু দায়ূদের শত্রুগণের কাছে পরিশোধ লইবেন। পরে যোনাথন, দায়ূদের প্রতি তাঁহার যে প্রেম ছিল, তৎপ্রযুক্ত পুনর্ব্বার তাঁহাকে শপথ করাইলেন, কেননা তিনি আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতেন। পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, কাল অমাবস্যা; কাল তোমার আসন শূন্য থাকায় তোমার তত্ত্ব জিজ্ঞাসা করা হইবে; তুমি পরশ্ব পর্য্যন্ত থাকিয়া, সেই দিন অতি ত্বরায় নামিয়া আসিয়া পূর্ব্ব কার্য্যের দিন যে স্থানে লুকাইয়া ছিলে, সেই স্থানে এষল নামক প্রস্তরের নিকটে থাকিবে। আমি লক্ষ্য বিদ্ধ করিবার ছলে তিনটী তীর তাহার পার্শ্বে ক্ষেপণ করিব। আর দেখ, আমার বালকটীকে পাঠাইব, বলিব, যাও, তীর কুড়াইয়া আন; আমি যদি বালকটীকে বলি, দেখ, তোমার এদিকে তীর আছে, তুলিয়া লও, তবে তুমি আসিও; জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তোমার মঙ্গল, কোন ভয় নাই। কিন্তু আমি যদি বালকটীকে বলি, দেখ, তোমার ওদিকে তীর আছে, তবে তুমি চলিয়া যাইও, কেননা সদাপ্রভু তোমাকে বিদায় করিলেন। আর দেখ, তোমার ও আমার এই কথোপকথনের বিষয়ে সদাপ্রভু যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্ত্তী। পরে দায়ূদ ক্ষেত্রে লুকাইয়া রহিলেন, ইতিমধ্যে অমাবস্যা উপস্থিত হইলে রাজা ভোজনে বসিলেন। রাজা অন্য সময়ের ন্যায় আপন আসনে অর্থাৎ ভিত্তির নিকটস্থ আসনে বসিলেন। যোনাথন দাঁড়াইলেন, এবং অব্‌নের শৌলের পার্শ্বে বসিলেন; কিন্তু দায়ূদের স্থান শূন্য থাকিল। তথাপি সে দিন শৌল কিছুই বলিলেন না, কেননা মনে মনে ভাবিলেন, তাহার কিছু হইয়াছে, সে শুচি নয়, সে অবশ্য অশুচি হইয়া থাকিবে। কিন্তু পরদিবসে, মাসের দ্বিতীয় দিবসে, দায়ূদের স্থান শূন্য থাকাতে শৌল আপন পুত্র যোনাথনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যিশয়ের পুত্র কল্য ও অদ্য ভোজনে কেন আসিতেছে না? যোনাথন শৌলকে উত্তর করিলেন, দায়ূদ বৈৎলেহমে যাইবার জন্য আমার কাছে অনেক বিনতি করিয়াছিল; সে কহিল, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে যাইতে দেও, কেননা নগরে আমাদের গোষ্ঠীর এক যজ্ঞ আছে, এবং আমার ভ্রাতাই আমাকে যাইতে আজ্ঞা করিয়াছেন; অতএব বিনয় করি, আমি যদি তোমার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে আমি গিয়া আমার জ্ঞাতিদিগকে দেখিয়া আসি। এই জন্য সে রাজার মেজে আইসে নাই। তখন যোনাথনের প্রতি শৌলের ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, তিনি তাঁহাকে কহিলেন, অরে বক্রশীলা বিদ্রোহিণী স্ত্রীর পুত্র, আমি কি জানি না যে, তুই আপনার লজ্জা ও মাতার আবরণীয়ের লজ্জা জন্মাইতে যিশয়ের পুত্রকে মনোনীত করিয়াছিস্‌? ফলে যিশয়ের পুত্র যাবৎ ভূতলে থাকিবে, তাবৎ তুই স্থির থাকিবি না, তোর রাজ্যও স্থির থাকিবে না। অতএব এখন লোক পাঠাইয়া তাহাকে আমার কাছে আন্‌, কেননা সে মৃত্যুর সন্তান। তাহাতে যোনাথন উত্তর করিয়া আপন পিতা শৌলকে কহিলেন, সে কেন হত হইবে? সে কি করিয়াছে? তখন শৌল তাঁহাকে আঘাত করিবার জন্য তাঁহার দিকে আপন বড়শা নিক্ষেপ করিলেন। ইহাতে যোনাথন জানিতে পারিলেন যে, তাঁহার পিতা দায়ূদকে বধ করিতে মনস্থ করিয়াছেন। তখন যোনাথন মহাক্রুদ্ধ হইয়া মেজ হইতে উঠিলেন, মাসের দ্বিতীয় দিবসে আহার করিলেন না; কেননা দায়ূদের জন্য তাঁহার দুঃখ হইল, কারণ তাঁহার পিতা তাঁহার অপমান করিয়াছিলেন। পরে প্রাতঃকালে যোনাথন একটী ক্ষুদ্র বালককে সঙ্গে লইয়া ক্ষেত্রে, দায়ূদের সহিত যে স্থান নিরূপিত হইয়াছিল, তথায় গেলেন। পরে তিনি বালকটীকে কহিলেন, আমি যে কয়েকটী তীর নিক্ষেপ করিব, তুমি দৌড়িয়া গিয়া তাহা কুড়াইয়া আন। তাহাতে বালকটী দৌড়িলে তিনি তাহার ওদিকে পড়িবার মত তীর নিক্ষেপ করিলেন। আর বালকটী যোনাথনের নিক্ষিপ্ত তীরের কাছে উপস্থিত হইলে যোনাথন বালকটীকে ডাকিয়া কহিলেন, তোমার ওদিকে কি তীর নাই? আবার যোনাথন বালককে ডাকিয়া কহিলেন, শীঘ্র দৌড়িয়া আইস, বিলম্ব করিও না। তখন যোনাথনের সেই বালক তীরগুলি কুড়াইয়া লইয়া আপন কর্ত্তার কাছে আসিল। কিন্তু বালকটী কিছুই বুঝিল না, কেবল যোনাথন ও দায়ূদ সেই বিষয় জ্ঞাত ছিলেন। পরে যোনাথন আপন তীর ধনুকাদি বালকটীকে দিয়া কহিলেন, এগুলি নগরে লইয়া যাও। বালকটী যাইবামাত্র দায়ূদ দক্ষিণদিক্‌স্থ কোন স্থান হইতে উঠিয়া আসিয়া তিন বার ভূমিতে উবুড় হইয়া পড়িয়া প্রণিপাত করিলেন, এবং তাঁহারা দুই জনে পরস্পর চুম্বন ও রোদন করিলেন, কিন্তু দায়ূদ অধিক রোদন করিলেন। পরে যোনাথন দায়ূদকে কহিলেন, কুশলে যাও, আমরা ত দুই জন সদাপ্রভুর নামে এই দিব্য করিয়াছি যে, সদাপ্রভু যুগে যুগে আমার ও তোমার মধ্যবর্ত্তী, এবং আমার বংশের ও তোমার বংশের মধ্যবর্ত্তী থাকিবেন। পরে তিনি উঠিয়া প্রস্থান করিলেন, আর যোনাথন নগরে চলিয়া গেলেন। পরে দায়ূদ নোবে অহীমেলক যাজকের নিকটে উপস্থিত হইলেন; আর অহীমেলক কাঁপিতে কাঁপিতে আসিয়া দায়ূদের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন, ও তাঁহাকে কহিলেন, আপনি একা কেন? আপনার সঙ্গে কেহ নাই কেন? দায়ূদ অহীমেলক যাজককে কহিলেন, রাজা একটী কর্ম্মের ভার দিয়া আমাকে বলিয়াছেন, আমি তোমাকে যে কার্য্যে প্রেরণ করিলাম ও যাহা আদেশ করিলাম, তাহার কিছুই যেন কেহ না জানে; আর আমি নিজের সঙ্গী যুবকদিগকে অমুক অমুক স্থানে আসিতে বলিয়াছি। এখন আপনার কাছে কি আছে? পাঁচখানা রুটী হউক, কিম্বা যাহা থাকে, আমার হাতে দিউন। যাজক দায়ূদকে উত্তর করিলেন, আমার কাছে সাধারণ রুটী নাই, কেবল পবিত্র রুটী আছে—যদি সেই যুবকেরা কেবল স্ত্রী হইতে পৃথক্‌ হইয়া থাকে। দায়ূদ যাজককে উত্তর দিলেন, সত্যই তিন দিন আমাদের হইতে স্ত্রীলোক পৃথক্‌ রহিয়াছে; আমি যখন বাহির হইয়া আসি, তখন যাত্রা সাধারণ হইলেও যুবকদিগের পাত্র সকল পবিত্র ছিল; অতএব অদ্য তাহাদের পাত্র সকল আরও কত না পবিত্র। তখন যাজক তাঁহাকে পবিত্র রুটী দিলেন; কেননা সেই স্থানে অন্য রুটী ছিল না, কেবল উহা তুলিয়া লইবার দিনে তপ্ত রুটী রাখিবার জন্য যে দর্শন-রুটী সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে স্থানান্তরীকৃত হইয়াছিল, তাহাই মাত্র ছিল। সেই দিন শৌলের দাসগণের মধ্যে ইদোমীয় দোয়েগ নামে এক জন সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নিবদ্ধ হইয়া সেই স্থানে ছিল, সে শৌলের প্রধান পশুপালক। পরে দায়ূদ অহীমেলককে কহিলেন, এই স্থানে আপনার কাছে কি বড়শা বা খড়্‌গ নাই? কেননা রাজকার্য্যের তাড়াতাড়িতে আমি আপন খড়্‌গ বা অস্ত্র সঙ্গে আনি নাই। যাজক কহিলেন, এলা তলভূমিতে আপনি যাহাকে বধ করিয়াছিলেন, সেই পলেষ্টীয় গলিয়াতের খড়্‌গ আছে; দেখুন, ইহা এফোদের পশ্চাদ্দিকে এখানে কাপড়ে জড়ান আছে; ইহা যদি লইতে চাহেন, লউন, কেননা ইহা ছাড়া আর কোন খড়্‌গ এখানে নাই। দায়ূদ কহিলেন, সেখানির তুল্য আর নাই; সেখানি আমাকে দিউন। পরে দায়ূদ উঠিয়া সেই দিন শৌলের ভয়ে পলাইয়া গাতের রাজা আখীশের কাছে গেলেন। তাহাতে আখীশের দাসগণ তাঁহাকে কহিল, এ ব্যক্তি কি দেশের রাজা দায়ূদ নয়? লোকেরা কি নাচিতে নাচিতে উহার বিষয় পরস্পর গাহিয়া বলে নাই, “শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র, আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত”? আর দায়ূদ সে কথা মনে রাখিলেন, এবং গাতের রাজা আখীশ হইতে অতিশয় ভীত হইলেন। আর তিনি উহাদের সাক্ষাতে বুদ্ধির বৈকল্য দেখাইলেন; তিনি তাহাদের কাছে ক্ষিপ্তের ন্যায় ব্যবহার করিতেন, দ্বারের কবাট আঁচড়াইতেন, ও আপন দাড়ির উপরে লালা ক্ষরিতে দিতেন। তখন আখীশ আপন দাসগণকে কহিলেন, দেখ, তোমরা দেখিতে পাইতেছ, এ ক্ষিপ্ত; তবে ইহাকে আমার নিকটে কেন আনিলে? আমার কি ক্ষিপ্ত লোকের অভাব আছে যে, তোমরা ইহাকে আমার কাছে ক্ষিপ্তের ব্যবহার করিতে আনিয়াছ? এ কি আমার গৃহে আসিবে? পরে দায়ূদ তথা হইতে প্রস্থান করিয়া অদুল্লম গুহাতে পলাইয়া গেলেন; আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ ও তাঁহার সমস্ত পিতৃকুল তাহা শুনিয়া সেই স্থানে তাঁহার নিকটে নামিয়া গেল। আর ক্লিষ্ট, ঋণী ও তিক্তপ্রাণ সমস্ত লোক তাঁহার নিকটে একত্র হইল, আর তিনি তাহাদের সেনাপতি হইলেন; এইরূপে অনুমান চারিশত লোক তাঁহার সঙ্গী হইল। পরে দায়ূদ তথা হইতে মোয়াবের মিস্পীতে গিয়া মোয়াব-রাজকে কহিলেন, বিনয় করি, ঈশ্বর আমার প্রতি কি করিবেন, তাহা যে পর্য্যন্ত আমি জ্ঞাত না হই, তাবৎ আমার পিতামাতা আসিয়া আপনাদের কাছে থাকুন। পরে তিনি তাঁহাদিগকে মোয়াব-রাজের সম্মুখে আনিলেন; আর যাবৎ দায়ূদ সেই দুর্গম স্থানে থাকিলেন, তাবৎ তাঁহারা ঐ রাজার সহিত বাস করিলেন। পরে গাদ ভাববাদী দায়ূদকে কহিলেন, তুমি আর এই দুর্গম স্থানে থাকিও না, প্রস্থান করিয়া যিহূদা দেশে যাও। তখন দায়ূদ যাত্রা করিয়া হেরৎ বনে উপস্থিত হইলেন। পরে শৌল শুনিতে পাইলেন যে, দায়ূদের ও তাঁহার সঙ্গীদের উদ্দেশ পাওয়া গিয়াছে। সেই সময়ে শৌল শল্যহস্তে গিবিয়ায়, রামাস্থ ঝাউ গাছের তলে বসিয়া ছিলেন, এবং তাঁহার চারিদিকে তাঁহার সমস্ত দাস দাঁড়াইয়াছিল। তখন শৌল আপনার চতুর্দ্দিকে দণ্ডায়মান আপন দাসগণকে কহিলেন, হে বিন্যামীনীয়েরা, শ্রবণ কর। যিশয়ের পুত্র কি তোমাদের প্রত্যেক জনকেই ক্ষেত্র ও দ্রাক্ষার উদ্যান দিবে? সে কি তোমাদের সকলকেই সহস্রপতি ও শতপতি করিবে? এই জন্য তোমরা সকলে কি আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়াছ? যিশয়ের পুত্রের সহিত আমার পুত্র যে নিয়ম করিয়াছে, তাহা কেহ আমার কর্ণগোচর করে নাই; এবং আমার পুত্র অদ্যকার মত আমার বিরুদ্ধে ঘাঁটি বসাইবার জন্য আমার দাসকে যে উষ্কাইয়া দিয়াছে, ইহাতেও তোমাদের মধ্যে কেহ আমার জন্য দুঃখিত হয় নাই বা আমাকে তাহা জ্ঞাত করে নাই। তখন ইদোমীয় দোয়েগ—যে শৌলের দাসগণের নিকটে দাঁড়াইয়াছিল—সে উত্তর করিল, আমি নোবে অহীটূবের পুত্র অহীমেলকের নিকটে যিশয়ের পুত্রকে যাইতে দেখিয়াছিলাম। সেই ব্যক্তি তাহার নিমিত্ত সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, ও তাহাকে খাদ্য দ্রব্য দিয়াছিল, এবং পলেষ্টীয় গলিয়াতের খড়্‌গ তাহাকে দিয়াছিল। তখন রাজা লোক পাঠাইয়া অহীটূবের পুত্র অহীমেলক যাজককে ও তাঁহার সমস্ত পিতৃকুলকে, নোবনিবাসী যাজকদিগকে ডাকাইলেন; আর তাঁহারা সকলে রাজার নিকটে আসিলেন। তখন শৌল কহিলেন, হে অহীটূবের পুত্র, শুন। তিনি উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, দেখুন, এই আমি। শৌল তাঁহাকে কহিলেন, তুমি ও যিশয়ের পুত্র আমার বিরুদ্ধে কেন চক্রান্ত করিলে? সে যেন অদ্যকার মত আমার বিরুদ্ধে উঠিয়া ঘাঁটি বসায়, সেই জন্য তুমি তাহাকে রুটী ও খড়্‌গ দিয়াছ, এবং তাহার জন্য ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করিয়াছ। অহীমেলক রাজাকে উত্তর করিলেন, আপনার সমস্ত দাসের মধ্যে কে দায়ূদের তুল্য বিশ্বস্ত? তিনি ত মহারাজের জামাতা, আপনার গুপ্ত মন্ত্রণা জানিবার অধিকারী, ও আপনার বাটীতে সম্ভ্রান্ত। আমি কি এই প্রথম বার তাঁহার জন্য ঈশ্বরের নিকটে জিজ্ঞাসা করিয়াছি? কখনই নয়; মহারাজ আপনার এই দাসকে ও আমার সমস্ত পিতৃকুলকে দোষ দিবেন না, কেননা আপনার দাস এ বিষয়ের অল্প কি অধিক কিছুমাত্র জ্ঞাত নহে। কিন্তু রাজা কহিলেন, হে অহীমেলক, তোমাকে ও তোমার সমস্ত পিতৃকুলকে মরিতে হইবে। তখন রাজা আপনার চতুর্দ্দিকে দণ্ডায়মান ধাবকগণকে কহিলেন, তোমরা ফিরিয়া দাঁড়াও, সদাপ্রভুর এই যাজকগণকে বধ কর; কেননা ইহারাও দায়ূদের সাহায্য করে, এবং তাহার পলায়নের কথা জানিয়াও আমার কর্ণগোচর করে নাই। কিন্তু সদাপ্রভুর যাজকদিগকে আক্রমণ করিবার জন্য হস্ত বিস্তার করিতে রাজার দাসগণ সম্মত হইল না। পরে রাজা দোয়েগকে কহিলেন, তুমি ফিরিয়া এই যাজকগণকে আক্রমণ কর। তখন ইদোমীয় দোয়েগ ফিরিয়া দাঁড়াইল, ও যাজকগণকে আক্রমণ করিয়া সেই দিবসে মসীনা-সূত্রের এফোদ পরিধায়ী পঁচাশী জনকে বধ করিল। পরে সে খড়্‌গধারে যাজকদের নোব নগরে আঘাত করিল; সে স্ত্রী, পুরুষ, বালকবালিকা ও স্তন্যপায়ী শিশু এবং গোরু, গর্দ্দভ ও মেষ সকল খড়্‌গধারে বধ করিল। ঐ সময়ে অহীটূবের পুত্র অহীমেলকের একটী মাত্র পুত্র রক্ষা পাইলেন; তাঁহার নাম অবিয়াথর; তিনি দায়ূদের কাছে পলাইয়া গেলেন। অবিয়াথর দায়ূদকে এই সংবাদ দিলেন যে, শৌল সদাপ্রভুর যাজকগণকে বধ করিয়াছেন। দায়ূদ অবিয়াথরকে কহিলেন, ইদোমীয় দোয়েগ সে স্থানে থাকাতে আমি সেই দিনই বুঝিয়াছিলাম যে, সে নিশ্চয়ই শৌলকে সংবাদ দিবে। আমিই তোমার পিতৃকুলের সমস্ত প্রাণীর বধের কারণ। তুমি আমার সহিত থাক, ভীত হইও না; কেননা যে আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করে; সেই তোমার প্রাণনাশের চেষ্টা করিতেছে; কিন্তু আমার সঙ্গে তুমি সুরক্ষিত থাকিবে। আর লোকেরা দায়ূদকে এই সংবাদ দিল, দেখ, পলেষ্টীয়েরা কিয়ীলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছে, আর খামার সকলের শস্য লুটিতেছে। তখন দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কি গিয়া ঐ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিব? সদাপ্রভু দায়ূদকে কহিলেন, যাও, সেই পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত কর, ও কিয়ীলা রক্ষা কর। দায়ূদের লোকেরা তাঁহাকে কহিল, দেখুন, আমাদের এই যিহূদা দেশে থাকাই ভয়ের বিষয়; তবে কিয়ীলাতে পলেষ্টীয়দের সৈন্যগণের বিরুদ্ধে যাওয়া আরও কত না ভয়ের বিষয়? তখন দায়ূদ পুনর্ব্বার সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন; আর সদাপ্রভু উত্তর করিলেন, উঠ, কিয়ীলাতে যাও, কেননা আমি পলেষ্টীয়দিগকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব। তখন দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা কিয়ীলাতে গেলেন, এবং পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ করিয়া তাহাদের পশুগণকে লইয়া আসিলেন, আর তাহাদিগকে মহাসংহারে সংহার করিলেন; এইরূপে দায়ূদ কিয়ীলা-নিবাসীদিগকে রক্ষা করিলেন। অহীমেলকের পুত্র অবিয়াথর যখন কিয়ীলাতে দায়ূদের নিকটে পলায়ন করেন, তখন তিনি এক এফোদ হস্তে করিয়া আসিয়াছিলেন। পরে দায়ূদ কিয়ীলাতে আসিয়াছে, এই সংবাদ পাইয়া শৌল কহিলেন, ঈশ্বর তাহাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন, কেননা দ্বার ও অর্গলযুক্ত নগরে প্রবেশ করাতে সে আবদ্ধ হইয়াছে। পরে দায়ূদকে ও তাঁহার লোকদিগকে অবরোধ করিবার জন্য শৌল যুদ্ধার্থে কিয়ীলাতে যাইবার নিমিত্ত সমস্ত লোককে ডাকিলেন। দায়ূদ জানিতে পারিলেন যে, শৌল তাঁহার বিরুদ্ধে অনিষ্ট কল্পনা করিতেছেন, তাই তিনি অবিয়াথর যাজককে কহিলেন, এই স্থানে এফোদ আন। পরে দায়ূদ কহিলেন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, শৌল কিয়ীলাতে আসিয়া আমার নিমিত্ত এই নগর উচ্ছিন্ন করিবার চেষ্টা করিতেছেন, তোমার দাস আমি ইহা শুনিলাম। কিয়ীলার গৃহস্থেরা কি তাঁহার হস্তে আমাকে সমর্পণ করিবে? তোমার দাস আমি যেরূপ শুনিলাম, সেইরূপ শৌল কি আসিবেন? হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, বিনয় করি, তোমার দাসকে তাহা বল। সদাপ্রভু কহিলেন, সে আসিবে। দায়ূদ জিজ্ঞাসা করিলেন, কিয়ীলার গৃহস্থেরা কি আমাকে ও আমার লোকদিগকে শৌলের হস্তে সমর্পণ করিবে? সদাপ্রভু কহিলেন, সমর্পণ করিবে। তখন দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা, অনুমান ছয় শত লোক, উঠিয়া কিয়ীলা হইতে বাহির হইয়া যে কোন স্থানে যাইতে পারিলেন, গেলেন; আর শৌলকে যখন বলা হইল যে, দায়ূদ কিয়ীলা হইতে পলাইয়া গিয়াছে, তখন তিনি যাইতে ক্ষান্ত হইলেন। পরে দায়ূদ প্রান্তরে নানা দুরাক্রম স্থানে বাস করিলেন, সীফ প্রান্তরে পাহাড় অঞ্চলে রহিলেন। আর শৌল প্রতিদিন তাঁহার অন্বেষণ করিলেন, কিন্তু ঈশ্বর তাঁহার হস্তে তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন না। আর দায়ূদ দেখিলেন যে, শৌল আমার প্রাণনাশের চেষ্টায় বাহির হইয়া আসিয়াছেন। তৎকালে দায়ূদ সীফ প্রান্তরে বনে ছিলেন। আর শৌলের পুত্র যোনাথন উঠিয়া বনে দায়ূদের নিকটে গিয়া ঈশ্বরেতে তাঁহার হস্ত সবল করিলেন। আর তিনি তাঁহাকে কহিলেন, ভয় করিও না, আমার পিতা শৌলের হস্ত তোমাকে পাইবে না, আর তুমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে, এবং আমি তোমার দ্বিতীয় হইব, ইহা আমার পিতা শৌলও জানেন। পরে তাঁহারা দুই জন সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নিয়ম স্থির করিলেন। আর দায়ূদ বনে থাকিলেন; কিন্তু যোনাথন গৃহে গেলেন। পরে সীফীয়েরা গিবিয়াতে শৌলের নিকটে গিয়া কহিল, দায়ূদ কি আমাদের নিকটে মরুভূমির দক্ষিণে হখীলা পাহাড়ের বনে কোন দুরাক্রম স্থানে লুকাইয়া নাই? অতএব হে রাজন্‌! নামিয়া আসিবার জন্য আপনার প্রাণে যত ইচ্ছা, তদনুসারে নামিয়া আইসুন; রাজার হস্তে তাহাকে সমর্পণ করা আমাদের কাজ। শৌল কহিলেন, তোমরা সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হও, কেননা তোমরা আমার প্রতি কৃপা করিলে। তোমরা যাও, আরও সন্ধান কর, জ্ঞাত হও, দেখিয়া লও, তাহার পা রাখিবার স্থান কোথায়? আর সেখানে তাহাকে কে দেখিয়াছে? কেননা দেখ, লোকে আমাকে বলিয়াছে, সে অতিশয় চাতুরীর সহিত চলে। অতএব যে সমস্ত গুপ্ত স্থানে সে লুকাইয়া থাকে, তাহার কোন্‌ স্থানে সে আছে, তাহা দেখ, লক্ষ্য কর, পরে আমার নিকটে আবার নিশ্চয় সমাচার লইয়া আইস, আসিলে আমি তোমাদের সহিত যাইব; সে যদি দেশে থাকে, তবে আমি যিহূদার সমস্ত সহস্রের মধ্যে তাহার সন্ধান করিব। তাহাতে তাহারা উঠিয়া শৌলের অগ্রে সীফে গেল; কিন্তু দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা মরুভূমির দক্ষিণে অরাবায়, মায়োন প্রান্তরে, ছিলেন। পরে শৌল ও তাঁহার লোকেরা তাঁহার অন্বেষণে গেলেন, আর লোকেরা দায়ূদকে তাহার সংবাদ দিলে তিনি শৈলে নামিয়া আসিলেন, এবং মায়োন প্রান্তরে রহিলেন। তাহা শুনিয়া শৌল মায়োন প্রান্তরে দায়ূদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেলেন। আর শৌল পর্ব্বতের এক পার্শ্বে গেলেন, এবং দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা পর্ব্বতের অন্য পার্শ্বে গেলেন। আর দায়ূদ শৌলের ভয়ে স্থানান্তরে যাইবার জন্য ত্বরান্বিত হইলেন; কেননা তাঁহাকে ও তাঁহার লোকদিগকে ধরিবার জন্য শৌল আপন লোকদের সহিত তাঁহাকে বেষ্টন করিয়াছিলেন। কিন্তু এক জন দূত শৌলের নিকটে আসিয়া কহিল, আপনি শীঘ্র আইসুন, কেননা পলেষ্টীয়েরা দেশ আক্রমণ করিয়াছে। তখন শৌল দায়ূদের পশ্চাৎ ধাবন হইতে ফিরিয়া পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যাত্রা করিলেন। এই নিমিত্ত সেই স্থানের নাম সেলা-হহ্মলকোৎ [রক্ষাশৈল] হইল। পরে দায়ূদ তথা হইতে উঠিয়া গিয়া ঐন্‌-গদীস্থ নানা দুরাক্রম স্থানে বাস করিলেন। পরে শৌল পলেষ্টীয়দের পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া আসিলে লোকে তাঁহাকে এই সংবাদ দিল, দেখুন, দায়ূদ ঐন্‌-গদীর প্রান্তরে আছে। তাহাতে শৌল সমস্ত ইস্রায়েল হইতে মনোনীত তিন সহস্র লোক লইয়া বনচ্ছাগের শৈল সকলের উপরে দায়ূদের ও তাঁহার লোকদের অন্বেষণে গমন করিলেন। পথের মধ্যে তিনি মেষবাথানে উপস্থিত হইলেন; তথায় এক গুহা ছিল; আর শৌল পা ঢাকিবার জন্য তন্মধ্যে প্রবেশ করিলেন; কিন্তু দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা সেই গুহার অন্তঃপ্রদেশে বসিয়াছিলেন। তখন দায়ূদের লোকেরা তাঁহাকে কহিল, দেখুন, এ সেই দিন, যে দিনের বিষয়ে সদাপ্রভু আপনাকে বলিয়াছেন, দেখ, আমিই তোমার শত্রুকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব, তখন তুমি তাহার প্রতি যাহা ভাল বুঝিবে, তাহাই করিবে। তাহাতে দায়ূদ উঠিয়া গুপ্তরূপে শৌলের বস্ত্রের অগ্রভাগ কাটিয়া লইলেন। তৎপরে, শৌলের বস্ত্রের অঞ্চল ছেদন করাতে দায়ূদের অন্তঃকরণ ধুক্‌ ধুক্‌ করিতে লাগিল; আর তিনি আপন লোকদিগকে কহিলেন, আমার প্রভুর প্রতি, সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি এমন কর্ম্ম করিতে, তাঁহার বিরুদ্ধে আমার হস্ত বিস্তার করিতে সদাপ্রভু আমাকে না দিউন; কেননা তিনি সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তি। এইরূপ কথা দ্বারা দায়ূদ আপন লোকদিগকে শাসন করিলেন, শৌলের বিরুদ্ধে উঠিতে দিলেন না। পরে শৌল উঠিয়া গুহা হইতে বাহির হইয়া আপন পথে গমন করিলেন। তৎপরে দায়ূদও উঠিয়া গুহা হইতে বাহির হইলেন, এবং শৌলের পশ্চাৎ হইতে ডাকিয়া কহিলেন, হে আমার প্রভু মহারাজ; আর শৌল পশ্চাতে দৃষ্টি করিলে দায়ূদ ভূমিতে মস্তক নমনপূর্ব্বক প্রণিপাত করিলেন। আর দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, মানুষের এমন কথা আপনি কেন শুনেন যে, দেখুন, দায়ূদ আপনার অনিষ্ট চেষ্টা করিতেছে? দেখুন, আপনি অদ্য চাক্ষুষ দেখিতেছেন, অদ্য এই গুহার মধ্যে সদাপ্রভু আপনাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলেন, এবং কেহ আপনাকে বধ করিবার পরামর্শ দিয়াছিল, কিন্তু আপনার উপরে আমার মমতা হইল, আমি কহিলাম, আমার প্রভুর বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করিব না, কেননা তিনি সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তি। আর হে আমার পিতঃ, দেখুন; হাঁ, আমার হস্তে আপনার বস্ত্রের এই অঞ্চল দেখুন; কেননা আমি আপনার বস্ত্রের অগ্রভাগ কাটিয়া লইয়াছি, তথাপি আপনাকে বধ করি নাই, ইহাতে আপনি বিবেচনা করিয়া দেখিবেন, আমি হিংসায় কি অধর্ম্মে হস্তক্ষেপ করি নাই, এবং আপনার বিরুদ্ধে পাপ করি নাই; তথাপি আপনি আমার প্রাণ হরণ করিবার জন্য মৃগয়া করিতেছেন। সদাপ্রভু আমার ও আপনার মধ্যে বিচার করিবেন, আপনার কৃত অন্যায় হইতে আমাকে উদ্ধার করিবেন, কিন্তু আমার হস্ত আপনার বিরুদ্ধ হইবে না। প্রাচীনদের প্রবাদে বলে, “দুষ্টদেরই হইতে দুষ্টতা জন্মে,” কিন্তু আমার হস্ত আপনার বিরুদ্ধ হইবে না। ইস্রায়েলের রাজা কাহার পশ্চাতে বাহির হইয়া আসিয়াছেন? আপনি কাহার পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া আসিতেছেন? একটা মৃত কুকুরের পশ্চাতে, একটা শিশুর পশ্চাতে। কিন্তু সদাপ্রভু বিচারকর্ত্তা হউন, তিনি আমার ও আপনার মধ্যে বিচার করুন; আর তিনি দৃষ্টিপাতপূর্ব্বক আমার বিবাদ নিষ্পত্তি করুন, এবং আপনার হস্ত হইতে আমাকে রক্ষা করুন। দায়ূদ শৌলের কাছে এই সকল কথা সাঙ্গ করিলে শৌল জিজ্ঞাসা করিলেন, হে আমার বৎস দায়ূদ, এ কি তোমার স্বর? আর শৌল উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিলেন। পরে তিনি দায়ূদকে কহিলেন, আমা অপেক্ষা তুমি ধার্ম্মিক, কেননা তুমি আমার মঙ্গল করিয়াছ, কিন্তু আমি তোমার অমঙ্গল করিয়াছি। তুমি আমার প্রতি কেমন মঙ্গল ব্যবহার করিয়া আসিতেছ, তাহা অদ্য দেখাইলে; সদাপ্রভু আমাকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিলেও তুমি আমাকে বধ করিলে না। মনুষ্য আপন শত্রুকে পাইলে কি তাহাকে মঙ্গলের পথে ছাড়িয়া দেয়? অদ্য তুমি আমার প্রতি যাহা করিলে, তাহার প্রতিশোধে সদাপ্রভু তোমার মঙ্গল করুন। এখন দেখ, আমি জানি, তুমি অবশ্যই রাজা হইবে, আর ইস্রায়েলের রাজ্য তোমার হস্তে স্থির থাকিবে। অতএব এখন সদাপ্রভুর নামে আমার কাছে দিব্য কর যে, তুমি আমার পরে আমার বংশ উচ্ছিন্ন করিবে না, ও আমার পিতৃকুল হইতে আমার নাম লোপ করিবে না। তখন দায়ূদ শৌলের নিকটে দিব্য করিলেন। পরে শৌল বাটী চলিয়া গেলেন, কিন্তু দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা দুরাক্রম স্থানে উঠিয়া গেলেন। পরে শমূয়েলের মৃত্যু হইল, এবং সমস্ত ইস্রায়েল একত্র হইয়া তাঁহার জন্য শোক করিল, আর রামায় তাঁহার বাটীতে তাঁহার কবর দিল। পরে দায়ূদ উঠিয়া পারণ প্রান্তরে গমন করিলেন। তৎকালে মায়োনে এক ব্যক্তি ছিল, কর্ম্মিলে তাহার বিষয়-আশয় ছিল; সে অতি বড় মানুষ; তাহার তিন সহস্র মেষ ও এক সহস্র ছাগী ছিল। সেই ব্যক্তি কর্ম্মিলে আপন মেষদিগের লোম ছেদন করিতেছিল। সেই পুরুষের নাম নাবল ও তাহার স্ত্রীর নাম অবীগল; ঐ স্ত্রী সুবুদ্ধি ও সুবদনা, কিন্তু ঐ পুরুষ কঠিন ও দুর্বৃত্ত ছিল; সে কালেবের বংশজাত। আর নাবল আপন মেষগণের লোম ছেদন করিতেছে, দায়ূদ প্রান্তরে এই কথা শুনিলেন। পরে দায়ূদ দশ জন যুবককে পাঠাইলেন; দায়ূদ সেই যুবকদিগকে কহিলেন, তোমরা কর্ম্মিলে উঠিয়া নাবলের কাছে যাও, এবং আমার নামে তাহাকে মঙ্গলবাদ কর; আর তাহাকে এই কথা বল, চিরজীবি হউন; আপনার কুশল, আপনার বাটীর কুশল, ও আপনার সর্ব্বস্বের কুশল হউক। সম্প্রতি আমি শুনিলাম, আপনার কাছে লোমচ্ছেদকগণ আছে; ইতিমধ্যে আপনার মেষপালকগণ আমাদের সহিত ছিল, আমরা তাহাদের অপকার করি নাই; এবং যাবৎ তাহারা কর্ম্মিলে ছিল, তাবৎ তাহাদের কিছুই হারায়ও নাই। আপনার যুবকদিগকে জিজ্ঞাসা করুন, তাহারা আপনাকে বলিবে; অতএব এই যুবকগণের প্রতি আপনার অনুগ্রহদৃষ্টি হউক, কেননা আমরা শুভ দিনে আসিলাম। বিনয় করি, আপন দাসদিগকে ও আপন পুত্র দায়ূদকে, যাহা আপনার হাতে উঠে, দান করুন। তখন দায়ূদের যুবকগণ গিয়া দায়ূদের নাম করিয়া নাবলকে সেই সকল কথা কহিল, পরে তাহারা চুপ করিয়া রহিল। নাবল উত্তর করিয়া দায়ূদের দাসদিগকে কহিল, দায়ূদ কে? যিশয়ের পুত্র কে? এই সময়ে অনেক দাস আপন আপন প্রভু হইতে পৃথক্‌ হইয়া বেড়াইতেছে। আমি কি আপনার রুটী, জল ও আপন মেষ-লোমচ্ছেদকদের জন্য সে সকল পশু মারিয়াছি, তাহাদের মাংস লইয়া অজ্ঞাত কোথাকার লোকদিগকে দিব? তখন দায়ূদের যুবকগণ মুখ ফিরাইয়া আপনাদের পথে চলিয়া আসিল, এবং তাঁহার নিকটে ফিরিয়া আসিয়া ঐ সমস্ত কথা তাঁহাকে বলিল। তখন দায়ূদ আপন লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা প্রত্যেক জন খড়্‌গ বাঁধ। তাহাতে তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন খড়্‌গ বাঁধিল, এবং দায়ূদও আপন খড়্‌গ বাঁধিলেন। পরে দায়ূদের পশ্চাতে অনুমান চারি শত লোক গেল, এবং দ্রব্যসামগ্রী রক্ষার্থে দুই শত লোক রহিল। ইতিমধ্যে যুবকদের এক জন নাবলের স্ত্রী অবীগলকে সংবাদ দিয়া কহিল, দেখুন, দায়ূদ আমাদের কর্ত্তাকে মঙ্গলবাদ করিতে প্রান্তর হইতে দূতগণকে পাঠাইয়াছিলেন, আর তিনি তাহাদিগকে লাঞ্ছনা করিলেন। কিন্তু সেই লোকেরা আমাদের পক্ষে বড় ভালই ছিল; যখন আমরা মাঠে ছিলাম, তখন যাবৎ তাহাদের সঙ্গে ছিলাম, তাবৎ আমাদের অপকার হয় নাই, কিছুই হারায়ও নাই। আমরা যত দিন তাহাদের কাছে থাকিয়া মেষ রক্ষা করিতেছিলাম, তাহারা দিবারাত্র আমাদের চারিদিকে প্রাচীরস্বরূপ ছিল। অতএব এখন আপনার কি কর্ত্তব্য, তাহা বিবেচনা করিয়া বুঝুন, কেননা আমাদের কর্ত্তার ও তাঁহার সমস্ত কুলের বিরুদ্ধে অমঙ্গল স্থির হইয়াছে; কিন্তু তিনি এমন পাষণ্ড যে, তাঁহাকে কোন কথা কহিতে পারা যায় না। তখন অবীগল শীঘ্র দুই শত রুটী, দুই কুপা দ্রাক্ষারস, পাঁচটা প্রস্তুত মেষ, পাঁচ কাঠা ভাজা শস্য, এক শত গুচ্ছ শুষ্ক দ্রাক্ষাফল ও দুই শত ডুমুর-চাক লইয়া গর্দ্দভের উপরে চাপাইল। আর সে আপন চাকরদিগকে কহিল, তোমরা আমার অগ্রে অগ্রে চল, দেখ, আমি তোমাদের পশ্চাতে পশ্চাতে যাইতেছি। কিন্তু সে আপন স্বামী নাবলকে তাহা জানাইল না। পরে সে গর্দ্দভে চড়িয়া পর্ব্বতের অন্তরাল দিয়া নামিয়া যাইতেছিল, ইতিমধ্যে দেখ, দায়ূদ আপন লোকদের সহিত তাহার সম্মুখে নামিয়া আসিলেন, তাহাতে সে তাঁহাদের সহিত মিলিল। দায়ূদ বলিয়াছিলেন, প্রান্তরস্থিত উহার সমস্ত বস্তু আমি বৃথাই রক্ষা করিয়াছি, উহার সমস্ত দ্রব্যের কিছুই হারায় নাই; আর সে উপকারের পরিবর্ত্তে আমার অপকার করিয়াছে। যদি আমি উহার সম্পর্কীয় পুরুষদের মধ্যে এক জনকেও রাত্রি প্রভাত পর্য্যন্ত অবশিষ্ট রাখি, তবে ঈশ্বর দায়ূদের শত্রুদের প্রতি অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। পরে অবীগল দায়ূদকে দেখিবামাত্র তাড়াতাড়ি গর্দ্দভ হইতে নামিয়া দায়ূদের সম্মুখে উবুড় হইয়া পড়িয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিলেন। আর তাঁহার চরণে পড়িয়া কহিলেন, হে আমার প্রভু, আমার উপরে, আমারই উপরে এই অপরাধ বর্ত্তুক। বিনয় করি, আপনার দাসীকে আপনার কর্ণগোচরে কথা কহিবার অনুমতি দিউন; আর আপনি আপনার দাসীর কথা শ্রবণ করুন। বিনয় করি, আমার প্রভু সেই পাষণ্ডকে অর্থাৎ নাবলকে গণনার মধ্যে ধরিবেন না; তাহার যেমন নাম, সেও তেমনি। তাহার নাম নাবল [মূর্খ], তাহার অন্তরে মূর্খতা। কিন্তু আপনার এই দাসী আমি আমার প্রভুর প্রেরিত যুবকদিগকে দেখি নাই। অতএব হে আমার প্রভু, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, ও আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, সদাপ্রভুই আপনাকে রক্তপাতে লিপ্ত হইতে ও আপন হস্তে প্রতিশোধ লইতে বারণ করিয়াছেন, কিন্তু আপনার শত্রুগণ ও যাহারা আমার প্রভুর অনিষ্ট চেষ্টা করে, তাহারা নাবলের তুল্য হউক। এখন আপনার দাসী এই যে উপহার প্রভুর নিমিত্ত আনিয়াছে, ইহা প্রভুর পশ্চাদগামী যুবকদিগকে প্রদান করিতে আজ্ঞা হউক। বিনয় করি, আপনার দাসীর অপরাধ ক্ষমা করুন, কেননা সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আমার প্রভুর কুল স্থির করিবেন; কারণ সদাপ্রভুরই জন্য আমার প্রভু যুদ্ধ করিতেছেন, যাবজ্জীবন আপনাতে কোন অনিষ্ট দেখা যাইবে না। মনুষ্য উঠিয়া আপনার তাড়না ও প্রাণনাশের চেষ্টা করিলেও আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে আমার প্রভুর প্রাণ জীবন-বোচ্‌কাতে বদ্ধ থাকিবে, কিন্তু আপনার শত্রুদের প্রাণ তিনি ফিঙ্গার জালে দিয়া নিক্ষেপ করিবেন। সদাপ্রভু আমার প্রভুর বিষয়ে যে সমস্ত মঙ্গলের কথা কহিয়াছেন, তাহা যখন সফল করিবেন, আপনাকে ইস্রায়েলের উপরে অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত করিবেন, তখন অকারণে রক্তপাত করাতে কিম্বা আপনি প্রতিশোধ লওয়া হেতু আমার প্রভুর শোক বা হৃদয়ে বিঘ্ন জন্মিবে না। আর যখন সদাপ্রভু আমার প্রভুর মঙ্গল করিবেন, তখন আপনার এই দাসীকে স্মরণ করিবেন। পরে দায়ূদ অবীগলকে কহিলেন, ধন্য ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি অদ্য আমার সহিত সাক্ষাৎ করাইতে তোমাকে প্রেরণ করিলেন। আর ধন্য তোমার সুবিচার, এবং ধন্যা তুমি, কারণ অদ্য তুমি রক্তপাত ও স্বহস্তে প্রতিশোধ লইতে আমাকে নিবৃত্ত করিলে। কারণ তোমার হিংসা করিতে যিনি আমাকে বারণ করিয়াছেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে যদি তুমি শীঘ্র না আসিতে, তবে নাবলের সম্পর্কীয় পুরুষদের মধ্যে এক জনও প্রভাত পর্য্যন্ত অবশিষ্ট থাকিত না। পরে দায়ূদ আপনার জন্য আনীত ঐ সকল দ্রব্য তাহার হস্ত হইতে গ্রহণ করিয়া তাহাকে কহিলেন, তুমি কুশলে ঘরে যাও; দেখ, আমি তোমার রবে কর্ণপাত করিয়া তোমাকে গ্রাহ্য করিলাম। পরে অবীগল নাবলের নিকটে আসিল; আর দেখ, রাজভোজের মত তাহার গৃহে ভোজ হইতেছিল, এবং নাবল প্রফুল্লচিত্ত ছিল, সে অতিশয় মত্ত হইয়াছিল; এই জন্য অবীগল রাত্রি প্রভাতের পূর্ব্বে ঐ বিষয়ের অল্প কি অধিক কিছুই তাহাকে কহিল না। কিন্তু প্রাতঃকালে নাবলের মত্ততা দূর হইলে তাহার স্ত্রী তাহাকে ঐ সমস্ত বৃত্তান্ত জ্ঞাত করিল; তখন তাহার অন্তর মধ্যে হৃদয় ম্রিয়মাণ হইল, এবং সে প্রস্তরবৎ হইয়া পড়িল। আর দিন দশেক পরে সদাপ্রভু নাবলকে আঘাত করাতে সে মরিয়া গেল। পরে নাবল মরিয়াছে, এই কথা শুনিয়া দায়ূদ কহিলেন, ধন্য সদাপ্রভু, তিনি নাবলের হস্তে আমার দুর্নাম-বিষয়ক বিবাদ নিষ্পত্তি করিলেন, এবং আপন দাসকে অনিষ্ট কার্য্য হইতে রক্ষা করিলেন; আর নাবলের হিংসা সদাপ্রভু তাহারই মস্তকে বর্ত্তাইলেন। পরে দায়ূদ লোক পাঠাইয়া অবীগলকে বিবাহ করিবার প্রস্তাব তাহাকে জানাইলেন। দায়ূদের দাসগণ কর্ম্মিলে অবীগলের নিকটে গিয়া তাহাকে কহিল, দায়ূদ আপনাকে বিবাহের জন্য লইয়া যাইতে আপনার নিকটে আমাদিগকে পাঠাইয়াছেন। তখন সে উঠিয়া উবুড় হইয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিয়া কহিল, দেখুন, আপনার এই দাসী আমার প্রভুর দাসদের পা ধোয়াইবার দাসী। পরে অবীগল শীঘ্র উঠিয়া গর্দ্দভে চড়িয়া আপনার পাঁচ জন অনুচরী যুবতীর সহিত দায়ূদের দূতগণের পশ্চাতে গেল, গিয়া দায়ূদের স্ত্রী হইল। আর দায়ূদ যিষ্রিয়েলীয়া অহীনোয়মকেও বিবাহ করিলেন; তাহাতে তাহারা উভয়েই তাঁহার স্ত্রী হইল। কিন্তু শৌল মীখল নামে আপন কন্যা দায়ূদের স্ত্রীকে লইয়া গল্লীম-নিবাসী লয়িশের পুত্র পল্‌টিকে দিয়াছিলেন। পরে সীফীয়েরা গিবিয়াতে শৌলের নিকটে গিয়া কহিল, দায়ূদ কি মরুভূমির সম্মুখস্থ হখীলা পাহাড়ে লুকাইয়া নাই? তখন শৌল উঠিলেন ও সীফ প্রান্তরে দায়ূদের অন্বেষণার্থে ইস্রায়েলের তিন সহস্র মনোনীত লোককে সঙ্গে লইয়া সীফ প্রান্তরে নামিয়া গেলেন। আর শৌল মরুভূমির সম্মুখস্থ হখীলা পাহাড়ে পথের পার্শ্বে শিবির স্থাপন করিলেন। কিন্তু দায়ূদ প্রান্তর মধ্যে অবস্থিতি করিতেছিলেন, আর তিনি দেখিতে পাইলেন, শৌল তাঁহার পশ্চাতে প্রান্তরে আসিতেছেন। তখন দায়ূদ চর পাঠাইয়া, শৌল নিশ্চয় আসিয়াছেন, ইহা জ্ঞাত হইলেন। পরে দায়ূদ উঠিয়া শৌলের শিবির-স্থানের নিকটে গেলেন, এবং দায়ূদ, শৌলের ও তাঁহার সেনাপতি নেরের পুত্র অব্‌নেরের শয়ন-স্থান দেখিলেন; শৌল শকটমণ্ডলের মধ্যে শুইয়াছিলেন, এবং লোকেরা তাঁহার চারিদিকে ছাউনি করিয়াছিল। পরে দায়ূদ হিত্তীয় অহীমেলককে ও সরূয়ার পুত্র যোয়াবের ভ্রাতা অবীশয়কে বলিলেন, ঐ শিবিরে শৌলের নিকটে আমার সঙ্গে কে নামিয়া যাইবে? অবীশয় কহিলেন, আমি আপনার সঙ্গে যাইব। পরে রাত্রিকালে দায়ূদ ও অবীশয় লোকদের নিকটে আসিলেন, আর দেখ, শৌল শকটমণ্ডলের মধ্যে নিদ্রিত আছেন, তাঁহার শিয়রের কাছে তাঁহার বড়শা ভূমিতে পোঁতা, এবং চারিদিকে অব্‌নের ও সমস্ত লোক শুইয়া আছে। তখন অবীশয় দায়ূদকে কহিলেন, অদ্য ঈশ্বর আপনার শত্রুকে আপনার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন; অতএব এখন বিনয় করি, বড়শা দ্বারা উহাঁকে এক আঘাতে ভূমির সহিত গাঁথিবার অনুমতি দিউন, আমি উহাঁকে দুই বার আঘাত করিব না। কিন্তু দায়ূদ অবীশয়কে কহিলেন, উহাঁকে বিনষ্ট করিও না; কেননা সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কে হস্ত বিস্তার করিয়া নির্দ্দোষ হইতে পারে? দায়ূদ আরও কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, সদাপ্রভুই উহাঁকে আঘাত করিবেন, কিম্বা উহাঁর দিন উপস্থিত হইলে উনি মরিবেন, কিম্বা সংগ্রামে গিয়া হত হইবেন। আমি যে সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করি, সদাপ্রভু এমন না করুন; কিন্তু উহাঁর শিয়রের নিকটস্থ বড়শা ও জলের ভাঁড় তুলিয়া লইয়া আইস; পরে আমরা চলিয়া যাইব। এইরূপে দায়ূদ শৌলের শিয়র হইতে তাঁহার বড়শা ও জলের ভাঁড় লইলেন, আর চলিয়া গেলেন, কিন্তু কেহ তাহা দেখিল না, জানিল না, কেহ জাগিলও না, কেননা সকলে নিদ্রিত ছিল; কারণ সদাপ্রভু তাহাদিগকে অগাধ নিদ্রায় মগ্ন করিয়াছিলেন। পরে দায়ূদ অন্য পারে গিয়া দূরে পর্ব্বতের শৃঙ্গে দাঁড়াইলেন; তাঁহাদের মধ্যে অনেকটা স্থান ব্যবধান ছিল। তখন দায়ূদ লোকদিগকে ও নেরের পুত্র অব্‌নেরকে ডাকিয়া কহিলেন, হে অব্‌নের, তুমি কি উত্তর দিবে না? তখন অব্‌নের উত্তর করিলেন, রাজার কাছে চেঁচাইতেছ তুমি কে? দায়ূদ অব্‌নেরকে কহিলেন, তুমি কি পুরুষ নহ? আর ইস্রায়েলের মধ্যে তোমার তুল্য কে? তবে তুমি আপন প্রভু রাজাকে কেন সাবধানে রাখিলে না? দেখ, তোমার প্রভু রাজাকে বিনষ্ট করিতে লোকদের মধ্যে এক জন আসিল। তুমি এ কাজ ভাল কর নাই। জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তোমরা মৃত্যুর সন্তান, কেননা সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তি তোমাদের প্রভুকে সাবধানে রাখ নাই। তুমি একবার দেখ, রাজার শিয়রের নিকটস্থ বড়শা ও জলের ভাঁড় কোথায়? তখন শৌল দায়ূদের স্বর বুঝিয়া কহিলেন, হে আমার বৎস দায়ূদ, এ কি তোমার স্বর? দায়ূদ কহিলেন, হাঁ প্রভু মহারাজ, এ আমারই স্বর। তিনি আরও কহিলেন, আমার প্রভু আপন দাসের পশ্চাতে পশ্চাতে কেন ধাবমান হন? আমি কি করিয়াছি? আমার হস্তে কি অনিষ্ট আছে? এখন বিনয় করি, আমার প্রভু মহারাজ আপন দাসের কথা শুনুন; যদি সদাপ্রভু আমার বিরুদ্ধে আপনাকে উত্তেজনা করিয়া থাকেন, তবে তিনি নৈবেদ্যের সৌরভ গ্রহণ করুন; কিন্তু যদি মনুষ্য-সন্তানেরা করিয়া থাকে, তবে তাহারা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে শাপগ্রস্ত হউক; কেননা অদ্য তাহারা আমাকে তাড়াইয়া দিয়াছে, যেন সদাপ্রভুর অধিকারে আমার অংশ না থাকে; তাহারা বলিয়াছে, তুমি গিয়া অন্য দেবগণের সেবা কর। অতএব এখন আমার রক্ত সদাপ্রভুর সাক্ষাৎ হইতে দূরে মৃত্তিকায় পতিত না হউক। ইস্রায়েলের রাজা একটী পিশুর অন্বেষণে বাহিরে আসিয়াছেন, যেমন কেহ পর্ব্বতে তিতির পক্ষীর পিছনে দৌড়িয়া যায়। তখন শৌল কহিলেন, আমি পাপ করিয়াছি; বৎস দায়ূদ, ফিরিয়া আইস; আমি তোমার হিংসা আর করিব না, কেননা অদ্য আমার প্রাণ তোমার দৃষ্টিতে মহামূল্য ছিল। দেখ, আমি নির্ব্বোধের কর্ম্ম করিয়াছি, ও বড়ই ভ্রান্ত হইয়াছি। দায়ূদ উত্তর করিলেন, হে রাজন্‌। এই দেখুন বড়শা; কোন যুবক পার হইয়া আসিয়া ইহা লইয়া যাউক। সদাপ্রভু প্রত্যেক জনকে তাহার ধার্ম্মিকতা ও বিশ্বস্ততার ফল দিবেন; বাস্তবিক সদাপ্রভু অদ্য আপনাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলেন, কিন্তু আমি সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করিতে চাহিলাম না। অতএব দেখুন, অদ্য যেমন আমার সাক্ষাতে আপনার প্রাণ মহামূল্য হইল, তেমনি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আমার প্রাণ মহামূল্য হউক; আর তিনি সমস্ত সঙ্কট হইতে আমাকে উদ্ধার করুন। পরে শৌল দায়ূদকে কহিলেন, বৎস দায়ূদ, তুমি ধন্য; তুমি অবশ্য মহৎ কর্ম্ম করিবে, আর বিজয়ী হইবে। পরে দায়ূদ আপন পথে চলিয়া গেলেন, শৌলও স্বস্থানে ফিরিয়া গেলেন। পরে দায়ূদ মনে মনে কহিলেন, ইহার মধ্যে কোন এক দিন আমি শৌলের হস্তে বিনষ্ট হইব। পলেষ্টীয়দের দেশে পলায়ন ব্যতিরেকে আমার আর মঙ্গল নাই; তথায় গেলে শৌল ইস্রায়েলের সমস্ত অঞ্চলে আমার অন্বেষণ করিতে ক্ষান্ত হইবেন, এবং আমি তাঁহার হস্ত হইতে রক্ষা পাইব। অতএব দায়ূদ উঠিয়া আপনার সঙ্গী ছয় শত লোক লইয়া মায়োকের পুত্র আখীশ নামক গাতের রাজার নিকটে গেলেন। আর দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা আপন আপন পরিবারের সহিত গাতে আখীশের নিকটে বাস করিলেন, বিশেষতঃ দায়ূদ ও তাঁহার দুই স্ত্রী, অর্থাৎ যিষ্রিয়েলীয়া অহীনোয়ম ও নাবলের বিধবা কর্ম্মিলীয়া অবীগল তথায় বাস করিলেন। পরে দায়ূদ পলাইয়া গাতে গিয়াছেন, এই সংবাদ শৌলের কর্ণগোচর হইলে তিনি আর তাঁহার অন্বেষণ করিলেন না। পরে দায়ূদ আখীশকে কহিলেন, আমি যদি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, তবে জনপদের কোন নগরে আমাকে স্থান দিউন, আমি তথায় বাস করিব; আপনার এই দাস আপনার সহিত রাজধানীতে কেন বসতি করিবে? তখন আখীশ সেই দিন সিক্লগ নগর তাঁহাকে দিলেন; এই কারণ অদ্যাপি সিক্লগ যিহূদার রাজাদের অধিকারে আছে। পলেষ্টীয়দের জনপদে দায়ূদের অবস্থিতি দিনের সংখ্যা এক বৎসর চারিমাস। ঐ সময়ে দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা যাইয়া গশূরীয়, গির্ষীয় ও অমালেকীয়দিগকে আক্রমণ করিতেন, কেননা শূরের সন্নিকট ও মিসর পর্য্যন্ত যে দেশ, তথায় পুরাকাল হইতে সেই জাতিরা বাস করিত। আর দায়ূদ সেই দেশবাসীদিগকে আঘাত করিতেন, পুরুষ কি স্ত্রী কাহাকেও জীবিত রাখিতেন না; মেষ, গোরু, গর্দ্দভ, উষ্ট্র ও বস্ত্র লুট করিতেন, পরে আখীশের কাছে ফিরিয়া আসিতেন। আর অদ্য তোমরা কোথায় চড়াউ হইলে? আখীশ ইহা জিজ্ঞাসা করিলে দায়ূদ বলিতেন, যিহূদার দক্ষিণাঞ্চলে, কিম্বা যিরহমেলীয়দের দক্ষিণাঞ্চলে, অথবা কেনীয়দের দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু দায়ূদ কোন পুরুষ কিম্বা স্ত্রীকে গাতে আনিবার জন্য জীবিত রাখিতেন না, বলিতেন, পাছে কেহ আমাদের বিপক্ষে এমন সংবাদ দেয়, দায়ূদ এই প্রকার কর্ম্ম করিয়াছেন, আর তিনি যতদিন পলেষ্টীয়দের জনপদে বাস করিতেছেন, ততদিন ঐ প্রকার ব্যবহার করিয়া আসিতেছেন। আর আখীশ দায়ূদকে বিশ্বাস করিয়া বলিতেন, দায়ূদ নিজ জাতি ইস্রায়েলের নিকটে আপনাকে নিতান্ত ঘৃণাস্পদ করিয়াছে; অতএব সে চিরকাল আমার দাস থাকিবে। সেই সময়ে পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের সহিত সংগ্রাম করিবার অভিপ্রায়ে যুদ্ধের নিমিত্ত। আপনাদের সৈন্যদল সংগ্রহ করিল। আর আখীশ দায়ূদকে কহিলেন, নিশ্চয় জানিবে, তোমাকে ও তোমার লোকদিগকে সৈন্যদলভুক্ত হইয়া আমার সহিত যাইতে হইবে। দায়ূদ আখীশকে কহিলেন, ভাল, আপনার এই দাস কি করিতে পারে, তাহা আপনি জানিতে পারিবেন। আখীশ দায়ূদকে কহিলেন, ভাল, আমি তোমাকে যাবজ্জীবন আমার মস্তক-রক্ষক করিয়া নিযুক্ত করিব। তখন শমূয়েল মরিয়া গিয়াছিলেন, এবং সমস্ত ইস্রায়েল তাঁহার জন্য শোক করিয়াছিল, এবং রামায়, তাঁহার নিজ নগরে, তাঁহাকে কবর দিয়াছিল। আর শৌল ভূতড়িয়া ও গুণীদিগকে দেশ হইতে দূর করিয়া দিয়াছিলেন। পরে পলেষ্টীয়েরা একত্র হইল, এবং আসিয়া শূনেমে শিবির স্থাপন করিল, আর শৌল সমস্ত ইস্রায়েলকে একত্র করিয়া গিল্‌বোয়ে শিবির স্থাপন করিলেন। কিন্তু শৌল পলেষ্টীয়দের সৈন্য দেখিয়া ভীত হইলেন, তাঁহার অতিশয় হৃৎকম্প হইল। তখন শৌল সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু সদাপ্রভু তাঁহাকে উত্তর দিলেন না; স্বপ্ন দ্বারাও নয়, ঊরীম দ্বারাও নয়, ভাববাদিগণ দ্বারাও নয়। তখন শৌল আপন দাসগণকে কহিলেন, আমার জন্য একটী ভূতড়িয়া স্ত্রীলোকের অন্বেষণ কর; আমি তাহার কাছে গিয়া জিজ্ঞাসা করিব। তাঁহার দাসগণ কহিল, দেখুন, ঐন্‌দোরে একটা ভূতড়িয়া স্ত্রীলোক আছে। তখন শৌল ছদ্মবেশ ধরিলেন, অন্য বস্ত্র পরিলেন ও দুই জন পুরুষকে সঙ্গে লইয়া যাত্রা করিলেন, এবং রাত্রিতে সেই স্ত্রীলোকটার কাছে আসিয়া কহিলেন, বিনয় করি, তুমি আমার জন্য ভূতের দ্বারা মন্ত্র পড়িয়া, যাঁহার নাম আমি তোমাকে বলিব, তাঁহাকে উঠাইয়া আন। সে স্ত্রীলোক তাঁহাকে কহিল, দেখ, শৌল যাহা করিয়াছেন, তিনি যে ভূতড়িয়াদিগকে ও গুণীদিগকে দেশের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিয়াছেন, তাহা তুমি জ্ঞাত আছ; অতএব আমাকে বধ করিতে আমার প্রাণের বিরুদ্ধে কেন ফাঁদ পাতিতেছ? তখন শৌল তাহার কাছে সদাপ্রভুর দিব্য করিয়া কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এজন্য তোমার উপরে দোষ আসিবে না। তখন সেই স্ত্রীলোক জিজ্ঞাসা করিল, আমি তোমার কাছে কাহাকে উঠাইয়া আনিব? তিনি কহিলেন, শমূয়েলকে উঠাইয়া আন। পরে সেই স্ত্রীলোক শমূয়েলকে দেখিতে পাইয়া উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিয়া উঠিল; আর সেই স্ত্রীলোক শৌলকে কহিল, আপনি কেন আমাকে প্রতারণা করিলেন? আপনি শৌল। রাজা তাহাকে কহিলেন, ভয় নাই; তুমি কি দেখিতেছ? স্ত্রী লোকটা শৌলকে কহিল, আমি দেখিতেছি, দেবতা ভূমি হইতে উঠিয়া আসিতেছেন। শৌল জিজ্ঞাসা করিলেন, তাঁহার আকার কেমন? সে কহিল, এক জন বৃদ্ধ উঠিতেছেন, তিনি পরিচ্ছদে আবৃত। তাহাতে শৌল বুঝিতে পারিলেন, তিনি শমূয়েল, আর মস্তক নমনপূর্ব্বক ভূমিতে অধোমুখ হইয়া প্রণিপাত করিলেন। পরে শমূয়েল শৌলকে বলিলেন, কি জন্য আমাকে উঠাইয়া কষ্ট দিলে? শৌল বলিলেন, আমি মহাসঙ্কটে পড়িয়াছি, পলেষ্টীয়েরা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছে, ঈশ্বরও আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, আমাকে আর উত্তর দেন না, ভাববাদিগণ দ্বারাও নয়, স্বপ্ন দ্বারাও নয়। অতএব আমার যাহা কর্ত্তব্য, তাহা আমাকে জানাইবার নিমিত্ত আপনাকে ডাকাইলাম। শমূয়েল কহিলেন, যখন সদাপ্রভু তোমাকে ত্যাগ করিয়া তোমার বিপক্ষ হইয়াছেন, তখন আমাকে কেন জিজ্ঞাসা কর? সদাপ্রভু আমা দ্বারা যেরূপ বলিয়াছিলেন, সেইরূপ আপনার জন্য করিলেন; ফলতঃ সদাপ্রভু তোমার হস্ত হইতে রাজ্য টানিয়া ছিঁড়িয়াছেন ও তোমার প্রতিবাসী, দায়ূদকে দিয়াছেন। যেহেতু তুমি সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত কর নাই, এবং অমালেকের প্রতি তাঁহার প্রচণ্ড কোপ সফল কর নাই, এই হেতু অদ্য সদাপ্রভু তোমার প্রতি এইরূপ করিলেন। আর সদাপ্রভু তোমার সহিত ইস্রায়েলকেও পলেষ্টীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবেন। কল্য তুমি ও তোমার পুত্রগণ আমার সঙ্গী হইবে; আর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সৈন্যদলকেও পলেষ্টীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবেন। তখন শৌল অমনি ভূমিতে লম্বমান হইয়া পড়িলেন; শমূয়েলের বাক্যে তিনি বড় ভীত হইলেন, এবং সমস্ত দিন ও সমস্ত রাত্রি অনাহারে থাকাতে তিনি শক্তিহীন হইয়া পড়িয়াছিলেন। পরে সেই স্ত্রীলোক শৌলের নিকটে আসিয়া তাঁহাকে অতিশয় বিহ্বল দেখিয়া কহিলেন, দেখুন, আপনার দাসী আমি আপনার কথা রাখিয়াছি, আপনি আমাকে যাহা বলিয়াছিলেন, প্রাণ হাতে করিয়া আপনার সেই কথা রাখিয়াছি। অতএব বিনয় করি, এখন আপনিও এই দাসীর কথা রাখুন; আমি আপনার সম্মুখে কিঞ্চিৎ খাদ্য রাখি, আপনি ভোজন করুন, তাহা হইলে পথে চলিবার সময়ে শক্তি পাইবেন। কিন্তু তিনি অসম্মত হইয়া কহিলেন, আমি ভোজন করিব না; তথাচ তাঁহার দাসগণ ও সেই স্ত্রীলোকটী আগ্রহপূর্ব্বক বিনয় করিলে তিনি তাহাদের কথা শুনিয়া ভূমি হইতে উঠিয়া খট্টায় বসিলেন। তখন সে স্ত্রীলোকের গৃহে একটা পুষ্ট গোবৎস ছিল, আর সে তাড়াতাড়ি সেইটী মারিল, এবং সূজী লইয়া ঠাসিয়া তাড়ীশূন্য রুটী প্রস্তুত করিল। পরে শৌলের ও তাঁহার দাসগণের সম্মুখে তাহা আনিল, আর তাঁহারা ভোজন করিলেন; পরে সেই রাত্রিতে উঠিয়া চলিয়া গেলেন। পরে পলেষ্টীয়েরা আপনাদের সমস্ত সৈন্যদল অফেকে একত্র করিল, এবং ইস্রায়েলীয়েরা যিষ্রিয়েলস্থ উনুইর নিকটে শিবির স্থাপন করিল। পলেষ্টীয়দের ভূপালেরা শতসংখ্যক ও সহস্রসংখ্যক সৈন্য লইয়া অগ্রসর হইতে লাগিলেন, আর সকলের শেষে আখীশের সহিত দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা অগ্রসর হইলেন। তখন পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ জিজ্ঞাসা করিলেন, এই ইব্রীয়েরা এখানে কি করে? আখীশ পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষদিগকে উত্তর করিলেন, এই ব্যক্তি কি ইস্রায়েলের রাজা শৌলের দাস দায়ূদ নয়? সে এত দিন ও এত বৎসর আমার সঙ্গে বাস করিতেছে; এবং যে দিন আমার পক্ষ হইয়াছে, তদবধি অদ্য পর্য্যন্ত ইহার কোন ত্রুটি দেখি নাই। তাহাতে পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ তাঁহার উপরে ক্রুদ্ধ হইলেন; আর পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ তাঁহাকে কহিলেন, তুমি তাহাকে ফিরাইয়া পাঠাইয়া দেও; সে তোমার নিরূপিত আপন স্থানে ফিরিয়া যাউক, আমাদের সহিত যুদ্ধে না আইসুক, পাছে সে যুদ্ধে আমাদের বিপক্ষ হয়; কেননা এই সব লোকের মুণ্ড ছাড়া আর কিসে সে আপন কর্ত্তাকে প্রসন্ন করিবে? এ কি সেই দায়ূদ নয়, যাহার বিষয়ে লোকেরা নাচিয়া নাচিয়া পরস্পর গাহিত, “শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র, আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত”? তখন আখীশ দায়ূদকে ডাকাইয়া কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তুমি সরল লোক, এবং সৈন্যের মধ্যে আমার সহিত তোমার গমনাগমন আমার দৃষ্টিতে ভাল, কেননা তোমার আসিবার দিন অবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমি তোমার কোন দোষ পাই নাই, তথাচ ভূপালগণ তোমার উপরে তুষ্ট নন। অতএব এখন কুশলে ফিরিয়া যাও, পলেষ্টীয়দের ভূপালগণের দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহা করিও না। তখন দায়ূদ আখীশকে কহিলেন, কিন্তু আমি কি করিয়াছি? অদ্য পর্য্যন্ত যত দিন আপনার সমক্ষে আছি, আপনি এই দাসের কি দোষ পাইয়াছেন যে, আমি আপন প্রভু মহারাজের শত্রুদের সহিত যুদ্ধ করিতে যাইতে পারিব না? তাহাতে আখীশ উত্তর করিয়া দায়ূদকে কহিলেন, আমি জানি, ঈশ্বরের দূতের ন্যায় তুমি আমার দৃষ্টিতে উত্তম, কিন্তু পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ বলিয়াছেন, সেই ব্যক্তি আমাদের সহিত যুদ্ধে যাইতে পাইবে না। অতএব তোমার সঙ্গে তোমার প্রভুর যে দাসগণ আসিয়াছে, তাহাদিগকে লইয়া প্রত্যূষে উঠিও; আর প্রত্যূষে উঠিবামাত্র আলো হইলে প্রস্থান করিও। তাহাতে দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা প্রত্যূষে উঠিয়া প্রাতঃকালে যাত্রা করিয়া পলেষ্টীয়দের দেশে ফিরিয়া গেলেন। আর পলেষ্টীয়েরা যিষ্রিয়েলে গমন করিল। পরে দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা তৃতীয় দিবসে সিক্লগে উপস্থিত হইলেন। ইতিমধ্যে অমালেকীয়েরা দক্ষিণ অঞ্চলে ও সিক্লগে চড়াউ হইয়াছিল, সিক্লগে আঘাত করিয়া তাহা আগুনে পোড়াইয়া দিয়াছিল। তাহারা তথাকার স্ত্রীলোক প্রভৃতি ছোট বড় সকলকে বন্দি করিয়া লইয়া গিয়াছিল; তাহারা কাহাকেও বধ করে নাই, কিন্তু সকলকে লইয়া আপনাদের পথে চলিয়া গিয়াছিল। পরে দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা যখন সেই নগরে উপস্থিত হইলেন, দেখ, নগর আগুনে পুড়িয়া গিয়াছে, ও তাঁহাদের স্ত্রী পুত্র কন্যা বন্দিরূপে নীত হইয়াছে। তখন দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গী লোকেরা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন, শেষে রোদন করিতে তাঁহাদের আর শক্তি রহিল না। ঐ সময়ে দায়ূদের দুই স্ত্রী, যিষ্রিয়েলীয়া অহীনোয়ম ও কর্ম্মিলীয় নাবলের বিধবা অবীগল বন্দি হইয়াছিলেন। তখন দায়ূদ অতিশয় ব্যাকুল হইলেন, কারণ প্রত্যেক জনের মন আপন আপন পুত্র কন্যার জন্য শোকাকুল হওয়াতে লোকেরা দায়ূদকে প্রস্তরাঘাত করিবার কথা কহিতে লাগিল; তথাপি দায়ূদ আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুতে আপনাকে সবল করিলেন। পরে দায়ূদ অহীমেলকের পুত্র অবিয়াথর যাজককে কহিলেন, বিনয় করি, এখানে আমার কাছে এফোদ আন; তাহাতে অবিয়াথর দায়ূদের নিকটে এফোদ আনিলেন। তখন দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে এই কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, ঐ সৈন্যদলের পশ্চাতে পশ্চাতে গেলে আমি কি তাহাদের লাগাল পাইব? তিনি তাঁহাকে কহিলেন, তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া যাও, নিশ্চয়ই তাহাদের লাগাল পাইবে, ও সকলকে উদ্ধার করিবে। তখন দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গী ছয় শত লোক গিয়া বিষোর স্রোতে উপস্থিত হইলে কতক লোককে সেখানে রাখা হইল; কিন্তু দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গী চারি শত লোক শত্রুদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেলেন; কারণ দুই শত লোক ক্লান্তি প্রযুক্ত বিষোর স্রোত পার হইতে না পারাতে সেই স্থানে রহিল। পরে তাহারা মাঠের মধ্যে এক জন মিস্রীয়কে পাইয়া তাহাকে দায়ূদের নিকটে আনিল, এবং তাহাকে রুটী দিলে সে ভোজন করিল, আর তাহারা তাহাকে জল পান করিতে দিল; আর তাহারা ডুমুরচাকের এক খণ্ড ও দুই থলুয়া শুষ্ক দ্রাক্ষা তাহাকে দিল; তাহা খাইলে পর তাহার প্রাণ স্বস্থ হইল, কেননা তিন দিবারাত্র সে রুটী ভোজন কি জল পান করে নাই। পরে দায়ূদ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কাহার লোক? কোথা হইতে আসিলে? সে কহিল, আমি এক জন মিস্রীয় যুবক, এক জন অমালেকীয়দের দাস; অদ্য তিন দিন হইল, আমি পীড়িত হইয়াছিলাম বলিয়া আমার কর্ত্তা আমাকে ত্যাগ করিয়া গেলেন। আমরা করেথীয়দের দক্ষিণাঞ্চলে, যিহূদার অধিকারে ও কালেবের অধিকারের দক্ষিণাঞ্চলে চড়াউ হইয়াছিলাম, আর সিক্লগ আগুনে পোড়াইয়া দিয়াছিলাম। পরে দায়ূদ তাহাকে বলিলেন, সেই দলের নিকটে কি আমাকে পৌঁছাইয়া দিবে? সে কহিল, আপনি আমার কাছে ঈশ্বরের নামে দিব্য করুন যে, আমাকে বধ করিবেন না, বা আমার কর্ত্তার হাতে আমাকে সমর্পণ করিবেন না, তাহা হইলে আমি সেই দলের নিকটে আপনাকে পৌঁছাইয়া দিব। পরে যখন সে তাঁহাকে পৌঁছাইয়া দিল, দেখ, তাহারা সমস্ত ভূমি ব্যাপিয়াছিল, ভোজন পান ও উৎসব করিতেছিল, কারণ পলেষ্টীয়দের দেশ ও যিহূদার দেশ হইতে তাহারা প্রচুর লুটদ্রব্য আনিয়াছিল। দায়ূদ সন্ধ্যাকাল অবধি পরদিনের সন্ধ্যা পর্য্যন্ত তাহাদিগকে আঘাত করিলেন; তাহাদের মধ্যে এক জনও রক্ষা পাইল না, কেবল চারি শত যুবক উটে চড়িয়া পলায়ন করিল। আর অমালেকীয়েরা যাহা কিছু লইয়া গিয়াছিল, দায়ূদ সে সমস্ত উদ্ধার করিলেন, বিশেষতঃ দায়ূদ আপনার দুই স্ত্রীকেও মুক্ত করিলেন। তাহাদের ছোট কি বড়, পুত্র কি কন্যা, অথবা দ্রব্য-সামগ্রী প্রভৃতি যাহা কিছু উহারা লইয়া গিয়াছিল, তাহার কিছুরই ত্রুটি হইল না; দায়ূদ সমস্তই ফিরাইয়া আনিলেন। আর দায়ূদ সমস্ত মেষপাল ও গোপাল লইলেন; এবং লোকেরা সে গুলিকে [উদ্ধৃত] পশুপালের অগ্রে অগ্রে গমন করাইল, আর কহিল, ইহা দায়ূদের লুটদ্রব্য। পরে যে দুই শত লোক ক্লান্তি প্রযুক্ত দায়ূদের পশ্চাতে গমন করিতে পারে নাই, যাহাদিগকে তাঁহারা বিষোর স্রোতের ধারে রাখিয়া গিয়াছিলেন, তাহাদের নিকটে দায়ূদ আসিলেন; তাহারা দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গী লোকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে গেল; আর দায়ূদ লোকদের সহিত নিকটে আসিয়া তাহাদের কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন। কিন্তু দায়ূদের সঙ্গে যাহারা গিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে দুষ্ট পাষণ্ডেরা সকলে কহিল, উহারা আমাদের সহিত গমন করে নাই; অতএব আমরা যে লুটদ্রব্য উদ্ধার করিয়াছি, উহাদিগকে তাহা হইতে কিছুই দিব না, উহারা প্রত্যেকে কেবল আপন আপন স্ত্রী ও সন্তানগণকে লইয়া চলিয়া যাউক। তখন দায়ূদ উত্তর করিলেন, হে আমার ভ্রাতৃগণ, যে সদাপ্রভু আমাদিগকে রক্ষা করিয়া আমাদের বিরুদ্ধে আগত সৈন্যদলকে আমাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন, তিনি আমাদিগকে যাহা দিলেন, তাহা লইয়া তোমরা এরূপ করিও না। কেই বা এ বিষয়ে তোমাদের কথা শুনিবে? যে যুদ্ধে যায়, সে যেমন অংশ পাইবে, যে জিনিস পত্রের নিকটে থাকে, সেও তদ্রূপ অংশ পাইবে; উভয়ের সমান অংশ হইবে। সেই দিন অবধি দায়ূদ ইস্রায়েলের জন্য বিধি ও শাসন স্থির করিলেন, ইহা অদ্য পর্য্যন্ত চলিতেছে। পরে দায়ূদ যখন সিক্লগে উপস্থিত হইলেন, তখন আপনার প্রণয়ী যিহূদার প্রাচীনগণের নিকটে লুটিত দ্রব্যের কিছু কিছু পাঠাইয়া দিয়া কহিলেন, দেখ, সদাপ্রভুর শত্রুগণ হইতে আনীত লুটিত দ্রব্যের মধ্যে ইহা তোমাদের জন্য উপহার । বৈথেল, দক্ষিণাঞ্চলস্থ রামোৎ, যত্তীর, অরোয়ের, শিফমোৎ, ইষ্টিমোয়, রাখল, যিরহমেলীয়দের নগর সকল, কেনীয়দের নগর সকল, হর্ম্মা, কোর-আশন, অথাক, ও হিব্রোণ, যে যে স্থানে দায়ূদের ও তাঁহার লোকদের গমনাগমন হইত, সেই সকল স্থানের লোকদের কাছে [তিনি তাহা পাঠাইলেন]। ইতিমধ্যে পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিলে ইস্রায়েল-লোকেরা পলেষ্টীয়দের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল, এবং গিল্‌বোয় পর্ব্বতে আহত হইয়া পড়িতে লাগিল। আর পলেষ্টীয়েরা শৌলের ও তাঁহার পুত্রগণের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িল, এবং পলেষ্টীয়েরা যোনাথন, অবীনাদব ও মল্‌কী-শূয়, শৌলের এই পুত্রদিগকে বধ করিল। পরে শৌলের বিরুদ্ধে ঘোরতর সংগ্রাম হইল, আর ধনুর্ধরেরা তাঁহার লাগাল পাইল; সেই ধনুর্ধারিগণ হইতে শৌল অতিশয় ত্রাসযুক্ত হইলেন। আর শৌল আপন অস্ত্রবাহককে কহিলেন, তোমার খড়্‌গ খুল, উহা দ্বারা আমাকে বিদ্ধ কর; নতুবা কি জানি, ঐ অচ্ছিন্নত্বকেরা আসিয়া আমাকে বিদ্ধ করিয়া আমার অপমান করিবে। কিন্তু তাঁহার অস্ত্রবাহক তাহা করিতে চাহিল না, কারণ সে অতিশয় ভীত হইয়াছিল; অতএব শৌল খড়্‌গ লইয়া আপনি তাহার উপরে পড়িলেন। আর শৌল মরিয়াছেন দেখিয়া তাঁহার অস্ত্রবাহকও আপন খড়্‌গের উপরে পড়িয়া তাঁহার সহিত মরিল। এই প্রকারে সেই দিন শৌল, তাঁহার তিন পুত্র, তাঁহার অস্ত্রবাহক ও তাঁহার সমস্ত লোক এক সঙ্গে মারা পড়েন। পরে ইস্রায়েলের যে লোকেরা তলভূমির ওপারে ও যর্দ্দনের ওপারে ছিল, তাহারা যখন দেখিতে পাইল যে, ইস্রায়েল লোকেরা পলায়ন করিয়াছে, এবং শৌল ও তাঁহার পুত্রগণ মরিয়াছেন, তখন তাহারা নগর সকল পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিল, আর পলেষ্টীয়েরা আসিয়া সেই সকল নগর মধ্যে বাস করিতে লাগিল। পরদিবসে পলেষ্টীয়েরা হত লোকদের সজ্জাদি খুলিয়া লইতে আসিয়া গিল্‌বোয় পর্ব্বতে পতিত শৌল ও তাঁহার তিন পুত্রকে দেখিতে পাইল; তখন তাহারা তাঁহার মস্তক ছেদন করিয়া সজ্জা খুলিয়া লইল, এবং আপনাদের দেবালয়ে ও লোকদের মধ্যে সেই বার্ত্তা জ্ঞাপনার্থে পলেষ্টীয়দের দেশের সর্ব্বত্র প্রেরণ করিল। পরে তাঁহার সজ্জা অষ্টারোৎ দেবীদের গৃহে রাখিল, এবং তাঁহার শব বৈৎ-শানের প্রাচীরে টাঙ্গাইয়া দিল। পরে যখন যাবেশ-গিলিয়দ নিবাসিগণ শৌলের প্রতি পলেষ্টীয়দের কৃত সেই কর্ম্মের সংবাদ পাইল, তখন সমস্ত বিক্রমশালী লোক উঠিল, এবং সমস্ত রাত্রি হাঁটিয়া গিয়া শৌলের ও তাঁহার পুত্রগণের শরীর বৈৎ-শানের প্রাচীর হইতে নামাইল, আর যাবেশে আসিয়া তথায় তাঁহাদের শব পোড়াইয়া দিল। আর তাহারা তাঁহাদের অস্থি লইয়া যাবেশস্থ ঝাউ গাছের তলায় পুঁতিয়া রাখিল; পরে সাত দিবস উপবাস করিল। শৌলের মৃত্যুর পরে এই ঘটনা হইল; দায়ূদ অমালেকীয়দিগকে বধ করিয়া ফিরিয়া আসিলেন; আর দায়ূদ সিক্লগে দুই দিবস থাকিলেন; পরে তৃতীয় দিবসে, দেখ, শৌলের শিবির হইতে একটী লোক আসিল, তাহার কাপড় ছেঁড়া ও মাথায় মাটী ছিল, দায়ূদের নিকটে আসিয়া সে ভূমিতে পড়িয়া প্রণিপাত করিল। দায়ূদ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? সে কহিল, আমি ইস্রায়েলের শিবির হইতে পলাইয়া আসিয়াছি? দায়ূদ জিজ্ঞাসা করিলেন, সমাচার কি? আমাকে বল দেখি। সে উত্তর করিল, লোকেরা যুদ্ধ হইতে পলায়ন করিয়াছে; আবার লোকদের মধ্যেও অনেকে পতিত হইয়াছে, মারা পড়িয়াছে, এবং শৌল ও তাঁহার পুত্র যোনাথনও মারা পড়িয়াছেন। পরে দায়ূদ সেই সংবাদদাতা যুবককে জিজ্ঞাসা করিলেন, শৌল ও তাঁহার পুত্র যোনাথন যে মারা পড়িয়াছেন, ইহা তুমি কি প্রকারে জানিলে? তাহাতে সেই সংবাদদাতা যুবক তাঁহাকে কহিল, আমি ঘটনাক্রমে গিল্‌বোয় পর্ব্বতে উপস্থিত হইয়াছিলাম, আর দেখ, শৌল বড়শার উপরে নির্ভর দিয়াছিলেন, এবং দেখ, রথ, ও অশ্বারোহিগণ চাপাচাপি করিয়া তাঁহার খুব কাছে আসিয়াছিল। ইতিমধ্যে তিনি পশ্চাতে মুখ ফিরাইয়া আমাকে দেখিয়া ডাকিলেন। আমি বলিলাম, এই যে আমি। তিনি আমাকে বলিলেন, তুমি কে? আমি কহিলাম, আমি এক জন অমালেকীয়। তিনি আমাকে কহিলেন, বিনয় করি, আমার নিকটে দাঁড়াইয়া আমাকে বধ কর, কেননা আমার মাথা ঘূরিতেছে, আর এখনও প্রাণ আমাতে সম্পূর্ণ রহিয়াছে। তাহাতে আমি নিকটে দাঁড়াইয়া তাঁহাকে বধ করিলাম; কেননা পতনের পরে তিনি যে জীবিত থাকিবেন না, ইহা নিশ্চয় বুঝিলাম; আর তাঁহার মস্তকে যে মুকুট ছিল, ও হস্তে যে বলয় ছিল, তাহা লইয়া এই স্থানে আমার প্রভুর নিকটে আসিয়াছি। তখন দায়ূদ আপন বস্ত্র ধরিয়া ছিঁড়িলেন, এবং তাঁহার সঙ্গীরাও সকলে তদ্রূপ করিল, আর শৌল, তাঁহার পুত্র যোনাথন, সদাপ্রভুর প্রজাগণ ও ইস্রায়েলের কুল খড়্‌গে পতিত হওয়াতে তাঁহাদের বিষয়ে তাঁহারা শোক ও বিলাপ এবং সন্ধ্যা পর্য্যন্ত উপবাস করিলেন। পরে দায়ূদ ঐ সংবাদদাতা যুবককে কহিলেন, তুমি কোথাকার লোক? সে কহিল, আমি এক জন প্রবাসীর পুত্র, অমালেকীয়। দায়ূদ তাহাকে কহিলেন, সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তিকে সংহার করণার্থে আপন হস্ত বিস্তার করিতে তুমি কেন ভীত হইলে না? পরে দায়ূদ যুবকদের এক জনকে ডাকিয়া আজ্ঞা করিলেন, তুমি নিকটে গিয়া ইহাকে আক্রমণ কর। তাহাতে সে তাহাকে আঘাত করিলে সে মরিল। আর দায়ূদ তাহাকে কহিলেন, তোমার রক্তপাতের অপরাধ তোমার মস্তকে বর্ত্তুক; কেননা তোমারই মুখ তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়াছে, তুমিই বলিয়াছ, আমিই সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তিকে বধ করিয়াছি। পরে দায়ূদ শৌলের ও তাঁহার পুত্র যোনাথনের বিষয়ে এই বিলাপ-গাথায় বিলাপ করিলেন; এবং যিহূদার সন্তানদিগকে এই ধনুর্গীত শিখাইতে আজ্ঞা দিলেন; দেখ, তাহা যাশের গ্রন্থে লিখিত আছে। হে ইস্রায়েল, তোমার উচ্চস্থলীতে তব তেজ নিহত হইল! হায়! বীরগণ নিপতিত হইলেন। গাতে সংবাদ দিও না, অস্কিলোনের পথে প্রকাশ করিও না; পাছে পলেষ্টীয়দের কন্যাগণ আনন্দ করে, পাছে অচ্ছিন্নত্বক্‌দের কন্যাগণ উল্লাস করে। হে গিল্‌বোয়ের পর্ব্বতমালা, তোমাদের উপরে শিশির কি বৃষ্টি না পড়ুক, উপহারের ক্ষেত্র না থাকুক; কেননা তথায় বীরদের ঢাল অশুদ্ধ হইল, শৌলের ঢাল তৈলে অভিষিক্ত হইল না। নিহতগণের রক্ত ও বীরদের মেদ না পাইলে যোনাথনের ধনুক পরাঙ্মুখ হইত না, শৌলের খড়্‌গও অমনি ফিরিয়া আসিত না। শৌল ও যোনাথন জীবনকালে প্রিয় ও মনোহর ছিলেন, তাঁহারা মরণেও বিচ্ছিন্ন হইলেন না; তাঁহারা ঈগল অপেক্ষা বেগবান ছিলেন, সিংহ অপেক্ষা বলবান ছিলেন। ইস্রায়েল-কন্যাগণ! শৌলের জন্য রোদন কর, তিনি কৃমিজ বর্ণের রমণীয় পরিচ্ছদে তোমাদিগকে ভূষিত করিতেন, তোমাদের পরিচ্ছদের উপরে স্বর্ণালঙ্কার পরিধান করাইতেন। হায়! সংগ্রামের মধ্যে বীরগণ পতিত হইলেন। যোনাথন তব উচ্চস্থলিতে হত হইলেন। হা, ভ্রাতা যোনাথন! তোমার জন্য আমি ব্যাকুল। তুমি আমার কাছে অতিশয় মনোহর ছিলে; তোমার ভালবাসা আমার পক্ষে চমৎকার ছিল, রমণীগণের ভালবাসা অপেক্ষাও অধিক ছিল! হায়! বীরগণ নিপতিত হইলেন, যুদ্ধের অস্ত্র সকল বিনষ্ট হইল। তৎপরে দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কি যিহূদার কোন এক নগরে উঠিয়া যাইব? সদাপ্রভু কহিলেন, যাও। পরে দায়ূদ জিজ্ঞাসা করিলেন, কোথায় যাইব? তিনি কহিলেন, হিব্রোণে। অতএব দায়ূদ আর তাঁহার দুই স্ত্রী, যিষ্রিয়েলীয়া অহীনোয়ম ও কর্ম্মিলীয় নাবলের বিধবা অবীগল, সেই স্থানে গমন করিলেন। আর দায়ূদ প্রত্যেকের পরিবারের সহিত আপন সঙ্গিগণকেও লইয়া গেলেন, তাহাতে তাহারা হিব্রোণের নগর সমূহে বাস করিল। পরে যিহূদার লোকেরা আসিয়া সেই স্থানে দায়ূদকে যিহূদার কুলের উপরে রাজপদে অভিষেক করিল। পরে যাবেশ-গিলিয়দের লোকেরা শৌলের কবর দিয়াছে, লোকে দায়ূদকে এই সংবাদ দিল। তখন দায়ূদ যাবেশ-গিলিয়দের লোকদের নিকটে দূতগণকে প্রেরণ করিয়া কহিলেন, তোমরা সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদের পাত্র, কেননা তোমরা আপন প্রভুর প্রতি, শৌলের প্রতি, এই দয়া করিয়াছ, তাঁহার কবর দিয়াছ। অতএব সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি দয়া ও সত্য ব্যবহার করুন; এবং তোমরা এই কর্ম্ম করিয়াছ, এই জন্য আমিও তোমাদের প্রতি সদয়াচরণ করিব। অতএব এখন তোমাদের হস্ত সবল হউক, ও তোমরা বিক্রমশালী হও, কেননা তোমাদের প্রভু শৌল মরিয়াছেন, আর যিহূদার কুল আপনাদের উপরে আমাকে রাজপদে অভিষেক করিয়াছে। ইতিমধ্যে নেরের পুত্র অব্‌নের শৌলের সেনাপতি, শৌলের পুত্র ঈশ্‌বোশৎকে ওপারে মহনয়িমে লইয়া গেলেন; আর গিলিয়দের, অশূরীয়দের, যিষিয়েলের, ইফ্রয়িমের ও বিন্যামীনের এবং সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজা করিলেন। —শৌলের পুত্র ইশ্‌বোশৎ চল্লিশ বৎসর বয়সে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং দুই বৎসর রাজত্ব করেন। —কিন্তু যিহূদা-কুল দায়ূদের পশ্চাদগামী ছিল। আর দায়ূদ সাত বৎসর ছয় মাস হিব্রোণে যিহূদা-কুলের উপরে রাজত্ব করিলেন। একদা নেরের পুত্র অব্‌নের, এবং শৌলের পুত্র ঈশ্‌বোশতের দাসগণ মহনয়িম হইতে গিবিয়োনে গমন করিলেন। তখন সরূয়ার পুত্র যোয়াব ও দায়ূদের দাসগণও বাহির হইলেন, আর গিবিয়োনের পুষ্করিণীর নিকটে তাঁহারা পরস্পর সম্মুখবর্ত্তী হইলেন, এক দল পুষ্করিণীর এপারে, অন্য দল পুষ্করিণীর ওপারে বসিল। পরে অব্‌নের যোয়াবকে কহিলেন, বিনয় করি, যুবকগণ উঠিয়া আমাদের সম্মুখে যুদ্ধক্রীড়া করুক। যোয়াব কহিলেন, উহারা উঠুক। অতএব লোকেরা সংখ্যানুসারে উঠিয়া অগ্রসর হইল; শৌলের পুত্র ঈশ্‌বোশতের ও বিন্যামীনের পক্ষে বারো জন, এবং দায়ুদের দাসগণের মধ্যে বারো জন। আর তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিযোদ্ধার মাথা ধরিয়া কোঁকে খড়্‌গ বিদ্ধ করিয়া সকলে একত্র পতিত হইল। এই জন্য সেই স্থানের নাম হিল্‌কৎ-হৎসূরীম [ছুরিকা-ভূমি] হইল; তাহা গিবিয়োনে আছে। আর সেই দিবসে ঘোরতর সংগ্রাম হইল; এবং অব্‌নের ও ইস্রায়েল লোকেরা দায়ূদের দাসগণের সম্মুখে পরাজিত হইল। সে স্থানে যোয়াব, অবীশয় ও অসাহেল নামে সরূয়ার তিন পুত্র ছিলেন, সেই অসাহেল বন্য মৃগের ন্যায় চরণে দ্রুতগামী ছিলেন। আর অসাহেল অব্‌নেরের পশ্চাতে দৌড়িতে লাগিলেন, যাইতে যাইতে অব্‌নেরের পশ্চাদগমন হইতে দক্ষিণে কি বামে ফিরিলেন না। পরে অব্‌নের পশ্চাৎ দিকে ফিরিয়া বলিলেন, তুমি কি অসাহেল? তিনি উত্তর করিলেন, আমি সেই। অব্‌নের তাঁহাকে কহিলেন, তুমি দক্ষিণে কি বামে ফিরিয়া এই যুবকগণের কোন এক জনকে ধরিয়া তাহার সজ্জা গ্রহণ কর। কিন্তু অসাহেল তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিতে সম্মত হইলেন না। পরে অব্‌নের অসাহেলকে পুনর্ব্বার কহিলেন, আমার পশ্চাদগমন হইতে ফির; আমি কেন তোমাকে আঘাত করিয়া ভূতলশায়ী করিব? করিলে তোমার ভ্রাতা যোয়াবের সাক্ষাতে কি করিয়া মুখ দেখাইব? তথাপি তিনি ফিরিতে সম্মত হইলেন না; অতএব অব্‌নের বড়শার গোড়া তাঁহার উদরে এমন বিদ্ধ করিলেন যে, বড়শা তাঁহার পৃষ্ঠ দিয়া বাহির হইল; তাহাতে তিনি সেখানে পড়িয়া গেলেন, সেই স্থানেই মরিলেন, এবং যত লোক অসাহেলের পতন ও মরণ স্থানে উপস্থিত হইল, সকলেই দাঁড়াইয়া রহিল। কিন্তু যোয়াব ও অবীশয় অব্‌নেরের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেলেন; সূর্য্যাস্তকালে গিবিয়োন প্রান্তরগামী পথের নিকটবর্ত্তী গীহের সম্মুখস্থ অম্মা গিরির কাছে উপস্থিত হইলেন। আর বিন্যামীন-সন্তানগণ অব্‌নেরের পশ্চাতে একত্র দলবদ্ধ হইয়া এক গিরির শৃঙ্গে দাঁড়াইয়া রহিল। তখন অব্‌নের যোয়াবকে ডাকিয়া কহিলেন, খড়্‌গ কি চিরকাল গ্রাস করিবে? অবশেষে তিক্ততা হইবে, ইহা কি জান না? অতএব তুমি আপন ভ্রাতৃগণের পশ্চাদগমন হইতে ফিরিতে আপন লোকদিগকে কত কাল আজ্ঞা না দিয়া থাকিবে? যোয়াব কহিলেন, জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য, তুমি যদি কথা না বলিতে, তবে লোকে প্রাতঃকালেই চলিয়া যাইত, আপন আপন ভ্রাতার পশ্চাতে পশ্চাতে যাইত না। পরে যোয়াব তূরী বাজাইলেন; তাহাতে সমস্ত লোক স্থগিত হইল, ইস্রায়েলের পশ্চাতে আর তাড়া করিল না, যুদ্ধও আর করিল না। পরে অব্‌নের ও তাঁহার লোকেরা অরাবা তলভূমি দিয়া সেই সমস্ত রাত্রি চলিয়া যর্দ্দন পার হইলেন, এবং সমুদয় বিথোণ দিয়া মহনয়িমে উপস্থিত হইলেন। আর যোয়াব অব্‌নেরের পশ্চাদগমন হইতে ফিরিলেন; পরে সমস্ত লোককে একত্র করিলে দায়ূদের দাসগণের মধ্যে ঊনিশ জনের ও অসাহেলের অভাব হইল। কিন্তু দায়ূদের দাসগণের আঘাতে বিন্যামীনের ও অব্‌নেরের লোকদের তিন শত ষাট জন মরিয়াছিল। পরে লোকেরা অসাহেলকে তুলিয়া লইয়া বৈৎলেহমে তাঁহার পিতার কবরে কবর দিল। পরে যোয়াব ও তাঁহার লোকেরা সমস্ত রাত্রি গমন করিয়া প্রভাতকালে হিব্রোণে উপস্থিত হইলেন। শৌলের কুলে ও দায়ূদের কুলে পরস্পর অনেক দিন যুদ্ধ হইল; তাহাতে দায়ূদ বলবান হইয়া উঠিতে লাগিলেন, কিন্তু শৌলের কুল ক্ষীণ হইয়া পড়িতে লাগিল। আর হিব্রোণে দায়ূদের কয়েকটী পুত্র জন্মিল; তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র অম্নোন, সে যিষিয়েলীয়া অহীনোয়মের সন্তান; তাঁহার দ্বিতীয় পুত্র কিলাব, সে কর্ম্মিলীয় নাবলের বিধবা অবীগলের সন্তান; তৃতীয় অবশালোম, সে গশূরের তল্‌ময় রাজার কন্যা মাখার সন্তান; চতুর্থ আদোনিয়, সে হগীতের সন্তান; পঞ্চম শফটিয়, সে অবীটলের সন্তান; এবং ষষ্ঠ যিত্রিয়ম, সে দায়ূদের স্ত্রী ইগ্লার সন্তান; দায়ূদের এই সকল পুত্রের জন্ম হিব্রোণে হইল। যে সময়ে শৌলের কুলে ও দায়ূদের কুলে পরস্পর যুদ্ধ হইল, সেই সময়ে অব্‌নের শৌলের কুলের পক্ষে বীরত্ব দেখাইলেন। কিন্তু অয়ার কন্যা রিস্‌পা নাম্নী এক স্ত্রী শৌলের উপপত্নী ছিল; [ঈশ্‌বোশৎ] অব্‌নেরকে কহিলেন, তুমি আমার পিতার উপপত্নীর কাছে কেন গমন করিয়াছ? ঈশ্‌বোশতের এই কথায় অব্‌নের অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, আমি কি যিহূদার পক্ষীয় কুকুর-মুণ্ড? অদ্য পর্য্যন্ত আমি তোমার পিতা শৌলের কুলের প্রতি, তাঁহার ভ্রাতৃগণ ও বন্ধুগণের প্রতি দয়া করিতেছি, এবং তোমাকে দায়ূদের হস্তে সমর্পণ করি নাই; তবু তুমি অদ্য ঐ স্ত্রীলোকের বিষয়ে আমাকে অপরাধী করিতেছ? ঈশ্বর অব্‌নেরকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন, যদি দায়ূদের বিষয়ে সদাপ্রভু যে দিব্য করিয়াছেন, আমি তদনুসারে কর্ম্ম না করি, শৌলের কুল হইতে রাজ্য লইয়া দান অবধি বের্‌-শেবা পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের উপরে ও যিহূদার উপরে দায়ূদের সিংহাসন স্থাপনের চেষ্টা না করি। তখন তিনি অব্‌নেরকে আর এক কথাও কহিতে পারিলেন না, কারণ তিনি তাঁহাকে ভয় করিলেন। পরে অব্‌নের আপনার পক্ষে দায়ূদের নিকটে দূতগণকে পাঠাইয়া কহিলেন, এই দেশ কাহার? আরও কহিলেন, আপনি আমার সহিত নিয়ম করুন, আর দেখুন, সমস্ত ইস্রায়েলকে আপনার পক্ষে আনিতে আমার হস্ত আপনার সহকারী হইবে। দায়ূদ কহিলেন, ভাল; আমি তোমার সহিত নিয়ম করিব; কেবল একটী বিষয় আমি তোমার কাছে চাই; যখন তুমি আমার মুখ দেখিতে আসিবে, তখন শৌলের কন্যা মীখলকে না আনিলে আমার মুখ দেখিতে পাইবে না। আর দায়ূদ শৌলের পুত্র ঈশ্‌বোশতের নিকটে দূত পাঠাইয়া কহিলেন, আমি পলেষ্টীয়দের এক শত লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ পণ দিয়া যাহাকে বিবাহ করিয়াছি, আমার সেই স্ত্রী মীখলকে দেও। তাহাতে ঈশ্‌বোশৎ লোক পাঠাইয়া তাঁহার স্বামীর অর্থাৎ লয়িশের পুত্র পল্‌টিয়েলের নিকট হইতে মীখলকে লইয়া আসিলেন। তখন তাঁহার স্বামী তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে রোদন করিতে করিতে বহুরীম পর্য্যন্ত তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে চলিল। পরে অব্‌নের তাহাকে কহিলেন, যাও, ফিরিয়া যাও; তাহাতে সে ফিরিয়া গেল। পরে অব্‌নের ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের সহিত এইরূপ কথোপকথন করিলেন, তোমরা ইতিপূর্ব্বেই আপনাদের উপরে দায়ূদকে রাজা করিবার চেষ্টা করিয়াছিলে। এখন তাহাই কর, কেননা সদাপ্রভু দায়ূদের বিষয়ে বলিয়াছেন, আমি আপন দাস দায়ূদের হস্ত দ্বারা আপন প্রজা ইস্রায়েলকে পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে ও সকল শত্রুর হস্ত হইতে নিস্তার করিব। আর অব্‌নের বিন্যামীন বংশের কর্ণগোচরেও সেই কথা কহিলেন। আর ইস্রায়েলের ও বিন্যামীনের সমস্ত কুলের দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হইল, অব্‌নের সেই সকল কথা দায়ূদের কর্ণগোচরে বলিবার জন্য হিব্রোণে যাত্রা করিলেন। তখন অব্‌নের বিংশতি জনকে সঙ্গে লইয়া হিব্রোণে দায়ূদের নিকটে উপস্থিত হইলে দায়ূদ অব্‌নেরের ও তাঁহার সঙ্গী লোকদের জন্য ভোজ প্রস্তুত করিলেন। পরে অব্‌নের দায়ূদকে কহিলেন, আমি উঠিয়া গিয়া সমস্ত ইস্রায়েলকে আমার প্রভু মহারাজের নিকটে সংগ্রহ করি; যেন তাহারা আপনার সহিত নিয়ম করে, আর আপনি আপন প্রাণের ইচ্ছামত সকলের উপরে রাজত্ব করেন। পরে দায়ূদ অব্‌নেরকে বিদায় করিলে তিনি কুশলে প্রস্থান করিলেন। আর দেখ, দায়ূদের দাসগণ ও যোয়াব চড়াউ করিয়া ফিরিয়া আসিলেন, প্রচুর লুটদ্রব্য সঙ্গে লইয়া আসিলেন। তখন অব্‌নের হিব্রোণে দায়ূদের নিকটে ছিলেন না, কারণ দায়ূদ তাঁহাকে বিদায় করিয়াছিলেন, তিনি কুশলে গমন করিয়াছিলেন। পরে যোয়াব ও তাঁহার সঙ্গী সমস্ত সৈন্য আসিলে লোকেরা যোয়াবকে কহিল, নেরের পুত্র অব্‌নের রাজার নিকটে আসিয়াছিলেন, রাজা তাঁহাকে বিদায় করিয়াছেন, তিনি কুশলে চলিয়া গিয়াছেন। তখন যোয়াব রাজার নিকটে গিয়া কহিলেন, আপনি কি করিয়াছেন? দেখুন, অব্‌নের আপনার নিকটে আসিয়াছিল, আপনি কেন তাহাকে বিদায় করিয়া একেবারে চলিয়া যাইতে দিয়াছেন? আপনি ত নেরের পুত্র অব্‌নেরকে জানেন; আপনাকে ভুলাইবার জন্য, আপনার বাহিরে ও ভিতরে গমনাগমন জানিবার জন্য, আর আপনি যাহা যাহা করিতেছেন, সে সমস্ত অবগত হইবার জন্য সে আসিয়াছিল। পরে যোয়াব দায়ূদের নিকট হইতে বহির্গত হইয়া অব্‌নেরের পশ্চাতে দূতগণকে প্রেরণ করিলেন; তাহারা সিরা কূপের নিকট হইতে তাঁহাকে ফিরাইয়া আনিল; কিন্তু দায়ূদ তাহা জানিতেন না। পরে অব্‌নের হিব্রোণে ফিরিয়া আসিলে যোয়াব তাঁহার সহিত বিরলে আলাপ করিবার ছলে নগর-দ্বারের ভিতরে তাঁহাকে লইয়া গেলেন, পরে আপন ভ্রাতা অসাহেলের রক্তের প্রতিশোধার্থে সেই স্থানে তাঁহার উদরে আঘাত করিলেন, তাহাতে তিনি মরিয়া গেলেন। তৎপরে যখন দায়ূদ সেই কথা শুনিলেন, তখন তিনি কহিলেন, নেরের পুত্র অব্‌নেরের রক্তপাত বিষয়ে আমি ও আমার রাজ্য সদাপ্রভুর সাক্ষাতে চিরকাল নির্দ্দোষ। সেই রক্ত যোয়াবের ও তাহার সমস্ত পিতৃকুলের উপরে বর্ত্তুক, এবং যোয়াবের কুলে প্রমেহী কিম্বা কুষ্ঠী কিম্বা যষ্টি অবলম্বী কিম্বা খড়্‌গে পতিত কিম্বা ভক্ষ্যহীন লোকের অভাব না হউক। এইরূপে যোয়াব ও তাঁহার ভ্রাতা অবীশয় অব্‌নেরকে বধ করিলেন, কেননা তিনি গিবিয়োনে যুদ্ধকালে তাঁহাদের ভ্রাতা অসাহেলকে বধ করিয়াছিলেন। পরে দায়ূদ যোয়াবকে ও তাঁহার সঙ্গী সকল লোককে কহিলেন, তোমরা আপন আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া চট পরিধান কর, এবং শোক করিতে করিতে অব্‌নেরের অগ্রে অগ্রে চল। আর দায়ূদ রাজাও শবাধারের পশ্চাতে পশ্চাতে চলিলেন। আর হিব্রোণে অব্‌নেরকে কবর দেওয়া হইল; তখন রাজা অব্‌নেরের কবরের নিকটে উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিলেন, সমস্ত লোকও রোদন করিল। রাজা অব্‌নেরের বিষয়ে বিলাপ করিয়া কহিলেন, যেমন মূঢ় মরে, তেমনি কি মরিলেন অব্‌নের? তোমার হস্ত ছিল না বদ্ধ, চরণও ছিল না নিগড়বদ্ধ; যেমন কেহ অন্যায়ীদের সম্মুখে পড়ে, তেমনি পড়িলে তুমি! তখন সমস্ত লোক তাঁহার বিষয়ে আবার রোদন করিল। পরে কিছু বেলা থাকিতে সমস্ত লোক দায়ূদকে আহার করাইতে আসিল, কিন্তু দায়ূদ এই শপথ করিলেন, ঈশ্বর আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন, যদি সূর্য্য অস্তগত না হইলে আমি রুটী কিম্বা অন্য কোন দ্রব্যের আস্বাদ গ্রহণ করি। তখন সমস্ত লোক তাহা লক্ষ্য করিল, ও সন্তুষ্ট হইল; রাজা যাহা কিছু করিলেন, তাহাতেই সকল লোক সন্তুষ্ট হইল। আর নেরের পুত্র অব্‌নেরের বধ রাজা হইতে হয় নাই, ইহা সমস্ত লোক ও সমস্ত ইস্রায়েল, সেই দিবসে জানিতে পারিল। আর রাজা আপন দাসগণকে কহিলেন, তোমরা কি জান না যে, অদ্য ইস্রায়েলের মধ্যে প্রধান ও মহান্‌ এক জন পতিত হইলেন? আর রাজপদে অভিষিক্ত হইলেও অদ্য আমি দুর্ব্বল; এই কয়টা লোক, সরূয়ার পুত্রেরা, আমার অবাধ্য। সদাপ্রভু দুষ্ক্রিয়াকারীকে তাহার দুষ্টতানুরূপ প্রতিফল দিউন। পরে যখন শৌলের পুত্র শুনিলেন যে, অব্‌নের হিব্রোণে মরিয়া গিয়াছেন, তখন তাঁহার হস্ত দুর্ব্বল হইল, এবং সমস্ত ইস্রায়েল বিহ্বল হইল। শৌলের পুত্রের দুই জন দলপতি ছিল, এক জনের নাম বানা, আর এক জনের নাম রেখব; তাহারা বিন্যামীন বংশজাত বেরোতীয় রিম্মোণের পুত্র। বস্তুতঃ বেরোৎও বিন্যামীনের অধিকারের মধ্যে গণিত, কিন্তু বেরোতীয়েরা গিত্তয়িমে পলায়ন করে, আর সে স্থানে অদ্য পর্য্যন্ত প্রবাসী রহিয়াছে। আর শৌলের পুত্র যোনাথনের এক পুত্র ছিল, সে উভয় চরণে খঞ্জ; যিষ্রিয়েল হইতে যখন শৌলের ও যোনাথনের সংবাদ আসিয়াছিল, তখন তাহার বয়ঃক্রম পাঁচ বৎসর; তাহার ধাত্রী তাহাকে তুলিয়া লইয়া পলায়ন করিয়াছিল, কিন্তু ধাত্রী শীঘ্র পলাইতে যাওয়ায় সে পতিত হইয়া খঞ্জ হইয়াছিল; তাহার নাম মফীবোশৎ। একদা বেরোতীয় রিম্মোণের পুত্র রেখব ও বানা গিয়া দিবসের উত্তাপকালে ঈশ্‌বোশতের বাটীতে উপস্থিত হইল; তখন তিনি মধ্যাহ্নকালে বিশ্রাম করিতেছিলেন। আর উহারা প্রবেশ করিয়া গোম লইবার ছলে বাটীর মধ্যস্থান পর্য্যন্ত গিয়া তথায় তাঁহার উদরে আঘাত করিল; পরে রেখব ও তাহার ভ্রাতা বানা পলায়ন করিল। তিনি যে সময়ে শয়নাগারে আপন খট্টাতে শুইয়াছিলেন, সেই সময়ে তাহারা ভিতরে গিয়া আঘাতপূর্ব্বক তাঁহাকে বধ করিল; পরে তাঁহার মস্তক ছেদন করিয়া মুণ্ডটী লইয়া অরাবা তলভূমির পথ ধরিয়া সমস্ত রাত্রি গমন করিল। তাহারা ঈশ্‌বোশতের মুণ্ড হিব্রোণে দায়ূদের নিকটে আনিয়া রাজাকে কহিল, দেখুন, আপনার শত্রু শৌল, যে আপনার প্রাণনাশের চেষ্টা করিত, তাহার পুত্র ঈশ্‌বোশতের মুণ্ড; সদাপ্রভু অদ্য আমাদের প্রভু মহারাজের পক্ষে শৌলকে ও তাহার বংশকে অন্যায়ের প্রতিফল দিলেন। কিন্তু দায়ূদ বেরোতীয় রিম্মোণের পুত্র রেখব ও তাহার ভ্রাতা বানাকে এই উত্তর করিলেন, যিনি সর্ব্বসঙ্কট হইতে আমার প্রাণ মুক্ত করিয়াছেন, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যে ব্যক্তি আমাকে বলিয়াছিল, দেখ, শৌল মরিয়াছে, সে শুভ সংবাদ আনিয়াছে মনে করিলেও আমি তাহাকে ধরিয়া সিক্লগে বধ করিয়াছিলাম, তাহার সংবাদের জন্য আমি তাহাকে এই পুরস্কার দিয়াছিলাম। এখন যাহারা ধার্ম্মিক ব্যক্তিকে তাঁহারই গৃহমধ্যে তাঁহার খট্টার উপরে হত্যা করিয়াছে, সেই দুষ্ট লোক যে তোমরা, আমি তোমাদের হইতে তাহার রক্তের প্রতিশোধ কি আরও লইব না? পৃথিবী হইতে কি তোমাদিগকে উচ্ছেদ করিব না? পরে দায়ূদ আপন যুবকদিগকে আজ্ঞা করিলে তাহারা তাহাদিগকে বধ করিল, এবং তাহাদের হস্তপদ ছেদন করিয়া হিব্রোণস্থ পুষ্করিণীর পাড়ে টাঙ্গাইয়া দিল; কিন্তু ঈশ্‌বোশতের মস্তক লইয়া হিব্রোণে অব্‌নেরের কবরে পুঁতিয়া রাখিল। পরে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশ হিব্রোণে দায়ূদের নিকটে আসিয়া কহিল, দেখুন, আমরা আপনার অস্থি ও মাংস। পূর্ব্বে যখন শৌল আমাদের রাজা ছিলেন, তখনও আপনিই ইস্রায়েলকে বাহিরে লইয়া যাইতেন ও ভিতরে আনিতেন। আর সদাপ্রভু আপনাকে বলিয়াছিলেন, তুমিই আমার প্রজা ইস্রায়েলকে চরাইবে ও ইস্রায়েলের নায়ক হইবে। এইরূপে ইস্রায়েলের প্রাচীনেরা সকলে হিব্রোণে রাজার নিকটে আসিলেন; তাহাতে দায়ূদ রাজা হিব্রোণে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তাঁহাদের সহিত নিয়ম করিলেন, এবং তাঁহারা ইস্রায়েলের উপরে দায়ূদকে রাজপদে অভিষেক করিলেন। দায়ূদ ত্রিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং চল্লিশ বৎসর রাজত্ব করেন। তিনি হিব্রোণে যিহূদার উপরে সাত বৎসর ছয় মাস রাজত্ব করেন; পরে যিরূশালেমে সমস্ত ইস্রায়েলের ও যিহূদার উপরে তেত্রিশ বৎসর রাজত্ব করেন। পরে রাজা ও তাঁহার লোকেরা দেশনিবাসী যিবূষীয়দের বিরুদ্ধে যিরূশালেমে যাত্রা করিলেন; তাহাকে তাহারা দায়ূদকে কহিল, তুমি এই স্থানে প্রবেশ করিতে পাইবে না, অন্ধেরা ও খঞ্জেরাই তোমাকে তাড়াইয়া দিবে। তাহারা ভাবিয়াছিল, দায়ূদ এই স্থানে প্রবেশ করিতে পারিবেন না। কিন্তু দায়ূদ সিয়োনের দুর্গ হস্তগত করিলেন; তাহাই দায়ূদ-নগর। ঐ দিবসে দায়ূদ কহিলেন, যে কেহ যিবূষীয়দিগকে আঘাত করে, সে জলপ্রণালীতে গিয়া দায়ূদের প্রাণের ঘৃণিত খঞ্জ ও অন্ধদিগকে আঘাত করুক। এই কারণ লোকে বলে, অন্ধ ও খঞ্জেরা রহিয়াছে, সে গৃহমধ্যে প্রবেশ করিবে না। আর দায়ূদ সেই দুর্গে বসতি করিয়া তাহার নাম দায়ূদ-নগর রাখিলেন; এবং দায়ূদ মিল্লো অবধি ভিতর পর্য্যন্ত চারিদিকে [প্রাচীর] গাঁথিলেন। পরে দায়ূদ উত্তরোত্তর মহান্‌ হইয়া উঠিলেন, কারণ সদাপ্রভু বাহিনীগণের ঈশ্বর, তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন। আর সোরের রাজা হীরম দায়ূদের নিকটে দূতগণকে এবং এরস কাষ্ঠ, সূত্রধর ও ভাস্করদিগকে পাঠাইলেন; তাহারা দায়ূদের জন্য এক বাটী নির্ম্মাণ করিল। তখন দায়ূদ বুঝিলেন যে, সদাপ্রভু ইস্রায়েলের রাজপদে তাঁহাকে সুস্থির করিয়াছেন, এবং আপন প্রজা ইস্রায়েলের নিমিত্ত তাঁহার রাজ্যের উন্নতি করিয়াছেন। আর দায়ূদ হিব্রোণ হইতে আসিলে পর যিরূশালেমে আরও উপপত্নী ও ভার্য্যা গ্রহণ করিলেন, তাহাতে দায়ূদের আরও পুত্র কন্যা জন্মিল। যিরূশালেমে তাঁহার যে সকল পুত্র জন্মিল, তাহাদের নাম; সম্মূয়, শোবব, নাথন, শলোমন, যিভর, ইলীশূয়, নেফগ, যাফিয়, ইলীশামা, ইলিয়াদা ও ইলীফেলট। পলেষ্টীয়েরা যখন শুনিল যে, দায়ূদ ইস্রায়েলের উপরে রাজপদে অভিষিক্ত হইয়াছেন, তখন পলেষ্টীয় সমস্ত লোক দায়ূদের অন্বেষণে উঠিয়া আসিল; দায়ূদ তাহা শুনিয়া দুর্গে নামিয়া গেলেন। আর পলেষ্টীয়েরা আসিয়া রফায়ীম তলভূমিতে ব্যাপ্ত হইল। তখন দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে উঠিয়া যাইব? তুমি কি আমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিবে? সদাপ্রভু দায়ূদকে কহিলেন, যাও, আমি অবশ্য তোমার হস্তে পলেষ্টীয়দিগকে সমর্পণ করিব। পরে দায়ূদ বাল্‌-পরাসীমে আসিলেন, ও দায়ূদ তাহাদিগকে আঘাত করিলেন, আর কহিলেন, সদাপ্রভু আমার সম্মুখে আমার শত্রুগণকে সেতুভঙ্গের ন্যায় ভগ্ন করিলেন, এই জন্য সেই স্থানের নাম বাল্‌-পরাসীম [ভঙ্গ-স্থান] রাখিলেন। সেই স্থানে তাহারা আপনাদের প্রতিমা সকল ফেলিয়া গিয়াছিল, আর দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা সেগুলি তুলিয়া লইয়া গেলেন। পরে পলেষ্টীয়েরা পুনর্ব্বার আসিয়া রফায়ীম তলভূমিতে ব্যাপ্ত হইল। তাহাতে দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন, আর তিনি কহিলেন, তুমি যাইও না, কিন্তু উহাদের পশ্চাতে ঘুরিয়া আসিয়া বাকা বৃক্ষরাজির সম্মুখে উহাদিগকে আক্রমণ কর। সেই সকল বাকা বৃক্ষের শিখরে সৈন্যগমনের মত শব্দ শুনিলে তুমি উদ্যোগ করিবে; কেননা তখনই সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের সৈন্যকে আঘাত করিবার জন্য তোমার সম্মুখে অগ্রসর হইয়াছেন। দায়ূদ সদাপ্রভুর আজ্ঞানুযায়ী কার্য্য করিলেন; গেবা হইতে গেষরের নিকট পর্য্যন্ত পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিলেন। পরে দায়ূদ পুনরায় ইস্রায়েলের সমস্ত মনোনীত লোককে, ত্রিশ সহস্র জনকে, একত্র করিলেন। আর দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোক উঠিয়া ঈশ্বরের সিন্দুক, যাহার উপরে সেই নাম,—বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যিনি করূবদ্বয়ে আসীন, তাঁহার নাম—কীর্ত্তিত,তাহা বালি-যিহূদা হইতে আনিতে যাত্রা করিলেন। পরে তাঁহারা ঈশ্বরের সিন্দুক এক নূতন শকটে চড়াইয়া পাহাড়ে স্থিত অবীনাদবের বাটী হইতে বাহির করিলেন, আর অবীনাদবের পুত্র উষ ও অহিয়ো সেই নূতন শকট চালাইল। তাহারা পাহাড়ে স্থিত অবীনাদবের বাটী হইতে ঈশ্বরের সিন্দুকসহ শকট বাহির করিয়া আনিল; এবং অহিয়ো সিন্দুকটীর অগ্রে অগ্রে চলিল। আর দায়ূদ ও ইস্রায়েলের সমস্ত কুল সদাপ্রভুর সম্মুখে দেবদারু কাষ্ঠ-নির্ম্মিত সর্ব্ব প্রকার বাদ্য-যন্ত্র, এবং বীণা, নেবল, তবল, জয়শৃঙ্গ ও করতাল বাজাইলেন। পরে তাহারা নাখোরের খামার পর্য্যন্ত গেলে উষ হস্ত বিস্তার করিয়া ঈশ্বরের সিন্দুক ধরিল, কেননা বলদযুগল পিছলাইয়া পড়িয়াছিল। তখন উষের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, ও তাহার হঠকারিতা প্রযুক্ত ঈশ্বর সেই স্থানে তাহাকে আঘাত করিলেন; তাহাতে সে তথায় ঈশ্বরের সিন্দুকের পার্শ্বে মরিয়া গেল। সদাপ্রভু উষকে আক্রমণ করায় দায়ূদ অসন্তুষ্ট হইলেন, আর সেই স্থানের নাম পেরস-উষ [উষ-ভঙ্গ] রাখিলেন; অদ্যাপি সেই নাম চলিত আছে। আর দায়ূদ সেই দিন সদাপ্রভু হইতে ভীত হইয়া কহিলেন, সদাপ্রভুর সিন্দুক কি প্রকারে আমার নিকটে আসিবে? তাই দায়ূদ সদাপ্রভুর সিন্দুক দায়ূদ-নগরে আপনার কাছে আনিতে অনিচ্ছুক হইলেন, কিন্তু দায়ূদ পথের পার্শ্বস্থ গাতীয় ওবেদ-ইদোমের বাটীতে লইয়া রাখিলেন। সদাপ্রভুর সিন্দুক গাতীয় ওবেদ-ইদোমের বাটীতে তিন মাস থাকিল; আর সদাপ্রভু ওবেদ-ইদোমকে ও তাহার সমস্ত বাটীকে আশীর্ব্বাযুক্ত করিলেন। পরে দায়ূদ রাজা শুনিলেন, ঈশ্বরের সিন্দুকের জন্য সদাপ্রভু ওবেদ-ইদোমের বাটী ও তাহার সর্ব্বস্ব আশীর্ব্বাদযুক্ত করিয়াছেন; তাহাতে দায়ূদ গিয়া ওবেদ-ইদোমের বাটী হইতে আনন্দসহকারে ঈশ্বরের সিন্দুক দায়ূদ-নগরে আনিলেন। আর এইরূপ হইল, সদাপ্রভুর সিন্দুক-বাহকেরা ছয় পদ গমন করিলে তিনি এক গোরু ও এক পুষ্ট গোবৎস বলিদান করিলেন। আর দায়ূদ সদাপ্রভুর সম্মুখে যথাশক্তি নৃত্য করিলেন; তখন দায়ূদ শুক্ল এফোদ পরিধান করিয়াছিলেন। এইরূপে দায়ূদ ও ইস্রায়েলের সমস্ত কুল জয়ধ্বনি ও তূরীধ্বনি পুরঃসর সদাপ্রভুর সিন্দুক আনিলেন। আর দায়ূদ-নগরে সদাপ্রভুর সিন্দুকের প্রবেশ কালে শৌলের কন্যা মীখল বাতায়ন দিয়া দৃষ্টিপাত করিলেন, এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে দায়ূদ রাজাকে লম্ফ দিতে ও নৃত্য করিতে দেখিয়া মনে মনে তুচ্ছ করিলেন। পরে লোকেরা সদাপ্রভুর সিন্দুক ভিতরে আনিয়া স্বস্থানে, অর্থাৎ সিন্দুকের জন্য দায়ূদ যে তাম্বু স্থাপন করিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে রাখিল, এবং দায়ূদ সদাপ্রভুর সম্মুখে হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিলেন। আর হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলির উৎসর্গ সাঙ্গ করিলে পর দায়ূদ বাহিনীগণের সদাপ্রভুর নামে লোকদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। আর তিনি সকল লোকের মধ্যে অর্থাৎ ইস্রায়েলের সমস্ত লোকারণ্যের মধ্যে প্রত্যেক পুরুষকে ও প্রত্যেক স্ত্রীকে এক এক খানা রুটী ও এক এক ভাগ [মাংস] ও এক এক খানা দ্রাক্ষাপিষ্টক দিলেন; পরে সকল লোক আপন আপন গৃহে প্রস্থান করিল। পরে দায়ূদ আপন পরিজনদিগকে আশীর্ব্বাদ করণার্থে ফিরিয়া আসিলেন; তখন শৌলের কন্যা মীখল দায়ূদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে বাহিরে আসিয়া কহিলেন, অদ্য ইস্রায়েলের রাজা কেমন সমাদৃত হইলেন; কোন অসারচিত্ত লোক যেমন প্রকাশ্যরূপে বিবস্ত্র হয়, তদ্রূপ তিনি অদ্য আপন দাসগণের দাসীদিগের সাক্ষাতে বিবস্ত্র হইলেন। তখন দায়ূদ মীখলকে কহিলেন, সদাপ্রভুর প্রজার উপরে, ইস্রায়েলের উপরে অধ্যক্ষ-পদে আমাকে নিযুক্ত করিবার জন্য যিনি তোমার পিতা ও তাঁহার সমস্ত কুল অপেক্ষা আমাকে মনোনীত করিয়াছেন, সেই সদাপ্রভুর সাক্ষাতেই [তাহা করিয়াছি]; অতএব আমি সদাপ্রভুরই সাক্ষাতে আমোদ করিব। আর ইহা অপেক্ষা আরও লঘু হইব, এবং আমার নিজের দৃষ্টিতে আরও নীচ হইব; কিন্তু তুমি যে দাসীদের কথা কহিলে, তাহাদের কাছে সমাদৃত হইব। আর শৌলের কন্যা মীখলের মরণকাল পর্য্যন্ত সন্তান হইল না। পরে রাজা যখন আপন গৃহে বাস করিতে লাগিলেন, এবং সদাপ্রভু চারিদিকের সমস্ত শত্রু হইতে তাঁহাকে বিশ্রাম দিলেন, তখন রাজা নাথন ভাববাদীকে কহিলেন, দেখুন, আমি এরস কাষ্ঠের গৃহে বাস করিতেছি, কিন্তু ঈশ্বরের সিন্দুক যবনিকার মধ্যে বাস করিতেছে। নাথন রাজাকে কহিলেন, ভাল, যাহা কিছু আপনার মনে আছে, তাহাই করুন; কেননা সদাপ্রভু আপনার সহবর্ত্তী। কিন্তু সেই রাত্রিতে সদাপ্রভুর এই বাক্য নাথনের নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি যাও, আমার দাস দায়ূদকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি কি আমার বাসের জন্য গৃহ নির্ম্মাণ করিবে? ইস্রায়েল-সন্তানগণকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিবার দিন হইতে অদ্য পর্য্যন্ত আমি ত কোন গৃহে বাস করি নাই, কেবল তাম্বুতে ও আবাসে থাকিয়া যাতায়াত করিতেছি। সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের মধ্যে যাতায়াত কালে আমি যাহাকে আপন প্রজা ইস্রায়েলকে পালন করিবার ভার দিয়াছিলাম, ইস্রায়েলের এমন কোন বংশকে কি কখনও এই কথা বলিয়াছি যে, তোমরা কেন আমার জন্য এরস কাষ্ঠের গৃহ নির্ম্মাণ কর নাই? অতএব এখন তুমি আমার দাস দায়ূদকে এই কথা বল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার প্রজার উপরে, ইস্রায়েলের উপরে নায়ক করিবার জন্য আমিই তোমাকে মেষবাথান হইতে ও মেষের পশ্চাৎ হইতে গ্রহণ করিয়াছি। আর তুমি যে কোন স্থানে গমন করিয়াছ, সেই স্থানে তোমার সহবর্ত্তী থাকিয়া তোমার সম্মুখ হইতে তোমার সমস্ত শত্রুকে উচ্ছেদ করিয়াছি। আর আমি পৃথিবীস্থ মহাপুরুষদের নামের মত তোমার নাম মহৎ করিব। আর আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের জন্য একটী স্থান নিরূপণ করিব ও তাহাদিগকে রোপণ করিব; যেন আপনাদের সেই স্থানে তাহারা বাস করে, এবং আর বিচলিত না হয়। দুষ্ট লোকেরা তাহাদিগকে আর দুঃখ দিবে না, যেমন পূর্ব্বে দিত, এবং যে অবধি আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের উপরে বিচারকর্ত্তৃগণকে নিযুক্ত করিয়াছিলাম, সেই অবধি যেমন দিত। আর আমি যাবতীয় শত্রু হইতে তোমাকে বিশ্রাম করাইব। আরও সদাপ্রভু তোমাকে বলিতেছেন যে, তোমার জন্য সদাপ্রভু এক কুল নির্ম্মাণ করিবেন। তোমার দিন সম্পূর্ণ হইলে যখন তুমি আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইবে, তখন আমি তোমার পরে তোমার বংশকে, যে তোমার ঔরসে জন্মিবে তাহাকে স্থাপন করিব, এবং তাহার রাজ্য সুস্থির করিব। আমার নামের নিমিত্ত সে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবে, এবং আমি তাহার রাজসিংহাসন চিরস্থায়ী করিব। আমি তাহার পিতা হইব, ও সে আমার পুত্র হইবে; সে অপরাধ করিলে আমি মনুষ্যগণের দণ্ড ও মনুষ্য-সন্তানদের প্রহার দ্বারা তাহাকে শাস্তি দিব। কিন্তু আমি তোমার সম্মুখ হইতে যাহাকে দূর করিলাম, সেই শৌল হইতে আমি যেমন আপন দয়া অপসারণ করিলাম, তেমনি আমার দয়া তাহা হইতে দূরে যাইবে না। আর তোমার কুল ও তোমার রাজত্ব তোমার সম্মুখে চিরকাল স্থির থাকিবে; তোমার সিংহাসন চিরস্থায়ী হইবে। নাথন দায়ূদকে এই সমস্ত বাক্য অনুসারে ও এই সমস্ত দর্শন অনুসারে কথা কহিলেন। তখন দায়ূদ রাজা ভিতরে গিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে বসিলেন, আর কহিলেন, হে প্রভু সদাপ্রভু, আমি কে, আমার কুলই বা কি যে, তুমি আমাকে এ পর্য্যন্ত আনিয়াছ? আর হে প্রভু সদাপ্রভু, তোমার দৃষ্টিতে ইহাও ক্ষুদ্র বিষয় হইল; তুমি আপন দাসের কুলের বিষয়েও সুদীর্ঘ কালের উদ্দেশে কথা কহিলে; হে প্রভু সদাপ্রভু, এ কি মনুষ্যের নিয়ম? আর দায়ূদ তোমাকে আর কি বলিবে? হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি ত আপন দাসকে জ্ঞাত আছ। তুমি আপন বাক্যের অনুরোধে ও নিজ হৃদয়ানুসারে এই সমস্ত মহৎকার্য্য সাধন করিয়া আপন দাসকে জ্ঞাত করিয়াছ। অতএব, হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তুমি মহান্‌; কারণ তোমার তুল্য কেহই নাই, ও তুমি ব্যতীত কোন ঈশ্বর নাই; আমরা স্বকর্ণে যাহা যাহা শুনিয়াছি, তদনুসারে ইহা জানি। পৃথিবীর মধ্যে কোন্‌ একটী জাতি তোমার প্রজা ইস্রায়েলের তুল্য? ঈশ্বর তাহাকে আপন প্রজা করিবার জন্য এবং আপন নাম প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য মুক্ত করিতে গিয়াছিলেন, তুমি আমাদের পক্ষে মহৎ মহৎ কার্য্য ও তোমার দেশের পক্ষে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর কার্য্য তোমার প্রজাদের সম্মুখে সাধন করিয়াছিলে, তাহাদিগকে তুমি মিসর, জাতিগণ ও দেবগণ হইতে মুক্ত করিয়াছিলে। তুমি আপনার জন্য আপন প্রজা ইস্রায়েলকে স্থাপন করিয়া চিরকালের জন্য আপনার প্রজা করিয়াছ; আর হে সদাপ্রভু, তুমি তাহাদের ঈশ্বর হইয়াছে। এখন হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তুমি আপন দাসের ও তাহার কুলের বিষয়ে যে বাক্য বলিয়াছ, তাহা চিরকালের জন্য স্থির কর; যেমন বলিয়াছ, তদনুসারে কর। তোমার নাম চিরকাল মহিমান্বিত হউক; লোকে বলুক, বাহিনীগণের সদাপ্রভুই ইস্রায়েলের উপরে ঈশ্বর; আর তোমার দাস দায়ূদের কুল তোমার সাক্ষাতে সুস্থির হইবে। হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমিই আপন দাসের কাছে প্রকাশ করিয়াছ, বলিয়াছ, ‘আমি তোমার জন্য এক কুল নির্ম্মাণ করিব,’ এই কারণ তোমার কাছে এই প্রার্থনা করিতে তোমার দাসের মনে সাহস জন্মিল। আর এখন, হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর, তোমারই বাক্য সত্য, আর তুমি আপন দাসের কাছে এই মঙ্গল প্রতিজ্ঞা করিয়াছ। অতএব অনুগ্রহ করিয়া আপন দাসের কুলকে আশীর্ব্বাদ কর; তাহা যেন তোমার সম্মুখে চিরকাল থাকে; কেননা হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আপনি ইহা বলিয়াছ; আর তোমার আশীর্ব্বাদে তোমার এই দাসের কুল চিরকাল আশীঃপ্রাপ্ত থাকুক। তৎপরে দায়ূদ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিয়া নত করিলেন, আর দায়ূদ পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে প্রধান নগরের কর্ত্তৃত্ব হরণ করিলেন। আর তিনি মোয়াবীয়দিগকে আঘাত করিয়া রজ্জুতে মাপিলেন, ভূমিতে শয়ন করাইয়া বধ করণার্থে দুই রজ্জু এবং জীবিত রাখিবার জন্য সম্পূর্ণ এক রজ্জু দিয়া মাপিলেন; তাহাতে মোয়াবীয়েরা দায়ূদের দাস হইয়া উপঢৌকন আনিল। আর যে সময়ে সোবার রাজা রহোবের পুত্র হদদেষর ফরাৎ নদীর নিকটে আপন কর্ত্তৃত্ব পুনরায় স্থাপন করিতে যান, তৎকালে দায়ূদ তাঁহাকে আঘাত করেন। দায়ূদ তাঁহার নিকট হইতে সতের শত অশ্বারোহী ও বিশ সহস্র পদাতিক সৈন্য হস্তগত করিলেন, আর দায়ূদ তাঁহার রথের অশ্বগণের পাদশিরা ছেদন করিলেন, কিন্তু তাহার মধ্যে এক শত রথের অশ্ব রাখিলেন। পরে দম্মেশকের অরামীয়েরা সোবার হদদেষর রাজার সাহায্য করিতে আসিলে দায়ূদ সেই অরামীয়দের মধ্যে বাইশ সহস্র জনকে আঘাত করিলেন। আর দায়ূদ দম্মেশকের অরাম দেশে সৈন্যদল স্থাপন করিলেন, তাহাতে অরামীয়েরা দায়ূদের দাস হইয়া উপঢৌকন আনিল। এই প্রকারে দায়ূদ যে কোন স্থানে যাইতেন, সেই স্থানে সদাপ্রভু তাঁহাকে বিজয়ী করিতেন। আর দায়ূদ হদদেষরের দাসদের স্বর্ণঢাল সকল খুলিয়া যিরূশালেমে আনিলেন। আর দায়ূদ রাজা হদদেষরের বেটহ ও বেরোথা নগর হইতে বিস্তর পিত্তল আনিলেন। আর দায়ূদ হদদেষরের সমস্ত সৈন্যদলকে আঘাত করিয়াছেন শুনিয়া হমাতের রাজা তয়ি দায়ূদ রাজার কুশল জিজ্ঞাসা করিবার জন্য, এবং তিনি হদদেষরের সহিত যুদ্ধ করিয়া তাঁহাকে আঘাত করিয়াছেন বলিয়া তাঁহার ধন্যবাদ করিবার জন্য আপন পুত্র যোরামকে তাঁহার কাছে প্রেরণ করিলেন; কেননা হদদেষরের সহিত তয়িরও যুদ্ধ হইয়াছিল। যোরাম রৌপ্যের পাত্র, স্বর্ণের পাত্র ও পিত্তলের পাত্র সঙ্গে লইয়া আসিলেন। তাহাতে দায়ূদ রাজা সে সমস্তও সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র করিলেন; ফলতঃ অরাম, মোয়াব, অম্মোন-সন্তানগণ এবং পলেষ্টীয় ও অমালেক প্রভৃতি যে সমস্ত জাতিকে তিনি বশীভূত করিয়াছিলেন, তাহাদের হইতে লব্ধ দ্রব্যের মধ্যে রৌপ্য ও স্বর্ণ, এবং সোবার রাজা রহোবের পুত্র হদদেষর হইতে নীত লুটদ্রব্য সকল তিনি পবিত্র করিয়াছিলেন। আর দায়ূদ অরামকে আঘাত করিয়া ফিরিয়া আসিবার সময় লবণ-তলভূমিতে অষ্টাদশ সহস্র জনকে বধ করিয়া অতিশয় নামলব্ধ হইলেন। পরে দায়ূদ ইদোমে সৈন্যদল স্থাপন করিলেন, সমস্ত ইদোমে সৈন্যদল রাখিলেন, এবং ইদোমীয় সকল লোক দায়ূদের দাস হইল। আর দায়ূদ যে কোন স্থানে যাইতেন, সেই স্থানে সদাপ্রভু তাঁহাকে বিজয়ী করিতেন। দায়ূদ সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিলেন; দায়ূদ আপন সমস্ত প্রজা লোকের পক্ষে বিচার ও ন্যায় সাধন করিতেন। আর সরূয়ার পুত্র যোয়াব প্রধান সেনাপতি ছিলেন; এবং অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট ইতিহাসকর্ত্তা ছিলেন; আর অহীটূবের পুত্র সাদোক ও অবিয়াথরের পুত্র অহীমেলক যাজক ছিলেন; এবং সরায় লেখক ছিলেন; আর যিহোয়াদার পুত্র বনায় করেথীয় ও পলেথীয়দের [উপরে নিযুক্ত ছিলেন]; এবং দায়ূদের পুত্রগণ যাজক ছিলেন। পরে দায়ূদ কহিলেন, আমি যোনাথনের নিমিত্ত যাহার প্রতি দয়া করিতে পারি, এমন কেহ কি শৌলের কুলে অবশিষ্ট আছে? সীবঃ নামে শৌলের কুলের এক দাস ছিল, তাহাকে দায়ূদের নিকটে ডাকা হইলে রাজা তাহাকে কহিলেন, তুমি কি সীবঃ? সে কহিল, আপনার দাস সেই বটে। রাজা কহিলেন, আমি যাহার প্রতি ঈশ্বরের দয়া প্রদর্শন করিতে পারি, শৌলের কুলে এমন কেহই কি অবশিষ্ট নাই? সীবঃ রাজাকে কহিল, যোনাথনের এক পুত্র এখনও অবশিষ্ট আছেন, তিনি চরণে খঞ্জ। রাজা কহিলেন, সে কোথায়? সীবঃ রাজাকে কহিল, দেখুন, তিনি লো-দবারে অম্মীয়েলের পুত্র মাখীরের বাটীতে আছেন। পরে দায়ূদ রাজা লো-দবারে লোক প্রেরণ করিয়া অম্মীয়েলের পুত্র মাখীরের বাটী হইতে তাঁহাকে আনাইলেন। তখন শৌলের পৌত্র যোনাথনের পুত্র মফীবোশৎ দায়ূদের নিকটে আসিয়া উবুড় হইয়া পড়িয়া প্রণিপাত করিলেন। তখন দায়ূদ কহিলেন, মফীবোশৎ! তিনি উত্তর করিলেন, দেখুন, এই আপনার দাস। দায়ূদ তাঁহাকে কহিলেন, ভয় করিও না, আমি তোমার পিতা যোনাথনের নিমিত্ত অবশ্য তোমার প্রতি দয়া করিব, আমি তোমার পিতামহ শৌলের সমস্ত ভূমি তোমাকে ফিরাইয়া দিব, আর তুমি নিত্য আমার মেজে ভোজন করিবে। তাহাতে তিনি প্রণিপাত করিয়া কহিলেন, আপনার এ দাস কে যে, আপনি আমার মত মৃত কুকুরের প্রতি দৃষ্টি করিতেছেন? পরে রাজা শৌলের ভৃত্য সীবঃকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি তোমার কর্ত্তার পুত্রকে শৌলের ও তাঁহার সমস্ত কুলের সর্ব্বস্ব দিলাম। আর তুমি, তোমার পুত্রগণ ও দাসগণ তাঁহার জন্য ভূমি কর্ষণ করিবে, এবং তোমার কর্ত্তার পুত্রের খাদ্যের জন্য উৎপন্ন দ্রব্য আনিয়া দিবে; কিন্তু তোমার কর্ত্তার পুত্র মফীবোশৎ নিত্য আমার মেজে ভোজন করিবেন। ঐ সীবের পঞ্চদশ পুত্র ও বিংশতি দাস ছিল। তখন সীবঃ রাজাকে কহিল, আমার প্রভু মহারাজ আপন দাসকে যে যে আজ্ঞা করিলেন, তদনুসারে আপনার এই দাস সমস্তই করিবে। আর মফীবোশৎ রাজপুত্রদের এক জনের মত রাজার মেজে ভোজন করিতে লাগিলেন। মফীবোশতের মীখা নামে এক শিশুসন্তান ছিল। আর সীবের গৃহে বাসকারী সমস্ত লোক মফীবোশতের দাস ছিল। মফীবোশৎ যিরূশালেমে বাস করিলেন, কেননা তিনি নিত্য নিত্য রাজার মেজে ভোজন করিতেন; তিনি উভয় চরণে খঞ্জ ছিলেন। তৎপরে অম্মোন-সন্তানদের রাজা মরিলে তাঁহার পুত্র হানূন তাঁহার পদে রাজা হইলেন। তখন দায়ূদ কহিলেন, হানূনের পিতা নাহশ আমার প্রতি যেমন সদয় ব্যবহার করিয়াছিলেন, আমিও হানূনের প্রতি তেমনি সদয় ব্যবহার করিব। পরে দায়ূদ তাঁহাকে পিতৃশোকে সান্ত্বনা দিবার জন্য আপনার কয়েক জন দাসকে প্রেরণ করিলেন। তখন দায়ূদের দাসগণ অম্মোন-সন্তানদের দেশে উপস্থিত হইল। কিন্তু অম্মোন-সন্তানদের অধ্যক্ষগণ আপনাদের প্রভু হানূনকে কহিলেন, আপনি কি মনে করিতেছেন যে, দায়ূদ আপনার পিতার সম্মান করে বলিয়া আপনার নিকটে সান্ত্বনাকারিগণকে পাঠাইয়াছে? দায়ূদ কি নগরের সন্ধান লইবার ও নগর নিরীক্ষণপূর্ব্বক নষ্ট করিবার জন্য আপন দাসগণকে পাঠায় নাই? তখন হানূন দায়ূদের দাসগণকে ধরিয়া তাহাদের দাড়ির অর্দ্ধেক ক্ষৌরি করাইয়া দিলেন, ও বস্ত্রের অর্দ্ধেক অর্থাৎ নিতম্বদেশ পর্য্যন্ত কাটিয়া তাহাদিগকে বিদায় করিলেন। পরে তাহারা দায়ূদকে এই কথা বলিয়া পাঠাইলে, তিনি তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে লোক পাঠাইলেন; কেননা তাহারা অতিশয় লজ্জিত হইয়াছিল। রাজা বলিয়া পাঠাইলেন, যাবৎ তোমাদের দাড়ি না বাড়ে, তাবৎ তোমরা যিরীহোতে থাক, তৎপরে ফিরিয়া আসিও। অম্মোন-সন্তানেরা যখন দেখিতে পাইল যে, তাহারা দায়ূদের কাছে ঘৃণিত হইয়াছে, তখন অম্মোন-সন্তানেরা লোক পাঠাইয়া বৈৎ-রহোবস্থ ও সোবাস্থিত অরামীয় বিশ সহস্র পদাতিককে, এক সহস্র লোকশুদ্ধ মাখার রাজাকে, এবং টোবের বারো সহস্র লোককে বেতন দিয়া আনাইল। এই সংবাদ পাইয়া দায়ূদ যোয়াবকে ও বিক্রমশালী সমস্ত সৈন্যকে তথায় প্রেরণ করিলেন। অম্মোন-সন্তানেরা বাহিরে আসিয়া নগর-দ্বারের প্রবেশস্থানে যুদ্ধার্থ সৈন্য রচনা করিল, এবং সোবার ও রহোবের অরামীয়েরা, আর টোবের ও মাখার লোকেরা মাঠে স্বতন্ত্র থাকিল। এইরূপে সম্মুখে ও পশ্চাতে দুই দিকেই তাঁহার প্রতিকূলে যুদ্ধ হইবে দেখিয়া যোয়াব ইস্রায়েলের সমস্ত মনোনীত লোকের মধ্য হইতে লোক বাছিয়া লইয়া অরামীয়দের সম্মুখে সৈন্য রচনা করিলেন; আর অবশিষ্ট লোকদিগকে তিনি আপন ভ্রাতা অবীশয়ের হস্তে সমর্পণ করিলেন; আর তিনি অম্মোন-সন্তানদের সম্মুখে সৈন্য রচনা করিলেন। তিনি কহিলেন, যদি অরামীয়েরা আমা অপেক্ষা বলবান হয়, তবে তুমি আমার সাহায্য করিবে; আর যদি অম্মোন-সন্তানগণ তোমা অপেক্ষা বলবান হয়, তবে আমি গিয়া তোমার সাহায্য করিব। সাহস কর; আমাদের জাতির জন্য ও আমাদের ঈশ্বরের সকল নগরের জন্য আমরা আপনাদিগকে বলবান করিব; আর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তিনি তাহাই করুন। পরে যোয়াব ও তাঁহার সঙ্গী লোকেরা অরামীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সম্মুখীন হইলে তাহারা তাঁহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল। আর অরামীয়েরা পলায়ন করিয়াছে দেখিয়া অম্মোন-সন্তানগণও অবীশয়ের সম্মুখ হইতে পলাইয়া নগরে প্রবেশ করিল। পরে যোয়াব অম্মোন-সন্তানদের নিকট হইতে যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিলেন। অরামীয়েরা যখন দেখিতে পাইল যে, তাহারা ইস্রায়েলের সম্মুখে পরাজিত হইল, তখন তাহারা একত্র হইল। আর হদরেষর লোক পাঠাইয়া [ফরাৎ] নদীর পারস্থ অরামীয়দিগকে বাহির করিয়া আনিলেন; তাহারা হেলমে আসিল; হদরেষরের দলের সেনাপতি শোবক তাহাদের অগ্রণী ছিলেন। পরে দায়ূদকে এই সংবাদ দেওয়া হইলে তিনি সমস্ত ইস্রায়েলকে একত্র করিলেন, এবং যর্দ্দন পার হইয়া হেলমে উপস্থিত হইলেন। তাহাতে অরামীয়েরা দায়ূদের সম্মুখে সৈন্য রচনা করিয়া তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিল। আর অরামীয়েরা ইস্রায়েলের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল; আর দায়ূদ অরামীয়দের সাত শত রথারোহী ও চল্লিশ সহস্র অশ্বারোহী সৈন্য বধ করিলেন, এবং তাহাদের দলের সেনাপতি শোবককেও আঘাত করিলেন, তাহাতে তিনি সেই স্থানে মারা পড়িলেন। হদরেষরের অধীন সমস্ত রাজা যখন দেখিলেন যে, তাঁহারা ইস্রায়েলের সম্মুখে পরাজিত হইয়াছেন, তখন তাঁহারা ইস্রায়েলের সহিত সন্ধি করিয়া তাহাদের দাস হইলেন; সেই অবধি অরামীয়েরা অম্মোন-সন্তানদের সাহায্য করিতে ভীত হইল। পরে বৎসর ফিরিয়া আসিলে রাজবর্গের যুদ্ধে গমন সময়ে দায়ূদ যোয়াবকে, তাঁহার সহিত আপন দাসদিগকে ও সমস্ত ইস্রায়েলকে পাঠাইলেন; তাহারা গিয়া অম্মোন-সন্তানদিগকে সংহার করিয়া রব্বা নগর অবরোধ করিল; কিন্তু দায়ূদ যিরূশালেমে থাকিলেন। একদা বৈকালে দায়ূদ শয্যা হইতে উঠিয়া রাজবাটীর ছাদে বেড়াইতেছিলেন, আর ছাদ হইতে দেখিতে পাইলেন যে, একটী স্ত্রীলোক স্নান করিতেছে; স্ত্রী লোকটী দেখিতে বড়ই সুন্দরী ছিল। দায়ূদ তাহার বিষয় জিজ্ঞাসা করিতে লোক পাঠাইলেন। এক জন কহিল, এ কি ইলিয়ামের কন্যা, হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবা নয়? তখন দায়ূদ দূত পাঠাইয়া তাহাকে আনাইলেন, এবং সে তাঁহার নিকটে আসিলে দায়ূদ তাহার সহিত শয়ন করিলেন; সে স্ত্রী ঋতুস্নান করিয়া শুচি হইয়াছিল। পরে সে আপন ঘরে ফিরিয়া গেল। পরে সে স্ত্রী গর্ভবতী হইল; আর লোক পাঠাইয়া দায়ূদকে এই সমাচার দিল, আমার গর্ভ হইয়াছে। তখন দায়ূদ যোয়াবের নিকটে লোক পাঠাইয়া এই আজ্ঞা করিলেন, হিত্তীয় ঊরিয়কে আমার নিকটে পাঠাইয়া দেও। তাহাতে যোয়াব দায়ূদের নিকটে ঊরিয়কে পাঠাইলেন। ঊরিয় তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইলে দায়ূদ তাহাকে যোয়াবের কুশল, লোকদের কুশল ও যুদ্ধের কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন। পরে দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, তুমি আপন বাটীতে গিয়া পা ধোও। তখন ঊরিয় রাজবাটী হইতে বাহির হইল, আর রাজার নিকট হইতে তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে ভেট গেল। কিন্তু ঊরিয় আপন প্রভুর দাসগণের সঙ্গে রাজবাটীর দ্বারে শয়ন করিল, ঘরে গেল না। পরে এই কথা দায়ূদকে বলা হইল যে, ঊরিয় ঘরে যায় নাই। দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, তুমি কি পথভ্রমণ করিয়া আইস নাই? তবে কেন বাটীতে গেলে না? ঊরিয় দায়ূদকে কহিল, সিন্দুক, ইস্রায়েল ও যিহূদা কুটীরে বাস করিতেছে, এবং আমার প্রভু যোয়াব ও আমার প্রভুর দাসগণ খোলা মাঠে ছাউনী করিয়া আছেন; তবে আমি কি ভোজন পান করিতে ও স্ত্রীর সহিত শয়ন করিতে আপন গৃহে যাইতে পারি? আপনার জীবনের ও আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি এমন কর্ম্ম করিব না। তখন দায়ূদ ঊরিয়কে কহিলেন, অদ্যও তুমি এই স্থানে থাক, কল্য তোমাকে বিদায় করিব। তাহাতে ঊরিয় সে দিবস ও পরদিবস যিরূশালেমে রহিল। আর দায়ূদ তাহাকে নিমন্ত্রণ করিলে সে তাঁহার সাক্ষাতে ভোজন পান করিল; আর তিনি তাহাকে মত্ত করিলেন; কিন্তু সে সন্ধ্যাকালে আপন প্রভুর দাসগণের সঙ্গে আপন শয্যায় শয়ন করিবার জন্য বাহিরে গেল, ঘরে গেল না। প্রাতঃকালে দায়ূদ যোয়াবের নিকটে এক পত্র লিখিয়া ঊরিয়ের হাতে দিয়া পাঠাইলেন। পত্রখানিতে তিনি লিখিয়াছিলেন, তোমরা এই ঊরিয়কে তুমুল যুদ্ধের সম্মুখে নিযুক্ত কর, পরে ইহার পশ্চাৎ হইতে সরিয়া যাও, যেন এ আহত হইয়া মারা পড়ে। পরে কোন্ স্থানে বিক্রমশালী লোক আছে, তাহা জানাতে যোয়াব নগর অবরোধ-কালে সেই স্থানে ঊরিয়কে নিযুক্ত করিলেন। পরে নগরস্থ লোকেরা বাহির হইয়া যোয়াবের সহিত যুদ্ধ করিলে কয়েক জন লোক, দায়ূদের দাসদের মধ্যে কয়কে জন, পতিত হইল, বিশেষতঃ হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা পড়িল। পরে যোয়াব লোক পাঠাইয়া যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত দায়ূদকে জানাইলেন, আর দূতকে আদেশ করিলেন, তুমি রাজার সাক্ষাতে যুদ্ধের সমস্ত বৃত্তান্ত সমাপ্ত করিলে, যদি রাজার ক্রোধ জন্মে, আর যদি তিনি বলেন, তোমরা যুদ্ধ করিতে নগরের এত নিকটে কেন গিয়াছিলে? তাহারা প্রাচীর হইতে বাণ মারিবে, ইহা কি জানিতে না? যিরূব্বেশতের পুত্র অবীমেলককে কে আঘাত করিয়াছিল? তেবেষে একটা স্ত্রীলোক যাঁতার একখানা উপরের পাট প্রাচীর হইতে তাহার উপরে ফেলিয়া দিলে সে কি তাহাতেই মরে নাই? তোমরা কেন প্রাচীরের এত নিকটে গিয়াছিলে? তাহা হইলে তুমি বলিবে, আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা পড়িয়াছে। পরে সেই দূত প্রস্থান করিয়া যোয়াবের প্রেরিত সমস্ত কথা দায়ূদকে জ্ঞাত করিল। দূত দায়ূদকে কহিল, সেই লোকেরা আমাদের বিপক্ষে প্রবল হইয়া মাঠে আমাদের নিকটে বাহিরে আসিয়াছিল; তখন আমরা দ্বারের প্রবেশ-স্থান পর্য্যন্ত তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়াছিলাম। তখন ধনুর্দ্ধরেরা প্রাচীর হইতে আপনার দাসদের উপরে বাণ নিক্ষেপ করিল; তাই মহারাজের কতক দাস মারা পড়িয়াছে; আর আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মরিয়াছে। তখন দায়ূদ দূতকে কহিলেন, যোয়াবকে এই কথা বলিও, তুমি ইহাতে অসন্তুষ্ট হইও না, কেননা খড়্‌গ যেমন এক জনকে তেমনি আর এক জনকেও গ্রাস করে; তুমি নগরের বিরুদ্ধে আরও সপরাক্রমে যুদ্ধ কর, নগর উচ্ছিন্ন কর; এইরূপে তাহাকে আশ্বাস দিবে। আর ঊরিয়ের স্ত্রী আপন স্বামী ঊরিয়ের মৃত্যু-সংবাদ পাইয়া স্বামীর জন্য শোক করিল। পরে শোক অতীত হইলে দায়ূদ লোক পাঠাইয়া তাহাকে আপন বাটীতে আনাইলেন, তাহাতে সে তাঁহার স্ত্রী হইল, ও তাঁহার জন্য পুত্র প্রসব করিল। কিন্তু দায়ূদের কৃত এই কর্ম্ম সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে মন্দ হইল। পরে সদাপ্রভু দায়ুদের নিকটে নাথনকে প্রেরণ করিলেন। আর তিনি তাঁহার নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন,—এক নগরে দুইটী লোক ছিল; তাহাদের মধ্যে এক জন ধনবান, আর এক জন দরিদ্র। ধনবানের অতি বিস্তর মেষাদি পাল ও গোপাল ছিল। কিন্তু সেই দরিদ্রের আর কিছুই ছিল না, কেবল একটী ক্ষুদ্র মেষবৎসা ছিল, সে তাহাকে কিনিয়া পুষিতেছিল; আর সেটী তাহার সঙ্গে ও তাহার সন্তানদের সঙ্গে থাকিয়া বাড়িয়া উঠিতেছিল; সে তাহারই খাদ্য খাইত, ও তাহারই পাত্রে পান করিত, আর তাহার বক্ষঃস্থলে শয়ন করিত, ও তাহার কন্যার মত ছিল। পরে ঐ ধনবানের গৃহে এক জন পথিক আসিল, তাহাতে বাটীতে আগত অতিথির জন্য পাক করণার্থে সে আপন মেষাদি পাল ও গোপাল হইতে কিছু লইতে কাতর হইল, কিন্তু সেই দরিদ্রের মেষবৎসাটী লইয়া, যে অতিথি আসিয়াছিল, তাহার জন্য তাহাই পাক করিল। তাহাতে দায়ূদ সেই ধনবানের প্রতি অতিশয় ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিলেন; তিনি নাথনকে কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যে ব্যক্তি সেই কর্ম্ম করিয়াছে, সে মৃত্যুর সন্তান; সে কিছু দয়া না করিয়া এ কর্ম্ম করিয়াছে, এই জন্য সেই মেষবৎসার চতুর্গুণ ফিরাইয়া দিবে। তখন নাথন দায়ূদকে কহিলেন, আপনিই সেই ব্যক্তি। ইস্রায়েলের ঈশ্বর, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তোমাকে ইস্রায়েলের উপরে রাজপদে অভিষেক করিয়াছি, এবং শৌলের হস্ত হইতে উদ্ধার করিয়াছি; আর তোমার প্রভুর বাটী তোমাকে দিয়াছি, ও তোমার প্রভুর স্ত্রীগণকে তোমার বক্ষঃস্থলে দিয়াছি, এবং ইস্রায়েলের ও যিহূদার কুল তোমাকে দিয়াছি; আর তাহা যদি অল্প হইত, তবে তোমাকে আরও অমুক অমুক বস্তু দিতাম। তুমি কেন সদাপ্রভুর বাক্য তুচ্ছ করিয়া, তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিয়াছ? তুমি হিত্তীয় ঊরিয়কে খড়্‌গ দ্বারা আঘাত করাইয়াছ ও তাহার স্ত্রীকে লইয়া আপনার স্ত্রী করিয়াছ, অম্মোন-সন্তানদের খড়্‌গ দ্বারা ঊরিয়কে মারিয়া ফেলিয়াছ। অতএব খড়্‌গ কখনও তোমার কুলকে ছাড়িয়া যাইবে না; কেননা তুমি আমাকে তুচ্ছ করিয়া হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রীকে লইয়া আপনার স্ত্রী করিয়াছ। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমার কুল হইতেই তোমার বিরুদ্ধে অমঙ্গল উৎপন্ন করিব, এবং তোমার সাক্ষাতে তোমার স্ত্রীগণকে লইয়া তোমার আত্মীয়কে দিব; তাহাতে সে এই সূর্য্যের সাক্ষাতে তোমার স্ত্রীগণের সহিত শয়ন করিবে। বস্তুতঃ তুমি গোপনে এই কর্ম্ম করিয়াছ, কিন্তু আমি সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে ও সূর্য্যের সাক্ষাতে এই কার্য্য করিব। তখন দায়ূদ নাথনকে কহিলেন, আমি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। নাথন দায়ূদকে কহিলেন, সদাপ্রভুও আপনার পাপ দূর করিলেন, আপনি মরিবেন না। কিন্তু এই কর্ম্ম দ্বারা আপনি সদাপ্রভুর শত্রুগণকে নিন্দা করিবার বড় সুযোগ দিয়াছেন, এই জন্য আপনার নবজাত পুত্রটী অবশ্য মরিবে। পরে নাথন আপন গৃহে প্রস্থান করিলেন। আর সদাপ্রভু ঊরিয়ের স্ত্রীর গর্ভজাত দায়ূদের পুত্রটীকে আঘাত করিলে সে অতিশয় পীড়িত হইল। পরে দায়ূদ বালকটীর জন্য ঈশ্বরের কাছে বিনতি করিলেন; আর দায়ূদ উপবাস করিলেন, ভিতরে প্রবেশ করিয়া সমস্ত রাত্রি ভূমিতে পড়িয়া রহিলেন। তখন তাঁহার বাটীর প্রাচীনেরা উঠিয়া তাঁহাকে ভূমি হইতে তুলিবার জন্য তাঁহার নিকটে গিয়া দাঁড়াইলেন, কিন্তু তিনি সম্মত হইলেন না, এবং তাঁহাদের সহিত ভোজনও করিলেন না। পরে সপ্তম দিবসে বালকটী মরিল; তাহাতে বালকটী মরিয়াছে, এই কথা দায়ূদকে বলিতে তাঁহার দাসগণ ভয় করিল, কেননা তাহারা কহিল, দেখ, বালকটী জীবিত থাকিতে আমরা তাঁহাকে বলিলেও তিনি আমাদের বাক্যে কর্ণপাত করেন নাই; এখন বালকটী মরিয়াছে, এ কথা কেমন করিয়া তাঁহাকে বলিব? বলিলে তিনি আপনার অনিষ্ট করিবেন। কিন্তু দাসেরা কাণাকাণি করিতেছে দেখিয়া দায়ূদ বুঝিলেন, বালকটী মরিয়া গিয়াছে; দায়ূদ আপনি দাসগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বালকটী কি মরিয়াছে? তাহারা কহিল, মরিয়াছে। তখন দায়ূদ ভূমি হইতে উঠিয়া স্নান, তৈলমর্দ্দন ও বস্ত্র পরিবর্ত্তন করিলেন, এবং সদাপ্রভুর গৃহে প্রবেশ করিয়া প্রণিপাত করিলেন; পরে আপন গৃহে আসিয়া আজ্ঞা করিলে তাহারা তাঁহার সম্মুখে খাদ্য দ্রব্য রাখিল; আর তিনি ভোজন করিলেন। তখন তাঁহার দাসগণ তাঁহাকে কহিল, আপনি এ কেমন কাজ করিলেন? বালকটী জীবিত থাকিতে আপনি তাহার জন্য উপবাস ও রোদন করিতেছিলেন, কিন্তু বালকটী মরিয়া গেলেই উঠিয়া ভোজন করিলেন। তিনি কহিলেন, বালকটী জীবিত থাকিতে আমি উপবাস ও রোদন করিতেছিলাম; কারণ ভাবিয়াছিলাম, কি জানি, সদাপ্রভু আমার প্রতি কৃপা করিলে বালকটী বাঁচিতে পারে। কিন্তু এখন সে মরিয়া গিয়াছে, তবে আমি কি জন্য উপবাস করিব? আমি কি তাহাকে ফিরাইয়া আনিতে পারি? আমি তাহার কাছে যাইব, কিন্তু সে আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে না। পরে দায়ূদ আপন স্ত্রী বৎশেবাকে সান্ত্বনা করিলেন, ও তাহার কাছে গমন করিয়া তাহার সহিত শয়ন করিলেন; এবং সে পুত্র প্রসব করিলে দায়ূদ তাহার নাম শলোমন রাখিলেন; আর সদাপ্রভু তাহাকে প্রেম করিলেন। আর তিনি নাথন ভাববাদীকে প্রেরণ করিলেন, আর তিনি সদাপ্রভুর জন্য তাহান নাম যিদীদীয় [সদাপ্রভুর প্রিয়] রাখিলেন। ইতিমধ্যে যোয়াব অম্মোন-সন্তানদের রব্বা নগরের প্রতিকূলে যুদ্ধ করিয়া রাজনগর হস্তগত করিলেন। তখন যোয়াব দায়ূদের নিকটে দূতগণকে প্রেরণ করিয়া কহিলেন, আমি রব্বার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া জলনগর হস্তগত করিয়াছি। এখন আপনি অবশিষ্ট লোকদিগকে একত্র করিয়া নগরের কাছে শিবির স্থাপন করুন, তাহা হস্তগত করুন, নতুবা কি জানি, আমি ঐ নগর হস্তগত করিলে তাহার উপরে আমারই নাম কীর্ত্তিত হইবে। তখন দায়ূদ সমস্ত লোককে একত্র করিলেন, ও রব্বাতে গিয়া তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া তাহা হস্তগত করিলেন। আর তিনি তথাকার রাজার মস্তক হইতে তাঁহার মুকুট লইলেন; তাহাতে এক তালন্ত পরিমাণ স্বর্ণ ও মণি ছিল; আর তাহা দায়ূদের মস্তকে অর্পিত হইল; এবং তিনি ঐ নগর হইতে অতি প্রচুর লুটদ্রব্য বাহির করিয়া আনিলেন। আর দায়ূদ তথাকার লোকদিগকে বাহির করিয়া আনিয়া করাতের, লৌহের মইর ও লৌহের কুড়ালির মুখে রাখিলেন, এবং ইটের পাঁজার মধ্য দিয়া গমন করাইলেন। তিনি অম্মোন-সন্তানদের সমস্ত নগরের প্রতি এইরূপ করিলেন। পরে দায়ূদ ও সমস্ত লোক যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন। তৎপরে এই ঘটনা হইল; দায়ূদের পুত্র অবশালোমের তামর নামে সুন্দরী এক সহোদরা ছিল; দায়ূদের পুত্র অম্নোন তাহাকে ভালবাসিল। অম্নোন এমন আকুল হইল যে, আপন ভগিনী তামরের জন্য পীড়িত হইয়া পড়িল, কেননা সে কুমারী ছিল, এবং অম্নোন তাহার প্রতি কিছু করা দুঃসাধ্য বোধ করিল। কিন্তু দায়ূদের ভ্রাতা শিমিয়ের পুত্র যোনাদব নামে অম্মোনের এক বন্ধু ছিল; সেই যোনাদব অতিশয় চতুর ছিল। সে অম্নোনকে কহিল, রাজপুত্র! তুমি দিন দিন এমন কৃশ হইতেছ কেন? আমাকে কি বলিবে না? অম্নোন তাহাকে কহিল, আমি আপন ভ্রাতা অবশালোমের সহোদরা তামরকে ভালবাসি। যোনাদব কহিল, তুমি আপন খট্টার উপরে শয়ন করিয়া পীড়ার ভাণ কর; পরে তোমার পিতা তোমাকে দেখিতে আসিলে তাঁহাকে বলিও, অনুগ্রহ করিয়া আমার ভগিনী তামরকে আমার নিকটে আসিতে আজ্ঞা করুন, সে আমাকে রুটী খাইতে দিউক, এবং আমি দেখিয়া যেন তাহার হস্তে ভোজন করি, এই জন্য আমার সাক্ষাতেই খাদ্য পাক করুক। পরে অম্নোন পীড়ার ভাণ করিয়া পড়িয়া রহিল; তাহাতে রাজা তাহাকে দেখিতে আসিলে অম্নোন রাজাকে কহিল, বিনয় করি, আমার ভগিনী তামর আসিয়া আমার সাক্ষাতে খান দুই পিষ্টক প্রস্তুত করিয়া দিউক, আমি তাহার হস্তে ভোজন করিব। তখন দায়ূদ তামরের গৃহে লোক পাঠাইয়া কহিলেন, তুমি এক বার তোমার ভ্রাতা অম্নোনের গৃহে গিয়া তাহাকে কিছু খাদ্য প্রস্তুত করিয়া দেও। অতএব তামর আপন ভ্রাতা অম্মোনের গৃহে গেল; তখন সে শুইয়াছিল। পরে তামর সূজী লইয়া ছানিয়া তাহার সাক্ষাতে পিষ্টক প্রস্তুত করিয়া পাক করিল; আর তাওয়া লইয়া গিয়া তাহার সম্মুখে ঢালিয়া দিল, কিন্তু সে ভোজনে অসম্মত হইল। অম্নোন কহিল, আমার নিকট হইতে সকল লোক বাহিরে যাউক। তাহাতে সকলে তাহার নিকট হইতে বাহিরে গেল। তখন অম্নোন তামরকে কহিল, খাদ্য সামগ্রী এই কুঠরীর মধ্যে আন; আমি তোমার হস্তে ভোজন করিব। তাহাতে তামর আপনার কৃত ঐ পিষ্টক লইয়া কুঠরীর মধ্যে আপন ভ্রাতা অম্নোনের কাছে গেল। পরে সে তাহাকে ভোজন করাইতে তাহার নিকটে তাহা আনিলে অম্নোন তাহাকে ধরিয়া কহিল, হে আমার ভগিনি, আইস, আমার সহিত শয়ন কর। সে উত্তর করিল, হে আমার ভ্রাতা, না, না, আমাকে মানভ্রষ্ট করিও না, ইস্রায়েলের মধ্যে এমন কার্য্য করা কর্ত্তব্য নয়; তুমি এ মূঢ়তার কর্ম্ম করিও না। আমি কোথায় আমার কলঙ্ক বহন করিব? আর তুমিও ইস্রায়েলের মধ্যে এক জন মূঢ়ের সমান হইবে। অতএব বিনয় করি, বরং রাজার কাছে বল, তিনি তোমার হাতে আমাকে দিতে অসম্মত হইবেন না। কিন্তু অম্নোন তাহার কথা শুনিতে চাহিল না; আপনি তাহা অপেক্ষা বলবান হওয়াতে তাহাকে মানভ্রষ্ট করিল, তাহার সহিত শয়ন করিল। পরে অম্নোন তাহাকে অতিশয় ঘৃণা করিতে লাগিল; বস্তুতঃ সে তাহাকে যেরূপ প্রেম করিয়াছিল, তদপেক্ষা অধিক ঘৃণা করিতে লাগিল; আর অম্নোন তাহাকে কহিল, গা তুল, চলিয়া যাও। সে তাহাকে কহিল, তাহা করিও না, কেননা আমার সঙ্গে কৃত তোমার প্রথম দোষ অপেক্ষা আমাকে বাহির করিয়া দেওয়া, এই মহাদোষ আরও মন্দ। কিন্তু অম্নোন তাহার কথা শুনিতে চাহিল না। সে আপন পরিচারক যুবককে ডাকিয়া কহিল, ইহাকে আমার নিকট হইতে বাহির করিয়া দেও, পরে দুয়ারে হুড়কা লাগাইয়া দেও। সেই কন্যার গায়ে লম্বা কাপড় ছিল, কেননা অনূঢ়া রাজকুমারীরা ঐ প্রকার বস্ত্র পরিধান করিত। অম্নোনের পরিচারক তাহাকে বাহির করিয়া দিয়া পরে দ্বারে হুড়কা লাগাইয়া দিল। তখন তামর আপন মস্তকে ভস্ম দিল, এবং আপনার গায়ের ঐ লম্বা কাপড় ছিঁড়িয়া মাথায় হাত দিয়া ক্রন্দন করিতে করিতে চলিয়া গেল। আর তাহার সহোদর অবশালোম তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তোমার ভ্রাতা অম্নোন কি তোমার সহিত সংসর্গ করিয়াছে? কিন্তু এখন হে আমার ভগিনি, চুপ থাক, সে তোমার ভ্রাতা; তুমি এ বিষয়ে বিমনা হইও না। তদবধি তামর বিষণ্ণ ভাবে আপন সহোদর অবশালোমের গৃহে থাকিল। কিন্তু দায়ূদ রাজা এই সকল কথা শুনিয়া অতিশয় ক্রুদ্ধ হইলেন। আর অবশালোম অম্নোনের কাছে ভাল মন্দ কিছুই বলিল না, কেননা তাহার সহোদরা তামরকে সে মানভ্রষ্ট করাতে অবশালোম অম্নোনকে ঘৃণা করিল। সম্পূর্ণ দুই বৎসর পরে ইফ্রয়িমের নিকটস্থ বাল্‌-হাৎসোরে অবশালোমের মেষগুলির লোমকাটা হইল; এবং অবশালোম সমস্ত রাজপুত্রকে নিমন্ত্রণ করিল। আর অবশালোম রাজার নিকটে আসিয়া কহিল, দেখুন, আপনার এই দাসের মেষগুলির লোমকাটা হইতেছে; অতএব বিনয় করি, মহারাজ ও রাজার দাসগণ আপনার দাসের সঙ্গে আগমন করুন। রাজা অবশালোমকে কহিলেন, হে আমার পুত্র, তাহা নয়, আমরা সকলে যাইব না, পাছে তোমার ভারস্বরূপ হই। তথাপি সে পীড়াপীড়ি করিল, তবু রাজা যাইতে সম্মত হইলেন না, কিন্তু তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। তখন অবশালোম কহিল, যদ্যপি তাহা না হয়, তবে আমার ভ্রাতা অম্নোনকে আমাদের সঙ্গে যাইতে দিউন; রাজা তাহাকে কহিলেন, সে কেন তোমার সঙ্গে যাইবে? কিন্তু অবশালোম তাঁহাকে পীড়াপীড়ি করিলে রাজা অম্নোনকে ও তাহার সহিত সমস্ত রাজপুত্রকে যাইতে দিলেন। পরে অবশালোম আপন চাকরদিগকে এই আজ্ঞা দিল, দেখিও, দ্রাক্ষারসে অম্নোনের চিত্ত প্রফুল্ল হইলে যখন আমি তোমাদিগকে বলিব, অম্নোনকে মার, তখন তোমরা তাহাকে বধ করিও, ভীত হইও না। আমি কি তোমাদিগকে আজ্ঞা দিই নাই? তোমরা সাহস কর, বীর্য্যবান হও। পরে অবশালোমের চাকরেরা অম্নোনের প্রতি অবশালোমের আজ্ঞামত কর্ম্ম করিল। তখন রাজপুত্রগণ সকলে উঠিয়া আপন আপন খচরে চড়িয়া পলায়ন করিল। তাহারা পথে ছিল, এমন সময়ে দায়ূদের নিকটে এই সংবাদ পৌঁছিল, অবশালোম সমস্ত রাজপুত্রকে বধ করিয়াছে, তাহাদের এক জনও অবশিষ্ট নাই। তখন রাজা উঠিয়া আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া ভূমিতে লম্বমান হইয়া পড়িলেন, এবং তাঁহার দাসেরা সকলে আপন আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া তাঁহার নিকটে দাঁড়াইয়া রহিল। তখন দায়ূদের ভ্রাতা শিমিয়ের পুত্র যোনাদব কহিল, আমার প্রভু মনে করিবেন না যে, সমস্ত রাজকুমার হত হইয়াছে; কেবল অম্নোন মরিয়াছে, কেননা যে দিন সে অবশালোমের সহোদরা তামরকে মানভ্রষ্ট করিয়াছে, সেই দিন হইতে অবশালোম কর্ত্তৃক ইহা স্থির হইয়াছিল। অতএব সমস্ত রাজপুত্র মরিয়াছে ভাবিয়া আমার প্রভু মহারাজ শোক করিবেন না; কেবল অম্নোন মরিয়াছে। কিন্তু অবশালোম পলায়ন করিয়াছিল। আর যুবক প্রহরী চক্ষু তুলিয়া নিরীক্ষণ করিল, আর দেখ, পর্ব্বতের পার্শ্ব হইতে তাহার পশ্চাৎ দিকের পথ দিয়া অনেক লোক আসিতেছে। আর যোনাদব রাজাকে কহিল, দেখুন, রাজপুত্রগণ আসিতেছে, আপনার দাস যাহা বলিয়াছিল, তাহাই ঠিক হইল। তাহার কথা শেষ হইবামাত্র, দেখ, রাজপুত্রগণ উপস্থিত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিল, এবং রাজা ও তাঁহার সমস্ত দাসও অতিশয় রোদন করিলেন। কিন্তু অবশালোম পলাইয়া গশূরের রাজা অম্মীহূরের পুত্র তল্‌ময়ের নিকটে গেল, আর দায়ূদ প্রতিদিন আপন পুত্রের জন্য শোক করিতে লাগিলেন। অবশালোম পলাইয়া গশূরে গিয়া সে স্থানে তিন বৎসর প্রবাস করিল। পরে দায়ূদ রাজা অবশালোমের কাছে যাইবার আকাঙ্ক্ষা করিলেন; কেননা অম্নোন মরিয়া গিয়াছে জানিয়া তিনি তাহার বিষয়ে সান্ত্বনা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। পরে সরূয়ার পুত্র যোয়াব রাজার অন্তঃকরণ অবশালোমের বিষয়ে ব্যগ্র দেখিয়া, তকোয়ে দূত পাঠাইয়া তথা হইতে এক চতুরা স্ত্রীকে আনাইয়া তাহাকে কহিলেন, তুমি এক বার ছল করিয়া শোকান্বিতা হও, এবং শোকসূচক বস্ত্র পরিধান কর; গাত্রে তৈলমর্দ্দন করিও না, কিন্তু মৃতের জন্য বহুকাল শোককারিণী স্ত্রীর ন্যায় হও; আর রাজার নিকটে গিয়া তাঁহাকে এই প্রকার কথা বল। আর কি বলিতে হইবে, যোয়াব তাহাকে শিখাইয়া দিলেন। পরে তকোয়ের সেই স্ত্রীলোকটী রাজার কাছে কথা বলিতে গিয়া উবুড় হইয়া ভূমিতে পড়িয়া প্রণিপাতপূর্ব্বক কহিল, মহারাজ, রক্ষা করুন। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার কি হইয়াছে? স্ত্রীলোকটী কহিল, সত্য বলিতেছি, আমি বিধবা; আমার স্বামী মরিয়াছেন। আর আপনার দাসীর দুইটী পুত্র ছিল, তাহারা ক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধ করিল; তখন তাহাদিগকে ছাড়াইয়া দিবার কেহ না থাকাতে এক জন অন্য জনকে আঘাত করিয়া মারিয়া ফেলিল। আর দেখুন, সমুদয় গোষ্ঠী আপনার দাসীর বিরুদ্ধে উঠিয়া বলিতেছে, তুমি সেই ভ্রাতৃঘাতককে সমর্পণ কর, আমরা তাহার নিহত ভ্রাতার প্রাণের পরিবর্ত্তে তাহার প্রাণ লইব, আমরা উত্তরাধিকারীকেও উচ্ছিন্ন করিব। এই প্রকারে তাহারা আমার অবশিষ্ট অঙ্গারখানি নির্ব্বাণ করিতে চাহে, এবং ভূমণ্ডলে আমার স্বামীর নামাদি কিছু অবশিষ্ট রাখিতে চাহে না। তখন রাজা স্ত্রীলোকটীকে কহিলেন, তুমি ঘরে যাও, আমি তোমার বিষয়ে আজ্ঞা দিব। পরে ঐ তকোয়ীয়া স্ত্রী রাজাকে কহিল, হে আমার প্রভু! হে মহারাজ! আমারই প্রতি ও আমার পিতৃকুলের প্রতি এই অপরাধ বর্ত্তুক; মহারাজ ও তাঁহার সিংহাসন নির্দ্দোষ হউন। রাজা কহিলেন, যে কেহ তোমাকে কিছু বলে, তাহাকে আমার নিকটে আন, সে তোমাকে আর স্পর্শ করিবে না। পরে সে স্ত্রী কহিল, নিবেদন করি, মহারাজ আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে স্মরণ করুন, যেন রক্তের প্রতিশোধদাতা আর বিনাশ না করে; নতুবা তাহারা আমার পুত্রকে বিনষ্ট করিবে। রাজা কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তোমার পুত্রের একটী কেশও ভূমিতে পড়িবে না। তখন সে স্ত্রী কহিল, নিবেদন করি, আপনার দাসীকে আমার প্রভু মহারাজের কাছে একটী কথা বলিতে দিউন। রাজা কহিলেন, বল। সে স্ত্রী কহিল, তবে ঈশ্বরের প্রজার বিপক্ষে আপনি কেন সেইরূপ সঙ্কল্প করিতেছেন? ফলে এই কথা বলাতে মহারাজ এক প্রকার দোষী হইয়া পড়িলেন, যেহেতু মহারাজ আপনার নির্ব্বাসিত [সন্তানটী] ফিরাইয়া আনিতেছেন না। আমরা ত নিশ্চয়ই মরিব, এবং যাহা একবার ভূমিতে ঢালিয়া ফেলিলে পরে তুলিয়া লওয়া যায় না, এমন জলের ন্যায় হইব; পরন্তু ঈশ্বরও প্রাণ হরণ করেন না, কিন্তু নির্ব্বাসিত লোক যাহাতে তাঁহা হইতে নির্ব্বাসিত না থাকে, তাহার উপায় চিন্তা করেন। এখন আমি যে আপন প্রভু মহারাজের কাছে নিবেদন করিতে আসিলাম, তাহার কারণ এই; লোকেরা আমার ভয় জন্মাইয়াছিল; তাই আপনার দাসী কহিল, আমি মহারাজের কাছে নিবেদন করিব; হইতে পারে, মহারাজ আপন দাসীর নিবেদনানুসারে কার্য্য করিবেন। আমার পুত্রের সহিত আমাকে ঈশ্বরের অধিকার হইতে উচ্ছিন্ন করিতে যে চেষ্টা করে, তাহার হস্ত হইতে আপনার দাসীকে উদ্ধার করিতে মহারাজ অবশ্য মনোযোগ করিবেন। আপনার দাসী কহিল, আমার প্রভু মহারাজের বাক্য শান্তিকর হউক, কেননা ভাল মন্দ বিবেচনা করিতে আমার প্রভু মহারাজ ঈশ্বরের দূতের তুল্য; আর আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনার সহবর্ত্তী থাকুন। তখন রাজা উত্তর করিয়া স্ত্রীলোকটীকে কহিলেন, বিনয় করি, তোমাকে যাহা জিজ্ঞাসা করিব, তাহা আমা হইতে গোপন করিও না। সে স্ত্রী কহিল, আমার প্রভু মহারাজ বলুন। রাজা কহিলেন, এই সমস্ত ব্যাপারে তোমার সহিত কি যোয়াবের হাত আছে? সে স্ত্রী উত্তর করিয়া কহিল, হে আমার প্রভু, মহারাজ, আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমার প্রভু মহারাজ যাহা বলিয়াছেন, তাহার দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার যো নাই; আপনার দাস যোয়াবই আমাকে আদেশ করিয়াছেন, এই সমস্ত কথা আপনার দাসীকে শিখাইয়া দিয়াছেন। এই বিষয়ের নূতন আকার দেখাইবার জন্য আপনার দাস যোয়াব এই কর্ম্ম করিয়াছেন; যাহা হউক, আমার প্রভু পৃথিবীস্থ সমস্ত বিষয় জানিতে ঈশ্বরের দূতের ন্যায় বুদ্ধিমান। পরে রাজা যোয়াবকে কহিলেন, এখন দেখ, আমিই এ কার্য্য করিয়াছি; অতএব যাও, সেই যুবক, অবশালোমকে আবার আন। তাহাতে যোয়াব উবুড় হইয়া ভূমিতে পড়িয়া প্রতিপাত করিলেন, এবং রাজার ধন্যবাদ করিলেন, আর যোয়াব কহিলেন, হে আমার প্রভু, মহারাজ, আপনি আপনার দাসের নিবেদন সিদ্ধ করিলেন, ইহাতে আমি যে আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইলাম, তাহা অদ্য আপনার এই দাস জ্ঞাত হইল। পরে যোয়াব উঠিয়া গশূরে গিয়া অবশালোমকে যিরূশালেমে আনিলেন। পরে রাজা কহিলেন, সে ফিরিয়া আপন বাটীতে যাউক, সে আমার মুখ না দেখুন। তাহাতে অবশালোম আপন বাটীতে ফিরিয়া গেল, রাজার মুখ দেখিতে পাইল না। সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্যে অবশালোমের তুল্য সৌন্দর্য্যে অতি প্রশংসনীয় কেহ ছিল না; তাহার পায়ের তালু হইতে মাথার তালু পর্য্যন্ত নির্দ্দোষ ছিল। আর তাহার মস্তকের কেশ ভারী বোধ হইলে সে তাহা ছেদন করিত; বৎসরান্তর ছেদন করিত; মস্তক মুণ্ডন-সময়ে মস্তকের কেশ তৌল করিত; তাহাতে রাজপরিমাণ অনুসারে তাহা দুই শত শেকল পরিমিত হইত। অবশালোমের তিনটী পুত্র ও একটী কন্যা জন্মিয়াছিল, কন্যাটীর নাম তামর; সে দেখিতে সুন্দরী ছিল। আর অবশালোম সম্পূর্ণ দুই বৎসর যিরূশালেমে বাস করিল, কিন্তু রাজার মুখ দেখিতে পাইল না। পরে অবশালোম রাজার নিকটে পাঠাইবার জন্য যোয়াবকে ডাকাইল, কিন্তু তিনি তাহার নিকটে আসিতে সম্মত হইলেন না; পরে দ্বিতীয় বার লোক পাঠাইল, তখনও তিনি আসিতে সম্মত হইলেন না। অতএব সে আপন দাসদিগকে কহিল, দেখ, আমার ভূমির পার্শ্বে যোয়াবের ক্ষেত্র আছে, সে স্থানে তাহার যে যব আছে, তোমরা গিয়া তাহাতে আগুন লাগাইয়া দেও। তাহাতে অবশালোমের দাসগণ সেই ক্ষেত্রে আগুন লাগাইয়া দিল। তখন যোয়াব উঠিয়া অবশালোমের নিকটে তাহার গৃহে আসিয়া তাহাকে কহিলেন, তোমার দাসগণ আমার ক্ষেত্রে কেন আগুন দিয়াছে? অবশালোম যোয়াবকে কহিল, দেখ, আমি তোমার কাছে লোক পাঠাইয়া এখানে আসিতে বলিয়াছিলাম, ফলতঃ রাজার কাছে এই কথা নিবেদন করিবার জন্য তোমাকে পাঠাইব বলিয়াছিলাম যে, ‘আমি গশূর হইতে কেন আসিলাম? সেই স্থানে থাকিলে আমার আরও ভাল হইত। এখন আমাকে রাজার মুখ দেখিতে দিউন, আর যদি আমাতে অপরাধ থাকে, তবে তিনি আমাকে বধ করুন।’ পরে যোয়াব রাজার নিকটে গিয়া তাঁহাকে সেই কথা জ্ঞাত করিলে রাজা অবশালোমকে ডাকাইলেন; তাহাতে সে রাজার নিকটে গিয়া রাজার সম্মুখে উবুড় হইয়া ভূমিতে পড়িয়া প্রণিপাত করিল, আর রাজা অবশালোমকে চুম্বন করিলেন। তৎপরে অবশালোম আপনার নিমিত্ত রথ, অশ্ব ও আপনার অগ্রে অগ্রে দৌড়িবার জন্য পঞ্চাশ জন লোক রাখিল। আর অবশালোম প্রত্যূষে উঠিয়া রাজদ্বারের পথিপার্শ্বে দাঁড়াইত; এবং যে কেহ বিচারার্থে রাজার নিকটে বিবাদ উপস্থিত করিতে উদ্যত হইত, অবশালোম তাহাকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিত, তুমি কোন্‌ নগরের লোক? সে বলিত, আপনার দাস আমি ইস্রায়েলের অমুক বংশের লোক। তখন অবশালোম তাহাকে বলিত, দেখ, তোমার বিবাদের কথা ভাল ও যথার্থ; কিন্তু তোমার কথা শ্রবণ করিতে রাজার কোন লোক নাই। অবশালোম আরও কহিত, হায়, আমাকে কেন দেশের বিচারকর্ত্তৃপদে নিযুক্ত করা হয় নাই? তাহা করিলে যে কোন ব্যক্তির বিবাদ বা বিচারের কোন কথা থাকে, সে আমার নিকটে আসিলে আমি তাহার বিষয়ে ন্যায্য বিচার করিতাম। আর যে কেহ তাহার কাছে প্রণিপাত করিতে তাহার নিকটে আসিত, সে তাহাকে হস্ত প্রসারণপূর্ব্বক ধরিয়া চুম্বন করিত। ইস্রায়েলের যত লোক বিচারার্থে রাজার নিকটে যাইত, সকলের প্রতি অবশালোম এইরূপ ব্যবহার করিত। এই প্রকারে অবশালোম ইস্রায়েল লোকদের চিত্ত হরণ করিল। পরে চারি বৎসর অতীত হইলে অবশালোম রাজাকে কহিল, বিনয় করি, আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে যাহা মানত করিয়াছি, তাহা পরিশোধ করিতে আমাকে হিব্রোণে যাইতে দিউন। কেননা আপনার দাস আমি যখন অরামস্থ গশূরে অবস্থিতি করিতেছিলাম, তখন মানত করিয়া বলিয়াছিলাম, যদি সদাপ্রভু আমাকে যিরূশালেমে ফিরাইয়া আনেন, তবে আমি সদাপ্রভুর সেবা করিব। রাজা কহিলেন, কুশলে যাও। তখন সে উঠিয়া হিব্রোণে গমন করিল। কিন্তু অবশালোম ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের কাছে চর পাঠাইয়া বলিল, তূরীধ্বনি শুনিবামাত্র তোমরা বলিও, অবশালোম হিব্রোণে রাজা হইলেন। আর যিরূশালেম হইতে দুই শত লোক অবশালোমের সহিত গেল; ইহারা আহূত হইয়াছিল, এবং সরল মনে গেল, কিছুই জ্ঞাত ছিল না। পরে অবশালোম বলিদান কালে দায়ূদের মন্ত্রী গীলোনীয় অহীথোফলকে তাহার নগর হইতে, গীলো হইতে, ডাকিয়া পাঠাইল। আর চক্রান্ত দৃঢ় হইল, কারণ অবশালোমের পক্ষীয় লোক উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। পরে এক জন দায়ূদের কাছে আসিয়া এই সংবাদ দিল, ইস্রায়েল লোকদের অন্তঃকরণ অবশালোমের অনুগামী হইয়াছে। তখন দায়ূদের যে সকল দাস যিরূশালেমে তাঁহার নিকটে ছিল, তাহাদিগকে তিনি কহিলেন, আইস, আমরা উঠিয়া পলায়ন করি, কেননা অবশালোম হইতে আমাদের কাহারও বাঁচিবার যো নাই; শীঘ্র করিয়া চল, নতুবা সে সত্বর আমাদের সঙ্গ ধরিয়া আমাদিগকে বিপদ্‌গ্রস্ত করিবে, ও খড়্‌গধারে নগরে আঘাত করিবে। তাহাতে রাজার দাসগণ রাজাকে কহিল, দেখুন, আমাদের প্রভু মহারাজের যাহা ইচ্ছা হইবে, তাহাই করিতে আপনার দাসেরা প্রস্তুত আছে। পরে রাজা প্রস্থান করিলেন; এবং তাঁহার সমস্ত পরিজন তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে চলিল; আর রাজা বাটী রক্ষার্থে দশটী উপপত্নীকে রাখিয়া গেলেন। রাজা প্রস্থান করিলেন, ও সমস্ত লোক তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে চলিল, তাঁহারা বৈৎমির্হকে স্থগিত হইলেন। পরে তাঁহার সকল দাস তাঁহার পার্শ্বে পার্শ্বে অগ্রসর হইল, এবং করেথীয় ও পলেথীয় সমস্ত লোক, আর গাতীয় সমস্ত লোক, তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে গাৎ হইতে আগত ছয় শত লোক, রাজার সম্মুখে অগ্রসর হইল। তখন রাজা গাতীয় ইত্তয়কে কহিলেন, আমাদের সঙ্গে তুমিও কেন যাইবে? তুমি ফিরিয়া গিয়া রাজার সহিত বাস কর, কেননা তুমি বিদেশী এবং নির্ব্বাসিত লোক, তুমি স্বস্থানে ফিরিয়া যাও। তুমি কল্যমাত্র আসিয়াছ, অদ্য আমি কি তোমাকে আমাদের সহিত ভ্রমণ করাইব? আমি যেখানে পারি, সেখানে যাইব; তুমি ফিরিয়া যাও; আপন ভ্রাতৃগণকেও লইয়া যাও; দয়া ও সত্য তোমার সহবর্ত্তী হউক। ইত্তয় রাজাকে উত্তর করিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এবং আমার প্রভু মহারাজের প্রাণের দিব্য, জীবনের জন্য হউক, কিম্বা মরণের জন্য হউক, আমার প্রভু মহারাজ যে স্থানে থাকিবেন, আপনার দাসও সেই স্থানে অবশ্য থাকিবে। দায়ূদ ইত্তয়কে কহিলেন, তবে চল, অগ্রসর হও। তখন গাতীয় ইত্তয়, তাঁহার সমস্ত লোক ও সঙ্গী সমস্ত বালকবালিকা অগ্রসর হইয়া গেল। দেশশুদ্ধ লোক উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিল, ও সমস্ত লোক অগ্রসর হইল। রাজাও কিদ্রোণ স্রোত পার হইলেন, এবং সমস্ত লোক প্রান্তরের পথ ধরিয়া অগ্রসর হইল। আর দেখ, সাদোকও আসিলেন, এবং তাঁহার সঙ্গে লেবীয়েরা সকলে আসিল, তাহারা ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুক বহন করিতেছিল; পরে নগর হইতে সমস্ত লোকেরা বাহির না হওয়া পর্য্যন্ত তাহারা ঈশ্বরের সিন্দুক নামাইয়া রাখিল, এবং অবিয়াথর উঠিয়া গেলেন। পরে রাজা সাদোককে কহিলেন, তুমি ঈশ্বরের সিন্দুক পুনরায় নগরে লইয়া যাও; যদি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে আমি অনুগ্রহ পাই, তবে তিনি আমাকে পুনর্ব্বার আনিয়া তাহা ও তাঁহার নিবাস দেখাইবেন। কিন্তু যদি তিনি এই কথা বলেন, তোমাতে আমার সন্তোষ নাই, তবে দেখ, এই আমি, তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা ভাল, আমার প্রতি তাহাই করুন। রাজা সাদোক যাজককে আরও কহিলেন, তুমি দেখিতেছ? তুমি কুশলে নগরে ফিরিয়া যাও, এবং তোমার পুত্র অহীমাস ও অবিয়াথরের পুত্র যোনাথন, তোমাদের এই দুই পুত্র তোমাদের সহিত যাউক। দেখ, যাবৎ তোমাদের নিকট হইতে আমার কাছে ঠিক সমাচার না আইসে, তাবৎ আমি প্রান্তরের পারঘাটায় থাকিয়া বিলম্ব করিব। অতএব সাদোক ও অবিয়াথর ঈশ্বরের সিন্দুক পুনরায় যিরূশালেমে লইয়া গিয়া সেই স্থানে রহিলেন। পরে দায়ূদ জৈতুন পর্ব্বতের ঊর্দ্ধগামী পথ দিয়া উঠিলেন; তিনি উঠিবার সময়ে ক্রন্দন করিতে করিতে চলিলেন; তাঁহার মুখ আচ্ছাদিত ও পদ অনাবৃত ছিল, এবং তাঁহার সঙ্গী লোকেরা প্রত্যেকে আপন আপন মুখ আচ্ছাদন করিয়াছিল, এবং উঠিবার সময়ে রোদন করিতে করিতে চলিল। পরে কেহ দায়ূদকে কহিল, অবশালোমের সঙ্গে চক্রান্তকারীদের মধ্যে অহীথোফলও আছে; তখন দায়ূদ কহিলেন, হে সদাপ্রভু, অনুগ্রহ করিয়া অহীথোফলের মন্ত্রণাকে মূর্খতায় পরিণত কর। পরে যে স্থানে লোকেরা ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রণিপাত করিত, দায়ূদ পর্ব্বতের সেই শিখরে উপস্থিত হইলে দেখ, অর্কীয় হূশয় ছেঁড়া আঙ্গরাখা পরিয়া মাথায় মৃত্তিকা দিয়া দায়ূদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন। দায়ূদ তাঁহাকে কহিলেন, তুমি যদি আমার সহিত অগ্রসর হও, তবে আমাকে ভারগ্রস্ত করিবে। কিন্তু যদি নগরে ফিরিয়া গিয়া অবশালোমকে বল, হে রাজন্‌, আমি আপনার দাস হইব, ইতিপূর্ব্বে যেমন আপনার পিতার দাস ছিলাম, তেমনি এখন আপনার দাস হইব, তাহা হইলে তুমি আমার জন্য অহীথোফলের মন্ত্রণা ব্যর্থ করিতে পারিবে। সে স্থানে সাদোক ও অবিয়াথর, এই দুই যাজক কি তোমার সহিত থাকিবেন না? অতএব তুমি রাজবাটীর যে কোন কথা শুনিবে, তাহা সাদোক ও অবিয়াথর যাজককে বলিবে। দেখ, সে স্থানে তাঁহাদের সহিত তাঁহাদের দুই পুত্র, সাদোকের পুত্র অহীমাস ও অবিয়াথরের পুত্র যোনাথন, আছে; তোমরা যে কোন কথা শুনিবে, তাহাদের দ্বারা আমার নিকটে তাহার সমাচার পাঠাইয়া দিবে। অতএব দায়ূদের মিত্র হূশয় নগরে গেলেন; আর অবশালোম যিরূশালেমে প্রবেশ করিলেন। পরে দায়ূদ পর্ব্বত-শিখর পশ্চাতে ফেলিয়া কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইলে দেখ, মফীবোশতের দাস সীবঃ সজ্জিত দুই গর্দ্দভ সঙ্গে করিয়া তাঁহার সহিত মিলিল। সেই গর্দ্দভদের পৃষ্ঠে দুই শত রুটী ও এক শত থলুয়া শুষ্ক দ্রাক্ষাফল ও এক শত চাপ গ্রীষ্মকালের ফল ও এক কুপা দ্রাক্ষারস ছিল। রাজা সীবঃকে কহিলেন, তোমার এ সকলের অভিপ্রায় কি? সীবঃ কহিল, এই দুই গর্দ্দভ রাজপরিজনের বাহন হইবে, আর এই রুটী ও ফল যুবকদের আহারীয় এবং দ্রাক্ষারস প্রান্তরে ক্লান্ত লোকদের পানীয় হইবে। পরে রাজা কহিলেন, তোমার কর্ত্তার পুত্র কোথায়? সীবঃ রাজাকে কহিল, দেখুন, তিনি যিরূশালেমে অবস্থিতি করিতেছেন, কেননা তিনি বলিলেন, ইস্রায়েলের কুল অদ্য আমার পৈতৃক রাজ্য আমাকে ফিরাইয়া দিবে। রাজা সীবঃকে কহিলেন, দেখ, মফীবোশতের সর্ব্বস্ব তোমার। সীবঃ কহিল, হে আমার প্রভু মহারাজ, প্রণিপাত করি; বিনয় করি, যেন আমি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাই। পরে দায়ূদ রাজা বহুরীমে উপস্থিত হইলে দেখ, শৌলকুলের গোষ্ঠীভুক্ত গেরার পুত্র শিমিয়ি নামে এক ব্যক্তি তথা হইতে বাহির হইয়া আসিতে আসিতে শাপ দিল। আর সে দায়ূদের ও দায়ূদ রাজার সমস্ত দাসদের দিকে প্রস্তর নিক্ষেপ করিল; তখন সমস্ত লোক ও সমস্ত বীর তাঁহার দক্ষিণে ও বামে ছিল। শিমিয়ি শাপ দিতে দিতে এই কথা কহিল, যা, যা, তুই রক্তপাতী, তুই পাষণ্ড। তুই যাহার পদে রাজত্ব করিয়াছিস্‌, সেই শৌলের কুলের সমস্ত রক্তপাতের প্রতিফল সদাপ্রভু তোকে দিতেছেন, এবং সদাপ্রভু তোর পুত্র অবশালোমের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিয়াছেন; দেখ্‌, তুই নিজ দুষ্টতায় আট্‌কা পড়িয়াছিস্‌, কেননা তুই রক্তপাতী। তখন সরূয়ার পুত্র অবীশয় রাজাকে কহিলেন, ঐ মৃত কুকুর কেন আমার প্রভু মহারাজকে শাপ দেয়? আপনি অনুমতি করিলে আমি পার হইয়া গিয়া উহার মাথা কাটিয়া ফেলি। কিন্তু রাজা কহিলেন, হে সরূয়ার পুত্রগণ, তোমাদের সহিত আমার বিষয় কি? ও যখন শাপ দেয়, এবং সদাপ্রভু যখন উহাকে বলিয়া দেন, দায়ূদকে শাপ দেও, তখন কে বলিবে, এমন কর্ম্ম কেন করিতেছ? দায়ূদ অবীশয়কে ও আপনার সমস্ত দাসকে আরও কহিলেন, দেখ, আমার ঔরসজাত পুত্র আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করিতেছে, তবে ঐ বিন্যামীনীয় কি না করিবে? উহাকে থাকিতে দেও; ও শাপ দিউক, কেননা সদাপ্রভু উহাকে অনুমতি দিয়াছেন। হয় ত সদাপ্রভু আমার উপরে কৃত অন্যায়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবেন, এবং অদ্য আমাকে দত্ত শাপের পরিবর্ত্তে সদাপ্রভু আমার মঙ্গল করিবেন। এইরূপে দায়ূদ ও তাঁহার লোকেরা পথ দিয়া যাইতে লাগিলেন, আর শিমিয়ি তাঁহার আড়পারে পর্ব্বতের পার্শ্ব দিয়া চলিতে চলিতে শাপ দিতে লাগিল, এবং আড়পার হইতে প্রস্তর নিক্ষেপ করিল ও ধূলা ছড়াইয়া দিল। পরে রাজা ও তাঁহার সঙ্গীরা সকলে অয়েফীমে [শ্রান্তদের স্থানে] আসিলেন, আর তিনি সেই স্থানে বিশ্রাম করিলেন। আর অবশালোম ও ইস্রায়েলের সমস্ত লোক যিরূশালেমে প্রবেশ করিল, অহীথোফলও তাহার সঙ্গে আসিল। তখন দায়ূদের মিত্র অর্কীয় হূশয় অবশালোমের নিকটে আসিলেন। হূশয় অবশালোমকে কহিলেন, মহারাজ চিরজীবী হউন, মহারাজ চিরজীবী হউন। অবশালোম হূশয়কে কহিল, এই কি মিত্রের প্রতি তোমার দয়া? তুমি আপন মিত্রের সহিত কেন গমন করিলে না? হূশয় অবশালোমকে কহিলেন, তাহা নয়; কিন্তু সদাপ্রভু, এই জাতি ও ইস্রায়েলের সমস্ত লোক যাঁহাকে মনোনীত করিয়াছেন আমি তাঁহারই হইব, তাঁহারই সহিত থাকিব। আর পুনশ্চ, আমি কাহার সেবা করিব? তাঁহার পুত্রের সাক্ষাতে কি নয়? যেমন আপনার পিতার সাক্ষাতে সেবা করিয়াছি, তেমনি আপনার সাক্ষাতেও করিব। পরে অবশালোম অহীথোফলকে কহিল, এখন, কি কর্ত্তব্য? তোমরা মন্ত্রণা দেও। তখন অহীথোফল অবশালোমকে কহিল, তোমার পিতা বাটী রক্ষার্থে যাহাদিগকে রাখিয়া গিয়াছেন, তুমি আপন পিতার সেই উপপত্নীদের কাছে গমন কর; তাহাতে সমস্ত ইস্রায়েল শুনিবে যে, তুমি পিতার ঘৃণাস্পদ হইয়াছ, তখন তোমার সঙ্গী সমস্ত লোকের হস্ত সবল হইবে। পরে লোকেরা অবশালোমের নিমিত্ত প্রাসাদের ছাদে একটা তাম্বু স্থাপন করিল, তাহাতে অবশালোম সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে আপন পিতার উপপত্নীদের কাছে গমন করিল। ঐ সময়ে অহীথোফল যে মন্ত্রণা দিত, সেই মন্ত্রণা ঈশ্বরের বাক্যে উত্তরপ্রাপ্তির তুল্য ছিল; দায়ূদের ও অবশালোমের, উভয়ের বোধে অহীথোফলের যাবতীয় মন্ত্রণা তাদৃশ ছিল। অহীথোফল অবশালোমকে আরও কহিল, আমি বারো সহস্র লোক মনোনীত করিয়া অদ্য রাত্রিতে উঠিয়া দায়ূদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া যাই, যখন তিনি শ্রান্ত ও শিথিলহস্ত হইবেন, সেই সময়ে হঠাৎ তাঁহাকে আক্রমণ করিয়া ভয় দেখাইব; তাহাতে তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোক পলায়ন করিবে, আর আমি কেবল রাজাকে আঘাত করিব। এইরূপে সমস্ত লোককে তোমার পক্ষে আনিব; তুমি যাঁহার অন্বেষণ করিতেছ, তাঁহারই মরণ এবং সকলের প্রত্যাগমন দুই সমান; সমস্ত লোক শান্তিতে থাকিবে। এই কথা অবশালোমের ও ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনবর্গের তুষ্টিজনক হইল। তখন অবশালোম কহিল, এক বার অর্কীয় হূশয়কেও ডাক; তিনি কি বলেন, আমরা তাহাও শুনি। পরে হূশয় অবশালোমের নিকটে আসিলে অবশালোম তাঁহাকে কহিল, অহীথোফল এই প্রকার কথা বলিয়াছে, এখন তাহার কথানুসারে কার্য্য করা আমাদের কর্ত্তব্য কি না? যদি না হয়, তুমি বল। হূশয় অবশালোমকে কহিলেন, এই বার অহীথোফল ভাল পরামর্শ দেন নাই। হূশয় আরও কহিলেন, আপনি আপন পিতাকে ও তাঁহার লোকদিগকে জানেন, তাঁহারা বীর ও তিক্তপ্রাণ এবং মাঠের হৃতবৎসা ভল্লুকীর তুল্য, আর আপনার পিতা যোদ্ধা; তিনি লোকদের সহিত রাত্রি যাপন করিবেন না। দেখুন, এখন তিনি কোন গর্ত্তে কিম্বা আর কোন স্থানে লুকাইয়া আছেন; আর প্রথমে তিনি ঐ লোকদিগকে আক্রমণ করিলে যে কেহ তাহা শুনিবে, সে বলিবে, অবশালোমের অনুগামী লোকদের মধ্যে হত্যাকাণ্ড হইতেছে। তাহা হইলে যে বীর্য্যবান ব্যক্তি সিংহ-হৃদয়ের ন্যায় হৃদয়বিশিষ্ট, সেও একান্ত গলিয়া যাইবে; কারণ সমস্ত ইস্রায়েল জানে যে, আপনার পিতা বিক্রমশালী, ও তাঁহার সঙ্গিগণ বীর্য্যবান লোক। কিন্তু আমার পরামর্শ এই; দান অবধি বের্‌-শেবা পর্য্যন্ত সমুদ্রতীরস্থ বালির ন্যায় অসংখ্য সমস্ত ইস্রায়েল আপনার নিকটে সংগৃহীত হউক, পরে আপনি স্বয়ং যুদ্ধে গমন করুন। তাহাতে যে কোন স্থানে তাঁহাকে পাওয়া যাইবে, সেই স্থানে আমরা তাঁহার সমীপে উপস্থিত হইয়া ভূমিতে শিশির পতনের ন্যায় তাঁহার উপরে চাপিয়া পড়িব; তাঁহাকে বা তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোকের মধ্যে এক জনকেও রাখিব না। আর যদি তিনি কোন নগরে প্রস্থান করেন, তবে সমস্ত ইস্রায়েল সেই নগরে রজ্জু বাঁধিবে, আর আমরা স্রোত পর্য্যন্ত তাহা টানিয়া লইয়া যাইব, শেষে সেখানে একখানি পাথর কুচিও আর পাওয়া যাইবে না। পরে অবশালোম ও ইস্রায়েলের সমস্ত লোক কহিল, অহীথোফলের মন্ত্রণা অপেক্ষা অর্কীয় হূশয়ের মন্ত্রণা ভাল। বস্তুতঃ সদাপ্রভু যেন অবশালোমের প্রতি অমঙ্গল ঘটান, তজ্জন্য অহীথোফলের ভাল মন্ত্রণা ব্যর্থ করণার্থে সদাপ্রভুই ইহা স্থির করিয়াছেন। পরে হূশয় সাদোক ও অবিয়াথর এই দুই যাজককে কহিলেন, অহীথোফল অবশালোমকে ও ইস্রায়েলের প্রাচীনগণকে অমুক অমুক মন্ত্রণা দিয়াছিল, কিন্তু আমি অমুক অমুক মন্ত্রণা দিয়াছি। অতএব তোমরা শীঘ্র দায়ূদের কাছে লোক পাঠাইয়া তাঁহাকে বল, আপনি প্রান্তরস্থ পারঘাটায় অদ্যকার রাত্রি যাপন করিবেন না, কোন মতে পার হইয়া যাইবেন; পাছে মহারাজ ও আপনার সঙ্গী সমস্ত লোক সংহারপ্রাপ্ত হন। তৎকালে যোনাথন ও অহীমাস ঐন্‌রোগেলে ছিল; এক দাসী গিয়া তাহাদিগকে সংবাদ দিত, পরে তাহারা গিয়া দায়ূদ রাজাকে সংবাদ দিত; কেননা তাহারা নগরে আসিয়া দেখা দিতে পারিত না। কিন্তু এক জন যুবক তাহাদিগকে দেখিয়া অবশালোমকে জ্ঞাত করিল; আর তাহারা দুই জন শীঘ্র গিয়া বহুরীমে এক জন লোকের বাটীতে প্রবেশ করিল, এবং তাহার প্রাঙ্গণমধ্যে এক কূপ থাকাতে সেই কূপে নামিল। পরে গৃহিণী কূপটীর মুখে আচ্ছাদন দিয়া তাহার উপরে মাড়া শস্য মেলিয়া দিল, তাহাতে কেহ কিছু জানিতে পারিল না। পরে অবশালোমের দাসগণ সেই স্ত্রীলোকটীর বাটীতে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, অহীমাস ও যোনাথন কোথায়? স্ত্রীলোকটী তাহাদিগকে কহিল, তাহারা ঐ জলস্রোত পার হইয়া গেল। পরে তাহারা অন্বেষণ করিয়া উদ্দেশ না পাওয়াতে যিরূশালেমে ফিরিয়া গেল। তাহারা চলিয়া গেলে পর ঐ দুই জন কূপ হইতে উঠিয়া গিয়া দায়ূদ রাজাকে সংবাদ দিল; আর তাহারা দায়ূদকে কহিল, আপনারা উঠুন, শীঘ্র জল পার হইয়া যাউন, কেননা অহীথোফল আপনাদের বিরুদ্ধে অমুক মন্ত্রণা দিয়াছে। তাহাতে দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোক উঠিয়া যর্দ্দন পার হইলেন; যর্দ্দন পার হন নাই, তাহাদের এমন এক জনও প্রভাতের আলো পর্য্যন্ত অবশিষ্ট থাকিল না। আর অহীথোফল যখন দেখিত যে, তাহার মন্ত্রণানুযায়ী কাজ করা হইল না, তখন সে গর্দ্দভ সাজাইল, এবং উঠিয়া নিজ বাটীতে, আপন নগরে গেল, এবং আপন বাটীর বিষয়ে ব্যবস্থা করিয়া আপনি গলায় দড়ি দিয়া মরিল; পরে তাহার পিতার কবরে সে কবর প্রাপ্ত হইল। পরে দায়ূদ মহনয়িমে আসিলেন, এবং সমস্ত ইস্রায়েল লোকের সহিত অবশালোম যর্দ্দন পার হইল। আর অবশালোম যোয়াবের স্থলে অমাসাকে সৈন্যদলের উপরে নিযুক্ত করিয়াছিল। ঐ অমাসা ইস্রায়েলীয় যিথ্র নামক এক ব্যক্তির পুত্র; সেই ব্যক্তি নাহশের কন্যা অবীগলের কাছে গমন করিয়াছিল; উক্ত স্ত্রী যোয়াবের মাতা সরূয়ার ভগিনী। পরে ইস্রায়েল ও অবশালোম গিলিয়দ দেশে শিবির স্থাপন করিল। দায়ূদ মহনয়িমে উপস্থিত হইলে পর অম্মোন-সন্তানদিগের রব্বা-নিবাসী নাহশের পুত্র শোবি, আর লোদবার-নিবাসী অম্মীয়েলের পুত্র মাখীর, এবং রোগলীম-নিবাসী গিলিয়দীয় বর্সিল্লয় দায়ূদের ও তাঁহার সঙ্গী লোকদের জন্য শয্যা, ডাবর, মৃৎপাত্র, এবং আহারার্থে গোম, যব, সূজী, ভাজা শস্য, শিম, মসূর, ভাজা কলাই, মধু ও দধি এবং মেষপাল ও গোদুগ্ধের পনীর আনিলেন; কেননা তাঁহারা কহিলেন, লোকেরা প্রান্তরে ক্ষুধিত, শ্রান্ত ও পিপাসিত হইয়াছে। পরে দায়ূদ আপন সঙ্গী লোকদিগকে গণনা করিয়া তাহাদের উপরে সহস্রপতি ও শতপতিগণকে নিযুক্ত করিলেন। আর দায়ূদ যোয়াবের হস্তে লোকদের তৃতীয়াংশ, ও যোয়াবের সহোদর সরূয়ার পুত্র অবীশয়ের হস্তে তৃতীয়াংশ, এবং গাতীয় ইত্তয়ের হস্তে তৃতীয়াংশ সমর্পণ করিয়া প্রেরণ করিলেন। আর রাজা লোকদিগকে কহিলেন, আমিও তোমাদের সঙ্গে যাইব। কিন্তু লোকেরা কহিল, আপনি যাইবেন না; কেননা যদি আমরা পলাই, তবে আমাদের বিষয়ে তাহারা মনে করিবে না, আমাদের অর্দ্ধেক লোক মরিলেও আমাদের বিষয় মনে করিবে না; কিন্তু আপনি আমাদের দশ সহস্রের সমান; অতএব নগর হইতে আমাদের সাহায্য করণার্থে আপনি প্রস্তুত থাকিলে ভাল হয়। তখন রাজা তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা যাহা ভাল বুঝ, আমি তাহাই করিব। পরে রাজা নগর-দ্বারের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া রহিলেন, এবং সমস্ত লোক শত শত ও সহস্র সহস্র হইয়া বাহির হইল। তখন রাজা যোয়াব, অবীশয় ও ইত্তয়কে আজ্ঞা দিয়া কহিলেন, তোমরা আমার অনুরোধে সেই যুবকের প্রতি, অবশালোমের প্রতি, কোমল ব্যবহার করিও। অবশালোমের বিষয়ে সমস্ত সেনাপতিকে রাজার এই আজ্ঞা দিবার সময়ে সমস্ত লোকই তাহা শুনিল। পরে লোকেরা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেত্রে বাহির হইয়া গেল; ইফ্রয়িম অরণ্যে যুদ্ধ হইল। সে স্থানে ইস্রায়েল লোকেরা দায়ূদের দাসদের সম্মুখে আহত হইল, আর সেই দিন তথায় মহাসংহার হইল, বিংশতি সহস্র লোক মারা পড়িল। ফলতঃ যুদ্ধ তথাকার সমস্ত অঞ্চলে ব্যাপ্ত হইল; এবং সেই দিন খড়্‌গ যত লোককে গ্রাস করিল, অরণ্য তদপেক্ষা অধিক লোককে গ্রাস করিল। আর অবশালোম হঠাৎ দায়ূদের দাসগণের সম্মুখে পড়িল; অবশালোম আপন খচরে চড়িয়াছিল, সেই খচর তথাকার বড় একটা এলা বৃক্ষের শাখার নীচে দিয়া গমন করাতে সেই এলা বৃক্ষে অবশালোমের মস্তক বদ্ধ হইল; তাহাতে সে আকাশের ও পৃথিবীর মধ্যে ঝুলিয়া রহিল, এবং যে খচরটী তাহার নীচে ছিল, সেটী প্রস্থান করিল। আর এক পুরুষ তাহা দেখিয়া যোয়াবকে কহিল, দেখুন, আমি দেখিলাম, অবশালোম এলা বৃক্ষে ঝুলিতেছে। তখন যোয়াব সেই সংবাদদাতাকে কহিলেন, দেখ, তুমি ত দেখিয়াছিলে, তবে কেন সে স্থানে তাহাকে মারিয়া ভূমিতে ফেলিয়া দিলে না? তাহা করিলে আমি তোমাকে দশ [শেকল] রৌপ্য ও একটী কটিবন্ধ দিতাম। সেই ব্যক্তি যোয়াবকে কহিল, আমি যদ্যপি সহস্র [শেকল] রৌপ্য এই করতলে পাইতাম, তথাপি রাজপুত্রের বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করিতাম না; কেননা আমাদেরই কর্ণগোচরে রাজা আপনাকে, অবীশয়কে ও ইত্তয়কে এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তোমরা যে কেহ হও, সেই যুবক অবশালোমের বিষয়ে সাবধান থাকিবে। আর যদি আমি উহাঁর প্রাণের বিপরীতে বিশ্বাসঘাতকতা করিতাম—রাজা হইতে ত কোন বিষয় গুপ্ত থাকে না—তবে আপনি আমার বিপক্ষ হইতেন। তখন যোয়াব কহিলেন, তোমার সম্মুখে আমার এরূপ বিলম্ব করা অনুচিত। পরে তিনি হস্তে তিনটী খোঁচা লইয়া অবশালোমের বক্ষঃ বিদ্ধ করিলেন; তখনও সে এলা বৃক্ষের মধ্যে জীবিত ছিল। আর যোয়াবের অস্ত্রবাহক দশ জন যুবক অবশালোমকে বেষ্টন করিল ও আঘাত করিয়া বধ করিল। পরে যোয়াব তূরী বাজাইলেন, তাহাতে লোকেরা ইস্রায়েলের পশ্চাৎ ধাবন হইতে ফিরিল; কেননা যোয়াব লোকদিগকে ফিরাইয়া রাখিলেন। আর তাহারা অবশালোমকে লইয়া অরণ্যের এক বৃহৎ গর্ত্তে ফেলিয়া দিয়া তাহার উপরে প্রস্তরের অতি প্রকাণ্ড এক রাশি করিল। ইতিমধ্যে সমস্ত ইস্রায়েল আপন আপন তাম্বুতে পলায়ন করিল। রাজার তলভূমিতে যে স্তম্ভ আছে, অবশালোম জীবনকালে তাহা নির্ম্মাণ করাইয়া আপনার জন্য স্থাপন করিয়াছিল, কেননা সে বলিয়াছিল, আমার নাম রক্ষা করিতে আমার পুত্র নাই; এই জন্য সে আপন নামানুসারে ঐ স্তম্ভের নাম রাখিয়াছিল; অদ্যাপি তাহা অবশালোমের স্তম্ভ বলিয়া বিখ্যাত আছে। পরে সাদোকের পুত্র অহীমাস কহিল, আমি দৌড়িয়া গিয়া, সদাপ্রভু কি রূপে শত্রুগণের হস্ত হইতে রাজার বিচার নিষ্পত্তি করিয়াছেন, এই সমাচার রাজাকে দিই। কিন্তু যোয়াব তাহাকে কহিলেন, আজ তুমি সমাচারদাতা হইবে না, অন্য দিন সমাচার দিবে; রাজপুত্র মরিয়াছে, এই জন্য আজ তুমি সমাচার দিবে না। পরে যোয়াব কূশীয়কে কহিলেন, যাও, যাহা দেখিলে, রাজাকে গিয়া বল। তাহাতে কূশীয় যোয়াবের কাছে প্রণিপাত করিয়া দৌড়িয়া চলিল। পরে সাদোকের পুত্র অহীমাস আবার যোয়াবকে কহিল, যাহা হয় হউক, বিনয় করি, কূশীয়ের পশ্চাতে আমাকেও দৌড়িতে দিউন। যোয়াব কহিলেন, বৎস, তুমি কেন দৌড়িবে? তুমি ত এই সমাচারের জন্য পুরস্কার পাইবে না? [সে বলিল,] যাহা হয় হউক, আমি দৌড়িব। তাহাতে তিনি কহিলেন, দৌড়। তখন অহীমাস সমভূমির পথ দিয়া দৌড়িতে দৌড়িতে কূশীয়কে পশ্চাতে ফেলিল। সেই সময়ে দায়ূদ দুই নগর-দ্বারের মধ্যবর্ত্তী স্থানে বসিয়াছিলেন। আর প্রহরী নগর-দ্বারের উপরিভাগে, প্রাচীরে উঠিল, আর চক্ষু তুলিয়া নিরীক্ষণ করিল, আর দেখ, এক জন একা দৌড়িয়া আসিতেছে। তাহাতে প্রহরী উচ্চৈঃস্বরে রাজাকে তাহা বলিল; রাজা কহিলেন, সে যদি একা হয়, তবে তাহার মুখে সমাচার আছে। পরে সে আসিতে আসিতে নিকটবর্ত্তী হইল। প্রহরী আর এক জনকে দৌড়িয়া আসিতে দেখিয়া উচ্চৈঃস্বরে দ্বারীকে বলিল, দেখ, আর এক জন একা দৌড়িয়া আসিতেছে। তখন রাজা কহিলেন, সেও সমাচার আনিতেছে। পরে প্রহরী কহিল, প্রথম ব্যক্তির দৌড় সাদোকের পুত্র অহীমাসের দৌড় বলিয়া বোধ হয়। রাজা কহিলেন, সে ভাল মানুষ, ভাল সমাচার লইয়া আসিতেছে। তখন অহীমাস উচ্চৈঃস্বরে রাজাকে কহিল, মঙ্গল। পরে সে রাজার সম্মুখে উবুড় হইয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিয়া কহিল, আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য, আমার প্রভু মহারাজের বিরুদ্ধে যে লোকেরা হস্ত তুলিয়াছিল, তাহাদিগকে তিনি সমর্পণ করিয়াছেন। পরে রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, যুবক অবশালোমের কি মঙ্গল? অহীমাস কহিল, যে সময়ে যোয়াব মহারাজের দাসকে, আপনার দাস আমাকে পাঠান, সেই সময়ে বড় লোকারণ্য দেখিলাম, কিন্তু কি হইয়াছিল, তাহা জানি না। রাজা কহিলেন, এক পার্শ্বে যাও, এখানে দাঁড়াও; তাহাতে সে এক পার্শ্বে গিয়া দাঁড়াইল। আর দেখ, কূশীয় আসিল, ও কূশীয় কহিল, আমার প্রভু মহারাজের জন্য সমাচার আনিয়াছি; আপনার বিরুদ্ধে যাহারা উঠিয়াছিল, সেই সকলের হস্ত হইতে সদাপ্রভু অদ্য আপনার বিচার নিষ্পত্তি করিয়াছেন। রাজা কূশীয়কে জিজ্ঞাসা করিলেন, যুবক অবশালোমের কি মঙ্গল? কূশীয় কহিল, আমার প্রভু মহারাজের শত্রুগণ ও যাহারা অমঙ্গলার্থে আপনার বিরুদ্ধে উঠে, তাহারা সকলে সেই যুবকের মত হউক। তখন রাজা অধৈর্য্য হইয়া নগর-দ্বারের ছাদের উপরিস্থ কুঠরীতে উঠিয়া রোদন করিতে লাগিলেন; এবং গমন করিতে করিতে কহিলেন, হায়! আমার পুত্র অবশালোম! আমার পুত্র, আমার পুত্র অবশালোম! কেন তোমার পরিবর্ত্তে আমি মরি নাই? হায় অবশালোম! আমার পুত্র! আমার পুত্র! পরে কেহ যোয়াবকে কহিল, দেখ, রাজা অবশালোমের জন্য ক্রন্দন ও শোক করিতেছেন। আর সেই দিবসে সমস্ত লোকের পক্ষে বিজয় শোকের বিষয় হইয়া পড়িল, কারণ রাজা আপন পুত্রের বিষয়ে ব্যথিত হইয়াছেন, ইহা লোকে সেই দিন শুনিল। আর রণস্থল হইতে পলায়নকালে লোকেরা যেমন বিষণ্ণ হইয়া চোরের ন্যায় চলে, তদ্রূপ লোকেরা ঐ দিবসে চোরের ন্যায় নগরে প্রবেশ করিল। আর রাজা আপন মুখ ঢাকিয়া উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিয়া বলিতে লাগিলেন, হায়! আমার পুত্র অবশালোম! হায় অবশালোম! আমার পুত্র! আমার পুত্র! পরে যোয়াব গৃহের মধ্যে রাজার নিকটে আসিয়া কহিলেন, যাহারা আজ আপনার প্রাণ, আপনার পুত্র কন্যাদের প্রাণ ও আপনার ভার্য্যাদের প্রাণ ও আপনার উপপত্নীদের প্রাণ রক্ষা করিয়াছে, আপনার সেই দাসগণকে আপনি আজ বিষণ্ণবদন করিলেন। বস্তুতঃ আপনি আপন বিদ্বেষিগণকে প্রেম ও আপন প্রেমকারিগণকে দ্বেষ করিতেছেন; ফলে আপনি আজ প্রকাশ করিতেছেন যে, অধ্যক্ষেরা ও দাসেরা আপনার কাছে কিছুই নয়; কেননা আজ আমি দেখিতে পাইতেছি, যদি অবশালোম বাঁচিয়া থাকিত, আর আমরা সকলে আজ মরিতাম, তাহা হইলে আপনি সন্তুষ্ট হইতেন। অতএব আপনি এখন উঠিয়া বাহিরে গিয়া আপন দাসগণকে চিত্ততোষক কথা বলুন। আমি সদাপ্রভুর নামে শপথ করিতেছি, যদি আপনি বাহিরে না যান, তবে এই রাত্রি আপনার সহিত এক জনও থাকিবে না; এবং আপনার যৌবনকাল হইতে এখন পর্য্যন্ত যত অমঙ্গল ঘটিয়াছে, সে সকল অপেক্ষাও আপনার এই অমঙ্গল অধিক হইবে। তখন রাজা উঠিয়া নগর-দ্বারে বসিলেন; আর সমস্ত লোককে বলা হইল, দেখ, রাজা দ্বারে বসিয়া আছেন; তাহাতে সমস্ত লোক রাজার সম্মুখে আসিল। ইস্রায়েল লোকেরা প্রত্যেকে আপন আপন তাম্বুতে পলায়ন করিয়াছিল। পরে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্যে সমস্ত লোক কলহ করিয়া বলিতে লাগিল, রাজা শত্রুগণের হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার করিয়াছিলেন, ও পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছিলেন; সম্প্রতি তিনি অবশালোমের ভয়ে দেশ হইতে পলায়ন করিয়াছেন। আর আমরা যে অবশালোমকে আপনাদের উপরে অভিষেক করিয়াছিলাম, তিনি যুদ্ধে মরিয়াছেন; অতএব তোমরা এখন রাজাকে ফিরাইয়া আনিবার বিষয়ে একটী কথাও বলিতেছ না কেন? পরে দায়ূদ রাজা সাদোক ও অবিয়াথর এই দুই যাজকের নিকটে দূত পাঠাইয়া কহিলেন, তোমরা যিহূদার প্রাচীনবর্গকে বল, রাজাকে আপন বাটীতে ফিরাইয়া আনিতে তোমরা কেন সকলের শেষে পড়িতেছ? রাজাকে আপন বাটীতে ফিরাইয়া আনিবার জন্য সমস্ত ইস্রায়েলের নিবেদন তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইয়াছে। তোমরাই আমার ভ্রাতা, তোমরাই আমার অস্থি ও আমার মাংস; অতএব রাজাকে ফিরাইয়া আনিতে কেন সকলের শেষে পড়িতেছ? তোমরা অমাসাকেও বল, তুমি কি আমার অস্থি ও আমার মাংস নও? যদি তুমি নিয়ত আমার সাক্ষাতে যোয়াবের পদে সৈন্যদলের সেনাপতি না হও, তবে ঈশ্বর আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। এইরূপে তিনি যিহূদার সমস্ত লোকের হৃদয়কে এক জনের হৃদয়ের ন্যায় নমন করিলেন, তাহাতে তাহারা লোক পাঠাইয়া রাজাকে কহিল, আপনি ও আপনার সকল দাস পুনরাগমন করুন। পরে রাজা প্রত্যাগমন করিয়া যর্দ্দন পর্য্যন্ত আসিলেন। আর যিহূদার লোকেরা রাজার সঙ্গে দেখা করিতে ও তাঁহাকে যর্দ্দন পার করিয়া আনিতে গিল্‌গলে গেল। তখন দায়ূদ রাজার সঙ্গে দেখা করিতে বহুরীম-নিবাসী গেরার পুত্র বিন্যামীনীয় শিমিয়ি ত্বরা করিয়া যিহূদার লোকদের সহিত আসিল। আর বিন্যামীনীয় এক সহস্র লোক তাহার সঙ্গে ছিল, এবং শৌলের কুলের ভৃত্য সীবঃ ও তাহার পঞ্চদশ পুত্র ও বিংশতি দাস তাহার সহিত ছিল, তাহারা রাজার সাক্ষাতে জল ভাঙ্গিয়া যর্দ্দন পার হইল। তখন খেয়ার নৌকা রাজার পরিজনদিগকে পার করিতে ও তাঁহার বাসনামত কর্ম্ম করিতে অন্য পারে গিয়াছিল। রাজার যর্দ্দন পার হইবার সময়ে গেরার পুত্র শিমিয়ি রাজার সম্মুখে উবুড় হইয়া পড়িল। সে রাজাকে কহিল, আমার প্রভু আমার অপরাধ গণনা করিবেন না; যে দিন আমার প্রভু মহারাজ যিরূশালেম হইতে বাহির হন, সেই দিন আপনার দাস আমি যে অপকর্ম্ম করিয়াছিলাম, তাহা স্মরণে রাখিবেন না, মহারাজ কিছু মনে করিবেন না। আপনার দাস আমি জানি, আমি পাপ করিয়াছি, এই জন্য দেখুন, যোষেফের সমস্ত কুলের মধ্যে প্রথমে আমিই অদ্য আমার প্রভু মহারাজের সঙ্গে দেখা করিতে নামিয়া আসিয়াছি। কিন্তু সরূয়ার পুত্র অবীশয় উত্তর করিলেন, এজন্য কি শিমিয়ির প্রাণদণ্ড হইবে না যে, সে সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তিকে শাপ দিয়াছিল? দায়ূদ কহিলেন, হে সরূয়ার পুত্রগণ! তোমাদের সহিত আমার বিষয় কি যে, তোমরা অদ্য আমার বিপক্ষ হইতেছ? অদ্য কি ইস্রায়েলের মধ্যে কাহারও প্রাণদণ্ড হইতে পারে? কারণ আমি কি জানি না যে, অদ্য আমি ইস্রায়েলের উপরে রাজা? পরে রাজা শিমিয়িকে কহিলেন, তোমার প্রাণদণ্ড হইবে না; ফলতঃ রাজা তাহার কাছে শপথ করিলেন। পরে শৌলের পৌত্র মফীবোশৎ রাজার সঙ্গে দেখা করিতে নামিয়া আসিলেন; রাজার প্রস্থান দিনাবধি কুশলে প্রত্যাগমন দিন পর্য্যন্ত তিনি আপন পায়ের প্রতি যত্ন করেন নাই, দাড়ি পরিষ্কার করেন নাই, ও বস্ত্র ধৌত করান নাই। আর যখন তিনি যিরূশালেমে রাজার সঙ্গে দেখা করিতে আসিলেন, তখন রাজা তাঁহাকে কহিলেন, হে মফীবোশৎ, তুমি কেন আমার সহিত যাও নাই? তিনি উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, হে রাজন্‌, আমার দাস আমাকে বঞ্চনা করিয়াছিল; কেননা আপনার দাস আমি বলিয়াছিলাম, আমি গর্দ্দভ সাজাইয়া তাহার উপরে চড়িয়া মহারাজের সহিত যাইব, কেননা আপনার দাস আমি খঞ্জ। সে আমার প্রভু মহারাজের নিকটে আপনার এই দাসের নিন্দাবাদ করিয়াছে; কিন্তু আমার প্রভু মহারাজ ঈশ্বরের দূতের তুল্য; অতএব আপনার দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই করুন। আমার প্রভু মহারাজের সাক্ষাতে আমার সমস্ত পিতৃকুল নিতান্ত মৃত্যুর পাত্র ছিল, তথাপি যাহারা আপনার মেজে ভোজন করে, আপনি তাহাদের সহিত বসিতে আপনার এই দাসকে স্থান দিয়াছিলেন; অতএব আমার আর কি অধিকার আছে যে, মহারাজের কাছে পুনর্ব্বার ক্রন্দন করিব? রাজা তাহাকে কহিলেন, তোমার বিষয়ে অধিক কথায় কি প্রয়োজন? আমি বলিতেছি তুমি ও সীবঃ উভয়ে সেই ভূমি অংশ করিয়া লও। তখন মফীবোশৎ রাজাকে কহিলেন, সে সমস্তই গ্রহণ করুক, কারণ আমার প্রভু মহারাজ কুশলে আপন বাটীতে ফিরিয়া আসিয়াছেন। আর গিলিয়দীয় বর্সিল্লয় রোগলীম হইতে নামিয়া আসিয়াছিলেন, তিনি রাজাকে যর্দ্দনের পারে রাখিয়া যাইবার আশয়ে তাঁহার সহিত যর্দ্দন পার হইয়াছিলেন। বর্সিল্লয় অতি বৃদ্ধ, আশী বৎসর বয়স্ক ছিলেন; আর মহনয়িমে রাজার অবস্থিতিকালে তিনি রাজার খাদ্য যোগাইয়াছিলেন, কারণ তিনি এক জন খুব বড় মানুষ ছিলেন। রাজা বর্সিল্লয়কে কহিলেন, তুমি আমার সহিত পার হইয়া আইস, আমি তোমাকে যিরূশালেমে আমার সঙ্গে প্রতিপালন করিব। কিন্তু বর্সিল্লয় রাজাকে কহিলেন, আমার আয়ুর আর কত দিন আছে যে, আমি মহারাজের সহিত যিরূশালেমে উঠিয়া যাইব? অদ্য আমার বয়স আশী বৎসর; এখন কি ভাল মন্দের বিশেষ বুঝিতে পারি? যাহা ভোজন করি বা যাহা পান করি, আপনার দাস আমি কি তাহার আস্বাদ বুঝিতে পারি? এখন কি আর গায়ক ও গায়িকাদের গানের শব্দ শুনিতে পাই? তবে কেন আপনার এই দাস আমার প্রভু মহারাজের ভারস্বরূপ হইবে? আপনার দাস মহারাজের সহিত কেবল যর্দ্দন পার হইয়া যাইবে, এই মাত্র; মহারাজ কেন এমন পুরস্কারে আমাকে পুরস্কৃত করিবেন? অনুগ্রহ করিয়া আপনার এই দাসকে ফিরিয়া যাইতে দিউন; আমি আপন নগরে আপন পিতামাতার কবরের নিকটে মরিব। কিন্তু দেখুন, এই আপনার দাস কিম্‌হম; এ আমার প্রভু মহারাজের সহিত পার হইয়া যাউক; আপনার যাহা ভাল বোধ হয়, ইহার প্রতি করিবেন। রাজা উত্তর করিলেন, কিম্‌হম আমার সহিত পার হইয়া যাইবে; তোমার যাহা ভাল বোধ হয়, আমি তাহার প্রতি তাহাই করিব; এবং তুমি আমাকে যাহা করিতে বলিবে, তোমার জন্য আমি তাহাই করিব। পরে সমস্ত লোক যর্দ্দন পার হইল, রাজাও পার হইলেন; এবং রাজা বর্সিল্লয়কে চুম্বন করিলেন, ও আশীর্ব্বাদ করিলেন; পরে তিনি স্বস্থানে ফিরিয়া গেলেন। আর রাজা পার হইয়া গিল্‌গলে গেলেন; এবং কিম্‌হম তাঁহার সহিত গেল, এবং যিহূদার সমস্ত লোক ও ইস্রায়েলের অর্দ্ধেক লোক গিয়া রাজাকে পার করিয়া লইয়া আসিয়াছিল। আর দেখ, ইস্রায়েলের সমস্ত লোক রাজার নিকটে আসিয়া রাজাকে কহিল, আমাদের ভ্রাতা যিহূদার লোকেরা কেন আপনাকে চুরি করিয়া আনিল? মহারাজকে আপনার পরিজনদিগকে ও দায়ূদের সঙ্গে তাঁহার সমস্ত লোককে, যর্দ্দন পার করিয়া কেন আনিল? তখন যিহূদার সমস্ত লোক ইস্রায়েল লোকদিগকে উত্তর করিল, রাজা ত আমাদের নিকট কুটুম্ব, তবে তোমরা এ বিষয়ে কেন ক্রুদ্ধ হও? আমরা কি রাজার কিছু খাইয়াছি? অথবা তিনি কি আমাদিগকে কিছু ভেট দিয়াছেন? তখন ইস্রায়েল লোকেরা উত্তর করিয়া যিহূদার লোকদিগকে কহিল, রাজাতে আমাদের দশ অংশ অধিকার আছে, আরও দায়ূদে তোমাদের অপেক্ষা আমাদের অধিকার অধিক; অতএব আমাদিগকে কেন তুচ্ছবোধ করিলে; আর আমাদের রাজাকে ফিরাইয়া আনিবার প্রস্তাব কি প্রথমে আমরাই করি নাই? তখন ইস্রায়েল লোকদের বাক্য অপেক্ষা যিহূদার লোকদের বাক্য অধিক কঠিন হইল। ঐ সময়ে সেই স্থানে বিন্যামীনীয় বিখ্রির পুত্র শেবঃ নামে এক জন পাষণ্ড ছিল; সে তূরী বাজাইয়া কহিল, দায়ূদে আমাদের কোন অংশ নাই, যিশয়ের পুত্রে আমাদের অধিকার নাই; হে ইস্রায়েল, তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন তাম্বুতে যাও। তাহাতে ইস্রায়েলের সমস্ত লোক দায়ূদের পশ্চাৎ হইতে ফিরিয়া বিখ্রির পুত্র শেবের পশ্চাতে গেল; কিন্তু যর্দ্দন অবধি যিরূশালেম পর্য্যন্ত যিহূদার লোকেরা আপনাদের রাজাতে আসক্ত থাকিল। পরে দায়ূদ যিরূশালেমে আপন গৃহে আসিলেন। আর রাজবাটী রক্ষার্থে আপনার যে দশটী উপপত্নীকে রাখিয়া গিয়াছিলেন, তাহাদিগকে লইয়া কারাগৃহে রুদ্ধ করিয়া রাখিলেন, এবং প্রতিপালন করিলেন, কিন্তু তাহাদের কাছে আর গমন করিলেন না; অতএব তাহারা মরণ দিন পর্য্যন্ত বৈধব্য-অবস্থায় রুদ্ধ রহিল। পরে রাজা অমাসাকে কহিলেন, তুমি তিন দিনের মধ্যে যিহূদার লোকদিগকে ডাকাইয়া আমার জন্য একত্র কর, আর তুমিও এই স্থানে উপস্থিত হও। তখন অমাসা যিহূদার লোকদিগকে ডাকাইয়া একত্র করিতে গেলেন, কিন্তু রাজা যে সময় নিরূপণ করিয়া দিয়াছিলেন, সেই নির্দ্দিষ্ট সময় হইতে তিনি অধিক বিলম্ব করিলেন। তাহাতে দায়ূদ অবীশয়কে কহিলেন, অবশালোম যাহা করিয়াছিল, তদপেক্ষা বিখ্রির পুত্র শেবঃ এখন আমাদের অধিক অনিষ্ট করিবে; তুমি আপন প্রভুর দাসদিগকে লইয়া তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া যাও, নতুবা সে প্রাচীরবেষ্টিত কোন কোন নগর হাত করিয়া আমাদের দৃষ্টি এড়াইবে। তাহাতে যোয়াবের লোক জন, আর করেথীয় ও পলেথীয়গণ এবং সমস্ত বীর তাঁহার সহিত বাহির হইল; তাহারা বিখ্রির পুত্র শেবের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিবার জন্য যিরূশালেম হইতে প্রস্থান করিল। তাহারা গিবিয়োনস্থ মহাপ্রস্তরের নিকটে উপস্থিত হইলে অমাসা তাহাদের সম্মুখে আসিলেন। তখন যোয়াব সৈনিক বেশ কটিবন্ধনপূর্ব্বক পরিধান করিয়াছিলেন, তাহার উপরে খড়্‌গের কটিবন্ধন ছিল; সকোষ খড়্‌গখানি তাঁহার কটিদেশে আবদ্ধ ছিল, পরে বাহিরে আসিতে আসিতে তিনি খড়্‌গখানি খুলিয়া পড়িতে দিলেন। আর যোয়াব অমাসাকে কহিলেন, হে আমার ভ্রাতঃ তোমার মঙ্গল ত? পরে যোয়াব অমাসাকে চুম্বন করিবার জন্য দক্ষিণ হস্ত দিয়া তাঁহার দাড়ি ধরিলেন। কিন্তু যোয়াবের হস্তস্থিত খড়্‌গের প্রতি অমাসার লক্ষ্য না থাকাতে তিনি তদ্দ্বারা তাঁহার উদরে আঘাত করিলেন, তাঁহার ভুঁড়ি বাহির হইয়া ভূমিতে পড়িল; যোয়াব দ্বিতীয় বার তাঁহাকে আঘাত করিলেন না, তিনি মরিয়া গেলেন। পরে যোয়াব ও তাঁহার ভ্রাতা অবীশয় বিখ্রির পুত্র শেবের পশ্চাতে পশ্চাতে ধাবমান হইলেন। ইতিমধ্যে শেবের নিকটে যোয়াবের এক জন যুবক দাঁড়াইয়া কহিতে লাগিল, যে যোয়াবকে ভালবাসে ও দায়ূদের পক্ষীয়, সে যোয়াবের পশ্চাদ্বর্ত্তী হউক। তখনও অমাসা রাজপথের মধ্যে আপন রক্তে গড়াগড়ি দিতেছিলেন; অতএব সমস্ত লোক দাঁড়াইয়া রহিল দেখিয়া ঐ ব্যক্তি অমাসাকে রাজপথ হইতে ক্ষেত্রে সরাইয়া দিয়া তাঁহার উপরে একখান বস্ত্র ফেলিয়া দিল; কেননা সে দেখিল, যে কেহ তাঁহার নিকট দিয়া যায়, সে দাঁড়াইয়া থাকে। তখন অমাসা রাজপথ হইতে সরান হইলে সমস্ত লোক বিখ্রির পুত্র শেবের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিবার জন্য যোয়াবের অনুগামী হইল। আর তিনি ইস্রায়েলের যাবতীয় বংশের মধ্য দিয়া আবেল ও বৈৎমাখায় এবং বেরীয়দের সমস্ত অঞ্চল পর্য্যন্ত গমন করিলেন, তাহাতে লোকেরা একত্র হইয়া শেবের পশ্চাতে পশ্চাতে চলিল। পরে তাহারা আবেল-বৈৎমাখাতে আসিয়া তাহাকে রুদ্ধ করিয়া নগরের নিকটে জাঙ্গাল প্রস্তুত করিল, এবং তাহা প্রাচীরের সমান হইল; আর যোয়াবের সঙ্গী সমস্ত লোক প্রাচীর ভূমিসাৎ করিবার জন্য তাহা ভাঙ্গিতে লাগিল। পরে নগরের মধ্য হইতে একটী বুদ্ধিমতী স্ত্রীলোক উচ্চৈঃস্বরে কহিল, শুন শুন, অনুগ্রহ করিয়া যোয়াবকে এই স্থান পর্য্যন্ত আসিতে বল, আমি তাঁহার সহিত কথা কহিব। পরে যোয়াব তাহার নিকটে গেলে সে স্ত্রীলোকটী জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কি যোয়াব? তিনি উত্তর করিলেন, আমি যোয়াব। সে স্ত্রীলোকটী কহিল, আপনার দাসীর কথা শুনুন; তিনি উত্তর করিলেন, শুনিতেছি। পরে স্ত্রীলোকটী এই কথা কহিল, সেকালে লোকে বলিত, তাহারা আবেলে মন্ত্রণা জানিতে চাহিবেই চাহিবে, এইরূপে তাহারা কার্য্য সমাপন করিত। আমি ইস্রায়েলের শান্তিপ্রিয় ও বিশ্বস্ত লোকদের এক জন, কিন্তু আপনি ইস্রায়েলের মাতৃস্থানীয় একটী নগর বিনষ্ট করিতে চেষ্টা করিতেছেন; আপনি কেন সদাপ্রভুর অধিকার গ্রাস করিবেন? যোয়াব উত্তর করিলেন, গ্রাস করা কিম্বা বিনাশ করা আমা হইতে দূরে থাকুক, দূরে থাকুক। ব্যাপার এরূপ নয়। কিন্তু বিখ্রির পুত্র শেবঃ নামে পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের এক জন লোক রাজার বিরুদ্ধে, দায়ূদের বিরুদ্ধে হস্ত তুলিয়াছে; তোমরা কেবল তাহাকে সমর্পণ কর, তাহাতে আমি এই নগর হইতে প্রস্থান করিব। তখন সে স্ত্রী যোয়াবকে কহিল, দেখুন, প্রাচীরের উপর দিয়া তাহার মুণ্ড আপনার নিকটে নিক্ষেপ করা যাইবে। পরে সে স্ত্রী বুদ্ধিপূর্ব্বক সকল লোকের নিকটে গেল। তাহাতে লোকেরা বিখ্রির পুত্র শেবের মস্তক ছেদন করিয়া যোয়াবের নিকটে বাহিরে ফেলিয়া দিল। তখন তিনি তূরী বাজাইলে লোকেরা নগর হইতে ছিন্নভিন্ন হইয়া আপন আপন তাম্বুতে গেল, এবং যোয়াব যিরূশালেমে রাজার নিকটে ফিরিয়া গেলেন। ঐ সময়ে যোয়াব ইস্রায়েলের সমস্ত সেনার অধ্যক্ষ ছিলেন; এবং যিহোয়াদার পুত্র বনায় করেথীয় ও পলেথীয়দের অধ্যক্ষ ছিলেন; আর অদোরাম [রাজার] কর্ম্মাধীন দাসদের অধ্যক্ষ, এবং অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট ইতিহাসকর্ত্তা, আর শবা লেখক ছিলেন; এবং সাদোক ও অবিয়াথর যাজক ছিলেন। আর যায়ীরীয় ঈরাও দায়ূদের যাজক ছিলেন। দায়ূদের সময়ে ক্রমাগত তিন বৎসর দুর্ভিক্ষ হয়; তাহাতে দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিলে সদাপ্রভু উত্তর করিলেন, শৌলে ও তাহার কুলে রক্তপাতের দোষ রহিয়াছে, কেননা সে গিবিয়োনীয়দিগকে বধ করিয়াছিল। তাহাতে রাজা গিবিয়োনীয়দিগকে ডাকাইয়া তাহাদের সহিত আলাপ করিলেন। গিবিয়োনীয়েরা ইস্রায়েল-সন্তান নয়, ইহারা ইমোরীয়দের অবশিষ্টাংশের লোক, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহাদের কাছে দিব্য করিয়াছিল, কিন্তু শৌল ইস্রায়েল ও যিহূদা-সন্তানদের পক্ষে উদ্যোগী হইয়া তাহাদিগকে বধ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। দায়ূদ গিবিয়োনীয়দিগকে কহিলেন, আমি তোমাদের জন্য কি করিব? তোমরা যেন সদাপ্রভুর অধিকারকে আশীর্ব্বাদ কর, এই জন্য আমি কি দিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিব? গিবিয়োনীয়েরা তাঁহাকে কহিল, শৌলের সহিত কিম্বা তাহার কুলের সহিত আমাদের রৌপ্য কি স্বর্ণ বিষয়ক বিবাদ নাই, আবার ইস্রায়েলের মধ্যে কাহাকেও বধ করা আমাদের কার্য্য নয়। পরে তিনি কহিলেন, তবে তোমরা কি বল? আমি তোমাদের জন্য কি করিব? তাহারা রাজাকে কহিল, যে ব্যক্তি আমাদের সংহার করিয়াছে, ও আমরা যেন ইস্রায়েলের সীমার মধ্যে কোথাও তিষ্ঠিতে না পারি, বিনষ্ট হই, এই জন্য কুমন্ত্রণা করিয়াছিল, তাহার সন্তানদের মধ্যে সাত জন পুরুষ আমাদের কাছে সমর্পিত হউক; আমরা সদাপ্রভুর মনোনীত শৌলের গিবিয়াতে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাহাদিগকে ফাঁশি দিব। তখন রাজা কহিলেন, সমর্পণ করিব। তথাপি দায়ূদের ও শৌলের পুত্র যোনাথনের মধ্যে সদাপ্রভুর নামে যে শপথ হইয়াছিল, তৎপ্রযুক্ত রাজা শৌলের পৌত্র, যোনাথনের পুত্র মফীবোশতের প্রতি করুণা করিলেন। কিন্তু অয়ার কন্যা রিস্পা শৌলের জন্য অর্মোণি ও মফীবোশৎ নামে যে দুইটী পুত্র প্রসব করিয়াছিল, এবং মহোলাতীয় বর্সিল্লয়ের পুত্র অদ্রীয়েলের জন্য শৌলের কন্যা মীখল যে পাঁচটী পুত্র প্রসব করিয়াছিল, তাহাদিগকে লইয়া রাজা গিবিয়োনীয়দের হস্তে সমর্পণ করিলেন; তাহাতে তাহারা ঐ পর্ব্বতে সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহাদিগকে ফাঁশি দিল। সে সাত জন একেবারে মারা পড়িল; তাহারা প্রথম ফসল কাটার সময়ে অর্থাৎ যব কাটার আরম্ভকালে নিহত হইল। পরে অয়ার কন্যা রিস্পা চট লইয়া ফসল কাটার আরম্ভাবধি যে পর্য্যন্ত আকাশ হইতে তাহাদের উপরে জল না বর্ষিল, সে পর্য্যন্ত পাষাণের উপরে আপনার শয্যারূপে সেই চটখানি পাতিয়া রাখিল, এবং দিবসে আকাশের পক্ষিগণকে ও রাত্রিতে বনপশুগণকে তাহাদের উপরে বিশ্রাম করিতে দিত না। পরে অয়ার কন্যা রিস্পা, শৌলের উপপত্নী, সেই যে কর্ম্ম করিল, তাহা দায়ূদ রাজাকে জ্ঞাত করা হইল। তখন দায়ূদ গমন করিয়া যাবেশ-গিলিয়দের গৃহস্থগণের নিকট হইতে শৌলের অস্থি ও তাঁহার পুত্র যোনাথনের অস্থি গ্রহণ করিলেন; কেননা গিল্‌বোয়ে পলেষ্টীয়গণ কর্ত্তৃক শৌলের হত হইবার সময়ে তাঁহাদের দুই জনের শব পলেষ্টীয়গণ কর্ত্তৃক বৈৎশানের চকে টাঙ্গান হইলে পর উহারা সেই স্থান হইতে তাহা চুরি করিয়া আনিয়াছিল। তিনি তথা হইতে শৌলের অস্থি ও তাঁহার পুত্র যোনাথনের অস্থি আনিলেন, এবং লোকেরা সেই ফাঁশি দেওয়া লোকদের অস্থিও সংগ্রহ করিল। পরে তাহারা শৌলের ও তাঁহার পুত্র যোনাথনের অস্থি বিন্যামীন দেশের সেলাতে তাঁহার পিতা কীশের কবরের মধ্যে রাখিল; তাহারা রাজার আজ্ঞানুসারে সমস্ত কর্ম্ম করিল। তৎপরে দেশের জন্য ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করা হইলে তিনি প্রসন্ন হইলেন। পলেষ্টীয়দের সহিত ইস্রায়েলের আবার যুদ্ধ বাধিল; তাহাতে দায়ূদ আপন দাসগণের সঙ্গে গিয়া পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ করিলেন; আর দায়ূদ ক্লান্ত হইলেন। তখন তিন শত [শেকল] পরিমিত পিত্তলময় বড়শাধারী যিশ্‌বী-বনোব নামে রফার এক সন্তান নবসজ্জায় সজ্জিত হইয়া দায়ূদকে আঘাত করিতে মনস্থ করিল। কিন্তু সরূয়ার পুত্র অবীশয় তাঁহার সাহায্য করিয়া সেই পলেষ্টীয়কে আঘাত ও বধ করিলেন। তখন দায়ূদের লোকেরা তাঁহার নিকটে দিব্য করিয়া কহিল, আপনি আর আমাদের সহিত যুদ্ধে যাইবেন না, ইস্রায়েলের প্রদীপ নির্ব্বাণ করিবেন না। তৎপরে আর এক বার গোবে পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ হইল; তখন হূশাতীয় সিব্বখয় রফার সন্তান সফকে বধ করিল। আবার পলেষ্টীয়দের সহিত গোবে যুদ্ধ হইল; আর যারেওরগীমের পুত্র বৈৎলেহমীয় ইল্‌হানন তাঁতের নরাজের ন্যায় বড়শাধারী গাতীয় গলিয়াৎকে বধ করিল, ইহার বড়শা তাঁতের নরাজের ন্যায় ছিল। আর এক বার গাতে যুদ্ধ হইল; আর তথায় অতি দীর্ঘকায় এক জন ছিল, প্রতিহস্তপদে তাহার ছয় ছয় অঙ্গুলি, সর্ব্বশুদ্ধ চব্বিশ অঙ্গুলি ছিল, সেও রফার সন্তান। সে ইস্রায়েলকে টিট্‌কারি দিলে দায়ূদের ভ্রাতা শিমিয়ের পুত্র যোনাথন তাহাকে বধ করিল। রফার এই চারি সন্তান গাতে জন্মিয়াছিল, ইহারা দায়ূদ ও তাঁহার দাসগণের হাতে নিপতিত হইল। যে দিন সদাপ্রভু সমস্ত শত্রুর হস্ত হইতে এবং শৌলের হস্ত হইতে দায়ূদকে উদ্ধার করিলেন, সেই দিন তিনি সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই গীতের কথা নিবেদন করিলেন। তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু মম শৈল, মম দুর্গ ও মম রক্ষাকর্ত্তা, মম শৈলরূপ ঈশ্বর, আমি তাঁহার শরণাগত; মম ঢাল, মম ত্রাণ-শৃঙ্গ, মম উচ্চ দুর্গ, মম আশ্রয়স্থান, মম ত্রাতা, উপদ্রব হইতে আমার ত্রাণকারী। আমি কীর্ত্তনীয় সদাপ্রভুকে ডাকিব, এইরূপে আমার শত্রুগণ হইতে ত্রাণ পাইব। কেননা আমি মৃত্যুর তরঙ্গে বেষ্টিত, পাষণ্ডের বন্যাতে আশঙ্কিত ছিলাম; আমি পাতালের রজ্জুতে বেষ্টিত, মৃত্যুর পাশে জড়িত ছিলাম। সঙ্কটে আমি সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, আমার ঈশ্বরকে আহ্বান করিলাম; তিনি নিজ মন্দির হইতে আমার রব শুনিলেন, আমার আর্ত্তনাদ তাঁহার কর্ণগোচর হইল। তখন পৃথিবী টলিল, কম্পিত হইল, গগনমণ্ডলের ভিত্তি সকল বিচলিত হইল, ও টলিল, কারণ তিনি জ্বলিয়া উঠিলেন। তাঁহার নাসারন্ধ্র হইতে ধূম উদগত হইল, তাঁহার মুখনির্গত অগ্নি গ্রাস করিল; তদ্দ্বারা অঙ্গার সকল প্রজ্বলিত হইল। তিনি গগনকে নোয়াইয়া নামিলেন, অন্ধকার তাঁহার পদতলে ছিল; তিনি করূব আরোহণে উড্ডীন হইলেন, বায়ুর পক্ষযুগলের উপরে দর্শন দিলেন। তিনি তাম্বুর ন্যায় আপনার চতুর্দ্দিকে অন্ধকার, জলরাশি ও ঘন মেঘমালা স্থাপন করিলেন। তাঁহার সম্মুখবর্ত্তী তেজ হইতে জ্বলন্ত অঙ্গার সকল প্রজ্বলিত হইল। সদাপ্রভু আকাশ হইতে বজ্রনাদ করিলেন, পরাৎপর আপন রব শুনাইলেন। তিনি বাণ ছাড়িলেন, তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিলেন, বজ্র দ্বারা তাহাদিগকে উদ্বিগ্ন করিলেন। তখন সদাপ্রভুর তর্জ্জনে, তাঁহার নাসিকার প্রশ্বাসবায়ুতে, সমুদ্রের প্রণালী সকল প্রকাশ পাইল, ভূমণ্ডলের মূল সকল অনাবৃত হইল। তিনি ঊর্দ্ধ হইতে [হস্ত] বিস্তার করিলেন, আমাকে ধরিলেন, মহাজলরাশি হইতে আমাকে টানিয়া তুলিলেন; আমাকে উদ্ধার করিলেন, আমার বলবান শত্রু হইতে, আমার বিদ্বেষীগণ হইতে, কারণ তাহারা আমা অপেক্ষা শক্তিমান্‌। আমার বিপদের দিনে তাহারা আমার কাছে আসিল, কিন্তু সদাপ্রভু আমার অবলম্বন হইলেন। তিনি আমাকে বাহিরে প্রশস্ত স্থানে আনিলেন, আমাকে উদ্ধার করিলেন, কেননা তিনি আমাতে সন্তুষ্ট ছিলেন। সদাপ্রভু আমার ধার্ম্মিকতা-অনুযায়ী পুরস্কার দিলেন, আমার হস্তের শুচিতানুযায়ী ফল দিলেন। কেননা আমি সদাপ্রভুর পথে চলিয়াছি, দুষ্টতাপূর্ব্বক আমার ঈশ্বরকে ছাড়ি নাই। কারণ তাঁহার সমস্ত শাসন আমার সম্মুখে ছিল, আমি তাঁহার বিধিপথ হইতে দূরে যাই নাই। আর আমি তাঁহার উদ্দেশে সিদ্ধ ছিলাম, নিজ অপরাধ হইতে আপনাকে রক্ষা করিতাম। তাই সদাপ্রভু আমাকে আমার ধার্ম্মিকতা অনুসারে, তাঁহার সাক্ষাতে আমার শুচিতানুসারে ফল দিলেন। তুমি দয়াবানের সহিত সদয় ব্যবহার করিবে, সিদ্ধের সহিত সিদ্ধ ব্যবহার করিবে। তুমি শুচির সহিত শুচি ব্যবহার করিবে, কুটিলের সহিত চতুরের ব্যবহার করিবে। তুমি দুঃখীদিগকে নিস্তার করিবে, কিন্তু গর্ব্বীদের উপরে তোমার দৃষ্টি আছে, তুমি তাহাদিগকে অবনত করিবে। হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রদীপ; সদাপ্রভুই আমার অন্ধকার আলোকময় করেন। কেননা তোমার দ্বারা আমি সৈন্যদলের বিরুদ্ধে দৌড়ি, আমার ঈশ্বরের দ্বারা প্রাচীর উল্লঙ্ঘন করি। তিনিই ঈশ্বর, তাঁহার পথ সিদ্ধ; সদাপ্রভুর বাক্য পরীক্ষাসিদ্ধ, তিনি নিজ শরণাগত সকলের ঢাল। কারণ সদাপ্রভু ব্যতীত আর ঈশ্বর কে আছে? আমাদের ঈশ্বর ব্যতীত আর শৈল কে আছে? ঈশ্বর আমার দৃঢ় দুর্গ; তিনি সিদ্ধকে আপন পথে চালান; তিনি তাহার চরণ হরিণীর চরণবৎ করেন; আমার উচ্চস্থলীতে আমাকে সংস্থাপন করেন। তিনি আমার হস্তকে যুদ্ধ করিতে শিক্ষা দেন, তাই আমার বাহু তাম্রময় ধনুকে চাড়া দেয়। তুমি আমাকে নিজ পরিত্রাণ-ঢাল দিয়াছ, তব কোমলতা আমাকে মহান করিয়াছে। তুমি আমার নীচে পাদসঞ্চারের স্থান প্রশস্ত করিয়াছ, আর আমার গুল্‌ফ বিচলিত হয় নাই। আমি আপন শত্রুগণের পশ্চাতে দৌড়িয়া তাহাদিগকে বিনষ্ট করিয়াছি, সংহার না করিয়া ফিরিয়া আসি নাই। আমি তাহাদিগকে সংহার করিয়া চূর্ণ করিয়াছি, তাই তাহারা উঠিতে পারে না, তাহারা আমার পদতলে পতিত হইয়াছে। কারণ তুমি যুদ্ধার্থে বল দিয়া আমার কটিবন্ধন করিয়াছ, যাহারা আমার বিরুদ্ধে উঠিয়াছিল, তাহাদিগকে তুমি আমার অধীনে নত করিয়াছ। তুমি আমার শত্রুগণকে আমা হইতে ফিরাইয়া দিয়াছ; আমি আপন বিদ্বেষীদিগকে সংহার করিয়াছি। তাহারা চাহিয়া রহিল, কিন্তু ত্রাণকর্ত্তা কেহ নাই; তাহারা সদাপ্রভুর দিকে চাহিল, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে উত্তর দিলেন না। তখন আমি পৃথিবীর ধূলির ন্যায় তাহাদিগকে চূর্ণ করিলাম, পথের কর্দ্দমের ন্যায় তাহাদিগকে দলিত করিলাম, এবং ছড়াইয়া ফেলিলাম। তুমিও আমাকে প্রজাদের দ্রোহ হইতে উদ্ধার করিয়াছ; জাতিগণের মস্তক হইবার জন্য রাখিয়াছ, আমার অপরিচিত জাতি আমার দাস হইবে। বিজাতি-সন্তানেরা আমার কর্ত্তৃত্ব স্বীকার করিবে, শ্রবণমাত্র তাহারা আমার আজ্ঞাকারী হইবে। বিজাতি-সন্তানেরা ম্লান হইবে, সকম্পে স্ব স্ব গোপনীয় স্থান হইতে আসিবে। সদাপ্রভু জীবিত, মম শৈল ধন্য হউন; মম ত্রাণ-শৈল ঈশ্বর উন্নত হউন। সেই ঈশ্বর আমার পক্ষে প্রতিশোধ দেন, জাতিগণকে আমার অধীনে নত করেন; আমার শত্রুগণ হইতে আমাকে উদ্ধার করেন; যাহারা আমার বিরুদ্ধে উঠে, তুমি তাহাদের উপরেও আমাকে উন্নত করিতেছ; তুমি দুর্বৃত্ত লোক হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়া থাক। এই কারণ, হে সদাপ্রভু, আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার স্তব করিব, তব নামের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিব। তিনি আপন রাজাকে মহাপরিত্রাণ দেন, আপন অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন, যুগে যুগে দায়ূদের ও তাহার বংশের প্রতি দয়া করেন। দায়ূদের শেষ বাক্য এই। যিশয়ের পুত্র দায়ূদ কহিতেছে, সেই উচ্চীকৃত পুরুষ কহিতেছে, যে যাকোবের ঈশ্বর কর্ত্তৃক অভিষিক্ত, যে ইস্রায়েলের মধুর গায়ক, সে কহিতেছে, আমার দ্বারা সদাপ্রভুর আত্মা বলিয়াছেন, তাঁহার বাণী আমার জিহ্বাগ্রে রহিয়াছে। ইস্রায়েলের ঈশ্বর কহিয়াছেন, ইস্রায়েলের শৈল আমাকে বলিয়াছেন, যিনি মনুষ্যদের উপরে ধার্ম্মিকতায় কর্ত্তৃত্ব করেন, যিনি ঈশ্বর-ভয়ে কর্ত্তৃত্ব করেন, তিনি প্রাতঃকালের, সুর্য্যোদয় কালের, মেঘরহিত প্রাতঃকালের দীপ্তির ন্যায় হইবেন; যখন বৃষ্টির পরবর্ত্তী তেজঃপ্রযুক্ত ভূতল হইতে নবীন তৃণ বহির্গত হয়। ঈশ্বরের নিকটে আমার কুল কি তাদৃশ নয়? হাঁ, তিনি আমার সহিত এক চিরস্থায়ী নিয়ম করিয়াছেন; তাহা সর্ব্ববিষয়ে সুসম্পন্ন ও সুরক্ষিত; ইহা ত আমার সম্পূর্ণ ত্রাণ ও সম্পূর্ণ অভীষ্ট; তিনি কি তাহা অঙ্কুরিত করাইবেন না? কিন্তু পাষণ্ডেরা সকলে উৎপাটনীয় কন্টক; কন্টক ত হস্তে ধরা যায় না। যে পুরুষ তাহাদিগকে স্পর্শ করিবেন, তিনি প্রেক ও বড়শাদণ্ডে পূর্ণ হইবেন; পরে তাহারা স্বস্থানে অগ্নিতে ভস্মীভূত হইবে। দায়ূদের বীরগণের নামাবলী। তখমোনীয় যোশেব-বশেবৎ সেনানীবর্গের অধ্যক্ষ ছিলেন; ইস্‌নীয় আদীনো, তিনি এককালে নিহত আটশত লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছিলেন। তাঁহার পরে এক জন অহোহীয়ের সন্তান দোদয়ের পুত্র ইলিয়াসর; তিনি দায়ূদের সঙ্গী বীরত্রয়ের এক জন; তাঁহারা পলেষ্টীয়দিগকে টিট্‌কারি দিলে পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধার্থে তথায় একত্র হইল, এবং ইস্রায়েল লোকেরা নিকটে আসিতেছিল, ইতিমধ্যে তিনি দাঁড়াইয়া যে পর্য্যন্ত তাঁহার হস্ত শ্রান্ত না হইল, তাবৎ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিলেন; শেষে খড়্‌গে তাঁহার হস্ত যোড়া লাগিয়া গেল; আর সদাপ্রভু সেই দিনে মহানিস্তার করিলেন, এবং লোকেরা কেবল লুট করিবার জন্য তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে গেল। তাঁহার পরে হরারীয় আগির পুত্র শম্ম; পলেষ্টীয়েরা এক মসূর-ক্ষেত্রের নিকটে একত্র হইয়া দল বাঁধিলে যখন লোকেরা পলেষ্টীয়দের হইতে পলায়ন করিল, তখন শম্ম সেই ক্ষেত্রমধ্যে দাঁড়াইয়া তাহা উদ্ধার করিলেন, এবং পলেষ্টীয়দিগকে বধ করিলেন; আর সদাপ্রভু মহানিস্তারে তাহাদিগকে নিস্তার করিলেন। আর ত্রিশ জন প্রধানের মধ্যে তিন জন ফসল কাটার সময়ে অদুল্লম গুহাতে দায়ূদের নিকটে আসিলেন; তখন পলেষ্টীয়দের সৈন্য রফায়ীম তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিয়াছিল। আর দায়ূদ দুর্গম স্থানে ছিলেন, এবং পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদল বৈৎলেহমে ছিল। পরে দায়ূদ পিপাসাতুর হইয়া কহিলেন, হায়! কে আমাকে বৈৎলেহমের দ্বারের নিকটস্থ কূপের জল আনিয়া পান করিতে দিবে? তাহাতে ঐ বীরত্রয় পলেষ্টীয়দের সৈন্যমধ্য দিয়া গিয়া বৈৎলেহমের দ্বারের নিকটস্থ কূপের জল তুলিয়া লইয়া দায়ূদের নিকটে আসিলেন, কিন্তু তিনি তাহা পান করিতে সম্মত হইলেন না, সদাপ্রভুর উদ্দেশে ঢালিয়া ফেলিলেন; তিনি কহিলেন, হে সদাপ্রভু, এমন কর্ম্ম যেন আমি না করি; ইহা কি সেই মনুষ্যদের রক্ত নয়, যাহারা প্রাণপণে গিয়াছিল; অতএব তিনি তাহা পান করিতে সম্মত হইলেন না। ঐ বীরত্রয় এই সকল কার্য্য করিয়াছিলেন। আর সরূয়ার পুত্র যোয়াবের ভ্রাতা অবীশয় সেই তিন জনের মধ্যে প্রধান ছিলেন। তিনি তিন শত লোকের উপরে আপন বড়শা চালাইয়া তাহাদিগকে বধ করিলেন ও নরত্রয়ের মধ্যে খ্যাতনামা হইলেন। তিনি কি সেই তিন জনের মধ্যে অধিক মর্য্যাদাপন্ন ছিলেন না? এই জন্য তাঁহাদের সেনাপতি হইলেন, তথাচ [প্রথম] নরত্রয়ের তুল্য ছিলেন না। আর অনেক বিক্রমের কার্য্যকারী কব্‌সেলীয় এক বীরের সন্তান যিহোয়াদার পুত্র যে বনায়, তিনি মোয়াবীয় অরীয়েলের দুই পুত্রকে বধ করিলেন; তদ্ভিন্ন তিনি হিমানীর সময়ে গিয়া গর্ত্তের মধ্যে একটা সিংহকে মারিলেন। আর তিনি এক জন সুপুরুষ মিস্রীয়কে বধ করিলেন। সেই মিস্রীয়ের হস্তে এক বড়শা, এবং ইহাঁর হস্তে এক দণ্ড ছিল; পরে ইনি গিয়া সেই মিস্রীয়ের হস্ত হইতে বড়শাটী কাড়িয়া লইয়া তাহারই বড়শা দ্বারা তাহাকে বধ করিলেন। যিহোয়াদার পুত্র বনায় এই সকল কার্য্য করিলেন, তাহাতে তিনি বীরত্রয়ের মধ্যে নামলদ্ধ হইলেন। তিনি ঐ ত্রিশ জন অপেক্ষা মর্য্যাদাপন্ন, কিন্তু [প্রথম] নরত্রয়ের তুল্য ছিলেন না; দায়ূদ তাঁহাকে আপন রক্ষিসেনার অধ্যক্ষ করিলেন। [24-39] যোয়াবের ভ্রাতা অসাহেল ঐ ত্রিশের মধ্যে এক জন ছিলেন; বৈৎলেহমস্থ দোদয়ের পুত্র ইল্‌হানন, হরোদীয় শম্ম, হরোদীয় ইলীকা, পল্টীয় হেলস, তকোয়ীয় ইক্কেশের পুত্র ঈরা, অনাথোতীয় অবীয়েষর, হূশাতীয় মবুন্নয়, অহোহীয় সল্‌মোন, নটোফাতীয় মহরয়, নটোফাতীয় বানার পুত্র হেলব, বিন্যামীন-সন্তানদের গিবিয়া-নিবাসী রীবয়ের পুত্র ইত্তয়, পিরিয়াথোনীয় বনায়, গাশ উপত্যকা নিবাসী হিদ্দয়, অর্বতীয় অবি-য়লবোন, বরহূমীয় অস্‌মাবৎ, শাল্‌বোনীয় ইলিয়হবা, যাশেনের পুত্র যোনাথন, হরারীয় শম্ম, অরারীয় সাররের পুত্র অহীয়াম, মাখাথীয়ের পৌত্র অহস্‌বয়ের পুত্র ইলীফেলট, গীলোনীয় অহীথোফলের পুত্র ইলীয়াম, কর্মিলীয় হিষ্রয়, অর্ব্বীয় পারয়, সোবানিবাসী নাথনের পুত্র যিগাল, গাদীয় বানী, অম্মোনীয় সেলক, সরূয়ার পুত্র যোয়াবের অস্ত্রবাহক বেরোতীয় নহরয়, যিত্রীয় ঈরা, যিত্রীয় গারেব, হিত্তীয় ঊরিয়; সর্ব্বশুদ্ধ সাঁইত্রিশ জন। আর ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ পুনর্ব্বার প্রজ্বলিত হইল, তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে দায়ূদকে প্রবৃত্তি দিলেন, কহিলেন, যাও, ইস্রায়েল ও যিহূদাকে গণনা কর। তখন রাজা আপন সৈন্যদলের সেনাপতি যোয়াব, যিনি তাঁহার সঙ্গে ছিলেন, তাঁহাকে আজ্ঞা করিলেন, তুমি দান অবধি বের্‌-শেবা পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের যাবতীয় বংশ-মধ্যে পর্য্যটন কর, তোমরা লোকদিগকে গণনা কর, আমি প্রজাগণের সংখ্যা জানিব। যোয়াব রাজাকে কহিলেন, এখন যত লোক আছে, আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহার শত গুণ বৃদ্ধি করুন, এবং আমার প্রভু মহারাজ তাহা স্বচক্ষে দেখুন; কিন্তু এই কর্ম্মে আমার প্রভু মহারাজের অভিরুচি কেন হইল? তথাপি যোয়াবের উপরে ও সেনাপতিদের উপরে রাজার কথাই প্রবল হইল। পরে যোয়াব ও সেনাপতিগণ ইস্রায়েল লোকদিগকে গণনা করিবার জন্য রাজার সম্মুখ হইতে গমন করিলেন। তাঁহারা যর্দ্দন পার হইয়া গাদ দেশস্থ উপত্যকার মধ্যস্থিত নগরের দক্ষিণ পার্শ্বে অরোয়েরে এবং যাসেরে শিবির স্থাপন করিলেন। পরে তাঁহারা গিলিয়দে ও তহতীম-হদ্‌শি দেশে আসিলেন; তাহার পর দান-যানে গিয়া ঘুরিয়া সীদোনে উপস্থিত হইলেন। পরে সোরদুর্গে এবং হিব্বীয়দের ও কনানীয়দের সমস্ত নগরে গমন করিলেন, আর শেষে যিহূদার দক্ষিণাঞ্চলে বের-শেবাতে উপস্থিত হইলেন। এই প্রকারে সমস্ত দেশ পর্য্যটন করিবার পর তাঁহারা নয় মাস বিশ দিনের শেষে যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিলেন। পরে যোয়াব গণিত লোকদের সংখ্যা রাজার কাছে দিলেন; ইস্রায়েলে খড়্‌গধারী আট লক্ষ বলবান লোক ছিল; আর যিহূদার পাঁচ লক্ষ লোক ছিল। দায়ূদ লোকদিগকে গণনা করাইলে পর তাঁহার হৃদয় ধুক্‌ ধুক্‌ করিতে লাগিল। দায়ূদ সদাপ্রভুকে কহিলেন, এই কার্য্য করিয়া আমি মহাপাপ করিয়াছি; এখন, হে সদাপ্রভু, বিনয় করি, নিজ দাসের অপরাধ ক্ষমা কর, কেননা আমি বড়ই অজ্ঞানের কর্ম্ম করিয়াছি। পরে যখন দায়ূদ প্রত্যূষে উঠিলেন, তখন দায়ূদের দর্শক গাদ ভাববাদীর নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি গিয়া দায়ূদকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তোমার সম্মুখে তিনটী [দণ্ড] রাখি, তাহার মধ্যে তুমি একটী মনোনীত কর, আমি তাহাই তোমার প্রতি করিব। পরে গাদ দায়ূদের নিকটে আসিয়া তাঁহাকে জ্ঞাত করিলেন, কহিলেন, আপনার দেশে সাত বৎসর ব্যাপিয়া কি দুর্ভিক্ষ হইবে? না আপনার বিপক্ষগণ যাবৎ আপনার পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করে, তাবৎ আপনি তিন মাস পর্য্যন্ত তাহাদের অগ্রে অগ্রে পলায়ন করিবেন? না তিন দিবস পর্য্যন্ত আপনার দেশে মহামারী হইবে? যিনি আমাকে পাঠাইলেন, তাঁহাকে কি উত্তর দিব, তাহা এখন বিবেচনা করিয়া দেখুন। দায়ূদ গাদকে কহিলেন, আমি বড়ই বিপদ্‌গ্রস্ত হইলাম; আইসুন, আমরা সদাপ্রভুর হস্তে পড়ি, কেননা তাঁহার করুণা প্রচুর; কিন্তু আমি মনুষ্যের হস্তে পড়িতে চাহি না। পরে প্রাতঃকাল অবধি নিরূপিত সময় পর্য্যন্ত সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপরে মহামারী পাঠাইলেন; আর দান অবধি বের্‌-শেবা পর্য্যন্ত লোকদের মধ্যে সত্তর সহস্র লোক মরিল। আর যখন দূত যিরূশালেম বিনষ্ট করিতে তৎপ্রতি হস্ত বিস্তার করিলেন, তখন সদাপ্রভু সেই বিপদের জন্য অনুশোচনা করিয়া সেই লোকবিনাশক দূতকে কহিলেন, যথেষ্ট হইয়াছে, এখন তোমার হস্ত সঙ্কুচিত কর। তখন সদাপ্রভুর দূত যিবূষীয় অরৌণার খামারের নিকটে ছিলেন। পরে দায়ূদ সেই লোকঘাতী দূতকে দেখিয়া সদাপ্রভুকে কহিলেন, দেখ, আমিই পাপ করিয়াছি, আমিই অপরাধ করিয়াছি, কিন্তু এই মেষগণ কি করিল? বিনয় করি, আমারই বিরুদ্ধে ও আমার পিতৃকুলের বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার কর। সেই দিন গাদ দায়ূদের কাছে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি উঠিয়া গিয়া যিবূষীয় অরৌণার খামারে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি স্থাপন করুন। অতএব দায়ূদ সদাপ্রভুর আজ্ঞামতে গাদের বাক্যানুসারে উঠিয়া গেলেন। তখন অরৌণা দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিতে পাইল, রাজা ও তাঁহার দাসগণ তাঁহার কাছে আসিতেছেন; তাহাতে অরৌণা বাহিরে আসিয়া রাজার সম্মুখে ভূমিতে উবুড় হইয়া প্রণিপাত করিল। আর অরৌণা কহিল, আমার প্রভু মহারাজ আপন দাসের নিকটে কি জন্য আসিয়াছেন? দায়ূদ কহিলেন, লোকদের উপর হইতে মহামারী যেন নিবৃত্ত হয়, এই জন্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিব বলিয়া আমি তোমার কাছে এই খামার কিনিতে আসিয়াছি। তখন অরৌণা দায়ূদকে কহিল, আমার প্রভু মহারাজের দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই লইয়া উৎসর্গ করুন; দেখুন, হোমবলির নিমিত্ত এই বৃষগুলি এবং কাষ্ঠের নিমিত্ত এই মর্দ্দনযন্ত্র ও বৃষদের সজ্জা আছে; হে রাজন্‌, অরৌণা রাজাকে এই সমস্ত দিতেছে। অরৌণা রাজাকে আরও কহিল, সদাপ্রভু আপনার ঈশ্বর আপনাকে গ্রাহ্য করুন। কিন্তু রাজা অরৌণাকে কহিলেন, তাহা নয়, আমি অবশ্য মূল্য দিয়া তোমার কাছে এই সমস্ত ক্রয় করিব; আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিনামূল্যে হোমবলি উৎসর্গ করিব না। পরে দায়ূদ পঞ্চাশ শেকল রৌপ্যে সেই খামার ও বৃষগুলি ক্রয় করিয়া লইলেন। আর দায়ূদ সেই স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়া হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিলেন। এইরূপে দেশের জন্য সদাপ্রভুর কাছে নিবেদন করিলে তিনি প্রসন্ন হইলেন, এবং ইস্রায়েলের উপর হইতে মহামারী নিবৃত্ত হইল। দায়ূদ রাজা বৃদ্ধ ও গতবয়স্ক হইয়াছিলেন; এবং লোকেরা তাঁহার গাত্রে অনেক বস্ত্র দিলেও তাহা উষ্ণ হইত না। এই জন্য তাঁহার দাসগণ তাঁহাকে কহিল, আমাদের প্রভু মহারাজের নিমিত্ত একটী যুবতী কুমারীর অন্বেষণ করা যাউক; সে মহারাজের সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাঁহার শুশ্রূষা করুক; এবং আমাদের প্রভু মহারাজের গাত্র যেন উষ্ণ হয়, তজ্জন্য আপনার বক্ষঃস্থলে শয়ন করুক। পরে লোকেরা ইস্রায়েলের সমস্ত অঞ্চলে সুন্দরী যুবতীর অন্বেষণ করিল, ও শূনেমীয়া অবীশগকে পাইয়া রাজার নিকটে আনিল। সেই যুবতী অতি সুন্দরী ছিল, আর সে রাজার শুশ্রূষা ও তাঁহার পরিচর্য্যা করিত, কিন্তু রাজা তাহার পরিচয় লইলেন না। আর হগীতের পুত্র আদোনিয়, আমিই রাজা হইব, বলিয়া বড়াই করিতে লাগিল, এবং আপনার নিমিত্ত রথ, অশ্বারোহী ও আপনার অগ্রে অগ্রে দৌড়িবার জন্য পঞ্চাশ জন লোক প্রস্তুত করিল। তাহার পিতা কোন সময়ে তাহাকে এ কথা বলিয়া অসন্তুষ্ট করেন নাই যে, তুমি কেন এমন করিয়াছ? এবং সেও পরম সুন্দর পুরুষ ছিল; আর অবশালোমের পরে তাহার জন্ম হয়। সে সরূয়ার পুত্র যোয়াবের ও অবিয়াথর যাজকের সহিত পরামর্শ করিল; আর তাঁহারা আদোনিয়ের অনুগামী হইয়া তাহার সাহায্য করিলেন। কিন্তু সাদোক যাজক, যিহোয়াদার পুত্র বনায়, নাথন ভাববাদী, শিমিয়ি, রেয়ি ও দায়ূদের বীরগণ আদোনিয়ের পক্ষে হন নাই। পরে আদোনিয় ঐন্‌-রোগেলের পার্শ্বস্থ সোহেলৎ প্রস্তরের নিকটে অনেক মেষ, বৃষ ও হৃষ্টপুষ্ট গোবৎস বলিদান করিল, এবং আপনার ভ্রাতৃগণ সমস্ত রাজপুত্রকে ও রাজার দাস যিহূদার সমস্ত লোককে নিমন্ত্রণ করিল; কিন্তু নাথন ভাববাদীকে, বনায়কে, বীরগণকে ও আপন ভ্রাতা শলোমনকে নিমন্ত্রণ করিল না। তখন নাথন শলোমনের মাতা বৎশেবাকে কহিলেন, আপনি কি শুনেন নাই যে, হগীতের পুত্র আদোনিয় রাজত্ব করিতেছে, আর আমাদের প্রভু দায়ূদ রাজা তাহা জানেন না? এক্ষণে আইসুন, বিনয় করি, আমি আপনাকে পরামর্শ দিই, যেন আপনি নিজের প্রাণ ও আপন পুত্র শলোমনের প্রাণ বাঁচাইতে পারেন। চলুন, দায়ূদ রাজার নিকটে গিয়া তাঁহাকে বলুন, হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনি কি শপথ করিয়া আপন দাসীকে বলেন নাই, আমার পরে তোমার পুত্র শলোমন রাজত্ব করিবে, সেই আমার সিংহাসনে বসিবে? তবে আদোনিয় রাজত্ব করে কেন? দেখুন, সেই স্থানে রাজার সঙ্গে আপনার কথা শেষ না হইতে হইতে আমিও আপনার পশ্চাতে আসিয়া আপনার কথার পোষকতা করিব। পরে বৎশেবা অন্তরাগারে রাজার নিকটে গেলেন; তৎকালে রাজা অতি বৃদ্ধ হইয়াছিলেন, এবং শূনেমীয়া অবীশগ রাজার পরিচর্য্যা করিতেছিল। তখন বৎশেবা মস্তক নমন করিয়া রাজার কাছে প্রণিপাত করিলেন। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার বাঞ্ছা কি? তিনি কহিলেন, হে আমার প্রভু, আপনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে শপথ করিয়া আপন দাসীকে বলিয়াছিলেন, ‘আমার পরে তোমার পুত্র শলোমন রাজত্ব করিবে, সেই আমার সিংহাসনে বসিবে’। কিন্তু এখন, দেখুন, আদোনিয় রাজত্ব করিতেছে, আর হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনি তাহা জানেন না। সে বিস্তর বৃষ, হৃষ্টপুষ্ট গোবৎস ও মেষ বলিদান করিয়া সমস্ত রাজপুত্রকে, অবিয়াথর যাজককে ও যোয়াব সেনাপতিকে নিমন্ত্রণ করিয়াছে, কিন্তু আপনার দাস শলোমনকে নিমন্ত্রণ করে নাই। হে আমার প্রভু মহারাজ, সমস্ত ইস্রায়েলের দৃষ্টি আপনারই উপরে আছে, আপনার পরে আমার প্রভু মহারাজের সিংহাসনে কে বসিবে, তাহা আপনি লোকদিগকে জ্ঞাত করুন; নতুবা আমার প্রভু মহারাজ পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলে আমি ও আমার পুত্র শলোমন অপরাধী গণিত হইব। আর দেখ, তিনি রাজার সহিত কথা কহিতেছেন, ইতিমধ্যে নাথন ভাববাদী আসিলেন। তখন কেহ রাজাকে কহিল, দেখুন, নাথন ভাববাদী। পরে নাথন রাজার সম্মুখে আসিয়া ভূমিতে উবুড় হইয়া রাজার সম্মুখে প্রণিপাত করিলেন। আর নাথন কহিলেন, হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনি কি এমন কথা বলিয়াছেন যে, আমার পরে আদোনিয় রাজত্ব করিবে, ও আমার সিংহাসনে সেই বসিবে? সে ত আজই গিয়া বিস্তর বৃষ, হৃষ্টপুষ্ট গোবৎস ও মেষ বলিদান করিয়া সমস্ত রাজপুত্রকে, সেনাপতিগণকে ও অবিয়াথর যাজককে নিমন্ত্রণ করিয়াছে; আর দেখুন, তাহারা তাহার সাক্ষাতে ভোজন পান করিতেছে, ও বলিতেছে, রাজা আদোনিয় চিরজীবী হউন। কিন্তু আপনার দাস যে আমি, আমাকে ও সাদোক যাজককে এবং যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে ও আপনার দাস শলোমনকে সে নিমন্ত্রণ করে নাই। এ কর্ম্ম কি আমার প্রভু মহারাজের আদেশে হইয়াছে? আর আমার প্রভু মহারাজের পরে কে আপনার সিংহাসনে বসিবে, তাহা আপনার দাসদিগকে জ্ঞাত করেন নাই? তখন দায়ূদ রাজা উত্তর করিলেন, বৎশেবাকে আমার নিকটে ডাকিয়া আন। তিনি রাজার নিকটে আসিয়া রাজার সম্মুখে দাঁড়াইলেন। রাজা শপথ করিয়া কহিলেন, যিনি সমস্ত সঙ্কট হইতে আমার প্রাণ মুক্ত করিয়াছেন, সেই জীবিত সদাপ্রভুর দিব্য, আমার পরে তোমার পুত্র শলোমন রাজত্ব করিবে, সেই আমার পদে আমার সিংহাসনে বসিবে, তোমার নিকটে আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম লইয়া এই যে শপথ করিয়াছি, অদ্যই তদনুরূপ কর্ম্ম করিব। তখন বৎশেবা মস্তক নমন করিয়া, ভূমিতে মুখ দিয়া, রাজার কাছে প্রণিপাত করিয়া কহিলেন, আমার প্রভু দায়ূদ রাজা নিত্যজীবী হউন। পরে দায়ূদ রাজা কহিলেন, সাদোক যাজককে, নাথন ভাববাদীকে ও যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে আমার কাছে ডাকিয়া আন। তাঁহারা রাজার সম্মুখে আসিলেন। রাজা তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আপন প্রভুর দাসগণকে সঙ্গে লইয়া আমার পুত্র শলোমনকে আমার নিজের অশ্বতরে আরোহন করাইয়া গীহোনে নামিয়া যাও। সেই স্থানে সাদোক যাজক ও নাথন ভাববাদী তাহাকে ইস্রায়েলের উপরে রাজপথে অভিষেক করুন, এবং তোমরা সকলে তূরী বাজাইয়া বল, রাজা শলোমন চিরজীবী হউন। পরে তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে উঠিয়া আইস; সে আসিয়া আমার সিংহাসনে বসিবে, কেননা সে আমার পদে রাজা হইবে; আমি ইস্রায়েলের ও যিহূদার উপরে তাহাকে নায়ক করিয়া নিযুক্ত করিলাম। তাহাতে যিহোয়াদার পুত্র বনায় রাজাকে উত্তর করিলেন, বলিলেন, আমেন, আমার প্রভু মহারাজের ঈশ্বর সদাপ্রভুও ইহাই বলুন। সদাপ্রভু যেমন আমার প্রভু মহারাজের সহবর্ত্তী থাকিয়া আসিয়াছেন, তেমনি শলোমনের সহবর্ত্তী থাকুন, এবং আমার প্রভু দায়ূদ রাজার সিংহাসন হইতে তাঁহার সিংহাসন বড় করুন। তখন সাদোক যাজক, নাথন ভাববাদী, যিহোয়াদার পুত্র বনায়, এবং করেথীয় ও পলেথীয়গণ গিয়া দায়ূদ রাজার অশ্বতরে শলোমনকে আরোহণ করাইয়া গীহোনে লইয়া গেলেন। পরে সাদোক যাজক [পবিত্র] তাম্বুর মধ্য হইতে তৈলের শৃঙ্গটী লইয়া শলোমনকে অভিষেক করিলেন; আর তূরী বাজাইলে সমস্ত লোক কহিল, রাজা শলোমন চিরজীবী হউন। আর সমস্ত লোক তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে উঠিয়া আসিল, এবং জনসমূহ এমন বংশীবাদ্য ও মহাহর্ষনাদ করিল যে, তাহার শব্দে পৃথিবী বিদীর্ণ হইল। তখন আদোনিয় ও তাহার সঙ্গী নিমন্ত্রিত লোকেরা ভোজন সাঙ্গ করিবামাত্র সেই ধ্বনি শুনিল। আর যোয়াব তূরীধ্বনি শুনিয়া কহিলেন, নগরে এত কলরব কেন হইতেছে? তিনি এই কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে দেখ, অবিয়াথর যাজকের পুত্র যোনাথন উপস্থিত হইল। আদোনিয় কহিল, আইস, তুমি ভদ্রলোক, সুসংবাদ আনিতেছ। যোনাথন উত্তর করিয়া আদোনিয়কে কহিল, সত্যই আমাদের প্রভু দায়ূদ রাজা শলোমনকে রাজপদে নিযুক্ত করিয়াছেন; রাজা সাদোক যাজককে, নাথন ভাববাদীকে ও যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে এবং করেথীয় ও পলেথীয়দিগকে তাঁহার সঙ্গে প্রেরণ করিয়াছেন; আর তাঁহারা তাঁহাকে রাজার অশ্বতরে আরোহণ করাইলেন; আর সাদোক যাজক ও নাথন ভাববাদী তাঁহাকে গীহোনে রাজপদে অভিষেক করিয়াছেন; এবং তাঁহারা তথা হইতে এমন আনন্দ করিতে করিতে আসিয়াছেন যে, নগর প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছে; তোমরা যে ধ্বনি শুনিলে, এ সেই ধ্বনি। আর শলোমন রাজ্যের সিংহাসনেও বসিয়াছেন। অধিকন্তু রাজার দাসগণ আসিয়া আমাদের প্রভু দায়ূদ রাজাকে এই বলিয়া আশীর্ব্বাদ করিয়াছে, আপনার ঈশ্বর শলোমনের নাম আপনার নাম হইতেও শ্রেষ্ঠ করুন, ও তাঁহার সিংহাসন আপনার সিংহাসন হইতেও মহৎ করুন; তখন রাজা শয্যার উপরে প্রণিপাত করিলেন। আরও রাজা এই কথা কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য, তিনি অদ্য আমার সিংহাসনে বসিবার জন্য এক ব্যক্তিকে দিলেন, এবং আমার নেত্রযুগল তাহা দেখিল। তখন আদোনিয়ের সঙ্গী নিমন্ত্রিত লোকেরা সকলে ভীত হইয়া প্রত্যেক জন উঠিয়া আপন আপন পথে চলিয়া গেল। আর আদোনিয় শলোমন হইতে ভীত হইল, এবং উঠিয়া গিয়া যজ্ঞবেদির শৃঙ্গ অবলম্বন করিল। পরে শলোমনের নিকটে কেহ এই কথা কহিল, দেখুন, আদোনিয় শলোমন রাজা হইতে ভীত হইয়াছে, কেননা দেখ, সে যজ্ঞবেদির শৃঙ্গ অবলম্বন করিয়াছে, বলিতেছে, শলোমন রাজা আপনার দাসকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিবেন না, আমার নিকটে অদ্য এই দিব্য করুন। তাহাতে শলোমন কহিলেন, যদি সে আপনাকে ভদ্রলোক দেখায়, তবে তাহার এক কেশও ভূমিতে পতিত হইবে না; কিন্তু যদি তাহার মধ্যে দুষ্টতা পাওয়া যায়, তবে সে মারা পড়িবে। পরে শলোমন রাজা লোক প্রেরণ করিলে তাহারা তাহাকে বেদি হইতে নামাইয়া আনিল; তাহাতে সে আসিয়া শলোমন রাজার কাছে প্রণিপাত করিল, এবং শলোমন তাহাকে কহিলেন, তোমার ঘরে যাও। পরে দায়ূদের মরণকাল সন্নিকট হইল; আর তিনি আপন পুত্র শলোমনকে আদেশ দিয়া কহিলেন, সমস্ত মর্ত্ত্যলোকের যে পথ, আমি সেই পথে গমন করিতেছি; তুমি বলবান হও ও পুরুষত্ব প্রকাশ কর। আর আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রক্ষণীয় বিধান রক্ষা করিয়া তাঁহার পথে চল, মোশির ব্যবস্থায় লিখিত তাঁহার বিধি, তাঁহার আজ্ঞা, তাঁহার শাসন ও তাঁহার সাক্ষ্য সকল পালন কর; যেন তুমি যে কোন কার্য্য কর, ও যে কোন দিকে ফির, বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতে পার; আর যেন, সদাপ্রভু আমার সম্বন্ধে যে বাক্য বলিয়াছেন, তাহা সংস্থাপন করেন; তিনি বলিয়াছেন, তোমার সন্তানেরা যদি সমস্ত অন্তঃকরণের ও সমস্ত প্রাণের সহিত আমার সম্মুখে সত্য আচরণ করিতে আপনাদের পথে সাবধানে চলে, তবে—তিনি বলেন,—ইস্রায়েলের সিংহাসনে তোমার [বংশে] লোকের অভাব হইবে না। আর সরূয়ার পুত্র যোয়াব আমার প্রতি যাহা করিয়াছে, ফলতঃ ইস্রায়েলের দুই সেনাপতির প্রতি, নেরের পুত্র অব্‌নেরের ও যেথরের পুত্র অমাসার প্রতি যাহা করিয়াছে, তাহাও তুমি জ্ঞাত আছ; সে তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিয়া শান্তির সময়ে যুদ্ধের রক্তপাত করিয়াছে, এবং যুদ্ধের রক্ত তাহার কটিদেশস্থ পটুকাতে ও পাদস্থিত পাদুকাতে লাগিয়াছে। অতএব তুমি বুদ্ধিসহকারে তাহার প্রতি ব্যবহার করিবে; তাহাকে পক্ব কেশে শান্তিতে পাতালে নামিতে দিও না। কিন্তু গিলিয়দীয় বর্সিল্লয়ের পুত্রগণের প্রতি সদয় ব্যবহার করিও, এবং তোমার মেজে ভোজনকারী লোকদের মধ্যে তাহাদিগকে স্থান দিও; কেননা তোমার ভ্রাতা অবশালোমের সম্মুখ হইতে আমার পলায়নকালে তাহারা তদ্রূপে আমার কাছে আসিয়াছিল। আর দেখ, তোমার কাছে বিন্যামীনীয় গেরার পুত্র বহুরীম-নিবাসী শিমিয়ি আছে; আমার মহনয়িমে যাইবার দিন সেই ব্যক্তি আমাকে নিদারুণ শাপ দিয়াছিল; কিন্তু সে আমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যর্দ্দনে আসিয়াছিল, আর আমি সদাপ্রভুর দিব্য করিয়া তাহাকে বলিয়াছিলাম, আমি তোমাকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিব না। কিন্তু তুমি এখন তাহাকে নিরপরাধ জ্ঞান করিবে না; কেননা তুমি বুদ্ধিমান; তাহার প্রতি তোমার যাহা কর্ত্তব্য, তাহা বুঝিবে; তাহাকে পক্ব কেশে রক্তের সহিত পাতালে নামাইবে। পরে দায়ূদ আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত এবং দায়ূদ-নগরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন। দায়ূদ ইস্রায়েলের উপরে চল্লিশ বৎসর রাজত্ব করেন; তিনি হিব্রোণে সাত বৎসর রাজত্ব করেন ও যিরূশালেমে তেত্রিশ বৎসর রাজত্ব করেন। পরে শলোমন আপন পিতা দায়ূদের সিংহাসনে বসিলেন, এবং তাঁহার রাজ্য অতিশয় দৃঢ় হইল। পরে হগীতের পুত্র আদোনিয় শলোমনের মাতা বৎশেবার নিকটে গেল। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি শান্তিভাবে আসিয়াছ ত? সে উত্তর করিল, শান্তিভাবে। সে আরও কহিল, আপনার কাছে আমার কিছু বলিবার আছে। বৎশেবা কহিলেন, বল। সে কহিল, আপনি জানেন, রাজ্য আমারই ছিল, এবং আমি রাজা হইব বলিয়া সমস্ত ইস্রায়েল আমার প্রতি উন্মুখ হইয়াছিল; কিন্তু রাজত্ব ঘূরিয়া গেল, আমার ভ্রাতার হইল; কেননা তাহা সদাপ্রভু হইতেই তাহার হইল। এখন আমি আপনার কাছে একটী বিষয় যাচ্ঞা করি, আপনি আমাকে অস্বীকার করিবেন না। তিনি কহিলেন, বল। তখন আদোনিয় কহিল, অনুগ্রহ করিয়া শলোমন রাজাকে বলুন—তিনি ত আপনার কথা অস্বীকার করিবেন না,—তিনি যেন আমার সহিত শূনেমীয়া অবীশগের বিবাহ দেন। বৎশেবা কহিলেন, ভাল, আমি তোমার নিমিত্ত রাজাকে বলিব। পরে বৎশেবা আদোনিয়ের জন্য বলিতে শলোমন রাজার নিকটে গেলেন; আর রাজা তাঁহার সম্মুখে উঠিয়া তাঁহার কাছে প্রণিপাত করিলেন। পরে তিনি আপন সিংহাসনে বসিলেন, এবং রাজমাতার কারণ আসন স্থাপন করাইলে তিনিও তাঁহার দক্ষিণদিকে বসিলেন। আর তিনি কহিলেন, আমি তোমার কাছে একটী ক্ষুদ্র বিষয় যাচ্ঞা করি, আমার কথা অস্বীকার করিও না। রাজা কহিলেন, মাতা, যাচ্ঞা কর, আমি তোমার কথা অস্বীকার করিব না। তখন তিনি কহিলেন, তোমার ভ্রাতা আদোনিয়ের সহিত শূনেমীয়া অবীশগের বিবাহ দিতে হইবে। শলোমন রাজা উত্তর করিয়া মাতাকে কহিলেন, তুমি আদোনিয়ের নিমিত্ত শূনেমীয়া অবীশগকে কেনা যাচ্ঞা কর? তাহার নিমিত্ত রাজ্যও যাচ্ঞা কর, কেননা সে আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা; তাহার ও অবিয়াথর যাজকের ও সরূয়ার পুত্র যোয়াবের নিমিত্ত [রাজ্য যাচ্ঞা কর]। পরে শলোমন রাজা সদাপ্রভুর দিব্য করিয়া কহিলেন, আদোনিয় যদি নিজ প্রাণের বিরুদ্ধে এই কথা বলিয়া না থাকে, তবে ঈশ্বর আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। আর এখন যিনি আপন প্রতিজ্ঞানুসারে আমাকে সুস্থির করিয়া আমার পিতা দায়ূদের সিংহাসনে বসাইয়াছেন ও আমার জন্য কুল নির্ম্মাণ করিয়াছেন, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, অদ্যই আদোনিয়ের প্রাণদণ্ড হইবে। তখন শলোমন রাজা যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে প্রেরণ করিলে তিনি তাহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন। পরে রাজা অবিয়াথর যাজককে কহিলেন, তুমি অনাথোতে আপন ক্ষেত্রে যাও, কেননা তুমিও মৃত্যুর পাত্র; তথাপি আমি অদ্য তোমার প্রাণদণ্ড করিব না, কারণ তুমি আমার পিতা দায়ূদের সম্মুখে প্রভু সদাপ্রভুর সিন্দুক বহন করিয়াছিলে, এবং আমার পিতার সমস্ত দুঃখভোগে দুঃখভোগ করিয়াছিলে। এইরূপে শলোমন অবিয়াথরকে সদাপ্রভুর যাজকের পদ হইতে দূর করিয়া দিলেন; ইহাতে সদাপ্রভুর বাক্য, —শীলোতে এলির কুলের বিপক্ষে তিনি যাহা বলিয়াছিলেন, —তাহা সিদ্ধ হইল। পরে সেই ঘটনার বার্ত্তা যোয়াবের কাছে উপস্থিত হইল; যোয়াব যদ্যপি অবশালোমের অনুবর্ত্তী হন নাই, তথাপি আদোনিয়ের অনুবর্ত্তী হইয়াছিলেন। এখন যোয়াব সদাপ্রভুর তাম্বুতে পলায়ন করিয়া যজ্ঞবেদির শৃঙ্গ ধরিলেন। পরে শলোমন রাজার কাছে এই সংবাদ আসিল যে, যোয়াব সদাপ্রভুর তাম্বুতে পলায়ন করিয়াছেন, আর দেখুন, তিনি বেদির পার্শ্বে আছেন। তাহাতে শলোমন যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে প্রেরণ করিলেন, কহিলেন, যাও, তাহাকে আক্রমণ কর। তাহাতে বনায় সদাপ্রভুর তাম্বুতে গমন করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, রাজা এই কথা বলেন, তুমি বাহিরে আইস। তিনি কহিলেন, তাহা হইবে না, আমি এই স্থানে মরিব। তখন বনায় রাজাকে সংবাদ জানাইয়া কহিলেন, যোয়াব অমুক কথা বলিয়াছেন, এবং আমাকে অমুক উত্তর দিয়াছেন। তখন রাজা কহিলেন, সে যাহা বলিয়াছে, সেই মত কর, তাহাকে আক্রমণ কর, আর তাহার কবর দেও; তাহা হইলে, যোয়াব অকারণে যে রক্তপাত করিয়াছে, তাহার অপরাধ তুমি আমার পক্ষ হইতে ও আমার পিতৃকুল হইতে দূর করিবে। আর সদাপ্রভু তাহার রক্তপাতের অপরাধ তাহারই মস্তকে বর্ত্তাইবেন; কেননা সে আমার পিতা দায়ূদের অজ্ঞাতসারে আপনা হইতে ধার্ম্মিক ও সৎ দুই ব্যক্তিকে, ইস্রায়েলের সেনাপতি নেরের পুত্র অব্‌নেরকে, ও যিহূদার সেনাপতি যেথরের পুত্র অমাসাকে আক্রমণ করিয়া খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়াছিল। তাহাদের রক্তপাতের অপরাধ যোয়াবের মস্তকে ও যুগে যুগে তাহার বংশের মস্তকে বর্ত্তিবে; কিন্তু দায়ূদের, তাঁহার বংশের, তাঁহার কুলের ও তাঁহার সিংহাসনের প্রতি সদাপ্রভু হইতে যুগে যুগে শান্তি বর্ত্তিবে। তখন যিহোয়াদার পুত্র বনায় উঠিয়া গিয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন; পরে প্রান্তরে তাঁহার বাটীতে তাঁহাকে কবর দেওয়া হইল। আর রাজা তাঁহার পদে যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে সেনাপতি করিলেন, এবং অবিয়াথরের পদ রাজা সাদোক যাজককে দিলেন। আর রাজা লোক পাঠাইয়া শিমিয়িকে ডাকাইয়া কহিলেন, তুমি যিরূশালেমে আপনার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া এই স্থানে বাস কর, এখান হইতে বাহির হইয়া অন্য কোন স্থানে যাইও না। তুমি যে দিন বাহির হইয়া কিদ্রোণ স্রোত পার হইবে, সেই দিন অবশ্য হত হইবে; এই নিশ্চয় জ্ঞাত হও; তোমার রক্তপাতের অপরাধ তোমারই মস্তকে বর্ত্তিবে। তাহাতে শিমিয়ি রাজাকে কহিল, এ কথা ভাল; আমার প্রভু মহারাজ যেমন কহিলেন, আপনার এই দাস সেইরূপই করিবে। পরে শিমিয়ি অনেক দিন পর্য্যন্ত যিরূশালেমে বাস করিল। কিন্তু তিন বৎসর পরে শিমিয়ির দুই দাস পলায়ন করিয়া মাখার পুত্র আখীশ নামে গাতীয় রাজার নিকটে গেল। তাহাতে কেহ শিমিয়িকে বলিল, দেখ, তোমার দাসেরা গাতে রহিয়াছে। তখন শিমিয়ি উঠিয়া গর্দ্দভ সাজাইয়া আপন দাসদের অন্বেষণে গাতে আখীশের নিকটে গেল, গিয়া শিমিয়ি গাৎ হইতে আপন দাসদিগকে আনিল। পরে শলোমনকে কেহ সংবাদ দিল, শিমিয়ি যিরূশালেম হইতে গাতে গিয়াছিল, এখন ফিরিয়া আসিয়াছে। রাজা লোক পাঠাইয়া শিমিয়িকে ডাকাইয়া কহিলেন, আমি কি তোমাকে সদাপ্রভুর দিব্য করাইয়া তোমার বিপক্ষে এই সাক্ষ্য দিই নাই যে, নিশ্চয় জ্ঞাত হও, তুমি যে দিন বাহিরে যাইবে, স্থানান্তরে ভ্রমণ করিবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে? আর তুমি আমাকে বলিয়াছিলে, আমি যে কথা শুনিলাম, সে ভাল কথা। তবে তুমি সদাপ্রভুর দিব্য ও তোমাকে দত্ত আমার আজ্ঞা কেন পালন কর নাই? রাজা শিমিয়িকে আরও কহিলেন, আমার পিতা দায়ূদের প্রতি তোমার কৃত যে সমস্ত দুষ্টতার বিষয়ে তোমার মন সাক্ষ্য দেয়, তাহা তুমি জান; অতএব সদাপ্রভু তোমার দুষ্টতার ফল তোমার মস্তকে বর্ত্তাইবেন। কিন্তু শলোমন রাজা আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত হইবে, ও সদাপ্রভুর সম্মুখে দায়ূদের সিংহাসন যুগে যুগে স্থির থাকিবে। পরে রাজা যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে আজ্ঞা করিলে তিনি গিয়া তাহাকে আক্রমণ করিয়া বধ করিলেন। আর শলোমনের হস্তে রাজ্য সুস্থির হইল। শলোমন মিসর-রাজ ফরৌণের সহিত কুটুম্বিতা করিলেন, তিনি ফরৌণের কন্যাকে বিবাহ করিলেন, এবং যে পর্য্যন্ত আপন গৃহ, এবং সদাপ্রভুর গৃহ ও যিরূশালেমের চারিদিকের প্রাচীর-নির্ম্মাণ সমাপ্ত না করিলেন, সেই পর্য্যন্ত তাঁহাকে দায়ূদ-নগরে আনিয়া রাখিলেন। আর লোকেরা নানা উচ্চস্থলীতে বলিদান করিত, কেননা তৎকাল পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মিত হয় নাই। শলোমন সদাপ্রভুকে প্রেম করিতেন, আপন পিতা দায়ূদের বিধি অনুসারে চলিতেন, তথাপি উচ্চস্থলীতে বলিদান করিতেন ও ধূপ জ্বালাইতেন। একদা রাজা বলিদান করিবার জন্য গিবিয়োনে যান; কেননা সেই স্থান প্রধান উচ্চস্থলী ছিল; শলোমন তথাকার যজ্ঞবেদিতে এক সহস্র হোমবলি দান করিলেন। গিবিয়োনে সদাপ্রভু রাত্রিকালে স্বপ্নযোগে শলোমনকে দর্শন দিলেন। ঈশ্বর কহিলেন, যাচ্ঞা কর, আমি তোমাকে কি দিব? শলোমন কহিলেন, তোমার দাস আমার পিতা দায়ূদ সত্যে, ধার্ম্মিকতায় ও তোমার উদ্দেশে হৃদয়ের সরলতায় তোমার সাক্ষাতে যেমন চলিতেন, তুমি তাঁহার প্রতি তদনুরূপ মহাদয়া প্রদর্শন করিয়াছ, আর তাঁহার প্রতি এই মহাদয়া করিয়াছ যে, তাঁহার সিংহাসনে বসিবার জন্য এক পুত্র তাঁহাকে দিয়াছ, যেমন অদ্য রহিয়াছে। এখন, হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমি আমার পিতা দায়ূদের পদে আপনার এই দাসকে রাজা করিলে; কিন্তু আমি ক্ষুদ্র বালকমাত্র, বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে জানি না। আর তোমার দাস তোমার মনোনীত প্রজাদিগের মধ্যে রহিয়াছে, তাহারা এক মহাজাতি, বাহুল্যপ্রযুক্ত তাহাদের গণনা ও সংখ্যা করা যায় না। অতএব তোমার প্রজাদের বিচার করিতে ও ভাল মন্দের বিশেষ জানিতে তোমার এই দাসকে বুঝিবার চিত্ত প্রদান কর; কারণ তোমার এমন বৃহৎ প্রজাবৃন্দের বিচার করা কাহার সাধ্য? তখন প্রভুর দৃষ্টিতে ইহা তুষ্টিকর হইল যে, শলোমন এই বিষয় যাচ্ঞা করিলেন। আর ঈশ্বর তাঁহাকে কহিলেন, তুমি এই বিষয় যাচ্ঞা করিয়াছ, আপনার জন্য দীর্ঘায়ু যাচ্ঞা কর নাই, আপনার জন্য ঐশ্বর্য্য যাচ্ঞা কর নাই; এবং আপন শত্রুগণের প্রাণ যাচ্ঞা কর নাই; কিন্তু বিচার শ্রবণার্থে আপনার জন্য বুদ্ধি যাচ্ঞা করিয়াছ; এই কারণ দেখ, আমি তোমার বাক্যানুসারেই করিলাম। দেখ, আমি তোমাকে এমন জ্ঞানশালী ও বুঝিবার চিত্ত দিলাম যে, তোমার পূর্ব্বে তোমার তুল্য কেহ হয় নাই, এবং পরেও তোমার তুল্য কেহ উৎপন্ন হইবে না। আবার তুমি যাহা যাচ্ঞা কর নাই, তাহাও তোমাকে দিলাম, এমন ঐশ্বর্য্য ও গৌরব দিলাম যে, তোমার জীবনকালে রাজবর্গের মধ্যে কেহ তোমার তুল্য হইবে না। আর তোমার পিতা দায়ূদ যেমন চলিত, তেমনি তুমি যদি আমার আজ্ঞা সকল ও আমার বিধি সকল পালন করিতে আমার পথে চল, তবে আমি তোমার আয়ু দীর্ঘ করিব। পরে শলোমন জাগরিত হইলেন, আর দেখ, উহা স্বপ্ন। পরে তিনি যিরূশালেমে গিয়া সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া হোমবলি উৎসর্গ করিলেন, ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিলেন, এবং আপনার সমস্ত দাসকে এক ভোজ দিলেন। সেই সময়ে দুইটী স্ত্রীলোক—তাহারা বেশ্যা—রাজার নিকটে আসিয়া তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইল। একটী স্ত্রীলোক কহিল, হে আমার প্রভু, আমি ও এই স্ত্রীলোকটী উভয়ে এক ঘরে থাকি; এবং আমি উহার কাছে ঘরে থাকিয়া প্রসব করি। আমার প্রসবের পর তিন দিনের দিন এই স্ত্রীলোকটীও প্রসব করিল; তখন আমরা একত্র ছিলাম, ঘরে আমাদের সঙ্গে কোন অন্য লোক ছিল না, কেবল আমরা দুই জন ঘরে ছিলাম। আর রাত্রিতে এই স্ত্রীলোকটীর সন্তানটী মরিয়া গেল, কারণ এ তাহার উপরে শয়ন করিয়াছিল। তাহাতে এ মধ্যরাত্রে উঠিয়া, যখন আপনার দাসী আমি নিদ্রিতা ছিলাম, তখন আমার পার্শ্ব হইতে আমার সন্তানটীকে লইয়া নিজের কোলে শোয়াইয়া রাখিল, এবং নিজের মরা সন্তানটীকে আমার কোলে শোয়াইয়া রাখিল; প্রাতঃকালে আমি আপনার সন্তানটীকে দুধ দিতে উঠিলাম, আর দেখ, মরা ছেলে; কিন্তু সকালে তাহার প্রতি ভাল করিয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সে আমার প্রসূত সন্তান নয়। অন্য স্ত্রীলোকটী কহিল, না, জীবিত সন্তান আমার, মৃত সন্তান তোমার। প্রথম স্ত্রী কহিল, না, না, মৃত সন্তান তোমার, জীবিত সন্তান আমার। এইরূপে তাহারা দুই জনে রাজার সম্মুখে বলাবলি করিল। তখন রাজা কহিলেন, এক জন বলিতেছে, এই জীবিত সন্তান আমার, মৃত সন্তান তোমার; অন্য জন বলিতেছে, না, মৃত সন্তান তোমার, জীবিত সন্তান আমার। পরে রাজা বলিলেন, আমার কাছে একখানা খড়্‌গ আন। তাহাতে রাজার কাছে খড়্‌গ আনা হইল। রাজা বলিলেন, এই জীবিত ছেলেটীকে দুই খণ্ড করিয়া ফেল, আর এক জনকে অর্দ্ধেক, এবং অন্য জনকে অর্দ্ধেক দেও। তখন জীবিত ছেলেটী যাহার সন্তান, সেই স্ত্রী রাজাকে বলিল, (ফলে সন্তানের জন্য তাহার অন্তঃকরণ স্নেহে উত্তপ্ত হওয়াতে সে বলিল,) হে আমার প্রভু, বিনয় করি, জীবিত ছেলেটী উহাকে দিউন, ছেলেটীকে কোন মতে বধ করিবেন না। কিন্তু অপর জন কহিল, সে আমারও না হউক, তোমারও না হউক, দুই খণ্ড কর। তখন রাজা উত্তর করিয়া কহিলেন, জীবিত ছেলেটী উহাকে দেও, কোন মতে বধ করিও না; ঐ উহার মাতা। রাজা বিচারের এই নিষ্পত্তি করিলেন, তাহা শুনিয়া সমস্ত ইস্রায়েল রাজা হইতে ভীত হইল; কেননা তাহারা দেখিতে পাইল, বিচার করণার্থে তাঁহার অন্তরে ঈশ্বরদত্ত জ্ঞান আছে। শলোমন রাজা সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতেন। তাঁহার অমাত্যগণের নাম এই এই; সাদোকের পুত্র অসরিয় যাজক ছিলেন। শীশার পুত্র ইলীহোরফ ও অহিয় লেখক ছিলেন; অহীলুদের পুত্র যিহোশাফট ইতিহাসকর্ত্তা ছিলেন; আর যিহোয়াদার পুত্র বনায় সেনাপতি, এবং সাদোক ও অবিয়াথর যাজক ছিলেন; এবং নাথনের পুত্র অসরিয় অধ্যক্ষদের প্রধান, ও নাথনের পুত্র সাবূদ যাজক, রাজার মিত্র ছিলেন। আর অহীশার বাটীর অধ্যক্ষ, এবং অব্দের পুত্র অদোনীরাম [রাজার] কর্ম্মাধীন দাসদের অধ্যক্ষ ছিলেন। আর সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে শলোমনের নিযুক্ত বারো জন অধ্যক্ষ ছিলেন, তাঁহারা রাজার ও রাজবাটীর জন্য খাদ্য দ্রব্যের আয়োজন করিতেন; বৎসরের মধ্যে এক এক মাসের জন্য আয়োজন করিবার ভার এক এক জনের উপরে ছিল। তাঁহাদের নাম এই এই; পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে বিন্‌-হূর। মাকসে, শালবীমে, বৈৎ-শেমশে ও এলোন-বৈৎহাননে বিন্‌-দেকর। অরুব্বোতে বিন্‌-হেষদ; সোখো ও সমুদয় হেফর প্রদেশ তাঁহার অধীন ছিল। সমুদয় দোর উপগিরিতে বিন্‌-অবীনাদব; তিনি শলোমনের কন্যা টাফৎকে বিবাহ করেন। তানকে ও মগিদ্দোতে এবং সর্ত্তনের নিকটে ও যিষ্রিয়েলের নিম্নে স্থিত সমস্ত বৈৎশানে, অর্থাৎ বৈৎ-শান অবধি আবেল-মহোলা ও যক্‌মিয়ামের পার পর্য্যন্ত অহীলূদের পুত্র বানা। রামোৎ-গিলিয়দে বিন্‌-গেবর; গিলিয়দস্থ মনঃশি-সন্তান যায়ীরের গ্রাম সকল, এবং বাশনস্থ অর্গোব অঞ্চল, প্রাচীরবেষ্টিত ও পিত্তলের অর্গলবিশিষ্ট ষাটটী বৃহৎ নগর তাঁহার অধীন ছিল। মহনয়িমে ইদ্দোর পুত্র অহীনাদব। নপ্তালিতে অহীমাস; তিনিও শলোমনের এক কন্যাকে, বাসমৎকে, বিবাহ করেন। আশেরে ও বালোতে হূশয়ের পুত্র বানা। ইষাখরে পারূহের পুত্র যিহোশাফট। বিন্যামীনে এলার পুত্র শিমিয়ি। গিলিয়দ দেশে অর্থাৎ ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের ও বাশনের রাজা ওগের দেশে ঊরির পুত্র গেবর; উক্ত দেশে তিনিই একমাত্র অধ্যক্ষ ছিলেন। যিহূদা ও ইস্রায়েল সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় বহুসংখ্যক ছিল, তাহারা ভোজন পান ও আমোদ করিত। আর [ফরাৎ] নদী অবধি পলেষ্টীয়দের দেশ ও মিসরের সীমা পর্য্যন্ত যাবতীয় রাজ্যের উপরে শলোমন কর্ত্তৃত্ব করিতেন; শলোমনের সমস্ত জীবনকালে তাহারা তাঁহাকে উপঢৌকন দিত, এবং তাঁহার দাসত্ব করিত। শলোমনের প্রত্যেক দিনের আয়োজনীয় দ্রব্য এই ছিল, ত্রিশ কোর সূক্ষ্ম সূজী ও ষাট কোর ময়দা; দশটা পুষ্ট গোরু, ও মাঠ হইতে আনীত কুড়িটা গোরু, ও এক শত মেষ; ইহা ছাড়া হরিণ, মৃগী, কালসাব ও পুষ্ট পক্ষী। ফলে, তিনি তিপ্‌সহ অবধি ঘসা পর্য্যন্ত [ফরাৎ] নদীর এ পারস্থ সমস্ত দেশের, নদীর এ পারস্থ সকল রাজার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতেন; আর তাঁহার চারিদিকের সমস্ত অঞ্চলে শান্তি ছিল। শলোমনের সমস্ত অধিকার সময়ে দান অবধি বের্‌-শেবা পর্য্যন্ত যিহূদা ও ইস্রায়েল প্রত্যেক জন আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুর বৃক্ষের তলে নির্ভয়ে বাস করিত। শলোমনের রথের নিমিত্ত চল্লিশ সহস্র অশ্বশালা ও বারো সহস্র অশ্বারোহী ছিল। আর শলোমন রাজার নিমিত্ত ও শলোমন রাজার মেজে ভোজনকারীদের নিমিত্ত পূর্ব্বোক্ত অধ্যক্ষেরা প্রত্যেক জন আপন আপন নিরূপিত মাসে খাদ্য দ্রব্যের আয়োজন করিতেন, কিছুরই ত্রুটী করিতেন না। তাঁহারা প্রত্যেক জন আপন আপন কার্য্যভার অনুসারে অশ্ব ও দ্রুতগামী বাহন সকলের জন্য যথাস্থানে যব ও তৃণ আনিতেন। আর ঈশ্বর শলোমনকে বিপুল জ্ঞান ও সূক্ষ্মবুদ্ধি এবং সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় চিত্তের বিস্তীর্ণতা দিলেন। তাহাতে পূর্ব্বদেশের সমস্ত লোকের জ্ঞান ও মিস্রীয়দের যাবতীয় জ্ঞান হইতে শলোমনের অধিক জ্ঞান হইল। ফলে, তিনি সকল লোক হইতে জ্ঞানবান, ইষ্রাহীয় এথন, এবং মাহোলের পুত্র হেমন, কল্‌কোল ও দর্দা, ইহাঁদের হইতেও অধিক জ্ঞানবান হইলেন; এবং চারিদিকের সমস্ত জাতির মধ্যে তাঁহার সুখ্যাতি হইল। তিনি তিন সহস্র প্রবাদ বাক্য বলিতেন, ও তাঁহার এক সহস্র পাঁচটী গীত ছিল। আর তিনি লিবানোনের এরস বৃক্ষ হইতে প্রাচীরের গাত্রে উৎপন্ন এসোব তৃণ পর্য্যন্ত গাছ সকলের বর্ণনা করিতেন, এবং পশু, পক্ষী, উরোগামী জন্তু ও মৎস্যের বর্ণনা করিতেন। আর পৃথিবীস্থ যে সকল রাজা শলোমনের জ্ঞানের সংবাদ শুনিয়াছিলেন, তাঁহাদের নিকট হইতে সর্ব্বদেশীয় লোক শলোমনের জ্ঞানের উক্তি শুনিতে আসিত। আর সোরের রাজা হীরম শলোমনের নিকটে আপন দাসগণকে পাঠাইলেন; কেননা লোকেরা তাঁহার পিতার স্থানে তাঁহাকেই রাজপদে অভিষেক করিয়াছে, তিনি এই কথা শুনিয়াছিলেন; বাস্তবিক হীরম দায়ূদকে বরাবর ভালবাসিতেন। পরে শলোমন হীরমকে এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন, আপনি জানেন, আমার পিতা দায়ূদ তাঁহার চারিদিকে যুদ্ধ প্রযুক্ত আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিতে পারেন নাই; কিন্তু শেষে সদাপ্রভু সে সমস্ত তাঁহার পদতলস্থ করিলেন। আর এখন আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু চারিদিকে আমাকে বিশ্রাম দিয়াছেন; বিপক্ষ কেহ নাই, বিপদ-ঘটনাও কিছুই নাই। আর দেখুন, আমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবার সঙ্কল্প করিতেছি, কেননা সদাপ্রভু তদ্বিষয়ে আমার পিতা দায়ূদকে এই কথা বলিয়াছিলেন, আমি তোমার স্থানে তোমার যে পুত্রকে তোমার সিংহাসনে বসাইব, সেই আমার নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবে। অতএব এখন আপনি আপনার লোকদিগকে আমার নিমিত্ত লিবানোনে গিয়া এরস বৃক্ষ ছেদন করিতে আজ্ঞা করুন, আর আমার দাসগণ আপনার দাসগণের সহিত থাকিবে; আর আপনি যাহা বলিবেন, তদনুসারেই আমি আপনার দাসদিগকে বেতন দিব; কেননা আপনি জানেন, কাষ্ঠ ছেদন করিতে সীদোনীয়দের ন্যায় দক্ষ লোক আমাদের মধ্যে কেহ নাই। শলোমনের কথা শুনিয়া হীরম বড় আনন্দিত হইয়া কহিলেন, অদ্য সদাপ্রভু ধন্য, যেহেতু তিনি দায়ূদকে জ্ঞানবান পুত্র দিয়া এই মহাজাতির অধ্যক্ষ করিয়াছেন। পরে হীরম শলোমনের কাছে লোক পাঠাইয়া কহিলেন, আপনি আমার কাছে যে কথা বলিয়া পাঠাইয়াছেন, তাহা আমি শুনিলাম; আমি এরসকাষ্ঠ ও দেবদারুকাষ্ঠ সম্বন্ধে আপনার সমস্ত অভীষ্ট সিদ্ধ করিব। আমার দাসগণ লিবানোন হইতে তাহা নামাইয়া সমুদ্রে আনিবে, পরে আমি মাঁড় বাঁধিয়া সমুদ্রপথে আপনার নিরূপিত স্থানে প্রেরণ করিব, আর সেই স্থানে তাহা খুলিয়া দিব, তখন আপনি তাহা গ্রহণ করিবেন; এবং আমার বাটীর জন্য খাদ্য দ্রব্য যোগাইয়া আমার অভীষ্ট সিদ্ধ করিবেন। এইরূপে হীরম শলোমনের সমস্ত বাসনানুসারে এরসকাষ্ঠ ও দেবদারুকাষ্ঠ দিতে লাগিলেন। আর শলোমন হীরমের বাটীর ভক্ষ্যের জন্য তাঁহাকে বিশ সহস্র কোর গোম ও উখলিতে প্রস্তুত বিশ কোর তৈল দিতেন; এইরূপে শলোমন বৎসর বৎসর হীরমকে দিতেন। আর সদাপ্রভু আপন প্রতিজ্ঞানুসারে শলোমনকে জ্ঞান দিলেন। আর হীরমের ও শলোমনের মধ্যে শান্তি ছিল, এবং তাঁহারা দুই জনে নিয়ম করিলেন। আর শলোমন রাজা সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্য হইতে আপনার কর্ম্মাধীন দাস সংগ্রহ করিলেন; সেই দাসদের সংখ্যা ত্রিশ সহস্র লোক। আর তিনি মাসিক পালাক্রমে তাহাদের দশ সহস্র জনকে লিবানোনে প্রেরণ করিতেন; তাহারা এক এক মাস লিবানোনে থাকিত, ও দুই দুই মাস বাটীতে থাকিত; এবং অদোনীরাম [রাজার] কর্ম্মাধীন সেই লোকদের অধ্যক্ষ ছিলেন। আর শলোমনের সত্তর সহস্র ভারবাহক, ও পর্ব্বতে আশী সহস্র প্রস্তরছেদক ছিল। তদ্ভিন্ন শলোমনের কর্ম্মকারী লোকদের উপরে কর্ত্তৃত্বকারী তিন সহস্র তিন শত প্রধান কার্য্যাধ্যক্ষ ছিল। আর তক্ষিত প্রস্তর দ্বারা গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপনার্থে তাহারা রাজার আজ্ঞানুসারে বৃহৎ বৃহৎ প্রস্তর, বহুমূল্য প্রস্তর, কাটিয়া আনিল। পরে শলোমনের রাজেরা ও হীরমের রাজেরা, এবং গিব্লীয়েরা সে সকল তক্ষণ করিল; এইরূপে তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিবার জন্য কাষ্ঠ ও প্রস্তর সকল প্রস্তত করিল। মিসর দেশ হইতে ইস্রায়েল-সন্তানদের বাহির হইয়া আসিবার পর চারি শত আশী বৎসরে, ইস্রায়েলের উপরে শলোমনের রাজত্বের চতুর্থ বৎসরের সিব মাসে অর্থাৎ দ্বিতীয় মাসে শলোমন সদাপ্রভুর উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ করিলেন। শলোমন রাজা সদাপ্রভুর উদ্দেশে যে গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন, তাহা দীর্ঘে ষাট হস্ত, প্রস্থে কুড়ি, ও উচ্চে ত্রিশ হস্ত। আর সেই গৃহের মন্দিরের সম্মুখে এক বারাণ্ডা ছিল, তাহা গৃহের প্রস্থানুসারে কুড়ি হস্ত দীর্ঘ, ও গৃহের সম্মুখে দশ হস্ত প্রস্থ। আর গৃহের নিমিত্ত তিনি জালবদ্ধ বাতায়ন প্রস্তুত করিলেন। আর তিনি গৃহের ভিত্তির গাত্রে চারিদিকে, মন্দিরের ও অন্তর্গৃহের ভিত্তির গাত্রে চারিদিকে, থাক করিলেন; এবং চারিদিকে কুঠরী নির্ম্মাণ করিলেন। তাহার নীচের থাক পাঁচ হস্ত প্রস্থ, ও মধ্যের থাক ছয় হস্ত প্রস্থ, এবং তৃতীয় থাক সাত হস্ত প্রস্থ; কেননা [কড়িকাষ্ঠ] যেন ভিত্তির মধ্যে বদ্ধ না হয়, এই জন্য তিনি গৃহের চারিদিকে ভিত্তির বহির্ভাগ সোপানাকার করিলেন। আর গৃহের নির্ম্মাণকালে প্রস্তরাকরে প্রস্তুত প্রস্তর সকল দ্বারা তাহা নির্ম্মিত হইল; নির্ম্মাণকালে গৃহের মধ্যে হাতুড়ি, বাটালি বা আর কোন লৌহাস্ত্রের শব্দ শুনা গেল না। মধ্যের থাকের দ্বার গৃহের দক্ষিণদিকে ছিল, এবং লোকে পেঁচাল সিঁড়ী দিয়া মধ্যতালাতে, ও মধ্যতালা হইতে তৃতীয় তালাতে উঠিত। এইরূপে তিনি গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন, তাহা সমাপ্ত করিলেন, এবং এরসকাষ্ঠের কড়ি ও সারি সারি [ফলক] দ্বারা গৃহ আচ্ছাদন করিলেন। আর গৃহের সর্ব্বগাত্রে পাঁচ পাঁচ হস্ত উচ্চ কুঠরীর থাক করিলেন, তাহা এরসকাষ্ঠ দ্বারা গৃহের সহিত সংযুক্ত ছিল। পরে শলোমনের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি এই গৃহ নির্ম্মাণ করিতেছ; ভাল, যদি আমার সমস্ত বিধি-পথে চল, আমার শাসন সকল পালন কর, ও আমার সমস্ত আজ্ঞা গ্রহণ করিয়া তদনুসারে চল, তবে আমি তোমার পিতা দায়ূদকে যাহা বলিয়াছি, আমার সেই বাক্য তোমার পক্ষে সফল করিব। আর আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে বাস করিব, আপন প্রজা ইস্রায়েলকে ত্যাগ করিব না। এইরূপে শলোমন গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন, তাহা সমাপ্ত করিলেন। আর তিনি ভিতরে গৃহের ভিত্তি সকলের গাত্রে এরসকাষ্ঠের তক্তা দিলেন; তিনি ভিতরে গৃহের মেজিয়া অবধি ভিত্তির ছাদ পর্য্যন্ত ঐ কাষ্ঠ দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন, এবং গৃহের মেজিয়া দেবদারুকাষ্ঠের তক্তা দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন। আর বিংশতি হস্ত পরিমিত গৃহের যে পশ্চাদ্ভাগ, তাহা মেজিয়া অবধি ভিত্তির ছাদ পর্য্যন্ত এরসকাষ্ঠের তক্তা দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন, এবং ভিতরে অন্তর্গৃহের অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানের জন্য তাহা প্রস্তুত করিলেন। তাহাতে গৃহ, অর্থাৎ অগ্রস্থিত মন্দির চল্লিশ হস্ত দীর্ঘ হইল। আর গৃহমধ্যে এরসকাষ্ঠে বার্ত্তাকী ও বিকসিত পুষ্প ক্ষোদা হইল; সকলই এরসকাষ্ঠময় হইল, কিছুমাত্র প্রস্তর দৃষ্ট হইল না। আর ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুক স্থাপনার্থে গৃহের ভিতরে তিনি এক অন্তর্গৃহ প্রস্তুত করিলেন। তিনি অন্তর্গৃহ ভিতরে বিংশতি হস্ত দীর্ঘ ও বিংশতি হস্ত প্রস্থ ও বিংশতি হস্ত উচ্চ করিয়া নির্ম্মল স্বর্ণে মুড়াইলেন, এবং বেদি এরসকাষ্ঠে মুড়াইলেন। শলোমন নির্ম্মল স্বর্ণ দ্বারা গৃহের ভিতরের ভাগ মুড়াইলেন, এবং অন্তর্গৃহের সম্মুখে স্বর্ণশৃঙ্খল রাখিলেন, আর অন্তর্গৃহ স্বর্ণ দ্বারা মুড়াইলেন। তিনি সমস্ত গৃহ স্বর্ণে মুড়াইলেন, যে পর্য্যন্ত সমুদয় গৃহ সাঙ্গ না হইল; এবং অন্তর্গৃহের নিকটস্থ সমস্ত বেদিটী স্বর্ণে মুড়াইলেন। আর তিনি অন্তর্গৃহের মধ্যে দশ দশ হস্ত উচ্চ জিতকাষ্ঠের দুই করূব নির্ম্মাণ করিলেন। এক করূবের এক পক্ষ পাঁচ হস্ত, ও অন্য পক্ষ পাঁচ হস্ত ছিল; এক পক্ষের প্রান্তভাগ হইতে অন্য পক্ষের প্রান্তভাগ পর্য্যন্ত দশ হস্ত হইল। আর দ্বিতীয় করূবও দশ হস্ত ছিল; দুই করূবের সম পরিমাণ ও সম আকার ছিল। প্রথম এবং দ্বিতীয় দুই করূবই দশ দশ হস্ত উচ্চ ছিল। পরে তিনি সেই দুই করূবকে ভিতরের গৃহে স্থাপন করিলেন, এবং করূবদের পক্ষ এমন প্রসারিত হইল যে, একটীর পক্ষ এক ভিত্তি, অন্যটীর পক্ষ অন্য ভিত্তি স্পর্শ করিল, এবং তাহাদের পক্ষ গৃহমধ্যে পরস্পর স্পর্শ করিল। পরে তিনি করূব দুইটীকে স্বর্ণে মুড়াইলেন। আর করূবের, খর্জ্জুর বৃক্ষের ও বিকসিত পুষ্পের মূর্ত্তিতে গৃহের সমস্ত ভিত্তির গাত্র ভিতরে বাহিরে চারিদিকে ক্ষোদিত করিলেন; এবং গৃহের মেজিয়া ভিতরে বাহিরে স্বর্ণে মুড়াইলেন। আর তিনি অন্তর্গৃহের প্রবেশ-দ্বারে জিতকাষ্ঠের কবাট নির্ম্মাণ করিলেন, এবং কপালি ও বাজু [ভিত্তির] পঞ্চমাংশ হইল। ঐ জিতকাষ্ঠময় দুই কবাটে করূবের, খর্জ্জুর বৃক্ষের ও বিকসিত পুষ্পের আকৃতি ক্ষোদিত করিয়া স্বর্ণ দ্বারা তাহা মুড়াইলেন; আর করূব ও খর্জ্জুর বৃক্ষের উপরে স্বর্ণের পাত করিয়া দিলেন। তদ্রূপ তিনি মন্দিরের দ্বারের নিমিত্ত [ভিত্তির] চতুর্থাংশে জিতকাষ্ঠের চৌকাঠ করিলেন। আর দেবদারুকাষ্ঠের দুই কবাট নির্ম্মাণ করিলেন, এক কবাটের দুই বাইল যেমন কব্‌জাতে খেলিত, অন্য কবাটের দুই বাইলও তদ্রূপ কব্‌জাতে খেলিত। আর তিনি তাহার উপরে করূব, খর্জ্জুর বৃক্ষ ও বিকসিত পুষ্প ক্ষুদিয়া সেই ক্ষোদিত কর্ম্মশুদ্ধ তাহা স্বর্ণ দ্বারা মুড়াইলেন। আর তিনি তিন পংক্তি তক্ষিত প্রস্তর ও এক পংক্তি এরসকাষ্ঠের কড়ি দ্বারা ভিতর প্রাঙ্গণ নির্ম্মাণ করিলেন। চতুর্থ বৎসরের সিব মাসে সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপিত হয়। আর একাদশ বৎসরের বূল মাসে, অর্থাৎ অষ্টম মাসে নিরূপিত সমস্ত আকারানুসারে সর্ব্বাংশে গৃহের নির্ম্মাণ সমাপ্ত হয়; তিনি ঐ গৃহের নির্ম্মাণে সাত বৎসর ব্যাপৃত ছিলেন। আর শলোমন তের বৎসর আপন বাটী নির্ম্মাণে ব্যাপৃত থাকিলেন; পরে আপনার সমুদয় বাটীর নির্ম্মাণ সমাপন করিলেন। আর তিনি লিবানোন অরণ্যের বাটী নির্ম্মাণ করিলেন; তাহার দীর্ঘতা এক শত হস্ত, প্রস্থ পঞ্চাশ হস্ত ও উচ্চতা ত্রিশ হস্ত ছিল, তাহা চারি শ্রেণী এরসকাষ্ঠের স্তম্ভের উপরে স্থাপিত এবং স্তম্ভগুলির উপরে এরসকাষ্ঠের কড়ি বসান ছিল। স্তম্ভগুলির উপরে প্রত্যেক শ্রেণীতে পনের, সর্ব্বশুদ্ধ পঁয়তাল্লিশটী কুঠরী স্থাপিত হইল, তাহার উপরে এরসকাষ্ঠের ছাদ হইল। আর বাতাযুক্ত [চৌকাঠের] তিন শ্রেণী ছিল, এবং পরস্পর অনুরূপ বাতায়নের তিন পংক্তি ছিল। আর সমস্ত দ্বার ও চৌকাঠ চতুষ্কোণ ও বাতাযুক্ত, এবং পরস্পর অনুরূপ বাতায়নের তিন পংক্তি ছিল। আর তিনি স্তম্ভশ্রেণীর এক বারাণ্ডা প্রস্তুত করিলেন, তাহার দীর্ঘতা পঞ্চাশ হস্ত ও প্রস্থ ত্রিশ হস্ত, এবং তাহাদের সম্মুখে আর এক বারাণ্ডা করিলেন, তাহাতেও স্তম্ভশ্রেণী ও তাহার সম্মুখে গোবরাট ছিল। আর সিংহাসনের যে বারাণ্ডাতে তিনি বিচার করিবেন, সেই বিচারের বারাণ্ডা প্রস্তুত করিলেন, ও মেজিয়ার এক দিক্‌ অবধি অন্য দিক্‌ পর্য্যন্ত এরসকাষ্ঠ দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন। আর তাঁহার বাসগৃহ, বারাণ্ডার ভিতরে অন্য প্রাঙ্গণ, সেইরূপ ছিল। আর শলোমন যাঁহাকে বিবাহ করিয়াছিলেন, সেই ফরৌণের কন্যার নিমিত্ত ঐ বারাণ্ডার ন্যায় এক গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন। এই সকল ভিত্তিমূল অবধি আলিসা পর্য্যন্ত ভিতরে ও বাহিরে তক্ষিত প্রস্তরের পরিমাণ অনুসারে করাত দিয়া কাটা বহুমূল্য প্রস্তরে নির্ম্মিত হইয়াছিল, এবং বাহিরে বড় প্রাঙ্গণ পর্য্যন্ত তদ্রূপ হইল। আর বহুমূল্য প্রস্তরে ভিত্তিমূল নির্ম্মিত হইয়াছিল, সে সকল প্রস্তর বৃহৎ, দশ হাত প্রস্তর ও আট হাত প্রস্তর। তাহার উপরে বহুমূল্য প্রস্তর, পরিমাণ অনুসারে তক্ষিত প্রস্তর ও এরসকাষ্ঠ ছিল। আর যেমন সদাপ্রভুর গৃহের মধ্য প্রাঙ্গণে ও গৃহের বারাণ্ডাতে, তদ্রূপ বড় প্রাঙ্গণের চারিদিকে তিন শ্রেণী তক্ষিত প্রস্তর ও এক শ্রেণী এরসকাষ্ঠ ছিল। আর শলোমন রাজা লোক প্রেরণ করিয়া সোর হইতে হীরমকে আনাইলেন। সে নপ্তালি বংশীয় এক বিধবার পুত্র, এবং তাহার পিতা সোর নগরস্থ এক জন কাংস্যকার, পিত্তলের সমস্ত কর্ম্ম করিতে সে জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিদ্যায় পরিপূর্ণ ছিল; সে শলোমন রাজার কাছে আসিয়া তাঁহার সমস্ত কার্য্য করিল। সে পিত্তলের দুই স্তম্ভ নির্ম্মাণ করিল; তাহার এক এক স্তম্ভ আঠার হস্ত উচ্চ, এবং বারো হস্ত পরিমিত সূত্র দুই স্তম্ভ বেষ্টন করিল। আর দুই স্তম্ভের মস্তকে স্থাপনার্থে সে ছাঁচে ঢালা পিত্তলময় দুই মাথলা নির্ম্মাণ করিল, এক মাথলার উচ্চতা পাঁচ হস্ত, দ্বিতীয় মাথলার উচ্চতাও পাঁচ হস্ত। স্তম্ভের উপরিস্থ সেই মাথলার জন্য জালকার্য্যের জাল ও শৃঙ্খলের কার্য্যের পাকান রজ্জু ছিল; এক মাথলার জন্য সাতটা, অন্য মাথলার জন্যও সাতটা। এইরূপে সে স্তম্ভ দুইটী নির্ম্মাণ করিল; আর স্তম্ভের উপরিস্থ মাথলা আচ্ছাদন জন্য জালকার্য্যের উপরে বেষ্টন করিতে দুই শ্রেণী নির্ম্মাণ করিল; এবং অন্য মাথলার জন্যও তদ্রূপ করিল। আর বারাণ্ডাতে দুই স্তম্ভের উপরিস্থ মাথলা চারি হস্ত পর্য্যন্ত শোশন পুষ্পের আকৃতি-বিশিষ্ট ছিল। আর দুই স্তম্ভের উপরে, জালকার্য্যের নিকটস্থ মোটাভাগের কাছে মাথলা ছিল; এবং অন্য মাথলার উপরে চারিদিকে শ্রেণীবদ্ধ দুই শত দাড়িম্ব ছিল। পরে সে ঐ দুই স্তম্ভ মন্দিরের বারাণ্ডাতে স্থাপন করিল, এবং দক্ষিণ হস্ত স্থাপন করিয়া তাহার নাম যাখীন [তিনি সুস্থির করিবেন] রাখিল, এবং বাম স্তম্ভ স্থাপন করিয়া তাহার নাম বোয়স [ইহাতেই বল] রাখিল। ঐ দুই স্তম্ভের উপরে শোশন পুষ্পের আকৃতি ছিল; এইরূপে দুই স্তম্ভের কার্য্য সমাপ্ত হইল। পরে সে ছাঁচে ঢালা এক গোলাকার সমুদ্র-পাত্র নির্ম্মাণ করিল, তাহা এক কাণা অবধি অন্য কাণা পর্য্যন্ত দশ হস্ত, ও তাহার উচ্চতা পাঁচ হস্ত, এবং তাহার পরিধি ত্রিশ হস্ত ছিল। আর চারিদিকে কাণার নীচে সমুদ্র-পাত্র বেষ্টনকারী বার্ত্তাকীর শ্রেণী ছিল, প্রত্যেক হস্ত পরিমাণের মধ্যে দশ দশ বার্ত্তাকী ছিল; বার্ত্তাকীর দুই শ্রেণী ছিল, ঐ পাত্র ঢালিবার সময়ে সেই সকল ছাঁচে ঢালা গিয়াছিল। ঐ পাত্র বারোটী গোরুর উপরে স্থাপিত ছিল; তাহাদের তিনটী উত্তরমুখ, তিনটী পশ্চিমমুখ, তিনটী দক্ষিণমুখ, ও তিনটী পূর্ব্বমুখ ছিল; এবং সমুদ্র-পাত্র তাহাদের উপরে রহিল; তাহাদের সকলের পশ্চাদ্‌ভাগ ভিতরে থাকিল। ঐ পাত্র চারি অঙ্গুলি পুরু, ও তাহার কাণা পানপাত্রের কাণার সদৃশ, শোশন পুষ্পাকার ছিল; তাহাতে দুই সহস্র বাৎ ধরিত। পরে সে পিত্তলময় দশ পীঠ নির্ম্মাণ করিল। এক এক পীঠ চারি হস্ত দীর্ঘ, চারি হস্ত প্রস্থ ও তিন হস্ত উচ্চ ছিল। সেই সকল পীঠের গঠন এইরূপ; তাহাদের পাটা ছিল, সেই সকল পাটা বিটের মধ্যে ছিল। আর বিটের পাটায় সিংহ, গোরু ও করূব ছিল, এবং উপরিভাগে বিট সকলের উপরে বৈঠক ছিল, এবং সিংহ ও গোরু সকলের নীচে ঝুলান মালার মত কাজ ছিল। প্রত্যেক পীঠের পিত্তলময় চারি চক্র ও পিত্তলময় আল ছিল, এবং চারি পায়াতে স্থাপিত অবলম্বন ছিল, সেই সকল অবলম্বন প্রক্ষালন-পাত্রের নীচে ঢালা ছিল, এ প্রত্যেকের পার্শ্বে মালা ছিল। আর মাথলার মধ্যে ও তাহার উপরে তাহার মুখ এক হস্ত, কিন্তু তাহার মুখ বৈঠকের আকৃতির ন্যায় গোল ও দেড় হস্ত পরিমিত; এবং তাহার মুখের উপরেও শিল্পকার্য্য ছিল; এবং তাহার পাটা সকল গোল নয়, চতুষ্কোণ ছিল। আর পাটার নীচে চারি চক্র; ঐ চক্রের আল পীঠের সহিত সংযুক্ত ছিল; তাহার প্রত্যেক চক্র দেড় হস্ত উচ্চ। আর চক্র সকলের গঠন রথচক্রের গঠনের ন্যায়, এবং আল, নেমি, আড়া ও নাভি সকল ছাঁচে ঢালা ছিল। আর প্রত্যেক পীঠের চারি কোণে স্থাপিত চারি অবলম্বন ছিল; সেই অবলম্বন স্বয়ং পীঠের সহিত নির্ম্মিত ছিল। ঐ পীঠের উপরিস্থ অর্দ্ধ হস্ত উচ্চ বর্ত্তুলাকার হাতল এবং পীঠের উপরিস্থ অবলম্বন ও পাটা তাহার সহিত নির্ম্মিত ছিল। আর সে তাহার অবলম্বনের প্রদেশে ও তাহার ধারে প্রত্যেকের স্থান-পরিমাণ অনুসারে করূব, সিংহ ও খর্জ্জুর বৃক্ষ ক্ষুদিল ও চারিদিকে মালা দিল। এইরূপে সে সেই দশটী পীঠ নির্ম্মাণ করিল; সকলগুলিই এক ছাঁচে, এক পরিমাণে ও এক আকারে নির্ম্মিত। পরে সে পিত্তলময় দশটী প্রক্ষালন-পাত্র নির্ম্মাণ করিল, তাহার প্রত্যেক পাত্রে চল্লিশ বাৎ ধরিত, এবং প্রত্যেক পাত্র চারি হস্ত পরিমিত ছিল; আর ঐ দশটী পীঠের মধ্যে এক এক পীঠের উপরে এক এক প্রক্ষালন-পাত্র থাকিত। আর সে গৃহের দক্ষিণ পার্শ্বে পাঁচ পীঠ ও বাম পার্শ্বে পাঁচ পীঠ রাখিল; আর গৃহের দক্ষিণ পার্শ্বে পূর্ব্বদিকে দক্ষিণদিকের সম্মুখে সমুদ্র-পাত্র স্থাপন করিল। হীরম ঐ সকল প্রক্ষালন-পাত্র, হাতা ও বাটি নির্ম্মাণ করিল। এইরূপে হীরম শলোমন রাজার জন্য সদাপ্রভুর গৃহের যে সকল কর্ম্মে প্রবৃত্ত হইয়াছিল, সে সমস্ত সমাপ্ত করিল; অর্থাৎ দুই স্তম্ভ, ও সেই স্তম্ভের উপরিস্থ মাথলার দুই গোলাকার, ও সেই স্তম্ভের উপরিস্থ মাথলার দুই গোলাকার আচ্ছাদনার্থক দুই জালকার্য্য; আর দুই জালকার্য্যের জন্য চারি শত দাড়িম্বাকার, অর্থাৎ স্তম্ভের উপরিস্থ মাথলার দুই গোলাকার আচ্ছাদনার্থক এক এক জালকার্য্যের জন্য দুই শ্রেণী দাড়িম্বাকার; আর দশটী পীঠ ও পীঠের উপরে দশটী প্রক্ষালন-পাত্র; এবং একটী সমুদ্র-পাত্র ও সমুদ্র-পাত্রের নীচে দ্বাদশ গোরু; এবং স্থালী, হাতা ও বাটি; এই যে সকল পাত্র হীরম শলোমন রাজার নিমিত্ত সদাপ্রভুর গৃহের জন্য প্রস্তুত করিল, সকলই তেজোময় পিত্তল দ্বারা নির্ম্মাণ করিল। রাজা যর্দ্দনের অঞ্চলে সুক্কোৎ ও সর্ত্তনের মধ্যস্থিত কর্দ্দম ভূমিতে তাহা ঢালাইলেন। আর শলোমন অতি বাহুল্যপ্রযুক্ত ঐ সকল পাত্র তৌল করিলেন না; পিত্তলের পরিমাণ নির্ণয় করা গেল না। শলোমন সদাপ্রভুর গৃহস্থিত সমস্ত পাত্র নির্ম্মাণ করাইলেন; স্বর্ণবেদি ও দর্শনরুটী রাখিবার স্বর্ণমেজ; এবং অন্তর্গৃহের সম্মুখে দক্ষিণে পাঁচটী ও বামে পাঁচটী নির্ম্মল স্বর্ণময় দীপবৃক্ষ, এবং স্বর্ণময় পুষ্প, প্রদীপ ও চিমটা; আর নির্ম্মল স্বর্ণময় ডাবর, কর্ত্তরী, বাটি, চমস ও অঙ্গার-পাত্র; এবং ভিতরের গৃহের অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানের কবাটের জন্য এবং গৃহের অর্থাৎ মন্দিরের কবাটের জন্য স্বর্ণময় কব্‌জা করাইলেন। এইরূপে সদাপ্রভুর গৃহের জন্য শলোমন রাজার কৃত সমস্ত কার্য্য সম্পন্ন হইল। আর শলোমন আপন পিতা দায়ূদের পবিত্রীকৃত দ্রব্য সকল, অর্থাৎ রৌপ্য, স্বর্ণ ও পাত্র সকল আনাইয়া সদাপ্রভুর গৃহস্থিত ধনাগার সমূহে রাখিলেন। পরে শলোমন দায়ূদ-নগর অর্থাৎ সিয়োন হইতে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক উঠাইয়া আনিবার জন্য ইস্রায়েলের প্রাচীনগণকে ও সমস্ত বংশপতিকে, অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণের পিতৃকুলাধ্যক্ষদিগকে, যিরূশালেমে শলোমন রাজার নিকটে একত্র করিলেন। তাহাতে এথানীম মাসে, অর্থাৎ সপ্তম মাসে, উৎসব সময়ে ইস্রায়েলের সমস্ত লোক শলোমন রাজার নিকটে একত্র হইল। পরে ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনবর্গ উপস্থিত হইলে যাজকগণ সিন্দুকটী উঠাইল। আর তাহারা সদাপ্রভুর সিন্দুক, সমাগম-তাম্বু ও তাম্বুর মধ্যস্থিত সমস্ত পবিত্র পাত্র উঠাইয়া আনিল; যাজকেরা ও লেবীয়েরা এই সকল উঠাইয়া আনিল। আর শলোমন রাজা এবং তাঁহার কাছে সমাগত সমস্ত ইস্রায়েলমণ্ডলী তাঁহার সহিত সিন্দুকের সম্মুখে থাকিয়া অনেক মেষ ও গো বলিদান করিলেন; সে সমস্ত বাহুল্যপ্রযুক্ত অসংখ্য ও অগণ্য ছিল। পরে যাজকেরা সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক লইয়া গিয়া স্বস্থানে, গৃহের অন্তর্গৃহে, মহাপবিত্র স্থানে, দুই করূবের পক্ষের নীচে স্থাপন করিল। সেই করূবেরা সিন্দুকের স্থানের উপরে পক্ষ বিস্তার করিয়া রহিল, আর ঊর্দ্ধে করূবেরা সিন্দুক ও তাহার দুই বহন-দণ্ড আচ্ছাদন করিয়া রহিল। সেই দুই বহন-দণ্ড এমন লম্বা ছিল যে, তাহার অগ্রভাগ অন্তর্গৃহের সম্মুখে পবিত্র স্থান হইতে দৃষ্ট হইত, তথাপি তাহা বাহিরে দৃষ্ট হইত না; অদ্য পর্য্যন্ত তাহা সেই স্থানে আছে। সিন্দুকের মধ্যে আর কিছু ছিল না, কেবল সেই দুইখানা প্রস্তরফলক ছিল, যাহা মোশি হোরেবে তাহার মধ্যে রাখিয়াছিলেন; সেই সময়ে, মিসর হইতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের বাহির হইয়া আসিবার পর, সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত নিয়ম করিয়াছিলেন। আর পবিত্র স্থানের মধ্য হইতে যাজকদের বাহির হইবার সময়ে সদাপ্রভুর গৃহ মেঘে এমন পরিপূর্ণ হইল যে, মেঘ প্রযুক্ত যাজকেরা পরিচর্য্যা করিবার জন্য দাঁড়াইতে পারিল না; কেননা সদাপ্রভুর গৃহ সদাপ্রভুর প্রতাপে পরিপূর্ণ হইয়াছিল। তখন শলোমন কহিলেন, সদাপ্রভু বলিয়াছেন যে, তিনি ঘোর অন্ধকারে বাস করিবেন। আমি সত্যই তোমার এক বসতি-গৃহ নির্ম্মাণ করাইলাম; ইহা চিরকাল তোমার নিবাসস্থান। পরে রাজা মুখ ফিরাইয়া সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; আর সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজ দণ্ডায়মান হইল। আর তিনি কহিলেন, ধন্য সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর। তিনি আমার পিতা দায়ূদের কাছে আপন মুখে এই কথা বলিয়াছিলেন, এবং আপন হস্ত দ্বারা ইহা সফল করিয়াছেন, যথা, যে দিন আমার প্রজা ইস্রায়েলকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছি, সেই দিন হইতে আমি আপন নাম স্থাপন জন্য গৃহ নির্ম্মাণার্থে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্যে কোন নগর মনোনীত করি নাই; কিন্তু আমার প্রজা ইস্রায়েলের অধ্যক্ষ হইবার জন্য দায়ূদকে মনোনীত করিয়াছি। আর ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আমার পিতা দায়ূদের মনোরথ ছিল। কিন্তু সদাপ্রভু আমার পিতা দায়ূদকে কহিলেন, আমার নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিতে তোমার মানস হইয়াছে; তোমার এইরূপ মনস্থ করা ভালই বটে। তথাপি তুমি সেই গৃহ নির্ম্মাণ করিবে না, কিন্তু তোমার কটি হইতে উৎপন্ন পুত্রই আমার নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিবে। সদাপ্রভু এই যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহা সফল করিলেন; সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞানুসারে আমি আপন পিতা দায়ূদের পদে উৎপন্ন ও ইস্রায়েলের সিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়া ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এই গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছি। আর সদাপ্রভু আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিবার সময়ে তাহাদের সহিত যে নিয়ম করিয়াছিলেন, তাহার আধার যে সিন্দুক, সেই সিন্দুকের জন্য আমি এখানে একটী স্থান প্রস্তুত করিয়াছি। পরে শলোমন সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজের সাক্ষাতে সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির সম্মুখে দাঁড়াইয়া স্বর্গের দিকে অঞ্জলি বিস্তার করিলেন; আর তিনি কহিলেন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, উপরিস্থ স্বর্গে বা নীচস্থ পৃথিবীতে তোমার তুল্য ঈশ্বর নাই। সর্ব্বান্তঃকরণে যাহারা তোমার সাক্ষাতে চলে, তোমার সেই দাসগণের পক্ষে তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করিয়া থাক; তুমি তোমার দাস আমার পিতা দায়ূদের কাছে যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলে, তাহা পালন করিয়াছ, যাহা আপন মুখে বলিয়াছিলে, তাহা আপন হস্ত দ্বারা সিদ্ধ করিয়াছ, যেমন অদ্য দেখা যাইতেছে। এখন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি আপন দাস আমার পিতা দায়ূদের নিকটে যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলে, তাহা রক্ষা কর; তুমি বলিয়াছিলে, আমার দৃষ্টিতে ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসিতে তোমার [বংশে] লোকের অভাব হইবে না; কেবলমাত্র যদি আমার সাক্ষাতে তুমি যেমন চলিয়াছ, তোমার সন্তানগণ আমার সাক্ষাতে তদ্রূপ চলিবার জন্য আপন আপন পথে সাবধান থাকে। এখন, হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর, বিনয় করি, তোমার দাস আমার পিতা দায়ূদের কাছে যে কথা তুমি বলিয়াছিলে, তাহা দৃঢ় হউক। কিন্তু ঈশ্বর কি সত্য সত্যই পৃথিবীতে বাস করিবেন? দেখ, স্বর্গ ও স্বর্গের স্ব তোমাকে ধারণ করিতে পারে না, তবে আমার নির্ম্মিত এই গৃহ কি পারিবে? তথাপি হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমি আপন দাসের প্রার্থনায় ও বিনতিতে মনোযোগ কর, তোমার দাস অদ্য তোমার নিকটে যে কাকূক্তি ও প্রার্থনা করিতেছে, তাহা শুন। যে স্থানের বিষয়ে তুমি বলিয়াছ, ‘আমার নাম সেই স্থানে থাকিবে,’ সে স্থানের অর্থাৎ এই গৃহের প্রতি তোমার চক্ষু দিবারাত্র উন্মীলীত থাকুক, এবং এই স্থানের অভিমুখে তোমার দাস যে প্রার্থনা করে, তাহা শুনিও। আর তোমার দাস ও তোমার লোক ইস্রায়েল যখন এই স্থানের অভিমুখে প্রার্থনা করিবে, তখন তাহাদের বিনতিতে কর্ণপাত করিও; তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং শুনিয়া ক্ষমা করিও। কেহ আপন প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে পাপ করিলে যদি তাহাকে দিব্য করাইবার জন্য কোন দিব্য নিশ্চিত হয়, আর সে আসিয়া এই গৃহে তোমার যজ্ঞবেদির সম্মুখে সেই দিব্য করে; তবে তুমি স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং নিষ্পত্তি করিয়া আপন দাসদের বিচার করিও; দোষীকে দোষী করিয়া তাহার কর্ম্মের ফল তাহার মস্তকে বর্ত্তাইও, এবং ধার্ম্মিককে ধার্ম্মিক করিয়া তাহার ধার্ম্মিকতানুযায়ী ফল দিও। তোমার প্রজা ইস্রায়েল তোমার বিরুদ্ধে পাপ করণ প্রযুক্ত শত্রুর সম্মুখে আহত হইলে পর যদি পুনর্ব্বার তোমার দিকে ফিরে, এবং এই গৃহে তোমার নামের স্তব করিয়া তোমার নিকটে প্রার্থনা ও বিনতি করে; তবে তুমি স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং আপন প্রজা ইস্রায়েলের পাপ ক্ষমা করিও, আর তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে এই যে দেশ দিয়াছ, এখানে পুনর্ব্বার তাহাদিগকে আনিও। তোমার বিরুদ্ধে তাহাদের পাপ প্রযুক্ত যদি আকাশ রুদ্ধ হয়, বৃষ্টি না হয়, আর লোকেরা যদি এই স্থানের অভিমুখে প্রার্থনা করে, তোমার নামের স্তব করে, এবং তোমা হইতে দুঃখ পাওয়াতে আপন আপন পাপ হইতে ফিরে; তবে তুমি স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং আপন দাসদের ও আপন প্রজা ইস্রায়েলের পাপ ক্ষমা করিও, ও তাহাদের গন্তব্য সৎপথ তাহাদিগকে দেখাইও; এবং তুমি আপন প্রজাদিগকে যে দেশ অধিকারার্থে দিয়াছ, তোমার সেই দেশে বৃষ্টি পাঠাইও। দেশের মধ্যে যদি দুর্ভিক্ষ হয়, যদি মহামারী হয়, যদি শস্যের শোষ কি ম্লানি, পঙ্গপাল কি কীট হয়, যদি তাহাদের শত্রুগণ তাহাদের দেশে, নগরে নগরে, তাহাদিগকে অবরোধ করে, যদি কোন মারীর বা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়; তাহা হইলে কোন ব্যক্তি বা তোমার সমস্ত প্রজা ইস্রায়েল, যাহারা প্রত্যেকে আপন আপন মনের মারী জানে, এবং এই গৃহের দিকে অঞ্জলি বিস্তার করিয়া কোন প্রার্থনা কি বিনতি করে; তবে তুমি তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং ক্ষমা করিও, কার্য্য করিও, এবং প্রত্যেক জনকে স্ব স্ব পথ অনুযায়ী প্রতিফল দিও—তুমি ত তাহাদের অন্তঃকরণ জান, কেননা একমাত্র তুমিই যাবতীয় মনুষ্য-সন্তানের অন্তঃকরণ জ্ঞাত আছ; —যেন আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে তুমি যে দেশ দিয়াছ, এই দেশে তাহারা যত দিন জীবিত থাকিবে, তাবৎ তোমাকে ভয় করে। অধিকন্তু তোমার প্রজা ইস্রায়েল গোষ্ঠীয় নয়, এমন কোন বিদেশী যখন তোমার নামের অনুরোধে দূর দেশ হইতে আসিবে, —কারণ তাহারা তোমার মহানাম, তোমার বলবান হস্ত ও তোমার বিস্তারিত বাহুর কথা শ্রবণ করিবে; —যখন সে আসিয়া এই গৃহের অভিমুখে প্রার্থনা করিবে, তখন তুমি তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গে তাহা শুনিও; এবং সেই বিদেশী তোমার নিকটে যে কিছু প্রার্থনা করিবে, তদনুসারে করিও; যেন তোমার প্রজা ইস্রায়েলের ন্যায় তোমাকে ভয় করণার্থে পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতি তোমার নাম জ্ঞাত হয়, এবং তাহারা জানিতে পায় যে, আমার নির্ম্মিত এই গৃহের উপরে তোমারই নাম কীর্ত্তিত। তুমি আপন প্রজাদিগকে কোন পথে প্রেরণ করিলে যদি তাহারা আপন শত্রুগণের সহিত যুদ্ধ করিতে বাহির হয়, এবং তোমার মনোনীত নগরের অভিমুখে ও তোমার নামের জন্য আমার নির্ম্মিত গৃহের অভিমুখে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করে; তবে তুমি স্বর্গে তাহাদের প্রার্থনা ও বিনতি শুনিও, এবং তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও। তাহারা যদি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে —কেননা পাপ না করে এমন কোন মনুষ্য নাই—এবং তুমি যদি তাহাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া শত্রুর হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ কর, ও শত্রুগণ তাহাদিগকে বন্দি করিয়া দূরস্থ কিম্বা নিকটস্থ শত্রু—দেশে লইয়া যায়; তথাপি যে দেশে তাহারা বন্দিরূপে নীত হইয়াছে, সেই দেশে যদি মনে মনে বিবেচনা করে, ও ফিরে এবং যাহারা তাহাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া গিয়াছে, তাহাদের দেশে যদি তোমার কাছে বিনতি করিয়া বলে, আমরা পাপ করিয়াছি, অপরাধী হইয়াছি, দুষ্টামি করিয়াছি; যে শত্রুগণ তাহাদিগকে লইয়া গিয়াছে, তাহাদের দেশে যদি সমস্ত অন্তঃকরণ ও সমস্ত প্রাণের সহিত তোমার কাছে ফিরিয়া আইসে এবং তুমি তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছ, আপনাদের সেই দেশের অভিমুখে, তোমার মনোনীত নগরের অভিমুখে ও তোমার নামের জন্য আমার নির্ম্মিত গৃহের অভিমুখে যদি তোমার কাছে প্রার্থনা করে; তবে তুমি তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গে তাহাদের প্রার্থনা ও বিনতি শুনিও, এবং তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও; আর তোমার যে প্রজারা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে, তাহাদিগকে ক্ষমা করিও, এবং তোমার বিরুদ্ধে কৃত তাহাদের সমস্ত অধর্ম্ম মার্জ্জনা করিও; আর যাহারা তাহাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া যায়, তাহাদের করুণার পাত্র করিও, তাহারা যেন ইহাদের প্রতি করুণা করে। কেননা ইহারা তোমারই প্রজা ও তোমারই অধিকার; তুমি ইহাদিগকে মিসর হইতে, লৌহের হাপরের মধ্য হইতে, বাহির করিয়া আনিয়াছ। এইরূপে তোমার এই দাসের বিনতিতে ও তোমার প্রজা ইস্রায়েলের বিনতিতে তোমার চক্ষু উন্মীলিত হউক, আর তাহারা যে কোন বিষয়ে তোমাকে ডাকে, তুমি তাহাদের কথায় কর্ণপাত করিও। কেননা হে প্রভু সদাপ্রভু, যখন তুমি আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলে, তখন আপন দাস মোশি দ্বারা যেমন বলিয়াছিলে, তদ্রূপ তুমিই আপনার অধিকার বলিয়া তাহাদিগকে পৃথিবীস্থ সকল জাতি হইতে পৃথক্‌ করিয়াছ। সদাপ্রভুর নিকটে এই সমস্ত প্রার্থনা ও বিনতি সাঙ্গ করিয়া শলোমন সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির সম্মুখে হাঁটু পাতন ও স্বর্গের দিকে অঞ্জলি বিস্তার করণ হইতে উঠিলেন। আর তিনি দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, বলিলেন; ধন্য সদাপ্রভু, যিনি আপনার সকল প্রতিজ্ঞানুসারে আপন প্রজা ইস্রায়েলকে বিশ্রাম দিয়াছেন; তিনি আপন দাস মোশির দ্বারা যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, সেই উত্তম প্রতিজ্ঞার একটী কথাও পতিত হয় নাই। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন আমাদের পিতৃপুরুষদের সহবর্ত্তী ছিলেন, তেমনি আমাদেরও সহবর্ত্তী থাকুন, তিনি আমাদিগকে ত্যাগ না করুন, আমাদিগকে ছাড়িয়া না যাউন। তাঁহার সমস্ত পথে চলিতে ও আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে তিনি যাহা যাহা আদেশ করিয়াছিলেন, তাঁহার সেই সকল আজ্ঞা, বিধি ও শাসন পালন করিতে আমাদের চিত্ত আপনার প্রতি আকর্ষণ করুন। আর এই যে সকল কথার দ্বারা আমি সদাপ্রভুর কাছে অনুরোধ করিলাম, আমার এই সকল কথা দিবারাত্র আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে থাকুক; এবং দিন দিন যেমন প্রয়োজন, তেমনি তিনি আপন দাসের ও আপন প্রজা ইস্রায়েলের বিচার সিদ্ধ করুন; যেন পৃথিবীর সমস্ত জাতি জানিতে পারে যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর, আর কেহ নাই। অতএব তাঁহার বিধিপথে চলিতে ও তাঁহার আজ্ঞা পালন করিতে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে তোমাদের অন্তঃকরণ একাগ্র হউক, যেমন অদ্য দেখা যাইতেছে। পরে রাজা ও তাঁহার সহিত সমস্ত ইস্রায়েল সদাপ্রভুর সম্মুখে যজ্ঞ করিলেন। শলোমন সদাপ্রভুর উদ্দেশে বাইশ সহস্র গোরু ও এক লক্ষ বিশ সহস্র মেষ মঙ্গলার্থক বলিরূপে উৎসর্গ করিলেন। এইরূপে রাজা ও সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তান সদাপ্রভুর গৃহ প্রতিষ্ঠা করিলেন। সেই দিন রাজা সদাপ্রভুর গৃহের সম্মুখস্থ প্রাঙ্গণের মধ্যদেশ পবিত্র করিলেন, কেননা তিনি সে স্থানে হোমবলি, ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, এবং মঙ্গলার্থক বলির মেদ উৎসর্গ করিলেন; কারণ হোমবলি, ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, এবং মঙ্গলার্থক বলির মেদ গ্রহণ পক্ষে সদাপ্রভুর সম্মুখস্থ পিত্তলময় যজ্ঞবেদি ছোট ছিল। এইরূপে সেই সময়ে শলোমন ও তাঁহার সঙ্গে সমস্ত ইস্রায়েল, হমাতের প্রবেশস্থান অবধি মিসরের স্রোত পর্য্যন্ত [দেশবাসী] মহাসমাজ, সাত দিন আর সাত দিন, চৌদ্দ দিন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে উৎসব করিলেন। অষ্টম দিনে তিনি লোকদিগকে বিদায় করিলেন, ও তাহারা রাজাকে ধন্যবাদ করিল, এবং সদাপ্রভু আপন দাস দায়ূদের ও আপন প্রজা ইস্রায়েলের যে সকল মঙ্গল করিয়াছিলেন, সেই সকলের জন্য আনন্দিত ও হৃষ্টচিত্ত হইয়া আপন আপন তাম্বুতে চলিয়া গেল। শলোমন সদাপ্রভুর গৃহ ও রাজবাটী নির্ম্মাণ এবং আপন বাসনামত যে সকল কর্ম্ম করিতে স্থির করিয়াছিলেন, তাহা সমাপ্ত করিলে, সদাপ্রভু যেমন গিবিয়োনে দর্শন দিয়াছিলেন, তদ্রূপ শলোমনকে দ্বিতীয় বার দর্শন দিলেন। সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি আমার কাছে যে প্রার্থনা ও বিনতি করিয়াছ, তাহা আমি শুনিয়াছি; এই যে গৃহ তুমি নির্ম্মাণ করিয়াছ, ইহার মধ্যে চিরকালের জন্য আমার নাম স্থাপনার্থে আমি ইহা পবিত্র করিলাম, এবং এই স্থানে প্রতিনিয়ত আমার চক্ষু ও আমার চিত্ত থাকিবে। আর তোমার পিতা দায়ূদ যেমন চলিতেন, তেমনি তুমিও যদি চিত্তের সিদ্ধতায় ও সরলভাবে আমার সাক্ষাতে চল, আমি তোমাকে যে সমস্ত আজ্ঞা দিয়াছি, যদি তদনুযায়ী কর্ম্ম কর, এবং আমার বিধি ও শাসন সকল পালন কর, তবে ‘ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসিতে তোমার [বংশে] লোকের অভাব হইবে না,’ এই বলিয়া তোমার পিতা দায়ূদের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম, তদনুসারে আমি ইস্রায়েলের উপরে তোমার রাজসিংহাসন চিরকালের জন্য স্থির করিব। কিন্তু যদি তোমরা, কি তোমাদের সন্তানগণ, কোন ক্রমে আমার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া যাও, ও তোমাদের সম্মুখে স্থাপিত আমার আজ্ঞা ও বিধি সকল পালন না কর, কিন্তু গিয়া অন্য দেবগণের সেবা কর, ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত কর, তবে আমি ইস্রায়েলকে যে দেশ দিয়াছি, তাহা হইতে তাহাদিগকে উচ্ছেদ করিব, এবং আপন নামের জন্য এই যে গৃহ পবিত্র করিলাম, ইহা আমার দৃষ্টিপথ হইতে দূর করিব, এবং সমস্ত জাতির মধ্যে ইস্রায়েল প্রবাদের ও উপহাসের আস্পদ হইবে। আর এই গৃহ যদিও এত উচ্চ, তথাপি যে কেহ ইহার নিকট দিয়া গমন করিবে, সে চমকিয়া উঠিবে, শিশ দিবে, ও জিজ্ঞাসা করিবে, এই দেশের ও এই গৃহের প্রতি সদাপ্রভু এমন কেন করিয়াছেন? আর লোকে বলিবে, ইহার কারণ এই, যিনি এই লোকদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলেন, উহারা আপনাদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছে, এবং অন্য দেবগণকে অবলম্বন করিয়া তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিয়াছে, ও তাহাদের সেবা করিয়াছে; এই জন্য সদাপ্রভু তাহাদের উপরে এই সকল অমঙ্গল উপস্থিত করিলেন। বিশ বৎসর অতীত হইল; এই সময়ের মধ্যে শলোমন সদাপ্রভুর গৃহ ও রাজবাটী, এই দুই গৃহ নির্ম্মাণ করেন। সোরের রাজা হীরম শলোমনের সমস্ত বাসনানুসারে এরসকাষ্ঠ, দেবদারুকাষ্ঠ ও স্বর্ণ যোগাইয়াছিলেন, তাই তখন শলোমন রাজা হীরমকে গালীল দেশস্থ বিশটী নগর দিলেন। আর হীরম শলোমনের দত্ত সেই সকল নগর দেখিবার জন্য সোর হইতে আসিলেন, কিন্তু সেগুলি তাঁহার দৃষ্টিতে তুষ্টিজনক হইল না। তিনি কহিলেন, হে আমার ভ্রাতা, এ সকল কেমন নগর আমাকে দিলে? আর তিনি সেগুলির নাম কাবূল দেশ রাখিলেন; অদ্যাপি সেই নাম রহিয়াছে। আর হীরম এক শত বিশ তালন্ত স্বর্ণ রাজাকে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। আর শলোমন সদাপ্রভুর গৃহ, আপনার বাটী, মিল্লো, যিরূশালেমের প্রাচীর, হাৎসোর, মগিদ্দো ও গেষর গাঁথিবার জন্য আপনার কর্ম্মাধীন দাস সংগ্রহ করিয়াছিলেন, তাহার বৃত্তান্ত এই। মিসর-রাজ ফরৌণ আসিয়া গেষর হস্তগত করিয়া আগুনে পোড়াইয়া দেন, এবং সেই নগরনিবাসী কনানীয়দিগকে বধ করেন, পরে তাহা যৌতুকরূপে আপন কন্যা শলোমনের ভার্য্যাকে দেন। আর শলোমন গেষর ও নিম্নস্থিত বৈৎহোরোণ, এবং বালৎ, আর দেশের প্রান্তরস্থ তামর, এবং শলোমনের সমস্ত ভাণ্ডার-নগর, এবং তাঁহার রথসমূহের ও অশ্বারোহীদের নগর সকল, আর যিরূশালেমে, লিবানোনে ও আপন অধিকার দেশের সর্ব্বত্র যাহা যাহা নির্ম্মাণ করিতে শলোমনের বাসনা ছিল, তিনি সে সমস্ত নির্ম্মাণ করিলেন। ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয়, ও যিবূষীয় যে সকল লোক অবশিষ্ট ছিল, যাহারা ইস্রায়েল-সন্তান নয়, যাহাদিগকে ইস্রায়েল-সন্তানগণ নিঃশেষে বিনষ্ট করিতে পারে নাই, দেশে অবশিষ্ট সেই লোকদের সন্তানদিগকে শলোমন আপনার কর্ম্মাধীন দাস করিয়া সংগ্রহ করিলেন; তাহারা অদ্য পর্য্যন্ত তাহাই করিতেছে। কিন্তু শলোমন ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে কাহাকেও দাস করিলেন না; তাহারা যোদ্ধা, তাঁহার কর্ম্মচারী, জনাধ্যক্ষ, সেনানী, এবং তাঁহার রথসমূহের ও অশ্বারোহীদিগের অধ্যক্ষ হইল। তাহাদের মধ্যে পাঁচ শত পঞ্চাশ জন শলোমনের কর্ম্মে নিযুক্ত প্রধান অধ্যক্ষ ছিল; তাহারা কর্ম্মকারী লোকদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিত। আর ফরৌণের কন্যা দায়ূদ-নগর হইতে তাঁহার জন্য নির্ম্মিত বাটীতে উঠিয়া আসিলেন; তৎকালে শলোমন মিল্লো গাঁথিলেন। আর শলোমন সদাপ্রভুর জন্য যে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহার উপরে বৎসরের মধ্যে তিন বার হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিতেন, এবং সে সময়ে সদাপ্রভুর সম্মুখস্থ বেদিতে ধূপদাহ করিতেন। এইরূপে তিনি গৃহনির্ম্মাণ সমাপ্ত করিলেন। আর শলোমন রাজা ইদোম দেশে সূফসাগরের তীরস্থ এলতের নিকটবর্ত্তী ইৎসিয়োন-গেবরে কতকগুলি জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন। পরে হীরম শলোমনের দাসদের সহিত সামুদ্রিক কার্য্যে নিপুন আপন নাবিক দাসদিগকে সেই সকল জাহাজে প্রেরণ করিলেন। তাহারা ওফীরে গিয়া তথা হইতে চারি শত বিশ তালন্ত স্বর্ণ লইয়া শলোমন রাজার নিকটে আনিল। আর শিবার রাণী সদাপ্রভুর নামের পক্ষে শলোমনের কীর্ত্তি শুনিয়া গূঢ়বাক্য দ্বারা তাঁহার পরীক্ষা করিতে আসিলেন। তিনি অতি বিপুল ঐশ্বর্য্যসহ, সুগন্ধি দ্রব্য, অতি বিস্তর স্বর্ণ ও মণিবাহক উষ্ট্রগণ সঙ্গে লইয়া যিরূশালেমে আসিলেন, এবং শলোমনের নিকটে আসিয়া নিজের মনে যাহা ছিল, তাঁহাকে সমস্তই কহিলেন। আর শলোমন তাঁহার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর করিলেন; রাজার বোধের অগম্য কিছুই ছিল না; তিনি তাঁহাকে সকলই কহিলেন। এই প্রকারে শিবার রাণী শলোমনের সমস্ত জ্ঞান ও তাঁহার নির্ম্মিত গৃহ, এবং তাঁহার মেজের খাদ্যদ্রব্য ও তাঁহার সেবকদের উপবেশন ও দণ্ডায়মান পরিচারকদের শ্রেণী ও তাহাদের পরিচ্ছদ এবং তাঁহার পানপাত্র বাহকগণ ও সদাপ্রভুর গৃহে উঠিবার জন্য তাঁহার নির্ম্মিত সোপান, এই সকল দেখিয়া হতজ্ঞান হইলেন। আর তিনি রাজাকে কহিলেন, আমি আপন দেশে থাকিয়া আপনার বাক্য ও জ্ঞানের বিষয় যে কথা শুনিয়াছিলাম, তাহা সত্য। কিন্তু আমি যাবৎ আসিয়া স্বচক্ষে না দেখিলাম, তাবৎ সেই কথায় আমার বিশ্বাস হয় নাই; আর দেখুন, অর্দ্ধেকও আমাকে বলা হয় নাই; আমি যে খ্যাতি শুনিয়াছিলাম, তাহা হইতেও আপনার জ্ঞান ও মঙ্গল অধিক। ধন্য আপনার লোকেরা, ধন্য আপনার এই দাসেরা, যাহারা নিয়ত আপনার সম্মুখে দাঁড়ায়, যাহারা আপনার জ্ঞানের উক্তি শুনে। ধন্য আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি আপনাকে ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসাইবার জন্য আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছেন; সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে চিরকাল প্রেম করেন, এই জন্য বিচার ও ধর্ম্ম প্রচলিত করিতে আপনাকে রাজা করিয়াছেন। পরে তিনি রাজাকে এক শত বিশ তালন্ত স্বর্ণ ও অতি প্রচুর সুগন্ধি দ্রব্য ও মণি উপঢৌকন দিলেন; শিবার রাণী শলোমন রাজাকে যত সুগন্ধি দ্রব্য দিলেন, তত প্রচুর সুগন্ধি দ্রব্য আর কখনও আইসে নাই। আর হীরমের যে সকল জাহাজ ওফীর হইতে স্বর্ণ লইয়া আসিত, সেই সকল জাহাজ ওফীর হইতে বিস্তর চন্দনকাষ্ঠ ও মণিও আনিত। সেই চন্দনকাষ্ঠ দ্বারা রাজা সদাপ্রভুর গৃহের ও রাজবাটীর নিমিত্ত গরাদিয়া ও গায়কদের জন্য বীণা এবং নেবল প্রস্তুত করিলেন; তদ্রূপ চন্দনকাষ্ঠ অদ্যাপি আর আইসে নাই, দেখাও যায় নাই। আর শলোমন রাজা শিবার রাণীর বাসনানুসারে তাঁহার যাবতীয় বাঞ্ছিত দ্রব্য দিলেন, তাহা ছাড়া শলোমন আপন রাজকীয় দানশীলতা অনুসারে তাঁহাকে আরও দিলেন। পরে তিনি ও তাঁহার দাসগণ স্বদেশে ফিরিয়া গেলেন। এক বৎসর মধ্যে শলোমনের কাছে ছয় শত ছেষট্টি তালন্ত পরিমিত স্বর্ণ আসিত। ইহা ছাড়া বণিকদের, ব্যবসায়িগণের ও মিশ্রিত লোকদের সমস্ত রাজার ও দেশাধিপতিগণের নিকট হইতে [স্বর্ণের আমদানি হইত]। তাহাতে শলোমন রাজা পিটান স্বর্ণময় দুই শত বৃহৎ ঢাল প্রস্তুত করিলেন; তাহার প্রত্যেক ঢালে ছয় শত শেকল পরিমিত স্বর্ণ ছিল। তিনি পিটান স্বর্ণ দ্বারা তিন শত ঢাল প্রস্তুত করিলেন; তাহার প্রত্যেক ঢালে তিন মানি করিয়া স্বর্ণ ছিল; পরে রাজা লিবানোন অরণ্যস্থ বাটীতে সেগুলি রাখিলেন। আর রাজা হস্তিদন্তময় এক বৃহৎ সিংহাসন নির্ম্মাণ করিয়া উত্তম স্বর্ণে মুড়াইলেন। ঐ সিংহাসনের ছয়টী সোপান ছিল, ও সিংহাসনের উপরিস্থ ভাগ পশ্চাৎ দিকে গোলাকার ছিল, এবং আসনের উভয় পার্শ্বে হাতা ছিল, সেই হাতার নিকটে দুই সিংহমূর্ত্তি দণ্ডায়মান ছিল। আর সেই ছয়টী সোপানের উপরে দুই পার্শ্বে বারোটী সিংহমূর্ত্তি দণ্ডায়মান ছিল; এইরূপ সিংহাসন আর কোন রাজ্যে প্রস্তুত হয় নাই। শলোমন রাজার সমস্ত পানপাত্র স্বর্ণময় ছিল, ও লিবানোন অরণ্যস্থ বাটীর যাবতীয় পাত্র নির্ম্মল স্বর্ণময় ছিল; রৌপ্যময় কিছুই ছিল না; শলোমনের অধিকারে তাহা কিছুরই মধ্যে গণ্য ছিল না। কেননা সমুদ্রে হীরমের জাহাজের সহিত রাজারও তর্শীশের জাহাজ ছিল; সেই তর্শীশের জাহাজ সকল তিন বৎসরান্তে এক বার স্বর্ণ, রৌপ্য, হস্তিদন্ত, কপি ও শিখী লইয়া আসিত। এইরূপে ঐশ্বর্য্যে ও জ্ঞানে শলোমন রাজা পৃথিবীস্থ সকল রাজার মধ্যে প্রধান হইলেন। আর ঈশ্বর শলোমনের চিত্তে যে জ্ঞান দিয়াছিলেন, তাঁহার সেই জ্ঞানের উক্তি শুনিবার জন্য সর্ব্বদেশীয় লোক তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে চেষ্টা করিত। আর প্রত্যেক জন আপন আপন উপঢৌকন, রৌপ্যময় পাত্র, স্বর্ণময় পাত্র, বস্ত্র, অস্ত্র ও সুগন্ধি দ্রব্য, অশ্ব ও অশ্বতর আনিত; প্রতিবৎসর এইরূপ হইত। আর শলোমন অনেক রথ ও অশ্বারোহী সংগ্রহ করিলেন; তাঁহার এক সহস্র চারি শত রথ ও বারো সহস্র অশ্বারোহী ছিল, আর সেই সকল তিনি রথ-নগরসমূহে, এবং যিরূশালেমে রাজার নিকটে রাখিতেন। রাজা যিরূশালেমে রৌপ্যকে প্রস্তুরের ন্যায়, ও এরসকাষ্ঠকে নিম্নভূমিস্থ সুকমোর গাছের ন্যায় প্রচুর করিলেন। আর শলোমনের অশ্ব সকল মিসর হইতে আনা হইত; রাজার বণিকেরা দল হিসাবে মূল্য দিয়া পালে পালে অশ্ব পাইত। আর মিসর হইতে আনীত এক এক রথের মূল্য ছয় শত শেকল রৌপ্য, এ এক এক অশ্বের মূল্য এক শত পঞ্চাশ শেকল ছিল। এই প্রকারে উহাদের দ্বারা হিত্তীয় সমস্ত রাজার জন্য, ও অরামীয় রাজগণের জন্যও অশ্ব আনা হইত। শলোমন রাজা ফরৌণের কন্যা ব্যতিরেকে আরও অনেক বিদেশীয়া রমণীকে, অর্থাৎ মোয়াবীয়া, অম্মোনীয়া, ইদোমীয়া, সীদোনীয়া ও হিত্তীয়া রমণীকে প্রেম করিতেন। যে জাতিগণের বিষয়ে সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বলিয়াছিলেন, তোমরা তাহাদের কাছে যাইও না, এবং তাহাদিগকে আপনাদের কাছে আসিতে দিও না, কেননা তাহারা অবশ্য তোমাদের হৃদয়কে আপনাদের দেবগণের অনুগমনে বিপথগামী করিবে, শলোমন তাহাদেরই প্রতি প্রেমাসক্ত হইলেন। সাত শত রমণী তাঁহার পত্নী, ও তিশ শত তাঁহার উপপত্নী ছিল; তাঁহার সেই স্ত্রীরা তাঁহার হৃদয়কে বিপথগামী করিল। ফলে এইরূপ ঘটিল, শলোমনের বৃদ্ধ বয়সে তাঁহার স্ত্রীরা তাঁহার হৃদয়কে অন্য দেবগণের অনুগমনে বিপথগামী করিল; তাঁহার পিতা দায়ূদের অন্তঃকরণ যেমন ছিল, তাঁহার অন্তঃকরণ তেমনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর ভক্তিতে একাগ্র ছিল না। কিন্তু শলোমন সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরতের ও অম্মোনীয়দের ঘৃণার্হ বস্তু মিল্‌কমের অনুগামী হইলেন। এইরূপে শলোমন সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিলেন; আপন পিতা দায়ূদের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগামী হইলেন না। সেই সময়ে শলোমন যিরূশালেমের সম্মুখস্থ পর্ব্বতে মোয়াবের ঘৃণার্হ বস্তু কমোশের জন্য ও অম্মোন-সন্তানদের ঘৃণার্হ বস্তু মোলকের জন্য উচ্চস্থলী নির্ম্মাণ করিলেন। তাঁহার যত বিদেশীয়া স্ত্রী আপন আপন দেবতার উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইত ও বলিদান করিত, সেই সকলের জন্য তিনি তদ্রূপ করিলেন। অতএব সদাপ্রভু শলোমনের প্রতি ক্রুদ্ধ হইলেন; কেননা তাঁহার অন্তঃকরণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু হইতে বিপথগামী হইয়াছিল, যিনি দুইবার তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন, এবং এই বিষয় তাঁহাকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, যেন তিনি অন্য দেবগণের অনুগামী না হন; কিন্তু সদাপ্রভু যাহা আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তাহা তিনি পালন করিলেন না। অতএব সদাপ্রভু শলোমনকে কহিলেন, তোমার ত এই ব্যবহার, তুমি আমার নিয়ম ও আমার আদিষ্ট বিধি সকল পালন কর নাই; এই কারণ আমি অবশ্য তোমা হইতে রাজ্য চিরিয়া লইয়া তোমার দাসকে দিব। তথাপি তোমার পিতা দায়ূদের জন্য তোমার বর্ত্তমান কালে তাহা করিব না, কিন্তু তোমার পুত্রের হস্ত হইতে তাহা চিরিয়া লইব। যাহা হউক, সমুদয় রাজ্য চিরিয়া লইব না; কিন্তু আমার দাস দায়ূদের জন্য ও আমার মনোনীত যিরূশালেমের জন্য তোমার পুত্রকে এক বংশ দিব। পরে সদাপ্রভু শলোমনের এক জন বিপক্ষ উৎপন্ন করিলেন; তিনি ইদোমীয় হদদ; ইদোমের রাজবংশে তাঁহার জন্ম হয়। দায়ূদ যখন ইদোমে ছিলেন, আর সেনাপতি যোয়াব নিহতদিগকে কবর দিতে উঠিয়া গিয়াছিলেন ও ইদোমের প্রত্যেক পুরুষকে আঘাত করিয়াছিলেন; (কারণ যাবৎ যোয়াব ইদোমের সমস্ত পুরুষকে উচ্ছিন্ন না করিলেন, তাবৎ ছয় মাস পর্য্যন্ত তিনি ও সমস্ত ইস্রায়েল ইদোমে ছিলেন;) তৎকালে ঐ হদদ ও তাঁহার সহিত তাঁহার পিতার দাস কয়েক জন ইদোমীয় পুরুষ মিসরে পলায়ন করিয়াছিলেন; তখন হদদ ক্ষুদ্র বালক ছিলেন। তাঁহারা মিদিয়ন হইতে উঠিয়া পারণে যান; পরে পারণ হইতে লোক সঙ্গে লইয়া মিসরে গিয়া মিসর-রাজ ফরৌণের নিকটে উপস্থিত হন; তিনি তাঁহাকে এক বাটী দেন, এবং তাঁহার জন্য খাদ্য দেন ও তাঁহাকে ভূমি দান করেন। আর হদদ ফরৌণের কাছে অতিশয় অনুগ্রহ পান; এবং ফরৌণ তাঁহার সহিত আপন শালীর অর্থাৎ তহ্‌পনেষ রাণীর ভগিনীর বিবাহ দেন। আর তহ্‌পনেষের ভগিনী তাঁহার জন্য গনুবৎ নামে এক পুত্র প্রসব করেন, এবং তহ্‌পনেষ ফরৌণের বাটীতে তাহার স্তন্য ত্যাগ করান, এবং গনুবৎ ফরৌণের বাটীতে ফরৌনের পুত্রদের মধ্যে ছিল। পরে যখন হদদ মিসরে শুনিলেন যে, দায়ূদ আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইয়াছেন ও যোয়াব সেনাপতি মরিয়াছেন, তখন হদদ ফরৌণকে কহিলেন, আমাকে বিদায় করুন, আমি স্বদেশে যাই। ফরৌণ তাঁহাকে কহিলেন, আমার এখানে তোমার কিসের অভাব হইয়াছে যে, দেখ, তুমি স্বদেশে যাইতে চেষ্টা করিতেছ। তিনি কহিলেন, অভাব হয় নাই, তথাপি কোন প্রকারে আমাকে বিদায় করুন। ঈশ্বর শলোমনের আর এক জন বিপক্ষ উৎপন্ন করিলেন; তিনি ইলিয়াদার পুত্র রষোণ; সেই ব্যক্তি সোবার রাজা হদদেষর নামক আপন প্রভুর নিকট হইতে পলায়ন করিয়াছিলেন। আর যে সময়ে দায়ূদ [সোবার] লোকদিগকে আঘাত করেন, তৎকালে ইনি আপনার নিকটে লোক সংগ্রহ করিয়া দলপতি হইয়াছিলেন। পরে তাঁহারা দম্মেশকে গিয়া সেখানে বাস করিলেন, এবং দম্মেশকে রাজত্ব করিলেন। হদদের কৃত অপকার ছাড়া ইনি শলোমনের সমস্ত জীবনকাল ব্যাপিয়া ইস্রায়েলের বিপক্ষ ছিলেন, এবং ইস্রায়েলকে দ্বেষ করিলেন, আর অরামের উপরে রাজত্ব করিলেন। আর সরেদানিবাসী ইফ্রয়িমীর নবাটের পুত্র যারবিয়াম শলোমনের দাস ছিলেন; তাঁহার মাতার নাম সরূয়া, তিনি বিধবা; সে ব্যক্তিও রাজার বিরুদ্ধে হস্ত তুলিলেন। রাজার বিরুদ্ধে তাঁহার হস্ত তুলিবার কারণ এই; শলোমন মিল্লো গাঁথিতেছিলেন, ও আপন পিতা দায়ূদের নগরের ভগ্নস্থান বদ্ধ করিয়া দিতেছিলেন। আর যারবিয়াম লোকটী বলবান বীর ছিলেন; এবং শলোমন এই যুবা লোকটীকে কার্য্যদক্ষ দেখিয়া যোষেফ-কুলের সমস্ত ভারের অধ্যক্ষ করেন। তৎকালে যারবিয়াম যিরূশালেমের বাহিরে গেলে শীলোনীয় অহিয় ভাববাদী পথে তাঁহার দেখা পাইলেন; অহিয় নূতন বস্ত্র পরিহিত ছিলেন, এবং মাঠে কেবল তাঁহারা দুই জন ছিলেন। তখন অহিয় আপন গাত্রের নূতন বস্ত্রখানি ধরিয়া ছিঁড়িয়া বারো খণ্ড করিলেন। আর তিনি যারবিয়ামকে কহিলেন, দশ খণ্ড তুমি লও, কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি শলোমনের হস্ত হইতে রাজ্য চিরিয়া লইব, ও দশ বংশ তোমাকে দিব। (কিন্তু আমার দাস দায়ূদের জন্য এবং ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্য হইতে আমার মনোনীত যিরূশালেম নগরের জন্য অবশিষ্ট এক বংশ উহার থাকিবে।) কারণ তাহারা আমাকে ত্যাগ করিয়া সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরতের, মোয়াবের দেব কমোশের ও অম্মোন-সন্তানদের দেব মিল্‌কমের কাছে প্রণিপাত করিয়াছে; উহার পিতা দায়ূদের ন্যায় তাহারা আমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তাহা করণার্থে এবং আমার বিধি ও শাসন সকল পালনার্থে আমার পথে চলে নাই। তথাচ আমি উহার হস্ত হইতে সমস্ত রাজ্য লইব না, কিন্তু আমার মনোনীত দাস যে দায়ূদ আমার আজ্ঞা ও বিধি সকল পালন করিত, তাহার জন্য উহাকে যাবজ্জীবন অধ্যক্ষপদে রাখিব। কিন্তু উহার পুত্রের হস্ত হইতে রাজ্য লইব, এবং তোমাকে দিব, দশ বংশ দিব। আর আমার নাম স্থাপনার্থে আমার মনোনীত যে যিরূশালেম নগর, তন্মধ্যে আমার সম্মুখে যেন আমার দাস দায়ূদের প্রদীপ নিত্য থাকে, এই নিমিত্ত উহার পুত্রকে এক বংশ দিব। আর আমি তোমাকে গ্রহণ করিব, তাহাতে তুমি আপন প্রাণের সমস্ত বাসনানুসারে রাজত্ব করিবে, ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে। আর যদি তুমি আমার দাস দায়ূদের ন্যায় আমার সমস্ত আদেশে কর্ণপাত কর, এবং আমার বিধি ও আজ্ঞা পালনার্থে আমার পথে চল, ও আমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তাহা কর, তবে আমি তোমার সহবর্ত্তী থাকিব, এবং যেমন দায়ূদের জন্য গাঁথিয়াছি, তেমনি তোমার জন্যও এক দৃঢ় কুল গাঁথিব, এবং ইস্রায়েলকে তোমায় দিব। আর এই কারণ আমি দায়ূদের বংশকে অবনত করিব, কিন্তু চিরকালের জন্য নয়। অতএব শলোমন যারবিয়ামকে বধ করিতে চেষ্টা করিলেন; কিন্তু যারবিয়াম উঠিয়া মিসরে মিসর-রাজ শীশকের নিকটে পলাইয়া গেলেন, এবং শলোমনের মৃত্যু পর্য্যন্ত মিসরে থাকিলেন। শলোমনের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত এবং তাঁহার সমস্ত কর্ম্ম ও জ্ঞানের বিবরণ কি শলোমনের বৃত্তান্ত-পুস্তকে লিখিত নাই? শলোমন যিরূশালেমে চল্লিশ বৎসর যাবৎ সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিলেন। পরে শলোমন আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, ও আপন পিতা দায়ূদের নগরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র রহবিয়াম তাঁহার পদে রাজা হইলেন। রহবিয়াম শিখিমে গেলেন; কেননা তাঁহাকে রাজা করণার্থে সমস্ত ইস্রায়েল শিখিমে উপস্থিত হইয়াছিল। আর যখন নবাটের পুত্র যারবিয়াম এই বিষয় শুনিলেন; (কারণ তিনি তখনও মিসরে ছিলেন, শলোমন রাজার সম্মুখ হইতে তথায় পলাইয়া গিয়াছিলেন; এবং যারবিয়াম মিসরে বাস করিতেছিলেন; আর লোকেরা দূত পাঠাইয়া তাঁহাকে ডাকিয়া আনিল;) তখন যারবিয়াম ও সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজ রহবিয়ামের কাছে আসিয়া এই কথা কহিলেন, আপনার পিতা আমাদের উপর দুঃসহ যোঁয়ালি দিয়াছেন, অতএব আপনার পিতা আমাদের উপরে যে কঠিন দাস্যকর্ম্ম ও ভারী যোঁয়ালি চাপাইয়াছেন, আপনি তাহা লঘু করুন, করিলে আমরা আপনার দাসত্ব করিব। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, এখন চলিয়া যাও, তিন দিনের পর আবার আমার নিকটে আসিও। তাহাতে লোকেরা চলিয়া গেল। পরে রহবিয়াম রাজা, তাঁহার পিতা শলোমনের জীবনকালে যে বৃদ্ধগণ তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইতেন, তাঁহাদের সহিত মন্ত্রণা করিলেন, কহিলেন, আমি ঐ লোকদিগকে কি উত্তর দিব? তোমরা কি মন্ত্রণা দেও? তাঁহারা তাঁহাকে কহিলেন, যদি আপনি অদ্য ঐ লোকদের সেবক হইয়া উহাদের সেবা করেন, এবং উহাদিগকে উত্তর দেন, ও প্রিয় বাক্য বলেন, তবে উহারা সর্ব্বদা আপনার সেবক থাকিবে। কিন্তু তিনি ঐ বৃদ্ধগণের দত্ত মন্ত্রণা ত্যাগ করিয়া, তাঁহার বয়স্য যে যুবকেরা তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইত, তাহাদের সহিত মন্ত্রণা করিলেন। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, ঐ লোকেরা বলিতেছে, আপনার পিতা আমাদের উপরে যে যোঁয়ালি চাপাইয়াছেন, তাহা লঘু করুন, এখন আমরা উহাদিগকে কি উত্তর দিব? তোমরা কি মন্ত্রণা দেও? তাঁহার বয়স্য যুবকগণ উত্তর করিল, যে লোকেরা আপনাকে বলিতেছে, আপনার পিতা আমাদের উপরে ভারী যোঁয়ালি চাপাইয়াছেন, আপনি আমাদের পক্ষে তাহা লঘু করুন, তাহাদিগকে এই কথা বলুন, আমার কনিষ্ঠ অঙ্গুলি আমার পিতার কটিদেশ হইতেও স্থূল। এখন, আমার পিতা তোমাদের উপরে ভারী যোঁয়ালি চাপাইয়া দিয়াছিলেন, কিন্তু আমি তোমাদের যোঁয়ালি আরও ভারী করিব; আমার পিতা তোমাদিগকে কশা দ্বারা শাস্তি দিতেন, কিন্তু আমি তোমাদিগকে বৃশ্চিক দ্বারা শাস্তি দিব। পরে ‘তৃতীয় দিনে আমার নিকটে ফিরিয়া আসিও’, রাজার উক্ত এই কথানুসারে যারবিয়াম এবং সমস্ত লোক তৃতীয় দিনে রহবিয়ামের নিকটে উপস্থিত হইলেন। আর রাজা লোকদিগকে কঠিন উত্তর দিলেন; বৃদ্ধগণ তাঁহাকে যে মন্ত্রণা দিয়াছিলেন, তিনি তাহা ত্যাগ করিলেন; আর সেই যুবকদের মন্ত্রণানুযায়ী কথা তাহাদিগকে বলিলেন; তিনি কহিলেন, আমার পিতা তোমাদের যোঁয়ালি ভারী করিয়াছিলেন, কিন্তু আমি তোমাদের যোঁয়ালি আরও ভারী করিব; আমার পিতা তোমাদিগকে কশা দ্বারা শাস্তি দিতেন, কিন্তু আমি তোমাদিগকে বৃশ্চিক দ্বারা শাস্তি দিব। এইরূপে রাজা লোকদের কথায় কর্ণপাত করিলেন না, কেননা শীলোনীয় অহিয়ের দ্বারা সদাপ্রভু নবাটের পুত্র যারবিয়ামকে যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহা অটল রাখিবার জন্য সদাপ্রভু হইতে এই ঘটনা হইল। যখন সমস্ত ইস্রায়েল দেখিল, রাজা তাহাদের কথায় কর্ণপাত করিলেন না, তখন লোকেরা রাজাকে এই উত্তর দিল, দায়ূদে আমাদের কি অংশ? যিশয়ের পুত্রে আমাদের কোন অধিকার নাই; হে ইস্রায়েল, তোমাদের তাম্বুতে যাও; দায়ূদ! এখন তুমি আপনার কুল দেখ। পরে ইস্রায়েল লোকেরা আপন আপন তাম্বুতে চলিয়া গেল। তথাপি যে ইস্রায়েল-সন্তানগণ যিহূদার সকল নগরে বাস করিত, রহবিয়াম তাহাদের উপরে রাজত্ব করিলেন। পরে রহবিয়াম রাজা [আপনার] কর্ম্মাধীন দাসদের অধ্যক্ষ অদোরামকে পাঠাইলেন; কিন্তু সমস্ত ইস্রায়েল তাহাকে পাথর মারিল, তাহাতে সে মরিয়া গেল। আর রহবিয়াম রাজা যিরূশালেমে পলাইবার জন্য তাড়াতাড়ি গিয়া রথে উঠিলেন। এইরূপে ইস্রায়েল দায়ূদের কুলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিল, অদ্য পর্য্যন্ত সেই ভাবেই আছে। পরে যারবিয়াম ফিরিয়া আসিয়াছেন, ইহা সমস্ত ইস্রায়েল শুনিয়া লোক পাঠাইয়া তাঁহাকে মণ্ডলীর নিকটে ডাকাইল, এবং সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজা করিল; কেবল যিহূদা-বংশ ব্যতিরেকে আর কোন বংশ দায়ূদ-কুলের অনুগামী থাকিল না। যিরূশালেমে উপস্থিত হইলে পর রহবিয়াম যিহূদার সমস্ত কুল ও বিন্যামীন বংশকে, এক লক্ষ আশী সহস্র মনোনীত যোদ্ধৃপুরুষকে ইস্রায়েল-কুলের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য, শলোমনের পুত্র রহবিয়ামের বশে রাজ্য ফিরাইয়া আনিবার জন্য একত্র করিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের লোক শময়িয়ের নিকটে ঈশ্বরের এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি শলোমনের পুত্র যিহূদার রাজা রহবিয়ামকে, যিহূদার ও বিন্যামীনের সমস্ত কুলকে এবং অবশিষ্ট লোকদিগকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা যাত্রা করিও না, তোমাদের ভ্রাতৃগণের সহিত, ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত যুদ্ধ করিও না; প্রত্যেক জন আপন আপন গৃহে ফিরিয়া যাও, কেননা এই ঘটনা আমা হইতে হইল। অতএব তাহারা সদাপ্রভুর বাক্য মানিয়া সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে ফিরিয়া গেল। পরে যারবিয়াম পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ শিখিম নির্ম্মাণ করিয়া তথায় বসতি করিলেন, এবং তথা হইতে যাত্রা করিয়া পনূয়েল নির্ম্মাণ করিলেন। আর যারবিয়াম মনে মনে বলিলেন, এখন রাজ্য দায়ূদ-কুলের হাতে ফিরিয়া যাইবে; এই লোকেরা যদি যিরূশালেমে সদাপ্রভুর গৃহে বলিদান করিতে যায়, তবে ইহাদের চিত্ত ইহাদের প্রভু যিহূদার রাজা রহবিয়ামের প্রতি ফিরিবে; আর ইহারা আমাকে বধ করিয়া পুনর্ব্বার যিহূদার রাজা রহবিয়ামের পক্ষ হইবে। অতএব রাজা মন্ত্রণা করিয়া স্বর্ণময় দুই গোবৎস নির্ম্মাণ করাইলেন; আর তিনি লোকদিগকে কহিলেন, যিরূশালেমে যাওয়া তোমাদের পক্ষে বাহুল্যমাত্র, হে ইস্রায়েল, দেখ, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। তিনি তাহাদের একটা বৈথেলে স্থাপন করিলেন, আর একটা দানে রাখিলেন। এই ব্যাপার পাপস্বরূপ হইল, কেননা তাহার একটার সম্মুখে লোকেরা দান পর্য্যন্তও যাইতে লাগিল। পরে তিনি কতকগুলি উচ্চস্থলীর গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন, এবং যাহারা লেবির সন্তান নয়, এমন সকল লোকের মধ্য হইতে যাজক করিলেন। আর যারবিয়াম অষ্টম মাসে, মাসের পঞ্চদশ দিনে যিহূদাস্থ উৎসবের সদৃশ এক উৎসব নিরূপণ করিলেন, এবং যজ্ঞবেদির কাছে উঠিয়া গেলেন; তিনি বৈথেলে এইরূপ করিলেন, নিজ কৃত বৎস-প্রতিমার কাছে বলিদান করিলেন, এবং আপনার কৃত উচ্চস্থলীসমূহের যাজকদিগকে বৈথেলে রাখিলেন। তিনি অষ্টম মাসের, —যে মাস তিনি আপনার মনে কল্পনা করিয়াছিলেন, সেই মাসের—পঞ্চদশ দিনে আপনার কৃত যজ্ঞবেদির কাছে গেলেন; আর তিনি ইস্রায়েল-সন্তানগণের জন্য উৎসব নিরূপণ করিলেন, এবং ধূপদাহের জন্য বেদির কাছে উঠিয়া গেলেন। আর দেখ, ঈশ্বরের এক জন লোক সদাপ্রভুর বাক্যের দ্বারা যিহূদা হইতে বৈথেলে উপস্থিত হইলেন; আর যারবিয়াম ধূপদাহের জন্য বেদির কাছে দাঁড়াইয়া ছিলেন। আর সেই ব্যক্তি বেদির বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর বাক্যের দ্বারা এই কথা ঘোষণা করিলেন, হে বেদি, হে বেদি, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, দায়ূদ-কুলে যোশিয় নামে একটী বালকের জন্ম হইবে; উচ্চস্থলীসমূহের যে যাজকেরা তোমার উপরে ধূপদাহ করে, তাহাদিগকে তিনি তোমার উপরে বলিদান করিবেন, ও তোমার উপরে মনুষ্যের অস্থি দগ্ধ করা যাইবে। আর সেই দিবসে সেই ব্যক্তি এক চিহ্ন নিরূপণ করিয়া বলিলেন, সদাপ্রভু এই চিহ্নের কথা বলিয়াছেন; দেখ, এই বেদি ফাটিয়া যাইবে, ও ইহার উপরিস্থ ভস্ম পড়িয়া যাইবে। ঈশ্বরের লোক বৈথেলস্থ বেদির বিরুদ্ধে যে কথা ঘোষণা করিলেন, তাহা শুনিয়া যারবিয়াম রাজা বেদি হইতে হস্ত বিস্তার করিয়া কহিলেন, উহাকে ধর। কিন্তু তিনি তাঁহার বিরুদ্ধে যে হস্ত বিস্তার করিলেন, তাহা শুষ্ক হইয়া গেল, তিনি তাহা আর গুড়াইতে পারিলেন না। আর ঈশ্বরের লোক সদাপ্রভুর বাক্যের দ্বারা যে চিহ্ন নিরূপণ করিয়াছিলেন, তদনুসারে বেদি ফাটিয়া গেল, এবং বেদি হইতে ভস্ম পড়িয়া গেল। তখন রাজা ঈশ্বরের লোককে কহিলেন, আমার হস্ত যেন পুনরায় স্বস্থ হয়, এই জন্য আপনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে অনুগ্রহ যাচ্ঞা করুন, আমার নিমিত্ত প্রার্থনা করুন। তাহাতে ঈশ্বরের লোক সদাপ্রভুর কাছে যাচ্ঞা করিলেন, আর রাজার হস্ত পুনরায় স্বস্থ হইল, পূর্ব্বকার মত হইল। তখন রাজা ঈশ্বরের লোককে কহিলেন, আপনি আমার সহিত গৃহে আসিয়া আরাম করুন, আর আমি আপনাকে উপহার দিব। ঈশ্বরের লোক রাজাকে কহিলেন, যদি আপনি আমাকে আপন বাটীর অর্দ্ধেক দেন, তথাপি আপনার সহিত প্রবেশ করিব না, আমি এই স্থানে অন্ন ভোজন বা জল পান করিব না; কেননা সদাপ্রভুর বাক্য দ্বারা আমি এই আজ্ঞা প্রাপ্ত হইয়াছি, তুমি অন্ন ভোজন ও জল পান করিও না, এবং যে পথ দিয়া যাইবে, সেই পথ দিয়া ফিরিয়া আসিও না। পরে তিনি যে পথ দিয়া বৈথেলে আসিয়াছিলেন, সেই পথে না গিয়া অন্য পথ ধরিয়া প্রস্থান করিলেন। বৈথেলে এক জন প্রাচীন ভাববাদী বাস করিতেন; তাঁহার এক পুত্র আসিয়া, বৈথেলে ঐ দিবসে ঈশ্বরের লোক যাহা যাহা করিয়াছিলেন, সমস্তই তাঁহাকে জ্ঞাত করিল; তিনি রাজাকে যে যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহার বৃত্তান্তও পুত্রেরা পিতাকে কহিল। তাহাদের পিতা জিজ্ঞাসা করিলেন, তিনি কোন্‌ পথে গেলেন? যিহূদা হইতে আগত ঈশ্বরের লোক কোন্‌ পথ ধরিয়া গিয়াছিলেন, তাহা তাঁহার পুত্রেরা দেখিয়াছিল। তখন তিনি আপন পুত্রদিগকে কহিলেন, আমার জন্য গর্দ্দভ সাজাও; তাহারা তাঁহার জন্য গর্দ্দভ সাজাইলে তিনি তাহার উপরে চড়িলেন। আর তিনি ঈশ্বরের লোকের পশ্চাতে গেলেন, এবং এক এলা বৃক্ষের তলে তাঁহাকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া বলিলেন, আপনি কি যিহূদা হইতে আগত ঈশ্বরের লোক? তিনি কহিলেন, আমি সেই। তখন তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমার সহিত গৃহে চলুন, আহার করুন। তিনি কহিলেন, আমি আপনার সহিত ফিরিয়া যাইতে ও আপনার গৃহে প্রবেশ করিতে পারি না; এবং এই স্থানে আপনার সঙ্গে অন্ন ভোজন বা জল পান করিব না; কেননা সদাপ্রভুর বাক্য দ্বারা আমাকে বলা হইয়াছে, তুমি সে স্থানে অন্ন ভোজন ও জল পান করিও না, এবং যে পথ দিয়া যাইবে, সেই পথ দিয়া ফিরিয়া আসিও না। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আপনি যেমন, আমিও তেমনি ভাববাদী; এক জন [স্বর্গীয়] দূত আমাকে সদাপ্রভুর বাক্য দ্বারা এই কথা কহিয়াছেন, তুমি উহাকে অন্ন ভোজন ও জল পান করাইবার জন্য সঙ্গে করিয়া তোমার গৃহে ফিরাইয়া আন। কিন্তু তিনি তাঁহাকে মিথ্যা কথা কহিলেন। তখন তিনি তাঁহার সহিত ফিরিয়া গিয়া তাঁহার গৃহে অন্ন ভোজন ও জল পান করিলেন। তাঁহারা মেজে বসিয়া আছেন, এমন সময়ে, যে ভাববাদী উহাঁকে ফিরাইয়া আনিয়াছিলেন, তাঁহার কাছে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হইল; তখন তিনি যিহূদা হইতে আগত ঈশ্বরের লোককে উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি সদাপ্রভুর বাক্যের বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছ; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহা তুমি পালন কর নাই; তিনি যে স্থানের বিষয়ে বলিয়াছিলেন, তুমি অন্ন ভোজন ও জল পান করিও না, সেই স্থানে ফিরিয়া আসিয়া তুমি অন্ন ভোজন ও জল পান করিয়াছ; এই কারণ তোমার শব তোমার পিতৃলোকদের কবরে প্রবিষ্ট হইবে না। পরে তাঁহার অন্ন ভোজন ও [জল] পান সাঙ্গ হইলে তিনি তাঁহার জন্য, অর্থাৎ যাঁহাকে ফিরাইয়া আনিয়াছিলেন, সেই ভাববাদীর জন্য গর্দ্দভ সাজাইলেন। পরে তিনি যাত্রা করিলে, পথিমধ্যে এক সিংহ তাঁহাকে পাইয়া বধ করিল, ও তাঁহার শব পথে পড়িয়া থাকিল, এবং তাহার পার্শ্বে গর্দ্দভ দাঁড়াইয়া রহিল; শবের পার্শ্বে সিংহ দাঁড়াইয়া রহিল। আর দেখ, লোকেরা পথ দিয়া গমন করিতে করিতে দেখিল, শব পথে পড়িয়া রহিয়াছে, এবং শবের পার্শ্বে সিংহ দাঁড়াইয়া আছে; পরে ঐ প্রাচীন ভাববাদীর নিবাসনগরে আসিয়া সংবাদ দিল। আর যে ভাববাদী তাঁহাকে পথ হইতে ফিরাইয়া আনিয়াছিলেন, তিনি ঐ সংবাদ শুনিয়া কহিলেন, ইনি ঈশ্বরের সেই লোক, যিনি সদাপ্রভুর বাক্যের বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছিলেন; তাঁহার প্রতি সদাপ্রভুর কথিত বাক্যানুসারে সদাপ্রভু তাঁহাকে সিংহের কাছে সমর্পণ করিয়াছেন, আর সিংহ তাঁহাকে বিদীর্ণ করিয়া বধ করিয়াছে। পরে তিনি আপন পুত্রগণকে কহিলেন, আমার জন্য গর্দ্দভ সাজাও; তাহারা তাহা সাজাইল। আর তিনি গিয়া দেখিলেন, শব পথে পড়িয়া রহিয়াছে, এবং শবের পার্শ্বে গর্দ্দভ ও সিংহ দাঁড়াইয়া আছে; সিংহ শব খায় নাই, গর্দ্দভকেও বিদীর্ণ করে নাই। পরে সেই ভাববাদী ঈশ্বরের লোকের শব তুলিয়া লইলেন, এবং গর্দ্দভের উপরে রাখিয়া ফিরাইয়া আনিলেন; সেই প্রাচীন ভাববাদী তাঁহার বিষয়ে বিলাপ করিতে ও তাঁহাকে কবর দিতে আপন নগরে আসিলেন। আর তিনি আপন কবরে ঐ শব রাখিলেন, এবং তাঁহারা হায়, আমার ভ্রাতা! বলিয়া তাঁহার জন্য বিলাপ করিলেন। এইরূপে তাঁহাকে কবর দিবার পর তিনি আপন পুত্রগণকে কহিলেন, আমি যখন মরিব, তখন এই যে কবরে ঈশ্বরের লোক কবরপ্রাপ্ত হইলেন, ইহার মধ্যে আমাকে কবর দিও, ইহাঁর অস্থির পার্শ্বে আমার অস্থি রাখিও। কেননা বৈথেলস্থ যজ্ঞবেদির ও শমরিয়ার নানা নগরে স্থিত উচ্চস্থলীর গৃহের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর বাক্য দ্বারা ইনি যে কথা ঘোষণা করিয়াছেন, তাহা অবশ্য সফল হইবে। এই ঘটনার পরেও যারবিয়াম আপনার কুপথ হইতে ফিরিলেন না, কিন্তু পুনর্ব্বার লোকসাধারণের মধ্য হইতে লোকদিগকে উচ্চস্থলীর যাজক নিযুক্ত করিলেন; যাহার ইচ্ছা হইত, তিনি তাহারই হস্তপূরণ করিতেন, যেন সে উচ্চস্থলীর যাজক হয়। আর এই ব্যাপার যারবিয়ামের কুলের পক্ষে পাপস্বরূপ হইল, যেন তাহা উচ্ছিন্ন ও ভূতল হইতে লুপ্ত হইয়া যায়। সেই সময়ে যারবিয়ামের পুত্র অবিয় পীড়িত হইল। তাহাতে যারবিয়াম আপন স্ত্রীকে কহিলেন, বিনয় করি, উঠ, ছদ্মবেশ ধারণ কর, তুমি যে যারবিয়ামের স্ত্রী, ইহা যেন টের পাওয়া না যায়; তুমি শীলোতে যাও; দেখ, সেখানে অহিয় ভাববাদী আছেন, তিনিই আমার বিষয় বলিয়াছিলেন যে, আমি এই জাতির উপরে রাজা হইব। তুমি দশখানা রুটী, কতকগুলি তিলুয়া ও এক ভাঁড় মধু সঙ্গে লইয়া তাঁহার কাছে যাও; বালকটীর কি হইবে, তাহা তিনি তোমাকে জানাইবেন। যারবিয়ামের স্ত্রী সেইরূপ করিলেন, তিনি উঠিয়া শীলোতে গিয়া অহিয়ের বাটীতে উপস্থিত হইলেন। ঐ সময়ে অহিয় দেখিতে পাইতেন না, কেননা বৃদ্ধ বয়স প্রযুক্ত তাঁহার চক্ষু ক্ষীণ হইয়াছিল। আর সদাপ্রভু অহিয়কে কহিলেন, দেখ, যারবিয়ামের স্ত্রী তোমার কাছে আপন পুত্রের কথা জিজ্ঞাসা করিতে আসিতেছে, কেননা বালকটী পীড়িত; তুমি তাহাকে অমুক অমুক কথা বলিবে; কেননা সে যখন আসিবে, তখন অপরিচিতার মত ভাণ করিবে। পরে দ্বারে তাঁহার প্রবেশ সময়ে অহিয় তাঁহার পায়ের শব্দ শুনিবামাত্র কহিলেন, হে যারবিয়ামের ভার্য্যা, ভিতরে আইস; তুমি কেন অপরিচিতার মত ভাণ করিতেছ? আমি ভারী সংবাদ দিতে তোমার কাছে প্রেরিত হইলাম। যাও, যারবিয়ামকে বল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি প্রজাদের মধ্য হইতে তোমাকে উচ্চ করিয়া আমার প্রজা ইস্রায়েলের অধ্যক্ষ করিয়াছি, এবং দায়ূদের কুল হইতে রাজ্য চিরিয়া লইয়া তোমাকে দিয়াছি; তথাপি আমার দাস যে দায়ূদ আমার আজ্ঞা পালন করিত, এবং আমার দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিবার জন্য সর্ব্বান্তঃকরণে আমার অনুগামী ছিল, তুমি তাহার সদৃশ হও নাই। কিন্তু তোমার পূর্ব্বে যাহারা ছিল, তুমি তাহাদের সকলের অপেক্ষা দুষ্কর্ম্ম করিয়াছ; এবং গিয়া আপনার জন্য অন্য দেবতা ও ছাঁচে ঢালা প্রতিমা সকল নির্ম্মাণ করিয়া আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়াছ; এবং আমাকে তোমার পশ্চাতে ফেলিয়াছ। এই জন্য দেখ, আমি যারবিয়ামের কুলের উপরে অমঙ্গল ঘটাইব; যারবিয়াম বংশের প্রত্যেক পুরুষকে, ইস্রায়েলের মধ্যে বদ্ধ ও মুক্ত লোককে, উচ্ছিন্ন করিব; লোকে যেমন ঝাঁটি দিয়া নিঃশেষে মল দূর করে, তদ্রূপ আমি যারবিয়ামের কুলকে একেবারে ঝাঁটি দিয়া ফেলিব। যারবিয়ামের যে কেহ নগরে মরিবে, তাহাকে কুকুরে খাইবে; ও যে কেহ মাঠে মরিবে, তাহাকে আকাশের পক্ষীরা খাইবে, কারণ সদাপ্রভু ইহা বলিয়াছেন। অতএব তুমি উঠ, তোমার ঘরে যাও; নগরে তোমার পদার্পণ হইবামাত্র বালকটী মরিবে। আর তাহার জন্য সমস্ত ইস্রায়েল বিলাপ করিয়া তাহাকে কবর দিবে; বস্তুতঃ যারবিয়ামের কুলে কেবল সেই কবর পাইবে; কেননা যারবিয়ামের কুলের মধ্যে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি তাহারই কিঞ্চিৎ সদ্ভাব পাওয়া গিয়াছে। আর সদাপ্রভু আপনার জন্য ইস্রায়েলের উপরে এক রাজা উৎপন্ন করিবেন; সে যারবিয়ামের কুলকে সেই দিন উচ্ছিন্ন করিবে; আর কি? এখনই [করিবে]। বস্তুতঃ সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে আঘাত করিয়া জলকম্পিত নলের সমান করিবেন, এবং তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে এই যে উত্তম দেশ দিয়াছেন, ইহা হইতে ইস্রায়েলকে উৎপাটন করিয়া [ফরাৎ] নদীর ওপারে ছিন্নভিন্ন করিবেন, কারণ তাহারা আপনাদের জন্য আশেরামূর্ত্তি সকল নির্ম্মাণ করিয়া সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিয়াছে। যারবিয়াম যে সকল পাপ করিয়াছেন, এবং যে সকল পাপের দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছেন, তৎপ্রযুক্ত সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে ত্যাগ করিবেন। পরে যারবিয়ামের ভার্য্যা উঠিয়া প্রস্থান করিলেন, এবং তির্সাতে উপস্থিত হইলেন, তিনি বাটীর দ্বারের গোবরাটে আসিবামাত্র বালকটী মরিয়া গেল। আর সদাপ্রভু আপন দাস অহিয় ভাববাদীর দ্বারা যে বাক্য বলিয়াছিলেন, তদনুসারে সমস্ত ইস্রায়েল তাহাকে কবর দিয়া তাহার জন্য বিলাপ করিল। যারবিয়ামের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত, তিনি কিরূপে যুদ্ধ করিলেন, ও কিরূপে রাজত্ব করিলেন, দেখ, তাহার বিবরণ ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। যারবিয়ামের রাজত্বকাল বাইশ বৎসর; পরে তিনি আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র নাদব তাঁহার পদে রাজা হইলেন। শলোমনের পুত্র রহবিয়াম যিহূদা দেশে রাজত্ব করিলেন। রহবিয়াম একচল্লিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং সদাপ্রভু আপন নাম স্থাপনার্থে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্য হইতে যে নগর মনোনীত করিয়াছিলেন, সেই যিরূশালেমে তিনি সতের বৎসর রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম নয়মা, তিনি অম্মোনীয়া। আর যিহূদা সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিত; তাহাদের পিতৃপুরুষেরা যাহা যাহা করিয়াছিল, সেই সকল অপেক্ষা তাহারা আপনাদের অধিক পাপ-কর্ম্ম দ্বারা তাঁহার অন্তজ্বালা জন্মাইত। তাহারাও আপনাদের জন্য অনেক উচ্চস্থলী, এবং প্রত্যেক উচ্চ পর্ব্বতে ও প্রত্যেক হরিৎ বৃক্ষের তলে স্তম্ভ ও আশেরা-মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিত; আর দেশে পুংগামী লোকও ছিল। সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন, তাহাদের সমস্ত ঘৃণিত ক্রিয়ানুসারে উহারা কার্য্য করিত। আর রহবিয়াম রাজার পঞ্চম বৎসরে মিসর-রাজ শীশক যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আসিলেন; তিনি সদাপ্রভুর গৃহের ধন ও রাজবাটীর ধন লইয়া গেলেন; তিনি সমস্তই লইয়া গেলেন, আর শলোমনের নির্ম্মিত স্বর্ণময় ঢাল সকলও লইয়া গেলেন। পরে রহবিয়াম রাজা তৎপরিবর্ত্তে পিত্তলময় ঢাল নির্ম্মাণ করাইয়া রাজবাটীর দ্বারপাল পদাতিকদিগের অধ্যক্ষগণের হস্তে সমর্পণ করিলেন। রাজা যখন সদাপ্রভুর গৃহে প্রবেশ করিতেন, তখন ঐ পদাতিকগণ সেই সকল ঢাল ধরিত; পরে পদাতিকদিগের ঘরে ফিরাইয়া লইয়া যাইত। রহবিয়ামের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত ও সমস্ত কর্ম্ম-বিবরণ কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? রহবিয়ামের ও যারবিয়ামের মধ্যে নিয়ত যুদ্ধ হইত। পরে রহবিয়াম আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং আপন পিতৃলোকদের সহিত দায়ূদ-নগরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন। তাঁহার মাতার নাম নয়মা, তিনি অম্মোনীয়া। পরে তাঁহার পুত্র অবিয়াম তাঁহার পদে রাজা হইলেন। নবাটের পুত্র যারবিয়াম রাজার অষ্টাদশ বৎসরে অবিয়াম যিহূদার উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। তিনি তিন বৎসর যিরূশালেমে রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম মাখা; তিনি অবীশালোমের কন্যা। তাঁহার পূর্ব্বে তাঁহার পিতা যে সকল পাপ করিয়াছিলেন, তিনিও সেই সমস্ত পাপপথে চলিতেন; তাঁহার পিতৃপুরুষ দায়ূদের অন্তঃকরণ যেরূপ ছিল, তাঁহার অন্তঃকরণ তদ্রূপ আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে একাগ্র ছিল না। তথাপি দায়ূদের জন্য তাঁহার পরে তাঁহার সন্তানকে তুলিয়া ধরিবার ও যিরূশালেমকে দৃঢ় করিবার নিমিত্ত তাঁহার ঈশ্বর সদাপ্রভু যিরূশালেমে তাঁহাকে এক প্রদীপ দিলেন। কেননা সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, দায়ূদ তাহাই করিতেন; হিত্তীয় ঊরিয়ের ব্যাপার ছাড়া কোন বিষয়ে তিনি তাঁহার আজ্ঞা হইতে যাবজ্জীবন পরাঙ্মুখ হন নাই। রহবিয়ামের ও যারবিয়ামের মধ্যে তাঁহার সমস্ত জীবনকালে যুদ্ধ হইত। অবিয়ামের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত ও সমস্ত কর্ম্ম-বিবরণ যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? আর অবিয়ামের ও যারবিয়ামের মধ্যে যুদ্ধ হইত। পরে অবিয়াম আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; এবং লোকেরা তাঁহাকে দায়ূদ-নগরে কবর দিল; আর তাঁহার পুত্র আসা তাঁহার পদে রাজা হইলেন। ইস্রায়েল-রাজ যারবিয়ামের বিংশতি বৎসরে আসা যিহূদার উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। তিনি একচল্লিশ বৎসর যিরূশালেমে রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম মাখা, তিনি অবীশালোমের কন্যা। আসা আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের ন্যায় সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন। তিনি দেশ হইতে পুংগামীদিগকে তাড়াইয়া দিলেন, এবং তাঁহার পিতৃপুরুষদের নির্ম্মিত পুত্তলি সকল দূরীভূত করিলেন। আর তাঁহার মাতা মাখা আশেরার জন্য এক ভীষণ প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। বলিয়া তাঁহাকে মাতারাণীর পদ হইতে চ্যুত করিলেন, এবং আসা তাঁহার সেই ভীষণ প্রতিমা ছেদন করিয়া কিদ্রোণ স্রোতের ধারে তাহা পোড়াইয়া দিলেন। কিন্তু উচ্চস্থলী সকল দূরীকৃত হইল না; তথাপি আসার অন্তঃকরণ যাবজ্জীবন সদাপ্রভুর উদ্দেশে একাগ্র ছিল। আর তিনি আপন পিতার পবিত্রীকৃত ও আপনার পবিত্রীকৃত রৌপ্য, স্বর্ণ ও পাত্র সকল সদাপ্রভুর গৃহে আনিলেন। আসার এবং ইস্রায়েল-রাজ বাশার মধ্যে যাবজ্জীবন যুদ্ধ হইত। আর যিহূদা রাজ আসার কাছে কোন কাহাকেও যাতায়াত করিতে না দিবার আশয়ে ইস্রায়েল-রাজ বাশা যিহূদার বিরুদ্ধে যাত্রা করিয়া রামা গাঁথাইলেন। তখন আসা সদাপ্রভুর গৃহস্থিত ভাণ্ডারের অবশিষ্ট সমস্ত রৌপ্য ও স্বর্ণ, এবং রাজবাটীর সমস্ত ধন লইয়া আপন দাসদের হস্তে সমর্পণ করিলেন; এবং আসা রাজা তাহাদিগকে হিষিয়োণের পৌত্র টব্রিম্মোণের পুত্র বিন্‌হদদ নামক দম্মেশক-নিবাসী অরাম-রাজের কাছে এই বলিয়া পাঠাইয়া দিলেন, আমাতে ও আপনাতে, আমার পিতাতে ও আপনার পিতাতে নিয়ম আছে; দেখুন, আমি আপনার নিকটে রৌপ্য ও স্বর্ণ উপহার পাঠাইলাম; আপনি গিয়া, ইস্রায়েল-রাজ বাশার সহিত আপনার যে নিয়ম আছে, তাহা ভঙ্গ করুন, তাহা হইলে সে আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিবে। তখন বিন্‌হদদ আসা রাজার কথায় কর্ণপাত করিলেন; তিনি ইস্রায়েলের নগরসমূহের বিরুদ্ধে আপন সেনাপতিগণকে প্রেরণ করিলেন, এবং ইয়োন, দান, আবেল-বৈৎ-মাখা ও সমস্ত কিন্নেরৎ এবং নপ্তালির সমস্ত দেশে আঘাত করিলেন। তখন বাশা এই সংবাদ পাইয়া রামা নির্ম্মাণ হইতে নিবৃত্ত হইয়া তির্সাতে রহিলেন। পরে আসা রাজা সমস্ত যিহূদাকে আহ্বান করিলেন, কাহাকেও বাদ দিলেন না; রামায় বাশা যে প্রস্তর ও কাষ্ঠ দ্বারা গাঁথিয়াছিলেন, তাহারা সে সকল লইয়া গেল; আর আসা রাজা তদ্দ্বারা বিন্যামীনের গেবা ও মিস্পা নগর গাঁথিলেন। আসার অবশিষ্ট সমস্ত বৃত্তান্ত ও তাঁহার সকল বিক্রমের কার্য্য, সমস্ত কর্ম্ম বিবরণ, এবং তিনি যে যে নগর গাঁথিলেন, এই সকলের কথা কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তাঁহার পায়ে রোগ হইল। পরে আসা আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের নগরে আপন পিতৃলোকদের সহিত কবরপ্রাপ্ত হইলেন। আর তাঁহার পুত্র যিহোশাফট তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহূদা-রাজ আসার দ্বিতীয় বৎসরে যারবিয়ামের পুত্র নাদব ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন; তিনি দুই বৎসর ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তিনি তাহাই করিতেন, আপন পিতার পথে, তাঁহার পিতা যদ্দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, সেই পাপ-পথে চলিতেন। আর ইষাখর-কুলজাত অহিয়ের পুত্র বাশা তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিলেন; এবং বাশা পলেষ্টীয়দের অধিকৃত গিব্বথোনে তাঁহাকে আঘাত করিলেন; ঐ সময়ে নাদব ও সমস্ত ইস্রায়েল গিব্বথোন অবরোধ করিতেছিলেন। যিহূদা-রাজ আসার তৃতীয় বৎসরে বাশা নাদবকে বধ করিয়া তাঁহার পদে রাজা হন। রাজা হইয়াই বাশা যারবিয়ামের সমস্ত কুলকে আঘাত করেন। সদাপ্রভু আপন দাস শীলোনীয় অহিয়ের দ্বারা যে বাক্য বলিয়াছিলেন, তদনুসারে বাশা যারবিয়ামের সম্পর্কীয় শ্বাসবিশিষ্ট কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না, সকলকেই সংহার করিলেন। ইহার কারণ এই, যারবিয়াম অনেক পাপ করিয়াছিলেন, এবং তদ্দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন; ফলে এই অসন্তোষজনক কর্ম্ম দ্বারা তিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিয়াছিলেন। নাদবের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত ও সমস্ত কর্ম্ম-বিবরণ কি ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? আর আসার ও ইস্রায়েল-রাজ বাশার মধ্যে যাবজ্জীবন যুদ্ধ হইত। যিহূদা-রাজ আসার তৃতীয় বৎসরে অহিয়ের পুত্র বাশা তির্সাতে সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া চব্বিশ বৎসর রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তিনি তাহাই করিতেন, এবং যারবিয়ামের পথে, যদ্দ্বারা তিনি ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার সেই পাপ-পথে চলিতেন। পরে হনানির পুত্র যেহূর নিকটে বাশার বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, আমি তোমাকে ধূলির মধ্য হইতে উঠাইলাম, ও আপন প্রজা ইস্রায়েলের অধ্যক্ষ করিলাম, কিন্তু তুমি যারবিয়ামের পথে চলিয়াছ, আমার প্রজা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়া তাহাদের পাপ দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়াছ। দেখ, আমি বাশাকে ও তাহার কুলকে ঝাঁটি দিব; এবং তোমার কুলকে নবাটের পুত্র যারবিয়ামের কুলের সমান করিব। বাশার যে কেহ নগরে মরিবে, কুকুরেরা তাহাকে খাইবে; এবং যে কেহ মাঠে মরিবে, আকাশের পক্ষীরা তাহাকে খাইবে। বাশার অবশিষ্ট বৃত্তান্ত, তাঁহার কর্ম্মবিবরণ ও বিক্রমের কার্য্য কি ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে বাশা আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, ও তির্সাতে কবরপ্রাপ্ত হইলেন; এবং তাঁহার পুত্র এলা তাঁহার পদে রাজা হইলেন। আবার হনানির পুত্র যেহূ ভাববাদী দ্বারা বাশার ও তাঁহার কুলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হইয়াছিল, তাহার কারণ, একে ত বাশা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যে সকল দুষ্ক্রিয়া করিয়া আপন হস্তকৃত কার্য্য দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিয়াছিলেন, সেই সকলের দ্বারা যারবিয়ামের কুলের সমান হইয়াছিলেন, আবার সেই কুলকে আঘাত করিয়াছিলেন। যিহূদা-রাজ আসার ষড়বিংশ বৎসরে বাশার পুত্র এলা তির্সাতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া দুই বৎসর রাজত্ব করেন। পরে তাঁহার অর্দ্ধসংখ্যক রথের অধ্যক্ষ সিম্রি নামে তাঁহার দাস তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিলেন। এলা তির্সাতে রাজবাটীর অধ্যক্ষ অর্সার গৃহে পান করিয়া মত্ত হইলেন, আর সিম্রি ভিতরে গিয়া যিহূদা-রাজ আসার সপ্তবিংশ বৎসরে তাঁহাকে আঘাত করিয়া মারিয়া ফেলিলেন, ও তাঁহার পদে রাজা হইলেন। রাজত্বের আরম্ভকালে তিনি সিংহাসনে উপবিষ্ট হইবামাত্র বাশার সমস্ত কুলকে আঘাত করিলেন; তাঁহার কুলে কোন পুরুষকে, তাঁহার জ্ঞাতি কিম্বা মিত্র কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না। ফলতঃ সদাপ্রভু যেহূ ভাববাদী দ্বারা বাশার বিরুদ্ধে যে কথা বলিয়াছিলেন, তদনুসারে সিম্রি বাশার সমস্ত কুল সংহার করিলেন। ইহার কারণ বাশার সমস্ত পাপ ও তাঁহার পুত্র এলার পাপাচার; তাঁহারা আপনার পাপ করিয়াছিলেন, এবং ইস্রায়েলকেও পাপ করাইয়া ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে আপনাদের অসার প্রতিমার দ্বারা অসন্তুষ্ট করিয়াছিলেন। এলার অবশিষ্ট বৃত্তান্ত ও তাঁহার সমস্ত কর্ম্মের বিবরণ ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? যিহূদা-রাজ আসার সপ্তবিংশ বৎসরে সিম্রি সাত দিন তির্সাতে রাজত্ব করেন; সেই সময়ে লোকেরা পলেষ্টীয়দের অধিকৃত গিব্বথোনের বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করিয়াছিল। পরে সেই শিবিরস্থ লোকেরা শুনিল যে, সিম্রি চক্রান্ত করিয়াছে ও রাজাকে আঘাত করিয়াছে; তখন সমস্ত ইস্রায়েল সেই দিন শিবিরের মধ্যে অম্রি নামক সেনাপতিকে ইস্রায়েলের উপরে রাজা করিল। পরে অম্রি ও তাঁহার সহিত সমস্ত ইস্রায়েল গিব্বথোন হইতে যাত্রা করিয়া তির্সা অবরোধ করিলেন। আর নগর হস্তগত হইল দেখিয়া সিম্রি রাজবাটীর দুর্গে গিয়া আপনার উপরে রাজবাটীতে আগুন দিয়া পোড়াইয়া দিলেন ও পুড়িয়া মরিলেন। ইহার কারণ তাঁহার পাপাচার, ফলতঃ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন, যারবিয়ামের পথে চলিতেন, তিনি নিজে পাপ করিয়া ইস্রায়েলকেও পাপ করাইয়াছিলেন। সিম্রির অবশিষ্ট বৃত্তান্ত ও তাঁহার কৃত চক্রান্তের বিষয় ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? তৎকালে ইস্রায়েলের লোকেরা দুই দল হইল; অর্দ্ধেক লোক গীনতের পুত্র তিব্‌নিকে রাজা করিতে তাহার অনুগামী হইল, আর অর্দ্ধেক লোক অম্রির অনুগামী হইল। কিন্তু অম্রির অনুগামী লোকেরা গীনতের পুত্র তিব্‌নির অনুগামীদিগকে পরাজয় করিল; আর তিব্‌নি মরিলেন, এবং অম্রি রাজা হইলেন। যিহূদা-রাজ আসার একত্রিংশ বৎসরে অম্রি ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া বারো বৎসর রাজত্ব করেন; তিনি ছয় বৎসর তির্সাতে রাজত্ব করেন। পরে তিনি দুই তালন্ত রৌপ্য মূল্য দিয়া শেমরের কাছে শমরিয়া পাহাড় ক্রয় করিলেন, আর সেই পাহাড়ের উপরে গাঁথিলেন; এবং যে নগর গাঁথিলেন, ঐ পাহাড়ের অধিকারী শেমরের নামানুসারে সেই নগরের নাম শমরিয়া রাখিলেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, অম্রি তাহাই করিতেন; এবং তাঁহার পূর্ব্বে যাঁহারা ছিলেন, তাঁহাদের সকলের হইতে অধিক দুষ্কার্য্য করিলেন। বাস্তবিক ইনি নবাটের পুত্র যারবিয়ামের সমস্ত পথে চলিতেন, এবং তিনি যে যে পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়া ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তাহাদের অসার প্রতিমা সকল দ্বারা অসন্তুষ্ট করিয়াছিলেন, ইনিও সেই সকল পাপের পথে চলিতেন। অম্রির অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও তাঁহার সাধিত বিক্রমের কার্য্য ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? পরে অম্রি আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, ও শমরিয়াতে কবরপ্রাপ্ত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র আহাব তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহূদা-রাজ আসার অষ্টত্রিংশ বৎসরে অম্রির পুত্র আহাব ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন; আর অম্রির পুত্র আহাব বাইশ বৎসর শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করেন। তাঁহার পূর্ব্বে যাঁহারা ছিলেন, তাঁহাদের সকলের হইতে অম্রির পুত্র আহাব সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই অধিক পরিমাণে করিতেন। নবাটের পুত্র যারবিয়ামের পাপ-পথে গমন করা যেন তাঁহার পক্ষে লঘু বিষয় বোধ হইত, তাই তিনি সীদোনীয়দের ইৎবাল রাজার কন্যা ঈষেবলকে বিবাহ করিলেন, আর গিয়া বালের সেবা ও তাঁহার কাছে প্রণিপাত করিতে লাগিলেন। আর তিনি শমরিয়াতে যে বাল-মন্দির নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাঁহার মধ্যে বালের জন্য এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। আর আহাব আশেরা-মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিলেন। তাঁহার পূর্ব্বে ইস্রায়েলে যত রাজা ছিলেন, সেই সকল অপেক্ষা আহাব ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অসন্তোষজনক আরও অধিক কাজ করিলেন। তাঁহার সময়ে বৈথেলীয় হীয়েল যিরীহো নগর নির্ম্মাণ করিল; তাহাতে সদাপ্রভু নূনের পুত্র যিহোশূয়ের দ্বারা যে বাক্য বলিয়াছিলেন, তদনুসারে তাহাকে ভিত্তিমূল স্থাপনের দণ্ডস্বরূপ আপন জ্যেষ্ঠ পুত্র অবীরামকে, এবং কবাট স্থাপনের দণ্ডস্বরূপ আপন কনিষ্ঠ পুত্র সগূবকে দিতে হইল। আর গিলিয়দ-প্রবাসীদের মধ্যবর্ত্তী তিশ্‌বীয় এলিয় আহাবকে কহিলেন, আমি যাঁহার সাক্ষাতে দণ্ডায়মান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এই কয়েক বৎসর শিশির কি বৃষ্টি পড়িবে না; কেবল আমার কথানুসারে পড়িবে। পরে তাঁহার নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি এই স্থান হইতে প্রস্থান করিয়া পূর্ব্বদিকে যাও, এবং যর্দ্দনের সম্মুখস্থ করীৎ স্রোতের ধারে লুকাইয়া থাক। সে স্থানে তুমি স্রোতের জল পান করিতে পাইবে, আর আমি কাকদিগকে তোমার খাদ্য দ্রব্য যোগাইবার আজ্ঞা দিয়াছি। তখন তিনি গিয়া সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে কর্ম্ম করিলেন, যর্দ্দনের সম্মুখস্থ করীৎ স্রোতের ধারে গিয়া অবস্থিতি করিলেন। আর কাকেরা তাঁহার জন্য প্রাতঃকালে রুটী ও মাংস, এবং সন্ধ্যাকালেও রুটী ও মাংস আনিয়া দিত; আর তিনি স্রোতের জল পান করিতেন। কিছু কাল পরে দেশে বৃষ্টি না হওয়াতে ঐ স্রোত শুষ্ক হইয়া গেল। পরে তাঁহার নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি উঠ, সীদোনের অন্তঃপাতী সারিফতে গিয়া সেখানে বাস কর; দেখ, আমি তথায় এক বিধবাকে তোমার খাদ্য দ্রব্য যোগাইবার আজ্ঞা দিয়াছি। তখন তিনি উঠিয়া সারিফতে যাত্রা করিলেন; আর যখন সেই নগরের দ্বারে উপস্থিত হইলেন, দেখ, সেই স্থানে এক বিধবা কাষ্ঠ কুড়াইতেছে। তিনি তাহাকে ডাকিয়া কহিলেন, বিনয় করি, তুমি একটী পাত্রে করিয়া কিঞ্চিৎ জল আন, আমি পান করিব। সে স্ত্রীলোকটী তাহা আনিতে যাইতেছে, ইতিমধ্যে তিনি তাহাকে ডাকিয়া কহিলেন, বিনয় করি, আমার জন্য এক খণ্ড রুটী হাতে করিয়া আনিও। সে কহিল, তোমার ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমার ঘরে একটী পিষ্টকও নাই; কেবল জালায় এক মুষ্টি ময়দা ও ভাঁড়ে কিঞ্চিৎ তৈল আছে; আর দেখ, আমি খান দুই কাষ্ঠ কুড়াইতেছি, তাহা লইয়া গিয়া আমার ও আমার ছেলেটীর জন্য উহা পাক করিব; পরে আমরা তাহা খাইয়া মরিব। এলিয় তাহাকে কহিলেন, ভয় করিও না; যাহা বলিলে, তাহা কর গিয়া, কিন্তু প্রথমে তাহা হইতে আমার জন্য একটী ক্ষুদ্র পিষ্টক প্রস্তুত করিয়া আন; পরে আপনার ও ছেলেটীর জন্য প্রস্তুত করিও। কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে দিন পর্য্যন্ত সদাপ্রভু ভূতলে বৃষ্টি না দেন, সেই দিন পর্য্যন্ত তোমার ময়দার জালা শূন্য হইবে না, ও তৈলের ভাঁড় শুকাইয়া যাইবে না। তাহাতে সে গিয়া এলিয়ের বাক্যানুসারে করিল; আর সে এবং এলিয়, এবং সেই স্ত্রীলোকের পরিজন অনেক দিন পর্য্যন্ত ভোজন করিল। সদাপ্রভু এলিয়ের দ্বারা যে বাক্য বলিয়াছিলেন, তদনুসারে ঐ ময়দার জালা শূন্য হইল না, তৈলের ভাঁড়ও শুকাইল না। এই সকল ঘটনার পরে সেই স্ত্রীলোকের, সেই গৃহস্বামিনীর, পুত্র পীড়িত হইল, এবং তাহার পীড়া এমন উৎকট হইল যে, তাহার শরীরে আর শ্বাসবায়ু রহিল না। তখন স্ত্রীলোকটী এলিয়কে কহিল, হে ঈশ্বরের লোক, আপনার সহিত আমার বিষয় কি? আপনি আমার অপরাধ স্মরণ করাইতে ও আমার পুত্রকে মারিয়া ফেলিতে আমার এখানে আসিয়াছেন। তিনি তাহাকে কহিলেন, তোমার পুত্রটী আমাকে দেও। পরে তিনি তাহার ক্রোড় হইতে ছেলেটীকে লইয়া উপরে আপনার থাকিবার কুঠরীতে গিয়া আপন শয্যায় শোয়াইয়া দিলেন। আর তিনি সদাপ্রভুকে ডাকিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি যে বিধবার বাটীতে প্রবাস করিতেছি, তুমি কি তাহার পুত্রকে মারিয়া ফেলিয়া তাহারও উপরে অমঙ্গল উপস্থিত করিলে? পরে তিনি বালকটীর উপরে তিন বার আপন শরীর লম্বমান করিয়া সদাপ্রভুকে ডাকিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, বিনয় করি, এই বালকের মধ্যে প্রাণ ফিরিয়া আসুক। তখন সদাপ্রভু এলিয়ের রবে কর্ণপাত করিলেন, তাহাতে বালকটীর প্রাণ তাহার মধ্যে ফিরিয়া আসিল, সে পুনর্জীবিত হইল। পরে এলিয় বালকটীকে লইয়া উপরিস্থ কুঠরী হইতে গৃহমধ্যে নামিয়া গিয়া তাহার মাতার কাছে সমর্পণ করিলেন; আর এলিয় কহিলেন, দেখ, তোমার পুত্র জীবিত। তাহাতে সে স্ত্রী এলিয়কে কহিল, এখন আমি জানিতে পারিলাম, আপনি ঈশ্বরের লোক, এবং সদাপ্রভুর যে বাক্য আপনার মুখে আছে, তাহা সত্য। অনেক দিনের পর এইরূপ ঘটিল। তৃতীয় বৎসরে এলিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি গিয়া আহাবকে দেখা দেও; পরে আমি ভূতলে বৃষ্টি প্রেরণ করিব। তাহাতে এলিয় আহাবকে দেখা দিতে গেলেন। তৎকালে শমরিয়ায় ভারী দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। আর আহাব রাজবাটীর অধ্যক্ষ ওবদিয়কে ডাকিলেন। ওবদিয় সদাপ্রভুকে অতিশয় ভয় করিতেন; আর যে সময়ে ঈষেবল সদাপ্রভুর ভাববাদিগণকে উচ্ছেদ করিতেছিল, সেই সময়ে ওবদিয় এক শত ভাববাদীকে লইয়া পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করিয়া গহ্বরের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন, আর তিনি অন্ন জল দিয়া তাহাদিগকে প্রতিপালন করিতেন। আহাব ওবদিয়কে কহিলেন, দেশের মধ্যে যত জলের উনুই ও স্রোতমার্গ আছে, তুমি সেইগুলির কাছে যাও; হয় ত আমরা কিছু তৃণ পাইতে পারিব, এবং অশ্ব ও অশ্বতর সকলের প্রাণ রক্ষা করিব, নতুবা সমস্ত পশু হারাইতে হইবে। আর তাঁহারা দেশে পরিভ্রমণ করণার্থে আপনাদের মধ্যে দেশ দুই ভাগ করিয়া লইলেন; আহাব স্বতন্ত্র এক পথে গেলেন, এবং ওবদিয় স্বতন্ত্র অন্য পথে গেলেন। ওবদিয় পথ দিয়া যাইতেছিলেন, এমন সময়ে, দেখ, এলিয় তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত; তখন ওবদিয় তাঁহাকে চিনিয়া উবুড় হইয়া পড়িয়া কহিলেন, আপনি কি আমার প্রভু এলিয়? তিনি উত্তর করিলেন, আমি সেই; যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন, এলিয় উপস্থিত। তিনি কহিলেন, আমি কি পাপ করিলাম যে, আপনি আপন দাস আমাকে বধ করণার্থে আহাবের হস্তে সমর্পণ করিতে চাহেন? আপনার ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এমন কোন জাতি কি রাজ্য নাই, যাহার নিকটে আমার প্রভু আপনার অন্বেষণে দূত পাঠান নাই; আর যখন তাহারা বলিল, সে ব্যক্তি নাই; তখন তাহারা আপনাকে পাইতে পারে নাই বলিয়া তিনি সেই সকল রাজ্যের ও জাতির লোকদিগকে শপথও করাইয়াছেন। এখন আপনি বলিতেছেন, যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন, এলিয় উপস্থিত। আর আমি আপনার নিকট হইতে গেলেই সদাপ্রভুর আত্মা আমার অজ্ঞাত কোন স্থানে আপনাকে লইয়া যাইবেন, তাহাতে আমি গিয়া আহাবকে সংবাদ দিলে যদি তিনি আপনার উদ্দেশ না পান, তবে আমাকে বধ করিবেন; কিন্তু আপনার দাস আমি বাল্যাবধি সদাপ্রভুকে ভয় করিয়া আসিতেছি। ঈষেবল যখন সদাপ্রভুর ভাববাদিগণকে বধ করিতেছিলেন, তখন আমি যাহা করিয়াছিলাম, তাহা কি আমার প্রভু শুনেন নাই? আমি পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করিয়া সদাপ্রভুর এক শত ভাববাদীকে গহ্বরে লুকাইয়া রাখিয়া অন্নজল দিয়া প্রতিপালন করিয়াছি। আর এখন আপনি বলিতেছেন, যাও, তোমার প্রভুকে বল, দেখুন, এলিয় উপস্থিত; তিনি ত আমাকে বধ করিবেন। এলিয় কহিলেন, আমি যাঁহার সাক্ষাতে দণ্ডায়মান, সেই বাহিনীগণের জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমি অদ্য অবশ্য তাঁহাকে দেখা দিব। তখন ওবদিয় আহাবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন ও তাঁহাকে সংবাদ দিলেন; তাহাতে আহাব এলিয়ের সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন। এলিয়ের দেখা পাইবামাত্র আহাব তাঁহাকে কহিলেন, হে ইস্রায়েলের কন্টক, এ কি তুমি? এলিয় কহিলেন, আমি ইস্রায়েলের কন্টক হই নাই, কিন্তু আপনি ও আপনার পিতৃকুল; কেননা আপনারা সদাপ্রভুর আজ্ঞা সকল ত্যাগ করিয়াছেন, এবং আপনি বালবেদগণের অনুগামী হইয়াছেন। এখন লোক পাঠাইয়া সমস্ত ইস্রায়েলকে কর্ম্মিল পর্ব্বতে আমার নিকটে একত্র করুন, এবং বালের ভাববাদী সেই চারি শত পঞ্চাশ জনকে ও আশেরার ভাববাদী সেই চারি শত জনকেও উপস্থিত করুন, যাহারা ঈষেবলের মেজে ভোজন করিয়া থাকে। তাহাতে আহাব সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানের কাছে লোক পাঠাইলেন, এবং সেই ভাববাদিগণকে কর্ম্মিল পর্ব্বতে একত্র করিলেন। পরে এলিয় সমস্ত লোকের নিকটে উপস্থিত হইয়া কহিলেন, তোমরা কত কাল দুই নৌকায় পা দিয়া থাকিবে? সদাপ্রভু যদি ঈশ্বর হন, তবে তাঁহার অনুগামী হও; আর বাল যদি ঈশ্বর হয়, তবে তাঁহার অনুগামী হও। কিন্তু লোকেরা তাঁহাকে কোন উত্তর দিল না। তখন এলিয় লোকদিগকে কহিলেন, আমি, কেবল একা আমিই, সদাপ্রভুর ভাববাদী অবশিষ্ট আছি; কিন্তু বালের ভাববাদিগণ চারি শত পঞ্চাশ জন আছে। আমাদিগকে দুইটী বৃষ দত্ত হউক; উহারা আপনাদের জন্য একটী বৃষ মনোনীত করুক, ও খণ্ড খণ্ড করিয়া কাষ্ঠের উপরে রাখুক, কিন্তু তাহাতে আগুন না দিউক; পরে আমি অন্য বৃষটী প্রস্তুত করিয়া কাষ্ঠের উপরে রাখিব, কিন্তু তাহাতে আগুন দিব না। পরে তোমরা আপনাদের দেবতার নামে ডাকিও, এবং আমি সদাপ্রভুর নামে ডাকিব; আর যে ঈশ্বর আগুনের দ্বারা উত্তর দিবেন, তিনিই ঈশ্বর হউন। সকল লোক উত্তর করিল, এ বেশ কথা। পরে এলিয় বালের ভাববাদিগণকে কহিলেন, তোমরা ত অনেকে আছ, অগ্রে তোমরাই আপনাদের জন্য একটা বৃষ মনোনীত করিয়া প্রস্তুত কর, এবং আপনাদের দেবতার নামে ডাক, কিন্তু আগুন দিও না। পরে তাহাদিগকে যে বৃষ দত্ত হইল, তাহা লইয়া তাহারা প্রস্তুত করিল, এবং প্রাতঃকাল হইতে মধ্যাহ্নকাল পর্য্যন্ত এই বলিয়া বালের নামে ডাকিতে লাগিল, হে বাল, আমাদিগকে উত্তর দেও। কিন্তু কোন বাণী হইল না, এবং কেহই উত্তর দিল না। আর তাহারা নির্ম্মিত যজ্ঞবেদির কাছে খোঁড়ার ন্যায় নাচিতে লাগিল। পরে মধ্যাহ্নকালে এলিয় তাহাদিগকে বিদ্রূপ করিয়া কহিলেন, উচ্চৈঃস্বরে ডাক; কেননা সে দেবতা; সে ধ্যান করিতেছে, বা কোথাও গিয়াছে, বা পথে চলিতেছে, কিম্বা হয় ত নিদ্রা গিয়াছে, তাহাকে জাগান চাই। তখন তাহারা উচ্চৈঃস্বরে ডাকিল, এবং আপনাদের ব্যবহারানুসারে গাত্রে রক্তের ধারা বহন পর্য্যন্ত ছুরিকা ও শলাকা দ্বারা আপনাদিগকে ক্ষতবিক্ষত করিল। আর মধ্যাহ্নকাল অতীত হইলে তাহারা [বৈকালের] বলিদানের সময় পর্য্যন্ত ভাবোক্তি প্রচার করিল, তথাপি কোন বাণীও হইল না, কেহ উত্তরও দিল না, কেহ মনোযোগও করিল না। পরে এলিয় সমস্ত লোককে কহিলেন, আমার নিকটে আইস; তাহাতে সমস্ত লোক তাঁহার নিকটে আসিল। আর তিনি সদাপ্রভুর ভগ্ন যজ্ঞবেদি সারাইলেন। কারণ ‘তোমার নাম ইস্রায়েল হইবে, ‘ ইহা বলিয়া সদাপ্রভুর বাক্য যে যাকোবের কাছে উপস্থিত হইয়াছিল, তাঁহার সন্তানদের বংশ-সংখ্যানুসারে এলিয় বারোখানা প্রস্তর গ্রহণ করিলেন। আর তিনি সেই প্রস্তরগুলি দিয়া সদাপ্রভুর নামে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, এবং বেদির চারিদিকে দুই কাঠা বীজ ধরিতে পারে, এমন এক প্রণালী খুদিলেন। পরে তিনি কাষ্ঠ সাজাইয়া বৃষটী খণ্ড খণ্ড করিয়া কাষ্ঠের উপরে রাখিলেন। আর কহিলেন, চারি জালা জল ভরিয়া এই হোমবলির উপরে ও কাষ্ঠের উপরে ঢালিয়া দেও। পরে তিনি কহিলেন, দ্বিতীয় বার উহা কর; তাহারা দ্বিতীয় বার তাহা করিল। পরে তিনি কহিলেন, তৃতীয় বার কর; তাহারা তৃতীয় বার তাহা করিল। তখন বেদির চারিদিকে জল গেল, এবং তিনি ঐ প্রণালীও জলে পরিপূর্ণ করিলেন। পরে [বৈকালের] বলিদান সময়ে এলিয় ভাববাদী নিকটে আসিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও ইস্রায়েলের ঈশ্বর, অদ্য জানাইয়া দেও যে, ইস্রায়েলের মধ্যে তুমিই ঈশ্বর, এবং আমি তোমার দাস, ও তোমার বাক্যানুসারেই এই সকল কর্ম্ম করিলাম। হে সদাপ্রভু, আমাকে উত্তর দেও, আমাকে উত্তর দেও; যেন এই লোকেরা জানিতে পারে যে, হে সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর, এবং তুমিই ইহাদের হৃদয় ফিরাইয়া আনিয়াছ। তখন সদাপ্রভুর অগ্নি পতিত হইল, এবং হোমবলি, কাষ্ঠ, প্রস্তর ও ধূলি গ্রাস করিল, এবং প্রণালীস্থিত জলও চাটিয়া খাইল। তাহা দেখিয়া সমস্ত লোক উবুড় হইয়া পড়িয়া কহিল, সদাপ্রভুই ঈশ্বর, সদাপ্রভুই ঈশ্বর। তখন এলিয় তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা বালের ভাববাদিগণকে ধর, তাহাদের এক জনকেও পলাইয়া রক্ষা পাইতে দিও না। তখন তাহারা তাহাদিগকে ধরিল, আর এলিয় তাহাদিগকে লইয়া কীশোন স্রোতোমার্গে নামিয়া গেলেন, এবং সেখানে তাহাদিগকে বধ করিলেন। পরে এলিয় আহাবকে কহিলেন, আপনি উঠিয়া গিয়া ভোজন পান করুন, কেননা ভারী বৃষ্টির শব্দ হইতেছে। তাহাতে আহাব ভোজন পান করিতে উঠিয়া গেলেন। আর এলিয় কর্ম্মিলের শৃঙ্গে উঠিলেন; এবং ভূমির দিকে নত হইয়া আপন মুখ দুই জানুর মধ্যে রাখিলেন। আর তিনি আপন চাকরকে কহিলেন, তুমি উঠিয়া যাও, সমুদ্রের দিকে দৃষ্টিপাত কর। তাহাতে সে গিয়া দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, কিছুই নাই। এলিয় কহিলেন, আবার যাও; সাত বার। পরে সপ্তম বারে সে কহিল, দেখুন, মনুষ্যহস্তের ন্যায় ক্ষুদ্র একখানি মেঘ সমুদ্র হইতে উঠিতেছে। তখন এলিয় কহিলেন, উঠিয়া গিয়া আহাবকে বল, [রথে অশ্ব] যুড়িয়া নামিয়া যাউন, পাছে বৃষ্টিতে আপনার গমনের ব্যাঘাত হয়। আর অমনি মেঘে ও বায়ুতে আকাশ ঘোর হইয়া উঠিল ও ভারী বৃষ্টি হইল; তাহাতে আহাব শকটারোহণে যিষ্রিয়েলে গমন করিলেন। আর সদাপ্রভুর হস্ত এলিয়ের উপরে অবস্থিতি করিতেছিল, তাই তিনি কটি বন্ধন করিয়া যিষ্রিয়েলের প্রবেশ-স্থান পর্য্যন্ত আহাবের অগ্রে অগ্রে দৌড়িয়া গেলেন। আর এলিয় যাহা যাহা করিয়াছিলেন, কেমন করিয়া তিনি সমুদয় ভাববাদীকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়াছিলেন, এই সমস্ত বৃত্তান্ত আহাব ঈষেবলকে জ্ঞাত করিলেন। তাহাতে ঈষেবল এলিয়ের নিকটে দূত পাঠাইয়া কহিল, কল্য এমন সময়ে যদি আমি তোমার প্রাণকে তাঁহাদের এক জনের প্রাণের সমান না করি, তবে দেবগণ আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। এলিয় তাহা দেখিয়া উঠিলেন, এবং প্রাণরক্ষার্থে চলিয়া গেলেন, আর যিহূদার অন্তঃপাতী বেরশেবাতে উপস্থিত হইয়া সেখানে আপন চাকরটিকে রাখিলেন। কিন্তু তিনি আপনি এক দিনের পথ প্রান্তরে অগ্রসর হইয়া এক রোতম বৃক্ষের কাছে গিয়া তাহার তলে বসিলেন, এবং আপনার মৃত্যু প্রার্থনা করিলেন; কহিলেন, এই যথেষ্ট; হে সদাপ্রভু, এখন আমার প্রাণ লও, কেননা আপন পিতৃপুরুষদের হইতে আমি উত্তম নহি। পরে তিনি এক রোতম বৃক্ষের তলে শয়ন করিয়া নিদ্রা গেলেন; আর দেখ, এক দূত তাঁহাকে স্পর্শ করিয়া কহিলেন, উঠ, আহার কর। তিনি চাহিয়া দেখিলেন; আর দেখ, তাঁহার শিয়রে তপ্ত প্রস্তরে পক্ব একখানি পিষ্টক ও এক ভাঁড় জল রহিয়াছে; তখন তিনি ভোজন পান করিয়া পুনর্ব্বার শয়ন করিলেন। পরে সদাপ্রভুর দূত দ্বিতীয় বার তাঁহার নিকটে আসিয়া তাঁহাকে স্পর্শ করিয়া কহিলেন, উঠ, আহার কর, কেননা তোমার শক্তি হইতেও পথ অধিক। তাহাতে তিনি উঠিয়া ভোজন পান করিলেন, এবং সেই খাদ্যের প্রভাবে চল্লিশ দিবারাত্র গমন করিয়া ঈশ্বরের পর্ব্বত হোরেবে উপস্থিত হইলেন। পরে তিনি তথায় এক গহ্বরে উপস্থিত হইয়া সেই স্থানে রাত্রি যাপন করিলেন। আর দেখ, তাঁহার নিকটে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হইল; তিনি কহিলেন, এলিয়, তুমি এখানে কি করিতেছ? এলিয় কহিলেন, আমি বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভুর পক্ষে অতিশয় উদ্যোগী হইয়াছি; কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ তোমার নিয়ম ত্যাগ করিয়াছে, তোমার যজ্ঞবেদি সকল উৎপাটন করিয়াছে, ও তোমার ভাববাদিগণকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়াছে; আর আমি, কেবল একা আমিই অবশিষ্ট রহিলাম; আর তাহারা আমার প্রাণ লইতে চেষ্টা করিতেছে। পরে তিনি কহিলেন, তুমি বাহির হইয়া এই পর্ব্বতে সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াও। আর দেখ, সদাপ্রভু সেই স্থান দিয়া গমন করিলেন; এবং সদাপ্রভুর অগ্রগামী প্রবল প্রচণ্ড বায়ু পর্ব্বতমালা বিদীর্ণ করিল, ও শৈল সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল; কিন্তু সেই বায়ুতে সদাপ্রভু ছিলেন না। বায়ুর পরে ভূমিকম্প হইল, কিন্তু সেই ভূমিকম্পে সদাপ্রভু ছিলেন না। ভূমিকম্পের পরে অগ্নি হইল, কিন্তু সেই অগ্নিতে সদাপ্রভু ছিলেন না। অগ্নির পরে ঈষৎ শব্দকারী ক্ষুদ্র এক স্বর হইল; তাহা শুনিবামাত্র এলিয় শাল দিয়া মুখ ঢাকিলেন, এবং বাহিরে গিয়া গহ্বরের মুখে দাঁড়াইলেন। আর দেখ, তাঁহার প্রতি এই বাণী হইল, এলিয়, তুমি এখানে কি করিতেছ? তিনি কহিলেন, আমি বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভুর পক্ষে অতিশয় উদ্যোগী হইয়াছি; কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ তোমার নিয়ম ত্যাগ করিয়াছে, তোমার যজ্ঞবেদি সকল উৎপাটন করিয়াছে, ও তোমার ভাববাদিগণকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়াছে; আর আমি, কেবল একা আমিই অবশিষ্ট রহিলাম; আর তাহারা আমার প্রাণ লইতে চেষ্টা করিতেছে। তখন সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি যাও, আপন পথে ফিরিয়া দম্মেশকের প্রান্তরে গমন কর, পরে গিয়া হসায়েলকে অরামের উপরে রাজপদে অভিষেক কর, এবং নিম্‌শির পুত্র যেহূকে ইস্রায়েলের উপরে রাজপদে অভিষেক কর; আর তোমার পদে ভাববাদী হইবার জন্য আবেলমহোলা-নিবাসী শাফটের পুত্র ইলীশায়কে অভিষেক কর। তাহাতে যে কেহ হসায়েলের খড়্‌গ এড়াইবে, যেহূ তাহাকে বধ করিবে; যে কেহ যেহূর খড়্‌গ এড়াইবে, ইলীশায় তাহাকে বধ করিবে। কিন্তু ইস্রায়েলের মধ্যে আমি আপনার জন্য সাত সহস্র লোককে অবশিষ্ট রাখিব, সেই সকলের জানু বালের সম্মুখে পাতিত হয় নাই, ও সেই সকলের মুখ তাহাকে চুম্বন করে নাই। পরে তিনি তথা হইতে গিয়া শাফটের পুত্র ইলীশায়ের দেখা পাইলেন; সেই সময়ে তিনি হাল বহিতেছিলেন; বারো যোড়া বলদ তাঁহার অগ্রে ছিল, এবং শেষ যোড়ার সহিত তিনি আপনি ছিলেন। এলির তাঁহার নিকট পর্য্যন্ত অগ্রসর ইহয়া আপনার শাল তাঁহার গাত্রে ফেলিয়া দিলেন। তাহাতে তিনি বলদ সকল ত্যাগ করিয়া এলিয়ের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, বিনয় করি, অনুমতি দিউন, আমি আপন মাতা পিতাকে চুম্বন করিয়া আসি, পরে আপনার পশ্চাদগামী হইব। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, তুমি ফিরিয়া যাও, বল দেখি, আমি তোমার কি করিলাম? পরে তিনি তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া গেলেন, এবং সেই বলদ যোড়া লইয়া বলিদান করিলেন, এবং তাহাদের যোঁয়ালিকাষ্ঠের দ্বারা তাহাদের মাংস পাক করিলেন, পরে লোকদিগকে দিলে তাহারা ভোজন করিল। তখন তিনি উঠিয়া এলিয়ের পশ্চাদগামী হইলেন ও তাঁহার পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন। আর অরাম-রাজ বিন্‌হদদ আপনার সমস্ত সৈন্য একত্র করিলেন; তাঁহার সঙ্গে বত্রিশ জন রাজা এবং অনেক অশ্ব ও রথ ছিল; তিনি উঠিয়া গিয়া শমরিয়া অবরোধ করিলেন, ও সেই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিলেন। তিনি নগরে ইস্রায়েল-রাজ আহাবের নিকটে দূতগণকে পাঠাইয়া কহিলেন, বিন্‌হদদ এই কথা কহেন; তোমার রৌপ্য ও তোমার স্বর্ণ আমার, এবং তোমার ভার্য্যা সকল ও তোমার সন্তানদের মধ্যে যাহারা উত্তম, তাহারা আমার। ইস্রায়েল-রাজ উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনার কথা যথার্থ, আমি আপনার, এবং আমার সর্ব্বস্বই আপনার। পরে দূতগণ আবার আসিয়া কহিল, বিন্‌হদদ এই কথা কহেন, আমি তোমার কাছে দূতগণকে পাঠাইয়া বলিয়াছিলাম, তুমি আপন রৌপ্য ও স্বর্ণ এবং স্ত্রী ও সন্তান সকলকে আমার কাছে সমর্পণ কর। কিন্তু কল্য এই সময়ে আমি আপন দাসদিগকে তোমার নিকটে পাঠাইব, তাহারা তোমার গৃহে ও তোমার দাসদের গৃহে অনুসন্ধান করিবে, এবং যত দ্রব্য তোমার দৃষ্টিতে রমণীয়, সেই সকল হস্তগত করিয়া লইয়া আসিবে। তখন ইস্রায়েলের রাজা দেশের সমস্ত প্রাচীনবর্গকে ডাকিয়া কহিলেন, বিনয় করি, বিবেচনা করিয়া দেখ, এ ব্যক্তি কেবল অনিষ্টের চেষ্টা করিতেছে, কেননা এ আমার স্ত্রী ও পুত্র সকলের জন্য এবং আমার রৌপ্য ও স্বর্ণের জন্য আদেশ পাঠাইলে আমি অস্বীকার করি নাই। সমস্ত প্রাচীন ও সমস্ত প্রজা তাঁহাকে কহিল, আপনি শুনিবেন না, সম্মত হইবেন না। তখন তিনি বিন্‌হদদের দূতগণকে কহিলেন, আমার প্রভু মহারাজকে বল, আপনি প্রথমে আপন দাসের নিকটে যাহা কিছু বলিয়া পাঠাইয়াছিলেন, সে সমস্ত আমি করিব; কিন্তু এই কার্য্য করিতে পারি না। পরে দূতগণ প্রস্থান করিল, এবং বিন্‌হদদকে সমাচার দিল। তখন তিনি তাঁহার কাছে লোক পাঠাইয়া কহিলেন, শমরিয়ার ধূলি যদি আমার পশ্চাদগামী সমস্ত লোকের মুষ্টিপূরণে কুলায়, তবে দেবগণ আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। তাহাতে ইস্রায়েলের রাজা উত্তর করিলেন, তোমরা তাঁহাকে বল, যে ব্যক্তি সজ্জা ধারণ করে, সে সজ্জাত্যাগীর ন্যায় শ্লাঘা না করুক। এই উত্তর শ্রবণকালে বিন্‌হদদ ও অন্য রাজগণ কুটীরে কুটীরে পান করিতেছিলেন; তিনি আপন দাসদিগকে কহিলেন, সৈন্য রচনা কর। তাহাতে তাহারা নগরের বিরুদ্ধে সৈন্য রচনা করিতে লাগিল। আর দেখ, এক জন ভাববাদী ইস্রায়েল-রাজ আহাবের নিকটে আসিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি কি ঐ সমস্ত মহালোকারণ্য দেখিয়াছ? দেখ, অদ্য আমি উহাদিগকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব; তাহাতে তুমি জানিতে পারিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আহাব কহিলেন, কাহার দ্বারা করিবেন? ভাববাদী কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, প্রদেশাধ্যক্ষদের যুবকগণের দ্বারা। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, যুদ্ধের আরম্ভ কে করিবে? তিনি কহিলেন, আপনি। তখন তিনি প্রদেশাধ্যক্ষদের যুবকগণকে সংগ্রহ করিলেন, তাহারা দুই শত বত্রিশ জন হইল; এবং তাহাদের পশ্চাতে সমস্ত লোককে অর্থাৎ সমস্ত ইস্রায়েল-সন্তানকে সংগ্রহ করিলে সাত সহস্র জন হইল। পরে তাহারা মধ্যাহ্নকালে বাহির হইল। তখন বিন্‌হদদ ও অন্য রাজগণ, তাঁহার সহায় বত্রিশ জন রাজা, কুটীরে কুটীরে পান করিয়া মত্ত হইয়াছিলেন। প্রদেশাধ্যক্ষদের সেই যুবকগণ প্রথমেই বাহিরে গেল; তখন বিন্‌হদদ লোক পাঠাইলে তাহারা তাঁহাকে এই সমাচার দিল, শমরিয়া হইতে কতকগুলি লোক বাহির হইয়া আসিয়াছে। তিনি বলিলেন, তাহারা যদি সন্ধির নিমিত্ত আসিয়া থাকে, তবে তোমরা তাহাদিগকে জীবন্ত ধর; যদি যুদ্ধের নিমিত্তও আসিয়া থাকে, তবু জীবন্ত ধর। ইতিমধ্যে উহারা, অর্থাৎ প্রদেশাধ্যক্ষদের সেই যুবকগণ ও তাহাদের পশ্চাদগামী সৈন্যদল নগর হইতে বাহির হইল। আর তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিযোদ্ধাকে বধ করিল, তাহাতে অরামীয়েরা পলায়ন করিল, আর ইস্রায়েল তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেল, এবং অরাম-রাজ বিন্‌হদদ অশ্বে উঠিয়া কয়েক জন অশ্বারোহী সৈন্যের সহিত পলাইয়া রক্ষা পাইলেন। পরে ইস্রায়েলের রাজা বাহির হইয়া তাহাদের অশ্ব ও রথ সকল বিনষ্ট করিলেন, এবং মহাসংহারে অরামীয়দিগকে সংহার করিলেন। পরে সেই ভাববাদী ইস্রায়েলের রাজার নিকটে আসিয়া কহিলেন, আপনি গিয়া আপনাকে বলবান করুন, এবং সাবধান হইয়া আপনার কর্ত্তব্য বিবেচনা করুন, কেননা বৎসর ফিরিলে অরামের রাজা আপনার বিরুদ্ধে উঠিয়া আসিবেন। আর অরাম-রাজের দাসগণ তাঁহাকে কহিল, উহাদের দেবতা পর্ব্বতগণের দেবতা, এই জন্য আমাদের অপেক্ষা উহারা বলবান হইয়াছিল; কিন্তু চলুন, আমরা সমভূমিতে উহাদের সহিত যুদ্ধ করি, অবশ্য উহাদের অপেক্ষা বলবান হইব। আপনি এই কর্ম্ম করুন, রাজাদিগকে স্থানচ্যুত করিয়া তাঁহাদের স্থানে সেনাপতিগণকে নিযুক্ত করুন। আর আপনার পক্ষীয় যত সৈন্য, যত অশ্ব ও রথ পতিত হইয়াছে, তত সৈন্য, তত অশ্ব ও রথ সংগ্রহ করুন; পরে আমরা সমভূমিতে উহাদের সহিত যুদ্ধ করিব, করিলে অবশ্য উহাদের অপেক্ষা বলবান হইব। তিনি তাহাদের কথা শুনিয়া তদনুসারে কার্য্য করিলেন। বৎসর ফিরিয়া আসিলে বিন্‌হদদ অরামীয়দিগকে সংগ্রহ করিয়া ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে অফেকে গেলেন। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণকে সংগ্রহ করা হইল, এবং তাহারা খাদ্যদ্রব্যাদি প্রস্তুত করিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে যাত্রা করিল; আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ দুইটী ক্ষুদ্র ছাগপালের ন্যায় তাহাদের সম্মুখে শিবির স্থাপন করিল; কিন্তু অরামীয়েরা দেশময় ব্যাপিয়া গেল। পরে ঈশ্বরের এক জন লোক আসিয়া ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অরামীয়েরা বলিয়াছে, সদাপ্রভু পর্ব্বতগণের দেবতা, তলভূমির দেবতা নহেন; এই জন্য আমি এই সমস্ত মহাজনতাকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর তাহারা সাত দিন পর্য্যন্ত সম্মুখাসম্মুখি হইয়া শিবিরে রহিল, পরে সপ্তম দিবসে যুদ্ধ বাধিয়া গেল; তাহাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণ এক দিনে অরামের এক লক্ষ পদাতিক সৈন্যকে সংহার করিল। কিন্তু অবশিষ্ট সকলে অফেকে পলাইয়া গেল, নগরে প্রবেশ করিল; আর তাহারা প্রাচীর সেই অবশিষ্ট সাতাশ সহস্র লোকের উপরে পতিত হইল। আর বিন্‌হদদ পলাইয়া নগরে গিয়া এক ভিতরের কুঠরীতে প্রবেশ করিলেন। পরে তাঁহার দাসগণ তাঁহাকে কহিল, দেখুন, আমরা শুনিয়াছি, ইস্রায়েল-কুলের রাজারা দয়ালু রাজা, বিনয় করি, আমরা কটিদেশে চট পরিয়া মাথায় রজ্জু দিয়া বাহির হইয়া ইস্রায়েলের রাজার কাছে যাই; হয় ত তিনি আপনার প্রাণ রক্ষা করিবেন। পরে তাহারা কটিদেশে চট পরিয়া মাথায় রজ্জু দিয়া ইস্রায়েলের রাজার কাছে আসিয়া কহিল, আপনার দাস বিন্‌হদদ কহিতেছেন, বিনয় করি, আমার প্রাণ রক্ষা করুন। তিনি কহিলেন, তিনি কি এখনও জীবিত আছেন? তিনি আমার ভ্রাতা। সেই লোকেরা এইটী শুভ লক্ষণ বিবেচনা করিল, এবং তাঁহার মনের ভাব বুঝিবার জন্য ত্বরান্বিত হইল; তাহারা কহিল, আপনার ভ্রাতা বিন্‌হদদ। তিনি কহিলেন, তোমরা গিয়া তাঁহাকে আন। তাহাতে বিন্‌হদদ বাহির হইয়া তাঁহার নিকটে আসিলেন, আর তিনি তাঁহাকে রথে উঠাইয়া লইলেন। তখন [বিন্‌হদদ] তাঁহাকে কহিলেন, আপনার পিতা হইতে আমার পিতা যে সকল নগর হরণ করিয়াছিলেন, সেগুলি আমি ফিরাইয়া দিব; এবং আমার পিতা যেমন শমরিয়াতে পল্লী করিয়াছেন, তদ্রূপ আপনিও দম্মেশকে আপনার জন্য পল্লী করুন। [আহাব কহিলেন,] আমি এই নিয়মে আপনাকে ছাড়িয়া দিব। পরে তিনি তাঁহার সহিত নিয়ম স্থির করিয়া তাঁহাকে ছাড়িয়া দিলেন। পরে শিষ্য-ভাববাদিগণের মধ্যে এক জন সদাপ্রভুর বাক্য দ্বারা আপন সহশিষ্যকে কহিল, তুমি আমাকে আঘাত কর। কিন্তু সে তাহাকে আঘাত করিতে সম্মত হইল না। তখন সে তাহাকে কহিল, তুমি সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিলে না, এ কারণ দেখ, আমার নিকট হইতে যাইবামাত্র এক সিংহ তোমাকে বধ করিবে। পরে সে তাহার নিকট হইতে যাইবামাত্র এক সিংহ তাহাকে দেখিতে পাইয়া বধ করিল। পরে সে আর এক জনকে দেখিতে পাইয়া কহিল, তুমি আমাকে আঘাত কর। এই ব্যক্তি তাহাকে আঘাত করিল, আঘাত করিয়া ক্ষত করিল। পরে সেই ভাববাদী গিয়া ছদ্মবেশী ভাবে চক্ষুর ঊর্দ্ধে পাগড়ী বাঁধিয়া পথে রাজার অপেক্ষায় দাঁড়াইয়া রহিল। পরে যখন রাজা নিকট দিয়া যাইতে লাগিলেন, সে রাজার কাছে কাঁদিয়া কহিল, আপনার দাস আমি যুদ্ধে গিয়াছিলাম, আর দেখুন, এক ব্যক্তি পার্শ্বে ফিরিয়া আমার নিকটে একটা লোককে আনিয়া কহিল, এই ব্যক্তিকে সাবধানে রাখ; ইহাকে যদি কোন ক্রমে না পাওয়া যায়, তবে ইহার প্রাণের পরিবর্ত্তে তোমার প্রাণ যাইবে, নতুবা তোমাকে এক তালন্ত রৌপ্য দিতে হইবে। কিন্তু আপনার দাস আমি এদিকে ওদিকে ব্যস্ত ছিলাম, ইতিমধ্যে সে কোথায় চলিয়া গেল। তখন ইস্রায়েলের রাজা তাহাকে কহিলেন, ঐরূপই তোমার বিচার হইবে; তুমি আপনিই তাহা স্থির করিলে। পরে সে শীঘ্র আপন চক্ষুর ঊর্দ্ধ হইতে পাগড়ীটী উঠাইয়া লইল, তাহাতে ইস্রায়েলের রাজা চিনিতে পারিলেন যে, সে ভাববাদীদের মধ্যে এক জন। পরে সে তাঁহাকে কহিল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যে ব্যক্তিকে বিনাশার্থে বর্জ্জনীয় করিয়াছিলাম, তাহাকে তুমি তোমার হস্ত হইতে ছাড়িয়া দিয়াছ; এই জন্য তাহার প্রাণের পরিবর্ত্তে তোমার প্রাণ, ও তাহার প্রজার পরিবর্ত্তে তোমার প্রজা যাইবে। তখন ইস্রায়েলের রাজা বিষণ্ণ ও রুষ্ট হইয়া গৃহে গেলেন, পরে শমরিয়াতে উপস্থিত হইলেন। তৎপরে এই ঘটনা হইল; যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের এক দ্রাক্ষাক্ষেত্র ছিল, তাহা যিষ্রিয়েলে শমরিয়ার রাজা আহাবের রাজবাটীর পার্শ্বেই ছিল। আহাব নাবোৎকে কহিলেন, তোমার দ্রাক্ষাক্ষেত্র আমাকে দেও; আমি উহা সব্‌জির ক্ষেত্র করিব, কারণ উহা আমার বাটীর নিকটবর্ত্তী; উহার পরিবর্ত্তে তোমাকে আরও উত্তম একখানি দ্রাক্ষাক্ষেত্র দিব; কিম্বা যদি তোমার বিহিত বোধ হয়, তবে তাহার মূল্য রৌপ্য মুদ্রা তোমাকে দিব। নাবোৎ আহাবকে কহিলেন, আমি যে আপন পৈতৃক অধিকার আপনাকে দিই, সদাপ্রভু ইহা নিবারণ করুন। তখন, ‘আমি পৈতৃক অধিকার আপনাকে দিব না,’ যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের উক্ত এই কথায় আহাব বিষণ্ণ ও রুষ্ট হইয়া আপন গৃহে আসিলেন, এবং শয্যাতে পড়িয়া রহিলেন, মুখ ফিরাইয়া থাকিলেন, খাদ্য গ্রহণ করিলেন না। তখন তাঁহার স্ত্রী ঈষেবল তাঁহার নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, তোমার মন এমন বিষণ্ণ কেন যে, তুমি আহার কর না? তিনি তাহাকে কহিলেন, আমি যিষ্রিয়েলীয় নাবোৎকে বলিয়াছিলাম, টাকা লইয়া তোমার দ্রাক্ষাক্ষেত্র আমাকে দেও; কিম্বা যদি সন্তুষ্ট হও, তবে আমি তাহার পরিবর্ত্তে আর একখানি দ্রাক্ষাক্ষেত্র তোমাকে দিব; তাহাতে সে উত্তর করিল, আমি আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্র আপনাকে দিব না। তখন তাঁহার স্ত্রী ঈষেবল তাঁহাকে কহিল, এখন তুমিই না ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতেছ? উঠ, আহার কর; তোমার চিত্ত প্রফুল্ল হউক; আমি যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের দ্রাক্ষাক্ষেত্র তোমাকে দিব। পরে সে আহাবের নাম করিয়া কতকগুলি পত্র লিখিয়া তাঁহার মুদ্রায় মুদ্রাঙ্কিত করিল, আর নাবোতের প্রতিবাসিগণের, তাঁহার বসতি-নগরের প্রাচীন ও প্রধান লোকদের, নিকটে সেই সকল পত্র প্রেরণ করিল। পত্রে সে এই কথা লিখিয়াছিল, তোমরা উপবাস ঘোষণা কর, ও লোকদের মধ্যে নাবোৎকে উচ্চস্থানে বসাও। আর পাষণ্ড দুই জন পুরুষকে তাহার সম্মুখে বসাইয়া দেও; তাঁহারা তাহার বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিউক যে, ‘তুমি ঈশ্বরকে ও রাজাকে জলাঞ্জলি দিয়াছ’। পরে তাহাকে বাহিরে লইয়া গিয়া প্রস্তরাঘাতে বধ কর। পরে তাহার নগরস্থ লোকেরা, নগরবাসী প্রাচীন ও প্রধানবর্গ, ঈষেবলের প্রেরিত আজ্ঞানুসারে, তাহার প্রেরিত পত্রের লিখনানুসারে, কর্ম্ম করিল। তাহারা উপবাস ঘোষণা করিল, এবং লোকদের মধ্যে নাবোৎকে উচ্চস্থানে বসাইল। পরে পাষণ্ড দুই জন পুরুষ আসিয়া তাহার সম্মুখে বসিল; সেই দুই পাষণ্ড পুরুষ লোকদের সাক্ষাতে নাবোতের বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিল যে, নাবোৎ ঈশ্বরকে ও রাজাকে জলাঞ্জলি দিয়াছে। তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে নগরের বাহিরে লইয়া গিয়া প্রস্তরাঘাতে বধ করিল। পরে তাহারা ঈষেবলের নিকটে এই সংবাদ পাঠাইল, নাবোৎ প্রস্তরাঘাতে মারা পড়িয়াছে। নাবোৎ প্রস্তরাঘাতে মারা পড়িয়াছে, এই কথা শুনিবামাত্র ঈষেবল আহাবকে কহিল, উঠ, যিষ্রিয়েলীয় নাবোৎ টাকায় যে দ্রাক্ষাক্ষেত্র তোমাকে দিতে অসম্মত ছিল, তাহা গিয়া অধিকার কর; কেননা নাবোৎ জীবিত নাই, সে মরিয়াছে। তখন নাবোৎ মরিয়াছে, এই কথা শুনিয়া আহাব উঠিয়া যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের দ্রাক্ষাক্ষেত্র অধিকার করিতে গেলেন। আর তিশ্‌বীয় এলিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, উঠ, শমরিয়া-নিবাসী ইস্রায়েলরাজ আহাবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাও; দেখ, সে নাবোতের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে রহিয়াছে, সে তাহা অধিকার করিতে গিয়াছে। তুমি তাহাকে বলিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি কি নরহত্যা করিয়াছ, আবার [পরের] অধিকার কি হরণ করিয়াছ? আর তাহাকে বলিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে স্থানে কুকুরেরা নাবোতের রক্ত চাটিয়া খাইয়াছে, সেই স্থানে কুকুরেরা তোমার রক্তও চাটিয়া খাইবে। তখন আহাব এলিয়কে কহিলেন, হে আমার শত্রু, তুমি কি আমাকে পাইয়াছ? তিনি কহিলেন, তোমাকে পাইয়াছি; কারণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তুমি তাহাই করিবার জন্য আপনাকে বিক্রয় করিয়াছ। দেখ, আমি তোমার উপরে অমঙ্গল উপস্থিত করিব, ও তোমাকে নিঃশেষে ঝাঁটি দিব; এবং আহাব-বংশের প্রত্যেক পুরুষকে এবং ইস্রায়েলের মধ্যে বদ্ধ ও মুক্ত সকল লোককে উচ্ছেদ করিব। আর আমি তোমার কুল নবাটের পুত্র যারবিয়ামের কুলের সমান ও অহিয়ের পুত্র বাশার কুলের সমান করিব; ইহার কারণ তোমার সেই অসন্তোষজনক আচার ব্যবহার, যদ্দ্বারা তুমি আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়াছ, আর ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছ। আবার ঈষেবলের বিষয়েও সদাপ্রভু বলিলেন যে, কুকুরেরা যিষ্রিয়েলের দুর্গপ্রাচীরের কাছে ঈষেবলকে খাইবে। আহাবের যে কেহ নগরে মরিবে, কুকুরেরা তাহাকে খাইবে; এবং যে কেহ মাঠে মরিবে, আকাশের পক্ষীরা তাহাকে খাইবে। (আহাব, যিনি আপন স্ত্রী ঈষেবল কর্ত্তৃক উত্তেজিত হইয়া সদাপ্রভুর সাক্ষাতে কদাচরণ করিতে আপনাকে বিক্রয় করিয়াছিলেন, তাঁহার তুল্য আর কেহ কখনও হয় নাই। আর সদাপ্রভু যে ইমোরীয়দিগকে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখ হইতে অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন, তাহাদের সমস্ত ক্রিয়ানুসারে তিনি পুত্তলিদের অনুগামী হইয়া অতিশয় ঘৃণার্হ কর্ম্ম করিতেন।) আহাব যখন ঐ সকল কথা শুনিলেন, তখন আপন বস্ত্র ছিঁড়িলেন, এবং গায়ে চট বাঁধিয়া উপবাস করিলেন, চটে শয়ন করিলেন, এবং ধীরে ধীরে বেড়াইলেন। পরে তিশ্‌বীয় এলিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, আহাব আমার সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছে, ইহা কি তুমি দেখিতেছ? সে আমার সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছে, এই জন্য আমি তাহার জীবনকালে ঐ অমঙ্গল ঘটাইব না, কিন্তু তাহার পুত্রের জীবনকালে তাহার কুলের উপরে সেই অমঙ্গল উপস্থিত করিব। পরে তিন বৎসর পর্য্যন্ত উভয় পক্ষ ক্ষান্ত রহিল; অরামের ও ইস্রায়েলের মধ্যে যুদ্ধ হইল না। তৃতীয় বৎসরে যিহূদা-রাজ যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজার নিকটে আসিলেন। আর ইস্রায়েলের রাজা আপন দাসদিগকে কহিলেন, রামোৎ-গিলিয়দ যে আমাদের, ইহা কি তোমরা জান না? কিন্তু আমরা অরামের রাজার হস্ত হইতে তাহা না লইয়া চুপ করিয়া আছি। আর তিনি যিহোশাফটকে কহিলেন, আপনি কি যুদ্ধার্থে রামোৎ-গিলিয়দে আমার সঙ্গে যাইবেন? যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, আমি ও আপনি, আমার লোক ও আপনার লোক, এবং আমার অশ্ব ও আপনার অশ্ব, সকলই এক। পরে যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, বিনয় করি, অদ্য সদাপ্রভুর বাক্যের অন্বেষণ করুন। তাহাতে ইস্রায়েলের রাজা ভাববাদিগণকে, অনুমান চারি শত জনকে একত্র করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিব, না ক্ষান্ত হইব? তখন তাহারা কহিল, যাত্রা করুন; প্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন। কিন্তু যিহোশাফট কহিলেন, আবার সদাপ্রভুর এমন কোন ভাববাদী কি এস্থানে নাই যে, আমরা তাঁহারই কাছে অন্বেষণ করিতে পারি? ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমরা যাহার দ্বারা সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিতে পারি, এমন আর এক জন আছে, সে যিম্লের পুত্র মীখায়, কিন্তু আমি তাহাকে ঘৃণা করি, কেননা আমার উদ্দেশে সে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে। যিহোশাফট কহিলেন, মহারাজ এমন কথা কহিবেন না। তখন ইস্রায়েলের রাজা আপনার এক জন কর্ম্মচারীকে ডাকিয়া আজ্ঞা দিলেন, যিম্লের পুত্র মীখায়কে শীঘ্র লইয়া আইস। সেই সময়ে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদা-রাজ যিহোশাফট আপন আপন রাজবস্ত্র পরিধান করিয়া শমরিয়ার দ্বার-প্রবেশস্থানের কাছে খোলা জায়গায় আপন আপন সিংহাসনে বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহাদের সম্মুখে ভাববাদীরা সকলে ভাবোক্তি প্রচার করিতেছিল। আর কনানার পুত্র সিদিকিয় লৌহময় শৃঙ্গযুগল নির্ম্মাণ করিয়া কহিল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইহার দ্বারা আপনি অরামের বিনাশ সাধন পর্য্যন্ত গুঁতাইবেন। আর ভাববাদীরা সকলেই তদ্রূপ ভাবোক্তি প্রচার করিল, কহিল, আপনি রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন; কেননা সদাপ্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন। আর যে দূত মীখায়কে ডাকিতে গিয়াছিল, সে তাঁহাকে কহিল, দেখুন, ভাববাদিগণের বাক্য সকল এক মুখে রাজার পক্ষে মঙ্গল সূচনা করে; বিনয় করি, আপনার বাক্য উহাদের কোন এক জনের বাক্যের সমানার্থক হউক; আপনি মঙ্গলসূচক কথা বলুন। মীখায় কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, সদাপ্রভু আমাকে যাহা বলেন, আমি তাহাই বলিব। পরে তিনি রাজার নিকটে আসিলে রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মীখায়, আমরা রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধ করিতে যাইব, না ক্ষান্ত হইব? তিনি তাঁহাকে কহিলেন, যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন; সদাপ্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন। রাজা তাঁহাকে কহিলেন, তুমি সদাপ্রভুর নামে আমাকে সত্য ব্যতিরেকে আর কিছুই কহিবে না, আমি কত বার তোমাকে এই শপথ করাইব? তখন তিনি কহিলেন, আমি সমস্ত ইস্রায়েলকে অরক্ষক মেষপালের ন্যায় পর্ব্বতগণের উপরে ছিন্নভিন্ন দেখিলাম, এবং সদাপ্রভু কহিলেন, উহাদের স্বামী নাই; উহারা প্রত্যেকে কুশলে আপন আপন বাটীতে ফিরিয়া যাউক। তখন ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি কি অগ্রেই আপনাকে বলি নাই যে, এই ব্যক্তি আমার উদ্দেশে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে? আর মীখায় কহিলেন, এজন্য আপনি সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন; আমি দেখিলাম, সদাপ্রভু তাঁহার সিংহাসনে উপবিষ্ট, আর তাঁহার দক্ষিণে ও বামে তাঁহার নিকটে স্বর্গের সমস্ত বাহিনী দণ্ডায়মান। পরে সদাপ্রভু কহিলেন, আহাব যেন যাত্রা করিয়া রামোৎ-গিলিয়দে পতিত হয়, এই জন্য কে তাহাকে মুগ্ধ করিবে? তাহাতে কেহ এক প্রকারে, কেহ বা অন্য প্রকারে কহিল। শেষে এক আত্মা গিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া কহিল, আমি তাহাকে মুগ্ধ করিব। সদাপ্রভু কহিলেন, কিসে? সে কহিল, আমি গিয়া তাহার সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা হইব। তখন তিনি কহিলেন, তুমি তাহাকে মুগ্ধ করিবে, কৃতকার্য্যও হইবে; যাও, সেইরূপ কর। অতএব দেখুন, সদাপ্রভু আপনার এই সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা দিয়াছেন; আর সদাপ্রভু আপনার বিষয়ে অমঙ্গলের কথা কহিয়াছেন। তখন কনানার পুত্র সিদিকিয় নিকটে আসিয়া মীখায়ের গালে চড় মারিয়া কহিল, সদাপ্রভুর আত্মা তোর সঙ্গে কথা কহিবার জন্য আমার নিকট হইতে কোন্‌ পথে গিয়াছিলেন? মীখায় কহিলেন, দেখ, যে দিন তুমি লুকাইবার জন্য এক ভিতরের কুঠরীতে যাইবে, সেই দিন তাহা জানিবে। পরে ইস্রায়েলের রাজা বলিলেন, মীখায়কে ধরিয়া পুনরায় নগরাধ্যক্ষ আমোনের ও রাজপুত্র যোয়াশের নিকটে লইয়া যাও; আর বল, রাজা এই কথা কহেন, ইহাকে কারাগারে বদ্ধ করিয়া রাখ, এবং যে পর্য্যন্ত আমি কুশলে ফিরিয়া না আসি, সে পর্য্যন্ত ইহাকে আহারার্থে কষ্টযুক্ত অন্ন ও কষ্টযুক্ত জল দেও। মীখায় কহিলেন, যদি আপনি কোন মতে কুশলে ফিরিয়া আইসেন, তবে সদাপ্রভু আমার দ্বারা কথা কহেন নাই। আর তিনি কহিলেন, হে জাতিগণ, তোমরা সকলে শ্রবণ কর। পরে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদা-রাজ যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করিলেন। আর ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি অন্য বেশ ধারণ করিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করিব, আপনি রাজবস্ত্র পরিধান করুন। পরে ইস্রায়েলের রাজা অন্য বেশ করিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করিলেন। অরামের রাজা আপন রথাধ্যক্ষ বত্রিশ জন সেনাপতিকে এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তোমরা কেবল ইস্রায়েলের রাজা ব্যতিরেকে ক্ষুদ্র কি মহান্‌ আর কাহারও সহিত যুদ্ধ করিও না। পরে রথাধ্যক্ষগণ যিহোশাফটকে দেখিয়া, উনিই অবশ্য ইস্রায়েলের রাজা, এই বলিয়া তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য এক পার্শ্বে গেলেন। তখন যিহোশাফট চেঁচাইয়া উঠিলেন। আর রথাধ্যক্ষগণ যখন দেখিলেন, ইনি ইস্রায়েলের রাজা নহেন, তখন তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া গেলেন। কিন্তু একটা লোক লক্ষ্য ব্যতিরেকে ধনুক আকর্ষণ করিয়া ইস্রায়েলের রাজার উদর-ত্রাণের ও বুকপাটার সন্ধিস্থানে বাণাঘাত করিল; তাহাতে তিনি আপন সারথিকে কহিলেন, হস্ত ফিরাইয়া সৈন্যদলের মধ্য হইতে আমাকে লইয়া যাও, আমি দারুন আঘাত পাইয়াছি। সেই দিবস তুমুল যুদ্ধ হইল, আর লোকেরা অরামীয়দের সম্মুখে রাজাকে রথে দণ্ডায়মান রাখিল; কিন্তু সায়ংকালে তিনি মরিয়া গেলেন, এবং তাঁহার ক্ষতের রক্ত রথের গর্ভে পড়িল। পরে সূর্য্যাস্তকালে সৈন্যদলের মধ্যে সর্ব্বত্র এই রব হইল, প্রত্যেক জন আপন আপন নগরে, প্রত্যেক জন আপন আপন দেশে চলিয়া যাউক। এইরূপে রাজা মরিয়া গেলেন ও শমরিয়াতে আনীত হইলেন, আর লোকেরা শমরিয়াতে রাজাকে কবর দিল। পরে শমরিয়ার পুষ্করিণীর ধারে তাঁহার রথ ধৌত করিলে সদাপ্রভুর কথিত বাক্যানুসারে কুকুরেরা তাঁহার রক্ত চাটিয়া খাইল; বেশ্যারা তথায় স্নান করিত। আহাবের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত ও সমস্ত কর্ম্মের বিবরণ এবং তিনি যে হস্তিদন্তময় গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর যে সমস্ত নগর নির্ম্মাণ করিলেন, সে সকলের কথা কি ইস্রায়েল রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? এইরূপে আহাব আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র অহসিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। ইস্রায়েল-রাজ আহাবের চতুর্থ বৎসরে আসার পুত্র যিহোশাফট যিহূদায় রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। যিহোশাফট পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে পঁচিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম অসূবা, তিনি শিল্‌হির কন্যা। যিহোশাফট আপন পিতা আসার সমস্ত পথে চলিতেন, সেই পথ হইতে না ফিরিয়া সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন; কিন্তু উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন হয় নাই, লোকেরা তখনও উচ্চস্থলীতে বলিদান করিত ও ধূপ জ্বালাইত। আর যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজার সহিত সন্ধি স্থাপন করেন। যিহোশাফটের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত, এবং তিনি যে যে বিক্রমের কার্য্য করিলেন, ও যে সকল যুদ্ধ করিলেন, সে সকল কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? তাঁহার পিতা আসার সময়ে যে পুংগামীরা অবশিষ্ট ছিল, তাহাদিগকে তিনি দেশ হইতে দূর করিয়া দিলেন। সেই সময়ে ইদোমে রাজা ছিল না, এক জন প্রতিনিধি রাজত্ব করিতেন। যিহোশাফট স্বর্ণের জন্য ওফীরে প্রেরণার্থে তর্শীশের কয়েকখানি জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন, কিন্তু সেগুলি গেল না, কেননা সেই জাহাজগুলি ইৎসিয়োন-গেবরে ভগ্ন হইল। তখন আহাবের পুত্র অহসিয় যিহোশাফটকে কহিলেন, আপনার দাসদের সহিত আমার দাসেরা জাহাজে যাউক; কিন্তু যিহোশাফট সম্মত হইলেন না। পরে যিহোশাফট আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; এবং আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের নগরে পিতৃলোকদের সহিত কবরপ্রাপ্ত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র যিহোরাম তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহূদা-রাজ যিহোশাফটের সতের বৎসরে আহাবের পুত্র অহসিয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং তিনি দুই বৎসর ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন, আপন পিতার পথে ও আপন মাতার পথে, এবং নবাটের পুত্র যে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার পথে চলিতেন। তিনি বালের সেবা করিতেন, তাহার কাছে প্রণিপাত করিতেন, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিতেন, তাঁহার পিতা যাহা যাহা করিতেন, তিনিও তাহাই করিতেন। আহাবের মৃত্যুর পরে মোয়াব ইস্রায়েলের অধীনতা ত্যাগ করিল। আর অহসিয় শমরিয়ায় স্থিত আপন গৃহের উপরিস্থ কুঠরীর সিঁড়ির দ্বার দিয়া পড়িয়া গিয়া পীড়িত হইলেন; তাহাতে তিনি কয়েক জন দূত পাঠাইলেন, তাহাদিগকে বলিলেন, যাও, ইক্রোণের দেবতা বাল্‌-সবূবকে জিজ্ঞাসা কর গিয়া যে, এই পীড়া হইতে আমি সুস্থ হইব কি না? কিন্তু সদাপ্রভুর দূত তিশ্‌বীয় এলিয়কে কহিলেন, উঠ, শমরিয়া-রাজের দূতগণের সহিত সাক্ষাৎ কর গিয়া, আর তাহাদিগকে বল, ইস্রায়েলের মধ্যে কি ঈশ্বর নাই যে, তোমরা ইক্রোণের দেবতা বাল্‌-সবূবের কাছে জিজ্ঞাসা করিতে যাইতেছ? অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যে খাটে উঠিয়া শুইয়াছ, তাহা হইতে আর নামিবে না, মরিবেই মরিবে। পরে এলিয় চলিয়া গেলেন। আর সেই দূতগণ রাজার নিকটে ফিরিয়া গেলে তিনি তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কেন ফিরিয়া আসিলে? তাহারা বলিল, এক ব্যক্তি আমাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়া আমাদিগকে কহিলেন, যে রাজা তোমাদিগকে পাঠাইলেন, তোমরা তাঁহার কাছে ফিরিয়া যাও, তাহাকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েলের মধ্যে কি ঈশ্বর নাই যে, তুমি ইক্রোণের দেবতা বাল্‌-সবূবের কাছে জিজ্ঞাসা করিতে লোক পাঠাইতেছ? অতএব তুমি যে খাটে উঠিয়া শুইয়াছ, তাহা হইতে আর নামিবে না, মরিবেই মরিবে। রাজা তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়া যে ব্যক্তি এই সকল কথা কহিল, সে কি প্রকার লোক? তাহারা উত্তর করিল, তিনি লোমশ পুরুষ, এবং তাঁহার কটিদেশে চর্ম্মপটুকা বদ্ধ। রাজা কহিলেন, সে তিশ্‌বীয় এলিয়। পরে রাজা পঞ্চাশ জন সেনার সহিত এক জন পঞ্চাশৎপতিকে তাঁহার কাছে পাঠাইয়া দিলেন; তখন সে তাঁহার কাছে উঠিয়া গেল; আর দেখ, এলিয় পর্ব্বতের শৃঙ্গে বসিয়াছিলেন। সে তাঁহাকে কহিল, হে ঈশ্বরের লোক, রাজা বলিয়াছেন, তুমি নামিয়া আইস। এলিয় সেই পঞ্চাশৎপতিকে উত্তর করিলেন, যদি আমি ঈশ্বরের লোক হই, তবে আকাশ হইতে অগ্নি নামিয়া তোমাকে ও তোমার পঞ্চাশ জন লোককে গ্রাস করুক। তখন আকাশ হইতে অগ্নি নামিয়া তাহাকে ও তাহার পঞ্চাশ জন লোককে গ্রাস করিল। পরে রাজা পুনর্ব্বার পঞ্চাশ জন লোকের সহিত আর এক জন পঞ্চাশৎপতিকে তাঁহার কাছে পাঠাইলেন। সে গিয়া কহিল, হে ঈশ্বরের লোক, রাজা এই কথা বলিয়াছেন, শীঘ্র নামিয়া আইস। এলিয় উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, যদি আমি ঈশ্বরের লোক হই, তবে আকাশ হইতে অগ্নি নামিয়া তোমাকে ও তোমার পঞ্চাশ জন লোককে গ্রাস করুক। তখন আকাশ হইতে ঈশ্বরের অগ্নি নামিয়া তাহাকে ও তাহার পঞ্চাশ জন লোককে গ্রাস করিল। পরে রাজা তৃতীয় বার পঞ্চাশ জন লোকের সহিত এক জন পঞ্চাশৎপতিকে পাঠাইলেন। তাহাতে সেই তৃতীয় পঞ্চাশৎপতি উঠিয়া গেল, এবং উপস্থিত হইয়া এলিয়ের সম্মুখে হাঁটু পাতিয়া বিনয়পূর্ব্বক কহিল, হে ঈশ্বরের লোক, আমি বিনয় করি, আমার প্রাণ এবং আপনার এই পঞ্চাশ জন দাসের প্রাণ আপনার দৃষ্টিতে বহুমূল্য হউক। দেখুন, আকাশ হইতে অগ্নি নামিয়া পূর্ব্বাগত দুই সেনাপতিকে ও তাহাদের পঞ্চাশ পঞ্চাশ জনকে গ্রাস করিয়াছে; কিন্তু এখন আমার প্রাণ আপনার দৃষ্টিতে বহুমূল্য হউক। তখন সদাপ্রভুর দূত এলিয়কে কহিলেন, ইহার সহিত নামিয়া যাও, ইহাকে ভয় করিও না। পরে এলিয় উঠিয়া তাহার সহিত রাজার নিকটে নামিয়া গেলেন। আর তিনি তাঁহাকে কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি ইক্রোণের দেবতা বাল্‌-সবূবের কাছে জিজ্ঞাসা করিতে দূতগণকে পাঠাইয়াছিলে; ইহার কারণ কি এই যে, ইস্রায়েলের মধ্যে এমন ঈশ্বর নাই, যাঁহার বাক্য জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে? অতএব তুমি যে খাটে উঠিয়া শুইয়াছ, তাহা হইতে আর নামিবে না, মরিবেই মরিবে। আর এলিয়ের দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তিনি মরিলেন; এবং তাঁহার পুত্র না থাকাতে যিহোরাম তাঁহার পদে, যিহূদা-রাজ যিহোশাফটের পুত্র যিহোরামের দ্বিতীয় বৎসরে, রাজা হইলেন। অহসিয়ের কৃত অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? পরে যখন সদাপ্রভু এলিয়কে ঘূর্ণবায়ুতে স্বর্গে তুলিয়া লইতে উদ্যত হইলেন, তখন এলিয় ও ইলীশায় গিল্‌গল হইতে যাত্রা করিলেন। আর এলিয় ইলীশায়কে কহিলেন, বিনয় করি, তুমি এই স্থানে থাক, কেননা সদাপ্রভু আমাকে বৈথেল পর্য্যন্ত পাঠাইলেন। ইলীশায় কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি আপনাকে ছাড়িব না। পরে তাঁহারা বৈথেলে নামিয়া গেলেন। তখন বৈথেলের শিষ্য-ভাববাদিগণ বাহিরে ইলীশায়ের কাছে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, অদ্য সদাপ্রভু আপনার শীর্ষ হইতে আপনার প্রভুকে লইবেন, ইহা কি আপনি জানেন? তিনি কহিলেন, হাঁ, আমি তাহা জানি; তোমরা নীরব হও। পরে এলিয় তাঁহাকে কহিলেন, হে ইলীশায়, বিনয় করি, তুমি এই স্থানে থাক; কেননা সদাপ্রভু আমাকে যিরীহোতে পাঠাইলেন। তিনি কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি আপনাকে ছাড়িব না। পরে তাঁহারা যিরীহোতে আসিলেন। তখন যিরীহোর শিষ্য-ভাববাদিগণ ইলীশায়ের নিকটে আসিয়া কহিল, অদ্য সদাপ্রভু আপনার শীর্ষ হইতে আপনার প্রভুকে লইবেন, ইহা কি আপনি জানেন? তিনি উত্তর করিলেন, হাঁ, আমি তাহা জানি; তোমরা নীরব হও। পরে এলিয় তাঁহাকে কহিলেন, বিনয় করি, তুমি এই স্থানে থাক, কেননা সদাপ্রভু আমাকে যর্দ্দনে পাঠাইলেন। তিনি কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি আপনাকে ছাড়িব না। পরে তাঁহারা দুই জন চলিলেন। তখন শিষ্য-ভাববাদিগণের মধ্যে পঞ্চাশ জন লোক গিয়া তাঁহাদের সম্মুখে দূরে দাঁড়াইল, আর যর্দ্দনের ধারে ঐ দুই জন দাঁড়াইলেন। পরে এলিয় আপন শাল ধরিয়া গুটাইয়া লইয়া জলে আঘাত করিলেন, তাহাতে জল এদিকে ওদিকে বিভক্ত হইল, এবং তাঁহারা দুই জন শুষ্ক ভূমি দিয়া পার হইলেন। পার হইলে পর এলিয় ইলীশায়কে কহিলেন, তোমার নিমিত্ত আমি কি করিব? তাহা তোমার নিকট হইতে আমার নীত হইবার পূর্ব্বে যাচ্ঞা কর। ইলীশায় কহিলেন, বিনয় করি, আপনার আত্মায় দুই অংশ আমাতে বর্ত্তুক। তিনি কহিলেন, কঠিন বর যাচ্ঞা করিলে; যদি তোমার নিকট হইতে নীত হইবার সময়ে আমাকে দেখিতে পাও, তবে তোমার প্রতি তাহা বর্ত্তিবে; কিন্তু না দেখিলে বর্ত্তিবে না। পরে এইরূপ ঘটিল; তাঁহারা যাইতে যাইতে কথা কহিতেছেন, ইতিমধ্যে দেখ, অগ্নিময় এক রথ ও অগ্নিময় অশ্বগণ আসিয়া তাঁহাদিগকে পৃথক্‌ করিল, এবং এলিয় ঘূর্ণবায়ুতে স্বর্গে উঠিয়া গেলেন। আর ইলীশায় তাহা দেখিলেন, এবং উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, হে আমার পিতা, হে আমার পিতা, হে ইস্রায়েলের রথসমূহ ও তাহার অশ্বারোহিগণ। পরে তিনি তাঁহাকে আর দেখিতে পাইলেন না; তখন আপন বস্ত্র ধরিয়া ছিঁড়িয়া দুই খানা করিলেন। আর তিনি এলিয়ের গাত্র হইতে পতিত শালখানি তুলিয়া লইলেন, এবং ফিরিয়া গিয়া যর্দ্দনের ধারে দাঁড়াইলেন। পরে তিনি এলিয়ের গাত্র হইতে পতিত সেই শালখানি লইয়া জলে আঘাত করিয়া কহিলেন, এলিয়ের ঈশ্বর সদাপ্রভু কোথায়? আর তিনিও জলে আঘাত করিলে জল এদিকে ওদিকে বিভক্ত হইল, এবং ইলীশায় পার হইয়া গেলেন। তখন যিরীহোর শিষ্য-ভাববাদিগণ সম্মুখে [থাকায়] তাহা দেখিয়া কহিল, এলিয়ের আত্মা ইলীশায়ে অধিষ্ঠিত হইয়াছে। পরে তাহারা তাঁহার সঙ্গে দেখা করিয়া তাঁহার সম্মুখে ভূমিতে প্রণিপাত করিল। আর তাঁহাকে কহিল, দেখুন, আপনার দাসগণের এখানে পঞ্চাশ জন বলবান লোক আছে; বিনয় করি, তাহারা আপনার প্রভুর অন্বেষণে যাউক; কি জানি, সদাপ্রভুর আত্মা তাঁহাকে উঠাইয়া কোন পর্ব্বতে কিম্বা কোন উপত্যকাতে ফেলিয়া গিয়াছেন। তিনি কহিলেন, পাঠাইও না। তথাপি তাহারা তাঁহাকে পীড়াপীড়ি করিলে তিনি লজ্জিত হইয়া কহিলেন, পাঠাইয়া দেও। অতএব তাহারা পঞ্চাশ জন লোক পাঠাইয়া দিল; উহারা তিন দিন পর্য্যন্ত অন্বেষণ করিল, কিন্তু তাঁহাকে পাইল না। পরে উহারা ইলীশায়ের নিকটে ফিরিয়া আসিল; তখনও তিনি যিরীহোতে ছিলেন। তিনি কহিলেন, আমি কি তোমাদিগকে বলি নাই, যাইও না। পরে নগরের লোকেরা ইলীশায়কে কহিল, বিনয় করি, দেখুন, এই নগরের স্থান র‍ম্য বটে, ইহা ত প্রভু দেখিতেছেন; কিন্তু জল মন্দ ও ভূমি ফলনাশক। তিনি কহিলেন, আমার কাছে নূতন একটী ভাঁড় আনিয়া তাহাতে লবণ রাখ। পরে তাঁহার কাছে তাহা আনীত হইল। তিনি বাহির হইয়া জলের উনুইর নিকট গিয়া তাহাতে লবণ ফেলিলেন, এবং কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি এ জল ভাল করিলাম, অদ্যাবধি ইহা আর মৃত্যুজনক কি ফলনাশক হইবে না। ইলীশায়ের উক্ত সেই বাক্যানুসারে সেই জল অদ্য পর্য্যন্ত ভাল হইয়া আছে। পরে তিনি তথা হইতে বৈথেলে চলিলেন; আর তিনি পথ দিয়া উপরে যাইতেছেন, এমন সময়ে নগর হইতে কতকগুলি বালক আসিয়া তাঁহাকে বিদ্রূপ করিয়া কহিল, রে টাক্‌পড়া, উঠিয়া আয়; রে টাক্‌পড়া, উঠিয়া আয়। তখন তিনি পশ্চাৎ দিকে মুখ ফিরাইয়া তাহাদিগকে দেখিলেন, এবং সদাপ্রভুর নামে তাহাদিগকে শাপ দিলেন; আর বন হইতে দুইটা ভল্লূকী আসিয়া তাহাদের মধ্যে বেয়াল্লিশ জন বালককে ছিঁড়িয়া ফেলিল। পরে তিনি তথা হইতে কর্ম্মিল পর্ব্বতে গেলেন, এবং তথা হইতে শমরিয়ায় ফিরিয়া আসিলেন। যিহূদা-রাজ যিহোশাফটের অষ্টাদশ বৎসরে আহাবের পুত্র যিহোরাম শমরিয়ায় ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করতে আরম্ভ করেন, এবং বারো বৎসর রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তিনি তাহাই করিতেন; তথাপি আপন পিতা মাতার মত ছিলেন না; কেননা তিনি আপন পিতার নির্ম্মিত বালের স্তম্ভ দূর করিয়া দিলেন। কিন্তু নবাটের পুত্র যারবিয়াম ইস্রায়েলকে যে সকল পাপের দ্বারা পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার সেই সকল পাপে তিনি আসক্ত থাকিলেন, তাহা হইতে ফিরিলেন না। মোয়াব-রাজ মেশা মেষাধিকারী ছিলেন; তিনি ইস্রায়েল-রাজকে কররূপে এক লক্ষ মেষশাবকের এবং এক লক্ষ মেষের লোম দিতেন। কিন্তু আহাব মরিলে মোয়াবের রাজা ইস্রায়েল-রাজের অধীনতা ত্যাগ করিলেন। সেই সময় যিহোরাম রাজা শমরিয়া হইতে, বাহিরে গিয়া সমস্ত ইস্রায়েলকে সংগ্রহ করিলেন। পরে তিনি যাত্রা করিয়া যিহূদা-রাজ যিহোশাফটের কাছে দূত পাঠাইয়া কহিলেন, মোয়াবের রাজা আমার অধীনতা ত্যাগ করিয়াছে, আপনি কি আমার সঙ্গে মোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিবেন? তিনি কহিলেন, করিব; আমি ও আপনি, আমার লোক ও আপনার লোক, আমার অশ্ব ও আপনার অশ্ব, সকলই এক। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আমরা কোন্‌ পথ দিয়া যাইব? ইনি কহিলেন, ইদোম প্রান্তরের পথ দিয়া। পরে ইস্রায়েলের রাজা, যিহূদার রাজা ও ইদোমের রাজা যাত্রা করিলেন; তাঁহারা সাত দিনের পথ ঘুরিয়া গেলেন; তখন তাঁহাদের সৈন্যের ও পশ্চাদগামী পশুদের জন্য জল পাওয়া গেল না। ইস্রায়েলের রাজা কহিলেন, হায় হায়! সদাপ্রভু মোয়াবের হস্তে সমর্পণ করিবার জন্য এই তিন রাজাকে এক সঙ্গে আহ্বান করিয়াছেন। কিন্তু যিহোশাফট কহিলেন, সদাপ্রভুর কোন ভাববাদী কি এখানে নাই যে, তাঁহার দ্বারা আমরা সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিতে পারি? ইস্রায়েল-রাজের দাসগণের মধ্যে এক জন উত্তর করিয়া কহিল, শাফটের পুত্র যে ইলীশায় এলিয়ের হস্তের উপরে জল ঢালিতেন, তিনি এখানে আছেন। যিহোশাফট কহিলেন, সদাপ্রভুর বাক্য তাঁহার কাছে আছে। পরে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহোশাফট এবং ইদোমের রাজা তাঁহার কাছে নামিয়া গেলেন। তখন ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, আপনার সহিত আমার বিষয় কি? আপনি আপন পিতার ভাববাদীদের ও আপন মাতার ভাববাদীদের নিকট যাউন। ইস্রায়েলের রাজা কহিলেন, তাহা নায়, কেননা মোয়াবের হস্তে সমর্পণ করিবার জন্য সদাপ্রভু এই তিন রাজাকে এক সঙ্গে আহ্বান করিয়াছেন। ইলীশায় কহিলেন, আমি যাঁহার সাক্ষাতে দণ্ডায়মান, সেই বাহিনীগণের জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যদি যিহূদা-রাজ যিহোশাফটের মুখের দিকে না চাহিতাম, তবে আপনার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতাম না, আপনাকে দেখিতাম না। যাহা হউক, এখন আমার নিকটে এক জন বীণাবাদককে আনা হউক। পরে বাদক বীণা বাজাইলে সদাপ্রভুর হস্ত ইলীশায়ের উপরে উপস্থিত হইল। আর তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমার এই উপত্যকা খাতময় কর। কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা বায়ু দেখিবে না, ও বৃষ্টি দেখিবে না, তথাপি এই উপত্যকা জলে পরিপূর্ণ হইবে; তাহাতে তোমরা, তোমাদের পশুগণ ও বাহন সকল পান করিবে। আর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে এটী অতি ক্ষুদ্র বিষয়, তিনি মোয়াবকেও তোমাদের হস্তে সমর্পণ করিবেন। তখন তোমরা প্রত্যেক প্রাচীরবেষ্টিত নগরে ও প্রত্যেক উত্তম নগরে আঘাত করিবে, আর প্রত্যেক উত্তম বৃক্ষ কাটিয়া ফেলিবে, ও জলের উনুই সকল বুজাইয়া দিবে, এবং উর্ব্বর ক্ষেত্র সকল প্রস্তরের দ্বারা নষ্ট করিবে। পরে প্রাতঃকালে নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবার সময়ে দেখ, ইদোমের পথ দিয়া জল আসিয়া দেশ পরিপূর্ণ করিল। সমস্ত মোয়াব-বাসী যখন শুনিতে পাইল যে, রাজগণ তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে আসিয়াছেন, তখন যাহারা সজ্জা পরিধান করিতে পারিত, তাহারা সকলে এবং ততোধিক বয়সের লোক সমাহূত হইয়া সীমাতে দাঁড়াইয়া রহিল। পরে তাহারা প্রত্যূষে উঠিল, তখন সূর্য্য জলের উপরে চক্‌মক্‌ করিতেছিল, তাহাতে মোয়াবীয়েরা সম্মুখে রক্তের ন্যায় রাঙ্গা জল দেখিল। তখন তাহারা কহিল, এ যে রক্ত; সেই রাজগণ অবশ্য বিনষ্ট হইয়াছে, আর লোকেরা পরস্পর মারামারি করিয়া মরিয়াছে; অতএব হে মোয়াব, এক্ষণে লুট করিতে চল। পরে তাহারা ইস্রায়েলের শিবিরে উপস্থিত হইলে ইস্রায়েলীয়েরা উঠিয়া মোয়াবীয়দিগকে আঘাত করিল, তাহাতে উহারা তাহাদের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল, এবং তাহারা মোয়াবীয়দিগকে আঘাত করিতে করিতে অগ্রসর হইয়া উহাদের দেশে প্রবেশ করিল। তাহারা নগর সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল, ও প্রত্যেক জন প্রত্যেক উর্ব্বর ক্ষেত্রে প্রস্তর ফেলিয়া তাহা পরিপূর্ণ করিল, এবং জলের উনুই সকল বুজাইয়া দিল, ও উত্তম উত্তম বৃক্ষ সকল কাটিয়া ফেলিল; কেবল কীর্‌হরাসতে তথাকার প্রস্তর সকল অবশিষ্ট রাখিল, কিন্তু ফিঙ্গাধারীরা নগরের চারিদিকে গিয়া নিবাসীদিগকে আঘাত করিল। মোয়াবের রাজা যখন দেখিলেন যে, যুদ্ধ তাঁহার অসহ্য হইতেছে, তখন তিনি ইদোমের রাজার নিকটে ভেদ করিয়া যাইবার জন্য সাত শত খড়্‌গধারীকে আপনার সঙ্গে লইলেন; কিন্তু তাহারা পারিল না। পরে যে তাঁহার পদে রাজা হইত, আপনার সেই জ্যেষ্ঠ পুত্রকে লইয়া তিনি প্রাচীরের উপরে হোমবলিরূপে উৎসর্গ করিলেন। আর ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে অতিশয় ক্রোধ উৎপন্ন হইল; পরে তাহারা তাঁহার নিকট হইতে প্রস্থান করিয়া স্বদেশে ফিরিয়া গেল। একদা শিষ্য-ভাববাদিগণের মধ্যে এক জনের স্ত্রী ইলীশায়ের কাছে কাঁদিয়া কহিল, আপনার দাস আমার স্বামী মরিয়াছেন; আপনি জানেন, আপনার দাস সদাপ্রভুকে ভয় করিতেন; এখন মহাজন আমার দুইটী সন্তানকে দাস করিবার জন্য লইয়া যাইতে আসিয়াছে। ইলীশায় তাহাকে বলিলেন, আমি তোমার নিমিত্ত কি করিতে পারি? বল দেখি, ঘরে তোমার কি আছে? সে কহিল, এক বাটী তৈল ব্যতিরেকে আপনার দাসীর আর কিছু নাই। তখন তিনি কহিলেন, যাও, বাহির হইতে তোমার সমস্ত প্রতিবাসীর কাছে শূন্য পাত্র চাহিয়া আন, অল্প আনিও না। পরে ভিতরে গিয়া তুমি ও তোমার পুত্রেরা ঘরে থাকিয়া দ্বার রুদ্ধ কর, এবং সেই সকল পাত্রে তৈল ঢাল; এক এক পাত্র পূর্ণ হইলে তাহা এক দিকে রাখ। পরে সে স্ত্রীলোক তাঁহার নিকট হইতে প্রস্থান করিল, আর সে ও তাহার পুত্রেরা ঘরে থাকিয়া দ্বার রুদ্ধ করিল; তাহারা পুনঃপুনঃ তাহাকে পাত্র আনিয়া দিল, এবং সে তৈল ঢালিল। সমস্ত পাত্র পূর্ণ হইলে পর সে আপন পুত্রকে কহিল, আর পাত্র আন। পুত্র কহিল, আর পাত্র নাই। তখন তৈলের স্রোত বদ্ধ হইল। পরে সে গিয়া ঈশ্বরের লোককে সংবাদ দিল। তিনি কহিলেন, যাও, সেই তৈল বিক্রয় করিয়া তোমার ঋণ পরিশোধ কর, এবং যাহা অবশিষ্ট থাকিবে, তদ্দ্বারা তুমি ও তোমার পুত্রেরা দিনপাত কর। এক দিন ইলীশায় শূনেমে যান। তথায় এক ধনবতী মহিলা ছিলেন; তিনি আগ্রহ সহকারে তাঁহাকে ভোজনের নিমন্ত্রণ করিলেন। পরে যত বার তিনি ঐ পথ দিয়া যাইতেন, তত বার আহার করণার্থে সেই স্থানে যাইতেন। আর সেই মহিলা আপন স্বামীকে কহিলেন, দেখ, আমি বুঝিতে পারিয়াছি, এই যে ব্যক্তি আমাদের নিকট দিয়া যখন তখন যাতায়াত করেন, ইনি ঈশ্বরের এক জন পবিত্র লোক। বিনয় করি, আইস, আমরা প্রাচীরের উপরে একটী ক্ষুদ্র কুঠরী নির্ম্মাণ করি, এবং তাহার মধ্যে তাঁহার নিমিত্ত একখানি খাট, একখানি মেজ, একখানি আসন ও একটী পিলসুজ রাখি; তিনি আমাদের এখানে আসিলে সেই স্থানে থাকিবেন। এক দিন ইলীশায় সেখানে আসিলেন; আর সেই কুঠরীতে প্রবেশ করিয়া শয়ন করিলেন। পরে তিনি আপন চাকর গেহসিকে কহিলেন, তুমি ঐ শূনেমীয়াকে ডাক। তাহাতে সে তাঁহাকে ডাকিলে সেই স্ত্রীলোকটী তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইলেন। তখন ইলীশায় গেহসিকে কহিলেন, উহাঁকে বল, দেখুন, আমাদের নিমিত্ত আপনি এই সকল চিন্তা করিলেন, এখন আপনার নিমিত্ত কি করিতে হইবে? রাজার কিম্বা সেনাপতির নিকটে আপনার কি কোন নিবেদন আছে? তিনি উত্তর করিলেন, আমি আপন লোকদের মধ্যে বাস করিতেছি। পরে ইলীশায় কহিলেন, তবে উহাঁর জন্য কি করিতে হইবে? গেহসি কহিল, নিশ্চয়ই উহাঁর পুত্র নাই, স্বামীও বৃদ্ধ। ইলীশায় কহিলেন, উহাঁকে ডাক; পরে তাঁহাকে ডাকিলে তিনি দ্বারে দাঁড়াইলেন। তখন ইলীশায় কহিলেন, এই ঋতুতে এই সময় পুনরায় উপস্থিত হইলে আপনি পুত্র ক্রোড়ে করিবেন। কিন্তু তিনি কহিলেন, না; হে প্রভু, হে ঈশ্বরের লোক, আপনার দাসীকে মিথ্যা কথা কহিবেন না। পরে ইলীশায়ের বাক্যানুসারে সেই স্ত্রী গর্ভধারণ করিয়া সেই সময় পুনরায় উপস্থিত হইলে, পুত্র প্রসব করিলেন। বালকটী বড় হইলে পর সে এক দিন ছেদকদের কাছে আপন পিতার নিকটে গেল। পরে সে পিতাকে কহিল, আমার মাথা! আমার মাথা! তখন পিতা চাকরকে কহিলেন, তুমি ইহাকে তুলিয়া ইহার মাতার কাছে লইয়া যাও। পরে সে তাহাকে তুলিয়া মাতার কাছে আনিলে বালকটী মধ্যাহ্নকাল পর্য্যন্ত তাঁহার ক্রোড়ে বসিয়া থাকিল, পরে মরিয়া গেল। তখন মাতা উপরে গিয়া ঈশ্বরের লোকের খাটে তাহাকে শয়ন করাইলেন, পরে দ্বার রুদ্ধ করিয়া বাহিরে আসিলেন, আর আপন স্বামীকে ডাকিয়া বলিলেন, বিনয় করি, তুমি চাকরদের এক জনকে ও একটী গর্দ্দভী আমার কাছে পাঠাইয়া দেও, আমি ঈশ্বরের লোকের কাছে তাড়াতাড়ি গিয়া ফিরিয়া আসিব। তিনি কহিলেন, অদ্য তাঁহার নিকটে কেন যাইবে? অদ্য অমাবস্যাও নয়, বিশ্রামবারও নয়। নারী কহিলেন, মঙ্গল হইবে। আর তিনি গর্দ্দভী সাজাইয়া আপন চাকরকে কহিলেন, গর্দ্দভী চালাইয়া চল, আজ্ঞা না পাইলে আমার গতি শিথিল করিও না। পরে তিনি কর্মিল পর্ব্বতে ঈশ্বরের লোকের নিকটে চলিলেন। তখন ঈশ্বরের লোক তাঁহাকে দূর হইতে দেখিয়া আপন চাকর গেহসিকে কহিলেন, দেখ, ঐ সেই শূনেমীয়া; এক বার দৌড়িয়া গিয়া উহাঁর সহিত সাক্ষাৎ কর, আর জিজ্ঞাসা কর, আপনার মঙ্গল? আপনার স্বামীর মঙ্গল? বালকটীর মঙ্গল? তিনি উত্তর করিলেন, মঙ্গল। পরে পর্ব্বতে ঈশ্বরের লোকের কাছে উপস্থিত হইয়া তিনি তাঁহার চরণ ধরিলেন; তাহাতে গেহসি তাঁহাকে ঠেলিয়া দিবার জন্য নিকটে আসিল, কিন্তু ঈশ্বরের লোক কহিলেন, উহাঁকে থাকিতে দেও, উহাঁর প্রাণ শোকাকুল হইয়াছে, আর সদাপ্রভু আমাহইতে তাহা গোপন করিয়াছেন, আমাকে জানান নাই। তখন স্ত্রীলোকটী কহিলেন, আমার প্রভুর কাছে আমি কি পুত্র চাহিয়াছিলাম? আমাকে প্রতারণা করিবেন না, এ কথা কি বলি নাই? তখন ইলীশায় গেহসিকে কহিলেন, কটিবন্ধন কর, আমার এই যষ্টি হস্তে লইয়া প্রস্থান কর; কাহারও সহিত সাক্ষাৎ হইলে তাহাকে মঙ্গলবাদ করিও না, এবং কেহ মঙ্গলবাদ করিলে তাহাকে উত্তর দিও না; পরে বালকটীর মুখের উপরে আমার এই যষ্টি রাখিও। তখন বালকের মাতা কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, এবং আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি আপনাকে ছাড়িব না। তখন ইলীশায় উঠিয়া তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে চলিলেন। ইতিমধ্যে গেহসি তাঁহাদের অগ্রে গিয়া বালকটীর মুখে ঐ যষ্টি রাখিল, তথাপি কোন শব্দ হইল না, অবধানের কোন লক্ষণও পাওয়া গেল না। অতএব গেহসি তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে ফিরিয়া গিয়া তাঁহাকে কহিল, বালকটী জাগে নাই। পরে ইলীশায় সেই গৃহে আসিলেন, আর দেখ, বালকটী মৃত, ও তাঁহার শয্যায় শায়িত। তখন তিনি প্রবেশ করিলেন, এবং তাঁহাদের দুই জনকে বাহিরে রাখিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন। আর [খাটে] উঠিয়া বালকটীর উপরে শয়ন করিলেন; তিনি তাহার মুখের উপরে আপন মুখ, চক্ষুর উপরে চক্ষু ও করতলের উপরে করতল দিয়া তাহার উপরে আপনি লম্বমান হইলেন; তাহাতে বালকটীর গাত্র উত্তাপযুক্ত হইতে লাগিল। পরে তিনি ফিরিয়া আসিয়া গৃহমধ্যে একবার এদিক্‌ একবার ওদিক্‌ করিলেন, আবার উঠিয়া তাহার উপরে লম্বমান হইলেন; তাহাতে বালকটী সাত বার হাঁচিল, ও বালকটী চক্ষু মেলিল। তখন তিনি গেহসিকে ডাকিয়া কহিলেন, ঐ শূনেমীয়াকে ডাক। সে তাঁহাকে ডাকিলে স্ত্রীলোকটী তাঁহার নিকটে আসিলেন। ইলীশায় কহিলেন, আপনার পুত্রকে তুলিয়া লউন। তখন সে স্ত্রীলোক নিকটে গিয়া তাঁহার পদতলে পড়িয়া ভূমিতে প্রণিপাত করিলেন, এবং আপন পুত্রকে তুলিয়া লইয়া বাহিরে গেলেন। ইলীশায় পুনর্ব্বার গিল্‌গলে উপস্থিত হইলেন; সেই সময়ে দেশে দুর্ভিক্ষ ছিল। তখন শিষ্য-ভাববাদিগণ তাঁহার সম্মুখে বসিয়াছিল; তিনি আপন চাকরকে আজ্ঞা দিলেন, বড় হাঁড়ী চড়াইয়া এই শিষ্য-ভাববাদিগণের জন্য ব্যঞ্জন পাক কর। তখন তাহাদের এক জন তরকারি সংগ্রহ করিতে মাঠে গেল, এবং বনশসার লতা দেখিতে পাইয়া তাহার বুনো ফলে বস্ত্র পূর্ণ করিয়া আনিল, পরে তাহা কুটিয়া পাকের হাঁড়ীতে দিল; কিন্তু সেগুলি কি, তাহা তাহারা জানিল না। পরে লোকদের ভোজনার্থে তাহা ঢালিলে তাহারা সেই ব্যঞ্জন খাইতে গিয়া চীৎকার করিয়া কহিল, হে ঈশ্বরের লোক, হাঁড়ীর মধ্যে মৃত্যু; আর তাহারা তাহা খাইতে পারিল না। তখন তিনি কহিলেন, তবে কিছু ময়দা আন। পরে তিনি হাঁড়ীতে তাহা ফেলিয়া কহিলেন, লোকদের জন্য ঢালিয়া দেও, তাহারা ভোজন করুক। তাহাতে হাঁড়ীতে কিছুই মন্দ থাকিল না। আর বাল্‌-শালিশা হইতে এক ব্যক্তি আসিল, সে ঈশ্বরের লোকের কাছে আশুপক্ক শস্যের রুটী, যবের কুড়িখানা রুটী ও ছালায় করিয়া শস্যের তাজা শীষ আনিল; আর তিনি কহিলেন, ইহা লোকদিগকে দেও, তাহারা ভোজন করুক। তখন তাঁহার পরিচারক কহিল, আমি কি এক শত লোককে ইহা পরিবেষণ করিব? কিন্তু তিনি কহিলেন, ইহা লোকদিগকে দেও তাহারা ভোজন করুক; কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহারা ভোজন করিবে, ও উদ্বৃত্ত রাখিবে। অতএব সে তাহাদের সম্মুখে তাহা স্থাপন করিল, আর সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তাহারা ভোজন করিল, আর উদ্বৃত্তও রাখিল। অরাম-রাজের সেনাপতি নামান আপন প্রভুর সাক্ষাতে মহান্‌ ও সম্মানিত লোক ছিলেন, কেননা তাঁহারই দ্বারা সদাপ্রভু অরামকে বিজয়ী করিয়াছিলেন; আর তিনি বলবান বীর, কিন্তু কুষ্ঠরোগী ছিলেন। এক সময়ে অরামীয়েরা দলে দলে গমন করিয়াছিল; তাহারা ইস্রায়েল দেশ হইতে একটী ছোট বালিকাকে বন্দি করিয়া আনিলে সে ঐ নামানের পত্নীর পরিচারিকা হইয়াছিল। সে আপন কর্ত্রীকে কহিল, আহা! শমরিয়ায় যে ভাববাদী আছেন, তাঁহার সহিত যদি আমার প্রভুর সাক্ষাৎ হইত, তবে তিনি তাঁহাকে কুষ্ঠ হইতে উদ্ধার করিতেন। পরে নামান গিয়া আপন প্রভুকে কহিলেন, ইস্রায়েল দেশ হইতে আনীতা সেই বালিকা এই এই কথা কহিতেছে। অরাম-রাজ কহিলেন, তুমি যাও, সেখানে যাও, আমি ইস্রায়েলের রাজার কাছে পত্র পাঠাই। তখন তিনি আপনার সঙ্গে দশ তালন্ত রৌপ্য, ছয় সহস্র স্বর্ণমুদ্রা ও দশ যোড়া বস্ত্র লইয়া প্রস্থান করিলেন। আর তিনি ইস্রায়েলের রাজার কাছে পত্র লইয়া গেলেন, পত্রে এই কথা লিখিত ছিল, এই পত্র যখন আপনার নিকটে পৌঁছিবে, তখন দেখুন, আমি আপন দাস নামানকে আপনার কাছে প্রেরণ করিলাম, আপনি তাহাকে কুষ্ঠ হইতে উদ্ধার করিবেন। এই পত্র পাঠ করিয়া ইস্রায়েলের রাজা আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, মারিবার ও বাঁচাইবার ঈশ্বর কি আমি যে, এই ব্যক্তি এক জন মনুষ্যকে কুষ্ঠ হইতে উদ্ধার করণার্থে আমার কাছে পাঠাইতেছে? বিনয় করি, তোমরা বিবেচনা করিয়া দেখ, কিন্তু সে আমার বিরুদ্ধে সূত্র অন্বেষণ করিতেছে। পরে ইস্রায়েলের রাজা আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়াছেন, ইহা শুনিয়া ঈশ্বরের লোক ইলীশায় রাজার কাছে এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন, আপনি কেন বস্ত্র ছিঁড়িলেন? সে ব্যক্তি আমার কাছে আইসুক; তাহাতে জানিতে পারিবে যে, ইস্রায়েলের মধ্যে একজন ভাববাদী আছে। অতএব নামান আপন অশ্বগণের ও রথসমূহের সহিত আসিয়া ইলীশায়ের গৃহ-দ্বারে উপস্থিত হইলেন। তখন ইলীশায় তাঁহার কাছে এক জন দূত পাঠাইয়া কহিলেন, আপনি গিয়া সাত বার যর্দ্দনে স্নান করুন, আপনার নূতন মাংস হইবে, ও আপনি শুচি হইবেন। তখন নামান ক্রুদ্ধ হইয়া চলিয়া গেলেন, আর কহিলেন, দেখ, আমি ভাবিয়াছিলাম, তিনি অবশ্য বাহির হইয়া আমার নিকটে আসিবেন, এবং দাঁড়াইয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে ডাকিবেন, আর কুষ্ঠ-স্থানের উপর হাত দোলাইয়া কুষ্ঠীকে উদ্ধার করিবেন। ইস্রায়েলের সমস্ত জলাশয় হইতে দম্মেশকের অবানা ও পর্পর নদী কি উত্তম নয়? আমি কি তাহাতে স্নান করিয়া শুচি হইতে পারি না? আর তিনি মুখ ফিরাইয়া ক্রোধের আবেগে প্রস্থান করিলেন। কিন্তু তাঁহার দাসেরা নিকটে আসিয়া নিবেদন করিল, পিতা, ঐ ভাববাদী যদি কোন মহৎ কর্ম্ম করিবার আজ্ঞা আপনাকে দিতেন, আপনি কি তাহা করিতেন না? তবে স্নান করিয়া শুচি হউন, তাঁহার এই আজ্ঞাটী কি মানিবেন না? তখন তিনি ঈশ্বরের লোকের আজ্ঞানুসারে নামিয়া গিয়া সাত বার যর্দ্দনে ডুব দিলেন, তাহাতে ক্ষুদ্র বালকের ন্যায় তাঁহার নূতন মাংস হইল, ও তিনি শুচি হইলেন। পরে তিনি আপন সঙ্গী জনগণের সহিত ঈশ্বরের লোকের কাছে ফিরিয়া আসিয়া তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইলেন, আর বলিলেন, দেখুন, আমি এখন জানিতে পারিলাম, সমস্ত পৃথিবীতে আর কোথাও ঈশ্বর নাই, কেবল ইস্রায়েলের মধ্যে আছেন; অতএব বিনয় করি, আপনার এই দাসের কাছে উপহার গ্রহণ করুন। কিন্তু তিনি কহিলেন, আমি যাঁহার সম্মুখে দণ্ডায়মান, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমি কিছু গ্রহণ করিব না। নামান আগ্রহ করিয়া তাহা গ্রহণ করিতে বলিলেও তিনি অস্বীকার করিলেন। পরে নামান কহিলেন, তাহা যদি না হয়, তবে বিনয় করি, দুইটী অশ্বতরের ভারযোগ্য মৃত্তিকা আপনার এই দাসকে দেওয়া হউক; কেননা অদ্যাবধি আপনার এই দাস সদাপ্রভু ব্যতিরেকে অন্য দেবতার উদ্দেশে হোম কিম্বা বলিদান আর করিবে না। কেবল এই বিষয়ে সদাপ্রভু আপনার দাসকে ক্ষমা করুন; আমার প্রভু প্রণিপাত করিবার জন্য যখন রিম্মোণের মন্দিরে প্রবেশ করেন, এবং আমার হস্তে নির্ভর দেন, তখন যদি আমি রিম্মোণের মন্দিরে প্রণিপাত করি, তবে রিম্মোণের মন্দিরে প্রণিপাত করণ বিষয়ে সদাপ্রভু আপনার দাসকে যেন ক্ষমা করেন। ইলীশায় তাঁহাকে কহিলেন, কুশলে গমন করুন। পরে তিনি তাঁহার সম্মুখ হইতে প্রস্থান করিয়া কিছু দূর গমন করিলেন। তখন ঈশ্বরের লোক ইলীশায়ের চাকর গেহসি কহিল, দেখ, আমার প্রভু ঐ অরামীয় নামানকে অমনি ছাড়িয়া দিলেন, তাঁহার হস্ত হইতে তাঁহার আনীত দ্রব্য গ্রহণ করিলেন না; জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমি তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়া তাঁহার কাছে কিছু লইব। পরে গেহসি নামানের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িয়া গেল; তাহাতে নামান আপনার পশ্চাতে পশ্চাতে এক জনকে দৌড়িয়া আসিতে দেখিয়া তাহার সহিত সাক্ষাৎ করণার্থে রথ হইতে নামিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, মঙ্গল ত? সে কহিল, মঙ্গল। আমার প্রভু এই বলিয়া আমাকে পাঠাইলেন, দেখুন, এক্ষণে পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশ হইতে শিষ্য-ভাববাদীদের মধ্যে দুই জন যুবক আসিল; বিনয় করি, তাহাদের জন্য এক তালন্ত রৌপ্য ও দুই যোড়া বস্ত্র দান করুন। নামান কহিলেন, অনুগ্রহ করিয়া দুই তালন্ত লও। পরে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করিয়া দুই থলীতে দুই তালন্ত রৌপ্য বাঁধিয়া দুই যোড়া বস্ত্রের সহিত আপনার দুই জন চাকরকে দিলে তাহারা উহার অগ্রে অগ্রে বহিতে লাগিল। পরে পাহাড়ে উপস্থিত হইলে সে তাহাদের হস্ত হইতে সেই সকল লইয়া গৃহ মধ্যে রাখিল, এবং সেই লোকদিগকে বিদায় করিলে তাহারা চলিয়া গেল। পরে আপনি ভিতরে গিয়া আপন প্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইল। তখন ইলীশায় তাহাকে কহিলেন, গেহসি, তুমি কোথা হইতে আসিলে? সে কহিল, আপনার দাস কোন স্থানে যায় নাই। তখন তিনি তাহাকে কহিলেন, সেই ব্যক্তি যখন তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে রথ হইতে নামিলেন, তখন আমার মন কি যায় নাই? রৌপ্য লইবার এবং বস্ত্র, জিতবৃক্ষের উদ্যান ও দ্রাক্ষাক্ষেত্র, মেষ, গোরু ও দাস দাসী লইবার সময় কি এই? অতএব নামানের কুষ্ঠরোগ তোমাতে ও তোমার বংশে চিরকাল লাগিয়া থাকিবে। তাহাতে গেহসি হিমের ন্যায় শ্বেতকুষ্ঠগ্রস্ত হইয়া তাঁহার সম্মুখ হইতে প্রস্থান করিল। একদা শিষ্য-ভাববাদিগণ ইলীশায়কে কহিল, দেখুন, আমরা আপনার সাক্ষাতে যে স্থানে বাস করিতেছি, ইহা আমাদের পক্ষে সঙ্কীর্ণ। অনুমতি করুন, আমরা যর্দ্দনে গিয়া প্রত্যেক জন তথা হইতে এক একখানি কড়িকাষ্ঠ লইয়া আমাদের জন্য সেখানে বাসস্থান প্রস্তুত করি। তিনি কহিলেন, যাও। আর এক জন কহিল, আপনি অনুগ্রহ করিয়া আপনার দাসদের সহিত চলুন। তিনি কহিলেন, যাইব। অতএব তিনি তাহাদের সহিত গেলেন; পরে যর্দ্দনের নিকটে উপস্থিত হইয়া তাহারা কাষ্ঠ ছেদন করিতে লাগিল। কিন্তু এক জন কড়িকাষ্ঠ ছেদন করিতেছিল, এমন সময়ে কুড়ালির ফলা জলে পড়িয়া গেল; তাহাতে সে কাঁদিয়া কহিল, হায় হায়! প্রভু, আমি ত উহা ধার করিয়া আনিয়াছিলাম। তখন ঈশ্বরের লোক জিজ্ঞাসা করিলেন, তাহা কোথায় পড়িয়াছে? সে তাঁহাকে সেই স্থান দেখাইল। তখন ইলীশায় একখানি কাষ্ঠ কাটিয়া সেই স্থানে ফেলিয়া লৌহখানি ভাসাইয়া উঠাইলেন। আর তিনি কহিলেন, উহা তুলিয়া লও। তাহাতে সে হাত বাড়াইয়া তাহা লইল। এক সময়ে অরামের রাজা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছিলেন; আর যখন তিনি আপন দাসদের সহিত মন্ত্রণা করিয়া কহিতেন, অমুক অমুক স্থানে আমার শিবির স্থাপন করা হইবে, তখন ঈশ্বরের লোক ইস্রায়েলের রাজার কাছে বলিয়া পাঠাইতেন, সাবধান, অমুক স্থান উপেক্ষা করিবেন না, কেননা সেখানে অরামীয়েরা নামিয়া আসিতেছে। তাহাতে ঈশ্বরের লোক যে স্থানের বিষয় বলিয়া তাঁহাকে সাবধান করিয়া দিতেন, সেই স্থানে ইস্রায়েলের রাজা সৈন্য পাঠাইয়া আপনাকে রক্ষা করিতেন; কেবল দুই এক বার নয়। এই বিষয়ের জন্য অরামের রাজার হৃদয় উদ্বিগ্ন হইল, তিনি আপন দাসগণকে ডাকিয়া কহিলেন, আমাদের মধ্যে কে ইস্রায়েলের রাজার পক্ষীয়, তাহা কি তোমরা আমাকে বলিবে না? তখন তাঁহার দাসদের মধ্যে এক জন কহিল, হে আমার প্রভু মহারাজ, কেহ নয়; কিন্তু আপনি আপন শয়নাগারে যে সকল কথা বলেন, সে সকল ইস্রায়েলস্থ ভাববাদী ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে জ্ঞাত করেন। তখন তিনি কহিলেন, তোমরা গিয়া দেখ, সে কোথায়; আমি লোক পাঠাইয়া তাহাকে আনাইব। পরে কেহ তাঁহাকে এই সংবাদ দিল, দেখুন, তিনি দোথনে আছেন। তাহাতে তিনি অনেক অশ্ব, রথ ও এক বৃহৎ সৈন্যদল সেখানে পাঠাইলেন। তাহারা রাত্রিতে আসিয়া সেই নগর বেষ্টন করিল। আর ঈশ্বরের লোকের পরিচারক প্রত্যূষে উঠিয়া যখন বাহিরে গেল, তখন দেখ, অনেক অশ্ব ও রথসহ এক সৈন্যদল নগর বেষ্টন করিয়া আছে। পরে তাঁহার চাকর তাঁহাকে কহিল হায় হায়, হে প্রভু! আমরা কি করিব? তিনি কহিলেন, ভয় করিও না, উহাদের সঙ্গীদের অপেক্ষা আমাদের সঙ্গী অধিক। তখন ইলীশায় প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, বিনয় করি, ইহার চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন এ দেখিতে পায়। তখন সদাপ্রভু সেই যুবকটীর চক্ষু খুলিয়া দিলেন, এবং সে দেখিতে পাইল, আর দেখ, ইলীশায়ের চারিদিকে অগ্নিময় অশ্বে ও রথে পর্ব্বত পরিপূর্ণ। পরে ঐ সৈন্যগণ তাঁহার নিকটে আসিলে ইলীশায় সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিয়া বলিলেন, বিনয় করি, এই দলকে অন্ধতায় আহত কর। তাহাতে তিনি ইলীশায়ের বাক্যানুসারে তাহাদিগকে অন্ধতায় আহত করিলেন। পরে ইলীশায় তাহাদিগকে কহিলেন, এ সে পথ নয়, এবং এ সেই নগর নয়; তোমরা আমার পশ্চাতে পশ্চাতে আইস; যে ব্যক্তির অন্বেষণ করিতেছ, তাহার নিকট আমি তোমাদিগকে লইয়া যাইব। আর তিনি তাহাদিগকে শমরিয়ায় লইয়া গেলেন। তাহারা শমরিয়ায় প্রবিষ্ট হইলে পর ইলীশায় কহিলেন, হে সদাপ্রভু, ইহাদের চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন ইহারা দেখিতে পায়। তখন সদাপ্রভু তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দিলেন, এবং তাহারা দেখিতে পাইল, আর দেখ, তাহারা শমরিয়ার মধ্যে উপস্থিত। আর ইস্রায়েলের রাজা তাহাদিগকে দেখিয়া ইলীশায়কে কহিলেন, হে পিতা, মারিব? মারিব? ইলীশায় কহিলেন, মারিও না। তুমি যাহাদিগকে খড়্‌গ ও ধনুর দ্বারা বন্দি কর, তাহাদিগকে কি মারিয়া থাক? উহাদের সম্মুখে রুটী ও জল রাখ; উহারা ভোজন পান করিয়া উহাদের প্রভুর কাছে চলিয়া যাউক। তখন তিনি তাহাদের জন্য মহাভোজ প্রস্তুত করিলেন, এবং তাহারা ভোজন পান করিলে তাহাদিগকে বিদায় করিলেন; তাহারা আপন প্রভুর নিকটে গেল। পরে অরামের সৈন্যদল ইস্রায়েল দেশে আর আসিল না। তৎপরে অরাম-রাজ বিন্‌হদদ আপনার সমস্ত সৈন্য একত্র করিলেন, এবং উঠিয়া গিয়া শমরিয়া অবরোধ করিলেন। তাহাতে শমরিয়ায় অতিশয় দুর্ভিক্ষ হইল; আর দেখ, তাহারা অবরোধ করিয়া রহিলে শেষে একটা গর্দ্দভের মুণ্ডের মূল্য আশী রৌপ্যমুদ্রা, ও কপোতমলের এক কাবের চতুর্থাংশের মূল্য পাঁচ রৌপ্যমুদ্রা হইল। একদা ইস্রায়েলের রাজা প্রাচীরের উপরে বেড়াইতেছেন, এমন সময়ে একটী স্ত্রীলোক তাঁহার কাছে কাঁদিয়া কহিল, হে আমার প্রভু মহারাজ, রক্ষা করুন। রাজা কহিলেন, যদি সদাপ্রভু তোমাকে রক্ষা না করেন, আমি কোথা হইতে তোমাকে রক্ষা করিব? কি খামার হইতে? না দ্রাক্ষাপেষণকুণ্ড হইতে? রাজা আরও কহিলেন, তোমার কি হইয়াছে? সে উত্তর করিল, এই স্ত্রীলোকটী আমাকে বলিয়াছিল, তোমার ছেলেটীকে দেও, আজ আমরা তাহাকে খাই, কাল আমার ছেলেটীকে খাইব। তখন আমরা আমার ছেলেটীকে পাক করিয়া খাইলাম। পরদিন আমি ইহাকে কহিলাম, তোমার ছেলেটীকে দেও, আমরা খাই; কিন্তু এ আপনার ছেলেটীকে লুকাইয়া রাখিয়াছে। স্ত্রীলোকটীর এই কথা শুনিয়া রাজা আপন বস্ত্র ছিঁড়িলেন; তখন তিনি প্রাচীরের উপরে বেড়াইতেছিলেন; তাহাতে লোকেরা চাহিয়া দেখিল, আর দেখ, বস্ত্রের নীচে তাঁহার গাত্রে চট বাঁধা। পরে তিনি কহিলেন, অদ্য যদি শাফটের পুত্র ইলীশায়ের মস্তক তাহার স্কন্ধে থাকে, তবে ঈশ্বর আমাকে অমুক ও ততোধিক দণ্ড দিউন। তখন ইলীশায় আপন গৃহে বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহার সহিত প্রাচীনবর্গ বসিয়াছিলেন; ইতিমধ্যে রাজা আপনার সম্মুখ হইতে এক জন লোক পাঠাইলেন। কিন্তু সেই দূতের আসিবার পূর্ব্বে ইলীশায় প্রাচীনবর্গকে কহিলেন, সেই নরঘাতকের পুত্র আমার মস্তক ছেদনার্থে লোক পাঠাইয়াছে, তোমরা কি দেখিতেছ? দেখ, সেই দূত আসিলে দ্বার রুদ্ধ করিও, এবং দ্বারশুদ্ধ তাহাকে ঠেলিয়া দিও; তাহার প্রভুর পদশব্দ কি তাহার পশ্চাতে নাই? তিনি তাহাদের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতেছেন, এমন সময়ে দেখ, দূত তাঁহার নিকটে পৌঁছিল, পরে রাজা কহিলেন, দেখ, এই অমঙ্গল সদাপ্রভু হইতে হইল, আমি কেন আর সদাপ্রভুর অপেক্ষাতে থাকিব? ইলীশায় কহিলেন, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন; সদাপ্রভু এই কথা কহেন, কল্য এই বেলায় শমরিয়ার দ্বারে শেকলে এক পসুরী সূজী ও শেকলে দুই পসুরী যব বিক্রয় হইবে। তখন রাজা যে সেনানীর হস্তে নির্ভর দিয়াছিলেন, তিনি ঈশ্বরের লোককে উত্তর করিলেন, দেখ, যদি সদাপ্রভু আকাশে গবাক্ষ করেন, তথাপি কি এমন হইতে পারিবে? তিনি বলিলেন, দেখ, তুমি স্বচক্ষে তাহা দেখিবে, কিন্তু তাহার কিছুই খাইতে পাইবে না। সেই সময়ে নগর-দ্বারের প্রবেশ স্থানে চারি জন কুষ্ঠী ছিল। তাহারা পরস্পর কহিল, ‘আমরা এখানে বসিয়া বসিয়া কেন মরিব?’ যদি বলি, নগরে প্রবেশ করিব, তবে নগরমধ্যে দুর্ভিক্ষ আছে, সেখানে মরিব; আর যদি এখানে বসিয়া থাকি, তবু মরিব। এখন আইস, আমরা অরামীয়দের শিবিরে গিয়া পড়ি; তাহারা আমাদিগকে বাঁচায় ত বাঁচিব, মারিয়া ফেলে ত মরিব। তখন তাহারা অরামীয়দের শিবিরে যাইবার জন্য সন্ধ্যাকালে উঠিল; যখন তাহারা অরামীয়দের শিবিরের প্রান্তভাগে উপস্থিত হইল, তখন দেখ, সেখানে কেহ নাই। কেননা প্রভু অরামীয়দের সৈন্যদলকে রথের শব্দ ও অশ্বের শব্দ, বৃহৎ সৈন্যদলের শব্দ শ্রবণ করাইয়াছিলেন; তাহাতে তাহারা এক জন অন্যকে বলিয়াছিল, দেখ ইস্রায়েলের রাজা আমাদের বিরুদ্ধে হিত্তীয়দের রাজগণকে ও মিস্রীয়দের রাজগণকে টাকা দিয়াছে, যেন তাহারা আমাদের উপরে চড়াউ করে। তাই তাহারা সন্ধ্যাকালে উঠিয়া পলায়ন করিয়াছিল; আপনাদের শিবির অর্থাৎ তাম্বু, অশ্ব ও গর্দ্দভ সকল যেমন ছিল, তেমনি ত্যাগ করিয়া আপন আপন প্রাণরক্ষার্থে পলায়ন করিয়াছিল। পরে ঐ কুষ্ঠীরা শিবিরের প্রান্তভাগে আসিয়া এক তাম্বুর মধ্যে গিয়া ভোজন পান করিল এবং তথা হইতে রৌপ্য, স্বর্ণ ও বস্ত্র লইয়া গিয়া লুকাইয়া রাখিল; পরে পুনরায় আসিয়া আর এক তাম্বুর মধ্যে গেল, এবং তথা হইতেও দ্রব্যাদি লইয়া গিয়া লুকাইয়া রাখিল। পরে তাহারা পরস্পর কহিল, আমাদের এ কাজ ভাল নয়; অদ্য সুসংবাদের দিন, কিন্তু আমরা চুপ করিয়া আছি; যদি প্রভাত পর্য্যন্ত বিলম্ব করি, তবে আমাদের অপরাধ আমাদিগকে ধরিবে। এখন আইস, আমরা গিয়া রাজবাটীতে সংবাদ দিই। পরে তাহারা গিয়া নগরের দ্বার-রক্ষকদিগকে ডাকিয়া তাহাদিগকে সংবাদ দিল যে, আমরা অরামীয়দের শিবিরে গিয়াছিলাম; আর দেখ, সেখানে কেহ নাই, মানুষের শব্দও নাই, কেবল ঘোড়াগুলি বাঁধা, ও গাধা গুলি বাঁধা, আর তাম্বু সকল যেমন ছিল, তেমনি আছে। তাহাতে দ্বারপালদিগকে ডাকা হইলে তাহারা ভিতরে রাজবাটীতে সংবাদ দিল। পরে রাজা রাত্রিতে উঠিয়া আপন দাসগণকে কহিলেন, অরামীয়েরা আমাদের প্রতি যাহা করিয়াছে, তাহা আমি তোমাদিগকে বলি; তাহারা জানে, আমরা ক্ষুধার্ত্ত, তাই তাহারা মাঠে লুকাইয়া থাকিবার জন্য শিবির হইতে বাহিরে গিয়াছে, আর বলিয়াছে, উহারা যখন নগর হইতে বাহিরে আসিবে, তখন আমরা উহাদিগকে জীবন্ত ধরিব ও নগরের মধ্যে প্রবেশ করিব। তখন তাঁহার দাসগণের মধ্যে এক জন উত্তর করিল, তবে বিনয় করি, নগরে যাহা অবশিষ্ট আছে, কয়েক জন সেই অবশিষ্ট অশ্বদের মধ্যে পাঁচটা অশ্ব গ্রহণ করুক—দেখুন, তাহারা এবং নগরের অবশিষ্ট ইস্রায়েলের সমস্ত লোক, এই দুই সমান; দেখুন তাহারা এবং নষ্টকল্প ইস্রায়েলের সমস্ত লোক, এই দুই সমান—আমরা একবার পাঠাইয়া দেখি। পরে তাহারা অশ্বযুক্ত দুই রথ লইল; রাজা তাহাদিগকে অরামীয়দের সৈন্যের পশ্চাতে পাঠাইলেন, বলিলেন, যাও, দেখ গিয়া। তাহাতে তাহারা যর্দ্দন পর্য্যন্ত উহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে গেল, আর দেখ, অরামীয়েরা তাড়াতাড়িতে যাহা যাহা ফেলিয়া গিয়াছিল, সেই সকল বস্ত্রে ও পাত্রে সমস্ত পথ পরিপূর্ণ। তখন দূতেরা ফিরিয়া আসিয়া রাজাকে সংবাদ দিল। আর লোকেরা বাহিরে গিয়া অরামীয়দের শিবির লুট করিল; তাহাতে সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে শেকলে এক পসুরী সূজী, এবং শেকলে দুই পসুরী যব বিক্রয় হইল। আর রাজা যে সেনানীর হস্তে নির্ভর দিয়াছিলেন, তাঁহাকে তিনি নগর-দ্বারের অধ্যক্ষ করিয়া নিযুক্ত করিলেন; কিন্তু লোকেরা দ্বারে তাঁহাকে পদতলে দলিত করিল, তাহাতে তিনি মরিয়া গেলেন; ঈশ্বরের লোকের কাছে যখন রাজা নামিয়া গিয়াছিলেন, তখন ঈশ্বরের লোক যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা সফল হইল। ঈশ্বরের লোক রাজাকে বলিয়াছিলেন, কল্য এই বেলায় শমরিয়ার দ্বারে শেকলে দুই পসুরী যব এবং শেকলে এক পসুরী সূজী বিক্রয় হইবে; আর ঐ সেনানী ঈশ্বরের লোককে উত্তর করিয়াছিলেন, দেখ, যদি সদাপ্রভু আকাশে গবাক্ষ করেন, তথাপি কি এমন হইতে পারিবে? তিনি বলিয়াছিলেন, দেখ, তুমি স্বচক্ষে তাহা দেখিবে, কিন্তু তাহার কিছুই খাইতে পাইবে না; উহাঁর, সেই দশা ঘটিল, কারণ লোকেরা দ্বারে তাঁহাকে পদতলে দলিত করাতে তিনি মারা পড়িলেন। ইলীশায় যে স্ত্রীলোকটীর পুত্রকে পুনর্জীবিত করিয়াছিলেন, তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, তুমি উঠিয়া পরিবারের সহিত যে স্থানে প্রবাস করিতে পার, সেই স্থানে গিয়া প্রবাস কর; কেননা সদাপ্রভু দুর্ভিক্ষ ডাকিয়াছেন, আর তাহা আসিয়া সাত বৎসর পর্য্যন্ত এই দেশে থাকিবে। তাহাতে সেই স্ত্রীলোকটী উঠিয়া ঈশ্বরের লোকের বাক্যানুসারে কার্য্য করিলেন; তিনি ও তাঁহার পরিবার গিয়া সাত বৎসর পলেষ্টীয়দের দেশে প্রবাস করিলেন। সাত বৎসরের শেষে সেই স্ত্রীলোকটী পলেষ্টীয়দের দেশ হইতে ফিরিয়া আসিলেন, আর আপনি বাটী ও ভূমির জন্য রাজার কাছে কাঁদিতে গেলেন। ঐ সময়ে রাজা ঈশ্বরের লোকের চাকর গেহসির সহিত কথা কহিতেছিলেন; তিনি বলিলেন, ইলীশায় যে সকল মহৎ কর্ম্ম করিয়াছেন, সেই সমস্তের বৃত্তান্ত আমাকে বল। তাহাতে ইলীশায় কিরূপে মৃতকে পুনর্জীবিত করিয়াছিলেন, তাহার বিবরণ সে রাজাকে কহিতেছে, আর দেখ, যাঁহার পুত্রকে তিনি পুনর্জীবিত করিয়াছিলেন, সেই স্ত্রীলোকটী আপন বাটী ও ভূমির জন্য রাজার কাছে আসিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। তখন গেহসি কহিল, হে আমার প্রভু মহারাজ, এ সেই স্ত্রীলোক, এবং এই তাঁহার পুত্র, যাহাকে ইলীশায় পুনর্জীবিত করিয়াছিলেন। আর রাজা স্ত্রীলোকটীকে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি তাঁহাকে বৃত্তান্ত কহিলেন। আর রাজা তাঁহার পক্ষে এক জন কর্ম্মচারীকে নিযুক্ত করিয়া কহিলেন, ইহার সর্ব্বস্ব, এবং এ যে দিন দেশ ত্যাগ করিয়াছে, সেই দিনাবধি অদ্য পর্য্যন্ত উৎপন্ন ইহার ক্ষেত্রের সমস্ত উপস্বত্ব ইহাকে ফিরাইয়া দেও। একদা ইলীশায় দম্মেশকে উপস্থিত হন। তখন অরাম-রাজ বিন্‌হদদ পীড়িত ছিলেন; তিনি সংবাদ পাইলেন যে, ঈশ্বরের লোক এই স্থান পর্য্যন্ত আসিয়াছেন। তখন রাজা হসায়েলকে কহিলেন, তুমি উপহার সঙ্গে লইয়া ঈশ্বরের লোকের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাও, এবং তাঁহার দ্বারা সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা কর, এই পীড়াতে আমি কি বাঁচিব? পরে হসায়েল তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন। তিনি উপহার সঙ্গে লইয়া, এমন কি, সর্ব্বপ্রকার উত্তম বস্তু চল্লিশটী উষ্ট্রের পৃষ্ঠে দিয়া দম্মেশকে আসিয়া তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া কহিলেন, আপনার পুত্র অরাম-রাজ বিন্‌হদদ আপনার কাছে আমাকে পাঠাইয়া জিজ্ঞাসা করিতেছেন, এই পীড়াতে আমি কি বাঁচিব? ইলীশায় তাঁহাকে কহিলেন, আপনি গিয়া তাঁহাকে বলুন, অবশ্য বাঁচিতে পারেন; তথাপি ইহা সদাপ্রভু আমাকে জ্ঞাত করিয়াছেন যে, তিনি অবশ্য মরিবেন। আর হসায়েল যে পর্য্যন্ত লজ্জা না পাইলেন, সে পর্য্যন্ত তিনি তাঁহার প্রতি স্থিরদৃষ্টি করিয়া রহিলেন; পরে ঈশ্বরের লোক রোদন করিতে লাগিলেন। হসায়েল জিজ্ঞাসা করিলেন, আমার প্রভু কেন রোদন করেন? তিনি উত্তর করিলেন, কারণ এই, আপনি ইস্রায়েল-সন্তানগণের যে অনিষ্ট করিবেন, তাহা আমি জানি; আপনি তাহাদের দৃঢ় দুর্গ সকল আগুনে পোড়াইয়া দিবেন, তাহাদের যুবকগণকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিবেন, তাহাদের শিশুগণকে ধরিয়া আছাড় মারিবেন, ও তাহাদের গর্ভবতী স্ত্রীলোকদিগের উদর বিদীর্ণ করিবেন। হসায়েল কহিলেন, আপনার এই কুকুর তুল্য দাস কে যে, এমন মহৎ কর্ম্ম করিবে? ইলীশায় কহিলেন, সদাপ্রভু আমাকে দেখাইয়াছেন যে, আপনি অরামের রাজা হইবেন। তখন তিনি ইলীশায়ের নিকট হইতে প্রস্থান করিয়া আপন প্রভুর কাছে গেলেন; রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইলীশায় তোমাকে কি কহিলেন? হসায়েল বলিলেন, তিনি আমাকে কহিলেন, আপনি অবশ্য বাঁচিবেন। কিন্তু পর দিবসে হসায়েল কম্বল জলে ডুবাইয়া রাজার মুখের উপরে বিস্তার করিলেন, তাহাতে তিনি মরিলেন, এবং হসায়েল তাঁহার পদে রাজা হইলেন। ইস্রায়েল-রাজ আহাবের পুত্র যোরামের পঞ্চম বৎসরে, যখন যিহোশাফট যিহূদার রাজা ছিলেন, তখন যিহূদা-রাজ যিহোশাফটের পুত্র যিহোরাম রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। তিনি বত্রিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে আট বৎসর কাল রাজত্ব করেন। আহাবের কুল যেমন করিত, তিনিও তেমনি ইস্রায়েলের রাজাদের পথে চলিতেন, কারণ তিনি আহাবের কন্যাকে বিবাহ করিয়াছিলেন; ফলে, সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন। তথাপি আপন দাস দায়ূদের জন্য সদাপ্রভু যিহূদাকে বিনষ্ট করিতে চাহিলেন না, তিনি ত দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে, তাঁহাকে তাঁহার সন্তানগণের জন্য নিয়ত এক প্রদীপ দিবেন। তাঁহার সময়ে ইদোম যিহূদার অধীনতা অস্বীকার করিয়া আপনাদের উপরে এক জনকে রাজা করিল। অতএব যোরাম আপন সমস্ত রথ সঙ্গে লইয়া সায়ীরে যাত্রা করিলেন; আর রাত্রিকালে তিনি উঠিয়া, যাহারা তাঁহাকে বেষ্টন করিয়াছিল, সেই ইদোমীয়দিগকে ও তাহাদের রথের অধ্যক্ষদিগকে আঘাত করিলেন, আর সেই লোকেরা আপন আপন তাম্বুতে পলাইয়া গেল। এইরূপে ইদোম অদ্য পর্য্যন্ত যিহূদার অধীনতা অস্বীকার করিয়া রহিয়াছে। আর ঐ সময়ে লিব্‌নাও অধীনতা অস্বীকার করিল। যোরামের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাসপুস্তকে লিখিত নাই? পরে যোরাম আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং দায়ূদ-নগরে আপন পিতৃলোকদের সহিত কবরপ্রাপ্ত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র অহসিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। ইস্রায়েল-রাজ আহাবের পুত্র যোরামের দ্বাদশ বৎসরে যিহূদা-রাজ যিহোরামের পুত্র অহসিয় রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। অহসিয় বাইশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে এক বৎসর রাজত্ব করেন। তাঁহার মাতার নাম অথলিয়া, তিনি ইস্রায়েল-রাজ অম্রির পৌত্রী। অহসিয় আহাব-কুলের পথে চলিতেন, সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাঁহা মন্দ, আহাব-কুলের ন্যায় তাহাই করিতেন, কেননা তিনি আহাব-কুলের জামাতা ছিলেন। তিনি আহাবের পুত্র যোরামের সঙ্গে অরাম-রাজ হসায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার জন্য রামোৎ-গিলিয়দে গেলেন; তাহাতে অরামীয়েরা যোরামকে ক্ষতবিক্ষত করিল। অতএব যোরাম রাজা অরাম-রাজ হসায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার সময়ে রামাতে অরামীয়েরা তাঁহাকে যে সকল আঘাত করে, তাহা হইতে আরোগ্য পাইবার জন্য যিষ্রিয়েলে ফিরিয়া গেলেন; আর আহাবের পুত্র যোরামের পীড়া প্রযুক্ত যিহূদা-রাজ যিহোরামের পুত্র অহসিয় তাঁহাকে দেখিতে যিষ্রিয়েলে নামিয়া গেলেন। তখন ইলীশায় ভাববাদী এক জন শিষ্য-ভাববাদীকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি কটিবন্ধন কর, এবং এই তৈলের শিশি হস্তে লইয়া রামোৎ-গিলিয়দে যাও। সেখানে উপস্থিত হইয়া নিম্‌শির পৌত্র যিহোশাফটের পুত্র যেহূর অন্বেষণ কর, এবং নিকটে গিয়া তাঁহার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাও, এবং এক ভিতরের কুঠরীতে লইয়া যাও। পরে তৈলের শিশিটী লইয়া তাঁহার মস্তকে ঢালিয়া দিয়া বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তোমাকে ইস্রায়েলের উপরে রাজপদে অভিষেক করিলাম। পরে তুমি দ্বার খুলিয়া পলায়ন করিবে, বিলম্ব করিবে না। তখন সেই যুবক, সেই যুব-ভাববাদী, রামোৎ-গিলিয়দে গেল। সে সেখানে উপস্থিত হইলে দেখ, সেনাপতিগণ বসিয়া ছিলেন। সে কহিল, হে সেনাপতি, আপনার কাছে আমার কিছু বক্তব্য আছে। যেহূ বলিলেন, আমাদের সকলের মধ্যে কাহার কাছে? সে কহিল, হে সেনাপতি, আপনার কাছে। তখন যেহূ উঠিয়া গৃহমধ্যে গেলেন। তাহাতে সে তাঁহার মস্তকে তৈল ঢালিয়া তাঁহাকে বলিল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভুর প্রজাবৃন্দের উপরে, ইস্রায়েলের উপরে, তোমাকে রাজপদে অভিষেক করিলাম। তুমি আপন প্রভু আহাবের কুলকে আঘাত করিবে; এবং আমি আপন দাস ভাববাদিগণের রক্তের প্রতিশোধ ও সদাপ্রভুর সকল দাসের রক্তের প্রতিশোধ ঈষেবলের হস্ত হইতে লইব। বস্তুতঃ আহাবের সমুদয় কুল বিনষ্ট হইবে; আমি আহাব-বংশের প্রত্যেক পুরুষকে, ইস্রায়েলের মধ্যে বদ্ধ ও মুক্ত লোককে, উচ্ছিন্ন করিব। আর আহাবের কুলকে নবাটের পুত্র যারবিয়ামের কুলের ও অহিয়ের পুত্র বাশার কুলের সমান করিব। আর ঈষেবলকে কুকুরেরা যিষ্রিয়েলের ভূমিতে খাইবে, কেহ তাহাকে কবর দিবে না। পরে সেই যুবক দ্বার খুলিয়া পলায়ন করিল। তখন যেহূ আপন প্রভুর দাসদের নিকটে বাহিরে আসিলেন; এক জন তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, সকলই মঙ্গল ত? ঐ পাগলটা তোমার কাছে কেন আসিয়াছিল? তিনি কহিলেন, তোমরা ত উহাকে চিন, ও কি বলিয়াছে, তাহাও জান। তাহারা কহিল, এ মিথ্যা কথা; আমাদিগকে [সত্য] বল। তখন তিনি কহিলেন, সে আমাকে এই এই কথা কহিল, বলিল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তোমাকে ইস্রায়েলের উপরে রাজপদে অভিষেক করিলাম। তখন তাহারা শীঘ্র করিয়া প্রত্যেকে আপন আপন বস্ত্র খুলিয়া সোপানের উপরে তাঁহার পদতলে পাতিল, এবং তূরী বাজাইয়া কহিল, যেহূ রাজা হইলেন। এইরূপে নিম্‌শির পৌত্র যিহোশাফটের পুত্র যেহূ যোরামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিলেন।—তৎকালে যোরাম ও সমস্ত ইস্রায়েল অরাম-রাজ হসায়েল হইতে রামোৎ-গিলিয়দ রক্ষা করিতেছিলেন; কিন্তু অরাম-রাজ হসায়েলের সহিত যোরাম রাজার যুদ্ধকালে অরামীয়েরা তাঁহাকে যে সকল আঘাত করিয়াছিল, তাহা হইতে আরোগ্য পাইবার জন্য তিনি যিষ্রিয়েলে ফিরিয়া গিয়াছিলেন।—পরে যেহূ বলিলেন, যদি তোমাদের এই অভিমত হয়, তবে যিষ্রিয়েলে সংবাদ দিবার জন্য কাহাকেও এই নগর হইতে পলাইয়া বাহির হইতে দিও না। পরে যেহূ রথে চড়িয়া যিষ্রিয়েলে গমন করিলেন, কেননা সেই স্থানে যোরাম শয্যাগত ছিলেন। আর যিহূদা-রাজ অহসিয় যোরামকে দেখিতে নামিয়া গিয়াছিলেন। তখন যিষ্রিয়েলের দুর্গের উপরে প্রহরী দাঁড়াইয়াছিল; যেহূর আসিবার সময়ে সে তাঁহার দল দেখিয়া কহিল, আমি একটী দল দেখিতেছি। যোরাম কহিলেন, তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য এক জন অশ্বারোহীকে পাঠাইয়া দেও, সে গিয়া বলুক, মঙ্গল ত? পরে এক জন অশ্বারোহী তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়া কহিল, রাজা জিজ্ঞাসা করিতেছেন, মঙ্গল ত? যেহূ কহিলেন, মঙ্গলে তোমার কি কাজ? তুমি আমার পশ্চাতে আইস। পরে প্রহরী এই সংবাদ দিল, সেই দূত তাহাদের নিকটে গেল বটে, কিন্তু ফিরিয়া আসিল না। পরে রাজা আর এক জনকে অশ্বারোহণে পাঠাইলেন; সে তাঁহাদের নিকটে উপস্থিত হইয়া কহিল, রাজা জিজ্ঞাসা করিতেছেন, মঙ্গল ত? যেহূ কহিলেন, মঙ্গলে তোমার কি কাজ? তুমি আমার পশ্চাতে আইস। পরে প্রহরী সংবাদ দিল, এ ব্যক্তি তাহাদের নিকটে গেল, কিন্তু ফিরিয়া আসিল না; আর রথচালন নিমশির সন্তান যেহূর চালনের ন্যায় দেখাইতেছে, কেননা সে উন্মত্তের ন্যায় চালায়। তখন যোরাম কহিলেন, রথ সাজাও। তখন তাহারা তাঁহার রথ সাজাইল। আর ইস্রায়েল-রাজ যোরাম ও যিহূদা-রাজ অহসিয় আপন আপন রথে চড়িয়া বাহির হইয়া যেহূর কাছে গেলেন, এবং যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের ভূমিতে তাঁহার দেখা পাইলেন। যেহূকে দেখিবামাত্র যোরাম কহিলেন, যেহূ, মঙ্গল ত? তিনি উত্তর করিলেন, যে পর্য্যন্ত তোমার মাতা ঈষেবলের এত ব্যভিচার ও মায়াবিত্ব থাকে, সে পর্য্যন্ত মঙ্গল কোথায়? তখন যোরাম আপন হস্ত ফিরাইয়া পলায়ন করিলেন, এবং অহসিয়কে কহিলেন, হে অহসিয়, বিশ্বাসঘাতকতা! পরে যেহূ আপনার সমস্ত বলে ধনুক আকর্ষণ করিয়া যোরামের উভয় বাহুমূলের মধ্যে বাণাঘাত করিলেন, আর বাণ তাঁহার হৃদয় দিয়া বাহির হইল, তাহাতে তিনি আপন রথে নত হইয়া পড়িলেন। তখন যেহূ আপন সেনানী বিদ্‌করকে কহিলেন, তুমি উহাকে তুলিয়া লইয়া যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের ক্ষেত্রের ভূমিতে ফেলিয়া দেও; কেননা মনে করিয়া দেখ, তুমি ও আমি উভয়ে অশ্বে চড়িয়া পাশাপাশি উহার পিতা আহাবের পশ্চাতে চলিতেছিলাম, এমন সময়ে সদাপ্রভু তাঁহার বিরুদ্ধে এই ভাববাণী বলিয়াছিলেন, সত্যই গত কল্য আমি নাবোতের রক্ত ও তাহার পুত্রদের রক্ত দেখিয়াছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন; আর সদাপ্রভু কহেন, এই ভূমিতে আমি তোমাকে প্রতিফল দিব। অতএব এখন তুমি উহাকে তুলিয়া লইয়া সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে ঐ ভূমিতে ফেলিয়া দেও। তখন যিহূদা-রাজ অহসিয় তাহা দেখিয়া উদ্যানবাটীর পথ ধরিয়া পলায়ন করিলেন; আর যেহূ তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে গিয়া কহিলেন, উহাকেও রথের মধ্যে আঘাত কর; তখন তাহারা যিব্‌লিয়মের নিকটস্থ গূরের আরোহণ পথে [তাঁহাকে আঘাত করিল]; পরে তিনি মগিদ্দোতে পলাইয়া গিয়া সে স্থানে মরিলেন। আর তাঁহার দাসগণ তাঁহাকে রথে করিয়া যিরূশালেমে লইয়া গিয়া দায়ূদ-নগরে তাঁহার পিতৃলোকদের সহিত তাঁহার কবরে তাঁহাকে কবর দিল। অহসিয় আহাবের পুত্র যিহোরামের একাদশ বৎসরে যিহূদার উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন। পরে যেহূ যিষ্রিয়েলে উপস্থিত হইলেন; ঈষেবল তাহা শুনিল; আর সে চক্ষে অঞ্জন দিয়া, মাথায় কেশবেশ করিয়া বাতায়ন দিয়া দেখিতেছিল, এবং যেহূ দ্বারে প্রবেশ করিলে সে তাঁহাকে কহিল, রে সিম্রি! রে প্রভুঘাতক! মঙ্গল ত? যেহূ বাতায়নের দিকে মুখ তুলিয়া কহিলেন, কে আমার পক্ষে? কে? তখন দুই তিন জন নপুংসক তাহার দিকে চাহিল। আর তিনি আজ্ঞা করিলেন, উহাকে নীচে ফেলিয়া দেও। তাহারা তাহাকে নীচে ফেলিয়া দিল, আর তাহার কতকটা রক্ত ভিত্তিতে ও অশ্বদের গায়ে ছিট্‌কিয়া পড়িল; আর তিনি তাহাকে পদতলে দলিত করিলেন। পরে ভিতরে গিয়া যেহূ ভোজন পান করিলেন; আর কহিলেন, তোমরা গিয়া ঐ শাপগ্রস্তার তত্ত্ব করিয়া তাহাকে কবর দেও, কেননা সে রাজপুত্রী। তাহাতে লোকেরা তাহাকে কবর দিতে গেল, কিন্তু তাহার মাথার খুলি, পা ও করতল ব্যতিরেকে আর কিছুই পাইল না। অতএব তাহারা ফিরিয়া আসিয়া তাঁহাকে সংবাদ দিল। তিনি কহিলেন, ইহা সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে হইল, তিনি আপন দাস তিশ্‌বীয় এলিয়ের দ্বারা এই কথা বলিয়া ছিলেন, যিষ্রিয়েলের ভূমিতে কুকুরেরা ঈষেবলের মাংস খাইবে; এবং যিষ্রিয়েলের ভূমিতে ঈষেবলের শব সারের মত ক্ষেত্রে পতিত হইবে; তাহাতে কেহ বলিতে পারিবে না যে, ‘এই ঈষেবল’। শমরিয়ায় আহাবের সত্তর জন পুত্র ছিল। যেহূ শমরিয়ায় যিষ্রিয়েলের অধ্যক্ষদের অর্থাৎ প্রাচীনদের কাছে ও আহাবের [সন্তানদিগের] অভিভাবকদের কাছে কয়েকখানি পত্র লিখিয়া পাঠাইলেন। তিনি লিখিলেন, তোমাদের প্রভুর পুত্রগণ তোমাদের কাছে আছে, এবং কতকগুলি রথ, অশ্ব ও সুদৃঢ় এক নগর এবং অস্ত্রশস্ত্রও তোমাদের কাছে আছে। অতএব তোমাদের নিকটে এই পত্র উপস্থিত হইবামাত্র তোমাদের প্রভুর পুত্রদের মধ্যে কোন্‌ ব্যক্তি সৎ ও উপযুক্ত, তাহা নিশ্চয় করিয়া তাহার পিতার সিংহাসনে তাহাকে বসাও, এবং আপন প্রভুর কুলের নিমিত্ত যুদ্ধ কর। কিন্তু তাহারা যার পর নাই ভীত হইয়া কহিল, দেখ, যাঁহার সম্মুখে দুই জন রাজা দাঁড়াইতে পারিলেন না, তাঁহার সম্মুখে আমরা কি প্রকারে দাঁড়াইব? অতএব গৃহাধ্যক্ষ ও নগরাধ্যক্ষ এবং প্রাচীনবর্গ ও অভিভাবকেরা যেহূর নিকটে এই কথা বলিয়া পাঠাইল, আমরা আপনার দাস, আপনি আমাদিগকে যাহা যাহা বলিবেন, সে সমস্তই করিব, কাহাকেও রাজা করিব না; আপনার দৃষ্টিতে যাহা ভাল, আপনি তাহাই করুন। পরে তিনি তাহাদের কাছে দ্বিতীয় বার এক পত্র লিখিলেন, যথা, তোমরা যদি আমার সপক্ষ হও, ও আমার রবে কর্ণপাত কর, তবে আপন প্রভুর পুত্রদিগের মুণ্ডগুলি লইয়া কল্য এমন সময়ে যিষ্রিয়েলে আমার নিকটে আসিও। সেই রাজকুমারেরা সত্তর জন, তাহারা আপনাদের প্রতিপালনকারী নগরবাসী বড় লোকদের সঙ্গে ছিল। আর পত্রখানি তাহাদের নিকটে উপস্থিত হইলে তাহারা সেই সত্তর জন রাজকুমারকে লইয়া বধ করিল, এবং কতকগুলি ডালাতে করিয়া তাহাদের মুণ্ড যিষ্রিয়েলে তাঁহার নিকটে পাঠাইয়া দিল। পরে এক জন দূত আসিয়া তাঁহাকে সংবাদ দিয়া কহিল, রাজকুমারদের মুণ্ড সকল আনা হইয়াছে। তিনি কহিলেন, দ্বারপ্রবেশের স্থানে দুই রাশি করিয়া সেগুলি প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত রাখ। পরে প্রাতঃকালে তিনি বাহিরে গিয়া দাঁড়াইলেন, ও সমস্ত লোককে কহিলেন, তোমরা ত ধার্ম্মিক; দেখ, আমি আপন প্রভুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়া তাহাকে মারিয়া ফেলিয়াছি; কিন্তু এই সকলকে কে বধ করিল? এখন তোমরা জানিও, সদাপ্রভু আহাব-কুলের বিপরীতে যাহা বলিয়াছেন, সদাপ্রভুর সেই বাক্যের মধ্যে কিছুই ভূমিতে পতিত হইবার নয়; কারণ সদাপ্রভু আপন দাস এলিয়ের দ্বারা যাহা বলিয়াছেন, তাহা করিলেন। পরে যিষ্রিয়েলে আহাব-কুলের যত লোক অবশিষ্ট ছিল, যেহূ তাহাদিগকে, তাঁহার সমস্ত মহৎ লোককে, তাঁহার বন্ধুবান্ধবদিগকে ও তাঁহার যাজকদিগকে বধ করিলেন, তাঁহার সম্বন্ধীয় কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিলেন না। পরে তিনি উঠিয়া প্রস্থান করিলেন, শমরিয়ায় গেলেন। পথিমধ্যে মেষ-পালকদের মেষ-লোমচ্ছেদন গৃহে উপস্থিত হইলে, যিহূদা-রাজ অহসিয়ের ভ্রাতাদের সহিত যেহূর সাক্ষাৎ হইল; তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কে? তাহারা কহিল, আমরা অহসিয়ের ভ্রাতা; রাজার ও মহিষীর সন্তানদিগকে মঙ্গলবাদ করিতে যাইতেছি। তিনি কহিলেন, উহাদিগকে জীবন্ত ধর। তাহাতে লোকেরা তাহাদিগকে জীবন্ত ধরিয়া মেষ-লোমচ্ছেদন-গৃহের কূপের নিকটে বধ করিল, বিয়াল্লিশ জনের মধ্যে এক জনকেও অবশিষ্ট রাখিল না। যেহূ তথা হইতে প্রস্থান করিলে রেখবের পুত্র যিহোনাদবের সহিত তাঁহার দেখা হইল; তিনি তাঁহারই কাছে আসিতেছিলেন। যেহূ তাঁহাকে মঙ্গলবাদ করিয়া কহিলেন, তোমার প্রতি আমার মন যেমন, তেমনি কি তোমার মন সরল? যিহোনাদব কহিলেন, সরল। যদি তাহা হয়, তবে আমাকে হস্ত দেও। পরে তিনি তাঁহাকে হস্ত দিলে যেহূ তাঁহাকে আপনার কাছে রথে চড়াইলেন। আর তিনি কহিলেন, আমার সঙ্গে চল, সদাপ্রভুর নিমিত্ত আমার যে উদ্যোগ, তাহা দেখ; এইরূপে তাঁহাকে তাঁহার রথে চড়াইয়া লওয়া হইল। পরে শমরিয়ায় উপস্থিত হইলে যেহূ শমরিয়ায় অবশিষ্ট আহাবের সমস্ত লোককে বধ করিলেন, যে পর্য্যন্ত না আহাব-কুলকে একেবারে বিনষ্ট করিলেন; সদাপ্রভু এলিয়কে যে কথা বলিয়াছিলেন, তদনুসারেই করিলেন। পরে যেহূ সমস্ত লোককে একত্র করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আহাব বালের অল্পই সেবা করিতেন, কিন্তু যেহূ তাঁহার অধিক সেবা করিবে। অতএব এখন তোমরা বালের সমস্ত ভাববাদীকে, তাঁহার সমস্ত পূজককে ও সমস্ত যাজককে আমার কাছে ডাকিয়া আন, কেহই অনুপস্থিত না হউক; কেননা, বালের উদ্দেশে আমাকে মহাযজ্ঞ করিতে হইবে; যে কেহ অনুপস্থিত হইবে, সে বাঁচিবে না। কিন্তু যেহূ বালের পূজকদিগকে বিনষ্ট করিবার আশয়ে এই ছল করিয়াছিলেন। পরে যেহূ বলিলেন, বালের উদ্দেশে পর্ব্বসভা নিরূপণ কর। তাহারা পর্ব্ব ঘোষণা করিয়া দিল। আর যেহূ ইস্রায়েলের সর্ব্বত্র লোক পাঠাইলে বালের যত পূজক ছিল, সকলে আসিল, কেহ অনুপস্থিত রহিল না। পরে তাহারা বালের গৃহে প্রবিষ্ট হইলে বালের গৃহ এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্ত পর্য্যন্ত পরিপূর্ণ হইল। তখন তিনি বস্ত্রাগারের অধ্যক্ষকে কহিলেন, বালের সমস্ত পূজকের জন্য বস্ত্র বাহির করিয়া আন। তাহাতে সে তাহাদের জন্য বস্ত্র বাহির করিয়া আনিল। পরে যেহূ ও রেখবের পুত্র যিহোনাদব বালের গৃহে গেলেন; তিনি বালের পূজকদিগকে কহিলেন, তদন্ত করিয়া দেখ, এখানে তোমাদের সঙ্গে বালের পূজক ব্যতিরেকে সদাপ্রভুর দাসদের মধ্যে কেহ যেন না থাকে। আর উহারা বলিদান ও হোম করিতে ভিতরে গেল। এ দিকে যেহূ আশী জনকে বাহিরে রাখিয়া বলিয়াছিলেন, ঐ যে লোকদিগকে আমি তোমাদের হস্তগত করিলাম, উহাদের এক জনও যদি পলাইয়া বাঁচে, তবে [যে তাহাকে ছাড়িয়া দিবে] উহার প্রাণের জন্য তাহার প্রাণ যাইবে। পরে হোম কার্য্য সাঙ্গ হইলে যেহূ ধাবক সেনাদিগকে ও সেনানীগণকে বলিলেন, ভিতরে যাও, উহাদিগকে বধ কর, এক জনকেও বাহিরে আসিতে দিও না। তখন তাহারা খড়্‌গধারে তাহাদিগকে আঘাত করিল; পরে ধাবক সেনারা ও সেনানীগণ তাহাদিগকে বাহিরে ফেলিয়া দিল; পরে তাহারা বাল-মন্দিরের পুরীতে গেল; আর বালের মন্দির হইতে স্তম্ভ সকল বাহির করিয়া পোড়াইয়া ফেলিল। তাহারা বালের স্তম্ভটী ভাঙ্গিয়া ফেলিল, এবং বালের গৃহ ভাঙ্গিয়া সেখানে এক পায়খানা প্রস্তুত করিল, তাহা অদ্যাপি আছে। এইরূপে যেহূ ইস্রায়েলের মধ্য হইতে বালকে উচ্ছিন্ন করিলেন। তথাপি নবাটের পুত্র যে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার পাপবস্তুর অর্থাৎ বৈথেলস্থ ও দানস্থ স্বর্ণময় দুই গোবৎসের অনুগমন হইতে যেহূ ফিরিলেন না। আর সদাপ্রভু যেহূকে কহিলেন, আমার দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহা করিয়া তুমি ভাল কাজ করিয়াছ, এবং আমার মনে যাহা যাহা ছিল, আহাবকুলের প্রতি সমস্তই করিয়াছ, এই নিমিত্ত চতুর্থ পুরুষ পর্য্যন্ত তোমার বংশ ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসিবে। তথাপি যেহূ সর্ব্বান্তঃকরণে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ব্যবস্থানুসারে চলিবার জন্য সতর্ক হইলেন না; যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার সেই সকল পাপ হইতে তিনি ফিরিলেন না। ঐ সময়ে সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে খর্ব্ব করিতে লাগিলেন; বাস্তবিক, হসায়েল ইস্রায়েলের এই সমস্ত অঞ্চলে তাহাদিগকে আঘাত করিলেন; —যর্দ্দনের পূর্ব্বদিকে সমস্ত গিলিয়দ দেশ, অর্ণোন উপত্যকার নিকটস্থ অরোয়ের অবধি গাদীয়, রূবেণীয় ও মনঃশীয়দের দেশ, অর্থাৎ গিলিয়দ ও বাশন। যেহূর অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, সমস্ত কার্য্যের বিবরণ ও তাঁহার সমস্ত বিক্রমের কথা কি ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে যেহূ আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, আর শমরিয়াতে তাঁহার কবর দেওয়া হইল; পরে তাঁহার পুত্র যিহোয়াহস তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যেহূ আটাশ বৎসর কাল শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিয়াছিলেন। ইতিমধ্যে অহসিয়ের মাতা অথলিয়া যখন দেখিল যে, তাহার পুত্র মরিয়াছে, তখন সে উঠিয়া সমস্ত রাজবংশ বিনষ্ট করিল। কিন্তু যোরাম রাজার কন্যা, অহসিয়ের ভগিনী যিহোশেবা, অহসিয়ের পুত্র যোয়াশকে লইয়া, নিহত রাজপুত্রদের মধ্য হইতে চুরি করিয়া, তাঁহার ধাত্রীর সহিত শয্যাগারে রাখিলেন; তাঁহারা অথলিয়া হইতে তাঁহাকে লুকাইলেন, এই জন্য তিনি হত হন নাই। আর তিনি তাঁহার সহিত সদাপ্রভুর গৃহে ছয় বৎসর যাবৎ লুক্কায়িত রহিলেন; তখন অথলিয়া দেশের উপরে রাজত্ব করিতেছিল। পরে সপ্তম বৎসরে যিহোয়াদা লোক প্রেরণ করিয়া রক্ষক ও ধাবক সৈন্যের শতপতিদিগকে ডাকাইয়া আপনার নিকটে সদাপ্রভুর গৃহে আনিলেন, এবং তাহাদের সহিত নিয়ম করিয়া সদাপ্রভুর গৃহে তাহাদিগকে শপথ করাইয়া রাজপুত্রকে দেখাইলেন। আর তিনি তাহাদিগকে আজ্ঞা দিয়া কহিলেন, তোমরা এই কার্য্য করিবে; তোমাদের মধ্যে যাহারা বিশ্রামদিনে প্রবেশ করিবে, তাহাদের তৃতীয়াংশ রাজবাটীর প্রহরীকার্য্য করিবে; তৃতীয়াংশ সূরদ্বারে থাকিবে; এবং তৃতীয়াংশ ধাবক সৈন্যের পশ্চাতে দ্বারে থাকিবে; এইরূপে তোমরা আক্রমণ নিবারণার্থে গৃহের প্রহরীকার্য্য করিবে। আর তোমাদের, অর্থাৎ যাহারা বিশ্রামবারে বাহিরে যায়, তাহাদের সকলের, দুই দল রাজার সমীপে সদাপ্রভুর গৃহের প্রহরীকার্য্য করিবে। তোমরা প্রত্যেক জন স্ব স্ব হস্তে অস্ত্র লইয়া রাজাকে বেষ্টন করিবে; আর যে কেহ শ্রেণীর ভিতরে আইসে, সে হত হইবে; এবং রাজা যখন বাহিরে যান, কিম্বা ভিতরে আইসেন, তখন তোমরা তাঁহার সঙ্গে থাকিবে। পরে যিহোয়াদা যাজক যাহা যাহা আজ্ঞা করিলেন, শতপতিরা তদনুসারে সকলই করিল; কারণ তাহারা প্রত্যেক জন আপন আপন লোকদিগকে, যাহারা বিশ্রামবারে ভিতরে যায়, বা বিশ্রামবারে বাহিরে আইসে, তাহাদিগকে লইয়া যিহোয়াদা যাজকের নিকটে আসিল। পরে দায়ূদ রাজার যে বড়শা ও ঢাল সদাপ্রভুর গৃহে ছিল, তাহা যাজক শতপতিদিগকে দিলেন। আর গৃহের দক্ষিণ পার্শ্ব অবধি গৃহের বাম পার্শ্ব পর্য্যন্ত যজ্ঞবেদির ও গৃহের নিকটে ধাবক সৈন্য প্রত্যেক জন স্ব স্ব হস্তে অস্ত্র লইয়া রাজার চারিদিকে দাঁড়াইল। পরে তিনি রাজপুত্রকে বাহিরে আনিয়া তাঁহার মস্তকে মুকুট দিলেন, ও তাঁহাকে সাক্ষ্যপুস্তক দিলেন, এবং তাঁহারা তাঁহাকে রাজা করিলেন, ও অভিষেক করিলেন; আর করতালি দিয়া কহিলেন, রাজা চিরজীবী হইন। তখন অথলিয়া ধাবক সৈন্যের ও লোকদের কোলাহল শুনিয়া সদাপ্রভুর গৃহে লোকদের নিকটে আসিল; আর দৃষ্টিপাত করিল, আর দেখ, রাজা যথারীতি মঞ্চের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন, এবং সেনাপতিগণ ও তূরীবাদকগণ রাজার নিকটে আছে, এবং দেশের সমস্ত লোক আনন্দ করিতেছে ও তূরী বাজাইতেছে। তখন অথলিয়া আপনার বস্ত্র ছিঁড়িয়া ‘রাজদ্রোহ, রাজদ্রোহ’ বলিয়া চেঁচাইয়া উঠিল। কিন্তু যিহোয়াদা যাজক সৈন্যদলের উপরে নিযুক্ত শতপতিদিগকে আজ্ঞা করিয়া কহিলেন, উহাকে বাহির করিয়া দুই শ্রেণীর মধ্য দিয়া লইয়া যাও; আর যে উহার পশ্চাতে যাইবে, তাহাকে খড়্‌গ দ্বারা বধ কর; কারণ যাজক বলিয়াছিলেন, সে যেন সদাপ্রভুর গৃহমধ্যে হত না হয়। পরে লোকেরা তাহার জন্য দুই পংক্তি হইয়া পথ ছাড়িলে সে অশ্বদ্বারের পথ দিয়া রাজবাটীতে প্রবেশ করিল; এবং সেই স্থানে হত হইল। আর যিহোয়াদা সদাপ্রভুর এবং রাজার ও লোকদের মধ্যে এক নিয়ম করিলেন, যেন তাহারা সদাপ্রভুর প্রজা হয়; রাজার ও লোকদের মধ্যেও নিয়ম করিলেন। পরে দেশের সমস্ত লোক বালের গৃহে গিয়া তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিল, এবং তাহার যজ্ঞবেদি ও প্রতিমা সকল একেবারে চূর্ণ করিয়া ফেলিল, ও বেদি সকলের সম্মুখে বালের যাজক মত্তনকে বধ করিল। পরে যাজক সদাপ্রভুর গৃহের উপরে কর্ম্মচারীদিগকে নিযুক্ত করিলেন। আর তিনি শতপতিদিগকে এবং রক্ষক ও ধাবক সেনাগণকে ও দেশের সমস্ত লোককে সঙ্গে লইলেন; তাহারা সদাপ্রভুর গৃহ হইতে রাজাকে লইয়া ধাবক সৈন্যের দ্বারের পথ দিয়া রাজবাটীতে আসিল; আর তিনি রাজ-সিংহাসনে বসিলেন। তখন দেশের সমস্ত লোক আনন্দ করিল, এবং নগর সুস্থির হইল; আর অথলিয়াকে তাহারা রাজবাটীতে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়াছিল। যিহোয়াশ সাত বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। যেহূর সপ্তম বৎসরে যিহোয়াশ রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে চল্লিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম সিবিয়া, তিনি বের-শেবানিবাসিনী। আর যতদিন যিহোয়াদা যাজক যিহোয়াশকে উপদেশ দিতেন, ততদিন তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য তাহাই করিতেন। তথাপি উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন হইল না, লোকেরা তখনও উচ্চস্থলীতে বলিদান করিত ও ধূপ জ্বালাইত। পরে যিহোয়াশ যাজকদিগকে কহিলেন, পবিত্র বস্তু সম্বন্ধীয় যে সকল রৌপ্য সদাপ্রভুর গৃহে আনীত হয়, প্রচলিত রৌপ্য, প্রত্যেক গণিত লোকের হিসাবে প্রাণীর মূল্যরূপে নিরূপিত রৌপ্য, ও মনুষ্যের মনের প্রবৃত্তি অনুসারে সদাপ্রভুর গৃহে আনীত রৌপ্য, এই সমস্ত রৌপ্য যাজকেরা আপন আপন পরিচিত লোকদের হস্ত হইতে গ্রহণ করুক, এবং গৃহের যে কোন স্থান ভগ্ন হইয়াছে, দেখা যাইবে, তাহারা সেই সকল স্থান সারুক। কিন্তু যিহোয়াশ রাজার তেইশ বৎসর পর্য্যন্ত যাজকেরা সেই গৃহের ভগ্ন স্থান সারেন নাই। তাহাতে যিহোয়াশ রাজা যিহোয়াদা যাজককে ও অন্য যাজকদিগকে ডাকাইয়া কহিলেন, তোমরা গৃহের ভগ্ন স্থানগুলি কেন সারিতেছ না? অতএব এখন তোমার পরিচিত লোকদের নিকট হইতে আর টাকা লইও না, কিন্তু তাহা গৃহের ভগ্ন স্থানের জন্য দিও। তখন যাজকেরা স্বীকার করিলেন যে, তাঁহারা লোকদের নিকট হইতে আর টাকা লইবেন না, এবং গৃহের ভগ্ন স্থান সারিবেন না। কিন্তু যিহোয়াদা যাজক একটী সিন্দুক লইলেন, ও তাহার ডালাতে এক ছিদ্র করিয়া যজ্ঞবেদির নিকটে সদাপ্রভুর গৃহের প্রবেশস্থানের দক্ষিণ পার্শ্বে রাখিলেন; আর দ্বার-রক্ষক যাজকেরা সদাপ্রভুর গৃহে আনীত সমস্ত টাকা তাহার মধ্যে রাখিত। পরে যখন তাহারা দেখিতে পাইল, সিন্দুকে অনেক টাকা জমিয়াছে, তখন রাজার লেখক ও মহাযাজক আসিয়া সদাপ্রভুর গৃহে প্রাপ্ত ঐ সকল টাকা থলীতে করিয়া গণনা করিতেন। পরে তাঁহারা সেই পরিমিত টাকা কর্ম্মকারীদের হস্তে, সদাপ্রভুর গৃহের অধ্যক্ষদের হস্তে দিতেন, আর ইহাঁরা সদাপ্রভুর গৃহের কর্ম্মকারী সূত্রধর ও গাঁথকদিগকে, এবং রাজ ও ভাস্করদিগকে তাহা দিতেন, এবং সদাপ্রভুর গৃহের ভগ্ন স্থান সারিবার জন্য কাষ্ঠ ও ক্ষোদিত প্রস্তর ক্রয় করিবার জন্য, ও গৃহ সারিবার নিমিত্তে যাহা যাহা লাগিত, সেই সকলের জন্য তাহা ব্যয় করিতেন। কিন্তু সদাপ্রভুর গৃহের জন্য রৌপ্যডাবর, কর্ত্তরী, বাটী, তূরী, কোন স্বর্ণময় পাত্র বা রৌপ্যময় পাত্র সদাপ্রভুর গৃহে আনীত সেই রৌপ্য দ্বারা নির্ম্মিত হইল না; কারণ তাঁহারা কর্ম্মকারীদিগকেই সেই টাকা দিতেন, এবং তাঁহারা তাহা লইয়া সদাপ্রভুর গৃহ সারিলেন। কিন্তু উহাঁরা কর্ম্মকারীদিগকে দিবার নিমিত্তে যাঁহাদের হস্তে টাকা দিতেন, তাঁহাদের সহিত হিসাব করিতেন না, কেননা তাঁহারা বিশ্বস্তরূপে কর্ম্ম করিতেন। দোষার্থক ও পাপার্থক বলি সম্বন্ধীয় যে টাকা, তাহা সদাপ্রভুর গৃহে আনীত হইত না; তাহা যাজকদেরই হইত। ঐ সময়ে অরাম-রাজ হসায়েল যাত্রা করিয়া গাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিলেন ও তাহা হস্তগত করিলেন; পরে হসায়েল যিরূশালেমের বিরুদ্ধেও যাত্রা করিতে উন্মুখ হইলেন। তাহাতে যিহূদা-রাজ যিহোয়াশ আপন পিতৃপুরুষদের অর্থাৎ যিহূদার যিহোশাফট, যিহোরাম ও অহসিয় রাজার পবিত্রীকৃত বস্তু সকল, ও আপনার পবিত্রীকৃত বস্তু সকল, এবং সদাপ্রভুর গৃহের ভাণ্ডারে ও রাজবাটীর ভাণ্ডারে যত স্বর্ণ পাওয়া গেল, সে সমস্ত লইয়া অরাম-রাজ হসায়েলের নিকটে পাঠাইয়া দিলেন, তাহাতে তিনি যিরূশালেমের সম্মুখ হইতে ফিরিয়া গেলেন। যোয়াশের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ কি যিহূদা রাজগণের ইতিহাস পুস্তকে লিখিত নাই? পরে যোয়াশের দাসেরা উঠিয়া চক্রান্ত করিল, এবং সিল্লাগামী পথস্থিত মিল্লো নামক বাটীতে তাঁহাকে আঘাত করিল। ফলে শিমিয়তের পুত্র যোষাখর ও শোমরের পুত্র যিহোষাবদ, তাঁহার দুই জন দাস, তাঁহাকে আঘাত করিলে তিনি মরিলেন; পরে লোকেরা দায়ূদ-নগরে তাঁহার পিতৃলোকদের সহিত তাঁহাকে কবর দিল, এবং তাঁহার পুত্র অমৎসিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। অহসিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যোয়াশের তেইশ বৎসরে যেহূর পুত্র যিহোয়াহস শমরিয়ায় ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং সতের বৎসর কার রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন, এবং নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার সেই সকল পাপের অনুগামী হইলে; তাহা হইতে ফিরিলেন না। তখন ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, আর তিনি অরাম-রাজ হসায়েলের হস্তে ও হসায়েলের পুত্র বিন্‌হদদের হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিলেন, তাহারা [যিহোয়াহসের] সমস্ত [রাজত্ব] কাল তাঁহাদের অধীন রহিল। পরে যিহোয়াহস সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার প্রার্থনায় কর্ণপাত করিলেন, কেননা অরামের রাজা ইস্রায়েলের উপরে যে উপদ্রব করিতেন, সেই উপদ্রব তিনি দেখিলেন। (আর সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে এক জন উদ্ধারকর্ত্তা দিলেন, তাহাতে তাহারা অরামের হস্ত হইতে উদ্ধার পাইল, এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণ পূর্ব্বের ন্যায় আপন আপন তাম্বুতে বাস করিল। তথাপি যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার কুলের সেই সকল পাপ হইতে তাহারা ফিরিল না, সেই পথে চলিত, আর শমরিয়াতে আশেরা-মূর্ত্তিও রহিল।) বাস্তবিক, অরাম-রাজ কেবল পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী, দশখানি রথ ও দশ সহস্র পদাতিক ছাড়া যিহোয়াহসের নিমিত্ত অন্য কোন সৈন্য অবশিষ্ট রাখেন নাই; তিনি তাহাদিগকে বিনষ্ট করিয়াছিলেন, দলনীয় ধূলির সমান করিয়াছিলেন। যিহোয়াহসের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, সমস্ত কার্য্যের বিবরণ ও তাঁহার বিক্রমের কথা কি ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে যিহোয়াহস আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, আর শমরিয়াতে তাঁহার কবর দেওয়া হইল, এবং তাঁহার পুত্র যোয়াশ তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহূদা-রাজ যোয়াশের সাঁইত্রিশ বৎসরে যিহোয়াহসের পুত্র যিহোয়াশ শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং ষোল বৎসর কাল রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তিনি তাহাই করিতেন; নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার সেই সমস্ত পাপ হইতে ফিরিলেন না, সেই পথে চলিতেন। যোয়াশের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের, এবং যে বিক্রমের দ্বারা তিনি যিহূদা-রাজ অমৎসিয়ের সহিত যুদ্ধ করিলেন, সেই সমস্ত কথা কি ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে যোয়াশ আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; আর যারবিয়াম তাঁহার সিংহাসনে উপবিষ্ট হইলেন; এবং যোয়াশ ইস্রায়েলের রাজাদের সহিত শমরিয়ায় কবরপ্রাপ্ত হইলেন। ইলীশায় পীড়িত হইলেন, সেই পীড়াতেই তাঁহার মৃত্যু হয়; আর ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশ তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহার মুখের উপরে [হেঁট হইয়া] রোদন করিয়া কহিলেন, হে আমার পিতা, হে আমার পিতা, ইস্রায়েলের রথসমূহ ও অশ্বারোহিগণ। তখন ইলীশায় তাঁহাকে কহিলেন, আপনি ধনুর্ব্বাণ লউন। তিনি ধনুর্ব্বাণ লইলেন। পরে তিনি ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, ধনুকের উপরে হস্ত রাখুন। তিনি হস্ত রাখিলেন। পরে ইলীশায় রাজার হস্তের উপরে আপন হস্ত রাখিলেন, আর কহিলেন, পূর্ব্বদিকের বাতায়ন খুলুন। তিনি খুলিলেন। পরে ইলীশায় কহিলেন, বাণ নিক্ষেপ করুন। তিনি নিক্ষেপ করিলেন। তখন ইলীশায় কহিলেন, এ সদাপ্রভুর বিজয়-বাণ, অরামের বিপক্ষে বিজয়-বাণ, কেননা আপনি অফেকে অরামীয়দিগকে আঘাত করিবেন, করিতে করিতে তাহাদিগকে নিঃশেষ করিবেন। পরে তিনি কহিলেন, ঐ সকল বাণ লউন। রাজা সেগুলি লইলেন। তখন তিনি ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, ভূমিতে আঘাত করুন; রাজা তিন বার আঘাত করিয়া ক্ষান্ত হইলেন। তখন ঈশ্বরের লোক তাঁহার প্রতি ক্রুদ্ধ হইলেন; কহিলেন, পাঁচ ছয় বার আঘাত করিতে হইত, করিলে অরামকে নিঃশেষ করণ পর্য্যন্ত আঘাত করিতেন, কিন্তু এখন অরামকে তিন বার মাত্র আঘাত করিবেন। পরে ইলীশায়ের মৃত্যু হইল, ও লোকেরা তাঁহার কবর দিল। তখন মোয়াবীয় লুটকারী সৈন্যদল, বৎসর ফিরিয়া আসিলে, দেশে আসিয়া প্রবেশ করিল। আর লোকেরা একটা লোককে কবর দিতেছিল, আর দেখ, তাহারা এক লুটকারী সৈন্যদল দেখিয়া সেই শব ইলীশায়ের কবরে ফেলিয়া দিল; তখন সেই ব্যক্তি প্রবিষ্ট হইয়া ইলীশায়ের অস্থি স্পর্শ করিবামাত্র জীবিত হইয়া পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইল। যিহোয়াহসের সময়ে অরাম-রাজ হসায়েল ইস্রায়েলের উপরে সর্ব্বদাই উপদ্রব করিতেন। কিন্তু সদাপ্রভু অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের সহিত যে নিয়ম করিয়াছিলেন, তৎপ্রযুক্ত তাহাদের প্রতি অনুগ্রহ ও করুণা করিলেন, তাহাদের সপক্ষ রহিলেন, তাহাদিগকে বিনষ্ট করিতে চাহিলেন না, তখনও আপনার সম্মুখ হইতে নিক্ষেপ করিলেন না। পরে অরাম রাজ হসায়েল মরিলেন, এবং তাঁহার পুত্র বিন্‌হদদ তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহোয়াশের পিতা যিহোয়াহসের হস্ত হইতে হসায়েল যে সকল নগর যুদ্ধে লইয়াছিলেন, সেই সকল নগর যিহোয়াহসের পুত্র যিহোয়াশ হসায়েলের পুত্র বিন্‌হদদের হস্ত হইতে পুনর্ব্বার লইলেন। যোয়াশ তাঁহাকে তিন বার আঘাত করিয়া ইস্রায়েলের ঐ সকল নগর পুনর্ব্বার লইলেন। ইস্রায়েল-রাজ যোয়াহসের পুত্র যোয়াশের দ্বিতীয় বৎসরে যিহূদা-রাজ যোয়াশের পুত্র অমৎসিয় রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। তিনি পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে ঊনত্রিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম যিহোয়দ্দিন, তিনি যিরূশালেম-নিবাসিনী। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, অমৎসিয় তাহা করিতেন, তথাপি আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের ন্যায় করিতেন না; তিনি আপন পিতা যোয়াশের সমস্ত কার্য্যানুসারে কার্য্য করিতেন। তথাপি উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন হইল না; লোকেরা তখনও উচ্চস্থলীতে বলিদান করিত ও ধূপ জ্বালাইত। রাজ্য তাঁহার হস্তে স্থির হইলেই তাঁহার যে দাসেরা তাঁহার পিতা রাজাকে বধ করিয়াছিল, তাহাদিগকে তিনি বধ করিলেন। কিন্তু তিনি মোশির ব্যবস্থাগ্রন্থে লিখিত কথানুসারে সেই হত্যাকারীদের সন্তানদিগকে বধ করিলেন না, যেমন সদাপ্রভু আজ্ঞা দিয়াছিলেন, “সন্তানের জন্য পিতার, কিম্বা পিতার জন্য সন্তানের প্রাণদণ্ড করা যাইবে না; প্রতিজন আপন আপন পাপ প্রযুক্তই মরিবে।” তিনি লবণোপত্যকায় ইদোমের দশ সহস্র লোককে বধ করিলেন, ও যুদ্ধ দ্বারা সেলা হস্তগত করিয়া তাহার নাম যক্তেল রাখিলেন; অদ্যাপি তাহা রহিয়াছে। তৎকালে অমৎসিয় দূত পাঠাইয়া যেহূর পৌত্র যিহোয়াহসের পুত্র ইস্রায়েল-রাজ যিহোয়াশকে কহিলেন, আইস, আমরা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করি। ইস্রায়েল-রাজ যিহোয়াশ যিহূদা-রাজ অমৎসিয়ের নিকটে লোক পাঠাইয়া কহিলেন, লিবানোনস্থ শিয়ালকাঁটা লিবানোনস্থ এরস বৃক্ষের নিকটে বলিয়া পাঠাইল, আমার পুত্রের সহিত তোমার কন্যার বিবাহ দেও; ইতিমধ্যে লিবানোনস্থ এক বন্য পশু চলিতে চলিতে সেই শিয়ালকাঁটা দলাইয়া ফেলিল। তুমি ইদোমকে আঘাত করিয়াছ বলিয়া তোমার চিত্ত গর্ব্বিত হইয়াছে; আপনার বড়াই কর, ও ঘরে বসিয়া থাক; অমঙ্গলের সহিত বিরোধ করিতে কেন প্রবৃত্ত হইবে? এবং তুমি ও যিহূদা উভয়ে কেন পতিত হইবে? কিন্তু অমৎসিয় কথা শুনিলেন না। অতএব ইস্রায়েল-রাজ যিহোয়াশ যুদ্ধযাত্রা করিলেন, এবং যিহূদার অধিকারস্থ বৈৎশেমশে তিনি ও যিহূদার অমৎসিয় রাজা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করিলেন। তখন ইস্রায়েলের সম্মুখে যিহূদা পরাজিত হইল, আর প্রত্যেক জন আপন আপন তাম্বুতে পলায়ন করিল। আর ইস্রায়েল-রাজ যিহোয়াশ বৈৎ-শেমশে অহসিয়ের পৌত্র যিহোয়াশের পুত্র যিহূদা-রাজ অমৎসিয়কে ধরিয়া লইয়া যিরূশালেমে আসিলেন, এবং ইফ্রয়িমের দ্বার হইতে কোণের দ্বার পর্য্যন্ত যিরূশালেমের চারি শত হস্ত প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। আর তিনি সদাপ্রভুর গৃহে ও রাজবাটীর ভাণ্ডারে প্রাপ্ত সমস্ত স্বর্ণ ও রৌপ্য, ও সমস্ত পাত্র এবং বন্ধকরূপে কতকগুলি মনুষ্যকে লইয়া শমরিয়াতে ফিরিয়া গেলেন। যিহোয়াশের কৃত অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, ও তাঁহার বিক্রম এবং যিহূদা-রাজ অমৎসিয়ের সহিত তিনি কিরূপ যুদ্ধ করিলেন, এই সকল কি ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে যিহোয়াশ আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজাদের সহিত কবরপ্রাপ্ত হইলেন, আর তাঁহার পুত্র যারবিয়াম তাঁহার পদে রাজা হইলেন। ইস্রায়েল-রাজ যিহোয়াহসের পুত্র যিহোয়াশের মৃত্যুর পর যিহূদা-রাজ যোয়াশের পুত্র অমৎসিয় আর পনের বৎসর জীবিত ছিলেন। অমৎসিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে লোকেরা যিরূশালেমে তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিল, তাহাতে তিনি লাখীশে পলায়ন করিলেন; কিন্তু তাহারা তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে লাখীশে লোক পাঠাইয়া সেখানে তাঁহাকে বধ করাইল। আর অশ্ব-পৃষ্ঠে করিয়া তাঁহাকে আনিয়া, দায়ূদ-নগরে তাঁহার পিতৃলোকদের সহিত যিরূশালেমে তাঁহার কবর দিল। আর যিহূদার সমস্ত লোক ষোল বৎসর বয়স্ক অসরিয়কে লইয়া তাঁহার পিতা অমৎসিয়ের পদে রাজা করিল। রাজা [অমৎসিয়] পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলে পর তিনি এলৎ নগর গাঁথিলেন, এবং তাহা পুনর্ব্বার যিহূদার অধীন করিলেন। যিহূদা-রাজ যোয়াশের পুত্র অমৎসিয়ের পনের বৎসরে ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশের পুত্র যারবিয়াম শমরিয়ায় রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং একচল্লিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তিনি তাহাই করিতেন; নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তিনি তাঁহার সেই সমস্ত পাপ ত্যাগ করিলেন না। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন দাস গাৎ-হেফরীয় অমিত্তয়ের পুত্র যোনা ভাববাদীর দ্বারা যে কথা বলিয়াছিলেন, তদনুসারে তিনি হমাতের প্রবেশস্থান অবধি অরাবার সমুদ্র পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের সীমা পুনর্ব্বার হস্তগত করিলেন। কারণ সদাপ্রভু দেখিয়াছিলেন যে, ইস্রায়েলের দুঃখ অতিশয় তীব্র; ফলে, বদ্ধ কি মুক্ত কেহ ছিল না, ইস্রায়েলের সাহায্যকারীও কেহ ছিল না। আর সদাপ্রভু এমন কথা বলেন নাই যে, তিনি ইস্রায়েলের নাম আকাশের নীচে হইতে লোপ করিবেন; কিন্তু তিনি যোয়াশের পুত্র যারবিয়ামের হস্ত দ্বারা তাহাদিগকে নিস্তার করিলেন। যারবিয়ামের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত এবং সমস্ত কার্য্য, তিনি সবিক্রমে কিরূপে যুদ্ধ করিলেন, এবং যিহূদার [পুরাতন অধিকার] দম্মেশক ও হমাৎ পুনর্ব্বার কিরূপে ইস্রায়েলের হস্তগত করিলেন, এই সকল কি ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে যারবিয়াম আপন পিতৃলোকদের, ইস্রায়েলের রাজাদের, সহিত নিদ্রাগত হইলেন; এবং তাঁহার পুত্র সখরিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। ইস্রায়েল-রাজ যারবিয়ামের সাতাশ বৎসরে যিহূদা-রাজ অমৎসিয়ের পুত্র অসরিয় রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। তিনি ষোল বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে বাহান্ন বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম যিথলিয়া, তিনি যিরূশালেম-নিবাসিনী। অসরিয় আপন পিতা অমৎসিয়ের সমস্ত কার্য্যানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন। তথাপি উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন হইল না, তখনও লোকেরা উচ্চস্থলীতে বলিদান করিত ও ধূপ জ্বালাইত। পরে সদাপ্রভু রাজাকে আঘাত করিলেন, তাহাতে তিনি মরণ দিন পর্য্যন্ত কুষ্ঠরোগী হইয়া রহিলেন, ও স্বতন্ত্র গৃহে বাস করিলেন; আর রাজার পুত্র যোথম বাটীর কর্ত্তা হইয়া দেশের লোকদের শাসন করিতে লাগিলেন। অসরিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে অসরিয় আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, আর দায়ূদ-নগরে তাঁহার পিতৃলোকদের সহিত তাঁহার কবর দেওয়া হইল, এবং তাঁহার পুত্র যোথম তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহূদা-রাজ অসরিয়ের আটত্রিশ বৎসরে যারবিয়ামের পুত্র সখরিয় ছয় মাস কাল শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিলেন। তাঁহার পিতৃপুরুষেরা যেমন করিতেন, তেমনি তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতেন; নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তিনি তাঁহার সেই সকল পাপ ত্যাগ করিলেন না। পরে যাবেশের পুত্র শল্লুম তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিলেন, ও লোকদের সম্মুখে তাঁহাকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন, এবং তাঁহার পদে রাজা হইলেন। সখরিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, দেখ, ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। সদাপ্রভু যেহূকে এই কথা বলিয়াছিলেন, চতুর্থ পুরুষ পর্য্যন্ত তোমার বংশ ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসিবে; তাহা সফল হইল। যিহূদা-রাজ উষিয়ের ঊনচল্লিশ বৎসরে যাবেশের পুত্র শল্লুম রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং এক মাস কাল শমরিয়াতে রাজত্ব করেন। পরে গাদির পুত্র মনহেম তির্সা হইতে উঠিয়া গেলেন, শমরিয়াতে উপস্থিত হইলেন, আর যাবেশের পুত্র শল্লুমকে শমরিয়াতে আঘাত করিয়া বধ করিলেন, এবং তাঁহার পদে রাজা হইলেন। শল্লুমের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও তাঁহার কৃত চক্রান্ত, দেখ, ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। পরে মনহেম তির্সা হইতে গিয়া তিপ্‌সহ ও তাহার মধ্যস্থিত সকলকে ও তাহার অঞ্চল সকলে আঘাত করিলেন; লোকেরা তাঁহার জন্য দ্বার খুলিয়া দেয় নাই, তাই তিনি আঘাত করিলেন ও তথাকার গর্ভবতী স্ত্রীলোক সকলের উদর বিদীর্ণ করিলেন। যিহূদা-রাজ অসরিয়ের ঊনচল্লিশ বৎসরে গাদির পুত্র মনহেম ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং দশ বৎসর কাল শমরিয়াতে রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন; নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তাঁহার সেই সকল পাপ হইতে তিনি যাবজ্জীবন ফিরিলেন না। অশূর-রাজ পূল দেশের বিরুদ্ধে আসিলেন; তাহাতে পূলের সাহায্যে রাজ্য যেন আপনার হস্তে স্থির থাকে, এই জন্য মনহেম তাঁহাকে এক সহস্র তালন্ত রৌপ্য দিলেন। আর অশূর-রাজকে দিবার জন্য মনহেম ইস্রায়েল হইতে, সমস্ত ধনশালী ব্যক্তির নিকট হইতে, ঐ রৌপ্য আদায় করিলেন, প্রত্যেকের নিকট হইতে পঞ্চাশ পঞ্চাশ শেকল রৌপ্য লইলেন। তখন অশূর-রাজ ফিরিয়া গেলেন, দেশে রহিলেন না। মনহেমের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ কি ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে মনহেম আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র পকহিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহূদা-রাজ অসরিয়ের পঞ্চাশ বৎসরে মনহেমের পুত্র পকহিয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং দুই বৎসর কাল রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন, নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তিনি তাঁহার সেই সকল পাপ হইতে ফিরিলেন না। পরে রমলিয়ের পুত্র পেকহ নামক তাঁহার সেনানী তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিলেন, এবং শমরিয়ায় রাজবাটীর দুর্গে তাঁহাকে, অর্গোবকে ও অরিয়িকে আঘাত করিলেন, আর গিলিয়দীয়দের পঞ্চাশ জন লোক তাঁহার সঙ্গে ছিল; তিনি তাঁহাকে বধ করিয়া তাঁহার পদে রাজা হইলেন। পকহিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ, দেখ, ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। যিহূদা-রাজ অসরিয়ের বাহান্ন বৎসরে রমলিয়ের পুত্র পেকহ শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং কুড়ি বৎসর রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন, নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সকল পাপ দ্বারা ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তিনি তাঁহার সেই সকল পাপ হইতে ফিরিলেন না। ইস্রায়েল-রাজ পেকহের সময়ে অশূর-রাজ তিগ্লৎপিলেষর আসিয়া ইয়োন, আবেল-বৈৎ-মাখা, যানোহ, কেদশ, হাৎসোর, গিলিয়দ ও গালীল, নপ্তালির সমস্ত দেশ হস্তগত করিলেন, আর লোকদিগকে অশূরে বন্দি করিয়া লইয়া গেলেন। পরে উষিয়ের পুত্র যোথমের বিংশতি বৎসরে এলার পুত্র হোশেয় রমলিয়ের পুত্র পেকহের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিলেন, এবং তাঁহাকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন, ও তাঁহার পদে রাজা হইলেন। পেকহের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ, দেখ, ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। রমলিয়ের পুত্র ইস্রায়েল-রাজ পেকহের দ্বিতীয় বৎসরে উষিয়ের পুত্র যোথম রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। তিনি পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে ষোল বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম যিরূশা, তিনি সাদোকের কন্যা। যোথম সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন; আপন পিতা উষিয়ের সমস্ত কার্য্যানুসারে কার্য্য করিতেন। তথাপি উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন হয় নাই; লোকেরা তখনও উচ্চস্থলীতে বলিদান করিত ও ধূপ জ্বালাইত। তিনি সদাপ্রভুর গৃহের উচ্চতর দ্বার নির্ম্মাণ করিলেন। যোথমের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? ঐ সময়ে সদাপ্রভু অরাম-রাজ রৎসীনকে ও রমলিয়ের পুত্র পেকহকে যিহূদার বিরুদ্ধে পাঠাইতে আরম্ভ করিলেন। পরে যোথম আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, আর আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের নগরে আপন পিতৃলোকদের সহিত কবরপ্রাপ্ত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র আহস তাঁহার পদে রাজা হইলেন। রমলিয়ের পুত্র পেকহের সপ্তদশ বৎসরে যিহূদা-রাজ যোথমের পুত্র আহস রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। আহস বিংশতি বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে ষোল বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তিনি আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের ন্যায় আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহা করিতেন না। কিন্তু ইস্রায়েলের রাজাদের পথে চলিতেন, এমন কি, সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখ হইতে যে জাতিগণকে অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন, তাহাদের ঘৃণিত ক্রিয়ানুসারে আপন পুত্রকেও অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাইলেন। আর তিনি নানা উচ্চস্থলীতে, নানা পাহাড়ের উপরে ও প্রত্যেক হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে বলিদান করিতেন ও ধূপ জ্বালাইতেন। তৎকালে অরাম-রাজ রৎসীন এবং রমলিয়ের পুত্র ইস্রায়েল-রাজ পেকহ যুদ্ধার্থে যিরূশালেমে যাত্রা করিয়া আহসকে অবরোধ করিলেন, কিন্তু তাঁহাকে যুদ্ধে জয় করিতে পারিলেন না। সেই সময়ে অরাম-রাজ রৎসীন এলৎ নগর পুনর্ব্বার অরামের বশীভূত করিয়া যিহূদীদিগকে এলৎ হইতে দূর করিয়া দিলেন; আর অরামীয়েরা এলতে আসিয়া সেখানে বাস করিতে লাগিল, অদ্যাপি করিতেছে। তখন আহস অশূর-রাজ তিগ্লৎ-পিলেষরের নিকটে দূত পাঠাইয়া এই কথা বলিলেন, আমি আপনার দাস ও আপনার পুত্র, আপনি আসিয়া অরামের রাজার হস্ত হইতে ও ইস্রায়েলের রাজার হস্ত হইতে আমাকে নিস্তার করুন, তাহারা আমার বিরুদ্ধে উঠিয়াছে। আর আহস সদাপ্রভুর গৃহে ও রাজবাটীর ভাণ্ডারে প্রাপ্ত সমস্ত রৌপ্য ও স্বর্ণ লইয়া অশূর-রাজের নিকটে উপঢৌকন পাঠাইলেন। আর অশূর-রাজ তাঁহার কথায় কর্ণপাত করিলেন; অশূর-রাজ দম্মেশকের বিরুদ্ধে গিয়া তাহা হস্তগত করিলেন, তথাকার লোকদিগকে বন্দি করিয়া কীরে লইয়া গেলেন, এবং রৎসীনকে বধ করিলেন। পরে আহস রাজা অশূর-রাজ তিগ্লৎ-পিলেষরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে দম্মেশকে গেলেন; এবং দম্মেশকস্থ যজ্ঞবেদি দেখিয়া আহস রাজা সেই বেদির আকৃতি ও তাহাতে যে যে শিল্পকর্ম্ম ছিল, তাহার আদর্শ লিখিয়া ঊরিয় যাজকের নিকটে পাঠাইলেন। তাহাতে ঊরিয় যাজক এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন; আহস রাজা দম্মেশক হইতে যাহা যাহা পাঠাইয়াছিলেন, ঊরিয় যাজক দম্মেশক হইতে আহস রাজার আগমনের পূর্ব্বেই তদনুসারে সকলই করিলেন। পরে রাজা দম্মেশক হইতে আসিলেন ও রাজা সেই বেদি দেখিলেন; আর রাজা সেই বেদির নিকটে গিয়া তাহার উপরে বলিদান করিতে লাগিলেন। তিনি সেই বেদির উপরে আপন হোমবলি ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্য দগ্ধ করিলেন, আর পানীয় নৈবেদ্য ঢালিলেন, এবং আপন মঙ্গলার্থক বলি সকলের রক্ত প্রক্ষেপ করিলেন। আর সদাপ্রভুর সম্মুখস্থ যে পিত্তলময় যজ্ঞবেদি, তাহা গৃহের সম্মুখ হইতে অর্থাৎ আপন বেদির ও সদাপ্রভুর গৃহের মধ্যস্থান হইতে সরাইয়া আপন বেদির উত্তরদিকে স্থাপন করিলেন। পরে আহস রাজা ঊরিয় যাজককে এই আজ্ঞা দিলেন, বড় বেদির উপরে প্রাতঃকালীন হোমবলি ও সন্ধ্যাকালীন ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, এবং রাজার হোমবলি ও তাঁহার ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, এবং দেশের সমস্ত লোকের হোমবলি এবং তাহাদের ভক্ষ্য ও পানীয় নৈবেদ্য দগ্ধ করিও, আর তাহার উপরে হোমবলির সকল রক্ত ও অন্য বলির সকল রক্ত প্রক্ষেপ করিও; কিন্তু পিত্তলময় বেদি অন্বেষণার্থে আমার জন্য থাকিবে। ঊরিয় যাজক আহস রাজার আজ্ঞানুসারে সমস্ত কার্য্য করিলেন। পরে আহস রাজা পীঠ সকলের পাটা কাটিয়া তাহার উপর হইতে প্রক্ষালনপাত্র স্থানান্তর করিলেন, আর সমুদ্রপাত্রের নীচে যে পিত্তলময় বলদগুলি ছিল, তাহার উপর হইতে সেই পাত্র নামাইয়া শিলাস্তরণের উপরে বসাইলেন। আর তাহারা বিশ্রামদিনের জন্য গৃহের মধ্যে যে চন্দ্রাতপ এবং রাজার প্রবেশার্থে যে বহির্দ্বার করিয়াছিল, তাহা তিনি অশূর-রাজের ভয়ে সদাপ্রভুর গৃহের অন্য স্থানে রাখিলেন। আহসের কৃত অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? পরে আহস আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, আর আপন পিতৃলোকদের সহিত দায়ূদ-নগরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন; এবং তাঁহার পুত্র হিষ্কিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহূদা-রাজ আহসের দ্বাদশ বৎসরে এলার পুত্র হোশেয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং নয় বৎসর কাল রাজত্ব করেন। তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহা করিতেন বটে, কিন্তু তাঁহার পূর্ব্বে ইস্রায়েলের যে রাজগণ ছিলেন, তাঁহাদের ন্যায় নয়। তাঁহার বিরুদ্ধে অশূর-রাজ শল্‌মনেষর যুদ্ধযাত্রা করিলেন; তাহাতে হোশেয় তাঁহার দাস হইলেন ও তাঁহাকে উপঢৌকন দিতে লাগিলেন। পরে অশূর-রাজ হোশেয়ের চক্রান্ত জানিতে পারিলেন, কেননা তিনি মিসরের সো রাজার নিকটে দূতগণকে প্রেরণ করিয়াছিলেন, এবং বৎসর বৎসর যেমন করিতেন, অশূর-রাজের কাছে তদ্রূপ উপঢৌকন আর পাঠাইলেন না; এই জন্য অশূর-রাজ তাহাকে রুদ্ধ করিলেন, কারাগারে বদ্ধ করিলেন। পরে অশূর-রাজ সমস্ত দেশ আক্রমণ করিলেন, ও শমরিয়াতে গিয়া তিন বৎসর পর্য্যন্ত তাহা অবরোধ করিয়া রহিলেন। হোশেয়ের নবম বৎসরে অশূর-রাজ শমরিয়া হস্তগত করিয়া ইস্রায়েলকে অশূরে লইয়া গেলেন, এবং হলহে ও হাবোরে গোষণের নদীতীরে ও মাদীয়দের নানা নগরে বসাইয়া দিলেন। ইহার কারণ এই; ইস্রায়েল-সন্তানগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে, মিসরের ফরৌণ রাজার হস্তের অধীনতা হইতে, বাহির করিয়া আনিয়াছিলেন, তাঁহার বিরুদ্ধে তাহারা পাপ করিয়াছিল ও অন্য দেবগণকে ভয় করিত; আর সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানদের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন, তাহারা তাহাদেরই বিধি এবং ইস্রায়েলের রাজগণের আদিষ্ট বিধি অনুসারে চলিত। ইস্রায়েল সন্তানগণ গোপনে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে অন্যায় কার্য্য করিত; তাহারা প্রহরীদের উচ্চ গৃহ অবধি প্রাচীরবেষ্টিত নগর পর্য্যন্ত আপনাদের সকল নগরে আপনাদের জন্য উচ্চস্থলী প্রস্তুত করিয়াছিল। আর তাহারা প্রত্যেক উচ্চ পাহাড়ের উপরে ও প্রত্যেক হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে স্তম্ভ ও আশেরা-মূর্ত্তি স্থাপন করিয়াছিল। আর সদাপ্রভু তাহাদের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে নির্ব্বাসিত করিয়াছিলেন, তাহারা তাহাদের ন্যায় তথাকার সকল উচ্চস্থলীতে ধূপ জ্বালাইত, এবং দুষ্ক্রিয়া করিয়া সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিত। আর তাহারা পুত্তলিকাদের সেবা করিত, যাহার বিষয়ে সদাপ্রভু বলিয়াছিলেন, তোমরা এমন কর্ম্ম করিবে না। তথাপি সদাপ্রভু সমস্ত ভাববাদীর ও দর্শকের দ্বারা ইস্রায়েলের ও যিহূদার কাছে সাক্ষ্য দিতেন, বলিতেন, তোমরা আপনাদের কুপথ হইতে ফির, এবং আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে সমস্ত ব্যবস্থা দিয়াছি, ও আমার দাস ভাববাদিগণের হস্ত দ্বারা তোমাদের নিকটে যাহা পাঠাইয়াছি, তদনুসারে আমার আজ্ঞা ও বিধি সকল পালন কর। কিন্তু তাহারা কথা শুনিল না, তাহাদের যে পিতৃপুরুষেরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিত না, তাহাদের গ্রীবার ন্যায় আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিত। আর তাঁহার বিধি সকল ও তাহাদের পিতৃপুরুষদের সহিত কৃত তাঁহার নিয়ম, ও তাহাদের কাছে প্রদত্ত তাঁহার সাক্ষ্য সকল অগ্রাহ্য করিয়াছিল; আর অসার বস্তুর অনুগামী হইয়া আপনারাও অসার হইয়াছিল; এবং সদাপ্রভু যাহাদের মত কর্ম্ম করিতে নিষেধ করিয়াছিলেন, সেই চতুর্দ্দিক্‌স্থ জাতিগণের অনুগামী হইয়াছিল। তাহারা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞা ত্যাগ করিয়া আপনাদের জন্য ছাঁচে ঢালা প্রতিমা, দুই গোবৎস, নির্ম্মাণ করিয়াছিল, আশেরা-মূর্ত্তিও নির্ম্মাণ করিয়াছিল, এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীর কাছে প্রণিপাত ও বালদেবের সেবা করিত। আর তাহারা আপন আপন পুত্রকন্যাদিগকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাইত, এবং মন্ত্র ও মায়াক্রিয়ার ব্যবহার করিত, আর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিবার জন্য আপনাদিগকে বিক্রয় করিয়াছিল, এইরূপে তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিল। এই জন্য সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপরে অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাদিগকে আপনার দৃষ্টিগোচর হইতে দূর করিলেন; কেবল যিহূদা বংশ ব্যতীত আর কেহ অবশিষ্ট থাকিল না। আর যিহূদাও আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞা পালন না করিয়া ইস্রায়েলের আদিষ্ট বিধি অনুসারে চলিতে লাগিল। তাই সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সমস্ত বংশকে অগ্রাহ্য করিয়া দুঃখ দিলেন, এবং তাহাদিগকে লুটকারীদের হস্তে সমর্পণ করিলেন, শেষে একেবারে আপনার দৃষ্টিগোচর হইতে দূরে ফেলিয়া দিলেন। কেননা তিনি দায়ূদের কুল হইতে ইস্রায়েলকে ছিঁড়িয়া লইলে পর তাহারা নবাটের পুত্র যারবিয়ামকে রাজা করিয়াছিল; আর যারবিয়াম সদাপ্রভুর অনুগমন হইতে ইস্রায়েলকে পরাঙ্মুখ করিয়া তাহাদিগকে মহাপাপ করাইয়াছিলেন। যারবিয়াম যে সকল পাপ করিয়াছিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাঁহার সেই সমস্ত পাপপথে চলিত, সে সকল হইতে ফিরিল না। শেষে সদাপ্রভু আপনার সমুদয় দাস ভাববাদিগণের দ্বারা যেরূপ বলিয়াছিলেন, তদনুসারে ইস্রায়েলকে আপনার দৃষ্টিগোচর হইতে দূর করিলেন। আর ইস্রায়েল আপন দেশ হইতে অশূরে নীত হইল; অদ্যাপি তাহারা সেই স্থানে আছে। পরে অশূরের রাজা বাবিল, কূথা, অব্বা, হমাৎ ও সফর্বমিয় হইতে লোক আনাইয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণের পরিবর্ত্তে তাহাদিগকে শমরিয়ার নগরসমূহে বসাইয়া দিলেন; তাহাতে তাহারা শমরিয়া অধিকার করিয়া তথাকার নগরসমূহে বসতি করিল। সেখানে তাহাদের বাসের আরম্ভ কালে তাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত না, এই জন্য সদাপ্রভু তাহাদের মধ্যে সিংহ পাঠাইলেন, এবং সিংহেরা কোন কোন লোককে বধ করিল। অতএব লোকেরা অশূরের রাজাকে কহিল, আপনি যে জাতিদিগকে নির্ব্বাসিত করিয়া শমরিয়ার সকল নগরে বসাইয়া দিয়াছেন, তাহারা এদেশীয় ঈশ্বরের বিধান জানে না; এই জন্য তিনি তাহাদের মধ্যে সিংহ পাঠাইয়াছেন, এবং দেখুন, সিংহেরা তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিতেছে, কেননা তাহারা এদেশীয় ঈশ্বরের বিধান জানে না। পরে অশূর-রাজ এই আজ্ঞা করিলেন, তোমরা তথা হইতে যে যাজকদিগকে আনিয়াছ, তাহাদের এক জনকে সেই দেশে লইয়া যাও; তাহারা সেখানে গিয়া বাস করুক, এবং সে লোকদিগকে সেই দেশীয় ঈশ্বরের বিধান শিক্ষা দিউক। পরে তাহারা শমরিয়া হইতে যে যাজকদিগকে লইয়া গিয়াছিল, তাহাদের এক জন আসিয়া বৈথেলে বাস করিল, এবং কিরূপে সদাপ্রভুকে ভয় করিতে হয়, তাহা লোকদিগকে শিখাইতে লাগিল। তথাপি তাহাদের প্রত্যেক জাতি আপন আপন দেবতা নির্ম্মাণ করিল, এবং শমরীয়েরা উচ্চস্থলীর যে সকল গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছিল, তন্মধ্যে এক এক জাতি আপন আপন নিবাস-নগরে আপন আপন দেবতাকে স্থাপন করিল। এইরূপে বাবিলের লোকেরা সুক্কোৎ-বনোৎ নির্ম্মাণ করিল, ও কূথের লোকেরা নের্গল নির্ম্মাণ করিল, এবং হমাতের লোকেরা অশীমা নির্ম্মাণ করিল, আর অব্বীয়েরা নিভস ও তর্ত্তক নির্ম্মাণ করিল, ও সফর্বীয়েরা সফর্বয়িমের দেবতা অদ্রম্মেলক ও অনম্মেলকের উদ্দেশে আপন আপন সন্তানগকে আগুনে পোড়াইত। তাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, আবার আপনাদের জন্য আপনাদের মধ্য হইতে উচ্চস্থলী সকলের যাজকদিগকে নিযুক্ত করিত; তাহারাই তাহাদের জন্য উচ্চস্থলীর গৃহে বলিদান করিত। তাহারা সদাপ্রভুকেও ভয় করিত, এবং যে সকল জাতি হইতে আনীত হইয়াছিল, তাহাদের বিধান অনুসারে আপন আপন দেবতারও সেবা করিত। তাহারা অদ্য পর্য্যন্ত পূর্ব্বকার বিধান অনুসারে কর্ম্ম করিতেছে; তাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে না, নিজ নিজ বিধি ও শাসন অনুসারে আচরণ করে না, এবং সদাপ্রভু যাঁহার নাম ইস্রায়েল রাখিয়াছিলেন, সেই যাকোবের সন্তানগণকে দত্ত তাঁহার ব্যবস্থা ও আজ্ঞানুসারেও চলে না। বাস্তবিক সদাপ্রভু তাহাদের সহিত নিয়ম করিয়া এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তোমরা অন্য দেবগণকে ভয় করিবে না, তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিবে না, তাহাদের সেবা করিবে না, বা তাহাদের উদ্দেশে বলিদান করিবে না; কিন্তু যিনি মহা-পরাক্রম ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা মিসর দেশ হইতে তোমাদিগকে উঠাইয়া আনিয়াছেন, তোমরা সেই সদাপ্রভুকেই ভয় করিবে, তাঁহারই কাছে প্রণিপাত করিবে, ও তাঁহারই উদ্দেশে বলিদান করিবে; আর তিনি তোমাদের জন্য যে সকল বিধি ও শাসন এবং যে ব্যবস্থা ও আজ্ঞা লিখিয়া দিয়াছেন, সে সমস্ত সর্ব্বদা যত্নপূর্ব্বক পালন করিবে; অন্য দেবগণকে ভয় করিবে না; আর আমি তোমাদের সহিত যে নিয়ম করিয়াছি, তাহা ভুলিয়া যাইবে না, এবং অন্য দেবগণকে ভয় করিবে না; কিন্তু আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকেই ভয় করিবে; তাহাতে তিনিই তোমাদের সমুদয় শত্রুর হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিবেন। তথাপি তাহারা কথা শুনিল না; আপনাদের পূর্ব্বকার বিধান অনুসারে চলিল। এইরূপে সেই জাতিগণ সদাপ্রভুকেও ভয় করিতেছে, এবং আপনাদের ক্ষোদিত প্রতিমার সেবাও করিয়া আসিতেছি; তাহাদের পিতৃপুরুষেরা যেরূপ করিত, তাহাদের পুত্র পৌত্রেরাও অদ্য পর্য্যন্ত সেইরূপ করিতেছে। এলার পুত্র ইস্রায়েল-রাজ হোশেয়ের তৃতীয় বৎসরে যিহূদা-রাজ আহসের পুত্র হিষ্কিয় রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন। তিনি পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং ঊনত্রিশ বৎসর কাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন, তাঁহার মাতার নাম অবী, তিনি সখরিয়ের কন্যা। হিষ্কিয় আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের সমস্ত কার্য্যানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন। তিনি উচ্চস্থলী সকল উচ্ছিন্ন করিলেন, ও স্তম্ভ সকল ভগ্ন করিলেন; এবং আশেরা-মূর্ত্তি ছেদন করিলেন, আর মোশি যে পিত্তলময় সর্প নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, কেননা সেই সময় পর্য্যন্ত ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহার উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইত; এবং তিনি তাহার নাম নহুষ্টন [পিত্তলখণ্ড] রাখিলেন। তিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে নির্ভর করিতেন; আর তাঁহার পরে যিহূদার রাজগণের মধ্যে কেহ তাঁহার তুল্য হন নাই, তাঁহার পূর্ব্বেও ছিলেন না। বাস্তবিক তিনি সদাপ্রভুতে আসক্ত ছিলেন, তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিলেন না, বরং সদাপ্রভু মোশিকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছিলেন, যে সমস্ত পালন করিতেন। আর সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন; তিনি যে কোন স্থানে যাইতেন, বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতেন; আর তিনি অশূর-রাজের অধীনতা অস্বীকার করিলেন, তাঁহার দাসত্বে আর থাকিলেন না। তিনি ঘসা ও তাহার সীমা পর্য্যন্ত, প্রহরীদের উচ্চ গৃহ অবধি প্রাচীর-বেষ্টিত নগর পর্য্যন্ত, পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিলেন। হিষ্কিয় রাজার চতুর্থ বৎসরে, অর্থাৎ ইস্রায়েল-রাজ এলার পুত্র হোশেয়ের সপ্তম বৎসরে অশূর-রাজ শলমনেষর শমরিয়ার বিরুদ্ধে আসিয়া তাহা অবরোধ করিলেন। আর তিন বৎসর পরে অশূরীয়েরা তাহা হস্তগত করিল; হিষ্কিয় রাজার ষষ্ঠ বৎসরে, ও ইস্রায়েল-রাজ হোশেয়ের নবম বৎসরে শমরিয়া পরহস্তগত হইল। পরে অশূর-রাজ ইস্রায়েলকে অশূর দেশে লইয়া গিয়া হলহে, হাবোরে, গোষণের নদীতীরে এবং মাদীয়দের নানা নগরে স্থাপন করিলেন। ইহার কারণ এই, তাহারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাক্য মানিত না; বরং তাঁহার নিয়ম অর্থাৎ সদাপ্রভুর দাস মোশির সমস্ত আজ্ঞা লঙ্ঘন করিত, তাহা শুনিতও না, পালন করিতও না। পরে হিষ্কিয় রাজার চতুর্দ্দশ বৎসরে অশূর-রাজ সন্‌হেরীব যিহূদার প্রাচীর-বেষ্টিত সমস্ত নগরের বিরুদ্ধে আসিয়া সে সকল হস্তগত করিতে লাগিলেন। তাহাতে যিহূদা-রাজ হিষ্কিয় লাখীশে অশূর-রাজের নিকটে এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন, আমি দোষ করিয়াছি, আমার নিকট হইতে ফিরিয়া যাউন; আপনি আমাকে যে ভার দিবেন, তাহা আমি বহন করিব। তাহাতে অশূরের রাজা যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের তিন শত তালন্ত রৌপ্য ও ত্রিশ তালন্ত স্বর্ণ দণ্ড নিরূপণ করিলেন। তখন হিষ্কিয় সদাপ্রভুর গৃহে ও রাজবাটীর ভাণ্ডারসমূহে প্রাপ্ত সমস্ত রৌপ্য তাহাকে দিলেন। যিহূদা-রাজ হিষ্কিয় সদাপ্রভুর মন্দিরের যে যে কবাট ও যে যে বাজু মণ্ডিত করিয়াছিলেন, হিষ্কিয় সেই সময়ে তাহা [হইতে স্বর্ণ] কাটিয়া অশূরের রাজাকে দিলেন। পরে অশূরের রাজা লাখীশ হইতে তর্ত্তনকে, রব্‌সারীসকে ও রব্‌শাকিকে বৃহৎ সৈন্যদলের সহিত যিরূশালেমে হিষ্কিয় রাজার কাছে প্রেরণ করিলেন, এবং তাঁহারা যাত্রা করিয়া যিরূশালেমে উপস্থিত হইলেন। তাঁহারা উঠিয়া আসিয়া উচ্চতর পুষ্করিণীর প্রণালীর কাছে রজক-ভূমির রাজপথে অবস্থিতি করিলেন। পরে তাঁহারা রাজাকে আহ্বান করিলে হিল্কিয়ের পুত্র ইলিয়াকীম নামে রাজবাটীর অধ্যক্ষ, শিব্‌ন লেখক ও আসফের পুত্র যোয়াহ নামক ইতিহাসরচক বাহির হইয়া তাঁহাদের কাছে গেলেন। রব্‌শাকি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা হিষ্কিয়কে এই কথা বল, রাজাধিরাজ অশূর-রাজ এই কথা কহেন, তুমি যে সাহস করিতেছ, সে কেমন সাহস? তুমি কহিতেছ, সংগ্রামের বুদ্ধি ও পরাক্রম [আমার] আছে, কিন্তু সেটা কেবল ওষ্ঠের কথামাত্র; বল দেখি, তুমি কাহার উপরে নির্ভর করিয়া আমার বিদ্রোহী হইলে? এখন দেখ, তুমি ঐ থেঁৎলা নলরূপ যষ্টিতে, অর্থাৎ মিসরের উপরে নির্ভর করিতেছ; কিন্তু যে কেহ তাহার উপরে নির্ভর করে, সে তাহার হস্তে ফুটিয়া তাহা বিদ্ধ করে; যত লোক মিসর রাজ ফরৌণের উপরে নির্ভর করে, সেই সকলের পক্ষে সে তদ্রূপ। আর যদি তোমরা আমাকে বল, আমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করি, তবে তিনি কি সেই নহেন, যাঁহার উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল হিষ্কিয় দূর করিয়াছে, এবং যিহূদার ও যিরূশালেমের লোকদিগকে বলিয়াছে, তোমরা যিরূশালেমে এই যজ্ঞবেদির কাছে প্রণিপাত করিবে? তুমি এক বার আমার প্রভু অশূর-রাজের কাছে পণ কর, আমি তোমাকে দুই সহস্র অশ্ব দিব, যদি তুমি তদারোহী লোক দিতে পার। তবে কেমন করিয়া আমার প্রভুর ক্ষুদ্রতম দাসগণের মধ্যে এক জন সেনাপতিকে হটাইয়া দিবে, এবং রথ সকলের ও অশ্বারোহীদের জন্য মিসরের উপরে বিশ্বাস করিবে? বল দেখি, আমি কি সদাপ্রভুর সম্মতি ব্যতিরেকে এ স্থান ধ্বংস করিতে আসিয়াছি? সদাপ্রভুই আমাকে বলিয়াছেন, তুমি ঐ দেশে গিয়া উহা ধ্বংস কর। তখন হিল্কিয়ের পুত্র ইলিয়াকিম, শিব্‌ন ও যোয়াহ রব্‌শাকিকে কহিলেন, বিনয় করি, আপনার দাসদিগকে অরামীয় ভাষায় বলুন, কেননা আমরা তাহা বুঝিতে পারি; প্রাচীরের উপরিস্থ লোকদের কর্ণগোচরে আমাদের সহিত যিহূদী ভাষায় কথা বলিবেন না। কিন্তু রব্‌শাকি তাহাদিগকে বলিলেন, আমার প্রভু কি তোমার প্রভুরই কাছে এবং তোমারই কাছে এই কথা কহিতে আমাকে পাঠাইয়াছেন? ঐ যে লোকেরা তোমাদের সহিত আপন আপন বিষ্ঠা খাইতে ও আপন আপন মূত্র পান করিতে প্রাচীরের উপরে বসিয়া আছে, উহাদেরই কাছে কি তিনি পাঠান নাই? পরে রব্‌শাকি দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে যিহূদী ভাষায় বলিতে লাগিলেন, তোমরা রাজাধিরাজ অশূর-রাজের কথা শুন। রাজা এই কথা কহিতেছেন, হিষ্কিয় তোমাদের ভ্রান্তি না জন্মাউক; কেননা তাঁহার হস্ত হইতে তোমাদিগকে রক্ষা করিতে তাহার সাধ্য নাই। আর হিষ্কিয় এই কথা বলিয়া সদাপ্রভুতে তোমাদের বিশ্বাস না জন্মাউক যে, সদাপ্রভু আমাদিগকে নিশ্চয়ই উদ্ধার করিবেন, এই নগর কখনও অশূর-রাজের হস্তগত হইবে না। তোমরা হিষ্কিয়ের কথা শুনিও না; কেননা অশূর-রাজ এই কথা কহেন, তোমরা আমার সঙ্গে সন্ধি কর, বাহির হইয়া আমার কাছে আইস; তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন দ্রাক্ষাফল ও ডুমুরফল ভোজন কর, এবং আপন আপন কূপের জল পান কর; পরে আমি আসিয়া তোমাদের নিজ দেশের ন্যায় এক দেশে, শস্য ও দ্রাক্ষারসের দেশে, রুটী ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দেশে, এবং তৈলদায়ক জিতবৃক্ষ ও মধুর দেশে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; তাহাতে তোমরা বাঁচিবে, মরিবে না। কিন্তু হিষ্কিয়ের কথা শুনিও না; কেননা সে তোমাদিগকে ভুলায়, বলে, সদাপ্রভু আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন। জাতিগণের দেবতারা কি কেহ কখনও অশূর-রাজের হস্ত হইতে আপন আপন দেশ রক্ষা করিয়াছে? হমাতের ও অর্পদের দেবগণ কোথায়? সফর্বয়িমের, হেনার ও ইব্বার দেবগণ কোথায়? উহারা কি আমার হস্ত হইতে শমরিয়াকে রক্ষা করিয়াছে? ভিন্ন ভিন্ন দেশের সমস্ত দেবতার মধ্যে কোন্‌ দেবগণ আমার হস্ত হইতে আপনাদের দেশ উদ্ধার করিয়াছে? তবে সদাপ্রভু আমার হস্ত হইতে যিরূশালেমকে উদ্ধার করিবেন, ইহা কি সম্ভব? কিন্তু লোকেরা নীরব হইয়া থাকিল, তাঁহার এক কথারও উত্তর করিল না, কারণ রাজার এই আজ্ঞা ছিল যে, তাহাকে উত্তর দিও না। পরে হিল্কিয়ের পুত্র রাজবাটীর অধ্যক্ষ ইলিয়াকীম, শিব্‌ন লেখক ও আসফের পুত্র ইতিহাস-রচক যোয়াহ আপন আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া হিষ্কিয়ের নিকটে আসিয়া রব্‌শাকির কথা জ্ঞাত করিলেন। তাহা শুনিয়া হিষ্কিয় রাজা আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া চট পরিধান করিয়া সদাপ্রভুর গৃহে গমন করিলেন। আর রাজবাটীর অধ্যক্ষ ইলীয়াকীমকে ও শিব্‌ন লেখককে এবং যাজকদের প্রাচীনবর্গকে চট পরিধান করাইয়া আমোসের পুত্র যিশাইয় ভাববাদীর নিকটে পাঠাইয়া দিলেন। তাঁহারা তাঁহাকে বলিলেন, হিষ্কিয় এই কথা বলেন, অদ্যকার দিন সঙ্কটের, অনুযোগের ও অপমানের দিন, কেননা সন্তানগণ প্রসব-দ্বারে উপস্থিত, কিন্তু প্রসব করিবার শক্তি নাই। জীবন্ত ঈশ্বরকে টিট্‌কারি দিবার জন্য আপন প্রভু অশূর-রাজের প্রেরিত রব্‌শাকি যে সকল কথা কহিয়াছে, হয় ত আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু সে সমস্ত শুনিবেন, এবং তাহাকে সেই সকল কথার জন্য তিরস্কার করিবেন, যাহা আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু শুনিয়াছেন; অতএব যে অবশিষ্টাংশ এখনও আছে, আপনি তাহার নিমিত্ত প্রার্থনা উৎসর্গ করুন। তখন হিষ্কিয় রাজার দাসগণ যিশাইয়ের নিকটে উপস্থিত হইলেন। যিশাইয় তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের কর্ত্তাকে এই কথা বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যাহা শুনিয়াছ, ও যাহা বলিয়া অশূর-রাজের দাসেরা আমার নিন্দা করিয়াছে, সেই সকল কথায় ভীত হইও না। দেখ, আমি তাহার মধ্যে এক আত্মা দিব, এবং সে কোন সংবাদ শুনিবে, শুনিয়া আপন দেশে ফিরিয়া যাইবে, পরে আমি তাহারই দেশে তাহাকে খড়্‌গ দ্বারা নিপাত করিব। পরে রব্‌শাকি ফিরিয়া গেলেন, গিয়া দেখিতে পাইলেন যে, অশূর-রাজ লিব্‌নার বিপক্ষে যুদ্ধ করিতেছেন; বস্তুতঃ তিনি লাখীশ হইতে প্রস্থান করিয়াছেন, ইহা রব্‌শাকি শুনিয়াছিলেন। পরে তিনি কূশদেশীয় তির্হকঃ রাজার বিষয়ে এই সংবাদ শুনিলেন, দেখুন, তিনি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করণার্থে বাহির হইয়া আসিয়াছেন। তখন তিনি পুনর্ব্বার হিষ্কিয়ের নিকটে দূত পাঠাইলেন, বলিলেন, তোমরা যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়কে এই কথা বলিবে, তোমার বিশ্বাস-ভূমি ঈশ্বর এই বলিয়া তোমার ভ্রান্তি না জন্মাউন যে, যিরূশালেম অশূর-রাজের হস্তে সমর্পিত হইবে না। দেখ, সমুদয় দেশ নিঃশেষে বিনষ্ট করণ দ্বারা অশূরের রাজারা সমস্ত দেশের প্রতি যাহা যাহা করিয়াছেন, তাহা তুমি শুনিয়াছ; তবে তুমি কি উদ্ধার পাইবে? আমার পিতৃপুরুষগণ যে সকল জাতিকে বিনষ্ট করিয়াছেন—গোষণ, হারণ, রেৎসফ এবং তলঃশর-নিবাসী এদন-সন্তানগণ— তাহাদের দেবগণ কি তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়াছে? হমাতের রাজা, অর্পদের রাজা, এবং সফর্বয়িম নগরের, হেনার ও ইব্বার রাজা কোথায়? হিষ্কিয় দূতগণের হস্ত হইতে পত্রখানি লইয়া পাঠ করিলেন; পরে হিষ্কিয় সদাপ্রভুর গৃহে উঠিয়া গেলেন, এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা বিস্তার করিলেন। আর হিষ্কিয় সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রার্থনা করিলেন, কহিলেন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, করূবদ্বয়ে আসীন, তুমি, কেবলমাত্র তুমিই পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের ঈশ্বর; তুমিই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়াছ। হে সদাপ্রভু, কর্ণপাত করিয়া শুন; হে সদাপ্রভু, চক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখ; জীবন্ত ঈশ্বরকে টিট্‌কারি দিবার জন্য সন্‌হেরীব যে সকল কথা বলিয়া পাঠাইয়াছে, তাহা শুন। সত্য বটে, হে সদাপ্রভু, অশূরের রাজারা জাতিগণকে ও তাহাদের দেশ সকল বিনষ্ট করিয়াছে, এবং তাহাদের দেবগণকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করিয়াছে, কারণ তাহারা ঈশ্বর নয়, কিন্তু মনুষ্যের হস্তের কার্য্য, কাষ্ঠ ও প্রস্তর; এই জন্য উহারা তাহাদিগকে বিনষ্ট করিয়াছে। অতএব এখন, হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, বিনতি করি, তুমি তাহার হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার কর; তাহাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানিতে পারিবে যে, হে সদাপ্রভু, তুমি কেবল তুমিই ঈশ্বর। পরে আমোসের পুত্র যিশাইয় হিষ্কিয়ের নিকটে এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন; ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি অশূর-রাজ সন্‌হেরীবের বিষয়ে আমার কাছে প্রার্থনা করিয়াছ, তাহা আমি শুনিলাম। সদাপ্রভু তাহার বিষয়ে যে কথা বলিয়াছেন, তাহা এই, অনূঢ়া সিয়োন-কন্যা তোমাকে তুচ্ছ করিতেছে ও তোমাকে পরিহাস করিতেছে; যিরূশালেম-কন্যা তোমার দিকে মাথা নাড়িতেছে। তুমি কাহাকে টিট্‌কারি দিয়াছ? কাহার নিন্দা করিয়াছ? কাহার বিরুদ্ধে উচ্চশব্দ করিয়াছ ও ঊর্দ্ধদিকে চক্ষু তুলিয়াছ? ইস্রায়েলের পবিত্রতমেরই বিরুদ্ধে। তুমি আপন দূতগণের দ্বারা প্রভুকে টিট্‌কারি দিয়াছ, বলিয়াছ, ‘আমি নিজ রথ-বাহুল্য দ্বারা পর্ব্বতগণের উচ্চ মস্তকে, লিবানোনের নিভৃত স্থানে আরোহন করিয়াছি; আমি তাহার দীর্ঘকায় এরস বৃক্ষ ও উৎকৃষ্ট দেবদারু সকল ছেদন করিব; তাহার প্রান্তভাগস্থ বাসস্থানে, উর্ব্বর ক্ষেত্রের কাননে, প্রবেশ করিব। আমি তাহা খনন করিয়া অসাধারণ জল পান করিয়াছি, আমি আপন পদতল দ্বারা মিসরের সমস্ত খাল শুষ্ক করিব। তুমি কি শুন নাই যে, আমি দীর্ঘকালাবধি ইহা নিরূপণ করিয়াছিলাম, পূর্ব্বকালে ইহা স্থির করিয়াছিলাম? আমি এখন ইহা সিদ্ধ করিলাম, তোমার দ্বারা দৃঢ় নগর সকল বিনাশ করিয়া ঢিবি করিলাম; আর তন্নিবাসিগণ ক্ষীণহস্ত, ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত হইল; তাহারা ক্ষেত্রের শাক ও নবীন তৃণ, ছাদের উপরিস্থ ঘাস ও পক্ক না হইতে শোষিত শস্যের ন্যায় হইল। কিন্তু তোমার বসিয়া থাকা, তোমার বাহিরে যাওয়া, তোমার ভিতরে আসা, এবং আমার বিরুদ্ধে তোমার ক্রোধ-প্রকাশ, এই সকল আমি জানি। আমার বিরুদ্ধে তোমার ক্রোধপ্রযুক্ত, এবং তোমার যে দর্পকথা আমার কর্ণগোচর হইয়াছে, তৎপ্রযুক্ত, আমি তোমার নাসিকায় আমার কড়া, তোমার ওষ্ঠাধরে আমার বল্‌গা দিব, এবং তুমি যে পথ দিয়া আসিয়াছ, সেই পথ দিয়া তোমাকে ফিরাইব। আর [হে হিষ্কিয়,] তোমার জন্য এই চিহ্ন হইবে, তোমরা এই বৎসর স্বতঃ উৎপন্ন শস্য ও দ্বিতীয় বৎসর তাহার মূলোৎপন্ন শস্য ভোজন করিবে; পরে তোমরা তৃতীয় বৎসরে বীজ বপন করিয়া শস্য কাটিবে, এবং দ্রাক্ষাক্ষেত্র করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। আর যিহূদা-কুলের যে রক্ষাপ্রাপ্ত লোকেরা অবশিষ্ট আছে, তাহারা আবার নীচে মূল বাঁধিবে, ও উপরে ফল দিবে। কেননা যিরূশালেম হইতে অবশিষ্ট ব্যক্তিরা, সিয়োন পর্ব্বত হইতে রক্ষাপ্রাপ্ত লোকেরা নির্গত হইবে; বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্যোগ ইহা সাধন করিবে। অতএব অশূর-রাজের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সে এ নগরে আসিবে না, এখানে বাণ ছাড়িবে না, ঢাল লইয়া ইহার সম্মুখে আসিবে না, ইহার বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধিবে না। সে যে পথ দিয়া আসিয়াছে, সেই পথ দিয়াই ফিরিয়া যাইবে, এ নগরে আসিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কারণ আমি আপনার নিমিত্ত, ও আপন দাস দায়ূদের নিমিত্ত, এই নগরের রক্ষার্থে ইহার ঢালস্বরূপ হইব। পরে সেই রাত্রিতে সদাপ্রভুর দূত যাত্রা করিয়া অশূরীয়দের শিবিরে এক লক্ষ পঁচাশী সহস্র লোককে বধ করিলেন; লোকেরা প্রত্যূষে উঠিল, আর দেখ, সমস্তই মৃত দেহ। অতএব অশূর-রাজ সন্‌হেরীব প্রস্থান করিলেন, এবং নীনবীতে ফিরিয়া গিয়া বাস করিলেন। পরে তিনি যখন আপনার দেবতা নিষ্রোকের গৃহে প্রণিপাত করিতেছিলেন, তখন অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর নামক তাঁহার দুই পুত্র খড়্‌গ দ্বারা তাঁহাকে আঘাত করিল; পরে তাহারা অরারট দেশে পলায়ন করিল। আর এসর-হদ্দোন নামক তাঁহার পুত্র তাঁহার পদে রাজা হইলেন। তৎকালে হিষ্কিয়ের সাংঘাতিক পীড়া হইয়াছিল। আর আমোসের পুত্র যিশাইয় ভাববাদী তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি আপন বাটীর ব্যবস্থা করিয়া রাখ, কেননা তোমার মৃত্যু হইবে, তুমি বাঁচিবে না। তখন তিনি ভিত্তির দিকে মুখ ফিরাইয়া সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, বিনয় করি, তুমি এখন স্মরণ কর, আমি তোমার সাক্ষাতে সত্যে ও একাগ্রচিত্তে চলিয়াছি, এবং তোমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তাহাই করিয়াছি। আর হিষ্কিয় অতিশয় রোদন করিতে লাগিলেন। যিশায়াহ বাহির হইয়া নগরের মধ্য স্থান পর্য্যন্ত যান নাই, এমন সময়ে তাঁহার নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি ফিরিয়া গিয়া আমার প্রজাদের অধ্যক্ষ হিষ্কিয়কে বল, তোমার পিতৃপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তোমার প্রার্থনা শুনিলাম, আমি তোমার নেত্রজল দেখিলাম; দেখ, আমি তোমাকে সুস্থ করিব; তৃতীয় দিবসে তুমি সদাপ্রভুর গৃহে উঠিবে। আর আমি তোমার আয়ু পনের বৎসর বৃদ্ধি করিব; এবং অশূরের রাজার হস্ত হইতে তোমাকে ও এই নগরকে উদ্ধার করিব; আর আমি আপনার নিমিত্ত ও আপন দাস দায়ূদের নিমিত্ত এই নগরের ঢালস্বরূপ হইব। পরে যিশায়াহ কহিলেন, ডুমুরফলের একটা চাপ আন; আর লোকেরা তাহা লইয়া স্ফোটকের উপরে দিলে তিনি বাঁচিলেন। আর হিষ্কিয় যিশায়াহকে কহিলেন, সদাপ্রভু যে আমাকে সুস্থ করিবেন, এবং আমি যে তৃতীয় দিবসে সদাপ্রভুর গৃহে উঠিব, ইহার চিহ্ন কি? যিশায়াহ কহিলেন, সদাপ্রভু যে কথা বলিয়াছেন, তাহা যে সফল করিবেন, তাহার এই চিহ্ন সদাপ্রভু হইতে আপনাকে দেওয়া যাইবে; ছায়াটা কি দশ ধাপ অগ্রসর হইবে, না দশ ধাপ পিছে ফিরিয়া যাইবে? হিষ্কিয় কহিলেন, ছায়াটা যে দশ ধাপ আগে সরিয়া যায়, এ ক্ষুদ্র বিষয়; ছায়াটা বরং দশ ধাপ পিছাইয়া পড়ুক। তখন যিশায়াহ ভাববাদী সদাপ্রভুকে ডাকিলেন, তাহাতে আহসের সোপানে ছায়াটা যত ধাপ নামিয়া গিয়াছিল, তিনি তাহার দশ ধাপ পিছে ফিরাইলেন। ঐ সময়ে বলদনের পুত্র বাবিল-রাজ বরোদক্‌বলদন্‌ হিষ্কিয়ের নিকটে পত্র ও উপঢৌকনদ্রব্য পাঠাইলেন, কারণ তিনি শুনিয়াছিলেন যে, হিষ্কিয় পীড়িত হইয়াছেন। তাহাতে হিষ্কিয় দূতদের কথা শুনিলেন, এবং আপনার সমস্ত কোষ, রৌপ্য, স্বর্ণ, সুগন্ধি দ্রব্য ও বহুমূল্য তৈল এবং অস্ত্রাগার ও ধনাগার সমূহের সমস্ত বস্তু তাহাদিগকে দেখাইলেন; হিষ্কিয় তাহাদিগকে না দেখাইলেন, এমন কোন সামগ্রী তাঁহার বাটীতে বা তাঁহার সমস্ত রাজ্যে ছিল না। পরে যিশায়াহ ভাববাদী হিষ্কিয় রাজার নিকটে আসিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ঐ লোকেরা কি কহিল? আর উহারা কোথা হইতে আপনার নিকটে আসিল? হিষ্কিয় কহিলেন, উহারা দূরদেশ হইতে, বাবিল হইতে আসিয়াছে। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, উহারা আপনার বাটীতে কি কি দেখিয়াছে? হিষ্কিয় কহিলেন, আমার বাটীতে যাহা যাহা আছে, সকলই দেখিয়াছে; তাহাদিগকে না দেখাইয়াছি, আমার ধনাগার সমূহের মধ্যে এমন কোন দ্রব্য নাই। যিশায়াহ হিষ্কিয়কে কহিলেন, সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন। দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যখন তোমার বাটীতে যে কিছু আছে, এবং তোমার পিতৃপুরুষদের সঞ্চিত যাহা যাহা অদ্য পর্য্যন্ত রহিয়াছে, সকলই বাবিলে নীত হইবে; কিছুই অবশিষ্ট থাকিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর যাহারা তোমা হইতে উৎপন্ন হইবে, তোমার সেই সন্তানগণের মধ্যে কয়েক জন নীত হইবে; এবং তাহারা বাবিল রাজের প্রাসাদে নপুংসক হইবে। তখন হিষ্কিয় যিশায়াহকে কহিলেন, আপনি সদাপ্রভুর যে বাক্য কহিলেন, তাহা উত্তম। তিনি আরও কহিলেন, যদি আমার সময়ে শান্তি ও সত্য হয়, তবে তাহা কি [উত্তম] নয়? হিষ্কিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত বিক্রম, এবং কিরূপে পুষ্করিণী ও প্রণালী করিয়া তিনি নগরে জল আনিয়াছিলেন, এই সকল কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে হিষ্কিয় আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র মনঃশি তাঁহার পদে রাজা হইলেন। মনঃশি বারো বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং পঞ্চান্ন বৎসরকাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম হিফ্‌সীবা। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন; সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন, তিনি তাহাদের ঘৃণিত ক্রিয়ানুসারেই করিতেন। বাস্তবিক তাঁহার পিতা হিষ্কিয় যে সকল উচ্চস্থলী বিনষ্ট করিয়াছিলেন, তিনি সেগুলি পুনর্ব্বার নির্ম্মাণ করিলেন, এবং ইস্রায়েল-রাজ আহাব যেমন করিয়াছিলেন, তেমনি তিনি বালের জন্য যজ্ঞবেদি প্রস্তুত করিলেন, এবং আশেরামূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিলেন, আর আকাশের সমস্ত বাহিনীর কাছে প্রণিপাত ও তাহাদের সেবা করিতেন। আর সদাপ্রভু যে গৃহের উদ্দেশে বলিয়াছিলেন, আমি যিরূশালেমে আপন নাম স্থাপন করিয়া সদাপ্রভুর সেই গৃহে তিনি কতকগুলি যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি সদাপ্রভুর গৃহের দুই প্রাঙ্গণে আকাশের সমস্ত বাহিনীর জন্য যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি আপন পুত্রকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাইলেন, ও গণকতা ও মোহকের ব্যবহার করিতেন, এবং ভূতড়িয়াদিগকে ও গুণীদিগকে রাখিতেন। তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুল কদাচরণ করিয়া তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিলেন। আর তিনি আশেরার যে ক্ষোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহা সেই গৃহে স্থাপন করিলেন, যাহার বিষয়ে সদাপ্রভু দায়ূদকে ও তাঁহার পুত্র শলোমনকে এই কথা বলিয়াছিলেন, আমি এই গৃহে এবং ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্যে আমার মনোনীত এই যিরূশালেমে আপন নাম চিরকালের নিমিত্ত স্থাপন করিব; আর আমি তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছি, সেই দেশ হইতে ইস্রায়েলের চরণ আর চালিত হইতে দিব না; কেবল যদি তাহারা, আমি তাহাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছি, এবং আমার দাস মোশি তাহাদিগকে যে সমস্ত ব্যবস্থা দিয়াছে, তদনুসারে যত্নপূর্ব্বক চলে। কিন্তু তাহারা শুনিল না, আর সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানদের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে বিনষ্ট করিয়াছিলেন, তাহাদের অপেক্ষা অধিক কদাচরণ করিতে মনঃশি তাহাদিগকে কুপ্রবৃত্তি দিতেন। আর সদাপ্রভু আপন দাস ভাববাদিগণের দ্বারা এই কথা কহিলেন, যিহূদা-রাজ মনঃশি এই সকল ঘৃণিত কার্য্য করিয়াছে; তাহার পূর্ব্বে যে ইমোরীয়েরা ছিল, তাহাদের কৃত সমস্ত কার্য্য হইতেও সে অধিক দুষ্কার্য্য করিয়াছে, এবং আপন পুত্তলিগণ দ্বারা যিহূদাকেও পাপ করাইয়াছে। অতএব ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি যিরূশালেমের ও যিহূদার উপরে এমন অমঙ্গল আনিব যে, তাহা যে কেহ শুনিবে, তাহার কর্ণযুগল শিহরিয়া উঠিবে। আর আমি যিরূশালেমের উপরে শমরিয়ার সূত্র ও আহাবকুলের ওলন বিস্তার করিব; যেমন কেহ থালা মুছিয়া ফেলে, এবং মুছিলে পর তাহা উল্টাইয়া উবুড় করে, তদ্রূপ আমি যিরূশালেমকে মুছিয়া ফেলিব। আর আমি আপন অধিকারের অবশিষ্টাংশ ত্যাগ করিব, ও তাহাদের শত্রুগণের হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিব; তাহারা আপনাদের সমস্ত শত্রুর মৃগয়ার দ্রব্য ও লুটবস্তুস্বরূপ হইবে। ইহার কারণ এই, আমার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তাহারা করিয়াছে; এবং যে দিন তাহাদের পিতৃপুরুষেরা মিসর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিল, সেই দিন অবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়া আসিতেছে। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহা করিয়া মনঃশি যিহূদাকে পাপ করাইয়াছিলেন, আপনার এই পাপ ভিন্ন তিনি আবার অনেক নির্দ্দোষের রক্তপাতও করিয়াছিলেন, এমন কি, যিরূশালেমকে এক সীমা অবধি অন্য সীমা পর্য্যন্ত রক্তে পরিপূর্ণ করিয়াছিলেন। মনঃশির অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, সমস্ত কার্য্যের বিবরণ ও তাঁহার কৃত পাপ কি যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? পরে মনঃশি আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং আপন বাটীর উদ্যানে, উষের উদ্যানে কবরপ্রাপ্ত হইলেন; আর তাঁহার পুত্র আমোন তাঁহার পদে রাজা হইলেন। আমোন বাইশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন; এবং যিরূশালেমে দুই বৎসরকাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম মশুল্লেমৎ, তিনি যট্‌বাস্থ হারুষের কন্যা। তাঁহার পিতা মনঃশি যেরূপ করিয়াছিলেন, তিনিও তদ্রূপ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতেন। তাঁহার পিতা যে পথে চলিয়াছিলেন, তিনিও সেই সমস্ত পথে চলিতেন, এবং তাঁহার পিতা যে সকল পুত্তলির সেবা করিয়াছিলেন, তিনিও সেই সকলের সেবা করিতেন ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিতেন; তিনি আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছিলেন; সদাপ্রভুর পথে চলিতেন না। পরে আমোনের দাসগণ তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিল, আর তাহারা রাজাকে তাঁহার বাটীতে বধ করিল। কিন্তু দেশের লোকেরা আমোন রাজার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী সকলকে বধ করিল; পরে দেশের লোকেরা তাঁহার পুত্র যোশিয়কে তাঁহার পদে রাজা করিল। আমোনের কৃত অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? তিনি উষের উদ্যানস্থিত নিজ কবরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র যোশিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যোশিয় আট বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং একত্রিশ বৎসর কাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম যিদীদা, তিনি বস্কতীয় আদায়ার কন্যা। যোশিয় সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন, ও আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের সমস্ত পথে চলিতেন, তাহার দক্ষিণে কি বামে ফিরিতেন না। পরে যোশিয় রাজার অষ্টাদশ বৎসরে রাজা মশুল্লমের পৌত্র অৎসলিয়ের পুত্র শাফন লেখককে এই কথা বলিয়া সদাপ্রভুর গৃহে পাঠাইয়া দিলেন; তুমি হিল্কিয় মহাযাজকের নিকটে গিয়া, সদাপ্রভুর গৃহে যে টাকা আনীত হইয়াছে, দ্বারপালেরা লোকদের কাছে যাহা সংগ্রহ করিয়াছে, তাহা প্রস্তুত রাখিতে বল। আর তাহারা সদাপ্রভুর গৃহের তত্ত্বাবধায়ক কার্য্যকারীদের হস্তে তাহা সমর্পণ করুক, এবং তাহারা গৃহের ভগ্ন স্থান সারিবার জন্য সদাপ্রভুর গৃহের কার্য্যকারীদের হস্তে তাহা দিউক; অর্থাৎ সূত্রধর, গাঁথক ও রাজদিগকে, এবং গৃহ সারিবার জন্য কাষ্ঠ ও ক্ষোদিত প্রস্তর ক্রয় করণার্থে তাহা দিউক। কিন্তু তাহাদের হস্তে যে টাকা সমর্পিত হইল, তাহার বিষয়ে তাহাদের সহিত হিসাব করা হইল না, কেননা তাহারা বিশ্বস্তরূপে কর্ম্ম করিল। তখন হিল্কিয় মহাযাজক শাফন লেখককে কহিলেন, আমি সদাপ্রভুর গৃহে ব্যবস্থাপুস্তকখানি পাইয়াছি। পরে হিল্কিয় শাফনকে সেই পুস্তক দিলে তিনি তাহা পাঠ করিলেন। আর শাফন লেখক রাজার নিকটে গিয়া তাঁহাকে এই সমাচার দিলেন, আপনার দাসগণ সেই গৃহে প্রাপ্ত সমস্ত টাকা একত্র করিয়া সদাপ্রভুর গৃহের তত্ত্বাবধায়ক কার্য্যকারীদের হস্তে দিয়াছে। পরে শাফন লেখক রাজাকে কহিলেন, হিল্কিয় যাজক আমাকে একখানি পুস্তক দিয়াছেন। আর শাফন রাজার সাক্ষাতে তাহা পাঠ করিতে লাগিলেন। তখন রাজা সেই ব্যবস্থাপুস্তকের বাক্য সকল শুনিয়া আপনার বস্ত্র ছিঁড়িলেন। আর রাজা হিল্কিয় যাজককে, শাফনের পুত্র অহীকামকে, মীখায়ের পুত্র অক্‌বোরকে, শাফন লেখককে ও রাজভৃত্য অসায়কে এই আজ্ঞা করিলেন, তোমরা যাও, এই যে পুস্তকখানি পাওয়া গিয়াছে, এই পুস্তকের বাক্য সকলের বিষয়ে আমার ও প্রজাদের এবং সমস্ত যিহূদার নিমিত্ত সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা কর; কেননা আমাদের পালনার্থে লিখিত সকল কথানুযায়ী কর্ম্ম করিবার জন্য আমাদের পিতৃপুরুষেরা এই পুস্তকের কথায় কর্ণপাত করেন নাই, এই জন্য আমাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর অতিশয় ক্রোধ প্রজ্বলিত হইয়াছে। তখন হিল্কিয় যাজক, অহীকাম, অক্‌বোর, শাফন ও অসায়, ইহাঁরা বস্ত্রাগারের অধ্যক্ষ হর্হসের পৌত্র তিক্‌বের পুত্র শল্লুমের স্ত্রী হুল্‌দা ভাববাদিনীর নিকটে গেলেন; তিনি যিরূশালেমের দ্বিতীয় বিভাগে বাস করিতেছিলেন। পরে তাঁহারা তাঁহার সহিত কথোপকথন করিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে ব্যক্তি তোমাদিগকে আমার কাছে পাঠাইয়াছে, তাহাকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই স্থানের ও এখানকার নিবাসীদের উপরে অমঙ্গল আনিব, যিহূদা-রাজ যে পুস্তক পাঠ করিয়াছে, তাহাতে লিখিত সকল বাক্য বর্ত্তাইব। কারণ তাহারা আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, এবং অন্য দেবগণের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইয়াছে, এইরূপে স্ব স্ব হস্তের কার্য্য দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়াছে, তজ্জন্য এই স্থানের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে, তাহা নির্ব্বাণ হইবে না। কিন্তু যিহূদার রাজা, যিনি সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিতে তোমাদিগকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে এই কথা বল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যে সকল বাক্য শ্রবণ করিয়াছ, এই স্থানের ও এখানকার নিবাসীদের বিরুদ্ধে আমি যে সকল বাক্য কহিয়াছি, অর্থাৎ তাহারা যে বিস্ময়ের ও শাপের আস্পদ হইবে, তাহা শ্রবণমাত্র তোমার অন্তঃকরণ কোমল হইয়াছে, তুমি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছ, এবং আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া আমার সম্মুখে রোদন করিয়াছ, এই জন্য সদাপ্রভু কহেন, আমিও তোমার কথা শুনিলাম। অতএব দেখ, আমি তোমার পিতৃলোকদের কাছে তোমাকে সংগ্রহ করিব; তুমি শান্তিতে আপন কবরে সংগৃহীত হইবে, এবং আমি এই স্থানের উপরে যে সকল অমঙ্গল আনিব, তোমার চক্ষু সে সমস্ত দেখিবে না। পরে তাঁহারা আবার রাজাকে এই কথার সমাচার দিলেন। পরে রাজা লোক পাঠাইলে তাহারা যিহূদার ও যিরূশালেমের সমস্ত প্রাচীনবর্গকে তাঁহার নিকটে একত্র করিল। পরে রাজা সদাপ্রভুর গৃহে গেলেন, এবং যিহূদার সমস্ত লোক, সমস্ত যিরূশালেম-নিবাসী, যাজকগণ ও ভাববাদিগণ এবং ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সমস্ত প্রজা তাঁহার সহিত গমন করিল; পরে তিনি সদাপ্রভুর গৃহে প্রাপ্ত নিয়মপুস্তকের সমস্ত কথা তাহাদের কর্ণগোচরে পাঠ করিলেন। পরে রাজা মঞ্চের উপরে দাঁড়াইয়া সদাপ্রভুর অনুগামী হইবার, এবং সমস্ত অন্তঃকরণের ও সমস্ত প্রাণের সহিত তাঁহার আজ্ঞা, সাক্ষ্যকথা ও বিধি পালন করিবার জন্য, এই পুস্তকে লিখিত এই নিয়মের বাক্য সকল অটল রাখিবার জন্য সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নিয়ম স্থির করিলেন, এবং সমস্ত লোক সেই নিয়মে সায় দিল। আর রাজা বালের ও আশেরার নিমিত্ত এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীর নিমিত্ত নির্ম্মিত সমস্ত সামগ্রী সদাপ্রভুর মন্দির হইতে বাহির করিতে হিল্কিয় মহাযাজককে, দ্বিতীয় শ্রেণীর যাজকগণকে ও দ্বারপালদিগকে আজ্ঞা করিলেন; পরে তিনি যিরূশালেমের বাহিরে কিদ্রোণের ক্ষেত্রে সে সকল পোড়াইয়া তাহাদের ভস্ম বৈথেলে লইয়া গেলেন। আর যিহূদার রাজগণ কর্ত্তৃক নিযুক্ত যে পুরোহিতেরা যিহূদা দেশের নগরে নগরে উচ্চস্থলীতে, ও যিরূশালেমের চারিদিকে নানা স্থানে ধূপ জ্বালাইত, এবং যাহারা বালের, সূর্য্যের ও চন্দ্রের এবং গ্রহগণের ও আকাশের সমস্ত বাহিনীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইত, তাহাদিগকে তিনি নিবৃত্ত করিলেন। আর তিনি সদাপ্রভুর গৃহ হইতে আশেরা-মূর্ত্তি বাহির করিয়া যিরূশালেমের বাহিরে কিদ্রোণ স্রোতের কাছে আনিয়া কিদ্রোণ স্রোতের ধারে পোড়াইয়া দিলেন, এবং তাহা পিষিয়া গুঁড়া করিয়া তাহার ধূলি সামান্য লোকদের কবরের উপরে ফেলিয়া দিলেন। আর তিনি সদাপ্রভুর গৃহে স্থিত পুংগামীদের সেই কুঠরী সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, যেখানে স্ত্রীলোকেরা আশেরার জন্য ঘর বুনিত। আর তিনি যিহূদার নগর সকল হইতে সমস্ত যাজককে আনিলেন, এবং গেবা অবধি বের্‌-শেবা পর্য্যন্ত যে সকল উচ্চস্থলীতে যাজকেরা ধূপ জ্বালাইত, সেই সকল অশুচি করিলেন; আর নগর-দ্বারের যে সকল উচ্চস্থলী নগরাধ্যক্ষ যিহোশূয়ের দ্বার প্রবেশস্থানের নিকটে ছিল, নগর-দ্বারে প্রবেশকারীর বামদিকে থাকিত, সেই সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। কিন্তু উচ্চস্থলীর যাজকগণ সদাপ্রভুর যিরূশালেমস্থ যজ্ঞবেদিতে বলিদান করিতে গেল না, তাহারা কেবল আপনাদের ভ্রাতৃগণের মধ্যে থাকিয়া তাড়ী-শূন্য রুটী ভোজন করিত। আর কেহ যেন মোলকের উদ্দেশে আপন পুত্রকে কিম্বা কন্যাকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন না করায়, এই নিমিত্ত তিনি হিন্নোম সন্তানগণের উপত্যকাস্থিত তোফৎ অশুচি করিলেন। আর যিহূদার রাজারা যে অশ্বদিগকে সূর্য্যের উদ্দেশে দিয়া সদাপ্রভুর গৃহের প্রবেশস্থানের কাছে, উপপুরীতে অবস্থিত, নথন-মেলক নামক নপুংসকের কুঠরীর কাছে রাখিতেন, তাহাদিগকে তিনি দূর করিলেন, এবং সূর্য্যের রথ সকল আগুনে পোড়াইয়া দিলেন। আর যিহূদার রাজগণ আহসের উপরিস্থ কুঠরীর ছাদে যে সকল যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, এবং মনঃশি সদাপ্রভুর গৃহের দুই প্রাঙ্গণে যে যে যজ্ঞবেদি করিয়াছিলেন, রাজা সেই সকল বেদি ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, তথা হইতে শীঘ্র চলিয়া গেলেন, এবং তাহাদের ধূলি কিদ্রোণ স্রোতে নিক্ষেপ করিলেন। আর বিনাশ-পর্ব্বতের দক্ষিণে যিরূশালেমের সম্মুখে ইস্রায়েল-রাজ শলোমন সীদোনীয়দের ঘৃণাই বস্তু অষ্টোরতের জন্য, এবং মোয়াবের ঘৃণাই বস্তু কমোশের জন্য ও অম্মোন-সন্তানদের ঘৃণাই বস্তু মিল্কমের জন্য যে সকল উচ্চস্থলী করিয়াছিলেন, সে সমস্ত রাজা অশুচি করিলেন। আর তিনি স্তম্ভ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, ও আশেরা মূর্ত্তি সকল ছেদন করিয়া তাহাদের স্থান মনুষ্যের অস্থিতে পরিপূর্ণ করিলেন। অধিকন্তু বৈথেলে যে যজ্ঞবেদি ছিল, এবং নবাটের পুত্র যারবিয়াম, যিনি ইস্রায়েলকে পাপ করাইয়াছিলেন, তিনি যে উচ্চস্থলী নির্ম্মাণ করেন, যোশিয় সেই যজ্ঞবেদি ও সেই উচ্চস্থলীও ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, আর সেই উচ্চস্থলী আগুনে পোড়াইয়া দিলেন, ও পিষিয়া গুঁড়া করিলেন, এবং আশেরা পোড়াইয়া দিলেন। আর যোশিয় মুখ ফিরাইয়া তথাকার পর্ব্বতস্থ কবর সকল দেখিলেন, এবং লোক পাঠাইয়া সেই সকল কবর হইতে অস্থি আনাইলেন, এবং ঈশ্বরের যে লোক পূর্ব্বে এই সকল ঘটনা প্রচার করিয়াছিলেন, তাঁহার প্রচারিত সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে সেই যজ্ঞবেদির উপরে সেই সকল অস্থি পোড়াইয়া বেদি অশুচি করিলেন। পরে তিনি বলিলেন, আমি ঐ কোন স্তম্ভ দেখিতেছি? নগরের লোকেরা তাঁহাকে কহিল, ঈশ্বরের যে লোক যিহূদা হইতে আসিয়া বৈথেলস্থ যজ্ঞবেদির বিরুদ্ধে আপনার কৃত এই সকল ক্রিয়ার কথা প্রচার করিয়াছিলেন, ঐ তাঁহারই কবর। রাজা কহিলেন, তাঁহাকে থাকিতে দেও; তাঁহার অস্থি কেহ স্থানান্তর না করুক। অতএব তাহারা তাঁহার অস্থি এবং শমরিয়া হইতে আগত ভাববাদীর অস্থি রক্ষা করিল। আর ইস্রায়েল-রাজগণ শমরিয়ার নানা নগরে যে সকল উচ্চস্থলীর গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া [সদাপ্রভুকে] অসন্তুষ্ট করিয়াছিলেন, সে সকল যোশিয় দূর করিলেন, এবং বৈথেলে যে সমস্ত কর্ম্ম করিয়াছিলেন, তদনুসারে সেই সকলের প্রতিও করিলেন। আর তথাকার উচ্চস্থলী সকলের সমস্ত যাজককে যজ্ঞবেদিতে বলিদান করিলেন, এবং তাহার উপরে মনুষ্যের অস্থি পোড়াইয়া দিলেন; পরে যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন। পরে রাজা সমস্ত লোককে এই আজ্ঞা করিলেন, এই নিয়মপুস্তকে যেমন লিখিত আছে, তদনুসারে তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তার-পর্ব্ব পালন কর। বাস্তবিক ইস্রায়েলের বিচারকারী বিচারকর্ত্তাদের সময় অবধি ইস্রায়েল-রাজগণের ও যিহূদা-রাজগণের সমস্ত সময় মধ্যে এরূপ নিস্তার-পর্ব্ব পালন করা হয় নাই; কিন্তু যোশিয় রাজার অষ্টাদশ বৎসরে যিরূশালেমে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই নিস্তারপর্ব্ব-পালন করা হইল। আর যোশিয় যেন সদাপ্রভুর গৃহে হিল্কিয় যাজকের প্রাপ্ত পুস্তকে লিখিত ব্যবস্থার সমস্ত বাক্য অটল রাখিতে পারেন, তজ্জন্য তিনি যিহূদা দেশে ও যিরূশালেমে যে সকল ভূতড়িয়া, গুণী, ঠাকুর, পুত্তলি ও ঘৃণাই বস্তু দেখিতে পাইলেন, সে সকল দূর করিলেন। তাঁহার ন্যায় সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত প্রাণ ও সমস্ত শক্তি দ্বারা মোশির সমস্ত ব্যবস্থানুসারে সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিলেন, এমন কোন রাজা তাঁহার পূর্ব্বে ছিলেন না, এবং তাঁহার পরেও তাঁহার তুল্য কেহ উঠেন নাই। তথাপি মনঃশি যে সকল অসন্তোষজনক ক্রিয়া দ্বারা সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিয়াছিলেন, তৎপ্রযুক্ত যিহূদার বিরূদ্ধে সদাপ্রভুর যে প্রচণ্ড ক্রোধ প্রজ্বলিত হইয়াছিল, সেই ক্রোধ হইতে তিনি ফিরিলেন না। আর সদাপ্রভু কহিলেন, আমি যেমন ইস্রায়েলকে দূর করিয়াছি, তেমনি আপনার দৃষ্টি হইতে যিহূদাকেও দূর করিব, এবং এই যে যিরূশালেম নগর মনোনীত করিয়াছি, এবং ‘এই স্থানে আমার নাম থাকিবে,’ এ কথা যে গৃহের বিষয়ে বলিয়াছি, তাহাও অগ্রাহ্য করিব। যোশিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? তাহার সময়ে মিসর-রাজ ফরৌণ-নখো অশূর-রাজের বিরুদ্ধে ফরাৎ নদীর দিকে যাত্রা করিলেন, আর যোশিয় রাজা তাঁহার বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিলেন; তাহাতে ফরৌণ-নখো তাঁহার দেখা পাইবামাত্র মগিদ্দোতে তাঁহাকে বধ করিলেন। পরে যোশিয়ের দাসগণ তাঁহার মৃত দেহ রথে করিয়া মগিদ্দো হইতে যিরূশালেমে আনিয়া তাঁহার নিজ কবরে কবর দিল; পরে দেশের লোকেরা যোশিয়ের পুত্র যিহোয়াহসকে লইয়া অভিষেক করিয়া পিতার পদে রাজা করিল। যিহোয়াহস তেইশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে তিন মাস রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম হমূটল, তিনি লিব্‌না-নিবাসী যিরমিয়ের কন্যা। এই রাজা আপন পিতৃপুরুষদের সমস্ত কর্ম্মানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতেন। আর ফরৌণ-নখো যিরূশালেমে তাঁহার রাজত্ব প্রাপ্তির পরে হমাৎ দেশস্থ রিব্‌লাতে তাঁহাকে বদ্ধ করিলেন, এবং দেশের এক শত তালন্ত রৌপ্য ও এক তালন্ত স্বর্ণ দণ্ড স্থির করিলেন। পরে ফরৌণ-নখো যোশিয়ের পুত্র ইলিয়াকীমকে তাঁহার পিতা যোশিয়ের পদে রাজা করিয়া তাঁহার নাম পরিবর্ত্তন-পূর্ব্বক যিহোয়াকীম রাখিলেন, কিন্তু যিহোয়াহসকে লইয়া গেলেন; তাহাতে ইনি মিসর দেশে গিয়া সে স্থানে মরিলেন। পরে যিহোয়াকীম ফরৌণকে সেই সকল রৌপ্য ও স্বর্ণ দিলেন, কিন্তু ফরৌণের আজ্ঞানুসারে সেই রৌপ্যাদি দিবার জন্য তিনি দেশে কর নিরূপণ করিলেন; ফরৌণ-নখোকে দিবার জন্য তিনি প্রতিজনের উপর কর ধার্য্য করিয়া তদনুসারে দেশের লোকদের কাছে ঐ রৌপ্য ও স্বর্ণ আদায় করিলেন। যিহোয়াকীম পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে এগার বৎসর রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম সবীদা, তিনি রূমানিবাসী পদায়ের কন্যা। যিহোয়াকীম আপন পিতৃপুরুষদের সমস্ত কর্ম্মানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতেন। তাঁহার সময়ে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর আসিলেন; যিহোয়াকীম তিন বৎসর যাবৎ তাঁহার দাস ছিলেন, পরে তিনি ফিরিলেন, ও তাঁহার বিদ্রোহী হইলেন। তখন সদাপ্রভু তাঁহার বিরুদ্ধে কল্‌দীয়দের, অরামীয়দের, মোয়াবীয়দের ও অম্মোন-সন্তানগণের অনেক লুটকারী সৈন্যদল প্রেরণ করিলেন; সদাপ্রভু আপন দাস ভাববাদিগণের দ্বারা যে বাক্য বলিয়াছিলেন, তদনুসারে যিহূদাকে বিনষ্ট করিবার জন্য তাহার বিরুদ্ধে তাহাদিগকে পাঠাইলেন। বাস্তবিক সদাপ্রভুরই আজ্ঞানুসারে যিহূদার প্রতি এইরূপ ঘটিল, যেন তাহারা তাঁহার সম্মুখ হইতে দূরীকৃত হয়; ইহার কারণ মনঃশির পাপ সকল, তাঁহার কৃত সমস্ত কার্য্য, এবং তাঁহার কৃত নির্দ্দোষদিগের রক্তপাত; কারণ তিনি নির্দ্দোষদের রক্তে যিরূশালেমকে পরিপূর্ণ করিয়াছিলেন, আর সদাপ্রভু ক্ষমা করিতে চাহিলেন না। যিহোয়াকীমের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সমস্ত কার্য্যের বিবরণ যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? পরে যিহোয়াকীম আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র যিহোয়াখীন তাঁহার পদে রাজা হইলেন। তাহার পরে মিসর-রাজ আপন দেশের বাহিরে আর আসিলেন না, কেননা মিসরের স্রোত অবধি ফরাৎ নদী পর্য্যন্ত মিসর-রাজের যত অধিকার ছিল, সে সকলই বাবিল-রাজ হরণ করিয়াছিলেন। যিহোয়াখীন আঠার বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে তিন মাস রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম নহুষ্টা, তিনি যিরূশালেম-নিবাসী ইল্‌নাথনের কন্যা। যিহোয়াখীন আপন পিতার সমস্ত ক্রিয়ানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতেন। ঐ সময়ে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরের দাসগণ যিরূশালেমে আসিল, আর নগর অবরুদ্ধ হইল। যখন তাঁহার দাসগণ নগর অবরোধ করিতেছিল, তখন বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর নগরের নিকটে আসিলেন। পরে যিহূদা-রাজ যিহোয়াখীন, তাঁহার মাতা, দাসগণ, প্রধানবর্গ ও কর্ম্মচারিগণ বাবিল-রাজের নিকটে বাহিরে গেলেন; আর বাবিল-রাজ আপন রাজত্বের অষ্টম বৎসরে তাঁহাকে ধরিলেন। আর সদাপ্রভু যেমন বলিয়াছিলেন, তেমনি তিনি তথা হইতে সদাপ্রভুর গৃহের সমস্ত ধন ও রাজবাটীর সমস্ত ধন লইয়া গেলেন, এবং ইস্রায়েল রাজ শলোমন সদাপ্রভুর মন্দিরে যে সকল স্বর্ণময় পাত্র নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, সে সকলও কাটিয়া ফেলিলেন। আর তিনি যিরূশালেমের সমস্ত লোক, সমস্ত প্রধান লোক ও সমস্ত বলবান বীর, অর্থাৎ দশ সহস্র বন্দি, এবং সমস্ত শিল্পকার ও কর্ম্মকারকে লইয়া গেলেন; দেশের দীন দরিদ্র লোক ব্যতিরেকে আর কেহ অবশিষ্ট থাকিল না। তিনি যিহোয়াখীনকে বাবিলে লইয়া গেলেন; এবং রাজার মাতাকে, রাজার ভার্য্যাদিগকে, তাঁহার কর্ম্মচারীদিগকে ও দেশের পরাক্রমী লোকদিগকে যিরূশালেম হইতে বাবিলে বন্দি করিয়া লইয়া গেলেন। আর বাবিল-রাজ সমস্ত পরাক্রমী লোককে অর্থাৎ সপ্ত সহস্র লোককে, এবং শিল্পকার ও কর্ম্মকার এক সহস্রকে বন্দি করিয়া বাবিলে লইয়া গেলেন; তাহারা সকলে বীর্য্যবান্‌ ও রণদক্ষ লোক ছিল। পরে বাবিলের রাজা যিহোয়াখীনের পিতৃব্য মত্তনিয়কে তাঁহার পদে রাজা করিলেন, ও তাঁহার নাম পরিবর্ত্তন করিয়া সিদিকিয় রাখিলেন। সিদিকিয় একুশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং এগার বৎসর কাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম হমূটল, তিনি লিব্‌না-নিবাসী যিরমিয়ের কন্যা। যিহোয়াকীমের সকল ক্রিয়ানুসারে সিদিকিয়ও সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই করিতেন। কারণ সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রযুক্ত, যাবৎ তিনি তাহাদিগকে আপনার সাক্ষাৎ হইতে দূরে ফেলিয়া না দিলেন, তাবৎ যিরূশালেমে ও যিহূদায় এইরূপ ঘটনা ঘটিল। আর সিদিকিয় বাবিল-রাজের বিদ্রোহী হইলেন। পরে তাঁহার রাজত্বের নবম বৎসরে, দশম মাসে, মাসের দশম দিনে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর ও তাঁহার সমস্ত সৈন্য যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আসিয়া শিবির স্থাপন করিলেন, ও তাহার বিরুদ্ধে চারিদিকে গড় গাঁথিলেন। সিদিকিয়ের একাদশ বৎসর পর্য্যন্ত নগর অবরুদ্ধ থাকিল। পরে [চতুর্থ] মাসের নবম দিনে নগরে মহাদুর্ভিক্ষ হইল, দেশের লোকদের জন্য খাদ্য দ্রব্য কিছুই রহিল না। পরে নগর এক স্থানে ভগ্ন হইল, আর সমস্ত যোদ্ধা রাত্রিতে রাজার উদ্যানের নিকটস্থ দুই প্রাচীরের মধ্যবর্ত্তী দ্বারের পথ দিয়া পলায়ন করিল; তখন কল্‌দীয়েরা নগরের বিরুদ্ধে চারিদিকে ছিল। আর [রাজা] অরাবা তলভূমির পথে গেলেন। কিন্তু কলদীয়দের সৈন্য রাজার পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়া যিরীহোর তলভূমিতে তাঁহাকে ধরিয়া ফেলিল, তাহাতে তাঁহার সকল সৈন্য তাঁহার নিকট হইতে ছিন্নভিন্ন হইল। তখন তাহারা রাজাকে ধরিয়া রিব্‌লাতে বাবিল-রাজের নিকটে লইয়া গেল; পরে তাঁহার প্রতি দণ্ডাজ্ঞা হইল। তাহারা সিদিকিয়ের সাক্ষাতেই তাঁহার পুত্রগণকে বধ করিল, এবং সিদিকিয়ের চক্ষু উৎপাটন করিল ও তাঁহাকে শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া বাবিলে লইয়া গেল। পরে পঞ্চম মাসে, মাসের সপ্তম দিনে, বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরের ঊনবিংশ বৎসরে, বাবিল-রাজের দাস নবূষরদন নামক রক্ষকসেনাপতি যিরূশালেমে আসিলেন; তিনি সদাপ্রভুর গৃহ ও রাজবাটী পোড়াইয়া দিলেন, যিরূশালেমের সকল গৃহ, বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকাও আগুন দিয়া পোড়াইয়া দিলেন। আর সেই রক্ষক-সেনাপতির অনুগামী কল্‌দীয় সমস্ত সৈন্য যিরূশালেমের চারিদিকে প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিল। আর রক্ষকসেনাপতি নবূষরদন নগরের অবশিষ্ট লোকদিগকে ও যাহারা পক্ষান্তরে গিয়াছিল, বাবিল-রাজের পক্ষ হইয়াছিল, তাহাদিগকে এবং অবশিষ্ট সাধারণ লোকদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া গেলেন। কেবল দ্রাক্ষাক্ষেত্র পালন ও ভূমি কর্ষণার্থে রক্ষক-সেনাপতি কতকগুলি দীন দরিদ্র লোককে দেশে রাখিলেন। আর সদাপ্রভুর গৃহের পিত্তলময় দুই স্তম্ভ ও সদাপ্রভুর গৃহের পীঠ সকল ও পিত্তলময় সমুদ্রপাত্র কল্‌দীয়েরা খণ্ড খণ্ড করিয়া, সে সকল পিত্তল বাবিলে লইয়া গেল; আর স্থালী, হাতা, কর্ত্তরী ও চমস, আর সমস্ত পরিচর্য্যার্থক পিত্তলময় পাত্র লইয়া গেল। আর অঙ্গারধানী ও বাটী সকল, স্বর্ণময় পাত্রের স্বর্ণ ও রৌপ্যময় পাত্রের রৌপ্য, রক্ষকসেনাপতি লইয়া গেলেন। যে দুই স্তম্ভ, এক সমুদ্রপাত্র ও পীঠ সকল শলোমন সদাপ্রভুর গৃহের জন্য নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, সে সকল পাত্রের পিত্তল অপরিমিত ছিল। তাহার এক স্তম্ভ আঠার হস্ত উচ্চ, ও তাহার উপরে পিত্তলময় এক মাথলা ছিল, আর সেই মাথলা তিন হস্ত উচ্চ, এবং মাথলার উপরে চারিদিকে জালকার্য্য ও দাড়িম্বাকৃতি সকলই পিত্তলময় ছিল; এবং জালকার্য্য শুদ্ধ দ্বিতীয় স্তম্ভও ইহার তুল্য ছিল। পরে রক্ষকসেনাপতি প্রধান যাজক সরায়কে, দ্বিতীয় যাজক সফনিয়কে ও তিন জন দ্বারপালকে ধরিলেন। আর তিনি নগর হইতে যোদ্ধাদের উপরে নিযুক্ত এক জন কর্ম্মচারীকে, এবং যাঁহারা রাজার মুখদর্শন করিতেন, তাঁহাদের মধ্যে নগরে প্রাপ্ত পাঁচ জন লোককে, আর লেখককে, দেশের লোক সংগ্রহকারী সেনাপতিকে এবং নগরে প্রাপ্ত দেশীয় ষাট জনকে ধরিলেন। নবূষরদন রক্ষকসেনাপতি তাঁহাদিগকে ধরিয়া রিব্‌লাতে বাবিল-রাজের কাছে লইয়া গেলেন। আর বাবিল-রাজ হমাৎ দেশস্থ রিব্‌লাতে তাঁহাদিগকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন। এইরূপে যিহূদা আপন দেশ হইতে বন্দি হইয়া নীত হইল। যিহূদা দেশে যে লোকেরা অবশিষ্ট রহিল, যাহাদিগকে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর রাখিয়া গিয়াছিলেন, তাহাদের উপরে তিনি শাফনের পৌত্র অহীকামের পুত্র গদলিয়কে শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করিলেন। পরে বাবিল-রাজ গদলিয়কে শাসনকর্ত্তা করিয়াছেন, এই কথা শুনিয়া সেনাপতিগণ ও তাঁহাদের লোকেরা, অর্থাৎ নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল, কারেয়ের পুত্র যোহানন, নটোফাতীয় তন্‌হূমতের পুত্র সরায়, ও মাখাথীয়ের পুত্র যাসনিয় এবং তাঁহাদের লোকেরা মিস্পাতে গদলিয়ের নিকটে আসিলেন। আর গদলিয় তাঁহাদের কাছে ও তাঁহাদের লোকদের কাছে দিব্য করিয়া কহিলেন, তোমরা কল্‌দীয়দের দাসগণ হইতে ভীত হইও না; দেশে বাস করিয়া বাবিল-রাজের দাসত্ব স্বীকার কর, তোমাদের মঙ্গল হইবে। কিন্তু সপ্তম মাসে রাজবংশজাত ইলীশামার পৌত্র নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল ও তাঁহার সঙ্গী দশ জন আসিলেন, আর গদলিয়কে এবং যে যিহূদীরা ও কল্‌দীয়েরা তাঁহার সহিত মিস্পাতে ছিল, তাহাদিগকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন। পরে ছোট বড় সমস্ত লোক ও সেনাপতিগণ উঠিয়া মিসরে গেলেন, কেননা তাঁহারা কল্‌দীয়দের হইতে ভীত হইলেন। পরে যিহূদা-রাজ যিহোয়াখীনের বন্দিত্বের সাঁইত্রিশ বৎসরে, দ্বাদশ মাসে, মাসের সাতাশ দিবসে, বাবিল-রাজ ইবিল-মরোদক যে বৎসরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, সেই বৎসরে তিনি যিহূদা-রাজ যিহোয়াখীনের মস্তক কারাগার হইতে উঠাইলেন। আর তিনি তাঁহাকে প্রীতিবাক্য কহিয়া, তাঁহার সহিত বাবিলে যত রাজা ছিলেন, সকলের আসন হইতে তাঁহার আসন উচ্চে স্থাপন করিলেন। আর ইনি আপন কারাবাসের বস্ত্র পরিবর্ত্তন করিলেন, এবং যাবজ্জীবন প্রতিনিয়ত তাঁহার সম্মুখে ভোজন পান করিতে লাগিলেন। তাঁহার দিনপাতের জন্য রাজার আজ্ঞাতে তাঁহাকে নিয়ত বৃত্তি দেওয়া যাইত, তাঁহার সমস্ত জীবন ব্যাপিয়া তাঁহাকে দিনের উপযুক্ত দ্রব্য প্রতিদিন দেওয়া যাইত। আদম, শেখ, ইনোশ, কৈনন, মহললেল, যেরদ, হনোক, মথূশেলহ, লেমক, নোহ, শেম, হাম, ও যেফৎ। যেফতের সন্তান—গোমর, মাগোগ, মাদয়, যবন, তুবল, মেশক ও তীরস। গোমরের সন্তান—অস্কিনস, দীফৎ ও তোগর্ম। যবনের সন্তান—ইলীশা, তর্শীশ, কিত্তীম ও রোদানীম। হামের সন্তান—কূশ, মিসর, পূট ও কনান। কূশের সন্তান—সবা, হবীলা, সপ্তা, রয়মা ও সপ্তকা। রয়মার সন্তান—শিবা ও দদান। নিম্রোদ কূশের পুত্র; তিনি পৃথিবীতে পরাক্রমী হইতে লাগিলেন। আর লূদীয়, অনামীয়, লহাবীয়, নপ্তুহীয়, পথ্রোষীয়, পলেষ্টীয়দের আদিপুরুষ কস্‌লূহীয়, এবং কপ্তোরীয়, এই সকল মিসরের সন্তান। এবং কনানের জ্যেষ্ঠ পুত্র সীদোন, তাহার পর হেৎ, যিবূষীয়, ইমোরীয়, গির্গাশীয়, হিব্বীয়, অর্কীয়, সীনীয়, অর্বদীয়, সমারীয় ও হমাতীয়। শেমের সন্তান—এলম, অশূর, অর্ফক্‌ষদ, লূদ ও অরাম এবং ঊষ, হূল, গেথর ও মেশেক। আর অর্ফক্‌ষদ শেলহের জন্ম দিলেন, ও শেলহ এবরের জন্ম দিলেন। এবরের দুই পুত্র, একটীর নাম পেলগ [বিভাগ], কেননা তৎকালে পৃথিবী বিভক্ত হইল; তাঁহার ভ্রাতার নাম যক্তন। আর যক্তন অল্‌মোদদ, শেলফ, হৎসর্মাবৎ, যেরহ, হদোরাম, ঊসল, দিক্ল, এবল, অবীমায়েল, শিবা, ওফীর, হবীলা, ও যোবরের জন্ম দিলেন। ইহারা সকলে যক্তনের সন্তান। শেম, অর্ফক্‌ষদ, শেলহ, এবর, পেলগ, রিয়ূ, সরূগ, নাহোর, তেরহ, অব্রাম, অর্থাৎ অব্রাহাম। অব্রাহামের পুত্র ইস্‌হাক ও ইশ্মায়েল। তাঁহাদের বংশাবলি এই। ইশ্মায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্র নবায়োৎ, পরে কেদর, অদ্‌বেল, মিব্‌সম, মিশ্‌ম, দূমা, মসা, হদদ, তেমা, যিটূর, নাফীশ ও কেদমা; ইহারা ইশ্মায়েলের সন্তান। অব্রাহামের উপপত্নী কটূরার গর্ভজাত সন্তান—সিম্রণ, যক্‌ষণ, মদান, মিদিয়ন, যিশ্‌বক ও শূহ। যক্‌ষণের সন্তান—শিবা ও দদান। মিদিয়নের সন্তান—ঐফা, এফর, হনোক, অবীদ ও ইল্‌দায়া; ইহারা সকলে কটূরার সন্তান। অব্রাহামের পুত্র ইস্‌হাক। ইস্‌হাকের পুত্র—এষৌ ও ইস্রায়েল। এষৌর সন্তান—ইলীফস, রূয়েল, যিয়ূশ, যালম ও কোরহ। ইলীফসের সন্তান—তৈমন, ওমার, সফী, গয়িতম, কনস, তিম্ন ও অমালেক। রূয়েলের সন্তান—নহৎ, সেরহ, শম্ম, ও মিসা। সেয়ীরের সন্তান—লোটন, শোবল, সিবিয়োন, অনা, দিশোন, এৎসর ও দীশন। লোটনের সন্তান—হোরি ও হোমম; এবং তিম্না লোটনের ভগিনী। শোবলের সন্তান—অলিয়ন, মানহৎ, এবল, শফী ও ওনম। সিবিয়োনের সন্তান—অয়া ও অনা। অনার সন্তান দিশোন। দিশোনের সন্তান—হম্রণ, ইশ্‌বন, যিত্রণ ও করাণ। এৎসরের সন্তান—বিল্‌হন, সাবন, যাকন। দীশনের সন্তান—ঊষ ও অরাণ। ইস্রায়েল-সন্তানদের উপরে কোন রাজা রাজত্ব করিবার পূর্ব্বে ইহাঁরা ইদোম দেশের রাজা ছিলেন; বিয়োরের পুত্র বেলা; তাঁহার রাজধানীর নাম দিন্‌হাবা। আর বেলা মরিলে পর তাঁহার পদে বস্রা-নিবাসী সেরহের পুত্র যোবব রাজত্ব করেন। আর যোবব মরিলে পর তৈমন দেশীয় হূশম তাঁহার পদে রাজত্ব করেন। আর হূশম মরিলে পর বদদের পুত্র যে হদদ মোয়াব ক্ষেত্রে মিদিয়নকে আঘাত করিয়াছিলেন, তিনি তাঁহার পদে রাজত্ব করেন; তাঁহার রাজধানীর নাম অবীৎ ছিল। আর হদদ্‌ মরিলে পর মস্রেকা-নিবাসী সম্ল তাঁহার পদে রাজত্ব করেন। আর সম্ল মরিলে পর [ফরাৎ] নদীর নিকটবর্ত্তী রহোবোৎ-নিবাসী শৌল তাঁহার পদে রাজত্ব করেন। আর শৌল মরিলে পর অক্‌বোরের পুত্র বাল্‌-হানন তাঁহার পদে রাজত্ব করেন। আর বাল্‌-হানন মরিলে পর হদদ তাঁহার পদে রাজত্ব করেন; তাঁহার রাজধানীর নাম পায়, ও ভার্য্যার নাম মহেটবেল; সে মট্রেদের কন্যা ও মেষাহবের দৌহিত্রী। পরে হদদ মরিলেন। ইদোমের দলপতিদের নাম; দলপতি তিম্ন, দলপতি অলিয়া, দলপতি যিথেৎ, দলপতি অহলীবামা, দলপতি এলা, দলপতি পীনোন, পদপতি কনস, দলপতি তৈমন, দলপতি মিব্‌সর, দলপতি মগ্‌দীয়েল, দলপতি ঈরম; ইহাঁরা ইদোমের দলপতি। ইস্রায়েলের পুত্রগণ এই; রূবেণ, শিমিয়োন লেবি ও যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন, দান, যোষেফ ও বিন্যামীন, নপ্তালি, গাদ ও আশের। যিহূদার সন্তান—এর, ওনন ও শেলা; তাঁহার এই তিন পুত্র কানানীয়া বৎ-শূয়ার গর্ভে জন্মিয়াছিল। যিহূদার জ্যেষ্ঠ পুত্র এর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে দুষ্ট হওয়াতে তিনি তাহাকে মারিয়া ফেলিলেন। পরে যিহূদার পুত্রবধূ তামর তাঁহার ঔরসে পেরসকে ও সেরহকে প্রসব করিল; সর্ব্বশুদ্ধ যিহূদার পাঁচ পুত্র। পেরসের সন্তান—হিষ্রোণ ও হামূল। সেরহের সন্তান—শিম্রি, এথন, হেমন, কল্‌কোল ও দারা, সকলে পাঁচ জন। কর্মির পুত্র আখর বর্জ্জিত দ্রব্যের বিষয়ে সত্যলঙ্ঘন করিয়া ইস্রায়েলের কন্টক হইয়া ছিল। এথনের পুত্র অসরিয়। আর হিষ্রোণের ঔরসজাত পুত্র যিরহমেল, রাম, ও কালুবায়। রামের সন্তান অম্মীনাদব, ও অম্মীনাদবের পুত্র যিহূদা সন্তানগণের অধ্যক্ষ নহশোন। আর নহশোনের পুত্র সল্‌মোন, ও সল্‌মোনের পুত্র বোয়স। বোয়সের পুত্র ওবেদ ও ওবেদের পুত্র যিশয়। যিশয়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র ইলীয়াব, দ্বিতীয় অবীনাদব, তৃতীয় শম্ম, চতুর্থ নথলেন, পঞ্চম রদ্দয়, ষষ্ঠ ওৎসম, সপ্তম দায়ূদ। আর তাঁহাদের ভগিনী সরূয়া ও অবীগল। সরূয়ার পুত্র—অবীশয়, যোয়াব ও অসাহেল, তিন জন। আর অবীগলের পুত্র অমাসা; সেই অমাসার পিতা ইশ্মায়েলীয় যেথর। আর হিষ্রোণের পুত্র কালেব আপন স্ত্রী অসূবার গর্ভে ও যিরিয়োতের গর্ভে কয়েকটী সন্তানের জন্ম দিল। অসূবার পুত্রগণ এই; যেশর, শোবব ও অর্দোন। পরে অসূবা মরিলে কালেব ইফ্রাথাকে বিবাহ করিল, সে তাহার ঔরসে হূরকে প্রসব করিল। হূরের পুত্র ঊরি, ঊরির পুত্র বৎসলেল। পরে হিষ্রোণ গিলিয়দের পিতা মাখীরের কন্যার কাছে গমন করিল, ষাট বৎসর বয়সে সে তাহাকে বিবাহ করিল, তাহাতে সে স্ত্রী তাহার ঔরসে সগূবকে প্রসব করিল। সগূবের পুত্র যায়ীর, গিলিয়দ দেশে তাঁহার তেইশটী নগর ছিল। আর গশূর ও অরাম তাহাদের হইতে যায়ীরের গ্রাম সকল হরণ করিল, এবং তৎসঙ্গে কনাৎ ও তাহার উপনগর সকল, অর্থাৎ ষাট নগর [লইল]। ইহারা সকলে গিলিয়দের পিতা মাখীরের সন্তান। হিষ্রোণ কালেব-ইফ্রাথায় মরিলে পর হিষ্রোণের স্ত্রী অবিয়া তাঁহার জন্য তকোয়ের পিতা অস্‌হূরকে প্রসব করিল। হিষ্রোণের জ্যেষ্ঠ পুত্র যিরহমেলের এই সকল সন্তান; জ্যেষ্ঠ পুত্র রাম, পরে বূনা, ওরণ, ওৎসম ও অহিয়। অটারা নামে যিরহমেলের অন্য এক স্ত্রী ছিল, সে ওনমের মাতা। যিরহমেলের জ্যেষ্ঠ পুত্র রামের সন্তান—মাষ, যামীন ও একর। ওনমের সন্তান শম্ময় ও যাদা, এবং শম্ময়ের সন্তান নাদব ও অবীশূয়। অবীশূয়ের স্ত্রীর নাম অবীহয়িল; সে তাহার ঔরসে অহবান ও মোলীদকে প্রসব করিল। নাদবের সন্তান সেলদ ও অপ্পয়িম, কিন্তু সেলদ অপুত্রক হইয়া মরিল। অপ্পয়িমের পুত্র যিশী, ও যিশীর পুত্র শেশন, ও শেশনের পুত্র অহলয়। শম্ময়ের ভ্রাতা যাদার সন্তান যেথর ও যোনাথন; যেথর অপুত্রক হইয়া মরিলেন। যোনাথনের পুত্র পেলৎ ও সাসা। ইহারা যিরহমেলের সন্তান। শেশনের পুত্র ছিল না, কেবল কন্যা ছিল, আর যার্হা নামে শেশনের এক মিস্রীয় দাস ছিল। পরে শেশন আপনার দাস যার্হার সহিত আপন কন্যার বিবাহ দিল, আর সে তাহার ঔরসে অত্তয়কে প্রসব করিল। অত্তয়ের পুত্র নাথন, নাথনের পুত্র সাবদ; সাবদের পুত্র ইফ্‌লল, ইফ্‌ললের পুত্র ওবেদ; ওবেদের পুত্র যেহূ, যেহূর পুত্র অসরিয়; অসরিয়ের পুত্র হেলস, হেলসের পুত্র ইলীয়াসা; ইলীয়াসার পুত্র সিস্‌ময়, সিস্‌ময়ের পুত্র শল্লুম; শল্লুমের পুত্র যিকমিয়, ও যিকমিয়ের পুত্র ইলীশামা। যিরহমেলের ভ্রাতা কালেবের সন্তান; তাহার জ্যেষ্ঠ পুত্র মেশা, সে সীফের পিতা; এবং হিব্রোণের পিতা মারেশার সন্তানগণ। আর হিব্রোণের সন্তান—কোরহ, তপূহ, রেকম ও শেমা। শেমার পুত্র যর্কিয়মের পিতা রহম। রেকমের পুত্র শম্ময়। আর শম্ময়ের পুত্র মায়োন, এবং মায়োন বৈৎ-সুরের পিতা। আর কালেবের উপপত্নী ঐফা হারণকে, মোৎসাকে ও গাসেসকে প্রসব করিল, এবং হারণের সন্তান গাসেস। আর যেহদয়ের সন্তান রেগম, যোথম, গেসন, পেলট, ঐফা ও শাফ। কালেবের উপপত্নী মাখা শেবরকে ও তির্হনঃকে প্রসব করিল। আরও সে মদ্‌মন্নার পিতা শাফকে এবং মক্‌বেনার ও গিবিয়ার পিতা শিবাকে প্রসব করিল; আর কালেবের কন্যার নাম অক্‌ষা। কালেবের এই এই সন্তান; ইফ্রাথার জ্যেষ্ঠ পুত্র বিন্‌হূর; কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের পিতা শোবল; বৈৎলেহমের পিতা শল্‌ম, বৈৎ-গাদেরের পিতা হাফের। আর কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের পিতা শোবলের পুত্র হরোয়া, মনূহোতের অর্দ্ধাংশ। আর কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের গোষ্ঠী, যিত্রীয়, পূথীয়, শূমাথীয় ও মিশ্রায়ীয়গণ, ইহাদের হইতে সরাথীয় ও ইষ্টায়োলীয়েরা উৎপন্ন হইল। শল্‌মের সন্তান বৈৎলেহম ও নটোফাতীয়গণ, অট্রোৎ-বেৎযোয়াব, ও মনহতীয়দের অর্দ্ধাংশ, সরায়ীয়। আর যাবেষ-নিবাসী লেখকদের গোষ্ঠী, তিরিয়াথীয়গণ, শিমিয়থীয়গণ, সূখাথীয়গণ। ইহারা কীনীয় গোষ্ঠী, রেখবকুলের পিতা হম্মতের বংশজাত। দায়ূদের এই সকল পুত্র হিব্রোণে জন্মিল, জ্যেষ্ঠ পুত্র অম্নোন, সে যিষ্রিয়েলীয়া অহীনোয়মের গর্ভজাত; দ্বিতীয় দানিয়েল, সে কর্মিলীয়া অবীগলের গর্ভজাত; তৃতীয় অবশালোম, সে গশূরের তল্‌ময় রাজার কন্যা মাখার গর্ভজাত; চতুর্থ আদোনিয়, সে হগীতের গর্ভজাত; পঞ্চম শফটিয়, সে অবীটলের গর্ভজাত; ষষ্ঠ যিত্রিয়ম, সে তাঁহার ভার্য্যা ইগ্লার গর্ভজাত। হিব্রোণে তাঁহার ছয় পুত্র জন্মে, এবং দায়ূদ সেই স্থানে সাত বৎসর ছয় মাস রাজত্ব করেন, পরে যিরূশালেমে তেত্রিশ বৎসর রাজত্ব করেন। আর তাঁহার এই সকল পুত্র যিরূশালেমে জন্মে; শিমিয়, শোবব, নাথন ও শলোমন, এই চারি জন অম্মীয়েলের কন্যা বৎ-সূয়ার সন্তান। আর যিভর, ইলীশামা, ইলীফেলট, নোগহ, নেফগ, যাফিয়, ইলীশামা, ইলীয়াদা ও ইলীফেলট, এই নয় জন। ইহারা সকলে দায়ূদের পুত্র, উপপত্নীদের সন্তানগণ হইতে ইহারা ভিন্ন; আর তামর ইহাদের ভগিনী। শলোমনের পুত্র রহবিয়াম; তাঁহার পুত্র অবিয়; তাঁহার পুত্র আসা; তাঁহার পুত্র যিহোশাফট; তাঁহার পুত্র যোরাম; তাঁহার পুত্র অহসিয়; তাঁহার পুত্র যোয়াশ; তাঁহার পুত্র অমৎসিয়; তাঁহার পুত্র অসরিয়; তাঁহার পুত্র যোথম; তাঁহার পুত্র আহস; তাঁহার পুত্র হিষ্কিয়; তাঁহার পুত্র মনঃশি; তাঁহার পুত্র আমোন; তাঁহার পুত্র যোশিয়। যোশিয়ের সন্তান—জ্যেষ্ঠ যোহানন, দ্বিতীয় যিহোয়াকীম, তৃতীয় সিদিকিয়, চতুর্থ শল্লুম; এবং যিহোয়াকীমের পুত্র যিকনিয়, অপর পুত্র সিদিকিয়। বন্দি যিকনিয়ের সন্তান—তাঁহার পুত্র শল্টীয়েল, আর মল্‌কীরাম, পদায়, শিনৎসর, যিকমিয়, হোশামা ও নদবিয়। পদায়ের সন্তান সরুব্বাবিল ও শিমিয়ি; এবং সরুব্বাবিলের সন্তান—মশুল্লম ও হনানিয়, আর শলোমীৎ তাহাদের ভগিনী। আর হশুবা, ওহেল, বেরিখিয়, হসদিয় ও যুবশ-হেষদ, এই পাঁচ জন। আর হনানিয়ের সন্তান—পলটিয় ও যিশায়াহ; রফায়ের পুত্রগণ, অর্ণনের পুত্রগণ, ওবদিয়ের পুত্রগণ, শখনিয়ের পুত্রগণ। শখনিয়ের সন্তান—শময়িয়; আর শময়িয়ের সন্তান—হটূশ, যিগাল, বারীহ, নিয়রিয়, শাফট, ছয় জন। আর নিয়রিয়ের সন্তান—ইলীয়ৈনয়, হিষ্কিয় ও অস্রীকাম; তিন জন। আর ইলীয়ৈনয়ের সন্তান—হোদবিয়, ইলীয়াশীব, পলায়ঃ অক্কুব, যোহানন, দলায় ও অনানি, সাত জন। যিহূদার সন্তান—পেরস, হিষ্রোণ, কর্মী, হূর ও শোবল। আর শোবলের সন্তান রায়া, রায়ার সন্তান যহৎ ও যহতের সন্তান অহূময় ও লহদ; এই সকল সরাথীয় গোষ্ঠী। আর এই সকল ঐটমের পিতার সন্তান—যিষ্রিয়েল, যিশ্মা, যিদ্‌বশ; তাঁহাদের ভগিনীর নাম হৎসলিল-পোনী। আর গাদোরের পিতা পনূয়েল, হূশের পিতা এসর। ইহারা বৈৎলেহমের পিতা ইফ্রাথার জ্যেষ্ঠ পুত্র হূরের সন্তান। তকোয়ের পিতা অস্‌হূরের দুই স্ত্রী ছিল, হিলা ও নারা। নারা তাহার ঔরসে অহুষমকে, হেফরকে, তৈমিনিকে ও অহষ্টরিকে প্রসব করিল। এই সকল নারার সন্তান। আর হিলার সন্তান—সেরৎ, যিৎসোহর ও ইৎনন। আর হক্কোষের সন্তান—আনূব ও সোবেবা, এবং হারুমের পুত্র অহর্হলের গোষ্ঠী সকল। আর যাবেষ আপন ভ্রাতৃগণের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সম্ভ্রান্ত ছিলেন; তাঁহার মাতা তাঁহার নাম যাবেষ রাখিয়া বলিয়াছিলেন, আমি ত দুঃখেতে প্রসব করিলাম। আর যাবেষ ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ডাকিলেন, বলিলেন, আহা, তুমি সত্যই আমাকে আশীর্ব্বাদ কর, আমার অধিকার বৃদ্ধি কর, ও তোমার হস্ত আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকুক; আর আমি যেন দুঃখ প্রাপ্ত না হই, এই জন্য মন্দ হইতে আমাকে রক্ষা কর। তাহাতে ঈশ্বর তাঁহার যাচিত বিষয় দান করিলেন। শূহের ভ্রাতা কলূবের পুত্র মহীর, সে ইষ্টোনের পিতা। ইষ্টোনের পুত্র বৈৎরাফা ও পাসেহ, এবং ঈরনাহসের পিতা তহিন্ন; এই সকল রেকার লোক। আর কনসের পুত্র অৎনীয়েল ও সরায়, এবং অৎনীয়েলের পুত্র হথৎ। আর মিয়োনোথয়ের পুত্র অফ্রা সরায়ের পুত্র শিল্পকারদের উপত্যকা নিবাসিগণের পিতা যোয়াব, কেননা তাহারা শিল্পকার ছিল। আর যিফুন্নির পুত্র কালেবের সন্তান—ঈরূ, এলা ও নয়ম, এবং এলার সন্তানগণ, ও কনস। আর যিহলিলেলের সন্তান—সীফ, সীফা, তীরিয় ও অসারেল। আর ইষ্রার সন্তান—যেথর, মেরদ, এফর ও যালোন, এবং [মেরদের মিস্রীয়া স্ত্রীর] গর্ভে মরিয়ম, শম্ময় ও ইষ্টিমোয়ের পিতা যিশ্‌বহ জন্মিল। আর তাহার যিহূদীয়া স্ত্রী গদোরের পিতা যেরদকে, সোখোর পিতা হেবরকে, ও সানোহের পিতা যিকুথীয়েলকে প্রসব করিল। উহারা ফরৌণের কন্যা বিথিয়ার সন্তান, যাহাকে মেরদ বিবাহ করিয়াছিল। নহমের ভগিনী হোদিয়ের স্ত্রীর সন্তান গর্ম্মীয় কিয়ীলার পিতা ও মাখাথীয় ইষ্টিমোয়। আর শীমোনের সন্তান—অম্নোন, রিণ্ণ, বিন্‌-হানন, তীলোন। আর যিশীর সন্তান সোহেৎ ও বিন্‌-সোহেৎ। যিহূদার পুত্র শেলার সন্তান—লেকার পিতা এর, ও মারেশার পিতা লাদা, এবং অসবেয়ের কুলজাত যে লোকেরা মসীনাবস্ত্র বুনিত, তাহাদের সকল গোষ্ঠী, আর যোকীম ও কোষেবার লোক এবং যোয়াশ ও সারফ নামে মোয়াবের দুই শাসনকর্ত্তা, ও যাশূবিলেহম। এ অতি পুরাতন কথা। ইহারা কুম্ভকার ছিল, এবং নতায়ীমে ও গদেরায় বাস করিত; তাহারা রাজার কার্য্য করণার্থে তথায় তাঁহার নিকটে বাস করিত। শিমিয়োনের সন্তান—নমূয়েল, যামীন, যারীব, সেরহ, শৌল। তাহার পুত্র শল্লুম, তাহার পুত্র মিব্‌সম, তাহার পুত্র মিশ্‌ম। মিশ্‌মের সন্তান—তাহার পুত্র হম্মুয়েল, তাহার পুত্র শক্কূর, তাহার পুত্র শিময়ি। শিময়ির ষোল পুত্র ও ছয় কন্যা ছিল, কিন্তু তাহার ভ্রাতাদের অনেক সন্তান ছিল না, এবং তাহাদের সমস্ত গোষ্ঠী যিহূদা-সন্তানদের ন্যায় বৃদ্ধি পাইল না। তাহারা বের-শেবাতে, মোলাদাতে, হৎসর-শূয়ালে, বিল্‌হাতে, এৎসমে, তোলদে, বথূয়েলে, হর্ম্মাতে, সিক্লগে, বৈৎ-মর্কাবোতে, হৎসর-সূষীমে, বৈৎ-বিরীতে ও শারয়িমে বাস করিত; দায়ূদের রাজত্ব পর্য্যন্ত তাহাদের এই সকল নগর ছিল। আর তাহাদের গ্রাম ঐটম, ঐন, রিম্মোণ, তোখেন ও আশন, পাঁচ নগর; আর বাল পর্য্যন্ত এই সকল নগরের চতুর্দ্দিক্‌স্থিত সমস্ত গ্রাম তাহাদের ছিল। এই সকল তাহাদের নিবাসস্থান, আর তাহাদের নিজ বংশাবলি আছে। আর মশোবব, যম্লেক, অমৎসিয়ের পুত্র যোশঃ, আর যোয়েল, এবং অসীয়েলের সন্তান সরায়ের সন্তান যোশিবিয়ের সন্তান যেহূ; আর ইলিয়ৈনয়, যাকোবা, যিশোহায়, অসায়, অদীয়েল, যিশীমীয়েল ও বনায়; এবং শময়িয়ের সন্তান শিম্রির সন্তান যিদয়িয়ের সন্তান অলোনের সন্তান শিফির সন্তান সীষঃ; স্ব স্ব নামে উল্লিখিত এই লোকেরা আপন আপন গোষ্ঠীর মধ্যে অধ্যক্ষ ছিল, এবং ইহাদের সকল পিতৃকুল অতিশয় বৃদ্ধি পাইল। তাহারা আপনাদের পশুপালের জন্য চরাণির অন্বেষণে গদোরের প্রবেশস্থানে উপত্যকার পূর্ব্বপার্শ্ব পর্য্যন্ত গেল। তাহারা বহুতৃণযুক্ত উত্তম চরাণি পাইল, আর সে দেশ প্রশস্ত, প্রশান্ত ও নির্ব্বিরোধ ছিল; কারণ হাম বংশীয়েরা পূর্ব্বে সেই স্থানে বাস করিত। যিহূদার হিষ্কিয় রাজার সময়ে স্ব স্ব নামে লিখিত ঐ লোকেরা গিয়া সেই লোকদের তাম্বু ও তথায় প্রাপ্ত মিয়ূনীয়দিগকে আঘাত করিয়া নিঃশেষে বিনষ্ট করিল; অদ্যাপি সেইরূপ আছে; পরে আপনারা উহাদের পরিবর্ত্তে বসতি করিল, কেননা সে স্থানে তাহাদের পালের জন্য চরাণি ছিল। আর তাহাদের কতকগুলি লোক, অর্থাৎ শিমিয়োন-সন্তানদের মধ্যে পাঁচ শত লোক যিশীর সন্তান পলটিয়, নিয়রিয়, রফায়িয় ও উষীয়েলকে সেনাপতি করিয়া সেয়ীর পর্ব্বতে গেল। আর অমালেকীয়দের যে লোকেরা পলায়ন দ্বারা রক্ষা পাইয়াছিল, তাহাদিগকে আঘাত করিয়া সেই স্থানে বসতি করিল; অদ্যাপি করিতেছে। ইস্রায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্র রূবেণের সন্তান—রূবেণ জ্যেষ্ঠ ছিলেন বটে, কিন্তু তিনি আপন পিতার শয্যা অশুচি করিয়াছিলেন, এই জন্য তাঁহার জ্যেষ্ঠাধিকার ইস্রায়েলের পুত্র যোষেফের সন্তানদিগকে দেওয়া গেল, আর বংশাবলি জ্যেষ্ঠাধিকার অনুসারে উল্লেখ করা হয় না। কারণ যিহূদা আপন ভ্রাতৃগণের মধ্যে পরাক্রমী হইল, এবং তাহা হইতে নায়ক উৎপন্ন হইলেন, কিন্তু জ্যেষ্ঠাধিকার যোষেফের হইল। ইস্রায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্র রূবেণের সন্তান—হনোক ও পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্মী। যোয়েলের সন্তান—তাহার পুত্র শিময়িয়, তাহার পুত্র গোগ, তাহার পুত্র শিমিয়ি; তাহার পুত্র মীখা, তাহার পুত্র রায়া, তাহার পুত্র বাল; তাহার পুত্র বেরা; ইহাকে অশূর-রাজ তিল্‌গৎ-পিল্‌নেষর বন্দি করিয়া লইয়া গেলেন; সে রূবেণীয়দের অধ্যক্ষ ছিল। যখন তাহাদের বংশাবলি লেখা গেল, তখন আপন আপন গোষ্ঠী অনুসারে তাহার এই ভ্রাতৃগণ [উল্লিখিত হইল]; প্রধান যিয়ীয়েল ও সখরিয়, আর যোয়েলের সন্তান শেমার সন্তান আসসের সন্তান বেলা; সে অরোয়েরে নবো ও বাল্‌-মিয়োন পর্য্যন্ত বাস করিত। আর পূর্ব্বদিকে সে ফরাৎ নদী হইতে [বিস্তৃত] প্রান্তরের প্রবেশস্থান পর্য্যন্ত বাস করিত; কেননা গিলিয়দ দেশে তাহাদের পশুগণ বৃদ্ধি পাইয়াছিল। আর শৌলের সময়ে তাহারা হাগরীয়দের সহিত যুদ্ধ করিল, এবং ইহারা তাহাদের হস্তে নিপাতিত হইল; আর তাহারা ইহাদের তাম্বুতে গিলিয়দের পূর্ব্বদিকে সর্ব্বত্র বসতি করিল। আর গাদ-সন্তানগণ তাহাদের সম্মুখে সলখা পর্য্যন্ত বাশন দেশে বাস করিত। প্রধান যোয়েল, শাফম দ্বিতীয়, আর যানয় ও শাফট, ইহারা বাশনে থাকিত। আর তাহাদের পিতৃকুলজাত জ্ঞাতি মীখায়েল, মশুল্লম, শেবা, যোরায়, যাকন, সীয় ও এবর, সাত জন। বূষের সন্তান যহদোর সন্তান যিশীশয়ের সন্তান মীখায়েলের সন্তান গিলিয়দের সন্তান যারোহের সন্তান হূরির সন্তান যে অবীহয়িল, তাহারা সেই অবীহয়িলের সন্তান। গূনির সন্তান অব্দিয়েলের সন্তান অহি তাহাদের পিতৃকুলের প্রধান ছিল। তাহারা গিলিয়দে বাশনে ও তাথাকার উপনগর সকলে এবং তাহাদের সীমা পর্য্যন্ত শারোণের সমস্ত পরিসরে বাস করিত। যিহূদা-রাজ যোথমের ও ইস্রায়েল-রাজ যারবিয়ামের সময়ে তাহাদের সকলের বংশাবলি লিখিত হইয়াছিল। রূবেণ-সন্তানগণের, গাদীয়দের ও মনঃশির অর্দ্ধবংশের মধ্যে ঢাল ও খড়্‌গ ধারণে এবং ধনুক ব্যবহারে সমর্থ, যুদ্ধে নিপুন চোয়াল্লিশ সহস্র সাত শত ষাট জন বিক্রমী পুরুষ যুদ্ধযাত্রা-করিতে সমর্থ ছিল। তাহারা হাগরীয়দের সহিত এবং যিটূরের, নাফীশের ও নোদবের সহিত যুদ্ধ করিল। তাহারা তাহাদের বিপরীতে সাহায্য পাইল; তাহাতে হাগরীয়েরা ও তাহাদের সঙ্গী সমস্ত লোক তাহাদের হস্তে সমর্পিত হইল, কেননা তাহারা সংগ্রামে ঈশ্বরের কাছে ক্রন্দন করিল, আর তিনি তাহাদের প্রার্থনা শুনিলেন, যেহেতুক তাহারা তাঁহাতে বিশ্বাস করিল। আর তাহারা উহাদের পশুধন, অর্থাৎ পঞ্চাশ সহস্র উষ্ট্র, আড়াই লক্ষ মেষ, দুই সহস্র গর্দ্দভ এবং এক লক্ষ মানবপ্রাণী লইয়া গেল। বাস্তবিক অনেকে হত হইল, কারণ ঐ যুদ্ধ ঈশ্বর হইতে হইয়াছিল। আর তাহারা বন্দিত্বের সময় পর্য্যন্ত উহাদের স্থানে বাস করিল। আর মনঃশির অর্দ্ধবংশের সন্তানগণ সেই দেশে বসতি করিত; তাহারা বৃদ্ধি পাইয়া বাশন অবধি বাল হর্ম্মোণ, সনীর ও হর্ম্মোণ পর্ব্বত পর্য্যন্ত ব্যাপিয়া গিয়াছিল। এই সকল লোক তাহাদের পিতৃকুলপতি ছিলেন; এফর, যিশী, ইলীয়েল, অস্রীয়েল, যিরমিয়, হোদবিয় ও যহদীয়েল, এই সকল বলবান বীর ও বিখ্যাত লোক আপন আপন পিতৃকুলের পতি ছিলেন। ইহারা আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিল, এবং ঈশ্বর তদ্দেশীয় যে জাতিদিগকে তাহাদের সম্মুখ হইতে বিনষ্ট করিয়াছিলেন, তাহারা তাহাদের দেবগণের অনুগমনে ব্যভিচারী হইল। তাহাতে ইস্রায়েলের ঈশ্বর অশূর-রাজ পূলের মন, অশূর-রাজ তিল্‌গৎ-পিল্‌নেষরের মন উত্তেজিত করিলেন, আর তিনি তাহাদিগকে অর্থাৎ রূবেণীয় ও গাদীয়দিগকে এবং মনঃশির অর্দ্ধবংশকে লইয়া গিয়া হেলহে, হাবোরে, হারাতে ও গোষণ নদীতীরে উপস্থিত করিলেন; অদ্যাপি তাহারা সেই স্থানে আছে। লেবির সন্তান—গের্শোন, কহাৎ ও মরারি। কহাতের সন্তান—অম্রাম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল। অম্রামের সন্তান—হারোণ, মোশি এবং মরিয়ম। আর হারোণের সন্তান—নদাব ও অবীহূ, ইলিয়াসর ও ঈথামর। ইলিয়াসরের পুত্র পীনহস, পীনহসের পুত্র অবিশূয়, অবিশূয়ের পুত্র বুক্কি, বুক্কির পুত্র উষি, উষির পুত্র সরহিয়, সরহিয়ের পুত্র মরায়োৎ, মরায়োতের পুত্র অমরিয়, অমরিয়ের পুত্র অহীটূব, অহীটূবের পুত্র সাদোক, সাদোকের পুত্র অহীমাস, অহীমাসের পুত্র অসরিয়, অসরিয়ের পুত্র যোহানন, যোহাননের পুত্র অসরিয়; ইনি যিরূশালেমে শলোমনের নির্ম্মিত গৃহে যাজকীয় কর্ম্ম করিতেন। আর অসরিয়ের পুত্র অমরিয়, অমরিয়ের পুত্র অহীটূব, অহীটূবের পুত্র সাদোক, সাদোকের পুত্র শল্লুম, শল্লুমের পুত্র হিল্কিয়, হিল্কিয়ের পুত্র অসরিয়, অসরিয়ের পুত্র সরায় ও সরায়ের পুত্র যিহোষাদক। যে সময়ে সদাপ্রভু নবূখদ্‌নিৎসরের হস্ত দ্বারা যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদিগকে লইয়া গেলেন, তৎকালে এই যিহোষাদকও গেলেন। লেবির সন্তান—গোর্শোম, কহাৎ ও মরারি। আর গের্শোমের সন্তানদের নাম এই, লিব্‌নি ও শিমিয়ি। আর কহাতের সন্তান অম্রাম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল। মরারির সন্তান মহলি ও মূশি। আপন আপন পিতৃকুলানুসারে এই সকল লেবীয়দের গোষ্ঠী। গের্শোমের [সন্তান]; তাঁহার পুত্র লিব্‌নি, তাঁহার পুত্র যহৎ, তাঁহার পুত্র সিম্ম, তাঁহার পুত্র যোয়াহ, তাঁহার পুত্র ইদ্দো, তাঁহার পুত্র সেরহ, তাঁহার পুত্র যিয়ত্রয়। কহাতের সন্তান—তাঁহার পুত্র অম্মীনাদব, তাঁহার পুত্র কোরহ, তাঁহার পুত্র অসীর, তাঁহার পুত্র ইল্‌কানা, তাঁহার পুত্র ইবীয়াসফ, তাঁহার পুত্র অসীর, তাঁহার পুত্র তহৎ, তাঁহার পুত্র ঊরীয়েল, তাঁহার পুত্র ঊষিয়, তাঁহার পুত্র শৌল। ইল্‌কানার সন্তান অমাসয় ও অহীমোৎ। ইল্‌কানা; ইল্‌কানার সন্তান—তাঁহার পুত্র সোফী, তাঁহার পুত্র নহৎ, তাঁহার পুত্র ইলীয়াব, তাঁহার পুত্র যিরোহম, তাঁহার পুত্র ইল্‌কানা। শমূয়েলের সন্তান, তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র [যোয়েল] ও দ্বিতীয় অবিয়। মরারির সন্তান—মহলি, তাঁহার পুত্র লিব্‌নি, তাঁহার পুত্র শিমিয়ি, তাঁহার পুত্র উষঃ, তাঁহার পুত্র শিমিয়, তাঁহার পুত্র হগিয়, তাঁহার পুত্র অসায়। [নিয়ম-সিন্দুক] বিশ্রামস্থান প্রাপ্ত হইলে পর দায়ূদ যাঁহাদিগকে সদাপ্রভুর গৃহে গানের কার্য্যে নিযুক্ত করিলেন, তাঁহাদের নাম। শলোমন যে পর্য্যন্ত যিরূশালেমে সদাপ্রভুর গৃহ নির্ম্মাণ না করেন, সে পর্য্যন্ত তাঁহারা সমাগম-তাম্বুরূপ আবাসের সম্মুখে গান দ্বারা পরিচর্য্যা করিতেন ও আপন আপন পালা অনুসারে আপন আপন কার্য্যে নিযুক্ত থাকিতেন। সেই নিযুক্ত লোকেরা ও তাঁহাদের সন্তানগণ এই; কহাতীয়দের সন্তানগণের মধ্যে—হেমন গায়ক, তিনি যোয়েলের পুত্র; ইনি শমূয়েলের পুত্র, ইনি ইল্‌কানার পুত্র, ইনি যিরোহমের পুত্র, ইনি ইলীয়েলের পুত্র, ইনি তোহের পুত্র, ইনি সূফের পুত্র, ইনি ইল্‌কানার পুত্র, ইনি মাহতের পুত্র, ইনি অমাসয়ের পুত্র, ইনি ইল্‌কানার পুত্র, ইনি যোয়েলের পুত্র, ইনি অসরিয়ের পুত্র, ইনি সফনিয়ের পুত্র, ইনি তহতের পুত্র, ইনি অসীরের পুত্র, ইনি ইবীয়াসফের পুত্র, ইনি কোরহের পুত্র, ইনি যিষ্‌হরের পুত্র, ইনি কহাতের পুত্র, ইনি লেবির পুত্র, ইনি ইস্রায়েলের পুত্র। হেমনের ভ্রাতা আসফ, তিনি তাঁহার দক্ষিণদিকে দাঁড়াইতেন; সেই আসফ বেরিখিয়ের পুত্র, ইনি শিমিয়ের পুত্র, ইনি মীখায়েলের পুত্র, ইনি বাসেয়ের পুত্র, ইনি মল্কিয়ের পুত্র, ইনি ইৎনির পুত্র, ইনি সেরহের পুত্র, ইনি অদায়ার পুত্র, ইনি এথনের পুত্র, ইনি সিম্মের পুত্র, ইনি শিমিয়ির পুত্র, ইনি যহতের পুত্র, ইনি গের্শোমের পুত্র, ইনি লেবির পুত্র। ইহাঁদের ভ্রাতৃগণ মরারি-সন্তানেরা ইহাঁদের বাম দিকে দাঁড়াইতেন; এথন কীশির পুত্র, ইনি অব্দির পুত্র, ইনি মল্লূকের পুত্র, ইনি হশবিয়ের পুত্র, ইনি অমৎসিয়ের পুত্র, ইনি হিল্কিয়ের পুত্র, ইনি অম্‌সির পুত্র, ইনি বানির পুত্র, ইনি শেমরের পুত্র, ইনি মহলির পুত্র, ইনি মূশির পুত্র, ইনি মরারির পুত্র, ইনি লেবির পুত্র। তাঁহাদের ভ্রাতৃগণ লেবীয়েরা ঈশ্বরের গৃহরূপ আবাসের সমস্ত সেবাকর্ম্মের নিমিত্ত দত্ত হইয়াছিল। কিন্তু হারোণ ও তাঁহার পুত্রগণ হোমীয় যজ্ঞবেদির ও ধূপবেদির উপরে উপহার দাহ করিতেন, ঈশ্বরের দাস মোশির সমস্ত আজ্ঞানুসারে অতিপবিত্র স্থানের সমস্ত কার্য্য এবং ইস্রায়েলের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিতেন। হারোণের এই এই সন্তান; তাঁহার পুত্র ইলিয়াসর, তাঁহার পুত্র পীনহস, তাঁহার পুত্র অবীশূয়, তাঁহার পুত্র বুক্কি, তাঁহার পুত্র উষি, তাঁহার পুত্র সরাহিয়, তাঁহার পুত্র মরায়োৎ, তাঁহার পুত্র অমরিয়, তাঁহার পুত্র অহীটূব, তাঁহার পুত্র সাদোক, তাঁহার পুত্র অহীমাস। আর তাঁহাদের সীমার মধ্যে শিবির সন্নিবেশানুসারে এই সকল তাঁহাদের বাসস্থান; কহাতীয় গোষ্ঠীভুক্ত হারোণ-সন্তানগণের অধিকার এই, বাস্তবিক তাঁহাদের জন্য [প্রথম] গুঁলিবাট হইল। ফলতঃ তাঁহাদিগকে যিহূদা-দেশস্থ হিব্রোণ ও তাহার চারিদিকের পরিসরভূমি দেওয়া গেল। কিন্তু সেই নগরের ক্ষেত্র ও গ্রাম সকল যিফুন্নির পুত্র কালেবকে দেওয়া গেল। আর হারোণ-সন্তানগণকে আশ্রয়-নগর হিব্রোণ, আর পরিসরের সহিত লিব্‌না, এবং যত্তীর ও পরিসরের সহিত ইষ্টিমোয়, পরিসরের সহিত হিলেন, পরিসরের সহিত দবীর, পরিসরের সহিত আশন, পরিসরের সহিত বৈৎশেমশ; এবং বিন্যামীনবংশ হইতে পরিসরের সহিত গেবা, পরিসরের সহিত আলেমৎ ও পরিসরের সহিত অনাথোৎ দেওয়া গেল; সর্ব্বশুদ্ধ তাঁহাদের গোষ্ঠী অনুসারে তাঁহাদের তেরটী নগর হইল। আর কহাতের অবশিষ্ট সন্তানদিগকে বংশের গোষ্ঠী হইতে, অর্দ্ধবংশ অর্থাৎ মনঃশির অর্দ্ধেক হইতে, গুলিবাঁট দ্বারা দশটী নগর দত্ত হইল। গের্শোম-সন্তানগণকে স্ব স্ব গোষ্ঠী অনুসারে ইষাখরবংশ, আশেরবংশ, নপ্তালিবংশ ও বাশনস্থ মনঃশিবংশ হইতে তেরটী নগর দত্ত হইল। মরারি-সন্তানগণকে স্ব স্ব গোষ্ঠী অনুসারে রূবেণবংশ, গাদবংশ ও সবূলূনবংশ হইতে গুলিবাঁট দ্বারা বারোটী নগর দত্ত হইল। ইস্রায়েল-সন্তানগণ লেবীয়দিগকে এই সকল নগর ও তাহাদের পরিসর-ভূমি দিল। তাহারা গুলিবাঁট দ্বারা যিহূদা-সন্তানগণের বংশ ও শিমিয়োন-সন্তানগণের বংশ ও বিন্যামীন-সন্তানগণের বংশ হইতে স্ব স্ব নামে উল্লিখিত এই সকল নগর তাহাদিগকে দিল। কহাৎ-সন্তানগণের কোন কোন গোষ্ঠী ইফ্রয়িম বংশ হইতে আপন আপন অধিকারার্থে নগর পাইল। তাহারা তাহাদিগকে পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশস্থ আশ্রয়-নগর শিখিম ও তাহার পরিসর, আর পরিসরের সহিত গেষর, পরিসরের সহিত যক্‌মিয়াম, পরিসরের সহিত বৈৎ-হোরণ, পরিসরের সহিত অয়ালোন ও পরিসরের সহিত গাৎ-রিম্মোণ; এবং মনঃশির অর্দ্ধবংশ হইতে পরিসরের সহিত আনের, পরিসরের সহিত বিল্‌ময়, কহাতের অবশিষ্ট সন্তানগণের গোষ্ঠীর জন্য দিল। আর গের্শোম-সন্তানগণকে মনঃশির অর্দ্ধবংশের গোষ্ঠী হইতে পরিসরের সহিত বাশনস্থ গোলন ও পরিসরের সহিত অষ্টারোৎ; এবং ইষাখরবংশ হইতে পরিসরের সহিত কেদশ, পরিসরের সহিত দাবরৎ, পরিসরের সহিত রামোৎ ও পরিসরের সহিত আনেম; এবং আশেরবংশ হইতে পরিসরের সহিত মশাল, পরিসরের সহিত আব্দোন, পরিসরের সহিত হূকোক ও পরিসরের সহিত রহোব; এবং নপ্তালিবংশ হইতে পরিসরের সহিত গালীলস্থ কেদশ, পরিসরের সহিত হম্মোন ও পরিসরের সহিত কিরিয়াথয়িম দত্ত হইল। অবশিষ্ট [লেবীয়দিগকে], মরারির সন্তানদিগকে, সবূলূনবংশ হইতে পরিসরের সহিত রিম্মোণো ও পরিসরের সহিত তাবোর; এবং যিরীহোর নিকটে যর্দ্দনের ওপারে, অর্থাৎ যর্দ্দনের পূর্ব্বপারে রূবেণবংশ হইতে পরিসরের সহিত প্রান্তরস্থ বেৎসর, পরিসরের সহিত যাহসা, পরিসরের সহিত কদেমোৎ ও পরিসরের সহিত মেফাৎ; এবং গাদবংশ হইতে পরিসরের সহিত গিলিয়দস্থ রামোৎ, পরিসরের সহিত মহনয়িম, পরিসরের সহিত হিষ্‌বোণ ও পরিসরের সহিত যাসের দত্ত হইল। ইষাখরের সন্তান—তোলয় ও পূয়, যাশূব ও শিম্রোণ, এই চারি জন। তোলয়ের সন্তান উষি, রফায়, যিরীয়েল, যহময়, যিব্‌সম ও শমূয়েল, ইহারা তোলয়ের [বংশজাত], আপন আপন পিতৃকুলের পতি ও আপন আপন সমকালীন লোকদের মধ্যে বলবান বীর ছিল; দায়ূদের সময়ে তাহারা সংখ্যায় বাইশ সহস্র ছয় শত জন ছিল। উষির সন্তান যিষ্রাহিয়; আর যিষ্রাহিয়ের সন্তান—মীখায়েল, ওবদিয়, যোয়েল ও যিশিয়, পাঁচ জন; ইহাঁরা সকলে প্রধান লোক ছিলেন। ইহাঁদের সমকালে স্ব স্ব পিতৃকুলানুসারে ইহাঁদের সহিত যুদ্ধার্থ কতকগুলি সৈন্যদল ছিল, তাহাদের জনসংখ্যা ছত্রিশ সহস্র; কারণ তাহাদের অনেক স্ত্রী ও সন্তান ছিল। আর ইষাখরের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে তাহাদের ভ্রাতৃগণ বলবান বীর ছিল, সর্ব্বশুদ্ধ বংশাবলিক্রমে গণিত তাহাদের লোক সাতাশী সহস্র ছিল। বিন্যামীনের [সন্তান]—বেলা, বেখর ও যিদীয়েল, তিন জন। বেলার সন্তান ইষ্‌বোণ, উষি, উষীয়েল, যিরেমোৎ ও ঈরী, পাঁচ জন; ইহারা পিতৃকুলের পতি ও বলবান বীর ছিল, এবং বংশাবলিক্রমে লিখিত তাহাদের সংখ্যা বাইশ সহস্র চৌত্রিশ জন। আর বেখরের সন্তান সমীরাঃ, যোয়াশ, ইলীয়েষর, ইলিয়োঐনয়, অম্রি, যিরেমোৎ, অবিয়, অনাথোৎ ও আলেমৎ; ইহারা সকলেই বেখরের সন্তান। বংশাবলিক্রমে লিখিত তাহাদের পিতৃকুলপতিগণ বিংশতি সহস্র দুই শত বলবান বীর ছিল। আর যিদীয়েলের সন্তান বিল্‌হন; বিল্‌হনের সন্তান—যিয়ূশ, বিন্যামীন, এহূদ, কনানা, সেথন, তর্শীশ ও অহীশহর। ইহারা সকলেই যিদীয়েলের সন্তান, আপন আপন পিতৃকুলের পতি অনুসারে বলবান বীর ছিল, সৈন্য দলে যুদ্ধে গমনযোগ্য সপ্তদশ সহস্র দুই শত লোক। আর ঈরের সন্তান শুপ্পীম ও হুপ্পীম, অহেরের সন্তান হূশীম। নপ্তালির সন্তান—যহসিয়েল, গূনি, যেৎসর ও শল্লূম, ইহারা বিল্‌হার সন্তান। মনঃশির সন্তান—অস্রীয়েল; [তাঁহার স্ত্রী] ইহাকে প্রসব করিলেন। তাঁহার অরামীয়া উপপত্নী গিলিয়দের পিতা মাখীরকে প্রসব করিল; আর মাখীর হুপ্পীম ও শুপ্পীমের সম্বন্ধীয়া এক স্ত্রীকে বিবাহ করিল। আর তাহার ভগিনীর নাম মাখা। দ্বিতীয়ের নাম সলফাদ, সেই সলফাদের কয়েকটী কন্যা ছিল। মাখীরের স্ত্রী মাখা পুত্র প্রসব করিয়া তাহার নাম পেরশ রাখিল, ও তাহার ভ্রাতার নাম শেরশ, এবং ইহার পুত্রদের নাম ঊলম ও রেকম। আর ঊলমের সন্তান বদান। এই সকল মনঃশির পৌত্র মাখীরের পুত্র গিলিয়দের সন্তান। তাহার ভগিনী হম্মোলেকতের পুত্র ঈশ্‌হোদ, অবীয়েষর ও মহলা। আর শমীদার সন্তান অহিয়ন, শেখম, লিক্‌হি ও অনীয়াম। আর ইফ্রয়িমের সন্তান—শূথেলহ, তাহার পুত্র বেরদ, তাহার পুত্র তহৎ, তাহার পুত্র ইলিয়াদা, তাহার পুত্র তহৎ, তাহার পুত্র সাবদ, তাহার পুত্র শূথেলহ; আর এৎসর ও ইলিয়াদ; দেশজাত গাতের লোকেরা তাহাদিগকে বধ করিল, কেননা তাহারা উহাদের পশু হরণার্থে নামিয়া আসিয়াছিল। তখন তাহাদের পিতা ইফ্রয়িম অনেক দিন পর্য্যন্ত শোক করিলেন, এবং তাহার ভ্রাতৃগণ তাঁহাকে সান্ত্বনা করিতে আসিলেন। পরে তিনি আপন স্ত্রীর কাছে গমন করিলেন; তাহাতে তাঁহার স্ত্রী গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিলে তিনি তাহার নাম বরীয় [অমঙ্গল] রাখিলেন, কেননা তখন তাঁহার বাটীতে অমঙ্গল ঘটিয়াছিল। আর তাঁহার কন্যা শীরা উচ্চতর ও নিম্নতর বৈৎ-হোরোণ ও উষেণ-শীরা পত্তন করাইলেন। [বরীয়ের] পুত্র রেফহ ও রেশফ, ইহার পুত্র তেলহ, তাহার পুত্র তহন, তাহার পুত্র লাদন, তাহার পুত্র অম্মীহূদ, তাহার পুত্র ইলীশামা; তাহার পুত্র নূন, তাহার পুত্র যিহোশূয়। ইহাদের অধিকার ও নিবাসস্থান বৈথেল ও তাহার উপনগর সকল, এবং পূর্ব্বদিকে নারণ ও পশ্চিমদিকে গেষর ও তাহার উপনগর সকল; আর শিখিম ও তাহার উপনগর সকল, ঘসা ও তাহার উপনগর সকল পর্য্যন্ত। আর মনঃশি-সন্তানগণের সীমার পাশ্বর্স্থ বৈৎশান ও তাহার উপনগর সকল, তানক ও তাহার উপনগর সকল, মগিদ্দো ও তাহার উপনগর সকল, দোর ও তাহার উপনগর সকল। এই সকল স্থানে ইস্রায়েলের পুত্র যোষেফের সন্তানগণ বাস করিত। আশেরের সন্তান—যিম্ন, যিশ্‌বাঃ, যিশ্‌বী ও বরীয় এবং তাহাদের ভগিনী সেরহ। বরীয়ের সন্তান হেবর, ও বির্ষোতের পিতা মল্কীয়েল। হেবরের সন্তান যফ্‌লেট, শোমের ও হোথম এবং ইহাদের ভগিনী শূয়া। যফ্‌লেটের সন্তান পাসক, বিম্‌হল ও অশ্বৎ, এই সকল যফ্‌লেটের সন্তান। আর শেমরের সন্তান অহি, রোগহ, যিহুব্ব ও অরাম। তাহার ভ্রাতা হেলমের সন্তান শোফহ, যিম্ন, শেলশ ও আমল। সোফহের সন্তান সূহ, হর্ণেফর, শূয়াল, বেরী ও যিম্র; বেৎসর, হোদ, শম্ম, শিল্‌শ, যিত্রণ ও বেরা। আর যেথরের সন্তান যিফুন্নি, পিস্প ও অরা। আর উল্লের সন্তান আরহ, হন্নীয়েল ও রিৎসিয়। এই সকলে আশেরের সন্তান, আপন আপন পিতৃকুলের পতি, মনোনীত ও বলবান বীর, অধ্যক্ষদের মধ্যে প্রধান লোক ছিল। যুদ্ধে গমনকারীদের মধ্যে বংশাবলিক্রমে লিখিত ইহাদের জনসংখ্যা ছাব্বিশ সহস্র ছিল। বিন্যামীনের জ্যেষ্ঠ পুত্র বেলা, দ্বিতীয় অস্‌বেল, ও তৃতীয় অহর্হ, চতুর্থ নোহা, ও পঞ্চম রাফা। আর বেলার সন্তান অদ্দর, গেরা, অবীহূদ, অবীশূয়, নামান, আহোহ, গেরা, শফূফন ও হূরম। এহূদের সন্তানগণ এই। ইহাঁরা গেবা-নিবাসীদের পিতৃকুলপিত, পরে ইহাঁদিগকে বন্দি করিয়া মানহতে লইয়া যাওয়া হইল। আর তিনি নামান, অহিয় ও গেরা, ইহাঁদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া গেলেন; তাঁহার পুত্র উষঃ ও অহীহূদ। আর তিনি তাঁহাদিগকে বিদায় করিলে পর শহরয়িম মোয়াব-ক্ষেত্রে পুত্রগণকে জন্ম দিলেন, তাঁহার ভার্য্যা হূশীম ও বারা। আর তাঁহার হোদশ নামিকা স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র যোবব, সিবিয়, মেশা, মল্কম, যিয়ূশ, শখিয় ও মির্ম; তাঁহার এই পুত্রেরা পিতৃকুলপতি ছিলেন। আর হূশীমের গর্ভজাত তাঁহার পুত্র অহীটূব ও ইল্পাল। আর ইল্পালের সন্তান এবর ও মিশিয়ম, এবং ওনো, লোদ ও তাহার উপনগর সকলের পত্তনকারী শেমদ, এবং বরীয় ও শেমা; ইহাঁরা অয়ালোন-নিবাসীদের পিতৃকুলপতি ছিলেন, আর ইহাঁরা গাৎ-নিবাসীদিগকে দূর করিয়া দিলেন। আর বরীয়ের সন্তান অহিয়ো, শাশক, যিরেমোৎ, সবদিয়, অরাদ, এদর, মীখায়েল, যিশ্‌পা ও যোহ। আর ইল্পালের সন্তান সবদিয়, মশুল্লম, হিষ্কি, হেবর, যিশ্মরয়, যিষ্‌লিয় ও যোবব। আর শিমিয়ির সন্তান যাকীম, সিখ্রি, সব্দি, ইলীয়ৈনয়, সিল্লথয়, ইলীয়েল, অদায়া, বরায়া ও শিম্রৎ। আর শাশকের সন্তান যিশ্‌পন, এবর, ইলীয়েল, অব্দোন, সিখ্রি, হানন, হনানিয়, এলম, অন্তোথিয়, যিফদিয় ও পনূয়েল। আর যিরোহমের সন্তান শিম্‌শরয়, শহরিয়, অথলিয়, যারিশিয়, এলিয় ও সিখ্রি। ইহাঁরা পিতৃকুলপতি বলিয়া আপন আপন বংশাবলিতে প্রধান ছিলেন, ইহাঁরা যিরূশালেমে বাস করিতেন। আর গিবিয়োনের পিতা [যিয়ীয়েল] গিবিয়োনে বাস করিতেন, তাঁহার স্ত্রীর নাম মাখা। তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র অব্দোন, অপর সূর, কীশ, বাল, নাদব, গদোর, অহিয়ো ও সখর। আর মিক্লোতের পুত্র শিমিয়। ইহাঁরাও আপন ভাতৃগণের সম্মুখে যিরূশালেমে আপন ভ্রাতাদের কাছে বাস করিতেন। নেরের পুত্র কীশ, কীশের পুত্র শৌল, শৌলের পুত্র যোনাথন, মল্কীশূয়, অবীনাদব ও ইশ্‌বাল। আর যোনাথনের পুত্র মরীব্‌-বাল, ও মরীব্‌-বালের পুত্র মীখা। আর মীখার সন্তান পিথোন, মেলক, তরেয় ও আহস। আহসের সন্তান যিহোয়াদা, যিহোয়াদার সন্তান আলেমৎ, অস্‌মাবৎ ও সিম্রি; সিম্রির সন্তান মোৎসা। মোৎসার পুত্র বিনিয়া, তাহার পুত্র রফায়, তাহার পুত্র ইলীয়াসা, তাহার পুত্র আৎসেল। আৎসেলের ছয় পুত্র; তাহাদের নাম এই এই; অস্রীকাম, বোখরূ, ইশ্মায়েল, শিয়রিয়, ওবদিয় ও হানান; ইহারা সকলে আৎসেলের সন্তান। আর তাহার ভ্রাতা এশকের সন্তান—জ্যেষ্ঠ পুত্র ঊলম, দ্বিতীয় যিয়ূশ ও তৃতীয় এলীফেলট। আর ঊলমের পুত্রগণ বলবান বীর ও ধনুর্দ্ধর ছিল, এবং তাহাদের পুত্র পৌত্র অনেক ছিল, এক শত পঞ্চাশ জন; ইহারা সকলে বিন্যামীন-সন্তান। এইরূপে সমস্ত ইস্রায়েলের বংশাবলি লিখিত হইল, আর দেখ, তাহা ইস্রায়েলের রাজগণের পুস্তকে লিখিত রহিয়াছে। পরে যিহূদার লোকেরা আপনাদের সত্যলঙ্ঘন প্রযুক্ত বন্দি হইয়া বাবিলে নীত হইল। আপনাদের নানা নগরে যাহারা প্রথমে আপন আপন অধিকারে বসতি করিল, তাহারা এই,—ইস্রায়েল, যাজকগণ, লেবীয়গণ, ও নথীনীয়গণ। আর যিহূদা-সন্তানগণের, বিন্যামীন-সন্তানগণের এবং ইফ্রয়িম ও মনঃশি-সন্তানগণের মধ্যে এই লোকেরা যিরূশালেমে বাস করিতে লাগিল। উথয়, তিনি অম্মীহূদের পুত্র, ইনি অম্রির পুত্র, ইনি ইম্রির পুত্র, ইনি বানির পুত্র, ইনি যিহূদার পুত্র পেরসের সন্তানদের মধ্যে এক জন। শীলোনীয়দের মধ্যে জ্যেষ্ঠ অসায় ও তাহার সন্তানগণ। সেরহের সন্তানদের মধ্যে যুয়েল ও তাহাদের ভ্রাতৃগণ, ইহারা ছয় শত নব্বই জন। বিন্যামীন-সন্তানগণের মধ্যে মশুল্লমের পুত্র সল্লূ, মশুল্লম হোদবিয়ের পুত্র, ইনি হস্‌নূয়ের পুত্র। আর যিরোহমের পুত্র যিব্‌নিয় ও মিখ্রির পৌত্র উষিয় পুত্র এলা, এবং যিব্‌নিয়ের প্রপৌত্র রূয়েলের পৌত্র শফটিয়ের পুত্র মশুল্লম; ইহারা ও ইহাদের ভ্রাতৃগণ আপন আপন বংশ অনুসারে নয় শত ছাপ্পান্ন জন। ইহারা সকলে আপন আপন পিতৃকুলের মধ্যে কুলপিত ছিল। যাজকদের মধ্যে যিদয়িয়, যিহোয়ারীব ও যাখীন; আর ঈশ্বরের গৃহের অধ্যক্ষ যে অহীটূব, তাঁহার অতিবৃদ্ধপ্রপৌত্র মরায়োতের বৃদ্ধপ্রপৌত্র সাদোকের প্রপৌত্র মশুল্লমের পৌত্র হিল্কিয়ের পুত্র অসরিয়; আর মল্কিয়ের প্রপৌত্র পশ্‌হূরের পৌত্র যিরোহমের পুত্র অদায়া; এবং ইম্মেরের অতিবৃদ্ধপ্রপৌত্র মশিল্লমীতের বৃদ্ধপ্রপৌত্র মশুল্লমের প্রপৌত্র যহসেরার পৌত্র অদীয়েলের পুত্র মাসয়; ইহারা ও ইহাদের ভ্রাতৃগণ এক সহস্র সাত শত ষাট জন; ইহারা আপন আপন পিতৃকুলের পতি এবং ঈশ্বরের গৃহের সেবাকর্ম্ম সম্পাদনে অতি দক্ষ লোক। আর লেবীয়দের মধ্যে মরারিবংশজাত হশবিয়ের প্রপৌত্র অস্রীকামের পৌত্র হশূবের পুত্র শমরিয়; আর বকবকর, হেরশ ও গালল, এবং আসফের প্রপৌত্র সিখ্রির পৌত্র মীখার পুত্র মত্তনিয়; আর যিদূথূনের প্রপৌত্র গাললের পৌত্র শময়িয়ের পুত্র ওবদিয়; আর নটোফাতীয়দের পল্লীতে বাসকারী ইল্কানার পৌত্র আসার পুত্র বেরিখিয়। আর দ্বারপাল শল্লুম, অক্কুব, টল্‌মোন, অহীমান এবং তাহাদের ভ্রাতৃগণ, ইহাদের মধ্যে শল্লুম প্রধান। ইহারা এ যাবৎ পূর্ব্বদিক্‌স্থিত রাজদ্বারে থাকিত, ইহারাই লেবি-সন্তানদের শিবিরের দ্বারপাল। আর শল্লুম কোরহের প্রপৌত্র ইবীয়াসফের পৌত্র কোরির পুত্র; সে ও তাহার পিতৃকুলজাত কোরহীয় ভ্রাতৃগণ সেবাকর্ম্ম সম্পাদনে নিযুক্ত হইয়া, তাম্বুর দ্বার সকলের রক্ষক হইল। আর তাহাদের পিতৃপুরুষেরা সদাপ্রভুর শিবিরে নিযুক্ত হইয়া প্রবেশস্থানের রক্ষক হইল; পুরাকালে ইলিয়াসরের পুত্র পীনহস তাহাদের অধ্যক্ষ ছিলেন, এবং সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন। মশেলেমিয়ের পুত্র সখরিয় সমাগম-তাম্বুর দ্বাররক্ষক ছিল। সর্ব্বশুদ্ধ দ্বারপালের কার্য্যার্থে মনোনীত এই লোকেরা দুই শত বারো জন; তাহাদের গ্রামসমূহে তাহাদের বংশাবলি লিখিত হইয়াছিল। দায়ূদ ও শমূয়েল দর্শক তাহাদিগকে তাহাদের নিরূপিত কার্য্যে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। অতএব তাহারা ও তাহাদের সন্তানেরা সদাপ্রভুর গৃহের অর্থাৎ তাম্বুগৃহের দ্বারপালের কর্ম্মে প্রহরে প্রহরে নিযুক্ত হইত। এই দ্বারপালেরা পূর্ব্ব ও পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ চারিদিকে থাকিত। আর তাহাদের গ্রামস্থ ভ্রাতৃগণকে সময়ে সময়ে সপ্তাহের নিমিত্ত আসিয়া তাহাদের সঙ্গে থাকিতে হইত। কেননা ঐ চারি জন প্রধান দ্বারপাল লেবীয়, তাহারা নিরূপিত কার্য্যে নিযুক্ত, এবং ঈশ্বরের গৃহের কুঠরী ও ভাণ্ডার সকলের অধ্যক্ষ ছিল। আর তাহারা ঈশ্বরের গৃহের চতুর্দ্দিকে রাত্রি যাপন করিত; কেননা তাহাদের প্রতি রক্ষার ভার ছিল; এবং তাহাদিগকেই প্রতিদিন প্রাতে দ্বার খুলিতে হইত। আর তাহাদের কতক লোক সেবাকর্ম্মার্থক পাত্র সকল রক্ষা করিতে নিযুক্ত ছিল, আর সে সকল সংখ্যানুসারে ভিতরে লইয়া যাওয়া ও সংখ্যানুসারে বাহিরে আনা হইত। আর তাহাদের কতক লোক পাত্র সকল, পবিত্র স্থানের সমস্ত পাত্র, এবং সূজী, দ্রাক্ষারস, তৈল, কুন্দুরু ও সুগন্ধি দ্রব্যের রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিল। যাকজ-সন্তানদের মধ্যে কয়েক জন সুগন্ধি দ্রব্যের মিষ্টান্ন প্রস্তুত করিত। লেবীয়দের মধ্যে কোরহীয় শল্লুমের জ্যেষ্ঠ পুত্র মত্তিথিয় পক্বান্ন সকলের তত্ত্বাবধানে নিরূপিত কার্য্যে নিযুক্ত ছিল। আর তাহাদের জ্ঞাতি কহাতীয়দের সন্তানগণের মধ্যে কতক লোক প্রতি বিশ্রামবারে দর্শন-রুটী প্রস্তুত করিতে নিযুক্ত ছিল। কিন্তু লেবীয়দের পিতৃকুলপতি যে গায়কগণ, তাঁহারা কুঠরীতে [থাকিতেন, এবং অন্য কার্য্য হইতে] মুক্ত ছিলেন; কেননা তাঁহারা দিবারাত্র আপনাদের কার্য্যে ব্যাপৃত থাকিতেন। ইহাঁরা আপন আপন বংশানুসারে লেবীয়দের পিতৃকুলপতি, প্রধান লোক; ইহাঁরা যিরূশালেমে বসতি করিতেন। আর গিবিয়োনের পিতা যিয়ীয়েল গিবিয়োনে বাস করিতেন, তাঁহার স্ত্রীর নাম মাখা। তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র অব্দোন, পরে সূর, কীশ, বাল, নের, নাদব, গাদোর, অহিয়ো, সখরিয় ও মিক্লোৎ। মিক্লোতের পুত্র শিমিয়াম; ইহাঁরাও আপনাদের ভ্রাতৃগণের সম্মুখে যিরূশালেমে আপন ভ্রাতৃগণের কাছে বাস করিতেন। আর নেরের পুত্র কীশ, কীশের পুত্র শৌল, শৌলের পুত্র যোনাথন, মল্কীশূয়, অবীনাদব ও ইশ্‌বাল। যোনাথনের পুত্র মরীব্‌-বাল, মরীব্‌-বালের পুত্র মীখা। মীখার-সন্তান—পিথোন, মেলক, তহরেয় [ও আহস]। আহসের পুত্র যারঃ, যারের পুত্র আলেমৎ, অস্‌মাবৎ ও সিম্রি এবং সিম্রির পুত্র মোৎসা, মোৎসার পুত্র বিনিয়া, তাহার পুত্র রফায়, তাহার পুত্র ইলীয়াসা, তাহার পুত্র আৎসেল। আৎসেলের ছয় পুত্র, তাহাদের নাম এই এই; অস্রীকাম, বোখরূ, ইশ্মায়েল, শিয়রিয়, ওবদিয় ও হানান; ইহারা আৎসেলের সন্তান। পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিল, আর ইস্রায়েলের লোকেরা পলেষ্টীয়দের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল, এবং গিল্‌বোয় পর্ব্বতে আহত হইয়া পড়িতে লাগিল। আর পলেষ্টীয়েরা শৌলের ও তাঁহার পুত্রগণের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিল; এবং পলেষ্টীয়েরা যোনাথন, অবীনাদব ও মল্কী-শূয়কে, শৌলের পুত্রদিগকে, বধ করিল। পরে শৌলের বিরুদ্ধে ঘোরতর সংগ্রাম হইল, আর ধনুর্দ্ধরেরা তাঁহার লাগাল পাইল; সেই ধনুর্দ্ধরদের হইতে শৌল ত্রাসযুক্ত হইলেন। আর শৌল আপন অস্ত্রবাহককে কহিলেন, তোমার খড়্‌গ খুল, উহা দ্বারা আমাকে বিদ্ধ কর; নতুবা কি জানি, ঐ অচ্ছিন্নত্বকেরা আসিয়া আমার অপমান করিবে। কিন্তু তাঁহার অস্ত্রবাহক তাহা করিতে চাহিল না, কারণ সে অতিশয় ভীত হইয়াছিল; অতএব শৌল তাহার খড়্‌গ লইয়া আপনি তাহার উপরে পড়িলেন। আর শৌল মরিয়াছেন দেখিয়া তাঁহার অস্ত্রবাহকও আপন খড়্‌গের উপরে পড়িয়া মরিল। এই প্রকারে শৌল, ও তাঁহার তিন পুত্র মারা পড়েন, তাঁহার সমস্ত পরিজন একসঙ্গে মারা পড়েন। পরে যে সকল ইস্রায়েল লোক তলভূমিতে ছিল, তাহারা যখন দেখিতে পাইল যে, লোকেরা পলায়ন করিয়াছে, এবং শৌল ও তাঁহার পুত্রগণও মরিয়াছেন, তখন তাহারা আপনাদের নগর সকল পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিল; আর পলেষ্টীয়েরা আসিয়া সেই সকল নগরে বাস করিতে লাগিল। পরদিন পলেষ্টীয়েরা নিহত লোকদের সজ্জাদি খুলিয়া লইতে আসিয়া গিল্‌বোয় পর্ব্বতে পতিত শৌলকে ও তাঁহার পুত্রদিগকে দেখিতে পাইল। তখন তাঁহারা তাঁহার সজ্জা খুলিয়া তাঁহার মুণ্ড ও সজ্জা লইল, এবং আপনাদের দেব-প্রতিমাদিগকে ও লোকদিগকে শুভবার্ত্তা জ্ঞাপনার্থে পলেষ্টীয়দের দেশের সর্ব্বত্র প্রেরণ করিল। পরে তাঁহার সজ্জা আপনাদের দেবালয়ে রাখিল, এবং তাঁহার মুণ্ড দাগোন দেবের গৃহে টাঙ্গাইয়া দিল। পরে যখন যাবেশ-গিলিয়দের সমস্ত লোক শৌলের প্রতি কৃত পলেষ্টীয়দের সেই সমস্ত কর্ম্মের সংবাদ পাইল, তখন সমস্ত বিক্রমশালী লোক উঠিল, এবং শৌলের দেহ ও তাঁহার পুত্রগণের দেহ তুলিয়া যাবেশে লইয়া আসিয়া তাঁহাদের অস্থি যাবেশস্থ এলা বৃক্ষের তলে পুঁতিয়া রাখিল। পরে সাত দিবস উপবাস করিল। এইরূপে শৌল সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে কৃত সত্যলঙ্ঘন হেতু মরিলেন; কারণ তিনি সদাপ্রভুর বাক্য পালন করেন নাই; আবার তিনি অনুসন্ধান জন্য ভূতড়িয়ার কাছে মন্ত্রণা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, সদাপ্রভুর কাছে অনুসন্ধান করেন নাই; তজ্জন্য তিনি তাঁহাকে বধ করিলেন, এবং রাজ্য হস্তান্তর করিয়া যিশয়ের পুত্র দায়ূদকে দিলেন। পরে সমস্ত ইস্রায়েল হিব্রোণে দায়ূদের নিকটে একত্র হইয়া কহিল, দেখুন, আমরা আপনার অস্থি ও মাংস। পূর্ব্বে যখন শৌল রাজা ছিলেন, তখনও আপনিই ইস্রায়েলকে বাহিরে লইয়া যাইতেন ও ভিতরে আনিতেন; আর আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনাকে বলিয়াছিলেন, তুমিই আমার প্রজা ইস্রায়েলকে চরাইবে ও তুমিই আমার প্রজা ইস্রায়েলের নায়ক হইবে। এইরূপে ইস্রায়েলের প্রাচীনেরা সকলে হিব্রোণে রাজার নিকটে আসিলেন; তাহাতে দায়ূদ হিব্রোণে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তাঁহাদের সহিত নিয়ম করিলেন, এবং শমূয়েলের দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে তাঁহারা দায়ূদকে ইস্রায়েলের উপরে রাজ-পদে অভিষেক করিলেন। পরে দায়ূদ ও সমস্ত ইস্রায়েল যিরূশালেমে অর্থাৎ যিবূষে গেলেন; দেশনিবাসী যিবূষীয়েরা সেই স্থানে ছিল। তাহাতে যিবূষের নিবাসীরা দায়ূদকে কহিল, তুমি এই স্থানে প্রবেশ করিতে পাইবে না। তথাপি দায়ূদ সিয়োনের দুর্গ হস্তগত করিলেন; তাহাই দায়ূদ নগর। আর দায়ূদ বলিলেন, যে কেহ প্রথমে যিবূষীয়দিগকে আঘাত করিবে, সে প্রধান ও সেনাপতি হইবে; তাহাতে সরূয়ার পুত্র যোয়াব প্রথমে উঠিয়া যাওয়াতে প্রধান হইলেন। পরে দায়ূদ সেই দুর্গে বসতি করিলেন, তজ্জন্য লোকেরা তাহার নাম দায়ূদ-নগর রাখিল। আর তিনি চারিদিকে অর্থাৎ মিল্লো অবধি চারিদিকে নগর গাঁথিলেন, এবং যোয়াব নগরের অবশিষ্ট স্থান সারিয়া তুলিলেন। পরে দায়ূদ উত্তরোত্তর মহান্‌ হইয়া উঠিলেন; কারণ বাহিনীগণের সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন। দায়ূদের বীরগণের মধ্যে এই এই ব্যক্তি প্রধান; ইস্রায়েলের সম্বন্ধে সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে দায়ূদকে রাজা করণার্থে ইহাঁরা সমস্ত ইস্রায়েলের সহিত তাঁহার রাজত্বে তাঁহার প্রবল সহকারী হইলেন। দায়ূদের বীরগণের সংখ্যা এই; এক জন হক্‌মোনীয়ের পুত্র যাশবিয়াম ত্রিশ জনের মধ্যে প্রধান ছিলেন; তিনি তিন শত লোকের উপরে আপন বড়শা চালাইয়া তাহাদিগকে এককালে বধ করিয়াছিলেন। তাঁহার পরে অহোহীয় দোদোর পুত্র ইলিয়াসর, তিনি বীরত্রয়ের এক জন। তিনি পস্‌-দম্মীমে দায়ূদের সঙ্গে ছিলেন। পলেষ্টীয়েরা তথায় যুদ্ধার্থে একত্র হইয়াছিল; আর তথায় এক খণ্ড ক্ষেত্র যবে পরিপূর্ণ ছিল; আর লোকেরা পলেষ্টীয়দের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল। তাঁহারা সেই ক্ষেত্রমধ্যে দাঁড়াইয়া তাহা উদ্ধার করিলেন ও পলেষ্টীয়দিগকে বধ করিলেন, আর সদাপ্রভু মহানিস্তার সাধন করিলেন। আর ত্রিশ জন প্রধানের মধ্যে তিন জল শৈলে, অদুল্লম গুহাতে, দায়ূদের নিকটে আসিলেন; তখন পলেষ্টীয়দের সৈন্যগণ রফায়ীম তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিয়াছিল। আর দায়ূদ তখন দুর্গম স্থানে ছিলেন; এবং পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদল তখন বৈৎলেহমে ছিল। পরে দায়ূদ পিপাসাতুর হইয়া কহিলেন, হায়! কে আমাকে বৈৎলহমের দ্বারনিকটস্থ কূপের জল আনিয়া পান করিতে দিবে? তাহাতে ঐ তিন জন পলেষ্টীয়দের সৈন্যমধ্য দিয়া গিয়া বৈৎলেহমের দ্বারনিকটস্থ কূপের জল তুলিয়া লইয়া দায়ূদের নিকটে আনিলেন, কিন্তু দায়ূদ তাহা পান করিতে সম্মত হইলেন না, সদাপ্রভুর উদ্দেশে ঢালিয়া ফেলিলেন, আর কহিলেন, হে আমার ঈশ্বর, এমন কর্ম্ম যেন আমি না করি। আমি কি এই মনুষ্যদের রক্ত পান করিব, যাহারা প্রাণ পণ করিয়াছে? ইহারা প্রাণ পণ করিয়া এই জল আনিয়াছে। অতএব তিনি তাহা পান করিতে সম্মত হইলেন না। ঐ বীরত্রয় এই সকল কার্য্য করিয়াছিলেন। আর যোয়াবের ভ্রাতা অবীশয় তিন জনের মধ্যে প্রধান ছিলেন; তিনি তিন শত লোকের উপরে আপন বড়শা চালাইয়া তাহাদিগকে বধ করিলেন, ও তিন জনের মধ্যে খ্যাতনামা হইলেন। এই তিন জনের মধ্যে অন্য দুই জন হইতে তিনি অধিক মর্য্যাদাপন্ন ছিলেন, আর তাঁহাদের সেনাপতি হইলেন, তথাচ [প্রথম] তিন জনের তুল্য ছিলেন না। আর কব্‌সেলীয় এক বীরের পৌত্র যিহোয়াদার পুত্র যে বনায় অনেক বিক্রমী কার্য্য করিয়াছিলেন, তিনি মোয়াবীয় অরিয়েলের দুই পুত্রকে বধ করিলেন; তদ্ভিন্ন তিনি হিমানীর সময়ে গিয়া গর্ত্তের মধ্যে একটা সিংহকে মারিলেন। আর তিনি পাঁচ হস্ত দীর্ঘ বৃহৎকায় এক মিস্রীয়কে বধ করিলেন; ঐ মিস্রীয়ের হস্তে তন্তুবায়ের নরাজের ন্যায় এক বড়শা ছিল, ইনি আর এক দণ্ড হস্তে করিয়া তাঁহার কাছে গিয়া সেই মিস্রীয়ের হস্ত হইতে বড়শাটী কাড়িয়া লইয়া তাহারই বড়শা দ্বারা তাহাকে বধ করিলেন। যিহোয়াদার পুত্র বনায় এই সকল কার্য্য করিলেন, তাহাতে তিনি তিন জন বীরের মধ্যে খ্যাতনামা হইলেন। দেখ, তিনি ঐ ত্রিশ জন অপেক্ষা মর্য্যাদাপন্ন, কিন্তু [প্রথম] তিন জনের তুল্য ছিলেন না; দায়ূদ তাঁহাকে আপন রক্ষিসেনার অধ্যক্ষ করিলেন। সৈন্যবর্গের বীর্য্যবান লোকদের নাম। যোয়াবের ভ্রাতা অসাহেল, বৈৎলেহমস্থ দোদোর পুত্র ইল্‌হানন, হরোরীয় শম্মোৎ, পলোনীয় হেলস, তকোয়ীয় ইক্কেশের পুত্র ঈরা, অনাথোতীয় অবীয়েষর, হূশাতীয় সিব্বখয়, অহোহীয় ঈলয়, নটোফাতীয় মহরয়, নটোফাতীয় বানার পুত্র হেলদ, বিন্যামীন-সন্তানগণের গিবিয়া-নিবাসী রীবয়ের পুত্র ইথয়, পিরিয়াথোনীয় বনায়, গাশ উপত্যকা-নিবাসী হূরয়, অর্ব্বতীয় অবীয়েল, বাহরূমীয় অস্‌মাবৎ, শাল্‌বোনীয় ইলিয়হবঃ, গিষোণীয় হাষেমের পুত্রগণ, হরারীয় শাগির পুত্র যোনাথন, হরারীয় সাখরের পুত্র অহীয়াম, ঊরের পুত্র ইলীফাল, মখেরাতীয় হেফর, পলোনীয় অহিয়, কর্মিলীয় হিষ্রো, ইষ্‌বয়ের পুত্র নারয়, নাথনের ভ্রাতা যোয়েল, ইগ্রির পুত্র মিভর, অম্মোনীয় সেলক, সরূয়ার পুত্র যোয়াবের অস্ত্রবাহক বেরোতীয় নহরয়, যিত্রীয় ঈরা, যিত্রীয় গারেব, হিত্তীয় ঊরিয়, অহলয়ের পুত্র সাবদ, রূবেণীয় শীষার পুত্র অদীনা, তিনি রূবেণীয়দের এক জন প্রধান ছিলেন, ও তাঁহার সঙ্গে ত্রিশ জন ছিল, মাখার পুত্র হানান, মিত্নীয় যোশাফট, অষ্টরোতীয় উষিয়, অরোয়েরীয় হোথমের দুই পুত্র, শাম ও যিয়ীয়েল, শিম্রির পুত্র যিদীয়েল ও তাঁহার ভ্রাতা তীষীয় যোহা, মহবীয় ইলীয়েল, ইল্‌নামের দুই পুত্র যিরীবয় ও যোশবিয়, মোয়াবীয় যিৎমা, ইলীয়েল, ওবেদ ও মসোবায়ীয় যাসীয়েল। যে সময়ে দায়ূদ কীশের পুত্র শৌলের ভয়ে অবরুদ্ধ থাকিতেন, তৎকালে এই সকল লোক সিক্লগে দায়ূদের নিকটে আসিয়াছিলেন; তাঁহারা যুদ্ধে তাঁহার সহকারী বীরগণের মধ্যে ছিলেন। তাঁহারা ধনুর্দ্ধর এবং দক্ষিণ ও বাম উভয় হস্ত দ্বারা ফিঙ্গার প্রস্তর ও ধনুর্ব্বাণ ক্ষেপণে নিপুণ ছিলেন; তাঁহারা শৌলের জ্ঞাতি বিন্যামীনীয় লোক ছিলেন। অহীয়েষর প্রধান, পরে যোয়াশ, ইহাঁরা গিবিয়াতীয় শমায়ের পুত্র; আর অস্‌মাবতের পুত্র যিষীয়েল ও পেলট; এবং বরাখা ও অনাথোতীয় যেহূ; এবং গিবিয়োনীয় যিশ্ময়িয়, ইনি ত্রিশ জনের মধ্যে এক জন বীর ও ত্রিশের উপরে নিযুক্ত ছিলেন; আর যিরমিয়, যহসীয়েল, যোহানন, গদেরাথীয় যোষাবদ, ইলিয়ূষয়, যিরীমোৎ, বালিয়, শমরিয়, আর হরূফীয় শফটিয়। ইল্কানা, যিশিয়, অসরেল, যোয়েষর ও যাশবিয়াম, এই কোরহীয়গণ; আর গদোর-নিবাসী যিরোহমের পুত্র যোয়েলা ও সবদিয়। আর গাদীয়দের মধ্যে কতকগুলি বলবান বীর পৃথক্‌ হইয়া প্রান্তরস্থিত দুর্গম স্থানে দায়ূদের নিকটে আসিয়াছিলেন; তাঁহারা ঢাল ও বড়শাধারী, যুদ্ধে দীক্ষিত পুরুষ; সিংহ-মুখের ন্যায় তাঁহাদের মুখ ছিল, ও তাঁহারা পর্ব্বতস্থ হরিণের ন্যায় দ্রুতগামী ছিলেন। প্রধান এষর, দ্বিতীয় ওবদিয়, তৃতীয় ইলীয়াব, চতুর্থ মিশ্মন্না, পঞ্চম যিরমিয়, ষষ্ঠ অত্তয়, সপ্তম ইলীয়েল, অষ্টম যোহানন, নবম ইল্‌সাবাদ, দশম যিরমিয়, একাদশ মগ্‌বন্নয়। গাদ-সন্তানদের এই লোকেরা সৈন্যদলের সেনাপতি ছিলেন; ইহাঁদের মধ্যে যিনি ক্ষুদ্র তিনি শত জনের, ও যিনি মহান্‌ তিনি সহস্র জনের সমকক্ষ ছিলেন। প্রথম মাসে যে সময়ে যর্দ্দনের জল সমস্ত তীরের উপরে উঠিয়াছিল, সেই সময়ে ইহাঁরা নদী পার হইয়া পূর্ব্বদিকে ও পশ্চিমদিকে তলভূমিস্থ সকলকে তাড়াইয়া দিয়াছিলেন। আর বিন্যামীনের ও যিহূদার সন্তানগণের মধ্যে কতকগুলি লোক দায়ূদের নিকটে দুর্গম স্থানে আসিয়াছিল। আর দায়ূদ তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হইয়া তাহাদিগকে কহিলেন, যদি তোমরা আমার সাহায্য করিতে শান্তিভাবে আমার কাছে আসিয়া থাক, তবে আমার চিত্ত তোমাদের সঙ্গে এক হইয়া যাইবে। কিন্তু আমার হস্তে কোন দৌরাত্ম্য না থাকিলেও যদি আমাকে ঠকাইয়া বিপক্ষ লোকদের হস্তগত করিবার জন্য আসিয়া থাক, তবে আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তাহা দেখুন ও অনুযোগ করুন। তখন আত্মা সেনানীবর্গের অধ্যক্ষ অমাসয়ের উপরে আসিলেন, [আর তিনি কহিলেন], হে দায়ূদ, আমরা তোমরাই, হে যিশয়ের পুত্র, আমরা তোমারই পক্ষ; মঙ্গল হউক, তোমার মঙ্গল হউক, ও তোমার সাহায্যকারীদের মঙ্গল হউক, কেননা তোমার ঈশ্বর তোমার সাহায্য করেন। তখন দায়ূদ তাঁহাদিগকে গ্রহণ করিয়া সৈন্যদলের সেনাপতি করিলেন। আর দায়ূদ যখন শৌলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করণার্থে পলেষ্টীয়দের সহিত আসিয়াছিলেন, তখন মনঃশিরও কতকগুলি লোক তাঁহার পক্ষে হইল; কিন্তু তাঁহারা উহাদের সাহায্য করেন নাই; কেননা পলেষ্টীয়দের ভূপালেরা মন্ত্রণা করিয়া তাঁহাতে বিদায় করিলেন, কহিলেন, সেই ব্যক্তি আমাদের মুণ্ড লইয়া আপন প্রভু শৌলের পক্ষে সরিয়া যাইবে। পরে দায়ূদ সিক্লগে যাইতেছেন, এমন সময়ে মনঃশি-সংক্রান্ত অদ্‌ন, যোষাবদ, যিদীয়েল, মীখায়েল, যোষাবদ, ইলীহূ ও সিল্লথয়, মনঃশিবংশীয় এই সহস্রপতিরা তাঁহার পক্ষে হইলেন। আর তাঁহারা সৈন্যদলের বিপক্ষে দায়ূদের সাহায্য করিলেন, কারণ তাঁহারা সকলে বলবান বীর ছিলেন, এবং সৈন্যদলের সেনাপতি হইলেন। বস্তুতঃ সেই সময়ে দায়ূদের সাহায্যার্থে দিন দিন লোক আসিত, তাহাতে ঈশ্বরের সৈন্যদলের ন্যায় মহাসৈন্য হইল। যে লোকেরা সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে শৌলের রাজ্য হস্তান্তর করিয়া দায়ূদকে দিবার জন্য যুদ্ধার্থে সসজ্জ হইয়া হিব্রোণে তাঁহার নিকটে গিয়াছিল, তাহাদের সংখ্যা এই। যিহূদা-সন্তানগণ ঢাল ও বড়শাধারী, যুদ্ধার্থে সসজ্জ ছয় সহস্র আট শত লোক। শিমিয়োন-সন্তানদের মধ্যে যুদ্ধে বলবান বীর সাত সহস্র এক শত লোক। লেবি-সন্তানদের মধ্যে চারি সহস্র ছয় শত লোক। আর যিহোয়াদা হারোণবংশের অধ্যক্ষ, এবং তাঁহার সঙ্গে তিন সহস্র সাত শত লোক; আর বীর্য্যবান যুবক সাদোক, ও তাঁহার পিতৃকুলের বাইশ জন সেনাপতি। আর শৌলের জ্ঞাতি বিন্যামীন-সন্তানদের মধ্যে তিন সহস্র লোক; কারণ সেই সময় পর্য্যন্ত তাহাদের অধিকাংশ লোক শৌলের কুলের বশ্যতা স্বীকার করিত। আর ইফ্রয়িম-সন্তানদের মধ্যে বিংশতি সহস্র আট শত বলবান বীর, তাহারা আপন আপন পিতৃকুলে বিখ্যাত ছিল। আর মনঃশির অর্দ্ধবংশের মধ্যে আঠার সহস্র লোক, তাহারা আসিয়া যেন দায়ূদকে রাজা করে, তজ্জন্য আপন আপন নামে নির্দিষ্ট হইল। আর ইষাখর-সন্তানদের মধ্যে দুই শত প্রধান লোক, তাহারা কালজ্ঞ লোক, ইস্রায়েলের কি কর্ত্তব্য তাহা জানিত, আর তাহাদের ভ্রাতারা সকলে তাহাদের আজ্ঞাবহ ছিল। সবূলূনের মধ্যে সৈন্যদলে গমনযোগ্য, সর্ব্ববিধ যুদ্ধাস্ত্র লইয়া সৈন্যরচনা করিতে নিপুণ পঞ্চাশ সহস্র লোক ছিল, তাহারা সংগ্রামে দ্বিমনা ছিল না। নপ্তালির মধ্যে এক সহস্র সেনাপতি ও তাহাদের সহিত ঢাল ও বড়শাধারী সাঁইত্রিশ সহস্র লোক। দানীয়দের মধ্যে সৈন্যরচনা করিতে নিপুন আটাইশ সহস্র ছয় শত লোক। আশেরের মধ্যে সৈন্যদলে গমনযোগ্য, সৈন্যরচনা করিতে নিপুন চল্লিশ সহস্র লোক। আর যর্দ্দনের ওপারস্থ রূবেণীয়দের, গাদীয়দের ও মনঃশির অর্দ্ধবংশের মধ্যে যুদ্ধার্থে সর্ব্বপ্রকার অস্ত্রধারী এক লক্ষ বিংশতি সহস্র লোক। যুদ্ধে ও সৈন্যরচনায় নিপুণ এই সকল লোক দায়ূদকে সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজা করণার্থে একাগ্রচিত্তে হিব্রোণে আসিল, এবং ইস্রায়েলের অবশিষ্ট সকল লোকও দায়ূদকে রাজা করণার্থে একচিত্ত হইল। তাহারা তিন দিবস সেখানে দায়ূদের সহিত থাকিয়া ভোজন পান করিল; কেননা তাহাদের ভ্রাতৃগণ তাহাদের জন্য আয়োজন করিয়াছিল। অধিকন্তু ইষাখর, সবূলূন ও নপ্তালি প্রদেশ পর্য্যন্ত তাহাদের প্রতিবাসীরা, গর্দ্দভ, উষ্ট্র, অশ্বতর ও বলদের পৃষ্ঠে খাদ্য দ্রব্য, সূজীতে প্রস্তুত দ্রব্য, ডুমুরের চাপ, শুষ্ক দ্রাক্ষার থলুয়া, দ্রাক্ষারস ও তেল এবং বলদ ও মেষ অপর্য্যাপ্ত আনিল, কেননা ইস্রায়েলের মধ্যে আনন্দ হইয়াছিল। পরে দায়ূদ সহস্রপতিগণের ও শত পতিগণের সহিত, সমস্ত অধ্যক্ষের সহিত, মন্ত্রণা করিলেন। আর দায়ূদ সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজকে কহিলেন, যদি তোমাদের বিহিত বোধ হয়, ও আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হইতে এ কার্য্য হইয়া থাকে, তবে আইস, আমরা ইস্রায়েলের সমস্ত প্রদেশে আমাদের অবশিষ্ট ভ্রাতৃগণের কাছে লোক পাঠাই, তাহাদের নিকটে যাজকগণ ও লেবীয়েরা আপন আপন পরিসর-বিশিষ্ট নগরে বাস করে, তাহারা যেন আমাদের নিকটে একত্র হয়; আর আইস, আমাদের ঈশ্বরের সিন্দুক আমাদের কাছে ফিরাইয়া আনি, কেননা শৌলের সময়ে আমরা তাহার অন্বেষণ করি নাই। তখন সমস্ত সমাজ কহিল, আমরা তাহা করিব; কেননা সকল লোকের দৃষ্টিতে এই কথা নায্য বোধ হইল। পরে কিরিয়ৎ-যিয়ারীম হইতে ঈশ্বরের সিন্দুক আনিবার জন্য দায়ূদ মিসরের সীহোর নদী অবধি হমাতের প্রবেশ-স্থান পর্য্যন্ত সমস্ত ইস্রায়েলকে একত্র করিলেন। আর ঈশ্বরের সিন্দুক, করূবদ্বয়ে আসীন সদাপ্রভুর সিন্দুক, যাহার উপরে সেই নাম কীর্ত্তিত, তাহা যিহূদার অধিকারস্থ বালা অর্থাৎ কিরিয়ৎ-যিয়ারীম হইতে আনিবার জন্য দায়ূদ ও সমস্ত ইস্রায়েল সেই স্থানে গেলেন। পরে তাঁহারা ঈশ্বরের সিন্দুক এক নূতন শকটে উঠাইয়া অবীনাদবের বাটী হইতে বাহির করিলেন, এবং উষঃ ও অহিয়ো ঐ শকট চালাইল। আর দায়ূদ ও সমস্ত ইস্রায়েল সমস্ত শক্তিতে ঈশ্বরের সম্মুখে গীত সহকারে বীণা, নেবল, তবল, করতাল ও তূরী বাজাইলেন। পরে তাঁহারা কীদোনের খামার পর্য্যন্ত গেলে উষঃ ঐ সিন্দুক ধরিবার জন্য হস্ত বিস্তার করিল, কেননা বলদ-যুগল পিছলিয়া পড়িয়াছিল। তখন উষের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল ও সিন্দুকের প্রতি তাহার হস্ত বিস্তার করণ প্রযুক্ত তিনি তাহাকে আঘাত করিলেন; তাহাতে সে তথায় ঈশ্বরের সম্মুখে মরিল। সদাপ্রভু উষকে আক্রমণ করায় দায়ূদ অসন্তুষ্ট হইলেন, আর সেই স্থানের নাম পেরস-উষঃ [উষঃ-আক্রমণ] রাখিলেন; অদ্যাপি সেই নাম প্রচলিত আছে। আর দায়ূদ সেই দিন ঈশ্বর হইতে ভীত হইয়া কহিলেন; ঈশ্বরের সিন্দুক কি প্রকারে আমার নিকটে আনিব? তাই দায়ূদ সেই সিন্দুক দায়ূদ-নগরে আপনার নিকটে না আনিয়া [পথের] পার্শ্বস্থ গাতীয় ওবেদ-ইদোমের বাটীতে লইয়া রাখিলেন। আর ঈশ্বরের সিন্দুক ওবেদ-ইদোমের বাটীতে তাহার পরিবারের কাছে তিন মাস থাকিল; তাহাতে সদাপ্রভু ওবেদ-ইদোমের বাটী ও তাহার সর্ব্বস্বকে আশীর্ব্বাদযুক্ত করিলেন। আর সোরের রাজা হীরম দায়ূদের জন্য এক বাটী নির্ম্মাণার্থে তাঁহার নিকটে দূত এবং এরসকাষ্ঠ, ভাস্কর ও সূত্রধর পাঠাইলেন। তখন দায়ূদ বুঝিলেন যে, সদাপ্রভু ইস্রায়েলের রাজপথে তাঁহাকে সুস্থির করিয়াছেন, কেননা তাঁহার প্রজা ইস্রায়েলের নিমিত্ত তাঁহার রাজ্য উন্নতি প্রাপ্ত হইয়াছিল। আর দায়ূদ যিরূশালেমে আরও কতকগুলি স্ত্রী গ্রহণ করিলেন; এবং দায়ূদ আরও পুত্রকন্যার জন্ম দিলেন। যিরূশালেমে তাঁহার যে সকল পুত্র জন্মিল, তাহাদের নাম; শম্মূয়, শোবব, নাথন, শলোমন, যিভর, ইলীশূয়, ইল্পেলট, নোগহ, নেফগ, যাফিয়, ইলীশামা, বীলিয়াদা ও ইলীফেলট। পলেষ্টীয়েরা যখন শুনিল যে, দায়ূদ সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজপদে অভিষিক্ত হইয়াছেন, তখন পলেষ্টীয় সমস্ত লোক দায়ূদের অন্বেষণে উঠিয়া আসিল; দায়ূদ তাহা শুনিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে বাহির হইলেন। আর পলেষ্টীয়েরা আসিয়া রফায়ীম তলভূমিতে ব্যাপ্ত হইল। তখন দায়ূদ ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে উঠিয়া যাইব? তুমি কি আমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিবে? সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, যাও, আমি তাহাদিগকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিব। পরে তাহারা বাল্‌-পরাসীমে আসিল; আর দায়ূদ সেই স্থানে তাহাদিগকে আঘাত করিলেন; এবং দায়ূদ কহিলেন, ঈশ্বর আমার হস্ত দ্বারা আমার শত্রুগণকে সেতুভঙ্গের ন্যায় ভগ্ন করিলেন, এই জন্য সেই স্থানের নাম বাল্‌-পরাসীম [ভঙ্গস্থান] রাখা হইল। সেই স্থানে তাহারা আপনাদের দেবগণকে ফেলিয়া গিয়াছিল; তাহাতে দায়ূদের আজ্ঞানুসারে সেগুলি আগুনে পোড়াইয়া দেওয়া হইল। পরে পলেষ্টীয়েরা পুনর্ব্বার আসিয়া সেই তলভূমিতে ব্যাপ্ত হইল। তখন দায়ূদ পুনর্ব্বার ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন; তাহাতে ঈশ্বর তাঁহাকে কহিলেন, তুমি উহাদের পশ্চাতে যাইও না, উহাদের হইতে ফিরিয়া আসিয়া বাকা বৃক্ষরাজির সম্মুখে উহাদিগকে আক্রমণ কর। সেই সকল বাকা বৃক্ষের শিখরে সৈন্যগমনের মত শব্দ শুনিলে তুমি যুদ্ধে অগ্রসর হইবে, কেননা ঈশ্বর পলেষ্টীয়দের সৈন্যদলকে আঘাত করিবার জন্য তোমার সম্মুখে অগ্রসর হইয়াছেন। দায়ূদ ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে কার্য্য করিলেন; তখন তাঁহার লোকেরা গিবিয়োন অবধি গেষর পর্য্যন্ত পলেষ্টীয়দের সৈন্যদলকে আঘাত করিল। আর দায়ূদের কীর্ত্তি সমস্ত দেশে ব্যাপিল, এবং সদাপ্রভু সর্ব্ব জাতির মধ্যে তাঁহা হইতে ভয় উপস্থিত করিলেন। আর দায়ূদ আপনার জন্য দায়ূদ-নগরে [অনেক] গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিন্দুকের জন্য একটী স্থান প্রস্তুত করিলেন, তাহার নিমিত্ত এক তাম্বু স্থাপন করিলেন। সেই সময়ে দায়ূদ কহিলেন, ঈশ্বরের সিন্দুক বহন করা লেবীয়দের ছাড়া আর কাহারও কর্ত্তব্য নয়; কেননা ঈশ্বরের সিন্দুক বহিতে ও চিরকাল তাঁহার পরিচর্য্যা করিতে সদাপ্রভু তাহাদিগকেই মনোনীত করিয়াছেন। পরে দায়ূদ সদাপ্রভুর সিন্দুকের জন্য যে স্থান প্রস্তুত করিয়াছিলেন, সেই স্থানে তাহা আনিবার নিমিত্ত সমস্ত ইস্রায়েলকে যিরূশালেমে একত্র করিলেন। আর দায়ূদ হারোণ-সন্তানগণকে ও এই এই লেবীয়দিগকে একত্র করিলেন; —কহাতের সন্তানগণের মধ্যে ঊরীয়েল অধ্যক্ষ, আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ এক শত কুড়ি জন; মরারির সন্তানগণের মধ্যে অসায় অধ্যক্ষ, আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ দুই শত কুড়ি জন; গের্শোমের সন্তানগণের মধ্যে যোয়েল অধ্যক্ষ, আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ এক শত ত্রিশ জন; ইলীষাফণের সন্তানগণের মধ্যে শমরিয় অধ্যক্ষ, আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ দুই শত জন; হিব্রোণের সন্তানগণের মধ্যে ইলীয়েল অধ্যক্ষ, আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ আশী জন; উষীয়েলের সন্তানগণের মধ্যে অম্মীনাদব অধ্যক্ষ, আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ এক শত বারো জন। পরে দায়ূদ সাদোক ও অবিয়াথর, এ দুই যাজককে এবং লেবীয়দিগকে, অর্থাৎ ঊরীয়েলকে, অসায়কে, যোয়েলকে, শমরিয়কে, ইলীয়েলকে ও অম্মীনাদবকে ডাকিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা লেবীয়দের পিতৃকুলপতি, তোমরা ও তোমাদের ভ্রাতারা আপনাদিগকে পবিত্র কর, তাহাতে আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সিন্দুকের জন্য যে স্থান প্রস্তুত করিয়াছি, সে স্থানে তাহা আনিতে পারিবে। কেননা প্রথম বার তোমরা [তাহা বহন কর] নাই, এই জন্য আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে আক্রমণ করিলেন, কারণ আমরা বিধিমতে তাঁহার অন্বেষণ করি নাই। পরে যাজকেরা ও লেবীয়েরা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সিন্দুক আনিবার নিমিত্ত আপনাদিগকে পবিত্র করিলেন। আর লেবির সন্তানগণ বহন-দণ্ডযোগে স্কন্ধে করিয়া ঈশ্বরের সিন্দুক বহন করিল, যেমন সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে মোশি আজ্ঞা করিয়াছিলেন। আর দায়ূদ লেবীয়দের অধ্যক্ষদিগকে কহিলেন, তোমরা উচ্চৈঃস্বরে আনন্দধ্বনি করণার্থে আপনাদের গায়ক ভ্রাতৃগণকে বাদ্যযন্ত্র সহকারে, নেবল, বীণা ও করতাল সহকারে নিযুক্ত কর। তাহাতে লেবীয়েরা যোয়েলের পুত্র হেমনকে, তাঁহার ভ্রাতাদের মধ্যে বেরিখিয়ের পুত্র আসফকে, ও তাঁহাদের জ্ঞাতি মরারি-সন্তানগণের মধ্যে কূশায়ার পুত্র এথনকে নিযুক্ত করিল। আর তাঁহাদের সঙ্গে তাঁহাদের দ্বিতীয় পদস্থ ভ্রাতাদিগকে, সখরিয়, বেন, যাসীয়েল, শমীরামোৎ, যিহীয়েল, উন্নি, ইলীয়াব, বনায়, মাসেয়, মত্তিথিয়, ইলীফলেহূ ও মিক্‌নেয় এবং ওবেদ-ইদোম ও যিয়ীয়েল, এই দুই দ্বারপাল; এই সকলকে তাহারা নিযুক্ত করিল। অতএব হেমন, আসফ ও এথন, এই গায়কেরা পিত্তলের করতালে উচ্চধ্বনি করিতে, এবং সখরিয়, অসীয়েল, শমীরামোৎ, যিহীয়েল, উন্নি, ইলীয়াব, মাসেয় ও বনায় অলামোৎ [নামক সুরে] নেবল বাজাইবার পরিচালক, এবং মত্তিথিয়, ইলীফলেহূ, মিক্‌নেয়, ওবেদ-ইদোম, যিয়ীয়েল ও অসসিয় শিমিনীৎ [নামক সুরে] বীণা বাজাইবার পরিচালক নিযুক্ত হইলেন। আর লেবীয়দের অধ্যক্ষ কননিয় গান সম্বন্ধে নায়ক হইলেন; তিনি গান শিক্ষা দিলেন, কারণ তিনি সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। আর বেরিখিয় ও ইল্‌কানা সিন্দুকের দ্বাররক্ষক ছিলেন। শবনিয়, যিহোশাফট, নথনেল, অমাসয়, সখরিয়, বনায় ও ইলীয়েষর, এই সকল যাজক ঈশ্বরের সিন্দুকের সম্মুখে তূরী বাজাইলেন, এবং ওবেদ-ইদোম ও যিহিয় সিন্দুকের দ্বাররক্ষক ছিলেন। পরে দায়ূদ, ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গ ও সহস্রপতিগণ আনন্দ সহকারে ওবেদ-ইদোমের বাটী হইতে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক আনিতে গেলেন; আর যে লেবীয়েরা সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক বহন করিল, ঈশ্বর তাহাদের সাহায্য করিলেন বলিয়া উহাঁরা সাতটী বলদ ও সাতটী মেঘ উৎসর্গ করিলেন। আর দায়ূদ এবং সিন্দুকবাহক লেবীয়েরা, গায়কেরা ও গায়কদের সহিত গানের অধ্যক্ষ কননিয়, ইহাঁরা সকলে মসীনার পরিচ্ছদ পরিহিত ছিলেন; এবং দায়ূদের স্কন্ধে মসীনার এক এফোদ ছিল। এই প্রকারে জয়ধ্বনি সহকারে এবং শৃঙ্গ, তূরী, করতাল, নেবল ও বীণাধ্বনি সহকারে সমস্ত ইস্রায়েল সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক আনয়ন করিল। আর সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক যখন দায়ূদ-নগরে উপস্থিত হইল, তখন শৌলের কন্যা মীখল বাতায়ন দিয়া দৃষ্টিপাত করিলেন, এবং দায়ূদ রাজাকে নৃত্য ও আনন্দ করিতে দেখিয়া মনে মনে তুচ্ছ করিলেন। পরে লোকেরা ঈশ্বরের সিন্দুক ভিতরে আনিয়া, দায়ূদ তাহার জন্য যে তাম্বু স্থাপন করিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে রাখিল, এবং ঈশ্বরের সম্মুখে হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিল। আর দায়ূদ হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলির উৎসর্গ সাঙ্গ করিবার পর সদাপ্রভুর নামে লোকদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। আর সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্যে প্রত্যেক পুরুষকে ও প্রত্যেক স্ত্রীলোককে এক একখানা রুটী ও এক এক ভাগ [অন্য খাদ্য] ও এক একখানা দ্রাক্ষাপিষ্টক দিলেন। পরে তিনি সদাপ্রভুর সিন্দুকের সম্মুখে পরিচর্য্যা করিতে, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে স্মরণ করিতে, তাঁহার স্তবগান ও প্রশংসা করিতে লেবীয়দের কয়েক জনকে নিযুক্ত করিলেন; আসফ অধ্যক্ষ, দ্বিতীয় সখরিয়, অপর যিয়ীয়েল, শমীরামোৎ, যিহীয়েল, মত্তিথিয়, ইলীয়াব, বনায়, ওবেদ-ইদোম ও যিয়ীয়েল ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুকের সম্মুখে নেবল ও বীণা, আসফ উচ্চধ্বনির করতাল, আর বনায় ও যহসীয়েল, এই দুই জন যাজক নিত্য তূরী বাজাইতেন। আর সেই দিন দায়ূদ সদাপ্রভুর উদ্দেশে স্তবগান করিবার ভার আসফের ও তাঁহার ভ্রাতাদের হস্তে প্রথমে সমর্পণ করিলেন। সদাপ্রভুর স্তব কর, তাঁহার নামে ডাক, জাতিগণের মধ্যে তাঁহার ক্রিয়া সকল জানাও। তাঁহার উদ্দেশে গীত গাও, তাঁহার প্রশংসা গান কর। তাঁহার আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল ধ্যান কর। তাঁহার পবিত্র নামের শ্লাঘা কর; সদাপ্রভুর অন্বেষীদের চিত্ত আনন্দ করুক। সদাপ্রভুর ও তাঁহার শক্তির অনুসন্ধান কর, নিয়ত তাঁহার শ্রীমুখের অন্বেষণ কর। স্মরণ কর তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল, তাঁহার অদ্ভুত লক্ষণ ও তাঁহার মুখের শাসন সকল; তোমরা ত তাঁহার দাস ইস্রায়েলের বংশ, তোমরা যাকোব-সন্তান, তাঁহার মনোনীত লোক। তিনি আমাদের ঈশ্বর, সদাপ্রভু, তাঁহার শাসন সকল সমস্ত পৃথিবীতে বিদ্যমান। তোমরা তাঁহার নিয়ম অনন্তকাল স্মরণ করিও, সেই বাক্য তিনি সহস্র পুরুষপরম্পরার প্রতি আদেশ করিয়াছেন। সেই নিয়ম তিনি অব্রাহামের সহিত করিলেন, সেই শপথ ইস্‌হাকের কাছে করিলেন; তিনি তাহা যাকোবের জন্য বিধি বলিয়া, ইস্রায়েলের জন্য অনন্তকালীন নিয়ম বলিয়া দাঁড় করাইয়াছিলেন; তিনি কহিলেন, আমি তোমাকে কনান দেশ দিব, তাহাই তোমাদের নির্ণীত অধিকার; তৎকালে তোমরা সংখ্যাতে অধিক ছিলে না, অল্পই ছিলে, এবং তথায় প্রবাসী ছিলে। তাহারা এক জাতি হইতে অন্য জাতির নিকটে, এক রাজ্য হইতে অন্য লোকবৃন্দের নিকটে বেড়াইত। তিনি কোন মনুষ্যকে তাহাদের প্রতি উপদ্রব করিতে দিতেন না, বরং তাহাদের জন্য রাজগণকেও অনুযোগ করিতেন,— “আমার অভিষিক্ত ব্যক্তিগণকে স্পর্শ করিও না, আমার ভাববাদিগণের অপকার করিও না।” সমস্ত ভুবন! সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাও, দিন দিন তাঁহার পরিত্রাণ ঘোষণা কর। প্রচার কর জাতিগণের মধ্যে তাঁহার গৌরব, সমস্ত লোক-সমাজে তাঁহার আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল। কেননা সদাপ্রভু মহান্‌ ও অতি কীর্ত্তনীয়, তিনি সমস্ত দেবতা অপেক্ষা ভয়ার্হ। কেননা জাতিগণের সমস্ত দেবতা অবস্তুমাত্র, কিন্তু সদাপ্রভু আকাশমণ্ডলের নির্ম্মাতা। প্রভা ও প্রতাপ তাঁহার অগ্রবর্ত্তী, শক্তি ও আনন্দ তাঁহার বাসস্থানে বিদ্যমান। জাতিগণের গোষ্ঠী সকল! সদাপ্রভুর কীর্ত্তন কর, সদাপ্রভুর গৌরব ও শক্তি কীর্ত্তন কর। সদাপ্রভুর নামের গৌরব কীর্ত্তন কর, নৈবেদ্য সঙ্গে লইয়া তাঁহার সম্মুখে আইস, পবিত্র শোভায় সদাপ্রভুকে প্রণিপাত কর। সমস্ত ভুবন! তাঁহার সাক্ষাতে কম্পমান হও; জগৎও সুস্থির, তাহা বিচলিত হইবে না। আকাশমণ্ডল আনন্দ করুক, পৃথিবী উল্লাসিত হউক; লোকে জাতিগণের মধ্যে বলুক, সদাপ্রভু রাজত্ব করিতেছেন। সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সকলে গর্জ্জন করুক, ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রস্থ সকলই উল্লাসিত হউক। তখন বনের বৃক্ষ সকল সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আনন্দে গান করিবে; কেননা তিনি পৃথিবীর বিচার করিতে আসিতেছেন। সদাপ্রভুর স্তব কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। তোমরা বল, হে আমাদের ত্রাণেশ্বর, ত্রাণ কর, আমাদিগকে সংগ্রহ কর, জাতিগণ হইতে উদ্ধার কর, যেন আমরা তোমার পবিত্র নামের স্তব করি, যেন তোমার প্রশংসায় জয়ধ্বনি করি। ধন্য হউন সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, অনাদিকাল অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত। পরে সকল লোক কহিল, আমেন্‌, আর সদাপ্রভু প্রশংসা করিল। আর দিন দিন যেমন প্রয়োজন, তেমনি সিন্দুকের সম্মুখে নিয়ত পরিচর্য্যা করণার্থে তিনি আফসকে ও তাঁহার ভ্রাতৃগণকে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকের সম্মুখে রাখিলেন। ওবেদ-ইদোম ও তাঁহাদের আটষট্টি জন ভ্রাতা এবং যিদূথূনের পুত্র ওবেদ-ইদোম ও হোষা দ্বারপাল হইলেন। আর তিনি সাদোক যাজককে ও তাঁহার যাজক-ভ্রাতৃগণকে গিবিয়োনস্থ উচ্চস্থলীতে সদাপ্রভুর আবাসের সম্মুখে রাখিলেন, যেন তাঁহারা হোমবেদির উপরে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিয়ত প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে হোমবলি উৎসর্গ করেন, এবং সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে যে ব্যবস্থা আদেশ করিয়াছিলেন, তাহাতে লিখিত সমস্ত কথানুসারে কার্য্য করেন। আর তিনি হেমনকে ও যিদূথূনকে এবং আর যে মনোনীত লোকদের নাম লিখিত হইল, তাহাদিগকে উহাঁদের সঙ্গে রাখিলেন, যেন তাঁহারা সদাপ্রভুর স্তবগান করেন, কেননা তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। আর উচ্চধ্বনির নিমিত্ত তূরী ও করতাল এবং ঈশ্বরীয় সঙ্গীতের নিমিত্ত বাদ্যযন্ত্র বাজাইতে হেমন ও যিদূথূন উহাদের সঙ্গী, এবং যিদূথূনের পুত্রগণ দ্বারপাল হইলেন। পরে সমস্ত লোক আপন আপন গৃহে প্রস্থান করিল; এবং দায়ূদ আপন পরিজনদিগকে আশীর্ব্বাদ করণার্থে ফিরিয়া আসিলেন। পরে দায়ূদ যখন আপন গৃহে বাস করিতে লাগিলেন, তখন তিনি নাথন ভাববাদীকে কহিলেন, দেখুন, আমি এরসকাষ্ঠের গৃহে বাস করিতেছি, কিন্তু সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক যবনিকার অন্তরালে বাস করিতেছে। নাথন দায়ূদকে কহিলেন, যাহা কিছু আপনার মনে আছে, তাহাই করুন, কেননা ঈশ্বর আপনার সহবর্ত্তী। কিন্তু সেই রাত্রিতে ঈশ্বরের এই বাক্য নাথনের নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি যাও, আমার দাস দায়ূদকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি আমার জন্য বসতি-গৃহ নির্ম্মাণ করিবে না। ইস্রায়েলকে বাহির করিয়া আনিবার দিন হইতে অদ্য পর্য্যন্ত আমি ত কোন গৃহে বাস করি নাই, কিন্তু এক তাম্বু হইতে অন্য তাম্বুতে ও এক আবাস হইতে [অন্য আবাসে] গিয়াছি। সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্যে সকল স্থানে আমার যাতায়াত কালে আমি যাহাকে আমার প্রজাদিগের পালনের ভার দিয়াছিলাম, ইস্রায়েলের এমন কোন বিচারকর্ত্তাকে কি কখনও এই কথা বলিয়াছি যে, তোমরা কেন আমার জন্য এরসকাষ্ঠের গৃহ নির্ম্মাণ কর নাই? অতএব এখন তুমি আমার দাস দায়ূদকে এই কথা বলিবে, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার প্রজা ইস্রায়েলের নায়ক করিবার জন্য আমিই তোমাকে মেষবাথান হইতে ও মেষের পশ্চাৎ হইতে গ্রহণ করিয়াছি। আর তুমি যে কোন স্থানে গমন করিয়াছ, সেই স্থানে তোমার সহবর্ত্তী থাকিয়া তোমার সম্মুখ হইতে তোমার সমস্ত শত্রুকে উচ্ছেদ করিয়াছি, আর আমি তোমার নাম পৃথিবীস্থ মহাপুরুষদের নামের মত করিব। আর আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের জন্য একটী স্থান নিরূপণ করিব, ও তাহাদিগকে রোপন করিব; যেন তাহারা আপনাদের সেই স্থানে বাস করে, এবং আর বিচলিত না হয়; দুষ্ট লোকেরা তাহাদিগকে আর নষ্ট করিবে না, যেমন পূর্ব্বে করিত, এবং যে অবধি আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের উপরে বিচারকর্ত্তৃগণকে নিযুক্ত করিয়াছিলাম, সেই অবধি যেমন হইত। আর আমি তোমার সমস্ত শত্রুকে নত করিব। আরও তোমাকে কহিতেছি, তোমার জন্য সদাপ্রভু এক কুল নির্ম্মাণ করিবেন। আর তোমার দিন সম্পূর্ণ হইলে যখন তোমাকে আপন পিতৃলোকদের নিকটে যাইতে হইবে, তখন আমি তোমার পরে তোমার বংশকে, তোমার পুত্রগণের মধ্যে এক জনকে, স্থাপন করিব; এবং তাহার রাজ্য স্থির করিব। সেই আমার নিমিত্ত এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবে, এবং আমি তাহার সিংহাসন চিরস্থায়ী করিব। আমি তাহার পিতা হইব, ও সে আমার পুত্র হইবে; এবং যে তোমার পূর্ব্বে ছিল, তাহা হইতে যেমন আপন দয়া অপসারণ করিয়াছিলাম, তেমনি ইহা হইতে তাহা অপসারণ করিব না। কিন্তু আমার গৃহে ও আমার রাজ্যে তাহাকে চিরকাল স্থির রাখিব, এবং তাহার সিংহাসন চিরস্থায়ী হইবে। নাথন দায়ূদকে এই সমস্ত বাক্যানুসারে ও এই সমস্ত দর্শন অনুসারে কথা কহিলেন। তখন দায়ূদ রাজা ভিতরে গিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে বসিলেন, আর কহিলেন, হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, আমি কে, আমার কুলই বা কি যে, তুমি আমাকে এ পর্য্যন্ত আনিয়াছ? আর হে ঈশ্বর, তোমার দৃষ্টিতে ইহাও ক্ষুদ্র বিষয় হইল; তুমি আপন দাসের কুলের বিষয়েও সুদীর্ঘ কালের উদ্দেশে কথা কহিলে, এবং হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, আমাকে উচ্চপদস্থ মনুষ্যের শ্রেণীভুক্ত বলিয়া জ্ঞান করিলে। তোমার দাসের প্রতি কৃত সম্মানের বিষয়ে দায়ূদ তোমাকে আর কি বলিবে? তুমি ত আপন দাসকে জ্ঞাত আছ। হে সদাপ্রভু, তুমি আপন দাসের নিমিত্ত, ও নিজ হৃদয় অনুসারে, এই সমস্ত মহৎ কার্য্য সাধন করিয়া [এই] সমস্ত মহৎ কর্ম্ম জ্ঞাত করিয়াছ। হে সদাপ্রভু, তোমার তুল্য কেহই নাই, ও তুমি ব্যতীত কোন ঈশ্বর নাই; আমরা স্বকর্ণে যাহা যাহা শুনিয়াছি, তদনুসারে [ইহা জানি]। পৃথিবীর মধ্যে কোন্‌ একটী জাতি তোমার প্রজা ইস্রায়েলের তুল্য? তুমি ঈশ্বর তাহাকে আপন প্রজা করিবার জন্য মুক্ত করিতে গিয়াছিলে, যেন মিসর হইতে মুক্ত তোমার প্রজাবর্গের সম্মুখ হইতে জাতিগণকে তাড়াইয়া দিবার সময়ে মহৎ মহৎ ও ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর কার্য্য দ্বারা আপন নাম প্রতিষ্ঠিত কর। তুমি ত তোমার প্রজা ইস্রায়েলকে চিরকালের জন্য আপন প্রজা করিয়াছ; আর হে সদাপ্রভু, তুমিই তাহাদের ঈশ্বর হইয়াছ। এখন হে সদাপ্রভু, তুমি আপন দাসের ও তাহার কুলের বিষয়ে যে বাক্য বলিয়াছ, তাহা চিরকালের জন্য স্থিরীকৃত হউক; যেমন বলিয়াছ, তদনুসারে কর। তোমার নাম চিরকালের জন্য স্থিরীকৃত ও মহিমান্বিত হউক; লোকে বলুক, বাহিনীগণের সদাপ্রভুই ইস্রায়েলের ঈশ্বর, ইস্রায়েলের পক্ষীয় ঈশ্বর, আর তোমার দাস দায়ূদের কুল তোমার সাক্ষাতে সুস্থির। বাস্তবিক, হে আমার ঈশ্বর, তুমি আমার জন্য এক কুল উৎপন্ন করিবে, এই কথা আপন দাসের কাছে প্রকাশ করিলে; এই কারণ তোমার কাছে এই প্রার্থনা করিতে তোমার দাসের মনে সাহস জন্মিল। আর এখন, হে সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর, এবং তুমি আপন দাসের কাছে এই মঙ্গল প্রতিজ্ঞা করিয়াছ। এখন তুমি অনুগ্রহ করিয়া আপন দাসের কুলকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছ, যেন সেই কুল তোমার সম্মুখে চিরকাল থাকে; কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমিই আশীর্ব্বাদ করিয়াছ, তাই তাহা চিরকালের জন্য আশীর্ব্বাদযুক্ত। তৎপরে দায়ূদ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিয়া নত করিলেন, আর পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে গাৎ ও তাহার উপনগর সকল হরণ করিলেন। আর তিনি মোয়াবকে আঘাত করিলেন; তাহাতে মোয়াবীয়েরা দায়ূদের দাস হইয়া উপঢৌকন আনিল। আর যে সময়ে সোবার রাজা হদরেষর ফরাৎ নদীর নিকটে আপন কর্ত্তৃত্ব স্থাপন করিতে যান, সেই সময়ে দায়ূদ হমাতে তাঁহাকে আঘাত করেন। দায়ূদ তাঁহার নিকট হইতে এক সহস্র রথ, সাত সহস্র অশ্বারোহী ও বিশ সহস্র পদাতিক সৈন্য হস্তগত করিলেন, আর দায়ূদ তাঁহার রথের অশ্বগণের পাদশিরা ছেদন করিলেন, কিন্তু তাহার মধ্যে এক শত রথের অশ্ব রাখিলেন। আর দম্মেশকের অরামীয়েরা সোবার হদরেষর রাজার সাহায্য করিতে আসিলে দায়ূদ সেই অরামীয়দের মধ্যে বাইশ সহস্র জনকে আঘাত করিলেন। আর দায়ূদ দম্মেশকের অরাম দেশে [সৈন্যদল] স্থাপন করিলেন; তাহাতে অরাম দায়ূদের দাস হইয়া উপঢৌকন আনিল; এই প্রকারে দায়ূদ যে কোন স্থানে যাইতেন, সেই স্থানে সদাপ্রভু তাঁহাকে বিজয়ী করিতেন। আর দায়ূদ হদরেষরের দাসদের স্বর্ণঢাল সকল খুলিয়া যিরূশালেমে আনিলেন। আর দায়ূদ হদরেষরেব টিভৎ ও কূন নগর হইতে বিস্তর পিত্তল আনিলেন, শলোমন তাহা দ্বারা পিত্তলময় সমুদ্র, দুই স্তম্ভ ও পিত্তলময় পাত্র সকল নির্ম্মাণ করিলেন। তখন দায়ূদ সোবার রাজা হদরেষরের সমগ্র সৈন্যদলকে আঘাত করিয়াছেন, শুনিয়া হমাতের রাজা তয়ূ দায়ূদ রাজার কুশল জিজ্ঞাসা করিবার জন্য, এবং তিনি হদরেষরের সহিত যুদ্ধ করিয়া তাঁহাকে আঘাত করিয়াছেন বলিয়া তাঁহার ধন্যবাদ করিবার জন্য আপন পুত্র হদোরামকে তাঁহার কাছে প্রেরণ করিলেন; কেননা হদরেষরের সহিত তয়ূরও যুদ্ধ হইয়াছিল। আর [হদোরামের সঙ্গে] রৌপ্যের, স্বর্ণের ও পিত্তলের নানা প্রকার পাত্র ছিল। তাহাতে দায়ূদ রাজা সমস্ত জাতি হইতে, ইদোম, মোয়াব, অম্মোন-সন্তানগণ, এবং পলেষ্টীয়গণ ও অমালেক হইতে আনীত রৌপ্যের ও স্বর্ণের সহিত সেই সকল দ্রব্যও সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র করিলেন। আর সরূয়ার পুত্র অবীশয় লবণ-তলভূমিতে আঠার সহস্র ইদোমীয়কে বধ করিলেন। পরে তিনি ইদোমে সৈন্যদল স্থাপন করিলেন; এবং ইদোমীয় সকল লোক দায়ূদের দাস হইল। আর দায়ূদ যে কোন স্থানে যাইতেন, সেই স্থানে সদাপ্রভু তাঁহাকে বিজয়ী করিতেন। দায়ূদ সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিলেন; তিনি আপনার সমস্ত প্রজার জন্য বিচার ও ন্যায় সাধন করিতেন। আর সরূয়ার পুত্র যোয়াব সৈন্যাধ্যক্ষ ছিলেন; এবং অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট ইতিহাসকর্ত্তা ছিলেন। আর অহীটূবের পুত্র সাদোক ও অবিয়াথরের পুত্র অবীমেলক যাজক ছিলেন; এবং শব্‌শ লেখক ছিলেন। আর যিহোয়াদার পুত্র বনায় করেথীয় ও পলেথীয়দের উপরে নিযুক্ত ছিলেন; এবং দায়ূদের পুত্রগণ রাজার প্রধান সভাসদ ছিলেন। তৎপরে অম্মোন-সন্তানদের রাজা নাহশ মরিলেন, ও তাঁহার পুত্র তাঁহার পদে রাজা হইলেন। তখন দায়ূদ কহিলেন, আমি নাহশের পুত্র হানূনের প্রতি সদয় ব্যবহার করিব, কেননা তাঁহার পিতা আমার প্রতি সদয় ব্যবহার করিয়াছিলেন। পরে দায়ূদ তাঁহাকে পিতৃশোকে সান্ত্বনা দিবার জন্য দূতগণকে প্রেরণ করিলেন। আর দায়ূদের দাসগণ হানূনকে সান্ত্বনা দিবার জন্য অম্মোন-সন্তানদের দেশে তাঁহার কাছে উপস্থিত হইল। কিন্তু অম্মোন-সন্তানদের অধ্যক্ষগণ হানূনকে কহিলেন, আপনি কি মনে করিতেছেন যে, দায়ূদ আপনার পিতার সম্মান করে বলিয়া আপনার নিকটে সান্ত্বনাকারীগণকে পাঠাইয়াছে? তাহার দাসগণ কি সন্ধান লইবার এবং লণ্ডভণ্ড করিবার ও দেশ নিরীক্ষণ করিবার জন্য আপনার নিকটে আইসে নাই? তখন হানূন দায়ূদের দাসগণকে ধরিয়া তাহাদিগকে ক্ষৌরি করাইয়া দিলেন, ও বস্ত্রের অর্দ্ধেক অর্থাৎ নিতম্ব দেশ পর্য্যন্ত কাটিয়া তাহাদিগকে বিদায় করিলেন। পরে কোন লোক গিয়া সেই ব্যক্তিদের বৃত্তান্ত দায়ূদকে জ্ঞাত করিল। আর তিনি তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে লোক পাঠাইলেন; কেননা তাহারা অতিশয় লজ্জিত হইয়াছিল। রাজা বলিয়া পাঠাইলেন, যাবৎ তোমাদের দাড়ি না উঠে, তাবৎ তোমরা যিরীহোতে থাক, তৎপরে ফিরিয়া আসিও। অম্মোন-সন্তানগণ যখন দেখিতে পাইল যে, তাহারা দায়ূদের কাছে আপনাদিগকে ঘৃণার পাত্র করিয়াছে, তখন হানূন ও অম্মোন-সন্তানগণ অরাম-নহরয়িম, অরাম-মাখা ও সোবা হইতে রথ ও অশ্বারোহীদিগকে বেতন দিয়া আনিবার জন্য এক সহস্র তালন্ত রৌপ্য পাঠাইল। আর বত্রিশ সহস্র রথ ও মাখার রাজাকে এবং তাঁহার লোকদিগকে বেতন দিয়া আনাইল; তাহারা আসিয়া মেদবার সম্মুখে শিবির স্থাপন করিল; এবং অম্মোন-সন্তানগণও আপন আপন নগর হইতে একত্র হইয়া যুদ্ধে আসিল। তখন এই সংবাদ পাইয়া দায়ূদ যোয়াবকে ও বিক্রমশালী সমস্ত সৈন্যকে প্রেরণ করিলেন। অম্মোন-সন্তানগণ বাহিরে আসিয়া নগরের প্রবেশ-স্থানে যুদ্ধার্থে সৈন্য রচনা করিল, এবং সমাগত রাজারা মাঠে স্বতন্ত্র থাকিলেন। এইরূপে সম্মুখে ও পশ্চাতে দুই দিকেই তাঁহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হইবে দেখিয়া যোয়াব ইস্রায়েলের সমস্ত মনোনীত লোকের মধ্য হইতে লোক বাছিয়া লইয়া অরামীয়দের সম্মুখে সৈন্য রচনা করিলেন। আর অবশিষ্ট লোকদিগকে তিনি আপন ভ্রাতা অবীশয়ের হস্তে সমর্পণ করিলেন; তাহাতে তাহারা অম্মোন-সন্তানদের সম্মুখে সৈন্য রচনা করিল। আর তিনি কহিলেন, যদি অরামীয়েরা আমা অপেক্ষা বলবান হয়, তবে তুমি আমার সাহায্য করিবে; আর যদি অম্মোন-সন্তানগণ তোমা অপেক্ষা বলবান হয়, তবে আমি তোমার সাহায্য করিব। সাহস কর, আইস, আমাদের জাতির জন্য ও আমাদের ঈশ্বরের নগর সকলের জন্য আমরা আপনাদিগকে বলবান করি; আর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তিনি তাহাই করুন। পরে যোয়াব ও তাঁহার সঙ্গী লোকেরা যুদ্ধার্থে অরামীয়দের সম্মুখীন হইলে তাহারা তাঁহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল। আর অরামীয়েরা পলায়ন করিয়াছে দেখিয়া অম্মোন-সন্তানগণও তাঁহার ভ্রাতা অবীশয়ের সম্মুখ হইতে পলাইয়া নগরে প্রবেশ করিল। পরে যোয়াব যিরূশালেমে আসিলেন। অরামীয়েরা যখন দেখিতে পাইল যে, তাহারা ইস্রায়েলের সম্মুখে পরাজিত হইয়াছে, তখন দূত পাঠাইয়া [ফরাৎ] নদীর ওপারস্থ অরামীয়দিগকে বাহির করিয়া আনিল; হদরেষরের দলের সেনাপতি শোফক তাহাদের অগ্রণী ছিলেন। পরে দায়ূদকে এই সংবাদ দেওয়া হইলে তিনি সমস্ত ইস্রায়েলকে একত্র করিলেন, এবং যর্দ্দন পার হইয়া তাহাদের নিকটে উপস্থিত হইলেন, ও তাহাদের বিরুদ্ধে সৈন্য রচনা করিলেন; আর দায়ূদ অরামীয়দের বিরুদ্ধে সৈন্য রচনা করিলে তাহারা তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিল। আর অরামীয়েরা ইস্রায়েলের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল; আর দায়ূদ অরামীয়দের সাত সহস্র রথারোহী ও চল্লিশ সহস্র পদাতিক সৈন্য বধ করিলেন, এবং দলের সেনাপতি শোফককে বধ করিলেন। পরে হদরেষরের দাসগণ যখন দেখিল, তাহারা ইস্রায়েলের সম্মুখে পরাজিত হইয়াছে, তখন দায়ূদের সহিত সন্ধি করিয়া তাঁহার দাস হইল; এবং অরামীয়েরা আর অম্মোন-সন্তানগণের সাহায্য করিতে সম্মত হইল না। পরে যখন বৎসর ফিরিয়া আসিল, সেই সময়ে অর্থাৎ রাজবর্গের যুদ্ধে গমন সময়ে যোয়াব সৈন্যবল লইয়া গিয়া অম্মোন-সন্তানদের দেশ উৎসন্ন করিলেন, আর রব্বাতে গিয়া তাহা অবরোধ করিলেন, কিন্তু দায়ূদ যিরূশালেমে থাকিলেন। পরে যোয়াব রব্বাকে আঘাত করিয়া ভূমিসাৎ করিলেন। আর দায়ূদ তাহাদের রাজার মস্তক হইতে মুকুট লইলেন। আর জানা গেল, তাহা এক তালন্ত স্বর্ণ পরিমিত, এবং মণিতে ভূষিত; আর তাহা দায়ূদের মস্তকে অর্পিত হইল; এবং তিনি ঐ নগর হইতে অতি প্রচুর লুটদ্রব্য বাহির করিয়া আনিলেন। আর তিনি তথাকার লোকদিগকে বাহির করিয়া আনিয়া করাতের দ্বারা, লৌহের মই দ্বারা ও কুড়ালির দ্বারা ছেদন করিলেন; দায়ূদ অম্মোন-সন্তানদের সমস্ত নগরের প্রতি এইরূপ করিলেন। পরে দায়ূদ ও সমস্ত লোক যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন। তৎপরে গেষরে পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ হইল; তখন হূশাতীয় সিব্বখয় রফার সন্তান সিপ্পয়কে বধ করিল, আর তাহারা নত হইল। আবার পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ হইল, আর যায়ীরের পুত্র ইল্‌হানন গাতীয় গলিয়াতের ভ্রাতা লহমিকে বধ করিল, ইহার বড়শা তাঁতের নরাজের ন্যায় ছিল। আর একবার গাতে যুদ্ধ হইল; আর তথায় অতি দীর্ঘকায় এক জন ছিল, প্রতিহস্তপদে তাহার ছয় ছয় অঙ্গুলি, সর্ব্বশুদ্ধ চব্বিশ অঙ্গুলি ছিল, সেও রফার সন্তান। সে ইস্রায়েলকে টিট্‌কারি দিলে দায়ূদের ভ্রাতা শিমিয়ের পুত্র যোনাথন তাহাকে বধ করিল। ইহারা রফার বংশে গাতে জন্মিয়াছিল; ইহারা দায়ূদের হাতে ও তাঁহার দাসগণের হাতে নিপতিত হইল। আর শয়তান ইস্রায়েলের প্রতিকূলে দাঁড়াইয়া ইস্রায়েলকে গণনা করিতে দায়ূদকে প্রবৃত্তি দিল। তখন দায়ূদ যোয়াবকে ও জনাধ্যক্ষদিগকে কহিলেন, যাও, তোমরা বের্‌-শেবা হইতে দান পর্য্যন্ত ইস্রায়েলকে গণনা কর, পরে আমার নিকটে সংবাদ আন, আমি তাহাদের সংখ্যা জানিব। তখন যোয়াব কহিলেন, এখন যত লোক আছে, সদাপ্রভু তাহার শত গুণ অধিক আপন প্রজার বৃদ্ধি করুন; কিন্তু হে আমার প্রভু মহারাজ, তাহারা সকলে কি আমার প্রভুর দাস নহে? আমার প্রভু এ চেষ্টা কেন করিতেছেন? আপনি ইস্রায়েলের দোষের কারণ কেন হইবেন? তথাপি যোয়াবের উপরে রাজার কথাই প্রবল হইল। তাহাতে যোয়াব প্রস্থান করিয়া সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্যে পর্য্যটন করিলেন, পরে যিরূশালেমে আসিলেন। আর যোয়াব গণিত লোকদের সংখ্যা দায়ূদের কাছে দিলেন। সমস্ত ইস্রায়েলের এগার লক্ষ খড়্‌গধারী লোক, ও যিহূদার চারি লক্ষ সত্তর সহস্র খড়্‌গধারী লোক ছিল। কিন্তু তাহাদের মধ্যে তিনি লেবি ও বিন্যামীন [বংশকে] গণনা করেন নাই, কারণ রাজার কথায় যোয়াবের ঘৃণা হইয়াছিল। আর ঈশ্বর এই কার্য্যে অসন্তুষ্ট হইলেন; তাই তিনি ইস্রায়েলকে আঘাত করিলেন। পরে দায়ূদ ঈশ্বরকে কহিলেন, এই কার্য্য করিয়া আমি মহাপাপ করিয়াছি; কিন্তু এখন বিনয় করি, নিজ দাসের অপরাধ ক্ষমা কর; কেননা আমি বড়ই অজ্ঞানের কর্ম্ম করিয়াছি। পরে সদাপ্রভু দায়ূদের দর্শক গাদকে এই কথা কহিলেন; তুমি গিয়া দায়ূদকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তোমার সম্মুখে তিনটী [দণ্ড] রাখিলাম, তাহার মধ্যে তুমি একটা মনোনীত কর, আমি তাহাই তোমার প্রতি করিব। পরে গাদ দায়ূদের নিকটে আসিয়া তাঁহাকে বলিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যেটা ইচ্ছা, গ্রহণ কর; হয় তিন বৎসর দুর্ভিক্ষ, নয় তিন মাস পর্য্যন্ত শত্রুদের খড়্‌গ তোমাকে পাইয়া বসিলে তোমার বিপক্ষ লোকদের সম্মুখে সংহার, নয় ত তিন দিবস পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর খড়্‌গ, অর্থাৎ দেশে মহামারী এবং ইস্রায়েলের সমস্ত অঞ্চলে সদাপ্রভুর বিনাশক দূতের ভ্রমণ। যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে কি উত্তর দিব, তাহা এখন বিবেচনা করিয়া দেখুন। দায়ূদ গাদকে কহিলেন, আমি বড়ই বিপদ্‌গ্রস্ত হইলাম; এক্ষণে আমি সদাপ্রভুর হস্তে পড়ি, কেননা তাঁহার করুণা প্রচুর; কিন্তু আমি যেন মনুষ্যের হস্তে না পড়ি। পরে সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপরে মহামারী পাঠাইলেন, তাহাতে ইস্রায়েলের সত্তর সহস্র লোক মারা পড়িল। আর ঈশ্বর যিরূশালেম বিনষ্ট করিবার জন্য এক দূতকে তথায় প্রেরণ করিলেন; তিনি যখন বিনাশ করিতে উদ্যত হইলেন, তখন সদাপ্রভু দৃষ্টিপাত করিয়া সেই বিপদের জন্য অনুশোচনা করিলেন, এবং বিনাশক দূতকে কহিলেন, যথেষ্ট হইয়াছে, এখন তোমার হস্ত সঙ্কুচিত কর। তখন সদাপ্রভুর দূত যিবূষীয় অর্ণানের খামারের নিকটে দাঁড়াইয়াছিলেন। আর দায়ূদ চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, সদাপ্রভুর দূত পৃথিবীর ও আকাশের মধ্যপথে দাঁড়াইয়া আছেন, তাঁহার হস্তে যিরূশালেমের উপরে প্রসারিত নিষ্কোষ খড়্‌গ। তখন দায়ূদ ও প্রাচীনেরা চটপরিহিত ছিলেন, তাঁহারা অমনি উবুড় হইয়া পড়িলেন। আর দায়ূদ ঈশ্বরকে কহিলেন, লোকদিগকে গণনা করিতে যে আজ্ঞা দিয়াছিল, সে কি আমি নহি? আমিই পাপ করিয়াছি, আমিই বড় অপরাধ করিয়াছি, কিন্তু এই মেষগণ কি করিল? হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, বিনয় করি, আমারই বিরুদ্ধে ও আমার পিতৃকুলের বিরুদ্ধে তোমার হস্ত বিস্তারিত হউক; কিন্তু তোমার প্রজাদিগকে প্রহার করিবার জন্য বিস্তারিত না হউক। পরে সদাপ্রভুর দূত দায়ূদকে বলিবার জন্য গাদকে কহিলেন, দায়ূদ উঠিয়া গিয়া যিবূষীয় অর্ণানের খামারে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি স্থাপন করুক। অতএব সদাপ্রভুর নামে কথিত গাদের বাক্যানুসারে দায়ূদ উঠিয়া গেলেন। পরে অর্ণান মুখ ফিরাইয়া দূতকে দেখিতে পাইল; আর তাহার সঙ্গী চারি পুত্র লুকাইল। তখন অর্ণান গোম মাড়িতেছিল। কিন্তু দায়ূদ অর্ণানের কাছে আসিলে অর্ণান দৃষ্টি করিয়া দায়ূদকে দেখিয়া খামার হইতে বাহিরে আসিয়া ভূমিতে উবুড় হইয়া দায়ূদকে প্রণিপাত করিল। তখন দায়ূদ অর্ণানকে কহিলেন, তুমি এই খামারের স্থানটী আমাকে দেও, আমি এই স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করি; তুমি সম্পূর্ণ মূল্য লইয়া ইহা আমাকে দেও; তাহা হইলে লোকদের মধ্যে মহামারী নিবৃত্ত হইবে। তখন অর্ণান দায়ূদকে কহিল, আপনি লউন, আমার প্রভু মহারাজের দৃষ্টিতে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহাই করুন; দেখুন, আমি হোমবলির নিমিত্ত এই বৃষগুলি, কাষ্ঠের নিমিত্ত এই মর্দ্দনযন্ত্র, ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের নিমিত্ত এই গোম দিতেছি, সমস্তই দিতেছি। দায়ূদ রাজা অর্ণানকে কহিলেন, তাহা নয়, কিন্তু আমি অবশ্য সম্পূর্ণ মূল্য দিয়া ইহা ক্রয় করিব; কেননা তোমার যাহা, আমি সদাপ্রভুর জন্য তাহা লইব না, বিনামূল্যে হোমবলি উৎসর্গ করিব না। পরে দায়ূদ সেই স্থানের জন্য ছয় শত শেকল স্বর্ণ তৌল করিয়া অর্ণানকে দিলেন। আর দায়ূদ সেই স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়া হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিলেন, আর সদাপ্রভুকে ডাকিলেন; তাহাতে তিনি আকাশ হইতে হোমবেদির উপরে অগ্নিপাত দ্বারা তাঁহাকে উত্তর দিলেন। পরে সদাপ্রভু আপন দূতকে আজ্ঞা করিলে তিনি আপন খড়্‌গ পুনরায় কোষে রাখিলেন। সেই সময়ে যখন দায়ূদ দেখিলেন, সদাপ্রভু যিবূষীয় অর্ণানের খামারে তাঁহাকে উত্তর দিলেন, তখন তিনি সেই স্থানে বলিদান করিলেন। কেননা সদাপ্রভুর আবাস, যাহা মোশি প্রান্তরে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহা ও হোমবেদি সেই সময়ে গিবিয়োনস্থ উচ্চস্থলীতে ছিল। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করিবার জন্য তৎসম্মুখে গমন করা দায়ূদের অসাধ্য হইল, কারণ সদাপ্রভুর দূতের খড়্‌গ হইতে তিনি ভীত হইয়াছিলেন। তখন দায়ূদ কহিলেন, এই সদাপ্রভু ঈশ্বরের গৃহের স্থান, এই ইস্রায়েলের হোমবেদির স্থান। পরে দায়ূদ ইস্রায়েল দেশস্থ বিদেশী লোকদিগকে একত্র করিতে আজ্ঞা দিলেন; এবং ঈশ্বরের গৃহ নির্ম্মাণার্থে তক্ষিত প্রস্তর প্রস্তুত করিতে ভাস্করদিগকে নিযুক্ত করিলেন। আর দ্বার সকলের কবাটের প্রেকের জন্য ও কব্‌জার জন্য দায়ূদ অপর্য্যাপ্ত লৌহ প্রস্তুত করিলেন, এবং অপর্য্যাপ্ত পিত্তল, যাহা তৌল করা যায় না, আর অসংখ্য এসরকাষ্ঠ [প্রস্তুত করিলেন], কেননা সীদোনীয় ও সোরীয়েরা দায়ূদের নিকটে অপর্য্যাপ্ত এরসকাষ্ঠ আনিয়াছিল। আর দায়ূদ কহিলেন, আমার পুত্র শলোমন অল্পবয়স্ক ও কোমল, কিন্তু সদাপ্রভুর জন্য যে গৃহ নির্ম্মাণ করা যাইবে, তাহা অতিশয় প্রতাপান্বিত হইবে, তাহার কীর্ত্তি ও যশ সর্ব্বদেশে ব্যাপ্ত হইবে; আমি এখন তাহার জন্য আয়োজন করিব। অতএব দায়ূদ আপন মৃত্যুর পূর্ব্বে প্রচুর দ্রব্যের আয়োজন করিলেন। পরে তিনি আপন পুত্র শলোমনকে ডাকিয়া ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আজ্ঞা করিলেন। আর দায়ূদ আপন পুত্র শলোমনকে কহিলেন, আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আমারই মনোরথ ছিল; কিন্তু সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি অনেক রক্তপাত করিয়াছ ও বড় বড় যুদ্ধ করিয়াছ; তুমি আমার নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিবে না; কেননা আমার সাক্ষাতে তুমি অনেক রক্ত মৃত্তিকাতে ঢালিয়াছ। দেখ, তোমার এক পুত্র জন্মিবে, সে বিশ্রামের মনুষ্য হইবে; আমি তাহার চারিদিকের সকল শত্রু হইতে তাহাকে বিশ্রাম দিব, কেননা তাহার নাম শলোমন [শান্ত] হইবে, এবং তাহার সময়ে আমি ইস্রায়েলকে শান্তি ও নির্ব্বিঘ্নতা দিব। সেই আমার নামের জন্য গৃহ নির্ম্মাণ করিবে; আর সে আমার পুত্র হইবে, আমি তাহার পিতা হইব, এবং ইস্রায়েলের উপরে তাহার রাজসিংহাসন চিরকালের জন্য স্থির করিব। এখন, হে আমার পুত্র, সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী হউন, এবং তিনি তোমার বিষয়ে যেমন বলিয়াছেন, তদনুসারে তুমি কৃতকার্য্য হও, ও তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহ নির্ম্মাণ কর। কেবল সদাপ্রভু তোমাকে বুদ্ধি ও বিবেচনা দিয়া ইস্রায়েলের বিষয়ে তোমাকে আজ্ঞা দিউন, যেন তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ব্যবস্থা পালন করিতে পার। সদাপ্রভু ইস্রায়েলের নিমিত্ত মোশিকে যে সকল বিধি ও শাসন দিয়াছেন, সে সমস্ত যত্নপূর্ব্বক পালন করিলেই তুমি কৃতকার্য্য হইবে; তুমি বলবান হও, ও সাহস কর, ভয় করিও না, নিরাশ হইও না। আর দেখ, আমি কষ্টের মধ্যে সদাপ্রভুর গৃহের জন্য এক লক্ষ তালন্ত স্বর্ণ ও দশ লক্ষ তালন্ত রৌপ্য এবং অপরিমেয় পিত্তল ও লৌহ প্রস্তুত করিয়াছি, বাস্তবিক তাহা অপর্য্যাপ্ত; আর কাষ্ঠ ও প্রস্তর প্রস্তুত করিয়াছি; এবং তুমি আরও প্রস্তুত করিতে পারিবে। আর তোমার কাছে অনেক শিল্পকার আছে, প্রস্তর ও কাষ্ঠের ছেদক ও তৎকার্য্যকারী এবং সর্ব্বপ্রকার কর্ম্মে নিপুন অনেক লোক আছে। স্বর্ণ, রৌপ্য, পিত্তল ও লৌহ অসংখ্য; উঠ, কর্ম্ম কর, এবং সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী হউন। পরে দায়ূদ আপন পুত্র শলোমনের সাহায্য করিতে ইস্রায়েলের সমস্ত অধ্যক্ষকে আজ্ঞা করিলেন, কহিলেন, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কি তোমাদের সহবর্ত্তী নহেন? তিনি কি সর্ব্বদিকে তোমাদিগকে বিশ্রাম দেন নাই? তিনি ত দেশনিবাসী লোকদিগকে আমার হাতে দিয়াছেন, এবং সদাপ্রভুর ও তাঁহার প্রজাবৃন্দের সম্মুখে দেশ বশীভূত রহিয়াছে। এখন তোমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে আপন আপন চিত্ত ও প্রাণ নিবেশ কর, আর উঠ, সদাপ্রভু ঈশ্বরের ধর্ম্মধাম নির্ম্মাণ কর, যেন সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক ও ঈশ্বরের পবিত্র পাত্র সকল সেই গৃহে আনীত হয়, যাহা সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে নির্ম্মাণ করা যাইবে। আর দায়ূদ বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইলেন; এবং আপন পুত্র শলোমনকে ইস্রায়েলের উপরে রাজা করিলেন। তিনি ইস্রায়েলের সমস্ত অধ্যক্ষকে এবং যাজক ও লেবীয়দিগকে একত্র করিলেন। তখন ত্রিশ ও তদপেক্ষা অধিক বৎসর বয়স্ক লেবীয়েরা গণিত হইল; মস্তক-গণনায় তাহারা আটত্রিশ সহস্র পুরুষ। তাহাদের মধ্যে চব্বিশ সহস্র লোক সদাপ্রভুর গৃহের কার্য্যের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হইল, এবং ছয় সহস্র লোক শাসনকর্ত্তা ও বিচারকর্ত্তা, আর চারি সহস্র লোক দ্বারপাল; এবং দায়ূদ প্রশংসার্থে যে সকল বাদ্যযন্ত্র নির্ম্মাণ করেন, তাহা দ্বারা চারি সহস্র লোক সদাপ্রভুর প্রশংসা করিত। আর দায়ূদ তাহাদিগকে গের্শোন, কহাৎ ও মরারি, লেবির এই পুত্রদের বংশানুসারে নানা পালায় বিভক্ত করিলেন। গের্শোনীয়দের মধ্যে লাদন ও শিমিয়ি। লাদনের সন্তান; প্রধান যিহীয়েল, অপর সেথম ও যোয়েল, তিন জন। শিমিয়ির সন্তান শলোমোৎ, হসীয়েল ও হারণ, তিন জন; ইহারা লাদনের পিতৃকুলপতি। আর শিমিয়ির সন্তান যহৎ, সীন, যিয়ূশ ও বরীয়; শিমিয়ির এই চারি সন্তান। তাহাদের মধ্যে প্রধান যহৎ, ও দ্বিতীয় সীষ; কিন্তু যিয়ূশের ও বরীয়ের বহু সন্তান ছিল না, এ কারণ তাহারা একত্র গণিত হইয়া এক পিতৃকুল হইল। কহাতের পুত্র অম্রাম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল, চারি জন। অম্রামের পুত্র হারোণ ও মোশি; আর চিরকাল অতি পবিত্র বস্তু পবিত্র করণার্থে, সদাপ্রভুর সম্মুখে ধূপদাহ, তাঁহার পরিচর্য্যা এবং তাঁহার নামে আশীর্ব্বাদ করণার্থে হারোণকে ও তাঁহার সন্তানগণকে চিরকালের জন্য পৃথক করা গেল। কিন্তু ঈশ্বরের লোক যে মোশি, তাঁহার পুত্রগণ লেবিবংশের মধ্যে উল্লিখিত হইল। মোশির পুত্র গের্শোম ও ইলীয়েষর। গের্শোমের সন্তানদের মধ্যে শবূয়েল প্রধান। আর ইলীয়েষরের সন্তানদের মধ্যে রহবিয় প্রধান ছিল; এই ইলীয়েষরের আর পুত্র ছিল না, কিন্তু রহবিয়ের সন্তানগণ বহুসংখ্যক হইল। যিষ্‌হরের সন্তানদের মধ্যে শলোমীৎ প্রধান। হিব্রোণের পুত্রদের মধ্যে প্রধান যিরিয়, দ্বিতীয় অমরিয়, তৃতীয় যহসীয়েল, চতুর্থ যিকমিয়ার। উষীয়েলের পুত্রদের মধ্যে প্রধান মীখা, ও দ্বিতীয় যিশিয়। মরারির পুত্র মহলি ও মূশি। মহলির পুত্র ইলিয়াসর ও কীশ। ইলিয়াসর মরিলেন, তাঁহার পুত্র ছিল না, কেবল কয়েকটী কন্যা ছিল, আর তাহাদের জ্ঞাতি কীশের পুত্রগণ তাহাদিগকে বিবাহ করিল। মূশির পুত্র মহলি, এদর ও যিরেমোৎ, তিন জন। এই সকলে আপন আপন পিতৃকুলানুসারে লেবির সন্তান, বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক যাহারা নাম ও মস্তকানুসারে গণিত হইল, সদাপ্রভুর গৃহের সেবাকর্ম্ম করিত, ইহারা তাহাদের পিতৃকুলপতি। কেননা দায়ূদ কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে বিশ্রাম দিয়াছেন, এবং তিনি চিরকালের জন্য যিরূশালেমে বাস করেন; আর লেবীয়দিগকেও অদ্যাবধি আবাস কিম্বা তাহার সেবাকর্ম্মার্থক পাত্র সকল আর বহিতে হইবে না। কারণ দায়ূদের শেষ আজ্ঞায় লেবির সন্তানদের মধ্যে বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লোকেরা গণিত হইল। কেননা ঈশ্বরের গৃহের সেবাকর্ম্মের জন্য তাহাদের পদ হারোণ-সন্তানদের অধীন; [তাহা এই এই বিষয় সম্বন্ধীয়,] প্রাঙ্গণ ও কুঠরী সকল, পবিত্র বস্তু সকলের শুচিকরণ, ঈশ্বরের গৃহের সেবাকর্ম্ম সম্পাদন, এবং দর্শন-রুটী ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, তাড়ীশূন্য সরুচাকলী এবং ভর্জনপাত্রে ভর্জিত দ্রব্য ও রান্ধা দ্রব্য, এই সকলের নিমিত্ত ময়দা, এবং সকল পরিমাণ ও তৌল, আর সদাপ্রভুর স্তবগান ও প্রশংসার্থে প্রতি প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে দণ্ডায়মান হওয়া; এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রতিনিয়ত পালনীয় বিধিমতে বিশ্রামবারে, অমাবস্যায় ও পর্ব্বে সদাপ্রভুর উদ্দেশে সংখ্যানুসারে হোমবলিদান করা; আর তাহারা যেন সমাগম-তাম্বুর রক্ষণীয় দ্রব্য, ও পবিত্র স্থানের রক্ষণীয় দ্রব্য, এবং ঈশ্বরের গৃহের সেবাকর্ম্মের জন্য আপনাদের জ্ঞাতি হারোণ-সন্তানদের রক্ষণীয় দ্রব্য রক্ষা করে। হারোণ-সন্তানদের পালার কথা। হারোণের পুত্র নাদব ও অবীহূ, ইলিয়াসর ও ঈথামর। কিন্তু নাদব ও অবীহূ আপনাদের পিতার অগ্রে মারা পড়িল, এবং তাহাদের পুত্র ছিল না; অতএব ইলিয়াসর ও ঈথামর যাজক হইলেন। আর দায়ূদ এবং ইলিয়াসরের বংশজাত সাদোক ও ঈথামরের বংশজাত অহীমেলক যাজকদিগকে সেবাকর্ম্ম সম্বন্ধীয় আপন আপন শ্রেণীতে বিভক্ত করিলেন। তাহাতে জানা গেল, পুরুষদের সংখ্যাতে ঈথামরের সন্তানগণ অপেক্ষা ইলিয়াসরের সন্তানগণের মধ্যে প্রধান লোক অনেক, আর তাহাদিগকে এইরূপ বিভাগ করা হইল; ইলিয়াসরের সন্তানগণের মধ্যে ষোল জন পিতৃকুলপতি, ও ঈথামরের সন্তানগণের মধ্যে আট জন পিতৃকুলপতি হইল। পিতৃকুল নির্ব্বিশেষে গুলিবাঁট দ্বারা তাহাদিগকে বিভাগ করা হইল, কেননা ধর্ম্মধামের অধ্যক্ষগণ ও ঈশ্বরীয় অধ্যক্ষগণ ইলিয়াসর ও ঈথামর, উভয়ের সন্তানগণের মধ্য হইতে [গৃহীত] হইল। আর রাজার, অধ্যক্ষদের, সাদোক যাজকের, অবিয়াথরের পুত্র অহীমেলকের এবং যাজকীয় ও লেবীর পিতৃকুলপতিদের সাক্ষাতে লেবির বংশজাত নথনেলের পুত্র শময়িয় লেখক তাহাদের নাম লিখিলেন; বস্তুতঃ ইলিয়াসরের জন্য এক, ও ঈথামরের জন্য এক পিতৃকুল গ্রহণ করা হইল। তখন প্রথম গুলিবাঁট যিহোয়ারীবের নামে উঠিল; দ্বিতীয় যিদয়িয়ের, তৃতীয় হারীমের, চতুর্থ সিয়োরীমের, পঞ্চম মল্কিয়ের, ষষ্ঠ মিয়ামীনের, সপ্তম হক্কোষের, অষ্টম অবিয়ের, নবম যেশূয়ের, দশম শখনিয়ের, একাদশ ইলীয়াশীবের, দ্বাদশ যাকীমের, ত্রয়োদশ হুপ্পের, চতুর্দ্দশ যেশবাবের, পঞ্চদশ বিল্‌গার, ষোড়শ ইম্মেরের, সপ্তদশ হেষীরের, অষ্টাদশ হপ্পিসেসের, ঊনবিংশ পথাহিয়ের, বিংশ যিহিষ্কেলের, একবিংশ যাখীনের, দ্বাবিংশ গামূলের, ত্রয়োবিংশ দলায়ের, চতুর্বিংশ মাসিয়ের [নামে উঠিল]। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাহাদের পিতা হারোণ কর্ত্তৃক নিরূপিত যে তাহাদের বিধান, তদনুসারে সদাপ্রভুর গৃহে উপস্থিত হইবার বিষয়ে তাহাদের সেবাকর্ম্মের জন্য এই শ্রেণী হইল। লেবির অবশিষ্ট সন্তানদের কথা। অম্রামের সন্তানদের মধ্যে শবূয়েল, শবূয়েলের সন্তানদের মধ্যে যেহদিয়। রহবিয়ের কথা; রহবিয়ের সন্তানদের মধ্যে যিশিয় প্রধান। যিষ্‌হরীয়দের মধ্যে শলোমোৎ; শলোমোতের সন্তানদের মধ্যে যহৎ। আর [হিব্রোণের] পুত্র যিরিয় [প্রধান], দ্বিতীয় অমরিয়, তৃতীয় যহসীয়েল, চতুর্থ যিকমিয়াম। উষীয়েলের পুত্র মীখা; মীখার পুত্রদের মধ্যে শামীর। মীখার ভ্রাতা যিশিয়; যিশিয়ের পুত্রদের মধ্যে সখরিয়। মরারির পুত্র মহলি ও মূশি; যাসিয়ের পুত্র বিনো। মরারির সন্তান—যাসিয়ের পুত্র বিনো। শোহম, সক্কুর ও ইব্রি। মহলির পুত্র ইলিয়াসর, ইহার পুত্র ছিল না। কীশের কথা; কীশের পুত্র যিরহমেল। মূশির পুত্র মহলি, এদর ও যিরেমোৎ। ইহারা আপন আপন পিতৃকুলানুসারে লেবির সন্তান। আপনাদের ভ্রাতা হারোণ-সন্তানদের ন্যায় ইহারাও দায়ূদ রাজার, সাদোকের ও অহীমেলকের এবং যাজকীয় ও লেবীয় পিতৃকুলপতিদের সাক্ষাতে গুলিবাঁট করিল, অর্থাৎ প্রতি-পিতৃকুলের মধ্যে প্রধান লোক ও তাহার ছোট ভাই একই রূপ করিল। আর দায়ূদ ও সেনাপতিগণ সেবাকর্ম্মের জন্য আসফের, হেমনের ও যিদূথূনের কয়েকটী সন্তানকে পৃথক্ করিয়া বীণা, নেবল ও করতাল সহযোগে ভাবোক্তি গান করিবার ভার [দিলেন]; তাহাদের সেবাকর্ম্মানুসারে কর্ম্মকারীদের সংখ্যা। আসফের সন্তানদের কথা; আসফের সন্তান সক্কুর, যোষেফ, নথনিয় ও অসারেল; আসফের এই সন্তানগণ আসফের অধীন ছিল; ইনি রাজার অধীনে ভাবোক্তি কহিতেন। যিদূথূনের কথা; যিদূথূনের সন্তান—গদলিয়, সরী ও শিমিয়ি এবং যিশায়াহ, হশবিয় ও মত্তিথিয় ছয় জন; ইহারা বীণাবাদ্যে আপনাদের পিতা যিদূথূনের অধীন ছিল, ইনি সদাপ্রভুর স্তব ও প্রশংসা দ্বারা ভাবোক্তি কহিতেন। হেমনের কথা; হেমনের সন্তান—বুক্কিয়, মত্তনিয়, উষীয়েল, শবূয়েল্‌ ও যিরীমোৎ, হনানিয়, হনানি, ইলীয়াথা, গিদ্দল্‌তি ও রোমাম্‌তী-এষর, যশ্‌বকাশা, মল্লোথি, হোথীর, মহসীয়োৎ। যে হেমন ঈশ্বরীয় বাক্য সম্বন্ধে রাজার দর্শক ছিলেন, উচ্চধ্বনিতে শৃঙ্গ বাজাইবার নিমিত্ত তাঁহার এই সকল সন্তান ছিল। ঈশ্বর হেমনকে চৌদ্দ পুত্র ও তিন কন্যা দিয়াছিলেন। ইহারা সকলে ঈশ্বরের গৃহের সেবাকর্ম্মের জন্য করতাল, নেবল ও বীণা দ্বারা সদাপ্রভুর গৃহে গান করিবার জন্য তাহাদের পিতার অধীন ছিলেন; আসফ, যিদূথূন ও হেমন রাজার অধীন ছিলেন। সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীতগানে শিক্ষিত তাহারা ও তাহাদের ভ্রাতৃগণ সংখ্যায় সর্ব্বশুদ্ধ দুই শত অষ্টাশী জন সঙ্গীত পারদর্শী লোক ছিল। পরে তাহারা ছোট বড় এবং গুরু শিষ্য সকলে গুলিবাঁট দ্বারা আপন আপন রক্ষণীয় স্থির করিল। আর আসফের জন্য যোষেফের পক্ষে প্রথম গুলি উঠিল। দ্বিতীয় গদলিয়ের পক্ষে; সে, তাহার ভ্রাতৃগণ ও পুত্রগণ বারো জন। তৃতীয় সক্কুরের পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। চতুর্থ যিষ্রির পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। পঞ্চম নথনিয়ের পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। ষষ্ঠ বুক্কিয়ের পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। সপ্তম যিশারেলার পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। অষ্টম যিশায়াহের পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। নবম মত্তনিয়ের পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। দশম শিমিয়ির পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। একাদশ অসরেলের পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। দ্বাদশ হশবিয়ের পক্ষে; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। ত্রয়োদশ শবূয়েল; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। চতুর্দ্দশ মত্তিথিয়; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। পঞ্চদশ যিরেমোৎ; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। ষোড়শ হনানিয়; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। সপ্তদশ যশ্‌বকাশা; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। অষ্টাদশ হনানি; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। ঊনিবংশ মল্লোথি; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। বিংশ ইলীয়াথা; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। একবিংশ হোথীর; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। দ্বাবিংশ গিদ্দল্‌তি; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। ত্রয়োবিংশ মহসীয়োৎ; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। চতুর্ব্বিশ রোমাম্‌তী-এষর; তাহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ বারো জন। দ্বারপালদের পালার কথা। কোরহীয়দের মধ্যে কোরির পুত্র মশেলিমিয় আসফ-বংশজাত লোক ছিল। মশেলিমিয়ের সন্তান; সখরিয় জ্যেষ্ঠ পুত্র, দ্বিতীয় যিদীয়েল, তৃতীয় সবদিয়, চতুর্থ যৎনীয়েল, পঞ্চম এলম, ষষ্ঠ যিহোহানন, সপ্তম ইলিহৈনয়। আর ওবেদ-ইদোমের পুত্র ছিল; শমরিয় জ্যেষ্ঠ পুত্র, দ্বিতীয় যিহোষাবদ, তৃতীয় যোয়াহ, চতুর্থ সাখর, পঞ্চম নথনেল, ষষ্ঠ অম্মীয়েল, সপ্তম ইষাখর, অষ্টম পিয়ূল্লতয়; কেননা ঈশ্বর তাহাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছিলেন। তাহার পুত্র শময়িয়েরও কতকগুলি পুত্র জন্মিল, তাহারা আপনাদের পিতৃকুলে কর্ত্তৃত্ব করিল, কারণ তাহারা বলবান বীর ছিল। শময়িয়ের পুত্র অৎনি, রফায়েল, ওবেদ, ইল্‌সাবদ, এবং ইলীহূ ও সমথিয় নামে তাহার ভ্রাতারা বীরপুরুষ ছিল। ইহারা সকলে ওবেদ-ইদোমের সন্তান, ইহারা, ইহাদের পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ সেবাকর্ম্মের জন্য বীরপুরুষ ছিল। এই ওবেদ-ইদোমের বংশজাত বাষট্টি জন ছিল। আর মশেলিমিয়ের পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ আঠার জন বীরপুরুষ ছিল। আর মরারি-বংশজাত হোষার পুত্রগণের মধ্যে শিম্রি প্রধান ছিল; সে জ্যেষ্ঠ ছিল না, কিন্তু তাহার পিতা তাহাকে প্রধান করিয়াছিল; দ্বিতীয় হিল্কিয়, তৃতীয় টবলিয়, চতুর্থ সখরিয়; হোষার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ সর্ব্বশুদ্ধ তের জন ছিল। দ্বারপালদের পালা সকল ইহাদের, অর্থাৎ এই প্রধানদের ছিল। আপন ভ্রাতৃগণের ন্যায় ইহারা সদাপ্রভুর গৃহে পরিচর্য্যা করিবার জন্য ভার প্রাপ্ত হইয়াছিল। আর তাহারা ছোট বড় আপন আপন পিতৃকুলানুসারে প্রত্যেক দ্বারের জন্য গুলিবাঁট করিল। তাহাতে পূর্ব্বদিকের গুলি শেলিমিয়ের নামে উঠিল; ইহার পুত্র সখরিয় মন্ত্রণাদানে জ্ঞানবান; গুলিবাঁট করিলে উত্তরদিকের গুলি তাহার নামে উঠিল। ওবেদ-ইদোমের নামে দক্ষিণদিকের, এবং তাহার পুত্রগণের নামে ভাণ্ডারের গুলি উঠিল। শুপ্পীমের ও হোষার নামে পশ্চিমদিকের ঊর্দ্ধগামী পথসমীপস্থ শল্লেখৎ নামক দ্বারের গুলি উঠিল, তাহার প্রহরিদলের অভিমুখে প্রহরিদল ছিল। পূর্ব্বদিকে ছয় জন লেবীয় ছিল, উত্তরদিকে প্রতিদিন চারি জন, দক্ষিণদিকে প্রতিদিন চারি জন, ও ভাণ্ডারের জন্য দুই দুই জন। পশ্চিমদিকে উপপুরীর [দ্বারে] উচ্চপথে চারি জন, ও উপপুরীতে দুই জন ছিল। কোরহীয় ও মরারীয় বংশজাত লোকদের মধ্যে দ্বারপালদের এই সকল পালা ছিল। লেবীয়দের কথা। অহিয় সদাপ্রভুর গৃহের কোষাধ্যক্ষ ও পবিত্রীকৃত বস্তু সকলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। লাদনের সন্তান—লাদন সম্বন্ধীয় গের্শোনীয়দের সন্তান। গের্শোনীয় লাদনের সন্তান পিতৃকুলপতি ছিলেন, যিহীয়েলি। যিহীয়েলির পুত্র সেথম ও তাঁহার ভ্রাতা যোয়েল, ইহাঁরা সদাপ্রভুর গৃহের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। অম্রামীয়দের, যিষ্‌হরীয়দের হিব্রোণীয়দের ও উষীয়েলীয়দের মধ্যে মোশির পুত্র গের্শোনের সন্তান শবূয়েল কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আর তাঁহার ভ্রাতৃগণ; ইলীয়ষেরের পুত্র রহবিয়, তাঁহার পুত্র যিশায়াহ, তাঁহার পুত্র যোরাম, তাঁহার পুত্র সিখ্রি, তাঁহার পুত্র শলোমোৎ। দায়ূদ রাজা এবং পিতৃকুলপতিরা অর্থাৎ সহস্রপতিগণ, শতপতিগণ ও সেনাপতিগণ যে সকল বস্তু পবিত্র করিয়াছিলেন, শলোমোৎ ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ সেই সকল পবিত্রীকৃত বস্তুর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। সদাপ্রভুর গৃহ মেরামত করণার্থে উহাঁরা যুদ্ধে লব্ধ অনেক বস্তু পবিত্র করিয়াছিলেন। আর শমূয়েল দর্শক, কীশের পুত্র শৌল, নেরের পুত্র অব্‌নের ও সরূয়ার পুত্র যোয়াব যে সকল বস্তু পবিত্র করিয়াছিলেন, যিনি যাহা পবিত্র করিয়াছিলেন, সে সকল বস্তু শলোমোতের ও তাঁহার ভ্রাতৃগণের হস্তে রহিল। যিষ্‌হরীয়দের মধ্যে কননিয় ও তাঁহার পুত্রগণ শাসক ও বিচারকর্ত্তৃগণের জন্য ইস্রায়েলের উপরে বাহিরের কর্ম্মে নিযুক্ত হইলেন। হিব্রোণীয়দের মধ্যে হশবিয় ও তাহার ভ্রাতৃগণ এক সহস্র সাত শত বীরপুরুষ সদাপ্রভুর সকল কার্য্যে ও রাজার সেবাকর্ম্মে যর্দ্দনের এপারে পশ্চিমদিকে ইস্রায়েলের উপরে নিযুক্ত হইল। হিব্রোণীয়দের পিতৃকুলানুযায়ী বংশাবলিতে যিরিয় হিব্রোণীয়দের মধ্যে প্রধান ছিল; দায়ূদের রাজত্বের চল্লিশ বৎসরে অনুসন্ধান করা গেলে তাহাদের মধ্যে গিলিয়দস্থ যাসেরে অনেক বলবান বীর পাওয়া গেল। আর তাহার ভ্রাতৃগণ দুই সহস্র সাত শত বীরপুরুষ পিতৃকুলপতি ছিল; তাহাদিগকে দায়ূদ রাজা ঈশ্বরীয় ও রাজকীয় সমস্ত কার্য্য করিতে রূবেণীয়দের, গাদীয়দের ও মনঃশির অর্দ্ধবংশের উপরে নিযুক্ত করিলেন। ইস্রায়েল-সন্তানগণের সংখ্যানুসারে পিতৃকুলপতিগণ, সহস্রপতিগণ, শতপতিগণ ও কর্ম্মচারিগণ রাজার পরিচর্য্যা করিতেন; তাঁহারা নানা দলে বিভক্ত হইয়া বৎসরের সমস্ত মাসের এক এক মাসে কর্ম্মে প্রবৃত্ত ও নিবৃত্ত হইতেন; প্রত্যেক দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। প্রথম দলের উপরে প্রথম মাসের জন্য সব্দীয়েলের পুত্র যাশবিয়াম; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল; তিনি পেরসের সন্তানদের মধ্যবর্ত্তী; তিনি প্রথম মাসের জন্য নিযুক্ত সেনাদলের সমস্ত সেনাপতির মধ্যে প্রধান ছিলেন। দ্বিতীয় মাসের দলে অহোহীয় দোদয়, ও তাঁহার দল; অধ্যক্ষ ছিলেন মিক্লোৎ; এবং তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। তৃতীয় মাসের জন্য নিযুক্ত সেনাদলের তৃতীয় সেনাপতি যিহোয়াদা যাজকের পুত্র বনায়, তিনি প্রধান, তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। এই বনায় সেই ত্রিশ জনের মধ্যে বলবান ও সেই ত্রিশ জনের উপরে ছিলেন, এবং তাঁহার দলে তাঁহার পুত্র অম্মীষাবাদ ছিল। চতুর্থ মাসের জন্য চতুর্থ সেনাপতি যোয়াবের ভ্রাতা অসাহেল, ও তাঁহার পরে তাঁহার পুত্র সবদিয়; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। পঞ্চম মাসের জন্য পঞ্চম সেনাপতি যিষ্রাহীয় শমহূৎ; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। ষষ্ঠ মাসের জন্য ষষ্ঠ সেনাপতি তকোয়ীয় ইক্কেশের পুত্র ঈরা; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। সপ্তম মাসের জন্য সপ্তম সেনাপতি ইফ্রয়িম-সন্তানদের কুলজাত পলোনীয় হেলস; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। অষ্টম মাসের জন্য অষ্টম সেনাপতি সেরহীয় কুলজাত হূশাতীয় সিব্বখয়; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। নবম মাসের জন্য নবম সেনাপতি বিন্যামীন-বংশজাত অনাথোতীয় অবীয়েষর; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। দশম মাসের জন্য দশম সেনাপতি সেরহীয় কুলজাত নটোফাতীয় মহরয়; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। একাদশ মাসের জন্য একাদশ সেনাপতি ইফ্রয়িম-সন্তানদের কুলজাত পিরিয়াথোনীয় বনায়; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। দ্বাদশ মাসের জন্য দ্বাদশ সেনাপতি অৎনীয়েল-কুলজাত নটোফাতীয় হিল্‌দয়; তাঁহার দলে চব্বিশ সহস্র লোক ছিল। ইস্রায়েলের বংশাধ্যক্ষগণ। রূবেণীয়দের কুলে অধ্যক্ষ সিখ্রির পুত্র ইলীয়েষর; শিমিয়োনীয়দের কুলে মাখার পুত্র শফটিয়; লেবির কুলে কমূয়েলের পুত্র হশবিয়; হারোণের কুলে সাদোক; যিহূদার কুলে দায়ূদের ভ্রাতৃগণের মধ্যে ইলীহূ; ইষাখরের কুলে মীখায়েলের পুত্র অম্রি; সবূলূনের কুলে ওবদিয়ের পুত্র যিশ্মায়য়; নপ্তালির কুলে অস্রীয়েলের পুত্র যিরেমোৎ; ইফ্রয়িম-সন্তানদের কুলে অসসিয়ের পুত্র হোশেয়; মনঃশির অর্দ্ধবংশের কুলে পদায়ের পুত্র যোয়েল; গিলিয়দস্থ মনঃশির অর্দ্ধবংশের কুলে সখরিয়ের পুত্র যিদ্দো; বিন্যামীনের কুলে অব্‌নেরের পুত্র যাসীয়েল; দানের কুলে যিরোহমের পুত্র অসরেল। ইহাঁরা ইস্রায়েলের বংশাধ্যক্ষ ছিলেন। কিন্তু দায়ূদ বিংশতি বৎসর ও তদপেক্ষা অল্পবয়স্ক লোকদের সংখ্যা গ্রহণ করিলেন না, কেননা সদাপ্রভু বলিয়াছিলেন, তিনি আকাশের তারার ন্যায় ইস্রায়েলকে বহুসংখ্যক করিবেন। সরূয়ার পুত্র যোয়াব গণনা করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, কিন্তু সমাপ্ত করেন নাই; আর গণনা প্রযুক্ত ইস্রায়েলের উপরে কোপ পড়িয়াছিল; এবং তাহাদের সংখ্যা দায়ূদ রাজার ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত হইল না। অদীয়েলের পুত্র অস্‌মাবৎ রাজার কোষাধ্যক্ষ ছিলেন; এবং ক্ষেত্র, নগর, গ্রাম ও দুর্গ সকলে যে যে ভাণ্ডার ছিল, সেই সকলের অধ্যক্ষ উষিয়ের পুত্র যোনাথন। ক্ষেত্রের কৃষাণদের অধ্যক্ষ কলূবের পুত্র ইষ্রি। দ্রাক্ষাক্ষেত্র সকলের অধ্যক্ষ রামাথীয় শিমিয়ি; এবং দ্রাক্ষাক্ষেত্রস্থ দ্রাক্ষারসের ভাণ্ডারের অধ্যক্ষ শিফমীয় সব্দি। নিম্নভূমিস্থিত জিতবৃক্ষ ও সুকমোরবৃক্ষ সকলের অধ্যক্ষ গদেরীয় বাল-হানন। তৈল-ভাণ্ডারের অধ্যক্ষ যোয়াশ। শারোণে যে সকল গোরুর পাল চরিত, তাহার অধ্যক্ষ শারোণীয় সিট্রয়। নানা তলভূমিস্থিত গোরুর পালের অধ্যক্ষ অদ্‌লয়ের পুত্র শাফট। উষ্ট্রগণের অধ্যক্ষ ইশ্মায়েলীয় ওবীল। গর্দ্দভীগণের অধ্যক্ষ মেরোণোথীয় যেহদিয়। মেষপালদের অধ্যক্ষ হাগরীয় যাসীষ। ইহাঁরা দায়ূদ রাজার সম্পত্তির অধ্যক্ষ ছিলেন। দায়ূদের পিতৃব্য যোনাথন মন্ত্রী ও বুদ্ধিমান্‌ লোক, আর লেখক ছিলেন; এবং হক্‌মোনির পুত্র যিহীয়েল রাজপুত্রদের বয়স্য ছিলেন। আর অহীথোফল রাজমন্ত্রী, এবং অর্কীয় হূশয় রাজার সুহৃৎ ছিলেন। আর অহীথোফলের পরে বনায়ের পুত্র যিহোয়াদা ও অবিয়াথর ছিলেন; এবং যোয়াব রাজার সৈন্যদলের সেনাপতি ছিলেন। পরে দায়ূদ ইস্রায়েলের সমস্ত অধ্যক্ষকে অর্থাৎ বংশাধ্যক্ষগণকে, পালানুক্রমে রাজার পরিচর্য্যাকারী দলের অধ্যক্ষগণকে, সহস্রপতি ও শতপতিগণকে এবং রাজার ও রাজপুত্রদের সমস্ত সম্পত্তির ও পশুপালের অধ্যক্ষগণকে, কর্ম্মচারীদিগকে এবং বীরগণকে, এমন কি, সমস্ত বলবান বীরকে যিরূশালেমে একত্র করিলেন। তখন দায়ূদ রাজা চরণে ভর দিয়া দাঁড়াইয়া কহিলেন, হে আমার ভ্রাতৃগণ ও আমার প্রজাগণ, আমার কথা শুন; সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুকের জন্য ও আমাদের ঈশ্বরের পাদপীঠের জন্য এক বিশ্রাম-গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আমার মনোরথ হইয়াছিল; এবং আমি নির্ম্মাণার্থ আয়োজনও করিয়াছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে কহিলেন, তুমি আমার নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিবে না, কেননা তুমি যুদ্ধের লোক, তুমি রক্তপাত করিয়াছ। যাহা হউক, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপরে নিত্য রাজত্ব করণার্থে আমার সমস্ত পিতৃকুল হইতে আমাকে মনোনীত করিয়াছেন; বস্তুতঃ তিনি নায়করূপে যিহূদাকে ও যিহূদার কুলমধ্যে আমার পিতৃকুলকে মনোনীত করিয়াছেন, এবং সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজা করণার্থে আমার পিতার পুত্রগণের মধ্যে আমারই উপরে প্রসন্ন হইয়াছেন। আবার সদাপ্রভু আমাকে অনেক পুত্র দিয়াছেন, কিন্তু আমার পুত্র সকলের মধ্যে ইস্রায়েলের অধ্যক্ষরূপে সদাপ্রভুর রাজসিংহাসনে বসিবার জন্য আমার পুত্র শলোমনকে মনোনীত করিয়াছেন। আর তিনি আমাকে বলিয়াছেন, তোমার পুত্র শলোমনই আমার গৃহ ও আমার প্রাঙ্গণ সকল নির্ম্মাণ করিবে; কেননা আমি তাহাকেই আমার পুত্র বলিয়া মনোনীত করিয়াছি, আমিই তাহার পিতা হইব। আর অদ্যকার মত যদি সে আমার আজ্ঞা ও শাসন-কলাপ পালন করিতে তৎপর হয়, তবে আমি তাহার রাজ্য চিরকালের জন্য স্থির করিব। অতএব এখন সদাপ্রভুর সমাজ সমস্ত ইস্রায়েলের সাক্ষাতে ও আমাদের ঈশ্বরের কর্ণগোচরে তোমরা যত্নপূর্ব্বক তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আজ্ঞার অনুশীলন কর; যেন এই উত্তম দেশের স্বত্ব ভোগ করিতে পার, এবং তোমাদের পরে তোমাদের সন্তানগণের চিরস্থায়ী অধিকারার্থে তাহা রাখিয়া যাও। আর হে আমার পুত্র শলোমন, তুমি আপন পিতার ঈশ্বরকে জ্ঞাত হও, এবং একাগ্র অন্তঃকরণে ও ইচ্ছুক মনে তাঁহার সেবা কর; কেননা সদাপ্রভু সমস্ত অন্তঃকরণের অনুসন্ধান করেন, ও চিন্তার সমস্ত কল্পনা বুঝেন; তুমি যদি তাঁহার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাকে আপনার উদ্দেশ পাইতে দিবেন; কিন্তু যদি তাঁহাকে ত্যাগ কর, তবে তিনি তোমাকে চিরকালের জন্য দূর করিবেন। এখন সাবধান হও, কেননা ধর্ম্মধামের জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিতে সদাপ্রভু তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন; তুমি বলবান হইয়া কার্য্য কর। পরে দায়ূদ আপন পুত্র শলোমনকে বারাণ্ডার, তাহার কক্ষ সকলের, ভাণ্ডার সকলের, উপরিস্থ কুঠরী সকলের, ভিতর কুঠরী সকলের ও পাপাবরণ-সমন্বিত গৃহের আদর্শ দিলেন; আত্মার দ্বারা যাহা যাহা তাঁহার মনে উপস্থিত হইয়াছিল, সেই সকলের আদর্শ দিলেন। [তন্মধ্যে নির্দ্দিষ্ট বস্তু এই এই,] সদাপ্রভুর গৃহের প্রাঙ্গণ সকল, ও চারিদিকের সকল কুঠরী, ঈশ্বরের গৃহের ভাণ্ডার সকল ও পবিত্রীকৃত বস্তুর ভাণ্ডার সকল; আর যাজকদের ও লেবীয়দের পালা, এবং সদাপ্রভুর গৃহ সম্পর্কীয় সেবাকর্ম্মার্থক সমস্ত কার্য্য, ও সদাপ্রভুর গৃহ সম্পর্কীয় সেবাকর্ম্মার্থক সমস্ত পাত্র; স্বর্ণপাত্র সকলের জন্য সকল প্রকার সেবাকর্ম্মার্থক সমস্ত পাত্রের জন্য পরিমিত স্বর্ণ; সমস্ত রৌপ্যময় পাত্রের সকল প্রকার সেবাকর্ম্মার্থক সমস্ত পাত্রের জন্য পরিমিত রৌপ্য; এবং স্বর্ণদীপবৃক্ষের ও স্বর্ণদীপ সকলের জন্য, অর্থাৎ সকল দীপবৃক্ষের ও তৎসম্বন্ধীয় দীপের জন্য পরিমিত স্বর্ণ; এবং রৌপ্যময় দীপবৃক্ষের, প্রত্যেক দীপবৃক্ষের ব্যবহার অনুসারে সকল দীপবৃক্ষের ও তৎসম্বন্ধীয় দীপগুলির জন্য পরিমিত রৌপ্য; এবং দর্শন-রুটীর মেজ সকলের মধ্যে প্রত্যেক মেজের জন্য পরিমিত স্বর্ণ, এবং রৌপ্যময় মেজ সকলের জন্য রৌপ্য; এবং ত্রিকন্টক শূল, বাটি ও স্রুব সকলের জন্য নির্ম্মল স্বর্ণ; এবং স্বর্ণময় কটোরা সকলের মধ্যে প্রত্যেক কটোরার জন্য পরিমিত স্বর্ণ; এবং রৌপ্যময় কটোরা সকলের মধ্যে প্রত্যেক কটোরার জন্য পরিমিত রৌপ্য; এবং ধূপবেদির জন্য পরিমিত নির্ম্মল স্বর্ণ; এবং বাহনের, অর্থাৎ যে করূবদ্বয় পক্ষ বিস্তার করিয়া সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক আচ্ছাদন করিয়াছিল, তাহাদের আদর্শের জন্য স্বর্ণ। [দায়ূদ কহিলেন], এ সমস্ত সদাপ্রভুর হস্তচালন ক্রমে রচিত লিপি; তিনি আদর্শের সমস্ত কার্য্য আমাকে বুঝাইয়া দিয়াছেন। পরে দায়ূদ আপন পুত্র শলোমনকে কহিলেন, তুমি বলবান হও, সাহস কর, কার্য্য কর; ভয় করিও না, নিরাশ হইও না; কেননা সদাপ্রভু ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, তোমার সহবর্ত্তী; সদাপ্রভুর গৃহবিষয়ক কার্য্যের সমস্ত রচনা যাবৎ সমাপ্ত না হয়, তাবৎ তিনি তোমাকে ছাড়িবেন না, তোমাকে ত্যাগ করিবেন না। আর দেখ, ঈশ্বরের গৃহ সম্পর্কীয় সমস্ত সেবাকর্ম্মের জন্য যাজকদের ও লেবীয়দের পালা আছে, এবং সমস্ত কার্য্যের জন্য সুনিপুণ স্বতঃপ্রবৃত্ত লোকেরা সমস্ত রচনায় তোমার সহবর্ত্তী হইবে; আর অধ্যক্ষগণ ও সমস্ত প্রজা তোমার সমস্ত বাক্য মানিবে। পরে দায়ূদ রাজা সমস্ত সমাজকে কহিলেন, ঈশ্বর কেবল আমার পুত্র শলোমনকে মনোনীত করিয়াছেন; সে এখনও অল্পবয়স্ক ও কোমল, আর এই কার্য্য অতি মহৎ, কেননা এই প্রাসাদ মনুষ্যের নিমিত্ত নয়, কিন্তু সদাপ্রভু ঈশ্বরের নিমিত্ত। আর আমার যতটা ক্ষমতা আছে, তদনুসারে আমি আমার ঈশ্বরের গৃহের নিমিত্ত স্বর্ণময় দ্রব্যের জন্য স্বর্ণ, রৌপ্যময় দ্রব্যের জন্য রৌপ্য, পিত্তলময় দ্রব্যের জন্য পিত্তল, লৌহময় দ্রব্যের জন্য লৌহ, ও কাষ্ঠময় দ্রব্যের জন্য কাষ্ঠ, এবং গোমেদক মণি, খচণার্থক মণি, তেজস্বী প্রস্তর ও নানাবর্ণের প্রস্তর, এবং সর্ব্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর ও মর্ম্মর প্রস্তর প্রচুররূপে আয়োজন করিয়াছি। আবার সেই পবিত্র গৃহের নিমিত্ত যাহা যাহা আয়োজন করিয়াছি, তদ্ব্যতীত আমার নিজস্ব স্বর্ণ ও রৌপ্যধনও আছে; আমার ঈশ্বরের গৃহের প্রতি অনুরাগ প্রযুক্ত আমি আপন ঈশ্বরের গৃহের জন্য তাহাও দিলাম; ফলতঃ গৃহদ্বয়ের ভিত্তি সকল মুড়িবার জন্য তিন সহস্র তালন্ত স্বর্ণ, ওফীরের স্বর্ণ, ও সাত সহস্র তালন্ত নির্ম্মল রৌপ্য দিলাম; স্বর্ণময় দ্রব্যের জন্য স্বর্ণ, ও রৌপ্যময় দ্রব্যের জন্য রৌপ্য, এবং শিল্পকারদের হস্ত দ্বারা যাহা যাহা করা যাইবে, তাহার জন্যও দিলাম। ভাল, অদ্য কে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আপনার হস্তপূরণ জন্য ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করে? তখন পিতৃকুলপতিগণ, ইস্রায়েলের বংশাধ্যক্ষগণ, সহস্রপতিগণ, শতপতিগণ ও রাজার কার্য্যাধ্যক্ষগণ ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করিলেন। তাঁহারা ঈশ্বরের গৃহের কার্য্যের জন্য পাঁচ সহস্র তালন্ত স্বর্ণ, অদর্কোন নামে দশ সহস্র স্বর্ণমুদ্রা, দশ সহস্র তালন্ত রৌপ্য, আঠার সহস্র তালন্ত পিত্তল, ও এক লক্ষ তালন্ত লৌহ দিলেন। আর যাহাদের নিকটে মণি পাওয়া গেল, তাহারা গের্শোনীয় যিহীয়েলের হস্তে সদাপ্রভুর গৃহের ভাণ্ডারের জন্য তাহা দিল। তাহাতে প্রজারা ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করা হেতু আনন্দ করিল, কেননা তাহারা একাগ্রচিত্তে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করিল, এবং দায়ূদ রাজাও মহানন্দে আনন্দ করিলেন। আর দায়ূদ সমস্ত সমাজের সাক্ষাতে সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিলেন। দায়ূদ কহিলেন, হে সদাপ্রভু, আমাদের পিতৃপুরুষ ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি অনাদিকাল অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত ধন্য। হে সদাপ্রভু, মহত্ত্ব, পরাক্রম, গৌরব, জয় ও প্রতাপ তোমারই; কেননা স্বর্গে ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে, সকলই তোমার; হে সদাপ্রভু, রাজ্য তোমারই, এবং তুমি সকলের মস্তকরূপে উন্নত। তোমা হইতে ধন ও গৌরব আইসে, এবং তুমি সকলের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতেছ; তোমারই হস্তে বল ও পরাক্রম, এবং তোমারই হস্তে সকলকে মহত্ত্ব ও শক্তি দিবার অধিকার। আর এখন, হে আমাদের ঈশ্বর, আমরা তোমার স্তব করিতেছি, তোমার গৌরাবান্বিত নামের প্রশংসা করিতেছি। কিন্তু আমি কে, আমার প্রজারাই বা কে যে, আমরা এই প্রকারে ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করিতে সমর্থ হই? সমস্তই ত তোমা হইতে আইসে, এবং তোমার হস্ত হইতে যাহা পাইয়াছি, তাহাই তোমাকে দিলাম। কেননা আমাদের সমস্ত পিতৃপুরুষ যেমন ছিলেন, তেমনি আমরাও তোমার সম্মুখে বিদেশী ও প্রবাসী, পৃথিবীতে আমাদের আয়ু ছায়াসদৃশ ও আশাবিহীন। হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার পবিত্র নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবার জন্য আমরা এই যে দ্রব্যরাশির আয়োজন করিয়াছি, এ সকল তোমার হস্ত হইতেই আসিয়াছে, এবং সকলই তোমার। আর আমি জানি, হে আমার ঈশ্বর, তুমি অন্তঃকরণের পরীক্ষা করিয়া থাক, ও তুমি সরলতায় প্রসন্ন; আমি আপন অন্তঃকরণের সরলতায় ইচ্ছাপূর্ব্বক এই সকল দ্রব্য দিলাম, এবং এখন এই স্থানে সমাগত তোমার প্রজাদিগকেও আনন্দ সহকারে তোমার উদ্দেশে ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করিতে দেখিলাম। হে সদাপ্রভু, আমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি আপন প্রজাদের অন্তঃকরণের চিন্তামানসে এই প্রকার ভাব চিরস্থায়ী করিয়া রাখ, ও আপনার প্রতি তাহাদের অন্তঃকরণ স্থির কর। আর আমার পুত্র শলোমনকে অকাগ্র চিত্ত প্রদান কর, যেন সে তোমার আজ্ঞা, তোমার প্রমাণবাক্য ও তোমার বিধিকলাপ পালন করিতে ও এই সমস্ত কার্য্য করিতে পারে, এবং আমি যে প্রাসাদের জন্য আয়োজন করিয়াছি, তাহা নির্ম্মাণ করিতে পারে। পরে দায়ূদ সমস্ত সমাজকে কহিলেন, এখন তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। তাহাতে সমস্ত সমাজ আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিল, এবং মস্তক নমন করিয়া সদাপ্রভুর ও রাজার কাছে প্রণিপাত করিল। আর তাহারা পরদিবসে সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিল, ও সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলি উৎসর্গ করিল, অর্থাৎ এক সহস্র বলদ, এক সহস্র মেষ, এক সহস্র মেষশাবক, ও সেই সকলের পানীয় নৈবেদ্য ও প্রচুর বলি সমস্ত ইস্রায়েলের জন্য উৎসর্গ করিল; এবং সেই দিন মহানন্দে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ভোজন পান করিল। আর তাহারা দায়ূদের পুত্র শলোমনকে দ্বিতীয় বার রাজা করিল, এবং তাঁহাকে নায়ক ও সাদোককে যাজক করিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে অভিষেক করিল। তাহাতে শলোমন আপন পিতা দায়ূদের পদে রাজা হইয়া সদাপ্রভুর সিংহাসনে উপবেশন করিলেন, ও কৃতকার্য্য হইলেন, এবং সমস্ত ইস্রায়েল তাঁহার আজ্ঞাবহ হইল। আর অধ্যক্ষেরা ও বীরেরা সকলে এবং দায়ূদ রাজার সমস্ত পুত্রও শলোমন রাজার অধীনতা স্বীকার করিলেন। আর সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলের দৃষ্টিতে শলোমনকে অতিশয় মহান্‌ করিলেন, এবং তাঁহাকে এমন রাজপ্রতাপ দিলেন, যাহা পূর্ব্বে ইস্রায়েলের কোন রাজা প্রাপ্ত হন নাই। যিশয়ের পুত্র দায়ূদ সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিয়াছিলেন। তিনি চল্লিশ বৎসর কাল ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিলেন; সাত বৎসর হিব্রোণে, ও তেত্রিশ বৎসর যিরূশালেমে রাজত্ব করেন। পরে তিনি আয়ু, ধন ও গৌরবে পরিপূর্ণ হইয়া শুভ বৃদ্ধাবস্থায় মরিলেন, এবং তাঁহার পুত্র শলোমন তাঁহার পদে রাজত্ব করিতে লাগিলেন। আর দেখ, শমূয়েল দর্শকের পুস্তকে, নাথন ভাববাদীর পুস্তকে ও গাদ দর্শকের পুস্তকে দায়ূদ রাজার আদ্যোপান্ত কর্ম্মের বৃত্তান্ত, তাঁহার সমস্ত রাজত্বের ও বিক্রমের বিবরণ এবং তাঁহার ও ইস্রায়েলের এবং দেশীয় সকল রাজ্যের উপর দিয়া যে সকল কাল বহিয়াছিল, তৎসমুদয়ের কথা লিখিত আছে। আর দায়ূদের পুত্র শলোমন আপন রাজ্যে আপনাকে বলবান করিলেন, এবং তাঁহার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী থাকিয়া তাঁহাকে অতিশয় মহান্‌ করিলেন। পরে শলোমন সমস্ত ইস্রায়েলের অর্থাৎ সহস্রপতিদের, শতপতিদের, বিচারকর্ত্তাদের ও সমস্ত ইস্রায়েলের যাবতীয় অধ্যক্ষের—কুলপতিদিগের—সহিত কথা কহিলেন। তাহাতে শলোমন ও তাঁহার সহিত সমস্ত সমাজ গিবিয়োনস্থ উচ্চস্থলীতে গেলেন; কেননা সদাপ্রভুর দাস মোশি প্রান্তরে যাহা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, ঈশ্বরীয় সেই সমাগম-তাম্বু সেই স্থানে ছিল। কিন্তু ঈশ্বরের সিন্দুক দায়ূদ কিরিয়ৎ-যিয়ারীম হইতে, দায়ূদ তাহার জন্য যে স্থান প্রস্তুত করিয়াছিলেন, সেই স্থানে আনিয়াছিলেন, কেননা তিনি তাহার জন্য যিরূশালেমে এক তাম্বু স্থাপন করিয়াছিলেন। আর হূরের পৌত্র ঊরির পুত্র বৎসলেল যে পিত্তলময় যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহা সদাপ্রভুর আবাসের সম্মুখে ছিল; আর শলোমন ও সমাজ তাহার কাছে অন্বেষণ করিলেন। তখন শলোমন ঐ স্থানে সমাগম-তাম্বুর সমীপস্থ পিত্তলময় বেদিতে সদাপ্রভুর সম্মুখে যজ্ঞ করিলেন, এক সহস্র হোমবলি উৎসর্গ করিলেন। সেই রাত্রিতে ঈশ্বর শলোমনকে দর্শন দিয়া কহিলেন, যাচ্ঞা কর, আমি তোমাকে কি দিব? তখন শলোমন ঈশ্বরকে কহিলেন, তুমি আমার পিতা দায়ূদের প্রতি মহাদয়া প্রকাশ করিয়াছ, আর তাঁহার পদে আমাকে রাজা করিয়াছ। এখন, হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তুমি আমার পিতা দায়ূদের কাছে যে কথা বলিয়াছ, তাহা স্থিরীকৃত হউক; কেননা তুমিই পৃথিবীস্থ ধূলির ন্যায় বহুসংখ্যক এক জাতির উপরে আমাকে রাজা করিয়াছ। আমি যেন এই লোকদের সাক্ষাতে বাহিরে যাইতে ও ভিতরে আসিতে পারি, সে জন্য এখন আমাকে বুদ্ধি ও জ্ঞান দেও; কারণ তোমার এমন বৃহৎ প্রজাবৃন্দের বিচার করা কাহার সাধ্য? তখন ঈশ্বর শলোমনকে কহিলেন, ইহাই তোমার মনে উদয় হইয়াছে; তুমি ঐশ্বর্য্য, সম্পত্তি, গৌরব কিম্বা বৈরীদের প্রাণ যাচ্ঞা কর নাই, দীর্ঘায়ুও যাচ্ঞা কর নাই; কিন্তু আমি আমার যে প্রজাদের উপরে তোমাকে রাজা করিয়াছি, তুমি তাহাদের বিচার করিবার জন্য আপনার নিমিত্ত বুদ্ধি ও জ্ঞান যাচ্ঞা করিয়াছ। বুদ্ধি ও জ্ঞান তোমাকে দত্ত হইল; অধিকন্তু তোমার পূর্ব্বে কোন রাজার যাদৃশ হয় নাই, এবং তোমার পরেও যাদৃশ হইবে না, তাদৃশ ঐশ্বর্য্য, সম্পত্তি ও গৌরব আমি তোমাকে দিব। পরে শলোমন গিবিয়োনের উচ্চস্থলী হইতে, সমাগম তাম্বুর সম্মুখ হইতে, যিরূশালেমে আসিলেন, আর ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিতে থাকিলেন। আর শলোমন অনেক রথ ও অশ্বারোহী সংগ্রহ করিলেন; তাঁহার এক সহস্র চারি শত রথ, ও বারো সহস্র অশ্বারোহী ছিল; আর সেই সকল তিনি রথ নগরসমূহে; এবং যিরূশালেমে রাজার নিকটে রাখিতেন। রাজা যিরূশালেমে রৌপ্য ও স্বর্ণকে প্রস্তরের ন্যায়, এবং এরস কাষ্ঠকে নিম্নভূমিস্থ সুকমোর গাছের ন্যায় প্রচুর করিলেন। আর শলোমনের অশ্ব সকল মিসর হইতে আনা হইত, রাজার বণিকেরা দল হিসাবে মূল্য দিয়া পালে পালে অশ্ব পাইত। আর মিসর হইতে ক্রীত ও আনীত এক এক রথের মূল্য ছয় শত [শেকল] রৌপ্য, ও এক এক অশ্বের মূল্য এক শত পঞ্চাশ [শেকল] ছিল। এই প্রকারে উহাদের দ্বারা সমস্ত হিত্তীয় রাজার ও অরামীয় রাজার জন্যও অশ্ব আনা হইত। পরে শলোমন সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এক গৃহ ও আপনার রাজ্যের নিমিত্ত এক গৃহ নির্ম্মাণ করিতে স্থির করিলেন; আর শলোমন ভার বহিতে সত্তর সহস্র লোক, পর্ব্বতে [কাষ্ঠাদি] ছেদন করিতে আশী সহস্র লোক ও তাহাদের অধ্যক্ষরূপে তিন সহস্র ছয় শত লোক নিযুক্ত করিলেন। আর শলোমন সোরের হূরম রাজার নিকটে লোক পাঠাইয়া কহিলেন, আপনি আমার পিতা দায়ূদের প্রতি যেরূপ ব্যবহার করিয়াছিলেন ও তাঁহার বসতিবাটী নির্ম্মাণার্থে তাঁহার কাছে যেরূপ এরস কাষ্ঠ পাঠাইয়াছিলেন, [তদ্রূপ আমার জন্যও করুন]। দেখুন, আমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিতে উদ্যত হইয়াছি; তাঁহার সম্মুখে সুগন্ধি দ্রব্য জ্বালাইবার জন্য, নিত্য দর্শন-রুটীর জন্য এবং প্রতি প্রাতে ও সন্ধ্যাকালে, বিশ্রামবারে, অমাবস্যায় ও আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সকল পর্ব্বে হোম করিবার জন্য তাহা পবিত্র করিব। এ সকল কর্ম্ম ইস্রায়েলের নিত্য কর্ত্তব্য। আর আমি যে গৃহ নির্ম্মাণ করিব, তাহা মহৎ হইবে, কেননা আমাদের ঈশ্বর সকল দেবতা হইতে মহান্‌। কিন্তু তাঁহার নিমিত্ত গৃহ নির্ম্মাণ করিতে কে সমর্থ? কেননা স্বর্গ এবং স্বর্গের স্বর্গও তাঁহাকে ধারণ করিতে পারে না; তবে আমি কে যে, তাঁহার উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করি? কেবল তাঁহার সম্মুখে ধূপদাহ করিবার স্থান [নির্ম্মাণ করিতে পারি]। অতএব আমার পিতা দায়ূদ কর্ত্তৃক নিযুক্ত যে জ্ঞানবান লোকেরা যিহূদায় ও যিরূশালেমে আমার নিকটে আছে, তাহাদের সহিত স্বর্ণ, রৌপ্য, পিত্তল, লৌহ এবং বেগুনে, রক্ত ও নীলবর্ণ সূত্রের কার্য্য করণে ও সর্ব্বপ্রকার ক্ষোদন কার্য্যে নিপুন এক জন লোককে পাঠাইবেন। আর লিবানোন হইতে এরসকাষ্ঠ, দেবদারুকাষ্ঠ ও আল্‌গুমকাষ্ঠ আমার এখানে পাঠাইবেন; কেননা আমি জানি, আপনার দাসেরা লিবানোনে কাষ্ঠ কাটিতে তৎপর; আর দেখুন, আমার দাসেরাও আপনার দাসদের সহিত থাকিবে। আমার জন্য প্রচুর কাষ্ঠ প্রস্তুত করিতে হইবে, কেননা আমি যে গৃহ নির্ম্মাণ করিব, তাহা মহৎ ও আশ্চর্য্য হইবে। আর দেখুন, আমি আপনার দাসদিগকে, যে কাঠুরিয়ারা গাছ কাটিবে, তাহাদিগকে বিংশতি সহস্র কোর্‌ মাড়া গোধূম, বিংশতি সহস্র কোর্‌ যব, বিংশতি সহস্র বাৎ দ্রাক্ষারস ও বিংশতি সহস্র বাৎ তৈল দিব। পরে সোরের রাজা হূরম শলোমনের কাছে এই উত্তর লিখিয়া পাঠাইলেন, সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে প্রেম করেন, এই জন্য তাহাদের উপরে আপনাকে রাজা করিয়াছেন। হূরম আরও কহিলেন, ধন্য সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, স্বর্গমর্ত্ত্যের নির্ম্মাণকর্ত্তা, যিনি দায়ূদ রাজাকে সূক্ষ্মদর্শী ও বুদ্ধিমান এক বিজ্ঞ পুত্র দিয়াছেন, সেই পুত্র সদাপ্রভুর জন্য এক গৃহ ও আপন রাজ্যের জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবেন। এখন আমি হূরম-আবি নামক এক জন জ্ঞানবান্‌ ও বুদ্ধিমান লোককে পাঠাইলাম। সে দানবংশীয়া এক স্ত্রীর পুত্র, তাহার পিতা সোরের লোক; সে স্বর্ণ, রৌপ্য, পিত্তল, লৌহ, প্রস্তর ও কাষ্ঠ, এবং বেগুনে, নীল, মসীনা-সূত্রের ও রক্তবর্ণ সূত্রের কার্য্য করিতে তৎপর। আর সে সর্ব্বপ্রকার ক্ষোদন কার্য্য করিতে ও সর্ব্ববিধ কল্পনার কার্য্য প্রস্তুত করিতে তৎপর। তাহাকে আপনার কার্য্যনিপুন লোকদের সহিত এবং আপনার পিতা আমার প্রভু দায়ূদের কার্য্যনিপুন লোকদের সহিত স্থান দেওয়া যাউক। অতএব আমার প্রভু যে গোধূম, যব, তৈল ও দ্রাক্ষারসের কথা বলিয়াছেন, তাহা আপন দাসদের নিকটে পাঠাইয়া দিউন। আর আপনার যত কাষ্ঠের প্রয়োজন হইবে, আমরা লিবানোনে তত কাষ্ঠ কাটিব, এবং মাড় বাঁধিয়া সমুদ্রপথে যাফোতে আপনার জন্য পৌঁছাইয়া দিব; পরে আপনি তাহা যিরূশালেমে তুলিয়া লইয়া যাইবেন। আর শলোমন আপন পিতা দায়ূদের গণনার পরে ইস্রায়েল দেশের সমস্ত প্রবাসী লোক গণনা করাইলেন, তাহাতে এক লক্ষ তিপ্পান্ন সহস্র ছয় শত লোক পাওয়া গেল। তাহাদের মধ্যে তিনি ভার বহিতে সত্তর সহস্র লোক, পর্ব্বতে [কাষ্ঠাদি] ছেদন করিতে আশী সহস্র লোক ও লোকদিগকে কার্য্য করাইবার জন্য তিন সহস্র ছয় শত অধ্যক্ষ নিযুক্ত করিলেন। পরে শলোমন যিরূশালেমে মোরিয়া পর্ব্বতে সদাপ্রভুর গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ করিলেন; [সদাপ্রভু] সেই স্থানে তাঁহার পিতা দায়ূদকে দর্শন দিয়াছিলেন, এবং দায়ূদ সেই স্থান নিরূপণ করিয়াছিলেন; তাহা যিবূষীয় অর্ণানের খামার। তিনি আপন রাজত্বের চতুর্থ বৎসরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় দিনে নির্ম্মাণ কার্য্য আরম্ভ করিলেন। শলোমন ঈশ্বরের গৃহ নির্ম্মাণ করিতে যে মূল উপদেশ পাইয়াছিলেন, তদনুসারে হস্তের প্রাচীন পরিমাণে গৃহের দীর্ঘতা ষাট হস্ত ও প্রস্থ বিংশতি হস্ত করা হইল। আর গৃহের সম্মুখস্থ বারাণ্ডা গৃহের প্রস্থানুসারে বিংশতি হস্ত দীর্ঘ ও এক শত বিংশতি হস্ত উচ্চ হইল; আর তিনি ভিতরে তাহা নির্ম্মল স্বর্ণে মুড়াইলেন। তিনি বৃহৎ গৃহের গাত্র উত্তম স্বর্ণমণ্ডিত দেবদারু কাষ্ঠে আবৃত করিলেন ও তাহার উপরে খর্জ্জুরবৃক্ষ ও শৃঙ্খলাকৃতি করিলেন। আর শোভার নিমিত্ত গৃহটী মূল্যবান প্রস্তরে অলঙ্কৃত করিলেন; ঐ স্বর্ণ পর্বয়িম দেশের স্বর্ণ। আর তিনি গৃহ, গৃহের কড়িকাষ্ঠ, গোবরাট, ভিত্তি ও কবাট স্বর্ণে মুড়াইলেন, এবং ভিত্তির উপরে করূবাকৃতি ক্ষুদিলেন। আর তিনি অতি পবিত্র গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন, তাহার দীর্ঘতা গৃহের প্রস্থের ন্যায় বিংশতি হস্ত ও প্রস্থ বিংশতি হস্ত; এবং তিনি ছয় শত তালন্ত উত্তম স্বর্ণ দ্বারা তাহা মুড়াইলেন। প্রেকের পরিমাণ পঞ্চাশ শেকল স্বর্ণ। তিনি উপরিস্থ কুঠরী সকলও স্বর্ণ দ্বারা মুড়াইলেন। অতি পবিত্র গৃহের মধ্যে তিনি নিকালকার্য্য দ্বারা দুই করূব নির্ম্মাণ করিলেন; আর তাহা স্বর্ণে মুড়ান হইল। এই করূব দুইটীর পক্ষ বিংশতি হস্ত দীর্ঘ, একটীর পাঁচ হস্ত দীর্ঘ এক পক্ষ গৃহের ভিত্তি স্পর্শ করিল, এবং পাঁচ হস্ত দীর্ঘ অন্য পক্ষ দ্বিতীয় করূবেব পক্ষ স্পর্শ করিল। সেই করূবের পাঁচ হস্ত দীর্ঘ প্রথম পক্ষ গৃহের ভিত্তি স্পর্শ করিল, এবং পাঁচ হস্ত দীর্ঘ দ্বিতীয় পক্ষ ঐ করূবের পক্ষ স্পর্শ করিল। সেই করূব দুইটীর পক্ষ চতুষ্টয় বিংশতি হস্ত বিস্তারিত, তাহারা চরণে দণ্ডায়মান, এবং তাহাদের মুখ গৃহের দিকে ছিল। আর তিনি নীল, বেগুনে ও রক্তবর্ণ এবং মসীনা-সূত্র নির্ম্মিত তিরস্করিণী প্রস্তুত করিলেন ও তাহাতে করূবাকৃতি করিলেন। আর তিনি গৃহের সম্মুখে পঁয়ত্রিশ হস্ত উচ্চ দুই স্তম্ভ করিলেন, এক এক স্তম্ভের উপরে যে মাথলা তাহা পাঁচ হস্ত উচ্চ হইল। আর তিনি অন্তর্গৃহে শৃঙ্খল করিয়া সেই স্তম্ভের মস্তকে দিলেন, এবং এক শত দাড়িম্বাকৃতি করিয়া ঐ শৃঙ্খলের উপরে রাখিলেন। সেই দুইটী স্তম্ভ তিনি মন্দিরের সম্মুখে স্থাপন করিলেন, একটা দক্ষিণে ও অন্যটা বামে রাখিলেন, এবং যেটী দক্ষিণে, সেটীর নাম যাখীন [তিনি স্থির করিবেন] ও যেটী বামে, সেটীর নাম বোয়স [ইহাতেই বল] রাখিলেন। আর তিনি পিত্তলময় এক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন, তাহার দীর্ঘতা বিংশতি হস্ত, প্রস্থ বিংশতি হস্ত ও উচ্চতা দশ হস্ত। আর তিনি ছাঁচে ঢালা গোলাকার সমুদ্রপাত্র নির্ম্মাণ করিলেন; তাহা এক কাণা অবধি অন্য কাণা পর্য্যন্ত দশ হস্ত ও তাহার উচ্চতা পাঁচ হস্ত, এবং তাহার পরিধি ত্রিশ হস্ত করিলেন। তাহার চারিদিকে তাহার নীচে সমুদ্রপাত্র বেষ্টনকারী বলদের আকৃতি ছিল, প্রত্যেক হস্ত পরিমাণের মধ্যে দশ দশ আকৃতি ছিল; পাত্র ঢালিবার সময়ে সেই গবাকৃতির দুই শ্রেণী ছাঁচে ঢালা গিয়াছিল। ঐ পাত্র বারোটী গোরুর উপরে স্থাপিত ছিল, তাহাদের তিনটী উত্তরমুখ, তিনটী পশ্চিমমুখ, তিনটী দক্ষিণমুখ ও তিনটী পূর্ব্বমুখ ছিল, এবং সমুদ্রপাত্র তাহাদের উপরে রহিল; তাহাদের সকলের পশ্চাদ্ভাগ ভিতরে থাকিল। ঐ পাত্র চারি অঙ্গুলি পুরু ও তাহার কাণা পানপাত্রের কাণার সদৃশ, শোষণ পুষ্পাকার ছিল, তাহাতে তিন সহস্র বাৎ ধরিত। আর তিনটী প্রক্ষালনপাত্র নির্ম্মাণ করিলেন, এবং প্রক্ষালনার্থে তাহার পাঁচটা দক্ষিণে ও পাঁচটা বামে স্থাপন করিলেন; তাহার মধ্যে তাহারা হোমবলিদানের সামগ্রী প্রক্ষালন করিত, কিন্তু সমুদ্রপাত্র যাজকদের প্রক্ষালনার্থে ছিল। আর তিনি বিধিমতে স্বর্ণময় দশটী দীপাধার নির্ম্মাণ করিয়া মন্দিরে স্থাপন করিলেন, তাহার পাঁচটী দক্ষিণে ও পাঁচটী বামে রাখিলেন। আর তিনি দশখানি মেজও নির্ম্মাণ করিলেন, তাহার পাঁচখানি দক্ষিণে ও পাঁচখানি বামে মন্দিরের মধ্যে রাখিলেন। আর তিনি এক শত স্বর্ণময় বাটিও নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি যাজকদের প্রাঙ্গণ, বৃহৎ প্রাঙ্গণ ও প্রাঙ্গণের দ্বার সকল নির্ম্মাণ করিলেন, ও তাহার কবাটগুলি পিত্তলে মুড়িলেন। আর সমুদ্রপাত্র দক্ষিণ পার্শ্বে পূর্ব্বদিকে দক্ষিণদিকের সম্মুখে স্থাপন করিলেন। আর হূরম স্থালী, হাতা ও বাটি সকল নির্ম্মাণ করিল। এইরূপে হূরম শলোমন রাজার জন্য ঈশ্বরের গৃহের যে কর্ম্মে প্রবৃত্ত হইয়াছিল, তাহা সমাপ্ত করিল; অর্থাৎ দুই স্তম্ভ ও সেই দুই স্তম্ভের উপরিস্থ গোলাকার ও মাথলা, এবং সেই স্তম্ভের উপরিস্থ মাথলার দুই গোলাকার আচ্ছাদনার্থক দুই জালকার্য্য, এবং দুই জালকার্য্যের জন্য চারি শত দাড়িম্বাকার, অর্থাৎ স্তম্ভের উপরিস্থ মাথলার দুই গোলাকার আচ্ছাদনার্থক এক এক জালকার্য্যের জন্য দুই শ্রেণী দাড়িম্বাকার করিল। আর সে পীঠ সকল নির্ম্মাণ করিল, এবং সেই পীঠের উপরে প্রক্ষালনপাত্র সকল নির্ম্মাণ করিল; এক সমুদ্রপাত্র ও তাহার নীচে বারোটী গোরু; এবং স্থালী, হাতা ও ত্রিকন্টক শূল এবং অন্য সমস্ত পাত্র হূরম-আবি শলোমন রাজার নিমিত্ত সদাপ্রভুর গৃহের জন্য তেজস্বী পিত্তলে নির্ম্মাণ করিল। রাজা যর্দ্দনের অঞ্চলে সুক্কোৎ ও সরেদার মধ্যস্থিত কর্দ্দমভূমিতে তাহা ঢালাইলেন। আর শলোমন এই যে সকল পাত্র নির্ম্মাণ করিলেন, তাহা প্রচুর, কেননা পিত্তলের পরিমাণ নির্ণয় করা গেল না। শলোমন ঈশ্বরের গৃহস্থিত সমস্ত পাত্র, এবং স্বর্ণময় বেদি, ও দর্শন-রুটী রাখিবার মেজ, এবং অন্তর্গৃহের সম্মুখে বিধিমতে জ্বালাইবার জন্য নির্ম্মল স্বর্ণের দীপবৃক্ষ সকল, এবং পুষ্প, প্রদীপ ও চিমটা সকল স্বর্ণে নির্ম্মাণ করিলেন, সেই স্বর্ণ বিশুদ্ধ; আর কর্ত্তরী, বাটি, চমস ও অঙ্গারপাত্র নির্ম্মল স্বর্ণে, এবং গৃহের দ্বার, মহাপবিত্র স্থানের ভিতরের কবাট ও গৃহের অর্থাৎ মন্দিরের কবাট সকল স্বর্ণে নির্ম্মাণ করিলেন। এইরূপে সদাপ্রভুর গৃহের জন্য শলোমনের কৃত সমস্ত কার্য্য সম্পন্ন হইল। আর শলোমন আপন পিতা দায়ূদের পবিত্রীকৃত দ্রব্য সকল অর্থাৎ রৌপ্য, স্বর্ণ ও সকল পাত্র আনাইয়া ঈশ্বরের গৃহস্থিত ভাণ্ডারে রাখিলেন। পরে শলোমন দায়ূদ-নগর অর্থাৎ সিয়োন হইতে সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক উঠাইয়া আনিবার জন্য ইস্রায়েলের প্রাচীনগণকে ও সমস্ত বংশপতিকে, অর্থাৎ ইস্রায়েল-সন্তানগণের পিতৃকুলাধ্যক্ষদিগকে, যিরূশালেমে একত্র করিলেন। তাহাতে সপ্তম মাসে, উৎসব সময়ে ইস্রায়েলের সমস্ত লোক রাজার নিকটে একত্র হইল। পরে ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনবর্গ উপস্থিত হইলে লেবীয়েরা সিন্দুকটী উঠাইল। আর তাহারা সিন্দুক, সমাগম-তাম্বু ও তাম্বুর মধ্যস্থিত সমস্ত পবিত্র পাত্র উঠাইয়া আনিল; লেবীয় যাজকগণ এই সকল উঠাইয়া আনিল। আর শলোমন রাজা এবং তাঁহার কাছে সমাগত সমস্ত ইস্রায়েল-মণ্ডলী সিন্দুকের সম্মুখে থাকিয়া অনেক মেষ ও গো বলিদান করিলেন, সে সমস্ত বাহুল্য প্রযুক্ত অসংখ্য ও অগণ্য ছিল। পরে যাজকেরা সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক লইয়া গিয়া স্বস্থানে, গৃহের অন্তগৃহে, মহাপবিত্র স্থানে, দুই করূবের পক্ষের নীচে স্থাপন করিল। করূব দুইটী সিন্দুকের স্থানের উপরে পক্ষ বিস্তার করিয়া রহিল, আর ঊর্দ্ধে করূবেরা সিন্দুক ও তাহার দুই বহন-দণ্ড আচ্ছাদন করিয়া রহিল। সেই দুই বহন-দণ্ড এমন লম্বা ছিল যে, তাহার অগ্রভাগ সিন্দুকের অগ্রে অন্তর্গৃহের সম্মুখে দৃষ্ট হইত, তথাপি তাহা বাহিরে দৃষ্ট হইত না; অদ্য পর্য্যন্ত তাহা সেই স্থানে আছে। সিন্দুকের মধ্যে আর কিছু ছিল না, কেবল সেই দুইখানা প্রস্তর-ফলক ছিল, যাহা মোশি হোরেবে তাহার মধ্যে রাখিয়াছিলেন; সেই সময়ে, মিসর হইতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের বাহির হইয়া আসিবার পর, সদাপ্রভু তাহাদের সহিত নিয়ম করিয়াছিলেন। বাস্তবিক যাজকগণ পবিত্র স্থান হইতে বাহির হইল, তথায় উপস্থিত যাজকেরা সকলেই আপনাদিগকে পবিত্র করিয়াছিল, তাহাদিগকে আপন আপন পালা রক্ষা করিতে হইল না; এবং গায়ক লেবীয়েরা সকলে, আসফ, হেমন, যিদূথূন ও তাঁহাদের পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ, মসীনাবস্ত্র পরিহিত হইয়া, এবং করতাল, নেবল ও বীণা সহকারে যজ্ঞবেদির পূর্ব্বপ্রান্তে দণ্ডায়মান রহিল, এবং তূরীবাদক এক শত বিংশতি জন যাজক তাহাদের সঙ্গে ছিল। সেই তূরীবাদকেরা ও গায়কেরা সকলে একরবে সদাপ্রভুর প্রশংসা ও স্তব করিবার জন্য এক ব্যক্তির ন্যায় উপস্থিত ছিল; এবং যখন তাহারা তূরী ও করতালাদি বাদ্যের সহিত মহাশব্দ করিয়া ‘তিনি মঙ্গলময়, হাঁ, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী,’ এই কথা বলিয়া সদাপ্রভুর প্রশংসা করিল, তৎকালে গৃহ, সদাপ্রভুর গৃহ মেঘে এমন পরিপূর্ণ হইল যে, মেঘ প্রযুক্ত যাজকেরা পরিচর্য্যা করিবার জন্য দাঁড়াইতে পারিল না; কেননা ঈশ্বরের গৃহ সদাপ্রভুর প্রতাপে পরিপূর্ণ হইয়াছিল। তখন শলোমন কহিলেন, সদাপ্রভু বলিয়াছেন যে, তিনি ঘোর অন্ধকারে বাস করিবেন। কিন্তু আমি তোমার এক বসতিগৃহ নির্ম্মাণ করাইলাম; ইহা চিরকাল তোমার নিবাস-স্থান। পরে রাজা মুখ ফিরাইয়া সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; আর সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজ দণ্ডায়মান হইল। আর তিনি কহিলেন, ধন্য সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর; তিনি আমার পিতা দায়ূদের কাছে আপন মুখে এই কথা বলিয়াছিলেন, এবং আপন হস্ত দ্বারা ইহা সফল করিয়াছেন, যথা, যে দিন আমার প্রজাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছি, সেই দিন হইতে আমি আপন নাম স্থাপন জন্য গৃহ নির্ম্মাণার্থে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্যে কোন নগর মনোনীত করি নাই; এবং আপন প্রজা ইস্রায়েলের অধ্যক্ষ হইবার জন্য কোন মনুষ্যকে মনোনীত করি নাই। কিন্তু আপন নাম স্থাপন জন্য আমি যিরূশালেম মনোনীত করিয়াছি ও আমার প্রজা ইস্রায়েলের অধ্যক্ষ হইবার জন্য দায়ূদকে মনোনীত করিয়াছি। আর ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আমার পিতা দায়ূদের মনোরথ ছিল। কিন্তু সদাপ্রভু আমার পিতা দায়ূদকে কহিলেন, আমার নামের উদ্দেশে এক গৃহ নির্ম্মাণ করিতে তোমার মনোরথ হইয়াছে; তোমার এইরূপ মনোরথ করা ভালই বটে। তথাপি তুমি সেই গৃহ নির্ম্মাণ করিবে না, কিন্তু তোমার কটি হইতে উৎপন্ন পুত্রই আমার নামের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিবে। সদাপ্রভু এই যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহা সফল করিলেন; সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞানুসারে আমি আপন পিতা দায়ূদের পদে উৎপন্ন ও ইস্রায়েলের সিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়া ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের উদ্দেশে এই গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছি। আর সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানদের সহিত যে নিয়ম করিয়াছিলেন, তাহার আধার সিন্দুক ইহার মধ্যে রাখিলাম। পরে তিনি সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজের সাক্ষাতে সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির সম্মুখে দাঁড়াইয়া অঞ্জলি বিস্তার করিলেন;— কেননা শলোমন পাঁচ হস্ত দীর্ঘ, পাঁচ হস্ত প্রস্থ ও তিন হস্ত উচ্চ পিত্তলময় এক মঞ্চ নির্ম্মাণ করিয়া প্রাঙ্গণের মধ্যস্থলে রাখিয়াছিলেন; তিনি তাহার উপরে দাঁড়াইলেন, পরে সমস্ত ইস্রায়েল-সমাজের সম্মুখে হাঁটু পাতিয়া স্বর্গের দিকে অঞ্জলি বিস্তার করিলেন; —আর তিনি কহিলেন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, স্বর্গে কি পৃথিবীতে তোমার তুল্য ঈশ্বর নাই। সর্ব্বান্তঃকরণে যাহারা তোমার সাক্ষাতে চলে, তোমার সেই দাসগণের পক্ষে তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করিয়া থাক; তুমি তোমার দাস আমার পিতা দায়ূদের কাছে যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলে, তাহা পালন করিয়াছ, যাহা আপন মুখে বলিয়াছিলে, তাহা আপন হস্ত দ্বারা সিদ্ধ করিয়াছ, যেমন অদ্য দেখা যাইতেছে। এখন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি আপন দাস আমার পিতা দায়ূদের নিকটে যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলে, তাহা রক্ষা কর। তুমি বলিয়াছিলে, আমার দৃষ্টিতে ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসিতে তোমার [বংশে] লোকের অভাব হইবে না, কেবলমাত্র যদি আমার সাক্ষাতে তুমি যেমন চলিয়াছ, তোমার সন্তানগণ আমার সাক্ষাতে তদ্রূপ চলিবার জন্য আপন আপন পথে সাবধান থাকে। এখন, হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তোমার দাস দায়ূদের কাছে যে কথা তুমি বলিয়াছিলে, তাহা দৃঢ় হউক। কিন্তু ঈশ্বর কি সত্য সত্যই পৃথিবীতে মনুষ্যের সহিত বাস করিবেন? দেখ, স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ তোমাকে ধারণ করিতে পারে না, তবে আমার নির্ম্মিত এই গৃহ কি পারিবে? তথাপি হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমি আপন দাসের প্রার্থনাতে ও বিনতিতে মনোযোগ কর, তোমার দাস তোমার নিকটে যে কাকূক্তি ও প্রার্থনা করিতেছে, তাহা শুন। যে স্থানের বিষয়ে তুমি বলিয়াছ যে, তোমার নাম সেই স্থানে রাখিবে, সেই স্থানের অর্থাৎ এই গৃহের প্রতি তোমার চক্ষু দিবারাত্র উন্মীলিত থাকুক, এবং এই স্থানের অভিমুখে তোমার দাস যে প্রার্থনা করে, তাহা শুনিও। আর তোমার দাস ও তোমার লোক ইস্রায়েল যখন এই স্থানের অভিমুখে প্রার্থনা করিবে, তখন তাহাদের সকল বিনতিতে কর্ণপাত করিও; তোমার নিবাস-স্থান হইতে, স্বর্গ হইতে, তাহা শুনিও, এবং শুনিয়া ক্ষমা করিও। কেহ আপন প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে পাপ করিলে যদি তাহাকে দিব্য করাইবার জন্য কোন দিব্য নিশ্চিত হয়, আর সে আসিয়া এই গৃহে তোমার যজ্ঞবেদির সম্মুখে সেই দিব্য করে, তবে তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিও, এবং নিষ্পত্তি করিয়া আপন দাসদের বিচার করিও; দোষীকে দোষী করিয়া তাহার কর্ম্মের ফল তাহার মস্তকে বর্ত্তাইও, এবং ধার্ম্মিককে ধার্ম্মিক করিয়া তাহার ধার্ম্মিকতানুযায়ী ফল দিও। তোমার প্রজা ইস্রায়েল তোমার বিরুদ্ধে পাপ করণ প্রযুক্ত শত্রুর সম্মুখে আহত হইলে পর যদি পুনর্ব্বার ফিরে, এবং এই গৃহে তোমার নামের স্তব করিয়া তোমার নিকটে প্রার্থনা ও বিনতি করে; তবে তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিও, এবং আপন প্রজা ইস্রায়েলের পাপ ক্ষমা করিও, আর তাহাদিগকে ও তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে এই যে দেশ দিয়াছ, এখানে পুনর্ব্বার তাহাদিগকে আনিও। তোমার বিরুদ্ধে তাহাদের পাপ প্রযুক্ত যদি আকাশ রুদ্ধ হয়, বৃষ্টি না হয়, আর লোকেরা যদি এই স্থানের অভিমুখে প্রার্থনা করে, তোমার নামের স্তব করে, এবং তোমা হইতে দুঃখ পাওয়াতে আপন আপন পাপ হইতে ফিরে, তবে তুমি স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং আপন দাসদের ও আপন প্রজা ইস্রায়েলের পাপ ক্ষমা করিও, ও তাহাদের গন্তব্য সৎপথ তাহাদিগকে দেখাইও, এবং তুমি আপন প্রজাদিগকে যে দেশ অধিকারার্থে দিয়াছ, তোমার সেই দেশে বৃষ্টি পাঠাইও। দেশের মধ্যে যদি দুর্ভিক্ষ হয়, যদি মহামারী হয়, যদি শস্যের শোষ কি ম্লানি কি পঙ্গপাল কিম্বা কীট হয়, যদি তাহাদের শত্রুগণ তাহাদের দেশে নগরে নগরে তাহাদিগকে অবরোধ করে, যদি কোন মারীর বা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়; তাহা হইলে কোন ব্যক্তি বা তোমার সমস্ত প্রজা ইস্রায়েল, যাহারা প্রত্যেকে আপন আপন মনঃপীড়া ও মর্ম্মব্যথা জানে, এবং এই গৃহের দিকে যদি অঞ্জলি বিস্তার করিয়া কোন প্রার্থনা কি বিনতি করে; তবে তুমি তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গ হইতে তাহা শুনিও, এবং ক্ষমা করিও, এবং প্রত্যেক জনকে স্ব স্ব সমস্ত পথ অনুযায়ী প্রতিফল দিও; —তুমি ত তাহাদের অন্তঃকরণ জান; কেননা একমাত্র তুমিই মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণ জ্ঞাত আছ; —যেন আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে তুমি যে দেশ দিয়াছ, এই দেশে তাহারা যত দিন জীবিত থাকে, তোমার পথে চলিবার জন্য তোমাকে ভয় করে। অধিকন্তু তোমার প্রজা ইস্রায়েল গোষ্ঠীয় নয়, এমন কোন বিদেশী লোক যখন তোমার মহানাম, তোমার বলবান হস্ত ও তোমার বিস্তারিত বাহুর উদ্দেশে দূর দেশ হইতে আসিবে, যখন তাহারা আসিয়া এই গৃহের অভিমুখে প্রার্থনা করিবে, তখন তুমি স্বর্গ হইতে, তোমার নিবাস-স্থান হইতে তাহা শুনিও; এবং সেই বিদেশী লোক তোমার নিকটে যে কিছু প্রার্থনা করিবে, তদনুসারে করিও; যেন তোমার প্রজা ইস্রায়েলের ন্যায় পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতি তোমার নাম জ্ঞাত হয়, ও তোমাকে ভয় করে, এবং তাহারা যেন জানিতে পায় যে, আমার নির্ম্মিত এই গৃহের উপরে তোমারই নাম কীর্ত্তিত। তুমি আপন প্রজাদিগকে কোন পথে প্রেরণ করিলে, যদি তাহারা আপন শত্রুগণের সহিত যুদ্ধ করিতে বাহির হয়, এবং তোমার মনোনীত এই নগরের অভিমুখে ও তোমার নামের জন্য আমার নির্ম্মিত গৃহের অভিমুখে তোমার কাছে প্রার্থনা করে; তবে তুমি স্বর্গ হইতে তাহাদের প্রার্থনা ও বিনতি শুনিও, এবং তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও। তাহারা যদি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে, —কেননা পাপ না করে, এমন কোন মনুষ্য নাই, —এবং তুমি যদি তাহাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া শত্রুর হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ কর, ও শত্রুগণ তাহাদিগকে বন্দি করিয়া দূরস্থ কিম্বা নিকটস্থ কোন দেশে লইয়া যায়; তথাপি যে দেশে তাহারা বন্দিরূপে নীত হইয়াছে, সেই দেশে যদি মনে মনে বিবেচনা করে ও ফিরে, আপনাদের বন্দিত্বের দেশে তোমার কাছে বিনতি করিয়া যদি বলে, আমরা পাপ করিয়াছি, অপরাধী হইয়াছি ও দুষ্টামি করিয়াছি; এবং যে দেশে বন্দিরূপে নীত হইয়াছে, সেই বন্দিত্বের দেশে যদি সমস্ত অন্তঃকরণ ও সমস্ত প্রাণের সহিত তোমার কাছে ফিরিয়া আইসে, এবং তুমি তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছ, আপনাদের সেই দেশের অভিমুখে, তোমার মনোনীত নগরের অভিমুখে ও তোমার নামের জন্য আমার নির্ম্মিত গৃহের অভিমুখে যদি প্রার্থনা করে; তবে তুমি স্বর্গ হইতে, তোমার বাসস্থান হইতে তাহাদের প্রার্থনা ও বিনতি শুনিও, এবং তাহাদের বিচার নিষ্পত্তি করিও; আর তোমার যে প্রজারা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে, তাহাদিগকে ক্ষমা করিও। এখন, হে আমার ঈশ্বর, বিনয় করি, এই স্থানে যে প্রার্থনা হইবে, তৎপ্রতি যেন তোমার চক্ষু উন্মীলিত ও কর্ণ অবহিত থাকে। হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, এখন তুমি উঠিয়া তোমার বিশ্রাম-স্থানে গমন কর; তুমি ও তোমার শক্তির সিন্দুক। হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তোমার যাজকগণ পরিত্রাণ-বস্ত্র পরিধান করুক ও তোমার সাধুগণ মঙ্গলে আনন্দ করুক। হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তুমি আপন অভিষিক্ত লোকের মুখ ফিরাইয়া দিও না, আপন দাস দায়ূদের [প্রতি কৃত] বিবিধ-দয়া স্মরণ কর। শলোমন প্রার্থনা সাঙ্গ করিলে পর আকাশ হইতে অগ্নি নামিয়া হোম ও বলি সকল গ্রাস করিল, এবং সদাপ্রভুর প্রতাপে গৃহ পরিপূর্ণ হইল। আর যাজকগণ সদাপ্রভুর গৃহে প্রবেশ করিতে পারিল না, কারণ সদাপ্রভুর প্রতাপে সদাপ্রভুর গৃহ পরিপূর্ণ হইয়াছিল। যখন অগ্নি নামিল, এবং সদাপ্রভুর প্রতাপ গৃহের উপরে [বিরাজমান] হইল, তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ সকলে তাহা দেখিতে পাইল, আর তাহারা নত হইয়া প্রস্তর বাঁধা ভূমিতে উবুড় হইয়া প্রণিপাত করিল, এবং সদাপ্রভুর স্তব করিয়া কহিল, তিনি মঙ্গলময়, হাঁ, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। পরে রাজা ও সমস্ত লোক সদাপ্রভুর সম্মুখে যজ্ঞ করিলেন। শলোমন রাজা বাইশ সহস্র গোরু ও এক লক্ষ বিশ সহস্র মেষ বলিদান করিলেন। এইরূপে রাজা ও সমস্ত লোক ঈশ্বরের গৃহ প্রতিষ্ঠা করিলেন। আর যাজকগণ আপন আপন পদানুসারে দণ্ডায়মান ছিল, এবং লেবীয়েরাও সদাপ্রভুর সঙ্গীত জন্য বাদ্যযন্ত্রসহ দাঁড়াইয়াছিল; যখন দায়ূদ তাহাদিগের দ্বারা প্রশংসা করেন, তখন সদাপ্রভুর দয়া অনন্তকালস্থায়ী বলিয়া যেন তাঁহার স্তব করা হয়, এই জন্য দায়ূদ রাজা সেই সকল যন্ত্র নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন; আর তাহাদের সম্মুখে যাজকগণ তূরী বাজাইতেছিল, এবং সমস্ত ইস্রায়েল দণ্ডায়মান ছিল। আর শলোমন সদাপ্রভুর গৃহের সম্মুখস্থ প্রাঙ্গণের মধ্য দেশ পবিত্র করিলেন, কেননা তিনি সে স্থানে হোমবলি সকল, এবং মঙ্গলার্থক বলির মেদ উৎসর্গ করিলেন, কারণ হোমবলি, ভক্ষ্য-নৈবেদ্য এবং সেই মেদ গ্রহণ পক্ষে শলোমনের নির্ম্মিত পিত্তলময় যজ্ঞবেদি ক্ষুদ্র ছিল। এইরূপে সেই সময়ে শলোমন ও তাঁহার সঙ্গে সমস্ত ইস্রায়েল, হমাতের প্রবেশ-স্থান অবধি মিসরের স্রোত পর্য্যন্ত [দেশবাসী] অতি মহাসমাজ, সাত দিন উৎসব করিলেন। পরে তাঁহারা অষ্টম দিনে উৎসব-সভা করিলেন, ফলতঃ তাঁহারা সাত দিন যজ্ঞবেদির প্রতিষ্ঠা ও সাত দিন উৎসব পালন করিলেন। শলোমন সপ্তম মাসের ত্রয়োবিংশ দিনে লোকদিগকে স্ব স্ব তাম্বুতে বিদায় করিলেন। সদাপ্রভু দায়ূদের, শলোমনের ও আপন প্রজা ইস্রায়েলের যে সকল মঙ্গল করিয়াছিলেন, তৎপ্রযুক্ত তাহারা আনন্দিত ও হৃষ্টচিত্ত হইয়াছিল। এইরূপে শলোমন সদাপ্রভুর গৃহ ও রাজবাটীর নির্ম্মাণ সমাপ্ত করিলেন; সদাপ্রভুর গৃহে ও আপনার বাটীতে যাহা যাহা করিতে শলোমনের মনোবাঞ্ছা হইয়াছিল, সে সমস্ত তিনি কুশলে সাধন করিলেন। পরে সদাপ্রভু রাত্রিতে শলোমনকে দর্শন দিয়া কহিলেন, আমি তোমার প্রার্থনা শুনিয়াছি ও যজ্ঞ-গৃহ বলিয়া এই স্থান আমার জন্য মনোনীত করিয়াছি। আমি যদি আকাশ রুদ্ধ করি, আর বৃষ্টি না হয়, কিম্বা দেশ বিনষ্ট করিতে পঙ্গপালদিগকে আজ্ঞা করি, অথবা আপন প্রজাদের মধ্যে মহামারী প্রেরণ করি, আমার প্রজারা, যাহাদের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, তাহারা যদি নম্র হইয়া প্রার্থনা করে ও আমার মুখের অন্বেষণ করে, এবং আপনাদের কুপথ হইতে ফিরে, তবে আমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিব, তাহাদের পাপ ক্ষমা করিব ও তাহাদের দেশ আরোগ্য করিব। এই স্থানে যে প্রার্থনা হইবে, তাহার প্রতি এখন আমার চক্ষু উন্মীলিত ও কর্ণ অবহিত থাকিবে। কেননা এই গৃহে যেন আমার নাম চিরকালের জন্য থাকে, এই জন্য আমি এখন ইহা মনোনীত ও পবিত্র করিলাম, এবং এই স্থানে প্রতিনিয়ত আমার চক্ষু ও আমার চিত্ত থাকিবে। আর তোমার পিতা দায়ূদ যেমন চলিত, তেমনি তুমিও যদি আমার সাক্ষাতে চল, আমি তোমাকে যে সমস্ত আজ্ঞা দিয়াছি, যদি তদনুযায়ী কর্ম্ম কর, এবং আমার বিধি ও শাসন সকল পালন কর; তবে, ‘ইস্রায়েলের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতে তোমার [বংশে] লোকের অভাব হইবে না,’ এই বলিয়া আমি তোমার পিতা দায়ূদের সহিত যে নিয়ম করিয়াছিলাম, তদনুসারে তোমার রাজসিংহাসন স্থির করিব। কিন্তু যদি তোমরা [আমা হইতে] ফির ও তোমাদের সম্মুখে স্থাপিত আমার বিধি ও আজ্ঞা সকল পরিত্যাগ কর, আর গিয়া অন্য দেবগণের সেবা কর ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত কর, তবে আমি ইস্রায়েলীয়দিগকে আমার যে দেশ দিয়াছি, তাহা হইতে তাহাদিগকে সমূলে উৎপাটন করিব, এবং আপন নামের জন্য এই যে গৃহ পবিত্র করিলাম, ইহা আমার দৃষ্টিপথ হইতে দূর করিব, এবং সমস্ত জাতির মধ্যে ইহা প্রবাদের ও উপহাসের আস্পদ করিব। আর এই গৃহ উচ্চ হইলেও যে কেহ ইহার নিকট দিয়া গমন করিবে, সে চমকিয়া উঠিবে ও জিজ্ঞাসা করিবে, এই দেশের ও এই গৃহের প্রতি সদাপ্রভু এমন কেন করিয়াছেন? আর লোকে বলিবে, ইহার কারণ এই, যিনি এই লোকদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলেন, উহারা আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছে, এবং অন্য দেবগণকে অবলম্বন করিয়া তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিয়াছে ও তাহাদের সেবা করিয়াছে, এই জন্য তিনি তাহাদের উপরে এই সকল অমঙ্গল উপস্থিত করিলেন। সদাপ্রভুর মন্দির ও আপনার বাটী, এই দুই গৃহ নির্ম্মাণ করিতে শলোমনের বিংশতি বৎসর লাগিল। তৎপরে, হূরম শলোমনকে যে যে নগর দিয়াছিলেন, শলোমন সেগুলি পুনর্নির্ম্মাণ করিয়া সেই স্থানে ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বাস করাইলেন। পরে শলোমন হমাৎ-সোবাতে গিয়া তাহা বশীভূত করিলেন। আর তিনি প্রান্তরে তদ্‌মোর নগর নির্ম্মাণ করিলেন, এবং হমাতে সমস্ত ভাণ্ডার-নগর নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি উপরিস্থ বৈৎ-হোরোণ ও নীচস্থ বৈৎ-হোরোণ এই দুই প্রাচীরবেষ্টিত নগর প্রাচীর, দ্বার ও অর্গল দ্বারা দৃঢ় করিলেন। আর বালৎ এবং শলোমনের সমস্ত ভাণ্ডার-নগর এবং তাঁহার রথসমূহের ও অশ্বারোহীদের নগর সকল, আর যিরূশালেমে, লিবানোনে ও আপন অধিকার দেশের সর্ব্বত্র যাহা যাহা নির্ম্মাণ করিতে শলোমনের বাসনা ছিল, তিনি সে সমস্ত নির্ম্মাণ করিলেন। হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয় যে সকল লোক অবশিষ্ট ছিল, যাহারা ইস্রায়েল নয়, যাহাদিগকে ইস্রায়েল-সন্তানগণ নিঃশেষে বিনষ্ট করে নাই, দেশে অবশিষ্ট সেই লোকদের সন্তানদিগকে শলোমন আপনার কর্ম্মাধীন দাস করিয়া সংগ্রহ করিলেন; তাহারা অদ্য পর্য্যন্ত তাহাই করিতেছে। কিন্তু শলোমন আপন কার্য্যের জন্য ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে কাহাকেও দাস করিলেন না; তাহারা যোদ্ধা, তাঁহার প্রধান সেনানী, এবং তাঁহার রথসমূহের ও অশ্বারোহীদের অধ্যক্ষ হইল। আর তাহাদের মধ্যে শলোমন রাজার নিযুক্ত দুই শত পঞ্চাশ জন প্রধান অধ্যক্ষ প্রজাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিত। পরে শলোমন ফরৌণের কন্যার নিমিত্ত যে বাটী নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, সেই বাটীতে দায়ূদ-নগর হইতে তাঁহাকে আনাইলেন; কারণ তিনি কহিলেন, আমার ভার্য্যা ইস্রায়েল-রাজ দায়ূদের বাটীতে বাস করিবেন না, কেননা যে যে স্থানে সদাপ্রভুর সিন্দুক আসিয়াছে, সে সকল স্থান পবিত্র। আর শলোমন বারাণ্ডার সম্মুখে সদাপ্রভুর যে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহার উপরে সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোম করিতে লাগিলেন। তিনি মোশির আজ্ঞামতে বিশ্রামবারে, অমাবস্যায় ও বৎসরের মধ্যে নিরূপিত তিন উৎসবে, অর্থাৎ তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসবে, সাত সপ্তাহের উৎসবে ও কুটীরের উৎসবে প্রতিদিনের বিধানানুসারে বলি উৎসর্গ করিতেন। আর তিনি আপন পিতা দায়ূদের নিরূপণানুসারে যাজকদের সেবাকর্ম্মার্থে তাহাদের পালা নিরূপণ করিলেন, এবং প্রতিদিনের বিধানানুসারে প্রশংসা ও যাজকদের সম্মুখে পরিচর্য্যা করিতে লেবীয়দিগকে আপন আপন কার্য্যে নিযুক্ত করিলেন। আর তিনি পালানুসারে প্রতিদ্বারে দ্বারপালদিগকেও নিযুক্ত করিলেন; কেননা ঈশ্বরের লোক দায়ূদ সেইরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন। আর রাজা যাজকদিগকে ও লেবীয়দিগকে ভাণ্ডার প্রভৃতি যে কোন বিষয়ে যে আজ্ঞা দিতেন, তাহার অন্যথা তাহারা করিত না। সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপনের দিবসাবধি তাহার সমাপ্তি পর্য্যন্ত শলোমনের সমস্ত কর্ম্ম নিয়মিতরূপে চলিল— সদাপ্রভুর গৃহ সমাপ্ত হইল। তৎকালে শলোমন ইদোম দেশের সমুদ্রতীরস্থ ইৎসিয়োন-গেবরে ও এলতে গেলেন। আর হূরম আপন দাসদের দ্বারা তাঁহার নিকটে কয়েকটী জাহাজ ও সামুদ্রিক কার্য্যে বিজ্ঞ দাসদিগকে প্রেরণ করিলেন; তাহারা শলোমনের দাসদের সহিত ওফীরে গিয়া তথা হইতে চারি শত পঞ্চাশ তালন্ত স্বর্ণ লইয়া শলোমন রাজার নিকটে আনিল। আর শিবার রাণী শলোমনের কীর্ত্তি শুনিয়া গূঢ় বাক্য দ্বারা শলোমনের পরীক্ষা করিবার জন্য অতি বিপুল ঐশ্বর্য্যসহ এবং সুগন্ধি দ্রব্য, প্রচুর স্বর্ণ ও মণিবাহক উষ্ট্রগণ সঙ্গে লইয়া যিরূশালেমে আসিলেন; এবং শলোমনের নিকটে আসিয়া নিজের মনে যাহা ছিল, তাঁহাকে সমস্তই কহিলেন। আর শলোমন তাঁহার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলেন; শলোমনের বোধের অগম্য কিছুই ছিল না, তিনি তাঁহাকে সকলই কহিলেন। এই প্রকারে শিবার রাণী শলোমনের জ্ঞান ও তাঁহার নির্ম্মিত গৃহ, এবং তাঁহার মেজের খাদ্য দ্রব্য ও তাঁহার সেবকদের উপবেশন ও দণ্ডায়মান পরিচারকদের শ্রেণী ও তাহাদের পরিচ্ছদ, এবং তাঁহার পানপাত্র-বাহকগণ ও তাহাদের পরিচ্ছদ, এবং সদাপ্রভুর গৃহে উঠিবার জন্য তাঁহার নির্ম্মিত সোপান, এই সকল দেখিয়া হতজ্ঞান হইলেন। আর তিনি রাজাকে কহিলেন, আমি আপন দেশে থাকিয়া আপনার বাক্য ও জ্ঞানের বিষয় যে কথা শুনিয়াছিলাম, তাহা সত্য। কিন্তু আমি যাবৎ আসিয়া স্বচক্ষে না দেখিলাম, তাবৎ লোকদের সেই কথায় আমার বিশ্বাস হয় নাই; আর দেখুন, আপনার জ্ঞান-মহত্ত্বের অর্দ্ধেকও আমাকে বলা হয় নাই; আমি যে খ্যাতি শুনিয়াছিলাম, তাহা হইতেও আপনার [গুণ] অধিক। ধন্য আপনার লোকেরা এবং ধন্য আপনার এই দাসেরা, যাহারা নিয়ত আপনার সম্মুখে দাঁড়াইয়া আপনার জ্ঞানের উক্তি শুনে। ধন্য আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিমিত্ত রাজা করণার্থে আপন সিংহাসনে আপনাকে বসাইবার জন্য আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছেন। ইস্রায়েল লোকদিগকে চিরস্থায়ী করণার্থে আপনার ঈশ্বর তাহাদিগকে প্রেম করেন, এই জন্য বিচার ও ধর্ম্ম প্রচলিত করিতে আপনাকে তাহাদের উপরে রাজা করিয়াছেন। পরে তিনি রাজাকে এক শত বিশ তালন্ত স্বর্ণ ও অতি প্রচুর সুগন্ধি দ্রব্য ও মণি উপঢৌকন দিলেন। শিয়ার রাণী শলোমন রাজাকে যাদৃশ সুগন্ধি দ্রব্য দিলেন, তাদৃশ সুগন্ধি দ্রব্য আর হয় নাই। আর হূরমের ও শলোমনের যে দাসগণ ওফীর হইতে স্বর্ণ লইয়া আসিত, তাহারা চন্দনকাষ্ঠ ও মণিও আনিত। সেই চন্দনকাষ্ঠ দ্বারা রাজা সদাপ্রভুর গৃহের ও রাজবাটীর নিমিত্ত সোপান, গায়কদের জন্য বীণা এবং নেবল প্রস্তুত করাইলেন। পূর্ব্বে যিহূদা দেশে কেহ কখনও সেইরূপ দেখে নাই। আর শলোমন রাজা শিবার রাণীর বাসনানুসারে তাঁহার যাবতীয় বাঞ্ছিত দ্রব্য দিলেন, তাহা ছাড়া তিনি আপনার কাছে উহাঁর আনীত দ্রব্যের [প্রতিদানও করিলেন]; পরে রাণী ও তাঁহার দাসগণ স্বদেশে ফিরিয়া গেলেন। এক বৎসরের মধ্যে শলোমনের কাছে ছয় শত ছেষট্টি তালন্ত পরিমিত স্বর্ণ আসিত। ইহা ছাড়া বণিক ও ব্যবসায়িগণও স্বর্ণ আনিত; এবং আরবীয় সমস্ত রাজা ও দেশের শাসনকর্ত্তৃগণ শলোমনের নিকটে স্বর্ণ ও রৌপ্য আনিতেন। তাহাতে শলোমন রাজা পিটান স্বর্ণময় দুই শত বৃহৎ ঢাল প্রস্তুত করিলেন; তাহার প্রত্যেক ঢালে ছয় শত শেকল পরিমিত পিটান স্বর্ণ ছিল। আর তিনি পিটান স্বর্ণ দ্বারা তিন শত ঢাল প্রস্তুত করিলেন; তাহার প্রত্যেক ঢালে তিন শত শেকল পরিমিত স্বর্ণ ছিল। পরে রাজা লিবানোন অরণ্যস্থ বাটীতে সেগুলি রাখিলেন। আর রাজা হস্তিদন্তময় এক বৃহৎ সিংহাসন নির্ম্মাণ করিয়া নির্ম্মল স্বর্ণে মুড়াইলেন। ঐ সিংহাসনের ছয়টী সোপান, আর স্বর্ণময় এক পাদপীঠ সিংহাসনে বদ্ধ ছিল, এবং আসনের উভয় পার্শ্বে হাতা ছিল, সেই হাতার নিকটে দুই সিংহমূর্ত্তি দণ্ডায়মান ছিল, আর সেই ছয়টী সোপানের উপরে দুই পার্শ্বে বারোটী সিংহমূর্ত্তি দণ্ডায়মান ছিল; এইরূপ সিংহাসন আর কোন রাজ্যে প্রস্তুত হয় নাই। শলোমন রাজার সমস্ত পানপাত্র স্বর্ণময় ছিল, ও লিবানোন অরণ্যস্থ বাটীর যাবতীয় পাত্র নির্ম্মল স্বর্ণময় ছিল; শলোমনের অধিকারে রৌপ্য কিছুরই মধ্যে গণ্য ছিল না। কেননা হূরমের দাসদের সহিত রাজার কতকগুলি জাহাজ তর্শীশে যাইত; সেই তর্শীশের জাহাজ সকল তিন বৎসরান্তে এক বার স্বর্ণ, রৌপ্য, হস্তিদন্ত, কপি ও শিখী লইয়া আসিত। এইরূপে ঐশ্বর্য্যে ও জ্ঞানে শলোমন রাজা পৃথিবীস্থ সকল রাজার মধ্যে প্রধান হইলেন। আর ঈশ্বর শলোমনের চিত্ত যে জ্ঞান দিয়াছিলেন, তাঁহার সেই জ্ঞানের উক্তি শুনিবার জন্য পৃথিবীর সমস্ত রাজা তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে চেষ্টা করিতেন। আর প্রত্যেক জন আপন আপন উপঢৌকন, রৌপ্যময় পাত্র, স্বর্ণময় পাত্র, বস্ত্র, অস্ত্র ও সুগন্ধি দ্রব্য, অশ্ব ও অশ্বতর আনিতেন; প্রতি বৎসর এইরূপ হইত। আর অশ্ব ও রথসমূহের জন্য শলোমনের চারি সহস্র ঘর ও দ্বাদশ সহস্র অশ্বারোহী ছিল; তিনি তাহাদিগকে রথ-নগর সমূহের এবং যিরূশালেমে রাজার নিকটে রাখিতেন। আর তিনি [ফরাৎ] নদী অবধি পলেষ্টীয়দের দেশ ও মিসরের সীমা পর্য্যন্ত সমস্ত রাজার উপরে রাজত্ব করিতেন। রাজা যিরূশালেমে রৌপ্যকে প্রস্তরের ন্যায় ও এরস কাষ্ঠকে নিম্নভূমিস্থ সুকমোরকাষ্ঠের ন্যায় প্রচুর করিলেন। আর লোকেরা মিসর হইতে ও সকল দেশ হইতে শলোমনের জন্য অশ্ব আনিত। শলোমনের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত নাথন ভাববাদীর পুস্তকে ও শীলোনীয় অহীয়ের ভাববাণীতে এবং নবাটের পুত্র যারবিয়ামের বিষয়ে ইদ্দো দর্শকের যে দর্শন, তাহার মধ্যে কি লিখিত নাই? শলোমন যিরূশালেমে চল্লিশ বৎসর যাবৎ সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিলেন। পরে শলোমন আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন ও আপন পিতা দায়ূদের নগরে করবপ্রাপ্ত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র রহবিয়াম তাঁহার পদে রাজা হইলেন। রহবিয়াম শিখিমে গেলেন, কেননা তাঁহাকে রাজা করণার্থে সমস্ত ইস্রায়েল শিখিমে উপস্থিত হইয়াছিল। আর যখন নবাটের পুত্র যারবিয়াম এই বিষয় শুনিলেন, (কারণ তিনি মিসরে ছিলেন, শলোমন রাজার সম্মুখ হইতে তথায় পলাইয়া গিয়াছিলেন), তখন যারবিয়াম মিসর হইতে ফিরিয়া আসিলেন। লোকেরা দূত পাঠাইয়া তাঁহাকে ডাকিয়া আনিল; আর যারবিয়াম ও সমস্ত ইস্রায়েল-রহবিয়ামের কাছে আসিয়া এই কথা কহিলেন, আপনার পিতা আমাদের উপর দুঃসহ যোঁয়ালি দিয়াছেন; অতএব আপনার পিতা আমাদের উপরে যে কঠিন দাস্যকর্ম্ম ও ভারী যোঁয়ালি চাপাইয়াছেন, আপনি তাহা লঘু করুন, করিলে আমরা আপনার দাসত্ব করিব। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তিন দিনের পর আবার আমার নিকটে আসিও; তাহাতে লোকেরা চলিয়া গেল। পরে রহবিয়াম রাজা, তাঁহার পিতা শলোমনের জীবনকালে যে বৃদ্ধগণ তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইতেন, তাঁহাদের সহিত মন্ত্রণা করিলেন, কহিলেন, আমি ঐ লোকদিগকে কি উত্তর দিব? তোমরা কি মন্ত্রণা দেও? তাঁহারা তাঁহাকে কহিলেন, যদি আপনি ঐ লোকদের উপরে সদয় হইয়া উহাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন, এবং উহাদিগকে প্রিয় বাক্য বলেন, তবে উহারা সর্ব্বদা আপনার সেবক থাকিবে। কিন্তু তিনি ঐ বৃদ্ধগণের দত্ত মন্ত্রণা ত্যাগ করিয়া, তাঁহার বয়স্য যে যুবকেরা তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইত, তাহাদের সহিত মন্ত্রণা করিলেন। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, ঐ লোকেরা বলিতেছে, আপনার পিতা আমাদের উপরে যে যোঁয়ালি চাপাইয়াছেন, তাহা লঘু করুন; এখন আমরা উহাদিগকে কি উত্তর দিব? তোমরা কি মন্ত্রণা দেও? তাঁহার বয়স্য যুবকগণ উত্তর করিল, যে লোকেরা আপনাকে বলিতেছে, আপনার পিতা আমাদের উপরে ভারী যোঁয়ালি চাপাইয়াছেন, আপনি আমাদের পক্ষে তাহা লঘু করুন, তাহাদিগকে এই কথা বলুন, আমার কনিষ্ঠ অঙ্গুলি আমার পিতার কটিদেশ হইতেও স্থূল; এখন, আমার পিতা তোমাদের উপরে ভারী যোঁয়ালি চাপাইয়া দিয়াছিলেন, কিন্তু আমি তোমাদের যোঁয়ালি আরও ভারী করিব; আমার পিতা তোমাদিগকে কশা দ্বারা শাস্তি দিতেন, কিন্তু আমি বৃশ্চিক দ্বারা দিব। পরে ‘তৃতীয় দিনে আমার নিকটে ফিরিয়া আসিও,’ রাজার উক্ত এই কথানুসারে যারবিয়াম এবং সমস্ত লোক তৃতীয় দিনে রহবিয়ামের নিকটে উপস্থিত হইলেন। আর রাজা তাহাদিগকে কঠিন উত্তর দিলেন; ফলে রহবিয়াম রাজা বৃদ্ধগণের মন্ত্রণা ত্যাগ করিলেন, এবং সেই যুবকদের মন্ত্রণানুযায়ী কথা তাহাদিগকে বলিলেন; তিনি কহিলেন, আমার পিতা তোমাদের যোঁয়ালি ভারী করিয়াছিলেন, কিন্তু আমি তাহা আরও ভারী করিব; আমার পিতা তোমাদিগকে কশা দ্বারা শাস্তি দিতেন, কিন্তু আমি বৃশ্চিক দ্বারা দিব। এইরূপে রাজা লোকদের কথায় কর্ণপাত করিলেন না, কেননা শীলোনীয় অহিয়ের দ্বারা সদাপ্রভু নবাটের পুত্র যারবিয়ামকে যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহা অটল রাখিবার জন্য ঈশ্বর হইতে এই ঘটনা হইল। যখন সমস্ত ইস্রায়েল দেখিল, রাজা তাহাদের কথায় কর্ণপাত করিলেন না, তখন লোকেরা রাজাকে এই উত্তর দিল, দায়ূদে আমাদের কি অংশ? যিশয়ের পুত্রে আমাদের কোন অধিকার নাই; হে ইস্রায়েল প্রত্যেকে আপন আপন তাম্বুতে যাও; দায়ূদ! এখন তুমি আপনার কুল দেখ। পরে সমস্ত ইস্রায়েল আপন আপন তাম্বুতে চলিয়া গেল। তথাপি যে ইস্রায়েলসন্তানগণ যিহূদার নগর সকলে বাস করিত, রহবিয়াম তাহাদের উপরে রাজত্ব করিলেন। পরে রহবিয়াম রাজা [আপনার] কর্ম্মাধীন দাসদের অধ্যক্ষ হদোরামকে পাঠাইলেন, কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানগণ তাহাকে পাথর মারিল, তাহাতে সে মরিয়া গেল। আর রহবিয়াম রাজা যিরূশালেমে পলাইবার জন্য তাড়াতাড়ি গিয়া রথে উঠিলেন। এইরূপে ইস্রায়েল দায়ূদকুলের বিদ্রোহী হইল; অদ্য পর্য্যন্ত সেই ভাবেই রহিয়াছে। যিরূশালেমে উপস্থিত হইলে পর রহবিয়াম যিহূদার ও বিন্যামীনের কুল অর্থাৎ এক লক্ষ আশী সহস্র মনোনীত যোদ্ধৃপুরুষকে ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করণার্থে, রহবিয়ামের বশে রাজ্য ফিরাইয়া আনিবার জন্য, একত্র করিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের লোক শময়িয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি শলোমনের পুত্র যিহূদা-রাজ রহবিয়ামকে এবং যিহূদা ও বিন্যামীন-নিবাসী সমস্ত ইস্রায়েলকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা যাত্রা করিও না, তোমাদের ভ্রাতৃগণের সহিত যুদ্ধ করিও না; প্রত্যেক জন আপন আপন গৃহে ফিরিয়া যাও, কেননা এই ঘটনা আমা হইতে হইল। অতএব তাহারা সদাপ্রভুর বাক্য মানিয়া যারবিয়ামের বিরুদ্ধে যাত্রা হইতে ফিরিয়া গেল। পরে রহবিয়াম যিরূশালেমে বাস করিয়া দেশ রক্ষার জন্য যিহূদা দেশস্থ নগর সকল গাঁথিলেন। কারণ বৈৎলেহম, ঐটম, তকোয়, বৈৎ-সুর, সেখো, অদুল্লম, গাৎ, মারেশা, সীফ, অদোরয়িম, লাখীশ, অসেকা, সরা, অয়ালোন ও হিব্রোণ, এই যে সকল প্রাচীরবেষ্টিত নগর যিহূদা ও বিন্যামীন দেশে আছে, তিনি এই সকল গাঁথিলেন। আর তিনি দুর্গ সকল দৃঢ় করিয়া তাহার মধ্যে সেনাপতিগণকে রাখিলেন, এবং খাদ্য দ্রব্য, তৈল ও দ্রাক্ষারসের ভাণ্ডার করিলেন। আর প্রত্যেক নগরে ঢাল ও বড়শা রাখিলেন, ও নগর সকল অতিশয় দৃঢ় করিলেন। আর যিহূদা ও বিন্যামীন তাঁহার অধীনে ছিল। আর সমস্ত ইস্রায়েলের মধ্যে যে যাজক ও লেবীয়গণ ছিল, তাহারা আপন আপন সমস্ত অঞ্চল হইতে তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইল। অর্থাৎ লেবীয়েরা আপন আপন পরিসরভূমি ও আপন আপন অধিকার ত্যাগ করিয়া যিহূদায় ও যিরূশালেমে আসিল, কেননা যারবিয়াম ও তাঁহার পুত্রগণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে যাজনকর্ম্ম করিতে না দিয়া তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিয়াছিলেন। আর তিনি উচ্চস্থলী সকলের, ছাগদের ও আপনার নির্ম্মিত গোবৎসদ্বয়ের জন্য আপনি যাজকগণ নিযুক্ত করিয়াছিলেন। ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্যে যে সকল লোক ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণে নিবিষ্টমনা ছিল, তাহারা লেবীয়দের পশ্চাদগামী হইয়া আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিতে যিরূশালেমে আসিল। তাহারা তিন বৎসর পর্য্যন্ত যিহূদার রাজ্য দৃঢ় ও শলোমনের পুত্র রহবিয়ামকে বলবান করিল; কেননা তিন বৎসর পর্য্যন্ত তাহারা দায়ূদের ও শলোমনের পথে চলিল। আর রহবিয়াম দায়ূদের পুত্র যিরীমোতের কন্যা মহলৎকে বিবাহ করিলেন; [ইহাঁর মাতা] অবীহয়িল যিশয়ের পৌত্রী ইলীয়াবের কন্যা। সেই স্ত্রী তাঁহার জন্য কয়েকটী পুত্র অর্থাৎ যিয়ূশ, শমরিয় ও সহমকে প্রসব করিলেন। তাহার পরে তিনি অবশালোমের কন্যা মাখাকে বিবাহ করিলেন; এই স্ত্রী তাঁহার জন্য অবিয়, অত্তয়, সীষ ও শলোমীৎকে প্রসব করিলেন। রহবিয়াম আপনার সকল পত্নী ও উপপত্নীর মধ্যে অবশালোমের কন্যা মাখাকে সর্ব্বাপেক্ষা ভালবাসিতেন; তিনি আঠার পত্নী ও ষাট উপপত্নী গ্রহণ করিলেন, এবং আটাশ পুত্রের ও ষাট কন্যার জন্ম দিলেন। পরে রহবিয়াম মাখার গর্ভজাত অবিয়কে প্রধান, ভ্রাতৃগণের মধ্যে নায়ক করিলেন, কারণ তাঁহাকেই রাজা করিতে [তাঁহার মনোরথ ছিল]। আর তিনি সতর্কতা করিয়া চলিলেন, সমুদয় যিহূদা ও বিন্যামীন দেশের প্রাচীরবেষ্টিত প্রতি নগরে আপন পুত্রগণকে নিযুক্ত করিলেন ও তাহাদিগকে প্রচুর খাদ্য সামগ্রী দিলেন, এবং [তাহাদের জন্য] অনেক কন্যার চেষ্টা করিলেন। পরে যখন রহবিয়ামের রাজ্য দৃঢ় হইল, এবং তিনি শক্তিমান্‌ হইয়া উঠিলেন, তখন তিনি ও তাঁহার সহিত সমস্ত ইস্রায়েল সদাপ্রভুর ব্যবস্থা পরিত্যাগ করিলেন। আর রহবিয়াম রাজার পঞ্চম বৎসরে মিসর-রাজ শীশক যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আসিলেন, কারণ লোকেরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে সত্য লঙ্ঘন করিয়াছিল। সেই রাজার সঙ্গে বারো শত রথ ও ছয় সহস্র অশ্বারোহী ছিল; এবং মিসর হইতে তাঁহার সঙ্গে আগত লূবীয়, সুক্কীয় ও কূশীয় লোকেরা অসংখ্য ছিল। আর তিনি যিহূদার প্রাচীরবেষ্টিত নগর সকল হস্তগত করিয়া যিরূশালেম পর্য্যন্ত আসিলেন। তখন শময়িয় ভাববাদী রহবিয়ামের নিকটে এবং যিহূদার যে অধ্যক্ষগণ শীশকের ভয়ে যিরূশালেমে একত্রীভূত হইয়াছিলেন, তাঁহাদের নিকটে আসিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আমাকে ছাড়িয়াছ, এই জন্য আমিও তোমাদিগকে শীশকের হস্তে ছাড়িয়া দিলাম। তাহাতে ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণ ও রাজা আপনাদিগকে অবনত করিলেন, কহিলেন, সদাপ্রভু ধর্ম্মময়। যখন সদাপ্রভু দেখিলেন যে, তাহারা আপনাদিগকে অবনত করিয়াছে, তখন শময়িয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তাহারা আপনাদিগকে অবনত করিয়াছে, আমি তাহাদিগকে বিনষ্ট করিব না; অল্পকালের মধ্যে তাহাদিগকে উদ্ধার পাইতে দিব; শীশকের হস্ত দ্বারা যিরূশালেমের উপরে আমার ক্রোধ ঢালা হইবে না। কিন্তু তাহারা উহার দাস হইবে, তাহাতে আমার দাস হওয়া কি, এবং অন্যদেশীয় রাজ্যের দাস হওয়া কি, ইহা তাহারা বুঝিতে পারিবে। মিসর-রাজ শীশক যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আসিয়া সদাপ্রভুর গৃহের ধন ও রাজবাটীর ধন লইয়া গেলেন; তিনি সমস্তই লইয়া গেলেন; শলোমনের নির্ম্মিত স্বর্ণময় ঢাল সকলও লইয়া গেলেন। পরে রহবিয়াম রাজা তৎপরিবর্ত্তে পিত্তলময় ঢাল নির্ম্মাণ করাইয়া রাজবাটীর দ্বারপাল পদাতিকদিগের অধ্যক্ষগণের হস্তে সমর্পণ করিলেন। রাজা যখন সদাপ্রভুর গৃহে প্রবেশ করিতেন, তখন ঐ পদাতিকগণ আসিয়া সেই সকল ঢাল ধরিত, পরে পদাতিকদিগের ঘরে ফিরিয়া লইয়া যাইত। রহবিয়াম আপনাকে অবনত করাতে সদাপ্রভুর ক্রোধ তাঁহা হইতে নিবৃত্ত হইল, সর্ব্বনাশ হইল না। আর যিহূদার মধ্যেও কাহারও কাহারও সাধুভাব ছিল। রহবিয়াম রাজা যিরূশালেমে আপনাকে বলবান করিয়া রাজত্ব করিলেন; ফলতঃ রহবিয়াম একচল্লিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিলেন, এবং সদাপ্রভু আপন নাম স্থাপনার্থে ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্য হইতে যে নগর মনোনীত করিয়াছিলেন, সেই যিরূশালেমে তিনি সতের বৎসর রাজত্ব করেন। তাঁহার মাতার নাম নয়মা, তিনি অম্মোনীয়া। রহবিয়াম সদাপ্রভুর অন্বেষণ করণার্থে আপন অন্তঃকরণ সুস্থির করেন নাই বলিয়া যাহা মন্দ তাহাই করিতেন। রহবিয়ামের আদ্যোপান্ত কর্ম্মের বৃত্তান্ত শময়িয় ভাববাদীর ও ইদ্দো দর্শকের বংশাবলি-পুস্তকে কি লিখিত নাই? রহবিয়ামের ও যারবিয়ামের মধ্যে নিয়ত যুদ্ধ হইত। পরে রহবিয়াম আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং দায়ূদ-নগরে কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর তাঁহার পুত্র অবিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যারবিয়াম রাজার অষ্টাদশ বৎসরে অবিয় যিহূদার উপরে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি তিন বৎসর যিরূশালেমে রাজত্ব করিলেন; তাঁহার মাতার নাম মীখায়া, তিনি গিবিয়া নিবাসী ঊরীয়েলের কন্যা। অবিয়ের ও যারবিয়ামের মধ্যে যুদ্ধ হইত। অবিয় চারি লক্ষ মনোনীত যুদ্ধবীরের সহিত যুদ্ধে গমন করিলেন, এবং যারবিয়াম আট লক্ষ মনোনীত বলবান বীরের সহিত তাঁহার বিরুদ্ধে সৈন্য রচনা করিলেন। আর অবিয় পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশের সমারয়িম গিরির উপরে দাঁড়াইয়া কহিলেন, হে যারবিয়াম, তুমি ও সমস্ত ইস্রায়েল আমার কথা শুন। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের রাজ্যপদ চিরকালের জন্য দায়ূদকে দিয়াছেন; তাঁহাকে ও তাঁহার সন্তানদিগকে লবণ-নিয়ম দ্বারা দিয়াছেন, ইহা জ্ঞাত হওয়া কি তোমাদের উচিত নয়? তথাপি দায়ূদের পুত্র শলোমনের দাস যে নবাটের পুত্র যারবিয়াম, সে ব্যক্তি উঠিয়া আপন প্রভুর বিদ্রোহী হইল। আর পাষণ্ড অসারচিত্ত লোকেরা তাহার পক্ষে একত্র হইয়া শলোমনের পুত্র রহবিয়ামের বিরুদ্ধে আপনাদিগকে বীর্য্যবান করিল। তৎকালে রহবিয়াম যুবা ও কোমলান্তঃকরণ ছিলেন, তাহাদের সম্মুখে আপনাকে বলবান করিতে পারিলেন না। আর এখন তোমরাও দায়ূদের সন্তানগণের হস্তগত যে সদাপ্রভুর রাজ্য, তাহার প্রতিকূলে আপনাদিগকে বলবান করিবার মানস করিতেছ; তোমরা বৃহৎ লোকারণ্য, এবং সেই দুই স্বর্ণময় গোবৎস তোমাদের সহবর্ত্তী, যাহা যারবিয়াম তোমাদের জন্য দেবতারূপে নির্ম্মাণ করিয়াছে। তোমরা কি সদাপ্রভুর যাজকগণকে,—হারোণের সন্তানগণকে —ও লেবীয়দিগকে দূর কর নাই? আর অন্যদেশীয় জাতিদের ন্যায় আপনাদের জন্য কি যাজকগণ নিযুক্ত কর নাই? একটী গোবৎস ও সাতটী মেষ সঙ্গে লইয়া যে কেহ হস্ত পূরণার্থে উপস্থিত হয়, সে উহাদের যাজক হইতে পারে, যাহারা ঈশ্বর নয়। কিন্তু আমরা [তদ্রূপ নহি]; সদাপ্রভুই আমাদের ঈশ্বর; আমরা তাঁহাকে ত্যাগ করি নাই; এবং যাজকগণ —হারোণ-সন্তানগণ- সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা করিতেছে, এবং লেবীয়েরা আপন আপন কার্য্যে নিযুক্ত রহিয়াছে। আর তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রতিদিন প্রাতে ও সন্ধ্যাকালে হোম-বলি দগ্ধ করে ও সুগন্ধি ধূপ জ্বালায়, আর শুচি মেজের উপরে দর্শন-রুটী সাজাইয়া রাখে, এবং প্রতি সন্ধ্যাকালে জ্বালিবার জন্য দীপসমূহের সহিত স্বর্ণময় দীপ-বৃক্ষ প্রস্তুত করে; বস্তুতঃ আমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রক্ষণীয় বস্তু রক্ষা করি; কিন্তু তোমরা তাঁহাকে ত্যাগ করিয়াছ। আর দেখ, ঈশ্বর আমাদের সহবর্ত্তী, তিনি আমাদের অগ্রগামী; এবং তাঁহার যাজকগণ তোমাদের বিরুদ্ধে রণবাদ্য বাজাইবার জন্য রণবাদ্যের তূরীসহ আমাদের সঙ্গী। হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিও না, করিলে কৃতকার্য্য হইবে না। পরে যারবিয়াম পশ্চাদ্দিকে তাহাদের আক্রমণার্থে গোপনে এক দল সৈন্য প্রেরণ করিলেন; তাহাতে তাঁহার লোকেরা যিহূদার সম্মুখে ও সেই গুপ্ত দল পশ্চাতে ছিল। পরে যিহূদার লোকেরা মুখ ফিরাইল, আর দেখ, তাহাদের অগ্রে ও পশ্চাতে যুদ্ধ; তখন তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিল, এবং যাজকেরা তূরী বাজাইল। পরে যিহূদার লোকেরা রণনাদ করিয়া উঠিল; তাহাতে যিহূদার লোকদের রণনাদকালে ঈশ্বর অবিয়ের ও যিহূদার সম্মুখে যারবিয়ামকে ও সমস্ত ইস্রায়েলকে আঘাত করিলেন। তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ যিহূদার সাক্ষাতে পলায়ন করিল, এবং ঈশ্বর উহাদিগকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন। আর অবিয় ও তাঁহার লোকেরা মহাসংহারে উহাদিগকে সংহার করিলেন; বস্তুতঃ ইস্রায়েলের পাঁচ লক্ষ মনোনীত লোক মারা পড়িল। এইরূপে সেই সময়ে ইস্রায়েল-সন্তানগণ নত হইল ও যিহূদা-সন্তানগণ বলবান হইল, কেননা তাহারা আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর করিল। পরে অবিয় যারবিয়ামের পশ্চাতে পশ্চাতে ধাবমান হইয়া তাঁহার কতিপয় নগর, অর্থাৎ বৈথেল ও তাহার উপনগর সকল, যিশানা ও তাহার উপনগর সকল, এবং ইফ্রোণ ও তাহার উপনগর সকল হস্তগত করিলেন। অবিয়ের সময়ে যারবিয়াম আর বলবান হন নাই; পরে সদাপ্রভু তাঁহাকে আঘাত করিলে তিনি মরিলেন। কিন্তু অবিয় বলবান হইয়া উঠিলেন, আর তিনি চৌদ্দটী স্ত্রী গ্রহণ করিলেন, এবং বাইশ পুত্র ও ষোল কন্যার জন্ম দিলেন। অবিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, সমস্ত ক্রিয়া ও কথা ইদ্দো ভাববাদীর ব্যাখ্যান-গ্রন্থে লিখিত আছে। পরে অবিয় আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; এবং দায়ূদ-নগরে তাঁহার কবর হইল। আর তাঁহার পুত্র আসা তাঁহার পদে রাজা হইলেন; তাঁহার সময়ে দেশ দশ বৎসর সুস্থির থাকিল। আসা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ভাল ও ন্যায্য, তাহাই করিতেন; তিনি বিজাতীয় যজ্ঞবেদি ও উচ্চস্থলী সকল উঠাইয়া ফেলিলেন, স্তম্ভ সকল খণ্ড খণ্ড করিলেন ও আশেরা-মূর্ত্তি সকল ছেদন করিলেন; আর তিনি যিহূদার লোকদিগকে তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণ এবং [তাঁহার] ব্যবস্থা ও আজ্ঞা পালন করিতে আদেশ করিলেন। আর তিনি যিহূদার সমস্ত নগরের মধ্য হইতে উচ্চস্থলী ও সূর্য্য-প্রতিমা সকল উঠাইয়া ফেলিলেন; আর তাঁহার সম্মুখে রাজ্য সুস্থির হইল। আর তিনি যিহূদা দেশে প্রাচীরবেষ্টিত কতকগুলি নগর গাঁথিলেন, কেননা দেশ সুস্থির ছিল, এবং কয়েক বৎসর পর্য্যন্ত কেহ তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিল না, কারণ সদাপ্রভু তাঁহাকে বিশ্রাম দিয়াছিলেন। অতএব তিনি যিহূদাকে কহিলেন, আইস, আমরা এই সকল নগর গাঁথি এবং এই সকলের চারিদিকে প্রাচীর, দুর্গ, দ্বার ও অর্গল নির্ম্মাণ করি; দেশ ত অদ্যাপি আমাদের সম্মুখে আছে; কেননা আমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিয়াছি, আমরা তাঁহার অন্বেষণ করিয়াছি, আর তিনি সকল দিকে আমাদিগকে বিশ্রাম দিয়াছেন। এইরূপে তাহারা নগরগুলি গাঁথিয়া কুশলে সমাপ্ত করিল। আসার ঢাল ও বড়শাধারী অনেক সৈন্য ছিল, যিহূদার তিন লক্ষ ও বিন্যামীনের ঢাল ও ধনুর্ধারী দুই লক্ষ আশী সহস্র; তাহারা সকলে বলবান বীর ছিল। পরে কূশদেশীয় সেরহ দশ লক্ষ সৈন্য ও তিন শত রথ সঙ্গে লইয়া তাহাদের বিরুদ্ধে বাহির হইলেন ও মারেশা পর্য্যন্ত আসিলেন। তাহাতে আসা তাঁহার বিরুদ্ধে বাহির হইয়া আসিলেন। উহারা মারেশার নিকটস্থ সফাথা উপত্যকায় সৈন্য রচনা করিল। তখন আসা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডাকিলেন, কহিলেন, হে সদাপ্রভু, তুমি ছাড়া এমন আর কেহ নাই, যে বলবানের ও বলহীনের মধ্যে সাহায্য করে; হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমাদের সাহায্য কর; কেননা আমরা তোমার উপরে নির্ভর করি, এবং তোমারই নামে এই জন-সমারোহের বিরুদ্ধে আসিয়াছি। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের ঈশ্বর, তোমার বিরুদ্ধে মর্ত্ত্য প্রবল না হউক। তখন সদাপ্রভু আসার ও যিহূদার সম্মুখে কূশীয়দিগকে আঘাত করিলেন, আর কূশীয়েরা পলায়ন করিল। আর আসা ও তাঁহার সঙ্গী লোকেরা গরার পর্য্যন্ত তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া চলিলেন, তাহাতে এক কূশীয় পতিত হইল যে, আর তাহারা সবল হইয়া উঠিতে পারিল না; কারণ সদাপ্রভুর ও তাঁহার সৈন্যের সম্মুখে আহারা ভগ্ন হইয়া পড়িল; এবং লোকেরা অতি প্রচুর লুট দ্রব্য লইয়া আসিল। আর তাহারা গরারের চারিদিকে সমস্ত নগরকে আঘাত করিল, কেননা সদাপ্রভুর ভয় উহাদের উপরে পড়িয়াছিল; আরও তাহারা সেই সমস্ত নগর লুট করিল, কেননা সেই সকল নগরে প্রচুর লুট দ্রব্য ছিল। আর তাহারা পশুচারকদের তাম্বু সকলেও আঘাত করিল, এবং বিস্তর মেঘ ও উষ্ট্র লইয়া যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিল। পরে ঈশ্বরের আত্মা ওদেদের পুত্র অসরিয়ের উপরে আসিলেন, তাহাতে তিনি আসার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন, গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, হে আসা, এবং হে যিহূদার ও বিন্যামীনের সমস্ত লোক, তোমরা আমার বাক্য শুন; তোমরা যতদিন সদাপ্রভুর সঙ্গে থাক, ততদিন তিনিও তোমাদের সঙ্গে আছেন; আর যদি তোমরা তাঁহার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে তাঁহার উদ্দেশ পাইতে দিবেন; কিন্তু যদি তাঁহাকে ত্যাগ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে ত্যাগ করিবেন। ইস্রায়েল বহুকাল সত্যময় ঈশ্বর-বিহীন, শিক্ষাদায়ক যাজক-বিহীন ও ব্যবস্থাবিহীন ছিল; কিন্তু সঙ্কটে যখন তাহারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিয়া তাঁহার অন্বেষণ করিল, তখন তিনি তাহাদিগকে তাঁহার উদ্দেশ পাইতে দিলেন। সেই সময়ে যে বাহিরে যাইত ও যে ভিতরে আসিত, উভয়ের কিছুই শান্তি হইত না; দেশ-নিবাসী সকলে অতিশয় ত্রাসযুক্ত হইয়াছিল। তাহারা চূর্ণ হইত, এক জাতি অন্য জাতিকে ও এক নগর অন্য নগরকে আঘাত করিত; কেননা ঈশ্বর সর্ব্বপ্রকার সঙ্কট দ্বারা তাহাদিগকে ত্রাসযুক্ত করিতেন। কিন্তু তোমরা বলবান হও, তোমাদের হস্ত শিথিল না হউক, কেননা তোমাদের কার্য্য পুরস্কৃত হইবে। যখন আসা এই সকল বাক্য, অর্থাৎ ওদেদ ভাববাদীর ভাববাণী শুনিলেন, তখন তিনি সাহস পাইয়া যিহূদার ও বিন্যামীনের সমস্ত দেশ হইতে এবং তিনি পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে যে সকল নগর হস্তগত করিয়াছিলেন, সেই সকল নগর হইতে ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর করিলেন, এবং সদাপ্রভুর বারাণ্ডার সম্মুখস্থ সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদি সারাইলেন। পরে তিনি সমস্ত যিহূদা ও বিন্যামীনকে এবং তাহাদের মধ্যে প্রবাসী ইফ্রয়িম, মনঃশি ও শিমিয়োন হইতে [আগত] লোকদিগকে একত্র করিলেন; কেননা তাঁহার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্ত্তী আছেন দেখিয়া, ইস্রায়েল হইতে অনেক লোক আসিয়া তাঁহার পক্ষে হইয়াছিল। আসার রাজত্বের পঞ্চদশ বৎসরের তৃতীয় মাসে লোকেরা যিরূশালেমে একত্র হইল। আর সেই দিনে তাহারা আনীত লুট দ্রব্য হইতে সাত শত গোরু ও সাত সহস্র মেষ সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিল। আর তাহারা এই নিয়মে আবদ্ধ হইল যে, আপন আপন সমস্ত অন্তঃকরণ ও সমস্ত প্রাণের সহিত আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিবে; ছোট কি বড়, পুরুষ কি স্ত্রী, যে কেহ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণ না করিবে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে। তাহারা উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনিপূর্ব্বক তূরী ও শৃঙ্গ বাজাইয়া সদাপ্রভুর সাক্ষাতে শপথ করিল। এই শপথে সমস্ত যিহূদা আনন্দ করিল, কেননা তাহারা আপনাদের সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত শপথ করিয়াছিল; এবং সম্পূর্ণ বাসনার সহিত সদাপ্রভুর অন্বেষণ করাতে তিনি তাহাদিগকে তাঁহার উদ্দেশ পাইতে দিলেন; আর তিনি চারিদিকে তাহাদিগকে বিশ্রাম দিলেন। আর আসা রাজার মাতা মাখা আশেরার এক ভীষণ প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন বলিয়া আসা তাঁহাকে মাতারাণীর পদ হইতে চ্যুত করিলেন, এবং আসা তাঁহার সেই ভীষণ প্রতিমা ছেদন করিয়া চূর্ণ করিলেন ও কিদ্রোণ স্রোতের ধারে তাহা পোড়াইয়া দিলেন। কিন্তু ইস্রায়েলের মধ্য হইতে উচ্চস্থলী সকল দূরীকৃত হইল না; তথাপি আসার অন্তঃকরণ যাবজ্জীবন একাগ্র ছিল। আর তিনি আপন পিতার পবিত্রীকৃত ও আপনার পবিত্রীকৃত রৌপ্য, স্বর্ণ ও পাত্র সকল ঈশ্বরের গৃহে আনিলেন। আসার রাজত্বের পঁয়ত্রিশ বৎসর পর্য্যন্ত আর যুদ্ধ হইল না। আসার রাজত্বের ছত্রিশ বৎসরে ইস্রায়েল-রাজ বাশা যিহূদার বিরুদ্ধে যাত্রা করিলেন, এবং তিনি যিহূদা-রাজ আসার কাছে কোন কাহাকে যাতায়াত করিতে না দিবার আশয়ে রামা গাঁথিলেন। তখন আসা সদাপ্রভুর গৃহের ও রাজবাটীর ভাণ্ডার হইতে রৌপ্য ও স্বর্ণ বাহির করিয়া দম্মেশক-নিবাসী অরামরাজ বিন্‌হদদের নিকটে এই বলিয়া পাঠাইয়া দিলেন, আমাতে ও আপনাতে নিয়ম আছে, যেমন আমার পিতাতে ও আপনার পিতাতে ছিল; দেখুন, আমি আপনার নিকটে রৌপ্য ও স্বর্ণ পাঠাইলাম। আপনি গিয়া, ইস্রায়েল-রাজ বাশার সহিত আপনার যে নিয়ম আছে, তাহা ভঙ্গ করুন; তাহা হইলে সে আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিবে। তখন বিন্‌হদদ আসা রাজার কথায় কর্ণপাত করিলেন; তিনি ইস্রায়েলের নগর সমূহের বিরুদ্ধে আপন সেনাপতিগণকে প্রেরণ করিলেন, এবং তাহারা ইয়োন, দান, আবেল-ময়িম ও নপ্তালির সমস্ত ভাণ্ডার-নগরকে আঘাত করিল। তখন বাশা এই সংবাদ পাইয়া রামা নির্ম্মাণ হইতে নিবৃত্ত হইলেন, আপন কার্য্য হইতে ক্ষান্ত হইলেন। পরে আসা রাজা সমস্ত যিহূদাকে সঙ্গে লইলেন, রামায় বাশা যে প্রস্তর ও কাষ্ঠ দ্বারা গাঁথিয়াছিলেন, তাহারা সে সকল লইয়া গেল। পরে আসা তদ্দ্বারা গেবা ও মিস্পা নগর গাঁথিলেন। সেই সময়ে হনানি দর্শক যিহূদা-রাজ আসার নিকটে আসিয়া কহিলেন, আপনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর না করিয়া অরাম-রাজের উপরে নির্ভর করিলেন, এই জন্য অরাম-রাজের সৈন্য আপনার হস্ত এড়াইল। কূশীয় ও লূবীয়দের কি মহাসৈন্য এবং রথ ও অশ্বারোহীর বাহুল্য ছিল না? তথাপি আপনি সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর করাতে তিনি তাহাদিগকে আপনার হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলেন। কেননা সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে। এ বিষয়ে আপনি অজ্ঞানের কার্য্য করিয়াছেন, কেননা ইহার পরে পুনঃপুনঃ আপনার বিপক্ষে যুদ্ধ উপস্থিত হইবে। তখন আসা ঐ দর্শকের প্রতি অসন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে কারাগৃহে রাখিলেন; কেননা ঐ কথা প্রযুক্ত তিনি তাঁহার উপরে কোপান্বিত হইয়াছিলেন। আর ঐ সময়ে আসা প্রজাদের মধ্যেও কতকগুলি লোকের প্রতি দৌরাত্ম্য করিলেন। আর দেখ, আসার আদ্যোপান্ত কর্ম্মের বৃত্তান্ত যিহূদার ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। আসার রাজত্বের ঊনচল্লিশ বৎসরে তাঁহার পায়ে রোগ হইল; তাঁহার রোগ অতি বিষম হইল; তথাপি রোগের সময়েও তিনি সদাপ্রভুর অন্বেষণ না করিয়া বৈদ্যগণেরই অন্বেষণ করিলেন। পরে আসা আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, আপন রাজত্বের একচল্লিশ বৎসরে প্রাণত্যাগ করিলেন। আর তিনি দায়ূদ-নগরে আপনার জন্য যে কবর খনন করিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে লোকেরা তাঁহাকে কবর দিল, এবং গন্ধবণিকের প্রক্রিয়াতে প্রস্তুত নানা প্রকার সুগন্ধি দ্রব্যে পরিপূর্ণ শয্যায় তাঁহাকে শয়ন করাইল, আর তাঁহার জন্য অতি বড় দাহ করিল। পরে তাঁহার পুত্র যিহোশাফট তাঁহার পদে রাজা হইলেন, এবং ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে আপনাকে বলবান করিলেন। তিনি যিহূদার সকল প্রাচীরবেষ্টিত নগরে সৈন্য রাখিলেন, এবং যিহূদা দেশে ও তাঁহার পিতা আসা ইফ্রয়িমের যে সকল নগর হস্তগত করিয়াছিলেন, সেই সকল নগরেও সৈন্যদল স্থাপন করিলেন। আর সদাপ্রভু যিহোশাফটের সহবর্ত্তী ছিলেন, কারণ তিনি আপন পূর্ব্বপুরুষ দায়ূদের প্রথম আচরণ-পথে চলিতেন, বাল দেবগণের অন্বেষণ করিতেন না; কিন্তু আপন পৈতৃক ঈশ্বরের অন্বেষণ করিতেন ও তাঁহার সকল আজ্ঞা-পথে চলিতেন, ইস্রায়েলের কর্ম্মানুযায়ী কর্ম্ম করিতেন না। অতএব সদাপ্রভু তাঁহার হস্তে রাজ্য দৃঢ় করিলেন; আর সমস্ত যিহূদা যিহোশাফটের কাছে উপঢৌকন আনিল, এবং তাঁহার ধন ও প্রতাপ অতিশয় বৃদ্ধি পাইল। আর সদাপ্রভুর পথে তাঁহার অন্তঃকরণ উন্নত হইল; আবার তিনি যিহূদার মধ্য হইতে উচ্চস্থলী ও আশেরা-মূর্ত্তি সকল দূর করিলেন। পরে তিনি আপন রাজত্বের তৃতীয় বৎসরে যিহূদার সকল নগরে উপদেশ দিবার জন্য আপনার কয়েক জন প্রধান লোক অর্থাৎ বিন্‌-হয়িল, ওবদিয়, সখরিয়, নথনেল ও মীখায়কে প্রেরণ করিলেন। আর তাঁহাদের সহিত কয়েক জন লেবীয়কে অর্থাৎ শময়িয়, নথনিয়, সবদিয়, অসাহেল, শমীরামোৎ, যিহোনাথন, অদোনিয়, টোবিয় ও টোব্‌অদোনীয়, এই সকল লেবীয়কে এবং তাঁহাদের সহিত ইলীশামা ও যিহোরাম, এই দুই জন যাজককে পাঠাইলেন। তাঁহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পুস্তক সঙ্গে লইয়া যিহূদা দেশে উপদেশ দিতে লাগিলেন; তাঁহারা যিহূদার সমস্ত নগরে গিয়া লোকদিগকে উপদেশ দিলেন। আর যিহূদার চতুর্দ্দিক্‌স্থ দেশের সকল রাজ্যে সদাপ্রভু হইতে এমন ভয় উপস্থিত হইল যে, তাহারা যিহোশাফটের সহিত যুদ্ধ করিল না। আর পলেষ্টীয়দেরও কেহ কেহ যিহোশাফটের নিকটে করস্বরূপে উপঢৌকন ও রৌপ্য আনিল, এবং আরবীয়েরা তাঁহার নিকটে পশুপাল, সাত সহস্র সাত শত মেষ ও সাত সহস্র সাত শত ছাগ আনিল। এইরূপে যিহোশাফট অতিশয় মহান্‌ হইয়া উঠিলেন, এবং যিহূদা দেশে অনেক দুর্গ ও ভাণ্ডার-নগর গাঁথিলেন। আর যিহূদার নগর সকলের মধ্যে তাঁহার অনেক কার্য্য ছিল, এবং যিরূশালেমে তাঁহার বলবান বীর যোদ্ধারা থাকিত। তাহাদের পিতৃকুলানুসারে তাহাদের সংখ্যা এই; যিহূদার সহস্রপতিগণের মধ্যে অদন সেনাপতি ছিলেন, তাঁহার সহিত তিন লক্ষ বলবান বীর ছিল। তাঁহার পরে যিহোহানন সেনাপতি, তাঁহার সহিত দুই লক্ষ আশী সহস্র লোক ছিল। তাঁহার পরে সিখির পুত্র অমসিয়; সেই ব্যক্তি আপনাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করিয়াছিলেন; তাঁহার সহিত দুই লক্ষ বলবান বীর ছিল। আর বিন্যামীনের মধ্যে বলবান বীর ইলিয়াদা, তাঁহার সহিত দুই লক্ষ ধনুর্দ্ধর ও ঢালী ছিল। তাঁহার পরে যিহোষাবদ; তাঁহার সহিত যুদ্ধার্থে সসজ্জ এক লক্ষ আশী সহস্র লোক ছিল। ইহাঁরা রাজার পরিচর্য্যা করিতেন। ইহাঁদের ছাড়া রাজা যিহূদার সর্ব্বত্র প্রাচীরবেষ্টিত নগরে [কর্ম্মচারী লোক] রাখিতেন। যিহোশাফট অতিশয় ঐশ্বর্য্যবান্‌ ও প্রতাপান্বিত হইলেন, আর তিনি আহাবের সহিত কুটুম্বিতা করিলেন। কয়েক বৎসর পরে তিনি শমরিয়াতে আহাবের নিকটে গেলেন; আর আহাব তাঁহার নিমিত্ত ও তাঁহার সঙ্গী লোকদের নিমিত্ত অনেক মেষ ও বলদ মারিলেন, এবং রামোৎ-গিলিয়দে যাইতে তাঁহাকে প্ররোচিত করিলেন। আর ইস্রায়েল-রাজ আহাব যিহূদা-রাজ যিহোশাফটকে কহিলেন, আপনি কি রামোৎ-গিলিয়দে আমার সঙ্গে যাইবেন? তিনি উত্তর করিলেন, আমি ও আপনি এবং আমার লোক ও আপনার লোক, সকলেই এক, আমরা যুদ্ধে আপনার সঙ্গী হইব। পরে যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে কহিলেন, বিনয় করি, অদ্য সদাপ্রভুর বাক্যের অন্বেষণ করুন। তাহাতে ইস্রায়েলের রাজা ভাববাদিগণকে, চারি শত জনকে, একত্র করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আমরা রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধযাত্রা করিব, না আমি ক্ষান্ত হইব? তখন তাহারা কহিল, যাত্রা করুন, ঈশ্বর তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন। কিন্তু যিহোশাফট কহিলেন, ইহাদের ছাড়া সদাপ্রভুর এমন কোন ভাববাদী কি এ স্থানে নাই যে, আমরা তাঁহারই কাছে অন্বেষণ করিতে পারি? ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমরা যাহার দ্বারা সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিতে পারি, এমন আর এক জন আছে, কিন্তু আমি তাহাকে ঘৃণা করি, কেননা আমার উদ্দেশে সে কখনই মঙ্গলের নয়, সর্ব্বদাই কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে; সে ব্যক্তি যিম্লের পুত্র মীখায়। যিহোশাফট কহিলেন, মহারাজ, এমন কথা কহিবেন না। তখন ইস্রায়েলের রাজা এক জন কর্ম্মচারীকে ডাকিয়া আজ্ঞা দিলেন, যিম্লের পুত্র মীখায়কে শীঘ্র লইয়া আইস। সেই সময়ে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদা-রাজ যিহোশাফট আপন আপন রাজবস্ত্র পরিধান করিয়া আপন আপন সিংহাসনে বসিয়াছিলেন, তাঁহারা শমরিয়ার দ্বার-প্রবেশস্থানের খোলা জায়গায় বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহাদের সম্মুখে ভাববাদীরা সকলে ভাবোক্তি প্রচার করিতেছিল। আর কনানার পুত্র সিদিকিয় লৌহময় শৃঙ্গযুগল নির্ম্মাণ করিয়া কহিল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ‘ইহা দ্বারা আপনি অরামের বিনাশ সাধন পর্য্যন্ত গুঁতাইবেন’। আর ভাববাদীরা সকলেই তদ্রূপ ভাবোক্তি প্রচার করিল, কহিল, আপনি রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন, কেননা সদাপ্রভু তাহা মহারাজের হস্তে সমর্পণ করিবেন। আর যে দূত মীখায়কে ডাকিতে গিয়াছিল, সে তাঁহাকে কহিল, দেখুন, ভাববাদিগণের বাক্য সকল এক মুখে রাজার পক্ষে মঙ্গলসূচনা করে; অতএব বিনয় করি, আপনার বাক্য উহাদের কোন এক জনের বাক্যের সমানার্থক হউক, আপনি মঙ্গলসূচক কথা বলুন। মীখায় কহিলেন, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমার ঈশ্বর যাহা বলেন, আমি তাহাই বলিব। পরে তিনি রাজার নিকটে আসিলে রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মীখায়, আমরা রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধ করিতে যাইব, না আমি ক্ষান্ত হইব? তিনি কহিলেন, আপনারা যাত্রা করুন, কৃতকার্য্য হউন; তথাকার লোকেরা আপনাদের হস্তে সমর্পিত হইবে। রাজা তাঁহাকে কহিলেন, তুমি সদাপ্রভুর নামে আমাকে সত্য ব্যতিরেকে আর কিছুই বলিবে না, আমি কত বার তোমাকে এই শপথ করাইব? তখন তিনি কহিলেন, আমি সমস্ত ইস্রায়েলকে অরক্ষক মেষপালের ন্যায় পর্ব্বতগণের উপরে ছিন্নভিন্ন দেখিলাম, এবং সদাপ্রভু কহিলেন, উহাদের স্বামী নাই; উহারা প্রত্যেকে কুশলে আপন আপন বাটীতে ফিরিয়া যাউক। তখন ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি কি অগ্রেই আপনাকে বলি নাই যে, এই ব্যক্তি আমার উদ্দেশে মঙ্গলের নয়, কেবল অমঙ্গলের ভাবোক্তি প্রচার করে? আর মীখায় কহিলেন, এ জন্য আপনারা সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন; আমি দেখিলাম, সদাপ্রভু তাঁহার সিংহাসনে উপবিষ্ট, আর তাঁহার দক্ষিণে ও বামে স্বর্গের সমস্ত বাহিনী দণ্ডায়মান। পরে সদাপ্রভু কহিলেন, ইস্রায়েল-রাজ আহাব যেন যাত্রা করিয়া রামোৎ-গিলিয়দে পতিত হয়, এই জন্য কে তাহাকে মুগ্ধ করিবে? তাহাতে কেহ এক প্রকারে, কেহ বা অন্য প্রকারে কহিল। শেষে এক আত্মা গিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া কহিল, আমি তাহাকে মুগ্ধ করিব। সদাপ্রভু কহিলেন, কিসে? সে কহিল, আমি গিয়া তাহার সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা হইব। তখন তিনি কহিলেন, তুমি তাহাকে মুগ্ধ করিবে, কৃতকার্য্যও হইবে; যাও, সেইরূপ কর। অতএব দেখুন, সদাপ্রভু আপনার এই সমস্ত ভাববাদীর মুখে মিথ্যাবাদী আত্মা দিয়াছেন; আর সদাপ্রভু আপনার বিষয়ে অমঙ্গলের কথা কহিয়াছেন। তখন কনানার পুত্র সিদিকিয় নিকটে আসিয়া মীখায়ের গালে চড় মারিয়া কহিল, সদাপ্রভুর আত্মা তোর সঙ্গে কথা কহিবার জন্য আমার নিকট হইতে কোন্‌ পথে গিয়াছিলেন? মীখায় কহিলেন, দেখ, যে দিন তুমি লুকাইবার জন্য এক ভিতরের কুঠরীতে যাইবে, সেই দিন তাহা জানিবে। পরে ইস্রায়েলের রাজা বলিলেন, মীখায়কে ধরিয়া পুনরায় নগরাধ্যক্ষ আমোনের ও রাজপুত্র যোয়াশের নিকটে লইয়া যাও। আর বল, রাজা এই কথা কহেন, ইহাকে কারাগারে বদ্ধ করিয়া রাখ, এবং যে পর্য্যন্ত আমি কুশলে ফিরিয়া না আসি, সে পর্য্যন্ত ইহাকে আহারার্থে কষ্টযুক্ত অন্ন ও কষ্টযুক্ত জল দেও। মীখায় কহিলেন, যদি আপনি কোন মতে কুশলে ফিরিয়া আইসেন, তবে সদাপ্রভু আমার দ্বারা কথা কহেন নাই। আর তিনি কহিলেন, হে জাতিগণ, তোমরা সকলে শ্রবণ কর। পরে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদা-রাজ যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দে যাত্রা করিলেন। আর ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে কহিলেন, আমি অন্য বেশ ধারণ করিয়া যুদ্ধে প্রবেশ করিব, আপনি রাজবস্ত্র পরিধান করুন। পরে ইস্রায়েলের রাজা অন্য বেশ ধরিলে তাঁহারা যুদ্ধে প্রবেশ করিলেন। অরামের রাজা আপন রথাধ্যক্ষ সেনাপতিগণকে এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তোমরা কেবল ইস্রায়েলের রাজা ব্যতিরেকে ক্ষুদ্র কি মহান্‌ আর কাহারও সহিত যুদ্ধ করিও না। পরে রথাধ্যক্ষগণ যিহোশাফটকে দেখিয়া উনিই অবশ্য ইস্রায়েলের রাজা, এই বলিয়া তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য ঘুরিয়া আসিলেন; তখন যিহোশাফট চেঁচাইয়া উঠিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার সাহায্য করিলেন, এবং ঈশ্বর তাঁহার নিকট হইতে তাঁহাদিগকে যাইতে প্রবৃত্তি দিলেন। বস্তুতঃ রথাধ্যক্ষগণ যখন দেখিলেন, ইনি ইস্রায়েলের রাজা নহেন, তখন তাঁহার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া গেলেন। কিন্তু একটা লোক লক্ষ্য ব্যতিরেকে ধনুক আকর্ষণ করিয়া ইস্রায়েলের রাজার উদর-ত্রাণের ও বুকপাটার সন্ধিস্থানে বাণাঘাত করিল; তাহাতে তিনি আপন সারথিকে কহিলেন, হস্ত ফিরাইয়া সৈন্যদলের মধ্য হইতে আমাকে লইয়া যাও, আমি দারুণ আঘাত পাইয়াছি। সেই দিবস তুমুল যুদ্ধ হইল; আর ইস্রায়েলের রাজা অরামীয়দের সম্মুখে সন্ধ্যাকাল পর্য্যন্ত রথে আপনাকে দণ্ডায়মান রাখিলেন, কিন্তু সূর্য্যাস্তকালে মরিয়া গেলেন। পরে যিহূদা-রাজ যিহোশাফট কুশলে যিরূশালেমে আপন গৃহে ফিরিয়া আসিলেন। আর হনানির পুত্র যেহূ দর্শক তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়া যিহোশাফট রাজাকে কহিলেন, দুর্জনের সাহায্য করা এবং সদাপ্রভুর বিদ্বেষীদিগকে প্রেম করা কি আপনার উপযুক্ত? এ জন্য সদাপ্রভু হইতে আপনার উপরে ক্রোধ বর্ত্তিল। যাহা হউক, আপনার মধ্যে কোন কোন সাধু ভাব পাওয়া গিয়াছে; কেননা আপনি দেশ হইতে আশেরা-মূর্ত্তি সকল উচ্ছিন্ন করিয়াছেন, এবং ঈশ্বরের অন্বেষণ করিবার জন্য আপন অন্তঃকরণ সুস্থির করিয়াছেন। আর যিহোশাফট যিরূশালেমে বসতি করিলেন; পরে আবার বের্‌-শেবা অবধি পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশ পর্য্যন্ত লোকদের মধ্যে যাতায়াত করিয়া তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর পক্ষে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিলেন। আর দেশের মধ্যে অর্থাৎ যিহূদার প্রাচীরবেষ্টিত নগর সকলের মধ্যে নগরে নগরে বিচারকর্ত্তা নিযুক্ত করিলেন। তিনি বিচারকর্ত্তাদিগকে কহিলেন, তোমরা যাহা করিবে, সাবধান হইয়া করিও; কেননা তোমরা মনুষ্যদের জন্য নয়, কিন্তু সদাপ্রভুর জন্য বিচার করিবে, এবং বিচার ব্যাপারে তিনি তোমাদের সহকারী। অতএব সদাপ্রভুর ভয় তোমাদিগেতে অধিষ্ঠিত হউক; তোমরা সাবধান হইয়া কার্য্য কর, কেননা অন্যায়, কি মুখাপেক্ষা, কি উৎকোচ গ্রহণে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মতি নাই। আর যিহোশাফট যিরূশালেমেও সদাপ্রভুর পক্ষে বিচারার্থে এবং বিবাদ নিষ্পত্তি করণার্থে লেবীয়দের, যাজকদের ও ইস্রায়েলের পিতৃকুলপতিদের কয়েক জনকে নিযুক্ত করিলেন। আর তাঁহারা যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা সদাপ্রভুর ভয়ে বিশ্বস্ত ভাবে একাগ্রচিত্তে এইরূপ কার্য্য কর। রক্তপাতের বিষয়ে, ব্যবস্থা ও আজ্ঞার এবং বিধি ও শাসনের বিষয়ে যে কোন বিচার আপন আপন নগরে বাসকারী তোমাদের ভ্রাতাদের দ্বারা তোমাদের নিকটে উপস্থিত হয়, তদ্বিষয়ে তাহাদিগকে উপদেশ দিবে, পাছে তাহারা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে দোষী হয়, আর তোমাদের উপরে ও তোমাদের ভ্রাতাদের উপরে ক্রোধ বর্ত্তে; ইহা করিও, তাহা হইলে তোমরা দোষী হইবে না। আর দেখ, সদাপ্রভু সমস্ত বিচারে প্রধান যাজক অমরিয়, এবং রাজার সমস্ত বিচারে যিহূদা-কুলের অধ্যক্ষ ইশ্মায়েলের পুত্র সবদিয় তোমাদের উপরে নিযুক্ত আছেন; কর্ম্মচারী লেবীয়েরাও তোমাদের সম্মুখে আছে। তোমরা সাহসপূর্ব্বক কার্য্য কর, আর সদাপ্রভু সুজনের সহবর্ত্তী হউন। পরে মোয়াব-সন্তানগণ ও অম্মোন-সন্তানগণ এবং তাহাদের সহিত কতকগুলি মায়োনীয় লোক যিহোশাফটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে আসিল। তখন কোন কোন লোক আসিয়া যিহোশাফটকে এই সংবাদ দিল, সাগরের ওপারস্থ অরাম হইতে বৃহৎ লোকসমারোহ আপনার বিরুদ্ধে আসিতেছে; দেখুন, তাহারা হৎসসোন-তামরে, অর্থাৎ ঐন্‌-গদীতে আছে। তাহাতে যিহোশাফট ভীত হইয়া সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন, এবং যিহূদার সর্ব্বত্র উপবাস ঘোষণা করাইয়া দিলেন। আর যিহূদার লোকেরা সদাপ্রভুর কাছে সাহায্য যাচ্ঞা করিবার জন্য একত্র হইল; যিহূদার সমস্ত নগর হইতে লোকেরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে আসিল। পরে যিহোশাফট সদাপ্রভুর গৃহে নূতন প্রাঙ্গণের সম্মুখে যিহূদার ও যিরূশালেমের সমাজের মধ্যে দাঁড়াইলেন, আর কহিলেন, হে আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি কি স্বর্গস্থ ঈশ্বর নহ? তুমি কি জাতিগণের সমস্ত রাজ্যের কর্ত্তা নহ? আর শক্তি ও পরাক্রম তোমারই হস্তে, তোমার বিপক্ষে দাঁড়াইতে কাহারও সাধ্য নাই। হে আমাদের ঈশ্বর, তুমিই কি আপন প্রজা ইস্রায়েলের সম্মুখ হইতে এই দেশের নিবাসীদিগকে অধিকারচ্যুত কর নাই? এবং তোমার মিত্র অব্রাহামের বংশকে চিরকালের জন্য কি এই দেশ দেও নাই? আর তাহারা এই দেশে বসতি করিয়াছে, এবং এই দেশে তোমার নামের জন্য এক ধর্ম্মধাম নির্ম্মাণ করিয়া বলিয়াছে, খড়্‌গ, কি বিচারসিদ্ধ দণ্ড, কি মহামারী, কি দুর্ভিক্ষস্বরূপ অমঙ্গল যখন আমাদের প্রতি ঘটিবে, তখন আমরা এই গৃহের সম্মুখে, তোমারই সম্মুখে দণ্ডায়মান হইব—কেননা এই গৃহে তোমার নাম আছে,—এবং আমাদের সঙ্কটে আমরা তোমার কাছে ক্রন্দন করিব, তাহাতে তুমি তাহা শুনিয়া নিস্তার করিবে। আর এখন দেখ, অম্মোনের ও মোয়াবের সন্তানগণ এবং সেয়ীর পর্ব্বতনিবাসীরা, যাহাদের দেশে তুমি ইস্রায়েলকে মিসর দেশ হইতে আসিবার সময়ে প্রবেশ করিতে দেও নাই, কিন্তু ইহারা উহাদের নিকট হইতে অন্য পথে গিয়াছিল, উহাদিগকে বিনষ্ট করে নাই; দেখ, উহারা আমাদের কিরূপ অপকার করিতেছে; তুমি যাহা আমাদিগকে ভোগ করিতে দিয়াছ, তোমার সেই অধিকার হইতে আমাদিগকে তাড়াইয়া দিতে আসিতেছে। হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি কি উহাদের বিচার করিবে না? আমাদের বিরুদ্ধে ঐ যে বৃহৎ দল আসিতেছে, উহাদের বিরুদ্ধে আমাদের ত নিজের কোন সামর্থ্য নাই; কি করিতে হইবে, তাহাও আমরা জানি না; আমরা কেবল তোমার দিকে চাহিয়া আছি। এইরূপে শিশু, স্ত্রীলোক ও সন্তানগণের সহিত সমস্ত যিহূদা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দণ্ডায়মান হইল। আর সমাজের মধ্যে যহসীয়েল নামে এক জন লেবীয়ের উপরে সদাপ্রভুর আত্মা আসিলেন। তিনি আসফবংশজাত মত্তনিয়ের সন্তান যিয়েলের সন্তান বনায়ের সন্তান সখরিয়ের পুত্র। তখন তিনি কহিলেন, হে সমগ্র যিহূদা, হে যিরূশালেম-নিবাসী লোক সকল, আর হে মহারাজ যিহোশাফট, শ্রবণ কর; সদাপ্রভু তোমাদিগকে এই কথা কহেন, তোমরা ঐ বৃহৎ লোকসমারোহ হইতে ভীত কি নিরাশ হইও না, কেননা এই যুদ্ধ তোমাদের নয়, কিন্তু ঈশ্বরের। তোমরা কল্য উহাদের বিরুদ্ধে নামিয়া যাও; দেখ, তাহারা সীস নামক আরোহণ-স্থান দিয়া আসিতেছে; তোমরা যিরূয়েল প্রান্তরের সম্মুখে উপত্যকার অন্তভাগে তাহাদিগকে পাইবে। এবার তোমাদিগকে যুদ্ধ করিতে হইবে না; হে যিহূদা ও যিরূশালেম, তোমরা শ্রেণীবদ্ধ হও, দাঁড়াইয়া থাক, আর তোমাদের সহবর্ত্তী সদাপ্রভু যে নিস্তার করিবেন, তাহা দেখ; ভীত কি নিরাশ হইও না; কল্য তাহাদের বিরুদ্ধে যাত্রা কর; কেননা সদাপ্রভু তোমাদের সহবর্ত্তী। তখন যিহোশাফট ভূমিতে অধোমুখ হইয়া প্রণাম করিলেন, এবং সমস্ত যিহূদা ও যিরূশালেম-নিবাসিগণ সদাপ্রভুর কাছে প্রণিপাত করিতে সদাপ্রভুর সম্মুখে ভূমিষ্ঠ হইল। পরে কহাৎ-বংশজাত ও কোরহ-বংশজাত লেবীয়েরা অতি উচ্চৈঃস্বরে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রশংসা করিতে উঠিয়া দাঁড়াইল। পরে তাহারা প্রত্যূষে উঠিয়া তকোয় প্রান্তরে যাত্রা করিল; তাহাদের যাত্রাকালে যিহোশাফট দাঁড়াইয়া কহিলেন, হে যিহূদা, হে যিরূশালেম-নিবাসিগণ, আমার কথা শুন; তোমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর, তাহাতে সুস্থির হইবে; তাঁহার ভাববাদিগণে বিশ্বাস কর, তাহাতে কৃতকার্য্য হইবে। আর তিনি লোকদের সহিত পরামর্শ করিয়া লোক নিযুক্ত করিলেন, [যেন তাহারা] সৈন্য-শ্রেণীর অগ্রে অগ্রে গিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে সঙ্গীত ও পবিত্র শোভায় প্রশংসা করে, এবং এই কথা বলে,— “সদাপ্রভুর স্তবগান কর, কেননা তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী”। যখন তাহারা আনন্দগান ও প্রশংসা করিতে আরম্ভ করিল, তখন সদাপ্রভু যিহূদার বিরুদ্ধে আগত অম্মোনের ও মোয়াবের সন্তানগণের ও সেয়ীর পর্ব্বতীয় লোকদের বিরুদ্ধে লুক্কায়িত সৈন্যদিগকে নিযুক্ত করিলেন; তাহাতে তাহারা পরাহত হইল। আর অম্মোনের ও মোয়াবের সন্তানগণ নিঃশেষে বধ ও বিনাশ করিবার জন্য সেয়ীর পর্ব্বত-নিবাসীদের বিরুদ্ধে উঠিল; আর সেয়ীর-নিবাসীদিগকে সংহার করিবার পর পরস্পর এক জন অন্যের বিনাশ সাধনে সাহায্য করিল। তখন যিহূদার লোকেরা প্রান্তরের প্রহরিদুর্গে উপস্থিত হইয়া লোকসমারোহের প্রতি দৃষ্টপাত করিল, আর দেখ, ভূমিতে কেবলমাত্র শব পতিত আছে, কেহই পলাইয়া বাঁচে নাই। তখন যিহোশাফট ও তাঁহার লোকেরা তাহাদের লুট গ্রহণ করিতে গিয়া তাহাদের মধ্যে শবের সহিত প্রচুর সম্পত্তি ও বহুমূল্য রত্ন দেখিতে পাইলেন; তাঁহারা আপনাদের জন্য এত ধন সংগ্রহ করিলেন যে, সমস্ত লইয়া যাইতে পারিলেন না; সেই লুটিত বস্তুর বাহুল্য প্রযুক্ত তাহা লইয়া যাইতে তাঁহাদের তিন দিন লাগিল। আর চতুর্থ দিবসে তাঁহারা বরাখা-তলভূমিতে সমাগত হইলেন; কেননা সেই স্থানে তাহারা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিল, এই কারণ অদ্য পর্য্যন্ত সেই স্থান বরাখা [ধন্যবাদ] তলভূমি নামে খ্যাত আছে। পরে যিহূদার ও যিরূশালেমের সমস্ত লোক, এবং তাহাদের অগ্রে অগ্রে গমনকারী যিহোশাফট আনন্দপূর্ব্বক যিরূশালেমে যাইবার জন্য ফিরিয়া গেলেন, কেননা সদাপ্রভু তাঁহাদের শত্রুদের উপরে তাঁহাদিগকে আনন্দিত করিয়াছিলেন। আর তাঁহারা নেবল, বীণা ও তূরী বাজাইতে বাজাইতে যিরূশালেমে আসিয়া সদাপ্রভুর গৃহে গেলেন। আর সদাপ্রভু ইস্রায়েলের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়াছেন, এই জনরব অন্য দেশীয় সকল রাজ্যের লোকে শুনিলে ঈশ্বর হইতে ভয় তাহাদের উপরে আসিল। এইরূপে যিহোশাফটের রাজ্য সুস্থির হইল, তাঁহার ঈশ্বর চারিদিকে তাঁহাকে বিশ্রাম দিলেন। যিহোশাফট যিহূদার উপরে রাজত্ব করিলেন; তিনি পঁয়ত্রিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং পঁচিশ বৎসর যিরূশালেমে রাজত্ব করেন। তাঁহার মাতার নাম অসূবা, তিনি শিল্‌হির কন্যা। যিহোশাফট আপন পিতা আসার পথে চলিতেন, সেই পথ হইতে ফিরিতেন না, সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা নায্য তাহাই করিতেন। তথাপি উচ্চস্থলী সকল দূরীকৃত হইল না, এবং লোকেরা তখনও আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরের প্রতি আপন আপন অন্তঃকরণ সুস্থির করিল না। যিহোশাফটের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত, দেখ, ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকান্তর্গত হনানির পুত্র যেহূর পুস্তকে লিখিত আছে। পরে যিহূদা-রাজ যিহোশাফট ইস্রায়েল-রাজ অহসিয়ের সহিত যোগ দিলেন, সে ব্যক্তি দুরাচারী; তিনি তর্শীশে যাইবার জাহাজ নির্ম্মাণার্থে তাঁহার সহিত যোগ দিলেন, আর তাঁহারা ইৎসিয়োন-গেবরে সেই জাহাজগুলি নির্ম্মাণ করিলেন। তখন মারেশা-নিবাসী দোদাবাহূর পুত্র ইলীয়েষর যিহোশাফটের বিরুদ্ধে এই ভাবোক্তি প্রচার করিলেন, আপনি অহসিয়ের সহিত যোগ দিয়াছেন, এই জন্য সদাপ্রভু আপনার কর্ম্ম সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। আর ঐ সকল জাহাজ ভগ্ন হইল, তর্শীশে যাইতে পারিল না। পরে যিহোশাফট আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, এবং দায়ূদ-নগরে আপন পিতৃলোকদের সহিত কবরপ্রাপ্ত হইলেন। আর তাঁহার পুত্র যিহোরাম তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহোশাফটের ঔরসজাত যিহোরামের কয়েকটী ভ্রাতা ছিল, অসরিয়, যিহীয়েল, সখরিয়, অসরিয়, মীখায়েল, ও শফটিয়, ইহারা সকলে ইস্রায়েল-রাজ যিহোশাফটের পুত্র। আর তাহাদের পিতা তাহাদিগকে মহাসম্পত্তি অর্থাৎ রৌপ্য, স্বর্ণ ও বহুমূল্য দ্রব্য এবং যিহূদা দেশস্থ প্রাচীরবেষ্টিত নগরগুলি দান করিয়াছিলেন, কিন্তু যিহোরাম জ্যেষ্ঠ বলিয়া তাঁহাকে রাজ্য দিয়াছিলেন। যিহোরাম আপন পিতার রাজ্যে অধিষ্ঠিত হইলে আপনাকে বলবান করিলেন; আর আপনার সমস্ত ভ্রাতাকে এবং ইস্রায়েলের কতকগুলি অধ্যক্ষকেও খড়্‌গ দ্বারা বধ করিলেন। যিহোরাম বত্রিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করিয়া যিরূশালেমে আট বৎসর কাল রাজত্ব করেন। আহাবের কুল যেমন করিত, তিনিও তেমনি ইস্রায়েলের রাজাদের পথে চলিতেন; কারণ তিনি আহাবের কন্যাকে বিবাহ করিয়াছিলেন, ফলে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন। তথাপি সদাপ্রভু দায়ূদের সহিত আপনার কৃত নিয়ম প্রযুক্ত এবং তাঁহাকে ও তাঁহার সন্তানগণকে নিয়ত এক প্রদীপ দিবার যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, তদনুসারে তিনি দায়ূদের কুল বিনষ্ট করিতে চাহিলেন না। তাঁহার সময়ে ইদোম যিহূদার অধীনতা অস্বীকার করিয়া আপনাদের উপরে এক জনকে রাজা করিল। অতএব যিহোরাম আপন সেনাপতিগণকে ও সমস্ত রথ সঙ্গে লইয়া যাত্রা করিলেন; আর রাত্রিকালে তিনি উঠিয়া, যাহারা তাঁহাকে বেষ্টন করিয়াছিল, সেই ইদোমীয়দিগকে ও তাহাদের রথের অধ্যক্ষদিগকে আঘাত করিলেন। এইরূপে ইদোম অদ্য পর্য্যন্ত যিহূদার অধীনতা অস্বীকার করিয়া রহিয়াছে; আর ঐ সময়ে লিব্‌নাও তাঁহার অধীনতা অস্বীকার করিল, কেননা তিনি আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছিলেন। আরও তিনি যিহূদার অনেক পর্ব্বতে উচ্চস্থলী প্রস্তুত করিলেন, এবং যিরূশালেম-নিবাসীদিগকে ব্যভিচার করাইলেন, ও যিহূদাকে বিপথগামী করিলেন। পরে তাঁহার কাছে এলিয় ভাববাদীর নিকট হইতে এই কথা সম্বলিত একখানি লিপি আসিল; তোমার পিতা দায়ূদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি আপন পিতা যিহোশাফটের পথে ও যিহূদা-রাজ আসার পথে গমন কর নাই; কিন্তু ইস্রায়েলের রাজাদের পথে গমন করিয়াছ, এবং আহাব-কুলের ক্রিয়ানুসারে যিহূদাকে ও যিরূশালেম-নিবাসীদিগকে ব্যভিচার করাইয়াছ; আরও তোমা হইতে উত্তম যে তোমার পিতৃকুলজাত ভ্রাতৃগণ, তাহাদিগকে বধ করিয়াছ; এই কারণ দেখ, সদাপ্রভু তোমার প্রজাদিগকে, তোমার সন্তানদিগকে, তোমার ভার্য্যাদিগকে ও তোমার সমস্ত সম্পত্তি মহা আঘাতে আহত করিবেন। আর তুমি অস্ত্রের পীড়ায় অতিশয় পীড়িত হইবে, শেষে সেই পীড়ায় তোমার অন্ত্র দিন দিন বাহির হইয়া পড়িবে। পরে সদাপ্রভু যিহোরামের বিরুদ্ধে পলেষ্টীয়দের মন কূশীয়দের নিকটস্থ আরবীয়দের মন উত্তেজিত করিলেন; এবং তাহারা যিহূদার বিরুদ্ধে আসিয়া প্রাচীর ভাঙ্গিয়া রাজার বাটীতে প্রাপ্ত সকল সম্পত্তি, এবং তাঁহার পুত্রদিগকে ও তাঁহার ভার্য্যাদিগকে লইয়া গেল; কনিষ্ঠ পুত্র যিহোয়াহস ব্যতীত তাঁহার একটী পুত্রও অবশিষ্ট থাকিল না। এই সকল ঘটনার পরে সদাপ্রভু তাঁহাকে অন্ত্রের অপ্রতিকার্য্য পীড়া দ্বারা আঘাত করিলেন। তাহাতে কালক্রমে, দুই বৎসরের শেষে, তাঁহার অন্ত্র সেই রোগে বাহির হইয়া পড়িল, পরে তিনি উৎকট পীড়ায় মারা পড়িলেন। আর তাঁহার প্রজারা তাঁহার জন্য তাঁহার পিতৃলোকদের রীতি অনুযায়ী দাহ করিল না। তিনি বত্রিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে আট বৎসরকাল রাজত্ব করেন; তিনি চলিয়া গেলেন, কেহ শোক করিল না। আর লোকেরা দায়ূদ-নগরে তাঁহাকে কবর দিল, কিন্তু রাজাদের কবরস্থানে দিল না। পরে যিরূশালেম-নিবাসীরা তাঁহার কনিষ্ঠ পুত্র অহসিয়কে তাঁহার পদে রাজা করিল, কারণ আরবীয়দের সহিত শিবিরে যে দল আসিয়াছিল, তাহারা তাঁহার জেষ্ঠ পুত্র সকলকে বধ করিয়াছিল। অতএব যিহূদা-রাজ যিহোরামের পুত্র অহসিয় রাজত্ব করিতে লাগিলেন। অহসিয় বেয়াল্লিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন; এবং যিরূশালেমে এক বৎসরকাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম অথলিয়া, ইনি অম্রির পৌত্রী। অহসিয়ের মাতা তাঁহাকে অসদাচরণ করিতে মন্ত্রণা দিতেন, তাই তিনিও আহাব-কুলের পথে চলিতেন। আহাব-কুল যেমন করিত, তেমনি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা মন্দ, তিনি তাহাই করিতেন; কেননা পিতার মৃত্যুর পরে তাহারাই তাঁহার বিনাশজনক মন্ত্রী হইল। আর তাহাদেরই মন্ত্রণানুসারে তিনি চলিতেন, আর তিনি ইস্রায়েল-রাজ আহাবের পুত্র যিহোরামের সহায় হইয়া রামোৎ-গিলিয়দে অরাম-রাজ হসায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে গেলেন; তাহাতে অরামীয়েরা যোরামকে ক্ষতবিক্ষত করিল। অতএব অরাম-রাজ হসায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার সময়ে যিহোরাম রামাতে যে সকল আঘাত প্রাপ্ত হন, তাহা হইতে আরোগ্য পাইবার জন্য যিষ্রিয়েলে ফিরিয়া গেলেন; এবং আহাবের পুত্র যিহোরামের পীড়া প্রযুক্ত যিহূদা-রাজ যিহোরামের পুত্র অহসিয় তাঁহাকে দেখিতে যিষ্রিয়েলে নামিয়া গেলেন। কিন্তু যোরামের নিকটে আসাতে ঈশ্বর হইতে অহসিয়ের নিপাত ঘটিল; কেননা তিনি যখন আসিলেন, তখন যিহোরামের সহিত নিম্‌শির পুত্র সেই যেহূর বিরুদ্ধে বাহির হইলেন, যাঁহাকে ঈশ্বর আহাব-কুলের উচ্ছেদ করিবার জন্য অভিষেক করিয়াছিলেন। পরে যেহূ যে সময়ে আহাব-কুলকে দণ্ড দিতেছিলেন, সেই সময়ে তিনি যিহূদার অধ্যক্ষগণকে ও অহসিয়ের পরিচর্য্যাকারী তাঁহার ভ্রাতৃপুত্রগণকে পাইয়া বধ করিলেন। আর তিনি অহসিয়ের অন্বেষণ করিলেন; তৎকালে অহসিয় শমরিয়ায় লুকাইয়া ছিলেন; লোকেরা তাঁহাকে ধরিয়া যেহূর নিকটে আনিয়া বধ করিল, তথাপি তাঁহার কবর দিল, কেননা তাহারা কহিল, যে যিহোশাফট সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতেন, এ তাঁহারই সন্তান। আর অহসিয়ের কুলের মধ্যে রাজত্ব গ্রহণ করিবার ক্ষমতা কাহারও ছিল না। ইতিমধ্যে অহসিয়ের মাতা অথলিয়া যখন দেখিল যে, তাহার পুত্র মরিয়াছে, তখন সে উঠিয়া যিহূদা-কুলের সমস্ত রাজ-বংশ বিনষ্ট করিল। কিন্তু রাজকন্যা যিহোশাবৎ অহসিয়ের পুত্র যোয়াশকে লইয়া, নিহত রাজপুত্রদের মধ্য হইতে চুরি করিয়া, তাঁহার ধাত্রীর সহিত শয্যাগারে রাখিলেন; এইরূপে যিহোয়াদা যাজকের স্ত্রী, যিহোরাম রাজার কন্যা এবং অহসিয়ের ভগিনী ঐ যিহোশাবৎ অথলিয়া হইতে তাঁহাকে লুকাইলেন, এই জন্য তিনি তাঁহাকে বধ করিতে পারিলেন না। আর যোয়াশ তাঁহাদের সহিত ঈশ্বরের গৃহে ছয় বৎসর যাবৎ লুক্কায়িত রহিলেন; তখন অথলিয়া দেশের উপরে রাজত্ব করিতেছিল। পরে সপ্তম বৎসরে যিহোয়াদা আপনাকে বলবান করিয়া শতপতিদিগকে—যিহোরামের পুত্র অসরিয়কে, যিহোহাননের পুত্র ইশ্মায়েলকে, ওবেদের পুত্র অসরিয়কে, অদায়ার পুত্র মাসেয়কে, ও সিখ্রির পুত্র ইলীশাফটকে—লইয়া আপনার সহিত নিয়মে বদ্ধ করিলেন। পরে তাঁহারা যিহূদা দেশে ভ্রমণ করিয়া যিহূদার সমস্ত নগর হইতে লেবীয়দিগকে ও ইস্রায়েলের পিতৃকুলপতিদিগকে একত্র করিলে তাহারাও যিরূশালেমে আসিল। পরে সমস্ত সমাজ ঈশ্বরের গৃহে রাজার সহিত নিয়ম করিল। আর যিহোয়াদা তাহাদিগকে কহিলেন, দেখ, দায়ূদের সন্তানগণের বিষয়ে সদাপ্রভু যে কথা কহিয়াছেন, তদনুসারে রাজপুত্রই রাজত্ব করিবেন। তোমরা এই কার্য্য করিবে, তোমাদের অর্থাৎ যাজকদের ও লেবীয়দের যে তৃতীয়াংশ বিশ্রামবারে প্রবেশ করিবে, তাহারা দ্বারপাল হইবে। অন্য তৃতীয়াংশ রাজবাটীতে থাকিবে, অন্য তৃতীয়াংশ ভিত্তিমূলের দ্বারে থাকিবে, এবং সমস্ত লোক সদাপ্রভুর গৃহের প্রাঙ্গণে প্রাঙ্গণে থাকিবে। কিন্তু যাজকগণ ও পরিচর্য্যাকারী লেবীয়গণ ব্যতিরেকে আর কাহাকেও সদাপ্রভুর গৃহে প্রবেশ করিতে দিও না; উহারা পবিত্র, এই জন্য প্রবেশ করিবে; কিন্তু অন্য সমস্ত লোক সদাপ্রভুর রক্ষণীয় দ্রব্য রক্ষা করিবে। আর লেবীয়েরা প্রত্যেক জন স্ব স্ব হস্তে অস্ত্র লইয়া রাজাকে বেষ্টন করিবে, আর যে কেহ গৃহে প্রবেশ করিবে, সে হত হইবে; এবং রাজা যখন ভিতরে আইসেন, কিম্বা বাহিরে যান, তখন তোমরা তাঁহার সঙ্গে থাকিবে। পরে যিহোয়াদা যাজক যাহা যাহা আজ্ঞা করিলেন, লেবীয়েরা ও সমস্ত যিহূদা তদনুসারে সকলই করিল; ফলতঃ তাহারা প্রত্যেক জন আপন আপন লোকদিগকে, যাহারা বিশ্রামবারে ভিতরে যায় বা বিশ্রামবারে বাহিরে আইসে, তাহাদিগকে লইল, কেননা যিহোয়াদা যাজক পালা সকল বিদায় করেন নাই। আর দায়ূদ রাজার যে বড়শা, ঢাল ও চর্ম্ম ঈশ্বরের গৃহে ছিল, যিহোয়াদা যাজক তাহা শতপতিদিগকে দিলেন। আর তিনি সমস্ত লোককে স্থাপন করিলেন, প্রত্যেক জন স্ব স্ব হস্তে অস্ত্র লইয়া গৃহের দক্ষিণ পার্শ্ব অবধি গৃহের বাম পার্শ্ব পর্য্যন্ত যজ্ঞবেদির ও গৃহের নিকটে রাজার চারিদিকে দাঁড়াইল। পরে তাঁহারা রাজপুত্রকে বাহিরে আনিয়া তাঁহার মস্তকে মুকুট দিলেন, ও তাহাঁকে সাক্ষ্যপুস্তক দিলেন, এবং তাঁহাকে রাজা করিলেন, আর যিহোয়াদা ও তাঁহার পুত্রগণ তাঁহাকে অভিষেক করিলেন; পরে তাঁহারা কহিলেন, রাজা চিরজীবী হউন। আর লোকেরা দৌড়াদৌড়ি করিয়া রাজার প্রশংসা করিলে অথলিয়া সেই কোলাহল শুনিয়া সদাপ্রভুর গৃহে লোকদের নিকটে আসিল; আর দৃষ্টিপাত করিল, আর দেখ, প্রবেশ-স্থানে রাজা আপন মঞ্চের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন, এবং সেনাপতিগণ ও তূরীবাদকগণ রাজার নিকটে আছে, এবং দেশের সমস্ত লোক আনন্দ করিতেছে ও তূরী বাজাইতেছে, এবং গায়কেরা বাদ্য যন্ত্র লইয়া প্রশংসার গীত গান করিতেছে; তখন অথলিয়া আপনার বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিল, রাজদ্রোহ! রাজদ্রোহ! কিন্তু যিহোয়াদা যাজক সৈন্যদলের উপরে নিযুক্ত শতপতিদিগকে বাহিরে আনিয়া কহিলেন, উহাকে বাহির করিয়া দুই শ্রেণীর মধ্য দিয়া লইয়া যাও; আর যে উহার পশ্চাতে যাইবে, সে খড়্‌গ দ্বারা নিহত হউক; কারণ যাজক বলিয়াছিলেন, সদাপ্রভুর গৃহমধ্যে উহাকে বধ করিও না। পরে লোকেরা তাঁহার জন্য দুই পঙ্‌ক্তি হইয়া পথ ছাড়িলে সে রাজবাটীর অশ্বদ্বারের প্রবেশস্থানে গেল; সেই স্থানে তাহারা তাহাকে বধ করিল। আর যিহোয়াদা আপনার এবং সমস্ত লোকের ও রাজার মধ্যে এক নিয়ম করিলেন, যেন তাহারা সদাপ্রভুর প্রজা হয়। পরে সমস্ত লোক বালের গৃহে গিয়া তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিল, তাহার যজ্ঞবেদি ও প্রতিমা সকল চূর্ণ করিল, এবং বেদি সকলের সম্মুখে বালের যাজক মত্তনকে বধ করিল। আর দায়ূদের বিধানমতে আনন্দ ও গানের সহিত মোশির ব্যবস্থার লিখনানুসারে সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোম করিতে দায়ূদ যে লেবীয় যাজকদিগকে বিভাগপূর্ব্বক নিরূপণ করিয়াছিলেন, তাহাদের হস্তে যিহোয়াদা সদাপ্রভুর গৃহের তত্ত্বাবধানের ভার দিলেন। আর কোন প্রকার অশুচি লোক যেন প্রবেশ না করে, এই জন্য তিনি সদাপ্রভুর গৃহের সকল দ্বারে দ্বারপালদিগকে নিযুক্ত করিলেন। পরে তিনি শতপতিদিগকে, কুলীনবর্গকে, লোকদের শাসনকর্ত্তাদিগকে ও দেশের সমস্ত লোককে সঙ্গে লইলেন, তাঁহারা সদাপ্রভুর গৃহ হইতে রাজাকে নামাইয়া আনিলেন; পরে তাঁহারা উচ্চতর দ্বার দিয়া রাজবাটীতে প্রবেশ করিয়া রাজসিংহাসনে রাজাকে বসাইয়া দিলেন। তখন দেশের সমস্ত লোক আনন্দ করিল, এবং নগর সুস্থির হইল; আর অথলিয়াকে তাঁহারা খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়াছিল। যোয়াশ সাত বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে চল্লিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম সিবিয়া, তিনি বের্‌-শেবানিবাসিনী। যিহোয়াদা যাজকের সমস্ত জীবনকালে যোয়াশ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা নায্য, তাহাই করিতেন। আর যিহোয়াদা তাঁহার দুইটী বিবাহ দিলেন; আর তিনি পুত্র কন্যার জন্ম দিলেন। তৎপরে সদাপ্রভুর গৃহ সারাইতে যোয়াশের মনোরথ হইল। তাহাতে তিনি যাজকদিগকে ও লেবীয়দিগকে একত্র করিয়া কহিলেন, তোমরা যিহূদার নগরে নগরে গমন কর, এবং বৎসর বৎসর আপন ঈশ্বরের গৃহ মেরামৎ করিবার জন্য সমস্ত ইস্রায়েলের নিকট হইতে রৌপ্য সংগ্রহ কর; এই কার্য্য শীঘ্রই কর। কিন্তু লেবীয়েরা তাহা শীঘ্র করিল না। পরে রাজা প্রধান [যাজক] যিহোয়াদাকে ডাকিয়া কহিলেন, সাক্ষ্য-তাম্বুর জন্য ঈশ্বরের দাস মোশি ও ইস্রায়েল-সমাজ দ্বারা যে কর নিরূপিত হইয়াছে, তাহা যিহূদা ও যিরূশালেম হইতে আনিতে আপনি লেবীয়দিগকে কেন বলিয়া দেন নাই? কেননা সেই দুষ্টা স্ত্রী অথলিয়ার পুত্রগণ ঈশ্বরের গৃহ ভগ্ন করিয়াছিল, এবং সদাপ্রভুর গৃহস্থিত সমস্ত পবিত্র বস্তু লইয়া বাল দেবগণের জন্য ব্যয় করিয়াছিল। পরে রাজা আজ্ঞা করিলে তাহারা একটী সিন্দুক নির্ম্মাণ করিয়া সদাপ্রভুর গৃহের দ্বারসমীপে বাহিরে স্থাপন করিল। আর ঈশ্বরের দাস মোশি যে কর প্রান্তরে ইস্রায়েলের দেয় বলিয়া নিরূপণ করিয়াছিলেন, সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাহা আনিবার কথা তাহারা যিহূদা ও যিরূশালেমে ঘোষণা করিল। তাহাতে সমস্ত অধ্যক্ষ ও সমস্ত প্রজা আনন্দপূর্ব্বক তাহা আনিতে লাগিল, এবং যে পর্য্যন্ত না কার্য্য সমাপ্ত হইল, সে পর্য্যন্ত ঐ সিন্দুকে তাহা রাখিত। আর যে সময়ে লেবীয়দের হস্ত দ্বারা সেই সিন্দুক রাজার নিযুক্ত লোকদের কাছে আনীত হইত, তখন তাহার মধ্যে অনেক রৌপ্য দেখা গেলে রাজলেখক এবং প্রধান যাজকের নিযুক্ত এক জন লোক আসিয়া সিন্দুকটী শূন্য করিত, পরে পুনর্ব্বার তুলিয়া স্বস্থানে রাখিত; দিন দিন এইরূপ করাতে তাহারা অনেক রৌপ্য সঞ্চয় করিল। পরে রাজা ও যিহোয়াদা সদাপ্রভুর গৃহ সম্বন্ধীয় কার্য্যসম্পাদকদিগকে তাহা দিতেন; তাহারা সদাপ্রভুর গৃহ সারিবার জন্য গাঁথক ও সূত্রধরদিগকে বেতন দিত; এবং সদাপ্রভুর গৃহ মেরামৎ করিবার জন্য লৌহ ও পিত্তলের কর্ম্মকারীদিগকেও [দিত]। এইরূপে কার্য্যসম্পাদকগণ কর্ম্ম করিলে তাহাদের হস্তে কার্য্য সুসিদ্ধ হইল; আর তাহারা ঈশ্বরের গৃহ সারিয়া পূর্ব্বের মত দৃঢ় করিল। কার্য্য সমাপ্ত করিয়া তাহারা অবশিষ্ট রৌপ্য রাজার ও যিহোয়াদার সম্মুখে আনিত, এবং তদ্দ্বারা সদাপ্রভুর গৃহের জন্য নানা পাত্র, অর্থাৎ পরিচর্য্যার্থক ও হোমীয় পাত্র এবং চমস, আর স্বর্ণময় ও রৌপ্যময় পাত্র নির্ম্মিত হইল। আর তাহারা যিহোয়াদার সমস্ত জীবনকালে সদাপ্রভুর গৃহে নিয়ত হোম করিত। পরে যিহোয়াদা বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইয়া মরিলেন; মরণ সময়ে তাঁহার এক শত ত্রিশ বৎসর বয়স হইয়াছিল। লোকেরা দায়ূদ-নগরে রাজগণের সহিত তাঁহার কবর দিল, কেননা তিনি ইস্রায়েলের মধ্যে, এবং ঈশ্বরের ও তাঁহার গৃহের বিষয়ে সাধুকার্য্য, করিয়াছিলেন। যিহোয়াদার মৃত্যুর পরে যিহূদার অধ্যক্ষগণ আসিয়া রাজার কাছে প্রাণিপাত করিল; তখন রাজা তাহাদেরই কথায় কর্ণপাত করিতে লাগিলেন। পরে তাহারা আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহ ত্যাগ করিয়া আশেরা-মুর্ত্তি ও নানা প্রতিমার পূজা করিতে লাগিল; আর তাহাদের এই দোষ প্রযুক্ত যিহূদার ও যিরূশালেমের উপরে ক্রোধ উপস্থিত হইল। তথাপি সদাপ্রভুর দিকে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিবার জন্য তিনি তাহাদের নিকটে ভাববাদীদিগকে প্রেরণ করিলেন, আর তাঁহারা তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন; কিন্তু লোকেরা কাণ দিতে চাহিল না। পরে ঈশ্বরের আত্মা যিহোয়াদা যাজকের পুত্র সখরিয়ে আবেশ করাতে তিনি লোকদের হইতে উচ্চস্থানে দাঁড়াইয়া তাহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বর এই কথা কহেন, তোমরা কেন সদাপ্রভুর আজ্ঞা লঙ্ঘন করিতেছ? ইহাতে কৃতকার্য্য হইবে না। তোমরা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছ, তিনিও তোমাদিগকে ত্যাগ করিলেন। তাহাতে লোকেরা তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়া রাজার আজ্ঞায় সদাপ্রভুর গৃহের প্রাঙ্গণে তাঁহাকে প্রস্তরাঘাতে বধ করিল। তাঁহার পিতা যিহোয়াদা রাজার প্রতি যে দয়া করিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ না করিয়া যোয়াশ রাজা তাঁহার পুত্রকে্‌ বধ করিলেন; তিনি মরণকালে কহিলেন, সদাপ্রভু দৃষ্টিপাত করিয়া ইহার শোধ লইবেন। পরে বৎসর ফিরিয়া আসিলে অরামের সৈন্যদল যোয়াশের বিরুদ্ধে আসিল। তাহারা যিহূদায় ও যিরূশালেমে আসিয়া লোকদের মধ্যে জনাধ্যক্ষ সকলকে বিনষ্ট করিল, এবং তাহাদের সমস্ত দ্রব্য লুট করিয়া দম্মেশকের রাজার নিকটে পাঠাইয়া দিল। বস্তুতঃ অরামের অল্প লোকবিশিষ্ট সৈন্যদল আসিল, আর সদাপ্রভু তাহাদের হস্তে অতি বৃহৎ সৈন্যদল সমর্পণ করিলেন, কারণ লোকেরা আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছিল। এইরূপে অরামীয়েরা যোয়াশের বিচার সাধন করিল। তাহারা তাঁহাকে অতিশয় রুগ্ন অবস্থায় ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলে পর, তাঁহার দাসেরা যিহোয়াদা যাজকের পুত্রদের রক্তপাত প্রযুক্ত তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়া তাঁহার খট্টার উপরে তাঁহাকে বধ করিল, এবং তিনি মরিলে পর দায়ূদ-নগরে তাঁহার কবর দিল বটে, কিন্তু রাজগণের কবর-স্থানে দিল না। অম্মোনীয়া শিমিয়তের পুত্র সাবদ ও মোয়াবীয়া শিম্রীতের পুত্র যিহোষাবদ, এই দুই জন তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়াছিল। তাঁহার পুত্রদের কথা, তাঁহার বিরুদ্ধে গুরুতর ভাববাণীর কথা ও ঈশ্বরের গৃহ সারাইবার বিবরণ, দেখ, এই সকল বিষয় রাজাদের ইতিহাস-পুস্তকের ব্যাখ্যানগ্রন্থে লিখিত আছে; পরে তাঁহার পুত্র অমৎসিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। অমৎসিয় পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে ঊনত্রিশ বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম যিহোয়দ্দন, তিনি যিরূশালেম-নিবাসিনী। অমৎসিয় সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা নায্য তাহা করিতেন বটে, কিন্তু একাগ্রচিত্তে করিতেন না। পরে রাজ্য তাঁহার হস্তে স্থির হইলে তাঁহার যে দাসেরা তাঁহার পিতা রাজাকে বধ করিয়াছিল, তাহাদিগকে তিনি বধ করিলেন। কিন্তু তিনি তাহাদের সন্তানদিগকে বধ করিলেন না, ব্যবস্থা-গ্রন্থে, মোশির পুস্তকে সদাপ্রভুর যে আজ্ঞা লিখিত আছে, তদনুসারে কার্য্য করিলেন, যথা, সন্তানের জন্য পিতা, কিম্বা পিতার জন্য সন্তান মারা যাইবে না; প্রতিজন আপন আপন পাপ প্রযুক্ত মরিবে। পরে অমৎসিয় যিহূদাকে একত্র করিয়া, সমস্ত যিহূদা ও সমস্ত বিন্যামীন-সম্বন্ধীয় পিতৃকুলানুসারে সহস্রপতি ও শতপতিগণের অধীনে লোকদিগকে দাঁড় করাইলেন, এবং বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লোকদিগকে গণনা করিয়া দেখিলেন, যুদ্ধে গমনযোগ্য তিন লক্ষ মনোনীত লোক, তাহারা বড়শা ও ঢাল ধরিতে সক্ষম। আর তিনি এক শত তালন্ত রৌপ্য বেতন দিয়া ইস্রায়েল হইতে এক লক্ষ বলবান বীর লইলেন। কিন্তু ঈশ্বরের এক জন লোক তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, হে রাজন্‌, ইস্রায়েলের সৈন্য আপনার সঙ্গে না যাউক; কারণ ইস্রায়েলের সঙ্গে, অর্থাৎ সমস্ত ইফ্রয়িম-সন্তানের সঙ্গে সদাপ্রভু থাকেন না। তুমিই গিয়া কার্য্য কর, যুদ্ধার্থে বলবান হও; ঈশ্বর শত্রুর সম্মুখে তোমাকে নিপাত করিবেন, যেহেতু যাহায্য করিতে ও নিপাত করিতে ঈশ্বরের ক্ষমতা আছে। তাহাতে অমৎসিয় ঈশ্বরের লোককে কহিলেন, ভাল, কিন্তু সেই ইস্রায়েলীয় সৈন্যদলকে যে এক শত তালন্ত রৌপ্য দিয়াছি, তাহার জন্য কি করা যায়? ঈশ্বরের লোক কহিলেন, সদাপ্রভু আপনাকে ইহা অপেক্ষা আরও প্রচুর দিতে পারেন। তাহাতে অমৎসিয় তাহাদিগকে অর্থাৎ ইফ্রয়িম হইতে তাঁহার নিকটে আগত সেই সৈন্যদিগকে গৃহে পাঠাইবার জন্য পৃথক্‌ করিলেন; অতএব যিহূদার বিরুদ্ধে তাহাদের ক্রোধ অত্যন্ত প্রজ্বলিত হইল, তাহারা মহা ক্রোধে স্ব স্ব স্থানে ফিরিয়া গেল। পরে অমৎসিয় আপনাকে বলবান করিলেন, এবং আপন লোকদিগকে বাহির করিয়া লবণোপত্যকায় গিয়া সেয়ীর-সন্তানদের দশ সহস্র লোককে বধ করিলেন। আর যিহূদার সন্তানগণ তাহাদের দশ সহস্র জীবিত লোককে বন্দি করিয়া লইয়া গেল, এবং তাহাদিগকে শৈলশিখরে উপস্থিত করিয়া শৈলশিখর হইতে নীচে ফেলিয়া দিল, তাহাতে তাহারা সকলে চুর্ণ হইয়া গেল। কিন্তু অমৎসিয় আপনার সঙ্গে যুদ্ধযাত্রা করিতে না দিয়া যে সৈন্যদল ফিরিয়া পাঠাইয়াছিলেন, সেই দলের লোকেরা শমরিয়া অবধি বৈৎহোরোণ পর্য্যন্ত যিহূদার নগর সকল আক্রমণ করিয়া তাহাদের তিন সহস্র লোককে আঘাত করিল, এবং প্রচুর লুটদ্রব্য গ্রহণ করিল। ইদোমীয়দিগকে সংহার করিয়া ফিরিয়া আসিবার পর অমৎসিয় সেয়ীর-সন্তানগণের দেবগণকে সঙ্গে করিয়া আনিলেন, আপনার দেবতা বলিয়া তাহাদিগকে স্থাপন করিলেন, এবং তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিতে ও তাহাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইতে লাগিলেন। তাহাতে অমৎসিয়ের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, তিনি তাঁহার নিকটে এক জন ভাববাদীকে পাঠাইলেন; ভাববাদী তাঁহাকে কহিলেন, ঐ লোকদের যে দেবগণ আপনার হস্ত হইতে আপন প্রজাদিগকে উদ্ধার করে নাই, আপনি তাহাদের অন্বেষণ কেন করিয়াছেন? তিনি এই কথা কহিলে রাজা তাঁহাকে কহিলেন, আমরা কি তোমাকে রাজমন্ত্রিপদে নিযুক্ত করিয়াছি? ক্ষান্ত হও, কেন মার খাইবে? তখন সেই ভাববাদী ক্ষান্ত হইলেন, তথাপি কহিলেন, আমি জানি, ঈশ্বর আপনাকে বিনষ্ট করিবার সঙ্কল্প করিয়াছেন, কেননা আপনি এই কার্য্য করিয়াছেন, আর আমার পরামর্শে কাণ দেন নাই। পরে যিহূদার অমৎসিয় রাজা মন্ত্রণা গ্রহণ করিয়া যেহূর পৌত্র যিহোয়াহসের পুত্র ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশের নিকটে বলিয়া পাঠাইলেন, আইস, আমরা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করি। তখন ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশ যিহূদা-রাজ অমৎসিয়ের নিকটে লোক পাঠাইয়া কহিলেন, লিবানোনস্থ শিয়ালকাঁটা লিবানোনস্থ এরস বৃক্ষের নিকটে বলিয়া পাঠাইল, আমার পুত্রের সহিত তোমার কন্যার বিবাহ দেও; ইতিমধ্যে লিবানোনস্থ এক বন্য পশু চলিতে চলিতে সেই শিয়ালকাঁটা দলাইয়া ফেলিল। তুমি কহিতেছ, দেখ, আমি ইদোমকে আঘাত করিয়াছি; এই জন্য দর্প করিতে তোমার চিত্ত গর্ব্বিত হইয়াছে; তুমি এখন ঘরে বসিয়া থাক, অমঙ্গলের সহিত বিরোধ করিতে কেন প্রবৃত্ত হইবে? এবং তুমি ও যিহূদা, উভয়ে কেন পতিত হইবে? কিন্তু অমৎসিয় কথা শুনিলেন না, কারণ লোকেরা ইদোমীয় দেবগণের অন্বেষণ করিয়াছিল বলিয়া তাহারা যেন শত্রুহস্তগত হয়, তজ্জন্য ঈশ্বর হইতে এই ঘটনা হইল। পরে ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশ যুদ্ধযাত্রা করিলেন, এবং যিহূদার অধিকারস্থ বৈৎ-শেমশে তিনি ও যিহূদার অমৎসিয় রাজা পরস্পর মুখ দেখাদেখি করিলেন। তখন ইস্রায়েলের সম্মুখে যিহূদা পরাজিত হইল, আর প্রত্যেক জন আপন আপন তাম্বুতে পলায়ন করিল। আর ইস্রায়েল-রাজ যোয়াশ বৈৎ-শেমশে যিহোয়াহসের পৌত্র যোয়াশের পুত্র যিহূদা-রাজ অমৎসিয়কে ধরিয়া লইয়া যিরূশালেমে আনিলেন, এবং ইফ্রয়িমের দ্বার হইতে কোণের দ্বার পর্য্যন্ত যিরূশালেমের চারি শত হস্ত প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। আর ঈশ্বরের গৃহে ওবেদ-ইদোমের অধীনে যে সকল স্বর্ণ, রৌপ্য ও পাত্র পাওয়া গিয়াছিল, সে সমস্ত এবং রাজবাটীর ধন সম্পত্তি ও বন্ধকরূপে কতকগুলি মনুষ্যকে লইয়া শমরিয়াতে ফিরিয়া গেলেন। ইস্রায়েল-রাজ যিহোয়াহসের পুত্র যোয়াশের মৃত্যুর পরে যিহূদা-রাজ যোয়াশের পুত্র অমৎসিয় আর পনের বৎসর জীবিত থাকিলেন। অমৎসিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত, দেখ, যিহূদার ও ইস্রায়েলের রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে কি লিখিত নাই? অমৎসিয় সদাপ্রভুর অনুগমন হইতে বিমুখ হইলে পর লোকেরা যিরূশালেমে তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিল, তাহাতে তিনি লাখীশে পলায়ন করিলেন; কিন্তু তাহারা তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে লাখীশে লোক পাঠাইয়া সেখানে তাঁহাকে বধ করাইল। পরে অশ্বপৃষ্ঠে করিয়া তাঁহাকে আনিয়া যিহূদার নগরে তাঁহার পিতৃলোকদের সহিত তাঁহার কবর দিল। আর যিহূদার সমস্ত লোক ষোড়শ বৎসর বয়স্ক উষিয়কে লইয়া তাঁহার পিতা অমৎসিয়ের পদে রাজা করিল। রাজা [অমৎসিয়] আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলে পর তিনি এলৎ [নগর] গাঁথিলেন, এবং তাহা পুনর্ব্বার যিহূদার অধীন করিলেন। উষিয় ষোড়শ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে বাহান্ন বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম যিখলিয়া, তিনি যিরূশালেম-নিবাসিনী। উষিয় আপন পিতা অমৎসিয়ের সমস্ত কার্য্যানুসারে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা নায্য তাহা করিতেন। আর ঈশ্বরীয় দর্শনে বুদ্ধিমান যে সখরিয়, তাঁহার জীবনকালে তিনি ঈশ্বরের অন্বেষণ করিতে থাকিলেন; আর যত কাল সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিলেন, তত কাল ঈশ্বর তাঁহাকে কৃতকার্য্য করিলেন। আর তিনি যাত্রা করিয়া পলেষ্টিয়দের সহিত যুদ্ধ করিলেন, এবং গাতের প্রাচীর, যব্‌নির প্রাচীর ও অস্‌দোদের প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, এবং অস্‌দোদ অঞ্চলে ও পলেষ্টীয়দের মধ্যে কতকগুলি নগর নির্ম্মাণ করিলেন। আর ঈশ্বর পলেষ্টীয়দের, গূরবাল-নিবাসী আরবীয়দের ও মিয়ূনীয়দের বিরুদ্ধে তাঁহার সাহায্য করিলেন। আর অম্মোনীয়েরা উষিয়কে উপঢৌকন দিল, এবং তাঁহার নাম মিসরের সীমা পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত হইল; কারণ তিনি অতিশয় শক্তিমান্‌ হইলেন। আর উষিয় যিরূশালেমের কোণের দ্বারে, উপত্যকার দ্বারে ও প্রাচীরের কোণে উচ্চ গৃহ গাঁথিয়া দৃঢ় করিলেন। আর তিনি প্রান্তরে কতকগুলি উচ্চ গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন ও অনেক কূপ খুদিলেন, কেননা তাঁহার যথেষ্ট পশু-ধন ছিল, নিম্নদেশে ও সমভূমিতেও তাহাই করিলেন; এবং পর্ব্বতে ও উর্ব্বর ক্ষেত্র-সমূহে তাঁহার কৃষকগণ ও দ্রাক্ষাকৃষকগণ ছিল; কারণ তিনি কৃষিকর্ম্ম ভালবাসিতেন। আবার উষিয়ের যুদ্ধকারী সৈন্য-সামন্ত ছিল; রাজার হনানীয় নামক এক জন সেনাপতির অধীনে যিয়ূয়েল লেখকের ও মাসের অধ্যক্ষের হস্তলিখিত সংখ্যানুসারে তাহারা দলে দলে যুদ্ধযাত্রা করিত। পিতৃকুলপতি, বলবান বীর সর্ব্বশুদ্ধ দুই সহস্র ছয় শত জন ছিল। আর তাহাদের অধীনে সৈন্যবল, শত্রুর বিরুদ্ধে রাজার সাহায্য করণার্থে বীরপরাক্রমে যুদ্ধকারী তিন লক্ষ সাত সহস্র পাঁচ শত লোক ছিল। উষিয় সেই সকল সৈন্যের নিমিত্ত ঢাল, বড়শা, শিরস্ত্রাণ, বর্ম্ম ও ধনুক এবং ফিঙ্গার প্রস্তর প্রস্তুত করিলেন। আর যিরূশালেমে তিনি শিল্পীদের কল্পনাকৃত যন্ত্র প্রস্তুত করাইয়া তদ্দ্বারা বাণ ও বড় বড় প্রস্তর নিক্ষেপ করণার্থে দুর্গ সকলের পৃষ্ঠে ও প্রাচীরের চূড়াতে তাহা স্থাপন করিলেন। আর তাঁহার নাম দূরদেশে ব্যাপ্ত হইল, কারণ তিনি আশ্চর্য্য সাহায্য প্রাপ্ত হইয়া অতীব শক্তিমান্‌ হইয়া উঠিলেন। কিন্তু শক্তিমান্‌ হইলে পর তাঁহার মন উদ্ধত হইল, তিনি দুরাচরণ করিলেন, আর তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিলেন; কেননা তিনি ধূপবেদির উপরে ধূপ জ্বালাইতে সদাপ্রভুর মন্দিরে প্রবেশ করিলেন। তাহাতে অসরিয় যাজক ও তাঁহার সহিত সদাপ্রভুর আশী জন বীর্য্যবান্‌ যাজক তাঁহার পশ্চাতে প্রবেশ করিলেন। তাঁহারা উষিয় রাজার সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাঁহাকে কহিলেন, হে উষিয়, সদাপ্রভুর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইতে আপনার অধিকার নাই, কিন্তু হারোণ-সন্তান যে যাজকেরা ধূপ জ্বালাইবার জন্য পবিত্রীকৃত হইয়াছে, তাহাদেরই অধিকার আছে; আপনি ধর্ম্মধাম হইতে বাহির হউন, কেননা আপনি সত্যলঙ্ঘন করিয়াছেন, এ বিষয়ে সদাপ্রভু ঈশ্বর হইতে আপনার গৌরব হইবে না। তখন উষিয় কোপান্বিত হইলেন, আর ধূপ জ্বালাইবার জন্য তাঁহার হস্তে এক ধূনাচি ছিল; কিন্তু তিনি যাজকদের প্রতি কোপাবিষ্ট থাকিতেই সদাপ্রভুর গৃহে যাজকদের সাক্ষাতে ধূপবেদির সমীপে তাঁহার কপালে কুষ্ঠরোগ উদয় হইল। তখন প্রধান যাজক অসরিয় এবং অন্য সকল যাজক তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, তাঁহার কপালে কুষ্ঠ হইয়াছে; তখন তাঁহারা তাঁহাকে বেগে তথা হইতে দূর করিয়া দিলেন, এমন কি, তিনি আপনিও বাহিরে যাইতে ত্বরান্বিত হইলেন, কেননা সদাপ্রভু তাঁহাকে আঘাত করিয়াছিলেন। আর উষিয় রাজা মরণ দিন পর্য্যন্ত কুষ্ঠরোগী হইয়া রহিলেন; কুষ্ঠী হওয়াতে তিনি স্বতন্ত্র গৃহে বাস করিলেন, কেননা তিনি সদাপ্রভুর গৃহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছিলেন; তাহাতে তাঁহার পুত্র যোথম রাজবাটীর কর্ত্তা হইয়া দেশের লোকদের শাসন করিতে লাগিলেন। উষিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত আমোসের পুত্র যিশাইয় ভাববাদী লিখিয়াছেন। পরে উষিয় আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলে লোকেরা তাঁহার পিতৃলোকদের সহিত রাজাদের কবর-স্থানের ক্ষেত্রে তাঁহার কবর দিল, কারণ তাহারা কহিল, তিনি কুষ্ঠী। পরে তাঁহার পুত্র যোথম তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যোথম পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে ষোল বৎসর রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম যিরূশা, তিনি সাদোকের কন্যা। যোথম আপন পিতা উষিয়ের সমস্ত কার্য্যানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা নায্য তাহা করিতেন, কিন্তু সদাপ্রভুর মন্দিরে যাইতেন না; এবং লোকেরা তৎকালেও দুরাচরণ করিত। তিনি সদাপ্রভুর গৃহের উচ্চতর দ্বার গাঁথাইলেন, এবং ওফলের ভিত্তির অনেক স্থান গাঁথাইলেন; আর তিনি যিহূদার পর্ব্বতময় প্রদেশের নানা স্থানে নগর এবং নানা বনে গড় ও দুর্গ নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি অম্মোন-সন্তানগণের রাজার সহিত যুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে জয় করিলেন; তাহাতে অম্মোন-সন্তানগণ সেই বৎসরে তাঁহাকে এক শত তালন্ত রৌপ্য, দশ সহস্র কোর গোম ও দশ সহস্র [কোর] যব দিল; এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৎসরেও অম্মোন-সন্তানগণ তাঁহাকে তত দিল। এইরূপে যোথম শক্তিমান্‌ হইলেন, কেননা তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আপন পথ ব্যবস্থিত করিয়াছিলেন। যোথমের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, তাঁহার সমস্ত যুদ্ধ ও চরিত্র, দেখ, ইস্রায়েলের ও যিহূদার রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। তিনি পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে ষোল বৎসর রাজত্ব করেন। পরে যোথম আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলে লোকেরা তাঁহাকে দায়ূদ-নগরে কবর দিল, এবং তাঁহার পুত্র আহস তাঁহার পদে রাজা হইলেন। আহস বিংশতি বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে ষোল বৎসর কাল রাজত্ব করেন; তিনি আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের ন্যায় সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য তাহা করিতেন না; কিন্তু ইস্রায়েলের রাজাদের পথে চলিতেন, আর বাল দেবগণের উদ্দেশে ছাঁচে ঢালা প্রতিমা নির্ম্মাণ করাইলেন। আর তিনি হিন্নোমের পুত্রের উপত্যকাতে ধূপ জ্বালাইতেন, এবং সদাপ্রভুর ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখ হইতে যে জাতিগণকে অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন, তাহাদের ঘৃণিত ক্রিয়ানুসারে তিনি আপন সন্তানদিগকে অগ্নিতে দগ্ধ করিলেন। আর তিনি নানা উচ্চস্থলীতে, নানা পাহাড়ের উপরে ও প্রত্যেক হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে বলিদান করিতেন ও ধূপ জ্বালাইতেন। অতএব তাঁহার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁহাকে অরামরাজের হস্তে সমর্পণ করিলেন, তাহাতে অরামীয়েরা তাঁহাকে পরাজয় করিল, এবং তাঁহার অনেক লোককে বন্দি করিয়া দম্মেশকে লইয়া গেল। আবার তিনি ইস্রায়েলের রাজার হস্তেও সমর্পিত হইলেন, ইনিও মহাসংহারে তাঁহাকে পরাজয় করিলেন। কারণ রমলিয়ের পুত্র পেকহ যিহূদায় এক লক্ষ বিংশতি সহস্র বীর্য্যবান্‌ লোককে এক দিনে বধ করিলেন, যেহেতু তাহারা আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছিল। আর সিখ্রি নামে এক জন ইফ্রয়িমীয় বিক্রমশালী লোক রাজার পুত্র মাসেয়কে, বাটীর অধ্যক্ষ অস্রীকামকে ও রাজার প্রধান অমাত্য ইল্কানাকে বধ করিল। আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের ভ্রাতৃগণের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, দুই লক্ষ প্রাণীকে বন্দি করিয়া লইয়া গেল, এবং তাহাদের অনেক দ্রব্যও লুট করিল, আর সেই সকল লুটিত বস্তু শমরিয়াতে লইয়া গেল। কিন্তু তথায় ওদেদ নামে সদাপ্রভুর এক জন ভাববাদী ছিলেন; তিনি শমরিয়াতে প্রত্যাগত সৈন্যসামন্তের সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হইয়া তাহাদিগকে কহিলেন, দেখ, তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যিহূদার উপরে ক্রুদ্ধ হওয়াতে তোমাদের হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিয়াছেন, আর তোমরা গগনস্পর্শী ক্রোধাগ্নি দ্বারা তাহাদিগকে বধ করিয়াছ। আর এখন যিহূদার ও যিরূশালেমের লোকদিগকে আপনাদের দাস দাসী করিয়া বশে রাখিবার মানস করিতেছ; কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তোমাদের নিজেরও কি দোষ নাই? অতএব এখন আমার কথা শুন; তোমরা আপনাদের ভ্রাতৃগণ হইতে যাহাদিগকে বন্দি করিয়া আনিয়াছ, তাহাদিগকে ফিরিয়া পাঠাইয়া দেও; কেননা সদাপ্রভুর প্রচণ্ড ক্রোধ তোমাদের উপরে রহিয়াছে। তখন ইফ্রয়িম-সন্তানগণের মধ্যে কয়েক জন প্রধান লোক, অর্থাৎ যিহোহাননের পুত্র অসরিয়, মশিল্লেমোতের পুত্র বেরিখিয়, শল্লুমের পুত্র যিহিষ্কিয় ও হদ্‌লয়ের পুত্র অমাসা যুদ্ধযাত্রা হইতে প্রত্যাগত লোকদের বিপক্ষে উঠিলেন, এবং তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা বন্দিদিগকে এ স্থানে আনিও না; কেননা আমাদের পাপ ও দোষ সকলের উপরে, তোমরা সদাপ্রভুর নিকটে আমাদিগকে [আরও] দোষগ্রস্ত করিতে মানস করিতেছ; আমাদের ত মহাদোষ হইয়াছে, ও ইস্রায়েলের উপরে সদাপ্রভুর প্রচণ্ড ক্রোধ রহিয়াছে। তখন অস্ত্রধারী লোকেরা সেই বন্দিদিগকে ও লুঠিত বস্তু সকল অধ্যক্ষদের ও সমস্ত সমাজের সম্মুখে রাখিল। পরে উপরি উক্ত নাম বিশিষ্ট পুরুষেরা উঠিয়া বন্দিদিগকে লইয়া লুটিত বস্তু দ্বারা, তাহাদের মধ্যে যাহারা উলঙ্গ ছিল, সকলকে পরিচ্ছন্ন করিলেন, তাহাদের গাত্রে বস্ত্র ও পায়ে পাদুকা দিলেন, তাহাদিগকে ভোজন পান করাইলেন, তাহাদের গাত্রে তৈল মর্দ্দন করাইলেন, এবং অসমর্থ সকলকে গর্দ্দভে চড়াইয়া খর্জ্জুরপুর যিরীহোতে তাহাদের ভ্রাতাদের নিকটে তাহাদিগকে লইয়া গেলেন; পরে আপনারা শমরিয়াতে ফিরিয়া গেলেন। ঐ সময়ে আহস রাজা সাহায্য প্রার্থনা করিতে অশূর-রাজগণের নিকটে লোক পাঠাইলেন। কারণ ইদোমীয়েরা পুনর্ব্বার আসিয়া যিহূদাকে আঘাত করিয়া অনেক লোক বন্দি করিয়া লইয়া গিয়াছিল। আর পলেষ্টীয়েরা নিম্নভূমির ও যিহূদার দক্ষিণাঞ্চলের নগর সকল আক্রমণ করিয়া বৈৎশেমশ, অয়ালোন, গদেরোৎ, সোখো ও তাহার উপনগরগুলি, তিম্না ও তাহার উপনগরগুলি, এবং গিম্‌সো ও তাহার উপনগরগুলি হস্তগত করিয়া সেই সকল স্থানে বসতি করিয়াছিল। কেননা ইস্রায়েল-রাজ আহসের জন্য সদাপ্রভু যিহূদাকে নত করিলেন, কারণ তিনি যিহূদায় স্বেচ্ছাচার এবং সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে নিতান্তই সত্যলঙ্ঘন করিয়াছিলেন। আর অশূর-রাজ তিল্‌গৎ-পিল্‌নেষর তাঁহার নিকটে আসিলেন বটে, কিন্তু তাঁহার বলবৃদ্ধি না করিয়া তাঁহাকে ক্লেশ দিলেন। বস্তুতঃ আহস সদাপ্রভুর গৃহের, রাজবাটীর ও অধ্যক্ষদের কতক ধন লইয়া অশূর-রাজকে দিলেও তাঁহার কিছু সাহায্য হইল না। আর ক্লেশের সময়ে তিনি, সেই আহস রাজা, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে আরও সত্যলঙ্ঘন করিলেন। কারণ দম্মেশকের যে দেবগণ তাঁহাকে আঘাত করিয়াছিল, তিনি তাহাদের উদ্দেশে বলিদান করিলেন; আর কহিলেন, অরামীয় রাজাদের দেবগণই তাঁহাদের সাহায্য করেন, অতএব আমি তাঁহাদেরই উদ্দেশে বলিদান করিব, তাহাতে তাঁহারা আমারও সাহায্য করিবেন। কিন্তু তাহারাই তাঁহার ও সমস্ত ইস্রায়েলের বিনাশের কারণ হইল। পরে আহস ঈশ্বরের গৃহের পাত্র সকল একত্র করিলেন, ঈশ্বরের গৃহের সেই সকল পাত্র কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করিলেন, সদাপ্রভুর গৃহের কবাট সকল রুদ্ধ করিলেন, এবং যিরূশালেমের প্রত্যেক কোণে আপনার জন্য যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি অন্য দেবগণের উদ্দেশে ধূপ-জ্বালাইবার নিমিত্ত যিহূদার প্রত্যেক নগরে উচ্চস্থলী নির্ম্মাণ করিলেন; এইরূপে তিনি আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করিলেন। তাঁহার অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও আদ্যোপান্ত সমস্ত চরিত্র, দেখ, যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। পরে আহস আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, আর লোকেরা তাঁহাকে নগরে অর্থাৎ যিরূশালেমে কবর দিল, ইস্রায়েল-রাজগণের কবরে লইয়া যায় নাই; পরে তাঁহার পুত্র হিষ্কিয় তাঁহার পদে রাজা হইলেন। হিষ্কিয় পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং ঊনত্রিশ বৎসর কাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম অবিয়া, তিনি সখরিয়ের কন্যা। হিষ্কিয় আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের সমস্ত কার্য্যানুসারে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য তাহাই করিতেন। তিনি আপন রাজত্বের প্রথম বৎসরের প্রথম মাসে সদাপ্রভুর গৃহের কবাট সকল খুলিলেন, এবং মেরামৎ করিলেন। আর তিনি যাজক ও লেবীয়দিগকে আনাইয়া পূর্ব্বদিকের চকে একত্র করিয়া কহিলেন, হে লেবীয়েরা, আমার বাক্য শুন; তোমরা এখন আপনাদিগকে পবিত্র কর ও আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহ পবিত্র কর, এবং পবিত্র স্থান হইতে অশৌচ দূর করিয়া দেও। কেননা আমাদের পিতৃপুরুষেরা সত্যলঙ্ঘন করিয়াছেন ও আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিয়াছেন, আর তাঁহাকে ত্যাগ করিয়াছেন ও সদাপ্রভুর আবাস হইতে পরাঙ্মুখ হইয়া তাঁহার দিকে পৃষ্ঠদেশ ফিরাইয়াছেন। আর তাঁহারা বারাণ্ডার কবাট সকল বদ্ধ করিয়াছেন, এবং প্রদীপ সকল নির্ব্বাণ করিয়াছেন, ও পবিত্র স্থানে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের উদ্দেশে ধূপদাহ ও হোম করেন নাই। এই জন্য যিহূদার ও যিরূশালেমের উপরে সদাপ্রভুর ক্রোধ বর্ত্তিল; তাই তোমরা স্বচক্ষে দেখিতেছ যে, তিনি তাহাদিগকে ভাসিয়া বেড়াইবার, বিস্ময়ের ও শীস শব্দের পাত্র হইবার জন্য সমর্পণ করিয়াছেন। আর দেখ, সেই জন্য আমাদের পিতারা খড়্‌গে পতিত হইয়াছেন, এবং আমাদের পুত্রেরা, আমাদের কন্যারা, আমাদের ভার্য্যারা বন্দি হইয়া রহিয়াছে। অতএব আমাদের হইতে তাঁহার প্রচণ্ড ক্রোধ যেন নিবৃত্ত হয়, এই জন্য আমরা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সহিত নিয়ম স্থাপন করিব, ইহাই এখন আমার মনোরথ। হে আমার বৎসগণ, তোমরা এখন শিথিল হইও না, কেননা তোমরা যেন সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাঁহার পরিচর্য্যা কর, এবং তাঁহার পরিচারক ও ধূপদাহক হও, এই নিমিত্ত তিনি তোমাদিগকেই মনোনীত করিয়াছেন। তখন লেবীয়েরা উঠিল—কহাতীয়দের সন্তানগণের মধ্যে অমাসয়ের পুত্র মাহৎ ও অসরিয়ের পুত্র যোয়েল, মরারির সন্তানগণের মধ্যে অব্দির পুত্র কীশ ও যিহলিলেলের পুত্র অসরিয়, গের্শোনীয়দের মধ্যে সিম্মের পুত্র যোয়াহ ও যোয়াহের পুত্র এদন, ইলীষাফণের সন্তানদের মধ্যে শিম্রি ও যিয়ূয়েল, আর আসফের সন্তানদের মধ্যে সখরিয় ও মত্তনিয়, হেমনের সন্তানদের মধ্যে যিহূয়েল ও শিমিয়ি, এবং যিদূথূনের সন্তানদের মধ্যে শময়িয় ও উষীয়েল— এই সকল লোক আপনাদের ভ্রাতৃগণকে একত্র করিয়া আপনাদিগকে পবিত্র করিল, এবং সদাপ্রভুর বাক্যমতে রাজাজ্ঞানুসারে সদাপ্রভুর গৃহ শুচি করিতে আসিল। যাজকেরা শুচি করণার্থে সদাপ্রভুর গৃহের ভিতরে গিয়া, সদাপ্রভুর মন্দিরের মধ্যে যে সকল অশৌচ পাইল, সে সমস্ত বাহির করিয়া সদাপ্রভুর গৃহের প্রাঙ্গণে আনিয়া ফেলিল; পরে লেবীয়েরা বাহিরে কিদ্রোণ স্রোতে লইয়া যাইবার জন্য তাহা সংগ্রহ করিল। তাহারা প্রথম মাসের প্রথম দিনে পবিত্র করিতে আরম্ভ করিয়া মাসের অষ্টম দিনে সদাপ্রভুর বারাণ্ডাতে আসিল; আর আট দিনের মধ্যে সদাপ্রভুর গৃহ পবিত্র করিল, এবং প্রথম মাসের ষোড়শ দিবসে তাহা সাঙ্গ করিল। পরে তাহারা রাজবাটীতে হিষ্কিয় রাজার কাছে গিয়া কহিল, আমরা সদাপ্রভুর সমগ্র গৃহ এবং হোমবেদি ও তাহার পাত্র সকল, দর্শন-রুটীর মেজ ও তাহার পাত্র সকল শুচি করিয়াছি। আর আহস রাজা আপনার রাজত্বকালে সত্যলঙ্ঘন করিয়া যে সকল পাত্র ফেলিয়া দিয়াছিলেন, সে সকল আমরা প্রস্তুত করিয়া পবিত্র করিয়াছি; দেখুন, সে সমস্ত সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির সম্মুখে রহিয়াছে। পরে হিষ্কিয় রাজা প্রত্যূষে উঠিয়া নগরাধ্যক্ষদিগকে একত্র করিয়া সদাপ্রভুর গৃহে গেলেন। আর তাঁহারা রাজ্যের ধর্ম্মধামের ও যিহূদার জন্য পাপার্থক বলিরূপে সাতটী বৃষ, সাতটী মেষ, সাতটী মেষশাবক ও সাতটী ছাগ উপস্থিত করিলেন। পরে তিনি সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির উপরে হোম করিতে হারোণ-সন্তান-যাজকদিগকে আজ্ঞা করিলেন। অতএব বৃষদিগকে হনন করা হইলে যাজকেরা তাহাদের রক্ত লইয়া বেদির উপরে প্রক্ষেপ করিল, এবং মেষদিগকে হনন করা হইলে তাহাদের রক্ত বেদির উপরে প্রক্ষেপ করিল, এবং মেষশাবকদিগকে হনন করা হইলে তাহাদের রক্ত বেদির উপরে প্রক্ষেপ করিল। পরে পাপার্থক বলি ঐ ছাগ সকল রাজার ও সমাজের সম্মুখে আনীত হইলে তাহারা তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিল। আর যাজকেরা সে সকল হনন করিয়া সমস্ত ইস্রায়েলের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে তাহাদের রক্ত দ্বারা বেদির উপরে পাপার্থক বলি উৎসর্গ করিল, কেননা রাজার আজ্ঞায় সমস্ত ইস্রায়েলের জন্য সেই হোম ও পাপার্থক বলিদান করিতে হইল। আর তিনি দায়ূদের, রাজার দর্শক গাদের ও নাথন ভাববাদীর আজ্ঞানুসারে করতাল, নেবল ও বীণাধারী লেবীয়দিগকে সদাপ্রভুর গৃহে স্থাপন করিলেন, যেহেতু সদাপ্রভু আপন ভাববাদীদের দ্বারা এই আজ্ঞা করিয়াছিলেন। আর লেবীয়েরা দায়ূদের বাদ্যযন্ত্র এবং যাজকেরা তূরী হস্তে করিয়া দাঁড়াইল। পরে হিষ্কিয় বেদিতে হোম করিতে আজ্ঞা করিলেন; আর যখন হোম আরম্ভ হইল, তখন সদাপ্রভুর গানও আরম্ভ হইল, এবং তূরী ও ইস্রায়েল-রাজ দায়ূদের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়া উঠিল। আর হোম সাঙ্গ না হওয়া পর্য্যন্ত সমস্ত সমাজ প্রণিপাত করিল, গায়কেরা গান করিল ও তূরীবাদকেরা তূরী বাজাইল। পরে হোম সাঙ্গ হইলে রাজা ও তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোক হেঁট হইয়া প্রণিপাত করিলেন। পরে হিষ্কিয় রাজা ও অধ্যক্ষগণ দায়ূদের ও আসফ দর্শকের বাক্য দ্বারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রশংসা-গীত গান করিতে লেবীয়দিগকে আজ্ঞা করিলেন। আর তাহারা আনন্দপূর্ব্বক প্রশংসা-গীত গান করিল, এবং মস্তক নমন করিয়া প্রণিপাত করিল। তখন হিষ্কিয় উত্তর করিয়া কহিলেন, এখন সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমাদের হস্তপূরণ হইল; নিকটে আইস, সদাপ্রভুর গৃহে বলি ও স্তবার্থক উপহার উপস্থিত কর। তখন সমাজ বলি ও স্তবার্থক উপহার আনিল ও যত লোকের মনে ইচ্ছা হইল, তাহারা হোমবলি আনিল। সমাজ হোমার্থে যে সকল বলি আনিল, তাহার সংখ্যা এই; সত্তর বৃষ, এক শত মেষ ও দুই শত মেষশাবক, এই সকল সদাপ্রভুর উদ্দেশে দত্ত হোমবলি। আর ছয় শত বৃষ ও তিন সহস্র মেষ পবিত্রীকৃত হইল। কিন্তু যাজকগণ অল্প বলিয়া তাহারা হোমার্থক সকল পশুর চর্ম্ম খুলিতে অসমর্থ হইল; অতএব সেই কার্য্য যাবৎ সাঙ্গ না হয়, এবং যাজকেরা যাবৎ আপনাদিগকে পবিত্র না করে, তাবৎ তাহাদের লেবীয় ভ্রাতৃগণ তাহাদের সাহায্য করিল; কেননা আপনাদিগকে পবিত্র করণে যাজকগণ অপেক্ষা লেবীয়েরা অধিক সরলান্তঃকরণ ছিল। আর মঙ্গলার্থক বলি সকলের মেদ ও হোমবলি সকলের উপযুক্ত পেয় নৈবেদ্যসহ সেই হোমীয় যজ্ঞ প্রচুর হইয়াছিল। এইরূপে সদাপ্রভুর গৃহ সম্বন্ধীয় সেবাকর্ম্ম পরিপাটীক্রমে চলিল। আর ঈশ্বর লোকদের জন্য এমন পারিপাট্য বিধান করিয়াছেন, ইহাতে হিষ্কিয় ও সমস্ত লোক আনন্দ করিলেন; কেননা অকস্মাৎ সেই কার্য্য করা হইয়াছিল। পরে লোকেরা যেন ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিবার জন্য যিরূশালেমে সদাপ্রভুর গৃহে আইসে, এই জন্য হিষ্কিয় ইস্রায়েলের ও যিহূদার সর্ব্বত্র দূত পাঠাইলেন, এবং ইফ্রয়িম ও মনঃশিকেও পত্র লিখিলেন। কারণ রাজা, তাঁহার অধ্যক্ষগণ ও যিরূশালেমস্থ সমস্ত সমাজ দ্বিতীয় মাসে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিতে মন্ত্রণা করিয়াছিলেন; কারণ প্রয়োজন অপেক্ষা অল্প যাজক পবিত্রীকৃত হইয়াছিল, এবং যিরূশালেমে প্রজারা সমাগত হয় নাই, সুতরাং তখনই তাহা পালন করা তাঁহাদের অসাধ্য হইয়াছিল। এই বিষয়টী রাজার ও সমস্ত সমাজের দৃষ্টিতে ন্যায্য বোধ হইল। অতএব লোকেরা যেন যিরূশালেমে আসিয়া ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্ব পালন করে, এই জন্য তাহারা বের্‌-শেবা অবধি দান পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের সর্ব্বত্র ঘোষণা করিতে স্থির করিল, কেননা তাহারা [শাস্ত্রে] লিখিত বিধি অনুসারে বহু সংখ্যায় একত্র হইয়া তাহা পালন করে নাই। পরে ধাবকগণ রাজার ও তাঁহার অধ্যক্ষদের হস্ত হইতে পত্র লইয়া ইস্রায়েলের ও যিহূদার সর্ব্বত্র গমন করিয়া রাজাজ্ঞানুসারে এই কথা কহিল, হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ফির; তাহাতে তোমাদের যে অবশিষ্ট লোকেরা অশূর-রাজগণের হস্ত হইতে রক্ষা পাইয়াছে, তাহাদের প্রতি তিনি ফিরিবেন। তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদের ও ভ্রাতৃগণের সদৃশ হইও না, কেননা তোমরা দেখিতেছ, তাহারা আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করাতে তিনি তাহাদিগকে বিস্ময়ে সমর্পণ করিয়াছেন। এখন তোমাদের পিতৃপুরুষদের ন্যায় তোমরা আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিও না, কিন্তু সদাপ্রভুকে হস্ত দেও, এবং তিনি চিরকালের জন্য যে স্থান পবিত্র করিয়াছেন, তাঁহার সেই ধর্ম্মধামে আসিয়া তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা কর, তাহাতে তাঁহার প্রচণ্ড ক্রোধ তোমাদের হইতে নিবৃত্ত হইবে। কেননা তোমরা যদি পুনর্ব্বার সদাপ্রভুর প্রতি ফির, তবে তোমাদের ভ্রাতৃগণ ও সন্তানগণ যাহাদের দ্বারা বন্দিরূপে নীত হইয়াছে, তাহাদের কাছে কৃপা প্রাপ্ত হইয়া এই দেশে ফিরিয়া আসিতে পারিবে; কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কৃপাময় ও স্নেহশীল; যদি তোমরা তাঁহার প্রতি ফির, তবে তিনি তোমাদের ইহতে মুখ ফিরাইবেন না। ধাবকগণ ইফ্রয়িম ও মনঃশি দেশের নগরে নগরে ও সবূলূন পর্য্যন্ত গেল; কিন্তু লোকেরা তাহাদিগকে পরিহাস ও বিদ্রূপ করিল। তথাপি আশেরের, মনঃশির ও সবূলূনের অনেকগুলি লোক আপনাদিগকে অবনত করিয়া যিরূশালেমে আসিল। আর যিহূদাতেও ঈশ্বরের হস্ত বিদ্যমান হইল, ফলতঃ তিনি তাহাদিগকে এক চিত্ত দিয়া সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে রাজার ও অধ্যক্ষদের আজ্ঞা পালন করিতে প্রবৃত্ত করিলেন। পরে দ্বিতীয় মাসে তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসব পালনার্থে বিস্তর লোক, এক মহাসমাজ, যিরূশালেমে একত্র হইল। আর তাহারা উঠিয়া যিরূশালেমস্থ যজ্ঞবেদি সকল দূর করিল, এবং ধূপদাহের নিমিত্ত পাত্র সকলও দূর করিয়া কিদ্রোণ স্রোতে নিক্ষেপ করিল। পরে দ্বিতীয় মাসের চতুর্দ্দশ দিনে তাহারা নিস্তারপর্ব্বের বলি হনন করিল; আর যাজকেরা ও লেবীয়েরা লজ্জিত হইয়া আপনাদিগকে পবিত্র করিল, এবং সদাপ্রভুর গৃহে হোমবলি উপস্থিত করিল। আর তাহারা ঈশ্বরের লোক মোশির ব্যবস্থানুসারে প্রণালীক্রমে আপন আপন স্থানে দাঁড়াইল, যাজকেরা লেবীয়দের হস্ত হইতে রক্ত লইয়া প্রক্ষেপ করিল। কেননা যাহারা আপনাদিগকে পবিত্র করে নাই, এমন অনেক লোক সমাজের মধ্যে ছিল; অতএব সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র করণার্থে লেবীয়েরা অশুচি সকল লোকের জন্য নিস্তারপর্ব্বের বলিঘাতনকার্য্যে নিযুক্ত হইল। বস্তুতঃ বিস্তর লোক, ইফ্রয়িম, মনঃশি, ইষাখর ও সবূলূন ইহতে [আগত] অনেক লোক, আপনাদিগকে শুচি করে নাই, কিন্তু লিখিত বিধির বিপরীতে নিস্তারপর্ব্বের ভোজ ভোজন করিল। কেননা হিষ্কিয় তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিয়া বলিয়াছিলেন, ধর্ম্মধামের বিধি অনুসারে শুচি না হইলেও যে কেহ ঈশ্বরের অন্বেষণ, আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিবার জন্য আপন অন্তঃকরণ প্রস্তুত করিয়াছে, মঙ্গলময় সদাপ্রভু তাহাকে ক্ষমা করুন। তাহাতে সদাপ্রভু হিষ্কিয়ের বাক্যে কর্ণপাত করিয়া লোকদিগকে সুস্থ করিলেন। এইরূপে যিরূশালেমে উপস্থিত ইস্রায়েল-সন্তানগণ সাত দিন পর্য্যন্ত মহানন্দে তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসব পালন করিল, এবং লেবীয়েরা ও যাজকেরা প্রতিদিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে উচ্চধ্বনির বাদ্য বাজাইয়া সদাপ্রভুর প্রশংসা করিল। আর যে সকল লেবীয় সদাপ্রভুর [সেবাকর্ম্মে] সুদক্ষ ছিল, তাহাদিগকে হিষ্কিয় চিত্ততোষক কথা কহিলেন; এইরূপে তাহারা পর্ব্বের সাত দিন পর্য্যন্ত মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিয়া ভোজন করিল, এবং আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিল। পরে সমস্ত সমাজ আর সাত দিন পালন করিতে পরামর্শ করিল; এবং সেই সাত দিন আনন্দে পালন করিল। বস্তুতঃ যিহূদা-রাজ হিষ্কিয় সমাজকে উপহার জন্য এক সহস্র বৃষ ও সাত সহস্র মেষ দিলেন, এবং অধ্যক্ষেরা সমাজকে এক সহস্র বৃষ ও দশ সহস্র মেষ দিলেন, আর যাজকদের মধ্যে অনেকে আপনাদিগকে পবিত্র করিল। আর যিহূদার সমস্ত সমাজ, যাজকগণ, লেবীয়গণ ও ইস্রায়েল হইতে আগত সমস্ত সমাজ, এবং ইস্রায়েল দেশ হইতে আগত ও যিহূদায় বাসকারী বিদেশী সকলে আনন্দ করিল। এইরূপে যিরূশালেমে বড় আনন্দ হইল; কেননা ইস্রায়েল-রাজ দায়ূদের পুত্র শলোমনের সময়াবধি যিরূশালেমে এই প্রকার হয় নাই। পরে লেবীয় যাজকগণ উঠিয়া লোকদিগকে আশীর্ব্বাদ করিল; এবং তাহাদের রব শুনা গেল, তাহাদের প্রার্থনা তাঁহার পবিত্র বাসস্থান স্বর্গে উপস্থিত হইল। এই সমস্ত সাঙ্গ হইলে পর সেখানে উপস্থিত সমস্ত ইস্রায়েল যিহূদার নগরে নগরে গমন করিয়া স্তম্ভ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল, আশেরা-মূর্ত্তি সকল ছেদন করিল, এবং সমস্ত যিহূদায়, বিন্যামীনে, ইফ্রয়িমে ও মনঃশিতে উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল, নিঃশেষে উৎপাটন করিল; পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ প্রত্যেকে আপন আপন অধিকারে ও নগরে ফিরিয়া গেল। আর হিষ্কিয় হোমার্থক ও মঙ্গলার্থক বলিদান, পরিচর্য্যা, এবং সদাপ্রভুর শিবিরের, দ্বারসমূহে স্তবগান ও প্রসংশা করিতে যাজকদিগকে ও লেবীয়দিগকে পালার অনুক্রমে, প্রত্যেককে স্ব স্ব সেবাকর্ম্ম অনুসারে, নিযুক্ত করিলেন। আর সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় যেমন লেখা আছে, তদনুসারে তিনি হোমের জন্য, প্রাতঃকালীন ও সন্ধ্যাকালীন হোমের জন্য, এবং বিশ্রামবার, অমাবস্যা ও উৎসব সম্বন্ধীয় হোমের জন্য, রাজার সম্পত্তি হইতে দেয় অংশ [নিরূপণ করিলেন]। আর যাজক ও লেবীয়গণ যেন সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় বলবান থাকে, এই জন্য তিনি তাহাদের প্রাপ্য অংশ তাহাদিগকে দিতে যিরূশালেম-নিবাসী লোকদিগকে আজ্ঞা করিলেন। এই আজ্ঞা দেশে ব্যাপ্ত হইবামাত্র ইস্রায়েল-সন্তানগণ শস্য, দ্রাক্ষারস, তৈল ও মধু এবং ভূমির উৎপন্ন সমস্ত দ্রব্যের অগ্রিমাংশ অতি প্রচুররূপে আনিল, এবং সকল দ্রব্যের দশমাংশ প্রচুররূপে আনিল। আর ইস্রায়েলের ও যিহূদার যে সন্তানগণ যিহূদার নগরসমূহে বাস করিত, তাহারাও গো ও মেষের দশমাংশ এবং আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্রীকৃত পবিত্র দ্রব্যের দশমাংশ আনিয়া রাশি রাশি করিল। তৃতীয় মাসে তাহারা সেই রাশি করিতে আরম্ভ করিয়া সপ্তম মাসে সমাপ্ত করিল। পরে হিষ্কিয় ও অধ্যক্ষগণ আসিয়া রাশি সকল দেখিয়া সদাপ্রভুর ও তাঁহার প্রজা ইস্রায়েলের ধন্যবাদ করিলেন। আর হিষ্কিয় সে সকল রাশির বিষয়ে যাজকদিগকে ও লেবীয়দিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন। সাদোকের কুলজাত অসরিয় নামে প্রধান যাজক তাঁহাকে এই উত্তর দিলেন, যে অবধি লোকেরা সদাপ্রভুর গৃহে উপহার আনিতে আরম্ভ করিয়াছে, সেই অবধি আমরা ভোজন করিয়াছি, তৃপ্ত হইয়াছি, আর যথেষ্ট বাঁচিয়া গিয়াছে; কেননা সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন, তাই এই বৃহৎ দ্রব্যরাশি বাঁচিয়া গিয়াছে। পরে হিষ্কিয় সদাপ্রভুর গৃহে কতকগুলি কুঠরী প্রস্তুত করিতে আজ্ঞা দিলেন, তাহাতে তাহারা কুঠরী প্রস্তুত করিল। আর তাহারা উপহার, দশমাংশ ও পবিত্রীকৃত বস্তু বিশ্বস্তরূপে ভিতরে আনিল; এবং তাহাদের উপরে লেবীয় কনানিয় অধ্যক্ষ ছিলেন ও তাহার ভ্রাতা শিমিয়ি দ্বিতীয় ছিলেন। আর যিহীয়েল, অসসিয়, নহৎ, অসাহেল, যিরীমোৎ, যোষাবদ, ইলীয়েল, যিষ্মখিয়, মাহৎ ও বনায়, ইহারা হিষ্কিয় রাজার ও ঈশ্বরের গৃহের অধ্যক্ষ অসরিয়ের আজ্ঞাতে কনানিয় ও তাঁহার ভ্রাতা শিমিয়ির অধীনে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হইল। আর যিম্নার পুত্র কোরি নামক যে লেবীয় পূর্ব্বদিকের দ্বারপাল ছিল, সদাপ্রভুর প্রাপ্য উপহার ও মহাপবিত্র বস্তু সকল বিতরণ করিবার জন্য সে ঈশ্বরের উদ্দেশে স্বেচ্ছা-দত্ত বস্তু সকলের কর্ত্তা হইল। তাহার অধীনে এদন, বিন্যামীন, যেশূয়, শময়িয়, অমরিয় ও শখনিয়, ইহারা যাজকদের নগরে নগরে আপনাদের ছোট বড় ভ্রাতাদিগকে পালানুসারে অংশ দিবার জন্য নিরূপিত কার্য্যে নিযুক্ত হইল। ইহাদের ছাড়া তিন বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লোক পুরুষগণের বংশাবলিতে লিখিত হইয়াছিল, তাহারা দিন দিন কে কে আপন আপন পালানুসারে আপন আপন রক্ষণীয়ের মতে আপন আপন সেবাকর্ম্মের জন্য সদাপ্রভুর গৃহে প্রবেশ করিবে, [তাহা স্থির হইল]। আর আপন আপন পিতৃকুলানুসারে যাজকদের এবং বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লেবীয়দের বংশাবলি তাহাদের রক্ষণীয় ও পালা অনুসারে লেখা গিয়াছিল। আর এক এক জনের সমস্ত শিশু, স্ত্রী ও পুত্রকন্যাশুদ্ধ [তাহাদের] সমস্ত সমাজের বংশাবলি লেখা গিয়াছিল, কেননা তাহারা নিরূপিত কার্য্যে পবিত্রতায় আপনাদিগকে পবিত্র করিয়াছিল। আর হারোণসন্তান যে যাজকগণ আপন আপন নগরের পরিসরভূমিতে বাস করিত, তাহাদের প্রত্যেক নগরে স্ব স্ব নামে নির্দ্দিষ্ট কয়েকটী লোক যাজকদের মধ্যে সমস্ত পুরুষকে ও লেবীয়দের মধ্যে বংশাবলিতে লিখিত সমস্ত লোককে অংশ বিতরণ করিত। হিষ্কিয় যিহূদার সর্ব্বত্র এইরূপ করিলেন, আর তাঁহার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ভাল, ন্যায্য ও সত্য, তাহাই করিলেন। আর তিনি আপন ঈশ্বরের অন্বেষণ করিবার জন্য ঈশ্বরের গৃহের সেবাকর্ম্ম, ব্যবস্থা ও আজ্ঞার সম্বন্ধে যে কোন কর্ম্ম আরম্ভ করিলেন, তাহা সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত করিয়া কৃত কার্য্য হইলেন। এই সকল কর্ম্মের ও বিশ্বস্ত আচরণের পরে অশূর-রাজ সন্‌হেরীব আসিয়া যিহূদা দেশে প্রবেশ করিলেন, এবং প্রাচীর বেষ্টিত নগর সকলের বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করিয়া সে সমস্ত ভাঙ্গিয়া ফেলিতে মনস্থ করিলেন। যখন হিষ্কিয় দেখিলেন, সন্‌হেরীব আসিয়াছেন, আর তিনি যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার জন্য উন্মুখ হইয়াছেন, তখন তিনি আপন অধ্যক্ষগণের ও বীর্য্যবান্‌ লোকদের সহিত নগরের বহিঃস্থিত উনুই সকলের জল বদ্ধ করিবার মন্ত্রণা করিলেন, এবং তাঁহারা তাঁহার সাহায্য করিলেন। অতএব অনেক লোক একত্র হইয়া সমস্ত উনুই ও দেশের মধ্য গিয়া প্রবাহিত স্রোত বদ্ধ করিল, তাহারা কহিল অশূর-রাজগণ আসিয়া কেন অনেক জল পাইবে? আর তিনি আপনাকে বলবান করিয়া সমস্ত ভগ্ন প্রাচীর গাঁথিয়া দুর্গসমান উচ্চ করিলেন; আবার তাহার বাহিরে আর এক প্রাচীর গাঁথিলেন ও দায়ূদ নগরস্থ মিল্লো দৃঢ় করিলেন, এবং প্রচুর অস্ত্র শস্ত্র ও ঢাল প্রস্তুত করিলেন। আর তিনি লোকদের উপরে সেনাপতিদিগকে নিযুক্ত করিলেন, এবং নগরদ্বারের চকে আপনার নিকটে তাহাদিগকে একত্র করিয়া এই চিত্ততোষক বাক্য কহিলেন, তোমরা বলবান হও, সাহস কর, অশূর-রাজের সম্মুখে ও তাঁহার সঙ্গী সমস্ত লোক-সমারোহের সম্মুখে ভীত কি নিরাশ হইও না; কারণ তাঁহার সহায় অপেক্ষা আমাদের সহায় মহান্‌। মাংসময় বাহু তাঁহার সহায়, কিন্তু আমাদের সাহায্য করিতে ও আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করিতে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের সহায়। তখন লোকেরা যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের বাক্যে নির্ভর করিল। তৎপরে অশূর-রাজ সন্‌হেরীব আপনি যৎকালে সৈন্যসামন্তের সহিত লাখীশ অবরোধ করেন, তৎকালে যিরূশালেমে যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের নিকটে ও যিরূশালেমে উপস্থিত সমস্ত যিহূদার নিকটে আপন দাসগণ দ্বারা এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন; অশূর-রাজ সন্‌হেরীব এই কথা কহেন, তোমরা কিসের উপর নির্ভর করিতেছ যে, যিরূশালেমের দুর্গমধ্যে বাস করিতেছ? হিষ্কিয় কি ক্ষুৎপিপাসায় মরিতে দিবার জন্য তোমাদিগকে মুগ্ধ করিতেছে না? সে বলিতেছে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে অশূর-রাজের হস্ত হইতে উদ্ধার করিবেন। ঐ হিষ্কিয়ই কি তাঁহার উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল দূর করে নাই? এবং ‘তোমাদিগকে একই যজ্ঞবেদির সম্মুখে প্রণিপাত করিতে ও তাহারই উপরে ধূপ জ্বালাইতে হইবে,’ এই আজ্ঞা কি যিহূদাকে ও যিরূশালেমকে দেয় নাই? আমি ও আমার পিতৃপুরুষেরা আমরা অন্যান্য দেশস্থ সমস্ত লোকসমাজের প্রতি যাহা করিয়াছি, তোমরা কি তাহা জান না? সেই সকল দেশের জাতিগণের দেবতারা কি কোন প্রকারে আমার হস্ত হইতে আপন আপন দেশ উদ্ধার করিতে সমর্থ হইয়াছে? আমার পিতৃপুরুষেরা যে সকল জাতিকে নিঃশেষে বিনাশ করিয়াছেন, তাহাদের সমস্ত দেবতার মধ্যে কে আপন প্রজাদিগকে আমার হস্ত হইতে উদ্ধার করিতে পারিয়াছিল? তবে তোমাদের ঈশ্বর আমার হস্ত হইতে যে তোমাদিগকে উদ্ধার করিতে পারে, ইহা কি সম্ভব? অতএব হিষ্কিয় তোমাদিগকে না ভুলাউক, ও এইরূপে মুগ্ধ না করুক; তোমরা তাহাকে বিশ্বাস করিও না; কেননা আমার হস্ত হইতে ও আমার পিতৃপুরুষদের হস্ত হইতে আপন প্রজাদিগকে উদ্ধার করিতে কোন জাতির কিম্বা রাজ্যের কোন দেবতারই সাধ্য হয় নাই; তবে তোমাদের ঈশ্বর কি তোমাদিগকে আমার হস্ত হইতে উদ্ধার করিবে? আর রাজার দাসগণ সদাপ্রভু ঈশ্বরের ও তাঁহার দাস হিষ্কিয়ের বিরুদ্ধে আরও অধিক কথা কহিল। আর তিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে টিট্‌কারি দিবার জন্য ও তাঁহার বিরুদ্ধে কথা বলিবার জন্য এইরূপ পত্রও লিখিলেন, অন্যান্য দেশীয় জাতিগণের দেবগণ যেমন আমার হস্ত হইতে আপন আপন লোকদিগকে উদ্ধার করে নাই, তদ্রূপ হিষ্কিয়ের ঈশ্বরও আপন প্রজাদিগকে আমার হস্ত হইতে উদ্ধার করিবে না। আর যিরূশালেমের যে লোকেরা প্রাচীরের উপরে ছিল, তাহাদিগকে ভয় দেখাইবার ও ব্যাকুল করিবার জন্য তাহারা অতি উচ্চৈঃস্বরে যিহূদী ভাষায় তাহাদিগের কাছে চেঁচাইতে লাগিল; যেন নগর হস্তগত করিতে পারে। পৃথিবীস্থ জাতিগণের যে দেবগণ মনুষ্যহস্ত-নির্ম্মিত, তাহাদের বিষয়ে কথা কহিবার ন্যায় তাহারা যিরূশালেমের ঈশ্বরের বিষয়ে কথা কহিল। পরে হিষ্কিয় রাজা ও আমোসের পুত্র যিশাইয় ভাববাদী সেই কারণ প্রযুক্ত প্রার্থনা করিলেন, ও স্বর্গের কাছে ক্রন্দন করিলেন। তখন সদাপ্রভু এক দূত প্রেরণ করিলেন; তিনি অশূর-রাজের শিবিরের মধ্যে সমস্ত বলবান বীরকে, প্রধান লোককে ও সেনাপতিকে উচ্ছেদ করিলেন; তাহাতে সন্‌হেরীব লজ্জিত হইয়া আপন দেশে ফিরিয়া গেলেন। পরে তিনি আপন দেবালয়ে প্রবেশ করিলে তাঁহার নিজ ঔরসজাতেরা সেই স্থানে খড়্‌গ দ্বারা তাঁহাকে নিপাত করিল। এই প্রকারে সদাপ্রভু হিষ্কিয়কে ও যিরূশালেম-নিবাসীদিগকে অশূর-রাজ সন্‌হেরীবের হস্ত হইতে ও আর সকলের হস্ত হইতে নিস্তার করিলেন, এবং সর্ব্বদিকে তাহাদিগকে রক্ষা করিলেন। তাহাতে অনেক লোক যিরূশালেমে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নৈবেদ্য আনিল, এবং যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের কাছে বহুমূল্য দ্রব্য আনিল; তাহাতে সেই সময় হইতে তিনি সকল জাতির দৃষ্টিতে উন্নত হইলেন। ঐ সময়ে হিষ্কিয়ের সাংঘাতিক পীড়া হইল, আর তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন; তাহাতে সদাপ্রভু তাঁহাকে উত্তর দিলেন, ও তাঁহাকে এক অদ্ভুত লক্ষণ জানাইলেন। কিন্তু হিষ্কিয় প্রাপ্ত উপকারানুসারে প্রতিদান করিলেন না, কারণ তাঁহার মন গর্ব্বিত হইয়াছিল; অতএব তাঁহার এবং যিহূদার ও যিরূশালেমের উপরে ক্রোধ উপস্থিত হইল। তখন হিষ্কিয় আপন মনের গর্ব্ব বুঝিয়া আপনাকে অবনত করিলেন, তিনি ও যিরূশালেম-নিবাসীরা তাহা করিলেন। সেই জন্য সদাপ্রভুর ক্রোধ তাহাদের উপরে হিষ্কিয়ের সময়ে উপস্থিত হইল না। হিষ্কিয়ের প্রতি প্রচুর ধন ও প্রতাপ ছিল, তিনি আপনার জন্য রৌপ্যের, স্বর্ণের, মণির, সুগন্ধি দ্রব্যের, ঢালের ও সর্ব্বপ্রকার মনোহর পাত্রের কোষ প্রস্তুত করিলেন, আর শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈলের জন্য ভাণ্ডার, এবং সর্ব্বপ্রকার পশুর ঘর ও মেষপালের খোঁয়াড় করিলেন। আর তিনি আপনার জন্য নানা নগর ও গোমেষাদি অনেক পশুধন প্রস্তুত করিলেন, যেহেতু ঈশ্বর তাঁহাকে অতি প্রচুর ধন দিয়াছিলেন। এই হিষ্কিয় গীহোনের জলের উচ্চতর মুখ বদ্ধ করিয়া সরল পথে দায়ূদ-নগরের পশ্চিম পার্শ্বে সেই জল নামাইয়া আনিয়াছিলেন। আর হিষ্কিয় আপনার সকল কার্য্যেই কৃতকার্য্য হইলেন। কিন্তু তাঁহার দেশে যে অদ্ভুত লক্ষণ দেখান হইয়াছিল, তাহার বিবরণ জিজ্ঞাসা করিতে বাবিলেন অধ্যক্ষগণ দূতদিগকে পাঠাইলে ঈশ্বর তাঁহার পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত, তাঁহার মনে কি আছে, সে সকল জানিবার নিমিত্ত, তাঁহাকে ত্যাগ করিয়াছিলেন। হিষ্কিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও তাঁহার সাধুকার্য্যের বিবরণ, দেখ, আমোসের পুত্র যিশাইয় ভাববাদীর দর্শন-পুস্তকে লিখিত আছে; তাহা যিহূদার ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস পুস্তকান্তর্গত। পরে হিষ্কিয় আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; আর লোকেরা দায়ূদ-সন্তানগণের কবরস্থানের ঊর্দ্ধগামী পথে তাঁহাকে কবর দিল, এবং তাঁহার মরণকালে সমস্ত যিহূদা ও যিরূশালেম-নিবাসীরা তাঁহার সম্মান করিল। পরে তাঁহার পুত্র মনঃশি তাঁহার পদে রাজা হইলেন। মনঃশি বারো বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন; এবং পঞ্চান্ন বৎসরকাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন; সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে অধিকারচ্যুত করিয়াছিলেন, তিনি তাহাদের ঘৃণিত ক্রিয়ানুসারেই কার্য্য করিতেন। বস্তুতঃ তাঁহার পিতা হিষ্কিয় যে সকল উচ্চস্থলী ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছিলেন, তিনি সেগুলি পুনর্ব্বার নির্ম্মাণ করিলেন, বাল দেবগণের নিমিত্ত যজ্ঞবেদি প্রস্তুত করিলেন, এবং আশেরা-মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিলেন আর আকাশের সমস্ত বাহিনীর কাছে প্রণিপাত ও তাহাদের সেবা করিলেন। আর সদাপ্রভু যে গৃহের উদ্দেশে বলিয়াছিলেন, যিরূশালেমে আমার নাম চিরকাল থাকিবে, সদাপ্রভুর সেই গৃহে তিনি কতকগুলি যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি সদাপ্রভুর গৃহের দুই প্রাঙ্গণে আকাশের সমস্ত বাহিনীর জন্য যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। আর তিনি আপন সন্তানদিগকে হিন্নোম-সন্তানের উপত্যকায় অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাইলেন; আর গণকতা, মোহকের ব্যবহার ও মায়াক্রিয়া করিতেন, এবং ভূতড়িয়াদিগকে ও গুণীদিগকে রাখিতেন; তিনি সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুল কদাচরণ করিয়া তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিলেন। আর তিনি আপনার নির্ম্মিত এক ক্ষোদিত প্রতিমা ঈশ্বরের সেই গৃহে স্থাপন করিলেন, যাহার বিষয়ে ঈশ্বর দায়ূদকে ও তাঁহার পুত্র শলোমনকে এই কথা বলিয়াছিলেন, আমি এই গৃহে, ও ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্যে আমার মনোনীত এই যিরূশালেমে আপন নাম চিরকালের নিমিত্ত স্থাপন করিব; আর আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদের নিমিত্ত যে দেশ নিরূপণ করিয়াছি, সেই দেশ ইহতে ইস্রায়েলের চরণ আর সরাইয়া দিব না; কেবল যদি তাহারা, আমি তাহাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছি, অর্থাৎ আমার দাস মোশির হস্ত দ্বারা তাহাদিগকে যে সমস্ত ব্যবস্থা, বিধি ও শাসন দিয়াছি, তদনুসারে যত্নপূর্ব্বক চলে। তথাপি মনঃশি যিহূদাকে ও যিরূশালেম-নিবাসীদিগকে বিপথগামী করিলেন, তাহাতে সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানদের সম্মুখ হইতে যে জাতিদিগকে বিনষ্ট করিয়াছিলেন, উহারা তাহাদের অপেক্ষা অধিক কদাচরণ করিত। আর সদাপ্রভু মনঃশি ও তাঁহার লোকদের কাছে কথা কহিতেন, কিন্তু তাঁহারা কর্ণপাত করিতেন না। এই জন্য সদাপ্রভু তাঁহাদের বিরুদ্ধে অশূর-রাজের সেনাপতিদিগকে আনিলেন; আর তাহারা মনঃশিকে হাতকড়ী দিয়া তাঁহাকে শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া বাবিলে লইয়া গেল। তখন সঙ্কটাপন্ন হইয়া তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন, ও আপন পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরের সম্মুখে আপনাকে অতিশয় অবনত করিলেন। এইরূপে তাঁহার কাছে প্রার্থনা করিলে তিনি তাঁহার প্রার্থনা গ্রাহ্য করিলেন, তাঁহার বিনতি শুনিয়া তাঁহাকে পুনর্ব্বার যিরূশালেমে তাঁহার রাজ্যে আনিলেন। তখন মনঃশি জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর। তৎপরে তিনি দায়ূদ-নগরের বাহিরে গীহোনের পশ্চিমে উপত্যকামধ্যে মৎস্যদ্বারের প্রবেশ-স্থান পর্য্যন্ত প্রাচীর নির্ম্মাণ করিলেন, ওফল ঘেরিয়া অতি উচ্চ করিয়া তুলিলেন, এবং যিহূদা দেশের প্রাচীরবেষ্টিত সমস্ত নগরে বিক্রমী সেনাপতিগণকে নিযুক্ত করিলেন। আর তিনি সদাপ্রভুর গৃহ হইতে বিজাতীয় দেবগণকে ও প্রতিমাকে, এবং সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বতে ও যিরূশালেমে আপনার নির্ম্মিত যজ্ঞবেদি সকল তুলিয়া লইলেন, এবং নগর হইতে বাহির করিয়া ফেলিলেন। আর সদাপ্রভুর বেদি সারাইয়া তাহার উপরে মঙ্গলার্থক বলি ও স্তবার্থক উপহার উৎসর্গ করিলেন, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা করিতে যিহূদাকে আজ্ঞা করিলেন। সত্য বটে, তখনও লোকে উচ্চস্থলীতে যজ্ঞ করিত, কিন্তু কেবল আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশেই করিত। মনঃশির অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, আপন ঈশ্বরের কাছে তাঁহার প্রার্থনা, এবং যে দর্শকেরা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে তাঁহার সহিত কথা কহিতেন, তাঁহাদের বাক্য, দেখ, ইস্রায়েল-রাজগণের কার্য্যবিবরণমধ্যে লিখিত আছে। আর তাঁহার প্রার্থনা, কিরূপে সেই প্রার্থনা গ্রাহ্য হইল, এবং তাঁহার সমস্ত পাপ ও সত্যলঙ্ঘন, এবং আপনাকে অবনত করিবার পূর্ব্বে তিনি যে যে স্থানে উচ্চস্থলী নির্ম্মাণ এবং আশেরা-মূর্ত্তি ও ক্ষোদিত প্রতিমা স্থাপন করিয়াছিলেন, দেখ, সেই সকলের বিবরণ দর্শকদের গ্রন্থে লিখিত আছে। পরে মনঃশি আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন; আর লোকেরা তাঁহার বাটীতে তাঁহাকে কবর দিল, এবং তাঁহার পুত্র আমোন তাঁহার পদে রাজা হইলেন। আমোন বাইশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন; এবং যিরূশালেমে দুই বৎসরকাল রাজত্ব করেন। তাঁহার পিতা মনঃশি যেরূপ করিয়াছিলেন, তিনিও তদ্রূপ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিতেন; বস্তুতঃ তাঁহার পিতা মনঃশি যে সকল ক্ষোদিত প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আমোন তাহাদের উদ্দেশে যজ্ঞ করিতেন ও তাহাদের সেবা করিতেন। কিন্তু তাঁহার পিতা মনঃশি যেমন আপনাকে অবনত করিয়াছিলেন, তিনি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে আপনাকে তেমন অবনত করিলেন না; কিন্তু এই আমোন উত্তর উত্তর অধিক দোষ করিলেন। পরে তাঁহার দাসগণ তাঁহার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিল, আর তাঁহার বাটীতে তাঁহাকে বধ করিল। কিন্তু দেশের লোকেরা আমোন রাজার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী সকলকে বধ করিল; পরে দেশের লোকেরা তাঁহার পুত্র যোশিয়কে তাঁহার পদে রাজা করিল। যোশিয় আট বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন; এবং একত্রিশ বৎসরকাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন। সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাহা নায্য, তিনি তাহাই করিতেন, ও আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের পথে চলিতেন, তাহার দক্ষিণে কি বামে ফিরিতেন না। ফলতঃ তাঁহার রাজত্বের অষ্টম বৎসরে তিনি অল্পবয়স্ক হইলেও আপন পিতৃপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বরের অন্বেষণ করিতে আরম্ভ করিলেন, এবং দ্বাদশ বৎসরে উচ্চস্থলী ও আশেরা-মূর্ত্তি, ক্ষোদিত প্রতিমা ও ছাঁচে ঢালা প্রতিমা হইতে যিহূদা ও যিরূশালেমকে শুচি করিতে লাগিলেন। তাঁহার সাক্ষাতে লোকেরা বাল দেবগণের যজ্ঞবেদি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিল, এবং তিনি তদুপরি স্থাপিত সূর্য্যপ্রতিমা ছেদন করিলেন, আর আশেরা-মূর্ত্তি, ক্ষোদিত প্রতিমা ও ছাঁচে ঢালা প্রতিমা সকল ভাঙ্গিয়া ধূলিসাৎ করিয়া, যাহারা তাহাদের উদ্দেশে যজ্ঞ করিয়াছিল, তাহাদের কবরের উপরে সেই ধূলা ছড়াইয়া দিলেন। আর তাহাদের যজ্ঞবেদির উপরে যাজকদের অস্থি পোড়াইলেন, এবং যিহূদা ও যিরূশালেমকে শুচি করিলেন। আর মনঃশির, ইফ্রয়িমের ও শিমিয়োনের নগরে নগরে এবং নপ্তালি পর্য্যন্ত সর্ব্বত্র কাঁথড়ার মধ্যে এইরূপ করিলেন। আর তিনি যজ্ঞবেদি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন, এবং আশেরা-মূর্ত্তি সকল ও ক্ষোদিত প্রতিমা সকল চূর্ণ করিলেন, ইস্রায়েল দেশের সর্ব্বত্র সমস্ত সূর্য্যপ্রতিমা কাটিয়া ফেলিলেন, পরে যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিলেন। তাঁহার রাজত্বের অষ্টাদশ বৎসরে দেশ ও গৃহ শুচি করিবার পর তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহ মেরামৎ করিবার জন্য অৎসলিয়ের পুত্র শাফনকে, মাসেয় নগরাধ্যক্ষকে ও যোয়াহসের পুত্র যোয়াহ ইতিহাসকর্ত্তাকে পাঠাইলেন। আর তাঁহারা হিল্কিয় মহাযাজকের নিকটে উপস্থিত হইলেন, এবং ঈশ্বরের গৃহে আনীত সমস্ত রৌপ্য, যাহা দ্বারপাল লেবীয়েরা মনঃশি, ইফ্রয়িম ও ইস্রায়েলের সমস্ত অবশিষ্টাংশের নিকট হইতে, এবং সমস্ত যিহূদা ও বিন্যামীনের নিকট হইতে, আর যিরূশালেম-নিবাসীদের নিকট হইতে সংগ্রহ করিয়াছিল, সেই সকল রৌপ্য সমর্পণ করিলেন। তাঁহারা সদাপ্রভুর গৃহের তত্ত্বাবধায়ক কার্য্যকারীদের হস্তে তাহা সমর্পণ করিলেন, পরে যে কার্য্যকারীরা সদাপ্রভুর গৃহে কর্ম্ম করিত, তাহারা সেই গৃহ সারিবার ও মেরামৎ করিবার জন্য তাহা দিল, অর্থাৎ যিহূদার রাজগণ যে সকল গৃহ বিনষ্ট করিয়াছিলেন, সেই সকলের জন্য ক্ষোদিত প্রস্তর, ও যোড়ের কাষ্ঠ ক্রয় করিতে ও কড়িকাষ্ঠ প্রস্তুত করিতে তাহারা সূত্রধরদিগকে ও গাঁথকদিগকে তাহা দিল। আর সেই লোকেরা বিশ্বস্তরূপে কার্য্য করিল, এবং মরারি-সন্তানদের মধ্যে দুই জন লেবীয়, অর্থাৎ যহৎ ও ওবদিয়, তাহাদের তত্ত্বাবধায়ক ছিল, এবং কহাৎ-সন্তানদের মধ্যে সখরিয় ও মশুল্লম, এবং অন্য লেবীয়দের মধ্যে বাদ্য বাদনে নিপুন লোকেরা কর্ম্ম চালাইবার জন্য নিযুক্ত ছিল। আর তাহারা ভারবাহকদের অধ্যক্ষ, আর কর্ম্ম চালাইবার জন্য সর্ব্বপ্রকার সেবাকর্ম্মকারীদের উপরে নিযুক্ত ছিল, এবং লেবীয়দের মধ্যে কেহ কেহ লেখক, কর্ম্মচারী ও দ্বারপাল ছিল। তাহারা যখন সদাপ্রভুর গৃহে আনীত সকল রৌপ্য বাহির করিল, তখন হিল্কিয় যাজক মোশি দ্বারা দত্ত সদাপ্রভুর ব্যবস্থা পুস্তকখানি পাইলেন। পরে হিল্কিয় শাফন লেখককে কহিলেন, আমি সদাপ্রভুর গৃহে ব্যবস্থা-পুস্তকখানি পাইয়াছি; পরে হিল্কিয় শাফনকে সেই পুস্তক দিলেন। আর শাফন সেই পুস্তক রাজার কাছে লইয়া গিয়া রাজার কাছে এই নিবেদন করিলেন, আপনার দাসদের প্রতি আদিষ্ট সমস্ত কর্ম্ম করা যাইতেছে; তাঁহারা সদাপ্রভুর গৃহে প্রাপ্ত সমস্ত টাকা একত্র করিয়া তত্ত্বাবধায়কদের ও কর্ম্মকারীদের হস্তে দিয়াছেন। পরে শাফন লেখক রাজাকে এই কথা জ্ঞাত করিলেন, হিল্কিয় যাজক আমাকে একখানি পুস্তক দিয়াছেন; আর শাফন রাজার সাক্ষাতে তাহা পাঠ করিতে লাগিলেন। তখন রাজা ব্যবস্থার বাক্য সকল শুনিয়া আপনার বস্ত্র ছিঁড়িলেন। আর রাজা হিল্কিয়কে, শাফনের পুত্র অহীকামকে, মীখায়ের পুত্র অব্দোনকে, শাফন লেখককে ও রাজভৃত্য অসায়কে এই আজ্ঞা করিলেন, তোমরা যাও, যে পুস্তকখানি পাওয়া গিয়াছে, সেই পুস্তকের বাক্য সকলের বিষয়ে আমার নিমিত্ত এবং ইস্রায়েলের ও যিহূদার মধ্যে অবশিষ্ট লোকদের নিমিত্ত সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা কর; কেননা ঐ পুস্তকে লিখিত সকল কথানুযায়ী কর্ম্ম করিবার জন্য আমাদের পিতৃপুরুষেরা সদাপ্রভুর বাক্য পালন করেন নাই, এই জন্য আমাদের উপরে সদাপ্রভুর ক্রোধাগ্নি বর্ষিত হইয়াছে। তখন হিল্কিয় ও রাজার [নিযুক্ত] ঐ লোকেরা বস্ত্রাগারের অধ্যক্ষ হস্রহের পৌত্র, তোখতের পুত্র শল্লুমের স্ত্রী হুল্‌দা ভাববাদিনীর নিকটে গেলেন; তিনি যিরূশালেমে, দ্বিতীয় বিভাগে, বাস করিতেছিলেন। পরে তাঁহারা ঐ ভাবের কথা তাঁহাকে কহিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে ব্যক্তি তোমাদিগকে আমার কাছে পাঠাইয়াছে, তাহাকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই স্থানের ও এখানকার নিবাসীদের উপরে অমঙ্গল আনিব, যিহূদা-রাজের সাক্ষাতে যে পুস্তক উহারা পাঠ করিয়াছে, তাহাতে লিখিত সমস্ত অভিশাপ বর্ত্তাইব। কারণ তাহারা আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, এবং অন্য দেবগণের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইয়াছে, এইরূপে স্ব স্ব হস্তের সমস্ত কার্য্যদ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়াছে; তজ্জন্য এই স্থানের উপরে আমার ক্রোধাগ্নি বর্ষিত হইল, নির্ব্বাণ হইবে না। কিন্তু যিহূদার রাজা, যিনি সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করিতে তোমাদিগকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে এই কথা বল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যে সকল বাক্য শ্রবণ করিয়াছ, তাহার বিষয়ে কথা এই,— এই স্থানের ও এখানকার নিবাসীদের বিরুদ্ধে আমি যে সকল বাক্য কহিয়াছি, তাহা শ্রবণমাত্র তোমার অন্তঃকরণ কোমল হইয়াছে, তুমি ঈশ্বরের সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছ; তুমি আমার সাক্ষাতে আপনাকে অবনত করিয়াছ, এবং আপন বস্ত্র ছিঁড়িঁয়া আমার সম্মুখে রোদন করিয়াছ, এই জন্য সদাপ্রভু কহেন, আমিও তোমার কথা শুনিলাম। দেখ, আমি তোমার পিতৃলোকদের কাছে তোমাকে সংগ্রহ করিব; তুমি শান্তিতে আপন কবরে সংগৃহীত হইবে; এবং এই স্থানের ও এখানকার নিবাসীদের উপরে আমি যে সকল অমঙ্গল আনিব, তোমার চক্ষু সে সমস্ত দেখিবে না। পরে তাহারা আবার রাজাকে এই কথায় সমাচার দিলেন। আর রাজা লোক পাঠাইয়া যিহূদার ও যিরূশালেমের সমস্ত প্রাচীনবর্গকে একত্র করিলেন। পরে রাজা সদাপ্রভুর গৃহে গেলেন, এবং যিহূদার সমস্ত লোক, যিরূশালেম-নিবাসীরা, যাজকেরা ও লেবীয়েরা, মহান্‌ ও ক্ষুদ্র সমস্ত প্রজা গমন করিল; এবং তিনি সদাপ্রভুর গৃহে প্রাপ্ত নিয়ম-পুস্তকের সমস্ত কথা তাহাদের কর্ণগোচরে পাঠ করিলেন। পরে রাজা আপনার স্থানে দাঁড়াইয়া সদাপ্রভুর অনুগামী হইবার, এবং সমস্ত অন্তঃকরণের ও সমস্ত প্রাণের সহিত তাঁহার আজ্ঞা, সাক্ষ্যকথা ও বিধি পালন করিবার জন্য, এই পুস্তকে লিখিত নিয়মের কথানুসারে কার্য্য করিবার জন্য সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নিয়ম স্থির করিলেন। আর যিরূশালেমের ও বিন্যামীনের যত লোক উপস্থিত ছিল, সেই সকলকে তিনি অঙ্গীকার করাইলেন। তাহাতে যিরূশালেম-নিবাসীরা ঈশ্বরের, আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বরের, নিয়মানুসারে কার্য্য করিতে লাগিল। আর যোশিয় ইস্রায়েল-সন্তানগণের অধিকৃত সকল দেশ হইতে সমস্ত ঘৃণার্হ বস্তু দূর করিলেন, এবং ইস্রায়েলের মধ্যে যত লোক উপস্থিত ছিল, সকলকে সেবা, তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা, করাইলেন। তিনি যত দিন ছিলেন, তত দিন তাহারা আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুগমনে নিবৃত্ত হইল না। পরে যোশিয় যিরূশালেমে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিস্তারপর্ব্ব পালন করিলেন, লোকেরা প্রথম মাসের চতুর্দ্দশ দিনে নিস্তারপর্ব্বের বলি হনন করিল। আর তিনি যাজকদিগকে তাহাদের নিরূপিত কার্য্যে নিযুক্ত করিলেন, এবং সদাপ্রভুর গৃহের সেবাকর্ম্ম করিতে তাহাদিগকে আশ্বাস দিলেন। আর যে লেবীয়েরা সমস্ত ইস্রায়েলের শিক্ষক ও সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র ছিল, তাহাদিগকে তিনি কহিলেন, ইস্রায়েল-রাজ দায়ূদের পুত্র শলোমন যে গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তাহার মধ্যে তোমরা পবিত্র সিন্দুক রাখ; তাহার ভার আর তোমাদের স্কন্ধে থাকিবে না; এখন তোমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর ও তাঁহার প্রজা ইস্রায়েলের সেবা কর। আর আপন আপন পিতৃকুলানুসারে ইস্রায়েল-রাজ দায়ূদের লিখনমতে, এবং তাঁহার পুত্র শলোমনের লিখনমতে নিরূপিত আপন আপন পালানুসারে আপনাদিগকে প্রস্তুত কর। আর তোমাদের ভ্রাতৃগণের অর্থাৎ প্রজাদের পিতৃকুল সকলের বিভাগানুসারে ও লেবীয়দের পিতৃকুল সকলের অংশানুসারে পবিত্র স্থানে দণ্ডায়মান হও। আর নিস্তারপর্ব্বের বলি হনন কর ও আপনাদিগকে পবিত্র কর, এবং মোশি দ্বারা [কথিত] সদাপ্রভুর বাক্যমতে কার্য্য করণার্থে আপন ভ্রাতাদের জন্য আয়োজন কর। পরে যোশিয় প্রজাদিগকে, উপস্থিত সকলকে, পাল হইতে কেবল নিস্তারপর্ব্বীয় বলির জন্য সংখ্যায় ত্রিশ সহস্র মেষবৎস ও ছাগবৎস, এবং তিন সহস্র বৃষ দিলেন; এ সকলই রাজার সম্পত্তি হইতে প্রদত্ত হইল। আর তাঁহার অধ্যক্ষগণ ইচ্ছাপূর্ব্বক লোকদিগকে, যাজকদিগকে ও লেবীয়দিগকে দান করিলেন। হিল্কিয়, সখরিয় ও যিহীয়েল, ঈশ্বরের গৃহের এই অধ্যক্ষেরা যাজকদিগকে নিস্তারপর্ব্বীয় বলির জন্য দুই সহস্র ছয় শত [মেষাদির বৎস] ও তিন শত বৃষ দিলেন। আর কনানিয় এবং শময়িয় ও নথনেল নামে তাঁহার দুই ভ্রাতা, আর হশবিয়, যীয়ীয়েল ও যোষাবদ, লেবীয়দের এই অধ্যক্ষগণ লেবীয়দিগকে নিস্তারপর্ব্বীয় বলির জন্য পাঁচ সহস্র [মেষাদির বৎস] ও পাঁচ শত বৃষ দিলেন। এইরূপে সেবাকর্ম্মের আয়োজন হইল, আর রাজার আজ্ঞানুসারে যাজকেরা আপন আপন স্থানে ও লেবীয়েরা আপন আপন পালানুসারে দাঁড়াইল। আর নিস্তারপর্ব্বীয় বলি সকল হত হইল, এবং যাজকগণ তাহাদের হস্ত হইতে রক্ত লইয়া প্রক্ষেপ করিল ও লেবীয়েরা পশুদের চর্ম্ম খুলিল। আর মোশির পুস্তকে যেমন লেখা আছে, তদনুসারে সদাপ্রভুর উদ্দেশে [বলি] উপস্থিত করণার্থে তাহারা লোকদের পিতৃকুলের বিভাগানুসারে সকলকে দিবার জন্য হোমবলি উঠাইয়া লইল, এবং বৃষদিগের বিষয়েও তাহাই করিল। পরে তাহারা বিধিমতে নিস্তারপর্ব্বের বলি অগ্নিতে পাক করিল; আর পবিত্র বলি সকল স্থালীতে, হাঁড়ীতে ও কটাহে পাক করিল, এবং সকল লোককে শীঘ্র শীঘ্র পরিবেষণ করিল। তৎপরে আপনাদের ও যাজকদের জন্য আয়োজন করিল, কেননা হারোণ-সন্তান যাজকেরা হোম ও মেদ দগ্ধ করিতে রাত্রি পর্য্যন্ত ব্যস্ত ছিল; অতএব লেবীয়েরা আপনাদের ও হারোণ-সন্তান যাজকদের জন্য আয়োজন করিল। আর দায়ূদের, আসফের, হেমনের ও রাজ-দর্শক যিদূথূনের আজ্ঞানুসারে আসফ-সন্তান গায়কেরা আপন আপন স্থানে ছিল, ও দ্বারপালেরা প্রতিদ্বারে ছিল; তাহাদের আপন আপন সেবাকর্ম্ম ছাড়িয়া যাইবার প্রয়োজন হইল না, যেহেতু তাহাদের লেবীয় ভ্রাতারা তাহাদের জন্য আয়োজন করিয়াছিল। এইরূপে যোশিয় রাজার আজ্ঞানুসারে নিস্তারপর্ব্ব পালনার্থে ও সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির উপরে হোম করণার্থে সেই দিন সদাপ্রভুর সমস্ত সেবাকর্ম্মের আয়োজন হইল। ঐ সময়ে উপস্থিত ইস্রায়েল-সন্তানগণ নিস্তারপর্ব্ব, এবং সাত দিন তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসব পালন করিল। শমূয়েল ভাববাদীর সময়াবধি ইস্রায়েলে এতাদৃশ নিস্তারপর্ব্ব পালিত হয় নাই; যোশিয়, যাজকেরা, লেবীয়েরা এবং সমস্ত যিহূদা ও ইস্রায়েলের উপস্থিত লোকেরা ও যিরূশালেম-নিবাসীরা যাদৃশ নিস্তারপর্ব্ব পালন করিল, ইস্রায়েলের কোন রাজা তাদৃশ পর্ব্ব পালন করেন নাই। যোশিয়ের রাজত্বের অষ্টাদশ বৎসরে এই নিস্তারপর্ব্ব পালিত হইল। এই সকলের পরে, যোশিয় মন্দির ঠিক করিলে পর, মিসর-রাজ নখো ফরাৎ নদীর নিকটস্থ কর্কমীশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবার জন্য আসিতেছিলেন, আর যোশিয় তাঁহার বিরুদ্ধে যাত্রা করিলেন। তখন তিনি দূত দ্বারা এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন, হে যিহূদা-রাজ, তোমার সঙ্গে আমার বিষয় কি? আমি অদ্য তোমার বিরুদ্ধে আসি নাই, কিন্তু যে কুলের সহিত আমার যুদ্ধ বাধিয়াছে, তাহার বিরুদ্ধে যাইতেছি; আর ঈশ্বর আমাকে ত্বরা করিতে বলিয়াছেন; অতএব তুমি আমার সহবর্ত্তী ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণ হইতে ক্ষান্ত হও, নচেৎ তিনি তোমাকে বিনষ্ট করিবেন। তথাপি যোশিয় তাঁহা হইতে বিমুখ হন নাই, বরং তাঁহার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করিলেন; তিনি ঈশ্বরের মুখনির্গত নখোর বাক্যে কর্ণপাত না করিয়া মগিদ্দো উপত্যকায় যুদ্ধ করিতে গেলেন। পরে ধনুর্দ্ধরেরা যোশিয় রাজাকে বাণ মারিল; তখন রাজা আপন দাসদিগকে কহিলেন, আমাকে লইয়া যাও, কেননা আমি অত্যন্ত আহত হইয়াছি। তাহাতে তাঁহার দাসগণ সেই রথ হইতে তাঁহাকে বাহির করিল, এবং তাঁহার দ্বিতীয় রথে আরোহণ করাইয়া যিরূশালেমে আনিল, আর তিনি মারা পড়িলেন, এবং আপন পিতৃলোকদের কবরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন। পরে সমস্ত যিহূদা ও যিরূশালেম যোশিয়ের নিমিত্তে শোক করিল। আর যিরমিয় যোশিয়ের জন্য বিলাপ-গীত রচনা করিলেন, এবং সকল গায়ক ও গায়িকা আপন আপন বিলাপ-গীতে যোশিয়ের বিষয়ে গান করিল; অদ্যাপি করে; ফলতঃ তাহারা তাহা ইস্রায়েলের পালনীয় বিধি করিল; আর দেখ, তাহা বিলাপ-সংহিতায় লিখিত আছে। যোশিয়ের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত ও সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় লিখিত বাক্যানুযায়ী তাঁহার সাধুকার্য্য সকল, এবং তাঁহার বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত, দেখ, সে সকল ইস্রায়েলের ও যিহূদার রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। পরে দেশের লোকেরা যোশিয়ের পুত্র যিহোয়াহসকে লইয়া তাঁহার পিতার পদে যিরূশালেমে তাঁহাকে রাজা করিল। যোয়াহস তেইশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে তিন মাসকাল রাজত্ব করেন। পরে মিসর-রাজ যিরূশালেমে তাঁহাকে পদচ্যুত করিয়া দেশের এক শত তালন্ত রৌপ্য ও এক তালন্ত স্বর্ণ অর্থদণ্ড নির্দ্ধারণ করিলেন। আর মিসর-রাজ তাঁহার ভ্রাতা ইলীয়াকীমকে যিহূদা ও যিরূশালেমের উপরে রাজা করিলেন এবং তাঁহার নাম পরিবর্ত্তন করিয়া যিহোয়াকীম রাখিলেন; আর নখো তাঁহার ভ্রাতা যোয়াহসকে ধরিয়া মিসরে লইয়া গেলেন। যিহোয়াকীম পঁচিশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে এগার বৎসরকাল রাজত্ব করেন; আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন। তাঁহারই বিরুদ্ধে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর আসিয়া বাবিলে লইয়া যাইবার জন্য তাঁহাকে পিত্তল-শৃঙ্খলে বদ্ধ করিলেন। নবূখদ্‌-নিৎসর সদাপ্রভুর গৃহের পাত্রগুলিও বাবিলে লইয়া গিয়া বাবিলস্থ আপন মন্দিরে রাখিলেন। যিহোয়াকীমের অবশিষ্ট কর্ম্মের বৃত্তান্ত, তাঁহার কৃত ঘৃণার্হ ক্রিয়া সকল ও তাঁহার মধ্যে যাহা পাওয়া গিয়াছিল, দেখ, সে সকল ইস্রায়েলের ও যিহূদার রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত আছে। পরে তাঁহার পুত্র যিহোয়াখীন তাঁহার পদে রাজা হইলেন। যিহোয়াখীন আট বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে তিন মাস দশ দিন রাজত্ব করেন; সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন। পরে বৎসর ফিরিয়া আসিলে নবূখদ্‌নিৎসর রাজা লোক পাঠাইয়া তাঁহাকে ও সদাপ্রভুর গৃহস্থিত মনোরম পাত্র সকল বাবিলে লইয়া গেলেন, এবং যিহূদা ও যিরূশালেমের উপরে তাঁহার ভ্রাতা সিদিকিয়কে রাজা করিলেন। সিদিকিয় একুশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, এবং যিরূশালেমে এগার বৎসর রাজত্ব করেন। আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই তিনি করিতেন, সদাপ্রভুর মুখের বাক্যপ্রকাশক যিরমিয় ভাববাদীর সম্মুখে আপনাকে অবনত করিলেন না। আর যে নবূখদ্‌নিৎসর রাজা ইহাঁকে ঈশ্বরের নামে দিব্য করাইয়াছিলেন, ইনি তাঁহার বিদ্রোহী হইলেন, এবং আপন গ্রীবা শক্ত ও হৃদয় কঠিন করিয়া ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিতে অস্বীকার করিলেন। আর প্রধান যাজকেরা সকলে ও প্রজারা জাতিগণের সমস্ত ঘৃণার্হ ক্রিয়ানুসারে বহুল সত্যলঙ্ঘন করিল, এবং সদপ্রভু যিরূশালেমে আপনার যে গৃহ পবিত্র করিয়াছিলেন, তাহা অশুচি করিল। আর তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপন দূতদিগকে তাহাদের কাছে পাঠাইতেন, প্রত্যূষে উঠিয়া পাঠাইতেন, কেননা তিনি আপন প্রজাদের ও আপন বাসস্থানের প্রতি মমতা করিতেন। কিন্তু তাহারা ঈশ্বরের দূতদিগকে পরিহাস করিত, তাঁহার বাক্য তুচ্ছ করিত, ও তাঁহার ভাববাদিগণকে বিদ্রূপ করিত; তন্নিমিত্ত শেষে আপন প্রজাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ উত্থিত হইল, অবশেষে আর প্রতীকারের উপায় রহিল না। অতএব তিনি কল্‌দীয়দের রাজাকে তাহাদের বিরুদ্ধে আনিলেন, আর রাজা যুবকগণকে তাহাদের ধর্ম্মধামে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিলেন, আর যুবক কি যুবতী, বৃদ্ধ কি জরাজীর্ণ, কাহারও প্রতি দয়া করিলেন না; ঈশ্বর তাঁহার হস্তে সকলকে সমর্পণ করিলেন। তিনি ঈশ্বরের গৃহের ছোট বড় সমস্ত পাত্র, সদাপ্রভুর গৃহের ধনকোষ সকল, এবং রাজার ও তাঁহার অধ্যক্ষগণের ধনকোষ, সমুদয়ই বাবিলে লইয়া গেলেন। আর তাঁহার লোকেরা ঈশ্বরের গৃহ পোড়াইয়া দিল, যিরূশালেমের প্রাচীর ভগ্ন করিল, এবং তথাকার অট্টালিকা সকল অগ্নিদ্বারা পোড়াইয়া দিল, তথাকার সমস্ত মনোরম পাত্র বিনষ্ট করিল। আর তিনি খড়্‌গ হইতে অবশিষ্ট লোকদিগকে বাবিলে লইয়া গেলেন; তাহাতে পারস্য-রাজ্য স্থাপিত না হওয়া পর্য্যন্ত লোকেরা তাঁহার ও তাঁহার সন্তানদের দাস থাকিল। যিরমিয় দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্য সফল করণার্থে যে পর্য্যন্ত দেশ আপনার বিশ্রামকাল সকল ভোগ না করিল, [সে পর্য্যন্ত এইরূপ হইল;] সত্তর বৎসর পূর্ণ করণার্থে নিজ উচ্ছিন্ন দশার সমস্ত কাল দেশ বিশ্রাম ভোগ করিল। পরে পারস্য-রাজ কোরসের প্রথম বৎসরে যিরমিয় দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্য-সিদ্ধির নিমিত্ত সদাপ্রভু পারস্য-রাজ কোরসের মনে প্রবৃত্তি দিলেন, তাই তিনি আপনার রাজ্যের সর্ব্বত্র ঘোষণা দ্বারা এবং লিখিত বিজ্ঞাপন দ্বারা এই আজ্ঞা প্রচার করিলেন, পারস্য-রাজ কোরস এই কথা কহেন, স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভু পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য আমাকে দান করিয়াছেন, আর তিনি যিহূদা দেশস্থ যিরূশালেমে তাঁহার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবার ভার আমাকে দিয়াছেন। তোমাদের মধ্যে, তাঁহার সমস্ত প্রজার মধ্যে, যে কেহ হউক, তাহার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহার সহবর্ত্তী হউন, সে সেখানে যাউক। পারস্য-রাজ কোরসের প্রথম বৎসরে যিরমিয় দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্যসিদ্ধির নিমিত্ত সদাপ্রভু পারস্য-রাজ কোরসের মনে প্রবৃত্তি দিলেন, তাই তিনি আপনার রাজ্যের সর্ব্বত্র ঘোষণা দ্বারা এবং লিখিত বিজ্ঞাপন দ্বারা এই আজ্ঞা প্রচার করিলেন, পারস্য-রাজ কোরস এই কথা কহেন, স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভু পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য আমাকে দান করিয়াছেন, আর তিনি যিহূদা দেশস্থ যিরূশালেমে তাঁহার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবার ভার আমাকে দিয়াছেন। তোমাদের মধ্যে, তাঁহার সমস্ত প্রজার মধ্যে, যে কেহ হউক, তাহার ঈশ্বর তাহার সহবর্ত্তী হউন; সে যিহূদা দেশস্থ যিরূশালেমে যাউক, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর যিরূশালেমস্থ গৃহ নির্ম্মাণ করুক; তিনিই ঈশ্বর। আর যে কোন স্থানে যে কেহ অবশিষ্ট আছে, প্রবাস করিতেছে, সেই স্থানের লোকেরা ঈশ্বরের যিরূশালেমস্থ গৃহের জন্য স্বেচ্ছা-দত্ত নৈবেদ্য ব্যতিরেকে রৌপ্য, স্বর্ণ, নানা দ্রব্য ও পশু দিয়া তাহার সাহায্য করুক। তখন যিহূদার ও বিন্যামীনের পিতৃকুলপতিগণ এবং যাজকেরা ও লেবীয়েরা, এমন কি, ঈশ্বরের যে লোকদের মনে সদাপ্রভুর যিরূশালেমস্থ গৃহ নির্ম্মাণার্থে যাত্রা করিতে প্রবৃত্তি দিলেন, সেই সকলে উঠিল। আর তাহাদের চতুর্দ্দিক্‌স্থ সমস্ত লোক স্বেচ্ছা-দত্ত সকল নৈবেদ্য ব্যতিরেকে রৌপ্যময় পাত্র, স্বর্ণ, নানা দ্রব্য এবং পশু ও বহুমূল্য দ্রব্য তাহাদিগকে দিয়া তাহাদের হস্ত সবল করিল। আর নবূখদ্‌নিৎসর সদাপ্রভুর গৃহের যে সকল পাত্র যিরূশালেম হইতে আনিয়া আপন দেবালয়ে রাখিয়াছিলেন, কোরস রাজা সেই সকল বাহির করিয়া দিলেন। পারস্য-রাজ কোরস সে সকল কোষাধ্যক্ষ মিত্রদাতের হস্ত দ্বারা বাহির করিয়া আনাইলেন, আর যিহূদার অধ্যক্ষ শেশ্‌বসরের কাছে গণনা করিয়া তাহা সমর্পণ করিলেন। সেই সকল দ্রব্যের সংখ্যা; স্বর্ণময় ত্রিশখানি থাল, রৌপ্যময় সহস্র থাল, ঊনত্রিশখানি ছুরী, ত্রিশটী স্বর্ণময় পানপাত্র, চারি শত দশটী রৌপ্যময় দ্বিতীয় প্রকার পানপাত্র, এবং এক সহস্র অন্যান্য পাত্র; সর্ব্বশুদ্ধ পাঁচ সহস্র চারি শত স্বর্ণময় ও রৌপ্যময় পাত্র। বন্দিদিগকে বাবিল হইতে যিরূশালেমে উঠাইয়া আনিবার সময়ে শেশ্‌বসর এই সকল দ্রব্য আনিলেন। যাহারা বন্দিরূপে নীত হইয়াছিল, বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর যাহাদিগকে বাবিলে বন্দি করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন, তাহাদের মধ্য প্রদেশের এই লোকেরা বন্দিদশা হইতে যাত্রা করিয়া যিরূশালেমে ও যিহূদাতে আপন আপন নগরে ফিরিয়া আসিল; ইহারা সরুব্বাবিল, যেশূয়, নহিমিয়, সরায়, রিয়েলায়, মর্দখয়, বিল্‌শন, মিস্পর, বিগ্‌রয়, রহূম ও বানা, ইহাঁদের সহিত ফিরিয়া আসিল। সেই ইস্রায়েল লোকদের পুরুষ-সংখ্যা। পরোশের সন্তান দুই সহস্র এক শত বাহাত্তর জন। শফটিয়ের সন্তান তিন শত বাহাত্তর জন। আরহের সন্তান সাত শত পঁচাত্তর জন। যেশূয় ও যোয়াবের সন্তানদের মধ্যে পহৎ-মোয়াবের সন্তান দুই সহস্র আট শত বারো জন। এলমের সন্তান এক সহস্র দুই শত চুয়ান্ন জন। সত্তূর সন্তান নয় শত পঁয়তাল্লিশ জন। সক্কয়ের সন্তান সাত শত ষাট জন। বানির সন্তান ছয় শত বেয়াল্লিশ জন। বেবয়ের সন্তান ছয় শত তেইশ জন। অস্‌গদের সন্তান এক সহস্র দুই শত বাইশ জন। অদোনীকামের সন্তান ছয় শত ছেষট্টি জন। বিগ্‌বয়ের সন্তান দুই সহস্র ছাপ্পান্ন জন। আদীনের সন্তান চারি শত চুয়ান্ন জন। যিহিষ্কিয়ের বংশজাত আটেরের সন্তান আটানব্বই জন। বেৎসয়ের সন্তান তিন শত তেইশ জন। যোরাহের সন্তান এক শত বারো জন। হশুমের সন্তান দুই শত তেইশ জন। গিব্বরের সন্তান পঁচানব্বই জন। বৈৎলেহমের সন্তান এক শত তেইশ জন। নটোফার লোক ছাপ্পান্ন জন। অনাথোতের লোক এক শত আটাশ জন। অস্‌মাবতের সন্তান বিয়াল্লিশ জন। কিরিয়ৎ-আরীম, কফীরা ও বেরোতের সন্তান সাত শত তেতাল্লিশ জন। রামার ও গেবার সন্তান ছয় শত একুশ জন। মিক্‌মসের লোক এক শত বাইশ জন। বৈথেলের ও অয়ের লোক দুই শত তেইশ জন। নবোর সন্তান বাহান্ন জন। মগ্‌বীশের সন্তান এক শত ছাপ্পান্ন জন। অন্য এলমের সন্তান এক সহস্র দুই শত চুয়ান্ন জন। হারীমের সন্তান তিন শত বিংশতি জন। লোদ, হাদীদ ও ওনোর সন্তান সাত শত পঁচিশ জন। যিরিহোর সন্তান তিন শত পঁয়তাল্লিশ জন। সনায়ার সন্তান তিন সহস্র ছয় শত ত্রিশ জন। যাজকবর্গ; যেশূয় কুলের মধ্যে যিদয়িয়ের সন্তান নয় শত তিয়াত্তর জন। ইম্মেরের সন্তান এক সহস্র বাহান্ন জন। পশ্‌হূরের সন্তান এক সহস্র দুই শত সাতচল্লিশ জন। হারীমের সন্তান এক সহস্র সতের জন। লেবীয়বর্গ; হোদবিয়ের সন্তানদের মধ্যে যেশূয় ও কদ্‌মীয়েলের সন্তান চুয়াত্তর জন। গায়কবর্গ; আসফের সন্তান এক শত আটাশ জন। দ্বারপালদের সন্তানবর্গ; শল্লুমের সন্তান, আটেরের সন্তান, টলমোনের সন্তান, অক্কূবের সন্তান, হটীটার সন্তান, শোবয়ের সন্তান সর্ব্বশুদ্ধ এক শত ঊনচল্লিশ জন। নথীনীয়বর্গ; সীহের সন্তান, হসূফার সন্তান, টব্বায়োতের সন্তান, কেরোসের সন্তান, সীয়ের সন্তান, পাদোনের সন্তান, লবানার সন্তান, হগাবের সন্তান, অক্কূবের সন্তান, হাগবের সন্তান, শম্‌লয়ের সন্তান, হাননের সন্তান, গিদ্দেলের সন্তান, গহরের সন্তান, রায়ার সন্তান, রৎসীনের সন্তান, নকোদের সন্তান, গসমের সন্তান, উষের সন্তান, পাসেহের সন্তান, বেষয়ের সন্তান, অস্নার সন্তান, মিয়ূনীমের সন্তান, নফূষীমের সন্তান; বক্‌বূকের সন্তান, হকূফার সন্তান, হর্হূরের সন্তান, বসলূতের সন্তান, মহীদার সন্তান, হর্শার সন্তান, বর্কোসের সন্তান, সীষরার সন্তান, তেমহের সন্তান, নৎসীহের সন্তান, হটীফার সন্তানগণ। শলোমনের দাসদের সন্তানবর্গ; সোটয়ের সন্তান, হস্‌সোফেরতের সন্তান, পরূদার সন্তান; যালার সন্তান, দর্কোনের সন্তান, গিদ্দেলের সন্তান, শফটিয়ের সন্তান, হটীয়েল সন্তান, পোখেরৎ-হৎসবায়ীমের সন্তান, আমীর সন্তানগণ। নথীনীয়েরা ও শলোমনের দাসদের সন্তানবর্গ সর্ব্বশুদ্ধ তিন শত বিরানব্বই জন। আর তেল্‌-মেলহ, তেল হর্শা, করূব, অদ্দন ও ইম্মের, এই সকল স্থান হইতে নিম্নলিখিত লোক সকল আসিল, কিন্তু তাহারা ইস্রায়েলীয় কি না, এ বিষয়ে আপন আপন পিতৃকুল কি বংশের প্রমাণ দিতে পারিল না; দলায়ের সন্তান, টোবিয়ের সন্তান, নকোদের সন্তান ছয় শত বাহান্ন জন। আর যাজক-সন্তানদের মধ্যে হবায়ের সন্তান, হক্কোসের সন্তান ও বর্সিল্লয়ের সন্তানগণ; এই বর্সিল্লয় গিলিয়দীয় বর্সিল্লয়ের এক কন্যাকে বিবাহ করিয়া তাহাদের নামে আখ্যাত হইয়াছিল। বংশাবলিতে গণিত লোকদের মধ্যে ইহারা আপন আপন বংশাবলিপত্র অন্বেষণ করিয়া পাইল না, এই জন্য তাহারা অশুচি বলিয়া যাজকের পদ হইতে ভ্রষ্ট হইল। আর শাসনকর্ত্তা তাহাদিগকে কহিলেন, যে পর্য্যন্ত ঊরীম ও তুম্মীমের অধিকারী এক যাজক উৎপন্ন না হইবে, তাবৎ তোমরা অতি পবিত্র বস্তু ভোজন করিও না। একত্রীকৃত সমস্ত সমাজ বিয়াল্লিশ সহস্র তিন শত ষাট জন ছিল। তদ্ভিন্ন তাহাদের সাত সহস্র তিন শত সাঁইত্রিশ জন দাসদাসী ছিল, আর তাহাদের দুই শত জন গায়ক ও গায়িকা ছিল। তাহাদের সাত শত ছত্রিশ অশ্ব, দুই শত পঁয়তাল্লিশ অশ্বতর, চারি শত পঁয়ত্রিশ উষ্ট্র, ও ছয় সহস্র সাত শত বিংশতি গর্দ্দভ ছিল। পরে পিতৃকুলপতিদের মধ্যে কতকগুলি লোক সদাপ্রভুর যিরূশালেমস্থ গৃহের স্থানে আসিলে ঈশ্বরের সেই গৃহ স্বস্থানে স্থাপন করণার্থে ইচ্ছাপূর্ব্বক দান করিল। তাহারা আপন আপন শক্তি অনুসারে ঐ কর্ম্মের ভাণ্ডারে একষট্টি সহস্র অদর্কোন স্বর্ণ, ও পাঁচ সহস্র মানি রৌপ্য, ও যাজকদের জন্য এক শত অঙ্গরক্ষক বস্ত্র দিল। পরে যাজকেরা, লেবীয়েরা ও [অন্য] কোন কোন লোক এবং গায়কেরা, দ্বারপালেরা ও নথীনীয়েরা আপন আপন নগরে, এবং সমস্ত ইস্রায়েল আপন আপন নগরে বাস করিল। পরে সপ্তম মাস উপস্থিত হইল, আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ ঐ সকল নগরে ছিল; তখন লোকেরা এক মানুষের ন্যায় যিরূশালেমে একত্র হইল। আর যোষাদকের পুত্র যেশূয় ও তাঁহার যাজক ভ্রাতৃগণ এবং শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ উঠিয়া ঈশ্বরের লোক মোশির ব্যবস্থাতে লিখিত বিধি অনুসারে হোমীয় বলি উৎসর্গ করণার্থে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন। তাঁহারা যজ্ঞবেদি স্বস্থানে স্থাপন করিলেন, কেননা সেই সকল দেশের লোক হইতে তাঁহারা ভীত হইয়াছিলেন; এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাহার উপরে হোম অর্থাৎ প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে হোম করিতে লাগিলেন। আর তাহারা লিখিত বিধি অনুসারে কুটীরোৎসব পালন করিলেন, এবং প্রত্যেক দিনের উপযুক্ত সংখ্যানুসারে বিধিমতে দিন দিন হোমার্থক বলি উৎসর্গ করিলেন। তদবধি তাঁহারা নিত্য হোম, অমাবস্যার, এবং সদাপ্রভুর পবিত্রীকৃত সমস্ত পর্ব্বের উপহার, এবং যাহারা ইচ্ছাপূর্ব্বক সদাপ্রভুর উদ্দেশে স্বেচ্ছা-দত্ত উপহার আনিত, তাহাদের প্রত্যেক জনের উপহার উৎসর্গ করিতে লাগিলেন। সপ্তম মাসের প্রথম দিনে তাঁহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোম করিতে আরম্ভ করিলেন, কিন্তু তৎকালে সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপিত হয় নাই। আর পারস্য-রাজ কোরস তাঁহাদিগকে যে অনুমতি দিয়াছিলেন, তদনুসারে তাঁহারা ভাস্করদিগকে ও সূত্রধরদিগকে রৌপ্য দিলেন, এবং লিবানোন হইতে যাফোস্থ সমুদ্র-তীরে এরসকাষ্ঠ আনিবার জন্য সীদোনীয় ও সোরীয়দিগকে খাদ্য, পানীয় দ্রব্য ও তৈল দিলেন। আর যিরূশালেমে ঈশ্বরের গৃহের স্থানে আসিলে পর দ্বিতীয় বৎসরের দ্বিতীয় মাসে শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল ও যোষাদকের পুত্র যেশূর এবং তাঁহাদের অবশিষ্ট ভ্রাতৃগণ, অর্থাৎ যাজকেরা ও লেবীয়েরা এবং বন্দিদশা হইতে যিরূশালেমে আগত সমস্ত লোক কার্য্য আরম্ভ করিলেন, এবং সদাপ্রভুর গৃহের কার্য্যের তত্ত্বাবধান জন্য বিংশতি বৎসর ও ততোধিক বয়স্ক লেবীয়দিগকে নিযুক্ত করিলেন। তখন যেশূয়, তাঁহার পুত্রগণ ও ভ্রাতৃগণ, যিহূদার সন্তান কদ্‌মীয়েল ও তাঁহার পুত্রগণ ঈশ্বরের গৃহে কর্ম্মকারীদের কার্য্যের তত্ত্বাবধান জন্য একত্র হইয়া দাঁড়াইলেন; লেবীয় হেনাদদের সন্তানগণ ও তাহাদের পুত্র ও ভ্রাতৃগণ [তদ্রূপ করিল]। আর গাঁথকেরা যখন সদাপ্রভুর মন্দিরের ভিত্তিমূল স্থাপন করিল, তখন ইস্রায়েল-রাজ দায়ূদের নিরূপণানুসারে সদাপ্রভুর প্রশংসা করণার্থে আপন আপন পরিচ্ছদপরিহিত যাজকগণ তূরী লইয়া ও আসফের সন্তান লেবীয়েরা করতাল লইয়া দণ্ডায়মান হইল। তাহারা সদাপ্রভুর প্রশংসা ও স্তব করিয়া পালানুসারে এই গান করিল; “তিনি মঙ্গলময়, ইস্রায়েলের প্রতি তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী”। আর সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপন সময়ে সদাপ্রভুর প্রশংসা করিতে করিতে সমস্ত লোক উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি করিল। কিন্তু যাজকদের, লেবীয়দের ও পিতৃকুলপতিদের মধ্যে অনেক লোক, অর্থাৎ যে বৃদ্ধগণ পূর্ব্বকার গৃহ দেখিয়াছিলেন, তাঁহাদের চক্ষুর্গোচরে যখন এই গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপিত হইল, তাঁহারা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিলেন, আবার অনেকে আনন্দে উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি করিল। তখন লোকেরা আনন্দ জন্য জয়ধ্বনির শব্দ ও জনতার রোদনের শব্দ বিশেষ করিয়া নিশ্চয় করিতে পারিল না, যেহেতু লোকেরা এরূপ উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি করিল যে, তাহার শব্দ দূর হইতে শুনা গেল। পরে যিহূদার ও বিন্যামীনের বিপক্ষগণ শুনিল যে, বন্দিদশা হইতে আগত লোকেরা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে মন্দির নির্ম্মাণ করিতেছে; তখন তাহারা সরুব্বাবিলের ও পিতৃকুলপতিদের নিকটে আসিয়া তাঁহাদিগকে কহিল, তোমাদের সহিত আমারাও গাঁথি, কেননা তোমাদের ন্যায় আমরাও তোমাদের ঈশ্বরের অন্বেষণ করি; আর যে অশূর-রাজ এসর-হদ্দোন আমাদিগকে এই স্থানে আনিয়াছিলেন, তাঁহার সময়াবধি আমরা তাঁহারই উদ্দেশে যজ্ঞ করিয়া আসিতেছি। কিন্তু সরুব্বাবিল, যেশূয় ও ইস্রায়েলের অন্য সকল পিতৃকুলপতি তাহাদিগকে কহিলেন, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে গৃহ নির্ম্মাণ করিবার বিষয়ে আমাদের সহিত তোমাদের সম্পর্ক নাই; কিন্তু কোরস রাজা, পারস্য-রাজ, আমাদিগকে যাহা আজ্ঞা করিয়াছেন, তদনুসারে কেবল আমরাই ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নির্ম্মাণ করিব। তখন দেশের লোকেরা যিহূদার লোকদের হস্ত দুর্ব্বল করিতে ও নির্ম্মাণ-ব্যাপারে তাহাদিগকে উদ্বিগ্ন করিতে লাগিল; এবং তাহাদের অভিপ্রায় ব্যর্থ করিবার জন্য পারস্য-রাজ কোরসের সমস্ত জীবনকাল ব্যাপিয়া ও পারস্য-রাজ দারিয়াবসের রাজত্বপ্রাপ্তি পর্য্যন্ত টাকা দিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণাকারী নিযুক্ত করিত। অহশ্বেরশের রাজত্বকালে, তাঁহার রাজত্বের আরম্ভকালে, লোকেরা যিহূদা ও যিরূশালেম-নিবাসীদের বিরুদ্ধে এক অভিযোগ-পত্র লিখিল। আর অর্তক্ষস্তের সময়ে বিশ্লম, মিত্রদাৎ, টাবেল ও তাহার অন্য সঙ্গীরা পারস্যের অর্তক্ষস্ত রাজার কাছে এক পত্র লিখিল, তাহা অরামীয় অক্ষরে লিপিবদ্ধ ও অরামীয় ভাষায় বিরচিত হইয়াছিল। রহূম মন্ত্রী ও শিম্‌শয় লেখক যিরূশালেমের বিরুদ্ধে অর্তক্ষস্ত রাজার নিকটে এই মর্ম্মে পত্র লিখিল; “রহূম মন্ত্রী ও শিম্‌শয় লেখক ও তাহাদের সঙ্গী অন্য সকলে, অর্থাৎ দীনীয়, অফর্সৎখীয় টর্পলীয়, অফর্সীয়, অর্কবীয়, বাবিলীয়, শূশন্‌খীয়, দেহবীয়, ও এলমীয় লোকেরা, এবং মহামহিম সম্ভ্রান্ত অস্নপ্পর কর্ত্তৃক আনীত ও শমরিয়ার নগরে এবং [ফরাৎ] নদীর পারস্থ অন্য সকল দেশে স্থাপিত অন্য সকল জাতি, ইত্যাদি।” তাহারা অর্তক্ষস্ত রাজার নিকটে সেই যে পত্র পাঠাইল, তাহার অনুলিপি এই; “[ফরাৎ] নদীর পারস্থ আপনার দাসেরা, ইত্যাদি। মহারাজের নিকটে এই নিবেদন; যিহূদীরা আপনার নিকট হইতে আমাদের এখানে যিরূশালেমে আসিয়াছে; তাহারা সেই বিদ্রোহী মন্দ নগর নির্ম্মাণ করিতেছে; প্রাচীর সমাপ্ত করিয়াছে, ভিত্তিমূল মেরামৎ করিয়াছে। অতএব মহারাজের নিকটে নিবেদন এই, যদি এই নগর নির্ম্মিত ও প্রাচীর স্থাপিত হয়, তবে ঐ লোকেরা কর, রাজস্ব ও মাশুল আর দিবে না, ইহাতে পরিণামে রাজসরকারের ক্ষতি হইবে। আমরা রাজবাটীর লবণ খাইয়া থাকি, অতএব মহারাজের অপমান দেখা আমাদের উচিত নয়, এই জন্য লোক পাঠাইয়া মহারাজকে জ্ঞাত করিলাম। আপনার পিতৃপুরুষদের ইতিহাস-পুস্তকে অনুসন্ধান করা হউক; সেই ইতিহাস-পুস্তকে দেখিয়া জানিতে পারিবেন, এই নগর বিদ্রোহী নগর এবং রাজাদের ও প্রদেশ সকলের পক্ষে অনিষ্টকর, আর এই নগরে পুরাকালাবধি উপপ্লব হইয়া আসিতেছিল, সেই জন্যই এই নগর বিনষ্ট হয়। আমরা মহারাজকে জ্ঞাত করিলাম, যদি এই নগর নির্ম্মিত ও ইহার প্রাচীর স্থাপিত হয়, তবে এতদ্দ্বারা নদীর এপারে আপনার কিছু অধিকার থাকিবে না।” রাজা রহূম মন্ত্রীকে, শিম্‌শয় লেখককে ও শমরিয়ানিবাসী তাহাদের অন্য সঙ্গীদিগকে এবং নদী-পারস্থ অন্য লোকদিগকে উত্তরে লিখিলেন, “মঙ্গল হউক ইত্যাদি। তোমরা আমাদের কাছে যে পত্র পাঠাইয়াছ, তাহা আমার সম্মুখে স্পষ্টরূপে পঠিত হইয়াছে। আমার আজ্ঞায় অনুসন্ধান হইল ও জানা গেল, পুরাকালাবধি সেই নগর রাজদ্রোহ করিয়া আসিতেছিল, এবং তথায় বিদ্রোহ ও উপপ্লব হইত। আর যিরূশালেমে পরাক্রমী রাজগণও ছিলেন, তাঁহারা নদীপারস্থ সকলের উপরে রাজত্ব করিতেন, এবং তাঁহাদিগকে কর, রাজস্ব ও মাশুল দেওয়া হইত। সেই লোকদিগকে নিবৃত্ত থাকিতে, এবং যত দিন আমাহইতে কোন আজ্ঞা প্রচারিত না হয়, তত দিন ঐ নগর নির্ম্মাণ রহিত করিতে আজ্ঞা দেও। সাবধান, এই কার্য্যে তোমরা শিথিল হইও না; রাজ-সরকারের ক্ষতিজনক অপচয় কেন হইবে?” পরে রহূমের শিম্‌শয় লেখকের ও তাহাদের সঙ্গী লোকদের কাছে অর্তক্ষস্ত রাজার পত্র পাঠ হইবামাত্র তাহারা শীঘ্র যিরূশালেমে যিহূদীদের নিকটে গিয়া হস্ত ও বলপ্রয়োগে তাহাদিগকে ঐ কর্ম্ম হইতে নিবৃত্ত করিল। তখন যিরূশালেমস্থ ঈশ্বরের গৃহের কার্য্য নিবৃত্ত হইল; পারস্য-রাজ দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসর পর্য্যন্ত তাহা নিবৃত্ত থাকিল। পরে হগয় ভাববাদী ও ইদ্দোর পুত্র সখরিয়, এই দুই জন ভাববাদী যিহূদা ও যিরূশালেমস্থ যিহূদীদের নিকটে ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিলেন; ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নামে তাহাদের কাছে ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিলেন। তখন শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল ও যোষাদকের পুত্র যেশূয় উঠিয়া যিরূশালেমস্থ ঈশ্বরের গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ করিলেন, আর ঈশ্বরের ভাববাদীরা তাঁহাদের সঙ্গে থাকিয়া তাঁহাদিগকে সাহায্য করিতেন। সেই সময়ে নদী-পারস্থ দেশাধ্যক্ষ তত্তনয়, শথরবোষণয়, এবং তাঁহাদের সঙ্গী লোকেরা তাঁহাদের নিকটে আসিয়া কহিলেন, এই গৃহ নির্ম্মাণ ও প্রাচীর স্থাপন করিতে তোমাদিগকে কে আজ্ঞা দিয়াছে? তখন আমরা তাঁহাদিগকে এই প্রশ্নের উত্তর দিলাম, সেই গাঁথনিকারী লোকদের নাম কি? কিন্তু যিহূদীদের প্রাচীনবর্গের প্রতি তাঁহাদের ঈশ্বরের দৃষ্টি ছিল, আর যাবৎ দারিয়াবসের নিকটে নিবেদন উপস্থিত করা না যায়, এবং এই কর্ম্মের বিষয়ে পুনরায় পত্র না আইসে, তাবৎ উহাঁরা তাঁহাদিগকে নিবৃত্ত করিলেন না। নদী-পারস্থ দেশাধ্যক্ষ তত্তনয়, শথরবোষণয় এবং নদী-পারস্থ তাঁহাদের সঙ্গী অফর্সখীয়েরা দারিয়াবস রাজার নিকটে যে পত্র পাঠাইলেন, তাহার অনুলিপি এই। তাঁহারা এই কথা সম্বলিত এক পত্র পাঠাইলেন, “মহারাজ দারিয়াবসের সকলই মঙ্গল হউক। মহারাজের নিকটে আমাদের নিবেদন, আমরা যিহূদা প্রদেশে মহান্‌ ঈশ্বরের গৃহে গিয়াছিলাম, তাহা প্রকাণ্ড প্রস্তর দ্বারা নির্ম্মিত এবং তাঁহার ভিত্তিতে কাষ্ঠ বসান হইতেছে; আর এই কার্য্য সযত্নে চলিতেছে, ও তাহাদের হস্তে তাহা সুসিদ্ধ হইতেছে। আমরা সেই প্রাচীনদিগকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তাহাদিগকে এই কথা বলিলাম, এই গৃহ নির্ম্মাণ ও প্রাচীর স্থাপন করিতে তোমাদিগকে কে আজ্ঞা দিয়াছে? আর আমরা আপনার জ্ঞাপনার্থে তাহাদের প্রধান লোকদিগকে নাম লিখিয়া লইবার জন্য তাহাদের নামও জিজ্ঞাসা করিলাম। তাহারা আমাদিগকে এই উত্তর দিল, যিনি স্বর্গের ও পৃথিবীর ঈশ্বর, আমরা তাঁহারই দাস; আর এই যে গৃহ নির্ম্মাণ করিতেছি, ইহা বহু বৎসর পূর্ব্বে নির্ম্মিত হইয়াছিল, ইস্রায়েলের এক জন মহান্‌ রাজা তাহা নির্ম্মাণ ও সমাপ্ত করিয়াছিলেন। পরে আমাদের পিতৃপুরুষেরা স্বর্গের ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করাতে, তিনি তাহাদিগকে বাবিল-রাজ কল্‌দীয় নবূখদ্‌নিৎসরের হস্তে সমর্পণ করেন; তিনি এই গৃহ ধ্বংস করেন, এবং লোকদিগকে বাবিলে লইয়া যান। কিন্তু বাবিল-রাজ কোরসের প্রথম বৎসরে কোরস রাজা ঈশ্বরের এই গৃহ নির্ম্মাণ করিতে আজ্ঞা করিলেন। আর নবূখদ্‌নিৎসর ঈশ্বরের গৃহের যে সকল স্বর্ণময় ও রৌপ্যময় পাত্র যিরূশালেমস্থ মন্দির হইতে লইয়া গিয়া বাবিলের মন্দিরে রাখিয়াছিলেন, সেই সকল পাত্র কোরস রাজা বাবিলস্থ মন্দির হইতে বাহির করিয়া তাঁহার নিযুক্ত শেশ্‌বসর নামক শাসনকর্ত্তার হস্তে সমর্পণ করিলেন, এবং তাঁহাকে কহিলেন, তুমি এই সকল পাত্র যিরূশালেমস্থ মন্দিরে লইয়া গিয়া তথায় রাখ, এবং ঈশ্বরের গৃহ স্বস্থানে নির্ম্মিত হউক। তৎকালে সেই শেশ্‌বসর আসিয়া যিরূশালেমস্থ ঈশ্বরের গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপন করিলেন; তদবধি এখন পর্য্যন্ত ইহার গাঁথনি হইতেছে, তথাপি সাঙ্গ হয় নাই। অতএব এখন যদি মহারাজের বিহিত বোধ হয়, তবে কোরস রাজা যিরূশালেমস্থ ঈশ্বরের গৃহ নির্ম্মাণ করিবার আজ্ঞা দিয়াছিলেন কি না, তাহা মহারাজের ঐ বাবিলস্থ ধনাগারে অনুসন্ধান করা হউক; পরে মহারাজ এ বিষয়ে আমাদের নিকটে আপন ইচ্ছা বলিয়া পাঠাইবেন।” তখন দারিয়াবস রাজা আজ্ঞা করিলে বাবিলস্থ ধনাগারের পুস্তকালয়ে অনুসন্ধান করা গেল। পরে মাদীয় প্রদেশের অক্‌মথা নামক রাজপুরীতে একখানা খাতা পাওয়া গেল; তন্মধ্যে স্মরণার্থে এই কথা লিখিত ছিল, “কোরস রাজার প্রথম বৎসরে কোরস রাজা যিরূশালেমস্থ ঈশ্বরের গৃহের বিষয়ে এই আজ্ঞা করিলেন, সেই গৃহ যজ্ঞ-স্থান বলিয়া নির্ম্মিত হউক; ও তাহার ভিত্তিমূল দৃঢ়রূপে স্থাপিত হউক; তাহার উচ্চতা ষাট হস্ত ও প্রস্থ ষাট হস্ত হইবে। তাহা তিন তিন সারি প্রকাণ্ড প্রস্তরে ও এক এক সারি নূতন কড়িকাষ্ঠে গাঁথান হউক, এবং রাজবাটী হইতে তাহার ব্যয় প্রদত্ত হউক। আর ঈশ্বরের গৃহের যে সকল স্বর্ণময় ও রৌপ্যময় পাত্র নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেমস্থ মন্দির হইতে লইয়া বাবিলে রাখিয়াছিলেন, সে সকলও ফিরিয়া দেওয়া যাউক, এবং প্রত্যেক পাত্র যিরূশালেমস্থ মন্দিরে স্ব স্ব স্থানে নীত হউক, তাহা ঈশ্বরের গৃহে রাখিতে হইবে। অতএব হে নদী-পারস্থ দেশাধ্যক্ষ তত্তনয়, শথর-বোষণয় ও নদী-পারস্থ তোমাদের সঙ্গী অফর্সখীয়েরা, তোমরা এখন তথা হইতে দূরে থাক। ঈশ্বরের সেই গৃহের কার্য্য চলিতে দেও; যিহূদীদের অধ্যক্ষ ও যিহূদীদের প্রাচীনবর্গ ঈশ্বরের সেই গৃহ স্বস্থানে নির্ম্মাণ করুক। আর ঈশ্বরের সেই গৃহের গাঁথনির জন্য তোমরা যিহূদীদের প্রাচীনবর্গের কিরূপ সাহায্য করিবে, আমি তদ্বিষয়ে আজ্ঞা দিতেছি; তাহাদের যেন বাধা না হয়, এই জন্য রাজার ধন, অর্থাৎ নদীর পারের রাজকর হইতে যত্নপূর্ব্বক সেই লোকদিগকে ব্যয়ানুযায়ী অর্থ দত্ত হউক। আর তাহাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সকল অর্থাৎ স্বর্গের ঈশ্বরের উদ্দেশে হোমার্থে যুবা বৃষ, মেষ ও মেষশাবক, এবং গোম, লবণ, দ্রাক্ষারস ও তৈল যিরূশালেমস্থ যাজকদের নিরূপণানুসারে অবাধে দিন দিন তাহাদিগকে দত্ত হউক, যেন তাহারা স্বর্গের ঈশ্বরের উদ্দেশে সৌরভার্থক উপহার উৎসর্গ করে, এবং রাজার ও তাঁহার পুত্রদের জীবন প্রার্থনা করে। আরও আমি আজ্ঞা করিলাম, যে কেহ এই কথার অন্যথা করিবে, তাহার গৃহ হইতে একটী কড়িকাষ্ঠ বাহির করিয়া সেই কাষ্ঠে তাহাকে তুলিয়া টাঙ্গাইতে হইবে, এবং সেই দোষ প্রযুক্ত তাহার গৃহ সারের ঢিবি করা যাউক। আর যে কোন রাজা কিম্বা প্রজা [আজ্ঞার] অন্যথা করিয়া সেই যিরূশালেমস্থ ঈশ্বরের গৃহের বিনাশ সাধনে হস্তক্ষেপ করিবে, ঈশ্বর যিনি সেই স্থানে আপন নাম স্থাপন করিয়াছেন, তিনি তাহাকে নিপাত করিবেন। আমি দারিয়াবস আজ্ঞা করিলাম ইহা সযত্নে সম্পন্ন হউক।” তখন নদী-পারস্থ দেশাধ্যক্ষ তত্তনয়, শথর-বোষণয় ও তাঁহাদের সঙ্গিগণ যত্নপূর্ব্বক দারিয়াবস রাজার প্রেরিত আজ্ঞাহেতু তদনুযায়ী কর্ম্ম করিলেন। আর যিহূদীদের প্রাচীনবর্গ গাঁথনি করিয়া হগয় ভাববাদীর ও ইদ্দোর পুত্র সখরিয়ের ভাববাণী সহকারে কৃতকার্য্য হইলেন, এবং তাঁহারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে ও পারস্য-রাজ কোরসের, দারিয়াবসের ও অর্তক্ষস্তের আদেশানুসারে গাঁথনি করিয়া কার্য্য সমাপ্ত করিলেন। দারিয়াবস রাজার রাজত্বের ষষ্ঠ বৎসরে অদর মাসের তৃতীয় দিনে গৃহ সমাপ্ত হইল। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, যাজকেরা লেবীয়েরা ও বন্দিদশা হইতে আগত লোকদের অবশিষ্ট লোকেরা আনন্দে ঈশ্বরের সেই গৃহের প্রতিষ্ঠা করিল। আর ঈশ্বরের সেই গৃহের প্রতিষ্ঠার সময়ে এক শত বৃষ, দুই শত মেষ, চারি শত মেষশাবক, এবং সমস্ত ইস্রায়েলের জন্য পাপার্থক বলিরূপে ইস্রায়েলের বংশ-সংখ্যানুসারে বারোটী ছাগ উৎসর্গ করিল। আর যিরূশালেমে ঈশ্বরের সেবাকর্ম্মের জন্য যাজকদিগকে তাহাদের বিভাগানুসারে ও লেবীয়দিগকে তাহাদের পালানুসারে নিযুক্ত করা হইল; যেমন মোশির পুস্তকে লিখিত আছে। পরে প্রথম মাসের চতুর্দ্দশ দিনে বন্দিদশা হইতে আগত লোকেরা নিস্তারপর্ব্ব পালন করিল। কেননা যাজকেরা ও লেবীয়েরা আপনাদিগকে একসঙ্গে শুচি করিয়াছিল; তাহারা সকলেই শুচি হইয়াছিল, এবং বন্দিদশা হইতে আগত সমস্ত লোকের নিমিত্ত, তাহাদের যাজক ভ্রাতাদের ও আপনাদের নিমিত্ত নিস্তারপর্ব্বের বলি সকল হনন করিল। আর বন্দিদশা হইতে আগত ইস্রায়েল-সন্তানগণ, এবং যত লোক ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অন্বেষণার্থে তাহাদের পক্ষ হইয়া দেশ-নিবাসী জাতিগণের অশুচিতা হইতে আপনাদিগকে পৃথক্‌ করিয়াছিল, সেই সকলে তাহা ভোজন করিল, এবং সাত দিন পর্য্যন্ত আনন্দে তাড়ীশূন্য রুটীর উৎসব পালন করিল, যেহেতু সদাপ্রভু তাহাদিগকে আনন্দিত করিয়াছিলেন, আর ঈশ্বরের, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের, গৃহের কার্য্যে তাহাদের হস্ত দৃঢ় করিবার জন্য অশূররাজের চিত্ত তাহাদের পক্ষে ফিরাইয়াছিলেন। সেই সকল ঘটনার পরে পারস্য-রাজ অর্তক্ষস্তের রাজত্বকালে সরায়ের পুত্র ইষ্রা বাবিল হইতে যাত্রা করিলেন। উক্ত সরায় অসরিয়ের সন্তান, অসরিয় হিল্কিয়ের সন্তান, হিল্কিয় শল্লুমের সন্তান, শল্লুম সাদোকের সন্তান, সাদোক অহীটূবের সন্তান, অহীটূব অমরিয়ের সন্তান, অমরিয় অসরিয়ের সন্তান, অসরিয় মরায়োতের সন্তান, মরায়োৎ সরহিয়ের সন্তান, সরহিয় উষির সন্তান, উষি বুক্কির সন্তান, বুক্কি অবীশূয়ের সন্তান, অবীশূয় পীনহসের সন্তান, পীনহস ইলিয়াসরের সন্তান, ইলিয়াসর প্রধান যাজক হারোণের সন্তান। ইষ্রা মোশির ব্যবস্থায়, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত ব্যবস্থায়, ব্যুৎপন্ন অধ্যাপক ছিলেন, এবং তাঁহার উপরে তাঁহার ঈশ্বর সদাপ্রভুর হস্ত থাকায় রাজা তাঁহার সমস্ত বাঞ্ছিত বিষয় তাঁহাকে দিলেন। অর্তক্ষস্ত রাজার সপ্তম বৎসরে ইস্রায়েল-সন্তানদের, যাজকদের, ও লেবীয়দের, গায়কদের, দ্বারপালদের ও নথীনীয়দের কতকগুলি লোক যিরূশালেমে যাত্রা করিল। আর রাজার ঐ সপ্তম বৎসরের পঞ্চম মাসে ইষ্রা যিরূশালেমে উপস্থিত হইলেন। প্রথম মাসের প্রথম দিনে তিনি বাবিল হইতে যাত্রা আরম্ভ করিয়াছিলেন, এবং তাঁহার উপরে তাঁহার ঈশ্বরের মঙ্গলময় হস্ত থাকায় তিনি পঞ্চম মাসের প্রথম দিনে যিরূশালেমে উপস্থিত হইলেন। কেননা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা অনুশীলন ও পালন করিতে, এবং ইস্রায়েলে বিধি ও শাসন শিক্ষা দিতে ইষ্রা আপন অন্তঃকরণ সুস্থির করিয়াছিলেন। অর্তক্ষস্ত রাজা যে পত্র ইষ্রা যাজককে —সেই অধ্যাপককে, যিনি সদাপ্রভুর আদেশবাক্যের ও ইস্রায়েলের প্রতি তাঁহার বিধির অধ্যাপক ছিলেন—তাঁহাকে দিয়াছিলেন, তাহার অনুলিপি এই, “রাজাধিরাজ অর্তক্ষস্ত, ইষ্রা যাজক সমীপে, যিনি স্বর্গের ঈশ্বরের ব্যবস্থার অধ্যাপক, সিদ্ধ, ইত্যাদি। আমি এই আদেশ করিতেছি, আমার রাজ্যের মধ্যে ইস্রায়েল জাতির যত লোক, তাহাদের যত যাজক ও লেবীয় যিরূশালেমে যাইতে ইচ্ছা করে, তাহারা তোমার সহিত যাউক। কেননা তুমি রাজা ও তাঁহার সপ্ত মন্ত্রী কর্ত্তৃক প্রেরিত হইলে, যেন তোমার ঈশ্বরের যে ব্যবস্থা তোমার হস্তে আছে, তদনুসারে তুমি যিহূদার ও যিরূশালেমের তত্ত্বানুসন্ধান কর, এবং যিরূশালেমে যাঁহার আবাস, ইস্রায়েলের সেই ঈশ্বরের উদ্দেশে রাজা ও তাঁহার মন্ত্রিগণ ইচ্ছাপূর্ব্বক যে রৌপ্য ও স্বর্ণ দিয়াছেন, আর তুমি বাবিলের সমস্ত প্রদেশে যত রৌপ্য ও স্বর্ণ পাইতে পার, এবং লোকেরা ও যাজকেরা আপন ঈশ্বরের যিরূশালেমস্থ গৃহের নিমিত্ত ইচ্ছাপূর্ব্বক যাহা নিবেদন করে, সে সমস্ত যেন সেই স্থানে লইয়া যাও। অতএব সেই রৌপ্য দ্বারা তুমি বৃষ, মেষ, মেষশাবক ও তাহাদের উপযুক্ত ভক্ষ্য ও পানীয় নৈবেদ্য যত্নপূর্ব্বক ক্রয় করিয়া তোমাদের ঈশ্বরের যিরূশালেমস্থ গৃহস্থিত যজ্ঞবেদির উপরে উৎসর্গ করিবে। আর অবশিষ্ট রৌপ্যে ও স্বর্ণে তোমার ও তোমার ভ্রাতাদের মনে যাহা ভাল বোধ হয়, তাহা আপনাদের ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে করিবে। আর তোমার ঈশ্বরের গৃহের সেবার জন্য যে সকল পাত্র তোমাকে দত্ত হইল, তাহা যিরূশালেমের ঈশ্বরের সম্মুখে সমর্পণ করিবে। আর তাহা ছাড়া তোমার ঈশ্বরের গৃহের নিমিত্ত কর্ত্তব্য ব্যয়ের জন্য যাহা প্রয়োজনীয়, তাহা রাজভাণ্ডার হইতে [লইয়া] ব্যয় করিবে। আর আমি, অর্তক্ষস্ত রাজা, আমি নদীপারস্থ সমস্ত কোষাধ্যক্ষকে আদেশ করিতেছি, স্বর্গের ঈশ্বরের ব্যবস্থার অধ্যাপক ইষ্রা যাজক তোমাদের কাছে যাহা যাহা চাহিবেন, সে সমস্ত যেন সযত্নে দত্ত হয়, এক শত তালন্ত পর্য্যন্ত রৌপ্য, এক শত কোর্‌ পর্য্যন্ত গোম, এক শত বাৎ পর্য্যন্ত দ্রাক্ষারস, ও এক শত বাৎ পর্য্যন্ত তৈল, এবং অনিরূপণীয় পরিমাণে লবণ। স্বর্গের ঈশ্বর যাহা আদেশ করেন, তাহা স্বর্গের ঈশ্বরের গৃহের জন্য যথাযথরূপে করা হউক; রাজার ও তাঁহার পুত্রদের রাজ্যের প্রতি কেন ক্রোধ বর্ত্তিবে? আর এই বিজ্ঞাপন তোমাদিগকে দেওয়া যাইতেছে, যাজকদের, লেবীয়দের, গায়কদের, দ্বারপালদের, নথীনীয়দের ও সেই ঈশ্বরীয় গৃহের কর্ম্মে নিযুক্ত অন্য লোকদের মধ্যে কাহারও কাছে কর কি রাজস্ব কি মাশুল গ্রহণ করা বিধিসঙ্গত হইবে না। আর হে ইষ্রা, তোমার ঈশ্বরবিষয়ক যে জ্ঞান তোমার করতলে আছে, তদনুসারে নদীপারস্থ সকল লোকের বিচার করিবার জন্য, যাহারা তোমার ঈশ্বরের ব্যবস্থা জানে, এমন শাসনকর্ত্তা ও বিচারকর্ত্তাদিগকে নিযুক্ত কর; এবং যে তাহা না জানে, তোমরা তাহাকে শিক্ষা দেও। আর যে কেহ তোমার ঈশ্বরের ব্যবস্থা ও রাজার ব্যবস্থা পালন করিতে অসম্মত, সযত্নে তাহার শাসন করা হউক; তাহার প্রাণদণ্ড, নির্ব্বাসন, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত কিম্বা কারাদণ্ড হউক।” আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য; কেননা তিনি সদাপ্রভুর যিরূশালেমস্থ গৃহ শোভান্বিত করিতে এইরূপ প্রবৃত্তি রাজার অন্তঃকরণে দিলেন, এবং রাজার, তাঁহার মন্ত্রীদের ও রাজার সকল পরাক্রমী অধ্যক্ষের সাক্ষাতে আমাকে দয়াপ্রাপ্ত করিলেন। আর আমার উপরে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর হস্ত থাকায় আমি সবল হইলাম, এবং আমার সহিত যাইবার নিমিত্ত ইস্রায়েলের মধ্য হইতে প্রধান লোকদিগকে একত্র করিলাম। অর্তক্ষস্ত রাজার রাজত্বকালে তাহাদের যে পিতৃকুলপতিরা আমার সহিত বাবিল হইতে প্রস্থান করিল, তাহাদের নাম ও বংশাবলি এই। পীনহসের সন্তানদের মধ্যে গের্শোম, ঈথামরের সন্তানদের মধ্যে দানিয়েল, দায়ূদের সন্তানদের মধ্যে হটূশ। শখনিয়ের সন্তানদের মধ্যে; পরোশের সন্তানদের মধ্যে সখরিয়, এবং বংশাবলিতে নির্দ্দিষ্ট তাহার সঙ্গী এক শত পঞ্চাশ জন পুরুষ। পহৎ-মোয়াবের সন্তানদের মধ্যে সরহিয়ের পুত্র ইলীয়ৈনয়, ও তাহার সঙ্গী দুই শত পুরুষ। শখনিয়ের সন্তানদের মধ্যে মহসীয়েলের পুত্র, ও তাহার সঙ্গী তিন শত পুরুষ। আদীনের সন্তানদের মধ্যে যোনাথনের পুত্র এবদ, ও তাহার সঙ্গী পঞ্চাশ জন পুরুষ। এলমের সন্তানদের মধ্যে অথলিয়ের পুত্র যিশায়াহ, ও তাহার সঙ্গী সত্তর জন পুরুষ। শফটিয়ের সন্তানদের মধ্যে মীখায়েলের পুত্র সবদিয়, ও তাহার সঙ্গী আশী জন পুরুষ। যোয়াবের সন্তানদের মধ্যে যিহিয়েলের পুত্র ওবদিয়, ও তাহার সঙ্গী দুই শত আঠার জন পুরুষ। শলোমীতের সন্তানদের মধ্যে যোষিফিয়ের পুত্র, ও তাহার সঙ্গী এক শত ষাট জন পুরুষ আর বেবয়ের সন্তানদের মধ্যে বেবয়ের পুত্র সখরিয়, ও তাহার সঙ্গী আটাশ জন পুরুষ। অস্‌গদের সন্তানদের মধ্যে হকাটনের পুত্র যোহানন, ও তাহার সঙ্গী এক শত দশ জন পুরুষ। অদোনীকামের শেষ সন্তানদের মধ্যে কয়েক জন, তাহাদের নাম ইলীফেলট, যিয়ূয়েল ও শময়িয়, ও তাহাদের সঙ্গী ষাট জন পুরুষ। বিগ্‌বয়ের সন্তানদের মধ্যে ঊথয় ও সব্বূদ, ও তাহাদের সঙ্গী সত্তর জন পুরুষ। আমি তাহাদিগকে অহবা-গামিনী নদীর কাছে একত্র করিয়াছিলাম; সেই স্থানে আমরা শিবির স্থাপন করিয়া তিন দিন রহিলাম, আর লোকদের ও যাজকদের প্রতি নিরীক্ষণ করিলে আমি সে স্থানে লেবির সন্তানদের কাহাকেও দেখিতে পাইলাম না। তখন আমি ইলীয়েষর, অরীয়েল, শময়িয়, ইল্‌নাথন, যারিব, ইল্‌নাথন, নাথন, সখরিয়, ও মশুল্লম এই সকল প্রধান লোককে, এবং যোয়ারীব ও ইল্‌নাথন নামে দুই জন শিক্ষককে ডাকিতে পাঠাইলাম। পরে কাসিফিয়া নামক স্থানের প্রধান লোক ইদ্দোর নিকটে তাহাদিগকে প্রেরণ করিলাম; আর ‘তোমরা আমাদের ঈশ্বরের গৃহের জন্য পরিচারকদিগকে আমাদের নিকটে আন,’ কাসিফিয়া স্থান-প্রবাসী ইদ্দোক ও তাহার ভ্রাতা নথীনীয়দিগকে এই কথা কহিতে তাহাদিগকে আজ্ঞা করিলাম। আর আমাদের উপরে আমাদের ঈশ্বরের মঙ্গলময় হস্ত থাকায় তাহারা আমাদের নিকটে ইস্রায়েলের পুত্র লেবির বংশজাত মহলির সন্তানদের মধ্যে এক জন প্রবীণকে, আর শেরেবিয়কে এবং তাহার পুত্র ও ভ্রাতৃগণ আঠার জনকে, আর হশবিয়কে ও তাহার সহিত মরারির সন্তানদের মধ্যে যিশায়াহকে, তাহার ভ্রাতৃগণ ও পুত্রগণ বিংশতি জনকে আনিল; আর দায়ূদ ও অধ্যক্ষেরা যাহাদিগকে লেবীয়দের সেবাকর্ম্মের জন্য দিয়াছিলেন, সেই নথীনীয়দের মধ্যে দুই শত বিংশতি জনকেও আনিল; সেই সকলের নাম লিখিত হইল। পরে আমাদের নিমিত্ত এবং আমাদের বালকবালিকাদের ও সমস্ত সম্পত্তির নিমিত্ত সরল পথ যাচ্ঞা করিবার অভিপ্রায়ে আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষাতে আপনাদিগকে বিনীত করিবার জন্য আমি সেই স্থানে অহবা নদীর নিকটে উপবাস ঘোষণা করিলাম। কারণ পথে শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করণার্থে রাজার কাছে এক দল সৈন্য কি অশ্বারোহী চাহিতে আমার লজ্জা বোধ হইয়াছিল; বস্তুতঃ আমরা রাজাকে এই কথা বলিয়াছিলাম, আমাদের ঈশ্বরের হস্ত মঙ্গলের নিমিত্ত তাঁহার সমস্ত অন্বেষণকারীর উপরে আছে, কিন্তু যাহারা তাঁহাকে ত্যাগ করে, তাঁহার পরাক্রম ও ক্রোধ সেই সকলের বিরুদ্ধ। অতএব আমরা উপবাস করিলাম, ও আমাদের ঈশ্বরের কাছে সেই বিষয়ের জন্য প্রার্থনা করিলাম; তাহাতে তিনি আমাদের অনুরোধ গ্রাহ্য করিলেন। পরে আমি যাজকদের মধ্যে বারো জন প্রধানকে, অর্থাৎ শেরেবিয়কে, হশবিয়কে, ও তাহাদের সহিত তাহাদের দশ জন ভ্রাতাকে পৃথক্‌ করিলাম; আর রাজা, তাঁহার মন্ত্রিগণ, অধ্যক্ষগণ ও উপস্থিত সমস্ত ইস্রায়েল আমাদের ঈশ্বরের গৃহের জন্য উপহার বলিয়া যে রৌপ্য, স্বর্ণ ও পাত্র দিয়াছিলেন, উহাদিগকে তাহা তৌল করিয়া দিলাম; আমি ছয় শত পঞ্চাশ তালন্ত রৌপ্য, এক শত তালন্ত পরিমিত রৌপ্যের পাত্র, এক শত তালন্ত স্বর্ণ, এক সহস্র অদকোন মূল্যের বিংশতি স্বর্ণময় পাত্র, এবং স্বর্ণের ন্যায় বহুমূল্য উত্তম পরিষ্কৃত তাম্রের দুই পাত্র তৌল করিয়া তাহাদের হস্তে দিলাম। আর তাহাদিগকে কহিলাম, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র, এবং এই পাত্র সকলও পবিত্র, এবং এই রৌপ্য ও স্বর্ণ তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে স্বেচ্ছা-দত্ত নৈবেদ্য। অতএব তোমরা যিরূশালেমে সদাপ্রভুর গৃহের কুঠরীতে প্রধান যাজকদের, লেবীয়দের ও ইস্রায়েলের পিতৃকুলপতিদের কাছে যে পর্য্যন্ত তাহা তৌল করিয়া না দিবে, সে পর্য্যন্ত সতর্ক থাকিয়া রক্ষা করিবে। পরে যাজকেরা ও লেবীয়েরা যিরূশালেমে আমাদের ঈশ্বরের গৃহে লইয়া যাইবার নিমিত্ত সেই তৌল পরিমিত রৌপ্য, স্বর্ণ ও পাত্র গ্রহণ করিল। পরে প্রথম মাসের দ্বাদশ দিনে আমরা যিরূশালেমে যাইবার জন্য অহবা নদী হইতে প্রস্থান করিলাম, আর আমাদের উপরে আমাদের ঈশ্বরের হস্ত ছিল, তিনি পথিমধ্যে শত্রুদের ও গুপ্ত দস্যুদলের হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিলেন। পরে আমরা যিরূশালেমে উপস্থিত হইয়া সে স্থানে তিন দিন অবস্থিতি করিলাম। পরে চতুর্থ দিনে সেই রৌপ্য, স্বর্ণ ও পাত্র সকল আমাদের ঈশ্বরের গৃহে ঊরীয়ের পুত্র মরেমোৎ যাজকের হস্তে তৌল করিয়া দেওয়া গেল, আর তাহার সহিত পীনহসের পুত্র ইলিয়াসর এবং তাহাদের সহিত যেশূয়ের পুত্র যোষাবদ ও বিন্নূয়ির পুত্র নোয়দিয়, এই দুই জন লেবীয় ছিল। সমস্ত দ্রব্য গণনা ও তৌল করিয়া দেওয়া হইল, এবং সে সময়ে সমস্ত তৌলের পরিমাণ লিখিত হইল। নির্ব্বাসিত যে লোকেরা বন্দিদশা হইতে ফিরিয়া আসিয়াছিল, তাহারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের উদ্দেশে হোমবলি উৎসর্গ করিল; তাহারা সমুদয় ইস্রায়েলের জন্য বারোটী বৃষ, ছিয়ানব্বইটী মেষ, সাতাত্তরটী মেষশাবক, ও পাপার্থক বলির জন্য বারোটী ছাগ, এই সকল সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমার্থে বলিদান করিল। পরে রাজপ্রতিনিধি ক্ষিতিপালদিগের কাছে ও নদী-পারস্থ দেশাধ্যক্ষদিগের কাছে রাজার আজ্ঞাপত্র সমর্পিত হইল, আর তাহারা লোকদের, এবং ঈশ্বরের গৃহেরও সাহায্য করিলেন। সেই কার্য্যের সমাপ্তি হইলে পর অধ্যক্ষগণ আমার নিকটে আসিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল লোকেরা, যাজকেরা ও লেবীয়েরা নানা দেশ-নিবাসী জাতিগণের হইতে আপনাদিগকে পৃথক করে নাই; কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, যিবূষীয় অম্মোনীয়, মোয়াবীয়, মিস্রীয় ও ইমোরীয় লোকদের ঘৃণার্হ ক্রিয়ানুসারে কার্য্য করিতেছে। বস্তুতঃ তাহারা আপনাদের জন্য ও আপন আপন পুত্রদের জন্য তাহাদের কন্যাগণকে গ্রহণ করিয়াছে; এইরূপে পবিত্র বংশ নানা দেশ-নিবাসী জাতিগণের সহিত মিশ্রিত হইয়াছে; এবং অধ্যক্ষগণ ও শাসনকর্ত্তারাই প্রথমে এই সত্যলঙ্ঘনে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন। এই কথা শুনিয়া আমি আপন বস্ত্র ও পরিচ্ছদ ছিঁড়িলাম এবং আপন মস্তকের কেশ ও দাড়ি ছিঁড়িয়া স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রহিলাম। তখন বন্দিদশা হইতে আগত লোকদের সত্যলঙ্ঘন বিষয়ে যাহারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের বাক্যে কম্পান্বিত হইল, তাহারা আমার নিকটে একত্র হইল, এবং আমি সন্ধ্যাকালীন বলিদানের সময় পর্য্যন্ত স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রহিলাম। পরে সন্ধ্যাকালীন বলিদানের সময়ে আমি মনোদুঃখ হইতে উঠিলাম, এবং ছিন্ন বস্ত্র ও পরিচ্ছদ না খুলিয়া হাঁটু পাতিয়া আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে অঞ্জলি বিস্তার করিলাম; আর কহিলাম, হে আমার ঈশ্বর, আমি তোমার দিকে মুখ তুলিতে লজ্জিত ও বিষণ্ণ, কেননা হে আমার ঈশ্বর, আমাদের অপরাধ বহুল হইয়া আমাদের মস্তকের ঊর্দ্ধে উঠিয়াছে, ও আমাদের দোষ বৃদ্ধি পাইয়া গগনস্পর্শী হইয়াছে। আমাদের পিতৃপুরুষদের সময় অবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমরা মহাদোষগ্রস্ত; আমাদের অপরাধের জন্য আমরা, আমাদের রাজগণ ও আমাদের যাজকগণ নানা দেশীয় রাজাদের হস্তগত, খড়্‌গে, বন্দিদশায়, লুটে ও মুখের বিবর্ণতায় সমর্পিত হইয়াছি, ইহা অদ্যাপি দেখা যাইতেছে। আর এখন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ক্ষণকাল জন্য আমাদের কৃপালাভ হইল, যেন তিনি আমাদের কতকগুলি অবশিষ্ট লোককে রক্ষা করেন, আপন পবিত্র স্থানে আমাদিগকে একটী গোঁজ দেন, আমাদের ঈশ্বর যেন আমাদের চক্ষু দীপ্তিময় করেন ও দাসত্বের অবস্থায় একটুকু প্রাণ জুড়াইয়া দেন। কারণ আমরা দাস, তথাপি আমাদের ঈশ্বর আমাদের দাসত্বে আমাদিগকে ত্যাগ করেন নাই, কিন্তু আমাদের প্রাণ জুড়াইবার নিমিত্তে, আমাদের ঈশ্বরের গৃহ স্থাপন ও তাহার ভগ্ন স্থান মেরামৎ করিবার এবং যিহূদায় ও যিরূশালেমে আমাদিগকে একটী প্রাচীর দিবার নিমিত্ত তিনি পারস্য-রাজগণের দৃষ্টিতে আমাদিগকে দয়াপ্রাপ্ত করিলেন। এখন, হে আমাদের ঈশ্বর, ইহার পরে আমরা কি বলিব? কেননা আমরা তোমার আজ্ঞা সকল ত্যাগ করিয়াছি, যাহা তুমি আপন দাস ভাববাদিগণ দ্বারা প্রদান করিয়াছিলে, ও বলিয়াছিলে, তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, তাহা দেশবাসী লোকদের অশৌচ প্রযুক্ত অশুচি হইয়াছে; তাহাদের ঘৃণার্হ ক্রিয়া প্রযুক্ত দেশের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত তাহাদের মালিন্যে পরিপূর্ণ হইয়াছে। অতএব তোমরা তাহাদের পুত্রগণের সহিত তোমাদের কন্যাগণের বিবাহ দিও না, ও তোমাদের পুত্রগণের জন্য তাহাদের কন্যাগণকে গ্রহণ করিও না, এবং তাহাদের শান্তি ও মঙ্গল কখনও চেষ্টা করিও না; যেন তোমরা বলবান হও, যেন দেশের উত্তম দ্রব্য ভোগ করিতে, ও চিরকালের নিমিত্ত আপন সন্তানদের জন্য অধিকারস্বরূপ তাহা রাখিয়া যাইতে পার। কিন্তু আমাদের সকল দুষ্ক্রিয়া ও মহাদোষ প্রযুক্ত আমাদের প্রতি এই সমস্ত ঘটিয়াছে; তথাপি, হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি আমাদের অপরাধের দণ্ড লঘু করিয়াছ, অধিকন্তু কতক লোক আমাদিগকে রক্ষিত হইতে দিয়াছ; এই সকলের পরেও আমরা কি পুনর্ব্বার তোমার আজ্ঞা লঙ্ঘন করিয়া ঘৃণার্হ ক্রিয়াতে লিপ্ত এই জাতিদের সহিত কুটুম্বিতা করিব? করিলে তুমি কি আমাদের প্রতি এমন ক্রোধ করিবে না যে, আমরা বিলুপ্ত হইব, আর আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট কি রক্ষিত কেহ থাকিবে না? হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি ধর্ম্মময়, কেননা আমরা রক্ষিত হইয়া অদ্য পর্য্যন্ত কতকগুলি লোক অবশিষ্ট রহিয়াছি; দেখ, আমরা তোমার সাক্ষাতে দোষগ্রস্ত, তাই তোমার সাক্ষাতে আমাদের কেহই দাঁড়াইতে পারে না। ঈশ্বরের গৃহের সম্মুখে ইষ্রার এইরূপ প্রার্থনা, পাপস্বীকার, রোদন ও প্রণিপাত করিবার সময়ে ইস্রায়েল হইতে আবাল-বৃদ্ধবনিতা অতি বৃহৎ সমাজ তাঁহার নিকটে একত্র হইয়াছিল, বস্তুতঃ লোকেরা অতিশয় রোদন করিতেছিল। তখন এলম-সন্তানদের মধ্যে যিহীয়েলের পুত্র শখনিয় ইষ্রাকে উত্তর করিয়া কহিল, আমরা আপন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছি, ও দেশ-নিবাসী লোকদের মধ্য হইতে বিজাতীয় কন্যাদিগকে বিবাহ করিয়াছি; তথাপি এ বিষয়ে ইস্রায়েলের পক্ষে এখনও প্রত্যাশা আছে। অতএব আইসুন, আমার প্রভুর মন্ত্রণানুসারে ও আমাদের ঈশ্বরের আজ্ঞাতে কম্পান্বিত লোকদের মন্ত্রণানুসারে সেই সকল স্ত্রী ও তাহাদের গর্ভজাত সন্তানদিগকে ত্যাগ করিতে আমরা এখন আমাদের ঈশ্বরের সহিত নিয়ম করি; আর তাহা ব্যবস্থানুসারে করা যাউক। আপনি উঠুন, কেননা এই কার্য্যের ভার আপনারই উপরে রহিয়াছে, এবং আমারও আপনার সহকারী, আপনি সাহসপূর্ব্বক কার্য্য করুন। তখন ইষ্রা উঠিয়া ঐ বাক্যানুসারে কার্য্য করিতে যাজকদের, লেবীয়দের ও সমস্ত ইস্রায়েলের প্রধান লোকদিগকে দিব্য করাইলেন, তাহাতে তাহারা দিব্য করিল। পরে ইষ্রা ঈশ্বরের গৃহের সম্মুখ হইতে উঠিয়া ইলিয়াশীবের পুত্র যিহোহাননের কুঠরীতে প্রবেশ করিলেন, কিন্তু সেখানে যাইবার পূর্ব্বে কিছু রুটী ভোজন বা জল পান করেন নাই, কেননা বন্দিদশা হইতে আগত লোকদের সত্যলঙ্ঘনে তিনি শোকান্বিত হইয়াছিলেন। পরে যিহূদার ও যিরূশালেমের সর্ব্বত্র বন্দিদশা হইতে আগত লোকদের কাছে ঘোষণা করা হইল যে, তাহারা যেন যিরূশালেমে একত্র হয়, আর যে কেহ অধ্যক্ষদের ও প্রাচীনদের মন্ত্রণানুসারে তিন দিনের মধ্যে না আসিবে, তাহার সর্ব্বস্ব বাজেয়াপ্ত হইবে, ও বন্দিদশা হইতে আগত লোকদের সমাজ হইতে তাহাকে পৃথক্‌ করা যাইবে। পরে যিহূদার ও বিন্যামীনের সমস্ত পুরুষ তিন দিনের মধ্যে যিরূশালেমে একত্র হইল; সেই দিন নবম মাসের বিংশতিতম দিন। আর সকলে ঈশ্বরের গৃহের সম্মুখস্থ চকে বসিয়া সেই বিষয়ের জন্য, ও ভারী বৃষ্টি প্রযুক্ত কাঁপিতেছিল। পরে ইষ্রা যাজক উঠিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা সত্যলঙ্ঘন করিয়াছ, বিজাতীয় কন্যাদিগকে বিবাহ করিয়া ইস্রায়েলের দোষ বৃদ্ধি করিয়াছ। অতএব এখন তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে দোষ স্বীকার কর, ও তাঁহার তুষ্টিকর কর্ম্ম কর, এবং দেশনিবাসী লোকদের হইতে ও বিজাতীয় স্ত্রীদের হইতে আপনাদিগকে পৃথক্‌ কর। তখন সমস্ত সমাজ উচ্চৈঃস্বরে উত্তর করিল, হাঁ; আপনি যেমন কহিলেন, আমাদিগকে তেমনি করিতেই হইবে। কিন্তু লোক অনেক, এবং ভারী বর্ষার সময়, বাহিরে দাঁড়াইয়া থাকিতে আমাদের শক্তি নাই; এবং ইহা এক দিনের কিম্বা দুই দিনের কর্ম্ম নয়, যেহেতু আমরা এ বিষয়ে মহা অপরাধ করিয়াছি। অতএব সমস্ত সমাজের পক্ষে আমাদের অধ্যক্ষগণ নিযুক্ত হউন, এবং আমাদের নগরে নগরে যাহারা বিজাতীয় কন্যাদিগকে বিবাহ করিয়াছে, তাহারা এবং তাহাদের সহিত প্রত্যেক নগরের প্রাচীনবর্গ ও বিচারকর্ত্তারা আপন আপন নিরূপিত সময়ে আইসুক; তাহাতে এ বিষয়ে আমাদের ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধ আমাদের হইতে নিবৃত্ত হইবে। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কেবল অসাহেলের পুত্র যোনাথন ও তিক্‌বের পুত্র যহসিয় উঠিল, এবং মশুল্লম ও লেবীয় শব্বথয় তাহাদের সাহায্য করিল। আর বন্দিদশা হইতে আগত লোকেরা ঐ রূপ করিল। আর ইষ্রা যাজক এবং আপন আপন পিতৃকুলানুসারে ও প্রত্যেকের নামানুসারে নির্দ্দিষ্ট কতকগুলি কুলপতি পৃথক্‌কৃত হইয়া দশম মাসের প্রথম দিনে সেই বিষয়ের অনুসন্ধান করিতে বসিলেন। প্রথম মাসের প্রথম দিনে তাঁহারা বিজাতীয় কন্যা-গ্রহণকারী পুরুষদের বিচার সাঙ্গ করিলেন। যাজক-সন্তানদের মধ্যে বিজাতীয় কন্যাগ্রহণকারী এই সকল লোক ছিল; যিহোষাদকের পুত্র যে যেশূয়, তাঁহার সন্তানদের ও ভ্রাতাদের মধ্যে মাসেয়, ইলীয়েষর, যারিব ও গদলিয়। ইহারা আপন আপন স্ত্রী ত্যাগ করিবে বলিয়া হস্ত দিল, এবং দোষী হওয়াতে দোষার্থে পালের এক এক মেষ উৎসর্গ করিল। আর ইম্মেরের সন্তানদের মধ্যে হনানি ও সবদিয়। হারীমের সন্তানদের মধ্যে মাসেয়, এলিয়, শময়িয়, যিহীয়েল ও উষিয়। পশহূরের সন্তানদের মধ্যে ইলিয়ৈনয়, মাসেয় ইশ্মায়েল, নথনেল, যোষাবদ ও ইলিয়াসা। আর লেবীয়দের মধ্যে যোষাবদ, শিমিয়ি, কলায়—অর্থাৎ কলীট,—পথাহিয়, যিহূদা ও ইলিয়েষর। আর গায়কদের মধ্যে ইলীয়াশীব; দ্বার-পালদের মধ্যে শল্লুম, টেলম ও ঊরি। আর ইস্রায়েলের মধ্যে, পরিয়োশের সন্তানদের মধ্যে রমিয়, যিষিয়, মল্কিয়, মিয়ামীন, ইলিয়াসর, মল্কিয় ও বনায়। এলমের সন্তানদের মধ্যে মত্তনিয়, সখরিয়, যিহীয়েল, অব্দি, যিরেমোৎ, ও এলিয়। সত্তূর সন্তানদের মধ্যে ইলিয়ৈনয়, ইলিয়াশীব, মত্তনিয়, যিরেমোৎ, সাবদ, ও অসীসা। বেবয়ের সন্তানদের মধ্যে যিহোহানন, হনানিয়, সব্বয়, অৎলয়। বানির সন্তানদের মধ্যে মশুল্লম, মল্লূক ও অদায়া, যাশূব, শাল ও যিরমোৎ। পহৎ-মোয়াবের সন্তানদের মধ্যে অদ্‌ন, কলাল, বনায়, মাসেয়, মত্তনিয়, বৎসলেল, বিন্নূয়ী ও মনঃশি। হারীমের সন্তানদের মধ্যে ইলিয়েষর, যিশিয়, মল্কিয়, শময়িয়, শিমিয়োন, বিন্যামীন, মল্লূক, শমরিয়, হশূমের সন্তানদের মধ্যে মত্তনয়, মত্তত্ত, সাবদ, ইলীফেলট, যিরেময়, মনঃশি, শিমিয়ি। বানির সন্তানদের মধ্যে মাদয়, অম্রাম ও ঊয়েল, বনায়, বেদিয়া, কলূহূ, বনিয়, মরেমোৎ, ইলিয়াশীব, মত্তনিয়, মত্তনয়, যাসয়, বানি, বিন্নূয়ী, শিমিয়ি, শেলিমিয়, নাথন, অদায়া, মকদ্‌বয়, শাশয়, শারয়, অসরেল, শেলিমিয়, শমরিয়, শল্লুম, অমরিয়, যোষেফ। নবোর সন্তানদের মধ্যে যিয়ীয়েল, মত্তিথিয়, সাবদ, সবীনঃ, যাদয়, ও যোয়েল, বনায়। এই সকলে বিজাতীয়া স্ত্রী গ্রহণ করিয়াছিল, এবং কাহারও কাহারও স্ত্রীর গর্ভে সন্তান হইয়াছিল। বিংশতিতম বৎসরের কিশ্‌লেব মাসে আমি শূশন রাজধানীতে ছিলাম। তখন হনানি নামে আমার ভ্রাতাদের এক জন এবং যিহূদা হইতে কতকগুলি লোক আসিলে আমি তাহাদিগকে বন্দিদশা হইতে অবশিষ্ট, রক্ষাপ্রাপ্ত যিহূদীদের, ও যিরূশালেমের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলাম। তখন তাহারা আমাকে কহিল, সেই অবশিষ্ট লোকেরা অর্থাৎ যাহারা বন্দিদশা হইতে অবশিষ্ট থাকিয়া সেই প্রদেশে আছে, তাহারা অতিশয় দুরবস্থার ও গ্লানির মধ্যে রহিয়াছে, এবং যিরূশালেমের প্রাচীর ভগ্ন ও তাহার দ্বার সকল অগ্নিতে দগ্ধ রহিয়াছে। এই কথা শুনিয়া আমি কিছু দিন বসিয়া রোদন ও শোক করিলাম, এবং স্বর্গের ঈশ্বরের সাক্ষাতে উপবাস ও প্রার্থনা করিলাম। আমি কহিলাম, বিনয় করি, হে সদাপ্রভু স্বর্গের ঈশ্বর, তুমি মহান্‌ ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর; যাহারা তোমাকে প্রেম করে ও তোমার আজ্ঞা সকল পালন করে, তাহাদের পক্ষে তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করিয়া থাক। এখন তোমার দাসের প্রার্থনা শুনিবার জন্য তোমার কর্ণ অবহিত ও চক্ষু উন্মীলিত হউক। সম্প্রতি আমি তোমার দাস ইস্রায়েল-সন্তানগণের জন্য দিবারাত্র তোমার নিকটে প্রার্থনা করিতেছি, এবং ইস্রায়েল-সন্তানদের পাপ সকল স্বীকার করিতেছি; বাস্তবিক আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি; আমি ও আমার পিতৃকুলও পাপ করিয়াছি। আমরা তোমার বিরুদ্ধে অতিশয় দুষ্কর্ম্ম করিয়াছি; তুমি আপন দাস মোশিকে যে সকল আজ্ঞা, বিধি ও শাসন আদেশ করিয়াছিলে, তাহা আমরা পালন করি নাই। বিনয় করি, তুমি আপন দাস মোশির প্রতি আদিষ্ট এই কথা স্মরণ কর, যথা, “তোমরা সত্যলঙ্ঘন করিলে আমি তোমাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিব। কিন্তু যদি তোমরা আমার কাছে ফিরিয়া আইস, এবং আমার আজ্ঞা পালন ও তদনুযায়ী কর্ম্ম কর, তবে তোমাদের কেহ কেহ আকাশের প্রান্তভাগে দূরীকৃত হইলেও আমি তথা হইতে তাহাদিগকে সংগ্রহ করিব, এবং আপন নামের নিবাসার্থে যে স্থান মনোনীত করিয়াছি, সেই স্থানে তাহাদিগকে আনিব।” ইহারা তোমার দাস ও তোমার প্রজা, যাহাদিগকে তুমি আপন মহাপরাক্রম ও বলবান হস্ত দ্বারা মুক্ত করিয়াছ। হে প্রভু, বিনয় করি, তোমার এই দাসের প্রার্থনাতে, এবং যাহারা তোমার নাম ভয় করিতে সন্তুষ্ট, তোমার সেই দাসদের প্রার্থনাতে তোমার কর্ণ অবহিত হউক; আর বিনয় করি, অদ্য তোমার এই দাসকে কৃতকার্য্য কর, ও এই ব্যক্তির সাক্ষাতে করুণাপ্রাপ্ত কর,—আমি রাজার পানপাত্রবাহক ছিলাম। অর্তক্ষস্ত রাজার অধিকারের বিংশতিতম বৎসরের নীসন মাসে রাজার সম্মুখে দ্রাক্ষারস থাকাতে আমি সেই দ্রাক্ষারস লইয়া রাজাকে দিলাম। [তৎপূর্ব্বে] আমি তাঁহার সাক্ষাতে কখনও বিষণ্ণ হই নাই। রাজা আমাকে কহিলেন, তোমার ত পীড়া হয় নাই, তবে মুখ কেন বিষণ্ণ হইয়াছে? ইহা ত চিত্তের বিষাদ ব্যতিরেকে আর কিছু নয়। তখন আমি অতিমাত্র ভীত হইলাম। আর আমি রাজাকে কহিলাম, মহারাজ চিরজীবী হউন; আমি কেন বিষণ্ণবদন হইব না? যে নগর আমার পিতৃলোকদের কবরস্থান, তাহা ধ্বংসিত ও তাহার দ্বার সকল অগ্নিভক্ষিত হইয়াছে। তখন রাজা আমাকে কহিলেন, তুমি কি ভিক্ষা চাও? তাহাতে আমি স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিলাম। আর রাজাকে কহিলাম, যদি মহারাজের তুষ্টি হয়, এবং আপনার দাস যদি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকে, তবে আপনি আমাকে যিহূদায়, আমার পিতৃলোকদের কবরের নগরে, বিদায় করুন, যেন আমি তাহা নির্ম্মাণ করি। তখন রাজা—রাজমহিষীও তাঁহার পার্শ্বে উপবিষ্টা ছিলেন—আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার যাত্রা কত দিনের জন্য হইবে? আর কবে ফিরিয়া আসিবে? এইরূপে রাজা সন্তুষ্ট হইয়া আমাকে বিদায় করিলেন, আর আমি তাঁহার কাছে সময় নিরূপণ করিলাম। আর আমি রাজাকে কহিলাম, যদি মহারাজের তুষ্টি হয়, তবে নদী-পারস্থ দেশাধ্যক্ষেরা যেন যিহূদায় আমার উপস্থিত না হওয়া পর্য্যন্ত আমার যাত্রার সাহায্য করেন, এই জন্য তাঁহাদের নামে আমাকে পত্র দিতে আজ্ঞা হউক। আর মন্দিরের পার্শ্বস্থ দুর্গ-দ্বারের ও নগর-প্রাচীরের ও আমার প্রবেশ-গৃহের কড়িকাষ্ঠের নিমিত্ত রাজার বন-রক্ষক আসফ যেন আমাকে কাষ্ঠ দেন এই জন্য তাঁহার নামেও একখানি পত্র দিতে আজ্ঞা হউক। তাহাতে আমার উপরে আমার ঈশ্বরের মঙ্গলময় হস্ত থাকায় রাজা আমাকে সে সমস্ত দিলেন। পরে আমি নদী-পারস্থ দেশাধ্যক্ষদের নিকটে উপস্থিত হইয়া রাজার পত্র তাঁহাদিগকে দিলাম। রাজা সেনাপতিদিগকে ও অশ্বারোহীদিগকে আমার সঙ্গে পাঠাইয়াছিলেন। আর হোরোণীয় সন্‌বল্লট ও অম্মোনীয় দাস টোবিয় যখন সংবাদ পাইল, তখন ইস্রায়েল-সন্তানদের মঙ্গল চেষ্টার জন্য এক জন লোক আসিয়াছে, ইহা বুঝিয়া অতিশয় অসন্তুষ্ট হইল। আর আমি যিরূশালেমে উপস্থিত হইয়া সে স্থানে তিন দিন রহিলাম। পরে আমি ও আমার সঙ্গী কয়েকটী পুরুষ, আমরা রাত্রিতে উঠিলাম; কিন্তু যিরূশালেমের জন্য যাহা করিতে ঈশ্বর আমার মনে প্রবৃত্তি দিয়াছিলেন, তাহা কাহাকেও বলি নাই; এবং আমি যে পশুর উপরে আরোহন করিয়াছিলাম, সেটী ছাড়া আর কোন পশু আমার সঙ্গে ছিল না। আমি রাত্রিতে উপত্যকার দ্বার দিয়া বাহির হইয়া নাগকূপ ও সারদ্বার পর্য্যন্ত গেলাম, এবং যিরূশালেমের ভগ্ন প্রাচীর ও অগ্নিভক্ষিত দ্বার সকল দর্শন করিলাম। আর উনুইর দ্বার ও রাজার পুষ্করিণী পর্য্যন্ত গেলাম, কিন্তু সেই স্থানে আমার বাহন পশুর যাইবার স্থান ছিল না। তখন আমি রাত্রিকালে স্রোতের ধার দিয়া উপরে উঠিয়া প্রাচীর দেখিলাম, আর ফিরিয়া উপত্যকার দ্বার দিয়া প্রবেশ করিলাম, পরে ফিরিয়া আসিলাম। কিন্তু আমি কোন্‌ স্থানে গেলাম, কি করিলাম, তাহা অধ্যক্ষেরা জ্ঞাত ছিল না, এবং তৎকাল পর্য্যন্ত আমি যিহূদীদিগকে কি যাজকদিগকে কি প্রধান লোকদিগকে কি অধ্যক্ষদিগকে কি অন্য কর্ম্মচারীদিগকে কাহাকেও তাহা বলি নাই। পরে আমি তাহাদিগকে কহিলাম, আমরা কেমন দুরবস্থায় আছি, তাহা তোমরা দেখিতেছ; যিরূশালেম ধ্বংসিত ও তাহার দ্বার সকল অগ্নিতে দগ্ধ রহিয়াছে; আইস, আমরা যিরূশালেমের প্রাচীর নির্ম্মাণ করি, যেন আর গ্লানির পাত্র না থাকি। পরে আমার উপরে প্রসারিত ঈশ্বরের মঙ্গলময় হস্তের কথা এবং আমার প্রতি কথিত রাজার বাক্য তাহাদিগকে জানাইলাম। তাহাতে তাহারা কহিল, চল, আমরা উঠিয়া গিয়া গাঁথি। এইরূপে তাহারা সেই সাধু কার্য্যের জন্য আপন আপন হস্ত সবল করিল। কিন্তু হোরোণীয় সন্‌বল্লট, অম্মোনীয় দাস টোবিয় ও আরবীয় গেশম্‌ এই কথা শুনিয়া আমাদিগকে বিদ্রূপ ও অবজ্ঞা করিয়া কহিল, তোমরা এ কি কার্য্য করিতে উদ্যত হইলে? তোমরা কি রাজদ্রোহ করিবে? তখন আমি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলাম, যিনি স্বর্গের ঈশ্বর, তিনিই আমাদিগকে কৃতকার্য্য করিবেন; অতএব তাঁহার দাস আমরা উঠিয়া গাঁথিব; কিন্তু যিরূশালেমে তোমাদের কোন অংশ কি অধিকার কি স্মৃতিচিহ্ন নাই। পরে ইলীয়াশীব মহাযাজক ও তাঁহার ভ্রাতা যাজকগণ উঠিয়া মেষ-দ্বার গাঁথিলেন; তাঁহারা তাহা পবিত্র করিলেন, ও তাহার কবাট স্থাপন করিলেন; আর হম্মেয়া দুর্গ অবধি হননেলের দুর্গ পর্য্যন্ত তাহা পবিত্র করিলেন। তাঁহার নিকটে যিরীহোর লোকেরা গাঁথিল, আর তাহার নিকটে ইম্রির পুত্র সক্কূর গাঁথিল। হস্‌সনায়ার সন্তানগণ মৎস্য-দ্বার গাঁথিল; তাহারা তাহার আড়কাটা তুলিল, এবং তাহার কবাট স্থাপন করিল, আর খিল ও অর্গল দিল। তাহাদের নিকটে হক্কোসের পৌত্র ঊরিয়ের পুত্র মরেমোৎ মেরামৎ করিল। তাহাদের নিকটে মশেষবেলের পৌত্র বেরিখিয়ের পুত্র মশুল্লম মেরামৎ করিল। তাহাদের নিকটে বানার পুত্র সাদোক মেরামৎ করিল। তাহাদের নিকটে তকোয়ীয়েরা মেরামৎ করিল, কিন্তু তাহাদের প্রধানবর্গ আপনাদের প্রভুর কর্ম্মে ঘাড় পাতিল না। আর পাসেহের পুত্র যিহোয়াদা ও বসোদিয়ার পুত্র মশুল্লম পুরাতন দ্বার মেরামৎ করিল; তাহারা তাহার আড়কাটা তুলিল, এবং তাহার কবাট স্থাপন করিল, আর খিল ও অর্গল দিল। তাহাদের নিকটে গিবিয়োনীয় মলাটিয় ও মেরোণোথীয় যাদোন এবং গিবিয়োনের ও মিস্‌পার লোকেরা মেরামৎ করিল, ইহারা নদী-পারস্থ দেশাধ্যক্ষের সিংহাসনের অধীন। তাহার নিকটে স্বর্ণকারদের মধ্যে হর্হয়ের পুত্র উষীয়েল মেরামৎ করিল। আর তাহার নিকটে হনানিয় নামে এক জন গন্ধবণিক মেরামৎ করিল, তাহারা প্রশস্ত প্রাচীর পর্য্যন্ত যিরূশালেম দৃঢ় করিল। তাহাদের নিকটে যিরূশালেম প্রদেশের অর্দ্ধভাগের অধ্যক্ষ—হূরের পুত্র—রফায় মেরামৎ করিল। তাহাদের নিকটে হরূমফের পুত্র যিদায় আপন গৃহের সম্মুখে মেরামৎ করিল। তাহার নিকটে হশব্‌নিয়ের পুত্র হটুশ মেরামৎ করিল। হারীমের পুত্র মল্কিয় ও পহৎ-মোয়াবের পুত্র হশূব অন্য একভাগ ও তুন্দুরের দুর্গ মেরামৎ করিল। তাহার নিকটে যিরূশালেম প্রদেশের অর্দ্ধভাগের অধ্যক্ষ হলোহেশের পুত্র শল্লুম ও তাহার কন্যারা মেরামৎ করিল। হানূন এবং সানোহ-নিবাসীরা উপত্যকার দ্বার মেরামৎ করিল; তাহারা তাহা গাঁথিল, এবং তাহার কবাট স্থাপন করিল, আর খিল ও অর্গল দিল; এবং সার-দ্বার পর্য্যন্ত প্রাচীরের এক সহস্র হস্ত [মেরামৎ করিল]। আর বৈৎহক্কেরম প্রদেশের অধ্যক্ষ রেখবের পুত্র মল্কিয় সার-দ্বার মেরামৎ করিল; সে তাহা গাঁথিল, এবং তাঁহার কবাট স্থাপন করিল, আর খিল ও অর্গল দিল। আর মিস্‌পা প্রদেশের অধ্যক্ষ—কল্‌হোষির পুত্র—শল্লুম উনুই-দ্বার মেরামৎ করিল; সে তাহা গাঁথিল, তাহার আচ্ছাদন প্রস্তুত করিল, এবং তাহার কবাট স্থাপন করিল, আর খিল ও অর্গল দিল, এবং যে সোপান দিয়া দায়ূদ-নগর হইতে নামে, সেই পর্য্যন্ত রাজার উদ্যানের সম্মুখস্থ শীলোহ পুষ্করিণীর প্রাচীর [মেরামৎ করিল]। তাহার নিকটে বৈৎসূর প্রদেশের অর্দ্ধভাগের অধ্যক্ষ—অস্‌বূকের পুত্র—নহিমিয় দায়ূদের কবরের সম্মুখ পর্য্যন্ত, খনিত পুষ্করিণী পর্য্যন্ত ও পরাক্রমীদের গৃহ পর্য্যন্ত মেরামৎ করিল। তাহার নিকটে লেবীয়েরা, বিশেষতঃ বানির পুত্র রহূম মেরামৎ করিল। তাহার নিকটে কিয়ীলা প্রদেশের অর্দ্ধভাগের অধ্যক্ষ হশবিয় আপন ভাগ মেরামৎ করিল। তাহার পরে তাহাদের ভ্রাতৃগণ অর্থাৎ কিয়ীলা প্রদেশের অর্দ্ধভাগের অধ্যক্ষ—হেনাদদের পুত্র—ববয় মেরামৎ করিল। তাহার নিকটে মিস্পার অধ্যক্ষ—যেশূয়ের পুত্র—এসর [প্রাচীরের] বঙ্কে স্থিত অস্ত্রাগারে উঠিবার পথের সম্মুখে আর এক ভাগ মেরামৎ করিল। তাহার পরে সব্বয়ের পুত্র বারূক যত্ন করিয়া বঙ্ক হইতে মহাযাজক ইলিয়াশীবের গৃহ-দ্বার পর্য্যন্ত আর এক ভাগ মেরামৎ করিল। তাহার পরে হক্কোসের সন্তান ঊরিয়ের পুত্র মরেমোৎ ইলিয়াশীবের বাটীর দ্বার অবধি ইলিয়াশীবের বাটীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আর এক ভাগ মেরামৎ করিল। তাহার পরে [যর্দ্দনের] অঞ্চল-নিবাসী যাজকেরা মেরামৎ করিল। তাহার পরে বিন্যামীন ও হশূব আপন আপন গৃহের সম্মুখে মেরামৎ করিল। তাহার পরে অননিয়ের সন্তান মাসেয়ের পুত্র অসরিয় আপন গৃহের পার্শ্বে মেরামৎ করিল। তাহার পরে হেনাদদের পুত্র বিন্নূয়ী অসরিয়ের গৃহ অবধি বঙ্ক ও কোণ পর্য্যন্ত আর এক ভাগ মেরামৎ করিল। উষয়ের পুত্র পালল বঙ্কের সম্মুখে; রক্ষীদের প্রাঙ্গণের নিকটস্থ রাজার উচ্চতর বাটীর সমীপে বহির্বর্ত্তী দুর্গের সম্মুখে এবং তাহার পরে পরোশের পুত্র পদায় [মেরামৎ করিল]। আর নথীনীয়েরা পূর্ব্বদিকে জল-দ্বারের সম্মুখ পর্য্যন্ত ও বহির্বর্ত্তী দুর্গ পর্য্যন্ত ওফলে বাস করিত। তাহার পরে তকোয়ীয়েরা বহির্বর্ত্তী বৃহৎ দুর্গ অবধি ওফলের প্রাচীর পর্য্যন্ত আর এক ভাগ মেরামৎ করিল। যাজকেরা অশ্ব-দ্বারের উপরের দিকে, প্রত্যেক জন আপন আপন গৃহের সম্মুখে, মেরামৎ করিল। তাহার পরে ইম্মেরের পুত্র সাদোক আপন গৃহের সম্মুখে মেরামৎ করিল, এবং তাহার পরে পূর্ব্বদ্বাররক্ষক—শখনিয়ের পুত্র—শময়িয় মেরামৎ করিল। তাহার পরে শেলিমিয়ের পুত্র হনানিয় ও সালফের ষষ্ঠ পুত্র হানূন আর এক ভাগ মেরামৎ করিল; তাহার পরে বেরিখিয়ের পুত্র মশুল্লম আপন কুঠরীর সম্মুখে মেরামৎ করিল। তাহার পরে মল্কিয় নামে স্বর্ণকারদের এক জন নথীনীয়দের ও বণিকদের বাড়ী পর্য্যন্ত, এবং কোণে উঠিবার পথ পর্য্যন্ত হম্মিপ্‌কদ দ্বারের সম্মুখে মেরামৎ করিল। আর কোণে উঠিবার পথ ও মেষদ্বারের মধ্যে স্বর্ণকারেরা ও বণিকেরা মেরামৎ করিল। সন্‌বল্লট যখন শুনিতে পাইল যে, আমরা প্রাচীর গাঁথিতেছি, তখন সে কুপিত ও অতিশয় বিরক্ত হইল, আর যিহূদীদিগকে বিদ্রূপ করিল। আর সে আপন ভ্রাতৃগণের ও শমরীয় সৈন্যদলের সাক্ষাতে কহিল, এই নিস্তেজ যিহূদীরা কি করিতেছে? ইহারা কি আপনাদিগকে দৃঢ় করিবে? ইহারা কি যজ্ঞ করিবে? এক দিনে কি সমাপ্ত করিবে? কাঁথড়ার ঢিবি হইতে এই প্রস্তর সকল তুলিয়া কি সজীব করিবে? এ সব যে পুড়িয়া গিয়াছে! তখন অম্মোনীয় টোবিয় তাহার পার্শ্বে ছিল; সেও কহিল, উহারা যে গাঁথনি করিতেছে, তাহার উপরে যদি শিয়াল উঠে, তবে তাহাদের সেই পাথরের প্রাচীর ভাঙ্গিয়া পড়িবে। —হে আমাদের ঈশ্বর, শ্রবণ কর, কেননা আমরা তুচ্ছীকৃত হইলাম; উহাদের টিট্‌কারি উহাদেরই মস্তকে বর্ত্তাও, এবং উহাদিগকে বন্দি হইয়া লুটিত বস্তুর ন্যায় বিদেশে থাকিতে দেও; উহাদের অপরাধ ঢাকিয়া রাখিও না, ও উহাদের পাপ তোমার সম্মুখ হইতে মুছিয়া যাইতে দিও না; কেননা উহারা গাঁথকদিগেক সম্মুখে [তোমাকে] অসন্তুষ্ট করিয়াছে। —এইরূপে আমরা প্রাচীর গাঁথিলাম, তাহাতে [উচ্চতার] অর্দ্ধ পর্য্যন্ত সমস্ত প্রাচীর সংযোজিত হইল, কারণ কার্য্য করিতে লোকদের মন ছিল। আর সন্‌বল্লট ও টোবিয় এবং আরবীয়েরা, অম্মোনীয়েরা ও অস্‌দোদীয়েরা যখন শুনিতে পাইল, যিরূশালেমের প্রাচীরের মেরামৎ সম্পন্ন হইতেছে, ও তাহার ছিদ্র সকল বদ্ধ করিতে আরম্ভ করা হইয়াছে, তখন তাহারা অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল; আর তাহারা সকলে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিবার জন্য ও গোলযোগ উৎপন্ন করিবার জন্য চক্রান্ত করিল। কিন্তু তাহাদের ভয়ে আমরা আপনাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিলাম, ও দিবারাত্র তাহাদের বিরুদ্ধে প্রহরিগণকে রাখিলাম। আর যিহূদার লোকেরা কহিল, ভারবাহকেরা দুর্ব্বল হইয়াছে, এবং কাঁথড়া অনেক আছে, প্রাচীর গাঁথা আমাদের অসাধ্য। আবার আমাদের বিপক্ষগণ কহিল, উহারা জানিবে না, দেখিবে না, অমনি আমরা উহাদের মধ্যে আসিয়া উহাদিগকে বধ করিয়া কার্য্য বদ্ধ করিব। আর তাহাদের নিকটবাসী যিহূদীরা সর্ব্বস্থান হইতে আসিয়া দশ বার আমাদিগকে বলিল, তোমাদিগকে আমাদের কাছে ফিরিয়া আসিতে হইবে। অতএব আমি প্রাচীরের পশ্চাৎ দিকে নীচস্থ অনাবৃত স্থানে লোক নিযুক্ত করিলাম, স্ব স্ব গোষ্ঠী অনুসারে খড়্‌গ, বড়শা ও ধনুক সমেত লোক নিযুক্ত করিলাম। পরে আমি চাহিয়া দেখিলাম, এবং উঠিয়া প্রধান লোকদিগকে, অধ্যক্ষগণকে ও অন্য সকল লোককে কহিলাম, তোমরা উহাদের হইতে ভীত হইও না; মহান্‌ ও ভয়ঙ্কর প্রভুকে স্মরণ কর, এবং আপন আপন ভ্রাতৃগণের, পুত্র ও কন্যাগণের, স্ত্রীদিগের ও গৃহের জন্য যুদ্ধ কর। আর যখন আমাদের শত্রুগণ শুনিতে পাইল যে, আমরা জানিতে পারিয়াছি, আর ঈশ্বর তাহাদের মন্ত্রণা বিফল করিয়াছেন, তখন আমরা সকলে প্রাচীরে আপন আপন কার্য্য করিতে পুনর্ব্বার গমন করিলাম। আর সেই দিন অবধি আমার যুবকদের অর্দ্ধেক লোক কর্ম্ম করিত, অন্য অর্দ্ধেক লোক বড়শা, ঢাল, ধনু ও বর্ম্ম ধরিয়া থাকিত, এবং সমস্ত যিহূদা কুলের পশ্চাতে অধ্যক্ষগণ থাকিতেন। যাহারা প্রাচীর গাঁথিত, আর যাহারা ভার বহিত, তাহারা ভার তুলিয়া দিত, সকলে এক হস্তে কর্ম্ম করিত, অন্য হস্তে অস্ত্র ধরিত; আর গাঁথকেরা প্রত্যেক জন কটিদেশে খড়্‌গ বাঁধিয়া গাঁথিত; এবং তূরীবাদক আমার পার্শ্বে থাকিত। আর আমি প্রধান লোকদিগকে, অধ্যক্ষগণকে ও অন্য সকল লোককে কহিলাম, এই কর্ম্ম ভারী ও বিস্তীর্ণ, এবং আমরা প্রাচীরের উপরে পৃথক্‌ পৃথক্‌ হইয়া এক জন হইতে অন্য জন দূরে আছি; তোমরা যে কোন স্থানে তূরীর শব্দ শুনিবে, সেই স্থানে আমাদের নিকটে একত্র হইবে; আমাদের ঈশ্বর আমাদের নিমিত্ত যুদ্ধ করিবেন। এইরূপে আমরা কর্ম্ম করিতাম, এবং অরুণোদয় কাল অবধি তারাদর্শন কাল পর্য্যন্ত আমাদের অর্দ্ধেক লোক বড়শা ধরিয়া থাকিত। সেই সময়ে আমি লোকদিগকে আরও কহিলাম, প্রত্যেক পুরুষ আপন আপন চাকরের সহিত রাত্রিকালে যিরূশালেমের মধ্যে থাকুক; তাহারা রাত্রিকালে আমাদের রক্ষক হইবে, ও দিবসে কর্ম্ম করিবে। অতএব আমি, আমার ভ্রাতৃগণ, যুবকেরা ও আমার অনুবর্ত্তী রক্ষকেরা কেহ বস্ত্র খুলিতাম না, প্রত্যেকে নিজ নিজ অস্ত্রসহ জলের নিকটে যাইতাম। পরে আপনাদের ভ্রাতা যিহূদীদের বিরুদ্ধে প্রজাগণের ও তাহাদের স্ত্রীদিগের মহাক্রন্দন উত্থিত হইল। কেহ কেহ কহিল, আমরা পুত্র কন্যাশুদ্ধ অনেক প্রাণী, আহার করিয়া জীবন ধারণের নিমিত্ত শস্য লইব। আর কেহ কেহ কহিল, আমরা আপন ভূমি, দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও গৃহ বন্ধক দিতেছি দুর্ভিক্ষের সময়ে শস্য লইব। আর কেহ কেহ কহিল, রাজকরের নিমিত্ত আমরা আপন আপন ভূমি ও দ্রাক্ষাক্ষেত্র বন্ধক রাখিয়া রৌপ্য লইয়াছি। কিন্তু আমাদের মাংস আমাদের ভ্রাতাদের মাংসের সমান, আমাদের সন্তানগণ তাহাদের সন্তানদের সমান; তথাপি দেখুন, আমরা আপন আপন পুত্র কন্যাগণকে দাসত্বে আনিতেছি, আমাদের কন্যাদের মধ্যে কেহ কেহ ত দাসীর অবস্থায় পড়িয়াছে; আমাদের কিছু সঙ্গতি নাই; এবং আমাদের ভূমি ও দ্রাক্ষাক্ষেত্র সকল অন্য লোকদের হইয়াছে। তখন আমি তাহাদের ক্রন্দন ও এই সকল কথা শুনিয়া মহাক্রুদ্ধ হইলাম। আর আমি মনে মনে বিবেচনা করিলাম, এবং প্রধান লোকদিগকে ও অধ্যক্ষদিগকে ভর্ৎসনা করিয়া কহিলাম, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন ভ্রাতার কাছে সুদ আদায় করিয়া থাক। পরে তাহাদের বিরুদ্ধে মহাসমাজ একত্র করিলাম। আর আমি তাহাদিগকে কহিলাম, জাতিগণের কাছে আমাদের যে যিহূদী ভ্রাতৃগণ বিক্রীত ছিল, তাহাদিগকে আমরা সাধ্যানুসারে মুক্ত করিয়াছি; এখন তোমাদের ভ্রাতৃগণকে তোমরাই কি বিক্রয় করিবে? আমাদের কাছে কি তাহাদিগকে বিক্রয় করা হইবে? তাহাতে তাহারা নীরব হইল, কিছু উত্তর করিতে পারিল না। আমি আরও কহিলাম, তোমাদের এই কর্ম্ম ভাল নয়; আমাদের শত্রু জাতিগণের টিট্‌কারি প্রযুক্ত তোমরা কি আমাদের ঈশ্বরের ভয়ে চলিবে না? আমি, আমার ভ্রাতৃগণ ও যুবকেরা, আমরাও সুদের জন্য উহাদিগকে রৌপ্য ও শস্য ঋণ দিয়া থাকি; আইস, আমরা এই সুদ ছাড়িয়া দিই। তোমরা উহাদের শস্যক্ষেত্র, দ্রাক্ষাক্ষেত্র, জিতক্ষেত্র ও গৃহ সকল, এবং রৌপ্যের, শস্যের, দ্রাক্ষারসের ও তৈলের শতকরা যে বৃদ্ধি লইয়া তাহাদিগকে ঋণ দিয়াছ, তাহা অদ্যই তাহাদিগকে ফিরাইয়া দেও। তখন তাহারা কহিল, আমরা তাহা ফিরাইয়া দিব, তাহাদের কাছে কিছুই চাহিব না; আপনি যাহা বলিবেন, তদনুসারে করিব। তখন আমি যাজকদিগকে ডাকিয়া এই প্রতিজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিতে উহাদিগকে দিব্য করাইলাম। আবার আমি আপন কোলের কাপড় ঝাড়িয়া কহিলাম, যে কেহ এই প্রতিজ্ঞা পালন না করে, ঈশ্বর তাহার গৃহ ও পরিশ্রমের ফল হইতে তাহাকে এইরূপ ঝাড়িয়া ফেলুন, এইরূপে সে ঝাড়া ও শূন্য হউক। তাহাতে সমস্ত সমাজ কহিল, আমেন, এবং সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিল। পরে লোকেরা সেই প্রতিজ্ঞানুসারে কর্ম্ম করিল। অধিকন্তু আমি যে সময়ে যিহূদা দেশে তাহাদের অধ্যক্ষপদে নিযুক্ত হইয়াছিলাম, সেই অবধি অর্থাৎ অর্তক্ষস্ত রাজার বিংশতিতম বৎসরাবধি দ্বাত্রিংশ বৎসর পর্য্যন্ত, দ্বাদশ বৎসর আমি ও আমার ভ্রাতৃগণ দেশাধ্যক্ষের বৃত্তি ভোগ করি নাই। আমার পূর্ব্বে যে সকল দেশাধ্যক্ষ ছিলেন, তাঁহারা লোকদিগকে ভারগ্রস্ত করিতেন, এবং তাহাদের হইতে নগদ চল্লিশ শেকল রৌপ্য ব্যতিরেকে খাদ্য ও দ্রাক্ষারস লইতেন, এমন কি, তাঁহাদের চাকরেরাও লোকদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিত; কিন্তু আমি ঈশ্বরভয় প্রযুক্ত তাহা করিতাম না। আবার আমি এই প্রাচীরের কর্ম্মেও ব্যাপৃত ছিলাম; আমরা ভূমি ক্রয় করিতাম না, এবং আমার সমস্ত যুবক সেই স্থানে কার্য্যে একত্র হইত। আর আমাদের চতুর্দ্দিক্‌স্থিত জাতিগণের মধ্য হইতে যাহারা আমাদের নিকটে আসিত, তাহাদের ছাড়া যিহূদী ও অধ্যক্ষ এক শত পঞ্চাশ জন আমার মেজে বসিত। সেই সময়ে প্রতিদিন এই সকল আহারীয় দ্রব্য প্রস্তুত হইত, একটা বলদ ও ছয়টা উত্তম মেষ; কতকগুলি পক্ষীও আমার জন্য পাক করা যাইত; এবং দশ দিন অন্তর সর্ব্বপ্রকার দ্রাক্ষারস; এই সমস্ত সত্ত্বেও লোকদের দাসত্বের ভার গুরুতর হওয়াতে আমি দেশাধ্যক্ষের বৃত্তি চাহিতাম না। হে আমার ঈশ্বর, আমি এই লোকদের নিমিত্ত যে সকল কার্য্য করিয়াছি, মঙ্গলের নিমিত্ত আমার পক্ষে তাহা স্মরণ কর। পরে সন্‌বল্লট, টোবিয়, আরবীয় গেশম ও আমাদের অন্য সকল শত্রু শুনিতে পাইল যে, আমি প্রাচীর গাঁথিয়াছি, তাহার মধ্যে আর ভগ্ন স্থান নাই; তথাপি তখনও নগর-দ্বার সকলের কবাট স্থাপন করি নাই। তখন সন্‌বল্লট ও গেশম লোক দ্বারা আমার কাছে এই কথা বলিয়া পাঠাইল, আইস, আমরা ওনো সমস্থলীর কোন পল্লীগ্রামে একত্র হই। কিন্তু তাহারা আমার হিংসা করিতে মনস্থ করিয়াছিল। তখন আমি দূত দ্বারা তাহাদিগকে বলিয়া পাঠাইলাম, আমি এক মহৎ কার্য্য করিতেছি, নামিয়া যাইতে পারি না; আমি যাবৎ কার্য্য ত্যাগ করিয়া তোমাদের কাছে নামিয়া যাইব, তাবৎ কার্য্য কেন বন্ধ থাকিবে? এই প্রকারে তাহারা আমার কাছে চারি বার লোক পাঠাইল, আর আমি তাহাদিগকে তদ্রূপ উত্তর দিলাম। পরে সন্‌বল্লট ঐ প্রকারে পঞ্চম বার আমার নিকটে আপন চাকরকে পাঠাইল, তাহার হস্তে এক মুক্ত পত্র ছিল; তাহাতে এই কথা লেখা ছিল, জাতিগণের মধ্যে এই জনশ্রুতি হইতেছে, এবং গশ্‌মূও কহিতেছে যে, তুমি ও যিহূদীরা রাজদ্রোহ করিবার সঙ্কল্প করিতেছ, এই জন্য তুমি প্রাচীর নির্ম্মাণ করিতেছ; আর এই জনশ্রুতির মর্ম্ম এই যে, তুমি তাহাদের রাজা হইতে উদ্যত। আর যিহূদা দেশে এক জন রাজা আছেন, আপনার বিষয়ে যিরূশালেমে ইহা প্রচার করাইবার জন্য তুমি ভাববাদিগণকেও নিযুক্ত করিয়াছ। এখন এই জনশ্রুতি রাজার কাছে উপস্থিত হইবে; অতএব আইস, আমরা একত্র হইয়া মন্ত্রণা করি। তখন আমি তাহাকে বলিয়া পাঠাইলাম, তুমি যে সকল কথা কহিতেছ, সেরূপ কোন কাজ হয় নাই; কিন্তু তুমি মনগড়া কথা বলিতেছ। কারণ তাহারা সকলে আমাদিগকে ভয় দেখাইতে চাহিত, বলিত, এই কর্ম্মে উহাদের হস্ত দুর্ব্বল হউক, তাহাতে তাহা সমাপ্ত হইবে না। কিন্তু এখন, [হে ঈশ্বর,] তুমি আমার হস্ত সবল কর। পরে মহেটবেলের সন্তান দলায়ের পুত্র যে শময়িয় রুদ্ধ ছিল, তাহার গৃহে আমি গেলাম; আর সে কহিল, আইস, আমরা ঈশ্বরের গৃহে, মন্দিরের ভিতরে, একত্র হই, ও মন্দিরের দ্বার সকল রুদ্ধ করি, কেননা লোকে তোমাকে বধ করিতে আসিবে, রাত্রিকালেই তোমাকে বধ করিতে আসিবে। তখন আমি কহিলাম, আমার মত লোক কি পলায়ন করিবে? আমার মত কোন্‌ লোকটী প্রাণ বাঁচাইবার জন্য মন্দিরে আশ্রয় লইবে? আমি সেখানে প্রবেশ করিব না। আর আমি টের পাইলাম, দেখ, ঈশ্বর তাহাকে পাঠান নাই, সে আমার বিপক্ষে ভাবোক্তি উচ্চারণ করিয়াছে, এবং টোবিয় ও সন্‌বল্লট তাহাকে ঘুষ দিয়াছে। তাহাকে এই জন্য ঘুষ দেওয়া হইয়াছিল, যেন আমি ভীত হইয়া সেই কর্ম্ম করি ও পাপ করি, এবং তাহারা যেন আমার দুর্নাম করিবার সূত্র পাইয়া আমাকে টিট্‌কারি দিতে পারে। হে আমার ঈশ্বর, টোবিয় ও সন্‌বল্লটের এই কর্ম্ম অনুসারে তাহাদিগকে এবং নোয়দিয়া ভাববাদিনীকে ও অন্য যে ভাববাদীরা আমাকে ভয় দেখাইতে চাহিত, তাহাদিগকেও স্মরণ কর। ইলূল মাসের পঞ্চবিংশ দিনে, বাহান্ন দিনের মধ্যে প্রাচীর সমাপ্ত হইল। পরে আমাদের সমস্ত শত্রু যখন তাহা শুনিল, তখন আমাদের চারিদিকের জাতিগণ সকলে ভীত হইল, এবং আপনাদের দৃষ্টিতে নিতান্ত লঘু হইল, কেননা এই কার্য্য যে আমাদের ঈশ্বর হইতেই হইল, ইহা তাহারা বুঝিল। আবার ঐ সময়ে যিহূদার প্রধান লোকেরা টোবিয়ের নিকটে অনেক পত্র পাঠাইত, এবং টোবিয়ের পত্রও তাহাদের কাছে আসিত। কারণ যিহূদার মধ্যে অনেকে তাহার পক্ষে শপথ করিয়াছিল; কারণ সে আরহের পুত্র শখনিয়ের জামাতা ছিল, এবং তাহার পুত্র যিহোহানন বেরিখিয়ের পুত্র মশুল্লমের কন্যাকে বিবাহ করিয়াছিল। আরও তাহারা আমার সাক্ষাতে তাহার সৎকার্য্যের কথা কহিত, এবং আমার কথাও তাহার গোচর করিত। আমাকে ভয় দেখাইবার জন্য টোবিয় পত্র পাঠাইত। প্রাচীর নির্ম্মিত হইলে পর আমি দ্বার সকলের কবাট স্থাপন করিলাম, এবং দ্বারপালকেরা, গায়কেরা ও লেবীয়েরা নিযুক্ত হইল। আর আমি আপন ভ্রাতা হনানিকে ও দুর্গের শাসনকর্ত্তা হনানিয়কে যিরূশালেমের উপরে নিযুক্ত করিলাম, কেননা হনানিয় বিশ্বস্ত লোক ছিলেন, এবং অনেক লোক অপেক্ষা ঈশ্বরকে ভয় করিতেন। আর আমি তাঁহাদিগকে বলিলাম, যাবৎ রৌদ্র প্রচণ্ড না হয়, তাবৎ যিরূশালেমের দ্বার সকল খোলা না হউক; এবং রক্ষকেরা নিকটে দণ্ডায়মান থাকিতে দ্বার সকল রুদ্ধ ও কবাট অর্গলে বদ্ধ হউক; এবং তোমরা যিরূশালেম-নিবাসীদিগকে প্রহরী নিযুক্ত কর, তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন প্রহরি-স্থানে, আপন আপন গৃহের সম্মুখে, থাকুক। নগর বৃহৎ ও বিস্তারিত, কিন্তু তন্মধ্যে লোক অল্প ছিল, গৃহ সকলও নির্ম্মাণ করা যায় নাই। পরে আমার ঈশ্বর আমার মনে [প্রবৃত্তি] দিলে আমি প্রধানদিগকে, অধ্যক্ষদিগকে ও লোকদিগকে একত্র করিলাম, যেন তাহাদের বংশাবলি লেখা হয়। আর আমি প্রথমাগত লোকদের বংশাবলি পত্র পাইলাম, তন্মধ্যে এই কথা লিখিত পাইলাম;— যাহারা বন্দিরূপে নীত হইয়াছিল, বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর যাহাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া গিয়াছিলেন, তাহাদের মধ্যে প্রদেশের এই লোকেরা বন্দিদশা হইতে যাত্রা করিয়া যিরূশালেমে ও যিহূদাতে আপন আপন নগরে ফিরিয়া আসিল; তাহারা সরুব্বাবিল, যেশূয়, নহিমিয়, অসরিয়, রয়মিয়া, নহমানি, মর্দখয়, বিল্‌শন, মিস্পরৎ, বিগ্‌বয়, নহূম ও বানা, ইহাঁদের সহিত ফিরিয়া আসিল। সেই ইস্রায়েল লোকদের পুরুষ-সংখ্যা; পরোশের সন্তান দুই সহস্র এক শত বাহাত্তর জন। শফটিয়ের সন্তান তিন শত বাহাত্তর জন। আরহের সন্তান ছয় শত বাহান্ন জন। যেশূয় ও যোয়াবের সন্তানদের মধ্যে পহৎ-মোয়াবের সন্তান দুই সহস্র আট শত আঠার জন। এলমের সন্তান এক সহস্র দুই শত চুয়ান্ন জন। সত্তূর সন্তান আট শত পঁয়তাল্লিশ জন। সক্কয়ের সন্তান সাত শত ষাট জন। বিন্নূয়ির সন্তান ছয় শত আটচল্লিশ জন। বেবয়ের সন্তান ছয় আটাশ জন। আস্‌গদের সন্তান দুই সহস্র তিন শত বাইশ জন। অদোনীকামের সন্তান ছয় শত সাতষট্টি জন। বিগ্‌বয়ের সন্তান দুই সহস্র সাতষট্টি জন। আদীনের সন্তান ছয় শত পঞ্চান্ন জন। যিহিষ্কিয়ের বংশজাত আটেরের সন্তান আটানব্বই জন। হশুমের সন্তান তিন শত আটাশ জন। বেৎসয়ের সন্তান তিন শত চব্বিশ জন। হারীফের সন্তান এক শত বারো জন। গিবিয়োনের সন্তান পঁচানব্বই জন। বৈৎলেহমের ও নটোফার লোক এক শত অষ্টাশী জন। অনাথোতের লোক এক শত আটাশ জন। বৈৎ-অস্মাবতের লোক বিয়াল্লিশ জন। কিরিয়ৎ-যিয়ারীম, কফীরা ও বেরোতের লোক সাত শত তেতাল্লিশ জন। রামার ও গেবার লোক ছয় শত একুশ জন। মিক্‌মসের লোক এক শত বাইশ জন। বৈথেলের ও অয়ের লোক এক শত তেইশ জন। অন্য নবোর লোক বাহান্ন জন। অন্য এলমের সন্তান এক সহস্র দুই শত চুয়ান্ন জন। হারীমের সন্তান তিন শত কুড়ি জন। যিরীহোর সন্তান তিন শত পঁয়তাল্লিশ জন। লোদ, হাদীদ ও ওনোর সন্তান সাত শত একুশ জন। সনায়ার সন্তান তিন সহস্র নয় শত ত্রিশ জন। যাজকবর্গ; যেশূয় কুলের মধ্যে যিদয়িয়ের সন্তান নয় শত তিয়াত্তর জন। ইম্মেরের সন্তান এক সহস্র বাহান্ন জন। পশ্‌হূরের সন্তান এক সহস্র দুই শত সাতচল্লিশ জন। হারীমের সন্তান এক সহস্র সতের জন। লেবীয়বর্গ; হোদবিয়ের সন্তানদের মধ্যে যেশূয় ও কদ্‌মীয়েলের সন্তান চুয়াত্তর জন। গায়কবর্গ; আসফের সন্তান এক শত আটচল্লিশ জন। দ্বারপালবর্গ; শল্লুমের সন্তান, আটেরের সন্তান, টল্‌মোনের সন্তান, অক্কুবের সন্তান, হটীটার সন্তান, শোবয়ের সন্তান, এক শত আটত্রিশ জন। নথীনীয়বর্গ; সীহের সন্তান, হসূফার সন্তান, টব্বায়োতের সন্তান, কেরোসের সন্তান, সীয়ের সন্তান, পাদোনের সন্তান, লবানার সন্তান, হগাবের সন্তান, শল্‌ময়ের সন্তান, হাননের সন্তান, গিদ্দেলের সন্তান, গহরের সন্তান, রায়ার সন্তান, রৎসীনের সন্তান, নকোদের সন্তান, গসমের সন্তান, ঊষের সন্তান, পাসেহের সন্তান, বেষয়ের সন্তান, মিয়ূনীমের সন্তান, নফুষযীমের সন্তান, বকবূকের সন্তান, হকূফার সন্তান, হর্হূরের সন্তান, বসলীতের সন্তান, মহীদার সন্তান, হর্শার সন্তান, বর্কোসের সন্তান, সীষরার সন্তান, তেমহের সন্তান, নৎসীহের সন্তান, হটীফার সন্তানবর্গ। শলোমনের দাসদের সন্তানবর্গ; সোটয়ের সন্তান, সোফেরতের সন্তান, পরীদার সন্তান, যালার সন্তান, দর্কোনের সন্তান, গিদ্দেলের সন্তান, শফটিয়ের সন্তান, হটীলের সন্তান, পোখেরৎ-হৎসবায়ীমের সন্তান, আমোনের সন্তানগণ। নথীনীয়েরা ও শলোমনের দাসদের সন্তান সর্ব্বশুদ্ধ তিন শত বিরানব্বই জন ছিল। আর তেল্‌মেলহ, তেল্‌হর্শা, করূব, অদ্দন, ও ইম্মের, এই সকল স্থান হইতে নিম্নলিখিত লোক সকল আসিল; কিন্তু তাহারা ইস্রায়েলীয় লোক কি না, এ বিষয়ে আপন আপন পিতৃকুল কি গোত্রের প্রমাণ দিতে পারিল না; দলায়ের সন্তান, টোবিয়ের সন্তান, নকোদের সন্তান ছয় শত বিয়াল্লিশ জন। আর যাজকদের মধ্যে হবায়ের সন্তান, হক্কোসের সন্তান ও বর্সিল্লয়ের সন্তানবর্গ; এই বর্সিল্লয় গিলিয়দীয় বর্সিল্লয়ের এক কন্যাকে বিবাহ করিয়া তাহাদের নামে আখ্যাত হইয়াছিল। বংশাবলিতে বর্ণিত লোকদের মধ্যে ইহারা আপন আপন বংশাবলিপত্র অন্বেষণ করিয়া পাইল না, এই জন্য ইহারা অশুচি গণিত হইয়া যাজকের পদ হইতে ভ্রষ্ট হইল। আর শাসনকর্ত্তা তাহাদিগকে কহিলেন, যে পর্য্যন্ত ঊরীম ও তুম্মীমের অধিকারী এক যাজক উৎপন্ন না হইবেন, তাবৎ তোমরা পবিত্র বস্তু ভোজন করিও না। একত্রীকৃত সমস্ত সমাজ বিয়াল্লিশ সহস্র তিন শত ষাট জন ছিল। তদ্ভিন্ন তাহাদের সাত সহস্র তিন শত সাঁইত্রিশ জন দাস দাসী ছিল, আর তাহাদের দুই শত পঁয়তাল্লিশ জন গায়ক ও গায়িকা ছিল। তাহাদের সাত শত ছত্রিশটী অশ্ব, দুই শত পঁয়তাল্লিশটী অশ্বতর, চারি শত পঁয়ত্রিশটী উষ্ট্র ও ছয় সহস্র সাত শত কুড়িটী গর্দ্দভ ছিল। পিতৃকুলপতিদের মধ্যে কেহ কেহ সেই কর্ম্মের জন্য দান করিল। শাসনকর্ত্তা ভাণ্ডারে স্বর্ণের এক সহস্র অদর্কোন ও পঞ্চাশটী বাটী এবং যাজকদের জন্য পাঁচ শত ত্রিশটী অঙ্গরক্ষক দিলেন। কয়েক জন পিতৃকুলপতি সেই কর্ম্মের ভাণ্ডারে স্বর্ণের বিংশতি সহস্র অদর্কোন ও দুই সহস্র দুই শত মানি রৌপ্য দিল। অন্য লোকেরা স্বর্ণের বিংশতি সহস্র অদর্কোন, দুই সহস্র মানি রৌপ্য ও যাজকদের জন্য সাতষট্টিটী অঙ্গরক্ষক দিল। পরে যাজকেরা, লেবীয়েরা, দ্বারপালেরা ও গায়কেরা, এবং কোন কোন প্রজা ও নথীনীয়েরা এবং সমস্ত ইস্রায়েল আপন আপন নগরে বাস করিতে লাগিল। সপ্তম মাস উপস্থিত হইলে ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপন আপন নগরে ছিল। আর সমস্ত লোক এক মানুষের ন্যায় জল-দ্বারের সম্মুখস্থ চকে একত্র হইল; এবং তাহারা অধ্যাপক ইষ্রাকে ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্রভুর আদিষ্ট মোশির ব্যবস্থা-পুস্তক আনিতে কহিল। তাহাতে সপ্তম মাসের প্রথম দিনে ইষ্রা যাজক সমাজের সম্মুখে, স্ত্রী পুরুষ এবং যাহারা শুনিয়া বুঝিতে পারে, তাহাদের সম্মুখে সেই ব্যবস্থা-পুস্তক আনিলেন। আর জল-দ্বারের সম্মুখস্থ চকে স্ত্রী পুরুষ এবং যত লোক বুঝিতে পারে, তাহাদের নিকটে তিনি প্রাতঃকাল হইতে মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত তাহা পাঠ করিলেন, তাহাতে ব্যবস্থা পুস্তক শ্রবণে সমস্ত লোকের কর্ণ নিবিষ্ট হইল। বস্তুতঃ অধ্যাপক ইষ্রা ঐ কার্য্যের জন্য নির্ম্মিত এক কাষ্ঠময় মঞ্চের উপরে দাঁড়াইলেন, এবং তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে মত্তিথিয়, শেমা, অনায়, ঊরিয়, হিল্কিয় ও মাসেয়, এবং তাঁহার বাম পার্শ্বে পদায়, মীশায়েল, মল্কিয়, হশুম, হশবদ্দানা, সখরিয় ও মশুল্লম দাঁড়াইল। ইষ্রা সমস্ত লোকের সাক্ষাতে পুস্তকখানি খুলিলেন; কেননা তিনি সমস্ত লোক অপেক্ষা উচ্চে দণ্ডায়মান ছিলেন। তিনি পুস্তক খুলিবামাত্র সমস্ত লোক উঠিয়া দাঁড়াইল। পরে ইষ্রা মহান্‌ ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিলেন। আর সমস্ত লোক হাত তুলিয়া উত্তর করিল, আমেন, আমেন এবং মস্তক নমনপূর্ব্বক ভূমিতে মুখ দিয়া সদাপ্রভুর কাছে প্রণিপাত করিল। আর যেশূয়, বানি, শেরেবিয়, যামীন, অক্কুব, শব্বথয়, হোদিয়, মাসেয়, কলীট, অসরীয়, যোষাবদ, হানন, পলায় ও লেবীয়েরা লোকদিগকে ব্যবস্থা-পুস্তকের অর্থ বুঝাইয়া দিল; আর লোকেরা স্ব স্ব স্থানে দাঁড়াইয়া রহিল। এইরূপে তাহারা স্পষ্ট উচ্চারণপূর্ব্বক সেই পুস্তক, ঈশ্বরের ব্যবস্থা, পাঠ করিল, এবং তাহার অর্থ করিয়া লোকদিগকে পাঠ বুঝাইয়া দিল। আর শাসনকর্ত্তা নহিমিয়, অধ্যাপক ইষ্রা যাজক ও লোকদের শিক্ষক লেবীয়েরা সমস্ত লোককে কহিলেন, অদ্যকার দিন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র, তোমরা শোক করিও না, রোদন করিও না। কেননা ব্যবস্থা-পুস্তকের বাক্য শ্রবণে সমস্ত লোক রোদন করিতে ছিল। আর তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, যাও, পুষ্ট দ্রব্য ভোজন কর, মিষ্ট রস পান কর, এবং যাহার জন্য কিছু প্রস্তুত নাই, তাহাকে অংশ পাঠাইয়া দেও; কারণ অদ্যকার দিন আমাদের প্রভুর উদ্দেশে পবিত্র, তোমরা বিষণ্ণ হইও না, কেননা সদাপ্রভুতে যে আনন্দ, তাহাই তোমাদের শক্তি। লেবীয়েরাও লোক সকলকে শান্ত করিয়া কহিল, নীরব হও, কেননা অদ্য পবিত্র দিন, তোমরা বিষণ্ণ হইও না। তখন সমস্ত লোক ভোজন পান, অংশ প্রেরণ ও অতিশয় আনন্দ করিতে গেল, কেননা যে সকল কথা তাহাদের কাছে বলা গিয়াছিল, তাহারা সে সকল বুঝিতে পারিয়াছিল। আর দ্বিতীয় দিনে সমস্ত লোকের পিতৃকুলপতিরা, যাজকেরা ও লেবীয়েরা ব্যবস্থার বাক্যে মনোনিবেশ করিবার জন্য অধ্যাপক ইষ্রার কাছে একত্র হইল। আর তাহারা দেখিতে পাইল, ব্যবস্থায় এই কথা লেখা আছে যে, সদাপ্রভু মোশি দ্বারা এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ সপ্তম মাসের উৎসবকালে কুটীরে বাস করিবে; এবং আপনাদের সকল নগরে ও যিরূশালেমে এই কথা ঘোষণা ও প্রচার করিবে, যেরূপ লেখা আছে, তদনুসারে কুটীর নির্ম্মাণার্থে পর্ব্বতে গিয়া জিত বৃক্ষের শাখা, বন্য জিত বৃক্ষের শাখা, গুলমেঁদির শাখা, খর্জ্জুর বৃক্ষের শাখা ও ঝোপাল বৃক্ষের শাখা আন। তাহাতে লোকেরা বাহিরে গেল, ও সেই সকল আনিয়া প্রত্যেক জন আপন আপন গৃহের ছাদে ও প্রাঙ্গণে এবং ঈশ্বরের গৃহের সকল প্রাঙ্গণে, জল-দ্বারের চকে ও ইফ্রয়িম-দ্বারের চকে আপনাদের জন্য কুটীর নির্ম্মাণ করিল। বন্দিদশা হইতে প্রত্যাগত লোকদের সমস্ত সমাজ কুটীর নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বাস করিল; বস্তুতঃ নূনের পুত্র যিহোশূয়ের সময় হইতে সেই দিন পর্য্যন্ত ইস্রায়েল-সন্তানগণ সেরূপ করে নাই; তাহাতে অতি বড় আনন্দ হইল। আর ইষ্রা প্রথম দিন হইতে শেষ দিন পর্য্যন্ত প্রতিদিন ঈশ্বরের ব্যবস্থা-পুস্তক পাঠ করিলেন। আর লোকেরা সাত দিন পর্ব্ব পালন করিল, এবং বিধি অনুসারে অষ্টম দিনে উৎসব-সভা হইল। আর ঐ মাসের চতুর্ব্বিংশ দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণ উপবাস, চটপরিধান ও মস্তকে মৃত্তিকা অর্পণ করিয়া একত্র হইল। আর ইস্রায়েল-বংশ সমস্ত বিজাতীয় লোক হইতে আপনাদিগকে পৃথক্‌ করিল, এবং দাঁড়াইয়া আপনাদের পাপ ও আপনাদের পিতৃপুরুষদের অপরাধ স্বীকার করিল। আর তাহারা আপন আপন স্থানে দাঁড়াইল ও দিনের চতুর্থাংশ পর্য্যন্ত আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পুস্তক পাঠ করিল, পরে দিনের [আর এক] চতুর্থাংশ পর্য্যন্ত আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে পাপ স্বীকার ও প্রণিপাত করিল। আর যেশূয় ও বানি, কদ্‌মীয়েল, শবনিয়, বুন্নি, শেরেবিয়, বানি, কনানী, ইহারা লেবীয়দের সোপানে দাঁড়াইয়া আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিল। পরে যেশূয় ও কদ্‌মীয়েল, বানি, হশব্‌নিয়, শেরেবিয়, হোদিয়, শবনিয়, পথাহিয়, এই কয়েক জন লেবীয় এই কথা কহিল, উঠ; তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, যিনি অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল পর্য্যন্ত [ধন্য]। তোমার প্রতাপান্বিত নামের ধন্যবাদ হউক, যাহা যাবতীয় ধন্যবাদ ও প্রশংসার অতীত। কেবলমাত্র তুমিই সদাপ্রভু; তুমি স্বর্গ ও স্বর্গের স্বর্গ এবং তাহার সমস্ত বাহিনী, পৃথিবী ও তথাকার সমস্ত এবং সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ, আর তুমি তাহাদের সকলের স্থিতি করিতেছ, এবং স্বর্গের বাহিনী তোমার কাছে প্রণিপাত করে। তুমিই সদাপ্রভু ঈশ্বর; তুমি অব্রামকে মনোনীত করিয়াছিলে, কল্‌দীয় দেশের ঊর হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলে, ও তাঁহার নাম অব্রাহাম রাখিয়াছিলে; এবং আপনার সাক্ষাতে তাঁহার অন্তঃকরণ বিশ্বস্ত দেখিয়া কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, যিবূষীয় ও গির্গাশীয়ের দেশ তাঁহার বংশকে দিবার জন্য, তাঁহার সহিত নিয়ম করিয়াছিলে, আর তুমি আপনার বাক্য অটল রাখিয়াছ, কেননা তুমি ধর্ম্মময়। আর তুমি মিসরে আমাদের পিতৃপুরুষদের দুঃখ দেখিয়াছিলে, ও সূফসাগরের তীরে তাহাদের ক্রন্দন শুনিয়াছিলে; এবং ফরৌণে, তাঁহার সমস্ত দাসগণে ও তাঁহার দেশের প্রজা সকলে নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইয়াছিলে; কেননা তুমি জানিতে যে, মিস্রীয়েরা তাহাদের বিরুদ্ধে গর্ব্ব করিত; ইহাতে তুমি আপনার নাম প্রতিষ্ঠিত করিলে, যেমন অদ্য রহিয়াছে। আর তুমি তাহাদের সম্মুখে সমুদ্রকে দ্বিভাগ করিলে, তাহাতে তাহারা সমুদ্রের মধ্যস্থলে শুষ্ক পথ দিয়া অগ্রসর হইল; কিন্তু প্রবল জলে যেমন প্রস্তর, তেমনি তুমি তাহাদের পশ্চাদ্ধাবনকারী লোকদিগকে অগাধ জলে নিক্ষেপ করিলে। আর তুমি দিবসে মেঘস্তম্ভ দ্বারা, ও রাত্রিতে তাহাদের গন্তব্য পথে দীপ্তি দিবার জন্য অগ্নিস্তম্ভ দ্বারা তাহাদিগকে গমন করাইতে। তুমি সীনয় পর্ব্বতের উপরে নামিয়া আসিলে, স্বর্গ হইতে তাহাদের সহিত কথা বলিলে, আর যথার্থ শাসন, সত্য ব্যবস্থা, উত্তম বিধি ও আজ্ঞা তাহাদিগকে দিলে; এবং আপনার পবিত্র বিশ্রামবার তাহাদিগকে জ্ঞাত করিলে, এবং আপন দাস মোশি দ্বারা তাহাদিগকে আজ্ঞা, বিধি ও ব্যবস্থা দিলে; আর তাহাদের ক্ষুধা নিবারণার্থে স্বর্গ হইতে তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিলে, ও তাহাদের পিপাসা নিবারণার্থে শৈল হইতে জল বাহির করিলে; আর তুমি তাহাদিগকে যে দেশ দিবার জন্য হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলে, তাহা অধিকার করণার্থে তথায় প্রবেশ করিতে আজ্ঞা দিলে। তথাপি তাহারা ও আমাদের পিতৃপুরুষেরা গর্ব্ব করিল, আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিল, এবং তোমার আজ্ঞায় কর্ণপাত করিল না; আর তাহারা কথা শুনিতে অস্বীকার করিল, এবং তুমি তাহাদের মধ্যে যে সকল অদ্ভুত কার্য্য করিয়াছিলে, তাহা স্মরণে রাখিল না, কিন্তু আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিল, দাসত্বে ফিরিয়া যাইবার নিমিত্তে বিদ্রোহভাবে এক সেনাপতিকে নিযুক্ত করিল; কিন্তু তুমি ক্ষমাবান্‌ ঈশ্বর, কৃপাময় ও স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্‌, তাই তাহাদিগকে ত্যাগ করিলে না। এমন কি, তাহারা যখন আপনাদের জন্য ছাঁচে ঢালা এক গোবৎস নির্ম্মাণ করিল, এবং বলিল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, এইরূপে যখন মহা অসন্তোষকর কার্য্য করিল, তখনও তুমি আপন প্রচুর করুণা প্রযুক্ত প্রান্তরে তাহাদিগকে ত্যাগ করিলে না; দিবসে তাহাদের পথ দেখাইবার জন্য মেঘস্তম্ভ, এবং রাত্রিতে গন্তব্য পথে দীপ্তি দিবার জন্য অগ্নিস্তম্ভ তাহাদের উপর হইতে সরিয়া গেল না। আর তুমি শিক্ষা দিবার জন্য আপন মঙ্গলময় আত্মা তাহাদিগকে দান করিলে, এবং তাহাদের মুখ হইতে তোমার মান্না নিবৃত্ত করিলে না, ও তাহাদিগকে পিপাসা নিবারণার্থে জল দিলে। আর চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত প্রান্তরে তাহাদিগকে প্রতিপালন করিলে, তাহাদের অভাব হইল না; তাহাদের বস্ত্র জীর্ণ হইল না, ও তাহাদের পা ফুলিল না। পরে তুমি তাহাদিগকে নানা রাজ্য ও নানা জাতি প্রদান করিয়া সর্ব্বদিকে তাহাদের অংশ নিরূপণ করিলে; তাহাতে তাহারা সীহোনের দেশ, অর্থাৎ হিষ্‌বোণের রাজার দেশ ও বাশন-রাজ ওগের দেশ অধিকার করিল। আর তুমি তাহাদের সন্তানদিগকে আকাশের তারার ন্যায় বহুসংখ্যক করিলে, এবং সেই দেশে তাহাদিগকে আনিলে, যে দেশের বিষয়ে তুমি তাহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে বলিয়াছিলে যে, তাহারা তাহা অধিকার করিবার জন্য তথায় প্রবেশ করিবে। পরে সেই সন্তানগণ সেই দেশে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করিল, এবং তুমি সেই দেশনিবাসী কনানীয়দিগকে তাহাদের সম্মুখে নত করিলে, এবং উহাদিগকে ও উহাদের রাজগণকে ও দেশস্থ সকল জাতিকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলে, উহাদের প্রতি যাহা ইচ্ছা তাহা করিতে দিলে। তাহাতে তাহারা প্রাচীরবেষ্টিত অনেক নগর ও উর্ব্বরা ভূমি লইল, এবং সমুদয় উত্তম দ্রব্যে পরিপূর্ণ গৃহ, খনিত কূপ, দ্রাক্ষাক্ষেত্র, জিতক্ষেত্র ও প্রচুর ফলবৃক্ষ অধিকার করিল, এবং ভোজন করিয়া তৃপ্ত ও পুষ্ট হইল, এবং তোমার কৃত মহা মঙ্গলে আপ্যায়িত হইল। তথাপি তাহারা অবাধ্য হইয়া তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহাচরণ করিল, তোমার ব্যবস্থা পশ্চাৎ দিকে ফেলিল, এবং তোমার যে ভাববাদিগণ তোমার প্রতি তাহাদিগকে ফিরাইবার জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেন, তাঁহাদিগকে বধ করিল, ও মহা অসন্তোষকর কার্য্য করিল। পরে তুমি তাহাদিগকে বিপক্ষদের হস্তে সমর্পণ করিলে তাহারা তাহাদিগকে কষ্ট দিল; কিন্তু কষ্টের সময়ে যখন তাহারা তোমার কাছে কাঁদিত, তখন তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিতে, এবং তোমার প্রচুর করুণা প্রযুক্ত তাহাদিগকে নিস্তারকর্ত্তৃগণ দিতে, যাঁহারা বিপক্ষদের হস্ত হইতে তাহাদিগকে নিস্তার করিতেন। তথাপি বিশ্রাম পাইলে পর তাহারা আবার তোমার সাক্ষাতে কদাচারণ করিত, তাহাতে তুমি তাহাদিগকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিতে, এবং সেই শত্রুগণ তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিত; কিন্তু তাহারা ফিরিলে ও তোমার কাছে ক্রন্দন করিলে তুমি স্বর্গ হইতে তাহা শুনিতে; এবং আপন করুণানুসারে অনেক বার তাহাদিগকে উদ্ধার করিতে; আর আপন ব্যবস্থা-পথে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিবার নিমিত্তে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে; তথাপি তাহারা গর্ব্ব করিল, ও তোমার আজ্ঞায় কর্ণপাত করিত না, কিন্তু যাহা পালন করিলে মনুষ্য বাঁচে, তোমার সেই সকল শাসনের প্রতিকূলে পাপ করিত, ও স্কন্ধ সরাইত, গ্রীবা শক্ত করিত, কথা শুনিত না। তথাপি তুমি বহু বৎসর তাহাদের ব্যবহার সহ্য করিলে ও তোমার ভাববাদিগণের দ্বারা তোমার আত্মাকর্ত্তৃক তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে; কিন্তু তাহারা কর্ণপাত করিল না, তজ্জন্য তুমি তাহাদিগকে নানাদেশীয় জাতিগণের হস্তে সমর্পণ করিলে। তথাপি তোমার প্রচুর করুণা প্রযুক্ত তাহাদিগকে নিঃশেষ কর নাই ও ত্যাগ কর নাই, কারণ তুমি কৃপাময় ও স্নেহশীল ঈশ্বর। অতএব, হে আমাদের ঈশ্বর, মহান্‌, বিক্রান্ত ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বর, তুমি নিয়ম ও দয়া পালন করিয়া থাক; অশূর-রাজগণের সময়াবধি অদ্য পর্য্যন্ত আমাদের উপরে, আমাদের রাজাদের, অধ্যক্ষদের, যাজকদের ভাববাদীদের, পিতৃপুরুষদের ও তোমার সকল প্রজার উপরে যে সমস্ত ক্লেশ ঘটিতেছে, সে সকল তোমার দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র বোধ না হউক। আমাদের প্রতি এই সকল ঘটিলেও তুমি ধর্ম্মময়; কেননা তুমি সত্য ব্যবহার করিয়াছ, কিন্তু আমরা দুষ্কর্ম্ম করিয়াছি। আর আমাদের রাজগণ, অধ্যক্ষগণ, যাজকগণ ও পিতৃপুরুষেরা তোমার ব্যবস্থা পালন করেন নাই, এবং তোমার আজ্ঞায় ও যদ্দ্বারা তুমি তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে, তোমার সেই সাক্ষ্যকথায় কর্ণপাত করেন নাই। আর তাহাদের রাজত্বকালে, তোমার প্রদত্ত প্রচুর মঙ্গল সত্ত্বেও তোমাকর্ত্তৃক তাঁহাদের হস্তে সমর্পিত প্রশস্ত ও উর্ব্বর দেশে তাহারা তোমার সেবা করে নাই, এবং আপন আপন দুষ্ক্রিয়া সকল হইতে নিবৃত্ত হয় নাই। দেখ, অদ্য আমরা দাস, ফলে তুমি আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়া তদুৎপন্ন ফলের ও উত্তম দ্রব্যের অধিকারী করিয়াছিলে, দেখ, আমরা এই দেশমধ্যে দাস হইয়া রহিয়াছি। আর তুমি আমাদের পাপ প্রযুক্ত আমাদের উপরে যে রাজগণকে নিযুক্ত করিয়াছ, দেশোৎপন্ন দ্রব্যবাহুল্য তাঁহাদেরই স্বত্ব; আর তাঁহারা আমাদের শরীরের উপরে ও আমাদের পশুগণের উপরে স্বেচ্ছামত প্রভুত্ব করিতেছেন, আর আমরা মহা সঙ্কটের মধ্যে আছি। এই সকল ঘটিলেও আমরা নিশ্চিত নিয়ম করিয়া লিখিতেছি; এবং আমাদের অধ্যক্ষগণ, আমাদের লেবীয়েরা ও আমাদের যাজকগণ তাহাতে মুদ্রাঙ্ক দিতেছে। মুদ্রাঙ্ককারীদের নাম, হখলিয়ের পুত্র নহিমিয় শাসনকর্ত্তা, এবং সিদিকিয়, সরায়, অসরিয়, যিরমিয়, পশহূর, অমরিয়, মল্কিয়, হটূশ, শবনিয়, মল্লূক, হারীম, মরেমোৎ, ওবদিয়, দানিয়েল, গিন্নথোন, বারূক, মশুল্লম, অবিয়, মিয়ামীন, মাসিয়, বিল্‌গয়, শমরিয়, যাজকগণের মধ্যে, এই সকল লোক। আর লেবীয়দের মধ্যে অসনিয়ের পুত্র যেশূয়, হেনাদদের সন্তান বিন্নুয়ী, কদ্‌মীয়েল; এবং তাহাদের ভ্রাতৃগণ শবনিয়, হোদিয়, কলীট, পলায় হানন, মীখা, রহোব, হশবিয়, সক্কূর, শেরেবিয়, শবনিয়, হোদীয়, বানি, বনীনু। প্রজাদের মধ্যে প্রধান লোকেরা, পরোশ, পহৎ-মোয়াব, এলম, সত্তূ, বানি, বুন্নি, অস্‌গদ, বেবয়, অদোনিয়, বিগ্‌বয়, আদীন, আটের, হিষ্কিয়, অসূর, হোদিয়, হশুম বেৎসয়, হারীফ, অনাথোৎ, নবয়, মগ্‌পীয়শ, মশুল্লম, হেষীর, মশেষবেল, সাদোক, যদ্দুয়, পলটিয়, হানন, অনায়, হোশেয়, হনানিয়, হশূব, হলোহেশ, পিল্‌হ, শোবেক, রহূম, হশব্‌না, মাসেয়, এবং অহিয়, হানন, অনান, মল্লূক, হারীম, বানা। আর প্রজাদের অবশিষ্ট লোকেরা, যাজক, লেবীয়, দ্বারপাল, গায়ক, নথীনীয় প্রভৃতি যে সকল লোক নানাদেশীয় জাতিগণ হইতে আপনাদিগকে পৃথক করিয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থার পক্ষ হইয়াছিল, তাহারা সকলে, তাহাদের স্ত্রী ও পুত্র কন্যাগণ, জ্ঞানবান্‌ ও বুদ্ধিমান্‌ সকলে, আপনাদের ভ্রাতৃগণের, আপনাদের প্রধান লোকদের পক্ষে আসক্ত থাকিল, এবং শপথপূর্ব্বক এই দিব্য করিল, আমরা ঈশ্বরের দাস মোশি দ্বারা দত্ত ঈশ্বরের ব্যবস্থা-পথে চলিব, আমাদের প্রভু সদাপ্রভুর আজ্ঞা, শাসন ও বিধি সকল যত্নপূর্ব্বক পালন করিব; এবং দেশীয় লোকদের সহিত আপনাদের কন্যাগণের বিবাহ দিব না, ও আমাদের পুত্রগণের জন্য তাহাদের কন্যাগণকে গ্রহণ করিব না; আর দেশীয় লোকেরা বিশ্রামবারে বিক্রেয় দ্রব্য কিম্বা ভক্ষ্য দ্রব্য বিক্রয় করিতে আনিলে আমরা বিশ্রামবারে কিম্বা অন্য পবিত্র দিনে তাহাদের কাছে তাহা ক্রয় করিব না, এবং সপ্তম বৎসর ছাড়িয়া দিব, সমস্ত ঋণ আদায় পরিত্যাগ করিব। অধিকন্তু আমরা আপনাদের ঈশ্বরের গৃহের সেবাকার্য্যের জন্য, প্রতিবৎসর এক এক শেকলের তৃতীয়াংশ দানের ভার আপনাদের উপরে লইবার বিধান করিলাম, দর্শন-রুটীর, নিত্য ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের, নিত্য হোমের, বিশ্রামবারের, অমাবস্যার, পর্ব্ব সকলের, পবিত্র বস্তুর ও ইস্রায়েলের প্রায়শ্চিত্তার্থক পাপবলির নিমিত্ত এবং আমাদের ঈশ্বরের গৃহের সমস্ত কর্ম্মের নিমিত্ত তাহা করিলাম। আর কাষ্ঠদানের বিষয়ে, অর্থাৎ ব্যবস্থার লিখনানুসারে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির উপরে জ্বালাইবার জন্য আমাদের পিতৃকুলানুসারে বৎসর বৎসর নিরূপিত কালে আমাদের ঈশ্বরের গৃহে কাষ্ঠ আনিবার বিষয়ে আমরা যাজক, লেবীয় ও প্রজাগণ গুলিবাঁট করিলাম; আর আমাদের ভূমিজাত দ্রব্যের অগ্রিমাংশ ও সমস্ত বৃক্ষোৎপন্ন ফলের অগ্রিমাংশ বৎসর বৎসর সদাপ্রভুর গৃহে আনিবার; এবং ব্যবস্থায় যেমন লেখা আছে, তদনুসারে আমাদের প্রথমজাত পুত্র ও পশুদিগকে, আমাদের গোপাল ও মেষপাল সকলের প্রথমজাতদিগকে ঈশ্বরের গৃহে আমাদের ঈশ্বরের গৃহের পরিচর্য্যাকারী যাজকদের কাছে আনিবার; এবং আমাদের ময়দার অগ্রিমাংশ, আমাদের উত্তোলনীয় উপহার ও সমস্ত বৃক্ষের ফল, দ্রাক্ষারস ও তৈল আমাদের ঈশ্বরের গৃহের কুঠরী সমূহে যাজকদের নিকটে আনিবার; এবং আমাদের ভূমিজাত দ্রব্যের দশমাংশ লেবীয়দের কাছে আনিবার বিষয় স্থির করিলাম; কারণ আমাদের সমস্ত কৃষি-নগরে লেবীয়েরাই দশমাংশ আদায় করে। আর লেবীয়দের দশমাংশ আদায় কালে হারোণের সন্তান যাজক লেবীয়দের সঙ্গে থাকিবে; পরে লেবীয়েরা দশমাংশের দশমাংশ আমাদের ঈশ্বরের গৃহে, কুঠরী-সমূহে, ভাণ্ডারগৃহে আনিবে। কারণ পবিত্র স্থানের পাত্র সকল এবং পরিচর্য্যাকারী যাজকেরা, দ্বারপালেরা ও গায়কেরা যে স্থানে থাকে, সেই সকল কুঠরীতে ইস্রায়েল-সন্তানগণ ও লেবি-সন্তানগণ শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈলের উত্তোলনীয় উপহার আনিবে; এবং আমরা আপনাদের ঈশ্বরের গৃহ ত্যাগ করিব না। আর লোকদের অধ্যক্ষগণ যিরূশালেমে বাস করিল; আর অবশিষ্ট লোকেরাও পবিত্র নগর যিরূশালেমে বাস করণার্থে প্রতি দশ জনের মধ্যে এক জনকে সেখানে আনিবার ও নয় জনকে অন্যান্য নগরে বাস করাইবার জন্য গুলিবাঁট করিল। আর যে সকল লোক ইচ্ছাপূর্ব্বক যিরূশালেমে বাস করিতে চাহিল, লোকেরা তাহাদিগের ধন্যবাদ করিল। প্রদেশের এই সকল প্রধান লোক যিরূশালেমে বসতি করিল। কিন্তু যিহূদার নগরে নগরে ইস্রায়েল, যাজকেরা, লেবীয়েরা, নথীনীয়েরা ও শলোমনের দাসদের সন্তানগণ প্রত্যেকে আপন আপন অধিকারে আপন আপন নগরে বাস করিল। আর যিহূদা-সন্তানগণের মধ্যে ও বিন্যামীন-সন্তানগণের মধ্যে কতকগুলি লোক যিরূশালেমে বসতি করিল। যিহূদা-সন্তানগণের মধ্যে উষিয়ের পুত্র অথায়; সেই উষিয় সখরিয়ের পুত্র, সখরিয় অমরিয়ের পুত্র, অমরিয় শফটিয়ের পুত্র, শফটিয় মহললেলের পুত্র, সে পেরসের সন্তানদের মধ্যে এক জন। আর বারূকের পুত্র মাসেয়; সেই বারূক কল্‌হোষির পুত্র, কল্‌হোষি হসায়ের পুত্র, হসায় অদায়ার পুত্র, অদায়া যোয়ারীবের পুত্র, যোয়ারীব সখরিয়ের পুত্র, সখরিয় শীলোনীয়ের পুত্র। যিরূশালেম-নিবাসী পেরস-সন্তান সর্ব্বশুদ্ধ চারি শত আটষট্টি জন বীরপুরুষ ছিল। আর বিন্যামীনের এই সকল সন্তান; মশুল্লমের পুত্র সল্লূ, সেই মশুল্লম যোয়েদের পুত্র, যোয়েদ পদায়ের পুত্র, পদায় কোলায়ার পুত্র, কোলায়া মাসেয়ের পুত্র, মাসেয় ঈথীয়েলের পুত্র, ঈথীয়েল যিশায়াহের পুত্র। ইহার পরে গব্বয় ও সল্লয় প্রভৃতি নয় শত আটাশ জন। আর শিখ্রির পুত্র যোয়েল তাহাদের কার্য্যের তত্ত্বাবধায়ক ছিল, এবং হস্‌সনূয়ার পুত্র, যিহূদা নগরের দ্বিতীয় কর্ত্তা ছিল। যাজকদের মধ্যে; যোয়ারীবের পুত্র যিদয়িয়, যাখীন, হিল্কিয়ের পুত্র সরায়; সেই হিল্কিয় মশুল্লমের পুত্র, মশুল্লম সাদোকের পুত্র, সাদোক মরায়োতের পুত্র, মরায়োৎ অহীটুবের পুত্র; অহীটুব ঈশ্বরের গৃহের অধ্যক্ষ। আর গৃহের কর্ম্মকারী তাহাদের ভ্রাতৃগণ আট শত বাইশ জন; এবং যিরোহমের পুত্র অদায়া; সেই যিরোহম পললিয়ের পুত্র, পললিয় অম্‌সির পুত্র, অম্‌সি সখরিয়ের পুত্র, সখরিয় পশ্‌হূরের পুত্র, পশ্‌হূর মল্কিয়ের পুত্র। আর অদায়ার ভ্রাতৃগণ দুই শত বিয়াল্লিশ জন পিতৃকুলপতি ছিল, এবং অসরেলের পুত্র অমশয়; সেই অসরেল অহসয়ের পুত্র, অহসয় মশিল্লেমোতের পুত্র, মশিল্লেমোৎ ইম্মেরের পুত্র। আর তাহাদের ভ্রাতৃগণ এক শত আটাশ জন বীরপুরুষ ছিল, এবং তাহাদের কার্য্যের তত্ত্বাবধায়ক ছিল সব্দীয়েল, সে হগ্‌গদোলীমের পুত্র। আর লেবীয়দের মধ্যে; হশূবের পুত্র শিময়িয়; সেই হশূব অস্রীকামের পুত্র, অস্রীকাম হশবিয়ের পুত্র, হশবিয় বুন্নির পুত্র। আর প্রধান লেবীয়দের মধ্যে শব্বথয় ও যোষাবাদ ঈশ্বরের গৃহের বহিঃস্থ কার্য্যের তত্ত্বাবধায়ক ছিল। আর আসফের সন্তান, সব্দির সন্তান, মীখার পুত্র মত্তনিয় প্রার্থনাকালীন স্তবগান আরম্ভ করণে প্রধান ছিল, এবং তাহার ভ্রাতাদের মধ্যে বক্‌বুকিয় দ্বিতীয় ছিল, এবং যিদূথূনের সন্তান, গাললের সন্তান, শম্মুয়ের পুত্র অব্দ। পবিত্র নগরস্থ লেবীয়েরা সর্ব্বশুদ্ধ দুই শত চৌরাশী জন ছিল। আর দ্বারপালেরা—অক্কুব, টল্‌মোন, ও দ্বার সকলের প্রহরী তাহাদের ভ্রাতৃগণ—এক শত বাহাত্তর জন ছিল। আর ইস্রায়েলের, যাজকদের, লেবীয়দের অবশিষ্ট লোকেরা যিহূদার সমস্ত নগরে আপন আপন অধিকারে থাকিত। কিন্তু নথীনীয়েরা ওফলে বাস করিত, এবং সীহ ও গীষ্প নথীনীয়দের অধ্যক্ষ ছিল। আর বানির পুত্র উষি যিরূশালেমস্থ লেবীয়দের তত্ত্বাবধায়ক ছিল; সেই বানি হশবিয়ের পুত্র, হশবিয় মত্তনিয়ের পুত্র, মত্তনীয় মীখার পুত্র; মীখা আসফবংশজাত গায়কদের মধ্যে এক জন। উষি ঈশ্বরের গৃহের কর্ম্মের অধ্যক্ষ ছিল। কেননা তাহাদের বিষয়ে রাজার এক আজ্ঞা ছিল, এবং গায়কদের জন্য প্রতিদিন নিরূপিত অংশ দত্ত হইত। আর যিহূদার পুত্র সেরহের বংশজাত মশেষবেলের পুত্র যে পথাহিয়, সে লোকদের সমস্ত বিষয়ে রাজার অধীনে নিযুক্ত ছিল। আর গ্রাম সকল ও তৎসংক্রান্ত ক্ষেত্রের বিষয়; যিহূদা-সন্তানেরা কেহ কেহ কিরিয়ৎ-অর্ব্বে ও তাহার উপনগরসমূহে, দীবোনে ও তাহার উপনগরসমূহে, যিকব্‌সেলে ও তাহার গ্রামসমূহে, আর যেশূয়েতে, মোলাদাতে, বৈৎপেলটে, হৎসর-শুয়ালে, বের্‌-শেবাতে ও তাহার উপনগরসমূহে, সিক্লগে, মকোনাতে ও তাহার উপনগরসমূহে, ঐন-রিম্মোণে, সরায় ও যম্মুতে, সানোহে, অদুল্লমে ও তাহাদের গ্রামসমূহে, লাখীশে ও তৎসংক্রান্ত ক্ষেত্রে, অসেকাতে ও তাহার উপনগরসমূহে বাস করিত; বস্তুতঃ তাহারা বের্‌-শেবা অবধি হিন্নোম উপত্যকা পর্য্যন্ত তাম্বুতে বাস করিত। বিন্যামীন-সন্তানেরা গেবা অবধি মিক্‌মসে ও অয়াতে, এবং বৈথেলে ও তাহার উপ-নগরসমূহে, অনাথোতে, নোবে, অননিয়াতে, হাৎসারে, [33,34] রামাতে, গিত্তয়িমে, হাদীদে, *** সবোয়িমে, নবল্লাটে, লোদে ও ওনোতে, শিল্পকরদের উপত্যকাতে, বাস করিত। আর যিহূদার সম্পর্কীয় কোন কোন পালাভুক্ত কতকগুলি লেবীয় বিন্যামীনের সহিত সংযুক্ত হইল। এই যাজকগণ ও লেবীয়েরা শল্‌টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিলের ও যেশূয়ের সহিত আসিয়াছিল, সরায়, যিরমিয়, ইষ্রা, অমরিয়, মল্লুক, হটুশ, শখনিয়, রহূম, মরেমোৎ, ইদ্দো, গিন্নথোয়, অবিয়, মিয়ামীন, মোয়াদিয়, বিল্‌গা, শময়িয়, যোয়ারীব, যিদয়িয়, সল্লূ, আমোক, হিল্কিয়, যিদয়িয়,; ইহারা যেশূয়ের সময়ে যাজকদের ও আপন আপন ভ্রাতৃগণের মধ্যে প্রধান ছিল। আবার লেবীয়বর্গ; যেশূয়, বিন্নূয়ী, কদ্‌মীয়েল, শেরেবিয়, যিহূদা, মত্তনিয়; এই মত্তনিয় ও তাহার ভ্রাতৃগণ স্তবগানের অধ্যক্ষ ছিল। আর তাহাদের ভ্রাতৃগণ বক্‌বুকিয় ও উন্নো তাহাদের সম্মুখে প্রহরিকর্ম্মে নিযুক্ত ছিল। আর যেশূয়ের পুত্র যোয়াকীম, যোয়াকীমের পুত্র ইলিয়াশীব, ইলিয়াশীবের পুত্র যোয়াদা, যোয়াদার পুত্র যোনাথন, যোনাথনের পুত্র যদ্দূয়। যোয়াকীমের সময়ে ইহারা পিতৃকুলপতি যাজক ছিল। সরায়ের কুলে মরায়, যিরমিয়ের কুলে হনানিয়; ইষ্রার কুলে মশুল্লম, অমরিয়ের কুলে যিহোহানন, মল্লূকীর কুলে যোনাথন, শবনিয়ের কুলে যোষেফ, হারীমের কুলে অদ্‌ন, মরায়োতের কুলে হিল্কয়, ইদ্দোর কুলে সখরিয়, গিন্নথোনের কুলে মশুল্লম, অবিয়ের কুলে সিখ্রি, মিনিয়ামীনের কুলে [এক জন,] মোয়দিয়ের কুলে পিল্টয়, বিল্‌গার কুলে সম্মুয়, শময়িয়ের কুলে যিহোনাথন, যোয়ারীবের কুলে মত্তনয়, যিদয়িয়ের কুলে উষি, সল্লয়ের কুলে কল্লয়, আমোকের কুলে এবর, হিল্কিয়ের কুলে হশবিয়, যিদয়িয়ের কুলে নথনেল। ইলিয়াশীবের, ষোয়াদার, যোহাননের, ও যদ্দূয়ের সময়ে লেবীয়দের পিতৃকুলপতিগণের, এবং পারসীক দারিয়াবসের রাজত্বকালে যাজকগণের নাম বংশাবলিতে লিখিত হইল। লেবীর বংশজাত পিতৃকুলপতিদের নাম বংশাবলি-পুস্তকে ইলিয়াশীবের পুত্র যোহাননের সময় পর্য্যন্ত লিখিত হইল। লেবীয়দের প্রধান লোক হশবিয়, শেরেবিয়, ও কদ্‌মীয়েলের পুত্র যেশূয়, এবং তাহাদের সম্মুখস্থ ভ্রাতৃগণ ঈশ্বরের লোক দায়ূদের আজ্ঞানুসারে দলে দলে প্রশংসা ও স্তবগান করিতে নিযুক্ত হইল। মত্তনিয় ও বক্‌বুকিয়, ওবদিয়, মশুল্লম, টল্‌মোন, ও অক্কুব দ্বারপাল হইয়া দ্বারসমূহের নিকটবর্ত্তী ভাণ্ডার সকলের প্রহরি কর্ম্ম করিত। ইহারা যোষাদকের সন্তান যেশূয়ের পুত্র যোয়াকীমের সময়ে এবং দেশাধ্যক্ষ নহিমিয়ের ও অধ্যাপক ইষ্রা যাজকের সময়ে ছিল। আর যিরূশালেমের প্রাচীর প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে লোকেরা লেবীয়দের সকল স্থানে [গিয়া] যিরূশালেমে আনিবার জন্য তাহাদের অন্বেষণ করিল, যেন করতাল, নেবল ও বীণাবাদ্য পুরঃসর স্তব ও গান করিয়া আনন্দ সহকারে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর গায়কদের সন্তানগণ যিরূশালেমের চারিদিকের অঞ্চল হইতে ও নটোফাতীয়দের সকল গ্রাম হইতে, এবং বৈৎ-গিল্‌গল হইতে এবং গেবার ও অস্মাবতের ক্ষেত্র হইতে একত্র হইল, কেননা গায়কেরা যিরূশালেমের চারিদিকে আপনাদের জন্য গ্রাম পত্তন করিয়াছিল। আর যাজকেরা ও লেবীয়েরা আপনারা শুচি হইল, এবং তাহারা লোকদিগকে ও দ্বার সকল ও প্রাচীর শুচি করিল। পরে আমি যিহূদার অধ্যক্ষদিগকে প্রাচীরের উপরে আনিলাম, এবং স্তবগানকারী দুই মহা সংকীর্ত্তন-দল নিরূপণ করিলাম; [তাহার এক দল] প্রাচীরের উপর দিয়া দক্ষিণ পার্শ্বে সারদ্বারের দিকে গেল; তাহাদের পশ্চাতে হোশয়িয় ও যিহূদার অধ্যক্ষবর্গের অর্দ্ধেক, এবং অসরিয়, ইষ্রা, ও মশুল্লম, যিহূদা ও বিন্যামীন এবং শময়িয় ও যিরমিয় গেল। আর তূরীর সহিত যাজক-সন্তানদের মধ্যে কতকগুলি লোক, অর্থাৎ আসফের বংশজাত সক্কুরের সন্তান, মীখায়ের সন্তান, মত্তনিয়ের সন্তান, শময়িয়ের পুত্র যে যোনাথন, তাহার পুত্র সখরিয়, ও ইহার ভ্রাতৃগণ শময়িয় ও অসরেল, মিললয়, গিললয়, মায়য়, নথনেল, যিহূদা ও হনানি, ইহারা ঈশ্বরের লোক দায়ূদের নিরূপিত নানা বাদ্যযন্ত্র হস্তে লইয়া চলিল, এবং অধ্যাপক ইষ্রা তাহাদের অগ্রে অগ্রে চলিলেন। তাহারা উনুইদ্বারের নিকট হইয়া সম্মুখস্থ দায়ূদ-নগরের সোপানে প্রাচীরের ঊর্দ্ধ-গমন স্থান দিয়া উঠিয়া দায়ূদের গৃহের উপর দিয়া জন-দ্বার পর্য্যন্ত পূর্ব্বদিকে গমন করিল। আর স্তবগানকারী দ্বিতীয় দল প্রাচীরের উপর দিয়া তাহাদের সঙ্গে মিলিতে গেল; এবং আমি ও লোকদের অর্দ্ধেক তাহাদের পশ্চাতে গমন করিলাম। তাহারা তুন্দুরের দুর্গ অবধি প্রশস্ত প্রাচীর পর্য্যন্ত এবং ইফ্রয়িমের দ্বার, পুরাতন দ্বার, মৎস্য-দ্বার, হননেলের দুর্গ ও হম্মেয়ার দুর্গ দিয়া মেষ-দ্বার পর্য্যন্ত গেল, এবং রক্ষীদের দ্বারে দাঁড়াইল। এইরূপে ঈশ্বরের গৃহে স্তবগানকারীদের ঐ দুই দল, এবং আমি ও আমার সহিত অধ্যক্ষদের অর্দ্ধেক লোক; আর ইলীয়াকীম, মাসেয়, মিনিয়ামীন, মীখায়, ইলিয়ৈনয়, সখরিয়, হনানিয়, এই যাজকেরা তূরীসহ, এবং মাসেয়, শময়িয়, ইলিয়াসর, উষি, যিহোহানন, মল্কিয়, এলম ও এষর, আমরা সকলে দাঁড়াইয়া রহিলাম; তখন গায়কেরা উচ্চৈঃস্বরে গান করিল, ও যিষ্রহিয় তাহাদের তত্ত্বাবধায়ক ছিল। সেই দিবস লোকেরা অনেক বলিদান করিয়া আনন্দ করিল, কেননা ঈশ্বর তাহাদিগকে মহানন্দে আনন্দিত করিলেন, এবং স্ত্রী ও বালক বালিকাগণও আনন্দ করিল; তাহাতে অনেক দূর পর্য্যন্ত যিরূশালেমের আনন্দধ্বনি শুনা গেল। আর সেই দিন কেহ কেহ উত্তোলনীয় উপহারের, অগ্রিমাংশের ও দশমাংশের জন্য ভাণ্ডারার্থক কুঠরীতে কুঠরীতে, ব্যবস্থানুসারে যাজকদের ও লেবীয়দের জন্য সমস্ত নগরের ক্ষেত্র হইতে প্রাপ্য অংশ সকল তন্মধ্যে সংগ্রহ করণার্থে নিযুক্ত হইল; কেননা কার্য্যকারী যাজকদের ও লেবীয়দের জন্য যিহূদার আনন্দ জন্মিয়াছিল। আর তাহারা আপনাদের ঈশ্বরের রক্ষণীয় ও শুচিতার রক্ষণীয় রক্ষা করিল, এবং গায়কেরা ও দ্বারপালেরা দায়ূদের ও তাঁহার পুত্র শলোমনের আজ্ঞানুসারে [কর্ম্ম করিল]। কেননা পূর্ব্বকালে দায়ূদের ও আসফের সময়ে গায়কদের প্রধানবর্গ এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসার গান ও স্তবের গান নিরূপিত ছিল। আর সরুব্বাবিলের সময়ে ও নহিমিয়ের সময়ে সমস্ত ইস্রায়েল গায়কদের ও দ্বারপালদের দৈনিক অংশ দিত, আর লোকেরা লেবীয়দের জন্য দ্রব্য পবিত্র করিত, আবার লেবীয়েরা হারোণ-সন্তানদের জন্য দ্রব্য পবিত্র করিত। সেই দিন লোকদের কর্ণগোচরে মোশির পুস্তক পাঠ করা হইল; তন্মধ্যে লিখিত এই আজ্ঞা পাওয়া গেল, অম্মোনীয় কিম্বা মোয়াবীয় লোক কখনও ঈশ্বরের সমাজে প্রবেশ করিতে পাইবে না; কেননা তাহারা অন্ন জল লইয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণের সহিত সাক্ষাৎ করে নাই, বরং তাহাদিগকে শাপ দিতে তাহাদের প্রতিকূলে বিলিয়মকে ঘুষ দিয়াছিল; কিন্তু আমাদের ঈশ্বর সেই শাপ আশীর্ব্বাদে পরিণত করিলেন। তখন তাহারা এই ব্যবস্থা শুনিয়া সমগ্র মিশ্রিত জনতাকে ইস্রায়েল হইতে পৃথক্‌ করিল। ইহার পূর্ব্বে, আমাদের ঈশ্বরের গৃহের কুঠরী সকলের অধ্যক্ষ ইলিয়াশীব যাজক টোবিয়ের কুটুম্ব হওয়াতে তাহার জন্য এক বৃহৎ কুঠরী প্রস্তুত করিয়াছিল; পূর্ব্বে লোকেরা সেই স্থানে নিবেদিত ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, কুন্দুরু ও পাত্র সকল এবং লেবীয়দের, গায়কদের ও দ্বারপালদের নিমিত্ত আজ্ঞাপিত শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈলের দশমাংশ এবং যাজকদের প্রাপ্য উত্তোলনীয় উপহার সকল রাখিত। কিন্তু এই সকল ঘটনার সময়ে আমি যিরূশালেমে ছিলাম না, কেননা বাবিল-রাজ অর্তক্ষস্তের দ্বাত্রিংশ বৎসরে আমি রাজার কাছে গিয়া কিছু দিনের পর রাজার নিকট হইতে বিদায় লইলাম। পরে আমি যিরূশালেমে আসিলাম, আর ইলিয়াশীব টোবিয়ের জন্য ঈশ্বরের গৃহের প্রাঙ্গণে কুঠরী প্রস্তুত করিয়া যে অপকর্ম্ম করিয়াছে, তাহা অবগত হইলাম। ইহাতে আমার অতিশয় অসন্তোষ জন্মিল; তাই ঐ কুঠরী হইতে টোবিয়ের সমস্ত গৃহ সামগ্রী বাহির করিয়া ফেলিলাম। আর আমি আজ্ঞা দিয়া কুঠরী সকল শুচি করাইলাম, এবং সেই স্থানে ঈশ্বরের গৃহের পাত্র সকল, ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ও কুন্দুরু পুনর্ব্বার আনাইলাম। আর আমি জানিতে পাইলাম, লেবীয়দের অংশ তাহাদিগকে দেওয়া হয় নাই, তজ্জন্য কর্ম্মকারী লেবীয়েরা ও গায়কেরা পলাইয়া প্রত্যেকে আপন আপন ভূমিতে গিয়াছে। তাহাতে আমি অধ্যক্ষদিগকে অনুযোগ করিয়া কহিলাম, ঈশ্বরের গৃহ কেন পরিত্যক্ত হইল? পরে উহাদিগকে সংগ্রহ করিয়া স্ব স্ব পদে স্থাপন করিলাম। আর সমস্ত যিহূদা শস্যের, দ্রাক্ষারসের ও তৈলের দশমাংশ ভাণ্ডারে আনিতে লাগিল। আর আমি শেলিমিয় যাজককে ও সাদোক অধ্যাপককে এবং লেবীয়দের মধ্যে পদায়কে ও তাহাদের অধীনে মত্তনিয়ের পৌত্র সক্কুরের পুত্র হাননকে ভাণ্ডারসমূহের অধ্যক্ষ করিলাম, কেননা তাহারা বিশ্বস্ত গণিত ছিল, আর তাহাদের ভ্রাতৃগণকে অংশ বিতরণ করা তাহাদের কার্য্য হইল। হে আমার ঈশ্বর, এ বিষয়ে আমাকে স্মরণ কর; আমি আপন ঈশ্বরের গৃহের জন্য ও তৎসংক্রান্ত ক্রিয়াপদ্ধতির জন্য যে সকল সাধু কার্য্য করিয়াছি, তাহা লুপ্ত করিও না। ঐ সময়ে আমি যিহূদার মধ্যে কতকগুলি লোককে বিশ্রামবারে দ্রাক্ষাযন্ত্র মাড়িতে, আটি আনিতে ও গর্দ্দভের উপরে চাপাইতে এবং বিশ্রামবারে দ্রাক্ষারস, দ্রাক্ষাফল ও ডুমুরাদি সকল দ্রব্যের বোঝা যিরূশালেমে আনিতে দেখিলাম; তাহাতে যে দিন তাহারা ভক্ষ্য দ্রব্য বিক্রয় করিতেছিল, সেই দিন আমি তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম। আর সোরের কতকগুলি লোক নগরে বাস করিত, তাহারা মৎস্য ও সর্ব্বপ্রকার বিক্রেয় দ্রব্য আনিয়া বিশ্রামবারে যিহূদা-সন্তানদের কাছে ও যিরূশালেমে বিক্রয় করিত। তখন আমি যিহূদার প্রধান লোকদিগকে অনুযোগ করিয়া কহিলাম, তোমরা বিশ্রামবার অপবিত্র কর, এ কি কুকার্য্য করিতেছ? তোমাদের পিতৃপুরুষেরা কি সেইরূপ করিত না? আর তন্নিমিত্ত আমাদের ঈশ্বর কি আমাদের উপরে ও এই নগরের উপরে এই সকল অমঙ্গল ঘটান নাই? আবার তোমরাও বিশ্রামবার অপবিত্র করিয়া ইস্রায়েলের উপরে আরও ক্রোধ বর্ত্তাইতেছ। পরে বিশ্রামবারের পূর্ব্বে যিরূশালেমের দ্বার সকল ছায়াগ্রস্ত হইলে আমি কবাট বদ্ধ করিতে আজ্ঞা করিলাম; আরও কহিলাম, বিশ্রামবার অতীত না হইলে এই দ্বার মুক্ত করিও না; আর বিশ্রামবারে যেন কোন বোঝা ভিতরে আনীত না হয়, এই জন্য আমি আপনার কয়েক জন যুবককে দ্বারে নিযুক্ত করিলাম। তাহাতে বণিকেরা ও সর্ব্বপ্রকার দ্রব্যের বিক্রেতারা দুই এক বার যিরূশালেমের বাহিরে রাত্রি যাপন করিল। তখন আমি তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়া তাহাদিগকে কহিলাম, তোমরা কেন প্রাচীরের সম্মুখে রাত্রি যাপন কর? যদি আবার এমন কর, তবে আমি তোমাদের উপরে হাত বাড়াইব। তদবধি তাহারা বিশ্রামবারে আর আসিল না। পরে বিশ্রামবার পবিত্র করিবার জন্য আমি লেবীয়দিগকে শুচি হইতে ও দ্বার সকল রক্ষা করণার্থে আসিতে আজ্ঞা করিলাম। হে আমার ঈশ্বর, এই বিষয়েও আমাকে স্মরণ কর, এবং আপনার দয়ার মহত্ত্বানুসারে আমার প্রতি করুণা কর। আবার সেই সময়ে আমি দেখিলাম, যিহূদিগণের কেহ কেহ অস্‌দোদীয়া, অম্মোনীয়া ও মোয়াবীয়া স্ত্রী গ্রহণ করিয়াছে; এবং তাহাদের সন্তানেরা অর্দ্ধ অস্‌দোদীয় ভাষায় কথা কহিতেছে, যিহূদীদের ভাষায় কথা কহিতে জানে না, কিন্তু স্ব স্ব জাতির ভাষানুসারে কথা কহে। তাহাতে আমি তাহাদের সঙ্গে বিবাদ করিলাম, তাহাদিগকে তিরস্কার করিলাম, এবং তাহাদের কোন কোন ব্যক্তিকে প্রহার ও তাহাদের কেশ উৎপাটন করিলাম, এবং ঈশ্বরের নামে তাহাদিগকে [এই বলিয়া] দিব্য করাইলাম, তোমরা উহাদের পুত্রদের সহিত আপন আপন কন্যাদের বিবাহ দিবে না, ও আপন আপন পুত্রদের জন্য কিম্বা আপনাদের জন্য উহাদের কন্যাদিগকে গ্রহণ করিবে না। ইস্রায়েল-রাজ শলোমন এই সকল কার্য্য করিয়া কি অপরাধী হন নাই? কিন্তু অনেক জাতির মধ্যে তাহার তুল্য কোন রাজা ছিল না; আর তিনি আপন ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র ছিলেন, এবং ঈশ্বর তাঁহাকে সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজা করিয়াছিলেন; তথাপি বিজাতীয় স্ত্রীরা তাঁহাকেও পাপ করাইয়াছিল। অতএব আমরা কি তোমাদের এই কথায় কর্ণপাত করিব যে, তোমরা বিজাতীয় কন্যাদিগকে বিবাহ করিয়া আমাদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিবার নিমিত্তে এই সমস্ত মহাপাপ করিবে? ইলিয়াশীব মহাযাজকের পুত্র যিহোয়াদার এক পুত্র হোরোণীয় সন্‌বল্লটের জামাতা ছিল, এই জন্য আমি আপনার নিকট হইতে তাহাকে তাড়াইয়া দিলাম। হে আমার ঈশ্বর, তাহাদিগকে স্মরণ কর, কেননা তাহারা যাজকের পদ এবং যাজকের পদের ও লেবীয়দের নিয়ম কলঙ্কিত করিয়াছে। এইরূপে আমি বিজাতীয় সকলের হইতে তাহাদিগকে পরিষ্কার করিলাম, এবং প্রত্যেকের কার্য্যানুসারে যাজকদের ও লেবীয়দের রক্ষণীয় স্থির করিলাম; আর নিরূপিত সময়ে কাষ্ঠদান জন্য, ও অগ্রিমাংশ সকলের জন্য [লোক নিযুক্ত করিলাম]। হে আমার ঈশ্বর, মঙ্গলার্থে আমাকে স্মরণ কর। অহশ্বেরশের সময়ে এই ঘটনা হইল। ঐ অহশ্বেরশ হিন্দুস্থান হইতে কূশ দেশ পর্য্যন্ত এক শত সাতাশ প্রদেশের উপরে রাজত্ব করিতেন। তৎকালে অহশ্বেরশ রাজা শূশন রাজধানীতে রাজ-সিংহাসনে উপবিষ্ট হইয়া আপন রাজত্বের তৃতীয় বৎসরে আপনার সমস্ত অধ্যক্ষ ও দাসগণের জন্য এক ভোজ প্রস্তুত করিলেন; পারস্য ও মাদিয়া দেশের বিক্রমী লোকেরা, প্রধানেরা ও প্রদেশাধ্যক্ষেরা তাঁহার সাক্ষাতে উপস্থিত হইলেন। তিনি অনেক দিন অর্থাৎ এক শত আশী দিন পর্য্যন্ত আপন প্রতাপান্বিত রাজ্যের ঐশ্বর্য্য ও আপন উৎকৃষ্ট মহত্ত্বের গৌরব প্রদর্শন করিলেন। সেই সকল দিন সম্পূর্ণ হইলে পর রাজা শূশন রাজধানীতে উপস্থিত ক্ষুদ্র কি মহান্‌ সমস্ত লোকের জন্য রাজবাটীর উদ্যানের প্রাঙ্গণে সপ্তাহকালব্যাপী ভোজ প্রস্তুত করিলেন। তথায় কার্পাসনির্ম্মিত শুক্ল ও নীলবর্ণ চন্দ্রাতপ ছিল, তাহা মসীনা-সূত্রের বেগুনে রজ্জু দ্বারা রৌপ্যময় কড়াতে মর্ম্মরস্তম্ভে নিবদ্ধ ছিল, এবং লাল, সাদা, সবুজ ও কাল মর্ম্মর পাথরে শিল্পিত মেজিয়াতে স্বর্ণময় ও রৌপ্যময় আসনশ্রেণী স্থাপিত ছিল। আর রাজার দাতৃত্বানুসারে স্বর্ণপাত্রে পানীয় ও প্রচুর রাজকীয় দ্রাক্ষারস দত্ত হইল, সেই সকল পাত্র নানাবিধ ছিল। তাহাতে যথাবিধানে পান করা হইল, কেহ বল করিল না; কেননা যাহার যেমন ইচ্ছা, তদনুসারে তাহাকে করিতে দেও, এই আজ্ঞা রাজা আপনার গৃহের সমস্ত অধ্যক্ষকে দিয়াছিলেন। আর বষ্টী রাণীও অহশ্বেরশের রাজবাটীতে মহিলাগণের জন্য ভোজ প্রস্তুত করিলেন। সপ্তম দিন যখন রাজা দ্রাক্ষারসে প্রফুল্লচিত্ত ছিলেন, তখন তিনি মহূমন, বিস্থা, হর্বোণা, বিগ্‌থা, অবগথ, সেথর কর্ক্কস, অহশ্বেরশ রাজার সম্মুখে পরিচর্য্যাকারী এই সপ্ত নপুংসককে আজ্ঞা করিলেন, যেন তাহারা প্রজাদিগকে ও অধ্যক্ষদিগকে বষ্টী রাণীর সৌন্দর্য্য দেখাইবার জন্য তাঁহাকে রাজমুকুট পরাইয়া রাজার সাক্ষাতে আনয়ন করে; কেননা তিনি দেখিতে সুন্দরী ছিলেন। কিন্তু বষ্টী রাণী নপুংসকদের দ্বারা প্রেরিত রাজার আজ্ঞামতে আসিতে সম্মতা হইলেন না; তাহাতে রাজা অতিশয় ক্রুদ্ধ হইলেন, তাঁহার অন্তরে ক্রোধাগ্নি প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। পরে রাজা কালজ্ঞ বিদ্বান্‌বর্গকে এই বিষয় কহিলেন; কেননা ব্যবস্থা ও রাজনীতিজ্ঞ পুরুষ সকলের কাছে রাজার এইরূপ বলিবার প্রথা ছিল। আর কর্শনা, শেথর, অদ্‌মাথা তর্শীশ, মেরস, মর্সনা ও মমূখন, ইহাঁরা তাঁহার নিকটে ছিলেন; এই সাত জন পারস্য ও মাদিয়া দেশের অধ্যক্ষ রাজার মুখদর্শন করিতেন, এবং রাজ্যের শ্রেষ্ঠ স্থানে উপবিষ্ট ছিলেন। [রাজা কহিলেন,] বষ্টী রাণী নপুংসকদের দ্বারা প্রেরিত অহশ্বেরশ রাজার আজ্ঞা মানে নাই, অতএব ব্যবস্থানুসারে তাহার প্রতি কি কর্ত্তব্য? তখন মমূখন রাজার ও অধ্যক্ষদের সাক্ষাতে উত্তর করিলেন, বষ্টী রাণী যে কেবল মহারাজের কাছে অপরাধ করিয়াছেন, তাহা নয়, কিন্তু অহশ্বেরশ রাজার অধীন সমস্ত প্রদেশের সমস্ত অধ্যক্ষের ও সমস্ত লোকের কাছে অপরাধ করিয়াছেন। কেননা রাণীর এই কর্ম্মের কথা সমস্ত স্ত্রীলোকের মধ্যে রটিয়া যাইবে; সুতরাং অহশ্বেরশ রাজা বষ্টী রাণীকে আপনার সম্মুখে আনিতে আজ্ঞা করিলেও তিনি আসিলেন না, এই কথা শুনিলে তাহারা সচক্ষে আপন আপন স্বামীকে অবজ্ঞা করিবে। আর পারস্যের ও মাদিয়ার যে কুলীনা মহিলারা রাণীর এই কার্য্যের সমাচার শুনিলেন, তাঁহারা অদ্যই রাজার সকল অধ্যক্ষকে ঐরূপ বলিবেন, তাহাতে অতিশয় অবমাননা ও ক্রোধ জন্মিবে। যদি মহারাজের অভিমত হয়, তবে বষ্টী অহশ্বেরশ রাজার সম্মুখে আর আসিতে পাইবেন না, এই রাজাজ্ঞা আপনার শ্রীমুখ হইতে প্রকাশিত হউক; এবং ইহার অন্যথা যেন না হয়, এই জন্য ইহা পারসীকদের ও মাদীয়দের ব্যবস্থার মধ্যে লিখিত হউক; পরে মহারাজ তাঁহার রাজ্ঞীপদ লইয়া তাঁহা হইতে উৎকৃষ্টা আর এক রাণীকে দিউন। মহারাজ যে আজ্ঞা দিবেন, তাহা যখন তাঁহার বৃহৎ রাজ্যের সর্ব্বত্র প্রচারিত হইবে, তখন সমস্ত স্ত্রীলোক ক্ষুদ্র কি মহান্‌ আপন আপন স্বামীকে মর্য্যাদা করিবে। এই কথা রাজার ও অধ্যক্ষদের তুষ্টিকর হইলে রাজা মমূখনের কথানুযায়ী কর্ম্ম করিলেন। তিনি এক এক প্রদেশের অক্ষরানুসারে ও এক এক জাতির ভাষানুসারে রাজার অধীন সমস্ত প্রদেশে এইরূপ পত্র পাঠাইলেন, “ প্রত্যেক পুরুষ আপন আপন গৃহে কর্ত্তৃত্ব করুক, ও স্বজাতীয় ভাষায় ইহা প্রচার করুক।” এই সকল ঘটনার পরে অহশ্বেরশ রাজার ক্রোধ শান্ত হইলে তিনি বষ্টীকে, তাঁহার কার্য্য ও তাঁহার প্রতিকূলে যে আজ্ঞা প্রদত্ত হইয়াছিল, তাহা স্মরণ করিলেন। তখন রাজার পরিচর্য্যাকারী ভৃত্যেরা তাঁহাকে কহিল, মহারাজের জন্য সুন্দরী যুবতী কুমারীদের অন্বেষণ করা যাউক। মহারাজ আপন রাজ্যের সমস্ত প্রদেশে কর্ম্মচারীদিগকে নিযুক্ত করুন; তাহারা সেই সকল সুন্দরী যুবতী কুমারীদিগকে শূশন রাজধানীতে একত্র করিয়া অন্তঃপুরে স্ত্রীলোকদের রক্ষক রাজনপুংসক যে হেগয়, তাঁহার হস্তে সমর্পণ করুক, এবং তাহাদের অঙ্গসংস্কারার্থক দ্রব্য দত্ত হউক। পরে মহারাজের দৃষ্টিতে যে কন্যা উৎকৃষ্ট হইবেন, তিনি বষ্টীর পদে রাণী হউন। তখন এই কথা রাজার তুষ্টিকর হওয়াতে তিনি তদনুসারে করিলেন। তৎকালে যায়ীরের পুত্র মর্দখয় নামে এক জন যিহূদী শূশন রাজধানীতে ছিলেন। সেই যায়ীরের পিতা শিমিয়ি, শিমিয়ির পিতা বিন্যামীনীয় কীশ। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর কর্ত্তৃক বন্দিরূপে নীত যিহূদা-রাজ যিকনিয়ের সঙ্গে যে সকল লোক বন্দি হইয়াছিল, [কীশ] তাহাদের সহিত যিরূশালেম হইতে বন্দিরূপে নীত হইয়াছিলেন। মর্দখয় আপন পিতৃব্যের কন্যা হদসাকে অর্থাৎ ইষ্টেরকে প্রতিপালন করিতেন; কারণ তাঁহার পিতা কি মাতা ছিল না। সেই কন্যা সুন্দরী ও রূপবতী ছিলেন; তাঁহার পিতামাতা মরিলে পর মর্দখয় তাঁহাকে পোষ্যপুত্রী করিয়াছিলেন। পরে রাজার ঐ বাক্য ও আজ্ঞা প্রচারিত হইলে যখন শূশন রাজধানীতে হেগয়ের নিকটে অনেক কন্যা সংগৃহীতা হইল, তখন ইষ্টেরও রাজবাটীতে স্ত্রী রক্ষক হেগয়ের নিকটে নীতা হইলেন। আর সেই যুবতী হেগয়ের দৃষ্টিতে উৎকৃষ্ট হইলেন, ও তাঁহার কাছে দয়া পাইলেন, এবং তিনি সত্বর অঙ্গসংস্কারার্থক দ্রব্যগুলি, এবং আরও যে যে দ্রব্যের অংশ তাঁহাকে দিতে হয়, তাহা এবং রাজবাটী হইতে মনোনীত সাতটী দাসী তাঁহাকে দিলেন, এবং সেই দাসীদের সহিত তাঁহাকে অন্তঃপুরের উৎকৃষ্ট স্থানে লইয়া রাখিলেন। ইষ্টের আপন জাতির কি গোত্রের পরিচয় দিলেন না; কারণ মর্দখয় তাহা জানাইতে তাঁহাকে বারণ করিয়াছিলেন। পরে ইষ্টের কেমন আছেন ও তাঁহার প্রতি কি করা হয়, তাহা জানিবার জন্য মর্দখয় প্রতিদিন অন্তঃপুরের প্রাঙ্গণের সম্মুখে বেড়াইতে লাগিলেন। আর দ্বাদশ মাস স্ত্রীলোকদের জন্য নিয়মিত সেবা পাইলে পর অহশ্বেরশ রাজার নিকটে এক এক কন্যার গমনের পালা উপস্থিত হইত; যেহেতু তাহাদের অঙ্গসংস্কারে এত দিন লাগিত, বস্তুতঃ ছয় মাস গন্ধরসের তৈল, ছয় মাস সুগন্ধি ও স্ত্রীলোকের অঙ্গসংস্কারার্থক দ্রব্য ব্যবহৃত হইত; আর রাজার নিকটে যাইতে হইলে প্রত্যেক যুবতীর জন্য এই নিয়ম ছিল; সে যে কোন দ্রব্য চাহিত, তাহা অন্তঃপুর হইতে রাজবাটীতে গমন সময়ে সঙ্গে লইয়া যাইবার নিমিত্তে তাহাকে দেওয়া যাইত। সে সন্ধ্যাকালে যাইত, ও প্রাতঃকালে উপপত্নীদের রক্ষক রাজনপুংসক শাশ্‌গসের নিকটে দ্বিতীয় অন্তঃপুরে ফিরিয়া আসিত; রাজা তাহার উপরে প্রসন্ন হইয়া তাহার নাম ধরিয়া না ডাকাইলে সে রাজার নিকটে আর যাইত না। পরে মর্দখয় আপন পিতৃব্য অবীহয়িলের যে কন্যাকে পোষ্যপুত্রী করিয়াছিলেন, যখন রাজার নিকটে সেই ইষ্টেরের যাইবার পালা হইল, তখন তিনি কিছুই ভিক্ষা করিলেন না, কেবল স্ত্রীলোকদের রক্ষক রাজনপুংসক হেগয় যাহা যাহা নিরূপণ করিলেন, তাহাই মাত্র [সঙ্গে লইলেন]; আর যে কেহ ইষ্টেরের প্রতি দৃষ্টি করিত, সে তাঁহাকে অনুগ্রহ করিত। রাজার রাজত্বের সপ্তম বৎসরের দশম মাসে অর্থাৎ টেবেৎ মাসে ইষ্টের অহশ্বেরশ রাজার নিকটে রাজবাটীতে নীতা হইলেন। আর রাজা অন্য সকল স্ত্রীলোক অপেক্ষা ইষ্টেরকে অধিক ভালবাসিলেন, এবং অন্য সকল কুমারী অপেক্ষা তিনিই রাজার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ ও দয়া প্রাপ্ত হইলেন; অতএব রাজা তাঁহারই মস্তকে রাজমুকুট দিয়া বষ্টীর পদে তাঁহাকে রাণী করিলেন। পরে রাজা আপনার সমস্ত অধ্যক্ষ ও দাসগণের জন্য ইষ্টেরের ভোজ বলিয়া মহাভোজ প্রস্তুত করিলেন, এবং সকল প্রদেশের কর মোচন ও আপন রাজকীয় দাতৃত্বানুসারে দান করিলেন। দ্বিতীয় বার কুমারী সংগ্রহের সময়ে মর্দখয় রাজদ্বারে বসিতেন। তখনও ইষ্টের মর্দখয়ের আজ্ঞানুসারে আপন গোত্রের কি জাতির পরিচয় দেন নাই; কারণ ইষ্টের মর্দখয়ের নিকটে প্রতিপালিত হইবার সময়ে যেমন করিতেন, তখনও তেমনি তাঁহার আজ্ঞা পালন করিতেন। সেই সময়ে অর্থাৎ যখন মর্দখয় রাজদ্বারে বসিতেন, তখন দ্বারপালদের মধ্যে বিগ্‌থন ও তেরশ নামে রাজবাটীর দুই জন নপুংসক ক্রুদ্ধ হইয়া অহশ্বেরশ রাজার উপরে হস্তক্ষেপ করিতে চেষ্টা করিল। কিন্তু সেই বিষয় মর্দখয় জ্ঞাত হওয়াতে তিনি ইষ্টের রাণীকে তাহা জানাইলেন; এবং ইষ্টের মর্দখয়ের নাম করিয়া রাজাকে তাহা বলিলেন। তাহাতে অনুসন্ধানে সেই কথা সপ্রমাণ হইলে ঐ দুই জনকে গাছে ফাঁশি দেওয়া হইল, এবং সেই কথা রাজার সাক্ষাতে ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত হইল। ঐ সকল ঘটনার পরে অহশ্বেরশ রাজা অগাগীয় হম্মদাথার পুত্র হামনকে উন্নত করিলেন, উচ্চপদান্বিত করিলেন, এবং তাহার সঙ্গী সমস্ত অধ্যক্ষ অপেক্ষা তাহাকে শ্রেষ্ঠ আসন প্রদান করিলেন। তাহাতে রাজার যে দাসেরা রাজদ্বারে থাকিত, তাহারা সকলে হামনের কাছে নত হইয়া প্রণিপাত করিতে লাগিল, কারণ রাজা তাহার সম্বন্ধে সেইরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন; কিন্তু মর্দখয় নতও হইতেন না, প্রণিপাতও করিতেন না। তাহাতে রাজার যে দাসগণ রাজদ্বারে থাকিত, তাহারা মর্দখয়কে কহিল, তুমি রাজার আজ্ঞা কেন লঙ্ঘন করিতেছ? এইরূপে তাহারা প্রতিদিন তাঁহাকে বলিত, তথাপি তিনি তাহাদের কথা শুনিতেন না। তাহাতে মর্দখয়ের কথা স্থির থাকে কি না, তাহা জানিবার ইচ্ছাতে তাহারা হামনকে তাহা জ্ঞাত করিল; কেননা মর্দখয় যে যিহূদী, ইহা তিনি তাহাদিগকে বলিয়াছিলেন। আর হামন যখন দেখিল যে, মর্দখয় তাহার কাছে নত হইয়া প্রণিপাত করে না, তখন সে ক্রোধে পরিপূর্ণ হইল। কিন্তু সে কেবল মর্দখয়ের উপরে হস্তক্ষেপ করা লঘু বিষয় মনে করিল, বরং মর্দখয়ের জাতি অবগত হওয়াতে সে অহশ্বেরশ রাজার সমস্ত রাজ্যে সমস্ত যিহূদীকে মর্দখয়ের জাতি বলিয়া বিনষ্ট করিতে চেষ্টা করিল। আর সেই বিষয়ে অহশ্বেরশ রাজার দ্বাদশ বৎসরের প্রথম মাসে অর্থাৎ নীষণ মাসে হামনের সাক্ষাতে ক্রমাগত প্রত্যেক দিনে ও প্রত্যেক মাসে অদর নামক দ্বাদশ মাস পর্য্যন্ত পূর অর্থাৎ গুলিবাঁট করা হইল। পরে হানন অহশ্বেরশ রাজাকে কহিল, আপনার রাজ্যের সমস্ত প্রদেশস্থ জাতিগণের মধ্যে বিকীর্ণ অথচ পৃথক্‌কৃত এক জাতি আছে; অন্য সকল জাতির ব্যবস্থা হইতে তাহাদের ব্যবস্থা ভিন্ন, এবং তাহারা মহারাজের ব্যবস্থা পালন করে না; অতএব তাহাদিগকে থাকিতে দেওয়া মহারাজের অনুপযুক্ত। যদি মহারাজের অভিমত হয়, তবে তাহাদিগকে বিনষ্ট করিতে লেখা যাউক; তাহাতে আমি রাজ-ভাণ্ডারে রাখিবার জন্য কার্য্যকারী লোকদের হস্তে দশ সহস্র তালন্ত রৌপ্য দিব। তখন রাজা আপন হস্ত হইতে অঙ্গুরীয় খুলিয়া যিহূদীদের শত্রু অগাগীয় হম্মদাথার পুত্র হামনকে দিলেন। আর রাজা হামনকে কহিলেন, সেই রৌপ্য ও সেই জাতি তোমাকে দত্ত হইল, তুমি তাহাদের প্রতি যাহা ভাল বুঝ, তাহাই কর। পরে প্রথম মাসের ত্রয়োদশ দিনে রাজ-লেখকেরা আহূত হইল; সেই দিন হামনের সমস্ত আজ্ঞানুসারে রাজার নিযুক্ত ক্ষিতিপাল সকলের ও প্রত্যেক প্রদেশের অধ্যক্ষগণের, এবং প্রত্যেক জাতির প্রধানবর্গের কাছে, প্রত্যেক প্রদেশের অক্ষর ও প্রত্যেক জাতির ভাষানুসারে পত্র লিখিত হইল, তাহা অহশ্বেরশ রাজার নামে লিখিত ও রাজার অঙ্গুরীয়ে মুদ্রাঙ্কিত হইল। আর এই মর্ম্মের পত্র ধাবকগণ দ্বারা রাজার অধীন সমস্ত প্রদেশে প্রেরিত হইল যে, এক দিনে অর্থাৎ অদর নামক দ্বাদশ মাসের ত্রয়োদশ দিনে যুবা ও বৃদ্ধ, শিশু ও স্ত্রী শুদ্ধ সমস্ত যিহূদী লোককে সংহার, বধ ও বিনাশ, এবং তাহাদের দ্রব্য লুট করিতে হইবে। সেই আজ্ঞা যেন প্রত্যেক প্রদেশে প্রদত্ত হয়, এই জন্য সেই লিপির এক অনুলিপি সকল জাতির নিকটে প্রচারিত হইল, যাহাতে সেই দিনের জন্য সকলে প্রস্তুত হয়। ধাবকগণ রাজাজ্ঞা পাইয়া সত্বর বাহিরে গেল; এবং সেই আজ্ঞা শূশন রাজধানীতে প্রচারিত হইল; পরে রাজা ও হামন পান করিতে বসিলেন, কিন্তু শূশন নগরের সকল লোক উদ্বিগ্ন হইল। পরে মর্দখয় এই সকল ব্যপার জ্ঞাত হইয়া আপন বস্ত্র ছিঁড়িলেন, এবং চট পরিধান ও ভস্ম লেপন করিয়া নগরের মধ্যে গিয়া উচ্চৈঃস্বরে তীব্র ক্রন্দন করিলেন। পরে তিনি রাজদ্বারের সম্মুখ পর্য্যন্ত আসিলেন, কিন্তু চট পরিয়া রাজদ্বারে প্রবেশ করিবার উপায় ছিল না। আর প্রত্যেক প্রদেশের যে কোন স্থানে রাজার বাক্য ও আজ্ঞা উপস্থিত হইল, সেই স্থানে যিহূদিগণের মধ্যে মহাশোক, উপবাস, রোদন ও বিলাপ হইল, এবং অনেকে চটে ও ভস্মে শয্যা পাতিল। পরে ইষ্টেরের দাসীগণ ও নপুংসকেরা আসিয়া ঐ কথা তাঁহাকে জ্ঞাত করিল; তাহাতে রাণী অতিশয় মনস্তাপিতা হইয়া মর্দখয়কে চট পরিত্যাগ ও বস্ত্র পরিধান করাইবার জন্য বস্ত্র প্রেরণ করিলেন, কিন্তু তিনি তাহা গ্রহণ করিলেন না। তখন ইষ্টের আপনার পরিচর্য্যায় নিযুক্ত রাজ-নপুংসক হথককে ডাকিয়া, কি হইয়াছে ও কেন হইয়াছে, তাহা জানিবার জন্য মর্দখয়ের কাছে যাইতে আজ্ঞা করিলেন। পরে হথক রাজদ্বারের সম্মুখস্থ নগরের চকে মর্দখয়ের নিকটে গেলেন। তাহাতে মর্দখয় আপনার প্রতি যাহা যাহা ঘটিয়াছে, এবং যিহূদীদিগকে বিনষ্ট করিবার জন্য হামন যে পরিমাণের রৌপ্য রাজ-ভাণ্ডারে দিতে প্রতিজ্ঞা করিয়াছে, তাহা তাঁহাকে জানাইলেন। আর তাহাদের বিনাশার্থে যে আজ্ঞাপত্র শূশনে দত্ত হইয়াছে, তাহার একখানি অনুলিপি তাঁহাকে দিয়া ইষ্টেরকে তাহা দেখাইতে ও আজ্ঞা করিতে বলিলেন, এবং তিনি যেন রাজার নিকটে প্রবেশ করিয়া তাঁহার কাছে বিনতি ও স্বজাতির জন্য অনুরোধ করেন, এমন আদেশ করিতে বলিলেন। পরে হথক আসিয়া মর্দখয়ের কথা ইষ্টেরকে জ্ঞাত করিলেন। তখন ইষ্টের হথককে এই কথা বলিয়া মর্দখয়ের কাছে যাইতে আজ্ঞা করিলেন, রাজার দাসগণ ও রাজার অধীন প্রদেশ-সমূহের প্রজারা সকলেই জানে, পুরুষ কি স্ত্রী, যে কেহ আহূত না হইয়া ভিতরের প্রাঙ্গণে রাজার নিকটে যায়, তাহার জন্য একমাত্র ব্যবস্থা এই যে, তাহার প্রাণদণ্ড হইবে; কেবল যে ব্যক্তির প্রতি রাজা স্বর্ণময় রাজদণ্ড বিস্তার করেন, সেইমাত্র বাঁচে; আর, ত্রিশ দিন অবধি আমি রাজার নিকটে যাইবার জন্য আহূতা হই নাই। ইষ্টেরের এই কথা মর্দখয়কে জ্ঞাত করা হইল। তখন মর্দখয় ইষ্টেরকে এই উত্তর দিতে কহিলেন, সমস্ত যিহূদীর মধ্যে কেবল তুমি রাজবাটীতে থাকাতে রক্ষা পাইবে, তাহা মনে করিও না। ফলে যদি তুমি এ সময়ে সর্ব্বতোভাবে নীরব হইয়া থাক, তবে অন্য কোন স্থান হইতে যিহূদীদের উপকার ও নিস্তার ঘটিবে, কিন্তু তুমি আপন পিতৃকুলের সহিত বিনষ্ট হইবে; আর কে জানে যে, তুমি এই প্রকার সময়ের জন্যই রাজ্ঞীপদ পাও নাই? তখন ইষ্টের মর্দখয়কে এই উত্তর দিতে আজ্ঞা করিলেন, তুমি যাও, শূশনে উপস্থিত সমস্ত যিহূদীকে একত্র কর, এবং সকলে আমার নিমিত্ত উপবাস কর, তিন দিবস, দিনে কি রাত্রিতে কিছু আহার করিও না, কিছু পানও করিও না, আর আমিও আমার দাসীরাও তদ্রূপ উপবাস করিব; এইরূপে আমি রাজার নিকটে যাইব, তাহা ব্যবস্থাবিরুদ্ধ হইলেও যাইব, আর যদি বিনষ্ট হইতে হয়, হইব। পরে মর্দখয় গিয়া ইষ্টেরের আজ্ঞানুসারে কার্য্য করিলেন। আর তৃতীয় দিনে ইষ্টের রাজকীয় পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া রাজার গৃহের ভিতরে প্রাঙ্গণে রাজার গৃহের সম্মুখে দাঁড়াইলেন; তৎকালে রাজা রাজবাটীতে গৃহদ্বারের সম্মুখে রাজসিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন। আর রাজা যখন দেখিলেন যে ইষ্টের রাণী প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়া আছেন, তখন রাজার দৃষ্টিতে ইষ্টের অনুগ্রহ পাইলেন, রাজা ইষ্টেরের প্রতি আপন হস্তস্থিত স্বর্ণময় রাজদণ্ড বিস্তার করিলেন; তাহাতে ইষ্টের নিকটে আসিয়া রাজদণ্ডের অগ্রভাগ স্পর্শ করিলেন। পরে রাজা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইষ্টের রাণি, তুমি কি চাও? তোমার অনুরোধ কি? রাজ্যের অর্দ্ধেক পর্য্যন্ত হইলেও তাহা তোমাকে দেওয়া যাইবে। ইষ্টের উত্তর করিলেন, যদি মহারাজের ভাল বোধ হয়, তবে আমি আপনার জন্য যে ভোজ প্রস্তুত করিয়াছি, মহারাজ ও হামন সেই ভোজে অদ্য আগমন করুন। তখন রাজা কহিলেন, ইষ্টেরের কথামতে যেন কার্য্য হয়, সেই জন্য হামনকে ত্বরা করিতে বল। পরে রাজা ও হামন ইষ্টেরের প্রস্তুত ভোজে গেলেন। পরে দ্রাক্ষারস সহযুক্ত ভোজের সময়ে রাজা ইষ্টেরকে কহিলেন, তোমার নিবেদন কি? তাহা তোমাকে দেওয়া যাইবে; তোমার অনুরোধ কি? রাজ্যের অর্দ্ধেক পর্য্যন্ত হইলেও তাহা সিদ্ধ হইবে। তাহাতে ইষ্টের উত্তর করিয়া কহিলেন, আমার নিবেদন ও অনুরোধ এই, আমি যদি মহারাজের দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, এবং আমার নিবেদন গ্রাহ্য করিতে ও আমার অনুরোধ সিদ্ধ করিতে যদি মহারাজের ভাল বোধ হয়, তবে আমি আপনাদের জন্য যাহা প্রস্তুত করিব, মহারাজ ও হামন সেই ভোজে আগমন করুন; এবং আমি কল্য মহারাজের আজ্ঞানুসারে [উত্তর] করিব। সেই দিন হামন আহ্লাদিত ও হৃষ্টচিত্ত হইয়া বাহিরে গেল, কিন্তু যখন রাজদ্বারে মর্দখয়ের দেখা পাইল, এবং তিনি তাহার সম্মুখে উঠিয়া দাঁড়াইলেন না ও সরিলেন না, তখন হামন মর্দখয়ের প্রতি ক্রোধে পরিপূর্ণ হইল। তথাপি হামন ক্রোধ সম্বরণ করিল, এবং নিজ গৃহে আসিয়া আপন বন্ধুদিগকে ও আপন স্ত্রী সেরশকে ডাকিয়া আনাইল। আর হামন তাহাদের কাছে আপন ঐশ্বর্য্যের প্রতাপ ও সন্তান-বাহুল্যের কথা, এবং রাজা কিরূপে সকল বিষয়ে তাহাকে উচ্চ পদ দিয়াছেন ও কিরূপে তাহাকে অধ্যক্ষগণ ও রাজার দাসগণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আসন দিয়াছেন, এই সমস্ত তাহাদের কাছে বর্ণনা করিল। হামন আরও কহিল, ইষ্টের রাণী আপনার প্রস্তুত ভোজে রাজার সহিত আর কাহাকেও আনান নাই, কেবল আমাকেই আনাইয়া ছিলেন; কল্যও আমি রাজার সহিত তাঁহার কাছে নিমন্ত্রিত আছি। কিন্তু যে পর্য্যন্ত আমি রাজদ্বারে উপবিষ্ট যিহূদী মর্দখয়কে দেখিতে পাই, সে পর্য্যন্ত এই সকলেতেও আমার শান্তি বোধ হয় না। তখন তাহার স্ত্রী সেরশ ও সমস্ত বন্ধু তাহাকে কহিল, তুমি পঞ্চাশ হস্ত উচ্চ এক ফাঁশিকাষ্ঠ প্রস্তুত করাও; আর মর্দখয়কে তাহার উপরে ফাঁশি দিবার জন্য কল্য প্রাতঃকালে রাজার কাছে নিবেদন কর; পরে হৃষ্ট হইয়া রাজার সহিত ভোজে যাও। তখন হামন এই কথায় তুষ্ট হইয়া সেই ফাঁশিকাষ্ঠ প্রস্তুত করাইল। সেই রাত্রিতে রাজার নিদ্রা দূর হইল, আর তিনি স্মরণীয় ইতিহাস-পুস্তক আনিতে আজ্ঞা করিলেন; পরে রাজার সাক্ষাতে সেই পুস্তক পাঠ করা হইল। আর তন্মধ্যে লিখিত এই কথা পাওয়া গেল, রাজার নপুংসক বিগ্‌থন ও তেরশ নামে দুই জন দ্বারপাল অহশ্বেরশ রাজার উপরে হস্তক্ষেপ করিতে চাহিলে মর্দখয় তাহার সংবাদ দিয়াছিলেন। রাজা কহিলেন, ইহার নিমিত্ত মর্দখয়ের কি সম্মান ও পদবৃদ্ধি করা গিয়াছে? রাজার পরিচর্য্যাকারী ভৃত্যেরা কহিল, তাঁহার পক্ষে কিছুই করা যায় নাই। পরে রাজা কহিলেন, প্রাঙ্গণে কে আছে? তখন হামন আপনার প্রস্তুত ফাঁশিকাষ্ঠে মর্দখয়কে ফাঁশি দিবার জন্য রাজার কাছে নিবেদন করিতে রাজবাটীর বহিঃপ্রাঙ্গণে আসিয়াছিল। রাজার ভৃত্যগণ কহিল, দেখুন, হামন প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়া আছেন। রাজা কহিলেন, সে ভিতরে আইসুক। তখন হামন ভিতরে আসিলে রাজা তাহাকে কহিলেন, রাজা যাহার সমাদর করিতে চাহেন, তাহার প্রতি কি করা কর্ত্তব্য? হামন মনে মনে ভাবিল, রাজা আমা ব্যতিরেকে আর কাহার সমাদর করিতে চাহিবেন? অতএব হামন রাজাকে কহিল, মহারাজ যাহার সমাদর করিতে চাহেন, তাহার নিমিত্ত মহারাজের পরিধেয় রাজকীয় পরিচ্ছদ, আর মহারাজ যাহার উপরে আরোহণ করিয়া থাকেন, এবং যাহার মস্তকে একটা রাজমুকুট স্থাপিত হইয়া থাকে, সেই অশ্ব আনীত হউক; আর সেই পরিচ্ছদ ও অশ্ব মহারাজের এক জন অতি প্রধান অধ্যক্ষের হস্তে সমর্পিত হউক; এবং মহারাজ যাহার সমাদর করিতে চাহেন, সে সেই রাজকীয় পরিচ্ছদপরিহিত হউক; পরে তাহাকে সেই অশ্বারোহণে নগরের চকে লইয়া যাওয়া হউক, এবং তাহার অগ্রে অগ্রে এই কথা ঘোষণা করা হউক, রাজা যাঁহার সমাদর করিতে চাহেন, তাঁহার প্রতি এইরূপ ব্যবহার করা যাইবে। রাজা হামনকে কহিলেন, তুমি সত্বর হও, সেই পরিচ্ছদ ও অশ্ব লইয়া যেমন কহিলে, তেমনি রাজদ্বারে উপবিষ্ট যিহূদী মর্দখয়ের প্রতি কর; তুমি যে সকল কথা কহিলে, তাহার কিছু ত্রুটি করিও না। তখন হামন সেই পরিচ্ছদ অশ্ব লইল, মর্দখয়কে পরিচ্ছদ পরাইয়া দিল, এবং অশ্বারোহণে নগরের চকে গমন করাইল, আর তাঁহার অগ্রে অগ্রে এই কথা ঘোষণা করিল, রাজা যাঁহার সমাদর করিতে চাহেন, তাঁহার প্রতি এইরূপ ব্যবহার করা যাইবে। পরে মর্দখয় রাজদ্বারে ফিরিয়া গেলেন, কিন্তু হামন শোকান্বিত হইয়া বস্ত্র দ্বারা মস্তক আচ্ছাদন করিয়া সত্বর আপন গৃহে চলিয়া গেল। আর হামন আপন স্ত্রী সেরশকে ও সমস্ত বন্ধুকে আপনার সম্বন্ধীয় সকল ঘটনার কথা কহিল; তাহাতে তাহার জ্ঞানবান লোকেরা ও তাহার স্ত্রী সেরশ তাহাকে কহিল, যাহার সম্মুখে তোমার এই পতনের আরম্ভ হইল, সেই মর্দখয় যদি যিহূদী বংশীয় লোক হয়, তবে তুমি তাহাকে জয় করিতে পারিবে না, বরং তুমি তাহার সম্মুখে নিশ্চয়ই পতিত হইবে। তাহারা তাহার সহিত কথাবার্ত্তা কহিতেছে, ইতিমধ্যে রাজ-নপুংসকেরা আসিয়া ইষ্টেরের প্রস্তুত ভোজে হামনকে উপস্থিত করিবার জন্য ত্বরা করিল। পরে রাজা ও হামন ইষ্টের রাণীর সহিত পান করিতে আসিলেন। আর রাজা সেই দ্বিতীয় দিনে দ্রাক্ষারস সহযুক্ত ভোজের সময়ে ইষ্টেরকে পুনর্ব্বার কহিলেন, ইষ্টের রাণি, তোমার নিবেদন কি? তাহা তোমাকে দেওয়া যাইবে; এবং তোমার অনুরোধ কি? রাজ্যের অর্দ্ধেক পর্য্যন্ত হইলেও তাহা সিদ্ধ করা যাইবে। তখন ইষ্টের রাণী উত্তর করিলেন, মহারাজ, আমি যদি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, ও যদি মহারাজের ভাল বোধ হয়, তবে আমার নিবেদনে আমার প্রাণ, ও আমার অনুরোধে আমার জাতি আমাকে দত্ত হউক; কেননা আমি ও আমার স্বজাতি, আমরা সংহারিত, নিহত ও বিনষ্ট হইবার নিমিত্ত বিক্রীত হইয়াছি। যদি আমরা কেবল দাস দাসী হইবার জন্য বিক্রীত হইতাম, তবে আমি নীরব থাকিতাম; কিন্তু তাহা হইলেও মহারাজের ক্ষতিপূরণ করা বিপক্ষের অসাধ্য হইত। তখন অহশ্বেরশ রাজা ইষ্টের রাণীকে কহিলেন, এমন কার্য্য করিবার মানস যাহার অন্তরে জন্মিয়াছে, সে কে? আর সে কোথায়? ইষ্টের কহিলেন, এক জন বিপক্ষ ও শত্রু, সে এই দুষ্ট হামন। তখন হামন রাজার ও রাণীর সাক্ষাতে ত্রাসযুক্ত হইল। পরে রাজা ক্রোধবশতঃ দ্রাক্ষারস পান হইতে উঠিয়া রাজবাটীর উদ্যানে গেলেন; আর হামন ইষ্টের রাণীর কাছে আপন প্রাণ ভিক্ষা করিবার জন্য দাঁড়াইল, কেননা সে দেখিল, রাজা হইতে তাহার অমঙ্গল অবধারিত। পরে রাজা রাজবাটীর উদ্যান হইতে দ্রাক্ষারস সহযুক্ত ভোজের স্থানে ফিরিয়া আসিলেন; তখন ইষ্টের যে আসনে উপবিষ্টা ছিলেন, হামন তাহার উপরে পতিত ছিল; তাহাতে রাজা কহিলেন, এ ব্যক্তি কি গৃহমধ্যে আমার সাক্ষাতে রাণীকে বলাৎকারও করিবে? এই কথা রাজার মুখ হইতে নির্গত হইবামাত্র লোকেরা হামনের মুখ আচ্ছাদন করিল। পরে রাজার সাক্ষাতে উপস্থিত হর্বোণা নামে এক নপুংসক কহিল, দেখুন, যে মর্দখয় মহারাজের পক্ষে হিত-জনক সংবাদ দিয়াছিলেন, তাঁহার জন্য হামন-পঞ্চাশ হস্ত উচ্চ ফাঁশিকাষ্ঠ প্রস্তুত করিয়াছে, তাহা হামনের বাটীতে স্থাপিত আছে। রাজা কহিলেন, তাহারই উপরে ইহাকে ফাঁশি দেও। তাহাতে হামন মর্দখয়ের জন্য যে ফাঁশিকাষ্ঠ প্রস্তুত করিয়াছিল, লোকেরা তাহার উপরে হামনকে ফাঁশি দিল; তখন রাজার ক্রোধ প্রশমিত হইল। সেই দিন অহশ্বেরশ রাজা ইষ্টের রাণীকে যিহূদীদের শত্রু হামনের বাটী দান করিলেন। আর মর্দখয় রাজার সাক্ষাতে উপস্থিত হইলেন, কেননা মর্দখয় ইষ্টেরের কে, তাহা ইষ্টের জানাইয়াছিলেন। পরে রাজা হামন হইতে নীত আপনার অঙ্গুরীয় খুলিয়া মর্দখয়কে দিলেন, এবং ইষ্টের হামনের বাটীর উপরে মর্দখয়কে নিযুক্ত করিলেন। পরে ইষ্টের রাজার কাছে পুনর্ব্বার নিবেদন করিলেন, ও তাঁহার চরণে পড়িয়া রোদন করিতে করিতে অগাগীয় হামনের [অভিপ্রেত] অমঙ্গল, অর্থাৎ যিহূদীদের বিরুদ্ধে তাহার সঙ্কল্পিত কুমন্ত্রণা নিবারণার্থে তাঁহার কাছে সাধ্যসাধনা করিলেন। তখন রাজা ইষ্টেরের দিকে স্বর্ণময় রাজদণ্ড বিস্তার করাতে ইষ্টের উঠিয়া রাজার সম্মুখে দাঁড়াইয়া কহিলেন, যদি মহারাজের ভাল বোধ হয়, এবং আমি যদি আপনার দৃষ্টিতে অনুগ্রহ পাইয়া থাকি, আর এই কার্য্য মহারাজের দৃষ্টিতে ন্যায্য বোধ হয়, ও আমি আপনার সন্তোষকারিণী হই, তবে মহারাজের অধীন যাবতীয় প্রদেশস্থ যিহূদীদিগকে বিনষ্ট করণার্থে অগাগীয় হম্মদাথার পুত্র হামনের কুমন্ত্রণা সম্বলিত যে সকল পত্র লিখিত হইয়াছে, সে সকল ব্যর্থ করিবার জন্য লেখা হউক। কেননা আমার জাতির প্রতি যে অমঙ্গল ঘটিবে, তাহা দেখিয়া আমি কিরূপে সহ্য করিতে পারি? আর আপন জ্ঞাতি কুটুম্বের বিনাশ দেখিয়া কিরূপে সহ্য করিতে পারি? তখন অহশ্বেরশ রাজা ইষ্টের রাণীকে ও যিহূদী মর্দখয়কে কহিলেন, দেখ, আমি ইষ্টেরকে হামনের বাটী দিয়াছি, এবং হামনকে ফাঁশিকাষ্ঠে ফাঁশি দেওয়া হইয়াছে, কেননা সে যিহূদীদের উপরে হস্তক্ষেপ করিয়াছিল। এখন তোমরা আপনাদের অভিমতানুসারে রাজার নামে যিহূদীদের পক্ষে পত্র লিখ, ও রাজার অঙ্গুরীয়ে তাহা মুদ্রাঙ্কিত কর; কেননা রাজার নামে লিখিত ও রাজার অঙ্গুরীয়ে মুদ্রাঙ্কিত পত্র অন্যথা করিবার যো নাই। তখন তৃতীয় মাসের অর্থাৎ সীবন মাসের ত্রয়োবিংশ দিনে রাজ-লেখকেরা আহূত হইল, আর মর্দখয়ের সমস্ত আজ্ঞানুসারে যিহূদীদিগকে, ক্ষিতিপালদিগকে, এবং হিন্দুস্থান অবধি কূশ দেশ পর্য্যন্ত এক শত সাতাইশ প্রদেশের মধ্যে প্রত্যেক প্রদেশের অক্ষরানুসারে ও প্রত্যেক জাতির ভাষানুসারে দেশাধ্যক্ষগণকে ও প্রদেশ সকলের প্রধানবর্গকে এবং যিহূদীদের অক্ষর ও ভাষানুসারে তাহাদিগকে পত্র লেখা গেল। তাহা অহশ্বেরশ রাজার নামে লিখিত ও রাজার অঙ্গুরীয়ে মুদ্রাঙ্কিত হইল, পরে দ্রুতগামী বাহনারূঢ় অর্থাৎ বড়বাজাত রাজকীয় অশ্বে আরূঢ় ধাবকগণের হস্ত দ্বারা সেই সকল পত্র প্রেরিত হইল। তদ্দ্বারা রাজা যিহূদীদিগকে এই অনুমতি দিলেন যে, অহশ্বেরশ রাজার অধীন সমস্ত প্রদেশ এই দিনে, অর্থাৎ অদর নামক দ্বাদশ মাসের ত্রয়োদশ দিনে, তাহারা প্রত্যেক নগরে একত্র হইয়া আপন আপন প্রাণরক্ষার্থে দণ্ডায়মান হইতে, এবং যে কোন জাতি কি প্রদেশ তাহাদের বিপক্ষতা করে, তাহার সমস্ত বল অর্থাৎ সেই বিপক্ষগণকে ও তাহাদের বালক বালিকা ও স্ত্রী সকলকে সংহার, বধ ও বিনাশ করিতে এবং তাহাদের দ্রব্য সকল লুট করিতে পারিবে। আর প্রত্যেক প্রদেশে রাজাজ্ঞা বলিয়া প্রচারিত হইবার জন্য, এবং যিহূদীরা যেন আপন শত্রুদের প্রতিশোধ দানার্থে সেই দিনের নিমিত্ত প্রস্তুত হয়, তজ্জন্য সেই লিপির অনুলিপি সমস্ত জাতিকে জ্ঞাত করা গেল। পরে দ্রুতগামী রাজকীয় বাহনারূঢ় ধাবকগণ রাজার আজ্ঞায় ত্বরিত ও প্রবর্ত্তিত হইয়া যাত্রা করিল, এবং সেই আজ্ঞা শূশন রাজধানীতে প্রদত্ত হইল। পরে মর্দখয় নীল ও শুক্লবর্ণ রাজকীয় পরিচ্ছদপরিহিত, সুবর্ণময় বৃহৎ মুকুটে ভূষিত, এবং মসীনাসূত্রের বেগুনে বস্ত্রে বস্ত্রান্বিত হইয়া রাজার সম্মুখ হইতে বাহিরে গেলেন; আর শূশন রাজধানী হর্ষনাদ ও আনন্দ করিল। যিহূদীরা দীপ্তি, আনন্দ, আমোদ ও সম্মান প্রাপ্ত হইল। আর প্রতিপ্রদেশে ও প্রতিনগরে যে কোন স্থানে রাজার ঐ বাক্য ও আজ্ঞা উপস্থিত হইল, সেই স্থানে যিহূদীদের আনন্দ, আমোদ, ভোজ ও সুখের দিন হইল। আর দেশীয় জাতি সকলের অনেক লোক যিহূদি-মতাবলম্বী হইল, কেননা যিহূদীদের হইতে তাহাদের ত্রাস উৎপন্ন হইয়াছিল। পরে দ্বাদশ মাসের অর্থাৎ অদর মাসের যে ত্রয়োদশ দিবসে রাজার ঐ বাক্য ও আজ্ঞা কার্য্যে পরিণত হইবার সময় নিকটবর্ত্তী হইল, অর্থাৎ যে দিন যিহূদীদের শত্রুগণ তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করিবার অপেক্ষা করিয়াছিল, সেই দিন এমন বিপরীত ঘটনা হইল যে, যিহূদীরাই আপনাদের বিদ্বেষীদের উপরে প্রভুত্ব করিল। যিহূদীরা আপনাদের হিংসাচেষ্টাকারীদের উপরে হস্তক্ষেপ করিবার জন্য অহশ্বেরশ রাজার সমস্ত প্রদেশে আপন আপন নগরে একত্র হইল, এবং তাহাদের সম্মুখে কেহ দাঁড়াইতে পারিল না, কেননা তাহাদের হইতে সমস্ত জাতির ত্রাস উৎপন্ন হইয়াছিল। আর প্রদেশ সকলের প্রধানবর্গ, ক্ষিতিপাল, দেশাধ্যক্ষগণ ও রাজকর্ম্মচারিগণ সকলে যিহূদীদের সাহায্য করিলেন, কারণ মর্দখয় হইতে তাঁহাদের ত্রাস উৎপন্ন হইয়াছিল। কেননা মর্দখয় রাজবাটীর মধ্যে মহান্‌ ছিলেন, ও তাঁহার যশ সকল প্রদেশে ব্যাপ্ত হইল, বস্তুতঃ সেই মর্দখয় উত্তরোত্তর মহান্‌ হইয়া উঠিলেন। আর যিহূদীরা আপনাদের সমস্ত শত্রুকে খড়্‌গাঘাত, সংহার ও বিনাশ করিল; তাহারা তাহাদের বিদ্বেষীদের প্রতি যাহা ইচ্ছা তাহাই করিল। আর শূশন রাজধানীতে যিহূদিগণ পাঁচ শত লোককে বধ ও বিনাশ করিল। আর পর্শন্দাথঃ দল্‌ফোন, অস্পাথঃ, পোরাথঃ, অদলিয়ঃ, অরীদাথঃ, পর্মস্ত, অরীষয়, অরীদয় ও বয়িষাথঃ, যিহূদীদের শত্রু হম্মদাথার পুত্র হামনের এই দশ পুত্রকে তাহারা বধ করিল, কিন্তু লুটে হস্তক্ষেপ করিল না। যাহারা শূশন রাজধানীতে হত হইল, তাহাদের সংখ্যা সেই দিন রাজার কাছে আনীত হইল। রাজা ইষ্টের রাণীকে কহিলেন, যিহূদীরা শূশন রাজধানীতে পাঁচ শত লোককে ও হামনের দশ পুত্রকে বধ ও বিনাশ করিয়াছে; না জানি, রাজার অধীন অন্য সকল প্রদেশে কি করিয়াছে। এখন তোমার নিবেদন কি? তাহা তোমাকে দত্ত হইবে; এবং তোমার আর অনুরোধ কি? তাহা করা হইবে। ইষ্টের কহিলেন, যদি রাজার ভাল বোধ হয়, তবে অদ্যকার মত কল্যও করিবার অনুমতি শূশনস্থ যিহূদিগণকে দত্ত হউক, এবং হামনের দশ পুত্রকে ফাঁশিকাষ্ঠে টাঙ্গান যাউক। পরে রাজা তাহা করিতে আজ্ঞা দিলেন, এবং সেই আজ্ঞা শূশনে প্রচারিত হইল, তাহাতে লোকেরা হামনের দশ পুত্রকে ফাঁশি দিল। আর শূশনস্থ যিহূদীরা অদর মাসের চতুর্দ্দশ দিনেও একত্র হইয়া শূশনে তিন শত লোককে বধ করিল, কিন্তু লুটে হস্তক্ষেপ করিল না। আর রাজার নানা প্রদেশ-নিবাসী অন্য সকল যিহূদীরাও একত্র হইয়া আপন আপন প্রাণের জন্য দণ্ডায়মান হইল, এবং আপনাদের শত্রুগণ হইতে বিশ্রাম পাইল, বিদ্বেষীদের পঁচাত্তর সহস্র লোককে বধ করিল, কিন্তু লুটে হস্তক্ষেপ করিল না। তাহারা অদর মাসের ত্রয়োদশ দিনে এই কার্য্য করিল, এবং চতুর্দ্দশ দিনে বিশ্রাম করিয়া সেই দিনকে ভোজনপান ও আনন্দের দিন করিল। কিন্তু শূশনস্থ যিহূদীরা ঐ মাসের ত্রয়োদশ ও চতুর্দ্দশ দিনে একত্র হইল, এবং পঞ্চদশ দিনে বিশ্রাম করিল, ও সেই দিনকে ভোজনপান ও আনন্দের দিন করিল। এই কারণ পল্লীগ্রামের অর্থাৎ প্রাচীরবিহীন নগর সমূহের নিবাসী যিহূদীরা অদর মাসের চতুর্দ্দশ দিনকে আনন্দের, ভোজন পানের, সুখের ও পরস্পর ভাগ পাঠাইবার দিন বলিয়া মানে। পরে মর্দখয় এই বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করিলেন, এবং অহশ্বেরশ রাজার অধীন নিকটস্থ কি দূরস্থ সকল প্রদেশে যে সকল যিহূদী থাকিত, তাহাদের কাছে পত্র পাঠাইয়া আজ্ঞা করিলেন, যেন তাহারা বৎসর বৎসর অদর মাসের চতুর্দ্দশ ও সেই মাসের পঞ্চদশ দিন পালন করে, অর্থাৎ যে দুই দিন যিহূদীরা আপনাদের শত্রুগণ হইতে বিশ্রাম পাইয়াছিল, এবং যে মাসে তাহাদের দুঃখ সুখে ও শোক মঙ্গল-দিনে পরিণত হইয়াছিল, সেই মাসের সেই দুই দিন যেন তাহারা ভোজনপান ও আনন্দ এবং আপন আপন বন্ধুর কাছে ভাগ ও দরিদ্রদের কাছে দান পাঠাইবার দিন বলিয়া মানে। তাহাতে যিহূদীরা যেমন আরম্ভ করিয়াছিল ও মর্দখয় তাহাদিগকে যেমন লিখিয়াছিলেন, তাহারা সেইরূপ করিতে সম্মত হইল; কারণ সমস্ত যিহূদীর শত্রু অগাগীয় হম্মদাথার পুত্র যে হামন, সে যিহূদীদিগকে বিনষ্ট করিবার সঙ্কল্প করিয়াছিল, তাহাদিগকে লুপ্ত ও বিনষ্ট করিবার নিমিত্তে পূর অর্থাৎ গুলিবাঁট করিয়াছিল; কিন্তু রাজার সাক্ষাতে সেই বিষয় উপস্থিত হইলে তিনি এই আজ্ঞাপত্র দিলেন, হামন যিহূদীদের বিরুদ্ধে যে কুসঙ্কল্প করিয়াছিল, তাহা তাহারই মস্তকে বর্ত্তুক; লোকে তাহাকে ও তাহার পুত্রগণকে ফাঁশিকাষ্ঠে টাঙ্গাইয়া দিউক। তজ্জন্য পূর [গুলিবাঁট] নামানুসারে সেই দুই দিনের নাম পূরীম হইল। অতএব সেই পত্রের সকল কথা প্রযুক্ত, এবং সেই বিষয়ে তাহারা যাহা দেখিয়াছিল, ও তাহাদের প্রতি যাহা ঘটিয়াছিল, তৎপ্রযুক্ত যিহূদিগণ আপনাদের ও আপন আপন বংশের ও যিহূদি-মতাবলম্বী সকলের কর্ত্তব্য বলিয়া ইহা স্থির করিল যে, তৎসম্পর্কীয় লিখিত আজ্ঞা ও নিরূপিত সময়ানুসারে তাহারা বৎসর বৎসর ঐ দুই দিন পালন করিবে, কোন রূপে তাহার ত্রুটি করিবে না। আর পুরুষ-পরম্পরায় প্রত্যেক গোষ্ঠীতে, প্রত্যেক প্রদেশে ও প্রত্যেক নগরে সেই দুই দিন স্মরণ ও পালন করিতে হইবে; এবং পূরীমের সেই দুই দিন যিহূদীদের মধ্য হইতে কখনও লুপ্ত হইবে না, আর তাহাদের বংশের মধ্য হইতে তাহার স্মৃতির লোপ হইবে না। পরে অবীহলিয়ের কন্যা ইষ্টের রাণী ও যিহূদী মর্দখয় পূরীম দিন বিষয়ক এই দ্বিতীয় পত্র স্থির করিতে সম্পূর্ণ ক্ষমতার সহিত লিখিলেন। আর অহশ্বেরশ রাজার অধিকারস্থ এক শত সাতাইশ প্রদেশে সমস্ত যিহূদীর নিকটে মর্দখয় শান্তির ও সত্যের কথা সম্বলিত পত্র পাঠাইয়া, নিরূপিত কালে পূরীমের সেই দুই দিন পালন করিবার বিষয় স্থির করিলেন; যেমন উপবাস ও ক্রন্দনের বিষয়ে যিহূদী মর্দখয় ও ইষ্টের রাণী যিহূদীদের জন্য স্থির করিয়াছিলেন, এবং যেমন তাহারাও আপনাদের জন্য ও আপন আপন বংশের জন্য স্থির করিয়াছিল। আর ইষ্টেরের আজ্ঞায় পূরীম বিষয়ক এই বিধি স্থির হইল, ও তাহা পুস্তকে লিখিত হইল। সেই অহশ্বেরশ রাজা স্থলে ও সমুদ্রের দ্বীপসমূহে কর নিরূপণ করিলেন। আর তাঁহার ক্ষমতার ও পরাক্রমের সকল কথা, এবং রাজা মর্দখয়কে যে মহত্ত্ব দিয়া উচ্চপদান্বিত করিয়াছিলেন, তাহার সম্পূর্ণ বিবরণ কি মাদিয়া ও পারস্যের রাজগণের ইতিহাস-পুস্তকে লিখিত নাই? বস্তুতঃ এই যিহূদী মর্দখয় অহশ্বেরশ রাজার প্রধান অমাত্য এবং যিহূদীদের মধ্যে মহান্‌, আপন ভ্রাতৃসমূহের মধ্যে প্রিয়পাত্র ও স্বজাতীয় লোকদের হিতৈষী এবং আপন সমস্ত বংশের পক্ষে শান্তিবাদী ছিলেন। ঊষ দেশে ইয়োব নামে এক ব্যক্তি ছিলেন; তিনি সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী ছিলেন। তাঁহার সাত পুত্র ও তিন কন্যা জন্মে। তাঁহার সাত সহস্র মেষ, তিন সহস্র উষ্ট্র, পাঁচ শত যোড়া বলদ ও পাঁচ শত গর্দ্দভী, এই পশুধন, এবং অনেক দাস দাসী ছিল; বস্তুতঃ পূর্ব্বদেশের লোকদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্ব্বাপেক্ষা মহান্‌ ছিলেন। তাঁহার পুত্রগণ প্রত্যেকে আপন আপন দিনে গিয়া আপন আপন গৃহে ভোজ প্রস্তুত করিত, এবং লোক পাঠাইয়া আপনাদের তিন ভগিনীকেও আপনাদের সঙ্গে ভোজনপান করিবার জন্য নিমন্ত্রণ করিত। পরে তাহাদের ভোজের দিন পর্য্যায় গত হইলে ইয়োব তাহাদিগকে আনাইয়া পবিত্র করিতেন, আর প্রত্যূষে উঠিয়া তাহাদের সকলের সংখ্যানুসারে হোম করিতেন; কারণ ইয়োব বলিতেন, কি জানি, আমার পুত্রগণ পাপ করিয়া মনে মনে ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়াছে। ইয়োব সতত এইরূপ করিতেন। এক দিন ঈশ্বরের পুত্রেরা সদাপ্রভুর সম্মুখে দণ্ডায়মান হইবার জন্য উপস্থিত হন, তাঁহাদের মধ্যে শয়তান ও উপস্থিত হইল। সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, তুমি কোথা হইতে আসিলে? শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর করিয়া কহিল, আমি পৃথিবী পর্য্যটন ও তথায় ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিয়া আসিলাম। তাহাতে সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, আমার দাস ইয়োবের উপরে কি তোমার মন পড়িয়াছে? কেননা তাহার তুল্য সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই। শয়তান উত্তর করিয়া সদাপ্রভুকে কহিল, ইয়োব কি বিনা লাভে ঈশ্বরকে ভয় করে? তুমি তাহার চারিদিকে, তাহার বাটীর চারিদিকে ও তাহার সর্ব্বস্বের চারিদিকে কি বেড়া দেও নাই? তুমি তাহার হস্তের কার্য্য আশীর্ব্বাদযুক্ত করিয়াছ, এবং তাহার পশুধন দেশময় ব্যাপিয়াছে। কিন্তু তুমি একবার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার সর্ব্বস্ব স্পর্শ কর, তবে সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে। তখন সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, দেখ, তাহার সর্ব্বস্বই তোমার হস্তগত; তুমি কেবল তাহার উপরে হস্তক্ষেপ করিও না। তাহাতে শয়তান সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে বাহিরে গেল। পরে কোন এক দিন ইয়োবের পুত্রকন্যাগণ তাহাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার গৃহে ভোজন ও দ্রাক্ষারস পান করিতেছিল, এমন সময়ে ইয়োবের নিকটে এক দূত আসিয়া কহিল, বলদেরা হাল বহিতেছিল, এবং গর্দ্দভীরা তাহাদের পার্শ্বে চরিতেছিল, ইতিমধ্যে শিবায়ীয়েরা আক্রমণ করিয়া সে সকল লইয়া গেল, এবং খড়্‌গধারে যুবকগণকে নষ্ট করিল; আপনাকে সংবাদ দিতে কেবল একা আমি রক্ষা পাইয়াছি। সে কথা কহিতেছিল, ইতিমধ্যে আর এক জন আসিয়া কহিল, আকাশ হইতে ঈশ্বরের অগ্নি পতিত হইয়া মেষপাল ও যুবকগণকে দাহ করিল, তাহাদিগকে গ্রাস করিল; আপনাকে সংবাদ দিতে কেবল একা আমি রক্ষা পাইয়াছি। সে কথা কহিতেছিল, ইতিমধ্যে আর এক জন আসিয়া কহিল, কল্‌দীয়েরা তিন দল হইয়া উষ্ট্রপাল আক্রমণ করিয়া তাহাদিগকে লইয়া গেল, এবং খড়্‌গধারে যুবকগণকে বধ করিল; আপনাকে সংবাদ দিতে কেবল একা আমি রক্ষা পাইয়াছি। সে কথা কহিতেছিল, ইতিমধ্যে আর এক জন আসিয়া কহিল, আপনার পুত্রকন্যাগণ তাঁহাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার গৃহে ভোজন ও দ্রাক্ষারস পান করিতেছিলেন, আর দেখুন, প্রান্তরের পার হইতে একটা ভারী ঝড় উঠিয়া গৃহটীর চারি কোণে লাগিল, আর যুবকগণের উপরে গৃহ পতিত হইল, তাহাতে তাঁহারা মারা পড়িলেন; আপনাকে সংবাদ দিতে কেবল একা আমি রক্ষা পাইয়াছি। তখন ইয়োব উঠিয়া আপন বস্ত্র ছিঁড়িলেন, মস্তক মুণ্ডন করিলেন ও ভূমিতে পড়িয়া প্রণিপাত করিলেন, আর কহিলেন, আমি মাতার গর্ভ হইতে উলঙ্গ আসিয়াছি, আর উলঙ্গ সেই স্থানে ফিরিয়া যাইব; সদাপ্রভু দিয়াছিলেন, সদাপ্রভুই লইয়াছেন; সদাপ্রভুর নাম ধন্য হউক। এই সকলেতে ইয়োব পাপ করিলেন না, এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিবেচনার দোষারোপ করিলেন না। আর এক দিন ঈশ্বরের পুত্রগণ সদাপ্রভুর সম্মুখে দণ্ডায়মান হইবার জন্য উপস্থিত হইতে তাঁহাদের মধ্যে শয়তানও সদাপ্রভুর সম্মুখে দণ্ডায়মান হইবার জন্য উপস্থিত হইল। সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, তুমি কোথা হইতে আসিলে? শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর করিয়া কহিল, আমি পৃথিবী পর্য্যটন ও তথায় ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিয়া আসিলাম। সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, আমার দাস ইয়োবের প্রতি কি তোমার মন পড়িয়াছে? কেননা তাহার তুল্য সিদ্ধ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই; সে এখনও আপন সিদ্ধতা রক্ষা করিতেছে, যদিও তুমি অকারণে তাহাকে বিনষ্ট করিতে আমাকে প্রবৃত্ত করিয়াছ। শয়তান সদাপ্রভুকে উত্তর করিয়া কহিল, চর্ম্মের জন্য চর্ম্ম, আর প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে। কিন্তু তুমি এক বার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার অস্থি ও মাংস স্পর্শ কর, সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে। সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, দেখ, সে তোমার হস্তগত; কেবল তাহার প্রাণ থাকিতে দিও। পরে শয়তান সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে বাহির হইয়া ইয়োবের আপাদমস্তকে আঘাত করিয়া দুষ্ট স্ফোটক জন্মাইল। তাহাতে তিনি একখানা খাপরা লইয়া সর্ব্বাঙ্গ ঘর্ষণ করিতে লাগিলেন, আর ভস্মের মধ্যে বসিয়া রহিলেন। তখন তাঁহার স্ত্রী তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কি এখনও তোমার সিদ্ধতা রক্ষা করিতেছ? ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দিয়া প্রাণত্যাগ কর। কিন্তু তিনি তাঁহাকে কহিলেন, তুমি একটা মূঢ়া স্ত্রীর মত কথা কহিতেছ। বল কি? আমরা ঈশ্বর হইতে কি মঙ্গলই গ্রহণ করিব, অমঙ্গল গ্রহণ করিব না? এই সকলেতে ইয়োব আপন ওষ্ঠাধরে পাপ করিলেন না। পরে ইয়োবের প্রতি ঘটিত ঐ সকল বিপদের কথা তাঁহার তিন জন মিত্রের কর্ণগোচর হইলে তাঁহারা প্রত্যেকে আপন আপন স্থান হইতে আসিলেন; তৈমনীয় ইলীফস, শূহীয় বিল্‌দদ ও নামাথীয় সোফর একপরামর্শ হইয়া তাঁহার সহিত শোক ও তাঁহাকে সান্ত্বনা করিবার জন্য তাঁহার নিকটে আগমন করিতে স্থির করিলেন। পরে তাঁহারা দূর হইতে চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, কিন্তু তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না, তাহাতে তাঁহারা উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিলেন, এবং প্রত্যেকে আপন আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া আপন আপন মস্তকের উপরে আকাশের দিকে ধূলা ছড়াইতে লাগিলেন। পরে সাত দিন ও সাত রাত্রি তাঁহার সহিত ভূমিতে বসিয়া থাকিলেন, তাঁহাকে কেহ কিছুই কহিলেন না; কারণ তাঁহারা দেখিলেন, তাঁহার যাতনা অতি কঠোর। তৎপরে ইয়োব মুখ খুলিয়া আপনার জন্মদিনকে শাপ দিতে লাগিলেন। ইয়োব কহিলেন, বিলুপ্ত হউক সেই দিন, যে দিন আমার জন্ম হইয়াছিল, সেই রাত্রি, যে রাত্রি বলিয়াছিল, ‘পুত্রসন্তান হইল’। সেই দিন অন্ধকার হউক; ঊর্দ্ধ হইতে ঈশ্বর সে দিনের তত্ত্ব না করুন, দীপ্তি তাহার উপরে বিরাজমান না হউক; অন্ধকার ও মৃত্যুচ্ছায়া তাহাকে আদায় করুক, মেঘ তাহাকে আচ্ছন্ন করুক, যাহা কিছু দিন অন্ধকার করে, তাহা তাহাকে ত্রাসযুক্ত করুক। সেই রাত্রি তিমির গ্রস্ত হউক, তাহা বৎসরের দিনশ্রেণীতে ভুক্ত না হউক, তাহা মাসের সংখ্যার মধ্যে গণ্য না হউক। দেখ, সেই রাত্রি বন্ধ্যা হউক, আনন্দগান তাহাতে প্রবেশ না করুক। তাহারা তারে শাপ দিউক, যাহারা দিনকে শাপ দেয়, যাহারা লিবিয়াথনকে জাগাইতে নিপুন। তাহার সান্ধ্য নক্ষত্র সকল অন্ধকার হউক, সে যেন দীপ্তির অপেক্ষায় থাকিলেও দীপ্তি না পায়, সে যেন ঊষার চক্ষের পাতা দেখিতে না পায়। কেননা সে মম জননীর জঠরের কবাট বদ্ধ করে নাই আমার চক্ষু হইতে কষ্ট গুপ্ত রাখে নাই। আমি কেন গর্ভে মরি নাই? উদর হইতে পড়িবামাত্র কেন প্রাণত্যাগ করি নাই? জানুযুগল কেন আমাকে গ্রহণ করিয়াছিল? স্তনযুগই বা কেন আমাকে দুগ্ধ দিয়াছিল? তাহা হইলে এখন শয়ন করিয়া বিশ্রাম করিতাম, নিদ্রিত হইতাম, শান্তি পাইতাম,; রাজগণের ও দেশের মন্ত্রিগণের সহিত থাকিতাম, যাঁহারা আপনাদের জন্য ধ্বংসস্থান নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন; বা অধিপতিদের সহিত থাকিতাম, যাঁহাদের স্বর্ণ ছিল, যাঁহারা রৌপ্য স্ব স্ব গৃহ পরিপূর্ণ করিতেন; কিম্বা গুপ্ত গর্ভস্রাবের মত প্রাণহীন হইতাম। আলোক-দর্শন অপ্রাপ্ত শিশুর তুল্য হইতাম। সেই স্থানে দুষ্টগণ আর উৎপাত করে না, সেই স্থানে শ্রান্তেরা বিশ্রাম পায়; তথায় বন্দিগণ নিরাপদে একত্র থাকে, তাহারা উপদ্রবীর রব আর শুনে না; সেই স্থানে ছোট বড় একই, এবং দাস আপন স্বামী হইতে মুক্ত। দুঃখার্ত্তকে কেন দীপ্তি দেওয়া হয়? তিক্তপ্রাণকে কেন জীবন দেওয়া হয়? তাহারা মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা করে, কিন্তু তাহা আইসে না, তাহারা গুপ্ত ধন অপেক্ষা তাহার সন্ধান করে। কবর পাইতে পারিলে তাহারা আহ্লাদ করে, মহানন্দে উল্লাসিত হয়। ঈদৃশ লোকের পথ গুপ্ত, তাহার চতুর্দ্দিকে ঈশ্বর বেড়া দিয়াছেন। আমার হাহাকার আমার ভক্ষ্যবৎ হইতেছে, আমার আর্ত্তনাদ জলের ন্যায় ঢালা যাইতেছে। আমি যাহা ভয় করি, তাহাই আমার ঘটে, যাহার আশঙ্কা করি, তাহাই উপস্থিত হয়। আমার শান্তি নাই, বিরাম নাই, বিশ্রাম নাই; কেবল উদ্বেগ উপস্থিত হয়। পরে তৈমনীয় ইলীফস উত্তর করিয়া কহিলেন, তোমার সহিত কথা কহিতে চেষ্টা করিলে কি তুমি কাতর হইবে? কিন্তু কথা কহিতে কে নিবৃত্ত হইতে পারে? দেখ, তুমি অনেককে শিক্ষা দিয়াছ, তুমি দুর্ব্বল হস্ত সবল করিয়াছ। তোমার বাক্য পতনোম্মুখ লোককে উঠাইয়াছে, তুমি ভগ্ন হাঁটু সবল করিয়াছ। তবু এক্ষণে [দুঃখ] তোমার নিকটে আসিলে তুমি কাতর হইতেছ; তাহা তোমাকে স্পর্শ করিলে তুমি বিহ্বল হইতেছ। তোমার ঈশ্বরভয় কি তোমার প্রত্যাশা নয়? তোমার পথের সিদ্ধতা কি তোমার আশাভূমি নয়? মনে করিয়া দেখ, কে নির্দ্দোষ হইয়া বিনষ্ট হইয়াছে? কোথায় সরলাচারিগণ উচ্ছিন্ন হইয়াছে? আমি দেখিয়াছি, যাহারা অধর্ম্মরূপ চাষ করে, যাহারা অনিষ্ট-বীজ বপন করে, তাহারা তাহাই কাটে। তাহারা ঈশ্বরের ফুৎকারে বিনষ্ট হয়, তাঁহার কোপের নিশ্বাসে সংহার পায়। সিংহের গর্জ্জন ও মৃগেন্দ্রের হূঙ্কার [রুদ্ধ হয়], তরুণ কেশরিগণের দন্ত ভগ্ন হয়। ভক্ষ্যের অভাবে পশুরাজ প্রাণত্যাগ করে, সিংহীর শিশুগণ ছিন্নভিন্ন হয়। আমার কাছে একটী বাক্য গোপনে পৌঁছিল, আমার কর্ণকুহরে তাহার ঈষৎ শব্দ আসিল। রাত্রিকালীন স্বপ্নদর্শনে যখন ভাবনা জন্মে, মনুষ্য সকল যখন গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন হয়, এমন সময়ে আমার ত্রাস ও কম্প হইল, তাহা আমার অস্থি সকল বিকম্পিত করিল। পরে আমার সম্মুখ দিয়া একটা বাতাস চলিয়া গেল, আমার শরীর রোমাঞ্চিত হইল। তাহা দাঁড়াইয়া থাকিল, কিন্তু আমি তাহার আকৃতি নির্ণয় করিতে পারিলাম না; একটী মূর্ত্তি আমার চক্ষুর্গোচর হইল, আমি মৃদু স্বর ও এই বাণী শুনিলাম; “ঈশ্বর অপেক্ষা মর্ত্ত্য কি ধার্ম্মিক হইতে পারে? নিজ নির্ম্মাতা অপেক্ষা মনুষ্য কি শুচি হইতে পারে? দেখ, তিনি আপন দাসগণকেও বিশ্বাস করেন না, আপন দূতগণেতেও ত্রুটির দোষারোপ করেন। তবে যাহারা মৃণ্ময় গৃহে বাস করে, যাহাদের গৃহের ভিত্তিমূল ধূলাতে স্থাপিত, যাহারা কীটের ন্যায় মর্দ্দিত হয়; তাহারা কি? তাহারা প্রভাত ও সায়ংকালের মধ্যে চূর্ণ হয়; তাহারা চিরতরে বিনষ্ট হয়, কেহ চিন্তা করে না। তাহাদের আন্তরিক রজ্জু কি খোলা যায় না? তাহারা অজ্ঞানাবস্থায় মরিয়া যায়।” তুমি ডাক দেখি, কেহ কি তোমাকে উত্তর দিবে? পবিত্রগণের মধ্যে তুমি কাহার শরণ লইবে? কারণ মনস্তাপ অজ্ঞানকে নষ্ট করে, ঈর্ষা নির্বোধকে বিনাশ করে। আমি অজ্ঞানকে বদ্ধমূল দেখিয়াছিলাম। তৎক্ষণাৎ তাহার গৃহকে শাপ দিয়াছিলাম। তাহার সন্তানগণ নিস্তার হইতে দূরীকৃত, তাহারা নগরদ্বারে বিমর্দ্দিত হয়, উদ্ধারকারী কেহ নাই। ক্ষুধিত লোক তাহার শস্য খাইয়া ফেলে, কন্টকের বেড়া ভাঙ্গিয়া তাহা হরণ করে, ফাঁদ তাহার সম্পত্তি গ্রাস করে। কারণ ধূলি হইতে কষ্ট উৎপন্ন হয় না। মৃত্তিকা হইতে আয়াস জন্মে না; কিন্তু অগ্নির স্ফুলিঙ্গ যেমন ঊর্দ্ধে উঠে, তেমনি মনুষ্য আয়াসের নিমিত্ত জন্মে। কিন্তু আমি ত সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতাম, আপনার নিবেদন ঈশ্বরে সমর্পণ করিতাম। তিনি মহৎ মহৎ কর্ম্ম করেন, যাহার সন্ধান করা যায় না, আশ্চর্য্য ক্রিয়া করেন, যাহার সংখ্যা নাই। তিনি ভূতলে বৃষ্টি প্রদান করেন, তিনি জনপদের উপরে জল বহান। তিনি নীচ লোকদিগকে উচ্চ করেন, শোকার্ত্তেরা ত্রাণ দ্বারা উন্নত হয়। তিনি ধূর্ত্তদের কল্পনা ব্যর্থ করেন, তাহাদের হস্ত সঙ্কল্প সাধন করিতে পারে না। তিনি জ্ঞানীদিগকে তাহাদের ধূর্ত্ততায় ধরেন, কুটিলমনাদের মন্ত্রণা আশু বিফল হইয়া পড়ে। তাহারা দিবসে অন্ধকারে ভ্রমণ করে, মধ্যাহ্নে রাত্রিকালের ন্যায় হাঁতড়িয়া বেড়ায়। কিন্তু তিনি খড়্‌গ হইতে, উহাদের কবল হইতে, পরাক্রমীদের হস্ত হইতে, দরিদ্রকে নিস্তার করেন। এই কারণ-দীনহীন আশাযুক্ত হয়, অধর্ম্ম নিজ মুখ বদ্ধ করে। দেখ, ধন্য সেই ব্যক্তি, যাহাকে ঈশ্বর অনুযোগ করেন, অতএব তুমি সর্ব্বশক্তিমানের দত্ত শাস্তি তুচ্ছ করিও না। কেননা তিনি ক্ষত করেন, তিনি বাঁধিয়া দেন, তিনি আঘাত করেন, তাঁহারই হস্ত সুস্থ করে। তিনি ছয় সঙ্কট হইতে তোমাকে উদ্ধার করিবেন, সপ্ত সঙ্কটে অমঙ্গল তোমাকে স্পর্শ করিবে না। তিনি তোমাকে দুর্ভিক্ষ সময়ে মৃত্যু হইতে, যুদ্ধের সময়ে খড়্‌গধার হইতে মুক্ত করিবেন। জিহ্বার কশাঘাত হইতে তুমি গুপ্ত থাকিবে, বিনাশ আসিলে তোমার শঙ্কা হইবে না। বিনাশ ও দুর্ভিক্ষে তুমি হাসিবে, বন্যপশুদের হইতে তোমার শঙ্কা হইবে না। কারণ মাঠের প্রস্তরের সহিত তোমার সন্ধি হইবে, মাঠের পশুগণ তোমার সহিত শান্তিতে থাকিবে। আর তুমি জানিবে, তোমার তাম্বু শান্তিযুক্ত, তুমি তোমার নিবাসের তত্ত্ব করিলে দেখিবে, কিছুই হারায় নাই। তুমি জানিবে, তোমার বংশ বহুসংখ্যক হইবে, তোমার সন্তানসন্ততি ভূমির তৃণের ন্যায় হইবে। যেমন যথাসময়ে শস্যের আটি তুলিয়া লওয়া যায়, তদ্রূপ তুমি সম্পূর্ণায়ু হইয়া কবর প্রাপ্ত হইবে। দেখ, আমরা অনুসন্ধান করিয়াছি; ইহা নিশ্চিত; তুমি ইহা শুন, আপনার জন্য জানিয়া রাখ। পরে ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন, হায় যদি আমার মনস্তাপ তৌল করা হইত, যদি আমার বিপদ তুলায় পরিমিত হইত, তবে তাহা সমুদ্রের বালি হইতেও ভারী হইত, এই জন্য আমার বাক্য অসংলগ্ন হইয়া পড়ে। কারণ সর্ব্বশক্তিমানের বাণ সকল আমার ভিতরে প্রবিষ্ট, আমার আত্মা সে সকলের বিষ পান করিতেছে, ঈশ্বরীয় ত্রাসদল আমার বিরুদ্ধে শ্রেণীবদ্ধ। বনগর্দ্দভ ঘাস পাইলে কি চীৎকার করে? গোরু জাব পাইলে কি রব করে? যাহার স্বাদ নাই, তাহা কি লবণ বিনা ভোজন করা যায়? ডিম্বের লালার কি কিছু আস্বাদ আছে? আমার প্রাণ যাহা স্পর্শ করিতে অসম্মত, তাহাই আমার ঘৃণিত ভক্ষ্যস্বরূপ হইল। আঃ! আমি যেন বাঞ্ছনীয় বিষয় পাইতে পারি, ঈশ্বর যেন আমার অপেক্ষণীয় বিষয় আমাকে দেন, হাঁ, ঈশ্বর অনুগ্রহ করিয়া আমাকে চূর্ণ করুন, হস্ত প্রসারণ করিয়া আমাকে কাটিয়া ফেলুন; তবু তখনও আমার সান্ত্বনা থাকিবে, নির্ম্মম যাতনায়ও আমি উল্লাস করিব, কারণ আমি পবিত্রতমের বাক্য সকল অস্বীকার করি নাই। আমার বল কি যে, প্রতীক্ষা করিতে পারি, আমার পরিণাম কি যে, সহিষ্ণু হইতে পারি? আমার বল কি প্রস্তরের বল? আমার মাংস কি পিত্তলের? আমার দ্বারা কি আমার আর উপকার হইতে পারে? আমা হইতে কি বুদ্ধিকৌশল দূরীকৃত হয় নাই? শীর্ণ লোকের প্রতি বন্ধুর দয়া করা কর্ত্তব্য, পাছে সে সর্ব্বশক্তিমানের ভয় ত্যাগ করে। আমার ভ্রাতৃগণ স্রোতের ন্যায় বিশ্বাসঘাতক, তাহারা স্রোতমার্গস্থ প্রণালীর ন্যায় চঞ্চল। সেই স্রোত হিম হেতু কৃষ্ণবর্ণ হয়, তুষার পড়িয়া তাহার মধ্যে লীন হয়; কিন্তু উত্তপ্ত হইবামাত্র তাহা লুপ্ত হয়, গ্রীষ্ম হইলে তাহা স্বস্থান হইতে শুষিয়া যায়। সেই পথের বণিক্‌দল পথ ছাড়ে, তাহারা মরুস্থানে গিয়া বিনষ্ট হয়। টেমার বণিক্‌দল দৃষ্টিপাত করিল, শিবার পথিকদল সেই সকলের অপেক্ষা করিল। তাহারা প্রত্যাশা করাতে লজ্জিত হইল, সেখানে আসিলে তাহারা হতাশ হইল। বস্তুতঃ এখন তোমরা কিছুই নও; ত্রাস দেখিয়া ভয় পাইয়াছ। আমি কি বলিয়াছিলাম, আমাকে কিছু দেও, তোমাদের সঙ্গতি হইতে আমার জন্য ভেট দেও, বিপক্ষের হস্ত হইতে আমাকে রক্ষা কর, দুর্দ্দান্তদের হস্ত হইতে আমাকে মুক্ত কর? আমাকে শিক্ষা দেও, আমি নীরব হইব; আমাকে বুঝাইয়া দেও, কিসে আমি প্রমাদে পড়িয়াছি। ন্যায্য বাক্য কেমন প্রবল! কিন্তু তোমাদের তর্কে কি দোষ ব্যক্ত হয়? তোমরা কি শব্দের দোষ ধরিবার সঙ্কল্প করিতেছ? নিরাশ ব্যক্তির বাক্য ত বায়ুর তুল্য। তোমরা ত অনাথের জন্য গুলিবাঁট করিবে, তোমাদের বন্ধুকে বিক্রয় করিবে। এখন অনুগ্রহ করিয়া আমার প্রতি দৃষ্টি কর, আমি তোমাদের সাক্ষাতে মিথ্যা কহিব না। তোমরা ফিরিয়া যাও, অন্যায় না হউক; আমি বলি, ফিরিয়া যাও, আমার পক্ষ ন্যায্য। আমার জিহ্বাতে কি অন্যায় আছে? আমার রসনা কি বিপাকের স্বাদ বুঝে না? পৃথিবীতে কি মর্ত্ত্যকে সৈন্যবৃত্তি করিতে হয় না? তাহার দিনসমূহ কি বেতনজীবীর দিনের তুল্য নহে? দাস যেমন ছায়ার আকাঙ্ক্ষা করে, বেতনজীবী যেমন আপন বেতন অপেক্ষা করে; তেমনি অলীকতার মাসপর্য্যায় আমার দায়াংশ, কষ্টকর রাত্রি সকল আমার জন্য নিরূপিত। শয়নকালে আমি বলি, কখন্‌ উঠিব? কিন্তু রাত্রি দীর্ঘ হইয়া পড়ে, প্রভাত পর্য্যন্ত আমি কেবল ছট্‌ফট্‌ করিতে থাকি। কীট ও মাটীর ঢেলা আমার মাংসের আচ্ছাদন; আমার চর্ম্ম ফাটিয়াছে ও গলিত হইয়াছে। তন্তুবায়ের মাকু অপেক্ষা আমার আয়ু দ্রুতগামী, তাহা আশাবিহীন হইয়া শেষ হয়। স্মরণ কর, আমার জীবন শ্বাসমাত্র, আমার চক্ষু আর মঙ্গল দেখিতে পাইবে না; আমার দর্শনকারীর চক্ষু আর আমাকে দেখিবে না; আমার প্রতি তোমার দৃষ্টি পড়িবে, কিন্তু আমি অনুদ্দিষ্ট হইব। মেঘ যেমন ক্ষয় পাইয়া অন্তর্হিত হয়, তেমনি যে পাতালে নামে, সে আর উঠিবে না। সে আপনার গৃহে আর ফিরিয়া আসিবে না, তাহার স্থান আর তাহাকে চিনিবে না। অতএব আমি আর মুখ বুজিয়া থাকিব না; আমি আত্মার উদ্বেগে কথা বলিব, প্রাণের তিক্ততায় বিলাপ করিব। আমি কি সমুদ্র না তিমি যে, আমার উপরে তুমি প্রহরী রাখিতেছ? আমি যখন বলি, আমার খট্টা আমাকে সান্ত্বনা করিবে, আমার শয্যা দুঃখের উপশম করিবে; তখন তুমি নানা স্বপ্নে আমাকে উদ্বিগ্ন কর, নানা দর্শনে আমাকে ত্রাসযুক্ত কর। তাহাতে আমার প্রাণ শ্বাসরোধ চাহে, আমার এই অস্থিকঙ্কাল অপেক্ষা মরণ চাহে। আমার ঘৃণা হইয়াছে, আমি নিত্য বাঁচিয়া থাকিতে চাহি না; আমাকে ছাড়, কেননা আমার আয়ু নিশ্বাসবৎ। মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে মহান্‌ জ্ঞান কর, যে, তাহার উপরে তোমার মন পড়ে, যে, প্রতিপ্রভাতে তুমি তাহার তত্ত্ব কর, এবং নিমিষে নিমিষে তাহার পরীক্ষা কর? তুমি কত কাল আমা হইতে আপন দৃষ্টি ফিরাইবে না? আমার ঢোঁকগেলার মধ্যে কি আমাকে ছাড়িবে না? হে মনুষ্যদর্শক, আমি যদি পাপ করিয়া থাকি, তবে আমার কর্ম্মে তোমার কি হয়? তুমি কেন আমাকে তোমার শরলক্ষ্য করিয়াছ? আমি ত আপনার ভার আপনি হইয়াছি। তুমি আমার অধর্ম্ম ক্ষমা কর না কেন? আমার অপরাধ দূর কর না কেন? আমি ত এক্ষণে ধূলিতে শয়ন করিব, তুমি সযত্নে আমার অন্বেষণ করিবে, কিন্তু আমি অনুদ্দিষ্ট হইব। পরে শূহীয় বিল্‌দদ উত্তর করিয়া কহিলেন, তুমি কত ক্ষণ এই সকল কহিবে? তোমার মুখের বাক্য প্রচণ্ড ঝটিকাবৎ বহিবে? ঈশ্বর কি বিচারবিরুদ্ধ কর্ম্ম করেন? সর্ব্বশক্তিমান কি ধর্ম্মবিপয্যয় করেন? তোমার সন্তানগণ যদি তাঁহার বিরুদ্ধে পাপ করিয়া থাকে, আর তিনি তাহাদিগকে তাহাদের অধর্ম্মের হস্তে সমর্পণ করিয়া থাকেন, তুমিই যদি সযত্নে ঈশ্বরের অন্বেষণ কর, সর্ব্বশক্তিমানের নিকটে যদি সাধ্যসাধনা কর, যদি নির্ম্মল ও সরল হও, তবে তিনি এখনও তোমার নিমিত্ত জাগিবেন, ও তোমার ধর্ম্মনিবাস শান্তিযুক্ত করিবেন। তাহাতে তব অগ্রিম অবস্থা ক্ষুদ্র বোধ হইবে, তোমার অন্তিম দশা অতিশয় উন্নত হইবে। বিনয় করি, তুমি পূর্ব্বকালীন লোককে জিজ্ঞাসা কর, তাহাদের পিতৃগণের অনুসন্ধান-ফলে মনোযোগ কর। কেননা আমরা কল্যকার লোক কিছুই জানি না; পৃথিবীতে আমাদের আয়ু ছায়াস্বরূপ। উহারা কি তোমাকে শিক্ষা দিবে না, ও তোমাকে বলিবে না? উহাদের অন্তঃকরণ হইতে কি এই বাক্য নিঃসৃত হইবে না? “কর্দ্দম বিনা কি নল বৃদ্ধি পাইতে পারে? খাগ্‌ড়া কি জল ব্যতিরেকে বাড়িতে পারে? যখন তাহা তেজস্বী থাকে, কাটা না যায়, তখন অন্য সকল তৃণের পূর্ব্বে শুষ্ক হয়। যাহারা ঈশ্বরকে ভুলিয়া যায়, সেই সকলের সেই গতি; পামরের আশা বিনষ্ট হয়। তাহার ভরসা উচ্ছিন্ন হয়, তাহার আশ্রয় মাকড়সার জালমাত্র। সে আপন গৃহে নির্ভর করিবে, কিন্তু তাহা স্থির থাকিবে না, সে শক্ত করিয়া ধরিলেও তাহা থাকিবে না। সে সূর্য্যের সাক্ষাতে সতেজ থাকে, উদ্যানে তাহার কোমল শাখা ব্যাপিয়া যায়। প্রস্তররাশিতে তাহার শিকড় জড়িত হয়, সে পাষাণচয়ের স্থান দেখিতে পায়, তবু যখন সে স্বস্থান হইতে উৎপাটিত হয়, তখন সেই স্থান তাহাকে অস্বীকার করিয়া কহিবে, আমি ত তোমাকে দেখি নাই। দেখ, এই তাহার পথের আমোদ; পরে ধূলি হইতে অন্যেরা উঠিবে।” দেখ, ঈশ্বর সিদ্ধকে নিগ্রহ করেন না, আর তিনি দুরাচারদের হস্ত ধরিয়া রাখেন না। এখনও তিনি তোমার মুখ হাস্যে পূর্ণ করিবেন, তোমার ওষ্ঠাধর হর্ষধ্বনিতে পূর্ণ করিবেন। তোমার বিদ্বেষিগণ লজ্জাপরিহিত হইবে, দুষ্টগণের তাম্বু থাকিবে না। তখন ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন, আমি নিশ্চয় জানি, তাহাই বটে; ঈশ্বরের কাছে মর্ত্ত্য কি প্রকারে ধার্ম্মিক হইতে পারে? সে যদি তাঁহার সহিত বাদানুবাদ করিতে চাহে, তবে সহস্র কথার মধ্যে তাঁহাকে একটীরও উত্তর দিতে পারে না? তিনি চিত্তে জ্ঞানবান ও বলে পরাক্রান্ত; তাঁহার প্রতিরোধ করিয়া কে পার পাইয়াছে? তিনি পর্ব্বতগণকে স্থানান্তর করেন, তাহারা তাহা জানে না, তিনি ক্রোধে তাহাদিগকে উল্টাইয়া ফেলেন। তিনি পৃথিবীকে তাহার স্থান হইতে কম্পমান করেন, তাহার স্তম্ভ সকল টলটলায়মান হয়। তিনি সূর্য্যকে বারণ করিলে সে উদিত হয় না, তিনি তারাগণকে মুদ্রাঙ্কিত করেন। তিনি একাকী আকাশমণ্ডল বিস্তার করেন, সাগর-তরঙ্গের উপর পদার্পণ করেন। তিনি সপ্তর্ষি, মৃগশীর্ষ ও কৃত্তিকার, এবং দক্ষিণস্থ কক্ষ সকলের নির্ম্মাণকর্ত্তা। তিনি মহৎ মহৎ কর্ম্ম করেন, যাহা সন্ধানের অতীত, আশ্চর্য্য ক্রিয়া করেন, যাহার সংখ্যা নাই। দেখ, তিনি আমার সম্মুখ দিয়া যান, আমি তাঁহাকে দেখিতে পাই না; নিকট দিয়াও চলেন, আমি তাঁহাকে চিনিতে পারি না। দেখ, তিনি ধরিয়া লন, কে তাঁহাকে নিবারণ করিবে? কে বা তাঁহাকে বলিবে, ‘তুমি কি করিতেছ?’ ঈশ্বর আপন ক্রোধ সম্বরণ করিবেন না, গর্ব্বীর সহায়গণ তাঁহার পদতলে নত হয়। তবে আমি কি প্রকারে তাঁহাকে উত্তর দিব? কেমন করিয়া কথা বাছিয়া তাঁহাকে কহিব? ধার্ম্মিক হইলেও আমি উত্তর করিতে পারি না, আমার প্রতিবাদীর কাছে বিনতি করিতে হয়। আমি ডাকিলে যদিস্যাৎ তিনি উত্তর দেন, তথাপি তিনি যে আমার রবে কর্ণপাত করেন, আমার এমন বিশ্বাস জন্মিবে না। কেননা তিনি আমাকে ঝড়ে ভাঙ্গিয়া ফেলেন, অকারণে পুনঃপুনঃ ক্ষতবিক্ষত করেন। তিনি আমাকে শ্বাস টানিতে দেন না, বরং তিক্ততায় পরিপূর্ণ করেন। বিক্রমীর বলের কথা হইলে, দেখ, তিনি বিক্রমী, বিচারের কথা হইলে, কে আমার জন্য সময় নিরূপণ করিবে? যদিও আমি ধার্ম্মিক হই, আমার মুখই আমাকে দোষী করিবে; যদিও আমি সিদ্ধ হই, তাহাই আমার কুটিলতার প্রমাণ হইবে। আমি সিদ্ধ, আমার প্রাণ মান্য করি না, আপনার জীবনে আমার ঘৃণা লাগে। সকলই ত সমান, তাই আমি বলি, তিনি সিদ্ধ ও দুর্জ্জন উভয়কে সংহার করেন। কশা যদি হঠাৎ [মনুষ্যকে] মারিয়া ফেলে, তিনি নির্দ্দোষের পরীক্ষার হাস্য করিবেন। পৃথিবী দুর্জ্জনের হস্তে সমর্পিত হইয়াছে, তিনি তাহার বিচারকর্ত্তাদের মুখ আচ্ছাদন করেন; যদি না করেন, তবে এ কর্ম্ম কে করে? আমার দিন সকল ডাক অপেক্ষাও দ্রুতগামী; সে সকল উড়িয়া যায়, মঙ্গলের দর্শন পায় না। সে সকল চলিয়া যায়, যেমন দ্রুতগামী নৌকা চলে, যেমন ঈগল পক্ষী খাদ্যের উপরে আসিয়া পড়ে। যদি বলি, আমি বিলাপ ভুলিয়া যাইব, মুখের বিষণ্ণতা দূর করিব, প্রসন্নচিত্ত হইব, তথাপি আমার সকল ব্যাথায় আমি ভীত, আমি জানি, তুমি আমাকে নির্দ্দোষ জ্ঞান করিবে না। আমাকেই দোষী হইতে হইবে, তবে কেন বৃথা পরিশ্রম করিব? যদ্যপি হিমজলে গাত্র মার্জ্জন করি, যদ্যপি ক্ষার দিয়া হস্ত পরিষ্কার করি, তথাপি তুমি আমাকে ডোবায় মগ্ন করিবে, আমার নিজের বস্ত্রও আমাকে ঘৃণা করিবে। কেননা তিনি আমার ন্যায় মনুষ্য নহেন যে, তাঁহাকে উত্তর দিই, যে, তাঁহার সহিত একই বিচারস্থানে যাইতে পারি; আমাদের মধ্যে এমন কোন মধ্যস্থ নাই, যিনি আমাদের উভয়ের উপরে হস্তার্পণ করিবেন। তিনি আমার উপর হইতে আপনার দণ্ড দূর করুন, তাঁহার ভীষণতা আমাকে ব্যাকুল না করুক; তাহাতে আমি কথা কহিব, তাঁহা হইতে ভীত হইব না। কেননা আমি অন্তরে তাদৃশ নহি। আমার প্রাণ জীবনে ক্লান্ত হইয়াছে; আমি আপন দুঃখের কথা মুক্তকণ্ঠে বলিব, আমি প্রাণের তিক্ততায় কথা বলিব। আমি ঈশ্বরকে বলিব, আমাকে দোষী করিও না; আমার সহিত কি কারণে বিবাদ করিতেছ, তাহা আমাকে জ্ঞাত কর। এটী কি ভাল যে, তুমি উপদ্রব করিবে? তোমার হস্তনির্ম্মিত বস্তু তুমি তুচ্ছ করিবে? দুষ্টগণের মন্ত্রণায় প্রসন্ন হইবে? তোমার চক্ষু কি মাংসময়? তোমার দৃষ্টি কি মর্ত্ত্যের দৃষ্টির ন্যায়? তোমার আয়ু কি মর্ত্ত্যের আয়ুর ন্যায়? তোমার বৎসরসমূহ কি মনুষ্যের দিনসমূহের ন্যায়? সেই জন্য কি আমার অপরাধের অনুসন্ধান করিতেছ, আমার পাপের অন্বেষণ করিতেছ? তুমি ত জান, আমি দুষ্ট নহি, এবং তোমার হস্ত হইতে উদ্ধারকারী কেহ নাই। তোমার হস্ত আমাকে গড়িয়াছে, নিরমিয়াছে, আমার সর্ব্বাঙ্গ সুসংযুক্ত [করিয়াছে], তথাপি তুমি আমাকে সংহার করিতেছ। স্মরণ কর, তুমি মৃৎপাত্রের ন্যায় আমাকে গড়িয়াছ, আবার আমাকে কি ধূলিতে লীন করিবে? তুমি কি দুগ্ধের ন্যায় আমাকে ঢাল নাই? ছানার ন্যায় কি আমাকে ঘনীভূত কর নাই? তুমি আমাকে চর্ম্ম ও মাংস পরিহিত করিয়াছ, অস্থি ও শিরা দিয়া আমাকে বুনিয়াছ; তুমি আমাকে জীবনদান ও দয়া করিয়াছ, তব তত্ত্বাবধানে মম আত্মার পালন হইতেছে। তবু এ সমস্তই মনোমধ্যে গুপ্ত করিয়া রাখিয়াছ; আমি জানি, ইহা তোমার মনোরথ। আমি পাপ করিলে তুমি আমার প্রতি লক্ষ্য করিবে, আমার অপরাধ ক্ষমা করিবে না। আমি যদি দুষ্ট হই, আমার সন্তাপ হইবে; যদি ধার্ম্মিক হই, মস্তক তুলিতে পারিব না, আমি অবমাননায় পরিপূর্ণ হইয়াছি, আর আপনার দুঃখ দেখিতেছি। [মস্তক] তুলিলে তুমি সিংহের ন্যায় আমাকে মৃগয়া করিবে, আবার আমাতে তুমি আপনাকে আশ্চর্য্য দেখাইবে। তুমি আমার বিপরীতে নূতন নূতন সাক্ষী উপস্থিত করিবে, আমার প্রতি আপনার বিরক্তি বাড়াইবে; নূতন নূতন সৈন্যদল আমার প্রতিকূল। কেন আমাকে গর্ভ হইতে বাহির করিয়াছিলে? আমি তথায় প্রাণত্যাগ করিতাম, কাহারও নয়নগোচর হইতাম না। আমি অজাতের ন্যায় থাকিতাম, জঠর হইতেই কবরে নীত হইতাম। আমার দিন কি অল্প নয়? অতএব ক্ষান্ত হও, আমাকে ছাড়, ক্ষণকাল সান্ত্বনা লাভ করি, যে পর্য্যন্ত আমি সেই স্থানে না যাই, যথা হইতে আর ফিরিয়া আসিব না। তাহা তিমিরের ও মৃত্যুচ্ছায়ার দেশ, সেই দেশ ঘোর অন্ধকার, তিমিরময়, তাহা মৃত্যুচ্ছায়াব্যাপ্ত, পারিপাট্য-বিহীন, তথায় দীপ্তি অন্ধকারের সমান। পরে নামাথীয় সোফর উত্তর করিয়া কহিলেন, এত কথার কি কিছুই উত্তর দেওয়া যাইবে না? বাচালকে কি ধার্ম্মিক বলা যাইবে? তোমার দর্পে কি মনুষ্যেরা নীরব থাকিবে? তুমি বিদ্রূপ করিলে কি কেহ তোমাকে লজ্জা দিবে না? তুমি [ঈশ্বরকে] কহিতেছ, ‘আমার বাক্য শুদ্ধ, আমি তোমার দৃষ্টিতে শুচি।’ আহা! ঈশ্বর একবার কথা বলুন, তিনি তোমার বিরুদ্ধে আপন ওষ্ঠ খুলুন, তিনি প্রজ্ঞার গূঢ় তত্ত্ব তোমাকে জ্ঞাত করুন, কারণ বুদ্ধিকৌশল বহুবিধ; জানিও, ঈশ্বর তোমার অপরাধের অনেকটা ছাড়িয়া দেন। তুমি কি অনুসন্ধান দ্বারা ঈশ্বরকে পাইতে পার? সর্ব্বশক্তিমানের সম্পূর্ণ তত্ত্ব পাইতে পার? সে তত্ত্ব গগনবৎ উচ্চ; তুমি কি করিতে পার? পাতাল অপেক্ষাও অগাধ; তুমি কি জানিতে পার? পৃথিবী হইতেও তাহার পরিমাণ দীর্ঘ, সমুদ্র হইতেও তাহার পরিসর অধিক। তিনি যদি হঠাৎ আসিয়া বদ্ধ করেন, যদি বিচারসভা করেন, তবে তাঁহাকে কে নিবারণ করিতে পারে? কেননা তিনি অলীক লোকদিগকে জানেন, আলোচনা না করিয়াও অধর্ম্ম দেখেন। কিন্তু নিঃসার মনুষ্য জ্ঞানবিহীন, সে জন্মাবধি বনগর্দ্দভের শাবকের তুল্য। তুমি যদি আপনার চিত্ত স্থির কর, যদি তাঁহার অভিমুখে অঞ্জলি প্রসারণ কর; হস্তে অধর্ম্ম থাকিলে যদি তাহা দূর কর, অন্যায়কে তব তাম্বুতে বাস করিতে না দেও; তবে তুমি তোমার মুখ বিনা কলঙ্কে তুলিবে, তুমি সুস্থির থাকিবে, ভয় করিবে না। কারণ তুমি তোমার কষ্ট ভুলিয়া যাইবে, তাহা প্রবাহিত জলের ন্যায় মনে হইবে। তোমার জীবন মধ্যাহ্ন হইতেও বিমল হইবে, অন্ধকার হইলেও তাহা প্রভাতের ন্যায় হইবে। তুমি সাহস করিবে, কারণ প্রত্যাশা আছে, চারিদিকে তত্ত্ব লইয়া নির্ভয়ে শয়ন করিবে। আর তুমি শুইবে, কেহ তোমাকে ভয় দেখাইবে না, বরং অনেকে তোমার কাছে বিনতি করিবে। কিন্তু দুষ্টদের চক্ষু নিস্তেজ হইবে, তাহাদের আশ্রয় বিনষ্ট হইবে, তাহাদের আশা প্রাণত্যাগে পরিণত হইবে। পরে ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন, অবশ্য তোমরাই লোক! প্রজা তোমাদের সহিত মরিয়া যাইবে! কিন্তু তোমাদের ন্যায় আমারও বুদ্ধি আছে; তোমাদের হইতে আমি নিকৃষ্ট নহি; বাস্তবিক, এরূপ কথা কে না জানে? আমি প্রতিবাসীর হাস্যাস্পদ হইয়াছি; ঈশ্বরকে ডাকিলে তিনি যাহাকে উত্তর দিতেন, সেই ধার্ম্মিক সিদ্ধ ব্যক্তি হাস্যাস্পদ হইয়াছে। নিশ্চিন্ত লোকের জ্ঞানে বিপদ অবজ্ঞার বিষয়; যাহাদের পা পিছলিয়া যায়, তাহাদের জন্য তাহা প্রস্তুত। দস্যুদের তাম্বু শান্তিযুক্ত, ঈশ্বরের ক্রোধজনকেরা নির্ব্বিঘ্নে থাকে, ঈশ্বর তাহাদের হস্তে ধন দেন। পশুদিগকে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা তোমাকে শিক্ষা দিবে; আকাশের পক্ষীগণকে জিজ্ঞাসা কর, তাহারা তোমাকে বলিয়া দিবে; পৃথিবীকে বল, সে তোমাকে শিক্ষা দিবে, সমুদ্রের মৎস্যগণ তোমাকে বলিয়া দিবে। এ সকল দেখিয়া কে না জানে যে, সদাপ্রভুরই হস্ত ইহা সম্পন্ন করিয়াছে; তাঁহারই হস্তে সমস্ত জীবের প্রাণ, সমস্ত মানবজাতির আত্মা রহিয়াছে। রসনা যেমন খাদ্যের আস্বাদ লয়, তেমনি কর্ণ কি কথার পরীক্ষা করে না? প্রাচীনদের নিকটে প্রজ্ঞা আছে, দীর্ঘায়ু বুদ্ধিসমন্বিত। তাঁহারই নিকটে প্রজ্ঞা ও পরাক্রম আছে, পরামর্শ ও বুদ্ধি তাঁহারই। দেখ, তিনি ভাঙ্গিয়া ফেলিলে আর গড়া যায় না, তিনি মনুষ্যকে রুদ্ধ করিলে মুক্ত করা যায় না। দেখ, তিনি জল বদ্ধ করিলে তাহা শুষ্ক হয়, জল পাঠাইলে তাহা পৃথিবীকে লণ্ডভণ্ড করে। বল ও বুদ্ধিকৌশল তাঁহার, ভ্রান্ত ও ভ্রামক তাঁহার। তিনি মন্ত্রিগণকে সর্ব্বস্বহীন করিয়া লইয়া যান, তিনি বিচারকর্ত্তাদিগকে অবোধ করেন, তিনি রাজাদিগের কর্ত্তৃত্ববন্ধন মুক্ত করেন, তাঁহাদের কটিদেশে পটুকা বদ্ধ করেন, যাজকগণকে সর্ব্বস্বহীন করিয়া লইয়া যান, দৃঢ়মূলদিগকে উন্মূলন করেন। তিনি বিশ্বস্তদের কথা অন্যথা করেন, বৃদ্ধগণের বিবেচনা হরণ করেন। তিনি কর্ত্তাদের উপরে তুচ্ছতা ঢালিয়া দেন, বিক্রমীদের কটিবন্ধন খুলিয়া ফেলেন। তিনি অন্ধকার হইতে নিগূঢ়তত্ত্ব প্রকাশ করেন, মৃত্যুচ্ছায়াকে আলোর মধ্যে আনয়ন করেন। তিনি জাতিগণকে বাড়ান, আবার বিনাশ করেন, জাতিদিগকে প্রসারিত করেন, আবার লইয়া যান। তিনি পৃথিবীর জনাধ্যক্ষদের হৃদয় হরণ করেন, পথহীন মরুভূমিতে তাহাদিগকে ভ্রমণ করান। তাহারা আঁধারে হাঁতড়িয়া বেড়ায়, আলো পায় না; তিনি তাহাদিগকে মত্তের ন্যায় ভ্রমণ করান। দেখ, এ সকল আমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি, এই সকল স্বকর্ণে শুনিয়া বুঝিয়াছি। তোমরা যাহা জান, আমিও জানি, আমি তোমাদের হইতে নিকৃষ্ট নহি। কিন্তু আমি সর্ব্বশক্তিমানের সহিত কথা কহিতে চাই, ঈশ্বরের সহিত বিচার করিতে বাসনা করি। কিন্তু তোমরা ত নিতান্ত মিথ্যাবাক্য রচক, তোমরা সকলে অকর্ম্মণ্য চিকিৎসক। আহা! তোমরা একেবারে নীরব হইয়া থাক, ইহাই তোমাদের প্রজ্ঞা। বিনয় করি, আমার যুক্তি শ্রবণ কর, আমার ওষ্ঠাধরের তর্কে মন দেও। তোমরা কি ঈশ্বরের পক্ষে অন্যায়পূর্ব্বক কথা কহিবে? তাঁহার পক্ষে কি প্রতারণাপূর্ব্বক বাক্য বলিবে? তোমরা কি তাঁহার মুখাপেক্ষা করিবে? ঈশ্বরের পক্ষে কি বিবাদ করিবে? তিনি তোমাদের পরীক্ষা করিলে কি মঙ্গল হইবে? মনুষ্য যেমন মনুষ্যকে ভুলায়, তেমনি তোমরা কি তাঁহাকে ভুলাইবে? তিনি তোমাদিগকে অবশ্য অনুযোগ করিবেন, যদি তোমরা গোপনে মুখাপেক্ষা কর। তাঁহার মহত্ত্ব কি তোমাদিগকে ত্রাসযুক্ত করিবে না? তাঁহার ভয়ানকতায় কি তোমরা ভীত হও না? তোমাদের স্মরণীয় শ্লোকমালা ভস্মপ্রবাদ, তোমাদের দুর্গ সকল কর্দ্দম-দুর্গ। নীরব হও; আমাকে ছাড়, আমিই বলি, আমার যাহা হয় হউক। আমি কেন আমার মাংস দন্তে গ্রহণ করিব? কেন আমার প্রাণ আমার হস্তে রাখিব? যদিও তিনি আমাকে বধ করেন, তথাপি আমি তাঁহার অপেক্ষা করিব, কিন্তু তাঁহার সম্মুখে আপন পথের সমর্থন করিব। ইহাও আমার পরিত্রাণে পরিণত হইবে; কেননা পামর তাঁহার সম্মুখে আইসে না। মনোযোগ করিয়া আমার কথা শুন, আমার নিবেদন তোমাদের কর্ণগোচর হউক। দেখ, আমি আমার যুক্তি বিন্যাস করিলাম; আমি জানি যে, আমি নির্দ্দোষ হইব। বিচারে কে আমার প্রতিবাদ করিবে? করিলে আমি নীরব হইয়া প্রাণত্যাগ করিব। তুমি কেবল দুইটী কার্য্য আমার প্রতি করিও না, তাহাতে আমি তোমার সম্মুখ হইতে লুকাইব না; তোমার হস্ত আমা হইতে দূরে সরাইয়া লও, তোমার ভীষণতা আমাকে ভীত না করুক; তখন তুমি ডাকিও, আমি উত্তর করিব, কিম্বা আমি কথা কহিব, তুমি উত্তর দিও। আমার অপরাধ ও পাপ কত? আমার অধর্ম্ম ও পাপ আমাকে জ্ঞাত কর। তুমি কেন আপন মুখ লুকাইতেছ? কেন আমাকে তোমার শত্রু বলিয়া ধরিতেছ? তুমি কি বায়ুচালিত পত্র ত্রাসযুক্ত করিবে? তুমি কি শুষ্ক তৃণকে তাড়না করিবে? কারণ তুমি আমার বিরুদ্ধে তিক্ত কথা লিখিতেছ, আমাকে যৌবনের অপরাধের ফলভোগ করাইতেছ; তুমি আমার চরণ নিগড়ে বদ্ধ করিতেছ, আমার সমস্ত মার্গে লক্ষ্য রাখিতেছ, আমার পাদমূলের চারিদিকে আলি বাঁধিতেছ। আমি ক্ষয়শীল গলিত বস্তুর ন্যায়, আমি কীটকুট্টিত বস্ত্রের সদৃশ। মনুষ্য, অবলাজাত সকলে, অল্পায়ু ও উদ্বেগে পরিপূর্ণ। সে পুষ্পের ন্যায় প্রস্ফুটিত হইয়া ম্লান হয়, সে ছায়ার ন্যায় চলিয়া যায়, স্থির থাকে না; তবু তুমি কি ঈদৃশ প্রাণীর প্রতি চক্ষু মেলিবে? আমাকে তোমার সঙ্গে কি বিচারে আনিবে? অশুচি হইতে শুচির উৎপত্তি কে করিতে পারে? এক জনও পারে না। তাহার আয়ুর দিন নিরূপিত, তাহার মাসের সংখ্যা তোমার কাছে আছে, তুমি তাহার অলঙ্ঘনীয় সীমা স্থাপন করিয়াছ। অন্যত্র দৃষ্টি কর, সে বিরাম প্রাপ্ত হউক, বেতনজীবীর ন্যায় আপন দিন ভোগ করুক। কারণ বৃক্ষের আশা আছে, ছিন্ন হইলে তাহা পুনর্ব্বার পল্লবিত হইবে, তাহার কোমল শাখার অভাব হইবে না। যদ্যপি মৃত্তিকায় তাহার মূল পুরাতন হয়, ভূমিতে তাহার গুঁড়ি মরিয়া যায়, তথাচ জলের গন্ধ পাইলে তাহা পল্লবিত হয়, নবরোপিত বৃক্ষের ন্যায় শাখাবিশিষ্ট হয়। কিন্তু মানুষ মরিলে ক্ষয় পায়; মনুষ্য প্রাণত্যাগ করিয়া কোথায় থাকে? সমুদ্র হইতে জল চলিয়া যায়, নদী শুষ্ক হইয়া মরিয়া যায়; তদ্রূপ মনুষ্য শয়ন করিলে আর উঠে না, যাবৎ আকাশ লুপ্ত না হয়, সে জাগিবে না, নিদ্রা হইতে জাগরিত হইবে না। হায়, তুমি আমাকে পাতালে লুকাইয়া রাখিও, গুপ্ত রাখিও, যাবৎ তোমার ক্রোধ গত না হয়; আমার জন্য সময় নিরূপণ কর, আমাকে স্মরণ কর। মনুষ্য মরিয়া কি পুনর্জীবিত হইবে? আমি আপন সৈন্যবৃত্তির সমস্ত দিন প্রতীক্ষা করিব, যে পর্য্যন্ত আমার দশান্তর না হয়। পরে তুমি আহ্বান করিবে, ও আমি উত্তর দিব। তুমি আপন হস্তকৃতের প্রতি মমতা করিবে। কিন্তু এখন তুমি আমার পাদবিন্যাস গণিতেছ; আমার পাপের প্রতি কি লক্ষ্য রাখ না? আমার অধর্ম্ম থলীতে বদ্ধ ও মুদ্রাঙ্কিত, তুমি আমার অপরাধ বাঁধিয়া রাখিতেছ। সত্যই পর্ব্বত পড়িয়া বিলুপ্ত হয়, শৈলও আপন স্থান হইতে সরিয়া যায়, জল পাষাণকেও ক্ষয় করে, তাহার বন্যা ভূমির ধূলি ভাসাইয়া লইয়া যায়; তদ্রূপ তুমি মর্ত্ত্যের আশা ক্ষয় করিতেছ। তুমি চিরতরে তাহাকে পরাজয় করিতেছ, তাহাতে সে চলিয়া যায়, তুমি তাহার মুখের বিকার করিয়া তাহাকে দূর করিতেছ। তাহার সন্তানগণ গৌরবান্বিত হইলে সে তাহা জানে না, তাহারা অবনত হইলে সে তাহা টের পায় না। কেবল তাহার নিজের মাংস ব্যথিত হয়, তাহার নিজ প্রাণ ব্যাকুল হয়। পরে তৈমনীয় ইলীফস উত্তর করিয়া কহিলেন, জ্ঞানবান কি বায়ুবৎ জ্ঞানসহ উত্তর করিবে? সে কি পূর্ব্বীয় বায়ুতে উদর পূর্ণ করিবে? সে কি অনর্থক কথায় বিবাদ করিবে? সে কি নিষ্ফল বাক্য কহিবে? তুমি ত ভয় ছাড়িয়া দিতেছ, ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রার্থনানুরাগ ক্ষীণ করিতেছ। তোমারই মুখ তোমার অপরাধ ব্যক্ত করে, তুমি ধূর্ত্তদের জিহ্বা মনোনীত করিতেছ। তোমারই মুখ তোমাকে দূষিতেছে, আমি নই; তোমারই ওষ্ঠাধর তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতেছে। মনুষ্যদের মধ্যে তুমি কি প্রথমজাত? পর্ব্বতগণের পূর্ব্বে কি তোমার জন্ম হইয়াছিল? তুমি কি ঈশ্বরের গূঢ় মন্ত্রণা শুনিয়াছ? সমস্ত প্রজ্ঞা কি আত্মসাৎ করিয়াছ? আমরা যাহা না জানি, এমন কি জান? আমাদের যাহা অজ্ঞাত, এমন কি বুঝ? পক্বকেশ ও বৃদ্ধেরা আমাদের মধ্যে আছেন, তাঁহারা তোমার পিতা হইতেও বৃদ্ধ। ঈশ্বরের সান্ত্বনাবাক্য কি তোমার জ্ঞানে ক্ষুদ্র? তোমার সহিত কোমল আলাপ কি ক্ষুদ্র? তোমার মন কেন তোমাকে বিপথে টানে? তোমার চক্ষু কেন মিট্‌মিট্‌ করে? তুমি ত ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তোমার আত্মা ফিরাইতেছ, সেইরূপ কথা মুখ হইতে নির্গত করিতেছ। মর্ত্ত্য কি যে, সে পবিত্র হইতে পারে? অবলাজাত মনুষ্য কি ধার্ম্মিক হইতে পারে? দেখ, তিনি আপনার পবিত্রগণেও বিশ্বাস করেন না, তাঁহার দৃষ্টিতে আকাশও নির্ম্মল নহে। তবে যে ঘৃণার্হ ও ভ্রষ্ট, যে জন জলের মত অধর্ম্ম পান করে, সে কি! আমি তোমাকে বলি, আমার কথা শুন, আমি যাহা দেখিয়াছি তাহা প্রচার করিব। (জ্ঞানিগণ তাহা প্রকাশ করিয়াছেন, আপনাদের পিতৃলোক হইতে পাইয়া গুপ্ত রাখেন নাই; কেবল তাঁহাদিগকেই দেশ দত্ত হইয়াছিল, তাঁহাদের মধ্যে অপর লোক ভ্রমণ করিত না।) দুরাচার যাবজ্জীবন ক্লেশ পায়, দুর্দ্দান্তের বৎসর-সংখ্যা নিরূপিত আছে। তাহার কর্ণকুহরে ত্রাসের শব্দ আছে, শান্তির সময়ে বিনাশক তাহাকে আক্রমণ করে। সে বিশ্বাস করে না যে, অন্ধকার হইতে সে ফিরিয়া আসিবে, সে খড়্‌গের জন্য নির্দ্ধারিত। সে খাদ্যের চেষ্টায় ভ্রমণ করে, বলে, তাহা কোথায়? সে জানে, অন্ধকারের দিন তাহার সন্নিকট। সঙ্কট ও মনস্তাপ তাহাকে ভয় দেখায়, যুদ্ধার্থ সসজ্জ রাজার ন্যায় তাহার বিরুদ্ধে প্রবল হয়। কারণ সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করিয়াছে, সর্ব্বশক্তিমানের বিরুদ্ধে আস্ফালন করিয়াছে; সে উচ্চগ্রীব হইয়া তাঁহার বিরুদ্ধে দৌড়িতেছে; আপনার ঢালের স্থূল অংশ সকল দেখাইয়া দৌড়িতেছে। যেহেতু সে আপন মেদে মুখ ঢাকিত, সে আপন কটিদেশ হৃষ্টপুষ্ট করিত; সে বাস করিত উৎসন্ন নগরে, সেই সকল বাটীতে, যাহাতে কেহ বাস করিত না, যাহা প্রস্তররাশি হইবার জন্য নিরূপিত ছিল। সে ধনী হইবে না, তাহার সম্পত্তি থাকিবে না; তাহাদের ফল ভূমিতে নুইয়া পড়িবে না। সে অন্ধকার হইতে প্রস্থান করিবে না; অগ্নিশিখা তাহার শাখা শুষ্ক করিবে, সে তদীয় মুখের নিঃশ্বাসে উড়িয়া যাইবে। সে ভ্রান্ত হইয়া অলীকতায় বিশ্বাস না করুক, কেননা অলীকতাই তাহার বেতন হইবে; তাহার কালের পূর্ব্বেই তাহা পরিশোধ হইবে, তাহার শাখা সতেজ হইবে না। দ্রাক্ষালতার ন্যায় তাহার অপক্ব ফল ঝরিয়া পড়িবে, জিত বৃক্ষের ন্যায় তাহার পুষ্প খসিয়া পড়িবে। পামরদের মণ্ডলী বন্ধ্যা হইবে, অগ্নি উৎকোচ-তাম্বু সকল গ্রাস করিবে। তাহারা অনিষ্ট গর্ভে ধারণ করে, অন্যায় প্রসব করে, তাহাদের উদরে প্রতারণা প্রস্তুত হয়। পরে ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন, আমি এরূপ অনেক কথা শুনিয়াছি; তোমরা সকলে কষ্টজনক সান্ত্বনাকারী। বায়ুবৎ কথার কি শেষ হয়? উত্তর করিতে তোমাকে কিসে উত্তেজনা করে? আমিও তোমাদের ন্যায় কথা কহিতে পারি; আমার প্রাণের মত যদি তোমাদের প্রাণ হইত, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে কথা জুড়িতে পারিতাম; তোমাদের বিরুদ্ধে মস্তক নাড়িতে পারিতাম। কিন্তু মুখ দ্বারা তোমাদিগকে সবল করিতাম, আমার ওষ্ঠের সান্ত্বনায় তোমাদের শান্তি হইত। কথা কহিলেও আমার ক্লেশ নিবৃত্ত হয় না, নীরব থাকিলেও কি উপশম হয়? কিন্তু তিনি আমাকে অবসন্ন করিয়াছেন; তুমি আমার সমস্ত মণ্ডলী উৎসন্ন করিয়াছ। তুমি আমাকে ধরিয়াছ, আর তাহাই আমার প্রতিকূলে সাক্ষ্য দিতেছে; আমার কৃশতা আমার বিরুদ্ধে উঠিতেছে, আমার মুখের উপরে প্রমাণ দিতেছে। সে ক্রোধে আমাকে বিদীর্ণ করিয়াছে, ও আমাকে তাড়না করিয়াছে, সে আমার প্রতি দন্ত ঘর্ষণ করিয়াছে, আমার বিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে চক্ষু রক্তবর্ণ করে। লোকে আমার বিরুদ্ধে মুখ খুলিয়া হা করে, ধিক্কারপূর্ব্বক আমার গালে চপেটাঘাত করে, তাহারা আমার বিরুদ্ধে সমাগত হয়। ঈশ্বর আমাকে অন্যায়ীর কাছে সমর্পণ করেন, আমাকে দুষ্টদের হস্তে ফেলিয়া দেন। আমি শান্তিতে ছিলাম, তিনি আমাকে ভাঙ্গিয়াছেন, ঘাড় ধরিয়া আমাকে আছাড় মারিয়াছেন, আমাকে নিজ লক্ষ্যরূপে স্থাপন করিয়াছেন। তাঁহার ধনুর্দ্ধরেরা আমাকে বেষ্টন করে, তিনি আমার যকৃৎ বিদীর্ণ করেন, দয়া করেন না, তিনি মৃত্তিকায় আমার পিত্ত ঢালেন। তিনি ভঙ্গের পর ভঙ্গ দ্বারা আমাকে ভগ্ন করেন, তিনি বীরবৎ আমার বিরুদ্ধে দৌড়িয়া আইসেন। আমি নিজ চর্ম্মের উপরে চট বুনিয়াছি, ধূলাতে আপন শৃঙ্গ কলুষিত করিয়াছি। আমার মুখ রোদনে বিকৃত হইয়াছে, মৃত্যুচ্ছায়া আমার চক্ষুর পাতার উপরে আছে; তথাপি আমার হস্তে অত্যাচার নাই। আর আমার প্রার্থনা বিশুদ্ধ। পৃথিবী! আমার রক্ত আচ্ছাদন করিও না; আমার ক্রন্দন যেন বিশ্রামস্থান না পায়। দেখ, এখনও আমার সাক্ষ্য স্বর্গে আছে, আমার সাক্ষী উর্দ্ধস্থানে থাকেন। আমার মিত্রবর্গ আমাকে বিদ্রূপ করে; ঈশ্বরের উদ্দেশে আমার চক্ষু অশ্রুপাত করে; যেন তিনি ঈশ্বরের কাছে মনুষ্যের পক্ষে কথা কহেন, বন্ধুর কাছে মনুষ্য-সন্তানের পক্ষে কথা কহেন। কেননা আর কয়েক বৎসর গত হইলে যে পথে গেলে ফিরিব না, সেই পথে যাইব। আমার জীবাত্মা শেষ হইয়াছে, আমার আয়ু অবসান, কবর আমার নিমিত্ত প্রস্তুত। সত্য, বিদ্রূপকারিগণ আমার নিকটস্থ, তাহাদের বিরোধ আমার চক্ষুর্গোচরে আছে। বিনয় করি, তুমি অঙ্গীকার কর, তোমার কাছে তুমিই আমার প্রতিভূ হও; আর কে আছে যে, আমার হাতে তালী দিবে? তুমি ইহাদের চিত্ত বুদ্ধিরহিত করিয়াছ, তাই ইহাদিগকে উন্নত করিবে না। যে ব্যক্তি লুটরূপে আপনার বন্ধুদিগকে অর্পণ করে, তাহার সন্তানদের চক্ষু অন্ধ হইবে। উনি আমাকে লোকদের হাস্যাস্পদ করিয়াছেন, লোকে যাহার মুখে থুথু ফেলে, আমি এমন হইলাম। আমার চক্ষু মনস্থাপে নিস্তেজ হইয়াছে, আমার সর্ব্বাঙ্গ ছায়ার ন্যায় হইয়াছে। ইহাতে সরলাচারীরা মচৎকৃত হইবে, পামরের বিরুদ্ধে নির্দ্দোষ উত্তেজিত হইয়া উঠিবে। কিন্তু ধার্ম্মিক আপন পথে অগ্রসর হইবে, যে শুচিহস্ত, সে উত্তরোত্তর প্রবল হইবে। কিন্তু তোমরা সকলে এখন ফিরিয়া আইস, তোমাদের মধ্যে কাহাকেও জ্ঞানবান দেখি না। আমার আয়ু গত, আমার অভিপ্রায় সকল ভগ্ন, আমার মনোরথ সকল ভগ্ন হইয়াছে। ইহারা রাত্রিকে দিন করে, আলোকে অন্ধকারের নিকটস্থ বলে। যদি আমার ঘর বলিয়া পাতালের অপেক্ষা করি, যদি অন্ধকারে আমার শয্যা পাতিয়া থাকি, যদি ক্ষয়কে বলিয়া থাকি, তুমি আমার পিতা, কীটকে বলিয়া থাকি, তুমি আমার মাতা ও ভগিনী; তবে আমার আশা কোথায়? আর আমার আশা কে দেখিতে পাইবে? তাহা পাতালের অর্গল পর্য্যন্ত নামিয়া যাইবে, যখন একবার ধূলায় বিশ্রাম পাওয়া যায়। পরে শূহীয় বিল্‌দদ উত্তর করিয়া কহিলেন, তোমরা কত কাল বাক্য ধরিতে জাল পাতিবে? বিবেচনা কর, পরে আমরা উত্তর করিব। আমরা কি নিমিত্ত পশুবৎ গণিত হইয়াছি, তোমাদের দৃষ্টিতে অশুচি হইয়াছি? তুমি ত ক্রোধে আপনাকে বিদীর্ণ করিতেছ, তোমার নিমিত্ত কি পৃথিবী ত্যাগ করা যাইবে? শৈলকে কি স্বস্থান হইতে সরান যাইবে? দুষ্টের দীপ্তি ত নির্ব্বাণ হইবে, তাহার অগ্নিশিখা নিস্তেজ হইবে। তাহার তাম্বুতে আলোক অন্ধকার হইবে, তাহার উপরিস্থ প্রদীপ নিবিয়া যাইবে। তাহার বলের গতি খর্ব্ব করা যাইবে, সে আপনার পরামর্শ দ্বারাই নিপাতিত হইবে। সে ত আপন পাদসঞ্চারে জালমধ্যে চালিত হয়, সে ফাঁশ-কলের উপর দিয়া গমন করে। তাহার পাদমূল পাশে বদ্ধ হইবে, সে ফাঁদে ধৃত হইবে। তাহার জন্য ফাঁশ ভূমিতে লুক্কায়িত আছে, তাহার জন্য পথে কল পাতা আছে। চারিদিকে নানাবিধ ত্রাস তাহাকে ভয় দেখাইবে, পদে পদে তাহাকে তাড়না করিবে। তাহার বল ক্ষুধায় ক্ষীণ হইবে, বিপদ তাহার পার্শ্বে অবস্থিত থাকিবে। তাহা তাহার দেহের অঙ্গ সকল ভক্ষণ করিবে, মৃত্যুর জ্যেষ্ঠ তনয় তাহার সর্ব্বাঙ্গ ভক্ষণ করিবে; সে আপন বিশ্বাস-স্থল তাম্বু হইতে উৎপাটিত, এবং ত্রাস-রাজের কাছে নীত হইবে। তাহার অসম্পর্কীয়েরা তাহার তাম্বুতে বাস করিবে, তাহার বাসস্থানে গন্ধক ছড়ান যাইবে। নীচে তাহার মূল শুষ্ক হইবে, উপরে তাহার শাখা ম্লান হইবে। পৃথিবী হইতে তাহার স্মৃতি লুপ্ত হইবে, পথে কেহ তাহার নাম করিবে না। সে আলো হইতে অন্ধকারে দূরীকৃত হইবে, সে সংসার হইতে বিতাড়িত হইবে; স্বজাতীয়দের মধ্যে তাহার পুত্র কি পৌত্র থাকিবে না, তাহার প্রবাস-স্থানে কেহই অবশিষ্ট থাকিবে না, তাহার দুর্দিনে পশ্চিমদেশীয়েরা স্তম্ভিত হইবে, পূর্ব্বদেশীয়েরা ভয়ে রোমাঞ্চিত হইবে। সত্যই, অন্যায়ীদের বসতি এই রূপ; যে ঈশ্বরকে জানে না, তাহার এই দশা। পরে ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন, তোমরা কত ক্ষণ আমার প্রাণে ক্লেশ দিবে? বাক্যের আঘাতে আমাকে চূর্ণ করিবে? এই দশবার আমাকে তিরস্কার করিয়াছ; আমার প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহারে তোমাদের লজ্জা নাই। যাহা হউক, যদি আমি ভ্রম করিয়া থাকি, তবে সেই ভ্রমের ফল আমারই। তোমরা কি নিতান্তই আমার উপরে দর্প করিবে? আমার বিরুদ্ধে আমার গ্লানির দোহাই দিবে? এখন জান, ঈশ্বর আমার প্রতি অন্যায় করিয়াছেন, আপন জালে আমাকে ঘেরিয়াছেন। দেখ, আমি অন্যায়প্রযুক্ত ক্রন্দন করি, উত্তর পাই না; আর্ত্তনাদ করি, কিন্তু বিচার হইতেছে না। তিনি অলঙ্ঘনীয় বেড়া দ্বারা আমার পথ রুদ্ধ, এবং আমার মার্গ অন্ধকারাবৃত করিয়াছেন। তিনি আমার গৌরব-বসন খুলিয়া লইয়াছেন, আমার মস্তকের মুকুট হরণ করিয়াছেন। তিনি চারিদিকে আমাকে ভগ্ন করিয়াছেন, আমি গেলাম; তিনি বৃক্ষের ন্যায় আমার আশ্বাস উন্মূলন করিয়াছেন। তিনি আমার বিরুদ্ধে ক্রোধ প্রজ্বলিত করিয়াছেন, আমাকে এক জন বিপক্ষের ন্যায় গণনা করিয়াছেন। তাঁহার সৈন্য সকল একসঙ্গে আসিতেছে, তাহারা আমার বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধিতেছে, আমার তাম্বুর চারিদিকে শিবির স্থাপন করিয়াছে। তিনি মম জ্ঞাতিদিগকে আমা হইতে দূরে রাখিয়াছেন, আমার পরিচিতেরা অপরিচিতের ন্যায় হইয়াছে। আমার কুটুম্বগণ আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, আমার মিত্রগণ আমাকে ভুলিয়া গিয়াছে। আমার গৃহের প্রবাসীরা ও আমার দাসীগণ আমাকে অপরিচিতের ন্যায় জ্ঞান করে, আমি তাহাদের দৃষ্টিতে বিজাতীয় হইয়াছি। আমার দাসকে ডাকি, সে আমাকে উত্তর দেয় না, যদিও আমি নিজ মুখে তাহাকে বিনতি করি। আমার নিঃশ্বাস আমার ভার্য্যার ঘৃণিত, আমার আর্ত্তস্বর আমার সহোদরগণের ঘৃণিত। বালকেরাও আমাকে অবজ্ঞা করে, আমি উঠিলে তাহারা আমার বিরুদ্ধে কথা কহে। আমার সুহৃদ সকলে আমাকে ঘৃণা করে, আমার প্রিয়পাত্রেরা আমার প্রতি বিমুখ। আমার চর্ম্মে ও মাংসে অস্থি সংলগ্ন হইয়াছে, আমি দন্তের চর্ম্মাবশিষ্ট হইয়া বাঁচিয়া আছি। হে মম বন্ধুগণ, আমাকে কৃপা কর, কৃপা কর, কেননা ঈশ্বরের হস্ত আমাকে স্পর্শ করিয়াছে। ঈশ্বরের ন্যায় কেন আমাকে তাড়না কর? আমার মাংস ভক্ষণ করিতে কি ক্ষান্ত হইবে না? আহা, আমার কথা সকল যদি লিখিত হয়। সে সকল যদি পুস্তকে বিরচিত হয় যদি লৌহ-লেখনী ও সীসা দ্বারা পাষাণে তক্ষিত হইয়া অনন্ত কাল থাকে। কিন্তু আমি জানি, আমার মুক্তিকর্ত্তা জীবিত; তিনি শেষে ধূলির উপরে উঠিয়া দাঁড়াইবেন। আর আমার চর্ম্ম এইরূপে বিনষ্ট হইলে পর, তবু আমি মাংসবিহীন হইয়া ঈশ্বরকে দেখিব। আমি তাঁহাকে আপনার সপক্ষ দেখিব, আমারই চক্ষু দেখিবে, অন্যে নয়। বক্ষোমধ্যে আমার হৃদয় ক্ষীণ হইতেছে। তোমরা যদি বল, আমরা কেমন করিয়া উহাকে তাড়না করিব? আমার মধ্যে না কি মূলতত্ত্ব পাওয়া যায়, তবে তোমরা খড়্‌গ হইতে ভীত হও, কেননা খড়্‌গের দণ্ড ক্রোধময়, বিচার আছে, ইহা তোমাদের জানা উচিত। নামাথীয় সোফর উত্তর করিয়া কহিলেন, আমার চিন্তা উত্তর দিতে আমাকে উত্তেজনা করে, কারণ আমি অধৈর্য্য হইলাম। আমি নিজ অপমানসূচক উপদেশ শুনিলাম, আমার বুদ্ধি হইতে আত্মা আমাকে উত্তর যোগায়। তুমি কি ইহা জান না যে, কালের আরম্ভাবধি, পৃথিবীতে মনুষ্যের স্থাপনাবধি, দুষ্টগণের আনন্দগান ক্ষণমাত্রস্থায়ী, পামরের হর্ষ নিমেষমাত্রস্থায়ী? তাহার মহত্ত্ব যদি আকাশ পর্য্যন্ত উঠে, তাহার মস্তক যদি মেঘ স্পর্শ করে, তথাপি সে আপন বিষ্ঠার ন্যায় চিরতরে বিনষ্ট হইবে; যাহারা তাহাকে দেখিত, তাহারা বলিবে, সে কোথায়? সে স্বপ্নবৎ লুপ্ত হইবে, নিরুদ্দেশ হইবে; সে রাত্রিকালীন দর্শনের ন্যায় দূরীকৃত হইবে। যে চক্ষু তাহাকে দেখিত, সে আর দেখিবে না, তাহার বাসস্থান আর তাহাকে দেখিবে না। তাহার সন্তানগণ দরিদ্রদের কাছে দয়া চাহিবে, তাহার হস্ত তাহার সম্পত্তি ফিরাইয়া দিবে। তাহার অস্থি যৌবনের তেজে পরিপূর্ণ, কিন্তু তাহার সহিত তাহাও ধূলায় শয়ন করিবে। যদ্যপি দুষ্টতা তাহার মুখে মিষ্ট লাগে, আর সে তাহা জিহ্বার নীচে লুকাইয়া রাখে, যদ্যপি ভালবাসিয়া তাহা ত্যাগ না করে, কিন্তু মুখের মধ্যে রাখিয়া দেয়; তথাপি তাহার অন্ন উদরে গিয়া বিকৃত হয়, তাহার অন্তরে কালসর্পের গরলস্বরূপ হয়। সে ধন গ্রাস করিয়াছে, আবার তাহা বমন করিবে; ঈশ্বর তাহার উদর হইতে তাহা বাহির করিবেন; সে সর্পের গরল চুষিবে, বিষধরের জিহ্বা তাহাকে সংহার করিবে। সে নদী সকলের প্রতি দৃষ্টি করিবে না, মধু ও দধিপ্রবাহী স্রোত সকল দেখিবে না। সে আপন পরিশ্রমের ফল ফিরিয়া দিবে, গ্রাস করিবে না, সে নিজ লব্ধ সম্পত্তি অনুসারে আমোদ করিবে না। কারণ সে দরিদ্রগণকে উৎপীড়ন ও ত্যাগ করিত, সে যাহা নির্ম্মাণ করে নাই, এমন গৃহ কাড়িয়া লইত। তাহার উদরে শান্তি হইত না, সে আপন অভীষ্ট বস্তুর কিছুই রক্ষা করিতে পারিবে না তাহার গ্রাসে কিছু অবশিষ্ট থাকিত না, অতএব তাহার সুদশা থাকিবে না। সে পূর্ণ প্রাচুর্য্যের সময়ে কষ্টে পড়িবে, উপদ্রুত সকলের হস্ত তাহাকে আক্রমণ করিবে। সে যখন নিজ উদর পূর্ণ করিতে উদ্যত হয়, [ঈশ্বর] তাহার উপরে আপন ক্রোধাগ্নি নিক্ষেপ করিবেন, তাহার ভোজনকালে তাহার উপরে তাহা বর্ষণ করিবেন। সে লৌহাস্ত্র হইতে পলায়ন করিবে, কিন্তু পিত্তলের ধনুর্ব্বাণে বিদ্ধ হইবে। সে বাণ টানিলে তাহা তাহার অঙ্গ হইতে বাহির হয়, তাহার পিত্ত হইতে চক্‌মকে বাণাগ্র নির্গত হয়, নানাবিধ ত্রাস তাহাকে আক্রমণ করে। তাহার ধনরূপে সমুদয় অন্ধকার সঞ্চিত হয়, বিনা ব্যজনে অগ্নি তাহাকে গ্রাস করিবে। তাহার তাম্বুতে অবশিষ্ট সকলই ভস্ম করিবে। আকাশমণ্ডল তাহার অপরাধ ব্যক্ত করিবে, পৃথিবী তাহার প্রতিকূলে উঠিবে। তাহার বাটীর সম্পত্তি উড়িয়া যাইবে, তাহা ঈশ্বরের ক্রোধের দিনে গলিয়া যাইবে। ইহাই ঈশ্বর হইতে দুষ্ট মনুষ্যের লভ্য অংশ, ইহাই ঈশ্বর নিরূপিত তাহার অধিকার। পরে ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন, তোমরা মন দিয়া আমার কথা শুন, তাহাই তোমাদের সান্ত্বনা দান হইবে। আমার প্রতি সহিষ্ণুতা কর, আমিই কথা কহি; আমার কথনের পরে তুমি বিদ্রূপ করিও। আমার কাতরোক্তি কি মনুষ্যের কাছে? আমার মন অধৈর্য্য হইবে না কেন? তোমরা আমার প্রতি নিরীক্ষণ কর, স্তব্ধ হও, তোমাদের মুখে হাত দেও। মনে পড়িলেই আমি বিহ্বল হই, আমার মাংস কম্পিত হয়। দুর্জ্জনেরা কেন জীবিত থাকে, কেন বৃদ্ধ হয়, আবার ঐশ্বর্য্যে বীর্য্যবান্‌ হয়? তাহাদের বংশ তাহাদের সম্মুখে, তাহাদের সঙ্গে, তাহাদের সন্তান-সন্ততি তাহাদের দৃষ্টিতে স্থিরীকৃত হয়, তাহাদের বাটী শান্তিযুক্ত, ভয়রহিত, তাহাদের উপরে ঈশ্বরের দণ্ড নাই। তাহাদের বৃষ সঙ্গম করিলে তাহা ব্যর্থ হয় না; গাভী গাভীন হইলে তাহার গর্ভপাত হয় না। তাহারা আপন আপন শিশুদিগকে মেষপালের ন্যায় বাহিরে চালায়, তাহাদের সন্তানগণ নৃত্য করে। তাহারা তবল ও বীণা বাদ্য করে, বংশীর ধ্বনি শুনিলে আমোদ করে। তাহারা সুখে আপনাদের আয়ু যাপন করে। পরে এক নিমিষের মধ্যে পাতালে নামে। তথাপি তাহারা ঈশ্বরকে বলে, “ তুমি আমাদের নিকট হইতে দূর হও, কারণ আমরা তোমার পথ জানিতে চাহি না। সর্ব্বশক্তিমান কে যে, আমরা তাঁহার সেবা করিব? তাঁহার কাছে প্রার্থনা করিলে আমাদের কি লাভ?” দেখ, তাহাদের সুদশা তাহাদের হস্তগত নয়, দুষ্টদের পরামর্শ আমা হইতে দূরবর্ত্তী। কতবার দুষ্টদের প্রদীপ নির্ব্বাণ হয়? কতবার তাহাদের প্রতি বিপদ ঘটে, এবং [ঈশ্বর] ক্রোধে এমন ক্লেশ বন্টন করেন, যে, তাহারা বায়ুর সম্মুখস্থ শুষ্ক তৃণের ন্যায়, ও ঝটিকা-বিতাড়িত তুষের ন্যায় হয়? [তোমরা বল,] ঈশ্বর তাহার সন্তানগণের নিমিত্ত তাহার অধর্ম্ম সঞ্চয় করেন। তিনি তাহাকেই অধর্ম্মের ফল দিউন, তাহা হইলে সে তাহা জ্ঞাত হইবে, তাহার নিজের চক্ষু তাহার বিনাশ দেখুক, সে সর্ব্বশক্তিমানের ক্রোধ পান করুক। কারণ যখন তাহার মাসপর্য্যায় শেষ হইবে, তখন নিজ ভাবী কুলে তাহার কি সন্তোষ থাকিবে। কেহ কি ঈশ্বরকে জ্ঞান শিক্ষা দিবে? তিনি ত ঊর্দ্ধবাসীদেরও শাসন করেন। কেহ সম্পূর্ণ বলবান অবস্থায় মরে, সর্ব্ববিধ বিশ্রাম ও শান্তি থাকিতে মরে। তাহার ভাণ্ড সকল দুগ্ধে পরিপূর্ণ, তাহার অস্থির মজ্জা সতেজ থাকে। আর কেহ বা প্রাণে তিক্ত হইয়া মরে, মঙ্গলের আস্বাদ পায় না। ইহারা উভয়ে সমভাবে ধূলায় শয়ন করে, উভয়ে কীটে আচ্ছন্ন হয়। দেখ, আমি তোমাদের চিন্তা সকল জানি, আমার বিরুদ্ধে তোমাদের অন্যায় সঙ্কল্প সকল জানি। তোমরা কহিতেছ, “সেই ভাগ্যবানের বাটী কোথায়? সেই দুর্জ্জনদের বসতির তাম্বু কোথায়?” তোমরা কি পথিকদিগকে জিজ্ঞাসা কর নাই? উহাদের চিহ্ন সকল কি জান না? বিনাশের দিন পর্য্যন্ত দুর্জ্জন রক্ষিত হয়, ক্রোধের দিন পর্য্যন্ত তাহারা উত্তীর্ণ হয়। তাহার সম্মুখে তাহার পথ কে ব্যক্ত করিবে? তাহার কর্ম্মের ফল তাহাকে কে দিবে? আর সে কবরে নীত হইবে, লোকে তাহার কবর-স্থান চৌকি দিবে। তলভূমির মৃত্তিকা তাহার সুখকর বোধ হইবে, তাহার পরে সকলে তাহার অনুগামী হইবে, তাহার পূর্ব্বেও অসংখ্য লোক তদ্রূপ ছিল। তবে কেন আমাকে অনর্থক সান্ত্বনা করিতেছ? তোমাদের উত্তরে ত কেবল অসত্য রহিয়াছে। পরে তৈমনীয় ইলীফস উত্তর করিয়া কহিলেন, মনুষ্য কি ঈশ্বরের উপকারী হইতে পারে? বরং বিবেচক আপনারই উপকারী হয়। তুমি ধার্ম্মিক হইলে কি সর্ব্বশক্তিমানের আমোদ হয়? তুমি সিদ্ধ আচরণ করিলে কি তাঁহার লাভ হয়? তিনি কি তোমার ভয়হেতু তোমাকে অনুযোগ করেন, সেই জন্য কি তোমার সহিত বিচারে প্রবৃত্ত হন? তোমার দুষ্ক্রিয়া কি বিস্তর নয়? তোমার অপরাধের সীমা নাই। তুমি অকারণে নিজ ভ্রাতা হইতে বন্ধক লইতে, তুমি বস্ত্রহীনের বস্ত্র হরণ করিতে। তুমি পরিশ্রান্তকে পান করিতে জল দিতে না, ক্ষুধিতকে আহার দিতে অস্বীকার করিতে। কিন্তু দেশ বলবান লোকেরই অধিকার ছিল, সম্মানের পাত্রই তাহাতে বাস করিত। তুমি বিধবাদিগকে রিক্তহস্তে বিদায় করিতে, পিতৃহীনদিগের বাহু চূর্ণ করা হইত। এই কারণ তোমার চতুর্দ্দিকে ফাঁদ আছে, আকস্মিক ত্রাস তোমাকে বিহ্বল করে। অন্ধকার হইয়াছে, তুমি দেখিতে পাইতেছ না, জলের বন্যা তোমাকে আচ্ছন্ন করিয়াছে। ঈশ্বর কি উচ্চতম স্বর্গে থাকেন না? তারাগণের মাথা দেখ, সে সকল কেমন উচ্চ! কিন্তু তুমি কহিতেছ, ঈশ্বর কি জানেন? অন্ধকারে থাকিয়া তিনি কি শাসন করেন? নিবিড় মেঘ তাঁহার অন্তরাল, তিনি দেখেন না, তিনি গগনমণ্ডলে বিহার করেন। তুমি কি প্রাক্কালের সেই পথ ধরিবে, যাহার পথিকগণ দুর্জ্জন ছিল? তাহারা ত অকালে অপনীত হইল, তাহাদের ভিত্তিমূল বন্যায় ভাসিয়া গেল। তাহারা ঈশ্বরকে বলিত, আমাদের নিকট হইতে দূর হও; সর্ব্বশক্তিমান্‌ আমাদের কি করিবেন? তবু তিনি তাহাদের গৃহ উত্তম দ্রব্যে পূর্ণ করিতেন; কিন্তু দুষ্টদের পরামর্শ আমা হইতে দূরবর্ত্তী। ইহা দেখিয়া ধার্ম্মিকগণ আনন্দ করে, নির্দ্দোষ লোকে উহাদিগকে ঠাট্টা করিয়া বলে, “ সত্যই আমাদের বিপক্ষগণ বিনষ্ট হইয়াছে, অগ্নি উহাদের অবশেষ গ্রাস করিয়াছে।” বিনয় করি, ঈশ্বরের সহিত পরিচিত হও, শান্তি পাইবে; তাহা হইলে মঙ্গল তোমার কাছে আসিবে। তাঁহার মুখ হইতে ব্যবস্থা গ্রহণ কর, তাঁহার বাক্য হৃদয়মধ্যে রাখ। সর্ব্বশক্তিমানের প্রতি ফিরিলে তুমি সংগঠিত হইবে, তোমার তাম্বু হইতে অন্যায় দূর কর। ধূলার মধ্যেই কাঞ্চন রাখ, স্রোতোমার্গস্থ প্রস্তরসমূহের মধ্যে ওফীরের সুবর্ণ রাখ; তাহাতে সর্ব্বশক্তিমানই তোমার কাঞ্চন হইবেন, তোমার উজ্জ্বল রৌপ্যস্বরূপ হইবেন। তখন তুমি সর্ব্বশক্তিমানে আমোদ করিবে, ঈশ্বরের প্রতি মুখ তুলিতে পারিবে; তাঁহার কাছে বিনতি করিবে, তিনি তোমার কথা শুনিবেন, তুমি আপন মানত সকল পূর্ণ করিবে। তুমি কিছু মনস্থ করিলে তাহা তোমার পক্ষে সফল হইবে, তোমার পথে দীপ্তি আলো প্রদান করিবে। অবনত হইলে তুমি কহিবে, উন্নতি হইবে, আর তিনি অধোমুখের পরিত্রাণ করিবেন। যে ব্যক্তি নির্দ্দোষ নয়, তাহাকেও তিনি উদ্ধার করিবেন, তোমার হস্তের শুচিতায় সে উদ্ধার পাইবে। তখন ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন, আজিও আমার বিলাপ তীব্র; আমার কাতরতা হইতে আমার পীড়া ভারী। আহা! যদি তাঁহার উদ্দেশ পাইতে পারি, যদি তাঁহার আসনের নিকটে যাইতে পারি, তবে আমি তাঁহার সম্মুখে আপন বিচার বিন্যাস করিব, আমি নানা হেতুবাদে আপন মুখ পূর্ণ করিব। তিনি কি কি কথায় উত্তর দিবেন, তাহা জানিব, তিনি আমাকে কি বলিবেন, তাহা বুঝিব। তিনি কি আপন মহাপরাক্রমে আমার সহিত উত্তর প্রত্যুত্তর করিবেন? না, তিনি আমার প্রতি মনোযোগ করিবেন। তথায় সরল লোক তাঁহার সহিত বিচার করিতে পারে, এবং আমি আপন বিচারকর্ত্তা হইতে চিরতরে উদ্ধার পাইতে পারি। দেখ, আমি অগ্রসর হই, কিন্তু তিনি তথায় নাই, পশ্চাদ্দিকে যাই, তাঁহাকে দেখিতে পাই না; বামদিকে যাই; যখন তিনি কার্য্য করেন, কিন্তু তাঁহার দর্শন পাই না; তিনি দক্ষিণ দিকে আপনাকে গোপন করেন, আমি তাঁহাকে দেখিতে পাই না। তথাচ তিনি আমার অবলম্বিত পথ জানেন, তিনি আমার পরীক্ষা করিলে আমি সুবর্ণের ন্যায় উত্তীর্ণ হইব। আমার পদ তাঁহার পদচিহ্ন ধরিয়া চলিয়াছে, তাঁহার পথে রহিয়াছি, বিপথগামী হই নাই। তাঁহার ওষ্ঠনির্গত আজ্ঞা হইতে আমি পরাঙ্মুখ হই নাই, আমার প্রয়োজনীয় যাহা, তদপেক্ষা তাঁহার মুখের বাক্য সঞ্চয় করিয়াছি। কিন্তু তিনি একাগ্রচিত্ত; কে তাঁহাকে ফিরাইতে পারে? তিনি যাহা ইচ্ছা, তাহাই করেন। তিনি, আমার জন্য যাহা নিরূপিত, তাহা সফল করেন, এবং এইরূপ অনেক কর্ম্ম তাঁহার কাছে রহিয়াছে। এই কারণ আমি তাঁহার সাক্ষাতে বিহ্বল হই; যখন বিবেচনা করি তাঁহা হইতে ভীত হই। ঈশ্বরই আমার হৃদয় মূর্চ্ছিত করিয়াছেন, সর্ব্বশক্তিমান্‌ আমাকে বিহ্বল করিয়াছেন, কারণ আমি অন্ধকারপ্রযুক্ত অবসন্ন হইয়াছি, এমন নয়, ঘোর অন্ধকারে আমার মুখ আচ্ছন্ন বলিয়া নয়। সর্ব্বশক্তিমান্‌ হইতে কেন সময় নিরূপিত হয় না? যাহারা তাঁহাকে জানে, তাহারা কেন তাঁহার দিন দেখিতে পায় না? কেহ কেহ ভূমির আলি সরাইয়া দেয়, তাহারা সবলে মেষপাল হরণ করিয়া চরায়। তাহারা পিতৃহীনদিগের গর্দ্দভ লইয়া যায়, তাহারা বিধবার গোরু বন্ধক রাখে। তাহারা দরিদ্রদিগকে পথ হইতে তাড়াইয়া দেয়; দেশের দীনহীনেরা একেবারে লুকাইয়া থাকে। দেখ, প্রান্তরস্থ বনগর্দ্দভ সকলের ন্যায় তাহারা নিজ কর্ম্মে গিয়া গ্রাসের অন্বেষণ করে; জঙ্গল তাহাদের সন্তানদের জন্য খাদ্য যোগায়। তাহারা ক্ষেত্রে উহার পশুভক্ষ্য শস্য ছেদন করে, দুর্জ্জনের দ্রাক্ষাক্ষেত্রে অবশিষ্ট ফল চয়ন করে; বস্ত্রাভাবে উলঙ্গ হইয়া রাত্রি যাপন করে, শীতকালে তাহাদের আচ্ছাদনমাত্র থাকে না। তাহারা পর্ব্বতের বৃষ্টিতে ভিজে, আশ্রয় না থাকায় শৈলের শরণ লয়। কেহ কেহ পিতৃহীনকে মাতার স্তন হইতে কাড়িয়া লয়, দরিদ্রের সামগ্রী বন্ধক রাখে। তাই ইহারা বস্ত্রাভাবে উলঙ্গ হইয়া বেড়ায়, ক্ষুধিত হইয়া শস্যের আটি বহন করে। ইহারা উহাদের প্রাচীরের ভিতরে তৈল প্রস্তুত করে, দ্রাক্ষা মর্দ্দন করিয়া তৃষ্ণার্ত্ত হয়। লোকাকীর্ণ নগরমধ্যে লোকেরা কোঁকায়, আহত লোকের প্রাণ চীৎকার করে, তথাপি ঈশ্বর এই দোষে মনোযোগ করেন না। তাহারা আলোক-বিদ্রোহীদের দলভুক্ত, তাহারা তাহার গতি জানে না, তাহারা তাহার পথে থাকে না। রাত্রি-প্রভাতে হত্যাকারী উঠে, দুঃখী ও দীনহীনকে মারিয়া ফেলে, রাত্রিকালে সে চোরের সমান হয়। পারদারিকের চক্ষুও সন্ধ্যাকালের অপেক্ষা করে; সে বলে, কাহারও চক্ষু আমাকে দেখিতে পাইবে না; আর সে আপন মুখ আচ্ছাদন করে। তাহারা অন্ধকারে লোকের গৃহে সিঁধ কাটে, দিনমানে তাহারা লুক্কায়িত থাকে; তাহারা দীপ্তি জানে না। প্রাতঃকাল তাহাদের সকলের পক্ষে মৃত্যুচ্ছায়ার ন্যায়, কারণ তাহারা মৃত্যুচ্ছায়ার ভয়ানকতা জানে। এরূপ লোক স্রোতের বেগে চালিত তৃণস্বরূপ; দেশে তাহাদের অধিকার শাপগ্রস্ত হয়, তাহারা আর দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পথে বিহার করে না। অনাবৃষ্টি ও গ্রীষ্ম যেমন হিমানী-জলকে, পাতাল তেমনি পাপীদিগকে হরণ করে। গর্ভ তাহাদিগকে ভুলিয়া যাইবে, তাহারা কীটের সুস্বাদু ভক্ষ্য হইবে, তাহারা কাহারও স্মরণে থাকিবে না; বৃক্ষের মত অন্যায় ভাঙ্গিয়া পড়িবে। সে নিঃসন্তান বন্ধ্যা স্ত্রীকে গ্রাস করে, সে বিধবার প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করে না। [ঈশ্বর] শক্তি দ্বারা পরাক্রমীদিগকে আকর্ষণ করেন, তিনি উঠিলে কাহারও জীবনের আশা থাকে না। তিনি কাহাকে আশ্রয় দিলে সে নির্ভয়ে থাকে; কিন্তু তাহাদের পথে তাঁহার দৃষ্টি থাকে। তাহারা উচ্চ হয়, ক্ষণকাল গেলে তাহারা নাই, তাহারা নত হয়, অন্য সকলের ন্যায় অপনীত হয়, শস্যের শীষাগ্রের ন্যায় ছিন্ন হয়। যদি এরূপ না হয়, কে আমাকে মিথ্যাবাদী করিবে? কে আমার কথা নিরর্থক বলিয়া দেখাইবে? পরে শূহীয় বিল্‌দদ উত্তর করিয়া কহিলেন, প্রভুত্ব ও ভয়ানকতা তাঁহার, তিনি আপন উচ্চস্থানে থাকিয়া শাস্তি বিধান করেন। তাঁহার সৈন্যদল কি গণনা করা যায়? তাঁহার দীপ্তি কাহার উপরে না উঠে? তবে ঈশ্বরের কাছে মর্ত্ত্য কেমন করিয়া ধার্ম্মিক হইবে? অবলার সন্তান কেমন করিয়া বিশুদ্ধ হইবে? দেখ, তাঁহার দৃষ্টিতে চন্দ্রও নিস্তেজ, তারাগণও নির্ম্মল নহে; তবে কীটসদৃশ মর্ত্ত্য কি? কৃমিসদৃশ মনুষ্য-সন্তান কি? তখন ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন, তুমি বলহীনের কেমন সাহায্য করিলে! দুর্ব্বল বাহুকে কেমন নিস্তার করিলে! প্রজ্ঞাহীনকে কেমন পরামর্শ দিলে! বুদ্ধিকৌশল কেমন প্রচুররূপে প্রকাশ করিলে! তুমি কাহার কাছে কথা কহিলে? তোমা হইতে কাহার নিঃশ্বাস নির্গত হইল? প্রেতগণ কম্পিত হয়, জলরাশির ও তন্নিবাসীদের নীচে। তাঁহার সম্মুখে পাতাল অনাবৃত, বিনাশ-স্থান অনাচ্ছাদিত। তিনি শূন্যের উপরে উত্তর কেন্দ্র বিস্তার করিয়াছেন, অবস্তুর উপরে পৃথিবীকে ঝুলাইয়াছেন, তিনি স্বীয় নিবিড় মেঘে জল বদ্ধ করেন, তথাপি জলধর তাহার ভারে বিদীর্ণ হয় না। তিনি নিজ সিংহাসনের মুখ আচ্ছাদন করেন, আপন মেঘ দ্বারা তাহা আবৃত করেন। তিনি জলরাশির উপর চক্ররেখা লিখিয়াছেন, অন্ধকার ও দীপ্তির মধ্যবর্ত্তী সীমা পর্য্যন্ত। গগনমণ্ডলের স্তম্ভ সকল কম্পিত হয়, তাঁহার ভর্ৎসনায় চমকিয়া উঠে। তিনি আপন পরাক্রমে সমুদ্রকে উত্তেজিত করেন, আপন বুদ্ধিতে গর্ব্বীকে আঘাত করেন। তাঁহার শ্বাসে আকাশ পরিষ্কার হয়; তাঁহারই স্তম্ভ পলায়মান নাগকে বিদ্ধ করিয়াছে। দেখ, এই সকল তাঁহার মার্গের প্রান্ত; তাঁহার বিষয়ে কাকলীমাত্র শুনা যায়; কিন্তু তাঁহার পরাক্রমের গর্জ্জন কে বুঝিতে পারে? পরে ইয়োব পুনর্ব্বার কথা প্রসঙ্গ করিলেন, বলিলেন, জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য—যিনি আমার বিচার অগ্রাহ্য করিয়াছেন, সর্ব্বশক্তিমানের দিব্য—যিনি আমার প্রাণ তিক্ত করিয়াছেন, (কারণ আমার মধ্যে নিঃশ্বাস এখনও সম্পূর্ণ আছে, আমার নাসিকায় ঈশ্বরীয় প্রাণবায়ু আছে;) নিশ্চয়ই আমার ওষ্ঠ অন্যায় কহিবে না, আমার জিহ্বা প্রতারণা উচ্চারণ করিবে না। আমি তোমাদিগকে ধার্ম্মিক বলি, এমন যেন না হয়; প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা ত্যাগ করিব না। আমার ধার্ম্মিকতা আমি রক্ষা করিব, ছাড়িব না। আমি জীবিত থাকিতে আমার মন আমাকে ধিক্কার দিবে না। আমার শত্রু দুর্জ্জনের তুল্য হউক, যে আমার বিরুদ্ধে উঠে, সে অন্যায়ীর সমান হউক। বস্তুতঃ পামর ধন সঞ্চয় করিলেও তাহার প্রত্যাশা কি? কেননা ঈশ্বর তাহার প্রাণ হরণ করিবেন। যখন তাহার সঙ্কট ঘটে, ঈশ্বর কি তাহার ক্রন্দন শুনিবেন? সে কি সর্ব্বশক্তিমানে আমোদ করে? নিত্য কি ঈশ্বরকে আহ্বান করে? আমি ঈশ্বরের হস্তের বিষয়ে তোমাদিগকে উপদেশ দিব, সর্ব্বশক্তিমানের নিকটে যাহা আছে, তাহা গোপনে রাখিব না। দেখ তোমরা সকলেই তাহা দেখিয়াছ, তবে কেন এমন অলীক হইয়া পড়িয়াছ? দুষ্ট লোক ঈশ্বর হইতে এই ভাগ্য পায়, সর্ব্বশক্তিমান্‌ হইতে দুর্দ্দান্তেরা এই অধিকার লাভ করে। এমন লোকেরা পুত্রবাহুল্য হইলে খড়্‌গে নষ্ট হইবে, তাহার সন্তানসন্ততি ভক্ষ্যে তৃপ্ত হইবে না; তাহার অবশিষ্টেরা মারী দ্বারা কবরস্থ হইবে; তাহার বিধবাগণ রোদন করিবে না। সে যদিও ধূলির ন্যায় রৌপ্য সঞ্চয় করে, যদিও কর্দ্দমের ন্যায় পরিচ্ছদ প্রস্তুত করে, তবু প্রস্তুত করিলেও ধার্ম্মিক সেই বস্ত্র পরিবে, নির্দ্দোষ সেই রৌপ্য বিভাগ করিয়া লইবে। তাহার নির্ম্মিত গৃহ তন্তুকীটের বাসার তুল্য, তাহা ক্ষেত্ররক্ষকের কৃত কুঁড়িয়ার তুল্য। সে ধনী হইয়া শয়ন করে, কিন্তু সংগৃহীত হইবে না; সে চক্ষু উন্মীলন করে, আর সে নাই। জলরাশির ন্যায় ত্রাস তাহাকে আক্রমণ করিবে; রাত্রিতে তাহাকে ঝড়ে উড়াইয়া লইবে। পূর্ব্বীয় বায়ু তাহাকে তুলিয়া লয়, সে চলিয়া যায়, তাহা স্বস্থান হইতে তাহাকে দূরে নিক্ষেপ করে। [ঈশ্বর] তাহার উপরে বাণ ত্যাগ করিবেন, দয়া করিবেন না; সে তাঁহার হস্ত এড়াইবার জন্য পলায়ন করিবে। লোকে তাহাকে হাততালি দিবে, শিশ্‌ দিয়া তাহাকে স্বস্থান হইতে দূর করিবে। বাস্তবিক রৌপ্যের আকর আছে, সুবর্ণ পরিষ্কারের স্থানও আছে; ধূলি হইতে লৌহ উদ্ধৃত হয়, গলিত প্রস্তর হইতে পিত্তল পাওয়া যায়। মনুষ্য অন্ধকার নিঃশেষিত করে, অন্ধকারে ও মৃত্যুচ্ছায়াতে যে সকল পাথর আছে, সে প্রান্ত পর্য্যন্ত সে সকল অনুসন্ধান করে। তাহারা বাসস্থান ছাড়িয়া আকর খনন করে, [মানুষের] চরণ তাহাদিগকে ভুলিয়া যায়, তাহারা মনুষ্যদের হইতে দূরে ঝুলিতে ও দুলিতে থাকে; মৃত্তিকা হইতে শস্যের উৎপত্তি হয়, তাহার অধোভাগ যেন অগ্নি দ্বারা লণ্ডভণ্ড হয়। তাহার প্রস্তর নীলকান্ত মণির জন্মস্থান, তাহার ধূলি সুবর্ণসম্বলিত। সেই পথ চিলের অজ্ঞাত, তাহা শকুনির চক্ষুর অগোচর; দর্পী পশুগণ তাহা দলিত করে নাই, কেশরী তথায় পদার্পণ করে নাই। মনুষ্য দৃঢ় শৈলে হস্তক্ষেপ করে, পর্ব্বতদিগকে সমূলে উল্টাইয়া ফেলে। সে শৈলের মধ্যে স্থানে স্থানে খাল কাটে, তাহার চক্ষু সর্ব্বপ্রকার মণি দর্শন করে। সে নদীর জলক্ষরণ বন্ধ করে, যাহা গুপ্ত আছে, তাহা সে দীপ্তিতে আনে। কিন্তু প্রজ্ঞা কোথায় পাওয়া যায়? সুবিবেচনার স্থানই বা কোথায়? মনুষ্য তাহার মূল্য জানে না, জীবিতদের দেশে তাহা পাওয়া যায় না। জলধি বলে, তাহা আমাতে নাই; সমুদ্র বলে, তাহা আমার কাছে নাই। তাহা উত্তম সুবর্ণ দ্বারাও প্রাপ্ত হওয়া যায় না, তাহার মূল্য বলিয়া রৌপ্যও তৌল করা যায় না। ওফীরের সুবর্ণ তাহার সমতুল্য নয়, বহুমুল্য গোমেদক ও নীলকান্তমণিও নয়। স্বর্ণ ও কাচ তাহার সমান হইতে পারে না, তাহার পরিবর্ত্তে কাঞ্চনের পাত্র দত্ত হইবে না। তাহার কাছে প্রবাল ও স্ফটিকের নাম করা যায় না, পদ্মরাগমণির মূল্য অপেক্ষাও প্রজ্ঞার মূল্য অধিক। কূশদেশীয় পীতমণিও তাহার সমান নয়, নির্ম্মল সুবর্ণও তাহার সমতুল্য হয় না। অতএব প্রজ্ঞা কোথা হইতে আইসে? সুবিবেচনার স্থানই বা কোথায়? তাহা সমস্ত সজীব প্রাণীর চক্ষু হইতে গুপ্ত, তাহা আকাশের পক্ষীর অদৃশ্য। বিনাশ ও মৃত্যু বলে, আমরা স্বকর্ণে তাহার কীর্ত্তি শুনিয়াছি। ঈশ্বরই তাহার পথ জানেন; তিনিই তাহার স্থান জ্ঞাত আছেন; কেননা তিনি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত দেখেন, সমস্ত আকাশমণ্ডলের অধঃস্থানে তাঁহার দৃষ্টি যায়। তিনি যখন বায়ুর গুরুত্ব নিরূপণ করিলেন, যখন পরিমাণ দ্বারা জল পরিমিত করিলেন, যখন তিনি বৃষ্টির নিয়ম নিরূপণ করিলেন, বিদ্যুৎ ও মেঘগর্জ্জনের পথ স্থির করিলেন, তখন প্রজ্ঞাকে দেখিলেন ও প্রচার করিলেন, তাহা স্থাপন করিলেন, তাহার সন্ধানও করিলেন; আর তিনি মনুষ্যকে কহিলেন, দেখ, প্রভুর ভয়ই প্রজ্ঞা, দুষ্ক্রিয়া হইতে সরিয়া যাওয়াই সুবিবেচনা। পরে ইয়োব পুনর্ব্বার কথা প্রসঙ্গ করিলেন, বলিলেন, আহা! যদি আমি সেইরূপ থাকিতাম, যেমন পূর্ব্বকার মাসপর্য্যায়ে ছিলাম! যেমন পূর্ব্বকার দিনপর্য্যায়ে ছিলাম, যখন ঈশ্বর আমাকে চৌকি দিতেন। তখন আমার মাথার উপরে তাঁহার প্রদীপ জ্বলিত, তাঁহার আলোকে আমি অন্ধকারেও চলিতাম। আমি উত্তম অবস্থায় ছিলাম, ঈশ্বরের গূঢ় মন্ত্রণা আমার তাম্বুর উপরে থাকিত; তখন সর্ব্বশক্তিমান্‌ আমার সহায় ছিলেন, আমার সন্তানগণ আমার চারিদিকে ছিল। আমার পদচিহ্ন ক্ষীরে প্রক্ষালিত হইত, আমার জন্য শৈল তৈলের নদী বহাইত। আমি নগরের দিকে গিয়া পুরদ্বারে উঠিতাম, চকে আমার আসন প্রস্তুত করিতাম, যুবকগণ আমাকে দেখিয়া লুকাইত, বৃদ্ধেরা উঠিয়া দাঁড়াইতেন; অধ্যক্ষগণ বাক্য কথন হইতে নিবৃত্ত হইতেন, আপন আপন মুখে হাত দিয়া থাকিতেন; বড় লোকেরা অবাক হইয়া থাকিতেন, তাঁহাদের জিহ্বা তালুতে লাগিয়া থাকিত; আমার কথা শুনিলে কর্ণ মম সাধুবাদ করিত, আমাকে দেখিলে চক্ষু মম পক্ষে সাক্ষ্য দিত। কারণ আমি আর্ত্তনাদকারী দুঃখীকে, এবং পিতৃহীন ও অসহায়কে উদ্ধার করিতাম। নষ্টকল্পের আশীর্ব্বাদ আমার উপরে বর্ত্তিত; আমি বিধবার চিত্তকে আনন্দগান করাইতাম। আমি ধার্ম্মিকতা পরিতাম, আর তাহা আমাকে পরিত; আমার ন্যায়বত্তা পরিচ্ছদ ও উষ্ণীষস্বরূপ ছিল। আমি অন্ধের চক্ষু ছিলাম, আমি খঞ্জের চরণ ছিলাম। আমি দরিদ্রগণের পিতা ছিলাম; যাহাকে না জানিতাম, তাহারও বিচারের তদন্ত করিতাম; আমি অন্যায়ীর চোয়ালি ভগ্ন করিতাম, তাহার দন্ত হইতেই শিকার উদ্ধার করিতাম। তখন কহিতাম, আমি নিজ বাসার মধ্যে মরিব; আমার দিন বালুকার ন্যায় বহুসংখ্যক হইবে। জলের ধারে আমার মূল বিস্তৃত হয়, সমস্ত রাত্রি আমার শাখায় শিশির থাকে, আমার গৌরব আমাতে সতেজ থাকে, আমার ধনুক আমার হস্তে নূতনীকৃত হয়। লোকে আমারই বাক্য শুনিত, প্রতীক্ষা করিত, আমার পরামর্শের জন্য নীরব হইয়া থাকিত। আমার কথার পরে তাহারা আর কথা বলিত না; মম বাক্য তাহাদের উপরে ফোটা ফোটা পড়িত। তাহারা যেমন বৃষ্টির, তেমনি আমার প্রতীক্ষা করিত; যেন শেষ বর্ষার জন্য মুখ বিস্তার করিত। আমি তাহাদের প্রতি হাসিলে তাহারা বিশ্বাস করিত না, তাহারা আমার মুখের দীপ্তি নিস্তেজ করিত না। আমি তাহাদের পথ মনোনীত করিতাম, ও প্রধানের ন্যায় বসিতাম; সৈন্যদল মধ্যে যেমন রাজা, তেমনি থাকিতাম, শোকার্ত্তদের সান্ত্বনাকারীর ন্যায় থাকিতাম। সম্প্রতি, যাহারা আমা হইতে অল্পবয়স্ক, তাহারা আমাকে পরিহাস করে; আমি তাহাদের পিতাদিগকে আমার পালরক্ষক কুকুরদের সহিত রাখিতেও অবজ্ঞা করিতাম। তাহাদের ভুজবলে আমার কি ফল হইতে পারে? তাহাদের তেজ ত নষ্ট হইয়াছে। তাহারা দীনতায় ও অন্নাভাবে অসাড় হইয়া পড়ে, উৎসন্নতা ও শূন্যতার ঘোরে শুষ্কভূমি চর্ব্বণ করে; তাহারা ঝোড়ের নিকটে বিস্বাদু শাক তুলে, রেতম বৃক্ষের শিকড় তাহাদের ভক্ষ্য দ্রব্য। তাহারা মানব-সমাজ হইতে বিতাড়িত হয়, যেমন চোরের, তেমনি লোকে তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে চীৎকার করে। তাহারা উপত্যকার ভয়ানক স্থানে থাকে, ধূলিময় ও পাষাণময় গর্ত্তে বাস করে। তাহারা ঝোপের মধ্যে থাকিয়া হ্রেষারব করে, গোক্ষুরবনে একত্রীভূত হয়। তাহারা মূর্খদের সন্তান, অপদার্থদের সন্তান, তাহারা দেশ হইতে বিতাড়িত হইয়াছে। সম্প্রতি আমি তাহাদের গানের বিষয় হইয়াছি, বস্তুতঃ আমি তাহাদেরই গল্পের বিষয়। তাহারা আমাকে ঘৃণা করে, আমা হইতে দূরে থাকে, আমার মুখে থুথু ফেলিতে ভয় করে না। তিনি ত আপন রজ্জু খুলিয়া আমাকে নত করিয়াছেন, তাহারা আমার সাক্ষাতে বল্‌গা ফেলিয়া দিয়াছে। বেটারা আমার দক্ষিণে উঠে, আমার চরণ ঠেলিয়া দেয়, আমার বিরুদ্ধে বিনাশের উচ্চপথ প্রস্তুত করে। তাহারা আমার পথে রোধ করে, আমার সর্ব্বনাশার্থে সাহায্য করে; নিঃসহায় লোকেও এইরূপ করে। তাহারা যেন প্রশস্ত ছিদ্র দিয়া আইসে, ভঙ্গের মধ্যে আমার উপরে আসিয়া গড়াইয়া পড়ে। নানা প্রকার ত্রাস আমার সম্মুখে উপস্থিত, সে সকল বায়ুর ন্যায় আমার সম্ভ্রম দূর করিতেছে; মেঘের ন্যায় আমার মঙ্গল অতীত হইতেছে। এখন আমার প্রাণ আমার মধ্যে ঢালা যাইতেছে; দুঃখের দিনসমূহ আমাকে আক্রমণ করিতেছে। রাত্রিকালে আমার অস্থি সকল খসিয়া যায়, আমার দংশক সকল কখন নিদ্রা যায় না। [রোগের] প্রবল শক্তিতে আমার পরিচ্ছদ বিকৃত হয়, জামার গলার ন্যায় আমাতে আঁটিয়া থাকে। [ঈশ্বর] আমাকে পঙ্কে মগ্ন করিয়াছেন, আমি ধূলা ও ভস্মের ন্যায় হইতেছি। আমি তোমার কাছে আর্ত্তনাদ করি, তুমি উত্তর দেও না; আমি দাঁড়াইয়া থাকি, তুমি আমার প্রতি দৃষ্টিমাত্র করিতেছ। তুমি আমার প্রতি নির্দ্দয় হইয়া উঠিতেছ, আপন ভুজবলে আমাকে তাড়না করিতেছ। তুমি আমাকে তুলিয়া বায়ুতে চড়াইতেছ, ঝটিকায় বিলীন করিতেছ। বস্তুতঃ আমি জানি, তুমি আমাকে মৃত্যুর নিকটে লইয়া যাইতেছ; সমুদয় জীবিতের সভাগৃহে লইয়া যাইতেছ। পড়িবার সময়ে লোকে কি হস্ত বিস্তার করে না? বিনাশকালে কি সে জন্য আর্ত্তনাদ করে না? আমি বিপদগ্রস্তের নিমিত্ত কি কাঁদিতাম না? দীনের জন্য কি শোকাকুলচিত্ত হইতাম না? আমি মঙ্গলের অপেক্ষা করিলে অমঙ্গল ঘটিল, দীপ্তির প্রতীক্ষা করিলে অন্ধকার আসিল। আমার অন্ত্র জ্বলিতে থাকে, শান্তি পায় না, দুঃখের দিনসমূহ আমার সম্মুখবর্ত্তী হইয়াছে। বিনা রৌদ্রে আমি ম্লান হইয়া বেড়াইতেছি, আমি সমাজে উঠিয়া দাঁড়াই, আর্ত্তনাদ করি। আমি শৃগালগণের ভ্রাতা হইয়াছি, উষ্ট্রপক্ষীদের বন্ধু হইয়াছি। আমার চর্ম্ম কৃষ্ণবর্ণ হইয়াছে, খসিয়া পড়িতেছে, আমার অস্থি তাপে দগ্ধ হইয়াছে। আমার বীণার রব হাহাকারে পরিণত, আমার বংশী বিলাপকারীদের রবে পরিণত। আমি নিজ চক্ষুর সহিত নিয়ম করিয়াছি; অতএব যুবতীর প্রতি কটাক্ষপাত কেন করিব? ঊর্দ্ধবাসী ঈশ্বর হইতে কি প্রকার ভাগ্যপ্রাপ্তি হয়? উপরিস্থ সর্ব্বশক্তিমান্‌ হইতে কি অধিকার প্রাপ্তি হয়? তাহা কি অন্যায়কারীর জন্য বিপদ নয়? তাহা কি অধর্ম্মাচারীদের জন্য দুর্গতি নয়? তিনি কি আমার পথ সকল দেখেন না? আমার সকল পাদবিক্ষেপ গণনা করেন না? আমি যদি অলীকতার সহচর হইয়া থাকি, আমার চরণ যদি ছলের পথে দৌড়িয়া থাকে, (তিনি ধর্ম্মনিক্তিতে আমাকে তৌল করুন, ঈশ্বর আমার সিদ্ধতা জ্ঞাত হউন;) আমি যদি বিপথে পাদসঞ্চার করিয়া থাকি, আমার হৃদয় যদি চক্ষুর অনুবর্ত্তী হইয়া থাকে, আমার হস্তে যদি কোন কলঙ্ক লাগিয়া থাকে, তবে আমি বুনিলে অন্যে ফল ভোগ করুক, ও আমার চারা সকল উন্মূলিত হউক। আমার হৃদয় যদি রমণীতে মুগ্ধ হইয়া থাকে, প্রতিবাসীর দ্বারের নিকটে যদি আমি লুকাইয়া থাকি, তবে আমার স্ত্রী পরের জন্য যাঁতা পেষণ করুক, অন্য লোকে তাহাকে ভোগ করুক! কেননা তাহা জঘন্য কার্য্য, তাহা বিচারকর্ত্তাদের শাসনীয় অপরাধ; তাহা সর্ব্বনাশ পর্য্যন্ত গ্রাসকারী অগ্নি, তাহা আমার সর্ব্বস্ব উন্মূলন করিত। আমার দাস কি দাসী আমার কাছে অভিযোগ করিলে, যদি তাহাদের বিচারে তাচ্ছল্য করিয়া থাকি, তবে ঈশ্বর উঠিলে আমি কি করিব? তিনি তত্ত্ব করিলে তাঁহাকে কি উত্তর দিব? যিনি জরায়ু-মধ্যে আমাকে রচনা করিয়াছেন, তিনিই কি উহাকেও রচনা করেন নাই? একই জন কি আমাদিগকে গর্ভে গঠন করেন নাই? আমি যদি দরিদ্রদিগকে তাহাদের অভীষ্ট বস্তু হইতে বঞ্চিত করিয়া থাকি, যদি বিধবার নয়ন নিস্তেজ করিয়া থাকি, যদি আমার খাদ্য একা খাইয়া থাকি, পিতৃহীন তাহার কিছু খাইতে না পাইয়া থাকে, (বস্তুতঃ আমার বাল্যাবধি সে যেমন পিতার কাছে, তেমনি আমার কাছে মানুষ হইত, আজন্মকাল আমি বিধবার উপকার করিয়াছি;) যখন আমি কাহাকেও বস্ত্রাভাবে মৃতকল্প দেখিয়াছি, দীনহীনকে উলঙ্গ দেখিয়াছি, যদি তাহার কটি আমাকে আশীর্ব্বাদ না করিয়া থাকে, আমার মেষের লোমে তাহার গাত্র উষ্ণ না হইয়া থাকে; নগরদ্বারে নিজ সহায়কে দেখিতে পাওয়াতে, যদি পিতৃহীনের বিপরীতে হাত তুলিয়া থাকি; তবে আমার স্কন্ধের অস্থি খসিয়া পড়ুক, আমার বাহু সন্ধি হইতে পড়িয়া যাউক। কারণ ঈশ্বরদত্ত বিপদ আমার প্রতি ত্রাসজনক হইত, তাঁহার মহত্ত্বহেতু সেরূপ কিছু করিতে পারিতাম না। আমি যদি স্বর্ণকে আশাভূমি করিয়া থাকি, সুবর্ণকে বলিয়া থাকি, তুমি মম আশ্রয়, যদি আনন্দ করিয়া থাকি, সম্পদ বাড়িয়াছে বলিয়া, হস্তে সমৃদ্ধি লাভ হইয়াছে বলিয়া; যখন তেজোময় প্রভাকরকে দেখিয়াছি, সজ্যোৎস্না-বিহারী চন্দ্রকে দেখিয়াছি, তখন যদি আমার মন গোপনে মুগ্ধ হইয়া থাকে, আমার মুখ যদি হস্তকে চুম্বন করিয়া থাকে, তবে তাহাও বিচারকর্ত্তাদের শাসনীয় অপরাধ হইত, কেননা তাহা হইলে উর্দ্ধবাসী ঈশ্বরকে অস্বীকার করিতাম। আমার বিদ্বেষীর বিপদে কি আনন্দ করিয়াছি? তাহার অমঙ্গলে কি উল্লসিত হইয়াছি? বরঞ্চ আমার মুখকে পাপ করিতে দিই নাই; অভিশাপসহ উহার প্রাণ যাচ্ঞা করি নাই। আমার তাম্বুর লোকে কি বলিত না, কোন্‌ ব্যক্তি উহার দত্ত মাংসে তৃপ্ত হয় নাই? বিদেশী পথে রাত্রি যাপন করিত না, পথিকদের জন্য আমি দ্বার খুলিয়া রাখিতাম। আমি কি আদমের ন্যায় আপন অধর্ম্ম ঢাকিয়াছি? আমার অপরাধ কি বক্ষঃস্থলে লুকাইয়াছি? আমি কি মহৎ জনসমাজকে ভয় করিতাম? গোষ্ঠীদিগের তুচ্ছতায় কি উদ্বিগ্ন হইতাম? তাই কি চুপ করিতাম, দ্বারের বাহিরে যাইতাম না? হায় হায়! কেহ কি আমার কথা শুনে না? এই দেখ, আমার স্বাক্ষর; সর্ব্বশক্তিমান্‌ আমাকে উত্তর দিউন, আমার প্রতিবাদী আমার দোষপত্র লিখুন। অবশ্য আমি তাহা স্কন্ধে বহন করিব, আমার উষ্ণীষ বলিয়া তাহা বাঁধিব। আমার পাদবিক্ষেপের সংখ্যা তাঁহাকে জ্ঞাত করিব, রাজপুরুষের ন্যায় তাঁহার নিকটে যাইব। আমার ভূমি যদি আমার প্রতিকূলে ক্রন্দন করে, তাহার সীতা সকল যদি রোদন করে, আমি যদি বিনা অর্থে তাহার ফলভোগ করিয়া থাকি, তদধিকারীদের প্রাণহানির কারণ হইয়া থাকি, তবে গোমের স্থানে কন্টক উৎপন্ন হউক, যবের স্থানে বিষবৃক্ষ উৎপন্ন হউক। ইয়োবের বাক্য সমাপ্ত। পরে ঐ তিন জন ইয়োবকে উত্তর দিতে ক্ষান্ত হইলেন, কারণ তিনি নিজের দৃষ্টিতে আপনাকে ধার্ম্মিক মনে করিয়াছিলেন। তখন রাম গোষ্ঠীজাত বূষীয় বারখেলের পুত্র ইলীহূর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল; ইয়োবের প্রতি তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, কারণ তিনি ঈশ্বর অপেক্ষা আপনাকে ধার্ম্মিক জ্ঞান করিয়াছিলেন। আবার তাঁহার তিন জন বন্ধুর প্রতি তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল, কারণ তাঁহারা উত্তর করিতে না পারিয়াও ইয়োবকে দোষী করিয়াছিলেন। ইলীহূর বয়ঃক্রম অপেক্ষা তাঁহাদের সকলের বয়ঃক্রম অধিক ছিল, তাই তিনি ইয়োবের কাছে কথা কহিবার জন্য অপেক্ষা করিয়াছিলেন। পরে ঐ তিন ব্যক্তির মুখে আর উত্তর নাই দেখিয়া ইলীহূর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল। আর বূষীয় বারখেলের পুত্র ইলীহূ এই কথা বলিলেন, আমি যুবক, আর আপনারা প্রাচীন, তাই সঙ্কুচিত ছিলাম, আপনাদের কাছে আপন মত প্রকাশ করিতে ভয় করিলাম। আমি কহিলাম, বয়সই কথা বলুক, বৎসরের বাহুল্যই প্রজ্ঞা শিক্ষা দিউক। কিন্তু মানুষের মধ্যে আত্মা আছে, সর্ব্বশক্তিমানের নিঃশ্বাস তাহাদিগকে বিবেচক করে। মহতেরাই যে জ্ঞানবান, তাহা নয়, প্রাচীনেরাই যে বিচার বুঝেন, তাহাও নয়। অতএব আমি বলি, আমার কথা শুনুন, আমিও আপন মত প্রকাশ করি। দেখুন, আমি আপনাদের কথার অপেক্ষা করিয়াছি; আপনাদের হেতুবাদে কাণ দিয়াছি, যাবৎ আপনারা কি বলিবেন, খুঁজিতেছিলেন। আমি আপনাদের কথায় নিবিষ্টমনা ছিলাম, কিন্তু দেখুন, আপনাদের মধ্যে কেহই ইয়োবের দোষ ব্যক্ত করেন নাই, তাঁহার কথার উত্তর দেন নাই। তবে বলিবেন না, আমরা জ্ঞান পাইয়াছি; উহাঁকে পরাস্ত করা ঈশ্বরেরই সাধ্য, মনুষ্যের অসাধ্য। ফলে, তিনি আমার বিরুদ্ধে কিছুই বলেন নাই, আমিও আপনাদের বক্তৃতায় তাঁহাকে উত্তর দিব না। উহাঁরা ক্ষুব্ধ হইলেন, আর উত্তর করেন না, উহাঁদের বলিবার আর কথা নাই। আর কেন অপেক্ষা করিব? উহাঁরা ত কিছুই বলেন না, উহাঁরা স্থগিত হইলেন, কিছু উত্তর করেন না। আমিও যথাসাধ্য উত্তর করিব, আমিও আপন মত প্রকাশ করিব। কেননা আমি কথায় পরিপূর্ণ, আমার অন্তরস্থ আত্মা আমাকে প্রবর্ত্তনা করিতেছে। দেখুন, আমার উদর বদ্ধ দ্রাক্ষারসের মত, তাহা নূতন কুপার ন্যায় ফাটিয়া যায় যায় হইয়াছে। আমি কথা কহিব, কহিলে উপশম পাইব, আমি ওষ্ঠাধর খুলিয়া উত্তর করিব। আমি কোন লোকের মুখাপেক্ষাও করিব না, কোন মনুষ্যের চাটুবাদ করিব না। কেননা আমি চাটুবাদ করিতে জানি না, করিলে আমার নির্ম্মাতা শীঘ্রই আমাকে সংহার করিবেন। যাহা হউক, ইয়োব, বিনয় করি, আমার কথা শুনুন, আমার সকল বাক্যে কর্ণপাত করুন। দেখুন, আমি এখন মুখ খুলিয়াছি, আমার তালুস্থিত জিহ্বা কথা কহিতেছে। আমার বাক্য মনের সরলতা দেখাইবে, আমার ওষ্ঠাধর যাহা জানে, সরল ভাবে কহিবে। ঈশ্বরের আত্মা আমাকে রচনা করিয়াছেন, সর্ব্বশক্তিমানের নিঃশ্বাস আমাকে জীবন দেন। আপনি যদি পারেন, আমাকে উত্তর দিউন, আমার সম্মুখে বাক্য বিন্যাস করুন, উঠিয়া দাঁড়াউন। দেখুন, ঈশ্বরের কাছে আমিও আপনার মত; আমিও মৃত্তিকা হইতে গঠিত হইয়াছি। দেখুন, আমার ভয়ানকতা আপনাকে ত্রাসযুক্ত করিবে না, আমার ভার আপনার দুর্ব্বহ হইবে না। আপনি আমার কর্ণগোচরেই কথা কহিয়াছেন, আমি এই বাক্যের ধ্বনি শুনিতে পাইয়াছি, “আমি শুচি, আমার অধর্ম্ম নাই; আমি নিষ্কলঙ্ক, আমাতে অপরাধ নাই; দেখ, তিনি আমার বিরুদ্ধে ছিদ্র অন্বেষণ করেন, আমাকে আপনার শত্রু গণনা করেন; তিনি আমার চরণ নিগড়ে বদ্ধ করেন, আমার সমস্ত পথ নিরীক্ষণ করেন।” দেখুন, এ বিষয়ে আপনি যথার্থবাদী নহেন—আমি আপনাকে উত্তর দিই— কেননা মর্ত্ত্য অপেক্ষা ঈশ্বর মহান্‌। আপনি কেন তাঁহার সহিত বিতণ্ডা করিতেছেন? তিনি ত আপনার কোন কথার হেতু বলেন না। ঈশ্বর এক বার বলেন, বরং দুই বার, কিন্তু লোকে মন দেয় না। স্বপ্নে, রাত্রিকালীন দর্শনে, যখন মনুষ্যেরা অগাধ নিদ্রায় মগ্ন হয়, শয্যায় সুষুপ্ত হয়, তখন তিনি মনুষ্যদের কর্ণ খুলিয়া দেন, তাহাদের শিক্ষা মুদ্রাঙ্কিত করেন, যেন তিনি মনুষ্যকে দুষ্কর্ম্ম হইতে নিবৃত্ত করেন, যেন মনুষ্য হইতে অহঙ্কার গুপ্ত রাখেন। তিনি কূপ হইতে তাহার প্রাণ, অস্ত্রাঘাত হইতে তাহার জীবন রক্ষা করেন। সে আপন শয্যায় ব্যথিত হইয়া শাস্তি পায়, তাহার অস্থিতে নিরন্তর সংগ্রাম হয়, আহারেও তাহার জীবনের রুচি হয় না, সুস্বাদু খাদ্যও তাহার প্রাণে ভাল লাগে না, তাহার মাংস ক্ষয় পাইয়া অদৃশ্য হয়, তাহার অদৃশ্য অস্থি সকল বাহির হইয়া পড়ে। তাহার প্রাণ কূপের নিকটস্থ হয়, তাহার জীবন বিনাশকদের নিকটবর্ত্তী হয়। যদি তাহার সহিত এক দূত থাকেন, এক অর্থকারক, সহস্রের মধ্যে এক জন, যিনি মনুষ্যকে তাহার পক্ষে যাহা ন্যায্য, তাহা দেখান, তবে উনি তাহার প্রতি কৃপা করিয়া বলেন, “কূপে নামিয়া যাওয়া হইতে ইহাকে মুক্ত কর, আমি প্রায়শ্চিত্ত পাইলাম।” তাহার মাংস বালকের অপেক্ষাও সতেজ হইবে, সে যৌবনকাল ফিরিয়া পাইবে। সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, আর তিনি তাহার প্রতি প্রসন্ন হন, তাই সে হর্ষধ্বনিপূর্ব্বক তাঁহার মুখ দর্শন করে, আর তিনি মর্ত্ত্যকে তাহার ধার্ম্মিকতা ফিরাইয়া দেন। সে মনুষ্যদের কাছে গীত গাহিয়া বলে, “আমি পাপ করিয়াছি, প্রকৃতের বিপরীত করিয়াছি, তথাপি তাহার তুল্য প্রতিফল পাই নাই; তিনি কূপে প্রবেশ করা হইতে আমার প্রাণকে মুক্ত করিয়াছেন, আমার জীবন আলোক দর্শন করিবে।” দেখুন, ঈশ্বর এক সকল কার্য্য করেন, নরের সহিত দুই বার, তিন বার করেন, যেন কূপ হইতে তাহার প্রাণ ফিরাইয়া আনেন, যেন সে জীবিতদের দীপ্তিতে দেদীপ্যমান হয়। ইয়োব, অবধান করুন, আমার কথা শুনুন; আপনি নীরব থাকুন, আমি বলি। যদি আপনার কিছু বক্তব্য থাকে, উত্তর করুন, বলুন, কেননা আমি আপনাকে নির্দ্দোষ করিতে চাই। যদি না থাকে, তবে আমার কথা শুনুন, নীরব হউন, আমি আপনাকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দিই। ইলীহূ আর‍ও বলিতে লাগিলেন, হে বিজ্ঞেরা, আমার কথা শুনুন; হে জ্ঞানবানেরা, আমার বাক্যে কর্ণপাত করুন। কেননা রসনা যেমন ভক্ষ্যের স্বাদ লয়, তদ্রূপ কর্ণ কথার পরীক্ষা করে। আইসুন, যাহা ন্যায্য তাহাই মনোনীত করি, ভাল কি, আপনাদের মধ্যে নিশ্চয় করি। দেখুন, ইয়োব বলিলেন, আমি ধার্ম্মিক, কিন্তু আমার যাহা ন্যায্য, ঈশ্বর তাহা হরণ করিয়াছেন; আমি ন্যায়বান হইলেও মিথ্যাবাদী গণিত, বিনা দোষে আমি দারুণ আহত হইয়াছি। ইয়োবের সদৃশ কোন্‌ ব্যক্তি আছে? তিনি জলের ন্যায় উপহাস পান করেন, অধর্ম্মাচারীদের সঙ্গে চলেন, দুষ্ট লোকদের পথে গমন করেন। কেননা তিনি বলিয়াছেন, মনুষ্যের কিছুই লাভ নাই, যখন সে ঈশ্বরের সহিত প্রণয় রাখে। অতএব, হে বুদ্ধিমানেরা, আমার কথা শুনুন, ইহা দূরে থাকুক যে, ঈশ্বর দুষ্কার্য্য করিবেন, সর্ব্বশক্তিমান্‌ অন্যায় করিবেন। কারণ তিনি মনুষ্যের কর্ম্মের ফল তাহাকে দেন, মনুষ্যের গতি অনুসারে তাহার দশা ঘটান। ঈশ্বর ত কখনও দুষ্টাচরণ করেন না, সর্ব্বশক্তিমান্‌ কভু বিচার বিপরীত করেন না। পৃথিবীর কর্ত্তৃত্বভার তাঁহাকে কে দিল? সমস্ত জগৎ [তাঁহাকে] কে সমর্পণ করিল? যদি তিনি আপনাতেই নিবিষ্টমনা থাকেন, আপনার আত্মা ও নিঃশ্বাস আপনার কাছে সংগ্রহ করেন, তবে মর্ত্ত্যমাত্র একেবারে মরিয়া যাইবে, মনুষ্য পুনর্ব্বার ধূলিতে প্রতিগমন করিবে। যদি আপনার বিবেচনা থাকে, তবে ইহা শুনুন, আমার বাক্যের রবে কর্ণপাত করুন। যে ন্যায়বিদ্বেষী, সে কি শাসন করিবে? আপনি কি ধর্ম্মময় পরাক্রমীকে দোষী করিবেন? রাজাকে কি বলা যায়, তুমি পাপাধম? রাজন্যবর্গকে কি বলা যায়, তোমরা দুষ্ট? কিন্তু তিনি জনাধ্যক্ষদেরও মুখাপেক্ষা করেন না, দরিদ্রের কাছে ধনবানকেও বিশিষ্ট জ্ঞান করেন না, কেননা তাহারা সকলেই তাঁহার হস্তকৃত বস্তু। তাহারা হঠাৎ মরে, মধ্যরাত্রে মরে, প্রজাসমূহ বিচলিত হইয়া চলিয়া যায়, পরাক্রমী বিনা হস্তক্ষেপে অপনীত হয়। কেননা মানুষের পথে তাঁহার দৃষ্টি আছে; তিনি তাহার সমস্ত পাদসঞ্চার দেখেন; এমন অন্ধকার কি মৃত্যুচ্ছায়া নাই, যেখানে অধর্ম্মাচারিগণ লুকাইতে পারে। তিনি মনুষ্যের বিষয়ে দীর্ঘকাল চিন্তা করেন না, যখন সে ঈশ্বরের সম্মুখে বিচারস্থানে আইসে। তিনি বিনা সন্ধানে পরাক্রান্তদিগকে খণ্ড খণ্ড করেন, তাহাদের স্থানে অন্যদিগকে স্থাপন করেন। তজ্জন্য তিনি তাহাদের ক্রিয়া সকল জ্ঞাত হন, রাত্রিতে তাহাদিগকে উল্টাইয়া ফেলেন, তাহাতে তাহারা চূর্ণ হয়। তিনি তাহাদিগকে দুর্জ্জন বলিয়া প্রহার করেন, সকলের দৃষ্টিগোচরেই করেন; কারণ তাহারা তাঁহার অনুগমন হইতে ফিরিল, তাঁহার সমস্ত পথ অবহেলা করিল; এইরূপে দরিদ্রের ক্রন্দন তাঁহার নিকট আনাইল; আর তিনি দুঃখীদের ক্রন্দন শ্রবণ করিলেন। তিনি শান্তি দিলে কে দোষ দিতে পারে? তিনি মুখ ঢাকিলে তে তাঁহার দর্শন পাইতে পারে? জাতির বা ব্যক্তির কথা হউক, একই; পামর যেন রাজত্ব না করে, প্রজাগণকে ফাঁদে ফেলিতে যেন কেহ না থাকে। কেহ কি ঈশ্বরকে বলিয়াছে, আমি [শাস্তি] পাইয়াছি, আর পাপ করিব না, যাহা দেখিতে পাই না, তাহা আমাকে শিখাও; যদি অন্যায় করিয়া থাকি, আর করিব না? তাঁহার প্রতিফল দান কি আপনার ইচ্ছামতে হইবে যে, আপনি তাহা অগ্রাহ্য করিলেন? মনোনীত করা আপনার কর্ম্ম, আমার নয়; অতএব আপনি যাহা জানেন, বলুন। বুদ্ধিমান লোকেরা আমাকে বলিবেন, জ্ঞানবানেরা আমার কথা শুনিয়া বলিবেন, ইয়োব জ্ঞানশূন্য হইয়া কথা কহিতেছেন, তাঁহার কথা বুদ্ধিবিবর্জ্জিত। ইয়োবের পরীক্ষা শেষ পর্য্যন্ত হইলেই ভাল, কেননা তিনি অধার্ম্মিকদের ন্যায় উত্তর করিয়াছেন। বস্তুতঃ তিনি পাপে অধর্ম্ম যোগ করেন, তিনি আমাদের মধ্যে হাততালি দেন, আর তিনি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেন। ইলীহূ আর‍ও কহিতে লাগিলেন, আপনি কি ইহা ন্যায্য জ্ঞান করিতেছেন? আপনি কি বলিতেছেন, ঈশ্বরের ধর্ম্ম হইতে আমার ধর্ম্ম অধিক? কারণ আপনি বলিতেছেন, আমার কি উপকার? পাপ করিলে যাহা হইত, তাহা অপেক্ষা আমার কি লাভ হইবে? আমি আপনাকে উত্তর দিব, আপনার বন্ধুগণকেও সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিব। আকাশমণ্ডলের প্রতি দৃষ্টি করিয়া দেখুন, মেঘমালা নিরীক্ষণ করুন, তাহা আপনা হইতে উচ্চ। আপনি যদি পাপ করেন, তাঁহার বিরুদ্ধে কি করিবেন? অধর্ম্মের বাহুল্যে আপনি তাঁহার কি করিবেন? যদি ধার্ম্মিক হন, তাঁহাকে কি দিতে পারেন? আপনার হস্ত হইতেই বা তিনি কি গ্রহণ করিবেন? আপানার দুষ্টতার ফল আপনার তুল্য মনুষ্যে, আপনার ধার্ম্মিকতার ফল মনুষ্য-সন্তানে বর্ত্তে। উপদ্রবের বাহুল্যে লোকে ক্রন্দন করে, বলবানদের বাহু প্রযুক্ত ত্রাহি ত্রাহি করে। কিন্তু কেহ বলে না, আমার নির্ম্মাতা ঈশ্বর কোথায়? তিনি ত রাত্রিকালে গান প্রদান করেন। তিনি ভূতলের পশুদের অপেক্ষা আমাদের অধিক শিক্ষা দেন, আকাশের পক্ষীদের অপেক্ষা অধিক বুদ্ধিমান করেন। তথায় দুরাত্মাদের অহঙ্কার প্রযুক্ত লোকে ক্রন্দন করে, কিন্তু তিনি উত্তর করেন না। বাস্তবিক ঈশ্বর অলীক কথা শুনেন না, সর্ব্বশক্তিমান্‌ তাহা নিরীক্ষণ করেন না। আর আপনি বলিতেছেন, আমি তাঁহাকে দেখিতে পাই না; বিচার তাঁহার সম্মুখে, তাঁহার অপেক্ষা করুন। কিন্তু এখন তিনি নিজ কোপে শাসন করেন নাই, দর্পের প্রতি বিশেষ অবধান করেন নাই, তাই ইয়োব অসার কথায় মুখ খুলিয়াছেন, তিনি না জানিয়াও অনেক কথা বলেন। ইলীহূ আর‍ও কহিলেন, আপনি আমার প্রতি একটু ধৈর্য্য করুন, আমি আপনাকে শিক্ষা দিব, কারণ ঈশ্বরের পক্ষে আমার আরও কথা আছে। আমি দূর হইতে আপন জ্ঞান আনিব, আমার নির্ম্মাতার উপর ধর্ম্মগুণ বর্ত্তাইব। সত্যই আমার কথা মিথ্যা নয়, জ্ঞানে সিদ্ধ এক ব্যক্তি আপনার সহবর্ত্তী। দেখুন, ঈশ্বর পরাক্রমী, তবু কাহাকেও তুচ্ছ করেন না; তিনি বুদ্ধিবলে পরাক্রমী। তিনি দুষ্টদের প্রাণ রক্ষা করেন না, কিন্তু দুঃখীদের পক্ষে ন্যায় বিচার করেন। তিনি ধার্ম্মিকদের হইতে চক্ষু ফিরান না; কিন্তু সিংহাসনোপবিষ্ট রাজগণের সঙ্গে তাহাদিগকে চিরকালতরে বসান, তাহারা উন্নত হয়। তাহারা যদি শৃঙ্খলে বদ্ধ হয়, যদি দুঃখ-রজ্জুতে আবদ্ধ হয়; তবে তিনি দেখাইয়া দেন তাহাদের ক্রিয়া, ও তাহাদের অধর্ম্ম সকল, যাহা সগর্ব্বে করিয়াছে; তিনি উপদেশের প্রতি তাহাদের কর্ণ খুলিয়া দেন, তাহাদিগকে অধর্ম্ম হইতে ফিরিতে আজ্ঞা দেন। তাহারা যদি কথা শুনে, ও তাঁহার সেবা করে, তবে সুসম্পদে স্ব স্ব আয়ু কাটাইবে, সুখে স্ব স্ব বৎসর সকল যাপন করিবে। কিন্তু যদি না শুনে, তবে অস্ত্র দ্বারা বিনষ্ট হইবে, জ্ঞানের অভাবে প্রাণত্যাগ করিবে। পামরচিত্তেরা ক্রোধ সঞ্চয় করে, তিনি তাহাদিগকে বাঁধিলে ত্রাহি ত্রাহি করে না। তাহারা যৌবনকালে প্রাণত্যাগ করে, পুংগামীদের মধ্যে তাহাদেরও প্রাণ যায়। তিনি দুঃখীকে দুঃখ দ্বারা উদ্ধার করেন, তিনি উপদ্রবে তাহাদের কর্ণ খুলিয়া দেন। তিনি আপনাকেও সঙ্কটের মুখ হইতে বাহির করিয়া চালাইতে চাহেন; অসঙ্কীর্ণ প্রশস্ত স্থানে লইয়া যাইতে চাহেন, আপনার মেজ পুষ্টিকর দ্রব্যে সাজান হইবে। কিন্তু আপনি দুর্জ্জনের বিচারে পূর্ণ হইয়াছেন; বিচার ও শাসন আপনাকে ধরিয়াছে। যখন ক্রোধ আছে, সাবধান যেন আত্মপ্রাচুর্য্য দ্বারা ভ্রান্ত না হন, প্রায়শ্চিত্তের মহত্ত্ব আপনাকে ভ্রান্ত না করুক। আপনার ঐশ্বর্য্যে কি কুলাইবে যে, আপনি দুঃখে না পড়েন? আপনার বলের বাহুল্যে কি কুলাইবে? সেই রাত্রির আকাঙ্ক্ষা করিবেন না, যখন জাতিরা স্বস্থান হইতে প্রয়াণ করে। সাবধান, অধর্ম্মের প্রতি ফিরিবেন না, আপনি ত দুঃখভোগ অপেক্ষা তাহাই মনোনীত করিয়াছেন। দেখুন, ঈশ্বর আপন পরাক্রমে সর্ব্বোচ্চ, তাঁহার ন্যায় কে শিক্ষা দিতে পারে? কে তাঁহার গন্তব্য পথ নিরূপণ করিয়াছে? কে বলিতে পারে, তুমি অন্যায় করিয়াছ? মনে রাখিবেন, তাঁহার কার্য্যের মহিমা স্বীকার করা চাই, মনুষ্যগণ গান দ্বারা তাহা কীর্ত্তন করিয়াছে। সকল মনুষ্য তাহা নিরীক্ষণ করিয়াছে, মর্ত্ত্যগণ দূর হইতে তাহা সন্দর্শন করে। দেখুন, ঈশ্বর মহান্‌, আমরা তাঁহাকে জানি না; তাঁহার বর্ষ-সংখ্যার সন্ধান পাওয়া যায় না। তিনি জলের বিন্দু সকল আকর্ষণ করেন, সেগুলি তাঁহার বাষ্প হইতে বৃষ্টিরূপে পড়ে; জলদপটল তাহা ঢালিয়া দেয়, তাহা মনুষ্যদের উপরে প্রচুররূপে পতিত হয়। মেঘমালার বিস্তারণ কেহ কি বুঝিতে পারে? তাঁহার চন্দ্রাতপের গর্জ্জন কে বুঝে? দেখুন, তিনি আপনার চারিদিকে স্বীয় দীপ্তি বিস্তার করেন, তিনি সমুদ্রগর্ভ সমাবৃত করেন। কারণ তিনি এই সকল দ্বারা জাতিগণকে শাসন করেন, তিনি প্রচুর পরিমাণে শস্য উৎপন্ন করেন। তিনি আপন অঞ্জলি বিদ্যুতে পূর্ণ করেন, তাহাকে লক্ষ্য বিঁধিবার আজ্ঞা দেন। তাহার নিনাদ তাঁহার পরিচয় দেয়, পশুপাল সকলও তাঁহার আগমন জানায়। ইহাতেও আমার হৃদয় কম্পমান হইতেছে, স্বস্থানে থাকিয়া দুপ্‌ দুপ্‌ করিতেছে। শুন শুন, ঐ তাঁহার রবের নির্ঘোষ, ঐ তাঁহার মুখ হইতে নির্গত স্বর। তিনি সমস্ত আকাশের নীচে তাহা পাঠান, পৃথিবীর অন্ত পর্য্যন্ত আপন বিদ্যুৎ চালান। তৎপশ্চাতে এক রব নাদ করে, তিনি আপন মহত্ত্বের রবে বজ্রনাদ করেন; তাঁহার রব শুনা যায়, তিনি ঐ সকল রোধ করেন না। ঈশ্বর স্বীয় রবে আশ্চর্য্যরূপ গর্জ্জন করেন, আমাদের বোধের অগম্য মহৎ মহৎ কার্য্য করেন। ফলে তিনি হিমানীকে বলেন, পৃথিবীতে পড়, সামান্য বৃষ্টিকেও তাহা বলেন, তাঁহার পরাক্রমের বৃষ্টিকেও বলেন। তিনি মনুষ্যমাত্রের হস্ত মুদ্রাঙ্কিত করেন, যেন তাঁহার নির্ম্মিত সকল মনুষ্যই জ্ঞান পায়। তখন পশুগণ আশ্রয়-স্থানে প্রবেশ করে, আপন আপন গহ্বরে থাকে। [দক্ষিণস্থ] কক্ষ হইতে ঝটিকা আইসে, উত্তর হইতে শীত আইসে। ঈশ্বরের নিঃশ্বাস হইতে নীহার জন্মে, এবং বিস্তারিত জল সঙ্কুচিত হইয়া পড়ে। আরও ঈশ্বর ঘন মেঘে জল ভরেন, আপন বিজলির মেঘ বিস্তার করেন। তাঁহার পরিচালনে তাহা ঘূরে, যেন তাহারা তাঁহার আজ্ঞানুসারে কার্য্য করে, সমস্ত ভূমণ্ডলেই যেন করে। তিনি কখনও দণ্ডের, কখনও নিজ দেশের নিমিত্ত, কখনও বা দয়ার নিমিত্ত এই সকল ঘটান। হে ইয়োব, আপনি ইহাতে কর্ণপাত করুন, স্থির থাকুন, ঈশ্বরের আশ্চর্য্য কার্য্য সকল বিবেচনা করুন। আপনি কি জানেন, ঈশ্বর কিরূপে এই সকলের উপরে ভার রাখেন, আর আপন মেঘের দীপ্তি বিরাজমান করেন? আপনি কি মেঘমালার দোলন জানেন? পরম জ্ঞানীর আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল জানেন? যখন দক্ষিণ বায়ুতে পৃথিবী স্তব্ধ হয়, তখন তোমার বস্ত্র কেমন উষ্ণ হয়? আপনি কি তাঁহার সঙ্গে আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন, যাহা ছাঁচে ঢালা দর্পণের ন্যায় দৃঢ়? আমাদিগকে জানান, তাঁহাকে কি বলিব? কেননা আমরা অন্ধকার হেতু বাক্য বিন্যাস করিতে পারি না। তাঁহাকে কি বলা যাইবে যে, আমি কথা কহিব? কেহ কি কবলিত হইতে ইচ্ছা করিবে? এখন মনুষ্য দীপ্তি দেখিতে পারে না, যখন তাহা আকাশে উজ্জ্বল হয়, যখন বায়ু বহিয়া তাহা পরিষ্কার করিয়াছে। উত্তরদিক্‌ হইতে কাঞ্চনাভা আইসে, ঈশ্বরের ঊর্দ্ধে ভয়ানক প্রভা থাকে। সর্ব্বশক্তিমান্‌! তিনি আমাদের বোধের অগম্য; তিনি পরাক্রমে মহান্‌, তিনি ন্যায়বিচার ও প্রচুর ধর্ম্মগুণ বিপরীত করেন না। এ কারণ মনুষ্যগণ তাঁহাকে ভয় করে, তিনি বিজ্ঞচিত্তদের মুখাপেক্ষা করেন না। পরে সদাপ্রভু ঘূর্ণবায়ুর মধ্য হইতে ইয়োবকে উত্তর দিয়া কহিলেন, এ কে, যে জ্ঞানরহিত কথা দ্বারা মন্ত্রণাকে তিমিরাবৃত করে? তুমি এখন বীরের ন্যায় কটিবন্ধন কর; আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, তুমি আমাকে বুঝাইয়া দেও। যখন আমি পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, তখন তুমি কোথায় ছিলে? যদি তোমার বুদ্ধি থাকে, তবে বল, তুমি কি জান, কে পৃথিবীর পরিমাণ নিরূপণ করিল? কে তাহার উপরে মানরজ্জু ধরিল? তাহার চুঙ্গী সকল কিসের উপরে স্থাপিত হইল? কে বা তাহার কোণের প্রস্তর বসাইল? তৎকালে প্রভাতীয় নক্ষত্রগণ একসঙ্গে আনন্দরব করিল, ঈশ্বরের পুত্রগণ সকলে জয়ধ্বনি করিল। কে কবাট দিয়া সমুদ্রকে রুদ্ধ করিল, যখন তাহা নির্গত হইল, গর্ভাশয় হইতে বাহির হইল? তৎকালে আমি মেঘকে তাহার বস্ত্র করিলাম, ঘন তিমিরকে তাহার পটিকা করিলাম; আমি তাহার জন্য আমার বিধি নিরূপণ করিলাম, অর্গল ও কবাট স্থাপন করিলাম, বলিলাম, তুমি এই পর্য্যন্ত আসিতে পার, আর নয়; এ স্থানে তোমার তরঙ্গের গর্ব্ব নিবারিত হইবে। তুমি কি আজন্মকাল কখন প্রভাতকে আজ্ঞা দিয়াছ, অরুণকে তাহার উদয়-স্থান জানাইয়াছ; যেন তাহা পৃথিবীর প্রান্ত সকল ধরে, আর দুষ্টগণকে তাহা হইতে ঝাড়িয়া ফেলা যায়? ভূমণ্ডল মুদ্রাচিহ্নিত মৃত্তিকাবৎ আকারান্তর প্রাপ্ত হয়, সকলই বস্ত্রের ন্যায় প্রকাশ পায়; দুষ্টগণ হইতে তাহাদের দীপ্তি নিবারিত হয়, আর উচ্চ বাহু ভগ্ন হয়। তুমি কি সমুদ্রের উৎসে প্রবেশ করিয়াছ? জলধি-তলে কি পদার্পণ করিয়াছ? তোমার কাছে কি মৃত্যুর কবাট প্রকাশিত হইয়াছে? তুমি কি মৃত্যুচ্ছায়ার দ্বার দেখিয়াছ? তুমি কি ভুবনের বিস্তার জ্ঞাত হইয়াছ? বল, যদি সমস্তই জান। দীপ্তির নিবাসে যাইবার পথ কোথায়? অন্ধকারেরই বা বাসস্থান কোথায়? তুমি কি তাহার সীমাতে তাহাকে লইয়া যাইতে পার? তাহার গৃহের পথ কি জ্ঞাত আছ? আছ বৈ কি, তখন ত তোমার জন্ম হইয়াছিল! তোমার ত অনেক বয়ঃক্রম হইয়াছে! তুমি কি হিমানী-ভাণ্ডারে প্রবেশ করিয়াছ, সেই করকা-ভাণ্ডার কি তুমি দেখিয়াছ, যাহা আমি সঙ্কটকালের জন্য রাখিয়াছি, সংগ্রাম ও যুদ্ধদিনের জন্য রাখিয়াছি? কোন্‌ পথ দিয়া দীপ্তি বিভক্ত হইয়া যায়, ও পূর্ব্বীয় বায়ু ভুবনময় ব্যাপ্ত হয়? অতিবৃষ্টির জন্য কে প্রণালী কাটিয়াছে, বজ্র-বিদ্যুতের জন্য কে পথ করিয়াছে, যেন নির্জ্জন দেশে বৃষ্টি পড়ে, নরশূন্য প্রান্তরে বর্ষা হয়, যেন মরুভূমি ও শুষ্ক স্থান তৃপ্ত হয়, এবং কোমল তৃণ উৎপন্ন হয়? বৃষ্টির পিতা কেহ কি আছে? শিশির-বিন্দুসমূহের জনকই বা কে? নীহার কাহার গর্ভ হইতে নির্গত হইয়াছে? আকাশীয় হিমানীর জন্ম কে দিয়াছে? জল জমিয়া প্রস্তরবৎ হয়, জলধির মুখ কঠিন হইয়া যায়। তুমি কি মৃত্তিকা নক্ষত্রের হার গাঁথিতে পার? মৃগশীর্ষের কটিবন্ধ কি খুলিতে পার? রাশিগণকে কি স্ব স্ব ঋতুতে চালাইতে পার? স্বাতি ও তৎপুত্রগণকে পথ দেখাইতে পার? তুমি কি আকাশমণ্ডলের বিধান কলাপ জান? পৃথিবীতে তাহার কর্ত্তৃত্ব কি নিরূপণ করিতে পার? তুমি কি মেঘ পর্য্যন্ত তোমার রব তুলিতে পার, যেন বহুজল তোমাকে আচ্ছন্ন করে? তুমি কি বিদ্যুৎসমূহ পাঠাইলে তাহারা যাইবে? তোমাকে কি বলিবে, এই যে আমরা? কে ঘোর ঘনমালাকে জ্ঞান দিয়াছে? উল্কাকে কে বুদ্ধি দিয়াছে? কে প্রজ্ঞাবলে মেঘসমূহ গণিতে পারে? আকাশের কুপাগুলি কে উল্টাইতে পারে, যাহাতে ধূলা দ্রবীভূত ধাতুবৎ গলিয়া যায়, ও মৃত্তিকা জমাট বাঁধে? তুমি কি সিংহীর জন্য শিকার অন্বেষণ করিবে? সিংহশাবকদের ক্ষুধা কি নিবৃত্ত করিবে, যখন তাহারা গুহামধ্যে শয়ন করে, গুপ্ত স্থানে বসিয়া মৃগের অপেক্ষায় থাকে? কে দাঁড়কাককে আহার যোগাইয়া দেয়, যখন তাহার শাবকগণ ঈশ্বরের নিকটে আর্ত্তরব করে, ও খাদ্যের অভাবে ভ্রমণ করে? তুমি কি শৈলবাসী বন্য ছাগীদের প্রসবকাল জান? হরিণীর প্রসবের রীতি কি নির্ণয় করিতে পার? তাহারা কত মাস গর্ভ ধারণ করে, তাহা কি নির্ণয় করিতে পার? তাহাদের প্রসবকাল কি জান? তাহারা হেঁট হয়, প্রসব করে, অমনি দুঃখ ঝাড়িয়া ফেলে। তাহাদের শাবকগণ বলবান হয়, তাহারা মাঠে বৃদ্ধি পায়, তাহারা প্রস্থান করে, আর ফিরিয়া আইসে না। কে বন্য গর্দ্দভকে স্বাধীন করিয়া ছাড়িয়া দিয়াছে? কে বন্য খরের বন্ধন মুক্ত করিয়াছে? আমি মরুভূমিকে তাহার গৃহ করিয়াছি, লবণভূমিকে তাহার নিবাস করিয়াছি। সে নগরের কলরবকে পরিহাস করে, চালকের শব্দ শুনে না। পর্ব্বতশ্রেণী তাহার চরাণিস্থান; সে যাবতীয় নবীন তৃণাদির অন্বেষণ করে। গবয় কি তোমার সেবা করিতে সম্মত হইবে? সে কি তোমার যাবপাত্রের নিকটে থাকিবে? তুমি কি যোতে গবয়কে সীতায় বাঁধিতে পার? সে কি তোমার পশ্চাতে পশ্চাতে তলভূমিতে মই দিবে? তাহার বলবাহুল্যে তুমি কি তাহাকে বিশ্বাস করিবে? তোমার কর্ম্ম কি তাহাকে সমর্পণ করিবে? তুমি কি তাহার প্রতি এমন বিশ্বাস রাখিবে যে, সে তোমার শস্য আনিবে, তাহা খামারে একত্র করিবে? উষ্ট্রপক্ষিণীর ডানা উল্লাস করে, কিন্তু তাহার পক্ষ ও পালখ কি স্নেহবান্‌? সে ত ভূমিতে আপন ডিম্ব ত্যাগ করে, ধূলায় উষ্ণ হইতে দেয়। তাহার মনে থাকে না যে, হয় ত চরণে তাহা চূর্ণ করিবে, কিম্বা বন্য পশু তাহা দলাইবে। সে আপন শাবকগণের প্রতি পরের ন্যায় নির্দ্দয় হয়, প্রসব-বেদনা বিফল হইলেও নিশ্চিন্ত থাকে; যেহেতু ঈশ্বর তাহাকে জ্ঞানহীন করিয়াছেন, তাহাকে বুদ্ধি দেন নাই। সে যখন পক্ষ তুলিয়া গমন করে, তখন অশ্বকে ও তদারোহীকে পরিহাস করে। তুমি কি অশ্বকে বিক্রম দিয়াছ? তাহার গ্রীবাদেশে কেশর দিয়াছ? তাহাকে কি পঙ্গপালবৎ লম্ফন করাইয়াছ? তাহার নাসারবের তেজ অতি ভয়ানক। সে তলভূমিতে খুর ঘসে, নিজ বিক্রমে আমোদ করে, অস্ত্রশস্ত্রের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যায়। সে আশঙ্কাকে পরিহাস করে, উদ্বিগ্ন হয় না, খড়্‌গের সম্মুখ হইতে ফিরে না, তূণ তাহার বিরুদ্ধে শব্দ করে, শাণিত বড়শা ও শূল শব্দ করে। সে উগ্রতায় ও রাগে ভূমি খাইয়া ফেলে, তূরীবাদ্য শুনিলে দাঁড়াইয়া থাকে না। তূরীর রবের সহিত সে হ্রেষা শব্দ করে, দূর হইতে সংগ্রামের গন্ধ পায়, সেনাপতিদের হূঙ্কার ও সিংহনাদ শুনে। তোমারই বুদ্ধিতে কি বাজপক্ষী উড়ে, দক্ষিণ দিকে আপন পক্ষ বিস্তার করে? তোমারই আজ্ঞাতে কি ঈগল ঊর্দ্ধে উঠে, উচ্চ স্থানে আপনার বাসা করে? সে শৈল বসতি করে, তথায় তাহার বাসা, সে শৈলাগ্রে ও দুরাক্রম স্থানে থাকে। তথা হইতে সে শিকার অবলোকন করে, তাহার চক্ষু দূর হইতে তাহা নিরীক্ষণ করে। তাহার শাবকগণও রক্ত চুষে, সে স্থানে শব, সেই স্থানে সেও থাকে। সদাপ্রভু ইয়োবকে আরও কহিলেন, দোষগ্রাহী কি সর্ব্বশক্তিমানের সহিত বিবাদ করিবে? ঈশ্বরের সহিত বিতর্ককারী ইহার উত্তর দিউক। তখন ইয়োব উত্তর করিয়া সদাপ্রভুকে কহিলেন, দেখ, আমি অকিঞ্চন; তোমাকে কি উত্তর দিব? আমি নিজ মুখে হাত দিই। আমি এক বার কথা বলিয়াছি, আর উত্তর করিব না; দুই বার বলিয়াছি, পুনর্ব্বার বলিব না। সদাপ্রভু ঘূর্ণবায়ুর মধ্য হইতে ইয়োবকে আরও কহিলেন, তুমি এখন বীরের ন্যায় কটিবন্ধন কর; আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি তুমি বুঝাইয়া দেও। তুমি কি সত্যই আমার বিচার অগ্রাহ্য করিবে? নিজে ধার্ম্মিক হইবার জন্য আমাকে দোষী করিবে? তোমার কি ঈশ্বরের তুল্য বাহু আছে? তুমি কি তাঁহার ন্যায় সরবে বজ্রনাদ করিতে পার? তবে প্রাধান্যে ও মহত্ত্বে বিভূষিত হও, প্রভা ও প্রতাপ পরিধান কর। তোমার উচ্চণ্ড ক্রোধ ঢালিয়া দেও, প্রত্যেক অহঙ্কারীকে দৃক্‌পাতমাত্র নত কর; দৃক্‌পাতমাত্র প্রত্যেক অহঙ্কারীকে খর্ব্ব কর, দুষ্টদিগকে স্ব স্ব স্থানে দলিত কর; তাহাদিগকে যুগপৎ ধূলিতে আচ্ছন্ন কর, গুপ্ত স্থানে তাহাদের মুখ বন্ধন কর। তখন আমিও তোমার এই প্রশংসা করিব, তোমার দক্ষিণ হস্ত তোমাকে তরাইতে পারে। বহেমোৎকে দেখ, আমি তোমার সহিত তাহাকেও নির্ম্মাণ করিয়াছি; সে গোরুর ন্যায় তৃণভোজী। দেখ, তাহার কটিদেশে তাহার বল, উদরস্থ পেশীতে তাহার সামর্থ্য। সে এরস বৃক্ষের ন্যায় লাঙ্গুল নাড়ে, তাহার ঊরুদ্বয়ের শিরা সকল যোড়া। তাহার অস্থি সকল পিত্তলময় নলের তুল্য, তাহার পঞ্জর লৌহের অর্গলবৎ; ঈশ্বরের কার্য্যের মধ্যে সে অগ্রগণ্য; তাহার নির্ম্মাতা তাহাকে খড়্‌গ দিয়াছেন। পর্ব্বতগণ তাহার খাদ্য যোগায়; সমস্ত বন্য পশুও সেই স্থানে ক্রীড়া করে। সে শয়ন করে পদ্মবনে, নলবনের অন্তরালে, জলাভূমিতে। পদ্ম গাছ নিজ ছায়ায় তাহাকে আচ্ছন্ন করে, উপত্যকার বাইশি বৃক্ষ তাহার চারি দিকে থাকে। দেখ, নদী উচ্চণ্ড হইলে সে ভয় করে না, যর্দ্দন ছাপিয়া তাহার মুখে আসিয়া পড়িলেও সে সুস্থির থাকে। সে সজাগ থাকিলে কে তাহাকে ধরিতে পারে? রজ্জু দিয়া কে তাহার নাসিকা ফুঁড়িতে পারে? তুমি কি বড়শীতে লিবিয়াথনকে তুলিতে পার? হাতসূতে তাহার জিহ্বা বাঁধিতে পার? নলকাটী দিয়া তার নাক কি ফুঁড়িতে পার? বড়শা দিয়া তাহার হনূ কি বিঁধিতে পার? সে কি তোমার কাছে বহু বিনতি করিবে, বা তোমাকে কোমল কথা বলিবে? সে কি তোমার সহিত নিয়ম করিবে? তুমি কি তাহাকে লইয়া চির দাস করিবে? পক্ষীর সঙ্গে যেমন খেলা করে, তেমনি কি তার সঙ্গে খেলা করিবে? তোমার যুবতীদের জন্য কি তাহাকে বাঁধিয়া রাখিবে? ধীবর-দল কি তাহাকে দিয়া ব্যবসায় করিবে? অংশ অংশ করিয়া কি বণিক্‌দিগকে দিবে? তুমি কি তাহার চর্ম্ম লৌহ-ফলায়, তাহার মস্তক ধীবরের টেঁটায়, বিঁধিতে পার? তোমার হস্ত তাহার উপরে রাখ; যুদ্ধ স্মরণ কর, আর সেরূপ করিও না। দেখ, তাহাকে ধরিবার প্রত্যাশা মিথ্যা; তাহাকে দেখিবামাত্র লোকে কি পড়িয়া যায় না? তাহাকে জাগাইবে, এমন সাহসী কেহ নাই; তবে আমার সাক্ষাতে কে দাঁড়াইতে পারে? কে অগ্রে আমার উপকার করিয়াছে যে, আমি তাহার প্রত্যুপকার করিব? সমস্ত আকাশমণ্ডলের নীচে সকলই আমার। তাহার অঙ্গের সম্বন্ধে আমি নীরব থাকিব না, তাহার বিপুল বলের ও শরীরের সৌষ্ঠবের [কথা বলিব]। তাহার বর্ম্ম কে খুলিয়া দিতে পারে? তাহার দন্তশ্রেণীদ্বয়ের মধ্যে কে যাইতে পারে? তাহার মুখের কবাট কে খুলিতে পারে? তাহার দন্তাবলির চারি দিকে ত্রাস থাকে। তাহার ফলকশ্রেণী শোভা পায়, তাহা মুদ্রাঙ্কিতের ন্যায় দৃঢ়রূপে বদ্ধ। সেই সকল পরস্পর এমন সংলগ্ন যে, তাহার অন্তরালে বায়ু প্রবেশ করিতে পারে না। সেই সকল পরস্পর সংযুক্ত, সেগুলি একত্র সংলগ্ন, কিছুতেই ভিন্ন হয় না। তাহার হাঁচিতে দীপ্তি বিকাশ করে, তাহার নয়ন অরুণের নেত্রচ্ছদের সদৃশ। তাহার মুখ হইতে জ্বলন্ত মশাল নির্গত হয়, অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উৎপন্ন হয়। তাহার নাসারন্ধ্র হইতে ধূম নির্গত হয়, যেমন তপ্ত হণ্ডিকা ও খাগড়ার ধূম। তাহার নিঃশ্বাসে অঙ্গার জ্বলিয়া উঠে, তাহার মুখ হইতে অগ্নিশিখা বাহির হয়। তাহার গ্রীবায় বল অবস্থিতি করে, তাহার সম্মুখে ত্রাস নৃত্য করে। তাহার মাংসের পর্ত্তা পরস্পর সংযুক্ত; তাহা তাহার উপরে দৃঢ়ীভূত, সরিতে পারে না। তাহার হৃৎপিণ্ড প্রস্তরের ন্যায় দৃঢ়, যাঁতার নীচের পাটের ন্যায় দৃঢ়। সে উঠিলে বলবানেরাও উদ্বিগ্ন হয়, ত্রাসপ্রযুক্ত হতবুদ্ধি হইয়া পড়ে। খড়্‌গে তাহাকে আক্রমণ করিলে কিছু হইবে না, বড়শা, বাণ ও সাঁজোয়া বিফল হয়। সে লৌহকে নাড়ার ন্যায়, পিত্তলকে পচা কাষ্ঠের ন্যায় জ্ঞান করে। ধনুর্ব্বাণ তাহাকে তাড়াইতে পারে না, তাহার কাছে ফিঙ্গার প্রস্তর তৃণ হইয়া পড়ে। সে গদাকে তৃণতুল্য জ্ঞান করে, বড়শার ধ্বনিতে হাস্য করে। তাহার তলদেশ শাণিত খোলার ন্যায়, সে কর্দ্দমের উপর দিয়া কাঁটার মই চালায়। সে অগাধ জলকে স্থালীর জলের ন্যায় ফুটায়। সে সমুদ্রকে মলমের ন্যায় করে। তাহার পশ্চাতে পথ চক্‌মক্‌ করে, জলধি পক্ককেশের তুল্য বোধ হয়। পৃথিবীতে তাহার তুল্য কিছুই নাই; তাহাকে নির্ভীক করিয়া নির্ম্মাণ করা হইয়াছে। সে যাবতীয় উচ্চবস্তু সন্দর্শন করে, যাবতীয় গর্ব্ব-সন্তানের উপরে রাজা হয়। পরে ইয়োব সদাপ্রভুকে উত্তর করিয়া কহিলেন, আমি জানি, তুমি সকলই করিতে পার; কোন সঙ্কল্প সাধন তোমার অসাধ্য নয়। এ কে যে জ্ঞান বিনা মন্ত্রণাকে গুপ্ত রাখে? সত্য, আমি তাহাই বলিয়াছি, যাহা বুঝি নাই, যাহা আমার পক্ষে অদ্ভুত, আমার অজ্ঞাত। বিনয় করি, নিবেদন শুন, আমি কিছু বলি; আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, তুমি বুঝাইয়া দেও। পূর্ব্বে তোমার বিষয় কর্ণে শুনিয়াছিলাম, কিন্তু সম্প্রতি আমার চক্ষু তোমাকে দেখিল। এই নিমিত্ত আমি আপনাকে ঘৃণা করিতেছি, ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি। ইয়োবকে এই সকল বলিবার পর সদাপ্রভু তৈমনীয় ইলীফসকে কহিলেন, তোমার প্রতি ও তোমার দুই বন্ধুর প্রতি আমার কোপাগ্নি প্রজ্বলিত হইয়াছে, কারণ আমার দাস ইয়োব যেরূপ বলিয়াছে, তোমরা আমার বিষয়ে তদ্রূপ যথার্থ কথা বল নাই। অতএব তোমরা সাতটী বৃষ ও সাতটী মেষ লইয়া আমার দাস ইয়োবের নিকটে গিয়া আপনাদের নিমিত্ত হোমবলি উৎসর্গ কর। আর আমার দাস ইয়োব তোমাদিগের নিমিত্ত প্রার্থনা করিবে; কারণ আমি তাহাকে গ্রাহ্য করিব; নতুবা আমি তোমাদিগকে তোমাদের মূর্খতানুযায়ী প্রতিফল দিব; কেননা আমার দাস ইয়োবের ন্যায় তোমরা আমার বিষয়ে যথার্থ কথা বল নাই। তখন তৈমনীয় ইলীফস, শূহীয় বিল্‌দদ ও নামাথীয় সোফর গিয়া সদাপ্রভুর বাক্যানুযায়ী কর্ম্ম করিলেন; আর সদাপ্রভু ইয়োবকে গ্রাহ্য করিলেন। পরে ইয়োব আপন বন্ধুগণের নিমিত্ত প্রার্থনা করিলে সদাপ্রভু তাঁহার দুর্দ্দশার পরিবর্ত্তন করিলেন; বস্তুতঃ সদাপ্রভু ইয়োবকে পূর্ব্ব সম্পদের দ্বিগুণ সম্পদ দিলেন। পরে ইয়োবের ভ্রাতা ও ভগিনীরা সকলে এবং পূর্ব্বপরিচিত লোকেরা সকলে তাঁহার নিকটে আসিয়া তাঁহার বাটীতে তাঁহার সহিত ভোজন করিল ও তাঁহার জন্য দুঃখ প্রকাশ করিল, এবং সদাপ্রভু কর্ত্তৃক ঘটিত সমস্ত বিপদের বিষয়ে তাঁহাকে সান্ত্বনা করিল, আর প্রত্যেক জন এক এক খণ্ড কসীতা মুদ্রা ও এক একটী সুবর্ণের কুণ্ডল তাঁহাকে দিল। আর সদাপ্রভু ইয়োবের প্রথম অবস্থা হইতে শেষাবস্থা অধিক আশীর্ব্বাদযুক্ত করিলেন; তাঁহার চতুর্দ্দশ সহস্র মেষ, ছয় সহস্র উষ্ট্র, এক সহস্র যোড়া বলদ ও এক সহস্র গর্দ্দভী হইল। আর তাঁহার সাত পুত্র ও তিন কন্যা জন্মিল। তিনি জ্যেষ্ঠা কন্যার নাম যিমীমা, দ্বিতীয়ার নাম কৎসীয়া ও তৃতীয়ার নাম কেরণহপ্পূক রাখিলেন। ইয়োবের কন্যাগণের তুল্য রূপবতী যুবতী সমস্ত দেশে মিলিত না, এবং তাহাদের পিতা তাহাদের ভ্রাতৃগণের সহিত তাহাদিগকে দায়াধিকার দিলেন। পরে ইয়োব আর এক শত চল্লিশ বৎসর জীবিত থাকিয়া আপন পুত্র পৌত্রাদি চারি পুরুষ পর্য্যন্ত দেখিলেন। শেষে ইয়োব বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইয়া প্রাণত্যাগ করিলেন। ধন্য সেই ব্যক্তি, যে দুষ্টদের মন্ত্রণায় চলে না, পাপীদের পথে দাঁড়ায় না, নিন্দকদের সভায় বসে না। কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়। দুষ্টগণ সেরূপ নহে; কিন্তু তাহারা বায়ুচালিত তুষের ন্যায়। এই জন্য দুষ্টগণ বিচারে দাঁড়াইবে না, পাপীরা ধার্ম্মিকদের মণ্ডলীতে দাঁড়াইবে না। কারণ সদাপ্রভু ধার্ম্মিকগণের পথ জানেন, কিন্তু দুষ্টদের পথ বিনষ্ট হইবে। জাতিগণ কেন কলহ করে? লোকবৃন্দ কেন অনর্থক বিষয় ধ্যান করে? পৃথিবীর রাজগণ দণ্ডায়মান হয়, নায়কগণ একসঙ্গে মন্ত্রণা করে, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে; [বলে,] ‘আইস, আমরা উহাদের বন্ধন ছিঁড়িয়া ফেলি, আপনাদের হইতে উহাদের রজ্জু খুলিয়া ফেলি।’ যিনি স্বর্গে উপবিষ্ট, তিনি হাস্য করিবেন; প্রভু তাহাদিগকে বিদ্রূপ করিবেন। তখন তিনি ক্রোধে তাহাদের কাছে কথা কহিবেন, কোপে তাহাদিগকে বিহ্বল করিবেন। আমিই আমার রাজাকে স্থাপন করিয়াছি আমার পবিত্র সিয়োন-পর্ব্বতে। আমি সেই বিধির বৃত্তান্ত প্রচার করিব; সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি আমার পুত্র, অদ্য আমি তোমাকে জন্ম দিয়াছি। আমার নিকটে যাচ্ঞা কর, আমি জাতিগণকে তোমার দায়াংশ করিব, পৃথিবীর প্রান্ত সকল তোমার অধিকারে আনিয়া দিব। তুমি লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে ভাঙ্গিবে, কুম্ভকারের পাত্রের ন্যায় খণ্ড বিখণ্ড করিবে। অতএব এখন, রাজগণ! বিবেচক হও; পৃথিবীর বিচারকগণ! শাসন গ্রাহ্য কর। তোমার সভয়ে সদাপ্রভুর আরাধনা কর, সকম্পে উল্লাস কর। পুত্রকে চুম্বন কর, পাছে তিনি ক্রুদ্ধ হন ও তোমরা পথে বিনষ্ট হও, কারণ ক্ষণমাত্রে তাঁহার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইবে। ধন্য তাহারা সকলে, যাহারা তাঁহার শরণাপন্ন। হে সদাপ্রভু, আমার বিপক্ষ কত বাড়িয়াছে। অনেকে আমার বিরুদ্ধে উঠিতেছে। অনেকে আমার প্রাণের উদ্দেশে বলিতেছে, ঈশ্বরের কাছে উহার জন্য ত্রাণ নাই। সেলা। কিন্তু, হে সদাপ্রভু, তুমিই আমার বেষ্টনকারী ঢাল, আমার গৌরব, ও আমার মস্তক উত্তোলনকারী। আমি স্বরবে সদাপ্রভুকে ডাকি, আর তিনি আপন পবিত্র পর্ব্বত হইতে আমাকে উত্তর দেন। সেলা। আমি শয়ন করিলাম ও নিদ্রা গেলাম, আমি জাগ্রৎ হইলাম; কারণ সদাপ্রভু আমাকে ধারণ করেন। আমি অযুত অযুত লোক হইতেও ভীত হইব না, যাহারা আমার বিরুদ্ধে চারিদিকে সসজ্জ হইয়াছে। হে সদাপ্রভু, উঠ; হে আমার ঈশ্বর, আমার পরিত্রাণ কর; কেননা তুমি আমার সমস্ত শত্রুর চোয়ালে আঘাত করিয়াছ, তুমি দুষ্টদের দন্ত সকল ভাঙ্গিয়া দিয়াছ। পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই কাছে; তোমার প্রজাদের উপরে তোমার আশীর্ব্বাদ বর্ত্তুক। সেলা। হে আমার ধার্ম্মিকতার ঈশ্বর, আমি ডাকিলে আমাকে উত্তর দেও। সঙ্কটে তুমি আমাকে মনের প্রশস্ততা দিয়াছ; আমাকে দয়া কর, আমার প্রার্থনা শুন। হে মানব-সন্তানগণ, কত কাল আমার সম্মান অপমানে পরিণত করিবে, অলীকতা ভালবাসিবে, ও মিথ্যাকথার অন্বেষণ করিবে? সেলা। তোমরা জানিও, সদাপ্রভু সাধুকে আপনার নিমিত্ত পৃথক করিয়া রাখিয়াছেন; আমি সদাপ্রভুকে ডাকিলে তিনি শুনিবেন। তোমরা ভয় কর, পাপ করিও না, তোমাদের শয্যার উপরে মনে মনে কথা কহ, ও নীরব হও। সেলা। তোমরা ধার্ম্মিকতার বলি উৎসর্গ কর, আর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস রাখ। অনেকে বলে, কে আমাদিগকে মঙ্গল দেখাইবে? হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রতি নিজ মুখের দীপ্তি উদিত কর। তুমি আমার অন্তঃকরণে এমন আহ্লাদ দিয়াছ, যাহা উহাদের গোধূম ও দ্রাক্ষারসের বাহুল্যকালেও হয় না। আমি শান্তিতে শয়ন করিব, নিদ্রাও যাইব; কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমিই একাকী আমাকে নির্ভয়ে বাস করিতে দিতেছ। হে সদাপ্রভু, আমার বাক্যে কর্ণপাত কর, আমার কাকূক্তিতে মনোযোগ কর। মম রাজন্‌, মম ঈশ্বর, মম আর্ত্তনাদের রব শুন, কেননা আমি তোমারই কাছে প্রার্থনা করিতেছি। সদাপ্রভু, প্রাতঃকালে তুমি আমার রব শুনিবে; প্রাতে আমি তোমার উদ্দেশে [প্রার্থনা] সাজাইয়া চাহিয়া থাকিব। কেননা তুমি দুষ্টতাপ্রিয় ঈশ্বর নহ, মন্দ তোমার অতিথি হইতে পারে না। দর্পকারিগণ তোমার সাক্ষাতে দাঁড়াইবে না, তুমি সমুদয় অধর্ম্মচারীকে ঘৃণা করিয়া থাক। তুমি মিথ্যাবাদীদিগকে বিনষ্ট করিবে, সদাপ্রভু রক্তপাতীকে ও ছলপ্রিয়কে ঘৃণা করেন। কিন্তু আমি তোমার দয়ার বাহুল্যে তোমার গৃহে প্রবেশ করিব, তোমার পবিত্র মন্দিরের অভিমুখে তোমার ভয়ে প্রণিপাত করিব। হে সদাপ্রভু, আমার গুপ্ত শত্রুগণ হেতু তুমি আপন ধর্ম্মশীলতায় আমাকে চালাও, আমার সম্মুখে তোমার পথ সরল কর। কেননা উহাদের মুখে স্থিরতা কিছুই নাই; তাহাদের অন্তর দুষ্টতাময়, তাহাদের কন্ঠ অনাবৃত কবরস্বরূপ, তাহারা আপনাদের জিহ্বা মসৃণ করে। হে ঈশ্বর, তাহাদিগকে দোষী কর, তাহারা আপনাদের মন্ত্রণায় পতিত হউক, তুমি তাহাদের অধর্ম্ম-বাহুল্যে তাহাদিগকে তাড়াইয়া দেও, কেননা তাহারা তোমার বিদ্রোহী হইয়াছে। কিন্তু তোমার শরণাপন্ন সকলে আহ্লাদিত হউক, তাহারা চিরকাল আনন্দগান করুক, কেননা তুমি তাহাদিগকে রক্ষা করিতেছ; যাহারা তোমার নাম ভালবাসে, তাহারা তোমাতে উল্লাস করুক। কেননা তুমি ধার্ম্মিককে আশীর্ব্বাদ করিবে, হে সদাপ্রভু, তুমি ঢালের ন্যায় তাহাকে প্রসন্নতায় বেষ্টন করিবে। হে সদাপ্রভু, ক্রোধে আমাকে ভর্ৎসনা করিও না, কোপে আমাকে শাসন করিও না। হে সদাপ্রভু, আমাকে কৃপা কর, কেননা আমি ম্লান হইয়াছি; হে সদাপ্রভু, আমাকে সুস্থ কর, কেননা আমার অস্থি সকল বিহ্বল হইয়াছে। আমার প্রাণও অতিশয় বিহ্বল হইয়াছে; আর, তুমি হে সদাপ্রভু, আর কত কাল? হে সদাপ্রভু, ফিরিয়া আইস, আমার প্রাণ উদ্ধার কর, তোমার দয়াগুণে আমাকে পরিত্রাণ কর। কেননা মৃত্যুতে তোমাকে স্মরণ করা যায় না, পাতালে কে তোমার স্তব করিবে? আমি কোঁকাইতে কোঁকাইতে শ্রান্ত হইয়াছি; প্রতিরাত্রি আমি শয্যা ভাসাই, আমি নেত্রজলে খাট ভিজাই। মনস্তাপে আমার চক্ষু ক্ষীণ হইতেছে; আমার সকল বৈরী হেতু তাহা জীর্ণ হইতেছে। হে অধর্ম্মাচারী সকলে, আমা হইতে দূর হও, কেননা সদাপ্রভু আমার রোদন-রব শুনিয়াছেন। সদাপ্রভু আমার বিনতি শুনিয়াছেন; সদাপ্রভু আমার প্রার্থনা গ্রাহ্য করিবেন। আমার সমস্ত শত্রু লজ্জিত ও বিহ্বল হইবে; তাহারা ফিরিয়া যাইবে, হঠাৎ লজ্জিত হইবে। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি তোমারই শরণ লইয়াছি; আমার সকল তাড়নাকারী হইতে আমাকে নিস্তার কর, আমাকে উদ্ধার কর। পাছে [শত্রু] সিংহের ন্যায় আমার প্রাণ বিদীর্ণ করে, খণ্ড খণ্ড করে, যখন উদ্ধারকারী কেহ নাই। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, যদি আমি সেই কার্য্য করিয়া থাকি, যদি আমার করতলে অন্যায় লাগিয়া থাকে; যদি আমি প্রণয়ীর অপকার করিয়া থাকি, (বরং যে অকারণে আমার বৈরী, তাহাকেও উদ্ধার করিয়াছি,) তবে শত্রু দৌড়িয়া আমার প্রাণ ধরুক, আমার জীবন ভূমিতে দলিত করুক, এবং আমার গৌরব ধূলিসাৎ করুক। সেলা। হে সদাপ্রভু, ক্রোধভরে উত্থান কর, আমার বৈরীদের কোপের প্রতিকূলে উঠ, আমার পক্ষে জাগ্রৎ হও; তুমি বিচারের আজ্ঞা দিয়াছ। জাতিগণের মণ্ডলী তোমাকে বেষ্টন করুক; তাহাদের ঊর্দ্ধে তুমি উচ্চস্থানে ফিরিয়া আইস। সদাপ্রভু জাতিগণের বিচার করেন; হে সদাপ্রভু, আমার ধার্ম্মিকতা ও আমার আন্তরিক সিদ্ধতানুসারে আমার বিচার কর। বিনয় করি, দুষ্টগণের দুষ্টতা শেষ হউক, কিন্তু তুমি ধার্ম্মিককে সুস্থির কর; ধর্ম্মময় ঈশ্বর ত অন্তঃকরণ ও মর্ম্মের পরীক্ষক। ঈশ্বর আমার ঢালধারী, তিনি সরলচিত্তদের ত্রাণকর্ত্তা। ঈশ্বর ধর্ম্মময় বিচারকর্ত্তা; তিনি প্রতিদিন ক্রোধকারী ঈশ্বর। মানুষ যদি না ফিরে, তবে তিনি আপন খড়্‌গে শান দিবেন; তিনি নিজ ধনুকে চাড়া দিয়াছেন, তাহা প্রস্তুত করিয়াছেন। উহার জন্য তিনি মৃত্যুর অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুত করিয়াছেন; তিনি নিজ বাণ সকল অগ্নিবাণে পরিণত করেন। দেখ, সে অধর্ম্ম গর্ভে ধারণ করে, উপদ্রবে পূর্ণগর্ভ হয়, মিথ্যাকে প্রসব করে। সে কূপ খনন করিয়া গভীর করিয়াছে, কিন্তু আপনার কৃত গর্ত্তে পতিত হইল। তাহার উপদ্রব তাহারই মস্তকে ফিরিবে, তাহার দৌরাত্ম্য তাহারই মুণ্ডে পড়িবে। আমি সদাপ্রভুর ধর্ম্মশীলতানুসারে তাঁহার স্তব করিব, পরাৎপর সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা গান করিব। হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রভু, সমস্ত পৃথিবীতে তোমার নাম কেমন মহিমান্বিত। তুমি আকাশমণ্ডলের ঊর্দ্ধেও তোমার প্রভা সংস্থাপন করিয়াছ। তুমি শিশু ও দুগ্ধপোষ্যদের মুখ হইতে শক্তির ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছ, তোমার বৈরিগণহেতুই করিয়াছ, যেন শত্রু ও বিপক্ষকে ক্ষান্ত কর। আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি, [বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর? তুমি ঈশ্বর অপেক্ষা তাহাকে অল্পই ন্যূন করিয়াছ, গৌরব ও প্রতাপের মুকুটে বিভূষিত করিয়াছ। তোমার হস্তকৃত বস্তু সকলের উপরে তাহাকে কর্ত্তৃত্ব দিয়াছ, তুমি সকলই তাহার পদতলস্থ করিয়াছ;— সমস্ত মেষ ও গোরু, আর বন্য পশুগণ, শূন্যের পক্ষিগণ, এবং সাগরের মৎস্য, যাহা কিছু সমুদ্রপথগামী। হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রভু, সমস্ত পৃথিবীতে তোমার নাম কেমন মহিমান্বিত। আমি সর্ব্বান্তঃকরণে সদাপ্রভুর স্তব করিব, তোমার সমস্ত আশ্চর্য্য ক্রিয়া বর্ণনা করিব। আমি তোমাতে আনন্দ ও উল্লাস করিব; পরাৎপর, আমি তোমার নামের প্রশংসা গাহিব। যখন আমার শত্রুগণ ফিরিয়া যায়, তখন তোমার সাক্ষাতে পতিত ও বিনষ্ট হয়। কেননা তুমি আমার বিচার ও বিবাদ নিষ্পন্ন করিয়াছ, তুমি সিংহাসনে বসিয়া ধর্ম্মবিচার করিয়াছ। তুমি জাতিগণকে ভর্ৎসনা করিয়াছ, দুষ্টকে সংহার করিয়াছ, তুমি অনন্তকালের জন্য তাহাদের নাম লোপ করিয়াছ। শত্রুরা শেষ হইয়াছে, চিরতরে উৎসন্ন হইয়াছে; তুমি নগর সকল ধ্বংস করিয়াছ; তাহাদের নাম পর্য্যন্ত লুপ্ত হইয়াছে। কিন্তু সদাপ্রভু চিরকাল সমাসীন থাকিবেন; তিনি বিচারার্থে আপন সিংহাসন স্থাপন করিয়াছেন। আর তিনিই ধর্ম্মশীলতায় জগতের বিচার করিবেন, ন্যায়ে জাতিগণের শাসন করিবেন। আর সদাপ্রভু হইবেন ক্লিষ্টের জন্য উচ্চ দুর্গ, সঙ্কটের সময়ে উচ্চ দুর্গ। যাহারা তোমার নাম জানে, তাহারা তোমাতে বিশ্বাস রাখিবে; কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমি তোমার অন্বেষণকারীদিগকে পরিত্যাগ কর নাই। তোমরা সিয়োন-নিবাসী সদাপ্রভুর প্রশংসা গাও; জাতিগণের মধ্যে তাঁহার ক্রিয়া সকল জ্ঞাত কর। কেননা যিনি রক্তপাতের অনুসন্ধান করেন, তিনি নিহতদিগকে স্মরণ করেন; তিনি দুঃখীদিগের ক্রন্দন ভুলিয়া যান না; হে সদাপ্রভু, আমার প্রতি কৃপা কর; বিদ্বেষী লোকগণ হইতে আমার যে দুঃখ ঘটে, তাহা দেখ, তুমি মৃত্যু-দ্বার হইতে আমার উত্তোলনকর্ত্তা; এইজন্য আমি তোমার সমস্ত প্রশংসা প্রচার করিব; সিয়োন-কন্যার পুরদ্বারসমূহে, আমি তোমার পরিত্রাণে উল্লাস করিব। জাতিগণ আপনাদের কৃত খাতে ডুবিয়াছে; তাহারা গোপনে যে জাল পাতিয়াছিল, তাহাতে তাহাদেরই চরণ বদ্ধ হইয়াছে। সদাপ্রভু আপনার পরিচয় দিয়াছেন; তিনি বিচার সাধন করিয়াছেন; দুষ্ট স্বহস্তের কর্ম্মপাশে বদ্ধ হইয়াছে। হিগায়োন। সেলা। দুষ্টেরা পাতালে ফিরিয়া যাইবে, যে জাতিরা ঈশ্বরকে ভুলিয়া যায়, তাহারাও যাইবে। কারণ দরিদ্র নিয়ত বিস্মৃতিপাত্র থাকিবে না, দুঃখীদিগের আশা চিরতরে বিনষ্ট হইবে না। হে সদাপ্রভু, উঠ; মর্ত্ত্য প্রবল না হউক, তোমার সাক্ষাতে জাতিগণ বিচারিত হউক। হে সদাপ্রভু, তাহাদিগকে ভয় প্রদর্শন কর; জাতিগণ জানুক যে, তাহারা মর্ত্ত্যমাত্র। সেলা। হে সদাপ্রভু, কেন দূরে দাঁড়াইয়া থাক? সঙ্কটের সময়ে কেন লুকাইয়া থাক? দুষ্টের গর্ব্ব প্রযুক্ত দুঃখী আগুনে পোড়ে, উহাদের কল্পিত ছলে উহারাই ধরা পড়ুক। কেননা দুষ্ট আপন মনোরথের শ্লাঘা করে, লোভী সদাপ্রভুকে জলাঞ্জলি দেয়, অবজ্ঞা করে। দুষ্ট লোক নাক তুলিয়া [বলে,] তিনি অনুসন্ধান করিবেন না; ঈশ্বর নাই, ইহাই তাহার চিন্তার সার। তাহার পথ সর্ব্বদা দৃঢ়; তোমার শাসনকলাপ ঊর্দ্ধ, তাহার দৃষ্টির বহির্ভূত; সমস্ত বিপক্ষের প্রতি সে ফুৎকার করে। সে মনে মনে বলে, আমি বিচলিত হইব না, পুরুষানুক্রমে কখন বিপদ্‌গ্রস্ত হইব না। তাহার মুখ অভিশাপ, ছলনা ও শঠতায় পূর্ণ; তাহার জিহ্বার নীচে উপদ্রব ও অন্যায় থাকে। সে গ্রামের গুপ্ত স্থানে বসিয়া থাকে, নিভৃত স্থানে নির্দ্দোষকে বধ করে; তাহার চক্ষু অনাথকে ধরিবার জন্য লুক্কায়িত। সিংহ যেমন গহ্বরে, সে তেমনি গুপ্ত স্থানে থাকে, দুঃখীকে ধরিবার জন্য অন্তরালে থাকে; সে দুঃখীকে ধরে, আপন জালে টানে। সে গুঁড়ি মারে, সে অবনত হয়, অনাথেরা তাহার প্রবল [থাবায়] পতিত হয়। সে মনে মনে বলে, ঈশ্বর ভুলিয়া গিয়াছেন, তিনি মুখ লুকাইয়াছেন, কখনও দেখিবেন না; হে সদাপ্রভু, উঠ; হে ঈশ্বর, আপন হস্ত তোল। দুঃখীদিগকে ভুলিয়া যাইও না। দুষ্ট কেন ঈশ্বরকে অবজ্ঞা করে, মনে মনে বলে, তুমি অনুসন্ধান করিবে না? তুমি দেখিয়াছ, কেননা তুমি উপদ্রব ও দ্বেষের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেছ, যেন তাহার প্রতীকার স্বহস্তে কর; অনাথ তোমারই উপরে ভার সমর্পণ করে; তুমিই পিতৃহীনের সহায়। দুষ্টের বাহু ভাঙ্গিয়া ফেল, দুর্ব্বৃত্তের দুষ্টতার অনুসন্ধান কর, যাবৎ লেশমাত্র না থাকে। সদাপ্রভু অনন্তকালীন রাজা; জাতিগণ তাঁহার দেশ হইতে লুপ্ত হইয়াছে। হে সদাপ্রভু, তুমি নম্রদের আকাঙ্ক্ষা শুনিয়াছ; তুমি তাহাদের চিত্ত সুস্থির করিবে, তুমি কর্ণপাত করিবে; পিতৃহীনের ও উপদ্রুত লোকদের বিচার করিবার জন্য, যেন মৃত্তিকাজাত মর্ত্ত্য আর দুর্দ্দান্ত না থাকে। আমি সদাপ্রভুর শরণ লইয়াছি; তোমরা কি ভাবিয়া আমার প্রাণকে বল, পক্ষীর ন্যায় তোমাদের পর্ব্বতে উড়িয়া যাও; কেননা দেখ, দুষ্টগণ ধনুকে চাড়া দিতেছে, আপন আপন বাণ গুণে যোগ করিতেছে, যেন সরলচিত্তদিগকে অন্ধকারে বিদ্ধ করে; যদি মূলবস্তু সকল উৎপাটিত হয়, তবে ধার্ম্মিক কি করিবে? সদাপ্রভু আপন পবিত্র মন্দিরে আছেন; সদাপ্রভু, তাঁহার সিংহাসন স্বর্গে; তাঁহার চক্ষু নিরীক্ষণ করিতেছে, তাঁহার চক্ষুর পাতা মনুষ্য-সন্তানদের পরীক্ষা করিতেছে। সদাপ্রভু ধার্ম্মিকের পরীক্ষা করেন, কিন্তু দুষ্ট ও দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক তাঁহার প্রাণের ঘৃণাস্পদ। তিনি দুষ্টদের উপরে পাঁশ বর্ষণ করিবেন, অগ্নি, গন্ধক ও উত্তপ্ত বায়ু তাহাদের পানপাত্রের পেয় দ্রব্য। কেননা সদাপ্রভু ধর্ম্মময়, ধর্ম্মকর্ম্মই ভালবাসেন; সরল লোক তাঁহার শ্রীমুখ দর্শন করিবে। পদাপ্রভু, ত্রাণ কর, কেননা সাধু লোপ পাইল; মনুষ্য-সন্তানদের মধ্যে বিশ্বসনীয় লোক শেষ হইল। প্রতিজন প্রতিবাসীর সহিত অলীক কথা কহে; চাটুবাদী ওষ্ঠাধরে ও দ্বিধা চিত্তে কথা কহে। সদাপ্রভু সমস্ত চাটুবাদী ওষ্ঠাধর ও দর্পবাদী জিহ্বা কাটিয়া ফেলিবেন; উহারা বলে, আমরা জিহ্বা দ্বারা প্রবল হইব, আমাদের ওষ্ঠ আমাদেরই; আমাদের কর্ত্তা কে? দুঃখীদের সর্ব্বনাশ, দীনহীনের কাতরোক্তি প্রযুক্ত, আমি এক্ষণে উঠিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আমি ত্রাণাকাঙ্ক্ষীর ত্রাণ করিব। সদাপ্রভুর বাক্য সকল নির্ম্মল বাক্য; তাহা মৃত্তিকার মুচিতে খাঁটী করা রৌপ্যের তুল্য, সাত বার পরিষ্কৃত রৌপ্যের তুল্য। হে সদাপ্রভু, তুমিই তাহাদিগকে রক্ষা করিবে, চিরতরে এই কালের লোক হইতে উদ্ধার করিবে। দুষ্টগণ চারিদিকে বিহার করে, যখন মনুষ্য-সন্তানদের মধ্যে অধমতা উচ্চীকৃত হয়। কত কাল, সদাপ্রভু, আমাকে নিয়ত ভুলিয়া থাকিবে? কত কাল আমা হইতে তোমার মুখ লুক্কায়িত রাখিবে? কত কাল আমি প্রাণের মধ্যে ভাবনা করিব, চিত্তের মধ্যে বিষাদকে দিনমানে রাখিব? কত কাল শত্রু আমার উপরে উচ্চ থাকিবে? হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, দৃষ্টিপাত কর, আমাকে উত্তর দেও; আমার চক্ষু আলোকময় কর, পাছে আমি মৃত্যু-নিদ্রায় নিদ্রিত হই; পাছে শত্রু বলে, আমি তাহাকে জয় করিয়াছি; পাছে আমি বিচলিত হইলে বিপক্ষগণ উল্লাস করে। কিন্তু আমি তোমার দয়াতে বিশ্বাস করিয়াছি; আমার চিত্ত তোমার পরিত্রাণে উল্লাসিত হইবে। আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাহিব, কেননা তিনি আমার মঙ্গল করিয়াছেন। মূঢ় মনে মনে বলিয়াছে, ‘ঈশ্বর নাই’। তাহারা নষ্ট, তাহারা ঘৃণার্হ কর্ম্ম করিয়াছে; সৎকর্ম্ম করে এমন কেহই নাই। সদাপ্রভু স্বর্গ হইতে মনুষ্য-সন্তানদের প্রতি নিরীক্ষণ করিলেন; দেখিতে চাহিলেন, বুদ্ধিপূর্ব্বক কেহ চলে কি না, ঈশ্বরের অন্বেষণকারী কেহ আছে কি না। সকলে বিপথে গিয়াছে, সকলেই বিকারপ্রাপ্ত হইয়াছে; সৎকর্ম্ম করে, এমন কেহই নাই, এক জনও নাই। অধর্ম্মাচারী সকলের কি কিছুই জ্ঞান নাই? তাহারা খাদ্য গ্রাস করিবার ন্যায় আমার প্রজাগণকে গ্রাস করে, সদাপ্রভুকে ডাকে না। ঐ স্থানে তাহারা বড় ভয় পাইয়াছে; কেননা ঈশ্বর ধার্ম্মিক বংশের মধ্যবর্ত্তী। তোমরা দুঃখীর মন্ত্রণাকে লজ্জিত করিতেছ; কেননা সদাপ্রভু তাহার আশ্রয়। আঃ! ইস্রায়েলের পরিত্রাণ সিয়োন হইতে উপস্থিত হউক। সদাপ্রভু যখন আপন প্রজাদের বন্দিত্ব ফিরাইবেন, তখন যাকোব উল্লাসিত হইবে, ইস্রায়েল আনন্দ করিবে। হে সদাপ্রভু, তোমার তাম্বুতে কে প্রবাস করিবে? তোমার পবিত্র পর্ব্বতে কে বসতি করিবে? যে ব্যক্তি সিদ্ধ আচরণ ও ধর্ম্মকর্ম্ম করে, এবং হৃদয়ে সত্য কহে। যে পরীবাদ জিহ্বাগ্রে আনে না, মিত্রের অপকার করে না, আপনার প্রতিবাসীর দুর্নাম করে না। যাহার দৃষ্টিতে পামর তুচ্ছনীয় হয়; যে সদাপ্রভুর ভয়কারীদিগকে মান্য করে, দিব্য করিলে ক্ষতি হইলেও অন্যথা করে না; সুদের জন্য টাকা ধার দেয় না, নির্দ্দোষের বিরুদ্ধে উৎকোচ লয় না; এই সকল কর্ম্ম যে করে, সে কখনও বিচলিত হইবে না। হে ঈশ্বর, আমাকে রক্ষা কর, কেননা আমি তোমার শরণ লইয়াছি। আমি সদাপ্রভুকে বলিয়াছি তুমিই আমার প্রভু; তুমি ব্যতীত আমার মঙ্গল নাই। পৃথিবীতে যে পবিত্র ব্যক্তিগণ থাকেন, তাঁহারা আদরণীয়, আমার সমস্ত প্রীতির পাত্র। যাহারা অন্য [দেবতাকে] উপহার দেয়, তাহাদের যাতনা বৃদ্ধি পাইবে; রক্তরূপ তাহাদের পেয় নৈবেদ্য আমি উৎসর্গ করিব না, আপন ওষ্ঠাধরে তাহাদের নাম লইব না। সদাপ্রভু আমার দায়াংশ ও আমার পানপাত্র; তুমিই আমার অধিকার স্থায়ী করিতেছ। আমার জন্য মানরজ্জু মনোহর স্থানে পড়িয়াছে, আমার অধিকার আমার পক্ষে শোভাযুক্ত। আমি সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব, তিনিই আমাকে মন্ত্রণা দিয়াছেন, রাত্রিতেও আমার চিত্ত আমাকে প্রবোধ দেয়। আমি সদাপ্রভুকে নিয়ত সম্মুখে রাখিয়াছি; তিনি ত আমার দক্ষিণে, আমি বিচলিত হইব না। এই জন্য আমার চিত্ত আনন্দিত, ও আমার গৌরব উল্লাসিত হইল; আমার মাংসও নির্ভয়ে বাস করিবে। কারণ তুমি আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না, তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না। তুমি আমাকে জীবনের পথ জ্ঞাত করিবে, তোমার সম্মুখে তৃপ্তিকর আনন্দ, তোমার দক্ষিণ হস্তে নিত্য সুখভোগ। হে সদাপ্রভু, ধর্ম্মবাদ শুন, আমার কাকূক্তিতে অবধান কর, আমার প্রার্থনায় কর্ণপাত কর; তাহা ছলনার ওষ্ঠাধর হইতে নির্গত নয়। তোমার সাক্ষাতে আমার বিচার নিষ্পত্তি হউক; যাহা ন্যায্য তাহার প্রতি তোমার দৃষ্টি পড়ুক। তুমি আমার চিত্তের পরীক্ষা করিয়াছ, রাত্রিকালে আমার তত্ত্বানুসন্ধান করিয়াছ, তুমি আমাকে কষিয়াছ, কিছু পাও নাই; আমি স্থির করিলাম, আমার মুখ পাপ করিবে না। মনুষ্যের কার্য্য সম্বন্ধে, তোমার ওষ্ঠাধরের বাক্যে, আমি দুর্জ্জনের পথ হইতে সাবধান হইয়াছি। আমার পাদক্ষেপ তোমার পথে স্থির রহিয়াছে, আমার চরণ বিচলিত হয় নাই। আমি তোমাকে ডাকিলাম, কেননা, হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে উত্তর দিবে; আমার প্রতি কর্ণপাত কর, আমার বাক্য শুন। তোমার আশ্চর্য্য দয়া প্রকাশ কর; তুমি শরণাপন্ন লোকদিগকে নিস্তার করিয়া থাক, বিপক্ষগণ হইতে তোমার দক্ষিণ হস্ত দ্বারাই করিয়া থাক। নয়নের তারার ন্যায় আমাকে রক্ষা কর, তোমার পক্ষের ছায়াতে আমাকে সঙ্গোপন কর, দুষ্টগণ হইতে কর, যাহারা আমাকে নষ্ট করে, প্রাণনাশক শত্রুগণ হইতে কর, যাহারা আমাকে বেষ্টন করে। তাহারা আপন আপন মেদে বদ্ধ, তাহারা মুখে অহঙ্কারের কথা কহে। এখন তাহারা আমাদের পাদসঞ্চারে আমাদিগকে ঘেরিয়াছে, তাহারা আমাদিগকে ভূমিসাৎ করণার্থে চক্ষু স্থির করে। সে বিদারণ করিতে উৎসুক কেশরীর তুল্য, অন্তরালে উপবিষ্ট যুবসিংহের ন্যায়। হে সদাপ্রভু, উঠ, তাহাকে প্রতিরোধ কর, তাহাকে পাড়িয়া ফেল, তোমার খড়্‌গ দ্বারা দুষ্ট লোক হইতে আমার প্রাণ বাঁচাও। সদাপ্রভু, তোমার হস্ত দ্বারা মনুষ্যদের হইতে, সাংসারিক মনুষ্যদের হইতে, আমাকে বাঁচাও, তাহাদের দায়াংশ এই জীবনে; তুমি নিজ ধনে তাহাদের উদর পূর্ণ করিতেছ; তাহারা সন্তানে তৃপ্ত হয়, আপন আপন শিশুদের নিমিত্ত আপনাদের অবশিষ্ট সম্পত্তি রাখিয়া যায়। আমি ত ধার্ম্মিকতায় তোমার মুখ দর্শন করিব, জাগিয়া তোমার মূর্ত্তিতে তৃপ্ত হইব। হে সদাপ্রভু! মম বল! আমি তোমাতে অনুরক্ত। সদাপ্রভু মম শৈল, মম দুর্গ, ও মম রক্ষাকর্ত্তা, মম ঈশ্বর, মম দৃঢ় শৈল, আমি তাঁহার শরণাগত; মম ঢাল, মম ত্রাণশৃঙ্গ, মম উচ্চদুর্গ। আমি কীর্ত্তনীয় সদাপ্রভুকে ডাকিব, এইরূপে আমার শত্রুগণ হইতে ত্রাণ পাইব। আমি মৃত্যুর রজ্জুতে পরিবেষ্টিত ছিলাম, পাষণ্ডতার বন্যাতে আশঙ্কিত ছিলাম। আমি পাতালের রজ্জুতে বেষ্টিত ছিলাম, মৃত্যুর পাশে জড়িত ছিলাম। সঙ্গটে আমি সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, আমার ঈশ্বরের উদ্দেশে আর্ত্তনাদ করিলাম; তিনি নিজ মন্দির হইতে আমার রব শুনিলেন, তাঁহার সম্মুখে আমার আর্ত্তনাদ তাঁহার কর্ণে প্রবেশ করিল। তখন পৃথিবী টলিল, কম্পিত হইল, পর্ব্বতরাজির মূল সকল বিচলিত হইল, ও টলিল, কারণ তিনি জ্বলিয়া উঠিলেন। তাঁহার নাসারন্ধ্র হইতে ধূম উদগত হইল, তাঁহার মুখনির্গত অগ্নি গ্রাস করিল; তদ্দ্বারা অঙ্গার সকল প্রজ্বলিত হইল। তিনি গগনকে নোয়াইয়া নামিলেন, অন্ধকার তাঁহার পদতলে ছিল। তিনি করূব আরোহণে উড্ডীন হইলেন, বায়ু-পক্ষভরে উড়িয়া আসিলেন। তিনি অন্ধকারকে আপন অন্তরাল, আপনার চতুর্দ্দিক্‌স্থ তাম্বু করিলেন; জলের তিমির গণনের ঘন মেঘমালা। তাঁহার সম্মুখবর্ত্তী তেজ হইতে তাঁহার মেঘমালা চলিয়া গেল, শিলাবৃষ্টি ও প্রজ্বলিত অঙ্গার। আর সদাপ্রভু আকাশে বজ্রনাদ করিলেন, পরাৎপর আপন রব শুনাইলেন; শিলাবৃষ্টি ও প্রজ্বলিত অঙ্গার। তিনি আপন বাণ ছাড়িলেন, তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিলেন; বহু বজ্র ছাড়িয়া তাহাদিগকে উদ্বিগ্ন করিলেন। তখন জলরাশির প্রণালী সকল প্রকাশ পাইল, ভূমণ্ডলের মূল সকল অনাবৃত হইল, তোমার তর্জ্জনে, হে সদাপ্রভু, তোমার নাসিকার প্রশ্বাসবায়ুতে। তিনি ঊর্দ্ধ হইতে [হস্ত] বিস্তার করিলেন, আমাকে ধরিলেন, মহাজলরাশি হইতে আমাকে টানিয়া তুলিলেন; তিনি আমাকে উদ্ধার করিলেন আমার বলবান শত্রু হইতে, আমার বিদ্বেষিগণ হইতে, কেননা তাহারা আমা অপেক্ষা শক্তিমান ছিল। আমার বিপদের দিনে তাহারা আমার কাছে আসিল, কিন্তু সদাপ্রভু আমার অবলম্বন হইলেন। তিনি আমাকে বাহিরে প্রশস্ত স্থানে আনিলেন, আমাকে উদ্ধার করিলেন, কেননা তিনি আমাতে সন্তুষ্ট ছিলেন। সদাপ্রভু আমার ধার্ম্মিকতানুযায়ী পুরস্কার দিলেন, আমার হস্তের শুচিতানুযায়ী ফল দিলেন। কেননা আমি সদাপ্রভুর পথে চলিয়াছি, দুষ্টতাপূর্ব্বক আমার ঈশ্বরকে ছাড়ি নাই। কারণ তাঁহার সমস্ত শাসন আমার সম্মুখে ছিল, আমি তাঁহার বিধি আমা হইতে দূর করি নাই। আর আমি তাঁহার উদ্দেশে সিদ্ধ ছিলাম, নিজ অপরাধ হইতে আপনাকে রক্ষা করিতাম। তাই সদাপ্রভু আমার ধার্ম্মিকতা অনুসারে ফল দিলেন, তাঁহার সাক্ষাতে আমার হস্তের শুচিতানুসারে দিলেন। তুমি দয়াবানের সহিত সদয় ব্যবহার করিবে, সিদ্ধের সহিত সিদ্ধ ব্যবহার করিবে। তুমি শুচির সহিত শুচি ব্যবহার করিবে, কুটিলের সহিত চতুরতা ব্যবহার করিবে। কেননা তুমি দুঃখীদিগকে নিস্তার করিবে, কিন্তু গর্ব্বিত নয়ন অবনত করিবে। তুমিই আমার প্রদীপ উজ্জ্বল করিয়া থাক; সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার অন্ধকার আলোকময় করেন। কেননা তোমার দ্বারা আমি সৈন্যদলের বিরুদ্ধে দৌড়ি; আমার ঈশ্বরের দ্বারা প্রাচীর উল্লঙ্ঘন করি। তিনিই ঈশ্বর, তাঁহার পথ সিদ্ধ; সদাপ্রভুর বাক্য পরীক্ষাসিদ্ধ; তিনি নিজ শরণাগত সকলের ঢাল। কারণ সদাপ্রভু ব্যতীত আর ঈশ্বর কে আছে? আমাদের ঈশ্বর ব্যতীত আর শৈল কে আছে? ঈশ্বর বল দিয়া আমার কটিবন্ধন করিয়াছেন। তিনি আমার পথ সিদ্ধ করিয়াছেন। তিনি আমার চরণ হরিণীর চরণবৎ করেন, আমার উচ্চস্থলীতে আমাকে সংস্থাপন করেন। তিনি আমার হস্তকে যুদ্ধ করিতে শিক্ষা দেন, তাই আমার বাহু তাম্রময় ধনুকে চাড়া দেয়। তুমি আমাকে নিজ পরিত্রাণ-ঢাল দিয়াছ; তোমার দক্ষিণ হস্ত আমাকে ধারণ করিয়াছে, তোমার কোমলতা আমাকে মহান্‌ করিয়াছে। তুমি আমার নীচে পাদসঞ্চারের স্থান প্রশস্ত করিয়াছ, আর আমার গুল্‌ফ বিচলিত হয় নাই। আমি শত্রুগণের পশ্চাতে দৌড়িব, তাহাদিগকে ধরিব, সংহার না করিয়া ফিরিয়া আসিব না। আমি তাহাদিগকে চূর্ণ করিব, তাহারা আর উঠিতে পারিবে না, তাহারা আমার পদতলে পতিত হইবে। কারণ তুমি যুদ্ধার্থে বল দিয়া আমার কটিবন্ধন করিয়াছ; যাহারা আমার বিরুদ্ধে উঠিয়াছিল, তাহাদিগকে তুমি আমার অধীনে নত করিয়াছ। আমার শত্রুগণকে আমা হইতে ফিরাইয়া দিয়াছ, আমি আপন বিদ্বেষীদিগকে সংহার করিয়াছি। তাহারা আর্ত্তনাদ করিল, কিন্তু ত্রাণকর্ত্তা কেহ নাই; সদাপ্রভুকে [ডাকিল], কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন না। তখন আমি তাহাদিগকে বায়ুচালিত ধূলির ন্যায় চূর্ণ করিলাম; পথের কর্দ্দমের ন্যায় ফেলিয়া দিলাম; তুমি আমাকে প্রজাদের দ্রোহ হইতে উদ্ধার করিয়াছ, জাতিগণের মস্তকরূপে নিযুক্ত করিয়াছ; আমার অপরিচিত জাতি আমার দাস হইবে। শ্রবণমাত্র তাহারা আমার আজ্ঞাকারী হইবে; বিজাতি-সন্তানেরা আমার কর্ত্তৃত্ব স্বীকার করিবে। বিজাতি সন্তানেরা ম্লান হইবে, স্বকম্পে স্ব স্ব গুপ্ত স্থান হইতে বাহিরে আসিবে। সদাপ্রভু জীবন্ত, আমার শৈল ধন্য হউন, আমার ত্রাণের ঈশ্বর উন্নত হউন। সেই ঈশ্বর আমার পক্ষে প্রতিশোধ দেন, জাতিগণকে আমার অধীনে দমন করেন। তিনি আমার শত্রুগণ হইতে আমাকে উদ্ধার করেন; যাহারা আমার বিরুদ্ধে উঠে, তুমি তাহাদের উপরেও আমাকে উন্নত করিতেছ, তুমি দুর্ব্বৃত্ত লোক হইতে আমাকে উদ্ধার করিতেছ। এই কারণ, হে সদাপ্রভু, আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার স্তব করিব, তোমার নামের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিব। তিনি আপন রাজাকে মহাপরিত্রাণ দেন, আপন অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন, যুগে যুগে দায়ূদের ও তাহার বংশের প্রতি দয়া করেন। আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে। দিবস দিবসের কাছে বাক্য উচ্চারণ করে, রাত্রি রাত্রির কাছে জ্ঞান প্রচার করে। বাক্য নাই, ভাষাও নাই, তাহাদের রব শুনা যায় না। তাহাদের মানরজ্জু সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপ্ত, তাহাদের বাক্য জগতের সীমা পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত; তাহাদের মধ্যে তিনি সূর্য্যের নিমিত্ত এক তাম্বু স্থাপন করিয়াছেন। সে বরের ন্যায় আপন বাসরগৃহ হইতে নির্গত হয়, বীরের ন্যায় স্বীয় পথে দৌড়িবার জন্য আমোদ করে। সে আকাশমণ্ডলের প্রান্ত হইতে যাত্রা করে, অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত ঘুরিয়া আইসে; তাহার উত্তাপে কোন বস্তু লুক্কায়িত থাকে না। সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিদ্ধ, প্রাণের স্বাস্থ্যজনক; সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক। সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ, চিত্তের আনন্দবর্দ্ধক; সদাপ্রভুর আজ্ঞা নির্ম্মল, চক্ষুর দীপ্তিজনক। সদাপ্রভুর ভয় শুচি, চিরস্থায়ী, সদাপ্রভুর শাসন সকল সত্য, সর্ব্বাংশে ন্যায্য। তাহা স্বর্ণ ও প্রচুর কাঞ্চন অপেক্ষা বাঞ্ছনীয়, মধু ও মৌচাকের রস হইতেও সুস্বাদু। তোমার দাসও তদ্দ্বারা সুশিক্ষা পায়; তাহা পালন করিলে মহাফল হয়। ভ্রান্তির কার্য্য সকল কে বুঝিতে পারে? তুমি গুপ্ত দোষ হইতে আমাকে পরিষ্কার কর। দুঃসাহসজনিত [পাপ] হইতেও নিজ দাসকে পৃথক্‌ রাখ, সেই সকল আমার উপরে কর্ত্তৃত্ব না করুক; তখন আমি সিদ্ধ এবং মহাপাতক হইতে শুচি হইব। আমার মুখের বাক্য ও আমার চিত্তের ধ্যান তোমার দৃষ্টিতে গ্রাহ্য হউক, হে সদাপ্রভু, আমার শৈল, আমার মুক্তিদাতা। সদাপ্রভু সঙ্কটের দিনে তোমাকে উত্তর দিউন, যাকোবের ঈশ্বরের নাম তোমাকে উন্নত করুক, তিনি পবিত্র স্থান হইতে তব সাহায্য প্রেরণ করুন, সিয়োন হইতে তোমাকে সুস্থির রাখুন, তিনি তোমার সকল নৈবেদ্য স্মরণ করুন, তোমার হোমবলি গ্রাহ্য করুন। সেলা। তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করুন, তোমার সমস্ত মন্ত্রণা সিদ্ধ করুন। আমরা তোমার পরিত্রাণে আনন্দগান করিব, আমাদের ঈশ্বরের নামে পতাকা তুলিব; সদাপ্রভু তোমার সকল যাচ্ঞা সিদ্ধ করুন। এখন আমি জানি, সদাপ্রভু স্বীয় অভিষিক্ত ব্যক্তিকে নিস্তার করেন; তিনি নিজ দক্ষিণ হস্তের ত্রাণশক্তিতে আপন পবিত্র স্বর্গ হইতে তাঁহাকে উত্তর দিবেন। ইহারা রথে ও উহারা অশ্বে নির্ভর করে, কিন্তু আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের কীর্ত্তন করিব। তাহারা নত হইয়া পতিত হইয়াছে, কিন্তু আমরা উত্থিত হইয়া দাঁড়াইয়া আছি। সদাপ্রভু, পরিত্রাণ কর; যে দিন আহ্বান করি, রাজা আমাদিগকে উত্তর দিউন। হে সদাপ্রভু, তোমার বলে রাজা আনন্দ করেন, তিনি তোমার পরিত্রাণে কতই উল্লাসিত হন। তুমি তাঁহার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করিয়াছ, তাঁহার ওষ্ঠের প্রার্থনা অস্বীকার কর নাই। সেলা। কেননা তুমি মঙ্গলের বিবিধ বর সহ তাঁহার সম্মুখবর্ত্তী হইয়াছে, তুমি তাঁহার মস্তকে সুবর্ণমুকুট দিয়াছ। তিনি তোমার কাছে জীবন প্রার্থনা করিয়াছিলেন, তুমি তাঁহাকে দিয়াছ, অনন্তকালস্থায়ী দীর্ঘ পরমায়ু দিয়াছ। তোমার পরিত্রাণে তিনি মহাগৌরবান্বিত; তুমি তাঁহার উপরে প্রভা ও প্রতাপ রাখিয়াছ। তুমি তাঁহাকে চিরস্থায়ী আশীর্ব্বাদযুক্ত করিয়াছ, তোমার শ্রীমুখে তাঁহাকে আনন্দে পুলকিত করিয়াছ। কারণ রাজা সদাপ্রভুতে নির্ভর করেন, পরাৎপরের দয়াতে তিনি বিচলিত হইবেন না। তোমার হস্ত তোমার সমস্ত শত্রুকে ধরিবে; তোমার দক্ষিণ হস্ত তোমার বিদ্বেষিগণকে ধরিবে। তুমি আপন ক্রোধের সময় তাহাদিগকে প্রজ্বলিত তুন্দুরস্বরূপ করিবে; সদাপ্রভু কোপে তাহাদিগকে গ্রাস করিবেন, অগ্নি তাহাদিগকে ভক্ষণ করিবে। তুমি উচ্ছিন্ন করিবে পৃথিবী হইতে তাহাদের ফল, মনুষ্য-সন্তানদের মধ্য হইতে তাহাদের বংশ। কেননা তাহারা তোমার বিরুদ্ধে কুসঙ্কল্প করিল; তাহারা কুমন্ত্রণা করিল, তাহা সিদ্ধ করিতে পারে না। কেননা তুমি তাহাদিগকে ফিরাইয়া দিবে, তুমি তাহাদের মুখ তোমার ধনুর্গুণের লক্ষ্য করিবে। হে সদাপ্রভু, নিজ বলে উন্নত হও; আমরা তব পরাক্রম গাহিব ও প্রশংসা করিব। ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করিয়াছ? আমার রক্ষা হইতে ও আমার আর্ত্তনাদের উক্তি হইতে কেন দূরে থাক? হে আমার ঈশ্বর, আমি দিবসে আহ্বান করি, কিন্তু তুমি উত্তর দেও না; রাত্রিতেও [ডাকি], আমার বিরাম হয় না। কিন্তু তুমিই পবিত্র, ইস্রায়েলের প্রশংসাকলাপ তোমার সিংহাসন। আমাদের পিতৃপুরুষেরা তোমাতেই বিশ্বাস করিতেন; তাঁহারা বিশ্বাস করিতেন, আর তুমি তাঁহাদিগকে উদ্ধার করিতে। তাঁহারা তোমার নিকটে ক্রন্দন করিয়া রক্ষা পাইতেন, তোমাতে বিশ্বাস করিয়া লজ্জিত হইতেন না। কিন্তু আমি কীট, মানব নহি, মনুষ্যদের নিন্দাস্পদ, লোকদের অবজ্ঞাত। যাহারা আমাকে দেখে, সকলে আমাকে ঠাট্টা করে, তাহারা ওষ্ঠ বাহির করিয়া মাথা নাড়িয়া বলে, সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর কর; তিনি উহাকে উদ্ধার করুন; উহাকে রক্ষা করুন, কেননা তিনি উহাতে প্রীত। তুমিই ত জঠর হইতে আমাকে উদ্ধার করিলে; যখন আমার মাতার স্তন পান করি, তখন তুমি আমার বিশ্বাস জন্মাইলে। গর্ভ হইতে আমি তোমার হস্তে নিক্ষিপ্ত; আমার মাতৃজঠর হইতে তুমিই আমার ঈশ্বর। আমা হইতে দূরে থাকিও না, সঙ্কট আসন্ন, সাহায্যকারী কেহ নাই। অনেক বৃষ আমাকে বেষ্টন করিয়াছে, বাশনের বলবান বলদেরা আমাকে ঘেরিয়াছে। তাহারা আমার প্রতি মুখ খুলিয়া হা করে, বিদারক সিংহ যেন গর্জ্জন করিতেছে। আমি জলের ন্যায় সেচিত হইতেছি, আমার সমুদয় অস্থি সন্ধিচ্যুত হইয়াছে, আমার হৃদয় মোমের ন্যায় হইয়াছে, তাহা অন্ত্রের মধ্যে গলিত হইয়াছে। আমার বল খোলার ন্যায় শুষ্ক হইতেছে, আমার জিহ্বা তালুতে লাগিয়া যাইতেছে, তুমি আমাকে মৃত্যুর ধূলিতে রাখিয়াছ। কেননা কুকুরেরা আমাকে ঘেরিয়াছে, দুরাচারদের মণ্ডলী আমাকে বেষ্টন করিয়াছে; তাহারা আমার হস্তপদ বিদ্ধ করিয়াছে। আমি আপন অস্থি সকল গণনা করিতে পারি; উহারা আমার প্রতি দৃষ্টি করে, চাহিয়া থাকে। তাহারা আপনাদের মধ্যে আমার বস্ত্র বিভাগ করে, আমার পরিচ্ছদের জন্য গুলিবাঁট করে। কিন্তু, হে সদাপ্রভু, তুমি দূরে থাকিও না; হে আমার সহায়, আমার সাহায্য করিতে সত্বর হও। উদ্ধার কর আমার প্রাণ খড়্‌গ হইতে, আমার একমাত্র [আত্মা] কুকুরের হস্ত হইতে। নিস্তার কর আমাকে সিংহের মুখ হইতে, আর গবয়ের শৃঙ্গ হইতে—তুমি আমাকে উত্তর দিয়াছ। আমি আমার ভ্রাতৃগণের কাছে তোমার নাম প্রচার করিব; সমাজের মধ্যে তোমার প্রশংসা করিব। সদাপ্রভুর ভয়কারিগণ! তাঁহার প্রশংসা কর; যাকোবের সমস্ত বংশ! তাঁহাকে সমাদর কর; তাঁহাকে ভয় কর, ইস্রায়েলের সমস্ত বংশ! কেননা তিনি দুঃখীর দুঃখ উপেক্ষা বা ঘৃণা করেন নাই; তিনি তাহা হইতে আপন মুখও লুকান নাই; বরং সে তাঁহার কাছে কাঁদিলে তিনি শুনিলেন। মহাসমাজে তোমা হইতে আমার প্রশংসা জন্মে, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের সাক্ষাতে আমি আপন মানত সকল পূর্ণ করিব। নম্রগণ ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইবে, সদাপ্রভুর অন্বেষীরা তাঁহার প্রশংসা করিবে; তোমাদের অন্তঃকরণ নিত্যজীবী হউক। পৃথিবীর প্রান্তস্থিত সকলে স্মরণ করিয়া সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিবে; জাতিগণের সমস্ত গোষ্ঠী তোমার সম্মুখে প্রণিপাত করিবে। কেননা রাজত্ব সদাপ্রভুরই; তিনিই জাতিগণের উপরে শাসনকর্ত্তা। পৃথিবীস্থ সকল পুষ্ট লোক ভোজন করিয়া প্রণিপাত করিবে; যাহারা ধূলিতে নামিতে উদ্যত, তাহারা সকলে তাঁহার সাক্ষাতে জানু পাতিবে, যে নিজে প্রাণ বাঁচাইতে অসমর্থ, সেও পাতিবে। এক বংশ তাঁহার সেবা করিবে, প্রভুর সম্বন্ধে ইহা ভাবী বংশকে বলা যাইবে। তাহারা আসিবে, তাঁহার ধর্ম্মশীলতা জ্ঞাত করিবে, অনুজাত লোকদিগকে কহিবে, তিনি কার্য্য সাধন করিয়াছেন। সদাপ্রভু আমার পালক, আমার অভাব হইবে না। তিনি তৃণভূষিত চরাণীতে আমাকে শয়ন করান, তিনি বিশ্রাম-জলের ধারে ধারে আমাকে চালান। তিনি আমার প্রাণ ফিরাইয়া আনেন, তিনি নিজ নামের জন্য আমাকে ধর্ম্মপথে গমন করান। যখন আমি মৃত্যুচ্ছায়ার উপত্যকা দিয়া গমন করিব, তখনও অমঙ্গলের ভয় করিব না, কেননা তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ, তোমার পাঁচনী ও তোমার যষ্টি আমাকে সান্ত্বনা করে। তুমি আমার শত্রুগণের সাক্ষাতে আমার সম্মুখে মেজ সাজাইয়া থাক; তুমি আমার মস্তক তৈলে সিক্ত করিয়াছ; আমার পানপাত্র উথলিয়া পড়িতেছে। কেবল মঙ্গল ও দয়াই আমার জীবনের সমুদয় দিন আমার অনুচর হইবে, আর আমি সদাপ্রভুর গৃহে চিরদিন বসতি করিব। পৃথিবী ও তাহার সমস্ত বস্তু সদাপ্রভুরই; জগৎ ও তন্নিবাসিগণ তাঁহার। কেননা তিনিই সমুদ্রগণের উপরে তাহা স্থাপন করিয়াছেন, নদীগণের উপরে তাহা দৃঢ় করিয়া রাখিয়াছেন। কে সদাপ্রভুর পর্ব্বতে উঠিবে? কে তাঁহার পবিত্র স্থানে দণ্ডায়মান হইবে? যাহার অঞ্জলি নির্দ্দোষ ও অন্তঃকরণ বিমল, যে অলীকতার দিকে প্রাণ উত্তোলন করে নাই, ছলভাবে শপথ করে নাই। সেই সদাপ্রভু হইতে আশীর্ব্বাদ পাইবে, আপন ত্রাণেশ্বর হইতে ধার্ম্মিকতা পাইবে। এই তাঁহার অন্বেষণকারীদের বংশ; ইহারা তোমার মুখের অন্বেষী, হে যাকোবের [ঈশ্বর]। সেলা। হে পুরদ্বার সকল, মস্তক তোল; হে চিরন্তন কবাট সকল, উত্থিত হও; প্রতাপের রাজা প্রবেশ করিবেন। সেই প্রতাপের রাজা কে? পরাক্রমী ও বীর সদাপ্রভু, যুদ্ধবীর সদাপ্রভু। হে পুরদ্বার সকল, মস্তক তোল; হে চিরন্তন কবাট সকল, মস্তক উত্থাপন কর; প্রতাপের রাজা প্রবেশ করিবেন। সেই প্রতাপের রাজা কে? বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তিনিই প্রতাপের রাজা। সেলা। সদাপ্রভু, তোমারই দিকে আমি নিজ প্রাণ উত্তোলন করি। হে আমার ঈশ্বর, আমি তোমারই শরণ লইয়াছি, আমাকে লজ্জিত হইতে দিও না; আমার শত্রুগণ আমার উপরে উল্লাস না করুক। যে সকল লোক তোমার অপেক্ষা করে, তাহারা লজ্জিত হইবে না; যাহারা অকারণে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাহারাই লজ্জিত হইবে। সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও। তোমার সত্যে আমাকে চালাও, আমাকে শিক্ষা দেও, কেননা তুমিই আমার ত্রাণেশ্বর; আমি সমস্ত দিন তোমার অপেক্ষায় থাকি। সদাপ্রভু, তোমার করুণা ও দয়া স্মরণ কর, কেননা উভয়ই অনাদি। আমার যৌবনের পাপ ও আমার অধর্ম্ম সকল স্মরণ করিও না, সদাপ্রভু, তোমার মঙ্গলভাবের অনুরোধে, তোমার দয়ানুসারে আমাকে স্মরণ কর। সদাপ্রভু মঙ্গলময় ও সরল, এইজন্য তিনি পাপীদিগকে পথ দেখান। তিনি নম্রদিগকে ন্যায়বিচারের পথে চালান, নম্রদিগকে আপন পথ দেখাইয়া দেন। যাহারা তাঁহার নিয়ম ও সাক্ষ্য পালন করে, তাহাদের পক্ষে সদাপ্রভুর সমস্ত পথ দয়া ও সত্য। তোমার নামের গুণে, হে সদাপ্রভু, আমার অপরাধ ক্ষমা কর, কেননা তাহা গুরুতর। সে ব্যক্তি কে যে সদাপ্রভুকে ভয় করে? তিনি তাহাকে ইষ্ট পথ দেখাইয়া দিবেন। তাহার প্রাণ কুশলে বাস করিবে, তাহার বংশ দেশের অধিকারী হইবে। সদাপ্রভুর গূঢ় মন্ত্রণা তাঁহার ভয়কারীদের অধিকার, তিনি তাহাদিগকে আপন নিয়ম জানাইবেন। আমার দৃষ্টি নিরন্তর সদাপ্রভুর দিকে, কেননা তিনিই আমার চরণ জাল হইতে উদ্ধার করিবেন। আমার প্রতি ফির, আমার প্রতি কৃপা কর, কেননা আমি একাকী ও দুঃখী। আমার অন্তঃকরণের যন্ত্রণা বাড়িয়াছে, আমার কষ্ট সকল হইতে আমাকে নিস্তার কর। আমার দুঃখ ও আয়াসের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, আমার সমস্ত পাপ ক্ষমা কর। আমার শত্রুগণকে দেখ, কেননা তাহারা অনেক; তাহারা দুরন্ত দ্বেষভাবে আমাকে দ্বেষ করে। আমার প্রাণ রক্ষা কর, আমাকে উদ্ধার কর, আমাকে লজ্জিত হইতে দিও না, কেননা আমি তোমার শরণ লইয়াছি। সিদ্ধতা ও সরলতা আমাকে রক্ষা করুক, কেননা আমি তোমার অপেক্ষা করিতেছি। হে ঈশ্বর, ইস্রায়েলকে মুক্ত কর, তাহার সমস্ত সঙ্কট হইতে মুক্ত কর। সদাপ্রভু, আমার বিচার কর, কারণ আমি নিজ সিদ্ধতায় চলিয়াছি, আর আমি সদাপ্রভুর শরণ লইয়াছি, চঞ্চল হইব না। সদাপ্রভু, আমার পরীক্ষা করিয়া প্রমাণ লও, আমার মর্ম্ম ও চিত্ত নির্ম্মল কর। কেননা তোমার দয়া আমার নয়নগোচর; আমি তোমার সত্যে চলিয়া আসিতেছি। আমি অলীক লোকদের সঙ্গে বসি নাই, আমি ছদ্মবেশীদের সঙ্গে চলিব না। আমি দুরাচারদের সমাজ ঘৃণা করি, দুষ্টগণের সঙ্গে বসিব না। আমি শুদ্ধতায় আমার হাত ধুইব, সদাপ্রভু, এইরূপে তোমার যজ্ঞবেদি প্রদক্ষিণ করিব; যেন আমি স্তবের ধ্বনি শ্রবণ করাই, ও তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল প্রচার করি। সদাপ্রভু, আমি ভালবাসি তোমার নিবাসগৃহ, তোমার গৌরবের বাসস্থান। পাপীদের সহিত আমার প্রাণ লইও না, রক্তপাতী মনুষ্যদের সহিত আমার জীবন লইও না। তাহাদের হস্তে অনিষ্ট থাকে, তাহাদের দক্ষিণ হস্ত উৎকোচে পরিপূর্ণ। কিন্তু আমি নিজ সিদ্ধতায় চলিব; আমাকে মুক্ত কর, ও আমার প্রতি কৃপা কর। আমার চরণ সমভূমিতে দাঁড়াইয়া আছে; আমি মণ্ডলীগণের মধ্যে সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব। সদাপ্রভু আমার জ্যোতি, আমার পরিত্রাণ, আমি কাহা হইতে ভীত হইব? সদাপ্রভু আমার জীবন-দুর্গ, আমি কাহা হইতে ত্রাসযুক্ত হইব? দুরাচারেরা যখন আমার মাংস খাইতে নিকটে আসিল, তখন আমার সেই বিপক্ষেরা ও বিদ্বেষীরা উছোট খাইয়া পড়িল। যদ্যপি সৈন্যদল আমার বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন করে, তথাপি আমার অন্তঃকরণ ভীত হইবে না; যদ্যপি আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তথাপি তখনও আমি সাহস করিব। সদাপ্রভুর কাছে আমি একটী বিষয় যাচ্ঞা করিয়াছি, তাহারই অন্বেষণ করিব, যেন জীবনের সমুদয় দিন সদাপ্রভুর গৃহে বাস করি, সদাপ্রভুর সৌন্দর্য্য দেখিবার ও তাঁহার মন্দিরে অনুসন্ধান করিবার জন্য। কেননা বিপদের দিনে তিনি আপন আশ্রমে আমাকে সঙ্গোপন করিবেন, আপন তাম্বুর অন্তরালে আমাকে লুকাইয়া রাখিবেন; তিনি শৈলের উপরে আমাকে তুলিয়া লইবেন। আর এক্ষণে আমার চারিদিকের শত্রুগণ অপেক্ষা আমার মস্তক উন্নত হইবে, আমি তাঁহার তাম্বুতে জয়ধ্বনির বলি উৎসর্গ করিব, আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান ও সঙ্গীত করিব। সদাপ্রভু, শ্রবণ কর, আমি স্বরবে আহ্বান করি; আমার প্রতি কৃপা কর, আমাকে উত্তর দেও। আমার মন তোমাকে বলিল, [তুমি বলিলে,] ‘তোমরা আমার মুখের অন্বেষণ কর’; সদাপ্রভু, আমি তোমার মুখের অন্বেষণ করিব। আমা হইতে তোমার মুখ আচ্ছাদন করিও না। ক্রোধে তোমার দাসকে দূর করিও না; তুমি আমার সহায় হইয়া আসিতেছ; আমার ত্রাণেশ্বর, আমাকে ফেলিও না, ত্যাগ করিও না। আমার পিতামাতা আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে তুলিয়া লইবেন। সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিখাও, সমান পথে আমাকে গমন করাও, আমার শত্রুগণ প্রযুক্ত ইহা কর। আমার বিপক্ষগণের ইচ্ছায় আমাকে সমর্পণ করিও না; কেননা মিথ্যা সাক্ষিগণ আমার বিরুদ্ধে উঠিয়াছে, তাহারা নিষ্ঠুরতা ফূৎকার করে। আমি জীবিতদের দেশে সদাপ্রভুর মঙ্গলভাব দেখিব, এমন বিশ্বাস যদি না করিতাম, [তবে আমার কি হইত]? সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক; সাহস কর, তোমার অন্তঃকরণ সবল হউক; হাঁ, সদাপ্রভুরই অপেক্ষায় থাক। সদাপ্রভু, আমি তোমাকে ডাকিতেছি; আমার শৈল, আমার প্রতি বধির হইও না; পাছে, যদি তুমি আমার প্রতি নীরব হও, আমি গর্ত্তগামীদের তুল্য হইয়া পড়ি। যখন আমি তোমার নিকটে আর্ত্তনাদ করি, যখন তোমার পবিত্র অন্তর্গৃহের দিকে অঞ্জলি উঠাই, তখন তুমি আমার বিনতির রব শ্রবণ করিও। দুর্জ্জনদের ও অধর্ম্মাচারীদের সহিত আমাকে টানিয়া লইও না; তাহারা স্ব স্ব প্রতিবাসীদের সহিত শান্তির কথা কহে, কিন্তু তাহাদের অন্তঃকরণে হিংসাভাব আছে। তাহাদের কার্য্য আচরণের দুষ্টতানুসারে তাহাদিগকে ফল দেও; তাহাদের হস্তের কর্ম্মানুরূপ ফল তাহাদিগকে দেও; তাহাদের অপকার তাহাদেরই প্রতি বর্ত্তাও। কেননা তাহারা সদাপ্রভুর কার্য্য ও তাঁহার হস্তের কর্ম্ম বিবেচনা করে না; তিনি তাহাদিগকে ভাঙ্গিয়া ফেলিবেন, গাঁথিয়া তুলিবেন না। ধন্য সদাপ্রভু, তিনি আমার বিনতির রব শুনিয়াছেন। সদাপ্রভু আমার বল ও আমার ঢাল; আমার অন্তঃকরণ তাঁহার উপরে নির্ভর করিয়াছে, তাই আমি সাহায্য পাইয়াছি; এজন্য আমার অন্তঃকরণ উল্লাসিত হইয়াছে, আমি নিজ গীত দ্বারা তাঁহার প্রশংসা করিব। সদাপ্রভু আপন লোকদের বল; তিনিই আপন অভিষিক্ত ব্যক্তির ত্রাণদুর্গ। তোমার প্রজাদিগকে ত্রাণ কর, নিজ অধিকারকে আশীর্ব্বাদ কর; তাহাদিগকে পালন কর, চিরকাল বহন কর। হে ঈশ্বরের সন্তানগণ, সদাপ্রভুর কীর্ত্তন কর; সদাপ্রভুরই গৌরব ও পরাক্রম কীর্ত্তন কর। সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাঁহার নামের গৌরব কীর্ত্তন কর; পবিত্র শোভায় সদাপ্রভুর কাছে প্রণিপাত কর। জলের উপরে সদাপ্রভুর রব; গৌরবান্বিত ঈশ্বর বজ্রনাদ করিতেছেন, সদাপ্রভু জলরাশির উপরে বিদ্যমান। সদাপ্রভুর রব শক্তিবিশিষ্ট; সদাপ্রভুর রব প্রতাপান্বিত। সদাপ্রভুর রব এরস বৃক্ষ ভাঙ্গিয়া ফেলিতেছে; সদাপ্রভুই লিবানোনের এরস বৃক্ষ খণ্ড বিখণ্ড করিতেছেন। তিনি নাচাইতেছেন তাহাদিগকে গোবৎসের ন্যায়, লিবানোন ও শিরিয়োণকে গবয় শাবকের ন্যায়। সদাপ্রভুর রব অগ্নিশিখা বিকিরণ করিতেছে। সদাপ্রভুর রব প্রান্তরকে কম্পমান করিতেছে; সদাপ্রভু কাদেশের প্রান্তরকে কম্পমান করিতেছেন। সদাপ্রভুর রব হরিণীদিগকে প্রসব করাইতেছে, বনরাজিকে পত্রহীন করিতেছে; আর তাঁহার মন্দিরে সকলই বলিতেছে, গৌরব। সদাপ্রভু জলপ্লাবনে সমাসীন ছিলেন; সদাপ্রভু চিরকালতরে সমাসীন রাজা। সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে বল দিবেন; সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে শান্তি দিয়া আশীর্ব্বাদ করিবেন। সদাপ্রভু, আমি তোমার প্রশংসা করিব, কেননা তুমি আমাকে উঠাইয়াছ, আমার শত্রুগণকে আমার বিষয়ে আনন্দ করিতে দেও নাই। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি তোমার কাছে আর্ত্তনাদ করিলাম, আর তুমি আমাকে সুস্থ করিলে। সদাপ্রভু, তুমি পাতাল হইতে আমার প্রাণ উত্তোলন করিয়াছ, তুমি আমাকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছ, যেন গর্ত্তে নামিয়া না যাই। হে সদাপ্রভুর সাধুগণ, তাঁহার উদ্দেশে সঙ্গীত কর, তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ কর। কেননা তাঁহার ক্রোধ নিমেষমাত্র থাকে, তাঁহার অনুগ্রহেতেই জীবন; সন্ধ্যাকালে রোদন অতিথিরূপে আইসে, কিন্তু প্রাতঃকালে আনন্দ উপস্থিত। আমার সুখাবস্থায় আমি বলিয়াছিলাম, আমি কখনও বিচলিত হইব না। সদাপ্রভু, তুমি আপন অনুগ্রহেই আমার পর্ব্বত দৃঢ়রূপে স্থাপন করিয়াছিলে; তুমি মুখ লুকাইলে; আমি বিহ্বল হইয়া পড়িলাম। সদাপ্রভু, আমি তোমাকেই ডাকিলাম, সদাপ্রভুরই কাছে বিনতি করিলাম। কূপে নামিলে আমার রক্তে কি লাভ? ধূলি কি তোমার স্তব করিবে? তোমার সত্য কি প্রচার করিবে? শুন, হে সদাপ্রভু, আমাকে কৃপা কর; সদাপ্রভু, আমার সহায় হও। তুমি আমার বিলাপ নৃত্যে পরিণত করিয়াছ; তুমি আমার চট খুলিয়া আমাকে আনন্দ পটুকায় বদ্ধকটি করিয়াছ, যেন আমার গৌরব তোমার প্রশংসা গান করে, নীরব না থাকে। সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি চিরকাল তোমার স্তব করিব। সদাপ্রভু, আমি তোমারই শরণ লইয়াছি; আমাকে কখনও লজ্জিত হইতে দিও না; তোমার ধর্ম্মশীলতায় আমাকে রক্ষা কর। আমার দিকে কর্ণপাত কর; সত্বর আমাকে উদ্ধার কর; আমার দৃঢ় শৈল হও, আমার ত্রাণার্থক দুর্গগৃহ হও। কেননা তুমিই আমার শৈল ও আমার দুর্গ; অতএব তোমার নামের অনুরোধে আমাকে পথ দেখাইয়া গমন করাও। আমাকে সেই জাল হইতে উদ্ধার কর, যাহা লোকে আমার জন্য গোপনে পাতিয়াছে, কেননা তুমিই আমার দৃঢ় আশ্রয়। আমি তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি; সদাপ্রভু, সত্যের ঈশ্বর, তুমি আমাকে মুক্ত করিয়াছ। যাহারা অলীক নিঃসার বস্তু মানে, তাহাদিগকে আমি ঘৃণা করি; আর আমি সদাপ্রভুতে নির্ভর করি। আমি তোমার দয়াতে উল্লাস ও আনন্দ করিব, কেননা তুমি আমার দুঃখ দেখিয়াছ, তুমি দুর্দ্দশাকালে আমার প্রাণের তত্ত্ব লইয়াছ। তুমি আমাকে শত্রুহস্তে বদ্ধ কর নাই, প্রশস্ত ভূমিতে আমার চরণ স্থাপন করিয়াছ। সদাপ্রভু, আমাকে কৃপা কর, কেননা আমি বিপদ্‌গ্রস্ত; মনোদুঃখে আমার নয়ন, প্রাণ ও দেহ শীর্ণ হইতেছে। কারণ শ্রান্তিতে আমার জীবন ও দীর্ঘনিঃশ্বাসে আমার বয়স গেল, আমার অপরাধ প্রযুক্ত আমার শক্তি লোপ পাইতেছে, আর আমার অস্থি শীর্ণ হইল। আমার সকল শত্রু হেতু আমি নিন্দাস্পদ, আমার প্রতিবাসীদের কাছে অতিশয় নিন্দাস্পদ, ও আমার পরিচিতদের কাছে ভয়ঙ্কর হইয়াছি; পথে আমাকে দেখিয়া লোকেরা পলায়ন করিয়াছে। মৃত ব্যক্তির ন্যায় লোকে আমাকে ভুলিয়া গিয়াছে, আমি নষ্টকল্প পাত্রের সদৃশ হইলাম। কেননা আমি অনেকের কৃত পরিবাদ শুনিয়াছি, চারিদিকেই ভয়; তাহারা আমার বিরুদ্ধে একত্র হইয়া মন্ত্রণা করিয়াছে। আমার প্রাণনাশ করিবার সঙ্কল্প করিয়াছে। কিন্তু, সদাপ্রভু, আমি তোমার উপরে নির্ভর করিলাম; আমি কহিলাম, তুমিই আমার ঈশ্বর। আমার সময় সকল তোমার হস্তে রহিয়াছে; আমার শত্রুগণের হস্ত হইতে, আমার তাড়নাকারিগণ হইতে, আমাকে উদ্ধার কর। তোমার দাসের প্রতি তোমার মুখ উজ্জ্বল কর, তোমার দয়াতে আমাকে পরিত্রাণ কর। সদাপ্রভু, আমাকে লজ্জিত হইতে দিও না, কেননা আমি তোমাকে ডাকিয়াছি; দুষ্টগণ লজ্জিত হউক, পাতালে নীরব হউক। সেই মিথ্যাবাদী ওষ্ঠাধর সকল বোবা হউক, যাহারা ধার্ম্মিকের বিপক্ষে দর্পকথা কহে, অহঙ্কার ও তুচ্ছজ্ঞান সহকারে কহে। আহা! তোমার দত্ত মঙ্গল কেমন মহৎ, যাহা তুমি তোমার ভয়কারীদের জন্য সঞ্চয় করিয়াছ, যাহা মনুষ্য-সন্তানদের সাক্ষাতে তোমার শরণাপন্নদের পক্ষে সাধন করিয়াছ। তুমি মনুষ্যের কুমন্ত্রণা হইতে তাহাদিগকে আপন শ্রীমুখের অন্তরালে সঙ্গোপন করিবে, জিহ্বাসমূহের বিরোধ হইতে তাহাদিগকে আশ্রমের মধ্যে লুকাইয়া রাখিবে। ধন্য সদাপ্রভু, কেননা তিনি দৃঢ় নগরে আমার প্রতি আশ্চর্য্য দয়া করিলেন। আমি অধৈর্য্য হেতু বলিয়াছিলাম, আমি তোমার নয়নগোচর হইতে বিচ্ছিন্ন, কিন্তু তোমার উদ্দেশে আর্ত্তনাদ করিলে তুমি আমার বিনতির রব শ্রবণ করিলে। হে সদাপ্রভুর সমস্ত সাধু, তোমরা তাঁহাকে প্রেম কর; সদাপ্রভু বিশ্বস্তদিগকে রক্ষা করেন, কিন্তু গর্ব্বচারীকে অনেক প্রতিফল দেন। হে সদাপ্রভুর অপেক্ষাকারী সকলে, সাহস কর, তোমাদের অন্তঃকরণ সবল হউক। ধন্য সেই, যাহার অধর্ম্ম ক্ষমা হইয়াছে, যাহার পাপ আচ্ছাদিত হইয়াছে। ধন্য সেই ব্যক্তি, যাহার পক্ষে সদাপ্রভু অপরাধ গণনা করেন না, ও যাহার আত্মায় প্রবঞ্চনা নাই। আমি যখন চুপ করিয়াছিলাম, আমার অস্থি সকল ক্ষয় পাইতেছিল, কারণ আমি সমস্ত দিন আর্ত্তনাদ করিতেছিলাম। কারণ দিবারাত্র আমার উপরে তোমার হস্ত ভারী ছিল, আমার সরসতা গ্রীষ্মকালের শুষ্কতায় পরিণত হইয়াছিল। সেলা। আমি তোমার কাছে আমার পাপ স্বীকার করিলাম, আমার অপরাধ আর গোপন করিলাম না, আমি কহিলাম, ‘আমি সদাপ্রভুর কাছে নিজ অধর্ম্ম স্বীকার করিব,’ তাহাতে তুমি আমার পাপের অপরাধ মোচন করিলে। সেলা। এজন্য যখন তোমাকে পাওয়া যায়, প্রত্যেক সাধু তোমার কাছে প্রার্থনা করুক, অবশ্য জলরাশির প্লাবন হইলে তাহা তাহার নিকটে আসিবে না। তুমি আমার অন্তরাল, তুমি সঙ্কট হইতে আমাকে উদ্ধার করিবে; রক্ষাগীত দ্বারা আমাকে বেষ্টন করিবে। সেলা। আমি তোমাকে বুদ্ধি দিব, ও তোমার গন্তব্য পথ দেখাইব, তোমার উপরে দৃষ্টি রাখিয়া তোমাকে পরামর্শ দিব। তোমরা অশ্ব ও অশ্বতরের ন্যায় হইও না, যাহাদের বুদ্ধি নাই; বল্‌গা ও লাগাম ভূষারূপে পরাইয়া তাহাদিগকে দমন করিতে হয়, নতুবা তাহারা তোমার নিকটে আসিবে না। দুষ্টের অনেক যাতনা হয়; কিন্তু যে ব্যক্তি সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, সে দয়াতে বেষ্টিত হইবে। ধার্ম্মিকগণ, সদাপ্রভুতে আনন্দ কর, উল্লাস কর; হে সরলচিত্ত সকলে, তোমরা আনন্দধ্বনি কর। ধার্ম্মিকগণ, সদাপ্রভুতে আনন্দধ্বনি কর; প্রশংসা করা সরল লোকদের উপযুক্ত। তোমরা বীণাতে সদাপ্রভুর স্তব কর, দশতন্ত্রী নেবলে তাঁহার উদ্দেশে গীত গাও। তাঁহার উদ্দেশে নূতন গীত গাও, জয়ধ্বনিসহ মনোহর বাদ্য কর। কেননা সদাপ্রভুর বাক্য যথার্থ, তাঁহার সকল ক্রিয়া বিশ্বস্ততাসিদ্ধ। তিনি ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন; পৃথিবী সদাপ্রভুর দয়াতে পরিপূর্ণ। আকাশমণ্ডল নির্ম্মিত হইল সদাপ্রভুর বাক্যে, তাহার সমস্ত বাহিনী তাঁহার মুখের শ্বাসে। তিনি সমুদ্রের জলরাশির ন্যায় সঞ্চিত করেন, তিনি জলধি সকল ভাণ্ডারে রাখেন। সমস্ত পৃথিবী সদাপ্রভুকে ভয় করুক; জগন্নিবাসী সকলে তাঁহা হইতে ভীত হউক। তিনি কথা কহিলেন, আর উৎপত্তি হইল, তিনি আজ্ঞা করিলেন, আর স্থিতি হইল। সদাপ্রভু জাতিগণের মন্ত্রণা ব্যর্থ করেন, তিনি লোকবৃন্দের সঙ্কল্প সকল বিফল করেন। সদাপ্রভুর মন্ত্রণা চিরকাল স্থির থাকে, তাঁহার চিত্তের সঙ্কল্প পুরুষানুক্রমে স্থায়ী। ধন্য সেই জাতি, যাহার ঈশ্বর সদাপ্রভু, সেই লোকসমাজ, যাহাকে তিনি নিজ অধিকারার্থে মনোনীত করিয়াছেন। সদাপ্রভু স্বর্গ হইতে দৃষ্টিপাত করেন, তিনি সমুদয় মনুষ্য-সন্তানকে নিরীক্ষণ করেন। তিনি আপন বাসস্থান হইতে দৃষ্টিপাত করেন, পৃথিবীর সমস্ত নিবাসীর উপরে। তিনি একে একে তাহাদের হৃদয় গঠন করেন। তিনি তাহাদের সমস্ত কার্য্যালোচনা করেন। কোন রাজা মহাসৈন্য দ্বারা ত্রাণ পায় না; বীর মহাশক্তি দ্বারা নিস্তার পায় না; ত্রাণের জন্য অশ্ব মিথ্যা, সে আপন মহাশক্তিতে রক্ষা করিতে পারে না। দেখ, সদাপ্রভুর দৃষ্টি তাহাদের উপরে, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, যাহারা তাঁহার দয়ার প্রতীক্ষা করে, মৃত্যু হইতে তাহাদের প্রাণরক্ষা করিবার জন্য, দুর্ভিক্ষে তাহাদিগকে বাঁচাইয়া রাখিবার জন্য। আমাদের প্রাণ সদাপ্রভুর অপেক্ষায় রহিয়াছে; তিনিই আমাদের সহায় ও আমাদের ঢাল। হাঁ, আমাদের চিত্ত তাঁহাতেই আনন্দ করিবে, কেননা আমরা তাঁহার পবিত্র নামে বিশ্বাস করিয়াছি। সদাপ্রভু, তোমার দয়া আমাদের উপরে বর্ত্তুক, কেননা আমরা তোমার অপেক্ষা করিয়াছি। আমি সর্ব্বসময়ে সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব; তাঁহার প্রশংসা নিরন্তর আমার মুখে থাকিবে। আমার প্রাণ সদাপ্রভুরই শ্লাঘা করিবে; তাহা শুনিয়া নম্রগণ আনন্দিত হইবে। আমার সহিত সদাপ্রভুর মহিমা কীর্ত্তন কর; আইস, আমরা একসঙ্গে তাঁহার নামের প্রতিষ্ঠা করি। আমি সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন, আমার সকল আশঙ্কা হইতে উদ্ধার করিলেন। উহারা তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দীপ্যমান হইল; তাহাদের মুখ কখনও বিবর্ণ হইবে না। এই দুঃখী ডাকিল, সদাপ্রভু শ্রবণ করিলেন, ইহাকে সকল সঙ্কট হইতে নিস্তার করিলেন। সদাপ্রভুর দূত, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করেন। আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তাঁহার শরণাপন্ন। হে তাঁহার পবিত্রগণ, সদাপ্রভুকে ভয় কর, কেননা তাঁহার ভয়কারীদের অভাব হয় না। যুবসিংহদের অনাটন ও ক্ষুধায় ক্লেশ হয়, কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করে, তাহাদের কোন মঙ্গলের অভাব হয় না। আইস, বৎসগণ, আমার বাক্য শুন, আমি তোমাদিগকে সদাপ্রভুর ভয় শিক্ষা দিই। কোন্‌ ব্যক্তি জীবনে প্রীত হয়, মঙ্গল দেখিবার জন্য দীর্ঘায়ু ভালবাসে? তুমি হিংসা হইতে তোমার জিহ্বাকে, ছলনা-বাক্য হইতে তোমার ওষ্ঠকে সাবধানে রাখ। মন্দ হইতে দূরে যাও, যাহা ভাল তাহাই কর; শান্তির অন্বেষণ ও অনুধাবন কর। ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে। সদাপ্রভুর মুখ দুরাচারদের প্রতিকূল; তিনি ভূতল হইতে তাহাদের স্মরণ উচ্ছেদ করিবেন। [ধার্ম্মিকেরা] ক্রন্দন করিল, সদাপ্রভু শুনিলেন, তাহাদের সকল সঙ্কট হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিলেন। সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন। ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক, কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন। তিনি তাহার অস্থি সকল রক্ষা করেন; তাহার মধ্যে একখানিও ভগ্ন হয় না। দুষ্টতা দুর্জ্জনকে সংহার করিবে, ধার্ম্মিকের বিদ্বেষিগণ দোষীকৃত হইবে। সদাপ্রভু আপন দাসদের প্রাণ মুক্ত করেন; তাঁহার শরণাগত কেহই দোষীকৃত হইবে না। সদাপ্রভু, যাহারা আমার সঙ্গে বিবাদ করে, তাহাদের সহিত বিবাদ কর, যাহারা আমার সঙ্গে যুদ্ধ করে, তাহাদের সহিত যুদ্ধ কর। তুমি ঢাল ও ফলক ধারণ কর, আমার সাহায্যের জন্য দণ্ডায়মান হও। বড়শা ধর, আমার তাড়নাকারীদের সম্মুখে পথ রুদ্ধ কর; আমার প্রাণকে বল, আমিই তোমার পরিত্রাণ। যাহারা আমার প্রাণের অন্বেষণ করে, তাহারা লজ্জিত ও অপমানিত হউক; যাহারা আমার অনিষ্টের সঙ্কল্প করে, তাহারা ফিরিয়া যাউক, হতাশ হউক। তাহারা বায়ুচালিত তুষের ন্যায় হউক, সদাপ্রভুর দূত তাহাদিগকে তাড়া করুন। তাহাদের পথ অন্ধকার ও পিচ্ছিল হউক; সদাপ্রভুর দূত তাহাদের পশ্চাতে ধাবমান হউন। কেননা তাহারা অকারণে আমার জন্য গর্ত্তমধ্যে গুপ্ত জাল পাতিয়াছে, অকারণে আমার প্রাণের জন্য খাত খুঁড়িয়াছে। অজ্ঞাতসারে তাহার সর্ব্বনাশ উপস্থিত হউক; সে গোপনে পাতা আপনার জালে আপনি ধৃত হউক, সেই সর্ব্বনাশে সে পতিত হউক। আর আমার প্রাণ সদাপ্রভুতে উল্লাসিত হইবে, তাঁহার পরিত্রাণে আনন্দ করিবে। আমার সকল অস্থি বলিবে, সদাপ্রভু, তোমার তুল্য কে? তুমিই দুঃখীকে তদপেক্ষা বলবান ব্যক্তি হইতে, দুঃখী দরিদ্রকে তাহার লুণ্ঠনকারী হইতে, উদ্ধার করিয়া থাক। দুর্বৃত্ত সাক্ষিগণ উঠিতেছে, আমি যাহা জানি না, তাহা আমার কাছে চাহে। তাহারা উপকারের পরিবর্ত্তে আমার অপকার করে, তাহাতে আমার প্রাণ অনাথ হয়। কিন্তু তাহাদের পীড়ার সময়ে আমি চট পরিতাম, আমি উপবাস দ্বারা আপন প্রাণকে দুঃখ দিতাম, আমার প্রার্থনা আমার বক্ষে ফিরিয়া আসিবে। আমি তাহাদিগকে নিজ বন্ধু বা নিজ ভ্রাতা বলিয়া মনে করিতাম, আমি মাতৃশোকাতুরের ন্যায় শোকার্ত্ত হইয়া অধোমুখে থাকিতাম। তথাপি তাহারা আমার পদস্খলনে আনন্দিত হইল, ও সকলে একত্র হইল; অধম লোকেরা আমার অজ্ঞাতসারে আমার বিরুদ্ধে একত্র হইল, তাহারা আমাকে বিদীর্ণ করিল, ক্ষান্ত হইল না। পামর উপহাসকারী পিণ্ডীশূরদের ন্যায় তাহারা আমার প্রতি দন্তঘর্ষণ করিল। হে প্রভু, তুমি কত কাল দেখিবে? রক্ষা কর আমার প্রাণ তাহাদের ধ্বংস হইতে, আমার একমাত্র [আত্মা] সিংহগণ হইতে। আমি মহাসমাজের মধ্যে তোমার স্তব করিব, বলবান জাতির মধ্যে তোমার প্রশংসা করিব। আমার শত্রুগণকে আমার বিষয়ে অন্যায় আনন্দ করিতে দিও না, যাহারা অকারণে আমাকে দ্বেষ করে, তাহাদিগকে ভ্রূকুটি করিতে দিও না। কেননা তাহারা শান্তির কথা কহে না, কিন্তু দেশস্থ শান্ত মনুষ্যগণের বিরুদ্ধে ছলের কথা কল্পনা করে। তাহারা আমার বিরুদ্ধে মুখ ব্যাদান করিত; বলিত, ‘অহো! অহো! আমাদের চক্ষু দেখিয়াছে।’ সদাপ্রভু, তুমি দেখিয়াছ, নীরব থাকিও না; প্রভু, আমা হইতে দূরবর্ত্তী হইও না। জাগিয়া উঠ, জাগ্রৎ হও, আমার বিচারার্থে, আমার ঈশ্বর, আমার প্রভু, আমার হেতুবাদ জন্য। সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তোমার ধর্ম্মশীলতা অনুসারে আমার বিচার কর, উহারা আমার উপরে আনন্দ না করুক। তাহারা মনে মনে না বলুক, ‘অহো! ইহাই আমাদের অভিলাষ;’ তাহারা না বলুক, ‘তাহাকে গ্রাস করিলাম’। যাহারা আমার বিপদে আনন্দিত হয়, তাহারা একসঙ্গে লজ্জিত ও হতাশ হউক; যাহারা আমার বিরুদ্ধে শ্লাঘা করে, তাহারা লজ্জায় ও অপমানে আচ্ছন্ন হউক। যাহারা আমার ধার্ম্মিকতায় প্রীত, তাহারা আনন্দধ্বনি করুক, আহ্লাদিত হউক, নিত্য নিত্য বলুক, সদাপ্রভু মহিমান্বিত হউন, যিনি নিজ দাসের কুশলে প্রীত। আর আমার জিহ্বা তোমার ধর্ম্মশীলতার, ও সমস্ত দিন তোমার প্রশংসার কথা কহিবে। দুষ্টের হৃদয়মধ্যে অধর্ম্ম তাহার কাছে কথা বলে, ঈশ্বর-ভয় তাহার চক্ষুর অগোচর। সে নিজের দৃষ্টিতে আত্মশ্লাঘা করিয়া বলে, আমার অধর্ম্ম আবিষ্কৃত ও ঘৃণিত হইবে না। তাহার মুখের বাক্য অধর্ম্ম ও ছলমাত্র; সে সুবিবেচনা ও সদাচরণ ত্যাগ করিয়াছে। সে আপন শয্যাতে অধর্ম্ম কল্পনা করে, সে কুপথে দাঁড়াইয়া থাকে, সে দুষ্কর্ম্ম ঘৃণা করে না। সদাপ্রভু, তোমার দয়া আকাশমণ্ডলে ব্যাপ্ত, তোমার বিশ্বস্ততা গগনস্পর্শী। তোমার ধর্ম্মশীলতা ঈশ্বরের পর্ব্বতসমূহের তুল্য, তোমার শাসন সকল মহাজলধিস্বরূপ; সদাপ্রভু, তুমি মনুষ্য ও পশু রক্ষা করিয়া থাক। হে ঈশ্বর, তোমার দয়া কেমন বহুমূল্য! মনুষ্য-সন্তানবর্গ তোমার পক্ষচ্ছায়ার নীচে শরণ লয়। তাহারা তোমার গৃহের পুষ্টিকর দ্রব্যে পরিতৃপ্ত হয়, তুমি তাহাদিগকে তোমার আনন্দ নদীর জল পান করাইয়া থাক। কারণ তোমারই কাছে জীবনের উনুই আছে; তোমারই দীপ্তিতে আমরা দীপ্তি দেখিতে পাই। যাহারা তোমাকে জানে, তুমি তাহাদের প্রতি তোমার দয়া, ও সরলচিত্তদের প্রতি তোমার ধর্ম্মশীলতা চিরস্থায়ী কর। অহঙ্কারের চরণ আমার নিকটে না আইসুক, দুষ্টদের হস্ত আমাকে তাড়াইয়া না দিউক। ঐ যে অধর্ম্মাচারিগণ পতিত হইল; অধঃক্ষিপ্ত হইল, আর উঠিতে পারিবে না। তুমি দুরাচারদের বিষয়ে রুষ্ট হইও না; অধর্ম্মাচারীদের প্রতি ঈর্ষা করিও না। কেননা তাহারা ঘাসের ন্যায় শীঘ্র ছিন্ন হইবে, হরিৎ তৃণের ন্যায় ম্লান হইবে। সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখ, সদাচরণ কর, দেশে বাস কর, বিশ্বস্ততাক্ষেত্রে চর। আর সদাপ্রভুতে আমোদ কর, তিনি তোমার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন। তোমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাঁহাতে নির্ভর কর, তিনিই কার্য্য সাধন করিবেন। তিনি দীপ্তির ন্যায় তোমার ধর্ম্ম, মধ্যাহ্নের ন্যায় তোমার বিচার প্রকাশ করিবেন। সদাপ্রভুর নিকটে নীরব হও, তাঁহার অপেক্ষায় থাক; যে আপন পথে কৃতকার্য্য হয়, তাহার বিষয়ে, যে ব্যক্তি কুসঙ্কল্প করে, তাহার বিষয়ে রুষ্ট হইও না। ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হও, কোপ ত্যাগ কর, রুষ্ট হইও না, হইলে কেবল দুষ্কার্য্য করিবে। কারণ দুরাচারগণ উচ্ছিন্ন হইবে, কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারাই দেশের অধিকারী হইবে। আর ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, তুমি তাহার স্থান তত্ত্ব করিবে, কিন্তু সে আর নাই। কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে। দুষ্ট লোক ধার্ম্মিকের প্রতিকূলে কুসঙ্কল্প করে, তাহার বিরুদ্ধে দন্তঘর্ষণ করে। প্রভু তাহাকে উপহাস করিবেন, কেননা তিনি দেখেন, তাহার দিন আসিতেছে। দুষ্টেরা খড়্‌গ নিষ্কোষ ও ধনুক আকর্ষণ করিয়াছে, যেন দুঃখী ও দরিদ্রকে নিপাত করিতে পারে, যেন সরলপথগামীদিগকে বধ করিতে পারে, তাহাদের খড়্‌গ তাহাদেরই হৃদয়ে প্রবেশ করিবে, তাহাদের ধনুক ভাঙ্গিয়া যাইবে। ধার্ম্মিকের অল্প সম্পত্তি ভাল, বহুদুষ্টের ধনরাশি অপেক্ষা ভাল। কারণ দুষ্টদের বাহু ভগ্ন হইবে; কিন্তু সদাপ্রভু ধার্ম্মিকদিগকে ধরিয়া রাখেন। সদাপ্রভু সিদ্ধদের দিন সকল জানেন; তাহাদের অধিকার চিরকাল থাকিবে। তাহারা বিপৎকালে লজ্জিত হইবে না, দুর্ভিক্ষের সময়ে তৃপ্ত হইবে। কিন্তু দুষ্টগণ বিনষ্ট হইবে, সদাপ্রভুর শত্রুগণ মাঠের তৃণশোভার সমান হইবে; তাহারা অন্তর্হিত, ধূমের ন্যায় অন্তর্হিত হইবে। দুষ্ট ঋণ করিয়া পরিশোধ করে না, কিন্তু ধার্ম্মিক দয়াবান ও দানশীল। কেননা তাঁহার আশীর্ব্বাদের পাত্রেরা দেশের অধিকারী হইবে, কিন্তু তাঁহার শাপের পাত্রেরা উচ্ছিন্ন হইবে। সদাপ্রভু কর্ত্তৃক মনুষ্যের পাদক্ষেপ সকল স্থিরীকৃত হয়, তাহার পথে তিনি প্রীত। পতিত হইলেও সে ভূতলশায়ী হইবে না; কেননা সদাপ্রভু তাহার হস্ত ধরিয়া রাখেন। আমি যুবক ছিলাম, এখন বৃদ্ধ হইয়াছি, কিন্তু ধার্ম্মিককে পরিত্যক্ত দেখি নাই, তাহার বংশকে খাদ্য ভিক্ষা করিতে দেখি নাই। সে সমস্ত দিন দয়া করে, ও ধার দেয়, তাহার বংশ আশীর্ব্বাদ পায়। তুমি মন্দ হইতে দূরে যাও, সদাচরণ কর, চিরকাল বাস করিবে। কেননা সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন; তিনি আপন সাধুগণকে পরিত্যাগ করেন না; তাহারা চিরকাল রক্ষিত হয়; কিন্তু দুষ্টদের বংশ উচ্ছিন্ন হইবে। ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে। ধার্ম্মিকের মুখ জ্ঞানের কথা বলে, তাহার জিহ্বা ন্যায়বিচারের কথা কহে। তাহার ঈশ্বরের ব্যবস্থা তাহার অন্তরে আছে; তাহার পাদবিক্ষেপ টলিবে না। দুষ্ট লোক ধার্ম্মিকের প্রতি লক্ষ্য রাখে, তাহাকে বধ করিতে চেষ্টা করে। সদাপ্রভু তাহাকে উহার হস্তে ছাড়িয়া দিবেন না, তাহার বিচারকালে তাহাকে দোষী করিবেন না। সদাপ্রভুর অপেক্ষায় থাক, তাঁহার পথে চল; তাহাতে তিনি তোমাকে দেশের অধিকার ভোগের জন্য উন্নত করিবেন; দুষ্টগণের উচ্ছেদ হইলে তুমি তাহা দেখিতে পাইবে। আমি দুষ্টকে মহাক্ষমতাশালী দেখিয়াছি, উৎপত্তি স্থানের সতেজ বৃক্ষের ন্যায় প্রসারিত দেখিয়াছি। কিন্তু আমি সেই পথে গেলাম, দেখ, সে নাই, আমি অন্বেষণ করিলাম, কিন্তু তাহাকে পাওয়া গেল না। সিদ্ধকে অবধারণ কর, সরলকে নিরীক্ষণ কর; শান্তিপ্রিয় ব্যক্তির শেষ ফল আছে। অধর্ম্মাচারিগণ সকলেই বিনষ্ট হইবে; দুষ্টদের শেষ ফল উচ্ছিন্ন হইবে। কিন্তু ধার্ম্মিকদের পরিত্রাণ সদাপ্রভু হইতে, তিনি সঙ্কটকালে তাহাদের দৃঢ় দুর্গ। সদাপ্রভু তাহাদের সাহায্য করেন, তাহাদিগকে রক্ষা করেন, তিনি দুষ্টদের হইতে তাহাদিগকে রক্ষা করেন ও তাহাদের পরিত্রাণ করেন, কারণ তাহারা তাঁহার শরণ লইয়াছে। সদাপ্রভু, তোমার ক্রোধে আমাকে ভর্ৎসনা করিও না, তোমার রোষাগ্নিতে আমাকে শাস্তি দিও না। কেননা তোমার তীর সকল আমাতে বিদ্ধ, আমার উপরে তোমার হস্ত নামিয়াছে। তোমার কোপ হেতু আমার মাংসে কিছু স্বাস্থ্য নাই, আমার পাপহেতু আমার অস্থিতে কিছু শান্তি নাই। কেননা আমার অপরাধসমূহ আমার মস্তকের উপরে উঠিয়াছে, ভারী বোঝার ন্যায় সে সকল আমার শক্তি অপেক্ষা ভারী। আমার ক্ষত সকল দুর্গন্ধ ও গলিত হইয়াছে, আমার অজ্ঞানতা প্রযুক্তই হইয়াছে। আমি কুব্জ হইয়াছি, অত্যন্ত নুইয়া পড়িয়াছি, আমি সমস্ত দিন বিষণ্ণ হইয়া বেড়াইতেছি। কেননা আমার কটিদেশে জ্বালা ধরিয়াছে, আমার মাংসে কিছু স্বাস্থ্য নাই। আমি অবসন্ন ও অতিশয় ক্ষুণ্ণ হইয়াছি, চিত্তের ব্যাকুলতায় আর্ত্তনাদ করিতেছি। হে প্রভু, আমার সমস্ত কামনা তোমার সম্মুখে, আমার কাতরোক্তি তোমা হইতে গুপ্ত নয়। আমার হৃদয় ধুক্‌ ধুক্‌ করিতেছে, আমার বল আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, আমার চক্ষুর তেজও আমাকে ছাড়িয়া গিয়াছে, আমার প্রণয়ীরা ও আমার বন্ধুগণ আমার ব্যাধি হইতে দূরে দাঁড়ায়, আমার জ্ঞাতিবর্গ দূরে দাঁড়াইয়া থাকে। যাহারা আমার প্রাণের অন্বেষণ করে, তাহারা ফাঁদ পাতে; যাহারা আমার অনিষ্ট চেষ্টা করে, তাহারা বিনাশের কথা কহে, আর সমস্ত দিন ছলের চিন্তা করে। কিন্তু বধিরের ন্যায় আমি শ্রবণ করি না, আমি এমন বোবার ন্যায় হইয়াছি, যে মুখ খুলে না। আমি এমন ব্যক্তির তুল্য, যে শুনিতে পায় না, যাহার মুখে প্রতিবাদ পাওয়া যায় না। কারণ, সদাপ্রভু, আমি তোমারই অপেক্ষা করিতেছি; হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমিই উত্তর দিবে। কেননা আমি কহিলাম, পাছে উহারা আমার বিষয়ে আনন্দ করে, আমার চরণ টলিলেই আমার বিপক্ষে দর্প করে। আমি ত পড়িতে উদ্যত; আমার ব্যথা সতত আমার গোচরে রহিয়াছে। আমি আপন অপরাধ স্বীকার করিব, আমার পাপের নিমিত্ত খেদ করিব। কিন্তু আমার শত্রুগণ সতেজ ও বলবান, অনেকেই অকারণে আমাকে ঘৃণা করে। আর তাহারা উপকারের পরিবর্ত্তে অপকার করে, তাহারা আমার বিপক্ষ, কারণ যাহা ভাল, আমি তাহারই অনুগামী। সদাপ্রভু, আমাকে পরিত্যাগ করিও না; আমার ঈশ্বর, আমা হইতে দূরে থাকিও না। হে প্রভু, আমার পরিত্রাণ, তুমি আমার সাহায্য করিতে সত্বর হও। আমি কহিলাম, ‘আমি আপন পথে সাবধানে চলিব, যেন জিহ্বা দ্বারা পাপ না করি; যাবৎ আমার সাক্ষাতে দুর্জ্জন থাকে, আমি মুখে জাল্‌তি বাঁধিয়া রাখিব।’ আমি নীরবে বোবা হইয়া রহিলাম, সৎ কথা হইতেও বিরত থাকিলাম, আর আমার ব্যথা বাড়িয়া উঠিল। আমার অন্তরে হৃদয় সন্তপ্ত হইল; ভাবিতে ভাবিতে অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল; আমি জিহ্বাতে কথা কহিলাম, সদাপ্রভু, আমার অন্তকাল আমাকে জানাও, আমার আয়ুর পরিমাণ কি, জানাও, আমি জানিতে চাহি, আমি কেমন ক্ষণিক। দেখ, তুমি আমার আয়ু কতিপয় মুষ্টি পরিমিত করিয়াছ, আমার জীবনকাল তোমার দৃষ্টিতে অবস্তবৎ; সত্য, প্রত্যেক মনুষ্য স্থিরীকৃত হইলেও নিতান্ত অসার। সেলা। সত্য, মনুষ্য ছায়ার ন্যায় গমনাগমন করে, সত্য, তাহারা অসারের জন্য ব্যতিব্যস্ত; সে ধনরাশি সঞ্চয় করে, কিন্তু কে তাহা সংগ্রহ করিবে, জানে না। এখন, হে প্রভু, আমি কিসের অপেক্ষা করি? তোমাতেই আমার প্রত্যাশা। আমার সমস্ত অধর্ম্ম হইতে আমাকে নিস্তার কর, আমাকে মূঢ়ের ধিক্কারাস্পদ করিও না। আমি বোবা হইলাম, মুখ খুলিলাম না, কেননা তুমিই ইহা করিয়াছ। আমা হইতে তোমার আঘাত অন্তর কর, তোমার হস্তের প্রহারে আমি ক্ষীণ হইলাম। তুমি যখন অপরাধ প্রযুক্ত মনুষ্যকে ভর্ৎসনা দ্বারা শাসন কর, তখন কীটের ন্যায় তাহার সৌন্দর্য্য বিলীন করিয়া থাক; সত্য, প্রত্যেক মনুষ্য অসারমাত্র। সেলা। হে সদাপ্রভু, আমার প্রার্থনা শ্রবণ কর, আমার আর্ত্তনাদে কর্ণ দেও, আমার অশ্রুপাতে নীরব থাকিও না; কেননা আমি তোমার কাছে বিদেশী, আমার সমস্ত পিতৃলোকের ন্যায় প্রবাসী। আমা হইতে দৃষ্টি ফিরাও, যেন প্রফুল্ল হই, যাবৎ প্রয়াণ না করি, ও আর না থাকি। আমি ধৈর্য্যসহ সদাপ্রভুর অপেক্ষা করিতে ছিলাম, তিনি আমার প্রতি মনোযোগ করিয়া আমার আর্ত্তনাদ শুনিলেন। তিনি বিনাশের গর্ত্ত হইতে, পঙ্কময় ভূমি হইতে, আমাকে তুলিলেন, তিনি শৈলের উপরে আমার চরণ রাখিলেন, আমার পাদসঞ্চার দৃঢ় করিলেন। তিনি আমার মুখে নূতন গীত, আমাদের ঈশ্বরের স্তব দিলেন; অনেকে ইহা দেখিবে, ভীত হইবে, ও সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিবে। ধন্য সেই জন, যে সদাপ্রভুকে আপন বিশ্বাসভূমি করে, এবং তাহাদের দিকে না ফিরে, যাহারা অহঙ্কারী ও মিথ্যাপথে ভ্রমণ করে। সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমিই বাহুল্যরূপে সাধন করিয়াছ, আমাদের পক্ষে তোমার আশ্চর্য্য কার্য্য সকল ও তোমার সঙ্কল্প সকল; তোমার তুল্য কেহ নাই; আমি সে সকল বলিতাম ও বর্ণনা করিতাম, কিন্তু সে সকল গণনা করা যায় না। বলিদানে ও নৈবেদ্যে তুমি প্রীত নহ, তুমি আমার কর্ণযুগল ছিদ্রিত করিয়াছ; তুমি হোম ও পাপের নিমিত্ত বলিদান চাহ নাই; তখন আমি কহিলাম, দেখ, আমি আসিয়াছি; গ্রন্থখানিতে আমার বিষয় লিখিত আছে । হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত, আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে। আমি মহাসমাজে ধর্ম্মশীলতার মঙ্গলবার্ত্তা প্রচার করিয়াছি; দেখ, আমার ওষ্ঠাধর রুদ্ধ করি না; হে সদাপ্রভু, তুমি ইহা জ্ঞাত আছ। আমি তোমার ধর্ম্মশীলতা নিজ হৃদয়মধ্যে সঙ্গোপন করি নাই, তোমার বিশ্বস্ততা ও তোমার পরিত্রাণ প্রচার করিয়াছি; তোমার দয়া ও সত্য মহাসমাজ হইতে গুপ্ত রাখি নাই। হে সদাপ্রভু, তুমিও আমা হইতে আপন করুণা রুদ্ধ করিও না; তব দয়া ও তব সত্য সতত আমাকে রক্ষা করুক। কেননা অসংখ্য বিপদ আমাকে ঘেরিয়াছে; আমার অপরাধ সকল আমাকে ধরিয়াছে; আমি দেখিতে পাইতেছি না; আমার মস্তকের কেশ অপেক্ষাও সে সকল অধিক, আমার হৃদয় আমাকে ছাড়িয়াছে। সদাপ্রভু, অনুগ্রহ করিয়া আমাকে উদ্ধার কর, সদাপ্রভু, আমার সাহায্য করিতে সত্বর হও। তাহারা সকলেই লজ্জিত ও হতাশ হউক, যাহারা সংহার করিতে আমার প্রাণের অন্বেষণ করে, তাহারা ফিরিয়া যাউক, অপমানিত হউক, যাহারা আমার বিপদে প্রীত হয়। তাহারা আপনাদের লজ্জা প্রযুক্ত স্তম্ভিত হউক, যাহারা আমাকে বলে, অহো! অহো! যাহারা তোমার অন্বেষণ করে, তাহারা সকলে তোমাতে আমোদ ও আনন্দ করুক; যাহারা তোমার পরিত্রাণ ভালবাসে, তাহারা সতত বলুক, সদাপ্রভু মহিমান্বিত হউন। আমি দুঃখী ও দরিদ্র, প্রভুই আমার পক্ষে চিন্তা করেন; তুমি আমার সহায় ও আমার নিস্তার কর্ত্তা; হে আমার ঈশ্বর, বিলম্ব করিও না। ধন্য সেই জন, যে দীনহীনের পক্ষে চিন্তাশীল; বিপদের দিনে সদাপ্রভু তাহাকে নিস্তার করিবেন। সদাপ্রভু তাহাকে রক্ষা করিবেন, জীবিত রাখিবেন, দেশে সে আশীর্ব্বাদ পাইবে; তুমি শত্রুগণের ইচ্ছাতে তাহাকে সমর্পণ করিও না। ব্যাধিশয্যাগত হইলে সদাপ্রভু তাহাকে ধরিয়া রাখিবেন; তাহার পীড়ার সময়ে তুমি তাহার সমস্ত শয্যা পরিবর্ত্তন করিয়াছ। আমি কহিলাম, হে সদাপ্রভু, আমাকে কৃপা কর, আমার প্রাণ সুস্থ কর, কেননা আমি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। আমার শত্রুগণ আমার বিরুদ্ধে হিংসার কথা কহে,— ‘সে কখন মরিবে? কখন তাহার নাম লুপ্ত হইবে?’ আর যদি কেহ আমাকে দেখিতে আইসে, তবে সে অলীক কথা কহে; তাহার হৃদয় তাহার জন্য অধর্ম্ম সঞ্চয় করে, সে বাহিরে গিয়া তাহা বলিয়া বেড়ায়। আমার বিদ্বেষিগণ সকলে একত্র হইয়া আমার বিরুদ্ধে কাণাকাণি করে; তাহারা আমার বিপক্ষে অনিষ্ট কল্পনা করে। ‘কোন প্রকার মারাত্মক বিষয় উহাতে লাগিয়াছে, সে পড়িয়া আছে, আর উঠিবে না।’ আমার যে মিত্র আমার বিশ্বাসপাত্র ছিল, ও আমার রুটী খাইত, সে আমার বিরুদ্ধে পাদমূল উঠাইয়াছে। হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রতি কৃপা কর, আমাকে উঠাও, যেন আমি উহাদিগকে প্রতিফল দিই। আমি ইহাতেই জানি যে, তুমি আমাতে প্রীত, কেননা আমার শত্রু আমার উপরে জয়ধ্বনি করে না, তুমি আমার সিদ্ধতায় আমাকে ধরিয়া রাখিয়াছ, এবং চিরতরে আপনার সাক্ষাতে স্থাপন করিয়াছ। ধন্য সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, অনাদিকাল ইইতে অনন্তকাল পর্য্যন্ত। আমেন ও আমেন। দ্বিতীয় খণ্ড। [1] হরিণী যেমন জলস্রোতের আকাঙ্ক্ষা করে, তেমনি, হে ঈশ্বর, আমার প্রাণ তোমার আকাঙ্ক্ষা করিতেছে। ঈশ্বরের জন্য, জীবন্ত ঈশ্বরের জন্য আমার প্রাণ তৃষ্ণার্ত্ত। আমি কখন আসিয়া ঈশ্বরের সাক্ষাতে উপস্থিত হইব? আমার নেত্রজল দিবারাত্র আমার ভক্ষ্য হইল, কেননা লোকে সমস্ত দিন আমাকে বলে, ‘তোমার ঈশ্বর কোথায়?’ আমি ইহা স্মরণ করিয়া অন্তরে আপন প্রাণ ঢালি, কেননা আমি লোকারণ্যের সহিত যাত্রা করিতাম, তাহাদিগকে ঈশ্বরের গৃহে লইয়া যাইতাম, আনন্দ ও স্তবগানের ধ্বনির সহিত বহুলোক পর্ব্ব পালন করিত। হে আমার প্রাণ, কেন অবসন্ন হও? আমার অন্তরে কেন ক্ষুব্ধ হও? ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখ; কেননা আমি আবার তাঁহার স্তব করিব; তিনি আমার মুখের পরিত্রাণ ও আমার ঈশ্বর। আমার প্রাণ আমার অন্তরে অবসন্ন হইতেছে; সেইজন্য আমি তোমাকে স্মরণ করিতেছি, যর্দ্দনের দেশ হইতে, আর হর্ম্মোণ গিরিশ্রেণী, মিৎসিয়র পর্ব্বত হইতে। তোমার নির্ঝরসমূহের শব্দে জলপ্রবাহ জলপ্রবাহকে আহ্বান করিতেছে; তোমার সকল ঢেউ, তোমার সকল তরঙ্গ আমার উপর দিয়া যাইতেছে। সদাপ্রভু দিবসে আপন দয়াকে আদেশ করিবেন, রাত্রিতে তাঁহার স্তোত্র আমার সঙ্গী হইবে, আমার জীবনেশ্বরের কাছে প্রার্থনা [করিব]। আমি আপন শৈলস্বরূপ ঈশ্বরকে বলিব, কেন আমাকে ভুলিয়া গিয়াছ? আমি কেন শত্রুর দৌরাত্ম্যে বিষণ্ণ হইয়া বেড়াইতেছি? আমার বিপক্ষেরা আমাকে তিরস্কার করে, যেন অস্থি পর্য্যন্ত চূর্ণ করে, তাহারা সমস্ত দিন আমাকে বলে, তোমার ঈশ্বর কোথায়? হে আমার প্রাণ, কেন অবসন্ন হও? আমার অন্তরে কেন ক্ষুব্ধ হও? ঈশ্বরের অপেক্ষা কর; কেননা আমি আবার তাঁহার স্তব করিব; তিনি আমার মুখের পরিত্রাণ ও আমার ঈশ্বর। হে ঈশ্বর, আমার বিচার কর, অসাধু জাতির সহিত আমার বিবাদ নিষ্পন্ন কর; ছলপ্রিয় ও অন্যায়কারী মনুষ্য হইতে আমাকে উদ্ধার কর। কেননা তুমিই আমার দুর্গস্বরূপ ঈশ্বর; কেন আমাকে ত্যাগ করিয়াছ? আমি কেন শত্রুর দৌরাত্ম্যে বিষণ্ণ হইয়া বেড়াইতেছি? তোমার দীপ্তি ও তোমার সত্য প্রেরণ কর; তাহারাই আমার পথপ্রদর্শক হউক, তোমার পবিত্র গিরিতে ও তোমার আবাসে আমাকে উপস্থিত করুক। তাহাতে আমি ঈশ্বরের বেদির কাছে যাইব, আমার পরমানন্দজনক ঈশ্বরের কাছে যাইব; আর হে ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, আমি বীণাযন্ত্রে তোমার স্তব করিব। হে আমার প্রাণ, কেন অবসন্ন হও? আমার অন্তরে কেন ক্ষুব্ধ হও? ঈশ্বরের অপেক্ষা কর; কেননা আমি আবার তাঁহার স্তব করিব; তিনি আমার মুখের পরিত্রাণ ও আমার ঈশ্বর। হে ঈশ্বর, আমরা স্বকর্ণে শুনিয়াছি, আমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাদিগকে বলিয়াছেন, তুমি পূর্ব্বকালে তাঁহাদের সময়ে কার্য্য করিয়াছিলে। তুমি আপন হস্তে জাতিগণকে অধিকারচ্যুত করিয়া তাঁহাদিগকেই রোপন করিয়াছিলে, তুমি লোকবৃন্দকে চূর্ণ করিয়া তাঁহাদিগকেই বিস্তারিত করিয়াছিলে। কেননা তাঁহারা আপনাদের খড়্‌গ দ্বারা দেশ অধিকার করেন নাই, তাঁহাদের নিজ বাহু তাঁহাদিগকে নিস্তার করে নাই; কিন্তু তব দক্ষিণ হস্ত, তব বাহু ও তব মুখের প্রসন্নতা [তাহা করিয়াছিল,] কারণ তাঁহাদের প্রতি তোমার অনুকম্পা ছিল। হে ঈশ্বর, তুমিই আমার রাজা; যাকোবকে পরিত্রাণ করিতে আজ্ঞা হউক। তোমার দ্বারা আমরা আপন বিপক্ষদিগকে গুতাইয়া ফেলিয়া দিব; যাহারা আমার বিরুদ্ধে উঠে, তাহাদিগকে তোমার নামে পদতলে দলিব। যেহেতু আমি আপন ধনুকে নির্ভর করিব না, আমার খড়্‌গ আমাকে নিস্তার করিবে না। কিন্তু তুমিই আমাদের বিপক্ষগণ হইতে আমাদিগকে নিস্তার করিয়াছ, আমাদের বিদ্বেষিগণকে লজ্জাপন্ন করিয়াছ। আমরা সমস্ত দিন ঈশ্বরেরই শ্লাঘা করিয়াছি, আর চিরকাল তোমার নামের স্তব করিব। সেলা। কিন্তু তুমি আমাদিগকে ত্যাগ করিয়াছ, অপমানগ্রস্ত করিয়াছ, আমাদের বাহিনীগণের সঙ্গে যাত্রা কর না। তুমি বিপক্ষ হইতে আমাদিগকে ফিরাইতেছ; আমাদের বিদ্বেষিগণ আপনাদের জন্য লুট করিতেছে। তুমি আমাদিগকে ভক্ষণীয় মেষের ন্যায় সমর্পণ করিয়াছ, আমাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিয়াছ। তুমি আপন প্রজাদিগকে বিনামূল্যে বিক্রয় করিতেছ, তাহাদের মূল্য দ্বারা ধন বৃদ্ধি কর নাই। তুমি আমাদের প্রতিবাসিগণের কাছে আমাদিগকে তিরস্কারের বিষয়, আমাদের চতুর্দ্দিক্‌স্থিত লোকদের উপহাস ও বিদ্রূপের পাত্র করিতেছ। তুমি জাতিগণের মধ্যে আমাদিগকে প্রবাদের বিষয়, লোকবৃন্দের মধ্যে শিরশ্চালনের আস্পদ করিতেছ। সমস্ত দিন আমার অপমান আমার সম্মুখে থাকে, আমার মুখের লজ্জা আমাকে আচ্ছাদন করিয়াছে, তিরস্কারী ও নিন্দাকারীর রব প্রযুক্ত, শত্রু ও প্রতিহিংসাকারীর উপস্থিতি প্রযুক্ত। আমাদের প্রতি এই সকল ঘটিয়াছে; কিন্তু আমরা তোমাকে ভুলিয়া যাই নাই, তোমার নিয়ম বিষয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করি নাই; আমাদের চিত্ত পরাঙ্মুখ হয় নাই, আমাদের পাদবিক্ষেপ তোমার মার্গ হইতে ভ্রষ্ট হয় নাই। তথাপি তুমি আমাদিগকে শৃগালদিগের স্থানে চূরমার করিয়াছ, মৃত্যুচ্ছায়ায় আমাদিগকে আচ্ছন্ন করিয়াছ। আমরা যদি আপন ঈশ্বরের নাম ভুলিয়া গিয়া থাকি, যদি অন্য দেবের প্রতি অঞ্জলি প্রসারণ করিয়া থাকি, তবে ঈশ্বর কি তাহার সন্ধান পাইবেন না? তিনি ত অন্তঃকরণের গুপ্ত বিষয় সকল জানেন। হাঁ, তোমার জন্য আমরা সমস্ত দিন নিহত হইতেছি; আমরা বধ্য মেষের ন্যায় গণিত হইতেছি। জাগ্রৎ হও, হে প্রভু, কেন নিদ্রা যাও? উঠ; চিরকালের নিমিত্ত ত্যাগ করিও না। তুমি কেন আপন মুখ আচ্ছাদন করিতেছ? আমাদের দুঃখ ও দৌরাত্ম্যভোগ কেন ভুলিয়া যাইতেছ? কেননা আমাদের প্রাণ ধূলিতে অবনত, আমাদের উদর ভূমিতে লগ্ন হইয়াছে। আমাদের সাহায্যের নিমিত্ত উঠ, নিজ দয়ার অনুরোধে আমাদিগকে মুক্ত কর। আমার হৃদয়ে শুভকথা উথলিয়া উঠিতেছে; আমি রাজার বিষয়ে আপন রচনা বিবৃত করিব; আমার জিহ্বা দ্রুত লেখকের লেখনীস্বরূপ। তুমি মনুষ্য-সন্তানগণ অপেক্ষা পরম সুন্দর; তোমার ওষ্ঠাধরে অনুগ্রহ সেচিত হয়; এই নিমিত্ত ঈশ্বর চিরকালের জন্য তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন। হে বীর, তোমার খড়্‌গ কটিদেশে বন্ধন কর, তোমার প্রভা ও প্রতাপ [গ্রহণ কর]। আর স্বীয় প্রতাপে কৃতকার্য্য হও, বাহনে চড়িয়া যাও, সত্যের ও ধার্ম্মিকতাযুক্ত নম্রতার পক্ষে, তাহাতে তোমার দক্ষিণ হস্ত তোমাকে ভয়াবহ কার্য্য শিখাইবে। তোমার বাণ সকল তীক্ষ্ণ, জাতিরা তোমার নীচে পতিত হয়, রাজার শত্রুগণের হৃদয় বিদ্ধ হয়। হে ঈশ্বর, তোমার সিংহাসন অনন্তকালস্থায়ী, তোমার রাজদণ্ড সরলতার দণ্ড। তুমি ধার্ম্মিকতাকে প্রেম করিয়া আসিতেছ, দুষ্টতাকে ঘৃণা করিয়া আসিতেছ; এই কারণ ঈশ্বর, তোমার ঈশ্বর, তোমাকে অভিষিক্ত করিয়াছেন তোমার সখাগণ অপেক্ষা অধিক পরিমাণে আনন্দতৈলে। গন্ধরস, অগুরু ও দারুচিনিতে তোমার সকল বস্ত্র সুবাসিত হয়, হস্তিদন্তময় প্রাসাদসমূহ হইতে তারযুক্ত যন্ত্র সকল তোমাকে আনন্দিত করিয়াছে। তোমার মহিলারত্নদিগের মধ্যে রাজকন্যারা আছেন, তোমার দক্ষিণ দিকে দাঁড়াইয়া আছেন রাণী, ওফীরীর সুবর্ণে ভূষিতা। বৎস, শ্রবণ কর, দেখ, কর্ণপাত কর; তোমার জাতি ও তোমার পিতৃকুল ভুলিয়া যাও। তাহাতে রাজা তোমার সৌন্দর্য্য বাসনা করিবেন; কেননা তিনিই তোমার প্রভু, তুমি তাঁহার কাছে প্রণিপাত কর। সোর-কন্যা উপঢৌকন লইয়া আসিবেন, ধনী প্রজারা তোমার কাছে বিনতি করিবেন। রাজকন্যা অন্তঃপুরে সর্ব্বতোভাবে সুশোভিতা; তাঁহার পরিচ্ছদ স্বর্ণসূত্র-খচিত। তিনি সূচীশিল্পিত বস্ত্র পরিয়া রাজার নিকটে আনীতা হইবেন, তাঁহার পশ্চাদ্বর্ত্তিনী সহচরী কুমারীদিগকে তোমার নিকটে লওয়া যাইবে। তাহারা আনন্দে ও উল্লাসে আনীতা হইবে, তাহারা রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করিবে। তোমার পিতৃগণের পরিবর্ত্তে তোমার পুত্রেরা থাকিবে; তুমি তাহাদিগকে সমস্ত পৃথিবীতে অধ্যক্ষ করিবে। আমি তোমার নাম সমস্ত পুরুষপরম্পরায় স্মরণ করাইব, এইজন্য জাতিরা যুগে যুগে চিরকাল তোমার স্তব করিবে। ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয় ও বল। তিনি সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায়। অতএব আমরা ভয় করিব না—যদ্যপি পৃথিবী পরিবর্ত্তিত হয়, যদ্যপি পর্ব্বতগণ টলিয়া সমুদ্রের গর্ভে পড়ে। তাহার জল গর্জ্জন করুক, উচ্চণ্ড হউক, তাহার আস্ফালনে পর্ব্বতগণ কম্পিত হউক। সেলা। এক নদী আছে তাহার প্রণালী সকল ঈশ্বরের নগরকে, পরাৎপরের আবাসের পবিত্র স্থানকে আনন্দিত করে। ঈশ্বর তাহার মধ্যবর্ত্তী, তাহা বিচলিত হইবে না; প্রভাতেই ঈশ্বর তাহার সাহায্য করিবেন। জাতিগণ গর্জ্জন করিল, রাজ্য সকল বিচলিত হইল; তিনি আপন রব ছাড়িলেন, পৃথিবী গলিয়া গেল। বাহিনীগণের সদাপ্রভু আমাদের সহবর্ত্তী; যাকোবের ঈশ্বর আমাদের উচ্চদুর্গ। সেলা। চল, সদাপ্রভুর কার্য্যকলাপ সন্দর্শন কর, যিনি পৃথিবীতে ধ্বংস সাধন করিলেন। তিনি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন; তিনি ধনু ভগ্ন করেন, বড়শা খণ্ড খণ্ড করেন, তিনি রথ সকল আগুনে পোড়াইয়া দেন। তোমরা ক্ষান্ত হও; জানিও, আমিই ঈশ্বর; আমি জাতিগণের মধ্যে উন্নত হইব, আমি পৃথিবীতে উন্নত হইব। বাহিনীগণের সদাপ্রভু আমাদের সহবর্ত্তী; যাকোবের ঈশ্বর আমাদের উচ্চদুর্গ। সেলা। হে সমুদয় জাতি, করতালি দেও; আনন্দরবে ঈশ্বরের উদ্দেশে জয়ধ্বনি কর। কেননা পরাৎপর সদাপ্রভু ভয়াবহ, তিনি সমস্ত পৃথিবীর উপরে মহান্‌ রাজা। তিনি লোকবৃন্দকে আমাদের অধীন করেন, জাতিগণকে আমাদের পদতলস্থ করেন। তিনি আমাদের জন্য আমাদের অধিকার মনোনীত করেন; তাহা যাকোবের শ্লাঘার বিষয়, যাহাকে তিনি প্রেম করিলেন। সেলা। ঈশ্বর জয়ধ্বনি পুরঃসর, সদাপ্রভু তূরীধ্বনি পুরঃসর, ঊর্দ্ধগমন করিলেন। ঈশ্বরের উদ্দেশে স্তব কর, স্তব কর; আমাদের রাজার উদ্দেশে স্তব কর, স্তব কর। কেননা ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবীর রাজা; বুদ্ধি সহযোগে স্তব কর। ঈশ্বর জাতিগণের উপরে রাজত্ব করেন; ঈশ্বর আপন পবিত্র সিংহাসনে উপবিষ্ট। জাতিগণের প্রধানেরা একত্র হইয়াছেন, অব্রাহামের ঈশ্বরের প্রজা হইবার উদ্দেশে; কারণ পৃথিবীর ঢাল সকল ঈশ্বরের; তিনি অতিশয় উন্নত। সদাপ্রভু মহান্‌ ও অতীব কীর্ত্তনীয়, আমাদের ঈশ্বরের নগরে, তাঁহার পবিত্র পর্ব্বতে। রমণীয় উচ্চভূমি, সমস্ত পৃথিবীর আনন্দস্থল, উত্তর প্রান্তস্থিত সিয়োন পর্ব্বত, মহান্‌ রাজার পুরী। ঈশ্বর, তাহার অট্টালিকা-সমূহের মধ্যে, উচ্চদুর্গ বলিয়া আপনার পরিচয় দিয়াছেন। কেননা দেখ, রাজগণ সভাস্থ হইয়াছিলেন; তাঁহারা এক সঙ্গে চলিয়া গেলেন; তাঁহারা দেখিলেন, অমনি স্তম্ভিত হইলেন, বিহ্বল হইলেন, শীঘ্র পলায়ন করিলেন। ঐ স্থানে তাঁহাদের কাঁপনি ধরিল, প্রসবকারিণীর ন্যায় ব্যথা ধরিল। তুমি পূর্ব্বীয় বায়ু দ্বারা তর্শীশের জাহাজ সকল ভগ্ন করিয়া থাক। আমরা যাহা শুনিয়াছিলাম, তাহা দেখিয়াছি, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর নগরে, আমাদের ঈশ্বরের নগরে; ঈশ্বর তাহা চিরকালের জন্য সুস্থির করিবেন। সেলা। আমরা তোমার দয়া ধ্যান করিয়াছি, হে ঈশ্বর, তোমার মন্দিরের অভ্যন্তরে। যেমন তোমার নাম, হে ঈশ্বর, তেমনি তোমার প্রশংসা পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত; তোমার দক্ষিণ হস্ত ধর্ম্মশীলতায় পরিপূর্ণ। সিয়োন পর্ব্বত আনন্দ করুক, যিহূদার কন্যারা উল্লাসিত হউক, তোমার শাসননিচয়ের জন্য। তোমরা সিয়োনকে প্রদক্ষিণ কর, তাহার চারিদিকে ভ্রমণ কর, তাহার দুর্গ সকল গণনা কর, তাহার দৃঢ় প্রাচীরে মনোযোগ কর, তাহার অট্টালিকা সকল সন্দর্শন কর, যেন ভাবী বংশের কাছে তাহার বর্ণনা করিতে পার। কেননা এই ঈশ্বর অনন্তকালতরে আমাদের ঈশ্বর; তিনি চিরকাল আমাদের পথদর্শক হইবেন। হে সমুদয় জাতি, তোমরা ইহা শ্রবণ কর; জগন্নিবাসিগণ সকলে, কর্ণপাত কর। সামান্য লোকের কি মান্যবান লোকের সন্তান; ধনী কি দরিদ্র, নির্ব্বিশেষে শ্রবণ কর। আমার মুখ প্রজ্ঞার কথা কহিবে, আমার চিত্তের আলোচনা বুদ্ধির ফল হইবে। আমি দৃষ্টান্ত কথায় কর্ণপাত করিব, বীণাযন্ত্রে আপন গূঢ় বাক্যের ব্যাখ্যা করিব। সেই বিপৎকালে আমি কেন ভয় করিব, যখন তাহাদের অপরাধ আমাকে বেষ্টন করে, যাহারা আমাকে বঞ্চনা করে, যাহারা আপনাদের ধনে নির্ভর করে, আপনাদের সম্পত্তিবাহুল্যের শ্লাঘা করে, তাহাদের মধ্যে কেহই কোন মতে ভ্রাতাকে মুক্ত করিতে পারে না, কিম্বা তাহার প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরকে কিছু দিতে পারে না, ( কেননা তাহাদের প্রাণের মুক্তি দুর্মূল্য, এবং চিরকালেও অসাধ্য;) যেন সে নিত্যজীবী হয়, যেন সে ক্ষয় না দেখে। কারণ সে দেখে যে, জ্ঞানবানেরা মরে, হীনবুদ্ধি ও পশুবৎ লোক নির্ব্বিশেষে বিনষ্ট হয়, তাহারা অন্যদের জন্য আপনাদের ধন রাখিয়া যায়। তাহাদের আন্তরিক ভাব এই, তাহাদের বাটী চিরস্থায়ী, তাহাদের বাসস্থান পুরুষানুক্রমে থাকিবে, তাহারা স্ব স্ব নামানুসারে ভূমির নাম রাখে। কিন্তু মনুষ্য ঐশ্বর্য্যশালী হইলেও স্থির থাকে না; সে নশ্বর পশুদিগের সদৃশ। এই তাহাদের পথ, তাহাদের হীনবুদ্ধিতা; তথাপি তাহাদের পরে লোকে তাহাদের বাক্যের অনুমোদন করে। সেলা। তাহারা পাতালের জন্য নিযুক্ত মেষপালবৎ, মৃত্যু তাহাদিগকে চরাইবে; সরলগণ প্রভাতে তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে; তাহাদের রূপ পাতালে নষ্ট হইবে, তাহার কোন বসতিস্থান আর থাকিবে না। কিন্তু ঈশ্বর পাতালের হস্ত হইতে আমার প্রাণ মুক্ত করিবেন; কেননা তিনি আমাকে গ্রহণ করিবেন। সেলা। তুমি ভীত হইও না, যখন কেহ ধনবান হয়, যখন তাহার কুলের ঐশ্বর্য্য বৃদ্ধি পায়, কেননা মরণকালে সে কিছুই সঙ্গে লইয়া যাইবে না, তাহার ঐশ্বর্য্য তাহার অনুগমন করিবে না। সে জীবদ্দশায় আপন প্রাণকে আশীর্ব্বাদ করিত; আর তুমি আপনার মঙ্গল করিলে লোকে তোমার স্তব করে। সে আপন পিতৃবংশের কাছে যাইবে, তাহারা দীপ্তির দর্শন কখনও পাইবে না। সে মনুষ্য ঐশ্বর্য্যশালী অথচ অবোধ, সে নশ্বর পশুদিগের সদৃশ। ঈশ্বর, সদাপ্রভু ঈশ্বর কথা কহিয়াছেন, সূর্য্যের উদয়স্থান অবধি অস্তস্থান পর্য্যন্ত তিনি পৃথিবীকে আহ্বান করিয়াছেন। সিয়োন হইতে, পরম সৌন্দর্য্যের স্থান হইতে, ঈশ্বর দেদীপ্যমান হইয়াছেন। আমাদের ঈশ্বর আসিবেন, নীরব থাকিবেন না; তাঁহার অগ্রে অগ্নি গ্রাস করিবে, তাঁহার চারিদিকে অত্যন্ত ঝড় বহিবে। তিনি ঊর্দ্ধস্থিত স্বর্গকে ডাকিবেন, পৃথিবীকেও ডাকিবেন, স্বীয় প্রজাদের বিচার জন্য; আমার সাধুদিগকে আমার কাছে একত্র কর, যাহারা বলিদান লইয়া আমার সহিত নিয়ম করিয়াছে। আর স্বর্গ তাঁহার ধর্ম্মশীলতা জ্ঞাত করিবে, কেননা ঈশ্বর স্বয়ং বিচারকর্ত্তা। সেলা। হে আমার প্রজাগণ, শুন, আমি বলি; হে ইস্রায়েল, শুন, আমি তোমার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিই। আমিই ঈশ্বর, তোমার ঈশ্বর। আমি তোমার বলিদান সকলের বিষয়ে তোমাকে ভর্ৎসনা করিব না, তোমার হোমবলি সকল সতত আমার সম্মুখে। আমি তোমার গৃহ হইতে বৃষ, তোমার খোঁয়াড় হইতে ছাগ লইব না। কেননা বনের সমস্ত জন্তু আমার; সহস্র সহস্র পর্ব্বতীয় পশু আমার। আমি পর্ব্বতগণের সমস্ত পক্ষীকে জানি, মাঠের প্রাণী সকল আমার সম্মুখবর্ত্তী। আমি ক্ষুধিত হইলে তোমাকে বলিব না; কেননা জগৎ ও তাহার সমস্তই আমার। আমি কি বৃষমাংস ভোজন করিব? আমি কি ছাগরক্ত পান করিব? তুমি ঈশ্বরের উদ্দেশে স্তববলি উৎসর্গ কর, পরাৎপরের নিকটে আপন মানত পূর্ণ কর; আর সঙ্কটের দিনে আমাকে ডাকিও; আমি তোমাকে উদ্ধার করিব, ও তুমি আমার গৌরব করিবে। কিন্তু দুষ্টকে ঈশ্বর কহেন, আমার বিধি প্রচার করিতে তোমার কি অধিকার? তুমি আমার নিয়ম কেন মুখে আনিয়াছ? তুমি ত শাসন ঘৃণা করিয়া থাক, আমার বাক্য পশ্চাতে ফেলিয়া থাক। চোরকে দেখিলে তুমি তাহার সহিত প্রণয় করিতে, তুমি ব্যভিচারীদের সহভাগী হইতে। তুমি মন্দ বিষয়ে মুখ বাড়াইয়া দিয়া থাক, তোমার জিহ্বা ছল রচনা করে। তুমি বসিয়া নিজ ভ্রাতার বিরুদ্ধে কথা কহিয়া থাক, তুমি আপন সহোদরের নিন্দা করিয়া থাক। তুমি এই সকল করিয়াছ, আমি নীরব হইয়া রহিয়াছি; তুমি মনে করিয়াছ, আমি তোমারই মতন; আমি তোমাকে ভর্ৎসনা করিব, ও তোমার সাক্ষাতে সমস্তের বিন্যাস করিব। তোমরা যাহারা ঈশ্বরকে ভুলিয়া যাইতেছ, ইহা বিবেচনা কর, পাছে আমি তোমাদিগকে বিদীর্ণ করি, আর উদ্ধার করিবার কেহ না থাকে। যে ব্যক্তি স্তবের বলি উৎসর্গ করে, সেই আমার গৌরব করে; যে ব্যক্তি নিজ পথ সরল করে, তাহাকে আমি ঈশ্বরের পরিত্রাণ দেখাইব। হে ঈশ্বর, তোমার দয়ানুসারে আমার প্রতি কৃপা কর; তোমার করুণার বাহুল্য অনুসারে আমার অধর্ম্ম সকল মার্জ্জনা কর। আমার অপরাধ হইতে আমাকে নিঃশেষে ধৌত কর, আমার পাপ হইতে আমাকে শুচি কর। কেননা আমি নিজে আমার অধর্ম্ম সকল জানি; আমার পাপ সতত আমার সম্মুখে আছে। তোমার বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে আমি পাপ করিয়াছি, তোমার দৃষ্টিতে যাহা কুৎসিত, তাহাই করিয়াছি; অতএব তুমি আপনার বাক্যে ধর্ম্মময়, আপনার বিচারে নির্দ্দোষ রহিয়াছ। দেখ, অপরাধে আমার জন্ম হইয়াছে, পাপে আমার মাতা আমাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছিলেন। দেখ, তুমি আন্তরিক সত্যে প্রীত, তুমি গূঢ় স্থানে আমাকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দিবে। এসোব দ্বারা আমাকে মুক্তপাপ কর, তাহাতে আমি শুচি হইব; আমাকে ধৌত কর, তাহাতে আমি হিম অপেক্ষা শুক্ল হইব। আমাকে আমোদ ও আনন্দের বাক্য শুনাও; তোমা দ্বারা চূর্ণিত অস্থি সকল প্রফুল্ল হউক। আমার পাপসমূহের প্রতি মুখ আচ্ছাদন কর, আমার সকল অপরাধ মার্জ্জনা কর। হে ঈশ্বর, আমাতে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ সৃষ্টি কর, আমার অন্তরে সুস্থির আত্মাকে নূতন করিয়া দেও। তোমার সম্মুখ হইতে আমাকে দূর করিও না, তোমার পবিত্র আত্মাকে আমা হইতে হরণ করিও না। তোমার পরিত্রাণের আনন্দ আমাকে পুনরায় দেও, ইচ্ছুক আত্মা দ্বারা আমাকে ধরিয়া রাখ। আমি অধর্ম্মাচারীদিগকে তোমার পথ শিক্ষা দিব, পাপীরা তোমার দিকে ফিরিয়া আসিবে। হে ঈশ্বর, হে আমার পরিত্রাণের ঈশ্বর, রক্তপাতের দোষ হইতে আমাকে উদ্ধার কর, আমার জিহ্বা তোমার ধর্ম্মশীলতার বিষয় গান করিবে। হে প্রভু, আমার ওষ্ঠাধর খুলিয়া দেও, আমার মুখ তোমার প্রশংসা প্রচার করিবে। কেননা তুমি বলিদানে প্রীত নহ, হইলে তাহা দিতাম হোমে তোমার সন্তোষ নাই। ঈশ্বরের গ্রাহ্যবলি ভগ্ন আত্মা; হে ঈশ্বর, তুমি ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ তুচ্ছ করিবে না। তুমি আপন অনুগ্রহে সিয়োনের মঙ্গল কর, তুমি যিরূশালেমের প্রাচীর নির্ম্মাণ কর। তখন তুমি ধার্ম্মিকতার বলি, হোম ও পূর্ণাহুতিতে প্রীত হইবে; তখন লোকে তোমার বেদির উপরে বৃষদিগকে উৎসর্গ করিবে। বীর, তুমি কেন অনিষ্টকার্য্যের শ্লাঘা করিতেছ? ঈশ্বরের দয়া নিত্যস্থায়ী। তোমার জিহ্বা দুষ্টতার কল্পনা করিতেছে; হে ছলসাধক, তাহা শাণিত ক্ষুরের সদৃশ। তুমি সৎক্রিয়া অপেক্ষা দুষ্ক্রিয়া, এবং ধর্ম্মবাক্য অপেক্ষা মিথ্যা কথা ভালবাস। সেলা। হে ছলনার জিহ্বা, তুমি সমুদয় বিনাশক কথা ভালবাস। ঈশ্বরও তোমাকে চিরতরে বিনষ্ট করিবেন, তোমাকে ধরিয়া তাম্বু হইতে টানিয়া লইবেন, জীবিতদের দেশ হইতে তোমাকে উন্মুলন করিবেন। সেলা। ধার্ম্মিকেরা তাহা দেখিয়া ভীত হইবে, আর তাহার বিষয়ে উপহাস করিয়া বলিবে, ‘দেখ, ঐ ব্যক্তি ঈশ্বরকে আপন বল করিত না, সে আপনার ধনবাহুল্যে নির্ভর করিত; সে দুষ্টতায় আপনাকে বলবান করিত।’ কিন্তু আমি ঈশ্বরের বাটীতে হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষসদৃশ; আমি অনন্তকালতরে ঈশ্বরের দয়াতে বিশ্বাস করি। চিরকাল আমি তোমার স্তব করিব, কেননা তুমি কার্য্য সাধন করিয়াছ; আমি তোমার সাধুগণের সম্মুখে তোমার নামের অপেক্ষা করিব, কেননা তাহা উত্তম। মূঢ় মনে মনে বলিয়াছে, ‘ঈশ্বর নাই’। তাহারা নষ্ট, তাহারা ঘৃণার্হ অধর্ম্ম করিয়াছে; সৎকর্ম্ম করে, এমন কেহ নাই। ঈশ্বর স্বর্গ হইতে মনুষ্য-সন্তানদের প্রতি নিরীক্ষণ করিলেন, দেখিতে চাহিলেন, বিবেচক কেহ আছে কি না, ঈশ্বরের অন্বেষণকারী কেহ আছে কি না। সকলে বিপথে গিয়াছে, একসঙ্গে বিকারপ্রাপ্ত হইয়াছে; সৎকর্ম্ম করে, এমন কেহ নাই, এক জনও নাই। অধর্ম্মাচারীদের কি কিছুই জ্ঞান নাই? তাহারা খাদ্য গ্রাস করিবার ন্যায় আমার প্রজাগণকে গ্রাস করে, আর ঈশ্বরকে ডাকে না। ভয়শূন্য স্থানে তাহারা বড়ই ভয় পাইল; কেননা যাহারা তোমাকে অবরোধ করে, ঈশ্বর তাহাদের অস্থি ছড়াইয়া ফেলিলেন, তুমি তাহাদিগকে লজ্জা দিয়াছ, কারণ ঈশ্বর তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন। আহা! ইস্রায়েলের পরিত্রাণ সিয়োন হইতে উপস্থিত হউক; ঈশ্বর যখন আপন প্রজাদের বন্দিদশা হইতে ফিরাইয়া আনিবেন, তখন যাকোব উল্লাসিত হইবে, ইস্রায়েল আনন্দ করিবে। ঈশ্বর, তোমার নামে আমাকে পরিত্রাণ কর, তোমার পরাক্রমে আমার বিচার নিষ্পন্ন কর। হে ঈশ্বর, আমার প্রার্থনা শুন, আমার মুখের বাক্যে কর্ণপাত কর। কেননা অপরিচিত লোকেরা আমার বিপক্ষে উঠিয়াছে, দুর্দ্দান্ত লোকেরা আমার প্রাণের অন্বেষণ করিয়াছে; তাহারা ঈশ্বরকে সম্মুখে রাখে নাই। সেলা। দেখ, ঈশ্বর আমার সাহায্যকারী; প্রভু আমার প্রাণরক্ষকদের মধ্যবর্ত্তী। তিনি অমঙ্গল আমার গুপ্ত শত্রুদের কাছে ফিরাইয়া দিবেন; তুমি আপন সত্যে তাহাদিগকে সংহার কর। আমি তোমার উদ্দেশে স্ব-ইচ্ছার বলি উৎসর্গ করিব; হে সদাপ্রভু, তোমার নামের স্তব করিব, কেননা তাহা উত্তম। কারণ তিনি আমাকে সমস্ত সঙ্কট হইতে উদ্ধার করিয়াছেন, এবং আমার চক্ষু আমার শত্রুগণের দশা দেখিয়াছে। হে ঈশ্বর, আমার প্রার্থনায় কর্ণপাত কর, আমার বিনতি হইতে লুকাইও না। আমার প্রতি অবধান কর, আমাকে উত্তর দেও; আমি ভাবনায় অস্থির হইতেছি, কোঁকাইতেছি, শত্রুর রব হেতু, দুর্জ্জনের অত্যাচার হেতু; কেননা তাহারা আমাতে অধর্ম্ম আরোপ করে, ক্রোধে আমাকে তাড়না করে। আমার অন্তরে চিত্ত বড়ই ব্যথিত হইতেছে; মৃত্যুর ত্রাস আমাকে আক্রমণ করিয়াছে। ভয় ও কম্প আমাতে প্রবেশ করিয়াছে, আমি মহাত্রাসে আচ্ছন্ন হইয়াছি। আমি কহিলাম, আহা! যদি কপোতের ন্যায় আমার পক্ষ হইত, তবে আমি উড়িয়া গিয়া সুস্থির হইতাম; দেখ, আমি ভ্রমণ করিয়া দূরে যাইতাম, প্রান্তরে প্রবাস করিতাম; সেলা। আমি ত্বরায় রক্ষার্থে পলায়ন করিতাম, প্রচণ্ড বায়ু ও ঝটিকা হইতে পলায়ন করিতাম। গ্রাস কর, প্রভু, উহাদের জিহ্বা ভিন্ন কর; কেননা আমি নগরে দৌরাত্ম্য ও কলহ দেখিয়াছি। তাহারা দিবারাত্র প্রাচীরের উপর দিয়া নগর প্রদক্ষিণ করে, আর অধর্ম্ম ও অন্যায় তন্মধ্যে রহিয়াছে। তন্মধ্যে দুষ্টতা রহিয়াছে; উপদ্রব ও ছলনা তাহার চক ত্যাগ করে না। কোন শত্রু যে আমাকে তিরস্কার করিয়াছে, তাহা নয়, করিলে আমি তাহা সহিতে পারিতাম; বিদ্বেষীও আমার বিরুদ্ধে দর্প করে নাই, করিলে তাহা হইতে আপনাকে লুকাইতাম। কিন্তু, আমার সমকক্ষ মনুষ্য যে তুমি, আমার মিত্র ও আমার আত্মীয়, তুমিই তাহা করিয়াছ। আমরা একত্র হইয়া মধুর মন্ত্রণা করিতাম, আমরা সদলে ঈশ্বরের গৃহে গমন করিতাম। মৃত্যু তাহাদের উপরে হঠাৎ আইসুক; তাহারা জীবদ্দশায় পাতালে নামুক; কারণ তাহাদের আলয়ে এবং তাহাদের অন্তরে দুষ্টতা আছে। আমি কিন্তু ঈশ্বরকে ডাকিব, তাহাতে সদাপ্রভু আমাকে পরিত্রাণ করিবেন। সন্ধ্যায়, প্রাতে ও মধ্যাহ্নে আমি বিলাপ করি ও কোঁকাই, আর তিনি আমার রব শুনেন। তিনি আমার প্রতিকূল যুদ্ধ হইতে আমার প্রাণ কুশলে মুক্ত করিয়াছেন; কারণ অনেকে আমার বিপক্ষ ছিল! ঈশ্বর শুনিবেন, তাহাদিগকে উত্তর দিবেন; তিনি চিরকালাবধি সমাসীন। সেলা। উহাদের পরিবর্ত্তন হয় নাই, আর উহারা ঈশ্বরকে ভয় করে না। ঐ ব্যক্তি আপন মিত্রদের বিরুদ্ধে হস্ত তুলিয়াছে, আপনার নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছে। তাহার মুখ নবনীতের ন্যায় কোমল, কিন্তু তাহার অন্তঃকরণ যুদ্ধময়; তাহার বাক্য সকল তৈল অপেক্ষা চিক্কণ, তথাপি সে সকল বিকোষিত খড়্‌গস্বরূপ। তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পন কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন, কখনও ধার্ম্মিককে বিচলিত হইতে দিবেন না। কিন্তু হে ঈশ্বর, তুমিই উহাদিগকে বিনাশের কূপে নামাইবে; রক্তপাতী ও ছলপ্রিয়েরা আয়ুর অর্দ্ধকালও বাঁচিবে না; কিন্তু আমি তোমার উপরে নির্ভর করিব। হে ঈশ্বর, আমার প্রতি কৃপা কর, কেননা মর্ত্ত্য আমাকে গ্রাস করিতে চাহিতেছে; সে সমস্ত দিন যুদ্ধ করিয়া আমার প্রতি উপদ্রব করে। আমার গুপ্ত শত্রুগণ সমস্ত দিন আমাকে গ্রাস করিতে চাহিতেছে; কেননা অনেকে সদর্পে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছে। যে সময়ে আমার ভয় লাগে, আমি তোমাতে নির্ভর করিব। ঈশ্বরে আমি তাঁহার বাক্যের প্রশংসা করিব; আমি ঈশ্বরে নির্ভর করিয়াছি, ভয় করিব না; মাংসপিণ্ড আমার কি করিতে পারে? তাহারা সমস্ত দিন আমার বাক্য মোচড়ায়; তাহাদের সমস্ত সঙ্কল্প অনিষ্টের জন্য আমার বিরুদ্ধ। তাহারা একত্র হয়, ঘাঁটি বসায়, আমার পদচিহ্ন লক্ষ্য করে, এইরূপে তাহারা আমার প্রাণের অপেক্ষা করিতেছে। অধর্ম্মের দ্বারা তাহারা কি বাঁচিবে? হে ঈশ্বর, ক্রোধে জাতিগণকে নিপাত কর। তুমি আমার ভ্রমণ গণনা করিতেছ; আমার নেত্রজল তোমার কুপাতে রাখ; তাহা কি তোমার পুস্তকে লিখিত নাই? সেই দিন আমার শত্রুগণ ফিরিয়া যাইবে, যে দিন আমি ডাকি, আমি ইহা জানি যে, ঈশ্বর আমার সপক্ষ। ঈশ্বরে আমি [তাঁহার] বাক্যের প্রশংসা করিব; সদাপ্রভুতে [তাঁহার] বাক্যের প্রশংসা করিব। আমি ঈশ্বরে নির্ভর করিয়াছি, ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিতে পারে? হে ঈশ্বর, আমি তোমার কাছে মানতে বদ্ধ; আমি তোমাকে স্তবের উপহার দিব। তুমি ত মৃত্যু হইতে আমার প্রাণ উদ্ধার করিয়াছ, তুমি কি পতন হইতে আমার চরণ [উদ্ধার কর নাই,] যেন আমি জীবিতদের দীপ্তিতে ঈশ্বরের সাক্ষাতে গমনাগমন করি? আমার প্রতি কৃপা কর, হে ঈশ্বর, আমার প্রতি কৃপা কর, কেননা আমার প্রাণ তোমার শরণাগত; তোমার পক্ষের ছায়ায় আমি শরণ লইব, যে পর্য্যন্ত এই সব দুর্দ্দশা অতীত না হয়। আমি পরাৎপর ঈশ্বরকে ডাকিব, আমার জন্য কার্য্যসাধক ঈশ্বরকেই ডাকিব। তিনি স্বর্গ হইতে দূত প্রেরণ করিয়া আমাকে নিস্তার করিবেন, আমার গ্রাসকারীর তিরস্কার কালে করিবেন; সেলা ঈশ্বর আপন দয়া ও সত্য প্রেরণ করিবেন। আমার প্রাণ সিংহগণের মধ্যবর্ত্তী; অগ্নি-শিখাস্বরূপ লোকদের মধ্যে আমি শয়ন করি, সেই মনুষ্য-সন্তানদের দন্তগুলি বড়শা ও বাণ, তাহাদের জিহ্বা তীক্ষ্ণ খড়্‌গ। হে ঈশ্বর, স্বর্গের উপরে উন্নত হও, সমস্ত ভূমণ্ডলের উপরে তোমার গৌরব হউক। তাহারা আমার চরণের জন্য জাল পাতিয়াছে, আমার প্রাণ অবনত হইয়াছে; তাহারা আমার সম্মুখে খাত খনন করিয়াছে, আপনারাই তাহার মধ্যে পতিত হইল। সেলা। আমার চিত্ত সুস্থির, হে ঈশ্বর, আমার চিত্ত সুস্থির; আমি গান করিব, আমি স্তব করিব। হে আমার গৌরব, জাগ্রৎ হও; নেবল ও বীণে, জাগ্রৎ হও; আমি ঊষাকে জাগাইব। হে প্রভু, আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার স্তব করিব, আমি লোকবৃন্দের মধ্যে তোমার প্রশংসা গাহিব। কেননা তোমার দয়া আকাশমণ্ডল পর্য্যন্ত মহৎ, তোমার সত্য মেঘ পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত। হে ঈশ্বর, স্বর্গের উপরে উন্নত হও, সমস্ত ভূমণ্ডলের উপরে তোমার গৌরব হউক। বীরগণ! তোমরা কি ধর্ম্মনীতি কহিতেছ? মনুষ্য সন্তানবর্গ! তোমরা কি ন্যায় বিচার করিতেছ? তোমরা হৃদয়ে দুষ্টতা সাধন করিতেছ। দেশে স্বহস্তের উপদ্রব তৌল করিতেছে। দুষ্টগণ গর্ভ হইতেই বিপথগামী, তাহারা জন্মাবধি মিথ্যা কহিতে কহিতে ভ্রমপথে বেড়ায়। তাহাদের বিষ সর্পবিষের মত; তাহারা বধির কালসর্পের সদৃশ, যে কর্ণ রোধ করে, যে সাপুড়েদের স্বর শুনে না, নিপুন মন্ত্রপাঠকের স্বর শুনে না। হে ঈশ্বর, তাহাদের মুখে দন্ত ভাঙ্গিয়া দেও; সদাপ্রভু যুবসিংহদের কসের দন্ত উৎপাটন কর। তাহারা প্রবহমান জলের ন্যায় বিলীন হউক, সে বাণ যোজনা করিলে তাহা ছিন্নের মত হউক। দ্রবীভূত শম্বুকের ন্যায় তাহারা গলিয়া যাউক, সূর্য্য দেখে নাই, অবলার এমন গর্ভস্রাবের ন্যায় হউক। তোমাদের স্থালী কন্টক টের না পাইতে, তিনি কাঁচা ও জ্বলন্ত সকলই ঝড়ে উড়াইয়া দিবেন। ধার্ম্মিক লোক প্রতিফল দেখিয়া আনন্দিত হইবে, সে দুর্জ্জনের রক্তে আপন পাদ প্রক্ষালন করিবে; তাহাতে মনুষ্যগণ কহিবে, ধার্ম্মিক সত্যই ফল পায়, সত্যই পৃথিবীতে বিচারসাধন ঈশ্বর আছেন। হে আমার ঈশ্বর, আমার শত্রুগণ হইতে আমাকে উদ্ধার কর, আমার বিপক্ষগণ হইতে আমাকে উচ্চে স্থাপন কর। অধর্ম্মাচারীদের হইতে আমাকে উদ্ধার কর, রক্তপাতী মনুষ্যদের হইতে আমাকে রক্ষা কর। কারণ দেখ, তাহারা আমার প্রাণের জন্য লুকাইয়া আছে, বলবানেরা আমার বিরুদ্ধে একত্র হইতেছে, হে সদাপ্রভু, আমার অধর্ম্মের জন্য নয়, আমার পাপের জন্য নয়। আমার বিনা অপরাধে তাহারা দৌড়িয়া আসিয়া প্রস্তুত হইতেছে; তুমি আমাকে দেখা দিবার জন্য জাগ্রৎ হও, দৃষ্টিপাত কর। হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি সমস্ত জাতিকে প্রতিফল দিবার জন্য উঠ, তুমি কোন অধর্ম্মী বিশ্বাসঘাতকের প্রতি কৃপা করিও না। সেলা। তাহারা সন্ধ্যাকালে ফিরিয়া আইসে, কুকুরের ন্যায় শব্দ করে, নগরের চারিদিকে ভ্রমণ করে। দেখ, তাহারা মুখে বক বক করিতেছে, তাহাদের ওষ্ঠের মধ্যে খড়্‌গ আছে; কেননা [তাহারা বলে], কে শুনিতে পায়? কিন্তু, সদাপ্রভু! তুমি তাহাদিগকে পরিহাস করিবে, তুমি সমস্ত জাতিকে বিদ্রূপ করিবে। হে আমার বল, আমি তোমার অপেক্ষা করিব; কেননা ঈশ্বর আমার উচ্চদুর্গ। আমার দয়াবান্‌ ঈশ্বর আমার সম্মুখবর্ত্তী হইবেন, ঈশ্বর আমার গুপ্ত শত্রুদের দশা আমাকে দেখাইবেন। তুমি তাহাদিগকে বধ করিও না, পাছে আমার লোকেরা ভুলিয়া যায়; হে প্রভু, আমাদের ঢাল, তোমার শক্তিতে তাহাদিগকে ছড়াইয়া নীচে ফেল। তাহাদের ওষ্ঠাধরের বাক্য মুখের পাপমাত্র; তাহাদের অভিশাপ ও মিথ্যা কথা হেতু তাহারা আপনাদের অহঙ্কারে ধরা পড়ুক, তুমি সংহার কর তাহাদিগকে, ক্রোধে সংহার কর, যেন তাহারা আর না থাকে; তাহারা জানুক, ঈশ্বর যাকোবের মধ্যে কর্ত্তৃত্ব করেন, পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত করেন। সেলা। তাহারা সন্ধ্যাকালে ফিরিয়া আইসুক, কুকুরের ন্যায় শব্দ করুক, নগরের চারিদিকে ভ্রমণ করুক। তাহারা খাদ্যের চেষ্টায় পর্য্যটন করিবে, তৃপ্ত না হইলে রাত্রি-যাপন করিবে। কিন্তু আমি তোমার বল কীর্ত্তন করিব, তোমার দয়ার জন্য প্রত্যূষে আনন্দধ্বনি করিব; কেননা তুমি হইয়াছ আমার পক্ষে উচ্চদুর্গ, আমার সঙ্কটের দিনে আশ্রয়। হে আমার বল, আমি তোমার উদ্দেশে সঙ্গীত করিব, কেননা ঈশ্বর আমার উচ্চদুর্গ, তিনি আমার দয়াবান্‌ ঈশ্বর। হে ঈশ্বর, তুমি আমাদিগকে ত্যাগ করিয়াছ, আমাদিগকে ভগ্ন করিয়াছ, তুমি ক্রুদ্ধ হইয়াছ; ফিরিয়া আমাদিগকে স্বস্থ কর। তুমি দেশ কম্পান্বিত করিয়াছ, বিদীর্ণ করিয়াছ; দেশের ভঙ্গের প্রতীকার কর, কেননা দেশ টলিতেছে। তুমি আপন প্রজাদিগকে কষ্ট দেখাইয়াছ, তুমি আমাদিগকে অস্থিরতারূপ মদ্য পান করাইয়াছ। যাহারা তোমাকে ভয় করে, তুমি তাহাদিগকে এক পতাকা দিয়াছ, যেন তাহা সত্যের পক্ষে তুলিয়া ধরা যায়। সেলা। তোমার প্রিয়েরা যেন উদ্ধার পায়, তজ্জন্য তুমি নিজ দক্ষিণ হস্ত দ্বারা পরিত্রাণ কর, আমাদিগকে উত্তর দেও। ঈশ্বর আপন পবিত্রতায় কথা কহিয়াছেন। আমি উল্লাস করিব, আমি শিখিম বিভাগ করিব, ও সুক্কোতের তলভূমি মাপিব। গিলিয়দ আমার, মনঃশিও আমার; আর ইফ্রয়িম আমার শিরস্ত্রাণ; যিহূদা আমার বিচারদণ্ড; মোয়াব দেশ আমার প্রক্ষালনপাত্র; আমি ইদোমের উপরে নিজ পাদুকা নিক্ষেপ করিব; হে পলেষ্টিয়া, তুমি আমার জন্য উচ্চধ্বনি কর। কে আমাকে ঐ দৃঢ় নগরে লইয়া যাইবে? কে ইদোম পর্য্যন্ত আমাকে পথ দেখাইবে? হে ঈশ্বর, তুমি কি আমাদিগকে ত্যাগ কর নাই? হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের বাহিনীগণের সহিত গমন কর না। বিপক্ষের প্রতিকূলে আমাদের সাহায্য কর; কেননা মনুষ্যের কৃত পরিত্রাণ অলীক। ঈশ্বরের দ্বারা আমরা বীরের কর্ম্ম করিব; তিনিই আমাদের বিপক্ষদিগকে মর্দ্দন করিবেন। হে ঈশ্বর, আমার কাকূক্তি শ্রবণ কর, আমার প্রার্থনায় অবধান কর। চিত্ত অবসন্ন হইলে আমি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে তোমাকে ডাকিব; আমা অপেক্ষা উচ্চ শৈলে আমাকে লইয়া যাও। কেননা তুমি হইয়াছ আমার আশ্রয়, শত্রু হইতে রক্ষাকারী দৃঢ় দুর্গ। আমি চিরকাল তোমার তাম্বুতে বাস করিব, তোমার পক্ষযুগের অন্তরালে আশ্রয় লইব। সেলা। কেননা, হে ঈশ্বর, তুমিই আমার মানত সকল শুনিয়াছ, যাহারা তোমার নাম ভয় করে, তাহাদের অধিকার তাহাদিগকে দিয়াছ। তুমি রাজার আয়ু বৃদ্ধি করিবে, তাঁহার বৎসর পুরুষে পুরুষে থাকিবে। তিনি চিরকাল ঈশ্বরের সাক্ষাতে বসতি করিবেন; দয়া ও সত্যকে তাঁহার রক্ষার্থে নিযুক্ত কর। তাহাতে আমি চিরকাল তোমার নামের প্রশংসা গাহিব, দিন দিন আপন মানত পূর্ণ করিব। আমার প্রাণ নীরবে ঈশ্বরের অপেক্ষা করিতেছে, তাঁহা হইতেই আমার পরিত্রাণ। কেবল তিনিই মম শৈল ও মম পরিত্রাণ; তিনি মম উচ্চদুর্গ, আমি অতিশয় বিচলিত হইব না। তোমরা কত কাল এক জন মনুষ্যকে আক্রমণ করিবে, সকলে তাহাকে হনন করিবে, হেলিয়া পড়া ভিত্তি ও ভাঙ্গা বেড়ার ন্যায়? উহারা কেবল তাহার উচ্চপদ হইতে তাহাকে নিপাত করিবার মন্ত্রণা করিতেছে; উহারা মিথ্যা কথায় আমোদ করে; উহারা মুখে আশীর্ব্বাদ করে, কিন্তু অন্তরে শাপ দেয়। সেলা। হে আমার প্রাণ, নীরবে ঈশ্বরেরই অপেক্ষা কর; কেননা তাঁহা হইতেই আমার প্রত্যাশা। কেবল তিনিই মম শৈল ও মম পরিত্রাণ; তিনি মম উচ্চদুর্গ, আমি বিচলিত হইব না। আমার পরিত্রাণ ও আমার গৌরব ঈশ্বরনিষ্ঠ; আমার বলের শৈল ও আমার আশ্রয় ঈশ্বরে বিদ্যমান। হে লোক সকল, সতত তাঁহাতে নির্ভর কর, তাঁহারই সম্মুখে তোমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বল; ঈশ্বরই আমাদের আশ্রয়। সেলা। সামান্য লোকেরা বাষ্পমাত্র, মান্যবান লোকেরা মিথ্যা; তাহাদিগকে তৌল করিলে তাহারা উপরে উঠে; তাহাদের সর্ব্বস্ব বাষ্প অপেক্ষা লঘু। তোমরা উপদ্রবে নির্ভর করিও না, অপহরণের শ্লাঘা করিও না; ঐশ্বর্য্যের বাহুল্য হইলে তাহাতে মন দিও না। ঈশ্বর এক বার বলিয়াছেন, দুই বার আমি এই কথা শুনিয়াছি; পরাক্রম ঈশ্বরেরই। আর, হে প্রভু, দয়া তোমার, কারণ তুমিই প্রত্যেককে তাহার কর্ম্মানুরূপ ফল দিয়া থাক। হে ঈশ্বর, তুমি আমার ঈশ্বর; আমি সযত্নে তোমার অন্বেষণ করিব; আমার প্রাণ তোমার জন্য পিপাসু, আমার মাংস তোমার জন্য লালায়িত, শুষ্ক ও শ্রান্তিকর দেশে, জলবিহীন দেশে। এইরূপে আমি পবিত্র স্থানে তোমার মুখ চাহিয়া থাকিতাম, তোমার পরাক্রম ও তোমার গৌরব দেখিবার জন্য। কারণ তোমার দয়া জীবন হইতেও উত্তম; আমার ওষ্ঠাধর তোমার প্রশংসা করিবে। এইরূপে আমি যাবজ্জীবন তোমার ধন্যবাদ করিব, আমি তোমার নামে অঞ্জলি উঠাইব। আমার প্রাণ তৃপ্ত হইবে, যেমন মেদ ও মজ্জাতে হয়, আমার মুখ আনন্দপূর্ণ ওষ্ঠাধরে তোমার প্রশংসা করিবে। আমি শয্যার উপরে যখন তোমাকে স্মরণ করি, তখন প্রহরে প্রহরে তোমার বিষয় ধ্যান করি। কেননা তুমি আমার সহায় হইয়া আসিতেছ, তোমার পক্ষযুগলের ছায়াতে আমি আনন্দধ্বনি করিব। আমার প্রাণ পদে পদে তোমার অনুসঙ্গী; তোমার দক্ষিণ হস্ত আমাকে ধরিয়া রাখে। কিন্তু উহারা বিনাশার্থে আমার প্রাণের অন্বেষণ করে, তাহারা পৃথিবীর অধঃস্থানে যাইবে। তাহারা খড়্‌গের হস্তে সমর্পিত হইবে, তাহারা শৃগালের খাদ্য হইবে। কিন্তু রাজা ঈশ্বরে আনন্দ করিবেন; যে কেহ তাঁহাকে শপথ করে, সে শ্লাঘা করিবে; কারণ মিথ্যাবাদীদের মুখ রুদ্ধ হইবে। হে ঈশ্বর, আমার কাতরোক্তির রব শুন, শত্রুভয় হইতে আমার জীবন রক্ষা কর। দুরাচারদের গূঢ় মন্ত্রণা হইতে, অধর্ম্মাচারীদের জনতা হইতে, আমাকে সঙ্গোপন কর। তাহারা খড়্‌গের ন্যায় আপন আপন জিহ্বা শাণিত করিয়াছে; তাহারা কটুবাক্যরূপ তীর যোজনা করিয়াছে, যেন গোপনে সিদ্ধ লোকের প্রতি তাহা নিক্ষেপ করে; তাহারা অকস্মাৎ তাহাকে বাণ মারে, ভয় করে না। তাহারা কুমন্ত্রণায় আপনাদিগকে সবল করে, গোপনে ফাঁদ পাতিবার বিষয়ে কথাবার্ত্তা কহে; তাহারা বলে, কে আমাদিগকে দেখিবে? তাহারা অপরাধের সন্ধান করিয়া লয়, [বলে,] আমরা সন্ধানের চূড়ান্ত করিয়াছি, প্রত্যেকের অন্তর্ভাব ও হৃদয় গভীর। কিন্তু ঈশ্বর তাহাদিগকে বাণ মারিবেন, অকস্মাৎ তাহারা বাণে আহত হইবে। এইরূপে তাহারা উছোট খাইবে; তাহাদের জিহ্বা তাহাদের বিপক্ষ হইবে; যত লোক তাহাদিগকে দেখিবে, সকলে মাথা নাড়িবে। আর মনুষ্যমাত্র ভীত হইবে, তাহারা ঈশ্বরের কর্ম্ম প্রচার করিবে, আর তাঁহার কার্য্য বিবেচনা করিবে। ধার্ম্মিক লোক সদাপ্রভুতে আনন্দ করিবে, ও তাঁহার শরণাগত থাকিবে, আর সরলচিত্ত সকলে শ্লাঘা করিবে। হে ঈশ্বর, সিয়োনে প্রশংসা তোমার অপেক্ষা করে, তোমার উদ্দেশে মানত পূর্ণ করা যাইবে। হে প্রার্থনা শ্রবণকারী, তোমারই কাছে মর্ত্ত্যমাত্র আসিবে। অপরাধসমূহ আমা হইতে প্রবল; তুমি আমাদের অধর্ম্ম সকল মার্জ্জনা করিবে। ধন্য সেই, যাহাকে তুমি মনোনীত করিয়া নিকটে আন, সে তোমার প্রাঙ্গণে বাস করিবে; আমরা পরিতৃপ্ত হইব, তোমার গৃহের উত্তম দ্রব্যে, তোমার পবিত্র মন্দিরের উত্তম দ্রব্যে। হে আমাদের ত্রাণেশ্বর, তুমি ধার্ম্মিকতায় ভয়ানক ক্রিয়া দ্বারা আমাদিগকে উত্তর দিবে; তুমি পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তের, এবং দূরবর্ত্তী সমুদ্রবাসীদের বিশ্বাস-ভূমি। তুমি নিজ শক্তিতে পর্ব্বতগণের স্থাপনকর্ত্তা; তুমি পরাক্রমে বদ্ধকটি। তুমি সমুদ্রের গর্জ্জন, তাহার তরঙ্গের গর্জ্জন, ও জাতিগণের কোলাহল শান্ত করিয়া থাক। আর প্রান্তনিবাসীরা তোমার চিহ্ন সকল দেখিয়া ভয় পায়; তুমি প্রত্যূষের ও সন্ধ্যাকালের উদয়স্থানকে আনন্দ-গানময় করিয়া থাক। তুমি পৃথিবীর তত্ত্বাবধান করিতেছ, উহাতে জল সেচন করিতেছ, উহা অতিশয় ধনাঢ্য করিতেছ; ঈশ্বরের নদী জলে পরিপূর্ণ; এইরূপে ভূমি প্রস্তুত করিয়া তুমি মনুষ্যদের শস্য প্রস্তুত করিয়া থাক। তুমি তাহার সীতা সকল জলসিক্ত করিয়া থাক, তাহার আলি সকল সমান করিয়া থাক, তুমি বৃষ্টি দ্বারা তাহা কোমল করিয়া থাক, তাহার অঙ্কুরকে আশীর্ব্বাদ করিয়া থাক। তুমি আপন মঙ্গলভাবের বৎসরকে মুকুট পরাইয়া থাক, তোমার চক্রচিহ্ন দিয়া পুষ্টিকর দ্রব্য ক্ষরে। তাহা প্রান্তরস্থ চরাণি-স্থান সকলেতে ক্ষরে; এবং উপপর্ব্বতগণ হর্ষরূপ কটিবন্ধন পায়। মাঠ সকল মেষপালে ভূষিত হয়, তলভূমি সকল শস্যে পরিচ্ছন্ন হয়; তাহারা আনন্দধ্বনি করে, তাহারা গান করে। সমস্ত পৃথিবী! ঈশ্বরের উদ্দেশে আনন্দধ্বনি কর। তাঁহার নামের গৌরব কীর্ত্তন কর, তাঁহার প্রশংসা গৌরবান্বিত কর। ঈশ্বরকে বল, তোমার কর্ম্ম সকল কি ভয়াবহ! তোমার পরাক্রমের মহত্ত্বে তোমার শত্রুগণ তোমার কর্ত্তৃত্ব স্বীকার করিবে। সমস্ত পৃথিবী তোমার কাছে প্রণিপাত করিবে, ও তোমার উদ্দেশে সঙ্গীত করিবে; তাহারা তোমার নাম কীর্ত্তন করিবে। সেলা। চল, ঈশ্বরের ক্রিয়া সকল দেখ; মনুষ্য-সন্তানদের বিষয়ে তিনি স্বকর্ম্মে ভয়াবহ। তিনি সমুদ্রকে শুষ্কভূমিতে পরিণত করিলেন; লোকেরা নদীর মধ্য দিয়া পদব্রজে গমন করিল, তাঁহাতে সেই স্থানে আমরা আনন্দ করিলাম। তিনি নিজ পরাক্রমে অনন্তকাল কর্ত্তৃত্ব করেন; তাঁহার চক্ষু জাতিগণকে নিরীক্ষণ করিতেছে; বিদ্রোহীরা আপনাদিগকে উচ্চ না করুক। সেলা। হে জাতিগণ, আমাদের ঈশ্বরের ধন্যবাদ কর, তাঁহার প্রশংসাধ্বনি শ্রবণ করাও। তিনিই আমাদের প্রাণ জীবদ্দশায় রাখেন, আমাদের চরণ টলিতে দেন না। কেননা, হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের পরীক্ষা করিয়াছ, রৌপ্য পোড় দিবার ন্যায় আমাদিগকে পোড় দিয়াছ; তুমি আমাদিগকে জালে ফেলিয়াছ, আমাদের কটিদেশ ভারগ্রস্ত করিয়াছ। তুমি আমাদের মস্তকের উপর দিয়া অশ্বারোহী মনুষ্যদিগকে চালাইয়াছ; আমরা অগ্নি ও জলমধ্য দিয়া গমন করিয়াছ; তথাপি তুমি আমাদিগকে সমৃদ্ধি-স্থানে আনিয়াছ। আমি হোমবলি লইয়া তোমার গৃহে প্রবেশ করিব, তোমার উদ্দেশে আমার সেই মানত সকল পূর্ণ করিব, যাহা আমার ওষ্ঠাধর উচ্চারণ করিয়াছে, যাহা সঙ্কটের সময়ে আমার মুখ বলিয়াছে। আমি তোমার উদ্দেশে মেদ যুক্ত হোমবলি উৎসর্গ করিব, তাহার সহিত মেঘরূপ ধূপদাহ করিব; ছাগদের সহিত বৃষদিগকেও বলিদান করিব। সেলা। হে ঈশ্বর-ভীত লোক সকলে, তোমরা আসিয়া শ্রবণ কর; আমার প্রাণের জন্য তিনি যাহা করিয়াছেন, তাহার বর্ণনা করি। আমি নিজ মুখে তাঁহাকে ডাকিলাম, তাঁহার প্রতিষ্ঠা আমার জিহ্বাগ্রে ছিল। যদি চিত্তে অধর্ম্মের প্রতি তাকাইতাম, তবে প্রভু শুনিতেন না। কিন্তু সত্যই ঈশ্বর শুনিয়াছেন; তিনি আমার প্রার্থনার রবে অবধান করিয়াছেন। ধন্য ঈশ্বর, যিনি আমার প্রার্থনা, এবং আমা হইতে নিজ দয়া, দূর করেন নাই। ঈশ্বর আমাদিগকে কৃপা করুন, ও আশীর্ব্বাদ করুন, আমাদের প্রতি আপন মুখ উজ্জ্বল করুন। সেলা। এইরূপে যেন পৃথিবীতে তোমার পথ, ও সমস্ত জাতির মধ্যে তোমার পরিত্রাণ বিদিত হয়। হে ঈশ্বর, জাতিগণ তোমার স্তব করুক, সমস্ত জাতি তোমার স্তব করুক। লোকবৃন্দ আহ্লাদিত হইয়া আনন্দগান করুক; যেহেতু তুমি ন্যায়ে জাতিগণের বিচার করিবে, পৃথিবীতে লোকবৃন্দের শাসন করিবে। সেলা। হে ঈশ্বর, জাতিগণ তোমার স্তব করুক, সমস্ত জাতি তোমার স্তব করুক। পৃথিবী নিজ ফল দিয়াছে; ঈশ্বর, আমাদের ঈশ্বর, আমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবেন। ঈশ্বর আমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবেন, আর পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত তাঁহাকে ভয় করিবে। ঈশ্বর উঠুন, তাঁহার শত্রুগণ ছিন্নভিন্ন হউক, তাঁহার বিদ্বেষিগণ তাঁহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করুক। যেমন ধূম চালিত হয়, তেমনি তুমি তাহাদিগকে চালিত কর; যেমন অগ্নির সম্মুখে মোম গলিয়া যায়, তেমনি ঈশ্বরের সম্মুখে দুষ্টগণ বিনষ্ট হউক। কিন্তু ধার্ম্মিকগণ আনন্দ করুক, ঈশ্বরের সাক্ষাতে উল্লাস করুক, তাহারা আনন্দে আহ্লাদিত হউক। তোমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে গীত গাও, তাঁহার নামের কীর্ত্তন কর; যিনি মরুভূমি দিয়া বাহনে আসিতেছেন, তাঁহার জন্য রাজপথ বাঁধ; তাঁহার নাম ‘যাঃ’, তাঁহার সাক্ষাতে উল্লাস কর। ঈশ্বর আপন পবিত্র বাসস্থানে পিতৃহীনদের পিতা ও বিধবাদের বিচারকর্ত্তা। ঈশ্বর সঙ্গিহীনদিগকে পরিবার মধ্যে বাস করান, তিনি বন্দিগণকে মুক্ত করিয়া কুশলে রাখেন; কিন্তু বিদ্রোহীরা দগ্ধ ভূমিতে বাস করে। হে ঈশ্বর, তুমি যখন নিজ প্রজাগণের অগ্রে অগ্রে যাইতেছিলে, যখন শুষ্ক ভূমি দিয়া গমন করিতেছিলে, সেলা। তখন পৃথিবী কম্পমান হইল, ঈশ্বরের সাক্ষাতে আকাশও জলবিন্দুময় হইল; ঐ সীনয় ঈশ্বরের সাক্ষাতে, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সাক্ষাতে [কাঁপিয়া উঠিল]। হে ঈশ্বর, তুমি জলধারা বর্ষাইলে, তোমার অধিকার ক্লান্ত হইলে তুমিই তাহা সুস্থির করিলে। তোমার সমাজ তাহার মধ্যে বাস করিল; হে ঈশ্বর, তুমি আপন মঙ্গলভাবে দুঃখীর নিমিত্ত আয়োজন করিলে। প্রভু বাক্য দেন, শুভবার্ত্তার প্রচারিকাগণ মহাবাহিনী। বাহিনীগণের রাজারা পলায়ন করেন, পলায়ন করেন, আর গৃহস্বামিনী দ্রব্য বিভাগ করিয়া লয়। তোমরা কি বাথান মধ্যে শয়ন করিবে, রৌপ্যমণ্ডিত কপোতের পক্ষবৎ হইবে, যাহার পালখ হরিৎ সুবর্ণমণ্ডিত? সর্ব্বশক্তিমান যখন রাজাদিগকে দেশে ছিন্নভিন্ন করিলেন, তখন সল্‌মোন পর্ব্বতে [যেন] তুষার পড়িল। বাশন পর্ব্বত ঈশ্বরের পর্ব্বত; বাশন পর্ব্বত বহুশৃঙ্গ পর্ব্বত। হে বহুশৃঙ্গ পর্ব্বতগণ, ঈশ্বর আপন নিবাসের নিমিত্ত যে পর্ব্বতে প্রীত হইয়াছেন, তৎপ্রতি তোমরা কেন কুটিল দৃষ্টি করিতেছ? অবশ্য সদাপ্রভু চিরকাল তথায় বাস করিবেন। ঈশ্বরের রথ অযুত অযুত ও লক্ষ লক্ষ, প্রভু সে সকলের মধ্যবর্ত্তী; যেমন সীনয়ে, তাঁহার পবিত্র স্থানে । তুমি ঊর্দ্ধে উঠিয়াছ, বন্দিগণকে বন্দি করিয়াছ, মনুষ্যদের মধ্যে দান গ্রহণ করিয়াছ; এমন কি, বিদ্রোহীদের মধ্যেও গ্রহণ করিয়াছ, যেন সদাপ্রভু ঈশ্বর [তথায়] বাস করেন। ধন্য প্রভু, যিনি দিন দিন আমাদের ভার বহন করেন; সেই ঈশ্বর আমাদের পরিত্রাণ। সেলা। ঈশ্বর আমাদের পক্ষে পরিত্রাণসাধক ঈশ্বর; মৃত্যু হইতে উত্তরণ প্রভু সদাপ্রভুরই বশে। ঈশ্বর অবশ্য আপন শত্রুগণের মস্তক ও কুপথগামীর সকেশ-কপাল চূর্ণ করিবেন। প্রভু কহিলেন, আমি বাশন হইতে পুনর্ব্বার আনিব, সমুদ্রের গভীর তল হইতে [তাহাদিগকে] পুনর্ব্বার আনিব, যেন তোমার চরণ রক্তে ডুবাইতে পার, যেন তোমার কুকুরদের জিহ্বা [তোমার] শত্রুগণ হইতে অংশ পায়। হে ঈশ্বর, লোকে তোমার গমন দেখিয়াছে; পবিত্র স্থানে আমার ঈশ্বরের, আমার রাজার, গমন [দেখিয়াছে]। অগ্রে গায়কগণ, পশ্চাতে বাদ্যকরগণ চলিল, বাদ্যবাদিনী কুমারীদের মধ্যস্থানে। জনসমাগমের মধ্যে ঈশ্বরের ধন্যবাদ কর; তোমরা, যাহারা ইস্রায়েলরূপ উনুই হইতে [উৎপন্ন], তোমরা প্রভুর ধন্যবাদ কর। সেখানে আছেন তাহাদের শাসক কনিষ্ঠ বিন্যামীন, যিহূদার অধ্যক্ষগণ ও তাহাদের জনগণ, সবূলূনের অধ্যক্ষগণ, নপ্তালির অধ্যক্ষগণ। তোমার ঈশ্বর তোমার পরাক্রমের আজ্ঞা দিয়াছেন, হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের নিমিত্ত যাহা সাধন করিয়াছ, তাহা পরাক্রান্ত কর। যিরূশালেমে তোমার মন্দির আছে বলিয়া, রাজগণ তোমার উদ্দেশে উপহার আনিবেন। তুমি নলবনের বন্যপশুকে ভর্ৎসনা কর, বৃষদের মণ্ডলীকে ও জাতিগণের গোবৎসদিগকে ভর্ৎসনা কর; তাহারা প্রত্যেকে রৌপ্যের থান লইয়া পদতলস্থ হউক; যে যে জাতি যুদ্ধ ভালবাসে, তিনি তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিলেন। মিসর হইতে প্রধান প্রধান লোক আসিবে; কূশ শীঘ্র ঈশ্বরের কাছে কৃতাঞ্জলি হইবে। হে পৃথিবীর রাজ্য সকল, ঈশ্বরের উদ্দেশে গীত গাও; সেই প্রভুর প্রশংসা গান কর, সেলা। যিনি আদিকালীয় স্বর্গের স্বর্গ দিয়া রথারোহণে গমন করেন; দেখ, তিনি আপন রব, পরাক্রান্ত রব ছাড়েন। ঈশ্বরের পরাক্রম কীর্ত্তন কর; তাঁহার মহিমা ইস্রায়েলের উপরে, তাঁহার পরাক্রম আকাশমণ্ডলে রহিয়াছে। হে ঈশ্বর, তুমি তোমার ধর্ম্মধামে ভয়াবহ; ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তিনিই আপন প্রজাদিগকে পরাক্রম ও শক্তি দেন। ধন্য ঈশ্বর। হে ঈশ্বর, আমাকে পরিত্রাণ কর, কেননা আমার প্রাণ পর্য্যন্ত জল উঠিয়াছে। আমি অগাধ পঙ্কে ডুবিয়াছি, দাঁড়াইবার স্থান নাই; গভীর জলে আসিয়াছি, বন্যা আমার উপর দিয়া যাইতেছে। আমি ডাকিতে ডাকিতে ক্লান্ত হইয়াছি, আমার কণ্ঠ শুষ্ক হইয়াছে; আমার ঈশ্বরের অপেক্ষা করিতে করিতে আমার নয়নযুগল নিস্তেজ হইয়াছে। যাহারা অকারণে আমার বিদ্বেষী, তাহারা আমার মস্তকের কেশ অপেক্ষাও অনেক আমার উচ্ছেদার্থী মিথ্যাবাদী শত্রুগণ বলবান; আমি যাহা অপহরণ করি নাই, তাহাও আমাকে ফিরাইয়া দিতে হইল। হে ঈশ্বর, তুমি আমার মূঢ়তা জ্ঞাত আছ; আমার দোষ সকল তোমা হইতে গুপ্ত নয়। হে প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তোমার অপেক্ষাকারিগণ আমার দ্বারা লজ্জিত না হউক; হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তোমার অন্বেষণকারিগণ আমার দ্বারা অপমানিত না হউক। কেননা তোমারই নিমিত্ত আমি তিরস্কার সহ্য করিয়াছি, আমার মুখ লজ্জায় আচ্ছাদিত হইয়াছে। আমি হইয়াছি আমার ভ্রাতৃগণের কাছে বিদেশী, আমার সহোদরগণের কাছে বিজাতীয়। কারণ তোমার গৃহনিমিত্তক উদ্যোগ আমাকে গ্রাস করিয়াছে; যাহারা তোমাকে তিরস্কার করে, তাহাদের তিরস্কার আমার উপরে পড়িয়াছে। যখন আমি রোদন করিলাম, উপবাস দ্বারা প্রাণকে [ক্লেশ দিলাম], তখন তাহা আমার দুর্নামের বিষয় হইল। যখন আমি চট পরিধান করিলাম, তখন তাহাদের কাছে প্রবাদের বিষয় হইলাম। যাহারা পুরদ্বারে বসে, তাহারা আমার বিষয়ে কথাবার্ত্তা কহে; আমি সুরাপায়ীদের গীতস্বরূপ। কিন্তু, হে সদাপ্রভু, আমি তোমারই নিকটে প্রসন্নতার সময়ে প্রার্থনা করিতেছি; হে ঈশ্বর, তোমার দয়ার বাহুল্যে, তোমার পরিত্রাণের সত্যে, আমাকে উত্তর দেও। পঙ্ক হইতে আমাকে উদ্ধার কর, ডুবিয়া যাইতে দিও না; বিদ্বেষিগণ হইতে ও গভীর জল হইতে যেন উদ্ধার পাই। জলের বন্যা আমার উপর ছাপিয়া না উঠুক, অগাধ জল আমাকে গ্রাস না করুক; আমার উপরে কূপ আপন মুখ বদ্ধ না করুক। হে সদাপ্রভু, আমাকে উত্তর দেও, কেননা তোমার দয়া উত্তম; তোমার কৃপার বাহুল্যানুসারে আমার প্রতি মুখ ফিরাও। তোমার এই দাস হইতে মুখ আচ্ছাদন করিও না; কারণ আমি সঙ্কটাপন্ন, ত্বরায় আমাকে উত্তর দেও। নিকটে আসিয়া আমার প্রাণ মুক্ত কর; আমার শত্রুগণহেতু আমাকে নিষ্ক্রয় কর। তুমি আমার দুর্নাম, আমার লজ্জা ও আমার অপমান জান; আমার বিপক্ষেরা সকলে তোমার সম্মুখবর্ত্তী। তিরস্কারে আমার মনোভঙ্গ হইয়াছে, আমি অবসন্ন হইলাম, আমি সহানুভূতির অপেক্ষা করিলাম, কিন্তু তাহা নাই; সাত্ত্বনাকারীদের অপেক্ষা করিলাম, কিন্তু কাহাকেও পাইলাম না। আবার লোকে আমার খাদ্যের জন্য বিষ দিল, আমার পিপাসাকালে অম্লরস পান করাইল। তাহাদের মেজ তাহাদের সম্মুখে ফাঁদস্বরূপ হউক, শান্তিকালে তাহাদের পাশস্বরূপ হউক। তাহাদের চক্ষু অন্ধ হউক, যেন তাহারা দেখিতে না পায়; তুমি তাহাদের কটিদেশ চির-কম্পযুক্ত কর। তাহাদের উপরে তোমার ক্রোধ ঢালিয়া দেও, তোমার কোপাগ্নি তাহাদিগকে ধরুক। তাহাদের নিবাস শূন্য হউক, তাহাদের তাম্বুতে কেহ বাস না করুক। কেননা তাহারা তাহাকেই তাড়না করে, যাহাকে তুমি প্রহার করিয়াছ, তাহাদেরই ব্যথা বর্ণনা করে, যাহাদিগকে তুমি আঘাত করিয়াছ। তাহাদের অপরাধের উপরে অপরাধ যোগ কর, তাহারা তোমার ধর্ম্মশীলতায় প্রবেশ না করুক। জীবন-পুস্তক হইতে তাহাদের নাম লুপ্ত হউক, ধার্ম্মিকগণের সহিত তাহাদের অঙ্কপাত না হউক। কিন্তু আমি দুঃখী ও ব্যথিত, হে ঈশ্বর, তোমার পরিত্রাণ আমাকে উন্নত করুক। আমি গীত দ্বারা ঈশ্বরের নাম প্রশংসা করিব, স্তব দ্বারা তাঁহার মহিমা স্বীকার করিব। তাহাই সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে তুষ্টিকর হইবে, গোরু অপেক্ষা, শৃঙ্গ ও খুরযুক্ত বৃষ অপেক্ষা হইবে। নম্রগণ তাহা দেখিয়া আনন্দ করিবে; ঈশ্বরান্বেষিগণ! তোমাদের হৃদয় সঞ্জীবিত হউক। কেননা সদাপ্রভু দরিদ্রদের কথা শ্রবণ করেন, তিনি আপনার বন্দিগণকে তুচ্ছ করেন না। আকাশ ও পৃথিবী তাঁহার প্রশংসা করুক, সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সর্ব্ব জঙ্গম প্রশংসা করুক। কেননা ঈশ্বর সিয়োনের পরিত্রাণ করিবেন, ও যিহূদার নগর সকল গাঁথিবেন; লোকে সেখানে বাস করিবে, ও অধিকার পাইবে। তাঁহার দাসদের বংশই তাহা ভোগ করিবে; যাহারা তাঁহার নাম ভালবাসে, তাহারা তথায় বসতি করিবে। হে ঈশ্বর, আমার উদ্ধারার্থে [ত্বরা কর]; হে সদাপ্রভু, আমার সাহায্য করিতে ত্বরা কর। যাহারা আমার প্রাণের অন্বেষণ করে, তাহারা লজ্জিত ও হতাশ হউক; যাহারা আমার বিপদে প্রীত হয়, তাহারা ফিরিয়া যাউক, অপমানিত হউক। যাহারা বলে, অহো, অহো, তাহারা আপনাদের লজ্জা প্রযুক্ত ফিরিয়া যাউক। যাহারা তোমার অন্বেষণ করে, তাহারা সকলে তোমাতে আমোদ ও আনন্দ করুক; যাহারা তোমার পরিত্রাণ ভালবাসে, তাহারা সতত বলুক, ঈশ্বর মহিমান্বিত হউন। কিন্তু আমি দুঃখী ও দরিদ্র; হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে ত্বরা কর; তুমিই আমার সহায় ও আমার নিস্তারকর্ত্তা; হে সদাপ্রভু, বিলম্ব করিও না। সদাপ্রভু, আমি তোমার শরণ লইয়াছি; আমাকে কখনও লজ্জিত হইতে দিও না। তোমার ধর্ম্মশীলতায় আমাকে উদ্ধার কর, রক্ষা কর; আমার দিকে কর্ণপাত কর, আমাকে ত্রাণ কর। তুমি আমার বসতির শৈল হও, যেখানে আমি নিত্য যাইতে পারি; তুমি আমার পরিত্রাণ করিতে আজ্ঞা করিয়াছ; কেননা তুমিই আমার শৈল ও আমার দুর্গ। হে আমার ঈশ্বর, আমাকে উদ্ধার কর, দুর্জ্জনের হস্ত হইতে, অন্যায়কারী ও উপদ্রবীর করতল হইতে। কেননা, হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আমার আশা; তুমি বাল্যকাল হইতে আমার বিশ্বাস-ভূমি। গর্ভ হইতে তোমার উপরেই আমার নির্ভর; জননীর জঠর হইতে তুমিই আমার হিতৈষী; আমি সতত তোমারই প্রশংসা করি। আমি অনেকের দৃষ্টিতে অদ্ভুত লক্ষণস্বরূপ; কিন্তু তুমি আমার দৃঢ় আশ্রয়। আমার মুখ তোমার প্রশংসায় পরিপূর্ণ থাকিবে, সমস্ত দিন তোমার সৌন্দর্য্য বর্ণনা করিবে। বৃদ্ধ বয়সে আমাকে পরিত্যাগ করিও না, আমার বল ক্ষয় পাইলে আমাকে ছাড়িও না। কারণ আমার শত্রুগণ আমার বিষয়ে কথা কহে, আমার প্রাণের উপরে যাহাদের চক্ষু, তাহারা একত্র মন্ত্রণা করে। তাহারা বলে, ঈশ্বর উহাকে ত্যাগ করিয়াছেন, দৌড়িয়া উহাকে ধর, কেননা উদ্ধারকারী কেহই নাই। হে ঈশ্বর, আমা হইতে দূরবর্ত্তী হইও না; আমার ঈশ্বর, আমার সাহায্য করিতে ত্বরা কর। তাহারা লজ্জিত ও উচ্ছিন্ন হউক, যাহারা আমার প্রাণের বিপক্ষ; তাহারা তিরস্কারে ও অপমানে আচ্ছন্ন হউক, যাহারা আমার অনিষ্ট চেষ্টা করে। কিন্তু আমি নিরন্তর প্রত্যাশা করিব, এবং উত্তর উত্তর তোমার আরও প্রশংসা করিব। আমার মুখ তোমার ধর্ম্মশীলতা বর্ণনা করিবে, তোমার পরিত্রাণ সমস্ত দিন বর্ণনা করিবে, কেননা আমি তাহার সংখ্যা জানি না। আমি প্রভু সদাপ্রভুর পরাক্রমের ক্রিয়া সকল লইয়া উপস্থিত হইব; আমি তোমার, কেবল তোমারই ধর্ম্মশীলতা উল্লেখ করিব। হে ঈশ্বর, তুমি বাল্যকালাবধি আমাকে শিক্ষা দিয়া আসিতেছ; আর এ পর্য্যন্ত আমি তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল প্রচার করিতেছি। হে ঈশ্বর, বৃদ্ধ বয়স ও পক্বকেশের কাল পর্য্যন্তও আমাকে পরিত্যাগ করিও না, যাবৎ আমি এই বর্ত্তমান লোকদিগকে তোমার বাহুবল, ভাবী লোক সকলকে তোমার পরাক্রম, জ্ঞাত না করি। হে ঈশ্বর, তোমার ধর্ম্মশীলতাও ঊর্দ্ধ পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত; তুমি মহৎ মহৎ কার্য্য সাধন করিয়াছ; হে ঈশ্বর, তোমার তুল্য কে? তুমি আমাদিগকে অনেক দারুণ সঙ্কট দেখাইয়াছ, তুমি ফিরিয়া আমাদিগকে সঞ্জীবিত করিবে, পৃথিবীর অধঃস্থান হইতে পুনর্ব্বার উঠাইবে। তুমি আমার মহত্ত্ব বৃদ্ধি কর, এবং ফিরিয়া আমাকে সান্ত্বনা দেও । আবার আমি নেবল যন্ত্রে তোমার স্তব করিব, হে আমার ঈশ্বর, তোমার সত্যের স্তব করিব, হে ইস্রায়েলের পবিত্রতম, বীণাতে তোমার উদ্দেশে সঙ্গীত করিব। তোমার উদ্দেশে সঙ্গীত করিবার সময়ে আমার ওষ্ঠাধর আনন্দগান করিবে, আমার প্রাণও করিবে, যাহা তুমি মুক্ত করিয়াছ। আমার জিহ্বাও সমস্ত দিন তোমার ধর্ম্মশীলতার কথা কহিবে, কারণ তাহারা লজ্জিত হইয়াছে, তাহারা হতাশ হইয়াছে, যাহারা আমার অনিষ্ট চেষ্টা করে। হে ঈশ্বর, তুমি রাজাকে আপনার শাসন, রাজপুত্রকে আপনার ধর্ম্মশীলতা প্রদান কর। তিনি ধার্ম্মিকতায় তোমার প্রজাগণের, ন্যায়ে তোমার দুঃখীদের বিচার করিবেন । পর্ব্বতগণ ও উপপর্ব্বতগণ ধার্ম্মিকতা দ্বারা প্রজাদের জন্য শান্তিরূপ ফলে ফলবান্‌ হইবে। তিনি দুঃখী প্রজাগণের বিচার করিবেন, তিনি দরিদ্রের সন্তানদিগকে ত্রাণ করিবেন, কিন্তু উপদ্রবীকে চূর্ণ করিবেন। যাবৎ সূর্য্য থাকিবে, লোকে তোমাকে ভয় করিবে, যাবৎ চন্দ্র থাকিবে, পুরুষানুক্রমেই করিবে। ছিন্নতৃণ মাঠে বৃষ্টির ন্যায় তিনি নামিয়া আসিবেন, ভূমি সিঞ্চনকারী জলধারার ন্যায় আসিবেন। তাঁহার সময়ে ধার্ম্মিক লোক প্রফুল্ল হইবে, চন্দ্রের স্থিতিকাল পর্য্যন্ত প্রচুর শান্তি হইবে। তিনি এক সমুদ্র অবধি অপর সমুদ্র পর্য্যন্ত, ঐ নদী অবধি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত কর্ত্তৃত্ব করিবেন। তাঁহার সম্মুখে মরুনিবাসীরা নত হইবে, তাঁহার শত্রুগণ ধূলা চাটিবে। তর্শীশ ও দ্বীপগণের রাজগণ নৈবেদ্য আনিবেন; শিবা ও সবার রাজগণ উপহার দিবেন। হাঁ, সমুদয় রাজা তাঁহার কাছে প্রণিপাত করিবেন; সমুদয় জাতি তাঁহার দাস হইবে। কেননা তিনি আর্ত্তনাদকারী দরিদ্রকে, এবং দুঃখী ও নিঃসহায়কে উদ্ধার করিবেন। তিনি দীনহীন ও দরিদ্রের প্রতি দয়া করিবেন, তিনি দরিদ্রগণের প্রাণ নিস্তার করিবেন। তিনি চাতুরী ও দৌরাত্ম্য হইতে তাহাদের প্রাণ মুক্ত করিবেন, তাঁহার দৃষ্টিতে তাহাদের রক্ত বহুমূল্য হইবে; আর তাহারা জীবিত থাকিবে; ও তাঁহাকে শিবার সুবর্ণ দান করা যাইবে, লোকে তাঁহার নিমিত্ত নিরন্তর প্রার্থনা করিবে, সমস্ত দিন তাঁহার ধন্যবাদ করিবে। দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে, তাহার ফল লিবানোনের ন্যায় দোলায়মান হইবে; এবং নগরবাসীরা ভূমির তৃণের ন্যায় প্রফুল্ল হইবে। তাঁহার নাম অনন্তকাল থাকিবে; সূর্য্যের স্থিতি পর্য্যন্ত তাঁহার নাম সতেজ থাকিবে; মনুষ্যেরা তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ পাইবে; সমুদয় জাতি তাঁহাকে ধন্য ধন্য বলিবে। ধন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর, ইস্রায়েলর ঈশ্বর; কেবল তিনিই আশ্চর্য্য ক্রিয়া করেন। তাঁহার গৌরবান্বিত নাম অনন্তকাল ধন্য; তাঁহার গৌরবে সমস্ত পৃথিবী পরিপূর্ণ হউক। আমেন, আমেন। যিশয়ের পুত্র দায়ূদের প্রার্থনা সকল সমাপ্ত। ঈশ্বর নিতান্তই মঙ্গলস্বরূপ, ইস্রায়েলের পক্ষে, যাহারা শুদ্ধচিত্ত তাহাদের পক্ষে। কিন্তু আমার চরণ প্রায় টলিয়াছিল; আমার পাদবিক্ষেপ প্রায় স্খলিত হইয়াছিল। কারণ যখন দুষ্টদের কল্যাণ দেখিয়াছিলাম, তখন গর্ব্বিতদের প্রতি ঈর্ষা করিয়াছিলাম। কেননা তাহারা মৃত্যুকালে যন্ত্রণা পায় না, বরং তাহাদের কলেবর হৃষ্টপুষ্ট। মর্ত্ত্যের ন্যায় কষ্ট তাহাদের হয় না; মনুষ্যের মত তাহারা আহত হয় না। এইজন্য অহঙ্কার তাহাদের কণ্ঠের হারবৎ, দৌরাত্ম্য বস্ত্রবৎ তাহাদিগকে আচ্ছাদন করে। তাহাদের চক্ষু মেদে ঠেলিয়া উঠে, তাহাদের মনের সঙ্কল্প অপরিমিত। তাহারা বিদ্রূপ করে, ও দুষ্টতায় উপদ্রবের কথা কহে, তাহারা দর্পকথা কহে। তাহারা আকাশে মুখ রাখিয়াছে, এবং তাহাদের জিহ্বা পৃথিবীতে বিহার এইজন্য তাহাদের জনতা সেই দিকে ফিরে, প্রচুর জল তাহাদের দ্বারা গিলিত হয়। আর তাহারা বলে, ঈশ্বর কি রূপে জানিবেন? পরাৎপরের কি জ্ঞান আছে? দেখ, ইহারাই দুর্জন, ইহারা চিরকাল নির্ব্বিঘ্নে থাকিয়া ধন বৃদ্ধি করিয়াছে। নিশ্চয় আমি বৃথাই চিত্ত পরিষ্কার করিয়াছি, নির্দ্দোষতায় হস্ত প্রক্ষালন করিয়াছি। কেননা আমি সমস্ত দিন আহত হইয়াছি, প্রতি প্রভাতে শাস্তি পাইয়াছি। যদি আমি বলিতাম, এইরূপ বর্ণনা করিব, তবে দেখ, তোমার সন্তানদের বংশের প্রতি বিশ্বাসঘাতক হইতাম। আমি তাহা বুঝিবার জন্য চিন্তা করিলাম, কিন্তু তাহা আমার দৃষ্টিতে কষ্টকর হইল, যাবৎ আমি ঈশ্বরের ধর্ম্মধামে প্রবেশ না করিলাম, ও তাহাদের শেষ ফল বিবেচনা না করিলাম। তুমি তাহাদিগকে পিচ্ছিল স্থানেই রাখিতেছ, তাহাদিগকে বিনাশে ফেলিয়া দিতেছ। তাহারা নিমিষকাল মধ্যে কেমন উচ্ছিন্ন হয়, নানা ত্রাসে কেমন নিঃশেষে সংহার পায়। নিদ্রা ভঙ্গ হইলে পর যেমন স্বপ্ন তুচ্ছ হয়, তেমনি, হে প্রভু, তুমি জাগিলে তাহাদের মায়াপুত্তলিকে তুচ্ছ করিবে। কারণ আমার চিত্ত তাপিত হইল, আমার মর্ম্ম বিদ্ধ হইল; আমি মূর্খ ও অজ্ঞান, তোমার কাছে পশুবৎ ছিলাম। কিন্তু আমি নিরন্তর তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি; তুমি আমার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া রাখিয়াছ। তুমি নিজ মন্ত্রণায় আমাকে গমন করাইবে, শেষে সপ্রতাপে আমাকে গ্রহণ করিবে। স্বর্গে আমার কে আছে? পৃথিবীতেও তোমা ভিন্ন আর কিছুতে আমার প্রীতি নাই। আমার মাংস ও আমার চিত্ত ক্ষয় পাইতেছে, তথাপি ঈশ্বর চিরকাল আমার চিত্তের শৈল ও আমার দায়াংশ। কেননা দেখ, যাহারা তোমা হইতে দূরে থাকে, তাহারা বিনষ্ট হইবে; যে সকল লোক তোমা হইতে অপসরণ করিয়া ব্যভিচার করে, সেই সকলকে তুমি উচ্ছিন্ন করিয়াছ। কিন্তু ঈশ্বরের নিকটে থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল; আমি প্রভু সদাপ্রভুর শরণ লইলাম, যেন তোমার সমস্ত ক্রিয়া বর্ণনা করিতে পারি। হে ঈশ্বর, তুমি কেন চিরতরে ত্যাগ করিয়াছ? আপন চরাণির মেষগণের বিরুদ্ধে কেন তোমার ক্রোধাগ্নি প্রধূমিত হইতেছে? তোমার মণ্ডলীকে স্মরণ কর, যাহা তুমি পূর্ব্বকালে ক্রয় করিয়াছ, যাহা তোমার অধিকারের বংশ হইবার জন্য তুমি মুক্ত করিয়াছ; তোমার বাসস্থান সিয়োন পর্ব্বতকে স্মরণ কর। এই চিরকালীন স্তূপে পদার্পণ কর; শত্রু ধর্ম্মধামে সকলই ছারখার করিয়াছে। তোমার বিপক্ষগণ তোমার সমাগম-স্থানের মধ্যে গর্জ্জন করিয়াছে; চিহ্নের জন্য তাহারা আপনাদের চিহ্ন স্থাপন করিয়াছে। তাহারা এমন লোকদের ন্যায় দেখাইল, যাহারা নিবিড় বনে কুঠার উঠায় এখন তাহারা একেবারে তথাকার সমস্ত শিল্পকর্ম্ম কুঠার ও হাতুড়ি দ্বারা ভাঙ্গিয়া ফেলে। তাহারা তোমার ধর্ম্মধাম অগ্নিসাৎ করিল, তোমার নামের আবাস ভূমিসাৎ করিয়া অশুচি করিল। তাহারা মনে মনে কহিল, ‘আমরা তাহাদিগকে একেবারে সংহার করি,’ তাহারা দেশের মধ্যে ঈশ্বরের সমস্ত সমাগম-স্থান পোড়াইয়া দিয়াছে। আমরা আমাদের চিহ্নসমূহ দেখিতে পাই না, কোন ভাববাদী আর নাই; আমাদের কেহ জানে না, কত দিন। হে ঈশ্বর, বিপক্ষ কত দিন তিরস্কার করিবে? শত্রু কি চিরকাল তোমার নাম তুচ্ছ করিবে? তুমি আপন হস্ত, আপন দক্ষিণ হস্ত, কেন সঙ্কুচিত করিতেছ? উহা বক্ষঃস্থল হইতে বাহির কর, শত্রু নিঃশেষ কর। তথাপি ঈশ্বরই পূর্ব্বাবধি আমার রাজা, পৃথিবীর মধ্যে পরিত্রাণের সাধনকর্ত্তা। তুমিই আপন পরাক্রমে সমুদ্রকে দ্বিধা করিয়াছিলে, তুমিই জলে নাগদের মস্তক ভগ্ন করিয়াছিলে। তুমিই লিবিয়াথনের মস্তক চূর্ণ করিয়াছিলে, মরুভূমি-নিবাসী সকলকে খাদ্যরূপে তাহার দেহ দিয়াছিলে। তুমিই উৎস ও বন্যার জন্য পথ করিয়াছিলে, তুমিই নিত্য প্রবাহিনী নদী শুষ্ক করিয়াছিলে। দিবস তোমার, রাত্রিও তোমার; তুমিই জ্যোতিষ্ক ও সূর্য্য রচনা করিয়াছ। তুমিই পৃথিবীর সমস্ত সীমা স্থাপন করিয়াছ; তুমিই গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল করিয়াছ। স্মরণ কর, শত্রু সদাপ্রভুকে তিরস্কার করিয়াছে, মূঢ় জাতি তোমার নাম তুচ্ছ করিয়াছে। তোমার ঘুঘুর প্রাণ বন্য পশুকে দিও না; তোমার দুঃখিগণের জীবন চিরতরে ভুলিও না। সেই নিয়মের প্রতি দৃষ্টি রাখ; কেননা পৃথিবীর অন্ধকারময় স্থান সকল অত্যাচারের বসতিতে পরিপূর্ণ। উৎপীড়িত ব্যক্তি যেন লজ্জিত হইয়া ফিরিয়া না যায়; দুঃখী ও দরিদ্র তোমার নামের প্রশংসা করুক। উঠ, হে ঈশ্বর, আপনার বিবাদ নিষ্পন্ন কর; স্মরণ কর, মূঢ় সমস্ত দিন তোমাকে কেমন তিরস্কার করে। তোমার বিপক্ষগণের রব ভুলিও না; তোমার প্রতিরোধীদের কলহ নিয়ত উঠিতেছে। হে ঈশ্বর, আমরা তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তোমার নাম নিকটবর্ত্তী; লোকে তোমার আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল বর্ণনা করে। ‘‘আমি যখন নিরূপিত সময় উপস্থিত করিব, তখন আমিই ন্যায্য বিচার করিব। পৃথিবী ও তন্নিবাসীগণ বিলীন হইতেছে; আমি তাহার স্তম্ভ সকল স্থাপন করিয়াছি। সেলা। আমি গর্ব্বিত লোকদিগকে কহিলাম, গর্ব্ব করিও না; দুষ্ট লোকদিগকে কহিলাম, শৃঙ্গ তুলিও না। তোমাদের শৃঙ্গ উচ্চে তুলিও না; শক্তগ্রীব হইয়া কথা কহিও না।’’ কেননা উদয় স্থান হইতে, কি পশ্চিম হইতে, অথবা দক্ষিণ হইতে উন্নতিলাভ হয়, এমন নয়। কিন্তু ঈশ্বরই বিচারকর্ত্তা; তিনি কাহাকে নত, কাহাকে বা উন্নত করেন। কেননা সদাপ্রভুর হস্তে এক পানপাত্র আছে, তাহার দ্রাক্ষারস মাতিয়া উঠিয়াছে, তাহা মিশ্রিত মদ্যে পরিপূর্ণ, আর তিনি তাহা হইতে ঢালেন, পৃথিবীর দুষ্ট সকলে তাহার তলানি পর্য্যন্ত চাটিয়া খাইবে। কিন্তু আমি চিরকাল প্রচার করিব, যাকোবের ঈশ্বরের উদ্দেশে সঙ্গীত করিব। আর আমি দুষ্টগণের সমস্ত শৃঙ্গ কাটিয়া ফেলিব, কিন্তু ধার্ম্মিকগণের শৃঙ্গ উচ্চীকৃত হইবে। ঈশ্বর যিহূদার মধ্যে পরিচিত, ইস্রায়েলের মধ্যে তাঁহার নাম মহৎ। আর শালেমে তাঁহার আবাস, সিয়োনে তাঁহার বাসস্থান রহিয়াছে। সেখানে তিনি ধনুকের বিজলি সকল, ঢাল, খড়্‌গ ও সংগ্রাম ভঙ্গ করিয়াছেন। সেলা। মৃগয়ার পর্ব্বতমালা হইতে তুমি তেজোময় ও মহিমান্বিত। সাহসিক-চিত্তেরা লুণ্ঠিত ও নিদ্রায় মগ্ন হইয়াছে, কোন বীর আপন হস্ত পায় নাই। হে যাকোবের ঈশ্বর, তোমার তর্জ্জনে রথ ও অশ্ব মহানিদ্রাগত হইয়াছে। তুমি, তুমিই ভয়াবহ; তুমি একবার ক্রুদ্ধ হইলে কে তোমার সাক্ষাতে দাঁড়াইবে? তুমি স্বর্গ হইতে বিচারাজ্ঞা শ্রবণ করাইলে, পৃথিবী ভীত হইল, নিস্তব্ধ হইল, যখন ঈশ্বর উঠিলেন বিচার করিবার জন্য পৃথিবীস্থ মৃদু লোকদের পরিত্রাণ করিবার জন্য। সেলা। অবশ্য, মনুষ্যের ক্রোধ তোমার স্তব করিবে; তুমি ক্রোধের অবশেষ দ্বারা কটিবন্ধন করিবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে মানত কর, ও তাহা পূর্ণ কর; তাঁহার চতুর্দ্দিক্‌স্থ সকলে সেই ভয়াবহের নিকটে উপঢৌকন আনয়ন করুক। তিনি প্রধানবর্গের সাহস খর্ব্ব করেন; পৃথিবীস্থ রাজগণের পক্ষে তিনি ভয়াবহ। আমি স্বরবে ঈশ্বরের কাছে ক্রন্দন করিব; স্বরবে ঈশ্বরের কাছে ক্রন্দন করিব, তিনি আমার প্রতি কর্ণপাত করিবেন। সঙ্কটের দিনে আমি প্রভুর অন্বেষণ করিলাম; রাত্রিকালে আমার হস্ত বিস্তারিত থাকিল, সঙ্কুচিত হইল না; আমার প্রাণ প্রবোধ মানিল না। আমি ঈশ্বরকে স্মরণ করিয়া কোঁকাইতেছি; ভাবনা করিতে করিতে আমার আত্মা মূর্চ্ছিত হইতেছে। সেলা। তুমি আমার চক্ষুর পাতা খোলা রাখিতেছ; আমি এত উদ্বিগ্ন যে, কথা কহিতে পারি না। আমি আলোচনা করিলাম পূর্ব্বকালের দিন সকল, পুরাকালের বৎসর সকল। আমি আমার রাত্রিকালীন গীত স্মরণ করি, আমি মনে মনে ধ্যান করি; আমার আত্মা তত্ত্ব জিজ্ঞাসু হইল। প্রভু কি চিরকালের জন্য ত্যাগ করিবেন? তিনি কি আর সুপ্রসন্ন হইবেন না? তাঁহার দয়া কি চিরতরে শেষ হইয়াছে? তাঁহার প্রতিজ্ঞা কি পুরুষানুক্রমে বিফল থাকিবে? ঈশ্বর কি প্রসন্ন হইতে ভুলিয়া গিয়াছেন? তিনি ক্রোধে কি আপন করুণা রুদ্ধ করিয়াছেন? সেলা। পরে আমি কহিলাম, ইহা আমার পীড়া, পরাৎপরের দক্ষিণ হস্তের বৎসর সকল [স্মরণ করিব] । আমি সদাপ্রভুর কর্ম্ম সকল উল্লেখ করিব; তোমার পূর্ব্বকালীন আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল স্মরণ করিব। আমি তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যানও করিব, তোমার ক্রিয়া সকল আলোচনা করিব। হে ঈশ্বর, পবিত্রতায় তোমার পথ; ঈশ্বরের তুল্য মহান্‌ ঈশ্বর কে? তুমিই আশ্চর্য্য-কার্য্যকারী ঈশ্বর, তুমি জাতিগণের মধ্যে তোমার পরাক্রম জ্ঞাত করিয়াছ। তুমি বাহুবল দ্বারা আপন প্রজাদিগকে, যাকোবের ও যোষেফের সন্তানগণকে, মুক্ত করিয়াছ। সেলা। হে ঈশ্বর, জলসমূহ তোমাকে দেখিল; জলসমূহ তোমাকে দেখিল, কম্পিত হইল, জলধি সকলও বিচলিত হইল। জলধর সকল জলধারা বর্ষণ করিল, মেঘমালা গর্জ্জন করিল, তোমার বাণ সকলও বিক্ষিপ্ত হইল। চক্রবাতে তোমার বজ্রের ধ্বনি হইল, বিদ্যুৎ জগৎকে দেদীপ্যমান করিল, পৃথিবী কম্পমান ও টলটলায়মান হইল। সমুদ্রের মধ্যে তোমার পথ ছিল, বহু জলরাশির মধ্যে তোমার মার্গ ছিল, তোমার পদচিহ্ন জানা গেল না। তুমি স্বীয় প্রজাগণকে মেষপালের ন্যায় মোশি ও হারোণের হস্ত দ্বারা চালাইয়াছিলে। হে আমার স্বজাতি, আমার উপদেশ শ্রবণ কর, আমার মুখের বাক্যে কর্ণপাত কর। আমি দৃষ্টান্তকথায় আপন মুখ খুলিব, আমি পুরাকালের গূঢ় বাক্য সকল ব্যক্ত করিব; সেই সকল আমরা শুনিয়াছি, জ্ঞাত হইয়াছি, আমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাদিগকে বলিয়াছেন, আমরা সে সকল তাঁহাদের সন্তানগণের কাছে গুপ্ত রাখিব না, উত্তরকালীন বংশের কাছে সদাপ্রভুর প্রশংসা বর্ণনা করিব, তাঁহার পরাক্রম ও তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল বর্ণনা করিব। তিনি যাকোবের মধ্যে সাক্ষ্য দাঁড় করাইয়াছেন, ইস্রায়েলের মধ্যে ব্যবস্থা স্থাপন করিয়াছেন; যাহা তিনি আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, যেন তাঁহারা আপন আপন সন্তানগণকে তাহা জানান; যেন উত্তরকালীন বংশ, [অর্থাৎ] যে সন্তানগণ জন্মিবে, তাহারা তাহা জানিতে পারে, এবং উঠিয়া আপন আপন সন্তানগণের কাছে তাহার বর্ণনা করিতে পারে। যেন তাহারা ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখে, এবং ঈশ্বরের কার্য্য সকল ভুলিয়া না যায়, কিন্তু তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করে; যেন আপন পিতৃপুরুষদের ন্যায় না হয়, যাহারা অবাধ্য ও বিদ্রোহী বংশ ছিল; সেই বংশ আপনাদের চিত্ত স্থির করে নাই, তাহাদের আত্মা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল না। ইফ্রয়িমের সন্তানগণ সসজ্জ ও ধনুর্দ্ধর ছিল, সংগ্রামের দিনে তাহারা হটিয়া গেল। তাহারা ঈশ্বরের নিয়ম পালন করিল না, তাঁহার ব্যবস্থাপথে চলিতে অস্বীকার করিল। তাহারা তাঁহার কার্য্য সকল ভুলিয়া গেল, সেই সকল আশ্চর্য্য-কার্য্য, যাহা তিনি তাহাদিগকে দেখাইয়াছিলেন। তিনি তাহাদের পিতৃপুরুষদের সাক্ষাতে নানা আশ্চর্য্য কার্য্য করিয়াছিলেন। মিসর দেশে, সোয়নের মাঠে করিয়াছিলেন। তিনি সমুদ্রকে দ্বিধা করিয়া তাহাদিগকে পার করিয়াছিলেন, জলকে স্তূপাকারে দাঁড় করাইয়াছিলেন। তিনি তাহাদিগকে পথ দেখাইতেন, দিবসে মেঘ দ্বারা, এবং সমস্ত রাত্রি অগ্নির আলোক দ্বারা। তিনি প্রান্তরমধ্যে শৈল বিদীর্ণ করিলেন, তাহাদিগকে যেন জলধি হইতে প্রচুর জল পান করাইলেন। তিনি শৈল হইতে স্রোত বাহির করিলেন, নদীর ন্যায় জল বহাইলেন। তখনও তাহারা পুনঃ পুনঃ তাঁহার বিরুদ্ধে পাপ করিল, মরুভূমিতে পরাৎপরের বিদ্রোহী হইল; তাহারা মনে মনে ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, আপনাদের অভিলাষ পূরণার্থে ভক্ষ্য চাহিল। আর তাহারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা কহিল, বলিল, ঈশ্বর কি প্রান্তরে মেজ সাজাইয়া দিতে পারেন? দেখ, তিনি শৈলকে আঘাত করিলে জলধারা বহিল, স্রোতোধারা প্রবাহিত হইল; তিনি কি অন্নও দিতে পারেন? আপন প্রজাদের জন্য কি মাংস যোগাইবেন? অতএব সদাপ্রভু তাহা শুনিয়া ক্রোধান্বিত হইলেন; যাকোবের বিরুদ্ধে অগ্নি প্রজ্বলিত হইল, ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে কোপ উঠিল; কেননা তাহারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করিত না, তাঁহার পরিত্রাণে নির্ভর করিত না। তবু তিনি উপরিস্থ মেঘমালাকে আজ্ঞা দিলেন, আকাশমণ্ডলের দ্বার সকল খুলিয়া দিলেন। তিনি ভক্ষ্যের জন্য তাহাদের উপরে মান্না বর্ষণ করিলেন, তাহাদিগকে স্বর্গের শস্য দিলেন। মনুষ্য পরাক্রমীদের খাদ্য ভোজন করিল; তিনি তাহাদের তৃপ্তি পর্য্যন্ত ভক্ষ্য পাঠাইলেন। তিনি আকাশে পূর্ব্ব বায়ু বহাইলেন, নিজ পরাক্রমে দক্ষিণ বায়ু চালাইলেন। তিনি তাহাদের উপরে মাংসকে ধূলির ন্যায়, পক্ষধারী বিহঙ্গকে সমুদ্রের বালির ন্যায় বর্ষণ করিলেন। তিনি তাহা তাহাদের শিবিরের মধ্যে, তাহাদের আবাসসমূহের চারিপার্শ্বে, পড়িতে দিলেন। তখন তাহারা ভোজন করিয়া পরিতৃপ্ত হইল; তিনি তাহাদের অভীষ্ট বস্তু তাহাদিগকে দিলেন; তাহারা আপনাদের অভীষ্ট দ্রব্য ছাড়ে নাই, তাহাদের খাদ্য তাহাদের মুখেই ছিল, তখন তাহাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের কোপ উঠিল, তাহা তাহাদের হৃষ্টপুষ্টগণকে সংহার করিল, ইস্রায়েলের যুবকগণকে পাড়িয়া ফেলিল। এ সমস্ত হইলেও তাহারা পুনর্ব্বার পাপ করিল, ও তাঁহার আশ্চর্য্য ক্রিয়াতে বিশ্বাস করিল না। অতএব তিনি তাহাদের আয়ু অসারতায়, তাহাদের বৎসর সকল বিহ্বলতায়, শেষ করিলেন। তিনি লোকদিগকে বধ করিলে তাহারা তাঁহার অনুসন্ধান করিল, ফিরিয়া সযত্নে ঈশ্বরের অন্বেষণ করিল; তাহাদের স্মরণ হইল, ঈশ্বর তাহাদের শৈল, পরাৎপর ঈশ্বর তাহাদের মুক্তিদাতা। কিন্তু তাহারা মুখে তাঁহার চাটুবাদ করিল, জিহ্বাতে তাঁহার নিকটে মিথ্যা কহিল; কারণ তাহাদের হৃদয় তাঁহার প্রতি স্থির ছিল না, তাহারা তাঁহার নিয়মেও বিশ্বস্ত ছিল না। কিন্তু তিনি স্নেহময়, তাই অপরাধ ক্ষমা করিলেন, ধ্বংস করিলেন না, অনেকবার আপন ক্রোধ সম্বরণ করিলেন, আপনার সমস্ত কোপ উদ্দীপিত করিলেন না। তিনি স্মরণ করিলেন যে, তাহারা মাংস মাত্র, বায়ুস্বরূপ, যাহা বহিয়া গেলে আর ফিরিয়া আইসে না। তাহারা প্রান্তরে কতবার তাঁহার বিরুদ্ধে দ্রোহ করিল, মরুভূমিতে কতবার তাঁহাকে মনঃপীড়া দিল। তাহারা ফিরিয়া ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অসন্তুষ্ট করিল। তাহারা তাঁহার হস্ত স্মরণ করিল না, সেই দিনকে স্মরণ করিল না, যে দিনে তিনি তাহাদিগকে বিপক্ষের হস্ত হইতে মুক্ত করিলেন। তিনি মিসরে আপন চিহ্ন সকল, সোয়নের মাঠে আপন অদ্ভুত লক্ষণ সকল, স্থাপন করিলেন। তিনি রক্তে পরিণত করিলেন তাহাদের নদী সকল, তাহাদের প্রবাহ সকল, তাই তাহারা জল পান করিতে পারিল না। তিনি তাহাদের মধ্যে গ্রাসকারী দংশক, ও বিনাশকারী ভেক প্রেরণ করিলেন। তিনি গুটিপোকাকে তাহাদের ভূমির দ্রব্য, পঙ্গপালকে তাহাদের শ্রমফল দিলেন। তিনি শিলা দ্বারা তাহাদের দ্রাক্ষালতা, করকাপাতে তাহাদের ডুমুর গাছ মারিয়া ফেলিলেন। তিনি তাহাদের পশুগণকে শিলাতে, পাল সকলকে বজ্রাঘাতে সমর্পণ করিলেন। তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে পাঠাইলেন আপন প্রচণ্ড ক্রোধ, কোপ, ও রোষ, ও সঙ্কট, অমঙ্গলের এই দূতদল। তিনি নিজ ক্রোধের জন্য পথ করিলেন, মৃত্যু হইতে তাহাদের প্রাণ রক্ষা করেন নাই; কিন্তু তাহাদের জীবন মহামারীর হস্তে দিলেন। তিনি আঘাত করিলেন মিসরে সমস্ত প্রথমজাতকে, হামের তাম্বুসমূহে তাহাদের শক্তির প্রথম ফলকে; কিন্তু আপন প্রজাদিগকে মেষবৎ চালাইলেন, পালের মত প্রান্তর দিয়া লইয়া আসিলেন। তিনি তাহাদিগকে নিরাপদে লইয়া আসিলেন, তাহারা উদ্বিগ্ন হইল না, কিন্তু সমুদ্র তাহাদের শত্রুগণকে আচ্ছাদন করিল। আর তিনি তাহাদিগকে আনিলেন, আপন পবিত্র সীমায়, আপন দক্ষিণ হস্ত দ্বারা লব্ধ এই পর্ব্বতে। তিনি তাহাদের সম্মুখ হইতে জাতিগণকে দূর করিলেন, মানরজ্জু দ্বারা অধিকার বিভাগ করিয়া তাহাদিগকে দিলেন, ইস্রায়েলের বংশদিগকে উহাদের তাম্বুতে বাস করাইলেন। তথাপি তাহারা পরাৎপর ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল, তাঁহার বিদ্রোহী হইল, তাঁহার সাক্ষ্য সকল পালন করিল না। তাহারা সরিয়া গেল, তাহাদের পিতৃপুরুষদের ন্যায় বিশ্বাসঘাতকতা করিল; তাহারা বঞ্চক ধনুকের ন্যায় পার্শ্বে ফিরিল। কারণ তাহারা আপনাদের উচ্চস্থলীসমূহের দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিল, আপনাদের ক্ষোদিত প্রতিমাগণ দ্বারা তাঁহার অন্তর্জ্বালা জন্মাইল। ঈশ্বর তাহা শুনিয়া ক্রোধান্বিত হইলেন, ইস্রায়েলকে অতিমাত্র ঘৃণা করিলেন। তিনি শীলোস্থিত আবাস ত্যাগ করিলেন, সেই তাম্বু, যাহা তিনি মনুষ্যদের মধ্যে স্থাপন করিয়াছিলেন। তিনি আপন বল বন্দিদশায়, আপন শোভা বিপক্ষের হস্তে দিলেন। তিনি আপন প্রজাদিগকে খড়্‌গের হস্তগত করিলেন, আপন অধিকারের প্রতি ক্রুদ্ধ হইলেন। অগ্নি তাহাদের যুবকগণকে গ্রাস করিল, তাহাদের কন্যাগণের পরিণয়-সঙ্গীত হইল না। তাহাদের যাজকগণ খড়্‌গে পতিত হইল, তাহাদের বিধবারা রোদন করিল না। তখন প্রভু জাগিলেন, সুপ্তোত্থিতের ন্যায়, দ্রাক্ষারসে হর্ষনাদকারী বীরের ন্যায়। তিনি আপন বিপক্ষ লোকদিগকে মারিয়া ফিরাইয়া দিলেন, তাহাদিগকে চিরকালীন তিরস্কারের পাত্র করিলেন। আর তিনি যোষেফের তাম্বু অগ্রাহ্য করিলেন, ইফ্রয়িমের বংশকে মনোনীত করিলেন না; কিন্তু মনোনীত করিলেন যিহূদার বংশকে, ও আপনার প্রিয় সিয়োন পর্ব্বতকে। তিনি আপন ধর্ম্মধাম নির্ম্মাণ করিলেন, উচ্চ শিখরের ন্যায়, পৃথিবীর ন্যায়, যাহা তিনি চিরতরে স্থাপন করিয়াছেন। তিনি আপন দাস দায়ূদকে মনোনীত করিলেন, তাঁহাকে মেষের খোঁয়াড় হইতে গ্রহণ করিলেন; তিনি স্তন্যদাত্রী মেষীদের পশ্চাৎ হইতে তাঁহাকে আনিলেন, আপন প্রজা যাকোবকে ও আপন অধিকার ইস্রায়েলকে চরাইতে দিলেন। আর উনি হৃদয়ের সিদ্ধতানুসারে তাহাদিগকে চরাইলেন, আপন হস্তের দক্ষতায় তাহাদিগকে চালাইলেন। হে ঈশ্বর, জাতিগণ তোমার অধিকারে প্রবেশ করিয়াছে, তাহারা তোমার পবিত্র মন্দির অশুচি করিয়াছে, যিরূশালেমকে স্তূপের ঢিবী করিয়াছে। তাহারা তোমার দাসদের শব আকাশের পক্ষিগণকে ভক্ষণার্থে দিয়াছে, তোমার সাধুদের মাংস পৃথিবীর পশুগণকে দিয়াছে। তাহারা যিরূশালেমের চারিদিকে জলের ন্যায় উহাদের রক্ত ঢালিয়াছে; উহাদের কবর দিবার কেহ ছিল না। আমরা প্রতিবাসিগণের নিকটে তিরস্কারের বিষয় হইয়াছি। চারিদিকে লোকদের কাছে হাস্য ও বিদ্রূপের পাত্র হইয়াছি। হে সদাপ্রভু, আর কতকাল তুমি নিরন্তর ক্রুদ্ধ থাকিবে? তোমার অন্তর্জ্বালা কি অগ্নির ন্যায় জ্বলিবে? ঢালিয়া দেও তোমার কোপ সেই জাতিগণের উপরে, যাহারা তোমাকে জানে না, সেই রাজ্য সকলের উপরে, যাহারা তোমার নামে ডাকে না। কেননা তাহারা যাকোবকে গ্রাস করিয়াছে, তাহার বাসস্থান শূন্য করিয়াছে। পিতৃপুরুষদের অপরাধ সকল আমাদের বিরুদ্ধে স্মরিও না; তোমার বিবিধ করুণা ত্বরায় আমাদের নিকটে আইসুক, কেননা আমরা অতিশয় ক্ষীণ হইয়াছি। হে আমাদের ত্রাণেশ্বর, তোমার নামের গৌরবার্থে আমাদের সাহায্য কর, তোমার নামের অনুরোধে আমাদিগকে উদ্ধার কর, আমাদের সকল পাপ মার্জ্জনা কর। জাতিগণ কেন বলিবে, উহাদের ঈশ্বর কোথায়? তোমার দাসগণের যে রক্ত পাতিত হইয়াছে, তাহার প্রতিফল আমাদের দৃষ্টিগোচরে জাতিগণ জানিতে পারুক। বন্দির হাহাকার তোমার সম্মুখে উপস্থিত হউক, তুমি আপন বাহুর মহত্ত্বানুসারে মৃত্যুর সন্তানদিগকে বাঁচাও। আর, হে প্রভু, আমাদের প্রতিবাসিগণ যে তিরস্কারে তোমাকে তিরস্কার করিয়াছে, তাহার সাত গুণ পরিশোধ তাহাদের কোলে ফিরাইয়া দেও। তাহাতে তোমার প্রজা ও তোমার চরাণির মেষ যে আমরা, আমরা চিরকাল তোমার স্তব করিব, পুরুষানুক্রমে তোমার প্রশংসা প্রচার করিব। হে ইস্রায়েলের পালক, কর্ণপাত কর, যোষেফকে মেষপালবৎ চালাও যে তুমি, করূবদ্বয়ে আসীন যে তুমি, তুমি দেদীপ্যমান হও। ইফ্রয়িম, বিন্যামীন ও মনঃশির সম্মুখে আপন পরাক্রম সতেজ কর, আমাদের পরিত্রাণার্থে আগমন কর। হে ঈশ্বর, আমাদিগকে ফিরাও, তোমার মুখ উজ্জ্বল কর, তাহাতে আমরা পরিত্রাণ পাইব। হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, তুমি নিজ প্রজাগণের প্রার্থনার বিরুদ্ধে কতকাল কোপে জ্বলিবে? তুমি আহারার্থে তাহাদিগকে অশ্রুভক্ষ্য দিয়াছ, বহুলপরিমাণে নেত্রজল পান করাইয়াছ। তুমি প্রতিবাসীদের মধ্যে আমাদিগকে বিবাদের পাত্র করিতেছ, আমাদের শত্রুগণ একযোগে পরিহাস করে। হে বাহিনীগণের ঈশ্বর, আমাদিগকে ফিরাও, তোমার মুখ উজ্জ্বল কর, তাহাতে আমরা পরিত্রাণ পাইব। তুমি মিসর হইতে একটী দ্রাক্ষালতা আনিয়াছিলে, জাতিদিগকে দূর করিয়া তাহা রোপন করিয়াছিলে। তুমি তাহার জন্য ভূমি পরিষ্কার করিয়াছিলে, তাহা বদ্ধমূল হইয়া দেশময় ব্যাপ্ত হইল। তাহার ছায়ার পর্ব্বতগণ ঢাকা পড়িয়া গেল, তাহার শাখা সকল ঈশ্বরের এরস বৃক্ষ চয়ের তুল্য হইল। তাহা সমুদ্র পর্য্যন্ত আপন শাখা, নদী পর্য্যন্ত আপন পল্লব বিস্তার করিল। তুমি কেন তাহার বেড়া ভাঙ্গিয়া ফেলিলে? পথিক সকল যে তাহার পত্র ছিঁড়ে। বন হইতে শূকর আসিয়া তাহা কুচায়, মাঠের পশু তাহা মুড়াইয়া খাইয়া ফেলে। বিনয় করি, ফির, হে বাহিনীগণের ঈশ্বর, স্বর্গ হইতে চাহিয়া দেখ, এই দ্রাক্ষালতার তত্ত্ব কর; রক্ষা কর তাহা, যাহা তোমার দক্ষিণ হস্ত রোপন করিয়াছে, আর সেই পুত্রকে, যাহাকে তুমি আপনার জন্য সবল করিয়াছ। ইহা অগ্নিতে দগ্ধ হইয়াছে, ইহা ছেদিত হইয়াছে; তোমার মুখের তর্জ্জনে লোক বিনষ্ট হইতেছে। তোমার হস্ত তোমার দক্ষিণ হস্তের মনুষ্যের উপরে, তোমার নিমিত্ত সবলীকৃত মনুষ্যপুত্রের উপরে থাকুক। তাহাতে আমরা তোমা হইতে ফিরিয়া যাইব না; তুমি আমাদিগকে সঞ্জীবিত কর, আমরা তোমার নামে ডাকিব। হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, আমাদিগকে ফিরাও; তোমার মুখ উজ্জ্বল কর, তাহাতে আমরা পরিত্রাণ পাইব। তোমরা আমাদের বলস্বরূপ ঈশ্বরের উদ্দেশে আনন্দধ্বনি কর, যাকোবের ঈশ্বরের উদ্দেশে জয়ধ্বনি কর। ধর সঙ্গীত, বাজাও ডম্ফ, বাজাও নেবল সহকারে মনোহর বীণা। বাজাও তূরী অমাবস্যায়, বাজাও পূর্ণিমায়, আমাদের উৎসব দিনে। কেননা তাহা ইস্রায়েলের বিধি, যাকোবের ঈশ্বরের শাসন। তিনি যোষেফের মধ্যে এই সাক্ষ্য স্থাপন করিলেন, যখন তিনি মিসর দেশের বিরুদ্ধে বাহির হন; আমি এক বাণী শুনিলাম, যাহা জানিতাম না। ‘আমি উহার স্কন্ধকে ভারমুক্ত করিলাম, উহার হস্ত ঝুড়ি হইতে নিষ্কৃতি পাইল। তুমি সঙ্কটে ডাকিলে আমি তোমাকে উদ্ধার করিলাম; আমি মেঘনাদের অন্তরালে তোমাকে উত্তর দিলাম, মরীবার জলসমীপে তোমার পরীক্ষা করিলাম। সেলা। হে আমার প্রজালোক, শুন, আমি তোমার কাছে সাক্ষ্য দিব; হে ইস্রায়েল, তুমি যদি আমার কথা শুন! তোমার মধ্যে বিদেশীয় কোন দেবতা থাকিবে না। তুমি কোন বিজাতীয় দেবতার কাছে প্রণিপাত করিবে না। আমিই সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমাকে মিসর দেশ হইতে উঠাইয়া আনিয়াছি, তোমার মুখ খুলিয়া বিস্তার কর, আমি তাহা পূর্ণ করিব। কিন্তু আমার প্রজাগণ আমার রব শুনিল না, ইস্রায়েল আমাকে চাহিল না। তাই আমি তাহাদিগকে তাহাদের হৃদয়ের কঠিনতায় ছাড়িয়া দিলাম; তাহারা আপনাদের মন্ত্রণায় চলিল। আহা, যদি আমার প্রজাগণ আমার কথা শুনে, যদি ইস্রায়েল আমার পথে চলে! তাহা হইলে আমি তাহাদের শত্রুগণকে ত্বরায় দমন করিব, তাহাদের বিপক্ষগণের প্রতিকূলে আপন হস্ত ফিরাইব। সদাপ্রভুর বিদ্বেষিগণ তাঁহার কর্ত্তৃত্ব স্বীকার করিবে; কিন্তু ইহাদের সময় চিরকাল থাকিবে। তিনি ইহাদিগকে সুগোধূম ভোজন করাইবেন; আমি শৈলস্থ মধু দ্বারা তোমাকে তৃপ্ত করিব।’ ঈশ্বর ঈশ্বরের মণ্ডলীতে দণ্ডায়মান, তিনি ঈশ্বরদের মধ্যে বিচার করেন। তোমরা কতকাল অন্যায় বিচার করিবে, ও দুষ্টলোকদের মুখাপেক্ষা করিবে? সেলা। দীনহীন ও পিতৃহীন লোকদের বিচার কর; দুঃখী ও অকিঞ্চনদের প্রতি ন্যায় ব্যবহার কর। দীনহীন ও দরিদ্রকে নিস্তার কর; দুষ্ট লোকদের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার কর। উহারা জানে না, বুঝে না, উহারা অন্ধকারে যাতায়াত করে; পৃথিবীর সমস্ত ভিত্তিমূল টলটলায়মান হইতেছে। আমিই বলিয়াছি, তোমরা ঈশ্বর, তোমরা সকলে পরাৎপরের সন্তান; কিন্তু তোমরা মনুষ্যের ন্যায় মরিবে, এক জন অধ্যক্ষের ন্যায় পতিত হইবে। হে ঈশ্বর, উঠ, পৃথিবীর বিচার কর; কারণ তুমিই সমস্ত জাতিকে অধিকার করিবে। হে ঈশ্বর, মৌনী থাকিও না; হে ঈশ্বর, নীরব ও নিস্তব্ধ হইও না। কেননা, দেখ, তোমার শত্রুগণ গর্জ্জন করিতেছে, তোমার বিদ্বেষিগণ মস্তক তুলিয়াছে। তাহারা তোমার প্রজাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিতেছে, তোমার লুক্কায়িতগণের বিরুদ্ধে পরস্পর পরামর্শ আঁটিতেছে। তাহারা বলিয়াছে, আইস, আমরা উহাদিগকে উচ্ছিন্ন করি, আর জাতি থাকিতে না দিই, যেন ইস্রায়েলের নাম আর স্মরণে না থাকে। কারণ তাহারা একচিত্তে মন্ত্রণা করিয়াছে; তাহারা তোমার বিরুদ্ধে নিয়ম স্থাপন করে। ইদোমের তাম্বু সকল ও ইশ্মায়েলীয়গণ, মোয়াব ও হাগারীয়গণ, গবাল, অম্মোন ও অমালেক, সোর-বাসীদের সহিত পলেষ্টীয়া; অশূরিয়াও তাহাদের সঙ্গে যোগ দিয়াছে, তাহারা লোট-সন্তানগণের বাহু হইয়াছে। সেলা। ইহাদের প্রতি তদ্রূপ কর, যেরূপ মিদিয়নের প্রতি করিয়াছিলে, কীশোন নদীতে যেরূপ সীষরার ও যাবীনের প্রতি করিয়াছিলে; তাহারা ঐন্‌দোরে বিনষ্ট হইল, ভূমির উপরে সারস্বরূপ হইল। তুমি ইহাদের প্রধানবর্গকে ওরেব ও সেবের সমান কর, ইহাদের অধিপতি সকলকে সেবহ ও সল্‌মুন্নের সমান কর। ইহারা বলিয়াছে, আইস, আমরা অধিকার করিয়া লই আপনাদের জন্য ঈশ্বরের নিবাস সকল। হে আমার ঈশ্বর, তুমি ইহাদিগকে ঘূর্ণায়মান ধূলির ন্যায় কর, বায়ুর সম্মুখস্থ নাড়ার ন্যায় কর। যেমন দাবানল বন দগ্ধ করে, যেমন অগ্নিশিখা পর্ব্বতরাজি লেহন করে; তদ্রূপ তুমি ইহাদিগকে তোমার ঝটিকায় তাড়না কর, তোমার প্রচণ্ড বাত্যায় বিহ্বল কর। তুমি ইহাদের মুখ লজ্জায় পরিপূর্ণ কর, যেন, হে সদাপ্রভু, ইহারা তোমার নামের অন্বেষণ করে। ইহারা চিরতরে লজ্জিত ও বিহ্বল হউক, ইহারা হতাশ ও বিনষ্ট হউক; আর জানুক যে তুমি, যাঁহার নাম সদাপ্রভু, একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর। হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তোমার আবাস কেমন প্রিয়। আমার প্রাণ সদাপ্রভুর প্রাঙ্গণের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে, এমন কি, মূর্চ্ছিত হয়, আমার হৃদয় ও আমার মাংস জীবন্ত ঈশ্বরের উদ্দেশে উচ্চধ্বনি করে। সত্য, চটকপক্ষী এক কুলায় পাইয়াছে, খঞ্জনপক্ষী নিজ শাবক রাখিবার এক বাসা পাইয়াছে; তোমার বেদিই সেই স্থান, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, আমার রাজন্‌, আমার ঈশ্বর। ধন্য তাহারা, যাহারা তোমার গৃহে বাস করে, তাহারা সতত তোমার প্রশংসা করিবে। সেলা। ধন্য সেই ব্যক্তি, যাহার বল তোমাতে, [সিয়োনগামী] রাজপথ যাহার হৃদয়ে রহিয়াছে। তাহারা ক্রন্দনের তলভূমি দিয়া গমন করিয়া তাহা উৎসে পরিণত করে; প্রথম বৃষ্টি তাহা বিবিধ মঙ্গলে ভূষিত করে। তাহারা উত্তর উত্তর বলবান হইয়া অগ্রসর হয়, প্রত্যেকে সিয়োনে ঈশ্বরের কাছে দেখা দেয়। হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, আমার প্রার্থনা শুন; হে যাকোবের ঈশ্বর, কর্ণপাত কর। সেলা। দেখ, হে ঈশ্বর, আমাদের ঢাল, দৃষ্টিপাত কর তোমার অভিষিক্ত লোকের মুখের প্রতি। কেননা তোমার প্রাঙ্গণে এক দিনও সহস্র দিন অপেক্ষা উত্তম; বরং আমার ঈশ্বরের গৃহের গোবরাটে দাঁড়াইয়া থাকা আমার বাঞ্ছনীয়, তবু দুষ্টতার তাম্বুতে বাস করা বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ সদাপ্রভু ঈশ্বর সূর্য্য ও ঢাল; সদাপ্রভু অনুগ্রহ ও প্রতাপ প্রদান করেন; যাহারা সিদ্ধতায় চলে, তিনি তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিবেন না। হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তোমার উপরে নির্ভর করে। হে সদাপ্রভু, তুমি তোমার দেশের প্রতি প্রসন্ন হইয়াছ, তুমি যাকোবের বন্দিদশা ফিরাইয়াছ। তুমি আপন প্রজাদের অপরাধ ক্ষমা করিয়াছ, তুমি তাহাদের সমস্ত পাপ আচ্ছাদন করিয়াছ। সেলা। তুমি তোমার সমস্ত ক্রোধ সম্বরণ করিয়াছ, তুমি আপন কোপের চণ্ডতা হইতে ফিরিয়াছ। হে আমাদের ত্রাণেশ্বর, আমাদিগকে ফিরাও, আমাদের প্রতি তোমার অসন্তোষ নিবৃত্ত কর। আমাদের উপরে কি চিরকাল ক্রুদ্ধ থাকিবে? তুমি কি পুরুষে পুরুষে কোপ রাখিবে? তুমিই কি আবার আমাদিগকে সঞ্জীবিত করিবে না, যেন তোমার প্রজাগণ তোমাতে আনন্দ করে? হে সদাপ্রভু, তোমার দয়া আমাদিগকে দেখাও, আর তোমার পরিত্রাণ আমাদিগকে প্রদান কর। ঈশ্বর সদাপ্রভু যাহা বলিবেন, আমি তাহা শুনিব; কেননা তিনি আপন প্রজাদের, আপন সাধুগণের কাছে শান্তির কথা বলিবেন; কিন্তু তাহারা পুনর্ব্বার মূর্খতায় না ফিরুক। সত্যই তাঁহার পরিত্রাণ তাহাদেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, যেন আমাদের দেশে গৌরব বাস করিতে পায়। দয়া ও সত্য পরস্পর মিলিল, ধার্ম্মিকতা ও শান্তি পরস্পর চুম্বন করিল। ভূমি হইতে সত্যের অঙ্কুর উঠে, স্বর্গ হইতে ধার্ম্মিকতা হেঁট হইয়া দৃষ্টিপাত করিয়াছে। নিশ্চয় সদাপ্রভু মঙ্গল প্রদান করিবেন, আর আমাদের দেশ ফল প্রদান করিবে। ধার্ম্মিকতা তাঁহার অগ্রে অগ্রে চলিবে, তাঁহার পদচিহ্নকে মার্গস্বরূপ করিবে। হে সদাপ্রভু, কর্ণপাত কর, আমাকে উত্তর দেও, কেননা আমি দুঃখী ও দরিদ্র। আমার প্রাণ রক্ষা কর, কেননা আমি সাধু; হে আমার ঈশ্বর, তোমাতে বিশ্বাসকারী তোমার দাসকে তুমিই ত্রাণ কর। হে প্রভু, আমার প্রতি কৃপা কর, কেননা আমি সমস্ত দিন তোমাকে ডাকি। নিজ দাসের প্রাণ আনন্দিত কর, কেননা, হে প্রভু, আমি তোমার উদ্দেশে আমার প্রাণ উত্তোলন করি। কারণ, হে প্রভু, তুমি মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান, এবং যাহারা তোমাকে ডাকে, তুমি সেই সকলের পক্ষে দয়াতে মহান্‌। হে সদাপ্রভু, আমার প্রার্থনায় কর্ণপাত কর, আমার বিনতির রবে অবধান কর। সঙ্কটের দিনে আমি তোমাকে ডাকিব, কেননা তুমি আমাকে উত্তর দিবে। হে প্রভু, দেবগণের মধ্যে তোমার তুল্য কেহই নাই, তোমার কর্ম্ম সকলের তুল্য কিছুই নাই। হে প্রভু, তোমার বিরচিত সর্ব্বজাতি আসিয়া তোমার সম্মুখে প্রণিপাত করিবে, তাহারা তোমার নামের গৌরব করিবে। কারণ তুমি মহান্‌ এবং আশ্চর্য্য কার্য্যকারী; তুমিই একমাত্র ঈশ্বর। হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিক্ষা দেও, আমি তোমার সত্যে চলিব; তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর। হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি সর্ব্বান্তঃকরণে তোমার স্তব করিব, আমি চিরকাল তোমার নামের গৌরব করিব। কেননা আমার পক্ষে তোমার দয়া মহৎ, এবং তুমি অধঃস্থ পাতাল হইতে আমার প্রাণ উদ্ধার করিয়াছ। হে ঈশ্বর, অহঙ্কারিগণ আমার বিরুদ্ধে উঠিয়াছে, দুর্দ্দান্ত লোকদের মণ্ডলী আমার প্রাণের অন্বেষণ করিতেছে, তাহারা তোমাকে আপনাদের সম্মুখে রাখে নাই। কিন্তু, হে প্রভু, তুমি স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্‌। আমার প্রতি ফির, এবং আমাকে কৃপা কর, তোমার দাসকে তোমার শক্তি দেও, তোমার দাসীর পুত্রকে ত্রাণ কর। আমার জন্য মঙ্গলের কোন চিহ্ন-কার্য্য সাধন কর, যেন আমার বিদ্বেষিগণ তাহা দেখিয়া লজ্জা পায়, কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমিই আমার সাহায্য করিয়াছ, ও আমাকে সান্ত্বনা করিয়াছ। তাঁহার ভিত্তিমূল পবিত্র পর্ব্বত-শ্রেণীতে অবস্থিত। সদাপ্রভু সিয়োনের পুরদ্বার সকল ভালবাসেন, যাকোবের সমুদয় আবাস অপেক্ষা ভালবাসেন। হে ঈশ্বরের পুরি, তোমার বিষয়ে বিবিধ গৌরবের কথা কথিত হয়। সেলা। যাহারা আমাকে জানে, তাহাদের মধ্যে আমি রহবের ও বাবিলের উল্লেখ করিব; দেখ, পলেষ্টিয়া, সোর ও কূশ; এই ব্যক্তি তথায় জন্মিল। আর সিয়োনের বিষয়ে বলা যাইবে, এই ব্যক্তি এবং ঐ ব্যক্তি উহার মধ্যে জন্মিল, এবং পরাৎপর আপনি উহা অটল করিবেন। সদাপ্রভু যখন জাতিগণের নাম লিখেন, তখন গণনা করিলেন, এই ব্যক্তি তথায় জন্মিল। সেলা। গায়কগণ ও নর্ত্তকগণ [বলিবে], আমার সমস্ত উনুই তোমার মধ্যে। হে সদাপ্রভু, আমার ত্রাণেশ্বর, আমি দিবসে ও রাত্রিতে তোমার সম্মুখে ক্রন্দন করিয়াছি। আমার প্রার্থনা তোমার সাক্ষাতে উপস্থিত হউক; আমার কাকূক্তিতে কর্ণপাত কর। কেননা আমার প্রাণ দুঃখে পরিপূর্ণ, আমার জীবন পাতালের নিকটবর্ত্তী। আমি গর্ত্তগামীদের সহিত গণিত, আমি নিঃশক্তি মনুষ্যের সমান হইয়াছি। আমি মৃতগণের মধ্যে পরিত্যক্ত, আমি কবরশায়ী নিহতদের সদৃশ, যাহাদিগকে তুমি আর স্মরণ কর না; তাহারা তোমার হস্ত হইতে বিচ্ছিন্ন রহিয়াছে। তুমি আমাকে নীচতম গর্ত্তে রাখিয়াছ, অন্ধকারে ও গভীর স্থানে রাখিয়াছ। আমার উপরে তোমার ক্রোধ চাপিয়া আছে, তুমি আপনার সমস্ত তরঙ্গ দ্বারা আমাকে দুঃখার্ত্ত করিয়াছ। সেলা। তুমি আমার আত্মীয়দিগকে আমা হইতে দূরে রাখিয়াছ, তাহাদের কাছে আমাকে নিতান্ত ঘৃণার্হ করিয়াছ; আমি অবরুদ্ধ, বাহিরে আসিতে পারি না। আমার চক্ষু দুঃখে নিস্তেজ হইয়াছে, আমি প্রতিদিন তোমাকে ডাকিয়াছি, হে সদাপ্রভু, তোমার দিকে অঞ্জলি প্রসারণ করিয়াছি। তুমি কি মৃতগণের পক্ষে আশ্চর্য্য ক্রিয়া করিবে? প্রেতগণ কি উঠিয়া তোমার স্তবগান করিবে? সেলা। কবরের মধ্যে কি তোমার দয়া, বিনাশস্থানে কি তোমার বিশ্বস্ততা প্রচারিত হইবে? অন্ধকারে কি তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া, বিস্মৃতির দেশে কি তোমার ধর্ম্মশীলতা জানা যাইবে? কিন্তু, হে সদাপ্রভু, আমি তোমার উদ্দেশে আর্ত্তনাদ করিয়াছি, প্রাতে আমার প্রার্থনা তোমার সম্মুখবর্ত্তী হইবে। হে সদাপ্রভু, তুমি কেন আমার প্রাণকে পরিত্যাগ করিতেছ? আমা হইতে কেন তোমার মুখ লুকাইতেছ? বাল্যকাল হইতে আমি দুঃখী ও মৃতকল্প; আমি তোমার ত্রাসভারে সঙ্কুচিত। তোমার কোপাগ্নি আমার উপর দিয়া গিয়াছে; তোমার ত্রাস আমাকে উচ্ছেদ করিয়াছে। তাহা সমস্ত দিন জলের ন্যায় আমাকে ঘেরিয়াছে; তাহা একসঙ্গে আমাকে বেষ্টন করিয়াছে। তুমি প্রেমিক ও সুহৃৎকে আমা হইতে দূর করিয়াছ; অন্ধকারই আমার জ্ঞাতিকুটুম্ব। আমি চিরকাল সদাপ্রভুর বহুবিধ দয়া গাহিব, আমি নিজ মুখে তোমার বিশ্বস্ততা পুরুষ-পরম্পরার কাছে ব্যক্ত করিব। কারণ আমি বলিয়াছি, দয়া চিরতরে সংগ্রথিত হইবে, তুমি আপন বিশ্বস্ততাকে স্বর্গেই সংস্থাপন করিবে। ‘আমি আপন মনোনীত লোকের সহিত নিয়ম করিয়াছি, নিজ দাস দায়ূদের কাছে এই শপথ করিয়াছি; আমি তোমার বংশকে চিরতরে সংস্থাপন করিব, পুরুষে পুরুষে তোমার সিংহাস গাঁথিব।’ সেলা। হে সদাপ্রভু, স্বর্গ তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়ার, পবিত্রগণের সমাজে তোমার বিশ্বস্ততারও প্রশংসা করিবে। কেননা আকাশে সদাপ্রভুর সহিত কে উপমা ধরিতে পারে? বীর-পুত্রদের মধ্যেই বা কে সদাপ্রভুর তুল্য? ঈশ্বর পবিত্রগণের সভাতে প্রবল পরাক্রমশালী, আপনার চতুর্দ্দিক্‌স্থ সকলের উপরে ভয়াবহ। হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর! হে যাঃ, তোমার তুল্য বিক্রমী কে? আর তোমার বিশ্বস্ততা তোমার চারিদিকে বিদ্যমান। তুমিই সাগর-দর্পের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতেছ, তাহার তরঙ্গমালা উঠিলে তুমি তাহা প্রশান্ত করিয়া থাক। তুমিই রহবকে চূর্ণ করিয়া হত ব্যক্তির সমান করিয়াছ, তুমি নিজ বলবন্ত বাহু দ্বারা তোমার শত্রুগণকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছ। আকাশমণ্ডল তোমার, পৃথিবীও তোমার; জগৎ ও তাহার সমস্ত বস্তু তোমারই সংস্থাপিত। তুমিই উত্তর ও দক্ষিণ দিকের সৃষ্টি করিয়াছ; তাবোর ও হর্ম্মোণ তোমার নামে আনন্দধ্বনি করে। তোমার বাহু পরাক্রমবিশিষ্ট, তোমার হস্ত শক্তিমান্‌, তোমার দক্ষিণ হস্ত উচ্চ। ধর্ম্মশীলতা ও ন্যায়বিচার তোমার সিংহাসনের ভিত্তিমূল; দয়া ও সত্য তোমার শ্রীমুখের অগ্রগামী। ধন্য সেই প্রজারা, যাহারা সেই আনন্দধ্বনি জানে, হে সদাপ্রভু, তাহারা তোমার মুখের দীপ্তিতে গমনাগমন করে। তাহারা সমস্ত দিন তোমার নাম উল্লাস করে, তাহারা তোমার ধর্ম্মশীলতায় উন্নত হয়; যেহেতু তুমিই তাহাদের বলের শোভা, আর তোমার অনুগ্রহে আমাদের শৃঙ্গ উন্নত হইবে। কেননা আমাদের ঢাল সদাপ্রভুর, আমাদের রাজা ইস্রায়েলের পবিত্রতমের। একদা তুমি নিজ সাধুকে দর্শন দিয়া কথা কহিয়াছিলে, বলিয়াছিলে, আমি সাহায্য করিবার ভার এক জন বীরকে সমর্পণ করিয়াছি, আমি প্রজাদের মধ্যে মনোনীত এক জনকে উন্নত করিয়াছি। আমার দাস দায়ূদকেই পাইয়াছি, আমার পবিত্র তৈলে তাহাকে অভিষিক্ত করিয়াছি। আমার হস্ত তাহার দৃঢ় সহায় হইবে, আমার বাহু তাহাকে বলবান করিবে। শত্রু তাহার প্রতি উপদ্রব করিতে পারিবে না, দুষ্টতার সন্তান তাহাকে দুঃখ দিতে পারিবে না। আমি তাহার বিপক্ষগণকে তাহার সম্মুখে চূর্ণ করিব, তাহার বিদ্বেষিগণকে আঘাত করিব। কিন্তু আমার বিশ্বস্ততা ও দয়া তাহার সহিত থাকিবে, আমার নামে তাহার শৃঙ্গ উন্নত হইবে। আর আমি স্থাপন করিব তাহার হস্ত সমুদ্রের উপরে, তাহার দক্ষিণ হস্ত নদীগণের উপরে। সে আমাকে ডাকিয়া বলিবে, তুমি আমার পিতা, আমার ঈশ্বর, ও আমার পরিত্রাণের শৈল। আবার আমি তাহাকে প্রথমজাত করিব, পৃথিবীর রাজগণ হইতে সর্ব্বোচ্চ করিয়া নিযুক্ত করিব। আমি তাহার পক্ষে আমার দয়া চিরকাল রক্ষা করিব, আমার নিয়ম তাহার পক্ষে স্থির থাকিবে। আমি তাহার বংশকে নিত্যস্থায়ী করিব, তাহার সিংহাসন আকাশের আয়ুর ন্যায় করিব। তাহার সন্তানেরা যদি আমার ব্যবস্থা ত্যাগ করে, ও আমার শাসনানুসারে না চলে; যদি আমার বিধি সকল লঙ্ঘন করে, ও আমার আজ্ঞা সকল পালন না করে; তবে আমি অপরাধের জন্য দণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে শাস্তি দিব, অধর্ম্মের জন্য নানা প্রকারে আঘাত করিব; তথাপি তাহা হইতে আমার দয়া হরণ করিব না, আমার বিশ্বস্ততায় মিথ্যা বলিব না। আমি আমার নিয়ম ব্যর্থ করিব না, আমার ওষ্ঠনির্গত বাক্য অন্যথা করিব না। আমি আমার পবিত্রতায় এক বার শপথ করিয়াছি, দায়ূদের নিকটে কখনও মিথ্যা বলিব না। তাহার বংশ চিরকাল থাকিবে, তাহার সিংহাসন আমার সাক্ষাতে সূর্য্যের ন্যায় হইবে। তাহা চন্দ্রের ন্যায় চিরকাল অটল থাকিবে; আর গগনস্থ সাক্ষী বিশ্বস্ত। সেলা। কিন্তু তুমিই পরিত্যাগ ও অগ্রাহ্য করিয়াছ, আপন অভিষিক্ত লোকের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়াছ। তুমি আপন দাসের নিয়ম ঘৃণা করিয়াছ, তাঁহার মুকুট ভূমিতে ফেলিয়া অশুচি করিয়াছ। তুমি তাঁহার সমস্ত বেড়া ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছ, তাঁহার দুর্গ সকল উৎসন্ন করিয়াছ। পথিকেরা সকলে তাঁহার দ্রব্য লুট করে; তিনি প্রতিবাসীদের তিরস্কারের পাত্র হইয়াছেন। তুমি তাঁহার বিপক্ষগণের দক্ষিণ হস্ত উচ্চ করিয়াছ, তাঁহার সমস্ত শত্রুকে আনন্দিত করিয়াছ। হাঁ, তুমি তাঁহার খড়্‌গের ধার ফিরাইয়া দিয়াছ, সংগ্রামে তাঁহাকে দাঁড়াইতে দেও নাই। তুমি তাঁহাকে তেজোহীন করিয়াছ, তাঁহার সিংহাসন ভূমিতে নিক্ষেপ করিয়াছ। তুমি তাঁহার যৌবনকাল সংক্ষেপ করিয়াছ। লজ্জায় তাঁহাকে আচ্ছন্ন করিয়াছ। সেলা। হে সদাপ্রভু, কত কাল নিত্য লুক্কায়িত থাকিবে? কত কাল তোমার কোপ অগ্নিবৎ জ্বলিবে? স্মরণ কর, আমি কেমন ক্ষণিক; তুমি মনুষ্যসন্তান সকলকে কেমন অলীকতার নিমিত্ত সৃষ্টি করিয়াছ। কোন্‌ মনুষ্য জীবিত থাকিবে, মৃত্যু দেখিবে না, কে পাতালের হস্ত হইতে আপন প্রাণ মুক্ত করিবে? হে প্রভু, তোমার সেই পূর্ব্বকালীন বিবিধ দয়া কোথায়? তুমি ত আপন বিশ্বস্ততায় দায়ূদের পক্ষে শপথ করিয়াছিলে। হে প্রভু, তোমার দাসগণের প্রতি কৃত তিরস্কার স্মরণ কর, আমি বলবান জাতিসমূহের [তিরস্কার] নিজ বক্ষঃস্থলে বহন করি। হে সদাপ্রভু, তোমার শত্রুগণ তিরস্কার করিয়াছে, তোমার অভিষিক্ত লোকের পদচিহ্নকে তিরস্কার করিয়াছে। ধন্য সদাপ্রভু, চিরকালের জন্য! আমেন, আমেন। হে প্রভু, তুমিই আমাদের বাসস্থান হইয়া আসিতেছ, পুরুষে পুরুষে হইয়া আসিতেছ। পর্ব্বতগণের জন্ম হইবার পূর্ব্বে, তুমি পৃথিবী ও জগৎকে জন্ম দিবার পূর্ব্বে, এমন কি, অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল তুমিই ঈশ্বর। তুমি মর্ত্ত্যকে ধূলিতে ফিরাইয়া থাক, বলিয়া থাক, মনুষ্য-সন্তানেরা, ফিরিয়া যাও। কেননা সহস্র বৎসর তোমার দৃষ্টিতে যেন গত কল্য, তাহা ত চলিয়া গিয়াছে, আর যেন রাত্রির এক প্রহরমাত্র। তুমি তাহাদিগকে যেন বন্যায় ভাসাইয়া লইয়া যাইতেছ, তাহারা স্বপ্নবৎ; প্রাতঃকালে তাহারা তৃণের ন্যায়, যাহা বাড়িয়া উঠে। প্রাতঃকালে তৃণ পুষ্পিত হয়, ও বাড়িয়া উঠে, সায়ংকালে ছিন্ন হইয়া শুষ্ক হয়। কেননা তোমার ক্রোধে আমরা ক্ষয় পাই, তোমার কোপে আমরা বিহ্বল হই। তুমি রাখিয়াছ আমাদের অপরাধ সকল তোমার সাক্ষাতে, আমাদের গুপ্ত বিষয় সকল তোমার মুখের দীপ্তিতে। কেননা তোমার ক্রোধে আমাদের সকল দিন বহিয়া যায়, আমরা আপন আপন বৎসর শ্বাসবৎ শেষ করি। আমাদের আয়ুর পরিমাণ সত্তর বৎসর; বলযুক্ত হইলে আশী বৎসর হইতে পারে; তথাপি তাহাদের দর্প ক্লেশ ও দুঃখমাত্র, কেননা তাহা বেগে পলায়ন করে, এবং আমরা উড়িয়া যাই। তোমার কোপের বল কে বুঝে? তোমার ভয়াবহতার অনুরূপ ক্রোধ কে বুঝে? এরূপে আমাদের দিন গণনা করিতে শিক্ষা দেও, যেন আমরা প্রজ্ঞার চিত্ত লাভ করি। হে সদাপ্রভু, ফির, কত কাল? তোমার দাসগণের প্রতি সদয় হও। প্রত্যূষে আমাদিগকে তোমার দয়াতে তৃপ্ত কর, যেন আমরা যাবজ্জীবন আনন্দ ও আহ্লাদ করি। যত দিন তুমি আমাদিগকে দুঃখ দিয়াছ, যত বৎসর আমরা বিপদ দেখিয়াছি, তদনুসারে আমাদিগকে আনন্দিত কর। তোমার দাসগণের কাছে তোমার কর্ম্ম, তাহাদের সন্তানদের উপরে তোমার প্রতাপ দৃষ্ট হউক। আর আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রসন্নভাব আমাদের উপরে বর্ত্তুক; আর তুমি আমাদের পক্ষে আমাদের হস্তের কর্ম্ম স্থায়ী কর, আমাদের হস্তের কর্ম্ম তুমি স্থায়ী কর। যে ব্যক্তি পরাৎপরের অন্তরালে থাকে, সে সর্ব্বশক্তিমানের ছায়াতে বসতি করে। আমি সদাপ্রভুর বিষয়ে বলিব, ‘তিনি আমার আশ্রয়, আমার দুর্গ, আমার ঈশ্বর, আমি তাঁহাতে নির্ভর করিব’। হাঁ, তিনিই তোমাকে ব্যাধের ফাঁদ হইতে, ও সর্ব্বনাশক মারী হইতে রক্ষা করিবেন। তিনি আপন পালখে তোমাকে আবৃত করিবেন, তাঁহার পক্ষের নীচে তুমি আশ্রয় পাইবে; তাঁহার সত্য ঢাল ও তনুত্রাণস্বরূপ। তুমি ভীত হইবে না—রাত্রির ত্রাস হইতে, দিবসে উড্‌ডীয়মান শর হইতে, তিমির-বিহারী মারী হইতে, মধ্যাহ্নের সাংঘাতিক ব্যাধি হইতে। পড়িবে তোমার পার্শ্বে সহস্র জন, তোমার দক্ষিণে দশ সহস্র জন, কিন্তু উহা তোমার নিকটে আসিবে না। তুমি কেবল স্বচক্ষে নিরীক্ষণ করিবে, দুষ্টগণের প্রতিফল দেখিবে। ‘হাঁ, সদাপ্রভু, তুমিই আমার আশ্রয়’। তুমি পরাৎপরকে আপনার বাসস্থান করিয়াছ; তোমার কোন বিপদ ঘটিবে না, কোন উৎপাত তোমার তাম্বুর নিকটে আসিবে না। কারণ তিনি আপন দূতগণকে তোমার বিষয়ে আজ্ঞা দিবেন, যেন তাঁহারা তোমার সমস্ত পথে তোমাকে রক্ষা করেন। তাঁহারা তোমাকে হস্তে করিয়া তুলিয়া লইবেন, পাছে তোমার চরণে প্রস্তরের আঘাত লাগে। তুমি সিংহ ও সর্পের উপর পা দিবে, তুমি যুবসিংহ ও নাগকে পদতলে দলিবে। ‘সে আমাতে আসক্ত, তজ্জন্য আমি তাহাকে বাঁচাইব; আমি তাহাকে উচ্চে স্থাপন করিব, কারণ সে আমার নাম জ্ঞাত হইয়াছে। সে আমাকে ডাকিবে, আমি তাহাকে উত্তর দিব; আমি সঙ্কটে তাহার সঙ্গে থাকিব; আমি তাহাকে উদ্ধার করিব, গৌরবান্বিতও করিব। আমি দীর্ঘ আয়ু দিয়া তাহাকে তৃপ্ত করিব, আমার পরিত্রাণ তাহাকে দেখাইব।’ সদাপ্রভুর স্তব করা; হে পরাৎপর, তোমার নামের উদ্দেশে সঙ্গীত করা উত্তম; প্রাতঃকালে তোমার দয়া, ও প্রতিরাত্রে তোমার বিশ্বস্ততা প্রচার করা উত্তম, দশতন্ত্রী ও নেবলযন্ত্র সহকারে, গম্ভীর বীণা-ধ্বনি সহকারে। কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমি আপন কার্য্য দ্বারা আমাকে আহ্লাদিত করিয়াছ; আমি তোমার হস্তকৃত কার্য্য সকলে জয়ধ্বনি করিব। সদাপ্রভু, তোমার কার্য্য সকল কেমন মহৎ। তোমার সঙ্কল্প সকল অতি গভীর। নরপশু জানে না, নির্ব্বোধ ইহা বুঝে না। দুষ্টগণ যখন তৃণের ন্যায় অঙ্কুরিত হয়, অধর্ম্মাচারী সকলে যখন প্রফুল্ল হয়, তখন তাহাদের চির-বিনাশের জন্য সেইরূপ হয়। কিন্তু, সদাপ্রভু, তুমি অনন্তকাল ঊর্দ্ধবাসী। কেননা, দেখ, তোমার শত্রুগণ, হে সদাপ্রভু, দেখ, তোমার শত্রুগণ বিনষ্ট হইবে; অধর্ম্মাচারীরা সকলে ছিন্নভিন্ন হইবে। কিন্তু তুমি আমার শৃঙ্গ গবয়ের শৃঙ্গবৎ উন্নত করিয়াছ; আমি নব তৈলে অভিষিক্ত হইয়াছি। আর আমার চক্ষু আমার শত্রুদের দশা নিরীক্ষণ করিয়াছে; আমার কর্ণ আমার বিরোধী দুরাচারগণের দশা শুনিতে পাইয়াছে। ধার্ম্মিক লোক তালতরুর ন্যায় উৎফুল্ল হইবে, সে লিবানোনের এরস বৃক্ষের ন্যায় বাড়িবে। যাহারা সদাপ্রভুর বাটীতে রোপিত, তাহারা আমাদের ঈশ্বরের প্রাঙ্গণে উৎফুল্ল হইবে। তাহারা বৃদ্ধ বয়সেও ফল উৎপন্ন করিবে, তাহারা সরস ও তেজস্বী হইবে; তদ্দ্বারা প্রচারিত হইবে যে, সদাপ্রভু সরল; তিনি আমার শৈল, এবং তাঁহাতে অন্যায় নাই। সদাপ্রভু রাজত্ব করেন; তিনি মহিমাতে সজ্জিত; সদাপ্রভু সজ্জিত, তিনি পরাক্রমে বদ্ধকটি; আর জগৎও অটল, তাহা বিচলিত হইবে না। তোমার সিংহাসন পূর্ব্বাবধি অটল; অনাদিকাল হইতে তুমি বিদ্যমান। নদী সকল উঠাইয়াছে, হে সদাপ্রভু, নদী সকল আপন আপন ধ্বনি উঠাইয়াছে, নদী সকল আপন আপন তরঙ্গ উঠাইতেছে। জলসমূহের কল্লোলধ্বনি অপেক্ষা, সমুদ্রের প্রবল তরঙ্গমালা অপেক্ষা, ঊর্দ্ধস্থ সদাপ্রভু বলবান। তোমার সাক্ষ্য সকল অতি বিশ্বাসযোগ্য হে সদাপ্রভু, চিরদিনের জন্য পবিত্রতা তোমার গৃহের শোভা। হে প্রতিফলদাতা ঈশ্বর সদাপ্রভু, হে প্রতিফলদাতা ঈশ্বর, দেদীপ্যমান হও। উঠ, হে পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা, অহঙ্কারী লোকদিগকে অপকারের প্রতিফল দেও। দুষ্টগণ কত কাল, হে সদাপ্রভু, দুষ্টগণ কত কাল উল্লাস করিবে? তাহারা বক বক করিতেছে, সগর্ব্বে কথা কহিতেছে, অধর্ম্মাচারী সকলে আত্মশ্লাঘা করিতেছে। হে সদাপ্রভু, তোমার প্রজাদিগকেই তাহারা চূর্ণ করিতেছে, তোমার অধিকারকে দুঃখ দিতেছে। তাহারা বিধবা ও প্রবাসীকে বধ করিতেছে; পিতৃহীনদিগকে মারিয়া ফেলিতেছে। তাহারা বলিতেছে, সদাপ্রভু দেখিবেন না, যাকোবের ঈশ্বর বিবেচনা করিবেন না। হে লোকদের মধ্যবর্ত্তী নরপশুগণ, বিবেচনা কর; হে নির্ব্বোধেরা, কবে তোমাদের সুবুদ্ধি হইবে? যিনি কর্ণ রোপন করিয়াছেন, তিনি কি শুনিবেন না? যিনি চক্ষু গঠন করিয়াছেন, তিনি কি দেখিবেন না? যিনি জাতিগণের শিক্ষাদাতা, তিনি কি ভর্ৎসনা করিবেন না? তিনিই ত মনুষ্যকে জ্ঞান শিক্ষা দেন। সদাপ্রভু মনুষ্যের কল্পনা সকল জানেন, সে সকল ত শ্বাসমাত্র। ধন্য সেই ব্যক্তি, যাহাকে তুমি শাসন কর, হে সদাপ্রভু, যাহাকে তুমি আপন ব্যবস্থা হইতে শিক্ষা দেও, যেন তুমি তাহাকে বিপৎকাল হইতে বিশ্রাম দেও, দুষ্টের নিমিত্ত যাবৎ কূপ খনিত না হয়। কারণ সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে দূর করিবেন না, আপন অধিকার পরিত্যাগ করিবেন না। রাজশাসন ফিরিয়া ধার্ম্মিকতার কাছে আসিবে; সরলচিত্ত সকলে তাহার অনুগামী হইবে। কে আমার পক্ষে হইয়া দুরাচারগণের বিরুদ্ধে উঠিবে? কে আমার পক্ষে অধর্ম্মাচারিগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াইবে? সদাপ্রভু যদি আমার সাহায্য না করিতেন, আমার প্রাণ শীঘ্র নিঃশব্দ-স্থানে বসতি করিত। যখন আমি বলিতাম, আমার চরণ বিচলিত হইল, তখন, হে সদাপ্রভু, তোমার দয়া আমাকে সুস্থির রাখিত। আমার আন্তরিক ভাবনার বৃদ্ধিকালে তোমার দত্ত সান্ত্বনা আমার প্রাণকে আহ্লাদিত করে। দুষ্টতার সিংহাসন কি তোমার সখা হইতে পারে, যাহা বিধান দ্বারা উপদ্রব রচনা করে? তাহারা ধার্ম্মিকের প্রাণের বিরুদ্ধে দল বাঁধে, নির্দ্দোষের রক্তকে দোষী করে। কিন্তু সদাপ্রভু আমার উচ্চ দুর্গ হইয়াছেন, আমার ঈশ্বর আমার আশ্রয়-শৈল হইয়াছেন। তিনি তাহাদের অধর্ম্ম তাহাদেরই উপরে বর্ত্তাইয়াছেন, তাহাদের দুষ্টতায় তাহাদিগকে উচ্ছিন্ন করিবেন; সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর, তাহাদিগকে উচ্ছিন্ন করিবেন। আইস, আমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আনন্দগান করি, আমাদের ত্রাণ-শৈলের উদ্দেশে জয়ধ্বনি করি। আমরা স্তব সহ তাঁহার সম্মুখে গমন করি, সঙ্গীত দ্বারা তাঁহার উদ্দেশে জয়ধ্বনি করি। কেননা সদাপ্রভু মহান্‌ ঈশ্বর, তিনি সমুদয় দেবতার উপরে মহান্‌ রাজা। পৃথিবীর গভীর স্থান সকল তাঁহার হস্তগত, পর্ব্বতগণের চূড়া সকলও তাঁহারই। সমুদ্র তাঁহার, তিনিই তাহা নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তাঁহারই হস্ত শুষ্ক ভূমি গঠন করিয়াছে। আইস, আমরা প্রণিপাত করি, প্রণত হই, আমাদের নির্ম্মাতা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে জানু পাতি। কেননা তিনিই আমাদের ঈশ্বর, আমরা তাঁহার চরাণির প্রজা ও তাঁহার হস্তের মেষ। আহা! অদ্যই তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর! আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না, যেমন মরীবায়, যেমন প্রান্তরের মধ্যে মঃসার দিবসে, করিয়াছিলে। তখন তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার পরীক্ষা করিল, আমার বিচার করিল, আমর কর্ম্মও দেখিল। চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত আমি সেই জাতির প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলাম, আমি বলিয়াছিলাম, ইহারা ভ্রান্তচিত্ত লোক; ইহারা আমার পথ জ্ঞাত হইল না। অতএব আমি আপন ক্রোধে শপথ করিলাম, ইহারা আমার বিশ্রামস্থানে প্রবেশ করিবে না। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নূতন গীত গাও; সমস্ত পৃথিবী! সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাও। সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাও, তাঁহার নামের ধন্যবাদ কর, দিন দিন তাঁহার পরিত্রাণ ঘোষণা কর। প্রচার কর জাতিগণের মধ্যে তাঁহার গৌরব, সমস্ত লোক-সমাজে তাঁহার আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল। কেননা সদাপ্রভু মহান ও অতি কীর্ত্তনীয়, তিনি সমস্ত দেবতা অপেক্ষা ভয়ার্হ। কেননা জাতিগণের সমস্ত দেবতা অবস্তুমাত্র, কিন্তু সদাপ্রভু আকাশমণ্ডলের নির্ম্মাতা; প্রভা ও প্রতাপ তাঁহার অগ্রবর্ত্তী; শক্তি ও শোভা তাঁহার ধর্ম্মধামে বিদ্যমান। হে জাতিগণের গোষ্ঠী সকল, সদাপ্রভুর কীর্ত্তন কর, সদাপ্রভুর গৌরব ও শক্তি কীর্ত্তন কর। সদাপ্রভুর নামের গৌরব কীর্ত্তন কর, নৈবেদ্য সঙ্গে লইয়া তাঁহার প্রাঙ্গণে আইস। পবিত্র শোভায় সদাপ্রভুকে প্রণিপাত কর; সমস্ত পৃথিবী! তাঁহার সাক্ষাতে কম্পমান হও। জাতিগণের মধ্যে বল, সদাপ্রভু রাজত্ব করেন; জগৎও অটল, তাহা বিচলিত হইবে না; তিনি ন্যায়ে জাতিগণের বিচার করিবেন। আকাশমণ্ডল আনন্দ করুক, পৃথিবী উল্লাসিত হউক; সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সকলই গর্জ্জন করুক; ক্ষেত্র ও তথাকার সকলই উল্লাসিত হউক; তখন বনের সমস্ত বৃক্ষ আনন্দে গান করিবে; সদাপ্রভুর সাক্ষাতেই করিবে, কেননা তিনি আসিতেছেন, তিনি পৃথিবীর বিচার করিতে আসিতেছেন; তিনি ধর্ম্মশীলতায় জগতের বিচার করিবেন, আপন বিশ্বস্ততায় জাতিগণের বিচার করিবেন। সদাপ্রভু রাজত্ব করেন; পৃথিবী উল্লাসিত হউক, দ্বীপসমূহ আনন্দ করুক; মেঘ ও অন্ধকার তাঁহার চারিদিকে বিদ্যমান, ধর্ম্মশীলতা ও বিচার তাঁহার সিংহাসনের ভিত্তিমূল। অগ্নি তাঁহার অগ্রে অগ্রে গমন করে, চারিদিকে তাঁহার বিপক্ষগণকে দগ্ধ করে। তাঁহার বিদ্যুৎ জগৎকে দেদীপ্যমান করিল; পৃথিবী তাহা দেখিল, কম্পান্বিত হইল। পর্ব্বত সকল মোমের ন্যায় গলিয়া গেল, সদাপ্রভুর সাক্ষাতে, সমস্ত পৃথিবীর প্রভুর সাক্ষাতে। স্বর্গ তাঁহার ধর্ম্মশীলতা প্রচার করিয়াছে, এবং সমস্ত জাতি তাঁহার গৌরব দেখিয়াছে। লজ্জিত হউক সেই সকলে, যাহারা ক্ষোদিত প্রতিমার সেবা করে, যাহারা অবস্তুর শ্লাঘা করে; হে দেবগণ! সকলে তাঁহাকে প্রণিপাত কর। সিয়োন শুনিয়া আনন্দিত হইল, যিহূদার কন্যাগণ উল্লাসিত হইল, হে সদাপ্রভু, তোমার শাসনসমূহের জন্য। কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমিই সমস্ত ভূমণ্ডলের ঊর্দ্ধে পরাৎপর, তুমি সমস্ত দেবতা হইতে অতিশয় উন্নত। হে সদাপ্রভু-প্রেমিকগণ, দুষ্টতাকে ঘৃণা কর; তিনি আপন সাধুবর্গের প্রাণ রক্ষা করেন, দুষ্টগণের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করেন। দীপ্তি বপন করা গিয়াছে ধার্ম্মিকের জন্য, আর সরলচিত্তদের জন্য আনন্দ। হে ধার্ম্মিকগণ, সদাপ্রভুতে আনন্দ কর, তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ কর। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নূতন গীত গাও, কেননা তিনি আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য কর্ম্ম করিয়াছেন; তাঁহার দক্ষিণ হস্ত ও তাঁহার পবিত্র বাহু তাঁহার পক্ষে পরিত্রাণ সাধন করিয়াছে। সদাপ্রভু আপনার পরিত্রাণ জ্ঞাত করিয়াছেন, তিনি জাতিগণের দৃষ্টিগোচরে আপন ধর্ম্মশীলতা প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি ইস্রায়েল-কুলের পক্ষে আপন দয়া ও বিশ্বস্ততা স্মরণ করিয়াছেন; পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত আমাদের ঈশ্বরের পরিত্রাণ দেখিয়াছে। সমস্ত পৃথিবী! সদাপ্রভুর উদ্দেশে জয়ধ্বনি কর; উচ্চধ্বনি কর, আনন্দগান কর, প্রশংসা গাও। গান কর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বীণা সহকারে, বীণা সহকারে ও গানের রবে। তূরী ও ভেরিবাদ্য সহকারে রাজা সদাপ্রভুর সম্মুখে জয়ধ্বনি কর। সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ সকলই গর্জ্জন করুক, ভুবন ও তন্নিবাসিগণও করুক; নদ নদীগণ করতালী দিউক, পর্ব্বতগণ সকসঙ্গে আনন্দগান করুক; সদাপ্রভুর সাক্ষাতেই করুক, কেননা তিনি পৃথিবীর বিচার করিতে আসিতেছেন; তিনি ধর্ম্মশীলতায় জগতের বিচার করিবেন, ও ন্যায়ে জাতিগণের বিচার করিবেন। সদাপ্রভু রাজত্ব করেন, জাতিগণ কাঁপিতেছে; তিনি করূবদ্বয়ে আসীন, পৃথিবী টলিতেছে। সদাপ্রভু সিয়োনে মহান, তিনি সমস্ত জাতির উপরে উন্নত। তাহারা তোমার মহৎ ও ভয়াবহ নামের স্তব করুক; তিনি পবিত্র। রাজার বলও বিচার ভালবাসে; তুমি ন্যায়বিধি অটল করিয়া থাক, তুমি যাকোবের মধ্যে বিচার ও ধার্ম্মিকতা সাধন করিয়া থাক। তোমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিষ্ঠা কর, তাঁহার পাদপীঠের অভিমুখে প্রণিপাত কর; তিনি পবিত্র। তাঁহার যাজকদের মধ্যবর্ত্তী মোশি ও হারোণ, যাঁহারা তাঁহার নামে ডাকেন, তাঁহাদের মধ্যবর্ত্তী শমূয়েল; তাঁহারা সদাপ্রভুকে ডাকিতেন, এবং তিনি উত্তর দিতেন। তিনি মেঘস্তম্ভে থাকিয়া তাঁহাদিগের কাছে কথা কহিতেন; তাঁহারা তাঁহার সাক্ষ্য সকল ও তাঁহার প্রদত্ত বিধি পালন করিতেন। হে সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর, তুমিই তাঁহাদিগকে উত্তর দিয়াছিলে, তুমি তাঁহাদের পক্ষে ক্ষমাবান ঈশ্বর হইয়াছিলে, তথাপি তাঁহাদের কর্ম্মের প্রতিফল দিয়াছিলে। তোমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিষ্ঠা কর, তাঁহার পবিত্র পর্ব্বতের অভিমুখে প্রণিপাত কর; কেননা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু পবিত্র। সমস্ত পৃথিবী! সদাপ্রভুর উদ্দেশে জয়ধ্বনি কর; সানন্দে সদাপ্রভুর সেবা কর; আনন্দগানসহ তাঁহার সম্মুখে আইস। তোমরা জানিও, সদাপ্রভুই ঈশ্বর, তিনিই আমাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন, আমরা তাঁহারই; আমরা তাঁহার প্রজা ও তাঁহার চরাণির মেষ। তোমরা স্তব সহকারে তাঁহার দ্বারে প্রবেশ কর, প্রশংসা সহকারে তাঁহার প্রাঙ্গণে প্রবেশ কর; তাঁহার স্তব কর, তাঁহার নামের ধন্যবাদ কর। কেননা সদাপ্রভু মঙ্গলময়; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী; তাঁহার বিশ্বস্ততা পুরুষে পুরুষে স্থায়ী। আমি দয়া ও শাসনের বিষয় গাহিব; হে সদাপ্রভু, তোমারই প্রশংসা গান করিব। আমি বিবেচনাপূর্ব্বক সিদ্ধপথে গমন করিব; তুমি কবে আমার নিকটে আসিবে? আমার গৃহমধ্যে আমি হৃদয়ের সিদ্ধতায় চলিব। আমি কোন জঘন্য পদার্থ চক্ষের সম্মুখে রাখিব না, আমি বিপথগামীদের ক্রিয়া ঘৃণা করি, তাহা আমাতে লিপ্ত হইবে না। কুটিল অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে যাইবে; দুষ্টতার সহিত আমার পরিচয় হইবে না। যে জন গোপনে প্রতিবাসীর পরীবাদ করে, তাহাকে আমি উচ্ছেদ করিব; যাহার সাহঙ্কার দৃষ্টি ও গর্ব্বিত হৃদয়, তাহাকে সহ্য করিব না। দেশের বিশ্বস্ত লোকদের প্রতি আমার দৃষ্টি থাকিবে; তাহারা আমার সহিত বাস করিবে; যে সিদ্ধ পথে চলে, সেই আমার পরিচারক হইবে; প্রতারণাকারী আমার গৃহমধ্যে বাস করিবে না; মিথ্যাবাদী আমার চক্ষুর্গোচরে স্থির থাকিবে না। প্রতি প্রভাতে আমি দেশস্থ সকল দুষ্টকে বিনষ্ট করিব; যেন সমস্ত অধর্ম্মাচারীকে সদাপ্রভুর নগর হইতে উচ্ছিন্ন করি। হে সদাপ্রভু, আমার প্রার্থনা শুন, আমার আর্ত্তনাদ তোমার কাছে উপস্থিত হউক। সঙ্কটের দিনে আমা হইতে মুখ লুকাইও না, আমার দিকে কর্ণপাত কর; যে দিন আমি ডাকি, ত্বরায় আমাকে উত্তর দিও। কেননা আমার দিন সকল ধূমে লীন হইয়াছে, আমার অস্থি সকল জ্বলন্ত কাষ্ঠবৎ তপ্ত হইয়াছে; আমার হৃদয় তৃণের ন্যায় রৌদ্রাহত হইয়া শুষ্ক হইয়াছে; আমি আহার করিতে ভুলিয়া যাই। আমার হাহাকার শব্দ প্রযুক্ত আমার অস্থিগুলি মাংসে সংসক্ত হইয়াছে। আমি প্রান্তরস্থ পানিভেলার তুল্য হইয়াছি, উৎসন্ন স্থানের পেচকের সমান হইয়াছি। আমি সজাগ থাকি, এবং এমন হইয়াছি, যেন চটক ছাদের উপরে একাকী রহিয়াছে। শত্রুরা সমস্ত দিন আমাকে তিরস্কার করে, যাহারা আমার বিরুদ্ধে ক্রোধোন্মত্ত, তাহারা আমার নাম লইয়া শাপ দেয়। বস্তুতঃ আমি খাদ্যের ন্যায় ভস্ম খাইয়াছি, আমার পেয় দ্রব্যের সহিত নেত্রজল মিশাইয়াছি। ইহার কারণ তোমার কোপ ও তোমার রোষ; কেননা তুমি আমাকে তুলিয়া আছাড় মারিয়াছ। আমার দিন হেলিয়া পড়া ছায়ার সদৃশ, আমি তৃণের ন্যায় শুষ্ক হইতেছি। কিন্তু, হে সদাপ্রভু, তুমি অনন্তকাল সমাসীন থাকিবে, তোমার স্মরণ পুরুষে পুরুষে স্থায়ী। তুমি উঠিবে, সিয়োনের প্রতি করুণা করিবে; কারণ এখন তাহার প্রতি কৃপা করিবার সময়, কারণ নিরূপিত কাল উপস্থিত হইল। যেহেতু তোমার দাসগণ তাহার প্রস্তরে প্রীত, তাহার ধূলির প্রতি কৃপা করিতেছে। ইহাতে জাতিগণ সদাপ্রভুর নাম ভয় করিবে, পৃথিবীর সমস্ত রাজা তোমার প্রতাপে ভীত হইবে। কেননা সদাপ্রভু সিয়োনকে গাঁথিয়াছেন, তিনি স্বীয় প্রতাপে দর্শন দিয়াছেন; তিনি দীনহীনদের প্রার্থনার দিকে ফিরিয়াছেন, তাহাদের প্রার্থনা তুচ্ছ করেন নাই। ইহা ভাবী বংশের নিমিত্ত লিখিত হইবে; এবং যে জাতি সৃষ্ট হইবে, তাহারা সদাপ্রভুর প্রশংসা করিবে। কেননা তিনি আপন উচ্চ ধর্ম্মধাম হইতে অবলোকন করিলেন; সদাপ্রভু স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে দৃষ্টিপাত করিলেন; বন্দির হাহাকার শুনিবার জন্য, মৃত্যুর সন্তানদিগকে মুক্ত করিবার জন্য; যেন প্রচারিত হয় সিয়োনে সদাপ্রভুর নাম, ও যিরূশালেমে তাঁহার প্রশংসা; যৎকালে জাতিগণ একত্র মিলিবে, ও রাজ্য সকল মিলিবে, সদাপ্রভুর সেবা করিবার জন্য। তিনি পথের মধ্যে আমার বল নত করিয়াছেন, তিনি আমার আয়ু সংক্ষেপ করিয়াছেন। আমি বলিলাম, হে আমার ঈশ্বর, আয়ুর মধ্যভাগে আমাকে তুলিয়া লইও না; তোমার বৎসর সকল পুরুষে পুরুষে স্থায়ী। তুমি পুরাকালে পৃথিবীর মূল স্থাপন করিয়াছ, আকাশমণ্ডলও তোমার হস্তের রচনা। সে সকল বিনষ্ট হইবে, কিন্তু তুমি স্থির থাকিবে; সে সমস্ত বস্ত্রের ন্যায় জীর্ণ হইয়া পড়িবে, তুমি পরিচ্ছদের ন্যায় তাহাদিগকে খুলিবে, ও তাহাদের পরিবর্ত্তন হইবে। কিন্তু তুমি যে সেই আছ, তোমার বৎসর সকল কখনও শেষ হইবে না। তোমার দাসদের সন্তানগণ বসতি করিবে, তাহাদের বংশ তোমার সাক্ষাতে অটল হইবে। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর; হে আমার অন্তরস্থ সকল, তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ কর। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, তাঁহার সকল উপকার ভুলিয়া যাইও না। তিনি তোমার সমস্ত অধর্ম্ম ক্ষমা করেন, তোমার সমস্ত রোগের প্রতীকার করেন। তিনি কূপ হইতে তোমার জীবন মুক্ত করেন, দয়া ও করুণার মুকুটে তোমাকে ভূষিত করেন। তিনি উত্তম দ্রব্যে তোমার মুখ তৃপ্ত করেন, ঈগল পক্ষীর ন্যায় তোমার নূতন যৌবন হয়। সদাপ্রভু ধর্ম্মকার্য্য সাধন করেন, উপদ্রুত লোকদের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি করেন। তিনি জানাইলেন মোশিকে আপনার পথ, ইস্রায়েল-সন্তানগণকে আপনার কার্য্য সকল। সদাপ্রভু স্নেহশীল ও কৃপাময়, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান। তিনি নিত্য অনুযোগ করিবেন না, চিরকাল ক্রোধ রাখিবেন না। তিনি আমাদের প্রতি আমাদের পাপানুযায়ী ব্যবহার করেন নাই, আমাদের অধর্ম্মানুযায়ী প্রতিফল আমাদিগকে দেন নাই। কারণ পৃথিবীর উপরে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে তাঁহার দয়া তত মহৎ। পশ্চিম দিক্‌ হইতে পূর্ব্ব দিক্‌ যেমন দূরবর্ত্তী, তিনি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ সকল তেমনি দূরবর্ত্তী করিয়াছেন। পিতা সন্তানদের প্রতি যেমন করুণা করেন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তাহাদের প্রতি তিনি তেমনি করুণা করেন। কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে। মর্ত্ত্য, তাহার আয়ু তৃণ সদৃশ; যেমন মাঠের পুষ্প, তেমনি সে প্রফুল্ল হয়। তাহার উপর দিয়া বায়ু বহিলেই সে আর নাই, তাহার স্থানও তাহাকে আর চিনিবে না। কিন্তু সদাপ্রভুর দয়া, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে অনাদিকাল অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত থাকে; এবং তাঁহার ধর্ম্মশীলতা পুত্র পৌত্রদের প্রতি বর্ত্তে, তাহাদের প্রতি, যাহারা তাঁহার নিয়ম রক্ষা করে, ও তাঁহার বিধি সকল পালনার্থে স্মরণ করে। সদাপ্রভু স্বর্গে আপন সিংহাসন স্থাপন করিয়াছেন, তাঁহার রাজ্য কর্ত্তৃত্ব করে সমস্তের উপরে। সদাপ্রভুর দূতগণ! তাঁহার ধন্যবাদ কর, তোমরা বলে বীর, তাঁহার বাক্য-সাধক, তাঁহার বাক্যের রব শ্রবণে নিবিষ্ট। সদাপ্রভুর সমস্ত বাহিনি! তাঁহার ধন্যবাদ কর, তোমরা তাঁহার পরিচারক, তাঁহার অভিমত-সাধক। সদাপ্রভুর সমস্ত নির্ম্মিত বস্তু! তাঁহার ধন্যবাদ কর, তাঁহার অধিকারের সমস্ত স্থানে। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমি অতি মহান; তুমি প্রভা ও প্রতাপ পরিহিত। তুমি বস্ত্রের ন্যায় দীপ্তি পরিধান করিয়াছ, আকাশমণ্ডলকে চন্দ্রাতপের ন্যায় বিস্তার করিয়াছ। তিনি জলে আপন উপরিস্থ কক্ষের কড়িকাষ্ঠ স্থাপন করিয়াছেন, তিনি মেঘকে আপনার রথ করিয়া থাকেন, বায়ুপক্ষের উপরে গমনাগমন করেন। তিনি বায়ু সকলকে আপনার দূত, অগ্নিশিখাকে আপনার পরিচারক করেন। তিনি পৃথিবীকে তাহার ভিত্তিমূলের উপরে স্থাপন করিয়াছেন; তাহা অনন্তকালেও বিচলিত হইবে না। তুমি তাহা জলধি-বস্ত্রে আচ্ছাদন করিয়াছিলে; পর্ব্বতগণের উপরে জল দাঁড়াইয়াছিল। তোমার ভর্ৎসনায় সেই জল পলায়ন করিল, তোমার বজ্রনাদে তাহা বেগে প্রস্থান করিল। পর্ব্বতগণ উচ্চ হইল, সমস্থলী নিম্ন হইল, তুমি জলের জন্য যে স্থান প্রস্তুত করিয়াছিলে, জল তথায় গেল। তুমি সীমা স্থাপন করিয়াছ, যেন জল তাহা উল্লঙ্ঘন না করে, যেন ফিরিয়া পৃথিবীকে আচ্ছাদন না করে। তিনি তলভূমিতে প্রবাহ প্রেরণ করিয়া থাকেন; সে সকল পর্ব্বতগণের মধ্যে ভ্রমণ করে। সে সকল মাঠের সমস্ত পশুকে জল দেয়; বনগর্দ্দভেরা তৃষ্ণা নিবারণ করে। সে সকলের তীরে আকাশের পক্ষিগণ বাসা করে, ডালের মধ্য হইতে নিজ নিজ রব শুনায়। তিনি আপন কক্ষ হইতে পর্ব্বতে জল সেচন করেন; তোমার কার্য্যের ফলে পৃথিবী পরিতৃপ্ত হয়। তিনি পশুগণের জন্য তৃণ অঙ্কুরিত করেন; মনুষ্যের সেবার জন্য ওষধি অঙ্কুরিত করেন; এইরূপে ভূমি হইতে ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন, আর মর্ত্ত্যের চিত্তানন্দ-জনক দ্রাক্ষারস, মুখের প্রফুল্লতা-জনক তৈল, ও মর্ত্ত্যের চিত্তবল-সাধক ভক্ষ্য উৎপন্ন করেন। পরিতৃপ্ত হইয়াছে সদাপ্রভুর বৃক্ষ সকল, লিবানোনের সেই এরস বৃক্ষরাজি, যাহা তিনি রোপন করিয়াছেন। তাহার মধ্যে ক্ষুদ্র পক্ষিগণ বাসা করে; দেবদারু বৃক্ষ হাড়গিলার বাটী। উচ্চ পর্ব্বত সকল বনচ্ছাগের আবাস, শৈল সকল শাফন পশুর আশ্রয়। তিনি ঋতুর জন্য চন্দ্র নির্ম্মাণ করিয়াছেন, সূর্য্য আপন অস্তগমনের সময় জানে। তুমি অন্ধকার করিলে রাত্রি হয়, তখন বনপশু সকল বিহার করে, যুবসিংহগণ মৃগের চেষ্টায় গর্জ্জন করে, ঈশ্বরের কাছে তাহাদের খাদ্য অন্বেষণ করে। সূর্য্য উদিত হইলে তাহারা চলিয়া যায়, আপন আপন গহ্বরে শয়ন করে। মনুষ্য আপন কার্য্যে বাহির হয়, আর সায়ংকাল পর্য্যন্ত শ্রম করে। হে সদাপ্রভু, তোমার নির্ম্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ! তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সে সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ; পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ। ঐ যে সমুদ্র, বৃহৎ ও চারিদিকে বিস্তীর্ণ, তথায় জঙ্গমেরা থাকে, তাহারা অগণ্য; ক্ষুদ্র ও প্রকাণ্ড কত জীবজন্তু থাকে। তথায় পোতরাজি বিহার করে, তথায় সেই লিবিয়াথন থাকে, যাহা তুমি তথায় লীলা করিবার জন্য নির্ম্মাণ করিয়াছ। ইহারা সকলেই তোমার অপেক্ষায় থাকে, যেন তুমি যথাসময়ে তাহাদের ভক্ষ্য দেও। তুমি তাহাদিগকে দিলে তাহারা কুড়ায়; তুমি হস্ত মুক্ত করিলে তাহারা মঙ্গলে তৃপ্ত হয়। তুমি নিজ মুখ আচ্ছাদন করিলে তাহারা বিহ্বল হয়; তুমি তাহাদের নিঃশ্বাস হরণ করিলে তাহারা মরিয়া যায়, তাহাদের ধূলিতে প্রতিগমন করে। তুমি নিজ আত্মা পাঠাইলে তাহাদের সৃষ্টি হয়, আর তুমি ভূমিতল নবীন করিয়া থাক। সদাপ্রভুর গৌরব অনন্তকাল থাকুক, সদাপ্রভু আপন কার্য্য সকলে আনন্দ করুন। তিনি পৃথিবীর প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে তাহা কাঁপে; তিনি পর্ব্বতরাজিকে স্পর্শ করিলে তাহারা ধূমায়মান হয়। আমি যাবজ্জীবন সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান করিব; আমি যতকাল বাঁচিয়া থাকি, আমার ঈশ্বরের প্রশংসা গান করিব। তাঁহার কাছে আমার ধ্যান মধুর হউক; আমি সদাপ্রভুতে আনন্দ করিব। পাপিগণ পৃথিবী হইতে উচ্ছিন্ন হউক, দুষ্টগণ আর না থাকুক। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। সদাপ্রভুর স্তব কর, তাঁহার নামে ডাক, জাতিগণের মধ্যে তাঁহার ক্রিয়া সকল জানাও। তাঁহার উদ্দেশে গীত গাও, তাঁহার প্রশংসা গান কর, তাঁহার সকল আশ্চর্য্য কর্ম্ম ধ্যান কর। তাঁহার পবিত্র নামের শ্লাঘা কর; সদাপ্রভুর অন্বেষণকারীদের চিত্ত আনন্দ করুক। সদাপ্রভুর ও তাঁহার শক্তির অনুসন্ধান কর, নিয়ত তাঁহার শ্রীমুখের অন্বেষণ কর। স্মরণ কর তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল, তাঁহার অদ্ভুত লক্ষণ ও তাঁহার মুখের শাসন সকল; হে তাঁহার দাস অব্রাহামের বংশ, হে যাকোবের সন্তানগণ, তাঁহার মনোনীত লোকেরা। তিনি সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর, তাঁহার শাসন সকল সমস্ত পৃথিবীতে বিদ্যমান। তিনি আপন নিয়ম চিরকাল স্মরণ করেন, সেই বাক্য তিনি সহস্র পুরুষপরম্পরার প্রতি আদেশ করিয়াছেন; সেই নিয়ম তিনি অব্রাহামের সহিত করিলেন, সেই শপথ ইস্‌হাকের কাছে করিলেন; তিনি তাহা যাকোবের জন্য বিধি বলিয়া, ইস্রায়েলের জন্য চিরকালীন নিয়ম বলিয়া দাঁড় করাইলেন। তিনি কহিলেন, আমি তোমাকে কনান দেশ দিব, তাহাই তোমাদের নির্ণীত অধিকার। তৎকালে তাহারা সংখ্যাতে অধিক ছিল না, তাহারা অল্পই ছিল, এবং তথায় প্রবাসী ছিল। তাহারা এক জাতি হইতে অন্য জাতির নিকটে, এক রাজ্য হইতে অন্য লোকবৃন্দের নিকটে বেড়াইত। তিনি কোন মনুষ্যকে তাহাদের প্রতি উপদ্রব করিতে দিতেন না, বরং তাহাদের জন্য রাজগণকে অনুযোগ করিতেন; ‘আমার অভিষিক্ত ব্যক্তিদিগকে স্পর্শ করিও না, আমার ভাববাদিগণের অপকার করিও না।’ আর তিনি দেশে দুর্ভিক্ষ আহ্বান করিলেন, ভক্ষ্যরূপ সমস্ত যষ্টি ভগ্ন করিলেন। তিনি তাহাদের অগ্রে এক পুরুষকে পাঠাইলেন, যোষেফ দাসরূপে বিক্রীত হইলেন। লোকে বেড়ী দ্বারা তাঁহার চরণকে ক্লেশ দিল; তাঁহার প্রাণ লৌহে বদ্ধ হইল। যাবৎ তাঁহার বচন সফল না হইল, তাবৎ সদাপ্রভুর বাক্য তাঁহাকে পরীক্ষা করিল। রাজা লোক পাঠাইয়া তাঁহাকে ছাড়িয়া দিলেন, জাতিগণের কর্ত্তা তাঁহাকে মুক্ত করিলেন। তিনি তাঁহাকে আপন বাটীর প্রভু করিলেন, আপনার সমস্ত সম্পত্তির কর্ত্তা করিলেন, যেন তিনি তাঁহার অমাত্যগণকে ইচ্ছানুসারে বন্ধন করেন, ও তাঁহার প্রাচীনবর্গকে জ্ঞান প্রদান করেন। আর ইস্রায়েল মিসরে উপস্থিত হইলেন, যাকোব হামের দেশে প্রবাস করিলেন। ঈশ্বর নিজ প্রজাদের অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিলেন, বিপক্ষগণ হইতে তাহাদিগকে বলবান করিলেন। তিনি উহাদের চিত্ত এমন ফিরাইলেন যে, উহারা তাঁহার প্রজাদিগকে ঘৃণা করিল, তাঁহার দাসদের প্রতি ধূর্ত্ততার ব্যবহার করিল। তিনি পাঠাইলেন আপন দাস মোশিকে, ও হারোণকে, যাঁহাকে তিনি মনোনীত করিয়াছিলেন। তাঁহারা উহাদের মধ্যে তাঁহার নানা চিহ্ন, হামের দেশে নানা অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইলেন। তিনি অন্ধকার পাঠাইলেন, আর অন্ধকার হইল; তাঁহারা তাঁহার বাক্যের বিরুদ্ধাচরণ করিলেন না। তিনি উহাদের জল রক্তে পরিণত করিলেন, উহাদের মৎস্য সকল মারিয়া ফেলিলেন। উহাদের দেশ ভেকে আকীর্ণ হইল, উহাদের রাজগণের অন্তঃপুরে [তাহা প্রবেশ করিল]। তিনি বলিলেন, আর দংশকের ঝাঁক আসিল, পিশুগণ উহাদের সমস্ত অঞ্চলে আসিল। তিনি উহাদিগকে বৃষ্টির পরিবর্ত্তে শিলা দিলেন, উহাদের দেশে শিখাযুক্ত অগ্নি বর্ষণ করিলেন। আর তিনি উহাদের দ্রাক্ষালতা ও ডুমুরগাছে আঘাত করিলেন, উহাদের অঞ্চলের বৃক্ষসকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। তিনি বলিলেন, আর পঙ্গপাল আসিল, অসংখ্য পতঙ্গ আসিল। তাহারা উহাদের দেশের সমস্ত ওষধি গ্রাস করিল, উহাদের ভূমির ফল খাইয়া ফেলিল। আর তিনি উহাদের দেশে প্রথমজাত সকলকে, উহাদের সমস্ত শক্তির প্রথম ফলকে, আঘাত করিলেন। পরে তিনি লোকদিগকে রৌপ্য ও স্বর্ণের সহিত বাহির করিয়া আনিলেন, তাঁহার গোষ্ঠীদের মধ্যে এক জনও উছোট খায় নাই। তাহারা প্রস্থান করিলে মিসর আনন্দ করিল, কারণ উহারা তাহাদের হইতে ত্রাসাপন্ন হইয়াছিল। তিনি চন্দ্রাতপের জন্য মেঘ বিস্তার করিলেন, তিনি রাত্রি আলোকময় করণার্থে অগ্নি দিলেন। তাহারা যাচ্ঞা করিলে তিনি ভারুই পক্ষী আনাইলেন, এবং স্বর্গীয় ভক্ষ্যে তাহাদিগকে তৃপ্ত করিলেন। তিনি শৈল খুলিয়া দিলেন, জল প্রবাহিত হইল; তাহা নদী হইয়া শুষ্কভূমিতে বহিল। কারণ তিনি আপন পবিত্র বাক্য স্মরণ করিলেন, আপন দাস অব্রাহামকে স্মরণ করিলেন। তিনি আপন প্রজাদিগকে আনন্দ সহ, নিজ মনোনীত লোকদিগকে সঙ্গীতের সহিত বাহির করিয়া আনিলেন। তিনি তাহাদিগকে জাতিগণের দেশ দিলেন, তাহারা লোকবৃন্দের শ্রমের ফলাধিকারী হইল, যেন তাহারা তাঁহার বিধি সকল পালন করে, তাঁহার ব্যবস্থা রক্ষা করে। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর; সদাপ্রভুর স্তব কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। কে সদাপ্রভুর বিক্রমের কার্য্য সকল বর্ণনা করিতে পারে? কে তাঁহার সমস্ত প্রশংসা প্রচার করিতে পারে? ধন্য তাহারা, যাহারা ন্যায় রক্ষা করে, ধন্য সে, যে সতত ধর্ম্মাচরণ করে। সদাপ্রভু, তোমার প্রজাদের প্রতি তোমার যে মমতা, সেই মমতায় আমাকে স্মরণ কর; তোমার পরিত্রাণসহ আমার তত্ত্ব লও; যেন আমি তোমার মনোনীত লোকদের মঙ্গল দেখি, যেন তোমার জাতির আনন্দে আনন্দ করি, যেন তোমার অধিকারের সহিত শ্লাঘা করি। পিতৃপুরুষদের সহিত আমরা পাপ করিয়াছি, আমরা অপরাধী হইয়াছি, অধর্ম্ম করিয়াছি। আমাদের পিতৃপুরুষেরা মিসরে তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল বুঝিল না, তোমার বহু দয়া স্মরণ করিল না, বরং সমুদ্রতীরে, সূফ-সাগরে, বিরুদ্ধাচরণ করিল। তথাপি তিনি আপন নামের অনুরোধে তাহাদিগকে পরিত্রাণ করিলেন, যেন তিনি আপন বিক্রম জ্ঞাত করেন। তিনি সূফ-সাগরকে ধমক দিলেন, আর তাহা শুষ্ক হইল, তিনি তাহাদিগকে জলধি দিয়া চালাইলেন, যেমন প্রান্তর দিয়া চালায়। আর তিনি বিদ্বেষীর হস্ত হইতে তাহাদিগকে ত্রাণ করিলেন, শত্রুর হস্ত হইতে তাহাদিগকে মুক্ত করিলেন; জল তাহাদের বিপক্ষগণকে আচ্ছাদন করিল, উহাদের এক জনও অবশিষ্ট থাকিল না। তখন তাহারা তাঁহার বাক্যে বিশ্বাস করিল, তাঁহার প্রশংসা গান করিল। তাহারা ত্বরায় তাঁহার কার্য্য সকল ভুলিয়া গেল। তাঁহার মন্ত্রণার অপেক্ষায় রহিল না; কিন্তু প্রান্তরে অত্যন্ত লোভ করিল। মরুভূমিতে ঈশ্বরের পরীক্ষা করিল। তাহাতে তিনি তাহাদের প্রার্থিত তাহাদিগকে দিলেন, কিন্তু তাহাদের প্রাণে ক্ষীণতা পাঠাইলেন। আরও তাহারা শিবিরের মধ্যে মোশির প্রতি, ও সদাপ্রভুর পবিত্র লোক হারোণের প্রতি ঈর্ষা করিল। ভূমি ফাটিয়া গিয়া দাথনকে গ্রাস করিল, অবীরামের মণ্ডলীকে আচ্ছাদন করিল। তাহাদের মণ্ডলীর মধ্যে অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল; অনল-শিখা দুষ্ট লোকদিগকে পোড়াইয়া ফেলিল। তাহারা হোরেবে এক গোবৎস নির্ম্মাণ করিল, ছাঁচে ঢালা প্রতিমার কাছে প্রণিপাত করিল। এইরূপে তৃণভোজী গোরুর প্রতিমার সহিত তাহারা আপনাদের গৌরব পরিবর্ত্তন করিল। তাহারা আপন ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরকে ভুলিয়া গেল, যিনি মিসরে বিবিধ মহৎ কার্য্য করিয়াছিলেন; হামের দেশে নানা আশ্চর্য্য ক্রিয়া, সূফ-সাগরের ধারে নানা ভয়ঙ্কর কার্য্য করিয়াছিলেন। অতএব তিনি কহিলেন, উহাদিগকে সংহার করিতে হইবে; কিন্তু তাঁহার মনোনীত ব্যক্তি মোশি তাঁহার সাক্ষাতে ভঙ্গস্থানে দাঁড়াইলেন, তাঁহার কোপ ফিরাইবার জন্য দাঁড়াইলেন, পাছে তিনি তাহাদিগকে বিনাশ করেন। আর তাহারা রমণীয় দেশ তুচ্ছ করিল, তাঁহার বাক্যে বিশ্বাস করিল না; কিন্তু আপন আপন তাম্বুর মধ্যে বচসা করিল, সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিল না। অতএব তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে হস্ত তুলিলেন, বলিলেন, আমি উহাদিগকে প্রান্তরে নিপাত করিব, আমি উহাদের বংশকে জাতিগণের মধ্যে নিপাত করিব, উহাদিগকে নানা দেশে ছিন্নভিন্ন করিব। তাহারা বাল-পিয়োরের প্রতি আসক্ত হইল, মরাদের বলি ভোজন করিল। এইরূপে তাহারা স্ব স্ব কর্ম্ম দ্বারা তাঁহাকে অসন্তুষ্ট করিল; তাই তাহাদের মধ্যে মহামারীর প্রাদুর্ভাব হইল। তখন পীনহস দাঁড়াইয়া বিচার সাধন করিলেন, তাহাতে মহামারী নিবৃত্ত হইল। তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল, পুরুষে পুরুষে চিরকালের জন্য গণিত হইল। তাহারা মরীবার জলসমীপেও ঈশ্বরের কোপ জন্মাইল, আর তাহাদের জন্য মোশির বিপদ ঘটিল; কেননা তাহারা তাঁহার আত্মার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হইল, আর উনি আপন ওষ্ঠাধরে অবিবেচনার কথা কহিলেন। তাহারা জাতিগণকে বিনষ্ট করিল না, যাহা সদাপ্রভু করিতে আজ্ঞা দিয়াছিলেন। কিন্তু তাহারা জাতিগণের সহিত মিশ্রিত হইল, উহাদের ক্রিয়া শিক্ষা করিল; আর উহাদের প্রতিমা সকলের সেবা করিল, তাহাতে সে সকল তাহাদের ফাঁদ হইয়া উঠিল; ফলে তাহারা আপনাদের পুত্রদিগকে, আর আপনাদের কন্যাদিগকে ভূতদের উদ্দেশে বলিদান করিল; তাহারা নির্দ্দোষদের রক্তপাত, স্ব স্ব পুত্রকন্যাদেরই রক্তপাত করিল, কনানীয় প্রতিমাগণের উদ্দেশে তাহাদিগকে বলিদান করিল; দেশ রক্তে অশুদ্ধ হইল। এইরূপে তাহারা আপনাদের কার্য্যে অশুচি, আপনাদের ক্রিয়াতে ব্যভিচারী হইল। তাহাতে আপন প্রজাদের উপরে সদাপ্রভুর ক্রোধ জ্বলিয়া উঠিল, তিনি আপন অধিকারকে ঘৃণা করিলেন। তিনি তাহাদিগকে জাতিগণের হস্তে সমর্পণ করিলেন, তাহাতে তাহাদের বিদ্বেষিগণ তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিল। তাহাদের শত্রুগণও তাহাদের প্রতি দৌরাত্ম্য করিল, এবং তাহারা উহাদের হস্তের বশে নত হইল। অনেক বার তিনি তাহাদিগকে উদ্ধার করিলেন, কিন্তু তাহারা আপনাদের মন্ত্রণায় বিদ্রোহী হইল, ও আপনাদের অপরাধে ক্ষীণ হইয়া পড়িল। তথাচ তিনি যখন তাহাদের কাকূক্তি শুনিলেন, তখন তাহাদের সঙ্কটের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। তিনি তাহাদের পক্ষে আপনার নিয়ম স্মরণ করিলেন, নিজ দয়ার মহত্ত্বানুসারে অনুশোচনা করিলেন। যাহারা তাহাদিগকে বন্দি করিয়াছিল, তাহাদের সকলের দৃষ্টিতে তিনি তাহাদিগকে করুণাপ্রাপ্ত করিলেন। হে সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর, আমাদের ত্রাণ কর, জাতিগণের মধ্য হইতে আমাদিগকে সংগ্রহ কর; যেন আমরা তোমার পবিত্র নামের স্তব করি, যেন তোমার প্রশংসার জয়ধ্বনি করি। ধন্য সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, অনাদিকাল অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত। সমস্ত লোক বলুক, আমেন্‌। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। সদাপ্রভুর স্তব কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। সদাপ্রভুর মুক্তগণ এই কথা বলুক, যাহাদিগকে তিনি বিপক্ষের হস্ত হইতে মুক্ত করিয়াছেন, যাহাদিগকে তিনি সংগ্রহ করিয়াছেন নানা দেশ হইতে, পূর্ব্ব ও পশ্চিম হইতে, উত্তর ও দক্ষিণ হইতে। তাহারা প্রান্তরে নির্জন পথে পরিভ্রমণ করিল, বসতি-নগর পাইল না। তাহারা ক্ষুধিত ও তৃষ্ণার্ত্ত হইল, তাহাদের প্রাণ অন্তরে মুর্চ্ছাপন্ন হইল। সঙ্কটে তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিল, আর তিনি তাহাদিগকে কষ্ট হইতে উদ্ধার করিলেন। তিনি তাহাদিগকে সরল পথেও গমন করাইলেন, যেন তাহারা বসতি-নগরে যাইতে পারে। লোকে সদাপ্রভুর স্তব করুক, তাঁহার দয়া প্রযুক্ত, মনুষ্য-সন্তানদের জন্য তাঁহার আশ্চর্য্য কর্ম্ম প্রযুক্ত। কারণ তিনি আপ্যায়িত করেন আকাঙ্ক্ষী প্রাণকে, তিনি ক্ষুধিত প্রাণকে উত্তম দ্রব্যে তৃপ্ত করেন। লোকেরা অন্ধকারে ও মৃত্যুচ্ছায়ায় বসিয়াছিল, দুঃখ-পাশে ও লৌহ-শৃঙ্খলে বদ্ধ ছিল; কারণ তাহারা ঈশ্বরের বাক্যের বিরুদ্ধাচরণ করিত, পরাৎপরের মন্ত্রণা তুচ্ছ করিত; তাই তিনি তাহাদের হৃদয় আয়াসে অবনত করিলেন; তাহারা পতিত হইল, সাহায্যকারী কেহ ছিল না। সঙ্কটে তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিল, আর তিনি তাহাদিগকে কষ্ট হইতে ত্রাণ করিলেন। তিনি অন্ধকার ও মৃত্যুচ্ছায়া হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন, তাহাদের বন্ধন সকল ছেদন করিলেন। লোকে সদাপ্রভুর স্তব করুক, তাঁহার দয়া প্রযুক্ত, মনুষ্য-সন্তানদের জন্য তাঁহার আশ্চর্য্য কর্ম্ম প্রযুক্ত! কারণ তিনি পিত্তলের কবাট ভগ্ন করিয়াছেন, লৌহময় অর্গল ছেদন করিয়াছেন। মূর্খেরা আপনাদের অধর্ম্মাচরণ প্রযুক্ত, আপনাদের অপরাধ প্রযুক্ত দুর্দ্দশাপন্ন হয়। তাহাদের প্রাণ সমস্ত খাদ্য দ্রব্য ঘৃণা করে, তাহারা মৃত্যুদ্বারের সমীপে উপস্থিত হয়। সঙ্কটে তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করে, আর তিনি তাহাদিগকে কষ্ট হইতে ত্রাণ করেন। তিনি আপন বাক্য পাঠাইয়া তাহাদিগকে সুস্থ করেন, তাহাদের খাত হইতে তাহাদিগকে রক্ষা করেন। লোকে সদাপ্রভুর স্তব করুক, তাঁহার দয়া প্রযুক্ত, মনুষ্য-সন্তানদের জন্য তাহার আশ্চর্য্য কর্ম্ম প্রযুক্ত! তাহারা স্তববলি উৎসর্গ করুক, আনন্দগানসহ তাঁহার ক্রিয়ার বর্ণনা করুক। যাহারা জাহাজে চড়িয়া সমুদ্রযাত্রা করে, মহাজলরাশির মধ্যে ব্যবসায় করে, তাহারা সদাপ্রভুর কার্য্য সকল দেখে, গভীর জলে তাঁহার আশ্চর্য্য ব্যাপার সকল দেখে। তিনি আজ্ঞা দ্বারা প্রচণ্ড বায়ু উত্থাপন করেন, তাহা জলের তরঙ্গমালা উঠায়। তাহারা আকাশে উঠে, তাহারা জলধিতলে নামে; বিপাকে পড়িয়া তাহাদের প্রাণ গলিয়া যায়। তাহারা মত্তের ন্যায় হেলিয়া দুলিয়া ঢুলিয়া পড়ে, তাহাদের সমস্ত বুদ্ধি বিলুপ্ত হয়। সঙ্কটে তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করে, আর তিনি তাহাদিগকে কষ্ট হইতে বাহির করেন। তিনি ঝটিকা প্রশমিত করেন; তাহাতে জলরাশির তরঙ্গ সকল নিস্তব্ধ হয়। তখন তাহারা আনন্দ করে, কেননা শান্তি হইল, আর তিনি তাহাদিগকে তাহাদের অভীষ্ট পোতাশ্রয়ে লইয়া যান। লোকে সদাপ্রভুর স্তব করুক, তাঁহার দয়া প্রযুক্ত, মনুষ্য-সন্তানদের জন্য তাঁহার আশ্চর্য্য কর্ম্ম প্রযুক্ত! তাহারা প্রজা-সমাজে তাঁহার প্রতিষ্ঠা করুক, প্রাচীনদের সভাতে তাঁহার প্রশংসা করুক। তিনি নদী সকলকে প্রান্তরে, জলের উনুই সমূহকে শুষ্ক ভূমিতে পরিণত করেন, তিনি ফলবান দেশকে লবণ-প্রান্তর করেন, তথাকার নিবাসীদের কদাচরণ প্রযুক্ত। তিনি প্রান্তরকে জলাশয়ে, মরুভূমিকে জলের উনুই সমূহে পরিণত করেন; আর সেখানে তিনি ক্ষুধিত লোকদিগকে বাস করান, যেন তাহারা বসতি-নগর প্রস্তুত করে, এবং ক্ষেত্রে বীজ বপন ও দ্রাক্ষালতা রোপন করে, এবং উৎপন্ন ফল সঞ্চয় করে। তিনি তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করেন, তাই তাহারা অতিশয় বৃদ্ধি পায়, এবং তিনি তাহাদের পশুগণকে হ্রাস পাইতে দেন না। আবার তাহারা হ্রাস পায় ও অবনত হয়, উৎপীড়ন, বিপদ ও শোক প্রযুক্ত। তিনি কর্ত্তাদের উপরে তুচ্ছতা ঢালিয়া দেন, পথহীন মরুভূমিতে তাহাদিগকে ভ্রমণ করান; কিন্তু দরিদ্রকে দুঃখ হইতে উচ্চে স্থাপন করেন, আর মেষপালের ন্যায় পরিবার দেন। তাহা দেখিয়া সরল লোকে আনন্দিত হয়, আর সমস্ত দুষ্টতা আপন মুখ রুদ্ধ করে। জ্ঞানবান কে? সে এই সমস্ত বিবেচনা করিবে, তাহারা সদাপ্রভুর বিবিধ দয়া আলোচনা করিবে। হে ঈশ্বর, আমার চিত্ত সুস্থির; আমি গান করিব, আমার গৌরব সহ স্তব করিব। জাগ্রৎ হও, নেবল ও বীণা; আমি ঊষাকে জাগাইব। সদাপ্রভু, আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার স্তব করিব, আমি লোকবৃন্দের মধ্যে তোমার প্রশংসা গাহিব। কেননা তোমার দয়া আকাশমণ্ডল অপেক্ষা মহৎ, তোমার সত্য মেঘ পর্য্যন্ত ব্যাপ্ত। হে ঈশ্বর, আকাশমণ্ডলের উপরে উন্নত হও; সমস্ত পৃথিবীর উপরে তোমার গৌরব উন্নত হউক। তোমার প্রিয়েরা যেন উদ্ধার পায়, তজ্জন্য তুমি দক্ষিণ হস্ত দ্বারা পরিত্রাণ কর, আমাদিগকে উত্তর দেও। ঈশ্বর আপন পবিত্রতায় কথা কহিয়াছেন। আমি উল্লাস করিব; আমি শিখিম বিভাগ করিব, ও সুক্কোতের তলভূমি মাপিব। গিলিয়দ আমার, মনঃশিও আমার; আর ইফ্রয়িম আমার শিরস্ত্রাণ; যিহূদা আমার বিচারদণ্ড; মোয়াব আমার প্রক্ষালনপাত্র; আমি ইদোমের উপরে নিজ পাদুকা নিক্ষেপ করিব; পলেষ্টিয়ার উপরে জয়ধ্বনি করিব। কে আমাকে ঐ দৃঢ় নগরে লইয়া যাইবে? কে ইদোম পর্য্যন্ত আমাকে পথ দেখাইয়া দিবে? হে ঈশ্বর, তুমি কি আমাদিগকে ত্যাগ কর নাই? হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের বাহিনিগণ সহ গমন কর না। বিপক্ষের প্রতিকূলে আমাদের সাহায্য কর; কেননা মনুষ্যের সাহায্য অলীক। ঈশ্বরের দ্বারা আমরা বীরের কর্ম্ম করিব; তিনিই আমাদের বিপক্ষদিগকে মর্দ্দন করিবেন। হে আমার প্রশংসাপাত্র ঈশ্বর, নীরব থাকিও না। কেননা লোকে আমার বিরুদ্ধে দুষ্টতার মুখ ও ছলের মুখ খুলিয়াছে; তাহারা মিথ্যাবাদী জিহ্বা দ্বারা আমার সহিত কথা কহিয়াছে। তাহারা দ্বেষবাক্যেও আমাকে ঘেরিয়াছে, এবং অকারণে আমার সহিত যুদ্ধ করিয়াছে। আমার প্রেমের পরিবর্ত্তে তাহারা আমার বিপক্ষ হইয়াছে, কিন্তু আমি প্রার্থনায় রত। তাহারা আমার উপরে হিতের পরিবর্ত্তে অহিত, আমার প্রেমের পরিবর্ত্তে দ্বেষ রাখিয়াছে। তুমি সেই ব্যক্তির উপরে দুর্জ্জনকে নিযুক্ত কর; বিপক্ষ তাহার দক্ষিণে দাঁড়াইয়া থাকুক। বিচার সময়ে সে দোষীকৃত হউক, তাহার প্রার্থনা পাপরূপে গণিত হউক। তাহার আয়ুঃ অল্প হউক, অন্য ব্যক্তি তাহার অধ্যক্ষপদ প্রাপ্ত হউক। তাহার সন্তানগণ পিতৃহীন হউক, তাহার স্ত্রী বিধবা হউক। তাহার সন্তানগণ ভ্রমণ করিতে করিতে ভিক্ষা করুক, আপনাদের উৎসন্ন স্থান হইতে দূরে [খাদ্য] অন্বেষণ করুক। মহাজন তাহার সর্ব্বস্ব আটক করুক, অপর লোকেরা তাহার শ্রমফল লুট করুক। তাহার প্রতি কৃপা করে, এমন কেহ না থাকুক, তাহার অনাথ সন্তানদের প্রতি কেহ অনুগ্রহ না করুক। তাহার ভাবী বংশ উচ্ছিন্ন হউক, পরপুরুষের সময়ে তাহাদের নাম লুপ্ত হউক। তাহার পিতৃগণের অধর্ম্ম সদাপ্রভুর স্মরণে থাকুক, তাহার মাতার পাপ লুপ্ত না হউক। সে সকল সর্ব্বদা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে থাকুক, যেন তিনি পৃথিবী হইতে তাহাদের স্মৃতি লোপ করেন। কেননা সে দয়া করিবার বিষয় মনে করিত না, কিন্তু তাড়না করিত দুঃখী ও দরিদ্র ব্যক্তিকে, ও ভগ্নান্তঃকরণ লোককে, বধ করিবার নিমিত্ত। সে অভিশাপ দিতে ভালবাসিত, তাহা তাহারই প্রতি ঘটিল; আশীর্ব্বাদ করিতে তাহার প্রীতি হইত না, তাহা তাহা হইতে দূরে রহিল। সে অভিশাপকে বস্ত্রের ন্যায় পরিধান করিত, তাহা তাহার অন্তরে জলের ন্যায় প্রবেশ করিল, তাহার অস্থিতে তৈলের ন্যায় প্রবিষ্ট হইল। তাহা তাহার পক্ষে পরিধানার্থক বস্ত্রের ন্যায়, ও নিত্য কটিবন্ধনের ন্যায় হউক। সদাপ্রভু হইতে এই ফল পায় আমার বিপক্ষেরা, আমার প্রাণের বিরুদ্ধে যাহারা দুর্ব্বাক্য বলে, তাহারা। কিন্তু, হে প্রভু সদাপ্রভু, নিজ নামের অনুরোধে আমার সহিত ব্যবহার কর; তোমার দয়া মঙ্গলময়, অতএব আমাকে উদ্ধার কর। কেননা আমি দুঃখী ও দরিদ্র, এবং আমার অন্তরে হৃদয় আহত হইয়াছে। আমি হেলিয়া পড়া ছায়ার ন্যায় অতীত হইতেছি, পঙ্গপালের ন্যায় ইতস্ততঃ চালিত হইতেছি। উপবাস দ্বারা আমার হাঁটু দুর্ব্বল হইয়াছে, বসার অভাবে আমার মাংস বিকৃত হইয়াছে। আর আমি উহাদের কাছে তিরস্কারের পাত্র হইয়াছি; আমাকে দেখিলেই তাহারা মাথা নাড়ে। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার সাহায্য কর, নিজ দয়ানুসারে আমার পরিত্রাণ কর, যেন তাহারা জানিতে পায় যে, এ তোমার হস্ত, তুমিই, হে সদাপ্রভু, এই সকল করিয়াছ। তাহারা শাপ দিউক, কিন্তু তুমি আশীর্ব্বাদ করিও; তাহারা উঠিলে লজ্জিত হইবে, কিন্তু তোমার এই দাস আনন্দ করিবে। আমার বিপক্ষগণ অপমান-পরিহিত হইবে, উত্তরীয়ের ন্যায় লজ্জায় আচ্ছাদিত হইবে। আমি নিজ মুখে সদাপ্রভুর অতিশয় স্তব করিব, লোকারণ্যের মধ্যে তাঁহার প্রশংসা করিব। কারণ তিনি দরিদ্রের দক্ষিণে দাঁড়াইয়া থাকেন, যেন তাহার প্রাণের বিচারকদের হইতে তাহাকে ত্রাণ করেন। সদাপ্রভু আমার প্রভুকে বলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি। সদাপ্রভু সিয়োন হইতে তোমার পরাক্রমদণ্ড প্রেরণ করিবেন, তুমি আপন শত্রুদের মধ্যে কর্ত্তৃত্ব করিও। তোমার বিক্রম দিনে তোমার প্রজাগণ স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার হইবে; পবিত্র শোভায়, ঊষার গর্ভ হইতে, তোমার যুবকেরা তোমার কাছে শিশির তুল্য। সদাপ্রভু শপথ করিলেন, অনুশোচনা করিবেন না, তুমি অনন্তকালীন যাজক, মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে। তোমার দক্ষিণে স্থিত প্রভু আপন ক্রোধের দিনে রাজগণকে চূর্ণ করিবেন। তিনি জাতিদের মধ্যে বিচার করিবেন, তিনি শবে দেশ পরিপূর্ণ করিবেন, তিনি বিস্তীর্ণ দেশে মস্তক চূর্ণ করিবেন; তিনি পথিমধ্যে স্রোতের জল পান করিবেন; এইজন্য মস্তক তুলিবেন। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। আমি সর্ব্বান্তঃকরণে সদাপ্রভুর স্তব করিব, সরল লোকদের সভায় ও মণ্ডলীর মধ্যে করিব। সদাপ্রভুর কর্ম্ম সকল মহৎ; তৎপ্রীত সকলে সেই সকল অনুশীলন করে। তাঁহার ক্রিয়া প্রভা ও প্রতাপস্বরূপ, তাঁহার ধর্ম্মশীলতা নিত্যস্থায়ী। তিনি নিজ আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল স্মরণীয় করিয়াছেন; সদাপ্রভু কৃপাময় ও স্নেহশীল। তিনি আপন ভয়কারিগণকে আহার দিয়াছেন; তিনি আপনার নিয়ম চিরকাল স্মরণ করিবেন। তিনি নিজ প্রজাদিগকে আপন ক্রিয়ার শক্তি জ্ঞাত করিয়াছেন, তাহাদিগকে জাতিগণের অধিকার দান করিয়াছেন। তাঁহার হস্তের কর্ম্ম সকল সত্য ও ন্যায্য; তাঁহার সমস্ত বিধি বিশ্বসনীয়। সে সকল অনন্তকালের নিমিত্ত স্থিরীকৃত, সত্যে ও সরলতায় প্রণীত। তিনি আপন প্রজাদের কাছে মুক্তি পাঠাইয়াছেন; তিনি চিরকাল তরে আপন নিয়ম স্থির করিয়াছেন; তাঁহার নাম পবিত্র ও ভয়াবহ। সদাপ্রভুর ভয় প্রজ্ঞার আরম্ভ; যে কেহ তদনুযায়ী কর্ম্ম করে, সে সদ্বুদ্ধি পায়; তাঁহার প্রশংসা নিত্যস্থায়ী। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। ধন্য সেই জন, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার আজ্ঞাতে অতিমাত্র প্রীত হয়। তাহার বংশ পৃথিবীতে বিক্রমশালী হইবে; সরল লোকের গোষ্ঠী ধন্য হইবে। তাহার গৃহে ধন ও ঐশ্বর্য্য থাকে, তাহার ধার্ম্মিকতা নিত্যস্থায়ী। সরল লোকের জন্য অন্ধকারে জ্যোতি উদিত হয়; সে কৃপাময়, স্নেহশীল ও ধার্ম্মিক। যে জন কৃপা করে ও ঋণ দেয়, তাহার মঙ্গল হয়; সে বিচারে আপনার কথা নিষ্পন্ন করিবে। কারণ সে কোন কালে বিচলিত হইবে না; ধার্ম্মিক চিরকাল স্মরণে থাকিবে। অশুভ সংবাদেও সে ভয় করিবে না; তাহার চিত্ত স্থির, তাহা সদাপ্রভুতে নির্ভর করে। তাহার চিত্ত সুস্থির; সে ভয় করে না, শেষে সে আপন বিপক্ষদের দশা দেখিবে। সে বিতরণ করিয়াছে, দরিদ্রদিগকে দান করিয়াছে, তাহার ধার্ম্মিকতা নিত্যস্থায়ী; তাহার শৃঙ্গ গৌরবে উন্নত হইবে। দুষ্ট লোক তাহা দেখিয়া বিরক্ত হইবে; সে দন্ত ঘর্ষণ করিবে, ও গলিয়া যাইবে; দুষ্টগণের অভীষ্ট বিনষ্ট হইবে। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। হে সদাপ্রভুর দাসগণ, প্রশংসা কর, সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা কর। ধন্য সদাপ্রভুর নাম, এখন অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত। সূর্য্যের উদয়স্থান অবধি তাহার অস্তস্থান পর্য্যন্ত সদাপ্রভুর নাম কীর্ত্তনীয়। সদাপ্রভু সর্ব্বজাতির উপরে উন্নত, তাঁহার গৌরব আকাশমণ্ডলের উপরে উন্নত। কে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর তুল্য? তিনি ঊর্দ্ধে সমাসীন; তিনি অবনত হইয়া দৃষ্টিপাত করেন আকাশে ও পৃথিবীতে। তিনি ধূলি হইতে দীনহীনকে তুলেন, সারের ঢিবি হইতে দরিদ্রকে উঠান; যেন তিনি তাহাকে বসাইয়া দেন কুলীনদের সঙ্গে, আপন প্রজাদেরই কুলীনদের সঙ্গে। তিনি বন্ধ্যাকে গৃহিণী করেন, পুত্রদের আনন্দময়ী মাতা করেন। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। ইস্রায়েল যখন বাহির হইল মিসর হইতে, যাকোবের বংশ পরভাষী লোক হইতে, তখন যিহূদা হইল তাঁহার ধর্ম্মধাম, ইস্রায়েল হইল তাঁহার রাজ্য। দেখিয়া সমুদ্র পলায়ন করিল, যর্দ্দন উজানে বহিল। পর্ব্বতগণ লম্ফ দিল মেষের ন্যায়, উপপর্ব্বতগণ লম্ফ দিল মেষশাবকের ন্যায়। তোমার কি হইল, সমুদ্র, তুমি কেন পলাইলে? যর্দ্দন, তুমি কেন উজানে বহিলে? পর্ব্বতগণ, তোমরা কেন লম্ফ দিলে মেষের ন্যায়? উপপর্ব্বতগণ, তোমরা কেন লম্ফ দিলে মেষশাবকের ন্যায়? পৃথিবী! তুমি কম্পিত হও, প্রভুর সাক্ষাতে, যাকোবের ঈশ্বরের সাক্ষাতে। তিনি শৈলকে পরিণত করিলেন জলাশয়ে, চকমকি প্রস্তরকে জলের উৎসে। হে সদাপ্রভু, আমাদিগকে নয়, আমাদিগকে নয়, কিন্তু তোমারই নাম গৌরবান্বিত কর, তোমার দয়ার অনুরোধে, তোমার সত্যের অনুরোধে। জাতিগণ কেন বলিবে, ‘কোথায় উহাদের ঈশ্বর?’ আমাদের ঈশ্বর ত স্বর্গে থাকেন; তিনি যাহা ইচ্ছা করিয়াছেন, তাহাই করিয়াছেন। উহাদের প্রতিমা সকল রৌপ্য ও স্বর্ণ, মনুষ্যের হস্তের কার্য্য। মুখ থাকিতেও তাহারা কথা কহে না; চক্ষু থাকিতেও দেখিতে পায় না; কর্ণ থাকিতেও শুনিতে পায় না; নাসিকা থাকিতেও ঘ্রাণ পায় না; হস্ত থাকিতেও স্পর্শ করিতে পারে না; চরণ থাকিতেও চলিতে পারে না; তাহারা কণ্ঠে কথা কহিতে পারে না। যেমন তাহারা, তেমনি হইবে তাহাদের নির্ম্মাতারা, আর যে কেহ সে গুলিতে নির্ভর করে। হে ইস্রায়েল, তুমি সদাপ্রভুতেই নির্ভর কর; ‘তিনিই তাহাদের সহায় ও তাহাদের ঢাল।’ হারোণের কুল, তোমরা সদাপ্রভুতেই নির্ভর কর; ‘তিনিই তাহাদের সহায় ও তাহাদের ঢাল।’ সদাপ্রভুর ভয়কারিগণ, সদাপ্রভুতে নির্ভর কর; ‘তিনিই তাহাদের সহায় ও তাহাদের ঢাল।’ সদাপ্রভু আমাদিগকে মনে রাখিয়াছেন; তিনি আশীর্ব্বাদ করিবেন, ইস্রায়েলের কুলকে আশীর্ব্বাদ করিবেন, হারোণের কুলকে আশীর্ব্বাদ করিবেন। যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তিনি তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবেন, ক্ষুদ্র কি মহান সকলকে করিবেন। সদাপ্রভু তোমাদের বৃদ্ধি করুন, তোমাদের ও তোমাদের সন্তানগণের বৃদ্ধি করুন। তোমরা সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপাত্র, তিনি স্বর্গের ও পৃথিবীর নির্ম্মাণকর্ত্তা। স্বর্গ সদাপ্রভুরই স্বর্গ, কিন্তু তিনি পৃথিবী মনুষ্য-সন্তানদিগকে দিয়াছেন। মৃতেরা সদাপ্রভুর প্রশংসা করে না, যাহারা নিস্তব্ধ স্থানে নামে, তাহারা কেহ করে না। কিন্তু আমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ করিব, এখন অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত করিব। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। আমি সদাপ্রভুকে প্রেম করি, কারণ তিনি শুনেন আমার রব ও আমার বিনতি। তিনি আমার প্রতি কর্ণপাত করিয়াছেন, তজ্জন্য আমি যাবজ্জীবন তাঁহাকে ডাকিব। মৃত্যুর রজ্জু আমাকে বেষ্টন করিল, পাতালের কষ্ট আমাকে পাইয়া বসিল, আমি সঙ্কটে ও দুঃখে পড়িলাম। তখন আমি, সদাপ্রভুর নামে ডাকিলাম, বিনয় করি, সদাপ্রভু, আমার প্রাণ রক্ষা কর। সদাপ্রভু কৃপাবান ও ধর্ম্মময়, বস্তুতঃ আমাদের ঈশ্বর স্নেহশীল। সদাপ্রভু অমায়িক লোকদিগকে রক্ষা করেন; আমি দীনহীন হইলে তিনি আমার পরিত্রাণ করিলেন। হে আমার প্রাণ, তোমার বিশ্রাম-স্থানে ফিরিয়া যাও, কেননা সদাপ্রভু তোমার মঙ্গল করিয়াছেন। কারণ তুমি মৃত্যু হইতে আমার প্রাণ, অশ্রু হইতে আমার চক্ষু, পতন হইতে আমার চরণ, উদ্ধার করিয়াছ। আমি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে যাতায়াত করিব, জীবিতদের দেশেই করিব। আমার বিশ্বাস আছে, তাই কথা বলিব; আমি নিতান্ত দুঃখার্ত্ত ছিলাম। আমি উদ্বেগে বলিয়াছিলাম, মনুষ্যমাত্র মিথ্যাবাদী। আমি সদাপ্রভু হইতে যে সকল মঙ্গল পাইয়াছি, তাহার পরিবর্ত্তে তাঁহাকে কি ফিরাইয়া দিব? আমি পরিত্রাণের পানপাত্র গ্রহণ করিব, এবং সদাপ্রভুর নামে ডাকিব। আমি সদাপ্রভুর কাছে আমার মানত সকল পূর্ণ করিব; তাঁহার সমস্ত প্রজার সাক্ষাতেই করিব। সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুমূল্য তাঁহার সাধুগণের মৃত্যু। বিনয় করি, সদাপ্রভু, আমি তোমার দাস; আমি তোমার দাস, তোমার দাসীর পুত্র; তুমি আমার বন্ধন সকল মুক্ত করিয়াছ। আমি তোমার উদ্দেশে স্তব-বলি উৎসর্গ করিব, আর সদাপ্রভুর নামে ডাকিব। সদাপ্রভুর কাছে আমার মানত সকল পূর্ণ করিব, তাঁহার সমস্ত প্রজার সাক্ষাতেই করিব; সদাপ্রভুর গৃহের প্রাঙ্গণে, হে যিরূশালেম, তোমারই মধ্যে পূর্ণ করিব। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। সমস্ত জাতি, সদাপ্রভুর প্রশংসা কর; সমস্ত লোকবৃন্দ, তাঁহার সঙ্কীর্ত্তন কর। কেননা আমাদের উপরে তাঁহার দয়া মহৎ, ও সদাপ্রভুর সত্য অনন্তকালস্থায়ী। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। সদাপ্রভুর স্তব কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। ইস্রায়েল বলুক, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। হারোণের কুল বলুক, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তাহারা বলুক, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। আমি সঙ্কটের মধ্য হইতে সদাপ্রভুকে ডাকিলাম; সদাপ্রভু আমাকে উত্তর দিয়া প্রশস্ত স্থানে [আনিলেন]। সদাপ্রভু আমার সপক্ষ, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিতে পারে? সদাপ্রভু আমার সপক্ষ, আমার সহায়দের মধ্যবর্ত্তী; তাই আমি আপন বিদ্বেষীদের দশা দেখিব। মনুষ্যে নির্ভর করণাপেক্ষা সদাপ্রভুর শরণ লওয়া উত্তম। প্রধানবর্গে নির্ভর করণাপেক্ষা সদাপ্রভুর শরণ লওয়া উত্তম। সমুদয় জাতি আমাকে ঘেরিয়াছে; সদাপ্রভুর নামে আমি তাহাদিগকে উচ্ছেদ করিব। তাহারা আমাকে ঘেরিয়াছে, হাঁ, আমাকে ঘেরিয়াছে, সদাপ্রভুর নামে আমি তাহাদিগকে উচ্ছেদ করিব। মধুমক্ষিকার ন্যায় তাহারা আমাকে ঘেরিয়াছে, কাঁটার আগুনের মত তাহারা নিবিয়া গেল; সদাপ্রভুর নামে আমি তাহাদিগকে উচ্ছেদ করিব। তুমি আমাকে ফেলিয়া দিবার জন্য ধাক্কা মারিয়াছ, কিন্তু সদাপ্রভু আমার সাহায্য করিলেন। সদাপ্রভু আমার বল ও গান, আর তিনি আমার পরিত্রাণ হইয়াছেন। ধার্ম্মিকগণের তাম্বুতে আনন্দের ও পরিত্রাণের ধ্বনি হইতেছে; সদাপ্রভুর দক্ষিণ হস্ত বিক্রমসাধক। সদাপ্রভুর দক্ষিণ হস্ত উন্নত, সদাপ্রভুর দক্ষিণ হস্ত বিক্রমসাধক। আমি মরিব না, কিন্তু জীবিত থাকিব, আর সদাপ্রভুর কর্ম্ম সকল বর্ণনা করিব। সদাপ্রভু আমাকে ভারী শাস্তি দিয়াছেন, কিন্তু মৃত্যুর হস্তে সমর্পণ করেন নাই। আমার জন্য ধার্ম্মিকতার দ্বার সকল খুলিয়া দেও; আমি তাহা দিয়া প্রবেশ করিব, সদাপ্রভুর স্তব করিব। এই ত সদাপ্রভুর দ্বার, ইহা দিয়া ধার্ম্মিকগণ প্রবেশ করে। আমি তোমার স্তব করিব, কেননা তুমি আমাকে উত্তর দিয়াছ, আর তুমি আমার পরিত্রাণ হইয়াছ। গাঁথকেরা যে প্রস্তর অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহা কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল। ইহা সদাপ্রভু হইতেই হইয়াছে, ইহা আমাদের দৃষ্টিতে অদ্ভুত। অদ্য সদাপ্রভুর কৃত দিন; আমরা এই দিনে উল্লাস ও আনন্দ করিব। আহা! সদাপ্রভু, বিনয় করি, পরিত্রাণ কর; আহা! সদাপ্রভু, বিনয় করি, সৌভাগ্য দেও। ধন্য তিনি, যিনি সদাপ্রভুর নামে আসিতেছেন; আমরা সদাপ্রভুর গৃহ হইতে তোমাদিগকে ধন্যবাদ করি। সদাপ্রভুই ঈশ্বর; তিনি আমাদিগকে দীপ্তি দিয়াছেন; তোমরা রজ্জু দ্বারা উৎসবের বলি বেদির শৃঙ্গে বাঁধ। তুমি আমার ঈশ্বর, আমি তোমার স্তব করিব; তুমি আমার ঈশ্বর, আমি তোমার প্রতিষ্ঠা করিব। তোমরা সদাপ্রভুর স্তব কর, কেননা তিনি মঙ্গলময়; তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী। ধন্য তাহারা, যাহারা আচরণে সিদ্ধ, যাহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-পথে চলে। ধন্য তাহারা, যাহারা তাঁহার সাক্ষ্যকলাপ পালন করে; যাহারা সর্ব্বান্তঃকরণে তাঁহার অন্বেষণ করে। আবার তাহারা অন্যায় করে না, তাহারা তাঁহার সকল পথে গমন করে। তুমি আপন নিদেশমালা আদেশ করিয়াছ, যেন আমরা যত্নপূর্ব্বক তাহা পালন করি। আহা! আমার পথ সকল সুস্থির হউক, যেন আমি তোমার বিধিকলাপ পালন করি। তখন আমি লজ্জিত হইব না, যখন তোমার আজ্ঞা সকলের প্রতি দৃষ্টি রাখি। যখন তোমার ধর্ম্মময় শাসনকলাপ শিক্ষা করি, তখন আমি সরল চিত্তে তোমার স্তব করিব। আমি তোমার বিধিকলাপ পালন করিব; আমাকে একেবারে পরিত্যাগ করিও না। যুবক কেমন করিয়া নিজ পথ বিশুদ্ধ করিবে? তোমার বাক্যানুসারে সাবধান হইয়াই করিবে। আমি সর্ব্বান্তঃকরণে তোমার অন্বেষণ করিয়াছি, আমাকে তোমার আজ্ঞা-পথ ছাড়িয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে দিও না। তোমার বচন আমি হৃদয়মধ্যে সঞ্চয় করিয়াছি, যেন তোমার বিরুদ্ধে পাপ না করি। ধন্য তুমি, হে সদাপ্রভু, আমাকে তোমার বিধিকলাপ শিক্ষা দেও। আমি ওষ্ঠাধরে বর্ণনা করিয়াছি তোমার মুখের সমস্ত শাসন। আমি তোমার সাক্ষ্য-পথে আমোদ করিয়াছি, যেমন ধনসমূহে লোকে আমোদ করে। আমি তোমার নিদেশমালা ধ্যান করিব, তোমার সকল পথের প্রতি দৃষ্টি রাখিব। আমি তোমার বিধিকলাপে হর্ষিত হইব, তোমার বাক্য ভুলিয়া যাইব না। তোমার দাসের মঙ্গল কর, যেন আমি বাঁচি, তাহা হইলে আমি তোমার বাক্য পালন করিব। আমার নয়ন খুলিয়া দেও, যেন আমি দর্শন করি, তোমার ব্যবস্থায় আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য বিষয় দেখি। আমি পৃথিবীতে প্রবাসী, আমা হইতে তোমার আজ্ঞা সকল লুকাইও না। আমার প্রাণ আকাঙ্ক্ষায় ক্ষুণ্ণ হয় তোমার শাসনকলাপের জন্য, সর্ব্ব সময়ে। তুমি সেই শাপগ্রস্ত অহঙ্কারীদিগকে ভর্ৎসনা করিয়াছ, যাহারা তোমার আজ্ঞা পথ ছাড়িয়া ঘুরিয়া বেড়ায়। আমা হইতে দুর্নাম ও অপমান দূর কর, কেননা আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ পালন করিয়াছি। জনাধ্যক্ষেরাও বসিয়া আমার বিপক্ষে কথা কহিয়াছেন; তোমার এই দাস তোমার বিধি ধ্যান করে। তোমার সাক্ষ্যকলাপ আমার হর্ষজনক, সেগুলি আমার মন্ত্রণাদায়ক সুহৃৎ। আমার প্রাণ ধূলিতে সংলগ্ন, তোমার বাক্যানুসারে আমাকে সঞ্জীবিত কর। আমি আপন পথসমূহের কথা বলিলাম, আর তুমি আমাকে উত্তর দিয়াছ, তোমার বিধিকলাপ আমাকে শিক্ষা দেও। তোমার নিদেশ-পথ আমাকে বুঝাইয়া দেও, আমি তোমার আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল ধ্যান করিব। আমার প্রাণ দুঃখে গলিয়া পড়িতেছে, তোমার বাক্যানুসারে আমাকে উঠাও। আমা হইতে মিথ্যার পথ দূর কর, কৃপা করিয়া তোমার ব্যবস্থা আমাকে দেও। আমি বিশ্বস্ততার পথ মনোনীত করিয়াছি, আমি তোমার শাসনকলাপ সম্মুখে রাখিয়াছি। আমি তোমার সাক্ষ্যসমূহে আসক্ত; সদাপ্রভু, আমাকে লজ্জিত করিও না। আমি তোমার আজ্ঞা-পথে দৌড়িব, কেননা তুমি আমার হৃদয় প্রশস্ত করিতেছ। সদাপ্রভু, তোমার বিধি-পথ আমাকে দেখাও, আর আমি শেষ পর্য্যন্ত তাহা পালন করিব। আমাকে বিবেচনা দেও, আমি তোমার ব্যবস্থা মানিব, সর্ব্বান্তঃকরণে তাহা পালন করিব। তোমার আজ্ঞা-পথে আমাকে গমন করাও, কারণ তাহাতেই আমার প্রীতি। তোমার সাক্ষ্যকলাপের প্রতি আমার হৃদয় ফিরাও, লোভের প্রতি ফিরাইও না। অলীকতা দর্শন হইতে আমার চক্ষু ফিরাও, তোমার পথে আমাকে সঞ্জীবিত কর। তোমার দাসের পক্ষে সফল কর তোমার বচন, যাহা তোমার প্রতি ভয় সম্বন্ধীয়। দূর কর আমার দুর্নাম, যাহার বিষয় আমি ভয় করি, কেননা তোমার শাসনকলাপ উত্তম। দেখ, আমি তোমার নিদেশ সকলের আকাঙ্ক্ষা করিয়া আসিতেছি, তোমার ধর্ম্মশীলতায় আমাকে সঞ্জীবিত কর। আমার প্রতি তোমার দয়া বর্ত্তুক, হে সদাপ্রভু, তোমার বচনানুসারে তোমার পরিত্রাণ বর্ত্তুক। তবে আমি আমার দুর্নামকারীকে উত্তর দিতে পারিব, কেননা আমি তোমার বাক্যে নির্ভর করিতেছ। আর আমার মুখ হইতে সত্যের বাক্য নিঃশেষে হরণ করিও না, কেননা আমি তোমার শাসনকলাপের অপেক্ষা করিতেছি। আমি সতত তোমার ব্যবস্থা পালন করিব, যুগে যুগে চিরকাল করিব। আর আমি প্রশস্ত স্থানে গতায়াত করিব, কেননা আমি তোমার নিদেশ সকলের অন্বেষণ করিয়াছি। আমি রাজগণের সাক্ষাতেও তোমার সাক্ষ্যকলাপের কথা বলিব, আর আমি লজ্জিত হইব না। আমি তোমার আজ্ঞাসমূহে আমোদ করিব, সে সকল আমি ভালবাসি। আমি তোমার আজ্ঞা সকলের কাছে অঞ্জলি উঠাইব, সে সকল আমি ভালবাসি, আমি তোমার বিধিকলাপ ধ্যান করিব। তোমার দাসের পক্ষে সেই বাক্য স্মরণ কর, যদ্দ্বারা তুমি আমাকে প্রত্যাশাযুক্ত করিয়াছ। দুঃখের সময়ে ইহাই আমার সান্ত্বনা, তোমার বচন আমাকে সঞ্জীবিত করিয়াছে। অহঙ্কারিগণ আমাকে অতিশয় বিদ্রূপ করিয়াছে, তোমার ব্যবস্থা হইতে আমি বিমুখ হই নাই। সদাপ্রভু, আমি তোমার পূর্ব্বকালের শাসনকলাপ স্মরণ করিয়াছি, আর সান্ত্বনা পাইয়াছি। দুষ্টদের বিষয়ে আমার ক্রোধ জ্বলিয়া উঠিল, কেননা তাহারা তোমার ব্যবস্থা ত্যাগ করে। তোমার বিধিকলাপ হইয়াছে আমার গীত আমার প্রবাস-গৃহে। সদাপ্রভু, আমি রাত্রিকালে তোমার নাম স্মরণ করিয়াছি, ও তোমার ব্যবস্থা পালন করিয়াছি। আমি ইহাই পাইয়াছি, তোমার নির্দেশ সকল পালন করিয়াছি। সদাপ্রভু আমার অধিকার; আমি বলিয়াছি, আমি তোমার বাক্য সকল পালন করিব। আমি সর্ব্বান্তঃকরণে তোমার মুখের প্রসন্নতা চেষ্টা করিয়াছি; তোমার বচনানুসারে আমার প্রতি কৃপা কর। আমি নিজ পথসমূহ বিবেচনা করিলাম, ও তোমার সাক্ষ্যকলাপের প্রতি আমার চরণ ফিরাইলাম। আমি সত্বর হইলাম, বিলম্ব করিলাম না, তোমার আজ্ঞা সকল পালন করিবার জন্য। দুষ্টগণের রজ্জু আমাকে জড়াইয়াছে, আমি তোমার ব্যবস্থা ভুলিয়া যাই নাই। আমি মধ্যরাত্রে তোমার স্তব করিতে উঠিব, তোমার ধর্ম্মময় শাসনমালার জন্য। আমি সেই সকলের সখা, যাহারা তোমাকে ভয় করে, এবং যাহারা তোমার নিদেশ সকল পালন করে। তোমার দয়াতে, হে সদাপ্রভু, পৃথিবী পরিপূর্ণ, আমাকে তোমার বিধিকলাপ শিক্ষা দেও। তুমি আপন দাসের প্রতি মঙ্গল ব্যবহার করিয়াছ, হে সদাপ্রভু, তোমার বাক্যানুসারে করিয়াছ। উত্তম বিচার ও জ্ঞান আমাকে শিখাও, কেননা আমি তোমার আজ্ঞাসমূহে বিশ্বাস করিয়া আসিতেছি। দুঃখার্ত্ত হইবার পূর্ব্বে আমি ভ্রান্ত ছিলাম, কিন্তু এখন তোমার বচন পালন করিতেছি। তুমি মঙ্গলময় ও মঙ্গলকারী, তোমার বিধিকলাপ আমাকে শিক্ষা দেও। অহঙ্কারিগণ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা রচনা করিয়াছে, আমি সর্ব্বান্তঃকরণে তোমার নিদেশ সকল পালন করিব। উহাদের অন্তঃকরণ মেদের ন্যায় স্থূল; কিন্তু আমি তোমার ব্যবস্থায় আমোদ করি। আমি যে দুঃখার্ত্ত হইয়াছি, এ আমার পক্ষে উত্তম, যেন আমি তোমার বিধি শিখিতে পাই। তোমার মুখের ব্যবস্থা আমার পক্ষে উত্তম, সহস্র সহস্র স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা অপেক্ষা উত্তম। তোমার হস্ত আমার গঠন ও স্থিতি করিয়াছে; আমাকে বিবেচনা দেও, যেন তোমার আজ্ঞা সকল শিখিতে পারি। যাহারা তোমাকে ভয় করে, তাহারা আমাকে দেখিয়া আনন্দিত হইবে, কারণ আমি তোমার বাক্যে প্রত্যাশা করিয়াছি। হে সদাপ্রভু, আমি জানি, তোমার শাসনকলাপ ধর্ম্মময়, আর তুমি বিশ্বস্ততায় আমাকে দুঃখ দিয়াছ। আহা! তোমার দয়া আমার সান্ত্বনাজনক হউক, তোমার দাসের প্রতি তোমার বচনানুসারে হউক। আমার প্রতি তোমার করুণা বর্ত্তুক, যেন আমি বাঁচি; কেননা তোমার ব্যবস্থা আমার হর্ষজনক। অহঙ্কারিগণ লজ্জিত হউক, কেননা তাহারা মিথ্যা বলিয়া আমার সর্ব্বনাশ করিয়াছে; কিন্তু আমি তোমার নিদেশমালা ধ্যান করিতেছি। যাহারা তোমাকে ভয় করে, তাহারা আমার প্রতি ফিরুক, আর তাহারা তোমার সাক্ষ্যকলাপ বুঝিবে। আমার চিত্ত তোমার বিধিতে সিদ্ধ হউক, যেন আমি লজ্জিত না হই। তোমার পরিত্রাণের প্রতীক্ষায় আমার প্রাণ ক্ষীণ হয়, আমি তোমার বাক্যের অপেক্ষা করি। তোমার বচনের প্রতীক্ষায় আমার চক্ষু ক্ষীণ হয়, আমি বলি, তুমি কখন আমাকে সান্ত্বনা করিবে? কারণ আমি ধূমস্থ কুপার সদৃশ হইয়াছি; তথাপি তোমার বিধি ভুলিয়া যাই নাই। তোমার দাসের দিন কত? কবে আমার তাড়নাকারিগণের বিচার করিবে? অহঙ্কারিগণ আমার নিমিত্ত গর্ত্ত খুঁড়িয়াছে, তাহারা তোমার ব্যবস্থানুগামী নয়। তোমার সমস্ত আজ্ঞা বিশ্বসনীয়; লোকে মিথ্যা বলিয়া আমাকে তাড়না করে; আমার সাহায্য কর। উহারা পৃথিবীতে আমাকে প্রায় নিঃশেষ করিয়াছিল, কিন্তু আমি তোমার নিদেশমালা ত্যাগ করি নাই। তোমার দয়ানুসারে আমাকে সঞ্জীবিত কর, তাহাতে আমি তোমার মুখের সাক্ষ্য পালন করিব। অনন্তকালের নিমিত্ত, হে সদাপ্রভু, তোমার বাক্য স্বর্গে সংস্থাপিত। তোমার বিশ্বস্ততা পুরুষে পুরুষে স্থায়ী; তুমি পৃথিবীকে স্থাপন করিয়াছ, তাহা স্থির রহিয়াছে। অদ্যাপি তোমার শাসনানুসারে সকলই স্থির রহিয়াছে, কেননা সমস্তই তোমার দাস। যদি তোমার ব্যবস্থা আমার হর্ষজনক না হইত, তবে ইতিপূর্ব্বে আমি আপন দুঃখে বিনষ্ট হইতাম। আমি তোমার নিদেশমালা কখনও ভুলিয়া যাইব না, কারণ তদ্দ্বারা তুমি আমাকে সঞ্জীবিত করিয়াছ। আমি তোমারই, আমাকে পরিত্রাণ কর; কারণ আমি তব নিদেশমালার অন্বেষণ করিয়াছি। দুষ্টগণ আমাকে বিনষ্ট করিবার জন্য আমার অপেক্ষা করিয়াছে; আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ আলোচনা করিব। আমি সমস্ত সিদ্ধির অন্ত দেখিয়াছি; তোমার আজ্ঞা অতিশয় প্রশস্ত। আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়। তোমার আজ্ঞা সকল আমাকে শত্রুগণ অপেক্ষা জ্ঞানবান করে; কারণ সেই সকল চিরকাল আমার। আমার সমস্ত গুরু অপেক্ষা আমি জ্ঞানবান, কেননা আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ ধ্যান করি। প্রাচীন লোক হইতেও আমি বুদ্ধিমান, কারণ আমি তোমার নিদেশ সকল পালন করিয়াছি। আমি সমস্ত কুপথ হইতে আপন চরণ নিবৃত্ত করিয়াছি, যেন আমি তোমার বাক্য পালন করি। আমি তোমার শাসনপথ হইতে ফিরি নাই, কারণ তুমিই আমাকে শিক্ষা দিয়াছ। তোমার বচন সকল আমার তালুতে কেমন মিষ্ট লাগে! তাহা আমার মুখে মধু হইতেও মধুর! তোমার নিদেশমালা দ্বারা আমার বুদ্ধিলাভ হয়, তাই আমি সমুদয় মিথ্যাপথ ঘৃণা করি। তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক। আমি শপথ করিয়াছি, স্থির করিয়াছি, তোমার ধর্ম্মময় শাসনকলাপ পালন করিব। আমি অতিশয় দুঃখার্ত্ত; হে সদাপ্রভু, তোমার বাক্যানুসারে আমাকে সঞ্জীবিত কর। সদাপ্রভু, বিনয় করি, আমার স্বেচ্ছায় দত্ত মুখের উপহার সকল গ্রাহ্য কর, ও তোমার শাসনকলাপ আমাকে শিক্ষা দেও। আমার প্রাণ নিরন্তর আমার করতলে, তথাপি আমি তোমার ব্যবস্থা ভুলিয়া যাই নাই। দুষ্টগণ আমার নিমিত্ত ফাঁদ পাতিয়াছে, কিন্তু আমি তোমার নিদেশপথ হইতে বিপথগামী হই না। তোমার সাক্ষ্যকলাপ আমি চিরতরে অধিকার করিয়াছি, কারণ সে সকল আমার চিত্তের হর্ষজনক। আমি তোমার বিধিকলাপ পালন করিতে মনকে লওয়াইয়াছি, চিরকালের জন্য, শেষ পর্য্যন্ত। আমি দ্বিমনাদিগকে ঘৃণা করি, কিন্তু তোমার ব্যবস্থা ভালবাসি তুমি আমার অন্তরাল ও আমার ঢাল; আমি তোমার বাক্যে প্রত্যাশা রাখি। দুরাচারগণ, আমার নিকট হইতে দূর হও; আমি আপন ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল পালন করিব। তোমার বচনানুসারে আমাকে ধারণ কর, তাহাতে বাঁচিব, আমাকে নিজ আশার সম্বন্ধে লজ্জিত হইতে দিও না। আমাকে ধরিয়া রাখ, তাহাতে পরিত্রাণ পাইব, আর তোমার বিধিকলাপ সর্ব্বদা মান্য করিব। তুমি তাহাদের সকলকে হেয়জ্ঞান করিয়াছ, যাহারা তোমার বিধি-পথ হইতে ভ্রমে চলে; কেননা তাহাদের প্রবঞ্চনা অসার। তুমি পৃথিবীর সমস্ত দুষ্টকে মলবৎ দূর করিয়া থাক, তাই আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ ভালবাসি। তোমার ভয়ে আমার শরীর রোমাঞ্চিত হয়, তোমার শাসনকলাপে আমি ভীত। আমি ন্যায়বিচার ও ধর্ম্মাচরণ করিয়াছি, আমাকে উপদ্রবীদের হস্তে সমর্পণ করিও না। তুমি মঙ্গলের জন্য নিজ দাসের প্রতিভূ হও, অহঙ্কারীরা আমার প্রতি উপদ্রব না করুক। আমার চক্ষু ক্ষীণ হইতেছে, তোমার পরিত্রাণের জন্য, ও তোমার ধর্ম্মময় বচনের জন্য। তোমার দয়ানুসারে তোমার দাসের সহিত ব্যবহার কর, আর তোমার বিধিকলাপ আমাকে শিক্ষা দেও। আমি তোমার দাস, আমাকে বুদ্ধি দেও, যেন তোমার সাক্ষ্য সকল বুঝিতে পারি। সদাপ্রভুর কার্য্য করিবার সময় হইল, [কেননা] লোকে তোমার ব্যবস্থা খণ্ডন করিয়াছে। তজ্জন্য আমি তোমার আজ্ঞা সকল ভালবাসি, স্বর্ণ হইতে, নির্ম্মল স্বর্ণ হইতেও ভালবাসি। তজ্জন্য আমি সর্ব্ব বিষয়ে তোমার সমুদয় নিদেশ ন্যায্য জ্ঞান করি, সমস্ত মিথ্যাপথ ঘৃণা করি। তোমার সাক্ষ্যকলাপ আশ্চর্য্য, এই জন্য আমার প্রাণ সে সকল পালন করে। তব বাক্যসমূহের বিকাশ আলোক প্রদান করে, তাহা অমায়িকদিগকে বুদ্ধিমান করে। আমি মুখ খুলিয়া শ্বাস ফেলিতেছিলাম, কেননা তোমার আজ্ঞা সকলের আকাঙ্ক্ষা করিতেছিলাম। আমার প্রতি ফির, ও আমার প্রতি কৃপা কর, যেমন তোমার নামপ্রিয়দের প্রতি করিয়া থাক। তোমার বচনে আমার পাদবিক্ষেপ স্থির রাখ, কোন অধর্ম্ম আমার উপরে কর্ত্তৃত্ব না করুক। মনুষ্যের উপদ্রব হইতে আমাকে মুক্ত কর, তাহাতে আমি তোমার নিদেশমালা পালন করিব। তোমার দাসের প্রতি তোমার মুখ উজ্জ্বল কর, এবং তোমার বিধি সকল আমাকে শিক্ষা দেও। আমার চক্ষু হইতে জলধারা বহিতেছে, কারণ লোকে তোমার ব্যবস্থা পালন করে না। হে সদাপ্রভু, তুমি ধর্ম্মময় ও তোমার শাসন সকল ন্যায্য। তুমি ধর্ম্মশীলতায়, এবং অতীব বিশ্বস্ততায় তোমার সাক্ষ্যকলাপ আদেশ করিয়াছ। আমার উদ্যোগ আমাকে গ্রাস করিয়াছে, কারণ আমার বিপক্ষগণ তোমার বাক্য সকল ভুলিয়া গিয়াছে। তোমার বচন অতীব পরীক্ষাসিদ্ধ, তাই তোমার দাস তাহা ভালবাসে। আমি ক্ষুদ্র ও অবজ্ঞাত, [কিন্তু] আমি তোমার নিদেশ সকল ভুলিয়া যাই নাই। তোমার ধর্ম্মশীলতা চিরস্থায়ী ধর্ম্মশীলতা, আর তোমার ব্যবস্থা সত্য। সঙ্কট ও দুর্দ্দশা আমাকে পাইয়া বসিয়াছে, [তথাপি] তোমার আজ্ঞা সকল আমার হর্ষজনক। তোমার সাক্ষ্যকলাপ অনন্তকাল ধর্ম্মময়; আমাকে বুদ্ধি দেও, তাহাতে আমি বাঁচিব। আমি সর্ব্বান্তঃকরণে ডাকিয়াছি; হে সদাপ্রভু, আমাকে উত্তর দেও, আমি তোমার বিধিকলাপ পালন করিব। আমি তোমাকে ডাকিয়াছি; আমাকে পরিত্রাণ কর, তাহাতে আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ পালন করিব। আমি প্রভাতের অগ্রেও আর্ত্তনাদ করিলাম, আমি তোমার বাক্যসমূহের অপেক্ষাতে ছিলাম। আমার চক্ষু রাত্রিযামের পূর্ব্বে উন্মীলিত ছিল, যেন তোমার বচন ধ্যান করিতে পারি। তোমার দয়ানুসারে আমার রব শুন; হে সদাপ্রভু, তোমার শাসনানুসারে আমাকে সঞ্জীবিত কর। কুকর্ম্মের অনুগামীরা নিকটবর্ত্তী; তাহারা তোমার ব্যবস্থা হইতে দূরবর্ত্তী। হে সদাপ্রভু, তুমিই নিকটবর্ত্তী, আর তোমার সমস্ত আজ্ঞা সত্য। আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপের দ্বারা পূর্ব্বাবধি জানি, তুমি চিরতরে সে সমস্ত স্থাপন করিয়াছ। আমার দুঃখ দেখ, আমাকে উদ্ধার কর, কেননা আমি তোমার ব্যবস্থা ভুলিয়া যাই নাই। আমার বিবাদ নিষ্পত্তি কর, আমাকে মুক্ত কর, তোমার বচনানুসারে আমাকে সঞ্জীবিত কর। পরিত্রাণ দুষ্টগণ হইতে দূরবর্ত্তী, কারণ তাহারা তোমার বিধি সকলের অন্বেষণ করে না। হে সদাপ্রভু, তোমার করুণা বহুবিধ; তোমার শাসনকলাপানুসারে আমাকে সঞ্জীবিত কর। আমার তাড়নাকারী ও বিপক্ষ অনেক, [তথাপি] আমি তোমার সাক্ষ্যকলাপ হইতে বিপথগামী হই নাই। আমি বিশ্বাসঘাতকদগিকে দেখিয়া ঘৃণা করিলাম, কারণ তাহারা তোমার বচন পালন করে না। দেখ, আমি তোমার নিদেশ সকল কেমন ভালবাসি। সদাপ্রভু, তোমার দয়ানুসারে আমাকে সঞ্জীবিত কর। তোমার বাক্যের সমষ্টি সত্য, তোমার ধর্ম্মময় প্রত্যেক শাসন চিরস্থায়ী। অধ্যক্ষেরা অকারণে আমাকে তাড়না করিয়াছে, কিন্তু আমার মন তোমার বাক্যসমূহে ভীত হয়। আমি তোমার বচনে আনন্দ করি, যেমন মহালুট পাইলে লোকে করে। আমি মিথ্যাকে দ্বেষ করি, ঘৃণা করি, তোমার ব্যবস্থাই ভালবাসি। আমি দিনে সাত বার তোমার স্তব করি, তোমার ধর্ম্মময় শাসনকলাপের জন্য। যাহারা তোমার ব্যবস্থা ভালবাসে, তাহাদের পরম শান্তি, তাহাদের উছোট লাগে না। সদাপ্রভু, আমি তোমার পরিত্রাণের প্রত্যাশা করিয়াছি, ও তোমার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি। আমার প্রাণ তোমার সাক্ষ্যকলাপ পালন করিয়াছে, আমি সে সকল অতিশয় ভালবাসি। আমি তোমার নিদেশমালা ও সাক্ষ্যকলাপ পালন করিয়াছি; কারণ আমার সমস্ত পথ তোমার সম্মুখে। সদাপ্রভু, আমার কাকূক্তি তোমার নিকটে উপস্থিত হউক, তোমার বাক্যানুসারে আমাকে বুদ্ধি দেও। আমার বিনতি তোমার সম্মুখে উপস্থিত হউক, তোমার বচনানুসারে আমাকে নিস্তার কর। আমার ওষ্ঠাধর প্রশংসা করিবে, কারণ তুমি আমাকে তোমার বিধি সকল শিক্ষা দিতেছ। আমার জিহ্বা তোমার বচন কীর্ত্তন করিবে, যেহেতু তোমার সমস্ত আজ্ঞা ধর্ম্মময়। তোমার হস্ত আমার সহকারী হউক; কেননা আমি তোমার নিদেশমালা মনোনীত করিয়াছি। সদাপ্রভু, আমি তোমার পরিত্রাণের আকাঙ্ক্ষা করিয়াছি, এবং তোমার ব্যবস্থা আমার হর্ষজনক। আমার প্রাণ জীবিত থাকুক, সে তোমার প্রশংসা করিবে, আর তোমার শাসনকলাপ আমার সহকারী হউক। আমি হারাণ মেষের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছি; নিজ দাসের অন্বেষণ কর; কেননা আমি তোমার আজ্ঞাকলাপ ভুলিয়া যাই নাই। আমি সঙ্কটে সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন। সদাপ্রভু, আমার প্রাণ মিথ্যাবাদী ওষ্ঠাধর হইতে, প্রতারক জিহ্বা হইতে রক্ষা কর। হে প্রতারক জিহ্বা, তিনি তোমাকে কি দিবেন? তোমাকে অধিক কি যোগাইবেন? বীরের তীক্ষ্ণ বাণসমূহ, ও রোতমকাষ্ঠের অঙ্গারসমূহ। হায় হায়, আমি মেশকে প্রবাস করিতেছি, কেদরের তাম্বুসমূহের কাছে বাস করিতেছি। বহুকাল আমার প্রাণ এমন ব্যক্তির সহিত বাস করিয়াছে, যে সন্ধি ঘৃণা করে। আমি সন্ধিপ্রিয়, কিন্তু যখন কথা বলি উহারা যুদ্ধ চায়। আমি পর্ব্বতগণের দিকে চক্ষু তুলিব; কোথা হইতে আমার সাহায্য আসিবে? সদাপ্রভু হইতে আমার সাহায্য আইসে, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর নির্ম্মাণকর্ত্তা। তিনি তোমার চরণ বিচলিত হইতে দিবেন না, তোমার রক্ষক ঢুলিয়া পড়িবেন না। দেখ, যিনি ইস্রায়েলের রক্ষক, তিনি ঢুলিয়া পড়েন না, নিদ্রা যান না। সদাপ্রভুই তোমার রক্ষক, সদাপ্রভুই তোমার ছায়া, তিনি তোমার দক্ষিণ পার্শ্বে। দিবসে সূর্য্য তোমাকে আঘাত করিবে না, রাত্রিতে চন্দ্রও করিবে না। সদাপ্রভু তোমাকে সমস্ত অমঙ্গল হইতে রক্ষা করিবেন; তিনি তোমার প্রাণ রক্ষা করিবেন। সদাপ্রভু তোমার বাহিরে যাওয়া ও তোমার ভিতরে আসা রক্ষা করিবেন, এখন অবধি চিরকাল পর্য্যন্ত। আমি আনন্দিত হইলাম, যখন লোকে আমাকে বলিল, চল, আমরা সদাপ্রভুর গৃহে যাই। হে যিরূশালেম, তোমার দ্বারের ভিতরে আমাদের চরণ দণ্ডায়মান হইল। হে যিরূশালেম, তুমি নির্ম্মিত হইয়াছ একত্র সংযুক্ত নগরের ন্যায়। সেই স্থানে বংশ সকল, সদাপ্রভুর বংশ সকল উঠে, ইস্রায়েলকে দত্ত সাক্ষ্যের [নিমিত্ত], সদাপ্রভুর নামের স্তব করিবার জন্য। কেননা সেই স্থানে বিচারার্থক সিংহাসন সকল, দায়ূদ-কুলের সিংহাসন সকল স্থাপিত। তোমরা যিরূশালেমের শান্তি প্রার্থনা কর; যাহারা তোমাকে প্রেম করে, তাহাদের কল্যাণ হউক। তোমার প্রাচীরের মধ্যে শান্তি হউক, তোমার অট্টালিকাসমূহের মধ্যে কল্যাণ হউক। আমার ভ্রাতাদের ও মিত্রগণের অনুরোধে আমি বলিব, তোমার মধ্যে শান্তি বর্ত্তুক। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহের অনুরোধে আমি তোমার মঙ্গল চেষ্টা করিব। আমি তোমার দিকে চক্ষু তুলি, তুমিই স্বর্গে সমাসীন। দেখ, কর্ত্তার হস্তের প্রতি যেমন দাসদের দৃষ্টি, কর্ত্রীর হস্তের প্রতি যেমন দাসীর দৃষ্টি, তেমনি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি আমাদের দৃষ্টি, যত দিন না তিনি আমাদের প্রতি কৃপা করেন। আমাদিগকে কৃপা কর, হে সদাপ্রভু, কৃপা কর, কেননা আমরা অবজ্ঞায় নিতান্ত পূর্ণ হইয়াছি। আমাদের প্রাণ নিতান্ত পূর্ণ হইয়াছে, সুখী লোকদের বিদ্রূপে, অহঙ্কারীদের অবজ্ঞায়। যদি সদাপ্রভু আমাদের সপক্ষ না হইতেন, ইস্রায়েল ইহা বলুক, যদি সদাপ্রভু আমাদের সপক্ষ না হইতেন, যখন লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে উঠিয়াছিল, তখন তাহারা আমাদিগকে জীবদ্দশায় গ্রাস করিত, যখন আমাদের প্রতি তাহাদের ক্রোধ প্রজ্বলিত হইত। তখন জল আমাদিগকে প্লাবিত করিত, স্রোত আমাদের প্রাণের উপর দিয়া বহিত; তখন গর্ব্বিত জল আমাদের প্রাণের উপর দিয়া বহিত। ধন্য সদাপ্রভু, তিনি আমাদিগকে উহাদের দন্তশ্রেণীতে ভক্ষ্যবৎ সমর্পণ করেন নাই। আমাদের প্রাণ ব্যাধের ফাঁদ হইতে পক্ষীর ন্যায় রক্ষা পাইয়াছে; ফাঁদ ছিঁড়িয়াছে, আর আমরা রক্ষা পাইয়াছি। সদাপ্রভুর নামে আমাদের সাহায্য, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর নির্ম্মাণকর্ত্তা। যাহারা সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, তাহারা সিয়োন পর্ব্বতের সদৃশ, যাহা অটল ও চিরস্থায়ী। যিরূশালেমের চারিদিকে পর্ব্বতগণ আছে, আর সদাপ্রভু আপন প্রজাদের চারিদিকে আছেন; এখন অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত আছেন। কেননা দুষ্টতার রাজদণ্ড ধার্ম্মিকদের অধিকারের উপরে থাকিবে না, যেন ধার্ম্মিকগণ অন্যায়ে হস্তক্ষেপ না করে। সদাপ্রভু! তাহাদের মঙ্গল কর, যাহারা মঙ্গলস্বভাব, সরলচিত্তদের মঙ্গল কর। কিন্তু যাহারা আপনাদের বক্র পথে ফিরে, সদাপ্রভু তাহাদিগকে অধর্ম্মাচারীদের সহপথিক করিবেন। ইস্রায়েলের উপরে শান্তি বর্ত্তুক। সদাপ্রভু যখন সিয়োনের বন্দিদিগকে ফিরাইলেন, তখন আমরা স্বপ্নদর্শকদের ন্যায় হইলাম। তৎকালে আমাদের মুখ হাস্যে পূর্ণ হইল, আমাদের জিহ্বা আনন্দগানে পূর্ণ হইল; তৎকালে জাতিগণের মধ্যে লোকে বলিল, সদাপ্রভু উহাদের নিমিত্ত মহৎ মহৎ কর্ম্ম করিয়াছেন। সদাপ্রভু আমাদের নিমিত্ত মহৎ মহৎ কর্ম্ম করিয়াছেন, সে জন্য আমরা আনন্দিত হইয়াছি। সদাপ্রভু! আমাদের বন্দিদিগকে ফিরাইয়া আন, দক্ষিণ দেশের প্রণালীর ন্যায় ফিরাইয়া আন। যাহারা সজল নয়নে বীজ বপন করে, তাহারা আনন্দগান-সহ শস্য কাটিবে। যে ব্যক্তি রোদন করিতে করিতে বপনীয় বীজ লইয়া বাহিরে যায়, সে আনন্দগান-সহ আপন আটি লইয়া আসিবেই আসিবে। যদি সদাপ্রভু গৃহ নির্ম্মাণ না করেন, তবে নির্ম্মাতারা বৃথাই পরিশ্রম করে; যদি সদাপ্রভু নগর রক্ষা না করেন, রক্ষক বৃথাই জাগরণ করে। বৃথাই তোমরা প্রত্যূষে উঠ ও বিলম্বে শয়ন কর, এবং পরিশ্রমের খাদ্য ভক্ষণ কর, তিনি আপন প্রিয়পাত্রকে নিদ্রাযোগে এইরূপ দেন। দেখ, সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার, গর্ভের ফল তাঁহার দত্ত পুরস্কার। যেমন বীরের হস্তে বাণ সকল, তেমনি যৌবনের সন্তানগণ। ধন্য সেই পুরুষ, যাহার তূণ তাদৃশ বাণে পরিপূর্ণ; তাহারা লজ্জিত হইবে না, যখন তাহারা পুরদ্বারে শত্রুগণের সহিত কথা কহে। ধন্য সেই জন, যে কেহ সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার সকল পথে চলে। বাস্তবিক তুমি স্বহস্তের শ্রম-ফল ভোগ করিবে, তুমি ধন্য হইবে, ও তোমার মঙ্গল হইবে। তোমার গৃহের অন্তঃপুরে তোমার স্ত্রী ফলবতী দ্রাক্ষালতার ন্যায় হইবে, তোমার মেজের চারিদিকে তোমার সন্তানগণ জিত বৃক্ষের চারার ন্যায় হইবে। দেখ, যে ব্যক্তি সদাপ্রভুকে ভয় করে, সে এইরূপে আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হয়। সদাপ্রভু সিয়োন হইতে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করুন, যেন তুমি যাবজ্জীবন যিরূশালেমের মঙ্গল দেখিতে পাও, এবং তোমার সন্তানদের বংশ দেখিতে পাও। ইস্রায়েলের উপরে শান্তি বর্ত্তুক। আমার বাল্যকাল হইতে লোকে আমাকে অনেক পীড়ন করিয়াছে, ইস্রায়েল এই কথা বলুক, আমার বাল্যকাল হইতে লোকে আমাকে অনেক পীড়ন করিয়াছে, তথাপি আমার উপরে জয়ী হয় নাই। কৃষকেরা আমার পৃষ্ঠদেশ কর্ষণ করিয়াছে, তাহারা দীর্ঘ সীতা কাটিয়াছে। সদাপ্রভু ধর্ম্মময়, তিনি দুষ্টগণের রজ্জু ছেদন করিয়াছেন। সেই সকলে লজ্জিত হউক, হটিয়া যাউক, যাহারা সিয়োনকে দ্বেষ করে। তাহারা ছাদের উপরিস্থ তৃণের ন্যায় হউক, যাহা বাড়িতে না বাড়িতেই শুষ্ক হইয়া যায়; শস্যচ্ছেদক তাহাতে আপন হস্ত, আটিবন্ধনকারী আপন ক্রোড় পূর্ণ করে না। আর পথিকেরা বলে না, সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদ তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক, আমরা সদাপ্রভুর নামে তোমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করি। হে সদাপ্রভু, আমি গভীর জলে থাকিয়া তোমাকে ডাকিয়াছি। হে প্রভু, আমার রব শুন, তোমার কর্ণ আমার বিনতির রবে অবধান করুক। হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে? কিন্তু তোমার কাছে ক্ষমা আছে, যেন লোকে তোমাকে ভয় করে। আমি সদাপ্রভুর অপেক্ষা করিতেছি; আমার প্রাণ অপেক্ষা করিতেছে; আমি তাঁহার বাক্যে প্রত্যাশা করিতেছি। প্রহরিগণ যেরূপ প্রত্যূষের, প্রহরিগণ যেরূপ প্রত্যূষের জন্য আকাঙ্ক্ষী, আমার প্রাণ প্রভুর জন্য ততোধিক আকাঙ্ক্ষী। ইস্রায়েল, সদাপ্রভুতে প্রত্যাশা কর; কেননা সদাপ্রভুর কাছে দয়া আছে; আর তাঁহার কাছে প্রচুর মুক্তি আছে। আর তিনিই ইস্রায়েলকে মুক্ত করিবেন, তাহার সমস্ত অপরাধ হইতে মুক্ত করিবেন। সদাপ্রভু, আমার চিত্ত গর্ব্বিত নয়, আমার দৃষ্টি উচ্চ নয়, আমি ব্যাপৃত হই নাই মহৎ বিষয়ে, আমার বোধের অতীত আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য বিষয়ে। আমি আপন প্রাণকে শান্ত দান্ত করিয়াছি, সেই শিশুর ন্যায়, যে স্তন্য ছাড়িয়া মাতার সঙ্গে আছে, আমার প্রাণ ত্যক্তস্তন্য শিশুর ন্যায় আমার সঙ্গে আছে। হে ইস্রায়েল, সদাপ্রভুতে প্রত্যাশা কর এখন অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত। সদাপ্রভু, তুমি দায়ূদের পক্ষে তাঁহার সমস্ত কষ্ট স্মরণ কর। তিনি ত সদাপ্রভুর কাছে শপথ করিয়াছিলেন, যাকোবের একবীরের কাছে মানত করিয়াছিলেন; আমি নিজ গৃহ-তাম্বুতে প্রবেশ করিব না, নিজ শয়ন-খট্টায় উঠিব না; আমি নিজ চক্ষুকে নিদ্রা যাইতে দিব না, চক্ষুর পাতাকে তন্দ্রা মগ্ন হইতে দিব না, যাবৎ দেখিতে না পাই সদাপ্রভুর নিমিত্ত এক স্থান, যাকোবের একবীরের নিমিত্ত এক আবাস। দেখ, আমরা ইফ্রাথায় তাহার সংবাদ শুনিয়াছিলাম, অরণ্যের ক্ষেত্রে তাহা পাইয়াছি। আইস, আমরা তাঁহার আবাসে যাই, তাঁহার পাদপীঠে প্রণিপাত করি। হে সদাপ্রভু, উঠ, তোমার বিশ্রাম-স্থানে আইস, তুমি ও তোমার শক্তির সিন্দুক আইস। তোমার যাজকগণ ধার্ম্মিকতা-পরিহিত হউক, তোমার সাধুগণ আনন্দগান করুক। তুমি তোমার দাস দায়ূদের অনুরোধে তোমার অভিষিক্ত ব্যক্তির মুখ ফিরাইও না। সদাপ্রভু দায়ূদের কাছে সত্যে শপথ করিয়াছেন, তিনি তাহা হইতে ফিরিবেন না, আমি তোমার তনুর ফল তোমার সিংহাসনে বসাইব। তোমার সন্তানগণ যদি পালন করে আমার নিয়ম, আর আমার সাক্ষ্য, যাহা আমি তাহাদিগকে আদেশ করি, তবে তাহাদের সন্তানগণও চিরতরে তোমার সিংহাসনে উপবিষ্ট থাকিবে। কারণ সদাপ্রভু সিয়োনকে মনোনীত করিয়াছেন, তিনি আপন নিবাসের নিমিত্ত তাহা বাসনা করিয়াছেন। এই আমার চিরকালের বিশ্রামস্থান, আমি এই স্থানে বাস করিব, যেহেতু তাহাই বাসনা করিয়াছি। আমি তাহার ভক্ষ্যে বিপুল আশীর্ব্বাদ করিব, তাহার দরিদ্রগণকে অন্নদানে তৃপ্ত করিব। আমি তাহার যাজকগণকেও ত্রাণবস্ত্র পরিধান করাইব; তাহার সাধুগণ উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিবে। আমি সেখানে দায়ূদের জন্য এক শৃঙ্গ উদ্ভব করিব; আমি আপন অভিষিক্ত ব্যক্তির জন্য এক প্রদীপ সাজাইয়াছি। আমি তাহার শত্রুগণকে লজ্জা-পরিহিত করিব; কিন্তু তাহার মস্তকে তাহার মুকুট শোভা পাইবে। দেখ, ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারা একসঙ্গে ঐক্যে বাস করে! তাহা মস্তকে নিষিক্ত উৎকৃষ্ট তৈল-সদৃশ, যাহা দাড়িতে, হারোণের দাড়িতে ক্ষরিয়া পড়িল, তাঁহার বস্ত্রের গলায় ক্ষরিয়া পড়িল। তাহা হর্ম্মোণের শিশিরের সদৃশ, যাহা সিয়োন পর্ব্বতে ক্ষরিয়া পড়ে; কারণ তথায় সদাপ্রভু আশীর্ব্বাদ আজ্ঞা করিলেন, অনন্তকালের জন্য জীবন আজ্ঞা করিলেন। দেখ, হে সদাপ্রভুর দাস সকল, তোমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, তোমরা, যাহারা রাত্রিকালে সদাপ্রভুর গৃহে দাঁড়াইয়া থাক। তোমরা পবিত্র স্থানের দিকে স্ব স্ব হস্ত উত্তোলন কর, ও সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। সদাপ্রভু সিয়োন হইতে তোমাকে আশীর্ব্বাদ করুন, তিনি আকাশ ও পৃথিবীর নির্ম্মাণকর্ত্তা। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর; সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা কর, হে সদাপ্রভুর দাসগণ, তোমরা প্রশংসা কর; তোমরা, যাহারা সদাপ্রভুর গৃহে দাঁড়াইয়া থাক, আমাদের ঈশ্বরের গৃহ-প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়া থাক। সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, কেননা সদাপ্রভু মঙ্গলময়; তাঁহার নামের উদ্দেশে সঙ্গীত কর, কেননা তাহা মনোহর। কারণ সদাপ্রভু আপনার নিমিত্ত যাকোবকে, নিজস্ব অধিকার বলিয়া ইস্রায়েলকে মনোনীত করিয়াছেন। আমি ত জানি, সদাপ্রভু মহান, আমাদের প্রভু সমস্ত দেবতা অপেক্ষা মহান্‌। সদাপ্রভু যাহা ইচ্ছা করিয়াছেন, তাহাই করিয়াছেন, আকাশে, পৃথিবীতে, সমুদ্র-সমূহে ও সমস্ত জলধি-মধ্যে করিয়াছেন। তিনি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে বাষ্প উত্থাপন করেন, তিনি বৃষ্টির নিমিত্ত বিদ্যুৎ গঠন করেন, আপন ভাণ্ডার হইতে বায়ু বাহির করিয়া আনেন। তিনি মিসরের প্রথমজাতদিগকে আঘাত করিয়াছিলেন, মনুষ্য ও পশু উভয়ের মধ্যে। হে মিসর! তিনি তোমার মধ্যে চিহ্ন ও লক্ষণমালা পাঠাইয়াছিলেন, ফরৌণের ও তাঁহার সমস্ত দাসের বিরুদ্ধে। তিনি আঘাত করিয়াছিলেন বড় বড় জাতিকে, বধ করিয়াছিলেন বিক্রমী রাজগণকে; ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে, বাশনের রাজা ওগকে, ও কনানের সমস্ত রাজ্যকে। তিনি তাহাদের দেশ অধিকার জন্য দিলেন, নিজ প্রজা ইস্রায়েলকে অধিকার জন্য দিলেন। হে সদাপ্রভু, তোমার নাম অনন্তকালস্থায়ী, হে সদাপ্রভু, তোমার স্মরণ পুরুষানুক্রমে স্থায়ী। কারণ সদাপ্রভু আপন প্রজাদের বিচার করিবেন, আপন দাসগণের উপরে সদয় হইবেন। জাতিগণের প্রতিমা সকল রৌপ্য ও সুবর্ণ, সে গুলি মনুষ্যের হস্তের কার্য্য। মুখ থাকিতেও তাহারা কথা কহে না; চক্ষু থাকিতেও দেখিতে পায় না; কর্ণ থাকিতেও শুনিতে পায় না; তাহাদের মুখে শ্বাসমাত্রও নাই। যেমন তাহারা, তেমনি হইবে তাহাদের নির্ম্মাতারা, আর যে কেহ সে গুলিতে নির্ভর করে। হে ইস্রায়েলের কুল, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর; হে হারোণের কুল, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর; হে লেবির কুল, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর; হে সদাপ্রভুর ভয়কারিগণ, সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর। ধন্য হউন সদাপ্রভু সিয়োন হইতে, তিনি যিরূশালেমে বাস করেন। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। তোমরা সদাপ্রভুর স্তব কর; কেননা তিনি মঙ্গলময়; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— ঈশ্বরগণের ঈশ্বরের স্তব কর; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— প্রভুদিগের প্রভুর স্তব কর; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— [তাঁহার স্তব কর,] যিনি একা মহৎ মহৎ আশ্চর্য্য কর্ম্ম করেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— যিনি বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল নির্ম্মাণ করিয়াছেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— যিনি জলের উপরে ভূমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— যিনি বৃহৎ জ্যোতির্গণ নির্ম্মাণ করিয়াছেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— যিনি দিনমানে কর্ত্তৃত্ব করণার্থে সূর্য্য গড়িয়াছেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— রাত্রিতে কর্ত্তৃত্ব করণার্থে চন্দ্র ও তারকামালা গড়িয়াছেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— [তাঁহার স্তব কর,] যিনি প্রথমজাতদের সম্বন্ধে মিসরকে আঘাত করিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— এবং তাহাদের মধ্য হইতে ইস্রায়েলকে বাহির করিয়া আনিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— বলবান হস্ত ও বিস্তারিত বাহু দ্বারাই আনিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— [তাঁহার স্তব কর,] যিনি সূফ-সাগরকে দ্বিভাগ করিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— এবং তাহার মধ্য দিয়া ইস্রায়েলকে পার করিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— কিন্তু ফরৌণ ও তাঁহার বাহিনীকে সূফ-সাগরে ঠেলিয়া দিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— [তাঁহার স্তব কর,] যিনি নিজ প্রজাগণকে প্রান্তরের মধ্য দিয়া গমন করাইলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— যিনি মহান্‌ রাজগণকে আঘাত করিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— প্রতাপান্বিত রাজগণকে বধ করিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে, —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— ও বাশনের রাজা ওগকে [বধ করিলেন]; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— এবং তাহাদের দেশ অধিকার জন্য দিলেন, —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— নিজ দাস ইস্রায়েলকে অধিকার জন্য দিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— তিনি আমাদের হীনাবস্থায় আমাদিগকে স্মরণ করিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— বিপক্ষগণ হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিলেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— তিনি সমস্ত প্রাণীকে আহার দেন; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— স্বর্গের ঈশ্বরের স্তব কর; —তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী— বাবিলীয় নদী সকলের তীরে, তথায় আমরা বসিতাম আর কাঁদিতাম, যখন সিয়োনকে মনে পড়িত। আমরা তথাকার বাইশী বৃক্ষে আপন আপন বীণা টাঙ্গাইয়া রাখিতাম। কারণ তথায় আমাদের বন্দিকারীরা আমাদের কাছে গীত শুনিতে চাহিত, আমাদের উপদ্রবিগণ আনন্দের রব শুনিতে চাহিত, বলিত, ‘আমাদের কাছে সিয়োনের একটা গীত গাও।’ আমরা কেমন করিয়া বিজাতীয় ভূমিতে সদাপ্রভুর গীত গান করিব? যিরূশালেম, যদি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাই, আমার দক্ষিণ হস্ত [কৌশল] ভুলিয়া যাউক। আমার জিহ্বা তালুতে সংলগ্ন হউক, যদি আমি তোমাকে মনে না করি, যদি আপন পরমানন্দ হইতে যিরূশালেমকে অধিক ভাল না বাসি। হে সদাপ্রভু, ইদোম-সন্তানদের বিরুদ্ধে যিরূশালেমের দিন স্মরণ কর; তাহারা বলিয়াছিল, ‘উৎপাটন কর, উহার মূল পর্য্যন্ত উৎপাটন কর।’ হে বাবিল-কন্যা, হে বিনাশপাত্রি, ধন্য সেই, যে তোমাকে সেইরূপ প্রতিফল দিবে, যেরূপ তুমি আমাদের প্রতি করিয়াছ। ধন্য সেই, যে তোমার শিশুগণকে ধরে, আর শৈলের উপরে আছড়ায়। আমি সর্ব্বন্তঃকরণে তোমার স্তব করিব, দেবগণের সাক্ষাতে তোমার কীর্ত্তন করিব। তব পবিত্র মন্দিরের অভিমুখে প্রণিপাত করিব, তব দয়া ও তব সত্য প্রযুক্ত তোমার নামের স্তব করিব; কেননা তোমার সমস্ত নাম অপেক্ষা তুমি আপন বচন মহিমান্বিত করিয়াছ। যে দিন আমি ডাকিলাম, তুমি আমাকে উত্তর দিলে, আমার প্রাণে শক্তি দিয়া আমাকে উৎসাহযুক্ত করিলে। হে সদাপ্রভু, পৃথিবীর সমস্ত রাজা তোমার স্তব করিবে, কারণ তাহারা তোমার মুখের বাক্য শুনিয়াছে; তাহারা সদাপ্রভুর পথ সকলের বিষয় গান করিবে, কেননা সদাপ্রভুর গৌরব মহৎ। কারণ সদাপ্রভু উচ্চ, তথাপি অবনতের প্রতি দৃষ্টি রাখেন, কিন্তু গর্ব্বিতকে দূর হইতে জানেন। যদিও আমি সঙ্কটের মধ্য দিয়া গমন করি, তবু তুমি আমাকে সঞ্জীবিত করিবে; তুমি আমার শত্রুদের ক্রোধের প্রতিকূলে তোমার হস্ত বিস্তার করিবে, তোমার দক্ষিণ হস্ত আমাকে পরিত্রাণ করিবে। সদাপ্রভু আমার পক্ষে সকলই সিদ্ধ করিবেন; হে সদাপ্রভু, তোমার দয়া অনন্তকালস্থায়ী; তোমার স্বহস্তের কর্ম্ম পরিত্যাগ করিও না। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে অনুসন্ধান করিয়াছ, আমাকে জ্ঞাত হইয়াছ। তুমিই আমার উপবেশন ও আমার উত্থান জানিতেছ, তুমি দূর হইতে আমার সঙ্কল্প বুঝিতেছ। তুমি আমার পথ ও আমার শয়ন তদন্ত করিতেছ, আমার সমস্ত পথ ভালরূপে জান। যখন আমার জিহ্বাতে একটী কথাও নাই, দেখ, সদাপ্রভু, তুমি উহা সমস্তই জানিতেছ। তুমি আমার অগ্রপশ্চাৎ ঘেরিয়াছ, আমার উপরে তোমার করতল রাখিয়াছ। এই জ্ঞান আমার নিকটে অতি আশ্চর্য্য, তাহা উচ্চ, আমার বোধের অগম্য। আমি তোমার আত্মা হইতে কোথায় যাইব? তোমার সাক্ষাৎ হইতে কোথায় পলাইব? যদি স্বর্গে গিয়া উঠি, সেখানে তুমি; যদি পাতালে শয্যা পাতি, দেখ, সেখানে তুমি। যদি অরুণের পক্ষ অবলম্বন করি, যদি সমুদ্রের পরপ্রান্তে বাস করি, সেখানেও তোমার হস্ত আমাকে চালাইবে, তোমার দক্ষিণ হস্ত আমাকে ধরিবে। যদি বলি, ‘আঁধার আমাকে ঢাকিয়া ফেলিবে, আমার চারিদিকে আলোক রাত্রি হইবে,’ বাস্তবিক অন্ধকারও তোমা হইতে গুপ্ত রাখে না, বরং রাত্রি দিনের ন্যায় আলো দেয়; অন্ধকার ও আলোক উভয়ই সমান। বস্তুতঃ তুমিই আমার মর্ম্ম রচনা করিয়াছ; তুমি মাতৃগর্ভে আমাকে বুনিয়াছিলে। আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত; তোমার কর্ম্ম সকল আশ্চর্য্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে। আমার দেহ তোমা হইতে লুক্কায়িত ছিল না, যখন আমি গোপনে নির্ম্মিত হইতেছিলাম, পৃথিবীর অধঃস্থানে শিল্পিত হইতেছিলাম। তোমার চক্ষু আমাকে পিণ্ডাকার দেখিয়াছে, তোমার পুস্তকে সমস্তই লিখিত ছিল, যাহা দিন দিন গঠিত হইতেছিল, যখন সে সকলের একটীও ছিল না। হে ঈশ্বর, আমার পক্ষে তোমার সঙ্কল্প সকল কেমন মূল্যবান। তাহার সমষ্টি কেমন অধিক! গণনা করিলে তাহা বালুকা অপেক্ষা বহু সংখ্যক হয়; আমি যখন জাগিয়া উঠি, তখনও তোমার নিকটে থাকি। হে ঈশ্বর, তুমি নিশ্চয়ই দুষ্টকে বধ করিবে; হে রক্তপাতীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও। তাহারা দুষ্ট ভাবে তোমার নাম উচ্চারণ করে; তোমার শত্রুগণ তাহা অনর্থক লয়। হে সদাপ্রভু, যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, আমি কি তাহাদিগকে দ্বেষ করি না? যাহারা তোমার বিরুদ্ধে উঠে, তাহাদের প্রতি কি বিরক্ত হই না? আমি যার পর নাই দ্বেষে তাহাদিগকে দ্বেষ করি; তাহাদিগকে আমারই শত্রু মনে করি। হে ঈশ্বর, আমাকে অনুসন্ধান কর, আমার অন্তঃকরণ জ্ঞাত হও; আমার পরীক্ষা কর, আমার চিন্তা সকল জ্ঞাত হও; আর দেখ, আমাতে দুষ্টতার পথ পাওয়া যায় কি না, এবং সনাতন পথে আমাকে গমন করাও। হে সদাপ্রভু, দুর্ব্বৃত্ত মনুষ্য হইতে আমাকে উদ্ধার কর, দুর্জ্জন হইতে আমাকে রক্ষা কর। তাহারা মনে মনে দুষ্ট কল্পনা করে, প্রতিদিন যুদ্ধ উত্তেজিত করে। তাহারা সর্পের ন্যায় স্ব স্ব জিহ্বা তীক্ষ্ণ করিয়াছে, তাহাদের ওষ্ঠাধরের নিম্নভাগে কালসর্পের বিষ থাকে। সেলা। হে সদাপ্রভু, দুষ্টের হস্ত হইতে আমাকে নিস্তার কর, দুর্জ্জন হইতে আমাকে রক্ষা কর; তাহারা আমার চরণ ঠেলিয়া দিবার সঙ্কল্প করিয়াছে। অহঙ্কারিগণ গোপনে আমার নিমিত্ত ফাঁদ ও দড়ি প্রস্তুত করিয়াছে, তাহারা পথের পার্শ্বে জাল পাতিয়াছে, আমার জন্য যন্ত্র বসাইয়াছে। সেলা। আমি সদাপ্রভুকে কহিলাম, তুমি আমার ঈশ্বর; হে সদাপ্রভু, আমার বিনতির রবে কর্ণপাত কর। হে প্রভু সদাপ্রভু, আমার পরিত্রাণের বল, যুদ্ধের দিনে তুমি আমার মস্তক আচ্ছাদন করিয়াছ। হে সদাপ্রভু, দুষ্টের বাঞ্ছা পূর্ণ করিও না; তাহার সঙ্কল্প সিদ্ধ করিও না, পাছে তাহারা গর্ব্বিত হয়। সেলা। যাহারা আমাকে ঘেরে, তাহাদের মস্তক তাহাদের ওষ্ঠাধরের দৌরাত্ম্যে আচ্ছাদিত হউক; তাহাদের উপরে জ্বলন্ত অঙ্গার পড়ুক, তাহারা নিক্ষিপ্ত হউক অগ্নিতে, নিক্ষিপ্ত হউক গভীর খাতে, আর না উঠুক। পৃথিবীতে দুর্ম্মুখ স্থির থাকিতে পারিবে না; অমঙ্গল দুর্জ্জনকে নিপাত করিবার জন্য মৃগয়া করিবে। আমি জানি, সদাপ্রভু দুঃখীর বিবাদ, ও দরিদ্রবর্গের বিচার নিষ্পন্ন করিবেন। ধার্ম্মিকেরা অবশ্য তোমার নামের স্তব করিবে; সরলগণ তোমার সাক্ষাতে বাস করিবে। হে সদাপ্রভু, আমি তোমাকে ডাকিয়াছি, আমার পক্ষে ত্বরা কর; আমি তোমাকে ডাকিলে আমার রবে কর্ণপাত কর। আমার প্রার্থনা তোমার সম্মুখে সুগন্ধি ধূপরূপে, আমার অঞ্জলি-প্রসারণ সান্ধ্য উপহাররূপে সাজান হউক। হে সদাপ্রভু, আমার মুখে প্রহরী নিযুক্ত কর, আমার ওষ্ঠাধরের কবাট রক্ষা কর। কোন মন্দ বিষয়ে আমার চিত্তকে প্রবৃত্ত হইতে দিও না, আমি যেন অধর্ম্মাচারী লোকদের সহিত দুষ্ক্রিয়ায় ব্যাপৃত না হই, এবং উহাদের সুস্বাদু ভক্ষ্য ভোজন না করি। ধার্ম্মিক লোক আমাকে প্রহার করুক, সেটী দয়া; সে আমাকে অনুযোগ করুক, তাহা মস্তকের তৈল; আমার মস্তক তাহা অগ্রাহ্য না করুক, উহাদের দুষ্টতাসমূহের মধ্যেও আমি প্রার্থনা করিব। উহাদের বিচারকর্ত্তারা শৈলপার্শ্বে নিক্ষিপ্ত হইল; লোকেরা আমার বাক্য শুনিবে, কেননা তাহা মধুর। ভূমির কর্ষক ও খননকারী যেমন করে, তেমনি পাতালের মুখে আমাদের অস্থি সকল ছড়াইয়া পড়িয়াছে। বাস্তবিক, হে প্রভু সদাপ্রভু, আমার চক্ষু তোমার দিকে আছে; আমি তোমারই শরণাগত, আমার প্রাণ ঢালিয়া ফেলিও না। আমার জন্য পাতিত ফাঁদ হইতে, অধর্ম্মাচারীদের যন্ত্র হইতে, আমাকে রক্ষা কর। দুষ্টগণ আপনাদেরই জালে পতিত হউক; সেই অবসরে আমি উত্তীর্ণ হইব। আমি নিজ রবে সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করি, নিজ রবে সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করি। আমি তাঁহার কাছে আমার খেদের কথা ভাঙ্গিয়া বলি, তাঁহাকে আমার সঙ্কট জানাই। আমার আত্মা যখন আমার মধ্যে অবসন্ন হইয়াছিল, তখন তুমিই আমার মার্গ জ্ঞাত ছিলে; যে পথে আমি চলি, লোকেরা গোপনে আমার জন্য ফাঁদ পাতিয়াছে। [আমার] দক্ষিণে নিরীক্ষণ করিয়া দেখ, আমাকে চিনে এমন কেহই নাই, আমার আশ্রয় বিনষ্ট হইল; কেহই আমার প্রাণের তত্ত্ব করে না। আমি তোমার কাছে কাঁদিলাম, হে সদাপ্রভু, আমি কহিলাম, তুমিই আমার আশ্রয়, তুমি জীবিত লোকদের দেশে আমার অধিকার। আমার কাকূক্তিতে অবধান কর, কেননা আমি অতিশয় ক্ষীণ হইয়াছি; আমার তাড়নাকারিগণ হইতে আমাকে উদ্ধার কর; কেননা আমা অপেক্ষা তাহারা বলবান। কারাগার হইতে আমার প্রাণ উদ্ধার কর, যেন আমি তোমার নামের স্তব করি; ধার্ম্মিকেরা আমাকে বেষ্টন করিবে, কেননা তুমি আমার মঙ্গল করিবে। সদাপ্রভু, আমার প্রার্থনা শুন; আমার বিনতিতে কর্ণপাত কর; তোমার বিশ্বস্ততায় ও তোমার ধর্ম্মশীলতায় আমাকে উত্তর দেও। তোমার দাসকে বিচারে আনিও না, তোমার সাক্ষাতে ত কোন প্রাণী ধার্ম্মিক নয়। শত্রু আমার প্রাণকে তাড়না করিয়াছে; সে আমার জীবন ভূমিতে চূর্ণ করিয়াছে; সে আমাকে অন্ধকারে বাস করাইয়াছে, চিরকালের মৃতগণের সদৃশ করিয়াছে। ইহাতে আমার আত্মা অন্তরে অবসন্ন হইয়াছে, আমার অন্তরে চিত্ত অসার হইয়াছে। আমি পূর্ব্বকালের দিন সকল স্মরণ করিতেছি, তোমার সমস্ত কর্ম্ম ধ্যান করিতেছি, তোমার হস্তের কার্য্য আলোচনা করিতেছি। আমি তোমার উদ্দেশে অঞ্জলি প্রসারণ করিতেছি; সেলা। শুষ্ক ভূমির ন্যায় আমার প্রাণ তোমার আকাঙ্ক্ষী। আমাকে উত্তর দানে সত্বর হও, সদাপ্রভু, আমার উৎসাহ শেষ হইয়াছে; আমা হইতে তোমার মুখ লুক্কায়িত করিও না, পাছে আমি গর্ত্তগামীদের তুল্য হইয়া পড়ি। প্রাতে আমাকে তোমার দয়ার বচন শুনাও, কেননা তোমাতে আমি নির্ভর করিতেছি; আমার গন্তব্য পথ আমাকে জানাও, কেননা আমি তোমার দিকে নিজ প্রাণ উত্তোলন করি। হে সদাপ্রভু, আমার শত্রুগণ হইতে আমাকে নিস্তার কর; আমি তোমারই কাছে লুকাইয়াছি। তোমার ইষ্ট সাধন করিতে আমাকে শিক্ষা দেও; কেননা তুমিই আমার ঈশ্বর; তোমার আত্মা মঙ্গলময়, আমাকে সরল ভূমি দিয়া চালাও। সদাপ্রভু, তোমার নামের অনুরোধে আমাকে সঞ্জীবিত কর; তোমার ধর্ম্মশীলতায় সঙ্কট হইতে আমার প্রাণ উদ্ধার কর। আর তোমার দয়াতে আমার শত্রুদিগকে উচ্ছেদ কর, আমার প্রাণের সমস্ত দুঃখদায়ীকে বিনষ্ট কর, কেননা আমি তোমার দাস। ধন্য সদাপ্রভু, আমার শৈল, তিনিই আমার হস্তকে যুদ্ধ শিখান, আমার অঙ্গুলি সকলকে সংগ্রাম শিক্ষা দেন। তিনি আমার দয়াস্বরূপ ও আমার দুর্গ, আমার উচ্চদুর্গ ও আমার নিস্তারকর্ত্তা; তিনি আমার ঢাল, আমি তাঁহারই শরণাগত; তিনি আমার প্রজাদিগকে আমার অধীনে নত করেন। হে সদাপ্রভু, মনুষ্য কি যে তুমি তাহার পরিচয় লও? মর্ত্ত্যের সন্তান কি যে তুমি তাহাকে গণ্য কর? মনুষ্য নিঃশ্বাসের তুল্য, তাহার আয়ু ছায়ার সদৃশ, যাহা চলিয়া যায়। হে সদাপ্রভু, তোমার আকাশমণ্ডল নোয়াইয়া নামিয়া আইস; পর্ব্বতগণকে স্পর্শ কর, তাহারা ধূমাইবে। বিদ্যুৎ নিক্ষেপ কর, উহাদিগকে ছিন্নভিন্ন কর, তোমার বাণ ছাড়, উহাদিগকে সংহার কর ঊর্দ্ধ হইতে তোমার হস্ত প্রসারণ কর; আমাকে উদ্ধার কর, মহাজল হইতে রক্ষা কর, সেই বিজাতি-সন্তানদের হস্ত হইতে রক্ষা কর, যাহাদের মুখ অলীক কথা কহে, যাহাদের দক্ষিণ হস্ত মিথ্যার দক্ষিণ হস্ত। হে ঈশ্বর, আমি তোমার উদ্দেশে নূতন গীত গাহিব, দশতন্ত্রী নেবলে তোমার প্রশংসা গাহিব। তুমিই রাজাদিগের ত্রাণদাতা, মারাত্মক খড়্‌গ হইতে আপন দাস দায়ূদের উদ্ধারকর্ত্তা। আমাকে উদ্ধার কর, সেই বিজাতি-সন্তানদের হস্ত হইতে রক্ষা কর, যাহাদের মুখ অলীক কথা কহে, যাহাদের দক্ষিণ হস্ত মিথ্যার দক্ষিণ হস্ত। আমাদের পুত্রগণ যেন বৃক্ষের চারার ন্যায় যৌবনে বর্দ্ধনশীল হয়, আমাদের কন্যাগণ যেন প্রাসাদের গাঁথনীর অনুরূপে তক্ষিত কোণের স্তম্ভ সদৃশ হয়; আমাদের ভাণ্ডার সকল যেন পরিপূর্ণ ও নানা প্রকার দ্রব্যবিশিষ্ট হয়; আমাদের মেষগণ যেন আমাদের মাঠে সহস্র সহস্র ও অযুত অযুত শাবক প্রসব করে; আমাদের বলদ সকল যেন ভার বহন করে; ভগ্নদশা যেন না হয়, হানিও যেন না হয়, আমাদের কোন চকে যেন ক্রন্দন না হয়। ধন্য সেই জাতি, যে এরূপ অবস্থাপন্ন; ধন্য সেই জাতি, সদাপ্রভু যাহার ঈশ্বর। আমি তোমার প্রতিষ্ঠা করিব, হে আমার ঈশ্বর, হে রাজন্‌, আমি অনন্তকাল তোমার নামের ধন্যবাদ করিব। প্রতিদিন আমি তোমার ধন্যবাদ করিব, যুগে যুগে চিরকাল তোমার নামের প্রশংসা করিব। সদাপ্রভু মহান্‌ ও অতীব কীর্ত্তনীয়; তাঁহার মহিমার তত্ত্ব পাওয়া যায় না। বংশানুক্রমে এক পুরুষ অন্য পুরুষের কাছে তোমার ক্রিয়া সকলের প্রশংসা করিবে, তোমার পরাক্রমের কার্য্য সকল প্রচার করিবে। তোমার প্রভার গৌরবযুক্ত প্রতাপ, ও তোমার আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল আমি ধ্যান করিব। আর লোকে তোমার ভয়াবহ কর্ম্ম সকলের বিক্রমের কথা বলিবে, এবং আমি তোমার মহিমার বর্ণনা করিব। তাহারা তোমার মহৎ মঙ্গলভাবের খ্যাতি প্রচার করিবে, তোমার ধর্ম্মশীলতার বিষয় গান করিবে। সদাপ্রভু কৃপাময় ও স্নেহশীল, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্‌। সদাপ্রভু সকলের পক্ষে মঙ্গলময়, তাঁহার করুণা তাঁহার কৃত সমস্ত পদার্থের উপরে আছে। হে সদাপ্রভু, তোমার সমস্ত পদার্থ তোমার প্রশংসা করে, এবং তোমার সাধুগণ তোমার ধন্যবাদ করে। তাহারা তোমার রাজ্যের গৌরব বর্ণনা করে, তোমার পরাক্রমের কথা বলে, যেন মনুষ্য-সন্তানগণকে জানাইতে পারে তাঁহার পরাক্রমের কার্য্য সকল, এবং তাঁহার রাজ্যের প্রতাপের গৌরব। তোমার রাজ্য সর্ব্বযুগের রাজ্য, তোমার কর্ত্তৃত্ব পুরুষে পুরুষে চিরস্থায়ী। সদাপ্রভু পতনোম্মুখ সকলকে ধরিয়া রাখেন, অবনত সকলকে উত্থাপন করেন। সকলের চক্ষু তোমার অপেক্ষা করে, তুমিই যথাসময়ে তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিতেছ। তুমিই আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক। সদাপ্রভু আপনার সমস্ত পথে ধর্ম্মশীল, আপনার সমস্ত কার্য্যে দয়াবান্‌। সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে, যাহারা সত্যে তাঁহাকে ডাকে। যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তিনি তাহাদের বাঞ্ছা পূর্ণ করেন, আর তাহাদের আর্ত্তনাদ শুনিয়া তাহাদিগকে ত্রাণ করেন। যাহারা সদাপ্রভুকে প্রেম করে, তিনি তাহাদের সকলকে রক্ষা করেন, কিন্তু তিনি সমুদয় দুষ্টকে সংহার করিবেন। আমার মুখ সদাপ্রভুর প্রশংসা বর্ণনা করিবে; আর সমুদয় প্রাণী যুগে যুগে চিরকাল তাঁহার পবিত্র নামের ধন্যবাদ করুক। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর; হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। আমি যাবজ্জীবন সদাপ্রভুর প্রশংসা করিব; আমি যত কাল বাঁচিয়া থাকি, আমার ঈশ্বরের প্রশংসা গান করিব। তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই। তাহার শ্বাস নির্গত হয়, সে নিজ মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়। ধন্য সেই, যাহার সহায় যাকোবের ঈশ্বর, যাহার আশাভূমি সদাপ্রভু, তাহার ঈশ্বর। তিনি নির্ম্মাণ করিয়াছেন আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী, সমুদ্র ও তাহার মধ্যে যাহা কিছু আছে; তিনি অনন্তকাল সত্য পালন করেন। তিনি উপদ্রুতদের পক্ষে ন্যায়বিচার করেন, তিনি ক্ষুধিতদিগকে খাদ্য দান করেন; সদাপ্রভু বন্দিদিগকে মুক্ত করেন। সদাপ্রভু অন্ধদের চক্ষু খুলিয়া দেন; সদাপ্রভু অবনতদিগকে উত্থাপন করেন; সদাপ্রভু ধার্ম্মিকদিগকে প্রেম করেন। সদাপ্রভু বিদেশীদের রক্ষাকারী; তিনি পিতৃহীন ও বিধবাকে সুস্থির রাখেন, কিন্তু দুষ্টগণের পথ বক্র করেন। সদাপ্রভু অনন্তকাল রাজত্ব করিবেন; তোমার ঈশ্বর, হে সিয়োন, পুরুষে পুরুষে করিবেন। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, কেননা আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা গান করা উত্তম; তাহা মনোহর; প্রশংসার উপযুক্ত। সদাপ্রভু যিরূশালেম গাঁথেন, তিনি ইস্রায়েলের দূরীকৃতদিগকে সংগ্রহ করেন। তিনি ভগ্নচিত্তদিগকে সুস্থ করেন, তাহাদের ক্ষত সকল বাঁধিয়া দেন। তিনি তারাগণের সংখ্যা গণনা করেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে ডাকেন। আমাদের প্রভু মহান্‌ ও অতিশয় শক্তিমান্‌; তাঁহার বুদ্ধির ইয়ত্তা নাই। সদাপ্রভু নম্রদিগকে সুস্থির রাখেন, তিনি দুষ্টদিগকে ভূমিতে পাড়িয়া ফেলেন। তোমরা স্তবসহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে গীত গাও, বীণাযন্ত্রে আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা গাও। তিনি মেঘমালায় আকাশমণ্ডল আচ্ছন্ন করেন, তিনি পৃথিবীর জন্য বৃষ্টি প্রস্তুত করেন, তিনি পর্ব্বতগণের উপরে তৃণ উৎপাদন করেন। তিনি পশুকে তাহার খাদ্য দেন, দাঁড়কাকের শাবকদিগকে দেন, যাহারা ডাকিয়া উঠে। অশ্বের বলে তিনি আনন্দ করেন না, পুরুষের চরণেও সন্তুষ্ট হন না। সদাপ্রভু তাহাদিগেতে সন্তুষ্ট, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, যাহারা তাঁহার দয়ার অপেক্ষায় থাকে। হে যিরূশালেম, সদাপ্রভুর গুণকীর্ত্তন কর; হে সিয়োন, তোমার ঈশ্বরের প্রশংসা কর। কেননা তিনি তোমার দ্বারের অর্গল সকল দৃঢ় করিয়া দিয়াছেন, তিনি তোমার মধ্যে তোমার সন্তানগণকে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন। তিনি তোমার পরিসীমা শান্তিময় করেন, তিনি সুগোধূমে তোমাকে তৃপ্ত করেন। তিনি পৃথিবীতে আপন আজ্ঞা পাঠান, তাঁহার বাক্য বেগে ধাবমান হয়। তিনি মেষলোমের সদৃশ তুষার দেন, তিনি ভস্মের ন্যায় নীহার ছড়াইয়া দেন। তিনি খণ্ড খণ্ড করিয়া আপন হিমানী পাঠান; তাঁহার শীতের সম্মুখে কে দাঁড়াইতে পারে? তিনি আপন বাক্য পাঠাইয়া সে সমস্ত দ্রবীভূত করেন, তিনি আপন বায়ু বহাইলে জল প্রবাহিত হয়। তিনি জানান যাকোবকে আপন বাক্য, ইস্রায়েলকে আপন বিধি ও শাসনকলাপ। তিনি আর কোন জাতির পক্ষে এরূপ করেন নাই, তাঁহার শাসনকলাপ তাহারা জানে নাই। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, স্বর্গ হইতে সদাপ্রভুর প্রশংসা কর; ঊর্দ্ধস্থানে তাঁহার প্রশংসা কর। হে তাঁহার সমস্ত দূত, তাঁহার প্রশংসা কর; হে তাঁহার সমস্ত বাহিনি, তাঁহার প্রশংসা কর। হে সূর্য্য ও চন্দ্র, তাঁহার প্রশংসা কর; হে দীপ্তিময় সমস্ত তারা, তাঁহার প্রশংসা কর। হে স্বর্গের স্বর্গ, তাঁহার প্রশংসা কর। হে আকাশমণ্ডলের ঊর্দ্ধস্থিত জলসমূহ, তোমরাও তাঁহার প্রশংসা কর। ইহারা সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক, কেননা তিনি আজ্ঞা করিলেন, আর ইহারা সৃষ্ট হইল; তিনি চিরকালের জন্য তাহাদিগকে স্থাপন করিয়াছেন, তিনি এক বিধি দিয়াছেন, কেহ তাহা উল্লঙ্ঘন করিবে না। পৃথিবী হইতে সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, হে প্রকাণ্ড জলচর সকল ও সমস্ত জলধি; অগ্নি ও শিলা, তুষার ও বাষ্প, তাঁহার বাক্যসাধক প্রচণ্ড বায়ু; পর্ব্বতরাজি ও সমস্ত উপপর্ব্বত, ফলের বৃক্ষরাজি ও সমস্ত এরস বৃক্ষ; বন্য পশুগণ ও সমস্ত গ্রাম্য পশু; সরীসৃপ ও উড্ডীয়মান পক্ষী সকল; পৃথিবীর রাজগণ ও সমস্ত জাতি; লোকপালগণ ও পৃথিবীর সকল বিচারকর্ত্তা; যুবকগণ ও যুবতী সকল; বৃদ্ধগণ ও বালক-বালিকা-সমূহ; সকলে সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করুক, কেননা কেবল তাঁহারই নাম উন্নত, তাঁহার প্রভা পৃথিবীর ও স্বর্গের উপরিস্থ। আর তিনি আপন প্রজাদের জন্য এক শৃঙ্গ উত্তোলন করিয়াছেন, তাহা প্রশংসা-ভূমি, তাঁহার সমস্ত সাধুর নিমিত্ত, ইস্রায়েল-সন্তানদের নিমিত্ত, যাহারা তাঁহার নিকটস্থ প্রজা। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। সদাপ্রভুর উদ্দেশে নূতন গীত গাও; সাধুগণের সমাজে তাঁহার প্রশংসা গাও। ইস্রায়েল আপন নির্ম্মাণকর্ত্তাতে আনন্দ করুক, সিয়োন-সন্তানগণ আপনাদের রাজাতে উল্লাসিত হউক। তাহারা নৃত্যযোগে তাঁহার নামের প্রশংসা করুক, তবল ও বীণাযোগে তাঁহার প্রশংসা গান করুক; কেননা সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগেতে প্রীত, তিনি নম্রদিগকে পরিত্রাণে ভূষিত করিবেন। সাধুগণ গৌরবে উল্লাসিত হউক; তাহারা আপন আপন শয্যাতে আনন্দগান করুক। তাহাদের কণ্ঠে ঈশ্বরের উচ্চ প্রশংসা, তাহাদের হস্তে দ্বিধার খড়্‌গ থাকুক; যেন তাহারা জাতিগণকে প্রতিফল দেয়, লোকবৃন্দকে শাস্তি দেয়; যেন তাহাদের রাজগণকে শৃঙ্খলে, তাহাদের মান্যগণ্য লোকদিগকে লৌহনিগড়ে বদ্ধ করে; যেন তাহাদের বিরুদ্ধে লিখিত বিচার নিষ্পন্ন করে; ইহাই তাঁহার সমস্ত সাধুর মর্য্যাদা। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। ঈশ্বরের পবিত্র স্থানে তাঁহার প্রশংসা কর; তাঁহার শক্তির বিতানে তাঁহার প্রশংসা কর। তাঁহার পরাক্রম-কার্য্য সকলের জন্য তাঁহার প্রশংসা কর; তাঁহার মহিমার বাহুল্যানুসারে তাঁহার প্রশংসা কর। তূরীধ্বনি-সহ তাঁহার প্রশংসা কর; নেবল ও বীণাযন্ত্রে তাঁহার প্রশংসা কর। তবল ও নৃত্যযোগে তাঁহার প্রশংসা কর; তারযুক্ত যন্ত্রে ও বংশীতে তাঁহার প্রশংসা কর; সুশ্রাব্য করতালযোগে তাঁহার প্রশংসা কর; উচ্চধ্বনি করতালযোগে তাঁহার প্রশংসা কর। শ্বাসবিশিষ্ট সকলেই সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক। তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। শলোমনের হিতোপদেশ; তিনি দায়ূদের পুত্র, ইস্রায়েল-রাজ। এতদ্দ্বারা প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়া যায়, বুদ্ধির কথা বুঝা যায়; উপদেশ পাওয়া যায় বিজ্ঞতার আচরণ সম্বন্ধে, ধার্ম্মিকতা, বিচার ও ন্যায় সম্বন্ধে; অবোধদিগকে চতুরতা প্রদান করা যায়, যুবক জ্ঞান ও পরিণামদর্শিতা প্রাপ্ত হয়। জ্ঞানবান শুনিবে ও পাণ্ডিত্যে বৃদ্ধি পাইবে, বুদ্ধিমান সুমন্ত্রণা লাভ করিবে; এতদ্দ্বারা দৃষ্টান্ত কথা ও রূপক বুঝা যায়, জ্ঞানবানদের বাক্য ও তাহাদের সমস্যা বুঝা যায়। সদাপ্রভুর ভয় জ্ঞানের আরম্ভ; অজ্ঞানেরা প্রজ্ঞা ও উপদেশ তুচ্ছ করে। বৎস, তুমি তোমার পিতার উপদেশ শুন, তোমার মাতার ব্যবস্থা ছাড়িও না। কারণ সেই উভয় তোমার মস্তকের লাবণ্যভূষণ, ও তোমার কণ্ঠদেশের হারস্বরূপ হইবে। বৎস, যদি পাপীরা তোমাকে প্রলোভন দেখায়, তুমি সম্মত হইও না। তাহারা যদি বলে, ‘আমাদের সঙ্গে আইস, আমরা রক্তপাত করিবার জন্য লুকাইয়া থাকি, নির্দ্দোষদিগকে অকারণে ধরিবার জন্য গুপ্ত থাকি, পাতালের ন্যায় তাহাদিগকে জীবন্ত গ্রাস করি, গর্ত্তগামীদের ন্যায় সর্ব্বাঙ্গীণ গ্রাস করি, আমরা সর্ব্বপ্রকার বহুমূল্য ধন পাইব, লুটিত দ্রব্যে স্ব স্ব গৃহ পরিপূর্ণ করিব, তুমি আমাদের মধ্যে এক জন অংশী হইবে, আমাদের সকলেরই এক তোড়া হইবে’; বৎস, তাহাদের সঙ্গে সেই পথে চলিও না, তাহাদের মার্গ হইতে তোমার চরণ নিবৃত্ত কর; কারণ তাহাদের চরণ অনিষ্টের দিকে দৌড়ে, তাহারা রক্তপাত করিতে বেগে ধাবমান হয়। জাল পাতা হয় অনর্থক, কোন পক্ষীর দৃষ্টিগোচরে। আর উহারা আপনাদেরই রক্তপাত করিতে লুকাইয়া থাকে, আপনাদেরই প্রাণ ধরিতে গুপ্ত থাকে। পরধন-অপহারক সকলেরই এই গতি, সেই ধন তৎ-গ্রাহকদেরই প্রাণ নষ্ট করে। প্রজ্ঞা বাহিরে উচ্চৈঃস্বরে ডাকে, চকে চকে নিজ রব ছাড়ে; সে জনাকীর্ণ পথের মস্তকে আহ্বান করে, নগর-দ্বার সকলের প্রবেশ স্থানে, নগরে, সে এই কথা বলে; ‘অবোধেরা, কত দিন নির্বুদ্ধিতা ভালবাসিবে? নিন্দকেরা কত দিন নিন্দায় রত থাকিবে? হীনবুদ্ধিরা, কত দিন জ্ঞানকে ঘৃণা করিবে? তোমরা আমার অনুযোগে ফির; দেখ, আমি তোমাদের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব, আমার কথা তোমাদিগকে জ্ঞাত করিব।’ আমি ডাকিলে তোমরা অসম্মত হইলে, আমি হস্ত বিস্তার করিলে কেহ মনোযোগ করিলে না; কিন্তু তোমরা আমার সমস্ত পরামর্শ অগ্রাহ্য করিলে, আমার অনুযোগ শুনিতে চাহিলে না। এজন্য তোমাদের বিপদে আমিও হাসিব, তোমাদের ভয় উপস্থিত হইলে পরিহাস করিব; যখন ঝটিকার ন্যায় তোমাদের ভয় উপস্থিত হইবে, ঘূর্ণবায়ুর ন্যায় তোমাদের বিপদ আসিবে, যখন সঙ্কট ও সঙ্কোচ তোমাদের কাছে আসিবে। তখন সকলে আমাকে ডাকিবে, কিন্তু আমি উত্তর দিব না, তাহারা সযত্নে আমার অন্বেষণ করিবে, কিন্তু আমাকে পাইবে না; কারণ তাহারা জ্ঞানকে ঘৃণা করিত, সদাপ্রভুর ভয় মনোনীত করিত না; আমার পরামর্শে সম্মত হইত না, আমার সমস্ত অনুযোগ তুচ্ছ করিত; তাই তাহারা স্ব স্ব আচরণের ফল ভোগ করিবে, স্ব স্ব কুপরামর্শে উদর পূর্ণ করিবে। ফলে, অবোধদের বিপথগমন তাহাদিগকে বধ করিবে, হীনবুদ্ধিদের নিশ্চিন্ততা তাহাদিগকে বিনষ্ট করিবে; কিন্তু যে জন আমার কথা শুনে, সে নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না। বৎস, তুমি যদি আমার কথা সকল গ্রহণ কর, যদি আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর, যদি প্রজ্ঞার দিকে কর্ণপাত কর, যদি বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর; হাঁ, যদি সুবিবেচনাকে আহ্বান কর, যদি বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর; যদি রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর, গুপ্ত ধনের ন্যায় তাহার অনুসন্ধান কর; তবে সদাপ্রভুর ভয় বুঝিতে পারিবে, ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে। কেননা সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি নির্গত হয়। তিনি সরলদিগের জন্য সূক্ষ্ম বুদ্ধি রাখেন, যাহারা সিদ্ধতায় চলে, তিনি তাহাদের ঢাল। তিনি বিচারের মার্গ সকল রক্ষা করেন, আপন সাধুদের পথ সংরক্ষণ করেন। অতএব তুমি ধার্ম্মিকতা ও বিচার বুঝিবে, ন্যায় ও সমস্ত উত্তম পথ বুঝিবে। কেননা প্রজ্ঞা তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করিবে, জ্ঞান তোমার প্রাণের তুষ্টি জন্মাইবে, পরিণামদর্শিতা তোমার প্রহরী হইবে, বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে; যেন তোমাকে উদ্ধার করে দুষ্টের পথ হইতে, সেই সকল লোক হইতে, যাহারা কুটিল বাক্য বলে, যাহারা সরলতার পথ ত্যাগ করে, অন্ধকার-মার্গে চলিবার নিমিত্ত; যাহারা কুক্রিয়াসাধনে আনন্দিত হয়, দুষ্টতার কুটিলতায় উল্লাসিত হয়; যাহারা বক্র পথের পথিক, আপন আপন আচরণে বিপথগামী। সে তোমাকে উদ্ধার করিবে পরকীয়া স্ত্রী হইতে, সেই চাটুবাদিনী বিজাতীয়া হইতে, সে যৌবনকালের মিত্রকে ত্যাগ করে, আপন ঈশ্বরের নিয়ম ভুলিয়া যায়; কেননা উহার বাটী মৃত্যুর দিকে অবনত, উহার পথ প্রেতলোকের দিকে অবনত; যাহারা উহার কাছে যায়, তাহারা আর ফিরে না, তাহারা জীবনের পথ পায় না; যেন তুমি সুশীলদের মার্গে চলিতে পার, যেন ধার্ম্মিকগণের পথ অবলম্বন কর; কেননা সরলগণ দেশে বাস করিবে, সিদ্ধেরা তথায় অবশিষ্ট থাকিবে। কিন্তু দুষ্টগণ দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে, বিশ্বাসঘাতকেরা তথা হইতে উন্মূলিত হইবে। বৎস, তুমি আমার ব্যবস্থা ভুলিও না; তোমার চিত্ত আমার আজ্ঞা সকল পালন করুক। কারণ তদ্দ্বারা তুমি আয়ুর দীর্ঘতা, জীবনের বৎসর-বাহুল্য, এবং শান্তি, প্রাপ্ত হইবে। দয়া ও সত্য তোমাকে ত্যাগ না করুক; তুমি তদুভয় তোমার কণ্ঠদেশে বাঁধিয়া রাখ, তোমার হৃদয়-ফলকে লিখিয়া রাখ। তাহা করিলে অনুগ্রহ ও সুবুদ্ধি পাইবে, ঈশ্বরের ও মনুষ্যের দৃষ্টিতে পাইবে। তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না; তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন। আপনার দৃষ্টিতে জ্ঞানবান হইও না; সদাপ্রভুকে ভয় কর, মন্দ হইতে দূরে যাও। ইহা তোমার নাভির স্বাস্থ্যস্বরূপ হইবে, তোমার অস্থির মজ্জাস্বরূপ হইবে। তুমি সদাপ্রভুর সম্মান কর আপনার ধনে, আর তোমার সমস্ত দ্রব্যের অগ্রিমাংশে; তাহাতে তোমার গোলাঘর সকল বহু শস্যে পূর্ণ হইবে, তোমার কুণ্ডে নূতন দ্রাক্ষারস উথলিয়া পড়িবে। বৎস, সদাপ্রভুর শাসন তুচ্ছ করিও না, তাঁহার অনুযোগে ক্লান্ত হইও না; কেননা সদাপ্রভু যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাস্তি প্রদান করেন, যেমন পিতা প্রিয় পুত্রের প্রতি করেন। ধন্য সেই ব্যক্তি যে প্রজ্ঞা পায়, সেই ব্যক্তি যে বুদ্ধি লাভ করে; কেননা রৌপ্যের বাণিজ্য অপেক্ষাও তাহার বাণিজ্য উত্তম, সুবর্ণ অপেক্ষাও প্রজ্ঞা-লাভ উত্তম। তাহা মুক্তা হইতেও বহুমূল্য; তোমার অভীষ্ট কোন বস্তু তাহার সমান নয়। তাহার দক্ষিণ হস্তে দীর্ঘ পরমায়ু, তাহার বাম হস্তে ধন ও সম্মান থাকে। তাহার পথ সকল মনোরঞ্জনের পথ, তাহার সমস্ত মার্গ শান্তিময়। যাহারা তাহাকে ধরিয়া রাখে, তাহাদের কাছে তাহা জীবনবৃক্ষ; যে কেহ তাহা গ্রহণ করে, সে ধন্য। সদাপ্রভু প্রজ্ঞা দ্বারা পৃথিবীর মূল স্থাপন করিয়াছেন, বুদ্ধি দ্বারা আকাশমণ্ডল অটল করিয়াছেন; তাঁহার জ্ঞান দ্বারা জলধি সকল উদঘাটিত হইল, আর আকাশ ফোঁটা ফোঁটা শিশির বর্ষণ করে। বৎস, এ সকল তোমার দৃষ্টি-বহির্ভূত না হউক, তুমি সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও পরিণামদর্শিতা রক্ষা কর। তাহাতে সে সকল তোমার প্রাণের জীবনস্বরূপ হইবে, তোমার কণ্ঠের শোভাস্বরূপ হইবে। তখন তুমি নিজ পথে নির্ভয়ে গমন করিবে, তোমার পায়ে উছোট লাগিবে না। শয়নকালে তুমি ভয় করিবে না, তুমি শয়ন করিবে, তোমার নিদ্রা সুখদায়িনী হইবে। আকস্মিক বিপদ হইতে ভীত হইও না, দুষ্টের বিনাশ আসিলে তাহা হইতে ভীত হইও না; কেননা সদাপ্রভু তোমার বিশ্বাসভূমি হইবেন ফাঁদ হইতে তোমার চরণ রক্ষা করিবেন। যাহাদের মঙ্গল করা উচিত, তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিও না, যখন তাহা করিবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকে। তোমার প্রতিবাসীকে বলিও না, ‘যাও, আবার আসিও, আমি কল্য দিব’, যখন দ্রব্য তোমার হস্তে থাকে। তোমার প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে কুসঙ্কল্প করিও না, সে ত তোমার নিকটে নির্ভয়ে বাস করে। অকারণে কোন ব্যক্তির সহিত বিরোধ করিও না, যদি সে তোমার অপকার না করিয়া থাকে। উপদ্রবীর প্রতি ঈর্ষা করিও না, আর তাহার কোন পথ মনোনীত করিও না; কেননা খল সদাপ্রভুর ঘৃণার পাত্র; কিন্তু সরলগণের সহিত তাঁহার গূঢ় মন্ত্রণা। দুষ্টের গৃহে সদাপ্রভুর অভিশাপ থাকে, কিন্তু তিনি ধার্ম্মিকদের নিবাসকে আশীর্ব্বাদ করেন। নিশ্চয়ই তিনি নিন্দকদিগের নিন্দা করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন। জ্ঞানবানেরা সম্মানের অধিকারী হইবে, কিন্তু অবজ্ঞাই হীনবুদ্ধিদের উন্নতি। বৎসগণ, পিতার উপদেশ শুন, সুবিবেচনা বুঝিবার জন্য মনোযোগ কর। কেননা আমি তোমাদিগকে সুশিক্ষা দিব; তোমরা আমার ব্যবস্থা ত্যাগ করিও না। কারণ আমিও নিজ পিতার বৎস ছিলাম, মাতার দৃষ্টিতে কোমল ও অদ্বিতীয় ছিলাম। পিতা আমাকে শিক্ষা দিতেন, বলিতেন, তোমার চিত্ত আমার কথা ধরিয়া রাখুক; আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, জীবন পাইবে; প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর, সুবিবেচনা উপার্জ্জন কর, ভুলিও না; আমার মুখের কথা হইতে বিমুখ হইও না। প্রজ্ঞাকে ছাড়িও না, সে তোমাকে রক্ষা করিবে; তাহাকে প্রেম কর, সে তোমাকে সংরক্ষণ করিবে। প্রজ্ঞাই প্রধান বিষয়, তুমি প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর; সমস্ত উপার্জ্জন দিয়া সুবিবেচনা উপার্জ্জন কর। তাহাকে শিরোধার্য্য কর, সে তোমাকে উন্নত করিবে, যখন তাহাকে আলিঙ্গল কর, সে তোমাকে মান্য করিবে। সে তোমার মস্তকে লাবণ্যভূষণ দিবে, সে শোভার মুকুট তোমাকে প্রদান করিবে। বৎস, শুন, আমার কথা গ্রহণ কর, তাহাতে তোমার জীবনের বৎসর বহুসংখ্যক হইবে। আমি তোমাকে প্রজ্ঞার পথ দেখাইয়াছি, তোমাকে সরলতার মার্গে চালাইয়াছি। তোমার গমনকালে পাদসঞ্চার সঙ্কুচিত হইবে না, ধাবনকালে তোমার উছোট লাগিবে না। উপদেশ ধরিয়া রাখিও, ছাড়িয়া দিও না, তাহা রক্ষা কর, কেননা তাহা তোমার জীবন। দুর্জ্জনদের মার্গে প্রবেশ করিও না, দুর্বৃত্তদের পথে চলিও না, তাহা ছাড়, তাহার নিকট দিয়া যাইও না; তাহা হইতে বিমুখ হইয়া অগ্রসর হও। কেননা দুষ্কর্ম্ম না করিলে তাহাদের নিদ্রা হয় না, কাহারও উছোট না লাগাইলে তাহাদের নিদ্রা দূরে যায়। কারণ তাহারা দুষ্টতার অন্ন ভক্ষণ করে, তাহারা উপদ্রবের দ্রাক্ষারস পান করে। কিন্তু ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়। দুষ্টদের পথ অন্ধকারের ন্যায়; তাহারা কিসে উছোট খাইবে, জানে না। বৎস, আমার বাক্যে অবধান কর, আমার কথায় কর্ণপাত কর। তাহা তোমার দৃষ্টির বহির্ভূত না হউক, তোমার হৃদয়মধ্যে তাহা রাখ। কেননা যাহারা তাহা পায়, তাহাদের পক্ষে তাহা জীবন, তাহা তাহাদের সর্ব্বাঙ্গের স্বাস্থ্যস্বরূপ। সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদগম হয়। মুখের কুটিলতা আপনা হইতে অন্তর কর, ওষ্ঠাধরের বক্রতা আপনা হইতে দূর কর। তোমার চক্ষু সরল দৃষ্টি করুক, তোমার চক্ষুর পাতা সোজাভাবে সম্মুখে দেখুক। তোমার চরণের পথ সমান কর, তোমার সমস্ত গতি ব্যবস্থিত হউক। দক্ষিণে কি বামে ফিরিও না, মন্দ হইতে চরণ নিবৃত্ত কর। বৎস, আমার প্রজ্ঞায় অবধান কর, আমার বুদ্ধির প্রতি কর্ণপাত কর; যেন তুমি পরিণামদর্শিতা রক্ষা কর, যেন তোমার ওষ্ঠাধর জ্ঞানের কথা পালন করে। কেননা পরকীয়া স্ত্রীর ওষ্ঠ হইতে মধু ক্ষরে, তাহার তালু তৈল অপেক্ষাও স্নিগ্ধ; কিন্তু তাহার শেষ ফল নাগদানার ন্যায় তিক্ত, দ্বিধার খড়্‌গের ন্যায় তীক্ষ্ণ। তাহার চরণ মৃত্যুর কাছে নামিয়া যায়, তাহার পাদবিক্ষেপ পাতালে পড়ে। সে জীবনের সমান পথ পায় না, তাহার পথ সকল চঞ্চল; সে কিছু জানে না। অতএব বৎসগণ, আমার কথা শুন, আমার মুখের বাক্য হইতে বিমুখ হইও না। তুমি সেই স্ত্রী হইতে আপন পথ দূরে রাখ, তাহার গৃহ-দ্বারের নিকটে যাইও না; পাছে তুমি নিজ সম্মান অন্যদিগকে দেও, নিজ বৎসর সকল নির্দ্দয়কে দেও; পাছে অপর লোকে তোমার ধনে তৃপ্ত হয়, আর তোমার পরিশ্রমের ফল বিজাতীয়ের গৃহে থাকে; পাছে শেষকালে তুমি অনুশোচনা কর, যখন তোমার মাংস ও শরীর ক্ষয় পায়; পাছে বল, ‘হায়, আমি উপদেশ ঘৃণা করিয়াছি, আমার চিত্ত অনুযোগ তুচ্ছ করিয়াছে; আমি নিজ গুরুদের কথা শুনি নাই, নিজ শিক্ষকদের বাক্যে কর্ণপাত করি নাই; আমি প্রায় সর্ব্বপ্রকার মন্দে পড়িয়াছিলাম সমাজের ও মণ্ডলীর মধ্যে।’ তুমি নিজ জলাশয়ের জল পান কর, নিজ কূপের স্রোতোজল পান কর। তোমার উনুই কি বাহিরে বিস্তারিত হইবে? চকে কি জলস্রোত হইয়া যাইবে? উহা কেবল তোমারই হউক, তোমার সহিত অপর লোকের না হউক। তোমার উনুই ধন্য হউক, তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর। সে প্রেমিকা হরিণী ও কমনীয়া বাতপ্রমীবৎ; তাহারই কুচযুগ দ্বারা তুমি সর্ব্বদা আপ্যায়িত হও, তাহার প্রেমে তুমি সতত মোহিত থাক। বৎস, তুমি পরকীয়া স্ত্রীতে কেন মোহিত হইবে? বিজাতীয়ার বক্ষ কেন আলিঙ্গন করিবে? মনুষ্যের পথ ত সদাপ্রভুর দৃষ্টিগোচর; তিনি তাহার সকল পথ সমান করেন। দুষ্ট নিজ অপরাধসমূহে ধরা পড়ে, সে নিজ পাপ-পাশে বদ্ধ হয়। সে উপদেশের অভাবে প্রাণ ত্যাগ করিবে, নিজ অজ্ঞানতার আধিক্যে ভ্রান্ত হইবে। বৎস, তুমি যদি বন্ধুর জামিন হইয়া থাক, যদি অপরের সহিত হস্তে তালী দিয়া থাক, তবে আপন মুখের কথায় ফাঁদে পতিত হইয়াছ, আপন মুখের কথায় ধৃত হইয়াছ। এখন, বৎস, তুমি এই কার্য্য কর; আপনাকে উদ্ধার কর; যখন তুমি আপন বন্ধুর হস্তগত হইয়াছ, তখন যাও, বিনত হও, বন্ধুর সাধ্যসাধনা কর; তোমার চক্ষুকে নিদ্রা যাইতে দিও না, চক্ষুর পাতাকে মুদ্রিত হইতে দিও না; আপনাকে হরিণের ন্যায় [ব্যাধের] হস্ত হইতে, পক্ষীর ন্যায় জালিকের হস্ত হইতে উদ্ধার কর। হে অলস, তুমি পিপীলিকার কাছে যাও, তাহার ক্রিয়া সকল দেখিয়া জ্ঞানবান হও। তাহার বিচারকর্ত্তা কেহ নাই, শাসনকর্ত্তা কি অধ্যক্ষ কেহ নাই, তবু সে গ্রীষ্মকালে আপন খাদ্য প্রস্তুত করে, শস্য কাটিবার সময়ে ভক্ষ্য সঞ্চয় করে। হে অলস, তুমি কত কাল শুইয়া থাকিবে? কখন্‌ নিদ্রা হইতে উঠিবে? ‘আর একটু নিদ্রা, আর একটু তন্দ্রা, আর একটু শুইয়া হস্ত জড়সড় করিব’; তাই তোমার দরিদ্রতা দস্যুর ন্যায় আসিবে, তোমার দৈন্যদশা ঢালীর ন্যায় আসিবে। যে ব্যক্তি পাষণ্ড, যে লোক অপরাধী, সে মুখের কুটিলতায় চলে, সে চক্ষু দ্বারা ইঙ্গিত করে, পদ দ্বারা কথা বলে, সে অঙ্গুলি দ্বারা সঙ্কেত করে, তাহার হৃদয়ে কুটিলতা থাকে, সে সতত কুকল্পনা করে, সে বিবাদ খুলিয়া দেয়। সেই জন্য অকস্মাৎ তাহার বিপদ আসিবে, হঠাৎ সে ভগ্ন হইবে; আর প্রতীকার হইবে না। এই ছয় বস্তু সদাপ্রভুর ঘৃণিত, এমন কি, সপ্ত বস্তু তাঁহার প্রাণের ঘৃণাস্পদ; উদ্ধত দৃষ্টি, মিথ্যাবাদী জিহ্বা, নির্দ্দোষের রক্তপাতকারী হস্ত, দুষ্ট সঙ্কল্পকারী হৃদয়, দুষ্কর্ম্ম করিতে দ্রুতগামী চরণ, যে মিথ্যাসাক্ষী অসত্য কথা কহে, ও যে ভ্রাতৃগণের মধ্যে বিবাদ খুলিয়া দেয়। বৎস, তুমি আপন পিতার আজ্ঞা পালন কর, আপন মাতার ব্যবস্থা ত্যাগ করিও না। উহা সর্ব্বদা তোমার হৃদয়ে গাথিয়া রাখ, তোমার কণ্ঠদেশে বাঁধিয়া রাখ। গমনকালে সে তোমাকে পথ দেখাইবে, শয়নকালে তোমার প্রহরী হইবে, জাগরণকালে তোমার সহিত আলাপ করিবে। কেননা আজ্ঞা প্রদীপ ও ব্যবস্থা আলোক, এবং শিক্ষাজনক অনুযোগ জীবনের পথ; সে তোমাকে রক্ষা করিবে, দুষ্টা স্ত্রী হইতে, বিজাতীয়ার জিহ্বার চাটুবাদ হইতে। তুমি হৃদয়ে উহার সৌন্দর্য্যে লুব্ধ হইও না, উহার অপাঙ্গ-ভঙ্গিতে ধৃত হইও না। কেননা বারাঙ্গনা দ্বারা অন্নাভাব ঘটে, পরস্ত্রী [মনুষ্যের] মহামূল্য প্রাণ মৃগয়া করে। কেহ যদি বক্ষঃস্থলে অগ্নি রাখে, তবে তাহার বস্ত্র কি পুড়িয়া যাইবে না? কেহ যদি জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়া চলে, তবে তাহার পদতল কি পুড়িয়া যাইবে না? তদ্রূপ যে প্রতিবাসীর স্ত্রীর কাছে গমন করে; যে তাহাকে স্পর্শ করে, সে অদণ্ডিত থাকিবে না। যে ক্ষুধিত হইয়া প্রাণের তৃপ্তির জন্য চুরি করে, লোকে সেই চোরকে উপেক্ষা করে না; কিন্তু ধরা পড়িলে তাহাকে সপ্তগুণ ফিরাইয়া দিতে হইবে, তাহার গৃহের সর্ব্বস্বও সমর্পণ করিতে হইবে। পরদারগামী পুরুষ বুদ্ধিবিহীন, সে তাহা করিয়া আপনার প্রাণ আপনি নষ্ট করে। সে আঘাত ও অবমাননা পাইবে; তাহার দুর্নাম কখনও ঘুচিবে না। যেহেতু অন্তর্জ্বালা স্বামীর চণ্ডতা, প্রতিশোধের দিনে সে ক্ষমা করিবে না; সে কোন প্রকার প্রায়শ্চিত্ত গ্রাহ্য করিবে না, অনেক উৎকোচ দিলেও সম্মত হইবে না। বৎস, আমার কথা সকল পালন কর, আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর। আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, জীবন পাইবে, নয়ন-তারার ন্যায় আমার ব্যবস্থা রক্ষা কর; তোমার অঙ্গুলি-কলাপে সেগুলি বাঁধিয়া রাখ, তোমার হৃদয়-ফলকে তাহা লিখিয়া রাখ। প্রজ্ঞাকে বল, তুমি আমার ভগিনী, সুবিবেচনাকে তোমার সখী বল; তাহাতে তুমি পরকীয়া স্ত্রী হইতে রক্ষা পাইবে, চাটুভাষিণী বিজাতীয়া হইতে রক্ষা পাইবে। আমি আপন গৃহের বাতায়ন হইতে খড়খড়ি দিয়া নিরীক্ষণ করিতেছিলাম; অবোধদের মধ্যে আমার দৃষ্টি পড়িল, আমি যুবকগণের মধ্যে এক জনকে দেখিলাম, সে বুদ্ধিবিহীন যুবক। সে গলিতে গেল, ঐ স্ত্রীর কোণের নিকটে আসিল, তাহার বাটীর পথে চলিল। তখন সন্ধ্যাকাল, দিবাবসান হইয়াছিল, রাত্রিও অন্ধকার হইয়াছিল। তখন দেখ, এক স্ত্রী তাহার সম্মুখে আসিল, সে বেশ্যা-বেশধারিণী ও চতুর-চিত্তা; সে কলহকারিণী ও অবাধ্যা, তাহার চরণ ঘরে থাকে না; সে কখনও সড়কে, কখনও চকে, কোণে কোণে অপেক্ষাতে থাকে। সে তাহাকে ধরিয়া চুম্বন করিল, নির্লজ্জ মুখে তাহাকে কহিল, ‘আমাকে মঙ্গলার্থক বলিদান করিতে হইয়াছে, আজ আমি আপন মানত পূর্ণ করিয়াছি; তাই তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহিরে আসিয়াছি, সযত্নে তোমার মুখ দেখিতে আসিয়াছি, তোমাকে পাইয়াছি। আমি খাটে বুটাদার চাদর পাড়িয়াছি, মিস্রীয় সূত্রের চিত্রবিচিত্র বস্ত্র পাড়িয়াছি। আমি গন্ধরস, অগুরু ও দারুচিনি দিয়া আপন শয্যা আমোদিত করিয়াছি। চল, আমরা প্রভাত পর্য্যন্ত কামরসে মত্ত হই, আমরা প্রেম বাহুল্যে বিলাস করি। কেননা কর্ত্তা ঘরে নাই, তিনি দূরে যাত্রা করিয়াছেন; টাকার তোড়া সঙ্গে লইয়া গিয়াছেন, পূর্ণিমার দিন ঘরে আসিবেন।’ অনেক মধুর বাক্যে সে তাহার চিত্ত হরণ করিল, ওষ্ঠাধরের চাটুবাদে তাহাকে আকর্ষণ করিল। অমনি সে তাহার পশ্চাতে গেল, যেমন গোরু হত হইতে যায়, যেমন শৃঙ্খলবদ্ধ ব্যক্তি নির্ব্বোধের শাস্তি পাইতে যায়; শেষে তাহার যকৃৎ বাণে বিদ্ধ হইল; যেমন পক্ষী ফাঁদে পড়িতে বেগে ধাবিত হয়, আর জানে না যে, তাহা প্রাণনাশক। এখন বৎসগণ, আমার বাক্য শুন, আমার মুখের কথায় অবধান কর। তোমার চিত্ত উহার পথে না যাউক, তুমি উহার মার্গে ভ্রমণ করিও না। কেননা সে অনেককে আঘাত করিয়া নিপাত করিয়াছে, তাহার নিহত লোকেরা বৃহৎ দল। তাহার গৃহ পাতালের পথ, যে পথ মৃত্যুর অন্তঃপুরে নামিয়া যায়। প্রজ্ঞা কি ডাকে না? বুদ্ধি কি উচ্চৈঃস্বর করে না? সে পথের পার্শ্বস্থ উচ্চস্থানের চূড়ায়, মার্গ সকলের সংযোগস্থানে দাঁড়ায়; সে পুরদ্বার-সমীপে, নগরের অগ্রভাগে, দ্বারের প্রবেশ-স্থানে থাকিয়া উচ্চৈঃস্বরে কহে, হে মানবগণ, আমি তোমাদিগকে ডাকি, মনুষ্য-সন্তানদের কাছেই আমার বাণী। হে অবোধেরা, চতুরতা শিক্ষা কর; হে হীনবুদ্ধি সকল, সুবুদ্ধিচিত্ত হও। শুন, কেননা আমি উৎকৃষ্ট কথা কহিব, আমার ওষ্ঠাধরের বিকাশ ন্যায়-সঙ্গত। আমার মুখ সত্য কহিবে, দুষ্টতা আমার ওষ্ঠের ঘৃণাস্পদ। আমার মুখের সমস্ত বাক্য ধর্ম্মময়; তাহার মধ্যে বক্রতা বা কুটিলতা কিছুই নাই। বুদ্ধিমানের কাছে সে সকল স্পষ্ট, জ্ঞানপ্রাপ্তদের কাছে সে সকল সরল। আমার শাসনই গ্রহণ কর, রৌপ্য নয়, উৎকৃষ্ট সুবর্ণ অপেক্ষা জ্ঞান লও। কেননা প্রজ্ঞা মুক্তা হইতেও উত্তম, কোন অভীষ্ট বস্তু তাহার সমান নয়। আমি প্রজ্ঞা, চতুরতা-গৃহে বাস করি, পরিণামদর্শিতার তত্ত্ব জানি। সদাপ্রভুর ভয় দুষ্টতার প্রতি ঘৃণা; অহঙ্কার, দাম্ভিকতা ও কুপথ, এবং কুটিল মুখও আমি ঘৃণা করি। পরামর্শ ও বুদ্ধিকৌশল আমার, আমিই সুবিবেচনা, পরাক্রম আমার। আমা দ্বারা রাজগণ রাজত্ব করেন, মন্ত্রিগণ ধর্ম্মব্যবস্থা স্থাপন করেন। আমা দ্বারা শাসনকর্ত্তারা শাসন করেন, অধিপতিরা, পৃথিবীর সমস্ত বিচারকর্ত্তা, শাসন করেন। যাহারা আমাকে প্রেম করে, আমিও তাহাদিগকে প্রেম করি, যাহারা সযত্নে আমার অন্বেষণ করে; তাহারা আমাকে পায়। আমার কাছে রহিয়াছে ঐশ্বর্য্য ও সম্মান, অক্ষয় সম্পত্তি ও ধার্ম্মিকতা। কাঞ্চন ও নির্ম্মল সুবর্ণ অপেক্ষাও আমার ফল উত্তম, উৎকৃষ্ট রৌপ্য হইতেও আমার উপস্বত্ব উত্তম। আমি ধার্ম্মিকতার মার্গে গমন করি, বিচারের পথের মধ্য দিয়া গমন করি, যেন, যাহারা আমাকে প্রেম করে, তাহাদিগকে সত্ত্ববান করি, তাহাদের ভাণ্ডার সকল পরিপূর্ণ করি। সদাপ্রভু নিজ পথের আরম্ভে আমাকে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তাঁহার কর্ম্ম সকলের পূর্ব্বে পূর্ব্বাবধি। আমি স্থাপিত হইয়াছি অনাদি কালাবধি, আদি অবধি, পৃথিবীর উদ্ভবের পূর্ব্বাবধি। জলধি যখন হয় নাই, তখন আমি জন্মিয়াছিলাম, যখন জলপূর্ণ উনুই সকল হয় নাই। পর্ব্বত সকল স্থাপিত হইবার পূর্ব্বে, উপপর্ব্বত সকলের পূর্ব্বে আমি জন্মিয়াছিলাম; তখন তিনি স্থল ও মাঠ নির্ম্মাণ করেন নাই, জগতের ধূলির প্রথম অণুও গড়েন নাই। যখন তিনি আকাশমণ্ডল প্রস্তুত করেন, তখন আমি সেখানে ছিলাম; যখন তিনি জলধিপৃষ্ঠের চক্রাকার সীমা নিরূপণ করিলেন, যখন তিনি ঊর্দ্ধস্থ আকাশ দৃঢ়রূপে নির্ম্মাণ করিলেন, যখন জলধির প্রবাহ সকল প্রবল হইল, যখন তিনি সমুদ্রের সীমা স্থির করিলেন, যেন জল তাঁহার আজ্ঞা উল্লঙ্ঘন না করে, যখন তিনি পৃথিবীর মূল নিরূপণ করিলেন; তৎকালে আমি তাঁহার কাছে কার্য্যকারী ছিলাম; আমি দিন দিন আনন্দময় ছিলাম, তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতাম; আমি তাঁহার ভূমণ্ডলে আহ্লাদ করিতাম, মনুষ্য-সন্তানগণে আমার আনন্দ হইত। অতএব বৎসগণ, এখন আমার কথা শুন; কেননা তাহারা ধন্য, যাহারা আমার পথে চলে। তোমরা শাসনে অবধান কর, জ্ঞানবান হও; তাহা অগ্রাহ্য করিও না। ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আমার কথা শুনে, যে দিন দিন আমার দ্বারে জাগ্রৎ থাকে, আমার দ্বারের চৌকাঠে থাকিয়া অপেক্ষা করে। কেননা যে আমাকে পায়, সে জীবন পায়, এবং সদাপ্রভুর অনুগ্রহ ভোগ করে। কিন্তু যে আমার বিরুদ্ধে পাপ করে, সে আপন প্রাণের অনিষ্ট করে; যে সকল লোক আমাকে দ্বেষ করে, তাহারা মৃত্যুকে ভালবাসে। প্রজ্ঞা আপন গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছে, সে তাহার সপ্ত স্তম্ভ খুদিয়াছে; সে আপন পশুদিগকে মারিয়াছে; দ্রাক্ষারস মিশ্রিত করিয়াছে, সে আপন মেজও সাজাইয়াছে। সে আপন দাসীদিগকে পাঠাইয়াছে, সে নগরের উচ্চতম স্থান হইতে ডাকিয়া বলে, ‘যে অবোধ, সে এই স্থানে আইসুক’; যে বুদ্ধিবিহীন, সে তাহাকে বলে, ‘আইস, আমার ভক্ষ্য দ্রব্য ভোজন কর, আমার মিশ্রিত দ্রাক্ষারস পান কর।’ অবোধদের সঙ্গ ছাড়িয়া জীবন ধারণ কর, সুবিবেচনার পথে চরণ চালাও। যে নিন্দককে শিক্ষা দেয়, সে লজ্জা পায়, যে দুষ্টকে অনুযোগ করে, সে কলঙ্ক পায়। নিন্দককে অনুযোগ করিও না, পাছে সে তোমাকে দ্বেষ করে; জ্ঞানবানকেই অনুযোগ কর, সে তোমাকে প্রেম করিবে। জ্ঞানবানকে [শিক্ষা] দেও, সে আরও জ্ঞানবান হইবে; ধার্ম্মিককে জ্ঞান দেও, তাহার পাণ্ডিত্য বৃদ্ধি পাইবে। সদাপ্রভুকে ভয় করাই প্রজ্ঞার আরম্ভ, পবিত্রতম বিষয়ক জ্ঞানই সুবিবেচনা। কেননা আমা দ্বারা তোমার আয়ু বাড়িবে, তোমার জীবনের বৎসর-সংখ্যা বৃদ্ধি পাইবে। তুমি যদি জ্ঞানবান হও, নিজেরই মঙ্গলার্থে জ্ঞানবান হইবে, যদি নিন্দা কর, একাই তাহা বহন করিবে। হীনবুদ্ধি স্ত্রীলোক কলহকারিণী, সে অবোধ, কিছুই জানে না। সে আপনার গৃহ-দ্বারে বসে, নগরের উচ্চস্থানে আসন পাতিয়া বসে; সে পথিকদিগকে ডাকে, সরলপথ-গামীদিগকে ডাকে, ‘যে অবোধ, সে এই স্থানে আইসুক’; যে বুদ্ধিবিহীন, সে তাহাকে বলে, ‘অপহৃত-জল মিষ্ট, নিরালার অন্ন সুস্বাদু।’ কিন্তু সে জানে না যে, প্রেতগণই তথায় থাকে, উহার নিমন্ত্রিত লোকেরা গভীর পাতালে থাকে। জ্ঞানবান পুত্র পিতার আনন্দজনক, কিন্তু হীনবুদ্ধি পুত্র মাতার খেদজনক। দুষ্টতার ধন কিছুই উপকারী নয়, কিন্তু ধার্ম্মিকতা মৃত্যু হইতে উদ্ধার করে। সদাপ্রভু ধার্ম্মিকের প্রাণ ক্ষুধায় ক্ষীণ হইতে দেন না; কিন্তু তিনি দুষ্টদের কামনা দূর করেন। যে শিথিল হস্তে কর্ম্ম করে, সে দরিদ্র হয়; কিন্তু পরিশ্রমীদের হস্ত ধনবান করে। যে গ্রীষ্মকালে সঞ্চয় করে, সে বুদ্ধিমান পুত্র; যে শস্য কাটিবার সময় নিদ্রিত থাকে, সে লজ্জাজনক পুত্র। ধার্ম্মিকের মস্তকে বহু আশীর্ব্বাদ বর্ত্তে; কিন্তু দুষ্টগণের মুখ উপদ্রব ঢাকিয়া রাখে। ধার্ম্মিকের স্মৃতি আশীর্ব্বাদের বিষয়; কিন্তু দুষ্টদের নাম পচিয়া যাইবে। বিজ্ঞচিত্ত লোক আজ্ঞা গ্রহণ করে, কিন্তু অজ্ঞান বাচাল পতিত হইবে। যে সিদ্ধতায় চলে, সে নির্ভয়ে চলে; কিন্তু কুটিলাচারীকে চেনা যাইবে। যে চক্ষু দ্বারা ঈঙ্গিত করে, সে দুঃখ দেয়; আর অজ্ঞান বাচাল পতিত হইবে। ধার্ম্মিকের মুখ জীবনের উনুই; কিন্তু দুষ্টগণের মুখ উপদ্রব ঢাকিয়া রাখে। দ্বেষ বিবাদের উত্তেজক, কিন্তু প্রেম সমস্ত অধর্ম্ম আচ্ছাদন করে। জ্ঞানবানের ওষ্ঠাধরে প্রজ্ঞা পাওয়া যায়, কিন্তু বুদ্ধিবিহীনের পৃষ্ঠের জন্য দণ্ড রহিয়াছে। জ্ঞানবানেরা জ্ঞান সঞ্চয় করে, কিন্তু অজ্ঞানের মুখ আসন্ন সর্ব্বনাশ। ধনবানের ধনই তাহার দৃঢ় নগর, দরিদ্রদিগের দরিদ্রতাই তাহাদের সর্ব্বনাশ। ধার্ম্মিকের শ্রম জীবনজনক, দুর্জ্জনের উপস্বত্ব পাপজনক। যে শাসন মানে, সে জীবন-পথে চলে; কিন্তু যে অনুযোগ ত্যাগ করে, সে ভ্রান্ত হয়। যে দ্বেষ ঢাকিয়া রাখে, তাহার ওষ্ঠাধর মিথ্যাবাদী; আর যে পরীবাদ রটায়, সে হীনবুদ্ধি। বাক্যের বাহুল্যে অধর্ম্মের অভাব নাই; কিন্তু যে ওষ্ঠ দমন করে, সে বুদ্ধিমান। ধার্ম্মিকের জিহ্বা উৎকৃষ্ট রৌপ্যবৎ, দুষ্টদের অন্তঃকরণ স্বল্পমূল্য। ধার্ম্মিকের ওষ্ঠাধর অনেককে প্রতিপালন করে, কিন্তু অজ্ঞানেরা বুদ্ধির অভাবে মারা পড়ে। সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না। কুকর্ম্ম করা অজ্ঞানের আমোদ, আর প্রজ্ঞা বুদ্ধিমানের আমোদ। দুষ্ট যাহা ভয় করে, তাহার প্রতি তাহাই ঘটিবে; কিন্তু ধার্ম্মিকদের বাসনা সফল হইবে। যখন ঘূর্ণবায়ু বহিয়া যায়, দুষ্ট আর নাই; কিন্তু ধার্ম্মিক নিত্যস্থায়ী ভিত্তিমূলস্বরূপ। যেমন দন্তের পক্ষে অম্লরস ও চক্ষের পক্ষে ধূম, তেমনি আপন প্রেরণকর্ত্তাদের পক্ষে অলস। সদাপ্রভুর ভয় আয়ুবৃদ্ধি করে; কিন্তু দুষ্টদের বৎসর-সংখ্যা হ্রাস পাইবে। ধার্ম্মিকদের প্রত্যাশা আনন্দজনক; কিন্তু দুষ্টদের আশ্বাস বিনাশ পাইবে। সদাপ্রভুর পথ সিদ্ধের পক্ষে দুর্গ, কিন্তু তাহা অধর্ম্মাচারীদের পক্ষে সর্ব্বনাশ। ধার্ম্মিক লোক কখনও বিচলিত হইবে না; কিন্তু দুষ্টগণ দেশে বাস করিবে না। ধার্ম্মিকের মুখ প্রজ্ঞা-ফলে ফলবান; কিন্তু কুটিল জিহ্বা ছেদন করা যাইবে। ধার্ম্মিকের ওষ্ঠাধর সন্তোষের বিষয় জানে, কিন্তু দুষ্টদের মুখ কুটিলতামাত্র। ছলনার নিক্তি সদাপ্রভুর ঘৃণিত; কিন্তু ন্যায্য বাট্খারা তাঁহার তুষ্টিকর। অহঙ্কার আসিলে অপমানও আইসে; কিন্তু প্রজ্ঞাই নম্রদিগের সহচরী। সরলদের সিদ্ধতা তাহাদিগকে পথ দেখাইবে; কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের বক্রতা তাহাদিগকে নষ্ট করিবে। ক্রোধের দিনে ধন উপকার করে না; কিন্তু ধার্ম্মিকতা মৃত্যু হইতে রক্ষা করে। সিদ্ধের ধার্ম্মিকতা তাহার পথ সরল করে; কিন্তু দুষ্ট নিজ দুষ্টতায় পতিত হয়। সরলদের ধার্ম্মিকতা তাহাদিগকে উদ্ধার করে; কিন্তু বিশ্বাসঘাতকেরা নিজ নিজ কামনায় ধরা পড়ে। দুষ্ট মরিলে তাহার আশ্বাস নষ্ট হয়; আর অধর্ম্মের প্রত্যাশা বিনাশ পায়। ধার্ম্মিক সঙ্কট হইতে উদ্ধার পায়, আর দুষ্ট তাহার স্থানে উপস্থিত হয়। মুখ দ্বারা পাষণ্ড আপন প্রতিবাসীকে নষ্ট করে; কিন্তু জ্ঞান দ্বারা ধার্ম্মিকগণ উদ্ধার পায়। ধার্ম্মিকদের মঙ্গল হইলে নগরে উল্লাস হয়; দুষ্টদের বিনাশ হইলে আনন্দগান হয়। সরলদিগের আশীর্ব্বাদে নগর উন্নত হয়; কিন্তু দুষ্টদের বাক্যে তাহা উৎপাটিত হয়। যে প্রতিবাসীকে তুচ্ছ করে, সে বুদ্ধিবিহীন; কিন্তু বুদ্ধিমান নীরব হইয়া থাকে। কর্ণেজপ গুপ্ত কথা ব্যক্ত করে; কিন্তু যে আত্মায় বিশ্বস্ত, সে কথা গোপন করে। সুমন্ত্রণার অভাবে প্রজালোক পতিত হয়; কিন্তু মন্ত্রি-বাহুল্যে জয় হয়। যে অপরের জামিন হয়, সে নিশ্চয় ক্লেশ পায়; কিন্তু যে জামিনের কর্ম্ম ঘৃণা করে, সে নিরাপদ। অনুগ্রহশালিনী স্ত্রী সম্মান ধরিয়া রাখে, আর দুর্দ্দান্তেরা ধন ধরিয়া রাখে। দয়ালু আপন প্রাণের উপকার করে; কিন্তু নির্দ্দয় আপন মাংসের কন্টক। দুষ্ট মিথ্যা বেতন উপার্জ্জন করে; কিন্তু যে ধার্ম্মিকতার বীজ বুনে, সে সত্য বেতন পায়। যে ধার্ম্মিকতায় অটল, সে জীবন পায়; কিন্তু যে দুষ্টতার পিছনে দৌড়ে, সে নিজ মৃত্যু ঘটায়। বক্রচিত্তেরা সদাপ্রভুর ঘৃণার পাত্র; কিন্তু যাহারা আপন পথে সিদ্ধ, তাহারা তাঁহার সন্তোষের পাত্র। হস্তে হস্ত দিলেও দুষ্ট অদণ্ডিত থাকিবে না; কিন্তু ধার্ম্মিকদের বংশ রক্ষা পাইবে। যেমন শূকরের নাসিকায় সুবর্ণের নথ, তেমনি সুবিচার-ত্যাগিনী সুন্দরী স্ত্রী। ধার্ম্মিকদের মনোভিলাষ কেবল উত্তম, দুষ্টদের প্রত্যাশা ক্রোধমাত্র। কেহ কেহ বিতরণ করিয়া আরও বৃদ্ধি পায়; কেহ কেহ বা ন্যায্য ব্যয় অস্বীকার করিয়া কেবল অভাবে পড়ে। দানশীল ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয়, জল-সেচনকারী আপনিও জলে সিক্ত হয়। যে শস্য আটক করিয়া রাখে, লোকে তাহাকে শাপ দেয়; কিন্তু যে শস্য বিক্রয় করে, তাহার মস্তকে আশীর্ব্বাদ বর্ত্তে। যে সযত্নে মঙ্গল চেষ্টা করে, সে প্রীতির অন্বেষণ করে; কিন্তু যে অমঙ্গল খুঁজিয়া বেড়ায়, তাহারই প্রতি তাহা ঘটে। যে আপন ধনে নির্ভর করে, সে পতিত হয়; কিন্তু ধার্ম্মিকগণ সতেজ পল্লবের ন্যায় প্রফুল্ল হয়। যে নিজ পরিবারের কন্টক, সে বায়ু অধিকার করে; আর অজ্ঞান বিজ্ঞচিত্তের দাস হয়। ধার্ম্মিকের ফল জীবনবৃক্ষ; এবং জ্ঞানবান [অপরদের] প্রাণ লাভ করে। দেখ, পৃথিবীতে ধার্ম্মিক প্রতিফল পায়, তবে দুর্জ্জন ও পাপী আরও কত না পাইবে! যে শাসন ভালবাসে, সে জ্ঞান ভালবাসে; কিন্তু যে অনুযোগ ঘৃণা করে, সে পশুবৎ! সৎ লোক সদাপ্রভুর নিকটে অনুগ্রহ পাইবে; কিন্তু তিনি কুকল্পনাকারীকে দোষী করিবেন। মনুষ্য দুষ্টতা দ্বারা সুস্থির হইবে না, কিন্তু ধার্ম্মিকদের মূল বিচলিত হইবে না। গুণবতী স্ত্রী স্বামীর মুকুটস্বরূপ, কিন্তু লজ্জাদায়িনী তাহার সকল অস্থির পচন স্বরূপ। ধার্ম্মিকদের সঙ্কল্প সকল ন্যায্য, কিন্তু দুষ্টদের মন্ত্রণা ছলমাত্র। দুষ্টগণের কথাবার্ত্তা রক্তপাত জন্য লুকাইয়া থাকামাত্র; কিন্তু সরলদের মুখ তাহাদিগকে রক্ষা করে। দুষ্টগণ নিপাতিত হয়, তাহারা আর নাই; কিন্তু ধার্ম্মিকদের বাটী অটল থাকে। মনুষ্য আপন বিজ্ঞতানুরূপ প্রশংসা পায়; কিন্তু যে কুটিলচিত্ত, সে তুচ্ছীকৃত হয়। যে তুচ্ছীকৃত, তথাপি দাস রাখে, সে খাদ্যহীন আত্মশ্লাঘী হইতে উৎকৃষ্ট। ধার্ম্মিক আপন পশুর প্রাণের বিষয় চিন্তা করে; কিন্তু দুষ্টদের করুণা নিষ্ঠুর। যে আপন জমি চাষ করে, সে যথেষ্ট আহার পায়; কিন্তু যে অসারদের পিছনে পিছনে দৌড়ে, সে বুদ্ধিবিহীন। দুষ্ট লোক দুর্জ্জনদের শিকার বাঞ্ছা করে; কিন্তু ধার্ম্মিকদের মূল ফলদায়ক। ওষ্ঠের অধর্ম্মে দুর্জ্জনের ফাঁদ থাকে, কিন্তু ধার্ম্মিক সঙ্কট হইতে উত্তীর্ণ হয়। মনুষ্য আপন মুখের ফল দ্বারা মঙ্গলে তৃপ্ত হয়, মনুষ্যের হস্তকৃত কর্ম্মের ফল তাহারই প্রতি বর্ত্তে। অজ্ঞানের পথ তাহার নিজের দৃষ্টিতে সরল; কিন্তু যে জ্ঞানবান, সে পরামর্শ শুনে। অজ্ঞানের বিরক্তি একেবারে ব্যক্ত হয়, কিন্তু সতর্ক লোক অপমান ঢাকে। যে সত্যবাদী, সে ধর্ম্মের কথা কহে; কিন্তু মিথ্যাসাক্ষী ছলের কথা কহে। কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়্‌গাঘাতের মত, কিন্তু জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ। সত্যের ওষ্ঠ চিরকাল স্থায়ী; কিন্তু মিথ্যাবাদী জিহ্বা নিমেষমাত্র স্থায়ী। কু-কল্পনাকারীদের হৃদয়ে ছল থাকে; কিন্তু যাহারা শান্তির মন্ত্রণা দেয়, তাহাদের আনন্দ হয়। ধার্ম্মিকের কোন বিড়ম্বনা ঘটে না; কিন্তু দুষ্টেরা অনিষ্টে পূর্ণ হয়। মিথ্যাবাদী ওষ্ঠ সদাপ্রভুর ঘৃণিত; কিন্তু যাহারা বিশ্বস্ততায় চলে, তাহারা তাঁহার সন্তোষ-পাত্র। সতর্ক লোক জ্ঞান আচ্ছাদন করে; কিন্তু হীনবুদ্ধিদের হৃদয় অজ্ঞানতা প্রচার করে। পরিশ্রমীদের হস্ত কর্ত্তৃত্ব পায়; কিন্তু অলস পরাধীন দাস হয়। মনুষ্যের মনোব্যথা মনকে নত করে; কিন্তু উত্তম বাক্য তাহা হর্ষযুক্ত করে। ধার্ম্মিক নিজ প্রতিবাসীর পথ প্রদর্শক হয়; কিন্তু দুষ্টদের পথ তাহাদিগকে ভ্রান্ত করে। অলস মৃগয়াতে ধৃত পশু পাক করে না; কিন্তু মনুষ্যের বহুমূল্য রত্ন পরিশ্রমীর পক্ষে। ধার্ম্মিকতার পথে জীবন থাকে; তাহার গমন-পথে মৃত্যু নাই। জ্ঞানবান পুত্র পিতার শাসন মানে, কিন্তু নিন্দক ভর্ৎসনা শুনে না। মনুষ্য নিজ মুখের ফল দ্বারা মঙ্গল ভোগ করে; কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের প্রাণ দৌরাত্ম্য ভোগ করে। যে মুখ সাবধানে রাখে, সে প্রাণ রক্ষা করে; যে ওষ্ঠাধর খুলিয়া দেয়, তাহার সর্ব্বনাশ হয়। অলসের প্রাণ লালসা করে, কিছুই পায় না; কিন্তু পরিশ্রমীদের প্রাণ পুষ্ট হয়। ধার্ম্মিক মিথ্যা কথা ঘৃণা করে; কিন্তু দুষ্ট লোক দুর্গন্ধস্বরূপ, সে লজ্জা জন্মায়। ধার্ম্মিকতা সিদ্ধাচারীকে রক্ষা করে; কিন্তু দুষ্টতা পাপীকে পাড়িয়া ফেলে। কেহ আপনাকে ধনবান দেখায়, কিন্তু তাহার কিছুই নাই; কেহ বা আপনাকে দরিদ্র দেখায়, কিন্তু তাহার মহাধন আছে। মানুষের ধন তাহার প্রাণের প্রায়শ্চিত্ত; কিন্তু দরিদ্র তর্জ্জন শুনে না। ধার্ম্মিকের দীপ্তি আনন্দ করে; কিন্তু দুষ্টদের প্রদীপ নিভিয়া যায়। অহঙ্কারে কেবল বিবাদ উৎপন্ন হয়; কিন্তু যাহারা পরামর্শ মানে, প্রজ্ঞা তাহাদের সহবর্ত্তী। অলীকতায় অর্জ্জিত ধন ক্ষয় পায়; কিন্তু যে ব্যক্তি হস্ত দ্বারা সঞ্চয় করে, সে অধিক পায়। আশাসিদ্ধির বিলম্ব হৃদয়ের পীড়াজনক; কিন্তু বাঞ্ছার সিদ্ধি জীবনবৃক্ষ। যে বাক্য তুচ্ছ করে, সে আপনার সর্ব্বনাশ ঘটায়; যে ভয়পূর্ব্বক আজ্ঞা মানে, সে পুরস্কার পায়। জ্ঞানবানের শিক্ষা জীবনের উৎস, তাহা মৃত্যুর ফাঁদ হইতে দূরে যাইবার পথ। সুবুদ্ধি অনুগ্রহজনক, কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের পথ অসমান। যে কেহ সতর্ক, সে জ্ঞানপূর্ব্বক কর্ম্ম করে; কিন্তু হীনবুদ্ধি মূর্খতা বিস্তার করে। দুষ্ট দূত বিপদে পড়ে, কিন্তু বিশ্বস্ত দূত স্বাস্থ্যস্বরূপ। যে শাসন অমান্য করে, সে দরিদ্রতা ও লজ্জা পায়; কিন্তু যে অনুযোগ মান্য করে, সে সম্মানিত হয়। বাসনার সিদ্ধি প্রাণে মধুর বোধ হয়; কিন্তু মন্দ হইতে সরিয়া যাওয়া হীনবুদ্ধিদের ঘৃণিত। জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে। অমঙ্গল পাপীদের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়ে; কিন্তু ধার্ম্মিকদিগকে মঙ্গলরূপ পুরস্কার দত্ত হয়। সৎ লোক পুত্রদের পুত্রগণের জন্য অধিকার রাখিয়া যায়; কিন্তু পাপীর ধন ধার্ম্মিকের নিমিত্ত সঞ্চিত হয়। দরিদ্রগণের ভূমির চাষে খাদ্যবাহুল্য হয়; কিন্তু বিচারের অভাবে কেহ কেহ নষ্ট হয়। যে দণ্ড না দেয়, সে পুত্রকে দ্বেষ করে; কিন্তু যে তাহাকে প্রেম করে, সে সযত্নে শাস্তি দেয়। ধার্ম্মিক প্রাণের তৃপ্তি পর্য্যন্ত আহার করে, কিন্তু দুষ্টদের উদর শূন্য থাকে। স্ত্রীলোকদের বিজ্ঞতা তাহাদের গৃহ গাঁথে; কিন্তু অজ্ঞানতা স্বহস্তে তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলে। যে আপন সরলতায় চলে, সেই সদাপ্রভুকে ভয় করে; কিন্তু যে বক্রপথগামী, সে তাঁহাকে তুচ্ছ করে। অজ্ঞানের মুখে অহঙ্কারের দণ্ড থাকে; কিন্তু জ্ঞানবানদের ওষ্ঠ তাহাদিগকে রক্ষা করে। গোরু না থাকিলে যাবপাত্র পরিষ্কার থাকে; কিন্তু বলদের বলে ধনের বাহুল্য হয়। বিশ্বস্ত সাক্ষী মিথ্যা কথা কহে না; কিন্তু মিথ্যাসাক্ষী অসত্য কথা কহে। নিন্দক প্রজ্ঞার অন্বেষণ করে, আর তাহা পায় না; কিন্তু বুদ্ধিমানের পক্ষে জ্ঞান সুলভ। তুমি হীনবুদ্ধির সম্মুখে যাও, তাহার কাছে জ্ঞানের ওষ্ঠাধর দেখিবে না। নিজ পথ বুঝিয়া লওয়া সতর্কের প্রজ্ঞা, কিন্তু হীনবুদ্ধিদের অজ্ঞানতা ছলমাত্র। অজ্ঞানেরা দোষকে উপহাস করে; কিন্তু ধার্ম্মিকদের কাছে অনুগ্রহ থাকে। অন্তঃকরণ আপনার তিক্ততা বুঝে, অপর লোক তাহার আনন্দের ভাগী হইতে পারে না। দুষ্টদের বাটী বিনষ্ট হইবে; কিন্তু সরলদের তাম্বু সতেজ হইবে। একটী পথ আছে, যাহা মানুষের দৃষ্টিতে সরল; কিন্তু তাহার পরিমাণ মৃত্যুর পথ। হাস্যকালেও মনোদুঃখ হয়, আর আনন্দের পরিণাম খেদ। যে চিত্তে বিপথগামী, সে নিজ আচরণে পূর্ণ হয়; কিন্তু সৎ লোক আপনা হইতে [তৃপ্ত হয়]। যে অবোধ, সে সকল কথায় বিশ্বাস করে, কিন্তু সতর্ক লোক নিজ পাদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য রাখে জ্ঞানবান ভয় করিয়া মন্দ হইতে সরিয়া যায়; কিন্তু হীনবুদ্ধি অভিমানী ও দুঃসাহসী। আশুক্রোধী অজ্ঞানের কার্য্য করে, আর কু-কল্পনাকারী ঘৃণার পাত্র হয়। অবোধদের অধিকার অজ্ঞানতা; কিন্তু সতর্কেরা জ্ঞানমুকুটে বিভূষিত হয়। দুর্বৃত্তেরা সুজনদের সম্মুখে, আর দুষ্টেরা ধার্ম্মিকের দ্বারে প্রণত হয়। দরিদ্র আপন প্রতিবাসীরও ঘৃণিত, কিন্তু ধনবানের অনেক বন্ধু আছে। যে প্রতিবাসীকে তুচ্ছ করে, সে পাপ করে; কিন্তু যে দীনহীনদের প্রতি দয়া করে, সে ধন্য। যাহারা অনিষ্ট কল্পনা করে, তাহারা কি ভ্রান্ত হয় না? কিন্তু যাহারা মঙ্গল কল্পনা করে, তাহারা দয়া ও সত্য পায়। সমস্ত পরিশ্রমেই সংস্থান হয়, কিন্তু ওষ্ঠের বাচালতায় কেবল অভাব ঘটে। জ্ঞানবানদের ধনই তাহাদের মুকুট; কিন্তু হীনবুদ্ধিদের অজ্ঞানতা অজ্ঞানতামাত্র। সত্য সাক্ষী লোকের প্রাণ রক্ষা করে; কিন্তু যে অসত্য কথা কহে, সে ছলনা করে। সদাপ্রভুর ভয় দৃঢ় বিশ্বাসভূমি; তাঁহার সন্তানগণ আশ্রয় স্থান পাইবে। সদাপ্রভুর ভয় জীবনের উৎস, তাহা মৃত্যুর ফাঁদ হইতে দূরে যাইবার পথ। প্রজাবাহুল্যে রাজার শোভা হয়; কিন্তু জনবৃন্দের অভাবে ভূপতির সর্ব্বনাশ ঘটে। যে ক্রোধে ধীর, সে বড় বুদ্ধিমান; কিন্তু আশুক্রোধী অজ্ঞানতা তুলিয়া ধরে। শান্ত হৃদয় শরীরের জীবন; কিন্তু ঈর্ষা সকল অস্থির পচনস্বরূপ। যে দীনহীনের প্রতি উপদ্রব করে, সে তাহার নির্ম্মাতাকে টিট্‌কারী দেয়; কিন্তু যে দরিদ্রের প্রতি দয়া করে, সে তাঁহাকে সম্মান করে। দুষ্ট লোক আপন দুষ্কার্য্যে নিপাতিত হয়, কিন্তু ধার্ম্মিক মরণকালে আশ্রয় পায়। জ্ঞানবানের হৃদয়ে প্রজ্ঞা বিশ্রাম করে, কিন্তু হীনবুদ্ধিদের অন্তরে যাহা থাকে, তাহা প্রকাশ হইয়া পড়ে। ধার্ম্মিকতা জাতিকে উন্নত করে, কিন্তু পাপ লোকবৃন্দের কলঙ্ক। যে দাস বুদ্ধিপূর্ব্বক চলে, তাহার প্রতি রাজার অনুগ্রহ বর্ত্তে; কিন্তু লজ্জাদায়ী তাঁহার ক্রোধের পাত্র হয়। কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে, কিন্তু কটুবাক্য কোপ উত্তেজিত করে। জ্ঞানীদের জিহ্বা উত্তমরূপে জ্ঞান ব্যক্ত করে; কিন্তু হীনবুদ্ধিদের মুখ অজ্ঞানতা উদগার করে। সদাপ্রভুর চক্ষু সর্ব্বস্থানেই আছে, তাহা অধম ও উত্তমদের প্রতি দৃষ্টি রাখে। স্বাস্থ্যজনক জিহ্বা জীবনবৃক্ষ; কিন্তু তাহা বিগড়াইয়া গেলে আত্মা ভগ্ন হয়। অজ্ঞান আপন পিতার শাসন অগ্রাহ্য করে; কিন্তু যে অনুযোগ মানে, সেই সতর্ক হয়। ধার্ম্মিকের গৃহে মহাধন থাকে; কিন্তু দুষ্টের আয়ে উদ্বেগ থাকে। জ্ঞানবানদের ওষ্ঠাধর জ্ঞান ছড়াইয়া দেয়; কিন্তু হীনবুদ্ধিদের চিত্ত স্থির নয়। দুষ্টদের বলিদান সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ; কিন্তু সরলদের প্রার্থনা তাঁহার সন্তোষজনক। দুষ্টদের পথ সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ; কিন্তু তিনি ধার্ম্মিকতার অনুগামীকে ভালবাসেন। সৎ-পথত্যাগীর জন্য দুঃখদায়ক শাস্তি আছে; যে অনুযোগ ঘৃণা করে, সে মরিবে। পাতাল ও বিনাশস্থান সদাপ্রভুর দৃষ্টিগোচর; তবে মনুষ্য-সন্তানদের হৃদয়ও কি তদ্রূপ নয়? নিন্দক অনুযোগ ভালবাসে না; সে জ্ঞানবানের কাছে যায় না। আনন্দিত মন মুখকে প্রফুল্ল করে, কিন্তু মনের ব্যথায় আত্মা ভগ্ন হয়। বুদ্ধিমানের মন জ্ঞান অন্বেষণ করে; কিন্তু হীনবুদ্ধিদের মুখ অজ্ঞানতা-ক্ষেত্রে চরে। দুঃখীর সকল দিনই অশুভ; কিন্তু যাহার হৃষ্ট মন, তাহার সততই ভোজ। সদাপ্রভুর ভয়ের সহিত অল্পও ভাল, তবু উদ্বেগের সহিত প্রচুর ধন ভাল নয়। প্রণয়ভাবের সহিত শাক ভক্ষণ ভাল, তবু দ্বেষভাবের সহিত পুষ্ট গোরু ভাল নয়। যে ব্যক্তি ক্রোধী, সে বিবাদ উত্তেজিত করে; কিন্তু যে ক্রোধে ধীর, সে বিবাদ ক্ষান্ত করে। অলসের পথ কন্টকের বেড়ার ন্যায়; কিন্তু সরলদের পথ রাজপথ। জ্ঞানবান পুত্র পিতার আনন্দ জন্মায়; কিন্তু হীনবুদ্ধি লোক মাতাকে তুচ্ছ করে। নির্ব্বোধ অজ্ঞানতায় আনন্দ করে, কিন্তু বুদ্ধিমান লোক সরল পথে চলে। মন্ত্রণার অভাবে সঙ্কল্প সকল ব্যর্থ হয়; কিন্তু মন্ত্রিবাহুল্যে সে সকল সুস্থির হয়। মানুষ আপন মুখের উত্তরে আনন্দ পায়; আর যথাকালে কথিত বাক্য কেমন উত্তম। বুদ্ধিমানের জন্য জীবনের পথ ঊর্দ্ধগামী, যেন সে অধঃস্থিত পাতাল হইতে সরিয়া যায়। সদাপ্রভু অহঙ্কারীদের বাটী উপড়াইয়া ফেলেন, কিন্তু বিধবার সীমা স্থির রাখেন। কুসঙ্কল্প সকল সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ, কিন্তু মনোহর কথা সকল শুচি। ধনলোভী আপন পরিজনের কন্টক; কিন্তু যে উৎকোচ ঘৃণা করে, সে জীবিত থাকে। ধার্ম্মিকের মন উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করে; কিন্তু দুষ্টদের মুখ হিংসার কথা উদগার করে। সদাপ্রভু দুষ্টদের হইতে দূরে থাকেন, কিন্তু তিনি ধার্ম্মিকদের প্রার্থনা শুনেন। চক্ষুর জ্যোতিঃ চিত্তকে আনন্দিত করে, মঙ্গল-সমাচার অস্থি সকল পুষ্ট করে। যাহার কর্ণ জীবনদায়ক অনুযোগ শুনে, সে জ্ঞানীদের মধ্যে অবস্থিতি করিবে। যে শাসন অমান্য করে, সে আপন প্রাণকে তুচ্ছ করে; কিন্তু যে অনুযোগ শুনে, সে বুদ্ধি উপার্জ্জন করে। সদাপ্রভুর ভয় প্রজ্ঞার শাসন, আর সম্মানের অগ্রে নম্রতা থাকে। মনুষ্য মনে মনে নানা সঙ্কল্প করে, কিন্তু জিহ্বার উত্তর সদাপ্রভু হইতে হয়। মানুষের সমস্ত পথ নিজের দৃষ্টিতে বিশুদ্ধ; কিন্তু সদাপ্রভুই আত্মা সকল তৌল করেন। তোমার কার্য্যের ভার সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাহাতে তোমার সঙ্কল্প সকল সিদ্ধ হইবে। সদাপ্রভু সকলই স্ব স্ব উদ্দেশ্যে করিয়াছেন, দুষ্টকেও দুর্দ্দশাদিনের নিমিত্ত করিয়াছেন। যে কেহ হৃদয়ে গর্ব্বিত, সে সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ, হস্তে হস্ত দিলেও সে অদণ্ডিত থাকিবে না। দয়া ও সত্যে অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হয়, আর সদাপ্রভুর ভয়ে মনুষ্য মন্দ হইতে সরিয়া যায়। মানুষের পথ যখন সদাপ্রভুর সন্তোষজনক হয়, তখন তিনি তাহার শত্রুদিগকেও তাহার প্রণয়ী করেন। ধার্ম্মিকতার সহিত অল্পও ভাল, তথাপি অন্যায়ের সহিত প্রচুর আয় ভাল নয়। মনুষ্যের মন আপন পথের বিষয় সঙ্কল্প করে; কিন্তু সদাপ্রভু তাহার পাদবিক্ষেপ স্থির করেন। রাজার ওষ্ঠে ঐশিক বিচারাজ্ঞা থাকে, বিচারে তাঁহার মুখ সত্যলঙ্ঘন করিবে না। খাটি তরাজু ও নিক্তি সদাপ্রভুরই; থলিয়ার বাটখারা সকল তাঁহার কৃত বস্তু। দুষ্ট আচরণ রাজাদের ঘৃণাস্পদ; কারণ ধার্ম্মিকতায় সিংহাসন স্থির থাকে। ধর্ম্মশীল ওষ্ঠাধর রাজগণের প্রিয়, তাঁহারা ন্যায়বাদীকে ভালবাসেন। রাজার ক্রোধ মৃত্যুর দূতগণের ন্যায়; কিন্তু জ্ঞানবান লোক তাহা শান্ত করে। রাজার মুখের দীপ্তিতে জীবন, তাঁহার অনুগ্রহ অন্তিম বর্ষার মেঘ। সুবর্ণ অপেক্ষা প্রজ্ঞালাভ কেমন উত্তম। রৌপ্য অপেক্ষা বিবেচনালাভ বরণীয়। দুষ্ক্রিয়া হইতে সরিয়া যাওয়াই সরলদের রাজপথ; যে আপন পথ রক্ষা করে, সে প্রাণ বাঁচায়। বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার, পতনের পূর্ব্বে মনের গর্ব্ব। বরং দীনহীনদের সহিত নম্রাত্মা হওয়া ভাল, তবু অহঙ্কারীদের সহিত লুট বিভাগ করা ভাল নয়। যে বাক্যে মন দেয়, সে মঙ্গল পায়; এবং যে সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, সে ধন্য। বিজ্ঞচিত্ত বুদ্ধিমান বলিয়া আখ্যাত হয়; এবং ওষ্ঠের মাধুরী পাণ্ডিত্যের বৃদ্ধি করে। বিবেচনা বিবেচকের পক্ষে জীবনের উনুই; কিন্তু অজ্ঞানতা অজ্ঞানদের শাস্তি। জ্ঞানবানের হৃদয় তাহার মুখকে বুদ্ধি দেয়, তাহার ওষ্ঠে পাণ্ডিত্য যোগায়। মনোহর বাক্য মৌচাকের ন্যায়; তাহা প্রাণের পক্ষে মধুর, অস্থির পক্ষে স্বাস্থ্যকর। একটী পথ আছে, যাহা মানুষের দৃষ্টিতে সরল, কিন্তু তাহার পরিণাম মৃত্যুর পথ। শ্রমীর ক্ষুধাই তাহাকে পরিশ্রম করায়; বস্তুতঃ তাহার মুখ তাহাকে পীড়াপীড়ি করে। পাষণ্ড খনন করিয়া অনিষ্ট তোলে, তাহার ওষ্ঠে যেন জ্বলন্ত অঙ্গার থাকে। কুটিল ব্যক্তি বিবাদ খুলিয়া দেয়, পরীবাদক মিত্রভেদ জন্মায়। অত্যাচারী প্রতিবাসীকে লোভ দেখায়, এবং তাহাকে মন্দ পথে লইয়া যায়। যে চক্ষু মুদ্রিত করে, সে কুটিল বিষয়ের সঙ্কল্প করিবার জন্যই করে, যে ওষ্ঠ সঙ্কুচিত করে, সে দুষ্কর্ম্ম সিদ্ধ করে। পক্ব কেশ শোভার মুকুট; তাহা ধার্ম্মিকতার পথে পাওয়া যায়। যে ক্রোধে ধীর, সে বীর হইতেও উত্তম, নিজ আত্মার শাসনকারী নগর-জয়কারী হইতেও শ্রেষ্ঠ। গুলিবাঁট কোলে ফেলা যায়, কিন্তু তাহার সমস্ত নিষ্পত্তি সদাপ্রভু হইতে হয়। শান্তিযুক্ত এক শুষ্ক গ্রাসও ভাল, তবু বিবাদযুক্ত ভোজে পরিপূর্ণ গৃহ ভাল নয়। যে দাস বুদ্ধিপূর্ব্বক চলে, সে লজ্জাদায়ী পুত্রের উপরে কর্ত্তৃত্ব পায়, ভ্রাতাদের মধ্যে সে অধিকারের অংশী হয়। মুষী রৌপ্যের জন্য ও হাফর সুবর্ণের জন্য, কিন্তু সদাপ্রভুই চিত্তের পরীক্ষা করেন। দুরাচার দুষ্ট ওষ্ঠাধরের কথা শুনে; মিথ্যাবাদী হিংস্র জিহ্বায় কর্ণপাত করে। যে দীনহীনকে পরিহাস করে, সে তাহার নির্ম্মাতাকে টিট্‌কারী দেয়; যে বিপদে আনন্দ করে, সে অদণ্ডিত থাকিবে না। পুত্রদের পুত্রগণ বৃদ্ধদিগের মুকুট, এবং পিতারাই বালকদের শোভা। বাক্‌পটু ওষ্ঠ মূর্খের অনুপযুক্ত, মিথ্যাবাদী ওষ্ঠ মহোদয়ের আরও অনুপযুক্ত। গ্রাহকের দৃষ্টিতে দান বহুমূল্য মণির ন্যায়; তাহা যে দিকে ফিরে, সেই দিকে কৃতকার্য্য হয়। যে অধর্ম্ম আচ্ছাদন করে, সে প্রেমের অন্বেষণ করে; কিন্তু যে পুনঃ পুনঃ এক কথা বলে, সে মিত্রভেদ জন্মায়। বুদ্ধিমানের মনে অনুযোগ যত লাগে, হীনবুদ্ধির মনে এক শত প্রহারও তত লাগে না। দুর্জ্জন কেবল বিদ্রোহ চেষ্টা করে, তাহার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর দূত প্রেরিত হইবে। বরং হৃতবৎসা ভল্লুকী মনুষ্যের সহিত সাক্ষাৎ করুক, তবু অজ্ঞানতা-মগ্ন হীনবুদ্ধি না করুক। যে উপকার পাইয়া অপকার করে, অপকার তাহার বাটী ত্যাগ করিবে না। বিবাদের আরম্ভ সেতুভঙ্গ জলের ন্যায়; অতএব উচ্চণ্ড হইবার পূর্ব্বে বিবাদ ত্যাগ কর। যে দুষ্টকে নির্দ্দোষ করে, ও যে ধার্ম্মিককে দোষী করে, তাহারা উভয়েই সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ। হীনবুদ্ধির হস্তে অর্থ কেন থাকিবে? কি প্রজ্ঞা কিনিবার জন্য? তাহার যে বুদ্ধি নাই। বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার জন্য জন্মে। হীনবুদ্ধি হস্তে হস্ত তালী দেয়, প্রতিবাসীর কাছে জামিন হয়। যে বিরোধ ভালবাসে, সে অধর্ম্ম ভালবাসে; যে আপন দ্বার উচ্চ করে, সে বিনাশ অন্বেষণ করে। যে কুটিলমনা, সে মঙ্গল পায় না; যাহার জিহ্বা বক্র, সে বিপদে পতিত হয়। হীনবুদ্ধির জন্মদাতা আপনার খেদ জন্মায়; মূর্খের পিতা আনন্দ পায় না। সানন্দ হৃদয় স্বাস্থ্যজনক; কিন্তু ভগ্ন আত্মা অস্থি শুষ্ক করে। দুষ্ট লোক ক্রোড় হইতে উৎকোচ লয়, বিচারের পথ বক্র করিবার জন্য। বুদ্ধিমানের সম্মুখেই প্রজ্ঞা থাকে; কিন্তু হীনবুদ্ধির দৃষ্টি পৃথিবীর অন্তে যায়। হীনবুদ্ধি পুত্র আপন পিতার মনস্তাপস্বরূপ, আর সে আপন জননীর শোক জন্মায়। ধার্ম্মিকের অর্থদণ্ড করাও অনুচিত, সরলতার জন্য মহোদয়দিগকে প্রহার করাও অনুচিত। যে বাক্য সম্বরণ করে, সে জ্ঞানবান; আর যে শীতলাত্মা, সে বুদ্ধিমান। মূর্খও নীরব থাকিলে জ্ঞানবান বলিয়া গণিত হয়; যে ওষ্ঠাধর বদ্ধ রাখে, সে বুদ্ধিমান [বলিয়া গণিত]। যে পৃথক্‌ হয় সে নিজ অভীষ্ট চেষ্টা করে, এবং সমস্ত বুদ্ধিকৌশলের বিরুদ্ধে উচ্চণ্ড হয়। হীনবুদ্ধি বিবেচনায় প্রীত হয় না, কেবল নিজ মনেরই কথা প্রকাশে প্রীত হয়। দুষ্ট আসিলে তুচ্ছতাচ্ছল্যও আইসে, আর অপমানের সহিত দুর্নাম আইসে। মানুষের মুখের কথা গভীর জলের ন্যায়, প্রজ্ঞার উৎস স্রোতোবাহী প্রণালীর ন্যায়। দুষ্টের মুখাপেক্ষা করা ভাল নয়, তাহা করিলে বিচারে ধার্ম্মিককে ঠেলিয়া ফেলা হয়। হীনবুদ্ধির ওষ্ঠ বিবাদ সঙ্গে করিয়া আইসে, তাহার মুখ মার মার বলিয়া ডাকে। হীনবুদ্ধির মুখ তাহার সর্ব্বনাশজনক, তাহার ওষ্ঠ তাহার প্রাণের ফাঁদ। পরিবাদকের কথা মিষ্টান্নবৎ, তাহা অন্তরের অন্তঃপুরে নামিয়া যায়। যে ব্যক্তি আপন কার্য্যে অলস, সে বিনাশকের সহোদর। সদাপ্রভুর নাম দৃঢ় দুর্গ; ধার্ম্মিক তাহারই মধ্যে পলাইয়া রক্ষা পায়। ধনবানের ধনই তাহার দৃঢ় নগর, তাহার বোধে তাহা উচ্চ প্রাচীর। বিনাশের অগ্রে মনুষ্যের মন গর্ব্বিত হয়, আর সম্মানের অগ্রে নম্রতা থাকে। শুনিবার পূর্ব্বে যে উত্তর করে, তাহা তাহার পক্ষে অজ্ঞানতা ও অপমান। মানুষের আত্মা তাহার পীড়া সহিতে পারে, কিন্তু ভগ্ন আত্মা কে বহন করিতে পারে? বুদ্ধিমানের চিত্ত জ্ঞান উপার্জ্জন করে, এবং জ্ঞানবানদের কর্ণ জ্ঞানের সন্ধান করে। মানুষের উপহার তাহার জন্য পথ করে, বড় লোকদের সাক্ষাতে তাহাকে উপস্থিত করে। যে প্রথমে নিজ পক্ষ সমর্থন করে, তাহাকে ধার্ম্মিক বোধ হয়; কিন্তু তাহার প্রতিবাসী আসিয়া তাহার পরীক্ষা করে। গুলিবাঁট দ্বারা বিবাদের নিবৃত্তি হয়, ও বলবানদের মধ্যে বিবাদ ভঞ্জন হয়। বিরক্ত ভ্রাতা দৃঢ় নগর অপেক্ষা [দুর্জ্জয়], আর বিবাদ দুর্গের অর্গলস্বরূপ। মানুষের অন্তর তাহার মুখের ফলে পূরিয়া যায়, সে আপন ওষ্ঠে কৃত উপার্জ্জনে পূর্ণ হয়। মরণ ও জীবন জিহ্বার অধীন; যাহারা তাহা ভালবাসে, তাহারা তাহার ফল ভোগ করিবে। যে ভার্য্যা পায়, সে উৎকৃষ্ট বস্তু পায়, এবং সদাপ্রভুর কাছে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়। দরিদ্র লোক অনুনয় বিনয় করে, কিন্তু ধনবান কঠিন উত্তর দেয়। যাহার অনেক বন্ধু, তাহার সর্ব্বনাশ হয়; কিন্তু ভ্রাতা অপেক্ষাও অধিক প্রেমাসক্ত এক বন্ধু আছেন। যে দরিদ্র আপন সিদ্ধতায় চলে, সে কুটিলোষ্ঠ হীনবুদ্ধি অপেক্ষা ভাল। প্রাণ জ্ঞানবিহীন হইলে মঙ্গল নাই, যে দ্রুত পাদবিক্ষেপ করে, সে পাপ করে। মানুষের অজ্ঞানতা তাহার পথ বিপরীত করে, আর তাহার চিত্ত সদাপ্রভুর উপরে রুষ্ট হয়। ধন দ্বারা অনেক বন্ধু লাভ হয়; কিন্তু দরিদ্র আপন বন্ধু হইতে পৃথক্ হয়। মিথ্যাসাক্ষী অদণ্ডিত থাকিবে না, মিথ্যাভাষী রক্ষা পাইবে না। অনেকে বদান্যের স্তুতিবাদ করে, এবং সকলে দানশীলের বন্ধু হয়। দরিদ্রের ভ্রাতারা সকলে তাহাকে দ্বেষ করে, আরও নিশ্চয়, তাহার বন্ধুগণ তাহা হইতে দূরে যায়; সে আলাপের চেষ্টা করে, কিন্তু তাহারা নাই। যে বুদ্ধি উপার্জ্জন করে, সে আপন প্রাণকে প্রেম করে, যে বিবেচনা রক্ষা করে, সে মঙ্গল পায়। মিথ্যাসাক্ষী অদণ্ডিত থাকিবে না, মিথ্যাভাষী বিনাশ পাইবে। সুখভোগ হীনবুদ্ধির অনুপযুক্ত, জনাধ্যক্ষদের উপরে দাসের কর্ত্তৃত্ব আরও অনুপযুক্ত। মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে, আর দোষ ছাড়িয়া দেওয়া তাহার শোভা। রাজার কোপ সিংহের হুঙ্কারের তুল্য; কিন্তু তাঁহার অনুগ্রহ তৃণের উপরিস্থ শিশিরবৎ। হীনবুদ্ধি পুত্র পিতার বিষাদজনক, আর স্ত্রীর বিবাদ অবিরত বিন্দুপাতের তুল্য। বাটী ও ধন পৈত্রিক অধিকার; কিন্তু বুদ্ধিমতী স্ত্রী সদাপ্রভু হইতে পাওয়া যায়। আলস্য অগাধ নিদ্রায় মগ্ন করে, এবং অলস প্রাণ ক্ষুধায় কষ্ট পায়। যে আজ্ঞা পালন করে, সে আপন প্রাণ রক্ষা করে; যে আপন পথ উপেক্ষা করে, সে মরিবে। যে দরিদ্রকে কৃপা করে, সে সদাপ্রভুকে ঋণ দেয়; তিনি তাহার সেই উপকারের পরিশোধ করিবেন। তোমার পুত্রকে শাসন কর, কারণ আশা আছে, তোমার প্রাণ তাহার মৃত্যু ঘটাইবার বাসনা না করুক। অতি ক্রুদ্ধ লোক দণ্ড পাইবে; [তাহাকে] যদি উদ্ধার কর, আবার করিতে হইবে। পরামর্শ শুন, শাসন গ্রহণ কর, যেন তুমি শেষকালে জ্ঞানবান হও। মানুষের মনে অনেক সঙ্কল্প হয়, কিন্তু সদাপ্রভুরই মন্ত্রণা স্থির থাকিবে। দয়াতেই মনুষ্যকে বাঞ্ছনীয় করে, এবং মিথ্যাবাদী অপেক্ষা দরিদ্র লোক ভাল। সদাপ্রভুর ভয় জীবনে লইয়া যায়, যাহার তাহা আছে, সে তৃপ্ত হইয়া বসতি করে, অমঙ্গল তাহার নিকটে যায় না। অলস থালে হস্ত ডুবায়, পুনর্ব্বার মুখে দিতেও চাহে না। নিন্দককে প্রহার কর, অবোধ চতুর হইবে, বুদ্ধিমানকে অনুযোগ কর, সে জ্ঞান বুঝিতে পারিবে। যে পিতার প্রতি উপদ্রব করে ও মাতাকে তাড়াইয়া দেয়, সে লজ্জাকর ও অপমানজনক পুত্র। হে বৎস, শাসন মানিতে নিবৃত্ত হইলে তুমি জ্ঞানের কথা হইতে ভ্রান্ত হইবে। যে সাক্ষী পাষণ্ড, সে বিচারের নিন্দা করে, দুষ্টগণের মুখ অধর্ম্ম গ্রাস করে। প্রস্তুত রহিয়াছে নিন্দকদের নিমিত্ত দণ্ডাজ্ঞা, মূর্খদের পৃষ্ঠের নিমিত্ত কোড়া। দ্রাক্ষারস নিন্দক; সুরা কলহকারিণী; যে তাহাতে ভ্রান্ত হয়, সে জ্ঞানবান নয়। রাজার ভয়ঙ্করতা সিংহের হুঙ্কারের ন্যায়; যে তাঁহার ক্রোধ জন্মায়, সে আপন প্রাণের বিরুদ্ধে পাপ করে। বিবাদ হইতে নিবৃত্ত হওয়া মনুষ্যের গৌরব, কিন্তু মূর্খমাত্রেই বিবাদ করিবে। শীত প্রযুক্ত অলস হাল বহে না, শস্যের সময়ে সে চাহিবে, কিন্তু কিছুই মিলিবে না। মনুষ্যের হৃদয়ের পরামর্শ গভীর জলের ন্যায়; কিন্তু বুদ্ধিমান তাহা তুলিয়া আনিবে। অনেক লোক স্ব স্ব সাধুতার কীর্ত্তন করে, কিন্তু বিশ্বস্ত লোক কে খুঁজিয়া পাইতে পারে? যে ধার্ম্মিক আপন সিদ্ধতায় চলে, তাহার পরে তাহার সন্তানগণ ধন্য। যে রাজা বিচারাসনে বসেন, তিনি দৃষ্টি দ্বারা সমস্ত দুর্জ্জনতা উড়াইয়া দেন। কে বলিতে পারে, আমি চিত্ত বিশুদ্ধ করিয়াছি, আমার পাপ হইতে শুচি হইয়াছি? রকম রকম বাটখারা ও রকম রকম ঐফা, উভয়ই সদাপ্রভুর ঘৃণিত। বালকও কার্য্য দ্বারা আপন পরিচয় দেয়, তাহার কর্ম্ম বিশুদ্ধ ও সরল কি না, জানায়। শ্রবণকারী কর্ণ ও দর্শনকারী চক্ষু, এই উভয়ই সদাপ্রভুর নির্ম্মিত। নিদ্রাকে ভালবাসিও না, পাছে দীনতা ঘটে; তুমি চক্ষু মেল, খাদ্যে তৃপ্ত হইবে। ক্রেতা বলে, ভাল নয়, ভাল নয়, কিন্তু যখন চলিয়া যায়, তখন শ্লাঘা করে। সুবর্ণ আছে, অনেক মুক্তাও আছে, কিন্তু জ্ঞানবিশিষ্ট ওষ্ঠাধর অমূল্য রত্ন। যে অপরের জামিন হয়, তাহার বস্ত্র লও; যে বিজাতীয়দের জামিন হয়, তাহার কাছে বন্ধক লও। মিথ্যা কথার ফল মানুষের মিষ্ট বোধ হয়, কিন্তু পশ্চাতে তাহার মুখ কাঁকরে পরিপূর্ণ হয়। পরামর্শ দ্বারা সকল সঙ্কল্প স্থির হয়; তুমি সুমন্ত্রণার চালনায় যুদ্ধ কর। যে কর্ণেজপ হইয়া বেড়ায়, সে গুপ্ত কথা ব্যক্ত করে; যাহার মুখ আল্‌গা, তাহার সহিত ব্যবহার করিও না। যে আপন পিতাকে কিম্বা মাতাকে শাপ দেয়, ঘোর অন্ধকারে তাহার প্রদীপ নিভিয়া যাইবে। যে অধিকার প্রথমে ত্বরায় পাওয়া যায়, তাহার শেষ ফল আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে না। তুমি বলিও না, অপকারের প্রতিফল দিব; সদাপ্রভুর অপেক্ষা কর, তিনি তোমাকে রক্ষা করিবেন। রকম রকম বাটখারা সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ, ছলনার তৌল-দণ্ড ভাল নয়। মানুষের পাদবিক্ষেপ সদাপ্রভু হইতে হয়, তবে মানুষ কেমন করিয়া আপন পথ বুঝিবে? হঠাৎ ‘পবিত্র হইল’ বলিয়া উচ্চারণ করা, আর মানতের পর বিচার করা, মনুষ্যের পক্ষে ফাঁদস্বরূপ। জ্ঞানবান রাজা দুষ্টগণকে ঝাড়িয়া ফেলেন, তাহাদের উপর দিয়া চক্র চালান। মনুষ্যের আত্মা সদাপ্রভুর প্রদীপ, তাহা অন্তরের সমস্ত অন্তঃপুর তন্ন তন্ন করে। দয়া ও সত্য রাজাকে রক্ষা করে; তিনি দয়ায় আপন সিংহাসন স্থির রাখেন। যুবকদের বলই তাহাদের শোভা, আর পক্ককেশ বৃদ্ধ লোকদের শ্রী। প্রহারের ঘা মন্দকে পরিষ্কার করে, দণ্ডপ্রহার অন্তরের অন্তঃপুরে প্রবেশ করে। সদাপ্রভুর হস্তে রাজার চিত্ত জলপ্রণালীর ন্যায়; তিনি যে দিকে ইচ্ছা, সেই দিকে তাহা ফিরান। মানুষের সকল পথই নিজের দৃষ্টিতে সরল, কিন্তু সদাপ্রভু হৃদয় সকল তৌল করেন। ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়ের অনুষ্ঠান সদাপ্রভুর কাছে বলিদান অপেক্ষা গ্রাহ্য। উচ্চদৃষ্টি ও গর্ব্বিত মন, দুষ্টদের সেই প্রদীপ পাপময়। পরিশ্রমীর চিন্তা হইতে কেবল ধনলাভ হয়, কিন্তু যে কেহ হঠকারী, তাহার কেবল অভাব ঘটে। মিথ্যাবাদী জিহ্বা দ্বারা যে ধনকোষ লাভ, তাহা চপল বাষ্পবৎ, তদন্বেষীরা মৃত্যুর অন্বেষী। দুষ্টগণের দুর্জ্জনতা তাহাদিগকে উড়াইয়া দেয়, কেননা তাহারা ন্যায়াচরণ করিতে অসম্মত। দোষ-ভারাক্রান্ত লোকের পথ অতীব বক্র; কিন্তু বিশুদ্ধ লোকের কর্ম্ম সরল। বরং ছাদের কোণে বাস করা ভাল, তবু বিবাদিনী স্ত্রীর সহিত প্রশস্ত বাটীতে বাস করা ভাল নয়। দুষ্টের প্রাণ অনিষ্টের আকাঙ্ক্ষী, তাহার দৃষ্টিতে তাহার প্রতিবাসী দয়া পায় না। নিন্দককে দণ্ড দিলে অবোধ বুদ্ধিমান হয়, বুদ্ধিমানকে বুঝাইয়া দিলে সে জ্ঞান গ্রহণ করে। যিনি ধর্ম্মময়, যিনি দুষ্টদের কুলের বিষয় বিবেচনা করেন; তিনি দুষ্টদিগকে পাড়িয়া ফেলিয়া বিনাশ করেন। যে দরিদ্রের ক্রন্দনে কর্ণ রোধ করে, সে আপনি ডাকিবে, কিন্তু উত্তর পাইবে না। গুপ্ত দান শান্ত করে ক্রোধ, আর বক্ষঃস্থলে দত্ত উপঢৌকন শান্ত করে প্রচণ্ড ক্রোধ। ন্যায়াচরণ ধার্ম্মিকের পক্ষে আনন্দ, কিন্তু অধর্ম্মাচারীদের পক্ষে তাহা সর্ব্বনাশ। যে বুদ্ধির পথ ছাড়িয়া ভ্রমণ করে, সে প্রেতগণের সমাজে থাকিবে। যে আমোদ ভালবাসে, তাহার সৈন্যদশা ঘটিবে; যে দ্রাক্ষারস ও তৈল ভালবাসে, সে ধনবান হইবে না। দুষ্ট ধার্ম্মিকদের মুক্তির মূল্যস্বরূপ, বিশ্বাসঘাতক সরলদের পরিবর্ত্তস্বরূপ, বরং নির্জ্জন ভূমিতে বাস করা ভাল, তবু বিবাদিনী ও কোপনা স্ত্রীর সঙ্গে বাস করা ভাল নয়। জ্ঞানীর নিবাসে বহুমূল্য ধনকোষ ও তৈল আছে; কিন্তু হীনবুদ্ধি তাহা খাইয়া ফেলে। যে ধার্ম্মিকতার ও দয়ার অনুগামী হয়, সে জীবন, ধার্ম্মিকতা ও সম্মান পায়। জ্ঞানী বলবানদের নগর আক্রমণ করে, এবং তাহার নির্ভর-স্থানের শক্তি নিপাত করে। যে কেহ আপন মুখ ও জিহ্বা রক্ষা করে, সে সঙ্কট হইতে আপন প্রাণ রক্ষা করে। যে অভিমানী ও উদ্ধত, তাহার নাম নিন্দক; সে দর্পের প্রাবল্যে কর্ম্ম করে। অলসের অভিলাষ তাহাকে মৃত্যুসাৎ করে, কেননা তাহার হস্ত শ্রম করিতে অসম্মত। কেহ সমস্ত দিন অতিমাত্র লোভ করে; কিন্তু ধার্ম্মিক দান করে, কাতর হয় না। দুষ্টদের বলিদান ঘৃণাস্পদ, দুষ্টমনে আনীত হইলে তাহা আরও ঘৃণার্হ। মিথ্যাসাক্ষী বিনষ্ট হইবে; কিন্তু যে ব্যক্তি শুনে, তাহার কথা চিরস্থায়ী। দুষ্ট লোক আপন মুখ দৃঢ় করে; কিন্তু যে সরল, সে আপন পথ সুস্থির করে। নাহি জ্ঞান, নাহি বুদ্ধি, নাহি মন্ত্রণা—সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে। যুদ্ধের দিনের জন্য অশ্ব সুসজ্জিত হয়; কিন্তু বিজয় সদাপ্রভু হইতে হয়। প্রচুর ধন অপেক্ষা সুখ্যাতি বরণীয়; রৌপ্য ও সুবর্ণ অপেক্ষা প্রসন্নতা ভাল। ধনবান ও দরিদ্র একত্র মিলে; সদাপ্রভু তাহাদের উভয়ের নির্ম্মাতা। সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়। নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার, ধন, সম্মান ও জীবন। কুটিল ব্যক্তির পথে কন্টক ও ফাঁদ থাকে; যে আপন প্রাণ রক্ষা করে, সে তাহাদের হইতে দূরে থাকিবে। বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না। ধনবান দরিদ্রগণের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে, আর ঋণী মহাজনের দাস হয়। যে অধর্ম্ম-বীজ বুনে, সে দুর্গতি-শস্য কাটিবে, আর তাহার কোপের দণ্ড লোপ পাইবে। সুনয়ন ব্যক্তি আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে; কারণ সে দীনহীন লোককে আপন খাদ্যের অংশ দেয়। নিন্দককে তাড়াইয়া দেও, বিবাদ বাহিরে যাইবে, বিরোধ ও অবমাননাও ঘুচিবে। যে হৃদয়ের শুচিতা ভালবাসে, তাহার ওষ্ঠে অনুগ্রহ থাকে, রাজা তাহার বন্ধু হন। সদাপ্রভুর চক্ষু জ্ঞানবানকে রক্ষা করে; কিন্তু তিনি বিশ্বাসঘাতকের কথা উল্টাইয়া ফেলেন। অলস বলে, বাহিরে সিংহ আছে, চৌরাস্তায় গেলে আমি মারা পড়িব। পরকীয়া স্ত্রীদের মুখ গভীর খাত; সদাপ্রভুর ক্রোধপাত্রই তাহার মধ্যে পড়িবে। বালকের হৃদয়ে অজ্ঞানতা বাঁধা থাকে, কিন্তু শাসন-দণ্ড তাহা তাড়াইয়া দিবে। নিজের ধনবৃদ্ধির জন্য যে দরিদ্রদের প্রতি উপদ্রব করে, আর যে ধনবানকে দান করে, উভয়েরই অভাব ঘটে। তুমি কর্ণ পাতিয়া জ্ঞানবানদের কথা শুন, আমার জ্ঞানে মনোনিবেশ কর। কেননা সে সকল তোমার অন্তরে রাখিলে, একসঙ্গে তোমার ওষ্ঠে স্থির থাকিলে, সুখপ্রদ হইবে। সদাপ্রভু যেন তোমার আশ্রয় হন, তজ্জন্য আমি তোমাকে, তোমাকেই অদ্য এই সকল জানাইলাম। আমি তোমার কাছে কি উৎকৃষ্ট কথা লিখি নাই নানা যুক্তি ও জ্ঞান সম্বন্ধে? যাহাতে তুমি সত্য বাক্যের নিশ্চয়তা জানিতে পার, কেহ তোমাকে পাঠাইলে তুমি যেন তাহাকে সত্য উত্তর দিতে পার। দীনহীন বলিয়া দীনহীন লোকের দ্রব্য হরণ করিও না, দুঃখীকে পুরদ্বারে চূর্ণ করিও না। কেননা সদাপ্রভু তাহাদের পক্ষ সমর্থন করিবেন, আর যাহারা তাহাদের দ্রব্য হরণ করে, তাহাদের প্রাণ হরণ করিবেন। কোপন স্বভাব লোকের সহিত বন্ধুতা করিও না, ক্রোধীর সঙ্গে যাতায়াত করিও না; পাছে তুমি তাহার আচরণ শিক্ষা কর, আপন প্রাণের জন্য ফাঁদ প্রস্তুত কর। যাহারা হস্তে তালী দেয় ও ঋণের জামিন হয়, তাহাদের মধ্যে তুমি এক জন হইও না। যদি তোমার পরিশোধের সঙ্গতি না থাকে, তবে গায়ের নীচে হইতে তোমার শয্যা নীত হইবে কেন? সীমার পুরাতন চিহ্ন স্থানান্তর করিও না, যাহা তোমার পিতৃপুরুষগণ স্থাপন করিয়াছেন। তুমি কি কোন ব্যক্তিকে তাহার ব্যাপারে তৎপর দেখিতেছ? সে রাজগণের সাক্ষাতে দাঁড়াইবে, সে নীচ লোকদের সাক্ষাতে দাঁড়াইবে না। যখন তুমি শাসনকর্ত্তার সহিত ভোজনে বসিবে, তখন তোমার সম্মুখে কে আছে, ভালরূপে বিবেচনা করিও; আর যদি তুমি উদরম্ভরি হও, তবে আপনার গলায় আপনি ছুরি দিবে। তাহার সুস্বাদু খাদ্যে লালসা করিও না, কারণ তাহা বঞ্চনার আহার। ধন সঞ্চয় করিতে অত্যন্ত যত্ন করিও না, তোমার নিজ বুদ্ধি হইতে ক্ষান্ত হও। তুমি কি ধনের দিকে চাহিতেছ? তাহা আর নাই; কারণ ঈগল যেমন আকাশে উড়িয়া যায়, তেমনি ধন আপনার জন্য নিশ্চয়ই পক্ষ প্রস্তুত করে। কুদৃষ্টিকারীর খাদ্য ভোজন করিও না, তাহার সুস্বাদু ভক্ষ্যে লালসা করিও না; কেননা সে অন্তরে যেমন ভাবে, নিজেও তেমনি; সে তোমাকে বলে, তুমি ভোজন পান কর, কিন্তু তাহার চিত্ত তোমার সহবর্ত্তী নয়। তুমি যে গ্রাস খাইয়াছ, তাহা বমন করিবে, তোমার মধুর বাক্য হারাইবে। হীনবুদ্ধির কর্ণগোচরে কথা কহিও না, কেননা সে তোমার বাক্যের বিজ্ঞতা তুচ্ছ করিবে। সীমার পুরাতন চিহ্ন স্থানান্তর করিও না, পিতৃহীনদের ক্ষেত্রে প্রবেশ করিও না। কেননা তাহাদের মুক্তিকর্ত্তা বলবান; তিনি তোমার বিরুদ্ধে তাহাদের পক্ষ সমর্থন করিবেন। তুমি শাসনে মন দেও, জ্ঞানের কথায় কর্ণ দেও। বালককে শাসন করিতে ত্রুটি করিও না; তুমি দণ্ড দ্বারা তাহাকে মারিলে সে মরিবে না। তুমি তাহাকে দণ্ড দ্বারা প্রহার করিবে, পাতাল হইতে তাহার প্রাণকে রক্ষা করিবে। বৎস, তোমার চিত্ত যদি জ্ঞানশালী হয়, তবে আমারও চিত্ত আনন্দিত হইবে; বাস্তবিক আমার চিত্ত উল্লাসিত হইবে। যখন তোমার ওষ্ঠ ন্যায়বাদী হয়, তোমার মন পাপীদের প্রতি ঈর্ষা না করুক, কিন্তু তুমি সমস্ত দিন সদাপ্রভুর ভয়ে থাক। কেননা শেষ ফল অবশ্য আছে, তোমার আশা ছিন্ন হইবে না। বৎস, তুমি শুন, জ্ঞানবান হও, তোমার হৃদয় সৎপথে চালাও। মদ্যপায়ীদের সঙ্গী হইও না, পেটুক মাংসভোজীদের সঙ্গী হইও না; কারণ মদ্যপায়ী ও পেটুকের দৈন্যদশা ঘটে, এবং ঢুলু ঢুলু ভাব মনুষকে নেক্‌ড়া পরায়। তোমার জন্মদাতা পিতার কথা শুন, তোমার মাতা বৃদ্ধা হইলে তাঁহাকে তুচ্ছ করিও না। সত্য ক্রয় কর, বিক্রয় করিও না; প্রজ্ঞা, শাসন ও সুবিবেচনা [ক্রয় কর] ধার্ম্মিকের পিতা মহা-উল্লাসিত হন, জ্ঞানবানের জন্মদাতা তাহাতে আনন্দ করেন। তোমার পিতামাতা আহ্লাদিত হউন, তোমার জননী উল্লাসিতা হউন। হে বৎস, তোমার হৃদয় আমাকে দেও, তোমার চক্ষু আমার পথসমূহে প্রীত হউক। কেননা বেশ্যা গভীর খাত, বিজাতীয়া স্ত্রী সঙ্কীর্ণ কূপ। সে দস্যুর ন্যায় ঘাঁটি বসায়, মনুষ্যদের মধ্যে বিশ্বাসঘাতক দলের বৃদ্ধি করে। কে হায় হায় বলে? কে হাহাকার করে? কে বিবাদ করে? কে বিলাপ করে? কে অকারণ আঘাত পায়? কাহার চক্ষু লাল হয়? যাহারা দ্রাক্ষারসের নিকটে বহুকাল থাকে, যাহারা সুরার সন্ধানে যায়। দ্রাক্ষারসের প্রতি দৃষ্টি করিও না, যদিও উহা রক্তব, যদিও উহা পাত্রে চক্‌মক্‌ করে, যদিও উহা সহজে গলায় নামিয়া যায়; অবশেষে উহা সর্পের ন্যায় কামড়ায়, বিষধরের ন্যায় দংশন করে। তোমার চক্ষু পরকীয়া স্ত্রীদিগকে দেখিবে, তোমার চিত্ত কুটিল কথা কহিবে; তুমি তাহার তুল্য হইবে, যে সমুদ্রের মধ্যস্থলে শয়ন করে, যে মাস্তুলের উপরে শয়ন করে। [তুমি বলিবে,] লোকে আমাকে মারিয়াছে, কিন্তু আমি ব্যথা পাই নাই; তাহারা আমাকে প্রহার করিয়াছে, কিন্তু আমি টের পাই নাই। আমি কখন্‌ জাগ্রৎ হইব? আবার তাহার অন্বেষণ করিব। তুমি দুর্বৃত্ত লোকদের উপরে ঈর্ষা করিও না, তাহাদের সঙ্গে থাকিতেও বাসনা করিও না। কেননা তাহাদের চিত্ত অপহারের কল্পনা করে, তাহাদের ওষ্ঠাধর অনিষ্টের কথা কহে। প্রজ্ঞা দ্বারা গৃহ নির্ম্মিত হয়, আর বুদ্ধি দ্বারা তাহা স্থিরীকৃত হয়; জ্ঞান দ্বারা কুঠরী সকল পরিপূর্ণ হয়, বহুমূল্য ও মনোরম্য সমস্ত দ্রব্যে। জ্ঞানবান লোক বলবান, বিদ্বান পরাক্রমে বৃদ্ধি পায়। বস্তুতঃ সুমন্ত্রণার চালনায় তুমি যুদ্ধ করিবে, আর মন্ত্রিবাহুল্যে জয়ী হয়। মূর্খের জন্য প্রজ্ঞা অতি উচ্চ; সে নগর-দ্বারে মুখ খুলে না। যে অপকারের সঙ্কল্প করে, লোকে তাহাকে কুসঙ্কল্পকারী বলিবে। অজ্ঞানতার সঙ্কল্প পাপপয়, আর যে নিন্দক, সে মনুষ্যদের ঘৃণিত। সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত। তাহাদিগকে উদ্ধার কর, যাহারা মৃত্যুর কাছে নীত হইতেছে, যাহারা কাঁপিতে কাঁপিতে বধস্থানে যাইতেছে, আহা! তাহাদিগকে রক্ষা কর। যদি বল, দেখ, আমরা ইহা জানিতাম না, তবে যিনি হৃদয় তৌল করেন, তিনি কি তাহা বুঝেন না? যিনি তোমার প্রাণ রক্ষা করেন, তিনি কি তাহা জানিতে পারেন না? তিনি কি প্রত্যেক মনুষ্যকে তাহার কর্ম্মানুযায়ী ফল দিবেন না? হে বৎস, মধু খাও, যেহেতু তাহা উত্তম, মধুর চাক খাও, তাহা তোমার রসনায় মিষ্ট লাগে; জানিও, তোমার প্রাণের পক্ষে প্রজ্ঞা তদ্রূপ; তাহা পাইলে শেষ ফল হইবে, তোমার আশা ছিন্ন হইবে না। রে দুষ্ট, তুমি ধার্ম্মিকের নিবাসের বিরুদ্ধে ঘাঁটি বসাইও না, তাহার শয়ন-স্থান নষ্ট করিও না। কেননা ধার্ম্মিক সাত বার পড়িলেও আবার উঠে; কিন্তু দুষ্টেরা বিপৎপাতে নিপাতিত হইবে। তোমার শত্রুর পতনে আনন্দ করিও না, সে নিপাতিত হইলে তোমার চিত্ত উল্লাসিত না হউক; পাছে সদাপ্রভু তাহা দেখিয়া অসন্তুষ্ট হন, এবং তাহার উপর হইতে আপন ক্রোধ ফিরান। তুমি দুরাচারদের বিষয়ে রুষ্ট হইও না; দুষ্টগণের প্রতি ঈর্ষা করিও না। যেহেতু দুর্বৃত্ত লোকের শেষ ফল হইবে না, দুষ্টগণের প্রদীপ নিভিয়া যাইবে। ভয় কর সদাপ্রভুকে, হে বৎস, এবং রাজাকেও কর, পরিবর্ত্তনপ্রিয় লোকদের সঙ্গে যোগ দিও না; কেননা অকস্মাৎ তাহাদের বিপদ ঘটিবে; উভয়ের দ্বারা যে সংহার হইবে তাহা কে জানে? এই গুলিও জ্ঞানবানদের উক্তি। বিচারে মুখাপেক্ষা করা ভাল নয়। যে দুষ্টকে বলে, তুমি ধার্ম্মিক, জাতিগণ তাহাকে শাপ দিবে, লোকবৃন্দ তাহাকে ঘৃণা করিবে। কিন্তু যাহারা তাহাকে ধমক দেয়, তাহারা প্রীতি-পাত্র হইবে, তাহাদের প্রতি উত্তম আশীর্ব্বাদ বর্ত্তিবে। যে ব্যক্তি যথার্থ উত্তর করে, সে ওষ্ঠাধর চুম্বন করে। বাহিরে তোমার কার্য্যের আয়োজন কর, ক্ষেত্রে আপনার জন্য তাহা সম্পন্ন কর, পরে তোমার ঘর বাঁধ। অকারণে তোমার প্রতিবাসীর বিপক্ষে সাক্ষী হইও না; তুমি কি ওষ্ঠ দ্বারা প্রতারণা করিতে চাহ? বলিও না, ‘সে আমার প্রতি যেমন করিয়াছে, আমিও তাহার প্রতি তেমনি করিব; তাহার যেমন কর্ম্ম, তাহাকে তেমনি ফল দিব।’ আমি অলসের ক্ষেত্রের পার্শ্ব দিয়া গেলাম, হীনবুদ্ধির দ্রাক্ষার উদ্যানের নিকট দিয়া গেলাম; আর দেখ, তৎসমুদয় কাঁটাবন হইয়া উঠিয়াছে, বিছুটী তাহার পৃষ্ঠ আচ্ছন্ন করিয়াছে, তাহার প্রস্তরময় প্রাচীর ভগ্ন হইয়াছে। আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, মনোনিবেশ করিলাম, তাহা দর্শন করিয়া উপদেশ পাইলাম; ‘আর একটু নিদ্রা, আর একটু তন্দ্রা, আর একটু শুইয়া হস্ত জড়সড় করিব; তাই তোমার দরিদ্রতা দস্যুর ন্যায় আসিবে, তোমার দৈন্যদশা ঢালীর ন্যায় আসিবে। নিম্নলিখিত হিতোপদেশগুলিও শলোমনের; যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের লোকেরা এগুলি লিখিয়া লন। বিষয় গোপন করা ঈশ্বরের গৌরব, বিষয়ের অনুসন্ধান করা রাজগণের গৌরব। যেমন উচ্চতার সম্বন্ধে স্বর্গ ও গভীরতার সম্বন্ধে পৃথিবী, তদ্রূপ রাজগণের হৃদয় অনুসন্ধান করা যায় না। রৌপ্য হইতে খাদ বাহির করিয়া ফেল, স্বর্ণকারের যোগ্য এক পাত্র বাহির হইবে; রাজার সম্মুখ হইতে দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও, তাঁহার সিংহাসন ধার্ম্মিকতায় স্থিরীকৃত হইবে। রাজার সম্মুখে আত্মগৌরব করিও না, মহৎ লোকদের স্থানে দাঁড়াইও না; কেননা বরং ইহা ভাল যে, তোমাকে বলা যাইবে, ‘এখানে উঠিয়া এস’; কিন্তু তোমাক চক্ষু যাঁহাকে দর্শন করিয়াছে, সেই অধিপতির সাক্ষাতে নীচীকৃত হওয়া তোমার পক্ষে ভাল নয়। তাড়াতাড়ি বিবাদ করিতে যাইও না; বিবাদের শেষে তুমি কি করিবে, যখন তোমার প্রতিবাসী তোমাকে লজ্জায় ফেলিবে? প্রতিবাসীর সহিত তোমার বিবাদ মিটাইয়া ফেল, কিন্তু পরের গুপ্ত কথা প্রকাশ করিও না; পাছে শ্রোতা তোমাকে তিরস্কার করে, আর তোমার অখ্যাতি না ঘুচে। উপযুক্ত সময়ে কথিত বাক্য রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের তুল্য। যেমন সুবর্ণের নথ ও কাঞ্চনের আভরণ, তেমনি শ্রবণশীল কর্ণের পক্ষে জ্ঞানবান ভর্ৎসনাকারী। শস্য কাটিবার সময়ে যেমন হিমের স্নিগ্ধতা, তেমনি প্রেরণকর্ত্তাদের পক্ষে বিশ্বস্ত দূত; কারণ যে আপন কর্ত্তার প্রাণ জুড়ায়। যে দান বিষয়ে মিথ্যা দর্পকথা কহে, সে বৃষ্টিহীন মেঘ ও বায়ুর তুল্য। দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা শাসনকর্ত্তা প্ররোচিত হন, এবং কোমল জিহ্বা অস্থি ভগ্ন করে। তুমি কি মধু পাইয়াছ? যাহা তোমার পক্ষে যথেষ্ট, তাহাই খাও; পাছে অধিক খাইলে বমি কর। প্রতিবাসীর গৃহে তোমার পদার্পণ বিরল কর; পাছে বিরক্ত হইয়া সে তোমাকে ঘৃণা করে। যে ব্যক্তি প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষ্য দেয়, সে গদা, খড়্‌গ ও তীক্ষ্ণ বাণস্বরূপ। সঙ্কটের সময়ে বিশ্বাসঘাতকের উপর ভরসা ভগ্ন দন্ত ও বিকল চরণের তুল্য। যে বিষণ্ণচিত্তের নিকটে গীত গান করে, সে যেন শীতকালে বস্ত্র ছাড়ে, সোরার উপরে অম্লরস দেয়। তোমার শত্রু যদি ক্ষুধিত হয়, তাহাকে অন্ন ভোজন করাও; যদি সে পিপাসিত হয়, তাহাকে জল পান করাও; কেননা তুমি তাহার মস্তকে জ্বলন্ত অঙ্গার রাশি করিয়া রাখিবে, আর সদাপ্রভু তোমাকে পুরস্কার দিবেন। উত্তরীয় বায়ু বৃষ্টির উৎপাদক, তেমনি কর্ণেজপ জিহ্বা ক্রোধদৃষ্টির উৎপাদক। বরং ছাদের কোণে বাস করা ভাল; তবু বিবাদিনী স্ত্রীর সহিত প্রশস্ত বাটীতে বাস করা ভাল নয়। পিপাসার্ত্ত প্রাণের পক্ষে যেমন শীতল জল, দূরদেশ হইতে প্রাপ্ত মঙ্গল সংবাদ তদ্রূপ। ঘোলা জলের আকর ও মলিন উনুই যেরূপ, দুষ্টের সম্মুখে বিচলিত ধার্ম্মিক তদ্রূপ। অধিক মধু খাওয়া ভাল নয়, ভারী ভারী বিষয় অনুসন্ধান করা ভারী কথা। যে আপন আত্মা দমন না করে, সে এমন নগরের তুল্য, যাহা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, যাহার প্রাচীর নাই। যেমন গ্রীষ্মকালে তুষার ও শস্যচ্ছেদনকালে বৃষ্টি, তেমনি হীনবুদ্ধির পক্ষে সম্মান অনুপযুক্ত। যেমন চটক ভ্রমণ করে, তালচোঁচ উড়িতে থাকে, তেমনি অকারণে দত্ত শাপ নিকটে আইসে না। ঘোড়ার জন্য চাবুক, গাধার জন্য বল্‌গা, আর হীনবুদ্ধিদের পৃষ্ঠের জন্য দণ্ড। হীনবুদ্ধিকে তাহার অজ্ঞানতা অনুসারে উত্তর দিও না, পাছে তুমিও তাহার সদৃশ হও। হীনবুদ্ধিকে তাহার অজ্ঞানতা অনুসারে উত্তর দেও, পাছে সে নিজের দৃষ্টিতে জ্ঞানবান হয়। যে হীনবুদ্ধির হস্তে সমাচার প্রেরণ করে, সে নিজের পা কাটিয়া ফেলে ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। খঞ্জের চরণ খোঁড়াইয়া চলে, হীনবুদ্ধিদের মুখে নীতিকথা তদ্রূপ। যেমন প্রস্তররাশির মধ্যে মণির থলি, তেমনি সেই জন, যে হীনবুদ্ধিকে সম্মান প্রদান করে। মাতালের হাতে যে কাঁটা উঠে, তাহা যেমন, তেমনি হীনবুদ্ধিদের মুখে নীতিকথা। যেমন ধনুর্দ্ধর সকলকে ক্ষতবিক্ষত করে, তেমনি সেই ব্যক্তি, যে হীনবুদ্ধিকে বেতন দেয়, আর যে পথের লোককে বেতন দেয়। যেমন কুকুর আপন বমির প্রতি ফিরে, তেমনি হীনবুদ্ধি নিজ অজ্ঞানতার প্রতি ফিরে। তুমি কি নিজের দৃষ্টিতে জ্ঞানবান লোক দেখিতেছ? তাহা অপেক্ষা, বরং হীনবুদ্ধির বিষয়ে অধিক প্রত্যাশা আছে। অলস বলে, পথে সিংহ আছে, চৌরাস্তায় কেশরী থাকে। কব্জাতে যেমন কবাট ঘুরে, তেমনি অলস আপন খট্টায় ঘুরে। অলস থালে হস্ত ডুবায়, পুনর্ব্বার মুখে তুলিতে তাহার ক্লেশ বোধ হয়। সুবিচারসিদ্ধ উত্তরকারী সাত জন অপেক্ষা অলস নিজের দৃষ্টিতে অধিক জ্ঞানবান। যে জন পথে যাইতে যাইতে আপনার অসম্পর্কীয় বিবাদে রুষ্ট হয়, সে কুকুরের কাণ ধরে। যে পাগল জ্বলন্ত বাণ নিক্ষেপ করে, তীর ও মৃত্যু নিক্ষেপ করে, সে যেমন, তেমনি সেই ব্যক্তি, যে প্রতিবাসীকে প্রতারণা কর, আর বলে, আমি কি খেলা করিতেছি না? কাষ্ঠ শেষ হইলে অগ্নি নিভিয়া যায়, কর্ণেজপ না থাকিলে বিবাদ নিবৃত্ত হয়। যেমন জ্বলন্ত অঙ্গারের পক্ষে অঙ্গার ও অগ্নির পক্ষে কাষ্ঠ, তেমনি বিবাদানল জ্বালাইবার পক্ষে বিবাদী। কর্ণেজপের কথা মিষ্টান্নস্বরূপ, তাহা অন্তরের অন্তঃপুরে প্রবিষ্ট হয়। অনুরাগী ওষ্ঠাধর ও দুষ্ট হৃদয় খাদ-রৌপ্যে মণ্ডিত মৃৎপাত্রস্বরূপ। যে দ্বেষ করে, সে ওষ্ঠাধরে ভাণ করে, কিন্তু মনের মধ্যে ছল রাখে; তাহার রব মধুময় হইলে তাহাকে বিশ্বাস করিও না, কারণ তাহার হৃদয়মধ্যে সাতটা ঘৃণার্হ বস্তু থাকে। যদিও তাহার দ্বেষ কপটতায় আচ্ছন্ন, তাহার দুষ্টামি সমাজে প্রকাশিত হইবে। যে খাত খোদে, সে তাহার মধ্যে পতিত হইবে; যে প্রস্তর গড়াইয়া দেয়, তাহারই উপরে তাহা ফিরিয়া আসিবে। মিথ্যাবাদী জিহ্বা যাহাদিগকে চূর্ণ করিয়াছে, তাহাদিগকে ঘৃণা করে; আর চাটুবাদী মুখ বিনাশ সাধন করে। কল্যের বিষয়ে গর্ব্বকথা কহিও না; কেননা এক দিন কি উপস্থিত করিবে, তাহা তুমি জান না। অপরে তোমার প্রশংসা করুক, তোমার নিজ মুখ না করুক; অন্য লোকে করুক, তোমার নিজ ওষ্ঠ না করুক। প্রস্তর ভারী ও বালি গুরু, কিন্তু অজ্ঞানের অসন্তোষ ঐ উভয় অপেক্ষা ভারী। ক্রোধ নিষ্ঠুর ও কোপ বন্যাবৎ, কিন্তু অন্তর্জ্বালার কাছে কে দাঁড়াইতে পারে? বরং প্রকাশ্য অনুযোগ ভাল, তবু গুপ্ত প্রেম ভাল নয়। প্রণয়ীর প্রহার বিশ্বস্ততাযুক্ত, কিন্তু শত্রুর চুম্বন অতিমাত্র। তৃপ্ত প্রাণ মৌচাক পদতলে দলিত করে; কিন্তু ক্ষুধার্ত্ত প্রাণের কাছে তিক্ত দ্রব্য সকলও মিষ্ট। যেমন বাসা হইতে ভ্রমণকারী পক্ষী, তেমনি স্বস্থান হইতে ভ্রমণকারী মনুষ্য। সুগন্ধি তৈল ও ধূপ চিত্তকে আমোদিত করে, মিত্রের আন্তরিক মন্ত্রণাজনিত মিষ্টতা তদ্রূপ। নিজ মিত্রকে ও পিতার মিত্রকে ত্যাগ করিও না; নিজ বিপৎকালে ভ্রাতার গৃহে যাইও না; দূরস্থ ভ্রাতা অপেক্ষা নিকটস্থ প্রতিবাসী ভাল। বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব। সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়; কিন্তু অবোধেরা অগ্রে যাইয়া দণ্ড পায়। যে অপরের জামিন হয়, তাহার বস্ত্র লও; যে বিজাতীয়ার জামিন হয়, তাহার কাছে বন্ধক লও। যে ভোরে উঠিয়া উচ্চৈঃস্বরে আপন বন্ধুকে আশীর্ব্বাদ করে, তাহা তাহার পক্ষে অভিশাপরূপে গণিত হয়। ভারী বৃষ্টির দিনে অবিরত বিন্দুপাত, আর বিবাদিনী স্ত্রী, এ উভয়ই সমান। যে সেই স্ত্রীকে লুকায়, সে বাতাস লুকায়, এবং তাহার দক্ষিণ হস্ত তৈল ধরে। লৌহ লৌহকে সতেজ করে, তদ্রূপ মনুষ্য আপন মিত্রের মুখ সতেজ করে। যে ডুমুর গাছ রাখে, সে তাহার ফল খাইবে; যে আপন প্রভুর সেবা করে, সে সম্মানিত হইবে। জলমধ্যে যেমন মুখের প্রতিরূপ মুখ, তেমনি মনুষ্যের প্রতিরূপ মনুষ্য-হৃদয়। পাতালের ও বিনাশ-স্থানের তৃপ্তি নাই, মনুষ্যের চক্ষুও তৃপ্ত হয় না। রৌপ্যের জন্য মূষী ও সুবর্ণের জন্য হাফর, আর মনুষ্য তাহার প্রশংসা দ্বারা পরীক্ষিত। যদ্যপি উখলিতে গোমের মধ্যে মুষল দ্বারা অজ্ঞানকে কোট, তথাপি তাহার অজ্ঞানতা দূর হইবে না। তুমি আপন মেষপালের অবস্থা জানিয়া লও, আপন পশুপালে মনোযোগ কর; কেননা ধন চিরস্থায়ী নয়, মুকুট কি পুরুষানুক্রমে থাকে? ঘাস লইয়া গেলে পর নবীন তৃণ দেখা দেয়, এবং পর্ব্বতগণের ওষধি সংগ্রহ করা যায়। মেষশাবকেরা তোমাকে বস্ত্র দিবে, ছাগেরা ক্ষেত্রের মূল্যস্বরূপ হইবে; তোমার খাদ্যের জন্য, তোমার পরিবারের খাদ্যের জন্য ছাগীরা যথেষ্ট দুগ্ধ দিবে, তোমার যুবতী দাসীদের প্রতিপালন করিবে। কেহ তাড়না না করিলেও দুষ্ট পলায়; কিন্তু ধার্ম্মিকগণ সিংহের ন্যায় সাহসী। দেশের অধর্ম্মে তাহার অনেক কর্ত্তা হয়; কিন্তু বুদ্ধিমান ও জ্ঞানবান লোক দ্বারা [কর্ত্তৃত্ব] স্থায়ী হয়। যে দরিদ্র লোক দীনহীনদের প্রতি উপদ্রব করে, সে এমন প্লাবক বৃষ্টির তুল্য, যাহার পরে ভক্ষ্য থাকে না। ব্যবস্থাত্যাগীরা দুষ্টের প্রশংসা করে; কিন্তু ব্যবস্থাপালকেরা দুষ্টদের প্রতিরোধ করে। দুরাচারেরা বিচার বুঝে না, কিন্তু সদাপ্রভুর অন্বেষীরা সকলই বুঝে। বরং সেই দরিদ্র লোক ভাল, যে নিজ সিদ্ধতায় চলে, তবু দ্বিপথগামী কুটিল লোক ধনবান হইলেও ভাল নয়। যে ব্যবস্থা মানে, সেই জ্ঞানবান পুত্র; কিন্তু ভোক্তাদের সখা পিতার অপমানজনক। যে সুদ ও বৃদ্ধি লইয়া আপন ধন বাড়ায়, সে দীনহীনদের প্রতি দয়াকারীর জন্য সঞ্চয় করে। যে ব্যবস্থা শ্রবণ হইতে আপন কর্ণ ফিরাইয়া লয়, তাহার প্রার্থনাও ঘৃণাস্পদ। যে সরল লোকদিগকে কুপথে লইয়া ভ্রান্ত করে, সে নিজের খাতে পতিত হইবে; কিন্তু সিদ্ধ লোকেরা মঙ্গলরূপ অধিকার পায়। ধনী আপনার দৃষ্টিতে জ্ঞানবান, কিন্তু বুদ্ধিমান দরিদ্র তাহার পরীক্ষা করে। ধার্ম্মিকদের উল্লাসে মহাগৌরব হয়, কিন্তু দুষ্টদের উন্নতি হইলে লোকদের খুঁজিয়া পাওয়া ভার। যে আপন অধর্ম্ম সকল ঢাকে, সে কৃতকার্য্য হইবে না; কিন্তু যে তাহা স্বীকার করিয়া ত্যাগ করে, সে করুণা পাইবে। ধন্য সেই ব্যক্তি, যে সর্ব্বদা ভয় রাখে; কিন্তু যে হৃদয় কঠিন করে, সে বিপদে পড়িবে। যেমন গর্জ্জনকারী সিংহ ও পর্য্যটনকারী ভল্লুক, তেমনি দীনহীন প্রজার উপরে দুষ্ট শাসনকর্ত্তা। যে অধ্যক্ষ হীনবুদ্ধি, সে আবার বড় উপদ্রবী; কিন্তু যে লোভ ঘৃণা করে, সেই দীর্ঘজীবী হইবে। যে মনুষ্য নর-রক্তভারে ভারাক্রান্ত, সে গর্ত্ত পর্য্যন্ত পলাইবে, কেহ তাহাকে নিবারণ না করুক। যে সিদ্ধভাবে চলে, সে রক্ষা পাইবে; কিন্তু যে বক্রগামী দুই পথে চলে, সে একটায় পতিত হইবে। যে আপন জমি চাষ করে, সে যথেষ্ট আহার পায়; কিন্তু যে অসার লোকদের পিছনে পিছনে দৌড়ে, তাহার ঢের অকুলান হয়। বিশ্বস্ত লোক অনেক আশীর্ব্বাদ পাইবে; কিন্তু যে ধনবান হইবার জন্য তাড়াতাড়ি করে, সে অদণ্ডিত থাকিবে না। মানুষের মুখাপেক্ষা করা ভাল নয়, একখণ্ড রুটীর নিমিত্ত অধর্ম্ম করাও ভাল নয়। যার চক্ষু মন্দ, সে ধনের চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত; সে জানে না যে, দীতনা তাহাকে ধরিবে। কোন লোককে যে অনুযোগ করে, শেষে সে অনুগ্রহ পাইবে, যে জিহ্বাতে চাটুবাদ করে, সে নয়। যে পিতামাতার ধন চুরি করিয়া বলে, এ ত অধর্ম্ম নয়, সে ব্যক্তি বিনাশকের সখা। যে বেশী আকাঙ্ক্ষা করে, সে বিবাদ উত্তেজনা করে, কিন্তু যে সদাপ্রভুকে বিশ্বাস করে, সে পুষ্ট হইবে। যে নিজ হৃদয়কে বিশ্বাস করে, সে হীনবুদ্ধি; কিন্তু যে প্রজ্ঞা-পথে চলে, সে রক্ষা পাইবে। যে দরিদ্রকে দান করে, তাহার অভাব ঘটে না, কিন্তু যে চক্ষু মুদে, সে অনেক অভিশাপ পাইবে। দুষ্টদের উন্নতি হইলে লোকেরা লুকায়; তাহারা বিনষ্ট হইলে ধার্ম্মিকেরা বর্দ্ধিষ্ণু হয়। যে পুনঃ পুনঃ অনুযুক্ত হইয়াও ঘাড় শক্ত করে, সে হঠাৎ ভাঙ্গিয়া পড়িবে, তাহার প্রতীকার হইবে না। ধার্ম্মিকেরা বর্দ্ধিষ্ণু হইলে প্রজাগণ আনন্দ করে, কিন্তু দুষ্ট লোক কর্ত্তৃত্ব পাইলে প্রজারা আর্ত্তস্বর করে। যে প্রজ্ঞা ভালবাসে, সে পিতার আনন্দজনক হয়; কিন্তু যে বেশ্যাদিগেতে অনুরক্ত হয়, তাহার ধন নষ্ট হইবে। রাজা ন্যায়বিচার দ্বারা দেশ সুস্থির করেন; কিন্তু উৎকোচপ্রিয় তাহা লণ্ডভণ্ড করে। যে ব্যক্তি আপন প্রতিবাসীর তোষামোদ করে, সে তাহার পায়ের নীচে জাল পাতে। দুর্বৃত্ত লোকের অধর্ম্মে ফাঁদ থাকে, কিন্তু ধার্ম্মিক আনন্দিত হইয়া গান। ধার্ম্মিক দীনহীন লোকদের বিচার বুঝে; দুষ্ট লোক জ্ঞান বুঝে না। নিন্দাপ্রিয় লোকেরা নগরে আগুন লাগাইয়া দেয়; কিন্তু জ্ঞানবানেরা ক্রোধ ফিরাইয়া দেয়। অজ্ঞানের সহিত জ্ঞানবানের বিবাদ হইলে, সে রাগ করুক কি হাস্য করুক, কিছুতেই শান্তি হয় না। রক্তপাতী লোকেরা সিদ্ধব্যক্তিকে ঘৃণা করে; আর সরল লোকের প্রাণনাশের চেষ্টা করে। হীনবুদ্ধি আপনার সমস্ত ক্রোধ প্রকাশ করে, কিন্তু জ্ঞানী তাহা সম্বরণ করিয়া প্রশমিত করে। যে শাসনকর্ত্তা মিথ্যা কথায় কর্ণপাত করেন, তাঁহার পরিচারকগণ সকলে দুষ্ট। দরিদ্র ও উপদ্রবী একত্র মিলে; সদাপ্রভু উভয়েরই চক্ষু দীপ্তিময় করেন। যে রাজা সত্যভাবে দীনহীনদের বিচার করেন, তাঁহার সিংহাসন নিত্য স্থির থাকিবে। দণ্ড ও অনুযোগ প্রজ্ঞা দেয়; কিন্তু অশাসিত বালক মাতার লজ্জাজনক। দুষ্ট লোকেরা বৃদ্ধি পাইলে অধর্ম্ম বৃদ্ধি পায়; কিন্তু ধার্ম্মিকগণ তাহাদের নিপাত দেখিবে। তোমার পুত্রকে শাস্তি দেও, সে তোমাকে শাস্তি দিবে, সে তোমার প্রাণকে আনন্দিত করিবে। দর্শনের অভাবে প্রজাগণ উচ্ছৃঙ্খল হয়; কিন্তু যে ব্যবস্থা মানে, সে ধন্য। বাক্য দ্বারা দাসের শাসন হয় না, কেননা সে বুঝিলেও কথা মানিবে না। তুমি কি হঠকারী লোককে দেখিতেছ? তাহার অপেক্ষা বরং হীনবুদ্ধির বিষয়ে অধিক আশা আছে। যে দাসকে বাল্যাবধি কোমলভাবে প্রতি পালন করে, শেষে সেই দাস তাহার পুত্র হইয়া উঠে কোপন-স্বভাব ব্যক্তি বিবাদ উত্তেজনা করে ক্রোধী ব্যক্তি বিস্তর অধর্ম্ম করে। মনুষ্যের অহংকার তাহাকে নীচে নামাইবে কিন্তু নম্রচিত্ত ব্যক্তি সম্মান পাইবে। চোরের সহভাগী আপন প্রাণকে ঘৃণা করে; সে দিব্য করাইবার কথা শুনে, কিন্তু কিছু বলে না। লোক-ভয় ফাঁদজনক; কিন্তু যে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করে, সে উচ্চে স্থাপিত হইবে। অনেকে শাসনকর্ত্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করে; কিন্তু মনুষ্যের বিচার সদাপ্রভু হইতেই হয়। অন্যায়ী ব্যক্তি ধার্ম্মিকদের ঘৃণাস্পদ; আর সরলাচারী দুষ্টের ঘৃণাস্পদ। যাকির পুত্র আগূরের কথা; ভারবাণী। ঈথীয়েলের প্রতি, ঈথীয়েল ও উকলের প্রতি সেই ব্যক্তির উক্তি। সত্য, আমি মনুষ্য অপেক্ষা পশুবৎ, মনুষ্যের বিবেচনা আমার নাই। আমি প্রজ্ঞা শিক্ষা করি নাই, পবিত্রতমের জ্ঞান আমার নাই। কে স্বর্গারোহণ করিয়া নামিয়া আসিয়াছেন? কে আপন মুষ্টিদ্বয়ের বায়ু গ্রহণ করিয়াছেন? কে আপন বস্ত্রে জলরাশি বাঁধিয়াছেন? কে পৃথিবীর সমস্ত প্রান্ত স্থাপন করিয়াছেন? তাঁহার নাম কি? তাঁহার পুত্রের নাম কি? যদি জান, বল। ঈশ্বরের প্রত্যেক বাক্য পরীক্ষাসিদ্ধ; তিনি আপনার শরণাপন্ন লোকদের ঢালস্বরূপ। তাঁহার বাক্যকলাপে কিছু যোগ করিও না; পাছে তিনি তোমার দোষ ব্যক্ত করেন, আর তুমি মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হও। আমি তোমার কাছে দুই বর ভিক্ষা করিয়াছি, আমার জীবন থাকিতে তাহা অস্বীকার করিও না; অলীকতা ও মিথ্যাকথা আমা হইতে দূর কর; দরিদ্রতা বা ঐশ্বর্য্য আমাকে দিও না, আমার নিরূপিত খাদ্য আমাকে ভোজন করাও; পাছে অতি তৃপ্ত হইলে আমি তোমাকে অস্বীকার করিয়া বলি, সদাপ্রভু কে? কিম্বা পাছে দরিদ্র হইলে চুরি করিয়া বসি, ও আমার ঈশ্বরের নাম অপব্যবহার করি। কর্ত্তার কাছে দাসের দুর্নাম করিও না, পাছে সে তোমাকে শাপ দেয়, ও তুমি অপরাধী হও। এক বংশ আছে, তাহারা পিতাকে শাপ দেয়, আর মাতাকে মঙ্গলবাদ করে না। এক বংশ আছে, তাহারা আপনাদের দৃষ্টিতে শুচি, তবু আপনাদের মালিন্য হইতে ধৌত হয় নাই। এক বংশ আছে, তাহাদের দৃষ্টি কেমন উচ্চ! তাহাদের চক্ষুর পাতা উন্নত। এক বংশ আছে, তাহাদের দন্ত খড়্‌গ ও কসের দন্ত ছুরিকা, যেন দেশ হইতে দুঃখীদিগকে, মনুষ্যদের মধ্য হইতে দরিদ্রদিগকে গ্রাস করে। জোঁকের দুই কন্যা আছে, ‘দেহি,’ ‘দেহি’। তিনটা কখনও তৃপ্ত হয় না, চারিটা কখনও বলে না, যথেষ্ট হইল; পাতাল ও বন্ধ্যার জঠর, ভূমি, যাহা জলে তৃপ্ত হয় না, অগ্নি, যাহা বলে না, যথেষ্ট হইল। যে চক্ষু আপন পিতাকে পরিহাস করে, নিজ মাতার আজ্ঞা মানিতে অবহেলা করে, উপত্যকার কাকেরা তাহা তুলিয়া লইবে, ঈগল পক্ষীর শাবকগণ তাহা খাইয়া ফেলিবে। তিনটা আমার জ্ঞানের অগম্য, চারিটা আমি বুঝিতে পারি না; ঈগল পক্ষীর পথ আকাশে, সর্পের পথ শৈলের উপরে, জাহাজের পথ সমুদ্রের মধ্যস্থলে, পুরুষের পথ যুবতীতে। ব্যভিচারিণীর পথও তদ্রূপ; সে খাইয়া মুখ মুছে, আর বলে, আমি অধর্ম্ম করি নাই। তিনটার ভারে ভূতল কাঁপে, চারিটার ভারে কাঁপে, সহিতে পারে না; দাসের ভার, যখন সে রাজত্ব প্রাপ্ত হয়, মূর্খের ভার, যখন সে ভক্ষ্যে পরিতৃপ্ত হয়, ঘৃণিতা স্ত্রীর ভার, যখন সে পত্নী-পদ প্রাপ্ত হয়, আর দাসীর ভার, যখন সে আপন কর্ত্রীর স্থান প্রাপ্ত হয়। পৃথিবীতে চারিটী অতি ক্ষুদ্র, তথাপি তাহারা বড় বুদ্ধি ধরে; পিপীলিকা শক্তিমান জাতি নয়, তবু গ্রীষ্মকালে স্ব স্ব খাদ্যের আয়োজন করে; শাফন জন্তু বলবান জাতি নয়, তথাপি শৈলে ঘর বাঁধে; পঙ্গপালদিগের রাজা নাই, তথাপি তাহারা দল বাঁধিয়া যাত্রা করে; টিক্‌টিকি হাত দিয়া চলে, তথাপি রাজার অট্টালিকায় থাকে। তিনটা সুন্দররূপে গমন করে, চারিটা সুন্দররূপে চলে; সিংহ, যে পশুদের মধ্যে বিক্রমী, যে কাহাকেও দেখিয়া ফিরিয়া যায় না; যুদ্ধের অশ্ব, আর ছাগ, এবং রাজা, যাঁহার বিরুদ্ধে কেহ উঠে না। তুমি যদি আপনার বড়াই করিয়া মূর্খের কর্ম্ম করিয়া থাক, কিম্বা যদি কুসঙ্কল্প করিয়া থাক, তবে তোমার মুখে হাত দেও। কেননা দুগ্ধ মন্থনে নবনীত বাহির হয়, নাসিকা মন্থনে রক্ত বাহির হয়, ও ক্রোধ মন্থনে বিরোধ বাহির হয়। লমূয়েল রাজার কথা। তাঁহার মাতা তাঁহাকে এই ভারবাণী শিক্ষা দিয়াছিলেন। হে বৎস, কি বলিব? হে আমার গর্ভের সন্তান, কি বলিব। হে আমার মানতের পুত্র, কি বলিব? তুমি নারীগণকে আপন শক্তি দিও না, যাহা রাজগণের বিনাশক, তাহাতে লিপ্ত হইও না। রাজগণের জন্য, হে লমূয়েল, রাজগণের জন্য মদ্যপান উপযুক্ত নয়, ‘সুরা কোথায়?’ [বলা] শাসনকর্ত্তাদের অনুচিত। পাছে পান করিয়া তাঁহারা বিধি বিস্মৃত হন, এবং কোন দুঃখীর বিচার বিপরীত করেন। মৃতকল্প ব্যক্তিকে সুরা দেও, তিক্তপ্রাণ লোককে দ্রাক্ষারস দেও; সে পান করিয়া দৈন্যদশা ভুলিয়া যাউক, আপন দুর্দ্দশা আর মনে না করুক। তুমি বোবাদিগের জন্য তোমার মুখ খোল, অনাথ সকলের জন্য খোল। তোমার মুখ খোল, ন্যায় বিচার কর, দুঃখী ও দরিদ্রের বিচার কর। গুণবতী স্ত্রী কে পাইতে পারে? মুক্তা হইতেও তাঁহার মূল্য অনেক অধিক। তাঁহার স্বামীর হৃদয় তাঁহাতে নির্ভর করে, স্বামীর লাভের অভাব হয় না। তিনি জীবনের সমস্ত দিন তাঁহার উপকার করেন, অপকার করেন না। তিনি মেষলোম ও মসীনা অন্বেষণ করেন, প্রফুল্লভাবে আপন হস্তে কর্ম্ম করেন। তিনি বাণিজ্য-জাহাজসমূহের ন্যায়, তিনি দূর হইতে আপন খাদ্যসামগ্রী আনয়ন করেন। তিনি রাত্রি থাকিতে উঠেন, আর নিজ পরিজনদিগকে খাদ্য দেন, নিজ দাসীদিগকে নিরূপিত কর্ম্ম দেন। তিনি ক্ষেত্রের বিষয়ে সঙ্কল্প করিয়া তাহা ক্রয় করেন, স্বহস্তের ফল দিয়া দ্রাক্ষার উদ্যান প্রস্তুত করেন। তিনি বলে কটি বন্ধন করেন, আপন বাহুযুগল বলশালী করেন। তিনি দেখিতে পান, তাঁহার ব্যবসায় উত্তম, রাত্রিতে তাঁহার দীপ নির্ব্বাণ হয় না। তিনি টেকুয়া লইতে আপন হস্ত প্রসারণ করেন, তাঁহার করদ্বয় পাঁজ ধরে। তিনি দরিদ্রের প্রতি মুক্তহস্ত হন, দীনহীনের প্রতি হস্ত প্রসারণ করেন। তিনি নিজ পরিবারের বিষয়ে তুষার হইতে ভয় পান না; কারণ তাঁহার সমস্ত পরিজন লাল বস্ত্র পরিধান করে। তিনি আপনার জন্য বুটাদার চাদর নির্ম্মাণ করেন, তাঁহার পরিচ্ছদ শুভ্র মসীনা-বস্ত্রও বেগুনে বস্ত্র। তাঁহার স্বামী নগর-দ্বারে প্রসিদ্ধ হন, যখন দেশের প্রাচীনবর্গের সহিত বসেন। তিনি সূক্ষ্ম বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া বিক্রয় করেন, বণিকের হস্তে কটিবস্ত্র সমর্পণ করেন। বল ও সমাদর তাঁহার পরিচ্ছদ; তিনি ভবিষ্যৎকালের বিষয়ে হাস্য করেন। তিনি প্রজ্ঞার সহিত মুখ খোলেন, তাঁহার জিহ্বাগ্রে দয়ার ব্যবস্থা থাকে। তিনি আপন পরিবারের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখেন, তিনি আলস্যের খাদ্য খান না। তাঁহার সন্তানগণ উঠিয়া তাঁহাকে ধন্য বলে; তাঁহার স্বামীও বলেন, আর তাঁহার এইরূপ প্রশংসা করেন,— “অনেক মেয়ে গুণবত্তা প্রদর্শন করিয়াছে, কিন্তু তাহাদের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা তুমি শ্রেষ্ঠা।” লাবণ্য মিথ্যা, সৌন্দর্য্য অসার, কিন্তু যে স্ত্রী সদাপ্রভুকে ভয় করেন, তিনিই প্রশংসনীয়া। তোমরা তাঁহার হস্তের ফল তাঁহাকে দেও, নগর-দ্বারসমূহে তাঁহার ক্রিয়া তাঁহার প্রশংসা করুক। উপদেশকের কথা; তিনি দায়ূদের পুত্র, যিরূশালেমস্থ রাজা। উপদেশক কহিতেছেন, অসারের অসার, অসারের অসার, সকলই অসার। মনুষ্য সূর্য্যের নীচে যে পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত হয়, তাহার সেই সমস্ত পরিশ্রমে তাহার কি ফল দেখিতে পায়? এক পুরুষ চলিয়া যায়, আর এক পুরুষ আইসে; কিন্তু পৃথিবী নিত্যস্থায়ী। সূর্য্যও উঠে, আবার সূর্য্য অস্ত যায়; এবং সত্বর স্বস্থানে যায়, সেখানে গিয়া উঠে। বায়ু দক্ষিণ দিকে যায় ও ঘুরিয়া ঘুরিয়া উত্তর দিকে যায়; নিরন্তর ঘুরিয়া ঘুরিয়া আপন পথে যায়, এবং বায়ু আপন চক্রপথে ফিরিয়া আসে। জলস্রোত সকল সমুদ্রে প্রবেশ করে, তথাচ সমুদ্র পূর্ণ হয় না; জলস্রোত সকল যে স্থানে যায়, সেই স্থানে পুনরায় চলিয়া যায়। সমস্ত বিষয় ক্লান্তিজনক; তাহার বর্ণনা করা মনুষ্যের অসাধ্য; দর্শনে চক্ষু তৃপ্ত হয় না, এবং শ্রবণে কর্ণ তৃপ্ত হয় না। যাহা হইয়াছে, তাহাই হইবে; যাহা করা গিয়াছে, তাহাই করা যাইবে; সূর্য্যের নীচে নূতন কিছুই নাই। এমন কি কিছু আছে, যাহার সম্বন্ধে মনুষ্য বলে, দেখ, ইহা নূতন? তাহা পূর্ব্বে, আমাদের পূর্ব্ববর্ত্তী যুগপর্য্যায়ে ছিল; পূর্ব্বকালীয় লোকদের বিষয় কাহারও স্মরণে নাই; এবং ভাবী কালে যাহারা জন্মিবে, তাহাদের বিষয়ও পরবর্ত্তী ভাবী কালের লোকদের স্মরণে থাকিবে না। আমি উপদেশক, যিরূশালেমে ইস্রায়েলের উপরে রাজা ছিলাম। আর আমি প্রজ্ঞা দ্বারা আকাশের নীচে কৃত সমস্ত বিষয়ের অনুশীলন ও অনুসন্ধান করিতে মনোযোগ করিতাম; ঈশ্বর মনুষ্য-সন্তানগণকে কষ্টযুক্ত করিবার জন্য এই অতি ভারী কষ্ট দিয়াছেন। সূর্য্যের নীচে কৃত সমস্ত কার্য্য আমি দেখিয়াছি; দেখ, সে সকলই অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র। যাহা বক্র, তাহা সোজা করা যায় না; এবং যাহা নাই, তাহা গণনা করা যায় না। আমি আপন হৃদয়ের সহিত কথোপকথন করিলাম, কহিলাম, দেখ, আমার পূর্ব্বে যিরূশালেমে যে সকল অধ্যক্ষ ছিলেন, সেই সকল অপেক্ষা আমি অধিক প্রজ্ঞাবিশিষ্ট হইয়াছি, এবং আমার হৃদয় নানা প্রকার প্রজ্ঞায় ও বিদ্যায় পারদর্শী হইয়াছে। আমি প্রজ্ঞা জানিতে, এবং ক্ষিপ্রতা ও অজ্ঞানতা জানিতে মনোযোগ করিলাম, আমি জানিলাম যে, তাহাও বায়ুভক্ষণ মাত্র। কেননা প্রজ্ঞার বাহুল্যে মনস্তাপের বাহুল্য হয়; এবং যে বিদ্যার বৃদ্ধি করে, সে ব্যাথার বৃদ্ধি করে। আমি মনে মনে বলিলাম, ‘আইস, আমি এক বার আমোদের দ্বারা তোমার পরীক্ষা করি, তুমি সুখভোগ কর,’ আর দেখ, তাহাও অসার। আমি হাস্যের বিষয়ে কহিলাম, উহা ক্ষিপ্ত; এবং আমোদের বিষয়ে কহিলাম, উহা কি করিবে? আমি মনে মনে আন্দোলন করিলাম, কিরূপে মদ্যপানে শরীরকে তুষ্ট করিব,—তখনও আমার মন প্রজ্ঞাসহকারে আমাকে পথ প্রদর্শন করিতেছিল—আর কিরূপে অজ্ঞানতা অবলম্বন করিব, শেষে দেখিতে পারিব, আকাশের নীচে মনুষ্য-সন্তানদের সমস্ত জীবনকালে কি কি করা ভাল। আমি আপনার জন্য মহৎ মহৎ কার্য্য করিলাম, আপনার জন্য নানা স্থানে বাটী নির্ম্মাণ করিলাম, আপনার জন্য দ্রাক্ষাক্ষেত্রসমূহ প্রস্তুত করিলাম; আমি আপনার জন্য অনেক উদ্যান ও উপবন করিয়া তাহার মধ্যে সর্ব্বপ্রকার ফলবৃক্ষ রোপন করিলাম; সেই বৃক্ষোৎপাদক বনে জল সেচনার্থে আমি স্থানে স্থানে পুষ্করিণী খনন করিলাম। আমি অনেক দাস দাসী ক্রয় করিলাম, এবং আমার গৃহেও দাসগণ জন্মিল; আর আমার পূর্ব্বে যিরূশালেমে যাঁহারা ছিলেন, সেই সকল হইতে আমার গোমেষাদি পশুধন অধিক ছিল। আমি রৌপ্য ও সুবর্ণ এবং নানা রাজার ও নানা প্রদেশের বিশেষ বিশেষ ধন সঞ্চয় করিলাম; আমি অনেক গায়ক গায়িকা ও মনুষ্য-সন্তানদের সন্তোষকারিণী কত উপপত্নী পাইলাম। বাস্তবিক আমি মহান্‌ ছিলাম, আমার পূর্ব্বে যাঁহারা যিরূশালেমে ছিলেন, সেই সকল অপেক্ষা সমৃদ্ধিশালী হইলাম, এবং আমার প্রজ্ঞাও আমার সহবর্ত্তিনী ছিল। আর আমার চক্ষু দুটী যাহা ইচ্ছা করিত, তাহা আমি তাহাদের অগোচর রাখিতাম না; আমার হৃদয়কে কোন আনন্দভোগ করিতে বারণ করিতাম না; বাস্তবিক আমার সমস্ত পরিশ্রমে আমার হৃদয় আনন্দ করিত; সমস্ত পরিশ্রমে ইহাই আমার অংশ হইল। পরে আমার হস্ত যে সকল কার্য্য করিত, যে পরিশ্রমে আমি পরিশ্রান্ত হইতাম, সে সমস্তের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সে সকলই অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র; সূর্য্যের নীচে কিছুই লাভ নাই। পরে আমি প্রজ্ঞা, এবং ক্ষিপ্ততা ও অজ্ঞানতা দেখিতে প্রবৃত্ত হইলাম; কারণ যে ব্যক্তি রাজার পশ্চাতে আসিবে, সে কি করিবে? পূর্ব্বে যাহা করা গিয়াছিল, তাহাই মাত্র। তখন আমি দেখিলাম, যেমন অন্ধকার অপেক্ষা দীপ্তি উত্তম, তেমনি অজ্ঞানতা অপেক্ষা প্রজ্ঞা উত্তম। জ্ঞানবানের মস্তকেই চক্ষু থাকে; কিন্তু হীনবুদ্ধি অন্ধকারে ভ্রমণ করে; তথাপি আমি জানিলাম যে, সকলেরই এক দশা ঘটে। তখন আমি মনে মনে বলিলাম, হীনবুদ্ধির প্রতি যাহা ঘটে, তাহাই ত আমার প্রতি ঘটে, তবে আমি কি নিমিত্ত অধিক জ্ঞানবান হইলাম? পরে আমি মনে মনে বলিলাম, ইহাও অসার। কেননা হীনবুদ্ধির ন্যায় জ্ঞানবানের বিষয়ও লোকে চিরকাল মনে রাখিবে না, ভবিষ্যৎকালে কিছুই স্মরণে থাকিবে না; আহা! হীনবুদ্ধি যেমন মরে, তেমনি জ্ঞানবানও মরে। সুতরাং আমি জীবনে বিরক্ত হইলাম; কেননা সূর্য্যের নীচে কৃত কার্য্য আমার ক্লেশদায়ক বোধ হইল; কারণ সকলই অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র। সূর্য্যের নীচে আমি যে পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত হইতাম, আমার সেই সমস্ত পরিশ্রমে বিরক্ত হইলাম; কেননা আমার পরবর্ত্তী ব্যক্তির জন্য তাহা রাখিয়া যাইতে হইবে। আর সে জ্ঞানবান হইবে, কি হীনবুদ্ধি হইবে, তাহা কে জানে? কিন্তু আমি সূর্য্যের নীচে যে শ্রমে পরিশ্রম করিয়া জ্ঞান দেখাইতাম, সেই সকল পরিশ্রমের ফলাধিকারী সে হইবে; ইহাও অসার। অতএব সূর্য্যের নীচে আমি যে পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত হইতাম, ফিরিয়া আমার সেই সমস্ত পরিশ্রমের বিষয়ে আপন হৃদয়কে নিরাশ হইতে দিলাম। কেননা এক ব্যক্তির পরিশ্রম প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও কৌশল সহযুক্ত; তথাপি যে ব্যক্তি সে বিষয়ে পরিশ্রম করে নাই, তাহাকে তাহার অধিকার বলিয়া তাহা দিয়া যাইতে হয়। ইহাও অসার ও বড় মন্দ। তবে সূর্য্যের নীচে মনুষ্য যে সকল পরিশ্রমে ও হৃদয়ের উদ্বেগে পরিশ্রান্ত হয়, তাহাতে তাহার কি ফল দর্শে? কেননা তাহার সমস্ত দিন ব্যথাযুক্ত, এবং তাহার কষ্ট মনস্তাপজনক, রাত্রিতেও তাহার হৃদয় বিশ্রাম পায় না। ইহাও অসার। ভোজন পান করা এবং নিজ পরিশ্রমের মধ্যে প্রাণকে সুখভোগ করান ব্যতীত আর মঙ্গল মানুষের হয় না; ইহাও আমি দেখিলাম যে, তাহা ঈশ্বরের হস্ত হইতে হয়। আর আমা হইতে কে অধিক ভোজন করিতে কিম্বা অধিক সুখভোগ করিতে পারে? বস্তুতঃ যে ব্যক্তি [ঈশ্বরের] প্রীতিজনক, তাহাকে তিনি প্রজ্ঞা, বিদ্যা ও আনন্দ দেন; কিন্তু পাপীকে কষ্ট দেন, যেন সে ঈশ্বরের প্রীতিজনক ব্যক্তিকে দিবার জন্য ধন সংগ্রহ ও সঞ্চয় করে। ইহাও অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র। সকল বিষয়েরই সময় আছে, ও আকাশের নীচে সমস্ত ব্যাপারের কাল আছে। জন্মের কাল ও মরণের কাল; রোপণের কাল ও রোপিত বীজ উৎপাটনের কাল; বধ করিবার কাল ও সুস্থ করিবার কাল; ভাঙ্গিবার কাল ও গাঁথিবার কাল; রোদন করিবার কাল ও হাস্য করিবার কাল; বিলাপ করিবার কাল ও নৃত্য করিবার কাল; প্রস্তর নিক্ষেপ করিবার কাল ও প্রস্তর সংগ্রহ করিবার কাল; আলিঙ্গনের কাল ও আলিঙ্গন না করিবার কাল; অন্বেষণের কাল ও হারাইবার কাল; রক্ষণের কাল ও ফেলিয়া দিবার কাল; ছিঁড়িবার কাল ও সিঙ্গাইবার কাল; নীরব থাকিবার কাল ও কথা কহিবার কাল; প্রেম করিবার কাল ও দ্বেষ করিবার কাল; যুদ্ধের কাল ও সন্ধির কাল। কর্ম্মচারী ব্যক্তির পরিশ্রমে তাহার কি ফল দর্শে? ঈশ্বর মনুষ্য-সন্তানদিগকে কষ্টযুক্ত করণার্থে যে কষ্ট দেন, তাহা আমি দেখিয়াছি। তিনি সকলই যথাকালে মনোহর করিয়াছেন, আবার তাহাদের হৃদয়মধ্যে চিরকাল রাখিয়াছেন; তথাপি ঈশ্বর আদি অবধি শেষ পর্য্যন্ত যে সকল কার্য্য করেন, মনুষ্য তাহার তত্ত্ব বাহির করিতে পারে না। আমি জানি, যাবজ্জীবন আনন্দ ও সৎকর্ম্ম করণ ব্যতীত আর মঙ্গল তাহাদের হয় না। আর প্রত্যেক মনুষ্য যে ভোজন পান ও সমস্ত পরিশ্রমের মধ্যে সুখভোগ করে, ইহাও ঈশ্বরের দান। আমি জানি, ঈশ্বর যাহা কিছু করেন, তাহা চিরস্থায়ী; তাহা বাড়াইতেও পারা যায় না, কমাইতেও পারা যায় না; আর ঈশ্বর তাহা করিয়াছেন, যেন তাঁহার সম্মুখে মনুষ্যগণ ভীত হয়। যাহা আছে, তাহাই ছিল, এবং যাহা হইবে, তাহাই ছিল; এবং যাহা চলিয়া গিয়াছে, ঈশ্বর তাহার অনুসন্ধান করেন। আরও আমি সূর্য্যের নীচে, বিচারের স্থানে দেখিলাম, সেখানে দুষ্টতা আছে; এবং ধার্ম্মিকতার স্থানে দেখিলাম, সেখানে দুষ্টতা আছে। আমি মনে মনে কহিলাম, ঈশ্বরই ধার্ম্মিকের ও দুষ্টের বিচার করিবেন, কেননা সেখানে সমস্ত ব্যাপারের নিমিত্ত এবং সমস্ত কর্ম্মের নিমিত্ত বিশেষ কাল আছে। আমি মনে মনে কহিলাম, ইহা মনুষ্য-সন্তানদের নিমিত্ত হইতেছে, যেন ঈশ্বর তাহাদের পরীক্ষা করেন, আর যেন তাহারা দেখিতে পায় যে, তাহারা নিজেই পশুবৎ। কেননা মনুষ্য-সন্তানদের প্রতি যাহা ঘটে, তাহা পশুর প্রতিও ঘটে, সকলেরই প্রতি একরূপ ঘটনা ঘটে; এ যেমন মরে, সে তেমনি মরে; এবং তাহাদের সকলেরই নিঃশ্বাস এক; পশু হইতে মানুষের কিছু প্রাধান্য নাই, কেননা সকলই অসার। সকলেই এক স্থানে গমন করে, সকলেই ধূলি হইতে উৎপন্ন, এবং সকলেই ধূলিতে প্রতিগমন করে। মনুষ্য-সন্তানদের আত্মা ঊর্দ্ধগামী হয়, ও পশুর আত্মা ভূতলের দিকে অধোগামী হয়, ইহা কে জানে? অতএব আমি দেখিলাম, আপন কর্ম্মে আনন্দ করণ ব্যতীত আর মঙ্গল মনুষ্যের নাই; কেননা ইহাই তাহার অধিকার। মনুষ্যের [মৃত্যুর] পরে যাহা ঘটিবে, কে তাহাকে আনিয়া তাহা দেখাইতে পারে? পরে আমি ফিরিয়া, সূর্য্যের নীচে যে সকল উপদ্রব হয়, তাহা নিরীক্ষণ করিতে লাগিলাম। আর দেখ, উপদ্রুত লোকদের অশ্রুপাত হইতেছে, কিন্তু তাহাদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই; উপদ্রবী লোকদের হস্তে বল আছে, কিন্তু উপদ্রুত লোকদের সান্ত্বনাকারী কেহ নাই। অতএব যাহারা এখনও জীবিত আছে, তাহাদের অপেক্ষা, যাহারা ইতিপূর্ব্বে মরিয়া গিয়াছে, আমি তাহাদিগের প্রশংসা করিলাম। কিন্তু যে অদ্য পর্য্যন্ত হয় নাই, এবং সূর্য্যের নীচে কৃত মন্দ কার্য্য দেখে নাই, তাহার অবস্থা ঐ উভয় হইতেও ভাল। পরে আমি সমস্ত পরিশ্রম ও সমস্ত কার্য্যকৌশল দেখিয়া বুঝিলাম, ইহাতে মনুষ্য প্রতিবাসীর ঈর্ষাভাজন হয়; ইহাও অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র। হীনবুদ্ধি হস্ত জড়সড় করিয়া আপন মাংস ভোজন করে। পরিশ্রম ও বায়ুভক্ষণসহ পূর্ণ দুই মুষ্টি অপেক্ষা শান্তিসহ পূর্ণ এক মুষ্টি ভাল। তখন আমি ফিরিয়া সূর্য্যের নীচে অসারতা নিরীক্ষণ করিলাম। কোন ব্যক্তি একা থাকে, তাহার দ্বিতীয় কেহ নাই, পুত্রও নাই, ভ্রাতাও নাই, তথাচ তাহার পরিশ্রমের সীমা নাই, তাহার চক্ষুও ধনে তৃপ্ত হয় না। [সে বলে,] তবে আমি কাহার নিমিত্ত পরিশ্রম করিতেছি, ও আপন প্রাণকে মঙ্গল হইতে বঞ্চিত করিতেছি? ইহাও অসার ও ভারী কষ্টজনক। এক জন অপেক্ষা দুই জন ভাল, কেননা তাহাদের পরিশ্রমে সুফল হয়। কারণ তাহারা পড়িলে এক জন আপন সঙ্গীকে উঠাইতে পারে; কিন্তু ধিক্‌ তাহাকে যে একাকী, কেননা সে পড়িলে তাহাকে তুলিতে পারে, এমন দোসর কেহই নাই। আবার দুই জন একত্র শয়ন করিলে উষ্ণ হয়, কিন্তু এক জন কেমন করিয়া উষ্ণ হইবে? আর যে একাকী, তাহাকে যদ্যপি কেহ পরাস্ত করে, তথাপি দুই জন তাহার প্রতিরোধ করিবে, এবং ত্রিগুণ সূত্র শীঘ্র ছিঁড়ে না। যে বৃদ্ধ হীনবুদ্ধি রাজা আর কোন পরামর্শ গ্রহণ করিতে পারে না, তাহার অপেক্ষা বরং দরিদ্র জ্ঞানবান যুবক ভাল। কেননা সে রাজা হইবার জন্য কারাগার হইতে নির্গত হইয়াছিল; এমন কি, তাহার রাজ্যেও সে দীনাবস্থায় জন্মিয়াছিল। আমি সূর্য্যের নীচে বিহারকারী সমস্ত প্রাণীকে দেখিলাম, তাহারা সেই যুবকের, যে দ্বিতীয় ব্যক্তি উহার স্থানে উঠিল, তাহার সঙ্গী। সেই লোকসমূহের, যাহাদের উপরে সে অধ্যক্ষ ছিল, তাহাদের সকলের সীমা নাই; তথাপি উত্তরকালীন লোকেরা সেই ব্যক্তিকে আনন্দ করিবে না। বস্তুতঃ ইহাও অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র। তুমি ঈশ্বরের গৃহে গমন কালে তোমার চরণ সাবধানে রাখ; কারণ হীনবুদ্ধিদের ন্যায় বলিদান করা অপেক্ষা বরং শ্রবণার্থে উপস্থিত হওয়া ভাল; কেননা উহারা যে মন্দ কার্য্য করিতেছে, তাহা বুঝে না। তুমি আপন মুখকে বেগে কথা কহিতে দিও না, এবং ঈশ্বরের সাক্ষাতে কথা উচ্চারণ করিতে তোমার হৃদয় ত্বরান্বিত না হউক; কেননা ঈশ্বর স্বর্গে ও তুমি পৃথিবীতে, অতএব তোমার কথা অল্প হউক। কারণ স্বপ্ন বহুকষ্টসহ উপস্থিত হয়, আর হীনবুদ্ধির রব বহুবাক্যসহ উপস্থিত হয়। ঈশ্বরের নিকটে মানত করিলে তাহা পরিশোধ করিতে বিলম্ব করিও না, কারণ হীনবুদ্ধি লোকদিগেতে তাঁহার সন্তোষ নাই; যাহা মানত করিবে, তাহা পরিশোধ করিও। মানত করিয়া না দেওয়া অপেক্ষা বরং তোমার মানত না করাই ভাল। তোমার মাংসকে পাপ করাইতে তোমার মুখকে দিও না; এবং “উহা ভ্রম,” এমন কথা দূতের সাক্ষাতে বলিও না; ঈশ্বর কেন তোমার বাক্যে ক্রোধ করিয়া তোমার হস্তের কার্য্য নষ্ট করিবেন? বস্তুতঃ স্বপ্ন ও অসারতা বহুসংখ্যাক, বাক্যেরও বাহুল্য আছে; কিন্তু তুমি ঈশ্বরকে ভয় কর। তুমি দেশে দরিদ্রের পীড়ন, কিম্বা বিচারের ও ধার্ম্মিকতার খণ্ডন দেখিলে সেই ব্যাপারে চমৎকৃত হইও না, কেননা উচ্চপদান্বিত লোক অপেক্ষা উচ্চতর পদান্বিত এক রক্ষক আছেন; আবার যিনি উচ্চতম, তিনি উভয়ের কর্ত্তা। আর দেশের ফল সকলেরই জন্য; ভূমির দ্বারা রাজা সেবিত হন। যে ব্যক্তি রৌপ্য ভালবাসে, সে রৌপ্যে তৃপ্ত হয় না; আর যে ব্যক্তি ধনরাশি ভালবাসে, সে ধনাগমে তৃপ্ত হয় না; ইহাও অসার। সম্পত্তি বাড়িলে ভোক্তাও বাড়ে; আর দৃষ্টিসুখ ব্যতীত সম্পত্তিতে স্বামীদের কি ফল দর্শে? শ্রমজীবী অধিক বা অল্প আহার করুক, নিদ্রা তাহার মিষ্ট লাগে; কিন্তু ধনবানের পূর্ণতা তাহাকে নিদ্রা যাইতে দেয় না। সূর্য্যের নীচে আমি এই বিষম অনিষ্ট দেখিয়াছি যে, ধনস্বামীর অনিষ্টের জন্যই ধন রক্ষিত হয়; আর দুর্ঘটনায় সেই ধনের ক্ষয় হয়, এবং পুত্রের জন্ম দিলে তাহার হস্তে কিছুই নাই। সে মাতৃগর্ভ হইতে উলঙ্গ আইসে; যেমন আইসে তেমনি উলঙ্গই পুনরায় চলিয়া যায়; পরিশ্রম করিলেও সে যাহা সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতে পারে, এমন কিছুই নাই। ইহাও বিষম অনিষ্ট; সে যেমন আইসে, সর্ব্বতোভাবে তেমনি যায়; অতএব বায়ুর নিমিত্ত পরিশ্রম করিলে পর তাহার কি ফল দেখিবে? আর সে ত যাবজ্জীবন অন্ধকারে আহার করে, এবং তাহার বিষম বিরক্তি, পীড়া ও ক্রোধ উপস্থিত হয়। দেখ, আমি দেখিয়াছি, ইহাই উত্তম ও মনোরঞ্জক, ঈশ্বর মনুষ্যকে যে কয় দিন পরমায়ু দেন, সেই সমস্ত দিন সে যেন সূর্য্যের নীচে আপনার কর্ত্তব্য সমস্ত পরিশ্রমের মধ্যে ভোজন পান ও সুখভোগ করে, কারণ ইহাই তাহার অংশ। আবার ঈশ্বর যে কোন ব্যক্তিকে ধন-সম্পত্তি দান করেন, তাহাকে তাহা ভোগ করিতে, আপন অংশ লইতে ও আপন পরিশ্রমে আনন্দ করিতে ক্ষমতা দেন, ইহাই ঈশ্বরের দান। কারণ সে আপন পরমায়ুর দিন সকল তত স্মরণ করিবে না, কেননা ঈশ্বর তাহার হৃদয়ের আনন্দে তাহাকে উত্তর দেন। সূর্যের নীচে আমি একটা অনিষ্টের বিষয় দেখিয়াছি, তাহা মনুষ্যদের পক্ষে ভারী; ঈশ্বর কোন ব্যক্তিকে এত ধন, সম্পত্তি ও গৌরব দেন যে, অভীষ্ট বস্তু সকলের মধ্যে তাহার প্রাণের জন্য কিছুই অনটন থাকে না, তথাচ ঈশ্বর তাহা ভোগ করিবার ক্ষমতা তাহাকে দেন না, কিন্তু অপর লোক তাহা ভোগ করে; ইহা অসার ও অনিষ্টকর ব্যাধি। কোন ব্যক্তি যদি এক শত পুত্রের জন্ম দিয়া অনেক বৎসর বাঁচিয়া দীর্ঘজীবী হয়, কিন্তু তাহার প্রাণ যদি মঙ্গলে তৃপ্ত না হয়, এবং তাহার কবরও যদি না হয়, তবে আমি বলি, তাহা হইতে বরং গর্ভস্রাবও ভাল। কেননা তাহা বাষ্পবৎ আইসে, ও অন্ধকারে চলিয়া যায়, ও তাহার নাম অন্ধকারে ঢাকা পড়ে; আবার তাহা সূর্য্য দেখে নাই ও কিছুই জানে নাই; ঐ মনুষ্য অপেক্ষা ইহাই বিশ্রামযুক্ত। সে যদ্যপি দ্বিসহস্র বৎসর জীবিত থাকে, এবং কিছু মঙ্গল ভোগ না করে, [তবে কি?] সকলই কি এক স্থানে যায় না? মানুষের সমস্ত পরিশ্রম তাহার মুখের জন্য, তথাপি আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয় না। বস্তুতঃ হীনবুদ্ধি অপেক্ষা জ্ঞানবানের কি উৎকর্ষ? আর জীবিতদের সাক্ষাতে চলিতে জানে এমন দুঃখী লোকেরই বা কি উৎকর্ষ? দৃষ্টিসুখ যত ভাল, প্রাণের লালসা তত ভাল নহে; ইহাও অসার ও বায়ুভক্ষণ মাত্র। যাহা ইহয়াছে, অনেক দিন হইল তাহার নামকরণ হইয়াছিল, কারণ সকলে জানে যে, সে মনুষ্য, এবং আপনা অপেক্ষা পরাক্রান্ত লোকের সহিত বিতণ্ডা করিতে সে অপারক। যাহাতে অসারতা বাড়ে, এমন অনেক কথা আছে, তাহাতে মানুষের কি উৎকর্ষ? বস্তুতঃ জীবনকালে মনুষ্যের মঙ্গল কি, তাহা কে জানে? তাহার অসার জীবনকাল ত সে ছায়ার ন্যায় যাপন করে; আর মনুষ্যের পরে সূর্য্যের নীচে কি ঘটিবে, তাহা তাহাকে কে জানাইতে পারে? উৎকৃষ্ট তৈল অপেক্ষা সুখ্যাতি ভাল, এবং জন্মদিন অপেক্ষা মরণদিন ভাল। ভোজের গৃহে যাওয়া অপেক্ষা বিলাপ-গৃহে যাওয়া ভাল, কেননা তাহা সকল মনুষ্যের শেষগতি, এবং জীবিত লোক তাহাতে মনোনিবেশ করিবে। হাস্য হইতে মনস্তাপ ভাল, কারণ মুখের বিষণ্ণতায় হৃদয় প্রসন্ন হয়। জ্ঞানবানদের হৃদয় বিলাপগৃহে থাকে, কিন্তু হীনবুদ্ধিদের হৃদয় আমোদ-গৃহে থাকে। হীনবুদ্ধিদের গীত শ্রবণ অপেক্ষা জ্ঞানবানের ভর্ৎসনা শ্রবণ ভাল। কেননা যেমন হাঁড়ীর নীচে কাঁটার শব্দ, তেমনি হীনবুদ্ধির হাস্য; ইহাও অসার। উপদ্রব জ্ঞানবানকে ক্ষিপ্ত করে, এবং উৎকোচ বুদ্ধি নষ্ট করে। কার্য্যের আরম্ভ হইতে তাহার অন্ত ভাল, এবং গর্ব্বিতাত্মা অপেক্ষা ধীরাত্মা ভাল। তোমার আত্মাকে সত্বর বিরক্ত হইতে দিও না, কেননা হীনবুদ্ধি লোকদেরই বক্ষঃ বিরক্তির আশ্রয়। তুমি বলিও না, বর্ত্তমান কাল অপেক্ষা পূর্ব্বকাল কেন ভাল ছিল? কেননা এ বিষয়ে তোমার জিজ্ঞাসা করা প্রজ্ঞা হইতে উৎপন্ন হয় না। পৈতৃক ধনের ন্যায় প্রজ্ঞা ভাল; তাহা সূর্য্যদর্শী লোকদের পক্ষে আরও উৎকৃষ্ট। কেননা প্রজ্ঞা আশ্রয়, ধনও আশ্রয় বটে, কিন্তু জ্ঞানের উৎকৃষ্টতা এই যে, প্রজ্ঞা আপন অধিকারীর জীবন রক্ষা করে। ঈশ্বরের কার্য্য নিরীক্ষণ কর, কারণ তিনি যাহা বক্র করিয়াছেন, তাহা সরল করিতে কাহার সাধ্য? সুখের দিনে সুখী হও, এবং দুঃখের দিনে দেখ, ঈশ্বর ইহা ও উহা পার্শ্বাপার্শ্বি রাখিয়াছেন, অভিপ্রায় এই, তাহার পর কি ঘটিবে, তাহার কিছুই যেন মনুষ্য জানিতে না পারে। আমি আপন অসারতার কালে এই সমস্তই দেখিয়াছি; কোন ধার্ম্মিক লোক নিজ ধার্ম্মিকতায় বিনষ্ট হয়, এবং কোন দুষ্ট লোক নিজ দুষ্টতায় দীর্ঘ কাল যাপন করে। অতি ধার্ম্মিক হইও না, ও আপনাকে অতিশয় জ্ঞানবান দেখাইও না; কেন আপনাকে নষ্ট করিবে? অতি দুষ্ট হইও না, অজ্ঞানও হইও না; তোমার সময় না হইতে কেন মরিবে? তুমি যদি ইহা ধরিয়া রাখ, এবং উহা হইতেও হস্ত নিবৃত্ত না কর, তবে ভাল; কেননা যে ঈশ্বরকে ভয় করে, সে ঐ সকল হইতে উত্তীর্ণ হইবে। জ্ঞানবানকে প্রজ্ঞা যত বলবান করে, নগরস্থ দশ জন পরাক্রমী তত করে না। এমন ধার্ম্মিক লোক পৃথিবীতে নাই, যে সৎকর্ম্ম করে, পাপ করে না। যত কথা বলা যায়, সকল কথায় মন দিও না; দিলে হয় ত শুনিবে, তোমার দাস তোমাকে শাপ দিতেছে। কেননা তুমিও অন্যকে পুনঃ পুনঃ শাপ দিয়াছ, তাহা তোমার মন জ্ঞাত আছে। আমি প্রজ্ঞা দ্বারা এ সকলের পরীক্ষা করিলাম; আমি কহিলাম, জ্ঞানবান হইব, কিন্তু জ্ঞান আমা হইতে দূরে ছিল। যাহা আছে, তাহা দূরে রহিয়াছে; তাহা গভীর, গভীর, কে তাহা পাইতে পারে? আমি ফিরিলাম, ও মনোনিবেশ করিলাম, যেন জানিতে ও অনুসন্ধান করিতে পারি, প্রজ্ঞা ও তত্ত্ব অন্বেষণ করিতে পারি, জানিতে পারি যে, দুষ্টতা হীনবুদ্ধিতা মাত্র, আর অজ্ঞানতা ক্ষিপ্ততা মাত্র। তাহাতে মৃত্যু অপেক্ষাও তীব্র পদার্থ পাইলাম, অর্থাৎ সেই স্ত্রীলোক, যাহার অন্তঃকরণ ফাঁদ ও জাল, ও হস্ত শৃঙ্খলস্বরূপ; যে ব্যক্তি ঈশ্বরের প্রীতিজনক, সে তাহা হইতে রক্ষা পাইবে, কিন্তু পাপী তাহার দ্বারা ধৃত হইবে। উপদেশক কহিতেছেন, দেখ, তত্ত্ব পাইবার জন্য একটীর পরে আর একটী বিবেচনা করিয়া আমি ইহা পাইয়াছি। আমার মন এখনও যাহার অন্বেষণ করিয়া আসিতেছে, তাহা আমি পাই নাই; সহস্রের মধ্যে এক পুরুষকে পাইয়াছি; কিন্তু সেই সকলের মধ্যে একটী স্ত্রীলোককেও পাই নাই। দেখ, কেবল ইহাই জানিতে পাইয়াছি যে, ঈশ্বর মনুষ্যকে সরল করিয়া নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহারা অনেক কল্পনার অন্বেষণ করিয়া লইয়াছে। জ্ঞানবানের তুল্য কে? কে বাক্যের ভাবার্থ জানে? মানুষের প্রজ্ঞা তাহার মুখ উজ্জ্বল করে, এবং তাহার মুখের কঠিনতা পরিবর্ত্তন হয়। আমার পরামর্শ এই, তুমি রাজার আজ্ঞা পালন কর; ঈশ্বরের [সাক্ষাতে কৃত] শপথ প্রযুক্তই তাহা কর। তাঁহার সম্মুখ হইতে চলিয়া যাইতে ত্বরান্বিত হইও না; মন্দ বিষয়ে লিপ্ত থাকিও না; কেননা তিনি যাহা ইচ্ছা করেন, তাহাই করেন। কারণ রাজার বাক্য পরাক্রমবিশিষ্ট, আর ‘তুমি কি করিতেছ? এমন কথা তাঁহাকে কে বলিতে পারে? যে ব্যক্তি আজ্ঞা পালন করে, সে কোন মন্দ বিষয় জানিবে না; আর জ্ঞানবানের মন সময় ও বিচার জানে। বস্তুতঃ সমস্ত ব্যাপারের জন্য সময় ও বিচার আছে; কারণ মানুষের দুঃখ তাহার পক্ষে অতিমাত্র। কেননা কি ঘটিবে, তাহা সে জানে না; কি প্রকারেই বা ঘটিবে, তাহা তাহাকে কে জ্ঞাত করিতে পারে? আত্মা রাখিতে আত্মার উপরে কোন মনুষ্যের কর্ত্তৃত্ব নাই, এবং মরণদিনের উপরে কর্ত্তৃত্ব কাহারও নাই, এবং [সেই] যুদ্ধে ছুটী সম্ভবে না, আর দুষ্টতা দুষ্টকে বাঁচাইবে না। আমি এই সকলই দেখিয়াছি, ও সূর্য্যের নীচে যে সকল কার্য্য করা যায়, তাহার প্রতি মনোনিবেশ করিয়াছি; কোন কোন সময়ে এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে। অধিকন্তু আমি দেখিয়াছি, দুষ্টগণ কবরপ্রাপ্ত হইল, [সমাধি মধ্যে] প্রবেশ করিল; কিন্তু যাহারা সদাচরণ করিয়াছিল, তাহারা পবিত্র স্থান হইতে চলিয়া গেল, এবং নগরে লোকে তাহাদিগকে ভুলিয়া গেল; ইহাও অসার। দুষ্কর্ম্মের দণ্ডাজ্ঞা ত্বরায় সিদ্ধ হয় না, এই কারণ মনুষ্যসন্তানদের অন্তঃকরণ দুষ্কর্ম্ম করিতে সম্পূর্ণরূপে রত হয়। পাপী যদ্যপি শত বার দুষ্কর্ম্ম করিয়া দীর্ঘকাল থাকে, তথাপি আমি নিশ্চয় জানি, ঈশ্বর-ভীত লোকদের, যাহারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভীত হয়, তাহাদের মঙ্গল হইবে; কিন্তু দুষ্ট লোকের মঙ্গল হইবে না, ও সে দীর্ঘকাল থাকিবে না; তাহার আয়ু ছায়াস্বরূপ; কারণ সে ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভীত হয় না। পৃথিবীতে এই অসারতা সাধিত হয়; এমন ধার্ম্মিক লোক আছে, যাহাদের প্রতি দুষ্টদের কর্ম্মানুযায়ী ফল ঘটে; আবার এমন দুষ্ট লোক আছে, যাহাদের প্রতি ধার্ম্মিকদের কর্ম্মানুযায়ী ফল ঘটে; আমি কহিলাম, ইহাও অসার। তখন আমি আমোদের প্রশংসা করিলাম, কেননা ভোজন পান ও আমোদ করণ ব্যতীত সূর্য্যের নীচে মানুষের আর ভাল কিছু নাই; সূর্য্যের নীচে ঈশ্বরদত্ত তাহার জীবনকালে উহাই তাহার পরিশ্রমে তাহার সহবর্ত্তী হইবে। আমি যখন প্রজ্ঞার তত্ত্ব জানিতে এবং পৃথিবীতে যে কষ্ট ঘটে, তাহা দেখিতে মনোনিবেশ করিলাম,—দিবারাত্র ত মনুষ্যের চক্ষু নিদ্রা দেখে না—তখন ঈশ্বরের সমস্ত কার্য্যের বিষয়ে ইহা দেখিলাম, সূর্য্যের নীচে যে কার্য্য সাধন করা যায়, মনুষ্য তাহার তত্ত্ব পাইতে পারে না; কারণ যদ্যপি মনুষ্য তাহার অনুসন্ধানের জন্য পরিশ্রম করে, তথাপি তাহার তত্ত্ব পাইতে পারে না; এমন কি, জ্ঞানবান লোকেও যদি বলে, জানিতে পাইব, তবু তাহার তত্ত্ব পাইতে পারিবে না। বস্তুতঃ আমি এই সমস্ত বিষয় অনুসন্ধান করিবার জন্য এই সমস্ত বিষয়ে মনোনিবেশ করিলাম; ধার্ম্মিক ও জ্ঞানবান লোকেরা এবং তাহাদের কার্য্য সকল ঈশ্বরের হস্তগত; প্রেম কি ঘৃণা, তাহা মনুষ্য জানে না; সমস্তই তাহাদের সম্মুখে। সকলের প্রতি নির্ব্বিশেষে সকলই ঘটে; ধার্ম্মিক কি দুষ্ট, এবং ভাল ও শুচি কি অশুচি, এবং যজ্ঞকারী কি অযজ্ঞকারী, সকলের প্রতি একরূপ ঘটনা হয়; ভাল যেমন, পাপীও তেমনি, এবং শপথকারী যেমন, শপথে ভয়কারীও তেমনি। সূর্য্যের নীচে যত কার্য্য করা যায়, তাহার মধ্যে ইহা দুঃখের বিষয় যে, সকলের প্রতি একরূপ ঘটনা হয়; অধিকন্তু মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণ দুষ্টতায় পরিপূর্ণ, এবং যাবজ্জীবন ক্ষিপ্ততা তাহাদের হৃদয়মধ্যে থাকে, পরে তাহারা মৃতদের নিকটে যায়। কারণ কে অব্যাহতি পায়? সমস্ত জীবিত লোকের মধ্যে প্রত্যাশা আছে, কেননা মৃত সিংহ অপেক্ষা বরং জীবিত কুকুর ভাল। কারণ জীবিত লোকেরা জানে যে, তাহারা মরিবে; কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না, এবং তাহাদের আর কোন ফলও হয় না, কারণ লোকে তাহাদের বিষয় ভুলিয়া গিয়াছে। তাহাদের প্রেম, তাহাদের দ্বেষ ও তাহাদের ঈর্ষা সকলই বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে; সূর্য্যের নীচে যে কোন কার্য্য করা যায়, তাহাতে কোন কালেও তাহাদের আর কোন অধিকার হইবে না। তুমি যাও, আনন্দপূর্ব্বক তোমার খাদ্য ভোজন কর, হৃষ্টচিত্তে তোমার দ্রাক্ষারস পান কর, কেননা ঈশ্বর পূর্ব্বাবধি তোমার কার্য্য গ্রাহ্য করিয়া আসিতেছেন। তোমার বস্ত্র সর্ব্বদা শুক্লবর্ণ থাকুক, তোমার মস্তকে তৈলের অভাব না হউক। সূর্য্যের নীচে ঈশ্বর তোমাকে অসার জীবনের যত দিন দিয়াছেন, তোমার সেই সমস্ত অসার দিন থাকিতে তুমি আপন প্রিয়া ভার্য্যার সহিত সুখে জীবন যাপন কর, কেননা জীবনের মধ্যে, এবং তুমি সূর্য্যের নীচে যে পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত হইতেছ, তাহার মধ্যে ইহাই তোমার অধিকার। তোমার হস্ত যে কোন কার্য্য করিতে পায়, তোমার শক্তির সহিত তাহা কর; কেননা তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই। আমি ফিরিলাম, ও সূর্য্যের নীচে দেখিলাম যে, দ্রুতগামীদের দ্রুতগমন, কি বীরদের যুদ্ধ, কি জ্ঞানবানদের অন্ন, কি বুদ্ধিমানদের ধন, কি বিজ্ঞদেরই অনুগ্রহলাভ হয়, এমন নয়, কিন্তু সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে। বাস্তবিক মনুষ্যও আপনার কাল জানে না; যেমন মৎস্যগণ অশুভ জালে ধৃত হয়, কিম্বা যেমন পক্ষিগণ ফাঁদে ধৃত হয়, তেমনি মনুষ্য-সন্তানেরা অশুভকালে ধরা পড়ে, তাহা ত হঠাৎ তাহাদের উপরে পড়িয়া থাকে। আবার আমি প্রজ্ঞাকে সূর্য্যের নীচে এইরূপে দেখিয়াছি, আর তাহা আমার দৃষ্টিতে মহৎ বোধ হইল। একটী ক্ষুদ্র নগর ছিল, তাহাতে লোক অল্প ছিল; পরে মহান্‌ কোন রাজা আসিয়া তাহা বেষ্টন করিয়া তাহার বিরুদ্ধে বড় বড় দুর্গ নির্ম্মাণ করিলেন। আর ঐ নগরের মধ্যে এক জন জ্ঞানবান দরিদ্র লোককে পাওয়া গেল; সে আপন প্রজ্ঞা দ্বারা নগরটী রক্ষা করিল, কিন্তু সেই দরিদ্র লোকটীকে কেহই স্মরণ করিল না। তখন আমি কহিলাম, পরাক্রম হইতে প্রজ্ঞা উত্তম, তথাপি দরিদ্রের প্রজ্ঞাকে তুচ্ছ করা হয়, ও তাহার কথা কেহ শুনে না। হীনবুদ্ধিদের মধ্যে কর্ত্তৃত্বকারীর চীৎকার অপেক্ষা জ্ঞানবানদের কথা শান্তিস্থানে অধিক শ্রুত হয়। যুদ্ধাস্ত্র অপেক্ষাও প্রজ্ঞা উত্তম, কিন্তু এক জন পাপী বহু মঙ্গল নষ্ট করে। মৃত মক্ষিকাদের দ্বারা বণিকের সুগন্ধি তৈল দুগর্ন্ধ হয় ও মাতিয়া উঠে; প্রজ্ঞা ও সম্মান অপেক্ষা যৎকিঞ্চিৎ অজ্ঞানতা গুরুভার। জ্ঞানবানের হৃদয় তাহার দক্ষিণে, কিন্তু হীনবুদ্ধির হৃদয় তাহার বামে থাকে। আবার পথে চলিবার সময়েও অজ্ঞানের হৃদয় শূন্য, আর সে প্রত্যেক জনকে বলে যে, সে অজ্ঞান। যদ্যপি তোমার উপরে শাসনকর্ত্তার মনে বিরুদ্ধ ভাব জন্মে, তথাপি তোমার স্থান ছাড়িও না, কেননা শান্তভাব বড় বড় পাপ ক্ষান্ত করে। আমি সূর্য্যের নীচে এক মন্দ বিষয় দেখিয়াছি, তাহা শাসনকর্ত্তার সম্মুখে উৎপন্ন ভ্রমের ন্যায় দেখায়; অজ্ঞানতা অতি উচ্চপদে স্থাপিত হয়, এবং ধনবানেরা নীচ পদে বসে। আমি দাসদিগকে ঘোড়ার উপরে, এবং অধিপতিদিগকে দাসের ন্যায় পায়ে হাঁটিয়া চলিতে দেখিয়াছি। যে খাত খনন করে, সে তাহার মধ্যে পড়িবে; ও যে ব্যক্তি বেড়া ভাঙ্গিয়া ফেলে, সর্পে তাহাকে কামড়াইবে। যে ব্যক্তি প্রস্তর সরায়, সে তাহাতেই ব্যথা পাইবে; ও যে ব্যক্তি কাষ্ঠ চিরে, সে তাহাতে বিপদ্‌গ্রস্ত হইবে। লৌহ ভোঁতা হইলে ও তাহাতে ধার না দিলে তাহা চালাইতে অধিক বল লাগে, কিন্তু প্রজ্ঞাই কৃতকার্য্য হইবার উপযুক্ত উপায়। মন্ত্রমুগ্ধ হইবার পূর্ব্বে যদি সর্পে দংশন করে, তবে মন্ত্রপাঠকের দ্বারা কিছু ফল নাই। জ্ঞানবানের মুখনির্গত বাক্য অনুগ্রহজনক, কিন্তু হীনবুদ্ধির নিজ ওষ্ঠ তাহাকে গ্রাস করে। তাহার মুখনির্গত কথার আরম্ভই অজ্ঞানতা, ও তাহার মুখের শেষফল দুঃখদায়ক প্রলাপ। অজ্ঞান লোক অনেক কথা কহে; কিন্তু কি হইবে, তাহা মনুষ্য জানে না; এবং তাহার পরে কি হইবে, তাহা তাহাকে কে জানাইতে পারে? হীনবুদ্ধি লোকের পরিশ্রম তাহাকে ক্লান্ত করে, কেননা নগরে কিরূপে যাইতে হয়, তাহা সে জানে না। হে দেশ, ধিক্‌ তোমাকে, যদি তোমার রাজা বালক হন, ও তোমার অধ্যক্ষগণ যদি প্রত্যূষে ভোজন করেন। হে দেশ, ধন্য তুমি, যদি কুলীন-পুত্র তোমার রাজা হন, এবং তোমার অধ্যক্ষগণ উপযুক্ত সময়ে ভোজন করেন, বলবৃদ্ধির নিমিত্ত, মত্ততার নিমিত্ত নয়। আলস্য দ্বারা ছাদ বসিয়া যায়, ও হস্তের শৈথিল্যে ঘরে জল পড়ে। হাস্যের নিমিত্ত ভোজ প্রস্তুত করা হয়, এবং দ্রাক্ষারস জীবন আনন্দযুক্ত করে, আর রৌপ্য সকলই যোগায়। মনের মধ্যেও রাজাকে শাপ দিও না, আপনার শয়নাগারে ধনীকে শাপ দিও না; কেননা শূন্যের পক্ষী সেই শব্দ লইয়া যাইবে; যে পক্ষধারী, সে সেই কথা জ্ঞাত করিবে। তুমি জলের উপরে আপন ভক্ষ্য ছড়াইয়া দেও, কেননা অনেক দিনের পরে তাহা পাইবে। সাত জনকে, এমন কি, আট জনকেও অংশ বিতরণ কর, কেননা পৃথিবীতে কি আপদ ঘটিবে, তাহা তুমি জান না। মেঘ সকল যখন বৃষ্টিতে পূর্ণ হয়, তখন ভূতলে জল সেচন করে; এবং বৃক্ষ যখন দক্ষিণে কিম্বা উত্তরে পড়ে, তখন সেই বৃক্ষ যে দিকে পড়ে, সে সেই দিকে থাকে। যে জন বায়ু মানে, সে বীজ বপন করিবে না; এবং যে জন মেঘ দেখে, সে শস্য কাটিবে না। বায়ুর গতি ও গর্ভবতীর উদরস্থ অস্থির বৃদ্ধি যেমন তুমি জান না, তেমনি সর্ব্বসাধক ঈশ্বরের কার্য্যও তুমি জান না। তুমি প্রাতঃকালে আপন বীজ বপন কর, এবং সায়ংকালেও হস্ত নিবৃত্ত করিও না। কেননা ইহা কিম্বা উহা, কোন্‌টা সফল হইবে, কিম্বা উভয় সমভাবে উৎকৃষ্ট হইবে, তাহা তুমি জান না। সত্যই, আলো মিষ্ট, এবং চক্ষুর পক্ষে সূর্য্যদর্শন ভাল। কোন মনুষ্য যদি অনেক বৎসর জীবিত থাকে, তবে সেই সকলে আনন্দ করুক, কিন্তু অন্ধকারের দিন সকল মনে রাখুক; কেননা সেই সকল দিন অনেক হইবে। যাহা যাহা ঘটে, সে সকলই অসার। হে যুবক, তুমি তোমার তরুণ বয়সে আনন্দ কর, যৌবনকালে তোমার হৃদয় তোমাকে আহ্লাদিত করুক, তুমি তোমার মনোগত পথসমূহে ও তোমার চক্ষুর দৃষ্টিতে চল; কিন্তু জানিও, ঈশ্বর এই সকল ধরিয়া তোমাকে বিচারে আনিবেন। অতএব তোমার হৃদয় হইতে বিরক্তি দূর কর, শরীর হইতে দুঃখ অপসারণ কর, কেননা তরুণ বয়স ও জীবনের অরুণোদয়কাল অসার। আর তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর, যেহেতু দুঃসময় আসিতেছে, এবং সেই বৎসর সকল সন্নিকট হইতেছে, যখন তুমি বলিবে, ইহাতে আমার প্রীতি নাই। তৎকালে সূর্য্য, দীপ্তি, চন্দ্র ও তারাগণ অন্ধকারময় হইবে, এবং বৃষ্টির পরে পুনর্ব্বার মেঘ ফিরিয়া আসিবে। সেই দিনে গৃহের রক্ষকেরা কম্পিত হইবে, পরাক্রমী ব্যক্তিগণ নত হইবে, ও পেষণকারী লোকেরা অল্প হইয়াছে বলিয়া কর্ম্ম ত্যাগ করিবে, এবং গবাক্ষ দিয়া দর্শনকারিণীরা অন্ধীভূতা হইবে; আর পথের দিকের দ্বার রুদ্ধ হইবে; তখন যাঁতার শব্দ অতি সূক্ষ্ম হইবে, এবং পক্ষীর রবে লোকে উঠিয়া দাঁড়াইবে, ও বাদ্যকারিণী কন্যারা সকলে ক্ষীণ হইবে; আবার লোকে উচ্চস্থান হইতে ভীত হইবে, ও পথে ত্রাস হইবে, কদম্ব পুষ্পিত হইবে, ফড়িঙ্গ অতি কষ্টে চলিবে, ও কামনা নিস্তেজ হইবে; কেননা মানুষ আপন নিত্যস্থায়ী নিবাসে চলিয়া যাইবে ও বিলাপকারীরা পথে পথে বেড়াইবে। সেই সময়ে রৌপ্যের তার খুলিয়া যাইবে, সুবর্ণের পানপাত্র ভাঙ্গিবে, এবং উনুইর ধারে কলস খণ্ড খণ্ড হইবে, ও কূপে চক্র ভগ্ন হইবে। আর ধূলি পূর্ব্ববৎ মৃত্তিকাতে প্রতিগমন করিবে; এবং আত্মা যাঁহার দান, সেই ঈশ্বরের কাছে প্রতিগমন করিবে। উপদেশক কহিতেছেন, অসারের অসার, সকলই অসার। শেষ কথা, উপদেশক জ্ঞানবান ছিলেন; তাই তিনি লোকদিগকে জ্ঞান শিক্ষা দিতেন, এবং মনোনিবেশ ও বিবেচনা করিতেন, অনেক প্রবাদ বিন্যাস করিতেন। উপদেশক মনোহর বাক্য, এবং যাহা সরলভাবে লিখিত হইয়াছে, অর্থাৎ সত্যের বাক্য, প্রাপ্ত হইবার জন্য অনুসন্ধান করিতেন। জ্ঞানবানদের বাক্য সরল অঙ্কুশস্বরূপ, ও সভাপতিগণের [বাক্য] পোতা গোঁজস্বরূপ, তাহারা একই পালক দ্বারা দত্ত হইয়াছে। আর শেষ কথা এই, হে বৎস, তুমি এই সকল হইতে উপদেশ গ্রহণ কর; বহুপুস্তক রচনার শেষ হয় না, এবং অধ্যয়নের আধিক্যে শরীরের ক্লান্তি হয়। আইস, আমরা সমস্ত বিষয়ের উপসংহার শুনি; ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য । কারণ ঈশ্বর সমস্ত কর্ম্ম এবং ভাল হউক, কি মন্দ হউক, সমস্ত গুপ্ত বিষয়, বিচারে আনিবেন। পরমগীত; ইহা শলোমনের। তিনি নিজ মুখের চুম্বনে আমাকে চুম্বন করুন; কারণ তোমার প্রেম দ্রাক্ষারস হইতেও উত্তম। তোমার সুগন্ধি তৈল সৌরভে উৎকৃষ্ট; তোমার নাম সেচিত সুগন্ধি তৈলস্বরূপ; এই জন্যই কুমারীগণ তোমাকে প্রেম করে। আমাকে আকর্ষণ কর। আমরা তোমার পশ্চাতে দৌড়িব। রাজা আপন অন্তপুরে আমাকে আনিয়াছেন। আমরা তোমাতে উল্লাসিতা হইব, আনন্দ করিব, দ্রাক্ষারস হইতেও তোমার প্রেমের অধিক উল্লেখ করিব; লোকে ন্যায়তঃ তোমাকে প্রেম করে। অয়ি যিরূশালেমের কন্যাগণ। আমি কৃষ্ণবর্ণা, কিন্তু সুন্দরী, কেদরের তাম্বুর ন্যায়, শলোমনের যবনিকার ন্যায়। তোমরা আমার প্রতি এরূপ ভাবে দৃষ্টি করিও না যে, আমি কৃষ্ণবর্ণা, যে সূর্য্যই আমাকে বিবর্ণা করিয়াছে। আমার মাতৃপুত্রগণ আমার প্রতি কুপিত হইল, আমাকে দ্রাক্ষাক্ষেত্র সকলের রক্ষিকা করিল, আমার নিজ দ্রাক্ষাক্ষেত্র আমি রক্ষা করি নাই। হে আমার প্রাণ-প্রিয়তম! আমাকে বল, তুমি [পাল] কোথায় চরাইতেছ? মধ্যাহ্নকালে কোথায় শয়ন করাইতেছ? আমি কেন অবগুণ্ঠনবতীর ন্যায় হইব, তোমার সখাদের পালের নিকটে? অয়ি নারীকুল-সুন্দরি! তুমি যদি না জান, তবে পালের পদচিহ্ন ধরিয়া গমন কর, এবং পালকদের তাম্বুগুলির নিকটে তোমার ছাগবৎসদিগকে চরাও। ফরৌণের রথের এক অশ্বিনীর সহিত, অয়ি মম প্রিয়তমে! আমি তোমার তুলনা করিয়াছি। বেণী দ্বারা তোমার কপোলযুগল, হার দ্বারা তোমার কণ্ঠদেশ, শোভাযুক্ত হইতেছে। আমরা তোমার জন্য সুবর্ণ-বেণী প্রস্তুত করিব, তাহা রৌপ্যের গ্রন্থিবিশিষ্ট হইবে। যখন রাজা সভায় বসিলেন, আমার জটামাংসীর সৌরভ বিস্তারিত হইল। আমার প্রিয় আমার কাছে গন্ধরস-তরুগুচ্ছবৎ, যাহা আমার কুচযুগের মধ্যে থাকে। আমার প্রিয় আমার কাছে মেঁদির পুষ্পগুচ্ছবৎ, যাহা ঐন্‌-গদীর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে জন্মে। দেখ, তুমি সুন্দরী, অয়ি মম প্রিয়ে! দেখ, তুমি সুন্দরী, তোমার নয়নযুগল কপোতের সদৃশ। হে আমার প্রিয়! দেখ, তুমি সুন্দর, হাঁ, তুমি মনোহর, আর আমাদের শয্যা হরিদ্বর্ণ। এরস বৃক্ষ আমাদের গৃহের কড়িকাষ্ঠ, দেবদারু আমাদের বরগা। আমি শারোণের গোলাপ, তলভূমির শোশন পুষ্প। যেমন কন্টকবনের মধ্যে শোশন পুষ্প, তেমনি যুবতীগণের মধ্যে আমার প্রিয়া। যেমন বনতরুগণের মধ্যে নাগরঙ্গবৃক্ষ, তেমনি যুবকগণের মধ্যে আমার প্রিয়; আমি পরমহর্ষে তাঁহার ছায়াতে বসিলাম, তাঁহার ফল আমার মুখে সুস্বাদু লাগিল। তিনি আমাকে পান-শালাতে লইয়া গেলেন, আমার উপরে প্রেমই তাঁহার পতাকা হইল। তোমরা দ্রাক্ষাপূপ দ্বারা আমাকে সুস্থির কর, নাগরঙ্গ দ্বারা আমার প্রাণ যুড়াও; কেননা আমি প্রেম-পীড়িতা। তাঁহার বাম হস্ত আমার মস্তকের নীচে, থাকে, তাঁহার দক্ষিণ হস্ত আমাকে আলিঙ্গন করে। অয়ি যিরূশালেমের কন্যাগণ! আমি তোমাদিগকে দিব্য দিয়া বলিতেছি, মৃগী ও মাঠের হরিণীদিগের দিব্য দিয়া বলিতেছি, তোমরা প্রেমকে জাগাইও না, উত্তেজনা করিও না, যে পর্য্যন্ত তাহার বাসনা না হয়। ঐ মম প্রিয়ের রব! দেখ, তিনি আসিতেছেন, পর্ব্বতগণের উপর দিয়া, উপপর্ব্বতগণের উপর দিয়া লম্ফে ঝম্ফে আসিতেছেন। আমার প্রিয় মৃগের ও হরিণশাবকের সদৃশ; দেখ, তিনি আমাদের প্রাচীরের পশ্চাতে দাঁড়াইয়া আছেন, বাতায়ন দিয়া উকি মারিতেছেন, জাল দিয়া কটাক্ষ করিতেছেন। আমার প্রিয় কথা কহিলেন, আমাকে বলিলেন, ‘অয়ি মম প্রিয়ে! উঠ; অয়ি মম সুন্দরি! এস; কারণ দেখ, শীতকাল অতীত হইয়াছে, বর্ষা শেষ হইয়াছে, চলিয়া গিয়াছে, ক্ষেত্রে পুষ্প প্রস্ফুটিত হইয়াছে, [পক্ষিগণের] গানের সময় হইয়াছে, আমাদের দেশে ঘুঘুর রব শুনা যাইতেছে। ডুমুর গাছের ফল রসযুক্ত হইতেছে, দ্রাক্ষালতা সকল মুকুলিত হইয়াছে, সেগুলি সৌরভ বিস্তার করিতেছে। অয়ি মম প্রিয়ে! উঠ; অয়ি মম সুন্দরি! এস। অয়ি মম কপোতি! তুমি শৈলের ফাটালে, ভূধরের গুপ্ত স্থানে রহিয়াছ, আমাকে তোমার রূপ দেখিতে দেও, তোমার স্বর শুনিতে দেও, কেননা তোমার স্বর মিষ্ট ও তোমার রূপ মনোহর।’ তোমরা আমাদের নিমিত্ত সেই শৃগালদিগকে, ক্ষুদ্র শৃগালদিগকে ধর, যাহারা দ্রাক্ষার উদ্যান সকল নষ্ট করে; কারণ আমাদের দ্রাক্ষার উদ্যান সকল মুকুলিত হইয়াছে। আমার প্রিয় আমারই, আর আমি তাঁহারই; তিনি শোশন পুষ্পবনে [আপন পাল] চরান। যাবৎ দিবস শীতল না হয়, ও ছায়া সকল পলায়ন না করে, হে আমার প্রিয়! তাবৎ তুমি ফিরিয়া আইস, আর মৃগের কিম্বা হরিণশাবকের সদৃশ হও, বেথর পর্ব্বতশ্রেণীর উপরে। রাত্রিকালে আমি আমার শয্যায় আমার প্রাণ-প্রিয়তমের অন্বেষণ করিতেছিলাম, অন্বেষণ করিতেছিলাম, কিন্তু তাঁহাকে পাইলাম না। [বলিলাম], আমি এখন উঠিয়া নগরে ভ্রমণ করিব, গলিতে গলিতে ও চকে চকে ভ্রমণ করিব, আমার প্রাণ-প্রিয়তমের অন্বেষণ করিব; অন্বেষণ করিয়াছিলাম, কিন্তু তাঁহাকে পাইলাম না। নগরে ভ্রমণকারী প্রহরীরা আমাকে দেখিতে পাইল, [আমি বলিলাম], তোমরা কি আমার প্রাণ-প্রিয়তমকে দেখিয়াছ? আমি তাহাদের নিকট হইতে একটু অগ্রসর হইলাম, অমনি আমার প্রাণ প্রিয়তমকে পাইলাম, আমি তাঁহাকে ধরিলাম, ছাড়িলাম না, যাবৎ আপন মাতার গৃহে না আনিলাম, আমার জননীর অন্তঃপুরে না আনিলাম। অয়ি যিরূশালেমের কন্যাগণ। আমি তোমাদিগকে দিব্য দিয়া বলিতেছি, মৃগী ও মাঠের হরিণীদিগের দিব্য দিয়া বলিতেছি, তোমরা প্রেমকে জাগাইও না, উত্তেজনা করিও না, যে পর্য্যন্ত তাহার বাসনা না হয়। গন্ধরস ও কুন্দুরুতে সুবাসিত হইয়া, বণিকের সর্ব্বপ্রকার দ্রব্যে সুবাসিত হইয়া, ধূমস্তম্ভের ন্যায় প্রান্তর হইতে আসিতেছেন, উনি কে? দেখ, উহা শলোমনের শিবিকা, উহার চারিদিকে যষ্টি জন বীর আছেন, উহারা ইস্রায়েলের বীরগণের মধ্যবর্ত্তী। উহারা সকলে খড়্‌গধারী ও রণকুশল; উহাদের প্রত্যেকের কটিদেশে স্ব স্ব খড়্‌গ বাঁধা আছে, রাত্রিকালীন বিভীষিকা প্রযুক্ত। শলোমন রাজা আপনার জন্য এক চতুর্দ্দোল নির্ম্মাণ করিলেন, লিবানোনের কাষ্ঠ দিয়া করিলেন। তিনি রৌপ্য দিয়া তাহার স্তম্ভ নির্ম্মাণ করিলেন, সুবর্ণের তলদেশ ও বেগুনে রঙ্গের আসন করিলেন, এবং যিরূশালেমের কন্যাগণ কর্ত্তৃক প্রেম দিয়া তাহার মধ্যভাগ খচিত হইল। অয়ি সিয়োন কন্যাগণ। তোমরা বাহিরে গিয়া শলোমন রাজাকে নিরীক্ষণ কর; তিনি সেই মুকুটে ভূষিত, যাহা তাঁহার মাতা তাঁহার মাথায় দিয়াছিলেন, তাঁহার বিবাহের দিনে, তাঁহার চিত্তের আনন্দের দিনে। অয়ি মম প্রিয়ে! দেখ, তুমি সুন্দরী, দেখ, তুমি সুন্দরী; ঘোমটার মধ্যে তোমার নয়নযুগল কপোতের ন্যায়; তোমার কেশপাশ এমন ছাগপালের ন্যায়, যাহারা গিলিয়দ-পর্ব্বতের পার্শ্বে শুইয়া থাকে। তোমার দন্তশ্রেণী ছিন্নলোমা মেষীর পালবৎ, যাহারা স্নান করিয়া উঠিয়া আসিয়াছে, যাহারা সকলে যমজ শাবকবিশিষ্টা, যাহাদের মধ্যে একটীও মৃতবৎসা নাই। তোমার ওষ্ঠাধর সিন্দূরবর্ণ সূত্রের ন্যায়, তোমার মুখ অতি মনোহর, তোমার ঘোমটার মধ্যে তোমার গণ্ডদেশ দাড়িম্বখণ্ডের ন্যায়। তোমার গলদেশ দায়ূদের সেই দুর্গের সদৃশ, যাহা অস্ত্রাগারের নিমিত্ত নির্ম্মিত, যাহার মধ্যে এক সহস্র চর্ম্ম টাঙ্গান রহিয়াছে, সে সমস্তই বীরগণের ঢাল। তোমার কুচযুগল দুই হরিণ-শাবকের, হরিণীর দুই যমজ বৎসের ন্যায়, যাহারা শোশন পুষ্পবনে চরে। যাবৎ দিবস শীতল না হয়, ও ছায়া সকল পলায়ন না করে, তাবৎ আমি গন্ধরসের পর্ব্বতে যাইব, আর কুন্দুরুর পর্ব্বতে যাইব। অয়ি মম প্রিয়ে! তুমি সর্ব্বাঙ্গসুন্দরী, তোমাতে কোন দোষ নাই। আমারই সঙ্গে লিবানোন হইতে আইস, কান্তে! আমারই সঙ্গে লিবানোন হইতে আইস; অবলোকন কর অমানার শৃঙ্গ হইতে, শনীর ও হর্ম্মোণ পর্ব্বতের শৃঙ্গ হইতে, সিংহদের বাসস্থান হইতে, চিত্রব্যাঘ্রদের পর্ব্বত হইতে। তুমি আমার মন হরণ করিয়াছ, অয়ি মম ভগিনি! মম কান্তে! তুমি আমার মন হরণ করিয়াছ, তোমার এক নয়নকটাক্ষ দ্বারা, তোমার কণ্ঠের এক হার দ্বারা। তোমার প্রেম কেমন মনোরম! অয়ি মম ভগিনি! মম কান্তে! তোমার প্রেম দ্রাক্ষারস হইতে কত উৎকৃষ্ট! তোমার তৈলের সৌরভ সমস্ত সুগন্ধি দ্রব্য অপেক্ষা কত উৎকৃষ্ট! কান্তে! তোমার ওষ্ঠাধর হইতে ফোঁটা ফোঁটা মধু ক্ষরে, তোমার জিহ্বার তলে মধু ও দুগ্ধ আছে; তোমার বস্ত্রের গন্ধ লিবানোনের গন্ধের ন্যায়। মম ভগিনি, মম কান্তা অর্গলবদ্ধ উপবন, অর্গলবদ্ধ জলাকর, মুদ্রাঙ্কিত উৎস। তোমার চারাগুলি দাড়িম্বের উপবন, তন্মধ্যে আছে সুস্বাদু ফল, জটামাংসীর সহিত মেঁদি, জটামাংসী ও কুঙ্কুম, বচ, দারুচিনি ও সর্ব্বপ্রকার সুগন্ধি ধূনার বৃক্ষ, গন্ধরস অগুরু ও প্রধান প্রধান সমস্ত সুগন্ধির তরু। তুমি উপবন সকলের উৎস, তুমি জীবন্ত জলের কূপ, লিবানোন-প্রবাহিত স্রোতোমালা। হে উত্তরীয় বায়ু, জাগ, হে দক্ষিণ বায়ু, আইস, আমার উপবনে বহ; উপবনের বিবিধ সুগন্ধি প্রবাহিত হউক, আমার প্রিয় আপন উদ্যানে আইসুন, আপন উপাদেয় ফল সকল ভোজন করুন। আমি আপন উপবনে আসিয়াছি, অয়ি মম ভগিনি! মম কান্তে! আমার গন্ধরস ও সুগন্ধি দ্রব্য চয়ন করিয়াছি, আমার মধুসহ মধুক্রম চুষিয়াছি, আমার দ্রাক্ষারস ও দুগ্ধ পান করিয়াছি। হে বন্ধুগণ! ভোজন কর; পান কর, হে প্রিয়েরা, যথেষ্ট পান কর। আমি নিদ্রিতা ছিলাম, কিন্তু আমার হৃদয় জাগিয়াছিল; আমার প্রিয়ের স্বর, তিনি দ্বারে আঘাত করিয়া কহিলেন, ‘আমায় দুয়ার খুলিয়া দেও; অয়ি মম ভগিনি! মম প্রিয়ে! মম কপোতি! মম শুদ্ধমতি! কারণ আমার মস্তক ভিজিয়া গিয়াছে শিশিরে, আমার কেশপাশ রাত্রির জলবিন্দুতে।’ ‘আমি আমার অঙ্গরক্ষিণী খুলিয়াছি, কেমন করিয়া পরিধান করিব? আমি পা দুখানি ধুইয়াছি, কেমন করিয়া মলিন করিব?’ আমার প্রিয় দুয়ারের ছিদ্র দিয়া হস্ত বিস্তার করিলেন, তাঁহার জন্য আমার চিত্ত উচাটন হইল। আমি আপন প্রিয়ের জন্য দুয়ার খুলিতে উঠিলাম; তখন গন্ধরসে আমার হস্ত ভিজিল, আমার অঙ্গুলি দ্রব গন্ধরসে ভিজিল, অর্গলের হাতলের উপরে। আমি আপন প্রিয়ের জন্য দুয়ার খুলিয়া দিলাম; কিন্তু আমার প্রিয় ফিরিয়া গিয়াছিলেন, চলিয়া গিয়াছিলেন; তিনি কথা কহিলে আমার প্রাণ উড়িয়া গিয়াছিল; আমি তাঁহাকে অন্বেষণ করিলাম, কিন্তু পাইলাম না, আমি তাঁহাকে ডাকিলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন না। নগরে ভ্রমণকারী প্রহরীরা আমাকে দেখিতে পাইল, তাহারা আমাকে প্রহার করিল, ক্ষতবিক্ষত করিল, প্রাচীরের প্রহরিবর্গ আমার বস্ত্র কাড়িয়া লইল। অয়ি যিরূশালেমের কন্যাগণ! আমি তোমাদিগকে দিব্য দিয়া বলিতেছি, তোমরা যদি আমার প্রিয়তমের দেখা পাও, তবে তাঁহাকে বলিও যে, আমি প্রেমপীড়িতা। অন্য প্রিয় হইতে তোমার প্রিয় কিসে বিশিষ্ট? অয়ি নারীকুল-সুন্দরি! অন্য প্রিয় হইতে তোমার প্রিয় কিসে বিশিষ্ট যে, তুমি আমাদিগকে এরূপ দিব্য দিতেছ? আমার প্রিয়তম শ্বেত ও রক্তবর্ণ; তিনি দশ সহস্রের মধ্যে অগ্রগণ্য। তাঁহার মস্তক নির্ম্মল সুবর্ণের ন্যায়, তাঁহার কেশপাশ কুঞ্চিত ও দাঁড়কাকের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ। তাঁহার নয়নযুগল জলপ্রণালীর তীরস্থ কপোতযুগলের ন্যায়, যাহারা দুগ্ধে স্নাত ও পয়ঃপূর্ণ স্থানে উপবিষ্ট। তাঁহার গণ্ডদেশ সুগন্ধি ওষধির চৌকা ও আমোদকারী লতার স্তম্ভস্বরূপ; তাঁহার ওষ্ঠাধর শোশন পুষ্পের ন্যায়, দ্রব গন্ধরস ক্ষরণকারী। তাঁহার হস্ত বৈদূর্য্যমণিতে খচিত সুবর্ণের অঙ্গুরীয়স্বরূপ; তাঁহার কায় নীলকান্তমণিতে খচিত গজদন্তময় শিল্পকর্ম্মের ন্যায়। তাঁহার ঊরুদ্বয় সুবর্ণ চুঙ্গিতে বসান শ্বেতপ্রস্তরময় স্তম্ভদ্বয়ের ন্যায়; তাঁহার দৃশ্য লিবানোনের সদৃশ, এরস বৃক্ষের ন্যায় উৎকৃষ্ট। তাঁহার মুখ অতীব মধুর; হাঁ, তিনি সর্ব্বতোভাবে মনোহর। অয়ি যিরূশালেমের কন্যাগণ! এই আমার প্রিয়, এই আমার সখা। অয়ি নারীকুল-সুন্দরি! তোমার প্রিয় কোথায় গিয়াছেন? তোমার প্রিয় কোন্‌ দিকের পথ ধরিয়াছেন? আমরা তোমার সঙ্গে তাঁহার অন্বেষণ করিব। আমার প্রিয়তম আপন উপবনে সুগন্ধি ওষধির চৌকাতে গিয়াছেন, উপবনে [পাল] চরাইবার জন্য ও শোশন পুষ্প চয়ন করিবার জন্য। আমি আমার প্রিয়েরই ও আমার প্রিয় আমারই; তিনি শোশন পুষ্পবনে [পাল] চরান। অয়ি মম প্রিয়ে! তুমি তির্সার ন্যায় সুন্দরী, যিরূশালেমের ন্যায় রূপবতী, সপতাকা বাহিনীর ন্যায় ভয়ঙ্করী। তুমি আমা হইতে তোমার নয়ন দুটী ফিরাও, কেননা উহারা আমাকে উদ্বিগ্ন করে; তোমার কেশপাশ এমন ছাগপালের ন্যায়, যাহারা গিলিয়দের পার্শ্বে শুইয়া থাকে। তোমার দন্তশ্রেণী মেষীর পালবৎ, যাহারা স্নান করিয়া উঠিয়া আসিয়াছে, যাহারা সকলে যমজ-শাবকবিশিষ্টা, যাহাদের মধ্যে একটীও মৃতবৎসা নাই। তোমার ঘোমটার মধ্যে তোমার গণ্ডদেশ দাড়িম্বখণ্ডের ন্যায়। ষষ্টি রাণী ও অশীতি উপপত্নী আছে, আর অসংখ্য যুবতী আছে। আমার কপোতী, আমার শুদ্ধমতি অদ্বিতীয়া; সে আপন মাতার একমাত্র দুহিতা, সে আপন জননীর স্নেহপাত্রী; তাহাকে দেখিয়া কন্যাগণ ধন্যা বলিল, রাণীরা ও উপপত্নীরা তাহার প্রশংসা করিল। উনি কে, যিনি অরুণের ন্যায় উদীয়মানা, চন্দ্রের ন্যায় সুন্দরী, সূর্য্যের ন্যায় তেজস্বিনী, সপতাকা বাহিনীর ন্যায় ভয়ঙ্করী? আমি উপত্যকার নবীন তরুচয় দেখিতে, দ্রাক্ষালতা পল্লবিত হয় কি না, দেখিতে, দাড়িম্বপুষ্প ফুটে কি না, দেখিতে, আক্‌রোটের উপবনে নামিয়া গেলাম। আমার অজ্ঞাতসারে আমার প্রাণ আমাকে স্থাপন করিল আমার মহোদয় জাতির রথরাজির [মধ্যে]। ফির ফির, অয়ি শূলম্মীয়ে; ফির ফির, আমরা তোমাকে দেখিব। শূলম্মীয়াকে তোমরা কেন দেখিবে? মহনয়িমস্থ নৃত্যের ন্যায় কেন দেখিবে? অয়ি রাজকন্যে! পাদুকায় তোমার চরণ কেমন শোভা পাইতেছে! তোমার গোলাকার ঊরুদ্বয় স্বর্ণহারস্বরূপ। নিপুণ শিল্পীর হস্ত নির্ম্মিত স্বর্ণহারস্বরূপ। তোমার দেহ এমন গোল বাটীর ন্যায়, যাহাতে মিশ্রিত দ্রাক্ষারসের অভাব নাই। তোমার কটিদেশ এমন গোধূমরাশির ন্যায়, যাহা শোশন-পুষ্পশ্রেণীতে শোভিত। তোমার কুচযুগ দুই হরিণশাবকের ন্যায়, হরিণীর যমজ দুইটী বৎসের ন্যায়। তোমার গলদেশ গজদন্তময় উচ্চ গৃহের ন্যায়; তোমার নয়নযুগল হিশ্‌বনের বৎ-রব্বীম পুরদ্বার-সমীপস্থ সরোবরগুলির ন্যায়; তোমার নাসিকা লিবানোনের সেই উচ্চ গৃহের ন্যায়, যাহা দম্মেশকের দিকে সম্মুখীন। তোমার দেহের উপর তোমার মস্তক কর্ম্মিলের ন্যায়; তোমার মস্তকের কেশপাশ বেগুনে রঙ্গের ন্যায়, তোমার কেশদামে রাজা বন্দি আছেন। হে প্রেম, নানা আমোদের মধ্যে তুমি কেমন সুন্দরী ও মনোহারিণী! তোমার এই দীর্ঘতা খর্জ্জুর বৃক্ষের ন্যায়, তোমার কুচযুগ দ্রাক্ষাগুচ্ছস্বরূপ। আমি কহিলাম, আমি খর্জ্জুর বৃক্ষে উঠিব, আমি তাহার বাগুড়া ধরিব; তোমার কুচযুগ দ্রাক্ষাফলের গুচ্ছস্বরূপ হউক, তোমার নিঃশ্বাসের আঘ্রাণ নাগরঙ্গের ন্যায় হউক; তোমার তালু উত্তম দ্রাক্ষারসের ন্যায় হউক, যাহা সহজে আমার প্রিয়ের গলায় নামিয়া যায়, নিদ্রাগতদের ওষ্ঠ দিয়া সরিয়া যায়। আমি আমার প্রিয়েরই, তাঁহার বাসনা আমারই প্রতি। হে আমার প্রিয়, চল, আমরা জনপদে যাই, পল্লীগ্রামে কাল যাপন করি। চল, প্রত্যূষে উঠিয়া দ্রাক্ষাক্ষেত্রে যাই, দেখি, দ্রাক্ষালতা পল্লবিত হইয়াছে কি না, তাহার মুকুল ধরিয়াছে কি না, দাড়িম্ব পুষ্প ফুটিয়াছে কি না; সেখানে তোমাকে আমার প্রেম প্রদান করিব। দূদাফল সৌরভ বিস্তার করিতেছে; আমাদের দুয়ারে দুয়ারে নবীন ও পুরাতন সর্ব্বপ্রকার উত্তম উত্তম ফল আছে; হে আমার প্রিয়, আমি তোমারই নিমিত্ত তাহা রাখিয়াছি। আহা, তুমি যদি আমার সহোদরের ন্যায় হইতে, যে আমার মাতার স্তন্য পান করিত, তবে আমি তোমাকে সড়কে পাইলে চুম্বন করিতাম, তথাপি কেহ আমাকে তুচ্ছ করিত না। আমি তোমাকে পথ দেখাইতাম, আমার মাতার গৃহে লইয়া যাইতাম; তুমি আমাকে শিক্ষা প্রদান করিতে, আমি তোমাকে সুগন্ধমিশ্রিত দ্রাক্ষারস পান করাইতাম, আমার দাড়িম্বের মিষ্ট রস পান করাইতাম। তাঁহার বাম হস্ত আমার মস্তকের নীচে থাকিত, তাঁহার দক্ষিণ হস্ত আমাকে আলিঙ্গন করিত। অয়ি যিরূশালেম-কন্যাগণ! আমি তোমাদিগকে দিব্য দিয়া বলিতেছি, তোমরা প্রেমকে কেন জাগাইবে? কেন উত্তেজনা করিবে, যে পর্য্যন্ত তাহার বাসনা না হয়? উনি কে, যিনি প্রান্তর হইতে উঠিয়া আসিতেছেন, নিজ প্রিয়ের প্রতি নির্ভর দিয়া আসিতেছেন? আমি নাগরঙ্গ বৃক্ষতলে তোমাকে জাগাইলাম, সেখানে তোমার মাতা তোমাকে লইয়া ব্যথা খাইয়াছিলেন, সেখানে তোমার জননী ব্যথা খাইয়াছিলেন, ও তোমাকে প্রসব করিয়াছিলেন। তুমি আমাকে মোহরের ন্যায় তোমার হৃদয়ে, মোহরের ন্যায় তোমার বাহুতে রাখ; কেননা প্রেম মৃত্যুর ন্যায় বলবান; অন্তর্জ্বালা পাতালের ন্যায় নিষ্ঠুর; তাহার শিখা অগ্নির শিখা, তাহা সদাপ্রভুরই অগ্নি। বহু জল প্রেম নির্ব্বাণ করিতে পারে না, স্রোতস্বতীগণ তাহা ডুবাইয়া দিতে পারে না; কেহ যদি প্রেমের জন্য গৃহের সর্ব্বস্ব দেয়, লোকে তাহাকে যার পর নাই তুচ্ছ করে। ‘আমাদের একটী ছোট ভগিনী আছে, তাহার কুচযুগ নাই; আমরা নিজ ভগিনীর জন্য সে দিন কি করিব, যে দিনে তাহার বিষয়ে প্রস্তাব হইবে? সে যদি ভিত্তিস্বরূপা হয়, তাহার উপরে রৌপ্যের গুম্বোজ নির্ম্মাণ করিব, সে যদি দ্বারস্বরূপা হয়, এরস কাষ্ঠের কবাট দিয়া তাহা ঘেরিব।’ আমি ভিত্তিস্বরূপা, এবং আমার কুচযুগ তাহার উচ্চগৃহের ন্যায়; তখন তাঁহার নয়নগোচরে শান্তিপ্রাপ্তার ন্যায় হইলাম। বাল্‌-হামোনে শলোমনের এক দ্রাক্ষাক্ষেত্র ছিল, তিনি তাহা কৃষকদিগকে জমা দিয়াছেন; তাহার ফলের মূল্য প্রত্যেকে এক এক সহস্র মুদ্রা দিবে। আমার নিজের দ্রাক্ষাক্ষেত্র আমার সম্মুখে; হে শলোমন, সেই সহস্র মুদ্রা তোমারই হইবে, দুই শত মুদ্রা কৃষকদিগের থাকিবে। অয়ি উপবন-বাসিনি! সখাগণ তোমার স্বর শুনিবার জন্য কাণ পাতিয়া আছে, আমাকে তাহা শুনিতে দেও। হে আমার প্রিয়, শীঘ্র চল, মৃগের কিম্বা হরিণশাবকের সদৃশ হও, সুগন্ধময় পর্ব্বতশ্রেণীর উপরে। আমোসের পুত্র যিশাইয়ের দর্শন; যাহা তিনি যিহূদা-রাজ ঊষিয়, যোথম, আহস, ও হিষ্কিয়ের সময়ে যিহূদার ও যিরূশালেমের বিষয়ে দেখিতে পান। আকাশমণ্ডল, শ্রবণ কর, পৃথিবী, কর্ণপাত কর, কেননা সদাপ্রভু বলিয়াছেন। আমি সন্তানদিগকে পালন ও পোষণ করিয়াছি, আর তাহারা আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচরণ করিয়াছে। গোরু আপন স্বামীকে জানে, গর্দ্দভ আপন প্রভুর যাবপাত্র জানে, কিন্তু ইস্রায়েল জানে না, আমার প্রজাগণ বিবেচনা করে না। আহা পাপিষ্ঠ জাতি, অপরাধে ভারগ্রস্ত লোক, দুষ্কর্ম্মকারীদের বংশ, নষ্টাচারী সন্তানগণ; তাহারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছে, ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে অবজ্ঞা করিয়াছে, বিপথে গিয়াছে, পরাঙ্মুখ হইয়াছে। তোমরা আর কেন প্রহারিত হইবে? হইলে অধিক বিদ্রোহাচরণ করিবে; সমুদয় মস্তক ব্যথিত ও সমুদয় হৃদয় দুর্ব্বল হইয়াছে। পায়ের তালু অবধি মস্তক পর্য্যন্ত কোন স্থানে স্বাস্থ্য নাই; কেবল আঘাত ও প্রহারচিহ্ন ও নূতন ক্ষত; তাহা টেপা কি বাঁধা যায় নাই, এবং তৈল দ্বারা কোমলও করা যায় নাই। তোমাদের দেশ ধ্বংসস্থান, তোমাদের নগর সকল অগ্নিতে দগ্ধ; তোমাদের ভূমি—বিদেশী লোকেরা তোমাদের সাক্ষাতে তাহা ভোগ করিতেছে, তাহা বিদেশিগণ কর্ত্তৃক বিনষ্ট ভূমির ন্যায় ধ্বংসস্থান হইয়াছে। দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কুটীর, সশাক্ষেত্রের কুড়িয়া কিম্বা অবরুদ্ধ নগর যেমন, সিয়োন-কন্যা তেমনি হইয়া পড়িয়াছে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু যদি আমাদের জন্য যৎকিঞ্চিৎ অবশিষ্ট না রাখিতেন, তবে আমরা সদোমের সদৃশ হইতাম, ঘমোরার তুল্য হইতাম। সদোমের শাসনকর্ত্তারা, সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণ কর; ঘমোরার প্রজাগণ, আমাদের ঈশ্বরের ব্যবস্থায় কর্ণপাত কর। সদাপ্রভু কহিতেছেন, তোমাদের বলিদানবাহুল্যে আমার প্রয়োজন কি? মেষের, হোমবলিতে ও পুষ্ট পশুর মেদে আমার আর রুচি নাই; বৃষের কি মেষের, কি ছাগের রক্তে আমার কিছু সন্তোষ নাই। তোমরা যে আমার সাক্ষাতে উপস্থিত হইয়া আমার প্রাঙ্গণ সকল পদতলে দলিত কর, ইহা তোমাদের কাছে কে চাহিয়াছে? অসার নৈবেদ্য আর আনিও না; ধূপদাহ আমার ঘৃণিত; অমাবস্যা, বিশ্রামবার, সভার ঘোষণা—আমি অধর্ম্মযুক্ত পর্ব্বসভা সহিতে পারি না। আমার প্রাণ তোমাদের অমাবস্যা ও নিরূপিত উৎসব সকল ঘৃণা করে; সে সকল আমার পক্ষে ক্লেশকর, আমি সে সকল বহনে পরিশ্রান্ত হইয়াছি। তোমরা অঞ্জলি প্রসারণ করিলে আমি তোমাদের হইতে আমার চক্ষু আচ্ছাদন করিব; যদ্যপি অনেক প্রার্থনা কর, তথাপি শুনিব না; তোমাদের হস্ত রক্তে পরিপূর্ণ। তোমরা আপনাদিগকে ধৌত কর, বিশুদ্ধ কর, আমার নয়নগোচর হইতে তোমাদের ক্রিয়ার দুষ্টতা দূর কর; কদাচরণ ত্যাগ কর; সদাচরণ শিক্ষা কর, ন্যায়বিচারের অনুশীলন কর, উপদ্রবী লোককে শাসন কর, পিতৃহীন লোকের বিচার নিষ্পত্তি কর, বিধবার পক্ষ সমর্থন কর। সদাপ্রভু কহিতেছেন, আইস, আমরা উত্তর প্রত্যুত্তর করি; তোমাদের পাপ সকল সিন্দূরবর্ণ হইলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হইবে; লাক্ষার ন্যায় রাঙ্গা হইলেও মেষলোমের ন্যায় হইবে। তোমরা যদি সম্মত ও আজ্ঞাবহ হও, তবে দেশের উত্তম উত্তম ফল ভোগ করিবে। কিন্তু যদি অসম্মত ও বিরুদ্ধাচারী হও, তবে খড়্‌গভুক্ত হইবে; কেননা সদাপ্রভু মুখ এই কথা বলিয়াছে। সতী নগরী কেমন বেশ্যা হইয়াছে। সে ত ন্যায়বিচারে পূর্ণা ছিল। ধার্ম্মিকতা তাহাতে বাস করিত, কিন্তু এখন হত্যাকারী লোকেরা থাকে। তোমার রৌপ্য খাদ হইয়া পড়িয়াছে, তোমার দ্রাক্ষারস জলে মিশ্রিত হইয়াছে। তোমার অধ্যক্ষগণ বিদ্রোহী এবং চোরদের সখা; তাহাদের প্রত্যেক জন উৎকোচ ভালবাসে ও পারিতোষিকের অনুধাবন করে; তাহারা পিতৃহীন লোকের বিচার নিষ্পত্তি করে না, এবং বিধবার বিবাদ তাহাদের নিকটে আসিতে পায় না। এইজন্য প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের একবীর কহেন, আহা, আমি আপন বিপক্ষদিগকে [দণ্ড দিয়া] শান্তি পাইব, ও আমার শত্রুদিগকে প্রতিশোধ দিব। আর তোমার প্রতি আপন হস্ত ফিরাইব, ক্ষার দ্বারা তোমার খাদ উড়াইয়া দিব, ও তোমার সমস্ত সীসা দূর করিব। আর পূর্ব্বে যেমন ছিল, তেমনি পুনর্ব্বার তোমাকে বিচারকর্ত্তৃগণ দিব; প্রথমে যেমন ছিল, তেমনি মন্ত্রিগণ দিব; তৎপরে তুমি ‘ধার্ম্মিকতার পুরী, সতী নগরী’ নামে আখ্যাত হইবে। সিয়োন ন্যায়বিচার দ্বারা, ও তাহার যে লোকেরা ফিরিয়া আইসে, তাহারা ধার্ম্মিকতা দ্বারা, মুক্তি পাইবে। কিন্তু অধর্ম্মাচারী ও পাপী সকলের বিনাশ একসঙ্গে ঘটিবে, ও যাহারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করে, তাহারা বিনষ্ট হইবে। বস্তুতঃ লোকে তোমাদের অভীষ্ট এলা বৃক্ষ সকলের বিষয়ে লজ্জা পাইবে, এবং তোমরা আপনাদের মনোনীত উদ্যান সকলের বিষয়ে হতাশ হইবে। কেননা তোমার শুষ্কপত্র এলা বৃক্ষের ও নির্জ্জল উদ্যানের ন্যায় হইবে। আর বিক্রমী ব্যক্তি কোষ্টাপাটের ন্যায়, ও তাহার কার্য্য অগ্নিকণার ন্যায় হইবে; উভয়ই একসঙ্গে প্রজ্বলিত হইবে, কেহ নির্ব্বাণ করিবে না। আমোসের পুত্র যিশাইয় যিহূদার ও যিরূশালেমের বিষয়ে এই বাক্যের দর্শন পান। শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; এবং সমস্ত জাতি তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে। আর অনেক দেশের লোক যাইবে, বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, যাকোবের ঈশ্বরের গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব; কারণ সিয়োন হইতে ব্যবস্থা ও যিরূশালেম হইতে সদাপ্রভুর বাক্য নির্গত হইবে। আর তিনি জাতিগণের মধ্যে বিচার করিবেন, এবং অনেক দেশের লোক সম্বন্ধে নিষ্পত্তি করিবেন; আর তাহারা আপন আপন খড়্‌গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্তা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্‌গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না। যাকোবের কুল, চল, আমরা সদাপ্রভুর দীপ্তিতে গমন করি। বস্তুতঃ তুমি আপন প্রজাদিগকে, যাকোবের কুলকে, ত্যাগ করিয়াছ, কারণ তাহারা পূর্ব্বদেশের প্রথায় পরিপূর্ণ ও পলেষ্টীয়দের ন্যায় গণক হইয়াছে, এবং বিজাতিসন্তানদের হস্তে হস্ত দিয়াছে। আর তাহাদের দেশ রৌপ্য ও স্বর্ণে পরিপূর্ণ, তাহাদের ধনরাশির সীমা নাই; তাহাদের দেশ অশ্বে পরিপূর্ণ, এবং রথ যে কত, তাহার সংখ্যা নাই। আর তাহাদের দেশ প্রতিমায় পরিপূর্ণ, তাহারা আপনাদের হস্তকৃত বস্তুর কাছে প্রণিপাত করে, তাহা ত তাহাদেরই অঙ্গুলি দ্বারা নির্ম্মিত। আর সামান্য লোক অধোমুখ হয়, মান্য লোক অবনত হয়; অতএব তুমি তাহাদিগকে ক্ষমা করিও না। তোমরা শৈলে পশিয়া যাও, ও ধূলিতে লুকাও, সদাপ্রভুর ভয়ানকত্ব প্রযুক্ত ও তাঁহার মহিমার আদরণীয়তা প্রযুক্ত। সামান্য লোকের উচ্চ দৃষ্টি অবনত হইবে, মান্য লোকদের গর্ব্ব খর্ব্ব হইবে, আর সেই দিন কেবল সদাপ্রভুই উন্নত হইবেন। বস্তুতঃ যাহা কিছু গর্ব্বিত ও উদ্ধত এবং যাহা কিছু উচ্চীকৃত, সেই সমস্তের প্রতিকূলে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর এক দিন আসিতেছে; সে সকল নত হইবে। সেই দিন লিবানোনের উচ্চ ও উন্নত সমস্ত এরস বৃক্ষের প্রতিকূল, বাশনের সমস্ত অলোন বৃক্ষের প্রতিকূল, সমস্ত উচ্চ পর্ব্বতের প্রতিকূল, সমস্ত উন্নত গিরির প্রতিকূল, সমস্ত উচ্চ দুর্গের প্রতিকূল, সমস্ত দৃঢ় প্রাচীরের প্রতিকূল, তর্শীশের সমস্ত জাহাজের প্রতিকূল, এবং সমস্ত মনোহর শিল্পকর্ম্মের প্রতিকূল হইবে। আর সামান্য লোকের দর্প অধোমুখ হইবে, মান্য লোকদের গর্ব্ব খর্ব্ব হইবে; আর সেই দিন কেবল সদাপ্রভুই উন্নত হইবেন। আর প্রতিমা সকল নিঃশেষে বিলুপ্ত হইবে। আর লোকেরা শৈলের গুহাতে ও ধূলির গর্ত্তে পশিবে, সদাপ্রভুর ভয়ানকত্ব প্রযুক্ত, ও তাঁহার মহিমার আদরণীয়তা প্রযুক্ত, যখন তিনি পৃথিবীকে বিকম্পিত করিতে উঠিবেন। সেই দিন মনুষ্য ভজনার্থে নির্ম্মিত আপনার রৌপ্যময় প্রতিমা ও স্বর্ণময় প্রতিমা সকল ইন্দুরের ও চামচিকার কাছে নিক্ষেপ করিবে; আর গিরি-গহ্বরে ও শৈলগণের ফাটালে পশিবে, সদাপ্রভুর ভয়ানকত্ব প্রযুক্ত, ও তাঁহার মহিমার আদরণীয়তা প্রযুক্ত, যখন তিনি পৃথিবীকে বিকম্পিত করিতে উঠিবেন। তোমার মনুষ্যের আশ্রয় ছাড়িয়া যাও, যাহার নাসাগ্রে প্রাণবায়ু; ফলে সে কিসের মধ্যে গণ্য? বস্তুতঃ দেখ, প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু যিরূশালেম ও যিহূদা হইতে যষ্টি ও যষ্টিকা, অন্নরূপ সমস্ত যষ্টি ও জলরূপ সমস্ত যষ্টি, দূর করিবেন। বীর ও যোদ্ধা, বিচারকর্ত্তা, ভাববাদী মন্ত্রজ্ঞ ও বৃদ্ধ, পঞ্চাশৎপতি, সম্ভ্রান্ত লোক, মন্ত্রী, নিপুণ শিল্পী ও বশীকরণে জ্ঞানী, [এই সকলে দূরীকৃত হইবে]। আর আমি বালকগণকে তাহাদের অধিপতি করিব, শিশুরা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে। প্রজারা উপদ্রুত হইবে, প্রত্যেক জন অন্যের দ্বারা হইবে, প্রত্যেক জন প্রতিবাসীর দ্বারা হইবে, বালক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে, ও নীচ লোক মহতের বিরুদ্ধে গর্ব্বিতের কার্য্য করিবে। মনুষ্য আপন পিতৃকুলজাত ভ্রাতাকে ধরিয়া বলিবে, তোমার বস্ত্র আছে, তুমি আমাদের শাসনকর্ত্তা হও, এই বিনাশের অবস্থা তোমার হস্তের অধীন হউক; সেই দিন সে উচ্চ রব করিয়া কহিবে, আমি চিকিৎসক হইব না, কারণ আমার বাটীতে খাদ্য কি বস্ত্র কিছুই নাই; আমাকে লোকদের শাসনকর্ত্তা করিও না। বস্তুতঃ যিরূশালেম বিনষ্ট ও যিহূদা পতিত হইল, কেননা তাহাদের জিহ্বা ও কার্য্য সদাপ্রভুর প্রতিকূল, তাঁহার প্রতাপ নয়নের ক্রোধজনক। তাহাদের মুখের আকার তাহাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিতেছে; সদোমের ন্যায় তাহারা আপনাদের পাপ প্রচার করে, গোপন করে না। ধিক্‌ তাহাদের প্রাণকে! কেননা তাহারা আপনাদেরই মন্দ করিয়াছে। তোমরা ধার্ম্মিকের বিষয় বল, তাহার মঙ্গল হইবে; কেননা তাহারা আপন আপন ক্রিয়ার ফলভোগ করিবে। ধিক্‌ দুষ্টকে! অমঙ্গল ঘটিবে; কেননা তাহার হস্তকৃত কার্য্যের পরিশোধ তাহার প্রতি করা যাইবে। আমার প্রজাগণ! বালকেরা তাহাদের প্রতি উপদ্রব করে, ও স্ত্রীলোকেরা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। হে আমার প্রজা, তোমার পথদর্শকেরাই তোমাকে ঘুরাইয়া লইয়া বেড়ায়, ও তোমার গমনের পথ নষ্ট করে। সদাপ্রভু বিবাদ করিতে উঠিয়াছেন, তিনি জাতিগণের বিচার করিতে দাঁড়াইয়াছেন। সদাপ্রভু আপন প্রজাদের প্রাচীনবর্গকে ও অধ্যক্ষগণকে বিচারে আনিবেন; [বলিবেন,] তোমরাই দ্রাক্ষাক্ষেত্র গ্রাস করিয়াছ, দুঃখী লোক হইতে অপহৃত বস্তু তোমাদের গৃহে আছে। তোমরা কি জন্য আমার প্রজাগণকে দলাইতেছ, ও দুঃখীদের মুখ ঘষিতেছ? প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, এই কথা কহিতেছেন। সদাপ্রভু আরও কহিলেন, সিয়োনের কন্যাগণ গর্ব্বিতা, তাহারা গলা বাড়াইয়া কটাক্ষ করিয়া বেড়ায়, লঘু পাদসঞ্চারে চলে, ও চরণে রুণু রুণু শব্দ করে। অতএব প্রভু সিয়োনের কন্যাগণের মস্তক টাকপড়া করিবেন, ও সদাপ্রভু তাহাদের গুহ্য স্থান অনাবৃত করিবেন। সেই দিন প্রভু তাহাদের নূপুর, জালিবস্ত্র, চন্দ্রহার, ঝুমকা, চুড়ি, ঘোমটা, ললাট-ভূষণ, পায়ের মল, হেলিয়া, আতরের কৌটা, বাজু, অঙ্গুরীয়ক, নথ, চিত্রবস্ত্র, ঘাগরা, শাল, গেঁজিয়া, দর্পণ, মসীনা বস্ত্র, উষ্ণীষ ও আবরক বস্ত্ররূপ বেশভূষা খুলিয়া লইবেন। আর সুগন্ধির পরিবর্ত্তে পচন, হেলিয়ার পরিবর্ত্তে রজ্জু, সুন্দর কেশবিন্যাসের পরিবর্ত্তে টাক, চাদরের পরিবর্ত্তে চটের পটুকা, ও সৌন্দর্য্যের পরিবর্ত্তে দাগ হইবে। তোমার পুরুষেরা খড়্‌গ দ্বারা, ও তোমার বিক্রমিগণ সংগ্রামে পতিত হইবে। তাহার পুরদ্বার সকল ক্রন্দন ও বিলাপ করিবে; আর সে উৎসন্না হইয়া ভূমিতে বসিবে। আর সেই দিন সাত জন স্ত্রীলোক এক পুরুষকে ধরিয়া বলিবে, আমরা আপনাদেরই অন্ন ভোজন করিব, আপনাদেরই বস্ত্র পরিধান করিব; কেবল আমাদিগকে তোমার নামে আখ্যাত হইবার অনুমতি দেও, তুমি আমাদের অপমান দূর কর। সেই দিন ইস্রায়েলের মধ্যে যাহারা বাঁচিবে, তাহাদের পক্ষে সদাপ্রভুর পল্লব ভূষণ ও প্রতাপ হইবে, এবং দেশের ফল শোভা ও সৌন্দর্য্য হইবে। আর সিয়োনে যে কেহ অবশিষ্ট থাকিবে, ও যিরূশালেমে যে কেহ বাকী থাকিবে—যিরূশালেমে জীবিতগণের মধ্যে যে কাহারও নাম লিখিত আছে—সে পবিত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে। অগ্রে প্রভু বিচারের আত্মা ও দাহের আত্মা দ্বারা সিয়োনের কন্যাগণের মল ধৌত করিবেন, এবং যিরূশালেমের মধ্য হইতে তাহার রক্ত দূর করিয়া দিবেন। আর সদাপ্রভু সিয়োন পর্ব্বতস্থ সমস্ত আবাসের ও তাহার সভা সকলের উপরে দিনমানে মেঘ ও ধূম, এবং রাত্রিতে প্রজ্বলিত অগ্নির তেজ সৃষ্টি করিবেন, বস্তুতঃ সকল প্রতাপের উপরে চন্দ্রাতপ থাকিবে। আর দিনমানে গ্রীষ্মনিবারক ছায়া দিবার জন্য, এবং ঝড় ও বৃষ্টির সময়ে আশ্রয় ও আচ্ছাদন-স্থান হইবার জন্য এক তাম্বু থাকিবে। আমি আপন প্রিয়ের উদ্দেশে তাঁহার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের বিষয়ে আমার প্রিয়ের একটী গীত গান করি। [1] আমার প্রিয়ের এক দ্রাক্ষাক্ষেত্র ছিল, অতি উর্ব্বর এক গিরিশৃঙ্গে। তিনি তাহার চারিদিকে খনন করিলেন, তাহার পাথরগুলি তুলিয়া ফেলিলেন, তথায় উত্তম দ্রাক্ষালতা রোপণ করিলেন, তাহার মাঝখানে উচ্চগৃহ নির্ম্মাণ করিলেন, আর দ্রাক্ষা মাড়িবার এক কুণ্ডও খুদিলেন; আর অপেক্ষা করিলেন যে, দ্রাক্ষাফল ধরিবে, কিন্তু ধরিল বুনো আঙ্গুর। এখন হে যিরূশালেম-নিবাসিগণ ও যিহূদার লোক সকল, বিনয় করি, তোমরা আমার ও আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মধ্যে বিচার কর; আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের প্রতি এমন আর কি করিতে পারা যাইত, যাহা আমি করি নাই? আমি যখন অপেক্ষা করিলাম যে, দ্রাক্ষাফল ধরিবে, তখন কেন তাহাতে বুনো আঙ্গুর ধরিল? এখন শুন, আমি আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রের প্রতি যাহা করিব, তাহা তোমাদিগকে জ্ঞাত করি; আমি তাহার বেড়া দূর করিব, তাহা ভক্ষিত হইবে; আমি তাহার প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিব, তাহা দলিত হইবে। আমি তাহা উৎসন্ন করিব, তাহার লতা পরিষ্কার কি ভূমি খনন করা যাইবে না, আর তাহা শ্যাকুল ও কন্টকবৃক্ষের জঙ্গল হইবে, এবং আমি মেঘমালাকে আজ্ঞা দিব, যেন সে সকল তাহার উপরে জল বর্ষণ না করে। ফলতঃ ইস্রায়েল-কুল বাহিনীগণের সদাপ্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্র, এবং যিহূদার লোকেরা তাঁহার রমণীয় চারা; তিনি ন্যায়ের অপেক্ষা করিতেছিলেন, কিন্তু দেখ, রক্তপাত; তিনি ধার্ম্মিকতার অপেক্ষা করিতেছিলেন, কিন্তু দেখ, ক্রন্দন। ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা গৃহের সঙ্গে গৃহ যোগ করে, ক্ষেত্রের সঙ্গে ক্ষেত্র সংযোগ করে, অবশেষে আর স্থান থাকে না, তোমাদিগকে দেশমধ্যে একাকী বাস করান হয়! বাহিনীগণের সদাপ্রভু আমার কর্ণগোচরে কহেন, নিশ্চয়ই অনেক গৃহ ধ্বংসস্থান হইবে, বৃহৎ ও সুন্দর হইলেও নিবাসবিহীন হইবে। কারণ দশ বিঘা দ্রাক্ষাক্ষেত্রে এক বাৎ দ্রাক্ষারস উৎপন্ন হইবে, ও এক হোমর বীজে এক ঐফা মাত্র শস্য উৎপন্ন হইবে। ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা খুব সকালে উঠে, যেন সুরার অনুধাবন করিতে পারে; যাহারা অনেক রাত্রি বসিয়া থাকে, যাবৎ না দ্রাক্ষারস তাহাদিগকে উত্তপ্ত করে! বীণা ও নেবল, তবল ও বাঁশী ও দ্রাক্ষারস, এই সকল তাহাদের ভোজে বিদ্যমান; কিন্তু তাহারা সদাপ্রভুর কার্য্য নেহারে না, তাঁহার হস্তের ক্রিয়া দেখিল না। এই কারণ আমার প্রজারা জ্ঞানাভাব প্রযুক্ত বন্দিরূপে নীত, তাহাদের মহোদয়গণ ক্ষুধার্ত্ত, ও তাহাদের লোকারণ্য তৃষ্ণাতে শোষিত হয়। এই কারণ পাতাল আপন উদর বিস্তার করিয়াছে, অপরিমিতরূপে মুখ খুলিয়া হা করিয়াছে; আর উহাদের আদরণীয়তা, উহাদের লোকারণ্য, উহাদের কলহ, এবং যে উহাদের মধ্যে উল্লাস করে, সকলে সেখানে নামিয়া যাইতেছে। আর সামান্য লোক অধোমুখ হয়, মান্য লোক অবনত হয়, এবং দর্পীদের দৃষ্টি অবনত হয়। কিন্তু বাহিনীগণের সদাপ্রভু বিচারে উন্নত হন, পবিত্রতম ঈশ্বর ধর্ম্মশীলতায় পবিত্র বলিয়া মান্য হন। আর মেষশাবকগণ যেমন আপনাদের চরাণিতে চরে, তেমনি চরিবে, বিদেশিগণ হৃষ্টপুষ্ট লোকদের ধ্বংসস্থান সকল উপভোগ করিবে। ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা অলীকতার রজ্জুতে অপরাধ টানে, আর যেন শকটের দড়ি দিয়া পাপ টানে, বলে, ‘তিনি ত্বরা করুন, নিজ কার্য্য সত্বর করুন, যেন আমরা তাহা দেখিতে পাই; ইস্রায়েলের পবিত্রতমের মন্ত্রণা নিকটে আইসুক, যেন আমরা তাহা জানিতে পাই!’ ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা মন্দকে ভাল, আর ভালকে মন্দ বলে, আলোকে আঁধার, ও আঁধারকে আলো বলিয়া ধরে, মিষ্টকে তিক্ত, আর তিক্তকে মিষ্ট মনে করে! ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা আপন আপন চক্ষে জ্ঞানবান, আপন আপন দৃষ্টিতে বুদ্ধিমান! ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা দ্রাক্ষারস পান করিতে শূর, আর সুরা মিশাইতে বলবান; যাহারা উৎকোচের জন্য দুষ্ট লোককে নির্দ্দোষ করে, আর ধার্ম্মিকের ধার্ম্মিকতা তাহা হইতে দূর করে! অতএব অগ্নির জিহ্বা যেমন নাড়া গ্রাস করে, শুষ্ক তৃণ যেমন অগ্নিশিখায় পরিণত হয়, তেমনি তাহাদের মূল জীর্ণ কাষ্ঠের ন্যায় হইবে, ও তাহাদের পুষ্প ধূলার ন্যায় উড়িয়া যাইবে। কেননা তাহারা বাহিনীগণের সদাপ্রভুর ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করিয়াছে, ইস্রায়েলের পবিত্রতমের বাক্য অবজ্ঞা করিয়াছে। এই কারণ আপন প্রজাগণের বিপরীতে সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হইয়াছে, তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করিয়া আছেন, এবং তাহাদিগকে আঘাত করিয়াছেন; তাই উপপর্ব্বতগণ কম্পমান হইল, ও উহাদের শব সড়কের মধ্যে জঞ্জালের ন্যায় হইল। ইহাতেও তাঁহার ক্রোধ নিবৃত্ত হয় নাই, কিন্তু তাঁহার হস্ত এখনও বিস্তারিত রহিয়াছে। তিনি দূরস্থ জাতিগণের প্রতি পতাকা তুলিবেন, পৃথিবীর প্রান্তবাসীদের জন্য শিশ্‌ দিবেন; আর দেখ, তাহারা দ্রুতগমনে সত্বর আসিবে। তাহাদের মধ্যে কেহ ক্লান্ত হইবে না, উছোট খাইবে না, কেহ ঢুলিয়া পড়িবে না, নিদ্রা যাইবে না; তাহাদের কটিবন্ধন খুলিয়া যাইবে না, তাহাদের পাদুকার বন্ধন ছিঁড়িবে না। তাহাদের বাণ খরধার, তাহাদের সমস্ত ধনুকে চাড়া দেওয়া; তাহাদের অশ্বগণের খুর চক্‌মকি পাথরের মত, তাহাদের রথচক্র সকল ঘূর্ণবায়ুর ন্যায় গণ্য হইবে। তাহাদের হুঙ্কার সিংহীর তুল্য হইবে; তাহারা সিংহশাবকের ন্যায় হুঙ্কার করিবে, হাঁ, তাহারা গর্জ্জিয়া শিকার ধরিবে, অবাধে লইয়া যাইবে, কেহ উদ্ধার করিবে না। তাহারা সেই দিন ইহাদের উপরে সমুদ্রগর্জ্জনের ন্যায় গর্জ্জিয়া উঠিবে; আর, কেহ যদি দেশের প্রতি দৃষ্টি করে, দেখ, অন্ধকার ও সঙ্কট, আর আলোক আপন মেঘমণ্ডলে অন্ধকারময় হইয়াছে। যে বৎসর উষিয় রাজার মৃত্যু হয়, আমি প্রভুকে এক উচ্চ ও উন্নত সিংহাসনে উপবিষ্ট দেখিলাম; তাঁহার রাজবস্ত্রের অঞ্চলে মন্দির পূর্ণ হইয়াছিল। তাঁহার নিকটে সরাফগণ দণ্ডায়মান ছিলেন; তাঁহাদের মধ্যে প্রত্যেক জনের ছয় ছয় পক্ষ, প্রত্যেকে দুই পক্ষ দ্বারা আপন মুখ আচ্ছাদন করেন, দুই পক্ষ দ্বারা চরণ আচ্ছাদন করেন, ও দুই পক্ষ দ্বারা উড্‌ডীন হন। আর তাঁহারা পরস্পর ডাকিয়া বলিতে লাগিলেন, ‘পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র, বাহিনীগণের সদাপ্রভু; সমস্ত পৃথিবী তাঁহার প্রতাপে পরিপূর্ণ।’ তখন ঘোষণাকারীর রবে শিলামূল সকল কাঁপিতে লাগিল, ও গৃহ ধূমে পরিপূর্ণ হইতে লাগিল। তখন আমি কহিলাম, হায়, আমি নষ্ট হইলাম, কেননা আমি অশুচি-ওষ্ঠাধর মনুষ্য, এবং অশুচি-ওষ্ঠাধর জাতির মধ্যে বাস করিতেছি; আর আমার চক্ষু রাজাকে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুকে, দেখিতে পাইয়াছে। পরে ঐ সরাফগণের মধ্যে এক জন আমার কাছে উড়িয়া আসিলেন, তাঁহার হস্তে একখানি জ্বলন্ত অঙ্গার ছিল, তিনি যজ্ঞবেদির উপর হইতে চিমটা দ্বারা তাহা লইয়াছিলেন। আর তিনি আমার মুখে তাহা স্পর্শ করাইয়া কহিলেন, দেখ, ইহা তোমার ওষ্ঠাধর স্পর্শ করিয়াছে, তোমার অপরাধ ঘুচিয়া গেল ও তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হইল। পরে আমি প্রভুর রব শুনিতে পাইলাম; তিনি বলিলেন, আমি কাহাকে পাঠাইব? আমাদের পক্ষে কে যাইবে? আমি কহিলাম, এই আমি, আমাকে পাঠাও। তখন তিনি বলিলেন, তুমি যাও, এই জাতিকে বল, তোমরা শুনিতে থাকিও, কিন্তু বুঝিও না; এবং দেখিতে থাকিও, কিন্তু জানিও না। তুমি এই জাতির অন্তঃকরণ স্থূল কর, ইহাদের কর্ণ ভারী কর, ও ইহাদের চক্ষু বন্ধ করিয়া দেও, পাছে তাহারা চক্ষে দেখে, কর্ণে শুনে, অন্তঃকরণে বুঝে, এবং ফিরিয়া আইসে, ও সুস্থ হয়। তখন আমি কহিলাম, হে প্রভু, কত দিন? তিনি কহিলেন, যাবৎ নগর সকল নিবাসবিহীন ও বাটী সকল নরশূন্য হইয়া উৎসন্ন না হয়, এবং ভূমি ধ্বংস-স্থান হইয়া একেবারে উৎসন্ন না হয়, আর সদাপ্রভু মনুষ্যকে দূর না করেন, এবং দেশের মধ্যে অনেক ভূমি অধিকার শূন্য না হয়। যদ্যপি তাহার দশমাংশও থাকে, তথাপি তাহাকে পুনর্ব্বার গ্রাস করা যাইবে; কিন্তু যেমন এলা ও অলোন বৃক্ষ ছিন্ন হইলেও তাহার গুঁড়ি থাকে, তেমনি এই জাতির গুঁড়িস্বরূপ এক পবিত্র বংশ থাকিবে। যিহূদা-রাজ উষিয়ের পৌত্র যোথমের পুত্র আহসের সময়ে অরাম-রাজ রৎসীন ও ইস্রায়েল-রাজ, রমলিয়ের পুত্র পেকহ, যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে গেলেন, কিন্তু যুদ্ধে তাহা জয় করিতে পারিলেন না। তখন দায়ূদের কুলকে জ্ঞাত করা গেল যে, অরাম ইফ্রয়িমের সহায় হইয়াছে। তাহাতে তাঁহার হৃদয় ও তাঁহার প্রজাদের হৃদয় আলোড়িত হইল, যেমন বনের বৃক্ষ সকল বায়ুর দ্বারা আলোড়িত হয়। তখন সদাপ্রভু যিশাইয়কে কহিলেন, তুমি ও তোমার পুত্র শার-যাশূব উভয়ে আহসের সহিত সাক্ষাৎ করণার্থে উপরিস্থ পুষ্করিণীর প্রণালীর মুখের নিকটে রজকদের ক্ষেত্রস্থ রাজপথে যাও, এবং তাহাকে বল, সাবধান, সুস্থির হও; এই দুই ধূমময় কাষ্ঠের পুচ্ছ হইতে, রৎসীন ও অরামের, এবং রমলিয়ের পুত্রের, ক্রোধানল হইতে ভীত হইও না, তোমার হৃদয়কে দ্রব হইতে দিও না। অরাম, ইফ্রয়িম ও রমলিয়ের পুত্র তোমার বিরুদ্ধে এই হিংসার মন্ত্রণা করিয়াছে, বলিয়াছে, আইস, আমরা যিহূদার বিরুদ্ধে যাত্রা করি, তাহাকে ত্রাসযুক্ত করি, ও আপনাদের জন্য তথায় বিনাশ সাধন করিয়া তাহার মধ্যে এক জনকে, টাবেলের পুত্রকে, রাজা করি। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহিতেছেন, তাহা স্থির থাকিবে না, এবং সিদ্ধও হইবে না। কেননা অরামের মস্তক দম্মেশক ও দম্মেশকের মস্তক রৎসীন। আর পঁয়ষট্টি বৎসর গত হইলে ইফ্রয়িম বিনষ্ট হইবে, আর জাতি থাকিবে না। আর ইফ্রয়িমের মস্তক শমরিয়া, ও শমরিয়ার মস্তক রমলিয়ের পুত্র। স্থিরবিশ্বাসী না হইলে তোমরা কোন ক্রমে স্থির থাকিতে পারিবে না। সদাপ্রভু আহসকে আবার কহিলেন, তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে কোন চিহ্ন যাচ্ঞা কর, অধোলোকে কি ঊর্দ্ধলোকে যাচ্ঞা কর। কিন্তু আহস কহিলেন, আমি যাচ্ঞা করিব না, সদাপ্রভুর পরীক্ষাও করিব না। তিনি কহিলেন, হে দায়ূদের কুল, তোমরা একবার শুন, মনুষ্যকে ক্লান্ত করা কি তোমাদের দৃষ্টিতে ক্ষুদ্র বিষয় যে, আমার ঈশ্বরকেও ক্লান্ত করিবে? অতএব প্রভু আপনি তোমাদিগকে এক চিহ্ন দিবেন; দেখ, এক কন্যা গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম ইম্মানূয়েল [আমাদের সহিত ঈশ্বর] রাখিবে। যাহা মন্দ তাহা অগ্রাহ্য করিবার, এবং যাহা ভাল তাহা মনোনীত করিবার জ্ঞান পাইবার সময়ে বালকটী দধি ও মধু খাইবে। বাস্তবিক যাহা মন্দ তাহা অগ্রাহ্য করিবার ও যাহা ভাল তাহা মনোনীত করিবার জ্ঞান বালকটীর না হইতে, যে দেশের দুই রাজাকে তুমি ঘৃণা করিতেছ, সে দেশ পরিত্যক্ত হইবে। যিহূদা হইতে ইফ্রয়িমের পৃথক্‌ হইবার দিনাবধি যাদৃশ সময় কখনও হয় নাই, সদাপ্রভু তোমার প্রতি, তোমার প্রজাদের প্রতি ও তোমার পিতৃকুলের প্রতি তাদৃশ সময় উপস্থিত করিবেন, অশূরের রাজাকে আনিবেন। আর সেই দিন সদাপ্রভু মিসরের নদী সকলের প্রান্তস্থ মক্ষিকার প্রতি ও অশূর দেশীয় মৌমাছির প্রতি শিশ্‌ দিবেন। তাহাতে তাহারা সকলে আসিয়া উৎসন্ন উপত্যকাসমূহে, শৈলের ছিদ্র সকলে, কন্টকবনে ও মাঠে মাঠে বসিবে। সেই দিন প্রভু [ফরাৎ] নদীর পারস্থ ভাড়াটিয়া ক্ষুর দ্বারা, অশূর-রাজের দ্বারা, মস্তক ও পদের লোম ক্ষৌরি করিয়া দিবেন, এবং তদ্দ্বারা দাড়িও ফেলিবেন। সেই দিন যদি কেহ একটী যুবতী গাভী ও দুইটী মেষ পোষে, তবে তাহারা যে দুগ্ধ দিবে, সেই দুগ্ধের আধিক্যে সে দধি খাইবে; বস্তুতঃ দেশের মধ্যে অবশিষ্ট সমস্ত লোক দধি ও মধু খাইবে। আর সেই দিন, যে যে স্থানে সহস্র রৌপ্য-মুদ্রা মূল্যের সহস্র দ্রাক্ষালতা আছে, সেই সকল স্থান শ্যাকুল ও কন্টকময় হইবে; লোকে তীর ধনুক লইয়া সে স্থানে যাইবে, কেননা সমস্ত দেশ শ্যাকুল ও কন্টকের জঙ্গল হইবে; এবং যে সকল পার্ব্বত্য-ভূমি কোদালি দ্বারা খনন করা যায়, সেই সকল স্থানে শ্যাকুলের ও কাঁটার ভয়ে তুমি গমন করিবে না; তাহা বলদের চরাণিস্থান ও মেষের পদতলে দলিত হইবার স্থান হইবে। পরে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি একখানা বৃহৎ ফলক লও, এবং প্রচলিত অক্ষরে তাহাতে লিখ, ‘মহের-শালল-হাশ-বসের উদ্দেশে’; ইহার প্রমাণের জন্য আমি ঊরিয় যাজক ও যিবেরিখিয়ের পুত্র সখরিয়, এই দুই বিশ্বস্ত পুরুষকে আপনার সাক্ষী করিব। পরে আমি [আপন স্ত্রী] ভাববাদিনীতে গমন করিলে তিনি গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিলেন। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উহার নাম মহের-শালল-হাশ-বস [শীঘ্র-লুট-ত্বরা-অপহরণ] রাখ; কেননা বালকটীর বাপ, মা, এই কথা উচ্চারণ করিবার জ্ঞান না হইতে হইতে দম্মেশকের ধন ও শমরিয়ার লুট অশূর-রাজের অগ্রে অগ্রে বহন করা যাইবে। পরে সদাপ্রভু আমাকে আরও কহিলেন, এই লোকেরা ত শীলোহের মৃদুগামী স্রোত অগ্রাহ্য করিয়া রৎসীনে ও রমলিয়ের পুত্রে আনন্দ করিতেছে। এই কারণ দেখ, প্রভু [ফরাৎ] নদীর প্রবল ও প্রচুর জল, অর্থাৎ অশূর-রাজ ও তাহার সমস্ত প্রতাপকে, তাহাদের উপরে আনিবেন; সে ফাঁপিয়া সমস্ত খাল পূর্ণ করিবে, ও সমস্ত তীরভূমির উপর দিয়া যাইবে; যে যিহূদার দেশ দিয়া বেগে বহিবে, উথলিয়া উঠিয়া বাড়িতে থাকিবে, কণ্ঠ পর্য্যন্ত উঠিবে; আর, হে ইম্মানূয়েল, তোমার দেশের প্রস্থ তাহার পক্ষ দুইটীর বিস্তার দ্বারা ব্যাপ্ত হইবে। হে জাতিগণ, কোলাহল কর, কিন্তু তোমরা ভগ্ন হইবে; হে দূরদেশীয় সকল লোক, কর্ণপাত কর; খড়্‌গ বাঁধ, কিন্তু তোমরা ভগ্ন হইবে, খড়্‌গ বাঁধ, কিন্তু তোমরা ভগ্ন হইবে, একসঙ্গে মন্ত্রণা কর, কিন্তু তাহা নিষ্ফল হইবে; কথা কহ, কিন্তু তাহা স্থির থাকিবে না, কেননা ‘ঈশ্বর আমাদের সহিত’। কারণ সদাপ্রভু বলবান হস্ত অর্পণপূর্ব্বক আমাকে এই কথা কহিলেন, এবং আমাকে বলিয়া দিলেন যে, এই লোকদের পথে গমন করা আমার অকর্ত্তব্য; তিনি বলিলেন, এই লোকেরা যে সমস্ত বিষয়কে চক্রান্ত বলে, তোমরা সে সমস্তকে চক্রান্ত বলিও না; এবং ইহাদের ভয়ে ভীত হইও না, ত্রাসযুক্ত হইও না। বাহিনীগণের সদাপ্রভুকেই পবিত্র বলিয়া মান, তিনিই তোমাদের ভয়স্থান হউন, তিনিই তোমাদের ত্রাসভূমি হউন। তাহা হইলে তিনি পবিত্র আশ্রয় হইবেন; কিন্তু ইস্রায়েলের উভয় কুলের জন্য তিনি বিঘ্নজনক প্রস্তর ও বাধাজনক পাষাণ হইবেন, যিরূশালেম-নিবাসীদের জন্য পাশ ও ফাঁদস্বরূপ হইবেন। আর তাহাদের মধ্যে অনেক লোক বিঘ্ন পাইয়া পতিত ও বিনষ্ট হইবে, এবং ফাঁদে বদ্ধ হইয়া ধরা পড়িবে। তুমি সাক্ষ্যের কথা বদ্ধ কর, আমার শিষ্যগণের মধ্যে ব্যবস্থা মুদ্রাঙ্কিত কর। আমি সদাপ্রভুর আকাঙ্ক্ষা করিব, যিনি যাকোবের কুল হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করেন, এবং তাঁহার অপেক্ষায় থাকিব। এই দেখ, আমি ও সেই সন্তানগণ, যাহাদিগকে সদাপ্রভু আমাকে দিয়াছেন, সিয়োন-পর্ব্বত-নিবাসী বাহিনীগণের সদাপ্রভু নিরূপণক্রমে আমরা ইস্রায়েলের মধ্যে চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণস্বরূপ। আর যখন তাহারা তোমাদিগকে বলে, তোমরা ভূতড়িয়া ও গুণীদিগের নিকটে, যাহারা বিড় বিড় ও ফুসফুস করিয়া বকে, তাহাদের নিকটে অন্বেষণ কর, [তখন তোমরা বলিবে,] প্রজাগণ কি আপনাদের ঈশ্বরের কাছে অন্বেষণ করিবে না? তাহারা জীবিতদের জন্য কি মৃতদের কাছে [অন্বেষণ করিবে]? ব্যবস্থার কাছে ও সাক্ষ্যের কাছে [অন্বেষণ কর]; ইহার অনুরূপ কথা যদি তাহারা না বলে, তবে তাহাদের পক্ষে অরুণোদয় নাই। আর তাহারা ক্লিষ্ট ও ক্ষুধিত হইয়া দেশের মধ্য দিয়া গমন করিবে, এবং ক্ষুধিত হইলে রাগ করিয়া আপনাদের রাজাকে ও আপনাদের ঈশ্বরকে শাপ দিবে, এবং ঊর্দ্ধদিকে মুখ তুলিবে; আর তাহারা ভূমির দিকে চাহিবে, এবং দেখ, সঙ্কট ও অন্ধকার, যাতনার তিমির; আর তাহারা নিবিড় অন্ধকারে দূরীকৃত হইবে। কিন্তু যে [দেশ] পূর্ব্বে যাতনাগ্রস্ত ছিল, তাহার তিমির আর থাকিবে না; তিনি পূর্ব্বকালে সবূলূন দেশ ও নপ্তালি দেশকে তুচ্ছাস্পদ করিয়াছিলেন, কিন্তু উত্তরকালে সমুদ্রের নিকটবর্ত্তী সেই পথ, যর্দ্দনের তীরস্থ প্রদেশ, জাতিগণের গালীলকে, গৌরবান্বিত করিয়াছেন। যে জাতি অন্ধকারে ভ্রমণ করিত, তাহারা মহা-আলোক দেখিতে পাইয়াছে; যাহারা মৃত্যুচ্ছায়ার দেশে বাস করিত, তাহাদের উপরে আলোক উদিত হইয়াছে। তুমি সেই জাতির বৃদ্ধি করিয়াছ, তাহাদের আনন্দ বাড়াইয়াছ; তাহারা তোমার সাক্ষাতে শস্যচ্ছেদন সময়ের ন্যায় আহ্লাদ করে, যেমন লুট বিভাগ করিবার সময়ে লোকেরা উল্লাসিত হয়। কারণ তুমি তাহার ভারের যোঁয়ালি, তাহার স্কন্ধের বাঁক, তাহার উপদ্রবকারীর দণ্ড ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছ, যেমন মিদিয়নের দিনে করিয়াছিলে। বস্তুতঃ তুমুল যুদ্ধে সজ্জিত ব্যক্তির সমস্ত সজ্জা ও রক্তে লুণ্ঠিত বস্ত্র সকল জ্বলনীয় দ্রব্য হইবে, অগ্নির ভক্ষ্যস্বরূপ হইবে। কারণ একটী বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন, একটী পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে; আর তাঁহারই স্কন্ধের উপরে কর্ত্তৃত্বভার থাকিবে, এবং তাঁহার নাম হইবে—‘আশ্চর্য্য মন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ’। দায়ূদের সিংহাসন ও তাঁহার রাজ্যের উপরে কর্ত্তৃত্ববৃদ্ধির ও শান্তির সীমা থাকিবে না, যেন তাহা সুস্থির ও সুদৃঢ় করা হয়, ন্যায়বিচারে ও ধার্ম্মিকতা সহকারে, এখন অবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত। বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্যোগ ইহা সম্পন্ন করিবে। প্রভু যাকোবের কাছে এক বচন প্রেরণ করিয়াছেন, তাহা ইস্রায়েলের উপরে পতিত হইয়াছে। আর [দেশের] সমস্ত লোক, ইফ্রয়িম ও শমরিয়ার নিবাসিগণ, তাহা জানিতে পাইবে; তাহারা দর্পে ও চিত্তের গর্ব্বে বলিতেছে, ইষ্টক পতিত হইয়াছে বটে, কিন্তু আমরা তক্ষিত প্রস্তরে গাঁথিব; সুকমোর কাষ্ঠ সকল কাটা গিয়াছে বটে, কিন্তু আমরা তাহার পরিবর্ত্তে এরস কাষ্ঠ দিব। অতএব সদাপ্রভু রৎসীনের বিপক্ষদলকে তাহার বিরুদ্ধে উচ্চে স্থাপন করিবেন, ও তাহার শত্রুদিগকে উত্তেজিত করিবেন; অরাম সম্মুখে ও পলেষ্টীয়েরা পশ্চাতে; তাহারা হা করিয়া ইস্রায়েলকে গ্রাস করিবে এই সকলেতেও তাঁহার ক্রোধ নিবৃত্ত হয় নাই, কিন্তু তাঁহার হস্ত এখনও বিস্তারিত রহিয়াছে। তথাপি যিনি লোকদিগকে প্রহার করিয়াছেন, তাঁহার কাছে তাহারা ফিরে নাই, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর অন্বেষণ করে নাই। এইজন্য সদাপ্রভু ইস্রায়েলের মস্তক ও পুচ্ছ, বাগুড়া ও খাগড়া এক দিনেই কাটিয়া ফেলিবেন। প্রাচীন ও সম্মানিত লোক সেই মস্তক, এবং মিথ্যাশিক্ষা-দায়ী ভাববাদী সেই পুচ্ছ। কারণ এই জাতির পথদর্শকেরাই ইহাদিগকে ঘুরাইয়া লইয়া বেড়ায় এবং যাহারা তাহাদের দ্বারা চালিত হয়, তাহারা সংহারিত হইতেছে। এইজন্য প্রভু তাহাদের যুবকগণে আনন্দ করিবেন না, এবং তাহাদের পিতৃহীনদিগকে ও বিধবাদিগকে অনুকম্পা করিবেন না; কেননা তাহারা সকলে পামর ও দুরাচার, এবং প্রত্যেক মুখ মূঢ়তাভাষী। এই সকলেতেও তাঁহার ক্রোধ নিবৃত্ত হয় নাই, কিন্তু তাঁহার হস্ত এখনও বিস্তারিত রহিয়াছে। বাস্তবিক দুষ্টতা অগ্নিবৎ জ্বলে, তাহা শ্যাকুল ও কন্টকবন গ্রাস করে; নিবিড় বনে জ্বলিয়া উঠে, তাহা ঘূর্ণ্যমান ঘন ধূমস্তম্ভ হইয়া উঠে। বাহিনীগণের সদাপ্রভুর ক্রোধে দেশ দগ্ধ, এবং লোকেরা যেন অগ্নির ভক্ষ্য হইয়াছে; কেহ আপন ভ্রাতার প্রতি মমতা করে না। কেহ দক্ষিণ হস্তের দিকে টানিয়া লয়, তথাপি ক্ষুধিত থাকে; আবার কেহ বাম হস্তের দিকে গ্রাস করে, কিন্তু তৃপ্ত হয় না; প্রতিজন আপন আপন বাহুর মাংস ভোজন করে; মনঃশি ইফ্রয়িমকে ও ইফ্রয়িম মনঃশিকে, এবং উভয়ে একসঙ্গে যিহূদাকে আক্রমণ করে; এই সকলেতেও তাঁহার ক্রোধ নিবৃত্ত হয় নাই, কিন্তু তাঁহার হস্ত এখনও বিস্তারিত রহিয়াছে। ধিক্‌ সেই ব্যবস্থাপকদিগকে, যাহারা অধর্ম্মের ব্যবস্থা স্থাপন করে, ও সেই লেখকদিগকে, যাহারা উপদ্রব লিখে; যেন দরিদ্রগণকে ন্যায়বিচার হইতে ফিরাইয়া দেয়, ও আমার দুঃখী প্রজাদের অধিকার হরণ করে, যেন বিধবারা তাহাদের লুটদ্রব্য হয়, আর তাহারা পিতৃহীনদিগকে তাহাদের লুটিত দ্রব্য করিতে পারে। প্রতিফল দিবার দিনে, ও দূর হইতে যখন বিনাশ আসিবে, তখন তোমরা কি করিবে? সাহায্যের নিমিত্ত কাহার কাছে পলাইবে? আর তোমাদের প্রতাপ কোথায় রাখিবে? তাহারা বন্দিগণের নীচে অধোমুখ হইয়া পড়িবে, নিহতগণের নীচে পতিত হইবে, এই মাত্র। এই সকলেতেও তাঁহার ক্রোধ নিবৃত্ত হয় নাই, কিন্তু তাঁহার হস্ত এখনও বিস্তারিত রহিয়াছে। ধিক্‌ অশূরকে! সে আমার ক্রোধের দণ্ড! সে সেই যষ্টি, যাহার হস্তে আমার কোপ। আমি তাহাকে এক পামর জাতির বিপরীতে পাঠাইব, আমার ক্রোধপাত্র লোকবৃন্দের বিরুদ্ধে আজ্ঞা দিব, যেন সে লুট করে, ও লুটিত দ্রব্য লইয়া যায়, ও তাহাদিগকে পথের কাদার ন্যায় দলায়। কিন্তু তাহার সঙ্কল্প সেই প্রকার নয়, তাহার হৃদয় তাহা ভাবে না; বরং সর্ব্বনাশ করা এবং অনেক জাতিকে উচ্ছিন্ন করা তাহার মনস্কামনা। কারণ সে বলে, ‘আমার অধ্যক্ষগণ কি সকলে রাজা নহেন? কল্‌নো কি কর্কমীশের তুল্য নয়? হমাৎ কি অর্পদের তুল্য নয়? শমরিয়া কি দম্মেশকের তুল্য নয়? সে সকল প্রতিমার রাজ্য আমার হস্তগত হইয়াছে, সে গুলির ক্ষোদিত মূর্ত্তি যিরূশালেমের ও শমরিয়ার মূর্ত্তি সকল অপেক্ষা উত্তম; আমি শমরিয়াকে ও তাহার প্রতিমা সকলকে যেরূপ করিয়াছি, যিরূশালেমকে ও তাহার পুত্তলী সকলকেও কি সেইরূপ করিব না?’ অতএব এইরূপ ঘটিবে; সিয়োন পর্ব্বতে ও যিরূশালেমে প্রভু আপনার সমস্ত কার্য্য সমাপ্ত করিলে পর আমি অশূর-রাজের চিত্তস্ফীতিরূপ ফলের ও তাহার উচ্চদৃষ্টিরূপ আড়ম্বরের প্রতিফল দিব। কেননা সে বলিয়াছে, ‘আমার হস্তের বল ও আমার বিজ্ঞতা দ্বারা আমি কার্য্য সিদ্ধ করিয়াছি, কেননা আমি বুদ্ধিমান; আমি জাতিগণের সীমা সকল দূর করিয়াছি, ও তাহাদের সঞ্চিত ধন লুট করিয়াছি; এবং বীরের ন্যায় আমি সুখাসীনদিগকে নীচে নামাইয়াছি। আর পক্ষীর বাসার ন্যায় জাতিগণের ধন আমার হস্তগত হইয়াছে; লোকে যেমন পরিত্যক্ত ডিম্ব কুড়ায়, তেমনি আমি সমস্ত পৃথিবীকে সংগ্রহ করিয়াছি; পক্ষ নাড়িতে, কি চঞ্চু খুলিতে, কি চিঁচিঁ শব্দ করিতে কেহ ছিল না।’ কুড়ালি কি ছেদকের বিপরীতে দর্প করিবে? করপত্র কি করপত্রী হইতে আপনাকে শ্রেষ্ঠ মানিবে? যাহারা দণ্ড তুলে, দণ্ড যেন তাহাদিগকে চালনা করিতেছে; যে কাষ্ঠ নয়, যষ্টি যেন তাহাকে উঠাইতেছে। অতএব প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তাহার স্থূলকায় লোকদের মধ্যে কৃশতা প্রেরণ করিবেন, ও তাহার প্রতাপের নীচে অগ্নিদাহের ন্যায় দাহ হইবে। বাস্তবিক ইস্রায়েলের জ্যোতিঃ অগ্নিস্বরূপ হইবেন, ও যিনি তাহার পবিত্রতম, তিনি শিখাসদৃশ হইবেন; তাহা এক দিনে উহার শ্যাকুল ও কন্টক দগ্ধ করিয়া ভস্ম করিবে। আর তিনি তাহার বনের ও উদ্যানের গৌরবকে, প্রাণ ও শরীরকে, সংহার করিবেন; তাহাতে সে রোগীর ন্যায় ক্ষয় পাইবে। আর তাহার বনের অবশিষ্ট বৃক্ষ এমন অল্প হইবে যে, বালক তাহা গণনা করিয়া লিখিতে পারিবে। সেই দিনে ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশ ও যাকোব-কুলের রক্ষাপ্রাপ্ত লোকেরা আপনাদের প্রহারকারীর উপরে আর নির্ভর করিবে না; কিন্তু ইস্রায়েলের পবিত্রতম সদাপ্রভুর উপরে সত্যভাবে নির্ভর করিবে। অবশিষ্টাংশ ফিরিয়া আসিবে, যাকোবের অবশিষ্টাংশ বিক্রমশালী ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়া আসিবে। বস্তুতঃ হে ইস্রায়েল, তোমার লোকেরা সমুদ্রের বালির তুল্য হইলেও তাহাদের অবশিষ্টাংশই ফিরিয়া আসিবে; উচ্ছিন্নতা নিরূপিত, তাহা ধার্ম্মিকতার বন্যাস্বরূপ হইবে। কেননা প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে উচ্ছেদ, নিরূপিত উচ্ছেদ, সাধন করিবেন। অতএব প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন, হে আমার সিয়োন-নিবাসী প্রজাগণ, অশূর হইতে ভীত হইও না; যদিও সে তোমাকে দণ্ডাঘাত করে ও তোমার বিরুদ্ধে যষ্টি উঠায়, যেমন মিসর করিয়াছিল। কারণ আর অতি অল্পকাল অতীত হইলে ক্রোধ সিদ্ধ হইবে, আমার কোপ উহার সংহারে সিদ্ধ হইবে। আর বাহিনীগণের সদাপ্রভু তাহার বিরুদ্ধে কশা উত্তোলন করিবেন, যেমন ওরেব শৈলে মিদিয়নের হত্যাকাণ্ডে করিয়াছিলেন; এবং তাঁহার যষ্টি সাগরের উপরে থাকিবে, আর তিনি তাহা উত্তোলন করিবেন, যেমন মিসরে করিয়াছিলেন। সেই দিন তোমার স্কন্ধ হইতে উহার ভার ও তোমার গ্রীবা হইতে উহার যোঁয়ালি সরিয়া পড়িবে, এবং মেদের বৃদ্ধি প্রযুক্ত যোঁয়ালি ভাঙ্গিয়া যাইবে। সে অয়াতে আসিয়াছে, মিগ্রোণ পশ্চাতে ফেলিয়াছে; মিক্‌মসে নিজ দ্রব্যসামগ্রী রাখিয়াছে; তাহারা গিরিপথ ছাড়িয়া আসিয়াছে, গেবাতে রাত্রি যাপন করিয়াছে; রামা কাঁপিতেছে, শৌলের গিবিয়া পলায়ন করিতেছে। অয়ি গল্লীম-কন্যে! তুমি আপন স্বরে উচ্চশব্দ কর। লয়িশা, কর্ণপাত কর। হায়! দুঃখিনী অনাথোৎ! মদ্‌মেনার লোক পলাতক; গেবীম-নিবাসিগণ সকলই স্থানান্তরে লইয়া গেল। সে অদ্যই নোবে বিলম্ব করিতেছে, সে সিয়োন-কন্যার পর্ব্বতের, যিরূশালেম-গিরির, প্রতিকূলে হস্ত নাড়িতেছে। দেখ, প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ভয়ঙ্কররূপে শাখাগুলি ভঙ্গ করিবেন; তাহাতে অতি উচ্চমস্তক বৃক্ষ সকল ছিন্ন হইবে, ও অতি উন্নত তরু সকল ভূমিসাৎ হইবে। তিনি লৌহ দ্বারা বনের ঝাড় সকল কাটিয়া ফেলিবেন, এবং লিবানোন মহাপরাক্রমীর দ্বারা নিপাতিত হইবে। আর যিশয়ের গুঁড়ি হইতে এক পল্লব নির্গত হইবেন, ও তাহার মূল হইতে উৎপন্ন এক চারা ফল প্রদান করিবেন। আর সদাপ্রভুর আত্মা—প্রজ্ঞার ও বিবেচনার আত্মা, মন্ত্রণার ও পরাক্রমের আত্মা, জ্ঞানের ও সদাপ্রভুভয়ের আত্মা—তাঁহাতে অধিষ্ঠান করিবেন; আর তিনি সদাপ্রভুর-ভয়ে আমোদিত হইবেন । তিনি চক্ষুর দৃষ্টি অনুসারে বিচার করিবেন না, কর্ণের শ্রবণানুসারে নিষ্পত্তি করিবেন না; কিন্তু ধর্ম্মশীলতায় দীনহীনের বিচার করিবেন, সরলতায় পৃথিবীস্থ নম্রদের জন্য নিষ্পত্তি করিবেন; তিনি আপন মুখস্থিত দণ্ড দ্বারা পৃথিবীকে আঘাত করিবেন, আপন ওষ্ঠাধরের নিঃশ্বাস দ্বারা দুষ্টকে বধ করিবেন। আর ধর্ম্মশীলতা তাঁহার কটিদেশের পটুকা ও বিশ্বস্ততা তাঁহার কক্ষের পটুকা হইবে। আর কেন্দুয়াব্যাঘ্র মেষশাবকের সহিত একত্র বাস করিবে; চিতাব্যাঘ্র ছাগবৎসের সহিত শয়ন করিবে; গোবৎস, যুবসিংহ ও হৃষ্টপুষ্ট পশু একত্র থাকিবে; এবং ক্ষুদ্র বালক তাহাদিগকে চালাইবে। ধেনু ও ভল্লুকী চরিবে, তাহাদের বৎস সকল একত্র শয়ন করিবে, এবং সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে। আর স্তন্যপায়ী শিশু কেউটিয়া সর্পের গর্ত্তের উপরে খেলা করিবে, ত্যক্তস্তন্য বালক কৃষ্ণসর্পের বিবরের উপরে হস্ত রাখিবে। সে সকল আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না; কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে। আর সেই দিন এই ঘটিবে, যিশয়ের মূল, যিনি লোকবৃন্দের পতাকারূপে দাঁড়ান, তাঁহার কাছে জাতিগণ অন্বেষণ করিবে; আর তাঁহার বিশ্রামস্থান প্রতাপান্বিত হইবে। আর সেই দিন এই ঘটিবে, প্রভু আপন প্রজাগণের অবশিষ্টাংশকে মুক্ত করিয়া আনিবার জন্য দ্বিতীয়বার হস্তক্ষেপ করিবেন, অর্থাৎ অশূর হইতে, মিসর হইতে, পথ্রোষ হইতে, কূশ হইতে, এলম হইতে, শিনিয়র হইতে হমাৎ হইতে ও সমুদ্রের উপকূলসমূহ হইতে অবশিষ্ট লোকদিগকে আনিবেন। আর তিনি জাতিগণের নিমিত্ত পতাকা তুলিবেন, ইস্রায়েলের তাড়িত লোকদিগকে একত্র করিবেন, ও পৃথিবীর চারি কোণ হইতে যিহূদার ছিন্নভিন্ন লোকদিগকে সংগ্রহ করিবেন। আর ইফ্রয়িমের ঈর্ষা দূর হইবে, ও যাহারা যিহূদাকে ক্লেশ দেয়, তাহারা উচ্ছিন্ন হইবে; ইফ্রয়িম যিহূদার উপর ঈর্ষা করিবে না, ও যিহূদা ইফ্রয়িমকে ক্লেশ দিবে না। আর তাহারা পশ্চিশ দিকে পলেষ্টীয়দের স্কন্ধদেশে ছোঁ মারিবে, উভয়ে একত্র হইয়া পূর্ব্বদেশের লোকদের দ্রব্য লুট করিবে; তাহারা ইদোম ও মোয়াবের উপরে হস্তক্ষেপ করিবে, এবং অম্মোন-সন্তানেরা তাহাদের আজ্ঞাবহ হইবে। আর সদাপ্রভু মিস্রীয় সমুদ্রের খাড়ী নিঃশেষে বিনষ্ট করিবেন, [ফরাৎ] নদীর উপরে নিজ উত্তপ্ত বায়ু সহকারে হস্ত দোলাইবেন, তাহাকে প্রহার করিয়া সপ্ত প্রণালী করিবেন, ও লোকদিগকে পাদুকা-চরণে পার করিবেন। আর মিসর দেশ হইতে ইস্রায়েলের বাহির হইয়া আসিবার সময়ে যেমন তাহার নিমিত্ত পথ হইয়াছিল, তেমনি তাঁহার প্রজাদের অবশিষ্টাংশের, অশূর হইতে অবশিষ্ট লোকদের নিমিত্ত এক রাজপথ হইবে। আর সেই দিন তুমি বলিবে, হে সদাপ্রভু, আমি তোমার স্তবগান করিব; কেননা তুমি আমার প্রতি ক্রুদ্ধ ছিলে, কিন্তু তোমার ক্রোধ নিবৃত্ত হইয়াছে, আর তুমি আমাকে সান্ত্বনা করিতেছ। দেখ, ঈশ্বর আমার পরিত্রাণ; আমি সাহস করিব, ভীত হইব না; কেননা সদাপ্রভু যিহোবা আমার বল ও গান; তিনি আমার পরিত্রাণ হইয়াছেন। এইজন্য তোমরা আহ্লাদ সহকারে পরিত্রাণের উনুই সকল হইতে জল তুলিবে। আর সেই দিন তোমরা বলিবে, সদাপ্রভুর স্তব কর, তাঁহার নামে ডাক, জাতিগণের মধ্যে তাঁহার ক্রিয়া সকল জ্ঞাত কর, তাঁহার নাম উন্নত, এই বলিয়া কীর্ত্তন কর। সদাপ্রভুর উদ্দেশে সঙ্গীত কর; কেননা তিনি মহিমার কর্ম্ম করিয়াছেন; তাহা সমস্ত পৃথিবীর জ্ঞানগোচর হউক। অয়ি সিয়োন-নিবাসিনি! উচ্চধ্বনি কর, আনন্দগান কর; কেননা যিনি ইস্রায়েলের পবিত্রতম, তিনি তোমার মধ্যে মহান্‌। বাবিল বিষয়ক ভাববাণী; আমোসের পুত্র যিশাইয় এই দর্শন পান। তোমরা বৃক্ষশূন্য পর্ব্বতের উপরে পতাকা তুল, লোকদের নিমিত্ত উচ্চধ্বনি কর, হস্ত দোলাও; তাহারা প্রধানবর্গের পুরদ্বারে প্রবেশ করুক। আমি আপনার পবিত্র লোকদিগকে আদেশ করিয়াছি, আমি আমার ক্রোধ সফল করণার্থে আমার বীরগণকে, আমার দর্পিত উল্লাসকারিগণকে, আহ্বান করিয়াছি। পর্ব্বতমালায় লোক-সমারোহের রব, যেন মহা-জনবৃন্দের শব্দ! একত্রীকৃত জাতিগণের রাজ্যসমূহের কোলাহল শব্দ! বাহিনীগণের সদাপ্রভু যুদ্ধের জন্য বাহিনী রচনা করিতেছেন। তাহারা আসিতেছে দূরদেশ হইতে, আকাশমণ্ডলের প্রান্ত হইতে; সদাপ্রভুর ও তাঁহার ক্রোধের অস্ত্র সকল সমস্ত দেশ উচ্ছিন্ন করিতে আসিতেছেন। হাহাকার কর, কেননা সদাপ্রভুর দিন নিকটবর্ত্তী; সর্ব্বশক্তিমানের নিকট হইতে বিনাশের ন্যায় উহা আসিতেছে। এই কারণ সকলের হস্ত দুর্ব্বল হইবে, মর্ত্ত্যমাত্রের হৃদয় দ্রব হইবে; লোকেরা বিহ্বল হইবে, নানা যন্ত্রণা ও ব্যাথাগ্রস্ত হইবে, তাহারা প্রসবকারিণীর ন্যায় ব্যাথা খাইবে; এক জন অন্যের প্রতি একাগ্র দৃষ্টি করিবে, তাহাদের মুখ অগ্নিশিখার মুখ। দেখ, সদাপ্রভুর দিন আসিতেছে; পৃথিবীকে ধ্বংস-স্থান করিবার, তথাকার পাপীদিগকে তাহার মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিবার নিমিত্ত সেই দিন দারুণ এবং ক্রোধ ও প্রজ্বলিত কোপসমন্বিত। বস্তুতঃ আকাশের তারাগণ ও নক্ষত্ররাশি দীপ্তি দিবে না; সূর্য্য উদয়-সময়ে নিস্তেজ হইবে, ও চন্দ্র আপন জ্যোৎস্না প্রকাশ করিবে না। আর আমি জগতের উপরে দুর্বৃত্তির ফল ও দুষ্টগণের উপরে তাহাদের অপরাধের ফল বর্ত্তাইব; আমি অহঙ্কারীদের দর্প শেষ করিব, দুর্দ্দান্তদের গর্ব্ব খর্ব্ব করিব। আমি উত্তম সুবর্ণ হইতে মর্ত্ত্যকে, ওফীরের কাঞ্চন হইতে মনুষ্যকে দুর্লভ করিব। এইজন্য আমি আকাশমণ্ডলকে কম্পান্বিত করিব, এবং বাহিনীগণের সদাপ্রভুর ক্রোধে ও তাঁহার প্রজ্বলিত কোপের দিনে পৃথিবী টলিয়া স্থানভ্রষ্ট হইবে। তাহাতে তাড়িত হরিণের ন্যায় ও অরক্ষক মেষের ন্যায় লোকেরা প্রত্যেকে আপন আপন জাতির প্রতি ফিরিবে, প্রত্যেকে আপন আপন দেশের দিকে পলায়ন করিবে। যে কাহারও উদ্দেশ পাওয়া যাইবে, সে অস্ত্রবিদ্ধ হইবে; ও যে কেহ ধরা পড়িবে, সে খড়্‌গে পতিত হইবে। আর তাহাদের চক্ষুর সম্মুখে তাহাদের শিশুগণকে আছড়ান যাইবে, তাহাদের গৃহ লুণ্ঠিত হইবে, ও তাহাদের স্ত্রীগণ বলাৎকৃত হইবে। দেখ, আমি তাহাদের বিরুদ্ধে মাদীয়দিগকে উত্তেজিত করিব; তাহারা রৌপ্য তুচ্ছ করিবে, ও সুবর্ণে প্রীত হইবে না। তাহাদের ধনুর্দ্ধরেরা যুবকগণকে চূর্ণ করিবে, এবং তাহারা গর্ভফলের প্রতি করুণা করিবে না, বালক বালিকাদের প্রতি মমতা করিবে না। আর বাবিল—রাজ্য সকলের সেই রত্ন ও কল্‌দীয়দের শ্লাঘার সেই লাবণ্য—ঈশ্বরকর্ত্তৃক উৎপাটিত সদোম ও ঘমোরার সদৃশ হইবে। তাহার মধ্যে আর কখনও বসতি হইবে না, পুরুষপুরুষানুক্রমে তথায় কেহ বাস করিবে না, আরবীও সে স্থানে তাম্বু ফেলিবে না, মেষপালকেরাও সেখানে আপন আপন পাল শয়ন করাইবে না। কিন্তু সেই স্থানে বন্যপশুরা শয়ন করিবে; আর তাহাদের গৃহ সকল চীৎকারকারী জন্তুতে পরিপূর্ণ হইবে, উষ্ট্রপক্ষীরা সেখানে বাসা করিবে, ও ছাগেরা নাচিবে। আর তাহাদের অট্টালিকা সমূহে বৃকেরা শব্দ করিবে, বিলাস-প্রাসাদে শৃগালেরা বাস করিবে; হাঁ, তাহার কাল শীঘ্র উপস্থিত হইবে; তাহার দিন সকল দীর্ঘ হইবে না। কারণ সদাপ্রভু যাকোবের প্রতি করুণা করিবেন, ইস্রায়েলকে পুনর্ব্বার মনোনীত করিবেন, এবং তাহাদের দেশে তাহাদিগকে বসাইয়া দিবেন; তাহাতে বিদেশী লোক তাহাদিগেতে আসক্ত হইবে, তাহারা যাকোবের কুলের সহিত সংযুক্ত হইবে। আর জাতিগণ তাহাদিগকে লইয়া তাহাদের স্থানে পৌঁছাইয়া দিবে, এবং ইস্রায়েল-কুল সদাপ্রভুর দেশে তাহাদিগকে দাসদাসীর ন্যায় অধিকার করিবে; আপনারা যাহাদের কাছে বন্দি ছিল, তাহাদিগকে বন্দি করিবে, আর আপনাদের উপদ্রবকারীদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে। যে দিন সদাপ্রভু তোমাকে দুঃখ ও উদ্বেগ হইতে, এবং যে কঠোর দাসত্বে তুমি বদ্ধ ছিলে, তাহা হইতে বিশ্রাম দিবেন, সেই দিন তুমি বাবিল-রাজের বিরুদ্ধে এই প্রবাদ লইয়া বলিবে, আহা, উপদ্রবকারী কেমন শেষ হইয়াছে! অপহারিণী কেমন শেষ হইয়াছে! সদাপ্রভু দুষ্টদের দণ্ড ভাঙ্গিয়াছেন, শাসনকর্ত্তাদের রাজদণ্ড ভগ্ন করিয়াছেন। সে ক্রোধে প্রজাদিগকে আঘাত করিত, আঘাত করিতে ক্ষান্ত হইত না, সে কোপে জাতিগণকে শাসন করিত, আনিবার তাড়না করিত। সমস্ত পৃথিবী শান্ত ও সুস্থির হইয়াছে, সকলে উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিতেছে। দেবদারু ও লিবানোনের এরস বৃক্ষ সকলও তোমার বিষয়ে আনন্দ করে, বলে, যে অবধি তুমি ভূমিসাৎ হইয়াছ, আমাদের নিকটে কোন ছেদনকর্ত্তা আইসে না। অধঃস্থ পাতাল তোমার জন্য বিচলিত হয়, তোমার আগমনে তোমার সম্মুখে উপস্থিত হয়; তোমার নিমিত্ত প্রেতগণকে, পৃথিবীর প্রধান সকলকে সচেতন করে, জাতিগণের রাজা সকলকে আপন আপন সিংহাসন হইতে উঠাইয়াছে। তাহারা সকলে উত্তর করিয়া তোমাকে বলে, তুমিও কি আমাদের ন্যায় ক্ষীণবল হইলে? তুমিও কি আমাদের সমান হইলে? পাতালে নামান হইল তোমার ঘটা, ও তোমার নেবল যন্ত্রের মধুর বাদ্য; কীট তোমার নীচে পাতা রহিয়াছে, কৃমি তোমাকে ঢাকিয়াছে। হে প্রভাতি-তারা! ঊষা-নন্দন! তুমি ত স্বর্গভ্রষ্ট হইয়াছ! হে জাতিগণের নিপাতনকারী, তুমি ছিন্ন ও ভূপাতিত হইয়াছ! তুমি মনে মনে বলিয়াছিলে, ‘আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের ঊর্দ্ধে আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম-পর্ব্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; আমি মেঘরূপ উচ্চস্থলীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইব।’ তুমি ত নামান যাইবে পাতালে, গর্ত্তের গভীরতম তলে। তোমাকে দেখিলে লোকে একদৃষ্টিতে তোমার প্রতি নিরীক্ষণ করিবে, তোমার বিষয়ে বিবেচনা করিবে, এ কি সেই পুরুষ, যে পৃথিবীকে কম্পান্বিত করিত, রাজ্য সকল বিচলিত করিত, জগৎকে নির্জ্জন স্থানের ন্যায় করিত, জগতের নগর সকল উৎপাটন করিত, বন্দিদিগকে বাটী যাইতে দিত না?’ জাতিগণের সমুদয় রাজা, সকলেই সসম্মানে, প্রত্যেকে স্ব স্ব আগারে শয়ন করিতেছেন; কিন্তু তুমি আপন কবর-স্থান হইতে দূরে নিক্ষিপ্ত, কুৎসিত পল্লবের সদৃশ, তুমি সেই নিহতদের দ্বারা আচ্ছাদিত, যাহারা খড়্‌গবিদ্ধ, যাহারা গর্ত্তের প্রস্তররাশিতে নামিয়া যায়; তুমি পদদলিত শবের তুল্য হইয়াছ। তুমি উহাঁদের সহিত কবরস্থ হইবে না; কারণ তুমি স্বদেশ উচ্ছিন্ন করিয়াছ, আপন লোকদিগকে বধ করিয়াছ; দুরাচারদের বংশের নাম কোন কালে লওয়া হইবে না। তোমরা উহার সন্তানদের জন্য বধস্থান প্রস্তুত কর, উহাদের পিতৃপুরুষদের অপরাধ প্রযুক্ত কর; তাহারা উঠিয়া পৃথিবী অধিকার না করুক, জগৎকে নগরে পরিপূর্ণ না করুক। আর বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, আমি তাহাদের বিরুদ্ধে উঠিব; আমি বাবিলের নাম ও অবশিষ্টাংশ, পুত্র ও পৌত্রকে উচ্ছিন্ন করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর আমি ঐ নগর শজারুর অধিকার করিব, জলাভূমি করিব, সংহাররূপ মার্জ্জনী দ্বারা মার্জ্জন করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। বাহিনীগণের সদাপ্রভু শপথ করিয়া বলিয়াছেন, অবশ্যই, আমি যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছি, তদ্রূপ ঘটিবে; আমি যে মন্ত্রণা করিয়াছি, তাহা স্থির থাকিবে। ফলতঃ আমার দেশে অশূরীয়কে ভাঙ্গিয়া ফেলিব, আমার পর্ব্বতমালায় তাহাকে পদদলিত করিব; তাহাতে লোকদের স্কন্ধ হইতে তাহার যোঁয়ালি দূর হইবে, এবং তাহাদের গ্রীবা হইতে তাহার ভার সরিয়া পড়িবে। সমস্ত পৃথিবীর বিষয়ে এই মন্ত্রণা স্থির হইয়াছে, ও সমস্ত জাতির উপরে এই হস্ত বিস্তারিত আছে। কারণ বাহিনীগণের সদাপ্রভুই মন্ত্রণা করিয়াছেন, কে তাহা ব্যর্থ করিবে? তাঁহারই হস্ত বিস্তারিত হইয়াছে, কে তাহা ফিরাইবে? যে বৎসর আহস রাজার মৃত্যু হয়, সেই বৎসরের এই ভাববাণী। হে পলেষ্টিয়া, যে দণ্ড তোমাকে প্রহার করিত, তাহা ভগ্ন হইয়াছে বলিয়া সর্ব্বসাধারণে আনন্দ করিও না; কেননা সেই মূল-সর্প হইতে কেউটিয়া সর্প উৎপন্ন হইবে, এবং জ্বলন্ত উড়ুক্কু সর্প তাহার ফল হইবে। দীনহীনদের জ্যেষ্ঠ সন্তানেরা ভোজন করিবে, ও দরিদ্রগণ নির্ভয়ে শয়ন করিবে; আর আমি দুর্ভিক্ষ দ্বারা তোমার মূল হনন করিব, এবং তোমার অবশিষ্টাংশ হত হইবে। হে পুরদ্বার, হাহাকার কর; হে নগর, ক্রন্দন কর; হে পলেষ্টিয়া, তুমি বিলীন, তোমার সমুদয় বিলীন; কেননা উত্তর দিক্‌ হইতে ধূম আসিতেছে, আর উহার শ্রেণী হইতে কেহ সরিয়া যায় না। আর এই জাতির দূতগণকে কি উত্তর দেওয়া যাইবে? সদাপ্রভু সিয়োনের ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছেন; এবং তাঁহার দুঃখী প্রজাগণ তাহার মধ্যে আশ্রয় লইবে। মোয়াব বিষয়ক ভাববাণী। আহা, রাত্রির মধ্যে মোয়াবের আর নগর নষ্ট ও ধ্বংস হইল; আহা, রাত্রির মধ্যে মোয়াবের কীর নগর নষ্ট ও ধ্বংস হইল। সে রোদন করিবার জন্য বায়িতে ও দীবনে, উচ্চস্থলীতে, গিয়াছে; নবোর উপরে ও মেদবার উপরে মোয়াব হাহাকার করিতেছে, তাহাদের সকলের মস্তক মুণ্ডন হইয়াছে, প্রতিজনের দাড়ি কাটা গিয়াছে। সড়কে সড়কে তাহাদের লোক চট পরিধান করিয়াছে; তাহাদের ছাদের উপরে ও চকের মধ্যে সমস্ত লোক হাহাকার করিতেছে, রোদন করিয়া যেন গলিয়া পড়িতেছে। হিশ্‌বোন ও ইলিয়ালী ক্রন্দন করিতেছে; তাহাদের রব যহস পর্য্যন্ত শুনা যাইতেছে; তজ্জন্য মোয়াবের যোদ্ধৃগণ আর্ত্তনাদ করিতেছে; তাহার প্রাণ তাহার মধ্যে কম্পিত হইতেছে। মোয়াবের জন্য আমার হৃদয় ক্রন্দন করিতেছে; তাহার পলাতকেরা সোয়র পর্য্যন্ত, ইগ্লৎ-শলিশীয়ায় যাইতেছে; তাহারা রোদন করিতে করিতে লূহীতের আরোহণ-পথ দিয়া উঠিতেছে, হোরোণয়িমের পথে বিনাশসূচক আর্ত্তনাদ করিতেছে। নিম্রীমের জলসমূহ মরুস্থান হইল; ঘাস শুষ্ক হইল, নবীন তৃণ শেষ হইল, হরিদ্বর্ণ কিছুই নাই। এইজন্য তাহারা আপনাদের রক্ষিত ধন ও সঞ্চিত দ্রব্য বাইশী বৃক্ষের স্রোতের পারে লইয়া যাইতেছে। আহা, ক্রন্দনরব মোয়াবের পরিসীমা বেষ্টন করিয়াছে; তাহার হাহাকার ইগ্লয়িম পর্য্যন্ত, তাহার হাহাকার বের্‌-এলীম পর্য্যন্ত শুনা যাইতেছে। কারণ দীমোনের জল সমূহ রক্তময় হইল; আমি দীমোনের উপরে আরও দুঃখ, মোয়াবের পলাতকের উপরে ও দেশের অবশিষ্টাংশের উপরে সিংহ আনয়ন করিব। তোমরা সেলা হইতে প্রান্তর দিয়া সিয়োন-কন্যার পর্ব্বতে দেশাধ্যক্ষের কাছে মেষশাবক সমূহ পাঠাইয়া দেও। যেমন ভ্রমণকারী পক্ষিগণ, যেমন বিক্ষিপ্ত বাসা, মোয়াব-কন্যাগণ অর্ণোনের ঘাট সমূহে তদ্রূপ হইবে। মন্ত্রণা দেও, বিচার কর, মধ্যাহ্নকালে আপনার ছায়াকে রাত্রিকালের ন্যায় কর, বহিষ্কৃত লোকদিগকে লুকাইয়া রাখ, পলাতককে প্রকাশ করিও না। মোয়াব, আমার বহিষ্কৃত লোকদিগকে তোমার সহিত বাস করিতে দেও, বিনাশকের সম্মুখ হইতে তাহাদের অন্তরাল হও। কারণ উৎপীড়ক শেষ হইল, অপহার সমাপ্ত হইল; যাহারা লোকদিগকে পদতলে দলিত করিত, তাহারা দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইল। আর দয়াতে এক সিংহাসন স্থাপিত হইবে, এক জন সত্যের প্রভাবে দায়ূদের তাম্বুতে সেই আসনে বসিবেন; তিনি বিচারকর্ত্তা, বিচারে যত্নবান ও ধার্ম্মিকতা-সাধনে সত্বর হইবেন। আমরা মোয়াবের অহঙ্কারের কথা শুনিয়াছি, সে অত্যন্ত অহঙ্কারী; তাহার অভিমান, অহঙ্কার ও ক্রোধের কথা শুনিয়াছি; তাহার দর্প কিছু নয়। তজ্জন্য মোয়াবের নিমিত্ত মোয়াব হাহাকার করিবে, তাহার সমস্ত লোক হাহাকার করিবে; তোমরা কীর্‌হরেসেতের দ্রাক্ষাপিষ্টকের নিমিত্ত কাকূক্তি করিবে, নিতান্ত ক্ষুণ্ণ হইবে। কারণ হিশ্‌বোনের ক্ষেত্র সকল ও সিব্‌মার দ্রাক্ষালতা ম্লান হইল; জাতিগণের অধ্যক্ষগণ কর্ত্তৃক তাহার চারা সকল পদাহত হইল; সেগুলি যাসের পর্য্যন্ত পৌঁছিত, ও প্রান্তরে যাইত, তাহার শাখা সকল চারিদিকে বিস্তৃত হইয়াছিল, সে সকল সমুদ্র পার হইয়াছিল। এইজন্য সিব্‌মার দ্রাক্ষালতার নিমিত্ত যাসেরের রোদনকালে আমি রোদন করিব; হে হিশ্‌বোন, হে ইলিয়ালী, আমি নেত্রজলে তোমাকে সিক্ত করিব; কেননা তোমার গ্রীষ্মের ফল ও তোমার শস্যের উপরে রণনাদ হইল। আর ফলশালী ক্ষেত্র হইতে আনন্দ ও উল্লাস দূরীকৃত হইল; দ্রাক্ষাক্ষেত্রেও লোকেরা আর আনন্দগান বা হর্ষনাদ করে না; কেহ পদ দ্বারা চাপ দিয়া কুণ্ডে আর দ্রাক্ষারস বাহির করে না, আমি [দ্রাক্ষাপেষণের] গান নিবৃত্ত করাইয়াছি। এই কারণ আমার নাড়ী মোয়াবের জন্য, আমার অন্তর কীর্‌-হেরসের জন্য বীণার ন্যায় বাজিতেছে। যদ্যপি মোয়াব দেখা দেয়, উচ্চস্থলীতে আপনাকে ক্লান্ত করে, ও প্রার্থনা করিবার জন্য আপন ধর্ম্মধামে প্রবেশ করে, তথাপি সে কৃতার্থ হইবে না। সদাপ্রভু মোয়াবের বিষয়ে পূর্ব্বে এই কথা বলিয়াছিলেন। কিন্তু এখন সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছেন, বেতনজীবীর বৎসরের ন্যায় তিন বৎসরের মধ্যে আপন বৃহৎ লোকারণ্য শুদ্ধ মোয়াবের গৌরব তুচ্ছীকৃত হইবে; এবং অবশিষ্টাংশ অতি অল্প ও ক্ষীণবল হইবে। দম্মেশক বিষয়ক ভারবাণী। দেখ, দম্মেশক আর নগর না থাকিয়া উচ্ছিন্ন হইল, তাহা কাঁথড়ার ঢিবী হইবে। অরোয়েরের নগর সকল পরিত্যক্ত হইল, সেগুলি পশুপালদের অধিকার হইবে; তাহারা সেই স্থানে শয়ন করিবে, কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না। আর ইফ্রয়িমের দুর্গ ও দম্মেশকের রাজ্য এবং অরামের অবশিষ্টাংশ লুপ্ত হইবে; সে সকল ইস্রায়েল-সন্তানগণের গৌরবের তুল্য হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। আর সেই দিন এই ঘটিবে, যাকোবের গৌরব ক্ষীণ হইবে, ও তাহার মাংসের স্থূলতা কৃশ হইয়া পড়িবে। আর যেমন কেহ ক্ষেত্রস্থ শস্য সংগ্রহ করে, হাত বাড়াইয়া শীষ কাটে, তেমনি হইবে; যেমন কেহ রফায়ীম তলভূমিতে পতিত শীষ কুড়ায়, তেমনি হইবে। তথাপি তাহাতে যৎকিঞ্চিৎ অবশিষ্ট থাকিবে; জিত বৃক্ষের ফল ঝাড়িয়া লইবার পরেও যেমন তাহার উচ্চতম স্থানে গোটা দুই তিন ফল, কিম্বা ফলবান্‌ বৃক্ষের শাখাতে গোটা চারি পাঁচ ফল থাকে [তেমনি হইবে]; ইহা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলেন। সেই দিন মনুষ্য আপন নির্ম্মাতার প্রতি দৃষ্টি রাখিবে, ও তাহার চক্ষু ইস্রায়েলের পবিত্রতমের প্রতি চাহিয়া থাকিবে। সে আপন হস্তকৃত যজ্ঞবেদি সমূহের প্রতি দৃষ্টি রাখিবে না, ও তাহার চক্ষু আপন অঙ্গুলিকৃত বস্তু, আশেরা-মূর্ত্তি বা সূর্য্য-প্রতিমা সকল দেখিবে না। সেই দিন তাহার দৃঢ় নগর সকল বনের কিম্বা পর্ব্বত-শিখরের সেই পরিত্যক্ত স্থানের ন্যায় হইবে, যাহা ইস্রায়েল-সন্তানগণের সম্মুখে পরিত্যক্ত হইয়াছিল; আর দেশ ধ্বংসস্থান হইবে। কারণ তুমি আপন ত্রাণেশ্বরকে ভুলিয়া গিয়াছ, ও তোমার বলের শৈলকে স্মরণ কর নাই; এইজন্য সুন্দর সুন্দর চারা রোপন করিতেছ, ও বিদেশীয় কলমের সহিত লাগাইতেছ। তুমি রোপণের দিনে উহাতে বেড়া দেও, ও প্রাতঃকালে তোমার চারা পুষ্পিত করিতেছ, কিন্তু দুর্ভাগ্যের ও অপ্রতিকার্য্য দুঃখের দিনে তাহার ফল উড়িয়া যায়। হায় হায়, অনেক জাতির কোলাহল! তাহারা সমুদ্র-কল্লোলের ন্যায় কল্লোলধ্বনি করিতেছে; লোকবৃন্দের গর্জ্জন। তাহারা প্রবল বন্যার ন্যায় গর্জ্জন করিতেছে। লোকবৃন্দ প্রবল বন্যার ন্যায় গর্জ্জন করিবে, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে ধমক্‌ দিবেন, তাই তাহারা দূরে পলায়ন করিবে, এবং বায়ুর সম্মুখে পর্ব্বতস্থ ভুষীর ন্যায়, কিম্বা ঝড়ের সম্মুখে ঘূর্ণায়মান ধূলিরাশির ন্যায় তাড়িত হইবে। সন্ধ্যাকালে, দেখ, ত্রাস; প্রভাতের পূর্ব্বেই তাহারা নাই। এই আমাদের সর্ব্বস্ব-হরণকারীদের অধিকার, এই আমাদের লুটকারীদের ভাগ্য। আহা, পক্ষের ঝিঁঝীশব্দ-বিশিষ্ট, কূশদেশীয় নদীগণের পরপারস্থ, দেশ; তুমি ত সমুদ্রপথে নলনির্ম্মিত নৌকাতে জলের উপর দিয়া দূতগণকে প্রেরণ করিতেছ। হে দ্রুতগামী দূতগণ, যে জাতি দীর্ঘকায় ও মসৃণাঙ্গ, যে জনবৃন্দ আদি হইতে ভয়ঙ্কর, যে জাতি পরিমাণ করে ও দলন করে, যাহার দেশ নদনদী দ্বারা বিভক্ত, তাহার নিকটে গমন কর। হে জগন্নিবাসিগণ, হে পৃথিবীর অধিবাসিগণ, যখন পর্ব্বতগণের উপরে পতাকা উঠিবে, দৃষ্টিপাত করিও, এবং যখন তূরী বাজিবে, শ্রবণ করিও। কেননা সদাপ্রভু আমাকে এই কথা বলিয়াছেন, নির্ম্মল আকাশে সতেজ রৌদ্রের ন্যায়, শস্যচ্ছেদনের গ্রীষ্মসময়ে কুয়াসাযুক্ত মেঘের ন্যায়, আমি ক্ষান্ত হইব, আপন বাসস্থানে থাকিয়া নিরীক্ষণ করিব। কারণ দ্রাক্ষা সঞ্চয় করিবার পূর্ব্বে যে সময়ে মুকুল পরিণত হইবে, পুষ্প হইতে দ্রাক্ষাফল জন্মিয়া পক্ক হইবে, সেই সময়ে তিনি কাস্তা দিয়া তাহার ডগা কাটিবেন, ও তাহার শাখা সকল দূর করিবেন, কাটিয়া ফেলিবেন। পর্ব্বতস্থ হিংস্র পক্ষীদের ও বন্য পশুদের নিমিত্ত উহারা একসঙ্গে পরিত্যক্ত হইবে; হিংস্র পক্ষিগণ তাহার উপরে গ্রীষ্মকাল যাপন করিবে, ও সকল বন্য পশু তাহার উপরে শীতকাল যাপন করিবে। তৎকালে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর নিকটে ঐ দীর্ঘকায় ও মসৃণাঙ্গ জাতি উপহার বলিয়া আনীত হইবে; হাঁ, সেই যে জনবৃন্দ আদি হইতে ভয়ঙ্কর, যে জাতি পরিমাণ করে ও দলিত করে, যাহার দেশ নদনদী দ্বারা বিভক্ত, সেই জাতি হইতে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর নামের স্থানে, সিয়োন পর্ব্বতে, [উপহার আনীত হইবে]। দেখ, সদাপ্রভু দ্রুতগামী মেঘে আরোহণ করিয়া মিসরে গমন করিতেছেন; মিসরের প্রতিমাগণ তাঁহার সাক্ষাতে কাঁপিবে, ও মিসরের হৃদয় তাহার অন্তরে দ্রব হইবে। আর আমি মিস্রীয়দিগকে মিস্রীয়দের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিব; তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন ভ্রাতার ও প্রত্যেকে আপন আপন বন্ধুর সহিত, নগর নগরের সহিত, ও রাজ্য রাজ্যের সহিত সংগ্রাম করিবে। আর মিসরের আত্মা তাহার অন্তরে শূন্য হইয়া যাইবে, এবং আমি তাহার মন্ত্রণা গ্রাস করিব; আর তাহারা প্রতিমা, ভেল্কিকর, ভূতুড়িয়া ও গুণীদের নিকটে অন্বেষণ করিবে। আর আমি মিস্রীয়দিগকে কঠিন প্রভুর হস্তে সমর্পণ করিব, এক উগ্র রাজা তাহাদের উপরে রাজত্ব করিবে, ইহা প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। আর সমুদ্র নির্জ্জল হইবে, ও নদী চড়া পড়িয়া শুষ্ক হইবে। তাহার স্রোত সকলে দুর্গন্ধ হইবে, মিসরের খাল সকল ছোট হইয়া চড়া পড়িবে; নল ও খাগ্‌ড়া ম্লান হইবে। নীল নদীর নিকটস্থ, নীল নদীর তীরস্থ মাঠ সকল ও নীল নদীর নিকটে উপ্ত বীজ সকল শুষ্ক হইবে, উড়িয়া যাইবে, কিছুই থাকিবে না। ধীবরগণও হাহাকার করিবে; যে সকল লোক নীল নদীতে বড়শী ফেলে, তাহারা বিলাপ করিবে; এবং যাহারা জলের মুখে জাল পাতে, তাহারা অবসন্ন হইবে। আর যাহারা মসীনার অংশুক প্রস্তুত করে, ও যাহারা শুক্লবস্ত্র বুনে, তাহারা লজ্জিত হইবে। আর তাহার স্তম্ভ সকল ভগ্ন হইবে; যাহারা বেতনের জন্য কার্য্য করে, তাহারা সকলে প্রাণে দুঃখ পাইবে। সোয়নের প্রধানবর্গ নিতান্ত অজ্ঞান; ফরৌণের বিজ্ঞবর মন্ত্রিগণের মন্ত্রণা পশুবৎ হইল; তোমরা কেমন করিয়া ফরৌণকে বলিতে পার, আমি জ্ঞানীদের পুত্র, প্রাচীন রাজাদের সন্তান? তোমার সেই জ্ঞানবানেরা কোথায়? তাহারা একবার তোমাকে সংবাদ দিউক; বাহিনীগণের সদাপ্রভু মিসরের প্রতিকূলে যে মন্ত্রণা করিয়াছেন, তাহা তাহারা জানুক। সোয়নের প্রধানবর্গ অজ্ঞান হইল; নোফের প্রধানবর্গ মুগ্ধ হইল; যাহারা মিস্রীয় বংশগণের কোণের প্রস্তর, তাহারা মিসরকে ভ্রান্ত করিয়াছে। সদাপ্রভু মিসরের অন্তরে কুটিলতার আত্মা মিশাইয়া দিয়াছেন; মত্ত ব্যক্তি যেমন আপন বমিতে ভ্রান্ত হইয়া পড়ে, তদ্রূপ উহারা মিসরকে তাহার সমস্ত কর্ম্মে ভ্রান্ত করিয়াছে। মিসরের জন্য মস্তকের কি পুচ্ছের, বাগুড়ার কি খাগ্‌ড়ার করণীয় কোন কার্য্য হইবে না। সেই দিন মিসর স্ত্রীলোকের ন্যায় হইবে; বাহিনীগণের সদাপ্রভু তাহার উপরে হস্ত দোলাইবেন, সেই দোলন প্রযুক্ত সে কাঁপিবে ও ত্রাসযুক্ত হইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু তাহাদের বিরুদ্ধে যে মন্ত্রণা করিয়াছেন, তৎপ্রযুক্ত যিহূদা দেশ মিসরের ত্রাসজনক হইবে, কাহারও কাছে তাহার নামমাত্র করিলে সে ত্রাসযুক্ত হইবে। সেই দিন মিসর দেশের মধ্যে পাঁচ নগর কনানীয় ভাষাবাদী হইবে, এবং বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্দেশে শপথ করিবে। একটী নগর উৎপাটন নগর নামে আখ্যাত হইবে। সেই দিন মিসর দেশের মধ্যস্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি হইবে, এবং তাহার সীমার নিকটে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক স্তম্ভ স্থাপিত হইবে। তাহা মিসর দেশে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্দেশে চিহ্ন ও সাক্ষীস্বরূপ হইবে; কেননা তাহারা উপদ্রবীদের ভয়ে সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিবে, এবং তিনি এক জন তারক ও মহাবীরকে পাঠাইয়া তাহাদিগকে উদ্ধার করিবেন। আর সদাপ্রভু মিসরকে আপনার পরিচয় দিবেন। এবং সেই দিন মিস্রীয়েরা সদাপ্রভুকে জ্ঞাত হইবে; আর তাহারা বলিদান ও নৈবেদ্য দ্বারা আরাধনা করিবে, ও সদাপ্রভুর কাছে মানত করিয়া পালন করিবে। আর সদাপ্রভু মিসরকে প্রহার করিবেন, প্রহার করিয়া সুস্থ করিবেন; আর তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আসিবে, তাহাতে তিনি তাহাদের বিনতি গ্রাহ্য করিয়া তাহাদিগকে সুস্থ করিবেন। সেই দিন মিসর হইতে অশূরে যাইবার এক রাজপথ হইবে; তাহাতে অশূরীয় মিসরে, ও মিস্রীয় অশূরে যাতায়াত করিবে, এবং মিস্রীয়েরা অশূরীয়দের সঙ্গে আরাধনা করিবে। সেই দিন ইস্রায়েল মিসরের ও অশূরের সহিত তৃতীয় হইবে, পৃথিবীর মধ্যে আশীর্ব্বাদপাত্র হইবে; ফলতঃ বাহিনীগণের সদাপ্রভু তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবেন, বলিবেন, আমার প্রজা মিসর, আমার হস্তকৃত অশূর, ও আমার অধিকার ইস্রায়েল আশীর্ব্বাদযুক্ত হউক। যে বৎসর অশূর-রাজ সর্গোনের প্রেরিত তর্ত্তন [সেনাপতি] অস্‌দোদে আইসেন, আর অস্‌দোদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া তাহা হস্তগত করেন, তৎকালে সদাপ্রভু আমোসের পুত্র যিশাইয় দ্বারা এই কথা কহিলেন, তুমি গিয়া আপন কটিদেশ হইতে চট মুক্ত কর, ও পদ হইতে পাদুকা খুল। তাহাতে তিনি তাহা করিলেন, বিবস্ত্র ও শূন্যপদ হইয়া ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। তখন সদাপ্রভু কহিলেন, আমার দাস যিশাইয় যেমন মিসর ও কূশ দেশের বিষয়ে তিন বৎসরের চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণের জন্য বিবস্ত্র ও শূন্যপদ হইয়া ভ্রমণ করিয়াছে, সেইরূপ অশূর-রাজ মিসরের লজ্জার জন্য আবালবৃদ্ধ মিস্রীয়-বন্দি ও কূশীয় নির্ব্বাসিত লোকদিগকে বিবস্ত্র, শূন্যপদ ও অনাবৃত-নিতম্ব করিয়া চালাইবে। তাহাতে তাহারা আপনাদের বিশ্বাসভূমি কূশ ও আপনাদের গৌরবাস্পদ মিসরের বিষয়ে ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত হইবে। সেই দিন এই উপকূল-নিবাসীরা বলিবে, অশূর-রাজ হইতে উদ্ধার পাইবার জন্য আমরা যাহার কাছে সাহায্য লাভার্থে পলায়ন করিয়াছিলাম, দেখ, এই আমাদের সেই বিশ্বাসভূমি; তবে আমরাই কি প্রকারে বাঁচিব? দক্ষিণাঞ্চলে যেমন ঝটিকা মহাবেগে চলে, তেমনি প্রান্তর হইতে, ভয়ঙ্কর দেশ হইতে, [বিপদ] আসিতেছে। এক নিদারুণ দর্শন আমাকে জ্ঞাত করা হইল; বিশ্বাসঘাতক বিশ্বাসঘাতকতা করিতেছে, বিনাশক বিনাশ করিতেছে। হে এলম, উঠিয়া যাও; হে মাদিয়া, অবরোধ কর; আমি উহার ঘটিত সমস্ত বিলাপ নিবৃত্ত করিয়াছি। ইহাতে আমার সমস্ত কটিদেশে অঙ্গগ্রহ হইল, প্রসবকারিণীর ব্যথার ন্যায় আমার ব্যথা ধরিল; আমি এমন নুইয়া পড়িয়াছি যে, শুনিতে পাই না, আমি এমন বিহ্বল হইয়াছি যে, দেখিতে পাই না। আমার হৃদয় দুপ্‌ দুপ্‌ করিতেছে, মহাত্রাস আমাকে ভয়গ্রস্ত করিতেছে; আমি যে সন্ধ্যাকাল ভালবাসিয়াছিলাম, তাহা তিনি আমার পক্ষে ভয়ানক করিলেন। মেজ, প্রস্তুত, প্রহরিগণ নিযুক্ত, ভোজন-পান চলিতেছে; হে সেনাপতিগণ, উঠ, আপন আপন ঢাল তৈলাক্ত কর। বস্তুতঃ প্রভু আমাকে এই কথা কহিলেন, যাও, একজন প্রহরী নিযুক্ত কর; সে যাহা যাহা দেখিবে, তাহার সংবাদ দিউক। যখন সে দল দেখে, দুই দুই জন করিয়া অশ্বারোহীদিগকে, গর্দ্দভের দল, উষ্ট্রের দল দেখে, তখন সে যথাসাধ্য সাবধানে কর্ণপাত করিবে। আর সে সিংহবৎ উচ্চ শব্দ করিয়া কহিল, হে প্রভু, আমি দিনমানে নিরন্তর প্রহরি-দুর্গে দাঁড়াইয়া থাকি, এবং প্রতি রাত্রিতে আপন পাহারা-স্থানে দণ্ডায়মান রহিয়াছি। আর দেখ, এক দল লোক আসিল; অশ্বারোহীরা দুই দুই জন করিয়া আসিল। আর সে প্রত্যুত্তর করিয়া কহিল, ‘পড়িল, বাবিল পড়িল, এবং তাহার দেবগণের সমস্ত ক্ষোদিত প্রতিমা ভাঙ্গিয়া ভূমিসাৎ হইল।’ হে আমার মর্দ্দনীয় শস্য, আমার খামারের সন্তান, আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের কাছে যাহা শুনিয়াছি, তাহা তোমাদিগকে জ্ঞাত করিলাম। দূমা বিষয়ক ভারবাণী। কেহ সেয়ীর হইতে আমাকে ডাকিয়া কহিতেছে, প্রহরি, রাত্রি কত? প্রহরি, রাত্রি কত? প্রহরী বলিল, প্রাতঃকাল আসিতেছে এবং রাত্রিও আসিতেছে, যদি জিজ্ঞাসা করিবে, তবে জিজ্ঞাসা করিও; ফিরিয়া আসিও। আরব বিষয়ক ভারবাণী। হে দদানীয় পথিকদল-সমূহ, তোমরা আরবে বনের মধ্যে রাত্রি যাপন করিবে। তোমরা তৃষিতের কাছে জল আন; হে টেমা-দেশবাসীরা, তোমরা অন্ন লইয়া পলাতকদের সহিত সাক্ষাৎ কর। কেননা তাহারা খড়্‌গের সম্মুখ হইতে, নিষ্কোষিত খড়্‌গের আকর্ষিত ধনুর ও ভারী যুদ্ধের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল। বস্তুতঃ প্রভু আমাকে এই কথা কহিলেন, বেতনজীবীর বৎসরের ন্যায় আর এক বৎসরকাল মধ্যে কেদরের সমস্ত প্রতাপ লুপ্ত হইবে; আর কেদরবংশীয় বীরগণের মধ্যে অল্প ধনুর্দ্ধর মাত্র অবশিষ্ট থাকিবে, কারণ সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা বলিয়াছেন। এখন তোমার কি হইয়াছে যে, তোমার নিবাসিগণ সকলে গৃহের ছাদে উঠিয়াছে? হে কলরবপূর্ণ, কোলাহলযুক্ত নগরি, উল্লাসপ্রিয় পুরি, তোমার নিহতগণ খড়্‌গহত নয়, তাহারা যুদ্ধে মৃত নয়। তোমার শাসনকর্ত্তারা সকলে একবারে পলায়ন করিল; ধনুর্দ্ধরগণ কর্ত্তৃক বদ্ধ হইল; তোমার মধ্যে যে সকল লোক পাওয়া গেল, তাহারা একবারে বদ্ধ হইল, তাহারা দূরে পলায়ন করিল। এই নিমিত্ত আমি বলিলাম, আমাকে ছাড়িয়া অন্য দিকে দৃষ্টিপাত কর, আমি তীব্র রোদন করিব; আমার জাতিরূপ কন্যার সর্ব্বনাশ বিষয়ে আমাকে সান্ত্বনা করিতে চেষ্টা করিও না। কেননা প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু হইতে কোলাহলের, দলনের ও ব্যাকুলতার দিন দর্শনোপত্যকায় উপস্থিত; ভিত্তি ভগ্ন হইতেছে ও আর্ত্তনাদ পর্ব্বত পর্য্যন্ত যাইতেছে। আর এলম তূণ ধারণ করিল, তাহার সহিত পদাতিক ও অশ্বারোহিগণের দল; এবং কীরের লোক ঢাল অনাবৃত করিল। তোমার উত্তম উত্তম তলভূমি রথে পরিপূর্ণ হইল, ও অশ্বারোহিগণ পুরদ্বারের কাছে সসজ্জ হইল। আর তিনি যিহূদার আচ্ছাদন খুলিয়া ফেলিলেন; আর সেই দিন তুমি বনগৃহে রণসজ্জার প্রতি দৃষ্টি করিলে। আর তোমরা দায়ূদ-নগরের ভগ্নস্থানগুলি দেখিলে; বাস্তবিক সে সকল অনেক; ও নীচস্থ সরোবরের জল একত্র করিলে; এবং যিরূশালেমের গৃহ সকল গণনা করিলে, ও প্রাচীর দৃঢ় করণার্থে গৃহ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিলে। আর তোমরা পুরাতন পুষ্করিণীর জলের জন্য দুই ভিত্তির মধ্যস্থানে সরোবর প্রস্তুত করিলে; কিন্তু যিনি এই ঘটনা সম্পন্ন করিয়াছেন, তাঁহার প্রতি দৃষ্টি করিলে না; যিনি দীর্ঘকালাবধি ইহার সংগঠন করিয়াছেন, তাঁহাকে দেখিলে না। আর সেই দিন প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু রোদন, বিলাপ, মস্তক মুণ্ডন ও কটিদেশে চট বন্ধন ঘোষণা করিলেন; কিন্তু দেখ, আমোদ প্রমোদ, বলদ ঘাতন ও মেষ হনন, মাংস ভক্ষণ ও দ্রাক্ষারস পান। ‘আইস, আমরা ভোজন-পান করি, কেননা কল্য মরিব।’ আর আমার কর্ণগোচরে বাহিনীগণের সদাপ্রভু আপনাকে প্রকাশ করিলেন, সত্যই, মরণকাল পর্য্যন্ত তোমাদের এই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করা যাইবে না, ইহা প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, কহেন। প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, এই কথা কহেন, তুমি ঐ কোষাধ্যক্ষের নিকটে, অর্থাৎ বাটীর অধ্যক্ষ শিব্‌নের নিকটে গিয়া তাহাকে বল, এখানে তোমার কি? এখানে তোমার কেই বা আছে যে, তুমি আপনার জন্য এখানে কবর খনন করিয়াছ? এত উচ্চস্থানে আপনার কবর খনন করিয়াছে, আপনার নিমিত্ত শৈলে আগার খনন করিয়াছে। দেখ, হে বীর, সদাপ্রভু তোমাকে ছুড়িয়া ফেলিবেন, তিনি দৃঢ়রূপে তোমাকে ধরিবেন। তিনি ভাঁটার ন্যায় তোমাকে নিশ্চয় ঘুরাইয়া প্রশস্ত দেশে নিক্ষেপ করিবেন; সেই স্থানে তুমি মরিবে, এবং সেই স্থানে তোমার প্রতাপ-রথ সকল থাকিবে; তুমি আপন প্রভুর কুল-কলঙ্ক মাত্র। আমি তোমার পদ হইতে তোমাকে ঠেলিয়া দিব, তোমার স্থান হইতে তোমাকে উপড়াইয়া ফেলা যাইবে। আর সেই দিন আমি আপন দাসকে, হিল্কিয়ের পুত্র ইলীয়াকীমকে ডাকিব; আর তোমার পরিচ্ছদ তাহাকে পরিধান করাইব, তোমার পটুকা দিয়া তাহাকে বলবান করিব, ও তোমার কর্ত্তৃত্ব তাহার হস্তে সমর্পণ করিব; সে যিরূশালেম-নিবাসীদের ও যিহূদা-কুলের পিতা হইবে। আর আমি দায়ূদ-কুলের চাবি তাহার স্কন্ধে দিব; সে খুলিলে কেহ রুদ্ধ করিবে না, ও রুদ্ধ করিলে কেহ খুলিবে না। যেমন লোকে দৃঢ় স্থানে দাণ্ডা বদ্ধ করে, তেমনি তাহাকে বদ্ধ করিব; সে আপন পিতৃকুলের প্রতাপ-সিংহাসনস্বরূপ হইবে। আর তাহার পিতৃকুলের সমস্ত গৌরব, সন্তানসন্ততি ও পানপাত্র অবধি কুপা পর্য্যন্ত সমস্ত ক্ষুদ্র পাত্র ঐ দাণ্ডাতে ঝুলান যাইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, যে দাণ্ডা দৃঢ় স্থানে বদ্ধ ছিল, তাহা সেই দিন সরিয়া যাইবে, তাহা ছিন্ন হইয়া পতিত হইবে, ও যে ভার তাহার উপরে ছিল, তাহা উচ্ছিন্ন হইবে, কারণ সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছেন। হে তর্শীশের জাহাজ সকল, হাহাকার কর, কেননা সর্ব্বনাশ হইল, গৃহ কিম্বা প্রবেশের পথমাত্র নাই; এই সমাচার কিত্তীম দেশ হইতে উহাদের প্রতি প্রকাশিত হইল। হে উপকূল-নিবাসিগণ, নীরব হও; তোমাদের দেশ সমুদ্রপারগামী সীদোনীয় বণিকগণে পূর্ণ ছিল; এবং মহাজলরাশিতে শীহোর নদীর বীজ, নীল নদীর শস্য তাহার লাভ হইত, এবং তাহা জাতিগণের হট্টস্বরূপ ছিল। হে সীদোন, লজ্জিত হও, কেননা সাগর, সমুদ্রের দৃঢ় দুর্গ, এই কথা কহিতেছে, প্রসবযন্ত্রণা ভুগি নাই, প্রসব করি নাই, যুবকদিগের প্রতিপালন কি কুমারীদিগের ভরণপোষণ করি নাই। ঐ জনশ্রুতি মিসরে পৌঁছিবামাত্র লোকে সোরের সংবাদে ব্যথিত হইবে। তোমরা পার হইয়া তর্শীশে গমন কর; হে উপকূলনিবাসিগণ, হাহাকার কর। এই কি তোমাদের আনন্দনগরী? ইহা না প্রাচীন কালেও প্রাচীনা ছিল, এবং ইহার চরণ না দূরদেশে প্রবাস করণার্থে ইহাকে লইয়া যাইত? মুকুটবিতরণকারিণী সোর, যাহার বণিকেরা অধ্যক্ষ, মহাজনেরা পৃথিবীর গৌরবান্বিত, ইহার বিরুদ্ধে এই মন্ত্রণা কে করিয়াছে? বাহিনীগণের সদাপ্রভুই এই মন্ত্রণা করিয়াছেন; তিনি সমস্ত ভূষণের অহঙ্কার অশুচি করিবার, ও পৃথিবীর গৌরবান্বিত সকলকে অবমাননার পাত্র করিবার নিমিত্তই ইহা করিয়াছেন। হে তর্শীশ-কন্যা, তুমি নীল নদীর ন্যায় আপন দেশ প্লাবিত কর, তোমার কটিবন্ধন আর নাই। তিনি সমুদ্রের উপরে হস্ত বিস্তার করিয়াছেন, তিনি রাজ্য সকল কম্পমান করিয়াছেন; সদাপ্রভু কনানের দৃঢ় দুর্গ সকল উচ্ছিন্ন করিতে তাহার বিষয়ে আজ্ঞা করিয়াছেন। আর তিনি কহিলেন, বলাৎকৃতা কুমারী, সীদোন-কন্যা, তুমি আর উল্লাস করিবে না; উঠ, পার হইয়া কিত্তীমে যাও; সে স্থানেও তোমার বিশ্রাম হইবে না। ঐ দেখ, কল্‌দীয়দের দেশ; সেই জাতি আর নাই; অশূর বনজন্তুদের জন্য উহা নিরূপণ করিয়াছে; তাহারা উচ্চ দুর্গ করিয়া তাহার অট্টালিকা সকল ভূমিসাৎ করিয়াছে, নগর কাঁথড়ার ঢিবী করিয়াছে। হে তর্শীশের জাহাজ সকল, হাহাকার কর, কেননা তোমাদের দৃঢ় দুর্গের সর্ব্বনাশ হইল। সেই দিনে এইরূপ ঘটিবে, এক রাজার কালানুসারে সোর সত্তর বৎসর পর্য্যন্ত স্মৃতিবহির্ভূত থাকিবে; সত্তর বৎসরের শেষে সোরের দশা বেশ্যা বিষয়ক এই গীতের অনুযায়ী হইবে; ‘হে চিরবিস্মৃতে বেশ্যে, বীণা লইয়া নগরে ভ্রমণ কর; মধুর তালে বাজাও, বিস্তর গান কর, যেন আবার স্মৃতিপথে আসিতে পার।’ পরন্তু সত্তর বৎসরের শেষে সদাপ্রভু সোরের তত্ত্ব লইবেন; পরে সে পুনর্ব্বার আপন লাভজনক ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হইবে, এবং ভূতলে জগতের সমস্ত রাজ্যের সহিত বেশ্যাবৃত্তি করিবে। কিন্তু তাহার লভ্য ও আয় সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হইবে; তাহা কোষে রাখা কিম্বা সঞ্চয় করা যাইবে না; কেননা যাহারা সদাপ্রভুর সম্মুখে বাস করে, তাহাদের তৃপ্তিজনক ভক্ষ্যের ও সুন্দর পরিচ্ছদের নিমিত্ত তাহার লভ্য দত্ত হইবে। দেখ, সদাপ্রভু পৃথিবীকে শূন্য করিতেছেন, উৎসন্ন করিতেছেন, উল্টাইয়া ফেলিতেছেন, ও তাহার নিবাসীদিগকে ছড়াইয়া ফেলিতেছেন। এইরূপে প্রজা ও যাজক, দাস ও প্রভু, দাসী ও কর্ত্রী, ক্রেতা ও বিক্রেতা, অধমর্ণ ও উত্তমর্ণ, কুসীদগ্রাহী ও কুসীদদায়ক, সকলে সমান হইবে। পৃথিবী শূন্যীকৃত, শূন্যীকৃত হইবে, ও লুটিত, লুটিত হইবে, কেননা সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছেন। পৃথিবী শোকান্বিত ও নিস্তেজ হইল, জগৎ ম্লান ও নিস্তেজ হইল, পৃথিবীস্থ লোকদের উচ্চতমেরা ম্লান হইল। আর পৃথিবী আপন নিবাসীদের পদতলে অপবিত্র হইল, কারণ তাহারা ব্যবস্থা সকল লঙ্ঘন করিয়াছে, বিধি অন্যথা করিয়াছে, চিরস্থায়ী নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে। এই কারণ অভিশাপ পৃথিবীকে গ্রাস করিল, ও তন্নিবাসিগণ দোষী সাব্যস্ত হইল; এই কারণ পৃথিবী-নিবাসীরা দগ্ধ হইল, অল্প লোকই অবশিষ্ট আছে। নূতন দ্রাক্ষারস শোকার্ত্ত হইয়াছে, দ্রাক্ষালতা ম্লান হইয়াছে, প্রফুল্লচিত্ত সকলে দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিতেছে। ডম্ফের আমোদ নিবৃত্ত হইল, উল্লাসকারীদের কোলাহল শেষ হইল, বীণার আমোদ নিবৃত্ত হইল। লোকে আর গান সহকারে দ্রাক্ষারস পান করে না; সুরাপায়ীদের মুখে সুরা তিক্ত লাগে। উৎসন্নতার নগর ভগ্ন হইয়া পড়িল, সমস্ত গৃহ রুদ্ধ হইল, ভিতরে যাওয়া যায় না। দ্রাক্ষারসের বিষয়ে সড়কে চীৎকার হয়; সমস্ত আমোদ অন্ধকার হইল, দেশের বিলাস নির্ব্বাসিত হইল। নগরে ধ্বংস অবশিষ্ট রহিল, পুরদ্বার খণ্ড খণ্ড হইয়া ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। বস্তুতঃ পৃথিবীতে জাতিগণের মধ্যে এইরূপ ঘটনা হইবে; জিত বৃক্ষ ঝাড়িবার ন্যায়, ফল-সংগ্রহ সমাপ্তির পরে দ্রাক্ষাফল চয়নের ন্যায় ঘটিবে। ইহারা উচ্চরব করিবে, আনন্দগান করিবে, সদাপ্রভুর মহিমা প্রযুক্ত ইহারা সমুদ্র হইতে উচ্চধ্বনি শুনাইবে। অতএব তোমরা দীপ্তিদেশে সদাপ্রভুর গৌরব কর, সমুদ্রের উপকূল-সমূহে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম [কীর্ত্তন] কর। আমরা পৃথিবীর প্রান্ত হইতে সঙ্গীত শুনিয়াছি, ‘ধার্ম্মিকেরই নিমিত্ত শোভা’। কিন্তু আমি কহিলাম, আমি ক্ষীণ হইতেছি, আমি ক্ষীণ হইতেছি, আমাকে ধিক্‌। বিশ্বাসঘাতকেরা বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে, হাঁ, বিশ্বাসঘাতকেরা অতিশয় বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। হে পৃথিবীনিবাসী, ত্রাস, খাত ও ফাঁদ তোমার উপরে আসিয়াছে। যে কেহ ত্রাসের জনশ্রুতিতে পলাইয়া বাঁচিবে, সে খাতে পড়িবে, যে খাত হইতে উঠিয়া আসিবে, সে ফাঁদে ধরা পড়িবে; কারণ ঊর্দ্ধস্থ বাতায়ন সকল মুক্ত হইল, ও পৃথিবীর মূল সকল কম্পমান হইল। পৃথিবী বিদীর্ণ হইল, বিদীর্ণ হইল; পৃথিবী ফাটিয়া গেল, ফাটিয়া গেল; পৃথিবী বিচলিত হইল, বিচলিত হইল। পৃথিবী মত্ত লোকের ন্যায় টলটলায়মান হইবে, টোঙ্গের ন্যায় দুলিবে; আপন অধর্ম্মভারে ভারগ্রস্ত হইবে, পতিত হইবে, আর উঠিতে পারিবে না। সেই দিন সদাপ্রভু ঊর্দ্ধলোকে ঊর্দ্ধলোকীয় সৈন্যসামন্তকে ও পৃথিবীতে পার্থিব রাজগণকে প্রতিফল দিবেন। তাহাতে তাহারা কূপে একত্রীকৃত বন্দিগণের ন্যায় একত্রীকৃত হইবে, ও কারাগারে বদ্ধ হইবে, পরে অনেক দিত গত হইলে তাহাদের তত্ত্ব লওয়া যাইবে। আর চন্দ্র মলিন ও সূর্য্য লজ্জিত হইবে, কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভু সিয়োন পর্ব্বতে ও যিরূশালেমে রাজত্ব করিবেন; এবং তাঁহার প্রাচীনবর্গের সম্মুখে প্রতাপ থাকিবে। হে সদাপ্রভু, তুমি আমার ঈশ্বর; আমি তোমার প্রতিষ্ঠা করিব, তোমার নামের প্রশংসা করিব; কেননা তুমি আশ্চর্য্য কার্য্য করিয়াছ; পুরাকালীন মন্ত্রণা সকল সাধন করিয়াছ, বিশ্বস্ততায় ও সত্যে। কারণ তুমি নগরকে ঢিবীতে, দৃঢ় নগরকে কাঁথড়ায় পরিণত করিয়াছ; বিদেশীদের রাজপুরী আর নাই; তাহা কখনও নির্ম্মিত হইবে না। এই জন্য বলবান লোকেরা তোমার গৌরব করিবে, দুর্দ্দান্ত জাতিগণের নগর তোমাকে ভয় করিবে। কেননা তুমি দরিদ্রের দৃঢ় দুর্গ, সঙ্কটে দীনহীনের দৃঢ় দুর্গ, ঝটিকানিবারক আশ্রয়, রৌদ্রনিবারক ছায়া হইয়াছ, যখন দুর্দ্দান্তদের নিঃশ্বাস ভিত্তিতে ঝটিকার ন্যায় হয়। যেমন শুষ্ক দেশে রৌদ্র, তেমনি তুমি বিদেশীয়দের কোলাহল থামাইবে; যেমন মেঘের ছায়াতে রৌদ্র, তেমনি দুর্দ্দান্তদের হর্ষগান ক্ষান্ত হইবে। আর বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই পর্ব্বতে সর্ব্বজাতির নিমিত্ত উত্তম উত্তম খাদ্য দ্রব্যের এক ভোজ, পুরাতন দ্রাক্ষারসের, মেদোযুক্ত উত্তম খাদ্য দ্রব্যের ও নির্ম্মলীকৃত পুরাতন দ্রাক্ষারসের এক ভোজ প্রস্তুত করিবেন। আর সর্ব্বদেশীয় লোকেরা যে ঘোমটায় আচ্ছাদিত আছে, ও সর্ব্বজাতীয় লোকদের সম্মুখে যে আবরক বস্ত্র টাঙ্গান আছে, সদাপ্রভু এই পর্ব্বতে তাহা বিনষ্ট করিবেন। তিনি মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন, ও প্রভু সদাপ্রভু সকলের মুখ হইতে চক্ষুর জল মুছিয়া দিবেন; এবং সমস্ত পৃথিবী হইতে আপন প্রজাদের দুর্নাম দূর করিবেন; কারণ সদাপ্রভুই এই কথা কহিয়াছেন। সেই দিন লোকে বলিবে, এই দেখ, ইনিই আমাদের ঈশ্বর; আমরা ইহাঁরই অপেক্ষায় ছিলাম, ইনি আমাদিগকে ত্রাণ করিবেন; ইনিই সদাপ্রভু; আমরা ইহাঁরই অপেক্ষায় ছিলাম, আমরা ইহাঁর কৃত পরিত্রাণে উল্লাসিত হইব, আনন্দ করিব। কেননা সদাপ্রভুর হস্ত এই পর্ব্বতে অধিষ্ঠিত থাকিবে; আর যেমন পোয়াল সারকুড়ের জলে পদতলে দলিত হয়, তেমনি মোয়াব স্বস্থানে দলিত হইবে। আর সন্তরণকারী যেমন সন্তরণের জন্য হস্ত বিস্তার করে, তেমনি সে তাহার মধ্যে হস্ত বিস্তার করিবে; কিন্তু তিনি তাহার হস্তকৌশলের সহিত তাহার গর্ব্ব খর্ব্ব করিবেন। তিনি তোমার উচ্চ প্রাচীরযুক্ত দৃঢ় দুর্গ নিপাত করিয়াছেন, নত করিয়াছেন, ভূমিসাৎ করিয়াছেন, ধূলিশায়ী পর্য্যন্ত করিয়াছেন। সেই দিন যিহূদা দেশে এই গীত গান করা হইবে; আমাদের এক দৃঢ় নগর আছে; তিনি পরিত্রাণকে প্রাচীর ও পরিখাস্বরূপ করিবেন। তোমরা পুরদ্বার সকল মুক্ত কর, বিশ্বস্ততা-পালনকারী ধার্ম্মিক জাতি প্রবেশ করিবে। যাহার মন তোমাতে সুস্থির, তুমি তাহাকে শান্তিতে, শান্তিতেই রাখিবে, কেননা তোমাতেই তাহার নির্ভর। তোমরা চিরকাল সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখ; কেননা সদাপ্রভু যিহোবাতেই যুগসমূহের শৈল। কারণ তিনি ঊর্দ্ধলোক-নিবাসীদিগকে, উন্নত নগরকে, অবনত করিয়াছেন; তিনি তাহা অবনত করেন অবনত করিয়া ভূমিসাৎ করেন, ধূলিশায়ী পর্য্যন্ত করেন। লোকদের চরণ—দুঃখীদের পদ ও দরিদ্রদের পাদবিক্ষেপ—তাহা দলিত করিবে। ধার্ম্মিকের পথ সরলতায়, তুমি ধার্ম্মিকের মার্গ সমান করিয়া সরল করিতেছ। হাঁ, আমরা তোমার শাসন-পথেই, হে সদাপ্রভু, তোমার অপেক্ষায় রহিয়াছি; আমাদের প্রাণ তোমার নামের ও তোমার স্মরণচিহ্নের আকাঙ্ক্ষা করে। রাত্রিকালে আমি প্রাণের সহিত তোমার আকাঙ্ক্ষা করিয়াছি; হাঁ, সযত্নে আমার অন্তরস্থ আত্মা দ্বারা তোমার অন্বেষণ করিব, কেননা পৃথিবীতে তোমার শাসনকলাপ প্রচলিত হইলে, জনন্নিবাসীরা ধার্ম্মিকতা শিক্ষা করিবে। দুষ্ট লোক কৃপা পাইলেও ধার্ম্মিকতা শিখে না; সরলতার দেশে সে অন্যায় করে, সদাপ্রভুর মহিমা দেখে না। হে সদাপ্রভু, তোমার হস্ত উত্তোলিত হইয়াছে, তবু তাহারা দেখে না; কিন্তু তাহারা প্রজাগণের পক্ষে তোমার উদ্যোগ দেখিবে ও লজ্জা পাইবে, হাঁ, অগ্নি তোমার বিপক্ষদিগকে দদ্ধ করিবে। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের নিমিত্ত শান্তি নিরূপণ করিবে, কেননা আমাদের সমস্ত কার্য্যই তুমি আমাদের নিমিত্ত সাধন করিয়া আসিতেছ। হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি ব্যতীত অন্য প্রভুরা আমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিয়াছিল; কিন্তু কেবল তোমারই সাহায্যে আমরা তোমার নামের কীর্ত্তন করিব। মৃতেরা আর জীবিত হইবে না, প্রেতগণ আর উঠিবে না; এই জন্য তুমি প্রতিফল দিয়া উহাদিগকে সংহার করিয়াছ, উহাদের নাম পর্য্যন্ত লুপ্ত করিয়াছ। তুমি এই জাতির বৃদ্ধি করিয়াছ, হে সদাপ্রভু, তুমি এই জাতির বৃদ্ধি করিয়াছ; তুমি গৌরবান্বিত হইয়াছ, তুমি দেশের সকল সীমা বিস্তার করিয়াছ। হে সদাপ্রভু, সঙ্কটের সময়ে লোকেরা তোমার অপেক্ষায় ছিল, তোমা হইতে শাস্তি পাইবার সময়ে মৃদু স্বরে বিনয় করিত। গর্ভবতী স্ত্রী আসন্নপ্রসবকালে ব্যথা খাইতে খাইতে যেমন ক্রন্দন করে, হে সদাপ্রভু, আমরা তোমার সাক্ষাতে তাহার ন্যায় হইয়াছি। আমরা গর্ভিণী হইয়াছি, আমরা ব্যথা খাইয়াছি, যেন বায়ু প্রসব করিয়াছি; আমাদের দ্বারা দেশে পরিত্রাণ সিদ্ধ হয় নাই, জগন্নিবাসীরা ভূমিষ্ঠ হয় নাই। তোমার মৃতেরা জীবিত হইবে, আমার শবসমূহ উঠিবে; হে ধূলি-নিবাসীরা, তোমরা জাগ্রত হও, আনন্দ গান কর; কেননা তোমার শিশির দীপ্তির শিশির তুল্য, এবং ভূমি প্রেতদিগকে ভূমিষ্ঠ করিবে। হে আমার জাতি, চল, তোমার অন্তরাগারে প্রবেশ কর, তোমার দ্বার সকল রুদ্ধ কর; অল্পক্ষণ মাত্র লুক্কায়িত থাক, যে পর্য্যন্ত ক্রোধ অতীত না হয়। কেননা দেখ, সদাপ্রভু আপন স্থান হইতে নির্গমন করিতেছেন, পৃথিবী-নিবাসীদের অপরাধের প্রতিফল দিবার নিমিত্ত; পৃথিবী আপনার [উপরে পাতিত] রক্ত প্রকাশ করিবে, আপনার নিহতদিগকে আর আচ্ছাদিত রাখিবে না। সেই দিন সদাপ্রভু আপনার নিদারুণ, বৃহৎ ও সতেজ খড়্‌গ দ্বারা পলায়মান নাগ লিবিয়াথনকে, হাঁ, বক্র নাগ লিবিয়াথনকে প্রতিফল দিবেন, এবং সমুদ্রস্থ প্রকাণ্ড জলচর নষ্ট করিবেন। সেই দিন—এক দ্রাক্ষাক্ষেত্র, তোমরা তাহার বিষয়ে গান করিও। আমি সদাপ্রভু তাহার রক্ষক, আমি নিমিষে নিমিষে তাহাতে জল সেচন করিব; কিছুতে যেন তাহার হানি না করে, তজ্জন্য দিবারাত্র তাহা রক্ষা করিব। আমার ক্রোধ নাই; আঃ! কন্টক ও শ্যাকুলসমূহ যদি যুদ্ধে আমার বিপক্ষ হইত! আমি সে সকল আক্রমণ করিয়া একেবারে পোড়াইয়া দিতাম। সে বরং আমার পরাক্রমের শরণ লউক, আমার সহিত মিলন করুক, আমার সহিত মিলনই করুক। ভাবী কালে যাকোব মূল বাঁধিবে, ইস্রায়েল মুকুলিত ও উৎফুল্ল হইবে, এবং তাহারা ভূতলকে ফলে পরিপূর্ণ করিবে। তিনি ইস্রায়েলের প্রহারককে যেমন প্রহার করিয়াছেন, তদ্রূপ কি তাহাকেও প্রহার করিলেন? কিম্বা তৎকর্ত্তৃক নিহত লোকদের হত্যার ন্যায় সে কি হত হইল? তুমি স্থানান্তর করণ কালে পরিমাণে পরিমাণে তাহার সহিত বিবাদ করিলে; তিনি পূর্ব্বীয় বায়ুর দিনে নিজ প্রবল বায়ু দ্বারা তাহাকে ঝাড়িয়া দূর করিলেন। এই জন্য ইহা দ্বারা যাকোবের অপরাধ মোচন হইবে, এবং ইহা তাহার পাপ দূর করিবার সমস্ত ফল; সে চূণের ভগ্ন প্রস্তরগুলির ন্যায় যজ্ঞবেদির সমস্ত প্রস্তর চূর্ণ করিবে, আশেরা-মূর্ত্তি ও সূর্য্য-প্রতিমা সকল আর উঠিবে না। কারণ সুদৃঢ় নগর নির্জ্জন, বাসভূমি নরবর্জ্জিত ও পরিত্যক্ত হইয়াছে—প্রান্তরের ন্যায়; সেই স্থানে গোবৎস চরিবে ও শয়ন করিবে, এবং বৃক্ষের পত্র সকল আহার করিবে। তথাকার ডালপালা শুষ্ক হইলে ভাঙ্গা যাইবে, স্ত্রীলোকেরা আসিয়া তাহাতে আগুন দিবে। কারণ সেই জাতি নির্ব্বোধ, সেই জন্য তাহার নির্ম্মাতা তাহার প্রতি করুণা করিবেন না, তাহার গঠনকর্ত্তা তাহার প্রতি কৃপা করিবেন না। সেই দিন সদাপ্রভু [ফরাৎ] নদীর প্রণালী অবধি মিসরের স্রোত পর্য্যন্ত ফল পাড়িবেন; এইরূপে, হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমাদিগকে একে একে কুড়ান যাইবে। আর সেই দিন এক বৃহৎ তূরী বাজিবে; তাহাতে যাহারা অশূর দেশে নষ্টকল্প ও যাহারা মিসর দেশে তাড়িত রহিয়াছে, তাহারা আসিবে; এবং যিরূশালেমে পবিত্র পর্ব্বতে সদাপ্রভুর কাছে প্রণিপাত করিবে। হায়! ইফ্রয়িমের মাতালদের দর্পমুকুট; হায়! তাহার তেজোময় শোভার ম্লানপ্রায় পুষ্প, যাহা দ্রাক্ষারসে পরাভূতদের ফলশালী উপত্যকার মস্তকে রহিয়াছে। দেখ, প্রভুর একজন বলবান ও বীর্য্যশালী লোক আছে; সে শিলাযুক্ত ধারাসম্পাতের, প্রলয়কারী ঝটিকার ন্যায়, অতি বেগে ধাবমান প্রবল ধারাসম্পাতের ন্যায়, বলপূর্ব্বক [সকলই] ভূমিতে নিক্ষেপ করিবে। ইফ্রয়িমের মাতালদের দর্প-মুকুট পদতলে দলিত হইবে; এবং ফলশালী উপত্যকার মস্তকে স্থিত তাহাদের তেজোময় শোভার ম্লানপ্রায় যে পুষ্প, তাহা ফলসংগ্রহ-কালের পূর্ব্ববর্ত্তী এমন আশুপক্ব ডুমুরফলের সদৃশ হইবে, যাহা লোকে দেখিবামাত্র লক্ষ্য করে, করতলে করিবামাত্র গ্রাস করে। সেই দিন বাহিনীগণের সদাপ্রভুই আপন প্রজাদের অবশিষ্টাংশের জন্য শোভার মুকুট ও তেজের কিরীট হইবেন; আর বিচারার্থে উপবিষ্ট ব্যক্তির বিচারের আত্মা, ও যাহারা নগর-দ্বারে যুদ্ধ ফিরায়, তাহাদের বিক্রমস্বরূপ হইবেন। কিন্তু ইহারাও দ্রাক্ষারসে ভ্রান্ত ও সুরাপানে টলটলায়মান হইয়াছে; যাজক ও ভাববাদী সুরাপানে ভ্রান্ত হইয়াছে; তাহারা দ্রাক্ষারসে কবলিত ও সুরাপানে টলটলায়মান হয়, তাহারা দর্শনে ভ্রান্ত ও বিচারে বিচলিত হয়। বস্তুতঃ সকল মেজ বমিতে ও মলে পরিপূর্ণ হইয়াছে, স্থান মাত্র নাই। ‘সে কাহাকে জ্ঞান শিক্ষা দিবে? কাহাকে বার্ত্তা বুঝাইয়া দিবে? কি তাহাদিগকে, যাহারা দুধ ছাড়িয়াছে ও স্তন্যপানে নিবৃত্ত হইয়াছে? কেননা বিধির উপরে বিধি, বিধির উপরে বিধি; পাঁতির উপরে পাঁতি, পাঁতির উপরে পাঁতি; এখানে একটুকু, সেখানে একটুকু।’ শুন, তিনি অস্পষ্টবাক্‌ ওষ্ঠ ও পরভাষা দ্বারা এই লোকদের সহিত কথাবার্ত্তা কহিবেন, যাহাদিগকে তিনি বলিলেন, ‘এই বিশ্রামস্থানে, তোমরা ক্লান্তকে বিশ্রাম দেও, আর এই প্রাণ জুড়াইবার স্থান;’ তথাপি তাহারা শুনিতে সম্মত হইল না। সেই জন্য তাহাদের প্রতি সদাপ্রভুর বাক্য ‘বিধির উপরে বিধি, বিধির উপরে বিধি; পাঁতির উপরে পাঁতি, পাঁতির উপরে পাঁতি; এখানে একটুকু, সেখানে একটুকু’ হইবে; যেন তাহারা গিয়া পশ্চাতে পড়িয়া ভগ্ন হয়, ও ফাঁদে বদ্ধ হইয়া ধরা পড়ে। অতএব, হে নিন্দাপ্রিয় লোকেরা, যিরূশালেমস্থ এই জাতির শাসনকর্ত্তৃগণ, সদাপ্রভুর বাক্য শুন। তোমরা বলিয়াছ, ‘আমরা মৃত্যুর সহিত নিয়ম করিয়াছি, পাতালের সহিত সন্ধি স্থির করিয়াছি; জলপ্রলয়রূপ কশা যখন উপনীত হইবে, তখন আমাদের কাছে আসিবে না, কেননা আমরা অলীকতাকে আপনাদের আশ্রয় করিয়াছি, ও মিথ্যা ছলের আড়ালে লুকাইয়াছি।’ এই কারণ প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি সিয়োনে ভিত্তিমূলের নিমিত্ত এক প্রস্তর স্থাপন করিলাম; তাহা পরীক্ষাসিদ্ধ প্রস্তর বহুমূল্য কোণের প্রস্তর, অতি দৃঢ়রূপে বসান; যে ব্যক্তি বিশ্বাস করিবে, সে চঞ্চল হইবে না। আর আমি ন্যায়বিচারকে মানরজ্জু, ও ধার্ম্মিকতাকে ওলোন সূত্র করিব; শিলাবৃষ্টি ঐ অলীকতারূপ আশ্রয় ফেলিয়া দিবে, এবং বন্যা ঐ লুকাইবার স্থান ভাসাইয়া লইয়া যাইবে। আর মৃত্যুর সহিত কৃত তোমাদের নিয়ম বিলোপ করা যাইবে, ও পাতালের সহিত তোমাদের সন্ধি স্থির থাকিবে না; জলপ্রলয়রূপ কশা যখন উপনীত হইবে, তখন তোমরা তদ্দ্বারা দলিত হইবে। তাহা যতবার উপনীত হইবে, ততবার তোমাদিগকে ধরিবে, বস্তুতঃ সে প্রভাতে প্রভাতে, দিনে ও রাত্রিতে, উপনীত হইবে; আর এই বার্ত্তা বুঝিলে কেবল ত্রাস জন্মিবে। বাস্তবিক গাত্র বিস্তার করিবার পক্ষে বিছানা খাট, ও সর্ব্বাঙ্গে জড়াইবার পক্ষে লেপ ছোট। বস্তুতঃ সদাপ্রভু উঠিবেন, যেমন পরাসীম পর্ব্বতে উঠিয়াছিলেন; তিনি ক্রোধ করিবেন, যেমন গিবিয়োনের তলভূমিতে করিয়াছিলেন; এইরূপে তিনি আপন কার্য্য, আপন অসম্ভব কার্য্য সিদ্ধ করিবেন; আপন ব্যাপার, আপন বিজাতীয় ব্যাপার সম্পন্ন করিবেন। অতএব তোমরা নিন্দায় রত হইও না, পাছে তোমাদের বন্ধন দৃঢ়তর হয়; কেননা প্রভুর মুখে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুরই মুখে আমি সমস্ত পৃথিবীর জন্য উচ্ছেদের, নিরূপিত উচ্ছেদের কথা শুনিয়াছি। তোমরা কাণ দেও, আমার রব শুন; কর্ণপাত কর, আমার বাক্য শুন। বীজ বপন করিবার জন্য কৃষক কি সমস্ত দিন হাল বহে, ও মাটি খুঁড়িয়া ভূমির ঢেলা ভাঙ্গে? ভূমিতল সমান করিলে পর সে কি মহুরী ছাড়ায় না, ও জীরা বপন করে না? এবং শ্রেণী শ্রেণী করিয়া গোম নিরূপিত স্থানে যব ও ক্ষেত্রের সীমাতে জনার কি বুনে না? কারণ তাহার ঈশ্বর তাহাকে যথার্থ শিক্ষা দেন; তিনি তাহাকে জ্ঞান দেন। বস্তুতঃ মহুরী হাতগাড়ী দ্বারা মর্দ্দন করা যায় না, এবং জীরার উপরে গাড়ীর চক্র ঘুরে না, কিন্তু মহুরী দণ্ড দিয়া ও জীরা যষ্টি দিয়া মাড়া যায়। রুটীর শস্য চূর্ণ করিতে হয়; কারণ সে কখনও তাহা মর্দ্দন করিবে না; আর তাহার গাড়ীর চক্র ও তাহার অশ্বগণ তাহা ছড়ায় বটে, কিন্তু সে তাহা চূর্ণ করে না। ইহাও বাহিনীগণের সদাপ্রভু হইতে হয়; তিনি মন্ত্রণাতে আশ্চর্য্য ও বুদ্ধিকৌশলে মহান্‌। অহো, অরীয়েল, অরীয়েল, দায়ূদের শিবিরনগর। তোমরা এক বৎসরে অন্য বৎসর যোগ কর, উৎসবচক্র ঘুরিয়া আইসুক। কিন্তু আমি অরীয়েলের প্রতি দুঃখ ঘটাইব, তাহাতে শোক ও বিলাপ হইবে; আর সে আমার পক্ষে অরীয়েলের ন্যায় হইবে। আমি তোমার চারিদিকে শিবির স্থাপন করিব, ও গড় দ্বারা তোমাকে বেষ্টন করিব, এবং তোমার বিরুদ্ধে অবরোধ-জাঙ্গাল নির্ম্মাণ করিব; তাহাতে তুমি অবনত হইবে, মৃত্তিকা হইতে কথা কহিবে, ও ধূলা হইতে মৃদুস্বরে তোমার কথা বলিবে; ভূতুড়িয়ার ন্যায় তোমার রব মৃত্তিকা হইতে নির্গত হইবে, ও ধূলা হইতে তোমার কথার ফুস্‌ফুস্‌ শব্দ উঠিবে। কিন্তু তোমার শত্রুদের লোকারণ্য সূক্ষ্ম ধূলার ন্যায় হইবে, এবং দুর্দ্দান্তদের লোকারণ্য উড়ন্ত ভুসীর ন্যায় হইবে; ইহা হঠাৎ, মুহূর্ত্তমধ্যে ঘটিবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু মেঘগর্জ্জন, ভূমিকম্প, মহাশব্দ, ঘূর্ণবায়ু, ঝঞ্ঝা ও সর্ব্বগ্রাসক অগ্নিশিখা সহকারে তাহার তত্ত্ব লইবেন। তাহাতে সর্ব্বজাতির যে লোকারণ্য অরীয়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, যে সকল লোক তাহার ও তদীয় দুর্গের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, ও তাহাকে সঙ্কটাপন্ন করে, তাহারা স্বপ্নবৎ ও রাত্রিকালীন দর্শনের ন্যায় হইবে; এইরূপ হইবে, যেমন ক্ষুধিত ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে, যেন সে ভোজন করিতেছে; কিন্তু সে জাগ্রৎ হয়, আর তাহার প্রাণ শূন্য; অথবা যেমন পিপাসিত ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে, যেন সে পান করিতেছে; কিন্তু সে জাগ্রৎ হয়, আর দেখ, সে দুর্ব্বল, তাহার প্রাণে পিপাসা রহিয়াছে; সিয়োন পর্ব্বতের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী সর্ব্বজাতির লোকারণ্য তেমনি হইবে। তোমরা চমৎকৃত হও ও আশ্চর্য্য জ্ঞান কর, চক্ষু মুদ ও অন্ধ হও; উহারা মত্ত, কিন্তু দ্রাক্ষারসে নয়; উহারা টলটলায়মান, কিন্তু সুরাপানে নয়। কারণ সদাপ্রভু তোমাদের উপরে ঘোর নিদ্রাজনক আত্মা ঢালিয়া দিয়াছেন, ও তোমাদের ভাববাদিবর্গরূপ চক্ষু মুদ্রিত করিয়াছেন, এবং তোমাদের দর্শকবর্গরূপ মস্তক ঢাকিয়া রাখিয়াছেন। সমস্ত দর্শন তোমাদের পক্ষে মুদ্রাঙ্কবদ্ধ পুস্তকের কথাস্বরূপ হইয়াছে; যে লেখা পড়া জানে, তাহাকে কেহ যদি সেই পুস্তক দিয়া যদি বলে, অনুগ্রহ করিয়া ইহা পাঠ কর, তবে সে উত্তর করিবে, আমি পারি না, কারণ ইহা মুদ্রাঙ্কবদ্ধ। আবার যে লেখা পড়া জানে না, তাহাকে যদি সে তাহা দিয়া বলে, অনুগ্রহ করিয়া ইহা পাঠ কর, তবে সে উত্তর করিবে আমি লেখা পড়া জানি না। প্রভু আরও কহিলেন, এই লোকেরা আমার নিকটবর্ত্তী হয়, এবং আপন আপন মুখে ও ওষ্ঠাধরে আমার সম্মান করে, কিন্তু আপন আপন অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে রাখিয়াছে, এবং আমা হইতে তাহাদের যে ভয়, তাহাও মানুষের আদেশ, মুখস্থ করা মাত্র। অতএব দেখ, আমি এই জাতির সহিত পুনর্ব্বার আশ্চর্য্য ব্যবহার, এমন কি, আশ্চর্য্য ও চমৎকার ব্যবহার করিব; এবং তাহাদের জ্ঞানবানদের জ্ঞান বিনষ্ট, ও বিবেচক লোকেদর বিবেচনা অন্তর্হিত হইবে। ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা গভীর মন্ত্রণা করতঃ সদাপ্রভু হইতে তাহা গুপ্ত রাখিতে চেষ্টা করে, অন্ধকারে কর্ম্ম করে ও বলে, আমাদিগকে কে দেখিতে পায়? আমাদিগকে কে চিনিতে পারে? তোমাদের কেমন বিপরীত বুদ্ধি! কুম্ভকার কি মৃত্তিকার সমান বলিয়া গণ্য? নির্ম্মিত বস্তু কি নির্ম্মাতার বিষয়ে বলিবে, ঐ ব্যক্তি আমাকে নির্ম্মাণ করে নাই? গঠিত বস্তু কি আপন গঠনকারীর বিষয়ে বলিবে, উহার বুদ্ধি নাই? অতি অল্পকাল গত হইলে লিবানোন কি উদ্যানে পরিণত হইবে না? আর উদ্যান কি অরণ্য বলিয়া গণ্য হইবে না? সেই দিন বধিরগণ পুস্তকের বাক্য শুনিবে, এবং তিমির ও অন্ধকারের মধ্য হইতে অন্ধদের চক্ষু দেখিতে পাইবে। নম্রগণও সদাপ্রভুতে উত্তরোত্তর আনন্দিত হইবে, এবং মনুষ্যদের মধ্যবর্ত্তী দরিদ্রগণ ইস্রায়েলের পবিত্রতমে উল্লাস করিবে। কেননা দুর্দ্দান্ত লোক আর নাই, নিন্দক লুপ্ত হইল, যে সকল লোক অধর্ম্মে উৎসুক, তাহারা উচ্ছিন্ন হইল। তাহারা ত বাক্‌কৌশলে মানুষকে দোষী করে, নগর-দ্বারে দোষবক্তার জন্য ফাঁদ পাতে, অকারণে ধার্ম্মিকের প্রতি অন্যায় করে। অতএব অব্রাহামের মুক্তিদাতা সদাপ্রভু যাকোবকুলের বিষয়ে এই কথা কহেন, যাকোব এখন লজ্জিত হইবে না, তাহার মুখ এখন মলিন থাকিবে না। কেননা তাহার সন্তানগণ যখন তাহার মধ্যে আমার হস্তকৃত কর্ম্ম দেখিবে, তখন আমার নাম পবিত্র বলিয়া মানিবে, যাকোবের পবিত্রতমকে পবিত্র বলিয়া মানিবে, ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে সম্ভ্রম করিবে। আর ভ্রান্ত-আত্মা লোকেরা বিবেচনার কথা বুঝিবে, বচসা কারীরা পাণ্ডিত্য শিখিবে। সদাপ্রভু কহেন, ধিক্‌ সেই বিদ্রোহী সন্তানগণকে, যাহারা মন্ত্রণা সাধন করে, কিন্তু আমা হইতে নয়, এবং সন্ধি করে, কিন্তু আমার আত্মার আবেশে নয়, উদ্দেশ্য এই, যেন পাপের উপরে পাপ করিতে পারে। তাহারা মিসরে যাইবার জন্য যাত্রা করে, কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করে নাই, যেন ফরৌণের পরাক্রমে পরাক্রমী হইতে ও মিসরের ছায়াতে আশ্রয় লইতে পারে। এই জন্য ফরৌণের পরাক্রম তোমাদের লজ্জাস্বরূপ হইবে, এবং মিসরের ছায়াতে আশ্রয় লওয়া তোমাদের অপমানস্বরূপ হইবে। কারণ তাহার অধ্যক্ষগণ সোয়নে উপস্থিত, তাহার দূতগণ হানেষে আসিয়াছে। সকলে উপকারে অসমর্থ জাতির বিষয়ে লজ্জিত হইবে; সেই জাতি সাহায্যকারী কি উপকারজনক নয়, বরং লজ্জা ও দুর্নামস্বরূপ। দক্ষিণের পশুগণ বিষয়ক ভারবাণী। সঙ্কটের ও সঙ্কোচের যে দেশ সিংহীর ও কেশরীর, কালসর্পের ও জ্বালাদায়ী উড়ুক্কু সর্পের জন্মভূমি, সেই দেশ দিয়া তাহারা গর্দ্দভের স্কন্ধে করিয়া আপনাদের ধন, ও উষ্ট্রের ঝুঁটিতে করিয়া আপনাদের সম্পত্তি লইয়া এক জাতির কাছে যাইতেছে, যাহারা উপকার করিতে পারিবে না। কারণ মিসরের সাহায্য অসার ও মিথ্যা; এই নিমিত্ত আমি সেই জাতির এই নাম রাখিলাম, ‘রহব [গর্ব্বী], যে বসিয়া থাকে।’ তুমি এখন যাও, উহাদের সাক্ষাতে এই কথা ফলকের উপরে লিখ, ও পুস্তকে লিপিবদ্ধ কর; যেন তাহা উত্তরকালে সাক্ষ্যরূপে চিরকাল থাকে। কেননা উহারা বিদ্রোহী জাতি ও মিথ্যাবাদী সন্তান; উহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা শুনিতে অসম্মত সন্তান। তাহারা দর্শকদিগকে বলে, তোমরা দর্শন করিও না; লক্ষণবেত্তাদিগকে বলে, তোমরা আমাদের জন্য যথার্থ লক্ষণ বলিও না; আমাদিগকে স্নিগ্ধ বাক্য বল, মায়াযুক্ত লক্ষণ বল; পথ হইতে ফির, রাস্তা ছাড়িয়া যাও, ইস্রায়েলের পবিত্রতমকে আমাদের দৃষ্টিপথ হইতে দূর কর। অতএব ইস্রায়েলের পবিত্রতম এই কথা কহেন, তোমরা এই বাক্য হেয়জ্ঞান করিয়াছ, এবং উপদ্রবের ও কুটিলতার উপরে নির্ভর দিয়াছ, ও তাহা অবলম্বন করিয়াছ; এই হেতু সেই অপরাধ তোমাদের জন্য উচ্চ ভিত্তির পতনশীল ফুলা ফাটার ন্যায় হইবে, যাহার ভঙ্গ হঠাৎ মুহূর্ত্তমধ্যে উপস্থিত হয়। আর যেমন কুম্ভকারের পাত্র ভাঙ্গা যায়, তেমনি তিনি তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিবেন, চূর্ণ করিবেন, মমতা করিবেন না; তাহাতে চুলা হইতে অগ্নি তুলিতে কিম্বা কূপ হইতে জল তুলিতে একখানা খোলাও পাওয়া যাইবে না। বস্তুতঃ, প্রভু সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের পবিত্রতম, এই কথা বলিলেন, ফিরিয়া আসিয়া শান্ত হইলে তোমরা পরিত্রাণ পাইবে, সুস্থির থাকিয়া বিশ্বাস করিলে তোমাদের পরাক্রম হইবে; কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না। তোমরা কহিলে, তাহা নয়, আমরা ঘোড়ায় চড়িয়া বেগে ধাবমান হইব, এই জন্য তোমরা বেগে ধাবমান হইবে; আরও [কহিলে], আমরা বেগবান বাহনে চড়িয়া যাইব, এই জন্য তোমাদের তাড়নাকারীরা বেগে চলিয়া যাইবে। একের তর্জ্জনে এক সহস্র লোক পলায়ন করিবে, পাঁচের তর্জ্জনে তোমরা পলায়ন করিবে; তাহাতে তোমাদের অবশিষ্টাংশ পর্ব্বতের শৃঙ্গস্থিত মাস্তুলের ন্যায়, কিম্বা উপপর্ব্বতের উপরিস্থ পতাকাদণ্ডের ন্যায় হইবে। আর সেই জন্য সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিবার আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষা করিবেন, আর সেই জন্য তোমাদের প্রতি করুণা করিবার আকাঙ্ক্ষায় ঊর্দ্ধে থাকিবেন; কেননা সদাপ্রভু ন্যায় বিচারের ঈশ্বর; ধন্য তাহারা সকলে, যাহারা তাঁহার অপেক্ষা করে। বস্তুতঃ যিরূশালেমে, সিয়োনে প্রজাগণ বাস করিবে; তুমি আর রোদন করিবে না; তোমার ক্রন্দনের রবে তিনি অবশ্য তোমাকে কৃপা করিবেন; শুনিবামাত্রই তোমাকে উত্তর দিবেন। আর প্রভু যদ্যপি তোমাদিগকে সঙ্কটের খাদ্য ও কষ্টের জল দেন, তথাপি তোমার শিক্ষকগণ আর গুপ্ত থাকিবে না, বরং তোমার চক্ষু তোমার শিক্ষকগণকে দেখিতে পাইবে। আর দক্ষিণে কি বামে ফিরিবার সময়ে তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল। আর তোমরা আপনাদের ক্ষোদিত রৌপ্যপ্রতিমার সাজ ও ছাঁচে ঢালা স্বর্ণ-প্রতিমার আভরণ অশুচি করিবে, তুমি তাহা অশুচি বস্তুত ন্যায় ফেলিয়া দিবে, বলিবে, দূর, দূর। আর তিনি তোমার বীজের জন্য বৃষ্টি দিবেন, তাহাতে তুমি ভূমিতে বপন করিতে পারিবে; এবং ভূমিজাত ভক্ষ্য দিবেন, তাহা উত্তম ও পুষ্টিকর হইবে; সেই দিন তোমার পশুপাল প্রশস্ত মাঠে চরিবে। চাষকারী গোরু ও গর্দ্দভ সকল কুলাতে ও চালুনীতে ঝাড়া ও সুস্বাদু দ্রব্যে মিশ্রিত কলায় খাইবে। পরন্তু যে মহাহত্যার দিনে দুর্গ সকল পতিত হইবে, সেই দিন প্রত্যেক তুঙ্গ পর্ব্বতে ও প্রত্যেক উচ্চ গিরিতে জলের প্রবাহ ও স্রোত হইবে। আর যে দিন সদাপ্রভু আপন প্রজাদের ভগ্ন অবয়ব জোড়া দিবেন, ও প্রহারজাত ক্ষত সুস্থ করিবেন, সেই দিন চন্দ্রের দীপ্তি সূর্য্যের দীপ্তির তুল্য হইবে, এবং সূর্য্যের দীপ্তি সপ্তগুণ অধিক, অর্থাৎ সপ্ত দিবসের দীপ্তির সমান হইবে। দেখ, সদাপ্রভুর নাম দূর হইতে আসিতেছে, তাঁহার ক্রোধাগ্নি জ্বলিতেছে, ও ঘন ধূমরাশি উঠিতেছে; তাঁহার ওষ্ঠাধর তাপে পরিপূর্ণ, তাঁহার জিহ্বা সর্ব্বগ্রাসক অগ্নিস্বরূপ। তাঁহার নিঃশ্বাস প্লাবক বন্যার সদৃশ, তাহা কণ্ঠ পর্য্যন্ত উঠিবে; তাহা সর্ব্বদেশীয় লোকদিগকে বিনাশের কুলাতে ঝাড়িতে উদ্যত; আর জাতিগণের মুখে ভ্রান্তিজনক বল্‌গা দেওয়া যাইবে। পবিত্র উৎসব-রাত্রির ন্যায় তোমাদের গীত হইবে, এবং লোকে যেমন সদাপ্রভুর পর্ব্বতে ইস্রায়েলের শৈলের কাছে গমন কালে বাঁশী বাজায়, তদ্রূপ তোমাদের চিত্তের আনন্দ হইবে। সদাপ্রভু প্রচণ্ড ক্রোধ, সর্ব্বগ্রাসক অগ্নিশিখা, বাত্যা, ঝটিকা ও করকা দ্বারা আপনার প্রতাপান্বিত রব শুনাইবেন, ও আপনার হস্তাবতারণ দেখাইবেন। কারণ সদাপ্রভুর রবে অশূর ভগ্ন হইবে, তিনি তাহাকে দণ্ডাঘাত করিবেন। আর সদাপ্রভু নিরূপিত দণ্ডের যত আঘাত তাহার উপরে অবতারণ করিবেন, সে সকল তবল ও বীণা সহকারে ঘটিবে; এবং তিনি ঐ জাতির সহিত তুমুল যুদ্ধ করিবেন। কেননা তোফৎ [অগ্নিকুণ্ড] পূর্ব্বকালাবধি সাজান রহিয়াছে, তাহাই রাজার জন্য প্রস্তুত আছে; তিনি তাহা গভীর ও প্রশস্ত করিয়াছেন; তাহার চিতা অগ্নি ও প্রচুর কাষ্ঠময়; সদাপ্রভুর ফুৎকার গন্ধকস্রোতের ন্যায় তাহা প্রজ্বলিত করিবে। ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা সাহায্যের জন্য মিসরে নামিয়া যায়, অশ্বগণে বিশ্বাস করে, রথের বাহুল্য প্রযুক্ত রথে নির্ভর করে, অশ্বারোহিগণ অতি বলবান বলিয়া তাহাদের উপরে নির্ভর করে, কিন্তু ইস্রায়েলের পবিত্রতমের দিকে চাহে না, এবং সদাপ্রভুর অন্বেষণ করে না। পরন্তু তিনিও জ্ঞানবান; তিনি অমঙ্গল ঘটাইবেন, আপন বাক্য অন্যথা করিবেন না; তিনি দুরাচারদের কুলের বিরুদ্ধে ও অধর্ম্মাচারীদের সহায়গণের বিরুদ্ধে উঠিবেন। মিস্রীয়গণ ত মনুষ্যমাত্র, ঈশ্বর নয়; তাহাদের অশ্বগণ মাংসমাত্র, আত্মা নয়; এবং সদাপ্রভু আপন হস্ত বিস্তার করিলে সাহায্যকারী উছোট খাইবে, ও সাহায্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি পতিত হইবে, সকলে একসঙ্গে নষ্ট হইবে। কারণ সদাপ্রভু আমাকে এই কথা কহেন, যেমন মৃগরাজ কিম্বা যুবসিংহ পশু ধরিলে পর গর্জ্জন করে, এবং তাহার বিরুদ্ধে মেষপালকদের অনেককে ডাকিয়া একত্র করিলেও তাহাদের রবে উদ্বিগ্ন, তাহাদের কোলাহলে অবনত হয় না, সেইরূপ বাহিনীগণের সদাপ্রভু যুদ্ধ করণার্থে সিয়োন পর্ব্বতের ও তাহার গিরির উপরে নামিয়া আসিবেন। যেমন পক্ষীরা [বাসার উপরে] উড়িতে থাকে, তদ্রূপ বাহিনীগণের সদাপ্রভু যিরূশালেমকে আবৃত রাখিবেন, আবৃত রাখিয়া উদ্ধার করিবেন, এবং অগ্রে গিয়া রক্ষা করিবেন। হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা যাঁহাকে ছাড়িয়া ঘোর বিপথে চলিয়া গিয়াছ, তাঁহার কাছে ফিরিয়া আইস। কারণ সেই দিন প্রত্যেক জন আপন আপন রৌপ্যপ্রতিমা ও স্বর্ণপ্রতিমা, যে যে পাপবস্তু তোমরা স্বহস্তে গঠন করিয়াছ, সে সকল ফেলিয়া দিবে। আর অশূর খড়্‌গে পতিত হইবে, কিন্তু পুরুষের খড়্‌গে নয়; খড়্‌গ তাহাকে গ্রাস করিবে, কিন্তু মানুষের খড়্‌গে নয়; আর সে খড়্‌গের সম্মুখ হইতে পলাইবে, ও তাহার যুবকগণ কর্ম্মাধীন দাস হইবে। আর ত্রাসপ্রযুক্ত তাহার শৈল চলিয়া যাইবে, তাহার সেনাপতিগণ পতাকায় বিহ্বল হইবে; সিয়োনে যাঁহার অগ্নি ও যিরূশালেমে যাঁহার তুন্দুর আছে, সেই সদাপ্রভু এই কথা কহেন। দেখ, এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন, ও শাসনকর্ত্তৃগণ ন্যায়ে শাসন করিবেন। যেমন বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, এক জন মনুষ্য তদ্রূপ হইবেন। তখন দর্শকদের চক্ষু মুদ্রিত থাকিবে না, আর শ্রোতাদের কর্ণ অবধান করিবে। আর চপল লোকদের চিত্ত জ্ঞান পাইবে, এবং তোৎলাদের জিহ্বা সহজে স্পষ্ট কথা কহিবে। মূঢ়কে আর মহাত্মা বলা যাইবে না, এবং খল আর উদার বলিয়া আখ্যাত হইবে না। কেননা মূঢ় মূঢ়তার কথা কহিবে, ও তাহার মন দুষ্টতার কল্পনা করিবে; সে পামরতার কার্য্য করিবে ও সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে ভ্রান্তির কথা কহিবে, ক্ষুধার্ত্ত লোকের প্রাণ শূন্য রাখিবে, তৃষ্ণার্ত্ত লোকের জল বারণ করিবে। আর খলের যন্ত্র সকল মন্দ; সে মিথ্যাকথা দ্বারা নম্রদিগকে নষ্ট করিবার জন্য, যখন দরিদ্র ব্যক্তি ন্যায় কথা বলে, তখনও কুসংঙ্কল্প করে। কিন্তু মহাত্মা মাহাত্ম্যের সঙ্কল্প করে, এবং সে মাহাত্ম্য-পথে স্থির থাকে। হে নিশ্চিন্তা মহিলারা, উঠ, আমার রব শ্রবণ কর; হে নিঃশঙ্ক-চিত্তা যুবতীরা, আমার বাক্যে কর্ণপাত কর। হে নিঃশঙ্ক-চিত্তা যুবতীরা, বৎসরের পরে কিছু দিন গত হইলে তোমরা উদ্বিগ্না হইবে, কেননা দ্রাক্ষাফলের সংহার হইবে, ফল পাড়িবার সময় আসিবে না। হে নিশ্চিন্তারা, কম্পান্বিতা হও; হে নিঃশঙ্কারা, উদ্বিগ্না হও; পরিচ্ছদ খুলিয়া বিবস্ত্রা হও, কটিদেশে চট বাঁধ। সকলে বুক চাপড়িয়া মনোরম্য ক্ষেত্রের ও ফলবতী দ্রাক্ষালতার জন্য বিলাপ করিবে। আমার প্রজাদের ভূমিতে কাঁটা ও শেয়ালকাঁটা উৎপন্ন হইবে; উল্লাসপ্রিয় নগরের সমস্ত আনন্দ-গৃহেও তাহা জন্মিবে; কারণ রাজপুরী পরিত্যক্ত হইবে, লোকারণ্যের নগর নির্জ্জন হইয়া পড়িবে, গিরি ও প্রহরি-দুর্গ চিরকাল গুহাময় থাকিয়া বনগর্দ্দভের বিলাস-স্থান ও পশুপালের চরাণি-স্থান হইবে; যে পর্য্যন্ত ঊর্দ্ধলোক হইতে আমাদের উপরে আত্মা সেচিত না হন, প্রান্তর ফলবৃক্ষের উদ্যানে পরিণত না হয়, ও ফলশালী ক্ষেত্র অরণ্য বলিয়া গণ্য না হয়। তখন সেই প্রান্তরে ন্যায়বিচার বাস করিবে, সেই ফলশালী ক্ষেত্রে ধার্ম্মিকতা বসতি করিবে। আর শান্তিই ধার্ম্মিকতার কার্য্য হইবে, এবং চিরকালের জন্য সুস্থিরতা ও নিঃশঙ্কতা ধার্ম্মিকতার ফল হইবে। আর আমার প্রজাগণ শান্তির আশ্রমে, নিঃশঙ্কতার আবাসে ও নিশ্চিন্ততার বিশ্রাম-স্থানে বাস করিবে। কিন্তু অরণ্য ভূমিসাৎ হইবার সময়ে শিলাবৃষ্টি হইবে, আর নগর সম্পূর্ণরূপে নিপাতিত হইবে। ধন্য তোমরা, যাহারা সমস্ত জলপ্রবাহের ধারে বীজ বপন কর, যাহারা গোরু ও গর্দ্দভকে চরিতে দেও। তুমি যে ধ্বংসিত না হইয়াও ধ্বংস করিতেছ, প্রতারিত না হইয়াও প্রতারণা করিতেছ, ধিক্‌ তোমাকে; ধ্বংস-কার্য্যের সমাপ্তি করিলে পর তুমি ধ্বংসিত হইবে, প্রতারণা করিয়া শেষ করিলে পর লোকে তোমাকে প্রতারণা করিবে। হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রতি কৃপা কর, আমরা তোমার অপেক্ষায় রহিয়াছি; তুমি প্রতিপ্রভাতে আপন অপেক্ষাকারীদের বাহুস্বরূপ হও, ও সঙ্কটকালে আমাদের দের ত্রাণস্বরূপ হও। কোলাহলের রবে জাতিগণ পলায়ন করিল, তুমি উঠিলে লোকবৃন্দ ছিন্নভিন্ন হইল। পতঙ্গ যেমন সংগ্রহ করে, তেমনি লোকে তোমাদের লুট সংগ্রহ করিবে; ফড়িঙ্গেরা যেমন লাফায়, তেমনি লোকে তাহার উপরে লাফাইবে। সদাপ্রভু উন্নত; তিনি ত ঊর্দ্ধলোকে বাস করেন, তিনি সিয়োনকে ন্যায়বিচারে ও ধার্ম্মিকতায় পূর্ণ করিয়াছেন। আর তোমার সময়ে সুস্থিরতা হইবে, ত্রাণের, প্রজ্ঞার ও জ্ঞানের বাহুল্য হইবে; সদাপ্রভুর ভয় তাহার ধনকোষ। দেখ, উহাদের পুরুষসিংহেরা সড়কে ক্রন্দন করিতেছে, সন্ধির অন্বেষণকারী দূতগণ তীব্র রোদন করিতেছে। রাজপথ সকল নরশূন্য হইয়াছে, পথিকমাত্র নাই; সে নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে, নগর সকল তুচ্ছ করিয়াছে, মর্ত্ত্যকে তৃণ জ্ঞান করিয়াছে। দেশ শোকান্বিত ও মলিন হইয়াছে, লিবানোন লজ্জা পাইয়াছে ও ম্লান হইয়াছে, শারোণ মরুভূমির সমান, এবং বাশন ও কর্মিল পত্রশূন্য হইয়াছে। সদাপ্রভু কহেন, আমি এখন উঠিব, এখন উন্নত হইব, এখন উচ্চীকৃত হইব। তোমরা চিটারূপ গর্ভ ধারণ করিবে, নাড়া প্রসব করিবে; তোমাদের নিঃশ্বাস অগ্নিস্বরূপ, তাহা তোমাদিগকে গ্রাস করিবে। আর জাতিগণ ভাঁটিতে ভস্মীকৃত চূণের ন্যায় হইবে, অগ্নিতে দগ্ধ কন্টকের কুচির ন্যায় হইবে। হে দূরবর্ত্তী লোক সকল, আমি যাহা করিয়াছি, তাহা শুন; নিকটস্থ লোকেরা, আমার পরাক্রম জ্ঞাত হও। সিয়োনে পাপিগণ কাঁপিতেছে, পামরগণ ত্রাসাপন্ন হইয়াছে। আমাদের মধ্যে কে সর্ব্বগ্রাসক অগ্নিতে থাকিতে পারে? আমাদের মধ্যে কে চিরকালস্থায়ী অগ্নিশিখাসমূহের নিকটে থাকিতে পারে? যে জন ধার্ম্মিকতার পথে চলে, ও সরল ভাবের কথা কহে, যে উপদ্রবজাত লাভ ঘৃণা করে, যে উৎকোচের স্পর্শ হইতে হস্ত ঝাড়িয়া ফেলে, যে বধ করিবার পরামর্শ শুনিলে কর্ণ রোধ করে ও দুষ্কর্ম্মের দর্শন হইতে চক্ষু মুদ্রিত করে; সেই ব্যক্তি উচ্চস্থানে বাস করিবে, শৈলগণের দুরাক্রম স্থান তাহার দুর্গস্বরূপ হইবে; তাহাকে ভক্ষ্য দেওয়া যাইবে, সে নিশ্চয়ই জল পাইবে। তোমার নয়নযুগল স্বীয় সৌন্দর্য্যবিশিষ্ট রাজাকে দর্শন করিবে, দূরব্যাপী দেশ দেখিবে। তোমার চিত্ত ঐ ত্রাসের বিষয় আন্দোলন করিবে; কোথায় সেই লিপিকর্ত্তা, কোথায় সেই মুদ্রা-তৌলকারী? কোথায় সেই দুর্গ-গণনাকারী? তুমি আর সেই ক্রূর জাতিকে দেখিতে পাইবে না, সেই জাতিকে, যাহার গভীর ভাষা তুমি জান না, যাহার অস্পষ্ট বাক্য তুমি বুঝিতে পার না। আমাদের পর্ব্বপুরী সিয়োনের প্রতি দৃষ্টি কর, তোমার নয়নযুগল শান্তিযুক্ত বসতিস্বরূপ যিরূশালেমকে দেখিবে; তাহা অটল তাম্বুস্বরূপ, তাহার গোঁজ কখনও উৎপাটিত হইবে না, এবং তাহার কোন রজ্জু ছিঁড়িবে না। বস্তুতঃ সেখানে সদাপ্রভু সপ্রতাপে আমাদের সহবর্ত্তী হইবেন, তাহা বৃহৎ নদনদী ও বিস্তীর্ণ স্রোতোমালার স্থান; তথায় দাঁড়যুক্ত পোত গমনাগমন করিবে না, ও প্রতাপযুক্ত জাহাজ তাহা পার হইয়া আসিবে না। কেননা সদাপ্রভু আমাদের বিচারকর্ত্তা, সদাপ্রভু আমাদের ব্যবস্থাপক, সদাপ্রভু আমাদের রাজা; তিনিই আমাদিগকে পরিত্রাণ করিবেন। তোমার রজ্জু সকল ঢিলা হইয়া পড়িয়াছে, লোকে আপনাদের মাস্তুলের গোড়া শক্ত কিম্বা পাইল খাটাইয়া দিতে পারে না; তখন বিস্তর লুটের সামগ্রী বিভাগ করা গেল; পঙ্গুরা লুট দ্রব্য ধরিল। আর নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত; তন্নিবাসী প্রজাদের অপরাধের ক্ষমা হইবে। হে জাতিগণ, নিকটে আসিয়া শুন; হে লোকবৃন্দ, অবধান কর; শুনুক পৃথিবী ও তথাকার সকলে, জগৎ ও তদুৎপন্ন সকল পদার্থ। কেননা জাতিমাত্রের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ, তাহাদের সৈন্য সামন্তের বিরুদ্ধে তাঁহার প্রচণ্ড কোপ প্রজ্বলিত হইল; তিনি তাহাদিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিলেন, তাহাদিগকে বধে সমর্পণ করিলেন। আর তাহাদের নিহতগণ বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইবে, তাহাদের শব হইতে দুর্গন্ধ উঠিবে, তাহাদের রক্তে পর্ব্বতগণ গলিত হইবে। আর আকাশের সমস্ত বাহিনী ক্ষয় পাইবে, আকাশমণ্ডল লিপি-পত্রের ন্যায় জড়াইয়া যাইবে; এবং যেমন দ্রাক্ষালতার জীর্ণ পত্র ও ডুমুর বৃক্ষের জীর্ণ পল্লব, তদ্রূপ তাহার সমস্ত বাহিনী জীর্ণ হইয়া পড়িবে। কেননা আমার খড়্‌গ স্বর্গে পরিতৃপ্ত হইয়াছে; দেখ, বিচার সাধনার্থে তাহা ইদোম দেশের উপরে, আমার বর্জ্জিত লোকদের উপরে পড়িবে। সদাপ্রভুর খড়্‌গ তৃপ্ত হইয়াছে রক্তে ও আপ্যায়িত হইয়াছে মেদে, মেষশাবকের ও ছাগের রক্তে এবং মেষদের মেটিয়ার মেদে; কেননা বস্রাতে সদাপ্রভুর এক যজ্ঞ, ইদোম দেশে বিস্তর পশুবধ হইবে। তাহাদের সহিত গবয়, ও ষাঁড়ের সহিত যুবাবৃষ নামিয়া আসিবে, এবং তাহাদের ভূমি রক্তে পরিতৃপ্ত, ও ধূলা মেদে সারাল হইবে। কেননা এ সদাপ্রভুর প্রতিশোধের দিন, এ সিয়োনের বিবাদ সম্বন্ধীয় প্রতিফলদানের বৎসর। তথাকার প্রবাহ সকল আল্‌কাতরায়, তথাকার ধূলি গন্ধকে পরিণত হইবে, তথাকার ভূমি প্রজ্বলিত আল্‌কাতরা হইবে। তাহা দিবারাত্র কদাচ নির্ব্বাণ হইবে না, চিরকাল তাহার ধূম উঠিবে; তাহা পুরুষানুক্রমে উৎসন্ন হইয়া থাকিবে, তাহার মধ্য দিয়া অনন্তকালেও কেহ যাইবে না। কিন্তু পানিভেলা ও শজারু তাহা অধিকার করিবে, এবং মহাপেচক ও দাঁড়কাক তাহার মধ্যে বাস করিবে; আর তাহার উপরে অবস্তুতারূপ মানরজ্জু ও শূন্যতারূপ ওলোনসূত্র ধরা যাইবে। তথাকার কুলীনেরা রাজত্ব ঘোষণা করিতে কেহই থাকিবে না; তথাকার অধ্যক্ষবর্গ সর্ব্বতোভাবে লুপ্ত হইবে। তাহার অট্টালিকা সকল কন্টকে, তাহার দুর্গ সকল বিছুটীতে ও শেয়ালকাঁটাতে ব্যাপ্ত হইবে, এবং সেই দেশ শৃগালের বাসস্থান, উষ্ট্রপক্ষীর মাঠ হইবে। আর বন্যপশুগণ বৃকগণের সহিত মিলিবে, এবং ছাগেরা আপন আপন মিত্রকে আহ্বান করিয়া আনিবে; আর সেখানে নিশাচর বাস করিয়া বিশ্রামের স্থান পাইবে। সে স্থানে বেতাছড়া সর্প বাসা করিয়া ডিম্ব প্রসব করিবে, তাহা ফুটাইয়া শাবকদিগকে আপন ছায়াতে একত্র করিবে; এবং সেখানে চিলেরা প্রত্যেকে আপন আপন সঙ্গিনীর সহিত একত্র হইবে। তোমরা সদাপ্রভুর পুস্তকে অনুসন্ধান কর, তাহা পাঠ কর, ইহার একেরও অভাব হইবে না, তাহারা কেহ সঙ্গিনীবিহীন থাকিবে না; কেননা আমার মুখ [দ্বারা] তিনিই ইহা আজ্ঞা করিয়াছেন, এবং তিনিই আপন আত্মা দ্বারা তাহাদিগকে সংগ্রহ করিয়াছেন। আর তিনি গুলিবাঁটপূর্ব্বক তাহাদিগকে সেই অধিকার দিয়াছেন, তাঁহার হস্ত মানরজ্জু দ্বারা প্রত্যেকের অংশ নিরূপণ করিয়াছে; তাহারা চিরকাল তাহা অধিকার করিবে, তাহারা পুরুষানুক্রমে সে স্থানে বাস করিবে। প্রান্তর ও জলশূন্য স্থান আমোদ করিবে, মরুভূমি উল্লাসিত হইবে, গোলাপের ন্যায় উৎফুল্ল হইবে। সে পুষ্পবাহুল্যে উৎফুল্ল হইবে, আর আনন্দ ও গান সহকারে উল্লাস করিবে; তাহাকে দত্ত হইবে লিবানোনের প্রতাপ, কর্মিলের ও শারোণের শোভা; তাহারা দেখিতে পাইবে সদাপ্রভুর প্রতাপ, আমাদের ঈশ্বরের শোভা। দুর্ব্বল হস্ত সবল কর, কম্পিত জানু সুস্থির কর। চপলচিত্তদিকে বল, সাহস কর, ভয় করিও না; দেখ, তোমাদের ঈশ্বর প্রতিশোধসহ ঈশ্বরীয় প্রতীকারসহ আসিতেছেন, তিনিই আসিয়া তোমাদিগের পরিত্রাণ করিবেন। তৎকালে অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, আর বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে। তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহ্বা আনন্দগান করিবে; কেননা প্রান্তরে জল উৎসারিত হইবে, ও মরুভূমির নানা স্থানে প্রবাহ হইবে। আর মরীচিকা জলাশয় হইয়া যাইবে, ও শুষ্কভূমি জলের উনুইতে পরিপূর্ণ হইবে; শৃগালদিগের নিবাসে, সেগুলি যেখানে শুইত, তথায় নল খাগ্‌ড়ার বন হইবে। আর সেই স্থানে এক জাঙ্গাল ও রাজপথ হইবে; তাহা পবিত্রতার পথ বলিয়া আখ্যাত হইবে; তাহা দিয়া কোন অশুচি লোক যাতায়াত করিবে না, কিন্তু তাহা উহাদের জন্য হইবে; সে পথে পথিকগণ, অজ্ঞানেরাও পরিভ্রমণ করিবে না। সেখানে সিংহ থাকিবে না, কোন হিংস্রক জন্তু তাহাতে উঠিবে না, সেখানে তাহা দেখা যাইবেই না; কিন্তু মুক্তিপ্রাপ্ত লোকেরা সেই পথে চলিবে; আর সদাপ্রভুর নিস্তারিত লোকেরা ফিরিয়া আসিবে, আনন্দগান পুরঃসর সিয়োনে আসিবে, এবং তাহাদের মস্তকে নিত্যস্থায়ী হর্ষমুকুট থাকিবে; তাহারা আমোদ ও আনন্দ প্রাপ্ত হইবে, এবং খেদ ও আর্ত্তস্বর দূরে পলায়ন করিবে। হিষ্কিয় রাজার চতুদ্দশ বৎসরে অশূর-রাজ সন্‌হেরীব যিহূদার প্রাচীর-বেষ্টিত সমস্ত নগরের বিরুদ্ধে আসিয়া সে সকল হস্তগত করিতে লাগিলেন। পরে অশূরের রাজা লাখীশ হইতে রব্‌শাকিকে বৃহৎ সৈন্যদলের সহিত যিরূশালেমে হিষ্কিয় রাজার কাছে প্রেরণ করিলেন; তাহাতে তিনি [আসিয়া] উচ্চতর পুষ্করিণীর প্রণালীর কাছে রজক-ভূমির রাজপথে অবস্থিতি করিলেন। পরে হিল্কিয়ের পুত্র ইলিয়াকীম নামে রাজবাটীর অধ্যক্ষ শিব্‌ন লেখক ও আসফের পুত্র যোয়াহ নামক ইতিহাসরচক বাহির হইয়া তাঁহার কাছে গেলেন। রব্‌শাকি তাঁহাদিগকে কহিলেন, “তোমরা হিল্কিয়কে এই কথা বল, রাজাধিরাজ অশূর-রাজ এই কথা কহেন, তুমি যে সাহস করিতেছ, সে কেমন সাহস? আমি বলি, তোমার সংগ্রামের বুদ্ধি ও পরাক্রম ওষ্ঠের কথা মাত্র; বল দেখি, তুমি কাহার উপরে নির্ভর করিয়া আমার বিদ্রোহী হইলে? দেখ, তুমি ঐ থেৎলা নলরূপ যষ্টির, অর্থাৎ মিসরের উপরে নির্ভর করিতেছ; কিন্তু যে কেহ তাহার উপরে নির্ভর করে, সে তাহার হস্তে ফুটিয়া তাহা বিদ্ধ করে; যত লোক মিসর-রাজ ফরৌণের উপরে নির্ভর করে, সেই সকলের পক্ষে সে তদ্রূপ। আর যদি আমাকে বল, আমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করি, তবে তিনি কি সেই নহেন, যাঁহার উচ্চস্থলী ও যজ্ঞবেদি সকল হিষ্কিয় দূর করিয়াছে, এবং যিহূদার ও যিরূশালেমের লোকদিগকে বলিয়াছে, ‘তোমরা এই যজ্ঞবেদির কাছে প্রণিপাত করিবে’? তুমি এক বার আমার প্রভু অশূর-রাজের কাছে পণ কর; আমি তোমাকে দুই সহস্র অশ্ব দিই, যদি তুমি তদারোহী লোক দিতে পার। তবে কেমন করিয়া আমার প্রভুর ক্ষুদ্রতম দাসগণের মধ্যে এক জন সেনাপতিকে হটাইয়া দিবে, এবং রথ সকলের ও অশ্বারোহীদের জন্য মিসরের উপরে বিশ্বাস করিবে? বল দেখি, আমি কি সদাপ্রভুর সম্মতি ব্যতিরেকে এই দেশ ধ্বংস করিতে আসিয়াছি? সদাপ্রভুই আমাকে বলিয়াছেন, তুমি ঐ দেশে গিয়া উহা ধ্বংস কর।” তখন ইলিয়াকীম, শিব্‌ন ও যোয়াহ রব্‌শাকিকে কহিলেন, বিনয় করি, আপনার দাসদিগকে অরামীয় ভাষায় বলুন, কেননা আমরা তাহা বুঝিতে পারি; প্রাচীরের উপরিস্থ লোকদের কর্ণগোচরে আমাদের কাছে যিহূদী ভাষায় কথা বলিবেন না। কিন্তু রব্‌শাকি বলিলেন, আমার প্রভু কি তোমার প্রভুরই কাছে এবং তোমারই কাছে এই কথা কহিতে আমাকে পাঠাইয়াছেন? ঐ যে লোকেরা তোমাদের সহিত আপন আপন বিষ্ঠা খাইতে ও আপন আপন মূত্র পান করিতে প্রাচীরের উপরে বসিয়া আছে, উহাদেরই কাছে কি তিনি পাঠান নাই? পরে রব্‌শাকি দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে যিহূদী ভাষায় বলিতে লাগিলেন, “তোমরা রাজাধিরাজ অশূর-রাজের কথা শুন। রাজা এই কথা কহিতেছেন, হিষ্কিয় তোমাদের ভ্রান্তি না জন্মাউক; কেননা তোমাদিগকে রক্ষা করিতে তাহার সাধ্য নাই। আর হিষ্কিয় এই কথা বলিয়া সদাপ্রভুতে তোমাদের বিশ্বাস না জন্মাউক যে, সদাপ্রভু আমাদিগকে নিশ্চয়ই উদ্ধার করিবেন, এই নগর কখনও অশূর-রাজের হস্তগত হইবে না। তোমরা হিষ্কিয়ের কথা শুনিও না; কেননা অশূর-রাজ এই কথা কহেন, তোমরা আমার সঙ্গে সন্ধি কর, বাহির হইয়া আমার কাছে আইস; তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন দ্রাক্ষাফল ও ডুমুর ফল ভোজন কর, এবং আপন আপন কূপের জল পান কর; পরে আমি আসিয়া তোমাদের নিজ দেশের ন্যায় এক দেশে, শস্য ও দ্রাক্ষারসের দেশে, রুটী ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের দেশে তোমাদিগকে লইয়া যাইব। সদাপ্রভু আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন, এই বলিয়া যেন হিষ্কিয় তোমাদিগকে না ভুলায়। জাতিগণের দেবতারা কি কেহ অশূর-রাজের হস্ত হইতে আপন আপন দেশ রক্ষা করিয়াছে? হমাতের ও অর্পদের দেবগণ কোথায়? সফর্বয়িমের দেবগণ কোথায়? উহারা কি আমার হস্ত হইতে শমরিয়াকে রক্ষা করিয়াছে? ভিন্ন ভিন্ন দেশের সমস্ত দেবতার মধ্যে কোন্‌ দেবগণ আমার হস্ত হইতে আপনাদের দেশ উদ্ধার করিয়াছে? তবে সদাপ্রভু আমার হস্ত হইতে যিরূশালেমকে উদ্ধার করিবেন, ইহা কি সম্ভব?” কিন্তু লোকেরা নীরব হইয়া থাকিল, তাহার এক কথারও উত্তর করিল না, কারণ রাজার এই আজ্ঞা ছিল যে, তাহাকে উত্তর দিও না। পরে হিল্কিয়ের পুত্র রাজবাটীর অধ্যক্ষ ইলিয়াকীম, শিব্‌ন লেখক ও আসফের পুত্র ইতিহাস-রচক যোয়াহ আপন আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া হিষ্কিয়ের নিকটে আসিয়া রব্‌শাকির কথা জ্ঞাত করিলেন। তাহা শুনিয়া হিষ্কিয় রাজা আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া চট পরিধান করিয়া সদাপ্রভুর গৃহে গমন করিলেন। আর রাজবাটীর অধ্যক্ষ ইলীয়াকীমকে ও শিব্‌ন লেখককে এবং যাজকদের প্রাচীনবর্গকে চট পরিধান করাইয়া আমোসের পুত্র যিশাইয় ভাববাদীর নিকটে পাঠাইয়া দিলেন। তাঁহারা তাঁহাকে বলিলেন, হিষ্কিয় এই কথা বলেন, অদ্যকার দিন সঙ্কটের, অনুযোগের ও অপমানের দিন, কেননা সন্তানগণ প্রসবদ্বারে উপস্থিত, কিন্তু প্রসব করিবার শক্তি নাই। জীবন্ত ঈশ্বরকে টিটকারি দিবার জন্য আপন প্রভু অশূর-রাজের প্রেরিত রব্‌শাকি যে সকল কথা কহিয়াছে, হয় ত আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা শুনিবেন, এবং তাঁহাকে সেই সকল কথার জন্য তিরস্কার করিবেন, যাহা আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু শুনিয়াছেন; অতএব যে অবশিষ্টাংশ এখনও আছে, আপনি তাহার নিমিত্ত প্রার্থনা উৎসর্গ করুন। তখন হিষ্কিয় রাজার দাসগণ যিশাইয়ের নিকটে উপস্থিত হইলেন। যিশাইয় তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের কর্ত্তাকে এই কথা বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যাহা শুনিয়াছ, ও যাহা বলিয়া অশূর-রাজের দাসেরা আমার নিন্দা করিয়াছে, সেই সকল কথায় ভীত হইও না। দেখ, আমি তাহার মধ্যে এক আত্মা দিব, এবং সে কোন সংবাদ শুনিবে, শুনিয়া আপন দেশে ফিরিয়া যাইবে, পরে আমি তাহারই দেশে তাহাকে খড়্‌গ দ্বারা নিপাত করিব। পরে রব্‌শাকি ফিরিয়া গেলেন, গিয়া দেখিতে পাইলেন যে, অশূর-রাজ লিব্‌নার বিপক্ষে যুদ্ধ করিতেছেন; বস্তুতঃ তিনি লাখীশ্‌ হইতে প্রস্থান করিয়াছেন, ইহা রবশাকি শুনিয়াছেন। পরে তিনি কূশদেশীয় তির্হকঃ রাজার বিষয়ে এই সংবাদ শুনিলেন, তিনি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করণার্থে বাহির হইয়া আসিয়াছেন। ইহা শুনিয়া তিনি হিষ্কিয়ের নিকটে দূত পাঠাইলেন, বলিলেন, তোমরা যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়কে এই কথা বলিবে, তোমার বিশ্বাস-ভূমি ঈশ্বর এই বলিয়া তোমার ভ্রান্তি না জন্মাউন যে, যিরূশালেম অশূর-রাজের হস্তে সমর্পিত হইবে না। দেখ, সমুদয় দেশ নিঃশেষে বিনষ্ট করিয়া অশূরের রাজারা সমস্ত দেশের প্রতি যাহা যাহা করিয়াছেন, তাহা তুমি শুনিয়াছ; তবে তুমি কি উদ্ধার পাইবে? আমার পিতৃপুরুষগণ যে সকল জাতিকে বিনষ্ট করিয়াছেন—গোষণ, হারণ, রেৎসফ এবং তলঃসর-নিবাসী এদন-সন্তানগণ—তাহাদের দেবগণ কি তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়াছে? হমাতের রাজা, অর্পদের রাজা, এবং সফর্বয়িম নগরের, হেনার ও ইব্বার রাজা কোথায়? হিষ্কিয় দূতগণের হস্ত হইতে পত্রখানি লইয়া পাঠ করিলেন; পরে হিষ্কিয় সদাপ্রভুর গৃহে উঠিয়া গেলেন, এবং সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহা বিস্তার করিলেন। আর হিষ্কিয় সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন, কহিলেন, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, করূবদ্বয়ে আসীন, তুমি, কেবল মাত্র তুমিই পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের ঈশ্বর; তুমিই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়াছ। হে সদাপ্রভু, কর্ণপাত করিয়া শুন, হে সদাপ্রভু চক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখ; জীবন্ত ঈশ্বরকে টিটকারি দিবার জন্য সন্‌হেরীব যে সকল কথা বলিয়া পাঠাইয়াছে, তাহা শুন। সত্য বটে, হে সদাপ্রভু, অশূরের রাজারা সর্ব্বদেশীয় লোকদিগকে ও তাহাদের দেশ সকল বিনষ্ট করিয়াছে, এবং তাহাদের দেবগণকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করিয়াছে, কারণ তাহারা ঈশ্বর নয়, কিন্তু মনুষ্যের হস্তের কার্য্য, কাষ্ঠ ও প্রস্তর; এই জন্য উহারা তাহাদিগকে বিনষ্ট করিয়াছে। অতএব এখন, হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি তাহার হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার কর; তাহাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানিতে পারিবে যে, তুমি, কেবল মাত্র তুমিই সদাপ্রভু। পরে আমোসের পুত্র যিশাইয় হিষ্কিয়ের নিকটে এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন; ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি অশূর-রাজ সন্‌হেরীবের বিষয়ে আমার কাছে প্রার্থনা করিয়াছ, সদাপ্রভু তাহার বিষয়ে যে কথা বলিয়াছেন, তাহা এই, “অনূঢ়া সিয়োন-কন্যা তোমাকে তুচ্ছ করিতেছে ও তোমাকে পরিহাস করিতেছে; যিরূশালেম-কন্যা তোমার দিকে মাথা নাড়িতেছে। তুমি কাহাকে টিটকারি দিয়াছ? কাহার নিন্দা করিয়াছ? কাহার বিরুদ্ধে উচ্চশব্দ করিয়াছ ও ঊর্দ্ধদিকে চক্ষু তুলিয়াছ? ইস্রায়েলের পবিত্রতমেরই বিরুদ্ধে! তুমি আপন দাসগণের দ্বারা প্রভুকে টিটকারি দিয়াছ, বলিয়াছ, ‘আমি নিজ রথবাহুল্য দ্বারা পর্ব্বতগণের উচ্চ মস্তকে, লিবানোনের নিভৃত স্থানে আরোহণ করিয়াছি, আমি তাহার দীর্ঘকায় এরস বৃক্ষ ও উৎকৃষ্ট দেবদারু সকল ছেদন করিব, তাহার প্রান্তভাগস্থ উচ্চতম স্থানে, উর্ব্বর ক্ষেত্রের কাননে প্রবেশ করিব। আমি খননপূর্ব্বক জল পান করিয়াছি, আমি আপন পদতল দ্বারা মিসরের সমস্ত খাল শুষ্ক করিব।’ তুমি কি শুন নাই যে, আমি দীর্ঘকালাবধি ইহা নিরূপণ করিয়াছিলাম, পূর্ব্বকালে ইহা স্থির করিয়াছিলাম? আমি এখন ইহা সিদ্ধ করিলাম, তোমা দ্বারা দৃঢ় নগর সকল বিনাশ করিয়া ঢিবী করিলাম। আর তন্নিবাসিগণ ক্ষীণহস্ত, ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত হইল; তাহারা ক্ষেত্রের শাক ও নবীন তৃণ, ছাদের উপরিস্থ ঘাস ও অপক্ব শস্যবিশিষ্ট ক্ষেত্রের ন্যায় হইল। কিন্তু তোমার বসিয়া থাকা, তোমার বাহিরে যাওয়া, তোমার ভিতরে আসা, এবং আমার বিরুদ্ধে তোমার ক্রোধ প্রকাশ, এই সকল আমি জানি। আমার বিরুদ্ধে তোমার ক্রোধ প্রযুক্ত এবং তোমার যে দর্পকথা আমার কর্ণগোচর হইয়াছে, তৎপ্রযুক্ত আমি তোমার নাসিকায় আমার কড়া ও তোমার ওষ্ঠাধরে আমার বল্‌গা দিব, এবং তুমি যে পথ দিয়া আসিয়াছ, সেই পথ দিয়া তোমাকে ফিরাইব। আর [হে হিষ্কিয়,] তোমার জন্য এই চিহ্ন হইবে, তোমরা এই বৎসর স্বতঃ উৎপন্ন শস্য, ও দ্বিতীয় বৎসর তাহার মূলোৎপন্ন শস্য, ভোজন করিবে; পরে তোমরা তৃতীয় বৎসরে বীজ বপন করিয়া শস্য কাটিবে, এবং দ্রাক্ষাক্ষেত্র করিয়া তাহার ফলভোগ করিবে। আর যিহূদা কুলের যে উত্তীর্ণগণ অবশিষ্ট আছে, তাহারা আবার নীচে মূল বাঁধিবে, ও উপরে ফল দিবে। কেননা যিরূশালেম হইতে অবশিষ্টগণ, সিয়োন পর্ব্বত হইতে উত্তীর্ণগণ, নির্গত হইবে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্যোগ ইহা সাধন করিবে। অতএব অশূর-রাজের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সে এ নগরে আসিবে না, এখানে বাণ ছাড়িবে না, ঢাল লইয়া ইহার সম্মুখে আসিবে না, ইহার বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধিবে না। সে যে পথ দিয়া আসিয়াছে, সেই পথ দিয়াই ফিরিয়া যাইবে, এ নগরে আসিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কারণ আমি আপনার নিমিত্ত ও আপন দাস দায়ূদের নিমিত্ত এই নগরের রক্ষার্থে ইহার ঢালস্বরূপ হইব। পরে সদাপ্রভুর দূত যাত্রা করিয়া অশূরীয়দের শিবিরে এক লক্ষ পঁচাশী সহস্র লোককে বধ করিলেন; লোকেরা প্রত্যূষে উঠিল, আর দেখ, সমস্তই মৃত দেহ। অতএব অশূর-রাজ সন্‌হেরীব প্রস্থান করিলেন, এবং নীনবীতে ফিরিয়া গিয়া বাস করিলেন। পরে তিনি যখন আপনার দেবতা নিষ্রোকের গৃহে প্রণিপাত করিতেছিলেন, তখন অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর নামক তাঁহার দুই পুত্র খড়্‌গ দ্বারা তাঁহাকে আঘাত করিল; পরে তাহারা অরারট দেশে পলায়ন করিল। আর এসর-হদ্দোন নামক তাঁহার পুত্র তাঁহার পদে রাজা হইলেন। তৎকালে হিষ্কিয়ের সাংঘাতিক পীড়া হইয়াছিল। আর আমোসের পুত্র যিশাইয় ভাববাদী তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি আপন বাটীর ব্যবস্থা করিয়া রাখ, কেননা তোমার মৃত্যু হইবে, তুমি বাঁচিবে না। তখন হিষ্কিয় ভিত্তির দিকে মুখ ফিরাইয়া সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, বিনয় করি, তুমি এখন স্মরণ কর; আমি তোমার সাক্ষাতে সত্যে ও একাগ্র চিত্তে চলিয়াছি, এবং তোমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তাহাই করিয়াছি। আর হিষ্কিয় অতিশয় রোদন করিতে লাগিলেন। তখন যিশাইয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, যাও, হিষ্কিয়কে বল, তোমার পিতৃপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তোমার প্রার্থনা শুনিলাম; আমি তোমার নেত্রজল দেখিলাম; দেখ, আমি তোমার আয়ু পনর বৎসর বৃদ্ধি করিব, এবং অশূরের রাজার হস্ত হইতে তোমাকে ও এই নগরকে উদ্ধার করিব; আমি এই নগরের ঢালস্বরূপ হইব। আর সদাপ্রভু যে কথা বলিয়াছেন, তাহা যে সফল করিবেন, তাহার এই চিহ্ন সদাপ্রভু হইতে আপনাকে দেওয়া যাইবে। দেখ, আহসের সোপানে ছায়া সূর্য্যের সহিত ধাপগুলিতে যত ধাপ নামিয়া গিয়াছে, আমি তাহার দশ ধাপ পিছে ফিরাইয়া দিব। পরে সূর্য্য যত ধাপ নামিয়া গিয়াছে, তাহার দশ ধাপ ফিরিয়া গেল। যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের লিপি; তিনি পীড়িত হইয়া যখন পীড়া হইতে আরোগ্য লাভ করেন, তখনকার লেখা। আমি বলিলাম, আমার আয়ুর মধ্যাহ্নে আমি পাতালের পুরদ্বারে প্রবেশ করিব, আমার বৎসরশ্রেণীর অবশিষ্টাংশে বঞ্চিত হইলাম। আমি বলিলাম, আমি সদাপ্রভুকে জীবিতদের দেশে সদাপ্রভুকে আর দেখিব না, জগন্নিবাসীদের সঙ্গে মনুষ্যকেও আর দেখিব না। মেষপালকের তাম্বুর ন্যায় আমার আবাস উঠাইয়া আমা হইতে স্থানান্তর করা গেল; আমি তন্তুবায়ের ন্যায় আপন আয়ু জড়াইলাম; তিনি তাঁত হইতে আমাকে কাটিয়া ফেলিবেন; তুমি এক দিবারাত্রের মধ্যে আমাকে শেষ করিবে। আমি প্রাতঃকাল পর্য্যন্ত নীরব থাকিলাম; তিনি সিংহের ন্যায় আমার অস্থি সকল চূর্ণ করেন, তুমি এক দিবারাত্রের মধ্যে আমাকে শেষ করিবে। তালচোঁচের ন্যায়, সারসের ন্যায় আমি চিঁচিঁ শব্দ করিতেছিলাম, ঘুঘুর ন্যায় কাতরোক্তি করিতেছিলাম; ঊর্দ্ধদিকে দৃষ্টি করিতে করিতে আমার চক্ষু ক্ষীণ হইল; হে সদাপ্রভু, আমি উপদ্রুত, তুমি আমার প্রতিভূ হও। আমি কি বলিব? তিনি আমাকে কহিলেন, এবং নিজেই সাধন করিলেন; আমার প্রাণের তিক্ততা প্রযুক্ত অবশিষ্ট বৎসর সকল আমি ধীরে ধীরে গমন করিব। হে প্রভু, এই সকলের দ্বারা লোকেরা জীবিত থাকে, কেবল ইহাতেই আমার আত্মার জীবন; আমাকে সুস্থ কর, আমাকে সঞ্জীবিত কর। দেখ, আমার শান্তির নিমিত্তই আমার তিক্ততা, তিক্ততা উপস্থিত হইল; কিন্তু তুমি প্রেমেই আমার প্রাণকে বিনাশকূপ হইতে উদ্ধার করিলে, তুমি ত আমার সমস্ত পাপ তোমার পশ্চাতে ফেলিয়াছ। পাতাল ত তোমার স্তবগান করে না; মৃত্যু তোমার প্রশংসা করে না; গর্ত্তগামীরা তোমার সত্যের অপেক্ষা করে না। জীবিত, জীবিত লোকই তোমার স্তবগান করিবে, আমি যেমন অদ্য করিতেছি; পিতা সন্তানগণকে তোমার সত্য জ্ঞাত করিবে। সদাপ্রভু আমার পরিত্রাণ করিতে [সম্মত]; অতএব আমার সঙ্গীত-মালা আমরা তারযুক্ত যন্ত্রে গান করিব, যত দিন জীবিত থাকি, সদাপ্রভুর গৃহে গাহিব। যিশাইয় বলিয়াছিলেন, ডুমুরফলের চাপ লইয়া ছেঁচিয়া স্ফোটকের উপরে দেওয়া হউক, তাহাতে তিনি বাঁচিবেন। আর হিষ্কিয় বলিয়াছিলেন, আমি যে সদাপ্রভুর গৃহে উঠিব, ইহার চিহ্ন কি? ঐ সময়ে বলদনের পুত্র বাবিল-রাজ মরোদক-বলদন হিষ্কিয়ের নিকটে পত্র ও উপঢৌকন-দ্রব্য পাঠাইলেন, কারণ তিনি শুনিয়াছিলেন যে, হিষ্কিয় পীড়িত হইয়াছিলেন, ও আরোগ্য লাভ করিয়াছেন। তাহাতে হিষ্কিয় দূতদের [আগমনে] আনন্দিত হইলেন, এবং আপনার কোষাগার, রৌপ্য, স্বর্ণ, সুগন্ধি দ্রব্য, ও বহুমূল্য তৈল এবং সমুদয় অস্ত্রাগার ও ধনাগার সমূহের সমস্ত বস্তু তাহাদিগকে দেখাইলেন। হিষ্কিয় তাহাদিগকে না দেখাইলেন, এমন কোন সামগ্রী তাঁহার বাটীতে বা তাঁহার সমস্ত রাজ্যে ছিল না। পরে যিশাইয় ভাববাদী হিষ্কিয় রাজার নিকটে আসিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ঐ লোকেরা কি কহিল? আর উহারা কোথা হইতে আপনার নিকটে আসিল? হিষ্কিয় কহিলেন, উহারা দূরদেশ হইতে, বাবিল হইতে আমার কাছে আসিয়াছে। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, উহারা আপনার বাটীতে কি কি দেখিয়াছে? হিষ্কিয় কহিলেন, আমার বাটীতে যাহা যাহা আছে, সকলই দেখিয়াছে; তাহাদিগকে না দেখাইয়াছি, আমার ধনাগার সমূহের মধ্যে এমন কোন দ্রব্য নাই। যিশাইয় হিষ্কিয়কে কহিলেন, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণ করুন। দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যখন তোমার বাটীতে যাহা কিছু আছে, এবং তোমার পিতৃপুরুষদের সঞ্চিত যাহা যাহা অদ্য পর্য্যন্ত রহিয়াছে, সকলই বাবিলে নীত হইবে; কিছুই অবশিষ্ট থাকিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর যাহারা তোমা হইতে উৎপন্ন হইবে, তোমার সেই সন্তানগণের মধ্যে কয়েক জন নীত হইবে; এবং তাহারা বাবিল-রাজের প্রাসাদে নপুংসক হইবে। তখন হিষ্কিয় যিশাইয়কে কহিলেন, আপনি সদাপ্রভুর যে বাক্য কহিলেন, তাহা উত্তম। তিনি আরও কহিলেন, কারণ আমার সময়ে শান্তি ও সত্য থাকিবে। তোমরা সান্ত্বনা কর, আমার প্রজাদিগকে সান্ত্বনা কর, তোমাদের ঈশ্বর ইহা বলেন। যিরূশালেমকে চিত্ততোষক কথা বল; আর তাহার নিকটে ইহা প্রচার কর যে, তাহার সৈন্যবৃত্তি সমাপ্ত হইয়াছে, তাহার অপরাধের ক্ষমা হইয়াছে; তাহার যত পাপ, তাহার দ্বিগুণ [ফল] সে সদাপ্রভুর হস্ত হইতে পাইয়াছে। এক জনের রব, সে ঘোষণা করিতেছে, ‘তোমরা প্রান্তরে সদাপ্রভুর পথ প্রস্তুত কর, মরুভূমিতে আমাদের ঈশ্বরের জন্য রাজপথ সরল কর। প্রত্যেক উপত্যকা উচ্চীকৃত হইবে, প্রত্যেক পর্ব্বত ও উপপর্ব্বত নিম্ন করা যাইবে; বক্র স্থান সরল হইবে, উচ্চনীচ ভূমি সমস্থলী হইবে; আর সদাপ্রভুর প্রতাপ প্রকাশ পাইবে, আর সমস্ত মর্ত্ত্য একসঙ্গে তাহা দেখিবে, কারণ সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে।’ এক জনের রব, সে বলিতেছে, ‘ঘোষণা কর,’ এক জন কহিল, ‘কি ঘোষণা করিব?’ ‘মর্ত্ত্যমাত্র তৃণস্বরূপ, তাহার সমস্ত কান্তি ক্ষেত্রস্থ পুষ্পের তুল্য। তৃণ শুষ্ক হইয়া যায়, পুষ্প ম্লান হইয়া পড়ে, কারণ তাহার উপরে সদাপ্রভুর নিঃশ্বাস বহে; সত্যই লোকেরা তৃণস্বরূপ। তৃণ শুষ্ক হইয়া যায়, পুষ্প ম্লান হইয়া পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকিবে।’ হে সিয়োনের কাছে সুসমাচার-প্রচারকারিণি! উচ্চ পর্ব্বতে আরোহণ কর; হে যিরূশালেমের কাছে সুসমাচার-প্রচারকারিণি! সবলে উচ্চৈঃস্বর কর, উচ্চৈঃস্বর কর, ভয় করিও না; যিহূদার নগর সকলকে বল, দেখ, তোমাদের ঈশ্বর! দেখ, প্রভু সদাপ্রভু সপরাক্রমে আসিতেছেন, তাঁহার বাহু তাঁহার জন্য কর্ত্তৃত্ব করে; দেখ, তাঁহার সঙ্গে তাঁহার [দাতব্য] বেতন আছে, তাঁহার অগ্রে তাঁহার [দাতব্য] পুরস্কার আছে। তিনি মেষপালকের ন্যায় আপন পাল চরাইবেন, তিনি শাবকদিগকে বাহুতে সংগ্রহ করিবেন, এবং কোলে করিয়া বহন করিবেন; দুগ্ধবতী সকলকে তিনি ধীরে ধীরে চালাইবেন। কে আপন করতলে জলরাশি মাপিয়াছে, বিঘত দিয়া আকাশমণ্ডল পরিমাণ করিয়াছে, পৃথিবীর ধূলা পালিতে ভরিয়াছে, পাল্লাতে পর্ব্বতগণকে, ও নিক্তিতে উপপর্ব্বতগণকে তৌল করিয়াছে? কে সদাপ্রভুর আত্মার পরিমাণ করিয়াছে? কিম্বা তাঁহার মন্ত্রী হইয়া তাঁহাকে শিক্ষা দিয়াছে? তিনি কাহার কাছে মন্ত্রণা গ্রহণ করিয়াছেন? কে তাঁহাকে বুদ্ধি দিয়াছে, ও বিচারপথ দেখাইয়াছে, তাঁহাকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়াছে, ও বিবেচনার মার্গ জানাইয়াছে? দেখ, জাতিগণ কলসের একটী জলবিন্দুর তুল্য, আর পাল্লাতে লগ্ন ধূলিকণার ন্যায় গণ্য; দেখ, তিনি দ্বীপ সকলকে একটী পরমাণুর ন্যায় তুলেন। আর জ্বাল দিবার নিমিত্তে লিবানোনে, হোমবলির নিমিত্ত তাহার জন্তু সকলে কুলায় না। তাঁহার সম্মুখে সমস্ত জাতি অবস্তুবৎ, তিনি তাহাদিগকে অসার ও শূন্য জ্ঞান করেন। তবে তোমরা কাহার সহিত ঈশ্বরের তুলনা দিবে? তাঁহার সদৃশ বলিয়া কি প্রকার মূর্ত্তি উপস্থিত করিবে? শিল্পকর প্রতিমা ছাঁচে ঢালে, স্বর্ণকার তাহা স্বর্ণপত্রে মোড়ে, ও তাহার নিমিত্ত রৌপ্যের শৃঙ্খল প্রস্তুত করে। যে ব্যক্তি এইরূপ উপহার দিতে পারে না, সে দুষ্পচ্য কোন কাষ্ঠ মনোনীত করে; আপনার জন্য এক জন বিজ্ঞ শিল্পকর খুঁজে, যেন সে এমন একটী প্রতিমা প্রস্তুত করে, যাহা টলিবে না। তোমরা কি জ্ঞাত হও নাই? তোমরা কি শুন নাই? আদি অবধি কি তোমাদিগকে সংবাদ দেওয়া হয় নাই? পৃথিবীর পত্তনাবধি তোমরা কি বুঝ নাই? তিনিই পৃথিবীর সীমাচক্রের উপরে উপবিষ্ট; তন্নিবাসিগণ ফড়িঙ্গস্বরূপ; তিনি চন্দ্রাতপের ন্যায় আকাশমণ্ডল বিস্তার করেন, বাসতাম্বুর ন্যায় তাহা টাঙ্গাইয়া দেন। তিনি ভূপতিদিগকে লুপ্ত করেন, পৃথিবীর বিচারকর্ত্তাদিগকে অসার বস্তুর তুল্য করেন। তাহারা রোপিত হয় নাই, তাহারা উপ্ত হয় নাই, ভূমিতে তাহাদের কাণ্ড বদ্ধমূল হয় নাই, অমনি তিনি তাহাদের উপরে ফুৎকার দেন, তাহারা শুকাইয়া যায়, ঘূর্ণবায়ু তাহাদিগকে নাড়ার ন্যায় উড়াইয়া দেয়। অতএব তোমরা কাহার সহিত আমার উপমা দিবে যে আমি তাহার সদৃশ হইব? ইহা পবিত্রতম কহেন। ঊর্দ্ধদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে? তিনি বাহিনীর ন্যায় সংখ্যানুসারে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে আহ্বান করেন; তাঁহার সামর্থ্যের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য প্রযুক্ত তাহাদের একটাও অনুপস্থিত থাকে না। যে যাকোব, তুমি কেন কহিতেছ, হে ইস্রায়েল, কেন তুমি বলিতেছ, আমার পথ সদাপ্রভু হইতে লুক্কায়িত, আমার বিচার আমার ঈশ্বর হইতে সরিয়া গিয়াছে? তুমি কি জ্ঞাত হও নাই? তুমি কি শুন নাই? অনাদি অনন্ত ঈশ্বর, সদাপ্রভু, পৃথিবীর প্রান্ত সকলের সৃষ্টিকর্ত্তা ক্লান্ত হন না, শ্রান্ত হন না; তাঁহার বুদ্ধির অনুসন্ধান করা যায় না। তিনি ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন। তরুণেরা ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়, যুবকেরা স্খলিত, স্খলিত হয়; কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্দ্ধে উঠিবে; তাহারা দৌড়িলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না। হে উপকূল সকল, আমার সাক্ষাতে নীরব হও; লোকবৃন্দ নূতন বল প্রান্ত হউক; তাহারা নিকটে আইসুক, পরে কথা বলুক; আমরা একত্র হইয়া বিচার করিব। কে পূর্ব্বদিক হইতে এক জনকে উত্তেজিত করিল? তিনি ধর্ম্মশীলতায় তাহাকে ডাকিয়া আপনার অনুগামী করেন; তিনি জাতিগণকে তাহার সম্মুখে দিবেন, রাজগণের উপরে তাহাকে কর্ত্তৃত্ব করাইবেন, তিনি তাহাদিগকে ধূলির ন্যায় তাহার খড়্‌গের সম্মুখে দিবেন, চালিত নাড়ার ন্যায় তাহার ধনুকের সম্মুখে দিবেন। সে তাহাদের পশ্চাৎ ধাবমান হইবে, নিরাপদে অগ্রসর হইবে; যে পথে কখনও পদার্পণ করে নাই। সেই পথে যাইবে। এ সকল কাহার কৃত, কাহার সাধিত? কে পুরুষাবলিকে আদি অবধি আহ্বান করেন? আমি সদাপ্রভু আদি, এবং সেই আমি শেষকালীন লোকদের সহবর্ত্তী। উপকূল সকল দৃষ্টিপাত করিয়া ভীত হইল, পৃথিবীর প্রান্ত সকল ত্রাসযুক্ত হইল; তাহারা নিকটবর্ত্তী হইয়া আসিল। তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সাহায্য করিল, আপন আপন ভ্রাতাকে কহিল, সাহস কর। শিল্পকর স্বর্ণকারকে আশ্বাস দিল, এবং হাতুড়িতে সমানকারী লোক নেহাইর উপরে আঘাতকারীকে জোড়ের বিষয়ে কহিল, উত্তম হইয়াছে; এবং প্রেক দিয়া [প্রতিমাটা] দৃঢ় করিল, যেন তাহা না নড়ে। কিন্তু হে আমার দাস ইস্রায়েল, আমার মনোনীত যাকোব, আমার বন্ধু অব্রাহামের বংশ, আমি তোমাকে ধরিয়া পৃথিবীর প্রান্ত হইতে আনিয়াছি, পৃথিবীর সীমা হইতে আহ্বান করিয়া বলিয়াছি, তুমি আমার দাস, আমি তোমাকে মনোনীত করিয়াছি, দূর করি নাই। ভয় করিও না, কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি; ব্যাকুল হইও না, কারণ আমি তোমার ঈশ্বর; আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব; আমি আপন ধর্ম্মশীলতার দক্ষিণ হস্ত দ্বারা তোমাকে ধরিয়া রাখিব। দেখ, যাহারা তোমার প্রতি কুপিত, তাহারা সকলে লজ্জিত ও বিষণ্ণ হইবে; যাহারা তোমার সহিত বিবাদ করে, তাহারা অবস্তুবৎ হইবে, বিনষ্ট হইবে। যাহারা তোমার সহিত বিরোধ করে, তাহাদিগকে তুমি অন্বেষণ করিবে, কিন্তু দেখিতে পাইবে না; যাহারা তোমার সহিত যুদ্ধ করে, তাহারা অবস্তুবৎ ও অকিঞ্চনবৎ হইবে। কেননা আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর তোমার দক্ষিণ হস্ত ধারণ করিব; তোমাকে বলিব, ভয় করিও না, আমি তোমার সাহায্য করিব। হে কীট যাকোব, হে ইস্রায়েলের নরগণ, ভয় করিও না; সদাপ্রভু কহেন, আমি তোমার সাহায্য করিব; আর ইস্রায়েলের পবিত্রতম তোমার মুক্তিদাতা। দেখ, আমি তোমাকে তীক্ষ্ণ দন্তশ্রেণীবিশিষ্ট শস্যমাড়া নূতন গুঁড়ির ন্যায় করিব; তুমি পর্ব্বতগণকে মাড়িয়া চূর্ণ করিবে, উপপর্ব্বতগণকে ভুষীর সমান করিবে। তুমি তাহাদিগকে ঝাড়িবে বায়ু তাহাদিগকে উড়াইয়া লইবে, ও ঘূর্ণবায়ু তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিবে; আর তুমি সদাপ্রভুতে উল্লাস করিবে, ইস্রায়েলের পবিত্রতমের শ্লাঘা করিবে। দুঃখী দরিদ্রগণ জল অন্বেষণ করে কিন্তু জল নাই, তাহাদের জিহ্বা তৃষ্ণাতে শুষ্ক হইয়াছে; আমি সদাপ্রভু তাহাদিগকে উত্তর দিব, আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর তাহাদিগকে ত্যাগ করিব না। আমি বৃক্ষাদিশূন্য গিরিশ্রেণীতে নদনদী, ও সমস্থলীর মধ্যে স্থানে স্থানে উনুই খুলিব; আমি প্রান্তরকে জলাশয় ও শুষ্ক ভূমিকে জলের প্রস্রবণ করিব। আমি প্রান্তরে, এরস, বাবলা, গুলমেঁদি ও তৈলবৃক্ষ রোপন করিব; আমি মরুভূমিতে দেবদারু, তিধর ও তাশূর বৃক্ষ একত্র লাগাইব; যেন তাহারা দেখিয়া জানিয়া, বিবেচনা করিয়া একেবারে নিশ্চয় বুঝিতে পারে যে, সদাপ্রভুর হস্ত এই কার্য্য করিয়াছে, ইস্রায়েলের পবিত্রতম ইহা সৃষ্টি করিয়াছেন। সদাপ্রভু কহেন, তোমরা আপনাদের বিবাদ উপস্থিত কর; যাকোবের রাজা কহেন, তোমরা আপনাদের দৃঢ় যুক্তি সকল নিকটে আন। উহারা সে সমস্ত লইয়া নিকটে আইসুক, যাহা যাহা ঘটিবে, আমাদিগকে জ্ঞাত করুক; পূর্ব্বকার বিষয় কি কি তাহা বল; তাহা হইলে আমরা বিবেচনা করিয়া তাহার শেষ ফল জানিতে পারিব; কিম্বা উহারা আগামী ঘটনা সকল আমাদের কর্ণগোচর করুক। উত্তরকালে কি কি ঘটিবে, তোমরা তাহা জ্ঞাত কর; তাহা করিলে তোমরা যে দেবতা, তাহা বুঝিতে পারিব; হাঁ, তোমরা মঙ্গল কর বা অমঙ্গল কর, তাহাতে আমরা বিস্মিত হইয়া একত্র তাহা নিরীক্ষণ করিব। দেখ, তোমরা অবস্তু ও তোমাদের কার্য্য অকিঞ্চন; যে জন তোমাদিগকে মনোনীত করে, সে ঘৃণার পাত্র। আমি উত্তরদিক্‌ হইতে এক ব্যক্তিকে উত্তেজিত করিলাম, সে উপস্থিত; সূর্য্যোদয়ের দিক্‌ হইতে সে আমার নামে আহ্বান করে; যেমন কেহ কর্দ্দম মর্দ্দন করে, ও কুম্ভকার যেমন মৃত্তিকা দলন করে, তেমনি সে দেশাধ্যক্ষগণকে দলিত করিবে। কে আদি অবধি ইহার সংবাদ দিয়াছে, যাহাতে আমরা জানিতে পারি? কে অগ্রে বলিয়াছে, যাহাতে আমরা বলিতে পারি সে সত্যনিষ্ঠ? সংবাদদাতা ত কেহই নাই; ঘোষণাকারী ত কেহই নাই; তোমাদের বাক্যের শ্রোতা ত কেহই নাই। প্রথমে [আমি] সিয়োনকে [বলিব], দেখ, ইহাদিগকে দেখ; আর যিরূশালেমকে এক জন সুসমাচার-প্রচারক দিব। আমি চাহিয়া দেখি, কেহই নাই; উহাদের মধ্যে মন্ত্রণাদাতা এমন কেহ নাই যে, আমি জিজ্ঞাসা করিলে একটী কথার উত্তর দিতে পারে। দেখ, উহারা সকলে, উহাদের কর্ম্ম সকল অসার, অকিঞ্চন; উহাদের ছাঁচে ঢালা প্রতিমা সকল বায়ু ও অবস্তুমাত্র। ঐ দেখ, আমার দাস, আমি তাঁহাকে ধারণ করি; তিনি আমার মনোনীত, আমার প্রাণ তাঁহাতে প্রীত; আমি তাঁহার উপরে আপন আত্মাকে স্থাপন করিলাম; তিনি জাতিগণের কাছে ন্যায়বিচার উপস্থিত করিবেন। তিনি চিৎকার করিবেন না, উচ্চশব্দ করিবেন না, পথে আপন রব শুনাইবেন না। তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না; সধূম শলিতা নির্ব্বাণ করিবেন না; সত্যে তিনি ন্যায়বিচার প্রচলিত করিবেন। তিনি নিস্তেজ হইবেন না, নিরুৎসাহ হইবেন না, যে পর্য্যন্ত না পৃথিবীতে ন্যায়বিচার স্থাপন করেন; আর উপকূলসমূহ তাঁহার ব্যবস্থার অপেক্ষায় থাকিবে। সদাপ্রভু ঈশ্বর, যিনি আকাশমণ্ডল সৃষ্টি করিয়াছেন ও তাহা বিস্তার করিয়াছেন, যিনি ভূতল ও তদুৎপন্ন সমস্তই বিছাইয়াছেন, যিনি তন্নিবাসী সকলকে নিঃশ্বাস দেন, ও তথাকার সমস্ত জঙ্গমকে জীবাত্মা দেন, তিনি এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভু ধর্ম্মশীলতায় তোমাকে আহ্বান করিয়াছি, আর আমি তোমার হস্ত ধরিব, তোমাকে রক্ষা করিব; এবং তোমাকে প্রজাগণের নিয়মস্বরূপ ও জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিয়া নিযুক্ত করিব; তুমি অন্ধদিগকে চক্ষু দিবে, তুমি কারাকূপ হইতে বন্দিদিগকে ও কারাগার হইতে অন্ধকারবাসিগণকে বাহির করিয়া আনিবে। আমি সদাপ্রভু, ইহাই আমার নাম; আমি আপন গৌরব অন্যকে, কিম্বা আপন প্রশংসা ক্ষোদিত প্রতিমাগণকে দিব না। দেখ, পূর্ব্বকার বিষয় সকল সিদ্ধ হইল; আর আমি নূতন নূতন ঘটনা জ্ঞাত করি, অঙ্কুরিত হইবার পূর্ব্বে তোমাদিগকে তাহা জানাই। হে সমুদ্রগামীরা, ও সাগরস্থ সকলে, হে উপকূলসমূহ ও তন্নিবাসীরা, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নূতন গীত গাহ, পৃথিবীর প্রান্ত হইতে তাঁহার প্রশংসা গাহ। প্রান্তর ও তথাকার নগর সকল উচ্চৈঃস্বর করুক, কেদরের বসতি গ্রাম সকল তাহা করুক, শেলা-নিবাসীরা আনন্দ-রব করুক, পর্ব্বতগণের চূড়া হইতে মহানাদ করুক; তাহারা সদাপ্রভুর গৌরব স্বীকার করুক, উপকূল সমূহের মধ্যে তাঁহার প্রশংসা প্রচার করুক। সদাপ্রভুর বীরের ন্যায় যাত্রা করিবেন, যোদ্ধার ন্যায় উদ্যোগ উত্তেজিত করিবেন; তিনি জয়ধ্বনি করিবেন, হাঁ, মহানাদ করিবেন; তিনি শত্রুদের বিপরীতে পরাক্রম দেখাইবেন; আমি অনেক দিন চূপ করিয়া আছি, নীরব আছি, ক্ষান্ত রহিয়াছি; এখন প্রসবকারিণী স্ত্রীর ন্যায় কোঁকাইয়া উঠিব; আমি এককালে নিঃশ্বাস টানিয়া ফুৎকার করিব। আমি পর্ব্বত ও উপপর্ব্বতগণকে ধ্বংস করিব, তদুপরিস্থ সমস্ত তৃণ শুষ্ক করিব, এবং নদনদীকে উপকূল, ও জলাশয় সকল শুষ্ক করিব। আমি অন্ধদিগকে তাহাদের অবিদিত পথ দিয়া লইয়া যাইব; যে সকল মার্গ তাহারা জানে না, সেই সকল মার্গ দিয়া তাহাদিগকে চালাইব; আমি তাহাদের অগ্রে অন্ধকারকে আলোক, এ বক্রভূমিকে সরল করিব; এই সমস্ত আমি করিব, তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিব না। যাহারা ক্ষোদিত প্রতিমাদিগেতে নির্ভর করে, যাহারা ছাঁচে ঢালা প্রতিমাদিগকে বলে, তোমরা আমাদের দেবতা, তাহাদিগকে ফিরাইয়া দেওয়া যাইবে, তাহারা নিতান্ত লজ্জিত হইবে। হে বধিরগণ, শুন; হে অন্ধ সকল, দেখিবার জন্য চক্ষু মেল। আমার দাস বই আর অন্ধ কে? আমার প্রেরিত দূতের ন্যায় বধির কে? [আমার] মিত্রের ন্যায় অন্ধ কে? সদাপ্রভুর দাসের ন্যায় অন্ধ কে? তুমি অনেক বিষয় দেখিতেছ, কিন্তু মন দিতেছ না; তাহার কর্ণ খোলা রহিয়াছে, কিন্তু সে শুনে না। সদাপ্রভু আপন ধর্ম্মশীলতার অনুরোধে ব্যবস্থাকে মহৎ ও সমাদরণীয় করিতে প্রীত হইলেন। তথাপি তাহারা হৃতধন ও লুটিত জাতি; তাহারা সকলে গর্ত্তে পাশবদ্ধ ও কারাগারে লুক্কায়িত হইয়াছে; তাহারা হৃতধন হইয়াছে, উদ্ধারকর্ত্তা কেহ নাই; লুটিত হইয়াছে, কেহ বলে না, ফিরাইয়া দেও। তোমাদের মধ্যে কে ইহাতে কর্ণপাত করিবে? কে অবধান করিয়া ভাবিকালের নিমিত্ত তাহা শুনিয়া রাখিবে? কে যাকোবকে লুটিত হইতে দিয়াছে, ইস্রায়েলকে অপহারকদের হস্তে দিয়াছে? সেই সদাপ্রভু কি নয় যাঁহার বিরুদ্ধে আমরা পাপ করিয়াছি, যাঁহার পথে লোকেরা গমন করিতে অসম্মত ছিল, তাঁহার ব্যবস্থা মানিত না? তজ্জন্য তিনি তাহার উপরে আপন ক্রোধের তাপ ও যুদ্ধের প্রচণ্ডতা ঢালিয়া দিলেন; তাহাতে তাহার চারিদিকে অগ্নি জ্বলিয়া উঠিল, কিন্তু সে জানিল না; অগ্নি তাহার দাহ জন্মাইল, তথাপি সে মনোযোগ করিল না। কিন্তু এখন, হে যাকোব, তোমার সৃষ্টিকর্ত্তা, হে ইস্রায়েল, তোমার নির্ম্মাণকর্ত্তা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ভয় করিও না, কেননা আমি তোমাকে মুক্ত করিয়াছি, আমি তোমার নাম ধরিয়া তোমাকে ডাকিয়াছি, তুমি আমার। তুমি যখন জলের মধ্য দিয়া গমন করিবে, আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকিব; যখন নদ-নদীর মধ্য দিয়া গমন করিবে, সে সকল তোমাকে মগ্ন করিবে না; যখন অগ্নির মধ্য দিয়া চলিবে, তুমি পুড়িবে না, তাহার শিখা তোমার উপরে জ্বলিবে না। কেননা আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, ইস্রায়েলের পবিত্রতম, তোমার ত্রাণকর্ত্তা; আমি তোমার মুক্তির মূল্য বলিয়া মিসর, তোমার পরিবর্ত্তে কূশ ও সবা দিয়াছি। তুমি আমার দৃষ্টিতে বহুমূল্য ও সম্ভ্রান্ত, আমি তোমাকে প্রেম করিয়াছি, তজ্জন্য আমি তোমার পরিবর্ত্তে মনুষ্যগণকে, ও তোমার প্রাণের পরিবর্ত্তে জাতিগণকে দিব। ভয় করিও না, কেননা আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি; আমি পূর্ব্ব দিক্‌ হইতে তোমার বংশকে আনিব, ও পশ্চিম দিক্‌ হইতে তোমাকে সংগ্রহ করিব; আমি উত্তর দিক্‌কে বলিব, ছাড়িয়া দেও; দক্ষিণ দিক্‌কেও বলিব, রুদ্ধ রাখিও না; আমার পুত্রগণকে দূর হইতে, ও আমার কন্যাদিগকে পৃথিবীর প্রান্ত হইতে আনিয়া দেও; যে কেহ আমার নামে আখ্যাত, যাহাকে আমি আমার গৌরবার্থে সৃষ্টি করিয়াছি [সেই ব্যক্তিকে আনিয়া দেও], আমি তাহাকে নির্ম্মাণ করিয়াছি, আমি তাহাকে গঠন করিয়াছি। বাহির কর সেই অন্ধ জাতিকে, যাহার চক্ষু আছে; সেই বধিরগণকে, যাহাদের কর্ণ আছে। সমুদয় জাতি একত্র হউক, লোকবৃন্দ সমবেত হউক; তাহাদের মধ্যে কে ইহার সংবাদ দিতে পারে, ও পূর্ব্বকার বিষয় আমাদিগকে শুনাইতে পারে? তাহারা আপনাদের সাক্ষীদিগকে উপস্থিত করুক, তাহাতে নির্দ্দোষীকৃত হইবে; অথবা তাহারা শ্রবণ করুক, ও বলুক, সত্য বটে। সদাপ্রভু কহেন, তোমরাই আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস; যেন তোমরা জানিতে ও আমাতে বিশ্বাস করিতে পার, এবং বুঝিতে পার যে, আমিই তিনি; আমার পূর্ব্বে কোন ঈশ্বর নির্ম্মিত হয় নাই, এবং আমার পরেও হইবে না। আমি, আমিই সদাপ্রভু; আমি ভিন্ন আর ত্রাণকর্ত্তা নাই। আমিই সংবাদ দিয়াছি, পরিত্রাণ করিয়াছি, ঘোষণা করিয়াছি, কোন ইতর [দেবতা] তোমাদের মধ্যে ছিল না; অতএব তোমরাই আমার সাক্ষী, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আর আমিই ঈশ্বর। [এই] দিবস হইতেও আমিই তিনি, এবং আমার হস্ত হইতে উদ্ধারকারী কেহ নাই; আমি কার্য্য করিব, কে তাহা অন্যথা করিবে? সদাপ্রভু, তোমাদের মুক্তিদাতা, ইস্রায়েলের পবিত্রতম, এই কথা কহেন, আমি তোমাদেরই জন্য বাবিলে লোক পাঠাইয়াছি, তাহাদের সকলকে পলাতকের ন্যায় আনয়ন করিব, কল্‌দীয়দিগকে তাহাদের আনন্দগানের নৌকায় করিয়া আনিব। আমিই সদাপ্রভু, তোমাদের পবিত্রতম, ইস্রায়েলের সৃষ্টিকর্ত্তা, তোমাদের রাজা। যিনি সমুদ্রে পথ ও প্রচণ্ড জলরাশিতে মার্গ করিয়া দেন, যিনি রথ, অশ্ব, সৈন্য ও বীরগণকে বাহিরে আনয়ন করেন, —তাহারা এককালে নিদ্রাগত হয়, আর উঠিতে পারিবে না, তাহারা পাটের ন্যায় মিট্‌মিট্‌ করিতে করিতে নিবিয়া যায়,— সেই সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা পূর্ব্বকার কার্য্য সকল মনে করিও না, পুরাতন ক্রিয়া সকল আলোচনা করিও না। দেখ, আমি এক নূতন কার্য্য করিব, তাহা এখনই অঙ্কুরিত হইবে; তোমরা কি তাহা জানিবে না? এমন কি, আমি প্রান্তরমধ্যে পথ, ও মরুভূমিতে নদনদী করিয়া দিব। বন্য জন্তুগণ, শৃগাল ও উষ্ট্র পক্ষী সকল আমার গৌরব করিবে; কেননা আমি প্রান্তর মধ্যে জল ও মরুভূমিতে নদনদী যোগাই, আমার প্রজাবৃন্দকে, আমার মনোনীত লোকদিগকে, পান করাইবার নিমিত্তই যোগাই,; সেই যে প্রজাবৃন্দকে আমি আপনার নিমিত্ত নির্ম্মাণ করিয়াছি, তাহারা আমার প্রশংসা প্রচার করিবে। কিন্তু হে যাকোব, আমাকে তুমি ডাক নাই; হে ইস্রায়েল, তুমি আমার বিষয়ে ক্লান্ত হইয়াছ। তুমি আমার কাছে তোমার হোমবলির মেষাদি আন নাই, তোমার বলিদান দ্বারা আমার সমাদর কর নাই। আমি নৈবেদ্যের বিষয়ে তোমাকে দাস্যকর্ম্ম করাই নাই, ধূপের বিষয়ে তোমাকে ক্লান্ত করি নাই। তুমি আমার নিমিত্ত রৌপ্যমূল্যে বচ ক্রয় কর নাই, তোমার বলির মেদে আমাকে তৃপ্ত কর নাই; কিন্তু তোমার পাপ দ্বারা আমাকে দাস্যকর্ম্ম করাইয়াছ, তোমার অপরাধ সকল দ্বারা আমাকে ক্লান্ত করিয়াছ। আমি, আমিই আমার নিজের অনুরোধে তোমার অধর্ম্ম সকল মার্জ্জনা করি, তোমার পাপ সকল মনে রাখিব না। আমাকে স্মরণ করাইয়া দেও; আইস, আমরা পরস্পর বিচার করি; তুমি যেন নির্দ্দোষীকৃত হও, তজ্জন্য আপনার কথা বল। তোমার আদিপিতা পাপ করিল, তোমার মধ্যস্থগণ আমার বিপরীতে অধর্ম্ম করিয়াছে। এই জন্য আমি পবিত্র স্থানের অধ্যক্ষগণকে অপবিত্র করিলাম, এবং যাকোবকে অভিশাপে ও ইস্রায়েলকে বিদ্রূপে সমর্পণ করিলাম। কিন্তু হে আমার দাস যাকোব, হে আমার মনোনীত ইস্রায়েল, তুমি এখন শ্রবণ কর। যিনি তোমাকে গঠন করিয়াছেন, গর্ভাবধি তোমাকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন, ও তোমার সাহায্য করিবেন, সেই সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে আমার দাস যাকোব, হে আমার মনোনীত যিশুরূণ, ভয় করিও না। কেননা আমি তৃষিত ভূমির উপরে জল, এবং শুষ্ক স্থানের উপরে জলপ্রবাহ ঢালিয়া দিব; আমি তোমার বংশের উপরে আপন আত্মা, তোমার সন্তানদের উপরে আপন আশীর্ব্বাদ, ঢালিব। জলস্রোতের ধারে যেমন বাইশী বৃক্ষ, তেমনি তৃণের মধ্যে তাহারা অঙ্কুরিত হইবে। এক জন বলিবে, আমি সদাপ্রভুর; আর এক জন যাকোবের নামে অভিহিত হইবে; এবং আর এক জন আপন হস্তে লিখিবে ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে’, ও ইস্রায়েল নামে উপাধি গ্রহণ করিবে। সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের রাজা, তাহার মুক্তিদাতা, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমিই আদি, আমিই অন্ত, আমি ভিন্ন আর কোন ঈশ্বর নাই। আমার ন্যায় কে ডাকিবে, ও তাহা জ্ঞাত করিবে, এবং আমার জন্য তাহা বিন্যাস করিবে, —যে অবধি আমি পুরাকালীন প্রজাবৃন্দকে স্থাপন করিয়াছিলাম? আর যাহা যাহা আসিতেছে, এবং যাহা যাহা ঘটিবে, উহারা তাহা জ্ঞাত করুক। তোমরা কম্পান্বিত হইও না, ভয় করিও না; আমি কি পূর্ব্বাবধি তোমাদিগকে শুনাই নাই ও জানাই নাই? আর তোমরাই আমার সাক্ষী। আমি ভিন্ন আর কোন ঈশ্বর কি আছে? অন্য শৈল নাই, আমি কাহাকেও জানি না। ক্ষোদিত প্রতিমার নির্ম্মাতারা সকলে অবস্তু, তাহাদের পুত্তলিরত্ন সকল উপকারী নয়; এবং তাহাদের নিজের সাক্ষিগণ দেখে না, জানে না, যেন তাহারা লজ্জাপ্রাপ্ত হয়। কে দেবতা নির্ম্মাণ করিয়াছে, বা যাহা উপকারী নয়, এমন প্রতিমা ঢালিয়াছে? দেখ, তাহার সমস্ত সহায় লজ্জিত হইবে; সেই শিল্পকরেরা মর্ত্ত্যমাত্র, তাহারা সকলে একত্র হউক, উঠিয়া দাঁড়াউক; তাহারা একেবারে কম্পান্বিত ও লজ্জিত হইবে। কর্ম্মকার অস্ত্র [নির্ম্মাণ করে], তপ্ত অঙ্গারে পরিশ্রম করে, হাতুড়ি দ্বারা তাহা গড়ে, নিজ বলবান্‌ বাহু দ্বারা তাহা প্রস্তুত করে; আবার সে ক্ষুধিত হইয়া দুর্ব্বল হয়, জল পান না করিয়া ক্লান্ত হয়। সূত্রধর সূত্রপাত করে, সে সিন্দুর দ্বারা তাহার আকৃতি লিখে, তাহাতে রেঁদা বুলায়, কম্পাস দিয়া তাহার আকার নিরূপণ করে, এবং পুরুষের আকৃতি ও মনুষ্যের সৌন্দর্য্য অনুসারে তাহা নির্ম্মাণ করে, যেন তাহা বাটীতে বাস করিতে পারে। কেহ আপনার নিমিত্ত এরস বৃক্ষ ছেদন করে, তর্সা ও অলোন বৃক্ষ গ্রহণ করে, বনতরুগণের মধ্যে কোন দৃঢ় বৃক্ষ মনোনীত করে; সে শরল বৃক্ষ রোপন করে, আর বৃষ্টি তাহা পালন করে। পরে তাহা জ্বালানি কাষ্ঠ হইয়া মনুষ্যের ব্যবহারে আইসে; সে তাহার কিছু লইয়া আগুন পোহায়; আবার তুন্দুর তপ্ত করিয়া রুটি পাক করে; আবার এক দেবতা নির্ম্মাণ করিয়া তাহার কাছে প্রণিপাত করে, এক প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়া তাহার কাছে দণ্ডবৎ হয়। সে তাহার এক অংশ আগুনে পোড়ায়, অন্য অংশ দ্বারা মাংস [পাক করিয়া] ভোজন করে, শূল্যমাংস প্রস্তুত করিয়া তৃপ্ত হয়, আবার আগুন পোহাইয়া বলে, আহা, আমি আগুন পোহাইলাম, আগুনের তাপ লইলাম। আর সে তাহার অবশিষ্ট অংশ দ্বারা এক দেবতা, আপনার জন্য এক প্রতিমা নির্ম্মাণ করে, সে তাহার কাছে দণ্ডবৎ হইয়া প্রণিপাত করে, এবং তাহার কাছে প্রার্থনা করিয়া বলে, আমাকে উদ্ধার কর, কেননা তুমি আমার দেবতা। তাহারা জানে না ও বিবেচনা করে না; কেননা তিনি তাহাদের চক্ষু বদ্ধ করিয়াছেন, তাই তাহারা দেখিতে পায় না; তাহাদের চিত্ত বদ্ধ করিয়াছেন, তাই তাহারা বুঝিতে পারে না। কেহই মনে করে না, কাহারও এমন জ্ঞান কি বুদ্ধি নাই যে বলিবে, আমি ইহার এক অংশ আগুনে পোড়াইয়াছি, আবার ইহার তপ্ত অঙ্গারে রুটি পাক করিয়াছি, আমি শূল্যমাংস প্রস্তুত করিয়া ভোজন করিয়াছি, তবে ইহার অবশিষ্ট অংশ দ্বারা কি ঘৃণার্হ বস্তু নির্ম্মাণ করিব? কাষ্ঠখণ্ডের কাছে কি দণ্ডবৎ হইব? সে ভস্মভোজী, মুগ্ধচিত্ত তাহাকে ভ্রান্ত করিয়াছে, সে আপন প্রাণ উদ্ধার করিতে পারে না, এবং ইহাও বলে না যে, আমার দক্ষিণ হস্তে কি মিথ্যা কথা নাই? হে যাকোব, হে ইস্রায়েল, তুমি এই সকল স্মরণ কর, কেননা তুমি আমার দাস, আমি তোমাকে গঠন করিয়াছি; তুমি আমার দাস; হে ইস্রায়েল, তুমি আমার স্মরণ হইতে ভ্রষ্ট হইবে না। আমি তোমার অধর্ম্ম সকল কুজ্ঝটিকার ন্যায়, তোমার পাপ সকল মেঘের ন্যায় ঘুচাইয়া ফেলিয়াছি; তুমি আমার প্রতি ফির, কেননা আমি তোমাকে মুক্ত করিয়াছি। হে স্বর্গ সকল, তোমরা আনন্দ-রব কর, কেননা সদাপ্রভু কার্য্য সাধন করিয়াছেন; হে পৃথিবীর অধঃস্থান সকল জয়-জয় ধ্বনি কর; হে পর্ব্বতগণ, উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান কর, হে কানন ও তন্মধ্যস্থ বৃক্ষ, [তোমরাও কর] কেননা সদাপ্রভু যাকোবকে মুক্ত করিয়াছেন, এবং ইস্রায়েলের মধ্যে আপনাকে শোভান্বিত করিবেন। তোমার মুক্তিদাতা এবং গর্ভাবধি তোমার গঠনকারী সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভু সর্ব্ববস্তু-নির্ম্মাতা, আমি একাকী আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছি, আমি ভূতল বিছাইয়াছি; আমার সঙ্গী কে? [সদাপ্রভু] বাচালদিগের চিহ্ন সকল ব্যর্থ করেন, ও মন্ত্রজ্ঞদিগকে উন্মত্ত করেন, তিনি জ্ঞানবানদিগকে হটাইয়া দেন, ও তাহাদের জ্ঞান মূর্খতাস্বরূপ করেন। তিনি আপন দাসের বাক্য স্থির করেন, ও আপন দূতগণের মন্ত্রণা সিদ্ধ করেন; তিনি যিরূশালেমের বিষয়ে কহেন, তাহা বসতিবিশিষ্ট হইবে, আর যিহূদার নগর সকলের বিষয়ে কহেন, সে গুলি পুনর্নির্ম্মিত হইবে, আর আমি দেশের উৎসন্ন স্থান সকল পুনর্ব্বার উঠাইব। তিনি অগাধ জলকে বলেন, শুষ্ক হও, আমি তোমার নদনদী শুকাইয়া ফেলিব। তিনি কোরসের উদ্দেশে কহেন, আমার পালরক্ষক, সে আমার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিবে। তিনি যিরূশালেমের বিষয়ে বলেন, সে পুনর্নির্ম্মিত হইবে, এবং মন্দিরকে বলেন, তোমার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইবে। সদাপ্রভু আপন অভিষিক্ত ব্যক্তি, কোরসের, বিষয়ে এই কথা কহেন, আমি তাহার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়াছি, আমি তাহার সম্মুখে নানা জাতিকে পরাভব করিব, আর রাজগণের কটিবন্ধ খুলিয়া ফেলিব; আমি তাহার অগ্রে কবাট সকল মুক্ত করিব, আর পুরদ্বার সকল বদ্ধ থাকিবে না। আমি তোমার অগ্রে অগ্রে গমন করিয়া উচ্চনীচ স্থান সমান করিব, আমি পিত্তলের কবাট ভগ্ন করিব, ও লৌহের হুড়কা কাটিয়া ফেলিব। আর আমি তোমাকে অন্ধকারাবৃত ধনকোষ ও গুপ্ত স্থানে সঞ্চিত নিধি দিব; যেন তুমি জানিতে পার, আমি সদাপ্রভুই তোমার নাম ধরিয়া ডাকি, আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর। আমার দাস যাকোবের ও আমার মনোনীত ইস্রায়েলের নিমিত্ত আমি তোমার নাম ধরিয়া তোমাকে ডাকিয়াছি; তুমি আমাকে না জানিলেও তোমাকে উপাধি দিয়াছি। আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়; আমি ব্যতীত অন্য ঈশ্বর নাই; তুমি আমাকে না জানিলেও আমি তোমার কটি বন্ধ করিব; যেন সূর্য্যোদয়ের স্থানাবধি পশ্চিম দিক্‌ পর্য্যন্ত লোকে জানিতে পারে যে, আমি ব্যতীত অন্য নাই; আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়। আমি দীপ্তির রচনাকারী ও অন্ধকারের সৃষ্টিকর্ত্তা, আমি শান্তির রচনাকারী ও অনিষ্টের সৃষ্টিকর্ত্তা; আমি সদাপ্রভু এই সকলের সাধনকর্ত্তা। হে আকাশমণ্ডল, উপর হইতে শিশির বর্ষণ কর, মেঘমালা ধার্ম্মিকতা বর্ষণ করুক; ভূমি বিদীর্ণ হউক, ও মেঘমালা পরিত্রাণ-ফল উৎপন্ন করুক, পৃথিবী সঙ্গে সঙ্গে ধার্ম্মিকতা অঙ্কুরিত করুক আমি সদাপ্রভু ইহার সৃষ্টিকর্ত্তা। ধিক্‌ তাহাকে, যে আপন নির্ম্মাতার সহিত বিবাদ করে; সে ত মাটীর খোলার মধ্যবর্ত্তী খোলা মাত্র। মৃত্তিকা কি মুম্ভকারকে বলিবে, ‘তুমি কি নির্ম্মাণ করিতেছ? তোমার রচিত বস্তু কি বলিবে, ‘উহার হস্ত নাই’? ধিক্‌ তাহাকে, যে পিতাকে বলে, ‘তুমি কি জন্মাইতেছ?’ কিম্বা স্ত্রীলোককে বলে, ‘তুমি কি প্রসব করিতেছ?’ সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের পবিত্রতম ও তাহার নির্ম্মাতা, এই কথা কহেন, তোমরা আগামী ঘটনা সকলের বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা কর; আমার সন্তানদের ও আমার হস্তকৃত কার্য্যের বিষয়ে আমাকে আদেশ দেও। আমি পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়াছি, ও পৃথিবীর উপরে মনুষ্যের সৃষ্টি করিয়াছি; আমি নিজ হস্তে আকাশমণ্ডল বিস্তীর্ণ করিয়াছি, এবং আকাশের সমস্ত বাহিনীকে আজ্ঞা দিয়া আসিতেছি। আমিই উহাকে ধর্ম্মশীলতায় উত্তেজিত করিয়াছি, আর উহার সকল পথ সমান করিব; সেই আমার নগরটী গাঁথিবে, এবং আমার বন্দীকৃত লোকদিগকে ছাড়িয়া দিবে, বিনামূল্যে ও বিনাপুরস্কারেই দিবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, মিসরের উপার্জ্জিত সম্পত্তি ও কূশের বাণিজ্যের লভ্য এবং দীর্ঘকায় সবায়ীয়গণ তোমার কাছে আসিবে, তাহারা তোমারই হইবে; তাহারা তোমার পশ্চাদগামী হইবে; শৃঙ্খলে বদ্ধ হইয়া আসিবে; আর তোমার কাছে প্রণিপাত করিয়া এই নিবেদন করিবে, ‘তোমারই মধ্যে ঈশ্বর আছেন, আর কেহ নয়, আর কোন ঈশ্বর নাই।’ হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর, হে ত্রাণকর্ত্তা, সত্য, তুমি আত্মগোপনকারী ঈশ্বর। তাহারা সকলে লজ্জিত ও বিষণ্ণ হইবে, তাহারা সকসঙ্গে অপমানগ্রস্ত হইয়া চলিয়া যাইবে, সেই পুত্তলি-নির্ম্মাতারা! কিন্তু ইস্রায়েল সদাপ্রভু কর্ত্তৃক অনন্তকালস্থায়ী পরিত্রাণ প্রাপ্ত হইয়াছে; তোমরা অনন্তকালেও কখনও লজ্জিত কি বিষণ্ণ হইবে না। কেননা আকাশমণ্ডলের সৃষ্টিকর্ত্তা সদাপ্রভু, স্বয়ং ঈশ্বর, যিনি পৃথিবীকে সংগঠন করিয়া নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তাহা স্থাপন করিয়াছেন, ও অনর্থক সৃষ্টি না করিয়া বাসস্থানার্থে নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তিনি এই কথা কহেন, আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়। আমি গোপনে অন্ধকারময় দেশের কোন স্থানে কথা কহি নাই; আমি যাকোবের বংশকে এই বাক্য কহি নাই যে, ‘তোমরা অনর্থক আমার অন্বেষণ কর,’ আমি সদাপ্রভু ন্যায্য বাক্য বলি, সরলতার কথা কহি। হে জাতিগণের মধ্য হইতে উত্তীর্ণ লোক সকল, তোমরা একত্র হইয়া আইস, একসঙ্গে নিকটে আইস; তাহারা কিছুই জানে না, যাহারা আপনাদের প্রতিমার কাষ্ঠ বহিয়া বেড়ায়, যাহারা এমন দেবতার কাছে প্রার্থনা করে, যে পরিত্রাণ করিতে পারে না। তোমরা সংবাদ দেও, কথা উপস্থিত কর; হাঁ, সকলে পরস্পর মন্ত্রণা করুক। পূর্ব্ব হইতে এ কথা কে জ্ঞাত করিয়াছে? সেকাল হইতে কে সংবাদ দিয়াছে? আমি সদাপ্রভু কি করি নাই? আমি ব্যতীত অন্য ঈশ্বর নাই; আমি ধর্ম্মশীল ও ত্রাণকারী ঈশ্বর; আমি ব্যতীত অন্য নাই। হে পৃথিবীর প্রান্ত সকল, আমার প্রতি দৃষ্টি করিয়া পরিত্রাণ প্রাপ্ত হও, কেননা আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়। আমি আপন নামে শপথ করিয়াছি, আমার মুখ হইতে ধার্ম্মিকতা নির্গত হইয়াছে, একটী বাক্য, যাহা ফিরিয়া আসিবে না, বস্তুতঃ আমার কাছে প্রত্যেক হাঁটু পাতিত হইবে, প্রত্যেক জিহ্বা শপথ করিবে। লোকে আমাকে বলিবে, কেবল সদাপ্রভুতেই ধার্ম্মিকতা ও শক্তি আছে; তাঁহারই কাছে লোকেরা আসিবে, এবং যে সকল লোক তাঁহাতে বিরক্ত, তাহারা লজ্জিত হইবে। সদাপ্রভুতেই ইস্রায়েলের সমস্ত বংশ ধার্ম্মিকীকৃত হইবে, ও শ্লাঘা করিবে। বেল নত হইল, নবো উবুড় হইয়া পড়িল; তাহাদের প্রতিমাগণ জন্তুদের উপরে ও পশুদের উপরে; তোমরা যাহাদিগকে তুলিয়া লইয়া বেড়াইতে, তাহারা বোঝা হইল, ক্লান্ত পশুর ভার হইল। তাহারা একসঙ্গে উবুড় হইল, নত হইয়া পড়িল, বোঝা রক্ষা করিতে পারিল না, বরং আপনারা বন্দি হইয়া চলিয়া গেল। হে যাকোবের কুল, হে ইস্রায়েলকুলের সমস্ত অবশিষ্টাংশ, আমার কথা শুন; গর্ভ হইতে আমি তোমাদিগকে বহন করিয়া আসিতেছি, মাতার উদর হইতে তোমাদিগকে বহন করিয়া আসিতেছি। আর তোমাদের বৃদ্ধ বয়স পর্য্যন্ত আমি যে সেই থাকিব, পক্বকেশ হওয়া পর্য্যন্ত আমিই তুলিয়া বহন করিব; আমিই নির্ম্মাণ করিয়াছি, আমিই বহন করিব; হাঁ, আমিই তুলিয়া বহন করিব, রক্ষা করিব। তোমরা আমাকে কাহার সদৃশ ও কাহার সমান বলিবে, কিম্বা কাহার সহিত আমার উপমা দিলে আমরা পরস্পর সমান হইব? তাহারা তোড়া হইতে স্বর্ণ ঢালে, নিক্তিতে রৌপ্য তৌল করে, স্বর্ণকারকে বানি দেয়, আর সে তাহার দ্বারা এক দেবতা নির্ম্মাণ করে, পরে তাহারা দণ্ডবৎ হইয়া প্রণিপাত করে। তাহারা তাহাকে স্কন্ধে তুলিয়া বহন করে, স্বস্থানে বসাইয়া দেয়, তাহাতে সে দাঁড়াইয়া থাকে, আপন স্থান হইতে সরে না; আবার এক জন তাহার কাছে ক্রন্দন করে, কিন্তু সে উত্তর দিতে পারে না, কাহাকেও সঙ্কট হইতে নিস্তার করিতে পারে না। তোমরা ইহা স্মরণ কর, ও পুরুষত্ব দেখাও; হে অধর্ম্মাচারিগণ, মনোযোগ কর। সেকালের পুরাতন কার্য্য সকল স্মরণ কর; কারণ আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়; আমি ঈশ্বর, আমার তুল্য কেহ নাই। আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই, আর বলি, আমার মন্ত্রণা স্থির থাকিবে, আমি আপনার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিব। আমি পূর্ব্ব দিক্‌ হইতে হিংস্র পক্ষীকে, দূরদেশ হইতে আমার মন্ত্রণার মনুষ্যকে, আহ্বান করি; আমি বলিয়াছি, আর আমি সফল করিব; আমি কল্পনা করিয়াছি, আর আমি সিদ্ধ করিব। হে কঠিন-চিত্তেরা, তোমরা যাহারা ধার্ম্মিকতা হইতে দূরবর্ত্তী, আমার কথা শুন; আমি নিজ ধর্ম্মশীলতা নিকটস্থ করিলাম; তাহা দূরে থাকিবে না, আর আমার পরিত্রাণের বিলম্ব হইবে না, আমার শোভাস্বরূপ ইস্রায়েলের জন্য আমি সিয়োনে পরিত্রাণ স্থাপন করিব। হে অনূঢ়া বাবিল-কন্যে, তুমি নামিয়া ধূলিতে বস; হে কল্‌দীয়দের কন্যে, ভূমিতে বস, সিংহাসন নাই; কেননা লোকে তোমাকে আর কোমলা ও সুখভোগিনী বলিয়া ডাকিবে না। যাঁতা লইয়া শস্য পেষণ কর, তোমার ঘোমটা খুল, পদের বস্ত্র তুল, জঙ্ঘা অনাবৃত কর, পদব্রজে নদনদী পার হও। তোমার নগ্নতা প্রকাশিত হইবে, হাঁ, তোমার লজ্জার বিষয় দৃশ্য হইবে; ‘আমি প্রতিশোধ দিব, কাহারও অনুরোধ মানিব না।’ আমাদের মুক্তিদাতা, তাঁহার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তিনি ইস্রায়েলের পবিত্রতম। হে কল্‌দীয়দের কন্যে, নীরবে বস, অন্ধকারে আশ্রয় লও; কেননা তুমি আর রাজ্য সকলের ঠাকুরাণী বলিয়া আখ্যাতা হইবে না। আমি আপন প্রজাবৃন্দের উপরে ক্রুদ্ধ হইয়াছিলাম, আপন অধিকার অপবিত্র করিয়াছিলাম, তোমার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিয়াছিলাম; তুমি তাহাদের প্রতি করুণা কর নাই, তোমার যোঁয়ালি অতি ভারী করিয়া বৃদ্ধ লোকের উপরে দিয়াছ। আর তুমি বলিলে, আমি চিরকাল ঠাকুরাণী থাকিব; তাই তুমি এ সকলে মনোযোগ কর নাই, শেষকালের ফলও বিবেচনা কর নাই। অতএব এখন, হে বিলাসিনি! ইহা শুন, তুমি নির্ভয়ে বসিয়া আছ, মনে মনে কহিতেছ, আমিই আছি, আমা ভিন্ন আর কেহ নাই, আমি বিধবা হইয়া বসিব না, সন্তান-বিরহ জ্ঞাত হইব না। কিন্তু সন্তান-বিরহ ও বৈধব্য, এই উভয়ই অকস্মাৎ এক দিনে তোমার প্রতি ঘটিবে; তোমার মায়াবিত্বের আধিক্য ও বিবিধ ইন্দ্রজালের প্রাচুর্য্য থাকিলেও উভয়ই পূর্ণ পরিমাণে তোমার উপরে আসিবে। তুমি আপন দুষ্টতায় নির্ভর করিয়াছ, তুমি বলিয়াছ, কেহ আমাকে দেখিতে পায় না; তোমার বিদ্যা ও তোমার জ্ঞান তোমাকে বিপথগামিনী করিয়াছে; তুমি মনে মনে বলিয়াছ, আমিই আছি, আমা ভিন্ন আর কেহ নাই। এইজন্য দুর্দ্দশা তোমার উপরে আসিবে, তুমি তাহা মন্ত্রবলে দূর করিতে পারিবে না; তোমার উপরে বিপদ্‌পাত হইবে, তুমি তাহার প্রতিবিধান করিতে পারিবে না; তোমার উপরে হঠাৎ বিনাশ উপস্থিত হইবে, তুমি তাহার কিছু জান না। যে বিবিধ ইন্দ্রজালে ও মায়াবিত্বের বাহুল্যে তুমি বাল্যকালাবধি শ্রম করিয়া আসিতেছ, এখন সেই সকল লইয়া দাঁড়াও; দেখি, যদি উপকার পাও, দেখি, যদি ভয় দেখাইতে পার। তুমি আপনার অনেক মন্ত্রণায় ক্লান্ত হইয়াছ; তবে জ্যোতিষীরা, নক্ষত্রদর্শীরা, মাসদৈবজ্ঞেরা উঠিয়া দাঁড়াউক, তোমার প্রতি যাহা যাহা ঘটিবে, তাহা হইতে তোমাকে নিস্তার করুক। দেখ, তাহারা খড়ের ন্যায় হইল; আগুন তাহাদিগকে পোড়াইয়া ফেলিল; তাহারা অগ্নিশিখার বল হইতে আপন আপন প্রাণ উদ্ধার করিতে পারিবে না; উহা উষ্ণ হইবার অঙ্গার বা সম্মুখে বসিবার আগুন নয়। তুমি যে সকল বিষয়ে পরিশ্রম করিয়াছ, সে সকল তোমার পক্ষে এইরূপ হইল; যাহারা তোমার সহিত যৌবনাবধি বাণিজ্য করিয়াছে, তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন পথে ভ্রান্ত হইল, তোমার নিস্তারকারী কেহ নাই। হে যাকোবের কুল, এই কথা শুন; তোমরা ত ইস্রায়েল নামে আখ্যাত ও যিহূদা-জলাশয় হইতে নিঃসৃত; তোমরা সদাপ্রভুর নাম লইয়া শপথ করিয়া থাক, ও ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে স্বীকার করিয়া থাক, কিন্তু সত্যে নয় ও ধার্ম্মিকতায় নয়। কারণ তাহারা পবিত্র নগরের লোক বলিয়া পরিচয় দেয়, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বরে নির্ভর করে; তাঁহার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু। পূর্ব্বকার বিষয় সকল আমি সেকাল অবধি জ্ঞাত করিয়াছি; সেগুলি আমার মুখ হইতে নির্গত হইয়াছিল, আমি তাহা জ্ঞাত করিতাম; আমি অকস্মাৎ সাধন করিলাম, সেগুলি উপস্থিত হইল। কারণ আমি জানিতাম যে, তুমি অবাধ্য, তোমার গ্রীবা লৌহশলাকাবৎ, ও তোমার কপাল পিত্তলময়; এই জন্য আমি পূর্ব্ব হইতে তোমাকে তাহার সংবাদ দিয়াছি, উপস্থিত হইবার অগ্রে তাহা তোমাকে শুনাইয়াছি; পাছে তুমি বল, আমার পুত্তলি ইহা করিয়াছে, আমার ক্ষোদিত প্রতিমা ও আমার ছাঁচে ঢালা প্রতিমা ইহার আজ্ঞা দিয়াছে। তুমি শুনিয়াছ, এই সমস্ত দেখ; তোমরা কি তাহা জ্ঞাত করিবে না? এখন হইতে আমি তোমাকে নূতন নূতন কথা শুনাই, সে সকল নিগূঢ়, তুমি জানিতে পার নাই। সে সকল এখনই সৃষ্ট হইল, পূর্ব্ব হইতে ছিল না; অদ্যকার পূর্ব্বে তুমি সে সকল শুন নাই; পাছে তুমি বল যে, আমি সে সকল জ্ঞাত ছিলাম। তুমি ত শুন নাই, জ্ঞাতও হও নাই, এবং পূর্ব্ব হইতে তোমার কর্ণ খোলাও হয় নাই; কেননা আমি জানিয়াছিলাম, তুমি নিতান্ত বিশ্বাসঘাতক ও গর্ভ হইতে অধর্ম্মাচারী বলিয়া আখ্যাত। আমি আপন নামের অনুরোধে ক্রোধ সম্বরণ করিব, এবং আপনার প্রশংসার্থে তোমার-প্রতি সংযত হইব, তোমাকে উচ্ছেদ করিব না। দেখ, আমি তোমাকে অগ্নিতে খাঁটি করিয়াছি, কিন্তু রৌপ্য বলিয়া নয়; দুঃখরূপ হাপরের মধ্যে তোমাকে পরীক্ষাসিদ্ধ করিয়াছি। আমি আপনার অনুরোধে, কেবল আপনারই অনুরোধে কার্য্য করিব, কারণ [আমার নাম] কেন অপবিত্রীকৃত হইবে? আমি ত আপন গৌরব অন্যকে দিব না। হে যাকোব, হে আমার আহূত ইস্রায়েল, আমার বাক্যে কর্ণপাত কর; আমিই তিনি, আমি আদি, আবার আমি অন্ত। আমারই হস্ত পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছে, আমার দক্ষিণ হস্ত আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছে; আমি তাহাদিগকে ডাকিলে সে সমস্ত একসঙ্গে দাঁড়ায়। তোমরা সকলে একত্র হইয়া শুন, উহাদের মধ্যে কে এ সকলের সংবাদ দিয়াছে? সদাপ্রভু ঐ যে ব্যক্তিকে প্রেম করেন, সে বাবিলের সম্বন্ধে তাঁহার মনোরথ সিদ্ধ করিবে, তাহার বাহু কল্‌দীয়দের উপরে [স্থাপিত হইবে]। আমি, আমিই কথা কহিলাম, হাঁ, আমি তাহাকে আহ্বান করিয়াছি, আমি তাহাকে আনিলাম, আর সে আপন পথে কৃতার্থ হইবে। তোমরা আমার নিকটে আইস, এই কথা শুন, আমি আদি অবধি গোপনে কহি নাই; যে অবধি সেই ঘটনা হইতেছে, সেই অবধি আমি তথায় বর্ত্তমান। আর এখন প্রভু সদাপ্রভু আমাকে ও তাঁহার আত্মাকে প্রেরণ করিয়াছেন। সদাপ্রভু, তোমার মুক্তিদাতা, ইস্রায়েলের পবিত্রতম, এই কথা কহেন, আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই। আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই? করিলে তোমার শান্তি নদীর ন্যায়, তোমার ধার্ম্মিকতা সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায় হইত; আর তোমার বংশ বালুকার ন্যায় হইত, তোমার সন্তান তাহার কণাসমূহের ন্যায় হইত, তাহার নাম উচ্ছিন্ন ও আমার সম্মুখ হইতে লুপ্ত হইত না। তোমরা বাবিল হইতে বাহির হও, কল্‌দীয়দের মধ্য হইতে পলায়ন কর, আনন্দগানের রবসহকারে ইহা প্রচার কর, এই সংবাদ দেও, পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত এই বিষয় উল্লেখ কর; তোমার বল, সদাপ্রভু আপন দাস যাকোবকে মুক্ত করিয়াছেন। তিনি যখন শুষ্ক স্থান দিয়া তাহাদিগকে লইয়া গেলেন, তাহারা তৃষ্ণার্ত্ত হইল না, তিনি তাহাদের জন্য শৈল হইতে স্রোত বহাইলেন; তিনি শৈল ভেদ করিলেন, জল প্রবাহিত হইল। সদাপ্রভু কহেন, দুষ্ট লোকদের কিছুই শান্তি নাই। হে উপকূল সকল, আমার বাক্য শুন; হে দূরস্থ জাতিগণ, কর্ণপাত কর। সদাপ্রভু গর্ভাবধি আমাকে ডাকিয়াছেন, মাতার উদর হইতে আমার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি আমার মুখ তীক্ষ্ণ খড়্‌গস্বরূপ করিয়াছেন, আপন হস্তের ছায়াতে আমাকে লুক্কায়িত করিয়াছেন, এবং আমাকে শাণিত বাণস্বরূপ করিয়াছেন, আপন তূণের মধ্যে রাখিয়াছেন। আর তিনি আমাকে বলিয়াছেন ‘তুমি আমার দাস, তুমি ইস্রায়েল, তোমাতেই আমি মহিমান্বিত হইব’। কিন্তু আমি কহিলাম, আহা! আমি পণ্ডশ্রম করিয়াছি, শূন্যতার ও অসারতার জন্য আপন শক্তি ব্যয় করিয়াছি; নিশ্চয়ই আমার বিচার সদাপ্রভুর কাছে, ও আমার শ্রমের ফল আমার ঈশ্বরের কাছে রহিয়াছে। আর এখন সদাপ্রভু বলেন; যিনি আমাকে গর্ভাবধি নির্ম্মাণ করিয়াছেন, যেন আমি তাঁহার দাস হইয়া যাকোবকে তাঁহার কাছে পুনরানয়ন করি, যেন ইস্রায়েল তাঁহার কাছে সংগৃহিত হয়; —বাস্তবিক, সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে আমি সম্মানিত, এবং আমার ঈশ্বর আমার বল হইয়াছেন; —তিনি বলেন, তুমি যে যাকোবের বংশ সকলকে উঠাইবার জন্য ও ইস্রায়েলের রক্ষিত লোকদিগকে পুনর্ব্বার আনিবার জন্য আমার দাস হও, ইহা লঘু বিষয়; আমি তোমাকে জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিব, যেন তুমি পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত আমার পরিত্রাণস্বরূপ হও। যে ব্যক্তি মনুষ্যের অবজ্ঞাত, প্রজাবৃন্দের ঘৃণাস্পদ ও কর্ত্তৃত্বকারীদের দাস, তাহাকে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের মুক্তিদাতা ও তাহার পবিত্রতম, এই কথা কহেন, তোমাকে দেখিলে রাজারা উঠিয়া দাঁড়াইবে, অধ্যক্ষেরা প্রণিপাত করিবে; সদাপ্রভুর নিমিত্তই করিবে, তিনি ত বিশ্বসনীয়; ইস্রায়েলের পবিত্রতমের নিমিত্ত করিবে, তিনি ত তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি প্রসন্নতার সময়ে তোমার প্রার্থনার উত্তর দিয়াছি, এবং পরিত্রাণের দিবসে তোমার সাহায্য করিয়াছি; আর আমি তোমাকে রক্ষা করিব, ও প্রজাবৃন্দের সন্ধিরূপে নিযুক্ত করিব; তাহাতে তুমি দেশের উন্নতি সাধন করিবে, ও ধ্বংসিত অধিকার সকল অধিকারে আনিবে; তুমি বন্দিগণকে বলিবে, বাহির হও; যাহারা অন্ধকারে আছে, তাহাদিগকে বলিবে প্রকাশিত হও। তাহারা পথে পথে চরিবে, ও বৃক্ষশূন্য গিরিশ্রেণী তাহাদের চরাণিস্থান হইবে। তাহারা ক্ষুধিত কি পিপাসিত হইবে না; এবং তপ্ত বালুকা কি রৌদ্র দ্বারা আহত হইবে না; কেননা যিনি তাহাদের প্রতি দয়াকারী, তিনি তাহাদিগকে চরাইবেন, জলের উনুইয়ের নিকটে লইয়া যাইবেন। আর আমি আমার সমস্ত পর্ব্বত পথ করিব, আর আমার রাজপথ সকল উচ্চীকৃত হইবে। দেখ, ইহারা দূর হইতে আসিবে; আর দেখ, উহারা উত্তর ও পশ্চিম দিক্‌ হইতে আসিবে; আর ঐ লোকেরা সীনীম দেশ হইতে আসিবে। আকাশমণ্ডল, আনন্দ-রব কর, পৃথিবী, উল্লাসিত হও; পর্ব্বতগণ, উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান কর; কেননা সদাপ্রভু আপন প্রজাগণকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, আর আপন দুঃখীদের প্রতি করুণা করিবেন। কিন্তু সিয়োন কহিল, সদাপ্রভু আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, প্রভু আমাকে ভুলিয়া গিয়াছেন। স্ত্রীলোক কি আপন স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলিয়া যাইতে পারে? আপন গর্ভজাত বালকের প্রতি কি স্নেহ করিবে না? বরং তাহারা ভুলিয়া যাইতে পারে, তথাপি আমি তোমাকে ভুলিয়া যাইব না। দেখ, আমি আপন হস্তের তালুতে তোমার আকৃতি লিখিয়াছি, তোমার প্রাচীর সর্ব্বদা আমার সম্মুখে আছে। তোমার পুত্রেরা ত্বরা করিতেছে, তোমার উৎপাটনকারীরা ও উৎসন্নকারীরা তোমার মধ্য হইতে নির্গত হইবে। তুমি চারিদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, এই সকলে একত্র হইয়া তোমার কাছে আসিতেছে। সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তুমি ভূষণের ন্যায় এই সকলকে পরিধান করিবে, কন্যার মেখলার ন্যায় এই সকলকে ধারণ করিবে। কারণ তোমার উৎসন্ন ও ধ্বংসিত স্থান সকলের এবং তোমার নষ্ট দেশের বিষয় [বলিতেছি]; এক্ষণে তুমি নিবাসীদের পক্ষে সঙ্কীর্ণ হইবে, এবং যাহারা তোমাকে গ্রাস করিয়াছিল, তাহারা দূরে থাকিবে। তোমার বিরহের সন্তানগণ ইহার পরে তোমার কর্ণগোচরে বলিবে, আমার পক্ষে এই স্থান সঙ্কীর্ণ; সরিয়া যাও, আমাকে বাস করিতে দেও। তখন তুমি মনে মনে বলিবে, আমার এই সকলকে কে জন্ম দিয়াছে? আমি ত সন্তান-বিরহিতা ও বন্ধ্যা, নির্ব্বাসিতা ও পরিভ্রান্তা ছিলাম; ইহাদিগকে কে প্রতিপালন করিয়াছে? দেখ, আমি একাকিনী অবশিষ্টা ছিলাম, ইহারা কোথায় ছিল? প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি জাতিগণের প্রতি আমার হস্ত তুলিব, লোকবৃন্দের প্রতি আমার পতাকা উঠাইব, তাহাতে তাহারা তোমার পুত্রগণকে কোলে করিয়া, ও তোমার কন্যাদিগকে কাঁধে করিয়া আনিয়া দিবে। আর রাজগণ তোমার রক্ষণাবেক্ষণকারী পালক ও তাহাদের রাণীরা তোমার ধাত্রী হইবে; তাহারা ভূমিতে মুখ দিয়া তোমার কাছে প্রণিপাত করিবে, ও তোমার চরণের ধূলি চাটিবে; আর তুমি জানিতে পারিবে, আমিই সদাপ্রভু; যাহারা আমার অপেক্ষা করে, তাহারা লজ্জিত হইবে না। বীর হইতে কি যুদ্ধে ধৃত প্রাণী হরণ করা যায়? কিম্বা ন্যায়বানের বন্দিগণকে কি মুক্ত করা যায়? সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অবশ্য বীরের বন্দিগণকে হরণ করা যাইবে, ও ভীমবিক্রান্তের ধৃত প্রাণীকে মুক্ত করা যাইবে; কারণ তোমার প্রতিবাদীর সহিত আমিই বিবাদ করিব, আর তোমার সন্তানদিগকে আমিই ত্রাণ করিব। আর আমি তোমার উপদ্রবকারিগণকে তাহাদেরই মাংস ভোজন করাইব; তাহারা নূতন দ্রাক্ষারসের ন্যায় আপন আপন রক্তে মত্ত হইবে; আর মর্ত্ত্যমাত্র জানিতে পারিবে যে, আমিই সদাপ্রভু তোমার ত্রাণকর্ত্তা, তোমার মুক্তিদাতা, যাকোবের এক বীর। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যে পত্র দ্বারা তোমাদের মাতাকে ত্যাগ করিয়াছি, তাহার সেই ত্যাগপত্র কোথায়? কিম্বা আমার মহাজনদের মধ্যে কাহার কাছে তোমাদিগকে বিক্রয় করিয়াছি? দেখ, তোমাদের অপরাধ প্রযুক্ত তোমরা বিক্রীত হইয়াছ, এবং তোমাদের অধর্ম্ম প্রযুক্ত তোমাদের মাতা ত্যক্তা হইয়াছে। আমি আসিলে কেহ উপস্থিত হইল না কেন? আমি ডাকিলে কেহ উত্তর দিল না কেন? আমার হস্ত কি এমন খাট হইয়াছে যে, আমি মুক্ত করিতে পারি না? আমার কি উদ্ধার করিবার ক্ষমতা নাই? দেখ, আমি ধমকে সমুদ্র শুষ্ক করি, নদনদী প্রান্তরে পরিণত করি, তথাকার মৎস্যগণ জলাভাবে দুর্গন্ধযুক্ত হয়, পিপাসায় মারা পড়ে। আমি আকাশমণ্ডলকে কালিমা পরাই, ও চট তাহার আচ্ছাদন করি। প্রভু সদাপ্রভু আমাকে শিক্ষাগ্রাহীদের জিহ্বা দিয়াছেন, যেন আমি বুঝিতে পারি, কিরূপে ক্লান্ত লোককে বাক্য দ্বারা সুস্থির করিতে হয়; তিনি প্রভাতে প্রভাতে জাগরিত করেন, আমার কর্ণ জাগরিত করেন, যেন আমি শিক্ষাগ্রাহীদের ন্যায় শুনিতে পাই। প্রভু সদাপ্রভু আমার কর্ণ খুলিয়াছেন, এবং আমি বিরুদ্ধাচারী হই নাই, পারঙ্মুখ হই নাই। আমি প্রহারকদের প্রতি আপন পৃষ্ঠ, যাহারা দাড়ি উপড়াইয়াছে, তাহাদের প্রতি আপন গাল পাতিয়া দিলাম, অপমান ও থুথু হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিলাম না। কারণ প্রভু সদাপ্রভু আমার সাহায্য করিবেন, সেই জন্য আমি বিহ্বল হই নাই, সেই জন্য চকমকির পাথরের ন্যায় আপন মুখ স্থাপন করিয়াছি, এবং আমি জানি যে লজ্জিত হইব না। যিনি আমাকে ধার্ম্মিক করেন, তিনি নিকটবর্ত্তী; কে আমার সহিত বিবাদ করিবে? আইস, আমরা একত্র দাঁড়াই; কে আমার প্রতিবাদী? সে আমার নিকটে আইসুক। দেখ, প্রভু সদাপ্রভু আমার সাহায্য করিবেন, কে আমাকে দোষী করিবে? দেখ, তাহারা সকলে বস্ত্রের ন্যায় জীর্ণ হইবে, কীটে তাহাদিগকে ভক্ষণ করিবে। তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে, যে তাঁহার দাসের রবে কর্ণপাত করে? যে অন্ধকারে চলে যাহার দীপ্তি নাই, সে সদাপ্রভুর নামে বিশ্বাস করুক, আপন ঈশ্বরে নির্ভর দিউক। দেখ, অগ্নি জ্বালাইতেছ ও শিখামণ্ডলে আপনাদিগকে বেষ্টন করিতেছ যে তোমরা, তোমরা সকলে আপনাদের অগ্নির আলোকে ও আপনাদের প্রজ্বলিত শিখামণ্ডলকে গমন কর। আমার হস্তে এই ফল পাইবে, তোমরা দুঃখে শয়ন করিবে। তোমরা, যাহারা ধার্ম্মিকতার অনুগামী, যাহারা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতেছ, তোমরা আমার বাক্যে কর্ণপাত কর; তোমরা যে শৈল হইতে তক্ষিত ও যে কূপের ছিদ্র হইতে খনিত হইয়াছ, তাহার প্রতি দৃষ্টি কর। তোমাদের পিতা অব্রাহাম ও তোমাদের প্রসবকারিণী সারার প্রতি দৃষ্টি কর; ফলতঃ যখন সে একাকী ছিল, তখন আমি তাহাকে ডাকিয়া আশীর্ব্বাদযুক্ত ও বহুবংশ করিলাম। বস্তুতঃ সদাপ্রভু সিয়োনকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, তিনি তাহার সমস্ত উৎসন্ন স্থানকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, এবং তাহার প্রান্তরকে এদনের ন্যায়, ও তাহার শুষ্ক ভূমিকে সদাপ্রভুর উদ্যানের ন্যায় করিয়াছেন; তাহার মধ্যে আমোদ ও আনন্দ, স্তবগান ও সঙ্গীতের ধ্বনি পাওয়া যাইবে। হে আমার প্রজাগণ, আমার বাক্যে অবধান কর; হে আমার জনবৃন্দ, আমার বচনে কর্ণপাত কর; কেননা আমা হইতে ব্যবস্থা নির্গত হইবে, আমি জাতিগণের দীপ্তির জন্য আপন বিচার স্থাপন করিব। আমার ধর্ম্মশীলতা নিকটবর্ত্তী, আমার পরিত্রাণ নির্গত হইল, এবং আমার বাহু জাতিগণের বিচার নিষ্পন্ন করিবে; উপকূল সকল আমারই অপেক্ষায় থাকিবে, ও আমার বাহুতে প্রত্যাশা রাখিবে। তোমরা আকাশমণ্ডলের প্রতি চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টিপাত কর, অধঃস্থিত ভূমণ্ডলও নিরীক্ষণ কর; কেননা আকাশমণ্ডল ধূমের ন্যায় অন্তর্হিত হইবে, ভূমণ্ডল বস্ত্রের ন্যায় জীর্ণ হইবে, এবং তন্নিবাসিগণ সেইরূপে মারা পড়িবে; কিন্তু আমার পরিত্রাণ অনন্তকাল থাকিবে, আমার ধর্ম্মশীলতা বিনষ্ট হইবে না। তোমরা যাহারা ধার্ম্মিকতা জান, যে লোকদের অন্তরে আমার ব্যবস্থা আছে, তোমরা আমার বাক্যে কর্ণপাত কর; মর্ত্ত্যের টিট্‌কারিতে ভয় করিও না, তাহাদের বিদ্রূপে উদ্বিগ্ন হইও না। কেননা কীটে তাহাদিগকে বস্ত্রের ন্যায় খাইয়া ফেলিবে, ও কৃমিরা তাহাদিগকে মেষলোমের ন্যায় খাইয়া ফেলিবে; কিন্তু আমার ধর্ম্মশীলতা অনন্তকাল ও আমার পরিত্রাণ পুরুষানুক্রমে থাকিবে। জাগ, জাগ, বল পরিধান কর, হে সদাপ্রভুর বাহু; জাগ, যেমন পূর্ব্বকালে, সেকালের পুরুষে পুরুষে জাগিয়াছিলে, তুমিই কি রহবকে কুচি কুচি করিয়া কাট নাই, প্রকাণ্ড জলচরকে বিদ্ধ কর নাই? তুমিই কি সমুদ্র, মহাজলধির জল শুষ্ক কর নাই, সমুদ্রের গভীর স্থানকে কি পথ কর নাই, যেন মুক্তিপ্রাপ্ত লোকেরা পার হইয়া যায়? সদাপ্রভুর নিস্তারিত লোকেরা ফিরিয়া আসিবে, আনন্দগান পুরঃসর সিয়োনে আসিবে, এবং তাহাদের মস্তকে নিত্যস্থায়ী হর্ষমুকুট থাকিবে; তাহারা আমোদ ও আনন্দ প্রাপ্ত হইবে, এবং খেদ ও আর্ত্তস্বর দূরে পলায়ন করিবে। আমি, আমিই তোমাদের সাত্ত্বনাকর্ত্তা। তুমি কে যে, মর্ত্ত্যকে ভয় করিতেছ, সে ত মরিয়া যাইবে; এবং মনুষ্য-সন্তানকে ভয় করিতেছ, সে ত তৃণের ন্যায় হইয়া পড়িবে; আর তোমার নির্ম্মাতা সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গিয়াছ, যিনি আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন, পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছেন; এবং তুমি সমস্ত দিন অবিরত উপদ্রবীর ক্রোধ হেতু ভয় পাইতেছ, যখন সে বিনাশ করিতে প্রস্তুত হইয়াছে? উপদ্রবীর ক্রোধ কোথায়? ন্যুব্জ বন্দি শীঘ্রই মুক্ত হইবে; সে মরিয়া কূপে নামিয়া যাইবে না, আর তাহার খাদ্যের অভাব হইবে না। আমি ত সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, আমি সমুদ্রকে ব্যস্ত করিলে তাহার তরঙ্গ কল্লোলধ্বনি করে; বাহিনীগণের সদাপ্রভু, এই আমার নাম। আর আমি আপন বাক্য তোমার মুখে রাখিলাম, আপন হস্তের ছায়ায় তোমাকে আচ্ছাদন করিলাম। আমার উদ্দেশ্যে, আকাশমণ্ডল রোপন করি, পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করি, এবং সিয়োনকে বলি, তুমি আমার প্রজা। জাগ, জাগ, উঠিয়া দাঁড়াও, হে যিরূশালেম, তুমি সদাপ্রভুর হস্ত হইতে তাঁহার ক্রোধ-পানপাত্রে পান করিয়াছ, মত্ততাজনক বৃহৎ পানপাত্রে পান করিয়াছ, তলানি চাটিয়া খাইয়াছ। [এই পুরী] যে সকল পুত্র প্রসব করিয়াছে, তাহাদের মধ্যে তাহাকে লইয়া যাইবার কেহই নাই; যে সকল পুত্র প্রতিপালন করিয়াছে, তাহাদের মধ্যে ইহার হস্ত ধরিবার কেহ নাই। এই দুই তোমার প্রতি ঘটিয়াছে; কে তোমার নিমিত্ত বিলাপ করিবে? ধনাপহার ও বিনাশ, দুর্ভিক্ষ ও খড়্‌গ; আমি কিরূপে তোমাকে সান্ত্বনা করিব? জালে বদ্ধ হরিণের ন্যায় তোমার পুত্রগণ মূর্চ্ছিত হইয়াছে, প্রতি সড়কের মাথায় পড়িয়া আছে; তাহারা সদাপ্রভুর ক্রোধে তোমার ঈশ্বরের ধমকে পরিপূর্ণ। অতএব তুমি এই কথা শুন, হে দুঃখিনি, তুমি মত্তা, কিন্তু দ্রাক্ষারসে নয়; তোমার প্রভু সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, যিনি আপন প্রজাদের পক্ষবাদী, তিনি এই কথা কহেন, দেখ, আমি মত্ততাজনক পানপাত্র, আমার ক্রোধরূপ বৃহৎ পানপাত্র, তোমার হস্ত হইতে লইলাম; সেই পানপাত্রে তুমি আর পান করিবে না। আর আমি তোমার সেই ক্লেশদাতাদের হস্তে তাহা সমর্পণ করিব, যাহারা তোমার প্রাণকে বলিয়াছে, ‘হেঁট হও, আমরা তোমার উপর দিয়া গমন করি,’ আর তুমি ভূমির ন্যায় ও সড়কের ন্যায় পথিকদের কাছে আপন পৃষ্ঠ পাতিয়া দিয়াছ। জাগ, জাগ, হে সিয়োন বল পরিধান কর; পবিত্র নগরি যিরূশালেম, তোমার রম্য বস্ত্র সকল পরিধান কর, কেননা এখন অবধি তোমার মধ্যে অছিন্নত্বক্‌ কি অশুচি লোক আর প্রবেশ করিবে না। গাত্রের ধূলা ঝাড়িয়া ফেল, হে যিরূশালেম, উঠ, উপবেশন কর; হে বন্দি সিয়োন-কন্যে, তোমার গ্রীবার বন্ধন সকল খুলিয়া ফেল। কারণ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা বিনামূল্যে বিক্রীত হইয়াছিলে, আর বিনারৌপ্যে মুক্ত হইবে। কেননা প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার প্রজারা পূর্ব্বে মিসরে প্রবাস করিবার জন্য তথায় নামিয়া গিয়াছিল; আবার অশূর অকারণে তাহাদের প্রতি দৌরাত্ম্য করিল। আর সদাপ্রভু কহেন, এখন এই স্থানে আমার কি আছে? কেননা আমার প্রজাগণ বিনামূল্যে নীত হইয়াছে। সদাপ্রভু কহেন, তাহাদের কর্ত্তারা চীৎকার করিতেছে, এবং আমার নাম সমস্ত দিন অবিরত নিন্দিত হইতেছে। এই জন্য আমার প্রজাগণ আমার নাম জানিবে, এই জন্য তাহারা সেই দিন [জানিবে] যে, আমিই কথা কহিতেছি; দেখ, এই আমি। আহা! পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ কেমন শোভা পাইতেছে, যে সুসমাচার প্রচার করে, শান্তি ঘোষণা করে, মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, পরিত্রাণ ঘোষণা করে, সিয়োনকে বলে, তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করেন। তোমার প্রহরিগণের রব! তাহারা উচ্চধ্বনি করিতেছে, তাহারা একসঙ্গে আনন্দগান করিতেছে, কেননা সদাপ্রভু যখন সিয়োনে ফিরিয়া আইসেন, তখন তাহারা প্রত্যক্ষ দেখিবে। হে যিরূশালেমের উৎসন্ন স্থান সকল, উচ্চরব কর, একসঙ্গে আনন্দগান কর, কেননা সদাপ্রভু আপন প্রজাদিগকে সান্ত্বনা করিয়াছেন, তিনি যিরূশালেমকে মুক্ত করিয়াছেন। সদাপ্রভু সর্ব্বজাতির দৃষ্টিতে আপন পবিত্র বাহু অনাবৃত করিয়াছেন; আর পৃথিবীর সমুদয় প্রান্ত আমাদের ঈশ্বরের পরিত্রাণ দেখিবে। চল চল, সেই স্থান হইতে বাহির হও, অশুচি কোন বস্তু স্পর্শ করিও না, উহার মধ্য হইতে বাহির হও; হে সদাপ্রভুর পাত্রবাহকগণ, তোমরা বিশুদ্ধ হও। কেননা তোমার ত্বরান্বিত হইয়া বাহিরে যাইবে না, পলায়নের দ্বারা গমন করিবে না; কারণ সদাপ্রভু তোমাদের অগ্রে অগ্রে যাইবেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাদের পশ্চাদ্বর্ত্তী হইবেন। দেখ, আমার দাস কৃতকার্য্য হইবেন; তিনি উচ্চ ও উন্নত ও মহামহিম হইবেন। মনুষ্য অপেক্ষা তাঁহার আকৃতি, মানব-সন্তানগণ অপেক্ষা তাঁহার রূপ বিকারপ্রাপ্ত বলিয়া যেমন অনেকে তাঁহার বিষয়ে হতবুদ্ধি হইত, তেমনি তিনি অনেক জাতিকে চকিত করিবেন, তাঁহার সম্মুখে রাজারা মুখ বদ্ধ করিবে; কেননা তাহাদের কাছে যাহা বলা হয় নাই, তাহারা তাহা দেখিতে পাইবে; তাহারা যাহা শুনে নাই, তাহা বুঝিতে পারিবে। আমরা যাহা শুনিয়াছি, তাহা কে বিশ্বাস করিয়াছে? সদাপ্রভুর বাহু কাহার কাছে প্রকাশিত হইয়াছে? কারণ তিনি তাঁহার সম্মুখে চারার ন্যায়, এবং শুষ্ক ভূমিতে উৎপন্ন মূলের ন্যায় উঠিলেন; তাঁহার এমন রূপ কি শোভা নাই যে, তাঁহার প্রতি দৃষ্টি করি, এবং এমন আকৃতি নাই যে, তাঁহাকে ভালবাসি। তিনি অবজ্ঞাত ও মনুষ্যদের ত্যাজ্য, ব্যথার পাত্র ও যাতনা পরিচিত হইলেন; লোকে যাহা হইতে মুখ আচ্ছাদন করে, তাহার ন্যায় তিনি অবজ্ঞাত হইলেন, আর আমরা তাঁহাকে মান্য করি নাই। সত্য, আমাদের যাতনা সকল তিনিই তুলিয়া লইয়াছেন, আমাদের ব্যথা সকল তিনি বহন করিয়াছেন; তবু আমরা মনে করিলাম, তিনি আহত, ঈশ্বরকর্ত্তৃক প্রহারিত ও দুঃখার্ত্ত। কিন্তু তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন; আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ত্তিল, এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল। আমরা সকলে মেষগণের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছি, প্রত্যেকে আপন আপন পথের দিকে ফিরিয়াছি; আর সদাপ্রভু আমাদের সকলকার অপরাধ তাঁহার উপরে বর্ত্তাইয়াছেন। তিনি উপদ্রুত হইলেন, তবু দুঃখভোগ স্বীকার করিলেন, তিনি মুখ খুলিলেন না; মেষশাবক যেমন হত হইবার জন্য নীত হয়, মেষী যেমন লোমচ্ছেদকদের সম্মুখে নীরব হয়, সেইরূপ তিনি মুখ খুলিলেন না। তিনি উপদ্রব ও বিচার দ্বারা অপনীত হইলেন; তৎকালীয়দের মধ্যে কে ইহা আলোচনা করিল যে, তিনি জীবিতদের দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইলেন? আমার জাতির অধর্ম্ম প্রযুক্তই তাঁহার উপরে আঘাত পড়িল। আর লোকে দুষ্টগণের সহিত তাঁহার কবর নিরূপণ করিল, এবং মৃত্যুতে তিনি ধনবানের সঙ্গী হইলেন, যদিও তিনি দৌরাত্ম্য করেন নাই, আর তাঁহার মুখে ছল ছিল না। তথাপি তাঁহাকে চূর্ণ করিতে সদাপ্রভুরই মনোরথ ছিল; তিনি তাঁহাকে যাতনাগ্রস্ত করিলেন, তাঁহার প্রাণ যখন দোষার্থক বলি উৎসর্গ করিবে, তখন তিনি আপন বংশ দেখিবেন, দীর্ঘায়ু হইবেন, এবং তাঁহার হস্তে সদাপ্রভুর মনোরথ সিদ্ধ হইবে; তিনি আপন প্রাণের শ্রমফল দেখিবেন, তৃপ্ত হইবেন; আমার ধার্ম্মিক দাস আপনার জ্ঞান দিয়া অনেককে ধার্ম্মিক করিবেন, এবং তিনিই তাহাদের অপরাধ সকল বহন করিবেন। এই জন্য আমি মহানদিগের মধ্যে তাঁহাকে অংশ দিব, তিনি পরাক্রমীদের সহিত লুট বিভাগ করিবেন, কারণ তিনি মৃত্যুর জন্য আপন প্রাণ ঢালিয়া দিলেন, তিনি অধর্ম্মীদের সহিত গণিত হইলেন; আর তিনিই অনেকের পাপভার তুলিয়া লইয়াছেন, এবং অধর্ম্মীদের জন্য অনুরোধ করিতেছেন । অয়ি বন্ধ্যে, অপ্রসূতে, তুমি আনন্দগান কর, অয়ি গর্ভব্যথা-রহিতে, তুমি উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান কর, ও হর্ষনাদ কর; কেননা সধবার সন্তান অপেক্ষা অনাথার সন্তান অধিক, ইহা সদাপ্রভু কহেন। তুমি আপন তাম্বুর স্থান পরিসর কর, তোমার শিবিরের যবনিকা বিস্তারিত হউক, ব্যয়শঙ্কা করিও না; তোমার রজ্জু সকল দীর্ঘ কর, তোমার গোঁজ সকল দৃঢ় কর। কেননা তুমি দক্ষিণে ও বামে বিস্তীর্ণা হইবে, তোমার বংশ জাতিগণের অধিকার পাইবে, এবং ধ্বংসিত নগরসমূহে লোক বসাইবে। ভয় করিও না, কেননা তুমি লজ্জা পাইবে না; বিষণ্ণ হইও না, কেননা তুমি অপ্রতিভ হইবে না; কারণ তুমি আপন যৌবনের অপমান ভুলিয়া যাইবে, আর তোমার বৈধব্যের দুর্নাম স্মরণে থাকিবে না। কেননা তোমার নির্ম্মাতা তোমার পতি, তাঁহার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু; আর ইস্রায়েলের পবিত্রতম তোমার মুক্তিদাতা, তিনি সমস্ত পৃথিবীর ঈশ্বর বলিয়া আখ্যাত হইবেন। কারণ সদাপ্রভু তোমাকে পরিত্যক্তা ও আত্মায় দুঃখিতা স্ত্রীর ন্যায়, কিম্বা দূরীকৃতা যৌবনকালীয় ভার্য্যার ন্যায় ডাকিয়াছেন; ইহা তোমার ঈশ্বর কহেন। আমি ক্ষুদ্র নিমেষ কালের জন্য তোমাকে ত্যাগ করিয়াছি, কিন্তু মহাকরুণায় তোমাকে সংগ্রহ করিব। আমি কোপাবেশে এক নিমেষমাত্র তোমা হইতে আপন মুখ লুকাইয়াছিলাম, কিন্তু অনন্তকালস্থায়ী দয়াতে তোমার প্রতি করুণা করিব, ইহা তোমার মুক্তিদাতা সদাপ্রভু কহেন। বস্তুতঃ আমার নিকটে ইহা নোহের জলসমূহের সদৃশ; কারণ আমি যেমন শপথ করিয়াছি যে, নোহের জলসমূহ আর ভূতল আপ্লাবিত করিবে না, তেমনি এই শপথ করিলাম যে, তোমার প্রতি আর ক্রুদ্ধ হইব না, তোমাকে আর ভর্ৎসনাও করিব না। বস্তুতঃ পর্ব্বতগণ সরিয়া যাইবে, উপপর্ব্বতগণ টলিবে; কিন্তু আমার দয়া তোমা হইতে সরিয়া যাইবে না, এবং আমার শান্তি-নিয়ম টলিবে না; যিনি তোমার প্রতি অনুকম্পা করেন, সেই সদাপ্রভু ইহা কহেন। অয়ি দুঃখিনি, অয়ি ঝটিকা-দুলিতে ও সান্ত্বনাবিহীনে, দেখ, আমি রসাঞ্জন দিয়া তোমার প্রস্তর বসাইব, নীলমণি দ্বারা তোমার ভিত্তিমূল স্থাপন করিব; আর পদ্মরাগমণি দ্বারা তোমার আলিসা, ও সূর্য্যকান্তমণি দ্বারা তোমার পুরদ্বার সকল, ও মনোহর প্রস্তর দ্বারা তোমার সমস্ত পরিসীমা নির্ম্মাণ করিব। আর তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে, আর তোমার সন্তানদের পরম শান্তি হইবে। তুমি ধার্ম্মিকতায় স্থিরীকৃত হইবে; তুমি উপদ্রব হইতে দূরে থাকিবে, বস্তুতঃ তুমি ভীত হইবে না; এবং ত্রাস হইতে দূরে থাকিবে, বাস্তবিক তাহা তোমার নিকটে আসিবে না। দেখ, লোকে যদি দল বাঁধে, তাহা আমা হইতে হয় না; যে কেহ তোমার বিপক্ষে দল বাঁধে, সে তোমা হেতু পতিত হইবে। দেখ, যে কর্ম্মকার জ্বলদঙ্গারে বাতাস দেয়, আর আপন কার্য্যের জন্য অস্ত্র গঠন করে, আমিই তাহার সৃষ্টি করিয়াছি, বিনাশ করণার্থে নাশকের সৃষ্টিও আমিই করিয়াছি। যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না; যে কোন জিহ্বা বিচারে তোমার প্রতিবাদিনী হয়, তাহাকে তুমি দোষী করিবে। সদাপ্রভুর দাসদের এই অধিকার, এবং আমা হইতে তাহাদের এই ধার্ম্মিকতা লাভ হয়, ইহা সদাপ্রভু কহেন। অহো, তৃষিত লোক সকল, তোমরা জলের কাছে আইস; যাহার রৌপ্য নাই, আইসুক; তোমরা আইস, খাদ্য ক্রয় কর, ভোজন কর; হাঁ, আইস, বিনা রৌপ্যে খাদ্য, বিনা মূল্যে দ্রাক্ষারস ও দুগ্ধ ক্রয় কর। কেন অখাদ্যের নিমিত্ত রৌপ্য তৌল করিতেছ, যাহাতে তৃপ্তি নাই, তাহার জন্য স্বস্ব শ্রমফল দিতেছ? শুন, আমার কথা শুন, উত্তম ভক্ষ্য ভোজন কর, পুষ্টিকর দ্রব্যে তোমাদের প্রাণ আপ্যায়িত হউক। কর্ণপাত কর, আমার নিকটে আইস; শ্রবণ কর, তোমাদের প্রাণ সঞ্জীবিত হইবে; আর আমি তোমাদের সহিত এক নিত্যস্থায়ী নিয়ম করিব, দায়ূদের [প্রতি কৃত] অটল দয়া স্থির করিব। দেখ, আমি তাঁহাকে জাতিগণের সাক্ষীরূপে, জাতিগণের নায়ক ও আদেষ্টারূপে নিযুক্ত করিলাম। দেখ, তুমি যে জাতিকে জান না, তাহাকে আহ্বান করিবে; যে জাতি তোমাকে জানিত না, সে তোমার কাছে দৌড়িয়া আসিবে; ইহা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিমিত্ত, ইস্রায়েলের পবিত্রতমের হেতু ঘটিবে, কেননা তিনি তোমাকে গৌরবান্বিত করিয়াছেন। সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, যাবৎ তাঁহাকে পাওয়া যায়, তাঁহাকে ডাক, যাবৎ তিনি নিকটে থাকেন; দুষ্ট আপন পথ, অধার্ম্মিক আপন সঙ্কল্প ত্যাগ করুক; এবং সে সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিয়া আইসুক, তাহাতে তিনি তাহার প্রতি করুণা করিবেন; আমাদের ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসুক, কেননা তিনি প্রচুররূপে ক্ষমা করিবেন। কারণ সদাপ্রভু কহেন, আমার সঙ্কল্প সকল ও তোমাদের সঙ্কল্প সকল এক নয়, এবং তোমাদের পথ সকল ও আমার পথ সকল এক নয়। কারণ ভূতল হইতে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, তোমাদের পথ হইতে আমার পথ, ও তোমাদের সঙ্কল্প হইতে আমার সঙ্কল্প তত উচ্চ। বাস্তবিক যেমন বৃষ্টি বা হিম আকাশ হইতে নামিয়া আইসে, আর সেখানে ফিরিয়া যায় না, কিন্তু ভূমিকে আদ্র করিয়া ফলবতী ও অঙ্কুরিত করে, এবং বপনকারীকে বীজ ও ভক্ষককে ভক্ষ্য দেয়, আমার মুখনির্গত বাক্য তেমনি হইবে; তাহা নিষ্ফল হইয়া আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে না, কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহা সম্পন্ন করিবে, এবং যে জন্য তাহা প্রেরণ করি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে। কারণ তোমরা আনন্দ সহকারে বাহিরে যাইবে, এবং শান্তিতে তোমাদিগকে লইয়া যাওয়া হইবে। পর্ব্বত ও উপপর্ব্বতগণ তোমাদের সমক্ষে উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিবে, এবং ক্ষেত্রের সমস্ত বৃক্ষ হাততালি দিবে। কন্টকবৃক্ষের পরিবর্ত্তে দেবদারু, শ্যাকুলের পরিবর্ত্তে গুলমেঁদি উৎপন্ন হইবে; আর তাহা সদাপ্রভুর কীর্ত্তিস্বরূপ হইবে, লোপহীন নিত্যস্থায়ী চিহ্ন হইবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা ন্যায়বিচার রক্ষা কর, ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান কর, কেননা আমার পরিত্রাণ আগতপ্রায়, এবং আমার ধার্ম্মিকতার প্রকাশ সন্নিকট। ধন্য সেই ব্যক্তি, যে এইরূপ আচরণ করে এবং সেই মানবসন্তান, যে ইহা দৃঢ় করিয়া রাখে, যে বিশ্রামবার পালন করে, অপবিত্র করে না, এবং সমস্ত দুষ্ক্রিয়া হইতে আপন হস্ত রক্ষা করে। আর সদাপ্রভুতে আসক্ত বিজাতি-সন্তান এ কথা না বলুক যে, সদাপ্রভু আপন প্রজাবৃন্দ হইতে আমাকে নিশ্চয়ই বিভিন্ন করিবেন, এবং নপুংসক না বলুক, দেখ, আমি শুষ্ক বৃক্ষ। কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন যে, যে নপুংসক আমার বিশ্রামবার পালন করে, আমার সন্তোষকর বিষয় মনোনীত করে, ও আমার নিয়ম দৃঢ় করিয়া রাখে, তাহাদিগকে আমি আমার গৃহমধ্যে ও আমার প্রাচীরের ভিতরে পুত্রকন্যা অপেক্ষা উত্তম স্থান ও নাম দিব; আমি তাহাদিগকে লোপহীন অনন্তকালস্থায়ী নাম দিব। আর যে বিজাতি-সন্তানগণ সদাপ্রভুর পরিচর্য্যা করিবার জন্য, তাঁহার নামের প্রতি প্রেম দেখাইবার জন্য ও তাঁহার দাস হইবার জন্য সদাপ্রভুতে আসক্ত হয়, অর্থাৎ যে কেহ বিশ্রামবার পালন করে, অপবিত্র করে না, ও আমার নিয়ম দৃঢ় করিয়া রাখে, তাহাদিগকে আমি আপন পবিত্র পর্ব্বতে আনিব, এবং আমার প্রার্থনা-গৃহে আনন্দিত করিব; তাহাদের হোমবলি ও অন্য বলি সকল আমার যজ্ঞবেদির উপরে গ্রাহ্য হইবে, যেহেতু আমার গৃহ সর্ব্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ বলিয়া আখ্যাত হইবে। প্রভু সদাপ্রভু, যিনি ইস্রায়েলের দূরীকৃত লোকদিগকে সংগ্রহ করেন, তিনি বলেন, আমি আরও অধিক সংগ্রহ করিয়া তাহার সংগৃহীত লোকদিগেতে [যোগ করিব]। হে মাঠের সমস্ত পশু, হে সমস্ত বনপশু, গ্রাস করিতে আইস। তাহার প্রহরিগণ অন্ধ, সকলেই অজ্ঞান; তাহারা সকলে গোঙ্গা কুকুর, ঘেউ ঘেউ করিতে পারে না; তাহারা স্বপ্নদর্শী, নিদ্রালু ও তন্দ্রাপ্রিয়। সেই কুকুরগণ উদরম্ভরি, তাহাদের কখনও তৃপ্তি বোধ হয় না; আর ইহারা বিবেচনা-বিহীন পালক; সকলে নির্ব্বিশেষে আপন আপন পথের দিকে, আপন আপন লাভের চেষ্টায়, ফিরিয়াছে। [প্রত্যেক জন বলে,] চল, আমি দ্রাক্ষারস আনি, আমরা সুরাপানে মত্ত হইব, এবং যেমন অদ্যকার দিন, তেমনি কল্যও হইবে; তাহা অত্যন্ত অধিক বলিয়া মহাদিন হইবে। ধার্ম্মিক বিনষ্ট হইতেছে, কিন্তু কেহ সে বিষয়ে মনোযোগ করে না; সাধু মনুষ্যগণকে চয়ন করা যাইতেছে, কিন্তু কেহ বিবেচনা করে না যে, বিপদের সম্মুখ হইতে ধার্ম্মিককে চয়ন করা যাইতেছে। সে শান্তিতে প্রবেশ করে; সরলপথ-গামীরা প্রত্যেকে আপন আপন শয্যার উপরে বিশ্রাম করে। কিন্তু, হে গণিকার পুত্রগণ, পরদারিকের ও বেশ্যার বংশ, তোমরা নিকটবর্ত্তী হইয়া এখানে আইস। তোমরা কাহাকে উপহাস কর? কাহাকে দেখিয়া মুখ বক্র ও জিহ্বা বাহির কর? তোমরা কি অধর্ম্মের সন্তান ও মিথ্যাকথার বংশ নও? তোমরা এলা বৃক্ষগণের মধ্যে সমুদয় হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে [দেবকামে] জ্বলিয়া থাক, তোমরা নানা উপত্যকায় ও শৈল-দরীর তলে আপন আপন বালকগণকে বধ করিয়া থাক। উপত্যকার চিক্কণ প্রস্তর সকলের মধ্যে তোমার অংশ, সেইগুলিই তোমার অধিকার; তাহাদেরই উদ্দেশে তুমি পানীয় দ্রব্য ঢালিয়াছ, নৈবেদ্য উৎসর্গ করিয়াছ। এই সকলেতে আমি কি ক্ষান্ত হইব? তুমি উর্চ্চ ও তুঙ্গ পর্ব্বতের উপরে তোমার শয্যা পাতিয়াছ; সেই স্থানেও তুমি বলিদান করিতে উঠিয়াছিলে; আর তোমার স্মৃতিস্তম্ভ কবাটের ও চৌকাঠের পশ্চাতে রাখিয়াছ; কেননা তুমি আমাকে ছাড়িয়া আর এক জনকে পাইয়া বস্ত্র খুলিয়া খাটে উঠিয়াছ, আপন শয্যা বৃদ্ধি করিয়া উহাদের সহিত নিয়ম করিয়াছ, উহাদের শয্যা দেখিয়া তাহা ভালবাসিয়াছ। আর তুমি তৈল মাখিয়া রাজার নিকটে গমন করিয়াছিলে, প্রচুর সুগন্ধিদ্রব্য ব্যবহার করিয়াছিলে, দূরদেশে আপন দূতগণকে প্রেরণ করিয়াছিলে, এবং পাতাল পর্য্যন্ত আপনাকে অবনত করিয়াছিলে। তোমার যাতায়াতের আধিক্য প্রযুক্ত পথশ্রান্তা হইয়াছিলে, তথাপি ‘আশা নাই’ ইহা বল নাই; তোমার হস্তের নাড়ী টের পাইয়াছ, এজন্য তুমি ক্লান্তা হও নাই। বল দেখি, কাহা হইতে এমন ত্রাসযুক্তা ও ভীতা হইয়াছ যে, মিথ্যা কথা বলিতেছ, এবং আমাকে ভুলিয়া গিয়াছ, মনে স্থান দেও নাই? আমি কি চিরকালাবধি নীরব রহি নাই, তাই বুঝি আমাকে ভয় কর না? আমি তোমার ধার্ম্মিকতার তত্ত্ব দেখাইব! আর তোমার কার্য্য সকল! সে সকল তোমার উপকারী হইবে না। তুমি যখন ক্রন্দন কর, তখন তোমার সঞ্চিত [পুত্তলিগণ] তোমাকে উদ্ধার করুক। কিন্তু বায়ু তাহাদিগকে উড়াইয়া লইবে, একটী নিঃশ্বাস সে সকলকে লইয়া যাইবে; কিন্তু যে ব্যক্তি আমার শরণাপন্ন সে দেশাধিকার পাইবে, ও আমার পবিত্র পর্ব্বত অধিকার করিবে। আর বলা হইবে, উচ্চ কর, উচ্চ কর, পথ পরিষ্কার কর, আমার প্রজাগণের পথ হইতে বিঘ্ন দূর কর। কেননা যিনি উচ্চ ও উন্নত, যিনি অনন্তকালনিবাসী, যাঁহার নাম “পবিত্র”, তিনি এই কথা কহেন, আমি ঊর্দ্ধলোকে ও পবিত্র স্থানে বাস করি, চূর্ণ ও নম্রাত্মা মনুষ্যের সঙ্গেও বাস করি, যেন নম্রদিগের আত্মাকে সঞ্জীবিত করি ও চূর্ণ লোকদের হৃদয়কে সঞ্জীবিত করি। কারণ আমি নিত্য বিবাদ করিব না, সর্ব্বদা ক্রোধ করিব না; করিলে আত্মা, এবং আমার নির্ম্মিত প্রাণী সকল, আমার সম্মুখে মূর্চ্ছাপন্ন হইবে। তাহার লোভরূপ অপরাধে আমি ক্রুদ্ধ হইলাম ও তাহাকে আঘাত করিলাম, আপন [মুখ] লুকাইয়া ক্রোধ করিলাম, তথাপি সে বিমুখ হইয়া আপন মনের মত পথে চলিল। আমি তাহার পথ সকল দেখিয়াছি, আর তাহাকে সুস্থ করিব; আমি তাহার পথপ্রদর্শকও হইব, এবং তাহাকে ও তাহার শোকাকুলদিগকে সান্ত্বনারূপ ধন দিব। আমি ওষ্ঠাধরের ফল সৃষ্টি করি; শান্তি নিকটবর্ত্তী ও দূরবর্ত্তী উভয়েরই শান্তি, ইহা সদাপ্রভু কহেন; হাঁ, আমি তাহাকে সুস্থ করিব! কিন্তু দুষ্টগণ আলোড়িত সমুদ্রের তুল্য, তাহা ত স্থির হইতে পারে না, ও তাহার জলে পঙ্ক ও কর্দ্দম উঠে। আমার ঈশ্বর কহেন, দুষ্ট লোকদের কিছুই শান্তি নাই। মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা কর, রব সংযত করিও না, তূরীর ন্যায় উচ্চধ্বনি কর; আমার প্রজাদিগকে তাহাদের অধর্ম্ম, যাকোবের কুলকে তাহাদের পাপ সকল জানাও। তাহারা ত দিন দিন আমারই অন্বেষণ করে, আমার পথ জানিতে ভালবাসে; যে জাতি ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করে ও আপন ঈশ্বরের শাসন ত্যাগ করে নাই, এমন জাতির ন্যায় আমাকে ধর্ম্মশাসন সকলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে, ঈশ্বরের নিকটে আসিতে ভালবাসে। [আর বলে,] ‘আমরা উপবাস করিয়াছি, তুমি কেন দৃষ্টি কর না? আমরা আপন আপন প্রাণকে দুঃখ দিয়াছি, তুমি কেন তাহা জান না?’ দেখ, তোমাদের উপবাস-দিনে তোমরা সুখের চেষ্টা ও আপন আপন কর্ম্মচারীদের প্রতি দৌরাত্ম্য করিয়া থাক; দেখ, তোমরা বিবাদ ও কলহের জন্য, এবং দুষ্টতার মুষ্টি দ্বারা আঘাত করিবার জন্য উপবাস করিয়া থাক; অদ্যকার ন্যায় উপবাস করিলে তোমরা ঊর্দ্ধলোকে আপনাদের রব শুনাইতে পারিবে না। আমার মনোনীত উপবাস কি এই প্রকার? মনুষ্যের আপন প্রাণকে দুঃখ দিবার দিন কি এই প্রকার? নলের ন্যায় মস্তক হেঁট করা এবং চট ও ভস্ম পাতিয়া বসা, তুমি কি ইহাকেই উপবাস এবং সদাপ্রভুর প্রসন্নতার দিন বল? আমার মনোনীত উপবাস কি এই নয়? দুষ্ট তার গাঁট সকল খুলিয়া দেওয়া, যোঁয়ালির খিল মুক্ত করা, এবং দলিত লোকদিগকে স্বাধীন করিয়া ছাড়িয়া দেওয়া, ও প্রত্যেক যোঁয়ালি ভগ্ন করা কি নয়? ক্ষুধিত লোককে তোমার খাদ্য বন্টন করা, তাড়িত দুঃখীদিগকে গৃহে আশ্রয় দেওয়া, ইহা কি নয়? উলঙ্গকে দেখিলে তাহাকে বস্ত্র দান করা, তোমার নিজ মাংস হইতে আপনার গা না ঢাকা, ইহা কি নয়? ইহা করিলে অরুণের ন্যায় তোমার দীপ্তি প্রকাশ পাইবে, তোমার আরোগ্য শীঘ্রই অঙ্কুরিত হইবে; আর তোমার ধার্ম্মিকতা তোমার অগ্রগামী হইবে; সদাপ্রভুর প্রতাপ তোমার পশ্চাদ্বর্ত্তী হইবে। তৎকালে তুমি ডাকিবে ও সদাপ্রভু উত্তর দিবেন; তুমি আর্ত্তনাদ করিবে ও তিনি কহিবেন, এই যে আমি। যদি তুমি আপনার মধ্য হইতে যোঁয়ালি, অঙ্গুলিতর্জ্জন ও অধর্ম্মবাক্য দূর কর, আর যদি ক্ষুধিত লোককে তোমার প্রাণের ইষ্ট ভক্ষ্য দেও, ও দুঃখার্ত্ত প্রাণীকে আপ্যায়িত কর, তবে অন্ধকারে তোমার দীপ্তি উদিত হইবে, ও তোমার তিমির মধ্যাহ্নের সমান হইবে। আর সদাপ্রভু নিয়ত তোমাকে পথ প্রদর্শন করিবেন, মরুভূমিতে তোমার প্রাণ তৃপ্ত করিবেন, ও তোমার অস্থি সকল বলবান্‌ করিবেন, তাহাতে তুমি জলসিক্ত উদ্যানের ন্যায় হইবে, এবং এমন জলের উনুইর ন্যায় হইবে, যাহার জল শুকায় না। তোমার বংশীয় লোকেরা পুরাকালের উৎসন্ন স্থান সকল নির্ম্মাণ করিবে; তুমি বহু পুরুষ পূর্ব্বের ভিত্তিমূল সকলের উপরে গাঁথিয়া তুলিবে, এবং ভগ্নস্থান-সংস্কারক ও নিবাসার্থক পথসমূহের উদ্ধারক বলিয়া আখ্যাত হইবে। তুমি যদি বিশ্রামবার লঙ্ঘন হইতে আপন পা ফিরাও, যদি আমার পবিত্র দিনে নিজ অভিলাষের চেষ্টা না কর, যদি বিশ্রামবারকে আমোদদায়ক, ও সদাপ্রভুর পবিত্র দিনকে গৌরবান্বিত বল, এবং তোমার নিজ কার্য্য সাধন না করিয়া, নিজ অভিলাষ চেষ্টা না করিয়া, নিজ কথা না কহিয়া যদি তাহা গৌরবান্বিত কর, তবে তুমি সদাপ্রভুতে আমোদিত হইবে, এবং আমি তোমাকে পৃথিবীর উচ্চস্থলী সকলের উপর দিয়া আরোহণ করাইব, এবং তোমার পিতা যাকোবের অধিকার ভোগ করাইব, কারণ সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে। দেখ, সদাপ্রভুর হস্ত এমন খাট নয় যে, তিনি পরিত্রাণ করিতে পারেন না; তাঁহার কর্ণ এমন ভারী নয় যে, তিনি শুনিতে পান না; কিন্তু তোমাদের অপরাধ সকল তোমাদের ঈশ্বরের সহিত তোমাদের বিচ্ছেদ জন্মাইয়াছে, তোমাদের পাপ সকল তোমাদের হইতে তাঁহার শ্রীমুখ আচ্ছাদন করিয়াছে, এই জন্য তিনি শুনেন না। বস্তুতঃ তোমাদের করতল রক্তে ও তোমাদের অঙ্গুলি অপরাধে অশুচি হইয়াছে, তোমাদের ওষ্ঠ মিথ্যা কথা কহিয়াছে, তোমাদের জিহ্বা দুষ্টতার কথা কহে। কেহ ধার্ম্মিকতায় অভিযোগ করে না, কেহ সত্যে হেতুবাদ করে না; তাহারা অবস্তুতে নির্ভর করে, ও মিথ্যা কহে, অনিষ্ট গর্ভে ধারণ করে, অন্যায় প্রসব করে। তাহারা কালসর্পের ডিম ফুটায়, ও মাকড়সার জাল বুনে; যে তাহাদের ডিম খায়, সে মারা পড়ে, তাহা ফুটিলে কালসর্প বাহির হয়। তাহাদের জালের সূতায় বস্ত্র হইবে না, তাহাদের কর্ম্মে তাহারা আচ্ছাদিত হইবে না, তাহাদের কর্ম্ম সকল অধর্ম্মের কর্ম্ম, তাহাদের হস্তে দৌরাত্ম্যের কার্য্য থাকে। তাহাদের চরণ দুষ্কর্ম্মের দিকে দৌড়িয়া যায়, তাহারা নির্দ্দোষের রক্তপাত করিতে ত্বরান্বিত হয়; তাহাদের চিন্তা সকল অধর্ম্মের চিন্তা, তাহাদের পথে ধ্বংস ও বিনাশ থাকে। তাহারা শান্তির পথ জানে না, তাহাদের মার্গে বিচার নাই; তাহারা আপনাদের পথ বক্র করিয়াছে; যে কেহ সেই পথে যায়, সে শান্তি জানে না। এই জন্য বিচার আমাদের হইতে দূরে থাকে, ধার্ম্মিকতা আমাদের সঙ্গ ধরিতে পারে না; আমরা দীপ্তির অপেক্ষা করি, কিন্তু দেখ, অন্ধকার; আলোকের অপেক্ষা করি, কিন্তু তিমিরে ভ্রমণ করি। আমরা অন্ধ লোকদের ন্যায় ভিত্তির জন্য হাঁতড়াই, চক্ষুহীন লোকদের ন্যায় হাঁতড়াই; যেমন সন্ধ্যাকালে তেমনি মধ্যাহ্নে আমরা উছোট খাই, মৃতদের ন্যায় আমরা অন্ধকার-স্থানে থাকি। আমরা সকলে ভল্লূকের ন্যায় গর্জ্জন করি, ঘুঘুর ন্যায় দারুণ আর্ত্তরব করি; আমরা বিচারের অপেক্ষা করি, কিন্তু তাহা নাই; ত্রাণের অপেক্ষা করি, কিন্তু তাহা আমাদের হইতে দূরবর্ত্তী। কেননা তোমার সাক্ষাতে আমাদের অধর্ম্ম অনেক হইয়াছে, আমাদের পাপসমূহ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেছে; ফলে আমাদের অধর্ম্ম সকল আমাদের সঙ্গে সঙ্গে রহিয়াছে, আর আমরা আপনাদের অপরাধ সকল জানি; তাহা অধর্ম্ম ও সদাপ্রভুকে অস্বীকার, আপন ঈশ্বরের অনুগমন হইতে বিমুখ হওয়া, উপদ্রবের ও বিদ্রোহের কথাবার্ত্তা, মিথ্যা কথা গর্ভে ধারণ ও হৃদয় হইতে বাহির করণ। আর বিচার পশ্চাতে হটিয়া পড়িয়াছে, এবং ধার্ম্মিকতা দূরে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে; বস্তুতঃ চকে সত্য উছোট খাইয়া পড়িয়াছে, ও সরলতা প্রবেশ করিতে পায় না। সত্য হারাইয়া গিয়াছে, দুষ্কর্ম্মত্যাগী লোক লুটিত হইতেছে। আর সদাপ্রভু দৃষ্টিপাত করিলেন, ন্যায়বিচার না থাকাতে অসন্তুষ্ট হইলেন। তিনি দেখিলেন, কোন পুরুষ বর্ত্তমান নাই; এবং চমকিত হইলেন, কেননা অনুরোধকারী কেহ নাই; এই হেতু তাঁহারই বাহু তাঁহার জন্য পরিত্রাণ সাধন করিল, তাঁহারই ধর্ম্মশীলতা তাঁহাকে তুলিয়া ধরিল। তিনি ধর্ম্মশীলতারূপ বুকপাটা বাঁধিলেন, মস্তকে ত্রাণরূপ শিরস্ত্র ধারণ করিলেন, তিনি প্রতিশোধরূপ বস্ত্র পরিধান করিলেন, পরিচ্ছদের ন্যায় উদ্যোগ-পরিহিত হইলেন। লোকদের কার্য্য যেমন, তদনুসারেই তিনি প্রতিফল দিবেন; আপন বিপক্ষদিগকে ক্রোধরূপ, আপন শত্রুদিগকে প্রতিশোধরূপ দণ্ড দিবেন, উপকূল সকলকে অপকারের প্রতিফল দিবেন। তাহাতে সদাপ্রভুর নাম হইতে পশ্চিম দেশীয়েরা, তাঁহার প্রতাপ হইতে সূর্য্যোদয়স্থানের লোকেরা ভীত হইবে; কারণ তিনি এমন প্রবল বন্যার ন্যায় আসিবেন, যাহা সদাপ্রভুর বায়ু দ্বারা তাড়িত । আর, এক মুক্তিদাতা আসিবেন, সিয়োনের জন্য, যাকোবের মধ্যে যাহারা অধর্ম্ম হইতে ফিরিয়া আইসে, তাহাদের জন্য, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু কহেন, তাহাদের সহিত আমার নিয়ম এই, আমার আত্মা, যিনি তোমাতে অধিষ্ঠান করিয়াছেন, ও আমার বাক্য সকল, যাহা আমি তোমার মুখে দিয়াছি, সে সকল তোমার মুখ হইতে, তোমার বংশের মুখ হইতে ও তোমার বংশোৎপন্ন বংশের মুখ হইতে অদ্যাবধি অনন্তকাল পর্য্যন্ত কখনও দূর করা যাইবে না; ইহা সদাপ্রভু কহেন। উঠ, দীপ্তিমতী হও, কেননা তোমার দীপ্তি উপস্থিত, সদাপ্রভুর প্রতাপ তোমার উপরে উদিত হইল। কেননা, দেখ, অন্ধকার পৃথিবীকে, ঘোর তিমির জাতিগণকে, আচ্ছন্ন করিতেছে, কিন্তু তোমার উপরে সদাপ্রভু উদিত হইবেন, এবং তাঁহার প্রতাপ তোমার উপরে দৃষ্ট হইবে। আর জাতিগণ তোমার দীপ্তির কাছে আগমন করিবে, রাজগণ তোমার অরুণোদয়ের আলোর কাছে আসিবে। তুমি চারিদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, উহারা সকলে একত্র হইয়া তোমার কাছে আসিতেছে; তোমার পুত্রগণ দূর হইতে আসিবে, তোমার কন্যাগণ কক্ষে করিয়া আনীত হইবে। তখন তুমি তাহা দেখিয়া দীপ্যমান হইবে, তোমার হৃদয় স্পন্দন করিবে ও বিকসিত হইবে; কেননা সমুদ্রের দ্রব্যরাশি তোমার দিকে ফিরান যাইবে, জাতিগণের ঐশ্বর্য্য তোমার কাছে আসিবে। তোমাকে আবৃত করিবে উষ্ট্রযূথ, মিদিয়নের ও ঐফার দ্রুতগামী উষ্ট্রগণ; শিবা দেশ হইতে সকলেই আসিবে; তাহারা সুবর্ণ ও কুন্দুরু আনিবে, এবং সদাপ্রভুর প্রশংসার সুসমাচার প্রচার করিবে। কেদরের সমস্ত মেষপাল তোমার নিকটে একত্রীকৃত হইবে, নবায়োতের মেষগণ তোমার পরিচর্য্যা করিবে; তাহারা আমার যজ্ঞবেদির উপরে উৎসৃষ্ট হইয়া গ্রাহ্য হইবে, আর আমি আপনার ভূষণস্বরূপ গৃহ বিভূষিত করিব। এ কাহারা উড়িয়া আসিতেছে, মেঘের ন্যায়, আপন আপন খোপের দিকে কপোতের ন্যায়? সত্যই উপকূল সকল আমার অপেক্ষা করিবে, তর্শীশের জাহাজ সকল অগ্রগামী হইবে, দূর হইতে তোমার সন্তানদিগকে আনিবে, তাহাদের রৌপ্য ও সুবর্ণের সহিত আনিবে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের জন্য, ইস্রায়েলের পবিত্রতমের জন্য, কেননা তিনি তোমাকে বিভূষিত করিয়াছেন। আর বিজাতি-সন্তানেরা তোমার প্রাচীর গাঁথিবে, তাহাদের রাজগণ তোমার পরিচর্য্যা করিবে; কেননা আমি কোপভরে তোমাকে প্রহার করিয়াছি, কিন্তু অনুগ্রহে তোমার প্রতি করুণা করিলাম। আর তোমার পুরদ্বার সকল সর্ব্বদা খোলা থাকিবে, কি দিন কি রাত্রি কখনও রুদ্ধ হইবে না; জাতিগণের ঐশ্বর্য্য তোমার কাছে আনা যাইবে, আর তাহাদের রাজগণকেও সঙ্গে আনা যাইবে। কারণ যে জাতি বা রাজ্য তোমার দাসত্ব স্বীকার না করিবে, তাহা বিনষ্ট হইবে; হাঁ, সেই জাতিগণ নিঃশেষে ধ্বংসিত হইবে। লিবানোনের গৌরব তোমার কাছে আসিবে, দেবদারু, তিধর ও তাশূর বৃক্ষ একত্র আসিবে, আমার পবিত্র স্থান বিভূষিত করিবার নিমিত্ত আসিবে, এবং আমি আপন চরণের স্থান গৌরবান্বিত করিব। আর যাহারা তোমাকে দুঃখ দিত, তাহাদের সন্তানগণ হেঁট হইয়া তোমার নিকটে আসিবে; এবং যাহারা তোমাকে হেয়জ্ঞান করিত, তাহারা সকলে তোমার পদতলে প্রণিপাত করিবে, আর তোমাকে বলিবে, এ সদাপ্রভুর নগরী, এ ইস্রায়েলের পবিত্রতমের সিয়োন। তুমি পরিত্যক্তা ও ঘৃণিতা ছিলে, তোমার মধ্য দিয়া কেহ যাতায়াত করিত না, তৎপরিবর্ত্তে আমি তোমাকে চিরস্থায়ী শ্লাঘার পাত্র, বহু পুরুষপরম্পরার আনন্দের পাত্র করিব। আর তুমি জাতিগণের দুগ্ধ পান করিবে, এবং রাজগণের স্তন চুষিবে; আর জানিবে যে, আমি সদাপ্রভুই তোমার ত্রাণকর্ত্তা, তোমার মুক্তিদাতা, যাকোবের এক বীর। আমি পিত্তলের পরিবর্ত্তে সুবর্ণ, এবং লৌহের পরিবর্ত্তে রৌপ্য আনিব, কাষ্ঠের পরিবর্ত্তে পিত্তল, ও প্রস্তরের পরিবর্ত্তে লৌহ আনিব; আর আমি শান্তিকে তোমার অধ্যক্ষ করিব, ধার্ম্মিকতাকে তোমার শাসনকর্ত্তা করিব। আর শুনা যাইবে না—তোমার দেশে উপদ্রবের কথা, তোমার সীমার মধ্যে ধ্বংস ও বিনাশের কথা; কিন্তু তুমি আপন প্রাচীরের নাম ‘পরিত্রাণ’ রাখিবে, আপন পুরদ্বারের নাম ‘প্রশংসা’ রাখিবে। সূর্য্য আর দিবসে তোমার জ্যোতিঃ হইবে না, আলোকের জন্য চন্দ্রও তোমাকে জ্যোৎস্না দিবে না, কিন্তু সদাপ্রভুই তোমার চিরজ্যোতিঃ হইবেন, তোমার ঈশ্বরই তোমার ভূষণ হইবেন। তোমার সূর্য্য আর অস্তমিত হইবে না, তোমার চন্দ্র আর ডুবিয়া যাইবে না; কেননা সদাপ্রভু তোমার চিরজ্যোতিঃ হইবেন, এবং তোমার শোকের দিন সমাপ্ত হইবে। আর তোমার প্রজারা সকলে ধার্ম্মিক হইবে, তাহারা চিরকাল তরে দেশ অধিকার করিবে, তাহারা আমার রোপিত তরুর শাখা, আমার হস্তের কার্য্য, যেন আমি বিভূষিত হই। যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্‌ জাতি হইয়া উঠিবে; আমি সদাপ্রভু যথাকালে ইহা সম্পন্ন করিতে সত্বর হইব। প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কেননা নম্রগণের কাছে সুসমাচার প্রচার করিতে সদাপ্রভু আমাকে অভিষেক করিয়াছেন; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমি ভগ্নান্তঃকরণ লোকদের ক্ষত বাঁধিয়া দিই; যেন বন্দি লোকদের কাছে মুক্তি, ও কারাবদ্ধ লোকদের কাছে কারামোচন প্রচার করি; যেন সদাপ্রভুর প্রসন্নতার বৎসর ও আমাদের ঈশ্বরের প্রতিশোধের দিন ঘোষণা করি; যেন সমস্ত শোকার্ত্তকে সান্ত্বনা করি; যেন সিয়োনের শোকার্ত্ত লোকদিগকে বর দিই, যেন তাহাদিগকে ভস্মের পরিবর্ত্তে শিরোভূষণ, শোকের পরিবর্ত্তে আনন্দতৈল, অবসন্ন আত্মার পরিবর্ত্তে প্রশংসারূপ পরিচ্ছদ দান করি; তাই তাহারা ধার্ম্মিকতা-বৃক্ষ ও সদাপ্রভুর রোপিত তাঁহার ভূষণার্থক উদ্যান বলিয়া আখ্যাত হইবে। তাহারা পুরাকালের ধ্বংসিত স্থান সকল নির্ম্মাণ করিবে, পূর্ব্বকালের উৎসন্ন স্থান সকল গাঁথিয়া তুলিবে, এবং ধ্বংসিত নগর, বহু পুরুষ পূর্ব্বের উৎসন্ন স্থান সকল নূতন করিবে। আর বিদেশিগণ দাঁড়াইয়া তোমাদের পাল চরাইবে, বিজাতি-সন্তানেরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রের কৃষক ও তোমাদের দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পাইটকারী হইবে। কিন্তু তোমরা সদাপ্রভুর যাজক বলিয়া আখ্যাত হইবে, লোকে তোমাদিগকে আমাদের ঈশ্বরের পরিচারক বলিবে; তোমরা জাতিগণের ঐশ্বর্য্য ভোগ করিবে, ও তাহাদের প্রতাপে শ্লাঘা করিবে। তোমাদের লজ্জার পরিবর্ত্তে দ্বিগুণ অংশ হইবে; অপমানের পরিবর্ত্তে লোকেরা আপন আপন অধিকারে আনন্দরব করিবে, তজ্জন্য আপনাদের দেশে দ্বিগুণ অংশ পাইবে; তাহাদের চিরস্থায়ী আহ্লাদ হইবে। কেননা আমি সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসি, অধর্ম্মযুক্ত অপহরণ ঘৃণা করি; আর আমি সত্যে তাহাদের ক্রিয়ার ফল দিব, ও তাহাদের সহিত চিরস্থায়ী এক নিয়ম করিব। আর তাহাদের বংশ জাতিগণের মধ্যে, ও তাহাদের সন্তানগণ লোকবৃন্দের মধ্যে পরিচিত হইবে; দেখিবামাত্র সকলে তাহাদিগকে চিনিবে যে, তাহারা সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত বংশ। ‘আমি সদাপ্রভুতে অতিশয় আনন্দ করিব, আমার প্রাণ আমার ঈশ্বরে উল্লাস করিবে; কেননা বর যেমন যাজকীয় সজ্জার ন্যায় শিরোভূষণ পরে, কন্যা যেমন আপন রত্নরাজি দ্বারা আপনাকে অলঙ্কৃতা করে, তেমনি তিনি আমাকে পরিত্রাণ-বস্ত্র পরাইয়াছেন, ধার্ম্মিকতা-পরিচ্ছদে পরিচ্ছন্ন করিয়াছেন।’ বস্তুতঃ ভূমি যেমন আপন অঙ্কুর নির্গত করে, উদ্যান যেমন আপনাতে উপ্ত বীজ অঙ্কুরিত করে, তেমনি প্রভু সদাপ্রভু সমুদয় জাতির সাক্ষাতে ধার্ম্মিকতা ও প্রশংসা অঙ্কুরিত করিবেন। সিয়োনের নিমিত্ত আমি নীরব থাকিব না, যিরূশালেমের নিমিত্ত ক্ষান্ত থাকিব না, যাবৎ আলোকের ন্যায় তাহার ধার্ম্মিকতা, জ্বলন্ত প্রদীপের ন্যায় তাহার পরিত্রাণ উদিত না হয়। আর জাতিগণ তোমার ধার্ম্মিকতা, ও সমস্ত রাজা তোমার প্রতাপ দর্শন করিবে; এবং তুমি এক নূতন নামে আখ্যাত হইবে, যাহা সদাপ্রভুর মুখ নির্ণয় করিবে। আর তুমি সদাপ্রভুর হস্তস্থিত ভূষণার্থক মুকুট, তোমার ঈশ্বরের করতলস্থিত রাজকিরীট হইবে। লোকে তোমাকে আর পরিত্যক্তা বলিবে না, এবং তোমার ভূমিকে আর ধ্বংসস্থান বলিবে না; কিন্তু তুমি হিফ্‌সীবা [উহাতে আমার প্রীতি], ও তোমার ভূমি বিয়ূলা [বিবাহিতা] নামে আখ্যাতা হইবে? কেননা সদাপ্রভু তোমাতে প্রীত, এবং তোমার ভূমি বিবাহিতা হইবে। বস্তুতঃ যুবক যেমন কুমারীকে বিবাহ করে, তেমনি তোমার পুত্রগণ তোমাকে বিবাহ করিবে; এবং বর যেমন কন্যাতে আমোদ করে, তেমনি তোমার ঈশ্বর তোমাতে আমোদ করিবেন। হে যিরূশালেম, আমি তোমার প্রাচীরের উপরে প্রহরিগণকে নিযুক্ত করিয়াছি; তাহারা কি দিন কি রাত্রি কদাচ নীরব থাকিবে না। তোমরা, যাহারা সদাপ্রভুকে স্মরণ করাইয়া থাক, তোমরা ক্ষান্ত থাকিও না, এবং তাঁহাকেও ক্ষান্ত থাকিতে দিও না, যে পর্য্যন্ত তিনি যিরূশালেমকে স্থাপন না করেন, ও পৃথিবীর মধ্যে প্রশংসার পাত্র না করেন। সদাপ্রভু আপন দক্ষিণ হস্ত ও আপন বলবান্‌ বাহু তুলিয়া শপথ করিয়াছেন, নিশ্চয় আমি অন্নের নিমিত্ত তোমার শত্রুদিগকে তোমার গোম আর দিব না, এবং বিজাতি-সন্তানেরা তোমার পরিশ্রম দ্বারা প্রস্তুত তোমার দ্রাক্ষারস আর পান করিতে পাইবে না; কিন্তু যাহারা উহা সঞ্চয় করিবে, তাহারাই ভোজন করিবে, আর সদাপ্রভুর প্রশংসা করিবে; এবং যাহারা ইহা সংগ্রহ করিবে, তাহারাই আমার পবিত্র প্রাঙ্গণে পান করিবে। তোমরা অগ্রসর হও, পুরদ্বার দিয়া অগ্রসর হও, লোকদের জন্য পথ প্রস্তুত কর, উচ্চ কর, রাজপথ উচ্চ কর, প্রস্তর সকল সরাইয়া ফেল, জাতিগণের জন্য পতাকা তুলিয়া ধর। দেখ, সদাপ্রভু পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত এই রব শুনাইয়াছেন, তোমরা সিয়োন-কন্যাকে বল, দেখ, তোমার পরিত্রাণ উপস্থিত; দেখ, তাঁহার সঙ্গে তাঁহার [দাতব্য] বেতন আছে, তাঁহার অগ্রে তাঁহার [দাতব্য] পুরস্কার আছে। আর তাহাদিগকে বলা যাইবে, ‘পবিত্র প্রজা’, ‘সদাপ্রভুর মুক্ত লোক’; এবং তোমাকে বলা যাইবে, ‘অন্বেষিতা’, ‘অপরিত্যক্তা নগরী’। উনি কে, যিনি ইদোম হইতে আসিতেছেন, রক্তরঞ্জিত বস্ত্র পরিয়া বস্রা হইতে আসিতেছেন? উনি কে, যিনি আপন পরিচ্ছদে প্রতাপান্বিত, আপন শক্তির বাহুল্যে চলিয়া আসিতেছেন? ‘এ আমি, যিনি ধর্ম্মশীলতায় কথা বলেন, ও যিনি পরিত্রাণ করণে বলবান্‌।’ আপনার পরিচ্ছদ রক্তমাখা কেন? আপনার বস্ত্র কুণ্ডে দ্রাক্ষাদলনকারীর বস্ত্রবৎ কেন? ‘আমি কুণ্ডের দ্রাক্ষা একাকী দলন করিয়াছি, জাতিগণের মধ্যে কেহই আমার সঙ্গে ছিল না। আমি ক্রোধে তাহাদিগকে দলন করিলাম, কোপভরে তাহাদিগকে মর্দ্দন করিলাম; আর তাহাদের রক্তের ছিটা আমার বস্ত্রে লাগিল, আমার সমস্ত পরিচ্ছদ কলঙ্কিত করিলাম। কেননা প্রতিশোধের দিন আমার চিত্তে রহিয়াছে, ও আমার মুক্ত লোকদের বৎসর আসিল। আমি দেখিলাম, কিন্তু সহকারী কেহ ছিল না; আমি চমকিত হইলাম, কেননা সহায় কেহ ছিল না; তাই আমারই বাহু আমার জন্য পরিত্রাণ সাধন করিল, ও আমার কোপই আমাকে তুলিয়া ধরিল। আর আমি ক্রোধে জাতিগণকে দলন করিলাম, কোপভরে তাহাদিগকে মত্ত করিলাম, মৃত্তিকাতে তাহাদের রক্তপাত করিলাম।’ আমি সদাপ্রভুর নানাবিধ দয়া কীর্ত্তন করিব; সদাপ্রভু আমাদের যে সকল উপকার করিয়াছেন, এবং আপনার নানাবিধ করুণা ও প্রচুর দয়ানুসারে ইস্রায়েল-কুলের যে প্রচুর মঙ্গল করিয়াছেন, তদনুসারে আমি সদাপ্রভুর প্রশংসা কীর্ত্তন করিব। কারণ তিনি কহিলেন, উহারা অবশ্য আমার প্রজা, উহারা এমন সন্তান, যাহারা মিথ্যা আচরণ করিবে না; এইরূপে তিনি তাহাদের ত্রাণকর্ত্তা হইলেন। তাহাদের সকল দুঃখে তিনি দুঃখিত হইতেন, তাঁহার শ্রীমুখস্বরূপ দূত তাহাদিগকে পরিত্রাণ করিতেন; তিনি আপন প্রেমে ও আপন স্নেহে তাহাদিগকে মুক্ত করিতেন, এবং পুরাকালের সমস্ত দিন তাহাদিগকে তুলিয়া বহন করিতেন। কিন্তু তাহারা বিদ্রোহী হইয়া তাঁহার পবিত্র আত্মাকে শোকাকুল করিত, তাহাতে তিনি ফিরিয়া তাহাদের শত্রু হইলেন, আপনি তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তখন তাঁহার প্রজাগণ পুরাকাল, মোশির কাল স্মরণ করিয়া কহিল, তিনি কোথায়, যিনি আপন পালের রক্ষকগণ সহকারে তাহাদিগকে সমুদ্র হইতে উত্তীর্ণ করিয়াছিলেন? তিনি কোথায়, যিনি তাহাদের অন্তরে আপন পবিত্র আত্মা রাখিয়াছিলেন, যিনি মোশির দক্ষিণে আপন প্রতাপান্বিত বাহু গমন করাইয়াছিলেন, যিনি আপনার জন্য চিরস্থায়ী নাম স্থাপনার্থে তাহাদের সম্মুখে জল দ্বিভাগ করিয়াছিলেন, যিনি তাহাদিগকে প্রান্তরে [ধাবমান] অশ্বের ন্যায় জলধির মধ্য দিয়া গমন করাইয়াছিলেন, উছোট খাইতে দেন নাই? পশুপাল যেমন সমস্থলীতে নামিয়া যায়, তেমনি সদাপ্রভুর আত্মা তাহাদিগকে বিশ্রাম করাইয়াছিলেন; আপনার জন্য প্রতাপান্বিত নাম স্থাপনার্থে তুমি আপন প্রজাগণকে সেইরূপে লইয়া গিয়াছিলে। তুমি স্বর্গ হইতে অবলোকন কর, তোমার পবিত্রতার ও তোমার প্রতাপের বসতি হইতে দৃষ্টিপাত কর। তোমার উদ্যোগ ও তোমার বিক্রম-কার্য্য সকল কোথায়? আমার প্রতি তোমার অন্তরস্থ বাৎসল্যের ও তোমার স্নেহের স্বর ক্ষান্ত হইয়াছে। তুমি ত আমাদের পিতা; যদ্যপি অব্রাহাম আমাদিগকে জানেন না, ও ইস্রায়েল আমাদিগকে স্বীকার করেন না, তথাপি তুমি সদাপ্রভু আমাদের পিতা, অনাদিকাল হইতে আমাদের মুক্তিদাতা, এই তোমার নাম। হে সদাপ্রভু, তুমি কেন আমাদিগকে তোমার পথ ছাড়িয়া ভ্রান্ত হইতে দিতেছ? তোমাকে ভয় না করিতে আমাদের অন্তঃকরণকে কেন কঠিন করিতেছ? তুমি আপন দাসদের, আপন অধিকারস্বরূপ বংশগণের জন্য ফির। তোমার পবিত্র প্রজাগণ অল্পকালমাত্র আপন অধিকার ভোগ করিয়াছে; আমাদের বিপক্ষগণ তোমার ধর্ম্মধাম পদতলে দলিত করিয়াছে। তুমি যাহাদের উপরে কখনও কর্ত্তৃত্ব কর নাই, ও তোমার নাম যাহাদের উপরে কীর্ত্তিত হয় নাই, আমরা তাহাদের সমান হইয়াছি। আহা, তুমি আকাশমণ্ডল বিদীর্ণ করিয়া নামিয়া আইস, পর্ব্বতগণ তোমার সাক্ষাতে কম্পিত হউক; যেমন অগ্নি ঝোপ প্রজ্বলিত করে, যেমন অগ্নি জল ফুটায় [তদ্রূপ হউক]; তোমার বিপক্ষদিগকে তোমার নাম জ্ঞাত কর; তোমার সাক্ষাতে জাতিগণ কম্পমান হউক। যখন তুমি ভয়ানক কার্য্য করিয়াছিলে, যাহার অপেক্ষা আমরা করি নাই, তখন তুমি নামিয়া আসিয়াছিলে, তোমার সাক্ষাতে পর্ব্বতগণ কম্পিত হইয়াছিল। কারণ পুরাকাল অবধি লোকে শুনে নাই, কর্ণে অনুভব করে নাই, চক্ষুতে দেখে নাই যে, তোমা ভিন্ন আর কোন ঈশ্বর আছেন, যিনি তাঁহার অপেক্ষাকারীর পক্ষে কার্য্য সাধন করেন। যে জন আনন্দপূর্ব্বক ধর্ম্মাচরণ করে, যাহারা তোমার পথে তোমাকে স্মরণ করে, সে সকলের সহিত তুমি সাক্ষাৎ করিয়া থাক; দেখ, তুমি ক্রুদ্ধ হইয়াছ, আর আমরা পাপ করিয়াছি, বহুকাল হইতে এই অবস্থাতে আছি, তবে আমরা কি পরিত্রাণ পাইব? আমরা ত সকলে অশুচি ব্যক্তির সদৃশ হইয়াছি, আমাদের সর্ব্বপ্রকার ধার্ম্মিকতা মলিন বস্ত্রের সমান; আর আমরা সকলে পত্রের ন্যায় জীর্ণ হই, আমাদের অপরাধ সকল বায়ুর ন্যায় আমাদিগকে উড়াইয়া লইয়া যায়। আবার, কেহ তোমার নামে ডাকে না, তোমাকে ধরিতে উৎসুক হয় না; কেননা তুমি আমাদের হইতে আপন মুখ লুকাইয়াছ, আমাদের অপরাধের হস্তে আমাদিগকে গলিয়া যাইতে দিতেছ। কিন্তু এখন, হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের পিতা; আমরা মৃত্তিকা, আর তুমি আমাদের কুম্ভকার; আমরা সকলে তোমার হস্তকৃত বস্তু। হে সদাপ্রভু, বিষম ক্রুদ্ধ হইও না, চিরকাল অপরাধ মনে রাখিও না; বিনতি করি, দেখ, দৃষ্টি কর, আমরা সকলে তোমার প্রজা। তোমার পবিত্র নগর সকল প্রান্তর হইয়া গিয়াছে, সিয়োন প্রান্তর হইয়া গিয়াছে, যিরূশালেম ধ্বংসস্থান। আমাদের পিতৃপুরুষেরা যেখানে তোমার প্রশংসা করিতেন, আমাদের সেই পবিত্র ও সুশোভন গৃহ অগ্নিতে দগ্ধ হইয়াছে, এবং আমাদের মনোরম সমস্ত বস্তু উচ্ছিন্ন হইয়াছে। হে সদাপ্রভু, এই সকল দেখিয়াও তুমি কি ক্ষান্ত থাকিবে? তুমি কি নীরব থাকিবে ও আমাদিগকে বিষম দুঃখ দিবে? যাহারা জিজ্ঞাসা করে নাই, আমি তাহাদিগকে আমার অনুসন্ধান করিতে দিয়াছি; যাহারা আমার অন্বেষণ করে নাই, আমি তাহাদিগকে আমার উদ্দেশ পাইতে দিয়াছি; যে জাতি আমার নামে আখ্যাত হয় নাই, তাহাকে আমি কহিলাম, “দেখ, এই আমি, দেখ এই আমি।” আমি সমস্ত দিন বিদ্রোহী প্রজাবৃন্দের প্রতি আপন অঞ্জলি বিস্তার করিয়া আছি; তাহারা আপন আপন কল্পনার অনুসরণ করিয়া কুপথে গমন করে। সেই প্রজারা আমার সাক্ষাতে নিত্য নিত্য আমাকে অসন্তুষ্ট করে, উদ্যানের মধ্যে বলিদান করে, ইষ্টকার উপরে সুগন্ধিদ্রব্য জ্বালায়। তাহারা কবর-স্থানে বসে, গুপ্ত স্থানে রাত্রি যাপন করে; তাহারা শূকরের মাংস ভোজন করে, ও তাহাদের পাত্রে ঘৃণার্হ মাংসের ঝোল থাকে; তাহারা বলে, স্বস্থানে থাক, আমার নিকটে আসিও না, কেননা তোমা অপেক্ষা আমি পবিত্র। ইহারা আমার নাসিকার ধূম, সমস্ত দিন প্রজ্বলিত অগ্নি। দেখ, আমার সম্মুখে ইহা লিখিত আছে; আমি নীরব থাকিব না, প্রতিফল দিব; ইহাদের কোলেই প্রতিফল দিব; সদাপ্রভু কহেন, আমি তোমাদের কৃত অপরাধ এবং তৎসঙ্গে তোমাদের পিতৃপুরুষদের কৃত অপরাধ সকলের [প্রতিফল দিব]; তাহারা পর্ব্বতগণের উপরে সুগন্ধি দ্রব্য জ্বালাইত, উপপর্ব্বতগণের উপরে আমাকে টিট্‌কারি দিত, তজ্জন্য আমি অগ্রে তাহাদের ক্রিয়ার পরিমাণ করিয়া তাহাদের কোলে দিব। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দ্রাক্ষাগুচ্ছে ফলের রস দেখিলে লোকে যেমন বলে, ইহা বিনষ্ট করিও না, কেননা ইহাতে আশীর্ব্বাদ আছে; তদ্রূপ আমি আপন দাসদের নিমিত্ত করিব, সমুদয়ের বিনাশ করিব না। আর আমি যাকোব হইতে এক বংশকে, এবং যিহূদা হইতে আমার পর্ব্বতগণের এক অধিকারীকে উৎপন্ন করিব, আমার মনোনীত লোকেরা তাহা অধিকার করিবে, ও আমার দাসেরা সেখানে বসতি করিবে। আর আমার যে প্রজাবৃন্দ আমার অন্বেষণ করিয়াছে, তাহাদের নিমিত্ত শারোণ মেষপালের খোঁয়াড় হইবে, এবং আখোর তলভূমি গোপালের শয়ন-স্থান হইবে। কিন্তু তোমরা যাহারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিতেছ, আমার পবিত্র পর্ব্বত ভুলিয়া যাইতেছ, ভাগ্য [দেবের] জন্য মেজ সাজাইয়া থাক, এবং নিরূপণী [দেবীর] উদ্দেশে মিশ্র সুরা পূর্ণ করিয়া থাক, তোমাদিগকে আমি খড়্‌গের জন্য নিরূপণ করিলাম, আর তোমরা সকলে বধ্য-স্থানে অবনত হইবে; কারণ আমি ডাকিলে তোমরা উত্তর দিতে না, আমি কথা কহিলে শুনিতে না; কিন্তু আমার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিতে, এবং যাহাতে আমার প্রীতি নাই, তাহাই মনোনীত করিতে। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমার দাসেরা ভোজন করিবে, কিন্তু তোমরা ক্ষুধার্ত্ত থাকিবে; দেখ, আমার দাসেরা পান করিবে, কিন্তু তোমরা তৃষ্ণার্ত্ত থাকিবে; দেখ, আমার দাসেরা আনন্দ করিবে, কিন্তু তোমরা লজ্জিত হইবে; দেখ, আমার দাসেরা চিত্তের সুখে আনন্দরব করিবে, কিন্তু তোমরা চিত্তের দুঃখে ক্রন্দন করিবে, এবং আত্মার ক্ষোভে হাহাকার করিবে। আর তোমরা আমার মনোনীত লোকদের নিকটে তোমাদের নাম শাপাস্পদরূপে রাখিয়া যাইবে, এবং প্রভু সদাপ্রভু তোমাকে বধ করিবেন, আর তিনি আপন দাসদের অন্য নাম রাখিবেন। যে ব্যক্তি পৃথিবীতে আপনাকে আশীর্ব্বাদ করিবে, সে সত্যের ঈশ্বরের নামে আপনাকে আশীর্ব্বাদ করিবে; এবং যে ব্যক্তি পৃথিবীতে শপথ করিবে, সে সত্যের ঈশ্বরের নামে শপথ করিবে; কেননা পূর্ব্বকালীন সমস্ত সঙ্কট লোকে ভুলিয়া যাইবে, ও আমার দৃষ্টি হইতে তাহা লুকাইবে। কারণ দেখ, আমি নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না। কিন্তু আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর; কারণ দেখ, আমি যিরূশালেমকে উল্লাসভূমি ও তাহার প্রজাদিগকে আনন্দ-ভূমি করিয়া সৃষ্টি করি। আমি যিরূশালেমে উল্লাস করিব, আমার প্রজাগণে আমোদ করিব; এবং তাহার মধ্যে রোদনের শব্দ কি ক্রন্দনের শব্দ আর শুনা যাইবে না। সে স্থান হইতে অল্প দিনের কোন শিশু কিম্বা অসম্পূর্ণায়ু কোন বৃদ্ধ [যাইবে] না; বরং বালকই এক শত বৎসর বয়ঃক্রমে মরিবে; এবং পাপী এক শত বৎসর বয়স্ক হইলে শাপাহত হইবে। আর লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রোপন করিলে অন্যে ভোগ করিবে না; বস্তুতঃ আমার প্রজাদের আয়ু বৃক্ষের আয়ুর তুল্য হইবে, এবং আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে। তাহারা বৃথা পরিশ্রম করিবে না, বিহ্বলতার নিমিত্ত সন্তানের জন্ম দিবে না, কারণ তাহারা সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদপ্রাপ্ত বংশ, ও তাহাদের সন্তানগণ তাহাদের সহবর্ত্তী হইবে। আর তাহাদের ডাকিবার পূর্ব্বে আমি উত্তর দিব, তাহারা কথা বলিতে না বলিতে আমি শুনিব। কেন্দুয়াব্যাঘ্র ও মেষশাবক একত্র চরিবে, সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে; আর ধূলিই সর্পের খাদ্য হইবে। তাহারা আমার পবিত্র পর্ব্বতের কোন স্থানে হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, স্বর্গ আমার সিংহাসন, পৃথিবী আমার পাদপীঠ; তোমরা আমার জন্য কিরূপ গৃহ নির্ম্মাণ করিবে? আমার বিশ্রাম স্থান কোন্‌ স্থান? এ সকলই ত আমার হস্ত দ্বারা নির্ম্মিত, তাই এই সকল উৎপন্ন হইল, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু এই ব্যক্তির প্রতি, অর্থাৎ যে দুঃখী, ভগ্নাত্মা ও আমার বাক্যে কম্পমান, তাহার প্রতি আমি দৃষ্টিপাত করিব। যে ব্যক্তি গো হনন করে, সে নরহত্যা করে; যে ব্যক্তি মেষশাবক বলিদান করে, সে কুকুরের গলা ভাঙ্গিয়া ফেলে; যে ব্যক্তি নৈবেদ্য উৎসর্গ করে, সে শূকরের রক্ত দেয়; যে ব্যক্তি সুগন্ধিধূপ জ্বালায়, সে মিথ্যাদেবের ধন্যবাদ করে; হাঁ, তাহারা আপন আপন পথ মনোনীত করিয়াছে, এবং তাহাদের প্রাণ আপন আপন ঘৃণাই বস্তুতে প্রীত হয়; আমিও তাহাদের নানা মায়া মনোনীত করিব, এবং তাহাদের নিজ ত্রাসের বিষয় তাহাদের প্রতি ঘটাইব; কারণ আমি ডাকিলে কেহ উত্তর দিত না, আমি কথা কহিলে তাহারা শুনিত না, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই সাধন করিত, এবং যাহাতে আমার প্রীতি নাই তাহাই মনোনীত করিত। তোমরা যাহারা সদাপ্রভুর বাক্যে কম্পমান, তোমরা তাঁহার বাক্য শুন; তোমাদের যে ভ্রাতৃগণ তোমাদিগকে ঘৃণা করে, আমার নাম প্রযুক্ত তোমাদিগকে বাহির করিয়া দেয়, তাহারা বলিয়াছে, সদাপ্রভু মহিমান্বিত হউন, যেন আমরা তোমাদের আনন্দ দেখিতে পাই; কিন্তু উহারাই লজ্জিত হইবে। নগর হইতে কলহের রব, মন্দির হইতে রব! উহা সদাপ্রভুর রব, যিনি শত্রুদিগকে অপকারের প্রতিফল দেন। ব্যথা উঠিবার পূর্ব্বে [সিয়োন] প্রসব করিল; তাহার গর্ভযন্ত্রণার পূর্ব্বে পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হইল। এমন কথা কে শুনিয়াছে? এমন কার্য্য কে দেখিয়াছে? এক দিবসে কি কোন দেশের জন্ম হইবে? কোন জাতি কি একেবারেই ভূমিষ্ঠ হইবে? ফলে, গর্ভযন্ত্রণা হইবামাত্র সিয়োন আপন সন্তানগণকে প্রসব করিল। আমি প্রসবকাল উপস্থিত করিয়া কি প্রসব হইতে দিব না? ইহা সদাপ্রভু কহেন। প্রসব হইতে দিতেছি যে আমি, আমি কি গর্ভ রোধ করিব? ইহা তোমার ঈশ্বর কহেন। তোমরা যাহারা যিরূশালেমকে ভালবাস, তোমরা সকলে তাহার সহিত আনন্দ কর, তাহার বিষয়ে উল্লাস কর; তোমরা যাহারা তাহার জন্য শোকান্বিত, তোমরা সকলে তাহার সহিত অতিশয় প্রফুল্ল হও; যেন তোমরা তাহার সান্ত্বনারূপ স্তন চূষিয়া তৃপ্ত হও, যেন তাহাকে দোহন করিয়া তাহার প্রতাপ-বাহুল্যে আমোদিত হও। কারণ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহার দিকে নদীর ন্যায় শান্তি ও উত্থলিত বন্যার ন্যায় জাতিগণের প্রতাপ বহাইব, তাহাতে তোমরা স্তন্য পান করিবে, কক্ষদেশে করিয়া তোমাদিগকে বহন করা যাইবে, হাঁটুর উপরে নাচান যাইবে। মাতা যেমন আপন পুত্রকে সান্ত্বনা করে, তেমনি আমি তোমাদিগকে সান্ত্বনা করিব; তোমরা যিরূশালেমে সান্ত্বনা পাইবে। এই সকল দেখিলে তোমাদের হৃদয় প্রফুল্ল হইবে, তোমাদের অস্থি সকল নবীন তৃণের ন্যায় সতেজ হইবে; এবং সদাপ্রভুর হস্ত আপন দাসদের পক্ষে আত্মপরিচয় দিবে, আর তিনি আপন শত্রুদের প্রতি কুপিত হইবেন। কারণ দেখ, সদাপ্রভু অগ্নিসহ আগমন করিবেন, তাঁহার রথ সকল ঘূর্ণ্যবায়ুর ন্যায় হইবে; তিনি মহাতাপে আপন ক্রোধ, প্রজ্বলিত অগ্নি দ্বারা আপন ভর্ৎসনা কার্য্যে পরিণত করিবেন। কেননা সদাপ্রভু অগ্নি দ্বারা ও আপন খড়্‌গ দ্বারা সমস্ত মর্ত্ত্যের সহিত আপনার বিবাদ নিষ্পন্ন করিবেন; আর সদাপ্রভু কর্ত্তৃক অনেক লোক নিহত হইবে। যাহারা মধ্যবর্ত্তী এক ব্যক্তির পশ্চাতে পশ্চাতে উদ্যানে [যাইবার জন্য] আপনাদিগকে পবিত্র ও শুচি করে, শূকরের মাংস, ঘৃণ্য দ্রব্য ও মূষিক খায়, তাহারা একসঙ্গে বিনষ্ট হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আমিই তাহাদের ক্রিয়া ও কল্পনা সকল [জানি]।[সেই সময়] উপস্থিত, যখন আমি সর্ব্বজাতীয় ও সর্ব্বভাষাবাদী লোককে সংগ্রহ করিব; তাহারা আসিয়া আমার প্রতাপ দর্শন করিবে। আর আমি তাহাদের মধ্যে এক চিহ্ন স্থাপন করিব; এবং তাহাদের মধ্য হইতে উত্তীর্ণ লোকদিগকে জাতিগণের কাছে, তর্শীশ, পূল ও ধনুর্দ্ধর লূদ, এবং তূবল ও যবনের কাছে, যে দূরস্থ উপকূল সমূহ কখনও আমার খ্যাতি শুনে নাই ও আমার প্রতাপ দেখে নাই, তাহাদের কাছে প্রেরণ করিব; এবং তাহারা জাতিগণের মধ্যে আমার প্রতাপ জ্ঞাত করিবে। আর সদাপ্রভু কহেন, তাহারা সর্ব্বজাতির মধ্য হইতে তোমাদের সমস্ত ভ্রাতাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য বলিয়া অশ্ব, শকট, ডুলি, অশ্বতর ও উষ্ট্রে করিয়া আমার পবিত্র পর্ব্বত যিরূশালেমে আনয়ন করিবে, যেমন ইস্রায়েল-সন্তানগণ শুচি পাত্রে করিয়া সদাপ্রভুর গৃহে নৈবেদ্য আনে। আর আমি তাহাদের মধ্যেও কতক লোককে যাজক ও লেবীয় হইবার নিমিত্ত গ্রহণ করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কারণ আমি যে নূতন আকাশমণ্ডল ও নূতন পৃথিবী গঠন করিব, তাহা যেমন আমার সম্মুখে থাকিবে, তেমনি তোমাদের বংশ ও তোমাদের নাম থাকিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর প্রতি অমাবস্যায় ও প্রতি বিশ্রামবারে সমস্ত মর্ত্ত্য আমার সম্মুখে প্রণিপাত করিতে আসিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর তাহারা বাহিরে গিয়া, যে লোকেরা আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্ম করিয়াছে, তাহাদের শব দেখিবে; কারণ তাহাদের কীট মরিবে না, ও তাহাদের অগ্নি নির্ব্বাণ হইবে না, এবং তাহারা সমস্ত মর্ত্ত্যের ঘৃণাস্পদ হইবে। যিরমিয়ের বাক্য; তিনি হিল্কিয়ের পুত্র, বিন্যামীন প্রদেশীয় অনাথোৎ-নিবাসী যাজকদের এক জন। আমোনের পুত্র যিহূদা-রাজ যোশিয়ের সময়ে, তাঁহার রাজত্বের ত্রয়োদশ বৎসরে, সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল। আর যোশিয়ের পুত্র যিহুদা-রাজ যিহোয়াকীমের সময়ে, যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের একাদশ বৎসরের সমাপ্তি পর্য্যন্ত, পঞ্চম মাসে যিরূশালেম-নিবাসীদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া যাওয়া পর্য্যন্ত [বাক্য] উপস্থিত হইল। সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, উদরের মধ্যে তোমাকে গঠন করিবার পূর্ব্বে আমি তোমাকে জ্ঞাত ছিলাম, তুমি গর্ভ হইতে বাহির হইয়া আসিবার পূর্ব্বে তোমাকে পবিত্র করিয়াছিলাম; আমি তোমাকে জাতিগণের কাছে ভাববাদী করিয়া নিযুক্ত করিয়াছি। তখন আমি কহিলাম, হায় হায়, হে প্রভু সদাপ্রভু, দেখ, আমি কথা কহিতে জানি না, কেননা আমি বালক। কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, ‘আমি বালক,’ এমন কথা বলিও না; কিন্তু আমি তোমাকে যাহার কাছে পাঠাইব, তাহারই কাছে তুমি যাইবে, এবং তোমাকে যাহা আজ্ঞা করিব, তাহাই বলিবে। উহাদের সম্মুখে ভীত হইও না, কেননা তোমার উদ্ধারার্থে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন। পরে সদাপ্রভু আপন হস্ত বিস্তার করিয়া আমার মুখ স্পর্শ করিলেন, এবং সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, দেখ, আমি আমার বাক্য তোমার মুখে দিলাম; দেখ, উৎপাটন, ভঙ্গ, বিনাশ ও নিপাত করিবার নিমিত্ত, পত্তন ও রোপন করিবার নিমিত্ত, আমি জাতিগণের উপরে ও রাজ্য সকলের উপরে আজ তোমাকে নিযুক্ত করিলাম। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, যিরমিয়, তুমি কি দেখিতেছ? আমি কহিলাম, আমি বাদাম গাছের এক শাখা দেখিতেছি। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, ভাল দেখিয়াছ, কেননা আমি আপন বাক্য সফল করিতে জাগ্রৎ আছি। পরে দ্বিতীয় বার সদাপ্রভুর বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, তিনি বলিলেন, তুমি কি দেখিতেছ? আমি কহিলাম, ধূমযুক্ত একটী হাঁড়ি দেখিতেছি; তাহার মুখ উত্তর দিক্‌ হইতে [হেলিয়া আছে।] তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উত্তর দিক্‌ হইতে এই দেশনিবাসী সকলের উপরে অমঙ্গলরূপ বন্যা প্রবাহিত হইবে। কারণ, দেখ, আমি উত্তর দিকস্থ নানা রাজ্যের সমস্ত গোষ্ঠীকে ডাকিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন; তাহারা আসিয়া যিরূশালেমের পুর-দ্বারের প্রবেশ-স্থানে, তাহার চারিদিকের সমস্ত প্রাচীরের সম্মুখে, এবং যিহূদার সমস্ত নগরের সম্মুখে, আপন আপন সিংহাসন স্থাপন করিবে। আর আমি ইহাদের সমস্ত দুষ্ক্রিয়ার জন্য ইহাদের বিরুদ্ধে আমার শাসন সকল প্রচার করিব; কেননা ইহারা আমাকে পরিত্যাগ করিয়া অন্য দেবতাদের নিকটে ধূপ জ্বালাইয়াছে, ও আপন আপন হস্তকৃত বস্তুর কাছে প্রণিপাত করিয়াছে। অতএব তুমি কটিবন্ধন কর, উঠ; আমি তোমাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করি, সে সমস্ত তাহাদিগকে বল; তাহাদের সম্মুখে উদ্বিগ্ন হইও না, পাছে আমি তাহাদের সাক্ষাতে তোমাকে উদ্বিগ্ন করি। আর দেখ, আমি অদ্য সমগ্র দেশের বিরুদ্ধে, যিহূদার রাজগণের, তাহার অধ্যক্ষবর্গের, তাহার যাজকগণের ও দেশের লোকসাধারণের বিরুদ্ধে তোমাকে দৃঢ় নগর, লৌহস্তম্ভ ও পিত্তল-প্রাচীরস্বরূপ করিলাম। তাহারা তোমার সহিত যুদ্ধ করিবে, কিন্তু তোমাকে পরাজয় করিতে পারিবে না, কারণ তোমার উদ্ধারার্থে আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি যাও, যিরূশালেমের কর্ণগোচরে এই কথা প্রচার কর, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমার পক্ষে তোমার যৌবনের ভক্তি, তোমার বিবাহকালের প্রেম আমার স্মরণ হয়; তুমি আমার পশ্চাতে প্রান্তরে, যেখানে বপন করা যায় নাই, এমন দেশে গমন করিয়াছিলে। ইস্রায়েল সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র, তাঁহার আয়ের অগ্রিমাংশ ছিল; যে সকল লোক তাহাকে গ্রাস করিবে, তাহারা দোষী হইবে; তাহাদের প্রতি অমঙ্গল ঘটিবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন। হে যাকোবের কুল, হে ইস্রায়েল-কুলের সমুদয় গোষ্ঠী, সদাপ্রভুর বাক্য শুন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার কি অন্যায় দেখিয়াছে যে, তাহারা আমা হইতে দূরে গিয়াছে, অসারতার অনুগামী হইয়া অসার হইয়াছে? তাহারা বলে নাই যে, সেই সদাপ্রভু কোথায়, যিনি মিসর দেশ হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলেন, যিনি প্রান্তরের মধ্য দিয়া, মরুভূমি ও গর্ত্তময় ভূমি দিয়া, জলবিহীনতার ও মৃত্যুচ্ছায়ার ভূমি দিয়া পথিকবিহীন ও নিবাসী-বর্জ্জিত ভূমি দিয়া, আমাদিগকে লইয়া আসিয়াছিলেন? আমি তোমাদিগকে এই ফলবান দেশে আনিয়াছিলাম, যেন তোমরা এখানকার ফল ও উত্তম উত্তম সামগ্রী ভোজন কর; কিন্তু তোমরা প্রবেশ করিয়া আমার দেশ অশুচি করিলে, আমার অধিকার ঘৃণাস্পদ করিলে। যাজকেরা বলে নাই, ‘সদাপ্রভু কোথায়?’ এবং যাহারা ব্যবস্থা হাতে করে, তাহারা আমাকে জানে নাই, পালকেরা আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচরণ করিয়াছে, ভাববাদিগণ বাল [দেবের] নাম লইয়া ভাববাণী বলিয়াছে, এবং এমন পদার্থের পশ্চাদগামী হইয়াছে, যাহাতে উপকার নাই। অতএব আমি তোমাদের সহিত আরও বিবাদ করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, এবং তোমাদের পুত্রপৌত্রগণেরও সহিত বিবাদ করিব। বস্তুতঃ তোমরা পার হইয়া কিত্তীয়দের উপকূল সমূহে যাও, দেখ; আর কেদরে লোক পাঠাও, সূক্ষ্ম বিবেচনা কর, দেখ, এমন কি হইয়াছে? কোন জাতি কি আপনাদের দেবগণের পরিবর্ত্তন করিয়াছে? সেই দেবগণ ত ঈশ্বর নয়। কিন্তু আমার প্রজাগণ এমন বস্তুর সহিত আপনাদের গৌরবের পরিবর্ত্তন করিয়াছে, যাহাতে উপকার নাই। হে আকাশমণ্ডল, ইহাতে স্তম্ভিত হও, রোমাঞ্চিত হও, নিতান্ত অসাড় হইয়া পড়, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কেননা আমার প্রজাবৃন্দ দুই দোষ করিয়াছে; জীবন্ত জলের উনুই যে আমি, আমাকে তাহারা ত্যাগ করিয়াছে; আর আপনাদের জন্য কূপ খুদিয়াছে, সেগুলি ভগ্ন কূপ, জলাধার হইতে পারে না। ইস্রায়েল কি দাস? সে কি গৃহজাত [কিঙ্কর]? সে কেন লুটদ্রব্য হইয়াছে? যুবসিংহগণ তাহার উপরে গর্জ্জন ও হূঙ্কার করিয়াছে; তাহারা তাহার দেশ ধ্বংসিত করিয়াছে; তাহার নগর সকল দগ্ধ হইয়াছে, নিবাসী কেহ নাই। আবার নোফের ও তফনহেষের লোকেরা তোমার মাথা মুড়াইয়াছে। তুমি কি আপনি আপনার প্রতি ইহা ঘটাও নাই? বাস্তবিক তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন তোমাকে পথ দিয়া লইয়া যাইতেছিলেন, তখন তুমি তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়াছ। এখন শীহোর নদীর জল পান করিতে মিসরের পথে কেন যাইতেছ? অথবা ফরাৎ নদীর জল পান করিতে অশূরের পথে কেন যাইতেছ? তোমারই দুষ্টতা তোমাকে শাস্তি দিবে, এবং তোমার বিপথগামিত্ব তোমাকে অনুযোগ করিবে; অতএব জানিও আর দেখিও, এটা মন্দ ও তিক্ত বিষয় যে, তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে পরিত্যাগ করিয়াছ, ও মনের মধ্যে আমার ভয়কে স্থান দেও নাই, ইহা প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। বস্তুতঃ দীর্ঘকাল হইল, আমি তোমার যোঁয়ালি ভগ্ন করিয়াছিলাম, তোমার বন্ধন সকল ছেদন করিয়াছিলাম; আর তুমি বলিয়াছিলে, আমি দাসত্ব করিব না বাস্তবিক সমস্ত উচ্চ পর্ব্বতের উপরে ও সমস্ত হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে তুমি নত হইয়া ব্যভিচার করিয়া আসিতেছ। আমি ত সর্ব্বতোভাবে প্রকৃত বীজোৎপন্ন উত্তম দ্রাক্ষালতা করিয়া তোমাকে রোপন করিয়াছিলাম, তুমি কেমন করিয়া বিকৃত হইয়া আমার কাছে বিজাতীয় দ্রাক্ষালতার শাখা হইলে? যদ্যপি সোরা দিয়া তুমি আপনাকে ধৌত কর, ও অনেক সাবান লাগাও, তথাপি তোমার অপরাধ আমার সম্মুখে চিহ্নিত রহিয়াছে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। তুমি কেমন করিয়া বলিতে পার, আমি অশুচি নহি, বাল [দেবগণের] পশ্চাতে যাই নাই? উপত্যকাতে তোমার পথ দেখ; যাহা করিয়াছ, তাহা জ্ঞাত হও; তুমি আপন পথে ভ্রমণকারিণী উষ্ট্রী; তুমি প্রান্তরপরিচিতা বন্য গর্দ্দভী, যাহা অভিলাষক্রমে বায়ু আহার করে; তাহার কামাবেশে কে তাহাকে ফিরাইতে পারে? যাহারা তাহার অন্বেষণ করে, তাহারা আপনাদিগকে ক্লান্ত করিবে না, তাহার [নিয়মিত] মাসে তাহাকে পাইবে। তুমি আপন চরণ পাদুকা-রহিত ও গলার নলী শুষ্ক হইতে দিও না। কিন্তু তুমি বলিয়াছ, আশা নাই, না, কেননা আমি বিদেশীদিগকে প্রেম করিয়া আসিতেছি, তাহাদেরই পশ্চাতে যাইব। চোর ধরা পড়িলে যেমন লজ্জিত হয়, তেমনি ইস্রায়েল-কুল, আপনারা ও তাহাদের রাজগণ, অধ্যক্ষবর্গ, যাজকগণ ও ভাববাদিগণ লজ্জিত হইয়াছে; বস্তুতঃ তাহারা কাষ্ঠকে বলে, তুমি আমার পিতা; শিলাকে বলে, তুমি আমার জননী; তাহারা আমার প্রতি পৃষ্ঠ ফিরাইয়াছে, মুখ নয়; কিন্তু বিপৎকালে তাহারা বলিবে, ‘তুমি উঠ, আমাদিগকে নিস্তার কর’। কিন্তু তুমি আপনার জন্য যাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছ, তোমার সেই দেবতারা কোথায়? তাহারাই উঠুক, যদি বিপৎকালে তোমাকে নিস্তার করিতে পারে; কেননা হে যিহূদা, তোমার যত নগর, তত দেবতা। সদাপ্রভু কহেন, তোমরা কেন আমার সঙ্গে বিবাদ করিতেছ? সকলেই আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচরণ করিয়াছ। আমি তোমাদের সন্তানগণকে বৃথাই আঘাত করিয়াছি; তাহারা শাসন গ্রাহ্য করিল না; তোমাদেরই খড়্‌গ বিনাশক সিংহের ন্যায় তোমাদের ভাববাদিগণকে গ্রাস করিয়াছে। হে বর্ত্তমানকালের লোক সকল, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য দেখ; ইস্রায়েলের কাছে আমি কি প্রান্তর হইয়াছি? কিম্বা আমি কি অন্ধকারময় দেশ হইয়াছি? আমার প্রজারা কেন বলে, আমরা ছুটিয়া চলিয়া গিয়াছি, তোমার নিকটে আর আসিব না? কুমারী কি আপন ভূষণ, ও কন্যা কি আপন মেখলা ভুলিয়া যাইতে পারে? কিন্তু আমার লোক অসংখ্য দিন আমাকে ভুলিয়া রহিয়াছে। তুমি প্রেমের অনুসন্ধান করিতে আপন পথ কেমন প্রস্তুত করিয়াছ। এই কারণ তুমি দুষ্টদিগকেও তোমার পথ শিখাইয়াছ। আর তোমার বস্ত্রের অঞ্চলে নির্দ্দোষ দীনহীন প্রাণীদের রক্ত পাওয়া যাইতেছে; তুমি তাহাদিগকে সিঁধ কাটিবার সময়ে ধর নাই, কিন্তু ঐ সকলের উপরে [এই দুষ্ক্রিয়াও করিয়াছ]; তথাপি বলিয়াছ, আমি নির্দ্দোষ, অবশ্য তাঁহার ক্রোধ আমা হইতে ফিরিয়াছে। দেখ, আমি তোমার বিচার করিব, কারণ তুমি বলিতেছ, ‘আমি পাপ করি নাই’। তুমি আপন পথ পরিবর্ত্তন করিতে কেন এত ঘুরিয়া বেড়াও? অশূরের বিষয়ে যেমন লজ্জিত হইয়াছিলে, মিসরের বিষয়েও তদ্রূপ লজ্জিত হইবে। তাহার নিকট হইতেও মাথায় হাত দিয়া প্রস্থান করিবে, কেননা সদাপ্রভু তোমার বিশ্বাসপাত্রদিগকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন, তাহাদের সাহায্যে তুমি কৃতকার্য্য হইবে না। লোকে বলে, কেহ আপন স্ত্রীকে ত্যাগ করিলে পর ঐ স্ত্রী তাহার সঙ্গ ছাড়িয়া যদি অন্য পুরুষের হয়, তবে তাহার স্বামী কি পুনর্ব্বার তাহার কাছে গমন করিবে? করিলে কি সেই দেশ নিতান্ত অশুচি হইবে না? কিন্তু তুমি অনেক কান্তের সহিত ব্যভিচার করিয়াছ, তবু আমার কাছে ফিরিয়া আইস, ইহা সদাপ্রভু কহেন। চক্ষু তুলিয়া বৃক্ষশূন্য গিরি সকল দেখ, কোন্‌ স্থানে তোমার সতীত্বলঙ্ঘন না হইয়াছে? তুমি উহাদের জন্য প্রান্তরস্থ আরবীয়ের ন্যায় রাজপথে বসিয়াছ, তুমি আপন ব্যভিচার ও দুষ্ট ক্রিয়া দ্বারা দেশ অশুচি করিয়াছ। এই নিমিত্ত বৃষ্টিধারা নিবারিত হইয়াছে, এবং শেষ বর্ষাও হয় নাই; তথাপি তুমি বেশ্যার ললাট ধারণ করিয়াছ, লজ্জিতা হইতে অসম্মত হইয়াছ। তুমি এখন অবধি কি আমাকে ডাকিয়া বলিবে না? ‘হে আমার পিতা, তুমিই আমার বাল্যকালের মিত্র। তিনি কি চিরকাল ক্রোধ রাখিবেন, শেষ পর্য্যন্ত তাহা রক্ষা করিবেন?’ দেখ, তুমি মন্দ কথা বলিয়াছ, ও মন্দ কার্য্য করিয়াছ, ও তাহা সিদ্ধ করিয়াছ। যোশিয় রাজার সময়ে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, বিপথগামিনী ইস্রায়েল যাহা করিয়াছে, তাহা কি তুমি দেখিয়াছ? সে প্রত্যেক উচ্চ পর্ব্বতের উপরে ও প্রত্যেক হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে গিয়া সেই সকল স্থানে ব্যভিচার করিয়াছে। সে এই সকল কর্ম্ম করিলে পর আমি কহিলাম, সে আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে, কিন্তু সে ফিরিয়া আসিল না; এবং তাহার বিশ্বাসঘাতিনী ভগিনী যিহূদা তাহা দেখিল। আর আমি দেখিলাম, বিপথগামিনী ইস্রায়েল ব্যভিচার করিয়াছিল, এই কারণ প্রযুক্তই যদ্যপি আমি তাহাকে ত্যাগপত্র দিয়া ত্যাগ করিয়াছিলাম, তথাপি তাহার ভগিনী বিশ্বাসঘাতিনী যিহূদা ভয় করিল না, কিন্তু আপনিও গিয়া ব্যভিচার করিল। তাহার ব্যভিচারের নির্লজ্জতায় দেশ অশুচি হইয়াছিল; সে প্রস্তর ও কাষ্ঠের সহিত ব্যভিচার করিত। এমন হইলেও তাহার বিশ্বাসঘাতিনী ভগিনী যিহূদা সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত নয়, কেবল কপটভাবে আমার প্রতি ফিরিয়াছে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, বিশ্বাসঘাতিনী যিহূদা অপেক্ষা বিপথগামিনী ইস্রায়েল আপনাকে ধার্ম্মিক দেখাইয়াছে। তুমি যাও, এই সকল কথা উত্তর দিকে প্রচার কর, বল, সদাপ্রভু কহেন, হে বিপথগামিনী ইস্রায়েল, ফিরিয়া আইস; আমি তোমাদের প্রতি ক্রোধদৃষ্টি করিব না; যেহেতু আমি দয়াবান, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আমি চিরকাল ক্রোধ রাখিব না। কেবলমাত্র তোমার এই অপরাধ স্বীকার কর যে, তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচরণ করিয়াছ, ও প্রত্যেক হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে বিদেশীদের সহিত আপন আচার ভ্রষ্ট করিয়াছ, আর তোমরা আমার রবে অবধান কর নাই, ইহা সদাপ্রভু কহেন। হে বিপথগামী সন্তানগণ, ফিরিয়া আইস, ইহা সদাপ্রভু কহেন, কেননা আমি তোমাদের স্বামী; আমি নগর হইতে এক জন ও গোষ্ঠী হইতে দুই জন করিয়া তোমাদিগকে গ্রহণ করিব, ও সিয়োনে আনিব; আর তোমাদিগকে আপন মনের মত পালকগণ দিব, তাহারা জ্ঞানে ও বিজ্ঞতায় তোমাদিগকে চরাইবে। সদাপ্রভু কহেন, সেই সময়ে যখন তোমরা দেশে বর্দ্ধিত ও বহুপ্রজ হইবে, তখন ‘সদাপ্রভুর নিয়ম-সিন্দুক,’ এ কথা লোকে আর বলিবে না, তাহা মনে আসিবে না, তাহারা তাহা স্মরণে আনিবে না, তাহার বিরহে দুঃখিত হইবে না, এবং তাহা আর নির্ম্মাণ করা যাইবে না। সেই সময়ে যিরূশালেম সদাপ্রভুর সিংহাসন বলিয়া আখ্যাত হইবে, এবং সমস্ত জাতি তাহার নিকটে, সদাপ্রভুর নামের কাছে, যিরূশালেমে, একত্রীকৃত হইবে; তাহারা আর আপন আপন দুষ্ট হৃদয়ের কঠিনতা অনুসারে চলিবে না। তৎকালে যিহূদা-কুল ইস্রায়েল-কুলের সঙ্গে সঙ্গে গমন করিবে, এবং তাহারা একসঙ্গে উত্তর দেশ হইতে, যে দেশ আমি অধিকারের জন্য তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে দিয়াছি, সেই দেশে আসিবে। আর আমিই বলিয়াছিলাম, আমি সন্তানগণের মধ্যে তোমাকে কেমন স্থান দিব! মনোরম্য এক দেশ, জাতিগণের পরমরত্নস্বরূপ অধিকার তোমাকে দান করিব! আমি বলিয়াছিলাম, তোমরা আমাকে পিতা বলিয়া ডাকিবে, এবং আমার পশ্চাদগমন হইতে ফিরিয়া যাইবে না। হে ইস্রায়েল-কুল, সত্যই যে স্ত্রী বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া আপন স্বামীকে ছাড়িয়া যায়, তাহার ন্যায় তোমরাও আমার কাছে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছ, ইহা সদাপ্রভু কহেন। বৃক্ষশূন্য গিরিমালার উপরে উচ্চরব, ইস্রায়েল-সন্তানদের রোদন ও কাকূক্তি শুনা যাইতেছে; কারণ তাহারা কুটিলপথগামী হইয়াছে, আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গিয়াছে। হে বিপথগামী সন্তানগণ, ফিরিয়া আইস, আমি তোমাদের বিপথগমন-রোগ ভাল করিব। ‘দেখ, আমরা তোমার কাছে আসিলাম, কেননা তুমিই আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। সত্যই, উপপর্ব্বতস্থ সমস্ত, গিরিস্থ লোকারণ্য মিথ্যামাত্র, সত্যই আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে ইস্রায়েলের পরিত্রাণ। কিন্তু বাল্যকালাবধি আমাদের পিতৃপুরুষদের শ্রমফল, তাঁহাদের মেষগবাদি পাল ও তাঁহাদের পুত্রকন্যাগণ, সেই লজ্জাস্পদের গ্রাসে পড়িয়াছে। আইস, আমরা আপনাদের লজ্জাতে শয়ন করি, এবং আমাদের অপমান আমাদিগকে আচ্ছাদন করুক; কারণ আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি, আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষেরা করিয়াছি, বাল্যকাল হইতে অদ্য পর্য্যন্ত করিয়াছি; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে অবধান করি নাই। সদাপ্রভু কহেন, হে ইস্রায়েল, তুমি যদি ফিরিয়া আসিতে চাহ, তবে আমারই কাছে ফিরিয়া আইস; এবং যদি আমার দৃষ্টি হইতে তোমার ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর কর, তবে আর বিচলিত হইবে না। আর তুমি সত্যে, ন্যায়ে, ও ধার্ম্মিকতায় ‘জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য’ বলিয়া শপথ করিবে, আর জাতিগণ তাঁহাতেই আপনাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবে, তাঁহারই শ্লাঘা করিবে। কারণ সদাপ্রভু যিহূদার ও যিরূশালেমের লোকদিগকে এই কথা কহেন, তোমরা আপনাদের পতিত ভূমি চাষ কর, কন্টকবন মধ্যে বীজ বপন করিও না। হে যিহূদার লোক, হে যিরূশালেম-নিবাসিগণ, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে ছিন্নত্বক্‌ হও, আপন আপন হৃদয়ের ত্বক্‌ দূর করিয়া ফেল,পাছে তোমাদের ক্রিয়ার দুষ্টতা প্রযুক্ত আমার ক্রোধ অগ্নিবৎ জ্বলিয়া উঠে, এবং এমন দাহ করে যে, কেহ নিবাইতে পারিবে না। তোমরা যিহূদা দেশে প্রচার কর, যিরূশালেমে ঘোষণা কর; বল, তোমরা দেশে তূরীধ্বনি কর, চীৎকার করিয়া বল, তোমরা একত্র হও, আইস, আমরা দৃঢ় নগর সকলে প্রবেশ করি। সিয়োনের দিকে পতাকা তুল, রক্ষার্থে পলায়ন কর, বিলম্ব করিও না; কেননা আমি উত্তর দিক্‌ হইতে অমঙ্গল ও মহাধ্বংস আনিব। সিংহ আপন গহ্বর হইতে উঠিয়া আসিতেছে, জাতিগণের বিনাশক আসিতেছে; সে পথে আছে, সে স্বস্থান হইতে বাহির হইয়াছে, তোমার দেশ ধ্বংসস্থান করণার্থে আসিতেছে; তোমার নগর সকল উচ্ছিন্ন ও নিবাসীবিহীন হইবে। এই জন্য তোমরা চট পরিধান কর, বিলাপ ও হাহাকার কর, কেননা সদাপ্রভুর জলন্ত ক্রোধ আমাদের হইতে ফিরে নাই। সদাপ্রভু কহেন, সেই দিন রাজার হৃদয় ও অধ্যক্ষগণের হৃদয় ক্ষয় পাইবে, যাজকগণ চমকিয়া উঠিবে, ও ভাববাদিগণ স্তম্ভিত হইবে। তখন আমি কহিলাম, হায় হায়! হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি এই লোকদিগকে ও যিরূশালেমকে নিতান্ত ভ্রান্ত করিয়াছ, কথিত হইয়াছে, তোমাদের শান্তি হইবে, কিন্তু তাহাদের প্রাণ পর্য্যন্ত খড়্‌গ প্রবেশ করিতেছে। তৎকালে এই লোকদিগকে ও যিরূশালেমকে এই কথা বলা যাইবে, প্রান্তরস্থ বৃক্ষশূন্য গিরিমালা হইতে উষ্ণ বায়ু আমার জাতির কন্যার দিকে আসিতেছে, তাহা শস্য ঝাড়িবার কি পরিষ্কার করিবার নিমিত্ত নয়। তদপেক্ষা অধিক প্রচণ্ড বায়ু আমার আজ্ঞাতে আসিতেছে, এখন আমিও লোকদের বিরুদ্ধে বিচারদণ্ড প্রচার করিব। দেখ, সে মেঘমালার ন্যায় আসিতেছে, তাহার রথ সকল ঘূর্ণবায়ুস্বরূপ, তাহার অশ্বগণ ঈগল পক্ষী হইতেও দ্রুতগামী। হায় হায়, আমরা নষ্ট হইলাম। হে যিরূশালেম, হৃদয় ধুইয়া তোমার দুষ্টতা ঘুচাও, যেন পরিত্রাণ পাইতে পার; কত দিন তোমার অন্তরে দুশ্চিন্তা বাস করিবে? বস্তুতঃ দান নগর হইতে কোন প্রচারকের রব আসিতেছে, ইফ্রয়িমের পর্ব্বতমালা হইতে কেহ দুর্ঘটনার কথা ঘোষণা করিতেছে। তোমরা জাতিগণের কাছে উল্লেখ কর; দেখ, যিরূশালেমের বিরুদ্ধে ঘোষণা কর; দূর দেশ হইতে অবরোধকারিগণ আসিতেছে, তাহারা যিহূদার নগর সকলের বিরুদ্ধে হূঙ্কার করিতেছে। তাহারা ক্ষেত্ররক্ষকদের ন্যায় যিরূশালেমের চারিদিকে থাকিবে, কেননা সে আমার প্রতিকূলচারিণী হইয়াছে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। তোমার পথ ও তোমার ক্রিয়া সকল তোমার বিরুদ্ধে ইহা ঘটাইয়াছে; এ তোমার দুষ্টতার ফল, হাঁ, ইহা তিক্ত, হাঁ, ইহা তোমার মর্ম্মভেদী। ‘হায় আমার অন্ত্র! হায় আমার অন্ত্র! আমি হৃদয়ে ব্যথিত; আমার হৃদয় ধুক্‌ ধুক্‌ করিতেছে; আমি নীরব থাকিতে পারি না; কেননা হে আমার প্রাণ, তুমি তূরীর রব ও যুদ্ধের সিংহনাদ শুনিয়াছ। ধ্বংসের উপরে ধ্বংস প্রচারিত হইতেছে, ফলে, সমুদয় দেশ উচ্ছিন্ন হইতেছে; হঠাৎ আমার তাম্বু সকল, নিমেষ কাল মধ্যে আমার যবনিকা সকল উচ্ছিন্ন হইল। আমি কত দিন পতাকা দেখিব ও তূরীর রব শুনিব?’ বস্তুতঃ আমার প্রজারা অজ্ঞান, তাহারা আমাকে জানে না; তাহারা নির্ব্বোধ বালক, তাহাদের বিবেচনা নাই; তাহারা কদাচারে পটু, কিন্তু সদাচার করিতে জানে না। ‘আমি পৃথিবীতে দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ তাহা ঘোর ও শূন্য ছিল; আমি আকাশমণ্ডলে [দৃষ্টিপাত করিলাম] তাহার দীপ্তি ছিল না। আমি পর্ব্বতগণের উপরে দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সে সকল কাঁপিতেছে, ও উপপর্ব্বত সকল টলটলায়মান হইতেছে। আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, মনুষ্যমাত্র নাই, এবং আকাশের সমস্ত পক্ষী পলাইয়া গিয়াছে। আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সদাপ্রভুর সম্মুখে ও তাঁহার জ্বলন্ত ক্রোধের সম্মুখে উদ্যান মরুভূমি হইয়া পড়িয়াছে, ও তাহার সমস্ত নগর ভগ্ন হইয়াছে।’ কারণ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সমস্ত দেশ ধ্বংসের স্থান হইবে তথাপি আমি নিঃশেষে সংহার করিব না। এই জন্য পৃথিবী শোক করিবে, উপরিস্থ আকাশমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ হইবে; কারণ আমি ইহা বলিয়াছি, ইহা মনে স্থির করিয়াছি, এ বিষয়ে অনুশোচনা করি নাই, ইহা হইতে ফিরিব না। অশ্বারোহীদের ও ধনুর্দ্ধরগণের রবে সমস্ত নগর পলায়ন করে, তাহারা নিবিড় বনে প্রবেশ করে ও শৈলে উঠে; সকল নগর পরিত্যক্ত তাহাদের মধ্যে বাসকারী মনুষ্যমাত্র নাই। [হে পুরি,] তুমি উচ্ছিন্ন হইলে কি করিবে? যদ্যপি লোহিতবর্ণ বস্ত্র পরিধান কর, যদ্যপি সুবর্ণের অলঙ্কারে আপনাকে ভূষিত কর, যদ্যপি অঞ্জন দ্বারা চক্ষু চির, তথাপি সৌন্দর্য্যের চেষ্টা অলীক হইবে; জারেরা তোমাকে অগ্রাহ্য করে, তোমার প্রাণনাশেরই চেষ্টা করে। বস্তুতঃ স্ত্রীর প্রসবকালের রবের ন্যায়, প্রথম প্রসবকালের আর্ত্তনাদের ন্যায় আমি সিয়োনকন্যার রব শুনিয়াছি; সে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়িয়া অঞ্জলি বিস্তার করিয়া কহিতেছে, হায় হায়, হত্যাকারীদের সম্মুখে আমার প্রাণ অবসন্ন হইল। তোমরা যিরূশালেমের সড়কে সড়কে দৌড়াদৌড়ি কর, দেখ, জ্ঞাত হও, এবং তথাকার সকল চকে অন্বেষণ কর; যদি এমন এক জনকেও পাইতে পার, যে ন্যায়াচরণ করে, সত্যের অনুশীলন করে, তবে আমি নগরকে ক্ষমা করিব। তাহারা যদ্যপি বলে, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তথাপি তাহারা মিথ্যা শপথ করে। হে সদাপ্রভু, তোমার দৃষ্টি কি সত্যের প্রতি নয়? তুমি তাহাদিগকে প্রহার করিলেও তাহারা দুঃখার্ত্ত হইল না; তাহাদিগকে জীর্ণ করিলেও তাহারা শাসন গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিল; তাহারা আপন আপন মুখ পাষাণ হইতেও কঠিন করিল; তাহারা ফিরিয়া আসিতে অস্বীকার করিল। তখন আমি কহিলাম, ইহারা ত দরিদ্র, ইহারা অজ্ঞান, কারণ সদাপ্রভুর পথ ও আপনাদের ঈশ্বরের বিচার জানে না; আমি একবার মহৎ লোকদের নিকটে গিয়া তাহাদের কাছে কথা কহিব, কেননা তাহারা সদাপ্রভুর পথ ও আপনাদের ঈশ্বরের বিচার জানে। কিন্তু উহারা একযোগে যোঁয়ালি ভগ্ন করিয়াছে, বন্ধন ছেদন করিয়াছে। এই নিমিত্ত বন হইতে সিংহ আসিয়া তাহাদিগকে বধ করিবে, জঙ্গলের কেঁদুয়া তাহাদিগকে বিনষ্ট করিবে, চিতা ব্যাঘ্র তাহাদের নগরের নিকটে প্রহরী হইবে; যে কেহ নগর হইতে বাহির হইবে, সে বিদীর্ণ হইবে; কারণ তাহাদের অধর্ম্ম অধিক, তাহাদের বিপথগমন গুরুতর। আমি কিরূপে তোমাকে ক্ষমা করিব? তোমার সন্তানগণ আমাকে ত্যাগ করিয়াছে; অনীশ্বরদের নাম লইয়া শপথ করিয়াছে; আমি তাহাদিগকে পরিতৃপ্ত করিলে তাহারা ব্যভিচার করিল, ও দলে দলে বেশ্যার বাটীতে গিয়া একত্র হইল। তাহারা খাদ্যপুষ্ট অশ্বের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইল, প্রত্যেক জন পরস্ত্রীর প্রতি হেষ্রা করিল। আমি কি এই সকলের প্রতিফল দিব না, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আমার প্রাণ কি এই প্রকার জাতির প্রতিশোধ দিবে না? তোমরা যিরূশালেমের প্রাচীরে উঠিয়া নষ্ট কর, কিন্তু নিঃশেষে সংহার করিও না; তাহার পল্লব সকল দূর কর, কারণ সে সকল সদাপ্রভুর নয়। কেননা ইস্রায়েল-কুল ও যিহূদা-কুল আমার বিপরীতে অত্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। তাহারা সদাপ্রভুকে অস্বীকার করিয়া বলিয়াছে, ‘উনি তিনি নন; আর আমাদের প্রতি অমঙ্গল ঘটিবে না, আমরা খড়্‌গ কি দুর্ভিক্ষ দর্শন করিব না, আর ভাববাদিগণ বায়ুবৎ হইবে, তাহাদের মধ্যে বাক্য নাই, তাহাদেরই প্রতি এইরূপ করা যাইবে।’ এই কারণ বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা এই কথা বলিতেছ, এজন্য দেখ, আমি তোমার মুখস্থিত আমার বাক্যকে অগ্নিস্বরূপ ও এই জাতিকে কাষ্ঠস্বরূপ করিব, উহা ইহাদিগকে গ্রাস করিবে। সদাপ্রভু কহেন, হে ইস্রায়েল-কুল, দেখ, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে দূর হইতে এক জাতিকে আনিব; সে বলবান জাতি, সে প্রাচীন জাতি; তুমি সেই জাতির ভাষা জান না, তাহারা কি বলে, তাহা বুঝিতে পার না। তাহাদের তূণ খোলা কবরের ন্যায়, তাহারা সকলে বীর পুরুষ। তাহারা তোমার পক্ব শস্য ও তোমার অন্ন, তোমার পুত্রকন্যাগণের খাদ্য গ্রাস করিবে; তাহারা তোমার মেষপাল ও গোপাল গ্রাস করিবে; তোমার দ্রাক্ষালতা ও ডুমুরবৃক্ষ গ্রাস করিবে; তুমি যে সকল প্রাচীরবেষ্টিত নগরে বিশ্বাস করিতেছ, সে সকল তাহারা খড়্‌গ দ্বারা চূরমার করিবে। কিন্তু সদাপ্রভু কহেন, সেই সময়েও আমি নিঃশেষে তোমাদের সংহার করিব না। আর যখন তাহারা বলিবে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের প্রতি এ সকল কেন করিলেন? তখন তুমি তাহাদিগকে বলিবে, তোমরা যেমন আমাকে ত্যাগ করিয়াছ ও আপনাদের দেশে বিজাতীয় দেবতাদের দাসত্ব করিয়াছ, তেমনি বিদেশে বিদেশীদের দাসত্ব করিবে। তোমরা যাকোব-কুলকে এ কথা জানাও, যিহূদার মধ্যে ইহা প্রচার কর, বল, হে অজ্ঞান নির্ব্বোধ জাতি, চক্ষু থাকিতে অন্ধ, কর্ণ থাকিতে বধির যে তোমরা, তোমরা এই কথা শুন। সদাপ্রভু কহেন, তোমরা কি আমাকে ভয় করিবে না? আমার সাক্ষাতে কি কম্পমান হইবে না? আমি ত বালুকা দ্বারা সমুদ্রের সীমা নিত্যস্থায়ী বিধিক্রমে স্থির করিয়াছি; সে তাহা উল্লঙ্ঘন করিতে পারে না; তাহার তরঙ্গ আস্ফালন করিলেও কৃতার্থ হয় না, কল্লোলধ্বনি করিলেও সীমা অতিক্রম করিতে পারে না। কিন্তু এই লোকদের চিত্ত অবাধ্য ও প্রতিকূলাচারী, তাহারা অবাধ্য হইয়া চলিয়া গিয়াছে। তাহারা মনে মনে বলে না, আইস, আমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করি; তিনিই উপযুক্ত কালে প্রথম ও শেষ বর্ষার জল দেন; আমাদের জন্য ফসল কাটিবার নিয়মিত সপ্তাহ সকল রক্ষা করেন। তোমাদের অপরাধ এই সকল অন্যথা করিয়াছে, তোমাদের পাপ তোমাদের মঙ্গল নিবারণ করিয়াছে। কারণ আমার প্রজাদের মধ্যে দুষ্ট লোক পাওয়া যায়, তাহারা ব্যাধের ন্যায় হেঁট হইয়া লুকাইয়া থাকে, তাহারা ফাঁদ পাতে ও মানুষ ধরে। পিঞ্জর যেমন পক্ষীতে পরিপূর্ণ, তদ্রূপ তাহাদের বাটী ছলে পরিপূর্ণ; এই জন্য তাহারা উন্নত ও ধানবান্‌ হইয়াছে। তাহারা স্থূলকায় ও চাকচিক্যশালী হইয়াছে; হাঁ, তাহারা দুষ্টতার রীতি অপেক্ষাও পাপ করে, তাহারা বিচার করে না, পিতৃহীনের কল্যাণার্থে বিচার করে না, ও দরিদ্রদের বিচার নিষ্পত্তি করে না। সদাপ্রভু কহেন, আমি কি এই সকলের প্রতিফল দিব না? আমার প্রাণ কি এই প্রকার জাতির প্রতিশোধ দিবে না? দেশের মধ্যে ভয়ানক ও রোমাঞ্চজনক ব্যাপার সাধিত হয়। ভাববাদিগণ মিথ্যা ভাববাণী বলে, আর যাজকগণ তাহাদের বশবর্ত্তী হইয়া কর্ত্তৃত্ব করে; আর আমার প্রজারা এই রীতি ভালবাসে; কিন্তু ইহার পরিণামে তোমরা কি করিবে? হে বিন্যামীন-সন্তানগণ, তোমরা যিরূশালেমের মধ্য হইতে পলায়ন কর, তকোয় নগরে তূরী বাজাও, বৈৎ-হক্কেরমে ধ্বজা তুল, কেননা উত্তর দিক্‌ হইতে অমঙ্গল ও মহাধ্বংস উকি মারিতেছে। সুন্দরী সুখভোগিনী সিয়োন-কন্যাকে আমি সংহার করিব। মেষপালকগণ আপন আপন পাল সঙ্গে লইয়া তাহার কাছে আসিবে; তাহারা তাহার বিরুদ্ধে চারিদিকে আপন আপন তাম্বু স্থাপন করিবে, প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে পাল চরাইবে। তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন কর; উঠ, আমরা মধ্যাহ্নকালে যাত্রা করি। ধিক্‌ আমাদিগকে! কেননা দিবাবসান হইতেছে, সন্ধ্যাকালের ছায়া দীর্ঘ হইতেছে। উঠ, আমরা রাত্রিযোগে যাত্রা করি, তাহার অট্টালিকা সকল নষ্ট করি। বস্তুতঃ বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছেন, তোমরা বৃক্ষ কাটিয়া যিরূশালেমের বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধ; সেই নগর প্রতিফল পাইবে; তাহার ভিতরে সকলই উপদ্রব। যেমন উনুই আপন জল নির্গত করে, তেমনি সে আপন দুষ্টতা নির্গত করে; তাহার মধ্যে দৌরাত্ম্য ও লুটের শব্দ শুনা যায়; পীড়া ও আঘাত নিয়ত আমার দৃষ্টিগোচর রহিয়াছে। হে যিরূশালেম, শাসন গ্রহণ কর, পাছে আমার প্রাণ তোমা হইতে বিভিন্ন হয়, পাছে আমি তোমাকে ধ্বংসস্থান করি, নিবাসীবিহীন ভূমি করি। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, উহারা ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে শেষ দ্রাক্ষাফলের ন্যায় ঝাড়িয়া ফেলিবে; তুমি দ্রাক্ষাফল সংগ্রহকারীর ন্যায় ঝুড়িতে পুনঃপুনঃ হাত দেও। আমি কাহাকে বলিলে, কাহাকে সাক্ষ্য দিলে, উহারা শুনিবে? দেখ, তাহাদের কর্ণ অচ্ছিন্নত্বক্‌, তাহারা শুনিতে পায় না। দেখ, সদাপ্রভুর বাক্য তাহাদের টিট্‌কারির বিষয় হইয়াছে; সে বাক্যে তাহাদের কিছুই সন্তোষ হয় না। আহা! আমি সদাপ্রভুর ক্রোধে পরিপূর্ণ হইয়াছি; সম্বরণ করিতে করিতে ক্লান্ত হইলাম; সড়কে বালকদের উপরে ও যুবকগণের সভার উপরে একসঙ্গে তাহা ঢালিয়া দেও; কারণ, এমন কি, স্বামী ও স্ত্রী, বৃদ্ধ ও জরাতুর সকলেই ধরা পড়িবে। আর ভূমি ও স্ত্রীশুদ্ধ তাহাদের বাটী সকল পরের অধিকার হইবে; কারণ, আমি এই দেশনিবাসীদের বিরুদ্ধে আপন হস্ত বিস্তার করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, কেননা তাহার ক্ষুদ্র ও মহান সকলেই লোভে লুব্ধ; ভাববাদী ও যাজক সকলেই কপটাচার করে। আর তাহারা আমার জাতির ক্ষত কেবল একটুমাত্র সুস্থ করিয়াছে; যখন শান্তি নাই, তখন শান্তি শান্তি বলিয়াছে। তাহারা ঘৃণাই কার্য্য করিয়াছে বলিয়া কি লজ্জিত হইল? তাহারা মোটে লজ্জিত হয় নাই, বিষণ্ণ হইতেও জানে না; তজ্জন্য তাহারা পতিতগণের মধ্যে পতিত হইবে; আমি যখন তাহাদের প্রতিফল দিব, তখন তাহাদের নিপাত হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা পথে পথে দাঁড়াইয়া দেখ, এবং কোন্‌ কোন্‌টা চিরন্তন মার্গ, তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া বল, উত্তম পথ কোথায়? আর সেই পথে চল, তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কিন্তু তাহারা কহিল, আমরা চলিব না। আর আমি তোমাদের উপরে প্রহরিগণকে রাখিলাম, [বলিলাম,] ‘তোমরা তূরীধ্বনিতে কর্ণপাত কর;’ কিন্তু তাহারা বলিল, কর্ণপাত করিব না। অতএব হে জাতিগণ, শুন; হে মণ্ডলি, তাহাদের মধ্যে কি কি আছে, জ্ঞাত হও। হে পৃথিবী, শুন, দেখ, আমিই এই জাতির উপরে অমঙ্গল আনিব, তাহাদের কল্পনাসমূহের ফল বর্ত্তাইব, কারণ তাহারা আমার বাক্যে অবধান করে নাই; আর আমার ব্যবস্থা, তাহারা তাহা হেয়জ্ঞান করিয়াছে। শিবা হইতে আমার কাছে কেন ধূপ আইসে? কেন দূর দেশ হইতে মিষ্ট বচ আইসে? তোমাদের হোমবলি সকল আমার গ্রাহ্য নয়, তোমাদের বলিদানও আমার তুষ্টিজনক নয়। অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই জাতির সম্মুখে নানা বিঘ্ন স্থাপন করিব, আর পিতারা ও পুত্রেরা একসঙ্গে সেই সকল বিঘ্নে উছোট খাইবে; প্রতিবাসী ও তাহার বন্ধু বিনষ্ট হইবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, উত্তর দেশ হইতে এক জনসমাজ আসিতেছে, পৃথিবীর প্রান্ত হইতে এক মহাজাতি উত্তেজিত হইয়া আসিতেছে। তাহারা ধনুক ও বড়শাধারী, নিষ্ঠুর ও করুণারহিত, তাহাদের রব সমুদ্র-গর্জ্জনের তুল্য, এবং তাহারা অশ্বারোহণে আসিতেছে। অয়ি সিয়োন-কন্যে, তোমারই বিপরীতে যুদ্ধ করণার্থে তাহারা প্রত্যেক জন যোদ্ধার ন্যায় সুসজ্জিত হইয়াছে। আমরা এই বিষয়ে জনশ্রুতি শুনিয়াছি, আমাদের হস্ত অবশ হইল; যন্ত্রণা, প্রসবকারিণীর ন্যায় বেদনা, আমাদিগকে ধরিল। মাঠে যাইও না, পথে গমন করিও না, কেননা সেখানে শত্রুর খড়্‌গ, চারিদিকেই ভয়। হে আমার জাতির কন্যে, তুমি চট পরিধান কর, ভস্মে লুণ্ঠিত হও, একমাত্র পুত্রবিয়োগ জন্য শোকের ন্যায় শোক কর, তীব্র বিলাপ কর; কেননা বিনাশক অকস্মাৎ আমাদের উপরে আসিবে। আমি আপন প্রজাগণের মধ্যে তোমাকে পরীক্ষক করিয়া দুর্গরূপে স্থাপন করিয়াছি; যেন তুমি তাহাদের পথ জ্ঞাত হও ও পরীক্ষা কর। তাহারা সকলে দারুণ অবাধ্য, পরীবাদ করিয়া বেড়ায়; তাহারা পিত্তল ও লৌহস্বরূপ; তাহারা সকলেই ভ্রাষ্টাচারী। যাঁতা দগ্ধ হইয়াছে, সীসা অগ্নিতে শেষ হইয়াছে; অনর্থক তাহা খাঁটি করিবার চেষ্টা হইতেছে; কারণ দুষ্টগণকে বাহির করা যাইতেছে না। তাহাদিগকে অগ্রাহ্য রৌপ্য বলা যাইবে, কারণ সদাপ্রভু তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন। যিরমিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি সদাপ্রভুর গৃহের দ্বারে দাঁড়াও, তথায় এই কথা প্রচার কর, বল, হে যিহূদার সমস্ত লোক, সদাপ্রভুর কাছে প্রণিপাত করণার্থে এই সকল দ্বারে প্রবেশ করিয়া থাক যে তোমরা, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন। বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন আচার-ব্যবহার শুদ্ধ কর, তাহাতে আমি তোমাদিগকে এই স্থানে বাস করাইব। তোমরা এ মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করিও না, যথা, সদাপ্রভুর মন্দির, সদাপ্রভুর মন্দির, সদাপ্রভুর মন্দির এই সকল। যদি তোমরা আপন আপন আচার-ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ কর; যদি বাদী প্রতিবাদীর বিচার যথার্থরূপে নিষ্পত্তি কর; যদি বিদেশী, পিতৃহীন ও বিধবাদের প্রতি উপদ্রব না কর, এই স্থানে নির্দ্দোষের রক্তপাত না কর, এবং আপনাদের অমঙ্গলের নিমিত্ত অন্য দেবগণের পশ্চাদগামী না হও, তবে আমি এই স্থানে, তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে এই যে দেশ দিয়াছি, এখানে তোমাদিগকে যুগে যুগে চিরকাল বাস করিতে দিব। দেখ, তোমরা মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করিতেছ, তাহা উপকার করিতে পারে না। তোমরা কি চুরি, নরহত্যা, ব্যভিচার, মিথ্যাশপথ এবং বালের উদ্দেশে ধূপদাহ করিবে, এবং যাহাদিগকে জান নাই, এমন অন্য দেবগণের পশ্চাদগমন করিবে, আর এখানে আসিয়া, এই যে গৃহের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, এই গৃহে আমার সাক্ষাতে দাঁড়াইবে, আর বলিবে, আমরা উদ্ধার পাইলাম, যেন ঐ সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্য করিতে পার? এই যে গৃহের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, এই গৃহ কি তোমাদের দৃষ্টিতে দস্যুগণের গহ্বর হইয়াছে? দেখ, আমি, আমিই উহা দেখিয়াছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু শীলোতে আমার যে স্থান ছিল, যেখানে আমি প্রথমে আপন নাম বাস করাইয়াছিলাম, তোমরা একবার তথায় গমন কর, এবং আমার প্রজা ইস্রায়েলের দুষ্টতা প্রযুক্ত আমি সেই স্থানের প্রতি যাহা করিয়াছি, তাহা দেখ। আর এখন তোমরা এই সকল কর্ম্ম করিয়াছ, ইহা সদাপ্রভু কহেন, এবং আমি প্রত্যূষে উঠিয়া তোমাদিগকে কথা কহিলেও তোমরা শুন নাই, আমি তোমাদিগকে ডাকিলেও তোমরা উত্তর দেও নাই; সেই জন্য এই যে গৃহের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, যাহাতে তোমরা বিশ্বাস করিতেছ, এবং এই যে স্থান আমি তোমাদিগকে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে দিয়াছি, ইহার প্রতিও আমি এখন সেইরূপ করিব, যেরূপ শীলোর প্রতি করিয়াছিলাম। আর তোমাদের ভ্রাতৃসমূহকে, ইফ্রয়িমের সমস্ত বংশকে, যেমন বাহির করিয়া দিয়াছি, তেমনি তোমাদিগকেও আমার দৃষ্টিপথ হইতে বাহির করিয়া দিব। অতএব তুমি এই জাতির নিমিত্ত প্রার্থনা করিও না, তাহাদের জন্য আমার কাছে কাতরোক্তি ও প্রার্থনা উৎসর্গ করিও না, অনুরোধও করিও না; কেননা আমি তোমার কথা শুনিব না। তাহারা যিহূদার নগরে নগরে ও যিরূশালেমের সড়কে সড়কে যাহা করিতেছে, তাহা কি তুমি দেখিতেছ না? বালকেরা কাঠ কুড়ায়, পিতারা অগ্নি জ্বালায়, স্ত্রীলোকেরা ময়দা ছানে, আকাশ-রাণীর উদ্দেশে পিষ্টক পাক ও অন্য দেবতাদের উদ্দেশে পানীয় নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবার জন্য ইহা করে, যেন এইরূপে তাহারা আমার অসন্তোষ জন্মায়। তাহারা কি আমারই অসন্তোষ জন্মায়? ইহা সদাপ্রভু কহেন; তাহারা কি আপনাদেরই অসন্তোষ জন্মাইয়া আপনাদের মুখের বিবর্ণতা ঘটায় না? এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, এই স্থানের উপরে, মনুষ্য, পশু এবং ক্ষেত্রের বৃক্ষ ও ভূমির ফল, এই সকলের উপরে আমার ক্রোধ ও কোপ ঢালা যাইবে; আর তাহা দাহন করিবে, নিবিয়া যাইবে না। বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন; তোমরা আপনাদের অন্যান্য বলির সহিত হোমবলি যোগ কর, মাংস খাই। ফেল। বস্তুতঃ যে দিন আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম, তৎকালে হোমের কিম্বা বলিদানের বিষয় তাহাদিগকে বলিয়াছিলাম, কিম্বা আজ্ঞা দিয়াছিলাম, এমন নয়; বরং তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দিয়াছিলাম, তোমরা আমার রবে কর্ণপাত কর, তাহাতে আমি তোমাদের ঈশ্বর হইব, ও তোমরা আমার প্রজা হইবে; আর আমি তোমাদিগকে যে পথে চলিবার আজ্ঞা দিই, সেই পথেই চলিও, যেন তোমাদের মঙ্গল হয়। কিন্তু তাহারা শুনিল না, কর্ণপাতও করিল না, বরং আপনাদের মন্ত্রণায়, আপনাদের হৃদয়ের কঠিনতায় আচরণ করিল, তাহারা অগ্রসর না হইয়া পিছে হটিয়া গেল। যে দিন তোমাদের পিতৃপুরুষেরা মিসর দেশ হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিল, সেই দিন হইতে অদ্য পর্য্যন্ত আমি প্রতিদিন প্রত্যূষে উঠিয়া আপনার সমস্ত দাসকে, অর্থাৎ ভাববাদিগণকে, তোমাদের নিকটে প্রেরণ করিয়া আসিতেছি। তথাপি লোকেরা আমার বাক্য শুনে নাই, কর্ণপাতও করে নাই, কিন্তু আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিত; তাহারা পিতৃপুরুষগণ অপেক্ষাও অধিক দুরাচার হইয়াছে। আর তুমি তাহাদিগকে এই সকল কথা বলিবে, কিন্তু তাহারা তোমার বাক্য শুনিবে না; তুমি তাহাদিগকে ডাকিবে, কিন্তু তাহারা তোমাকে উত্তর দিবে না। তখন তুমি তাহাদিগকে বলিবে, এ সেই জাতি, যে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করে নাই, শাসন গ্রহণ করে নাই; সত্য বিনষ্ট ও ইহাদের মুখ হইতে উচ্ছিন্ন হইয়াছে। [হে যিরূশালেম], তুমি আপনার চুল কাটিয়া দূরে ফেলিয়া দেও, বৃক্ষশূন্য গিরি সকলের উপরে উঠিয়া বিলাপ কর, কেননা সদাপ্রভু আপন ক্রোধের পাত্র বংশকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন, পরিত্যাগ করিয়াছেন। কারণ আমার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, যিহূদার সন্তানগণ তাহাই করিয়াছে, ইহা সদাপ্রভু কহেন; এই যে গৃহের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, ইহা অশুচি করণার্থে তাহারা ইহার মধ্যে আপনাদের ঘৃণিত বস্তু সকল রাখিয়াছে। আর তাহারা আপন আপন পুত্রকন্যাগণকে আগুনে পোড়াইবার জন্য হিন্নোম-সন্তানের উপত্যকায় তোফতের উচ্চস্থলী সকল প্রস্তুত করিয়াছে; ইহা আমি আজ্ঞা করি নাই, আমার মনেও ইহা উদয় হয় নাই। এই জন্য সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যখন ঐ স্থান আর তোফৎ কিম্বা হিন্নোম-সন্তানের উপত্যকা নামে আখ্যাত হইবে না, কিন্তু হত্যার উপত্যকা বলিয়া আখ্যাত হইবে; কারণ লোকেরা স্থানাভাবপ্রযুক্ত ঐ তোফতে কবর দিবে। আর এই জাতির শব আকাশের পক্ষীসমূহের ও ভূমির পশুগণের ভক্ষ্য হইবে, কেহ তাহাদিগকে খেদাইয়া দিবে না। তখন আমি যিহূদার সকল নগরে ও যিরূশালেমের সকল পথে আমোদের রব ও আনন্দের রব, বরের রব ও কন্যার রব নিবৃত্ত করিব; কেননা দেশ ধ্বংসস্থান হইয়া পড়িবে। সদাপ্রভু কহেন, তৎকালে লোকেরা যিহূদার রাজগণের অস্থি, তাহার অধ্যক্ষবর্গের অস্থি, যাজকগণের অস্থি, ভাববাদিগণের অস্থি ও যিরূশালেমনিবাসী লোকদের অস্থি তাহাদের কবর হইতে বাহির করিবে। আর তাহারা সূর্য্যের, চন্দ্রের ও সমস্ত আকাশবাহিনীর সম্মুখে —তাহারা যাহাদিগকে ভক্তি ও সেবা করিত, যাহাদের অনুগামী হইত, যাহাদিগকে অন্বেষণ করিত, ও যাহাদের কাছে প্রণিপাত করিত, আহাদের সম্মুখে—সে সকল অস্থি ছড়াইয়া দিবে। সেগুলি আর একত্রীকৃত কিম্বা কবরে স্থাপিত হইবে না; সারের ন্যায় ভূমির উপরে থাকিবে। আর এই দুষ্ট গোষ্ঠীর অবশিষ্ট যে সমস্ত লোক থাকিবে,—যে সকল স্থানে আমি তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিয়াছি, সেই সমস্ত স্থানে থাকিবে,—তাহারা জীবন অপেক্ষা মরণই বাঞ্ছনীয় জ্ঞান করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। তুমি তাহাদিগকে আরও বলিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, মনুষ্য পতিত হইলে কি আর উঠে না? বিপথে গেলে কি আর ফিরিয়া আইসে না? তবে যিরূশালেমের এই জাতি কেন নিত্যস্থায়ী বিপথগমন দ্বারা বিপথগামী হইয়াছে? তাহারা খলতাকে দৃঢ়রূপে ধরিয়া রহিয়াছে, তাহারা ফিরিয়া আসিতে অসম্মত। আমি কর্ণপাত করিয়া শুনিলাম, কিন্তু তাহারা যথার্থ কথা কহিল না; কেহ আপন দুষ্টতার জন্য অনুতাপ করিয়া বলে না, ‘হায়, আমি কি করিলাম!’ অশ্ব যেমন ঊর্দ্ধশ্বাসে যুদ্ধে দৌড়িয়া যায়, তেমনি প্রত্যেক জন, আপন আপন ধাবন পথে ফিরে। আকাশে হাড়গিলাও আপনার সময় জানে, এবং ঘুঘু, তালচোঁচ ও বক আপন আপন আগমনের কাল রক্ষা করে, কিন্তু আমার প্রজারা সদাপ্রভুর বিধান জানে না। তোমরা কেমন করিয়া বলিতে পার, আমরা জ্ঞানী, এবং আমাদের কাছে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা আছে? দেখ, অধ্যাপকদের মিথ্যা-লেখনী তাহা মিথ্যা করিয়া ফেলিয়াছে। জ্ঞানীরা লজ্জিত হইল, ব্যাকুল ও ধৃত হইল; দেখ, তাহারা সদাপ্রভুর বাক্য অগ্রাহ্য করিয়াছে, তবে তাহাদের জ্ঞান কি প্রকার? এই জন্য আমি অন্য লোকদিগকে তাহাদের স্ত্রী, এবং অন্য অধিকারীদিগকে তাহাদের ক্ষেত্র দিব; কেননা ক্ষুদ্র কি মহান সকলেই লোভে লুব্ধ, ভাববাদী ও যাজকশুদ্ধ সমস্ত লোক প্রবঞ্চনায় রত। আর তাহারা আমার জাতির কন্যার ক্ষত কেবল একটুমাত্র সুস্থ করিয়াছে; যখন শান্তি নাই, তখন বলিয়াছে, শান্তি, শান্তি। তাহারা ঘৃণাই কার্য্য করিয়াছে বলিয়া কি লজ্জিত হইল? তাহারা মোটে লজ্জিত হয় নাই, তাহারা বিষণ্ণ হইতে জানেও না। এই জন্য তাহারা পতিতগণের মধ্যে পতিত হইবে; আমি যখন তাহাদের প্রতিফল দিব, তখন তাহাদের নিপাত হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আমি তাহাদিগকে নিঃশেষে সংহার করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন; দ্রাক্ষালতায় দ্রাক্ষাফল, কিম্বা ডুমুরগাছে ডুমুরফল থাকিবে না, পত্রও জীর্ণ হইবে; হাঁ, আমি তাহাদের জন্য আক্রমণকারী লোকদিগকে নিরূপণ করিয়াছি। আমরা কেন বসিয়া থাকি? আইস আমরা একত্র হইয়া প্রাচীরবেষ্টিত নগরে নগরে প্রবেশ করি, সেখানে ক্ষয়প্রাপ্ত হই; কেননা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে ক্ষয়ের পাত্র করিলেন, ও বিষবৃক্ষের রস পান করাইলেন, কারণ আমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। আমরা শান্তির অপেক্ষা করিলাম, কিন্তু কিছুই মঙ্গল হইল না; আরোগ্যকালের অপেক্ষা করিলাম, কিন্তু দেখ, উদ্বেগ উপস্থিত। দান নগর হইতে শত্রুর অশ্বগণের নাসারব শুনা যাইতেছে; তাহার বাজীদের হেষ্রাশব্দে সমস্ত দেশ কাঁপিতেছে; তাহারা আসিয়াছে, জনপদ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত দ্রব্য এবং নগর ও তন্নিবাসিবর্গকে গ্রাস করিয়াছে। বস্তুতঃ দেখ, আমি তোমাদের মধ্যে সর্প, কালসর্প প্রেরণ করিব, তাহারা কোন মন্ত্র মানিবে না, তোমাদিগকে দংশন করিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আহা, আমি যদি দুঃখে সাত্ত্বনা পাইতাম! আমার মধ্যে হৃদয় মূর্চ্ছিত। দেখ, দূর দেশ হইতে আমার জাতির কন্যার আর্ত্তনাদ শুনা যাইতেছে; সদাপ্রভু কি সিয়োনে নাই? তাহার রাজা কি তাহার মধ্যবর্ত্তী নহেন? তাহারা আপনাদের ক্ষোদিত প্রতিমা ও বিজাতীয় অসার বস্তুসমূহ দ্বারা আমাকে কেন অসন্তুষ্ট করিয়াছে? শস্য কাটিবার সময় গেল, ফলচয়নের কাল শেষ হইল, কিন্তু আমাদের পরিত্রাণ হয় নাই। আমি আমার জাতির কন্যার ভগ্নতা প্রযুক্ত ভগ্ন হইয়াছি, আমি মলিন ও চকিত হইয়াছি। গিলিয়দে কি তরুসার নাই? সেখানে কি চিকিৎসক নাই? তবে আমার জাতির কন্যা কেন স্বাস্থ্য লাভ করে নাই? হায় হায়, আমার মস্তক কেন জলময় হইল না! আমার চক্ষু কেন অশ্রুর উনুই হইল না! তাহা হইলে আমি আমার জাতির কন্যার নিহতদের বিষয়ে দিবারাত্র রোদন করিতে পারিতাম। হায় হায়, প্রান্তরে পথিকদের রাত্রিবাসার্থক কুটীরের ন্যায় কেন আমার কুটীর হয় নাই! হইলে আমি স্বজাতীয়দিগকে ত্যাগ করিয়া স্থানান্তরে যাইতে পারিতাম। কেননা তাহারা সকলে ব্যভিচারী ও বিশ্বাসঘাতকদের সমাজ। তাহারা জিহ্বারূপ ধনুকে মিথ্যারূপ বাণ যোজনা করে; এবং দেশে বিশ্বস্ততার পক্ষে তাহাদের বিক্রম প্রকাশ হয় নাই; বরং তাহারা দুষ্টতা হইতে দুষ্টতার প্রতি অগ্রসর হয়, এবং তাহারা আমাকে জানে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন বন্ধু হইতে সাবধান থাক, কোন ভ্রাতাকেও বিশ্বাস করিও না, কেননা প্রত্যেক ভ্রাতা নিতান্তই প্রতারণা করে, প্রত্যেক বন্ধু পরীবাদ করিয়া বেড়ায়। প্রত্যেক জন আপন আপন বন্ধুকে প্রবঞ্চনা করে, সত্য কহে না; তাহারা আপন আপন জিহ্বাকে মিথ্যা বলিতে শিক্ষা দিয়াছে, তাহারা অপরাধ করিবার জন্য ক্লেশ স্বীকার করে। তুমি ছলনার মধ্যস্থানে বাস করিতেছ; তাহারা ছলনা প্রযুক্ত আমাকে জানিতে অস্বীকার করে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। অতএব বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহাদিগকে গলাইব, তাহাদের পরীক্ষা করিব; আমার জাতির কন্যা হেতু আর কি করিব? তাহাদের জিহ্বা প্রাণনাশক বাণ; তাহা ছলের কথা কহে; লোকে মুখে বন্ধুর সহিত প্রেমালাপ করে, কিন্তু অন্তরে তাহার জন্য ঘাঁটি বসায়। সদাপ্রভু কহেন, আমি কি তাহাদিগকে এই সকলের প্রতিফল দিব না? আমার প্রাণ কি এই প্রকার জাতির প্রতিশোধ দিবে না? আমি পর্ব্বতগণের বিষয়ে রোদন ও হাহাকার করিব, প্রান্তরস্থ চরাণিস্থানের বিষয়ে বিলাপ করিব, কেননা সে সকল দগ্ধ ও পথিকবিহীন হইল; পশুপালের রব আর শুনা যায় না, আকাশের পক্ষিগণ ও পশু সকল পলায়ন করিয়াছে, চলিয়া গিয়াছে। আমি যিরূশালেমকে ঢিবি ও শৃগালদের বাসস্থান করিব; আমি যিহূদার নগর সকল নিবাসীবিহীন ধ্বংসস্থান করিব। এই সকল বুঝিতে পারে, এমন জ্ঞানবান্‌ কে? সদাপ্রভুর মুখে বাক্য শুনিয়া জ্ঞাত করিতে পারে, এমন ব্যক্তি কে? দেশ কি জন্য বিনষ্ট ও মরুভূমির ন্যায় দগ্ধ ও পথিকবিহীন হইল? সদাপ্রভু কহেন, কারণ এই, তাহারা আমার সেই ব্যবস্থা ত্যাগ করিয়াছে, যাহা আমি তাহাদের সম্মুখে রাখিয়াছিলাম; তাহারা আমার রবে কর্ণপাত করে নাই, সে পথে চলে নাই; কিন্তু আপন আপন হৃদয়ের কঠিনতার ও বালদেবগণের অনুগমন করিয়াছে, তাহাদের পিতৃপুরুষেরা তাহাদিগকে এই শিক্ষা দিয়াছিল। এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই লোকদিগকে নাগদানা ভোজন করাইব, বিষবৃক্ষের রস পান করাইব। তাহারা ও তাহাদের পিতৃপুরুষেরা যাহাদিগকে জানে নাই, এমন জাতিগণের মধ্যে তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিব, এবং যাবৎ তাহাদিগকে সংহার না করি, তাবৎ আমি তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে খড়্‌গ প্রেরণ করিব। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা বিবেচনা কর, বিলাপকারিণীদিগকে ডাক, তাহারা আইসুক; জ্ঞানবতী স্ত্রীলোকদের কাছে লোক পাঠাও, তাহারা আইসুক। তাহারা ত্বরায় আসিয়া আমাদের নিমিত্ত হাহাকার করুক, যেন আমাদের চক্ষু অশ্রুতে ভাসিয়া যায়, আমাদের চক্ষুর পাতা দিয়া জলধারা নির্গত হয়। কারণ সিয়োন হইতে এই হাহাকার শব্দ শুনা যাইতেছে, আমরা কেমন হৃতসর্ব্বস্ব হইলাম। আমরা অতিশয় লজ্জিত হইলাম; কারণ আমরা দেশত্যাগী হইয়াছি, [শত্রুরা] আমাদের আবাস সকল ভূমিসাৎ করিল। আহা! হে স্ত্রীলোকেরা, সদাপ্রভুর কথা শুন, তাঁহার মুখের বাক্য কর্ণে গ্রহণ কর, এবং আপন আপন কন্যাদিগকে হাহাকার করিতে শিক্ষা দেও, প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসিনীকে বিলাপ করিতে শিক্ষা দেও। কেননা মৃত্যু আমাদের বাতায়নে উঠিল, তাহা আমাদের অট্টালিকায় প্রবেশ করিল; যেন বাহির হইতে বালকেরা উচ্ছিন্ন হয়, চক হইতে যুবকগণ উচ্ছিন্ন হয়। তুমি বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, মনুষ্যগণের শব সারের ন্যায় ক্ষেত্রে পতিত থাকিবে, ছেদকের পশ্চাতে যে শস্যগুচ্ছ পড়িয়া থাকে, তাহার তুল্য হইবে, কেহ তাহাদিগকে সংগ্রহ করিবে না। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, জ্ঞানবান্‌ আপন জ্ঞানের শ্লাঘা না করুক, বিক্রমী আপন বিক্রমের শ্লাঘা না করুক, ধনবান্‌ আপন ধনের শ্লাঘা না করুক। কিন্তু যে ব্যক্তি শ্লাঘা করে, সে এই বিষয়ের শ্লাঘা করুক যে, সে বুঝিতে পারে ও আমার এই পরিচয় পাইয়াছে যে, আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে দয়া, বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করি, কারণ ঐ সকলে প্রীত, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি ছিন্নত্বক্‌দিগকে অচ্ছিন্নত্বক্‌ বলিয়া প্রতিফল দিব; আমি মিসরকে, যিহূদাকে, ইদোমকে, অম্মোন-সন্তানগণকে, মোয়াবকে এবং প্রান্তরবাসী যাহারা আপনাদের কেশকোণ মুণ্ডন করিয়াছে, তাহাদের সকলকে [প্রতিফল দিব]; কেননা সমস্ত জাতি অচ্ছিন্নত্বক্‌, আর ইস্রায়েলের সমস্ত কুল হৃদয়ে অচ্ছিন্নত্বক্‌। হে ইস্রায়েল-কুল, সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যে কথা কহেন, তাহা শুন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা জাতিগণের ব্যবহার শিখিও না, আকাশের নানা চিহ্ন হইতে ভীত হইও না; বাস্তবিক জাতিগণই তাহা হইতে ভীত হয়। কেননা জাতিগণের বিধি সকল অসার; লোকে বনে কাষ্ঠ ছেদন করে, তাহাই বাটালি সহকারে কারুকরের হস্তকৃত কর্ম্ম হইয়া উঠে। লোকে তাহা রৌপ্য ও সুবর্ণে অলঙ্কৃত করে; এবং যেন না নড়ে, তজ্জন্য হাতুড়ি দিয়া প্রেক মারিয়া তাহা দৃঢ় করে। সে সকল কোঁদা স্তম্ভস্বরূপ; কথা কহিতে পারে না; তাহাদিগকে বহন করিতে হয়, কারণ তাহারা চলিতে পারে না। তোমরা তাহাদের হইতে ভীত হইও না; কারণ তাহারা অহিত করিতে পারে না, হিত করিতেও তাহাদের সাধ্য নাই। হে সদাপ্রভু, তোমার তুল্য কেহই নাই; তুমি মহান, তোমার নামও পরাক্রমে মহৎ। হে জাতিগণের রাজন্‌, তোমাকে কে না ভয় করিবে? তাহা তোমারই পাওনা, কেননা জাতিগণের সমস্ত জ্ঞানী লোকের মধ্যে, তাহাদের সমুদয় রাজ্যের মধ্যে, তোমার তুল্য কেহ নাই। কিন্তু তাহারা নির্ব্বিশেষে পশুবৎ ও স্থূলবুদ্ধি; অসার লোকদের শিক্ষা! উহা কাষ্ঠমাত্র। তর্শীশ হইতে রৌপ্যের পাত ও ঊফস হইতে স্বর্ণ আনীত হয়; [পুত্তলিগণ] কারুকরের কৃত ও স্বর্ণকারের হস্তনির্ম্মিত; তাহাদের পরিচ্ছদ নীল ও বেগুনে, সে সকলই শিল্পনিপুণ লোকদের কৃত কর্ম্ম। কিন্তু সদাপ্রভু সত্য ঈশ্বর; তিনিই জীবন্ত ঈশ্বর ও অনন্তকালস্থায়ী রাজা; তাঁহার ক্রোধে পৃথিবী কম্পিত হয়, এবং তাঁহার কোপ জাতিগণ সহিতে পারে না। তোমরা উহাদিগকে এই কথা বল, ‘যে দেবগণ আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডল গঠন করে নাই, তাহারা ভূমণ্ডল হইতে ও আকাশমণ্ডলের অধঃ হইতে উচ্ছিন্ন হইবে’। তিনি নিজ শক্তিতে পৃথিবী গঠন করিয়াছেন, নিজ জ্ঞানে জগৎ স্থাপন করিয়াছেন, নিজ বুদ্ধিতে আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন। তিনি রব ছাড়িলে আকাশে জলরাশির শব্দ হয়, তিনি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে বাষ্প উত্থাপন করেন; তিনি বৃষ্টির নিমিত্ত বিদ্যুৎ গঠন করেন, তিনি আপন ভাণ্ডার হইতে বায়ু বাহির করিয়া আনেন। প্রত্যেক মনুষ্য পশুবৎ হইয়াছে, সে জ্ঞানহীন; প্রত্যেক স্বর্ণকার আপন প্রতিমা দ্বারা লজ্জিত হয়। কারণ তাহার ছাঁচে ঢালা বস্তু, মিথ্যামাত্র, তাহার মধ্যে শ্বাসবায়ু নাই। সে সকল অসার, মায়ার কর্ম্মমাত্র; তাহাদের প্রতিফল দানকালে তাহারা বিনষ্ট হইবে। যিনি যাকোবের অধিকার, তিনি সেরূপ নহেন; কারণ তিনি সমস্ত বস্তুর গঠনকারী, এবং ইস্রায়েল তাঁহার অধিকাররূপ বংশ; তাঁহার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু! হে অবরুদ্ধস্থান-নিবাসিনি! তুমি ভূমি হইতে আপন সামগ্রী কুড়াইয়া লও। কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই সময়ে দেশীয় লোকদিগকে ফিঙ্গার প্রস্তরের ন্যায় নিক্ষেপ করিব, এবং এমন সঙ্কটাপন্ন করিব যে, তাহারা টের পাইবে। হায় হায়, আমার কেমন ভঙ্গ! আমার ক্ষত অতি বেদনাযুক্ত; তথাপি আমি কহিলাম, ইহা আমার পীড়া, আমি ইহা সহ্য করিব। আমার তাম্বু বিনষ্ট হইল; আমার সমস্ত রজ্জু ছিঁড়িয়া গেল; আমার সন্তানগণ আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিল, তাহারা আর নাই। আমার তাম্বু পুনর্ব্বার টাঙ্গাইতে ও আমার যবনিকা ঝুলাইতে এক জনও নাই। কেননা পালকগণ পশুবৎ হইয়াছে, সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করে নাই, এ জন্য বুদ্ধিপূর্ব্বক চলে নাই, তাহাদের সমস্ত পাল ছিন্নভিন্ন হইয়াছে। কোলাহলের রব! দেখ, তাহা উপস্থিত হইতেছে, উত্তর দেশ হইতে বড় কলরব আসিতেছে; যিহূদার নগর সকল ধ্বংসিত ও শৃগালদের বাসস্থান করা হইবে। হে সদাপ্রভু, আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না। হে সদাপ্রভু, আমাকে শাসন কর, কেবল বিচারপূর্ব্বক কর; ক্রোধপূর্ব্বক করিও না, পাছে তুমি আমাকে ক্ষীণ করিয়া ফেল। ঢালিয়া দেও তোমার কোপ সেই জাতিগণের উপরে, যাহারা তোমাকে জানে না; সেই গোষ্ঠী সকলের উপরে, যাহারা তোমার নামে ডাকে না; কেননা তাহারা যাকোবকে গ্রাস করিয়াছে, গ্রাস করিয়া সংহার করিয়াছে, তাহারা তাহার বাসস্থান শূন্য করিয়াছে। যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তোমরা এই নিয়মের কথা শুন, এবং যিহূদার লোকদের কাছে ও যিরূশালেম-নিবাসীদের কাছে বল। তুমি তাহাদিগকে বল, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা কহেন, এই নিয়মের কথা যে কেহ না মানিবে, সে শাপগ্রস্ত হউক। মিসর দেশ হইতে, সেই লৌহের হাপর হইতে, তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিবার দিনে আমি তাহাদিগকে তাহা আদেশ করিয়াছিলাম, বলিয়াছিলাম, ‘তোমরা আমার রবে অবধান করিও, এবং আমি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিই, তাহা পালন করিও, তাহাতে তোমরা আমার প্রজা হইবে, এবং আমি তোমাদের ঈশ্বর হইব; যেন আমি সেই শপথ সিদ্ধ করিতে পারি, যে শপথ তোমাদের পিতৃপুরুষদিগের নিকটে, তাহাদিগকে অদ্যকার ন্যায় এই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ দিবার জন্য করিয়াছিলাম।’ তখন আমি উত্তর করিলাম, বলিলাম, আমেন, সদাপ্রভু। আর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি যিহূদার নগরে নগরে ও যিরূশালেমের সড়কে সড়কে এই সমস্ত কথা প্রচার কর, বল, তোমরা এই নিয়মের কথা শুন, ও সে সকল পালন কর। কেননা যে দিন আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে উঠাইয়া আনিয়াছিলাম, তদবধি অদ্য পর্য্যন্ত সাক্ষ্য দিয়াছি, প্রত্যূষে উঠিয়া আমি তাহাদিগকে দৃঢ়রূপে সাক্ষ্য দিয়া বলিয়াছি, তোমরা আমার রবে অবধান কর। তবু তাহারা অবধান করিল না, কর্ণপাত করিল না, কিন্তু প্রত্যেকে আপন আপন দুষ্ট হৃদয়ের কঠিনতা অনুসারে আচরণ করিল; সেই জন্য আমি এই নিয়মের সমস্ত কথা তাহাদের উপরে বর্ত্তাইলাম; যে নিয়ম আমি তাহাদিগকে পালন করিতে আজ্ঞা দিয়াছিলাম, কিন্তু তাহারা পালন করে নাই। আর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, যিহূদার লোকদের মধ্যে ও যিরূশালেম-নিবাসিগণের মধ্যে চক্রান্ত পাওয়া গিয়াছে। তাহারা আপনাদের সেই পিতৃপুরুষদের অপরাধের প্রতি ফিরিয়াছে, যাহারা আমার কথা শুনিতে অস্বীকৃত হইয়াছিল; আর তাহারা সেবা করণার্থে অন্য দেবগণের পশ্চাতে গিয়াছে; ইস্রায়েল-কুল ও যিহূদা-কুল আমার সেই নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে, যাহা আমি তাহাদের পিতৃপুরুষদের সহিত করিয়াছিলাম। অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহাদের প্রতি অমঙ্গল ঘটাইব, তাহারা তাহা হইতে রক্ষা পাইতে পারিবে না; তখন তাহারা আমার কাছে ক্রন্দন করিবে, কিন্তু আমি তাহাদের কথা শুনিব না। আর যিহূদার নগর সকল ও যিরূশালেম-নিবাসিগণ যে দেবগণের কাছে ধূপ জ্বালাইয়া থাকে, তাহাদের কাছে গমন করিয়া ক্রন্দন করিবে, কিন্তু তাহারা বিপদের সময়ে তাহাদিগকে কোন মতে নিস্তার করিবে না। বস্তুতঃ হে যিহূদা, তোমার যত নগর তত দেবতা; এবং যিরূশালেমের যত সড়ক, তোমরা সেই লজ্জাস্পদের নিমিত্ত তত বেদি, বালের উদ্দেশে ধূপদাহ করণার্থে তত বেদি স্থাপন করিয়াছ। অতএব তুমি এই জাতির নিমিত্ত প্রার্থনা করিও না, ইহাদের জন্য খেদোক্তি কি প্রার্থনা উৎসর্গ করিও না, কেননা ইহারা বিপদ হেতু যে সময়ে আমাকে ডাকিবে, তখন আমি ইহাদের কথা শুনিব না। আমার গৃহে আমার প্রিয়ার কি কার্য্য? সে ত অনেকের সহিত ব্যভিচার করিয়াছে, এবং তোমা হইতে পবিত্র মাংস সরান হইয়াছে। তুমি যখন দুষ্কার্য্য কর, তখনই উল্লাস করিয়া থাক। সদাপ্রভু তোমার নাম ‘ফলশোভায় মনোহর হরিৎপর্ণ জিতবৃক্ষ’ রাখিয়াছিলেন; তিনি মহা তুমুল-শব্দ সহকারে তাহার উপরে অগ্নি জ্বালাইয়াছেন, তাই তাহার শাখা সকল ভাঙ্গিয়া পড়িল। বাস্তবিক বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যিনি তোমাকে রোপন করিয়াছিলেন, তিনি তোমার বিরুদ্ধে অমঙ্গলের কথা বলিয়াছেন, ‘ইস্রায়েল-কুলের ও যিহূদা-কুলের দুষ্টতা ইহার কারণ; তাহারা বালের কাছে ধূপদাহ করিয়া আমাকে অসন্তুষ্ট করাতে আপনাদের প্রতি আপনারাই তাহার ফল বর্ত্তাইয়াছে।’ আর সদাপ্রভু আমাকে জানাইলে আমি বুঝিলাম; সেই সময়ে তুমি আমাকে তাহাদের ক্রিয়াকাণ্ড জানাইলে। কিন্তু আমি বধার্থে নীয়মান গৃহপালিত মেষশাবকের ন্যায় ছিলাম; জানিতাম না যে, তাহারা আমার বিরুদ্ধে কুমন্ত্রণা করিয়াছে, বলিয়াছে, আইস, আমরা ফলশুদ্ধ বৃক্ষটী নষ্ট করি, জীবিত লোকদের দেশ হইতে উহাকে ছেদন করিয়া ফেলি, যেন উহার নাম আর স্মরণে না থাকে। কিন্তু হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তুমি ধর্ম্মতঃ বিচার করিয়া থাক, তুমি মর্ম্মের ও অন্তঃকরণের পরীক্ষা করিয়া থাক; তাহাদের প্রতি তোমার প্রতিশোধ দান আমাকে দেখিতে দেও, কেননা তোমারই কাছে আমি আপন বিবাদের কথা নিবেদন করিয়াছি। এই জন্য অনাথোতের লোকদের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহারা তোমার প্রাণের অন্বেষণ করে, বলে, তুমি সদাপ্রভুর নামে ভাববাণী বলিও না, বলিলে আমাদের হাতে মারা পড়িবে; এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহাদিগকে প্রতিফল দিব; যুবকগণ খড়্‌গে মারা পড়িবে; তাহাদের পুত্রকন্যাগণ ক্ষুধায় মরিবে; তাহাদের অবশিষ্ট কেহ থাকিবে না; কেননা অনাথোতের লোকদিগকে প্রতিফল দিবার বৎসরে আমি তাহাদের প্রতি অমঙ্গল ঘটাইব। হে সদাপ্রভু, আমি যখন তোমার সহিত বিবাদ করি, তুমিই ধর্ম্মময়; তথাপি তোমার সহিত বাদানুবাদ করিব। দুষ্ট লোকদের পথ কেন কুশলযুক্ত হয়? যাহারা অতিশয় বিশ্বাসঘাতক, তাহারা কেন শান্তিতে থাকে? তুমি তাহাদিগকে রোপন করিয়াছ; তাহারা মূল বাঁধিয়াছে; তাহারা বৃদ্ধি পাইয়া ফলবানও হইতেছে; তুমি তাহাদের মুখের নিকটস্থ, কিন্তু তাহাদের অন্তঃকরণ হইতে দূরবর্ত্তী। কিন্তু, হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে জ্ঞাত আছ, তুমি আমাকে দেখিতেছ, এবং তোমার প্রতি আমার মন কেমন, তাহার পরীক্ষা লইয়া থাক; উহাদিগকে মেষের ন্যায় নিহত হইবার জন্য টানিয়া লও, বধের দিনের জন্য নিযুক্ত করিয়া রাখ। কত দিন দেশ শোক করিবে ও সমস্ত ক্ষেত্রের তৃণ শুষ্ক থাকিবে? দেশনিবাসীদের দুষ্টতা প্রযুক্ত পশু ও পক্ষিগণের সংহার হইতেছে; কারণ লোকেরা বলে, সে আমাদের শেষ দশা দেখিবে না। তুমি যদি পদাতিকদের সহিত দৌড়িয়া গিয়া থাক, আর তাহারা তোমাকে ক্লান্ত করিয়া থাকে, তবে অশ্বগণের সহিত কি প্রকারে পারিয়া উঠিবে? আর যদ্যপি শান্তির দেশে নির্ভয়ে থাক, তথাপি যর্দ্দনের শোভাস্থানে কি করিবে? বস্তুতঃ তোমার ভ্রাতৃগণ ও তোমার পিতৃকুল, তাহারাই তোমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে, তাহারাই তোমার পশ্চাতে ‘ধর ধর’ বলিয়া ডাকিতেছে; তাহারা তোমাকে ভাল ভাল কথা কহিলেও তাহাদের কথায় বিশ্বাস করিও না। আমি আপন বাটী ত্যাগ করিয়াছি; আপন অধিকার ছাড়িয়া দিয়াছি, আপন প্রাণের প্রিয়পাত্রীকে শত্রুগণের হস্তে সমর্পণ করিয়াছি। আমার পক্ষে আমার অধিকার অরণ্যস্থ সিংহতুল্য হইল; সে আমার বিরুদ্ধে হূঙ্কার করিল, এই জন্য আমি তাহাকে ঘৃণা করিয়াছি। আমার পক্ষে কি আমার অধিকার চিত্রাঙ্গ শকুনিবৎ হইয়াছে? শকুনিরা কি চারিদিকে তাহার বিপরীতে আসিয়াছে? চল, তোমরা সমস্ত বন্য পশু একত্র কর, তাহাদিগকে ভোজন করাইতে আন। অনেক পালরক্ষক আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্র বিনষ্ট করিয়াছে, আমার ভূমি পদতলে দলিত করিয়াছে, আমার ভূমিরত্নকে ধ্বংসিত প্রান্তর করিয়াছে। তাহারা তাহা ধ্বংসস্থান করিয়াছে, তাহা ধ্বংসিত হইয়া আমার কাছে বিলাপ করিতেছে; সমুদয় দেশ ধ্বংসিত হইয়াছে, কেননা কেহ মনোযোগ করে না। প্রান্তরে বৃক্ষশূন্য যে সকল গিরি আছে, তাহাদের উপর দিয়া বিনাশকগণ আসিয়াছে, বস্তুতঃ সদাপ্রভুর খড়্‌গ দেশের এক সীমা অবধি অপর সীমা পর্য্যন্ত সকলই গ্রাস করিতেছে, কোন প্রাণীর শান্তি নাই। তাহারা গোম বুনিয়াছে, কন্টকরূপ শস্য কাটিয়াছে, অনেক কষ্ট করিলেও কিছু উপকার প্রাপ্ত হয় না; তোমরা সদাপ্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধ প্রযুক্ত তোমাদের ফলের বিষয়ে লজ্জিত হও। আমার সমস্ত দুষ্ট প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে সদাপ্রভু এই কথা বলেন, —আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলকে যাহার অধিকারী করিয়াছি, সেই অধিকার তাহারা স্পর্শ করে, দেখ, আমি তাহাদের ভূমি হইতে তাহাদিগকে উৎপাটন করিব, এবং তাহাদের মধ্য হইতে যিহূদা-কুলকেও উৎপাটন করিব। আর তাহাদের উৎপাটনের পরে আমি ফিরিয়া তাহাদের প্রতি করুণা করিব, তাহাদের প্রত্যেক জনকে পুনরায় তাহার অধিকারে ও তাহার ভূমিতে আনিয়া দিব। আর তাহারা যদি যত্নপূর্ব্বক আমার প্রজাদের পথ শিখে, এবং যেমন বালের নামে শপথ করিতে আমার প্রজাদিগকে শিক্ষা দিত, তেমনি যদি জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য বলিয়া আমার নামে শপথ করে, তবে তাহারা আমার প্রজাদের মধ্যে সংগ্রথিত হইবে। কিন্তু তাহারা যদি কথা না শুনে, তবে আমি সেই জাতিকে উৎপাটন করিব, উৎপাটন করিয়া বিনষ্ট করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু আমাকে এই কথা কহিলেন, তুমি যাও, মসীনা-সূতার এক পটিকা ক্রয় কর, ও তাহা কটিদেশে বাঁধ, তাহা জলে দিও না। তাহাতে আমি সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে এক পটিকা ক্রয় করিলাম, ও আমার কটিদেশে বাঁধিলাম। পরে দ্বিতীয় বার সদাপ্রভুর বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, যথা, তুমি যে পটিকা ক্রয় করিয়া কটিদেশে বাঁধিয়াছ, উঠ, তাহা লইয়া ফরাৎ নদীর নিকটে গিয়া তথাকার শৈলের কোন ছিদ্রে লুকাইয়া রাখ। তাহাতে আমি সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে গিয়া ফরাৎ নদীর কাছে তাহা লুকাইয়া রাখিলাম। পরে বহুদিন গতে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি উঠ, ফরাতের নিকটে যাও, এবং আমার আজ্ঞায় তথায় যে পটিকা লুকাইয়া রাখিয়াছ, তাহা তথা হইতে তুলিয়া লও। তখন আমি ফরাতের নিকটে গেলাম, এবং খনন করিয়া যে স্থানে পটিকাটী লুকাইয়া রাখিয়াছিলাম, তথা হইতে তাহা তুলিয়া লইলাম; আর দেখ, সে পটিকা নষ্ট হইয়াছে, কোন কার্য্যের যোগ্য নাই। তখন সদাপ্রভুর বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, যথা, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এইরূপে আমি যিহূদার দর্প ও যিরূশালেমের মহাদর্প চূর্ণ করিয়া ফেলিব। এই যে দুষ্ট জাতি আমার কথা শুনিতে অস্বীকার করে, আপন আপন হৃদয়ের কঠিনতা অনুসারে চলে, এবং অন্য দেবগণের সেবা ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিবার জন্য তাহাদের অনুগামী হয়, তাহারা এই পটিকার ন্যায় হইবে, যাহা কোন কার্য্যের যোগ্য নয়। কেননা, সদাপ্রভু কহেন, মনুষ্যের কটিদেশে যেমন পটিকা জড়ান থাকে, তদ্রূপ আমি সমস্ত ইস্রায়েল-কুলকে ও সমস্ত যিহূদা-কুলকে আপনাতে জড়াইয়াছিলাম, যেন তাহারা আমার উদ্দেশে প্রজাবর্গ, এবং কীর্ত্তি, প্রশংসা ও শোভাস্বরূপ হয়; কিন্তু তাহারা শুনিতে চাহিল না। অতএব তুমি তাহাদিগকে এই কথা বল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, প্রত্যেক কলস দ্রাক্ষারসে পূর্ণ করা যাইবে; তাহাতে তাহারা তোমাকে বলিবে, প্রত্যেক কলস যে দ্রাক্ষারসে পূর্ণ করা যাইবে, তাহা আমরা কি জানি না? তখন তুমি তাহাদিগকে বলিও, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই দেশনিবাসী সমস্ত লোককে, অর্থাৎ দায়ূদের সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজগণকে এবং যাজকগণ, ভাববাদিবর্গ ও যিরূশালেম-নিবাসী সমস্ত লোককে মত্ততায় পূর্ণ করিব। আর আমি এক জনকে অন্য জনের বিরুদ্ধে, আর পিতাদিগকে ও পুত্রদিগকে একসঙ্গে আছড়াইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন; আমি মমতা করিব না, কৃপা করিব না, করুণা করিব না; তাহাদিগকে বিনষ্ট করিব। তোমরা শুন, কর্ণপাত কর, অহঙ্কার করিও না, কেননা সদাপ্রভু কথা বলিয়াছেন। তোমরা সময় থাকিতে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব স্বীকার কর, নতুবা তিনি অন্ধকার উপস্থিত করিবেন, আর তিমিরাচ্ছন্ন পর্ব্বতমালায় তোমাদের চরণে উছোট লাগিবে, এবং তোমরা আলোর অপেক্ষা করিলে তিনি তাহা মৃত্যুচ্ছায়াতে পরিণত করিবেন, ঘোর অন্ধকারস্বরূপ করিবেন। তোমরা যদি এ কথা না শুন, তবে তোমাদের দর্প প্রযুক্ত আমার প্রাণ নিরালায় রোদন করিবে, এবং আমার চক্ষু অশ্রুপাত করিবে, অশ্রুধারা বহিবে, কেননা সদাপ্রভুর পাল বন্দি হইল। তুমি রাজাকে ও মাতারাণীকে বল, তোমরা অবনত হও, বস, কেননা তোমাদের উষ্ণীষ, তোমাদের চারু মুকুট খসিয়া পড়িল। দক্ষিণ প্রদেশীয় নগর সকল রুদ্ধ হইল; তাহা খুলিয়া দেয়, এমন কেহ নাই; সমস্ত যিহূদা বন্দিরূপে নীত হইয়াছে, তাহার সমুদয় লোক বন্দিরূপে নীত হইয়াছে। তোমরা চক্ষু তুলিয়া দেখ, উহারা উত্তর দিক্‌ হইতে আসিতেছে; তোমাকে যে মেষপাল দত্ত হইয়াছিল, তোমার সেই চারু মেষপাল কোথায়? তুমি যাহাদিগকে আত্মীয়রূপে আপনার উপরে [প্রভুত্ব করিতে] শিক্ষা দিয়াছ, যখন তিনি তাহাদিগকে মস্তকরূপে তোমার উপরে নিযুক্ত করিবেন, তৎকালে কি বলিবে? প্রসবকালে যেমন স্ত্রীলোক, তেমনি তুমি কি যন্ত্রণাগ্রস্ত হইবে না? আর যদি তুমি মনে মনে বল, আমার দশা কেন ঘটিল? তোমার অপরাধের বাহুল্যে তোমার পরিচ্ছদের অন্ত তুলিয়া দেওয়া হইল, তোমার পাদমূলের প্রতি অত্যাচার করা হইল। কূশীয় কি আপন ত্বক্‌, কিম্বা চিতাবাঘ কি আপন চিত্রবিচিত্র পরিবর্ত্তন করিতে পারে? তাহা হইলে দুষ্কর্ম্ম অভ্যাস করিয়াছ যে তোমরা, তোমরাও সৎকর্ম্ম করিতে পারিবে। আর আমি ইহাদিগকে উড়াইয়া দিব, যেমন প্রান্তরস্থ বায়ুর সম্মুখে নাড়া উড়িয়া যায়। ইহাই তোমার নির্দ্দিষ্ট অধিকার, আমা দ্বারা নিরূপিত তোমার অংশ, এই কথা সদাপ্রভু কহেন; যেহেতু তুমি আমাকে ভুলিয়া গিয়াছ, এবং মিথ্যাতে বিশ্বাস করিয়াছ। এই জন্য আমিও তোমার পরিচ্ছদের অন্ত মুখের ঊর্দ্ধ পর্য্যন্ত তুলিয়া দিব, আর তোমার লজ্জা দেখা যাইবে। আমি ক্ষেত্রস্থ পর্ব্বতগণের উপরে তোমার ঘৃণিত ব্যাপার সকল, তোমার ব্যভিচার, তোমার হেষ্রা, তোমার বেশ্যাবৃত্তি সম্বন্ধীয় কুকর্ম্ম দেখিয়াছি। ধিক্‌ তোমাকে, যিরূশালেম! তুমি শুচি হইতে চাহ না; আর কত দিন এমন থাকিবে? ভারী অনাবৃষ্টি বিষয়ে যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল। যিহূদা শোক করিতেছে, তাহার নগরদ্বার সকল জীর্ণ হইতেছে, সে সকল মলিন বেশে ভূমিতে বসিয়া আছে; আর যিরূশালেমের আর্ত্তরব ঊর্দ্ধে উঠিতেছে। তাহাদের প্রধানেরা আপন আপন অধীনদিগকে জলের জন্য পাঠায়; তাহারা গর্ত্ত সকলের নিকটে আসিয়া কিছুমাত্র জল পায় না, শূন্য পাত্র হস্তে করিয়া ফিরিয়া যায়; তাহারা লজ্জিত ও বিষণ্ণ হইয়া মস্তক ঢাকিয়া রাখে। দেশে বৃষ্টি না হওয়াতে ভূমি নিরাশ হইয়াছে বলিয়া কৃষকেরা লজ্জা পাইয়া আপন আপন মস্তক ঢাকিয়া রাখে। এমন কি, তৃণ নাই বলিয়া হরিণীও মাঠে প্রসব করিয়া শিশু ত্যাগ করিয়া যায়। বনগর্দ্দভ সকল বৃক্ষশূন্য গিরিতে দাঁড়াইয়া শৃগালের ন্যায় বায়ুর জন্য হাঁপায়; তৃণাদি না থাকাতে তাহাদের চক্ষু ক্ষীণ হইয়াছে। যদ্যপি আমাদের অপরাধ সকল আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিতেছে, তথাপি, হে সদাপ্রভু, তুমি আপন নামের অনুরোধে কার্য্য কর; আমরা ত নানা প্রকারে বিপথগামী হইয়াছি; আমরা তোমারই বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। হে ইস্রায়েলের আশাভূমি, সঙ্কটকালে তাহার ত্রাণকর্ত্তা, কেন তুমি এই দেশে প্রবাসীর ন্যায়, কিম্বা রাত্রিবাসার্থী পথিকের ন্যায় হও? কেন তুমি স্তম্ভিত মানুষের ন্যায়, ত্রাণ করিতে অসমর্থ বীরের ন্যায় হও? তথাপি, হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের মধ্যবর্ত্তী, আর আমাদের উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত; আমাদিগকে পরিত্যাগ করিও না। সদাপ্রভু এই জাতির বিষয়ে এই কথা কহেন, তাহারা এইরূপেই ভ্রমণ করিতে ভালবাসে, আপন আপন পা থামায় নাই; এই কারণ সদাপ্রভু তাহাদিগকে গ্রাহ্য করেন না; তিনি এখন তাহাদের অপরাধ স্মরণ করিবেন, তাহাদের পাপ সকলের প্রতিফল দিবেন। সদাপ্রভু আমাকে আরও কহিলেন, তুমি এই জাতির পক্ষে মঙ্গল প্রার্থনা করিও না। তাহারা উপবাস করিলেও আমি তাহাদের কাতরোক্তি শুনিব না, হোম ও নৈবেদ্য উৎসর্গ করিলেও তাহাদিগকে গ্রাহ্য করিব না, কিন্তু আমিই খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা তাহাদিগকে সংহার করিব। তখন আমি কহিলাম, হায়, প্রভু সদাপ্রভু! দেখ, ভাববাদিগণ তাহাদিগকে বলিতেছে, তোমরা খড়্‌গ দেখিবে না, তোমাদের প্রতি দুর্ভিক্ষ ঘটিবে না, কারণ আমি এ স্থানে তোমাদিগকে সত্য শান্তি দিব। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, সেই ভাববাদীরা আমার নামে মিথ্যা ভাববাণী বলে; আমি তাহাদিগকে প্রেরণ করি নাই, তাহাদিগকে আজ্ঞা দিই নাই, তাহাদের কাছে কথা কহি নাই; তাহারা তোমাদের নিকটে মিথ্যা দর্শন ও মন্ত্র, অবস্তু ও আপন আপন হৃদয়ের প্রতারণামূলক ভাববাণী বলে। এই জন্য যে ভাববাদিগণ আমার নামে ভাববাণী বলে, আমি তাহাদিগকে না পাঠাইলেও বলে, এ দেশে খড়্‌গ কি দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হইবে না, তাহাদের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, খড়্‌গ ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা সেই ভাববাদিগণের বিনাশ হইবে। আর তাহারা যে জাতির কাছে ভাববাণী বলে, সে জাতি দুর্ভিক্ষ ও খড়্‌গ প্রযুক্ত যিরূশালেমের সড়কে সড়কে নিক্ষিপ্ত হইবে, এবং তাহাদিগকে ও তাহাদের স্ত্রীপুত্র কন্যাদিগকে কবর দিবার জন্য কেহ থাকিবে না; কারণ আমি তাহাদের দুষ্টতাকে তাহাদের উপরে ঢালিয়া দিব। আর তুমি তাহাদিগকে এই কথা বল, দিবারাত্র আমার চক্ষু হইতে জলধারা পড়ুক, তাহা নিবৃত্ত না হউক, কেননা আমার জাতির অনূঢ়া কন্যা মহাভঙ্গে ও বিষম আঘাতে ভগ্ন হইল। আমি যদি বাহির হইয়া ক্ষেত্রে যাই, তবে দেখ, খড়্‌গহত লোক, যদি নগরে প্রবেশ করি, তবে দেখ, ক্ষুধাপীড়িত লোক; কারণ ভাববাদী ও যাজক উভয়ে দেশ পর্য্যটন করে, কিছুই জানে না। তুমি কি যিহূদাকে নিতান্তই অগ্রাহ্য করিয়াছ? তোমার প্রাণ কি সিয়োনকে ঘৃণা করিয়াছে? তুমি আমাদিগকে কেন এমন আঘাত করিলে যে, আমাদের আরোগ্য হয় না? আমরা শান্তির অপেক্ষা করিলাম, কিছুই মঙ্গল হইল না; আরোগ্যকালের অপেক্ষা করিলাম, আর দেখ, উদ্বেগ! হে সদাপ্রভু, আমরা আমাদের দুষ্টতা ও আমাদের পিতৃপুরুষদের অপরাধ স্বীকার করিতেছি; কারণ আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। তুমি আপন নামের অনুরোধে আমাদিগকে ঘৃণা করিও না, তোমার প্রতাপের সিংহাসন অনাদরের পাত্র করিও না; আমাদের সহিত তোমার নিয়ম স্মরণ কর, ভঙ্গ করিও না। জাতিগণের অসার দেবতাদের মধ্যে বৃষ্টি দিতে পারে, এমন কেহ কি আছে? কিম্বা আকাশ কি জল বর্ষণ করিতে পারে? হে সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর, তুমিই কি সেই [বৃষ্টিদাতা] নহ? এই জন্য আমরা তোমার অপেক্ষায় থাকিব, কেননা তুমিই এই সমস্ত করিয়া থাক। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, যদ্যপি মোশি ও শমূয়েল আমার সম্মুখে দাঁড়াইত, তথাপি আমার প্রাণ এই জাতির অনুকূল হইত না; তুমি আমার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে বিদায় কর, তাহারা চলিয়া যাউক। আর যদি তাহারা তোমাকে বলে, কোথায় চলিয়া যাইব? তবে তাহাদিগকে বলিও, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, মৃত্যুর পাত্র মৃত্যুর স্থানে, খড়্‌গের পাত্র খড়্‌গের স্থানে, দুর্ভিক্ষের পাত্র দুর্ভিক্ষের স্থানে, ও বন্দিত্বের পাত্র বন্দিত্বের স্থানে গমন করুক। সদাপ্রভু কহেন, আমি চারি জাতিকে তাহাদের উপরে নিযুক্ত করিব; বধ করিবার জন্য খড়্‌গ, টানাটানি করিবার জন্য কুকুর, ভক্ষণ ও বিনাশ করিবার জন্য আকাশের পক্ষী ও ভূমির পশু। আর আমি এমন করিব যে তাহারা পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যে ভাসিয়া বেড়াইবে; যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের পুত্র মনঃশির নিমিত্ত, যিরূশালেমে কৃত তাহার কার্য্যের নিমিত্ত ইহা করিব। হে যিরূশালেম, কে তোমাকে দয়া করিবে? কেই বা তোমার নিমিত্ত বিলাপ করিবে? কেই বা তোমার মঙ্গল জিজ্ঞাসা করিতে আসিবে? সদাপ্রভু কহেন, তুমিই আমাকে ত্যাগ করিয়াছ, তুমি পিছাইয়া পড়িয়াছ, এই জন্য আমি তোমার বিরুদ্ধে আপন হস্ত বিস্তার করিয়া তোমাকে নষ্ট করিয়াছি; আমি ক্ষমা করিতে করিতে ক্লান্ত হইলাম। আমি তাহাদিগকে দেশের পুরদ্বার সমূহে কুলাতে করিয়া ঝাড়িয়াছি, তাহাদিগকে সন্তান-বিরহিত করিয়াছি, আমার প্রজাগণকে বিনষ্ট করিয়াছি, তাহারা আপনাদের পথ হইতে ফিরে নাই। তাহাদের বিধবা সকল আমার সম্মুখে সমুদ্রের বালি হইতেও বহুসংখ্যক হইয়াছে; আমি তাহাদের কাছে যুকবগণের জননীর বিরুদ্ধে মধ্যাহ্নকালে বিনাশক এক জনকে আনিয়াছি, অকস্মাৎ তাহার প্রতি দুঃখ ও বিহ্বলতা উপস্থিত করিয়াছি। সপ্তপ্রসূতা ক্ষীণা হইয়াছে, প্রাণত্যাগ করিয়াছে, দিন থাকিতে তাহার সূর্য্য অস্তগমন করিয়াছে, সে লজ্জিতা ও হতাশা হইয়াছে; আর আমি তাহাদের অবশিষ্টাংশকেও শত্রুদের সম্মুখে খড়্‌গে সমর্পণ করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। হায়! হায়! মা আমার, আমি সমস্ত পৃথিবীর বিরোধের ও বিবাদের পাত্র, তুমি আমাকে কেন প্রসব করিয়াছ? আমি ত কাহাকেও সুদের জন্য ঋণ দিই নাই, আমাকেও কেহ দেয় নাই, তথাপি সকলে আমাকে শাপ দিতেছে। সদাপ্রভু কহিলেন, আমি নিশ্চয়ই তোমাকে মুক্ত করিয়া তোমার মঙ্গল করিব; নিশ্চয়ই শত্রুগণকে সঙ্কটকালে ও দুর্দ্দশার সময়ে তোমার কাছে বিনতি করাইব। লৌহ, উত্তর দেশীয় লৌহ ও পিত্তল কি ভাঙ্গিতে পারা যায়? আমি তোমার ঐশ্বর্য্য ও ধনকোষ সকল লুটদ্রব্য করিয়া বিনামূল্যে বিতরণ করিব; তোমার পাপসমূহের জন্য তোমার সীমার সর্ব্বত্রই [করিব]। আর তোমার শত্রুগণের দ্বারা তোমার অজ্ঞাত এক দেশে তাহা লইয়া যাইব; কেননা আমার ক্রোধে অগ্নি প্রজ্বলিত হইল, তাহা তোমাদের উপরে জ্বলিয়া উঠিবে। হে সদাপ্রভু, তুমিই জ্ঞাত আছ; আমাকে স্মরণ কর, আমার তত্ত্বানুসন্ধান কর, আমার তাড়নাকারীদিগকে অন্যায়ের প্রতিশোধ দেও, তোমার দীর্ঘসহিষ্ণুতায় আমাকে হরণ করিও না; জানিও আমি তোমার নিমিত্ত টিট্‌কারি সহ্য করিয়াছি। তোমার বাক্য সকল পাওয়া গেল, আর আমি সেগুলি ভক্ষণ করিলাম, তোমার বাক্য সকল আমার আমোদ ও চিত্তের হর্ষজনক ছিল; কেননা হে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, আমার উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত। আমি পরিহাসকারীদের সভাতে বসি নাই, উল্লাস করি নাই; তোমার হস্ত প্রযুক্ত একাকী বসিতাম, কেননা তুমি আমাকে ক্রোধে পূর্ণ করিয়াছ। আমার যাতনা নিত্যস্থায়ী ও আমার ক্ষত অপ্রতিকার্য্য কেন? তাহা চিকিৎসা অগ্রাহ্য করিতেছে। তুমি কি আমার কাছে মিথ্যা স্রোতের ও অস্থায়ী জলের ন্যায় হইবে? অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যদি ফিরিয়া আইস, তবে আমি তোমাকে ফিরাইয়া আনিব, তুমি আমার সাক্ষাতে দাঁড়াইবে; এবং যদি অপকৃষ্ট বস্তু হইতে কাঞ্চন বাহির করিয়া লও, তবে আমার মুখস্বরূপ হইবে; উহারা তোমার কাছে ফিরিয়া আসিবে, কিন্তু তুমি উহাদের কাছে ফিরিয়া যাইবে না। আর আমি এই জাতির কাছে তোমাকে পিত্তলের দৃঢ় প্রাচীরস্বরূপ করিব; তাহারা তোমার সহিত যুদ্ধ করিবে, কিন্তু তোমাকে পরাভব করিতে পারিবে না, কেননা তোমার ত্রাণের ও তোমার উদ্ধারের জন্য আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর আমি দুষ্টদের হস্ত হইতে তোমাকে উদ্ধার করিব, দুর্দ্দান্তদের করতল হইতে তোমাকে মুক্ত করিব। আবার সদাপ্রভুর বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, যথা, তুমি এই স্থানে বিবাহ করিও না, পুত্রকন্যাদের জন্ম দিও না, কেননা এই স্থানে জাত পুত্রকন্যাদের বিষয়ে, এবং এই দেশে তাহাদের প্রসবকারিণী মাতাদের ও জন্মদাতা পিতাদের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন; তাহারা অতি যন্ত্রণাদায়ক মরণে মরিবে, তাহাদের নিমিত্ত কেহ বিলাপ করিবে না, কেহ তাহাদিগকে কবর দিবে না; তাহারা ভূমির উপরে সারের ন্যায় পড়িয়া থাকিবে; এবং তাহারা খড়্‌গ ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা হত হইবে; তাহাদের শব আকাশের পক্ষিগণের ও ভূমির পশুদের ভক্ষ্য হইবে। বস্তুতঃ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি শোকের গৃহে প্রবেশ করিও না, বিলাপ করিতে যাইও না, তাহাদের জন্য ক্রন্দন করিও না; কেননা, সদাপ্রভু কহেন, আমি এই জাতি হইতে আমার শান্তি, দয়া ও করুণা অপহরণ করিয়াছি। এই দেশে ক্ষুদ্র ও মহান সমস্ত লোক মরিবে, কেহ তাহাদিগকে কবর দিবে না, লোকে তাহাদের জন্য বিলাপ করিবে না, ও তাহাদের নিমিত্ত কেহ আপন অঙ্গের কাটকুট কিম্বা মস্তক মুণ্ডন করিবে না; মৃত লোকের নিমিত্ত শোককারীদিগকে সান্ত্বনাসূচক [রুটি] বিতরণ করিবে না, পিতা কিম্বা মাতার নিমিত্ত শোকে সান্ত্বনাসূচক পাত্রে পান করাইবে না। আর তুমি তাহাদের সহিত ভোজন ও পান করিতে বসিবার জন্য কোন ভোজ-গৃহে প্রবেশ করিবে না। কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই স্থানে তোমাদের দৃষ্টিগোচরে, তোমাদের বর্ত্তমান সময়ে, আমোদের রব ও আনন্দের রব, বরের রব ও কন্যার রব নিবৃত্ত করিব। আর তুমি এই জাতির নিকটে এই সমস্ত কথা প্রচার করিলে যখন তাহারা তোমাকে বলিবে, সদাপ্রভু আমাদের বিরুদ্ধে এই সমস্ত মহাবিপদের কথা কেন বলিয়াছেন? আমাদের অপরাধ কি? আমাদের পাপ কি, যাহা আমরা আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে করিয়াছি? তখন তুমি তাহাদিগকে বলিবে, সদাপ্রভু কহেন, তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, তাহারা অন্য দেবগণের পশ্চাদগামী হইয়া তাহাদের সেবা করিয়াছে, তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিয়াছে, এবং আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, আমার ব্যবস্থা পালন করে নাই। আর তোমরা আপনাদের পিতৃপুরুষগণ অপেক্ষাও মন্দ আচরণ করিয়াছ; কারণ দেখ, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন দুষ্ট হৃদয়ের কঠিনতা অনুসারে চলিতেছ, তাই আমার বাক্যে কর্ণপাত করিতেছ না। এই জন্য তোমাদের পিতৃপুরুষেরা ও তোমরা যে দেশ জান নাই, এমন এক দেশে আমি এই দেশ হইতে তোমাদিগকে নিক্ষেপ করিব; সেই স্থানে তোমরা দিবারাত্র অন্য দেবগণের সেবা করিবে, কেননা আমি তোমাদিগকে দয়া করিব না। এই জন্য, সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে লোকেরা আর বলিবে না, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যিনি ইস্রায়েল সন্তানগণকে মিসর দেশ হইতে উঠাইয়া আনিয়াছেন; কিন্তু [তাহারা বলিবে], সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যিনি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে উত্তর দেশ হইতে, এবং আর যে সকল দেশে তিনি তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছিলেন, সেই সকল দেশ হইতে উঠাইয়া আনিয়াছেন, বস্তুতঃ আমি তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছিলাম, তাহাদের সেই দেশে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিব। সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি অনেক ধীবর আনাইব, তাহারা মৎস্যের ন্যায় তাহাদিগকে ধরিবে; পরে আমি অনেক ব্যাধ আনাইব, তাহারা মৃগয়া করিয়া প্রত্যেক পর্ব্বত হইতে, প্রত্যেক উপপর্ব্বত হইতে ও শৈলের ছিদ্র সকল হইতে তাহাদিগকে আনিবে। কেননা তাহাদের সমস্ত পথে আমার দৃষ্টি আছে, তাহারা আমার সম্মুখ হইতে লুক্কায়িত নহে, এবং তাহাদের অপরাধও আমার দৃষ্টি হইতে গুপ্ত নহে। আমি অগ্রে তাহাদের অপরাধের ও তাহাদের পাপের দ্বিগুণ ফল দিব; কেননা তাহারা আপনাদের জঘন্য পদার্থরূপ শবে আমার দেশ অপবিত্র করিয়াছে, এবং আপনাদের ঘৃণার্হ বস্তুসমূহে আমার অধিকার পরিপূর্ণ করিয়াছে। হে সদাপ্রভু, আমার বল ও আমার দুর্গ, এবং সঙ্কটকালে আমার আশ্রয়, পৃথিবীর প্রান্ত সকল হইতে জাতিগণ তোমার নিকটে আসিয়া বলিবে, ‘কেবল মিথ্যা বিষয়ে ও অসার বস্তুতে আমাদের পিতৃপুরুষদের অধিকার ছিল, তাহার মধ্যে একটাও উপকারী নয়। মনুষ্য কি আপনার নিমিত্ত দেবতা নির্ম্মাণ করিবে? তাহারা ত ঈশ্বর নয়।’ এই জন্য দেখ, আমি তাহাদিগকে জ্ঞাত করিব, একটীবার তাহাদিগকে আমার হস্ত ও পরাক্রম জ্ঞাত করিব, তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমার নাম সদাপ্রভু। যিহূদার পাপ লৌহলেখনী ও হীরকের কাঁটা দিয়া লিখিত হইয়াছে, তাহাদের চিত্তফলকে ও তাহাদের যজ্ঞবেদির শৃঙ্গে তাহা ক্ষোদিত হইয়াছে। আর তাহাদের বালকেরা হরিৎপর্ণ বৃক্ষের কাছে উচ্চ গিরির উপরে তাহাদের যজ্ঞবেদি ও আশেরা-মূর্ত্তি সকল স্মরণ করে। হে ক্ষেত্রস্থ আমার পর্ব্বত, আমি তোমার ঐশ্বর্য্য, তোমার সমস্ত ধনকোষ লুটদ্রব্য করিয়া বিতরণ করিব; পাপপ্রযুক্ত তোমার সীমার সর্ব্বত্র তোমার উচ্চস্থলী সকলও [বিতরণ করিব]। আমি তোমাকে যে অধিকার দিয়াছিলাম, তুমি নিজেই সেই অধিকার হইতে চ্যুত হইবে, এবং আমি তোমার অজ্ঞাত সেই দেশে তোমাকে দিয়া শত্রুগণের সেবা করাইব; কারণ তোমরা আমার ক্রোধে অগ্নি প্রজ্বলিত করিয়াছ, তাহা চিরকাল জ্বলিবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে ব্যক্তি মনুষ্যে নির্ভর করে, মাংসকে আপনার বাহু জ্ঞান করে, ও যাহার অন্তঃকরণ সদাপ্রভু হইতে সরিয়া যায়, সে শাপগ্রস্ত। সে মরুভূমিস্থ ঝাউ গাছের সদৃশ হইবে, মঙ্গল আসিলে তাহার দর্শন পাইবে না, কিন্তু প্রান্তরের উত্তপ্ত স্থানে ও নিবাসীহীন লবণ-ভূমিতে বাস করিবে। ধন্য সেই ব্যক্তি, যে সদাপ্রভুতে নির্ভর করে, যাহার বিশ্বাসভূমি সদাপ্রভু। সে জলের নিকটে রোপিত এমন বৃক্ষের ন্যায় হইবে, যাহা নদীকূলে মূল বিস্তার করে, গ্রীষ্মের আগমনে সে ভয় করিবে না, এবং তাহার পত্র সতেজ থাকিবে; অনাবৃষ্টির বৎসরেও সে নিশ্চিন্ত থাকিবে, ফলদানেও নিবৃত্ত হইবে না। অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে? আমি সদাপ্রভু অন্তঃকরণের অনুসন্ধান করি, আমি মর্ম্মের পরীক্ষা করি; আমি প্রত্যেক মনুষ্যকে আপন আপন আচরণানুসারে আপন আপন কর্ম্মের ফল দিয়া থাকি। প্রসব না করিলেও যেমন তিত্তির পক্ষী শাবকদিগকে সংগ্রহ করে, তেমনি সেই ব্যক্তি যে অন্যায়ে ধন সঞ্চয় করে, সেই ধন অর্দ্ধ বয়সে তাহাকে ছাড়িয়া যাইবে, এবং শেষকালে সে মূঢ় হইয়া পড়িবে। আদিকাল হইতে উচ্চে অবস্থিত প্রতাপ-সিংহাসন আমাদের ধর্ম্মধামের স্থান। হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের প্রত্যাশাভূমি, যত লোক তোমাকে পরিত্যাগ করে, সকলেই লজ্জিত হইবে। ‘যাহারা আমা হইতে সরিয়া যায়, তাহাদের নাম ধূলিতে লিখিত হইবে; কারণ তাহারা জীবন্ত জলের উনুই সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়াছে।’ হে সদাপ্রভু, আমাকে সুস্থ কর, তাহাতে আমি সুস্থ হইব; আমাকে পরিত্রাণ কর, তাহাতে আমি পরিত্রাণ পাইব, কেননা তুমি আমার প্রশংসাভূমি। দেখ, উহারা আমাকে বলিতেছে, সদাপ্রভুর বাক্য কোথায়? তাহা একবার উপস্থিত হউক। আমি ত তোমার পশ্চাদ্বর্ত্তী পালরক্ষকের কার্য্য হইতে বিমুখ হই নাই, এবং অপ্রতিকার্য্য বিপদের দিন আকাঙ্ক্ষা করি নাই, তাহা তুমি জ্ঞাত আছ; আমার ওষ্ঠাধর হইতে যাহা নির্গত হইত, তাহা তোমার সম্মুখে ছিল। আমার ত্রাসজনক হইও না; বিপৎকালে তুমিই আমার আশ্রয়। যাহারা আমাকে তাড়না করে, তাহারা লজ্জিত হউক, কিন্তু আমি যেন লজ্জিত না হই; তাহারা নিরাশ হউক, কিন্তু আমি যেন নিরাশ না হই; তুমি তাহাদের উপরে অমঙ্গলের দিন উপস্থিত কর, ও দ্বিগুণ ভঙ্গে তাহাদিগকে ভগ্ন কর। সদাপ্রভু আমাকে এই কথা কহিলেন, যিহূদার রাজগণ যে দ্বার দিয়া ভিতরে আইসে ও বাহিরে যায়, তুমি জনসাধারণের সেই দ্বারে ও যিরূশালেমের সকল দ্বারে গিয়া দাঁড়াও; আর তাহাদিগকে বল, হে যিহূদার রাজগণ, হে সমস্ত যিহূদা, হে সমস্ত যিরূশালেম-নিবাসী, তোমরা যত লোক এই সকল দ্বার দিয়া ভিতরে আসিয়া থাক, সকলে সদাপ্রভুর বাক্য শুন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন প্রাণের বিষয়ে সাবধান হও, বিশ্রামদিনে কোন বোঝা বহিও না, যিরূশালেমের দ্বার দিয়া ভিতরে আনিও না। আর বিশ্রামবারে আপন আপন গৃহ হইতে কোন বোঝা বাহির করিও না, এবং কোন কার্য্য করিও না; কিন্তু বিশ্রামদিন পবিত্র করিও, যেমন আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে আজ্ঞা দিয়াছিলাম। তথাপি তাহারা শুনে নাই, কর্ণপাত করে নাই, কিন্তু আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিয়াছিল, যেন কথা শুনিতে কিম্বা উপদেশ গ্রাহ্য করিতে না হয়। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা যদি যত্নপূর্ব্বক আমার কথায় কর্ণপাত করিয়া, বিশ্রামদিনে এই নগরের দ্বার দিয়া কোন বোঝা ভিতরে না আন, যদি বিশ্রামদিন পবিত্র কর, সেই দিনে কোন কার্য্য না কর, তবে দায়ূদের সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজগণ ও প্রধানবর্গ রথে ও অশ্বে চড়িয়া এই নগরের দ্বার দিয়া প্রবেশ করিবে, তাহারা, তাহাদের প্রধানগণ, যিহূদার লোক ও যিরূশালেম-নিবাসিগণ প্রবেশ করিবে, এবং এই নগর নিত্যস্থায়ী বাসস্থান হইবে। আর যিহূদার নগর সকল, যিরূশালেমের চারিদিকের অঞ্চল, বিন্যামীন প্রদেশ, নিম্নভূমি, পার্ব্বতীয় দেশ ও দক্ষিণ দেশ হইতে লোকেরা হোম, বলি, ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ও ধূপ লইয়া আসিবে; তাহারা সদাপ্রভুর গৃহে স্তবের উপহার আনয়ন করিবে। কিন্তু যদি তোমরা আমার কথায় কর্ণপাত না কর, বিশ্রামদিন পবিত্র না কর, বিশ্রামদিনে বোঝা বহিয়া যিরূশালেমের দ্বারে প্রবেশ কর, তবে আমি তাহার সকল দ্বারে অগ্নি জ্বালাইব; তাহা যিরূশালেমের অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে, নির্ব্বাণ হইবে না। যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর নিকট হইতে এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি উঠিয়া কুম্ভকারের বাটীতে নামিয়া যাও, সেখানে আমি তোমাকে আমার বাক্য শুনাইব। তখন আমি কুম্ভকারের বাটীতে নামিয়া গেলাম, আর দেখ, সে কুলালচক্রে কর্ম্ম করিতেছিল। আর সে মৃত্তিকা দিয়া যে পাত্র নির্ম্মাণ করিতেছিল, তাহা যখন কুম্ভকারের হস্তে নষ্ট হইয়া গেল, তখন সে তাহা লইয়া আর এক পাত্র নির্ম্মাণ করিল, কুম্ভকারের দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তদনুসারেই করিল। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে উপস্থিত হইল; সদাপ্রভু কহেন, হে ইস্রায়েল-কুল, তোমাদের সহিত আমি কি এই কুম্ভকারের ন্যায় ব্যবহার করিতে পারি না? হে ইস্রায়েল-কুল, দেখ, যেমন কুম্ভকারের হস্তে মৃত্তিকা, তেমনি আমার হস্তে তোমরা। যখন আমি কোন জাতির কিম্বা রাজ্যের বিষয়ে উন্মূলনের, উৎপাটনের ও বিনাশের কথা বলি, তখন আমি যে জাতির বিষয়ে কথা বলিয়াছি, তাহারা যদি আপন দুষ্টতা হইতে ফিরে, তবে তাহাদের যে অমঙ্গল করিতে আমার মনস্থ ছিল, তাহা হইতে আমি ক্ষান্ত হইব। আর যখন আমি কোন জাতির কিম্বা রাজ্যের বিষয়ে গাঁথিয়া তুলিবার ও রোপন করিবার কথা বলি, তখন তাহারা যদি আমার রব না মানিয়া আমার সাক্ষাতে কদাচরণ করে, তবে তাহাদের যে মঙ্গল করিতে আমার কথা ছিল, তাহা হইতে আমি ক্ষান্ত হইব। অতএব এখন তুমি গিয়া যিহূদার লোকদিগকে ও যিরূশালেম-নিবাসিগণকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে অমঙ্গল প্রস্তুত করিতেছি, তোমাদের বিরুদ্ধে সঙ্কল্প করিতেছি; তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন কুপথ হইতে ফির, আপন আপন পথ ও আপন আপন ক্রিয়া ভাল কর। কিন্তু তাহারা বলে, আশা নাই, কেননা আমরা আপনাদেরই সঙ্কল্পানুসারে চলিব, প্রত্যেকে আপন আপন দুষ্ট হৃদয়ের কঠিনতা অনুসারে কর্ম্ম করিব। এই জন্য সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা এখন জাতিগণের মধ্যে জিজ্ঞাসা কর, এরূপ কথা কে শুনিয়াছে? ইস্রায়েল-কুমারী নিতান্ত রোমাঞ্চজনক কর্ম্ম করিয়াছে। লিবানোনের হিম কি ক্ষেত্রস্থ শৈলকে ত্যাগ করে? কিম্বা দূর হইতে আগত সুশীতল জলস্রোত কি লুপ্ত হয়? বাস্তবিক আমার প্রজাগণ আমাকে ভুলিয়া গিয়াছে, তাহারা অলীক বস্তুর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইতেছে, এবং ইহারা তাহাদের পথে, চিরন্তর মার্গে, তাহাদের বিঘ্ন ঘটাইয়াছে, তাহারা বিপথের, অপ্রস্তুত মার্গের, পথিক হইয়াছে। ইহাতে তাহারা আপন দেশকে বিস্ময়ের ও নিত্য শিশ শব্দের বিষয় করে; যে কেহ তাহার নিকট দিয়া গমন করিবে, সে বিস্ময়াপন্ন হইয়া মাথা নাড়িবে। যেমন পূর্ব্বীয় বায়ু করে, তেমনি আমি শত্রুদের সম্মুখে তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিব; তাহাদের বিপদের সময়ে তাহাদিগকে পৃষ্ঠ দেখাইব, মুখ নয়। তখন তাহারা কহিল, চল, আমরা যিরমিয়ের বিরুদ্ধে পরামর্শ করি, কেননা যাজকের নিকট হইতে ব্যবস্থা, জ্ঞানবানের নিকট হইতে মন্ত্রণা ও ভাববাদীর নিকট হইতে বাক্য লুপ্ত হইবে না; চল, আমরা জিহ্বা দ্বারা উহাকে প্রহার করি, উহার কোন কথায় মনোযোগ না করি। হে সদাপ্রভু, আমার প্রতি মনোযোগ কর, যাহারা আমার সঙ্গে বিবাদ করে, তাহাদের রব শুন। উপকারের পরিশোধে কি অপকার করা হইবে? তাহারা ত আমার প্রাণের জন্য গর্ত্ত খনন করিয়াছে। স্মরণ কর, তাহাদের হইতে তোমার ক্রোধ ফিরাইবার চেষ্টায় আমি তাহাদের পক্ষে হিতবাক্য বলিবার জন্য তোমার সম্মুখে দাঁড়াইতাম। অতএব তুমি তাহাদের সন্তানগণকে দুর্ভিক্ষে সমর্পণ কর, তাহাদিগকে খড়্‌গের হস্তগত কর, আর তাহাদের স্ত্রীগণ পুত্রহীনা ও বিধবা হউক, তাহাদের পুরুষেরা মারীতে বিনষ্ট ও তাহাদের যুবকগণ সংগ্রামে খড়্‌গহত হউক। তুমি তাহাদের প্রতি অকস্মাৎ সৈন্যদল উপস্থিত করিলে তাহাদের গৃহ সকল হইতে ক্রন্দনের রব শুনা যাউক; কেননা তাহারা আমাকে ধরিবার জন্য গর্ত্ত খনন করিয়াছে, ও আমার পায়ের জন্য গোপনে ফাঁদ পাতিয়াছে। আর হে সদাপ্রভু, প্রাণনাশার্থে আমার বিরুদ্ধে তাহাদের কৃত সমস্ত মন্ত্রণা তুমিই জ্ঞাত আছ; তুমি তাহাদের অপরাধ ক্ষমা করিও না, তাহাদের পাপ তোমার সম্মুখ হইতে মুছিয়া ফেলিও না; তাহারা তোমার সম্মুখে নিপাতিত হউক; তুমি আপন ক্রোধের সময়ে তাহাদের প্রতি কার্য্য কর। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যাও, কুম্ভকারের এক ঘট ক্রয় কর, এবং প্রজাদের কতিপয় প্রাচীন লোক ও যাজকদের কতিপয় প্রাচীন লোক [সঙ্গে করিয়া লও]। আর খর্পর দ্বারের প্রবেশ-স্থানের নিকটে হিন্নোম-সন্তানের যে উপত্যকা আছে, সেই স্থানে গমন কর; পরে আমি তোমাকে যে কথা বলিব, তাহা সেই স্থানে প্রচার কর। এই কথা বল, হে যিহূদার রাজগণ, হে যিরূশালেম-নিবাসিগণ, সদাপ্রভুর বাক্য শুন; বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই স্থানের প্রতি এমন অমঙ্গল ঘটাইব যে, তাহা যে শুনিবে, তাহার কর্ণ শিহরিয়া উঠিবে। কারণ তাহারা আমাকে পরিত্যাগ করিয়াছে, এই স্থান বিজাতীয় [স্থান] করিয়াছে, এবং তাহারা, তাহাদের পিতৃপুরুষেরা ও যিহূদার রাজগণ যাহাদিগকে জ্ঞাত ছিল না, এমন অন্য দেবগণের উদ্দেশে এই স্থানে ধূপ জ্বালাইয়াছে, আর নির্দ্দোষদের রক্তে এই স্থান পরিপূর্ণ করিয়াছে। তাহারা বালের উদ্দেশে হোমবলিরূপে আপন আপন পুত্রগণকে আগুনে পোড়াইবার জন্য বালের উচ্চস্থলী নির্ম্মাণ করিয়াছে; তাহা আমি আজ্ঞা করি নাই, উচ্চারণ করি নাই, এবং তাহা আমার মনেও উদয় হয় নাই। এই কারণ, সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যখন এই স্থান আর তোফৎ কিম্বা হিন্নোম-সন্তানের উপত্যকা নামে আখ্যাত হইবে না, কিন্তু হত্যার উপত্যকা বলিয়া আখ্যাত হইবে। আর আমি এই স্থানে যিহূদার ও যিরূশালেমের মন্ত্রণা বিফল করিব, এবং শত্রুগণের সম্মুখে খড়্‌গ দ্বারা ও তাহাদের প্রাণনাশার্থী লোকদের হস্ত দ্বারা তাহাদিগকে নিপাত করিব; আমি তাহাদের শব খাদ্যের নিমিত্ত আকাশের পক্ষিগণকে ও ভূমির পশুদিগকে দিব। আর আমি এই নগর বিস্ময়ের ও শিশ শব্দের বিষয় করিব, যে কেহ ইহার নিকট দিয়া গমন করিবে, সে ইহার [প্রতি উপস্থিত] সকল আঘাত দেখিয়া বিস্মিত হইবে, ও শিশ দিবে। আর যখন তাহাদের শত্রুগণ ও প্রাণনাশার্থিগণ কর্ত্তৃক তাহারা অবরুদ্ধ ও ক্লিষ্ট হইবে, তখন আমি তাহাদিগকে তাহাদের পুত্রদের মাংস ও তাহাদের কন্যাদের মাংস ভোজন করাইব, এবং তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন বন্ধুর মাংস খাইবে। পরে তুমি আপনার সঙ্গী পুরুষদের সাক্ষাতে সেই ঘট ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, এবং তাহাদিগকে বলিবে, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যেমন কুম্ভকারের কোন পাত্র ভাঙ্গিয়া ফেলিলে আর তাহা যোড়া দিতে পারা যায় না, তেমনি আমি এই জাতি ও এই নগর ভাঙ্গিয়া ফেলিব; তাহাতে কবর দিবার জন্য স্থানাভাব প্রযুক্ত লোকেরা তোফতে কবর দিবে। সদাপ্রভু কহেন, আমি এই স্থানের ও এতন্নিবাসীদের প্রতি এই কার্য্য করিব, আমি এই নগর তোফতের সদৃশ করিব। তাহাতে যিরূশালেমের গৃহ সকল ও যিহূদার রাজগণের গৃহ সকল, অর্থাৎ যে সমস্ত গৃহের ছাদে তাহারা আকাশমণ্ডলের সমস্ত বাহিনীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইত, এবং অন্য দেবগণের উদ্দেশে পানীয় নৈবেদ্য ঢালিত, সেই সকল গৃহ তোফতের ন্যায় অশুচি স্থান হইবে। পরে সদাপ্রভু যিরমিয়কে ভাববাণী বলিবার নিমিত্ত যেখানে পাঠাইয়াছিলেন, তিনি সেই তোফৎ হইতে আসিয়া সদাপ্রভুর গৃহের প্রাঙ্গণে দাঁড়াইয়া সমস্ত লোককে কহিলেন, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই নগরের বিষয়ে ও ইহার নিকটস্থ নগর সকলের বিষয়ে যে সকল অমঙ্গলের কথা বলিয়াছি, সেই সকল ইহাদের উপরে ঘটাইব, কারণ ইহারা আপন আপন গ্রীবা শক্ত করিয়াছে, যেন আমার কথা শুনিতে না হয়। যিরমিয় যখন এই সকল ভাবোক্তি প্রচার করিতেছিলেন, তখন ইম্মেরের সন্তান পশ্‌হূর যাজক, সদাপ্রভুর গৃহের প্রধান অধ্যক্ষ, তাহা শ্রবণ করিল। পশ্‌হূর যিরমিয় ভাববাদীকে প্রহার করিয়া সদাপ্রভুর গৃহগামী বিন্যামীনের উচ্চতর দ্বারে স্থিত হাঁড়িকাঠে তাঁহাকে বদ্ধ করিয়া রাখিল। পর-দিবস পশ্‌হূর যিরমিয়কে হাঁড়িকাঠ হইতে মুক্ত করিয়া আনিল। তখন যিরমিয় তাহাকে কহিলেন, সদাপ্রভু তোমার নাম পশ্‌হূর রাখেন নাই, কিন্তু মাগোরমিষাবীব [চারিদিকেই ভয়] রাখিয়াছেন। কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমার পক্ষে ও তোমার সমস্ত বন্ধুর পক্ষে তোমাকে ভয়জনক করিব। তাহারা শত্রুদের খড়্‌গধারে পতিত হইবে, ও তুমি স্বচক্ষে তাহা দেখিবে, এবং আমি সমস্ত যিহূদাকে বাবিল-রাজের হস্তে সমর্পণ করিব; তাহাতে সে তাহাদিগকে বন্দি করিয়া বাবিলে লইয়া যাইবে, ও খড়্‌গাঘাতে বধ করিবে। আর আমি এই নগরের সমস্ত সম্পত্তি, শ্রমোপার্জ্জিত অর্থ, বহুমূল্য বস্তু ও যিহূদার রাজগণের ধনকোষ সকল শত্রুগণের হস্তে প্রদান করিব; আর তাহারা সে সমস্ত লুটপাট করিয়া বাবিলে লইয়া যাইবে। আর হে পশ্‌হূর, তুমি ও তোমার গৃহনিবাসিগণ সকলে বন্দি-দশার স্থানে যাইবে, তুমি বাবিলে উপস্থিত হইবে, সেই স্থানে মরিবে, ও সেই স্থানে কবরপ্রাপ্ত হইবে; তোমার এবং যাহাদের কাছে তুমি মিথ্যা ভাববাণী বলিয়াছ, তোমার সেই সমস্ত বন্ধুরও [সেই গতি হইবে]। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে প্ররোচনা করিলে আমি প্ররোচিত হইলাম; তুমি আমা হইতে বলবান্‌, তুমি প্রবল হইয়াছ। আমি সমস্ত দিন উপহাসের পাত্র হইয়াছি, সকলেই আমাকে ঠাট্টা করে। যতবার আমি কথা কহি, ততবার চেঁচাইয়া উঠি; দৌরাত্ম্য ও লুটপাট বলিয়া চেঁচাই; সদাপ্রভুর বাক্য প্রযুক্ত সমস্ত দিন আমাকে টিটকারি দেওয়া ও বিদ্রূপ করা হয়। যদি বলি, তাঁহার বিষয় আর উল্লেখ করিব না, তাঁহার নামে আর কিছু কহিব না, তবে আমার হৃদয়ে যেন দাহকারী অগ্নি অস্থিমধ্যে রুদ্ধ হয়; তাহা সহ্য করিতে করিতে আমি ক্লান্ত হইয়া পড়ি, আর তিষ্ঠিতে পারি না। কারণ আমি অনেকের পরীবাদ শুনিতেছি, চারিদিকে ভয় রহিয়াছে। ‘তোমরা অভিযোগ কর, এবং আমরাও উহার নামে অভিযোগ করিব,’ আমার সমস্ত মিত্র আমার স্খলনের অপেক্ষা করিয়া এই কথা বলে, ‘কি জানি, সে প্ররোচিত হইবে, আর আমরা প্রবল হইয়া তাহাকে পরাভব করিয়া প্রতিরোধ দিব।’ কিন্তু সদাপ্রভু প্রবল পরাক্রান্ত বীরের ন্যায় আমার সঙ্গে থাকেন, এই জন্য আমার তাড়নাকারিগণ উছোট খাইবে, প্রবল হইবে না, বুদ্ধিপূর্ব্বক না চলাতে তাহারা মহা লজ্জিত হইবে; সেই অপমান নিত্য থাকিবে, তাহা কেহ ভুলিয়া যাইবে না। কিন্তু, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তুমি ত ধার্ম্মিকের পরীক্ষক, মর্ম্মের ও হৃদয়ের পরিদর্শক, তুমি তাহাদিগকে প্রতিশোধ দেও, আমি দেখি, কেননা আমি আপন বিবাদের বিষয় তোমারই কাছে প্রকাশ করিলাম। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান কর, সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, কারণ তিনি দুরাচারদের হস্ত হইতে দরিদ্র লোকের প্রাণ উদ্ধার করিয়াছেন। আমি যে দিন জন্মিয়াছিলাম, সেই দিন শাপগ্রস্ত হউক; আমার মাতা যে দিন আমাকে প্রসব করিয়াছিলেন, সেই দিন আশীর্ব্বাদ বিহীন হউক। ‘তোমার পুত্রসন্তান হইল,’ এই সংবাদ দিয়া যে ব্যক্তি আমার পিতাকে পরমানন্দিত করিয়াছিল, সে শাপগ্রস্ত হউক। সদাপ্রভু ক্ষমা না করিয়া যে সকল নগর উৎসন্ন করিয়াছিলেন, ঐ ব্যক্তি সেই সকল নগরের ন্যায় হউক; সে প্রাতঃকালে ক্রন্দন ও মধ্যাহ্নকালে চীৎকার শুনুক। তিনি কেন আমাকে গর্ভের মধ্যে মারিয়া ফেলিলেন না? তাহা হইলে আমার জননী আমার কবর হইতেন, তাঁহার গর্ভ নিত্য গুরু থাকিত। লজ্জায় জীবন কাটাইবার জন্য আমি কষ্ট ও খেদ দেখিতে কেন গর্ভ হইতে নির্গত হইলাম? সিদিকিয় রাজা মল্কিয়ের সন্তান পশ্‌হূরকে ও মাসেয়ের পুত্র সফনিয় যাজককে যিরমিয়ের নিকটে এই কথা বলিবার জন্য প্রেরণ করিয়াছিলেন, যথা, ‘তুমি আমাদের জন্য সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা কর, কেননা বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর আমাদের সহিত যুদ্ধ করিতেছেন; হয় ত সদাপ্রভু আপনার সমস্ত আশ্চর্য্য ক্রিয়ানুসারে আমাদের প্রতি ব্যবহার করিবেন, তাহা হইলে ঐ রাজা আমাদের নিকট হইতে উঠিয়া যাইবেন।’ তৎকালে যিরমিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল। যিরমিয় তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা সিদিকিয়কে এই কথা বল, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, তোমরা আপন আপন হস্তস্থিত যে সকল যুদ্ধাস্ত্র দ্বারা বাবিল-রাজের সহিত ও তোমাদের অবরোধকারী কল্‌দীয়দের সহিত প্রাচীরের বাহিরে যুদ্ধ করিতেছ, আমি সেই সকলের মুখ ফিরাইয়া দিব, এবং এই নগরের মধ্যে সে সকল সংগ্রহ করিব। আর আমি আপনি বিস্তারিত হস্ত ও বলবান্‌ বাহু দ্বারা ক্রোধে, রোষে ও মহাকোপে তোমাদের সহিত যুদ্ধ করিব। আমি এই নগরবাসী মনুষ্য ও পশু সকলকে সংহার করিব; তাহারা মহামারীতে মারা পড়িবে। আর, সদাপ্রভু কহেন, তৎপরে আমি যিহূদা-রাজ সিদিকিয়কে, তাহার দাসগণকে ও প্রজাদিগকে, এমন কি, এই নগরের যে সকল লোক মারী, খড়্‌গ ও দুর্ভিক্ষ হইতে অবশিষ্ট থাকিবে, তাহাদিগকে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের হস্তে, তাহাদের শত্রুগণের হস্তে ও তাহাদের প্রাণনাশার্থী লোকদের হস্তে সমর্পণ করিব; সেই রাজা খড়্‌গধারে তাহাদিগকে আঘাত করিবে, তাহাদের প্রতি মমতা করিবে না, ক্ষমা কি করুণা করিবে না। আর তুমি এই লোকদিগকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, তোমাদের সম্মুখে আমি জীবনের পথ ও মৃত্যুর পথ রাখিতেছি। যে ব্যক্তি এই নগরে থাকিবে, সে খড়্‌গে, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীতে মারা পড়িবে; কিন্তু যে ব্যক্তি বাহিরে গিয়া তোমাদের অবরোধকারী কল্‌দীয়দের পক্ষে দাঁড়াইবে, সে বাঁচিবে, এবং তাহার প্রাণ তাহার পক্ষে লুটদ্রব্যের ন্যায় হইবে। কেননা, সদাপ্রভু কহেন, আমি অমঙ্গলের নিমিত্ত এই নগরের বিপরীতে আপন মুখ রাখিয়াছি, মঙ্গলের নিমিত্ত নয়; ইহা বাবিল-রাজের হস্তগত হইবে, এবং সে ইহা আগুনে পোড়াইয়া দিবে। আর যিহূদার রাজকুলের বিষয় তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন; হে দায়ূদের কুল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা প্রাতঃকালে বিচার নিষ্পত্তি কর, এবং লুন্ঠিত ব্যক্তিকে উপদ্রবীর হস্ত হইতে উদ্ধার কর, নতুবা তোমাদের আচরণের দুষ্টতা প্রযুক্ত আমার ক্রোধ অগ্নির ন্যায় বহির্গত হইবে, এবং এমন দাহ করিবে যে, কেহ তাহা নির্ব্বাণ করিবে না। হে তলভূমিনিবাসিনি, সমস্থলীর শৈলবাসিনি, সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; তোমরা কহিতেছ, আমাদের বিপরীতে কে নামিয়া আসিবে? আমাদের নিবাসে কে প্রবেশ করিবে? সদাপ্রভু কহেন, আমি তোমাদের কর্ম্মের ফলানুসারে তোমাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিব; আমি তাহার বনে অগ্নি জ্বালাইব, উহা তাহার চারিদিকে সকলই গ্রাস করিবে। সদাপ্রভু এই কথা কহিলেন, তুমি যিহূদার রাজবাটীতে গিয়া সেই স্থানে এই কথা বল। ‘তুমি বল, হে দায়ূদের সিংহাসনে উপবিষ্ট যিহূদা-রাজ, তুমি, তোমার দাসগণ ও এই সকল দ্বার দিয়া প্রবেশকারী তোমার প্রজাগণ, সদাপ্রভুর বাক্য শুন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা ন্যায়বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান কর, এবং লুন্ঠিত ব্যক্তিকে উপদ্রবীর হস্ত হইতে উদ্ধার কর; বিদেশী, পিতৃহীন ও বিধবাদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার করিও না, এবং এই স্থানে নির্দ্দোষের রক্তপাত করিও না। কেননা তোমরা যদি এই কথা যত্নপূর্ব্বক পালন কর, তবে দায়ূদের সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজগণ আপন দাসগণের ও প্রজাগণের সহিত রথে ও অশ্বে চড়িয়া এই বাটীর দ্বার দিয়া প্রবেশ করিবে। কিন্তু, তোমরা যদি এই সকল বাক্য না শুন, তবে, সদাপ্রভু কহেন, আমি আমারই নামে শপথ করিতেছি যে, এই বাটী উৎসন্ন স্থান হইবে। কেননা সদাপ্রভু যিহূদার রাজকুলের বিষয়ে এই কথা কহেন, তুমি আমার কাছে গিলিয়দ ও লিবানোন-শৃঙ্গ; কিন্তু অবশ্য আমি তোমাকে প্রান্তর ও নিবাসীবিহীন নগরসমূহের সমান করিব। আর তোমার বিপরীতে বিনাশক পুরুষগণকে প্রত্যেকের অস্ত্রসহ প্রস্তুত করিব; তাহারা তোমার উৎকৃষ্ট এরসবৃক্ষ সকল ছেদন করিয়া অগ্নিতে নিক্ষেপ করিবে। আর অনেক জাতীয় লোক এই নগরের নিকট দিয়া যাইবে, এবং তাহারা প্রত্যেক জন আপন আপন সঙ্গীকে বলিবে, সদাপ্রভু কি জন্য এই মহানগরের প্রতি এমন ব্যবহার করিয়াছেন? তখন তাহারা উত্তর করিবে, কারণ এই লোকেরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিয়ম ত্যাগ করিয়া অন্য দেবগণের কাছে প্রণিপাত করিত, ও তাহাদের সেবা করিত। তোমরা মৃত ব্যক্তির জন্য রোদন করিও না, তাহার জন্য বিলাপ করিও না; যে ব্যক্তি প্রস্থান করিতেছে, বরং তাহারই জন্য অতিশয় রোদন কর; কেননা সে আর ফিরিয়া আসিবে না, আপন জন্মদেশ আর দেখিবে না। বস্তুতঃ যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যে শল্লুম আপন পিতা যোশিয়ের পদে রাজত্ব করিয়াছিল ও এই স্থান হইতে চলিয়া গিয়াছে, তাহার বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সে এই স্থানে আর ফিরিয়া আসিবে না; কিন্তু যে স্থানে বন্দিরূপে নীত হইয়াছে, সেই স্থানে মরিবে, এ দেশ আর দেখিবে না। ধিক্‌ তাহাকে, যে অধর্ম্ম দ্বারা আপন বাটী, ও অন্যায় দ্বারা আপন উচ্চ কুঠরী নির্ম্মাণ করে, যে বিনা বেতনে আপন প্রতিবাসীকে খাটায়, এবং তাহার শ্রমের ফল তাহাকে দেয় না; যে বলে, ‘আমি আপনার নিমিত্ত এক বৃহৎ বাটী ও প্রশস্ত উচ্চ কুঠরী নির্ম্মাণ করিব,’ এবং সে আপনার নিমিত্ত বাতায়ন-দ্বার কাটে; আর এরস কাষ্ঠ দিয়া ঘর মুড়ান হয়, এবং সিন্দুরবর্ণ রঙ্গ লেপন করা যায়। এরস কাষ্ঠের বিষয়ে শ্রেষ্ঠ হইবার জন্য চেষ্টা করাতে তোমার রাজত্ব কি থাকিবে? তোমার পিতা কি ভোজন পান করিত না, বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান কি করিত না? তাই তাহার মঙ্গল হইল। সে দুঃখী দীনহীনের বিচার করিত, তাই মঙ্গল হইল। সদাপ্রভু কহেন, আমাকে জ্ঞাত হওয়া কি তাহাই নয়? কিন্তু তোমার চক্ষু ও তোমার অন্তঃকরণ কেবল তোমারই লাভ ও নির্দ্দোষের রক্তপাত এবং উপদ্রবের ও দৌরাত্ম্যের অনুষ্ঠান ব্যতিরেকে আর কিছুই লক্ষ্য করে না। অতএব যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহার বিষয়ে লোকেরা ‘হায় আমার ভ্রাতা,’ কিম্বা ‘হায় ভগিনী’ বলিয়া বিলাপ করিবে না, এবং ‘হায় প্রভু’ কিম্বা ‘হায় তাঁহার গৌরব’ বলিয়াও বিলাপ করিবে না। গর্দ্দভের কবরের ন্যায় তাহার কবর হইবে; লোকে তাহাকে টানিয়া যিরূশালেমের দ্বারের বাহিরে ফেলিয়া দিবে। তুমি লিবানোনে উঠ, ক্রন্দন কর; বাশনে উচ্চৈঃস্বর কর; এবং অবারীম হইতে ক্রন্দন কর; কেননা তোমার প্রেমিকেরা সকলে বিনষ্ট হইল। তোমার শান্তির সময়ে আমি তোমার কাছে কথা বলিয়াছিলাম, কিন্তু তুমি বলিয়াছিলে, আমি শুনিব না; তোমার বাল্যকালাবধি এই রীতি দাঁড়াইয়াছে, তুমি আমার রবে অবধান কর নাই। বায়ু তোমার সমস্ত পালককে ভক্ষণ করিবে; তোমার প্রেমিকেরা বন্দি-দশার স্থানে গমন করিবে; বস্তুতঃ তখন তুমি আপনার সমস্ত দুষ্কর্ম্ম প্রযুক্ত লজ্জিতা ও বিষণ্ণা হইবে। হে লিবানোন্‌-বাসিনি! এরস বনে বাসকারিণি! যখন তুমি প্রসবযন্ত্রণার ন্যায় যন্ত্রণা পাইবে, তখন কেমন কাতরোক্তি করিবে। সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, যিহোয়াকীমের পুত্র যিহূদা-রাজ কয়িন আমার দক্ষিণ হস্তস্থিত মোহরের তুল্য হইলেও আমি তোমাকে তথা হইতে ফেলিয়া দিব। আর যাহারা তোমার প্রাণের অন্বেষণ করে, তাহাদের হস্তে, ও যাহাদের হইতে তুমি উদ্বিগ্ন হইতেছ, তাহাদের হস্তে, অর্থাৎ বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের হস্তে ও কল্‌দীয়দের হস্তে তোমাকে সমর্পণ করিব। আর তোমাকে ও তোমার প্রসবিনী মাতাকে তুলিয়া অন্য দেশে নিক্ষেপ করিব, যে দেশে তোমার জন্ম হয় নাই; সেই স্থানে তোমরা মরিবে। কিন্তু যে দেশে ফিরিয়া আসিতে তাহাদের প্রাণ আকাঙ্ক্ষা করে, তথায় তাহারা ফিরিয়া আসিতে পারিবে না। এই কয়িন কি তুচ্ছ ভগ্ন পাত্র? এ কি অপ্রীতিজনক পাত্র? এ ব্যক্তি ও ইহার বংশ কেন বহিষ্কৃত হইয়াছে? তাহাদের অজ্ঞাত দেশে কেন নিক্ষিপ্ত হইয়াছে? হে দেশ, দেশ, দেশ, সদাপ্রভুর বাক্য শুন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এই ব্যক্তির বিষয়ে লিখ, এ নিঃসন্তান, এ পুরুষ জীবনকালে কৃতকার্য্য হইবে না; কারণ ইহার বংশের কোন ব্যক্তি কৃতকার্য্য হইবে না, দায়ূদের সিংহাসনে উপবেশন ও যিহূদার উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না। সদাপ্রভু কহেন, ধিক্‌ সেই পালকদিগকে যাহারা আমার পালের মেষদিগকে নষ্ট ও ছিন্নভিন্ন করে। এই জন্য সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, যে পালকেরা আমার প্রজাগণকে চরায়, তাহাদের বিরুদ্ধে এই কথা কহেন, তোমরা আমার মেষদিগকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছ, তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিয়াছ, তাহাদের তত্ত্বাবধান কর নাই; দেখ, আমি তোমাদের আচরণের দুষ্টতার প্রতিফল তোমাদিগকে দিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর আমি যে সকল দেশে আপন পাল তাড়াইয়া দিয়াছি, তথা হইতে তাহার অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করিব, পুনর্ব্বার তাহাদিগকে খোঁয়াড়ে আনিব, এবং তাহারা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হইবে। আর আমি তাহাদের উপরে এমন পালকগণকে নিযুক্ত করিব, যাহারা তাহাদিগকে চরাইবে; তখন তাহারা আর ভীত কি নিরাশ হইবে না, এবং কেহ নিরুদ্দেশ হইবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি দায়ূদের বংশে এক ধার্ম্মিক পল্লব উৎপন্ন করিব; তিনি রাজা হইয়া রাজত্ব করিবেন, বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিবেন, এবং দেশে ন্যায়বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করিবেন। তাঁহার সময়ে যিহূদা পরিত্রাণ পাইবে, ও ইস্রায়েল নির্ভয়ে বাস করিবে, আর তিনি এই নামে আখ্যাত হইবেন, “সদাপ্রভু আমাদের ধার্ম্মিকতা।” অতএব, সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে লোকেরা আর বলিবে না, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যিনি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে মিসর দেশ হইতে উঠাইয়া আনিয়াছেন, কিন্তু [তাহারা বলিবে], সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যিনি ইস্রায়েলের কুলজাত বংশকে উত্তর দেশ হইতে, এবং যে সকল দেশে আমি তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছিলাম, সেই সকল দেশ হইতে উঠাইয়া আনিয়াছেন, চালাইয়া আনিয়াছেন; আর তাহারা আপন দেশে বাস করিবে। ভাববাদিগণের বিষয়। আমার অন্তরে হৃদয় ভগ্ন হইতেছে, আমার সমস্ত অস্থি বিচল হইতেছে; সদাপ্রভুর হেতু ও তাঁহার পবিত্র বাক্যের হেতু আমি মত্ত লোকের ন্যায়, দ্রাক্ষারসে অভিভূত ব্যক্তির ন্যায় হইয়াছি। কেননা দেশ ব্যভিচারিগণে পরিপূর্ণ; হাঁ, অভিশাপের কারণ দেশ শোক করিতেছ; প্রান্তরস্থ চরাণিস্থান সকল শুষ্ক হইয়াছে; এবং লোকদের ধাবন-পথ মন্দ হইয়াছে, ও তাহাদের পরাক্রম ন্যায়সঙ্গত নয়। কেননা ভাববাদী ও যাজক উভয়ে পামর হইয়াছে; সদাপ্রভু কহেন, আমার গৃহেও আমি তাহাদের দুষ্ক্রিয়া দেখিয়াছি। এ কারণ তাহাদের পক্ষে তাহাদের পথ অন্ধকারময় পিচ্ছিল স্থানের তুল্য হইবে; তাহারা তাড়িত হইয়া তাহার মধ্যে পতিত হইবে; কেননা তাহাদিগকে প্রতিফল দিবার বৎসরে আমি তাহাদের প্রতি অমঙ্গল উপস্থিত করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আমি শমরিয়ার ভাববাদিগণের মধ্যে অসঙ্গত ব্যাপার দেখিয়াছিলাম; তাহারা বালের নামে ভাববাণী বলিত ও আমার প্রজা ইস্রায়েলকে ভ্রান্ত করিত। আর যিরূশালেমের ভাববাদিগণের মধ্যে রোমাঞ্চজনক ব্যাপার দেখিয়াছি; তাহারা ব্যভিচার করে, ও মিথ্যারূপ পথে চলে, এবং কদাচারীদের হস্ত এমন বলবান্‌ করে যে, কেহ আপন কুপথ হইতে ফিরে না; তাহারা সকলে আমার কাছে সদোমের তুল্য, এবং সেখানকার নিবাসীরা ঘমোরার সমান হইয়াছে। এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু সেই ভাববাদিগণের বিষয়ে এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহাদিগকে নাগদানা ভোজন করাইব, বিষবৃক্ষের রস পান করাইব, কেননা পামরতা যিরূশালেমের ভাববাদিগণ হইতে উৎপন্ন হইয়া সমস্ত দেশ ব্যাপিয়াছে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ঐ যে ভাববাদিগণ তোমাদের কাছে ভাববাণী বলে, তাহাদের কথা শুনিও না, তাহারা তোমাদিগকে ভুলায়; তাহারা আপন আপন হৃদয়ের দর্শন বলে, সদাপ্রভুর মুখে শুনিয়া বলে না। যাহারা আমাকে অবজ্ঞা করে, তাহাদের কাছে তাহারা অবিরত বলে, সদাপ্রভু বলিয়াছেন, তোমাদের শান্তি হইবে; এবং যাহারা আপন আপন হৃদয়ের কঠিনতায় চলে, তাহাদের প্রত্যেক জনকে বলে, অমঙ্গল তোমাদের কাছে আসিবে না। বাস্তবিক কে সদাপ্রভুর সভায় দাঁড়াইয়া দেখিয়াছে ও তাঁহার বাক্য শুনিয়াছে? কে আমার বাক্যে কর্ণ দিয়া তাহা শুনিতে পাইয়াছে? দেখ, সদাপ্রভুর ঝটিকা, তাঁহার প্রচণ্ড ক্রোধ, হাঁ, ঘূর্ণ্যমান ঝটিকা নির্গত হইতেছে; তাহা দুষ্টদের মস্তকে লাগিবে। যে পর্য্যন্ত সদাপ্রভু আপন মনের অভিপ্রায় সফল ও সিদ্ধ না করেন, সে পর্য্যন্ত তাঁহার ক্রোধ ফিরিবে না; তোমরা শেষকালে তাহা সম্পূর্ণরূপে বুঝিতে পারিবে। আমি সেই ভাববাদিগণকে প্রেরণ করি নাই, তাহারা আপনারা দৌড়িয়াছে; আমি তাহাদিগকে বলি নাই, তাহারা আপনারা ভাববাণী বলিয়াছে। কিন্তু তাহারা যদি আমার সভায় দাঁড়াইত, তবে আমার প্রজাদিগকে আমার বাক্য শুনাইত, এবং তাহাদের কুপথ হইতে ও তাহাদের ক্রিয়ার দুষ্টতা হইতে তাহাদিগকে ফিরাইত। সদাপ্রভু কহেন, আমি কি নিকটে ঈশ্বর, দূরে কি ঈশ্বর নহি? সদাপ্রভু কহেন, এমন গুপ্ত স্থানে কি কেহ লুকাইতে পারে যে, আমি তাহাকে দেখিতে পাইব না? আমি কি স্বর্গ ও মর্ত্ত্য ব্যাপিয়া থাকি না? ইহা সদাপ্রভু কহেন। ভাববাদীরা যাহা বলিয়াছে, তাহা আমি শুনিয়াছি, তাহারা আমার নামে মিথ্যা ভাববাণী বলে, যথা, আমি স্বপ্ন দেখিয়াছি, স্বপ্ন দেখিয়াছি। যে ভাববাদিগণ মিথ্যা ভাববাণী বলে, যাহারা নিজ অন্তঃকরণের কপটতার ভাববাদী, তাহাদের অন্তঃকরণে ইহা কত কাল থাকিবে? তাহাদের সঙ্কল্প এই, তাহাদের পিতৃপুরুষেরা বালের অনুরাগে যেমন আমাকে ভুলিয়া গিয়াছিল, তদ্রূপ তাহারা আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে আপন আপন স্বপ্নের বৃত্তান্ত কথন দ্বারা আমার প্রজাদিগকে আমার নাম ভুলিয়া যাইতে দিবে। যে ভাববাদী স্বপ্ন দেখিয়াছে, সে স্বপ্নের বৃত্তান্ত বলুক; এবং যে আমার বাক্য পাইয়াছে, সে সত্যরূপে আমার বাক্যই বলুক। সদাপ্রভু কহেন, শস্যের কাছে পোয়াল কি? সদাপ্রভু কহেন, আমার বাক্য কি অগ্নির তুল্য নয়? তাহা কি হাতুড়ির তুল্য নয়, যাহা পাষাণ খণ্ডবিখণ্ড করে? অতএব সদাপ্রভু কহেন, দেখ, যে সকল ভাববাদী আপন আপন প্রতিবাসী হইতে আমার বাক্য হরণ করে, আমি তাহাদের বিপক্ষ। সদাপ্রভু বলেন, দেখ, আমি সেই সকল ভাববাদীর বিপক্ষ, যাহারা আপন আপন জিহ্বা ব্যবহার করিয়া বলে, ‘তিনিই বলেন’। সদাপ্রভু বলেন, দেখ, আমি তাহাদের বিপক্ষ, যাহারা মিথ্যা স্বপ্নের ভাববাণী বলে ও তাহার বৃত্তান্ত বলে, আপনাদের মিথ্যা কথা ও দাম্ভিকতা দ্বারা আমার প্রজাদিগকে ভ্রান্ত করে; কিন্তু আমি তাহাদিগকে পাঠাই নাই, তাহাদিগকে আজ্ঞা দিই নাই; তাহারা এই লোকদের কিছুমাত্র উপকারী হইতে পারে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর যে সময়ে এই লোকেরা কিম্বা কোন ভাববাদী বা যাজক তোমাকে জিজ্ঞাসা করিবে, সদাপ্রভুর ভারবাণী কি? তখন তুমি তাহাদিগকে বলিবে, ভারবাণী কি! সদাপ্রভু বলেন, আমি তোমাদিগকে দূর করিয়া দিব। আর যে কোন ভাববাদী, যাজক বা সামান্য লোক বলিবে, ‘সদাপ্রভুর ভারবাণী,’ তাহাকে ও তাহার কুলকে আমি প্রতিফল দিব। তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন প্রতিবাসীকে ও আপন আপন ভ্রাতাকে এই কথা বলিবে, সদাপ্রভু কি উত্তর দিয়াছেন? আর, সদাপ্রভু কি বলিয়াছেন? কিন্তু ‘সদাপ্রভুর ভারবাণী,’ এই কথার উচ্চারণ আর করিও না; কারণ প্রত্যেক জনের নিজ বাক্যই তাহার পক্ষে ভারবাণী হইবে; কেননা তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের, আমাদের ঈশ্বর বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, বাক্য বিপরীত করিয়াছ। তোমরা ভাববাদীকে বলিও, সদাপ্রভু তোমাকে কি উত্তর দিয়াছেন? আর, সদাপ্রভু কি বলিয়াছেন? কিন্তু ‘সদাপ্রভুর ভারবাণী,’ এই কথা যদি বল, তবে সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তোমরা বলিতেছ, ‘সদাপ্রভুর ভারবাণী,’ কিন্তু আমি তোমাদের কাছে লোক প্রেরণ করিয়া বলিয়াছি, ‘সদাপ্রভুর ভারবাণী’ এ কথা বলিও না। এই জন্য দেখ, আমি তোমাদিগকে একেবারে তুলিয়া লইব এবং তোমাদিগকে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে নগর দিয়াছি, তাহা শুদ্ধ তোমাদিগকে আমার নিকট হইতে দূর করিয়া দিব। আর আমি এমন নিত্যস্থায়ী দুর্নাম ও নিত্যস্থায়ী অপমান তোমাদের উপরে রাখিব, যাহা লোকে ভুলিয়া যাইবে না। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর যিহোয়াকীমের পুত্র যিহূদা-রাজ যিকনিয়কে, যিহূদার অধ্যক্ষগণকে, শিল্পকর ও কর্ম্মকারদিগকে যিরূশালেম হইতে বাবিলে বন্দি করিয়া লইয়া গেলে পর সদাপ্রভু আমাকে [দর্শন] দেখাইলেন; আর দেখ, সদাপ্রভুর মন্দিরের সম্মুখে দুই ডালা ডুমুরফল স্থাপিত। তাহার মধ্যে এক ডালায় আশুপক্ব ডুমুরফলের ন্যায় অতি উত্তম ফল ছিল, আর এক ডালায় অতি মন্দ ফল ছিল, এমন মন্দ যে খাওয়া যায় না। তখন সদাপ্রভু আমাকে বলিলেন যিরমিয়, তুমি কি দেখিতেছ? আমি কহিলাম, ডুমুরফল; উত্তম ফল অতি উত্তম, এবং মন্দ ফল অতি মন্দ, এমন মন্দ যে খাওয়া যায় না। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যিহূদার যে বন্দিগণকে এই স্থান হইতে কল্‌দীয়দের দেশে পাঠাইয়াছি, তাহাদিগকে এই উত্তম ডুমুরফলের সদৃশ করিয়া মঙ্গলার্থে লক্ষ্য করিব। কারণ আমি মঙ্গলার্থে তাহাদের প্রতি দৃষ্টি রাখিব, ও পুনর্ব্বার তাহাদিগকে এই দেশে আনিব; তাহাদিগকে গাঁথিব, উৎপাটন করিব না; রোপন করিব, উন্মূলন করিব না। আর আমি যে সদাপ্রভু, তাহা জানিবার মন তাহাদিগকে দিব; আর তাহারা আমার প্রজা হইবে ও আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব; কেননা তাহারা সর্ব্বান্তঃকরণে আমার প্রতি ফিরিয়া আসিবে। আর যে মন্দ ফল এমন মন্দ যে তাহা খাওয়া যায় না, তাহা যেমন, সত্যই সদাপ্রভু এই কথা বলেন, সেইরূপ আমি যিহূদার রাজা সিদিকিয়কে তাহার অধ্যক্ষগণকে ও যিরূশালেমের, অবশিষ্ট লোকদিগকে—যাহারা এই দেশে রহিয়াছে, তাহাদিগকে, এবং যাহারা মিসর দেশে বাস করিতেছে, তাহাদিগকে—সমর্পণ করিব; আমি অমঙ্গলার্থে তাহাদিগকে পৃথিবীর সমুদয় রাজ্যে ভাসিয়া বেড়াইবার জন্য সমর্পণ করিব; এবং যে সকল স্থানে তাড়না করিব, সেই সকল স্থানে তাহাদিগকে টিটকারি, প্রবাদ, বিদ্রূপ, ও অভিশাপের পাত্র করিব। আর আমি তাহাদিগকে ও তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছি, তথা হইতে তাহারা যে পর্য্যন্ত নিঃশেষে উচ্ছিন্ন না হয়, সে পর্য্যন্ত তাহাদের মধ্যে খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী প্রেরণ করিব। যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের চতুর্থ বৎসরে, অর্থাৎ বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের প্রথম বৎসরে, যিহূদার সমস্ত লোকের বিষয়ে এই বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল; যিরমিয় ভাববাদী যিহূদার সমস্ত লোকের ও যিরূশালেম-নিবাসী সকলের নিকটে তাহা প্রচার করিয়া কহিলেন, আমোনের পুত্র যিহূদা-রাজ যোশিয়ের ত্রয়োদশ বৎসর অবধি অদ্য পর্য্যন্ত, অর্থাৎ এই তেইশ বৎসর কাল সদাপ্রভুর বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইয়াছে, এবং আমি তোমাদিগকে তাহা বলিয়াছি, প্রত্যূষে উঠিয়া বলিয়াছি, কিন্তু তোমরা শুন নাই। আর সদাপ্রভু আপনার সমস্ত দাস ভাববাদিগণকে তোমাদের নিকটে পাঠাইয়াছেন, প্রত্যূষে উঠিয়া পাঠাইয়াছেন, কিন্তু তোমরা শুন নাই, শুনিবার জন্য কর্ণপাতও কর নাই। তাঁহারা বলিয়াছেন, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন কুপথ হইতে ও আপন আপন আচরণের দুষ্টতা হইতে ফির, তাহাতে সদাপ্রভু তোমাদিগকে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছেন, তোমরা তথায় যুগে যুগে চিরকাল বাস করিতে পাইবে। আর অন্য দেবগণের সেবা ও তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিবার জন্য তাহাদের পশ্চাদগামী হইও না, আপনাদের হস্তকৃত বস্তু দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিও না; তাহাতে আমি তোমাদের অমঙ্গল করিব না। কিন্তু, সদাপ্রভু কহেন, তোমরা আমার কথা শুন নাই, এইরূপে আপনাদের হস্তকৃত বস্তু দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিয়া আপনাদের অমঙ্গল ঘটাইতেছ। অতএব বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আমার বাক্য শুন নাই, এই জন্য দেখ, আমি আদেশ পাঠাইয়া উত্তরদিক্‌স্থ সমস্ত গোষ্ঠীকে লইয়া আসিব, সদাপ্রভু কহেন, আমি আমার দাস বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরকে আনিব, ও তাহাদিগকে এই দেশের বিরুদ্ধে, এতন্নিবাসীদিগের বিরুদ্ধে ও চতুর্দ্দিক্‌স্থিত এই সমস্ত জাতির বিরুদ্ধে আনিব; এবং ইহাদিগকে নিঃশেষে বিনষ্ট করিব, এবং বিস্ময়ের ও শিশ শব্দের বিষয় ও চিরস্থায়ী উৎসন্ন স্থান করিব। আর ইহাদের মধ্য হইতে আমোদের রব ও আনন্দের রব, বরের রব, কন্যার রব, যাঁতার শব্দ ও প্রদীপের আলো সংহার করিব। তাহাতে এই সমগ্র দেশ উৎসন্ন স্থান ও বিস্ময়ের বিষয় হইবে; এবং এই জাতিগণ সত্তর বৎসর বাবিল-রাজের দাসত্ব করিবে। সদাপ্রভু আরও কহেন, সত্তর বৎসর সম্পূর্ণ হইলে আমি বাবিল-রাজকে ও সেই জাতিকে তাহাদের অপরাধের সমুচিত প্রতিফল দিব, কল্‌দীয়দের দেশকে [দিব], এবং তাহা চিরস্থায়ী ধ্বংসস্থান করিব। আর সেই দেশের বিরুদ্ধে আমি যাহা যাহা বলিয়াছি, এই পুস্তকে যাহা যাহা লিখিত আছে, যিরমিয় সমস্ত জাতির বিরুদ্ধে যে ভাববাণী বলিয়াছে, আমার সেই সমস্ত বাক্য ঐ দেশের প্রতি সফল করিব। বস্তুতঃ অনেক জাতি ও মহান রাজারা তাহাদিগকে দাসত্ব করাইবে, এবং আমি তাহাদের ক্রিয়ানুরূপ ও হস্তের কার্য্যানুরূপ প্রতিফল তাহাদিগকে দিব। বাস্তবিক সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, আমাকে এই কথা কহিলেন, তুমি আমার হস্ত হইতে এই ক্রোধরূপ দ্রাক্ষারসের পানপাত্র গ্রহণ কর, এবং যে সমস্ত জাতির নিকটে আমি তোমাকে পাঠাই, তাহাদিগকে তাহা পান করাও। তাহারা পান করিবে, টলটলায়মান হইবে, এবং তাহাদের মধ্যে যে খড়্‌গ আমি পাঠাইব, তৎপ্রযুক্ত উন্মত্ত হইবে। তখন আমি সদাপ্রভুর হস্ত হইতে সেই পানপাত্র গ্রহণ করিলাম, এবং সদাপ্রভু যে সমস্ত জাতির কাছে আমাকে পাঠাইলেন, তাহাদিগকে পান করাইলাম। তাহারা এই এই। যিরূশালেম ও যিহূদার নগর সকল এবং তাহার রাজগণ ও অধ্যক্ষগণ—যেন তাহারা উৎসন্ন স্থান এবং বিস্ময়ের, শিশ শব্দের ও অভিশাপের বিষয় হয়; যেমন অদ্য হইতেছে—মিসর রাজ ফরৌণ, তাহার দাসগণ, তাহার অধ্যক্ষগণ ও তাহার সমস্ত প্রজা; এবং সমস্ত মিশ্রিত জাতি, ঊষ দেশের সমস্ত রাজা, ও পলেষ্টীয়দের দেশের সমস্ত রাজা, অস্কিলোন, ঘসা, ইক্রোণ ও অস্‌দোদের অবশিষ্টাংশ; ইদোম, মোয়াব ও অম্মোন-সন্তানগণ; এবং সোরের সমস্ত রাজা, সীদোনের সমস্ত রাজা, ও সমুদ্রপারস্থ উপকূলের রাজগণ, দদান, টেমা, বূষ, ও ছিন্নগুম্ফ সমস্ত লোক, এবং আরবের সমস্ত রাজা, ও প্রান্তরবাসী মিশ্রিত জাতিগণের সমস্ত রাজা; এবং সিম্রীর সমস্ত রাজা, এলমের সমস্ত রাজা, ও মাদীয়দের সমস্ত রাজা; এবং উত্তরদিকের নিকটস্থ ও দূরস্থ সমস্ত রাজা, নির্ব্বিশেষে এই সকলে; ভূলতে যত রহিয়াছে, পৃথিবীর সেই সমস্ত রাজ্য; আর ইহাদের পরে শেশকের রাজা পান করিবে। আর তুমি তাহাদিগকে এই কথা বলিবে, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা পান করিয়া মত্ত হইয়া বমন কর, এবং তোমাদের মধ্যে আমার প্রেরিত খড়্‌গ প্রযুক্ত পতিত হও, আর উঠিও না। আর যদি তাহারা তোমার হস্ত হইতে পানার্থে পাত্রটী গ্রহণ করিতে অসম্মত হয়, তবে তাহাদিগকে বলিবে, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদিগকে অবশ্য পান করিতে হইবে। কেননা দেখ, আমার নাম যাহার উপরে কীর্ত্তিত হইয়াছে, আমি প্রথমতঃ সেই নগরের অমঙ্গল করি; আর তোমরা কি নিতান্তই অদণ্ডিত থাকিবে? তোমরা অদণ্ডিত থাকিবে না; কারণ আমি পৃথিবী-নিবাসীমাত্রের বিরুদ্ধে খড়্‌গ আহ্বান করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। অতএব তুমি তাহাদের বিরুদ্ধে ভাববাণীরূপে এই সমস্ত কথা প্রচার কর, তাহাদিগকে বল, সদাপ্রভু ঊর্দ্ধলোক হইতে হূঙ্কার করিবেন, আপন পবিত্র বাসস্থান হইতে আপন রব শুনাইবেন; তিনি আপন বাথানের বিরুদ্ধে ভারী হূঙ্কার করিবেন; তিনি পৃথিবী-নিবাসীমাত্রের বিপরীতে দ্রাক্ষামর্দ্দকের ন্যায় সিংহনাদ করিবেন। পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত নির্ঘোষ ব্যাপিবে, কেননা জাতিগণের সহিত সদাপ্রভুর বিবাদ আছে; তিনি মর্ত্ত্যমাত্রের বিচার করিবেন; যাহারা দুষ্ট, তাহাদিগকে তিনি খড়্‌গে সমর্পণ করিবেন, ইহা সদাপ্রভু কহেন। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, এক জাতির পরে অন্য জাতির প্রতি অমঙ্গল উপস্থিত হইবে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত হইতে প্রচণ্ড ঘূর্ণ্যবায়ু উঠিবে। তৎকালে সদাপ্রভুর নিহত লোক সকল পৃথিবীর এক প্রান্ত হইতে পৃথিবীর অন্য প্রান্ত পর্য্যন্ত দেখা যাইবে; কেহ তাহাদের নিমিত্ত বিলাপ করিবে না, এবং তাহাদিগকে সংহার করা কি কবর দেওয়া যাইবে না, তাহারা ভূমির উপরে সারের ন্যায় পতিত থাকিবে। মেষপালকগণ, তোমরা হাহাকার ও ক্রন্দন কর; মেষাগ্রগামিগণ, তোমরা ধূলিতে লুণ্ঠিত হও, কেননা তোমাদের হত্যার ও ছিন্নভিন্ন হইবার সময় আসিয়া পড়িয়াছে; আর তোমরা মনোহর পাত্রের ন্যায় পতিত হইবে। মেষপালকদের পলায়ন-স্থান কিম্বা মেষাগ্রগামীদের উত্তরণ-স্থান থাকিবে না। মেষপালকদের ক্রন্দনের শব্দ ও মেষাগ্রগামীদের হাহাকার শুনা যাইতেছে, কেননা সদাপ্রভু তাহাদের চরাণি-স্থান উচ্ছিন্ন করিতেছেন। আর সদাপ্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধ প্রযুক্ত শান্তিযুক্ত বাথান সকল বিনষ্ট হইতেছে। যুবসিংহ যেন আপন গহ্বর ছাড়িয়া আসিয়াছে; বস্তুতঃ উৎপীড়ক [খড়্‌গের] রোষ ও উহাঁর জ্বলন্ত ক্রোধ প্রযুক্ত তাহাদের দেশ বিস্ময়ের স্থান হইল। যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের রাজত্বের আরম্ভে এই বাক্য সদাপ্রভু হইতে উপস্থিত হইল, যথা, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি সদাপ্রভুর গৃহের প্রাঙ্গণে দাঁড়াও, এবং সদাপ্রভুর গৃহে প্রণিপাত করণার্থে আগত যিহূদার সমস্ত নগরবাসীদিগকে যে সকল কথা বলিতে আমি তোমাকে আজ্ঞা করি, সে সমস্ত তাহাদিগকে বল, এক কথাও চাপিয়া রাখিও না। হয় ত, তাহারা শুনিবে, ও প্রত্যেকে আপন আপন কুপথ হইতে ফিরিবে; তাহা হইলে তাহাদের আচরণের দুষ্টতা প্রযুক্ত আমি তাহাদের যে অমঙ্গল করিতে মনস্থ করিয়াছি, তাহা হইতে ক্ষান্ত হইব। তুমি তাহাদিগকে বলিবে, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা যদি আমার কথা না শুন; আমি তোমাদের সম্মুখে যে ব্যবস্থা দিয়াছি, সেই পথে না চল; আমিই তোমাদের কাছে যাহাদিগকে পাঠাইয়া আসিতেছি, কিন্তু প্রত্যূষে উঠিয়া পাঠাইলেও যাহাদের কথা তোমরা শুন নাই, আমার দাস সেই ভাববাদীদের বাক্য না শুন; তবে আমি এই গৃহ শীলোর সমান করিব, এবং এই নগর পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির কাছে অভিশাপের বিষয় করিব। যখন যিরমিয় সদাপ্রভুর গৃহে এই সকল কথা কহিলেন, তখন যাজকগণ, ভাববাদিগণ ও সমস্ত প্রজালোক তাহা শুনিল। আর যিরমিয় সমস্ত লোকের কাছে সদাপ্রভুর আজ্ঞাপিত সকল কথা বলিয়া সাঙ্গ করিলে পর যাজকগণ, ভাববাদিগণ ও সমস্ত প্রজা লোক তাঁহাকে ধরিয়া কহিল, তুমি মরিবেই মরিবে; তুমি কেন সদাপ্রভুর নাম করিয়া এই ভাববাণী বলিয়াছ যে, এই গৃহ শীলোর সমান হইবে, এবং নগর উৎসন্ন, নিবাসীবিহীন হইবে? আর সমস্ত লোক সদাপ্রভুর গৃহে যিরমিয়ের কাছে একত্র হইল। তখন যিহূদার অধ্যক্ষগণ এ কথা শুনিয়া রাজবাটী হইতে সদাপ্রভুর গৃহে উঠিয়া আসিলেন, এবং সদাপ্রভুর গৃহের নূতন দ্বারের প্রবেশ-স্থানে বসিলেন। পরে যাজকগণ ও ভাববাদিগণ অধ্যক্ষদিগকে ও সমস্ত প্রজালোককে কহিল, এই ব্যক্তি প্রাণদণ্ডের যোগ্য, কেননা এ এই নগরের বিপরীতে ভাববাণী বলিয়াছে, তোমরা ত স্বকর্ণে তাহা শুনিয়াছ। তখন যিরমিয় সমস্ত অধ্যক্ষকে ও সমস্ত প্রজালোককে কহিলেন, তোমরা যে সকল কথা শুনিলে, এই গৃহের ও এই নগরের বিপরীতে সেই সমস্ত ভাববাণী বলিতে সদাপ্রভুই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। অতএব এখন তোমরা আপন আপন পথ ও ক্রিয়া শুদ্ধ কর, আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে অবধান কর; তাহা হইলে সদাপ্রভু তোমাদের বিরুদ্ধে যে অমঙ্গলের কথা কহিয়াছেন, তাহা করিতে ক্ষান্ত হইবেন। আর আমি, দেখ, আমি তোমাদের হস্তগত; তোমাদের দৃষ্টিতে যাহা ভাল ও নায্য, তাহাই আমার প্রতি কর। কেবল নিশ্চয় জানিও, যদি তোমরা আমাকে বধ কর, তবে আপনাদের উপরে, এই নগরের উপরে ও এতন্নিবাসীদের উপরে নির্দ্দোষের রক্তপাতের অপরাধ বর্ত্তাইবে, কেননা সত্যই ঐ সমস্ত কথা তোমাদের কর্ণগোচরে বলিবার জন্য সদাপ্রভু আমাকে তোমাদের নিকটে প্রেরণ করিয়াছেন। তখন অধ্যক্ষগণ ও সমস্ত প্রজালোক যাজকদিগকে ও ভাববাদিগণকে কহিল, এ ব্যক্তি প্রাণদণ্ডের যোগ্য নয়, কেননা ইনি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে আমাদের কাছে কথা বলিয়াছেন। তখন দেশের প্রাচীনবর্গের মধ্যে কয়েক জন উঠিয়া লোকদের সমস্ত সমাজকে কহিলেন, যিহূদা-রাজ হিষ্কিয়ের সময়ে মোরেষ্টীয় মীখা ভাববাণী বলিতেন; তিনি যিহূদার সমস্ত লোককে বলিয়াছিলেন, ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সিয়োন ক্ষেত্রের ন্যায় কর্ষিত হইবে, যিরূশালেম কাঁথড়ার ঢিবী হইয়া যাইবে; এবং সেই গৃহের পর্ব্বত বনস্থ উচ্চস্থলীর সমান হইবে।’ বল দেখি, যিহূদা-রাজ হিষ্কিয় ও সমস্ত যিহূদা কি তাহাকে বধ করিয়াছিলেন? তিনি কি সদাপ্রভু হইতে ভীত হইয়া সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন না? তাহা করাতে সদাপ্রভু তাঁহাদের বিরুদ্ধে যে অমঙ্গলের কথা বলিয়াছিলেন, তাহা হইতে ক্ষান্ত হইলেন। আমরা ত আপন আপন প্রাণের বিরুদ্ধে ভারী অমঙ্গল করিতেছি। অধিকন্তু আর এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি সদাপ্রভুর নামে ভাববাণী বলিতেন, তিনি কিরিয়ৎ-যিয়ারীমস্থ শময়িয়ের পুত্র ঊরিয়; তিনি যিরমিয়ের সমস্ত বাক্যের ন্যায় এই নগরের ও এই দেশের বিরুদ্ধে ভাববাণী বলিয়াছিলেন। আর যখন যিহোয়াকীম রাজা, তাঁহার সমস্ত যুদ্ধবীর ও সমস্ত অধ্যক্ষ সেই ব্যক্তির কথা শুনিতে পাইলেন, তখন রাজা তাঁহাকে বধ করিতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু ঊরিয় তাহা শুনিতে পাইয়া ভীত হইয়া মিসরে পলাইয়া গেলেন। তখন যিহোয়াকীম রাজা অক্‌বোরের পুত্র ইল্‌নাথনকে এবং তাহার সহিত অন্য কয়েক জন লোককে মিসরে প্রেরণ করিলেন; আর তাহারা ঊরিয়কে মিসর হইতে আনিয়া যিহোয়াকীম রাজার কাছে উপস্থিত করিল; রাজা তাঁহাকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিয়া সামান্য লোকের কবর-স্থানে তাঁহার শব নিক্ষেপ করিলেন। যাহা হউক, শাফনের পুত্র অহীকামের হস্ত যিরমিয়ের সপক্ষ থাকায় তিনি নিহত হইবার জন্য লোকদের হস্তে সমর্পিত হইলেন না। যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের রাজত্বের আরম্ভে সদাপ্রভু হইতে এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে উপস্থিত হইল; সদাপ্রভু আমাকে এই কথা কহিলেন, তুমি কতিপয় বন্ধনী ও যোঁয়লি প্রস্তুত করিয়া আপন স্কন্ধে রাখ; আর যে দূতগণ যিরূশালেমে যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের নিকটে আসিয়াছে, তাহাদের দ্বারা ইদোমের রাজার, মোয়াবের রাজার, অম্মোন-সন্তানগণের রাজার, সোরের রাজার ও সীদোনের রাজার নিকটে তাহা পাঠাও। আর আপন আপন কর্ত্তাকে বলিবার জন্য তাহাদিগকে এই আদেশ দেও, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন প্রভুকে এই কথা বলিবে, আমিই আপনার মহাপরাক্রম ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা পৃথিবী, পৃথিবী-নিবাসী মনুষ্য ও পশু নির্ম্মাণ করিয়াছি, এবং আমি যাহাকে তাহা দেওয়া বিহিত বুঝি, তাহাকে তাহা দিয়া থাকি। সম্প্রতি আমি এই সকল দেশ আপন দাস বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরের হস্তে দিয়াছি, এবং তাহার দাসত্ব করণার্থে মাঠের পশুগণও তাহাকে দিয়াছি। আর, সমস্ত জাতি তাহার, তাহার পুত্রের ও তাহার পৌত্রের দাস হইবে; পরে তাহার দেশের সময়ও উপস্থিত হইবে, তখন অনেক জাতি ও মহান্‌ রাজগণ তাহাকেও দাসত্ব করাইবে। আর যে জাতি ও যে রাজ্য সেই বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরের দাস না হইবে, ও বাবিল-রাজের যোঁয়ালির নীচে আপন গ্রীবা না রাখিবে, সদাপ্রভু কহেন, আমি খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা সেই জাতিকে প্রতিফল দিব, যে পর্য্যন্ত উহার হস্ত দ্বারা তাহাদিগকে সংহার না করি। আর তোমাদের কর্ত্তব্য এই, তোমাদের যে ভাববাদী, মন্ত্রজ্ঞ, স্বপ্নদর্শক, গণক, ও মায়াবী সকল তোমাদিগকে বলে, তোমরা বাবিল-রাজের দাস হইবে না, তাহাদের কথায় কর্ণপাত করিও না; কেননা তাহারা তোমাদের কাছে মিথ্যা ভাববাণী বলে, যেন তোমরা স্বদেশ হইতে দূরীকৃত, এবং আমা দ্বারা তাড়িত হইয়া বিনষ্ট হও। কিন্তু যে জাতি বাবিল-রাজের যোঁয়ালির নীচে আপন গ্রীবা রাখিবে, ও তাহার দাস হইবে, সদাপ্রভু কহেন, আমি সেই জাতিকে স্বদেশে স্থির থাকিতে দিব; তাহারা তথায় কৃষিকার্য্য করিবে, ও তথায় বাস করিবে। পরে আমি সেই সমস্ত বাক্যানুসারে যিহূদা-রাজ সিদিকিয়কে এই কথা বলিলাম, আপনারা আপন আপন গ্রীবা বাবিল-রাজের যোঁয়ালির নীচে রাখিয়া তাঁহার ও তাঁহার লোকদের দাস হউন, তাহাতে বাঁচিবেন। যে জাতি বাবিল-রাজের দাস না হইবে, তাহার বিরুদ্ধে সদাপ্রভু যাহা বলিয়াছেন, তদনুসারে আপনারা অর্থাৎ আপনি ও আপনার প্রজাগণ খড়্‌গে, দুর্ভিক্ষে ও মহামারীতে কেন মরিবেন? যে ভাববাদীরা আপনাদিগকে বলে, আপনারা বাবিল-রাজের দাস হইবেন না, তাহাদের বাক্যে কর্ণপাত করিবেন না, কেননা তাহারা আপনাদের কাছে মিথ্যা ভাববাণী বলে। কারণ সদাপ্রভু বলেন, আমি তাহাদিগকে পাঠাই নাই, কিন্তু তাহারা মিথ্যা করিয়া আমার নামে ভাববাণী বলে; ইহার ফল এই, যাহারা তোমাদের কাছে ভাববাণী বলে, সেই ভাববাদিগণ ও তোমরা উভয়ে আমা দ্বারা তাড়িত হইয়া বিনষ্ট হইবে। পরে আমি যাজকদিগকে ও এই সমস্ত প্রজালোককে কহিলাম, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদের যে ভাববাদিগণ তোমাদের কাছে এই ভাববাণী বলে, দেখ, সদাপ্রভুর গৃহের পাত্র সকল বাবিল হইতে সম্প্রতি শীঘ্র ফিরাইয়া আনা যাইবে, তোমরা তাহাদের বাক্যে কর্ণপাত করিও না, কেননা তাহারা তোমাদের কাছে মিথ্যা ভাববাণী বলে। তোমরা তাহাদের কথায় কর্ণপাত করিও না; বাবিল-রাজের দাস হও, তাহাতে বাঁচিবে; এই নগর কেন উৎসন্ন হইবে? কিন্তু তাহারা যদি ভাববাদী হয়, ও তাহাদের কাছে বাস্তবিক সদাপ্রভুর বাক্য থাকে, তবে সদাপ্রভুর গৃহে, যিহূদার রাজবাটীতে ও যিরূশালেমে যে সকল পাত্র অবশিষ্ট আছে, তাহা যেন বাবিলে না যায়, এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করুক। কারণ দুই স্তম্ভ, সমুদ্রপাত্র ও পীঠ সকল, এবং যে সমস্ত পাত্র এই নগরে অবশিষ্ট আছে, —অর্থাৎ বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর যিহোয়াকীমের পুত্র যিহূদা-রাজ যিকনিয়কে এবং যিহূদার ও যিরূশালেমের সমস্ত প্রধানবর্গকে বন্দি করিয়া যিরূশালেম হইতে বাবিলে লইয়া যাইবার সময়ে যে সকল পাত্র লইয়া যান নাই—সেই সমস্তের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হাঁ, সদাপ্রভুর গৃহে, যিহূদার রাজবাটীতে ও যিরূশালেমে অবশিষ্ট সেই পাত্র সকলের বিষয়ে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, সে সমস্ত বাবিলে নীত হইবে, এবং যে পর্য্যন্ত আমি তাহাদের তত্ত্বানুসন্ধান না করিব, সে পর্য্যন্ত সেই স্থানে থাকিবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন; পরে আমি সে সমস্ত এই স্থানে ফিরাইয়া আনিব। ঐ বৎসরে, যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের রাজত্বের আরম্ভে, চতুর্থ বৎসরের পঞ্চম মাসে, গিবিয়োন-নিবাসী অসূরের পুত্র হনানিয় ভাববাদী সদাপ্রভুর গৃহে যাজকগণের ও সমস্ত প্রজালোকের সাক্ষাতে আমাকে এই কথা কহিল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, আমি বাবিল-রাজের যোঁয়ালি ভগ্ন করিয়াছি। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর এই স্থান হইতে সদাপ্রভুর গৃহের যে সকল পাত্র বাবিলে লইয়া গিয়াছে, সে সকল আমি দুই বৎসরের মধ্যে এই স্থানে ফিরাইয়া আনিব। আর যিহোয়াকীমের পুত্র যিহূদা-রাজ যিকনিয়কে ও যিহূদার সমস্ত বন্দি, যাহারা বাবিলে গিয়াছে, তাহাদিগকে এই স্থানে ফিরাইয়া আনিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন; কেননা আমি বাবিল-রাজের যোঁয়ালি ভগ্ন করিব। তখন যিরমিয় ভাববাদী যাজকদের সাক্ষাতে, এবং সদাপ্রভুর গৃহে দণ্ডায়মান প্রজাসমূহের সাক্ষাতে হনানিয় ভাববাদীর সহিত কথা বলিলেন, যিরমিয় ভাববাদী কহিলেন, আমেন; সদাপ্রভু তাহাই করুন; সদাপ্রভুর গৃহের পাত্র সকল ও বন্দি লোকসমূহকে বাবিল হইতে এই স্থানে ফিরাইয়া আনিবার বিষয়ে তুমি যে যে ভাববাণী বলিলে, সদাপ্রভু তোমার সেই সকল বাক্য সিদ্ধ করুন। কিন্তু আমি তোমার কর্ণগোচরে ও সমস্ত প্রজালোকের কর্ণগোচরে একটী কথা বলি, শ্রবণ কর। আমার ও তোমার পূর্ব্বে সে কালের যে ভাববাদিগণ ছিল, তাহারা অনেক দেশ ও মহৎ মহৎ রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অমঙ্গল ও মহামারী বিষয়ক ভাববাণী বলিয়াছিল। যে ভাববাদী শান্তির ভাববাণী বলে, সেই ভাববাদীর বাক্য সফল হইলেই জানা যায় যে, সদাপ্রভু সত্যই সেই ভাববাদীকে প্রেরণ করিয়াছেন। তখন হনানিয় ভাববাদী যিরমিয় ভাববাদীর স্কন্ধ হইতে সেই যোঁয়ালি লইয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিল। আর হনানিয় সমস্ত প্রজা লোকের সাক্ষাতে কহিল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দুই বৎসরের মধ্যে আমি বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরের যোঁয়ালি এইরূপে ভাঙ্গিয়া সমুদয় জাতির স্কন্ধ হইতে দূর করিব। পরে যিরমিয় ভাববাদী চলিয়া গেলেন। হনানিয় যিরমিয় ভাববাদীর স্কন্ধ হইতে যোঁয়ালি লইয়া ভাঙ্গিলে পর যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি গিয়া হনানিয়কে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি কাষ্ঠের যোঁয়ালি ভাঙ্গিলে বটে, কিন্তু তাহার পরিবর্ত্তে লৌহের যোঁয়ালি প্রস্তুত করিবে। কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, এই সকল জাতি যেন বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরের দাস হয়, তজ্জন্য আমি তাহাদের স্কন্ধে লৌহের যোঁয়ালি দিলাম; তাহারা তাহার দাস হইবে; আর আমি তাহাকে মাঠের পশুগণও দিলাম। তখন যিরমিয় ভাববাদী হনানিয় ভাববাদীকে কহিলেন, হে হনানিয়, শুন; সদাপ্রভু তোমাকে প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু তুমি এই লোকদিগকে মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করাইতেছ। অতএব সদাপ্রভু এই কথা বলেন, দেখ, আমি তোমাকে ভূতল হইতে দূর করিয়া দিব; তুমি এই বৎসরেই মরিবে, কেননা তুমি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিপথগমনের কথা বলিয়াছ। পরে হনানিয় ভাববাদী সেই বৎসরের সপ্তম মাসে প্রাণত্যাগ করিল। যিকনিয় রাজা, মাতারাণী ও নপুংসক সকল এবং যিহূদার ও যিরূশালেমের অধ্যক্ষগণ, শিল্পকরেরা ও কর্ম্মকারেরা যিরূশালেম হইতে প্রস্থান করিলে পর, যিরমিয় ভাববাদী নির্ব্বাসিত লোকদের অবশিষ্ট প্রাচীনবর্গের নিকটে, এবং নবূখদ্‌নিৎসর কর্ত্তৃক যিরূশালেম হইতে বন্দিরূপে বাবিলে নীত যাজকগণের, ভাববাদিগণের ও সমস্ত লোকের নিকটে শাফনের পুত্র ইলিয়াসা ও হিল্কিয়ের পুত্র গমরিয়ের হাতে যিরূশালেম হইতে একখানি পত্র পাঠাইয়া দেন। যিহূদা-রাজ সিদিকিয় বাবিলে, বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরের নিকটে, ইহাঁদিগকে পাঠাইয়াছিলেন। সেই পত্রে এই কথা ছিল। বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, সমস্ত নির্ব্বাসিত লোকের প্রতি—আমি যে সকল লোককে যিরূশালেম হইতে বাবিলে বন্দি করিয়া আনিয়াছি, তাহাদের প্রতি—আদেশ এই; —তোমরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া বাস কর, উপবন রোপণ করিয়া ফল ভোগ কর; বিবাহ করিয়া পুত্রকন্যার জন্ম দেও, এবং আপন আপন পুত্রদিগের বিবাহ দেও, ও আপন আপন কন্যাদিগের বিবাহ দেও, তাহারা সন্তানসন্ততি উৎপন্ন করুক; এই প্রকারে তোমরা হ্রাস না পাইয়া সেখানে বর্দ্ধিত হও। আর আমি তোমাদিগকে যে নগরে বন্দি করিয়া আনিয়াছি, তথাকার শান্তি চেষ্টা কর, ও সেখানকার নিমিত্ত সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা কর; কেননা সেখানকার শান্তিতে তোমাদের শান্তি হইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমাদের মধ্যে উপস্থিত তোমাদের ভাববাদিগণ ও মন্ত্রজ্ঞ লোকেরা তোমাদিগকে না ভুলাউক; এবং তোমরা যে সকল স্বপ্ন ঘটাইয়া থাক, সেই স্বপ্ন সকলে মনোযোগ করিও না। কেননা তাহারা তোমাদের কাছে মিথ্যা করিয়া আমার নামে ভাববাণী বলে; আমি তাহাদিগকে প্রেরণ করি নাই, ইহা সদাপ্রভু কহেন। বস্তুতঃ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, বাবিলের সম্বন্ধে সত্তর বৎসর সম্পূর্ণ হইলে আমি তোমাদের তত্ত্বাবধান করিব, এবং তোমাদের পক্ষে আমার মঙ্গলবাক্য সিদ্ধ করিব, তোমাদিগকে পুনর্ব্বার এই স্থানে ফিরাইয়া আনিব। কেননা, সদাপ্রভু বলেন, আমি তোমাদের পক্ষে যে সকল সঙ্কল্প করিতেছি, তাহা আমিই জানি; সে সকল মঙ্গলের সঙ্কল্প, অমঙ্গলের নয়, তোমাদিগকে শেষ ফল ও আশাসিদ্ধি দিবার সঙ্কল্প! আর তোমরা আমাকে আহ্বান করিবে, এবং গিয়া আমার কাছে প্রার্থনা করিবে, আর আমি তোমাদের কথায় কর্ণপাত করিব। আর তোমরা আমার অন্বেষণ করিয়া আমাকে পাইবে; কারণ তোমরা সর্ব্বান্তঃকরণে আমার অন্বেষণ করিবে; আর আমি তোমাদিগকে আমার উদ্দেশ পাইতে দিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন; এবং আমি তোমাদের বন্দি-দশা ফিরাইব, এবং যে সকল জাতির মধ্যে ও যে সকল স্থানে তোমাদিগকে তাড়াইয়া দিয়াছি, সেই সকল স্থান হইতে তোমাদিগকে সংগ্রহ করিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন; এবং যে স্থান হইতে তোমাদিগকে বন্দি করিয়া আনিয়াছি, সেই স্থানে তোমাদিগকে পুনর্ব্বার লইয়া যাইব। তোমরা ত বলিয়াছ, সদাপ্রভু বাবিলে আমাদের নিমিত্ত ভাববাদিগণকে উৎপন্ন করিয়াছেন। দায়ূদের সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজার বিষয়ে ও এই নগরবাসী সমস্ত লোকের বিষয়ে, তোমাদের যে ভ্রাতৃগণ তোমাদের সহিত বন্দি-দশার স্থানে প্রস্থান করে নাই, সেই সকলের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহাদের উপরে খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী প্রেরণ করিব; এবং ঘৃণাজনক যে ডুমুরফল এমন মন্দ যে খাওয়া যায় না, তাহার ন্যায় তাহাদিগকে করিব। হাঁ, আমি খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী লইয়া তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে ধাবমান হইব, এবং পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যে তাহাদিগকে ভাসিয়া বেড়াইবার জন্য সমর্পণ করিব; এবং যে সকল জাতির মধ্যে তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিয়াছি, সেই সমস্ত জাতির নিকটে তাহাদিগকে অভিশাপের, বিস্ময়ের, শিশ শব্দের ও টিট্‌কারির পাত্র করিব। কারণ, সদাপ্রভু কহেন, আমি প্রত্যূষে উঠিয়া তাহাদের নিকটে আপন দাস ভাববাদিগণকে পাঠাইলেও তাহারা আমার বাক্যে কর্ণপাত করে নাই; তোমরা শুনিতে চাও নাই, ইহা সদাপ্রভু বলেন। অতএব তোমরা যত নির্ব্বাসিত লোক আমাদ্বারা যিরূশালেম হইতে বাবিলে প্রেরিত হইয়াছ, তোমরা সকলে সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণ কর। কোলায়ের পুত্র আহাব ও মাসেয়ের পুত্র সিদিকিয়, যাহারা মিথ্যা করিয়া আমার নামে তোমাদের কাছে ভাববাণী বলে, তাহাদের বিষয়ে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি তাহাদিগকে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরের হস্তে সমর্পণ করিব; সে তোমাদের দৃষ্টিগোচরে তাহাদিগকে বধ করিবে। আর বাবিলে যিহূদার যত নির্ব্বাসিত লোক আছে, তাহাদের মধ্যে ঐ দুই ব্যক্তির উপলক্ষে এই অভিশাপের কথা প্রচলিত হইবে, ‘বাবিল-রাজ যে সিদিকিয়কে ও আহাবকে অগ্নিতে ভাজিয়াছিলেন, তাহাদের ন্যায় সদাপ্রভু তোমাকে করুন।’ কেননা তাহারা ইস্রায়েলের মধ্যে মূঢ়তার কার্য্য করিয়াছে, আপন আপন প্রতিবাসীর স্ত্রীর সহিত ব্যভিচার করিয়াছে, এবং মিথ্যা করিয়া আমার নামে, আমি যাহা আজ্ঞা করি নাই, এমন কথা বলিয়াছে; আমিই জানি, আমিই সাক্ষী, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর তুমি নিহিলামীয় শময়িয়ের বিষয়ে এই কথা বলিবে, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তুমি যিরূশালেমস্থ সমস্ত লোকের কাছে ও মাসেয়ের পুত্র সফনিয় যাকজ এবং সমস্ত যাজকের কাছে আপনার নামে এই পত্র পাঠাইয়াছ, যথা, ‘সদাপ্রভু যিহোয়াদা যাজকের পরিবর্ত্তে তোমাকে যাজকপদে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন তোমরা সদাপ্রভুর গৃহে অধ্যক্ষ হও; যে কোন ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হইয়া আপনাকে ভাববাদী বলিয়া দেখায়, তাহাকে হাঁড়িকাঠে ও বেড়ীতে বদ্ধ করা তোমার উচিত। অতএব অনাথোতীয় যে যিরমিয় তোমাদের কাছে আপনাকে ভাববাদী বলিয়া দেখায়, তাহাকে তুমি কেন তিরস্কার কর নাই? না করাতেই সে বাবিলে আমাদের নিকটে একখান পত্র পাঠাইয়াছে, বলিয়াছে, ‘বিলম্ব হইবে, তোমরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া বাস কর, উপবন রোপন করিয়া ফল ভোগ কর।’ সফনিয় যাজক যিরমিয় ভাববাদীর কর্ণগোচরে সেই পত্র পাঠ করিলেন। পরে যিরমিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তুমি সমস্ত নির্ব্বাসিত লোকের কাছে এই কথা বলিয়া পাঠাও, সদাপ্রভু নিহিলামীয় শময়িয়ের বিষয়ে এই কথা কহেন, আমি শময়িয়কে প্রেরণ না করিলেও সে তোমাদের কাছে ভাববাণী বলিয়া মিথ্যা কথায় তোমাদের বিশ্বাস জন্মাইয়াছে। তজ্জন্য সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি নিহিলামীয় শময়িয়কে ও তাহার বংশকে দণ্ড দিব; তাহার কোন সন্তান এই জাতির মধ্যে বাস করিবে না; আর আমি আপন আপন প্রজাদের যে মঙ্গল করিব, তাহা সে দেখিতে পাইবে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন; কারণ সে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিপথগমনের কথা কহিয়াছে। সদাপ্রভু হইতে এই বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, আমি তোমার কাছে যে সকল কথা বলিয়াছি, সে সমস্ত একখানি পুস্তকে লিখিয়া রাখ। কেননা, সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের ও যিহূদার বন্দি-দশা ফিরাইব; আর আমি তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছি, সেই দেশে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিব, এবং তাহারা তাহা অধিকার করিবে। ইস্রায়েল ও যিহূদার বিষয়ে সদাপ্রভু যে সকল বাক্য বলিলেন, তাহা এই। সদাপ্রভু এই কথা কহেন; আমরা ভয়ের, কম্পনের শব্দ শুনিয়াছি, শান্তির নয়। তোমরা একবার জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ, পুরুষের কি প্রসববেদনা হয়? প্রসবকালে যেমন স্ত্রীলোকের, তেমনি আমি প্রত্যেক পুরুষের কটিদেশে হস্ত ও সকলের মুখ বিষাদে ম্লান কেন দেখিতেছি? হায়! সেই দিন মহৎ, তাহার তুল্য দিন আর নাই; এ যাকোবের সঙ্কটকাল, কিন্তু ইহা হইতে সে নিস্তার পাইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি সেই দিন তোমার গ্রীবা হইতে উহার যোঁয়ালি ভগ্ন করিব, তোমার বন্ধন সকল ছেদন করিব, এবং বিদেশিগণ তাহাকে আর দাসত্ব করাইবে না। কিন্তু তাহারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর, ও আপনাদের রাজা দায়ূদের দাসত্ব করিবে, আমি তাহাদের জন্য তাঁহাকেই উৎপন্ন করিব। অতএব, হে আমার দাস যাকোব, ভয় করিও না, ইহা সদাপ্রভু কহেন; হে ইস্রায়েল, নিরাশ হইও না; কেননা দেখ, আমি দূর হইতে তোমাকে ও বন্দিদশার দেশ হইতে তোমার বংশকে নিস্তার করিব; যাকোব ফিরিয়া আসিয়া নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত থাকিবে, কেহ তাহাকে ভয় দেখাইবে না। কেননা তোমার পরিত্রাণার্থে আমিই তোমার সহবর্ত্তী, ইহা সদাপ্রভু কহেন; কারণ আমি যাহাদের মধ্যে তোমাকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছি, সেই সমস্ত জাতিকে নিঃশেষে সংহার করিব; তোমাকে নিঃশেষে সংহার করিব না, কিন্তু বিচারানুরূপ শাস্তি দিব, কোন মতে অদণ্ডিত রাখিব না। কারণ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমার ভঙ্গ অপ্রতিকার্য্য ও তোমার ক্ষত ব্যথাজনক। তোমার পক্ষ সমর্থন করিবার কেহই নাই; তোমার ব্রণ ভাল করিবার ঔষধ নাই, তোমার পটিও নাই। তোমার প্রেমকারিগণ সকলে তোমাকে ভুলিয়া গিয়াছে, তাহারা তোমার অন্বেষণ করে না; কারণ আমি তোমাকে শত্রুর আঘাতের ন্যায় আঘাত করিয়াছি, নির্দ্দয়ের ন্যায় শাস্তি দিয়াছি; কেননা তোমার অপরাধ বহুল, তোমার পাপ প্রবল। তোমার ভঙ্গ প্রযুক্ত কেন ক্রন্দন কর? তোমার বেদনা অপ্রতিকার্য্য; তোমার অপরাধ বহুল, তোমার পাপ প্রবল, এই জন্য আমি তোমার প্রতি এই সকল করিয়াছি। অতএব যাহারা তোমাকে গ্রাস করে, তাহারা সকলে গ্রাসিত হইবে; তোমার বিপক্ষগণ সকলেই বন্দি-দশার স্থানে যাইবে; এবং যাহারা তোমার সম্পত্তি লুট করে, তাহারা লুটিত হইবে; ও যাহারা তোমার দ্রব্য হরণ করে, সেই সকলের দ্রব্য আমি হরণ করাইব। কারণ আমি তোমার স্বাস্থ্য ফিরাইয়া আনিব, ও তোমার ক্ষত সকল ভাল করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, কেননা তাহারা বলে, এ দূরীকৃতা, এ সেই সিয়োন, যাহার অন্বেষণ কেহ করে না। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি যাকোবের তাম্বু সকলের বন্দি-দশা ফিরাইব, ও তাহার আবাস সকলের প্রতি করুণা করিব; তাহাতে নগর আপন উপপর্ব্বতের উপরে নির্ম্মিত হইবে, ও রাজপুরীতে রীতিমত মানুষের বসতি হইবে। আর সেই স্থানের মধ্য হইতে স্তবগান ও আনন্দকারীদের ধ্বনি নির্গত হইবে; আর আমি লোকদের বৃদ্ধি করিব, তাহারা হ্রাস পাইবে না; আমি তাহাদিগকে গৌরবান্বিত করিব, তাহারা আর লঘু থাকিবে না। আর তাহাদের সন্তানসন্ততি পূর্ব্বমত হইবে, তাহাদের মণ্ডলী আমার সম্মুখে স্থিরীকৃত হইবে; এবং যাহারা তাহাদের প্রতি উপদ্রব করে, সেই সকলকে আমি দণ্ড দিব। তাহাদের অধিপতি তাহাদেরই মধ্যে এক জন হইবেন, ও তাহাদের মধ্যে উৎপন্ন এক ব্যক্তি তাহাদের শাসনকর্ত্তা হইবেন; আর আমি তাঁহাকে আপনার নিকটস্থ করিব, তিনি আমার নিকটে আসিবেন; কেননা তিনি কে, যিনি আমার নিকটে আসিতে সাহস পাইয়াছেন? ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর তোমরা আমার প্রজা হইবে, এবং আমি তোমাদের ঈশ্বর হইব। দেখ, সদাপ্রভুর ঝটিকা, তাঁহার প্রচণ্ড ক্রোধ, হাঁ, হুহু শব্দকারী ঝটিকা নির্গত হইতেছে; তাহা দুষ্টদের মস্তকে লাগিবে। যে পর্য্যন্ত সদাপ্রভু আপন মনের অভিপ্রায় সফল ও সিদ্ধ না করেন, সে পর্য্যন্ত তাঁহার প্রজ্বলিত ক্রোধ ফিরিবে না; তোমরা শেষকালে তাহা বুঝিতে পারিবে। সদাপ্রভু কহেন, সেই সময়ে আমি ইস্রায়েলের সমুদয় গোষ্ঠীর ঈশ্বর হইব, এবং তাহারা আমার প্রজা হইবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, খড়্‌গ হইতে রক্ষিত লোকেরা প্রান্তরে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইল; সে ইস্রায়েল, আমি তাহাকে বিশ্রাম দিতে গমন করিলাম। সদাপ্রভু দূর হইতে আমাকে দর্শন দিয়া বলিলেন, আমি ত চিরপ্রেমে তোমাকে প্রেম করিয়া আসিতেছি, এই জন্য আমি তোমার প্রতি চিরস্থায়ী দয়া করিলাম। হে কুমারি ইস্রায়েল, আমি তোমাকে পুনর্ব্বার গাঁথিয়া তুলিব, তুমি গাঁথা যাইবে, তুমি পুনর্ব্বার আপন তবলে বিভূষিতা হইবে, এবং আনন্দকারীদের শ্রেণীতে নৃত্য করিতে করিতে গমন করিবে। তুমি শমরিয়ার পর্ব্বতমালায় পুনর্ব্বার দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিবে; রোপকেরা দ্রাক্ষালতা রোপন করিবে, ও তাহার ফল ভোগ করিবে। কেননা এমন দিন উপস্থিত হইবে, যে দিন প্রহরিগণ পর্ব্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশে ঘোষণা করিয়া বলিবে, উঠ, চল, আমরা সিয়োনে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে গমন করি। অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা যাকোবের নিমিত্ত আনন্দরব কর, জাতিগণের অগ্রগণ্যের উদ্দেশে উচ্চধ্বনি কর, ঘোষণা কর, প্রশংসা কর, আর বল, হে সদাপ্রভু, তোমার প্রজাদিগকে, ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে, পরিত্রাণ কর। দেখ, আমি তাহাদিগকে উত্তর দেশ হইতে আনিব, পৃথিবীর প্রান্তভাগ হইতে সংগ্রহ করিব; তাহারা অন্ধ, খঞ্জ, গর্ভবতী ও প্রসূতী শুদ্ধ মহাসমাজ হইয়া এই স্থানে ফিরিয়া আসিবে। তাহারা রোদন করিতে করিতে আসিবে, এবং বিনয় সহকারে আমা দ্বারা চালিত হইবে; আমি তাহাদিগকে জলস্রোতের নিকট দিয়া সরল পথে গমন করাইব, সে পথে তাহারা উছোট খাইবে না, যেহেতু আমি ইস্রায়েলের পিতা, এবং ইফ্রয়িম আমার প্রথমজাত পুত্র। হে জাতি সকল, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন, এবং দূরস্থ উপকূল সমূহে তাহা প্রচার কর; আর বল, যিনি ইস্রায়েলকে ছড়াইয়াছেন, তিনিই তাহাকে সংগ্রহ করিবেন, আর রক্ষক যেমন নিজ পালকে রক্ষা করে, তেমনি রক্ষা করিবেন। কারণ সদাপ্রভু যাকোবকে উদ্ধার করিয়াছেন, তদপেক্ষা অধিক বলবানের হস্ত হইতে তাহাকে মুক্ত করিয়াছেন। তাহারা আসিয়া উচ্চ সিয়োনে আনন্দগান করিবে, এবং স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইয়া সদাপ্রভুর মঙ্গলদানের নিকটে, গোমের, দ্রাক্ষারসের, তৈলের, মেষবৎসদের ও গোবৎসদের জন্য আসিবে, এবং তাহাদের প্রাণ সুসিক্ত উদ্যানের ন্যায় হইবে; তাহারা আর অবসন্ন হইবে না। তখন কন্যারা নাচিয়া আনন্দ করিবে, এবং যুবকগণ ও বৃদ্ধেরা একত্র হইয়া আনন্দ করিবে; কারণ আমি তাহাদের শোক আমোদে পরিণত করিব; তাহাদিগকে সান্ত্বনা করিব, ও দুঃখ ঘুচাইয়া আহ্লাদিত করিব। আর আমি পুষ্টিকর দ্রব্য দ্বারা যাজকদের প্রাণ আপ্যায়িত করিব, এবং আমার মঙ্গলদান দ্বারা আমার প্রজাগণ তৃপ্ত হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, রামায় শব্দ শুনা যাইতেছে, হাহাকার ও তীব্র রোদন! রাহেল আপন সন্তানদের জন্য রোদন করিতেছে, সে আপন সন্তানদের বিষয়ে প্রবোধ কথা মানে না, কেননা তাহারা নাই। সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তোমার রোদনের শব্দ ও চক্ষের জল নিবৃত্ত কর; কেননা তোমার কার্য্যের পুরস্কার দত্ত হইবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন, আর তাহারা শত্রুর দেশ হইতে ফিরিয়া আসিবে। তোমার শেষকালের বিষয়ে প্রত্যাশা আছে, ইহা সদাপ্রভু বলেন; হাঁ, তোমার সন্তানগণ আপনাদের অঞ্চলে ফিরিয়া আসিবে। আমি ইফ্রয়িমের স্বর স্পষ্ট শুনিতে পাইয়াছি; সে খেদোক্তি করিয়া বলিয়াছে, ‘তুমি আমাকে শাস্তি দিয়াছ, আমি শাস্তি ভোগ করিয়াছি, যাহাকে বশ করা হয় নাই, এমন গোবৎসের ন্যায়; আমাকে ফিরাও, তাহাতে আমি ফিরিব, কেননা তুমিই আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু। আমি ফিরিলে পর অনুতাপ করিলাম, ও শিক্ষা পাইলে পর ঊরুদেশে আঘাত করিলাম; আমি লজ্জিত ও নিতান্ত বিষণ্ণ হইলাম, কেননা নিজ যৌবনকালের অপযশ বহন করিলাম।’ ইফ্রয়িম কি আমার প্রিয় পুত্র? সে কি আনন্দদায়ী বালক? হাঁ, যতবার আমি তাহার বিরুদ্ধে কথা কহি, ততবার পুনরায় তাহাকে সাগ্রহে স্মরণ করি; এই কারণ তাহার জন্য আমার অন্তর ব্যাকুল হয়; অবশ্য আমি তাহার প্রতি করুণা করিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন। তুমি স্থানে স্থানে আপনার জন্য পথের চিহ্ন রাখ, স্তম্ভ স্থাপন কর, যে পথে গমন করিয়াছিলে, সেই রাজপথে মনোনিবেশ কর; হে ইস্রায়েল-কুমারি, ফিরিয়া আইস; তোমার এই সকল নগরে ফিরিয়া আইস। অয়ি বিপথগামিনি কন্যে, কতকাল ভ্রমণ করিবে? সদাপ্রভু ত পৃথিবীতে এক নূতন নিয়ম সৃষ্টি করিলেন; নারী পুরুষকে বেষ্টন করিবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, আমি যখন এই লোকদের বন্দি-দশা ফিরাইব, তখন তাহারা যিহূদা দেশে ও তথাকার সকল নগরে পুনর্ব্বার এই কথা বলিবে, ‘হে ধর্ম্মনিবাস, হে পবিত্র-পর্ব্বত, সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্ব্বাদ করুন।’ যিহূদা ও তাহার সমস্ত নগর, এবং কৃষকগণ ও যাহারা পালের সহিত ইতস্ততঃ ভ্রমণ করে, তাহারা তথায় একত্র বাস করিবে। কারণ আমি আপ্যায়িত করিয়াছি ক্লান্ত প্রাণকে, এবং প্রত্যেক অবসন্ন প্রাণকে তৃপ্ত করিয়াছি। তখন আমি জাগ্রৎ হইয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর আমার নিদ্রা আমার সুখদায়ক ছিল। সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি ইস্রায়েলকুল ও যিহূদা-কুলরূপ ক্ষেত্রে মনুষ্যরূপ বীজ ও পশুরূপ বীজ বপন করিব; আর যেমন আমি তাহাদের উন্মূলন, উৎপাটন, নিপাত, বিনাশ ও অমঙ্গল করিতে জাগরূক ছিলাম, তেমনি তাহাদিগকে গাঁথিতে ও রোপন করিতেও জাগরূক হইব, ইহা সদাপ্রভু বলেন। তৎকালে লোকে আর বলিবে না, পিতারা অম্ল দ্রাক্ষাফল খাইয়াছিলেন, তাই সন্তানদের দাঁত টকিয়াছে। কিন্তু প্রত্যেক জন আপন আপন অপরাধ প্রযুক্ত মরিবে; যে ব্যক্তি অম্ল দ্রাক্ষাফল খাইবে তাহারই দাঁত টকিয়া যাইবে। সদাপ্রভু বলেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি ইস্রায়েল-কুলের ও যিহূদা-কুলের সহিত এক নূতন নিয়ম স্থির করিব। মিসর দেশ হইতে তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিবার জন্য তাহাদের হস্তগ্রহণ করিবার দিনে আমি তাহাদের সহিত যে নিয়ম স্থির করিয়াছিলাম, সেই নিয়মানুসারে নয়; আমি তাহাদের স্বামী হইলেও তাহারা আমার সেই নিয়ম লঙ্ঘন করিল, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু সেই সকল দিনের পর আমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত এই নিয়ম স্থির করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আমি তাহাদের অন্তরে আমার ব্যবস্থা দিব, ও তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব; এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে। আর, ‘তোমরা সদাপ্রভুকে জ্ঞাত হও,’ এই কথা বলিয়া তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীকে ও আপন আপন ভ্রাতাকে আর শিক্ষা দিবে না; কারণ তাহারা ক্ষুদ্র ও মহান সকলেই আমাকে জ্ঞাত হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন; কেননা আমি তাহাদের অপরাধ ক্ষমা করিব, এবং তাহাদের পাপ আর স্মরণে আনিব না। যিনি দিনমানে জ্যোতির জন্য সূর্য্যকে, এবং রাত্রিকালে জ্যোতির জন্য চন্দ্রের ও নক্ষত্রগণের বিধিকলাপ দেন, যিনি সমুদ্রকে ব্যস্ত করিলে তাহার তরঙ্গ কল্লোলধ্বনি করে, সেই সদাপ্রভু এই কথা কহেন; ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু’ তাঁহার নাম; যদি এই সকল বিধি আমার সম্মুখ হইতে বিচলিত হয়, —ইহা সদাপ্রভু বলেন, —তবে আমার সম্মুখে নিত্যস্থায়ী জাতিরূপে ইস্রায়েল-বংশের অবস্থিতিও শেষ হইবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যদি ঊর্দ্ধে আকাশমণ্ডল পরিমাণ করা যায়, নিম্নে পৃথিবীর মূল যদি অনুসন্ধান করিয়া পাওয়া যায়, তবে আমিও তাহাদের কৃত সকল ক্রিয়া প্রযুক্ত ইস্রায়েলের সমস্ত বংশকে দূর করিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন। সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে হননেলের দুর্গ অবধি কোণের দ্বার পর্য্যন্ত নগরটী সদাপ্রভুর উদ্দেশে নির্ম্মিত হইবে; এবং তথা হইতে মানরজ্জু বরাবর সম্মুখপথে গারেব উপপর্ব্বতের উপর দিয়া টানা যাইবে, ও ঘুরিয়া গোয়াতে উপস্থিত হইবে। আর শবের ও ভস্মের সমুদয় তলভূমি ও কিদ্রোণ স্রোত পর্য্যন্ত সকল ক্ষেত্র, পূর্ব্বদিক্‌স্থ অশ্বদ্বারের কোণ পর্য্যন্ত, সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হইবে; তাহা কোন কালেও আর উন্মূলিত বা নিপাতিত হইবে না। যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের দশম বৎসরে, অর্থাৎ নবূখদ্‌রিৎসরের অষ্টাদশ বৎসরে, সদাপ্রভু হইতে যে বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল, তাহার বৃত্তান্ত। সেই সময়ে বাবিল-রাজের সৈন্যসামন্ত যিরূশালেম অবরোধ করিতেছিল, এবং যিরমিয় ভাববাদী যিহূদার রাজবাটীস্থিত রক্ষীদের প্রাঙ্গণে বদ্ধ ছিলেন; যেহেতু যিহূদা-রাজ সিদিকিয় তাঁহাকে অবরুদ্ধ করিয়াছিলেন, বলিয়াছিলেন, তুমি কেন ভাববাণী বলিয়া কহিতেছ, ‘সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই নগর বাবিল-রাজের হস্তে সমর্পণ করিব, এবং সে ইহা হস্তগত করিবে; আর যিহূদা-রাজ সিদিকিয় কল্‌দীয়দের হস্ত হইতে পার পাইবে না, কিন্তু বাবিল-রাজের হস্তে নিশ্চয় সমর্পিত হইবে, এবং সম্মুখাসম্মুখি হইয়া তাহার সহিত কথা কহিবে, ও স্বচক্ষে তাহার চক্ষু দেখিবে; আর সে সিদিকিয়কে বাবিলে লইয়া যাইবে; এবং আমি যে পর্য্যন্ত তাহার তত্ত্বাবধান না করিব, তাবৎ সে সেই স্থানে থাকিবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন; তোমরা কল্‌দীয়দের সহিত সংগ্রাম করিয়াও কৃতকার্য্য হইবে না’? যিরমিয় কহিলেন, সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইয়াছিল, দেখ, তোমার পিতৃব্য শল্লুমের পুত্র হনমেল তোমার নিকটে আসিয়া এই কথা কহিবে, অনাথোতে আমার যে ক্ষেত্র আছে, তাহা তুমি আপনার জন্য ক্রয় কর, কেননা ক্রয় দ্বারা তাহা মুক্ত করিবার অধিকার তোমার আছে। পরে সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে আমার পিতৃব্যের পুত্র হনমেল রক্ষীদের প্রাঙ্গণে আমার নিকটে আসিয়া আমাকে কহিল, বিনয় করি, বিন্যামীন প্রদেশস্থ অনাথোতে আমার যে ক্ষেত্র আছে, তাহা তুমি ক্রয় কর; কেননা দায়াধিকার তোমার, এবং মুক্ত করিবার অধিকার তোমার; তুমি আপনার জন্য তাহা ক্রয় কর। তখন আমি বুঝিলাম, ইহা সদাপ্রভুর বাক্য। পরে আমি আপন পিতৃব্যের পুত্র হনমেলের নিকটে অনাথোতে স্থিত সেই ক্ষেত্র ক্রয় করিলাম, ও তাহার মূল্য সপ্তদশ শেকল রৌপ্য তাহাকে তৌল করিয়া দিলাম। আর আমি ক্রয়পত্রে স্বাক্ষর করিলাম, মুদ্রাঙ্ক করিলাম, ও সাক্ষী রাখিলাম, এবং তাহাকে সেই রৌপ্য নিক্তিতে তৌল করিয়া দিলাম। পরে বিধি ও নিয়ম সম্বলিত ক্রয়পত্রের দুই কেতা, অর্থাৎ মুদ্রাঙ্কিত এক পত্র ও খোলা এক পত্র লইলাম। পরে আমার জ্ঞাতি হনমেলের সাক্ষাতে, এবং ক্রয়পত্রে স্বাক্ষরকারী সাক্ষীদের সাক্ষাতে, রক্ষীদের প্রাঙ্গণে উপবিষ্ট সমস্ত যিহূদীর সাক্ষাতে আমি সেই ক্রয়পত্র মহসেয়ের পৌত্র নেরিয়ের পুত্র বারূকের হস্তে সমর্পণ করিলাম। আর তাহাদের সাক্ষাতে বারূককে এই আজ্ঞা করিলাম, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তুমি এই মুদ্রাঙ্কিত ও খোলা দুইখানা ক্রয়পত্র লইয়া এক মৃত্তিকার পাত্রে রাখ, যেন অনেক দিন থাকে। কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, বাটীর, ক্ষেত্রের ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের ক্রয় বিক্রয় এই দেশে আবার চলিবে। নেরিয়ের পুত্র বারূককে সেই ক্রয়পত্র দিলে পর আমি সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করিলাম, হা, প্রভু সদাপ্রভু! দেখ, তুমিই আপন মহাপরাক্রম ও বিস্তারিত বাহু দ্বারা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্ম্মাণ করিয়াছ; তোমার অসাধ্য কিছুই নাই। তুমি সহস্র [পুরুষ] পর্য্যন্ত দয়াকারী; আর পিতৃপুরুষদের অপরাধের প্রতিফল তাহাদের পশ্চাদ্বর্ত্তী সন্তানদের ক্রোড়ে দিয়া থাক; তুমি মহান ও পরাক্রান্ত ঈশ্বর, বাহিনীগণের সদাপ্রভু তোমার নাম। তুমি মন্ত্রণায় মহান ও ক্রিয়ায় শক্তিমান; প্রত্যেক জনকে আপন আপন পথানুসারে ও আপন আপন ক্রিয়ানুসারে সমুচিত ফল দিবার জন্য মনুষ্য-সন্তানদের সমস্ত পথের প্রতি তোমার চক্ষু উন্মীলিত রহিয়াছে। তুমি মিসর দেশে নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ প্রদর্শন করিয়াছিলে, অদ্য পর্য্যন্তও ইস্রায়েল ও অন্যান্য লোকদের মধ্যে করিয়া আসিতেছ; আর আপনার জন্য কীর্ত্তি সাধন করিয়াছ, অদ্যও করিতেছ। তুমি চিহ্ন, অদ্ভুত লক্ষণ, বলবান হস্ত, বিস্তারিত বাহু ও ভয়ঙ্কর মহাকর্ম্ম দ্বারা আপন প্রজা ইস্রায়েলকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়াছিলে। আর এই যে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ দিতে তাহাদের পিতৃপুরুষদের নিকটে শপথ করিয়াছিলে ইহা তাহাদিগকে দিয়াছিলে; এবং তাহারা আসিয়া ইহা অধিকার করিয়াছিল; কিন্তু তাহারা তোমার রবে অবধান করে নাই, তোমার ব্যবস্থা-পথেও চলে নাই; তুমি যাহা পালন করিতে আজ্ঞা করিয়াছিলে, তাহার কিছুই পালন করে নাই, এই জন্য তুমি তাহাদের উপরে এই সমস্ত অমঙ্গল ঘটাইয়াছ। ঐ সকল জাঙ্গাল দেখ, উহারা জয় করণার্থে নগরের কাছে আসিয়াছে; এবং খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা ইহার বিপরীতে যুদ্ধকারী কল্‌দীয়দের হস্তে নগর দত্ত হইয়াছে; তুমি যাহা বলিয়াছ, তাহা সফল হইয়াছে; আর দেখ, এই সকল তুমি দেখিতেছ। আর, হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি আমাকে বলিয়াছ, তুমি রৌপ্য দিয়া ক্ষেত্র ক্রয় কর, ও সাক্ষী রাখ, কিন্তু এই নগর কল্‌দীয়দের হস্তে দেওয়া হইল। পরে যিরমিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, দেখ, আমিই সদাপ্রভু সমুদয় মর্ত্ত্যের ঈশ্বর; আমার অসাধ্য কি কিছু আছে? অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি কল্‌দীয়দের হস্তে ও বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের হস্তে এই নগর সমর্পণ করিব, তাহাতে সে তাহা হস্তগত করিবে। আর যে কল্‌দীয়েরা এই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছে, তাহারা প্রবেশ করিয়া এই নগরে আগুন লাগাইবে; এবং আমাকে অসন্তুষ্ট করণার্থে যে সকল গৃহের ছাদে লোকেরা বালের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইত, ও অন্য দেবগণের উদ্দেশে পানীয় নৈবেদ্য ঢালিয়া দিত, সেই সকল গৃহশুদ্ধ এই নগর আগুনে পোড়াইয়া দিবে। কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ ও যিহূদা-সন্তানগণ বাল্যকালাবধি, আমার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, কেবল তাহাই করিয়া আসিতেছে; বাস্তবিক ইস্রায়েল-সন্তানগণ আপনাদের হস্তকৃত বস্তু দ্বারা আমাকে কেবল অসন্তুষ্ট করিয়াছে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কারণ এই নগর নির্ম্মিত হইবার দিন অবধি অদ্য পর্য্যন্ত ইহা আমার ক্রোধের ও কোপের কারণ হইয়া আসিতেছে; তৎপ্রযুক্ত ইহা আমার সম্মুখ হইতে দূরীকৃত হইবার যোগ্য হইয়াছে। কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ ও যিহূদা-সন্তানগণ, অর্থাৎ তাহারা, তাহাদের রাজগণ, অধ্যক্ষগণ, যাজকগণ, ভাববাদিগণ, যিহূদার লোকেরা ও যিরূশালেম-নিবাসিগণ আমাকে অসন্তুষ্ট করণার্থে নানা প্রকার দুষ্ক্রিয়া করিয়াছে। তাহারা আমার প্রতি পৃষ্ঠ ফিরাইয়াছে, মুখ নয়; আমি তাহাদিগকে শিক্ষা দিলে, প্রত্যূষে উঠিয়া শিক্ষা দিলেও, তাহারা উপদেশ গ্রহণার্থে কর্ণপাত করে নাই। কিন্তু যে গৃহের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, তাহা অশুচি করিতে তাহার মধ্যে তাহাদের ঘৃণার্হ বস্তু সকল স্থাপন করিয়াছে। আর তাহারা মোলকের উদ্দেশে আপন আপন পুত্রকন্যাদিগকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাইবার জন্য হিন্নোম-সন্তানের উপত্যকায় বালের উচ্চস্থলী সকল নির্ম্মাণ করিয়াছে, আমি তাহা আজ্ঞা করি নাই; তাহা আমার মনেও উদয় হয় নাই যে, তাহারা এই ঘৃণার্হ কার্য্য করে, যেন যিহূদাকে পাপ করায়। অতএব এখন, তোমরা যে নগরের বিষয়ে বলিয়া থাক, ইহা খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা বাবিল-রাজের হস্তগত হইল, এই নগরের বিষয়ে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন; দেখ, আমি নিজ ক্রোধ, কোপ ও প্রচণ্ড রোষে তাহাদিগকে যে সকল দেশে ছিন্নভিন্ন করিয়াছি, সেই সকল দেশ হইতে তাহাদিগকে সংগ্রহ করিব, এবং পুনর্ব্বার এই স্থানে আনিব ও নির্ভয়ে বাস করাইব। আর তাহারা আমার প্রজা হইবে, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব। আর আমি তাহাদের ও তাহাদের পরে তাহাদের সন্তানদের মঙ্গলের নিমিত্ত তাহাদিগকে এক চিত্ত ও এক পথ দিব, যেন তাহারা চিরকাল আমাকে ভয় করে। আমি তাহাদের সহিত এই নিত্যস্থায়ী নিয়ম স্থির করিব যে, তাহাদের প্রতি কখনও বিমুখ হইব না, তাহাদের মঙ্গল করিব, এবং তাহারা যেন আমাকে পরিত্যাগ না করে, এই জন্য আমার প্রতি ভয় তাহাদের অন্তঃকরণে স্থাপন করিব। আমি তাহাদের মঙ্গলার্থে তাহাদের বিষয়ে আনন্দ করিব, এবং সত্যরূপে সর্ব্বান্তঃকরণের ও সমস্ত প্রাণের সহিত তাহাদিগকে এই দেশে রোপন করিব। কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যেমন এই লোকদের উপরে এই সমস্ত মহৎ অমঙ্গল আনিয়াছি, তেমনি তাহাদের যে সমস্ত মঙ্গল প্রতিজ্ঞা করিয়াছি, সেই সমস্তও আনিব। আর এই যে দেশের বিষয়ে তোমরা বলিতেছ, ‘ইহা নরশূন্য ও পশুশূন্য ধ্বংসস্থান হইয়াছে, কল্‌দীয়দের হস্তগত হইয়াছে, ইহার মধ্যে আবার ক্ষেত্র ক্রয় করা যাইবে। বিন্যামীন প্রদেশে, যিরূশালেমের চারিদিকের অঞ্চলে, যিহূদার সকল নগরে, পার্ব্বত্য অঞ্চলের সকল নগরে, নিম্নভূমির সকল নগরে ও দক্ষিণের সকল নগরে লোকেরা রৌপ্য দিয়া ক্ষেত্র ক্রয় করিবে, ক্রয়পত্রে লিখিয়া দিবে, মুদ্রাঙ্ক করিবে, ও তাহার সাক্ষী রাখিবে; কেননা আমি তাহাদের বন্দি দশা ফিরাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। যে সময়ে যিরমিয় পূর্ব্ববৎ রক্ষীদের প্রাঙ্গণে রুদ্ধ ছিলেন, তৎকালে সদাপ্রভুর বাক্য দ্বিতীয়বার তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইল, যথা, সদাপ্রভু, যিনি এই কার্য্য সাধন করেন, যিনি ইহা সুস্থির করিবার জন্য নিরূপণ করেন, যাঁহার নাম সদাপ্রভু, তিনি এই কথা কহেন; তুমি আমাকে আহ্বান কর, আর আমি তোমাকে উত্তর দিব, এবং এমন মহৎ ও দুরূহ নানা বিষয় তোমাকে জানাইব, যাহা তুমি জান না। কারণ এই নগরের যে সকল বাটী ও যিহূদার রাজগণের যে সকল বাটী জাঙ্গাল ও খড়্‌গ হইতে রক্ষার জন্য উৎপাটিত হইয়াছে, সেই সকলের বিষয়ে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, লোকেরা কল্‌দীয়দের সহিত যুদ্ধ করিতে আইসে, কিন্তু ঐ সকল বাটী সেই মনুষ্যদের শবে পরিপূর্ণ হইবে, যাহাদিগকে আমি নিজ ক্রোধে ও নিজ প্রচণ্ড কোপে আঘাত করিয়াছি, এবং যাহাদের সমস্ত দুষ্টতা প্রযুক্ত এই নগর হইতে আপন মুখ লুকাইয়াছি। দেখ, আমি এই নগরের ক্ষত বাঁধিয়া ইহার চিকিৎসা করিব, তাহাদিগকে সুস্থ করিব, ও তাহাদের কাছে প্রচুর শান্তি ও সত্য প্রকাশ করিব। আর আমি যিহূদার ও ইস্রায়েলের বন্দি-দশা ফিরাইব, এবং পূর্ব্বকালের ন্যায় পুনর্ব্বার তাহাদিগকে গাঁথিয়া তুলিব। আর তাহারা যে সকল অপরাধ করিয়া আমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে, তাহা হইতে আমি তাহাদিগকে শুচি করিব; এবং তাহারা যে সকল অপরাধ করিয়া আমার বিরুদ্ধে পাপ ও অধর্ম্মাচরণ করিয়াছে, সে সকল আমি ক্ষমা করিব। আর পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির সম্মুখে এই নগর আমার পক্ষে আনন্দের কীর্ত্তি, প্রশংসা ও শোভাস্বরূপ হইবে; আমি তাহাদের যে সমস্ত মঙ্গল করিব, তাহা তাহারা শুনিবে, এবং আমি নগরের যে সমস্ত মঙ্গল ও শান্তি বিধান করিব, তৎপ্রযুক্ত তাহারা থরথর করিয়া কাঁপিবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা এই যে স্থানকে ধ্বংসিত, নরশূন্য ও পশুশূন্য বলিয়া থাক, হাঁ, যিহূদার যে নগরসমূহ ও যিরূশালেমের যে পথ সকল উৎসন্ন, নরশূন্য, নিবাসীবর্জ্জিত ও পশুবিহীন হইয়াছে, এই স্থানে পুনর্ব্বার আমোদের রব ও আনন্দের রব, বরের রব ও কন্যার রব শুনা যাইবে; এবং তাহাদেরও রব শুনা যাইবে, যাহারা বলে, ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভুর প্রশংসা কর, কেননা সদাপ্রভু মঙ্গলস্বরূপ, তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী,’ আর যাহারা সদাপ্রভুর গৃহে স্তবগানরূপ উপহার আনয়ন করে। কেননা পূর্ব্বকালের ন্যায় আমি এই দেশের বন্দি-দশা ফিরাইব, ইহা সদাপ্রভু বলেন। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এই নরশূন্য ও পশুশূন্য ধ্বংসস্থানে এবং ইহার সমস্ত নগরে আবার রাখালদের বাথান হইবে, তাহারা আপনাদের পাল শয়ন করাইবে। পার্ব্বত্য অঞ্চলের সকল নগরে, নিম্নভূমির সকল নগরে, দক্ষিণের সকল নগরে, বিন্যামীন দেশে ও যিরূশালেমের চারিদিকের অঞ্চলে, এবং যিহূদার সকল নগরে, মেষগণনাকারী লোকের হস্তের নীচে দিয়া মেষপালগণ পুনরায় চলিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যখন আমি সেই মঙ্গলের কথা সফল করিব, যাহা আমি ইস্রায়েল-কুলের ও যিহূদা-কুলের সম্বন্ধে বলিয়াছি। সেই সকল দিনে ও সেই সময়ে আমি দায়ূদের বংশে ধার্ম্মিকতার এক পল্লবকে উৎপন্ন করিব; তিনি দেশে ন্যায়বিচার ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করিবেন। সেই সকল দিনে যিহূদা পরিত্রাণ পাইবে, যিরূশালেম নির্ভয়ে বাস করিবে, আর সে এই নামে আখ্যাত হইবে, ‘সদাপ্রভু আমাদের ধার্ম্মিকতা’। কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েল-কুলের সিংহাসনে উপবিষ্ট হইতে দায়ূদের সম্পর্কীয় পুরুষের অভাব হইবে না; আর নিত্য আমার সম্মুখে হোম উৎসর্গ, ভক্ষ্য-নৈবেদ্য দাহ ও বলিদান করিতে লেবীয় যাজকদের সম্পর্কীয় লোকের অভাব হইবে না। পরে যিরমিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর বাক্য উপস্থিত হইল, যথা, সদাপ্রভু কহেন, তোমরা যদি দিবস সম্বন্ধীয় আমার নিয়ম কিম্বা রাত্রি সম্বন্ধীয় আমার নিয়ম এরূপ ভঙ্গ করিতে পার যে, যথাসময়ে দিবস কি রাত্রি না হয়, তবে আমার দাস দায়ূদের সহিত আমার যে নিয়ম আছে, তাহাও ভঙ্গ করা যাইবে, তাহার সিংহাসনে বসিতে তাহার বংশজাত লোকের অভাব হইবে; এবং আমার পরিচারক লেবীয় যাজকদের সহিত কৃত আমার নিয়মও ভঙ্গ করা হইবে। আকাশমণ্ডলের বাহিনী যেমন গণনা করা যায় না, ও সমুদ্রের বালি যেমন পরিমাণ করা যায় না, তেমনি আমি আপন দাস দায়ূদের বংশকে ও আমার পরিচারক লেবীয়দিগকে বৃদ্ধি করিব। আবার যিরমিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, এই লোকেরা কি বলিয়াছে, তাহা কি তুমি টের পাও নাই? তাহারা বলিয়াছে, সদাপ্রভু যে দুই গোষ্ঠীকে মনোনীত করিয়াছিলেন, তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন; এইরূপে তাহারা আমার প্রজাবৃন্দকে তুচ্ছজ্ঞান করে, তাহাদের সম্মুখে তাহারা আর জাতি বলিয়া গণ্য হয় না। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যদি দিবস ও রাত্রি সম্বন্ধীয় আমার নিয়ম না থাকে, যদি আমি আকাশের ও পৃথিবীর বিধি সকল নিরূপণ না করিয়া থাকি, তাহা হইলেই আমি যাকোবের ও আপন দাস দায়ূদের বংশকে অগ্রাহ্য করিয়া অব্রাহামের, ইসহাকের ও যাকোবের বংশের শাসনকর্ত্তা করিবার জন্য তাহার বংশ হইতে লোক গ্রহণ করিব না; সত্যই আমি তাহাদের বন্দি-দশা ফিরাইব ও তাহাদের প্রতি করুণা করিব। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর, তাঁহার সমস্ত সৈন্য ও তাঁহার হস্তের কর্ত্তৃত্বাধীন ভূখণ্ডের সমস্ত রাজ্য, এবং সকল জাতি যৎকালে যিরূশালেম ও তাহার সমস্ত নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছিল, তৎকালে যিরমিয়ের নিকটে সদাপ্রভু হইতে এই বাক্য উপস্থিত হইল, সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তুমি যাও, যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের সহিত আলাপ করিয়া তাহাকে এই কথা বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ আমি বাবিল-রাজের হস্তে এই নগর সমর্পণ করিব, আর সে তাহা আগুনে পোড়াইয়া দিবে। তুমিও তাহার হস্ত হইতে উত্তীর্ণ হইবে না, নিশ্চয়ই ধরা পড়িবে, ও তাহার হস্তে সমর্পিত হইবে; এবং তোমার চক্ষু বাবিল-রাজের চক্ষু দেখিবে, ও সে সম্মুখাসম্মুখি হইয়া তোমার সঙ্গে কথা কহিবে, আর তুমি বাবিলে গমন করিবে। তথাপি, হে যিহূদা-রাজ সিদিকিয়, সদাপ্রভুর বাক্য শুন; সদাপ্রভু তোমার বিষয়ে এই কথা কহেন, তুমি খড়্‌গ দ্বারা মরিবে না; তুমি শান্তিতে মরিবে, এবং তোমার পিতৃলোকদের জন্য, তোমার পূর্ব্বগত রাজাদের জন্য, যেমন দাহ হইয়াছিল, তেমনি লোকে তোমার জন্যও দাহ করিবে, এবং ‘হায় প্রভু’ বলিয়া তোমার জন্য বিলাপ করিবে; কেননা সদাপ্রভু কহেন, আমি এই কথা কহিলাম। পরে যিরমিয় ভাববাদী যিরূশালেমে যিহূদা-রাজ সিদিকিয়কে ঐ সকল কথা কহিলেন; তৎকালে বাবিল-রাজের সৈন্য যিরূশালেমের বিরুদ্ধে, ও যিহূদার অবশিষ্ট সমস্ত নগরের বিরুদ্ধে, লাখীশের বিরুদ্ধে ও অসেকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতেছিল; বাস্তবিক যিহূদা দেশস্থ নগরের মধ্যে প্রাচীরবেষ্টিত সেই দুইটীমাত্র নগর অবশিষ্ট ছিল। সিদিকিয় রাজা যিরূশালেমস্থ সমস্ত লোকের সহিত তাহাদের কাছে মুক্তি ঘোষণার জন্য নিয়ম স্থির করিলে পর সদাপ্রভু হইতে যে বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল, তাহার বৃত্তান্ত। [স্থির হইয়াছিল যে,] প্রত্যেক জন আপন আপন ইব্রীয় দাসকে কি ইব্রীয়া দাসীকে মুক্ত করিয়া বিদায় করিবে, কেহ তাহাদিগকে অর্থাৎ আপনার যিহূদী ভ্রাতাকে দাসত্ব করাইবে না। আর, সমস্ত অধ্যক্ষ ও সমস্ত লোক সম্মত হইয়াছিল; তাহারা এই নিয়মে বদ্ধ হইয়াছিল যে, প্রত্যেক জন আপন আপন দাস দাসীকে মুক্ত করিয়া বিদায় করিবে, আর দাসত্ব করাইবে না; তাহারা সম্মত হইয়া তাহাদিগকে মুক্ত করিয়া বিদায় করিয়াছিল। কিন্তু তৎপরে তাহারা ফিরিয়া বসিল, যাহাদিগকে মুক্ত করিয়া বিদায় করিয়াছিল, সেই দাস দাসীদিগকে আবার আনাইয়া আপনাদের দাস দাসী করিবার জন্য বশীভূত করিল। এই জন্য সদাপ্রভু হইতে এই বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, মিসর দেশ হইতে, দাসগৃহ হইতে, তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিবার দিনে আমিই তাহাদের সহিত এই নিয়ম করিয়াছিলাম, ‘তোমার কোন ইব্রীয় ভ্রাতা যদি তোমার কাছে বিক্রীত হয়, তবে সপ্তম বৎসরের শেষে তুমি তাহাকে মুক্ত করিবে; সে ছয় বৎসর তোমার দাসত্ব করিলে পর তুমি তাহাকে মুক্ত করিয়া আপনার নিকট হইতে যাইতে দিবে।’ কিন্তু তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার বাক্যে অবধান করিল না এবং কর্ণপাত করিল না। সম্প্রতি তোমরা ফিরিয়াছিলে, আমার দৃষ্টিতে যাহা নায্য, তাহাই করিয়াছিলে, অর্থাৎ প্রত্যেক জন আপন আপন প্রতিবাসীর মুক্তি ঘোষণা করিয়াছিলে, এবং যে গৃহের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, তাহার মধ্যে আমার সম্মুখে নিয়ম স্থির করিয়াছিলে। কিন্তু এক্ষণে তোমরা ফিরিয়া বসিয়াছ, আমার নাম অপবিত্র করিয়াছ; যাহাদিগকে মুক্ত করিয়া তাহাদের বাঞ্ছামতে বিদায় দিয়াছিলে, তাহাদিগকে প্রত্যেক জন আপন আপন দাস দাসী করিয়াছ, তোমরা তাহাদিগকে আপনাদের দাস দাসী করিবার জন্য বশীভূত করিয়াছ। এই জন্য সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন ভ্রাতার ও প্রতিবাসীর মুক্তি ঘোষণা করিতে আমার বাক্যে অবধান কর নাই; অতএব সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে খড়্‌গ, মহামারী ও দুর্ভিক্ষের মুক্তি ঘোষণা করিতেছি, আমি তোমাদিগকে পৃথিবীস্থ সমস্ত রাজ্যে ভাসিয়া বেড়াইবার জন্য সমর্পণ করিব। যে লোকেরা আমার নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছে, যাহারা আমার সাক্ষাতে নিয়ম করিয়া তাহার কথা পালন করে নাই, গোবৎসকে দুই খণ্ড করিয়া তন্মধ্য দিয়া গমন করিয়াছে, আমি তাহাদিগকে সমর্পণ করিব; যিহূদার অধ্যক্ষগণ, যিরূশালেমের অধ্যক্ষগণ, নপুংসকগণ, যাজকগণ ও দেশের সমস্ত প্রজা, যাহারা গোবৎসটীর দুই খণ্ডের মধ্য দিয়া গমন করিয়াছে, তাহাদিগকে আমি তাহাদের শত্রুগণের হস্তে ও প্রাণনাশে সচেষ্ট লোকদের হস্তে সমর্পণ করিব; তাহাতে তাহাদের শব আকাশের পক্ষিগণের ও ভূমির পশুদের খাদ্য হইবে। আর যিহূদা-রাজ সিদিকিয়কে ও তাহার অধ্যক্ষগণকে আমি তাহাদের শত্রুগণের ও প্রাণনাশে সচেষ্ট লোকদের হস্তে, হাঁ, বাবিল-রাজের যে সৈন্যগণ তোমাদের নিকট হইতে উঠিয়া গিয়াছে, তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিব। সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি আজ্ঞা দ্বারা তাহাদিগকে এই নগরে ফিরাইয়া আনিব; আর তাহারা এই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়া ইহা হস্তগত করিবে, ও আগুনে পোড়াইয়া দিবে; আর আমি যিহূদার সকল নগরকে নিবাসী-বিহীন ধ্বংসস্থান করিব। যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের সময়ে সদাপ্রভু হইতে এই বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল। তুমি রেখবীয় কুলজাত লোকদের নিকটে গিয়া তাহাদের সহিত আলাপ কর, এবং সদাপ্রভুর গৃহের এক কুঠরীতে আনিয়া তাহাদিগকে পানার্থে দ্রাক্ষারস দেও। তখন আমি হবৎসিনিয়ের পৌত্র যিরমিয়ের পুত্র যাসিনিয়কে, তাহার ভ্রাতৃগণকে ও সকল পুত্রকে এবং রেখবীয়দের সমস্ত কুলকে সঙ্গে লইলাম; আমি তাহাদিগকে সদাপ্রভুর গৃহে ঈশ্বরের লোক যিগ্দলিয়ের পুত্র হাননের সন্তানদের কুঠরীতে লইয়া গেলাম; শল্লুমের পুত্র মাসেয় নামক দ্বারপালের কুঠরীর উপরে অধ্যক্ষগণের যে কুঠরী, [উক্ত কুঠরী] তাহার পার্শ্বে স্থিত। পরে আমি দ্রাক্ষারসে পূর্ণ কতিপয় ভাণ্ড ও কতকগুলি বাটি রেখবীয় কুলজাত লোকদের সম্মুখে রাখিয়া তাহাদিগকে কহিলাম, তোমরা দ্রাক্ষারস পান কর। কিন্তু তাহারা কহিল, আমরা দ্রাক্ষারস পান করিব না, কেননা আমাদের পিতৃপুরুষ রেখবের পুত্র যিহোনাদব আমাদিগকে এই আজ্ঞা দিয়াছেন, তোমরা ও তোমাদের সন্তানগণ কেহ কখনও দ্রাক্ষারস পান করিবে না; আর গৃহ নির্ম্মাণ, বীজ বপন ও দ্রাক্ষাক্ষেত্রের চাষ করিবে না, এবং এই সকলের অধিকারী হইবে না, কিন্তু যাবজ্জীবন তাম্বুতে বাস করিবে; যেন, তোমরা যে স্থানে প্রবাস করিতেছ, সেই দেশে দীর্ঘজীবী হও। অতএব আমাদের পিতৃপুরুষ রেখবের পুত্র যিহোনাদব আমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিয়াছেন, তদনুসারে আমরা তাঁহার বাক্য পালন করিয়া আসিতেছি; ফলতঃ দ্রাক্ষারস পান করা যাবজ্জীবন আমাদের ও আমাদের স্ত্রী পুত্র কন্যাদের অকর্ত্তব্য, এবং আমাদের বাসের জন্য গৃহ নির্ম্মাণ করাও অকর্ত্তব্য, আর দ্রাক্ষাক্ষেত্র, শস্যক্ষেত্র বা বীজ আমাদের নাই; কিন্তু আমরা তাম্বুবাসী, এবং আমাদের পিতৃপুরুষ যিহোনাদব আমাদিগকে যে সমস্ত আজ্ঞা দিয়াছেন, সেই সকল মানিয়া তদনুসারে কর্ম্ম করিয়া আসিতেছি। কিন্তু বাবিলরাজ নবূখদ্‌নিৎসর যখন এই দেশের মধ্যে আসিলেন, তখন আমরা কহিলাম, আইস, আমরা কল্‌দীয় সৈন্যের সম্মুখ হইতে ও অরামীয় সৈন্যের সম্মুখ হইতে যিরূশালেমে চলিয়া যাই; এই জন্য আমরা যিরূশালেমে বাস করিতেছি। পরে যিরমিয়ের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তুমি গিয়া যিহূদার লোকদিগকে ও যিরূশালেম-নিবাসীদিগকে বল, সদাপ্রভু কহেন, তোমরা আমার বাক্য পালন করিবার জন্য কি উপদেশ গ্রহণ করিবে না? রেখবের পুত্র যিহোনাদব আপন সন্তানদিগকে দ্রাক্ষারস পান করিতে বারণ করিলে তাহার সেই বাক্য অটল হইয়াছে; অদ্যাবধি তাহারা দ্রাক্ষারস পান করে না, কারণ তাহারা আপনাদের পিতৃপুরুষদের আজ্ঞা মানে; কিন্তু আমি তোমাদের কাছে কথা বলিয়াছি, প্রত্যূষে উঠিয়া বলিয়াছি, তথাপি তোমরা আমার কথায় অবধান কর নাই। আমি আপনার সমস্ত দাস ভাববাদিগণকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করিয়াছি, প্রত্যূষে উঠিয়া প্রেরণ করিয়া তোমাদিগকে বলিয়াছি, তোমরা আপন আপন কুপথ হইতে ফির, তোমাদের আচার-ব্যবহার শুদ্ধ কর, এবং অন্য দেবগণের সেবা করণার্থে তাহাদের পশ্চাদগামী হইও না; তাহাতে আমি তোমাদিগকে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছি, তাহার মধ্যে তোমরা বাস করিবে, কিন্তু তোমরা কর্ণপাত কর নাই, এবং আমার কথায় অবধান কর নাই। রেখবের পুত্র যিহোনাদব যাহা আজ্ঞা করিয়াছিল, তাহার সন্তানেরা তাহাই অটলরূপে পালন করিতেছে; কিন্তু এই জাতি আমার কথায় অবধান করে নাই। এই জন্য সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা বলেন, দেখ, আমি যিহূদার বিপরীতে ও যিরূশালেম-নিবাসী সকলের বিপরীতে যে সকল অমঙ্গলের কথা বলিয়াছি, সে সমস্ত তাহাদের প্রতি ঘটাইব; কারণ আমি তাহাদের কাছে কথা বলিয়াছি, কিন্তু তাহারা শুনে নাই, এবং তাহাদিগকে আহ্বান করিয়াছি, কিন্তু তাহারা উত্তর দেয় নাই। পরে যিরমিয় রেখবীয় কুলকে কহিলেন, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা আপনাদের পিতৃপুরুষ যিহোনাদবের আজ্ঞায় অবধান করিয়াছ, তাহার সমস্ত আদেশ পালন করিয়াছ, ও তাহার সমস্ত আজ্ঞানুসারে কার্য্য করিয়াছ; এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, রেখবের পুত্র যিহোনাদবের জন্য আমার সম্মুখে দাঁড়াইবার লোকের অভাব কখনও হইবে না। যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের চতুর্থ বৎসরে এই বাক্য সদাপ্রভু হইতে যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল, যথা, তুমি একখানি জড়ান পুস্তক লও, এবং আমি যে দিন তোমার কাছে কথা বলিয়াছিলাম, সেই অবধি, যোশিয়ের সময় অবধি, অদ্য পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের, যিহূদার ও সমস্ত জাতির বিরুদ্ধে তোমাকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সেই সমস্ত বাক্য উহাতে লিখ। হয় ত, আমি যিহূদা-কুলের উপরে যে সকল অমঙ্গল ঘটাইবার সঙ্কল্প করিয়াছি, তাহারা সেই সমস্ত অমঙ্গলের কথা শুনিয়া প্রত্যেকে আপন আপন কুপথ হইতে ফিরিবে; আর আমি তাহাদের অপরাধ ও পাপ মার্জ্জনা করিব। পরে যিরমিয় নেরিয়ের পুত্র বারূককে ডাকিলেন; এবং বারূক যিরমিয়ের প্রতি কথিত সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্য তাঁহার মুখে শুনিয়া এক জড়ান পুস্তকে লিখিলেন। পরে যিরমিয় বারূককে আজ্ঞা করিলেন, বলিলেন, আমি রুদ্ধ আছি, সদাপ্রভুর গৃহে যাইতে পারি না। অতএব তুমি যাও, এবং আমার মুখে শুনিয়া যাহা যাহা এই পুস্তকে লিখিয়াছ, সদাপ্রভুর সেই সকল বাক্য উপবাস-দিনে সদাপ্রভুর গৃহে লোকদের কর্ণগোচরে পাঠ কর, আর তুমি আপন আপন নগর হইতে আগত সমস্ত যিহূদার সাক্ষাতেও পাঠ করিবে। হয় ত, সদাপ্রভুর সম্মুখে তাহারা বিনতি উপস্থিত করিবে এবং প্রত্যেক জন আপন আপন কুপথ হইতে ফিরিবে, কেননা সদাপ্রভু এই জাতির বিরুদ্ধে অত্যন্ত ক্রোধের ও রোষের কথা বলিয়াছেন। পরে নেরিয়ের পুত্র বারূক যিরমিয় ভাববাদীর আজ্ঞানুসারে সমস্ত কার্য্য করিলেন, ঐ পুস্তকে লিখিত সদাপ্রভুর বাক্য সদাপ্রভুর গৃহে পাঠ করিলেন। পরে যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের পঞ্চম বৎসরের নবম মাসে যিরূশালেমস্থ সমস্ত লোক, এবং যিহূদার নগরসমূহ হইতে যিরূশালেমে আগত সমস্ত লোক, সদাপ্রভুর সাক্ষাতে উপবাস ঘোষণা করিল। তখন বারূক সদাপ্রভুর গৃহে, উপরিস্থ প্রাঙ্গণে, সদাপ্রভুর গৃহের নূতন দ্বারের প্রবেশ-স্থানে, শাফনের পুত্র গমরিয় লেখকের কুঠরীতে ঐ পুস্তক লইয়া সমস্ত লোকের কর্ণগোচরে যিরমিয়ের কথা সকল পাঠ করিলেন। যখন শাফনের পৌত্র গমরিয়ের পুত্র মীখায় সেই পুস্তকে লিখিত সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্য শুনিলেন, তখন তিনি রাজবাটীতে নামিয়া লেখকের কুঠরীতে গেলেন; আর দেখ, সেই স্থানে অধ্যক্ষগণ সকলে, অর্থাৎ ইলীশামা লেখক, শময়িয়ের পুত্র দলায়, অক্‌বোরের পুত্র ইল্‌নাথন, শাফনের পুত্র গমরিয় ও হনানিয়ের পুত্র সিদিকিয় প্রভৃতি সমস্ত অধ্যক্ষ উপবিষ্ট ছিলেন। লোকদের কর্ণগোচরে যখন বারূক ঐ পুস্তক পাঠ করিয়াছিলেন, তখন মীখায় যে সকল কথা শুনিয়াছিলেন, তাহা তাঁহাদিগকে জ্ঞাত করিলেন। তাহাতে অধ্যক্ষগণ সকলে কূশির প্রপৌত্র শেলিমিয়ের পৌত্র নথনিয়ের পুত্র যিহূদী দ্বারা বারূককে এই কথা বলিয়া পাঠাইলেন, তুমি লোকদের কর্ণগোচরে যে পুস্তক পাঠ করিয়াছ, তাহা হস্তে করিয়া আইস; অতএব নেরিয়ের পুত্র বারূক পুস্তকখানি হস্তে লইয়া তাঁহাদের নিকটে আসিলেন। তাঁহারা কহিলেন, বিনয় করি, তুমি বসিয়া আমাদের কর্ণগোচরে উহা পাঠ কর; তাহাতে বারূক তাঁহাদের কর্ণগোচরে পাঠ করিলেন। তখন ঐ সকল কথা শুনিয়া তাঁহারা সকলে ভয় প্রযুক্ত পরস্পর তাকাতাকি করিলেন, এবং বারূককে কহিলেন, আমরা এই সকল কথার বিষয় অবশ্য রাজাকে জানাইব। পরে তাঁহারা বারূককে জিজ্ঞাসা করিলেন, বল দেখি, তুমি কেমন করিয়া তাঁহার মুখে শুনিয়া এই সকল কথা লিখিয়াছিলে? বারূক উত্তর করিলেন, তিনি মুখে আমার নিকটে এই সকল কথা উচ্চারণ করিতেছিলেন, এবং আমি কালি দিয়া এই পুস্তকে সে সমস্ত লিখিতেছিলাম। তখন অধ্যক্ষগণ বারূককে কহিলেন, তুমি ও যিরমিয় যাইয়া লুকাইয়া থাক; কেহ যেন তোমাদের সন্ধান না পায়। পরে তাঁহারা ইলীশামা লেখকের কুঠরীতে পুস্তকখানি রাখিয়া প্রাঙ্গণে রাজার নিকটে গিয়া তাঁহার কর্ণগোচরে ঐ সকল কথা কহিলেন। তাহাতে রাজা পুস্তকখানি আনিবার জন্য যিহূদীকে পাঠাইলেন, আর যিহূদী ইলীশামা লেখকের কুঠরী হইতে তাহা আনিয়া রাজার কর্ণগোচরে ও তাঁহার সাক্ষাতে দণ্ডায়মান অধ্যক্ষগণের কর্ণগোচরে তাহা পাঠ করিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে নবম মাসে রাজা শীতকাল যাপনের গৃহে বসিয়াছিলেন, এবং তাঁহার সম্মুখে জ্বলন্ত আগুনের আঙ্গটা ছিল। আর যিহূদী তিন চারি পাতা পাঠ করিলে পর [রাজা] লেখকের ছুরিকা দ্বারা পুস্তকখানি কাটিয়া ঐ আঙ্গটার আগুনে ফেলিয়া দিতে লাগিলেন; এইরূপে শেষে পুস্তকখানির সমুদয় আঙ্গটার আগুনে ভস্মসাৎ হইল। রাজা ও তাঁহার দাসগণ ঐ সকল বাক্য শুনিয়াও কেহ ভীত হইলেন না, ও আপন আপন বস্ত্র ছিঁড়িলেন না। যদ্যপি ইল্‌নাথন, দলায় ও গমরিয়, পুস্তকখানি যেন পোড়ান না হয়, সে জন্য রাজাকে বিনয় করিয়াছিলেন, তথাপি তিনি তাঁহাদের কথা শুনিলেন না। আর রাজা রাজপুত্র যিরহমেলকে, অস্রীয়েলের পুত্র সরায়কে ও অব্দিয়েলের পুত্র শেলিমিয়কে আজ্ঞা করিলেন, তোমরা বারূক লেখককে ও যিরমিয় ভাববাদীকে ধর; কিন্তু সদাপ্রভু তাঁহাদিগকে লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন। যিরমিয়ের মুখে শুনিয়া বারূক যে সকল বাক্য লিখিয়াছিলেন, তৎসম্বলিত পুস্তকখানি রাজা পোড়াইলে পর সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি পুনর্ব্বার আর এক পুস্তক গ্রহণ কর; এবং ঐ প্রথম বাক্য সকল, অর্থাৎ যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীম কর্ত্তৃক দগ্ধীভূত সেই প্রথম পুস্তকে যাহা ছিল, সে সমস্ত তন্মধ্যে লিখ। আর যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের বিষয়ে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি এই পুস্তক পোড়াইয়াছ, বলিয়াছ, তুমি কেন ইহার মধ্যে এই কথা লিখিয়াছ যে, বাবিল-রাজ অবশ্য আসিবেন, ও এই দেশ নষ্ট করিবেন, এবং নরশূন্য ও পশুহীন করিবেন? অতএব যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দায়ূদের সিংহাসনে উপবেশন করিতে তাহার কেহ থাকিবে না, এবং তাহার শব দিবসে রৌদ্রে ও রাত্রিকালে হিমে নিক্ষিপ্ত হইয়া পতিত থাকিবে। আর আমি তাহাকে, তাহার বংশকে ও তাহার দাসগণকে তাহাদের অপরাধের প্রতিফল দিব, আর তাহাদের বিরুদ্ধে এবং যিরূশালেম-নিবাসীদের ও যিহূদার লোকদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অমঙ্গলের কথা বলিলেও তাহারা কর্ণপাত করে নাই, আমি তাহাদের উপরে সেই সমস্ত অমঙ্গল ঘটাইব। পরে যিরমিয় আর একখানি পুস্তক লইয়া নেরিয়ের পুত্র বারূক লেখককে দিলেন, তাহাতে যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীম যে পুস্তক আগুনে পোড়াইয়াছিলেন, তাহার সমস্ত কথা তিনি পুনর্ব্বার যিরমিয়ের মুখে শুনিয়া লিখিলেন; তদ্ভিন্ন ঐ প্রকার আর আর অনেক কথাও তাহাতে লিখিত হইল। যিহোয়াকীমের পুত্র কনিয়ের পদে যোশিয়ের পুত্র সিদিকিয় রাজা হইয়া রাজত্ব করেন; বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর তাঁহাকেই যিহূদা দেশের রাজা করিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি, তাঁহার দাসগণ ও দেশীয় লোকেরা যিরমিয় ভাববাদী দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্যে কর্ণপাত করিতেন না। পরে সিদিকিয় রাজা শেলিমিয়ের পুত্র যিহূখলকে ও মাসেয়ের পুত্র সফনিয় যাজককে যিরমিয় ভাববাদীর নিকটে প্রেরণ করিয়া কহিলেন, বিনয় করি, আপনি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন। সেই সময়ে যিরমিয় লোকদের মধ্যে যাতায়াত করিতেন, কারণ তৎকালে তিনি কারাগারে বদ্ধ হন নাই। আর ফরৌণের সৈন্য মিসর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিল; এবং যিরূশালেম-অবরোধক কল্‌দীয়েরা তাহাদের সমাচার শুনিয়া যিরূশালেম হইতে চলিয়া গিয়াছিল। তখন যিরমিয় ভাববাদীর নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, যিহূদার যে রাজা আমার নিকটে জিজ্ঞাসা করিতে তোমাদিগকে পাঠাইয়াছে, তাহাকে এই কথা বল, দেখ, ফরৌণের যে সৈন্য তোমাদের সাহায্যার্থে বাহির হইয়া আসিয়াছে, তাহারা মিসরে আপন দেশে ফিরিয়া যাইবে। আর কল্‌দীয়েরা পুনর্ব্বার আসিবে, এই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে; এবং ইহা হস্তগত করিয়া আগুনে পোড়াইয়া দিবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা এই কথা বলিয়া আপনাদের প্রাণকে বঞ্চনা করিও না যে, কল্‌দীয়েরা আমাদের নিকট হইতে অবশ্য চলিয়া যাইবে; কেননা তাহারা চলিয়া যাইবে না। বাস্তবিক যে কল্‌দীয়েরা তোমাদের সহিত যুদ্ধ করিতেছে, তোমার তাহাদের সমস্ত সৈন্যকে আঘাত করিলেও যদ্যপি তাহাদের মধ্যে কতকগুলি খড়্‌গবিদ্ধ লোকমাত্র অবশিষ্ট থাকে, তথাপি তাহারাই আপন আপন তাম্বুতে উঠিয়া এই নগর আগুনে পোড়াইয়া দিবে। কল্‌দীয়দের সৈন্যদল যে সময়ে ফরৌণের সৈন্যদলের ভয়ে যিরূশালেম হইতে উঠিয়া গিয়াছিল, সেই সময়ে যিরমিয় বিন্যামীন প্রদেশে যাইবার ও তথায় লোকদের মধ্যে আপনার প্রাপ্য অংশ গ্রহণ করিবার ইচ্ছায় যিরূশালেম হইতে প্রস্থান করিলেন। যখন তিনি বিন্যামীনের দ্বারে উপস্থিত হন, তখন সেই স্থানে রক্ষকদের এক জন অধ্যক্ষ ছিল, তাহার নাম যিরিয়, সে হনানিয়ের পৌত্র, শেলিমিয়ের পুত্র; সেই ব্যক্তি যিরমিয় ভাববাদীকে ধরিয়া কহিল, তুমি কল্‌দীয়দের পক্ষে যাইতেছ। যিরমিয় কহিলেন, এ মিথ্যা কথা, আমি কল্‌দীয়দের পক্ষে যাইতেছি না। তথাপি যিরিয় তাঁহার কথা না শুনিয়া যিরমিয়কে ধরিয়া অধ্যক্ষদের নিকটে লইয়া গেল। সেই অধ্যক্ষগণ যিরমিয়ের প্রতি ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে প্রহার করিল, এবং যোনাথন লেখকের বাটীতে স্থিত কারাগারে রাখিল, কেননা তাহারা তাহাই কারাগার করিয়াছিল। সেই কারাকূপে ও কারাকক্ষে প্রবেশ করিবার পর যিরমিয় সেই স্থানে অনেক দিন যাপন করিলেন; পরে সিদিকিয় রাজা লোক পাঠাইয়া তাঁহাকে আনাইলেন; আর রাজা আপন বাটীতে তাঁহাকে নির্জ্জনে জিজ্ঞাসা করিলেন, সদাপ্রভুর কোন বাক্য কি আছে? যিরমিয় কহিলেন, হাঁ, আছে। তিনি আরও কহিলেন, আপনি বাবিল-রাজের হস্তে সমর্পিত হইবেন। যিরমিয় সিদিকিয় রাজাকে ইহাও কহিলেন, আপনার বিরুদ্ধে, আপনার দাসগণের বিরুদ্ধে, কিম্বা এই লোকদের বিরুদ্ধে আমি কি অপরাধ করিয়াছি যে, আপনারা আমাকে কারাগারে রাখিয়াছেন? আর যাহারা আপনাদের নিকটে এই ভাববাণী বলিত যে, বাবিল-রাজ আপনাদের কিম্বা এই দেশের বিরুদ্ধে আসিবেন না, আপনাদের সেই ভাববাদিগণ কোথায়? এখন, হে আমার প্রভু মহারাজ, বিনয় করি, শ্রবণ করুন; আমি যোনাথন লেখকের বাটীতে যেন না মরি, এই জন্য আপনি সে স্থানে আমাকে আর পাঠাইবেন না, বিনয় করি, আমার এই বিনতি আপনার সাক্ষাতে গ্রাহ্য হউক। তখন লোকেরা সিদিকিয় রাজার আজ্ঞাতে যিরমিয়কে রক্ষীদের প্রাঙ্গণে রাখিল, এবং যে পর্য্যন্ত নগরের সমস্ত রুটী শেষ না হইল; সে পর্য্যন্ত প্রতিদিন রুটী-ওয়ালাদের পল্লী হইতে এক একখানা রুটী লইয়া তাঁহাকে দেওয়া যাইত। এই প্রকারে যিরমিয় রক্ষীদের প্রাঙ্গণে থাকিলেন। আর মত্তনের পুত্র শফটিয়, পশ্‌হূরের পুত্র গদলিয়, শেলিমিয়ের পুত্র যিহূখল ও মল্কিয়ের পুত্র পশ্‌হূর শুনিল, যে সমস্ত লোকের নিকটে যিরমিয় এই সকল বাক্য বলিলেন, যথা, ‘সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে কেহ এই নগরে থাকিবে, সে খড়্‌গে, দুর্ভিক্ষে ও মহামারীতে মারা পড়িবে; কিন্তু যে কেহ বাহির হইয়া কল্‌দীয়দের নিকটে যাইবে, সে বাঁচিবে, লুটদ্রব্যের ন্যায় আপন প্রাণ লাভ করিয়া বাঁচিবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এই নগর অবশ্য বাবিল-রাজের সৈন্যগণের হস্তে সমর্পিত হইবে, ও সে ইহা হস্তগত করিবে।’ তখন অধ্যক্ষগণ রাজাকে কহিলেন, এ ব্যক্তির প্রাণদণ্ড করিতে আজ্ঞা হউক, কেননা এ লোকদের কাছে এই প্রকার কথা বলিয়া এই নগরে অবশিষ্ট যোদ্ধাদের হস্ত ও প্রজা সকলের হস্ত দুর্ব্বল করিতেছে; কারণ এ ব্যক্তি এই জাতির মঙ্গল চেষ্টা করে না, কেবল অমঙ্গল চেষ্টা করে। সিদিকিয় রাজা কহিলেন, দেখ, সে তোমাদেরই হস্তে আছে; কারণ তোমাদের বিরুদ্ধে রাজার কিছু করিবার সাধ্য নাই। তখন তাঁহারা যিরমিয়কে ধরিয়া রক্ষীদের প্রাঙ্গণে স্থিত রাজপুত্র মল্কিয়ের কূপমধ্যে ফেলিয়া দিল, রজ্জুতে করিয়া যিরমিয়কে নামাইয়া দিল; সেই কূপে জল ছিল না, কিন্তু পঙ্ক ছিল, এবং যিরমিয় পঙ্কে মগ্নপ্রায় হইলেন। ইতিমধ্যে রাজবাটীস্থিত এবদ-মেলক নামে এক জন কূশীয় নপুংসক শুনিতে পাইল যে, যিরমিয়কে কূপে ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছে; তখন রাজা বিন্যামীনের দ্বারে বসিয়াছিলেন। এবদ-মেলক রাজবাটী হইতে বাহিরে গিয়া রাজাকে কহিল, হে আমার প্রভু মহারাজ, এই লোকেরা যিরমিয় ভাববাদীর প্রতি যাহা যাহা করিয়াছে, সমস্তই মন্দ ব্যবহার করিয়াছে, তাঁহাকে কূপে ফেলিয়া দিয়াছে; তিনি সে স্থানে ক্ষুধায় মৃতপ্রায় হইয়াছেন, কেননা নগরে আর রুটী নাই। তখন রাজা কূশীয় এবদ-মেলককে আজ্ঞা করিলেন, তুমি এই স্থান হইতে ত্রিশ জন পুরুষকে সঙ্গে লইয়া গিয়া যিরমিয় ভাববাদী না মরিতে মরিতে তাঁহাকে কূপ হইতে উত্তোলন কর। তখন এবদ-মেলক সেই লোকদিগকে সঙ্গে লইয়া রাজবাটীতে গিয়া ভাণ্ডারের নীচস্থান হইতে কতকগুলি জীর্ণবস্ত্র ও পুরাতন জীর্ণনেকড়া লইয়া রজ্জু দ্বারা কূপে যিরমিয়ের কাছে নামাইয়া দিল। আর কূশীয় এবদ-মেলক যিরমিয়কে কহিল, এই জীর্ণবস্ত্র ও জীর্ণনেকড়াগুলা আপনার বগলে রজ্জুর নীচে দিউন। যিরমিয় তাহা করিলেন। আর উহারা ঐ রজ্জু ধরিয়া টানিয়া কূপ হইতে তাঁহাকে তুলিল; এবং যিরমিয় রক্ষীদের প্রাঙ্গণে থাকিলেন। পরে সিদিকিয় রাজা লোক পাঠাইয়া যিরমিয় ভাববাদীকে সদাপ্রভুর গৃহের তৃতীয় প্রবেশ-স্থানে আপনার নিকটে আনাইলেন; আর রাজা যিরমিয়কে কহিলেন, আমি আপনাকে একটী কথা জিজ্ঞাসা করি, আমার কাছে কিছুই গোপন করিবেন না। যিরমিয় সিদিকিয়কে কহিলেন, আমি যদি আপনাকে তাহা জানাই, তবে আপনি কি আমাকে নিশ্চয়ই বধ করিবেন না? আর আমি যদি আপনাকে পরামর্শ দিই, আপনি আমার কথায় কর্ণপাত করিবেন না। সিদিকিয় রাজা গোপনে যিরমিয়ের কাছে শপথ করিয়া কহিলেন, আমাদের এই জীবাত্মার নির্ম্মাতা জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমি আপনাকে বধ করিব না, এবং আপনার প্রাণনাশার্থে সচেষ্ট এই লোকদের হস্তে আপনাকে সমর্পণ করিব না। তখন যিরমিয় সিদিকিয়কে কহিলেন, সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তুমি যদি বাহির হইয়া বাবিল-রাজের প্রধানবর্গের নিকটে যাও, তবে তোমার প্রাণ বাঁচিবে, এই নগরও আগুনে পোড়াইয়া দেওয়া হইবে না, এবং তুমি বাঁচিবে, তুমি ও তোমার পরিবার। কিন্তু যদি বাবিল-রাজের প্রধানবর্গের নিকটে না যাও, তবে এই নগর কল্‌দীয়দের হস্তে সমর্পিত হইবে, এবং তাহারা ইহা আগুনে পোড়াইয়া দিবে, আর তুমিও তাহাদের হস্ত হইতে উত্তীর্ণ হইবে না। সিদিকিয় রাজা যিরমিয়কে কহিলেন, যে যিহূদীরা কল্‌দীয়দের পক্ষে গিয়াছে, তাহাদিগকে আমি ভয় করি; কি জানি, আমি তাহাদের হস্তে সমর্পিত হইব, আর তাহারা আমার অপমান করিবে। যিরমিয় কহিলেন, আপনি সমর্পিত হইবেন না; বিনয় করি, আমি আপনাকে যাহা বলি, সে বিষয়ে আপনি সদাপ্রভুর বাক্য মান্য করুন; তাহাতে আপনার মঙ্গল হইবে, আপনার প্রাণ বাঁচিবে। কিন্তু আপনি যদি যাইতে অসম্মত হন, তবে সদাপ্রভু আমাকে যাহা জ্ঞাত করিয়াছেন, সেই কথা এই; দেখুন, যিহূদার রাজবাটীতে অবশিষ্ট সমস্ত স্ত্রীলোক বাবিল-রাজের প্রধানবর্গের কাছে নীত হইবে। আর সেই স্ত্রীলোকেরা বলিবে, তোমার মিত্রগণ তোমাকে ভুলাইয়াছে, পরাভব করিয়াছে, তোমার চরণ পঙ্কমধ্যে ডুবিয়া গিয়াছে, উহারা পিছিয়া পড়িয়াছে। আর লোকেরা আপনার সমস্ত ভার্য্যা ও আপনার সন্তানগণকে বাহিরে কল্‌দীয়দের কাছে লইয়া যাইবে; এবং আপনিও তাহাদের হস্ত হইতে উত্তীর্ণ হইবেন না, কিন্তু বাবিল-রাজের হস্তে ধৃত হইবেন, এবং আপনি এই নগরকে আগুনে পোড়াইয়া দিবেন। পরে সিদিকিয় যিরমিয়কে কহিলেন, এই সকল কথা কেহ জ্ঞাত না হউক, তাহাতে আপনি মরিবেন না। কিন্তু আমি যে আপনার সহিত কথাবার্ত্তা কহিয়াছি, অধ্যক্ষগণ যদি তাহা শুনিতে পায়, এবং আপনার কাছে আসিয়া বলে, ‘তুমি রাজাকে কি কি বলিয়াছ, তাহা আমাদিগকে জানাও, আমাদের হইতে কিছুই গোপন করিও না, তাহাতে আমরা তোমাকে বধ করিব না, আর রাজা তোমাকে কি কি বলিয়াছেন, জানাও,’ তবে আপনি তাহাদিগকে এই কথা বলিবেন, রাজা যেন আমাকে যোনাথনের বাটীতে পুনর্ব্বার প্রেরণ না করেন, সেখানে যেন না মরি, রাজার কাছে আমি এই বিনতি করিয়াছিলাম। পরে অধ্যক্ষেরা সকলে যিরমিয়ের নিকটে আসিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন; তাহাতে তিনি রাজার আজ্ঞানুসারে ঐ সকল কথা তাঁহাদিগকে কহিলেন। তখন তাঁহারা তাঁহার সহিত কথা কহিতে ক্ষান্ত হইলেন; বস্তুতঃ সেই সকল কথা রাষ্ট্র হইল না। আর যিরূশালেমের পরাজয়-দিন পর্য্যন্ত যিরমিয় রক্ষীদের প্রাঙ্গণে থাকিলেন। যিরূশালেমের পরাজয় এইরূপে হইয়াছিল। যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের নবম বৎসরের দশম মাসে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর ও তাঁহার সমস্ত সৈন্য যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আসিয়া তাহা অবরোধ করিলেন। পরে সিদিকিয়ের একাদশ বৎসরের চতুর্থ মাসের নবম দিনে নগরের এক স্থান ভগ্ন হইল। তখন বাবিল-রাজের সমস্ত প্রধানবর্গ, অর্থাৎ নের্গল-শরেৎসর, সমগরনবো, প্রধান নপুংসক শর্সখীম ও প্রধান গণক নের্গল-শরেৎসর প্রভৃতি বাবিল-রাজের সমস্ত প্রধানবর্গ প্রবেশ করিয়া মধ্যম দ্বারে বসিলেন। আর যিহূদা-রাজ সিদিকিয় ও সমস্ত যোদ্ধা তাঁহাদিগকে দেখিয়া পলায়ন করিলেন, রাত্রিকালে রাজার উদ্যানের পথে দুই প্রাচীরের মধ্যস্থিত দ্বার দিয়া নগরের বাহিরে গেলেন; আর তিনি অরাবা তলভূমির পথে প্রস্থান করিলেন। কিন্তু কল্‌দীয়দের সৈন্য তাঁহাদের পশ্চাতে ধবমান হইয়া যিরীহোর সমভূমিতে সিদিকিয় রাজার লাগাল পাইল, ও তাঁহাকে ধরিয়া হমাৎ দেশস্থ রিব্লাতে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের নিকটে আনিল; তাহাতে তিনি তাঁহার দণ্ডবিধান করিলেন। আর বাবিল-রাজ রিব্লাতে সিদিকিয়ের সাক্ষাতে তাঁহার পুত্রগণকে বধ করিলেন, বাবিল-রাজ যিহূদার সমস্ত অধ্যক্ষকেও বধ করিলেন। আর তিনি সিদিকিয়ের চক্ষু উৎপাটন করিয়া তাঁহাকে বাবিলে লইয়া যাইবার জন্য পিত্তলের দুই শৃঙ্খলে বদ্ধ করিলেন। পরে কল্‌দীয়েরা রাজবাটী ও সামান্য লোকদের ঘরবাড়ী আগুনে পোড়াইয়া দিল, এবং যিরূশালেমের সমস্ত প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিল। আর নবূষরদন রক্ষক সেনাপতি, যাহারা নগরে অবশিষ্ট ছিল, সেই লোকদিগকে, ও যাহারা পক্ষান্তরে গিয়া তাঁহার সপক্ষ হইয়াছিল, তাহাদিগকে এবং অন্য অবশিষ্ট লোকদিগকে বন্দি করিয়া বাবিলে লইয়া গেলেন। তথাপি নবূষরদন রক্ষক-সেনাপতি কতকগুলি দীনদরিদ্র লোককে যিহূদা দেশে অবশিষ্ট রাখিলেন, এবং সেই দিন তাহাদিগকে দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও ভূমি প্রদান করিলেন। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর যিরমিয়ের বিষয়ে নবূষরদন রক্ষক-সেনাপতিকে এই আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তুমি তাঁহাকে গ্রহণ করিয়া তাঁহার তত্ত্বাবধান করিও, তাঁহার কিছুই হানি করিও না; বরং তিনি তোমাকে যেরূপ বলিবেন, তাঁহার সহিত তদ্রূপ ব্যবহার করিও। অতএব নবূষরদন রক্ষক-সেনাপতি, প্রধান নপুংসক নবূশস্‌বন ও প্রধান গণক নের্গল-শরেৎসর এবং বাবিল-রাজের সমস্ত প্রধানবর্গ লোক প্রেরণ করিয়া রক্ষীদের প্রাঙ্গণ হইতে যিরমিয়কে লইয়া আসিলেন, এবং তাঁহাকে বাটীতে লইয়া যাইবার জন্য শাফনের পৌত্র অহীকামের পুত্র গদলিয়ের কাছে সমর্পণ করিলেন; তাহাতে তিনি লোকদের মধ্যে বাস করিলেন। যে সময়ে যিরমিয় রক্ষীদের প্রাঙ্গণে বদ্ধ ছিলেন, তৎকালে তাঁহার নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইয়াছিল, তুমি যাইয়া কূশীয় এবদ-মেলককে বল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, মঙ্গলের নিমিত্ত নয়, কিন্তু অমঙ্গলের নিমিত্ত আমি এই নগরের উপরে আপন বাক্য সকল সফল করিব, সেই দিন তোমার সাক্ষাতে সে সমস্ত সফল হইবে। কিন্তু সেই দিন আমি তোমাকে উদ্ধার করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, এবং তুমি যে লোকদের হইতে উদ্বিগ্ন হইয়াছ, তাহাদের হস্তে তুমি সমর্পিত হইবে না। আমি তোমাকে অবশ্য রক্ষা করিব, তুমি খড়্‌গে পতিত হইবে না, কিন্তু লুটিত দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণলাভ হইবে; কেননা তুমি আমাতে বিশ্বাস করিয়াছ, ইহা সদাপ্রভু কহেন। রক্ষক-সেনাপতি নবূষরদন যিরমিয়কে রামা হইতে বিদায় দিলে পর তাঁহার নিকটে সদাপ্রভুর যে বাক্য উপস্থিত হইল, তাহার বৃত্তান্ত। [নবূষরদন] যখন তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন, তখন তিনি শৃঙ্খলে বদ্ধ, এবং যিরূশালেমের ও যিহূদার যে সমস্ত লোক নির্ব্বাসার্থে বাবিলে নীত হইতেছিল, তাহাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। রক্ষক-সেনাপতি যিরমিয়কে গ্রহণ করিয়া কহিলেন, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু এই স্থানের বিষয়ে এই অমঙ্গলের কথা বলিয়াছিলেন; আর সদাপ্রভু তাহা ঘটাইয়াছেন, যেমন বলিয়াছিলেন, তেমনি করিয়াছেন। তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছ, তাঁহার রবে অবধান কর নাই, এই জন্য তোমাদের প্রতি ইহা ঘটিল। এখন দেখ, অদ্য আমি তোমার হস্তের শৃঙ্খল হইতে তোমাকে মুক্ত করিলাম; তুমি যদি আমার সহিত বাবিলে যাইতে ইচ্ছা কর, তবে আইস, আমি তোমার প্রতি অনুগ্রহদৃষ্টি রাখিব; আর যদি আমার সহিত বাবিলে যাইতে তোমার ইচ্ছা না হয়, তবে ক্ষান্ত হও; দেখ, সমস্ত দেশ তোমার সম্মুখে আছে; যে স্থানে যাওয়া তোমার উত্তম ও বিহিত বোধ হয়, সেই স্থানে যাও। তিনি তখনও ফিরিতেছেন না [দেখিয়া কহিলেন], ‘ভাল, তুমি শাফনের পৌত্র অহীকামের পুত্র গদলিয়ের কাছে ফিরিয়া যাও, বাবিল-রাজ তাঁহাকেই যিহূদার নগরসমূহের উপরে শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করিয়াছেন, তুমি লোকদের মধ্যে তাঁহার সহিত বাস কর; কিম্বা যে কোন স্থানে যাওয়া তোমার বিহিত বোধ হয়, সেই স্থানে যাও।’ পরে রক্ষক-সেনাপতি তাঁহাকে পাথেয় ও উপঢৌকন দিয়া বিদায় করিলেন। তাহাতে যিরমিয় মিস্পাতে অহীকামের পুত্র গদলিয়ের নিকটে গিয়া দেশে অবশিষ্ট লোকদের মধ্যে তাঁহার সহিত বাস করিতে লাগিলেন। মাঠে অবস্থিত সৈন্যগণের সমস্ত সেনাপতি ও তাহাদের লোকেরা যখন শুনিতে পাইল যে, বাবিল-রাজ অহীকামের পুত্র গদলিয়কে দেশে শাসনকর্ত্তা নিযুক্ত করিয়াছেন, এবং যাহারা বন্দিরূপে বাবিলে নীত হয় নাই, সেই সকল পুরুষ, স্ত্রী, বালকবালিকা ও জনপদস্থ দরিদ্র লোকদিগকে তাঁহার কাছে সমর্পণ করিয়াছেন, তখন তাহারা মিস্পাতে গদলিয়ের কাছে আসিল; অর্থাৎ নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল এবং যোহানন ও যোনাথন নামে কারেহের দুই পুত্র, তন্‌হূমতের পুত্র সরায়, নটোফাতীয় এফয়ের পুত্রগণ ও মাখাথীয়ের পুত্র যাসনিয়, ইহারা আপন আপন লোকদের সহিত উপস্থিত হইল। আর শাফনের পৌত্র অহীকামের পুত্র গদলিয় তাহাদের কাছে ও তাহাদের লোকদের কাছে শপথ করিয়া বলিলেন, তোমরা কল্‌দীয়দের দাস হইতে ভয় করিও না, দেশে বাস করিয়া বাবিল-রাজের দাস হও, তাহাতে তোমাদের মঙ্গল হইবে। আর আমি, দেখ, যে কল্‌দীয়েরা আমাদের এখানে আসিবে, আমি তাহাদের সম্মুখে দণ্ডায়মান হইবার জন্য এই মিস্পাতে বাস করিব; কিন্তু তোমরা দ্রাক্ষারস, গ্রীষ্মের ফল ও তৈল সঞ্চয় করিয়া আপন আপন পাত্রে রাখ, এবং যে সকল নগর তোমাদের হস্তগত হইয়াছে, তথায় বাস কর। আর মোয়াবে, অম্মোন-সন্তানদের মধ্যে ইদোমে ও অন্যান্য দেশে যে সকল যিহূদী ছিল, তাহারা যখন শুনিল যে, বাবিল-রাজ যিহূদার এক অংশ অবশিষ্ট রাখিয়াছেন, এবং শাফনের পৌত্র অহীকামের পুত্র গদলিয়কে তাহাদের উপরে নিযুক্ত করিয়াছেন, তখন সেই যিহূদীরা সকলে যে সমস্ত স্থানে বিতাড়িত হইয়াছিল, সেই সমস্ত স্থান হইতে ফিরিয়া আসিল, যিহূদা দেশে মিস্পাতে গদলিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল, এবং অপর্য্যাপ্ত দ্রাক্ষারস ও গ্রীষ্মের ফল সঞ্চয় করিতে লাগিল। পরে কারেহের পুত্র যোহানন ও মাঠে অবস্থিত সৈন্যগণের সমস্ত সেনাপতি মিস্পাতে গদলিয়ের নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, আপনি কি জানেন, অম্মোন-সন্তানদের রাজা বালীস আপনার প্রাণনাশ করিতে নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েলকে প্রেরণ করিয়াছেন? কিন্তু অহীকামের পুত্র গদলিয় তাহাদের কথায় বিশ্বাস করিলেন না। পরে কারেহের পুত্র যোহানন মিস্পাতে গদলিয়কে গোপনে কহিল, যদি আপনার অনুমতি হয়, তবে আমি গিয়া নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েলকে বধ করি, কেহ তাহা জানিতে পারিবে না; সে কেন আপনার প্রাণ নষ্ট করিবে? করিলে আপনার নিকটে সংগৃহিত সমস্ত যিহূদী ছিন্নভিন্ন, এবং যিহূদার অবশিষ্টাংশ বিনষ্ট হইবে। কিন্তু অহীকামের পুত্র গদলিয় কারেহের পুত্র যোহাননকে কহিলেন, এ কার্য্য করিও না; কেননা ইশ্মায়েলের বিষয়ে তুমি যাহা বলিতেছ, তাহা মিথ্যা। ইলীশামার পৌত্র নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল রাজার প্রধান কর্ম্মচারীদের মধ্যে গণিত রাজবংশীয় ছিল; সপ্তম মাসে সে দশ জন পুরুষকে সঙ্গে লইয়া মিস্পাতে অহীকামের পুত্র গদলিয়ের নিকটে আসিল; আর তাহারা মিস্পাতে একত্র ভোজন করিল। পরে নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল ও তাহার ঐ দশ জন সঙ্গী উঠিয়া বাবিল-রাজের নিযুক্ত দেশাধ্যক্ষকে, শাফনের পৌত্র অহীকামের পুত্র গদলিয়কে, খড়্‌গাঘাতে বধ করিল। আর মিস্পাতে গদলিয়ের সঙ্গে যে সমস্ত যিহূদী ছিল, এবং যে কল্‌দীয়দিগকে সেখানে পাওয়া গেল, তাহাদিগকে, অর্থাৎ যোদ্ধা সকলকে ইশ্মায়েল বধ করিল। সে গদলিয়কে বধ করিলে পর —কেহই সে বিষয় জানিত না—দ্বিতীয় দিনে শিখিম, শীলো ও শমরিয়া হইতে আশী জন পুরুষ আসিতেছিল; তাহারা দাড়ি কাটিয়া, ছিন্নবস্ত্র পরিয়া ও আপন আপন অঙ্গ কাটাকুটি করিয়া সদাপ্রভুর গৃহে উৎসর্গ করণার্থে নৈবেদ্য ও ধূপ হস্তে লইয়া [আসিতেছিল]। আর নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য মিস্পা হইতে নির্গত হইয়া রোদন করিতে করিতে বাহিরে গেল, এবং তাহাদের সহিত সাক্ষাৎ হইলে তাহাদিগকে কহিল, অহীকামের পুত্র গদলিয়ের কাছে চল। পরে তাহারা নগরের মধ্যস্থানে আসিলে নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল ও তাহার সঙ্গী পুরুষেরা তাহাদিগকে বধ করিয়া তথাকার কূপমধ্যে নিক্ষেপ করিল। কিন্তু তাহাদের মধ্যে দশ জনকে পাওয়া গেল, যাহারা ইশ্মায়েলকে কহিল, আমাদিগকে বধ করিবেন না, কেননা ক্ষেত্রে আমাদের গোম, যব, তৈল, ও মধুর গুপ্ত ভাণ্ডার আছে। তাহাতে সে ক্ষান্ত হইল, তাহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্যে তাহাদিগকে বধ করিল না। ঐ লোকদিগকে বধ করিলে পর ইশ্মায়েল যে কূপে তাহাদের শব গদলিয়ের পার্শ্বে ফেলিয়া দিয়াছিল, তাহা আসা রাজা ইস্রায়েল-রাজ বাশার ভয়ে প্রস্তুত করিয়াছিলেন; নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল তাহাই নিহতগণের শবে পরিপূর্ণ করিল। পরে ইশ্মায়েল মিস্পাতে অবশিষ্ট সমস্ত লোককে বন্দি করিয়া লইয়া গেল, রাজকুমারীগণ ও যে সমস্ত লোক মিস্পাতে অবশিষ্ট ছিল, যাহাদিগকে নবূষরদন রক্ষক-সেনাপতি অহীকামের পুত্র গদলিয়ের কাছে সমর্পণ করিয়াছিলেন, তাহাদিগকে নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল বন্দি করিয়া অম্মোন-সন্তানদের কাছে যাইবার জন্য প্রস্থান করিল। কিন্তু কারেহের পুত্র যোহানন ও তাহার সঙ্গী সেনাপতিরা সকলে যখন শুনিতে পাইল যে, নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল এই সকল দুষ্ক্রিয়া করিয়াছে, তখন তাহারা সমস্ত লোককে লইয়া নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েলের সহিত যুদ্ধ করিতে গেল, এবং গিবিয়োনে স্থিত বৃহৎ জলাশয়ের নিকটে তাহার দেখা পাইল। তখন ইশ্মায়েলের সঙ্গে যে সকল লোক ছিল, তাহারা কারেহের পুত্র যোহাননকে ও তাহার সঙ্গী সেনাপতিদিগকে দেখিয়া আনন্দিত হইল। আর ইশ্মায়েল সেই যে সকল লোককে বন্দি করিয়া মিস্পা হইতে লইয়া যাইতেছিল, তাহারা ঘুরিয়া কারেহের পুত্র যোহাননের নিকটে ফিরিয়া আসিল। কিন্তু নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল আট জন লোকের সহিত যোহাননের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিয়া অম্মোন-সন্তানদের কাছে গেল। নথনিয়ের পুত্র যে ইশ্মায়েল অহীকামের পুত্র গদলিয়কে বধ করিয়াছিল, তাহার নিকট হইতে কারেহের পুত্র যোহানন ও তাহার সঙ্গী সেনাপতিগণ যে সকল অবশিষ্ট লোককে মিস্পা হইতে ফিরাইয়া আনিয়াছিল, তাহাদিগকে সঙ্গে লইল, অর্থাৎ যুদ্ধকুশল পুরুষদিগকে এবং গিবিয়োন হইতে আনীত স্ত্রীলোক, বালকবালিকা, ও নপুংসকদিগকে সঙ্গে লইল; আর তাহারা কল্‌দীয়দের ভয়প্রযুক্ত মিসরে যাইবার জন্য বৈৎলেহমের পার্শ্বে কিমহমের যে সরাইখানা আছে, তথায় প্রবাস করিল। কেননা নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল বাবিল-রাজের নিযুক্ত দেশাধ্যক্ষ অহীকামের পুত্র গদলিয়কে বধ করিয়াছিল, তজ্জন্য তাহারা কল্‌দীয়দের হইতে ভীত হইয়াছিল। পরে সমস্ত সেনাপতি এবং কারেহের পুত্র যোহানন ও হোশয়িয়ের পুত্র যাসনিয়, আর ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সমস্ত লোক নিকটে আসিল, এবং যিরমিয় ভাববাদীকে কহিল, আমাদের এই বিনতি আপনার সাক্ষাতে গ্রাহ্য হউক; আপনি আমাদের নিমিত্ত, অর্থাৎ এই সমস্ত অবশিষ্ট লোকের নিমিত্ত, আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন; কেননা আপনি স্বচক্ষে আমাদিগকে দেখিতেছেন, আমরা অনেকে ছিলাম, এক্ষণে অল্পই অবশিষ্ট আছি। অতএব কোন্‌ পথ আমাদের গন্তব্য, কি করা আমাদের কর্ত্তব্য, তাহা আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে জ্ঞাত করুন। তখন যিরমিয় ভাববাদী তাহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদের কথা শুনিলাম, দেখ, তোমাদের বাক্যানুসারে আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিব, এবং সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে কোন উত্তর দিবেন, তাহার সমস্ত কথা তোমাদিগকে জ্ঞাত করিব, কিছুই তোমাদের কাছে গোপন করিব না। তাহারা যিরমিয়কে কহিল, সদাপ্রভু আমাদের মধ্যে সত্য ও বিশ্বাস্য সাক্ষী হউন; আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনার দ্বারা যে কোন কথা আমাদের কাছে বলিয়া পাঠাইবেন, তদনুসারে আমরা অবশ্য করিব। ভাল হউক, কি মন্দ হউক, আমরা যাঁহার কাছে আপনাকে প্রেরণ করিতেছি, আমাদের ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুর রবে আমরা অবধান করিব; যেন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে অবধান করি বলিয়া আমাদের মঙ্গল হয়। পরে দশ দিন গত হইলে সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল। তাহাতে তিনি কারেহের পুত্র যোহাননকে ও তাহার সঙ্গী সেনাপতিগণকে এবং ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সমস্ত লোককে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা যাঁহার কাছে আপনাদের বিনতি উপস্থিত করণার্থে আমাকে প্রেরণ করিয়াছিলে, সেই সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা যদি স্থির হইয়া এই দেশে বাস কর, তবে আমি তোমাদিগকে গাঁথিয়া তুলিব, উৎপাটন করিব না, তোমাদিগকে রোপন করিব, উন্মূলন করিব না; কেননা তোমাদের যে অমঙ্গল করিয়াছি, তদ্বিষয়ে ক্ষান্ত হইলাম। তোমরা যে বাবিল-রাজ হইতে ভীত হইয়াছ, তাহা হইতে ভীত হইও না; সদাপ্রভু কহেন, তাহা হইতে ভীত হইও না; কেননা তোমাদের নিস্তার করিতে ও তাহার হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিতে আমি তোমাদের সহবর্ত্তী। আর আমি তোমাদের প্রতি করুণা বর্ত্তাইব, তাহাতে সে তোমাদের প্রতি করুণা করিবে, ও তোমাদের ভূমিতে তোমাদিগকে প্রত্যাগমন করাইবে। কিন্তু যদি তোমরা বল, আমরা এ দেশে বাস করিব না, এইরূপে যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে অবধান না করিয়া বল, ‘না, আমরা মিসর দেশে যাইব, সেই স্থানে যুদ্ধ দেখিতে, তূরীবাদ্য শ্রবণ করিতে ও খাদ্যাভাবে ক্ষুধাভোগ করিতে হইবে না, আর আমরা তথায় বাস করিব, ‘তবে এখন, হে যিহূদার অবশিষ্ট লোক সকল, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন; বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা যদি মিসরে প্রবেশ করিতে নিতান্তই উন্মুখ হও, ও সেখানে প্রবাস করিতে যাও, তাহা হইলে যে খড়্‌গের ভয় করিতেছ, তাহা মিসর দেশেই তোমাদের লাগাল পাইবে, আর যে দুর্ভিক্ষে ব্যাকুল হইতেছ, তাহা মিসর দেশে তোমাদের অনুবর্ত্তী হইবে, তাহাতে তোমরা সেখানে মরিবে। যে সকল লোক মিসরে প্রবাস করিতে যাইবার জন্য উন্মুখ হইয়াছে, তাহাদের এই গতি হইবে, তাহারা খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা মারা পড়িবে; আমি তাহাদের প্রতি যে অমঙ্গল ঘটাইব, তাহা হইতে তাহাদের মধ্যে কেহই উত্তীর্ণ কি রক্ষাপ্রাপ্ত হইবে না। কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, যিরূশালেম-নিবাসীদের উপরে যেমন আমার ক্রোধ ও কোপ ঢালা গিয়াছে, তোমরা মিসরে গমন করিলে তোমাদের উপরে তেমনি আমার কোপ ঢালা যাইবে, তোমরা অভিসম্পাত, বিস্ময়, শাপ ও টিটকারির পাত্র হইবে; এই স্থান আর কখনও দেখিতে পাইবে না। হে যিহূদার অবশিষ্ট লোক সকল, সদাপ্রভু তোমাদিগকে বলিয়াছেন, তোমরা মিসরে প্রবেশ করিও না; নিশ্চয় জানিও, আমি অদ্য তোমাদিগকে এই সাক্ষ্য দিলাম। বস্তুতঃ তোমরা আপনাদের প্রাণের বিরুদ্ধে প্রতারণা করিয়াছ, কেননা তোমরা আমাকে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রেরণ করিয়াছিলে, বলিয়াছিলে, ‘তুমি আমাদের নিমিত্ত আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা কর, তাহাতে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যাহা যাহা বলিবেন, তদনুসারে তুমি আমাদিগকে জানাইবে, আমরা তাহা করিব।’ আর অদ্য আমি তোমাদিগকে তাহা জানাইলাম; কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে সকল বিষয়ের জন্য আমাকে তোমাদের কাছে পাঠাইয়াছেন, তাহার কোন বিষয়ে তোমরা তাঁহার রবে অবধান করিলে না। অতএব এখন নিশ্চয় জানিও, তোমরা যে স্থানে প্রবাস করণার্থে যাইতে বাঞ্ছা করিতেছ, সে স্থানে খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা মারা পড়িবে। যিরমিয় যখন সকল লোকের কাছে তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্য—যে সকল বাক্য বলিবার জন্য তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁহাকে তাহাদের কাছে প্রেরণ করিয়াছিলেন, সেই সকল বাক্য—সাঙ্গ করিলেন, তখন হোশয়িয়ের পুত্র অসরিয় ও কারেহের পুত্র যোহানন, এবং গর্ব্বিত লোকেরা সকলে যিরমিয়কে কহিল, তুমি মিথ্যা বলিতেছ; মিসরে প্রবাস করিতে যাইও না, এই কথা বলিতে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে পাঠান নাই। কিন্তু নেরিয়ের পুত্র বারূক আমাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবর্ত্তনা করিয়াছে, আমাদিগকে কল্‌দীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবার জন্যই তাহা করিয়াছে, যেন তাহারা আমাদিগকে বধ করে, কিম্বা বন্দি করিয়া বাবিলে লইয়া যায়। এইরূপে কারেহের পুত্র যোহানন এবং সেনাপতিরা সকলে ও সমস্ত লোক যিহূদা দেশে বাস করিবার সম্বন্ধে সদাপ্রভুর রবে অবধান করিল না। কিন্তু কারেহের পুত্র যোহানন এবং সেনাপতিরা সকলে যিহূদার সমস্ত অবশিষ্টাংশকে লইল—অর্থাৎ জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন হইলে পর তাহাদের নিকট হইতে যিহূদা দেশে প্রবাস করণার্থে যাহারা ফিরিয়া আসিয়াছিল, সেই পুরুষ, স্ত্রী, ও বালকবালিকা সকলকে, এবং রাজকুমারীগণকে, ও যে সকল লোককে, নবূষরদন রক্ষক-সেনাপতি শাফনের পৌত্র অহীকামের পুত্র গদলিয়ের কাছে রাখিয়া গিয়াছিলেন, তাহাদিগকে, এবং যিরমিয় ভাববাদীকে ও নেরিয়ের পুত্র বারূককে লইল—এবং মিসর দেশে প্রবেশ করিল; কারণ তাহারা সদাপ্রভুর রবে অবধান করিল না। তাহারা তফন্‌হেষ পর্য্যন্ত গেল। পরে তফন্‌হেষে যিরমিয়ের নিকট সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, তোমার হাতে খানকতক বড় বড় পাথর লইয়া তফন্‌হেষে ফরৌণের বাটীর প্রবেশস্থানে যে ইটের গাঁথনি আছে, তাহার সুরকির মধ্যে যিহূদীদের সাক্ষাতে ঐ প্রস্তরগুলা লুকাইয়া রাখ, আর তাহাদিগকে বল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি আদেশ প্রেরণ করিয়া আপন দাস বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরকে লইয়া আসিব, এবং এই যে সকল প্রস্তর লুকাইয়া রাখিলাম, ইহার উপরে তাহার সিংহাসন স্থাপন করিব, আর সে ইহার উপরে আপনার রাজকীয় চন্দ্রাতপ বিস্তার করিবে। সে আসিয়া মিসর দেশে আঘাত করিবে, মৃত্যুর পাত্রকে মৃত্যুতে, বন্দিত্বের পাত্রকে বন্দিত্বে, ও খড়্‌গের পাত্রকে খড়্‌গে সমর্পণ করিবে। আর আমি মিসরস্থ দেবালয়-সমূহে আগুন লাগাইব, বস্তুতঃ সে দেবগণের কতকগুলিকে পোড়াইয়া দিবে, ও কতকগুলিকে বন্দি করিয়া লইয়া যাইবে; এবং মেষপালক যেমন আপন গাত্রে বস্ত্র জড়ায়, তদ্রূপ সে এই মিসর দেশ দ্বারা আপনাকে সজ্জিত করিবে; এবং সে এই স্থান হইতে শান্তিতে প্রস্থান করিবে। আর সে মিসর দেশীয় সূর্য্যপুরীর স্তম্ভ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, ও মিসরস্থ দেবালয় সকল আগুনে পোড়াইয়া দিবে। মিসর দেশে বাসকারী, মিগ্‌দোলে, তফন্‌হেষে, নোফে ও পথ্রোষ প্রদেশে বাসকারী যিহূদীদের বিষয়ে যিরমিয়ের নিকটে এই বাক্য উপস্থিত হইল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, যিরূশালেমের উপরে ও যিহূদার সমুদয় নগরের উপরে আমি যে সমস্ত অমঙ্গল উপস্থিত করিয়াছি, তাহা তোমরা দেখিয়াছ; দেখ, আজ সে সকল উৎসন্ন স্থান আছে, তথায় কেহ বাস করে না; ইহার কারণ লোকদের দুষ্টতা, যাহা আমাকে অসন্তুষ্ট করণার্থে তাহারা করিত; তাহাদের, তোমাদের ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের অপরিচিত অন্য দেবগণের সেবা করণার্থে তাহারা তাহাদের উদ্দেশে ধূপদাহ করিতে গমন করিত। তথাপি আমি আমার সমস্ত দাস ভাববাদিগণকে তোমাদের নিকটে পাঠাইতাম, প্রত্যূষে উঠিয়া পাঠাইয়া বলিতাম, আহা, তোমরা আমার ঘৃণিত এই জঘন্য কার্য্য করিও না। কিন্তু তাহারা অবধান করিত না, এবং আপন আপন দুষ্ক্রিয়া হইতে ফিরিবার নিমিত্ত, অন্য দেবগণের উদ্দেশে আর ধূপ না জ্বালাইবার নিমিত্ত, কর্ণপাত করিত না। এই জন্য আমার কোপ ও ক্রোধ বর্ষিত হইল, যিহূদার নগরে নগরে ও যিরূশালেমের পথে পথে জ্বলিয়া উঠিল, তাহাতে সে সকল অদ্য যেমন রহিয়াছে, তেমনি উৎসন্ন ও ধ্বংসিত হইয়াছে। অতএব এখন সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা কেন আপন আপন প্রাণের বিরুদ্ধে মহাপাপ করিতেছ? এ কার্য্যে ত আপনাদের সম্পর্কীয় পুরুষ, স্ত্রী, বালক ও স্তন্যপায়ী শিশুদিগকে যিহূদার মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিবে, আপনাদের কাহাকেও অবশিষ্ট রাখিবে না। তোমরা এই যে মিসর দেশে প্রবাসার্থে আসিয়াছ, এখানে অন্য দেবগণের উদ্দেশে ধূপদাহ করিয়া কেন আপনাদের হস্তকৃত কর্ম্ম দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করিতেছ? তোমরা উচ্ছিন্ন হইবে, এবং পৃথিবীস্থ সমুদয় জাতির মধ্যে শাপের ও টিটকারির পাত্র হইবে। তোমাদের পিতৃপুরুষদের দুষ্ক্রিয়া যিহূদার রাজাদের দুষ্ক্রিয়া, তাহাদের স্ত্রীগণের দুষ্ক্রিয়া, তোমাদের নিজেদের দুষ্ক্রিয়া ও তোমাদের স্ত্রীগণের দুষ্ক্রিয়া, যাহা যিহূদা দেশে ও যিরূশালেমের পথে পথে করা হইত, সে সমস্ত কি ভুলিয়া গিয়াছ? এই লোকেরা অদ্য পর্য্যন্ত চূর্ণমনা হয় নাই, ভয়ও করে নাই, এবং আমি আপনার যে ব্যবস্থা ও বিধিকলাপ তোমাদের সম্মুখে ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের সম্মুখে রাখিয়াছি ইহারা তদনুসারে আচরণ করে নাই। এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমাদের অমঙ্গল করিতে ও সমস্ত যিহূদাকে উচ্ছিন্ন করিতে উন্মুখ হইলাম। আর আমি যিহূদার অবশিষ্টাংশকে, অর্থাৎ যাহারা মিসর দেশে প্রবাস করিতে যাইবার জন্য উন্মুখ হইয়াছে, তাহাদিগকে ধরিব; তাহারা সকলে বিনষ্ট হইবে, মিসর দেশেই পতিত হইবে; তাহারা খড়্‌গ ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা বিনষ্ট হইবে; ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সকলে খড়্‌গে ও দুর্ভিক্ষে মারা পড়িবে, এবং অভিসম্পাত, বিস্ময়, শাপ ও টিটকারির পাত্র হইবে। আমি যেমন খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা যিরূশালেমকে দণ্ড দিয়াছি, তদ্রূপ মিসর দেশ-নিবাসীদিগকে দণ্ড দিব; তাহাতে যিহূদার যে অবশিষ্ট লোক মিসরে প্রবাস করিতে আসিয়াছে, তাহাদের মধ্যে কেহ উত্তীর্ণ কি রক্ষাপ্রাপ্ত হইবে না; সেই যিহূদা দেশে ফিরিয়া যাইতে পারিবে না, সেখানে বাস করিবার জন্য ফিরিয়া যাইতে বাঞ্ছা করিতেছে; কতকগুলি পলাতক ভিন্ন আর কেহ ফিরিয়া যাইবে না। তখন যে সকল পুরুষ জ্ঞাত ছিল যে, তাহাদের স্ত্রীরা অন্য দেবগণের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইয়াছে, তাহারা এবং নিকটে দণ্ডায়মান সমস্ত স্ত্রীলোক, এক মহাসমাজ, অর্থাৎ মিসরের পথ্রোষ প্রদেশে বাসকারী সমস্ত লোক যিরমিয়কে উত্তর দিয়া কহিল, তুমি সদাপ্রভুর নামে আমাদিগকে যে কথা বলিয়াছ, তোমার সে কথা আমরা শুনিব না; কিন্তু আমাদেরই মুখনির্গত সমস্ত বাক্যানুরূপ কার্য্য করিবই করিব, আকাশরাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইব ও পেয় নৈবেদ্য ঢালিব; আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষগণ, আমাদের রাজগণ, ও আমাদের অধ্যক্ষগণ যিহূদার নগরে নগরে ও যিরূশালেমের পথে পথে তাহাই করিতাম, আর তৎকালে আমরা ভক্ষ্যদ্রব্যে তৃপ্ত হইতাম, এবং সুখে ছিলাম, কোন অমঙ্গল দেখিতাম না। কিন্তু যে অবধি আমরা আকাশরাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালান ও পেয় নৈবেদ্য ঢালা ছাড়িয়া দিয়াছি, সে অবধি আমাদের সমস্ত বস্তুর অভাব হইতেছে, এবং আমরা খড়্‌গ ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা বিনষ্ট হইতেছি। আর আমরা যখন আকাশরাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইতাম ও পেয় নৈবেদ্য ঢালিতাম, তখন কি আপন আপন স্বামী ব্যতিরেকে তাঁহার পূজার জন্য পূপ প্রস্তুত করিতাম, ও তাঁহার উদ্দেশে পেয় নৈবেদ্য ঢালিতাম? পরে যিরমিয় সমস্ত লোককে, পুরুষ, কি স্ত্রী যত লোক সেই উত্তর দিয়াছিল, সেই সমস্ত লোককে এই কথা কহিলেন, যিহূদার নগরে নগরে ও যিরূশালেমের পথে পথে তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষগণ, তোমাদের রাজগণ, ও অধ্যক্ষগণ, এবং জনপদস্থ প্রজাগণ যে, ধূপদাহ করিতে, সদাপ্রভু কি সেই ধূপদাহ স্মরণ করেন নাই, তাহা কি তাঁহার মনে পড়ে নাই? সদাপ্রভু তোমাদের আচারের দুষ্টতা ও তোমাদের কৃত ঘৃণার্হ ক্রিয়া প্রযুক্ত আর সহ্য করিতে পারিলেন না, এই জন্য তোমাদের দেশ অদ্য যেমন রহিয়াছে, তেমনি উৎসন্ন, বিস্ময়জনক, শাপগ্রস্ত ও নিবাসী-বিহীন হইল। তোমরা ধূপদাহ করিয়াছ, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছ, সদাপ্রভুর রবে অবধান কর নাই, এবং তাঁহার ব্যবস্থা, বিধি ও সাক্ষ্যানুসারে চল নাই, তজ্জন্যই অদ্য যেমন রহিয়াছে, তেমনি তোমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটিয়াছে। যিরমিয় সমস্ত পুরুষলোককে এবং সমস্ত স্ত্রীলোককে আরও কহিলেন, হে মিসর দেশস্থ সমস্ত যিহূদী, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন; বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, তোমরা ও তোমাদের স্ত্রীরা মুখে যাহা বলিয়াছ, হস্ত দ্বারা তাহা সম্পন্ন করিয়াছ, তোমরা বলিয়াছ, ‘আমরা আকাশরাণীর উদ্দেশে ধূপদাহ করিবার ও পেয় নৈবেদ্য ঢালিবার যে মানত করিয়াছি, তাহা অবশ্য সিদ্ধ করিব;’ ভাল, তোমাদের মানত অটল কর, তোমাদের মানত সিদ্ধ কর। অতএব, হে মিসর-দেশনিবাসী সমস্ত যিহূদী, সদাপ্রভুর বাক্য শুন; সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি আপন মহানামে শপথ করিয়াছি, ‘জীবন্ত প্রভু সদাপ্রভুর দিব্য,’ এই কথা বলিয়া মিসর দেশস্থ কোন যিহূদী আমার নাম আর মুখে আনিবে না। দেখ, আমি তাহাদের অমঙ্গলের নিমিত্ত জাগরূক, মঙ্গলের নিমিত্ত নয়; তাহাতে মিসর দেশস্থ সমস্ত যিহূদার লোক খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দ্বারা নিঃশেষে বিনষ্ট হইবে। খড়্‌গ হইতে উত্তীর্ণ অতি অল্প লোক মিসর দেশ হইতে যিহূদা দেশে ফিরিয়া যাইবে; ইহাতে যিহূদার অবশিষ্ট সমস্ত লোক, যাহারা মিসর দেশে প্রবাস করণার্থে এখানে আসিয়াছে, তাহারা জানিতে পারিবে যে, কাহার বাক্য অটল থাকিবে, আমার কি তাহাদের। সদাপ্রভু কহেন, তোমাদের কাছে ইহাই চিহ্ন হইবে যে, আমি এই স্থানে তোমাদিগকে প্রতিফল দিব, যেন তোমরা জানিতে পার যে, তোমাদের বিরুদ্ধে আমার বাক্য অবশ্য অটল থাকিবে, অমঙ্গলের নিমিত্ত। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি যেমন যিহূদা-রাজ সিদিকিয়কে তাহার প্রাণনাশে সচেষ্ট শত্রু বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের হস্তে সমর্পণ করিয়াছি, তেমনি মিসর-রাজ ফরৌণ-হফ্রাকেও তাহার শত্রুদের হস্তে, যাহারা তাহার প্রাণনাশে সচেষ্ট, তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিব। যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের চতুর্থ বৎসরে যখন নেরিয়ের পুত্র বারূক এই সমস্ত কথা যিরমিয়ের মুখে শুনিয়া পুস্তকে লিখিলেন, তখন যিরমিয় ভাববাদী তাঁহাকে এই কথা কহিলেন, হে বারূক, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তোমার বিষয়ে এই কথা কহেন, তুমি বলিয়াছ, হায় হায়, ধিক্‌ আমাকে! কেননা সদাপ্রভু আমার ব্যথার উপরে দুঃখ যোগ করিয়াছেন; আমি কোঁকাইতে কোঁকাইতে শ্রান্ত হইয়াছি, কিছুমাত্র বিশ্রাম পাইতেছি না। তুমি তাহাকে এই কথা বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি যাহা গাঁথিয়াছি, তাহা আমি ভাঙ্গিয়া ফেলিব; যাহা রোপন করিয়াছি, তাহা আমি উৎপাটন করিব; আর এই সমগ্র দেশে উহা করিব। তবে তুমি কি আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্টা করিবে? সে চেষ্টা করিও না; কেননা দেখ, আমি সমস্ত মর্ত্ত্যের প্রতি অমঙ্গল ঘটাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন; কিন্তু তুমি যে সকল স্থানে যাইবে, সে সকল স্থানে লুট দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণ তোমাকে দিব। জাতিগণের বিষয়ে যিরমিয় ভাববাদীর নিকটে সদাপ্রভুর যে বাক্য উপস্থিত হইল, তাহার বৃত্তান্ত। মিসরের বিষয়। যোশিয়ের পুত্র যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের চতুর্থ বৎসরে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর মিসর-রাজ ফরৌণ-নখোর যে সৈন্যসামন্তকে পরাজয় করিলেন, ফরাৎ নদীর তীরস্থ কর্কমীশে উপস্থিত সেই সৈন্যসামন্ত বিষয়ক কথা। তোমরা চর্ম্মঢাল ও ফলক প্রস্তুত কর, এবং যুদ্ধ করণার্থে নিকটে আইস। অশ্বগণকে সজ্জিত কর, হে অশ্বারোহিগণ, অশ্বারোহণ কর, এবং শিরস্ত্রাণ পরিয়া সম্মুখে দাঁড়াও, বড়শা চকচকে কর, বর্ম্ম পরিধান কর। আমি কি জন্য ইহা দেখিয়াছি? তাহারা উদ্বিগ্ন হইয়া পৃষ্ঠ ফিরাইতেছে, তাহাদের বীরগণ চূর্ণ হইতেছে, তাড়াতাড়ি পলায়ন করিতেছে, ফিরিয়া চাহে না; চারিদিকে ভয়, ইহা সদাপ্রভু কহেন। দ্রুতগামী লোককে পলায়ন করিতে দিও না, বীরকে পার পাইতে দিও না; উত্তরদিকে ফরাৎ নদীর নিকটে তাহারা উছোট খাইয়া পড়িয়াছে। ঐ কে, যে নীল নদের ন্যায় উঠিয়া আসিতেছে, নদীসমূহের ন্যায় জলরাশি আস্ফালিত করিতেছে? মিসর নীল নদের ন্যায় উঠিয়া আসিতেছে, নদীসমূহের ন্যায় জলরাশি আস্ফালিত করিতেছে; আর সে বলে, আমি উথলিয়া উঠিব, ভূতল আপ্লাবিত করিব, আমি নগর ও তন্নিবাসীদিগকে বিনষ্ট করিব। হে অশ্বগণ, উঠিয়া যাও; হে রথ সকল, উন্মত্তের ন্যায় হও; বীরগণ, ঢালধারী কূশ ও পূট, এবং ধনুর্দ্ধর ও ধনুকে চাড়াদায়ী লূদীয়গণ বহির্গত হউক। এ প্রভুর, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর দিন, তাঁহার বিপক্ষদিগকে প্রতিফল দিবার জন্য প্রতিশোধের দিন; খড়্‌গ গ্রাস করিয়া তৃপ্ত হইবে, তাহাদের রক্তপানে পরিতৃপ্ত হইবে, কেননা উত্তরদেশে ফরাৎ নদীর নিকটে প্রভুর, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর এক যজ্ঞ হইতেছে। হে অনূঢ়ে মিসর-কন্যে, তুমি গিলিয়দে উঠিয়া যাও, তরুসার গ্রহণ কর; তুমি বৃথাই অনেক ঔষধ ব্যবহার করিতেছ; তোমার পটী নাই। জাতিগণ তোমার অপমানের কথা শুনিয়াছে, তোমার কাতরোক্তিতে পৃথিবী পরিপূর্ণ হইতেছে, কেননা বীর বীরে উছোট খাইয়াছে, তাহারা উভয়ে একসঙ্গে পতিত হইল। মিসর দেশ পরাজয় করণার্থে বাবিল রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের আগমন বিষয়ে সদাপ্রভু যিরমিয়কে এই কথা কহিলেন। তোমরা মিসরে প্রচার কর, মিগ্‌দোলে ঘোষণা কর, এবং নোফে ও তফন্‌হেষে ঘোষণা কর, বল, তুমি উঠিয়া দাঁড়াও, আপনাকে প্রস্তুত কর, কেননা খড়্‌গ তোমার চারিদিকে গ্রাস করিয়াছে। তোমার বলবানেরা কেন ভাসিয়া গেল? তাহারা স্থির থাকিতে পারিল না, যেহেতু সদাপ্রভু তাহাদিগকে অধঃপাতিত করিলেন। তিনি অনেককে উছোট খাওয়াইলেন, হাঁ, তাহারা এক জন অন্যের উপরে পতিত হইল; আর তাহারা বলিল, উঠ, আমরা এই উৎপীড়ক খড়্‌গ হইতে ফিরিয়া স্বজাতির নিকটে ও আমাদের জন্মভূমিতে যাই। সে স্থানে লোকেরা উচ্চৈঃস্বরে বলিল, মিসর-রাজ ফরৌণ শব্দমাত্র, সে সময় বহিয়া যাইতে দিয়াছে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু যাঁহার নাম, সেই রাজা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, পর্ব্বতগণের মধ্যে তাবোরের সদৃশ কিম্বা সমুদ্রের নিকটস্থ কর্মিলের সদৃশ এক ব্যক্তি আসিবে। হে মিসর-নিবাসিনি কন্যে, নির্ব্বাসের জন্য সম্বল প্রস্তুত কর; কেননা নোফ ধ্বংসিত, দগ্ধ ও নিবাসীবিহীন হইবে। মিসর অতি সুন্দরী তরুণী গাভী, কিন্তু উত্তরদিক্‌ হইতে দংশক আসিতেছে, আসিতেছে। মিসরের মধ্যবর্ত্তী তাহার বেতনভোগীরা পুষ্ট গোবৎসের ন্যায়, তাহারাও ফিরিয়া গিয়াছে, একযোগে পলায়ন করিয়াছে, স্থির থাকে নাই, কেননা তাহাদের বিপদের দিন, প্রতিফল পাইবার সময়, তাহাদের কাছে উপস্থিত। তাহার শব্দ সর্পের ন্যায় চলিবে; কারণ উহারা সসৈন্যে চলিবে, এবং কাঠুরিয়াদের ন্যায় কুড়ালি লইয়া তাহার বিরুদ্ধে আসিবে। সদাপ্রভু কহেন, উহারা তাহার অরণ্য কাটিয়া ফেলিবে, তাহার অনুসন্ধান করা যায় না, কারণ উহারা পঙ্গপাল অপেক্ষাও অধিক, উহারা অসংখ্য। মিসরকন্যা লজ্জিতা হইবে, সে উত্তরদেশীয়দের হস্তে সমর্পিতা হইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, কহেন, দেখ, আমি নো নগরের আমোন দেবকে, ফরৌণ ও মিসরকে এবং তাহার দেবগণ ও রাজগণকে, ফরৌণ ও তাহার শরণাপন্ন সকলকে প্রতিফল দিব; আর যাহারা তাহাদের প্রাণনাশার্থে সচেষ্ট, তাহাদের হস্তে, বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের ও তাহার দাসগণের হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিব; কিন্তু তৎপরে সেই দেশ পূর্ব্বকালের ন্যায় নিবাসবিশিষ্ট হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। পরন্তু, হে আমার দাস যাকোব, তুমি ভয় করিও না; হে ইস্রায়েল, নিরাশ হইও না; কেননা দেখ, আমি দূর হইতে তোমাকে, বন্দিত্ব-দেশ হইতে তোমার বংশকে নিস্তার করিব; যাকোব ফিরিয়া আসিবে, নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত থাকিবে, কেহ তাহাকে ভয় দেখাইবে না। সদাপ্রভু কহেন, হে আমার দাস যাকোব, তুমি ভয় করিও না, কেননা আমি তোমার সহবর্ত্তী; হাঁ, যাহাদের মধ্যে আমি তোমাকে দূর করিয়াছি, সেই সমস্ত জাতিকে নিঃশেষে সংহার করিব, কিন্তু তোমাকে নিঃশেষে সংহার করিব না; আমি বিচারানুরূপ শাস্তি দিব, কোন মতে অদণ্ডিত রাখিব না। ফরৌণ ঘসা পরাজয় করিবার পূর্ব্বে পলেষ্টীয়দের বিষয়ে যিরমিয় ভাববাদীর নিকটে সদাপ্রভুর যে বাক্য উপস্থিত হইল, তাহার বৃত্তান্ত। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, উত্তরদিক্‌ হইতে জল উথলিয়া আসিতেছে, তাহা প্লাবনকারী বন্যা হইয়া উঠিবে, দেশ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু, নগর ও তন্নিবাসীদিগকে, আপ্লাবিত করিবে, তাহাতে লোকেরা ক্রন্দন করিবে, দেশনিবাসীরা সকলে হাহাকার করিবে। শত্রুর বলবান অশ্বদের খুরের খটখটানিতে, রথের ঘর্ঘরাণিতে, চক্রের শব্দে পিতারা হস্তের অবশতা প্রযুক্ত আপন আপন বালকদের প্রতিও ফিরিয়া দেখিবে না। কেননা সমস্ত পলেষ্টীয়কে বিনষ্ট করিবার দিন, সোর ও সীদোনের প্রত্যেক অবশিষ্ট সহকারীকে উচ্ছিন্ন করিবার দিন আসিতেছে; কারণ সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দিগকে, কপ্তোরের উপকূলের অবশিষ্ট লোককে, বিনষ্ট করিবেন। ঘসার মস্তকে টাক পড়িল, অস্কিলোন, তাহাদের তলভূমির অবশিষ্টাংশ, নীরব হইল; তুমি কত কাল আপনার অঙ্গ কাটাকুটি করিবে? হে সদাপ্রভুর খড়্‌গ, তুমি আর কত কাল পরে ক্ষান্ত হইবে? তুমি আপন কোষে প্রবেশ কর, শান্ত হও, ক্ষান্ত হও। উহা কি প্রকারে ক্ষান্ত হইতে পারে? সদাপ্রভু ত উহাকে আজ্ঞা দিয়াছেন; অস্কিলোনের বিরুদ্ধে ও সমুদ্র-বক্ষের বিরুদ্ধে, সেইখানে তিনি তাহাকে নিযুক্ত করিয়াছেন। মোয়াবের বিষয়। বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, হায় হায় নবো! উহা ত উচ্ছিন্ন হইল; কিরিয়াথয়িম লজ্জিত হইল, পরহস্তগত হইল, মিস্‌গব লজ্জিত হইল, উদ্বিগ্ন হইল। মোয়াবের প্রশংসা আর নাই, লোকেরা হিশ্‌বোনে তাহার অমঙ্গলার্থ মন্ত্রণা করিয়াছে, ‘আইস, আমরা তাহাদিগকে উচ্ছিন্ন করি, জাতি থাকিতে দিব না।’ হে মদ্‌মেনা, তুমিও নিস্তব্ধ হইবে, খড়্‌গ তোমার পশ্চাদগামী হইবে। হোরোণয়িম হইতে ক্রন্দনের শব্দ, ধ্বংস ও মহাবিনাশ। মোয়াব ভগ্ন হইল; তাহার ক্ষুদ্র লোকদের ক্রন্দনের শব্দ শুনা যাইতেছে। লূহীতের আরোহণ-পথে লোকে রোদন করিতে করিতে উঠিতেছে; কেননা হোরোণয়িমের অবরোহণ-পথে বিনাশের জন্য সঙ্কটের ক্রন্দন শুনা যাইতেছে। ‘পলায়ন কর, আপন আপন প্রাণ রক্ষা কর, প্রান্তরস্থ ঝাউ গাছের ন্যায় হও।’ কারণ তুমি আপন কার্য্যে ও আপন ধনকোষে নির্ভর করিতে, এই জন্য তুমিও পরহস্তগত হইবে, এবং কমোশ নির্ব্বাসার্থে গমন করিবে, তাহার যাজকগণ ও অধ্যক্ষগণ একসঙ্গে যাইবে। প্রত্যেক নগরের উপরে বিনাশক আসিবে, কোন নগর রক্ষা পাইবে না; তলভূমি বিনষ্ট হইবে, সমভূমি উচ্ছিন্ন হইবে, যেমন সদাপ্রভু বলিয়াছেন। মোয়াবকে পক্ষযুগল দেও, যেন সে উড়িয়া পলাইয়া যায়; তাহার নগর সকল ধ্বংস হইবে, তন্মধ্যে বাসকারী কেহ থাকিবে না। শাপগ্রস্ত হউক সেই ব্যক্তি, যে শিথিলভাবে সদাপ্রভুর কার্য্য করে; শাপগ্রস্ত হউক সেই ব্যক্তি, যে আপন খড়্‌গকে রক্তপাত করিতে বারণ করে। মোয়াব বাল্যকাল অবধি নিশ্চিন্ত ও আপন গাদের উপরে সুস্থির আছে, এক পাত্র হইতে অন্য পাত্রে ঢালা হয় নাই, সে নির্ব্বাসার্থে প্রস্থান করে নাই; এই জন্য তাহার রস তাহার মধ্যেই রহিয়াছে, ও তাহার স্বাদ বিকৃত হয় নাই। অতএব সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন দিন আসিতেছে, যে দিন আমি তাহার কাছে সেচকদিগকে পাঠাইব, তাহারা তাহাকে সেচন করিবে, তাহার পাত্র সকল শূন্য করিবে, এবং তাহাদের কুপা সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবে। ইস্রায়েল-কুল আপন বিশ্বাসভূমি বৈথেলের বিষয়ে যেমন লজ্জিত হইয়াছিল, তেমনি মোয়াব কমোশের বিষয়ে লজ্জিত হইবে। তোমরা কেমন করিয়া বলিতে পার, আমরা বীর ও যুদ্ধের জন্য বলবন্ত? মোয়াব বিনষ্ট হইল, তাহার নগর সকল ধূমময় হইয়া উঠিতেছে, ও তাহার মনোনীত যুবকেরা বধ্যস্থানে নামিয়া গিয়াছে; ইহা সেই রাজা বলেন, যাঁহার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু। মোয়াবের বিপদ আগতপ্রায় ও তাহার অমঙ্গল অতি ত্বরান্বিত। তোমরা যত লোক তাহার চারিদিকে থাক, তাহার জন্য বিলাপ কর, আর তোমরা যত লোক তাহার নাম জান, বল, এই দৃঢ় দণ্ড, এই চারু যষ্টি কেমন ভগ্ন হইয়াছে! হে দীবোন-নিবাসিনি কন্যে, তুমি আপন প্রতাপ হইতে নামিয়া আইস, শুষ্ক ভূমিতে বস, কেননা মোয়াবের বিনাশক তোমার বিরুদ্ধে উঠিয়া আসিয়াছে, তোমার দৃঢ় দুর্গ সকল ভগ্ন করিয়াছে। হে অরোয়ের-নিবাসিনি, তুমি পথের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া অবলোকন কর, এবং পলাতককে ও রক্ষার্থিনী স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা কর, কি হইয়াছে? মোয়াব লজ্জিত হইয়াছে, কেননা সে ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে; তোমরা হাহাকার ও ক্রন্দন কর; অর্ণোনে এই কথা প্রচার কর, ‘মোয়াব উৎসন্ন হইল’। আর বিচার দণ্ড উপস্থিত হইল, সমভূমির উপরে, হোলন, যহস, মেফাৎ, দীবোন, নবো, বৈৎ-দিব্লাথয়িম, কিরিয়াথয়িম, বৈৎ-গামূল, বৈৎ-মিয়োন, করিয়োৎ ও বস্রার উপরে, এবং মোয়াব দেশের দূরস্থ কি নিকটস্থ সমস্ত নগরের উপরে হইল। মোয়াবের শৃঙ্গ ছিন্ন, ও তাহার বাহু ভগ্ন হইল, ইহা সদাপ্রভু কহেন। তোমরা তাহাকে মত্ত কর, কারণ সে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বড়াই করিত। আর মোয়াব বমন করিয়া লুণ্ঠন করিবে, এবং আপনিও পরিহাস-পাত্র হইবে। ইস্রায়েল কি তোমার পরিহাস-পাত্র ছিল না? সে কি চোরের মধ্যে ধরা পড়িয়াছিল? তুমি তাহার বিষয় যতবার কথা বল, ততবার মাথা নাড়িয়া থাক। হে মোয়াব-নিবাসীগণ, তোমরা নগর সকল ত্যাগ কর, শৈলে গিয়া বাস কর, এমন কপোতের ন্যায় হও, যে গর্ত্তের মুখের ধারে বাসা করে। আমরা মোয়াবের অহঙ্কারের কথা শুনিয়াছি, সে অত্যন্ত অহঙ্কারী; তাহার অভিমান, অহঙ্কার, উদ্ধতভাব ও চিত্ত-গরিমার [কথা শুনিয়াছি]। সদাপ্রভু কহেন, আমি তাহার ক্রোধ জানি, তাহা কিছু নয়; তাহার দর্প কিছু কাজের হয় নাই। এই জন্য আমি মোয়াবের বিষয়ে হাহাকার করিব, সমস্ত মোয়াবের জন্য ক্রন্দন করিব; কীর-হেরেসের লোকদের বিষয়ে কাকূক্তি করা যাইবে। হে সিব্‌মার দ্রাক্ষালতে, আমি যাসেরের রোদন অপেক্ষা তোমার বিষয়ে অধিক রোদন করিব; তোমার শাখা সকল সমুদ্রপারে যাইত, তাহা যাসের সমুদ্র পর্য্যন্ত বিস্তারিত হইত; তোমার গ্রীষ্মের ফলের উপরে ও দ্রাক্ষাফলের উপরে লুটকারী আসিয়া পড়িয়াছে। মোয়াবের ফলবান্‌ ক্ষেত্র ও ভূমি হইতে আনন্দ ও উল্লাস দূরীকৃত হইল, এবং আমি দ্রাক্ষাকুণ্ড দ্রাক্ষারস-বিহীন করিলাম; লোকে হর্ষনাদ সহকারে আর দ্রাক্ষা মর্দ্দন করিবে না; সেই নাদ হর্ষনাদ হইবে না। হিশ্‌বোন অবধি ইলিয়ালী পর্য্যন্ত চীৎকার উঠিতেছে, তাহার শব্দ যহস পর্য্যন্ত ব্যাপিতেছে; সোয়র অবধি হোরোণয়িম পর্য্যন্ত, ইগ্লৎ-শলিশীয়া পর্য্যন্ত, [শব্দ যাইতেছে], কেননা নিম্রীমস্থ জলসমূহও মরুস্থান হইল। সদাপ্রভু আরও কহেন, আমি মোয়াবের মধ্যে উচ্চস্থলীতে বলিদানকারী ও তাহার দেবের উদ্দেশে ধূপদাহকারী লোকের লোপ করিব। এই জন্য মোয়াবের নিমিত্ত আমার হৃদয় বংশীর ন্যায় বাজিতেছে, কীর-হেরেসের লোকদের বিষয়ে আমার অন্তঃকরণ বংশীর ন্যায় বাজিতেছে; এই জন্য তাহার উপার্জ্জিত ধনবাহুল্য নষ্ট হইল। হাঁ, প্রত্যেক মস্তক টাকপড়া ও প্রত্যেক দাড়ি কাটা হইল, সকলের হস্তে কাটাকুটি ও কটিতে চট দেখা যায়। মোয়াবের সমস্ত ছাদে ও তাহার চকের সর্ব্বত্র বিলাপ শুনা যাইতেছে, কেননা সদাপ্রভু কহেন, আমি মোয়াবকে একটা অপ্রীতিজনক পাত্রের ন্যায় ভাঙ্গিয়া ফেলিলাম। সে কেমন ভগ্ন হইল! লোকে কেমন হাহাকার করিতেছে! মোয়াব লজ্জা প্রযুক্ত কেমন পৃষ্ঠ ফিরাইয়াছে! এইরূপে মোয়াব আপনার চারিদিকের সমস্ত লোকের পরিহাস-পাত্র ও ভয়স্থান হইবে। কারণ সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, ঐ ব্যক্তি ঈগলের ন্যায় উড়িয়া আসিবে, এবং মোয়াবের উপরে আপন পক্ষ বিস্তার করিবে। নগর সকল পরহস্তগত, দুর্গ সকল অধিকৃত হইল; সেই দিন মোয়াবের বীরগণের চিত্ত প্রসববেদনাতুরা স্ত্রীর চিত্তের সমান হইবে। মোয়াব লুপ্ত হইল, আর জাতি থাকিবে না, কেননা সে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বড়াই করিয়াছে। সদাপ্রভু কহেন, হে মোয়াবনিবাসী, ত্রাস, খাত ও ফাঁদ তোমার উপরে আসিয়াছে। যে কেহ ত্রাস প্রযুক্ত পলাইয়া যাইবে, সে খাতে পড়িবে; যে কেহ খাত হইতে উঠিয়া আসিবে, সে ফাঁদে ধরা পড়িবে; কেননা আমি তাহার উপরে, মোয়াবের উপরে, প্রতিফল-দানের বৎসর আনিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। হিশ্‌বোনের ছায়াতলে পলাতকেরা শক্তিহীন হইয়া দাঁড়াইয়া আছে, কারণ হিশ্‌বোন হইতে অগ্নি ও সীহোনের মধ্য হইতে অগ্নিশিখা নির্গত হইয়াছে, আর মোয়াবের পার্শ্ব ও কলহকারীদের মস্তকের তালু গ্রাস করিয়াছে। হে মোয়াব, ধিক্‌ তোমাকে! কমোশের প্রজালোক বিনষ্ট হইল, কারণ তোমার পুত্রগণ বন্দি হইল, তোমার কন্যাগণ বন্দি-দশার স্থানে নীত হইল। কিন্তু শেষকালে আমি মোয়াবের বন্দি-দশা ফিরাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। মোয়াবের বিচারের কথা এই পর্য্যন্ত। অম্মোন-সন্তানগণের বিষয়। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েলের কি পুত্র নাই? তাহার উত্তরাধিকারী কি কেহ নাই? তবে মিল্‌কম কেন গাদের ভূমি অধিকার করে, ও তাহার প্রজারা উহার নগরসমূহে বাস করে? এই জন্য সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি অম্মোন-সন্তানদের রব্বা [নগরে] যুদ্ধের সিংহনাদ শুনাইব; তখন তাহা ধ্বংসস্থানীয় ঢিবি হইবে, এবং তাহার কন্যাগণ অগ্নিতে দগ্ধ হইবে; তৎকালে ইস্রায়েল আপনার অধিকার-গ্রাসকারীদিগকে অধিকারচ্যুত করিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। হে হিশ্‌বোন, হাহাকার কর, কেননা অয় বিনষ্ট হইল; হে রব্বার কন্যাগণ, ক্রন্দন কর, চট পরিধান কর, বিলাপ কর, প্রাচীর সকলের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি কর, কেননা মিল্‌কম নির্ব্বাসনার্থে গমন করিবে, তাহার যাজকগণ ও অধ্যক্ষগণ একসঙ্গে যাইবে। হে বিপথগামিনি কন্যে, তুমি কেন আপন তলভূমি সকলের শ্লাঘা করিতেছ? তোমার তলভূমি বিলীন হইবে। অয়ি স্বধনে বিশ্বাসকারিণি, তুমি কেন বলিতেছ, আমার বিরুদ্ধে কে আসিবে? প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমার চারিদিকের সকলের হইতে তোমার প্রতি ত্রাস উপস্থিত করিব; তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সম্মুখস্থ পথে বিতাড়িত হইবে, কেহ পরিভ্রান্তকে সংগ্রহ করিবে না। তথাপি পরে আমি অম্মোন-সন্তানদের বন্দি-দশা ফিরাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। ইদোমের বিষয়। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তৈমনে কি আর প্রজ্ঞা নাই? বুদ্ধিমানদের মধ্যে কি মন্ত্রণার লোপ হইয়াছে? তাহাদের জ্ঞান কি অন্তর্হিত হইয়াছে? হে দদান-নিবাসিগণ, তোমরা পলায়ন কর, মুখ ফিরাও, গভীরে গিয়া বাস কর, কেননা আমি এষৌর উপরে তাহার বিপদ, তাহাকে প্রতিফল দিবার সময় উপস্থিত করিব। যদি দ্রাক্ষাসঞ্চয়কারিগণ তোমার নিকটে আইসে, তাহারা কিছু ফল অবশিষ্ট রাখিবে না; যদি রাত্রিকালে চোর আইসে, তাহারা যথেষ্ট পাইলেও ক্ষতি করিবে। বস্তুতঃ আমি এষৌকে বস্ত্রহীন করিয়াছি, তাহার গুপ্ত স্থান সকল অনাবৃত করিয়াছি, সে কোন প্রকারে লুকাইয়া থাকিতে পারিবে না; তাহার বংশ, ভ্রাতৃগণ ও প্রতিবাসিগণ লুটিত হইয়াছে, সে আর নাই। তুমি আপন পিতৃহীন বালকদিগকে ত্যাগ কর, আমি তাহাদিগকে বাঁচাইব; তোমার বিধবাগণও আমাতে বিশ্বাস করুক। কেননা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, সেই পাত্রে পান করা যাহাদের নিয়ম ছিল না, তাহাদিগকে সেই পাত্রে পান করিতে হইবে, তবে তুমি কি নিতান্তই অদণ্ডিত থাকিবে? তুমি অদণ্ডিত থাকিবে না, অবশ্য পান করিবে। কেননা, সদাপ্রভু কহেন, আমি আপন নামে এই দিব্য করিয়াছি, বস্রা বিস্ময়, টিটকারি, উৎসন্নতা ও অভিশাপের পাত্র হইবে; আর তাহার সমস্ত নগর চিরকাল উৎসন্ন-স্থান থাকিবে। আমি সদাপ্রভুর নিকট হইতে এই বার্ত্তা শুনিয়াছি, এবং জাতিগণের কাছে এক দূত প্রেরিত হইয়াছে; তোমরা একত্র হও, ইহার বিপক্ষে যাত্রা কর, যুদ্ধ করণার্থে গাত্রোত্থান কর। কেননা দেখ, আমি তোমাকে জাতিগণের মধ্যে ক্ষুদ্র করিয়াছি, মনুষ্যের মধ্যে অবজ্ঞাত করিয়াছি। হে শৈলদরীবাসি, পর্ব্বতশৃঙ্গ অবলম্বিন্‌, তোমার ভয়ঙ্করতার বিষয়ে তোমার অন্তঃকরণের অহঙ্কার তোমাকে বঞ্চনা করিয়াছে; তুমি যদ্যপি ঈগল পক্ষীর ন্যায় উচ্চ স্থানে বাসা কর, তথাপি আমি তোমাকে তথা হইতে নামাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর ইদোম বিস্ময়ের পাত্র হইবে, যাহারা তাহার নিকট দিয়া গমন করে, সকলে বিস্মিত হইবে, ও তাহার প্রতি উপস্থিত সকল আঘাত প্রযুক্ত শিশ দিবে। সদাপ্রভু কহেন, সদোমের, ঘমোরার ও তন্নিকটবর্ত্তী নগরসমূহের উৎপাটনহেতু যেমন হইয়াছিল, তেমনি হইবে, কেহ সেখানে থাকিবে না, কোন মনুষ্য-সন্তান তাহার মধ্যে প্রবাস করিবে না। দেখ, সেই ব্যক্তি সিংহের ন্যায় যর্দ্দনের শোভাস্থান হইতে উঠিয়া সেই চিরস্থায়ী চরাণি-স্থানের বিরুদ্ধে আসিবে; বস্তুতঃ আমি চক্ষুর নিমিষে তাহাকে তথা হইতে দূর করিয়া দিব, এবং তাহার উপরে মনোনীত লোককে নিযুক্ত করিব। কেননা আমার তুল্য কে? আমার সময় নিরূপণ কে করিবে? এবং আমার সম্মুখে দাঁড়াইবে, এমন পালক কোথায়? অতএব সদাপ্রভুর মন্ত্রণা শুন, যাহা তিনি ইদোমের বিরুদ্ধে করিয়াছেন; তাঁহার সঙ্কল্প সকল শুন, যাহা তিনি তৈমন-নিবাসীদের বিপক্ষে করিয়াছেন। নিশ্চয়ই লোকেরা তাহাদিগকে টানিয়া লইয়া যাইবে, পালের শাবকদিগকেও লইয়া যাইবে; নিশ্চয়ই তিনি তাহাদের চরাণি-স্থান তাহাদের সহিত উৎসন্ন করিবেন। পৃথিবী তাহাদের পতনের শব্দে কাঁপিতেছে, সূফ সাগর পর্য্যন্ত ক্রন্দনের রব শুনা যাইতেছে! দেখ, সে ঈগল পক্ষীর ন্যায় উঠিয়া উড়িয়া আসিবে, বস্রার বিপরীতে আপন পক্ষ বিস্তার করিবে; আর ইদোমের বীরগণের চিত্ত সেই দিন প্রসববেদনাতুরা স্ত্রীর চিত্তের সমান হইবে। দম্মেশকের বিষয়। হমাৎ ও অর্পদ লজ্জিত হইল, কারণ তাহারা অমঙ্গলের বার্ত্তা শুনিল, বিগলিত হইল; সাগরে উদ্বেগ দেখা যাইতেছে; তাহা সুস্থির হইতে পারে না। দম্মেশক ক্ষীণবল হইয়াছে, পলায়নার্থে ফিরিতেছে, ও ত্রাসযুক্ত হইয়াছে; যেমন প্রসবকালে স্ত্রীলোকের, তেমনি তাহার যন্ত্রণা ও ব্যথা ধরিয়াছে। এই প্রশংসিত নগর, আমার আনন্দজনক পুরী, কেন পরিত্যক্ত হয় নাই? এই জন্য সেই দিন তাহার যুবকগণ তাহার চকে পতিত, ও সমস্ত যোদ্ধা স্তব্ধীকৃত হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। আর আমি দম্মেশকের প্রাচীরে অগ্নি লাগাইব, তাহা বিন্‌হদদের অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর কর্ত্তৃক পরাহত কেদরের ও হাৎসোর রাজ্যসমূহের বিষয়। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা উঠ, কেদরে যাও, এবং পূর্ব্বদেশের লোকদের সর্ব্বস্ব লুট কর। লোকে তাহাদের তাম্বু ও পশুপাল সকল লইয়া যাইবে; তাহাদের যবনিকা, তাহাদের সমস্ত পাত্র ও তাহাদের উষ্ট্রদিগকে আপনাদের নিমিত্ত লইয়া যাইবে; এবং উচ্চৈঃস্বরে তাহাদের বিষয়ে বলিবে, চারিদিকেই ভয়। সদাপ্রভু কহেন, হে হাৎসোর-নিবাসিগণ, পলায়ন কর, দূরে চলিয়া যাও, গভীরে গিয়া বাস কর, কেননা বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর তোমাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করিয়াছে, তোমাদের বিরুদ্ধে সঙ্কল্প স্থির করিয়াছে। তোমরা উঠ, সেই শান্তিযুক্ত জাতির বিরুদ্ধে যাত্রা কর, যে নির্ভয়ে বাস করে, যাহার কপাট নাই, হুড়কা নাই, যে একাকী থাকে, ইহা সদাপ্রভু বলেন। তাহাদের উষ্ট্রগণ লুটবস্তু হইবে, তাহাদের বিপুল পশুধন লুটিত দ্রব্য হইবে, এবং যে লোকেরা আপনাদের কেশকোণ মুণ্ডন করিয়াছে, তাহাদিগকে আমি সকল বায়ুর দিকে উড়াইয়া দিব, এবং চারিদিক্‌ হইতে তাহাদের বিপদ আনিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর হাৎসোর শৃগালদের বসতি ও চিরস্থায়ী ধ্বংসস্থান হইবে; সেখানে কেহ থাকিবে না, কোন মনুষ্য-সন্তান তাহার মধ্যে প্রবাস করিবে না। যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের রাজত্বের আরম্ভকালে এলমের বিষয়ে সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয় ভাববাদীর নিকটে উপস্থিত হইল; —বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এলমের ধনু, তাহাদের বলের অগ্রিমাংশ, ভাঙ্গিয়া ফেলিব। আর আকাশের চারিদিক্‌ হইতে চারি বায়ু এলমের উপরে বহাইব, এবং ঐ সকল বায়ুর দিকে তাহাদিগকে উড়াইয়া দিব; দূরীকৃত এলমীয়গণ যাহার কাছে না যাইবে, এমন জাতি থাকিবে না। আর আমি এলমীয়দিগকে তাহাদের শত্রুগণের সম্মুখে, ও যাহারা তাহাদের প্রাণনাশে সচেষ্ট, তাহাদের সম্মুখে, উদ্বিগ্ন করিব; আমি তাহাদের উপরে অমঙ্গল অর্থাৎ আমার প্রচণ্ড ক্রোধ উপস্থিত করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, এবং যাবৎ তাহাদিগকে সংহার না করি, তাবৎ তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে খড়্‌গ পাঠাইব; আর আমি নিজ সিংহাসন এলমে স্থাপন করিব, এবং সে স্থান হইতে রাজাকে ও অধ্যক্ষগণকে উচ্ছিন্ন করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু শেষকালে আমি এলমের বন্দি-দশা ফিরাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু যিরমিয় ভাববাদী দ্বারা বাবিলের বিষয়ে, কল্‌দীয়দের দেশের বিষয়ে, যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহা এই। তোমরা জাতিগণের মধ্যে জ্ঞাত কর, প্রচার কর, ধ্বজা তুলিয়া ধর; প্রচার কর, গুপ্ত রাখিও না; বল, ‘বাবিল পরহস্তগত হইল, বেল লজ্জিত হইল, মরোদক উদ্বিগ্ন হইল; তাহার প্রতিমা সকল লজ্জিত হইল, পুত্তলি সকল ক্ষুব্ধ হইল।’ কেননা উত্তরদিক্‌ হইতে এক জাতি তাহার বিরুদ্ধে উঠিয়া আসিল; সে তাহার দেশ ধ্বংস করিবে, তাহার মধ্যে কেহ বাস করিবে না; মনুষ্য ও পশু পলায়ন করিল, চলিয়া গেল। সদাপ্রভু কহেন, সেই সময়ে ও সেই কালে ইস্রায়েল সন্তানগণ আসিবে, তাহারা ও যিহূদা-সন্তানগণ একসঙ্গে আসিবে, রোদন করিতে করিতে চলিয়া আসিবে, ও আপনাদের ঈশ্বর, সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিবে। তাহারা সিয়োনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিবে, সেই দিকে মুখ রাখিবে, বলিবে, চল, তোমরা এমন নিয়ম দ্বারা সদাপ্রভুতে আসক্ত হও, যাহা অনন্তকাল থাকিবে, যাহা কখনও লোকে ভুলিয়া যাইবে না। আমার প্রজারা হারান মেষ হইয়া পড়িয়াছে, তাহাদের পালকগণ তাহাদিগকে ভ্রান্ত করিয়াছে, নানা পর্ব্বতে পথহারা করিয়া ফেলিয়াছে; উহারা পর্ব্বত হইতে উপপর্ব্বতে গমন করিয়াছে, আপনাদের শয়নস্থান ভুলিয়া গিয়াছে। যাহারা তাহাদিগকে পাইয়াছে, তাহারা গ্রাস করিয়াছে; তাহাদের বিপক্ষগণ বলিয়াছে, আমাদের দোষ হয় নাই, কারণ উহারা ধর্ম্মনিবাস সদাপ্রভুর, আপনাদের পিতৃপুরুষগণের আশাভূমি সদাপ্রভুর, বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে। তোমরা সত্বর বাবিলের মধ্য হইতে বাহির হইয়া পড়, কল্‌দীয়দের দেশ হইতে নির্গমন কর, এবং পালের অগ্রগামী ছাগের ন্যায় হও। কেননা দেখ, আমি উত্তরদেশ হইতে মহাজাতি-সমাজ উত্তেজিত করিয়া বাবিলের বিরুদ্ধে গমন করাইব, তাহারা বাবিলের বিরুদ্ধে সৈন্য রচনা করিবে, তাহাতে তাহা পরহস্তগত হইবে; তাহাদের বাণ কৌশলপরায়ণ বীরের ন্যায় হইবে, বিফল হইয়া ফিরিয়া আসিবে না। কল্‌দিয়া লুটবস্তু হইবে; যে সকল লোক সেই দেশ লুট করিবে, তাহারা তৃপ্ত হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। ওহে তোমরা, যাহারা আমার অধিকার লুট করিতেছ, তোমরা ত আনন্দ ও উল্লাস করিতেছ, শস্যমর্দ্দনকারিণী গাভীর ন্যায় নাচিতেছ, তেজস্বী অশ্বের ন্যায় হেষ্রা রব করিতেছ; এই জন্য তোমাদের মাতা অতি লজ্জিতা হইবে, তোমাদের জননী হতাশা হইবে; দেখ, জাতিগণের মধ্যে সে অন্ত হইবে, প্রান্তর, শুষ্ক স্থান ও মরুভূমি হইবে। সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রযুক্ত সে আর বসতি-স্থান হইবে না, সম্পূর্ণ ধ্বংসস্থান হইবে; যে কেহ বাবিলের নিকট দিয়া যাইবে, সে বিস্মিত হইবে, ও তাহার সমুদয় আঘাত দেখিয়া শিশ দিবে। হে ধনুকে চাড়াদায়ী লোক সকল, বাবিলের বিরুদ্ধে চারিদিকে সৈন্য রচনা কর, তাহার প্রতি বাণ নিক্ষেপ কর, বাণব্যয়ে কাতর হইও না, কেননা সে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে। তাহার চারিদিকে সিংহনাদ কর—সে হাতযোড় করিয়াছে, তাহার ভিত্তি সকল পতিত, তাহার প্রাচীর সকল উৎপাটিত হইয়াছে; কেননা এ সদাপ্রভুর প্রতিশোধ গ্রহণ; তোমরা উহার প্রতিশোধ লও; সে যেমন করিয়াছে, তাহার প্রতি তদ্রূপ কর। বাবিল হইতে বীজবাপককে কাটিয়া ফেল, ফসল কাটিবার সময়ে যে কাস্ত্যা ধরে, তারে কাট, উৎপীড়ক খড়্‌গের ভয়ে তাহারা প্রতেকে স্ব স্ব জাতির কাছে ফিরিয়া যাইবে, প্রত্যেকে স্ব স্ব দেশের দিকে পলায়ন করিবে। ইস্রায়েল ছিন্নভিন্ন মেষস্বরূপ; সিংহগণ তাহাকে তাড়াইয়া দিয়াছে; প্রথমতঃ অশূর-রাজ তাহাকে গ্রাস করিয়াছিল, এখন শেষে এই বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর তাহার অস্থি সকল ভগ্ন করিয়াছে। এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, দেখ, আমি অশূর-রাজকে যেমন প্রতিফল দিয়াছি, বাবিল-রাজ ও তাহার দেশকে তেমনি প্রতিফল দিব। আর ইস্রায়েলকে তাহার চরাণি-স্থানে ফিরাইয়া আনিব; সে কর্মিলের ও বাশনের উপরে চরিবে, এবং ইফ্রয়িম-পর্ব্বতমালায় ও গিলিয়দে তাহার প্রাণ তৃপ্ত হইবে। সদাপ্রভু কহেন, সেই সময়ে ও সেই কালে ইস্রায়েলের অপরাধের অনুসন্ধান করা যাইবে, কিন্তু পাওয়া যাইবে না; এবং যিহূদার পাপসমূহের [অনুসন্ধান করা যাইবে], কিন্তু পাওয়া যাইবে না; কেননা আমি যাহাদিগকে অবশিষ্ট রাখি, তাহাদিগকে ক্ষমা করিব। সদাপ্রভু কহেন, তুমি মরাথয়িম [দ্বিগুণদ্রোহ] দেশের বিরুদ্ধে ও পদোক [প্রতিফল] নিবাসীদের বিরুদ্ধে উঠিয়া যাও, তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে যাইয়া তাহাদিগকে নিহনন কর, নিঃশেষে বিনষ্ট কর; আমি তোমাকে যাহা যাহা করিতে আজ্ঞা করিয়াছি, তদনুসারে কর। দেশে সংগ্রামের শব্দ ও মহাবিনাশের শব্দ! সমস্ত পৃথিবী মুদগর কেমন ছিন্ন ও ভগ্ন হইল! জাতিগণের মধ্যে বাবিল কেমন উৎসন্ন হইল। হে বাবিল, আমি তোমার জন্য ফাঁদ পাতিয়াছি, আর তুমি তাহাতে ধৃতও হইয়াছ, কিন্তু জানিতে পার নাই; তোমাকে পাওয়া গিয়াছে, আবার তুমি ধরাও পড়িয়াছ, কেননা তুমি সদাপ্রভুর সহিত যুদ্ধ করিয়াছ। সদাপ্রভু আপন অস্ত্রাগার খুলিলেন, নিজ ক্রোধের অস্ত্র সকল বাহির করিয়া আনিলেন, কেননা কল্‌দীয়দের দেশে প্রভুর, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, কার্য্য আছে। তোমরা প্রান্তসীমা হইতে তাহার বিরুদ্ধে আইস, তাহার শস্যভাণ্ডার সকল খুলিয়া দেও, রাশির ন্যায় তাহাকে ঢিবী কর, নিঃশেষে বিনষ্ট কর; তাহার কিছু অবশিষ্ট রাখিও না। তাহার সমস্ত বৃষ বধ কর, তাহারা বধ্যস্থানে নামিয়া যাউক; হায় হায়, তাহাদের দিন, তাহাদের প্রতিফলের সময়, আসিয়া পড়িল! ঐ তাহাদের রব, যাহারা পলাইতেছে, ও বাবিল দেশ হইতে রক্ষা পাইতেছে, যেন সিয়োনে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিশোধ, তাঁহার মন্দির-নিমিত্ত প্রতিশোধ, জ্ঞাত করে। তোমরা বাবিলের বিরুদ্ধে ধনুর্দ্ধারীদিগকে, ধনুকে চাড়াদায়ী সকলকে, আহ্বান কর; চারিদিকে তাহার বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন কর, কাহাকেও রক্ষা পাইতে দিও না; তাহার ক্রিয়ানুযায়ী ফল তাহাকে দেও; সে যাহা যাহা করিয়াছে, তাহার প্রতি তদনুসারে কর; কেননা সে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে, ইস্রায়েলের পবিত্রতমের বিরুদ্ধে, দর্প করিয়াছে। এই জন্য সেই দিন তাহার যুবকগণ তাহার চকে পতিত হইবে, ও তাহার সমস্ত যোদ্ধা স্তব্ধীকৃত হইবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন। হে দর্প, প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ, কেননা তোমার সেই দিন উপস্থিত, যে দিন আমি তোমাকে প্রতিফল দিব। তখন ঐ দর্প উছোট খাইয়া পড়িবে, কেহ তাহাকে উঠাইবে না; এবং আমি তাহার সকল নগরে আগুন লাগাইয়া দিব, তাহা তাহার চারিদিকের সকলই গ্রাস করিবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণ ও যিহূদা-সন্তানগণ নির্ব্বিশেষে উপদ্রুত হইতেছে; এবং যাহারা তাহাদিগকে বন্দি-দশায় রাখিয়াছে, তাহারা তাহাদিগকে দৃঢ়রূপে ধরিয়া রাখিয়াছে, বিদায় করিতে অসম্মত রহিয়াছে। তাহাদের মুক্তিদাতা বলবান্‌; ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু’ তাঁহার নাম; তিনি সম্পূর্ণরূপে তাহাদের বিবাদ নিষ্পন্ন করিবেন, যেন তিনি পৃথিবীকে সুস্থির করেন, ও বাবিল-নিবাসীদিগকে অস্থির করেন। সদাপ্রভু কহেন, কল্‌দীয়দের উপরে, বাবিল-নিবাসীদের উপরে, বাবিলের অধ্যক্ষদের উপরে ও তাহার জ্ঞানবানদের উপরে খড়্‌গ রহিয়াছে। বাচালদিগের উপরে খড়্‌গ রহিয়াছে, তাহারা হতবুদ্ধি হইবে; তাহার বীরগণের উপরে খড়্‌গ রহিয়াছে, তাহারা উদ্বিগ্ন হইবে। তাহার ঘোটকদের উপরে, তাহার রথসমূহের উপরে ও তন্মধ্যস্থিত সমুদয় মিশ্রিত লোকের উপরে খড়্‌গ রহিয়াছে, তাহারা অবলাদিগের সমান হইবে; তাহারা সকল ধনকোষের উপরে খড়্‌গ রহিয়াছে, সে সকল লুট হইবে। তাহার জলাধার সকলের উপরে উত্তাপ রহিয়াছে, সেগুলি শুষ্ক হইবে; কেননা সে ক্ষোদিত প্রতিমার দেশ, ও সেখানকার লোকেরা আপন আপন বিভীষিকাগণের বিষয়ে উন্মত্ত। এই নিমিত্ত সেখানে বন্যপশু ও বৃকগণ বাস করিবে, এবং উষ্ট্রপক্ষী বাসা করিবে; তাহা আর কখনও লোকালয় হইবে না, পুরুষানুক্রমে সে স্থানে বসতি হইবে না। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ঈশ্বর যখন সদোম, ঘোমরা ও তন্নিকটস্থ নগর সকল উৎপাটন করিয়াছিলেন, তখন যেরূপ হইয়াছিল, সেইরূপ হইবে; কোন ব্যক্তি সেখানে বাস করিবে না, কোন মনুষ্য-সন্তান তাহার মধ্যে প্রবাস করিবে না। দেখ, উত্তরদিক্‌ হইতে এক জনসমাজ আসিতেছে, পৃথিবীর প্রান্ত হইতে এক মহাজাতি ও অনেক রাজা উত্তেজিত হইয়া আসিতেছে। তাহারা ধনুক ও বড়শাধারী, নিষ্ঠুর ও করুণারহিত; তাহাদের রব সমুদ্রগর্জ্জনের তুল্য, ও তাহারা অশ্বরোহণে আসিতেছে; অয়ি বাবিল-কন্যে; তোমারই বিপরীতে যুদ্ধ করণার্থে তাহারা প্রত্যেক জন যোদ্ধার ন্যায় সুসজ্জিত হইয়াছে। বাবিল-রাজ তাহাদের জনশ্রুতি শুনিয়াছে, তাহার হস্ত অবশ হইল, যন্ত্রণা, প্রসবকারিণীর ন্যায় বেদনা, তাহাকে ধরিল। দেখ, সে সিংহের ন্যায় যর্দ্দনের শোভাস্থান হইতে উঠিয়া সেই চিরস্থায়ী চরাণি-স্থানের বিরুদ্ধে আসিবে; কিন্তু আমি চক্ষুর নিমিষে তাহাকে তথা হইতে দূর করিয়া দিব, এবং তাহার উপরে মনোনীত লোককে নিযুক্ত করিব। কেননা আমার তুল্য কে? আমার সময় নিরূপণ কে করিবে? এবং আমার সম্মুখে দাঁড়াইবে, এমন পালক কোথায়? অতএব সদাপ্রভুর মন্ত্রণা শুন, যাহা তিনি বাবিলের বিরুদ্ধে করিয়াছেন; তাঁহার সঙ্কল্প সকল শুন, যাহা তিনি কল্‌দীয়দের দেশের বিরুদ্ধে করিয়াছেন। নিশ্চয়ই লোকেরা তাহাদিগকে টানিয়া লইয়া যাইবে, পালের শাবকদিগকেও লইয়া যাইবে; নিশ্চয়ই তিনি তাহাদের চরাণি-স্থান তাহাদের সহিত উৎসন্ন করিবেন। বাবিল পরহস্তগত হইয়াছে, এই শব্দে পৃথিবী কাঁপিতেছে, ও জাতিগণের মধ্যে ক্রন্দনের রব শুনা যাইতেছে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি, বাবিলের বিরুদ্ধে ও লেব-কামাই নিবাসীদের বিরুদ্ধে এক বিনাশক বায়ু উৎপন্ন করিব। আর আমি বাবিলে ঝাড়কদিগকে প্রেরণ করিব, তাহারা তাহাকে ঝাড়িবে, তাহার দেশ শূন্য করিবে, কারণ তাহারা বিপদের দিনে চারিদিকে তাহার বিরুদ্ধ হইবে। ধনুর্দ্ধর ধনুকে চাড়া না দিউক; সে বর্ম্মসজ্জায় উত্থিত না হউক; তোমরা তাহার যুবকদের প্রতি দয়া করিও না, তাহার সমস্ত সৈন্য নিঃশেষে বিনষ্ট কর। তাহারা কল্‌দীয়দের দেশে নিহত ও চকে খড়্‌গবিদ্ধ হইয়া পতিত হইবে। কারণ ইস্রায়েল কিম্বা যিহূদা যে আপন ঈশ্বর বাহিনীগণের সদাপ্রভু কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত, তাহা নয়; যদিও ইহাদের দেশ ইস্রায়েলের পবিত্রতমের বিরুদ্ধে দোষে পরিপূর্ণ হইয়াছে। তোমরা বাবিলের মধ্য হইতে পলায়ন কর, প্রত্যেক জন আপন আপন প্রাণ রক্ষা কর; তাহার অপরাধে তোমরা উচ্ছিন্ন হইও না; কেননা এ সদাপ্রভুর প্রতিশোধ গ্রহণের সময়, তিনি তাহাকে অপকারের প্রতিফল দিতে উদ্যত। সদাপ্রভুর হস্তে বাবিল সুবর্ণ পাত্রস্বরূপ ছিল, তাহা সমস্ত পৃথিবীকে মত্ত করিত, জাতিগণ তাহার মদ্যপান করিয়াছে, তজ্জন্য জাতিগণ উন্মত্ত হইয়াছে। বাবিল অকস্মাৎ পতিত ও ভগ্ন হইল; তাহার জন্য হাহাকার কর; তাহার ব্যাথার প্রতীকারার্থে তরুসার গ্রহণ কর; কি জানি সে সুস্থ হইবে। ‘আমরা বাবিলকে সুস্থ করিতে যত্ন করিয়াছি, কিন্তু সে সুস্থ হইল না; তাহাকে ত্যাগ কর, আমরা প্রত্যেক জন আপন আপন দেশে যাই, কেননা উহার বিচার গগনস্পর্শী, আকাশ পর্য্যন্ত উচ্চীকৃত। সদাপ্রভু আমাদের ধার্ম্মিকতা প্রকাশ করিয়াছেন; আইস, আমরা সিয়োনে গিয়া আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কার্য্য প্রচার করি।’ তোমরা বাণে শাণ দেও, ঢাল ধর; সদাপ্রভু মাদীয় রাজগণের মন উত্তেজিত করিয়াছেন, কেননা তাঁহার সঙ্কল্প বাবিলের বিপক্ষ, তাহার বিনাশার্থক; বস্তুতঃ এ সদাপ্রভুর প্রতিশোধ গ্রহণ, তাঁহার মন্দিরের নিমিত্ত প্রতিশোধ গ্রহণ। তোমরা বাবিলের প্রাচীরের বিরুদ্ধে পতাকা স্থাপন কর, রক্ষকগণকে সাহস দেও, প্রহরিগণকে নিযুক্ত কর, গোপনস্থানে সৈন্য রাখ; কেননা সদাপ্রভু বাবিল-নিবাসীদের বিষয়ে যাহা বলিয়াছেন, তাহা সঙ্কল্প করিয়াছেন, সিদ্ধও করিয়াছেন। হে জলরাশির উপরে বাসকারিণি! ধনকোষে ঐশ্বর্য্যশালিনি! তোমার শেষকাল, তোমার ধনলােভের পরিমাণ উপস্থিত। বাহিনীগণের সদাপ্রভু আপন নামে এই শপথ করিয়াছেন, সত্যই আমি তোমাকে পঙ্গপালবৎ জনগণে পরিপূর্ণ করিয়াছি, তাহারা তোমার বিরুদ্ধে সিংহনাদ করিবে। তিনি নিজ শক্তিতে পৃথিবী গঠন করিয়াছেন। নিজ জ্ঞানে জগৎ স্থাপন করিয়াছেন, নিজ বুদ্ধিতে আকাশমণ্ডল বিস্তার করিয়াছেন। তিনি রব ছাড়িলে আকাশে জলরাশির শব্দ হয়, তিনি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে বাষ্প উত্থাপন করেন; তিনি বৃষ্টির নিমিত্ত বিদ্যুৎ গঠন করেন, তিনি আপন ভাণ্ডার হইতে বায়ু বাহির করিয়া আনেন। প্রত্যেক মনুষ্য পশুবৎ হইয়াছে, সে জ্ঞানহীন; প্রত্যেক স্বর্ণকার আপন প্রতিমা দ্বারা লজ্জিত হয়; কারণ তাহার ছাঁচে ঢালা বস্তু মিথ্যামাত্র, তাহার মধ্যে শ্বাসবায়ু নাই। সে সকল অসার, মায়ার কর্ম্মমাত্র; তাহাদের প্রতিফল দানকালে তাহারা বিনষ্ট হইবে। যিনি যাকোবের অধিকার, তিনি সেরূপ নহেন; কারণ তিনি সমস্ত বস্তুর গঠনকারী, এবং [ইস্রায়েল] তাঁহার অধিকাররূপ বংশ; তাঁহার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু! তুমি আমার মুদগর ও যুদ্ধের অস্ত্র; তোমা দ্বারা আমি জাতিগণকে চূর্ণ করিব; তোমা দ্বারা রাজ্য সকল সংহার করিব; তোমা দ্বারা অশ্ব ও তদারোহীকে চূর্ণ করিব; তোমা দ্বারা রথ ও তদারোহীকে চূর্ণ করিব; তোমা দ্বারা পুরুষ ও স্ত্রীকে চূর্ণ করিব; তোমা দ্বারা বৃদ্ধ ও বালককে চূর্ণ করিব; তোমা দ্বারা যুবক ও যুবতীতে চূর্ণ করিব; তোমা দ্বারা পালরক্ষক ও তাহার পাল চূর্ণ করিব; তোমা দ্বারা কৃষক ও তাহার বলদযুগল চূর্ণ করিব; এবং তোমা দ্বারা দেশাধ্যক্ষ ও শাসনকর্ত্তৃগণকে চূর্ণ করিব। আর আমি বাবিলকে ও কল্‌দীয় দেশনিবাসী সকলকে তাহাদের সেই সমস্ত দুষ্কর্ম্মের প্রতিফল দিব, যাহা তাহারা সিয়োনে তোমাদের দৃষ্টিগোচরে করিয়াছে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। হে বিনাশক পর্ব্বত, তুমি সমস্ত পৃথিবীর বিনাশক; সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ, আমি তোমার বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করিব, শৈল হইতে তোমাকে গড়াইয়া ফেলিয়া দিব, ও তোমাকে জ্বলন্ত পর্ব্বত করিব। লোকে তোমা হইতে কোণের জন্য প্রস্তর কিম্বা ভিত্তিমূলের জন্য প্রস্তর লইবে না, কিন্তু তুমি চিরকাল ধ্বংসস্থান থাকিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। তোমরা দেশে ধ্বজা তোল, জাতিগণের মধ্যে তূরী বাজাও, তাহার বিপক্ষে নানা জাতিকে প্রস্তুত কর, অরারট, মিন্নি ও অস্কিনস রাজ্যকে তাহার বিপক্ষে আহ্বান কর, তাহার বিপক্ষে এক জন সেনাপতিকে নিযুক্ত কর, পঙ্গপালের ন্যায় অশ্বগণকে পাঠাও। তাহার বিপক্ষে জাতিগণকে, মাদীয়দের রাজগণকে, তাহাদের দেশাধ্যক্ষগণকে, শাসনকর্ত্তৃগণকে ও তাহার কর্ত্তৃত্বাধীন সমস্ত দেশের লোককে প্রস্তুত কর। দেশ কম্পিত ও ব্যথিত হইতেছে; কেননা বাবিল দেশকে ধ্বংস ও নিবাসশূন্য করণার্থে বাবিলের বিপক্ষে সদাপ্রভুর সঙ্কল্প সফল হইতেছে। বাবিলের বীরগণ যুদ্ধে বিরত হইয়াছে, তাহারা আপনাদের গড়ের মধ্যে রহিয়াছে; তাহাদের তেজ শুকাইয়া গিয়াছে; তাহারা অবলাদিগের সমান হইয়াছে; তাহার আবাস সকল দগ্ধ, তাহার হুড়কা সকল ভগ্ন হইয়াছে। ধাবক ধাবকের কাছে, ধাবিত হইতেছে, বার্ত্তাবহ বার্ত্তাবহের কাছে যাইতেছে, যেন বাবিল-রাজকে এই বার্ত্তা দেওয়া হয় যে, তাহার নগর চারিদিকে পরহস্তগত হইল; এবং পারঘাট সকল পরহস্তগত হইয়াছে, তাহারা নলবন আগুনে পোড়াইয়াছে ও যোদ্ধা সকল বিহ্বল হইয়াছে। কারণ বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, বাবিল-কন্যা শস্যমর্দ্দনকালীন খামারস্বরূপ; স্বল্পকাল মধ্যে তাহার জন্য ফসল কাটিবার সময় উপস্থিত হইবে। বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর আমাকে গ্রাস করিয়াছেন, আমাকে চূর্ণ করিয়াছেন, আমাকে শূন্যপাত্রস্বরূপ করিয়াছেন, আমাকে নাগবৎ গ্রাস করিয়াছেন, আমার উপাদেয় ভক্ষ্য দ্বারা আপন উদর পূর্ণ করিয়াছেন, আমাকে দূর করিয়াছেন। ‘আমার প্রতি ও আমার মাংসের প্রতি কৃত দৌরাত্ম্যের ফল বাবিলের উপরে বর্ত্তুক,’ ইহা সিয়োন-নিবাসিনী কহিতেছে; এবং ‘আমার রক্ত কল্‌দীয় দেশনিবাসীদের উপরে বর্ত্তুক,’ ইহা যিরূশালেম বলিতেছে। এই জন্য সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমার বিবাদ নিষ্পন্ন করিব; তোমার জন্য প্রতিশোধ লইব, এবং তাহার সমুদ্রকে জলশূন্য ও তাহার উনুইকে শুষ্ক করিব। আর বাবিল ঢিবীময়, শৃগালদের বাসস্থান, বিস্ময়ের ও শিশ শব্দের বিষয়, এবং নিবাসীবিহীন হইবে। তাহারা একত্র সিংহবৎ গর্জ্জন করিবে, সিংহশাবকদের ন্যায় ঘোর নাদ করিবে। তাহারা উত্তপ্ত হইলে পর আমি তাহাদের ভোজ প্রস্তুত করিব, ও তাহাদিগকে মত্ত করিব; যেন তাহারা উল্লাস করে ও চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হয়, আর জাগরিত না হয়, ইহা সদাপ্রভু কহেন। আমি তোমাদিগকে মেষশাবকদের ন্যায়, ছাগদের সহিত মেষদের ন্যায়, বধ্যস্থানে নামাইয়া আনিব। শেশক কেমন পরহস্তগত! সমস্ত পৃথিবীর প্রশংসাপাত্র কেমন পরাজিত হইয়াছে। জাতিসমূহের মধ্যে বাবিল কেমন ধ্বংসস্থান হইয়াছে। বাবিলের উপরে সমুদ্র উঠিয়াছে, সে তাহার তরঙ্গের কল্লোলে আচ্ছাদিত। তাহার নগর সকল ধ্বংস স্থান হইল, শুষ্ক ভূমি ও প্রান্তর হইয়া পড়িল; সেই দেশে কেহ বাস করে না, কোন মনুষ্য-সন্তান সেখানে গমনাগমন করে না। আর আমি বাবিলে বেল দেবকে প্রতিফল দিব, তাহার মুখ হইতে তাহার গিলিত দ্রব্য বাহির করিব; এবং জাতিগণ আর তাহার দিকে প্রবাহিত হইবে না; বাবিলের প্রাচীরও পতিত হইবে। হে আমার প্রজাগণ, তোমরা তাহার মধ্য হইতে বাহির হও, প্রত্যেক জন সদাপ্রভুর প্রজ্বলিত ক্রোধ হইতে আপন আপন প্রাণ রক্ষা কর। আর তোমাদের হৃদয়কে দ্রব হইতে দিও না, এবং দেশের মধ্যে যে জনরব শুনা যাইবে, তাহাতে ভীত হইও না, কেননা এক বৎসর এক জনরব উঠিবে, তৎপরে আর এক বৎসর আর এক জনরব উঠিবে; দেশে দৌরাত্ম্য, শাসনকর্ত্তা শাসনকর্ত্তার বিপক্ষ হইবে। অতএব দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি বাবিলের ক্ষোদিত প্রতিমাগণকে প্রতিফল দিব; আর তাহার সমস্ত দেশ লজ্জিত হইবে, ও তথাকার নিহত লোক সকল তাহার মধ্যে পতিত হইবে। আর আকাশমণ্ডল, পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত সকলে বাবিলের বিষয়ে আনন্দগান করিবে, কেননা লুটকারিগণ উত্তরদিক্‌ হইতে তাহার কাছে আসিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন। বাবিল যেমন ইস্রায়েলের নিহতগণকে নিপাত করিয়াছে, সেইরূপ সমুদয় দেশের নিহতগণ বাবিলে পতিত হইবে। খড়্‌গ হইতে রক্ষা পাইয়াছ যে তোমরা, তোমরা চল, বিলম্ব করিও না; দূরদেশে সদাপ্রভুকে স্মরণ কর, এবং যিরূশালেমকে মনে কর। আমরা টিটকারি শুনিয়াছি, তাই লজ্জিত হইয়াছি, আমাদের মুখ অপমানে আচ্ছন্ন হইয়াছে, কেননা বিদেশী লোকেরা সদাপ্রভুর গৃহের সকল পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিয়াছিল। এই জন্য সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি তাহার ক্ষোদিত প্রতিমাগণকে প্রতিফল দিব, আর তাহার দেশের সর্ব্বত্র নিহত লোকেরা কোঁকাইবে। বাবিল যদ্যপি আকাশ পর্য্যন্ত উঠে, যদ্যপি আপনার বলের দুর্গ দৃঢ় করে, তথাপি আমার আজ্ঞায় লুটকারীরা তাহার কাছে যাইবে, ইহ সদাপ্রভু কহেন। বাবিলের মধ্য হইতে ক্রন্দনের রব, কল্‌দীয়দের দেশ হইতে মহাভঙ্গের শব্দ। কেননা সদাপ্রভু বাবিলকে উচ্ছিন্ন করিতেছেন, তাহার মধ্যবর্ত্তী মহাশব্দকে ক্ষান্ত করিতেছেন, উহাদের তরঙ্গ সকল জলরাশির ন্যায় গর্জ্জন করিতেছে; তাহাদের কল্লোলধ্বনি শুনা যাইতেছে। কারণ তাহার উপরে, বাবিলের উপরে, বিনাশক আসিয়াছে, তাহার বীরগণ ধৃত হইল, তাহাদের ধনুক সকল ভগ্ন হইল; কেননা সদাপ্রভু প্রতিফলদাতা, তিনি অবশ্য সমুচিত ফল দিবেন। আর আমি তাহার অধ্যক্ষগণকে, তাহার জ্ঞানবানদিগকে, তাহার দেশাধ্যক্ষগণকে, তাহার শাসনকর্ত্তৃগণকে ও তাহার বীরগণকে মত্ত করিব; তাহাতে তাহারা চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হইবে, আর জাগরিত হইবে না, ইহা রাজা বলেন, যাঁহার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, বাবিলের প্রশস্ত প্রাচীর সকল একেবারে ভগ্ন হইবে, এবং তাহার উচ্চ দ্বার সকল আগুনে পোড়াইয়া দেওয়া যাইবে; আর লোকবৃন্দ কেবল অসারতার জন্য, ও জাতিগণ কেবল অগ্নির জন্য পরিশ্রম করিবে; এবং তাহারা ক্লান্ত হইবে। যিহূদা-রাজ সিদিকিয়ের চতুর্থ বৎসরে মহসেয়ের পৌত্র নেরিয়ের পুত্র সরায় যে সময়ে রাজার সহিত বাবিলে গমন করেন, তৎকালে যিরমিয় ভাববাদী সরায়কে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহার বৃত্তান্ত। উক্ত সরায় সেনানিবেশের অধ্যক্ষ ছিলেন। আর বাবিলের ভাবী অমঙ্গলের কথা, অর্থাৎ বাবিলের বিরুদ্ধে এই যে সকল কথা লিখিত আছে, তাহা যিরমিয় একখানা পুস্তকে লিখিয়াছিলেন। আর যিরমিয় সরায়কে কহিলেন, বাবিলে উপস্থিত হইলে পর তুমি দেখিও, যেন এই সকল কথা পাঠ কর, আর বলিবে, হে সদাপ্রভু, তুমি এই স্থানকে উচ্ছিন্ন করিবার কথা কহিয়াছ, বলিয়াছ যে, এখানে মনুষ্য বা পশু কিছুই বাস করিবে না, ইহা চিরধ্বংসস্থান হইবে। পরে এই পুস্তকের পাঠ সমাপ্ত হইলে তুমি ইহার সঙ্গে একখানা প্রস্তর বাঁধিয়া ফরাৎ নদীর মাঝখানে ইহা নিক্ষেপ করিবে; আর তুমি বলিবে, আমি [সদাপ্রভু] বাবিলের যে অমঙ্গল ঘটাইব, তৎপ্রযুক্ত বাবিল এইরূপ ডুবিয়া যাইবে, আর কখনও উঠিবে না; ‘এবং তাহারা ক্লান্ত হইবে’। এই পর্য্যন্ত যিরমিয়ের বাক্য। সিদিকিয় একুশ বৎসর বয়সে রাজত্ব করিতে আরম্ভ করেন, আর তিনি এগার বৎসর কাল যিরূশালেমে রাজত্ব করেন; তাঁহার মাতার নাম হমুটল, তিনি লিব্‌না-নিবাসী যিরমিয়ের কন্যা। যিহোয়াকীমের সকল ক্রিয়ানুসারে সিদিকিয়ও সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিতেন। কারণ যিরূশালেমে ও যিহূদায় সদাপ্রভুর ক্রোধজনিত ঘটনা হইল, যে পর্য্যন্ত না তিনি আপনার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে দূরে ফেলিয়া দিলেন, আর সিদিকিয় বাবিল-রাজের বিদ্রোহী হইলেন। পরে তাঁহার রাজত্বের নবম বৎসরের দশম মাসে, মাসের দশম দিনে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর ও তাঁহার সমস্ত সৈন্য যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আসিয়া শিবির স্থাপন করিলেন, ও তাহার বিরুদ্ধে চারিদিকে গড় গাঁথিলেন; আর সিদিকিয়ের একাদশ বৎসর পর্য্যন্ত নগর অবরুদ্ধ থাকিল। চতুর্থ মাসে, মাসের নবম দিনে, নগরে মহা দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল, দেশের লোকদের জন্য খাদ্যদ্রব্য কিছুই রহিল না। পরে নগরের এক স্থান ভগ্ন হইল, ও সমস্ত যোদ্ধা রাত্রিতে নগর হইতে বাহিরে গিয়া রাজার উদ্যানের নিকটস্থ দুই প্রাচীরের দ্বারের পথ দিয়া পলায়ন করিল—তখন কল্‌দীয়েরা নগরের বিরুদ্ধে চারিদিকে ছিল—আর উহারা অরাবা তলভূমির পথে গেল। কিন্তু কল্‌দীয়দের সৈন্য রাজার পশ্চাতে দৌড়িয়া গিয়া যিরীহোর তলভূমিতে সিদিকিয়কে ধরিল, তাহাতে তাঁহার সকল সৈন্য তাঁহার নিকট হইতে ছিন্নভিন্ন হইল। তখন তাহারা রাজাকে ধরিয়া হমাৎ দেশস্থ রিব্লাতে বাবিল-রাজের নিকটে লইয়া গেল, পরে তিনি তাঁহার দণ্ডবিধান করিলেন। আর বাবিল-রাজ সিদিকিয়ের সাক্ষাতেই তাঁহার পুত্রগণকে হনন করিলেন; এবং যিহূদার সমস্ত অধ্যক্ষগণকেও রিব্লাতে হনন করিলেন; আর সিদিকিয়ের চক্ষু উৎপাটন করিলেন; পরে বাবিল-রাজ তাঁহাকে শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া বাবিলে লইয়া গেলেন, এবং তাঁহার মৃত্যু পর্য্যন্ত তাঁহাকে কারাগারে বদ্ধ রাখিলেন। পরে পঞ্চম মাসে, মাসের দশম দিনে, বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের ঊনবিংশ বৎসরে, রক্ষ-সেনাপতি নবূষরদন—যিনি বাবিল-রাজের সম্মুখে দাঁড়াইতেন—যিরূশালেমে প্রবেশ করিলেন; তিনি সদাপ্রভুর গৃহ ও রাজবাটী পোড়াইয়া দিলেন, এবং যিরূশালেমের সকল গৃহ ও বৃহৎ বৃহৎ সকল অট্টালিকা আগুনে পোড়াইয়া দিলেন। আর রক্ষ-সেনাপতির অনুগামী সমস্ত কল্‌দীয় সৈন্য যিরূশালেমের চারিদিকের সমস্ত প্রাচীর ভগ্ন করিল। আর রক্ষ-সেনাপতি নবূষরদন কতকগুলি দীনদরিদ্র লোককে, নগরে পরিত্যক্ত অবশিষ্ট লোকদিগকে, ও যাহারা পক্ষান্তরে গিয়াছিল, বাবিল-রাজের সপক্ষ হইয়াছিল, তাহাদিগকে, এবং অবশিষ্ট সাধারণ লোকদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া গেলেন। কেবল দ্রাক্ষাক্ষেত্রে পালন ও ভূমিকর্ষণার্থে রক্ষ-সেনাপতি নবূষরদন কতকগুলি দীনদরিদ্র লোককে দেশে রাখিলেন। আর সদাপ্রভুর গৃহের পিত্তলময় দুই স্তম্ভ, ও সদাপ্রভুর গৃহের পীঠ সকল ও পিত্তলময় সমুদ্রপাত্র কল্‌দীয়েরা খণ্ড খণ্ড করিয়া সেই সকল পিত্তল বাবিলে লইয়া গেল। আর স্থালী, হাতা, কর্ত্তরী, বাটি ও চমস, এবং সমস্ত পরিচর্য্যার্থক পিত্তলময় পাত্র, লইয়া গেল। আর ডাবর, অঙ্গারধানী, বাটি, স্থালী, দীপবৃক্ষ, চমস ও সেকপাত্র প্রভৃতি—স্বর্ণময় পাত্রের স্বর্ণ ও রৌপ্যময় পাত্রের রৌপ্য—রক্ষ-সেনাপতি হইয়া গেলেন। যে দুই স্তম্ভ, এক সমুদ্রপাত্র ও পীঠ সকলের নীচে দ্বাদশ পিত্তলময় বৃষ শলোমন রাজা সদাপ্রভুর গৃহের জন্য নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, সেই সকল পাত্রের পিত্তল অপরিমিত ছিল। ফলতঃ ঐ দুই স্তম্ভের প্রত্যেকের উচ্চতা আঠার হস্ত ও পরিধি বারো হস্ত ছিল, এবং তাহা চারি অঙ্গুলি পুরু ছিল; তাহা ফাঁপা ছিল। আর তাহার উপরে পাঁচ হস্ত পরিমাণ উচ্চ পিত্তলময় এক মাথলা ছিল, মাথলার উপরে চারিদিকে জালকার্য্য ও দাড়িম্বাকৃতি, ছিল; সে সকলও পিত্তলময়; এবং তাহার দ্বিতীয় স্তম্ভেরও ঐ মত আকার ও দাড়িম্ব ছিল। পার্শ্বে ছিয়ানব্বই দাড়িম্ব ছিল, চারিদিকের জালকার্য্যের উপরে শ্রেণীবদ্ধ এক শত দাড়িম্ব ছিল। পরে রক্ষ-সেনাপতি মহাযাজক সরায়কে, দ্বিতীয় যাজক সফনিয়কে ও তিন জন দ্বারপালকে ধরিলেন। আর তিনি নগর হইতে যোদ্ধাদের উপরে নিযুক্ত এক জন কর্ম্মচারীকে এবং যাঁহারা রাজার মুখ দর্শন করিতেন, তাঁহাদের মধ্যে নগরে প্রাপ্ত সাত জন লোককে, দেশের লোকসংগ্রহকারী সৈন্যাধ্যক্ষের লেখককে ও নগর মধ্যে প্রাপ্ত দেশের লোকদের মধ্যে ষাট জনকে ধরিলেন। রক্ষ-সেনাপতি নবূষরদন তাঁহাদিগকে ধরিয়া রিব্লাতে বাবিল-রাজের কাছে লইয়া গেলেন। আর বাবিল-রাজ হমাৎ দেশস্থ রিব্লাতে তাঁহাদিগকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন। এইরূপে যিহূদা আপন দেশ হইতে বন্দি হইয়া নীত হইল। নবূখদ্‌রিৎসর কর্ত্তৃক এই সকল লোক বন্দিরূপে নীত হইল; সপ্তম বৎসরে তিন সহস্র তেইশ জন যিহূদী; নবূখদ্‌রিৎসরের অষ্টাদশ বৎসরে তিনি যিরূশালেম হইতে আটশত বত্রিশ জনকে বন্দি করিয়া লইয়া যান। নবূখদ্‌রিৎসরের ত্রয়োবিংশ বৎসরে রক্ষ-সেনাপতি নবূষরদন সাতশত পঁয়তাল্লিশ জন যিহূদীকে বন্দি করিয়া লইয়া যান। ইহারা সর্ব্বশুদ্ধ চারি সহস্র ছয়শত প্রাণী। পরে যিহূদার যিহোয়াখীন রাজার বন্দি-দশার সপ্তত্রিংশ বৎসরে, দ্বাদশ মাসে, মাসের পঞ্চবিংশ দিবসে, বাবিল-রাজ ইবিল-মরোদক আপন রাজত্বের প্রথম বৎসরে যিহূদা-রাজ যিহোয়াখীনের মস্তক উঠাইলেন, ও তাঁহাকে কারাগার হইতে মুক্ত করিলেন। আর তিনি তাঁহাকে প্রীতিবাক্য কহিয়া, তাঁহার সহিত যে সকল রাজা বাবিলে ছিলেন, তাঁহাদের আসন হইতে তাঁহার আসন উচ্চে স্থাপন করিলেন। আর ইনি কারাবাসের বস্ত্র পরিবর্ত্তন করিলেন; এবং যাবজ্জীবন প্রতিনিয়ত রাজার সম্মুখে ভোজন পান করিতে লাগিলেন। আর তাঁহার মরণদিন পর্য্যন্ত বাবিল-রাজের আজ্ঞাতে তাঁহাকে নিয়ত বৃত্তি দেওয়া হইত, তাঁহার সমস্ত জীবন ব্যাপিয়া তাঁহাকে দিনের উপযুক্ত খাদ্য দ্রব্য প্রতিদিন দেওয়া হইত। হায়, সেই নগরী কেমন একাকিনী বসিয়া আছে, যে লোকে পরিপূর্ণা ছিল। সে বিধবার ন্যায় হইয়াছে, যে জাতিগণের মধ্যে প্রধানা ছিল। প্রদেশ-সমূহের মধ্যে যে রাজ্ঞী ছিল, সে কর্ম্মাধীনা দাসী হইয়াছে। সে রাত্রে অতিশয় রোদন করে; তাহার গণ্ডে অশ্রু পড়িতেছে; তাহার সমস্ত প্রেমিকের মধ্যে এমন এক জনও নাই যে, তাহাকে সান্ত্বনা করিবে; তাহার বন্ধুরা সকলে তাহাকে প্রবঞ্চনা করিয়াছে, তাহারা তাহার শত্রু হইয়া উঠিয়াছে। যিহূদা দুঃখে ও মহাদাসত্বে নির্ব্বাসিত হইয়াছে; সে জাতিগণের মধ্যে বাস করিতেছে, বিশ্রাম পায় না; তাহার তাড়নাকারিগণ সকলে সঙ্কীর্ণ পথে তাহাকে ধরিয়াছিল। সিয়োনের পথ সকল শোক করিতেছে, কারণ কেহ পর্ব্বে আইসে না; তাহার সমস্ত দ্বার শূন্য; তাহার যাজকগণ দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে; তাহার কুমারীগণ ক্লিষ্টা, সে আপনি মনঃপীড়া পাইতেছে। তাহার বিপক্ষগণ মস্তকস্বরূপ হইয়াছে, তাহার শত্রুবর্গ ভাগ্যবান হইয়াছে; কেননা তাহার অধর্ম্মের বাহুল্য প্রযুক্ত সদাপ্রভু তাহাকে ক্লিষ্ট করিয়াছেন; তাহার শিশু বালকেরা বিপক্ষের অগ্রে অগ্রে বন্দি হইয়া গিয়াছে। আর সিয়োন-কন্যার সমস্ত শোভা তাহাকে ছাড়িয়া গিয়াছে; তাহার অধ্যক্ষগণ এমন হরিণদিগের ন্যায় হইয়াছে, যাহারা চরাণি-স্থান পায় না; তাহারা শক্তিহীন হইয়া পশ্চাদ্ধাবকের অগ্রে অগ্রে গমন করিয়াছে। যিরূশালেম নিজ দুঃখের ও দুর্গতির সময়ে, আপনার পূর্ব্বকালাগত মনোহর সামগ্রী সকল স্মরণ করিতেছে; তাহার লোকেরা যখন বিপক্ষের হস্তগত হইয়াছিল, তাহার সাহায্যকারী কেহ ছিল না, তখন বিপক্ষগণ তাহাকে দেখিল, তাহার উৎসন্নতায় উপহাস করিল। যিরূশালেম অতিশয় পাপ করিয়াছে, এই জন্য ঘৃণাস্পদ হইল; যাহারা তাহাকে সম্মান করিত, তাহারা তাহাকে তুচ্ছ করিতেছে, কারণ তাহার উলঙ্গতা দেখিতে পাইয়াছে; সে আপনিও দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিতেছে, মুখ পিছনে ফিরাইতেছে। তাহার অশৌচ বস্ত্রের অঞ্চলে ছিল, সে আপনার শেষফল মনে করিত না, এই জন্য আশ্চর্য্যরূপে অধঃপতিত হইল; তাহাকে সান্ত্বনা করিবার কেহ নাই; আমার দুঃখ দেখ, হে সদাপ্রভু, কারণ শত্রু দর্প করিয়াছে; বিপক্ষ তাহার সমস্ত মনোহর দ্রব্যে হস্তার্পণ করিয়াছে; ফলে সে দেখিয়াছে, জাতিগণ তাহার পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিয়াছে, যাহাদের বিষয়ে তুমি আদেশ করিয়াছিলে যে, তাহারা তোমার সমাজে প্রবেশ করিবে না। তাহার সমস্ত প্রজা দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিতেছে, তাহারা অন্নের চেষ্টা করিতেছে, প্রাণ ফিরাইয়া আনিবার জন্য খাদ্যের পরিবর্ত্তে আপন আপন মনোহর দ্রব্য সকল দিয়াছে। দেখ, হে সদাপ্রভু, অবধান কর, কেননা আমি তুচ্ছাস্পদ হইয়াছি। হে পথিক সকল, ইহাতে কি তোমাদের কিছু আইসে যায় না? অবধান করিয়া দেখ, আমার যে ব্যথা দেওয়া হইয়াছে, তাহার তুল্য ব্যথা আর কোথাও কি আছে? তদ্দ্বারা সদাপ্রভু আপন প্রচণ্ড ক্রোধের দিনে আমাকে ক্লিষ্ট করিয়াছেন। তিনি ঊর্দ্ধলোক হইতে আমার অস্থিচয়ের মধ্যে অগ্নি পাঠাইয়াছেন, তাহা সে সকল পরাভব করিতেছে; তিনি আমার চরণের নিমিত্ত জাল পাতিয়াছেন, আমার মুখ পিছনে ফিরাইয়াছেন, আমাকে অনাথা ও সমস্ত দিন মূর্চ্ছাপন্না করিয়াছেন। আমার অধর্ম্মের যোঁয়ালি তাঁহার হস্ত দ্বারা বদ্ধ হইয়াছে; তাহা জড়ান হইল, আমার ঘাড়ে উঠিল; তিনি আমার বল খর্ব্ব করিয়াছেন; যাহাদের বিরুদ্ধে আমি উঠিতে পারি না, তাহাদেরই হস্তে প্রভু আমাকে সমর্পণ করিয়াছেন। প্রভু আমার মধ্যস্থিত আমার সমস্ত বীরকে নগণ্য করিয়াছেন, তিনি আমার যুবকগণকে ভগ্ন করিবার জন্য আমার বিপরীতে সভা আহ্বান করিয়াছেন, প্রভু যিহূদা-কুমারীকে দ্রাক্ষাকুণ্ডে মর্দ্দন করিয়াছেন। এই কারণ আমি ক্রন্দন করিতেছি; আমার চক্ষু, আমার চক্ষু জলের নির্ঝর হইয়াছে; কেননা সান্ত্বনাকারী, যিনি আমার প্রাণ ফিরাইয়া আনিবেন, তিনি আমা হইতে দূরে গিয়াছেন; আমার বালকেরা অনাথ, কারণ শত্রু বিজয়ী হইয়াছে। সিয়োন অঞ্জলি প্রসারণ করিতেছে; তাহার সান্ত্বনাকারী কেহ নাই; সদাপ্রভু যাকোবের সম্বন্ধে আজ্ঞা দিয়াছেন যে, তাহার চারিদিকের লোক তাহার বিপক্ষ হউক; যিরূশালেম তাহাদের মধ্যে ঘৃণাস্পদ। সদাপ্রভুই ধর্ম্মময়, ফলে আমি তাঁহার আজ্ঞার প্রতিকূলাচরণ করিয়াছি; হে জাতি সকল, বিনয় করি, শুন, আমার ব্যথা দেখ; আমার কুমারীগণ ও যুবকগণ বন্দি হইয়া গিয়াছে। আমি আপন প্রেমিকদিগকে ডাকিলাম, তাহারা আমাকে বঞ্চনা করিল; আমার যাজকগণ ও আমার প্রাচীনবর্গ নগরের মধ্যে প্রাণত্যাগ করিল, বাস্তবিক তাহারা আপন আপন প্রাণ ফিরাইয়া আনিবার জন্য অন্নের অন্বেষণ করিতেছিল। দৃষ্টিপাত কর, হে সদাপ্রভু, কেননা আমি সঙ্কটাপন্না; আমার অন্ত্র দগ্ধ হইতেছে; আমার ভিতরে হৃদয় বিকারপ্রাপ্ত হইতেছে, কারণ আমি অতিশয় প্রতিকূলাচরণ করিয়াছি; বাহিরে খড়্‌গ নিঃসন্তান করিতেছে, ভিতরে যেন মৃত্যু উপস্থিত। লোকে আমার দীর্ঘনিঃশ্বাস শুনিতে পাইয়াছে; আমার সান্ত্বনাকারী কেহ নাই; আমার শত্রুরা সকলে আমার অমঙ্গলের কথা শুনিয়াছে; তাহারা আমোদ করিতেছে, কেননা তুমিই ইহা করিয়াছ; তুমি নিজ প্রচারিত দিন উপস্থিত করিবে, তখন তাহারা আমার সমান হইবে। তাহাদের সমস্ত দুষ্টতা তোমার দৃষ্টিগোচর হউক; তুমি আমার সমস্ত অধর্ম্মের জন্য আমার প্রতি যেরূপ করিয়াছ, তাহাদের প্রতিও সেইরূপ কর, কেননা আমার দীর্ঘনিঃশ্বাস অধিক ও আমার হৃদয় মূর্চ্ছিত। প্রভু আপন ক্রোধে সিয়োন-কন্যাকে কেমন মেঘাচ্ছন্ন করিয়াছেন! তিনি ইস্রায়েলের শোভা স্বর্গ হইতে ভূতলে নিক্ষেপ করিয়াছেন; তিনি আপন ক্রোধের দিনে আপন পাদপীঠ স্মরণ করেন নাই। প্রভু যাকোবের সমস্ত বাসস্থান গ্রাস করিয়াছেন, দয়া করেন নাই; তিনি ক্রোধে যিহূদা-কন্যার দৃঢ় দুর্গ সকল উৎপাটন করিয়াছেন, তিনি সে সমস্ত ভূমিসাৎ করিয়াছেন; রাজ্য ও তাহার অধ্যক্ষগণকে অশুচি করিয়াছেন। তিনি প্রচণ্ড ক্রোধে ইস্রায়েলের সমস্ত শৃঙ্গ উচ্ছেদ করিয়াছেন, তিনি শত্রুর সম্মুখ হইতে আপন দক্ষিণ হস্ত সঙ্কুচিত করিয়াছেন, চতুর্দ্দিক্‌ দগ্ধকারী অগ্নিশিখার ন্যায় তিনি যাকোবকে প্রজ্বলিত করিয়াছেন। তিনি শত্রুবৎ আপন ধনুকে চাড়া দিয়াছেন, বিপক্ষবৎ দক্ষিণ হস্ত তুলিয়া দাঁড়াইয়াছেন, আর নয়নরঞ্জন সকলকে বধ করিয়াছেন; তিনি সিয়োন-কন্যার তাম্বুমধ্যে আপন ক্রোধানল ঢালিয়া দিয়াছেন। প্রভু শত্রুবৎ হইয়াছেন, ইস্রায়েলকে গ্রাস করিয়াছেন, তিনি তাহার সমুদয় অট্টালিকা গ্রাস করিয়াছেন, তাহার দুর্গ সকল ধ্বংস করিয়াছেন, তিনি যিহূদা-কন্যার শোক ও বিলাপ বৃদ্ধি করিয়াছেন। তিনি বাগানের কুটীরের ন্যায় আপন কুটীর দূর করিয়াছেন, আপনার সমাগম-স্থান বিনষ্ট করিয়াছেন; সদাপ্রভু সিয়োনে পর্ব্ব ও বিশ্রামবার বিস্মৃত করাইয়াছেন, প্রচণ্ড ক্রোধে রাজাকে ও যাজককে অবজ্ঞা করিয়াছেন। প্রভু আপন যজ্ঞবেদি দূর করিয়াছেন, আপন পবিত্র স্থান ঘৃণা করিয়াছেন; তিনি তাহার অট্টালিকার ভিত্তি শত্রুহস্তে সমর্পণ করিয়াছেন; তাহারা সদাপ্রভুর গৃহমধ্যে পর্ব্বদিনের ন্যায় কোলাহল করিয়াছে। সদাপ্রভু সিয়োন-কন্যার প্রাচীর নষ্ট করিবার সঙ্কল্প করিয়াছেন; তিনি সূত্রপাত করিয়াছেন, লোপ করণ হইতে আপন হস্ত নিবৃত্ত করেন নাই; তিনি পরিখা ও প্রাচীরকে বিলাপ করাইয়াছেন, সে সকল একসঙ্গে তেজোহীন হইয়াছে। পুরদ্বার সকল মৃত্তিকায় আচ্ছন্ন হইয়াছে, তিনি তাহার অর্গল নষ্ট ও খণ্ড খণ্ড করিয়াছেন; তাহার রাজা ও অধ্যক্ষগণ ব্যবস্থাবিহীন জাতিগণের মধ্যে থাকে; তাহার ভাববাদিগণও সদাপ্রভু হইতে কোন দর্শন পায় না। সিয়োন-কন্যার প্রাচীনেরা মৃত্তিকায় বসিয়া আছে, নীরব হইয়া রহিয়াছে; তাহারা আপন আপন মস্তকে ধূলি ছড়াইয়াছে, তাহারা কটিদেশে চট বাঁধিয়াছে, যিরূশালেম-কুমারীগণ ভূমি পর্য্যন্ত মস্তক হেঁট করিতেছে। আমার নেত্রযুগল অশ্রুপাতে ক্ষীণ হইয়াছে, আমার অন্ত্র দগ্ধ হইতেছে; আমার জাতিরূপ কন্যার ভঙ্গ প্রযুক্ত আমার যকৃৎ মৃত্তিকায় চালা যাইতেছে, কেননা নগরের চকে চকে বালকবালিকা ও স্তন্যপায়ী শিশু মূর্চ্ছাপন্ন হয়। তাহারা আপন আপন মাতাকে বলে, গোম ও দ্রাক্ষারস কোথায়? কেননা তাহারা নগরের চকে চকে খড়্‌গবিদ্ধ লোকদের ন্যায় মূর্চ্ছাপন্ন হয়, নিজ নিজ মাতার বক্ষঃস্থলে প্রাণত্যাগ করে। অয়ি যিরূশালেম-কন্যে, আমি কি বলিয়া তোমার কাছে সাক্ষ্য দিব? কিসের সহিত তোমার উপমা দিব? অয়ি সিয়োন-কুমারি, আমি তোমার সান্ত্বনার জন্য কিসের সহিত তোমার তুলনা দিব? কেননা তোমার ভঙ্গ সমুদ্রের ন্যায় বৃহৎ, তোমার চিকিৎসা করা কাহার সাধ্য? তোমার ভাববাদিগণ তোমার নিমিত্ত অলীকতার ও মূর্খতার দর্শন পাইয়াছে, তাহারা তোমার বন্দি-দশা ফিরাইবার জন্য তোমার অধর্ম্ম ব্যক্ত করে নাই, কিন্তু তোমার নিমিত্ত অলীকতার ভাববাণী সকল ও নির্ব্বাসনের বিষয় সকল দর্শন করিয়াছে। যে সকল লোক তোমার নিকট দিয়া যায়, তাহারা তোমার দিকে হাততালি দেয়; তাহারা শিশ দিয়া যিরূশালেম-কন্যার দিকে মাথা নাড়িয়া বলে, এ কি সেই নগর, যাহা ‘পরম সৌন্দর্য্যের স্থল’ ও ‘সমস্ত পৃথিবীর আনন্দ-স্থল’ নামে আখ্যাত ছিল? তোমার সমস্ত শত্রু তোমার বিরুদ্ধে মুখ খুলিয়া হাঁ করিয়াছে, তাহারা শিশ দিয়া দন্ত ঘর্ষণ করে, বলে, আমরা তাহাকে গ্রাস করিলাম, এ অবশ্য সেই দিনে, যাহার আকাঙ্ক্ষা করিতাম; আমরা পাইলাম, দেখিলাম। সদাপ্রভু যে সঙ্কল্প করিয়াছিলেন, তাহা সিদ্ধ করিয়াছেন; পুরাকালে যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, সেই বাক্য পূর্ণ করিয়াছেন, তিনি নিপাত করিয়াছেন, দয়া করেন নাই; তিনি শত্রুকে তোমার উপরে আনন্দ করিতে দিয়াছেন, তোমার বিপক্ষদের শৃঙ্গ উচ্চ করিয়াছেন। লোকদের হৃদয় প্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়াছে; অহো সিয়োন-কন্যার প্রাচীর! দিবারাত্র অশ্রুধারা জলস্রোতের ন্যায় বহিয়া যাউক, আপনাকে কিছু বিশ্রাম দিও না, তোমার চক্ষুর তারাকে ক্ষান্ত হইতে দিও না। উঠ, রাত্রিকালে প্রত্যেক প্রহরের আরম্ভে বিলাপ কর, প্রভুর সম্মুখে আপন হৃদয় জলের ন্যায় ঢালিয়া দেও, তাঁহার উদ্দেশে হস্ত উত্তোলন কর, তোমার শিশুগণের প্রাণরক্ষার্থে, যাহারা প্রতি পথের মস্তকে ক্ষুধায় মূর্চ্ছাপন্ন রহিয়াছে। দেখ, হে সদাপ্রভু, অবধান কর, তুমি কাহার প্রতি এমন ব্যবহার করিয়াছ? স্ত্রীলোক কি আপন গর্ভফল, যাহাদিগকে হাতে করিয়া দোলাইয়াছে, সেই শিশুগুলি ভোজন করিবে? প্রভুর পবিত্র স্থানে কি যাজক ও ভাববাদী নিহত হইবে? বালক ও বৃদ্ধ পথে পথে ভূমিতে পড়িয়া আছে, আমার কুমারীগণ ও আমার যুবকগণ খড়্‌গে পতিত হইয়াছে; তুমি আপন ক্রোধের দিনে তাহাদিগকে বধ করিয়াছ; তুমি হত্যা করিয়াছ, দয়া কর নাই। তুমি চারিদিক্‌ হইতে আমার ত্রাস সকলকে পর্ব্বদিনের ন্যায় আহ্বান করিয়াছ; সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে উত্তীর্ণ কি রক্ষাপ্রাপ্ত কেহ রহিল না; আমি যাহাদিগকে দোলাইতাম ও ভরণপোষণ করিতাম, আমার শত্রু তাহাদিগকে সংহার করিয়াছে। আমি সেই ব্যক্তি, যে তাঁহার ক্রোধের দণ্ডঘটিত দুঃখ দেখিয়াছে। আমাকে তিনি চালাইয়াছেন, আর গমন করাইয়াছেন অন্ধকারে, আলোকে নয়। সত্যই আমার বিরুদ্ধে তিনি আপন হস্ত ফিরান; সমস্ত দিন পুনঃ পুনঃ ফিরান। তিনি আমার মাংস ও চর্ম্ম জীর্ণ করিয়াছেন; আমার অস্থি সকল ভগ্ন করিয়াছেন। তিনি আমাকে অবরোধ করিয়াছেন, এবং বিষ ও শ্রান্তি দ্বারা আমাকে বেষ্টন করিয়াছেন; তিনি আমাকে অন্ধকারে বাস করাইয়াছেন, বহুকালের মৃতদের সদৃশ করিয়াছেন। তিনি আমার চারিদিকে বেড়া দিয়াছেন, আমি বাহির হইতে পারি না; তিনি আমার শৃঙ্খল ভারী করিয়াছেন। আমি যখন ক্রন্দন ও আর্ত্তনাদ করি, তিনি আমার প্রার্থনা অগ্রাহ্য করেন। তিনি ক্ষোদিত প্রস্তর দ্বারা আমার পথ সকল রোধ করিয়াছেন, তিনি আমার মার্গ সকল বক্র করিয়াছেন। তিনি আমার পক্ষে লুক্কায়িত ভল্লুক বা অন্তরালে গুপ্ত সিংহস্বরূপ। তিনি আমার পথ বিপথ করিয়াছেন, আমাকে খণ্ড বিখণ্ড করিয়াছেন, অনাথ করিয়াছেন। তিনি আপন ধনুকে চাড়া দিয়া আমাকে বাণের লক্ষ্য করিয়া রাখিয়াছেন। তিনি আপন তূণের বাণ আমার মর্ম্মে প্রবেশ করাইয়াছেন। আমি হইয়াছি, স্বজাতীয় সকলের উপহাসের বিষয়, সমস্ত দিন তাহাদের গানের বিষয়। তিনি আমাকে তিক্ততায় পূর্ণ করিয়াছেন, আমাকে নাগদানায় পূরিত করিয়াছেন। তিনি কঙ্কর দ্বারা আমার দন্ত ভাঙ্গিয়াছেন, আমাকে ভস্মে আচ্ছাদন করিয়াছেন। তুমি আমার প্রাণ শান্তি হইতে দূর করিয়াছ; আমি মঙ্গল ভুলিয়া গিয়াছি। আমি কহিলাম, আমার বল ও সদাপ্রভুতে আমার প্রত্যাশা নষ্ট হইয়াছে। স্মরণ কর আমার দুঃখ ও আমার দুর্দ্দশা নাগদানা ও বিষ। আমার প্রাণ নিত্য তাহা স্মরণে রাখিতেছে, আমার অন্তরে অবসন্ন হইতেছে। আমি পুনর্ব্বার ইহা মনে করি, তাই আমার প্রত্যাশা আছে। সদাপ্রভুর বিবিধ দয়ার গুণে আমরা নষ্ট হই নাই; কেননা তাঁহার বিবিধ করুণা শেষ হয় নাই। নূতন নূতন করুণা প্রতি প্রভাতে! তোমার বিশ্বস্ততা মহৎ। আমার প্রাণ বলে, সদাপ্রভুই আমার অধিকার; এই জন্য আমি তাঁহাতে প্রত্যাশা করিব। সদাপ্রভু মঙ্গলস্বরূপ, তাঁহার আকাঙ্ক্ষীদের পক্ষে, তাঁহার অন্বেষী প্রাণের পক্ষে। সদাপ্রভুর পরিত্রাণের প্রত্যাশা করা, নীরবে অপেক্ষা করা, ইহাই মঙ্গল। যৌবনকালে যোঁয়ালি বহন করা মানুষের মঙ্গল। সে একাকী বসুক, নীরব থাকুক, কারণ তিনি তাহার স্কন্ধে [যোঁয়ালি] রাখিয়াছেন। সে ধূলাতে মুখ দিউক, তবে প্রত্যাশা হইলে হইতে পারে। সে আপন প্রহারকের কাছে গাল পাতিয়া দিউক অপমানে পরিপূর্ণ হউক। কেননা প্রভু চিরতরে পরিত্যাগ করিবেন না। যদ্যপি মনস্তাপ দেন, তথাপি আপন প্রচুর দয়ানুসারে করুণা করিবেন। কেননা তিনি অন্তরের সহিত দুঃখ দেন না, মনুষ্য-সন্তানগণকে শোকার্ত্ত করেন না। লোকে যে পৃথিবীর বন্দি সকলকে পদতলে দলিত করে, পরাৎপরের সম্মুখে মনুষ্যের প্রতি অন্যায় করে, কাহারও বিবাদের অন্যায় নিষ্পত্তি করে, তাহা প্রভু দেখিতে পারেন না। প্রভু আজ্ঞা না করিলে কাহার বাক্য সিদ্ধ হইতে পারে? পরাৎপরের মুখ হইতে কি বিপদ ও সম্পদ দুই বাহির হয় না? জীবিত মনুষ্য কেন আক্ষেপ করে, প্রত্যেক ব্যক্তি আপন পাপের দণ্ডের জন্য? আইস, আমরা আপন আপন পথের সন্ধান ও পরীক্ষা করি, এবং সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আসি; আইস, হস্তযুগলের সহিত হৃদয়কেও স্বর্গনিবাসী ঈশ্বরের দিকে উত্তোলন করি। আমরা অধর্ম্ম ও বিদ্রোহাচরণ করিয়াছি; তুমি ক্ষমা কর নাই। তুমি ক্রোধে আচ্ছাদন করিয়া আমাদিগকে তাড়না করিয়াছ, বধ করিয়াছ, দয়া কর নাই। তুমি মেঘে আপনাকে আচ্ছাদন করিয়াছ, প্রার্থনা তাহা ভেদ করিতে পারে না। তুমি জাতিগণের মধ্যে আমাদিগকে জঞ্জাল ও আবর্জ্জনার ন্যায় করিয়াছ। আমাদের সমস্ত শত্রু আমাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলিয়া হা করিয়াছে। ত্রাস ও খাত, উৎসন্নতা ও ভঙ্গ, আমাদের প্রতি উপস্থিত। আমার জাতিরূপ কন্যার ভঙ্গ প্রযুক্ত আমার চক্ষু হইতে জলধারা বহিতেছে। আমার চক্ষু অবিশ্রান্ত অশ্রুতে ভাসিতেছে, বিরাম পায় না, যে পর্য্যন্ত সদাপ্রভু স্বর্গ হইতে হেঁট হইয়া দৃষ্টিপাত না করেন। আমার নগরীর সমস্ত কন্যার নিমিত্ত আমার চক্ষু আমার প্রাণকে আর্দ্র করে। অকারণে যাহারা আমার শত্রু, তাহারা আমাকে পক্ষীর ন্যায় শিকার করিয়াছে। তাহারা আমার জীবন কূপে সংহার করিয়াছে, এবং আমার উপরে প্রস্তর নিক্ষেপ করিয়াছে। আমার মস্তকের উপর দিয়া জল বহিল; আমি কহিলাম, আমি উচ্ছিন্ন হইয়াছি। হে সদাপ্রভু, আমি অধোলোকস্থ কূপের মধ্য হইতে তোমার নাম ডাকিয়াছি। তুমি আমার রব শুনিয়াছ; আমার নিঃশ্বাস, আমার আর্ত্তনাদ হইতে কর্ণ লুকাইও না। যে দিন আমি তোমাকে ডাকিয়াছি, সেই দিন তুমি নিকটে আসিয়াছ, বলিয়াছ, ভয় করিও না। হে প্রভু, তুমি আমার প্রাণের বিবাদ সকল নিষ্পত্তি করিয়াছ; আমার জীবন মুক্ত করিয়াছ। হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রতি কৃত উপদ্রব দেখিয়াছ, আমার বিচার নিষ্পত্তি কর। উহাদের সমস্ত প্রতিশোধ ও আমার বিরুদ্ধে কৃত সমস্ত সঙ্কল্প তুমি দেখিয়াছ। হে সদাপ্রভু, তুমি উহাদের টিটকারি ও আমার বিরুদ্ধে কৃত উহাদের সমস্ত সঙ্কল্প শুনিয়াছ; আমার প্রতিরোধীদের মুখের বচন ও আমার বিরুদ্ধে সমস্ত দিন তাহাদের ভণভণানি শুনিয়াছ। তাহাদের উপবেশন ও উত্থান নিরীক্ষণ কর, আমি তাহাদের গীতস্বরূপ। হে সদাপ্রভু, তুমি তাহাদের হস্তকৃত কর্ম্মানুযায়ী প্রতিফল তাহাদিগকে দিবে। তুমি তাহাদিগকে চিত্তের জড়তা দিবে, তোমার অভিশাপ তাহাদের প্রতি বর্ত্তিবে। তুমি তাহাদিগকে ক্রোধে তাড়না করিবে, ও সদাপ্রভুর স্বর্গের নীচে হইতে উচ্ছিন্ন করিবে। হায়, সুবর্ণ কেমন মলিন হইয়াছে! বিমল কাঞ্চন কেমন বিকৃত হইয়াছে! ধর্ম্মধামের প্রস্তরগুলি প্রতি পথের মস্তকে নিক্ষিপ্ত রহিয়াছে। হায়, বহুমূল্য সিয়োন-পুত্রগণ, যাহারা নির্ম্মল কাঞ্চনের তুল্য, তাহারা মৃন্ময় ভাণ্ডের ন্যায়, কুম্ভকারের হস্তকৃত বস্তুর ন্যায় গণিত হইয়াছে! শৃগালীরাও স্তন দেয়, আপন আপন শিশুদিগকে দুগ্ধ পান করায়; আমরা জাতিরূপ কন্যা নিষ্ঠুরা হইয়াছে, প্রান্তরস্থ উষ্ট্রপক্ষীদের ন্যায়। স্তন্যপায়ী শিশুরা জিহ্বা পিপাসায় তালুতে সংলগ্ন হইয়াছে; বালকবালিকারা রুটী চাহিতেছে, কেহ তাহাদিগকে বাঁটিয়া দেয় না। যাহারা উপাদেয় দ্রব্য ভোজন করিত, তাহারা অনাথ হইয়া পথে পথে রহিয়াছে; যাহাদিগকে সিন্দূরবর্ণ বস্ত্র পরাইয়া লালন পালন করা যাইত, তাহারা সারের ঢিবী আলিঙ্গন করিতেছে। বাস্তবিক আমার জাতিরূপ কন্যার অপরাধ সেই সদোমের পাপ হইতেও অধিক, যাহা এক নিমিষে উৎপাটিত হইয়াছিল, অথচ তাহার উপরে মানুষের হাত পড়ে নাই। তাহার অধ্যক্ষগণ হিম অপেক্ষা নির্ম্মল, দুগ্ধ অপেক্ষা শুভ্রবর্ণ ছিলেন; প্রবাল অপেক্ষা রক্তবর্ণ অঙ্গ তাঁহাদের ছিল; নীলকান্তমণির ন্যায় কান্তি তাঁহাদের ছিল; তাঁহাদের মুখ কালি হইতেও কাল হইয়া পড়িয়াছে; পথে তাঁহাদিগকে চেনা যায় না; তাঁহাদের চর্ম্ম অস্থিতে সংলগ্ন হইয়াছে; তাহা কাষ্ঠবৎ শুষ্ক হইয়াছে। ক্ষুধাতে নিহত লোক অপেক্ষা বরং খড়্‌গে নিহত লোক ধন্য, কেননা ইহারা ক্ষেত্রের শস্যের অভাবে যেন শূলে বিদ্ধ হইয়া ক্ষয় পাইতেছে। স্নেহময়ী স্ত্রীগণের হস্ত আপন আপন শিশু রন্ধন করিয়াছে; আমার জাতিরূপ কন্যার ভঙ্গপ্রযুক্ত ইহারা তাহাদের খাদ্যদ্রব্য হইয়াছে। সদাপ্রভু আপন ক্রোধ সম্পন্ন করিয়াছেন, আপন প্রচণ্ড কোপ ঢালিয়া দিয়াছেন; তিনি সিয়োনে অগ্নি জ্বালাইয়াছেন, তাহা তাহার ভিত্তিমূল গ্রাস করিয়াছে। পৃথিবীর রাজগণ, জগন্নিবাসী সমস্ত লোক, বিশ্বাস করিত না যে, যিরূশালেমের দ্বারে কোন বিপক্ষ কি শত্রু প্রবেশ করিতে পারিবে। ইহার কারণ তাহার ভাববাদিগণের পাপ ও তাহার যাজকগণের অপরাধ; কেননা তাহারা তাহার মধ্যে ধার্ম্মিকগণের রক্তপাত করিত। তাহারা অন্ধগণের ন্যায় পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে, রক্তে কলুষিত হইয়াছে, লোকেরা তাহাদের বস্ত্র স্পর্শ করিতে পারে না। লোকে তাহাদিগকে চেঁচাইয়া বলিয়াছে, তোমরা পথ ছাড়; অশুচি, পথ ছাড়, পথ ছাড়, স্পর্শ করিও না; তাহারা পলায়ন করিয়াছে, ঘুরিয়া বেড়াইয়াছে; জাতিগণের মধ্যে লোকে বলিয়াছে, উহারা এই স্থানে আর প্রবাস করিতে পারিবে না। সদাপ্রভুর মুখ তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছে, তিনি তাহাদিগকে আর দেখিতে পারেন না; লোকে যাজকগণের মুখাপেক্ষা করে নাই, প্রাচীনগণের প্রতি কৃপা করে নাই। এখনও আমাদের চক্ষু ক্ষীণ হইয়া পড়িতেছে, মিথ্যা সাহায্যের প্রত্যাশায়; আমরা অপেক্ষা করিতে করিতে এমন জাতির অপেক্ষায় রহিয়াছি, যে রক্ষা করিতে পারে না। [শত্রুগণ] আমাদের পাদবিক্ষেপের অনুসরণ করে, আমরা স্ব স্ব পথে বেড়াইতে পারি না; আমাদের শেষকাল নিকটবর্ত্তী, আমাদের আয়ু সম্পূর্ণ হইল, হাঁ, আমাদের শেষকাল উপস্থিত। আমাদের তাড়নাকারিগণ আকাশের ঈগল পক্ষী অপেক্ষা বেগগামী ছিল; তাহারা পর্ব্বতের উপরে আমাদের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িত, প্রান্তরে আমাদের জন্য ঘাঁটি বসাইত। যিনি আমাদের নাসিকায় বায়ুস্বরূপ, সদাপ্রভুর অভিষিক্ত, তিনি তাহাদের গর্ত্তে ধৃত হইলেন, যাঁহার বিষয়ে বলিয়াছিলাম, আমরা তাঁহার ছায়ায় জাতিগণের মধ্যে জীবন যাপন করিব। হে ঊষদেশ-নিবাসিনি ইদোম-কন্যে, তুমি আনন্দ কর ও পুলকিতা হও। তোমার নিকটেও সেই পানপাত্র আসিবে, তুমি মত্তা হইবে, উলঙ্গিনী হইবে। সিয়োন-কন্যা, তোমার অপরাধ শেষ হইল; তিনি তোমাকে আর বন্দি-দশায় ফেলিবেন না; হে ইদোম-কন্যে, তিনি তোমার অপরাধের প্রতিফল দিবেন, তোমার পাপ অনাবৃত করিবেন। হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রতি যাহা ঘটিয়াছে, স্মরণ কর, দৃষ্টিপাত কর, আমাদের অপমান দেখ। আমাদের অধিকার বিদেশীদের হস্তে, আমাদের বাটী সকল বিজাতীয়দের হস্তে গিয়াছে। আমরা অনাথ ও পিতৃহীন, আমাদের মাতারা বিধবাদের ন্যায় হইয়াছেন। আমাদের জল আমরা রৌপ্য দিয়া পান করিয়াছি, আমাদের কাষ্ঠ মূল্য দিয়া কিনিতে হয়। লোকে ঘাড় ধরিয়া আমাদিগকে তাড়না করে, আমরা পরিশ্রান্ত, কিছুই বিশ্রাম পাই না। আমরা মিস্রীয়দের কাছে করযোড় করিয়াছি, অশূরীয়দের কাছেও করিয়াছি, খাদ্যে তৃপ্ত হইবার জন্য। আমাদের পিতৃপুরুষেরা পাপ করিয়াছেন, এখন তাঁহারা নাই, আমরাই তাঁহাদের অপরাধ বহন করিয়াছি। আমাদের উপরে দাসেরা কর্ত্তৃত্ব করে, তাহাদের হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করে, এমন কেহ নাই। প্রাণসংশয়ে আমরা খাদ্য আহরণ করি, প্রান্তরে স্থিত খড়্‌গ প্রযুক্ত। আমাদের চর্ম্ম তুন্দুরের ন্যায় জ্বলে, দুর্ভিক্ষের জ্বলন্ত তাপ প্রযুক্ত। সিয়োনে রমণীগণ ভ্রষ্টা হইল, যিহূদার নগর-সমূহে কুমারীরা ভ্রষ্টা হইল। অধ্যক্ষগণের হাত বাঁধিয়া ফাঁসি দেওয়া গেল, প্রাচীন লোকদের মুখ সমাদৃত হইল না। যুবকগণকে যাঁতা বহিতে হইল, শিশুরা কাষ্ঠভারে উছোট খাইল। প্রাচীনেরা পুরদ্বারে উপবেশনে নিবৃত্ত, যুবকগণ বাদ্য বাদনে নিবৃত্ত হইয়াছে; আমাদের চিত্তের আনন্দ লুপ্ত হইয়াছে, আমাদের নৃত্য শোকে পরিণত হইয়াছে। আমাদের মস্তক হইতে মুকুট খসিয়া পড়িয়াছে, ধিক্‌ আমাদিগকে! কেননা আমরা পাপ করিয়াছি। এই জন্য আমাদের অন্তঃকরণ মূর্চ্ছিত হইয়াছে, এই সমস্ত কারণে আমাদের চক্ষু নিস্তেজ হইয়াছে, কেননা সিয়োন পর্ব্বত উচ্চিন্ন স্থান হইয়াছে, শৃগালগণ তদুপরি যাতায়াত করে। হে সদাপ্রভু, তুমি অনন্তকাল সমাসীন; তোমার সিংহাসন পুরুষানুক্রমে স্থায়ী। কেন চিরতরে আমাদিগকে ভুলিয়া যাইবে? কেন এত দিন আমাদিগকে ত্যাগ করিয়া থাকিবে? হে সদাপ্রভু, তোমার প্রতি আমাদিগকে ফিরাও তাহাতে আমরা ফিরিব; পূর্ব্বকালের সদৃশ নূতন সময় আমাদিগকে দেও। কিন্তু তুমি আমাদিগকে একেবারে অগ্রাহ্য করিয়াছ, আমাদের প্রতি অতিশয় ক্রোধাবিষ্ট হইয়াছ। ত্রিংশ বৎসরের চতুর্থ মাসে, মাসের পঞ্চম দিবসে, যখন আমি কবার নদীতীরে নির্ব্বাসিত লোকদের মধ্যে ছিলাম, তখন স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর আমি ঈশ্বরীয় দর্শন প্রাপ্ত হইলাম। রাজা যিহোয়াখীনের নির্ব্বাসনের পঞ্চম বৎসরের ঐ মাসের পঞ্চম দিনে কল্‌দীয়দের দেশে কবার নদীতীরে বুষির পুত্র যিহিষ্কেল যাজকের নিকটে সদাপ্রভুর বাক্য আসিয়া উপস্থিত হইল, এবং সেই স্থানে সদাপ্রভু তাঁহার উপরে হস্তার্পণ করিলেন। আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, উত্তরদিক্‌ হইতে ঘূর্ণ্যবায়ু, বৃহৎ মেঘ ও জাজ্বল্যমান অগ্নি আসিল, এবং তাহার চারিদিকে তেজ ও তাহার মধ্যস্থানে অগ্নির মধ্যবর্ত্তী প্রতপ্ত ধাতুর ন্যায় প্রভা ছিল। আর তাহার মধ্য হইতে চারি প্রাণীর মূর্ত্তি প্রকাশ পাইল। তাহাদের আকৃতি এই; তাহাদের রূপ মনুষ্যবৎ। আর প্রত্যেকের চারি চারি মুখ ও চারি চারি পক্ষ। তাহাদের চরণ সোজা, পদতল গোবৎসের পদতলের ন্যায়, এবং তাহারা পরিষ্কৃত পিত্তলের তেজের ন্যায় চাক্‌চিক্যশালী। তাহাদের চারি পার্শ্বে পক্ষের নীচে মানুষের হস্ত ছিল; চারি প্রাণীরই এইরূপ মুখ ও পক্ষ ছিল; তাহাদের পক্ষ পরস্পর সংযুক্ত; গমনকালে তাহারা ফিরিত না, প্রত্যেকে সম্মুখ দিকে গমন করিত। তাহাদের মুখের আকৃতি এই; তাহাদের মানুষের মুখ ছিল, আর দক্ষিণদিকে চারিটীর সিংহের মুখ, এবং বামদিকে চারিটীর গোরুর মুখ, আবার চারিটীর ঈগল পক্ষীর মুখ ছিল। উপরিভাগে তাহাদের মুখ ও পক্ষ বিভিন্ন ছিল, এক একটীর দুই দুই পক্ষ পরস্পর যোড়া ছিল, এবং আর দুই দুই পক্ষে গাত্র আচ্ছাদিত ছিল। আর তাহারা প্রত্যেকে সম্মুখ দিকে গমন করিত; যে দিকে যাইতে আত্মার ইচ্ছা হইত, তাহারা সেই দিকে গমন করিত; গমনকালে ফিরিত না। এই আকৃতিবিশিষ্ট প্রাণীদের আভা প্রজ্বলিত অঙ্গার ও মশালের আভার সদৃশ; [সেই অগ্নি] ঐ প্রাণীদের মধ্যে গমনাগমন করিত, সেই অগ্নি তেজোময়, ও সেই অগ্নি হইতে বিদ্যুৎ নির্গত হইত। আর ঐ প্রাণিগণের দ্রুত যাতায়াত বিদ্যুল্লতার আভার সদৃশ। আমি যখন ঐ প্রাণীদিগকে অবলোকন করিলাম, দেখ, ভূতলে ঐ প্রাণীদের পার্শ্বে চারি মুখের এক একটীর জন্য এক এক চক্র ছিল। চারি চক্রের আভা ও রচনা বৈদূর্য্যমণির প্রভার ন্যায়; চারিটীর রূপ একই, এবং তাহাদের আভা ও রচনা চক্রের মধ্যস্থিত চক্রের ন্যায় ছিল। গমনকালে ঐ চারি চক্র চারি পার্শ্বে গমন করিত, গমনকালে ফিরিত না। তাহাদের নেমি উচ্চ ও ভয়ঙ্কর, এবং সেই চারিটী নেমির চারিদিক্‌ চক্ষুতে পরিপূর্ণ ছিল। আর প্রাণিগণের গমনকালে তাহাদের পার্শ্বে ঐ চক্রগুলিও গমন করিত; এবং প্রাণিগণের ভূতল হইতে উত্থাপিত হইবার সময়ে চক্রগুলিও উত্থাপিত হইত। যে কোন স্থানে আত্মার ইচ্ছা হইত, সেই স্থানে তাহারা যাইত; সেই দিকেই আত্মার যাইবার ইচ্ছা হইত; আর তাহাদের পার্শ্বে পার্শ্বে চক্রগুলিও উঠিত, কেননা সেই প্রাণীর আত্মা ঐ চক্রগণে ছিল। উহারা যখন চলিত, ইহারাও তখন চলিত; এবং উহারা যখন স্থগিত হইত, ইহারাও তখন স্থগিত হইত; আর উহারা যখন ভূতল হইতে উত্থাপিত হইত, চক্রগুলিও তখন পার্শ্বে পার্শ্বে উত্থাপিত হইত, কেননা সেই প্রাণীর আত্মা ঐ সকল চক্রে ছিল। আর সেই প্রাণীর মস্তকের উপরে এক বিতানের আকৃতি ছিল, তাহা ভয়ঙ্কর স্ফটিকের আভার ন্যায় তাহাদের মস্তকের উপরে বিস্তারিত ছিল। সেই বিতানের নীচে তাহাদের পক্ষ সকল পরস্পরের দিকে ঋজুভাবে প্রসারিত ছিল, প্রত্যেক প্রাণীর এ দিকে দুই, ও দিকে দুই পক্ষ ছিল, সেগুলি তাহাদের গাত্র আচ্ছাদন করিয়াছিল। আর তাহাদের গমন কালে আমি তাহাদের পক্ষ সকলের ধ্বনিও শুনিলাম, তাহা মহাজলরাশির কল্লোলের ন্যায়, সর্ব্বশক্তিমানের রবের ন্যায়, সৈন্যসামন্তের ধ্বনির ন্যায় তুমুল ধ্বনি। দণ্ডায়মান হইবার সময় তাহারা আপন আপন পক্ষ শিথিল করিত। তাহাদের মস্তকের উপরিস্থ বিতানের ঊর্দ্ধে এক রব হইতেছিল; দণ্ডায়মান হইবার সময়ে তাহারা আপন আপন পক্ষ শিথিল করিত। আর তাহাদের মস্তকের উপরিস্থ বিতানের ঊর্দ্ধে এক সিংহাসনের, নীলকান্তমণিবৎ আভাবিশিষ্ট এক সিংহাসনের মূর্ত্তি ছিল; সেই সিংহাসন-মূর্ত্তির উপরে মনুষ্যের আকৃতিবৎ এক মূর্ত্তি ছিল, তাহা তাহার ঊর্দ্ধে ছিল। তাঁহার কটির আকৃতি অবধি উপরের দিকে আমি প্রতপ্ত ধাতুর ন্যায় আভা দেখিলাম; অগ্নির আভা যেন তাহার মধ্যে চারিদিকে ছিল; এবং তাঁহার কটির আকৃতি অবধি নীচের দিকে অগ্নিবৎ আভা দেখিলাম, এবং তাঁহার চারিদিকে তেজ ছিল। বৃষ্টির দিনে মেঘে উৎপন্ন ধনুকের যেমন আভা, তাঁহার চারিদিকের তেজের আভা সেইরূপ ছিল। ইহা সদাপ্রভুর প্রতাপের মূর্ত্তির আভা। আমি তাহা দেখিবামাত্র উপুড় হইয়া পড়িলাম, এবং বাক্যবাদী এক ব্যক্তির রব শুনিতে পাইলাম। তিনি আমাকে বলিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান তুমি পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াও; আমি তোমার সহিত আলাপ করিব। যে সময়ে তিনি আমার সহিত কথা কহিলেন, তখন আত্মা আমাতে প্রবেশ করিয়া আমাকে পায়ে ভর দেওয়াইয়া দাঁড় করাইলেন; তাহাতে যিনি আমার সহিত কথা কহিলেন, তাঁহার বাক্য আমি শুনিলাম। তিনি আমাকে বলিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, আমি ইস্রায়েল-সন্তানদের কাছে, বিদ্রোহী জাতিগণের কাছে তোমাকে প্রেরণ করিতেছি; তাহারা আমার বিদ্রোহী হইয়াছে, তাহারা ও তাহাদের পিতৃপুরুষেরা আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচরণ করিয়া আসিতেছে, অদ্যকার দিন পর্য্যন্তও করিতেছে। সেই সন্তানগণ দৃঢ়মুখ ও কঠিনচিত্ত, আমি তাহাদের নিকটে তোমাকে প্রেরণ করিতেছি; তুমি তাহাদিগকে বলিও, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন। আর তাহারা শুনুক বা না শুনুক—তাহারা ত বিদ্রোহীকুল—তথাপি জানিতে পাইবে, তাহাদের মধ্যে এক জন ভাববাদী উপস্থিত হইল। হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি তাহাদের হইতে ভীত হইও না, তাহাদের বাক্য হইতেও ভীত হইও না; শ্যাকুল ও কন্টক তোমার নিকটে আছে বটে, এবং তুমি বৃশ্চিকের মধ্যে বাস করিতেছ, তথাপি তাহাদের বাক্যে ভয় করিও না, ও তাহাদের মুখ দেখিয়া উদ্বিগ্ন হইও না, তাহারা ত বিদ্রোহীকুল। তুমি তাহাদের কাছে আমার বাক্য সকল বলিও, তাহারা শুনুক বা না শুনুক; তাহারা ত অত্যন্ত বিদ্রোহী। হে মনুষ্য-সন্তান, আমি তোমাকে যাহা বলি, তুমি শুন; তুমি সেই বিদ্রোহীকুলের ন্যায় বিদ্রোহী হইও না; তোমার মুখ খুল, আমি তোমাকে যাহা দিই, তাহা ভোজন কর। পরে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, একখানি হস্ত আমার প্রতি প্রসারিত হইল, আর দেখ, তাহার মধ্যে একখানি জড়ান পুস্তক ছিল। তিনি আমার সম্মুখে তাহা বিস্তার করিলেন, সেই পুস্তকখানির ভিতরে বাহিরে লেখা, আর বিলাপ, খেদোক্তি ও সন্তাপের কথা তাহাতে লেখা ছিল। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, তোমার কাছে যাহা উপস্থিত, তাহা ভোজন কর, এই পুস্তকখানি ভোজন কর, এবং ইস্রায়েল-কুলের নিকটে গিয়া তাহাদের সহিত কথা বল। তখন আমি মুখ খুলিলাম, আর তিনি আমাকে সেই পুস্তক ভোজন করাইলেন; আর তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, আমি তোমাকে যে পুস্তক দিলাম, উহা জঠরে গ্রহণ করিয়া উদর পরিপূর্ণ কর। তখন আমি তাহা ভোজন করিলাম; আর তাহা আমার মুখে মধুর ন্যায় মিষ্ট লাগিল। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি যাও, ইস্রায়েল-কুলের নিকটে যাইয়া তাহাদিগকে আমার বাক্য সকল বল। কারণ তুমি গভীর-বাক্‌ ও কঠিন ভাষাবাদী কোন জাতির কাছে প্রেরিত নও, কিন্তু ইস্রায়েল-কুলের নিকটে প্রেরিত হইতেছ। যাহাদের কথা তোমার বোধের অগম্য, এমন গভীর-বাক্‌ ও কঠিন ভাষাবাদী অনেক জাতির কাছে তুমি প্রেরিত নও; আমি তাহাদের নিকটে তোমাকে পাঠাইলে তাহারা তোমার কথা অবশ্য শুনিত। কিন্তু ইস্রায়েল-কুল তোমার কথা শুনিতে সম্মত হইবে না, যেহেতু তাহারা আমার কথা শুনিতে সম্মত নয়; কারণ ইস্রায়েল-কুল সকলেই দৃঢ়-কপাল ও কঠিনচিত্ত। দেখ, আমি তাহাদের মুখের প্রতিকূলে তোমার মুখ, এবং তাহাদের কপালের প্রতিকূলে তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম। যে হীরক চক্‌মকি পাথর হইতেও দৃঢ়, তাহার ন্যায় আমি তোমার কপাল দৃঢ় করিলাম; যদ্যপি তাহারা বিদ্রোহীকুল, তথাপি তাহাদিগকে ভয় করিও না, ও তাহাদের মুখ দেখিয়া উদ্বিগ্ন হইও না। আরও তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান আমি তোমাকে যাহা যাহা বলি, সেই সমস্ত বাক্য তুমি অন্তঃকরণে গ্রহণ কর, কর্ণ দিয়া শুন। আর যাও, ঐ নির্ব্বাসিত লোকদের, তোমার স্বজাতি-সন্তানদের কাছে গিয়া তাহাদিগকে বল; তাহারা শুনুক বা না শুনুক, তথাপি তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন। পরে আত্মা আমাকে তুলিয়া লইলেন, এবং আমি আমার পশ্চাৎ দিকে এই বাক্য মহানির্ঘোষের শব্দের ন্যায় তাঁহার স্থান হইতে শুনিলাম, ‘ধন্য সদাপ্রভুর প্রতাপ’। আর ঐ প্রাণীদের পরস্পরের পক্ষসমাঘাতের শব্দ, তাহাদের পার্শ্বে চক্রের শব্দ, এই মহানির্ঘোষের শব্দ শুনিলাম। আর আত্মা আমাকে তুলিয়া লইয়া গেলে আমি মনস্তাপে দুঃখিত হইয়া গমন করিলাম; আর সদাপ্রভুর হস্ত আমার উপরে বলবৎ ছিল। আমি টেল্‌-আবীবস্থ নির্ব্বাসিত লোকদের, কবার নদীতীরবাসীদিগের কাছে আসিলাম, এবং তাহারা যে স্থানে বাস করিত, সেই স্থানে সাত দিন স্তব্ধ থাকিয়া তাহাদের মধ্যে বসিয়া রহিলাম। সাত দিন গত হইলে পর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, আমি তোমাকে ইস্রায়েল-কুলের জন্য প্রহরী নিযুক্ত করিলাম; তুমি আমার মুখে কথা শুনিবে, এবং আমার নামে তাহাদিগকে চেতনা দিবে। যখন আমি দুষ্ট লোককে বলি, তুমি মরিবেই মরিবে, তখন তুমি যদি তাহাকে চেতনা না দেও, এবং তাহার প্রাণরক্ষার্থে চেতনা দিবার জন্য সেই দুষ্ট লোককে তাহার কুপথের বিষয় কিছু না বল, তবে সেই দুষ্ট লোক নিজ অপরাধে মরিবে, কিন্তু তাহার রক্তের প্রতিশোধ আমি তোমার হস্ত হইতে লইব। কিন্তু তুমি দুষ্টকে চেতনা দিলে সে যদি আপন দুষ্টতা ও কুপথ হইতে না ফিরে, তবে সে নিজ অপরাধে মরিবে, কিন্তু তুমি আপন প্রাণ রক্ষা করিলে। আবার, কোন ধার্ম্মিক লোক যদি আপন ধার্ম্মিকতা হইতে ফিরিয়া অন্যায় করে, আর আমি তাহার সম্মুখে বিঘ্ন রাখি, তবে সে মরিবে; তুমি তাহাকে চেতনা না দিলে সে নিজ পাপে মরিবে, এবং তাহার কৃত ধর্ম্মকর্ম্ম সকল আর স্মরণে আসিবে না; কিন্তু আমি তোমার হস্ত হইতে তাহার রক্তের প্রতিশোধ লইব। আর তুমি ধার্ম্মিক লোককে পাপ না করিতে চেতনা দিলে সে যদি পাপ না করে, তবে সচেতন হওয়াতে সে অবশ্য বাঁচিবে; আর তুমিও আপন প্রাণ রক্ষা করিলে। পরে সেই স্থানে সদাপ্রভু আমার উপরে হস্তার্পণ করিলেন, আর তিনি কহিলেন, উঠ, বাহির হইয়া সমস্থলীতে যাও, আমি সেখানে তোমার সহিত কথা বলিব। তাহাতে আমি উঠিয়া সমস্থলীতে গমন করিলাম, আর দেখ, সে স্থানে সদাপ্রভুর সেই প্রতাপ দণ্ডায়মান, কবার নদীতীরে যে প্রতাপ দেখিয়াছিলাম; তখন আমি উপুড় হইয়া পড়িলাম। পরে আত্মা আমাতে প্রবেশ করিয়া আমাকে পায়ে ভর দেওয়াইয়া দাঁড় করাইলেন; আর তিনি আমার সঙ্গে কথা বলিয়া আমাকে কহিলেন, যাও, তুমি আপন গৃহের দ্বার রুদ্ধ করিয়া ভিতরে থাক। কিন্তু হে মনুষ্য-সন্তান, দেখ, লোকেরা রজ্জু দিয়া তোমাকে বাঁধিবে, তাহাতে তুমি বাহিরে তাহাদের মধ্যে যাইতে পারিবে না। আর আমিও তোমার জিহ্বা মুখের তালুতে সংলগ্ন করিব, তাহাতে তুমি বোবা হইবে, তাহাদের কাছে দোষবক্তা হইবে না, কেননা তাহারা বিদ্রোহীকুল। কিন্তু যখন আমি তোমার সঙ্গে কথা বলি, তখন তোমার মুখ খুলিয়া দিব, তাহাতে তুমি তাহাদিগকে এই কথা কহিবে, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন; যে শুনে সে শুনুক, যে না শুনে সে না শুনুক; কেননা তাহারা বিদ্রোহীকুল। আর হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি একখানি ইষ্টক লইয়া তোমার সম্মুখে রাখ, ও তাহার উপরে এক নগরের অর্থাৎ যিরূশালেমের ছবি আঁক। আর তাহা সৈন্যে বেষ্টিত কর, তাহার বিরুদ্ধে গড় গাঁথ, তাহার বিপরীতে জাঙ্গাল বাঁধ, স্থানে স্থানে তাহার বিরুদ্ধে শিবির স্থাপন কর, ও তাহার বিরুদ্ধে চারিদিকে প্রাচীর-ভেদক যন্ত্র স্থাপন কর। আর একখানা লোহার তাওয়া লইয়া তোমার ও নগরের মধ্যস্থলে লৌহ-প্রাচীরের ন্যায় তাহা স্থাপন কর, এবং তোমার মুখ তাহার দিকে রাখ, তাহাতে তাহা অবরুদ্ধ হইবে, ও তুমি তাহা অবরোধ করিয়া থাকিবে। ইস্রায়েল-কুলের জন্য ইহা চিহ্নস্বরূপ হইবে। পরে তুমি বাম পার্শ্বে শয়ন করিয়া ইস্রায়েল-কুলের অপরাধ তাহার উপরে রাখ; যতদিন তুমি তাহাতে শয়ন করিবে, ততদিন তাহাদের অপরাধ বহন করিবে। আমি তাহাদের অপরাধ বৎসরের সংখ্যা তোমার জন্য দিনের সংখ্যা, অর্থাৎ তিনশত নব্বই দিন রাখিলাম; এইরূপে তুমি ইস্রায়েল-কুলের অপরাধ বহন করিবে। সেই সকল সমাপ্ত করিলে পর তুমি আপন দক্ষিণ পার্শ্বে শয়ন করিবে, এবং যিহূদা-কুলের অপরাধ বহন করিবে; আমি চল্লিশ দিন, এক এক বৎসরের নিমিত্ত এক এক দিন, তোমার জন্য রাখিলাম। আর তুমি আপন মুখ যিরূশালেমের অবরোধের দিকে রাখিবে, আপন বাহু অনাবৃত করিবে, ও তাহার বিরুদ্ধে ভাববাণী বলিবে। আর দেখ, আমি রজ্জু দিয়া তোমাকে বদ্ধ করিব, তাহাতে তুমি যাবৎ তোমার অবরোধের দিন সমাপ্ত না করিবে, তাবৎ এক পার্শ্ব হইতে অন্য পার্শ্বে ফিরিবে না। আর তুমি আপনার কাছে গোম, যব, মাষ, মসুরি, কঙ্গু ও জনরা, লইয়া সকলই এক পাত্রে রাখ এবং তাহা দ্বারা রুটী প্রস্তুত কর; যতদিন পার্শ্বে শয়ন করিবে, ততদিন, অর্থাৎ তিনশত নব্বই দিন, তাহা ভোজন করিও। তোমরা খাদ্য পরিমাণপূর্ব্বক, অর্থাৎ দিন দিন বিংশতি তোলা করিয়া ভোজন করিতে হইবে; তুমি বিশেষ বিশেষ সময়ে তাহা ভোজন করিবে। আর জলও পরিমাণপূর্ব্বক, অর্থাৎ হিনের ষষ্ঠাংশ করিয়া পান করিতে হইবে; তুমি বিশেষ বিশেষ সময়ে তাহা পান করিবে। আর ঐ খাদ্যদ্রব্য যবের পিষ্টকের ন্যায় করিয়া ভোজন করিবে, এবং তাহাদের দৃষ্টিতে মনুষ্যের বিষ্ঠা দিয়া তাহা পাক করিবে। আর সদাপ্রভু কহিলেন, আমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে যে জাতিগণের মধ্যে দূর করিয়া দিব, তাহাদের মধ্যে তাহারা সেই প্রকারে আপন আপন অশুচি রুটী খাইবে। তখন আমি কহিলাম, আহা, প্রভু সদাপ্রভু, দেখ, আমার প্রাণ অশুচি হয় নাই; আমি বাল্যকাল অবধি অদ্য পর্যন্ত স্বয়ং মৃত কিম্বা পশু দ্বারা বিদীর্ণ কিছুই খাই নাই, ঘৃণার্হ মাংস কখনও আমার মুখে প্রবিষ্ট হয় নাই। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, দেখ, আমি মনুষ্যের বিষ্ঠার পরিবর্ত্তে তোমাকে গোময় দিলাম, তুমি তাহা দিয়া আপন রুটী পাক করিবে। আর তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, দেখ, আমি যিরূশালেমে অন্নরূপ যষ্টি ভগ্ন করিব, তাহাতে তাহারা পরিমাণপূর্ব্বক ভাবনা সহকারে অন্ন ভোজন করিবে, পরিমাণপূর্ব্বক ও বিস্ময় সহকারে জলপান করিবে; যেন তাহারা অন্নের ও জলের অভাবে পরস্পর বিস্ময়াপন্ন ও আপন আপন অপরাধে ক্ষীণ হয়। আর, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি একখানা তীক্ষ্ণ অস্ত্র লইয়া অর্থাৎ নাপিতের ক্ষুর লইয়া, আপন মস্তক ও দাড়ি ক্ষৌরি করিবে; পরে নিক্তি লইয়া সেই কেশ সকল ভাগ ভাগ করিবে। পরে নগরের অবরোধ কাল সাঙ্গ হইলে তাহার তৃতীয়াংশ নগরের মধ্যে অগ্নিতে দগ্ধ করিবে, এবং তৃতীয়াংশ লইয়া নগরের চারিদিকে খড়্‌গ দ্বারা কাটাকুটি করিবে, অপর তৃতীয়াংশ বায়ুতে উড়াইয়া দিবে, পরে আমি তাহাদের পশ্চাতে খড়্‌গ নিষ্কোষ করিব। আবার তুমি তাহার অল্পসংখ্যক কেশ লইয়া আপন বস্ত্রের অঞ্চলে বাঁধিয়া রাখিবে। পরে তাহারও কিছু লইয়া অগ্নিমধ্যে ফেলিয়া দিয়া অগ্নিতে দগ্ধ করিবে, তাহা হইতেই অগ্নি নির্গত হইয়া সমস্ত ইস্রায়েল-কুলে লাগিবে। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এ যিরূশালেম; আমি ইহাকে জাতিগণের মধ্যে স্থাপন করিয়াছি, এবং ইহার চারিদিকে নানা দেশ রহিয়াছে; কিন্তু সে দুষ্কার্য্য করিবার জন্য ঐ জাতিগণ অপেক্ষা আমার শাসনকলাপের, ও আপনার চারিদিকের দেশের লোক অপেক্ষা আমার বিধিকলাপের বিদ্রোহী হইয়াছে; কারণ ইহারা আমার শাসনকলাপ অগ্রাহ্য করিয়াছে, এবং আমার বিধিপথে চলে নাই। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা চারিদিকের জাতিগণ হইতে অধিক গণ্ডগোল করিয়াছ, আমার বিধিপথে গমন কর নাই, আমার শাসনকলাপ পালন কর নাই, এবং তোমাদের চারিদিকের জাতিগণের শাসনানুসারেও চল নাই। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি, আমিই তোমার বিপক্ষ; আমি জাতিগণের সাক্ষাতে তোমার মধ্যে বিচার সাধন করিব। যাহা কখনও করি নাই, এবং যাহার ন্যায় আর কখনও করিব না, তাহাই তোমার ঘৃণার্হ কার্য্য সকলের নিমিত্ত তোমার মধ্যে করিব। এই জন্য তোমার মধ্যে পিতারা সন্তানগণকে ভোজন করিবে, ও সন্তানেরা আপন আপন পিতাকে ভোজন করিবে, এবং আমি তোমার মধ্যে বিচার সাধন করিব, ও তোমার সমস্ত অবশিষ্টাংশকে সমস্ত বায়ুর দিকে উড়াইয়া দিব। অতএব, প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তুমি যখন আপনার সকল জঘন্য বস্তু ও ঘৃণার্হ ক্রিয়া দ্বারা আমার পবিত্র স্থান অশুচি করিয়াছ, তখন আমিও নিশ্চয় সংহার করিব, চক্ষুলজ্জা করিব না, আমিও কিছু দয়া করিব না। তোমার তৃতীয়াংশ লোক মহামারীতে মরিবে, অথবা তোমার মধ্যে দুর্ভিক্ষ দ্বারা ক্ষয় পাইবে; অপর তৃতীয়াংশ তোমার চারিদিকে খড়্‌গে পতিত হইবে; এবং শেষ তৃতীয়াংশকে আমি সমস্ত বায়ুর দিকে উড়াইয়া দিয়া তাহাদের পশ্চাতে খড়্‌গ নিষ্কোষ করিব। এই প্রকারে আমার ক্রোধ সম্পন্ন হইবে, এবং আমি তাহাদের উপরে আপন ক্রোধ চরিতার্থ করিয়া শান্ত হইব; তাহাদের প্রতি আমার কোপ সম্পন্ন হইলে তাহারা জানিতে পারিবে যে, আমি সদাপ্রভু আপন অন্তর্জ্বালায় এই কথা বলিয়াছি। আর আমি তোমাকে চারিদিকের জাতিগণের মধ্যে, পথিকমাত্রের দৃষ্টিতে, উৎসন্ন-স্থান ও টিটকারির পাত্র করিব। হাঁ, তুমি তোমার চারিদিকের জাতিগণের কাছে টিটকারী, কটুবাক্য, উপদেশ ও বিস্ময়ের বিষয় হইবে; কেননা আমি ক্রোধ, কোপ ও কোপযুক্ত ভর্ৎসনা দ্বারা তোমার মধ্যে বিচার সাধন করিব, আমি সদাপ্রভুই এই কথা কহিলাম। আমি তথাকার লোকদের প্রতি দুর্ভিক্ষরূপ হিংস্র বাণ সকল নিক্ষেপ করিব, সে সকল বিনাশার্থক বাণ, আমি তোমাদিগকে বিনষ্ট করণার্থে সে সমস্ত নিক্ষেপ করিব; এবং তোমাদের উপরে দুর্ভিক্ষের ভার বৃদ্ধি করিব, ও তোমাদের অন্নরূপ যষ্টি ভাঙ্গিয়া ফেলিব। আর আমি তোমাদের বিরুদ্ধে দুর্ভিক্ষ ও হিংস্র জন্তুদিগকে পাঠাইব; তাহারা তোমাকে নিঃসন্তান করিবে; আর মহামারী ও রক্ত তোমার মধ্য দিয়া গমনাগমন করিবে, আর আমি তোমার বিরুদ্ধে খড়্‌গ আনাইব; আমি সদাপ্রভুই এই কথা কহিলাম। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণের দিকে মুখ রাখিয়া তাহাদের কাছে ভাববাণী বল। এই কথা বল, হে ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণ, তোমরা প্রভু সদাপ্রভুর বাক্য শুন। প্রভু সদাপ্রভু পর্ব্বতগণকে, উপপর্ব্বতগণকে, জলপ্রণালী ও উপত্যকা সকলকে এই কথা কহেন, দেখ, আমি, আমিই তোমাদের উপরে এক খড়্‌গ আনিব, ও তোমাদের উচ্চস্থলী সকল বিনষ্ট করিব। তোমাদের যজ্ঞবেদি সকল ধ্বংস, ও সূর্য্যপ্রতিমা সকল ভগ্ন হইবে; এবং আমি তোমাদের নিহত লোকদিগকে তোমাদের পুত্তলিগণের সম্মুখে নিক্ষেপ করিব। আমি ইস্রায়েল-সন্তানদের শব তাহাদের পুত্তলিগণের সম্মুখে রাখিব, এবং তোমাদের যজ্ঞবেদি সকলের চারিদিকে তোমাদের অস্থি ছড়াইব। তোমাদের সমস্ত বসতি-স্থানে নগর সকল উৎসন্ন হইবে, উচ্চস্থলী সকল ধ্বংস হইবে; যেন তোমাদের যজ্ঞবেদি সকল উৎসন্ন ও দণ্ডপ্রাপ্ত, এবং তোমাদের পুত্তলি সকল ভগ্ন হয়, আর না থাকে, আর তোমাদের সূর্য্যপ্রতিমা সকল উচ্ছিন্ন হয়, এবং তোমাদের নির্ম্মিত বস্তু সকল লোপ পায়। আর তোমাদের মধ্যে নিহত লোকেরা পতিত হইবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তথাপি আমি এক অবশিষ্টাংশ রাখিব, বস্তুতঃ দেশ বিদেশে তোমাদের ছিন্নভিন্ন হইবার সময়ে তোমাদের কোন কোন লোক জাতিগণের মধ্যে খড়্‌গ হইতে উত্তীর্ণ হইবে। আর তোমাদের সেই উত্তীর্ণ লোকেরা যাহাদের কাছে বন্দিরূপে নীত হইবে, সেই জাতিগণের মধ্যে আমাকে স্মরণ করিবে; [দেখিবে] তাহাদের যে ব্যভিচারী হৃদয় আমাকে ত্যাগ করিয়া গিয়াছে, ও তাহাদের যে চক্ষু আপন আপন পুত্তলিদের অনুগমনে ব্যভিচার করিয়াছে, তাহা আমি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছি; তাহাতে তাহারা আপন আপন ঘৃণার্হ আচার-ব্যবহারক্রমে যে সকল দুষ্ক্রিয়া করিয়াছে, তজ্জন্য আপনাদের দৃষ্টিতে আপনাদিগকে ঘৃণা করিবে। আর তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু; আমি তাহাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটাইবার কথা বৃথা কহি নাই। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি করে করাঘাত ও ভূমিতে পদাঘাত কর, এবং ইস্রায়েল-কুলের সমস্ত ঘৃণার্হ দুষ্ক্রিয়ার নিমিত্ত হাহাকার কর, কেননা তাহারা খড়্‌গে, দুর্ভিক্ষে ও মহামারীতে পতিত হইবে। দূরবর্ত্তী লোক মহামারীতে মরিবে, নিকটবর্ত্তী লোক খড়্‌গে পতিত হইবে, এবং অবশিষ্ট ও রক্ষিত লোক দুর্ভিক্ষে মরিবে; এই প্রকারে আমি তাহাদিগেতে আপন ক্রোধ সম্পন্ন করিব। তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যখন সমুদয় উচ্চ গিরিতে, পর্ব্বতশৃঙ্গে, হরিৎপর্ণ বৃক্ষের তলে তাহাদের যজ্ঞবেদির চারিদিকে পুত্তলিগণের মধ্যে তাহাদের নিহত লোকেরা থাকিবে, এবং প্রত্যেক ঝোপাল এলা বৃক্ষের তলে, যে স্থানে তাহারা আপন আপন পুত্তলিগণের উদ্দেশে সৌরভার্থক নৈবেদ্য উৎসর্গ করিত, সেই স্থানেও থাকিবে। আর আমি তাহাদের উপরে আপন হস্ত বিস্তার করিব, এবং তাহাদের সমস্ত বসতি-স্থানে, প্রান্তর হইতে দিব্‌লা পর্য্যন্ত দেশ ধ্বংস ও উৎসন্ন করিব; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, প্রভু সদাপ্রভু ইস্রায়েল-দেশের বিষয়ে এই কথা কহেন, পরিণাম; দেশের চারি কোণে পরিণাম আসিতেছে। এখন তোমার পরিণাম উপস্থিত; আমি তোমার উপরে আপন ক্রোধ প্রেরণ করিব, তোমার আচারানুসারে বিচার করিব, তোমার সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্যের ফল তোমার উপরে রাখিব। আমি তোমার প্রতি চক্ষুলজ্জা করিব না, দয়াও করিব না, কিন্তু তোমার কার্য্যের ফল তোমার উপরে রাখিব, ও তোমার ঘৃণার্হ কার্য্য সকল তোমার মধ্যে থাকিবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অমঙ্গল, একা অমঙ্গল, দেখ, তাহা আসিতেছে। পরিণাম আসিতেছে; সেই পরিণাম আসিতেছে; তাহা তোমার বিরুদ্ধে জাগিয়া উঠিতেছে; দেখ, তাহা আসিতেছে। হে দেশনিবাসী লোক, তোমার পালা আসিতেছে, কাল আসিতেছে, দিবস সন্নিকট হইতেছে; সে কোলাহলের দিন, পর্ব্বতগণের উপরে আনন্দধ্বনির দিন নয়। আমি এখন অবিলম্বে তোমার উপরে আপন ক্রোধ ঢালিয়া দিব, তোমার প্রতি আপন কোপ সাধন করিব, তোমার আচারানুসারে বিচার করিব, তোমার সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্যের ফল তোমার উপরে রাখিব। আমি চক্ষুলজ্জা করিব না দয়াও করিব না, তোমার কার্য্যানুরূপ ফল তোমার উপরে রাখিব, এবং তোমার ঘৃণার্হ কার্য্য সকল তোমার মধ্যে থাকিবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমি, সদাপ্রভু আঘাত করি। ঐ দেখ, সেই দিন; দেখ, তাহা আসিতেছে; তোমার পালা উপস্থিত, দণ্ড পুষ্পিত, দর্প বিকশিত হইয়াছে। দৌরাত্ম্য বাড়িয়া দুষ্টতার দণ্ড হইয়া উঠিতেছে; তাহাদের কেহই থাকিবে না, তাহাদের লোকারণ্য বা তাহাদের ধন থাকিবে না; তাহাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতাও থাকিবে না। কাল আসিতেছে দিন সন্নিকট হইল; ক্রেতা আনন্দ না করুক, বিক্রেতা শোক না করুক; কেননা তথাকার সমস্ত লোকারণ্যের প্রতি ক্রোধ উপস্থিত। বস্তুতঃ উভয়ে জীবিত অবস্থায় থাকিলেও বিক্রেতা বিক্রীত [অধিকারের] নিকটে ফিরিয়া যাইবে না, কেননা এই দর্শন তথাকার সমস্ত লোকারণ্য বিষয়ক; কেহ ফিরিয়া যাইবে না; আপন জীবনের অপরাধে কেহ আপন জীবাত্মা সবল করিতে পারিবে না। তাহারা তূরী বাজাইয়া সকল প্রস্তুত করিয়াছে, কিন্তু কেহ যুদ্ধে গমন করে না, কেননা আমার ক্রোধ তথাকার সমস্ত লোকারণ্যের প্রতি উপস্থিত। বাহিরে খড়্‌গ এবং ভিতরে মহামারী ও দুর্ভিক্ষ। যে ব্যক্তি ক্ষেত্রে থাকিবে, সে খড়্‌গে মরিবে; যে নগরে থাকিবে, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী তাহাকে গ্রাস করিবে। কিন্তু তাহাদের মধ্যে যাহারা উত্তীর্ণ হয়, তাহারা রক্ষা পাইবে, তাহারা পর্ব্বতগণের উপরে থাকিয়া উপত্যকাস্থ ঘুঘুর ন্যায় হইবে, সকলে আপন আপন অপরাধের নিমিত্ত বিলাপ করিবে। সকলের হস্ত দুর্ব্বল হইবে, সকলের হাঁটু জলের মত দ্রব হইবে। তাহারা কটিদেশে চট বাঁধিবে, মহাত্রাসে আচ্ছন্ন হইবে, সকলের মুখে কালি পড়িবে, তাহাদের সকলের মস্তকে টাক পড়িবে। তাহারা আপন আপন রৌপ্য চকে ফেলিয়া দিবে, তাহাদের সুবর্ণ অশুচি বস্তু হইবে; সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তাহাদের স্বর্ণ কি রৌপ্য তাহাদিগকে রক্ষা করিতে পারিবে না; তাহা তাহাদের প্রাণ তৃপ্ত, কিম্বা তাহাদের উদর পূর্ণ করিবে না কেননা তাহাই তাহাদের অপরাধজনক বিঘ্ন হইয়াছে। তাহারা আপনাদের মনোহর আভরণের শ্লাঘা করিত, এবং তাহা দিয়া আপন আপন ঘৃণিত বস্তু সকলের প্রতিমা ও জঘন্য বস্তু গড়িত, এ কারণ আমি তাহা তাহাদের অশুচি বস্তু করিলাম। আর আমি তাহা মৃগয়ার বস্তুরূপে বিদেশীয়দের হস্তে ও লুটদ্রব্যরূপে পৃথিবীর দুষ্ট লোকদের হস্তে সমর্পণ করিব, তাহারা তাহা অপবিত্র করিবে। আর আমি তাহাদের হইতে আমার মুখ ফিরাইব, তাহাতে আমার গুপ্ত কোষ অপবিত্রীকৃত হইবে, দস্যুগণ তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহা অপবিত্র করিবে। তুমি শৃঙ্খল প্রস্তুত কর, কেননা দেশ রক্তপাতরূপ অপরাধে পরিপূর্ণ, এবং নগর দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ। তজ্জন্য আমি জাতিগণের মধ্যে দুষ্ট লোকদিগকে আনিব, তাহারা উহাদের গৃহ সকল অধিকার করিবে; আমি বলবান লোকদিগের শ্লাঘা চূর্ণ করিব; আর তাহাদের পবিত্র স্থান সকল অপবিত্র হইবে। সংহার আসিতেছে, তাহারা শান্তির অন্বেষণ করিবে, কিন্তু তাহা মিলিবে না। বিপদের উপরে বিপদ ঘটিবে, জনরবের উপরে জনরব হইবে; আর তাহা ভাববাদীর নিকটে দর্শনের চেষ্টা করিবে, কিন্তু যাজকের ব্যবস্থা-জ্ঞান ও প্রাচীন লোকদের মন্ত্রণা লোপ পাইবে। রাজা শোকাকুল ও অমাত্য উৎসন্নতারূপ পরিচ্ছদে পরিচ্ছন্ন হইবে, ও দেশের প্রজাগণের হস্ত কাঁপিবে; আমি তাহাদের প্রতি তাহাদের আচারানুরূপ ব্যবহার করিব; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। যষ্ঠ বৎসরের ষষ্ঠ মাসে, মাসের পঞ্চম দিনে আমি আপন গৃহে উপবিষ্ট ছিলাম, এবং যিহূদার প্রাচীনবর্গ আমার সম্মুখে উপবিষ্ট ছিল, এমন সময়ে প্রভু সদাপ্রভু সেই স্থানে আমার উপরে হস্তার্পণ করিলেন। তাহাতে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, অগ্নির আকারের ন্যায় এক মূর্ত্তি; তাঁহার কটির আকৃতি অবধি নীচের দিকে অগ্নিময়, এবং কটি অবধি উপরের দিকে যেন জ্যোতির আকৃতি ও প্রতপ্ত ধাতুর প্রভা। তিনি এক হস্তমূর্ত্তি বিস্তার করিয়া আমার মস্তকের কেশগুচ্ছ ধরিলেন, তাহাতে আত্মা আমাকে তুলিয়া পৃথিবী ও আকাশের মধ্যপথে লইয়া গেলেন, এবং ঈশ্বরীয় দর্শনক্রমে যিরূশালেমে উত্তরাভিমুখ ভিতর-দ্বারের প্রবেশ-স্থানে বসাইলেন; সেই স্থানে অন্তর্জ্বালা-জনক অন্তর্জ্বালার প্রতিমা স্থাপিত ছিল। আর দেখ, সমস্থলীতে যে দৃশ্য আমি দেখিয়াছিলাম সে স্থানে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সেইরূপ প্রতাপ রহিয়াছে। তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি চক্ষু তুলিয়া উত্তরদিকে দৃষ্টি কর; তাহাতে আমি উত্তরদিকে চক্ষু তুলিলাম, আর দেখ যজ্ঞবেদির দ্বারের উত্তরে, প্রবেশ-স্থানে ঐ অন্তর্জ্বালার প্রতিমা রহিয়াছে। আর তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, ইহারা কি করে, তুমি কি দেখিতেছ? ইস্রায়েল-কুল আমার ধর্ম্মধাম হইতে আমাকে দূর করণার্থে এখানে অধিক ঘৃণার্হ কার্য্য করিতেছে। কিন্তু ইহার পরেও তুমি আবার কত অধিক ঘৃণার্হ কার্য্য দেখিবে। তখন তিনি আমাকে প্রাঙ্গণের দ্বারে আনিলেন, এবং আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, ভিত্তির মধ্যে এক ছিদ্র। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্যসন্তান, এই ভিত্তি খুদ; যখন আমি সেই ভিত্তি খুদিলাম, দেখ, একটী দ্বার। তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি ভিতরে গিয়া দেখ, তাহারা এখানে কি কি ঘৃণার্হ কার্য্য করিতেছে। তাহাতে আমি ভিতরে গিয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সর্ব্বপ্রকার সরীসৃপের ও ঘৃণ্য পশুর আকৃতি, এবং ইস্রায়েল-কুলের সমস্ত পুত্তলি চারিদিকে ভিত্তির গাত্রে চিত্রিত রহিয়াছে; আর তাহাদের সম্মুখে ইস্রায়েল কুলের প্রাচীনবর্গের সত্তর জন পুরুষ দণ্ডায়মান, এবং তাহাদের মধ্যস্থানে শাফনের পুত্র যাসনিয় দণ্ডায়মান, আর প্রত্যেকের হস্তে এক এক ধূনাচি; আর ধূপমেঘের সৌরভ ঊর্দ্ধে উঠিতেছে। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, ইস্রায়েল-কুলের প্রাচীন-বর্গ অন্ধকারে, প্রত্যেকে আপন আপন ঠাকুরঘরে, কি কি কার্য্য করে, তাহা কি তুমি দেখিলে? কারণ তাহারা বলে, সদাপ্রভু আমাদিগকে দেখিতে পান না, সদাপ্রভু দেশ ত্যাগ করিয়াছেন। তিনি আমাকে আরও কহিলেন, ইহার পরেও তুমি আবার তাহাদের কৃত কত অধিক ঘৃণার্হ কার্য্য দেখিবে। পরে তিনি সদাপ্রভুর গৃহের উত্তর দিকের দ্বারের প্রবেশ-স্থানে আমাকে আনিলেন; আর দেখ, সেখানে স্ত্রীলোকেরা বসিয়া তম্মুষ [দেবের] জন্য রোদন করিতেছে। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি কি ইহা দেখিলে? ইহার পরেও তুমি আবার এই সকল অপেক্ষা কত অধিক ঘৃণার্হ কার্য্য দেখিবে। পরে তিনি আমাকে সদাপ্রভুর গৃহের ভিতর-প্রাঙ্গণে আনিলেন, আর দেখ, সদাপ্রভুর মন্দিরের প্রবেশ-স্থানে, বারাণ্ডার ও যজ্ঞবেদির মধ্যস্থানে, অনুমান পঁচিশ জন পুরুষ, তাহারা সদাপ্রভুর মন্দিরের দিকে পৃষ্ঠ ও পূর্ব্বদিকে মুখ ফিরাইয়া পূর্ব্বমুখে সূর্য্যের কাছে প্রণিপাত করিতেছে। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান তুমি কি ইহা দেখিলে? এখানে যিহূদা-কুল যে সকল ঘৃণার্হ কার্য্য করিতেছে, তাহাদের পক্ষে কি তাহা করা লঘু বিষয়? কারণ তাহারা দেশকে দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ করিয়াছে; এবং আবার ফিরিয়া আমাকে বিরক্ত করিয়াছে; আর দেখ, তাহারা আপন আপন নাসিকায় পল্লব দিতেছে। অতএব আমিও কোপাবেশে কার্য্য করিব, চক্ষুলজ্জা করিব না, দয়াও করিব না; তাহারা যদ্যপি আমার কর্ণগোচরে উচ্চৈঃস্বরে চেঁচায়, তথাপি তাহাদের কথা শুনিব না। তখন তিনি আমার কর্ণগোচরে উচ্চরবে ঘোষণা করিয়া বলিলেন, হে নগরে নিযুক্ত কর্ম্মচারিগণ, নিকটে আইস, প্রত্যেকে আপন আপন বিনাশক-অস্ত্র হস্তে করিয়া আইস। আর দেখ, উত্তরদিক্‌স্থ উচ্চতর দ্বার হইতে ছয় জন পুরুষ আসিল, তাহাদের প্রত্যেক জনের হস্তে সংহারক অস্ত্র ছিল, এবং তাহাদের মধ্যস্থলে মসীনা-বস্ত্র পরিহিত এক পুরুষ ছিল; ইহার কটিদেশে লেখকের মস্যাধার ছিল; তাহারা ভিতরে আসিয়া পিত্তলময় যজ্ঞবেদির পার্শ্বে দণ্ডায়মান হইল। তখন ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রতাপ যে করূবের উপরে ছিল, তাহা হইতে উঠিয়া গৃহের গোবরাটের নিকটে গেল; এবং তিনি ঐ মসীনা-বস্ত্র পরিহিত পুরুষকে ডাকিলেন, যাহার কটিদেশে লেখকের মস্যাধার ছিল। আর সদাপ্রভু তাহাকে কহিলেন, তুমি নগরের মধ্য দিয়া, যিরূশালেমের মধ্য দিয়া যাও, এবং তাহার মধ্যে কৃত সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্যের বিষয়ে যে সকল লোক দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে ও কোঁকায়, তাহাদের প্রত্যেকের কপালে চিহ্ন দেও। পরে আমি শুনিলাম, তিনি অবশিষ্ট লোকদিগকে এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা নগর দিয়া ইহার পশ্চাতে পশ্চাতে যাও, এবং আঘাত কর, চক্ষুলজ্জা করিও না, দয়াও করিও না; বৃদ্ধ, যুবক, কুমারী, শিশু ও স্ত্রীলোকদিগকে নিঃশেষে বধ কর, কিন্তু যাহাদের কলাপে চিহ্নটী দেখা যায়, তাহাদের কাহারও নিকটে যাইও না; আর আমার ধর্ম্মধাম অবধি আরম্ভ কর। তাহাতে তাহারা গৃহের সম্মুখস্থিত প্রাচীনগণ অবধি আরম্ভ করিল। পরে তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, গৃহ অশুচি কর, প্রাঙ্গণ সকল নিহত লোকে পরিপূর্ণ কর; বাহির হও। তাহাতে তাহারা বাহিরে যাইয়া নগরের মধ্যে আঘাত করিতে লাগিল। তাহারা যখন আঘাত করিতে ছিল, আর আমি অবশিষ্ট রহিলাম, তখন উপুড় হইয়া ক্রন্দন করিলাম, আর কহিলাম, আহা, প্রভু সদাপ্রভু! তুমি যিরূশালেমের উপরে আপন ক্রোধ ঢালিয়া দিবার সময়ে কি ইস্রায়েলের সমস্ত অবশিষ্টাংশকে নষ্ট করিবে? তখন তিনি আমাকে কহিলেন, ইস্রায়েল ও যিহূদাকুলের অপরাধ অতি ভারী; এবং দেশ রক্তে পরিপূর্ণ ও নগর অত্যাচারে পরিপূর্ণ; কারণ তাহারা বলে, সদাপ্রভু দেশ ত্যাগ করিয়াছেন, সদাপ্রভু দেখিতে পান না। অতএব আমিও চক্ষুলজ্জা করিব না, দয়াও করিব না; তাহাদের কার্য্যের ফল তাহাদের উপরে বর্ত্তাইব। আর দেখ, মসীনা-বস্ত্র পরিহিত পুরুষ, যাহার কটিদেশে মস্যাধার ছিল, সে এই সংবাদ দিল, আপনি যেমন আমাকে আজ্ঞা করিয়াছিলেন, আমি তদ্রূপ করিয়াছি। পরে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, করূবদের মস্তকের উপরিস্থ বিতানে যেন নীলকান্তমণি বিরাজমান, সিংহাসনের মূর্ত্তিবিশিষ্ট এক আকৃতি তাহাদের উপরে প্রকাশ পাইল। পরে তিনি ঐ মসীনা-বস্ত্র পরিহিত ব্যক্তিকে কহিলেন, তুমি ঐ ঘূর্ণ্যমান চক্রগুলির মধ্যস্থানে করূবের নীচে প্রবেশ কর, এবং করূবদের মধ্যস্থান হইতে এক অঞ্জলি প্রজ্বলিত অঙ্গার লইয়া নগরের উপরে নিক্ষেপ কর; তাহাতে সে ব্যক্তি আমার সাক্ষাতে সেখানে প্রবেশ করিল। যখন সেই পুরুষ প্রবেশ করিল, তখন করূবগণ গৃহের দক্ষিণ পার্শ্বে দাঁড়াইয়াছিলেন, এবং ভিতরের প্রাঙ্গণ মেঘে পরিপূর্ণ ছিল। আর সদাপ্রভুর প্রতাপ করূবের উপর হইতে উঠিয়া গৃহের গোবরাটের উপরে দাঁড়াইল, এবং গৃহ মেঘে পরিপূর্ণ ও প্রাঙ্গণ সদাপ্রভুর প্রতাপের তেজে পরিপূর্ণ হইল। আর করূবদের পক্ষের শব্দ বহিঃপ্রাঙ্গণ পর্য্যন্ত শুনা যাইতেছিল, উহা সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের কথনকালীন রবের ন্যায়। আর তিনি যখন ঐ মসীনা-বস্ত্র পরিহিত পুরুষকে এই আজ্ঞা দিলেন, ‘তুমি এই ঘূর্ণ্যমান [চক্রগুলির] মধ্য হইতে, করূবদের মধ্যস্থান হইতে, অগ্নি লও,’ তখন সে প্রবেশ করিয়া এক চক্রের পার্শ্বে দাঁড়াইল। তখন এক করূব করূবদের মধ্য হইতে করূবদের মধ্যস্থিত অগ্নি পর্য্যন্ত হাত বাড়াইয়া তাহার কিছু লইয়া ঐ মসীনা-বস্ত্র পরিহিত পুরুষের অঞ্জলিতে দিল, আর সে তাহা লইয়া বাহিরে গেল। আর করূবদের পক্ষ সকলের অধঃস্থানে মনুষ্য-হস্তের আকৃতি প্রকাশ পাইল। পরে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, এক করূবের পার্শ্বে এক চক্র, অন্য করূবের পার্শ্বে অন্য চক্র, এইরূপে চারি করূবের পার্শ্বে চারি চক্র; ঐ চক্র সকলের আভা বৈদুর্য্যমণির প্রভার ন্যায়। তাহাদের আকৃতি এই, চারিটীর রূপ একই ছিল; যেন চক্রের মধ্যে চক্র রহিয়াছে। গমনকালে তাহারা আপনাদের চারি পার্শ্বে গমন করিত; গমনকালে ফিরিত না; যে স্থান মস্তকের সম্মুখ, সেই স্থানে তাহারা তাহার পশ্চাতে গমন করিত, গমনকালে ফিরিত না। আর তাহাদের সর্ব্বাঙ্গ, তাহাদের পৃষ্ঠ, হস্ত ও পক্ষ এবং চক্র সকল চারিদিকে চক্ষুতে পরিপূর্ণ ছিল, চারিটীর চক্রে চক্ষু ছিল। আর আমি শুনিলাম, সেই চক্রগুলিকে কেহ উচ্চৈঃস্বরে কহিল, ঘূর্ণ্যমান [চক্র]। প্রত্যেক প্রাণীর চারি মুখ; প্রথম মুখ করূবের মুখ, দ্বিতীয় মুখ মানুষের মুখ, তৃতীয় সিংহের মুখ ও চতুর্থ ঈগল পক্ষীর মুখ। তখন করূবেরা ঊর্দ্ধে উঠিল। আমি কবার নদীর তীরে সেই প্রাণীকে দেখিয়াছিলাম। করূবদের গমনকালে চক্রগুলিও তাহাদের পার্শ্বে পার্শ্বে যাইত; এবং করূবেরা যখন ভূতল হইতে ঊর্দ্ধে গমনার্থে আপন আপন পক্ষ উঠাইত, চক্রগুলিও তখন তাহাদের পার্শ্ব ছাড়িত না। উহারা দাঁড়াইলে ইহারাও দাঁড়াইত, এবং উহারা উঠিলে ইহারাও একসঙ্গে উঠিত, কেননা ঐ চক্রগুলিতে সেই প্রাণীর আত্মা ছিল। পরে সদাপ্রভুর প্রতাপ গৃহের গোবরাটের ঊর্দ্ধ হইতে প্রস্থান করিয়া করূবদের উপরে দাঁড়াইল। তখন করূবেরা আমার দৃষ্টিগোচরে প্রস্থানকালে পক্ষ উঠাইয়া ভূতল হইতে ঊর্দ্ধগমন করিল; এবং তাহাদের পার্শ্বে চক্রগুলিও গমন করিল; পরে করূবেরা সদাপ্রভুর গৃহের পূর্ব্বদ্বারের প্রবেশ-স্থানে দাঁড়াইল; তখন ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রতাপ ঊর্দ্ধে তাহাদের উপরে ছিল। আমি কবার নদীর নিকটে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের বাহন সেই প্রাণীকে দেখিয়াছিলাম; আর ইহারা যে করূব, তাহা জানিলাম। প্রত্যেক প্রাণীর চারি মুখ ও চারি পক্ষ, এবং তাহাদের পক্ষের নীচে মনুষ্য-হস্তের মূর্ত্তি ছিল। আমি কবার নদীর নিকটে যে যে মুখ দেখিয়াছিলাম, সে সকল ইহাদেরই মুখের মূর্ত্তি; ইহারা তাহাদেরই আকৃতিবিশিষ্ট; বাস্তবিক ইহারা সেই প্রাণী; প্রত্যেক প্রাণী সম্মুখ দিকেই গমন করিত। আবার আত্মা আমাকে উঠাইয়া সদাপ্রভুর গৃহের পূর্ব্বাভিমুখ পূর্ব্বদ্বারের নিকটে আনিলেন; আর দেখ, সেই দ্বারের প্রবেশ-স্থানে পঁচিশ জন পুরুষ; এবং তাহাদের মধ্যস্থানে আমি অসূরের পুত্র যাসনিয় ও বনায়ের পুত্র প্লটিয়, লোকদের অধ্যক্ষ এই দুই জনকে দেখিলাম। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, এই নগরের মধ্যে ইহারা অধর্ম্মের সঙ্কল্পকারী ও কুমন্ত্রণাদায়ক; ইহারাই বলে, গৃহ সকল গাঁথিবার সময় সন্নিকট হয় নাই; এই [নগর] হাঁড়ি, ও আমার মাংস। অতএব ইহাদের বিরুদ্ধে ভাববাণী বল; হে মনুষ্য-সন্তান, ভাববাণী বল। তখন সদাপ্রভুর আত্মা আমার উপরে নামিয়া আসিলেন, আর তিনি কহিলেন, তুমি বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন; হে ইস্রায়েল-কুল, তোমরা অমুক অমুক কথা বলিয়াছ; তোমাদের মনে যাহা যাহা উঠিয়াছে, সে সকল আমি জানি। তোমরা এই নগরে আপনাদের নিহত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি করিয়াছ, তোমরা নিহত লোকে এখানকার চক সকল পরিপূর্ণ করিয়াছ। এই কারণ প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদের যে নিহত লোকদিগকে তোমরা নগরের মধ্যে রাখিয়াছ, তাহারাই মাংস, এবং এই [নগর] হাঁড়ী; কিন্তু তোমাদিগকে ইহার মধ্য হইতে বাহির করা যাইবে। তোমরা খড়্‌গের ভয় করিয়াছ, আর আমি তোমাদের বিরুদ্ধে খড়্‌গই আনিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। আর আমি তোমাদিগকে ইহার মধ্য হইতে বাহির করিয়া বিদেশীদের হস্তে সমর্পণ করিব, এবং তোমাদিগের মধ্যে বিচার সাধন করিব। তোমরা খড়্‌গে পতিত হইবে; আমি ইস্রায়েলের সীমাতে তোমাদের বিচার করিব; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু; এই [নগর] তোমাদের জন্য হাঁড়ী হইবে না, এবং তোমরা ইহার মধ্যস্থিত মাংস হইবে না; আমি ইস্রায়েলের সীমাতে তোমাদের বিচার করিব; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু; কেননা তোমরা আমার বিধিপথে চল নাই, আমার শাসন পালন কর নাই, কিন্তু তোমাদের চারিদিকের জাতিগণের শাসনানুরূপ কর্ম্ম করিয়াছ। আর আমি ভাববাণী বলিতেছিলাম, এমন সময়ে বনায়ের পুত্র প্লটিয় মরিল। তখন আমি উপুড় হইয়া উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করিলাম, বলিলাম, হায়, প্রভু সদাপ্রভু! তুমি কি ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে নিঃশেষে সংহার করিবে? পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তোমার ভ্রাতৃগণ, হাঁ, তোমার ভ্রাতৃগণ, তোমার জ্ঞাতিগণ ও ইস্রায়েলের সমুদয় কুল, ইহাদের সকলকে যিরূশালেম-নিবাসিগণ বলে, তোমরা সদাপ্রভু হইতে দূরে যাও, এই দেশ অধিকারার্থে আমাদিগকেই দত্ত হইয়াছে। অতএব তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যদ্যপি তাহাদিগকে জাতিগণের কাছে দূর করিয়াছি, যদ্যপি দেশ-বিদেশে ছিন্নভিন্ন করিয়াছি, তথাপি তাহারা যে সকল দেশে গিয়াছে, সেই সকল দেশে আমি কিয়ৎকাল তাহাদের ধর্ম্মধাম হইয়াছি । অতএব তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাদিগকে সংগ্রহ করিব, ও তোমরা যে সকল দেশ ছিন্নভিন্ন হইয়াছ, সেই সকল দেশ হইতে একত্র করিব, এবং ইস্রায়েল-দেশ তোমাদিগকে দিব। তাহারা সে দেশে যাইবে, তথাকার সমস্ত জঘন্য পদার্থ ও তথাকার সমস্ত ঘৃণার্হ বস্তু তথা হইতে দূর করিবে। আমি তাহাদিগকে একই হৃদয় দান করিব, ও তোমাদের অন্তরে এক নূতন আত্মা স্থাপন করিব; আর তাহাদের মাংস হইতে প্রস্তরময় হৃদয় দূর করিব, তাহাদিগকে মাংসময় হৃদয় দিব, যেন তাহারা আমার বিধিপথে চলে, এবং আমার শাসন সকল মান্য করে, ও পালন করে; আর তাহারা আমার প্রজা হইবে, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব। কিন্তু যাহাদের হৃদয় তাহাদের জঘন্য পদার্থ সকলের হৃদয়ের, ও তাহাদের ঘৃণার্হ বস্তু সকলের অনুগমন করে, তাহাদের কার্য্যের ফল আমি তাহাদেরই মস্তকে বর্ত্তাইব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। পরে করূবগণ আপন আপন পক্ষ উঠাইল, তখন চক্রগুলিও তাহাদের পার্শ্বে ছিল, এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রতাপ ঊর্দ্ধে তাহাদের উপরে ছিল। পরে সদাপ্রভুর প্রতাপ নগরের মধ্য হইতে ঊর্দ্ধগমন করিয়া নগরের পূর্ব্বপার্শ্বস্থিত পর্ব্বতের উপরে স্থগিত হইল। আর আত্মা আমাকে তুলিয়া দর্শনযোগে ঈশ্বরের আত্মার প্রভাবে কল্‌দীয়দের দেশে নির্ব্বাসিত লোকদের কাছে আনিলেন; আর আমি যাহা দর্শন করিয়াছিলাম, তাহা আমার নিকট হইতে ঊর্দ্ধগমন করিল। পরে সদাপ্রভু আমাকে যে সকল বিষয় দেখাইয়াছিলেন, সে সমস্তই আমি নির্ব্বাসিত লোকদিগকে বলিলাম। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান তুমি বিদ্রোহী-কুলের মধ্যে বাস করিতেছ; দেখিবার চক্ষু থাকিলেও তাহারা দেখে না, শুনিবার কর্ণ থাকিলেও শুনে না, কেননা তাহারা বিদ্রোহী-কুল। অতএব, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি আপনার জন্য নির্ব্বাসার্থক জিনিষপত্র প্রস্তুত কর, দিনের বেলা তাহাদের সাক্ষাতে নির্ব্বাসার্থে প্রস্থান কর, ও নির্ব্বাসার্থে তাহাদের সাক্ষাতে স্বস্থান হইতে অন্য স্থানে যাও; হয় ত তাহারা বুঝিতে পারিবে যে, তাহারা বিদ্রোহী-কুল। তুমি দিনের বেলা তাহাদের সাক্ষাতে নির্ব্বাসার্থক জিনিষপত্রের ন্যায় তোমার জিনিষপত্র বাহির করিবে; লোকে যেমন নির্ব্বাসার্থে প্রস্থান করে, তেমনি সন্ধ্যাকালে তাহাদের সাক্ষাতে প্রস্থান করিবে। তুমি তাহাদের সাক্ষাতে ভিত্তিতে গর্ত্ত করিয়া তাহা দিয়া সেই জিনিষপত্র বাহির করিও। তাহাদের সাক্ষাতে তাহা স্কন্ধে তুলিয়া অন্ধকার সময়ে লইয়া যাইবে; তোমার মুখ আচ্ছাদন করিবে, যেন ভূমি দেখিতে না পাও; কেননা আমি তোমাকে ইস্রায়েল-কুলের জন্য চিহ্নস্বরূপ করিয়া রাখিয়াছি। তখন আমি সেই আজ্ঞানুসারে কার্য্য করিলাম; নির্ব্বাসার্থক জিনিষপত্রের ন্যায় আমার জিনিষপত্র দিনের বেলা বাহির করিলাম, পরে সন্ধ্যাকালে স্বহস্তে ভিত্তিতে গর্ত্ত করিলাম, অন্ধকার সময়ে তাহা আপন স্কন্ধে তুলিয়া তাহাদের সাক্ষাতে সকলই লইয়া গেলাম। পরে প্রাতঃকালে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, ইস্রায়েল-কুল—সেই বিদ্রোহী-কুল—কি তোমাকে বলে নাই, ‘তুমি কি করিতেছ?’ তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এই ভারবাণী দ্বারা যিরূশালেমস্থ নরপতিকে ও উহারা যাহার মধ্যবর্ত্তী, সেই সমস্ত ইস্রায়েল-কুলকে বুঝায়। তুমি বল, আমি তোমাদের পক্ষে চিহ্ন; আমি যেমন করিলাম, তদ্রূপ তাহাদের প্রতিও করা যাইবে; তাহারা নির্ব্বাসিত হইয়া বন্দিত্বস্থানে যাইবে। আর তাহাদের মধ্যবর্ত্তী নরপতি অন্ধকার সময়ে ভার স্কন্ধে করিয়া বহির্গমন করিবে, লোকে জিনিষপত্র বাহির করিবার জন্য প্রাচীর খুদিবে, সে আপন মুখ আচ্ছাদন করিবে, কারণ সে চক্ষে ভূমি দেখিবে না। আর আমি তাহার উপরে আমার জাল বিস্তার করিব, তাহাতে সে আমার ফাঁদে ধৃত হইবে; আমি কল্‌দীয়দের দেশ বাবিলে তাহাকে লইয়া যাইব; তথাপি সে তাহা দেখিতে পাইবে না, অথচ সেই স্থানে মরিবে। আমি তাহার চারিদিকে তাহার সহকারী সমস্ত লোকজনকে ও তাহার সমস্ত সৈন্যদলকে সমুদয় বায়ুর মুখে উড়াইয়া দিব, এবং তাহাদের পশ্চাতে খড়্‌গ নিষ্কোষ করিব। আর তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যখন আমি তাহাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন ও নানাদেশে বিকীর্ণ করিব। তথাপি আমি তাহাদের কতকগুলি লোককে খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হইতে অবশিষ্ট রাখিব; যেন তাহারা যে জাতিগণের কাছে যাইবে, তাহাদের মধ্যে আপনাদের সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্য প্রচার করে; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি কাঁপিতে কাঁপিতে তোমার রুটী ভোজন কর, এবং উদ্বেগ ও চিন্তার সহিত তোমার জল পান কর। আর দেশের লোকদিগকে এই কথা বল, ইস্রায়েল দেশস্থ যিরূশালেম-নিবাসীদের বিষয়ে প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহারা চিন্তার সহিত আপন আপন রুটী ভোজন করিবে, বিস্ময়ের সহিত আপন আপন জল পান করিবে; কেননা নিবাসী-লোকদিগের দৌরাত্ম্য প্রযুক্ত তাহাদের দেশের ও তন্মধ্যস্থ সর্ব্বস্বের ধ্বংস হইবে। আর বসতিবিশিষ্ট নগর সকল উৎসন্ন ও দেশ ধ্বংসস্থান হইবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, এ কেমন প্রবাদ, যাহা ইস্রায়েল-দেশে তোমাদের মধ্যে প্রচলিত, যথা, ‘কাল বিলম্ব হইতেছে, প্রত্যেক দর্শন বিফল হইল?’ তুমি তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি এই প্রবাদ লোপ করিব; ইহা প্রবাদ বলিয়া ইস্রায়েলের মধ্যে আর চলিবে না; কিন্তু তাহাদিগকে বল, কাল এবং সমস্ত দর্শনের বাক্য সন্নিকট। কারণ অলীক দর্শন কিম্বা চাটুবাদের মন্ত্রতন্ত্র ইস্রায়েল-কুলের মধ্যে আর থাকিবে না। কেননা আমি সদাপ্রভু, আমি কথা কহিব; আর আমি যে বাক্য বলিব, তাহা অবশ্য সফল হইবে, বিলম্ব আর হইবে না; কারণ, হে বিদ্রোহী-কুল, তোমাদের বর্ত্তমান সময়েই আমি কথা কহিব, এবং তাহা সফলও করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। আবার সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, দেখ, ইস্রায়েল-কুল বলে, ঐ ব্যক্তি যে দর্শন পায়, সে অনেক বিলম্বের কথা; সে দূরবর্ত্তী কালের বিষয়ে ভাববাণী বলিতেছে। এই জন্য তুমি তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার সমস্ত বাক্য সফল হইতে আর বিলম্ব হইবে না; আমি যে বাক্য বলিব, তাহা সফল হইবে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, ইস্রায়েলের যে ভাববাদীরা ভাববাণী বলে, তুমি তাহাদের বিরুদ্ধে ভাববাণী বল; এবং যাহারা নিজ নিজ হৃদয় হইতে ভাববাণী বলে, তাহাদিগকে বল, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ধিক্‌ সেই নির্ব্বোধ ভাববাদিগণকে, যাহারা আপন আপন আত্মার অনুগমন করে, কিছুই দেখে নাই। হে ইস্রায়েল, তোমার ভাববাদিগণ উৎসন্ন স্থানের শৃগালদের তুল্য। তোমরা কোন ফাটলে উঠ নাই, এবং সদাপ্রভুর দিনে সংগ্রামে দাঁড়াইবার জন্য ইস্রায়েল-কুলের নিমিত্ত প্রাচীরও দৃঢ় কর নাই। তাহারা অলীক দর্শন পাইয়াছে, মিথ্যা মন্ত্র পড়িয়াছে, তাহারা বলে, ‘সদাপ্রভু বলেন,’ অথচ সদাপ্রভু তাহাদিগকে প্রেরণ করেন নাই; আর তাহারা আশা করিয়াছে যে, সেই বাক্য সিদ্ধ হইবে। তোমরা কি অলীক দর্শন পাও নাই? মিথ্যাকথারূপ মন্ত্র কি পড় নাই? কেননা আমি না বলিলেও তোমরা বলিতেছ, ইহা সদাপ্রভু বলেন। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা অলীক বাক্য বলিয়াছ, ও মিথ্যাকথারূপ দর্শন পাইয়াছ; এই নিমিত্ত দেখ, আমি তোমাদের বিপক্ষ, ইহা সদাপ্রভু কহেন। বস্তুতঃ আমার হস্ত সেই ভাববাদীদের বিপক্ষ হইবে, যাহারা অলীক দর্শন পায় ও মিথ্যা মন্ত্র পড়ে; তাহারা আমার প্রজাদের সভায় থাকিবে না, এবং ইস্রায়েল-কুলের বংশাবলিপত্রে উল্লিখিত হইবে না, আর ইস্রায়েল-দেশে প্রবেশ করিবে না; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু। শান্তি না হইলেও তাহারা ‘শান্তি’ বলিয়া আমার প্রজাদিগকে ভ্রান্ত করিয়াছে; এবং কেহ ভিত্তি নির্ম্মাণ করিলে, দেখ, তাহারা কলি দিয়া তাহা লেপন করে। এই জন্য যাহারা কলি দিয়া তাহা লেপন করে, তাহাদিগকে বল, তাহা পতিত হইবে, প্লাবনকারী বৃষ্টি আসিবে; হে বৃহৎ করকা সকল, তোমরা পড়িবে, এবং প্রচণ্ড বাত্যা তাহা বিদারণ করিবে। দেখ, সেই ভিত্তি যখন পতিত হইবে, তখন এই কথা কি তোমাদিগকে বলা যাইবে না, তোমরা যাহা দিয়া লেপন করিয়াছ, সেই প্রলেপ কোথায়? এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমিই আপন ক্রোধে প্রচণ্ড বাত্যা দ্বারা তাহা বিদারণ করিব, আমার কোপে প্লাবনকারী বৃষ্টি আসিবে, ও আমার ক্রোধে বৃহৎ করকা উহা বিনাশ করিবে। এই প্রকারে তোমরা কলি দিয়া যে ভিত্তি লেপন করিয়াছ, তাহা আমি ভাঙ্গিয়া ফেলিব, ভূমিসাৎ করিব, তাহাতে তাহার মূল অনাবৃত হইবে; তাহা পড়িবে, আর তাহার মধ্যে তোমাদের বিনাশ হইবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। এই প্রকারে আমি সেই ভিত্তিতে, এবং যাহারা তাহা লেপন করিয়াছে তাহাদিগেতে, আপন ক্রোধ সম্পন্ন করিব; আর আমি তোমাদিগকে বলিব, সেই ভিত্তি আর নাই, এবং তাহার লেপনকারিগণও নাই; অর্থাৎ যাহারা যিরূশালেমের বিষয়ে ভাববাণী বলে, এবং শান্তি না হইলেও তাহার জন্য শান্তির দর্শন পায়, ইস্রায়েলের সেই ভাববাদিগণ নাই; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর হে মনুষ্য-সন্তান, তোমার জাতির যে কন্যাগণ আপন আপন হৃদয় হইতে ভাববাণী বলে, তুমি তাহাদের বিরুদ্ধে তোমার মুখ রাখ, এবং তাহাদের বিরুদ্ধে ভাববাণী বল; তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ধিক্‌ সেই স্ত্রীলোকদিগকে, যাহারা প্রাণের মৃগয়া করিবার নিমিত্তই সমস্ত কনুইয়ের জন্য বালিশ সেলাই করে, ও সর্ব্ব আকৃতির লোকের মাথার জন্য আবরণী প্রস্তুত করে; তোমরা কি আমার প্রজাদের প্রাণ মৃগয়া করিয়া আপনাদের প্রাণ রক্ষা করিবে? তোমরা ত দুই এক মুষ্টি যব বা দুই এক খণ্ড রুটীর জন্য আমার প্রজাদের মধ্যে আমাকে অপবিত্র করিয়াছ, ফলতঃ যে সকল প্রাণী বধের যোগ্য নয়, তাহাদিগকে বধ করিবার জন্য, ও যে সকল প্রাণী বাঁচিবার যোগ্য নয়, তাহাদিগকে বাঁচাইবার জন্য, তোমরা আমার সেই প্রজাদিগকে মিথ্যাকথা বলিয়া থাক, যাহারা মিথ্যাকথা শুনিয়া থাকে। অতএব প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, তোমাদের যে যে বালিশ দ্বারা তোমরা পক্ষী শিকারের ন্যায় প্রাণ মৃগয়া করিয়া থাক, আমি সেই সকলের বিপক্ষ; আমি তোমাদের ভুজ হইতে সেই সকল বালিশ লইয়া ছিঁড়িয়া ফেলিব; এবং তোমরা যাহাদিগকে পক্ষির মত মৃগয়া করিয়া থাক, আমি সেই সকল প্রাণকে মুক্ত করিব; আর আমি তোমাদের আবরণী ছিঁড়িয়া ফেলিব, ও তোমাদের হস্ত হইতে আপন প্রজাদিগকে উদ্ধার করিব; তাহারা মৃগয়াতে ধৃত হইবার জন্য তোমাদের হস্তে আর থাকিবে না; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আমি যে ধার্ম্মিককে বিষণ্ণ করি নাই, তোমরা মিথ্যাকথা দ্বারা তাহার অন্তঃকরণ দুঃখার্ত্ত করিয়াছ, এবং দুষ্ট লোকের হস্ত সবল করিয়াছ, যেন সে জীবনপ্রাপ্তির নিমিত্ত আপন কুপথ হইতে না ফিরে; এই জন্য তোমরা অলীক দর্শন আর দেখিবে না, মন্ত্র আর পড়িবে না; এবং আমি তোমাদের হস্ত হইতে আপন প্রজাদিগকে উদ্ধার করিব; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। পরে ইস্রায়েলের জন কতক প্রাচীন আমার নিকটে আসিয়া আমার সম্মুখে বসিল। তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, ঐ লোকেরা আপন আপন পুত্তলিকে আপন আপন হৃদয়ে উঠিতে দিয়াছে, ও আপন আপন দৃষ্টির সম্মুখে আপনাদের অপরাধজনক বিঘ্ন রাখিয়াছে; আমি কি কোন মতে উহাদিগকে আমার কাছে অনুসন্ধান করিতে দিব? অতএব তুমি উহাদের সহিত আলাপ করিয়া উহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েল-কুলের যে কোন ব্যক্তি আপন পুত্তলিকে হৃদয়ে উঠিতে দেয়, ও আপন দৃষ্টির সম্মুখে আপনার অপরাধজনক বিঘ্ন রাখে, এবং ভাববাদীর কাছে আইসে, সেই ব্যক্তিকে আমি সদাপ্রভু তাহার পুত্তলিগণের বাহুল্যানুসারে তদ্বিষয়ে উত্তর দিব; যেন আমি ইস্রায়েল-কুলকে তাহাদের হৃদয়রূপ ফাঁদে ধরি, কেননা আপন আপন পুত্তলিগণের অনুরাগে তাহারা সকলে আমা হইতে সরিয়া গিয়াছে। অতএব তুমি ইস্রায়েল-কুলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা ফির, তোমাদের পুত্তলিগণ হইতে বিমুখ হও, তোমাদের সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্য হইতে বিমুখ হও। কেননা ইস্রায়েল-কুলের মধ্যে ও ইস্রায়েলে প্রবাসকারী বিদেশীদের মধ্যে যে কেহ আমা হইতে আপনাকে বিভিন্ন করে, আপন পুত্তলিগণকে হদয়ে উঠিতে দেয়, ও আপন দৃষ্টির সম্মুখে অপরাধজনক বিঘ্ন রাখে, সে যদি আমার কাছে অনুসন্ধান করিবার জন্য ভাববাদীর কাছে আইসে, তবে আমি সদাপ্রভু আপনি তাহাকে উত্তর দিব। ফলতঃ আমি সেই মনুষ্যের বিরুদ্ধে মুখ রাখিব, এবং তাহাকে চিহ্ন ও প্রবাদের জন্য বিস্ময়াস্পদ করিব, এবং আমার প্রজাদের মধ্য হইতে তাহাকে উচ্ছিন্ন করিব; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। কোন ভাববাদী যদি প্ররোচিত হইয়া কথা কহে, তবে জানিও, আমিই সদাপ্রভু সেই ভাববাদীকে প্ররোচনা করিয়াছি; আমি তাহার বিরুদ্ধে আপন হস্ত বিস্তার করিয়া আপন প্রজা ইস্রায়েলের মধ্য হইতে তাহাকে উচ্ছিন্ন করিব। এইরূপে তাহারা আপন আপন অপরাধ বহন করিবে; ঐ অনুসন্ধানার্থী ব্যক্তি ও ভাববাদী উভয়ের সমান অপরাধ হইবে; যেন ইস্রায়েল-কুল আর আমা হইতে বিপথগামী না হয়, এবং আপনাদের সমস্ত অধর্ম্ম দ্বারা আর আপনাদিগকে অশুচি না করে; কিন্তু তাহারা যেন আমার প্রজা হয়, ও আমি তাহাদের ঈশ্বর হই; ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, কোন দেশ সত্যলঙ্ঘন দ্বারা আমার বিরুদ্ধে পাপ করিলে যখন আমি তাহার বিরুদ্ধে আপন হস্ত বিস্তার করি, তাহার অন্নরূপ যষ্টি ভাঙ্গিয়া ফেলি, ও তাহার মধ্যে দুর্ভিক্ষ প্রেরণ করিয়া তথাকার মনুষ্য ও পশু উচ্ছিন্ন করি; তখন তাহার মধ্যে যদি নোহ, দানিয়েল ও ইয়োব, এই তিন ব্যক্তি থাকে, তবে তাহারা আপন আপন ধার্ম্মিকতায় আপন আপন প্রাণমাত্র রক্ষা করিবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। আমি যদি দেশের সর্ব্বত্র হিংস্র পশুদিগকে প্রেরণ করি, ও তাহারা লোকদিগকে নিঃসন্তান করে, এবং দেশ ধ্বংসস্থান ও পশুর ভয়ে পথিক-বিহীন হয়, অথচ তাহার মধ্যে ঐ তিন ব্যক্তি থাকে, প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তাহারাও পুত্র কিম্বা কন্যাদিগকে উদ্ধার করিতে পারিবে না, কেবল আপনারাই উদ্ধার পাইবে, কিন্তু দেশ ধ্বংসস্থান হইয়া যাইবে। অথবা যদি আমি দেশের বিরুদ্ধে খড়্‌গ আনিয়া বলি, ‘দেশের সর্ব্বত্র খড়্‌গ গমন করুক,’ আর তথাকার মনুষ্য ও পশু উচ্ছিন্ন করি, অথচ তাহার মধ্য ঐ তিন ব্যক্তি থাকে, প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তাহারাও পুত্র কিম্বা কন্যাদিগকে উদ্ধার করিতে পারিবে না, কেবল আপনারাই উদ্ধার পাইবে। অথবা আমি যদি সেই দেশে মহামারী প্রেরণ করি, এবং তথাকার মনুষ্য ও পশু উচ্ছিন্ন করিবার জন্য তাহার উপরে আপন ক্রোধ ঢালিয়া রক্ত বহাই, অথচ দেশের মধ্যে নোহ, দানিয়েল ও ইয়োব থাকে, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তাহারাও পুত্র কিম্বা কন্যাকে উদ্ধার করিতে পারিবে না; আপন আপন ধার্ম্মিকতায় আপন আপন প্রাণমাত্র উদ্ধার করিবে। কারণ প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এমন যদি হয়, তবে আমি মনুষ্য ও পশু উচ্ছিন্ন করণার্থে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আমার চারি মহাদণ্ড, অর্থাৎ খড়্‌গ, দুর্ভিক্ষ, হিংস্র পশু ও মহামারী প্রেরণ করিলে কি না ঘটিবে? তথাপি দেখ, তাহার মধ্যে কতকগুলি রক্ষাপ্রাপ্ত লোক, পুত্র ও কন্যা, বাহিরে আনীত হইবে; দেখ, তাহারা তোমাদের কাছে আসিবে, এবং তোমরা তাহাদের আচার ব্যবহার ও ক্রিয়াকাণ্ড দেখিবে; তাহাতে আমি যিরূশালেমের উপরে যে সকল অমঙ্গল বত্তাইয়াছি, তাহার উপরে যাহা কিছু উপস্থিত করিয়াছি, তদ্বিষয়ে তোমরা সান্ত্বনা প্রাপ্ত হইবে। বস্তুতঃ উহারা তোমাদিগকে সান্ত্বনা করিবে; কেননা তাহাদের আচার-ব্যবহার ও ক্রিয়াকাণ্ড দেখিয়া তোমরা বুঝিবে, আমি তাহার মধ্যে যাহা করিয়াছি, তাহার কিছুই অকারণে করি নাই; ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, অন্য সকল গাছ অপেক্ষা দ্রাক্ষালতার গাছ, বনের গাছ সকলের মধ্যে দ্রাক্ষালতার শাখা, কিসে শ্রেষ্ঠ? কোন কার্য্যের নিমিত্ত কি তাহা হইতে কাষ্ঠ গ্রহণ করা যায়? কিম্বা কোন পাত্র ঝুলাইবার জন্য কি তাহাতে দাণ্ডা নির্ম্মিত হয়? দেখ, তাহা ভক্ষ্যরূপে অগ্নিতে ফেলিয়া দেওয়া যায়; অগ্নি তাহার দুই অগ্রভাগ গ্রাস করিল, মধ্যদেশ দগ্ধ হইল; তাহা কি কোন কার্য্যে লাগিবে? দেখ, অবিকল থাকিতে তাহা কোন কার্যে লাগিত না, তবে যখন অগ্নি ভক্ষিত হইল, দগ্ধ হইল, তখন তাহা কি কোন কার্য্যে লাগিতে পারিবে? অতএব প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যেমন অগ্নিভক্ষিত হইবার জন্য বনের গাছ সকলের মধ্যে দ্রাক্ষালতার গাছ দিয়াছি, তেমনি যিরূশালেম-নিবাসী লোকদিগকে দিলাম। আমি তাহাদের বিরুদ্ধে মুখ রাখিব; অগ্নি হইতে উত্তীর্ণ হইলেও অগ্নি তাহাদিগকে গ্রাস করিবে; যখন আমি তাহাদের বিরুদ্ধে মুখ রাখি, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর আমি দেশ ধ্বংসস্থান করিব, কারণ তাহার সত্যলঙ্ঘন করিয়াছে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি যিরূশালেমকে তাহার ঘৃণার্হ কার্য্য সকল জ্ঞাত কর। তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু যিরূশালেমকে এই কথা কহেন, তোমার উৎপত্তি ও জন্মস্থান কনানীয়দের দেশ, তোমার পিতা ইমোরীয় ও মাতা হিত্তীয়া। তোমার জন্মের বৃত্তান্ত এই; তুমি যে দিন জন্মিয়াছিলে, তোমার নাড়ী কাটা হয় নাই, এবং তোমাকে পরিষ্কার করণার্থে জলে স্নান করান হয় নাই, তুমি লবণ মাখান বা পটিতে বেষ্টিত হও নাই। তোমার প্রতি কেহ স্নেহদৃষ্টি করিয়া কৃপা সহকারে ইহার কোন কার্য্য করে নাই, কিন্তু তুমি জন্মদিনে আপন স্বাভাবিক ঘৃণার্হ অবস্থাতে মাঠে নিক্ষিপ্তা হইয়াছিলে। আর আমি তোমার নিকট দিয়া গমন করিয়া তোমাকে তোমার রক্তমধ্যে ছট্‌ফট্‌ করিতে দেখিলাম, এবং তোমাকে কহিলাম, ‘তুমি নিজ রক্তে লিপ্তা হইলেও জীবিতা হও,’ হাঁ, তোমাকে কহিলাম, ‘তুমি নিজ রক্তে লিপ্তা হইলেও জীবিতা হও’। আমি তোমাকে ক্ষেত্রস্থ উদ্ভিজ্জের ন্যায় অতিশয় বাড়াইলাম, তাহাতে তুমি বৃদ্ধি পাইয়া বড় হইয়া উঠিলে, পরম শোভা প্রাপ্ত হইলে, তোমার স্তনযুগল পীন ও কেশ দীর্ঘ হইল; কিন্তু তুমি বিবস্ত্রা ও উলঙ্গিনী ছিলে। তখন আমি তোমার নিকট দিয়া গমন করিয়া তোমার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম, দেখ, তোমার সময় প্রেমের সময়, এই জন্য আমি তোমার উপরে আপন বস্ত্র বিস্তার করিয়া তোমার উলঙ্গতা আচ্ছাদন করিলাম; এবং আমি শপথ করিয়া তোমার সহিত নিয়ম স্থির করিলাম, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন, তাহাতে তুমি আমার হইলে। পরে আমি তোমাকে জলে স্নান করাইলাম, তোমার গাত্র হইতে সমস্ত রক্ত ধৌত করিলাম, আর তৈল মর্দ্দন করিলাম। আর আমি তোমাকে বিচিত্র পরিচ্ছদ পরাইলাম, তহশচর্ম্মের পাদুকা পরাইলাম, এবং তোমাকে মসীনা-বস্ত্রের বেষ্টনে বেষ্টিত ও পট্টবস্ত্রে আচ্ছাদিত করিলাম। পরে তোমাকে নানা আভরণে বিভূষিত করিলাম, তোমার হস্তে কঙ্কণ ও গলদেশে হার দিলাম। আমি তোমার নাসিকাতে নথ, কর্ণে দুল ও মস্তকে চারু মুকুট দিলাম। এই প্রকারে তুমি স্বর্ণে ও রৌপ্যে বিভূষিত হইলে; তোমার বস্ত্র মসীনা-সূত্র ও পট্ট দ্বারা নির্ম্মিত এবং শিল্পকর্ম্মে বিচিত্র হইল, তুমি সূক্ষ্ম সূজী, মধু ও তৈল ভোজন করিতে, এবং পরম-সুন্দরী হইয়া অবশেষে রাজ্ঞীর পদ প্রাপ্ত হইলে। আর তোমার সৌন্দর্য্যের জন্য জাতিগণের মধ্যে তোমার কীর্ত্তি ব্যাপিল, কেননা আমি তোমাকে যে শোভা দিয়াছিলাম, তাহা দ্বারা তোমার সৌন্দর্য্য সিদ্ধ হইয়াছিল, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। পরে তুমি আপন সৌন্দর্য্যে নির্ভর করিয়া নিজ কীর্ত্তির অভিমানে ব্যভিচারিণী হইলে; যে কেহ নিকট দিয়া যাইত, তাহার উপরে তোমার ব্যভিচাররূপ জল সেচন করিতে; উহা তাহারই ভোগ্য হইত। আর তুমি আপনার কোন কোন বস্ত্র লইয়া আপনার জন্য চিত্র বিচিত্র উচ্চস্থলী প্রস্তুত করিয়া তাহার উপরে বেশ্যাক্রিয়া করিতে; এরূপ হইবেও না, হইবারও নয়। আর আমার সুবর্ণ ও আমার রৌপ্য দ্বারা নির্ম্মিত যে সকল চারু আভরণ আমি তোমাকে দিয়াছিলাম, তুমি তাহা লইয়া পুরুষাকৃতি প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়া তাহাদের সহিত ব্যভিচার করিতে। আর তুমি আপন বিচিত্র বস্ত্র সকল লইয়া তাহাদিগকে পরিধান করাইতে, এবং আমার তৈল ও আমার ধূপ তাহাদের সম্মুখে রাখিতে। আর আমি তোমাকে আমার যে খাদ্য দিয়াছিলাম, যে সূক্ষ্ম সূজী, তৈল ও মধু তোমাকে খাইতে দিয়াছিলাম, তাহা তুমি সৌরভার্থে তাহাদের সম্মুখে রাখিতে; ইহাই করা হইত, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। আর তুমি, আমার জন্য প্রসূত তোমার যে পুত্রকন্যাগণ, তাহাদিগকে লইয়া ভক্ষ্যরূপে উহাদের কাছে উৎসর্গ করিয়াছ। তোমার ব্যভিচার কি ক্ষুদ্র বিষয় যে, তুমি আমার সন্তানগণকেও বধ করিয়া উৎসর্গ করিয়াছ, উহাদের জন্য [অগ্নির মধ্য দিয়া] গমন করাইয়াছ? আপনার সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্যে ও ব্যভিচারে মগ্ন হওয়াতে তুমি আপন যৌবনাবস্থার সেই সময় স্মরণ কর নাই, যখন তুমি বিবস্ত্রা ও উলঙ্গিনী ছিলে, নিজ রক্তে ছট্‌ফট্‌ করিতেছিলে। আর তোমার এই সকল দুষ্কার্য্যের পরে—প্রভু সদাপ্রভু কহেন, ধিক্‌, ধিক্‌ তোমাকে! —তুমি আপনার নিমিত্ত টিকরস্থান নির্ম্মাণ করিয়াছ, এবং প্রত্যেক চকে উচ্চস্থান প্রস্তুত করিয়াছ। প্রত্যেক পথের মস্তকে তুমি আপনার উচ্চস্থান নির্ম্মাণ করিয়াছ, আপন সৌন্দর্য্যকে ঘৃণার্হ বস্তু করিয়াছ, প্রত্যেক পথিকের জন্য আপনার পা খুলিয়া দিয়াছ, এবং আপন বেশ্যাক্রিয়া বাড়াইয়াছ। আরও তুমি তোমার প্রতিবাসী স্থূলমাংস মিস্রীয়দের সহিত ব্যভিচার করিয়াছ, এবং আমাকে অসন্তুষ্ট করণার্থে তোমার বেশ্যাক্রিয়া আরও বাড়াইয়াছ। এই জন্য দেখ, আমি তোমার উপরে হস্ত বিস্তার করিয়া তোমার নিরূপিত বৃত্তি খর্ব্ব করিলাম; এবং যাহারা তোমাকে দ্বেষ করে, যে পলেষ্টীয়দের কন্যারা তোমার কুকর্ম্মের ব্যবহারে লজ্জিতা হইয়াছে, তাহাদের ইচ্ছায় তোমাকে সমর্পণ করিলাম। আরও তুমি তৃপ্ত না হওয়াতে অশূরীয়দের সহিত বেশ্যাক্রিয়া করিয়াছ; কিন্তু তাহাদের সহিত ব্যভিচার করিলেও তৃপ্ত হও নাই। আর তুমি বাণিজ্যের দেশ কল্‌দিয়া পর্য্যন্ত আপন ব্যভিচার বৃদ্ধি করিয়াছ, কিন্তু ইহাতেও তৃপ্ত হইলে না। প্রভু সদাপ্রভু কহেন, তোমার হৃদয় কেমন দুর্ব্বল! তুমি ত এই সমস্ত করিয়াছ, ইহা উদ্ধত বেশ্যার কার্য্য; তুমি প্রত্যেক পথের মস্তকে তোমার টিকরস্থান নির্ম্মাণ করিয়াছ; প্রত্যেক চকে তোমার টিকরস্থান প্রস্তুত করিয়াছ; ইহাতে তুমি বেশ্যাবৎ হও নাই; তুমি ত পণ অবজ্ঞা করিয়াছ। ব্যভিচারিণী স্ত্রী! তুমি আপন স্বামীর পরিবর্ত্তে জারগণকে গ্রহণ করিয়া থাক। লোকে বেশ্যামাত্রকেই মুদ্রা দেয়, কিন্তু তুমি আপনার প্রেমিকমাত্রকেই উপহার দিয়াছ, এবং তোমার বেশ্যাবৃত্তিক্রমে তাহারা যেন সর্ব্বদিক্‌ হইতে তোমার কাছে আইসে, এই জন্য তাহাদিগকে উৎকোচ দিয়াছ। ইহাতে অন্যান্য স্ত্রী হইতে তোমার বেশ্যাবৃত্তি বিপরীত; বস্তুতঃ লোকেরা ব্যভিচারার্থে তোমার পশ্চাদগামী হয় না, আর তুমি কিছু পণ না লইয়া পণ দিয়া থাক, ইহাতেই তোমার কাণ্ড বিপরীত। অতএব, হে বেশ্যা, সদাপ্রভুর বাক্য শুন; প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমার তাম্র ঢালিয়া দেওয়া হইয়াছে, এবং তোমার প্রেমিকগণের সহিত তোমার ব্যভিচার হেতু তোমার উলঙ্গতা অনাবৃত হইয়াছে, সে জন্য, এবং তোমার সমস্ত ঘৃণার্হ পুত্তলির জন্য, আর তুমি তাহাদিগকে যে রক্ত দিয়াছ, তোমার সন্তানগণের সেই রক্তের জন্য, দেখ, আমি তোমার সেই সমস্ত প্রেমিককে একত্র করিব, যাহাদের সঙ্গে তুমি রমণ করিয়াছ, এবং যাহাদিগকে তুমি প্রেম করিয়াছ, ও যাহাদিগকে দ্বেষ করিয়াছ; তোমার বিরুদ্ধে চারিদিক্‌ হইতে তাহাদিগকে একত্র করিব, পরে তাহাদের সম্মুখে তোমার উলঙ্গতা অনাবৃত করিব, তাহাতে তাহারা তোমার সমস্ত উলঙ্গতা দেখিবে। আর সতীধর্ম্মভ্রষ্টা ও রক্তপাতকারিণী স্ত্রীলোকদিগের বিচারের ন্যায় আমি তোমার বিচার করিব, এবং ক্রোধের ও অন্তর্জ্বালার রক্ত তোমার উপরে উপস্থিত করিব। আর আমি তাহাদের হস্তে তোমাকে সমর্পণ করিব, তাহাতে তাহারা তোমার উচ্চস্থান ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, তোমার উচ্চস্থান সকল উৎপাটন করিবে, তোমাকে বিবস্ত্রা করিবে, এবং তোমার চারু আভরণ সকল হরণ করিবে; তাহারা তোমাকে বিবস্ত্রা ও উলঙ্গিনী করিয়া রাখিবে। আর তাহারা তোমার বিরুদ্ধে সমাজ আনিবে, প্রস্তরাঘাতে তোমাকে বধ করিবে, ও আপন আপন খড়্‌গ দ্বারা বিদ্ধ করিবে; এবং তোমার গৃহ সকল আগুনে পোড়াইয়া দিবে, ও অনেক স্ত্রীলোকের সাক্ষাতে তোমাকে বিচারসিদ্ধ দণ্ড দিবে; এইরূপে আমি তোমার ব্যভিচার ক্রিয়া ক্ষান্ত করাইব, তুমি আর পণ দিবে না। আমি তোমার প্রতি আপন ক্রোধ চরিতার্থ করিয়া শান্ত হইব, তাহাতে তোমার উপর হইতে আমার অন্তর্জ্বালা যাইবে, আমি ক্ষান্ত হইব, আর অসন্তুষ্ট হইব না। তুমি আপন যৌবনাবস্থা স্মরণ কর নাই, কিন্তু এই সকল বিষয়ে আমাকে ক্রুদ্ধ করিয়াছ; এই জন্য দেখ, আমিও তোমার কার্য্যের ফল তোমার মস্তকে দিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন; ঐ সকল ঘৃণার্হ আচরণের পরে তুমি আর কুকর্ম্ম করিবে না। দেখ, যে কেহ প্রবাদ ব্যবহার করে, সে তোমার বিরুদ্ধে এই প্রবাদ ব্যবহার করিবে, ‘যেমন মাতা তেমনি কন্যা’। তুমি নিজ মাতার কন্যা, সেও আপন স্বামীকে ও সন্তানগণকে ঘৃণা করিত; এবং তুমি নিজ ভগিনীদের ভগিনী, তাহারাও আপন আপন স্বামী ও সন্তানগণকে ঘৃণা করিত; তোমাদের মাতা হিত্তীয়া ও তোমাদের পিতা ইমোরীয় ছিল। তোমার বড় ভগিনী শমরিয়া, সে আপন কন্যাগণের সহিত তোমার বামদিকে বসতি করে; এবং তোমার ছোট ভগিনী সদোম, সে আপন কন্যাগণের সহিত তোমার দক্ষিণে বসতি করে। কিন্তু তুমি যে তাহাদের পথে গমন করিয়াছ ও তাহাদের ঘৃণার্হ ক্রিয়ানুসারে কার্য্য করিয়াছ, তাহা নহে, বরং উহা লঘু বিষয় বলিয়া আপনার সমস্ত আচার-ব্যবহারে তাহাদের হইতেও ভ্রষ্টা হইয়াছ। প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তোমার ভগিনী সদোম ও তাহার কন্যাগণ তোমার মত ও তোমার কন্যাদের মত ক্রিয়া করে নাই। দেখ, তোমার ভগিনী সদোমের এই অপরাধ ছিল; তাহার ও তাহার কন্যাদিগের দর্প, ভক্ষ্যের পূর্ণতা এবং নিশ্চিন্ততাযুক্ত শান্তি ছিল; আর সে দুঃখী ও দরিদ্রের হস্ত সবল করিত না। তাহারা অহঙ্কারিণী ছিল, ও আমার সাক্ষাতে ঘৃণার্হ ক্রিয়া করিত, অতএব আমি তাহা দেখিয়া তাহাদিগকে দূর করিলাম। আর শমরিয়া তোমার পাপের অর্দ্ধেক পাপও করে নাই, কিন্তু তুমি আপন ঘৃণার্হ ক্রিয়া তাহাদের হইতেও অধিক বাড়াইয়াছ, এবং আপনার কৃত সমস্ত ঘৃণার্হ ক্রিয়া দ্বারা আপন ভগিনীদিগকে ধার্ম্মিক প্রতিপন্ন করিয়াছ। তুমিও নিজ অপমান বহন কর, কেননা তুমি তোমার ভগিনীদের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি করিয়াছ; তুমি যে সকল পাপকার্য্য দ্বারা তাহাদের অপেক্ষা অধিক ঘৃণার্হ হইয়াছ; তৎপ্রযুক্ত তাহারা তোমা অপেক্ষা ধার্ম্মিক হইয়াছে; তুমিও লজ্জিতা হও, নিজ অপমান বহন কর, কেননা তুমি আপন ভগিনীদিগকে ধার্ম্মিক প্রতিপন্ন করিয়াছ। আমি তাহাদের বন্দি-দশা, সদোম ও তাহার কন্যাদের বন্দি-দশা, এবং শমরিয়া ও তাহার কন্যাদের বন্দি-দশা ফিরাইব, এবং তাহাদের মধ্যে তোমার বন্দিদের বন্দি-দশা ফিরাইব; যেন তুমি আপন ভগিনীদের সান্ত্বনার কারণ হইয়া, যাহা যাহা করিয়াছ, সেই সকল ক্রিয়া প্রযুক্ত নিজ অপমান বহন করিতে ও অপমানিত হইতে পার। আর তোমার ভগিনীরা, সদোম ও তাহার কন্যাগণ, পূর্ব্বদশা প্রাপ্ত হইবে, এবং শমরিয়া ও তাহার কন্যাগণ পূর্ব্বদশা প্রাপ্ত হইবে, এবং তুমি ও তোমার কন্যাগণ পূর্ব্বদশা প্রাপ্ত হইবে। তোমার অহঙ্কারের সময়ে তুমি আপন ভগিনী সদোমের নাম মুখে আনিতে না; তখন তোমার দুষ্টতা প্রকাশ পায় নাই; যেমন এই সময়ে অরামের কন্যারা ও তাহার চারিদিকের নিবাসিনী সকলে, পলেষ্টীয়দের কন্যারা, তোমাকে টিটকারি দিতেছে; ইহারা চারিদিকে তোমাকে তুচ্ছ করে। তুমি আপন কুকর্ম্মের ও আপন ঘৃণার্হ আচরণেরই ভার বহন করিয়াছ, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কেননা প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যেরূপ কর্ম্ম করিয়াছ, আমি তোমার প্রতি তদনুরূপ কর্ম্ম করিব; তুমি ত শপথ অবজ্ঞা করিয়া নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছ। তথাপি তোমার যৌবনকালে তোমার সহিত আমার যে নিয়ম ছিল, তাহা আমি স্মরণ করিব, এবং তোমার পক্ষে চিরস্থায়ী এক নিয়ম স্থির করিব। তখন তুমি আপন আচার ব্যবহার স্মরণ করিয়া লজ্জিতা হইবে, যখন আপনার ভগিনীদিগকে, আপনার বড় ও ছোট ভগিনীদিগকে, গ্রহণ করিবে; আর আমি তাহাদিগকে কন্যাদের ন্যায় তোমাকে দিব, কিন্তু তোমার নিয়মক্রমে নয়। বাস্তবিক আমিই তোমার সহিত আপন নিয়ম স্থির করিব; তাহাতে তুমি জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু; অভিপ্রায় এই, আমি যখন তোমার ক্রিয়া সকল মার্জ্জনা করিব, তখন তুমি যেন তাহা স্মরণ করিয়া লজ্জিতা হও, ও নিজ অপমান প্রযুক্ত আর কখনও মুখ না খুল, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল; হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েল-কুলের কাছে নিগূঢ় বাক্য ও উপমা উত্থাপন কর। তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এক প্রকাণ্ড ঈগল পক্ষী ছিল; তাহার পক্ষ বৃহৎ ও পালখ সকল দীর্ঘ ও চিত্রবিচিত্র লোমে পরিপূর্ণ; ঐ পক্ষী লিবানোনে আসিয়া এরস বৃক্ষের উচ্চতম শাখা লইয়া গেল; সে তাহার পল্লবের অগ্রভাগ কাটিয়া বাণিজ্যের দেশে লইয়া গিয়া বণিকদের এক নগরে রাখিল। আর সে ঐ ভূমির একটী বীজ লইয়া ঊর্ব্বর ক্ষেত্রে লাগাইয়া দিল; সে জলরাশির সমীপে তাহা রাখিল, বাইশী বৃক্ষের ন্যায় তাহা রোপন করিল। পরে তাহা বৃদ্ধি পাইয়া খর্ব্ব অথচ বিস্তারিত দ্রাক্ষালতা হইল; তাহার শাখা ঐ ঈগলের অভিমুখে ফিরিল, ও সেই পক্ষীর নীচে তাহার মূল থাকিল; এই প্রকারে তাহা দ্রাক্ষালতা হইয়া শাখাবিশিষ্ট ও পল্লবিত হইল। কিন্তু বৃহৎ পক্ষ ও অনেক লোমবিশিষ্ট আর এক প্রকাণ্ড ঈগল ছিল, আর দেখ, ঐ দ্রাক্ষালতা জলে সেচিত হইবার জন্য আপনার রোপণস্থান কেয়ারী হইতে তাহার দিকে মূল বক্র করিয়া আপন শাখা বিস্তার করিল। সে জলরাশির নিকটে উর্ব্বরা ভূমিতে রোপিত হইয়াছিল, সুতরাং বহুশাখায় ভূষিতা ও ফলবতী হইয়া উৎকৃষ্ট দ্রাক্ষালতা হইতে পারিত। তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সে কি কৃতকার্য্য হইবে? তাহার মূল কি উৎপাটিত হইবে না? তাহার ফল কি কাটা যাইবে না? সে শুষ্ক হইবে, ও তাহার ডালের নবীন ডগা সকল ম্লান হইবে। তাহার মূল হইতে তাহাকে তুলিয়া লইবার জন্য বলবান হস্ত ও অনেক সৈন্য লাগিবে না। আর দেখ, সে রোপিত হইয়াছে বলিয়া কি কৃতকার্য্য হইবে? পূর্ব্বীয় বায়ুস্পর্শে সে কি একেবারে শুষ্ক হইবে না? সে আপন প্ররোহ-স্থান ঐ কেয়ারীতে অবশ্য শুষ্ক হইয়া পড়িবে। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি সেই বিদ্রোহীকুলকে এই কথা বল, তোমরা কি ইহার তাৎপর্য্য জান না? তাহাদিগকে বল, দেখ, বাবিল-রাজ যিরূশালেমে আসিয়া তাহার রাজাকে ও তাহার অধ্যক্ষগণকে আপনার কাছে বাবিলে লইয়া গেল। আর সে রাজবংশের একটী বীজ লইয়া তাহার সহিত নিয়ম করিল, শপথ দ্বারা তাহাকে বদ্ধ করিল, এবং দেশের পরাক্রমী লোকদিগকে লইয়া গেল; যেন রাজ্যটী খর্ব্ব হয়, আপনাকে উচ্চ করিতে না পারে, কিন্তু তাহার নিয়ম পালন করিয়া যেন স্থির থাকে। কিন্তু সে তাহার বিদ্রোহী হইয়া অশ্ব ও অনেক সৈন্য পাইবার জন্য মিসরে দূত পাঠাইয়া দিল। সে কি কৃতকার্য্য হইবে? এমন কার্য্য যে করে, সে কি রক্ষা পাইবে? সে ত নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে, তবু কি নিস্তার পাইবে? প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, যে রাজা তাহাকে রাজা করিল, যাহার শপথ সে তুচ্ছ করিল, ও যাহার নিয়ম সে ভঙ্গ করিল, সেই রাজার বাসস্থানে ও তাহারই নিকটে বাবিলের মধ্যে সে মরিবে। আর ফরৌণ পরাক্রান্ত বাহিনী ও মহাসমাজ দ্বারা যুদ্ধে তাহার সাহায্য করিবে না, যদিও অনেক লোকের প্রাণ বিনাশার্থে জাঙ্গাল বাঁধা ও গড় নির্ম্মাণ করা হয়। সে ত শপথ অবজ্ঞা করিয়া নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে; হাঁ, দেখ, হাত যোড় করিবার পরেও সে এই সকল কার্য্য করিয়াছে, সে রক্ষা পাইবে না। অতএব প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, সে আমার শপথ অবজ্ঞা করিয়াছে, আমার নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছে, অতএব আমি ইহার ফল তাহার মস্তকে বর্ত্তাইব। আর আমি আপন জাল তাহার উপরে পাতিব, সে আমার ফাঁদে ধৃত হইবে; আমি তাহাকে বাবিলে লইয়া যাইব, এবং সে আমার বিরুদ্ধে যে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছে, তন্নিমিত্ত সেখানে আমি তাহার বিচার করিব। তাহার সকল সৈন্যের মধ্যে যত লোক পলাইবে, সকলেই খড়্‌গে পতিত হইবে, এবং অবশিষ্ট লোকেরা সর্ব্ব বায়ুর দিকে ছিন্নভিন্ন হইবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমি সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছি। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমিই এরস বৃক্ষের উচ্চতম শাখার একটী কলম লইয়া রোপন করিব, তাহার ডাল সকলের অগ্র হইতে অতি কোমল একটী ডাল ভাঙ্গিয়া লইয়া উচ্চ ও উন্নত পর্ব্বতে রোপন করিব; ইস্রায়েলের উচ্চতার পর্ব্বতে তাহা রোপন করিব; তাহাতে তাহা বহুশাখাযুক্ত ও ফলবান হইয়া বিশাল এরস বৃক্ষ হইয়া উঠিবে; তাহার তলে সর্ব্বজাতীয় সকল পক্ষী বাসা করিবে, তাহার শাখার ছায়াতেই বাসা করিবে। তাহাতে ক্ষেত্রের সমস্ত বৃক্ষ জানিবে যে, আমি সদাপ্রভু উচ্চ বৃক্ষকে খর্ব্ব করিয়াছি, খর্ব্ব বৃক্ষকে উচ্চ করিয়াছি, সতেজ বৃক্ষকে শুষ্ক করিয়াছি, ও শুষ্ক বৃক্ষকে সতেজ করিয়াছি; আমি সদাপ্রভু ইহা বলিলাম, আর ইহা করিলাম। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, ‘পিতৃপুরুষেরা অম্ল দ্রাক্ষাফল খায়, তাই সন্তানদের দাঁত টকিয়া যায়,’ এই যে প্রবাদ তোমরা ইস্রায়েল-দেশের বিষয়ে বল, ইহাতে তোমাদের অভিপ্রায় কি? প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য ইস্রায়েলের মধ্যে তোমাদের এই প্রবাদের ব্যবহার আর করিতে হইবে না। দেখ, সমস্ত প্রাণ আমার; যেমন পিতার প্রাণ, তদ্রূপ সন্তানের প্রাণও আমার; যে প্রাণী পাপ করে, সেই মরিবে। পরন্তু কোন ব্যক্তি যদি ধার্ম্মিক হয় এবং ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করে, পর্ব্বতের উপরে ভোজন করে নাই, ইস্রায়েল-কুলের পুত্তলিগণের প্রতি দৃষ্টিপাত করে নাই, আপন প্রতিবাসীর স্ত্রীকে ভ্রষ্ট করে নাই, ও ঋতুমতী স্ত্রীর নিকটেও যায় নাই; এবং কাহারও প্রতি দৌরাত্ম্য করে নাই, ঋণীকে বন্ধক ফিরাইয়া দিয়াছে, কাহারও দ্রব্য বলপূর্ব্বক অপহরণ করে নাই, ক্ষুধিত লোককে অন্ন দিয়াছে, ও উলঙ্গকে বস্ত্র পরাইয়াছে, সুদের লোভে ঋণ দেয় নাই, কিছু বৃদ্ধি লয় নাই, অন্যায় হইতে আপন হস্ত ফিরাইয়াছে, মনুষ্যদের মধ্যে যথার্থ বিচার করিয়াছে, আমার বিধিপথে গমন করিয়াছে, এবং সত্য আচরণের উদ্দেশে আমার শাসনকলাপ পালন করিয়াছে, তবে সেই ব্যক্তি ধার্ম্মিক; সে অবশ্য বাঁচিবে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু সেই ব্যক্তির পুত্র যদি দস্যু ও রক্তপাতকারী হয়, এবং সেই প্রকার কোন একটা কার্য্য করে; সেই সকল [কর্ত্তব্যের] কোন কর্ম্ম না করে; যদি পর্ব্বতের উপরে ভোজন করিয়া থাকে, ও আপন প্রতিবাসীর স্ত্রীকে ভ্রষ্ট করিয়া থাকে, দুঃখী দরিদ্রের প্রতি দৌরাত্ম্য করিয়া থাকে, পরের দ্রব্য বলপূর্ব্বক অপহরণ করিয়া থাকে, বন্ধক দ্রব্য ফিরাইয়া না দিয়া থাকে, এবং পুত্তলিগণের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া থাকে, ঘৃণার্হ কার্য্য করিয়া থাকে; যদি সুদের লোভে ঋণ দিয়া থাকে, ও বৃদ্ধি লইয়া থাকে, তবে সে কি বাঁচিবে? সে বাঁচিবে না; সে এই সকল ঘৃণার্হ কার্য্য করিয়াছে; সে মরিবেই মরিবে; তাহার রক্ত তাহারই উপরে বর্ত্তিবে। আবার দেখ, ইহার পুত্র যদি আপন পিতার কৃত সমস্ত পাপ দেখিয়া বিবেচনা করে, ও তদনুযায়ী কার্য্য না করে, পর্ব্বতের উপরে ভোজন করে নাই, ইস্রায়েল-কুলের পুত্তলিগণের প্রতি দৃষ্টিপাত করে নাই, আপন প্রতিবাসীর স্ত্রীকে ভ্রষ্ট করে নাই, কাহারও প্রতি দৌরাত্ম্য করে নাই, বন্ধক দ্রব্য রাখে নাই, কাহারও দ্রব্য বলপূর্ব্বক অপহরণ করে নাই, কিন্তু ক্ষুধিত লোককে অন্ন দিয়াছে ও উলঙ্গকে বস্ত্র পরাইয়াছে, দুঃখী লোকের প্রতি উপদ্রব হইতে আপন হস্ত নিবারণ করিয়াছে, সুদ বা বৃদ্ধি লয় নাই, আমার শাসন সকল পালন করিয়াছে, ও আমার বিধিপথে গমন করিয়াছে, তবে সে আপন পিতার অপরাধে মরিবে না, সে অবশ্য বাঁচিবে। কিন্তু তাহার পিতা ভারী উপদ্রব করিত, ভ্রাতার দ্রব্য বলপূর্ব্বক অপহরণ করিত, স্বজাতীয় লোকদের মধ্যে অসৎকর্ম্ম করিত; তাই দেখ, সে আপন অপরাধে মরিল। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, ‘সেই পুত্র কেন পিতার অপরাধ বহন করে না?’ সেই পুত্র ত ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করিয়াছে, এবং আমার বিধি সকল রক্ষা করিয়াছে, সে সকল পালন করিয়াছে; সে অবশ্য বাঁচিবে। যে প্রাণী পাপ করে, সেই মরিবে; পিতার অপরাধ পুত্র বহন করিবে না, ও পুত্রের অপরাধ পিতা বহন করিবে না; ধার্ম্মিকের ধার্ম্মিকতা তাহার উপরে বর্ত্তিবে, ও দুষ্টের দুষ্টতা তাহার উপরে বর্ত্তিবে। অধিকন্তু দুষ্ট লোক যদি আপনার কৃত সমস্ত পাপ হইতে ফিরে, ও আমার বিধি সকল পালন করে, এবং ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করে, তবে সে অবশ্য বাঁচিবে; সে মরিবে না। তাহার পূর্ব্বকৃত কোন অধর্ম্ম তাহার বলিয়া স্মরণে আনা যাইবে না; সে যে ধর্ম্মাচরণ করিয়াছে, তাহাতে বাঁচিবে। দুষ্ট লোকের মরণে কি আমার কিছু সন্তোষ আছে? ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন; বরং সে আপন কুপথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে, ইহাতে কি আমার সন্তোষ হয় না? আর ধার্ম্মিক লোক যদি আপন ধার্ম্মিকতা হইতে ফিরিয়া অন্যায় করে, ও দুষ্টের কৃত সমস্ত ঘৃণার্হ ক্রিয়ানুরূপ আচরণ করে, তবে সে কি বাঁচিবে? তাহার কৃত কোন ধর্ম্মকর্ম্ম স্মরণে আনা যাইবে না; সে যে সত্য লঙ্ঘন করিয়াছে ও যে পাপ করিয়াছে, তাহাতেই মরিবে। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, ‘প্রভুর পথ সরল নয়’। হে ইস্রায়েল-কুল, এক বার শুন; আমার পথ কি সরল নয়? তোমাদের পথ কি অসরল নয়? ধার্ম্মিক লোক যখন আপন ধার্ম্মিকতা হইতে ফিরিয়া অন্যায় করে ও তাহাতে মরে, তখন আপনার কৃত অন্যায়েই মরে। আর দুষ্ট লোক যখন আপনার কৃত দুষ্টতা হইতে ফিরিয়া ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করে, তখন আপন প্রাণ বাঁচায়। সে বিবেচনা করিয়া আপনার কৃত সমস্ত অধর্ম্ম হইতে ফিরিল, এই জন্য সে অবশ্য বাঁচিবে; সে মরিবে না। কিন্তু ইস্রায়েল-কুল বলিতেছে, প্রভুর পথ সরল নয়। হে ইস্রায়েল-কুল, আমার পথ কি সরল নয়? তোমাদের পথ কি অসরল নয়? অতএব হে ইস্রায়েল-কুল, আমি তোমাদের প্রত্যেকের আচার ব্যবহার অনুসারে তোমাদের বিচার করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। তোমরা ফির, আপনাদের কৃত সমস্ত অধর্ম্ম হইতে মন ফিরাও, তাহাতে তাহা তোমাদের অপরাধজনক বিঘ্ন হইবে না। তোমরা আপনাদের কৃত সমস্ত অধর্ম্ম আপনাদের হইতে দূরে ফেলিয়া দেও, এবং আপনাদের জন্য নূতন হৃদয় ও নূতন আত্মা প্রস্তুত কর; কেননা, হে ইস্রায়েল-কুল, তোমরা কেন মরিবে? কারণ যে মরে, তাহার মরণে আমার কিছু সন্তোষ নাই, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; অতএব তোমরা মন ফিরাইয়া বাঁচ। আর তুমি ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণের বিষয়ে বিলাপ কর। বল, তোমার মাতা কি ছিল? সে ত সিংহী ছিল; সিংহগণের মধ্যে শয়ন করিত, যুবসিংহদের মধ্যে আপন বৎসদিগকে প্রতিপালন করিত। তাহার প্রতিপালিত এক বৎস যুবসিংহ হইয়া উঠিল, সে মৃগ বিদারণ করিতে শিখিল, মনুষ্যদিগকে গ্রাস করিতে লাগিল। জাতিগণও তাহার বিষয় শুনিতে পাইল; সে তাহাদের গর্ত্তে ধরা পড়িল; আর তাহারা তাহার নাক ফুঁড়িয়া মিসর দেশে লইয়া গেল। সেই সিংহী যখন দেখিল, সে প্রতীক্ষা করিয়াছিল, কিন্তু তাহার প্রত্যাশা বিনষ্ট হইল, তখন আপনার আর একটা শাবককে লইয়া যুবসিংহ করিয়া তুলিল। পরে সে সিংহদের সঙ্গে গতায়াত করিতে করিতে যুবসিংহ হইয়া উঠিল, সে মৃগ বিদারণ করিতে শিখিল, মনুষ্যদিগকে গ্রাস করিতে লাগিল। সে তাহাদের অট্টালিকা সকল জ্ঞাত ছিল; তাহাদের নগর সকল উৎসন্ন করিল; তাহার গর্জ্জনের শব্দে দেশ ও তাহার সমস্তই স্তম্ভিত হইল। তখন চারিদিকের জাতিগণ নানা প্রদেশ হইতে তাহার বিপক্ষে দাঁড়াইল, তাহার উপরে আপনাদের জাল পাতিল; সে তাহাদের গর্ত্তে ধরা পড়িল। তাহারা তাহার নাক ফুঁড়িয়া পিঞ্জরে রাখিল, তাহাকে বাবিল-রাজের নিকটে লইয়া গেল; ইস্রায়েলের কোন পর্ব্বতে যেন তাহার হূঙ্কার আর শুনিতে পাওয়া না যায়, তাই তাহাকে দুর্গের মধ্যে রাখিল। তোমার রক্তে তোমার মাতা জলরাশির নিকটে রোপিত দ্রাক্ষালতাস্বরূপ ছিল, সে অনেক জল প্রযুক্ত ফলবান ও শাখায় পূর্ণ হইল। আর তাহার শাখাদণ্ড দৃঢ় ও কর্ত্তৃত্বকারীদের রাজদণ্ড হইবার যোগ্য হইল; সে দীর্ঘতায় মেঘস্পর্শী, এবং উচ্চতায় ও শাখাবাহুল্যে বিরাজমান হইল। কিন্তু সে কোপে উৎপাটিত হইল, ভূমিতে নিক্ষিপ্ত হইল; পূর্ব্বীয় বায়ুতে তাহার ফল শুষ্ক হইয়া পড়িল; তাহার দৃঢ় শাখা সকল ভগ্ন ও শুষ্ক হইল, অগ্নি সেগুলি গ্রাস করিল। এখন সে প্রান্তরমধ্যে নির্জ্জল ও শুষ্ক ভূমিতে রোপিত হইয়াছে। তাহার শাখাদণ্ড হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া তাহার ফল গ্রাস করিয়াছে; রাজদণ্ডের জন্য একটী দৃঢ় শাখাও তাহাতে নাই। এ বিলাপ, এবং ইহা বিলাপের জন্য থাকিবে। সপ্তম বৎসরের পঞ্চম মাসে, মাসের দশম দিনে ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের মধ্যে কয়েক জন পুরুষ সদাপ্রভুর কাছে অন্বেষণ করিবার জন্য আসিয়া আমার সম্মুখে বসিল। তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েলের প্রাচীনবর্গের সহিত আলাপ করিয়া তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা কি আমার কাছে অন্বেষণ করিতে আসিয়াছ? প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব না। হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি কি তাহাদের বিচার করিবে? তুমি কি তাহাদের বিচার করিবে? তবে তাহাদের পিতৃপুরুষদের ঘৃণার্হ ক্রিয়া সকল তাহাদিগকে জ্ঞাত কর; আর তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি যে দিন ইস্রায়েলকে মনোনীত করিয়াছিলাম, যাকোবের কুলজাত বংশের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, মিসর দেশে তাহাদের কাছে আপনার পরিচয় দিয়াছিলাম, যখন তাহাদের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়া বলিয়াছিলাম, আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু; সেই দিন তাহাদের পক্ষে হস্ত উত্তোলন করিয়া [বলিয়াছিলাম] যে, আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিব, এবং তাহাদের জন্য যে দেশ অনুসন্ধান করিয়াছি, সর্ব্ব দেশের ভূষণস্বরূপ সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশে লইয়া যাইব; আর আমি তাহাদিগকে বলিয়াছিলাম, তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন নয়নরঞ্জন ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর কর, এবং মিসরের পুত্তলিগণ দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না; আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। কিন্তু তাহারা আমার বিরুদ্ধাচারী হইল, আমার কথা শুনিতে অসম্মত হইল, আপন আপন নয়নরঞ্জন ঘৃণার্হ বস্তু সকল দূর করিল না, এবং মিসরের পুত্তলিগণকেও ছাড়িল না; তাহাতে আমি বলিলাম, আমি তাহাদের উপরে আমার কোপ ঢালিব, মিসর দেশের মধ্যে তাহাদিগেতে আমার ক্রোধ সাধন করিব। কিন্তু আমি আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম; যেন আমার নাম সেই জাতিগণের সাক্ষাতে অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের মধ্যে তাহারা বাস করিতেছিল, ও যাহাদের সাক্ষাতে আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনাতে আপনার পরিচয় দিয়া ছিলাম। পরে আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া প্রান্তরে আনিলাম। আর আমি তাহাদিগকে আমার বিধিকলাপ দিলাম, ও আমার শাসনকলাপ জ্ঞাত করিলাম, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে। আর আমিই যে তাহাদের পবিত্রকারী সদাপ্রভু, ইহা জানাইবার জন্য আমার ও তাহাদের মধ্যে চিহ্নস্বরূপে আমার বিশ্রামদিন সকলও তাহাদিগকে দিলাম। কিন্তু ইস্রায়েল-কুল সেই প্রান্তরে আমার বিরুদ্ধাচারী হইল; আমার বিধিপথে চলিল না, এবং আমার শাসনকলাপ অগ্রাহ্য করিল, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে; আর আমার বিশ্রামদিন সকল অতিশয় অপবিত্র করিল; তখন আমি কহিলাম, আমি তাহাদিগকে সংহার করিবার জন্য প্রান্তরে তাহাদের উপরে আমার কোপ ঢালিব। কিন্তু আমি আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম, যেন সেই জাতিগণের সাক্ষাতে আমার নাম অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের সাক্ষাতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম। অধিকন্তু আমি প্রান্তরে তাহাদের বিপক্ষে হস্ত উত্তোলন করিলাম, বলিলাম, আমি সর্ব্ব দেশের ভূষণ যে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ তাহাদিগকে প্রদান করিয়াছি, সেই দেশে তাহাদিগকে লইয়া যাইব না; কারণ তাহারা আমার শাসনকলাপ অগ্রাহ্য করিত, আমার বিধিপথে চলিত না, ও আমার বিশ্রামদিন অপবিত্র করিত, কেননা তাহাদের অন্তঃকরণ তাহাদের পুত্তলিগণের অনুগামী ছিল। কিন্তু তাহাদিগকে বিনাশ সাধনে আমার চক্ষুলজ্জা হইল, এই জন্য আমি সেই প্রান্তরে তাহাদিগকে সংহার করিলাম না। আর সেই প্রান্তরে আমি তাহাদের সন্তানগণকে কহিলাম, তোমরা আপনাদের পিতৃগণের বিধিপথে চলিও না, তাহাদের শাসনকলাপ মানিও না, ও তাহাদের পুত্তলিগণ দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিও না; আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু; আমারই বিধিপথে চল, ও আমারই শাসনকলাপ রক্ষা কর, পালন কর; আর আমার বিশ্রামদিন পবিত্র কর, তাহাই আমার ও তোমাদের মধ্যে চিহ্নস্বরূপ হইবে, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। তথাপি সেই সন্তানগণ আমার বিরুদ্ধাচারী হইল; তাহারা আমার বিধিপথে চলিল না, এবং আমার শাসনকলাপ পালনার্থে রক্ষা করিল না, যাহা পালন করিলে তদ্দ্বারা মনুষ্য বাঁচে; তাহারা আমার বিশ্রামদিনও অপবিত্র করিল; তখন আমি কহিলাম, আমি তাহাদের উপরে আপন কোপ ঢালিব, প্রান্তরে তাহাদিগেতে আপন ক্রোধ সাধন করিব। তথাপি আমি হস্ত আকর্ষণ করিলাম, আপন নামের অনুরোধে কার্য্য করিলাম, যেন সেই জাতিগণের সাক্ষাতে আমার নাম অপবিত্রীকৃত না হয়, যাহাদের সাক্ষাতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম। অধিকন্তু আমি প্রান্তরে তাহাদের বিপক্ষে হস্ত উত্তোলন করিলাম, বলিলাম, তাহাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিব, নানা দেশে বিকীর্ণ করিব; কারণ তাহারা আমার শাসনকলাপ পালন করিল না, আমার বিধিকলাপ অগ্রাহ্য করিল, আমার বিশ্রামদিন অপবিত্র করিল, ও তাহাদের পিতাদের পুত্তলিগণে তাহাদের চক্ষু আসক্ত থাকিল। অধিকন্তু যাহা মঙ্গলজনক নয়, এমন বিধিকলাপ, এবং যদ্দ্বারা কেহ বাঁচিতে পারে না, এমন শাসনকলাপ, তাহাদিগকে দিলাম। তাহারা গর্ভ উন্মোচক সমস্ত সন্তানকে [অগ্নির মধ্য দিয়া] গমন করাইত, তাই আমি তাহাদিগকে আপন আপন উপহারে অশুচি হইতে দিলাম, যেন আমি তাহাদিগকে ধ্বংস করি, যেন তাহারা জানিতে পারে যে, আমিই সদাপ্রভু। অতএব, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত আলাপ করিয়া তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছে, ইহাতেই আমার নিন্দা করিয়াছে। কারণ আমি তাহাদিগকে যে দেশ দিব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, যখন সেই দেশে আনিলাম, তখন তাহারা যে কোন স্থানে কোন উচ্চ পর্ব্বত কিম্বা কোন ঝোপাল বৃক্ষ দেখিতে পাইত, সেই স্থানে বলিদান করিত, সেই স্থানে [আমার] অসন্তোষজনক নৈবেদ্য উৎসর্গ করিত, সেই স্থানে আপনাদের সৌরভার্থক দ্রব্যও রাখিত, এবং সেই স্থানে আপনাদের পেয় নৈবেদ্য ঢালিত। তাহাতে আমি তাহাদিগকে কহিলাম, তোমরা যে উচ্চস্থলীতে উঠিয়া যাও, উহা কি? এইরূপে অদ্য পর্য্যন্ত তাহার নাম বামা [উচ্চস্থলী] হইয়া রহিয়াছে। অতএব তুমি ইস্রায়েল-কুলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা কি আপন আপন পিতৃপুরুষদের রীতিতে আপনাদিগকে অশুচি করিতেছ? তাহাদের ঘৃণার্হ বস্তু সকলের অনুগমনে ব্যভিচার করিতেছ? তোমরা যখন আপনাদের উপহার দেও, যখন আপন আপন সন্তানদিগকে অগ্নির মধ্য দিয়া গমন করাও, তখন অদ্য পর্য্যন্ত আপনাদের সমস্ত পুত্তলির দ্বারা কি আপনাদিগকে অশুচি করিতেছ? তবে, হে ইস্রায়েল-কুল, আমি কি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব? প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমাদিগকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব না। আর তোমরা যাহা মনে করিয়া থাক, তাহা কোন ক্রমে হইবে না; তোমরা ত বলিতেছ, আমরা জাতিদের তুল্য হইব, ভিন্ন ভিন্ন দেশের গোষ্ঠীদের তুল্য হইব, কাষ্ঠ ও প্রস্তরের পরিচর্য্যা করিব। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি বলবান হস্ত, বিস্তারিত বাহু ও কোপের বর্ষণ দ্বারা তোমাদের উপরে রাজত্ব করিব। আমি বলবান হস্ত, বিস্তারিত বাহু ও কোপের বর্ষণ দ্বারা জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাদিগকে বাহির করিব, এবং যে সকল দেশে তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া রহিয়াছ, সেই সকল দেশ হইতে তোমাদিগকে একত্র করিব। আমি জাতিসমূহের প্রান্তরে আনিয়া সম্মুখাসম্মুখি হইয়া সেই স্থানে তোমাদের সহিত বিচার করিব। আমি মিসর দেশের প্রান্তরে যেমন তোমাদের পিতৃপুরুষদের সহিত বিচার করিয়াছিলাম, তোমাদের সহিত তেমনি বিচার করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। আর আমি তোমাদিগকে পাঁচনীর নীচে দিয়া গমন করাইব, ও নিয়মরূপ বন্ধনে আবদ্ধ করিব। পরে বিদ্রোহী ও আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচারী সকলকে ঝাড়িয়া তোমাদের মধ্য হইতে দূর করিব; তাহারা যে দেশে প্রবাস করে, তথা হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিব বটে, কিন্তু তাহারা ইস্রায়েল-দেশে প্রবেশ করিবে না; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। পরন্তু হে ইস্রায়েল-কুল, প্রভু সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে এই কথা বলেন, তোমরা যাও, প্রত্যেকে আপন আপন পুত্তলিগণের সেবা কর; কিন্তু উত্তরকালে তোমরা আমার কথায় অবধান করিবেই করিবে; তখন আপন আপন উপহার ও পুত্তলিগণ দ্বারা আমার পবিত্র নাম আর অপবিত্র করিবে না। কারণ, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার পবিত্র পর্ব্বতে, ইস্রায়েলের উচ্চতার পর্ব্বতে, ইস্রায়েলের সমস্ত কুল, তাহারা সকলেই, দেশমধ্যে আমার সেবা করিবে; সেই স্থানে আমি তাহাদিগকে গ্রাহ্য করিব, সেই স্থানে তোমাদের সমস্ত পবিত্র বস্তুর সহিত তোমাদের উপহার ও তোমাদের নৈবেদ্যের অগ্রিমাংশ চাহিব। যখন জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাদিগকে আনিব, এবং যে সকল দেশে তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া রহিয়াছ, সেই সকল দেশ হইতে তোমাদিগকে একত্র করিব, তখন আমি সৌরভার্থক দ্রব্যের ন্যায় তোমাদিগকে গ্রাহ্য করিব; আর তোমাদের দ্বারা জাতিগণের সাক্ষাতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব। আর আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম, সেই ইস্রায়েল-দেশে যখন তোমাদিগকে আনিব, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর সেখানে তোমরা সেই আচার ব্যবহার ও সমস্ত ক্রিয়াকাণ্ড স্মরণ করিবে, যদ্দ্বারা আপনাদিগকে অশুচি করিয়াছ; আর তোমাদের কৃত সমস্ত কুক্রিয়া প্রযুক্ত তোমরা আপনাদের দৃষ্টিতে আপনাদিগকে ঘৃণা করিবে। হে ইস্রায়েল-কুল, প্রভু সদাপ্রভু বলেন, আমি যখন তোমাদের মন্দ আচার ব্যবহার অনুসারে নয় ও তোমাদের দুষ্ট ক্রিয়াকাণ্ড অনুসারে নয়, কিন্তু আপন নামের অনুরোধে তোমাদের সহিত ব্যবহার করিব, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি দক্ষিণদিকে আপন মুখ রাখ, দক্ষিণ দেশের দিকে বাক্য বর্ষণ কর, ও দক্ষিণ প্রান্তরস্থ অরণ্যের বিপরীতে ভাববাণী বল। আর দক্ষিণের অরণ্যকে বল, তুমি সদাপ্রভুর বাক্য শুন; প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ আমি তোমার মধ্যে অগ্নি জ্বালাইব, তাহা তোমার মধ্যে সমস্ত সতেজ বৃক্ষ ও সমস্ত শুষ্ক বৃক্ষ গ্রাস করিবে; সেই জলন্ত অগ্নি নির্ব্বাণ হইবে না; দক্ষিণ অবধি উত্তর পর্য্যন্ত সমুদয় মুখ তদ্দ্বারা দগ্ধ হইবে। তাহাতে সমস্ত প্রাণী দেখিবে যে, আমি সদাপ্রভু তাহা প্রজ্বলিত করিয়াছি; তাহা নির্ব্বাণ হইবে না। তখন আমি কহিলাম, হাঁ প্রভু সদাপ্রভু, তাহারা আমার বিষয়ে বলে, ঐ ব্যক্তি কি উপমাবাদী নয়? আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি যিরূশালেমের দিকে আপন মুখ রাখ, পবিত্র স্থানের দিকে বাক্য বর্ষণ কর, ও ইস্রায়েল-দেশের বিরুদ্ধে ভাববাণী বল। তুমি ইস্রায়েল-দেশকে বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; আমি কোষ হইতে আপন খড়্‌গ বাহির করিয়া তোমার মধ্য হইতে ধার্ম্মিক ও দুষ্টকে উচ্ছিন্ন করিব। আমি যখন তোমার মধ্য হইতে ধার্ম্মিক ও দুষ্ট লোককে উচ্ছিন্ন করিব, তখন আমার খড়্‌গ কোষ হইতে বাহির হইয়া দক্ষিণ অবধি উত্তর পর্য্যন্ত সমস্ত প্রাণীর বিরুদ্ধে যাইবে; তাহাতে সমস্ত প্রাণী জানিবে যে, আমি সদাপ্রভু কোষ হইতে আপন খড়্‌গ বাহির করিয়াছি, তাহা আর ফিরিবে না। আর হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ কর; কটিদেশ ভাঙ্গিয়া মনস্তাপপূর্ব্বক তাহাদের সাক্ষাতে দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ কর। আর, যখন তাহারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করিবে, ‘কেন দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিতেছ?’ তখন বলিও, বার্ত্তার নিমিত্ত, কেননা তাহা আসিতেছে; তৎকালে প্রত্যেক হৃদয় গলিয়া যাইবে, প্রত্যেক হস্ত দুর্ব্বল হইবে, প্রত্যেক মন নিস্তেজ হইবে, ও প্রত্যেক জানু জলের মত হইয়া পড়িবে; দেখ, তাহা আসিতেছে, তাহা সফলও হইবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, ভাববাণী বল, সদাপ্রভু এই কথা কহেন; তুমি বল, খড়্‌গ, খড়্‌গ, উহা শাণিত ও মার্জ্জিত করা হইয়াছে। উহা শাণিত করা হইয়াছে, যেন সংহার করে; মার্জ্জিত করা হইয়াছে, যেন বিদ্যুতের ন্যায় হয়; তবে আমরা কি আমোদ করিব? আমার পুত্রের রাজদণ্ড প্রত্যেক কাষ্ঠকে তুচ্ছ করে। তাহা মার্জ্জিত হইবার জন্য দেওয়া হইয়াছে, যেন হাত দিয়া ধরা যায়; খড়্‌গ শাণিত ও মার্জ্জিত করা হইয়াছে, যেন হন্তার হস্তে দেওয়া হয়। হে মনুষ্য-সন্তান, ক্রন্দন ও হাহাকার কর, কেননা উহা আমার প্রজাদের বিরুদ্ধে, উহা ইস্রায়েলের সমস্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপস্থিত হইয়াছে; তাহারা আমার প্রজাদের সহিত খড়্‌গে সমর্পিত হইয়াছে; অতএব তুমি আপন ঊরুদেশে আঘাত কর। কারণ পরীক্ষা করা গিয়াছে; সেই তুচ্ছ রাজদণ্ড যদি আর না থাকে, তাহাতে কি? ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। অতএব, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ভাববাণী বল, ও করে করাঘাত কর; সেই খড়্‌গ, আহত লোকদের খড়্‌গ, দুই বরং তিনটী খড়্‌গ হইয়া উঠুক; তাহা আহত মহল্লোকের খড়্‌গ, তাহা চারিদিকে তাহাদিগকে ঘেরিবে। আমি তাহাদিগকে সমস্ত নগর-দ্বারে খড়্‌গের ত্রাস রাখিলাম, যেন তাহাদের অন্তঃকরণ গলিয়া যায়, ও তাহাদের বিস্তর স্খলন হয়। আঃ! তাহা বিদ্যুতের ন্যায় নির্ম্মিত, তাহা হত্যার জন্য শাণিত হইয়াছে। [হে খড়্‌গ,] একাগ্র হইয়া দক্ষিণদিকে ফির, প্রস্তুত হইয়া বামদিকে ফির; যে দিকে তোমার মুখ রাখা যায়, [সেই দিকে গমন কর]। আমিও করে করাঘাত করিব, ও আপন ক্রোধ চরিতার্থ করিয়া শান্ত হইব; আমি সদাপ্রভু ইহা কহিলাম। আবার সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, বাবিল-রাজের খড়্‌গ আসিবে বলিয়া তুমি দুই পথ আঁক; সেই দুই পথ এক দেশ হইতে আসিবে; আর তুমি হস্তাকৃতি এক চিহ্ন খোদ, নগরগামী পথের মস্তকে তাহা খোদ। খড়্‌গের জন্য অম্মোন-সন্তানদের রব্বা নগরগামী এক পথ, ও যিহূদার প্রাচীরবেষ্টিত যিরূশালেম নগরগামী অন্য পথ আঁক। কেননা বাবিল-রাজ মন্ত্রপূত করিবার জন্য দুই পথের সঙ্গমস্থানে, অর্থাৎ সেই দুই পথের মস্তকে, দণ্ডায়মান হইল; সে বাণ সকল সঞ্চালন করিল, ঠাকুরদের কাছে অনুসন্ধান করিল, ও যকৃৎ নিরীক্ষণ করিল। তাহার দক্ষিণদিকে মন্ত্র উঠিল, ‘যিরূশালেম,’ [সেই স্থানে] প্রাচীরভেদক যন্ত্র স্থাপন করিতে, বধের আজ্ঞা দিতে, উচ্চৈঃস্বরে সিংহনাদ করিতে, নগরদ্বার সকলের বিরুদ্ধে প্রাচীরভেদক যন্ত্র স্থাপন করিতে, জাঙ্গাল বাঁধিতে ও উচ্চ গৃহ প্রস্তুত করিতে হইবে। কিন্তু মন্ত্রটী তাহাদের দৃষ্টিতে অলীক বোধ হইবে; তাহারা উহাদের কাছে পুনঃ পুনঃ শপথ করিয়াছিল; কিন্তু তিনি তাহাদের অপরাধ স্মরণীয় করেন, যেন তাহারা ধৃত হয়। এইজন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন অপরাধ স্মরণীয় করিয়াছ, কেননা তোমাদের অধর্ম্ম সকল অনাবৃত হইল, তাই তোমাদের সমস্ত কার্য্যে তোমাদের পাপ প্রকাশিত হয়, তোমরা স্মরণীয় হওয়াতে হস্তে ধৃত হইবে। আর হে আহত দুষ্ট ইস্রায়েল-নরপতি, অন্তক অপরাধের সময়ে তোমার দিন উপস্থিত হইল। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, উষ্ণীষ অপসারণ কর ও রাজমুকুট দূর কর; যাহা আছে, তাহা আর থাকিবে না; যাহা খর্ব্ব তাহা উচ্চ হউক, ও যাহা উচ্চ তাহা খর্ব্ব হউক। আমি বিপর্য্যয়, বিপর্য্যয়, বিপর্য্যয় করিব; যাহা আছে, তাহাও থাকিবে না, যাবৎ তিনি না আইসেন, যাঁহার অধিকার; আমি তাঁহাকে দিব। আর হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি এই ভাববাণী বল, প্রভু সদাপ্রভু অম্মোন-সন্তানদের বিষয়ে ও তাহাদের টিটকারির বিষয়ে এই কথা কহেন; তুমি বল, খড়্‌গ, খড়্‌গ নিষ্কোষিত হইয়াছে, উহা হত্যার নিমিত্ত মার্জ্জিত, যেন গ্রাস করে, যেন বিদ্যুতের ন্যায় হয়। এদিকে লোকেরা তোমার জন্য অলীক দর্শন পায়, ও তোমার জন্য মিথ্যা মন্ত্র পাঠ করে, যেন তোমাকে সেই আহত দুষ্টগণের গ্রীবার উপরে নিপেক্ষ করে, যাহাদের দিন শেষের অপরাধকালে উপস্থিত হইয়াছে। উহা পুনর্ব্বার কোষে রাখ; তুমি যে স্থানে সৃষ্ট ও যে দেশে উৎপন্ন হইয়াছিলে, তথায় আমি তোমার বিচার করিব। আর আমি তোমার উপরে আমার ক্রোধ ঢালিব; আমি তোমার বিরুদ্ধে আমার কোপাগ্নিতে ফুঁ দিব, এবং পশুবৎ ও বিনাশ সাধনে নিপুন লোকদের হস্তে তোমাকে সমর্পণ করিব। তুমি অগ্নির কাষ্ঠস্বরূপ হইবে; তোমার রক্ত দেশের মধ্যে [পাতিত] হইবে; লোকে তোমাকে আর কখনও স্মরণ করিবে না, কেননা আমি সদাপ্রভু ইহা কহিলাম। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি কি বিচার করিবে? সেই রক্তলিপ্তা নগরীর বিচার করিবে? তবে তাহার সমস্ত ঘৃণার্হ ক্রিয়া তাহাকে জ্ঞাত কর। তুমি বলিবে, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এ সেই নগরী, যে আপনার মধ্যে রক্তপাত করিয়া থাকে, যেন তাহার কাল উপস্থিত হয়; সে আপনার জন্য পুত্তলিগণকে নির্ম্মাণ করিয়া থাকে, যেন সে অশুচি হয়। তুমি যে রক্তপাত করিয়াছ, তদ্দ্বারা তুমি দণ্ডনীয়া হইয়াছ, ও তুমি যে যে পুত্তলি নির্ম্মাণ করিয়াছ, তদ্দ্বারা অশুচি হইয়াছ; এবং তুমি আপনার দিন সন্নিকট করিয়াছ, ও আপন আয়ুর অন্তে উপস্থিত হইয়াছ; এইজন্য আমি তোমাকে জাতিগণের ও সকল দেশের কাছে বিদ্রূপের পাত্র করিলাম। তোমার নিকটস্থ ও দূরস্থ সকলে তোমাকে বিদ্রূপ করিবে, তুমি ত অশুচিনামিকা ও কলহপূর্ণা। দেখ, ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণ, প্রত্যেকে আপন আপন ক্ষমতা অনুসারে, তোমার মধ্যে রক্তপাত করিবার জন্য থাকিয়া আসিয়াছে। তোমার মধ্যে পিতামাতাকে তুচ্ছ করা হইয়াছে; তোমার মধ্যে বিদেশীর প্রতি উপদ্রব করা হইয়াছে; তোমার মধ্যে পিতৃহীনের ও বিধবার প্রতি দৌরাত্ম্য করা হইয়াছে। তুমি আমার পবিত্র বস্তু সকল অবজ্ঞা করিয়াছ, ও আমার বিশ্রামদিন সকল অপবিত্র করিয়াছ। রক্তপাত করণার্থে তোমার মধ্যে কর্ণেজপ লোক থাকিয়া আসিয়াছে; এবং তোমার মধ্যে লোকে পর্ব্বতের উপরে ভোজন করিয়াছে; তোমার মধ্যে লোকে কুকর্ম্ম করিয়াছে; তোমার মধ্যে লোকে পিতার উলঙ্গতা অনাবৃত করিয়াছে; তোমার মধ্যে লোকে ঋতুমতী অশুচি স্ত্রীকে বলাৎকার করিয়াছে; তোমার মধ্যে কেহ আপন প্রতিবাসীর স্ত্রীর সহিত ঘৃণার্হ কার্য্য করিয়াছে; কেহ বা আপন পুত্রবধূকে কুকর্ম্মে অশুচি করিয়াছে; আর কেহ বা তোমার মধ্যে আপনার ভগিনীকে, আপন পিতার কন্যাকে, বলাৎকার করিয়াছে। রক্তপাত করণার্থে তোমার মধ্যে লোকে উৎকোচ গ্রহণ করিয়াছে; তুমি সুদ ও বৃদ্ধি লইয়াছ, উপদ্রব করিয়া লোভে প্রতিবাসীদের কাছে লাভ করিয়াছ, এবং আমাকেই ভুলিয়া গিয়াছ, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। অতএব দেখ, তুমি যে অন্যায় লাভ করিয়াছ, ও তোমার মধ্যে যে রক্তপাত হইয়াছে, তন্নিমিত্ত আমি করে করাঘাত করিয়াছি। আমি যে সময় তোমার কাছে নিকাশ লইব, সেই সময়ে তোমার অন্তঃকরণ কি সুস্থির থাকিবে? তোমার হস্ত কি সবল থাকিবে? আমি সদাপ্রভু ইহা বলিলাম, আর ইহা সিদ্ধ করিব। আমি তোমাকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন ও নানাদেশে বিকীর্ণ করিব, এবং তোমার মধ্য হইতে তোমার অশুচিতা দূর করিব। তুমি জাতিগণের সাক্ষাতে আপনার দোষে অপবিত্রীকৃত হইবে; তাহাতে তুমি জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, ইস্রায়েল-কুল আমার কাছে খাদস্বরূপ হইয়াছে; তাহারা সকলে হাপরের মধ্যে পিত্তল, দস্তা, লৌহ ও সীসস্বরূপ; তাহারা রৌপ্যের খাদস্বরূপ হইয়াছে। অতএব প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা সকলে খাদস্বরূপ হইয়াছ, এইজন্য দেখ, আমি তোমাদিগকে যিরূশালেমের মধ্যে একত্র করিব। যেমন লোকে অগ্নিতে ফুঁ দিয়া গলাইবার জন্য রৌপ্য, পিত্তল, লৌহ, সীস ও দস্তা হাপরের মধ্যে একত্র করে, তদ্রূপ আমি আপন ক্রোধে ও প্রচণ্ড কোপে তোমাদিগকে একত্র করিব, এবং তথায় রাখিয়া গলাইব। হাঁ, আমি তোমাদিগকে সংগ্রহ করিয়া আমার ক্রোধাগ্নিতে ফুঁ দিব, তাহাতে তোমরা তাহার মধ্যে গলিয়া যাইবে। যেমন হাপরের মধ্যে রৌপ্য গলান যায়, তেমনি তাহার মধ্যে তোমাদিগকে গলান যাইবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমি সদাপ্রভু তোমাদের উপরে আপন কোপ ঢালিলাম। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি দেশকে বল, তুমি এমন এক দেশ, যাহা পরিষ্কৃত হয় নাই ও ক্রোধের দিনে বৃষ্টিতে সিক্ত হয় নাই। তথাকার ভাববাদিগণ তথায় চক্রান্ত করে; তাহারা এমন গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, যে মৃগ বিদারণ করে; তাহারা প্রাণীদিগকে গ্রাস করিয়াছে; তাহারা ধন ও বহুমূল্য বস্তু হরণ করে; তাহারা তথায় অনেক স্ত্রীকে বিধবা করিয়াছে। তথাকার যাজকগণ আমার ব্যবস্থার প্রতি দৌরাত্ম্য করিয়াছে, ও আমার পবিত্র বস্তু সকল অপবিত্র করিয়াছে, পবিত্র ও সামান্যের কিছু বিশেষ রাখে নাই, শুচি অশুচির কোন প্রভেদ শিক্ষা দেয় নাই, ও আমার বিশ্রামদিন সকলের প্রতি চক্ষু মুদিয়াছে, আর আমি তাহাদের মধ্যে অপবিত্রীকৃত হইতেছি। তথাকার অধ্যক্ষগণ তথায় এমন কেন্দুয়ার ন্যায়, যাহারা মৃগবিদারণ করে; তাহারা রক্তপাত করে, প্রাণ বিনাশ করে, যেন অন্যায় লাভ পাইতে পারে। আর তথাকার ভাববাদিগণ তাহাদের জন্য কলি দিয়া [ভিত্তি] লেপন করিয়াছে, তাহারা অলীক দর্শন পায়, ও তাহাদের জন্য মিথ্যাকথারূপ মন্ত্র পড়ে; সদাপ্রভু কথা না কহিলেও তাহারা বলে, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন। দেশের প্রজারা ভারী উপদ্রব করিয়াছে, পরের দ্রব্য বলপূর্ব্বক অপহরণ করিয়াছে, দুঃখী দরিদ্রের প্রতি দৌরাত্ম্য করিয়াছে, এবং বিদেশীর প্রতি অন্যায়পূর্ব্বক উপদ্রব করিয়াছে। আর আমি যেন দেশ বিনষ্ট না করি, এই জন্য তাহাদের মধ্যে এমন এক জন পুরুষকে অন্বেষণ করিলাম, যে তাহার প্রাচীর সারাইবে ও দেশের নিমিত্ত আমার সম্মুখে তাহার ফাটালে দাঁড়াইবে, কিন্তু পাইলাম না। এই জন্য আমি তাহাদের উপরে আপন রোষ ঢালিলাম; আমি আপন কোপাগ্নি দ্বারা তাহাদিগকে সংহার করিলাম; তাহাদের কার্য্যের ফল তাহাদের মস্তকে দিলাম, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, দুটী স্ত্রীলোক ছিল, তাহারা এক মাতার কন্যা। তাহারা মিসরে ব্যভিচার যৌবনকালেই করিল; সেখানে তাদের স্তন মর্দ্দিত হইত, সেখানে লোকেরা তাহাদের কৌমার্য্যকালীন চুচুক টিপিত। তাহাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠার নাম অহলা [তাহার তাম্বু], ও তাহার ভগিনীর নাম অহলীবা [তাহার মধ্যে আমার তাম্বু]; তাহারা আমার হইল এবং পুত্রকন্যা প্রসব করিল। তাহাদের নামের তাৎপর্য এই, অহলা শমরিয়া, ও অহলীবা যিরূশালেম। আমার থাকিতে অহলা ব্যভিচার করিল, আপনার প্রেমিকগণে, নিকটবর্ত্তী অশূরীয়দিগেতে কামাসক্তা হইল; ইহারা নীলবস্ত্র পরিহিত, দেশাধ্যক্ষ ও শাসনকর্ত্তা, সকলেই মনোহর যুবক ও অশ্বারোহী যোদ্ধা। সে তাহাদের অর্থাৎ সমস্ত উৎকৃষ্ট অশূর-সন্তানের সহিত ব্যভিচার করিত, এবং যাহাদিগেতে কামাসক্তা হইত, তাহাদের সকলকার সমস্ত পুত্তলি দ্বারা ভ্রষ্ট হইত। আবার সে মিসরের সময় হইতে আপনার ব্যভিচার ত্যাগ করে নাই; কেননা তাহার যৌবনকালে লোকে তাহার সহিত শয়ন করিত, তাহারাই তাহার কৌমার্য্যকালীন চুচুক টিপিত, ও তাহার সহিত রতিক্রিয়া করিত। এই জন্য আমি তাহার প্রেমিকদের হস্তে,—সে যাহাদিগেতে কামাসক্তা ছিল, সেই অশূর-সন্তানদের হস্তে তাহাকে সমর্পণ করিলাম। তাহারা তাহার উলঙ্গতা অনাবৃত করিল, তাহার পুত্রকন্যাদিগকে হরণ করিয়া তাহাকে খড়্‌গ দ্বারা বধ করিল; এইরূপে স্ত্রীলোকদের মধ্যে তাহার অখ্যাতি হইল, কারণ লোকেরা তাহাকে বিচারসিদ্ধ দণ্ড দিল। এই সকল দেখিয়াও তাহার ভগিনী অহলীবা আপন কামাসক্তিতে তাহা অপেক্ষা, হাঁ, বেশ্যাক্রিয়ায় সেই ভগিনী অপেক্ষা অধিক ভ্রষ্ট হইল। সে নিকটবর্ত্তী অশূর-সন্তানগণে—দেশাধ্যক্ষগণে ও শাসনকর্ত্তৃগণে—কামাসক্তা হইল; তাহারা দিব্য পরিচ্ছদান্বিত অশ্বারোহী যোদ্ধা, সকলেই মনোহর যুবক। আর আমি দেখিলাম, সে অশুচি, উভয়ে একই পথে চলিতেছে। আর সে আপন বেশ্যাক্রিয়া বাড়াইল, কেননা সে ভিত্তিতে চিত্রিত পুরুষদিগকে অর্থাৎ কল্‌দীয়দের সিন্দূরচিত্রিত প্রতিরূপ দেখিল; তাহারা পটিকাতে বদ্ধকটি, তাহাদের মস্তকে রঙ্গে ডুবান দীর্ঘ উষ্ণীষ, তাহারা সকলে দেখিতে সেনানীদের ন্যায়, কল্‌দীয় দেশজাত বাবিল-সন্তানদের রূপবিশিষ্ট। তাহাদিগকে দেখিবামাত্র সে কামাসক্তা হইয়া কল্‌দীয় দেশে তাহাদের কাছে দূত প্রেরণ করিল। তাহাতে বাবিল-সন্তানেরা তাহার কাছে আসিয়া প্রেম-শয্যায় শয়ন করিল, ও ব্যভিচার করিয়া তাহাকে ভ্রষ্ট করিল; সে তাহাদের দ্বারা অশুচি হইল, পরে তাহাদের প্রতি তাহার প্রাণে ঘৃণা হইল। সে আপন বেশ্যাক্রিয়া প্রকাশ করিল, আপন উলঙ্গতা অনাবৃত করিল; তাহাতে আমার প্রাণে যেমন তাহার ভগিনীর প্রতি ঘৃণা হইয়াছিল, তেমনি তাহার প্রতিও ঘৃণা হইল। আর সে আপন বেশ্যাক্রিয়া সকল বাড়াইল, যে সময়ে মিসর দেশে বেশ্যাক্রিয়া করিত, আপনার সেই যৌবনকাল স্মরণ করিল। কেননা গর্দ্দভের ন্যায় মাংসবিশিষ্ট ও অশ্বের ন্যায় রেতোবিশিষ্ট তাহাদের শৃঙ্গারকারিগণে যে কামাসক্তা হইল। এইরূপে, মিস্রীয়েরা যে সময়ে কৌমার্য্যকালীন স্তন বলিয়া তোমার চুচুক টিপিত, তুমি পুনর্ব্বার সেই যৌবনকালীয় কুকর্ম্মের চেষ্টা করিয়াছ। এই জন্য, হে অহলীবা, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, তোমার প্রাণে যাহাদের প্রতি ঘৃণা হইয়াছে, তোমার সেই প্রেমিকদিগকে আমি তোমার বিরুদ্ধে উঠাইব, চারিদিক্‌ হইতে তাহাদিগকে তোমার বিরুদ্ধে আনিব। বাবিল-সন্তানেরা এবং কল্‌দীয়েরা সকলে, পকোদ, শোয়া ও কোয়া এবং তাহাদের সঙ্গে সমস্ত অশূর-সন্তান আনীত হইবে; তাহারা সকলে মনোহর যুবক, দেশাধ্যক্ষ ও শাসনকর্ত্তা, সেনানী ও সমাহূত লোক, সকলে অশ্বারোহী যোদ্ধা। তাহারা অস্ত্রশস্ত্র, রথ, চক্র ও জাতিসমাজ সঙ্গে লইয়া তোমার বিরুদ্ধে আসিবে, চর্ম্ম, ঢাল ও টোপর ধরিয়া তোমার বিরুদ্ধে চারিদিকে উপস্থিত হইবে; এবং আমি তাহাদের হাতে বিচার-ভার সমর্পণ করিব, তাহারা আপনাদের বিচারানুসারে তোমার বিচার করিবে। আর আমি আমার অন্তর্জ্বালা তোমার বিরুদ্ধে স্থাপন করিব; তাহারা তোমার প্রতি কোপে ব্যবহার করিবে; তাহারা তোমার নাসিকা ও কর্ণ কাটিয়া ফেলিবে ও তোমার অবশিষ্ট লোকেরা খড়্‌গে পতিত হইবে; তাহারা তোমার পুত্রকন্যাগণকে হরণ করিবে, ও তোমার অবশিষ্ট লোকেরা অগ্নিভক্ষিত হইবে। তাহারা তোমাকে বিবস্ত্রা করিবে, ও তোমার চারু আভরণ সকল হরণ করিবে। এইরূপে আমি তোমার কুকর্ম্ম ও মিসর দেশ হইতে [কৃত] তোমার বেশ্যাক্রিয়া নিবৃত্ত করিব, তাহাতে তুমি উহাদের প্রতি আর দৃষ্টিপাত করিবে না, এবং মিসরকেও আর স্মরণ করিবে না। কেননা প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, তুমি যাহাদিগকে দ্বেষ করিতেছ, যাহাদের প্রতি তোমার প্রাণে ঘৃণা হইয়াছে, তাহাদের হস্তে আমি তোমাকে সমর্পণ করিব। তাহারা তোমার প্রতি দ্বেষ করিবে, ও তোমার সমস্ত শ্রমফল হরণ করিবে, এবং তোমাকে উলঙ্গিনী ও বিবস্ত্রা করিয়া পরিত্যাগ করিবে, তাহাতে তোমার ব্যভিচার-ঘটিত উলঙ্গতা, তোমার কুকর্ম্ম ও তোমার বেশ্যাক্রিয়া, অনাবৃত হইবে। তুমি জাতিগণের অনুগমনে ব্যভিচার করিয়াছ, তাহাদের পুত্তলিগণ দ্বারা অশুচি হইয়াছ, এই নিমিত্ত এ সকল তোমার প্রতি করা যাইবে। তুমি আপন ভগিনীর পথে গমন করিয়াছ, এই জন্য আমি তাহার পানপাত্র তোমার হস্তে দিব। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি আপন ভগিনীর পাত্রে পান করিবে, সেই পাত্র গভীর ও বৃহৎ; তুমি পরিহাসের বিষয় হইবে; সেই পাত্রে অনেকটা ধরে। তুমি পরিপূর্ণা হইবে মত্ততায় ও খেদে, বিস্ময়ের ও ধ্বংসের পাত্রে, তোমার ভগিনী শমরিয়ার পাত্রে। তুমি তাহাতে পান করিবে, গাদও খাইয়া ফেলিবে, এবং তাহার খোলা চাটিবে, ও আপন স্তন বিদীর্ণ করিবে; কেননা আমি ইহা কহিলাম, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। অতএব প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি আমাকে ভুলিয়া গিয়াছ, আমাকে পিছনে ফেলিয়াছ, তজ্জন্য তুমি আবার আপন কুকর্ম্মের ও বেশ্যাক্রিয়ার ভার বহন কর। সদাপ্রভু আমাকে আরও কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি কি অহলার ও অহলীবার বিচার করিবে? তবে তাহাদের ঘৃণার্হ ক্রিয়া সকল তাহাদিগকে জ্ঞাত কর। কেননা তাহারা ব্যভিচার-কার্য্য করিয়াছে, ও তাহাদের হস্তে রক্ত আছে; তাহারা আপন পুত্তলিগণের সহিত ব্যভিচার করিয়াছে, এবং আমার জন্য প্রসূত আপন সন্তানগণকে উহাদের গ্রাসার্থে [অগ্নির মধ্য দিয়া] গমন করাইয়াছে। তাহারা আমার প্রতি আরও এই অপকার্য্য করিয়াছে, সেই দিন আমার ধর্ম্মধাম অশুচি করিয়াছে, এবং তাহারা আমার বিশ্রামদিন অপবিত্র করিয়াছে। কারণ যখন তাহারা আপনাদের পুত্তলিগণের উদ্দেশে আপন আপন বালকগণকে হনন করিত, তখন সেই দিন আমার ধর্ম্মধামে আসিয়া তাহা অপবিত্র করিত; আর দেখ, আমার গৃহমধ্যে তাহারা এই প্রকার করিয়াছে। অধিকন্তু তোমরা দূরস্থ পুরুষদিগকে আনিবার জন্য দূত প্রেরণ করিয়াছ; দূর প্রেরিত হইলে, দেখ, তাহারা আসিল; তুমি তাহাদের নিমিত্ত স্নান করিলে, চক্ষুতে অঞ্জন দিলে, ও অলঙ্কারে আপনাকে বিভূষিত করিলে; পরে রাজকীয় শয্যায় বসিয়া তৎসম্মুখে মেজ সাজাইয়া তাহার উপরে আমার ধূপ ও আমার তৈল রাখিলে। আর তাহার সহিত নিশ্চিন্ত লোকারণ্যের কলরব হইল, এবং সাধারণ লোকদের সহিত প্রান্তর হইতে মদ্যপায়ীরা আনীত হইল, তাহারা ঐ দুই রমণীর হস্তে কঙ্কণ ও মস্তকে চারু মুকুট দিল। তখন ব্যভিচার-ক্রিয়াতে যে জীর্ণা, সেই স্ত্রীর বিষয়ে আমি কহিলাম, এখন তাহারা ইহার সহিত, এবং এ তাহাদের সহিত, ব্যভিচার কার্য্য করিবে। আর পুরুষেরা যেমন বেশ্যার কাছে গমন করে, তেমনি তাহারা উহার কাছে গমন করিত; এইরূপে তাহারা অহলার ও অহলীবার, সেই দুই কুকর্ম্মকারিণী রমণীর কাছে গমন করিত। আর ধার্ম্মিক ব্যক্তিরাই ব্যভিচারিণী ও রক্তপাতকারিণীদের বিচারানুসারে তাহাদের বিচার করিবে; কেননা তাহারা ব্যভিচারিণী, ও তাহাদের হস্তে রক্ত আছে। বস্তুতঃ প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি তাহাদের বিরুদ্ধে জনসমাজ আনিব, এবং তাহাদিগকে ভাসিয়া বেড়াইতে ও লুটদ্রব্য হইতে দিব। সেই সমাজ তাহাদিগকে প্রস্তরাঘাত করিবে, ও আপনাদের খড়্‌গে খণ্ড খণ্ড করিবে; তাহারা তাহাদের পুত্রকন্যাদিগকে বধ করিবে, এবং তাহাদের গৃহ আগুনে পোড়াইয়া দিবে। এই প্রকারে আমি দেশ হইতে কুকর্ম্ম নিবৃত্ত করিব, তাহাতে সমুদয় স্ত্রীলোক শিক্ষা পাইবে, তোমাদের কুকর্ম্মের ন্যায় আচরণ করিবে না। আর লোকেরা তোমাদের কুকর্ম্মের বোঝা তোমাদের উপরে রাখিবে, এবং তোমরা আপনাদের পুত্তলিগণ-সম্বন্ধীয় পাপ সকল বহন করিবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু। আর নবম বৎসরের দশম মাসে, মাসের দশম দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি এই দিনের, অদ্যকার এই দিনের নাম লিখিয়া রাখ, অদ্যকার এই দিনে বাবিল-রাজ যিরূশালেমের কাছে আসিল। তুমি সেই বিদ্রোহী-কুলের উদ্দেশে এক দৃষ্টান্তকথা বল, তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি চড়াও, হাঁড়ি চড়াও, তাহার মধ্যে জলও দেও। তাহার মাংসখণ্ড সকল, প্রত্যেক উত্তম খণ্ড, ঊরু ও স্কন্ধ তাহার মধ্যে একত্র কর; উৎকৃষ্ট অস্থিসমূহে তাহা পূর্ণ কর। পালের মধ্যে যে মেষ উৎকৃষ্ট তাহা গ্রহণ কর, এবং হাঁড়ীর নীচে অস্থি সাজাও, তাহা সুসিদ্ধ কর, এবং তাহার মধ্যে অস্থি সকলও পাক হউক। অতএব প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ধিক্‌ সেই রক্তপূর্ণা পুরীকে, সেই হাঁড়ীকে, যাহার মধ্যে কলঙ্ক আছে, ও যাহার কলঙ্ক তাহার মধ্য হইতে বাহির হয় নাই! তুমি খণ্ড খণ্ড করিয়া তাহার সমুদয় বাহির কর, তাহার বিষয়ে গুলিবাঁট করা হয় নাই। কেননা তাহার রক্ত তাহার মধ্যে আছে; সে শুষ্ক পাষাণের উপরে তাহা রাখিয়াছে, ধূলি দ্বারা আচ্ছাদিত করিবার জন্য মৃত্তিকার উপরে তাহা ঢালে নাই। ক্রোধ উৎপাদন করিবার জন্য, প্রতিশোধ লইবার জন্য, আমি তাহার রক্ত শুষ্ক পাষাণের উপরে রাখিয়াছি, যেন আচ্ছাদিত না হয়। অতএব প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ধিক্‌ সেই রক্তপূর্ণা পুরীকে! আমিও বিশাল রাশি সাজাইব। বিস্তর কাষ্ঠ দেও, অগ্নি প্রজ্বলিত কর, মাংস সুসিদ্ধ কর, সুরস ঝোল কর, অস্থি সকল দগ্ধ হউক। পরে হাঁড়ী শূন্য হইলে তাহার অঙ্গারের উপরে তাহা স্থাপন কর, যেন তাহা তপ্ত হইলে তাহার পিত্তল দগ্ধ হয়, এবং তাহার মধ্যে তাহার অশৌচ গলিয়া যায়, ও তাহার কলঙ্ক নিঃশেষিত হয়। সে পরিশ্রমে ক্লান্ত হইয়াছে, তথাপি তাহার বিষম কলঙ্ক তাহার মধ্য হইতে নির্গত হয় না, তাহার কলঙ্ক অগ্নিসাৎ হউক। তোমার অশৌচে কুকর্ম্ম আছে; আমি তোমাকে শুচি করিলেও তুমি শুচি হইলে না, এই জন্য তুমি আপন অশৌচ হইতে আর শুচীকৃত হইবে না, যাবৎ আমি তোমাতে নিজ ক্রোধ চরিতার্থ করিয়া শান্ত না হইব। আমি সদাপ্রভু ইহা কহিলাম; ইহা সফল হইবে, আমি ইহা সাধন করিব, ক্ষান্ত হইব না, দয়া করিব না, অনুশোচনাও করিব না; তোমার যেরূপ আচরণ ও তোমার যেরূপ ক্রিয়া, সেইরূপ বিচার করা যাইবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আরও সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, দেখ, আমি আঘাত দ্বারা তোমার নয়নের প্রীতিপাত্রকে তোমা হইতে হরণ করিব; তথাপি তুমি বিলাপ কি রোদন করিবে না, এবং তোমার অশ্রুপাতও হইবে না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়, নীরব হও, মৃতের জন্য বিলাপ করিও না; তুমি মস্তকে শিরোভূষণ বাঁধ, ও পায়ে পাদুকা দেও; তুমি ওষ্ঠাধর আচ্ছাদন করিও না, ও লোকদের [প্রেরিত] রুটী খাইও না। তখন আমি প্রাতঃকালে লোকদের সঙ্গে কথা কহিলাম; পরে সন্ধ্যাকালে আমার স্ত্রী মরিল; এবং প্রাতঃকালে আমি প্রাপ্ত আদেশানুযায়ী কর্ম্ম করিলাম। আর লোকেরা আমাকে কহিল, এ সকলের সহিত আমাদের সম্বন্ধ কি যে, তুমি এরূপ করিতেছ? তাহা কি আমাদিগকে জানাইবে না? তখন আমি তাহাদিগকে কহিলাম, সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি ইস্রায়েল-কুলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমার যে ধর্ম্মধাম তোমাদের বলের গর্ব্ব, তোমাদের নয়নের প্রীতিপাত্র ও তোমাদের প্রাণের মমতার বস্তু, তাহাই আমি অপবিত্র করিব, এবং তোমাদের যে পুত্রকন্যাগণকে ত্যাগ করিয়াছ, তাহারা খড়্‌গে পতিত হইবে। তখন তোমরা আমার এই কর্ম্মের মত কর্ম্ম করিবে, ওষ্ঠাধর আচ্ছাদন করিবে না, ও লোকদের [প্রেরিত] রুটী খাইবে না। তোমরা মস্তকে শিরোভূষণ ও চরণে পাদুকা দিবে, বিলাপ কি রোদন করিবে না, কিন্তু আপন আপন অপরাধে ক্ষীণ হইয়া যাইবে, এবং এক জন অন্য জনের কাছে কোঁকাইবে। এইরূপে যিহিষ্কেল তোমাদের জন্য চিহ্নস্বরূপ হইবে; সে যাহা যাহা করিল, তোমরা সেই সমস্তই করিবে; ইহা যখন ঘটিবে, তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু। আর, হে মনুষ্য-সন্তান, যে দিন আমি তাহাদের বল, তাহাদের শোভার আমোদ, তাহাদের নয়নের প্রীতিপাত্র ও প্রাণের অভিলষিত বস্তু, তাহাদের পুত্রকন্যাগণকে, তাহাদের হইতে হরণ করিব, সেই দিন কি তাহা তোমার কর্ণগোচর করিবার নিমিত্ত পলাতক ব্যক্তি তোমার নিকটে আসিবে না? সেই দিন পলাতকের কাছে তোমার মুখ খোলা যাইবে, তাহাতে তুমি কথা কহিবে, আর বোবা থাকিবে না; এইরূপে তুমি তাহাদের জন্য চিহ্নস্বরূপ হইবে; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি অম্মোন-সন্তানদের দিকে মুখ রাখ, ও তাহাদের বিরুদ্ধে ভাববাণী বল। তুমি অম্মোন-সন্তানদিগকে বল, তোমরা প্রভু সদাপ্রভুর বাক্য শুন। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি আমার ধর্ম্মধাম অপবিত্রীকৃত দেখিয়া তাহার বিষয়ে, ইস্রায়েল-ভূমি ধ্বংসিত দেখিয়া তাহার বিষয়ে, এবং যিহূদা-কুল বন্দি হইয়া যাত্রা করিয়াছে দেখিয়া তাহার বিষয়ে, বলিয়াছ, ‘বাহবা, বাহবা’; এই জন্য দেখ, আমি তোমাকে অধিকাররূপে পূর্ব্বদেশের লোকদের হস্তে সমর্পণ করিব, তাহারা তোমার মধ্যে আপন আপন শিবির স্থাপন করিবে, ও তোমার মধ্যে আপন আপন তাম্বু ফেলিবে; তাহারাই তোমার ফল ভক্ষণ করিবে, ও তোমার দুগ্ধ পান করিবে। আর আমি রব্বাকে উষ্ট্রের বাথান ও অম্মোন-সন্তানদের [দেশকে] মেষাদি পালের শয়ন-স্থান করিব; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। কেননা প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি ইস্রায়েল-দেশের বিরুদ্ধে হাততালি দিয়াছ, পদাঘাত করিয়াছ ও প্রাণের সহিত সম্পূর্ণ অবজ্ঞাভাবে আনন্দ করিয়াছ। এই জন্য দেখ, আমি তোমার বিরুদ্ধে নিজ হস্ত বিস্তার করিয়াছি, জাতিগণের লুটদ্রব্যরূপে তোমাকে সমর্পণ করিব, জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাকে কাটিয়া ফেলিব, দেশসমূহের মধ্য হইতে তোমাকে উচ্ছিন্ন করিব; আমি তোমাকে লুপ্ত করিব, তাহাতে তুমি জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, মোয়াব ও সেয়ীর কহিতেছে, দেখ, যিহূদা-কুল, অন্য সকল জাতির তুল্য। এই জন্য দেখ, আমি মোয়াবের স্কন্ধ নগরসমূহের দিকে খুলিয়া দিব, অর্থাৎ চতুর্দ্দিক্‌স্থ তাহার সকল নগরে, বিশেষতঃ দেশের ভূষণ বৈৎ-যিশীমোতে, বাল্‌মিয়োনে ও কিরিয়াথয়িমে, অম্মোন-সন্তানদের বিরুদ্ধে পূর্ব্বদেশের লোকদের জন্য পথ প্রস্তুত করিয়া দেশ অধিকারার্থে দিব, এইরূপে জাতিগণের মধ্যে অম্মোন-সন্তানেরা আর স্মৃতিপথে আসিবে না। আর আমি মোয়াবকে বিচারসিদ্ধ দণ্ড দিব, তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইদোম প্রতিশোধ লইবার ভাবে যিহূদা-কুলের প্রতি কর্ম্ম করিয়াছে, ও নিতান্ত দণ্ডণীয় হইয়াছে, তাহাদের প্রতিশোধ লইয়াছে; এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি ইদোমের উপরে আপন হস্ত বিস্তার করিব, তাহার মধ্য হইতে মনুষ্য ও পশু উচ্ছিন্ন করিব, আমি তৈমন অবধি তাহার দেশ উৎসন্ন স্থান করিব, ও দদান পর্য্যন্ত তাহার লোক খড়্‌গে পতিত হইবে। আর ইদোমের উপরে আমার প্রতিশোধ লইবার ভার আমার প্রজা ইস্রায়েলের হস্তে সমর্পণ করিব, তাহাতে আমার যেরূপ ক্রোধ ও যেরূপ কোপ, তাহারা ইদোমের প্রতি তদনুরূপ ব্যবহার করিবে, তখন উহারা আমার প্রতিশোধ-গ্রহণ জ্ঞাত হইবে; ইহা সদাপ্রভু বলেন। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, পলেষ্টীয়েরা প্রতিশোধ লইবার ভাবে কর্ম্ম করিয়াছে, হাঁ, চিরশত্রুতা প্রযুক্ত বিনাশ করণার্থে প্রাণের অবজ্ঞার সহিত প্রতিশোধ লইয়াছে; এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি পলেষ্টীয়দের উপরে আপন হস্ত বিস্তার করিব, করেথীয়দিগকে কর্ত্তন করিব, এবং সমুদ্রের উপকূলের অবশিষ্ট সকলকে বিনষ্ট করিব। আর আমি কোপজনিত বিবিধ ভর্ৎসনা দ্বারা তাহাদের ভারী প্রতিশোধ লইব; আমি যখন তাহাদের প্রতিশোধ লইব, তখন তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর একাদশ বৎসরে, মাসের প্রথম দিবসে, সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, যিরূশালেমের বিষয়ে সোর বলিয়াছে, ‘বাহবা, জাতিগণের পুরদ্বার ভগ্ন হইল; সে আমার দিকে ফিরিয়াছে; আমি পূর্ণা হইব, সে ত উচ্ছিন্ন হইয়াছে;’ এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে সোর, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; সমুদ্র যেমন তরঙ্গ উঠায়, তেমনি তোমার বিপক্ষে আমি অনেক জাতিকে উঠাইব। তাহারা সোরের প্রাচীর বিনষ্ট করিবে, তাহার উচ্চগৃহ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবে; এবং আমি সেই নগরের ধূলি তাহা হইতে চাঁচিয়া ফেলিব, ও তাহাতে শুষ্ক পাষাণ করিব। সে সমুদ্রের মধ্যে জাল বিস্তার করিবার স্থান হইবে, কেননা আমিই ইহা কহিলাম, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; আর সে জাতিগণের লুটদ্রব্য হইবে। আর জনপদে তাহার যে কন্যাগণ আছে, তাহারা খড়্‌গে নিহত হইবে; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। কারণ প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি উত্তরদিক্‌ হইতে অশ্ব, রথ ও অশ্বারোহিগণের এবং জনসমাজের ও অনেক সৈন্যের সহিত রাজাধিরাজ বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসরকে আনাইয়া সোরে উপস্থিত করিব। সে জনপদে অবস্থিতা তোমার কন্যাদিগকে খড়্‌গাঘাতে বধ করিবে, তোমার বিরুদ্ধে গড় গাঁথিবে, তোমার বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধিবে, ও তোমার বিরুদ্ধে ঢাল উত্তোলন করিবে। আর সে তোমার প্রাচীরে দুর্গভেদক যন্ত্র স্থাপন করিবে, ও আপন তীক্ষ্ণ অস্ত্র দ্বারা তোমার উচ্চগৃহ সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিবে। তাহার অশ্বগণের বাহুল্য প্রযুক্ত তাহাদের ধূলি তোমাকে আচ্ছাদন করিবে; সে যখন ভগ্নপ্রাচীর নগরে প্রবেশের ন্যায় তোমার দ্বার সকলের ভিতরে যাইবে, তখন অশ্বারোহীদের, চক্রের ও রথের শব্দে তোমার প্রাচীর কাঁপিবে। সে আপন অশ্বগণের খুরে তোমার সমস্ত পথ দলিত করিবে, খড়্‌গ দ্বারা তোমার প্রজাদিগকে বধ করিবে, ও তোমার পরাক্রমসূচক স্তম্ভ সকল ভূমিসাৎ হইবে। উহারা তোমার সম্পত্তি লুট করিবে, তোমার বাণিজ্যদ্রব্য হরণ করিবে, তোমার প্রাচীর ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, ও তোমার মনোরম্য গৃহ সকল ধ্বংস করিবে; এবং তাহারা তোমার প্রস্তর, কাষ্ঠ ও ধূলি জলমধ্যে নিক্ষেপ করিবে। আর আমি তোমার গানের শব্দ নিবৃত্ত করিব; এবং তোমার বীণাধ্বনি আর শুনা যাইবে না। আর আমি তোমাকে শুষ্ক পাষাণ করিব; তুমি জাল বিস্তার করিবার স্থান হইবে; তুমি আর নির্ম্মিত হইবে না; কেননা আমি সদাপ্রভু ইহা কহিলাম, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। প্রভু সদাপ্রভু সোরকে এই কথা কহেন, তোমার পতনের শব্দে, তোমার মধ্যে আহত লোকদের কোঁকানিতে ও ভয়ানক নরহত্যায় উপকূল সকল কি কাঁপিবে না? তখন সমুদ্রের অধ্যক্ষগণ সকলে আপন আপন সিংহাসন হইতে নামিবে, আপন আপন পরিচ্ছদ ত্যাগ করিবে, শিল্পকর্ম্মের বস্ত্র সকল খুলিয়া ফেলিবে; তাহারা ত্রাস পরিধান করিবে; তাহারা ভূমিতে বসিবে, অনুক্ষণ ত্রাসযুক্ত থাকিবে ও তোমার বিষয়ে বিস্ময়াপন্ন হইবে। আর তাহারা তোমার বিষয়ে বিলাপ করিয়া তোমাকে বলিবে, হে সমুদ্রোৎপন্ন স্থাননিবাসিনি, তুমি কিরূপ বিনষ্ট হইলে! সেই বিখ্যাতা পুরী স্বনিবাসীদের সহিত সমুদ্রে পরাক্রান্তা ছিল, তাহারা তাহার সমস্ত অধিবাসীর উপর তাহাদের ভয়ানকতা অর্পণ করিত। এখন তোমার পতনের দিনে উপকূল সকল কাঁপিতেছে, তোমার শেষগতিতে সমুদ্রস্থিত দ্বীপ সকল বিহ্বল হইতেছে। কেননা প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যখন আমি নিবাসীহীন নগর সকলের ন্যায় তোমাকে উচ্ছিন্ন নগর করিব, যখন আমি তোমার উপরে জলধি উঠাইব ও মহৎ জলরাশি তোমাকে আচ্ছাদন করিবে, তখন আমি তোমাকে পাতালগামীদের সঙ্গে প্রাক্কালীন লোকদের নিকটে নামাইব, এবং অধোভুবনে, চিরোৎসন্ন স্থানে, পাতালগামী সকলের সঙ্গে বাস করাইব, তাহাতে তুমি আর বসতিস্থান হইবে না; কিন্তু জীবিতদিগের দেশে আমি শোভা স্থাপন করিব । আমি তোমাকে ত্রাসস্বরূপ করিব, তুমি আর হইবে না; লোকেরা তোমার অন্বেষণ করিলেও আর কখনও তোমাকে পাইবে না, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আবার সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি সোরের বিষয়ে বিলাপ কর। সোরকে বল, হে সমুদ্রের প্রবেশস্থান-নিবাসিনি, অনেক উপকূলে জাতিগণের বণিক্‌, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে সোর, তুমি বলিতেছ, আমি পরমসুন্দরী। সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে তোমার স্থান আছে; তোমার নির্ম্মাণকারীরা তোমার সৌন্দর্য্য সিদ্ধ করিয়াছে। তাহারা সনীরীয় দেবদারু কাষ্ঠে তোমার সমস্ত তক্তা প্রস্তুত করিয়াছে, তোমার জন্য মাস্তুল প্রস্তুত করণার্থে লিবানোন হইতে এরস বৃক্ষ গ্রহণ করিয়াছে। তাহারা বাশন দেশীয় অল্লোন বৃক্ষ হইতে তোমার দাঁড় প্রস্তুত করিয়াছে; কিত্তীয় উপকূলসমূহ হইতে আনীত তাশূর কাষ্ঠে খচিত হস্তিদন্ত দ্বারা তোমার তক্তা নির্ম্মাণ করিয়াছে। তোমার পতাকা হইবার জন্য মিসর দেশ হইতে আনীত সূচী-কর্ম্মে চিত্রিত মসীনা-বস্ত্র তোমার পাইল ছিল; ইলীশার উপকূলসমূহ হইতে আনীত নীল ও বেগুনে বস্ত্র তোমার আচ্ছাদন ছিল। সীদোন ও অর্বদ-নিবাসিগণ তোমার দাঁড়ী ছিল; হে সোর, তোমার জ্ঞানবানেরা তোমার মধ্যে তোমার কর্ণধার ছিল। গবালের প্রাচীনবর্গ ও জ্ঞানবানেরা তোমার মধ্যে তোমার ছিদ্র-প্রতীকারক ছিল। সমুদ্রগামী সমুদয় জাহাজ ও তাহাদের নাবিকগণ তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিবার জন্য তোমার মধ্যে ছিল। পারস, লূদ ও পূট দেশীয়েরা তোমার সৈন্যসামন্তের মধ্যে তোমার যোদ্ধা ছিল; তাহারা তোমার মধ্যে ঢাল ও শিরস্ত্র টাঙ্গাইয়া রাখিত; তাহারাই তোমার শোভা সম্পাদন করিয়াছে। অর্বদের লোক তোমার সৈন্যসামন্তের সহিত চারিদিকে তোমার প্রাচীরের উপরে ছিল, যুদ্ধবীরেরা তোমার সকল উচ্চগৃহে ছিল; তাহারা চারিদিকে তোমার প্রাচীরে আপন আপন ঢাল টাঙ্গাইত; তাহারাই তোমার সৌন্দর্য্য সিদ্ধ করিয়াছে। সর্ব্বপ্রকার ধনের প্রাচুর্য্য প্রযুক্ত তর্শীশ তোমার বণিক্‌ ছিল; তাহারা রৌপ্য, লৌহ, দস্তা ও সীসা দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। যবন, তূবল ও মেশক তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তাহারা মনুষ্যের প্রাণ ও তৈজস পাত্র দিয়া তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিত। তোগর্মকুলের লোকেরা ঘোটক, যুদ্ধাশ্ব ও অশ্বতর আনিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। দদান-সন্তানেরা তোমার ব্যবসায়ী ছিল, অনেক উপকূল তোমার করায়ত্ত হট্ট ছিল; তাহারা হস্তিদন্তের শৃঙ্গ ও আব্‌লুস কাষ্ঠ তোমার মূল্যরূপে আনিত। তোমার নির্ম্মিত দ্রব্যের বাহুল্য প্রযুক্ত অরাম তোমার বণিক্‌ ছিল; তথাকার লোকেরা তাম্রমণি, বেগুনে ও বুটাদার বস্ত্র, মসীনা-বস্ত্র এবং প্রবাল ও পদ্মরাগমণি দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। যিহূদা এবং ইস্রায়েল-দেশ তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তথাকার লোকেরা মিন্নীতের গোধূম, পক্বান্ন, মধু, তৈল ও তরুসার দিয়া তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিত। সর্ব্বপ্রকার ধনবাহুল্য হেতু তোমার নির্ম্মিত দ্রব্যের প্রাচুর্য্য প্রযুক্ত দম্মেশক তোমার বণিক্‌ ছিল, তথাকার লোকেরা হিল্‌বোনের দ্রাক্ষারস ও শুভ্র মেষলোম আনিত। বদান ও যবন উষল হইতে আসিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত; তোমার বিনিমেয় দ্রব্যের মধ্যে কান্তলৌহ, কাশ ও দারুচিনি থাকিত। দদান রথে বিস্তরণীয় দুলিচা সম্বন্ধে তোমার ব্যবসায়ী ছিল। আরব, এবং কেদরের অধ্যক্ষেরা সকলে তোমার করায়ত্ত বণিক্‌ ছিল, মেষশাবক, মেষ ও ছাগ, এই সকল বিষয়ে তাহারা তোমার বণিক্‌ ছিল। শিবার ও রয়মার ব্যবসায়ীরাও তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তাহারা সর্ব্বপ্রকার শ্রেষ্ঠ গন্ধদ্রব্য ও সর্ব্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর এবং স্বর্ণ দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। হারণ, কন্নী, এদন, শিবার এই ব্যবসায়ীরা, এবং অশূর ও কিল্‌মদ তোমার ব্যবসায়ী ছিল। ইহারা তোমার ব্যবসায়ী ছিল; ইহারা অপূর্ব্ব বস্ত্র এবং নীলবর্ণ ও বুটাদার প্রবারণ ও শিল্পিত বস্ত্র, রজ্জুবদ্ধ এরস কাষ্ঠময় সিন্দুকে করিয়া, তোমার বিক্রয়স্থানে আনয়ন করিত। তর্শীশের জাহাজ সকল দ্রব্য-বিনিময়ে তোমার কাফিলা ছিল; এইরূপে তুমি পরিপূর্ণা ছিলে, সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে অতিশয় প্রতাপান্বিতা ছিলে। তোমার দাঁড়ীরা তোমাকে প্রশস্ত জলে লইয়া গিয়াছে; পূর্ব্বীয় বায়ু সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে তোমাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে। তোমার ধন, তোমার পণ্যদ্রব্যসমূহ, তোমার বিনিমেয় দ্রব্য সকল, তোমার নাবিকগণ, তোমার কর্ণধারেরা, তোমার ছিদ্র-প্রতীকারকগণ ও দ্রব্য বিনিময়কারীরা, এবং তোমার মধ্যবর্ত্তী সমস্ত যোদ্ধা তোমার মধ্যস্থিত জনসমাজের সঙ্গে তোমার পতনের দিনে সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে পতিত হইবে। তোমার কর্ণধারদের ক্রন্দনের শব্দে উপনগর সকল কম্পিত হইবে। আর সমুদয় দাঁড়ী, নাবিকগণ, সমুদ্রগামী সমস্ত কর্ণধার আপন আপন জাহাজ হইতে নামিয়া স্থলে দাঁড়াইবে, তোমার জন্য উচ্চৈঃস্বর করিবে, তীব্র ক্রন্দন করিবে, আপন আপন মস্তকে ধূলা দিবে ও ভস্মে লুণ্ঠন করিবে। আর তাহারা তোমার জন্য মস্তক মুণ্ডন করিবে, ও কটিদেশে চট বাঁধিবে, এবং তোমার জন্য প্রাণের দুঃখে রোদন সহকারে তীব্র বিলাপ করিবে। আর তাহারা শোক করিয়া তোমার জন্য বিলাপ করিবে, তোমার বিষয়ে এই বলিয়া বিলাপ করিবে, ‘কে সোরের তুল্য, সমুদ্রের মধ্যস্থানে নিস্তব্ধীকৃতার তুল্য? যখন সমুদ্র সকল হইতে তোমার পণ্য দ্রব্য নানা স্থানে যাইত, তখন তুমি বহুসংখ্য জাতিকে তৃপ্ত করিতে; তোমার ধনের ও বিনিমেয় দ্রব্যের বাহুল্যে তুমি পৃথিবীর রাজগণকে ধনী করিতে। এখন তুমি সমুদ্র দ্বারা গভীর জলে ভগ্ন হইলে তোমার বিনিমেয় দ্রব্য ও তোমার সমস্ত সমাজ তোমার মধ্যে পতিত হইল। উপকূল-নিবাসিগণ সকলে তোমার অবস্থায় বিস্ময়াপন্ন হইয়াছে, ও তাহাদের রাজগণ নিতান্ত উদ্বিগ্ন হইয়াছে, বিকৃতবদন হইয়াছে। জাতিগণের মধ্যবর্ত্তী বণিক্‌গণ তোমার বিষয়ে শিশ দেয়; তুমি ত্রাসস্বরূপ হইলে, এবং তুমি কোন কালে আর হইবে না।’ আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি সোরের অধ্যক্ষকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমার চিত্ত গর্ব্বিত হইয়াছে, তুমি বলিয়াছ, আমি দেবতা, আমি সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে ঈশ্বরের আসনে বসিয়া আছি; কিন্তু তুমি ত মনুষ্যমাত্র, দেবতা নহ, তথাপি আপন চিত্তকে ঈশ্বরের চিত্তের তুল্য বলিয়া মানিয়াছি। দেখ, তুমি দানিয়েল অপেক্ষাও জ্ঞানী, কোন নিগূঢ় কথা তোমার কাছে তিমিরাবৃত নয়; তোমার জ্ঞানে ও তোমার বুদ্ধিতে তুমি আপনার জন্য ঐশ্বর্য্য উপার্জ্জন করিয়াছ, আপন কোষে স্বর্ণ ও রৌপ্য সঞ্চয় করিয়াছ; তোমার জ্ঞানের মহত্ত্বে বাণিজ্য দ্বারা আপনার ঐশ্বর্য্য বর্দ্ধিত করিয়াছ, তাই তোমার ঐশ্বর্য্যে তোমার চিত্ত গর্ব্বিত হইয়াছে; এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি আপনার চিত্তকে ঈশ্বরের চিত্তের তুল্য বলিয়া মানিয়াছ; এই জন্য দেখ, আমি তোমার বিরুদ্ধে বিদেশীদিগকে আনিব, জাতিগণের মধ্যে তাহারা ভীমবিক্রান্ত, তাহারা তোমার জ্ঞানকান্তির বিরুদ্ধে আপন আপন খড়্‌গ নিষ্কোষ করিবে, ও তোমার দীপ্তি অপবিত্র করিবে। তাহারা তোমাকে কূপে নামাইবে; তুমি সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে, নিহত লোকদের ন্যায় মরিবে। তোমার বধকারীর সাক্ষাতে তুমি কি বলিবে, ‘আমি ঈশ্বর’? কিন্তু যে তোমাকে বিদ্ধ করিবে, তাহার হস্তে ত তুমি মনুষ্যমাত্র, দেবতা নহ। তুমি বিদেশীদের হস্ত দ্বারা অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদের ন্যায় মরিবে, কেননা আমি ইহা কহিলাম, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি সোরের রাজার জন্য বিলাপ কর, ও তাহাকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি পরিমাণের মুদ্রাঙ্ক, তুমি পূর্ণজ্ঞান, তুমি সৌন্দর্য্যে সিদ্ধ; তুমি ঈশ্বরের উদ্যান এদনে ছিলে; সর্ব্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর, চূণি, পীতমণি, হীরক, বৈদূর্য্যমণি, গোমেদক, সূর্য্যকান্ত, নীলকান্ত, হরিণ্মণি ও মরকত, এবং স্বর্ণ তোমার আচ্ছাদন ছিল, তোমার ঢাকের ও বাঁশীর কারুকার্য্য তোমার মধ্যে ছিল; তোমার সৃষ্টিদিনে এ সকল প্রস্তুত হইয়াছিল। তুমি অভিষিক্ত আচ্ছাদক করূব ছিলে, আমি তোমাকে স্থাপন করিয়াছিলাম, তুমি ঈশ্বরের পবিত্র পর্ব্বতে ছিলে; তুমি অগ্নিময় প্রস্তর সকলের মধ্যে গমনাগমন করিতে। তোমার সৃষ্টি দিন অবধি তুমি আপন আচারে সিদ্ধ ছিলে; শেষে তোমার মধ্যে অন্যায় পাওয়া গেল। তোমার বাণিজ্যবাহুল্যে তোমার অভ্যন্তর দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ হইল, তুমি পাপ করিলে, তাই আমি তোমাকে ঈশ্বরের পর্ব্বত হইতে ভ্রষ্ট করিলাম, এবং হে আচ্ছাদক করূব, তোমাকে অগ্নিময় প্রস্তর সকলের মধ্য হইতে লুপ্ত করিলাম। তোমার চিত্ত তোমার সৌন্দর্য্যে গর্ব্বিত হইয়াছিল; তুমি নিজ দীপ্তি হেতু আপন জ্ঞান নষ্ট করিয়াছ; আমি তোমাকে ভূমিতে নিক্ষেপ করিলাম, রাজগণের সম্মুখে রাখিলাম, যেন তাহারা তোমাকে দেখিতে পায়। তোমার অপরাধের বাহুল্যে তুমি নিজ বাণিজ্যবিষয়ক অন্যায় দ্বারা আপনার পবিত্র স্থান সকল অপবিত্র করিয়াছ; এই জন্য আমি তোমার মধ্য হইতে অগ্নি বাহির করিলাম, সে তোমাকে গ্রাস করিল; এবং আমি তোমাকে দর্শনকারী সকলের সাক্ষাতে ভস্ম করিয়া ভূমিতে ফেলিয়া দিলাম। জাতিগণের মধ্যে যত লোক তোমাকে জানে, তাহারা সকলে তোমার বিষয়ে বিস্ময়াপন্ন হইল; তুমি ত্রাসস্বরূপ হইলে, এবং তুমি কোন কালে আর হইবে না। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি সীদোনের দিকে মুখ রাখ, ও তাহার বিরুদ্ধে ভাববাণী বল; তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে সীদোন, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; আমি তোমার মধ্যে মহিমান্বিত হইব; তাহাতে লোকেরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, কেননা আমি সেই নগরকে বিচারসিদ্ধ দণ্ড দিব, ও তাহার মধ্যে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব। আমি তাহার মধ্যে মহামারী ও তাহার চকে চকে রক্ত প্রেরণ করিব, এবং আহত লোকেরা তাহার মধ্যে পতিত হইবে, কারণ খড়্‌গ চারি দিকে তাহার বিরুদ্ধ হইবে, তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তখন ইস্রায়েল-কুলের জ্বালাজনক কোন হুল কিম্বা ব্যথাজনক কোন কন্টক তাহাদের অবজ্ঞাকারী চতুর্দ্দিক্‌স্থ কোন লোকের মধ্যে আর উৎপন্ন হইবে না; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে জাতিগণের মধ্যে ইস্রায়েল-কুল ছিন্নভিন্ন হইয়াছে, তাহাদের মধ্য হইতে যখন আমি তাহাদিগকে সংগ্রহ করিব, এবং জাতিগণের সাক্ষাতে তাহাদিগেতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব, তখন আমি আমার দাস যাকোবকে যে ভূমি দিয়াছি, তাহারা আপনাদের সেই ভূমিতে বাস করিবে। তাহারা নির্ভয়ে তথায় বাস করিবে; হাঁ, তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিবে, ও দ্রাক্ষার উদ্যান করিবে, এবং নির্ভয়ে বাস করিবে; কেননা তখন আমি তাহাদের অবজ্ঞাকারী চতুর্দ্দিকস্থ সকল লোককে বিচারসিদ্ধ দণ্ড দিব; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। দশম বৎসরের দশম মাসে, মাসের দ্বাদশ দিনে, সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল; হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি মিসর-রাজ ফরৌণের বিরুদ্ধে মুখ রাখ, এবং তাহার বিরুদ্ধে ও সমস্ত মিসরের বিরুদ্ধে ভাববাণী বল। তুমি এই কথা বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে মিসর-রাজ ফরৌণ, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; তুমি সেই প্রকাণ্ড কুম্ভীর, যে আপন স্রোতঃসমূহের মধ্যে শয়ন করে, বলে, আমার নদী আমারই, আমিই আপনার জন্য ইহা উৎপন্ন করিয়াছি। কিন্তু আমি তোমার হনু ফুঁড়িব, তোমার স্রোতঃসমূহের মৎস্য সকল তোমার আঁইসে সংলগ্ন করিব, এবং তোমার স্রোতঃসমূহের মধ্য হইতে তোমাকে তুলিব; তোমার স্রোতঃসমূহের মৎস্য সকল তখনও তোমার আঁইসে লাগিয়া থাকিবে। আর আমি তোমার স্রোতঃসমূহের সমস্ত মৎস্যশুদ্ধ তোমাকে প্রান্তরে ফেলিয়া দিব; তুমি মাঠের পৃষ্ঠে পতিত থাকিবে, সংগৃহিত কি সঞ্চিত হইবে না; আমি তোমাকে ভূমির পশুদের ও আকাশের পক্ষীদের ভক্ষ্যরূপে দিলাম। তাহাতে মিসর-নিবাসী সকলে জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যেহেতু তাহারা ইস্রায়েল-কুলের পক্ষে নলের যষ্টি হইয়াছিল। যখন তাহারা তোমাকে হস্তে ধরিত, তখন তুমি ফাটিয়া তাহাদের সমস্ত স্কন্ধ বিদীর্ণ করিতে; এবং যখন তাহারা তোমার উপরে নির্ভর করিত, তখন তুমি ভাঙ্গিয়া যাইতে ও তাহাদের সমস্ত কটিদেশ অসাড় করিতে। সেই জন্য, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমার বিরুদ্ধে খড়্‌গ আনিব, ও তোমার মধ্য হইতে মনুষ্য ও পশু উচ্ছিন্ন করিব। মিসর দেশ ধ্বংস ও উৎসন্ন স্থান হইবে; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু; যেহেতু তুমি বলিতে, নদী আমার, আমিই তাহা উৎপন্ন করিয়াছি। এই জন্য দেখ, আমি তোমার ও তোমার স্রোতঃসমূহের বিপক্ষ; আমি মিগ্‌দোল অবধি সিবেনী পর্য্যন্ত, ও কূশ দেশের সীমা পর্য্যন্ত, মিসর দেশ নিতান্ত উৎসন্ন ও ধ্বংসস্থান করিব। মনুষ্যের চরণ তাহা দিয়া যাতায়াত করিবে না; ও পশুর চরণ তাহা দিয়া যাতায়াত করিবে না; এবং চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত তথায় বসতি হইবে না। আর আমি মিসর দেশকে ধ্বংসিত দেশসমূহের মধ্য ধ্বংসস্থান করিব, এবং উচ্ছিন্ন নগরসমূহের মধ্যে তাহার নগর সকল চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত ধ্বংসস্থান থাকিবে; আর আমি মিস্রীয়দিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন ও দেশবিদেশে বিকীর্ণ করিব। কেননা প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে সকল জাতির মধ্যে মিস্রীয়েরা ছিন্নভিন্ন হইবে, তাহাদের মধ্য হইতে আমি চল্লিশ বৎসরের শেষে তাহাদিগকে সংগ্রহ করিব। আর মিসরের বন্দি-দশা ফিরাইব, ও তাহাদের উৎপত্তিস্থান পথ্রোষ দেশে তাহাদিগকে প্রত্যাগমন করাইব, তথায় তাহারা খর্ব্ব এক রাজ্য হইবে। অন্যান্য রাজ্য অপেক্ষা তাহা খর্ব্ব হইবে, এবং আপনাকে আর জাতিগণের উপরে বড় করিয়া তুলিবে না; আমি তাহাদিগকে ন্যূন করিব, তাহারা আর জাতিগণের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না। মিসর আর ইস্রায়েল-কুলের বিশ্বাসভূমি হইবে না; ইহারা উহাদের দিকে ফিরিয়া গিয়াছে বলিয়া আর অপরাধ স্মরণ করাইবে না; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু। আর সপ্তবিংশ বৎসরের প্রথম মাসে, মাসের প্রথম দিবসে, সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসর আপন সৈন্যসামন্তকে সোরের বিরুদ্ধে ভারী পরিশ্রম করাইয়াছে; সকলের মস্তক টাকপড়া ও সকলের স্কন্ধ জীর্ণত্বক্‌ হইয়াছে; কিন্তু সোরের বিরুদ্ধে সে যে পরিশ্রম করিয়াছে, তাহার বেতন সে কিম্বা তাহার সৈন্য সোর হইতে পায় নাই। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরকে মিসর দেশ দিব; সে তাহার লোকারণ্য লইয়া যাইবে, তাহার দ্রব্য লুট করিবে, ও তাহার সম্পত্তি অপহরণ করিবে; তাহাই তাহার সৈন্যের বেতন হইবে। সে যে পরিশ্রম করিয়াছে, তাহার বেতন বলিয়া আমি মিসর দেশ তাহাকে দিলাম, কেননা তাহারা আমারই জন্য কার্য্য করিয়াছে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। সেই দিন আমি ইস্রায়েল-কুলের নিমিত্ত এক শৃঙ্গ প্ররোহণ করাইব, এবং তাহাদের মধ্যে তোমার মুখ খুলিয়া দিব; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আবার সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, ভাববাণী বল, তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা হাহাকার করিয়া বল, ‘হায়! সে কেমন দিন!’ কারণ সেই দিন নিকটবর্ত্তী, হাঁ, সদাপ্রভুর দিন, সেই মেঘাড়ম্বরের দিন নিকটবর্ত্তী; তাহা জাতিগণের কাল হইবে। মিসরে খড়্‌গ প্রবেশ করিবে, ও কূশে যাতনা হইবে; কেননা তখন মিসরে নিহত লোকেরা পতিত হইবে, তাহার লোকারণ্য নীত হইবে, ও তাহার ভিত্তিমূল সকল উৎপাটিত হইবে। কূশ, পূট ও লূদ এবং সমস্ত মিশ্রিত লোক, আর কূব ও মিত্রদেশীয় লোকেরা তাহাদের সহিত খড়্‌গে পতিত হইবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যাহারা মিসরের স্তম্ভস্বরূপ, তাহারাও পতিত হইবে, এবং তাহার পরাক্রমের গর্ব্ব খর্ব্ব হইবে; তথায় মিগ্‌দোল অবধি সিবেনী পর্য্যন্ত লোকেরা খড়্‌গে পতিত হইবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। তাহারা ধ্বংসিত দেশসমূহের মধ্যে ধ্বংস হইবে, এবং দেশের নগর সকল উচ্ছিন্ন নগরসমূহের মধ্যে থাকিবে। তখন তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যখন আমি মিসরে অগ্নি লাগাই, এবং তাহার সহকারীরা সকলে ভগ্ন হয়। সেই দিন নিশ্চিন্ত কূশকে উদ্বিগ্ন করণার্থে দূতগণ নৌকাযোগে আমার নিকট হইতে নির্গত হইবে, তাহাতে মিসরের দিনে যেমন হইয়াছিল, তেমনি তাহাদের মধ্যে যাতনা হইবে; বস্তুতঃ দেখ, তাহা আসিতেছে। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি বাবিল-রাজ নবূখদ্‌রিৎসরের হস্ত দ্বারা মিসরের লোকারণ্য শেষ করিব। সে এবং তাহার প্রজারা, জাতিগণের মধ্যে সেই ভীমবিক্রান্ত লোকেরা দেশের বিনাশার্থে আনীত হইবে, এবং মিসরের বিরুদ্ধে আপন আপন খড়্‌গ নিষ্কোষ করিবে, ও নিহতগণে দেশ পূর্ণ করিবে। আর আমি স্রোতঃসমূহকে শুষ্ক স্থান করিব, দেশকে দুর্বৃত্ত লোকদের হস্তে বিক্রয় করিব, ও বিদেশীদের হস্ত দ্বারা দেশ ও তথাকার সকলই ধ্বংস করিব; আমি সদাপ্রভু ইহা কহিলাম। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি পুত্তলি সকলও বিনষ্ট করিব, নোফ হইতে অবস্তু-প্রতিমা সকল শেষ করিব, মিসর দেশ হইতে কোন অধ্যক্ষ আর উৎপন্ন হইবে না, এবং আমি মিসর দেশে ভয় জন্মাইব। আর আমি পথ্রোষকে ধ্বংস করিব, সোয়নে আগুন লাগাইব, ও নো-নগরে বিচারসিদ্ধ দণ্ড দিব। আর মিসরের বলস্বরূপ সীনের উপরে আমার ক্রোধ ঢালিব, ও নো-নগরের লোকারণ্য উচ্ছিন্ন করিব। আমি মিসরে আগুন লাগাইব; যাতনাতে সীন ছট্‌ফট্‌ করিবে, নো-নগর ভগ্ন হইবে, এবং নোফে বিপক্ষ লোকেরা দিনমানে আসিবে। আবেন ও পী-বেশতের যুবকগণ খড়্‌গে পতিত হইবে, এবং সেই সকল পুরী বন্দি-দশা স্থানে গমন করিবে। আর তফন্‌হেষে দিবস অন্ধকার হইয়া যাইবে, কেননা তখন সেই স্থানে আমি মিসরের যোঁয়ালি সকল ভাঙ্গিয়া ফেলিব; তাহাতে তাহার মধ্যে তাহার পরাক্রমের ছটা শেষ হইবে; সে আপনি মেঘাচ্ছন্ন হইবে, ও তাহার কন্যাগণ বন্দি-দশা স্থানে যাইবে। এইরূপে আমি মিসরকে বিচারসিদ্ধ দণ্ড দিব, তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। একাদশ বৎসরের প্রথম মাসে, মাসের সপ্তম দিনে, সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, আমি মিসর-রাজ ফরৌণের বাহু ভাঙ্গিয়াছি, আর দেখ, প্রতিকারের নিমিত্ত, পটি দিয়া তাহা বাঁধিবার নিমিত্ত, খড়্‌গধারণের উপযুক্ত শক্তি দিবার নিমিত্ত, তাহা বাঁধা হয় নাই। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি মিসর-রাজ ফরৌণের বিপক্ষ, আমি তাহার বলবান ও ভগ্ন উভয় বাহু ভাঙ্গিয়া ফেলিব, এবং খড়্‌গকে তাহার হস্ত হইতে খসাইব। আর আমি মিস্রীয়দিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন ও নানাদেশে বিকীর্ণ করিব। আর আমি বাবিল-রাজের বাহু বলবান করিব, ও তাহারই হস্তে আমার খড়্‌গ দিব; কিন্তু ফরৌণের বাহু ভাঙ্গিয়া ফেলিব, তাহাতে সে উহার সাক্ষাতে আহত লোকের কাতরোক্তির মত কাতরোক্তি করিবে। আর আমি বাবিল-রাজের বাহু বলবান করিব, কিন্তু ফরৌণের বাহু ঝুলিয়া পড়িবে; তাহাতে লোকেরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যখন আমি বাবিল-রাজের হস্তে আমার খড়্‌গ দিব, এবং সে মিসর দেশের বিরুদ্ধে তাহা বিস্তার করিবে। আর আমি মিস্রীয়দিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন ও নানাদেশে বিকীর্ণ করিব; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। একাদশ বৎসরের তৃতীয় মাসে, মাসের প্রথম দিনে, সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, মিসর-রাজ ফরৌণকে ও তাহার লোকারণ্যকে বল, তুমি তোমার মহিমায় কাহার তুল্য? দেখ, অশূর লিবানোনস্থ এরস বৃক্ষস্বরূপ ছিল, তাহার সুন্দর ডাল, ঘন ছায়া ও উচ্চ দৈর্ঘ্য ছিল; তাহার শিখর মেঘমালার মধ্যবর্ত্তী ছিল। সে জলে বর্দ্ধিত ও জলধিতে উচ্চ হইয়াছিল; তাহার স্রোতঃসমূহ তাহার উদ্যানের চারিদিকে বহিত, এবং সে ক্ষেত্রস্থ বৃক্ষ সকলের কাছে আপন প্রণালী পাঠাইত। এই কারণ ক্ষেত্রের সমস্ত বৃক্ষ অপেক্ষা তাহার দৈর্ঘ্য উচ্চতম হইল, এবং সে ডাল পালা মেলিলে প্রচুর জলহেতু সেগুলি বৃদ্ধি পাইল ও তাহার শাখা দীর্ঘ হইল। তাহার ডালে আকাশের সকল পক্ষী বাসা করিত, এবং তাহার শাখার নীচে মাঠের সকল পশু প্রসব করিত, এবং তাহার ছায়াতে সকল মহাজাতি বাস করিত। সে আপন মহত্ত্বে, ডালের দীর্ঘতায়, মনোহর ছিল, কেননা তাহার মূল প্রচুর জলের পার্শ্বে ছিল। ঈশ্বরের উদ্যানে এরস বৃক্ষ সকল তাহাকে গোপন করিতে পারিত না, দেবদারু সকল ডালপালায় তাহার সমান ছিল না; এবং অর্ম্মোণ বৃক্ষ সকল তাহার ন্যায় শাখাবিশিষ্ট ছিল না; ঈশ্বরের উদ্যানে স্থিত কোন বৃক্ষ সৌন্দর্য্যে তাহার তুল্য ছিল না। আমি প্রচুর শাখা দিয়া তাহাকে সুন্দর করিয়াছিলাম, এদনে ঈশ্বরের উদ্যানস্থিত সমস্ত বৃক্ষ তাহার উপরে ঈর্ষা করিত। অতএব প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি দীর্ঘতায় উচ্চ হইলে; সেই বৃক্ষ মেঘমালার মধ্যে আপন শিখর স্থাপন করিল, ও উচ্চতায় তাহার অন্তঃকরণ গর্ব্বিত হইল; এই জন্য আমি তাহাকে জাতিগণের মধ্যে বলবানের হস্তে সমর্পণ করিব, সে তাহার সহিত উপযুক্ত ব্যবহার করিবে; আমি তাহার দুষ্টতা প্রযুক্ত তাহাকে দূর করিলাম। তাহাতে বিদেশীরা, জাতিগণের মধ্যে ভীমবিক্রান্ত লোকেরা, তাহাকে কাটিয়া ফেলিল, ও ছাড়িয়া গেল; পর্ব্বতগণের উপরে ও উপত্যকা সকলে তাহার শাখা পড়িয়া আছে, এবং দেশের সকল জলপ্রবাহে তাহার ডালপালা ভগ্ন হইল; পৃথিবীর সকল জাতি তাহার ছায়া হইতে প্রস্থান করিল, তাহাকে ছাড়িয়া গেল। তাহার পতিত কাণ্ডে আকাশের সকল পক্ষী বাস করিবে, এবং তাহার শাখার নিকটে মাঠের সকল পশু থাকিবে; ইহার ভাব এই, যেন জলের নিকটবর্ত্তী বৃক্ষ সকল আপন আপন উচ্চতায় গর্ব্বিত না হয়, আপন আপন শিখর মেঘমালার মধ্যে স্থাপন না করে, তাহাদের তেজীয়ানেরা, জলপায়ী সকলে, যেন স্ব স্ব উচ্চতায় দণ্ডায়মান না হয়; কেননা তাহারা সকলে মৃত্যুতে, অধোভুবনে, মনুষ্য-সন্তানদের মধ্যে, পাতালবাসীদের নিকটে, সমর্পিত হইয়াছে। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, পাতালে তাহার নামিয়া যাইবার দিনে আমি শোক নিরূপণ করিলাম; আমি তাহার জন্য জলধিকে আচ্ছাদন করিলাম, ও তাহার স্রোতঃসমূহ নিবৃত্ত করিলাম, তাহাতে জলরাশি রুদ্ধ হইল; এবং আমি তাহার জন্য লিবানোনকে কৃষ্ণবর্ণ করিলাম, ও ক্ষেত্রস্থ বৃক্ষ সকল তাহার জন্য জীর্ণ হইল। যখন আমি তাহাকে পাতালবাসীদের নিকটে ফেলিয়া দিলাম, তখন তাহার পতনের শব্দে জাতিগণকে কম্পিত করিলাম; আর এদনের সমস্ত বৃক্ষ, লিবানোনের উৎকৃষ্ট ও শ্রেষ্ঠ জলপায়ী সকলে, অধোভুবনে সান্ত্বনা পাইল। তাহার সহিত তাহারাও পাতালে খড়্‌গ নিহত লোকদের কাছে নামিয়াছে; তাহারা তাহার বাহুস্বরূপ হইয়া তাহারই ছায়াতে জাতিগণের মধ্যে বাস করিয়াছিল। এইরূপে তুমি প্রতাপে ও মহত্ত্বে এদনস্থ বৃক্ষসমূহের মধ্যে কাহার তুল্য? তথাপি এদনস্থ বৃক্ষগণের সহিত তুমিও অধোভুবনে অবনীত হইবে; অচ্ছিন্নত্বক্‌ সকলের মধ্যে খড়্‌গনিহত লোকদের সহিত শয়ন করিবে। এ সেই ফরৌণ ও তাহার সমস্ত লোকারণ্য; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। দ্বাদশ বৎসরের দ্বাদশ মাসে, মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি মিসর-রাজ ফরৌণের জন্য বিলাপ কর, আর তাহাকে বল, জাতিগণের যুবাসিংহের সহিত তোমার তুলনা করা গিয়াছিল; কিন্তু তুমি জলচর কুম্ভীরের সদৃশ; তুমি আপন নদীগণের মধ্যে আস্ফালন করিতে, নিজ চরণ দ্বারা জল মলিন করিতে ও তথাকার নদনদী কর্দ্দমময় করিতে। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি বহু জাতির সমাজ দ্বারা তোমার উপরে আপন জাল বিস্তার করিব, তাহারা আমার টানা জালে তোমাকে তুলিবে। পরে আমি তোমাকে স্থলে ছাড়িয়া দিব; তোমাকে মাঠের পৃষ্ঠে ফেলিয়া দিব; আকাশের পক্ষী সকলকে তোমার উপরে বসাইব, সমস্ত ভূতলের পশুদিগকে তোমা দ্বারা তৃপ্ত করিব। আমি পর্ব্বতগণের উপরে তোমার মাংস ফেলিব, ও তোমার দীর্ঘ শবে উপত্যকা সকল পূর্ণ করিব। আর তুমি যেখানে সাঁতার দিতেছ, সেই দেশকে পর্ব্বত পর্য্যন্ত তোমার রক্তে সিক্ত করিব, আর জলপ্রবাহ সকল তোমাতে পরিপূর্ণ হইবে। তোমাকে নির্ব্বাণ করিবার সময়ে আমি আকাশ আচ্ছাদন করিব, তাহার নক্ষত্র সকল কৃষ্ণবর্ণ করিব; আমি সূর্য্যকে মেঘাচ্ছন্ন করিব, ও চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না। আকাশে যত উজ্জ্বল জ্যোতিঃ আছে, সেই সকলকে আমি তোমার উপরে কৃষ্ণবর্ণ করিব, তোমার দেশের উপরে অন্ধকার ব্যাপ্ত করিব; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর আমি বহু জাতির মনে ত্রাস জন্মাইব, যখন তোমার অজ্ঞাত নানা দেশে জাতিগণের মধ্যে তোমার ভঙ্গ উপস্থিত করিব। হাঁ, তোমার বিষয়ে বহু জাতিকে বিস্ময়াপন্ন করিব, তাহাদের রাজগণ তোমার জন্য রোমাঞ্চিত হইবে, যখন তাহাদের সাক্ষাতেই আমি আমার খড়্‌গ চালাইব; তোমার পতনদিনে তাহারা নিমিষে নিমিষে কম্পান্বিত হইবে, প্রত্যেক জন আপন প্রাণের বিষয়ে কম্পান্বিত হইবে। কেননা প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, বাবিল-রাজের খড়্‌গ তোমার উপরে আসিবে। আমি বীরগণের খড়্‌গ দ্বারা তোমার লোকারণ্যকে নিপাত করিব; তাহারা সকলে জাতিগণের মধ্যে ভীমবিক্রান্ত; তাহারা মিসরের দর্প চূর্ণ করিবে, তাহার সমস্ত লোকারণ্যের সংহার হইবে। আর আমি জল-সমূহের সমীপ হইতে তাহার সকল পশু উচ্ছিন্ন করিব; তাহাতে মনুষ্যের চরণ সে সকল আর মলিন করিবে না, পশুগণের খুরও সে সকল মলিন করিবে না। তৎকালে আমি তথাকার জল নির্ম্মল করিব, ও তথাকার নদনদী সকল তৈলের ন্যায় প্রবাহিত করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। যখন আমি মিসর দেশ ধ্বংসস্থান ও উৎসন্ন করিব, এবং ভূমি তৎপূরক বস্তুবিহীন হইবে, যখন আমি তন্নিবাসী সকলকে আঘাত করিব, তখন তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। এ বিলাপ-গীত, লোকে ইহা গান করিবে; জাতিগণের কন্যাগণ ইহা গান করিবে; তাহারা মিসরের উদ্দেশে ও তাহার সমস্ত লোকারণ্যের উদ্দেশে ইহা গান করিবে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর দ্বাদশ বৎসরে, সেই মাসের পঞ্চদশ দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি মিসরের লোকারণ্যের বিষয়ে হাহাকার কর, এবং তাহাদিগকে অর্থাৎ সেই জাতিকে ও বিখ্যাত জাতিদের কন্যাগণকে অধোভুবনে পাতালবাসীদের কাছে নামাইয়া দেও। তুমি কাহা অপেক্ষা সুন্দর? নামিয়া যাও, অচ্ছিন্নত্বক্‌দের সহিত শায়িত হও। তাহারা খড়্‌গনিহত লোকদের মধ্যে পতিত হইবে; সে খড়্‌গে সমর্পিত হইয়াছে; তোমরা সেই জাতি ও তাহার সমস্ত লোকারণ্যকে টানিয়া লইয়া যাও। বলবান বীরগণ পাতালের মধ্যে থাকিয়া তাহার ও তাহার সহকারীদের সহিত কথা বলিবে; সেই অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকেরা, সেই খড়্‌গনিহত লোকেরা নামিয়া গিয়াছে, শুইয়া আছে। সেই স্থানে অশূর ও তাহার সমস্ত জনসমাজ আছে; তাহার কবর সকল তাহার চারিদিকে আছে; তাহারা সকলে নিহত, খড়্‌গে পতিত হইয়াছে। গর্ত্তের গভীর স্থানে তাহাদের কবর দেওয়া গিয়াছে, এবং তাহার সমাজ তাহার কবরের চারিদিকে আছে; তাহারা সকলে নিহত, খড়্‌গে পতিত হইয়াছে, যাহারা জীবিতদের দেশে ত্রাস জন্মাইত। সেই স্থানে এলম ও তাহার কবরের চারিদিকে তাহার সমস্ত লোকারণ্য আছে; তাহারা সকলে নিহত, খড়্‌গে পতিত হইয়াছে, তাহারা অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় অধোভুবনে নামিয়া গিয়াছে; তাহারা জীবিতদের দেশে ত্রাস জন্মাইত, এবং পাতালবাসীদের সঙ্গে আপনাদের অপমান ভোগ করিয়াছে। নিহত লোকদের মধ্যে তাহার সমস্ত লোকারণ্যশুদ্ধ তাহার শয্যা পাতিত হইয়াছে; তাহার চারিদিকে তাহার কবর সকল রহিয়াছে; তাহারা সকলে অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় খড়্‌গে নিহত হইয়াছে; কেননা জীবিতদের দেশে তাহাদের হইতে ত্রাস জন্মিত, আর তাহারা পাতালবাসীদের সঙ্গে আপনাদের অপমান ভোগ করিয়াছে; নিহত লোকদের মধ্যেই তাহাকে রাখা গিয়াছে। সেই স্থানে মেশক, তূবল ও তাহার সমস্ত লোকারণ্য আছে; তাহার চারিদিকে তাহার কবর সকল রহিয়াছে; তাহারা সকলে অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় খড়্‌গে নিহত হইয়াছে; কেননা জীবিতদের দেশে তাহারা ত্রাস জন্মাইত। কিন্তু তাহারা অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদের পতিত সেই বীরগণের সহিত শয়ন করিবে না, যাহারা আপন আপন যুদ্ধসজ্জাশুদ্ধ পাতালে নামিয়া গিয়াছে, ও যাহাদের খড়্‌গ তাহাদের মস্তকের নীচে রাখা গিয়াছে, ও যাহাদের অপরাধ তাহাদের অস্থির উপরে রহিয়াছে, কেননা জীবিতদের দেশে তাহারা বীরগণের ত্রাসভূমি ছিল। তুমিও অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদের মধ্যে ভগ্ন হইবে, ও খড়্‌গনিহতদের সহিত শয়ন করিবে। সেই স্থানে ইদোম, তাহার রাজগণ ও তাহার সমস্ত অধ্যক্ষ আছে; পরাক্রান্ত হইলেও খড়্‌গনিহত লোকদের সহিত তাহাদিগকে রাখা গিয়াছে; তাহারা অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদের সঙ্গে ও পাতালবাসীদের সঙ্গে শয়ন করিবে। সেই স্থানে উত্তর দেশীয় অধ্যক্ষেরা সকলে ও সীদোনীয় সকল লোক আছে; তাহারা নিহত লোকদের সহিত নামিয়াছে; আপনাদের পরাক্রমে ভয়ানক হইলেও তাহারা লজ্জাপন্ন হইয়াছে; তাহারা খড়্‌গনিহত লোকদের কাছে অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় শুইয়া রহিয়াছে, এবং পাতালবাসীদের সঙ্গে আপনাদের অপমান ভোগ করিতেছে। এই সকলকেই ফরৌণ দেখিবে, এবং আপন সমস্ত লোকারণ্যের বিষয়ে সান্ত্বনা পাইবে; ফরৌণ ও তাহার সমস্ত সৈন্য খড়্‌গে নিহত হইয়াছে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। কেননা আমি জীবিতদের দেশে তাহা হইতে ত্রাস উৎপন্ন করিয়াছি; আর অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদের মধ্যে, খড়্‌গনিহত লোকদের সঙ্গে, ফরৌণ ও তাহার সমস্ত লোকারণ্য শায়িত হইবে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি আপন জাতির সন্তানগণের সহিত আলাপ কর, তাহাদিগকে বল, আমি কোন দেশের বিরুদ্ধে খড়্‌গ আনিলে যদি সেই দেশের লোকেরা আপনাদের মধ্য হইতে কোন ব্যক্তিকে লইয়া আপনাদের প্রহরী নিযুক্ত করে; সে খড়্‌গকে দেশের বিরুদ্ধে আসিতে দেখিলে যদি তূরী বাজাইয়া লোকদিগকে সচেতন করে, তবে যে কেহ তূরীর শব্দ শুনিয়াও সচেতন না হয়, যদি খড়্‌গ উপস্থিত হয় ও তাহাকে সংহার করে, তাহার রক্ত তাহারই মস্তকে বর্ত্তিবে। সে তূরীর শব্দ শুনিয়াও সচেতন হয় নাই; তাহার রক্ত তাহারই উপরে বর্ত্তিবে; যদি সচেতন হইত, তবে প্রাণ বাঁচাইতে পারিত। কিন্তু সেই প্রহরী খড়্‌গ আসিতে দেখিলে যদি তূরী না বাজায়, এবং লোকদিগকে সচেতন করা না হয়, আর যদি খড়্‌গ উপস্থিত হয় ও তাহাদের মধ্যে কোন প্রাণীকে সংহার করে, তবে তাহার অপরাধ প্রযুক্ত তাহার সংহার হইবে, কিন্তু আমি সেই প্রহরীর হস্ত হইতে তাহার রক্তের পরিশোধ লইব। হে মনুষ্য-সন্তান, আমি তোমাকেই হে ইস্রায়েল-কুলের প্রহরী নিযুক্ত করিলাম; অতএব তুমি আমার মুখে বাক্য শ্রবণ কর, ও আমার নামে তাহাদিগকে সচেতন কর। আমি যখন দুষ্ট লোককে বলি, হে দুষ্ট, তোমাকে নিশ্চয় মরিতে হইবে, তখন তুমি তাহার পথের বিষয়ে সেই দুষ্ট লোককে সচেতন করিবার নিমিত্ত যদি কিছু না বল, তবে সেই দুষ্ট নিজ অপরাধ প্রযুক্ত মরিবে; কিন্তু আমি তোমার হস্ত হইতে তাহার রক্তের পরিশোধ লইব। পরন্তু তুমি সেই দুষ্টকে তাহার পথ হইতে ফিরাইবার জন্য তাহার পথের বিষয়ে সচেতন করিলে যদি সে আপন পথ হইতে না ফিরে, তবে সে নিজ অপরাধ প্রযুক্ত মরিবে, কিন্তু তুমি আপন প্রাণ রক্ষা করিলে। আর, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েল-কুলকে বল, তোমরা এইরূপ বলিয়া থাক, আমাদের অধর্ম্মের ও পাপের ভার আমাদের উপরে আছে, এবং তাহাতেই আমরা ক্ষয় পাইতেছি, তবে কেমন করিয়া বাঁচিব? তুমি তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, দুষ্ট লোকের মরণে আমার সন্তোষ নাই; বরং দুষ্ট লোক যে আপন পথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে, [ইহাতেই আমার সন্তোষ]। তোমরা ফির, আপন আপন কুপথ হইতে ফির; কারণ, হে ইস্রায়েল-কুল, তোমরা কেন মরিবে? আর হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি আপন জাতির সন্তানদিগকে বল, ধার্ম্মিকের ধার্ম্মিকতা তাহার অধর্ম্মের দিনে তাহাকে রক্ষা করিবে না; আবার দুষ্টের যে দুষ্টতা, তাহাতে সে আপন দুষ্টতা হইতে ফিরিবার দিনে উছোট খাইবে না; এবং ধার্ম্মিক লোক পাপ করিবার দিনে ধার্ম্মিকতা দ্বারা বাঁচিবে না। যখন আমি ধার্ম্মিকের উদ্দেশে বলি, সে অবশ্য বাঁচিবে, তখন যদি সে আপন ধার্ম্মিকতায় নির্ভর করিয়া অন্যায় করে, তবে তাহার সমস্ত ধর্ম্মকর্ম্ম আর স্মরণ হইবে না; সে যে অন্যায় করিয়াছে, তাহাতেই মরিবে। আর, যখন আমি দুষ্টকে বলি, তুমি মরিবেই মরিবে, তখন যদি সে আপন পাপ হইতে ফিরিয়া ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করে —সেই দুষ্ট যদি বন্ধক ফিরাইয়া দেয়, অপহৃত দ্রব্য পরিশোধ করে, এবং অন্যায় না করিয়া জীবনদায়ক বিধি-পথে চলে—তবে অবশ্য বাঁচিবে, সে মরিবে না। তাহার কৃত সমস্ত পাপ আর তাহার বলিয়া স্মরণ হইবে না; সে ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করিয়াছে, অবশ্য বাঁচিবে। তথাপি তোমার জাতির সন্তানেরা বলিতেছে, প্রভুর পথ সরল নয়; কিন্তু তাহাদেরই পথ অসরল। ধার্ম্মিক লোক যখন আপন ধার্ম্মিকতা হইতে ফিরিয়া অন্যায় করে, তখন সে তাহাতেই মরিবে। আর দুষ্ট লোক যখন আপন দুষ্টতা হইতে ফিরিয়া ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করে, তখন সে তৎপ্রযুক্তই বাঁচিবে। তথাপি তোমরা কহিতেছ, প্রভুর পথ সরল নয়। হে ইস্রায়েল-কুল, আমি তোমাদের প্রত্যেকের পথ অনুসারে তোমাদের বিচার করিব। আর আমাদের নির্ব্বাসনের দ্বাদশ বৎসরের দশম মাসে, মাসের পঞ্চম দিনে যিরূশালেম হইতে এক জন পলাতক আমার নিকটে আসিয়া কহিল, নগর পরাজিত হইয়াছে। আর সেই পলাতকের আসিবার পূর্ব্বে সন্ধ্যাকালে সদাপ্রভু আমার উপরে হস্তার্পণ করিয়াছিলেন, এবং প্রাতঃকালে সেই পলাতকের উপস্থিত হইবার অপেক্ষায় তিনি আমার মুখ খুলিয়া দিলেন, তখন আমার মুখ খুলিয়া গেল, আমি আর বোবা রহিলাম না। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, ইস্রায়েল-দেশে যাহারা সেই সকল উৎসন্ন স্থানে বাস করে, তাহারা কহিতেছে, অব্রাহাম একমাত্র ছিলেন, আর দেশের অধিকার পাইয়াছিলেন; কিন্তু আমরা অনেক লোক, আমাদিগকেই দেশ অধিকারার্থে দত্ত হইয়াছে। অতএব তুমি তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা রক্তশুদ্ধ মাংস খাইয়া থাক, আপন আপন পুত্তলিগণের প্রতি চক্ষু তুলিয়া থাক, ও রক্তপাত করিয়া থাক; তোমরা কি দেশের অধিকারী হইবে? তোমরা আপন আপন খড়্‌গে নির্ভর করিয়া থাক, ঘৃণার্হ কার্য্য করিয়া থাক, ও প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর স্ত্রীকে অশুচি করিয়া থাক; তোমরা কি দেশের অধিকারী হইবে? তুমি তাহাদিগকে এই কথা বলিবে, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, যাহারা সেই সকল উৎসন্ন স্থানে আছে, তাহারা খড়্‌গে পতিত হইবে; এবং যে কেহ মাঠে আছে, তাহাকে আমি ভক্ষ্যরূপে পশুদের কাছে সমর্পণ করিলাম; এবং যাহারা দুর্গে কি গুহাতে থাকে, তাহারা মহামারীতে মরিবে। আর আমি দেশকে ধ্বংসিত ও বিস্ময়ের স্থান করিব, তাহার পরাক্রমের গর্ব্ব নিবৃত্ত হইবে, এবং ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণ ধ্বংসিত হইবে, কেহ তাহা দিয়া গমন করিবে না। তখন তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যখন আমি তাহাদের কৃত সমস্ত ঘৃণার্হ ক্রিয়া হেতু দেশকে ধ্বংসিত ও বিস্ময়ের স্থান করিব। আর, হে মনুষ্য-সন্তান, তোমার জাতির সন্তানেরা ভিত্তির নিকটে ও গৃহ সকলের দ্বারদেশে তোমার বিষয়ে কথাবার্ত্তা কহে, ও প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীকে ও ভ্রাতাকে বলে, চল, আমরা গিয়া শুনি, সদাপ্রভু হইতে যে বাক্য বাহির হয়, তাহা কি। আর প্রজালোক যেমন আইসে, তেমনি তাহারা তোমার কাছে আইসে, আমার প্রজা বলিয়া তোমার সম্মুখে বসে, ও তোমার বাক্য সকল শুনে, কিন্তু তাহা পালন করে না; কেননা মুখে তাহারা বিলক্ষণ প্রেম দেখায়, কিন্তু তাহাদের চিত্ত তাহাদের লাভের দিকে যায়। আর দেখ, তাহাদের নিকটে তুমি মধুর স্বরবিশিষ্ট নিপুন বাদ্যকরের সুচারু সঙ্গীতস্বরূপ; তাহারা তোমার বাক্য শুনে, কিন্তু পালন করে না। ইহার সিদ্ধি যখন আসিবে—দেখ, আসিতেছে—তখন তাহারা জানিবে যে, তাহাদের মধ্যে এক জন ভাববাদী রহিয়াছে। আবার সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েলের পালকদের বিরুদ্ধে ভাববাণী বল, ভাববাণী বল, তাহাদিগকে, অর্থাৎ সেই পালকদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েলের সেই পালকদিগকে ধিক্‌, যাহারা আপনাদিগকেই পালন করিতেছে। মেষগণকেই পালন করা কি পালকদের কর্ত্তব্য নয়? তোমরা মেদ খাইয়া থাক, মেষলোম পরিধান করিয়া থাক, পুষ্ট মেষ বলিদান করিয়া থাক, কিন্তু মেষগণকে পালন কর না। তোমরা দুর্ব্বলদিগকে সবল কর নাই, পীড়িতের চিকিৎসা কর নাই, ভগ্নাঙ্গের ক্ষত বাঁধ নাই, দূরীকৃতকে ফিরাইয়া আন নাই, হারাণের অন্বেষণ কর নাই, কিন্তু বল ও উপদ্রবপূর্ব্বক তাহাদের শাসন করিয়াছ। আর পালকের অভাবে মেষগণ ছিন্নভিন্ন হইয়াছে; তাহারা বন্য পশু সকলের খাদ্য হইয়াছে, ছিন্নভিন্ন হইয়া গিয়াছে। আমার মেষেরা সকল পর্ব্বতে ও সকল উচ্চ গিরির উপরে ভ্রমণ করিতেছে; সমস্ত ভূতলে আমার মেষগণ ছিন্নভিন্ন হইয়াছে; তাহাদের অন্বেষণ কি সন্ধান করে, এমন কেহ নাই। অতএব হে পালকগণ, সদাপ্রভুর বাক্য শুন। প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমার পাল লুটদ্রব্য হইয়াছে, এবং আমার মেষগণ বন্য পশু সকলের খাদ্য হইয়াছে; কেননা পালক নাই, এবং আমার পালকেরা আমার মেষগণের অন্বেষণ করে নাই; বরং সেই পালকেরা আপনাদিগকেই পালন করিয়াছে, আমার মেষগণকে পালন করে নাই; এই জন্য, হে পালকগণ, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি সেই পালকদের বিপক্ষ; আমি তাহাদের হস্ত হইতে আমার মেষগণকে আদায় করিব, এবং তাহাদিগকে পালকের কর্ম্ম হইতে চ্যুত করিব, সেই পালকেরা আর আপনাদিগকে পালন করিবে না; আর আমি আপন মেষগণকে তাহাদের মুখ হইতে উদ্ধার করিব, তাহাদের খাদ্য হইতে দিব না। কারণ প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি, আমিই আপন মেষগণের অন্বেষণ করিব, তাহাদিগকে খুঁজিয়া বাহির করিব। পালক আপন ছিন্নভিন্ন মেষগণের মধ্যে থাকিবার দিনে যেমন আপন পাল খুঁজিয়া বাহির করে, তেমনি আমি আপন মেষগণকে খুঁজিয়া বাহির করিব, এবং যে সকল স্থানে তাহারা মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকারময় দিবসে ছিন্নভিন্ন হইয়াছে, সেই সকল স্থান হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিব। আর আমি জাতিগণের মধ্য হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিব, নানা দেশ হইতে সংগ্রহ করিব, এবং তাহাদের নিজ ভূমিতে তাহাদিগকে আনিব; আর ইস্রায়েলের পর্ব্বত-সমূহের উপরে, জলপ্রবাহগুলির কাছে এবং দেশের সকল বসতি-স্থানে তাহাদিগকে চরাইব। আমি উত্তম চরাণিতে তাহাদিগকে চরাইব, এবং ইস্রায়েলের উচ্চ উচ্চ পর্ব্বতে তাহাদের বাথান হইবে; তাহারা সেই স্থানে উত্তম বাথানে শয়ন করিবে, এবং ইস্রায়েলের পর্ব্বতমালায় হরিৎ চরাণিতে চরিবে। আমিই আপন মেষদিগকে চরাইব, আমিই তাহাদিগকে শয়ন করাইব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আমি হারাণ মেষের অন্বেষণ করিব, দূরীকৃতকে ফিরাইয়া আনিব, ভগ্নাঙ্গের ক্ষত বাঁধিব, ও পীড়িতকে সবল করিব, এবং হৃষ্টপুষ্ট ও বলবানকে সংহার করিব; আমি বিচারমতে তাহাদিগকে পালন করিব। আর তোমাদের বিষয়ে, হে আমার মেষপাল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি মেষ ও মেষের, আবার মেষদের ও ছাগদের মধ্যে বিচার করিব। ইহা কি তোমাদের কাছে তুচ্ছ বিষয় বোধ হয় যে, উত্তম চরাণিতে চরিতেছ, আবার আপনাদের অবশিষ্ট তৃণ পদতলে দলিত করিতেছ? এবং নির্ম্মল জল পান করিতেছ, আবার অবশিষ্টকে পদ দ্বারা মলিন করিতেছ? আমার মেষগণের গতি এই, তোমরা যাহা পদতলে দলন করিয়াছ, তাহারা তাহাই খায়, ও তোমরা যাহা পদ দ্বারা মলিন করিয়াছ, তাহারা তাহাই পান করে। অতএব প্রভু সদাপ্রভু তাহাদিগকে এই কথা কহেন, দেখ, আমি, আমিই হৃষ্টপুষ্ট মেষের ও কৃশ মেষের মধ্যে বিচার করিব। তোমার পার্শ্ব ও স্কন্ধ দিয়া দুর্ব্বল সকলকে ঠেলিতেছ, শৃঙ্গ দিয়া ঢুষাইতেছ, তাহাদিগকে বাহিরে ছিন্নভিন্ন না করিয়া ক্ষান্ত হও না। এই জন্য আমি আপন মেষপালকে রক্ষা করিব, তাহারা আর লুটদ্রব্য হইবে না; এবং আমি মেষ ও মেষের মধ্যে বিচার করিব। আর আমি তাহাদের উপরে একমাত্র পালককে উৎপন্ন করিব, তিনি তাহাদিগকে পালন করিবেন, তিনি আমার দাস দায়ূদ; তিনিই তাহাদিগকে চরাইবেন, এবং তিনিই তাহাদের পালক হইবেন। আর আমি সদাপ্রভু তাহাদের ঈশ্বর হইব, এবং আমার দাস দায়ূদ তাহাদের মধ্যে অধ্যক্ষ হইবেন; আমি সদাপ্রভুই ইহা কহিলাম। আমি তাহাদের পক্ষে শান্তির নিয়ম স্থির করিব, ও হিংস্র পশুদিগকে দেশ হইতে শেষ করিব; তাহাতে তাহারা নির্ভয়ে প্রান্তরে বাস করিবে ও বনে নিদ্রা যাইবে। আর আমি তাহাদিগকে ও আমার গিরির চারিদিকের পরিসীমাকে আশীর্ব্বাদস্বরূপ করিব; এবং যথাসময়ে জলধারা বর্ষাইব, আশীর্ব্বাদের ধারা বর্ষিবে। আর ক্ষেত্রের বৃক্ষ ফল উৎপন্ন করিবে, ও ভূমি নিজ শস্য দিবে; এবং তাহারা নির্ভয়ে স্বদেশে থাকিবে, তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যখন আমি তাহাদের যোঁয়ালির খিল ভাঙ্গিয়া ফেলিব, এবং যাহারা তাহাদিগকে দাসত্ব করাইয়াছে, তাহাদের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিব। তাহারা আর জাতিগণের লুটদ্রব্য হইবে না, এবং বন্য পশুগণ তাহাদিগকে আর গ্রাস করিবে না; কিন্তু তাহারা নির্ভয়ে বাস করিবে, কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না। আর আমি তাহাদের জন্য যশের উদ্যান উৎপন্ন করিব; তাহাতে দেশের মধ্যে ক্ষুধায় তাহাদের সংহার আর হইবে না, এবং তাহারা জাতিগণের কৃত অপমান আর ভোগ করিবে না। আর তাহারা জানিবে যে, আমি সদাপ্রভু, তাহাদের সহবর্ত্তী ঈশ্বর, ও তাহারা আমার প্রজা ইস্রায়েল-কুল, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর তোমরা আমার মেষ, আমার চরাণির মেষ; তোমরা মনুষ্য, আমিই তোমাদের ঈশ্বর; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আরও সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি সেরীয় পর্ব্বতের বিরুদ্ধে মুখ রাখ, তাহার বিরুদ্ধে ভাববাণী বল; আর তাহাকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে সেয়ীর পর্ব্বত, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ, আমি তোমার বিরুদ্ধে আমার হস্ত বিস্তার করিব, এবং তোমাকে ধ্বংসের ও বিস্ময়ের পাত্র করিব। আমি তোমার নগর সকল উৎসন্ন স্থান করিব, এবং তুমি ধ্বংস হইবে, তাহাতে তুমি জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তোমার চিরন্তন শত্রুভাব আছে, এবং তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে তাহাদের বিপৎকালে, শেষের অপরাধকালে, খড়্‌গের হস্তে সমর্পণ করিয়াছ; এই জন্য, প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমাকে রক্তময় করিব, এবং রক্ত তোমার পশ্চাতে দৌড়িবে; তুমি রক্ত ঘৃণা কর নাই, তাই রক্ত তোমার পশ্চাতে দৌড়িবে। আমি সেয়ীর পর্ব্বতকে বিস্ময়ের পাত্র ও ধ্বংসস্থান করিব, এবং গমনাগমনকারী লোককে তাহার মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিব। আমি তাহার নিহত লোকে তাহার পর্ব্বত সকল পূর্ণ করিব; তোমার উপপর্ব্বত সকলে, তোমার উপত্যকা সকলে ও তোমার সমস্ত জলপ্রবাহে খড়্‌গনিহত লোক পতিত হইবে। আমি তোমাকে চিরন্তন ধ্বংসস্থান করিব, এবং তোমার নগর সকল নিবাসীবিহীন হইবে; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তুমি বলিয়াছ, এই দুই জাতি ও এই দুই দেশ আমারই হইবে, এবং আমরা তাহাদের অধিকারী হইব, তথাপি সদাপ্রভু সেই স্থানে ছিলেন; এই জন্য, প্রভু সদাপ্রভু কহেন, আমার জীবনের দিব্য, তুমি যেমন তাহাদের প্রতি নিজ দ্বেষের অনুযায়ী কর্ম্ম করিয়াছ, তেমনি আমি তোমার সেই ক্রোধ ও ঈর্ষার অনুযায়ী কর্ম্ম করিব, এবং যখন তোমার বিচার করিব, তখন তাহাদের মধ্যে আপনার পরিচয় দিব। আর তুমি জানিবে যে, আমি সদাপ্রভু তোমার সেই সকল নিন্দাবাদ শুনিয়াছি, যাহা তুমি ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণের বিষয়ে বলিয়াছ; তুমি বলিয়াছ, সে সকল ধ্বংসস্থান, সেগুলি গ্রাসার্থে আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে। এইরূপে তোমরা আমার বিপরীতে আপন মুখে দর্প করিয়াছ, এবং আমার বিরুদ্ধে অনেক কথা বলিয়াছ; আমি তাহা শুনিয়াছি। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সমস্ত পৃথিবীর আনন্দকালে আমি তোমাকে ধ্বংস করিব। তুমি ইস্রায়েল-কুলের অধিকার ধ্বংসিত দেখিয়া যেরূপ আনন্দ করিয়াছ, আমি তোমার সহিত সেইরূপ ব্যবহার করিব; হে সেয়ীর পর্ব্বত, তুমি ধ্বংস হইবে, সমস্ত ইদোম, তাহার সমস্তই হইবে; তাহাতে লোকে জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণের কাছে ভাববাণী বল, তুমি বল, হে ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণ, সদাপ্রভুর বাক্য শুন। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, শত্রু তোমাদের বিরুদ্ধে বলিয়াছে, ‘বাহবা!’ আর, ‘সেই চিরন্তন উচ্চস্থলী সকল আমাদের অধিকার হইল;’ এই জন্য তুমি ভাববাণী বল, তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, লোকেরা তোমাদিগকে জাতিগণের অবশিষ্ট অংশের অধিকার করণার্থে ধ্বংস ও চারিদিকে গ্রাস করিয়াছে, এবং তোমার বাচালদের ওষ্ঠগত ও লোকদের নিন্দার আস্পদ হইয়াছ; এই জন্য, হে ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণ, তোমরা প্রভু সদাপ্রভুর বাক্য শুন; প্রভু সদাপ্রভু সেই পর্ব্বত, উপপর্ব্বত, জলপ্রবাহ ও উপত্যকা সকলকে এবং সেই ধ্বংসিত কাঁথড়া ও পরিত্যক্ত নগর সকলকে এই কথা কহেন, তোমরা চারিদিকের জাতিগণের অবশিষ্ট অংশের লুটদ্রব্য ও হাস্যের পাত্র হইয়াছ; এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, নিশ্চয়ই আমি সেই জাতিগণের অবশিষ্ট অংশের বিরুদ্ধে, বিশেষতঃ সমস্ত ইদোমের বিরুদ্ধে আমার অন্তর্জ্বালার অগ্নিতেই কথা কহিয়াছি, কেননা তাহারা তাহাদের সমস্ত চিত্তের হর্ষে ও প্রাণের অবজ্ঞায় লুটের আশায় শূন্য করণার্থে আমার দেশ আপনাদের অধিকার বলিয়া নিরূপণ করিয়াছে। অতএব তুমি ইস্রায়েল-ভূমির বিষয়ে ভাববাণী বল, এবং সেই পর্ব্বত, উপপর্ব্বত, জলপ্রবাহ ও উপত্যকা সকলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি আমার অন্তর্জ্বালায় ও আমার কোপে বলিয়াছি, তোমরা জাতিগণের কাছে অপমান বহন করিয়াছ; এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি নিজ হস্ত তুলিয়া শপথ করিয়াছি, তোমাদের চারিদিকে যে জাতিগণ আছে, তাহারাই নিশ্চয় আপনাদের অপমান বহন করিবে। কিন্তু হে ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণ, তোমরা আপনাদের শাখা বাড়াইয়া আমার প্রজা ইস্রায়েলকে আপন আপন ফল দিবে, কেননা তাহাদের আগমন সন্নিকট। কারণ দেখ, আমি তোমাদের সপক্ষ; এবং আমি তোমাদের প্রতি ফিরিব, তাহাতে তোমাদিগেতে চাষ ও বীজবপন হইবে। আর আমি তোমাদের উপরে মনুষ্যদিগকে, সমস্ত ইস্রায়েল-কুলকে, তাহার সকলকেই বহুসংখ্যক করিব; আর নগর সকল বসতিবিশিষ্ট হইবে, এবং ধ্বংসিত স্থান সকল নির্ম্মিত হইবে। আর আমি তোমাদের উপরে মনুষ্য ও পশুকে বহুসংখ্যক করিব, তাহাতে তাহারা বর্দ্ধিষ্ণু ও বহুপ্রজ হইবে; এবং আমি তোমাদিগকে পূর্ব্বকালের ন্যায় বসতিস্থান করিব, এবং তোমাদের আদিম দশা অপেক্ষা অধিক মঙ্গল তোমাদিগকে দিব; তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আমি তোমাদের উপর দিয়া মনুষ্যদিগকে, আমার প্রজা ও ইস্রায়েলকে, যাতায়াত করাইব; তাহারা তোমাকে ভোগ করিবে, ও তুমি তাহাদের অধিকার ভূমি হইবে, এখন হইতে তাহাদিগকে আর সন্তানবিহীন করিবে না। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহারা তোমাকে মনুষ্যগ্রাসক ও নিজ জাতির সন্তাননাশক বলে; এই জন্য তুমি আর মনুষ্যদিগকে গ্রাস করিবে না, এবং তোমার জাতিকে আর সন্তানবিহীন করিবে না, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আমি তোমাকে আর জাতিগণের অপমান-বাক্য শুনাইব না, তুমি আর লোকদিগের টিটকারির ভার বহন করিবে না, এবং তোমার জাতির বিঘ্ন আর জন্মাইবে না, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, ইস্রায়েল-কুল যখন আপনাদের ভূমিতে বাস করিত, তখন আপন আপন আচরণ ও ক্রিয়া দ্বারা তাহা অশুচি করিত; তাহাদের আচরণ আমার দৃষ্টিতে স্ত্রীলোকের পৃথক্‌স্থিতিকালীন অশৌচের তুল্য বোধ হইল। অতএব সেই দেশে তাহাদের সেচিত রক্ত প্রযুক্ত, এবং তাহাদের পুত্তলিগণ দ্বারা দেশ অশুচি করণ প্রযুক্ত, আমি তাহাদের উপরে আপন কোপ সেচন করিলাম। আর আমি তাহাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিলাম, এবং তাহারা নানা দেশে বিকীর্ণ হইল; তাহাদের আচরণ ও ক্রিয়ানুসারে আমি তাহাদের বিচার করিলাম। আর তাহারা যেখানে গেল, সেইখানে জাতিগণের নিকটে গিয়া আমার পবিত্র নাম অপবিত্র করিল; কেননা লোকে তাহাদের বিষয়ে বলিত, উহারা সদাপ্রভুর প্রজা, এবং তাঁহারই দেশ হইতে বাহির হইয়াছে। কিন্তু আমি আমার সেই পবিত্র নামের অনুরোধে দয়ার্দ্র হইলাম, যাহা ইস্রায়েল-কুল, জাতিগণের মধ্যে যেখানে গিয়াছে, সেইখানে অপবিত্র করিয়াছে। অতএব তুমি ইস্রায়েল-কুলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে ইস্রায়েল-কুল, আমি তোমাদের নিমিত্ত কার্য্য করিতেছি, তাহা নয়, কিন্তু আমার সেই পবিত্র নামের অনুরোধে কার্য্য করিতেছি, যাহা তোমরা যেখানে গিয়াছ, সেইখানে জাতিগণের মধ্যে অপবিত্র করিয়াছ। আমি আমার সেই মহৎ নাম পবিত্র করিব, যাহা জাতিগণের মধ্যে অপবিত্রীকৃত হইয়াছে, যাহা তোমরা তাহাদের মধ্যে অপবিত্র করিয়াছ; আর জাতিগণ জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, যখন আমি তাহাদের সাক্ষাতে তোমাদিগেতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। কারণ আমি জাতিগণের মধ্য হইতে তোমাদিগকে গ্রহণ করিব, দেশসমূহ হইতে তোমাদিগকে সংগ্রহ করিব, ও তোমাদেরই দেশে তোমাদিগকে উপস্থিত করিব। আর আমি তোমাদের উপরে শুচি জল প্রক্ষেপ করিব, তাহাতে তোমরা শুচি হইবে; আমি তোমাদের সকল অশৌচ হইতে ও তোমাদের সকল পুত্তলি হইতে তোমাদিগকে শুচি করিব। আর আমি তোমাদিগকে নূতন হৃদয় দিব, ও তোমাদের অন্তরে নূতন আত্মা স্থাপন করিব; আমি তোমাদের মাংস হইতে প্রস্তরময় হৃদয় দূর করিব, ও তোমাদিগকে মাংসময় হৃদয় দিব। আর আমার আত্মাকে তোমাদের অন্তরে স্থাপন করিব, এবং তোমাদিগকে আমার বিধিপথে চালাইব, তোমরা আমার শাসন সকল রক্ষা করিবে ও পালন করিবে। আর আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে যে দেশ দিয়াছি, সেই দেশে তোমরা বাস করিবে; আর তোমরা আমার প্রজা হইবে, এবং আমিই তোমাদের ঈশ্বর হইব। আমি তোমাদের সমস্ত অশুচিতা হইতে তোমাদিগকে পরিত্রাণ করিব; এবং গোধূম আহ্বান করিয়া প্রচুর করিয়া দিব, তোমাদের উপরে দুর্ভিক্ষভার অর্পণ করিব না। আমি বৃক্ষের ফল ও ক্ষেত্রোৎপন্ন দ্রব্য প্রচুর করিয়া দিব, যেন জাতিগণের মধ্যে তোমরা আর দুর্ভিক্ষজন্য টিটকারি ভোগ না কর। তখন তোমরা আপনাদের মন্দ আচরণ ও অসৎক্রিয়া সকল স্মরণ করিবে, এবং আপনাদের অপরাধ ও জঘন্য কার্য্য প্রযুক্ত আপনাদের দৃষ্টিতে আপনাদিগকে অতিশয় ঘৃণা করিবে। প্রভু সদাপ্রভু বলেন, তোমরা জানিও, আমি তোমাদের নিমিত্ত এ কার্য্য করিতেছি, তাহা নয়; হে ইস্রায়েল-কুল, তোমরা আপনাদের আচরণ প্রযুক্ত লজ্জিত ও বিষণ্ণ হও। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে দিন আমি তোমাদের সকল অপরাধ হইতে তোমাদিগকে শুচি করিব, সেই দিন নগর সকলকে বসতিবিশিষ্ট করিব, এবং উৎসন্ন স্থান সকল নির্ম্মিত হইবে। আর যে দেশ পথিক সকলের সাক্ষাতে ধ্বংসস্থান ছিল, সেই ধ্বংসিত দেশে কৃষিকার্য্য চলিবে। আর লোকে বলিবে, এই ধ্বংসিত দেশ এদন উদ্যানের তুল্য হইল, এবং উচ্ছিন্ন, ধ্বংসিত ও উৎপাটিত নগর সকল প্রাচীরবেষ্টিত ও বসতিস্থান হইল। তখন তোমাদের চারিদিকে অবশিষ্ট জাতিগণ জানিতে পাইবে যে, আমি সদাপ্রভু উৎপাটিত স্থান সকল নির্ম্মাণ করিয়াছি, ও ধ্বংসিত স্থান উদ্যান করিয়াছি; আমি সদাপ্রভু ইহা বলিয়াছি, এবং ইহা সিদ্ধ করিব। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহাদের পক্ষে ইহা করিবার জন্য আমি ইস্রায়েল-কুলকে আমার কাছে অন্বেষণ করিতে দিব; আমি তাহাদিগকে মেষপালের ন্যায় মনুষ্যে বর্দ্ধিষ্ণু করিব। যেমন পবিত্র মেষপালে, যেমন যিরূশালেমের পর্ব্বসময়ের মেষপালে, তেমনি মনুষ্যপালে এই উচ্ছিন্ন নগর সকল পরিপূর্ণ হইবে; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। সদাপ্রভুর হস্ত আমার উপরে অর্পিত হইল, এবং তিনি সদাপ্রভুর আত্মায় আমাকে বাহিরে লইয়া গিয়া সমস্থলীর মধ্যে রাখিলেন; তাহা অস্থিতে পরিপূর্ণ ছিল। পরে তিনি চারিদিকে তাহাদের নিকট দিয়া আমাকে গমন করাইলেন; আর দেখ, সেই সমস্থলীর পৃষ্ঠে বিস্তর অস্থি ছিল; এবং দেখ, সে সকল অতিশয় শুষ্ক। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, এই সকল অস্থি কি জীবিত হইবে? আমি কহিলাম, হে প্রভু সদাপ্রভু, আপনি জানেন। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি এই সকল অস্থির উদ্দেশে ভাববাণী বল, তাহাদিগকে বল, হে শুষ্ক অস্থি সকল, সদাপ্রভুর বাক্য শুন। প্রভু সদাপ্রভু এই সকল অস্থিকে এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমাদের মধ্যে আত্মা প্রবেশ করাইব, তাহাতে তোমরা জীবিত হইবে। আর আমি তোমাদের উপরে শিরা দিব, তোমাদের উপরে মাংস উৎপন্ন করিব, চর্ম্ম দ্বারা তোমাদিগকে আচ্ছাদন করিব, ও তোমাদের মধ্যে আত্মা দিব, তাহাতে তোমরা জীবিত হইবে, আর তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তখন আমি যেমন আজ্ঞা পাইলাম, তদনুসারে ভাববাণী বলিলাম; আর আমার ভাববাণী বলিবার সময়ে শব্দ হইল, আর দেখ, মড়মড়ধ্বনি হইল, এবং সেই সকল অস্থির মধ্যে প্রত্যেক অস্থি আপন আপন অস্থির সহিত সংযুক্ত হইল। পরে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, তাহাদের উপরে শিরা হইল, ও মাংস উৎপন্ন হইল, এবং চর্ম্ম তাহাদিগকে আচ্ছাদন করিল, কিন্তু তাহাদের মধ্যে আত্মা ছিল না। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, আত্মার উদ্দেশে ভাববাণী বল, হে মনুষ্য-সন্তান, ভাববাণী বল, এবং আত্মাকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে আত্মন্‌; চারি বায়ু হইতে আইস, এবং এই নিহত লোকদের উপরে বহ, যেন তাহারা জীবিত হয়। তখন, তিনি আমাকে যে আজ্ঞা দিলেন, তদনুসারে আমি ভাববাণী বলিলাম; তাহাতে আত্মা তাহাদের মধ্যে প্রবেশ করিল, এবং তাহারা জীবিত হইল, ও আপন আপন পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইল; সে অতিশয় মহতী বাহিনী। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, এই সকল অস্থি সমস্ত ইস্রায়েল-কুল; দেখ, তাহারা বলিতেছে, আমাদের অস্থি সকল শুষ্ক হইয়া গিয়াছে, এবং আমাদের আশ্বাস নষ্ট হইয়াছে; আমরা একেবারে উচ্ছিন্ন হইলাম। এই জন্য তুমি ভাববাণী বল, তাহাদিগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি তোমাদের কবর সকল খুলিয়া দিব, হে আমার প্রজা সকল, তোমাদের কবর হইতে তোমাদিগকে উত্থাপন করিব, এবং তোমাদিগকে ইস্রায়েল দেশে লইয়া যাইব। তখন তোমরা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, কেননা আমি তোমাদের কবর সকল খুলিয়া দিব, এবং হে আমার প্রজা সকল, তোমাদের কবর হইতে তোমাদিগকে উত্থাপন করিব। আর আমি তোমাদের মধ্যে আপন আত্মা দিব, তাহাতে তোমরা জীবিত হইবে; এবং আমি তোমাদের দেশে তোমাদিগকে বসাইব, তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমি সদাপ্রভু ইহা বলিয়াছি, এবং ইহা সিদ্ধ করিয়াছি; সদাপ্রভু এই কথা বলেন। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি আপনার জন্য একখানি কাষ্ঠ লইয়া তাহার উপরে এই কথা লিখ, ‘যিহূদার জন্য, এবং তাহার সখা ইস্রায়েল-সন্তানদের জন্য।’ পরে আর একখানি কাষ্ঠ লইয়া তাহার উপরে লিখ, ‘যোষেফের জন্য, ইহা ইফ্রয়িমের ও তাহার সখা সমস্ত ইস্রায়েল-কুলের কাষ্ঠ।’ পরে সেই দুইখানি কাষ্ঠ পরস্পর যোড়া দিয়া তোমার জন্য একটি কাষ্ঠ কর, দুইখানি তোমার হস্তে একীভূত হউক। আর যখন তোমার জাতির সন্তানেরা তোমাকে বলিবে, ‘ইহাতে আপনার অভিপ্রায় কি, তাহা কি আমাদিগকে জানাইবেন না?’ তখন তুমি তাহাদিগকে বলিও, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, ইফ্রয়িমের হস্তে যোষেফের যে কাষ্ঠ আছে, আমি তাহা গ্রহণ করিব, ও তাহার সখা ইস্রায়েলের বংশদিগকে গ্রহণ করিব, তাহাদিগকে উহার অর্থাৎ যিহূদার কাষ্ঠের সহিত যোড়া দিব, এবং তাহাদিগকে একটি কাষ্ঠ করিব, তাহাতে সে সকল আমার হস্তে একীভূত হইবে। আর তুমি সেই যে দুই কাষ্ঠে লিখিবে, তাহা তাহাদের সাক্ষাতে তোমার হস্তে থাকিবে। আর তুমি তাহাদিগকে বলিও, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, ইস্রায়েল-সন্তানেরা যেখানে যেখানে গমন করিয়াছে, আমি তথাকার জাতিগণের মধ্য হইতে তাহাদিগকে গ্রহণ করিব, এবং চারিদিক্‌ হইতে তাহাদিগকে একত্র করিয়া তাহাদের দেশে লইয়া যাইব। আর আমি সেই দেশে, ইস্রায়েলের পর্ব্বতসমূহে, তাহাদিগকে একই জাতি করিব, ও একই রাজা তাহাদের সকলের রাজা হইবেন; তাহারা আর দুই জাতি হইবে না, আর কখনও দুই রাজ্যে বিভক্ত হইবে না। আর তাহারা আপনাদের পুত্তলি ও জঘন্য বস্তু দ্বারা এবং আপনাদের কোন অধর্ম্ম দ্বারা আপনাদিগকে আর অশুচি করিবে না; হাঁ, যে সকল স্থানে তাহারা পাপ করিয়াছে, তাহাদের সেই সকল বাসস্থান হইতে আমি তাহাদিগকে নিস্তার করিব, এবং তাহাদিগকে শুচি করিব; তাহাতে তাহারা আমার প্রজা হইবে, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব। আর আমার দাস দায়ূদ তাহাদের উপরে রাজা হইবেন; তাহাদের সকলের এক পালক হইবে, এবং তাহারা আমার শাসনপথে চলিবে, আর আমার বিধিকলাপ রক্ষা করিয়া তদনুযায়ী আচরণ করিবে। আর আমি আপন দাস যাকোবকে যে দেশ দিয়াছি, যাহার মধ্যে তোমাদের পিতৃপুরুষেরা বাস করিত, সেই দেশে তাহারা বাস করিবে, তাহারা ও তাহাদের পুত্রপৌত্রগণ চিরকাল বাস করিবে এবং আমার দাস দায়ূদ চিরকালের জন্য তাহাদের অধ্যক্ষ হইবেন। আর আমি তাহাদের জন্য শান্তির এক নিয়ম স্থির করিব; তাহাদের সহিত তাহা চিরস্থায়ী নিয়ম হইবে; আমি তাহাদিগকে বসাইব ও বাড়াইব, এবং আপন ধর্ম্মধাম চিরকালের জন্য তাহাদের মধ্যে স্থাপন করিব। আর আমার আবাস তাহাদের উপরে অবস্থিতি করিবে, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে। তখন আমি যে ইস্রায়েলের পবিত্রকারী সদাপ্রভু, তাহা জাতিগণ জানিবে, কেননা তখন আমার ধর্ম্মধাম তাহাদের মধ্যে চিরকাল থাকিবে। আর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি রোশের, মেশকের ও তূবলের অধ্যক্ষ মাগোগ দেশীয় গোগের দিকে মুখ রাখ, ও তাহার বিরুদ্ধে ভাববাণী বল, তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে গোগ, রোশের, মেশকের ও তূবলের অধ্যক্ষ, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; এবং তোমাকে এদিক্‌ ওদিক্‌ ফিরাইব, ও তোমার হনূ ফুঁড়িব, আর তোমাকে ও তোমার সমস্ত সৈন্যকে, অশ্বগণকে ও পূর্ণ সজ্জাপরিহিত সমস্ত অশ্বারোহীকে, ঢাল ও ফলকধারী মহাসমাজকে, খড়্‌গহস্ত সমস্ত লোককে বাহিরে আনিব। পারস্য, কূশ ও পূট তাহাদের সঙ্গী হইবে; ইহারা সকলে ঢাল ও শিরস্ত্রাণধারী; গোমর ও তাহার সকল সৈন্যদল, উত্তরদিকের প্রান্তবাসী তোগর্ম্মের কুল ও তাহার সকল সৈন্যদল এই নানা মহাজাতি তোমার সঙ্গী হইবে। প্রস্তুত হও, আপনাকে প্রস্তুত কর—তুমি ও তোমার নিকটে সমাগত তোমার সমস্ত সমাজ—এবং তুমি তাহাদের রক্ষক হও। বহুদিন অতীত হইলে তোমার তত্ত্ব লওয়া যাইবে; শেষের বৎসরসমূহে তুমি এই দেশে, খড়্‌গ হইতে পুনরানীত এবং অনেক জাতি হইতে সংগৃহীত লোকদের নিকটে, ইস্রায়েলের চিরোৎসন্ন পর্ব্বতসমূহে আসিবে; তাহারা জাতিগণের মধ্য হইতে বাহিরে আনীত হইয়াছে, এবং তাহারা সকলেই নির্ভয়ে বাস করিবে। কিন্তু তুমি উঠিবে, ঝঞ্ঝার ন্যায় আসিবে, মেঘের ন্যায় তুমি ও তোমার সহিত তোমার সকল সৈন্যদল ও অনেক জাতি সেই দেশ আচ্ছাদন করিবে। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সেই দিন নানা বিষয় তোমার মনে পড়িবে, এবং তুমি অনিষ্টের সঙ্কল্প করিবে। তুমি কহিবে, আমি সেই অপ্রাচীর গ্রামপূর্ণ দেশের বিরুদ্ধে যাত্রা করিব, আমি সেই শান্তিযুক্ত লোকদের কাছে যাইব। তাহারা নির্ভয়ে বাস করিতেছে; তাহারা সকলে প্রাচীরহীন স্থানে বাস করিতেছে; এবং তাহাদের অর্গল কি কবাট নাই। [তোমার অভিপ্রায় এই] যে, লুট কর ও দ্রব্য হরণ কর, [পূর্ব্বে] উৎসন্ন সেই বসতিস্থান সকলের প্রতি এবং জাতিগণের মধ্য হইতে সংগৃহিত, আর পশু ও ধন প্রাপ্ত এবং পৃথিবীর নাভিনিবাসী জাতির প্রতি হস্ত বিস্তার কর। শিবা, দদান ও তর্শীশের বণিকগণ এবং তথাকার সকল যুবসিংহ তোমাকে বলিবে, তুমি কি লুট করিবার জন্য আসিলে? দ্রব্য হরণার্থে কি আপনার নিকটে তোমার এই জনসমাজকে একত্র করিলে? স্বর্ণ ও রৌপ্য লইয়া যাওয়া, পশু ও ধন হরণ করা, বিস্তর লুট করা, কি তোমার অভিপ্রায়? অতএব, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ভাববাণী বল, গোগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সেই দিন যখন আমার প্রজা ইস্রায়েল নির্ভয়ে বাস করিবে, তখন তুমি কি তাহা জ্ঞাত হইবে না? আর তুমি আপন স্থান হইতে, উত্তরদিকের প্রান্ত হইতে, আসিবে, এবং অনেক জাতি তোমার সঙ্গে আসিবে; তাহারা সকলে ঘোড়ায় চড়িয়া আসিবে, মহাসমাজ ও বিক্রমী সৈন্যসামন্ত হইবে। আর তুমি মেঘের ন্যায় দেশ আচ্ছাদন করিবার জন্য আমার প্রজা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যাত্রা করিবে; উত্তরকালে এইরূপ ঘটিবে; আমি তোমাকে আমার দেশের বিরুদ্ধে আনিব, যেন জাতিগণ আমাকে জানিতে পারে, কেননা তখন, হে গোগ, আমি তাহাদের দৃষ্টিগোচরে তোমাতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি কি সেই ব্যক্তি, যাহার বিষয়ে আমি পূর্ব্বকালে আমার দাসগণ দ্বারা, অর্থাৎ যাহারা সেই সময়ে অনেক বৎসর ব্যাপিয়া ভাববাণী বলিত, সেই ইস্রায়েলীয় ভাববাদিগণ দ্বারা এই কথা কহিতাম যে, আমি তাহাদের বিরুদ্ধে তোমাকে আনাইব? সেই দিন যখন গোগ ইস্রায়েল-দেশের বিরুদ্ধে আসিবে, তখন আমার কোপাগ্নি আমার নাসিকায় উঠিবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। কারণ আমি নিজ অন্তর্জ্বালায় ও রোষানলে বলিয়াছি, অবশ্য সেই দিন ইস্রায়েলে-দেশে মহাকম্প হইবে। তাহাতে সমুদ্রের মৎসগণ, আকাশের পক্ষিগণ, বনের পশুগণ, ভূচর সরীসৃপ সকল এবং ভূতলস্থ মনুষ্য সকল আমার সাক্ষাতে কম্পমান হইবে, পর্ব্বত সকল উৎপাটিত হইবে, শৈলাগ্র সকল পতিত হইবে, এবং সমস্ত প্রাচীর ভূমিসাৎ হইবে। আর আমি আপনার সকল পর্ব্বতে তাহার বিরুদ্ধে খড়্‌গ আহ্বান করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; প্রত্যেকের খড়্‌গ তাহার ভ্রাতার বিরুদ্ধ হইবে। আর আমি মহামারী ও রক্ত দ্বারা বিচারে তাহার সহিত বিবাদ করিব, এবং তাহার উপরে, তাহার সকল সৈন্যদলের উপরে ও তাহার সঙ্গী অনেক জাতির উপরে প্লাবনকারী ধারাসম্পাত ও বড় বড় করকা, অগ্নি ও গন্ধক বর্ষণ করিব। আর আমি আপনার মহত্ত্ব ও পবিত্রতা প্রকাশ করিব, বহুসংখ্যক জাতির সাক্ষাতে আপনার পরিচয় দিব; তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি গোগের বিরুদ্ধে ভাববাণী বল, তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে গোগ! রোশের, মেশকের ও তূবলের অধিপতি, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ। আমি তোমাকে এদিক্‌ ওদিক ফিরাইব, তোমাকে চালাইব, উত্তরদিকের প্রান্ত হইতে তোমাকে আনাইব, এবং ইস্রায়েলের পর্ব্বতসমূহে তোমাকে উপস্থিত করিব। আর আমি আঘাত করিয়া তোমার ধনু তোমার বাম হস্ত হইতে খসাইব, ও তোমার দক্ষিণ হস্ত হইতে তোমার তীর সকল নিপাত করিব। ইস্রায়েলের পর্ব্বতসমূহে তুমি, তোমার সকল সৈন্যদল ও তোমার সঙ্গী জাতিগণ পতিত হইবে; আমি তোমাকে কবলিত হইবার জন্য সর্ব্বজাতীয় হিংস্র পক্ষী ও বনপশুদের কাছে দিব। তুমি মাঠে পড়িয়া থাকিবে, কেননা আমি ইহা কহিলাম; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর আমি মাগোগের মধ্যে ও নিশ্চিন্ত উপকূল-নিবাসীদের মধ্যে অগ্নি প্রেরণ করিব, তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আর আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের মধ্যে আপন পবিত্র নাম জ্ঞাত করিব, আমার পবিত্র নাম আর অপবিত্র হইতে দিব না; তাহাতে জাতিগণ জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের মধ্যে পবিত্রতম। দেখ, ইহা আসিতেছে ও সিদ্ধ হইবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; এ সেই দিন, যে দিনের কথা আমি বলিয়াছি। তখন ইস্রায়েলের সকল নগর-নিবাসী লোকেরা বাহিরে যাইবে, এবং ঢাল ও ফলক, ধনু ও বাণ, এবং যষ্টি ও শূল, এই সকল অস্ত্রশস্ত্র লইয়া অগ্নি জ্বালাইবে ও দাহ করিবে; তাহারা সাত বৎসর পর্য্যন্ত সেই সকল লইয়া অগ্নি জ্বালাইবে। তাহারা মাঠ হইতে কাষ্ঠ আনিবে না, বনের বৃক্ষ কাটিবে না; কেননা তাহারা সেই অস্ত্রশস্ত্র লইয়া অগ্নি জ্বালাইবে; তাহারা তাহাদের লুটকারীদের ধন লুট করিবে, ও যাহারা তাহাদের সম্পত্তি অপহরণ করিয়াছিল, তাহাদের সম্পত্তি অপহরণ করিবে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর সেই দিন আমি ইস্রায়েলের মধ্যে গোগকে কবরস্থান দিব, তাহা সমুদ্রের পূর্ব্বদিক্‌স্থ পথিকদের উপত্যকা; এবং তাহা পথিকদের গতি রোধ করিবে; সেই স্থানে লোকে গোগকে ও তাহার সমস্ত লোকারণ্যকে কবর দিবে, এবং তাহার নাম রাখিবে গে-হামোন-গোগ [গোগীয় লোকারণ্যের উপত্যকা]। দেশ শুচি করিবার নিমিত্ত ইস্রায়েল-কুল তাহাদিগকে কবর দিতে সাত মাস ব্যস্ত থাকিবে। আর দেশের সকল লোক তাহাদিগকে কবর দিবে, এবং আমার নিজ গৌরব প্রকাশ করিবার দিনে সেই কর্ম্ম তাহাদের পক্ষে যশস্কর হইবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর যাহারা নিত্য কার্য্যে ব্যাপৃত থাকিবে, তাহাদিগকে তাহারা পৃথক করিয়া দিবে, উহারা দেশ পর্য্যটন করিবে, পর্য্যটনকারীদের সঙ্গে ভূমির পৃষ্ঠে অবশিষ্ট সকলকে দেশ শুচি করণার্থে কবর দিবে; সপ্তম মাসের শেষে তাহারা অনুসন্ধান করিবে। আর সেই দেশপর্য্যটনকারীরা পর্য্যটন করিবে; এবং যখন কেহ মনুষ্যের অস্থি দেখে, তখন তাহার পার্শ্বে এক চিহ্ন গাঁথিবে; পরে যাহারা কবর দেয় গে-হামোন-গোগে তাহারা তাহার কবর দিবে। আবার এক নগরের নাম হামোনা [লোকারণ্য] হইবে; এইরূপে তাহারা দেশ শুচি করিবে। আর হে মনুষ্য-সন্তান, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি সর্ব্বজাতীয় পক্ষিগণকে এবং সমস্ত বনপশুকে বল, তোমরা একত্র হইয়া আইস, সর্ব্বদিক্‌ হইতে আমার যজ্ঞে সমবেত হও, কেননা আমি ইস্রায়েলের পর্ব্বতগণের উপরে তোমাদের জন্য এক মহাযজ্ঞ করিব; তাহাতে তোমরা মাংস খাইবে ও রক্ত পান করিবে। তোমরা বীরগণের মাংস খাইবে ও ভূপতিদের রক্ত পান করিবে, তাহারা সকলে বাশনদেশীয় হৃষ্টপুষ্ট পুংমেষ, মেষবৎস, ছাগ ও বৃষস্বরূপ। আর আমি তোমাদের জন্য যে যজ্ঞ প্রস্তুত করিয়াছি, তাহাতে তোমরা তৃপ্ত হওয়া পর্য্যন্ত মেদ ভোজন ও মত্ত হওয়া পর্য্যন্ত রক্ত পান করিবে। আর আমার মেজে অশ্ব, রথ, বীর ও সর্ব্ববিধ যোদ্ধৃগণকে খাইয়া তাহারা তৃপ্ত হইবে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর আমি জাতিগণের মধ্যে আপন গৌরব স্থাপন করিব, এবং আমি যে শাসন করিব ও তাহাদিগেতে যে হস্তার্পণ করিব, তাহা সমস্ত জাতি দেখিবে। আর সেই দিনে ও তৎপশ্চাতে ইস্রায়েল-কুল জানিবে যে, আমি সদাপ্রভুই তাহাদের ঈশ্বর। আর জাতিগণ জানিবে যে, ইস্রায়েল-কুল নিজ অপরাধ প্রযুক্ত নির্ব্বাসিত হইয়াছিল, বস্তুতঃ তাহারা আমার বিরুদ্ধে সত্যলঙ্ঘন করিয়াছিল, তাই আমি তাহাদের হইতে আপন মুখ লুকাইয়াছিলাম, ও তাহাদিগকে বিপক্ষগণের হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলাম, আর তাহারা সকলে খড়্‌গাঘাতে পতিত হইয়াছিল। তাহাদের যেরূপ অশুচিতা ও যেরূপ অধর্ম্ম, আমি তাহাদের প্রতি তদ্রূপ ব্যবহার করিয়াছিলাম; আমি তাহাদের হইতে আপন মুখ লুকাইয়াছিলাম। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এখন আমি যাকোবের বন্দি-দশা ফিরাইব, সমস্ত ইস্রায়েল-কুলের প্রতি করুণা করিব, এবং আমার পবিত্র নামের পক্ষে উদ্যোগী হইব। আর তাহারা আপনাদের অপমান ও আমার বিরুদ্ধে কৃত আপনাদের সমস্ত সত্যলঙ্ঘনের ভার বহিবে, যখন তাহারা নির্ভয়ে আপন দেশে বাস করিবে, আর কেহ তাহাদিগকে উদ্বিগ্ন করিবে না, যখন আমি জাতিগণের মধ্য হইতে তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিব ও তাহাদের শত্রুদিগের সকল দেশ হইতে তাহাদিগকে সংগ্রহ করিব, এবং বহুসংখ্যক জাতির সাক্ষাতে তাহাদিগেতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব। তখন তাহারা জানিবে যে, আমিই তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, কেননা আমি জাতিগণের নিকটে তাহাদিগকে নির্ব্বাসিত করিয়াছিলাম, আর আমি তাহাদেরই দেশে তাহাদিগকে একত্র করিয়াছি, তাহাদের মধ্যে কাহাকেও আর তথায় অবশিষ্ট রাখিব না। আর আমি তাহাদের হইতে আপন মুখ আর লুকাইব না, কারণ আমি ইস্রায়েল-কুলের উপরে নিজ আত্মাকে ঢালিয়া দিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আমাদের নির্ব্বাসের পঞ্চবিংশ বৎসরে, বৎসরের আরম্ভে, মাসের দশম দিনে, অর্থাৎ নগর নিপাতিত হইবার পরে চতুর্দ্দশ বৎসরের সেই দিবসে, সদাপ্রভু আমার উপরে হস্তার্পণ করিলেন, ও আমাকে সেই স্থানে উপস্থিত করিলেন। তিনি ঈশ্বরীয় দর্শনযোগে আমাকে ইস্রায়েল-দেশে উপস্থিত করিলেন, ও অতিশয় উচ্চ কোন এক পর্ব্বতে বসাইলেন; তাহার উপরে দক্ষিণদিকে যেন এক নগরের গাঁথনি ছিল। তিনি আমাকে সেই স্থানে লইয়া গেলেন, আর দেখ, এক পুরুষ; তাঁহার আভা পিত্তলের আভার ন্যায়, তাঁহার হস্তে কার্পাসের এক রজ্জু ও পরিমাণার্থক এক নল ছিল, এবং তিনি দ্বারে দাঁড়াইয়া ছিলেন। পরে সেই পুরুষ আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, আমি তোমাকে যাহা যাহা দেখাইব, সেই সকল তুমি স্বচক্ষে নিরীক্ষণ কর, স্বকর্ণে শ্রবণ কর ও তাহাতে তোমার চিত্ত নিবেশ কর, কেননা আমি যেন তোমাকে সে সকল দেখাই, সেই জন্যই তুমি এই স্থানে আনীত হইলে; তুমি যাহা যাহা দেখিবে, তাহা সকলই ইস্রায়েল-কুলকে জ্ঞাত করিও। আর দেখ, গৃহের বাহিরে চারিদিকে এক প্রাচীর, আর সেই পুরুষের হস্তে পরিমাণার্থক এক নল, তাহা ছয় হস্ত দীর্ঘ, ইহার প্রত্যেক হস্ত এক হস্ত চারি অঙ্গুলি পরিমিত। পরে তিনি ভিত্তির বেধ এক নল ও উচ্চতা এক নল মাপিলেন। পরে তিনি পূর্ব্বাভিমুখ দ্বারে আসিলেন, তাহার সোপান দিয়া উঠিলেন, এবং দ্বারের গোবরাট মাপিলেন; তাহার প্রস্থ এক নল পরিমিত; এবং অন্য গোবরাট, তাহার প্রস্থ এক নল পরিমিত। আর প্রত্যেক বাসা দীর্ঘে এক নল ও প্রস্থে এক নল পরিমিত; এক এক বাসার মধ্যে পাঁচ পাঁচ হস্ত ব্যবধান ছিল; এবং দ্বারের বারাণ্ডার পার্শ্বে গৃহের দিকে দ্বারের গোবরাট এক নল পরিমিত ছিল। আর তিনি গৃহের দিকে দ্বারের বারাণ্ডা এক নল মাপিলেন। পরে তিনি দ্বারের বারাণ্ডা আট হস্ত এবং তাহার উপস্তম্ভ সকল দুই হস্ত মাপিলেন; দ্বারের বারাণ্ডা গৃহের দিকে ছিল। আর পূর্ব্বাভিমুখ দ্বারের বাসা এক পার্শ্বে তিনটী, অন্য পার্শ্বেও তিনটী ছিল; তিনের একই পরিমাণ ছিল; এবং এপার্শ্বে ওপার্শ্বে স্থিত উপস্তম্ভ সকলেরও একই পরিমাণ ছিল। পরে তিনি দ্বারের প্রবেশস্থানের প্রস্থ দশ হস্ত মাপিলেন; আর দ্বারের দীর্ঘতা তের হস্ত পরিমিত ছিল। আর বাসা সকলের সম্মুখে এক হস্ত পরিমিত প্রান্ত ছিল; এবং অন্য পার্শ্বেও এক হস্ত পরিমিত প্রান্ত ছিল; এবং প্রত্যেক বাসা এক পার্শ্বে ছয় হস্ত পরিমিত, এবং অন্য পার্শ্বে ছয় হস্ত পরিমিত ছিল। পরে তিনি এক বাসার ছাদ অবধি অপর বাসার ছাদ পর্য্যন্ত দ্বারের প্রস্থ পঁচিশ হস্ত মাপিলেন, এক প্রবেশ-দ্বার অপর প্রবেশ-দ্বারের সম্মুখে ছিল। পরে তিনি উপস্তম্ভ সকল ষাট হস্ত করিলেন; এবং প্রাঙ্গণ উপস্তম্ভগুলি পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইল, তাহার চারিদিকে দ্বার ছিল। আর প্রবেশস্থানে দ্বারের অগ্রদেশ হইতে অন্তঃস্থ দ্বারের বারাণ্ডায় অগ্রদেশ পর্য্যন্ত পঞ্চাশ হস্ত ছিল। আর দ্বারের ভিতরে সর্ব্বদিকে বাসা সকলের ও তাহার উপস্তম্ভ সকলের জালবদ্ধ বাতায়ন ছিল, এবং তাহার মণ্ডপ সকলে তদ্রূপ ছিল; বাতায়ন সকল ভিতরে চারিদিকে ছিল; এবং উপস্তম্ভ সকলে খর্জ্জুর বৃক্ষের আকৃতি ছিল। পরে তিনি আমাকে বহিঃপ্রাঙ্গণে আনিলেন; আর দেখ, সেই স্থানে অনেক কুঠরী ও চারিদিকে প্রাঙ্গণের জন্য নির্ম্মিত ও প্রস্তরবাঁধা ভূমি; সেই প্রস্তরবাঁধা ভূমির উপরে ত্রিশ কুঠরী। সেই প্রস্তরবাঁধা ভূমি দ্বার সকলের বগলে দ্বারের দৈর্ঘ্যানুযায়ী ছিল, ইহা নিম্নতর প্রস্তরবাঁধা ভূমি। পরে তিনি দ্বারের নিম্নতন অগ্রদেশ হইতে অন্তঃপ্রাঙ্গণের অগ্রদেশ পর্য্যন্ত বাহিরে প্রস্থ মাপিলেন, পূর্ব্বদিকে ও উত্তরদিকে তাহা এক শত হস্ত। পরে তিনি বহিঃপ্রাঙ্গণের উত্তরাভিমুখ দ্বারের দীর্ঘতা ও প্রস্থ মাপিলেন। তাহার বাসা এক পার্শ্বে তিনটী ও অন্য পার্শ্বে তিনটী, এবং তাহার উপস্তম্ভ ও মণ্ডপ সকলের পরিমাণ প্রথম দ্বারের পরিমাণের তুল্য; দীর্ঘে পঞ্চাশ হস্ত ও প্রস্থে পঁচিশ হস্ত। আর তাহার বাতায়ন, মণ্ডপ ও খর্জ্জুরাকৃতি সকল পূর্ব্বাভিমুখ দ্বারের পরিমাণানুরূপ ছিল, লোকেরা সাতটী ধাপ দিয়া তাহাতে আরোহণ করিত; তৎসম্মুখে তাহার মণ্ডপ ছিল। আর উত্তরদ্বারের ও পূর্ব্বদ্বারের সম্মুখে অন্তঃপ্রাঙ্গণের দ্বার ছিল; তিনি এক দ্বার হইতে অন্য দ্বার পর্য্যন্ত এক শত হস্ত মাপিলেন। পরে তিনি আমাকে দক্ষিণদিকে লইয়া গেলেন, আর দেখ, দক্ষিণদিকে এক দ্বার; আর তিনি তাহার উপস্তম্ভ ও মণ্ডপ সকল মাপিলেন, তাহার পরিমাণ পূর্ব্বোক্ত পরিমাণের তুল্য। আর পূর্ব্বোক্ত বাতায়নের ন্যায় চারিদিকে তাহার ও তাহার মণ্ডপ সকলেরও বাতায়ন ছিল; দীর্ঘে পঞ্চাশ হস্ত ও প্রস্থে পঁচিশ হস্ত। আর তাহাতে আরোহণ করিবার সাতটী ধাপ ছিল, ও সেগুলির সম্মুখে তাহার মণ্ডপ ছিল; এবং তাহার উপস্তম্ভে এক দিকে এক, ও অন্য দিকে এক, এইরূপ দুই খর্জ্জুরাকৃতি ছিল। আর দক্ষিণদিকে অন্তঃপ্রাঙ্গণের এক দ্বার ছিল; পরে তিনি দক্ষিণাভিমুখ এক দ্বার হইতে অন্য দ্বার পর্য্যন্ত এক শত হস্ত মাপিলেন। পরে তিনি আমাকে দক্ষিণদ্বার দিয়া অন্তঃপ্রাঙ্গণের মধ্যে আনিলেন; এবং পূর্ব্বোক্ত পরিমাণ অনুসারে দক্ষিণদ্বার মাপিলেন। আর তাহার বাসা, উপস্তম্ভ ও মণ্ডপ সকল ঐ পরিমাণের অনুরূপ ছিল; এবং চারিদিকে তাহার ও তাহার মণ্ডপের বাতায়ন ছিল; [দ্বার] দীর্ঘে পঞ্চাশ হস্ত, ও প্রস্থে পঁচিশ হস্ত। আর চারিদিকে মণ্ডপ ছিল, তাহা পঁচিশ হস্ত দীর্ঘ ও পাঁচ হস্ত প্রস্থ। আর তাহার মণ্ডপগুলি বহিঃপ্রাঙ্গণের পার্শ্বে, এবং তাহার উপস্তম্ভে খর্জ্জুরাকৃতি ছিল; এবং তাহার আরোহণীর আটটী ধাপ। পরে তিনি আমাকে পূর্ব্বদিকে অন্তঃপ্রাঙ্গণের মধ্যে আনিলেন; এবং ঐ পরিমাণ অনুসারে দ্বার মাপিলেন। তাহার বাসা, উপস্তম্ভ ও মণ্ডপগুলি ঐ পরিমাণের অনুরূপ ছিল; এবং চারিদিকে তাহার ও তাহার মণ্ডপের বাতায়ন ছিল; দীর্ঘে পঞ্চাশ হস্ত ও প্রস্থে পঁচিশ হস্ত। আর তাহার মণ্ডপগুলি বহিঃপ্রাঙ্গণের পার্শ্বে ছিল, এবং এদিকে ওদিকে তাহার উপস্তম্ভে খর্জ্জুরাকৃতি ছিল, এবং তাহার আরোহণীর আটটী ধাপ। পরে তিনি আমাকে উত্তরদ্বারে আনিলেন; এবং ঐ পরিমাণ অনুসারে তাহা মাপিলেন। তাহার বাসা, উপস্তম্ভ ও মণ্ডপগুলি এবং চারিদিকে বাতায়ন ছিল; দীর্ঘে পঞ্চাশ হস্ত ও প্রস্থে পঁচিশ হস্ত। তাহার উপস্তম্ভগুলি বহিঃপ্রাঙ্গণের পার্শ্বে, এবং এদিকে ওদিকে উপস্তম্ভে খর্জ্জুরাকৃতি ছিল; এবং তাহার আরোহণীর আটটী ধাপ। দ্বার সকলের উপস্তম্ভের নিকটে দ্বারযুক্ত এক এক কুঠরী ছিল; তথায় লোকেরা হোমবলি ধৌত করিত। আর দ্বারের বারাণ্ডায় এদিকে দুই মেজ, ওদিকে দুই মেজ ছিল, তাহার নিকটে হোমার্থক, পাপার্থক, ও দোষার্থক বলি হনন করা হইত। আর [দ্বারের] বগলে বাহিরে উত্তরদ্বারের প্রবেশস্থানে আরোহণীর কাছে দুই মেজ ছিল, আবার দ্বারের বারাণ্ডার পার্শ্ববর্ত্তী অন্য বগলে দুই মেজ ছিল। দ্বারের বগলে এদিকে চারি মেজ, ওদিকে চারি মেজ ছিল; সর্ব্বশুদ্ধ আট মেজ, তদুপরি [বলি] হনন করা হইত। আর হোমবলির জন্য চারি মেজ ছিল, তাহা তক্ষিত প্রস্তরে নির্ম্মিত, এবং দেড় হস্ত দীর্ঘ, দেড় হস্ত প্রস্থ ও এক হস্ত উচ্চ ছিল; হোমবলির ও অন্য বলির পশু যদ্দ্বারা হনন করা হইত, সেই সকল অস্ত্র তথায় রাখা যাইত। আর চারি চারি অঙ্গুলি দীর্ঘ আঁকড়া চারিদিকে ভিত্তিতে মারা ছিল, এবং মেজ সকলের উপরে উপহারের মাংস রাখা যাইত। আর ভিতরের দ্বারের বাহিরে অন্তঃপ্রাঙ্গণে গায়কদের কুঠরী সকল ছিল, একটী ছিল উত্তরদ্বারের বগলে, সেটী দক্ষিণাভিমুখ; আর একটী ছিল পূর্ব্বদ্বারের বগলে, সেটী উত্তরাভিমুখ। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, যে যাজকেরা গৃহের রক্ষণীয় রক্ষা করে, এই দক্ষিণাভিমুখ কুঠরী তাহাদের হইবে। আর যে যাজকেরা যজ্ঞবেদির রক্ষণীয় রক্ষা করে, এই উত্তরাভিমুখ কুঠরী তাহাদের হইবে। ইহারা সাদোকের সন্তান, লেবির সন্তানদের মধ্যে ইহারাই সদাপ্রভুর পরিচর্য্যার্থে তাঁহার নিকটবর্ত্তী হয়। পরে তিনি সেই প্রাঙ্গণ মাপিলেন, তাহা এক শত হস্ত দীর্ঘ ও এক শত হস্ত প্রস্থ, চারিদিকে সমান ছিল; যজ্ঞবেদি গৃহের সম্মুখে ছিল। পরে তিনি আমাকে গৃহের বারাণ্ডায় লইয়া গিয়া সেই বারাণ্ডার উপস্তম্ভগুলি মাপিলেন; প্রত্যেকটী এদিকে পাঁচ হস্ত, ওদিকে পাঁচ হস্ত পরিমিত; এবং দ্বারের প্রস্থ এদিকে তিন হস্ত, ওদিকে তিন হস্ত পরিমিত ছিল। বারাণ্ডার দীর্ঘতা বিংশতি হস্ত ও প্রস্থ একাদশ হস্ত ছিল; এবং দশ ধাপ দিয়া লোকে তাহাতে উঠিত; আর উপস্তম্ভের নিকটে এদিকে এক স্তম্ভ, ওদিকে এক স্তম্ভ ছিল। পরে তিনি আমাকে মন্দিরের নিকটে আনিয়া উপস্তম্ভ সকল মাপিলেন; সে গুলির বিস্তার এদিকে ছয় হস্ত, ওদিকে ছয় হস্ত ছিল, ইহাই তাম্বুর বিস্তার। আর প্রবেশস্থানের বিস্তার দশ হস্ত, ও সেই প্রবেশস্থানের বগলে এদিকে পাঁচ হস্ত, ওদিকে পাঁচ হস্ত। পরে তিনি তাহার দীর্ঘতা চল্লিশ হস্ত, ও বিস্তার বিংশতি হস্ত মাপিলেন। পরে তিনি ভিতরে প্রবেশ করিয়া প্রবেশস্থানের প্রত্যেক উপস্তম্ভ দুই হস্ত, প্রবেশস্থান ছয় হস্ত ও প্রবেশস্থানের বিস্তার সাত হস্ত মাপিলেন। পরে তিনি তাহার দীর্ঘতা বিংশতি হস্ত ও মন্দিরের অগ্রদেশে তাহার প্রস্থ বিংশতি হস্ত মাপিলেন, এবং আমাকে কহিলেন, ইহাই অতি পবিত্র স্থান। পরে তিনি গৃহের ভিত্তি ছয় হস্ত, ও চারিদিকে গৃহ বেষ্টনকারী প্রত্যেক পার্শ্বস্থ কুঠরীর চারি হস্ত বিস্তার মাপিলেন। এক শ্রেণীর উপরে অন্য শ্রেণী, এইরূপে তিন শ্রেণী পার্শ্বস্থ কুঠরী, তাহার এক এক শ্রেণীতে ত্রিশ কুঠরী ছিল; এবং [গৃহের সহিত] সংলগ্ন হইবার নিমিত্ত চারিদিকের সকল পার্শ্বস্থ কুঠরীর জন্য গৃহের গায়ে এক ভিত্তি ছিল; তাহার উপরে সে সকল নির্ভর করিত, কিন্তু গৃহের ভিত্তিতে বদ্ধ ছিল না। আর উচ্চতার অনুক্রমে কুঠরী সকল উত্তর উত্তর প্রশস্ত হইয়া [গৃহ] বেষ্টন করিল, কারণ তাহা চারিদিকে ক্রমশঃ উচ্চ হইয়া গৃহ বেষ্টন করিল, এই জন্য উচ্চতার অনুক্রমে গৃহের গায়ে উত্তর উত্তর প্রশস্ত হইল; এবং নীচতম শ্রেণী হইতে মধ্য শ্রেণী দিয়া উচ্চতম শ্রেণীতে যাইবার পথ ছিল। আরও দেখিলাম, ঘরের মেজে চারিদিকে উচ্চ, পার্শ্বস্থ কুঠরীগুলি ছয় ছয় হস্ত পরিমিত সম্পূর্ণ এক এক নল। বহির্দ্দিকে পার্শ্বস্থ কুঠরী-শ্রেণীর যে ভিত্তি, তাহার পাঁচ হস্ত বেধ ছিল, এবং অবশিষ্ট [শূন্য] স্থান গৃহের পার্শ্বস্থ সেই সকল কুঠরীর স্থান ছিল। কুঠরী সকলের মধ্যে গৃহের চারিদিকে প্রত্যেক পার্শ্বে বিংশতি হস্ত প্রস্থ স্থান ছিল। আর পার্শ্বস্থ কুঠরী-শ্রেণীর দ্বার সেই শূন্য স্থানের দিকে ছিল, তাহার এক দ্বার উত্তরদিকে, অন্য দ্বার দক্ষিণদিকে ছিল; এবং চারিদিকে সেই শূন্য স্থানের বিস্তার পাঁচ হস্ত ছিল। আর ব্যবচ্ছিন্ন স্থলের সম্মুখে পশ্চিমদিকে যে গাঁথনি ছিল, তাহার বিস্তার সত্তর হস্ত ছিল, এবং চারিদিকে সেই গাঁথনির ভিত্তির বেধ পাঁচ হস্ত; এবং তাহার দীর্ঘতা নব্বই হস্ত ছিল। পরে তিনি গৃহের দীর্ঘতা এক শত হস্ত, এবং ব্যবচ্ছিন্ন স্থলের, গাঁথনির ও তাহার ভিত্তির দীর্ঘতা এক শত হস্ত মাপিলেন। আর পূর্ব্বদিকে গৃহের ও ব্যবচ্ছিন্ন স্থলের অগ্রদেশ এক শত হস্ত প্রস্থ ছিল। আর তিনি ব্যবচ্ছিন্ন স্থলের অগ্রদেশে স্থিত গাঁথনির দীর্ঘতা, অর্থাৎ উহার পশ্চাতে যাহা ছিল, তাহা এবং এদিকে ওদিকে উহার অপ্রশস্ত বারাণ্ডা এক শত হস্ত মাপিলেন, এবং ভিতর-মন্দির ও প্রাঙ্গণের বারাণ্ডা সকল [মাপিলেন]। চারিদিকে গোবরাট, জালবদ্ধ বাতায়ন এবং অপ্রশস্ত বারাণ্ডা ছিল, এক এক গোবরাটের সম্মুখে চারিদিকে কাষ্ঠের তিরস্করিণী ভূমি হইতে বাতায়ন পর্য্যন্ত ছিল; আর বাতায়নগুলি আচ্ছাদিত ছিল; আর প্রবেশস্থানের ঊর্দ্ধস্থ দেশ, অন্তর্গৃহ, বাহিরের স্থান ও সমস্ত ভিত্তি, চারিদিকে ভিতরে ও বাহিরে যাহা যাহা ছিল, সকলের বিশেষ বিশেষ পরিমাণ [নিরূপিত হইল]। আর উহাতে করূবের ও খর্জ্জুরের শিল্পকর্ম্ম ছিল, দুই দুই করূবের মধ্যে এক এক খর্জ্জুরবৃক্ষ, এবং এক এক করূবের দুই দুই মুখ ছিল। বস্তুতঃ এক পার্শ্বস্থ খর্জ্জুরের দিকে মনুষ্যের মুখ, এবং অন্য পার্শ্বস্থ খর্জ্জূরের দিকে সিংহের মুখ চারিদিকে সমস্ত গৃহে শিল্পিত ছিল। ভূমি অবধি দ্বারের উপরিভাগ পর্য্যন্ত সেই করূব ও খর্জ্জুরবৃক্ষ শিল্পিত ছিল; ইহা মন্দিরের ভিত্তি। মন্দিরের দ্বারকাষ্ঠ সকল চতুষ্কোণ, এবং পবিত্র স্থানের অগ্রদেশের আকৃতি সেই আকৃতির তুল্য ছিল। বেদি কাষ্ঠনির্ম্মিত, তিন হস্ত উচ্চ ও দুই হস্ত দীর্ঘ; এবং তাহার কোণ, পায়া ও গাত্র কাষ্ঠময় ছিল। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, ইহা সদাপ্রভুর সম্মুখস্থ মেজ। আর মন্দিরের ও ধর্ম্মধামের দুই দ্বার ছিল, এবং এক এক দ্বারের দুই দুই কবাট ছিল; দুই দুই ঘূর্ণী কবাট ছিল, অর্থাৎ এক দ্বারের দুই কবাট ও অন্য দ্বারের দুই কবাট ছিল। সেই সকলে, মন্দিরের সেই সকল কবাটে, ভিত্তির শিল্পকর্ম্মের ন্যায় করূব ও খর্জ্জুর শিল্পিত ছিল। আর বহিঃস্থ বারাণ্ডার অগ্রদেশে কাষ্ঠের ঝিলিমিলি ছিল। বারাণ্ডার দুই বগলে, তাহার এদিকে ওদিকে জালবদ্ধ বাতায়ন ও খর্জ্জূরাকৃতি ছিল। গৃহের পার্শ্বস্থ কুঠরী সকল ও ঝিলিমিলি এইরূপ ছিল। পরে তিনি আমাকে উত্তরদিক্‌স্থ পথে বহিঃপ্রাঙ্গণে লইয়া গেলেন; এবং ব্যবচ্ছিন্ন স্থলের সম্মুখে ও গাঁথনির সম্মুখে উত্তরদিক্‌স্থ কুঠরীতে লইয়া গেলেন। এক শত হস্ত দীর্ঘতার সম্মুখে উত্তরদিক্‌স্থ দ্বার ছিল, তাহার বিস্তার পঞ্চাশ হস্ত। অন্তঃপ্রাঙ্গণের বিংশতি হস্তের সম্মুখে এবং বহিঃপ্রাঙ্গণের প্রস্তরবাঁধা ভূমির সম্মুখে এক অপ্রশস্ত বারাণ্ডার অনুরূপ অন্য অপ্রশস্ত বারাণ্ডা তৃতীয় তালা পর্য্যন্ত ছিল। আর কুঠরী সকলের অগ্রে ভিতরের দিকে দশ হস্ত প্রস্থ এক শত হস্তের এক পথ ছিল, এবং সকলের দ্বার উত্তরদিকে ছিল। উপরিস্থ কুঠরীগুলি ক্ষুদ্র ছিল, কেননা গাঁথনির অধঃস্থিত ও মধ্যস্থিত কুঠরী হইতে ইহাদের স্থান অপ্রশস্ত বারাণ্ডার দ্বারা ন্যূনীকৃত ছিল। কেননা তাহাদের তিন শ্রেণী ছিল, আর প্রাঙ্গণ-স্তম্ভের সদৃশ স্তম্ভ ছিল না, এই জন্য অধঃস্থিত ও মধ্যস্থিত অপেক্ষা উপরের কুঠরীগুলি সঙ্কুচিত ছিল। আর বাহিরে কুঠরী সকলের অনুবর্ত্তী অথচ বহিঃপ্রাঙ্গণের পার্শ্বে কুঠরী সকলের অগ্রে এক বেড়া ছিল, তাহা পঞ্চাশ হস্ত দীর্ঘ। কারণ বহিঃপ্রাঙ্গণের [পার্শ্বে] কুঠরীগুলির দীর্ঘতা পঞ্চাশ হস্ত ছিল, কিন্তু দেখ, মন্দিরের অগ্রে তাহা এক শত হস্ত ছিল। বহিঃপ্রাঙ্গণ হইতে তথায় গেলে প্রবেশস্থান এই কুঠরীর নীচে পূর্ব্বদিকে পড়িত। প্রাঙ্গণের বেড়ার প্রশস্ত পার্শ্বে পূর্ব্বদিকে ব্যবচ্ছিন্ন স্থলের অগ্রে এবং গাঁথনির অগ্রে কুঠরী-শ্রেণী ছিল। আর তাহাদের অগ্রে যে পথ ছিল, তাহার আকার উত্তরদিক্‌স্থ কুঠরী সকলের ন্যায় ছিল; তাহার দীর্ঘতা অনুযায়ী বিস্তার ছিল; আর তাহাদের সমস্ত নির্গমস্থান, তাহাদের গঠন ও দ্বারের অনুযায়ী ছিল। দক্ষিণদিকের কুঠরীগুলির দ্বার সকলের ন্যায় এক দ্বার পথের মুখে ছিল; সেই পথ তথাকার বেড়ার অগ্রে, যে আসিত, তাহার পূর্ব্বদিকে পড়িত। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, ব্যবচ্ছিন্ন স্থলের অগ্রে উত্তর ও দক্ষিণদিকের যে সকল কুঠরী আছে, সেগুলি পবিত্র কুঠরী। যে যাজকেরা সদাপ্রভুর নিকটে উপস্থিত হয়, তাহারা সেই স্থানে অতি পবিত্র দ্রব্য সকল ভোজন করিবে; সেই স্থানে তাহারা অতি পবিত্র দ্রব্য সকল, এবং ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, পাপার্থক বলি ও দোষার্থক বলি রাখিবে, কেননা স্থানটী পবিত্র। যে সময় যাজকেরা প্রবেশ করে, সেই সময়ে তাহারা পবিত্র স্থান হইতে বহিঃপ্রাঙ্গণে বাহির হইবে না; তাহারা যে যে বস্ত্র পরিয়া পরিচর্য্যা করে, সেই সকল বস্ত্র তথায় রাখিবে, কেননা সে সকল পবিত্র; তাহারা অন্য বস্ত্র পরিধান করিবে, পরে প্রজাগণের স্থানে গমন করিবে। ভিতরের গৃহের পরিমাপ সমাপ্ত করিলে পর তিনি আমাকে পূর্ব্বাভিমুখ দ্বারের দিকে বাহিরে লইয়া গেলেন, এবং তাহার চারিদিক্‌ মাপিলেন। তিনি মাপিবার নল দিয়া পূর্ব্ব পার্শ্ব মাপিলেন, মাপিবার নলে তাহা সর্ব্বশুদ্ধ পাঁচ শত নল পরিমিত। তিনি উত্তর পার্শ্ব মাপিলেন, মাপিবার নলে তাহা সর্ব্বশুদ্ধ পাঁচ শত নল পরিমিত। তিনি দক্ষিণ পার্শ্ব মাপিলেন, মাপিবার নলে তাহা পাঁচ শত নল পরিমিত। তিনি পশ্চিম পার্শ্বের দিকে ফিরিয়া মাপিবার নল দিয়া পাঁচ শত নল মাপিলেন। এইরূপে তিনি তাহার চারিপার্শ্ব মাপিলেন; যাহা পবিত্র ও যাহা সামান্য, তাহার মধ্যে বিচ্ছেদ করিবার জন্য তাহার চারিদিকে প্রাচীর ছিল; তাহা পাঁচ শত নল দীর্ঘ ও পাঁচ শত নল প্রস্থ ছিল। পরে তিনি আমাকে পূর্ব্বাভিমুখ দ্বারের নিকটে আনিলেন; আর দেখ, পূর্ব্বদিক্‌ হইতে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের প্রতাপ আসিল; তাঁহার শব্দ জলরাশির শব্দের ন্যায়, এবং তাঁহার প্রতাপে পৃথিবী দীপ্তিময় হইল। আমি যে দৃশ্য দেখিয়াছিলাম, অর্থাৎ যখন নগরের বিনাশ করিতে আসিয়াছিলাম, তখন যে দৃশ্য দেখিয়াছিলাম, এ তদ্রূপ দৃশ্য, আর কবার নদীর তীরে যে দৃশ্য দেখিয়াছিলাম, তদ্রূপ দৃশ্য; তখন আমি উপুড় হইয়া পড়িলাম। আর সদাপ্রভুর প্রতাপ পূর্ব্বাভিমুখ দ্বারের পথ দিয়া গৃহে প্রবেশ করিল। পরে আত্মা আমাকে উঠাইয়া অন্তঃপ্রাঙ্গণে আনিলেন; আর দেখ, গৃহ সদাপ্রভুর প্রতাপে পরিপূর্ণ হইল। আর আমি শুনিলাম, গৃহের মধ্য হইতে এক জন আমার কাছে কথা বলিতেছেন, তখন এক ব্যক্তি আমার পার্শ্বে দণ্ডায়মান হইলেন। তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, ইহা আমার সিংহাসনের স্থান, এবং ইহাই আমার পদতল রাখিবার স্থান, এই স্থানে ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে আমি চিরকাল বাস করিব; এবং ইস্রায়েল-কুল, তাহারা বা তাহাদের রাজগণ, আপন আপন ব্যভিচার দ্বারা ও তাহাদের উচ্চস্থলীতে রাজগণের শব দ্বারা আমার পবিত্র নাম আর অশুচি করিবে না। তাহারা আমার গোবরাটের কাছে তাহাদের গোবরাট, ও আমার চৌকাঠের পার্শ্বে তাহাদের চৌকাঠ দিত, এবং আমার ও তাহাদের মধ্যে কেবল এক ভিত্তি ছিল; আর তাহারা আপনাদের কৃত জঘন্য ক্রিয়া দ্বারা আমার পবিত্র নাম অশুচি করিত, এই নিমিত্ত আমি নিজ ক্রোধানলে তাহাদিগকে গ্রাস করিয়াছি। এখন তাহারা আপনাদের ব্যভিচার ও আপনাদের রাজাদের শব আমা হইতে দূর করুক, তাহাতে আমি চিরকাল তাহাদের মধ্যে বাস করিব। হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ইস্রায়েল-কুলকে এই গৃহের কথা জ্ঞাত কর, যেন তাহারা আপন আপন অপরাধের জন্য লজ্জিত হয়, আর তাহারা ইহার সকল স্থান পরিমাণ করুক। যদি তাহারা আপনাদের কৃত সমস্ত কর্ম্ম প্রযুক্ত লজ্জিত হয়, তবে তুমি তাহাদিগকে গৃহের আকার, গঠন, নির্গমন-স্থান ও প্রবেশ-স্থান সকল, তাহার সমস্ত আকৃতি ও সমস্ত বিধি, তাহার সমস্ত আকৃতি ও সমস্ত ব্যবস্থা জ্ঞাত কর, আর তাহাদের সাক্ষাতে লিখ; এবং তাহারা তাহার সমস্ত আকৃতি ও সমস্ত বিধি রক্ষা করিয়া তদনুযায়ী কর্ম্ম করুক। গৃহের ব্যবস্থা এই; পর্ব্বতের শিখরে চারিদিকে তাহার সমস্ত পরিসীমা অতি পবিত্র। দেখ, ইহাই সেই গৃহের ব্যবস্থা। হস্তানুসারে যজ্ঞবেদির পরিমাণ সকল এই। প্রত্যেক হস্ত এক হস্ত চারি অঙ্গুলি পরিমিত। তাহার মূল এক হস্ত [উচ্চ] ও এক হস্ত প্রস্থ, এবং চারিদিকে তাহার প্রান্তে স্থিত নিকাল এক বিতস্তি পরিমিত; ইহা যজ্ঞবেদির তল। আর ভূমিতে স্থিত মূল অবধি অধঃস্থ সোপানাকৃতি পর্য্যন্ত দুই হস্ত ও তাহার পরিসর এক হস্ত; আবার সেই ক্ষুদ্র সোপানাকৃতি অবধি বৃহৎ সোপানাকৃতি পর্য্যন্ত চারি হস্ত ও তাহার প্রস্থ এক হস্ত। আর উপরিস্থ বেদি চারি হস্ত; এবং পুণ্যচুল্লী হইতে তাহার ঊর্দ্ধে চারি শৃঙ্গ হইবে। আর সেই পুণ্যচুল্লী বারো হস্ত দীর্ঘ ও বারো হস্ত প্রস্থ, চারিদিকে সমান হইবে। সোপানটী চারি পার্শ্বে চৌদ্দ হস্ত দীর্ঘ ও চৌদ্দ হস্ত প্রস্থ, এবং তাহার চারিদিকে স্থিত নিকাল অর্দ্ধ হস্ত পরিমিত, এবং তাহার মূল চারিদিকে এক হস্ত পরিমিত হইবে, এবং তাহার ধাপগুলি পূর্ব্বাভিমুখ হইবে। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সেই যজ্ঞবেদিতে হোমবলিদান ও রক্ত প্রক্ষেপ করণার্থে যে দিন তাহা প্রস্তুত করা যাইবে, সেই দিনের জন্য তৎসংক্রান্ত বিধি এই। প্রভু সদাপ্রভু কহেন, সাদোক বংশজাত যে লেবীয় যাজকগণ আমার পরিচর্য্যা করিতে আমার নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তুমি পাপার্থক বলিদানের জন্য এক যুবাবৃষ দিবে। পরে তাহার রক্তের কিয়দংশ লইয়া বেদির চারি শৃঙ্গে, সোপানের চারি প্রান্তে ও চারিদিকে তাহার নিকালে সেচন করিয়া বেদি মুক্তপাপ করিবে, ও তাহার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে। পরে তুমি ঐ পাপার্থক বৃষ লইয়া যাইবে, আর সে ধর্ম্মধামের বাহিরে গৃহের নিরূপিত স্থানে তাহা পোড়াইয়া দিবে। আর তুমি দ্বিতীয় দিনে পাপার্থক বলিরূপে এক নির্দ্দোষ ছাগ উৎসর্গ করিবে; তাহাতে [যাজকেরা] বৃষ দ্বারা যেমন করিয়াছিল, তেমনি যজ্ঞবেদি মুক্তপাপ করিবে। উহার মুক্তপাপ করণ সমাপ্ত হইলে পর তুমি নির্দ্দোষ এক যুবাবৃষ ও পালের নির্দ্দোষ এক মেষ উৎসর্গ করিবে। তুমি তাহাদিগকে সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত করিবে, এবং যাজকগণ তাহাদের উপরে লবণ ফেলিয়া দিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমার্থে তাহাদিগকে বলিদান করিবে। সপ্তাহ কাল প্রতিদিন তুমি পাপার্থক বলিরূপে এক এক ছাগ উৎসর্গ করিবে; আর তাহারা নির্দ্দোষ এক যুবাবৃষ ও পালের এক মেষ উৎসর্গ করিবে। সপ্তাহ কাল তাহারা যজ্ঞবেদির জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে, তাহা শুচি করিবে ও সংস্কার দ্বারা পূত করিবে। সেই সকল দিন অতীত হইলে পর অষ্টম দিন হইতে যাজকেরা সেই যজ্ঞবেদিতে তোমাদের হোমার্থক ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিবে, তাহাতে আমি তোমাদিগকে গ্রাহ্য করিব; ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। পরে তিনি ধর্ম্মধামের পূর্ব্বাভিমুখ বহির্দ্বারের দিকে আমাকে ফিরাইয়া আনিলেন; তখন সেই দ্বার রুদ্ধ ছিল। পরে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, এই দ্বার রুদ্ধ থাকিবে, খোলা যাইবে না; এবং ইহা দিয়া কেহ প্রবেশ করিবে না; কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ইহা দিয়া প্রবেশ করিয়াছেন, তন্নিমিত্ত ইহা রুদ্ধ থাকিবে। অধ্যক্ষ বলিয়া কেবল অধ্যক্ষই সদাপ্রভুর সম্মুখে আহার করণার্থে ইহার মধ্যে বসিবেন; তিনি এই দ্বারের বারাণ্ডার পথ দিয়া ভিতরে আসিবেন, ও সেই পথ দিয়া বাহিরে যাইবেন। পরে তিনি উত্তরদ্বারের পথে আমাকে গৃহের সম্মুখে আনিলেন; তাহাতে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, সদাপ্রভুর গৃহ সদাপ্রভুর প্রতাপে পরিপূর্ণ হইল; তখন আমি উপুড় হইয়া পড়িলাম। সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, সদাপ্রভুর গৃহের সমস্ত বিধি ও সমস্ত ব্যবস্থার বিষয়ে যাহা যাহা আমি তোমাকে বলিব, তুমি তাহাতে মনোযোগ কর, স্বচক্ষে তাহা নিরীক্ষণ কর ও স্বকর্ণে শ্রবণ কর, এবং এই গৃহে প্রবেশ করিবার ও ধর্ম্মধাম হইতে বাহিরে যাইবার সমস্ত পথের বিষয়ে মনোযোগ কর। আর সেই বিদ্রোহীদলকে, ইস্রায়েল-কুলকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে ইস্রায়েল-কুল, তোমাদের সকল জঘন্য ক্রিয়া যথেষ্ট হইয়াছে। বস্তুতঃ তোমরা অচ্ছিন্নত্বক্‌ হৃদয় ও অচ্ছিন্নত্বক্‌ মাংসবিশিষ্ট বিজাতীয় লোকদিগকে আমার ধর্ম্মধামে থাকিতে ও আমার সেই গৃহ অপবিত্র করিতে ভিতরে আনয়ন করিয়াছ, তোমরা আমার উদ্দেশে ভক্ষ্য, মেদ ও রক্ত উৎসর্গ করিয়াছ, আর তোমরা আমার নিয়ম ভঙ্গ করিয়াছ, তোমাদের সকল জঘন্য ক্রিয়া ছাড়া ইহা করিয়াছ। আর তোমরা আমার পবিত্র বিষয়সমূহের রক্ষণীয় রক্ষা কর নাই; কিন্তু আপনাদের ইচ্ছামতে আমার ধর্ম্মধামে রক্ষণীয়ের রক্ষক নিযুক্ত করিয়াছ। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে যে সকল বিজাতীয় লোক আছে, তাহাদের মধ্যে অচ্ছিন্নত্বক্‌ হৃদয় ও অচ্ছিন্নত্বক্‌ মাংসবিশিষ্ট কোন বিজাতীয় লোক আমার ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিবে না। কিন্তু ইস্রায়েল যখন বিপথে গিয়াছিল, আপন পুত্তলিদিগের অনুগমনার্থে আমাকে ছাড়িয়া বিপথে গিয়াছিল, তখন যে লেবীয়গণ আমা হইতে দূরে গিয়াছিল, তাহারা আপন আপন পাপ বহন করিবে। তথাপি তাহারা আমার ধর্ম্মধামে পরিচারক হইবে, গৃহের সকল দ্বারে পরিদর্শক ও গৃহের পরিচারক হইবে; তাহারা প্রজাগণের জন্য হোমবলি ও অন্য বলি হনন করিবে, এবং তাহাদের পরিচর্য্যা করিতে তাহাদের সম্মুখে দণ্ডায়মান হইবে। তাহাদের পুত্তলিগণের সাক্ষাতে তাহারা প্রজাগণের পরিচর্য্যা করিত এবং ইস্রায়েল-কুলের অপরাধজনক বিঘ্নস্বরূপ হইত; সেই জন্য আমি তাহাদের বিরুদ্ধে আপন হস্ত তুলিলাম, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; তাহারা আপন আপন পাপ বহন করিবে। আমার উদ্দেশে যাজকীয় কর্ম্ম করিতে তাহারা আমার নিকটবর্ত্তী হইবে না; এবং আমার পবিত্র দ্রব্য সকলের, বিশেষতঃ আমার অতি পবিত্র দ্রব্য সকলের নিকটে আসিবে না, কিন্তু আপনাদের অপমান ও আপনাদের কৃত জঘন্য ক্রিয়ার ভার বহন করিবে। তথাপি আমি তাহাদিগকে গৃহের সমস্ত সেবা-কর্ম্মে ও তন্মধ্যে কর্ত্তব্য সমস্ত কর্ম্মে গৃহের রক্ষণীয়ের রক্ষক করিব। কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানগণ যখন আমাকে ছাড়িয়া বিপথে গিয়াছিল, তখন সাদোকের সন্তান যে লেবীয় যাজকেরা আমার ধর্ম্মধামের রক্ষণীয় দ্রব্য রক্ষা করিত, তাহারাই আমার পরিচর্য্যা করণার্থে আমার নিকটবর্ত্তী হইবে, এবং আমার উদ্দেশে মেদ ও রক্ত উৎসর্গ করণার্থে আমার সম্মুখে দণ্ডায়মান হইবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। তাহারাই আমার ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিবে, এবং তাহারাই আমার পরিচর্য্যা করণার্থে আমার মেজের নিকটে আসিবে, ও আমার রক্ষণীয় রক্ষা করিবে। অন্তঃপ্রাঙ্গণের দ্বারে প্রবেশ করিবার সময়ে তাহারা মসীনার বস্ত্র পরিধান করিবে; অন্তঃপ্রাঙ্গণের সকল দ্বারে ও গৃহমধ্যে পরিচর্য্যা করিবার সময় তাহাদের গাত্রে মেষলোমের বস্ত্র উঠিবে না। তাহাদের মস্তকে মসীনার শিরোভূষণ ও কটীদেশে মসীনার জাঙ্ঘিয়া থাকিবে, তাহারা ঘর্ম্মজনক কিছুতে বন্ধকটি হইবে না। আর যখন তাহারা বহিঃপ্রাঙ্গণে, অর্থাৎ প্রজাবর্গের কাছে বহিঃপ্রাঙ্গণে বাহির হইবে, তখন আপনাদের পরিচর্য্যার বস্ত্র সকল ত্যাগ করিয়া পবিত্র কুঠরীতে রাখিয়া দিবে, এবং অন্য বস্ত্র পরিধান করিবে; আপনাদের ঐ বস্ত্র দ্বারা প্রজালোকদিগকে পবিত্র করিবে না। তাহারা মস্তক মুণ্ডন করিবে না, ও কেশ দীর্ঘ হইতে দিবে না, কেবল মস্তকের কেশ ছেদন করিবে। আর অন্তঃপ্রাঙ্গণে প্রবেশ করিবার সময়ে যাজকদের মধ্যে কেহই দ্রাক্ষারস পান করিবে না। তাহারা বিধবাকে কিম্বা পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করিবে না, কিন্তু ইস্রায়েল-কুলজাত অনূঢ়া কন্যাকে, কিম্বা যাজকের বিধবাকে বিবাহ করিবে। আর তাহারা আমার প্রজাগণকে পবিত্র ও সামান্য বস্তুর প্রভেদ শিক্ষা দিবে, এবং শুচি ও অশুচির প্রভেদ জানাইবে। আর বিবাদ হইলে তাহারা বিচারার্থে উপস্থিত হইবে; আমার সকল শাসনানুসারে বিচার নিষ্পন্ন করিবে; এবং আমার সমস্ত পর্ব্বে আমার ব্যবস্থা ও আমার বিধি সকল পালন করিবে, এবং আমার বিশ্রামদিন সকল পবিত্র করিবে। তাহারা কোন মৃত লোকের শবের নিকটে গিয়া আপনাদিগকে অশুচি করিবে না, কেবল পিতা কি মাতা, পুত্র কি কন্যা, ভ্রাতা কি অনূঢ়া ভগিনীর জন্য তাহারা অশুচি হইতে পারিবে। যাজক শুচি হইলে পর তাহার জন্য সাত দিন গণিত হইবে। পরে যে দিন সে ধর্ম্মধামের মধ্যে পরিচর্য্যা করণার্থে ধর্ম্মধামে অর্থাৎ অন্তঃপ্রাঙ্গণে প্রবেশ করিবে, সেই দিন আপনার জন্য পাপার্থক বলি উৎসর্গ করিবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর তাহাদের এক অধিকার হইবে, আমিই তাহাদের অধিকার; তোমরা ইস্রায়েলের মধ্যে তাহাদিগকে কোন স্বত্ব দিবে না, আমিই তাহাদের স্বত্ব। ভক্ষ্য-নৈবেদ্য, পাপার্থক বলি ও দোষার্থক বলি তাহাদের খাদ্য হইবে, এবং ইস্রায়েলের মধ্যে সমস্ত বর্জ্জিত দ্রব্য তাহাদের হইবে। আর সমস্ত আশুপক্ব শস্যাদির মধ্যে প্রত্যেকের অগ্রিমাংশ, এবং তোমাদের সমস্ত উপহারের মধ্যে প্রত্যেক উপহারের সকলই যাজকদের হইবে; এবং তোমরা আপন আপন ছানা ময়দার অগ্রিমাংশ যাজককে দিবে, তাহা করিলে আপন আপন গৃহে আশীর্ব্বাদ অবস্থিতি করাইবে। পক্ষী হউক কি পশু হউক, স্বয়ং মৃত কিম্বা বিদীর্ণ কিছুই যাজকদের খাদ্য হইবে না। আর যে সময়ে তোমরা অধিকারের জন্য গুলিবাঁট করিয়া দেশ বিভাগ করিবে, সেই সময়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক পবিত্র ভূমিখণ্ড উপহার বলিয়া নিবেদন করিবে; তাহার দীর্ঘতা পঁচিশ সহস্র [হস্ত] ও প্রস্থ বিশ সহস্র [হস্ত] হইবে; ইহা চারিদিকে ইহার সমস্ত পরিসীমার মধ্যে পবিত্র হইবে। তাহার মধ্যে পাঁচ শত [হস্ত] দীর্ঘ ও পাঁচ শত [হস্ত] প্রস্থ, চারিদিকে চতুষ্কোণ ভূমি ধর্ম্মধামের জন্য থাকিবে; আবার তাহার বহির্ভাগে চারিদিকে পঞ্চাশ হস্ত পরিমিত পরিসর থাকিবে। ঐ পরিমিত অংশের মধ্যে তুমি পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ ও দশ সহস্র [হস্ত] প্রস্থ ভূমি মাপিবে; তাহারই মধ্যে ধর্ম্মধাম অতি পবিত্র স্থান হইবে। দেশের এই অংশ পবিত্র; ইহা যাজকদের, ধর্ম্মধামের পরিচারকদের, যাহারা সদাপ্রভুর পরিচর্য্যার্থে নিকটে আগমন করে, তাহাদের হইবে; ইহা তাহাদের জন্য গৃহ নির্ম্মাণের স্থান ও ধর্ম্মধামের জন্য পবিত্র স্থান হইবে। আবার পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ ও দশ সহস্র [হস্ত] প্রস্থ ভূমি গৃহের পরিচারক লেবীয়দের জন্য হইবে, বাস করিবার নগর তাহাদের অধিকারার্থ হইবে। আর নগরের অধিকারের নিমিত্ত তোমরা পবিত্র উপহারের পার্শ্বে পাঁচ সহস্র [হস্ত] প্রস্থ ও পঁচিশ সহস্র [হস্ত] দীর্ঘ ভূমি দিবে, ইহা সমস্ত ইস্রায়েল-কুলের জন্য হইবে। আবার পবিত্র উপহারের এবং নগরের অধিকারের উভয় পার্শ্বে সেই পবিত্র উপহারের অগ্রে ও নগরের অধিকারের অগ্রে অর্থাৎ পশ্চিম প্রান্তের পশ্চিমে ও পূর্ব্ব প্রান্তের পূর্ব্বে এবং দীর্ঘতায় পশ্চিম সীমা হইতে পূর্ব্ব সীমা পর্য্যন্ত বিস্তৃত অংশ সকলের মধ্যে কোন অংশের সমতুল্য ভূমি অধ্যক্ষকে দিবে। দেশে ইহা ইস্রায়েলের মধ্যে তাঁহার অধিকার হইবে; এবং আমার নিযুক্ত অধ্যক্ষেরা আর আমার প্রজাদের উপরে দৌরাত্ম্য করিবে না, কিন্তু ইস্রায়েল-কুলকে আপন আপন বংশানুসারে দেশ দিবে। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে ইস্রায়েলের অধ্যক্ষগণ, ইহাই তোমাদের যথেষ্ট হউক; তোমরা দৌরাত্ম্য ও ধনাপহার দূর কর, ন্যায় ও ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান কর, আমার প্রজাদিগকে অধিকারচ্যুত করিতে ক্ষান্ত হও, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। ন্যায্য পাল্লা, ন্যায্য ঐফা ও ন্যায্য বাৎ তোমাদের হউক। ঐফার ও বাতের একই পরিমাণ হইবে; বাৎ হোমরের দশমাংশ, ঐফাও হোমরের দশমাংশ, এই উভয়ের পরিমাণ হোমরের অনুরূপ হইবে। আর শেকল বিংশতি গেরা পরিমিত হইবে; বিংশতি শেকলে, পঁচিশ শেকলে, ও পনের শেকলে তোমাদের মানি হইবে। তোমরা এই উপহার উৎসর্গ করিবে; তোমরা গোমের হোমর হইতে ঐফার ষষ্ঠাংশ, ও যবের হোমর হইতে ঐফার ষষ্ঠাংশ দিবে। আর তৈলের, বাৎ পরিমিত তৈলের নির্দ্দিষ্ট অংশ এক কোর হইতে বাতের দশমাংশ; [কোর] দশ বাৎ পরিমিত অথচ হোমরের সমান, কেননা দশ বাতে হোমর হয়। আর ইস্রায়েলের জলসিক্ত ভূমিতে চরে, এমন মেষাদিপাল হইতে দুই শত মেষের মধ্যে এক মেষ; লোকদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে তাহাই ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের, হোমবলির ও মঙ্গলার্থক বলির নিমিত্ত হইবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। দেশের সমস্ত প্রজা ইস্রায়েলের অধ্যক্ষকে এই উপহার দিতে বাধ্য হইবে। আর পর্ব্বে, অমাবস্যায় ও বিশ্রামবারে, ইস্রায়েল-কুলের সমস্ত উৎসবে, হোমবলি এবং ভক্ষ্য ও পেয়-নৈবেদ্য উৎসর্গ করা অধ্যক্ষের কর্ত্তব্য হইবে; তিনি ইস্রায়েল-কুলের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করণার্থে পাপার্থক বলি ও ভক্ষ্য-নৈবেদ্য এবং হোম ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিবেন। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, প্রথম মাসের প্রথম দিনে তুমি নির্দ্দোষ এক গোবৎস লইয়া ধর্ম্মধাম মুক্তপাপ করিবে। আর যাজক সেই পাপার্থক বলির, রক্তের কিয়দংশ লইয়া গৃহের চৌকাঠে, যজ্ঞবেদির সোপানের চারি প্রান্তে, এবং অন্তঃপ্রাঙ্গণের দ্বারের চৌকাঠে দিবে। আর যে কেহ প্রমাদী ও যে কেহ অবোধ, তাহার জন্য তুমি মাসের সপ্তম দিনেও তদ্রূপ করিবে, এই প্রকারে তোমরা গৃহের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করিবে। প্রথম মাসের চতুর্থ দিবসে তোমাদের নিস্তার পর্ব্ব হইবে, তাহা সাত দিনের উৎসব; তাড়ীশূন্য রুটী খাইতে হইবে। সেই দিনে অধ্যক্ষ আপনার জন্য ও দেশস্থ সকল প্রজালোকের জন্য পাপার্থক বলিরূপে এক বৃষ উৎসর্গ করিবেন। সেই উৎসবের সপ্তাহ ব্যাপিয়া তিনি সাত দিনের মধ্যে প্রতিদিন নির্দ্দোষ সাতটী বৃষ ও সাতটী মেষ দিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমার্থক বলি উৎসর্গ করিবেন, এবং প্রতিদিন এক ছাগ দিয়া পাপার্থক বলি উৎসর্গ করিবেন। আর ভক্ষ্য-নৈবেদ্যের নিমিত্ত বৃষের প্রতি এক ঐফা ও মেষের প্রতি এক হিন ঐফা [সূজী], ও ঐফার প্রতি এক হিন তৈল দিবেন। সপ্তম মাসে, মাসের পঞ্চদশ দিনে, পর্ব্বের সময়ে তিনি সাত দিন পর্য্যন্ত সেইরূপ করিবেন; পাপার্থক বলি ও হোমার্থক বলি এবং ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ও তৈল উৎসর্গ করিবেন। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অন্তঃপ্রাঙ্গণের পূর্ব্বাভিমুখ দ্বার কার্য্যের ছয় দিন বদ্ধ থাকিবে, কিন্তু বিশ্রামদিনে খোলা হইবে, এবং অমাবস্যার দিনেও খোলা হইবে। আর অধ্যক্ষ বাহির হইতে দ্বারের বারাণ্ডার পথ দিয়া প্রবেশ করিয়া দ্বারের চৌকাঠের নিকটে দণ্ডায়মান হইবেন, এবং যাজকগণ তাঁহার হোমার্থক বলি ও মঙ্গলার্থক বলি সকল উৎসর্গ করিবে, এবং তিনি দ্বারের গোবরাটে প্রণিপাত করিবেন, পরে বাহির হইয়া আসিবেন, কিন্তু সন্ধ্যা না হইলে দ্বার বদ্ধ করা যাইবে না। আর দেশের প্রজালোক সকল বিশ্রামবারে ও অমাবস্যায় সেই দ্বারের প্রবেশস্থানে সদাপ্রভুর কাছে প্রণিপাত করিবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে অধ্যক্ষকে এই হোমবলি উৎসর্গ করিতে হইবে, বিশ্রামবারে নির্দ্দোষ ছয়টী মেষশাবক ও নির্দ্দোষ একটী মেষ। আর ভক্ষ্য-নৈবেদ্যরূপে মেষের প্রতি এক ঐফা [সূজি], এবং মেষশাবকদের জন্য তাঁহার হাতে যতটা উঠিবে, এবং ঐফার প্রতি এক হিন তৈল। আর অমাবস্যার দিনে একটী নির্দ্দোষ গোবৎস, এবং ছয়টী মেষশাবক ও একটী মেষ, ইহারাও নির্দ্দোষ হইবে। আর ভক্ষ্য-নৈবেদ্যরূপে তিনি গোবৎসের প্রতি এক ঐফা, মেষের প্রতি এক ঐফা [সূজি], ও মেষশাবকদের জন্য তাঁহার হাতে যতটা উঠিবে, এবং ঐফার প্রতি এক হিন তৈল দিবেন। আর অধ্যক্ষ যখন আসিবেন, তখন দ্বারের বারণ্ডার পথ দিয়া প্রবেশ করিবেন, এবং সেই পথ দিয়া বাহির হইয়া আসিবেন। আর দেশের প্রজালোক সকল পর্ব্বসময়ে যখন সদাপ্রভুর সম্মুখে আসিবে, তখন প্রণিপাত করণার্থে যে ব্যক্তি উত্তরদ্বারের পথ দিয়া প্রবেশ করিবে, সে দক্ষিণদ্বারের পথ দিয়া বাহির হইয়া আসিবে; এবং যে ব্যক্তি দক্ষিণদ্বারের পথ দিয়া প্রবেশ করিবে, সে উত্তরদ্বারের পথ দিয়া বাহির হইয়া আসিবে; যে ব্যক্তি যে দ্বারের পথ দিয়া প্রবেশ করিবে, সে তথায় ফিরিয়া যাইবে না, কিন্তু আপনার সম্মুখস্থ পথ দিয়া বাহির হইয়া আসিবে। আর অধ্যক্ষ তাহাদের মধ্যে থাকিয়া তাহাদের প্রবেশকালে প্রবেশ করিবেন, ও তাহাদের বাহির হইয়া আসিবার সময় বাহির হইবেন। আর উৎসবে ও পর্ব্বে ভক্ষ্য-নৈবেদ্য গোবৎসের প্রতি এক ঐফা, মেষের প্রতি এক ঐফা [সূজি], ও মেষশাবকদের জন্য তাঁহার হাতে যতটা উঠিবে, এবং ঐফার প্রতি এক হিন তৈল লাগিবে। আর অধ্যক্ষ যখন স্ব-ইচ্ছায় দত্ত দান সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলি বা মঙ্গলার্থক বলিরূপে উৎসর্গ করিবেন, তখন তাঁহার জন্য পূর্ব্বাভিমুখ দ্বার খুলিয়া দিতে হইবে। আর তিনি বিশ্রামবারে যেমন করেন, তেমনি আপন হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিবেন, পরে বাহির হইয়া আসিবেন, এবং তাঁহার বাহির হইবার পর সেই দ্বার বদ্ধ করা যাইবে। আর তুমি প্রত্যহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলির জন্য একবর্ষীয় নির্দ্দোষ একটী মেষশাবক উৎসর্গ করিবে; প্রত্যহ প্রাতে তাহা উৎসর্গ করিবে। আর প্রত্যহ প্রাতে তাহার সহিত ভক্ষ্য-নৈবেদ্যরূপে ঐফার ষষ্ঠাংশ [সূজি], ও সেই সূক্ষ্ম সূজী আর্দ্র করণার্থে হিনের তৃতীয়াংশ তৈল, এই ভক্ষ্য-নৈবেদ্য সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করিবে, এই বিধি চিরকাল নিত্যস্থায়ী। এইরূপে প্রত্যহ প্রাতে সেই মেষশাবক, নৈবেদ্য ও তৈল উৎসর্গ করা যাইবে। ইহা নিত্য হোমবলি। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অধ্যক্ষ যদি আপন পুত্রগণের মধ্যে কোন এক জনকে কিছু দান করেন, তবে তাহা তাহার অধিকার হইবে, তাহা তাঁহার পুত্রদের হইবে; তাহা অধিকার বলিয়া তাহাদের স্বত্ব হইবে। কিন্তু তিনি যদি আপনার কোন দাসকে আপন অধিকারের কিছু দান করেন, তবে তাহা মুক্তিবৎসর পর্য্যন্ত তাহার থাকিবে, পরে পুনর্ব্বার অধ্যক্ষের হইবে; কেবল তাঁহার পুত্রগণ তাঁহার অধিকার পাইবে। আর অধ্যক্ষ প্রজাদিগকে দৌরাত্ম্যপূর্ব্বক অধিকারচ্যুত করণার্থে তাহাদের অধিকার হইতে কিছু লইবেন না; তিনি আপনারই অধিকারের মধ্য হইতে আপন পুত্রদিগকে অধিকার দিবেন; যেন আমার প্রজারা আপন আপন অধিকার হইতে ছিন্নভিন্ন হইয়া না যায়। পরে তিনি দ্বারের পার্শ্বস্থ প্রবেশের পথ দিয়া আমাকে যাজকদের উত্তরাভিমুখ পবিত্র কুঠরীশ্রেণীতে আনিলেন; আর দেখ পশ্চিমদিকে পশ্চাতে এক স্থান ছিল। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, এই স্থানে যাজকেরা দোষার্থক বলি ও পাপার্থক বলি পাক করিবে ও নৈবেদ্য ভর্জ্জন করিবে; যেন তাহারা প্রজাদিগকে পবিত্র করিবার জন্য তাহা বহিঃপ্রাঙ্গণে লইয়া না যায়। পরে তিনি আমাকে বহিঃপ্রাঙ্গণে আনিয়া সেই প্রাঙ্গণের চারি কোণ দিয়া গমন করাইলেন; আর দেখ, ঐ প্রাঙ্গণের প্রত্যেক কোণে এক এক প্রাঙ্গণ ছিল। প্রাঙ্গণের চারি কোণে চল্লিশ [হস্ত] দীর্ঘ ও ত্রিশ [হস্ত] প্রস্থ প্রাচীরবেষ্টিত প্রাঙ্গণ ছিল। সেই চারি কোণের প্রাঙ্গণগুলির একই পরিমাণ ছিল; চারিটীর মধ্যে প্রত্যেকের চারিদিকে গাঁথনি-শ্রেণী ছিল, এবং ঐ চারিদিকের গাঁথনি-শ্রেণীর তলে উনান পাতা ছিল। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, এ সকল পাচকদের গৃহ, এই স্থানে গৃহের পরিচারকেরা প্রজালোকদের বলি সিদ্ধ করিবে। পরে তিনি আমাকে ঘুরাইয়া গৃহের প্রবেশস্থানে আনিলেন, আর দেখ, গৃহের গোবরাটের নীচে হইতে জল বাহির হইয়া পূর্ব্বদিকে বহিতেছে, কেননা গৃহের সম্মুখভাগ পূর্ব্বদিকে ছিল; আর সেই জল নীচে হইতে গৃহের দক্ষিণ বগল দিয়া যজ্ঞবেদির দক্ষিণে নামিয়া যাইতে ছিল। পরে তিনি আমাকে উত্তরদ্বারের পথ দিয়া বাহির করিলেন, এবং ঘুরাইয়া বাহিরের পথ দিয়া, পূর্ব্বাভিমুখ পথ দিয়া, বহির্দ্বার পর্য্যন্ত লইয়া গেলেন; আর দেখ, দক্ষিণ বগল দিয়া জল চোঁয়াইয়া পড়িতেছিল। সে ব্যক্তি যখন পূর্ব্বদিকে গিয়াছিলেন, তখন তাঁহার হস্তে এক মানসূত্র ছিল; তিনি এক সহস্র হস্ত মাপিয়া আমাকে জলের মধ্য দিয়া গমন করাইলেন; তখন গোড়ালি পর্য্যন্ত জল উঠিল। আবার তিনি এক সহস্র হস্ত মাপিয়া আমাকে জলের মধ্য দিয়া গমন করাইলেন, তখন হাঁটু পর্য্যন্ত জল উঠিল। আবার তিনি এক সহস্র হস্ত মাপিয়া আমাকে জলের মধ্য দিয়া গমন করাইলেন; তখন কটি পর্য্যন্ত জল উঠিল। আবার তিনি এক সহস্র হস্ত মাপিলেন; তাহা আমার অগম্য নদী হইল; কারণ জল বাড়িয়া উঠিয়াছিল, সাঁতার জল, পদব্রজে পার হওয়া যায় না, এমন নদী হইয়াছিল। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি দেখিলে? পরে তিনি আমাকে পুনরায় ঐ নদীর তীরে লইয়া গেলেন। আর আমি যখন ফিরিয়া গেলাম, তখন দেখ, সেই নদীর তীরে এপারে ওপারে অনেক বৃক্ষ ছিল। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, এই জল পূর্ব্বদিক্‌স্থ অঞ্চলে বহিতেছে, অরাবা তলভূমিতে নামিয়া যাইবে, এবং সমুদ্রের দিকে যাইবে; যে জল বাহির করা হইয়াছে তাহা সমুদ্রে যাইবে ও ইহার জল উত্তম হইবে। আর এই স্রোতের জল যে কোন স্থানে বহিবে সে স্থানের অগণনীয় জীবজন্তু বাঁচিবে; আর যার-পর-নাই প্রচুর মৎস্য হইবে; কেননা এই জল সেখানে গিয়াছে বলিয়া সেখানকার [জল] উত্তম হইবে; এবং এই স্রোত যে কোন স্থান দিয়া বহিবে, সেই স্থানের সকলই সঞ্জীবিত হইবে। আর তাহার তীরে ধীবরগণ দাঁড়াইবে, ঐন্‌গদী অবধি ঐন্‌-ইগ্লয়িম পর্য্যন্ত জাল বিস্তার করিবার স্থান হইবে; মহাসমুদ্রের মৎস্যের ন্যায় নানাজাতীয় মৎস্য জন্মিয়া যার-পর-নাই প্রচুর হইবে। কিন্তু তাহার পঙ্কস্থান ও জলাভূমির প্রতীকার হইবে না; তাহা লবণার্থে নিরূপিত। আর নদীর ধারে এপারে ওপারে সর্ব্বপ্রকার ভোজনার্থ ফলের বৃক্ষ হইবে, তাহার পত্র ম্লান হইবে না, ও ফল শেষ হইবে না; প্রতিমাসে তাহার ফল পাকিবে, কেননা তাহার সেচনের জল ধর্ম্মধাম হইতে নির্গত; আর তাহার ফল আহারের জন্য ও পুত্র আরোগ্যের নিমিত্ত ব্যবহৃত হইবে। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশকে যে দেশ অধিকার জন্য দিবে, তাহার সীমা এই; যোষেফের দুই অংশ হইবে। আর তোমরা সকলে সমানাংশে অধিকার বলিয়া তাহা পাইবে, কারণ আমি তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে এই দেশ দিব বলিয়া হস্ত উত্তোলন করিয়াছিলাম; এই দেশ অধিকার বলিয়া তোমাদের হইবে। আর দেশের সীমা এই; উত্তরদিকে মহাসমুদ্র হইতে সদাদের প্রবেশস্থান পর্য্যন্ত হিৎলোনের পথ; হমাৎ, বরোথা, সিব্রয়িম, যাহা দম্মেশকের সীমার ও হমাতের সীমার মধ্যস্থিত; হৌরণের সীমার নিকটস্থ হৎসর-হত্তীকোন। আর সমুদ্র হইতে সীমা দম্মেশকের সীমাস্থ হৎসোর ঐনন পর্য্যন্ত যাইবে, আর উত্তরদিকে হমাতের সীমা; এই উত্তরপ্রান্ত। আর পূর্ব্বপ্রান্ত হৌরণ, দম্মেশক ও গিলিয়দের এবং ইস্রায়েল-দেশের মধ্যবর্ত্তী যর্দ্দন; তোমরা [উত্তর] সীমা অবধি পূর্ব্ব সমুদ্র পর্য্যন্ত মাপিবে; এই পূর্ব্বপ্রান্ত। আর দক্ষিণপ্রান্ত দক্ষিণে তামর অবধি কাদেশস্থ মরীবৎ জলাশয় [মিসরের] স্রোতোমার্গ ও মহাসমুদ্র পর্য্যন্ত; দক্ষিণদিকের এই দক্ষিণপ্রান্ত। আর পশ্চিমপ্রান্ত মহাসমুদ্র; [দক্ষিণ] সীমা অবধি হমাতের প্রবেশস্থানের সম্মুখ পর্য্যন্ত এই পশ্চিমপ্রান্ত। এইরূপে তোমরা ইস্রায়েলের বংশানুসারে আপনাদের মধ্যে এই দেশ বিভাগ করিবে। তোমরা আপনাদের নিমিত্ত, এবং যে বিদেশী লোকেরা তোমাদের মধ্যে প্রবাস করিয়া তোমাদের মধ্যে সন্তান উৎপন্ন করে, তাহাদেরও নিমিত্ত তাহা অধিকারার্থে গুলিবাঁট দ্বারা বিভাগ করিবে; এবং ইহারা ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে স্বজাতীয় লোকদের ন্যায় গণিত হইবে, তোমাদের সহিত ইস্রায়েল-বংশ সকলের মধ্যে অধিকার পাইবে। তোমাদের যে বংশের মধ্যে যে বিদেশী লোক প্রবাস করিবে, তাহার মধ্যে তোমরা তাহাকে অধিকার দিবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। বংশগুলির নাম এই এই। উত্তরপ্রান্ত হইতে হিৎলোনের পথের পার্শ্ব ও হমাতের প্রবেশস্থানের নিকট দিয়া হৎসর-ঐনন পর্য্যন্ত দম্মেশকের সীমাতে, উত্তরদিকে হমাতের পার্শ্বে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত দানের এক অংশ হইবে। আর দানের সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত আশেরের এক অংশ। আশেরের সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত নপ্তালির এক অংশ। নপ্তালির সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত মনঃশির এক অংশ। মনঃশির সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত ইফ্রয়িমের এক অংশ। ইফ্রয়িমের সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত রূবেণের এক অংশ। আর রূবেণের সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত যিহূদার এক অংশ। যিহূদার সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত উপহার-ভূমি থাকিবে; তোমরা প্রস্থে পঁচিশ সহস্র [হস্ত] ও পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত দীর্ঘতায় অন্যান্য অংশের তুল্য এক অংশ উপহারার্থে নিবেদন করিবে, ও তাহার মধ্যস্থানে ধর্ম্মধাম থাকিবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমরা যে উপহার-ভূমি নিবেদন করিবে, তাহা পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* দীর্ঘ ও দশ সহস্র [হস্ত]* প্রস্থ হইবে। সেই পবিত্র উপহার-ভূমি যাজকদের জন্য হইবে; তাহা উত্তরদিকে পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* দীর্ঘ, পশ্চিমদিকে দশ সহস্র [হস্ত]* প্রস্থ, পূর্ব্বদিকে দশ সহস্র [হস্ত]* প্রস্থ ও দক্ষিণদিকে পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* দীর্ঘ; তাহার মধ্যস্থানে সদাপ্রভুর ধর্ম্মধাম থাকিবে। তাহা সাদোক-সন্তানদের মধ্যে পবিত্রীকৃত যাজকদের জন্য হইবে, তাহারা আমার রক্ষণীয় দ্রব্য রক্ষা করিয়াছে; ইস্রায়েল-সন্তানদের ভ্রান্তির সময়ে লেবীয়েরা যেমন ভ্রান্ত হইয়াছিল, উহারা তেমন ভ্রান্ত হয় নাই। লেবীয়দের সীমার কাছে দেশের উপহার-ভূমি হইতে গৃহীত সেই উপহার-ভূমি তাহাদের হইবে, তাহা অতি পবিত্র। আর যাজকদের সীমার সম্মুখে, লেবীয়েরা পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* দীর্ঘ ও দশ সহস্র [হস্ত]* প্রস্থ [ভূমি] পাইবে; সমুদায়ের দীর্ঘতা পঁচিশ সহস্র ও প্রস্থ দশ সহস্র [হস্ত]* হইবে। তাহারা তাহার কিছু বিক্রয় করিবে না, বা পরিবর্ত্তন করিবে না, এবং দেশের [সেই] অগ্রিমাংশ হস্তান্তরীকৃত হইবে না, কেননা তাহা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। আর পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* দীর্ঘ সেই ভূমির সম্মুখে প্রস্থ পরিমাণে যে পাঁচ সহস্র [হস্ত]* অবশিষ্ট থাকে, তাহা সাধারণ স্থান বলিয়া নগরের, বসতির ও পরিসরের জন্য হইবে; নগরটী তাহার মধ্যস্থানে থাকিবে। তাহার পরিমাণ এইরূপ হইবে; উত্তরপ্রান্ত চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত]*, দক্ষিণপ্রান্ত চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত]*, পূর্ব্বপ্রান্ত চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত]* ও পশ্চিমপ্রান্ত চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত]*। আর নগরের পরিসরভূমি থাকিবে; উত্তরদিকে দুই শত পঞ্চাশ [হস্ত]*, দক্ষিণদিকে দুই শত পঞ্চাশ [হস্ত]*, পূর্ব্বদিকে দুই শত পঞ্চাশ [হস্ত]*। পশ্চিমদিকে দুই শত পঞ্চাশ [হস্ত]*। আর পবিত্র উপহারভূমির সম্মুখে অবশিষ্ট স্থান দীর্ঘ পরিমাণে পূর্ব্বদিকে দশ সহস্র [হস্ত]* ও পশ্চিমে দশ সহস্র [হস্ত]* হইবে, আর তাহা পবিত্র উপহারভূমির সম্মুখে থাকিবে, তদুৎপন্ন দ্রব্য নগরের কর্ম্মচারী লোকদের ভক্ষ্যের নিমিত্ত হইবে। আর ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্য হইতে নগরের শ্রমজীবীরা তাহা চাষ করিবে। সেই উপহারভূমি সর্ব্বশুদ্ধ পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* দীর্ঘ ও পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* প্রস্থ হইবে; তোমরা নগরের অধিকারশুদ্ধ চতুষ্কোণ পবিত্র উপহারভূমি নিবেদন করিবে। পবিত্র উপহারভূমির ও নগরের অধিকারের দুই পার্শ্বে যে সকল অবশিষ্ট ভূমি, তাহা অধ্যক্ষের হইবে; অর্থাৎ—পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* পরিমিত উপহারভূমি অবধি পূর্ব্বসীমা পর্য্যন্ত, ও পশ্চিমদিকে পঁচিশ সহস্র [হস্ত]* পরিমিত সেই উপহারভূমি অবধি পশ্চিমসীমা পর্য্যন্ত অন্য সকল অংশের সম্মুখে অধ্যক্ষের অংশ হইবে, এবং পবিত্র উপহারভূমি ও গৃহের ধর্ম্মধাম তাহার মধ্যস্থিত হইবে। আর অধ্যক্ষের প্রাপ্তব্য অংশের মধ্যস্থিত লেবীয়দের অধিকার ও নগরের অধিকার ছাড়া যাহা যিহূদার সীমার ও বিন্যামীনের সীমার মধ্যে আছে, তাহা অধ্যক্ষের হইবে। আর অবশিষ্ট বংশগুলির এই সকল অংশ হইবে; পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত বিন্যামীনের এক অংশ। বিন্যামীনের সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত শিমিয়োনের এক অংশ। শিমিয়োনের সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত ইষাখরের এক অংশ। ইষাখরের সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত সবূলূনের এক অংশ। সবূলূনের সীমার কাছে পূর্ব্বপ্রান্ত হইতে পশ্চিমপ্রান্ত পর্য্যন্ত গাদের এক অংশ। আর গাদের সীমার কাছে দক্ষিণপ্রান্তের দিকে তামর অবধি কাদেশস্থ মরীবৎ জলাশয় [মিসরের] স্রোতোমার্গ ও মহাসমুদ্র পর্য্যন্ত [দক্ষিণ] সীমা হইবে। তোমরা ইস্রায়েল-বংশ সকলের অধিকারার্থে যে দেশ গুলিবাঁট দ্বারা বিভাগ করিবে, তাহা এই; এবং তাহাদের ঐ সকল অংশ, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর নগরের এই সকল পরিসর হইবে; উত্তর পার্শ্বে পরিমাণে চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত]*। আর নগরের দ্বার সকল ইস্রায়েল-বংশগুলির নামানুসারে হইবে; তিন দ্বার উত্তরদিকে থাকিবে; রূবেণের এক দ্বার, যিহূদার এক দ্বার ও লেবির এক দ্বার। পূর্ব্ব পার্শ্বে চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত]*, আর তিন দ্বার হইবে; যোষেফের এক দ্বার, বিন্যামীনের এক দ্বার, দানের এক দ্বার। দক্ষিণ পার্শ্বে পরিমাণে চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত],* আর তিন দ্বার হইবে; শিমিয়োনের এক দ্বার ইষাখরের এক দ্বার ও সবূলূনের এক দ্বার। আর পশ্চিম পার্শ্বে চারি সহস্র পাঁচ শত [হস্ত], ও তাহার তিন দ্বার হইবে; গাদের এক দ্বার, আশেরের এক দ্বার ও নপ্তালির এক দ্বার। পরিধি আঠার সহস্র [হস্ত]* পরিমিত হইবে; আর সেই দিন অবধি নগরটীর এই নাম হইবে, “সদাপ্রভু তত্র”। যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমের রাজত্বের তৃতীয় বৎসরে বাবিল-রাজ নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেমে আসিয়া নগর অবরোধ করিলেন। আর প্রভু তাঁহার হস্তে যিহূদা-রাজ যিহোয়াকীমকে এবং ঈশ্বরের গৃহের কতকগুলি পাত্র সমর্পণ করিলেন; আর তিনি সেইগুলি শিনিয়র দেশে আপন দেবালয়ে লইয়া গেলেন; এবং পাত্রগুলি আপন দেবের ভাণ্ডার-গৃহে রাখিলেন। পরে রাজা আপন নপুংসকগণের অধ্যক্ষ অস্পনসকে বলিয়া দিলেন, যেন তিনি ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে, বিশেষতঃ রাজবংশের ও প্রধানবর্গের মধ্যে কয়েক জন যুবককে আনয়ন করেন, যাহারা নিষ্কলঙ্ক, সুন্দর ও সমুদয় বিদ্যায় তৎপর, বুদ্ধিতে বিচক্ষণ, জ্ঞানে বিজ্ঞ ও রাজপ্রাসাদে দাঁড়াইবার যোগ্য; আর যেন তিনি তাহাদিগকে কল্‌দীয়দের গ্রন্থ ও ভাষা শিক্ষা দেন। পরে রাজা নিরূপণ করিলেন যে, তাহাদের জন্য রাজার আহারীয় দ্রব্য ও তাঁহার পানীয় দ্রাক্ষারস হইতে প্রতিদিনের অংশ দিতে, এবং তাহাদিগকে তিন বৎসর পরিপোষণ করিতে হইবে; যেন সেই সময়ের শেষে তাহারা রাজার নিকটে দাঁড়াইতে পারে। তাহাদের মধ্যে যিহূদা-বংশীয় দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয় ছিলেন। আর নপুংসকগণের অধ্যক্ষ তাঁহাদের নাম রাখিলেন; তিনি দানিয়েলকে বেল্টশৎসর, হনানিয়কে শদ্রক, মীশায়েলকে মৈশক, ও অসরিয়কে অবেদ্‌নগো নাম দিলেন। কিন্তু দানিয়েল মনে স্থির করিলেন যে, তিনি রাজার আহারীয় দ্রব্যে ও তাঁহার পানীয় দ্রাক্ষারসে আপনাকে অশুচি করিবেন না; এই জন্য আপনাকে যেন অশুচি করিতে না হয়, এই অনুমতি নপুংসকগণের অধ্যক্ষের কাছে প্রার্থনা করিলেন। তখন ঈশ্বর সেই নপুংসকগণের অধ্যক্ষের কাছে দানিয়েলকে অনুগ্রহের ও করুণার পাত্র করিলেন। তাহাতে নপুংসকগণের অধ্যক্ষ দানিয়েলকে উত্তর করিলেন, আমি আমার প্রভু মহারাজকে ভয় করি, তিনিই তোমাদের ভক্ষ্য ও পানীয়-দ্রব্য নিরূপণ করিয়াছেন; তিনি তোমাদের সমবয়স্ক যুবকগণের মুখ অপেক্ষা তোমাদের মুখ কেন শুষ্ক দেখিবেন? ইহাতে তোমরা রাজার নিকটে আমার মস্তক সংশয়স্থল করিবে। পরে নপুংসকগণের অধ্যক্ষ দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়ের উপরে যে গৃহাধ্যক্ষকে নিযুক্ত করিয়াছিলেন, তাঁহাকে দানিয়েল কহিলেন, আপনি অনুগ্রহ করিয়া দশ দিন আপনার দাসদের পরীক্ষা করুন; ভোজন পান করিবার নিমিত্ত আমাদিগকে সব্‌জি ও জল দিতে আজ্ঞা হউক; পরে আপনার সম্মুখে আমাদের কান্তির ও রাজকীয় ভক্ষ্যভোগী যুবকগণের কান্তির পরীক্ষা হউক; পরে আপনি যেমন দেখিবেন, তদনুসারে আপনার এই দাসদের সহিত ব্যবহার করিবেন। তখন তিনি তাঁহাদের এই কথায় কর্ণপাত করিয়া দশ দিন পর্য্যন্ত তাঁহাদের পরীক্ষা করিলেন। দশ দিন অন্তে দেখা গেল, রাজকীয় ভক্ষ্যভোগী সকল যুবক অপেক্ষা ইহাঁরা সুরূপ ও মাংসল। এই জন্য গৃহাধ্যক্ষ তাঁহাদের ঐ আহারীয় দ্রব্য ও পানীয় দ্রাক্ষারস রহিত করিয়া তাঁহাদিগকে সব্‌জি দিতে থাকিলেন। আর ঈশ্বর সেই চারি জন যুবককে সমস্ত গ্রন্থে ও বিদ্যায় জ্ঞান ও পারদর্শিতা দিলেন; আর সমস্ত দর্শন ও স্বপ্নকথায় দানিয়েল বুদ্ধিমান হইলেন। পরে রাজা যে সময়ের শেষে সকলকে আনিবার কথা বলিয়া দিয়াছিলেন, সেই সময় উত্তীর্ণ হইলে নপুংসকগণের অধ্যক্ষ তাঁহাদিগকে নবূখদ্‌নিৎসরের সম্মুখে উপস্থিত করিলেন। তখন রাজা তাঁহাদের সহিত আলাপ করিলেন; আর তাঁহাদের মধ্যে দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়, এই কয়েক জনের সমকক্ষ কাহাকেও দেখিতে পাওয়া গেল না; এই জন্য তাঁহারা রাজার সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন। আর জ্ঞান ও বুদ্ধি-সংক্রান্ত যে কোন কথা রাজা তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তদ্বিষয়ে তাঁহার সমগ্র রাজ্যস্থ সমুদয় মন্ত্রবেত্তা ও গণক হইতে তাঁহাদিগকে দশগুণ অধিক বিজ্ঞ দেখিতে পাইলেন। দানিয়েল কোরস রাজার প্রথম বৎসর পর্য্যন্ত থাকিলেন। নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে নবূখদ্‌নিৎসর স্বপ্ন দেখিলেন, আর তাঁহার আত্মা উদ্বিগ্ন হইল, ও তাঁহার নিদ্রাভঙ্গ হইল। পরে রাজা আদেশ করিলেন, যেন তাঁহাকে ঐ স্বপ্ন বুঝাইয়া দিবার নিমিত্ত মন্ত্রবেত্তা, গণক, মায়াবী ও কল্‌দীয়দিগকে আহ্বান করা হয়। তাহারা আসিয়া রাজার সম্মুখে দাঁড়াইল। তখন রাজা তাহাদিগকে কহিলেন, আমি একটা স্বপ্ন দেখিয়াছি, সেই স্বপ্ন বুঝিবার জন্য আমার আত্মা উদ্বিগ্ন হইয়াছে। তখন কল্‌দীয়েরা রাজাকে বলিল,— অরামীয় ভাষা —মহারাজ! চিরজীবী হউন; আপনার এই দাসদিগকে স্বপ্নটী বলুন, আমরা তাৎপর্য্য জানাইব। রাজা উত্তর করিয়া কল্‌দীয়দিগকে কহিলেন, আমার এই আদেশবাক্য বাহির হইয়াছে; তোমরা যদি সেই স্বপ্ন ও স্বপ্নের তাৎপর্য্য আমাকে জ্ঞাত না কর, তবে খণ্ডবিখণ্ড হইবে, এবং তোমাদের গৃহ সকল সারের ঢিবী করা যাইবে; কিন্তু যদি সেই স্বপ্ন ও স্বপ্নের তাৎপর্য্য জ্ঞাত কর, তবে আমার কাছে দান, পারিতোষিক ও মহাসমাদর পাইবে; অতএব সেই স্বপ্ন ও স্বপ্নের তাৎপর্য্য আমাকে জানাও। তাহারা পুনর্ব্বার উত্তর করিয়া বলিল, মহারাজ, আপনার দাসদিগকে স্বপ্নটী বলুন, আমরা তাৎপর্য্য জানাইব। রাজা উত্তর করিয়া কহিলেন, আমি নিশ্চয় জানিলাম, আমার আদেশবাক্য বাহির হইয়াছে দেখিয়া তোমরা কাল বিলম্ব করিতে চাহিতেছ; কিন্তু যদি তোমরা সেই স্বপ্ন আমাকে জ্ঞাত না কর, তবে তোমাদের জন্য একমাত্র ব্যবস্থা রহিল; কেননা তোমরা আমার সাক্ষাতে মিথ্যাকথা ও বঞ্চনাবাক্য বলিবার মন্ত্রণা করিতেছ, যে পর্য্যন্ত না সময়ের পরিপর্ত্তন হয়; অতএব তোমরা আমাকে স্বপ্নটী বল, তাহাতে জানিব, স্বপ্নের তাৎপর্য্যও আমাকে জানাইতে পার। কল্‌দীয়েরা রাজার সম্মুখে উত্তর করিয়া বলিল, মহারাজের স্বপ্নকথা জানাইতে পারে, পৃথিবীতে এমন মনুষ্য কেহ নাই; বাস্তবিক মহান্‌ কি পরাক্রান্ত কোন রাজা কখন কোন মন্ত্রবেত্তাকে কি গণককে কি কল্‌দীয়কে এমন কথা জিজ্ঞাসা করেন নাই। মহারাজ যে কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন, তাহা দুরূহ; বস্তুতঃ যাঁহারা মাংসদেহে বাস করেন না, সেই দেবগণ ব্যতিরেকে আর কেহ নাই যে মহারাজের সম্মুখে ইহা জানাইতে পারে। ইহা শুনিয়া রাজা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ও কোপান্বিত হইয়া বাবিলের সমস্ত বিদ্বান্‌ লোককে বধ করিতে আজ্ঞা দিলেন। তখন এই আজ্ঞা প্রচারিত হইল যে, বিদ্বান্‌ লোকদিগকে বধ করিতে হইবে; আর লোকেরা দানিয়েলকে ও তাঁহার সহচরদিগকে বধ করণার্থে তাহাদের অন্বেষণ করিল। তখন যে রাজসেনাপতি অরিয়োক বাবিলীয় বিদ্বান্‌ লোকদিগকে বধ করিবার নিমিত্ত বাহির হইয়াছিলেন, তাঁহার কাছে দানিয়েল বিবেচনা ও জ্ঞান সহকারে কথা কহিলেন। তিনি রাজসেনাপতি অরিয়োককে জিজ্ঞাসা করিলেন, রাজার আদেশ এত প্রচণ্ড কেন? তাহাতে অরিয়োক দানিয়েলকে বৃত্তান্ত জ্ঞাত করিলেন। তখন দানিয়েল রাজার নিকটে গিয়া এই প্রার্থনা করিলেন, আমার জন্য সময় নিরূপণ করিতে আজ্ঞা হউক, যেন আমি মহারাজকে স্বপ্নটীর তাৎপর্য্য জ্ঞাত করিতে পারি। পরে দানিয়েল গৃহে গিয়া আপনার সহচর হনানিয়, মীশায়েল, ও অসরিয়কে সেই কথা জ্ঞাত করিলেন; যেন তাঁহারা ঐ নিগূঢ় বিষয় সম্বন্ধে স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে করুণা প্রার্থনা করেন; দানিয়েল ও তাঁহার সহচরগণ যেন বাবিলের অন্য বিদ্বান্‌ লোকদের সঙ্গে বিনষ্ট না হন। তখন রাত্রিকালীন দর্শনে দানিয়েলের কাছে ঐ নিগূঢ় বিষয় প্রকাশিত হইল; তখন দানিয়েল স্বর্গের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ করিলেন। দানিয়েল কহিলেন, ঈশ্বরের নাম যুগে যুগে চিরকাল ধন্য হউক, কেননা জ্ঞান ও পরাক্রম তাঁহারই। তিনিই কাল ও ঋতু পরিরত্তন করেন; রাজাদিগকে পদভ্রষ্ট করেন, ও রাজাদিগকে পদস্থ করেন; তিনি জ্ঞানীদিগকে জ্ঞান দেন, বিবেচকদিগকে বিবেচনা দেন। তিনিই গভীর ও গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন, অন্ধকারে যাহা আছে, তাহা তিনি জানেন, এবং তাঁহার কাছে জ্যোতিঃ বাস করে। হে আমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ ও প্রশংসা করি, তুমি আমাকে জ্ঞাত ও সামর্থ্য দিয়াছ, আমরা তোমার কাছে যাহা চাহিয়াছিলাম, তাহা আমাকে এখন জানাইলে; তুমি রাজার স্বপ্ন আমাদিগকে জানাইলে। এই কারণ দানিয়েল সেই অরিয়োকের নিকটে প্রবেশ করিলেন, যাঁহাকে রাজা বাবিলের বিদ্বান্‌ লোকদিগকে বধ করিতে নিযুক্ত করিয়াছিলেন; তিনি গিয়া তাঁহাকে এইরূপ কহিলেন, আপনি বাবিলের বিদ্বান্‌ লোকদিগকে বধ করিবেন না; রাজার নিকটে আমাকে লইয়া চলুন; আমি রাজাকে তাৎপর্য্য জ্ঞাত করিব। তখন অরিয়োক সত্বর দানিয়েলকে রাজার নিকটে লইয়া গেলেন, আর রাজাকে এই কথা কহিলেন, নির্ব্বাসিত যিহূদীদের মধ্যে এই এক ব্যক্তিকে পাইলাম; ইনি মহারাজকে তাৎপর্য্য জ্ঞাত করিবেন। রাজা বেল্টশৎসর নামে আখ্যাত দানিয়েলকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি যে স্বপ্ন দেখিয়াছি, সেই স্বপ্ন ও তাহার তাৎপর্য্য তুমি কি আমাকে জানাইতে পার? দানিয়েল রাজার সাক্ষাতে উত্তর করিয়া কহিলেন, মহারাজ যে নিগূঢ় কথা জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, তাহা বিদ্বান্‌ কি গণক কি মন্ত্রবেত্তা কি জ্যোতির্ব্বেত্তারা মহারাজকে জানাইতে পারে না; কিন্তু ঈশ্বর স্বর্গে আছেন, তিনি নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন, আর উত্তরকালে যাহা যাহা ঘটিবে, তাহা তিনি মহারাজ নবূখদ্‌নিৎসরকে জানাইয়াছেন। আপনার স্বপ্ন এবং শয্যার উপরে আপনার মনের দর্শন এই। হে মহারাজ, শয্যার উপরে আপনার মনে এই চিন্তা উৎপন্ন হইয়াছিল যে, ইহার পরে কি হইবে; আর যিনি নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন, তিনি আপনাকে ভাবী ঘটনা জানাইয়াছেন। পরন্তু আমার সম্বন্ধে ইহা বক্তব্য, অন্য কোন জীবিত লোক অপেক্ষা আমার অধিক জ্ঞান আছে বলিয়া যে আমার কাছে এই নিগূঢ় বিষয় প্রকাশিত হইল তাহা নয়, কিন্তু অভিপ্রায় এই, যেন মহারাজকে তাৎপর্য্য জ্ঞাত করা যায়, আর আপনি যেন আপনার মনের চিন্তা বুঝিতে পারেন। হে মহারাজ, আপনি দৃষ্টিপাত করিয়াছিলেন, আর দেখুন, এক প্রকাণ্ড প্রতিমা; সেই প্রতিমা বৃহৎ এবং অতিশয় তেজোবিশিষ্ট; তাহা আপনার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিল; আর তাহার দৃশ্য ভয়ঙ্কর। সেই প্রতিমার বৃত্তান্ত এই; তাহার মস্তক সুবর্ণময়, তাহার বক্ষঃ ও বাহু রৌপ্যময়, তাহার উদর ও ঊরুদেশ পিত্তলময়; তাহার জঙ্ঘা লৌহময়, এবং তাহার চরণ কিছু লৌহময় ও কিছু মৃত্তিকাময় ছিল। আপনি দৃষ্টিপাত করিতে থাকিলেন, শেষে বিনা হস্তে খনিত এক প্রস্তর সেই প্রতিমার লৌহ ও মৃণ্ময় দুই চরণে আঘাত করিয়া সেইগুলি চূর্ণ করিল। তখন সেই লৌহ, মৃত্তিকা, পিত্তল, রৌপ্য ও সুবর্ণ একসঙ্গে চূর্ণ হইয়া গ্রীষ্মকালীন খামারের তুষের ন্যায় হইল, আর বায়ু সে সকল উড়াইয়া লইয়া গেল, তাহাদের জন্য আর কোথাও স্থান পাওয়া গেল না। আর যে প্রস্তরখানি ঐ প্রতিমাকে আঘাত করিয়াছিল, তাহা বাড়িয়া মহাপর্ব্বত হইয়া উঠিল, এবং সমস্ত পৃথিবী পূর্ণ করিল। স্বপ্নটী এই; এখন আমরা মহারাজের সাক্ষাতে ইহার তাৎপর্য্য জ্ঞাত করি। হে মহারাজ, আপনি রাজাধিরাজ, স্বর্গের ঈশ্বর আপনাকে রাজ্য, ক্ষমতা, পরাক্রম ও মহিমা দিয়াছেন। আর যে কোন স্থানে মনুষ্য-সন্তানগণ বাস করে, সেই স্থানে তিনি মাঠের পশু ও আকাশের পক্ষিগণকে আপনার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন, এবং তাহাদের সকলের উপরে আপনাকে কর্ত্তৃত্ব দিয়াছেন; আপনিই সেই স্বর্ণময় মস্তক। আপনার পশ্চাতে আপনা হইতে ক্ষুদ্র আর এক রাজ্য উঠিবে; তাহার পরে পিত্তলময় তৃতীয় এক রাজ্য উঠিবে, তাহা সমস্ত পৃথিবীর উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে। আর চতুর্থ রাজ্য লৌহবৎ দৃঢ় হইবে; কারণ লৌহ যেমন সমস্ত দ্রব্য চূর্ণ করে ও পাড়িয়া ফেলে, লৌহ যেমন এই সকল চূর্ণ করে, তদ্রূপ সেই রাজ্য সকলই ভাঙ্গিয়া চূর্ণ করিবে। আর আপনি দেখিয়াছেন, দুই চরণ ও চরণের অঙ্গুলি সকল কিছু কুম্ভকারের মৃত্তিকার ও কিছু লৌহের, ইহাতে বিভক্ত রাজ্য বুঝায়; কিন্তু সেই রাজ্যে লৌহের দৃঢ়তা থাকিবে, কেননা আপনি কর্দ্দমে মিশ্রিত লৌহ দেখিয়াছেন। আর চরণের অঙ্গুলি সকল যেরূপ কিছু লৌহময় ও কিছু মৃণ্ময় ছিল, তদ্রূপ রাজ্যের একাংশ দৃঢ় ও একাংশ ভঙ্গুর হইবে। আর আপনি যেমন দেখিয়াছেন, লৌহ কর্দ্দমে মিশ্রিত হইয়াছে, তদ্রূপ সেই লোকেরা মনুষ্যের বীর্য্যে পরস্পর মিশ্রিত হইবে; কিন্তু যেমন লৌহ মৃত্তিকার সহিত মিশ্রিত হয় না, তদ্রূপ তাহারা পরস্পর মিশ্রিত থাকিবে না। আর সেই রাজগণের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব অন্য জাতির হস্তে সমর্পিত হইবে না; তাহা ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে। কারণ আপনি ত দেখিয়াছেন, পর্ব্বত হইতে একখানি প্রস্তর বিনা হস্তে খনিত হইল, এবং ঐ লৌহ, পিত্তল, মৃত্তিকা, রৌপ্য ও সুবর্ণকে চূর্ণ করিল; মহান্‌ ঈশ্বর মহারাজকে ভাবী ঘটনা জানাইয়াছেন; স্বপ্নটী নিশ্চিত ও তাহার তাৎপর্য্য সত্য। তখন রাজা নবূখদ্‌নিৎসর উপুড় হইয়া দানিয়েলকে প্রণাম করিলেন, এবং তাঁহার উদ্দেশে নৈবেদ্য ও সুগন্ধি দ্রব্য উৎসর্গ করিতে আজ্ঞা দিলেন। রাজা দানিয়েলকে কহিলেন, সত্যই তোমাদের ঈশ্বর দেবগণের ঈশ্বর, রাজাদের প্রভু ও নিগূঢ়তত্ত্বপ্রকাশক, কেননা তুমি এই নিগূঢ়তত্ত্বের বিষয় প্রকাশ করিতে সমর্থ হইয়াছ। তখন রাজা দানিয়েলকে মহান্‌ করিলেন, তাঁহাকে অনেক বহুমূল্য উপহার দিলেন, এবং তাঁহাকে বাবিলের সমস্ত প্রদেশের কর্ত্তা ও বাবিলস্থ সমুদয় বিদ্বান্‌ লোকের প্রধান অধিপতি করিয়া নিযুক্ত করিলেন। পরে দানিয়েল রাজার নিকটে নিবেদন করিলে রাজা শদ্রক, মৈশক, ও অবেদ-নগোকে বাবিল প্রদেশের রাজকার্য্যে নিযুক্ত করিলেন; কিন্তু দানিয়েল রাজদ্বারে থাকিতেন। রাজা নবূখদ্‌নিৎসর এক স্বর্ণময় প্রতিমা নির্ম্মাণ করিলেন, তাহা ষষ্টি হস্ত উচ্চ ও ছয় হস্ত স্থূল, তাহা তিনি বাবিল প্রদেশের দূরা সমস্থলীতে স্থাপন করিলেন। আর রাজা নবূখদ্‌নিৎসর সেই যে প্রতিমা স্থাপন করিয়াছিলেন, তাহার প্রতিষ্ঠা করিতে আসিবার জন্য ক্ষিতিপাল, প্রতিনিধি ও দেশাধ্যক্ষগণকে, মহাবিচারকর্ত্তা, কোষাধ্যক্ষ, ব্যবস্থাপক ও অধিপতিগণকে এবং প্রদেশসমূহের সমস্ত শাসনকর্ত্তাকে একত্র করিতে রাজা নবূখদ্‌নিৎসর লোক প্রেরণ করিলেন। তখন ক্ষিতিপালগণ, প্রতিনিধিগণ, দেশাধ্যক্ষগণ, মহাবিচারকর্ত্তৃগণ, কোষাধ্যক্ষগণ, ব্যবস্থাপকগণ ও অধিপতিগণ, এবং প্রদেশসমূহের সমস্ত শাসনকর্ত্তা রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্থাপিত সেই প্রতিমার প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য একত্র হইলেন। পরে তাঁহারা নবূখদ্‌নিৎসরের স্থাপিত প্রতিমার সম্মুখে দাঁড়াইলেন। তখন ঘোষক উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, ‘হে লোকবৃন্দ, জাতিগণ ও নানা ভাষাবাদিগণ, তোমাদের প্রতি এই আজ্ঞা দত্ত হইতেছে; যে সময়ে তোমরা শৃঙ্গ, বংশী, বীণা, চতুস্তন্ত্রী, পরিবাদিনী ও মৃদঙ্গ প্রভৃতি সর্ব্বপ্রকার যন্ত্রের বাদ্যশুনিবে, তৎকালে রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্থাপিত স্বর্ণময় প্রতিমার সম্মুখে উপুড় হইয়া প্রণাম করিবে। যে কোন ব্যক্তি উপুড় হইয়া প্রণাম না করিবে, সে তদ্দণ্ডেই প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হইবে।’ অতএব সমস্ত লোক যখন শৃঙ্গ, বংশী, বীণা, চতুস্তন্ত্রী ও পরিবাদিনী প্রভৃতি সর্ব্বপ্রকার যন্ত্রের বাদ্য শুনিল, তখন সমস্ত লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদী উপুড় হইয়া রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্থাপিত স্বর্ণময় প্রতিমাকে প্রণাম করিল। সেই সময়ে কতকগুলি কল্‌দীয় নিকটে আসিয়া যিহূদীদের উপরে দোষারোপ করিল। তাহারা রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের কাছে এই কথা কহিল, হে রাজন্‌ চিরজীবী হউন। হে রাজন্‌, আপনি এই আজ্ঞা করিয়াছেন, ‘যে কেহ শৃঙ্গ, বংশী, বীণা, চতুস্তন্ত্রী, পরিবাদিনী ও মৃদঙ্গ প্রভৃতি সর্ব্বপ্রকার যন্ত্রের বাদ্য শুনিবে, সে উপুড় হইয়া ঐ স্বর্ণময় প্রতিমাকে প্রণাম করিবে; যে কোন ব্যক্তি উপুড় হইয়া প্রণাম না করিবে, সে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হইবে।’ বাবিল প্রদেশের রাজকর্ম্মে আপনার নিযুক্ত কয়েক জন যিহূদী আছে, শদ্রক, মৈশক, ও অবেদ-নগো; হে রাজন্‌, সেই ব্যক্তিরা আপনাকে মানে নাই; তাহারা আপনার দেবগণের সেবা করে না, এবং আপনি যে স্বর্ণময় প্রতিমা স্থাপন করিয়াছেন, তাহাকেও প্রণাম করে না। তখন নবূখদ্‌নিৎসর ক্রোধে ও কোপে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে আনিতে আদেশ করিলেন; তাহাতে তাঁহারা রাজার সম্মুখে আনীত হইলেন। নবূখদ্‌নিৎসর তাঁহাদিগকে কহিলেন, হে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো, এই কি তোমাদের সংকল্প যে, আমার দেবতার সেবা করিবে না। আমার স্থাপিত স্বর্ণময় প্রতিমাকে প্রণাম করিবে না? এখনও যদি তোমরা শৃঙ্গ, বংশী, বীণা, চতুস্তন্ত্রী, পরিবাদিনী ও মৃদঙ্গ প্রভৃতি সর্ব্বপ্রকার যন্ত্রের বাদ্য শুনিবামাত্র আমার নির্ম্মিত স্বর্ণ-প্রতিমাকে উপুড় হইয়া প্রণাম করিতে প্রস্তুত হও, ভালই; কিন্তু যদি প্রণাম না কর, তবে সেই দণ্ডেই প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হইবে; আর এমন দেবতা কে যে, আমার হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিবে? শদ্রক, মৈশক, ও অবেদ্‌-নগো রাজাকে উত্তর করিলেন, হে নবূখদ্‌নিৎসর, আপনাকে এই কথার উত্তর দেওয়া আমাদের পক্ষে নিষ্প্রয়োজন। যদি হয়, আমরা যাঁহার সেবা করি, আমাদের সেই ঈশ্বর আমাদিগকে প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড হইতে উদ্ধার করিতে সমর্থ আছেন, আর, হে রাজন্‌, তিনি আপনার হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন; আর যদি নাও হয়, তবু হে রাজন্‌, আপনি জানিবেন, আমরা আপনার দেবগণের সেবা করিব না, এবং আপনার স্থাপিত স্বর্ণ-প্রতিমাকে প্রণাম করিব না। তখন নবূখদ্‌নিৎসর ক্রোধে পরিপূর্ণ হইলেন, এবং শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোর বিরুদ্ধে তাঁহার মুখ বিকটাকার হইল; তিনি বলিয়া দিলেন ও আদেশ করিলেন, অগ্নিকুণ্ড যে পরিমাণে উত্তপ্ত আছে, তাহা অপেক্ষা যেন সাত গুণ অধিক উত্তপ্ত করা হয়; আর তিনি আপন সৈন্যের মধ্যে কতকগুলি বীর্য্যবান্ পুরুষকে আজ্ঞা দিলেন, যেন তাহারা শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে বাঁধিয়া প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে। তখন ঐ পুরুষেরা আপন আপন জামা, আঙরাখা, পরিচ্ছদ প্রভৃতি বস্ত্রশুদ্ধ বদ্ধ হইলেন, এবং প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ড-মধ্যে নিক্ষিপ্ত হইলেন। আর রাজার আজ্ঞা প্রচণ্ড ও অগ্নিকুণ্ড অতি উত্তপ্ত ছিল, তৎপ্রযুক্ত যে পুরুষেরা শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে নিক্ষেপ করিল তাহারাই অগ্নিশিখায় হত হইল। আর শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো, এই তিন ব্যক্তি বদ্ধ হইয়া প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে পতিত হইলেন। তখন রাজা নবূখদ্‌নিৎসর চমৎকৃত হইলেন, ও সত্বর উঠিলেন; তিনি আপন মন্ত্রীদিগকে কহিলেন, আমরা কি তিন জন পুরুষকে বাঁধিয়া অগ্নিমধ্যে নিক্ষেপ করি নাই? তাঁহারা উত্তর করিয়া রাজাকে কহিলেন, হাঁ, মহারাজ। তখন রাজা কহিলেন, দেখ, আমি চারি ব্যক্তিকে দেখিতেছি; উহারা মুক্ত হইয়া অগ্নির মধ্যে গমনাগমন করিতেছে, উহাদের কোন হানি হয় নাই; আর চতুর্থ ব্যক্তির মূর্ত্তি দেবপুত্রের সদৃশ। তখন নবূখদ্‌নিৎসর সেই প্রজ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের দুয়ারের কাছে গিয়া কহিলেন, হে পরাৎপর ঈশ্বরের দাস শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো, বাহির হইয়া আইস। তখন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো অগ্নির মধ্য হইতে বাহির হইয়া আসিলেন। পরে ক্ষিতিপাল, প্রতিনিধি, দেশাধ্যক্ষ ও রাজমন্ত্রিগণ একত্র হইয়া ঐ তিন ব্যক্তিকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিলেন, অগ্নি তাঁহাদের শরীরের উপর কিছুই শক্তি প্রকাশ করে নাই, তাঁহাদের মস্তকের কেশও দগ্ধ হয় নাই, বস্ত্রও বিকৃত হয় নাই, এবং তাহাদের গায়ে অগ্নির গন্ধও নাই। তখন নবূখদ্‌নিৎসর এই কথা কহিলেন, ধন্য শদ্রকের, মৈশকের ও অবেদ্‌-নগোর ঈশ্বর, তিনি আপন দূত প্রেরণ করিয়া, তাঁহার সেই দাসদিগকে উদ্ধার করিলেন, যাহারা তাঁহাতে বিশ্বাস করিয়াছে, রাজার আজ্ঞা লঙ্ঘন করিয়াছে, এবং আপনাদের ঈশ্বর ব্যতিরেকে যেন অন্য কোন দেবের সেবা ও পূজা করিতে না হয়, সেই জন্য আপন আপন শরীর দিয়াছে। অতএব আমি এই নিয়ম স্থাপন করিতেছি, সকল দেশের লোক, জাতি ও ভাষাবাদিগণের মধ্যে যে কেহ শদ্রকের, মৈশকের ও অবেদ্‌-নগোর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কোন ভ্রান্তির কথা বলিবে, সে খণ্ডবিখণ্ড হইবে, এবং তাহার গৃহ সারের ঢিবী করা যাইবে; কেননা এ প্রকার উদ্ধার করিতে সমর্থ আর কোন দেবতা নাই। তখন রাজা বাবিল প্রদেশে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে উচ্চপদস্থ করিলেন। সমস্ত পৃথিবী-নিবাসী সকল লোক, জাতি ও ভাষাবাদীর প্রতি নবূখদ্‌নিৎসর রাজার বিজ্ঞাপন। তোমাদের মহতী শান্তি হউক। পরাৎপর ঈশ্বর আমার পক্ষে যে সকল চিহ্ন-কার্য্য ও আশ্চর্য্য কার্য্য সাধন করিয়াছেন, তাহা আমি প্রচার করা বিহিত বুঝিলাম। আহা! তাঁহার চিহ্ন সকল কেমন মহৎ! তাঁহার আশ্চর্য্য কার্য্য সকল কেমন পরাক্রমশালী! তাঁহার রাজ্য অনন্তকালীন রাজ্য, ও তাঁহার কর্ত্তৃত্ব পুরুষানুক্রমে স্থায়ী। আমি নবূখদ্‌নিৎসর আপন গৃহে শান্তিযুক্ত ও আপন প্রাসাদে তেজস্বী ছিলাম। আমি এক স্বপ্ন দেখিলাম, তাহা আমার ত্রাসজনক হইল, এবং শয্যার উপরে নানা চিন্তা ও মনের দর্শন আমাকে বিহ্বল করিল। অতএব সেই স্বপ্নের তাৎপর্য্য আমাকে জানাইবার জন্য আমি বাবিলের সমস্ত বিদ্বান্‌ লোককে আমার নিকটে আনিতে আজ্ঞা করিলাম। পরে মন্ত্রবেত্তা, গণক, কল্‌দীয় ও জ্যোতির্ব্বেত্তারা আমার কাছে আসিলে আমি তাহাদের কাছে সেই স্বপ্ন বলিলাম; কিন্তু তাহারা আমাকে তাহার তাৎপর্য্য বলিতে পারিল না। অবশেষে দানিয়েল, যাঁহার নাম আমার দেবের নামানুসারে বেল্টশৎসর, যাঁহার অন্তরে পবিত্র দেবগণের আত্মা আছেন, তিনি আমার সম্মুখে আসিলেন, আর আমি তাঁহার কাছে সেই স্বপ্ন বলিলাম; যথা— হে মন্ত্রবেত্তাগণের অধ্যক্ষ বেল্টশৎসর, আমি জানি, পবিত্র দেবগণের আত্মা তোমার অন্তরে আছেন, এবং কোন নিগূঢ় বাক্য তোমার পক্ষে কষ্টকর নহে; আমি স্বপ্নে যে যে দর্শন পাইয়াছি, তাহা ও তাহার তাৎপর্য্য আমাকে জ্ঞাত কর। শয্যার উপরে আমার মনের দর্শন এই; আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ পৃথিবীর মধ্যস্থলে এক বৃক্ষ রহিয়াছে, তাহা উচ্চে বৃহৎ। সেই বৃক্ষ বৃদ্ধি পাইয়া বলবান ও উচ্চতায় গগনস্পর্শী হইল, সমস্ত পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত দৃশ্যমান হইল। তাহার সুন্দর সুন্দর পত্র ও বিস্তর ফল ছিল; তাহার মধ্যে সকলের জন্য খাদ্য ছিল; তাহার তলে মাঠের পশুগণ ছায়া প্রাপ্ত হইত, তাহার শাখায় আকাশের পক্ষিগণ বাস করিত, এবং সমস্ত প্রাণী তাহা হইতে খাদ্য পাইত। পরে আমি আমার শয্যার উপরে মনের দর্শনে দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, এক জন প্রহরী, এক পবিত্র ব্যক্তি, স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিলেন। তিনি উচ্চৈঃস্বরে এই কথা কহিলেন, বৃক্ষটী ছেদন কর, উহার শাখা কাটিয়া ফেল, উহার পত্র ঝাড়িয়া ফেল, এবং উহার ফল ছড়াইয়া দেও; উহার তল হইতে পশুগণ ও উহার শাখা হইতে পক্ষিগণ চলিয়া যাউক। কিন্তু ভূমিতে উহার মূলের কাণ্ডকে লৌহ ও পিত্তলের শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া ক্ষেত্রের কোমল তৃণমধ্যে রাখ; আর সে আকাশের শিশিরে ভিজুক, এবং পশুদের সহিত পৃথিবীর তৃণে তাহার অংশ হউক; তাহার হৃদয় মানুষের না থাকিয়া পরিবর্ত্তিত হউক, ও তাহাকে পশুর হৃদয় দত্ত হউক; এবং তাহার উপরে সাত কাল ঘুরুক। এই বার্ত্তা প্রহরীবর্গের আদেশে, ও এই বিষয়টী পবিত্রগণের কথায় দত্ত হইল; অভিপ্রায় এই, যেন জীবিত লোকেরা জানিতে পারে যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন, যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন, ও মনুষ্যদের মধ্যে অতি নীচ ব্যক্তিকে তাহার উপরে নিযুক্ত করেন। আমি রাজা নবূখদ্‌নিৎসর এই স্বপ্ন দেখিয়াছি; এখন হে বেল্টশৎসর, তুমি তাৎপর্য্য বল, কেননা আমার রাজ্যস্থ কোন বিদ্বান্‌ আমাকে তাৎপর্য্য বলিতে পারে না, কিন্তু তুমি বলিতে পার, কেননা তোমার অন্তরে পবিত্র দেবগণের আত্মা আছেন। তখন দানিয়েল, যাঁহার নাম বেল্টশৎসর, কিয়ৎকাল স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন, ভাবনাতে বিহ্বল হইলেন। রাজা কহিলেন, হে বেল্টশৎসর, সেই স্বপ্ন ও তাহার তাৎপর্য্য তোমাকে বিহ্বল না করুক। বেল্টশৎসর উত্তর করিলেন, হে আমার প্রভু, এই স্বপ্ন আপনার শত্রুগণের প্রতি ঘটুক, ও ইহার তাৎপর্য্য আপনার বিপক্ষ লোকদের প্রতি ঘটুক। আপনি যে বৃক্ষটী দেখিয়াছেন, যাহা বৃদ্ধি পাইল, বলবান হইয়া উঠিল, যাহার উচ্চতা আকাশ পর্য্যন্ত পৌঁছিল, ও যাহা সমস্ত পৃথিবীতে দৃশ্যমান হইল, যাহার পত্র সুন্দর ও ফল বিস্তর ছিল, যাহাতে সকলের জন্য খাদ্য ছিল, যাহার তলে মাঠের পশুগণ বাস করিত, এবং যাহার শাখাতে আকাশের পক্ষিগণ বসতি করিত; হে রাজন, সেই বৃক্ষ আপনি। আপনি বৃদ্ধি পাইয়াছেন, বলবান হইয়া উঠিয়াছেন, আপনার মহিমা বৃদ্ধি পাইয়াছে, আকাশ পর্য্যন্ত পৌঁছিয়াছে, এবং আপনার কর্ত্তৃত্ব পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত ব্যাপিয়াছে। আর মহারাজ দেখিয়াছেন, এক জন প্রহরী, এক পবিত্র ব্যক্তি, স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিতেছেন, আর বলিতেছেন, ‘বৃক্ষটা ছেদন কর ও বিনষ্ট কর, কিন্তু ভূমিতে উহার মূলের কাণ্ডকে লৌহ ও পিত্তলের শৃঙ্খলে বদ্ধ করিয়া ক্ষেত্রের কোমল তৃণমধ্যে রাখ; সে আকাশের শিশিরে ভিজুক, মাঠের পশুদের সহিত তাহার অংশ হউক, যে পর্য্যন্ত না তাহার উপরে সাত কাল ঘূরে।’ হে রাজন্‌, ইহার তাৎপর্য্য এই; আর আমার প্রভু মহারাজের উপরে যাহা আসিয়াছে, তাহা পরাৎপরেরই নিরূপণ। আপনি মানব-সমাজ হইতে দূরীকৃত হইবেন, মাঠের পশুদের সহিত আপনার বসতি হইবে, বলদের ন্যায় আপনাকে তৃণ ভোজন করিতে দেওয়া যাইবে, আপনি আকাশের শিশিরে ভিজিবেন, এবং আপনার উপরে সাত কাল ঘূরিবে; যে পর্য্যন্ত না আপনি জানিবেন যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন, ও যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন। আর বৃক্ষমূলের কাণ্ড রাখিবার আজ্ঞা প্রদত্ত হইয়াছিল; সুতরাং আপনি যখন জানিতে পাইবেন যে, স্বর্গই কর্ত্তৃত্ব করে, তখন আপনার হস্তে আপনার রাজত্ব স্থির হইবে। অতএব, হে রাজন্‌, আপনি আমার পরামর্শ গ্রাহ্য করুন; আপনি ধার্ম্মিকতা দ্বারা আপন পাপ সকল, ও দুঃখীদের প্রতি কৃপা প্রদর্শন দ্বারা আপন অপরাধ সকল মুছিয়া ফেলুন; হয় ত আপনার শান্তিকাল বৃদ্ধি পাইবে। সে সমস্তই রাজা নবূখদ্‌নিৎসরে ফলিল। বারো মাসের শেষে তিনি বাবিলের রাজপ্রাসাদের উপরে বেড়াইতেছিলেন। রাজা এই কথা কহিলেন, এ কি সেই মহতী বাবিল নয়, যাহা আমি আপন বলের প্রভাবে ও আপন প্রতাপের মহিমার্থে রাজধানী করিবার জন্য নির্ম্মাণ করিয়াছি? রাজার মুখ হইতে এই বাক্য নির্গত হইতে না হইতে এই আকাশবাণী হইল, হে রাজন্‌ নবূখদ্‌নিৎসর! তোমাকে বলা হইতেছে, তোমার রাজত্ব তোমা হইতে গেল। আর তুমি মানব-সমাজ হইতে দূরীকৃত হইবে, মাঠের পশুদের সহিত তোমার বসতি হইবে, বলদের ন্যায় তোমাকে তৃণ ভোজন করান যাইবে, ও তোমার উপরে সাত কাল ঘূরিবে; যে পর্য্যন্ত না তুমি জানিবে যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর কর্ত্তৃত্ব করেন, ও যাহাকে তাহা দিতে ইচ্ছা করেন, তাহাকে তাহা দেন। সেই দণ্ডে নবূখদ্‌নিৎসরের সম্বন্ধে সেই বাক্য সিদ্ধ হইল; তিনি মানব-সমাজ হইতে দূরীকৃত হইলেন, বলদের ন্যায় তৃণ ভোজন করিতে লাগিলেন, তাঁহার শরীর আকাশের শিশিরে ভিজিল, ক্রমে তাঁহার কেশ ঈগল পক্ষীর পালখের ন্যায়, ও তাঁহার নখ পক্ষীর নখরের ন্যায় হইয়া উঠিল। আর সেই সময়ের শেষে আমি নবূখদ্‌নিৎসর স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিলাম, ও আমার বুদ্ধি আমাতে ফিরিয়া আসিল; তাহাতে আমি পরাৎপরের ধন্যবাদ করিলাম, এবং অনন্তজীবী ঈশ্বরের প্রশংসা ও সমাদর করিলাম; কারণ তাঁহার কর্ত্তৃত্ব অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব ও তাঁহার রাজ্য পুরুষানুক্রমে স্থায়ী; আর পৃথিবীনিবাসিগণ সকলে অবস্তুবৎ গণ্য; তিনি স্বর্গীয় বাহিনীর ও পৃথিবীনিবাসীদের মধ্যে আপন ইচ্ছানুসারে কার্য্য করেন; এবং এমন কেহ নাই যে, তাঁহার হস্ত থামাইয়া দিবে, কিম্বা তাঁহাকে বলিবে, তুমি কি করিতেছ? সেই সময়ে আমার বুদ্ধি আমাতে ফিরিয়া আসিল, এবং আমার রাজ্যের গৌরবার্থে আমার প্রতাপ ও তেজ আমাতে ফিরিয়া আসিল; আর আমার মন্ত্রিগণ ও আমার মহল্লোক সকল আমার অন্বেষণ করিল, এবং আমি আপন রাজ্যে পুনঃস্থাপিত হইলাম, ও আমার মহিমা অতিশয় বৃদ্ধি পাইল। এখন আমি নবূখদ্‌নিৎসর সেই স্বর্গরাজ্যের প্রশংসা, প্রতিষ্ঠা ও সমাদর করিতেছি; কেননা তাঁহার সমস্ত ক্রিয়া সত্য, ও তাঁহার পথ সকল ন্যায্য; আর যাহারা স্বগর্ব্বে চলে, তিনি তাহাদিগকে খর্ব্ব করিতে পারেন। রাজা বেল্‌শৎসর আপনার সহস্র মহল্লোকের নিমিত্ত মহাভোজ প্রস্তুত করিলেন, এবং সেই সহস্রের সাক্ষাতে দ্রাক্ষারস পান করিলেন। দ্রাক্ষারসের স্বাদ গ্রহণ করিতে করিতে বেল্‌শৎসর আজ্ঞা করিলেন, আমার পিতা নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেমস্থ মন্দির হইতে যে সকল স্বর্ণের ও রৌপ্যের পাত্র লইয়া আসিয়াছিলেন, সে সকল আনীত হউক, যেন রাজা ও তাঁহার মহল্লোকেরা, তাঁহার পত্নীগণ ও তাঁহার উপপত্নীগণ সেই সকল পাত্রে পান করিতে পারেন। তখন ঈশ্বরের যিরূশালেমস্থ গৃহ-মন্দির হইতে আনীত ঐ সুবর্ণ পাত্র সকল লইয়া আসা হইল, আর রাজা ও তাঁহার মহল্লোকেরা, তাঁহার পত্নীগণ ও তাঁহার উপপত্নীগণ সেই সকল পাত্রে পান করিলেন। তাঁহারা দ্রাক্ষারস পান করিতে করিতে সুবর্ণময়, রৌপ্যময়, পিত্তলময়, লৌহময়, কাষ্ঠময় ও প্রস্তরময় দেবগণের প্রশংসা করিতে লাগিলেন। সেই দণ্ডে মনুষ্য-হস্তের অঙ্গুলি-কলাপ আসিয়া রাজপ্রাসাদের ভিত্তির প্রলেপের উপরে দীপাধারের সম্মুখে লিখিতে লাগিল; এবং যে হস্তাগ্র লিখিতেছিল, তাহা রাজা দেখিলেন। তখন রাজার মুখ বিবর্ণ হইল, তিনি ভাবনাতে বিহ্বল হইলেন; তাঁহার কটিদেশের গ্রন্থি শিথিল হইয়া পড়িল, এবং তাঁহার জানুতে জানু ঠেকিতে লাগিল। রাজা উচ্চৈঃস্বরে গণক, কল্‌দীয় ও জ্যোতির্ব্বেত্তাদিগকে আনিতে আজ্ঞা করিলেন। রাজা বাবিলের বিদ্বান্‌দিগকে কহিলেন, যে কোন ব্যক্তি এই লেখা পড়িয়া ইহার তাৎপর্য্য আমাকে জানাইবে, সে বেগুনিয়া বস্ত্রে বস্ত্রান্বিত হইবে, তাহার কণ্ঠে সুবর্ণের হার দত্ত হইবে, এবং সে রাজ্যে তৃতীয় কর্ত্তা হইবে। তখন রাজার বিদ্বান্‌ লোকেরা ভিতরে আসিল; কিন্তু সেই লেখা পড়িতে কিম্বা রাজাকে তাহার তাৎপর্য্য জানাইতে পারিল না। তখন বেল্‌শৎসর রাজা অতিশয় বিহ্বল হইলেন, তাঁহার মুখ বিবর্ণ হইল, ও তাঁহার মহল্লোকেরা উদ্বিগ্ন হইলেন। রাজার ও তাঁহার মহল্লোকদের সেই কথা শুনিয়া রাণী ভোজনশালায় আসিলেন। রাণী বলিলেন, হে রাজন, চিরজীবী হউন; ভাবনাতে বিহ্বল হইবেন না, এবং মুখ বিবর্ণ হইতে দিবেন না। আপনার রাজ্যের মধ্যে এক ব্যক্তি আছেন, তাঁহার অন্তরে পবিত্র দেবগণের আত্মা আছেন; আপনার পিতার সময়ে তাঁহার মধ্যে দীপ্তি, বুদ্ধিকৌশল ও দেবগণের জ্ঞানের তুল্য জ্ঞান লক্ষিত হইয়াছিল, এবং আপনার পিতা রাজা নবূখদ্‌নিৎসর, হাঁ, রাজন্‌, আপনার পিতা তাঁহাকে মন্ত্রবেত্তাদের, গণকদের, কল্‌দীয়দের ও জ্যোতির্ব্বেত্তাদের প্রধান করিয়া নিযুক্ত করিয়াছিলেন; কেননা উৎকৃষ্ট আত্মা, জ্ঞান, বুদ্ধিকৌশল এবং স্বপ্নের তাৎপর্য্য বলিবার, গূঢ়বাক্য প্রকাশ করিবার ও সন্দেহ ভঞ্জন করিবার ক্ষমতা সেই দানিয়েলে পাওয়া গিয়াছিল, যাঁহাকে রাজা বেল্টশৎসর নাম দিয়াছিলেন। অতএব সেই দানিয়েলকে আহ্বান করা হউক, তিনি তাৎপর্য্য জানাইবেন। তখন দানিয়েল রাজার নিকটে আনীত হইলেন। রাজা দানিয়েলকে কহিলেন, তুমিই কি দানিয়েল সেই নির্ব্বাসিত যিহূদী লোকদের এক জন, যাহাদিগকে আমার পিতা মহারাজ যিহূদা দেশ হইতে আনিয়াছিলেন? তোমার বিষয়ে আমি শুনিতে পাইয়াছি যে, তোমার অন্তরে দেবগণের আত্মা আছেন, এবং দীপ্তি, বুদ্ধিকৌশল ও উৎকৃষ্ট জ্ঞান তোমার মধ্যে লক্ষিত হয়। আর সম্প্রতি এই লেখা পাঠ করিবার ও ইহার তাৎপর্য্য আমাকে জানাইবার জন্য বিদ্বান্‌ ও গণকেরা আমার কাছে আনীত হইয়াছিল; কিন্তু তাহারা লেখার তাৎপর্য্য আমাকে জানাইতে পারে নাই। কিন্তু তোমার বিষয়ে শুনিয়াছি যে, তুমি তাৎপর্য্য প্রকাশ করিতে ও সন্দেহ ভঞ্জন করিতে পার; এখন যদি তুমি এই লেখা পাঠ করিতে ও ইহার তাৎপর্য্য আমাকে জানাইতে পার, তবে বেগুনিয়া বস্ত্রে বস্ত্রান্বিত হইবে, তোমার কণ্ঠে সুবর্ণের হার দত্ত হইবে, এবং তুমি রাজ্যে তৃতীয় কর্ত্তা হইবে। তখন দানিয়েল উত্তর করিয়া রাজার সম্মুখে বলিলেন, আপনার দান আপনারই থাকুক, আপনার পুরস্কার অন্যকে দিউন; কিন্তু আমি মহারাজের নিকটে এই লিপি পাঠ করিব, এবং ইহার তাৎপর্য্য তাঁহাকে জানাইব। হে রাজন্‌, পরাৎপর ঈশ্বর আপনার পিতা নবূখদ্‌নিৎসরকে রাজ্য, মহিমা, গৌরব ও প্রতাপ দিয়াছিলেন। তিনি তাঁহাকে যে মহিমা দিয়াছিলেন, তৎপ্রযুক্ত সমস্ত লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদিগণ তাঁহার সাক্ষাতে কাঁপিত ও ভয় করিত; তিনি যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে বধ করিতেন, যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে সজীব রাখিতেন, এবং যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে উচ্চপদ দিতেন, যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে অবনত করিতেন। কিন্তু তাঁহার অন্তঃকরণ গর্ব্বিত হইলে ও তাঁহার আত্মা কঠিন হইয়া পড়িলে তিনি দুঃসাহসী হইলেন, তাই আপন রাজসিংহাসন হইতে চ্যুত হইলেন, ও তাঁহা হইতে গৌরব নীত হইল। তিনি মনুষ্য-সন্তানদের নিকট হইতে দূরীকৃত হইলেন, তাঁহার হৃদয় পশুর সমান হইল, ও বন্য-গর্দ্দভের সহিত তাঁহার বাস হইল; তিনি বলদের ন্যায় তৃণ ভোজন করিতেন, এবং তাঁহার শরীর আকাশের শিশিরে ভিজিত; যে পর্য্যন্ত না তিনি জানিতে পারিলেন যে, মনুষ্যদের রাজ্যে পরাৎপর ঈশ্বর কর্ত্তৃত্ব করেন, ও তাহার উপরে যাহাকে ইচ্ছা তাহাকে নিযুক্ত করেন। হে বেল্‌শৎসর, আপনি তাঁহারই পুত্র, আপনি এই সকল জ্ঞাত হইলেও আপনি অন্তঃকরণ নম্র করেন নাই। কিন্তু স্বর্গাধিপতির বিরুদ্ধে আপনাকে উচ্চ করিয়াছেন; এবং তাঁহার গৃহের নানা পাত্র আপনার সম্মুখে আনীত হইয়াছে, আর আপনি, আপনার মহল্লোকেরা, আপনার পত্নীগণ ও আপনার উপপত্নীগণ সেই সকল পাত্রে দ্রাক্ষারস পান করিয়াছেন; এবং রৌপ্যময়, সুবর্ণময়, পিত্তলময়, লৌহময়, কাষ্ঠময় ও প্রস্তরময় যে দেবগণ দেখিতে পায় না, শুনিতে পায় না, কিছু জানিতেও পারে না, আপনি তাহাদের প্রশংসা করিয়াছেন; কিন্তু আপনার নিঃশ্বাস যাঁহার হস্তগত ও আপনার সকল পথ যাঁহার অধীন, আপনি সেই ঈশ্বরের সমাদর করেন নাই। এই জন্য তাঁহার সম্মুখ হইতে এই হস্তাগ্র প্রেরিত ও এই কথা লিখিত হইল। লিখিত কথাটী এই, ‘মিনে মিনে, তকেল, উপারসীন,’ [গণিত, গণিত, তুলাতে পরিমিত, ও খণ্ডিত]। ইহার তাৎপর্য্য এই— ‘গণিত,’ ঈশ্বর আপনার রাজ্যের গণনা করিয়াছেন, তাহা শেষ করিয়াছেন; ‘তুলাতে পরিমিত,’ আপনি তুলাতে পরিমিত হইয়া লঘুরূপে নির্ণীত হইয়াছেন; ‘খণ্ডিত,’ আপনার রাজ্য খণ্ডিত হইয়া মাদীয় ও পারসীকদিগকে দত্ত হইল। তখন বেল্‌শৎসরের আজ্ঞায় দানিয়েল বেগুনিয়া বস্ত্রে বস্ত্রান্বিত হইলেন, ও তাঁহার কণ্ঠে সুবর্ণের হার দেওয়া গেল, এবং তাঁহার বিষয়ে এই কথা ঘোষণা করিয়া দেওয়া হইল যে, তিনি রাজ্যে তৃতীয় কর্ত্তা হইলেন। সেই রাত্রিতে কল্‌দীয় রাজা বেল্‌শৎসর হত হন। পরে মাদীয় দারিয়াবস রাজ্য প্রাপ্ত হন; তখন তাঁহার প্রায় বাষট্টি বৎসর বয়স হইয়াছিল। দারিয়াবস ইহা বিহিত-বুঝিলেন, যেন তিনি রাজ্যের সর্ব্বস্থানে রাজ্যের উপরে এক শত বিংশতি জন ক্ষিতিপাল, এবং তাঁহাদের উপরে তিন জন অধ্যক্ষকে নিযুক্ত করেন; সেই তিন জনের মধ্যে দানিয়েল এক জন ছিলেন। ইহার অভিপ্রায় এই, যেন ঐ ক্ষিতিপালেরা উহাঁদের কাছে হিসাব দেন, আর রাজার ক্ষতি না হয়। সেই দানিয়েল অধ্যক্ষগণ ও ক্ষিতিপালগণ হইতে বিশিষ্ট ছিলেন, কেননা তাঁহার অন্তরে উৎকৃষ্ট আত্মা ছিল; আর রাজা তাঁহাকে সমুদয় রাজ্যের উপরে নিযুক্ত করিতে মনস্থ করিলেন। তখন অধ্যক্ষেরা ও ক্ষিতিপালেরা রাজকর্ম্মের বিষয়ে দানিয়েলের দোষ ধরিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন, কিন্তু কোন দোষ বা অপরাধ পাইলেন না; কেননা তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন, তাঁহার মধ্যে কোন ভ্রান্তি কিম্বা অপরাধ পাওয়া গেল না। তখন সেই ব্যক্তিরা কহিলেন, আমরা ঐ দানিয়েলের অন্য কোন দোষ পাইব না; কেবল তাহার ঈশ্বরের ব্যবস্থা লইয়া যদি তাহার কোন দোষ পাই। তখন সেই অধ্যক্ষেরা ও ক্ষিতিপালেরা রাজার নিকটে সমাগত হইয়া তাঁহাকে এই কথা কহিলেন, মহারাজ দারিয়াবস, চিরজীবী হউন। রাজ্যের অধ্যক্ষগণ, প্রতিনিধিগণ, ক্ষিতিপালগণ, মন্ত্রিগণ ও দেশাধ্যক্ষগণ সকলে মন্ত্রণা করিয়া এমন রাজাজ্ঞা স্থাপন ও দৃঢ় প্রতিষেধবিধি প্রচার করিতে বিহিত বুঝিয়াছেন যে, যদি কেহ ত্রিশ দিন পর্য্যন্ত মহারাজ ব্যতীত কোন দেবতার কিম্বা মানুষের কাছে প্রার্থনা করে, তবে হে রাজন্‌, সে সিংহদের খাতে নিক্ষিপ্ত হইবে। এখন হে রাজন্‌, আপনি সেই প্রতিষেধবিধি স্থির করুন, এবং বিধিপত্রে স্বাক্ষর করুন, যেন মাদীয়দের ও পারসীকদের আলোপ্য ব্যবস্থানুসারে তাহা অপরিবর্ত্তনীয় হয়। অতএব দারিয়াবস রাজা সেই পত্র ও প্রতিষেধবিধিতে স্বাক্ষর করিলেন। পত্রখানি স্বাক্ষরিত হইয়াছে, ইহা দানিয়েল যখন জানিতে পাইলেন, তখন আপন গৃহে গেলেন; তাঁহার কুঠরীর বাতায়ন যিরূশালেমের দিকে খোলা ছিল; তিনি দিনের মধ্যে তিনবার জানু পাতিয়া আপন ঈশ্বরের সম্মুখে প্রার্থনা ও স্তবগান করিলেন, যেমন পূর্ব্বে করিতেন। তখন সেই লোকেরা সমাগত হইয়া দেখিলেন, দানিয়েল আপন ঈশ্বরের নিকটে অনুরোধ ও বিনতি করিতেছেন। তখন তাঁহারা রাজার নিকটে গিয়া রাজকীয় প্রতিষেধের বিষয়ে রাজার কাছে এই নিবেদন করিলেন; হে রাজন্‌, আপনি কি এই প্রতিষেধপত্রে স্বাক্ষর করেন নাই যে, যে কোন ব্যক্তি ত্রিশ দিনের মধ্যে মহারাজ ব্যতীত কোন দেবতার বা মানুষের কাছে প্রার্থনা করে, সে সিংহদের খাতে নিক্ষিপ্ত হইবে? রাজা উত্তর করিলেন, মাদীয়দের ও পারসীকদের অলোপ্য ব্যবস্থানুসারে তাহা স্থির হইয়াছে। তখন তাঁহারা রাজার সম্মুখে কহিলেন, হে রাজন্‌, নির্ব্বাসিত যিহূদীদের মধ্যবর্ত্তী দানিয়েল আপনাকে এবং আপনার স্বাক্ষরিত প্রতিষেধ মান্য করে না, কিন্তু প্রতিদিন তিনবার প্রার্থনা করে। রাজা এ কথা শুনিয়া অতিশয় ক্ষুণ্ণমনা হইলেন, এবং দানিয়েলকে উদ্ধার করিবার জন্য চেষ্টা পাইলেন; সূর্য্যাস্ত পর্য্যন্ত তাঁহাকে রক্ষা করিতে অনেক যত্ন করিলেন। তখন ঐ লোকেরা রাজার নিকটে সমাগত হইয়া রাজাকে কহিলেন, মহারাজ, জানিবেন, যে কোন প্রতিষেধ কি বিধি রাজা স্থির করিয়াছেন, তাহা অন্যথা হইতে পারে না, মাদীয়দের ও পারসীকদের এই ব্যবস্থা। তখন রাজা আজ্ঞা দিলেন, তাই তাঁহারা দানিয়েলকে আনিয়া সিংহদের খাতে নিক্ষেপ করিলেন। রাজা দানিয়েলকে কহিলেন, তুমি অবিরত যাঁহার সেবা করিয়া থাক, তোমার সেই ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করিবেন। পরে একখানা প্রস্তর আনা গেল ও খাতের মুখে স্থাপিত হইল, এবং দানিয়েলের বিষয়ে যেন কিছু পরিবর্ত্তন না হয়, এই জন্য রাজা আপনার মুদ্রায় ও আপন মহল্লোকদের মুদ্রায় তাহা অঙ্কিত করিলেন। পরে রাজা আপন প্রাসাদে গিয়া উপবাসে রাত্রি যাপন করিলেন, আপনার সম্মুখে কোন উপভোগের সামগ্রী আনিতে দিলেন না, তাঁহার নিদ্রাও হইল না। পরে রাজা অতি প্রত্যূষে উঠিয়া সত্বর সিংহদের খাতের কাছে গেলেন। আর খাতের নিকটে গিয়া তিনি আর্ত্তস্বর করিয়া দানিয়েলকে ডাকিলেন; রাজা দানিয়েলকে বলিলেন, হে জীবন্ত ঈশ্বরের সেবক দানিয়েল, তুমি অবিরত যাঁহার সেবা কর, তোমার সেই ঈশ্বর কি সিংহের মুখ হইতে তোমাকে রক্ষা করিতে পারিয়াছেন? তখন দানিয়েল রাজাকে কহিলেন, হে রাজন্‌, চিরজীবী হউন। আমার ঈশ্বর আপন দূত পাঠাইয়া সিংহগণের মুখ বদ্ধ করিয়াছেন, তাহারা আমার হিংসা করে নাই; কেননা তাঁহার সাক্ষাতে আমার নির্দ্দোষতা লক্ষিত হইল; এবং হে রাজন্‌, আপনার সাক্ষাতেও আমি কোন অপরাধ করি নাই। তখন রাজা অতিশয় আহ্লাদিত হইলেন, এবং দানিয়েলকে খাত হইতে তুলিতে আজ্ঞা করিলেন। তাহাতে দানিয়েলকে খাত হইতে তুলিয়া লওয়া হইল, আর তাঁহার শরীরে কোন প্রকার আঘাত দৃষ্ট হইল না, কারণ তিনি আপন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিয়াছিলেন। পরে রাজা আজ্ঞা করিলেন, তাহাতে যাহারা দানিয়েলের উপরে দোষারোপ করিয়াছিল, তাহাদিগকে আনিয়া তাহাদের বালকবালিকা ও স্ত্রীশুদ্ধ সিংহদের খাতে ফেলিয়া দেওয়া হইল; আর তাহারা খাতের তল স্পর্শ করিতে না করিতে সিংহগণ তাহাদিগকে আক্রমণ করিয়া তাহাদের সমস্ত অস্থি চূর্ণ করিল। তখন দারিয়াবস রাজা সমস্ত পৃথিবীনিবাসী লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীকে এই পত্র লিখিলেন, ‘তোমাদের মহতী শান্তি হউক! আমি এই আজ্ঞা করিতেছি, আমার রাজ্যের অধীন সর্ব্বস্থানে লোকেরা দানিয়েলের ঈশ্বরের সাক্ষাতে কম্পমান হউক ও ভয় করুক; কেননা তিনি জীবন্ত ঈশ্বর ও অনন্তকালস্থায়ী, এবং তাঁহার রাজ্য অবিনাশ্য, ও তাঁহার কর্ত্তৃত্ব শেষ পর্য্যন্ত থাকিবে। তিনি রক্ষা করেন ও উদ্ধার করেন, এবং তিনি স্বর্গে ও পৃথিবীতে চিহ্ন-কার্য্য ও আশ্চর্য্য কার্য্য সাধন করেন; তিনি দানিয়েলকে সিংহদের হস্ত হইতে রক্ষা করিয়াছেন।’ আর এই দানিয়েল দারিয়াবসের ও পারসীক কোরসের-রাজত্বকালে ভাগ্যবান্‌ থাকিলেন। বাবিল-রাজ বেল্‌শৎসরের প্রথম বৎসরে দানিয়েল শয্যার উপরে স্বপ্ন ও মনের দর্শন দেখিলেন; তখন তিনি সেই স্বপ্ন লিখিয়া কথার সার প্রকাশ করিলেন। দানিয়েল এই বিবরণ কহিলেন,— আমি রাত্রিকালে আমার দর্শনে দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, মহাসমুদ্রের উপরে আকাশের চারি বায়ু প্রচণ্ড বেগে বহিতেছে। আর সমুদ্র হইতে বৃহৎ চারিটা জন্তু বাহির হইল, তাহারা পরস্পর বিভিন্ন। প্রথমটা সিংহের সদৃশ; এবং ঈগল পক্ষীর ন্যায় তাহার পক্ষ ছিল; আমি দেখিতে দেখিতে তাহার সেই দুই পক্ষ উৎপাটিত হইল, পরে তাহাকে ভূমি হইতে উঠাইয়া মানুষের মত দুই চরণে দাঁড় করান হইল, এবং মানুষের হৃদয় তাহাকে দত্ত হইল। পরে দেখ, আর এক জন্তু; সেই দ্বিতীয়টা ভল্লূকের সদৃশ, সে এক পার্শ্বে চরণে ভর দিয়া দাঁড়াইল, এবং তাহার মুখে দন্তশ্রেণীর মধ্যে তিন খান পঞ্জরের অস্থি ছিল; তাহাকে বলা হইল, উঠ, যথেষ্ট মাংস ভোজন কর। তৎপরে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, আর এক জন্তু, সে চিতাব্যাঘ্রের সদৃশ, তাহার পৃষ্ঠে পক্ষীর ন্যায় চারি পক্ষ ছিল; আবার সেই জন্তুর চারি মস্তক ছিল, এবং তাহাকে কর্ত্তৃত্ব দত্ত হইল। তৎপরে আমি রাত্রিকালীন দর্শনে দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, চতুর্থ এক জন্তু, সে ভয়ঙ্কর, ক্ষমতাপন্ন ও অতিশয় শক্তিমান্‌; এবং তাহার বৃহৎ লৌহময় দন্ত ছিল, সে ভক্ষণ করিল ও চূর্ণ করিল, এবং উচ্ছিষ্টকে পদতলে দলিত করিল; আর পূর্ব্বকার সকল জন্তু হইতে সে ভিন্ন, ও তাহার দশটী শৃঙ্গ ছিল। আমি সেই শৃঙ্গের বিষয় ভাবিতেছিলাম, আর দেখ, তাহাদের মধ্যে আর এক শৃঙ্গ উঠিল, ইহা ক্ষুদ্র, ইহার সাক্ষাতে পূর্ব্ব শৃঙ্গগুলির তিন শৃঙ্গ সমূলে উৎপাটিত হইল; আর দেখ, ঐ শৃঙ্গে মানুষের চক্ষুর মত চক্ষু ও দর্পবাক্যবাদী মুখ ছিল। আমি দৃষ্টিপাত করিতে করিতে কয়েকটী সিংহাসন স্থাপিত হইল, এবং অনেক দিনের বৃদ্ধ উপবিষ্ট হইলেন, তাঁহার পরিচ্ছদ হিমানীর ন্যায় শুক্লবর্ণ এবং তাঁহার মস্তকের কেশ বিশুদ্ধ মেষলোমের তুল্য; তাঁহার সিংহাসন অগ্নিশিখাময়, তাহার চক্র সকল জলন্ত অগ্নি। তাঁহার সম্মুখ হইতে অগ্নির স্রোত নির্গত হইয়া বহিতেছিল; সহস্রের সহস্র তাঁহার পরিচর্য্যা করিতেছিল, এবং অযুতের অযুত তাঁহার সম্মুখে দণ্ডায়মান ছিল; বিচার বসিল এবং পুস্তক সকল খোলা হইল। আমি ঐ শৃঙ্গের কথিত দর্পবাক্যের রব প্রযুক্ত দৃষ্টিপাত করিতে থাকিলাম, আমি দৃষ্টিপাত করিতে থাকিলাম, যে পর্য্যন্ত সে জন্তু হত না হইল, তাহার শরীর বিনষ্ট না হইল, এবং তাহাকে অগ্নিশিখাতে ফেলিয়া দেওয়া না হইল। আর অন্য সকল জন্তুর গতি এই, তাহাদের হইতে কর্ত্তৃত্ব নীত হইল, তথাপি কিয়ৎকাল ও সময় পর্য্যন্ত তাহাদিগকে আয়ুর বৃদ্ধি দত্ত হইয়াছিল। আমি রাত্রিকালীন দর্শনে দৃষ্টিপাত করিলাম আর দেখ, আকাশের মেঘ সহকারে মনুষ্য-পুত্রের ন্যায় এক পুরুষ আসিলেন, তিনি সেই অনেক দিনের বৃদ্ধের নিকটে উপস্থিত হইলেন, তাঁহার সম্মুখে আনীত হইলেন। আর তাঁহাকে কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব দত্ত হইল; লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীকে তাঁহার সেবা করিতে হইবে; তাঁহার কর্ত্তৃত্ব অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব, তাহা লোপ পাইবে না, এবং তাঁহার রাজ্য বিনষ্ট হইবে না। আমি দানিয়েল আপন দেহমধ্যে আত্মায় বিষণ্ণ হইলাম ও আমার মনের দর্শন আমাকে বিহ্বল করিল। যাঁহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিলেন, আমি তাঁহাদের এক জনের কাছে গমন করিলাম এবং এই সকলের তথ্য জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি আমাকে এই কথা বলিয়া বিষয়টীর তাৎপর্য্য বুঝাইয়া দিলেন, ‘ঐ চারি বৃহৎ জন্তু চারি রাজা, তাহারা পৃথিবী হইতে উৎপন্ন হইবে। কিন্তু পরাৎপরের পবিত্রগণ রাজত্ব প্রাপ্ত হইবে, এবং চিরকাল, যুগে যুগে চিরকাল, রাজত্ব ভোগ করিবে।’ তখন আমি সেই চতুর্থ জন্তুর তথ্য জানিতে চাহিলাম, যে অন্য সকল হইতে ভিন্ন ও অতি ভয়ানক, যাহার দন্ত লৌহময় ও নখ পিত্তলময়, যে ভক্ষণ করিয়াছিল, চূর্ণ করিয়াছিল, ও উচ্ছিষ্টকে পদতলে দলিত করিয়াছিল। আর তাহার মস্তকে স্থিত দশ শৃঙ্গের তথ্য, ও যে অন্য শৃঙ্গ উঠিয়াছিল, যাহার সাক্ষাতে তিন শৃঙ্গ পড়িয়া গেল; সেই শৃঙ্গ, যাহার চক্ষু ও দর্পবাক্যবাদী মুখ ছিল, সহচরগণ অপেক্ষা যাহার বিপুল দৃশ্য ছিল, সেই শৃঙ্গের তথ্য জানিতে চাহিলাম। আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, সেই শৃঙ্গ পবিত্রগণের সহিত যুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে জয় করিল; যে পর্য্যন্ত না সেই অনেক দিনের বৃদ্ধ আসিলেন, আর পরাৎপরের পবিত্রগণের হস্তে বিচার-ভার দত্ত হইল, এবং পবিত্রগণের রাজত্ব-ভোগের সময় উপস্থিত হইল। তিনি এইরূপ কথা কহিলেন, ঐ চতুর্থ জন্তু পৃথিবীর চতুর্থ রাজ্য; সে রাজ্য সকল রাজ্য হইতে ভিন্ন হইবে, এবং সমস্ত পৃথিবীকে গ্রাস করিবে, মর্দ্দন করিবে ও চূর্ণ করিবে। আর তাহার দশ শৃঙ্গের তাৎপর্য্য; ঐ রাজ্য হইতে দশ রাজা উৎপন্ন হইবে। তাহাদের পরে আর এক জন উঠিবে, সে পূর্ব্ববর্ত্তী রাজাদের হইতে ভিন্ন হইবে, এবং তিন রাজাকে নিপাত করিবে। সে পরাৎপরের বিপরীতে কথা কহিবে, পরাৎপরের পবিত্রগণকে শীর্ণ করিবে, এবং নিরূপিত সময়ের ও ব্যবস্থার পরিবর্ত্তন করিতে মনস্থ করিবে, এবং এক কাল, [দুই] কাল ও অর্দ্ধ কাল পর্য্যন্ত তাহারা তাহার হস্তে সমর্পিত হইবে। পরে বিচার বসিবে, তাহার কর্ত্তৃত্ব তাহা হইতে নীত হইবে, শেষ পর্য্যন্ত তাহার ক্ষয় ও বিনাশ করা যাইবে। আর রাজত্ব, কর্ত্তৃত্ব ও সমস্ত আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত রাজ্যের মহিমা পরাৎপরের পবিত্র প্রজাদিগকে দত্ত হইবে; তাঁহার রাজ্য অনন্তকালস্থায়ী রাজ্য, এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব তাঁহার সেবা করিবে ও তাঁহার আজ্ঞাবহ হইবে। এই পর্য্যন্ত বৃত্তান্তের শেষ। আমি দানিয়েল ভাবনায় অত্যন্ত বিহ্বল হইলাম, ও আমার মুখ বিবর্ণ হইল; কিন্তু আমি সেই কথা মনে রাখিলাম। বেল্‌শৎসর রাজার রাজত্বের তৃতীয় বৎসরে আমি দানিয়েল প্রথম দর্শনের পরে আর এক দর্শন পাইলাম। আমি দর্শনক্রমে দৃষ্টিপাত করিতে করিতে দেখিলাম, যেন আমি এলম প্রদেশস্থ শূশন রাজবাটীতে আছি; আবার দর্শনক্রমে দেখিলাম, যেন আমি ঊলয় নদীর তীরে আছি। পরে আমি চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, নদীর সম্মুখে এক মেষ দাঁড়াইয়া আছে, তাহার দুই শৃঙ্গ, এবং সেই দুই শৃঙ্গ উচ্চ, কিন্তু একটী অন্যটী অপেক্ষা অধিকতর উচ্চ; ও যেটী উচ্চতর, সেটী পশ্চাতে উৎপন্ন হইল। আমি দেখিলাম, ঐ মেষ পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণদিকে ঢুঁস মারিল, তাহার সম্মুখে কোন জন্তু দাঁড়াইতে পারিল না, এবং তাহার হস্ত হইতে উদ্ধার করিতে পারে, এমন কেহ ছিল না, আর সে স্বেচ্ছামত কর্ম্ম করিত, আর আত্মগরিমা করিত। আমি এই বিষয় বিবেচনা করিতেছিলাম, আর দেখ, পশ্চিমদিক্‌ হইতে এক ছাগ সমস্ত পৃথিবী পার হইয়া আসিল, ভূমি স্পর্শ করিল না; আর সেই ছাগের দুই চক্ষুর মধ্যস্থানে বিলক্ষণ একটা শৃঙ্গ ছিল। পরে দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট যে মেষকে আমি দেখিয়াছিলাম, নদীর সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে, তাহার কাছে আসিয়া সে আপন বলের ব্যগ্রতায় তাহার দিকে দৌড়িয়া গেল। আর আমি দেখিলাম, সে মেষের কাছে আসিল, এবং তাহার উপরে ক্রোধ উত্তেজিত হইল, মেষকে আঘাত করিল, ও তাহার দুই শৃঙ্গ ভাঙ্গিয়া ফেলিল, তাহার সম্মুখে দাঁড়াইবার শক্তি ঐ মেষের আর রহিল না; আর সে তাহাকে ভূমিতে ফেলিয়া পদতলে দলিতে লাগিল; তাহার হস্ত হইতে ঐ মেষটীকে উদ্ধার করে, এমন কেহ ছিল না। পরে ঐ ছাগ অতিশয় আত্মগরিমা করিল, কিন্তু বলবান হইলে পর সেই বৃহৎ শৃঙ্গ ভগ্ন হইল, এবং তাহার স্থানে আকাশের চারি বায়ুর দিকে চারিটী বিলক্ষণ শৃঙ্গ উৎপন্ন হইল। আর তাহাদের একটীর মধ্য হইতে ক্ষুদ্রতম এক শৃঙ্গ উৎপন্ন হইল, সেটী দক্ষিণ ও পূর্ব্বদিকে এবং দেশরত্নের দিকে অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। আর সে আকাশমণ্ডলের বাহিনী পর্য্যন্ত বৃদ্ধি পাইল, এবং সেই বাহিনীর ও তারাগণের কিয়দংশ ভূমিতে ফেলিয়া দিল, এবং পদতলে দলিতে লাগিল। সে বাহিনীপতির বিপক্ষেও আত্মগরিমা করিল, ও তাঁহা হইতে নিত্য নৈবেদ্য অপহরণ করিল, এবং তাঁহার ধর্ম্মধামস্থান নিপাতিত হইল। আর অধর্ম্ম প্রযুক্ত নিত্য নৈবেদ্যের বিরুদ্ধে এক বাহিনী তাহার হস্তে সমর্পিত হইল, এবং সে সত্যকে ভূমিতে নিপাত করিল, এবং কর্ম্ম করিল, ও কৃতকার্য্য হইল। পরে আমি এক পবিত্র ব্যক্তিকে কথা কহিতে শুনিলাম, এবং যিনি কথা কহিতেছিলেন, তাঁহাকে আর এক পবিত্র ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিলেন, সেই নিত্য নৈবেদ্যের অপহরণ, ও সেই ধ্বংসজনক অধর্ম্ম, দলিত হইবার জন্য ধর্ম্মধামের ও বাহিনীর সমর্পণ সম্বন্ধীয় দর্শন কত লোকের জন্য? তিনি তাঁহাকে কহিলেন, দুই সহস্র তিন শত সন্ধ্যা ও প্রাতঃকালের নিমিত্ত; পরে ধর্ম্মধামের পক্ষে বিচার নিষ্পত্তি হইবে। আমি দানিয়েল এইরূপ দর্শন পাইলে পর তাহা বুঝিবার চেষ্টা করিলাম; আর দেখ, পুরুষাকৃতি এক ব্যক্তি আমার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইলেন; এবং আমি ঊলয়ের [তীর] মধ্য হইতে মনুষ্যের রব শুনিলাম, সেই রব ডাকিয়া কহিল, গাব্রিয়েল, ইহাকে দর্শনের তাৎপর্য্য বুঝাইয়া দেও। তাহাতে আমি যে স্থানে দাঁড়াইয়া ছিলাম, তিনি সেই স্থানের নিকটে আসিলেন; তিনি আসিলে আমি ত্রাসযুক্ত হইলাম, উপুড় হইয়া পড়িলাম; কিন্তু তিনি আমাকে কহিলেন, হে মনুষ্য-সন্তান, বুঝিয়া লও, কারণ এই দর্শন শেষকাল-বিষয়ক। যখন তিনি আমার সহিত আলাপ করিলেন, তখন আমি ঘোর নিদ্রায় ভূমিতে উপুড় হইয়া পড়িলাম; কিন্তু তিনি আমাকে স্পর্শ করিয়া স্বস্থানে দাঁড় করাইলেন। আর তিনি কহিলেন, দেখ, ক্রোধের উত্তরকালে যাহা ঘটিবে, তাহা আমি তোমাকে জানাই, কেননা এ নিরূপিত শেষকালের কথা। তুমি দুই শৃঙ্গবিশিষ্ট যে মেষ দেখিলে, সে মাদীয় ও পারসীক রাজা। আর সেই লোমশ ছাগ যবন দেশের রাজা, এবং তাহার দুই চক্ষুর মধ্যস্থানে যে বৃহৎ শৃঙ্গ, সে প্রথম রাজা। আর তাহার ভগ্ন হওয়া, ও তৎপরিবর্ত্তে আর চারি শৃঙ্গ উৎপন্ন হওয়া, ইহার মর্ম্ম এই, সেই জাতি হইতে চারি রাজ্য উৎপন্ন হইবে, কিন্তু উহার ন্যায় পরাক্রম-বিশিষ্ট হইবে না। তাহাদের রাজ্যের উত্তরকালে অধর্ম্মীদের মাত্রা পূর্ণ হইলে ভীষণবদন ও গূঢ়বাক্যবিৎ এক রাজা উৎপন্ন হইবে। সে বলে পরাক্রান্ত হইবে, কিন্তু নিজ বলে নহে, এবং সে আশ্চর্য্যরূপে বিনাশ করিবে; আর কৃতকার্য্য হইবে, কর্ম্ম সফল করিবে, এবং শক্তিমান্‌দিগকে ও পবিত্র প্রজাদিগকে বিনাশ করিবে। তাহার কৌশল প্রযুক্ত সে আপন হস্তে চাতুরি সফল করিবে; সে মনে মনে আত্মগরিমা করিবে, ও নিশ্চিন্ত অবস্থাপন্ন অনেককে বিনষ্ট করিবে, এবং অধিপতিগণের অধিপতির বিরুদ্ধে দাঁড়াইবে, কিন্তু সে বিনা হস্তে ভগ্ন হইবে। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকালের বিষয়ে কথিত দর্শন সত্য; কিন্তু তুমি এই দর্শন মুদ্রাঙ্কিত কর, কেননা এ অনেক দিনের কথা। আর আমি দানিয়েল কিছু দিন ক্লান্ত ও পীড়িত ছিলাম, তাহার পর উঠিয়া রাজার কর্ম্ম করিলাম; আর সেই দর্শনে চমৎকৃত হইলাম, কিন্তু কেহ তাহা বুঝিল না। মাদীয় বংশজাত অহশ্বেরশের পুত্র যে দারিয়াবস কল্‌দীয় রাজ্যের রাজপদে নিযুক্ত হইয়াছিলেন, তাঁহার প্রথম বৎসরে, তাঁহার রাজত্বের প্রথম বৎসরে, আমি দানিয়েল গ্রন্থাবলি দ্বারা বৎসরের সংখ্যা বুঝিলাম, অর্থাৎ যিরূশালেমের উৎসন্ন-দশা সমাপনে সত্তর বৎসর লাগিবে, সদাপ্রভুর এই যে বাক্য যিরমিয় ভাববাদীর নিকটে উপস্থিত হইয়াছিল, তাহা বুঝিলাম। পরে আমি উপবাস, চট পরিধান ও ভস্ম লেপন করিয়া প্রার্থনার ও বিনতির চেষ্টায় প্রভু ঈশ্বরের প্রতি দৃষ্টি করিলাম। আর আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলাম, ও পাপ স্বীকার করিয়া কহিলাম হে প্রভু, তুমিই সেই মহান্‌ ও ভয়াবহ ঈশ্বর, যিনি তাহাদের সহিত নিয়ম ও দয়া রক্ষা করেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে ও তাঁহার আজ্ঞা পালন করে। আমরা পাপ ও অপরাধ করিয়াছি, দুষ্টামি করিয়াছি ও বিদ্রোহী হইয়াছি, তোমার বিধি ও শাসনপথ ত্যাগ করিয়াছি; আর তোমার যে দাস ভাববাদিগণ আমাদের রাজগণকে, অধ্যক্ষগণকে, পিতৃপুরুষগণকে ও জনপদস্থ প্রজা সকলকে তোমার নামে কথা কহিতেন, তাঁহাদের কথায়ও আমরা কর্ণপাত করি নাই। হে প্রভু, ধর্ম্মশীলতা তোমার, কিন্তু আমরা মুখের বিবর্ণতার পাত্র, যেমন অদ্য দেখা যাইতেছে; যিহূদার লোক ও যিরূশালেম-নিবাসিগণ এবং সমস্ত ইস্রায়েল এই অবস্থায় রহিয়াছে,— যাহারা নিকটবর্ত্তী, ও যাহারা দূরস্থ, যাহারা সেই সকল দেশে রহিয়াছে, যেখানে তুমি তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিয়াছ, তোমার বিরুদ্ধে কৃত সত্যলঙ্ঘন প্রযুক্তই তাড়াইয়া দিয়াছ। হে প্রভু, আমরা, আমাদের রাজগণ, অধ্যক্ষগণ ও পিতৃপুরুষগণ সকলে মুখের বিবর্ণতার পাত্র, কারণ আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। করুণা ও ক্ষমা আমাদের প্রভু ঈশ্বরের; কারণ আমরা তাঁহার বিদ্রোহী হইয়াছি; এবং আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে অবধান করি নাই, তিনি আপন দাস ভাববাদিগণ দ্বারা আমাদের সম্মুখে যে সমস্ত ব্যবস্থা রাখিয়াছেন, আমরা সে পথে চলি নাই। হাঁ, সমস্ত ইস্রায়েল তোমার ব্যবস্থা লঙ্ঘন করিয়াছে, তোমার বাক্যে অবধান করিবার অনিচ্ছায় বিপথগামী হইয়াছে, সেই জন্য ঈশ্বরের দাস মোশির ব্যবস্থায় লিখিত অভিশাপ ও শপথ আমাদের উপরে বর্ষিত হইয়াছে, কারণ আমরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। আর আমাদের বিরুদ্ধে, ও যে বিচারকর্ত্তৃগণ আমাদের বিচার করিতেন, তাঁহাদের বিরুদ্ধে তিনি যে যে বাক্য বলিয়াছেন, সে সকল সফল করিয়া আমাদের উপরে ভারী অমঙ্গল বর্ত্তাইয়াছেন; কেননা যিরূশালেমের প্রতি যেরূপ করা গিয়াছে, আকাশমণ্ডলের নীচে আর কোথাও তদ্রূপ করা যায় নাই। মোশির ব্যবস্থায় যেরূপ লিখিত আছে, তদনুসারে এই সমস্ত অমঙ্গল আমাদের উপরে আসিয়াছে, তথাপি আমরা আপন আপন অপরাধ হইতে ফিরিবার জন্য, ও তোমার সত্য সম্বন্ধে বুদ্ধি লাভ করিবার জন্য, আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করি নাই। এই জন্য সদাপ্রভু অমঙ্গলার্থে জাগ্রৎ হইয়া আমাদের উপরে তাহা উপস্থিত করিয়াছেন, কেননা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনার কৃত সকল কার্য্যে ধর্ম্মশীল, কিন্তু আমরা তাঁহার রবে কর্ণপাত করি নাই। এখন, হে প্রভু, আমাদের ঈশ্বর, তুমি বলবান হস্ত দ্বারা মিসর দেশ হইতে আপন প্রজাদিগকে আনিয়া কীর্ত্তিলাভ করিয়াছ, যেমন অদ্যাপি দেখা যাইতেছে; আমরা পাপ করিয়াছি, দুষ্টামি করিয়াছি। হে প্রভু, বিনয় করি, তোমার সমস্ত ধর্ম্মশীলতা অনুসারে তোমার নগর যিরূশালেম —তোমার পবিত্র পর্ব্বত— হইতে তোমার ক্রোধ ও কোপ নিবৃত্ত হউক; কেননা আমাদের পাপপ্রযুক্ত ও আমাদের পিতৃপুরুষদের অপরাধ প্রযুক্ত যিরূশালেম ও তোমার প্রজাসমূহ চারিদিকের সমস্ত লোকের টিটকারির পাত্র হইয়াছে। অতএব, হে আমাদের ঈশ্বর, এখন তোমার এই দাসের প্রার্থনা ও বিনতি শ্রবণ কর, এবং তোমার ধ্বংসিত ধর্ম্মধামের প্রতি প্রভুর অনুরোধে তোমার মুখ উজ্জ্বল কর। হে আমার ঈশ্বর, কর্ণপাত কর, শুন, চক্ষু উন্মীলন কর, এবং আমাদের ধ্বংসিত স্থান সকলের প্রতি, ও যাহার উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, সেই নগরের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; কারণ আমরা নিজ ধার্ম্মিকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু তোমার মহাকরুণা প্রযুক্ত তোমার সম্মুখে আমাদের বিনতি উপস্থিত করিলাম। হে প্রভু, শুন; হে প্রভু, ক্ষমা কর; হে প্রভু, মনোযোগ কর ও কর্ম্ম কর, বিলম্ব করিও না; হে আমার ঈশ্বর, তোমার নিজের অনুরোধে কার্য্য কর, কেননা তোমার নগরের ও তোমার প্রজাগণের উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে। এইরূপে আমি নিবেদন ও প্রার্থনা করিতেছিলাম, এবং আমার পাপ ও আমার জাতি ইস্রায়েলের পাপ স্বীকার করিতেছিলাম, এবং আমার ঈশ্বরের পবিত্র পর্ব্বতের জন্য আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে বিনতি উপস্থিত করিতেছিলাম; আমার প্রার্থনার কথা শেষ হইতে না হইতে, আমি প্রথম দর্শনে যে ব্যক্তিকে দেখিয়াছিলাম, সেই গাব্রিয়েল বেগে উড়িয়া আসিয়া সন্ধ্যাকালীন নৈবেদ্যের সময়ে আমাকে স্পর্শ করিলেন। তিনি আমাকে বুঝাইয়া দিলেন, এবং আমার সহিত আলাপ করিয়া কহিলেন, হে দানিয়েল, আমি এক্ষণে তোমাকে বুদ্ধিকৌশল দিতে আসিয়াছি। তোমার বিনতির আরম্ভ সময়ে আজ্ঞা নির্গত হইয়াছিল, তাই আমি তোমাকে সংবাদ দিতে আসিলাম, কেননা তুমি অতিশয় প্রীতি-পাত্র; অতএব এই বিষয় বিবেচনা কর, ও এই দর্শন বুঝিয়া লও। তোমার জাতির ও তোমার পবিত্র নগরের সম্বন্ধে সত্তর সপ্তাহ নিরূপিত হইয়াছে—অধর্ম্ম সমাপ্ত করিবার জন্য, পাপ শেষ করিবার জন্য, অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করিবার জন্য, অনন্তকালস্থায়ী ধার্ম্মিকতা আনয়ন করিবার জন্য, দর্শন ও ভাববাণী মুদ্রাঙ্কিত করিবার জন্য, এবং মহাপবিত্রকে অভিষেক করিবার জন্য। অতএব তুমি জ্ঞাত হও, বুঝিয়া লও, যিরূশালেমকে পুনঃস্থাপন ও নির্ম্মাণ করিবার আজ্ঞা বাহির হওয়া অবধি অভিষিক্ত ব্যক্তি, নায়ক, পর্য্যন্ত সাত সপ্তাহ আর বাষট্টি সপ্তাহ হইবে, উহা চক ও পরিখাসহ পুনরায় নির্ম্মিত হইবে, সঙ্কটকালেই হইবে। সেই বাষট্টি সপ্তাহের পরে অভিষিক্ত ব্যক্তি উচ্ছিন্ন হইবেন, এবং তাঁহার কিছুই থাকিবে না; আর আগামী নায়কের প্রজারা নগর ও ধর্ম্মধাম বিনষ্ট করিবে, এ প্লাবন দ্বারা তাহার শেষ হইবে, এবং শেষ পর্য্যন্ত যুদ্ধ হইবে; ধ্বংস, বিধ্বংস নিরূপিত। এক সপ্তাহ পর্য্যন্ত তিনি অনেকের সহিত দৃঢ় নিয়ম করিলেন; সেই সপ্তাহের অর্দ্ধকালে তিনি যজ্ঞ ও নৈবেদ্য নিবৃত্ত করিবেন; পরে ঘৃণার্হ বস্তু সকলের পক্ষের উপরে ধ্বংসক আসিবে; এবং উচ্ছিন্নতা, নিরূপিত উচ্ছিন্নতা পর্য্যন্ত ধ্বংসকের উপরে [ক্রোধ] বর্ষিত হইবে। পারস্য-রাজ কোরসের তৃতীয় বৎসরে বেল্টশৎসর নামে আখ্যাত দানিয়েলের নিকটে এক বাক্য প্রকাশিত হইল, সেই বাক্য সত্য, ও মহাযুদ্ধসূচক; তিনি বাক্য বুঝিলেন, সেই দর্শনও বুঝিতে পারিলেন। সেই সময়ে আমি দানিয়েল পূর্ণ তিন সপ্তাহ শোক করিতেছিলাম; সেই পূর্ণ তিন সপ্তাহ যাবৎ সাঙ্গ না হইল, তাবৎ সুস্বাদু খাদ্য ভোজন করিলাম না, মাংস কি দ্রাক্ষারস আমার মুখে প্রবেশ করিল না, এবং আমি তৈল মর্দ্দন করিলাম না। পরে প্রথম মাসের চতুর্ব্বিংশ দিনে যখন আমি হিদ্দেকল নামক মহানদীর তীরে ছিলাম, তখন চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, মসীনা-বস্ত্র পরিহিত ও ঊফসের উত্তম স্বর্ণে বদ্ধকটি এক ব্যক্তি; তাঁহার শরীর বৈদূর্য্যমণির ন্যায়, তাঁহার মুখ বিদ্যুতের প্রভার ন্যায়, তাঁহার চক্ষু জ্বলন্ত মশালের ন্যায়, তাঁহার হস্ত পদ পরিষ্কৃত পিত্তলের আভাবিশিষ্ট, এবং তাঁহার বাক্যের রব লোকারণ্যের শব্দের ন্যায়। আমি দানিয়েল একাকী সেই দর্শন পাইলাম; কারণ আমার সঙ্গীরা সেই দর্শন পাইল না, কিন্তু তাহারা অতিশয় কাঁপিয়া উঠিল, এবং আপনাদিগকে লুকাইবার জন্য পলায়ন করিল। এই জন্য আমি একা থাকিয়া সেই মহৎ দর্শন প্রাপ্ত হইলাম, আর আমাতে বল রহিল না; আমার তেজ ক্ষয়ে পরিণত হইল, আমি কিছুমাত্র বল রক্ষা করিতে পারিলাম না। পরে আমি তাঁহার বাক্যের রব শুনিলাম, আর সেই বাক্যের রব শুনিবামাত্র আমি ঘোর নিদ্রায় উপুড় হইয়া পড়িলাম। আর দেখ, একখানি হস্ত আমাকে স্পর্শ করিয়া আমার জানু ও আমার দুই করতলের উপরে নির্ভর করাইল। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, হে মহাপ্রীতি-পাত্র দানিয়েল, আমি তোমাকে যে যে কথা বলিব, সে সকল বুঝিয়া লও, এবং উঠিয়া দাঁড়াও, কেননা আমি এখন তোমারই কাছে প্রেরিত হইলাম। তিনি আমাকে এই কথা কহিলে আমি কাঁপিতে কাঁপিতে উঠিয়া দাঁড়াইলাম। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, হে দানিয়েল, ভয় করিও না, কেননা যে প্রথম দিন তুমি বুঝিবার জন্য ও তোমার ঈশ্বরের সাক্ষাতে আপনাকে বিনীত করিবার জন্য মনঃসংযোগ করিয়াছিলে, সেই দিন হইতে তোমার বাক্য শুনা হইয়াছে; এবং তোমার বাক্য প্রযুক্ত আমি আসিয়াছি। কিন্তু পারস্য-রাজ্যের অধ্যক্ষ একুশ দিন পর্য্যন্ত আমার প্রতিকূলে দাঁড়াইলেন। পরে দেখ, প্রধান অধ্যক্ষদের মধ্যে মীখায়েল নামক এক জন আমার সাহায্য করিতে আসিলেন; আর আমি সে স্থানে পারস্যের রাজগণের কাছে রহিলাম। এখন, উত্তরকালে তোমার জাতির প্রতি যাহা ঘটিবে, তাহা আমি তোমাকে বুঝাইয়া দিতে আসিয়াছি; কেননা দর্শনটী এখনও দীর্ঘকালের অপেক্ষা করিতেছে। তিনি আমাকে এই কথা বলিলে পর আমি ভূমিতে উপুড় হইয়া অবাক্‌ হইয়া রহিলাম। আর দেখ, মনুষ্য-সন্তানদের আকৃতিবিশিষ্ট এক ব্যক্তি আমার ওষ্ঠাধর স্পর্শ করিলেন; তখন আমি মুখ খুলিয়া কথা কহিলাম, যিনি আমার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলেন, তাঁহাকে কহিলাম, হে আমার প্রভু, এই দর্শন প্রযুক্ত মর্ম্মবেদনা আমাকে ধরিয়াছে, কিছুমাত্র বল রক্ষা করিতে পারিতেছি না। কারণ আমার এই প্রভুর দাস কি প্রকারে আমার এই প্রভুর সহিত কথা কহিতে পারে? এক্ষণে আমার কিছুমাত্র বল নাই, আমার মধ্যে শ্বাসও নাই। তখন সেই যে ব্যক্তি দেখিতে মানুষের ন্যায়, তিনি পুনর্ব্বার স্পর্শ করিয়া আমাকে সবল করিলেন। আর তিনি কহিলেন, হে মহাপ্রীতি-পাত্র, ভয় করিও না, তোমার শান্তি হউক, সবল হও, সবল হও। তিনি আমার সহিত আলাপ করিলে আমি সবল হইলাম, আর বলিলাম, আমার প্রভু বলুন, কেননা আপনি আমাকে সবল করিয়াছেন। তখন তিনি কহিলেন, আমি কি জন্য তোমার কাছে আসিয়াছি, তাহা কি জান? এখন আমি পারস্যের অধ্যক্ষের সহিত যুদ্ধ করিতে ফিরিয়া যাইব; আর দেখ, আমি চলিয়া গেলে যবনের অধ্যক্ষ আসিবে। যাহা হউক, সত্যের গ্রন্থে যাহা লিখিত আছে, তাহা আমি তোমাকে জ্ঞাত করি; উহাদের বিরুদ্ধে আমার সাহায্য করিতে তোমাদের অধ্যক্ষ মীখায়েল ব্যতিরেকে আর কেহ নাই। আর মাদীয় দারিয়াবসের প্রথম বৎসরে আমিই তাঁহাকে সবল ও শক্তিমান্‌ করিতে দাঁড়াইয়াছিলাম। যাহা হউক, এখন আমি তোমাকে সত্য কথা জ্ঞাত করিব। দেখ, পারস্যে আর তিন রাজা উৎপন্ন হইবে, আর চতুর্থ রাজা সর্ব্বাপেক্ষা অধিক ধনশালী হইবে, এবং আপন ধনে শক্তিমান্‌ হইলে যবন-রাজ্যের বিরুদ্ধে সকলকে উত্তেজিত করিবে। পরে বীর্য্যবান্‌ এক রাজা উৎপন্ন হইবে, সে মহাকর্ত্তৃত্ব-বিশিষ্ট কর্ত্তা হইবে ও স্বেচ্ছানুসারে কর্ম্ম করিবে। সে উৎপন্ন হইলে তাহার রাজ্য ভগ্ন হইবে, আকাশের চারি বায়ুর দিকে বিভক্ত হইবে, কিন্তু তাহার বংশের নিমিত্ত নয়, আর সে যে কর্ত্তৃত্ব করিত, তদনুসারে নয়; বস্তুতঃ তাহার রাজ্য উৎপাটিত হইয়া উহাদের নয়, কিন্তু অন্যদের হইবে। আর দক্ষিণ দেশের রাজা বলবান হইবে, কিন্তু তাহার অধ্যক্ষদের মধ্যে এক জন তাহা হইতেও বলবান হইয়া প্রভুত্ব পাইবে, তাহার প্রভুত্ব মহাপ্রভুত্ব হইবে। আর, বৎসরনিচয়ের শেষে তাহারা পরস্পর সম্বন্ধ পাতাইবে, আর মিলন করণার্থে দক্ষিণ দেশের রাজার কন্যা উত্তর দেশের রাজার কাছে গমন করিবে; কিন্তু সে কন্যা নিজের বাহুবল রক্ষা করিবে না, এবং সে রাজা ও তাহার বাহু স্থায়ী হইবে না; কিন্তু সেই মহিলা, এবং যাহারা তাহাকে আনিয়াছিল, আর যে তাহার জন্ম দিয়াছিল, ও যে তৎকালে তাহাকে বল দিয়াছিল, সকলে সমর্পিত হইবে। তথাপি তাহার মূলের এক পল্লব হইতে এক জন তাহার পদে উৎপন্ন হইবে, আর সৈন্যের বিরুদ্ধে আসিয়া উত্তর দেশের রাজার দুর্গে প্রবেশ করিবে, এবং সেই সকলের বিপক্ষে ব্যাপৃত হইয়া পরাক্রম দেখাইবে। আর সে তাহাদের ঢালা প্রতিমাগণের সহিত, তাহাদের রৌপ্য ও স্বর্ণের নানা রমণীয় পাত্রের সহিত তাহাদের দেবগণকে বন্দি করিয়া মিসরে লইয়া যাইবে, পরে কয়েক বৎসর উত্তর দেশের রাজা হইতে নিবৃত্ত থাকিবে। আর সে দক্ষিণ দেশের রাজার রাজ্যে প্রবেশ করিবে, কিন্তু নিজ দেশে ফিরিয়া যাইবে। তাহার পুত্রগণ যুদ্ধ করিবে, এবং বিপুল বলসমারোহ সংগ্রহ করিবে; তাহারা আসিবে, উথলিয়া উঠিয়া বাড়িতে থাকিবে, এবং তাহারা ফিরিয়া আসিবে, ও তাহার দুর্গ পর্য্যন্ত যুদ্ধ করিবে। তাহাতে দক্ষিণ দেশের রাজা ক্রোধাবিষ্ট হইবে, এবং যাত্রা করিয়া তাহার সহিত, উত্তর দেশের রাজার সহিত, সংগ্রাম করিবে, সেও মহাসমারোহে একত্র করিবে, কিন্তু সেই সমারোহ উহার হস্তে সমর্পিত হইবে। ঐ সমারোহ নীত হইবে ও সে উদ্ধতচিত্ত হইবে, আর সহস্র সহস্র লোককে নিপাত করিবে, তথাপি প্রবল থাকিবে না। উত্তর দেশের রাজা ফিরিয়া আসিবে, এবং প্রথম সমারোহ অপেক্ষা বৃহৎ সমারোহ একত্র করিবে; আর কাল-পর্য্যায়ের শেষে, বৎসরনিচয়ের শেষে, মহাসৈন্য ও প্রচুর সামগ্রী লইয়া আসিবে। তৎকালে দক্ষিণ দেশের রাজার বিরুদ্ধে অনেক লোক উঠিবে; এবং এই দর্শন যাহাতে সফল হয়, সেই জন্য তোমার জাতির মধ্যে দুর্জ্জন-সন্তানেরা আপনাদিগকে উচ্চ করিবে, কিন্তু তাহারা পতিত হইবে। এইরূপে উত্তর দেশের রাজা আসিবে, জাঙ্গাল বাঁধিবে, এবং সুদৃঢ় নগর হস্তগত করিবে; তাহাতে দক্ষিণ দেশের সৈন্য ও তাহার মনোনীত লোকেরা স্থির থাকিবে না, স্থির থাকিতে তাহাদের শক্তি হইবে না। কিন্তু যে তাহার বিরুদ্ধে আসিবে, সে স্বেচ্ছানুসারে কার্য্য করিবে, তাহার সাক্ষাতে কেহ দাঁড়াইতে পারিবে না; আর সে দেশরত্নে দণ্ডায়মান হইবে, ও তাহার হস্তে বিনাশ থাকিবে। পরে সে আপন সমস্ত রাজ্যের পরাক্রম সঙ্গে করিয়া আসিবার জন্য উন্মুখ হইবে, ও তাহার সহিত সাম্য-নিয়ম স্থাপন করিবে; এবং বিনাশ করিবার নিমিত্ত উহাকে নারীগণের কন্যা দিবে, কিন্তু এটা স্থির থাকিবে না, ও তাহার হইবে না। পরে সে উপকূল-সমূহের বিরুদ্ধে গিয়া অনেককে হস্তগত করিবে; কিন্তু এক সেনাপতি তাহার কৃত টিটকারি নিবৃত্ত করিবে, এমন কি, সে তাহার টিটকারি তাহারই উপরে ফিরাইয়া দিবে। তখন সে আপন দেশের দুর্গ সকলের প্রতি মুখ ফিরাইবে; কিন্তু উছোট খাইয়া পড়িবে, তাহার উদ্দেশ আর পাওয়া যাইবে না। পরে এমন এক জন তাহার পদ প্রাপ্ত হইবে, যে রাজ্যের শোভাস্থানে প্রজাপীড়ককে প্রেরণ করিবে, কিন্তু সে অল্প দিনের মধ্যে বিনষ্ট হইবে, ক্রোধেও নয়, যুদ্ধেও নয়। পরে এক জন তুচ্ছ ব্যক্তি তাহার পদ পাইবে। তাহাকে রাজ্যের প্রভা দত্ত হয় নাই, কিন্তু সে নিশ্চিন্ততার সময়ে আসিয়া চাটুবাদ দ্বারা রাজ্য লাভ করিবে; তাহার সম্মুখ হইতে আপ্লাবনকারী সৈন্য সকল আপ্লাবিত হইয়া ভগ্ন হইবে, এবং নিয়মের নায়কও ভগ্ন হইবে। তাহার সহিত মিত্রতার কথা স্থির করণাবধি সে ছলনা করিবে, কারণ সে আসিয়া অল্প লোক দ্বারা পরাক্রমী হইবে। সে নিশ্চিন্ততার সময়ে প্রদেশের অতি উত্তম উত্তম স্থানে প্রবেশ করিবে, এবং তাহার পিতৃপুরুষেরা এবং পিতৃপুরুষদের পিতৃপুরুষেরাও যাহা করে নাই, তাহা করিবে; সে লোকদের মধ্যে লুটদ্রব্য, হৃতবস্তু এবং সম্পত্তি বিকীর্ণ করিবে, দৃঢ় দুর্গ সকলের বিরুদ্ধে কৌশল কল্পনা করিবে, কিছু কাল করিবে। আর সে অনেক সৈন্য সঙ্গে লইয়া দক্ষিণ দেশের রাজার বিরুদ্ধে আপন বল ও চিত্ত উত্তেজিত করিবে; তাহাতে দক্ষিণ দেশের রাজা অতি পরাক্রান্ত বিস্তর সৈন্য সঙ্গে লইয়া যুদ্ধ করিবে, কিন্তু স্থির থাকিবে না, কেননা তাহারা তাহার বিরুদ্ধে নানা কৌশল কল্পনা করিবে। যাহারা তাহার আহারীয় দ্রব্যের ভাগী, তাহারাই তাহাকে বিনষ্ট করিবে, ও উহার সৈন্য আপ্লাবন করিবে; এবং অনেকে নিহত হইয়া পড়িবে। আর এই দুই রাজার চিত্ত হিংসাপূর্ণ হইবে, এবং তাহারা এক মেজে বসিয়া মিথ্যাকথা কহিবে, কিন্তু তাহা সফল হইবে না, কেননা তখনও শেষ নিরূপিত কালের অপেক্ষা করিবে। আর সে অনেক সম্পত্তি লইয়া আপন দেশে ফিরিয়া যাইবে, ও তাহার অন্তঃকরণ পবিত্র নিয়মের বিপক্ষ হইবে, এবং যে কার্য্য করিয়া আপন দেশে ফিরিয়া যাইবে। নিরূপিত কালে সে ফিরিয়া আসিবে, দক্ষিণ দেশে প্রবেশ করিবে, কিন্তু পূর্ব্বকালে যেমন ছিল, উত্তরকালে তেমন হইবে না। কারণ কিত্তীমের জাহাজ সকল তাহার বিরুদ্ধে আসিবে, এজন্য সে বিষণ্ণ হইয়া ফিরিয়া যাইবে, ও পবিত্র নিয়মের বিরুদ্ধে ক্রোধ করিয়া কার্য্য করিবে; সে ফিরিয়া আসিবে, যাহারা পবিত্র নিয়ম ত্যাগ করে, তাহাদের প্রতি মনোযোগ করিবে। আর তাহার নিকট হইতে সৈন্যগণ উঠিবে, ধর্ম্মধাম অর্থাৎ দুর্গ অশুচি করিবে, নিত্য নৈবেদ্য নিবৃত্ত করিবে, এবং ধ্বংসকারী ঘৃণার্হ বস্তু স্থাপন করিবে। যাহারা সেই নিয়ম সম্বন্ধে দুষ্কার্য্য করে, সে তাহাদিগকে চাটুবাদ দ্বারা ভ্রষ্ট করিবে, কিন্তু যে প্রজারা আপন ঈশ্বরকে জানে, তাহারা বলবান হইয়া কার্য্য করিবে। আর প্রজাদের মধ্যে যাহারা বুদ্ধিমান, তাহারা অনেককে উপদেশ দিবে; তথাপি কিছু দিন পর্য্যন্ত তাহারা খড়্‌গে ও অগ্নিশিখায়, বন্দিদশায় ও লুটে পতিত হইবে। যখন পড়িবে, তখন তাহারা অল্প সাহায্য প্রাপ্ত হইবে, আর অনেকে চাটুবাদ দ্বারা তাহাদিগেতে আসক্ত হইবে। আর বুদ্ধিমানদের মধ্যে কেহ কেহ পতিত হইবে, যেন তাহারা পরীক্ষাসিদ্ধ, পরিষ্কৃত ও শুক্লীকৃত হয়; শেষ পর্য্যন্ত হইা হইবে; কেননা তখনও নিরূপিত কালের অপেক্ষা করা যাইবে। আর সেই রাজা স্বেচ্ছানুযায়ী কর্ম্ম করিবে, ও সমস্ত দেবতা অপেক্ষা আপনাকে বড় করিয়া দেখাইবে, ও দর্প করিবে, এবং ঈশ্বরদের ঈশ্বরের বিপরীতে অদ্ভুত কথা কহিবে, আর ক্রোধ সম্পন্ন না হওয়া পর্য্যন্ত কুশলপ্রাপ্ত থাকিবে; কেননা যাহা নিরূপিত, তাহাই করা যাইবে। আর সে আপন পিতৃপুরুষদের দেবগণকে মানিবে না, এবং স্ত্রীলোকদের কামনাকে কিম্বা কোন দেবতাকে মানিবে না; কেননা সে সর্ব্বাপেক্ষা আপনাকেই বড় করিয়া দেখাইবে। কিন্তু সে স্বস্থানে দুর্গ-দেবের সম্মান করিবে, এবং আপন পিতৃপুরুষদের অজ্ঞাত দেবকে স্বর্ণ, রৌপ্য, মণি ও মনোরম্য বস্তু দিয়া সম্মান করিবে। আর সে বিজাতীয় দেবের সাহায্যে অতি দৃঢ় দুর্গ সকলের বিরুদ্ধে ব্যাপৃত হইবে; যত লোক তাহাকে স্বীকার করিবে, তাহাদিগকে সে অতি সম্মানিত করিবে; তাহাদিগকে অনেকের উপরে কর্ত্তৃত্বপদ দিবে, ও পারিতোষিকরূপে ভূমি বিভাগ করিয়া দিবে। পরে শেষকালে দক্ষিণ দেশের রাজা তাহাকে ঢুসাইবে; আর উত্তর দেশের রাজা রথের, অশ্বারোহীদের ও অনেক জাহাজের সহিত ঘূর্ণ্যবায়ুর ন্যায় তাহার বিরুদ্ধে আসিবে; এবং নানা দেশের মধ্যে প্রবেশ করিবে ও উথলিয়া উঠিয়া বাড়িতে থাকিবে। সে রত্নস্বরূপ দেশেও প্রবেশ করিবে, তাহাতে অনেক দেশ পরাভূত হইবে, কিন্তু ইদোম ও মোয়াব এবং অম্মোন-সন্তানদের শ্রেষ্ঠাংশ তাহার হস্ত হইতে রক্ষা পাইবে। আর সে নানা দেশের উপরে হস্ত প্রসারণ করিবে, আর মিসর দেশ রক্ষা পাইবে না। মিস্রীয়দের স্বর্ণ ও রৌপ্যের ভাণ্ডার সকল ও সমস্ত রত্ন তাহার হস্তগত হইবে, এবং লুবীয়েরা ও কূশীয়েরা তাহার অনুচর হইবে। কিন্তু পূর্ব্ব ও উত্তর দেশ হইতে আগত সংবাদ তাহাকে বিহ্বল করিবে, এবং সে অনেককে উচ্ছিন্ন ও নিঃশেষে বিনষ্ট করণার্থে মহাক্রোধে যাত্রা করিবে। আর সে সমুদ্রের ও পবিত্র গিরিরত্নের মধ্যে রাজকীয় তাম্বু স্থাপন করিবে; তথাপি তাহার শেষকাল উপস্থিত হইবে, কেহ তাহার সাহায্য করিবে না। তৎকালে যে মহান্‌ অধ্যক্ষ তোমার জাতির সন্তানদের পক্ষে দাঁড়াইয়া থাকেন, সেই মীখায়েল উঠিয়া দাঁড়াইবেন, আর এমন সঙ্কটের কাল উপস্থিত হইবে, যাহা মনুষ্যজাতির স্থিতিকাল অবধি সেই সময় পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই; কিন্তু তৎকালে তোমার স্বজাতীয় যে কাহারও নাম পুস্তকে লিখিত পাওয়া যাইবে, সে উদ্ধার পাইবে। আর মৃত্তিকার ধূলিতে নিদ্রিত লোকদের মধ্যে অনেকে জাগরিত হইবে—কেহ কেহ অনন্ত জীবনের উদ্দেশে, এবং কেহ কেহ লজ্জার ও অনন্ত ঘৃণার উদ্দেশে। আর যাহারা বুদ্ধিমান্‌, তাহারা বিতানের দীপ্তির ন্যায়, এবং যাহারা অনেককে ধার্ম্মিকতার প্রতি ফিরায়, তাহারা তারাগণের ন্যায় অনন্তকাল দেদীপ্যমান হইবে। কিন্তু হে দানিয়েল, তুমি শেষকাল পর্য্যন্ত এই বাক্য সকল রুদ্ধ করিয়া রাখ, এই পুস্তক মুদ্রাঙ্কিত করিয়া রাখ; অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে। তখন আমি দানিয়েল দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, অন্য দুইজন দাঁড়াইয়া আছেন, এক ব্যক্তি নদীতীরে এপারে, এবং অন্য ব্যক্তি নদীতীরে ওপারে। আর এক ব্যক্তি সেই মসীনা-বস্ত্র-পরিহিত ব্যক্তিকে—যিনি জলের ঊর্দ্ধে ছিলেন, তাঁহাকে—কহিলেন, এই আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য বিষয়ের শেষ কত কালে হইবে? পরে আমি শুনিতে পাইলাম, সেই মসীনা-বস্ত্র-পরিহিত ও নদীর জলের ঊর্দ্ধে স্থিত ব্যক্তি আপন দক্ষিণ ও বাম হস্ত স্বর্গের দিকে তুলিয়া নিত্যজীবী ঈশ্বরের নামে শপথ করিয়া কহিলেন, ইহা এক কাল, [দুই] কাল ও অর্দ্ধ কালে হইবে, এবং পবিত্র জাতির বাহুভঙ্গ সম্পূর্ণ হইলে এই সকল সিদ্ধ হইবে। আমি এই কথা শুনিলাম বটে, কিন্তু বুঝিতে পারিলাম না; তখন আমি কহিলাম, হে আমার প্রভু, এই সকলের শেষফল কি হইবে? তিনি কহিলেন, হে দানিয়েল, তুমি প্রস্থান কর, কেননা শেষকাল পর্য্যন্ত এই বাক্য সকল রুদ্ধ ও মুদ্রাঙ্কিত থাকিবে। অনেকে আপনাদিগকে পরিষ্কৃত ও শুক্ল করিবে এবং পরীক্ষাসিদ্ধ হইবে, কিন্তু দুষ্টেরা দুষ্টাচরণ করিবে, আর দুষ্টদের মধ্যে কেহ বুঝিবে না; কেবল বুদ্ধিমানেরাই বুঝিবে। আর যে সময়ে নিত্য নৈবেদ্য নিবৃত্ত ও ধ্বংসকারী ঘৃণার্হ বস্তু স্থাপিত হইবে, তদবধি এক সহস্র দুই শত নব্বই দিন হইবে। ধন্য সেই, যে ধৈর্য্য ধরিয়া সেই এক সহস্র তিন শত পঁয়ত্রিশ দিন পর্য্যন্ত থাকিবে। কিন্তু তুমি শেষের অপেক্ষাতে গমন কর, তাহাতে বিশ্রাম পাইবে, এবং দিন-সমূহের শেষে আপন অধিকারে দণ্ডায়মান হইবে। যিহূদা-রাজ উষিয়, যোথম, আহস ও হিষ্কিয়ের সময়ে, এবং যোয়াশের পুত্র ইস্রায়েল-রাজ যারবিয়ামের সময়ে সদাপ্রভুর এই বাক্য বেরির পুত্র হোশেয়ের নিকটে উপস্থিত হইল। সদাপ্রভু যখন প্রথমে হোশেয় দ্বারা কথা বলেন, তখন সদাপ্রভু হোশেয়কে কহিলেন, তুমি যাও, ব্যভিচারের স্ত্রীকে ও ব্যভিচারের সন্তানদিগকে গ্রহণ কর, কেননা এই দেশ সদাপ্রভুর অনুগমন হইতে নিবৃত্ত হওয়ায় ভয়ানক ব্যভিচার করিতেছে। তাহাতে তিনি গিয়া দিব্‌লায়িমের কন্যা গোমরকে গ্রহণ করিলেন; আর সেই স্ত্রী গর্ভবতী হইয়া তাঁহার জন্য পুত্র প্রসব করিল। তখন সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি উহার নাম যিষ্রিয়েল রাখ, কেননা অল্প দিন পরে আমি যেহূর কুলকে যিষ্রিয়েলের রক্তপাতের ফল ভোগ করাইব, এবং ইস্রায়েল-কুলের রাজ্য শেষ করিব। আর সেই দিন আমি যিষ্রিয়েল-তলভূমিতে ইস্রায়েলের ধনু ভঙ্গ করিব। পরে সেই স্ত্রী পুনর্ব্বার গর্ভধারণ করিয়া কন্যা প্রসব করিল; তাহাতে [সদাপ্রভু] হোশেয়কে কহিলেন, তুমি তাহার নাম লো-রুহামা [অনুকম্পিতা নয়] রাখ, কেননা আমি ইস্রায়েল-কুলের প্রতি আর অনুকম্পা করিব না, কোন ক্রমে তাহাদের পাপ ক্ষমা করিব না। কিন্তু যিহূদা-কুলের প্রতি অনুকম্পা করিব, এবং তাহাদিগকে তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু দ্বারা পরিত্রাণ করিব; ধনু কি খড়্‌গ কি যুদ্ধ কি অশ্ব কি অশ্বারোহী দ্বারা পরিত্রাণ করিব না। পরে সে লো-রুহামাকে স্তন্যপান ত্যাগ করাইয়া গর্ভবতী হইল, এবং এক পুত্র প্রসব করিল। তখন [সদাপ্রভু] কহিলেন, তুমি তাহার নাম লো-অম্মি [আমার প্রজা নয়] রাখ; কেননা তোমরা আমার প্রজা নহ, এবং আমিও তোমাদের পক্ষ হইব না। কিন্তু ইস্রায়েল-সন্তানগণের সংখ্যা সমুদ্রের সেই বালুকার ন্যায় হইবে, যাহা পরিমাণ করা যায় না, ও গণনা করা যায় না। আর এই কথা যে স্থানে তাহাদিগকে বলা গিয়াছিল, ‘তোমরা আমার প্রজা নহ,’ সেই স্থানে তাহাদিগকে বলা যাইবে, ‘জীবন্ত ঈশ্বরের সন্তান’। আর যিহূদা-সন্তানগণ ও ইস্রায়েল-সন্তানগণ একসঙ্গে সংগৃহীত হইবে, এবং আপনাদের উপর এক জন অধ্যক্ষ নিযুক্ত করিবে, এবং সেই দেশ হইতে যাত্রা করিবে; কেননা যিষ্রিয়েলের দিন মহৎ হইবে। তোমরা আপনাদের ভ্রাতাদিগকে অম্মি [আমার প্রজা], ও আপনাদের ভগিনীদিগকে রুহামা [অনুকম্পিতা] বল। তোমরা বিবাদ কর, তোমাদের মাতার সহিত বিবাদ কর, কেননা সে আমার স্ত্রী নয়, এবং আমিও তাহার স্বামী নই; সে আপনার দৃষ্টি হইতে আপন বেশ্যাচার, এবং আপনার স্তনযুগলের মধ্য হইতে আপন ব্যভিচার দূর করুক। নতুবা আমি তাহাকে বিবস্ত্রা করিব, সে জন্মদিনে যেমন ছিল, তেমনি করিয়া তাহাকে রাখিব, এবং তাহাকে প্রান্তরের সমান ও মরুভূমির তুল্য করিব, তৃষ্ণা দ্বারা বধ করিব। আর তাহার সন্তানগণকে অনুকম্পা করিব না, কারণ তাহারা ব্যভিচারের সন্তান। বাস্তবিক তাহাদের মাতা ব্যভিচার করিয়াছে, তাহাদের গর্ভধারিণী লজ্জাকর কর্ম্ম করিয়াছে; কেননা সে বলিত, আমি আমার প্রেমিকগণের পশ্চাতে পশ্চাতে গমন করিব, তাহারাই আমাকে অন্ন ও জল, মেষলোম ও মসীনা, তৈল ও পানীয় দ্রব্য দেয়। এই জন্য দেখ, আমি কন্টক দ্বারা তাহার পথ রোধ করিব, ও তাহার চারিদিকে প্রাচীর গাঁথিব, তাহাতে সে আপন পথের সন্ধান পাইবে না। সে আপন প্রেমিকদের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িয়া যাইবে, কিন্তু তাহাদের লাগাল পাইবে না; সে তাহাদের অন্বেষণ করিবে, কিন্তু সন্ধান পাইবে না। তখন সে বলিবে, আমি ফিরিয়া আমার প্রথম স্বামীর নিকটে যাইব; কেননা এখন অপেক্ষা তখন আমার পক্ষে মঙ্গল ছিল। সে ত বুঝিত না যে, আমিই তাহাকে সেই শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈল দিতাম, এবং তাহার রৌপ্য ও স্বর্ণের বৃদ্ধি করিতাম,—যাহা তাহারা বালদেবের জন্য ব্যবহার করিয়াছে। অতএব আমি শস্যের সময়ে আমার শস্য ও দ্রাক্ষারসের ঋতুতে আমার দ্রাক্ষারস ফিরাইয়া লইব, এবং যাহা তাহার উলঙ্গতা আচ্ছাদনার্থক ছিল, আমার সেই মেষলোম ও মসীনা তুলিয়া লইব। এখন আমি তাহার প্রেমিকদের সাক্ষাতে তাহার ভ্রষ্টতা প্রকাশ করিব; কেহ তাহাকে আমার হস্ত হইতে উদ্ধার করিবে না। আর আমি তাহার সমস্ত আমোদ, তাহার উৎসব, অমাবস্যা, বিশ্রামদিন ও পর্ব্ব সকল রহিত করিব। আর আমি তাহার দ্রাক্ষালতা ও ডুমুরগাছ সকল বিনষ্ট করিব, যাহার বিষয়ে সে বলিয়াছে, ‘এই সকল আমার পণ, আমার প্রেমিকেরা ইহা আমাকে দিয়াছে’; কিন্তু আমি এ সকল অরণ্য করিব, আর মাঠের পশুগণ সে সকল খাইয়া ফেলিবে। আর আমি বাল-দেবগণের সময়ের প্রতিফল তাহাকে ভোগ করাইব, যাহাদের উদ্দেশে সে ধূপ জ্বালাইত, ও কুণ্ডলাদি অলঙ্কারে আপনাকে অলঙ্কত করিয়া প্রেমিকদের পশ্চাতে গমন করিত, এবং আমাকে ভুলিয়া থাকিত, ইহা সদাপ্রভু বলেন। অতএব দেখ, আমি তাহাকে প্ররোচনা করিয়া প্রান্তরে আনিব, আর চিত্ততোষক কথা কহিব। আর আমি সে স্থান হইতে তাহার দ্রাক্ষাক্ষেত্র এবং আশাদ্বার বলিয়া আখোর তলভূমি তাহাকে দিব; এবং সে সেখানে উত্তর করিবে, যেমন যৌবনকালে, যেমন মিসর হইতে আগমন দিনে করিয়াছিল। আর সদাপ্রভু কহেন, সেই দিনে সে আমাকে ‘ঈশী’ [আমার স্বামী] বলিয়া সম্বোধন করিবে; কিন্তু ‘বালী’ [আমার নাথ] বলিয়া আর সম্বোধন করিবে না। কারণ আমি তাহার মুখ হইতে বালদেবগণের নাম সকল দূর করিব, তাহাদের নাম লইয়া তাহাদিগকে আর স্মরণ করা হইবে না। আর সেই দিন আমি লোকদের নিমিত্ত মাঠের পশু, আকাশের পক্ষী ও ভূমির সরীসৃপ সকলের সহিত নিয়ম করিব; এবং ধনুক, খড়্‌গ ও রণসজ্জা ভাঙ্গিয়া দেশের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন করিব, ও তাহাদিগকে নিশ্চিন্তে শয়ন করাইব। আর আমি চিরকালের জন্য তোমাকে বাগ্‌দান করিব; হাঁ, ধার্ম্মিকতায়, ন্যায়বিচারে, দয়াতে ও বহুবিধ অনুকম্পায় তোমাকে বাগ্‌দান করিব। আমি বিশ্বস্ততায় তোমাকে বাগ্‌দান করিব, তাহাতে তুমি সদাপ্রভুকে জানিবে। আবার, সদাপ্রভু কহেন, সেই দিনে আমি উত্তর দিব; আমি আকাশকে উত্তর দিব, আকাশ ভূতলকে উত্তর দিবে; ভূতল শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈলকে উত্তর দিবে, এবং এই সকল যিষ্রিয়েলকে উত্তর দিবে। আমি আপনার জন্য তাহাকে দেশে রোপন করিব, ও যে ‘অনুকম্পিতা নয়,’ তাহাকে অনুকম্পা করিব, এবং যে ‘আমার প্রজা নয়,’ তাহাকে বলিব, তুমি আমার প্রজা, এবং সে বলিবে, তুমি আমার ঈশ্বর। পরে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি পুনশ্চ যাইয়া কান্তের প্রিয়া অথচ ব্যভিচারিণী এক স্ত্রীকে প্রেম কর; যেমন সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণকে প্রেম করেন, যদিও তাহারা অন্য দেবগণের প্রতি ফিরিয়া থাকে, এবং দ্রাক্ষাপূপ ভালবাসে। তাহাতে আমি পনের রৌপ্যমুদ্রায় এবং এক হোমর যবে ও অর্দ্ধ হোমর যবে তাহাকে আপনার নিমিত্ত ক্রয় করিলাম। আর আমি তাহাকে কহিলাম, ‘তুমি অনেক দিন পর্য্যন্ত আমার নিমিত্ত বসিয়া থাকিবে, ব্যভিচার করিবে না, ও কোন পুরুষের স্ত্রী হইবে না; এবং আমিও তোমার প্রতি তদ্রূপ ব্যবহার করিব।’ কেননা ইস্রায়েল-সন্তানগণ রাজাহীন, অধ্যক্ষহীন, যজ্ঞহীন, স্তম্ভহীন, এফোদ বা ঠাকুরহীন হইয়া অনেক দিন পর্য্যন্ত বসিয়া থাকিবে। পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ ফিরিয়া আসিবে, আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ও আপনাদের রাজা দায়ূদের অন্বেষণ করিবে, এবং উত্তরকালে সভয়ে সদাপ্রভুর ও তাঁহার মঙ্গল-ভাবের আশ্রয় লইবে। হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শুন; কেননা দেশনিবাসীদের সহিত সদাপ্রভুর বিবাদ আছে, কারণ দেশে সত্য নাই, দয়া নাই, ঈশ্বরীয় জ্ঞানও নাই। শপথ, মিথ্যাবাক্য, নরহত্যা, চুরি ও ব্যভিচার চলিতেছে, লোকেরা অত্যাচার করে, এবং রক্তপাতের উপরে রক্তপাত হয়। এই জন্য দেশ শোকাকুল হইবে, এবং মাঠের পশু ও আকাশের পক্ষিশুদ্ধ দেশনিবাসিগণ সকলে ম্লান হইবে, আর সমুদ্রের মৎস্যদেরও সংহার হইবে। তথাপি কেহ বিবাদ না করুক, ও কেহ অনুযোগ না করুক; কারণ তোমার জাতি যাজকের সহিত বিবাদকারী লোকদের তুল্য। আর তুমি দিবসে উছোট খাইবে, ও ভাববাদী রাত্রিকালে তোমার সহিত উছোট খাইবে, এবং আমি তোমার মাতাকে বিনাশ করিব। জ্ঞানের অভাব প্রযুক্ত আমার প্রজাগণ বিনষ্ট হইতেছে; তুমি ত জ্ঞান অগ্রাহ্য করিয়াছ, এই জন্য আমিও তোমাকে নিতান্ত অগ্রাহ্য করিলাম, তুমি আর আমার যাজক থাকিবে না; তুমি আপন ঈশ্বরের ব্যবস্থা ভুলিয়া গিয়াছ, আমিও তোমার সন্তানগণকে ভুলিয়া যাইব। তাহারা যত অধিক বৃদ্ধি পাইত, আমার বিরুদ্ধে তত অধিক পাপ করিত; আমি তাহাদের সম্মান অপমানে পরিণত করিব। আমার প্রজাদের পাপ ইহাদের উপজীবিকা, আর ইহারা তাহাদের অপরাধে মন আসক্ত করে। ঘটিবে এই, যেমন প্রজা তেমনি যাজক; আমি তাহাদিগকে প্রত্যেকের পথানুযায়ী দণ্ড দিব, ও প্রত্যেকের কার্য্যের প্রতিফল দিব। তাহারা ভোজন করিবে, অথচ তৃপ্ত হইবে না; ব্যভিচার করিবে, অথচ বহুবংশ হইবে না; কেননা তাহারা সদাপ্রভুর প্রতি অবধান ত্যাগ করিয়াছে। ব্যভিচার, মদ্য ও নূতন দ্রাক্ষারস, এই সকল বুদ্ধি হরণ করে। আমার প্রজাগণ আপনাদের কাষ্ঠখণ্ডের নিকট পরামর্শ জিজ্ঞাসা করে, ও তাহাদের যষ্টি তাহাদিগকে সংবাদ দেয়; কারণ ব্যভিচারের আত্মা তাহাদিগকে ভ্রান্ত করিয়াছে, আর তাহারা আপন ঈশ্বরের অধীনতা ছাড়িয়া ব্যভিচার করিতেছে। তাহারা পর্ব্বতশৃঙ্গের উপরে যজ্ঞ করে, এবং উপপর্ব্বতের উপরে অলোন, লিব্‌নী ও এলা বৃক্ষের তলে ধূপ জ্বালায়, কেননা তাহার ছায়া উত্তম। এই জন্য তোমাদের কন্যাগণ বেশ্যা হয়, ও তোমাদের পুত্রবধূগণ ব্যভিচার করে। তোমাদের কন্যারা বেশ্যা হইলে এবং পুত্রবধূগণ ব্যভিচার করিলে আমি তাহাদের দণ্ড দিব না, কেননা লোকে আপনারাও বেশ্যাদের সহিত গুপ্ত স্থানে যায়, ও গণিকাদের সহিত যজ্ঞ করে; এই নির্ব্বোধ জাতি নিপাতিত হইবে। হে ইস্রায়েল, তুমি যদ্যপি ব্যভিচারী হও, তথাপি যিহূদা দণ্ডনীয় না হউক; হাঁ, তোমরা গিল্‌গলে পদার্পণ করিও না, বৈৎ-আবনে উপস্থিত হইও না, এবং ‘জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য’ বলিয়া শপথ করিও না। কারণ স্বেচ্ছাচারিণী গাভীর ন্যায় ইস্রায়েল স্বেচ্ছাচারী হইয়াছে; এখন প্রশস্ত ময়দানে যেমন মেষশাবককে, তেমনি সদাপ্রভু তাহাদিগকে চরাইবেন। ইফ্রয়িম প্রতিমাগণে আসক্ত; তাহাকে থাকিতে দেও। তাহাদের মদ্যপান শেষ হইলে তাহারা অবিরত বেশ্যাগমন করে; তাহার ঢালেরা অপমান অতিশয় ভালবাসে। বায়ু আপন পক্ষদ্বয়ে সেই জাতিকে তুলিয়াছে, তাহাতে তাহারা আপনাদের যজ্ঞের বিষয়ে লজ্জিত হইবে। হে যাজকগণ, এই কথা শুন; হে ইস্রায়েল-কুল, অবধান কর; হে রাজকুল, কর্ণপাত কর, কারণ তোমাদেরই বিচার হইতেছে; কেননা তোমরা মিস্পাতে ফাঁদস্বরূপ ও তাবোরে বিস্তৃত জালস্বরূপ হইয়াছ। অত্যাচারীরা হত্যাকার্য্যে গভীরে নামিয়াছে, কিন্তু আমি তাহাদের সকলকে শাস্তি দিব। আমি ইফ্রয়িমকে জানি, ইস্রায়েলও আমার অগোচর নয়; বস্তুতঃ হে ইফ্রয়িম, তুমি এখন ব্যভিচার করিয়াছ, ইস্রায়েল অশুচি হইয়াছে। তাহাদের কার্য্য সকল তাহাদিগকে তাহাদের ঈশ্বরের প্রতি ফিরিতে দেয় না, কেননা তাহাদের অন্তরে ব্যভিচারের আত্মা থাকে, এবং তাহারা সদাপ্রভুকে জানে না। আর ইস্রায়েলের দপ তাহার মুখের উপরে প্রমাণ দিতেছে, এই জন্য ইস্রায়েল ও ইফ্রয়িম আপনাদের অপরাধে উছোট খাইবে, এবং তাহাদের সহিত যিহূদাও উছোট খাইবে। তাহারা আপন আপন গোমেষপাল লইয়া সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে যাইবে, কিন্তু তাঁহার উদ্দেশ পাইবে না; তিনি তাহাদের নিকট হইতে চলিয়া গিয়াছেন। তাহারা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে, কারণ বিজাতীয় সন্তান উৎপন্ন করিয়াছে; এখন অমাবস্যা তাহাদিগকে ও তাহাদের অধিকার গ্রাস করিবে। তোমরা গিবিয়াতে ভেরী বাজাও, রামাতে তুরীধ্বনি কর, বৈৎ-আবনে সিংহনাদ করিয়া বল, হে বিন্যামীন, তোমার পশ্চাতে [শত্রু]। ভর্ৎসনার দিনে ইফ্রয়িম ধ্বংসস্থান হইবে; যাহা নিশ্চয় ঘটিবে, তাহাই আমি ইস্রায়েল-বংশগণের মধ্যে জ্ঞাত করিয়াছি। যিহূদার অধ্যক্ষগণ তাহাদের ন্যায় হইয়াছে, যাহারা সীমার চিহ্ন স্থানান্তর করে; তাহাদের উপরে আমি জলের ন্যায় আপন ক্রোধ ঢালিয়া দিব। ইফ্রয়িম উপদ্রুত ও বিচারে মর্দ্দিত হইতেছে, কারণ সে আপন ইচ্ছায় [মিথ্যা] বিধানের অনুবর্ত্তী হইয়াছে। এই জন্য আমি ইফ্রয়িমের পক্ষে কীটস্বরূপ, যিহূদা-কুলের পক্ষে ক্ষয়স্বরূপ হইয়াছি। যখন ইফ্রয়িম আপন রোগ ও যিহূদা আপন ক্ষত দেখিতে পাইল, তখন ইফ্রয়িম অশূরের কাছে গমন করিল, ও বিবাদ-রাজের নিকটে লোক পাঠাইল; কিন্তু সে তোমাদিগকে সুস্থ করিতে পারে না, তোমাদের ক্ষত আরোগ্য করিবে না। কারণ আমি ইফ্রয়িমের পক্ষে সিংহের তুল্য, ও যিহূদাকুলের পক্ষে যুবাকেশরীর সদৃশ হইব; আমি, আমিই বিদীর্ণ করিয়া চলিয়া যাইব; আমি লইয়া যাইব, কেহ উদ্ধার করিবে না। আমি আপন স্থানে ফিরিয়া যাইব, যে পর্য্যন্ত তাহারা দোষ স্বীকার না করে, ও আমার শ্রীমুখের অন্বেষণ না করে; সঙ্কটের সময়ে তাহারা সযত্নে আমার অন্বেষণ করিবে। চল, আমরা সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া যাই, কারণ তিনিই বিদীর্ণ করিয়াছেন, তিনি আমাদিগকে সুস্থও করিবেন; তিনি আঘাত করিয়াছেন, তিনি আমাদের ক্ষত বন্ধনও করিবেন। দুই দিনের পরে তিনি আমাদিগকে সঞ্জীবিত করিবেন, তৃতীয় দিনে উঠাইবেন, তাহাতে আমরা তাঁহার সাক্ষাতে বাঁচিয়া থাকিব। আইস, আমরা সদাপ্রভুকে জ্ঞাত হই, জ্ঞাত হইবার জন্য অনুধাবন করি; অরুণোদয়ের ন্যায় তাঁহার উদয় নিশ্চিত; আর তিনি আমাদের নিকটে বৃষ্টির ন্যায় আসিবেন, ভূমি-সেচনকারী শেষ বর্ষার ন্যায় আসিবেন। হে ইফ্রয়িম, তোমার জন্য আমি কি করিব? হে যিহূদা, তোমার জন্য কি করিব? তোমাদের সাধুতা ত প্রাতঃকালের মেঘের ন্যায়, শিশিরের ন্যায়, যাহা প্রত্যূষে উড়িয়া যায়। এই জন্য আমি ভাববাদিগণ দ্বারা লোকদিগকে তক্ষিত করিয়াছি, আমার মুখের বাক্য দ্বারা বধ করিয়াছি; এবং আমার বিচার বিদ্যুতের ন্যায় নির্গত হয়। কারণ আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়; এবং হোম অপেক্ষা ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান [চাই]। কিন্তু ইহারা আদমের ন্যায় নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছে; ঐ স্থানে আমার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। গিলিয়দ অধর্ম্মাচারীদের নগর, তাহা রক্তে অঙ্কিত। যেমন দস্যুদল মানুষের অপেক্ষায় ঘাঁটি বসাইয়া থাকে, তদ্রূপ যাজকসমাজ শিখিমে যাইবার পথে নরহত্যা করে, হাঁ, তাহারা কুকর্ম্ম করিয়াছে। আমি ইস্রায়েলকুলে রোমাঞ্চজনক ব্যাপার দেখিয়াছি; ঐ স্থানে ইফ্রয়িমের বেশ্যাবৃত্তি প্রচলিত, ইস্রায়েল অশুচীভূত। আর হে যিহূদা, আমি যখন আপন প্রজাদের বন্দি-দশা ফিরাই, তখন তোমার জন্যও ফসল নিরূপিত। আমি যখন ইস্রায়েলকে সুস্থ করিতে চাহি, তখন ইফ্রয়িমের অপরাধ ও শমরিয়ার দুষ্টতা প্রকাশ পায়; কারণ তাহারা প্রতারণার কার্য্য করে; ভিতরে চোর প্রবেশ করে, বাহিরে দস্যুদল লুণ্ঠন করে। আর তাহাদের সমস্ত দুষ্টতা যে আমার স্মরণে আছে, ইহা তাহারা অন্তঃকরণে বিবেচনা করে না; এখন তাহাদের কার্য্য সকল তাহাদিগকে ঘেরিয়াছে, আমারই দৃষ্টিগোচরে সে সকল রহিয়াছে। তাহারা আপনাদের দুষ্টতা দ্বারা রাজাকে ও আপনাদের মিথ্যাবাক্য দ্বারা অধ্যক্ষগণকে আনন্দিত করে। তাহারা সকলে পারদারিক, রুটী-ওয়ালার উত্তপ্ত তুন্দুরস্বরূপ; ময়দা ছানিলে পর তাড়ী মাতিয়া উঠা পর্য্যন্ত রুটী-ওয়ালা আগুন না উষ্কাইয়া নিবৃত্ত থাকে। আমাদের রাজার উৎসবদিনে অধ্যক্ষগণ পীড়িত হওয়া পর্য্যন্ত দ্রাক্ষারসে উত্তপ্ত হইল, সে নিন্দকদের সঙ্গে হস্ত বিস্তার করিল। কারণ তাহারা যখন ঘাঁটি বসায়, তখন তুন্দুরের ন্যায় আপনাদের হৃদয় প্রস্তুত করে, তাহাদের রুটী-ওয়ালা সমস্ত রাত্রি নিদ্রা যায়, প্রাতঃকালে সে [তুন্দুর] যেন প্রচণ্ড অগ্নিতে জ্বলে। তাহারা সকলে তুন্দুরের ন্যায় উত্তপ্ত, এবং আপনাদের বিচারকর্ত্তাদিগকে গ্রাস করে; তাহাদের রাজগণ সকলে পতিত হইয়াছে; তাহাদের মধ্যে কেহই আমাকে আহ্বান করে না। ইফ্রয়িম ত জাতিগণের সহিত মিশিয়া গিয়াছে; ইফ্রয়িম এক পিঠ চোঁয়া পিষ্টকস্বরূপ। বিদেশিগণ তাহার বল গ্রাস করিয়াছে, কিন্তু সে তাহা জানে না; তাহার মস্তকের স্থানে স্থানে চুল পাকিয়াছে; কিন্তু সে তাহাও জানে না। ইস্রায়েলের দর্প তাহার মুখের উপরে প্রমাণ দিতেছে; এমন হইলেও তাহারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ফিরে নাই, ও তাঁহার অন্বেষণ করে নাই। হাঁ, ইফ্রয়িম অবোধ কপোতের ন্যায় হইয়াছে, সে বুদ্ধিহীন, লোকেরা মিসরকে আহ্বান করে, অশূরে গমন করে। তাহারা যখন যাইবে, আমি তাহাদের উপরে আপন জাল বিস্তার করিব; আকাশের পক্ষীর ন্যায় তাহাদিগকে নামাইয়া আনিব; তাহাদের মণ্ডলী যেমন শুনিয়াছে, তেমনি আমি তাহাদিগকে শাস্তি দিব। ধিক্‌ তাহাদিগকে! কেননা তাহারা আমার নিকট হইতে চলিয়া গিয়াছে; তাহাদের সর্ব্বনাশ! কেননা তাহারা আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্মাচরণ করিয়াছে; আমি তাহাদিগকে মুক্ত করিতাম, কিন্তু তাহারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাকথা বলিয়াছে। তাহারা অন্তঃকরণের সহিত আমার কাছে ক্রন্দন করে নাই, কিন্তু আপন আপন শয্যাতে হাহাকার করে; তাহারা শস্য ও দ্রাক্ষারসের জন্য একত্র হয়, ও আমাকে ছাড়িয়া বিপথগমন করে। আমিই ত শিক্ষা দিয়া তাহাদের বাহু সবল করিয়াছি; তথাপি তাহারা আমারই বিরুদ্ধে কুকল্পনা করে। তাহারা ফিরিয়া আইসে বটে, কিন্তু যিনি ঊর্দ্ধস্থ, তাঁহার প্রতি নয়; তাহারা বঞ্চক ধনুকের সদৃশ; তাহাদের অধ্যক্ষগণ আপন আপন জিহ্বার দুঃসাহস প্রযুক্ত খড়্‌গে পতিত হইবে; ইহাই মিসর দেশে তাহাদের পক্ষে উপহাস। তুমি আপন মুখে তূরী দেও। সে সদাপ্রভুর গৃহের উপরে ঈগল পক্ষীর ন্যায় আসিতেছে, কেননা লোকেরা আমার নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছে, ও আমার বিরুদ্ধে অধর্ম্ম করিয়াছে। তাহারা আমার কাছে ক্রন্দন করিয়া বলিবে, হে আমার ঈশ্বর, আমরা ইস্রায়েল, তোমাকে জানি। ইস্রায়েল, যাহা ভাল, তাহা দূরে ফেলিয়া দিয়াছে, শত্রু তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িয়া যাইবে। তাহারাই রাজগণকে স্থাপন করিয়াছে, আমা হইতে হয় নাই; তাহারা অধ্যক্ষগণকে নিযুক্ত করিয়াছে, আমি তাহা জানি নাই; তাহারা আপনাদের সুবর্ণ ও রৌপ্য দ্বারা আপনাদের জন্য প্রতিমা নির্ম্মাণ করিয়াছে, যেন তাহারা উচ্ছিন্ন হয়। হে শমরিয়ে, তিনি তোমার বৎস-প্রতিমা দূরে ফেলিয়া দিয়াছেন; উহাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইল; উহারা কত কাল বিলম্বে বিশুদ্ধ হইবে? কেননা ইস্রায়েল হইতেই ঐ বৎস হইয়াছে; শিল্পকার তাহা গড়িয়াছে, তাহা ঈশ্বর নয়; বাস্তবিক শমরিয়ার বৎস খণ্ডবিখণ্ড হইবে। কেননা তাহারা বায়ুরূপ বীজ বপন করে, ঝঞ্ঝারূপ শস্য কাটিবে; তাহার ক্ষেত্রে শস্য নাই; চারা শস্য দিবে না; শস্য দিলেও বিদেশিগণ তাহা গ্রাস করিবে। ইস্রায়েল গ্রাসিত হইল; এখন তাহারা অপ্রীতিকর পাত্রের ন্যায় জাতিগণের মধ্যে আছে। উহারা ত অশূরে গেল, সে এমন বন্য গর্দ্দভ, যে একাকী থাকে; ইফ্রয়িম প্রেমিকদিগকে পণ দিয়াছে। যদ্যপি তাহারা জাতিগণের মধ্যে [লোকদিগকে] পণ দেয়, তথাপি আমি এখন ইহাদিগকে একত্র করিব; রাজাধিরাজের বোঝায় তাহারা ক্রমশঃ ন্যূন হইয়া পড়িতেছে। ইফ্রয়িম পাপের চেষ্টায় অনেক যজ্ঞবেদি করিয়াছে, এই জন্য যজ্ঞবেদি সকল তাহার পক্ষে পাপস্বরূপ হইয়াছে। আমি তাহার জন্য আপন ব্যবস্থার দশ সহস্র কথা লিখি; সে সকল বিজাতীয়রূপে গণিত হয়। আমার উপহার-বলি লইয়া তাহারা মাংস বলি দেয় ও তাহা খাইয়া ফেলে; সদাপ্রভু তাহাদিগকে গ্রাহ্য করেন না; এখন তিনি তাহাদের অপরাধ স্মরণ করিয়া তাহাদের পাপের প্রতিফল দিবেন, তাহারা মিসরে ফিরিয়া যাইবে। কারণ ইস্রায়েল আপন নির্ম্মাতাকে ভুলিয়া গিয়াছে, ও স্থানে স্থানে প্রাসাদ গাঁথিয়াছে; এবং যিহূদা অনেক প্রাচীরবেষ্টিত নগর প্রস্তুত করিয়াছে; কিন্তু আমি তাহার নগরে নগরে অগ্নি পাঠাইব, সে তথাকার দুর্গ সকল গ্রাস করিবে। হে ইস্রায়েল, জাতিগণের ন্যায় তুমি উল্লাসে আনন্দ করিও না, কেননা তুমি আপন ঈশ্বরকে ছাড়িয়া ব্যভিচার করিতেছ, শস্যের প্রত্যেক খামারে পণ ভালবাসিতেছ। খামার কিম্বা দ্রাক্ষাপেষণস্থান তাহাদের খাদ্য দিবে না; তাহারা নূতন দ্রাক্ষারসে বঞ্চিত হইবে। তাহারা সদাপ্রভুর দেশে বাস করিবে না; কিন্তু ইফ্রয়িম মিসরে ফিরিয়া যাইবে, আর তাহারা অশূরে অশুচি দ্রব্য ভোজন করিবে। তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে দ্রাক্ষারস নিবেদন করিবে না, এবং তাহাদের বলিদান সকল তাঁহার তুষ্টিজনক হইবে না; তাহাদের পক্ষে সে সকল শোককারীদের খাদ্যের সমান হইবে; যাহারা তাহা ভোজন করিবে, তাহারা সকলে অশুচি হইবে; বস্তুতঃ তাহাদের খাদ্য তাহাদেরই ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য হইবে, তাহা সদাপ্রভুর গৃহে উপস্থিত হইবে না। পর্ব্বদিনে ও সদাপ্রভুর উৎসব-দিনে তোমরা কি করিবে? কারণ দেখ, তাহারা ধ্বংসস্থান হইতে পলায়ন করিল, [তথাপি] মিসর তাহাদিগকে একত্র করিবে, মোফ তাহাদিগকে কবর দিবে, তাহাদের রৌপ্যময় মনোহর দ্রব্য সকল বিছুটিবৃক্ষের অধিকার হইবে, তাহাদের তাম্বু সকলে কন্টকবৃক্ষ জন্মিবে। প্রতিফল-দানের সময় উপস্থিত, দণ্ডের সময় উপস্থিত, ইহা ইস্রায়েল জ্ঞাত হইবে; ভাববাদী অজ্ঞান, আত্মাবিষ্ট লোক উন্মত্ত; ইহার কারণ তোমার অপরাধের বাহুল্য ও বিদ্বেষের আধিক্য। ইফ্রয়িম আমার ঈশ্বরের সহিত প্রহরী [ছিল]; ভাববাদীর সকল পথে রহিয়াছে ব্যাধের ফাঁদ, তাহার ঈশ্বরের গৃহে বিদ্বেষ। তাহারা গিবিয়ার সময়ের ন্যায় অত্যন্ত ভ্রষ্ট হইয়াছে; তিনি তাহাদের অপরাধ স্মরণ করিবেন, তাহাদের পাপ সকলের প্রতিফল দিবেন। আমি প্রান্তরে দ্রাক্ষাফলের ন্যায় ইস্রায়েলকে পাইয়াছিলাম; আমি ডুমুরবৃক্ষের অগ্রিম আশুপক্ব ফলের ন্যায় তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে দেখিয়াছিলাম; কিন্তু তাহারা বালপিয়োরের কাছে গিয়া সেই লজ্জাস্পদের উদ্দেশে আপনাদিগকে পৃথক্‌ করিল, এবং আপনাদের সেই জারের ন্যায় জঘন্য হইয়া পড়িল। ইফ্রয়িমের গৌরব পক্ষীর ন্যায় উড়িয়া যাইবে; না প্রসব, না গর্ভ, না গর্ভধারন হইবে। যদ্যপি তাহারা সন্তানসন্ততি পালন করে, তথাপি আমি তাহাদিগকে এমন নিঃসন্তান করিব যে, এক জন মানুষও থাকিবে না; আবার ধিক্‌ তাহাদিগকে, যখন আমি তাহাদিগকে পরিত্যাগ করি। সোরকে আমি যেমন দেখিয়াছি, ইফ্রয়িমও সেই প্রকার রম্য স্থানে রোপিত; কিন্তু ইফ্রয়িম আপন সন্তানগণকে বাহিরে ঘাতকের নিকটে লইয়া যাইবে। হে সদাপ্রভু, তাহাদিগকে দেও; তুমি কি দিবে? তাহাদিগকে গর্ভস্রাবী জঠর ও শুষ্ক স্তন দেও। গিল্‌গলে তাহাদের সমস্ত দুষ্টামি [দেখা যায়], বস্তুতঃ সেখানে তাহাদের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মিয়াছিল; আমি তাহাদের কর্ম্মকাণ্ডের দুষ্টতা প্রযুক্ত আমার গৃহ হইতে তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিব, আর ভালবাসিব না, তাহাদের অধ্যক্ষগণ সকলে বিদ্রোহী। ইফ্রয়িম আহত, তাহাদের মূল শুষ্কীভূত, তাহারা আর ফলিবে না; যদ্যপি তাহারা সন্তানের জন্ম দেয়, তথাপি আমি তাহাদের প্রিয় গর্ভফল মারিয়া ফেলিব। আমার ঈশ্বর তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিবেন, কেননা তাহারা তাঁহার বাক্য মানে নাই; আর তাহারা জাতিগণের মধ্যে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিবে। ইস্রায়েল দীর্ঘপল্লবা দ্রাক্ষালতাস্বরূপ, তাহার ফল ধরে; সে আপন ফলের আধিক্য অনুসারে অধিক যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিয়াছে, আপন দেশের উৎকর্ষ অনুসারে উৎকৃষ্ট উৎকৃষ্ট স্তম্ভ নির্ম্মাণ করিয়াছে। তাহাদের অন্তঃকরণ বিভক্ত; এখন তাহারা দোষী প্রতিপন্ন হইবে। তিনিই তাহাদের যজ্ঞবেদি সকল ভগ্ন করিবেন, তাহাদের স্তম্ভ সকলই নষ্ট করিবেন। অবশ্য এখন তাহারা বলিবে, আমাদের রাজা নাই, কারণ আমরা সদাপ্রভুকে ভয় করি না, তবে রাজা আমাদের জন্য কি করিতে পারে? তাহারা [অলীক] কথা বলে, নিয়ম করিবার সময় মিথ্যা শপথ করে; তাই বিচার ক্ষেত্রের আলিস্থ বিষবৃক্ষের ন্যায় অঙ্কুরিত হয়। শমরিয়া-নিবাসিগণ বৈৎ-আবনের বৎস-প্রতিমার নিমিত্ত উদ্বিগ্ন হইবে; কারণ তাহার প্রজাগণ তাহার নিমিত্ত শোকার্ত্ত হইবে, এবং তাহার যে পুরোহিতেরা তাহার জন্য আনন্দ করিত, তাহারাও তাহার জন্য, তাহার গৌরবের নিমিত্ত শোকার্ত্ত হইবে, কারণ গৌরব তাহাকে ছাড়িয়া নির্ব্বাসিত হইবে। সেও বিবাদরাজের উপঢৌকন দ্রব্য বলিয়া অশূরে নীত হইবে; ইফ্রয়িম লজ্জা পাইবে, ইস্রায়েল আপন মন্ত্রণায় লজ্জিত হইবে। শমরিয়ার রাজা উচ্ছিন্ন হইল, সে জলোপরিস্থ ফেনের সদৃশ হইল। ইস্রায়েলের পাপস্বরূপ আবনের উচ্চস্থলী সকলও বিনষ্ট হইবে, তাহাদের যজ্ঞবেদি-সমূহের উপরে কন্টক ও শেয়ালকাঁটা জন্মিবে; এবং তাহারা পর্ব্বতগণকে বলিবে, আমাদিগকে ঢাকিয়া রাখ; ও উপপর্ব্বতগণকে বলিবে, আমাদের উপরে পড়। হে ইস্রায়েল, গিবিয়ার সময় অবধি তুমি পাপ করিয়া আসিতেছ; [তোমার] লোকেরা সেই স্থানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে; অন্যায়ী বংশের প্রতিকূলে কৃত যুদ্ধ কি গিবিয়াতে তাহাদিগকে ধরিবে না? আমি যখন ইচ্ছা, তাহাদিগকে শাস্তি দিব; আর তাহারা যখন তাহাদের দুইটী অপরাধরূপ যোঁয়ালিতে বদ্ধ রহিয়াছে, তখন তাহাদের বিপক্ষে জাতিগণ সংগৃহীত হইবে। আর ইফ্রয়িম এমন শিক্ষিতা গাভীস্বরূপ, যে [শস্য] মর্দ্দন করিতে ভালবাসে, কিন্তু আমি তাহার সুন্দর গ্রীবায় হস্তক্ষেপ করিয়াছি, আমি ইফ্রয়িমের উপরে এক আরোহীকে বসাইব; যিহূদা হাল টানিবে, যাকোব তাহার ঢেলা ভাঙ্গিবে। তোমরা আপনাদের জন্য ধার্ম্মিকতার বীজ বপন কর, দয়ানুযায়ী শস্য কাট, আপনাদের জন্য পতিত ভূমি তোল; কেননা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিবার সময় আছে, যে পর্য্যন্ত তিনি আসিয়া তোমাদের উপরে ধার্ম্মিকতা না বর্ষান। তোমরা দুষ্টতারূপ চাষ করিয়াছ, অধর্ম্মরূপ শস্য কাটিয়াছ, মিথ্যার ফল ভোজন করিয়াছ; কারণ তুমি আপনার পথে, আপনার বীরসমূহে বিশ্বাস করিয়াছ। এই নিমিত্ত তোমার লোকবৃন্দের বিরুদ্ধে কোলাহল উঠিবে; তোমার দৃঢ় দুর্গ সকলের সর্ব্বনাশ হইবে; যেমন যুদ্ধের দিনে শল্‌মন বৈৎ-অর্ব্বেলের সর্ব্বনাশ করিয়াছিল; মাতাকে ও বালকগণকে আছাড় মারিয়া খণ্ড খণ্ড করা হইয়াছিল। তোমাদের মহাদুষ্টতা প্রযুক্ত বৈথেল তোমাদের প্রতি ইহা ঘটাইবে; অরুণোদয় কালে ইস্রায়েলের রাজা উচ্ছিন্ন হইবে। ইস্রায়েলের বাল্যকালে আমি তাহাকে ভালবাসিতাম, এবং মিসর হইতে আপন পুত্রকে ডাকিয়া আনিলাম। তাহারা লোকদিগকে ডাকিলে লোকেরা দৃষ্টিপথ হইতে দূরে গেল, বাল দেবগণের উদ্দেশে যজ্ঞ করিল, এবং প্রতিমাগণের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইল। আমিই ত ইফ্রয়িমকে হাঁটিতে শিখাইয়াছিলাম, আমি তাহাদিগকে কোলে করিতাম; কিন্তু আমি যে তাহাদিগকে সুস্থ করিলাম, ইহা তাহারা বুঝিল না। আমি মনুষ্যের বন্ধনী দ্বারা তাহাদিগকে আকর্ষণ করিতাম, প্রেমরজ্জু দ্বারাই করিতাম, আর আমি তাহাদের পক্ষে সেই লোকদের ন্যায় ছিলাম, যাহারা হনূ হইতে যোঁয়ালি উঠাইয়া লয়, এবং আমি তাহাদিগকে ভক্ষ্য দিতাম। সে মিসর দেশে ফিরিয়া যাইবে না, কিন্তু অশূরই তাহার রাজা হইবে, কেননা তাহারা ফিরিয়া আসিতে অসম্মত হইল। আর তাহাদের নগর সকলের উপরে খড়্‌গ পতিত হইবে, তাহাদের অর্গল সকলকে সংহার করিবে, [লোকদিগকে] গ্রাস করিবে, ইহার কারণ তাহাদের নিজ-মন্ত্রণাসমূহ। আমার প্রজাগণ আমা হইতে বিপথগমনের দিকে ঝুঁকে; ঊর্দ্ধদিকে আহূত হইলে তাহারা কেহ উঠিতে স্বীকার করে না। হে ইফ্রয়িম, আমি কিরূপে তোমাকে ত্যাগ করিব? হে ইস্রায়েল, কিরূপে তোমাকে পরহস্তে সমর্পণ করিব? কিরূপে তোমাকে অদ্‌মার তুল্য করিব? কিরূপে তোমাকে সবোয়িমের ন্যায় রাখিব? আমার মধ্যে অন্তঃকরণ ব্যাকুল হইতেছে, আমার করুণাসমষ্টি একসঙ্গে প্রজ্বলিত হইতেছে। আমি আপন প্রচণ্ড ক্রোধ সফল করিব না, ইফ্রয়িমের সর্ব্বনাশ করিতে ফিরিব না, কেননা আমি ঈশ্বর, মনুষ্য নহি; আমি তোমার মধ্যবর্ত্তী পবিত্রতম, কোপে উপস্থিত হইব না। তাহারা সদাপ্রভুর অনুগমন করিবে; তিনি সিংহের ন্যায় ডাকিবেন; হাঁ, তিনি ডাকিবেন, আর পশ্চিমদিক হইতে সন্তানগণ কাঁপিতে কাঁপিতে আসিবে। তাহারা মিসর হইতে চটকপক্ষীর ন্যায়, অশূর দেশ হইতে কপোতের ন্যায় কাঁপিত কাঁপিতে আসিবে; আর আমি তাহাদের বাটীতে তাহাদিগকে বাস করাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। ইফ্রয়িম মিথ্যাকথায় ও ইস্রায়েলকুল ছলনায় আমাকে বেষ্টন করে; এবং যিহূদা এখনও ঈশ্বরের কাছে, বিশ্বস্ত পবিত্রতমের কাছে, চঞ্চল । ইফ্রয়িম বায়ু ভক্ষণ করে ও পূর্ব্বীয় বায়ুর পশ্চাতে দৌড়িয়া যায়; সে সমস্ত দিন মিথ্যাকথা ও উপদ্রব বৃদ্ধি করে, তাহারা অশূরের সহিত নিয়ম স্থির করে, এবং মিসরে তৈল নীত হয়। আর যিহূদার সহিত সদাপ্রভুর বিবাদ আছে, তিনি যাকোবকে তাহার পথানুসারে দণ্ড দিবেন, তাহার কার্য্যানুযায়ী প্রতিফল দিবেন। জরায়ুর মধ্যে সে আপন ভ্রাতার পাদমূল ধরিয়াছিল, আর বয়স কালে ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিয়াছিল। হাঁ, সে দূতের সহিত যুদ্ধ করিয়া বিজয়ী হইয়াছিল; সে তাঁহার নিকটে রোদন ও বিনতি করিয়াছিল; সে বৈথেলে তাঁহাকে পাইয়াছিল, তিনি সেখানে আমাদের সহিত আলাপ করিলেন। সদাপ্রভু বাহিনীগণের ঈশ্বর; সদাপ্রভু তাঁহার স্মরণীয় [নাম]। অতএব তুমি আপন ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়া আইস; দয়া ও ন্যায়বিচার রক্ষা কর; নিত্য আপন ঈশ্বরের অপেক্ষায় থাক। সে ব্যবসায়ী, তাহার হস্তে ছলনার নিক্তি, সে ঠকাইতে ভালবাসে। আর ইফ্রয়িম বলিয়াছে, আমি ত ঐশ্বর্য্যবান্‌ হইলাম, আপনার নিমিত্ত সংস্থান করিলাম; আমার সমস্ত শ্রমে এমন কোন অপরাধ পাওয়া যাইবে না, যাহাতে পাপ হয়। কিন্তু আমিই মিসর দেশ অবধি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু; আমি পর্ব্বদিনের ন্যায় তোমাকে পুনর্ব্বার তাম্বুতে বাস করাইব। আর আমি ভাববাদিগণের কাছে কথা বলিয়াছি, আমি দর্শনের বৃদ্ধি করিয়াছি, ও ভাববাদিগণ দ্বারা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করিয়াছি। গিলিয়দ কি অধর্ম্মময়? তাহারা অলীকমাত্র; গিল্‌গলে তাহারা বৃষ বলিদান করে; আবার তাহাদের যজ্ঞবেদি সকল ক্ষেত্রের আলিতে স্থিত পাথরের ঢিবীর ন্যায়। আর যাকোব অরাম দেশে পলাইয়া গিয়াছিল; ইস্রায়েল স্ত্রীর জন্য দাসের কর্ম্ম, ও স্ত্রীর জন্য পশুপালকের কার্য্য করিয়াছিল। সদাপ্রভু একজন ভাববাদী দ্বারা ইস্রায়েলকে মিসর হইতে আনিয়াছিলেন; আর এক জন ভাববাদী দ্বারা সে পালিত হইয়াছিল। ইফ্রয়িম [তাঁহাকে] অতিশয় অসন্তুষ্ট করিয়াছে; এই জন্য তাহার রক্ত তাহারই উপরে থাকিবে, আর তাহার প্রভু তাহার টিটকারি তাহার প্রতি ফিরাইয়া দিবেন। ইফ্রয়িম কথা কহিলে লোকের ত্রাস জন্মিত, ইস্রায়েলে সে উন্নত হইয়াছিল, কিন্তু বালের বিষয়ে দোষী হওয়াতে সে মরিল। আর এখন তাহারা উত্তরোত্তর আরও পাপ করিতেছে, তাহারা আপনাদের নিমিত্ত আপনাদের রৌপ্য দ্বারা ছাঁচে ঢালা প্রতিমা, ও আপনাদের নিজ বুদ্ধির মত পুত্তলি নির্ম্মাণ করিয়াছে; সেই সমস্তই শিল্পকারদের কর্ম্মমাত্র; তাহাদেরই বিষয়ে উহারা বলে, যে সকল লোক যজ্ঞ করে, তাহারা গোবৎসদিগকে চুম্বন করুক। এই নিমিত্ত তাহারা প্রাতঃকালের মেঘের ন্যায়, প্রত্যূষে অন্তর্হিত শিশিরের ন্যায়, ঘূর্ণ্যবায়ু দ্বারা খামার হইতে চালিত ভুসির ন্যায়, ও বাতায়ন হইতে নির্গত ধূমের ন্যায় হইবে। তথাপি আমিই মিসর দেশ অবধি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু; আমা ব্যতিরেকে আর কোন ঈশ্বরকে তুমি জানিবে না, এবং আমা ভিন্ন ত্রাণকর্ত্তা আর কেহ নাই। আমিই প্রান্তরে, মহাতৃষ্ণার দেশে, তোমাকে জ্ঞাত ছিলাম। চরাণী পাইলে তাহারা তৃপ্ত হইল, তৃপ্ত হইয়া গর্ব্বিতচিত্ত হইল, এই নিমিত্ত তাহারা আমাকে ভুলিয়া গিয়াছে। এই জন্য আমি তাহাদের পক্ষে সিংহের ন্যায় হইলাম; চিতাব্যাঘ্রের ন্যায় আমি পথের পার্শ্বে অপেক্ষায় থাকিব। আমি হৃতবৎসা ভল্লূকীর ন্যায় তাহাদের সম্মুখীন হইব, তাহাদের হৃৎপদ্ম বিদীর্ণ করিব, সেই স্থানে সিংহীর ন্যায় তাহাদিগকে গ্রাস করিব; বনপশু তাহাদিগকে খণ্ড খণ্ড করিবে। হে ইস্রায়েল, এ তোমার সর্ব্বনাশ যে, তুমি আমার বিপক্ষ, নিজ সহায়ের বিপক্ষ। বল দেখি, তোমার রাজা কোথায়, যে তোমার সকল নগরে তোমাকে ত্রাণ করিবে? তোমার বিচারকর্ত্তৃগণই বা কোথায়? তুমি ত বলিতে, আমাকে রাজা ও অধ্যক্ষগণ দেও। আমি ক্রোধ করিয়া তোমাকে রাজা দিয়াছি, আর কোপ করিয়া তাহাকে হরণ করিয়াছি। ইফ্রয়িমের অপরাধ [বোচ্‌কাতে] বদ্ধ, তাহার পাপ সঞ্চিত আছে। প্রসবকারিণী স্ত্রীর ন্যায় যন্ত্রণা তাহাকে ধরিবে; সে অবোধ সন্তান, উপযুক্ত সময়ে অপত্যদ্বারে উপস্থিত হয় না। পাতালের হস্ত হইতে আমি তাহাদিগকে উদ্ধার করিব, মৃত্যু হইতে আমি তাহাদিগকে মুক্ত করিব। হে মৃত্যু, তোমার মহামারী সকল কোথায়? হে পাতাল, তোমার সংহার কোথায়? অনুশোচনা আমার দৃষ্টি হইতে গুপ্ত থাকিবে। যদ্যপি ইফ্রয়িম ভ্রাতৃগণের মধ্যে ফলবান্‌ হয়, তথাপি এক পূর্ব্বীয় বায়ু আসিবে, সদাপ্রভুর শ্বাস প্রান্তর হইতে উঠিয়া আসিবে; তাহাতে তাহার উনুই শুষ্ক হইবে, ও তাহার উৎস শুকাইয়া যাইবে। ঐ ব্যক্তি তাহার সমস্ত মনোরম্য পাত্রের ভাণ্ডার লুটিবে। শমরিয়া দণ্ড পাইবে, কারণ সে আপন ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচারিণী হইয়াছে, তাহারা খড়্‌গে পতিত হইবে, তাহাদের শিশুগণকে আছাড়িয়া খণ্ড খণ্ড করা যাইবে, তাহাদের গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের উদর বিদীর্ণ করা যাইবে। হে ইস্রায়েল, তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস; কেননা তুমি নিজ অপরাধে উছোট খাইয়াছ। তোমরা বাক্য সঙ্গে লইয়া সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস; তাঁহাকে বল, সমুদয় অপরাধ হরণ কর; যাহা উত্তম, তাহা গ্রহণ কর; তাহাতে আমরা আপন আপন ওষ্ঠাধর বৃষরূপে দিয়া বলিদান করিব। অশূর আমাদের পরিত্রাণ করিবে না, আমরা অশ্বে আরোহণ করিব না, এবং আপনাদের হস্তকৃত বস্তুকে আর কখনও বলিব না, ‘আমাদের ঈশ্বর।’ কেননা তোমারই নিকটে পিতৃহীন লোকেরা করুণা পায়। আমি তাহাদের বিপথগমনের প্রতীকার করিব, আমি স্বেচ্ছায় তাহাদিগকে প্রেম করিব; কেননা আমার ক্রোধ তাহা হইতে ফিরিয়া গিয়াছে। আমি ইস্রায়েলের পক্ষে শিশিরের ন্যায় হইব; সে শোশন পুষ্পের ন্যায় ফুটিবে, আর লিবানোনের ন্যায় মূল বাঁধিবে। তাহার পল্লব সকল বিস্তারিত হইবে, জিত বৃক্ষের ন্যায় তাহার শোভা এবং লিবানোনের ন্যায় তাহার সৌরভ হইবে। যাহারা তাহার ছায়াতলে বাস করে, তাহারা ফিরিয়া আসিবে, শস্যবৎ সঞ্জীবিত হইবে, দ্রাক্ষালতায় ন্যায় ফুটিবে, লিবানোনীয় দ্রাক্ষারসের ন্যায় তাহার সুখ্যাতি হইবে। ইফ্রয়িম [বলিবে], আমাতে ও প্রতিমাগণে আর কি সম্পর্ক? আমি উত্তর দিয়াছি, আর তাহার প্রতি দৃষ্টি রাখিব; আমি সতেজ দেবদারুর ন্যায়; আমা হইতেই তোমার ফলপ্রাপ্তি। জ্ঞানবান্‌ কে? সে এই সকল বুঝিবে; বুদ্ধিমান্‌ কে? সে এই সকল জ্ঞাত হইবে; কেননা সদাপ্রভুর পথ সকল সরল, এবং ধার্ম্মিকগণ সেই সকল পথে চলে, কিন্তু অধর্ম্মাচারিগণ সেই সব পথে উছোট খায়। পথূয়েলের পুত্র যোয়েলের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল। হে প্রাচীনগণ, এই কথা শুন; আর হে দেশনিবাসী সকলে, কর্ণপাত কর। তোমাদের সময়ে এমন ঘটনা কি হইয়াছে? কিম্বা তোমাদের পিতৃপুরুষদের সময়ে কি এমন হইয়াছে? তোমরা আপন আপন সন্তানগণকে ইহার বৃত্তান্ত বল, এবং তাহারা আপন আপন সন্তানগণকে বলুক, আবার সেই সন্তানেরা ভাবী পুরুষপরম্পরাকে বলুক। শূককীটে যাহা রাখিয়া গিয়াছে, তাহা পঙ্গপালে খাইয়াছে; পঙ্গপালে যাহা রাখিয়া গিয়াছে, তাহা পতঙ্গে খাইয়াছে; পতঙ্গে যাহা রাখিয়া গিয়াছে, তাহা ঘুর্ঘুরিয়াতে খাইয়াছে। হে মত্তগণ, জাগিয়া উঠ ও রোদন কর; হে মদ্যপায়ী সকলে, মিষ্ট দ্রাক্ষারসের জন্য হাহাকার কর; কেননা তাহা তোমাদের মুখ হইতে অপহৃত হইয়াছে। কারণ আমার দেশের বিরুদ্ধে এক জাতি উঠিয়া আসিয়াছে, সে বলবান ও অসংখ্য; তাহার দন্তরাজি সিংহ-দন্তের ন্যায়, তাহার কশের দন্ত সিংহীর কশের দন্তের ন্যায়। সে আমার দ্রাক্ষালতা ধ্বংস করিয়াছে, আমার ডুমুরবৃক্ষ ত্বক্‌শূন্য করিয়াছে; সে ছাল খুলিয়া ফেলিয়াছে, তাহা ফেলিয়া দিয়াছে; তাহার শাখা সকল শুক্ল হইয়া পড়িয়াছে। তুমি এমন কন্যার ন্যায় বিলাপ কর, যে যৌবনকালীন কান্তের শোকে চটপরিহিতা। সদাপ্রভুর গৃহ হইতে ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ও পেয়-নৈবেদ্য অপহৃত হইয়াছে, সদাপ্রভুর পরিচারক যাজকগণ শোক করিতেছে। ক্ষেত্র বিনষ্ট, ভূমি শোকান্বিত, কেননা শস্য বিনষ্ট হইয়াছে, নূতন দ্রাক্ষারস শুষ্ক এবং তৈল লুপ্ত হইয়াছে। লজ্জিত হও, কৃষকগণ, হাহাকার কর, দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পালকগণ, গোধূম ও যবের নিমিত্ত; কেননা ক্ষেত্রের শস্য নষ্ট হইয়াছে। দ্রাক্ষালতা শুষ্ক ও ডুমুরবৃক্ষ ম্লান হইয়াছে; দাড়িম্ব, খর্জ্জুর, নাগরঙ্গ ও ক্ষেত্রের সমস্ত বৃক্ষ শুষ্ক হইয়াছে, বস্তুতঃ মনুষ্য-সন্তানদের মধ্যে আমোদ শুকাইয়া গিয়াছে। হে যাজকগণ, তোমরা বদ্ধকটি হইয়া বিলাপ কর; হে যজ্ঞবেদির পরিচারকগণ, হাহাকার কর; হে আমার ঈশ্বরের পরিচারকগণ, আইস, চট পরিয়া সমস্ত রাত্রি যাপন কর; কেননা তোমাদের ঈশ্বরের গৃহে ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ও পেয়-নৈবেদ্যের অভাব হইয়াছে। তোমরা পবিত্র উপবাস নিরূপণ কর, পর্ব্বদিন ঘোষণা কর, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহে প্রাচীনবর্গ ও দেশনিবাসী সকল লোককে একত্র কর, এবং সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন কর। হায় হায়, কেমন দিন! সদাপ্রভুর দিন ত সন্নিকট; উহা সর্ব্বশক্তিমানের নিকট হইতে প্রলয়ের ন্যায় আসিতেছে। আমাদের দৃষ্টি হইতে খাদ্য ও আমাদের ঈশ্বরের গৃহ হইতে আনন্দ ও উল্লাস কি উচ্ছিন্ন হয় নাই? বীজ সকল আপন আপন ঢেলার নীচে পচিয়া যাইতেছে; গোলা সকল ধ্বংসিত, শস্যাগার সকল উৎপাটিত; কারণ শস্য ম্লান হইয়াছে। পশুগণ কেমন কোঁকাইতেছে! বৃষপাল ব্যাকুল হইতেছে, কেননা তাহাদের চরাণীস্থান নাই; মেষপালও দণ্ডভোগ করিতেছে। হে সদাপ্রভু, আমি তোমাকেই ডাকিতেছি, কেননা অগ্নি প্রান্তরের চরাণী সকল গ্রাস করিয়াছে, তাহার শিখা ক্ষেত্রের সমস্ত বৃক্ষ দগ্ধ করিয়াছে। মাঠের পশুগণও তোমার কাছে আকাঙ্ক্ষা করে; কেননা জলপ্রণালী সকল শুষ্ক হইয়াছে, ও অগ্নি প্রান্তরস্থ চরাণী সকল গ্রাস করিয়াছে। তোমরা সিয়োনে তূরী বাজাও, আমার পবিত্র পর্ব্বতে সিংহনাদ কর, দেশনিবাসী সকলেই কম্পিত হউক; কেননা সদাপ্রভুর দিন আসিতেছে, হাঁ, সেই দিন সন্নিকট। সে তিমির ও অন্ধকারের দিন, মেঘের ও ঘোর অন্ধকারের দিন, পর্ব্বতগণের উপরে অরুণের ন্যায় তাহা ব্যাপ্ত হইতেছে। বলবতী এক মহাজাতি; তাহার তুল্য জাতি যুগের আরম্ভ অবধি হয় নাই, এবং তাহার পরে পুরুষানুক্রমের বৎসর-পর্য্যায়েও হইবে না। তাহাদের অগ্রে অগ্নি গ্রাস করে, পশ্চাতে বহ্নি-শিখা জ্বলে; তাহাদের অগ্রে দেশ যেন এদনের উদ্যান, তাহাদের পশ্চাতে ধ্বংসিত প্রান্তর, তাহা হইতে রক্ষাপ্রাপ্ত কিছুই নাই। তাহাদের আকার অশ্বগণের আকৃতির ন্যায়, এবং তাহারা অশ্বারোহীদের ন্যায় ধাবমান হয়। তাহাদের লম্ফের শব্দ পর্ব্বতশৃঙ্গের উপরে রথসমূহের শব্দের ন্যায়, নাড়া দগ্ধকারী অগ্নিশিখার শব্দের ন্যায়; তাহারা যুদ্ধার্থে শ্রেণীবদ্ধ বলবতী জাতির তুল্য। তাহাদের সম্মুখে জাতিগণ যন্ত্রণাগ্রস্ত, সকলেরই মুখ কালিমাযুক্ত হয়। তাহারা বীরগণের ন্যায় দৌড়ে, যোদ্ধাদের ন্যায় প্রাচীরে উঠে, প্রত্যেক জন আপন আপন পথে অগ্রসর হয়, আপনাদের মার্গ জটিল করে না। তাহারা এক জন অন্যের উপরে চাপাচাপি করে না; সকলেই আপন আপন মার্গে অগ্রসর হয়, এবং শূলাগ্রের উপরে পড়িলেও ভগ্নপঙ্‌ক্তি হয় না। তাহারা নগরের উপর লম্ফ দেয়, প্রাচীরের উপরে দৌড়ে, গৃহমধ্যে উঠে, চোরের ন্যায় গবাক্ষ দিয়া প্রবেশ করে। তাহাদের সম্মুখে পৃথিবী কাঁপে, আকাশমণ্ডল কম্পমান হয়, চন্দ্র ও সূর্য্য অন্ধকারময় হয়, নক্ষত্রগণ আপন আপন তেজ গুটাইয়া লয়। সদাপ্রভু নিজ সৈন্যসামন্তের অগ্রে আপন রব শুনাইতেছেন; কেননা তাঁহার শিবির অতি মহৎ; কেননা তাঁহার বাক্যসাধক বলবান, কেননা সদাপ্রভুর দিন মহৎ ও অতি ভয়ানক; আর কে তাহা সহ্য করিতে পারে? কিন্তু, সদাপ্রভু বলেন, এখনও তোমরা সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত, এবং উপবাস, রোদন ও বিলাপ সহকারে আমার কাছে ফিরিয়া আইস। আর আপন আপন বস্ত্র না ছিঁড়িয়া অন্তঃকরণ চির, এবং আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস; কেননা তিনি কৃপাময় ও স্নেহশীল ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্‌, এবং অমঙ্গলের বিষয়ে অনুশোচনা করেন। কে জানে যে, তিনি ফিরিয়া অনুশোচনা করিবেন না, এবং আপনার পশ্চাতে আশীর্ব্বাদ, অর্থাৎ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে ভক্ষ্য-নৈবেদ্য ও পেয়-নৈবেদ্য, রাখিয়া যাইবেন না? তোমরা সিয়োনে তূরী বাজাও, পবিত্র উপবাস নিরূপণ কর, পর্ব্বদিন ঘোষণা কর; প্রজা লোকদিগকে একত্র কর, পবিত্র সমাজ নিরূপণ কর, প্রাচীনগণকে আহ্বান কর, বালকবালিকাদিগকে ও দুগ্ধপোষ্য শিশুদিগকে একত্র কর; বর আপন বাসরগৃহ হইতে, কন্যা আপন অন্তঃপুর হইতে নির্গত হউক। বারাণ্ডার ও বেদির মধ্যস্থানে সদাপ্রভুর পরিচারক যাজকগণ রোদন করুক, তাহারা বলুক, হে সদাপ্রভু, আপন প্রজাগণের প্রতি মমতা কর, আপন অধিকারের টিটকারির বিষয় করিও না; তাহাদের বিষয়ে জাতিগণকে গল্প করিতে দিও না, লোকবৃন্দের মধ্যে কেন বলা হইবে যে, ‘উহাদের ঈশ্বর কোথায়?’ তখন সদাপ্রভু আপন দেশের জন্য উদ্যোগী হইলেন, ও আপন প্রজাদের প্রতি দয়া করিলেন। আর সদাপ্রভু উত্তর দিলেন, আপন প্রজাদিগকে কহিলেন, দেখ, আমি তোমাদের নিকটে শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈল প্রেরণ করিতেছি, তোমরা তাহাতে তৃপ্ত হইবে; এবং আমি জাতিগণের মধ্যে তোমাদিগকে আর টিটকারির পাত্র করিব না। বরং আমি তোমাদের নিকট হইতে উত্তর দেশীয় [সৈন্য] দূর করিব, এবং তাহাকে শুষ্ক ও ধ্বংসিত দেশে তাড়াইয়া দিব, পূর্ব্ব সমুদ্রের দিকে তাহার অগ্রভাগ, ও পশ্চিম সমুদ্রের দিকে তাহার পশ্চাদ্ভাগ ফেলিয়া দিব; আর তাহার দুর্গন্ধ উঠিবে ও পূতিগন্ধ উঠিবে, কারণ সে মহৎ মহৎ কর্ম্ম করিয়াছে। হে দেশ, ভয় করিও না, উল্লাসিত হও, আনন্দ কর, কেননা সদাপ্রভু মহৎ মহৎ কর্ম্ম করিয়াছেন। হে ক্ষেত্রের পশুগণ, ভয় করিও না, কেননা প্রান্তরস্থ চরাণীস্থান তৃণভূষিত হইতেছে, বৃক্ষ ফলবান্‌ হইতেছে, ডুমুরবৃক্ষ ও দ্রাক্ষালতা আপন আপন বল প্রদান করিতেছে। আর হে সিয়োন-সন্তানগণ, তোমরা উল্লাসিত হও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে আনন্দ কর, কেননা তিনি তোমাদিগকে যথাপরিমাণে অগ্রিম বৃষ্টি দিলেন, এবং প্রথমতঃ তোমাদের নিমিত্ত অগ্রিম ও উত্তর বর্ষার জল বর্ষাইলেন। এইরূপে খামার সকল শস্যে পরিপূর্ণ হইবে, দ্রাক্ষারস ও তৈলে কুণ্ড সকল উথলিয়া উঠিবে। আর পঙ্গপাল, পতঙ্গ, ঘুর্ঘুরিয়া ও শূককীট— আমি যে নিজ মহাসৈন্য তোমাদের কাছে পাঠাইয়াছি, তাহারা— যে যে বৎসরের শস্যাদি খাইয়াছে, আমি তাহা পরিশোধ করিয়া তোমাদিগকে দিব। তোমরা প্রচুর খাদ্য ভোজন করিয়া তৃপ্ত হইবে, এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের প্রশংসা করিবে, যিনি তোমাদের প্রতি আশ্চর্য্য ব্যবহার করিয়াছেন; আর আমার প্রজাগণ কদাচ লজ্জিত হইবে না। তাহাতে তোমরা জানিবে, আমি ইস্রায়েলের মধ্যবর্ত্তী, এবং আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, অন্য কেহ নাই, এবং আমার প্রজারা কদাচ লজ্জিত হইবে না। আর তৎপরে এইরূপ ঘটিবে, আমি মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব, তাহাতে তোমাদের পুত্রকন্যাগণ ভাববাণী বলিবে তোমাদের প্রাচীনেরা স্বপ্ন দেখিবে, তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাইবে; আর তৎকালে আমি দাসদাসীদিগেরও উপরে আমার আত্মা সেচন করিব। আর আমি আকাশে ও পৃথিবীতে অদ্ভুদ লক্ষণ দেখাইব,— রক্ত, অগ্নি ও ধূমস্তম্ভ দেখাইব। সদাপ্রভুর ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের আগমনের পূর্ব্বে সূর্য্য অন্ধকার ও চন্দ্র রক্ত হইয়া যাইবে। আর যে কেহ সদাপ্রভুর নামে ডাকিবে, সেই রক্ষা পাইবে; কারণ সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে সিয়োন পর্ব্বতে ও যিরূশালেমে রক্ষাপ্রাপ্ত দল থাকিবে, এবং পলাতক সকলের মধ্যে এমন লোক থাকিবে, যাহাদিগকে সদাপ্রভু ডাকিবেন। কারণ দেখ, সেই কালে ও সেই সময়ে যখন আমি যিহূদা ও যিরূশালেমের বন্দিদশা ফিরাইব, তখন সমস্ত জাতিকে সংগ্রহ করিয়া যিহোশাফট তলভূমিতে নামাইব, এবং সেখানে আমার প্রজা ও আমার অধিকার ইস্রায়েলের জন্য তাহাদের সহিত বিচার করিব, কেননা তাহারা তাহাদিগকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিয়াছে, ও আমার দেশ বিভাগ করিয়া লইয়াছে। তার তাহারা আমার প্রজাদের জন্য গুলিবাঁট করিয়াছে, এবং বেশ্যার বিনিময়ে বালক দিয়াছে, ও পান করিবার জন্য দ্রাক্ষারসের বিনিময়ে বালিকা বিক্রয় করিয়াছে। আবার হে সোর, হে সীদোন, হে পলেষ্টীয়দের সমস্ত অঞ্চল, আমার কাছে তোমরা কি? তোমরা কি প্রতিফল বলিয়া আমার অপকার করিবে? আমার অপকার করিলে আমি অবিলম্বে ও অতি শীঘ্র সেই অপকারের ফল তোমাদেরই মস্তকে বর্ত্তাইব। কেননা তোমরা আমার রৌপ্য ও আমার সুবর্ণ হরণ করিয়াছ, এবং আমার উৎকৃষ্ট রত্ন সকল আপন আপন মন্দিরে লইয়া গিয়াছ; আর যিহূদা-সন্তানগণকে ও যিরূশালেম-সন্তানগণকে তাহাদের সীমা হইতে দূর করণার্থে যবন-সন্তানদের কাছে বিক্রয় করিয়াছ। দেখ, তোমরা যে স্থানে পাঠাইবার জন্য তাহাদিগকে বিক্রয় করিয়াছ, তথা হইতে আমি তাহাদিগকে জাগাইয়া উঠাইয়া আনিব, এবং তোমাদের অপকারের ফল তোমাদেরই মস্তকে বর্ত্তাইব। আর তোমাদের পুত্রকন্যাগণকেও যিহূদার সন্তানদের হস্তে বিক্রয় করিব, তাহারা তাহাদিগকে দূরস্থ শিবায়ীয় জাতির কাছে বিক্রয় করিবে, কেননা ইহা সদাপ্রভু বলিয়াছেন। তোমরা জাতিগণের মধ্যে এই কথা প্রচার কর, যুদ্ধ নিরূপণ কর, বীরগণকে জাগাইয়া তুল, যোদ্ধা সকল নিকটবর্ত্তী হউক, উঠিয়া আইসুক। তোমরা আপন আপন লাঙ্গলের ফাল ভাঙ্গিয়া খড়্‌গ গড়, আপন আপন কাস্ত্যা ভাঙ্গিয়া বড়শা প্রস্তুত কর; দুর্ব্বল বলুক, আমি বীর। হে চারিদিকের জাতিগণ, তোমরা সকলে ত্বরা কর, আইস, একত্র হও; হে সদাপ্রভু, তুমিও সেখানে আপন বীরগণকে নামাইয়া দেও। জাতিগণ জাগিয়া উঠুক, যিহোশাফট-তলভূমিতে আইসুক, কেননা সে স্থানে আমি চারিদিকের সমস্ত জাতির বিচার করিতে বসিব। তোমরা কর্ত্তনী লাগাও, কেননা শস্য পাকিয়াছে; আইস, দ্রাক্ষাফল দলন কর, কেননা কুণ্ড পূর্ণ হইয়াছে, রসের আধার সকল উথলিয়া উঠিতেছে; কেননা তাহাদের দুষ্টতা বিষম। সমারোহ, সমারোহ দণ্ডাজ্ঞার তলভূমিতে! কেননা দণ্ডাজ্ঞার তলভূমিতে সদাপ্রভুর দিন সন্নিকট। সূর্য্য ও চন্দ্র অন্ধকার হইতেছে, নক্ষত্রগণ আপন আপন তেজ গুটাইয়া লইতেছে। আর সদাপ্রভু সিয়োন হইতে গর্জ্জন করিবেন, যিরূশালেম হইতে আপন রব শুনাইবেন; এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী কম্পিত হইবে; কিন্তু সদাপ্রভু আপন প্রজাদের আশ্রয় ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের দুর্গস্বরূপ হইবেন। তাহাতে তোমরা জানিবে যে, আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমি আমার পবিত্র সিয়োন পর্ব্বতে বাস করি; তখন যিরূশালেম পবিত্র হইবে; বিদেশীরা আর তাহার মধ্য দিয়া যাতায়াত করিবে না। সেই দিন পর্ব্বতগণ হইতে মিষ্ট দ্রাক্ষারস ক্ষরিবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে দুগ্ধস্রোত বহিবে, এবং যিহূদার সমস্ত প্রণালীতে জল বহিবে; আর সদাপ্রভুর গৃহ হইতে এক উৎস নির্গত হইবে, তাহা শিটীমের স্রোতোমার্গকে জল দিবে। মিসর ধ্বংসস্থান হইবে, ইদোম ধ্বংসিত প্রান্তর হইবে, ইহার কারণ যিহূদা-সন্তানদের প্রতি কৃত উপদ্রব, কেননা তাহারা আপন আপন দেশে নির্দ্দোষের রক্তপাত করিয়াছে। কিন্তু যিহূদা চিরকাল ও যিরূশালেম পুরুষানুক্রমে বসতিবিশিষ্ট থাকিবে। আর আমি তাহাদের যে রক্ত নির্দ্দোষ প্রতিপন্ন করি নাই, তাহা নির্দ্দোষ প্রতিপন্ন করিব; কারণ সদাপ্রভু সিয়োনে বাস করেন। আমোষের বাক্য। তিনি তকোয়স্থ গোপালকদের মধ্যবর্ত্তী ছিলেন; তিনি যিহূদা-রাজ উষিয়ের কালে এবং যোয়াশের পুত্র ইস্রায়েল-রাজ যারবিয়ামের কালে, ভূমিকম্পের দুই বৎসর পূর্ব্বে, ইস্রায়েলের সম্বন্ধে এই সকল দর্শন পান। তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু সিয়োন হইতে গর্জ্জন করিবেন, যিরূশালেম হইতে আপন রব শুনাইবেন; তাহাতে মেষপালকদের চরাণীস্থান সকল শোকান্বিত হইবে, কর্ম্মিলের শিখর শুষ্ক হইয়া যাইবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দম্মেশকের তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না, কেননা তাহারা লৌহময় শস্যমর্দ্দনযন্ত্রে গিলিয়দকে মর্দ্দন করিয়াছে; অতএব আমি হসায়েল-কুলে অগ্নি নিক্ষেপ করিব, তাহা বিন্‌হদদের অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে। আর আমি দম্মেশকের অর্গল ভাঙ্গিয়া ফেলিব, আবনের সমস্থলী হইতে নিবাসীকে ও বৈৎ-এদন হইতে রাজদণ্ডধারীকে উচ্ছিন্ন করিব; এবং অরামের লোকেরা বন্দি হইয়া কীরে যাইবে; ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ঘসার তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না, কেননা তাহারা ইদোমের কাছে সমর্পণ করিবার জন্য সমস্ত লোককে বন্দি করিয়া লইয়া গিয়াছিল; অতএব আমি ঘসার প্রাচীরে অগ্নি নিক্ষেপ করিব, তাহা তাহার অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে। আর আমি অস্‌দোদ হইতে নিবাসীকে ও অস্কিলোন হইতে রাজদণ্ড-ধারীকে উচ্ছিন্ন করিব; ইক্রোণের বিপক্ষে আমার হস্ত বিস্তার করিব, আর পলেষ্টীয়দের অবশিষ্টাংশও বিনষ্ট হইবে; ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সোরের তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না, কেননা তাহারা সমস্ত লোককে ইদোমের হস্তে সমর্পণ করিয়াছিল, ভ্রাতৃ-নিয়ম স্মরণ করিল না; অতএব আমি সোরের প্রাচীরে অগ্নি নিক্ষেপ করিব, তাহা তাহার অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইদোমের তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না; কেননা সে খড়্‌গহস্ত হইয়া আপন ভ্রাতাকে তাড়না করিয়াছিল, করুণার বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছিল; তাহার ক্রোধ নিত্য বিদারণ করিত, তাহার কোপ নিরন্তর প্রস্তুত থাকিত; অতএব আমি তৈমনের উপরে অগ্নি নিক্ষেপ করিব, তাহা বস্রার অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, অম্মোন-সন্তানদের তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহাদের দণ্ড নিবারণ করিব না; কেননা তাহারা গিলিয়দস্থ গর্ভবতী স্ত্রীদের উদর বিদীর্ণ করিয়াছিল, যেন আপনাদের সীমা বৃদ্ধি করিতে পারে; অতএব আমি রব্বার প্রাচীরে অগ্নি জ্বালাইব, তাহা তাহার অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে, যুদ্ধের দিনে সিংহনাদ হইবে, ঘূর্ণ্যবায়ুর দিনে প্রচণ্ড ঝটিকা হইবে; আর তাহাদের রাজা ও তাহার অধ্যক্ষগণ একসঙ্গে নির্ব্বাসনার্থে যাত্রা করিবে; ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, মোয়াবের তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না; কেননা সে ইদোমের রাজার অস্থি চূর্ণে পরিণত করিয়াছিল; অতএব আমি মোয়াবের উপরে অগ্নি নিক্ষেপ করিব, তাহা করিয়োতের অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে, এবং কোলাহল, সিংহনাদ ও তূরীধ্বনি সহকারে মোয়াব প্রাণত্যাগ করিবে; আর আমি তাহার মধ্য হইতে বিচারকর্ত্তাকে উচ্ছিন্ন করিব, এবং তাহার সহিত তাহার সকল অধ্যক্ষকেও সংহার করিব; ইহা সদাপ্রভু কহেন। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যিহূদার তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না; কেননা তাহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাঁহার বিধি সকল পালন করে নাই, কিন্তু তাহাদের পিতৃপুরুষেরা যে মিথ্যা বস্তুর অনুগামী হইয়াছিল, তদ্দ্বারা আপনারাও ভ্রান্ত হইয়াছে। অতএব আমি যিহূদার উপরে আগ্নি নিক্ষেপ করিব, তাহা যিরূশালেমের অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েলের তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না; কেননা তাহারা রৌপ্যের বিনিময়ে ধার্ম্মিককে, ও এক যোড়া পাদুকার বিনিময়ে দরিদ্রকে বিক্রয় করিয়াছে। তাহারা দীনহীন লোকদের মস্তকে ভূমির ধূলির আকাঙ্ক্ষা করে, ও নম্র লোকদের পথ বক্র করে, এবং পিতা ও পুত্র এক যুবতীতে গমন করে, যেন আমার পবিত্র নাম অপবিত্রীকৃত হয়। আর তাহারা সমস্ত বেদির কাছে বন্ধক বস্ত্রের উপরে শয়ন করে, ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত লোকদের দ্রাক্ষারস আপনাদের ঈশ্বরের গৃহে পান করে। আমিই ত তাহাদের সম্মুখে সেই ইমোরীয়কে উচ্ছিন্ন করিয়াছিলাম, যে এরস বৃক্ষবৎ দীর্ঘকায় ও অলোন বৃক্ষবৎ বলিষ্ঠ ছিল; তবু আমি ঊর্দ্ধে তাহার ফল ও নীচে তাহার মূল উচ্ছিন্ন করিয়াছিলাম। আর ইমোরীয়ের দেশ অধিকারার্থ দিবার জন্য আমিই তোমাদিগকে মিসর দেশ হইতে আনিয়াছিলাম, ও চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত প্রান্তরে গমন করাইয়াছিলাম। আর আমি তোমাদের পুত্রগণের মধ্যে কাহাকে কাহাকে ভাববাদী করিয়া, ও তোমাদের যুবকগণের মধ্যে কাহাকে কাহাকে নাসরীয় করিয়া উৎপন্ন করিতাম। হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, ইহা কি সত্য নহে? ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু তোমরা সেই নাসরীয়দিগকে দ্রাক্ষারস পান করাইতে, এবং সেই ভাববাদীদিগকে আদেশ করিতে, ভাববাণী বলিও না। দেখ, গোমের আটিতে পরিপূর্ণ শকট যেমন [ঘাস] চেপ্টায়, তেমনি আমি তোমাদিগকে তোমাদের স্থানে চেপ্টাইব। দ্রুতগামীর পলায়নের উপায় নষ্ট হইবে, বলবান আপন বল দৃঢ় করিবে না, ও বীর নিজ প্রাণ রক্ষা করিবে না; আর ধনুর্দ্ধর দাঁড়াইয়া থাকিবে না, ও দ্রুতপদ রক্ষা পাইবে না, এবং অশ্বারোহীও নিজ প্রাণ রক্ষা করিবে না; আর বীরগণের মধ্যে যে জন সাহসিকচিত্ত, সেও সেই দিন উলঙ্গ হইয়া পলায়ন করিবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন। হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা এই বাক্য শুন, যাহা তোমাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু বলিয়াছেন,—আমি মিসর দেশ হইতে যাহাকে বাহির করিয়া আনিয়াছি, সেই সমস্ত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে [বলিয়াছি], —আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে তোমাদেরই পরিচয় লইয়াছি, এই জন্য তোমাদের সমস্ত অপরাধ ধরিয়া তোমাদিগকে প্রতিফল দিব। একপরামর্শ না হইলে দুই ব্যক্তি কি একসঙ্গে চলে? শিকার না পাইলে বনের মধ্যে সিংহ কি গর্জ্জন করে? কোন পশু না ধরিলে গহ্বরে যুবাকেশরী কি হূঙ্কার করে? কল না পাতিলে পক্ষী কি ফাঁদে বদ্ধ হইয়া ভূমিতে পড়ে? কিছু ধরা না পড়িলে ভূমি হইতে কি কল ছুটে? নগরের মধ্যে তূরী বাজিলে লোকেরা কি কাঁপে না? সদাপ্রভু না ঘটাইলে নগরের মধ্যে কি অমঙ্গল ঘটে? নিশ্চয়ই প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না। সিংহ গর্জ্জন করিল, কে না ভয় করিবে? প্রভু সদাপ্রভু কথা কহিলেন, কে না ভাববাণী বলিবে? তোমরা অস্‌দোদের অট্টালিকা সকলের উপরে ও মিসর দেশের অট্টালিকা সকলের উপরে ঘোষণা কর, আর বল, তোমরা শমরিয়ার পর্ব্বতগণের উপরে একত্র হও; আর দেখ, তাহার মধ্যে কত মহাকোলাহল! তাহার মধ্যে কত উপদ্রব! উহারা ন্যায়াচরণ করিতে জানে না, ইহা সদাপ্রভু কহেন, তাহারা আপন আপন অট্টালিকায় দৌরাত্ম্য ও লুট সঞ্চয় করে। এই জন্য প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এক জন বিপক্ষ! সে দেশ বেষ্টন করিবে, সে তোমা হইতে তোমার শক্তি ফেলিয়া দিবে, এবং তোমার অট্টালিকা সকল লুট হইবে। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সিংহের মুখ হইতে যেমন মেষপালক দুই খানা পা কিম্বা একটী কর্ণমূল উদ্ধার করে, তেমনি সেই ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে উদ্ধার করা যাইবে, যাহারা শমরিয়ায় শয্যায় কোণে কিম্বা খট্টার শিল্পিত চাদরে বসিয়া থাকে। তোমরা শুন, আর যাকোবের কুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেও, ইহা প্রভু সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, কহেন। কেননা আমি যে দিন ইস্রায়েলকে তাহার অধর্ম্ম সকলের প্রতিফল দিব, সেই দিন বৈথেলস্থ যজ্ঞবেদি সকলেরও প্রতিফল দিব, তাহাতে বেদির শৃঙ্গ সকল ছিন্ন হইয়া ভূমিতে পড়িবে। আমি শীতকালের গৃহকে ও গ্রীষ্মকালের গৃহকে আঘাত করিব; হস্তিদন্তের গৃহ সকল নষ্ট হইবে, এবং অনেক গৃহ লুপ্ত হইবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন। হে শমরিয়ার গিরিবিহারিণী বাশনের গাভী সকল, এই বাক্য শুন; তোমরা দীনহীন লোকদের প্রতি উপদ্রব করিতেছ, দরিদ্রগণকে চূর্ণ করিতেছ, এবং আপনাদের কর্ত্তাদিগকে বলিতেছ, আন, আমরা পান করি। প্রভু সদাপ্রভু আপন পবিত্রতার শপথ করিয়া বলিয়াছেন, দেখ, তোমাদের উপরে এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে লোকে তোমাদিগকে আঁকড়া দ্বারা ও তোমাদের শেষাংশকে ধীবরের বড়শী দ্বারা টানিয়া লইয়া যাইবে। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সম্মুখস্থ ভগ্নস্থান দিয়া বাহির হইবে, এবং হর্ম্মোণে নিক্ষিপ্ত হইবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন। তোমরা বৈথেলে গিয়া অধর্ম্ম কর, গিল্‌গলে গিয়া অধর্ম্মের বৃদ্ধি কর, এবং প্রতিপ্রভাতে আপন আপন বলি, ও তিন তিন দিবসান্তে আপন আপন দশমাংশ উৎসর্গ কর। আর স্তবার্থে তাড়ীযুক্ত দ্রব্য উৎসর্গ কর, এবং স্বেচ্ছা-দত্ত উপহারের বিষয় ঘোষণা কর, ও প্রচার কর; কেননা, হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা এই প্রকার করিতেই ভালবাস, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। আর আমিও তোমাদের সমস্ত নগরে দন্তাবলির নির্ম্মলতা ও তোমাদের সমস্ত বাসস্থানে অন্নাভাব তোমাদিগকে দিলাম; তথাপি তোমরা আমার কাছে ফিরিয়া আসিলে না, ইহা সদাপ্রভু বলেন। আর শস্য পাকিবার তিন মাস পূর্ব্বে আমিও তোমাদের হইতে বৃষ্টি নিবারণ করিলাম; এক নগরে বৃষ্টি ও অন্য নগরে অনাবৃষ্টি করিলাম; এক ক্ষেত্র জলসিক্ত হইল, অন্য ক্ষেত্র জলাভাবে শুষ্ক হইয়া গেল। তাই জল পানার্থে দুই তিন নগরের লোক টলিতে টলিতে অন্য এক নগরে যাইত, কিন্তু তৃপ্ত হইত না; তথাপি তোমরা আমার কাছে ফিরিয়া আসিলে না, ইহা সদাপ্রভু বলেন। আমি শস্যের শোষ ও ম্লানি দ্বারা তোমাদিগকে আঘাত করিলাম; শূককীট তোমাদের বহুসংখ্য উদ্যান, তোমাদের দ্রাক্ষাক্ষেত্র, তোমাদের ডুমুরবৃক্ষ ও জিতবৃক্ষ খাইয়া ফেলিল; তথাপি তোমরা আমার কাছে ফিরিয়া আসিলে না, ইহা সদাপ্রভু বলেন। আমি তোমাদের মধ্যে মিসর দেশের মহামারীর ন্যায় মহামারী পাঠাইলাম; খড়্‌গ দ্বারা তোমাদের যুবকগণকে বধ করিলাম, ও তোমাদের অশ্বগণকে লইয়া গেলাম; আর তোমাদের শিবিরের দুর্গন্ধ তোমাদের নাসিকাতে প্রবেশ করাইলাম; তথাপি তোমরা আমার কাছে ফিরিয়া আসিলে না, ইহা সদাপ্রভু বলেন। আমি তোমাদের কতক [স্থান] উৎপাটন করিলাম, যেমন ঈশ্বর সদোম ও ঘমোরা উৎপাটন করিয়াছিলেন, তাহাতে তোমরা দাহ হইতে উদ্ধৃত অর্দ্ধদগ্ধ কাষ্ঠের ন্যায় হইলে; তথাপি তোমরা আমার কাছে ফিরিয়া আসিলে না, ইহা সদাপ্রভু বলেন। হে ইস্রায়েল, এই জন্য আমি তোমার প্রতি এইরূপ ব্যবহার করিব; আর তোমার প্রতি আমি এইরূপ ব্যবহার করিব, এই হেতু, হে ইস্রায়েল, তুমি আপন ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রস্তুত হও। কেননা দেখ, তিনি পর্ব্বতগণের নির্ম্মাতা, ও বায়ুর সৃষ্টিকর্ত্তা; তিনি মানুষের কাছে তাহার চিন্তা প্রকাশ করেন; তিনি অরুণকে অন্ধকার করেন, ও পৃথিবীর উচ্চস্থলী সকলের উপর দিয়া গমনাগমন করেন; বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু, এই তাঁহার নাম। হে ইস্রায়েল-কুল, আমি তোমাদের বিষয়ে এই যে বিলাপ করি, ইহা শুন। ইস্রায়েল-কুমারী পতিতা হইয়াছে, সে আর উঠিবে না; সে আপন ভূমিতে আছাড় খাইয়াছে; তাহাকে উঠাইবার কেহ নাই। কারণ প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যে নগরের লোকেরা সহস্র হইয়া বাহির হয়, তাহার এক শত অবশিষ্ট থাকিবে; আর যেখানে লোকেরা এক শত হইয়া বাহির হয়, তাহার দশ জন অবশিষ্ট থাকিবে, ইস্রায়েল-কুলের নিমিত্ত। কারণ সদাপ্রভু ইস্রায়েল-কুলকে এই কথা কহেন, তোমরা আমার অন্বেষণ কর, তাহাতে বাঁচিবে। কিন্তু বৈথেলের অন্বেষণ করিও না, গিল্‌গলে প্রবেশ করিও না, ও বেরশেবাতে যাইও না; কেননা গিল্‌গল অবশ্য নির্ব্বাসিত হইবে, বৈথেল অসার হইয়া পড়িবে। সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, তাহাতে বাঁচিবে; নতুবা তিনি যোষেফের কুলে অগ্নিবৎ লাগিবেন, আর সেই অগ্নি গ্রাস করিবে, বৈথেলে নির্ব্বাণ করিবার কেহই থাকিবে না। তোমরা বিচারকে নাগদানায় পরিণত করিতেছ, ও ধার্ম্মিকতাকে ভূমিসাৎ করিতেছ। [তাঁহার অন্বেষণ কর,] যিনি কৃত্তিকা ও মৃগশীর্ষ নির্ম্মাণ করিয়াছেন, যিনি মৃত্যুচ্ছায়াকে প্রভাতে পরিণত করেন, যিনি দিনকে রাত্রির ন্যায় অন্ধকারময় করেন, যিনি সমুদ্রের জলসমূহকে আহ্বান করিয়া স্থলের উপর দিয়া বহান; তাঁহার নাম সদাপ্রভু। তিনি বলবানের প্রতি হঠাৎ সর্ব্বনাশ উপস্থিত করেন, তাহাতে সর্ব্বনাশ দুর্গের উপরে আইসে। যে নগর-দ্বারে অনুযোগ করে, লোকে তাহাকে দ্বেষ করে, এবং তাহারা সিদ্ধবাদীকে ঘৃণা করে। তোমরা দীনহীন লোককে পদতলে দলিতেছ, ও তাহা হইতে গোমরূপ দর্শনী গ্রহণ করিতেছ; এই জন্য, তোমরা ক্ষোদিত প্রস্তরের গৃহ নির্ম্মাণ করিয়াছ বটে, কিন্তু তাহাতে বাস করিতে পাইবে না; তোমরা রম্য দ্রাক্ষাক্ষেত্র রোপন করিয়াছ বটে, কিন্তু তাহার দ্রাক্ষারস পান করিতে পাইবে না। কেননা আমি জানি, তোমাদের অধর্ম্ম বহুবিধ, তোমাদের পাপ কঠোর; তোমরা ধার্ম্মিককে ক্লেশ দিতেছ, উৎকোচ গ্রহণ করিতেছ, এবং নগর-দ্বারে দরিদ্র লোকদের প্রতি অন্যায় করিতেছ। এই জন্য এমন সময়ে বুদ্ধিমান লোক চুপ করিয়া থাকে, কেননা এ দুঃসময়। উত্তমের চেষ্টা কর, মন্দের নয়, যেন বাঁচিতে পার; তাহাতে সদাপ্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর, তোমাদের সঙ্গে থাকিবেন, যেমন তোমরা বলিয়া থাক। মন্দকে ঘৃণা কর ও উত্তমকে ভালবাস, এবং নগর-দ্বারে ন্যায়বিচার স্থাপন কর; হয় ত বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু যোষেফের অবশিষ্টাংশের প্রতি কৃপা করিবেন। এই জন্য প্রভু, বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু, এই কথা কহেন, সমস্ত চকে বিলাপ হইবে, এবং লোকে সমস্ত পথে হায় হায় করিবে; আর তাহারা চেঁচাইয়া কৃষককে বিলাপ করিতে বলিবে, বিলাপনিপুণদিগকে হাহাকার করিতে বলিবে। আর সমস্ত দ্রাক্ষাক্ষেত্রে বিলাপ হইবে, কেননা আমি তোমার মধ্য দিয়া গমন করিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন। তোমরা, যাহারা সদাপ্রভুর দিনের আকাঙ্ক্ষা কর; ধিক্‌ তোমাদিগকে! সদাপ্রভুর দিন তোমাদের কি করিবে? তাহা অন্ধকার, আলোক নহে। কোন ব্যক্তি যেন সিংহ হইতে পলায়ন করিল, আর ভল্লুকীর সম্মুখে পড়িল; অথবা গৃহে গিয়া ভিত্তিতে হস্ত রাখিলে সর্প তাহাকে দংশন করিল। সদাপ্রভুর দিন কি আলোক, অন্ধকার কি নয়? তাহা কি ঘোর অন্ধকার নয়, তাহাতে কি দীপ্তি থাকিবে? আমি তোমাদের উৎসব সকল ঘৃণা করি, অগ্রাহ্য করি, আমি তোমাদের পর্ব্বদিনের আঘ্রাণ লইব না। তোমরা আমার নিকটে হোম ও নৈবেদ্য উৎসর্গ করিলে আমি তাহা গ্রাহ্য করিব না, এবং তোমাদের পুষ্ট পশুর মঙ্গলার্থক বলিদানেও দৃক্‌পাত করিব না। আমার নিকট হইতে তোমার গানের গোল দূর কর, আমি তোমার নেবল-যন্ত্রের বাদ্য শুনিব না। কিন্তু বিচার জলবৎ প্রবাহিত হউক, ধার্ম্মিকতা চিরপ্রবহমাণ স্রোতের ন্যায় বহুক। হে ইস্রায়েল-কুল, তোমরা প্রান্তরে চল্লিশ বৎসর পর্য্যন্ত কি আমার উদ্দেশে বলিদান ও নৈবেদ্য উৎসর্গ করিয়াছিলে? বরং তোমরা তোমাদের রাজা সিক্কূৎকে ও কীয়ূন নামক তোমাদের প্রতিমাগণকে, তোমাদের দেবের তারা, যাহা তোমরা আপনাদের নিমিত্ত নির্ম্মাণ করিয়াছিলে, এই সকল তুলিয়া বহন করিতে। অতএব আমি তোমাদিগকে নির্ব্বাসনার্থে দম্মেশকের ওদিকে গমন করাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, যাঁহার নাম বাহিনীগণের ঈশ্বর। ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা সিয়োনে নিশ্চিন্ত রহিয়াছে, ও তাহাদিগকে, যাহারা শমরিয়া পর্ব্বতে নির্ভয়ে রহিয়াছে, জাতিগণের শ্রেষ্ঠাংশের মধ্যে যাহারা প্রসিদ্ধ, ইস্রায়েল-কুল যাহাদের শরণাগত। তোমরা কল্‌নীতে গিয়া দেখ, ও তথা হইতে বড় হমাতে গমন কর, পরে পলেষ্টীয়দের গাতে নামিয়া যাও; সেই সকল রাজ্য কি এই দুই রাজ্য হইতে উত্তম? কিম্বা তাহাদের সীমা কি তোমাদের সীমা হইতে বড়? উহারা অমঙ্গলের দিনকে আপনাদের হইতে দূরে রাখিতেছে ও দৌরাত্ম্যের আসন নিকটবর্ত্তী করিতেছে; তাহারা হস্তিদন্তের শয্যায় শয়ন করে, খট্টার উপরে আপন আপন গাত্র লম্বা করে, এবং পালের মধ্য হইতে মেষশাবকদিগকে, ও গোষ্ঠের মধ্য হইতে গোবৎসদিগকে আনিয়া ভোজন করে; তাহারা নেবল-যন্ত্রের বাদ্যে বিষম গান করে, দায়ূদের ন্যায় আপনাদের নিমিত্ত নানা বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবন করে; তাহারা বড় বড় ভাণ্ডে দ্রাক্ষারস পান করে, এবং উৎকৃষ্ট তৈল গাত্রে লেপন করে, কিন্তু তাহারা যোষেফের দুর্দ্দশায় দুঃখিত হয় না। এই জন্য এখন তাহারা প্রথম নির্ব্বাসিত লোকদের সহিত নির্ব্বাসিত হইবে, ও গাত্রলম্বকারীদের হর্ষনাদ লুপ্ত হইবে। প্রভু সদাপ্রভু আপনার নামে শপথ করিয়াছেন, ইহাই বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু কহেন; আমি যাকোবের দর্প ঘৃণা করি, ও তাহার অট্টালিকা সকল দেখিতে পারি না; এই জন্য আমি নগর ও তন্মধ্যস্থিত সকলকে পরহস্তে সমর্পণ করিব। যদি এক গৃহে দশ জন মানুষ অবশিষ্ট থাকে, তাহারা মরিবে। আর গৃহ হইতে অস্থি সকল বাহির করণার্থে কোন ব্যক্তির পিতৃব্য, এমন কি, শবদাহকারী, তাহাকে তুলিলে পর অন্তঃপুরস্থ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করিবে, এখনও কি তোমার কাছে আর কেহ আছে? সে বলিবে, কেহ নাই। তখন সে কহিবে, চুপ কর; সদাপ্রভুর নাম উচ্চারণ করিবার নহে। কারণ দেখ, সদাপ্রভু আজ্ঞা করেন, আর বৃহৎ গৃহ খণ্ডবিখণ্ড, ও ক্ষুদ্র গৃহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা যাইবে। শৈলে কি অশ্বগণ দৌড়িবে, কিম্বা কেহ বলদ লইয়া হাল বহিবে? তবে তোমরা কেন বিচারকে বিষবৃক্ষস্বরূপ, ও ধার্ম্মিকতার ফলকে নাগদানাস্বরূপ করিয়াছ? তোমরা অবস্তুতে আনন্দ করিতেছ, বলিতেছ, আমরা কি আপনাদের বলে শৃঙ্গ দুইটী লাভ করি নাই? কারণ, হে ইস্রায়েল-কুল, দেখ, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে এক জাতি উঠাইব, ইহা বাহিনীগণের ঈশ্বর সদাপ্রভু কহেন; তাহারা হমাতের প্রবেশস্থান অবধি অরাবা তলভূমির স্রোতোমার্গ পর্য্যন্ত তোমাদের প্রতি উপদ্রব করিবে। প্রভু সদাপ্রভু আমাকে এইরূপ দেখাইলেন, দেখ, পশ্চাজ্জাত তৃণের অঙ্কুরারম্ভে তিনি পঙ্গপালদিগকে গঠন করিলেন; আর দেখ, রাজার তৃণ কাটিবার পরে সেই তৃণ উৎপন্ন হইতেছিল। তাহারা ভূমির ওষধি নিঃশেষে ভোজন করিলে আমি কহিলাম, হে প্রভু সদাপ্রভু, বিনয় করি, ক্ষমা কর; যাকোব কিরূপে উঠিয়া দাঁড়াইবে? কেননা সে ক্ষুদ্র। সদাপ্রভু তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন; সদাপ্রভু বলিলেন, ইহা হইবে না। প্রভু সদাপ্রভু আমাকে এইরূপ দেখাইলেন; দেখ, প্রভু সদাপ্রভু বিবাদ জন্য অগ্নিকে আহ্বান করিলেন, আর সে মহাজলধিকে গ্রাস করিয়া ভূমি গ্রাস করিতে লাগিল। তখন আমি কহিলাম, হে প্রভু সদাপ্রভু, বিনয় করি, ক্ষান্ত হও; যাকোব কিরূপে উঠিয়া দাঁড়াইবে? কেননা সে ক্ষুদ্র। সদাপ্রভু তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন; প্রভু সদাপ্রভু বলিলেন, ইহাও হইবে না। তিনি আমাকে এইরূপ দেখাইলেন, দেখ, প্রভু ওলোন হস্তে লইয়া ওলোনের দ্বারা প্রস্তুত এক ভিত্তির উপরে দাঁড়াইয়া আছেন। আর সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, আমোষ, তুমি কি দেখিতেছ? আমি কহিলাম, ওলোন দেখিতেছি। তখন প্রভু কহিলেন, দেখ, আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের মধ্যে ওলোনসূত্র লাগাইতেছি, তাহাদিগকে আর অমনি ছাড়িয়া যাইব না। আর ইস্‌হাকের উচ্চস্থলী সকল ধ্বংস হইবে, ইস্রায়েলের পুণ্যধাম সকল উৎসন্ন হইবে, এবং আমি খড়্‌গ লইয়া যারবিয়ামের কুলের বিরুদ্ধে উঠিব। তখন বৈথেলের যাজক অমৎসিয় ইস্রায়েল-রাজ যারবিয়ামের কাছে এই কথা বলিয়া পাঠাইল, আমোষ ইস্রায়েল-কুলের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করিয়াছে, দেশ তাহার এত বাক্য সহিতে পারে না। কেননা আমোষ এই কথা কহিতেছে, যারবিয়াম খড়্‌গে নিহত হইবেন, ও ইস্রায়েল অবশ্য স্বদেশ হইতে নির্ব্বাসিত হইবে। আর অমৎসিয় আমোষকে কহিল, হে দর্শক, তুমি যাও, যিহূদা দেশে পলায়ন কর, সেই স্থানে রুটী ভোজন কর, ও সেই স্থানে ভাববাণী বল; কিন্তু বৈথেলে আর কখনও ভাববাণী বলিও না, কেননা এ রাজার পুণ্যধাম ও রাজপুরী। তখন আমোষ উত্তর করিয়া অমৎসিয়কে কহিলেন, আমি নিজে ভাববাদী ছিলাম না, ভাববাদীর সন্তানও ছিলাম না, কেবল গোপালক ও ডুমুরফল সংগ্রাহক ছিলাম। কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে পশুপালের অনুগমন হইতে লইলেন, এবং সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, যাও, আমার প্রজা ইস্রায়েলের কাছে ভাববাণী বল। অতএব এখন তুমি সদাপ্রভুর বাক্য শুন, তুমি কহিতেছ, ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে ভাববাণী বলিও না, ইস্‌হাক-কুলের বিপরীতে বাক্য বর্ষাইও না; এই জন্য সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমার স্ত্রী নগরের মধ্যে বেশ্যা হইবে, তোমার পুত্রকন্যাগণ খড়্‌গে পতিত হইবে, তোমার ভূমি মানরজ্জু দ্বারা বিভক্ত হইবে, এবং তুমি নিজে অশুচি দেশে মরিবে, আর ইস্রায়েল স্বদেশ হইতে অবশ্য নির্ব্বাসিত হইবে। প্রভু সদাপ্রভু আমাকে এইরূপ দেখাইলেন; দেখ, এক চুপড়ী গ্রীষ্মের ফল। আর তিনি কহিলেন, আমোষ, তুমি কি দেখিতেছ? আমি কহিলাম এক চুপড়ী গ্রীষ্মের ফল। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, আমার প্রজা ইস্রায়েলের কাছে পরিণাম আসিল; আমি তাহাদিগকে আর অমনি ছাড়িয়া যাইব না। সেই দিন প্রাসাদের গান সকল হাহাকার হইয়া যাইবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; শব অনেক; লোকে সকল স্থানে সেই সকল ফেলিয়া দিয়াছে। চুপ। অহো তোমরা যাহারা দরিদ্র লোককে গ্রাস করিতেছ ও দেশের হীন লোকদিগকে লোপ করিতেছ, তোমরা এই বাক্য শুন। তোমরা বলিয়া থাক, ‘অমাবস্যা কখন গত হইবে? আমরা শস্য বিক্রয় করিতে চাই। বিশ্রামদিন কখন গত হইবে? আমরা গোমের ব্যবসায় করিতে চাই। ঐফা ক্ষুদ্র ও শেকল ভারী করিব, আর ছলনার দাঁড়ি দ্বারা ঠকাইব; রৌপ্য দিয়া দীনহীনদিগকে ও এক যোড়া পাদুকা দিয়া দরিদ্রকে ক্রয় করিব, এবং গোমের ছাঁট বিক্রয় করিব।’ সদাপ্রভু যাকোবের মহিমাস্থলের নাম লইয়া এই শপথ করিয়াছেন, নিশ্চয়ই ইহাদের কোন ক্রিয়া আমি কখনও ভুলিয়া যাইব না। ইহার নিমিত্ত কি দেশ কাঁপিবে না? তন্নিবাসী সকলে কি শোকান্বিত হইবে না? সমুদয় দেশ নীল নদীর ন্যায় স্ফীত হইয়া উঠিবে, মিস্রীয় নদীর ন্যায় ঢেউ খেলিয়া আবার নামিয়া যাইবে। প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সেই দিন আমি মধ্যাহ্নকালে সূর্য্যকে অস্তগত করিব, এবং দীপ্তির দিনে দেশকে অন্ধকারময় করিব। আমি তোমাদের উৎসব সকল শোকে, তোমাদের সমুদয় গীত বিলাপে, পরিণত করিব; সকলের কটিদেশে চটপরিহিত করিব, ও সকলের মস্তকে টাক পড়াইব; একমাত্র পুত্রশোকের ন্যায় দেশকে শোক করাইব, এবং তাহার শেষকাল তীব্র দুঃখের দিন হইবে। প্রভু সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন দিন আসিতেছে, যে দিনে আমি এই দেশে দুর্ভিক্ষ প্রেরণ করিব; তাহা অন্নের দুর্ভিক্ষ কিম্বা জলের পিপাসা নয়, কিন্তু সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণের। লোকেরা টলিতে টলিতে এক সমুদ্র অবধি অন্য সমুদ্র পর্য্যন্ত এবং উত্তর হইতে পূর্ব্ব পর্য্যন্ত ভ্রমণ করিবে; তাহারা সদাপ্রভুর বাক্যের অন্বেষণে ইতস্ততঃ দৌড়াদৌড়ি করিবে, কিন্তু তাহা পাইবে না। সেই দিন সুন্দরী যুবতীগণ ও যুবকেরা পিপাসায় মূর্চ্ছাপন্ন হইবে। যাহারা শমরিয়ার পাপ লইয়া শপথ করে, বলে, ‘হে দান, তোমার জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য, বের্‌শেবার জীবন্ত পথের দিব্য,’ তাহারা পড়িয়া যাইবে, আর কখনও উঠিবে না। আমি প্রভুকে দেখিলাম, তিনি যজ্ঞবেদির কাছে দণ্ডায়মান ছিলেন; তিনি কহিলেন, তুমি মাথ্‌লাতে আঘাত কর, দ্বারের গোবরাট বিকম্পিত হউক, তুমি সকলের মস্তকে তাহা ভাঙ্গিয়া ফেল; আর তাহাদের শেষাংশকে আমি খড়্‌গে বধ করিব, তাহাদের মধ্যে এক জনও পলাইতে পারিবে না, এক জনও রক্ষা পাইতে পারিবে না। তাহারা পাতাল পর্য্যন্ত খুঁড়িয়া গেলেও তথা হইতে আমার হস্ত তাহাদিগকে ধরিয়া আনিবে, এবং আকাশ পর্য্যন্ত উঠিলেও আমি তথা হইতে তাহাদিগকে নামাইব। আর তাহারা কর্মিলের শৃঙ্গে গিয়া লুকাইলেও আমি সেখানে অনুসন্ধান করিয়া তাহাদিগকে ধরিব; আমার গোচর হইতে সমুদ্রের তলে গিয়া লুক্কায়িত হইলেও আমি সেখানে সর্পকে আজ্ঞা দিব, সে তাহাদিগকে দংশন করিবে। আর তাহারা শত্রুদের সম্মুখে বন্দি-দশার স্থানে গেলেও আমি সেখানে খড়্‌গকে আজ্ঞা দিব, আর তাহা তাহাদিগকে বধ করিবে; এইরূপে অমঙ্গলের জন্য আমি তাহাদের প্রতি চক্ষু রাখিব, মঙ্গলের জন্য নয়। প্রভু, বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তিনিই দেশকে স্পর্শ করিলে তাহা গলিয়া যায়, ও তন্নিবাসী সকলে শোকান্বিত হয়; এবং সমুদয় দেশ নীল নদীর ন্যায় স্ফীত হইয়া উঠিবে, মিস্রীয় নদীর ন্যায় নামিয়া যাইবে; তিনি আকাশে আপন উচ্চ কক্ষ সকল নির্ম্মাণ করিয়াছেন, পৃথিবীর ঊর্দ্ধে আপন চন্দ্রাতপ স্থাপন করিয়াছেন; তিনি সমুদ্রের জলসমূহকে ডাকিয়া স্থলের উপরে ঢালিয়া দেন; সদাপ্রভু তাঁহার নাম। সদাপ্রভু কহেন, হে ইস্রায়েল-সন্তানগণ, তোমরা কি আমার নিকটে কূশীয়দের সন্তানগণের তুল্য নহ? আমি কি মিসর দেশ হইতে ইস্রায়েলকে, কপ্তোর হইতে পলেষ্টীয়দিগকে, এবং কীর হইতে অরামীয়দিগকে আনি নাই? দেখ, প্রভু সদাপ্রভুর চক্ষু এই পাপিষ্ঠ রাজ্যের উপরে রহিয়াছে; আর আমি ভূতল হইতে ইহা উচ্ছিন্ন করিব; তথাপি যাকোবের কুলকে একেবারে উচ্ছিন্ন করিব না, ইহা সদাপ্রভু বলেন। কারণ দেখ, আমি আজ্ঞা দিব, আর যেমন কুলাতে শস্য চালে, তদ্রূপ আমি সমুদয় জাতির মধ্যে ইস্রায়েল-কুলকে চালিব, তথাপি এক কণাও ভূমিতে পড়িবে না। আমার সেই পাপী প্রজাগণ সকলে খড়্‌গ দ্বারা মারা পড়িবে, যাহারা বলিতেছে, অমঙ্গল আমাদের নিকট পর্য্যন্ত আসিবে না, আমাদের সম্মুখবর্ত্তী হইবে না। সেই দিন আমি দায়ূদের পতিত কুটীর উত্থাপন করিব, তাহার ফাটা বুজাইয়া দিব, ও উৎপাটিত স্থান সকল উঠাইব, এবং পূর্ব্বকালের ন্যায় তাহা নির্ম্মাণ করিব; যেন তাহারা ইদোমের অবশিষ্ট লোকদের এবং যত জাতির উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, সকলের অধিকারী হয়; সদাপ্রভু, যিনি ইহা সাধন করেন, তিনি এই কথা কহেন। সদাপ্রভু বলেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে হালবাহক শস্যচ্ছেদকের সহিত, ও দ্রাক্ষাপেষক বীজবাপকের সহিত মিলিবে; পর্ব্বতগণ হইতে মিষ্ট দ্রাক্ষারস ক্ষরিবে, এবং সকল উপপর্ব্বত গলিয়া যাইবে। আর আমি আপন প্রজা ইস্রায়েলের বন্দি-দশা ফিরাইব; তাহারা ধ্বংসিত নগর সকল নির্ম্মাণ করিয়া তথায় বাস করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার দ্রাক্ষারস পান করিবে, এবং উদ্যান প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। আর আমি তাহাদের ভূমিতে তাহাদিগকে রোপন করিব; আমি তাহাদিগকে যে ভূমি দিয়াছি, তাহা হইতে তাহারা আর উৎপাটিত হইবে না; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন। ওবদিয়ের দর্শন। প্রভু সদাপ্রভু ইদোমের বিষয়ে এই কথা কহেন। আমরা সদাপ্রভুর নিকট হইতে বার্ত্তা শুনিয়াছি, এবং জাতিগণের কাছে এক দূত প্রেরিত হইয়াছে; তোমরা উঠ, চল, আমরা তাহার বিপক্ষে যুদ্ধ করণার্থে উঠিয়া যাই। দেখ, আমি তোমাকে জাতিগণের মধ্যে ক্ষুদ্র করিয়াছি; তুমি নিতান্ত অবজ্ঞার পাত্র। হে শৈলদরী-বাসি, হে উচ্চস্থান-বাসি, তোমার অন্তঃকরণের অহঙ্কার তোমাকে বঞ্চনা করিয়াছে; তুমি মনে মনে কহিতেছ, কে আমাকে ভূমিতে নামাইবে? তুমি যদ্যপি ঈগল পক্ষীর ন্যায় উচ্চে আরোহণ কর, যদ্যপি তারাগণের মধ্যে তোমার বাসা স্থাপিত হয়, তথাপি আমি তোমাকে তথা হইতে নামাইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। তোমার নিকটে যদি চোরেরা আইসে, রাত্রিকালীন বিনাশকেরা আইসে— তুমি কেমন উচ্ছিন্ন হইল!— তবে কি কেবল প্রয়োজনমত চুরি করিবে? তোমার নিকটে যদি দ্রাক্ষা-সংগ্রহকারিগণ আইসে তাহারা কি কিছু ফল অবশিষ্ট রাখিবে না? এষৌর সম্পত্তি কেমন অন্বেষণ করা গিয়াছে! তাহার গুপ্ত ধনের কেমন অনুসন্ধান হইয়াছে! যে সকল লোক তোমার সহিত নিয়ম করিয়াছে, তাহারা তোমাকে সীমা পর্য্যন্ত বিদায় দিয়াছে; তোমার মিত্রগণ তোমাকে প্রবঞ্চনা করিয়া পরাভব করিয়াছে; যাহারা তোমার অন্ন ভোজন করে, তাহারা তোমার নীচে ফাঁদ পাতে; ইদোমে কিছু বিবেচনা নাই। সদাপ্রভু কহেন, সে দিন আমি কি ইদোমের জ্ঞানবান্‌দিগকে বিনষ্ট করিব না? এষৌর পর্ব্বত হইতে কি বুদ্ধি দূর করিব না? হে তৈমন, তোমার বীরগণ বিহ্বল হইবে, যেন এষৌর পর্ব্বত হইতে নরহত্যায় মনুষ্যমাত্র উচ্ছিন্ন হয়। তোমার ভ্রাতা যাকোবের প্রতি কৃত দৌরাত্ম্য প্রযুক্ত তুমি লজ্জায় আচ্ছন্ন হইবে ও চিরকালের জন্য উচ্ছিন্ন হইবে। যে দিন তুমি অন্য পক্ষে দাঁড়াইয়াছিলে, যে দিন বিদেশিগণ তাহার সম্পত্তি হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছিল, ও বিজাতিরা তাহার পুরদ্বারে পুরদ্বারে প্রবেশ করিয়াছিল, এবং যিরূশালেমের উপরে গুলিবাঁট করিয়াছিল, সে দিন তুমিও তাহাদের এক জনের সদৃশ ছিলে। কিন্তু তোমার ভ্রাতার দিনে, তাহার বিষম দুর্দ্দশার দিনে, তাহার দিকে দৃষ্টি করিও না; যিহূদার সন্তানদের বিনাশের দিনে তাহাদের বিষয়ে আনন্দ করিও না, এবং সঙ্কটের দিনে দর্পকথা বলিও না। আমার প্রজাগণের বিপত্তির দিনে তাহাদের পুরদ্বারে প্রবেশ করিও না; তুমি তাহাদের বিপত্তির দিনে তাহাদের অমঙ্গলের দিকে দৃষ্টি করিও না, এবং তাহাদের বিপত্তির দিনে তাহাদের সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করিও না। আর তাহাদের পলাতকদিগকে বধ করিবার জন্য পথের সংযোগস্থানে দাঁড়াইও না; এবং সঙ্কটের দিনে তাহাদের রক্ষাপ্রাপ্ত লোকদিগকে [শত্রুহস্তে] সমর্পণ করিও না। কেননা সর্ব্বজাতির উপরে সদাপ্রভুর দিন সন্নিকট; তুমি যেরূপ করিয়াছ, তোমার প্রতিও সেইরূপ করা যাইবে, তোমার অপকারের ফল তোমারই মস্তকে বর্ত্তিবে। কেননা আমার পবিত্র পর্ব্বতে তোমরা যেরূপ পান করিয়াছ, তদ্রূপ সমুদয় জাতি নিত্য পান করিবে, পান করিতে করিতে গিলিবে, পরে অজাতের ন্যায় হইবে। কিন্তু সিয়োন পর্ব্বতে পলাতক দল থাকিবে, আর তাহা পবিত্র হইবে, এবং যাকোবের কুল আপনাদের অধিকারের অধিকারী হইবে। আর যাকোবের কুল অগ্নি ও যোষেফের কুল শিখা, আর এষৌর কুল নাড়াস্বরূপ হইবে; তাহাদের মধ্যে উহারা দাহ করিয়া তাহাদিগকে গ্রাস করিবে; তাহাতে এষৌর কুলে রক্ষাপ্রাপ্ত কেহ থাকিবে না, কারণ সদাপ্রভু ইহা বলিয়াছেন। তখন দক্ষিণের লোকেরা এষৌর পর্ব্বত, ও নিম্নভূমির লোকেরা পলেষ্টীয়দের দেশ অধিকার করিবে; আর লোকেরা ইফ্রয়িমের ভূমি ও শমরিয়ার ভূমি অধিকার করিবে; এবং বিন্যামীন গিলিয়দকে অধিকার করিবে। আর ইস্রায়েল সন্তানদের নির্ব্বাসিত সৈন্য সারিফৎ পর্য্যন্ত কনানীয়দের দেশ অধিকার করিবে, এবং যিরূশালেমের যে নির্ব্বাসিত লোকেরা সফারদে আছে তাহারা দক্ষিণের নগর সকল অধিকার করিবে। আর এষৌর পর্ব্বতের বিচার করণার্থে নিস্তারকর্ত্তৃগণ সিয়োন পর্ব্বতে উঠিবে; এবং রাজ্য সদাপ্রভুর হইবে। সদাপ্রভুর এই বাক্য অমিত্তয়ের পুত্র যোনার কাছে উপস্থিত হইল, তুমি উঠ, নীনবীতে, সেই মহানগরে যাও, আর নগরের বিরুদ্ধে ঘোষণা কর, কেননা তাহাদের দুষ্টতা আমার সম্মুখে উঠিয়াছে। কিন্তু যোনা সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে তর্শীশে পলাইয়া যাইবার নিমিত্ত উঠিলেন; তিনি যাফোতে নামিয়া গিয়া, তর্শীশে যাইবে এমন এক জাহাজ পাইলেন; তখন জাহাজের ভাড়া দিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে নাবিকদের সহিত তর্শীশে যাইবার জন্য সেই জাহাজে প্রবেশ করিলেন। কিন্তু সদাপ্রভু সমুদ্রে প্রচণ্ড বায়ু পাঠাইয়া দিলেন, সমুদ্রে ভারী ঝড় উঠিল, এমন কি, জাহাজ ভাঙ্গিয়া যাইবার উপক্রম হইল। তখন নাবিকেরা ভীত হইল, প্রত্যেক জন আপন আপন দেবতার কাছে কাঁদিতে লাগিল, আর ভার লাঘবের নিমিত্ত জাহাজের মাল সমুদ্রে ফেলিয়া দিল। কিন্তু যোনা জাহাজের খোলে নামিয়াছিলেন, শয়ন করিয়া ঘোর নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন। তখন জাহাজের অধ্যক্ষ তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, ওহে, তুমি যে ঘুমাইতেছ তোমার কি হইল? উঠ, তোমার ঈশ্বরকে ডাক; হয় ত ঈশ্বর আমাদের বিষয় চিন্তা করিবেন, ও আমরা বিনষ্ট হইব না। পরে নাবিকেরা পরস্পর কহিল, আইস, আমরা গুলিবাঁট করি, তাহা হইলে জানিতে পারিব, কাহার দোষে আমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটিতেছে। পরে তাহারা গুলিবাঁট করিল, আর যোনার নামে গুলি উঠিল। তখন তাহারা তাঁহাকে কহিল, বল দেখি, কাহার দোষে আমাদের প্রতি এই অমঙ্গল ঘটিতেছে? তোমার ব্যবসায় কি? কোথা হইতে আসিয়াছ? তুমি কোন্‌ দেশের লোক? কোন্‌ জাতীয়? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আমি ইব্রীয়; আমি সদাপ্রভুকে ভয় করি, তিনি স্বর্গের ঈশ্বর, তিনি সমুদ্র ও স্থল নির্ম্মাণ করিয়াছেন। তখন সেই লোকেরা অতিশয় ভীত হইয়া তাঁহাকে কহিল, তুমি এ কি কর্ম্ম করিয়াছ? কেননা তিনি যে সদাপ্রভুর সম্মুখ হইতে পলাইতেছেন, ইহা তাহারা জ্ঞাত ছিল, কারণ তিনি তাহাদিগকে বলিয়াছিলেন। পরে তাহারা তাঁহাকে বলিল, আমরা তোমাকে কি করিলে সমুদ্র আমাদের প্রতি ক্ষান্ত হইতে পারে? কেননা সমুদ্র উত্তরোত্তর প্রচণ্ড হইয়া উঠিতেছিল। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আমাকে ধরিয়া সমুদ্রে ফেলিয়া দেও, তাহাতে সমুদ্র তোমাদের পক্ষে ক্ষান্ত হইবে; কেননা আমি জানি, আমারই দোষে তোমাদের উপরে এই ভারী ঝড় উপস্থিত হইয়াছে। তথাপি সেই লোকেরা জাহাজ ফিরাইয়া ডাঙ্গায় লইয়া যাইবার জন্য ঢেউ কাটিতে যত্ন করিল; কিন্তু পারিল না, কারণ সমুদ্র তাহাদের বিপরীতে উত্তরোত্তর প্রচণ্ড হইয়া উঠিতেছিল। এই জন্য তাহারা সদাপ্রভুকে ডাকিতে লাগিল, আর বলিল, বিনতি করি, হে সদাপ্রভু, বিনতি করি, এই ব্যক্তির প্রাণের নিমিত্ত আমাদের বিনাশ না হউক, এবং আমাদের উপরে নির্দ্দোষের রক্ত অর্পণ করিও না; কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমি আপন ইচ্ছামত কর্ম্ম করিয়াছ। পরে তাহারা যোনাকে ধরিয়া সমুদ্রে ফেলিয়া দিল, তাহাতে সমুদ্র থামিল, আর প্রচণ্ড হইল না। তখন সেই লোকেরা সদাপ্রভু হইতে অতিশয় ভীত হইল; আর তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে বলিদান করিল, এবং নানা মানত করিল। আর সদাপ্রভু যোনাকে গ্রাস করণার্থে একটা বৃহৎ মৎস্য নিরূপণ করিয়াছিলেন; সেই মৎস্যের উদরে যোনা তিন দিন ও তিন রাত্রি যাপন করিলেন। তখন যোনা ঐ মৎস্যের উদরে থাকিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে প্রার্থনা করিলেন। তিনি কহিলেন, আমি সঙ্কট প্রযুক্ত সদাপ্রভুকে ডাকিলাম, আর তিনি আমাকে উত্তর দিলেন; আমি পাতালের উদর হইতে আর্ত্তনাদ করিলাম, তুমি আমার রব শ্রবণ করিলে। তুমি আমাকে অগাধ জলে, সমুদ্র-গর্ভে, নিক্ষেপ করিলে, আর স্রোত আমাকে বেষ্টন করিল, তোমার সকল ঢেউ, তোমার সকল তরঙ্গ, আমার উপর দিয়া গেল। আমি কহিলাম, আমি তোমার নয়নগোচর হইতে দূরীভূত, তথাপি পুনরায় তোমার পবিত্র মন্দিরের দিকে দৃষ্টিপাত করিব। জলরাশি আমাকে ঘেরিল, প্রাণ পর্য্যন্ত উঠিল, জলধি আমাকে বেষ্টন করিল, মৃণাল আমার মস্তকে জড়াইল। আমি পর্ব্বতগণের মূল পর্য্যন্ত নামিয়া গেলাম; আমার পশ্চাতে পৃথিবীর অর্গল সকল চিরতরে বদ্ধ হইল; তথাপি, হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রাণকে কূপ হইতে উঠাইলে। আমার মধ্যে প্রাণ অবসন্ন হইলে আমি সদাপ্রভুকে স্মরণ করিলাম, আর আমার প্রার্থনা তোমার নিকটে, তোমার পবিত্র মন্দিরে, উপস্থিত হইল। যাহারা অলীক নিঃসার বস্তু মানে, তাহারা নিজ দয়ানিধিকে পরিত্যাগ করে; কিন্তু আমি তোমার উদ্দেশে স্তবধ্বনি সহ বলিদান করিব; আমি যে মানত করিয়াছি, তাহা পূর্ণ করিব; পরিত্রাণ সদাপ্রভুরই কাছে। পরে সদাপ্রভু সেই মৎস্যকে বলিলেন, আর সে যোনাকে শুষ্ক ভূমির উপরে উদগীরণ করিয়া দিল। পরে দ্বিতীয় বার সদাপ্রভুর বাক্য যোনার কাছে উপস্থিত হইল; তিনি কহিলেন, তুমি উঠ, নীনবীতে, সেই মহানগরে যাও, আর আমি তোমাকে যাহা ঘোষণা করিতে বলি, তাহা সেই নগরের উদ্দেশে ঘোষণা কর। তখন যোনা উঠিয়া সদাপ্রভুর বাক্যানুসারে নীনবীতে গেলেন। নীনবী ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মহানগর, তথায় যাতায়াত করিতে তিন দিন লাগিত। পরে যোনা নগরে প্রবেশ করিতে আরম্ভ করিয়া এক দিনের পথ গেলেন, এবং ঘোষণা করিলেন, বলিলেন, ‘আর চল্লিশ দিন গত হইলে নীনবী উৎপাটিত হইবে।’ তখন নীনবীয় লোকেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করিল; তাহারা উপবাস ঘোষণা করিল, এবং মহান্‌ হইতে ক্ষুদ্র পর্য্যন্ত সকলে চট পরিধান করিল। আর সেই বার্ত্তা নীনবী-রাজের নিকটে পৌঁছিলে তিনি আপন সিংহাসন হইতে উঠিলেন, গাত্রের শাল রাখিয়া দিলেন, এবং চট পরিধান করিয়া ভস্মে বসিলেন। আর তিনি নীনবীতে রাজার ও তাঁহার অধ্যক্ষগণের আদেশে এই কথা উচ্চৈঃস্বরে প্রচার করাইলেন, মনুষ্য ও গোমেষাদি পশু কেহ কিছু আস্বাদন না করুক, ভোজন কি জল গ্রহণ না করুক; কিন্তু মনুষ্য ও পশু চট পরিধান করিয়া যথাশক্তি ঈশ্বরকে ডাকুক, আর প্রত্যেক জন আপন আপন কুপথ ও আপন আপন হস্তস্থিত দৌরাত্ম্য হইতে ফিরুক। হয় ত, ঈশ্বর ক্ষান্ত হইবেন, অনুশোচনা করিবেন, ও আপন প্রজ্বলিত ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হইবেন, তাহাতে আমরা বিনষ্ট হইব না। তখন ঈশ্বর তাহাদের ক্রিয়া, তাহারা যে আপন আপন কুপথ হইতে বিমুখ হইল, তাহা দেখিলেন, আর তাহাদের যে অমঙ্গল করিবেন বলিয়াছিলেন, তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন; তাহা করিলেন না। কিন্তু ইহাতে যোনা মহা বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হইলেন। তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, বিনতি করি, আমি স্বদেশে থাকিতে কি ইহাই বলি নাই? সেই জন্য ত্বরা করিয়া তর্শীশে পলাইতে গিয়াছিলাম; কেননা আমি জানিতাম, তুমি কৃপাময় ও স্নেহশীল ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্‌, এবং অমঙ্গলের বিষয়ে অনুশোচনকারী। অতএব এখন, হে সদাপ্রভু, বিনতি করি, আমা হইতে আমার প্রাণ হরণ কর, কেননা আমার জীবন অপেক্ষা মরণ ভাল। সদাপ্রভু কহিলেন, তুমি ক্রোধ করিয়া কি ভাল করিতেছ? তখন যোনা নগরের বাহিরে গিয়া নগরের পূর্ব্বদিকে বসিয়া রহিলেন; সেখানে তিনি আপনার নিমিত্ত এক কুটীর নির্ম্মাণ করিয়া তাহার নীচে ছায়াতে বসিলেন, নগরের কি দশা হয় দেখিবার অপেক্ষা করিতে লাগিলেন। তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর এক এরণ্ড গাছ নিরূপণ করিলেন; আর সেই গাছটী বাড়াইয়া যোনার উপরে আনিলেন, যেন তাঁহার মস্তকের উপরে ছায়া হয়, যেন তাঁহার দুর্ম্মতি হইতে তাঁহাকে উদ্ধার করা হয়। আর যোনা সেই এরণ্ড গাছটীর জন্য বড় আহ্লাদিত হইলেন। কিন্তু পর দিন অরুণোদয়কালে ঈশ্বর এক কীট নিরূপণ করিলেন, সে ঐ এরণ্ড গাছটীকে দংশন করিলে তাহা শুষ্ক হইয়া পড়িল। পরে যখন সূর্য্য উঠিল, ঈশ্বর উষ্ণ পূর্ব্বীয় বায়ু নিরূপণ করিলেন, তাহাতে যোনার মস্তকে এমন রৌদ্র লাগিল যে, তিনি পরিক্লান্ত হইয়া আপন মৃত্যু প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, আমার জীবন অপেক্ষা মরণ ভাল। তখন ঈশ্বর যোনাকে কহিলেন, তুমি এরণ্ড গাছটীর নিমিত্ত ক্রোধ করিয়া কি ভাল করিতেছ? তিনি কহিলেন, মৃত্যু পর্য্যন্ত আমার ক্রোধ করাই ভাল। সদাপ্রভু কহিলেন, তুমি এই এরণ্ড গাছের নিমিত্ত কোন শ্রম কর নাই, এবং এটা বাড়াও নাই; ইহা এক রাত্রিতে উৎপন্ন ও এক রাত্রিতে উচ্ছিন্ন হইল, তথাপি তুমি ইহার প্রতি দয়ার্দ্র হইয়াছ। তবে আমি কি নীনবীর প্রতি, ঐ মহানগরের প্রতি, দয়ার্দ্র হইব না? তথায় এমন এক লক্ষ বিংশতি সহস্রের অধিক মনুষ্য আছে, যাহারা দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ জানে না; আর অনেক পশুও আছে। যিহূদা-রাজ যোথম, আহস ও হিষ্কিয়ের সময়ে সদাপ্রভুর এই বাক্য মোরেষ্টীয় মীখার কাছে উপস্থিত হইল; তিনি শমরিয়া ও যিরূশালেমের বিষয় এই দর্শন পাইলেন। হে জাতিগণ, তোমরা সকলেই শুন; হে পৃথিবী ও তাহার সমস্ত বস্তু, অবধান কর; আর প্রভু সদাপ্রভু তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হউন, প্রভু আপন পবিত্র মন্দির হইতে সাক্ষী হউন। কেননা দেখ, সদাপ্রভু আপন স্থান হইতে বাহির হইয়া আসিতেছেন, তিনি নামিয়া পৃথিবীর উচ্চস্থলী সকলের উপর দিয়া গমন করিবেন। তাঁহার নীচে পর্ব্বতগণ গলিয়া যাইবে, তলভূমি সকল বিদীর্ণ হইবে, যেমন অগ্নির উত্তাপে মোম গলিয়া যায়, যেমন গড়ান স্থানে জল ঝরিয়া পড়ে। যাকোবের অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও ইস্রায়েলকুলের বিবিধ পাপ প্রযুক্ত, এই সকল হইতেছে, যাকোবের অধর্ম্ম কি? শমরিয়া কি নয়? যিহূদার উচ্চস্থলী-সমূহই বা কি? যিরূশালেম কি নয়? এই জন্য আমি শমরিয়াকে ক্ষেত্রস্থ কাঁথড়ার ঢিবী করিব, দ্রাক্ষালতার উদ্যান করিব; আমি তাহার প্রস্তর সকল উপত্যকায় ফেলিয়া দিব, তাহার ভিত্তিমূল অনাবৃত করিব। আর তাহার সমস্ত ক্ষোদিত প্রতিমা খণ্ড বিখণ্ড করা যাইবে, ও তাহার বেতন সকল আগুনে পোড়ান যাইবে, এবং আমি তাহার সকল পুত্তলিকা ধ্বংস করিব, কেননা সে বেশ্যার বেতন দ্বারা তাহা সঞ্চয় করিয়াছে, এবং তাহা পুনরায় বেশ্যার বেতন হইয়া যাইবে। এই জন্য আমি বিলাপ ও হাহাকার করিব, আমি হৃতবস্ত্র ও উলঙ্গ হইয়া বেড়াইব, আমি শৃগালের ন্যায় বিলাপ করিব, উষ্ট্রপক্ষিণীর ন্যায় শোকধ্বনি করিব। কেননা তাহার ক্ষত অচিকিৎস্য; হাঁ, তাহা যিহূদা পর্য্যন্ত উপস্থিত; আমার জাতির পুরদ্বার পর্য্যন্ত, যিরূশালেম পর্য্যন্ত উপস্থিত। তোমার গাতে এ কথা জ্ঞাত করিও না, একেবারে রোদন করিও না, বৈৎ-লি-অফ্রায় আমি ধূলিতে গড়াগড়ি দিয়াছি। হে শাফীর-নিবাসিনি, তুমি নগ্না ও লজ্জিতা হইয়া চলিয়া যাও; সানন-নিবাসিনী বাহিরে যাইতে পারে না; বৈৎ-এৎসলের বিলাপ তোমাদের হইতে তাহার অবলম্বন হরণ করিবে। মারোৎ-নিবাসিনী মঙ্গলের আকাঙ্ক্ষায় অতিশয় পীড়িতা, কেননা যিরূশালেমের দ্বার পর্য্যন্ত সদাপ্রভু হইতে অমঙ্গল উপস্থিত। হে লাখীশ-নিবাসিনি, তুমি শকটে দ্রুতগামী পশু যোগ কর; সে সিয়োন-কন্যার অগ্রিম পাপস্বরূপ ছিল, কেননা তোমার মধ্যে ইস্রায়েলের অধর্ম্ম সকল পাওয়া গেল। এজন্য তুমি মোরেষৎ-গাৎকে বিদায়দান দিবে; ইস্রায়েলের রাজগণের পক্ষে অক্‌ষীবের গৃহ সকল প্রতারণাস্বরূপ হইবে। হে মারেশা-নিবাসিনি, আমি পুনর্ব্বার তোমার বিরুদ্ধে এক অধিকারীকে আনিব; ইস্রায়েলের গৌরব অদুল্লম পর্য্যন্ত আসিবে। তুমি আপন বাৎসল্যের পাত্র শিশুদের নিমিত্ত মস্তক মুণ্ডন কর, চুল কাটিয়া ফেল, শকুনীর ন্যায় আপন টাক বৃদ্ধি কর, কেননা তাহারা তোমার নিকট হইতে নির্ব্বাসনে গিয়াছে। ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা আপন আপন শয্যায় অধর্ম্ম কল্পনা করে ও কুকর্ম্ম স্থির করে! তাহারা রাত্রি প্রভাত হইবামাত্র তাহা সাধন করে, কেননা তাহা তাহাদের হস্তের ক্ষমতাধীন। তাহারা ক্ষেত্রের প্রতি লোভ করিয়া সবলে তাহা গ্রহণ করে, এবং ঘরের প্রতিও লোভ করিয়া তাহা হরণ করে; এইরূপে তাহারা পুরুষের ও তাহার ঘরের প্রতি, মনুষ্যের ও তাহার পৈতৃক অধিকারের প্রতি দৌরাত্ম্য করে। এই জন্য সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এমন অমঙ্গলের কল্পনা করি, যাহা হইতে তোমরা আপন আপন গ্রীবা বাহির করিতে পারিবে না, এবং গর্ব্ব করিয়া চলিতে পারিবে না; কেননা সেই সময় দুঃসময়। সেই দিন লোকেরা তোমাদের বিষয়ে এক প্রবাদ গ্রহণ করিবে, এবং আর্ত্তনাদ সহকারে বিলাপ করিবে, বলিবে, আমাদের নিতান্তই সর্ব্বনাশ হইল, তিনি আমার জাতির অধিকার হস্তান্তর করেন; তিনি একবারে আমা হইতে তাহা দূর করেন! আমাদের ক্ষেত্র ভাগ করিয়া ধর্ম্মত্যাগী লোককে দেন। এই জন্য গুলিবাঁটক্রমে মানরজ্জু ক্ষেপণ করিতে সদাপ্রভুর সমাজে তোমার কেহ থাকিবে না। ‘তোমরা বাক্য বর্ষাইও না,’ এইরূপে তাহারা বাক্য বর্ষায়; ‘ইহাদের কাছে তাহারা বাক্য বর্ষাইবে না; অপমান ঘুচিবে না।’ হে যাকোব-কুল ইহা কি বলা যাইবে, ‘সদাপ্রভুর আত্মা কি সঙ্কুচিত হইয়াছেন?’ এ সকল কি তাঁহার কর্ম্ম? সরলাচারী লোকের পক্ষে আমার বাক্য সকল কি মঙ্গলজনক নহে? কিন্তু সম্প্রতি আমার প্রজাগণ শত্রুবৎ হইয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়াছে; যুদ্ধবিমুখ নিশ্চিন্ত পথিকদের গাত্রীয় বস্ত্র হইতে তোমরা শাল কাড়িয়া লইতেছ। তোমরা আমার প্রজাদের নারীগণকে তাহাদের প্রীতিজনক গৃহ হইতে তাড়াইয়া দিতেছ, তাহাদের শিশুগণ হইতে আমার দত্ত শোভা চিরকালের জন্য হরণ করিতেছ। উঠ, প্রস্থান কর, এটা ত বিশ্রামের স্থান নয়, কেননা অশুচিতা বিনাশ করিতেছে, আর সেই বিনাশ ভয়ানক। বায়ুর ও মিথ্যাকথার অনুগামী কোন লোক যদি মিথ্যা করিয়া বলে, আমি দ্রাক্ষারস ও সুরার বিষয়ে তোমার পক্ষে বাক্য বর্ষাইব, তবে সে এই লোকদের বাক্যবর্ষক হইবে। হে যাকোব, আমি নিশ্চয়ই তোমার সমস্ত লোককে সমবেত করিব, আমি নিশ্চয়ই ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে সংগ্রহ করিব; তাহাদিগকে বস্রার মেষগণের ন্যায় একত্র করিব; যেমন বাথানের মধ্যস্থিত পাল, তেমনি তাহারা মনুষ্য-বাহুল্যে কোলাহল করিবে। ভঞ্জক উঠিয়া তাহাদের অগ্রগামী হইলেন; তাহারা বেড়া ভাঙ্গিয়াছে, দ্বারে পৌঁছিয়াছে, তাহা দিয়া বাহিরে গিয়াছে, এবং তাহাদের রাজা তাহাদের সম্মুখে চলিয়া গেলেন; আর সদাপ্রভু তাহাদের অগ্রগামী হইলেন। আর আমি বলিলাম, শুন দেখি, হে যাকোবের প্রধানবর্গ ও ইস্রায়েল-কুলের অধ্যক্ষগণ, ন্যায়বিচার জ্ঞাত হওয়া কি তোমাদের উচিত নয়? তোমরা সৎকর্ম্ম ঘৃণা করিতেছ, ও দুষ্কর্ম্ম ভালবাসিতেছ, লোকদের গাত্র হইতে চর্ম্ম ও অস্থি হইতে মাংস ছাড়াইয়া লইতেছ। এই লোকেরা আমার প্রজাগণের মাংস খাইতেছে; তাহাদের চর্ম্ম খুলিয়া অস্থি ভাঙ্গিয়া ফেলিতেছে; যেমন হাঁড়ীর জন্য খাদ্যদ্রব্য, কিম্বা কটাহের মধ্যে মাংস, তেমনি তাহা কুচি কুচি করিয়া কাটিতেছে। সেই সময়ে তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিবে, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে উত্তর দিবেন না; বরং তাহারা যেমন আপনাদের ব্যবহারে দুষ্ক্রিয়া করিয়াছে, তেমনি তিনি সেই সময়ে তাহাদের হইতে আপন মুখ লুকাইবেন। যে ভাববাদিগণ আমার প্রজাদিগকে ভ্রান্ত করে, যাহারা দন্ত দিয়া দংশন করে, আর বলিয়া উঠে, ‘শান্তি,’ কিন্তু তাহাদের মুখে যে ব্যক্তি কিছু না দেয়, তাহার সহিত যুদ্ধ নিরূপণ করে, তাহাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এই কারণ তোমাদের কাছে রাত্রি উপস্থিত হইবে, তোমরা দর্শন পাইবে না; তোমাদের কাছে অন্ধকার উপস্থিত হইবে, তোমরা মন্ত্র পাঠ করিবে না; এই ভাববাদীদের উপরে সূর্য্য অস্তগত হইবে, ও ইহাদের উপরে দিন কৃষ্ণবর্ণ হইবে। তাহাতে এই দর্শকেরা লজ্জিত ও এই মন্ত্রপাঠকেরা হতাশ হইবে, সকলে আপন আপন ওষ্ঠাধর ঢাকিবে, কেননা ঈশ্বর উত্তর দিবেন না। কিন্তু যাকোবকে তাহার অধর্ম্ম ও ইস্রায়েলকে তাহার পাপ জ্ঞাত করিবার জন্য আমি সত্যই সদাপ্রভুর আত্মার দত্ত শক্তিতে, এবং ন্যায়বিচারে ও বিক্রমে পরিপূর্ণ। হে যাকোব-কুলের প্রধানবর্গ ও ইস্রায়েল-কুলের অধ্যক্ষগণ, তোমরা ইহা শুন দেখি; তোমরা ন্যায়বিচার ঘৃণা করিতেছ, ও যাহা কিছু সরল তাহা বক্র করিতেছ। তোমরা প্রত্যেকে সিয়োনকে রক্তে ও যিরূশালেমকে দৌরাত্ম্যে গাঁথিতেছ। তথাকার প্রধানবর্গ উৎকোচ লইয়া বিচার করে, তথাকার যাজকগণ বেতন লইয়া শিক্ষা দেয়, ও তথাকার ভাববাদিগণ রৌপ্য লইয়া মন্ত্র পড়ে; তথাপি সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর করিয়া বলে, আমাদের মধ্যে কি সদাপ্রভু নাই? কোন অমঙ্গল আমাদের কাছে আসিবে না। এই জন্য তোমাদের নিমিত্ত সিয়োন ক্ষেত্রের ন্যায় কর্ষিত হইবে, ও যিরূশালেম কাঁথড়ার ঢিবী হইয়া যাইবে, এবং গৃহের পর্ব্বত বনস্থ উচ্চস্থলীর সমান হইবে। কিন্তু শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; তাহাতে জাতিগণ তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে। আর অনেক জাতি যাইতে যাইতে বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, যাকোবের ঈশ্বরের গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব; কারণ সিয়োন হইতে ব্যবস্থা ও যিরূশালেম হইতে সদাপ্রভুর বাক্য নির্গত হইবে। আর তিনি অনেক জাতির মধ্যে বিচার করিবেন, এবং দূরস্থ বলবান জাতিদের সম্বন্ধে নিষ্পত্তি করিবেন; আর তাহারা আপন আপন খড়্‌গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্ত্যা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্‌গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না। কিন্তু প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না; কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে। কারণ জাতিমাত্র প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে চলে; আর আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে চলিব। সদাপ্রভু কহেন, সেই দিনে আমি খঞ্জাকে সমবেত করিব, এবং যে তাড়িতা হইয়াছে ও যাহাকে আমি দুঃখ দিয়াছি, তাহাকে সংগ্রহ করিব। আর খঞ্জাকে অবশিষ্টাংশ করিয়া রাখিব, ও দূরীকৃতাকে বলবতী জাতি করিব; এবং সদাপ্রভু এখন অবধি চিরকাল সিয়োন পর্ব্বতে তাহাদের উপরে রাজত্ব করিবেন। আর হে পালের দুর্গ, হে সিয়োন-কন্যার গিরি, তোমারই কাছে [রাজ্য] আসিবেই আসিবে, হাঁ, পূর্ব্বকালীন কর্ত্তৃত্ব, যিরূশালেম-কন্যার রাজ্য আসিবে। তুমি এখন কেন ঘোর চীৎকার করিতেছ? তোমার মধ্যে কি রাজা নাই? তোমার মন্ত্রী কি বিনষ্ট হইল? তাই বলিয়া কি স্ত্রীর প্রসব-বেদনার ন্যায় বেদনা তোমাকে ধরিয়াছে? হে সিয়োন-কন্যা তুমি প্রসবকারিণীর ন্যায় ব্যথা খাও, কোঁতাও; কেননা এখন তোমাকে নগর ছাড়িয়া মাঠে বাস করিতে ও বাবিল পর্য্যন্ত যাইতে হইবে; সেখানে তুমি উদ্ধার পাইবে; সেখানে সদাপ্রভু তোমাকে তোমার শত্রুগণের হস্ত হইতে মুক্ত করিবেন। এখন অনেক জাতি তোমার বিরুদ্ধে সমবেত হইল; তাহারা বলে, সিয়োন অশুচি হউক, আমাদের চক্ষু তাহার দশা দেখুক। কিন্তু তাহারা সদাপ্রভুর সঙ্কল্প সকল জানে না ও তাঁহার মন্ত্রণা বুঝে না; বস্তুতঃ তিনি তাহাদিগকে আটির ন্যায় খামারে সংগ্রহ করিয়াছেন। হে সিয়োন-কন্যা উঠ, শস্য মর্দ্দন কর; কেননা আমি তোমার শৃঙ্গ লৌহময় ও খুর পিত্তলময় করিয়া দিব, তুমি অনেক জাতিকে চূর্ণ করিবে; এবং তুমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাহাদের লুটদ্রব্য, ও সমস্ত পৃথিবীর প্রভুর উদ্দেশে তাহাদের সম্পত্তি নিবেদন করিবে। হে সৈন্যদল-কন্যা, এখন তুমি সৈন্যদলস্বরূপ হইবে; সে আমাদের বিরুদ্ধে অবরোধ করিল, লোকে দণ্ড দিয়া ইস্রায়েলের বিচারকর্ত্তার হনূতে আঘাত করিবে। আর তুমি, হে বৈৎলেহম-ইফ্রাথা, তুমি যিহূদার সহস্রগণের মধ্যে ক্ষুদ্রা বলিয়া অগণিতা, তোমা হইতে ইস্রায়েলের মধ্যে কর্ত্তা হইবার জন্য আমার উদ্দেশে এক ব্যক্তি উৎপন্ন হইবেন; প্রাক্কাল হইতে, অনাদিকাল হইতে তাঁহার উৎপত্তি। এই জন্য তিনি তাহাদিগকে ত্যাগ করিবেন, যে পর্য্যন্ত প্রসবকারিণী প্রসব না করেন, সেই সময় পর্য্যন্ত। পরে তাঁহার অবশিষ্ট ভ্রাতৃগণ ইস্রায়েল-সন্তানদের সহিত ফিরিয়া আসিবে। আর তিনি দাঁড়াইবেন, এবং সদাপ্রভুর শক্তিতে, আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের মহিমাতে, [আপন পাল] চরাইবেন; তাই তাহারা বাস করিবে, কেননা তৎকালে তিনি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত মহান্‌ হইবেন। আর ইনিই [আমাদের] শান্তি হইবেন। অশূর যখন আমাদের দেশে আসিবে, ও আমাদের অট্টালিকা সকল দলিত করিবে, তখন আমরা তাহার বিপক্ষে সাত জন পালরক্ষক ও আট জন নরপতিকে উত্থাপন করিব। তাহারা খড়্‌গ দ্বারা অশূরের দেশ, এবং নিম্রোদের দেশের দ্বারে দ্বারে সেই দেশ শাসন করিবে; অশূর আমাদের দেশে আসিয়া আমাদের সীমা দলিত করিলে তিনি তাহা হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিবেন। আর অনেক জাতির মধ্যে যাকোবের অবশিষ্টাংশ সদাপ্রভুর নিকট হইতে আগত শিশিরের ন্যায়, তৃণের উপরে পতিত বৃষ্টির ন্যায় হইবে, যাহা মনুষ্যের জন্য বিলম্ব করে না ও মনুষ্য-সন্তানদের অপেক্ষা করে না। আর জাতিগণের মধ্যে, অনেক জাতির মধ্যে, যাকোবের অবশিষ্টাংশ, বনপশুদের মধ্যে যেমন সিংহ, মেষপালসমূহের মধ্যে যেমন যুবসিংহ, তেমনি হইবে; এ যদি পালের মধ্য দিয়া যায়, তবে দলন করে ও বিদীর্ণ করে, এবং উদ্ধারকারী কেহ নাই। তোমার বিপক্ষগণের উপরে তোমার হস্ত উন্নত হউক, আর তোমার সমস্ত শত্রু উচ্ছিন্ন হউক। আর সদাপ্রভু কহেন, সেই দিন আমি তোমার মধ্য হইতে তোমার অশ্ব সকল উচ্ছিন্ন করিব, ও তোমার রথ সকল নষ্ট করিব; আর আমি তোমার দেশের নগর সকল উচ্ছিন্ন করিব, ও তোমার দুর্গ সকল নিপাত করিব; আর আমি তোমার হস্তের মধ্য হইতে মায়াবিত্ব সকল উচ্ছিন্ন করিব, গণকেরা তোমার মধ্যে আর থাকিবে না; এবং আমি তোমার মধ্য হইতে তোমার ক্ষোদিত প্রতিমা ও তোমার স্তম্ভ সকল উচ্ছিন্ন করিব; তুমি আর আপন হস্তকৃত বস্তুর কাছে প্রণিপাত করিবে না। আর আমি তোমার মধ্য হইতে তোমার আশেরা-মূর্ত্তি সকল উৎপাটন করিব, ও তোমার নগর সকল বিনষ্ট করিব। আর আমি ক্রোধে ও প্রচণ্ডতায় সেই জাতিগণের কাছে প্রতিশোধ লইব, যাহারা কথা শুনে নাই। তোমরা এক বার শুন, সদাপ্রভু কি বলিতেছেন; তুমি উঠ, পর্ব্বতগণের সম্মুখে বিবাদ কর, উপপর্ব্বতগণ তোমার রব শুনুক। হে পর্ব্বতগণ, হে পৃথিবীর অটল ভিত্তিমূল সকল, তোমরা সদাপ্রভুর বিবাদ-বাক্য শুন; কেননা আপন প্রজাগণের সহিত সদাপ্রভুর বিবাদ হইতেছে, তিনি ইস্রায়েলের সহিত বিচার করিতেছেন। হে আমার প্রজালোক, আমি তোমার কি করিলাম? কিসে তোমাকে ক্লান্ত করিলাম? আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেও। আমি ত মিসর দেশ হইতে তোমাকে আনিয়াছিলাম, দাস-গৃহ হইতে মুক্ত করিয়াছিলাম, এবং তোমার অগ্রে মোশিকে, হারোণকে ও মরিয়মকে পাঠাইয়াছিলাম। হে আমার প্রজালোক, একবার স্মরণ কর, মোয়াবের রাজা বালাক কি মন্ত্রণা করিয়াছিল, ও বিয়োরের পুত্র বিলিয়ম তাহাকে কি উত্তর দিয়াছিল; শিটীম অবধি গিল্‌গল পর্য্যন্ত [কি ঘটিয়াছিল, স্মরণ কর], যেন তোমরা সদাপ্রভুর ধর্ম্মক্রিয়া সকল জ্ঞাত হও। ‘আমি কি লইয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হইব, ঊর্দ্ধস্থ ঈশ্বরের সম্মুখে প্রণত হইব? আমি কি হোমবলি লইয়া, একবর্ষীয় গোবৎসদিগকে লইয়া, তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইব? সহস্র সহস্র মেষে ও অযুত অযুত তৈলপ্রবাহে কি সদাপ্রভু প্রসন্ন হইবেন? আমি আপন অধর্ম্মের নিমিত্ত কি আপনার প্রথমজাত পুত্রকে দিব? আমার প্রাণের পাপ প্রযুক্ত কি শরীরের ফল দান করিব?’ হে মনুষ্য, যাহা ভাল, তাহা তিনি তোমাকে জানাইয়াছেন; বস্তুতঃ ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন? সদাপ্রভুর রব নগরকে আহ্বান করিতেছে; আর প্রজ্ঞাবান্‌ তোমার নামের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে; তোমরা দণ্ড ও তন্নিরূপণকারিকে মান। দুষ্টের গৃহে কি এখনও দুষ্টতার ভাণ্ডার ও ঘৃণিত হীন ঐফা আছে? দুষ্টতার নিক্তিতে ও ছলনার বাট্‌খারায় আমি কি বিশুদ্ধ হইব? তথাকার ধনবান্‌ লোকেরা দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ, ও তন্নিবাসিগণ মিথ্যাকথা বলিয়াছে, তাহাদের মুখমধ্যে জিহ্বা প্রবঞ্চক। এই জন্য আমিও সাংঘাতিকরূপে তোমাকে প্রহার করিয়াছি, তোমার পাপ প্রযুক্ত তোমাকে ধ্বংস করিয়াছি। তুমি আহার করিবে, তথাপি তৃপ্ত হইবে না, কিন্তু তোমার মধ্যে ক্ষীণতা থাকিবে; তুমি স্থানান্তর করিবে, কিন্তু কিছু বাঁচাইতে পারিবে না; যাহা বাঁচাইবে, তাহা আমি খড়্‌গকে দিব। বীজ বুনিয়াও তুমি শস্য কাটিতে পাইবে না, জিতফল পেষণ করিয়াও গাত্রে তৈল লেপন করিতে পাইবে না, এবং দ্রাক্ষা নিষ্পীড়ন করিয়াও দ্রাক্ষারস পান করিতে পাইবে না। কারণ অম্রির বিধি ও আহাব-কুলের ক্রিয়া সকল পালিত হইতেছে, এবং তোমরা তাহাদের পরামর্শানুসারে চলিতেছ, যেন আমি তোমাকে বিস্ময়ের বিষয়, ও তোমার নিবাসীদিগকে শিশ-শব্দের বিষয় করি; আর তোমরা আমার প্রজাদের টিটকারী বহন করিবে। ধিক্‌ আমাকে! কেননা আমি গ্রীষ্মকালীন ফল পাড়িবার কিম্বা দ্রাক্ষাচয়নের পরে চয়নকারীদের সদৃশ হইয়াছি; খাইবার যোগ্য একটী দ্রাক্ষাগুচ্ছ নাই; আমার প্রাণ আশুপক্ব ডুমুরফলের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে। পৃথিবী হইতে সাধু উচ্ছিন্ন হইয়াছে, মনুষ্যদের মধ্যে সরল লোক একেবারে নাই; সকলেই রক্তপাত করণার্থে ঘাঁটি বসায়; প্রত্যেক জন আপন আপন ভ্রাতাকে জালে বদ্ধ করিতে চেষ্টা পায়। যাহা মন্দ, তাহা সযত্নে করিবার জন্য তাহাদের উভয় হস্ত ব্যতিব্যস্ত; অধ্যক্ষ অর্থ চাহে, বিচারকর্ত্তা উপহার গ্রহণে প্রস্তুত; এবং বড় মানুষ আপন প্রাণের দুষ্টতা মুখে ব্যক্ত করে; তাহারা তাহা জালবৎ বুনে। তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উত্তম, সে শ্যাকুলের ন্যায়; আর যে অতি সরল, সে কন্টকময় বেড়া হইতে [মন্দ]; তোমার প্রহরিগণের দিন, তোমার সমুচিত দণ্ড, আসিতেছে; এখন তাহাদের ব্যাকুলতা জন্মিবে। তোমরা সখাতে প্রত্যয় করিও না; আত্মীয়েতেও বিশ্বাস করিও না; তোমার বক্ষঃস্থলে শয়নকারিণী স্ত্রীর কাছেও আপন মুখের দ্বার রক্ষা কর। কেননা পুত্র পিতাকে লঘুজ্ঞান করে, কন্যা আপন মাতার, ও পুত্রবধূ আপন শাশুড়ীর বিরুদ্ধে উঠে, আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু। কিন্তু আমি সদাপ্রভুর প্রতি দৃষ্টি রাখিব, আমার ত্রাণেশ্বরের অপেক্ষা করিব; আমার ঈশ্বর আমার বাক্য শুনিবেন। হে আমার বিদ্বেষিণি, আমার বিরুদ্ধে আনন্দ করিও না; পতিত হইলেও আমি উঠিব, অন্ধকারে বসিলেও সদাপ্রভু আমার আলোকস্বরূপ হইবেন। আমি সদাপ্রভুর ক্রোধ বহন করিব, কারণ আমি তাঁহার বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি; শেষে তিনি আমার বিবাদে পক্ষবাদী হইয়া আমার বিচার নিষ্পত্তি করিবেন; তিনি আমাকে বাহির করিয়া আলোকে আনিবেন, আমি তাঁহার ধর্ম্মশীলতা দর্শন করিব। তাহা দেখিয়া আমার বিদ্বেষিণী লজ্জায় আচ্ছন্ন হইবে; সে ত আমাকে বলিত, ‘তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু কোথায়?’ আমি স্বচক্ষে তাহাকে দেখিব; এখন সে পথের কর্দ্দমের ন্যায় পদতলে দলিতা হইবে। তোমার প্রাচীর গাঁথিবার দিন। সেই দিন সীমা দূরে অন্তরিত হইবে। সেই দিন তোমার কাছে লোকেরা আসিবে, অশূর হইতে ও মিসরের নগর-সমূহ হইতে, মিসর হইতে [ফরাৎ] নদী পর্য্যন্ত, আর সমুদ্র হইতে সমুদ্র, এবং পর্ব্বত [হইতে] পর্ব্বত পর্য্যন্ত আসিবে। তথাপি অধিবাসিগণের দোষে, তাহাদের কর্ম্মকাণ্ডের ফলরূপে, দেশ ধ্বংসস্থান হইয়া যাইবে। তুমি আপন পাঁচনী লইয়া আপন প্রজাগণকে, স্বতন্ত্র বাসকারী আপনার অধিকারস্বরূপ পাল্‌কে, কর্মিলের মধ্যস্থিত অরণ্যে চরাও; পূর্ব্বকালে যেমন চরিত, তেমনি তাহারা বাশনে ও গিলিয়দে চরুক। মিসর দেশ হইতে তোমার বাহির হইয়া আসিবার দিনের ন্যায় আমি তাহাদিগকে আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য কর্ম্ম দেখাইব। জাতিগণ দেখিয়া আপনাদের সমস্ত পরাক্রমের বিষয়ে লজ্জিত হইবে; তাহারা মুখে হস্ত দিবে, ও তাহাদের কর্ণ বধির হইবে। তাহারা সর্পের ন্যায় ধূলা চাটিবে, তাহারা কাঁপিতে কাঁপিতে ভূমিস্থ কিঞ্চুলুকার ন্যায় আপন আপন গোপনীয় স্থান হইতে বাহির হইয়া আসিবে; তাহারা সভয়ে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে আসিবে ও তোমা হইতে ভীত হইবে। কে তোমার তুল্য ঈশ্বর? —অপরাধ ক্ষমাকারী, ও আপন অধিকারের অবশিষ্টাংশের অধর্ম্মের প্রতি উপেক্ষাকারি! তিনি চিরকাল ক্রোধ রাখেন না, কারণ তিনি দয়ায় প্রীত। তিনি ফিরিয়া আমাদের প্রতি করুণা করিবেন; তিনি আমাদের অপরাধ সকল পদতলে মর্দ্দিত করিবেন; হাঁ, তুমি আপন লোকদের সমস্ত পাপ সমুদ্রের অগাধ জলে নিক্ষেপ করিবে। তুমি যাকোবের নিমিত্ত সেই সত্য ও অব্রাহামের নিমিত্ত সেই দয়া সাধন করিবে, যাহা পূর্ব্বকাল হইতে আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে শপথ করিয়াছিলে। নীনবী-বিষয়ক ভারবাণী। ইল্‌কোশীয় নহূমের দর্শন-পুস্তক। সদাপ্রভু স্বগৌরব-রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর, তিনি প্রতিফলদাতা; সদাপ্রভু প্রতিফলদাতা ও ক্রোধশালী; সদাপ্রভু আপন বিপক্ষগণকে প্রতিফল দেন, আপন শত্রুগণের জন্য ক্রোধ সঞ্চয় করেন। সদাপ্রভু ক্রোধে ধীর ও পরাক্রমে মহান্‌, এবং তিনি অবশ্য [পাপের] দণ্ড দেন; ঘূর্ণ্যবায়ু ও ঝড় সদাপ্রভুর পথ, মেষ তাঁহার পদধূলি। তিনি সমুদ্রকে ধম্‌কান, শুষ্ক করেন, নদনদী সকল নির্জ্জল করেন; বাশন ও কর্মিল ম্লান হয়, আর লিবানোনের পুষ্প ম্লান হয়। তাঁহার ভয়ে পর্ব্বতগণ কাঁপে, উপপর্ব্বতগণ গলিয়া যায়, এবং তাঁহার সম্মুখ হইতে পৃথিবী, জগৎ ও তন্নিবাসী সকলে উঠিয়া যায়। তাঁহার ক্রোধের সম্মুখে কে দাঁড়াইতে পারে? তাঁহার কোপের প্রদাহে কে তিষ্ঠিতে পারে? তাঁহার ক্রোধ অগ্নির ন্যায় সেচিত হয়, তাঁহার দ্বারা শৈলগণ ফাটিয়া যায়। সদাপ্রভু মঙ্গলস্বরূপ, সঙ্কটের দিনে তিনি দুর্গ; আর যাহারা তাঁহার শরণ লয়, তিনি তাহাদিগকে জানেন। কিন্তু তিনি প্লাবনকারী বন্যা দ্বারা সেই স্থান সংহার করিবেন, এবং আপন শত্রুগণকে অন্ধকারে তাড়াইয়া দিবেন। তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্বে কি চিন্তা করিতেছ? তিনি একেবারে শেষ করিবেন, দ্বিতীয় বার সঙ্কট উপস্থিত হইবে না। কেননা, জড়িত কন্টকের ন্যায় ও মদ্যপানে আর্দ্র হইলেও, তাহারা শুষ্ক খড়ের ন্যায় নিঃশেষে অগ্নি-ভক্ষিত হইবে। [হে নীনবি,] এক জন তোমা হইতে উৎপন্ন হইয়াছে, যে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে কুকল্পনা করিতেছে, যে পাষণ্ডতার মন্ত্রণা দেয়। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, পূর্ণশক্তি ও বহুসংখ্যক হইলেও তাহারা অমনি ছিন্ন হইবে, এবং [রাজা] অতীত হইবে। [হে যিহূদা,] আমি তোমাকে নত করিয়াছি, আর নত করিব না। এক্ষণে আমি তোমার স্কন্ধ হইতে তাহার যোঁয়ালি ভাঙ্গিব, ও তোমার বন্ধন ছেদন করিব। আর [হে নীনবী,] তোমার বিষয়ে সদাপ্রভু এই আজ্ঞা করিলেন, তোমার নামীয় বীজ আর উপ্ত হইবে না, আমি তোমার দেবালয় হইতে ক্ষোদিত ও ছাঁচে ঢালা প্রতিমা উচ্ছিন্ন করিব, আমি তোমার কবর প্রস্তুত করিব, কেননা তুমি পামর। দেখ, পর্ব্বতগণের উপরে তাহারই চরণ, যে সুসমাচার প্রচার করে, শান্তি ঘোষণা করে; হে যিহূদা, তুমি আপন পর্ব্ব সকল পালন কর; আপন মানত সকল পূর্ণ কর, কেননা পাষণ্ড আর তোমার মধ্যে যাতায়াত করিবে না; সে সর্ব্বতোভাবে উচ্ছিন্ন হইল। খণ্ডবিখণ্ডকারী তোমার বিরুদ্ধে উঠিয়া আসিয়াছে; তুমি দুর্গ রক্ষা কর, পথে প্রহরী-কার্য্য কর, কটিদেশ কষিয়া বাঁধ, আপনাকে অতিশয় বলবান কর। কারণ সদাপ্রভু ইস্রায়েলের শ্রীর ন্যায় যাকোবের শ্রীকে পুনরায় সতেজ করিতে উদ্যত; কারণ শূন্যকারীরা তাহাদিগকে [ভাণ্ডবৎ] শূন্য করিয়াছে, ও তাহাদের দ্রাক্ষালতা সকল বিনষ্ট করিয়াছে। উহার বীরগণের ঢাল রক্তীকৃত, বিক্রমিগণ লোহিতবর্ণ বস্ত্রপরিহিত, উহার আয়োজন-দিনে রথ সকল অয়সে উজ্জ্বল ও বড়শা সকল চালিত হয়। পথে পথে রথ সকল উন্মত্তের ন্যায় চলে, প্রশস্ত চকে দৌড়িতে দৌড়িতে পরস্পর আঘাত করে; তাহাদের আভা দেউটির ন্যায়, তাহারা বিদ্যুতের ন্যায় ধাবমান হয়। [রাজা] আপন কুলীনবর্গকে স্মরণ করেন, তাহারা গমনে স্খলিত হয়; প্রাচীরের দিকে দৌড়াদৌড়ি হইতেছে, অবরোধ-যন্ত্র স্থাপন করা গিয়াছে। নদীর দ্বার সকল খুলিয়া গেল; প্রাসাদ বিলীন হইল। হাঁ, ইহা নিরূপিত; [নীনবী] বিবস্ত্রা হইয়াছে, নীতা হইতেছে, ও তাহার দাসীগণ কপোতের ধ্বনির ন্যায় শোকধ্বনি করিতেছে, বক্ষঃস্থলে করাঘাত করিতেছে, নীনবী ত জন্মাবধি জলপূর্ণ পুষ্করিণীস্বরূপা, কিন্তু সকলে পলায়ন করিতেছে; দাঁড়াও, দাঁড়াও, [বলিলেও] কেহ মুখ ফিরায় না। তোমরা রৌপ্য লুট কর, স্বর্ণ লুট কর; কেননা আয়োজিত সামগ্রীর শেষ নাই; সর্ব্বপ্রকার রত্নের প্রতাপ আছে। সে শূন্য, শূন্যীকৃত ও উৎসন্ন; আর হৃদয় গলিত ও জানুতে জানুতে ঠেকাঠেকি হইল; এবং সকলের কটিদেশে অঙ্গগ্রহ ও মনুষ্যমাত্রের মুখ কালিমাযুক্ত। কোথায় সেই সিংহগণের গর্ত্ত, যুবাকেশরীদের সেই ভোজনস্থান, যে স্থানে সিংহ, সিংহী ও সিংহশাবক বিহার করিত, ভয় দেখাইবার কেহ ছিল না? সিংহ আপন শাবকদের জন্য যথেষ্ট পশু বিদীর্ণ করিত, আপন সিংহীদের জন্য অনেকের গলা চাপিয়া মারিত, আপন গুহা সকল হৃত পশুতে, ও গহ্বর সকল বিদীর্ণ পশুতে পরিপূর্ণ করিত। দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, আমি তোমার রথ-সমূহ দগ্ধ করিয়া ধূমে লীন করিব, এবং খড়্‌গ তোমার যুবাকেশরীদিগকে গ্রাস করিবে; হাঁ, আমি পৃথিবী হইতে তোমার লুট দ্রব্য উচ্ছিন্ন করিব; এবং তোমার দূতগণের রব আর শুনা যাইবে না। ধিক্‌ ঐ রক্তপাতী নগরকে। সে একেবারে মিথ্যায় ও দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ; লুট ছাড়ে না। কশার শব্দ; ঘূর্ণয়মান চক্রের শব্দ; প্লবমান অশ্ব ও লম্ফমান রথ; অশ্বারোহী যোদ্ধা, চাক্‌চিক্যশালী খড়্‌গ, বজ্রতুল্য বড়শা; নিহতগণের রাশি ও মৃত দেহের ঢিবী, শব-শমূহের শেষ নাই, উহাদের শবের উপরে লোকে উছোট খায়। ইহার কারণ সেই পরমাসুন্দরী বেশ্যার বেশ্যাক্রিয়ার বাহুল্য; সেই প্রধান মায়াবিনী আপন বেশ্যাক্রিয়াতে জাতিদিগকে ও আপন মায়াতে গোষ্ঠীদিগকে বিক্রয় করে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ, আমি তোমার বস্ত্রের অঞ্চল তুলিয়া তোমার মুখের উপরে টানিয়া দিব, জাতিগণকে তোমার উলঙ্গতা ও নানা রাজ্যের লোকদিগকে তোমার লজ্জা দেখাইব। আমি তোমার উপরে জঞ্জাল নিক্ষেপ করিয়া তোমাকে বিরূপ করিব, ও কৌতুকাস্পদ বলিয়া স্থাপন করিব। তাই যে কেহ তোমাকে দেখিবে, সে তোমার নিকট হইতে পলায়ন করিবে, আর বলিবে, নীনবী উৎসন্ন হইল, তাহার বিষয়ে কে বিলাপ করিবে? আমি কোথায় গিয়া তোমার নিমিত্ত সান্ত্বনাকারীদের অন্বেষণ করিব? নো-আমোন হইতে তুমি কি শ্রেষ্ঠ? সে ত নদীগণের মধ্যে সুখাসীনা ও চারিদিকে জলবেষ্টিতা ছিল; জলনিধি তাহার পরিখা, সমুদ্র তাহার প্রাচীর ছিল। কূশ ও মিসর তাহার বলস্বরূপ, তাহা অসীম; পুট ও লূবীয়গণ তাহার সহকারী ছিল। তথাপি সেও নির্ব্বাসিতা হইল, বন্দিদশার দেশে গেল, তাহার শিশুদিগকেও সকল পথের মাথায় আছাড় মারিয়া খণ্ড খণ্ড করা হইল; শত্রুরা তাহার মান্যবান পুরুষদের নিমিত্ত গুলিবাঁট করিল, এবং তাহার মহল্লোকের শৃঙ্খলে বদ্ধ হইল। তুমিও মত্তা হইবে, লুক্কায়িতা হইবে; তুমিও শত্রুভয় প্রযুক্ত আশ্রয় চেষ্টা করিবে। তোমার দৃঢ় দুর্গ সকল আশুপক্ব ফলবিশিষ্ট ডুমুরবৃক্ষের ন্যায় হইবে; সঞ্চালিত হইলে তাহার ফল ভক্ষকের মুখে পড়ে। দেখ, তোমার মধ্যস্থিত প্রজারা স্ত্রীলোক; তোমার দেশের পুরদ্বার সকল শত্রুগণের জন্য খোলা গিয়াছে, অগ্নি তোমার অর্গল সকল গ্রাস করিয়াছে। তুমি অবরোধ সময়ের জন্য জল তোল, তোমার দুর্গ সকল দৃঢ় কর, ইটখোলাতে যাও, কাদা ছান, ইটের পাঁজা সাজাও। সেখানে অগ্নি তোমাকে গ্রাস করিবে; খড়্‌গ তোমাকে ছেদন করিবে, তাহা পতঙ্গের ন্যায় তোমাকে খাইয়া ফেলিবে; তুমি পতঙ্গের ন্যায় বড় ঝাঁক হও, পঙ্গপালের ন্যায় বড় ঝাঁক হও। তুমি আকাশের তারা হইতেও আপন বণিকগণের বৃদ্ধি করিয়াছ; পতঙ্গ ঝাঁক বাঁধিয়া উড়িয়া যাইতেছে। তোমার কিরীটিগণ পঙ্গপালের তুল্য; তোমার সেনাপতিরা অগণ্য ফড়িঙ্গের তুল্য; ফড়িঙ্গ ত শীতের দিনে বেড়াতে আশ্রয় লয়, কিন্তু সূর্য্যোদয় হইলে উড়িয়া যায়; কোন্‌ স্থানে গেল, তাহা জানা যায় না। হে অশূর-রাজ, তোমার পালরক্ষকেরা নিদ্রা গিয়াছে, তোমার কুলীনেরা বিশ্রাম করিতেছে, তোমার প্রজারা পর্ব্বতগণের উপরে ছিন্নভিন্ন রহিয়াছে, তাহাদিগকে সংগ্রহ করিবার কেহ নাই; তোমার ভঙ্গের প্রতীকার নাই; তোমার ক্ষত সাংঘাতিক; যাহারা তোমার বার্ত্তা শুনিবে, তাহারা তোমার উপরে হাততালী দিবে; কেননা তোমার হিংসা তাহার উপরে না অবিরত রহিয়াছে? হবক্‌কূক ভাববাদীর ভারবাণী; তিনি এই দর্শন পান। হে সদাপ্রভু, কত কাল আমি আর্ত্তনাদ করিব, আর তুমি শুনিবে না? আমি দৌরাত্ম্যের বিষয়ে তোমার কাছে কাঁদিতেছি, আর তুমি নিস্তার করিতেছ না। তুমি কেন আমাকে অধর্ম্ম দেখাইতেছ, কেন দুষ্কার্য্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতেছ? লুটপাট ও দৌরাত্ম্য আমার সম্মুখে হইতেছে, বিরোধ উপস্থিত, বিসংবাদ বাড়িয়া উঠিতেছে। তাই ব্যবস্থা নিস্তেজ হইতেছে, বিচার কোন মতে নিষ্পন্ন হইতেছে না; কারণ দুর্জ্জনেরা ধার্ম্মিককে ঘেরিয়া থাকে, তজ্জন্য বিচার বিপরীত হইয়া পড়ে। তোমরা জাতিগণের মধ্যে দৃষ্টিপাত কর, নিরীক্ষণ কর, এবং চমৎকার জ্ঞান করিয়া হতবুদ্ধি হও; যেহেতু আমি তোমাদের সময়ে এক কর্ম্ম করিব, তাহার বৃত্তান্ত কেহ তোমাদিগকে জ্ঞাত করিলে তোমরা বিশ্বাস করিবে না। কারণ দেখ, আমি কল্‌দীয়দিগকে উঠাইব; তাহারা সেই নিষ্ঠুর ও ত্বরান্বিত জাতি, যে পরের নিবাস সকল অধিকার করণার্থে পৃথিবীর বিস্তারের সর্ব্বত্র বিহার করে। তাহারা ত্রাসজনক ও ভয়ঙ্কর, তাহাদের শাসন ও উন্নতি তাহাদেরই হইতে উৎপন্ন। তাহাদের অশ্বগণ চিতাব্যাঘ্র হইতেও দ্রুতগামী ও সায়ংকালীন কেন্দুয়া হইতেও উগ্র; তাহাদের অশ্বারোহিগণ বেগবান্‌; তাহাদের অশ্বারোহিগণ দূর হইতে আগত; ঈগল পক্ষী যেমন ভক্ষণার্থে দ্রুতবেগে চলে, তেমনি তাহারা উড়ে। তাহারা সকলে দৌরাত্ম্য করিতে আইসে, তাহারা অগ্রসর হইতে উন্মুখ; এবং তাহারা বন্দিদিগকে বালুকার ন্যায় একত্র করে। সেই জাতি রাজগণকে বিদ্রূপ করে, এবং অধ্যক্ষগণ তাহার উপহাসের পাত্র; সে দৃঢ় দুর্গ সমস্তকে উপহাস করে, ও ধূলি রাশীকৃত করিয়া তাহা হস্তগত করে। এইরূপে সে প্রচণ্ড বায়ুবৎ হঠাৎ বহিবে, অগ্রসর হইবে, আর দোষী হইবে; নিজ শক্তিই তাহার দেবতা। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার পবিত্রতম, তুমি কি অনাদিকাল হইতে নহ? আমরা মারা পড়িব না; হে সদাপ্রভু, তুমি বিচারার্থেই উহাকে নিরূপণ করিয়াছ; হে শৈল, তুমি শাসনার্থেই উহাকে স্থাপন করিয়াছ। তুমি এমন নির্ম্মলচক্ষু যে মন্দ দেখিতে পার না, এবং দুষ্কার্য্যের প্রতি তুমি দৃষ্টিপাত করিতে পার না, তবে বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি কেন দৃষ্টিপাত করিতেছ? আর দুর্জ্জন আপনার অপেক্ষা ধার্ম্মিক লোককে গ্রাস করিলে কেন নীরব থাক? মনুষ্যদিগকে সমুদ্রের মৎস্য তুল্য কিম্বা অস্বামিক কীট তুল্য কেন কর? সে সকলকে বড়শীতে তুলে, তাহাদিগকে নিজ জালে ধরে, খালুইতে একত্র করে; এই জন্য সে আনন্দিত ও উল্লাসিত হয়। এই জন্য সে আপন জালের উদ্দেশে বলিদান করে, ও আপন খালুইয়ের উদ্দেশে ধূপ জ্বালায়; কেননা তদ্দ্বারা তাহার অংশ পুষ্ট ও তাহার খাদ্য মেদোযুক্ত হয়। এই জন্য সে কি আপন জালের মধ্য হইতে মৎস্য বাহির করিতে থাকিবে? ও মমতা না করিয়া নিরন্তর জাতিগণকে বধ করিবে? আমি আপন প্রহরী-কার্য্যের স্থানে দাঁড়াইব, দুর্গের উপরে অবস্থিত থাকিব; আমার আবেদনের বিষয়ে তিনি আমাকে কি বলিবেন, এবং আমি কি উত্তর দিব, তাহা দেখিয়া বুঝিব। তখন সদাপ্রভু উত্তর করিয়া আমাকে কহিলেন, এই দর্শনের কথা লিখ, সুস্পষ্ট করিয়া ফলকে খুদ, যে পাঠ করে, সে যেন দৌড়িতে পারে। কেননা এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত, ও তাহা পরিনামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না; তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না। দেখ, তাহার প্রাণ দর্পে স্ফীত, তাহার অন্তর সরল নয়, কিন্তু ধার্ম্মিক ব্যক্তি আপন বিশ্বাস দ্বারা বাঁচিবে। আবার মদ্য প্রযুক্ত সে বিশ্বাসঘাতক; সে অভিমানী বীর, সে ঘরে থাকে না; সে পাতালের ন্যায় অপরিমিত লোভী, সে মৃত্যুর সদৃশ, তৃপ্ত হয় না, কিন্তু সর্ব্বজাতিকে একত্র করিয়া আত্মসাৎ করে, এবং সর্ব্বলোকবৃন্দকে আপনার কাছে সংগ্রহ করে। তাহারা সকলে কি তাহার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত কথা ও তাহার বিষয়ে পরিহাসজনক প্রবাদ উত্থাপন করিবে না? লোকে বলিবে, “ধিক্‌ তাহাকে, যে পরধনে বর্দ্ধিষ্ণু হয়—কত দিন হইবে?—আর যে বন্ধক দ্রব্যের ভারে ভারী হয়।” যাহারা তোমাকে দংশন করিবে, তাহারা কি হঠাৎ উঠিবে না? যাহারা তোমাকে সঞ্চালন করিবে, তাহারা কি শীঘ্র জাগিবে না? তখন তুমি তাহাদের লুঠিত বস্তু হইবে। তুমি অনেক জাতির সম্পত্তি লুট করিয়াছ; এই হেতু জাতিগণের সমস্ত শেষাংশ তোমার সম্পত্তি লুট করিবে; ইহার কারণ মনুষ্যদের রক্তপাত, এবং দেশ, নগর ও তন্নিবাসীদের প্রতি কৃত দৌরাত্ম্য। ধিক তাহাকে যে আপন কুলের নিমিত্ত কুলাভ সংগ্রহ করে, যেন উচ্চে বাসা করিতে পারে, যেন অমঙ্গলের হস্ত হইতে উদ্ধার পাইতে পারে। অনেক জাতিকে উচ্ছিন্ন করাতে তুমি আপন কুলের লজ্জাজনক মন্ত্রণা করিয়াছ, ও আপন প্রাণের বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছ। কেননা ভিত্তির মধ্য হইতে প্রস্তর কাঁদিবে, ও কাষ্ঠের মধ্য হইতে বরগা তাহার উত্তর দিবে। ধিক্‌ তাহাকে, যে রক্তপাত দ্বারা পুরী গাঁথে, যে অন্যায় দ্বারা নগর সংস্থাপন করে। দেখ, ইহা কি বাহিনীগণের সদাপ্রভু হইতে হয় না যে, লোকবৃন্দ অগ্নির জন্য পরিশ্রম করে, এবং জাতিগণ অলীকতার জন্য ক্লান্ত হয়? কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভুর মহিমাবিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে। ধিক্‌ তাহাকে, যে আপন প্রতিবাসীকে পান করায়; তুমি ভাণ্ডে তোমার বিষ মিশাইয়া থাক, আবার তাহাকে মত্ত করিয়া থাক, যেন তুমি তাহাদের উলঙ্গতার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে পার। তুমি সম্মানের স্থানে অপমানেই পরিপূর্ণ হইয়াছ; তুমিও পান করিয়া অচ্ছিন্নত্বকের ন্যায় হও; সদাপ্রভুর দক্ষিণ হস্ত স্থিত পানপাত্র তোমার দিকে ফিরান যাইবে, ও তোমার গৌরবের উপরে জঘন্য লজ্জা উপস্থিত হইবে। কারণ লিবানোনের প্রতি কৃত দৌরাত্ম্য তোমাকে আচ্ছন্ন করিবে ও পশুগণের সংহার তোমার ত্রাস জন্মাইবে; ইহার কারণ মনুষ্যদের রক্তপাত, এবং দেশ, নগর ও তন্নিবাসীদের প্রতি কৃত দৌরাত্ম্য। ক্ষোদিত প্রতিমায় উপকার কি যে, তাহার নির্ম্মাতা তাহা ক্ষোদন করে? ছাঁচে ঢালা প্রতিমার ও মিথ্যার শিক্ষকেই বা [উপকার কি] যে, আপনার নির্ম্মিত বস্তুর নির্ম্মাতা তাহাতে বিশ্বাস করিয়া অবাক্‌ অবস্তু নির্ম্মাণ করে? ধিক্‌ তাহাকে, যে কাষ্ঠকে বলে, তুমি জাগ, অবাক্‌ প্রস্তরকে বলে, তুমি উঠ। সে কি শিক্ষা দিবে? দেখ, সে সুবর্ণ ও রৌপ্যে মণ্ডিত, তাহার অন্তরে শ্বাসবায়ুর লেশও নাই। কিন্তু সদাপ্রভু আপন পবিত্র মন্দিরে আছেন; সমস্ত পৃথিবী তাঁহার সম্মুখে নীরব থাক। হবক্‌কূক ভাববাদীর প্রার্থনা। স্বর, শিগিয়োনোৎ। হে সদাপ্রভু, আমি তোমার বার্ত্তা শুনিলাম, ভীত হইলাম; হে সদাপ্রভু, বৎসর-সমূহের মধ্যে তোমার কর্ম্ম সজীব কর, বৎসর-সমূহের মধ্যে জ্ঞাত কর; কোপের সময়ে করুণা স্মরণ কর। ঈশ্বর তৈমন হইতে আসিতেছেন, পারণ পর্ব্বত হইতে পবিত্রতম আসিতেছেন। সেলা। আকাশমণ্ডল তাঁহার প্রভায় সমাচ্ছন্ন, পৃথিবী তাঁহার প্রশংসায় পরিপূর্ণ। তাহার তেজ দীপ্তির তুল্য, তাঁহার হস্ত হইতে কিরণ নির্গত হয়; ঐ স্থান তাঁহার পরাক্রমের অন্তরাল। তাঁহার অগ্রে অগ্রে মহামারী চলে, তাঁহার পদচিহ্ন দিয়া জ্বলদঙ্গার গমন করে। তিনি দাঁড়াইয়া পৃথিবীকে পরিমাণ করিলেন, তিনি দৃক্‌পাত করিয়া জাতিগণকে ত্রাসতাড়িত করিলেন; সনাতন পর্ব্বত সকল খণ্ডবিখণ্ড হইল, চিরন্তন গিরিমালা নত হইল; অনাদিকাল অবধি তাঁহার গতি। আমি দেখিলাম, কূশনের তাম্বু সকল ক্লিষ্ট, মিদিয়ন দেশীয় যবনিকা সকল কম্পিত হইল। সদাপ্রভু কি নদনদীগণের প্রতি বিরক্ত হইলেন, তোমার ক্রোধ কি নদনদীগণের উপরে বর্ত্তিল, সমুদ্রের প্রতি কি তোমার কোপ হইল যে, তুমি তোমার অশ্বগণে আরোহণ করিলে? পরিত্রাণসাধক তোমার রথ-সমূহে আরোহণ করিলে? তোমার ধনুক একেবারে অনাবৃত, বাক্যমূলক দণ্ড সকল শপথ দ্বারা স্থিরীকৃত। সেলা। তুমি ভূতলকে বিদীর্ণ করিয়া নদনদীময় করিলে। পর্ব্বতগণ তোমাকে দেখিয়া কাঁপিয়া উঠিল, প্রচণ্ড জলরাশি বহিয়া গেল, বারিধি আপন রব উদীর্ণ করিল, আপন হস্তদ্বয় উচ্চে উঠাইল। সূর্য্য ও চন্দ্র স্ব স্ব বাসস্থানে দাঁড়াইয়া থাকিল,— তোমার দ্রুতগামী বাণ-সমূহের দীপ্তিতে, তোমার বজ্ররূপ বড়শার তেজে। তুমি ক্রোধে ভূতল দিয়া গমন করিলে, কোপে জাতিগণকে [শস্যবৎ] মর্দ্দন করিলে। তুমি যাত্রা করিলে, —আপন প্রজাগণের পরিত্রাণার্থে, আপন অভিষিক্ত লোকের পরিত্রাণার্থে; তুমি দুষ্টের গৃহের মস্তক চূর্ণ করিলে, কণ্ঠদেশ পর্য্যন্ত আহার মূল অনাবৃত করিলে। সেলা। তুমি তাহার যোদ্ধাদের মস্তক তাহারই দণ্ড দ্বারা বিদ্ধ করিলে; তাহারা ঘূর্ণ্যবায়ুর ন্যায় আমাকে ছিন্নভিন্ন করিতে আসিয়াছিল; তাহারা দুঃখীকে গোপনে গ্রাস করিতে আনন্দ করিত। তুমি আপন অশ্বগণ লইয়া সমুদ্র দিয়া গমন করিলে। সেই মহাজলরাশি দিয়া গমন করিলে। আমি শুনিলাম, আমার অন্তর কাঁপিয়া উঠিল, সেই রবে আমার ওষ্ঠাধর বিকম্পিত হইল, আমার অস্থিতে পচন প্রবেশ করিল, আমি স্বস্থানে কম্পিত হইলাম, কারণ আমাকে বিশ্রাম করিতে হইবে, সঙ্কটের দিনের অপেক্ষায়, যখন আক্রমণকারী আসিবে লোকদের বিরুদ্ধে। যদিও ডুমুরবৃক্ষ পুষ্পিত হইবে না, দ্রাক্ষালতায় ফল ধরিবে না, জিতবৃক্ষ ফলদানে বঞ্চনা করিবে, ও ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হইবে না, খোঁয়াড় হইতে মেষপাল উচ্ছিন্ন হইবে, গোষ্ঠে গোরু থাকিবে না; তথাপি আমি সদাপ্রভুতে আনন্দ করিব, আমার ত্রাণেশ্বরে উল্লাসিত হইব। প্রভু সদাপ্রভুই আমার বল, তিনি আমার চরণ হরিণীর চরণ সদৃশ করেন, তিনি আমার উচ্চস্থলী সকল দিয়া আমাকে গমন করাইবেন। প্রধান বাদ্যকরের জন্য; আমার তারযুক্ত যন্ত্রে। সদাপ্রভুর এই বাক্য আমোনের পুত্র যিহূদা-রাজ যোশিয়ের সময়ে সফনিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল। ইনি কূশির পুত্র, কূশি গদলিয়ের পুত্র, গদলিয় অমরিয়ের পুত্র, অমরিয় হিষ্কিয়ের পুত্র। আমি ভূতল হইতে সকলই সংহার করিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন। আমি মনুষ্য ও পশুগণকে সংহার করিব, আমি আকাশের পক্ষিগণকে, সমুদ্রের মৎস্যগণকে, ও দুষ্টগণশুদ্ধ বিঘ্ন সকল সংহার করিব; হাঁ, আমি ভূতল হইতে মনুষ্যকে উচ্ছিন্ন করিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন। আর আমি যিহূদার বিরুদ্ধে ও যিরূশালেম-নিবাসী সকলের বিরুদ্ধে আপন হস্ত বিস্তার করিব, এবং এই স্থান হইতে বালের অবশেষ ও যাজকগণশুদ্ধ পুরোহিতদের নাম উচ্ছিন্ন করিব; এবং তাহাদিগকে উচ্ছিন্ন করিব, যাহারা ছাদের উপরে আকাশ-বাহিনীর কাছে প্রণিপাত করে, এবং যাহারা সদাপ্রভুর কাছে শপথ করিয়া, অথচ মালকামের নামেও শপথ করিয়া প্রণিপাত করে, এবং যাহারা সদাপ্রভুর অনুগমন হইতে পরাঙ্মুখ হয়, ও যাহারা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করে নাই, ও তাঁহার অনুসন্ধান করে নাই। তুমি প্রভু সদাপ্রভুর সাক্ষাতে নীরব হও; কেননা সদাপ্রভুর দিন সন্নিকট; কারণ সদাপ্রভু এক যজ্ঞের আয়োজন করিয়াছেন, আপন নিমন্ত্রিত লোকদিগের সংস্কার করিয়াছেন। সদাপ্রভুর সেই যজ্ঞের দিনে আমি অধ্যক্ষগণকে, রাজকুমারদিগকে ও বিজাতীয় পরিচ্ছদপরিহিত সকল লোককে দণ্ড দিব। আর যাহারা লম্ফ দিয়া গোবরাট উল্লঙ্ঘন করে, যাহারা আপনাদের প্রভুর গৃহ দৌরাত্ম্যে ও ছলনায় পরিপূর্ণ করে, সেই দিন আমি তাহাদিগকে দণ্ড দিব। সদাপ্রভু বলেন, সে দিন মৎস্য-দ্বার হইতে ক্রন্দনের শব্দ, দ্বিতীয় বিভাগ হইতে হাহাকার, ও উপপর্ব্বতগণ হইতে মহাভঙ্গের শব্দ শুনা যাইবে। হে মক্তেশ [উদূখল] নিবাসিগণ, তোমারা হাহাকার কর, কেননা সমস্ত ব্যবসায়ী লোক নষ্ট হইয়াছে, সকল রৌপ্যবাহক বিনাশ পাইয়াছে। সেই সময়ে আমি প্রদীপ জ্বালিয়া যিরূশালেমের সন্ধান করিব; আর যে লোকেরা নির্ব্বিঘ্নে আপন আপন গাদের উপরে সুস্থির আছে, যাহারা মনে মনে বলে, সদাপ্রভু মঙ্গলও করিবেন না, অমঙ্গলও করিবেন না, তাহাদিগকে দণ্ড দিব। তাহাদের সম্পদ লুট হইবে, ও তাহাদের গৃহ সকল ধ্বংসস্থান হইবে; তাহারা বাটী নির্ম্মাণ করিবে, কিন্তু তাহাতে বাস করিতে পাইবে না; দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিবে, কিন্তু তাহার দ্রাক্ষারস পান করিতে পাইবে না। সদাপ্রভুর মহাদিন নিকটবর্ত্তী, তাহা নিকটবর্ত্তী, অতি শীঘ্র আসিতেছে; ঐ সদাপ্রভুর দিনের শব্দ; সেখানে বীর তীব্র আর্ত্তরব করিতেছে। সেই দিন ক্রোধের দিন, সঙ্কটের ও সঙ্কোচের দিন, নাশের ও সব্বনাশের দিন, অন্ধকারের ও তিমিরের দিন, মেঘের ও গাঢ় তিমিরের দিন, তূরীধ্বনির ও রণনাদের দিন; তাহা প্রাচীরবেষ্টিত নগর ও উচ্চ দুর্গ সকলের বিপক্ষ। আমি মনুষ্যদিগকে দুঃখ দিব; তাহারা অন্ধের ন্যায় ভ্রমণ করিবে, কারণ তাহারা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছে; তাহাদের রক্ত ধূলার ন্যায় ও তাহাদের মাংস মলের ন্যায় ঢালা যাইবে। সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তাহাদের রৌপ্য কি তাহাদের সুবর্ণ তাহাদিগকে উদ্ধার করিতে পারিবে না; কিন্তু তাঁহার অন্তর্জ্বালার তাপে সমস্ত দেশ অগ্নি-ভক্ষিত হইবে, কেননা তিনি দেশ-নিবাসী সকলের বিনাশ, হাঁ, ভয়ানক সংহার করিবেন। হে লজ্জাহীন জাতি, তোমরা একত্র হও, হাঁ, একত্র হও, কেননা দণ্ডাজ্ঞা সফল হইবার সময় হইল, দিন ত তুষের ন্যায় উড়িয়া যাইতেছে; সদাপ্রভুর ক্রোধাগ্নি তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িল, সদাপ্রভুর ক্রোধের দিন তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িল। হে দেশস্থ সমস্ত নম্র লোক, তাঁহার শাসন পালন করিয়াছ যে তোমরা, তোমরা সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, ধর্ম্মের অনুশীলন কর, নম্রতার অনুশীলন কর; হয় ত সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তোমরা গুপ্তস্থানে রক্ষা পাইবে। কারণ ঘসা পরিত্যক্ত, ও অস্কিলোন ধ্বংসস্থান হইবে; অস্‌দোদের লোকেরা মধ্যাহ্নকালে তাড়িত হইবে, ও ইক্রোণ উন্মূলিত হইবে। ধিক্‌ সমুদ্রের উপকূল-নিবাসিগণকে, করেথীয়গণের জাতিকে! হে কনান, পলেষ্টীয়দের দেশ, সদাপ্রভুর বাক্য তোমাদের বিপক্ষ; আমি তোমাকে এমন উচ্ছিন্ন করিব যে, তোমাতে আর কেহ বসতি করিবে না। আর সমুদ্রের তীরস্থ অঞ্চল বাথানে, মেষপালকদের গহ্বরে ও মেষের খোঁয়াড়ে পরিণত হইবে। সেই অঞ্চল যিহূদা-কুলের অবশিষ্টাংশের অধিকার হইবে; তাহারা তাহার উপরে [আপন আপন পাল] চরাইবে; সন্ধ্যাকালে অস্কিলোনের গৃহে গৃহে শয়ন করিবে; কেননা তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদের তত্ত্বাবধান করিবেন, ও তাহাদের বন্দি-দশা ফিরাইবেন। আমি মোয়াবের টিটকারি ও অম্মোন-সন্তানদের কটুকাটব্য শুনিয়াছি; তাহারা আমার প্রজাদিগকে টিটকারি দিয়াছে, আর তাহাদের সীমার প্রতিকূলে আপনাদিগকে বড় করিয়াছে। এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা কহেন, আমার জীবনের দিব্য, মোয়াব অবশ্য সদোমের তুল্য, এবং অম্মোন-সন্তানেরা ঘমোরার তুল্য হইবে, বিছুটির আশ্রয়, লবণের কূপ ও নিত্য ধ্বংসস্থান হইবে; আমার প্রজাগণের অবশিষ্টাংশ তাহাদের সম্পত্তি লুট করিবে, ও আমার জাতির অবশিষ্ট লোকেরা তাহাদের অধিকার পাইবে। এই তাহাদের অহঙ্কারের প্রতিফল; কেননা তাহারা টিটকারি দিয়াছে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর প্রজাদের বিরুদ্ধে আপনাদিগকে বড় করিয়াছে। সদাপ্রভু উহাদের প্রতি ভয়ঙ্কর হইবেন, কারণ তিনি পৃথিবীস্থ সমস্ত দেবতাকে ক্ষীণ করিবেন, এবং মনুষ্যেরা সকলে আপন আপন স্থান হইতে তাঁহার কাছে প্রণিপাত করিবে, জাতিগণের উপকূলসমূহ করিবে। হে কূশীয়গণ, তোমরাও আমার খড়্‌গে নিহত হইবে। আর তিনি উত্তরদিকের বিরুদ্ধে আপন হস্ত বিস্তার করিবেন, অশূরকে বিনষ্ট করিবেন, এবং নীনবীকে ধ্বংস ও প্রান্তরের ন্যায় জলহীন স্থান করিবেন। আর তাহার মধ্যে পশুপাল ও সর্ব্বপ্রকার বিজাতীয় জীবের ঝাঁক শয়ন করিবে, পাণিভেলা ও শজারু তাহার স্তম্ভের মাথলার উপরে রাত্রি যাপন করিবে; বাতায়নের মধ্য দিয়া তাহাদের গানের রব শুনা যাইবে; গোবরাটে উৎসন্নতা থাকিবে; কেননা তিনি তাহার এরসকাষ্ঠের কর্ম্ম অনাবৃত করিয়াছেন। এই সেই উল্লাসপ্রিয়া নগরী, যে নির্ভয়ে বসিয়া থাকিত, যে মনে মনে বলিত, আমিই আছি, আমা ভিন্ন আর কেহ নাই; সে একেবারে ধ্বংসের আস্পদ হইল, পশুদের শয়নস্থান হইল! যে কেহ তাহার নিকট দিয়া যাইবে, সে শিশ দিবে, আপন হস্ত সঞ্চালন করিবে। ধিক্‌ সেই বিদ্রোহিণী ও ভ্রষ্টাকে, সেই অত্যাচার-কারিণী নগরীকে! সে রব শুনে নাই, শাসন গ্রহণ করে নাই, সদাপ্রভুতে নির্ভর করে নাই, আপন ঈশ্বরের নিকটে আইসে নাই। তাহার মধ্যস্থিত অধ্যক্ষগণ গর্জ্জনকারী সিংহ, তাহার বিচারকর্ত্তৃগণ সায়ংকালীন কেন্দুয়া ব্যাঘ্র; তাহারা প্রাতঃকালের জন্য কিছুমাত্র অবশিষ্ট রাখে না। তাহার ভাববাদিগণ দাম্ভিক ও বিশ্বাসঘাতক, তাহার যাজকগণ পবিত্রকে অপবিত্র করিয়াছে, তাহারা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অত্যাচার করিয়াছে। তাহার মধ্যবর্ত্তী সদাপ্রভু ধর্ম্মশীল; তিনি অন্যায় করেন না, প্রতি প্রভাতে তিনি আপন বিচার আলোকে স্থাপন করেন, ত্রুটি করেন না; কিন্তু অন্যায়াচারী লজ্জা জানে না। আমি জাতিগণকে উচ্ছিন্ন করিয়াছি, তাহাদের উচ্চ দুর্গ সকল ধ্বংসিত হইয়াছে; আমি তাহাদের পথ শূন্য করিয়াছি, তাহা দিয়া কেহ আর চলে না; তাহাদের নগর সকল লুপ্ত হইয়াছে, তথায় মনুষ্য নাই, কোন বাসকারী আর নাই। আমি কহিলাম তুমি অবশ্য আমাকে ভয় করিবে, তুমি শাসন গ্রহণ করিবে, তাহাতে তাহার নিবাস উচ্ছিন্ন হইবে না; ইহা তাহার সম্বন্ধে আমার নিরূপিত বিষয়ের অনুজ্ঞা; কিন্তু তন্নিবাসীরা প্রত্যূষে উঠিয়া আপনাদের সকল কার্য্য নষ্ট করিয়া ফেলিতে লাগিল। এই জন্য সদাপ্রভু কহেন, তোমরা সেই দিন পর্য্যন্ত আমার অপেক্ষায় থাক, যে দিন আমি হরণ করিতে উঠিব; কেননা আমার বিচার এই; আমি জাতিগণকে সংগ্রহ করিয়া ও রাজ্য সকল একত্র করিয়া তাহাদের উপরে আমার ক্রোধ, আমার সমস্ত কোপাগ্নি ঢালিয়া দিব; বস্তুতঃ আমার অন্তর্জ্বালার তাপে সমস্ত পৃথিবী অগ্নিভক্ষিত হইবে। আর তৎকালে আমি জাতিগণকে বিশুদ্ধ ওষ্ঠ দিব, যেন তাহারা সকলেই সদাপ্রভুর নামে ডাকে ও একযোগে তাঁহার আরাধনা করে। কূশ দেশস্থ নদীগণের পার হইতে আমার উপাসকগণ, আমার ছিন্নভিন্ন প্রজা-কন্যা, আমার নৈবেদ্য আনয়ন করিবে । তুমি আপনার যে সকল ক্রিয়াতে আমার কাছে অপরাধিনী হইয়াছ, তৎপ্রযুক্ত সে দিন লজ্জিতা হইবে না; কেননা সেই সময়ে আমি তোমার দর্পযুক্ত উল্লাসকারী লোকদিগকে তোমার মধ্য হইতে হরণ করিব; তাহাতে তুমি আমার পবিত্র পর্ব্বতে আর অহঙ্কার করিবে না। আর আমি তোমার মধ্যে দীনদুঃখী এক জাতিকে অবশিষ্ট রাখিব; তাহারা সদাপ্রভুর নামের শরণ লইবে। ইস্রায়েলের অবশিষ্ট লোক অন্যায় করিবে না, মিথ্যাকথা বলিবে না, এবং তাহাদের মুখে প্রতারক জিহ্বা থাকিবে না; বস্তুতঃ তাহারা চরিবে ও শয়ন করিবে, তাহাদিগকে ভয় দেখাইবার কেহ থাকিবে না। হে সিয়োন-কন্যা, আনন্দগান কর; হে ইস্রায়েল, জয়ধ্বনি কর; হে যিরূশালেম-কন্যা, আনন্দ কর, সর্ব্বান্তঃকরণে উল্লাস কর। সদাপ্রভু তোমার দণ্ড সকল দূর করিয়াছেন, তোমার শত্রুকে সরাইয়া দিয়াছেন; ইস্রায়েলের রাজা সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; তুমি আর অমঙ্গলের ভয় করিবে না। সেই দিন যিরূশালেমকে এই কথা বলা যাইবে, ভয় করিও না; হে সিয়োন, তোমার হস্ত শিথিল না হউক। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যবর্ত্তী; সেই বীর পরিত্রাণ করিবেন, তিনি তোমার বিষয়ে পরম আনন্দ করিবেন; তিনি প্রেমভরে মৌনী হইবেন, আনন্দগান দ্বারা তোমার বিষয়ে উল্লাস করিবেন। যাহারা পর্ব্ববিরহে খেদ করে, তাহাদিগকে আমি একত্র করিব; তাহারা তোমা হইতে উৎপন্ন, তাহারা ধিক্কারে ভারগ্রস্ত। দেখ, যে সকল লোক তোমাকে দুঃখ দেয়, সেই সময়ে আমি তাহাদের প্রতি যাহা করিবার, তাহা করিব; আর আমি খঞ্জাকে পরিত্রাণ করিব, ও দূরীকৃতাকে সংগ্রহ করিব; এবং যাহাদের লজ্জা সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপিয়াছে, আমি তাহাদিগকে প্রশংসার ও কীর্ত্তির পাত্র করিব। সেই সময়ে আমি তোমাদিগকে আনিব, সেই সময়ে তোমাদিগকে সংগ্রহ করিব; কারণ আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত জাতির মধ্যে তোমাদিগকে কীর্ত্তির ও প্রশংসার পাত্র করিব; কেননা তখন আমি তোমাদের দৃষ্টিগোচরে তোমাদিগকে বন্দিদশা হইতে ফিরাইয়া আনিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। দারিয়াবস রাজার দ্বিতীয় বৎসরের ষষ্ঠ মাসে, মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর বাক্য হগয় ভাববাদী দ্বারা শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল নামক যিহূদার অধ্যক্ষের কাছে এবং যিহোষাদকের পুত্র যিহোশূয় মহাযাজকের কাছে উপস্থিত হইল। তিনি কহিলেন, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এই লোকেরা বলিতেছে, সময়, সদাপ্রভুর গৃহ নির্ম্মাণের সময়, উপস্থিত হয় নাই। তখন হগয় ভাববাদী দ্বারা সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল; এই কি তোমাদের আপন আপন ছাদ আঁটা গৃহে বাস করিবার সময়? এই গৃহ ত উৎসন্ন রহিয়াছে। এই জন্য এখন বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর। তোমরা অনেক বীজ বপন করিয়াও অল্প সঞ্চয় করিতেছ, আহার করিয়াও তৃপ্ত হইতেছ না, পান করিয়াও আপ্যায়িত হইতেছ না, পরিচ্ছদ পরিয়াও উষ্ণ হইতেছ না, এবং বেতনজীবী লোক ছেঁড়া থলিতে বেতন রাখে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর। পর্ব্বতে উঠিয়া গিয়া কাষ্ঠ আন এই গৃহ নির্ম্মাণ কর, তাহাতে আমি এই গৃহের প্রতি প্রসন্ন হইব, এবং গৌরবান্বিত হইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন। তোমরা বাহুল্যের অপেক্ষা করিয়াছিলে, আর দেখ, অল্প পাইলে; এবং যাহা গৃহে আনিয়াছিলে, তাহার উপরে আমি ফুঁ দিলাম। বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, ইহার কারণ কি? কারণ এই যে, আমার গৃহ উৎসন্ন রহিয়াছে, তথাপি তোমরা প্রত্যেক জন আপন আপন গৃহে দৌড়িয়া যাইতেছ। এই জন্য তোমাদেরই কারণ আকাশ রুদ্ধ হইয়াছে, শিশির বর্ষায় না, ও ভূমি রুদ্ধ হইয়াছে, ফল দেয় না। আর আমি দেশের ও পর্ব্বতগণের উপরে, শস্য, দ্রাক্ষারস ও তৈল প্রভৃতি ভূমির উৎপন্ন বস্তুর উপরে, এবং মনুষ্য, পশু ও তোমাদের হস্তের সমস্ত শ্রমের উপরে অনাবৃষ্টিকে আহ্বান করিলাম। তখন শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল, যিহোষাদকের পুত্র যিহোশূয় মহাযাজক এবং লোকদের সমস্ত অবশিষ্টাংশ আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে, এবং আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কর্ত্তৃক প্রেরিত হগয় ভাববাদীর সকল বাক্যে মনোযোগ করিলেন; লোকেরাও সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ভীত হইল। তখন সদাপ্রভুর দূত হগয় সদাপ্রভুর দৌত্য-কার্য্যক্রমে লোকদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভু কহেন, আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি। পরে সদাপ্রভু শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল নামক যিহূদার অধ্যক্ষের আত্মাকে ও যিহোষাদকের পুত্র যিহোশূয় মহাযাজকের আত্মাকে এবং লোকদের সমস্ত অবশিষ্টাংশের আত্মাকে উত্তেজিত করিলেন; তাঁহারা আসিয়া আপনাদের ঈশ্বর বাহিনীগণের সদাপ্রভুর গৃহে কার্য্য করিতে লাগিলেন; ইহা দারিয়াবস রাজার দ্বিতীয় বৎসরের ষষ্ঠ মাসের চতুর্ব্বিংশ দিনে ঘটিল। সপ্তম মাসের একবিংশ দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য হগয় ভাববাদী দ্বারা উপস্থিত হইল, তুমি এখন শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল নামক যিহূদার অধ্যক্ষকে, যিহোষাদকের পুত্র যিহোশূয় মহাযাজককে ও লোকদের অবশিষ্টাংশকে এই কথা বল, তোমাদের মধ্যে অবশিষ্ট এমন কে আছে যে, পূর্ব্বপ্রতাপের অবস্থায় এই গৃহ দেখিয়াছিল? আর এখন তোমরা ইহা কি অবস্থায় দেখিতেছ? ইহা কি তোমাদের দৃষ্টিতে অবস্তুবৎ নহে? কিন্তু এখন, হে সরুব্বাবিল, তুমি বলবান হও, ইহা সদাপ্রভু বলেন, আর হে যিহোষাদকের পুত্র যিহোশূয় মহাযাজক, তুমি বলবান হও; এবং দেশের সমস্ত লোক, তোমরা বলবান হও, ইহা সদাপ্রভু বলেন, আর কার্য্য কর; কেননা আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। তোমরা যখন মিসর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছিলে, তখন আমি তোমাদের সহিত বাক্য দ্বারা নিয়ম স্থির করিয়াছিলাম; এবং আমার আত্মা তোমাদের মধ্যে অধিষ্ঠান করেন; তোমরা ভয় করিও না। কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আর এক বার, অল্পকালের মধ্যে, আমি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে এবং সমুদ্র ও শুষ্ক ভূমিকে কম্পান্বিত করিব। আর আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। রৌপ্য আমারই, স্বর্ণও আমারই, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। এই গৃহের পূর্ব্ব প্রতাপ অপেক্ষা উত্তর প্রতাপ গুরুতর হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন; আর এই স্থানে আমি শান্তি প্রদান করিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। দারিয়াবসের দ্বিতীয় বৎসরের নবম মাসের চতুর্ব্বিংশ দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য হগয় ভাববাদী দ্বারা উপস্থিত হইল; বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন, তুমি একবার যাজকদিগকে ব্যবস্থার বিষয় জিজ্ঞাসা কর, বল, কেহ যদি আপন বস্ত্রের অঞ্চলে পবিত্র মাংস বহন করে, আর সেই অঞ্চলে রুটী, কি সিদ্ধ শবজি, কি দ্রাক্ষারস, কি তৈল, কি অন্য কোন খাদ্যদ্রব্য স্পর্শ করা হয়, তবে সে দ্রব্য কি পবিত্র হইবে? যাজকগণ উত্তর করিয়া বলিলেন, না। তখন হগয় কহিলেন, শবের স্পর্শে অশুচি কোন লোক যদি ইহার মধ্যে কোন দ্রব্য স্পর্শ করে, তবে তাহা কি অশুচি হইবে? যাজকগণ উত্তর করিয়া বলিলেন, তাহা অশুচি হইবে। তখন হগয় উত্তর করিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু বলেন, আমার সম্মুখে এই বংশ তদ্রূপ ও এই জাতি তদ্রূপ; তাহাদের হস্তের সমস্ত কর্ম্মও তদ্রূপ; এবং ঐ স্থানে তাহারা যাহা উৎসর্গ করে, তাহা অশুচি। এখন, বিনতি করি, অদ্যকার দিনের পূর্ব্বে যত দিন সদাপ্রভুর মন্দিরে প্রস্তরের উপরে প্রস্তর স্থাপিত ছিল না, সেই সকল দিন আলোচনা কর। সেই সকল দিনে তোমাদের মধ্যে কেহ বিংশতি কাঠা শস্যরাশির নিকটে আসিলে কেবল দশ কাঠা হইত, এবং দ্রাক্ষাকুণ্ড হইতে পঞ্চাশ পূরা পরিমাণ দ্রাক্ষারস লইতে আসিলে কেবল বিংশতি পূরা হইত। আমি শস্যের শোষ, ম্লানি, ও শিলাবৃষ্টি দ্বারা তোমাদের হস্তের সমস্ত কার্য্যে তোমাদিগকে আঘাত করিতাম, তথাপি তোমরা আমার প্রতি ফিরিতে না, ইহা সদাপ্রভু বলেন। বিনতি করি, অদ্যকার দিন অবধি, এবং ইহার পরেও আলোচনা কর, নবম মাসের চতুর্ব্বিংশ দিন অবধি, সদাপ্রভুর মন্দিরের ভিত্তিমূল স্থাপনের দিন অবধি, আলোচনা কর। গোলায় কি কিছু বীজ অবশিষ্ট আছে? আর দ্রাক্ষালতা, ডুমুর, দাড়িম্ব এবং জিতবৃক্ষও ফলে নাই। অদ্যাবধি আমি আশীর্ব্বাদ করিব। পরে মাসের চতুর্ব্বিংশ দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য দ্বিতীয় বার হগয়ের নিকটে উপস্থিত হইল; তুমি যিহূদার অধ্যক্ষ সরুব্বাবিলকে এই কথা বল, আমি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে কম্পান্বিত করিব; আর রাজগণের সিংহাসন উল্টাইয়া ফেলিব, জাতিগণের সকল রাজ্যের পরাক্রম নষ্ট করিব, রথ ও রথারোহীদিগকে উল্টাইয়া ফেলিব, এবং অশ্ব ও অশ্বারোহিগণ আপন আপন ভ্রাতার খড়্‌গে পতিত হইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন, সেই দিন, হে শল্টীয়েলের পুত্র, আমার দাস, সরুব্বাবিল, আমি তোমাকে গ্রহণ করিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন; আমি তোমাকে মুদ্রণার্থক অঙ্গুরীয়স্বরূপ রাখিব; কেননা আমি তোমাকে মনোনীত করিয়াছি, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। দারিয়াবসের দ্বিতীয় বৎসরের অষ্টম মাসে সদাপ্রভুর এই বাক্য ইদ্দোর পৌত্র বেরিখিয়ের পুত্র সখরিয় ভাববাদীর নিকটে উপস্থিত হইল। সদাপ্রভু তোমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি অতিশয় ক্রোধাবিষ্ট হইয়াছিলেন। অতএব তুমি এই লোকদিগকে বল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন; তোমরা আমার প্রতি ফির, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন, আমিও তোমাদের প্রতি ফিরিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদের, সদৃশ হইও না, তাহাদিগকে পূর্ব্বকালীন ভাববাদিগণ উচ্চৈঃস্বরে বলিত, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা আপন আপন কুপথ হইতে ও আপন আপন কুকায্য হইতে ফির; কিন্তু তাহারা শুনিত না, আমার কথায় কর্ণপাত করিত না, ইহা সদাপ্রভু বলেন। তোমাদের পিতৃপুরুষেরা কোথায়? এবং ভাববাদিগণ কি নিত্যজীবী? কিন্তু আমি আপন দাস ভাববাদিগণকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলাম, আমার সেই সকল বাক্য ও বিধান কি তোমাদের পিতৃপুরুষদের লাগাল পায় নাই? তখন তাহারা ফিরিয়া আসিয়া কহিল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু আমাদের আচার ও ক্রিয়ানুসারে আমাদের প্রতি যেরূপ ব্যবহার করিতে মনস্থ করিয়াছিলেন, আমাদের প্রতি তদ্রূপ ব্যবহার করিয়াছেন। দারিয়াবসের দ্বিতীয় বৎসরের একাদশ মাসের, অর্থাৎ শবাট মাসের, চতুর্ব্বিংশ দিনে সদাপ্রভুর বাক্য ইদ্দোর পৌত্র বেরিখিয়ের পুত্র সখরিয় ভাববাদীর নিকটে উপস্থিত হইল। তিনি বলিলেন, আমি রাত্রিকালে দর্শন পাইলাম, আর দেখ, রক্তবর্ণ অশ্বে আরোহী এক পুরুষ, তিনি নিম্নভূমিস্থ গুলমেদিবৃক্ষ সকলের মধ্যে দাঁড়াইয়াছিলেন, এবং তাঁহার পশ্চাৎ রক্তবর্ণ, পাণ্ডুর ও শ্বেতবর্ণ কতিপয় অশ্ব ছিল। তখন আমি কহিলাম, হে আমার প্রভু, ইহারা কে? তাহাতে আমার সঙ্গে আলাপকারী দূত আমাকে কহিলেন, ইহারা কে, তাহা আমি তোমাকে জ্ঞাত করিব। আর যে পুরুষ গুলমেদিবৃক্ষ সকলের মধ্যে দাঁড়াইয়াছিলেন, তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু ইহাদিগকে পৃথিবীতে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে পাঠাইয়াছেন। তখন তাহারা উত্তর করিয়া, যিনি গুলমেদিবৃক্ষ সকলের মধ্যে দাঁড়াইছিলেন, সদাপ্রভুর সেই দূতকে কহিল, আমরা পৃথিবীতে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিয়াছি, আর দেখ, সমস্ত পৃথিবী সুস্থির ও বিশ্রান্ত। তখন সদাপ্রভুর দূত কহিলেন, হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, তুমি এই সত্তর বৎসর যাহাদের উপরে ক্রোধাবিষ্ট রহিয়াছ, সেই যিরূশালেমের প্রতি, ও যিহূদার নগর সকলের প্রতি করুণা করিতে কতকাল বিলম্ব করিবে? তখন যে দূত আমার সহিত আলাপ করিতেছিলেন, সদাপ্রভু তাঁহাকে উত্তর দিয়া নানা মঙ্গলকথা, নানা সান্ত্বনাদায়ক কথা কহিলেন। আর যে দূত আমার সহিত আলাপ করিতেছিলেন, তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি ঘোষণা করিয়া বল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলেন, যিরূশালেমের পক্ষে ও সিয়োনের পক্ষে আমি মহা অন্তর্জ্বালায় জ্বালাযুক্ত হইয়াছি। আর নিশ্চিন্ত জাতিগণের প্রতি আমি মহাক্রোধাবিষ্ট হইয়াছি; কেননা আমি যৎকিঞ্চিৎ ক্রোধাবিষ্ট হইলে তাহারা অমঙ্গলার্থে সাহায্য করিল। এই জন্য সদাপ্রভু এই কথা বলেন, আমি করুণা করিয়া যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিলাম; তাহার মধ্যে আমার গৃহ নির্ম্মিত হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন; এবং যিরূশালেমে সূত্রপাত হইবে। তুমি আরও ঘোষণা করিয়া বল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমার নগর সকল পুনর্ব্বার মঙ্গলে আপ্লাবিত হইবে, এবং সদাপ্রভু সিয়োনকে পুনর্ব্বার সান্ত্বনা করিবেন, ও যিরূশালেমকে পুনর্ব্বার মনোনীত করিবেন। পরে আমি চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, চারি শৃঙ্গ। তখন আমার সঙ্গে আলাপকারী দূতকে জিজ্ঞাসা করিলাম, এগুলি কি? তিনি আমাকে কহিলেন, এ সেই সকল শৃঙ্গ, যাহারা যিহূদা, ইস্রায়েল এবং যিরূশালেমকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছে। পরে সদাপ্রভু আমাকে চারি জন কর্ম্মকার দেখাইলেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ইহারা কি করিতে আসিতেছে? তিনি কহিলেন, ঐ শৃঙ্গ সকল যিহূদাকে এমন ছিন্নভিন্ন করিয়াছে যে, কেহই মস্তক তুলিতে পারে নাই; কিন্তু যে জাতিগণ যিহূদা দেশকে ছিন্নভিন্ন করিবার জন্য শৃঙ্গ উঠাইয়াছে, তাহাদিগকে ভয় দেখাইবার জন্য ও তাহাদের শৃঙ্গ সকল নীচে ফেলিয়া দিবার জন্য ইহারা আসিতেছে। পরে আমি চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, পরিমাণরজ্জু হস্তে এক পুরুষ। তখন আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি কোথায় যাইতেছেন? তিনি আমাকে কহিলেন, যিরূশালেম মাপিতে, তাহার প্রস্থ কত ও তাহার দীর্ঘতা কত, তাহা দেখিতে যাইতেছি। আর দেখ, যে দূত আমার সহিত আলাপ করিতেছিলেন, তিনি অগ্রসর হইলেন; আর এক জন দূত তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলেন। তিনি উহাঁকে কহিলেন, তুমি দৌড়িয়া গিয়া যুবককে, বল, যিরূশালেমের মধ্যবর্ত্তী মনুষ্যদের ও পশুদের আধিক্য প্রযুক্ত প্রাচীরবিহীন গ্রাম-সমূহের ন্যায় তাহার বসতি হইবে; কারণ, সদাপ্রভু কহেন, আমিই তাহার চারিদিকে অগ্নিময় প্রাচীরস্বরূপ হইব, এবং আমি তাহার মধ্যবর্ত্তী প্রতাপ স্বরূপ হইব। অহো! অহো! উত্তর দেশ হইতে পলায়ন কর, ইহা সদাপ্রভু কহেন; কেননা আমি তোমাদিগকে আকাশের চারি বায়ুর ন্যায় বিস্তৃত করিয়াছি, ইহা সদাপ্রভু বলেন। অহো সিয়োন, বাবিল-কন্যার সহনিবাসিনি! রক্ষার্থে পলায়ন কর। কারণ বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন; প্রতাপের পরে তিনি আমাকে সেই জাতিগণের কাছে পাঠাইলেন, যাহারা তোমাদিগকে লুট করিয়াছে; কেননা যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে তাঁহার চক্ষুর তারা স্পর্শ করে। কারণ দেখ, আমি তাহাদের উপরে আপন হস্ত চালাইব, তাহাতে তাহারা আপন দাসগণের লুটবস্তু হইবে, আর তোমরা জানিবে যে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুই আমাকে পাঠাইয়াছেন। সিয়োন-কন্যে, আনন্দগান কর, আহ্লাদ কর, কেননা দেখ, আমি আসিতেছি, আর আমি তোমার মধ্যে বাস করিব, ইহা সদাপ্রভু বলেন। সেই দিনে অনেক জাতি সদাপ্রভুতে আসক্ত হইবে, আমার প্রজা হইবে; এবং আমি তোমার মধ্যে বাস করিব, তাহাতে তুমি জানিবে যে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুই আমাকে তোমার নিকটে পাঠাইয়াছেন। আর সদাপ্রভু পবিত্র দেশে আপনার অংশ বলিয়া যিহূদাকে অধিকার করিবেন ও যিরূশালেমকে আবার মনোনীত করিবেন। সদাপ্রভুর সাক্ষাতে প্রাণীমাত্র নীরব হও, কেননা তিনি আপন পবিত্র আবাসের মধ্য হইতে জাগিয়া উঠিয়াছেন। পরে তিনি আমাকে যিহোশূয় মহাযাজককে দেখাইলেন; ইনি সদাপ্রভুর দূতের সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলেন, আর তাঁহার বিপক্ষতা করিবার জন্য শয়তান [বিপক্ষ] তাঁহার দক্ষিণে দাঁড়াইয়াছিল। তখন সদাপ্রভু শয়তানকে কহিলেন, শয়তান, সদাপ্রভু তোমাকে ভৎসনা করুন; হাঁ, যিনি যিরূশালেমকে মনোনীত করিয়াছেন, সেই সদাপ্রভু তোমাকে ভৎসনা করুন; এই ব্যক্তি কি অগ্নি হইতে উদ্ধৃত অদ্ধদগ্ধ কাষ্ঠস্বরূপ নয়? তখন যিহোশূয় মলিন বস্ত্রপরিহিত হইয়াই দূতের সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলেন। তাহাতে সেই দূত আপনার সম্মুখে দণ্ডায়মান ব্যক্তিদিগকে কহিলেন, ইহাঁর গাত্র হইতে ঐ মলিন বস্ত্র সকল খুলিয়া ফেল। পরে তিনি তাঁহাকে কহিলেন, দেখ, আমি তোমার অপরাধ তোমা হইতে দূর করিয়া দিয়াছি, ও তোমাকে শুভ্র বস্ত্র পরিহিত করিব। তখন আমি কহিলাম, ইহাঁর মস্তকে শুচি উষ্ণীষ দিতে আজ্ঞা হউক। তখন তাঁহার মস্তকে শুচি উষ্ণীষ দেওয়া হইল, এবং তাঁহাকে বস্ত্র পরিধান করান হইল; আর সদাপ্রভুর দূত নিকটে দাঁড়াইয়া রহিলেন। পরে সদাপ্রভুর দূত যিহোশূয়কে দৃঢ়রূপে কহিলেন, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি যদি আমার পথে চল, ও আমার রক্ষণীয়-দ্রব্য রক্ষা কর, তবে তুমিও আমার বাটীর বিচার করিবে, এবং আমার প্রাঙ্গণের রক্ষকও হইবে, আর এই যাহারা দাঁড়াইয়া আছে, আমি তোমাকে ইহাদের মধ্যে গমনাগমন করিবার অধিকার দিব। যে যিহোশূয় মহাযাজক, তুমি শুন, এবং তোমার সম্মুখে উপবিষ্ট তোমার সখাগণও শুনুক, কেননা তাহারা অদ্ভুত লক্ষণস্বরূপ লোক; কারণ দেখ, আমি আপন দাস পল্লবকে আনয়ন করিব। দেখ, যিহোশূয়ের সম্মুখে আমি এই প্রস্তর স্থাপন করিয়াছি; এক প্রস্তরের উপরে সাত চক্ষু আছে; দেখ, আমি তাহার মুদ্রা খুদিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন; এবং আমি এক দিনে সেই দেশের অপরাধ দূর করিব। বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন, সেই দিন তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীকে দ্রাক্ষালতার তলে ও ডুমুরবৃক্ষের তলে নিমন্ত্রণ করিবে। পরে যে দূত আমার সহিত আলাপ করিতেছিলেন, তিনি পুনরায় আসিয়া আমাকে নিদ্রা হইতে জাগরিত মনুষ্যের ন্যায় জাগাইলেন। আর তিনি আমাকে কহিলেন, কি দেখিতেছ? আমি কহিলাম, আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, এক দীপবৃক্ষ, সমস্তই স্বর্ণময়; তাহার মাথার ঊর্দ্ধে তৈলাধার, ও তাহার উপরে সাত প্রদীপ, এবং তাহার মাথার উপরে স্থিত প্রত্যেক প্রদীপের জন্য সাত নল; তাহার নিকটে দুই জিতবৃক্ষ, একটী তৈলাধারের দক্ষিণে ও একটী তাহার বামে। তখন যে দূত আমার সঙ্গে আলাপ করিতেছিলেন, আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, হে আমার প্রভু, এই সকল কি? তাহাতে যে দূত আমার সঙ্গে আলাপ করিতেছিলেন, তিনি উত্তর করিয়া আমাকে কহিলেন, এই সকল কি তাহা কি জান না? আমি কহিলাম, হে আমার প্রভু জানি না। তখন তিনি উত্তর করিয়া আমাকে কহিলেন, এ সরুব্বাবিলের প্রতি সদাপ্রভুর বাক্য, ‘পরাক্রম দ্বারা নয়, বল দ্বারাও নয়, কিন্তু আমার আত্মা দ্বারা,’ ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। হে বৃহৎ পর্ব্বত, তুমি কে? সরুব্বাবিলের সম্মুখে তুমি সমভূমি হইবে, এবং ‘প্রীতি, প্রীতি, ইহার প্রতি,’ এই হর্ষধ্বনির সহিত সে মস্তকস্বরূপ প্রস্তরখানি বাহির করিয়া আনিবে। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে উপস্থিত হইল, সরুব্বাবিলের হস্ত এই গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছে, আবার তাহারই হস্ত ইহা সমাপ্ত করিবে; তাহাতে তুমি জানিবে যে বাহিনীগণের সদাপ্রভুই তোমাদের নিকটে আমাকে পাঠাইয়াছেন। কারণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের দিনকে কে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়াছে? সরুব্বাবিলের হস্তে ওলোন দেখিয়া ঐ সপ্তটি ত আনন্দ করিবে; ইহারা সদাপ্রভুর চক্ষু, ইহারা সমস্ত পৃথিবী পর্য্যটন করে। পরে আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, দীপবৃক্ষটীর দক্ষিণে ও বামে দুই দিকে স্থিত ঐ দুই জিতবৃক্ষের তাৎপর্য্য কি? দ্বিতীয় বার তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, স্বর্ণময় যে দুই নল আপনা হইতে স্বর্ণবর্ণ তৈল নির্গত করে, তৎপার্শ্বে জিতফলের এই যে দুইটী শাখা আছে, ইহার তাৎপর্য্য কি? তিনি আমাকে উত্তর করিয়া কহিলেন, এ সকল কি, তাহা কি জান না? আমি কহিলাম, হে আমার প্রভু, জানি না। তখন তিনি কহিলেন, উঁহারা সেই দুই তৈল-কুমার, যাঁহারা সমস্ত ভূমণ্ডলের প্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া থাকেন। পরে আমি আবার চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, একখানি জড়ান পত্র উড়িতেছে। তখন তিনি আমাকে কহিলেন, কি দেখিতেছ? আমি উত্তর করিলাম, একখানি জড়ান পত্র উড়িতে দেখিতেছি; তাহা বিংশতি হস্ত দীর্ঘ ও দশ হস্ত প্রস্থ। তিনি আমাকে কহিলেন, উহা সমস্ত দেশের উপরে নির্গত অভিশাপ; বস্তুতঃ যে কেহ চুরি করে, সে উহার এক পৃষ্ঠের বিধান অনুসারে উচ্ছিন্ন হইবে, এবং যে কেহ শপথ করে, সে উহার অন্য পৃষ্ঠের বিধান অনুসারে উচ্ছিন্ন হইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, আমি উহাকে বাহির করিয়া আনিব, উহা চোরের বাটীতে ও আমার নামে মিথ্যা শপথকারীর বাটীতে প্রবেশ করিবে, এবং তাহার বাটীর মধ্যে অবস্থিতি করিয়া কাষ্ঠ ও প্রস্তরশুদ্ধ বাটী বিনাশ করিবে। পরে যে দূত আমার সহিত আলাপ করিতেছিলেন, তিনি বাহিরে আসিয়া আমাকে কহিলেন, তুমি চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ কি বাহির হইতেছে? তখন আমি জিজ্ঞাসা করিলাম ও কি? তিনি কহিলেন, ওটী ঐফাপাত্র বাহির হইতেছে; আরও কহিলেন, ওটী সমস্ত দেশে তাহাদের অধর্ম্ম । আর দেখ, এক মণ সীসা উত্থাপিত হইল, আর ঐফার মধ্যে এক স্ত্রী বসিয়া আছে। তিনি কহিলেন, এ দুষ্টতা। পরে তিনি ঐ স্ত্রীকে ঐফার মধ্যে ফেলিয়া দিয়া তাহার মুখে সেই সীসার ঢাকনী দিলেন। তখন আমি চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, দুই স্ত্রী বাহির হইয়া আসিল; তাহাদের পক্ষপুটে বায়ু ছিল; আর হাড়গিলার পক্ষের ন্যায় তাহাদের পক্ষ ছিল, তাহারা পৃথিবীর ও আকাশের মধ্যপথে সেই ঐফা উঠাইয়া লইয়া গেল। তখন, যে দূত আমার সহিত আলাপ করিতেছিলেন, আমি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, উহারা ঐফা কোথায় লইয়া যাইতেছে? তিনি আমাকে কহিলেন, ইহারা শিনিয়র দেশে উহার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিবে; তাহা প্রস্তুত হইলে তথায় উহাকে আপন স্থানে স্থাপন করা যাইবে। পরে আমি পুনর্ব্বার চক্ষু তুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, দুই পর্ব্বতের মধ্য হইতে চারি রথ বাহির হইল; সেই দুই পর্ব্বত পিত্তলের পর্ব্বত। প্রথম রথে রক্তবর্ণ অশ্বগণ, দ্বিতীয় রথে কৃষ্ণবর্ণ অশ্বগণ, তৃতীয় রথে শ্বেতবর্ণ অশ্বগণ, ও চতুর্থ রথে বিন্দুচিত্রিত বলবান অশ্বগণ ছিল। তখন, যে দূত আমার সহিত আলাপ করিতেছিলেন, আমি তাঁহাকে কহিলাম, হে আমার প্রভু, এ সকল কি? সে দূত উত্তর করিয়া আমাকে কহিলেন, ইহাঁরা স্বর্গের চারি বায়ু, সমস্ত পৃথিবীর প্রভুর সাক্ষাতে দাঁড়াইয়া থাকিবার পরে বাহির হইয়া আসিতেছেন। যে রথে কৃষ্ণবর্ণ অশ্বগণ আছে, তাহা উত্তর দেশে যাইতেছে; ও শ্বেতবর্ণ অশ্বগণ তাহাদের পশ্চাতে পশ্চাতে চলিল, এবং বিন্দুচিত্রিত অশ্বগণ দক্ষিণ দেশে চলিল। আর বলবান অশ্বগণ চলিল, এবং পৃথিবীতে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিবার অনুমতি প্রার্থনা করিল; তাহাতে তিনি কহিলেন, চলিয়া যাও, পৃথিবীতে ইতস্ততঃ ভ্রমণ কর; তাহাতে তাহারা পৃথিবীতে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিল। তখন তিনি আমাকে ডাকিয়া কহিলেন, দেখ, যাহারা উত্তর দেশে যাইতেছে, তাহারা উত্তর দেশে আমার আত্মাকে সুস্থির করিয়াছে। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি নির্ব্বাসিত লোকদের কাছে, অর্থাৎ হিল্‌দয়, টোবিয় ও যিদায়ের কাছে [রৌপ্য ও স্বর্ণ] গ্রহণ কর; সেই দিন যাও, সফনিয়ের পুত্র যোশিয়ের বাটীতে গমন কর, বাবিল হইতে তাহারা তথায় আসিয়াছে; তুমি রৌপ্য ও স্বর্ণ গ্রহণ করিয়া মুকুট নির্ম্মাণ কর, এবং যিহোষাদকের পুত্র যিহোশূয় মহাযাজকের মস্তকে দেও। আর তাহাকে বল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, সেই পুরুষ, যাঁহার নাম ‘পল্লব,’ তিনি আপন স্থানে পল্লবের ন্যায় বৃদ্ধি পাইবেন, এবং সদাপ্রভুর মন্দির গাঁথিবেন; হাঁ, তিনিই সদাপ্রভুর মন্দির গাঁথিবেন, তিনিই প্রভা ধারণ করিবেন, আপন সিংহাসনে বসিয়া কর্ত্তৃত্ব করিবেন, এবং আপন সিংহাসনের উপরে উপবিষ্ট যাজক হইবেন, তাহাতে এই দুইয়ের মধ্যে শান্তির মন্ত্রণা থাকিবে। পরন্তু হেলেমের, টোবিয়ের ও যিদায়ের নিমিত্ত, এবং সফনিয়ের পুত্রের সৌজন্যের নিমিত্ত, এই মুকুট স্মরণার্থে সদাপ্রভুর মন্দিরে থাকিবে। আর দূরস্থ লোকেরা আসিয়া সদাপ্রভুর মন্দির-নির্ম্মাণে সাহায্য করিবে; আর তোমরা জানিবে যে, বাহিনীগণের সদাপ্রভুই তোমাদের কাছে আমাকে পাঠাইয়াছেন। তোমরা যদি যত্নপূর্ব্বক আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাক্যে মনোযোগ কর, তবে ইহা সিদ্ধ হইবে। আর দারিয়াবস রাজার চতুর্থ বৎসরে কিষ্‌লেব নামক নবম মাসের চতুর্থ দিনে সদাপ্রভুর বাক্য সখরিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল। তৎকালে বৈথেলের লোকেরা শরেৎসরকে, রেগম্মেলককে ও তাহাদের লোকদিগকে সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিতে প্রেরণ করিল, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর গৃহের যাজকদিগকে এবং ভাববাদিগণকে জিজ্ঞাসা করিতে পাঠাইল যে, আমি এত বৎসর যেরূপ করিতেছি, তদ্রূপ পঞ্চম মাসে আপনাকে পৃথক্‌ করিয়া কি বিলাপ করিব? তখন বাহিনীগণের সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, তুমি দেশের সকল লোককে ও যাজকগণকে এই কথা বল, তোমরা এই সত্তর বৎসর কাল পঞ্চম ও সপ্তম মাসে যখন উপবাস ও বিলাপ করিয়াছ, তখন তাহা কি আমার, আমারই উদ্দেশে করিয়াছ? আর যখন ভোজন কর ও পান কর, তখন কি আপনারাই ভোজন ও আপনারাই পান কর না? যিরূশালেম ও তাহার চারিদিকের নগর সকল যখন বসতিবিশিষ্ট ও কুশলবিশিষ্ট ছিল, এবং দক্ষিণ দেশ ও নিম্নভূমি যখন বসতিবিশিষ্ট ছিল, তৎকালে সদাপ্রভু পূর্ব্বকার ভাববাদিগণ দ্বারা যে সকল কথা ঘোষণা করিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা শুনিবে না? আর সদাপ্রভুর এই বাক্য সখরিয়ের নিকটে উপস্থিত হইল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছেন, তোমরা যথার্থ বিচার কর, এবং প্রত্যেকে আপন আপন ভ্রাতার সহিত সদয় ও করুণ ব্যবহার কর; এবং বিধবা, পিতৃহীন, বিদেশী ও দুঃখী লোকদের প্রতি উপদ্রব করিও না, এবং তোমরা কেহ মনে মনে আপন ভ্রাতার অনিষ্ট চিন্তা করিও না। কিন্তু তাহারা কর্ণপাত করিতে অসম্মত হইয়া ঘাড় ফিরাইত, এবং যেন শুনিতে না পায়, সেই জন্য আপন আপন কর্ণ ভারী করিত। হাঁ, তাহারা আপন আপন অন্তঃকরণ হীরকের ন্যায় কঠিন করিত, যেন ব্যবস্থা শুনিতে না হয়, এবং বাহিনীগণের সদাপ্রভু আপনার আত্মা দ্বারা পূর্ব্বকার ভাববাদিগণের হস্তে যে সকল বাক্য প্রেরণ করিতেন, তাহাও শুনিতে না হয়; এই জন্য বাহিনীগণের সদাপ্রভু হইতে মহাক্রোধ উপস্থিত হইল। তখন তিনি ডাকিলে তাহারা যেমন শুনিত না, তদনুসারে বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহিলেন, তাহারা ডাকিলে আমিও শুনিব না; আর আমি ঘূর্ণ্যবায়ু দ্বারা তাহাদিগকে অপরিচিত সর্ব্বজাতির মধ্যে ছিন্নভিন্ন করিব। এইরূপে তাহাদের পরে দেশ এমন ধ্বংসিত হইয়াছে যে, তাহা দিয়া কেহ গমনাগমন করে নাই। এইরূপে তাহারা মনোরম্য দেশকে ধ্বংসস্থান করিয়াছিল। পরে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি মহৎ অন্তর্জ্বালায় সিয়োনের জন্য জ্বলিয়াছি, আর আমি তাহার জন্য মহাক্রোধে জ্বলিয়াছি। সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি সিয়োনে ফিরিয়া আসিয়াছি, আমি যিরূশালেমের মধ্যে বাস করিব; আর যিরূশালেম সত্যপুরী নামে, এবং বাহিনীগণের সদাপ্রভুর পর্ব্বত পবিত্র পর্ব্বত নামে আখ্যাত হইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, যাহারা অধিক বয়স প্রযুক্ত প্রত্যেকে লাঠি হাতে করে, এমন প্রাচীনেরা ও প্রাচীনারা পুনর্ব্বার যিরূশালেমের চকে বসিবে। আর চকে ক্রীড়া করে, এমন বালক বালিকাতে নগরের চক সকল পরিপূর্ণ হইবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, এই লোকদের অবশিষ্টাংশের দৃষ্টিতে তাহা যদি তৎকালে অসম্ভব বোধ হয়, তবে কি আমার দৃষ্টিতেও অসম্ভব বোধ হইবে? ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি পূর্ব্ব দেশ হইতে ও পশ্চিম দেশ হইতে আপন প্রজাদিগকে নিস্তার করিব; আর আমি তাহাদিগকে আনিব, তাহাতে তাহারা যিরূশালেমের মধ্যে বাস করিবে; এবং সত্যে ও ধার্ম্মিকতায় তাহারা আমার প্রজা হইবে, ও আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, বাহিনীগণের সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপনকালীন ভাববাদীদের মুখে এই বর্ত্তমান কালে এই সকল কথা শুনিতে পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদের হস্ত সবল হউক; মন্দির নির্ম্মিত হইবে। বস্তুতঃ সেই দিনের পূর্ব্বে মনুষ্যের বেতন ছিল না, পশুর ভাড়াও ছিল না; এবং যে কেহ ভিতরে আসিত কিম্বা বাহিরে যাইত, বিপক্ষ লোকের জন্য তাহার কিছুই শান্তি হইত না; আর আমি প্রত্যেক জনকে আপন আপন প্রতিবাসীর বিপক্ষে প্রেরণ করিতাম। কিন্তু এখন আমি এই লোকদের অবশিষ্টাংশের প্রতি পূর্ব্বকার দিন-সমূহের ন্যায় ব্যবহার করিব না, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন। কেননা শান্তিযুক্ত বীজ হইবে, দ্রাক্ষালতা ফলবতী হইবে, ভূমি আপন শস্য উৎপন্ন করিবে; ও আকাশ আপন শিশির দান করিবে; আর আমি এই লোকদের অবশিষ্টাংশকে এই সকলের অধিকারী করিব। আর হে যিহূদা-কুল ও ইস্রায়েল-কুল, জাতিগণের মধ্যে তোমরা যেমন অভিশাপস্বরূপ ছিলে, তেমনি আমি তোমাদিগকে নিস্তার করিব, আর তোমরা আশীর্ব্বাদস্বরূপ হইবে; ভয় করিও না; তোমাদের হস্ত সবল হউক। কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমাকে ক্রুদ্ধ করাতে আমি যেমন তোমাদের অমঙ্গল সাধনের সঙ্কল্প করিলাম, অনুশোচনা করিলাম না, বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, তেমনি ফিরিয়া এই সময়ে যিরূশালেমের ও যিহূদা-কুলের মঙ্গল সাধনের সঙ্কল্প করিলাম; তোমরা ভয় করিও না। তোমরা এই সকল কার্য্য করিও, আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলিও, তোমাদের নগর-দ্বারে সত্য ও শান্তিজনক বিচার করিও। আর মনে মনে আপন আপন প্রতিবাসীর অনিষ্ট চিন্তা করিও না, এবং মিথ্যা দিব্য ভালবাসিও না; কেননা এই সকল আমি ঘৃণা করি, ইহা সদাপ্রভু বলেন। পরে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও দশম মাসের যে সকল উপবাস, সে সকল যিহূদা-কুলের জন্য আনন্দ, আমোদ এবং মঙ্গলোৎসব হইয়া উঠিবে; অতএব তোমরা সত্য ও শান্তি ভালবাসিও। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইহার পরে নানা জাতি এবং অনেক নগরের নিবাসীরা আসিবে। এক নগরের নিবাসীরা অন্য নগরে গিয়া এই কথা বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিতে ও বাহিনীগণের সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে শীঘ্র যাই; আমিও যাইব। আর অনেক দেশের লোক ও বলবান জাতিগণ বাহিনীগণের সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিতে ও সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিতে যিরূশালেমে আসিবে। বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তৎকালে জাতিগণের সর্ব্ব ভাষাবাদী দশ দশ পুরুষ এক এক যিহূদী পুরুষের বস্ত্রের অঞ্চল ধরিয়া এই কথা কহিবে, আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী। হদ্রক দেশের উপরে সদাপ্রভুর বাক্যের ভারবাণী, এবং দম্মেশক তাহার অবস্থিতি-স্থান; কেননা সদাপ্রভুর চক্ষু মনুষ্যের এবং সমস্ত ইস্রায়েল-বংশের প্রতি রহিয়াছে । আর তাহার পার্শ্বে স্থিত হমাৎ এবং প্রচুর জ্ঞানবিশিষ্ট সোব ও সীদোনও তাহার ভাগী হইবে। সোর আপনার জন্য দৃঢ় দুর্গ নির্ম্মাণ করিয়াছে, এবং ধূলার ন্যায় রৌপ্য ও পথের কদ্দমের ন্যায় উত্তম স্বর্ণ সঞ্চয় করিয়াছে। দেখ, প্রভু তাহাকে অধিকারচ্যুত করিবেন, ও সমুদ্রে তাহার বলে আঘাত করিবেন, এবং সে অগ্নিভক্ষিত হইবে। তাহা দেখিয়া অস্কিলোন ভয় পাইবে, ঘসাও দেখিয়া অতিশয় ব্যথিত হইবে, এবং ইক্রোণও তদ্রূপ হইবে, কেননা তাহার আশাভূমি লজ্জিত হইবে, ঘসা হইতে রাজা উচ্ছিন্ন হইবে, ও অস্কিলোনে বসতি থাকিবে না। আর অস্‌দোদে জারজ বংশ বাস করিবে, এবং আমি পলেষ্টীয়দের দর্প চূর্ণ করিব। আর আমি তাহার মুখ হইতে তাহার পেয় রক্ত, ও দন্তের মধ্য হইতে তাহার জঘন্য বস্তু সকল অপসারণ করিব; আর সে অবশিষ্ট থাকিয়া আপনিও আমাদের ঈশ্বরের লোক হইবে; সে যিহূদার মধ্যে অধ্যক্ষতুল্য হইবে, এবং ইক্রোণ যিবূষীয়ের তুল্য হইবে। আর আমি সৈন্যসামন্তের বিরুদ্ধে আপন কুলের চারিদিকে শিবির স্থাপন করিব, যেন কেহ গমনাগমন না করে; তাহাতে কোন প্রজাপীড়নকারী আর তাহাদের নিকট দিয়া যাইবে না; কারণ এখন আমি স্বচক্ষে দেখিলাম। হে সিয়োন-কন্যা অতিশয় উল্লাস কর; হে যিরূশালেম-কন্যা, জয়ধ্বনি কর। দেখ, তোমার রাজা তোমার কাছে আসিতেছেন; তিনি ধর্ম্মময় ও পরিত্রাণযুক্ত, তিনি নম্র ও গর্দ্দভে উপবিষ্ট, গর্দ্দভীর শাবকে উপবিষ্ট। আর আমি ইফ্রয়িম হইতে রথ ও যিরূশালেম হইতে অশ্ব উচ্ছিন্ন করিব, আর যুদ্ধ-ধনু উচ্ছিন্ন হইবে; এবং তিনি জাতিদিগকে শান্তির কথা কহিবেন; আর তাঁহার কর্ত্তৃত্ব এক সমুদ্র অবধি অপর সমুদ্র পর্য্যন্ত, ও নদী অবধি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত ব্যাপিবে। আর তোমার বিষয়ে বলিতেছি, তোমার নিয়মের রক্ত প্রযুক্ত আমি তোমার বন্দিদিগকে সেই নির্জল কূপের মধ্য হইতে মুক্ত করিয়াছি। হে আশার বন্দিগণ, তোমরা ফিরিয়া দৃঢ় দুর্গে আইস; আমি অদ্যই অঙ্গীকার করিতেছি, আমি তোমাকে দ্বিগুণ অংশ দিব। কারণ আমি আপনার জন্য যিহূদাকে ধনুরূপে আকর্ষণ করিয়াছি, বাণরূপে ইফ্রয়িমকে সন্ধান করিয়াছি; আর হে সিয়োন, আমি তোমার সন্তানদিগকে, হে যবন তোমার সন্তানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিব, ও তোমাকে বীরের খড়্‌গস্বরূপ করিব। আর সদাপ্রভু তাহাদের ঊর্দ্ধে দর্শন দিবেন, ও তাঁহার বাণ বিদ্যুতের ন্যায় নির্গত হইবে; এবং প্রভু সদাপ্রভু তূরী বাজাইবেন, আর দক্ষিণের ঘূর্ণ্যবায়ু সহকারে গমন করিবেন। বাহিনীগণের সদাপ্রভু তাহাদিগকে রক্ষা করিবেন, তাহাতে তাহারা গ্রাস করিবে, ও ফিঙ্গার প্রস্তর সকল পদতলে দলিত করিবে; আর তাহারা পান করিবে, এবং দ্রাক্ষারসে মত্ত লোকের ন্যায় শব্দ করিবে; আর তাহারা বৃহৎ পানপাত্রের ন্যায় পূর্ণ হইবে, যজ্ঞবেদির কোণের ন্যায় হইবে। আর সেই দিন তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহাদিগকে আপন প্রজারূপ মেষপালের ন্যায় নিস্তার করিবেন, বস্তুতঃ তাহারা মুকুটস্থ মণির ন্যায় তাঁহার দেশের উপরে চাক্‌চিক্যবিশিষ্ট হইবে। আঃ! তাহাদের কেমন মঙ্গল ও কেমন শোভা! শস্য যুবকদিগকে ও নূতন দ্রাক্ষারস যুবতীদিগকে সতেজ করিবে। তোমরা শেষ বর্ষার সময়ে সদাপ্রভুর কাছে বৃষ্টি যাচ্ঞা কর; সদাপ্রভু বিদ্যুতের উৎপাদক। তিনি লোকদিগকে প্রচুর বৃষ্টি দিবেন, প্রত্যেক জনের ক্ষেত্রে তৃণ দিবেন। কেননা ঠাকুরগণ অসারতার কথা বলিয়াছে, মন্ত্রপাঠকেরা মিথ্যা দর্শন পাইয়াছে, ও মিথ্যা স্বপ্নের কথা বলিয়াছে; তাহারা বৃথাই সান্ত্বনা দেয়; এই কারণ লোকেরা মেষপালের ন্যায় চলিয়া যায় ও দুঃখ পায়, কেননা পালক নাই। পালকদের প্রতি আমার ক্রোধ প্রজ্বলিত হইতেছে, আর আমি ছাগদিগকে প্রতিফল দিব; কারণ বাহিনীগণের সদাপ্রভু আপন পাল যিহূদা-কুলের তত্ত্বাবধান করিয়াছেন, এবং তাহাকে আপনার সতেজ যুদ্ধাশ্বের ন্যায় করিবেন। তাহা হইতে কোণের প্রস্তর, তাহা হইতে গোঁজ, তাহা হইতে যুদ্ধ-ধনু, তাহা হইতে সমুদয় শাসনকর্ত্তা উৎপন্ন হইবে। বীরগণের ন্যায় তাহারা যুদ্ধে [শত্রুদিগকে] পথের কর্দ্দমে মর্দ্দন করিবে; তাহারা যুদ্ধ করিবে, কেননা সদাপ্রভু তাহাদের সহবর্ত্তী; আর অশ্বারোহিগণ লজ্জিত হইবে। আর আমি যিহূদা-কুলকে বিক্রমী করিব, যোষেফ-কুলকে ত্রাণপ্রাপ্ত করিব, এবং তাহাদিগকে ফিরাইয়া আনিব, কেননা তাহাদের প্রতি আমার করুণা আছে, এবং তাহারা এমন হইবে, যেন আমি তাহাদিগকে পরিত্যাগ করি নাই; কারণ আমিই তাহাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আর আমি তাহাদিগকে প্রার্থনার উত্তর দিব। আর ইফ্রয়িম বীরের তুল্য হইবে, এবং দ্রাক্ষারস দ্বারা যেমন আনন্দ হয়, তাহাদের অন্তঃকরণ তেমনি আনন্দ করিবে; তাহাদের সন্তানগণ দেখিবে ও আহ্লাদিত হইবে, তাহাদের অন্তঃকরণ সদাপ্রভুতে উল্লাস করিবে। আমি শিশ দিয়া তাহাদিগকে ডাকিব, তাহাদিগকে একত্র করিব, কারণ আমি তাহাদিগকে মুক্ত করিয়াছি, এবং তাহারা যেমন বহুবংশ ছিল, তেমনি বহুবংশ হইবে। আর আমি জাতিগণের মধ্যে তাহাদিগকে বপন করিব; তাহারা নানা দূর দেশে আমাকে স্মরণ করিবে; আর তাহারা আপন আপন সন্তানগণসহ জীবিত থাকিবে ও ফিরিয়া আসিবে। আমি তাহাদিগকে মিসর দেশ হইতে ফিরাইয়া আনিব, অশূর হইতে সংগ্রহ করিব; আমি তাহাদিগকে গিলিয়দ দেশে ও লিবানোনে আনিব, আর তাহাদের স্থানের অকুলান হইবে। আর তিনি সঙ্কট-সাগর দিয়া যাইবেন, তরঙ্গময় সমুদ্রকে প্রহার করিবেন, তাহাতে নীল নদের সকল গভীর স্থান শুষ্ক হইবে, অশূরের গর্ব্ব খর্ব্ব হইবে, ও মিসরের রাজদণ্ড দূরীকৃত হইবে। আর আমি তাহাদিগকে সদাপ্রভুতে বিক্রমী করিব, এবং তাহারা তাঁহার নামে গমনাগমন করিবে, ইহা সদাপ্রভু বলেন। হে লিবানোন, তোমার কবাট সকল খুলিয়া দেও, অগ্নি তোমার এরসবৃক্ষ সকল গ্রাস করুক। হে দেবদারু, হাহাকার কর, কেননা এরসবৃক্ষ পতিত, তরুরাজ সকল নষ্ট হইল; হে বাশনের অলোনবৃক্ষ সকল হাহাকার কর, কেননা দুর্গম বন ভূমিসাৎ হইল। মেষপালকদের হাহাকার-ধ্বনি! কারণ তাহাদের গৌরব নষ্ট হইল; যুবাসিংহদের গর্জ্জন-ধ্বনি! কেননা যর্দ্দনের শোভাস্থান নষ্ট হইল। আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহিলেন, তুমি এই বধ্য মেষপাল চরাও; তাহাদের অধিকারিগণ তাহাদিগকে বধ করে, তথাপি আপনাদিগকে দোষী মনে করে না; এবং তাহাদের বিক্রয়কারীরা প্রত্যেক জন বলে, ধন্য সদাপ্রভু, আমি ধনী হইলাম; এবং তাহাদের পালকগণ তাহাদের প্রতি দয়ার্দ্র হয় না। কারণ, সদাপ্রভু কহেন, আমি দেশ নিবাসীদের প্রতি আর দয়ার্দ্র হইব না, কিন্তু দেখ, আমি মনুষ্যদের মধ্যে প্রত্যেক জনকে তাহার প্রতিবাসীর হস্তে ও তাহার রাজার হস্তে সমর্পণ করিব; তাহারা দেশকে চূর্ণ করিবে, আর আমি তাহাদের হস্ত হইতে কাহাকেও উদ্ধার করিব না। তখন আমি সেই বধ্য মেষপালকে, সত্য, সেই দুঃখী মেষদিগকে চরাইতে লাগিলাম। আর আমি আপনার জন্য দুইটী পাঁচনী লইলাম; তাহার একটীর নাম প্রসন্নতা, অন্যটীর নাম ঐক্যবন্ধন রাখিলাম; আর আমি সেই মেষপাল চরাইলাম। আর আমি এক মাসের মধ্যে তাহার তিন জন পালককে উচ্ছিন্ন করিলাম; কারণ আমার প্রাণ তাহাদের প্রতি অসহিষ্ণু হইল, এবং তাহাদের প্রাণও আমাকে ঘৃণা করিল। তখন আমি কহিলাম, আমি তোমাদিগকে চরাইব না; যে মরে সে মরুক, ও যে উচ্ছিন্ন হয় সে উচ্ছিন্ন হউক, এবং অবশিষ্ট লোকেরা এক জন অন্যের মাংস গ্রাস করুক। পরে আমি প্রসন্নতা নামক আমার পাঁচনী লইলাম, তাহা খণ্ড খণ্ড করিলাম, যেন সর্ব্বজাতির সহিত কৃত আমার নিয়ম ভঙ্গ করি। আর সেই দিন তাহা ভগ্ন হইল, তাই পালের মধ্যে যে সকল দুঃখী আমাতে মনোযোগ করিত, তাহারা জ্ঞাত হইল যে, ইহা সদাপ্রভুর বাক্য। তখন আমি তাহাদিগকে কহিলাম, যদি তোমাদের ভাল বোধ হয়, তবে আমার বেতন দেও, নতুবা ক্ষান্ত হও। অতএব তাহারা আমার বেতন বলিয়া ত্রিশ রৌপ্য মুদ্রা তৌল করিয়া দিল। তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উহা কুম্ভকারের কাছে ফেলিয়া দেও, বিলক্ষণ মূল্য, উহাদের বিচারে আমি এইরূপ মূল্যবান্‌; আর আমি সেই ত্রিশ রৌপ্য মুদ্রা লইয়া সদাপ্রভুর গৃহে কুম্ভকারের কাছে ফেলিয়া দিলাম। পরে ঐক্য বন্ধন নামক আমার অন্য পাঁচনী খণ্ড খণ্ড করিলাম, যেন যিহূদার ও ইস্রায়েলের ভ্রাতৃভাব ভঞ্জন করি। পরে সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, এবার তুমি এক নির্ব্বোধ মেষপালকের দ্রব্য গ্রহণ কর। কেননা দেখ, আমি দেশে এমন এক মেষপালককে উঠাইব, যে উচ্ছিন্ন লোকদের তত্ত্বাবধান করিবে না, ছিন্নভিন্নদিগের অন্বেষণ করিবে না, ভগ্নাঙ্গকে সুস্থ করিবে না, সুস্থিরেরও ভরণপোষণ করিবে না, কিন্তু হৃষ্টপুষ্ট মেষদের মাংস খাইবে, এবং তাহাদের খুর ছিঁড়িবে। ধিক্‌ সেই অকর্ম্মণ্য পালককে, যে পাল ত্যাগ করে! তাহার বাহুতে ও দক্ষিণ চক্ষুতে খড়্‌গ পড়িবে; তাহার বাহু নিতান্তই শুষ্ক হইয়া যাইবে, ও তাহার দক্ষিণ চক্ষু নিতান্তই অন্ধীভূত হইবে। ইস্রায়েলের বিষয়ে সদাপ্রভুর বাক্যরূপ ভারবাণী। আকাশমণ্ডলের বিস্তারকর্ত্তা, পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপনকর্ত্তা এবং মনুষ্যের অন্তরস্থ আত্মার উৎপাদনকর্ত্তা সদাপ্রভু কহেন, দেখ, আমি চারিদিকের সর্ব্বজাতির পক্ষে যিরূশালেমকে টলনের পানপাত্রস্বরূপ করিব, এবং যিরূশালেমের অবরোধ কালে ইহা যিহূদাতেও সফল হইবে। সেই দিন আমি যিরূশালেমকে সর্ব্বজাতিরই বোঝাস্বরূপ প্রস্তর করিব; যত লোক সেই বোঝা লইবে, তাহারা ক্ষতবিক্ষত হইবে; আর তাহার বিরুদ্ধে পৃথিবীর সকল জাতি একত্রীকৃত হইবে। সদাপ্রভু কহেন, সেই দিন আমি সমস্ত অশ্বকে স্তব্ধতায় ও তদারোহীকে উন্মাদে আহত করিব, এবং যিহূদা-কুলের প্রতি আপন চক্ষু উন্মীলিত করিব, আর জাতিগণের সমস্ত অশ্বকে অন্ধতায় আহত করিব। আর যিহূদার অধ্যক্ষগণ মনে মনে কহিবে, যিরূশালেম-নিবাসীরা আপনাদের ঈশ্বর বাহিনীগণের সদাপ্রভুতে আমার বল। সেই দিন আমি যিহূদার অধ্যক্ষগণকে কাষ্ঠরাশির মধ্যস্থিত অগ্নির আঙ্গটার ন্যায়, ও আটির মধ্যস্থিত প্রজ্বলিত ডামসের ন্যায় করিব; তাহারা দক্ষিণদিকে ও বামদিকে চারি পার্শ্বের সকল জাতিকে গ্রাস করিবে, এবং যিরূশালেম, পুনরায় আপন স্থানে, যিরূশালেমে, বসতি করিবে। আর সদাপ্রভু প্রথমে যিহূদার তাম্বু সকল নিস্তার করিবেন, যেন দায়ূদ-কুলের শোভা ও যিরূশালেম-নিবাসীদের শোভা যিহূদার উপরে অভিমানী না হয়। সেই দিন সদাপ্রভু যিরূশালেম-নিবাসিগণকে রক্ষা করিবেন; আর সেই দিন তাহাদের মধ্যে যে উছোট খাইল, সেও দায়ূদের সদৃশ হইবে, এবং দায়ূদের কুল ঈশ্বরের সদৃশ, সদাপ্রভুর যে দূত তাহাদের অগ্রগামী, তাঁহার সদৃশ হইবে। আর সেই দিন আমি যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আগত সমস্ত জাতিকে নষ্ট করিতে উদ্যোগী হইব। আর দায়ূদ-কুলের ও যিরূশালেম-নিবাসীদের উপরে আমি অনুগ্রহের ও বিনতির আত্মা সেচন করিব; তাহাতে তাহারা যাঁহাকে বিদ্ধ করিয়াছে, সেই আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে, এবং তাঁহার জন্য বিলাপ করিবে, যেমন একমাত্র পুত্রের জন্য বিলাপ করা যায়, এবং তাঁহার জন্য শোকাকুল হইবে, যেমন প্রথমজাত পুত্রের জন্য লোকে শোকাকুল হয়। সেই দিন যিরূশালেমে অতিশয় বিলাপ হইবে, যেমন বিলাপ মগিদ্দোন সমস্থলিতে হদদ্‌-রিম্মোণে হইয়াছিল। দেশীয় প্রত্যেক গোষ্ঠী পৃথক্‌ পৃথক্‌ বিলাপ করিবে; দায়ূদ-কুলের গোষ্ঠী পৃথক্‌ ও তাহাদের স্ত্রীরা পৃথক্‌; নাথন-কুলের গোষ্ঠী পৃথক্‌ ও তাহাদের স্ত্রীরা পৃথক্‌; লেবি-কুলের গোষ্ঠী পৃথক্‌ ও তাহাদের স্ত্রীরা পৃথক্‌; শিমিয়ির গোষ্ঠী পৃথক্‌ ও তাহাদের স্ত্রীরা পৃথক্‌; অবশিষ্ট সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে এক এক গোষ্ঠী পৃথক্‌ ও তাহাদের স্ত্রীরা পৃথক্‌ পৃথক্‌ বিলাপ করিবে। সেই দিন দায়ূদ-কুলের ও যিরূশালেমনিবাসীদের জন্য পাপ ও অশৌচ হরণার্থে এক উনুই খোলা যাইবে। আর বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, সেই দিন আমি দেশ হইতে প্রতিমাগণের নাম লোপ করিব, তাহাদের বিষয় আর কাহারও স্মরণে থাকিবে না; আবার আমি ভাববাদীদিগকে ও অশুচিতার আত্মাকে দেশ হইতে নিঃসারণ করিব। যদি তখনও কেহ ভাববাণী বলে, তবে তাহার জন্মদাতা পিতামাতা তাহাকে কহিবে, তুমি বাঁচিবে না, কেননা তুমি সদাপ্রভুর নাম করিয়া মিথ্যা কহিতেছ; এবং সে ভাববাণী বলিলে তাহার জন্মদাতা পিতামাতা তাহাকে অস্ত্রবিদ্ধ করিবে। আর সেই দিন ভাববাদীরা প্রত্যেকে ভাববাণী বলিবার সময়ে আপন আপন দর্শনের বিষয়ে লজ্জিত হইবে, এবং প্রতারণা করণার্থে লোমশ বস্ত্র আর পরিধান করিবে না। কিন্তু প্রত্যেক জন বলিবে, আমি ভাববাদী নহি, আমি কৃষীবল, বাল্যকালাবধি দাস। আর যখন কেহ তাহাকে বলিবে, তোমার দুই হস্তের মধ্যে এই সকল ক্ষতের দাগ কি? তখন সে উত্তর করিবে, আমার আত্মীয়দের বাটীতে যে সকল আঘাত পাইয়াছি, এ সেই সকল আঘাত। হে খড়্‌গ, তুমি আমার পালকের, আমার সজাতীয় পুরুষের বিরুদ্ধে জাগ্রৎ হও, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন; পালককে আঘাত কর, তাহাতে পালের মেষেরা ছড়াইয়া পড়িবে; আর আমি ক্ষুদ্রগণের প্রতি আপন হস্ত ফিরাইব। সদাপ্রভু কহেন, সমস্ত দেশে দুই অংশ লোক উচ্ছিন্ন হইয়া প্রাণত্যাগ করিবে; কিন্তু তৃতীয় অংশ তাহার মধ্যে অবশিষ্ট থাকিবে। সেই তৃতীয় অংশকে আমি অগ্নিমধ্যে প্রবেশ করাইব, যেমন রৌপ্য খাঁটী করা যায়, তেমনি খাঁটী করিব, ও যেমন সুবর্ণ পরীক্ষিত হয়, তেমনি তাহাদের পরীক্ষা করিব; তাহারা আমার নামে ডাকিবে, এবং আমি তাহাদিগকে উত্তর দিব; আমি বলিব, এ আমার প্রজা; আর তাহারা বলিবে, সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর। দেখ, সদাপ্রভুর এক দিন আসিতেছে; সেই দিন তোমার মধ্যে তোমার সম্পত্তি লুট হইয়া বিভক্ত হইবে। কারণ আমি সমুদয় জাতিকে যুদ্ধার্থে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে সংগ্রহ করিব; তাহাতে নগর শত্রুহস্তগত, সকল গৃহের দ্রব্য লুটিত, ও স্ত্রীলোকেরা বলাৎকৃত হইবে, এবং নগরের অর্দ্ধেক লোক নির্ব্বাসনে যাইবে, আর অবশিষ্ট প্রজারা নগর হইতে উচ্ছিন্ন হইবে না। তখন সদাপ্রভু বাহির হইবেন, এবং সংগ্রামের দিনে যেমন যুদ্ধ করিয়াছিলেন, তেমনি ঐ জাতিগণের সহিত যুদ্ধ করিবেন। আর সেই দিন তাঁহার চরণ সেই জৈতুন পর্ব্বতের উপরে দাঁড়াইবে, যাহা যিরূশালেমের সম্মুখে পূর্ব্বদিকে অবস্থিত; তাহাতে জৈতুন পর্ব্বতের মধ্যদেশ পূর্ব্বদিকে ও পশ্চিমদিকে বিদীর্ণ হইয়া অতি বৃহৎ উপত্যকা হইয়া যাইবে, পর্ব্বতের অর্দ্ধেক উত্তরদিকে ও অর্দ্ধেক দক্ষিণদিকে সরিয়া যাইবে। তখন তোমরা আমার পর্ব্বতগণের উপত্যকা দিয়া পলায়ন করিবে; কেননা পর্ব্বতগণের সেই উপত্যকা আৎসল পর্য্যন্ত যাইবে; হাঁ, তোমরা পলায়ন করিবে, যেমন যিহূদা-রাজ উষিয়ের সময়ে ভূমিকম্পের সম্মুখ হইতে পলায়ন করিয়াছিলে; আর আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আসিবেন, তোমার সঙ্গে পবিত্রগণ সকলেই আসিবেন। আর সেই দিন আলো হইবে না, জ্যোতির্গণ সঙ্কুচিত হইবে। সে অদ্বিতীয় দিন হইবে, সদাপ্রভুই তাহার তত্ত্ব জানেন; তাহা দিবসও হইবে না, রাত্রিও হইবে না, কিন্তু সন্ধ্যাকালে দীপ্তি হইবে। আর সেই দিন যিরূশালেম হইতে জীবন্ত জল নির্গত হইবে, তাহার অর্দ্ধেক পূর্ব্বসমুদ্রের দিকে ও অর্দ্ধেক পশ্চিমসমুদ্রের দিকে যাইবে; তাহা গ্রীষ্ম ও শীতকালে থাকিবে। আর সদাপ্রভু সমস্ত দেশের উপরে রাজা হইবেন; সেই দিন সদাপ্রভু অদ্বিতীয় হইবেন, এবং তাঁহার নামও অদ্বিতীয় হইবে। গেবা অবধি যিরূশালেমের দক্ষিণস্থ রিম্মোণ পর্য্যন্ত সমস্ত দেশ রূপান্তর প্রাপ্ত হইয়া অরাবা তলভূমির ন্যায় হইবে, এবং নগরটী উন্নত হইয়া আপন স্থানে বসতিবিশিষ্ট হইবে; বিন্যামীনের দ্বার অবধি প্রথম দ্বারের স্থান পর্য্যন্ত, কোণের দ্বার পর্য্যন্ত, এবং হননেলের দুর্গ অবধি রাজার দ্রাক্ষাযন্ত্র পর্য্যন্ত সেইরূপ হইবে। আর লোকেরা তাহার মধ্যে বাস করিবে; আর কখনও অভিশাপ হইবে না, কিন্তু যিরূশালেম নির্ভয়ে বসতি করিবে। আর যে সকল জাতি যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিবে সদাপ্রভু এইরূপ আঘাতে তাহাদিগকে আহত করিবেন; চরণে ভর দিয়া দাঁড়াইবার সময়ে তাহাদের মাংস ক্ষয় পাইবে, কোটরে চক্ষু দুটী ক্ষয় পাইবে, ও মুখে জিহ্বা ক্ষয় পাইবে। আর সেই দিন তাহাদের মধ্যে সদাপ্রভু হইতে মহাকোলাহল হইবে; তাহারা প্রত্যেক জন আপন আপন প্রতিবাসীর হস্ত ধরিবে, এবং প্রত্যেকের হস্ত আপন আপন প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে উত্তোলিত হইবে। যিহূদাও যিরূশালেমে যুদ্ধ করিবে, এবং চারিদিকের সমস্ত জাতির ধন, স্বর্ণ, রৌপ্য ও বস্ত্র অতিশয় প্রচুররূপে সঞ্চয় করা যাইবে। আর সেই সকল শিবিরে উপস্থিত অশ্ব, অশ্বতর, উষ্ট্র, গর্দ্দভ প্রভৃতি সকল পশুর প্রতি আঘাত ঐ আঘাতের ন্যায় হইবে। আর যিরূশালেমের বিরুদ্ধে আগত সমস্ত জাতির মধ্যে যাহারা অবশিষ্ট থাকিবে, তাহারা বৎসর বৎসর বাহিনীগণের সদাপ্রভু রাজার কাছে প্রণিপাত করিতে ও কুটীরোৎসব পালন করিতে আসিবে। আর পৃথিবীর গোষ্ঠী সকলের মধ্যে যাহারা বাহিনীগণের সদাপ্রভু রাজার কাছে প্রণিপাত করিতে যিরূশালেমে না আইসে, তাহাদের উপরে বৃষ্টি হইবে না। মিসরের গোষ্ঠী যদি না আইসে, উপস্থিত না হয়, তবে তাহাদের উপরে [বৃষ্টি হইবে] না; যে সকল জাতি কুটীরোৎসব পালন করিতে না আসিবে, তাহাদিগকে সদাপ্রভু যে আঘাতে আহত করিবেন, সেই আঘাত [উহাদের প্রতিও] ঘটিবে। ইহা মিসরের দণ্ড হইবে, এবং যে সকল জাতি কুটীরোৎসব পালন করিতে না আসিবে, তাহাদের সকলের সেই দণ্ড হইবে। সেই দিন ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র’ এই কথা অশ্বগণের ঘন্টিকাতে থাকিবে, এবং সদাপ্রভুর গৃহে স্থিত হাঁড়ীগুলি যজ্ঞবেদির সম্মুখস্থ পাত্র সকলের তুল্য হইবে। আর যিরূশালেমের ও যিহূদার সমস্ত হাঁড়ী বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হইবে; এবং যাহারা বলিদান করে, তাহারা সকলে আসিয়া তাহার মধ্যে কোন কোন হাঁড়ী লইয়া তাহাতে পাক করিবে; আর সেই দিন বাহিনীগণের সদাপ্রভুর গৃহে কোন কনানীয় আর থাকিবে না। মালাখির দ্বারা ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্রভুর বাক্যরূপ ভারবাণী। আমি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, কিসে তুমি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছ? সদাপ্রভু কহেন, এষৌ কি যাকোবের ভ্রাতা নয়? তথাপি আমি যাকোবকে প্রেম করিয়াছি; কিন্তু এষৌকে অপ্রেম করিয়াছি, তাহার পর্ব্বতগণকে ধ্বংসস্থান করিয়াছি, ও তাহার অধিকার প্রান্তরস্থ শৃগালদের বাসস্থান করিয়াছি। ইদোম বলে, আমরা চূর্ণ হইয়াছি বটে, কিন্তু ফিরিয়া উৎসন্ন স্থান সকল গাঁথিব; বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তাহারা গাঁথিবে, কিন্তু আমি ভাঙ্গিয়া ফেলিব, এবং তাহাদিগকে এই নাম দেওয়া যাইবে, ‘দুষ্টতার অঞ্চল’ ও ‘সেই জাতি, যাহার প্রতি সদাপ্রভু নিত্য ক্রোধ করেন’। আর তোমাদের চক্ষু তাহা দেখিবে, এবং তোমরা বলিবে, ইস্রায়েলের সীমার বাহিরেও সদাপ্রভু মহীয়ান্‌ হউন। পুত্র পিতাকে এবং দাস প্রভুকে সমাদর করে; ভাল, আমি যদি পিতা হই, তবে আমার সমাদর কোথায়? আর আমি যদি প্রভু হই, তবে আমার প্রতি ভয় কোথায়? হে যাজকগণ, তোমরা যে আমার নাম অবজ্ঞা করিতেছ, তোমাদিগকেই বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, কিসে তোমার নাম অবজ্ঞা করিয়াছি? তোমরা আমার যজ্ঞবেদির উপরে অশুচি খাদ্য নিবেদন করিতেছ। তথাপি বলিতেছ, কিসে তোমাকে অশুচি করিয়াছি? সদাপ্রভুর মেজ তুচ্ছ, ইহা বলাতেই তাহা করিতেছ। আর যখন তোমরা যজ্ঞের নিমিত্ত অন্ধ পশু উৎসর্গ কর, সেটী কি মন্দ নয়? এবং যখন খঞ্জ ও রুগ্ন পশু উৎসর্গ কর, সেটী কি মন্দ নয়? তোমার দেশাধ্যক্ষের কাছে উহা উৎসর্গ কর দেখি; সে কি তোমার প্রতি প্রসন্ন হইবে? সে কি তোমাকে গ্রাহ্য করিবে? ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। এখন বলি, শুন, ঈশ্বরের কাছে বিনতি কর, যেন তিনি আমাদের প্রতি সদয় হন; তোমাদের হস্ত দ্বারা ঐ কার্য্য হইয়াছে, তোমাদের মধ্যে কি তিনি কাহাকেও গ্রাহ্য করিবেন? ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। আঃ। তোমাদেরই মধ্যে এক জন যদি কবাট রুদ্ধ করিত, তাহা হইলে তোমরা আমার যজ্ঞবেদির উপরে বৃথা অগ্নি জ্বালিতে না! তোমাদিগেতে আমার কিছু প্রীতি নাই, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; এবং তোমাদের হস্ত হইতে আমি নৈবেদ্য গ্রাহ্য করিব না। কারণ সূর্য্যের উদয়স্থান অবধি তাহার অস্তগমনস্থান পর্য্যন্ত জাতিগণের মধ্যে আমার নাম মহৎ, এবং প্রত্যেক স্থানে আমার নামের উদ্দেশে ধূপদাহ ও শুচি নৈবেদ্য উৎসৃষ্ট হইতেছে; কেননা জাতিগণের মধ্যে আমার নাম মহৎ, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু তোমরা তাহা অপবিত্র করিতেছ; কেননা তোমরা বলিতেছ, সদাপ্রভুর মেজ অশুচি, সেই মেজের ফল, তাঁহার খাদ্য তুচ্ছ। আরও বলিতেছ, দেখ, কেমন বিড়ম্বনা; আর তোমরা তাহার উপরে ফুঁ দিয়াছ, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। আর তোমরা লুটিত, খঞ্জ ও রুগ্ন পশুকে উপস্থিত করিয়াছ, এই প্রকারে নৈবেদ্য উপস্থিত করিতেছ; আমি কি তোমাদের হস্ত হইতে ইহা গ্রাহ্য করিব? ইহা সদাপ্রভু কহেন। আর পালের মধ্যে পুংপশু থাকিলেও যে প্রতারক মানত করিয়া প্রভুর উদ্দেশে সদোষ পশু উৎসর্গ করে, সে শাপগ্রস্ত; কেননা আমি মহান্‌ রাজা, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; এবং জাতিগণের মধ্যে আমার নাম ভয়াবহ। এখন, হে যাজকগণ, তোমাদের প্রতি এই আজ্ঞা। বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, যদি আমার নামের মহিমা স্বীকার করিবার জন্য তোমরা কথা না শুন, ও মনোযোগ না কর, তবে আমি তোমাদের উপরে অভিশাপ প্রেরণ করিব, ও তোমাদের আশীর্ব্বাদের পাত্র সকলকে শাপ দিব; বাস্তবিক আমি সে সমস্তকে শাপ দিয়াছি, কেননা তোমরা মনোযোগ কর না। দেখ, আমি তোমাদের জন্য বীজকে ভর্ৎসনা করিব, ও তোমাদের মুখে বিষ্ঠা অর্থাৎ তোমাদের উৎসব সকলের বিষ্ঠা ছড়াইব, এবং লোকেরা তাহার সহিত তোমাদিগকে লইয়া যাইবে। আর তোমরা জানিবে, লেবির সহিত যেন আমার নিয়ম থাকে, সেই জন্য আমি তোমাদের নিকটে এই আজ্ঞা পাঠাইলাম, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। তাহার সহিত আমার যে নিয়ম ছিল, তাহা জীবন ও শান্তির [নিয়ম], আর আমি তাহাকে উভয়ই দিতাম, যেন সে ভয় করে, আর সে আমাকে ভয় করিত, এবং আমার নামে ভীত হইত। তাহার মুখে সত্যের ব্যবস্থা ছিল, ও তাহার ওষ্ঠাধরে অন্যায় পাওয়া যাইত না; সে শান্তিতে ও সরলতায় আমার সহিত গমনাগমন করিত, এবং অনেককে অপরাধ হইতে ফিরাইত। বস্তুতঃ যাজকের ওষ্ঠাধর জ্ঞান রক্ষা করে, ও তাহার মুখে লোকেরা ব্যবস্থার অন্বেষণ করে, ইহা উপযুক্ত; কেননা সে বাহিনীগণের সদাপ্রভুর দূত। কিন্তু তোমরা পথ হইতে সরিয়া পড়িয়াছ, ব্যবস্থার বিষয়ে অনেককে উছোট খাওয়াইয়াছ; তোমরা লেবির নিয়ম নষ্ট করিয়াছ; ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। এই জন্য আমিও সকল প্রজা লোকের সাক্ষাতে তোমাদিগকে তুচ্ছতার পাত্র ও নীচ করিলাম, কারণ তোমরা আমার পথ রক্ষা করিতেছ না, ব্যবস্থার বিষয়ে মুখাপেক্ষা করিয়া থাক। আমাদের সকলের কি এক পিতা নহেন? এক ঈশ্বরই কি আমাদের সৃষ্টি করেন নাই? তবে আমরা কেন প্রত্যেক জন আপন আপন ভ্রাতার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করি, আপনাদের পৈতৃক নিয়ম অপবিত্র করি? যিহূদা বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে, এবং ইস্রায়েল ও যিরূশালেমে জঘন্য ক্রিয়া সাধিত হইয়াছে; কেননা যিহূদা সদাপ্রভুর সেই ধর্ম্মধাম অপবিত্র করিয়াছে, যাহা তিনি ভালবাসেন, ও এক বিজাতীয় দেবের কন্যাকে বিবাহ করিয়াছে। যে ব্যক্তি এই কর্ম্ম করে, সদাপ্রভু তাহার প্রতি এইরূপ করিবেন, যাকোবের তাম্বু সকল হইতে যে কেহ জাগায় ও যে কেহ উত্তর দেয়, এবং যে কেহ বাহিনীগণের সদাপ্রভুর উদ্দেশে নৈবেদ্য আনয়ন করে, তাহাকে উচ্ছিন্ন করিবেন। আর তোমাদের দ্বিতীয় অপকর্ম্ম এই, তোমরা অশ্রুপাতে, রোদনে ও আর্ত্তস্বরে সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদি আচ্ছন্ন করিয়া থাক, কারণ তিনি আর নৈবেদ্যের প্রতি দৃক্‌পাত করেন না, ও তোমাদের হস্ত হইতে তুষ্টিজনক বলিয়া কিছু গ্রাহ্য করেন না। তথাপি তোমরা বলিতেছ, ইহার কারণ কি? কারণ এই, সদাপ্রভু তোমার যৌবনকালীন স্ত্রীর ও তোমার মধ্যে সাক্ষী হইয়াছেন; ফলতঃ তুমি তাহার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছ; কিন্তু সে তোমার সখী ও তোমার নিয়মের স্ত্রী। তিনি কি একমাত্রকে গড়েন নাই? তাঁহার ত আত্মার অবশিষ্টাংশ ছিল। আর একমাত্র কেন? তিনি ঈশ্বরীয় বংশের চেষ্টা করিতেছিলেন। অতএব তোমরা আপন আপন আত্মার বিষয়ে সাবধান হও, এবং কেহ আপন যৌবনকালীন স্ত্রীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করুক। কেননা আমি স্ত্রীত্যাগ ঘৃণা করি, ইহা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু কহেন; আর যে আপন পরিচ্ছদ দৌরাত্ম্যে আচ্ছাদন করে, [তাহাকে ঘৃণা করি,] ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। অতএব তোমরা আপন আপন আত্মার বিষয়ে সাবধান হও, বিশ্বাসঘাতকতা করিও না। তোমরা আপন আপন বাক্য দ্বারা সদাপ্রভুকে ক্লান্ত করিয়াছ। তথাপি বলিয়া থাক, কিসে তাঁহাকে ক্লান্ত করিয়াছি? এই কথায় করিতেছ, তোমরা বলিতেছ, যে কেহ দুষ্কর্ম্ম করে, সে সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে উত্তম; তিনি তাহাদিগেতে প্রীত; অথবা, বিচারকর্ত্তা ঈশ্বর কোথায়? দেখ, আমি আপন দূতকে প্রেরণ করিব, সে আমার অগ্রে পথ প্রস্তুত করিবে; এবং তোমরা যে প্রভুর অন্বেষণ করিতেছ, তিনি অকস্মাৎ আপন মন্দিরে আসিবেন; নিয়মের সেই দূত, যাঁহাতে তোমাদের প্রীতি, দেখ, তিনি আসিতেছেন, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু তাঁহার আগমনের দিন কে সহ্য করিতে পারিবে; আর তিনি দর্শন দিলে কে দাঁড়াইতে পারিবে? কেননা তিনি রৌপ্য পরিষ্কারকের অগ্নিতুল্য ও রজকের ক্ষারতুল্য। তিনি রৌপ্য-পরিষ্কারক ও শুচিকারক হইয়া বসিবেন, তিনি লেবির সন্তানদিগকে শুচি করিবেন, এবং স্বর্ণের ও রৌপ্যের ন্যায় তাহাদিগকে বিশুদ্ধ করিবেন; তাহাতে তাহারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে ধার্ম্মিকতায় নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবে। তখন যিহূদার ও যিরূশালেমের নৈবেদ্য সদাপ্রভুর তুষ্টিজনক হইবে, যেমন পূর্ব্বকালে, আদিকালের বৎসর-সমূহে হইয়াছিল। আর আমি বিচার করিতে তোমাদের নিকটে আসিব; এবং মায়াবী, পারদারিক, ও মিথ্যাশপথকারিগণের বিরুদ্ধে, ও যাহারা বেতনের বিষয়ে বেতনজীবীর প্রতি, এবং বিধবা ও পিতৃহীন লোকের প্রতি, এবং অত্যাচার করে, বিদেশীর প্রতি অন্যায় করে, ও আমাকে ভয় করে না, তাহাদের বিরুদ্ধে আমি সত্বর সাক্ষী হইব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। কারণ আমি সদাপ্রভু, আমার পরিবর্ত্তন নাই; তাই তোমরা, হে যাকোব-সন্তানগণ, বিনষ্ট হইতেছ না। তোমাদের পিতৃপুরুষদের সময়াবধি তোমরা আমার বিধি-কলাপ হইতে সরিয়া পড়িয়াছ, সে সকল পালন কর নাই। আমার কাছে ফিরিয়া আইস, আমিও তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, আমরা কিসে ফিরিব? মনুষ্য কি ঈশ্বরকে ঠকাইবে? তোমরা ত আমাকে ঠকাইয়া থাক। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, কিসে তোমাকে ঠকাইয়াছি? দশমাংশে ও উপহারে। তোমরা অভিশাপে শাপগ্রস্ত; হাঁ, তোমরা, এই সমস্ত জাতি, আমাকেই ঠকাইতেছ। তোমরা সমস্ত দশমাংশ ভাণ্ডারে আন, যেন আমার গৃহে খাদ্য থাকে; আর তোমরা ইহাতে আমার পরীক্ষা কর, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন, আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করি কি না। আর আমি তোমাদের নিমিত্ত গ্রাসককে ভর্ৎসনা করিব, সে তোমাদের ভূমির ফল বিনষ্ট করিবে না, এবং ক্ষেত্রে তোমাদের দ্রাক্ষালতার ফল অকালে ঝরিবে না, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। আর সর্ব্বজাতি তোমাদিগকে ধন্য বলিবে, কেননা তোমরা প্রীতিজনক দেশ হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। তোমরা আমার বিরুদ্ধে শক্ত শক্ত কথা বলিয়াছ, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, আমরা কিসে তোমার বিরুদ্ধে কথা বলিয়াছি? তোমরা বলিয়াছ, ঈশ্বরের সেবা করা অনর্থক; এবং তাঁহার রক্ষণীয়-দ্রব্য রক্ষা করাতে ও বাহিনীগণের সদাপ্রভুর সাক্ষাতে শোকবেশে গমনাগমন করাতে আমাদের লাভ কি হইল? আমরা এখন দর্পী লোকদিগকে ধন্য বলি; হাঁ, দুষ্টাচারীরা প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ঈশ্বরের পরীক্ষা করিয়াও রক্ষা পায়। তখন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, তাহারা পরস্পর আলাপ করিল, এবং সদাপ্রভু কর্ণপাত করিয়া শুনিলেন; আর যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য তাঁহার সম্মুখে একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল। আর তাহারা আমারই হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; আমার কার্য্য করিবার দিনে তাহারা আমার নিজস্ব হইবে; এবং কোন মনুষ্য যেমন আপন সেবাকারী পুত্রের প্রতি মমতা করে, আমি তাহাদের প্রতি তেমনি মমতা করিব। তখন তোমরা ফিরিয়া আসিবে, এবং ধার্ম্মিক ও দুষ্টের মধ্যে, যে ঈশ্বরের সেবা করে, ও যে তাঁহার সেবা না করে, উভয়ের মধ্যে প্রভেদ দেখিবে। কারণ দেখ, সেই দিন আসিতেছে, তাহা হাপরের ন্যায় জ্বলিবে, এবং দর্পী ও দুষ্টাচারীরা সকলে খড়ের ন্যায় হইবে; আর সেই যে দিন আসিতেছে, তাহা তাহাদিগকে পোড়াইয়া দিবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; সে দিন তাহাদের মূল কি শাখা কিছুই অবশিষ্ট রাখিবে না। কিন্তু তোমরা যে আমার নাম ভয় করিয়া থাক, তোমাদের প্রতি ধার্ম্মিকতা-সূর্য্য উদিত হইবেন, তাঁহার পক্ষপুট আরোগ্যদায়ক; এবং তোমরা বাহির হইয়া পালের গোবৎসদের ন্যায় নাচিবে। আর তোমরা দুষ্ট লোকদিগকে মর্দ্দন করিবে; কেননা আমার কার্য্য করিবার দিনে তাহারা তোমাদের পদতলের অধঃস্থিত ভস্ম হইবে, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন। তোমরা আমার দাস মোশির ব্যবস্থা স্মরণ কর; তাহাকে আমি হোরেবে সমস্ত ইস্রায়েলের জন্য সেই বিধি ও শাসনকলাপ আদেশ করিয়াছিলাম। দেখ, সদাপ্রভুর সেই মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিন আসিবার পূর্ব্বে আমি তোমাদের নিকটে এলির ভাববাদীকে প্রেরণ করিব। সে সন্তানদের প্রতি পিতৃগণের হৃদয়, ও পিতৃগণের প্রতি সন্তানদের হৃদয় ফিরাইবে; পাছে আমি আসিয়া পৃথিবীকে অভিশাপে আঘাত করি। যীশু খ্রীষ্টের বংশাবলি-পত্র, তিনি দায়ূদের সন্তান, অব্রাহামের সন্তান। অব্রাহামের পুত্র ইস্‌হাক; ইস্‌হাকের পুত্র যাকোব; যাকোবের পুত্র যিহূদা ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ; যিহূদার পুত্র পেরস ও সেরহ, তামরের গর্ভজাত; পেরসের পুত্র হিষ্রোণ; হিষ্রোণের পুত্র রাম; রামের পুত্র অম্মীনাদব; অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন; নহশোনের পুত্র সল্‌মোন; সল্‌মোনের পুত্র বোয়স, রাহবের গর্ভজাত; বোয়সের পুত্র ওবেদ, রূতের গর্ভজাত; ওবেদের পুত্র যিশয়; যিশয়ের পুত্র দায়ূদ রাজা। দায়ূদের পুত্র শলোমন, ঊরিয়ের বিধবার গর্ভজাত; শলোমনের পুত্র রহবিয়াম; রহবিয়ামের পুত্র অবিয়; অবিয়ের পুত্র আসা; আসার পুত্র যিহোশাফট; যিহোশাফটের পুত্র যোরাম; যোরামের পুত্র উষিয়; উষিয়ের পুত্র যোথম; যোথমের পুত্র আহস; আহসের পুত্র হিষ্কিয়; হিষ্কিয়ের পুত্র মনঃশি; মনঃশির পুত্র আমোন; আমোনের পুত্র যোশিয়; যোশিয়ের সন্তান যিকনিয় ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ, বাবিলে নির্ব্বাসন কালে জাত। যিকনিয়ের পুত্র শল্‌টীয়েল, বাবিলে নির্ব্বাসনের পরে জাত; শল্‌টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল; সরুব্বাবিলের পুত্র অবীহূদ; অবীহূদের পুত্র ইলীয়াকীম; ইলীয়াকীমের পুত্র আসোর; আসোরের পুত্র সাদোক; সাদোকের পুত্র আখীম; আখীমের পুত্র ইলীহূদ; ইলীহূদের পুত্র ইলিয়াসর; ইলিয়াসরের পুত্র মত্তন; মত্তনের পুত্র যাকোব; যাকোবের পুত্র যোষেফ; ইনি মরিয়মের স্বামী; এই মরিয়মের গর্ভে যীশুর জন্ম হয়, যাঁহাকে খ্রীষ্ট [অভিষিক্ত] বলে। এইরূপে অব্রাহাম অবধি দায়ূদ পর্য্যন্ত সর্ব্বশুদ্ধ চৌদ্দ পুরুষ; দায়ূদ অবধি বাবিলে নির্ব্বাসন পর্য্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ; এবং বাবিলে নির্ব্বাসন অবধি খ্রীষ্ট পর্য্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ। যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এইরূপে হইয়াছিল। তাঁহার মাতা মরিয়ম যোষেফের প্রতি বাগ্‌দত্তা হইলে তাঁহাদের সহবাসের পূর্ব্বে জানা গেল, তাঁহার গর্ভ হইয়াছে—পবিত্র আত্মা হইতে। আর তাঁহার স্বামী যোষেফ ধার্ম্মিক হওয়াতে ও তাঁহাকে সাধারণের কাছে নিন্দার পাত্র করিতে ইচ্ছা না করাতে, গোপনে ত্যাগ করিবার মানস করিলেন। তিনি এই সকল ভাবিতেছেন, এমন সময় দেখ, প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাঁহাকে দর্শন দিয়া কহিলেন, যোষেফ, দায়ূদ-সন্তান, তোমার স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করিতে ভয় করিও না, কেননা তাঁহার গর্ভে যাহা জন্মিয়াছে, তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে; আর তিনি পুত্র প্রসব করিবেন, এবং তুমি তাঁহার নাম যীশু [ত্রাণকর্ত্তা] রাখিবে; কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন। এই সকল ঘটিল, যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত প্রভুর এই বাক্য পূর্ণ হয়, “দেখ, সেই কন্যা গর্ভবতী হইবে, এবং পুত্র প্রসব করিবে, আর তাঁহার নাম রাখা যাইবে ইম্মানূয়েল” অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ, ‘আমাদের সহিত ঈশ্বর’। পরে যোষেফ নিদ্রা হইতে উঠিয়া প্রভুর দূত তাঁহাকে যেরূপ আদেশ করিয়াছিলেন, সেইরূপ করিলেন, আপন স্ত্রীকে গ্রহণ করিলেন; আর যে পর্য্যন্ত ইনি পুত্র প্রসব না করিলেন, সেই পর্য্যন্ত যোষেফ তাঁহার পরিচয় লইলেন না, আর তিনি পুত্রের নাম যীশু রাখিলেন। হেরোদ রাজার সময়ে যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে যীশুর জন্ম হইলে পর, দেখ, পূর্ব্বদেশ হইতে কয়েক জন পণ্ডিত যিরূশালেমে আসিয়া কহিলেন, যিহূদীদের যে রাজা জন্মিয়াছেন, তিনি কোথায়? কারণ আমরা পূর্ব্বদেশে তাঁহার তারা দেখিয়াছি, ও তাঁহাকে প্রণাম করিতে আসিয়াছি। এই কথা শুনিয়া হেরোদ রাজা উদ্বিগ্ন হইলেন, ও তাঁহার সহিত সমুদয় যিরূশালেমও উদ্বিগ্ন হইল। আর তিনি সমস্ত প্রধান যাজক ও লোক সাধারণের অধ্যাপকগণকে একত্র করিয়া তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, খ্রীষ্ট কোথায় জন্মিবেন? তাঁহারা তাঁহাকে বলিলেন, যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে, কেননা ভাববাদী দ্বারা এইরূপ লিখিত হইয়াছে, “আর তুমি, হে যিহূদা দেশের বৈৎলেহম, তুমি যিহূদার অধ্যক্ষদের মধ্যে কোন মতে ক্ষুদ্রতম নও, কারণ তোমা হইতে সেই অধ্যক্ষ উৎপন্ন হইবেন, যিনি আমার প্রজা ইস্রায়েলকে পালন করিবেন।” তখন হেরোদ সেই পণ্ডিতগণকে গোপনে ডাকিয়া, ঐ তারা কোন্‌ সময়ে দেখা গিয়াছিল, তাহা তাঁহাদের নিকটে বিশেষ করিয়া জানিয়া লইলেন। পরে তিনি তাঁহাদিগকে বৈৎলেহমে পাঠাইয়া দিয়া কহিলেন, তোমরা গিয়া বিশেষ করিয়া সেই শিশুর অন্বেষণ কর; দেখা পাইলে আমাকে সংবাদ দিও, যেন আমিও গিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিতে পারি। রাজার কথা শুনিয়া তাঁহারা প্রস্থান করিলেন, আর দেখ, পূর্ব্বদেশে তাঁহারা যে তারা দেখিয়াছিলেন, তাহা তাঁহাদের অগ্রে অগ্রে চলিল, শেষে যেখানে শিশুটী ছিলেন, তাহার উপরে আসিয়া স্থগিত হইয়া রহিল। তারাটী দেখিতে পাইয়া তাঁহারা মহানন্দে অতিশয় আনন্দিত হইলেন। পরে তাঁহারা গৃহমধ্যে গিয়া শিশুটীকে তাঁহার মাতা মরিয়মের সহিত দেখিতে পাইলেন, ও ভূমিষ্ঠ হইয়া তাঁহাকে প্রণাম করিলেন, এবং আপনাদের ধনকোষ খুলিয়া তাঁহাকে স্বর্ণ, কুন্দুরু ও গন্ধরস উপহার দিলেন। পরে তাঁহারা যেন হেরোদের নিকটে ফিরিয়া না যান, স্বপ্নে এই আদেশ পাইয়া, অন্য পথ দিয়া আপনাদের দেশে চলিয়া গেলেন। তাঁহারা চলিয়া গেলে পর, দেখ, প্রভুর এক দূত স্বপ্নে যোষেফকে দর্শন দিয়া কহিলেন, উঠ, শিশুটীকে ও তাঁহার মাতাকে লইয়া মিসরে পলায়ন কর; আর আমি যত দিন তোমাকে না বলি, তত দিন সেখানে থাক; কেননা হেরোদ শিশুটীকে বধ করিবার জন্য তাঁহার অনুসন্ধান করিবে। তখন যোষেফ উঠিয়া রাত্রিযোগে শিশুটীকে ও তাঁহার মাতাকে লইয়া মিসরে চলিয়া গেলেন, এবং হেরোদের মৃত্যু পর্য্যন্ত সেখানে থাকিলেন, যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত প্রভুর এই বচন পূর্ণ হয়, “আমি মিসর হইতে আপন পুত্রকে ডাকিয়া আনিলাম” । পরে হেরোদ যখন দেখিলেন যে, তিনি পণ্ডিতগণ কর্ত্তৃক তুচ্ছীকৃত হইয়াছেন, তখন মহাক্রুদ্ধ হইলেন, এবং সেই পণ্ডিতদের নিকটে বিশেষ করিয়া যে সময় জানিয়া লইয়াছিলেন, তদনুসারে দুই বৎসর ও তাহার অল্প বয়সের যত বালক বৈৎলেহম ও তাহার সমস্ত পরিসীমার মধ্যে ছিল, লোক পাঠাইয়া সে সকলকে বধ করাইলেন। তখন যিরমিয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হইল, “রামায় শব্দ শুনা যাইতেছে, হাহাকার ও অত্যন্ত রোদন; রাহেল আপন সন্তানদের জন্য রোদন করিতেছেন, সান্ত্বনা পাইতে চান না, কেননা তাহারা নাই।” হেরোদের মৃত্যু হইলে পর, দেখ, প্রভুর এক দূত মিসরে যোষেফকে স্বপ্নে দর্শন দিয়া কহিলেন, উঠ, শিশুটীকে ও তাঁহার মাতাকে লইয়া ইস্রায়েল দেশে যাও; কারণ যাহারা শিশুটীর প্রাণনাশের চেষ্টা করিয়াছিল, তাহারা মরিয়া গিয়াছে। তাহাতে তিনি উঠিয়া শিশুটীকে ও তাঁহার মাতাকে লইয়া ইস্রায়েল দেশে আসিলেন। কিন্তু যখন তিনি শুনিতে পাইলেন যে, আর্খিলায় নিজ পিতা হেরোদের পদে যিহূদিয়াতে রাজত্ব করিতেছেন, তখন সেখানে যাইতে ভীত হইলেন; পরে স্বপ্নে আদেশ পাইয়া গালীল প্রদেশে চলিয়া গেলেন, এবং নাসরৎ নামক নগরে গিয়া বসতি করিলেন; যেন ভাববাদিগণ দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয় যে, তিনি নাসরতীয় বলিয়া আখ্যাত হইবেন। [1] সেই সময়ে যোহন বাপ্তাইজক উপস্থিত হইয়া যিহূদিয়ার প্রান্তরে প্রচার করিতে লাগিলেন; তিনি বলিলেন, ‘মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।’ ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা এই কথা কথিত হইয়াছিল, “প্রান্তরে এক জনের রব, সে ঘোষণা করিতেছে, তোমরা প্রভুর পথ প্রস্তুত কর, তাঁহার রাজপথ সকল সরল কর।” যোহন উটের লোমের কাপড় পরিতেন, তাঁহার কটিদেশে চর্ম্মপটুকা, ও তাঁহার খাদ্য পঙ্গপাল ও বনমধু ছিল। তখন যিরূশালেম, সমস্ত যিহূদিয়া, এবং যর্দ্দনের নিকটবর্ত্তী সমস্ত অঞ্চলের লোক বাহির হইয়া তাঁহার নিকটে যাইতে লাগিল; আর আপন আপন পাপ স্বীকার করিয়া যর্দ্দন নদীতে তাঁহার দ্বারা বাপ্তাইজিত হইতে লাগিল। কিন্তু অনেক ফরীশী ও সদ্দূকী বাপ্তিস্মের জন্য আসিতেছে দেখিয়া তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, হে সর্পের বংশেরা, আগামী কোপ হইতে পলায়ন করিতে তোমাদিগকে কে চেতনা দিল? অতএব মন-পরিবর্ত্তনের উপযোগী ফলে ফলবান্‌ হও। আর ভাবিও না যে, তোমরা মনে মনে বলিতে পার, অব্রাহাম আমাদের পিতা; কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ঈশ্বর এই সকল পাথর হইতে অব্রাহামের জন্য সন্তান উৎপন্ন করিতে পারেন। আর এখনই গাছগুলির মূলে কুড়ালি লাগান আছে; অতএব যে কোন গাছে উত্তম ফল ধরে না, তাহা কাটিয়া আগুনে ফেলিয়া দেওয়া যায়। আমি তোমাদিগকে মন-পরিবর্ত্তনের নিমিত্ত জলে বাপ্তাইজ করিতেছি বটে, কিন্তু আমার পশ্চাৎ যিনি আসিতেছেন, তিনি আমা অপেক্ষা শক্তিমান্‌; আমি তাঁহার পাদুকা বহিবারও যোগ্য নহি; তিনি তোমাদিগকে পবিত্র আত্মা ও অগ্নিতে বাপ্তাইজ করিবেন। তাঁহার কুলা তাঁহার হস্তে আছে, আর তিনি আপন খামার সুপরিষ্কার করিবেন, এবং আপনার গোম গোলায় সংগ্রহ করিবেন, কিন্তু তুষ অনির্ব্বাণ অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবেন। তৎকালে যীশু যোহন দ্বারা বাপ্তাইজিত হইবার জন্য গালীল হইতে যর্দ্দনে তাঁহার কাছে আসিলেন। কিন্তু যোহন তাঁহাকে বারণ করিতে লাগিলেন, বলিলেন, আপনার দ্বারা আমারই বাপ্তাইজিত হওয়া আবশ্যক, আর আপনি আমার কাছে আসিতেছেন? কিন্তু যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, এখন সম্মত হও, কেননা এইরূপে সমস্ত ধার্ম্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত। তখন তিনি তাঁহার কথায় সম্মত হইলেন। পরে যীশু বাপ্তাইজিত হইয়া অমনি জল হইতে উঠিলেন; আর দেখ, তাঁহার নিমিত্ত স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় নামিয়া আপনার উপরে আসিতে দেখিলেন। আর দেখ, স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত।’ তখন যীশু, দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হইবার জন্য, আত্মা দ্বারা প্রান্তরে নীত হইলেন। আর তিনি চল্লিশ দিবারাত্র অনাহারে থাকিয়া শেষে ক্ষুধিত হইলেন। তখন পরীক্ষক নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে বল, যেন এই পাথরগুলা রুটী হইয়া যায়। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া বলিলেন, লেখা আছে, “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।” তখন দিয়াবল তাঁহাকে পবিত্র নগরে লইয়া গেল, এবং ধর্ম্মধামের চূড়ার উপরে দাঁড় করাইল, আর তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে নীচে ঝাঁপ দিয়া পড়, কেননা লেখা আছে, “তিনি আপন দূতগণকে তোমার বিষয়ে আজ্ঞা দিবেন, আর তাঁহারা তোমাকে হস্তে করিয়া তুলিয়া লইবেন, পাছে তোমার চরণে প্রস্তরের আঘাত লাগে।” যীশু তাহাকে কহিলেন, আবার লেখা আছে, “তুমি আপন ঈশ্বর প্রভুর পরীক্ষা করিও না”। আবার দিয়াবল তাঁহাকে অতি উচ্চ এক পর্ব্বতে লইয়া গেল, এবং জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপ দেখাইল, আর তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ভূমিষ্ঠ হইয়া আমাকে প্রণাম কর, এই সমস্তই আমি তোমাকে দিব। তখন যীশু তাহাকে কহিলেন, দূর হও, শয়তান; কেননা লেখা আছে, “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।” তখন দিয়াবল তাঁহাকে ছাড়িয়া গেল, আর দেখ, দূতগণ কাছে আসিয়া তাঁহার পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন। পরে যোহন কারাগারে সমর্পিত হইয়াছেন শুনিয়া, তিনি গালীলে চলিয়া গেলেন; আর নাসরৎ ত্যাগ করিয়া সমুদ্রতীরে, সবূলূন ও নপ্তালির অঞ্চলে স্থিত কফরনাহূমে, গিয়া বাস করিলেন; যেন যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয়, “সবূলূন দেশ ও নপ্তালি দেশ, সমুদ্রের পথে, যর্দ্দনের পরপারে, পরজাতিগণের গালীল, যে জাতি অন্ধকারে বসিয়াছিল, তাহারা মহা আলো দেখিতে পাইল, যাহারা মৃত্যুর দেশে ও ছায়াতে বসিয়াছিল, তাহাদের উপরে আলো উদিত হইল।” সেই অবধি যীশু প্রচার করিতে আরম্ভ করিলেন; বলিতে লাগিলেন, ‘মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল’। একদা তিনি গালীল সমুদ্রের তীর দিয়া বেড়াইতে বেড়াইতে দেখিলেন, দুই ভ্রাতা—শিমোন, যাঁহাকে পিতর বলে, ও তাঁহার ভ্রাতা আন্দ্রিয়—সমুদ্রে জাল ফেলিতেছেন; কারণ তাঁহারা মৎস্যধারী ছিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস। আমি তোমাদিগকে মনুষ্যধারী করিব। আর তখনই তাঁহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন। পরে তিনি তথা হইতে অগ্রে গিয়া দেখিলেন, আর দুই ভ্রাতা—সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও তাঁহার ভ্রাতা যোহন—আপনাদের পিতা সিবদিয়ের সহিত নৌকায় জাল সারিতেছেন; তিনি তাঁহাদিগকে ডাকিলেন। আর তখনই তাঁহারা নৌকা ও আপনাদের পিতাকে পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন। পরে যীশু সমুদয় গালীলে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, এবং লোকদের সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার পীড়া ভাল করিলেন। আর তাঁহার জনরব সমুদয় সুরিয়া দেশে ব্যাপিল; এবং নানা প্রকার রোগ ও ব্যাধিতে ক্লিষ্ট সমস্ত পীড়িত লোক, ভূতগ্রস্ত ও মৃগীরোগী ও পক্ষাঘাতী লোক সকল, তাঁহার নিকটে আনীত হইল, আর তিনি তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। আর গালীল, দিকাপলি, যিরূশালেম, যিহূদিয়া ও যর্দ্দনের পরপার হইতে বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল। [1] তিনি বিস্তর লোক দেখিয়া পর্ব্বতে উঠিলেন; আর তিনি বসিলে পর তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহার নিকটে আসিলেন। তখন তিনি মুখ খুলিয়া তাঁহাদিগকে এই উপদেশ দিতে লাগিলেন— ধন্য যাহারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই। ধন্য যাহারা শোক করে, কারণ তাহারা সান্ত্বনা পাইবে। ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের অধিকারী হইবে। ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত, কারণ তাহারা পরিতৃপ্ত হইবে। ধন্য যাহারা দয়াশীল, কারণ তাহারা দয়া পাইবে। ধন্য যাহারা নির্ম্মলান্তঃকরণ, কারণ তাহারা ঈশ্বরের দর্শন পাইবে। ধন্য যাহারা মিলন করিয়া দেয়, কারণ তাহারা ঈশ্বরের পুত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে। ধন্য যাহারা ধার্ম্মিকতার জন্য তাড়িত হইয়াছে, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাহাদেরই। ধন্য তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কারণ তোমাদের পূর্ব্বে যে ভাববাদিগণ ছিলেন, তাঁহাদিগকে তাহারা সেই মত তাড়না করিত। তোমরা পৃথিবীর লবণ, কিন্তু লবণের স্বাদ যদি যায়, তবে তাহা কি প্রকারে লবণের গুণবিশিষ্ট করা যাইবে? তাহা আর কোন কার্য্যে লাগে না, কেবল বাহিরে ফেলিয়া দিবার ও লোকের পদতলে দলিত হইবার যোগ্য হয়। তোমরা জগতের দীপ্তি; পর্ব্বতের উপরে স্থিত নগর গুপ্ত থাকিতে পারে না। আর লোকে প্রদীপ জ্বালিয়া কাঠার নীচে রাখে না, কিন্তু দীপাধারের উপরেই রাখে, তাহাতে তাহা গৃহস্থিত সকল লোককে আলো দেয়। তদ্রূপ তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক, যেন তাহারা তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিয়া তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে। মনে করিও না যে, আমি ব্যবস্থা কি ভাববাদিগ্রন্থ লোপ করিতে আসিয়াছি; আমি লোপ করিতে আসি নাই, কিন্তু পূর্ণ করিতে আসিয়াছি। কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে পর্য্যন্ত আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত না হইবে, সে পর্য্যন্ত ব্যবস্থার এক মাত্রা কি এক বিন্দুও লুপ্ত হইবে না, সমস্তই সফল হইবে। অতএব যে কেহ এই সকল ক্ষুদ্রতম আজ্ঞার মধ্যে কোন একটী আজ্ঞা লঙ্ঘন করে, ও লোকদিগকে সেইরূপ শিক্ষা দেয়, তাহাকে স্বর্গরাজ্যে অতি ক্ষুদ্র বলা যাইবে; কিন্তু যে কেহ সে সকল পালন করে ও শিক্ষা দেয়, তাহাকে স্বর্গ-রাজ্যে মহান্‌ বলা যাইবে। কেননা আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, অধ্যাপক ও ফরীশীদের অপেক্ষা তোমাদের ধার্ম্মিকতা যদি অধিক না হয়, তবে তোমরা কোন মতে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে না। তোমরা শুনিয়াছ, পূর্ব্বকালীয় লোকদের নিকটে উক্ত হইয়াছিল, “তুমি নরহত্যা করিও না,” আর ‘যে নরহত্যা করে, সে বিচারের দায়ে পড়িবে’। কিন্তু আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, যে কেহ আপন ভ্রাতার প্রতি ক্রোধ করে, সে বিচারের দায়ে পড়িবে; আর যে কেহ আপন ভ্রাতাকে বলে, ‘রে নির্ব্বোধ,’ সে মহাসভার দায়ে পড়িবে। আর যে কেহ বলে, ‘রে মূঢ়,’ সে অগ্নিময় নরকের দায়ে পড়িবে। অতএব তুমি যখন যজ্ঞবেদির নিকটে আপন নৈবেদ্য উৎসর্গ করিতেছ, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভ্রাতার কোন কথা আছে, তবে সেই স্থানে বেদির সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলিয়া যাও, প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিলিত হও, পরে আসিয়া তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও। তুমি যখন বিপক্ষের সঙ্গে পথে থাক, তখন তাহার সহিত শীঘ্র মিলন করিও, পাছে বিপক্ষ তোমাকে বিচারকর্ত্তার হস্তে সমর্পণ করে, ও বিচারকর্ত্তা তোমাকে পেয়াদার হস্তে সমর্পণ করে, আর তুমি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হও। আমি তোমাকে সত্য কহিতেছি, যাবৎ শেষ কড়িটা পর্য্যন্ত পরিশোধ না করিবে, তাবৎ তুমি কোন মতে সেখান হইতে বাহিরে আসিতে পাইবে না। তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, “তুমি ব্যভিচার করিও না”। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল। আর তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও; কেননা তোমার সমস্ত শরীর নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং এক অঙ্গের নাশ হওয়া তোমার পক্ষে ভাল। আর তোমার দক্ষিণ হস্ত যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া দূরে ফেলিয়া দেও; কেননা তোমার সমস্ত শরীর নরকে যাওয়া অপেক্ষা বরং এক অঙ্গের নাশ হওয়া তোমার পক্ষে ভাল। আর উক্ত হইয়াছিল, “যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে, সে তাহাকে ত্যাগপত্র দিউক” । কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ ব্যভিচার ভিন্ন অন্য কারণে আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে, সে তাহাকে ব্যভিচারিণী করে; এবং যে ব্যক্তি সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে। আবার তোমরা শুনিয়াছ, পূর্ব্বকালীয় লোকদের নিকটে উক্ত হইয়াছিল, ‘তুমি মিথ্যা দিব্য করিও না, কিন্তু প্রভুর উদ্দেশে তোমার দিব্য সকল পালন করিও।’ কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, কোন দিব্যই করিও না; স্বর্গের দিব্য করিও না, কেননা তাহা ঈশ্বরের সিংহাসন; এবং পৃথিবীর দিব্য করিও না, কেননা তাহা তাঁহার পাদপীঠ; আর যিরূশালেমের দিব্য করিও না, কেননা তাহা মহান্‌ রাজার নগরী। আর তোমার মাথার দিব্য করিও না, কেননা একগাছি চুল সাদা কি কাল করিবার সাধ্য তোমার নাই। কিন্তু তোমাদের কথা হাঁ, হাঁ, না, না, হউক; ইহার অতিরিক্ত যাহা, তাহা মন্দ হইতে জন্মে। তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, “চক্ষুর পরিশোধে চক্ষু ও দন্তের পরিশোধে দন্ত”। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা দুষ্টের প্রতিরোধ করিও না; বরং যে কেহ তোমার দক্ষিণ গালে চড় মারে, অন্য গাল তাহার দিকে ফিরাইয়া দেও। আর যে তোমার সহিত বিচার-স্থানে বিবাদ করিয়া তোমার আঙ্‌রাখা লইতে চায়, তাহাকে চোগাও লইতে দেও। আর যে কেহ এক ক্রোশ যাইতে তোমাকে পীড়াপীড়ি করে, তাহার সঙ্গে দুই ক্রোশ যাও। যে তোমার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাকে দেও; এবং যে তোমার নিকটে ধার চায়, তাহা হইতে বিমুখ হইও না। তোমরা শুনিয়াছ, উক্ত হইয়াছিল, “তোমার প্রতিবাসীকে প্রেম করিবে,” এবং ‘তোমার শত্রুকে দ্বেষ করিবে’। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে, তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও; যেন তোমরা আপনাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও, কারণ তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান। কেননা যাহারা তোমাদিগকে প্রেম করে, তাহাদিগকেই প্রেম করিলে তোমাদের কি পুরস্কার হইবে? করগ্রাহীরাও কি সেই মত করে না? আর তোমরা যদি কেবল আপন আপন ভ্রাতৃগণকে মঙ্গলবাদ কর, তবে অধিক কি কর্ম্ম কর? পরজাতীয়েরাও কি সেইরূপ করে না? অতএব তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন সিদ্ধ, তোমরাও তেমনি সিদ্ধ হও। সাবধান, লোককে দেখাইবার জন্য তাহাদের সাক্ষাতে তোমাদের ধর্ম্মকর্ম্ম করিও না, করিলে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার নিকটে তোমাদের পুরস্কার নাই। অতএব তুমি যখন দান কর, তখন তোমার সম্মুখে তূরী বাজাইও না, যেমন কপটীরা লোকের কাছে গৌরব পাইবার জন্য সমাজ-গৃহে ও পথে করিয়া থাকে; আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তাহারা আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে। কিন্তু তুমি যখন দান কর, তখন তোমার দক্ষিণ হস্ত কি করিতেছে, তাহা তোমার বাম হস্তকে জানিতে দিও না। এইরূপে তোমার দান যেন গোপনে হয়; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন। আর তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন কপটীদের ন্যায় হইও না; কারণ তাহারা সমাজ-গৃহে ও পথের কোণে দাঁড়াইয়া লোক-দেখান প্রার্থনা করিতে ভাল বাসে; আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তাহারা আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে। কিন্তু তুমি যখন প্রার্থনা কর, তখন তোমার অন্তরাগারে প্রবেশ করিও, আর দ্বার রুদ্ধ করিয়া তোমার পিতা, যিনি গোপনে বর্ত্তমান, তাঁহার নিকটে প্রার্থনা করিও; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন। আর প্রার্থনাকালে তোমরা অনর্থক পুনরুক্তি করিও না, যেমন জাতিগণ করিয়া থাকে; কেননা তাহারা মনে করে, বাক্যবাহুল্যে তাহাদের প্রার্থনার উত্তর পাইবে। অতএব তোমরা তাহাদের মত হইও না, কেননা তোমাদের কি কি প্রয়োজন, তাহা যাচ্ঞা করিবার পূর্ব্বে তোমাদের পিতা জানেন। অতএব তোমরা এই মত প্রার্থনা করিও; হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক, তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক; আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আজ আমাদিগকে দেও; আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি; আর আমাদিগকে পরীক্ষাতে আনিও না, কিন্তু মন্দ হইতে রক্ষা কর। কারণ তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদিগকেও ক্ষমা করিবেন। কিন্তু তোমরা যদি লোকদিগকে ক্ষমা না কর, তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করিবেন না। আর তোমরা যখন উপবাস কর, তখন কপটীদের ন্যায় বিষণ্ণ-বদন হইও না; কেননা তাহারা লোককে উপবাস দেখাইবার নিমিত্ত আপনাদের মুখ মলিন করে; আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তাহারা আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে। কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর, তখন মাথায় তৈল মাখিও, এবং মুখ ধুইও; যেন লোকে তোমার উপবাস না দেখিতে পায়, কিন্তু তোমার পিতা, যিনি গোপনে বর্ত্তমান, তিনিই দেখিতে পান; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন। তোমরা পৃথিবীতে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় করিও না; এখানে ত কীটে ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে, এবং এখানে চোরে সিঁধ কাটিয়া চুরি করে। কিন্তু স্বর্গে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় কর; সেখানে কীটে ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে না, সেখানে চোরেও সিঁধ কাটিয়া চুরি করে না। কারণ যেখানে তোমার ধন, সেইখানে তোমার মনও থাকিবে। চক্ষুই শরীরের প্রদীপ; অতএব তোমার চক্ষু যদি সরল হয়, তবে তোমার সমস্ত শরীর দীপ্তিময় হইবে। কিন্তু তোমার চক্ষু যদি মন্দ হয়, তবে তোমার সমস্ত শরীর অন্ধকারময় হইবে। অতএব তোমার আন্তরিক দীপ্তি যদি অন্ধকার হয়, সেই অন্ধকার কত বড়! কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না; কেননা সে হয় ত এক জনকে দ্বেষ করিবে, আর এক জনকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইবে, আর এক জনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না। এই জন্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ‘কি ভোজন করিব, কি পান করিব’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিম্বা ‘কি পরিব’ বলিয়া শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না; ভক্ষ্য হইতে প্রাণ ও বস্ত্র হইতে শরীর কি বড় বিষয় নয়? আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; তাহারা বুনেও না, কাটেও না, গোলাঘরে সঞ্চয়ও করে না, তথাপি তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; তোমরা কি তাহাদের হইতে অধিক শ্রেষ্ঠ নও? আর তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হইয়া আপন বয়স এক হস্তমাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে? আর বস্ত্রের নিমিত্ত কেন ভাবিত হও? ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্পের বিষয়ে বিবেচনা কর, সেগুলি কেমন বাড়ে; সে সকল শ্রম করে না, সূতাও কাটে না; তথাপি আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, শলোমনও আপনার সমস্ত প্রতাপে ইহার একটীর ন্যায় সুসজ্জিত ছিলেন না। ভাল, ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তাহা যদি ঈশ্বর এরূপ বিভূষিত করেন, তবে হে অল্পবিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কি আরও অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন না? অতএব ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, ‘কি ভোজন করিব?’ বা ‘কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ কেননা পরজাতীয়েরাই এই সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে। অতএব কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না, কেননা কল্য আপনার বিষয় আপনি ভাবিত হইবে; দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট। তোমরা বিচার করিও না, যেন বিচারিত না হও। কেননা যেরূপ বিচারে তোমরা বিচার কর, সেইরূপ বিচারে তোমরাও বিচারিত হইবে; এবং যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদের নিমিত্ত পরিমাণ করা যাইবে। আর তোমার ভ্রাতার চক্ষে যে কুটা আছে, তাহাই কেন দেখিতেছ, কিন্তু তোমার নিজের চক্ষে যে কড়িকাট আছে, তাহা কেন ভাবিয়া দেখিতেছ না? অথবা তুমি কেমন করিয়া আপন ভ্রাতাকে বলিবে, এস, আমি তোমার চক্ষু হইতে কুটা গাছটা বাহির করিয়া দিই? আর দেখ, তোমার নিজের চক্ষে কড়িকাঠ রহিয়াছে! হে কপটি, আগে আপনার চক্ষু হইতে কড়িকাট বাহির করিয়া ফেল, আর তখন তোমার ভ্রাতার চক্ষু হইতে কুটা গাছটা বাহির করিবার নিমিত্ত স্পষ্ট দেখিতে পাইবে। পবিত্র বস্তু কুকুরদিগকে দিও না, এবং তোমাদের মুক্তা শূকরদিগের সম্মুখে ফেলিও না; পাছে তাহারা পা দিয়া তাহা দলায়, এবং ফিরিয়া তোমাদিগকে ফাড়িয়া ফেলে। যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। কেননা যে কেহ যাচ্ঞা করে, সে গ্রহণ করে; এবং যে অন্বেষণ করে, সে পায়; আর যে আঘাত করে, তাহার জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। তোমাদের মধ্যে এমন লোক কে যে, আপনার পুত্র রুটী চাহিলে তাহাকে পাথর দিবে, কিম্বা মাছ চাহিলে তাহাকে সাপ দিবে? অতএব তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিবেন। অতএব সর্ব্ববিষয়ে তোমরা যাহা যাহা ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও; কেননা ইহাই ব্যবস্থার ও ভাববাদি-গ্রন্থের সার। সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর; কেননা সর্ব্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়। ভাক্ত ভাববাদিগণ হইতে সাবধান; তাহারা মেষের বেশে তোমাদের নিকটে আইসে, কিন্তু অন্তরে গ্রাসকারী কেন্দুয়া। তোমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে। লোকে কি কাঁটাগাছ হইতে দ্রাক্ষাফল, কিম্বা শিয়ালকাঁটা হইতে ডুমুরফল সংগ্রহ করে? সেই প্রকারে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে, কিন্তু মন্দ গাছে মন্দ ফল ধরে। ভাল গাছে মন্দ ফল ধরিতে পারে না, এবং মন্দ গাছে ভাল ফল ধরিতে পারে না। যে কোন গাছে ভাল ফল ধরে না, তাহা কাটিয়া আগুনে ফেলিয়া দেওয়া যায়। অতএব তোমরা উহাদের ফল দ্বারাই উহাদিগকে চিনিতে পারিবে। যাহারা আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে, তাহারা সকলেই যে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে, এমন নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই পাইবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলিবে, হে প্রভু, হে প্রভু, আপনার নামেই আমরা কি ভাববাণী বলি নাই? আপনার নামেই কি ভূত ছাড়াই নাই? আপনার নামেই কি অনেক পরাক্রম-কার্য্য করি নাই? তখন আমি তাহাদিগকে স্পষ্টই বলিব, আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; হে অধর্ম্মাচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও। অতএব যে কেহ আমার এই সকল বাক্য শুনিয়া পালন করে, তাহাকে এমন এক জন বুদ্ধিমান লোকের তুল্য বলিতে হইবে, যে পাষাণের উপরে আপন গৃহ নির্ম্মাণ করিল। পরে বৃষ্টি নামিল, বন্যা আসিল, বায়ু বহিল, এবং সেই গৃহে লাগিল, তথাপি তাহা পড়িল না, কারণ পাষাণের উপরে তাহার ভিত্তিমূল স্থাপিত হইয়াছিল। আর যে কেহ আমার এই সকল বাক্য শুনিয়া পালন না করে, তাহাকে এমন এক জন নির্ব্বোধ লোকের তুল্য বলিতে হইবে, যে বালুকার উপরে আপন গৃহ নির্ম্মাণ করিল। পরে বৃষ্টি নামিল, বন্যা আসিল, বায়ু বহিল, এবং সেই গৃহে আঘাত করিল, তাহাতে তাহা পড়িয়া গেল, ও তাহার পতন ঘোরতর হইল। যীশু যখন এই সকল বাক্য শেষ করিলেন, লোকসমূহ তাঁহার উপদেশে চমৎকার জ্ঞান করিল; কারণ তিনি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় তাহাদিগকে উপদেশ দিতেন, তাহাদের অধ্যাপকদের ন্যায় নয়। তিনি পর্ব্বত হইতে নামিলে বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল। আর দেখ, এক জন কুষ্ঠী নিকটে আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিল, হে প্রভু, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুচি করিতে পারেন। তখন তিনি হাত বাড়াইয়া তাহাকে স্পর্শ করিলেন, কহিলেন, আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও; আর তখনই সে কুষ্ঠ হইতে শুচীকৃত হইল। পরে যীশু তাহাকে কহিলেন, দেখিও, এই কথা কাহাকেও বলিও না; কিন্তু যাজকের নিকটে গিয়া আপনাকে দেখাও, এবং মোশির আজ্ঞানুসারে নৈবেদ্য উৎসর্গ কর, তাহাদের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য। আর তিনি কফরনাহূমে প্রবেশ করিলে এক জন শতপতি তাঁহার নিকটে আসিয়া বিনতিপূর্ব্বক কহিলেন, হে প্রভু, আমার দাস গৃহে পক্ষাঘাতে পড়িয়া আছে, ভয়ানক যাতনা পাইতেছে। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমি গিয়া তাহাকে সুস্থ করিব। শতপতি উত্তর করিলেন, হে প্রভু, আমি এমন যোগ্য নই যে, আপনি আমার ছাদের নীচে আইসেন; কেবল বাক্যে বলুন, তাহাতেই আমার দাস সুস্থ হইবে। কারণ আমিও কর্ত্তৃত্বের অধীন লোক, আবার সেনাগণ আমার অধীন; আমি তাহাদের এক জনকে ‘যাও’ বলিলে সে যায়, এবং অন্যকে ‘আইস’ বলিলে সে আইসে, আর আমার দাসকে ‘এই কর্ম্ম কর’ বলিলে সে তাহা করে। এই কথা শুনিয়া যীশু আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, এবং যাহারা পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতেছিল, তাহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, ইস্রায়েলের মধ্যে কাহারও এত বড় বিশ্বাস দেখিতে পাই নাই। আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, অনেকে পূর্ব্ব ও পশ্চিম হইতে আসিবে, এবং অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের সহিত স্বর্গ-রাজ্যে একত্র বসিবে; কিন্তু রাজ্যের সন্তানদিগকে বাহিরের অন্ধকারে ফেলিয়া দেওয়া যাইবে; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে। পরে যীশু সেই শতপতিকে কহিলেন, চলিয়া যাও, যেমন বিশ্বাস করিলে, তেমনি তোমার প্রতি হউক। আর সেই দণ্ডেই তাহার দাস সুস্থ হইল। আর যীশু পিতরের গৃহে আসিয়া দেখিলেন, তাঁহার শাশুড়ী শয্যাগত, তাঁহার জ্বর হইয়াছে। পরে তিনি তাঁহার হস্ত স্পর্শ করিলেন, আর জ্বর ছাড়িয়া গেল; তখন তিনি উঠিয়া যীশুর পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন। আর সন্ধ্যা হইলে লোকেরা অনেক ভূতগ্রস্থকে তাঁহার নিকটে আনিল, তাহাতে তিনি বাক্য দ্বারাই সেই আত্মাগণকে ছাড়াইলেন, এবং সকল পীড়িত লোককে সুস্থ করিলেন; যেন যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয়, “তিনি আপনি আমাদের দুর্ব্বলতা সকল গ্রহণ করিলেন ও ব্যাধি সকল বহন করিলেন।” আর যীশু আপনার চারিদিকে বিস্তর লোক দেখিয়া পরপারে যাইতে আজ্ঞা করিলেন। তখন এক জন অধ্যাপক আসিয়া তাহাকে কহিলেন, হে গুরু, আপনি যে কোন স্থানে যাইবেন, আমি আপনার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইব। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, শৃগালদের গর্ত্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষিগণের বাসা আছে; কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই। শিষ্যদের মধ্যে আর এক জন তাঁহাকে বলিলেন, হে প্রভু, অগ্রে আমার পিতাকে কবর দিয়া আসিতে অনুমতি করুন। কিন্তু যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস; মৃতেরাই আপন আপন মৃতদের কবর দিউক। আর তিনি নৌকায় উঠিলে তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহার পশ্চাৎ গেলেন। আর দেখ, সমুদ্রে ভারী ঝড় আসিল, এমন কি, নৌকা তরঙ্গে আচ্ছন্ন হইতেছিল; কিন্তু তিনি নিদ্রাগত ছিলেন। তখন তাঁহারা তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহাকে জাগাইয়া কহিলেন, হে প্রভু, রক্ষা করুন, আমরা মারা পড়িলাম। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, হে অল্পবিশ্বাসীরা, কেন ভীরু হও? তখন তিনি উঠিয়া বায়ু ও সমুদ্রকে ধমক দিলেন; তাহাতে মহাশান্তি হইল। আর সেই ব্যক্তিরা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া কহিলেন, আঃ! ইনি কেমন লোক, বায়ু ও সমুদ্রও যে ইঁহার আজ্ঞা মানে! পরে তিনি পরপারে গাদারীয়দের দেশে গেলে দুই জন ভূতগ্রস্থ লোক কবরস্থান হইতে বাহির হইয়া তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইল; তাহারা এত বড় দুর্দ্দান্ত ছিল যে, ঐ পথ দিয়া কেহই যাইতে পারিত না। আর দেখ, তাহারা চেঁচাইয়া উঠিল, বলিল, হে ঈশ্বরের পুত্র, আপনার সহিত আমাদের সম্পর্ক কি? আপনি কি নিরূপিত সময়ের পূর্ব্বে আমাদিগকে যাতনা দিতে এখানে আসিলেন? তখন তাহাদের হইতে কিছু দূরে বৃহৎ এক শূকর পাল চরিতেছিল। তাহাতে ভূতেরা বিনতি করিয়া তাঁহাকে কহিল, যদি আমাদিগকে ছাড়ান, তবে ঐ শূকর-পালে পাঠাইয়া দিউন। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, চলিয়া যাও। তখন তাহারা বাহির হইয়া সেই শূকর-পালে প্রবেশ করিল; আর দেখ, সমুদয় শূকর মহাবেগে ঢালু পাড় দিয়া দৌড়িয়া গিয়া সমুদ্রে পড়িল, ও জলে ডুবিয়া মরিল। তখন পালকেরা পলায়ন করিল, এবং নগরে গিয়া সমস্ত বিষয়, বিশেষতঃ সেই ভূতগ্রস্তদের বিষয় বর্ণনা করিল। আর দেখ, নগরের সমস্ত লোক যীশুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য বাহির হইয়া আসিল, এবং তাঁহাকে দেখিয়া আপনাদের সীমা হইতে চলিয়া যাইতে বিনতি করিল। [1] পরে তিনি নৌকায় উঠিয়া পার হইলেন, এবং নিজ নগরে আসিলেন। আর দেখ, কয়েকটী লোক তাঁহার নিকটে এক জন পক্ষাঘাতীকে আনিল, সে খাটের উপরে শয়ান ছিল। যীশু তাহাদের বিশ্বাস দেখিয়া সেই পক্ষাঘাতীকে কহিলেন, বৎস, সাহস কর, তোমার পাপ ক্ষমা হইল। আর দেখ, কয়েক জন অধ্যাপক মনে মনে কহিল, এ ব্যক্তি ঈশ্বর-নিন্দা করিতেছে। তখন যীশু তাহাদের চিন্তা বুঝিয়া কহিলেন, তোমরা কেন মনে মনে কুচিন্তা করিতেছ? কারণ কোন্‌টা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা হইল’ বলা, না ‘তুমি উঠিয়া বেড়াও’ বলা? কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিতে মনুষ্যপুত্রের ক্ষমতা আছে, ইহা যেন তোমরা জানিতে পার, এই জন্য — তিনি সেই পক্ষাঘাতীকে বলিলেন — উঠ, তোমার শয্যা তুলিয়া লও, এবং তোমার ঘরে চলিয়া যাও। তখন সে উঠিয়া আপন গৃহে চলিয়া গেল। তাহা দেখিয়া লোকসমূহ ভীত হইল, আর ঈশ্বর মনুষ্যকে এমন ক্ষমতা দিয়াছেন বলিয়া তাহার গৌরব করিল। আর সে স্থান হইতে যাইতে যাইতে যীশু দেখিলেন, মথি নামক এক ব্যক্তি করগ্রহণ-স্থানে বসিয়া আছে; তিনি তাহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস। তাহাতে সে উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিল। পরে তিনি গৃহমধ্যে ভোজন করিতে বসিয়াছেন, আর দেখ, অনেক করগ্রাহী ও পাপী আসিয়া যীশুর এবং তাঁহার শিষ্যদের সহিত বসিল। তাহা দেখিয়া ফরীশীরা তাঁহার শিষ্যদিগকে কহিল, তোমাদের গুরু কি জন্য করগ্রাহী ও পাপীদের সহিত ভোজন করেন? তাহা শুনিয়া তিনি কহিলেন, সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, বরং পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা গিয়া শিক্ষা কর, এই বচনের মর্ম্ম কি, “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়”; কেননা আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকিতে আসিয়াছি। তখন যোহনের শিষ্যগণ তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিল, ফরীশীরা ও আমরা অনেক বার উপবাস করি, কিন্তু আপনার শিষ্যগণ উপবাস করে না, ইহার কারণ কি? যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, বর সঙ্গে থাকিতে কি বাসরঘরের লোকে বিলাপ করিতে পারে? কিন্তু এমন সময় আসিবে, যখন তাহাদের নিকট হইতে বর নীত হইবেন; তখন তাহারা উপবাস করিবে। পুরাতন বস্ত্রে কেহ কোরা কাপড়ের তালী দেয় না, কেননা তাহার তালীতে বস্ত্র ছিঁড়িয়া যায়, এবং আরও মন্দ ছিদ্র হয়। আর লোকে পুরাতন কুপায় নূতন দ্রাক্ষারস রাখে না; রাখিলে কুপাগুলি ফাটিয়া যায়, তাহাতে দ্রাক্ষারস পড়িয়া যায়, কুপাগুলিও নষ্ট হয়; কিন্তু লোকে নূতন কুপাতেই টাট্‌কা দ্রাক্ষারস রাখে, তাহাতে উভয়েরই রক্ষা হয়। তিনি তাহাদিগকে এই সকল কথা বলিতেছেন, আর দেখ, এক জন অধ্যক্ষ আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিলেন, আমার কন্যাটী এতক্ষণ মরিয়া গিয়াছে; কিন্তু আপনি আসিয়া তাহার উপরে হস্তার্পণ করুন, তাহাতে সে বাঁচিবে। তখন যীশু উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন, তাঁহার শিষ্যগণও চলিলেন। আর দেখ, বারো বৎসর অবধি প্রদর রোগগ্রস্ত একটী স্ত্রীলোক তাঁহার পশ্চাৎ দিকে আসিয়া তাঁহার বস্ত্রের থোপ স্পর্শ করিল; কারণ সে মনে মনে বলিতেছিল, উহাঁর বস্ত্রমাত্র স্পর্শ করিতে পারিলেই আমি সুস্থ হইব। তখন যীশু মুখ ফিরাইয়া তাহাকে দেখিয়া কহিলেন, বৎসে, সাহস কর, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল। সেই দণ্ড অবধি স্ত্রীলোকটী সুস্থ হইল। পরে যীশু সেই অধ্যক্ষের বাটীতে আসিয়া যখন দেখিলেন, বংশীবাদকগণ রহিয়াছে, ও লোকেরা কোলাহল করিতেছে, তখন বলিলেন, সরিয়া যাও, কন্যাটী ত মরে নাই, ঘুমাইয়া রহিয়াছে। তখন তাহারা তাঁহাকে উপহাস করিল। কিন্তু লোকদিগকে বাহির করিয়া দেওয়া হইলে তিনি ভিতরে গিয়া কন্যাটীর হাত ধরিলেন, তাহাতে সে উঠিল। আর এই জনরব সেই দেশময় ব্যাপিল। পরে যীশু সেখান হইতে প্রস্থান করিলে, দুই জন অন্ধ তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল; তাহারা চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন। তিনি গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলে পর সেই অন্ধেরা তাঁহার নিকটে আসিল; তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, আমি ইহা করিতে পারি? তাহারা তাঁহাকে বলিল, হাঁ, প্রভু। তখন তিনি তাহাদের চক্ষু স্পর্শ করিলেন, আর কহিলেন, তোমাদের বিশ্বাস অনুসারে তোমাদের প্রতি হউক। তখন তাহাদের চক্ষু খুলিয়া গেল। আর যীশু তাহাদিগকে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়া দিলেন, কহিলেন, দেখিও, যেন কেহ ইহা জানিতে না পায়। কিন্তু তাহারা বাহিরে গিয়া সেই দেশময় তাঁহার কীর্ত্তি প্রকাশ করিল। তাহারা বাহিরে যাইতেছে, আর দেখ, লোকেরা এক ভূতগ্রস্ত গোঁগাকে তাঁহার নিকটে আনিল। ভূত ছাড়ান হইলে সেই গোঁগা কথা কহিতে লাগিল; তখন লোক সকল আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া কহিল, ইস্রায়েলের মধ্যে এমন কখনও দেখা যায় নাই। কিন্তু ফরীশীরা বলিতে লাগিল, ভূতগণের অধিপতি দ্বারা সে ভূত ছাড়ায়। আর যীশু সমস্ত নগরে ও গ্রামে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, এবং সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার ব্যাধি আরোগ্য করিলেন। কিন্তু বিস্তর লোক দেখিয়া তিনি তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল। তখন তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন। পরে তিনি আপনার বারো জন শিষ্যকে নিকটে ডাকিয়া তাঁহাদিগকে অশুচি আত্মাদের উপরে ক্ষমতা দিলেন, যেন তাঁহারা তাহাদিগকে ছাড়াইতে, এবং সর্ব্বপ্রকার রোগ ও ব্যাধি আরোগ্য করিতে পারেন। সেই বারো জন প্রেরিতের নাম এই এই;— প্রথম, শিমোন, যাঁহাকে পিতর বলে, এবং তাঁহার ভ্রাতা আন্দ্রিয়, সিবদিয়ের পুত্র যাকোব এবং তাঁহার ভ্রাতা যোহন, ফিলিপ ও বর্থলময়, থোমা ও করগ্রাহী মথি, আল্‌ফেয়ের পুত্র যাকোব ও থদ্দেয়, কানানী শিমোন এবং ইষ্করিয়োতীয় যিহূদা, যে তাঁহাকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিল। এই বারো জনকে যীশু প্রেরণ করিলেন, আর তাঁহাদিগকে এই আদেশ দিলেন— তোমরা পরজাতিগণের পথে যাইও না, এবং শমরীয়দের কোন নগরে প্রবেশ করিও না; বরং ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষগণের কাছে যাও। আর তোমরা যাইতে যাইতে এই কথা প্রচার কর, ‘স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল’। পীড়িতদিগকে সুস্থ করিও, মৃতদিগকে উত্থাপন করিও, কুষ্ঠীদিগকে শুচি করিও, ভূতদিগকে ছাড়াইও; তোমরা বিনামূল্যে পাইয়াছ, বিনামূল্যেই দান করিও। তোমাদের গেঁজিয়ায় স্বর্গ কি রৌপ্য কি পিত্তল, এবং যাত্রার জন্য থলি কি দুইটী আঙ্‌রাখা কি পাদুকা কি যষ্টি, এ সকলের আয়োজন করিও না; কেননা কার্য্যকারী নিজ আহারের যোগ্য। আর তোমরা যে নগরে কি গ্রামে প্রবেশ করিবে, তথাকার কোন্‌ ব্যক্তি যোগ্য, তাহা অনুসন্ধান করিও, আর যে পর্য্যন্ত অন্য স্থানে না যাও, সেখানে থাকিও। আর তাহার গৃহে প্রবেশ করিবার সময়ে সেই গৃহকে মঙ্গলবাদ করিও। তাহাতে সেই গৃহ যদি যোগ্য হয়, তবে তোমাদের শান্তি তাহার প্রতি বর্ত্তুক; কিন্তু যদি যোগ্য না হয়, তবে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরিয়া আইসুক। আর যে কেহ তোমাদিগকে গ্রহণ না করে, এবং তোমাদের কথা না শুনে, সেই গৃহ কিম্বা সেই নগর হইতে বাহির হইবার সময়ে আপন আপন পায়ের ধূলা ঝাড়িয়া ফেলিও। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, বিচার-দিনে সেই নগরের দশা অপেক্ষা বরং সদোম ও ঘমোরা দেশের দশা সহনীয় হইবে। দেখ, কেন্দুয়াদের মধ্যে যেমন মেষ, তেমনি আমি তোমাদিগকে প্রেরণ করিতেছি; অতএব তোমরা সর্পের ন্যায় সতর্ক ও কপোতের ন্যায় অমায়িক হও। কিন্তু মনুষ্যদের হইতে সাবধান থাকিও; কেননা তাহারা তোমাদিগকে বিচারসভায় সমর্পণ করিবে, এবং আপনাদের সমাজ-গৃহে কোড়া মারিবে। এমন কি, আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের সম্মুখে, তাহাদের ও পরজাতিগণের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য, নীত হইবে। কিন্তু যখন লোকে তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, তখন তোমরা কিরূপে কি বলিবে, সে বিষয়ে ভাবিত হইও না; কারণ তোমাদের যাহা বলিবার, তাহা সেই দণ্ডেই তোমাদিগকে দান করা যাইবে। কেননা তোমরা কথা বলিবে, এমন নয়, কিন্তু তোমাদের পিতার যে আত্মা তোমাদের অন্তরে কথা কহেন, তিনিই বলিবেন। আর ভ্রাতা ভ্রাতাকে ও পিতা সন্তানকে মৃত্যুতে সমর্পণ করিবে; এবং সন্তানেরা মাতাপিতার বিপক্ষে উঠিয়া তাঁহাদিগকে বধ করাইবে। আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে; কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে। আর তাহারা যখন তোমাদিগকে এক নগরে তাড়না করিবে, তখন অন্য নগরে পলায়ন করিও; কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, ইস্রায়েলের সকল নগরে তোমাদের কার্য্য শেষ হইবে না, যে পর্য্যন্ত মনুষ্যপুত্র না আইসেন। শিষ্য গুরু হইতে বড় নয়, এবং দাস কর্ত্তা হইতে বড় নয়। শিষ্য আপন গুরুর তুল্য ও দাস আপন কর্ত্তার তুল্য হইলেই তাহার পক্ষে যথেষ্ট। তাহারা যখন গৃহের কর্ত্তাকে বেল্‌সবূল বলিয়াছে, তখন তাঁহার পরিজনগণকে আরও কি না বলিবে? অতএব তোমরা তাহাদিগকে ভয় করিও না, কেননা এমন ঢাকা কিছুই নাই, যাহা প্রকাশ পাইবে না, এবং এমন গুপ্ত কিছুই নাই, যাহা জানা যাইবে না। আমি যাহা তোমাদিগকে অন্ধকারে বলি, তাহা তোমরা আলোতে বলিও; এবং যাহা কাণে কাণে শুন, তাহা ছাদের উপরে প্রচার করিও। আর যাহারা শরীর বধ করে, কিন্তু আত্মা বধ করিতে পারে না, তাহাদিগকে ভয় করিও না; কিন্তু যিনি আত্মা ও শরীর উভয়ই নরকে বিনষ্ট করিতে পারেন, বরং তাঁহাকেই ভয় কর। দুইটী চড়াই পাখী কি এক পয়সায় বিক্রয় হয় না? আর তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা তাহাদের একটীও ভূমিতে পড়ে না। কিন্তু তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে। অতএব ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ। অতএব যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে স্বীকার করে, আমিও আপন স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাহাকে স্বীকার করিব। কিন্তু যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আপন স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাহাকে অস্বীকার করিব। মনে করিও না যে, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে আসিয়াছি; শান্তি দিতে আসি নাই, কিন্তু খড়গ দিতে আসিয়াছি। কেননা আমি পিতার সহিত পুত্রের, মাতার সহিত কন্যার, এবং শাশুড়ীর সহিত বধূর বিচ্ছেদ জন্মাইতে আসিয়াছি; আর আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে। যে কেহ পিতা কি মাতাকে আমা হইতে অধিক ভাল বাসে, সে আমার যোগ্য নয়; এবং যে কেহ পুত্র কি কন্যাকে আমা হইতে অধিক ভালবাসে, সে আমার যোগ্য নয়। আর যে কেহ আপন ক্রুশ তুলিয়া লইয়া আমার পশ্চাৎ না আইসে, সে আমার যোগ্য নয়। যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করে, সে তাহা হারাইবে; এবং যে কেহ আমার নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা রক্ষা করিবে। যে তোমাদিগকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর যে আমাকে গ্রহণ করে, সে আমার প্রেরণকর্ত্তাকেই গ্রহণ করে। যে ভাববাদীকে ভাববাদী বলিয়া গ্রহণ করে, সে ভাববাদীর পুরস্কার পাইবে; এবং যে ধার্ম্মিককে ধার্ম্মিক বলিয়া গ্রহণ করে, সে ধার্ম্মিকের পুরস্কার পাইবে। আর যে কেহ এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে কোন এক জনকে শিষ্য বলিয়া কেবল এক বাটী শীতল জল পান করিতে দেয়, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, সে কোন মতে আপন পুরস্কারে বঞ্চিত হইবে না। এইরূপে যীশু আপন বারো জন শিষ্যের প্রতি আদেশ সমাপ্ত করিবার পর লোকদের নগরে নগরে উপদেশ দিবার ও প্রচার করিবার জন্য সে স্থান হইতে প্রস্থান করিলেন। পরে যোহন কারাগারে থাকিয়া খ্রীষ্টের কর্ম্মের বিষয় শুনিয়া আপনার শিষ্যদের দ্বারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন, ‘যাঁহার আগমন হইবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকিব?’ যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা যাও, যাহা যাহা শুনিতেছ ও দেখিতেছ, তাহার সংবাদ যোহনকে দেও; অন্ধেরা দেখিতে পাইতেছে ও খঞ্জেরা চলিতেছে, কুষ্ঠীরা শুচিকৃত হইতেছে ও বধিরেরা শুনিতেছে, এবং মৃতেরা উত্থাপিত হইতেছে ও দরিদ্রদের নিকটে সুসমাচার প্রচারিত হইতেছে; আর ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আমাতে বিঘ্নের কারণ না পায়। তাহারা চলিয়া যাইতেছে, এমন সময়ে যীশু লোকসমূহকে যোহনের বিষয়ে বলিতে লাগিলেন, তোমরা প্রান্তরে কি দেখিতে গিয়াছিলে? কি বায়ুকম্পিত নল? তবে কি দেখিতে গিয়াছিলে? কি কোমল বস্ত্র পরিহিত কোন ব্যক্তিকে? দেখ, যাহারা কোমল বস্ত্র পরিধান করে, তাহারা রাজবাটীতে থাকে। তবে কি জন্য গিয়াছিলে? কি এক জন ভাববাদীকে দেখিবার জন্য? হাঁ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ভাববাদী হইতেও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে। ইনি সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে লেখা আছে, “দেখ, আমি আপন দূতকে তোমার সম্মুখে প্রেরণ করি; সে তোমার অগ্রে তোমার পথ প্রস্তুত করিবে।” আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকলের মধ্যে যোহন বাপ্তাইজক হইতে মহান্‌ কেহই উৎপন্ন হয় নাই, তথাপি স্বর্গ-রাজ্যে অতি ক্ষুদ্র যে ব্যক্তি, সে তাঁহা হইতে মহান্‌। আর যোহন বাপ্তাইজকের কাল হইতে এখন পর্য্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য বলে আক্রান্ত হইতেছে, এবং আক্রমীরা সবলে তাহা অধিকার করিতেছে। কেননা সমস্ত ভাববাদী ও ব্যবস্থা যোহন পর্য্যন্ত ভাববাণী বলিয়াছে। আর তোমরা যদি গ্রহণ করিতে সম্মত হও, তবে জানিবে, যে এলিয়ের আগমন হইবে, তিনি এই ব্যক্তি। যাহার শুনিতে কাণ থাকে, সে শুনুক। কিন্তু আমি কাহার সহিত এই কালের লোকদের তুলনা দিব? তাহারা এমন বালকদের তুল্য, যাহারা বাজারে বসিয়া আপনাদের সঙ্গিগণকে ডাকিয়া বলে, ‘আমরা তোমাদের নিকটে বাঁশী বাজাইলাম, তোমরা নাচিলে না; আমরা বিলাপ করিলাম, তোমরা বুক চাপড়াইলে না।’ কারণ যোহন আসিয়া ভোজন পান করেন নাই; তাহাতে লোকে বলে, সে ভূতগ্রস্ত। মনুষ্যপুত্র আসিয়া ভোজন পান করেন; তাহাতে লোকে বলে, ঐ দেখ, এক জন পেটুক ও মদ্যপায়ী, করগ্রাহীদের ও পাপীদের বন্ধু। কিন্তু প্রজ্ঞা নিজ কর্ম্মসমূহ দ্বারা নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হয়। তখন যে যে নগরে তাঁহার সর্ব্বাপেক্ষা অধিক পরাক্রম-কার্য্য সম্পন্ন হইয়াছিল, তিনি সেই সকল নগরকে ভর্ৎসনা করিতে লাগিলেন, কেননা তাহারা মন ফিরায় নাই— ‘কোরাসীন, ধিক্‌ তোমাকে! বৈৎসৈদা, ধিক্‌ তোমাকে! কেননা তোমাদের মধ্যে যে সকল পরাক্রম-কার্য্য করা গিয়াছে, সে সকল যদি সোর ও সীদোনে করা যাইত, তবে অনেক দিন পূর্ব্বে তাহারা চট পরিয়া ভস্মে বসিয়া মন ফিরাইত। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমাদের দশা হইতে বরং সোর ও সীদোনের দশা বিচার-দিনে সহনীয় হইবে। আর হে কফরনাহূম, তুমি না কি স্বর্গ পর্য্যন্ত উচ্চীকৃত হইবে? তুমি পাতাল পর্য্যন্ত নামিয়া যাইবে; কেননা যে সকল পরাক্রম-কার্য্য তোমার মধ্যে করা গিয়াছে, সে সকল যদি সদোমে করা যাইত, তবে তাহা আজ পর্য্যন্ত থাকিত। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমার দশা হইতে বরং সদোম দেশের দশা বিচারদিনে সহনীয় হইবে।’ সেই সময়ে যীশু এই কথা কহিলেন, হে পিতঃ হে স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে প্রকাশ করিয়াছ; হাঁ, পিতঃ, কেননা ইহা তোমার দৃষ্টিতে প্রীতিজনক হইল। সকলই আমার পিতা কর্ত্তৃক আমাকে সমর্পিত হইয়াছে; আর পুত্রকে কেহ জানে না, কেবল পিতা জানেন, এবং পিতাকে কেহ জানে না, কেবল পুত্র জানেন, এবং পুত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করেন, সে জানে। হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু। [1] সেই সময়ে যীশু বিশ্রামবারে শস্যক্ষেত্র দিয়া গমন করিলেন; আর তাঁহার শিষ্যেরা ক্ষুধিত হওয়াতে শীষ ছিঁড়িয়া ছিঁড়িয়া খাইতে লাগিলেন। কিন্তু ফরীশীরা তাহা দেখিয়া তাঁহাকে বলিল, দেখ, বিশ্রামবারে যাহা করা বিধেয় নয়, তাহাই তোমার শিষ্যগণ করিতেছে। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গীরা ক্ষুধিত হইলে তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা পাঠ কর নাই? তিনি ত ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করিলেন, এবং তাঁহারা দর্শন-রুটী ভোজন করিলেন, যাহা তাঁহার ও তাঁহার সঙ্গীদের ভোজন করা বিধেয় ছিল না, কেবল যাজকবর্গেরই বিধেয় ছিল । আর তোমরা কি ব্যবস্থায় পাঠ কর নাই যে, বিশ্রামবারে যাজকেরা ধর্ম্মধামে বিশ্রামবার লঙ্ঘন করিলেও নির্দ্দোষ থাকে? কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই স্থানে ধর্ম্মধাম হইতে মহান্‌ এক ব্যক্তি আছেন। কিন্তু “আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়,” এই কথার অর্থ কি, তাহা যদি তোমরা জানিতে, তবে নির্দ্দোষদিগকে দোষী করিতে না। কেননা মনুষ্যপুত্র বিশ্রামবারের কর্ত্তা। পরে তিনি তথা হইতে চলিয়া গিয়া তাহাদের সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিলেন। আর দেখ, একটী লোক, তাহার একখানি হাত শুকাইয়া গিয়াছিল। তখন তাহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, বিশ্রামবারে কি সুস্থ করা বিধেয়? তাঁহার উপরে দোষারোপ করিবার নিমিত্ত ইহা বলিল। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কে, যে একটী মেষ রাখে, আর সেটী যদি বিশ্রামবারে গর্ত্তে পড়িয়া যায়, সে কি তাহা ধরিয়া তুলিবে না? তবে মেষ হইতে মনুষ্য আরও কত শ্রেষ্ঠ! অতএব বিশ্রামবারে সৎকর্ম্ম করা বিধেয়। তখন তিনি সেই লোকটীকে কহিলেন, তোমার হাত বাড়াইয়া দেও; তাহাতে সে বাড়াইয়া দিল, আর তাহা অন্যটীর ন্যায় পুনরায় সুস্থ হইল। পরে ফরীশীরা বাহিরে গিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করিতে লাগিল, কি প্রকারে তাঁহাকে বিনষ্ট করিতে পারে। যীশু তাহা জানিয়া তথা হইতে চলিয়া গেলেন; অনেক লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল, আর তিনি সকলকে সুস্থ করিলেন, এবং এই দৃঢ় আজ্ঞা দিলেন, তোমরা আমার পরিচয় দিও না। —যেন যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয়, “দেখ, আমার দাস, তিনি আমার মনোনীত, আমার প্রিয়, আমার প্রাণ তাঁহাতে প্রীত, আমি তাঁহার উপরে আপন আত্মাকে স্থাপন করিব, আর তিনি জাতিগণের কাছে ন্যায়বিচার প্রচার করিবেন। তিনি কলহ করিবেন না, উচ্চশব্দও করিবেন না, পথে কেহ তাঁহার রব শুনিতে পাইবে না। তিনি থেৎলা নল ভাঙ্গিবেন না, সধূম শলিতা নির্ব্বাণ করিবেন না, যে পর্য্যন্ত না ন্যায়বিচার জয়ীরূপে প্রচলিত করেন। আর তাঁহার নামে পরজাতিগণ প্রত্যাশা রাখিবে।” তখন এক জন ভূতগ্রস্ত তাঁহার নিকটে আনীত হইল, সে অন্ধ ও গোঁগা; আর তিনি তাহাকে সুস্থ করিলেন, তাহাতে সেই গোঁগা কথা কহিতে ও দেখিতে লাগিল। ইহাতে সমস্ত লোক চমৎকৃত হইল ও বলিতে লাগিল, ইনিই কি সেই দায়ূদ সন্তান? কিন্তু ফরীশীরা তাহা শুনিয়া কহিল, এ ব্যক্তি আর কিছুতে নয়, কেবল ভূতগণের অধিপতি বেল্‌সবূলের দ্বারাই ভূত ছাড়ায়। তাহাদের চিন্তা জানিয়া তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, যে কোন রাজ্য আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা উচ্ছিন্ন হয়; এবং যে কোন নগর কিম্বা পরিবার আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা স্থির থাকিবে না। আর শয়তান যদি শয়তানকে ছাড়ায়, সে ত আপনারই বিপক্ষে ভিন্ন হইল; তবে তাহার রাজ্য কি প্রকারে স্থির থাকিবে? আর আমি যদি বেল্‌সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের সন্তানেরা কাহার দ্বারা ছাড়ায়? এই জন্য তাহারাই তোমাদের বিচারকর্ত্তা হইবে। কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে সুতরাং ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে আসিয়া পড়িয়াছে। আর অগ্রে সেই বলবান্‌ ব্যক্তিকে না বাঁধিয়া কে কেমন করিয়া সেই বলবানের গৃহে প্রবেশ করিয়া তাহার ঘরের দ্রব্য লুট করিতে পারিবে? বাঁধিলে পরেই সে তাহার ঘর লুট করিবে। যে আমার সপক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষ; এবং যে আমার সহিত কুড়ায় না, সে ছড়াইয়া ফেলে। এই কারণ আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, মনুষ্যদের সকল পাপ ও নিন্দার ক্ষমা হইবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার নিন্দার ক্ষমা হইবে না। আর যে কেহ মনুষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে; কিন্তু যে কেহ পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে না, ইহকালেও নয়, পরকালেও নয়। হয় গাছকে ভাল বল, এবং তাহার ফলকেও ভাল বল; নয় গাছকে মন্দ বল, এবং তাহার ফলকেও মন্দ বল; কেননা ফল দ্বারাই গাছ চেনা যায়। হে সর্পের বংশেরা, তোমরা মন্দ হইয়া কেমন করিয়া ভাল কথা কহিতে পার? কেননা হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে। ভাল মানুষ ভাল ভাণ্ডার হইতে ভাল দ্রব্য বাহির করে, এবং মন্দ মানুষ মন্দ ভাণ্ডার হইতে মন্দ দ্রব্য বাহির করে। আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, মনুষ্যেরা যত অনর্থক কথা বলে, বিচার-দিনে সেই সকলের হিসাব দিতে হইবে। কারণ তোমার বাক্য দ্বারা তুমি নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হইবে, আর তোমার বাক্য দ্বারাই তুমি দোষী বলিয়া গণিত হইবে। তখন কয়েক জন অধ্যাপক ও ফরীশী তাঁহাকে বলিল, হে গুরু, আমরা আপনার কাছে কোন চিহ্ন দেখিতে ইচ্ছা করি। তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, এই কালের দুষ্ট ও ব্যভিচারী লোকে চিহ্নের অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনা ভাববাদীর চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন ইহাদিগকে দেওয়া যাইবে না। কারণ যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ভে থাকিবেন। নীনবীয় লোকেরা বিচারে এই কালের লোকদের সহিত দাঁড়াইয়া ইহাদিগকে দোষী করিবে, কেননা তাহারা যোনার প্রচারে মন ফিরাইয়াছিল, আর দেখ, যোনা হইতে মহান্‌ এক ব্যক্তি এখানে আছেন। দক্ষিণ দেশের রাণী বিচারে এই কালের লোকদের সহিত উঠিয়া ইহাদিগকে দোষী করিবেন; কেননা শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনিবার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে আসিয়াছিলেন, আর দেখ, শলোমন হইতে মহান্‌ এক ব্যক্তি এখানে আছেন। আর অশুচি আত্মা যখন মনুষ্য হইতে বাহির হইয়া যায়, তখন জলবিহীন নানা স্থান দিয়া ভ্রমণ করতঃ বিশ্রামের অন্বেষণ করে, কিন্তু তাহা পায় না। তখন সে বলে, আমি যেখান হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি, আমার সেই গৃহে ফিরিয়া যাই; পরে সে আসিয়া তাহা শূন্য, মার্জ্জিত ও শোভিত দেখে। তখন সে গিয়া আপনা হইতে দুষ্ট অপর সাত আত্মাকে সঙ্গে লইয়া আইসে, আর তাহারা সেই স্থানে প্রবেশ করিয়া বাস করে; তাহাতে সেই মনুষ্যের প্রথম দশা হইতে শেষ দশা আরও মন্দ হয়। এই কালের দুষ্ট লোকদের প্রতি তাহাই ঘটিবে। তিনি লোকসমূহকে এই সকল কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে, দেখ, তাঁহার মাতা ও ভ্রাতারা তাঁহার সহিত কথা কহিবার চেষ্টায় বাহিরে দাঁড়াইয়া ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তাঁহাকে কহিল, দেখুন, আপনার মাতা ও ভ্রাতারা আপনার সহিত কথা কহিবার চেষ্টায় বাহিরে দাঁড়াইয়া আছেন। কিন্তু যে এই কথা বলিল, তাহাকে তিনি উত্তর করিলেন, আমার মাতা কে? আমার ভ্রাতারাই বা কাহারা? পরে তিনি আপন শিষ্যগণের দিকে হাত বাড়াইয়া কহিলেন, এই দেখ, আমার মাতা ও আমার ভ্রাতারা; কেননা যে কেহ আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার ভ্রাতা ও ভগিনী ও মাতা। [1] সেই দিন যীশু গৃহ হইতে বাহির হইয়া গিয়া সমুদ্রের কূলে বসিলেন। আর বিস্তর লোক তাঁহার নিকটে সমাগত হইল, তাহাতে তিনি একখানি নৌকায় উঠিয়া বসিলেন, এবং সমস্ত লোক তীরে দাঁড়াইয়া রহিল। তখন তিনি দৃষ্টান্ত দ্বারা তাহাদিগকে অনেক কথা কহিতে লাগিলেন। তিনি কহিলেন, দেখ, বীজবাপক বীজ বপন করিতে গেল। বপনের সময় কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল, তাহাতে পক্ষীরা আসিয়া তাহা খাইয়া ফেলিল। আর কতক বীজ পাষাণময় ভূমিতে পড়িল, যেখানে অধিক মৃত্তিকা ছিল না, তাহাতে অধিক মৃত্তিকা না পাওয়াতে তাহা শীঘ্র অঙ্কুরিত হইয়া উঠিল, কিন্তু সূর্য্য উঠিলে পর পুড়িয়া গেল, এবং তাহার মূল না থাকাতে শুকাইয়া গেল। আর কতক বীজ কাঁটাবনে পড়িল, তাহাতে কাঁটাগাছ বাড়িয়া তাহা চাপিয়া রাখিল। আর কতক বীজ উত্তম ভূমিতে পড়িল ও ফল দিতে লাগিল; কতক শত গুণ, কতক ষাট গুণ, ও কতক ত্রিশ গুণ। যাহার কাণ থাকে, সে শুনুক। পরে শিষ্যেরা নিকটে আসিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি কি জন্য দৃষ্টান্ত দ্বারা উহাদের নিকটে কথা কহিতেছেন? তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, স্বর্গ-রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সকল তোমাদিগকে জানিতে দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু তাহাদিগকে দেওয়া হয় নাই। কেননা যাহার আছে, তাহাকে দেওয়া যাইবে, ও তাহার বাহুল্য হইবে; কিন্তু যাহার নাই, তাহার যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে। এই জন্য আমি তাহাদিগকে দৃষ্টান্ত দ্বারা কথা বলিতেছি, কারণ তাহারা দেখিয়াও দেখে না, শুনিয়াও শুনে না, এবং বুঝেও না। আর তাহাদের সম্বন্ধে যিশাইয়ের এই ভাববাণী পূর্ণ হইতেছে, “তোমরা শ্রবণে শুনিবে, কিন্তু কোন মতে বুঝিবে না; আর দৃষ্টিতে দেখিবে, কিন্তু কোন মতে জানিবে না; কেননা এই লোকদের হৃদয় অসাড় হইয়াছে, শুনিতে তাহাদের কর্ণ ভারী হইয়াছে, ও তাহারা চক্ষু মুদ্রিত করিয়াছে, পাছে তাহারা চক্ষে দেখে, আর কর্ণে শুনে, হৃদয়ে বুঝে, এবং ফিরিয়া আইসে, আর আমি তাহাদিগকে সুস্থ করি।” কিন্তু ধন্য তোমাদের চক্ষু, কেননা তাহা দেখে, এবং তোমাদের কর্ণ, কেননা তাহা শুনে; কারণ আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তোমরা যাহা যাহা দেখিতেছ, তাহা অনেক ভাববাদী ও ধার্ম্মিক লোক দেখিতে বাঞ্ছা করিয়াও দেখিতে পান নাই; এবং তোমরা যাহা যাহা শুনিতেছ, তাহা তাঁহারা শুনিতে বাঞ্ছা করিয়াও শুনিতে পান নাই। অতএব তোমরা বীজবাপকের দৃষ্টান্ত শুন। যখন কেহ সেই রাজ্যের বাক্য শুনিয়া না বুঝে, তখন সেই পাপাত্মা আসিয়া, তাহার হৃদয়ে যাহা বপন করা হইয়াছিল, তাহা হরণ করিয়া লয়; এ সেই, যে পথের পার্শ্বে উপ্ত। আর যে পাষাণময় ভূমিতে উপ্ত, এ সেই, যে সেই বাক্য শুনিয়া অমনি আনন্দপূর্ব্বক গ্রহণ করে, কিন্তু তাহার অন্তরে মূল নাই, সে অল্প কালমাত্র স্থির থাকে; পরে সেই বাক্য হেতু ক্লেশ কিম্বা তাড়না ঘটিলে সে অমনি বিঘ্ন পায়। আর যে কাঁটাবনের মধ্যে উপ্ত, এ সেই, যে সেই বাক্য শুনে, আর সংসারের চিন্তা ও ধনের মায়া সেই বাক্য চাপিয়া রাখে, তাহাতে সে ফলহীন হয়। আর যে উত্তম ভূমিতে উপ্ত, এ সেই, যে সেই বাক্য শুনিয়া তাহা বুঝে, সে বাস্তবিক ফলবান, হয়, এবং কতক শত গুণ, কতক ষাট গুণ, ও কতক ত্রিশ গুণ ফল দেয়। পরে তিনি তাহাদের কাছে আর এক দৃষ্টান্ত উপস্থিত করিলেন, কহিলেন, স্বর্গ-রাজ্যকে এমন এক ব্যক্তির সহিত তুলনা করা যায়, যিনি আপন ক্ষেত্রে ভাল বীজ বপন করিলেন। কিন্তু লোকে নিদ্রা গেলে পর তাঁহার শত্রু আসিয়া ঐ গোমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বপন করিয়া চলিয়া গেল। পরে যখন বীজ অঙ্কুরিত হইয়া ফল দিল, তখন শ্যামাঘাসও প্রকাশ হইয়া পড়িল। তাহাতে সেই গৃহকর্ত্তার দাসেরা আসিয়া তাঁহাকে কহিল, মহাশয়, আপনি কি নিজ ক্ষেত্রে ভাল বীজ বুনেন নাই? তবে শ্যামাঘাস কোথা হইতে হইল? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, কোন শত্রু ইহা করিয়াছে। দাসেরা তাঁহাকে কহিল, তবে আপনি কি এমন ইচ্ছা করেন যে, আমরা গিয়া তাহা সংগ্রহ করি? তিনি কহিলেন, না, কি জানি, শ্যামাঘাস সংগ্রহ করিবার সময়ে তোমরা তাহার সহিত গোমও উপড়াইয়া ফেলিবে। শস্যচ্ছেদনের সময় পর্য্যন্ত উভয়কে একত্র বাড়িতে দেও। পরে ছেদনের সময়ে আমি ছেদকদিগকে বলিব, তোমরা প্রথমে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করিয়া পোড়াইবার জন্য বোঝা বোঝা বাঁধিয়া রাখ, কিন্তু গোম আমার গোলায় সংগ্রহ কর। তিনি আর এক দৃষ্টান্ত তাহাদের কাছে উপস্থিত করিলেন, কহিলেন, স্বর্গ-রাজ্য এমন একটী সরিষা-দানার তুল্য, যাহা কোন ব্যক্তি লইয়া আপন ক্ষেত্রে বপন করিল। সকল বীজের মধ্যে ঐ বীজ অতি ক্ষুদ্র; কিন্তু বাড়িয়া উঠিলে পর তাহা শাক হইতে বড় হয়, এবং এমন বৃক্ষ হইয়া উঠে যে, আকাশের পক্ষিগণ আসিয়া তাহার শাখায় বাস করে। তিনি তাহাদিগকে আর এক দৃষ্টান্ত কহিলেন, স্বর্গ-রাজ্য এমন তাড়ীর তুল্য, যাহা কোন স্ত্রীলোক লইয়া তিন মাণ ময়দার মধ্যে ঢাকিয়া রাখিল, শেষে সমস্তই তাড়ীময় হইয়া উঠিল। এই সমস্ত কথা যীশু দৃষ্টান্ত দ্বারা লোকসমূহকে কহিলেন, দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই কহিলেন না; যেন ভাববাদীর দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয়, “আমি দৃষ্টান্ত কথায় আপন মুখ খুলিব, জগতের পত্তনাবধি যাহা যাহা গুপ্ত আছে, সে সকল ব্যক্ত করিব।” তখন তিনি লোকসমূহকে বিদায় করিয়া গৃহে আসিলেন। আর তাঁহার শিষ্যগণ নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন, ক্ষেত্রের শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্তটী আমাদিগকে স্পষ্ট করিয়া বলুন। তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, যিনি ভাল বীজ বপন করেন, তিনি মনুষ্যপুত্র। ক্ষেত্র জগৎ; ভাল বীজ রাজ্যের সন্তানগণ; শ্যামাঘাস সেই পাপাত্মার সন্তানগণ; যে শত্রু তাহা বুনিয়াছিল, সে দিয়াবল; ছেদনের সময় যুগান্ত; ছেদকেরা স্বর্গদূত। অতএব যেমন শ্যামাঘাস সংগ্রহ করিয়া আগুনে পোড়াইয়া দেওয়া যায়, তেমনি যুগান্তে হইবে। মনুষ্যপুত্র আপন দূতগণকে প্রেরণ করিবেন; তাঁহারা তাঁহার রাজ্য হইতে সমস্ত বিঘ্নজনক বিষয় ও অধর্ম্মাচারীদিগকে সংগ্রহ করিবেন, এবং তাহাদিগকে অগ্নিকুণ্ডে ফেলিয়া দিবেন; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে। তখন ধার্ম্মিকেরা আপনাদের পিতার রাজ্যে সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান হইবে। যাহার কাণ থাকে, সে শুনুক। স্বর্গ-রাজ্য ক্ষেত্রমধ্যে গুপ্ত এমন ধনের তুল্য, যাহা দেখিতে পাইয়া এক ব্যক্তি গোপন করিয়া রাখিল, পরে আনন্দ হেতু গিয়া সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া সেই ক্ষেত্র ক্রয় করিল। আবার স্বর্গ-রাজ্য এমন এক বণিকের তুল্য, যে উত্তম উত্তম মুক্তা অন্বেষণ করিতেছিল, সে একটী মহামূল্য মুক্তা দেখিতে পাইয়া গিয়া সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া তাহা ক্রয় করিল। আবার স্বর্গ-রাজ্য এমন এক টানা জালের তুল্য, যাহা সমুদ্রে ফেলিয়া দেওয়া হইলে সর্ব্বপ্রকার মাছ সংগ্রহ করিল। জালটা পরিপূর্ণ হইলে লোকে কূলে টানিয়া তুলিল, আর বসিয়া বসিয়া ভালগুলি সংগ্রহ করিয়া পাত্রে রাখিল, এবং মন্দগুলি ফেলিয়া দিল। এইরূপ যুগান্তে হইবে; দূতগণ আসিয়া ধার্ম্মিকদের মধ্য হইতে দুষ্টদিগকে পৃথক্‌ করবেন, এবং তাহাদিগকে অগ্নিকুণ্ডে ফেলিয়া দিবেন; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে। তোমরা কি এ সকল বুঝিয়াছ? তাঁহারা কহিলেন, হাঁ। তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, এই জন্য স্বর্গ-রাজ্যের সম্বন্ধে শিক্ষিত প্রত্যেক অধ্যাপক এমন গৃহকর্ত্তার তুল্য, যে আপন ভাণ্ডার হইতে নূতন ও পুরাতন দ্রব্য বাহির করে। এই সকল দৃষ্টান্ত সমাপ্ত করিবার পর যীশু তথা হইতে চলিয়া গেলেন। আর তিনি স্বদেশে আসিয়া লোকদের সমাজ-গৃহে তাহাদিগকে উপদেশ দিতে লাগিলেন, তাহাতে তাহারা চমৎকৃত হইয়া কহিল, ইহার এমন জ্ঞান ও এমন পরাক্রম-কার্য্য সকল কোথা হইতে হইল? এ কি সূত্রধরের পুত্র নয়? ইহার মাতার নাম কি মরিয়ম নয়? এবং যাকোব, যোষেফ, শিমোন ও যিহূদা কি ইহার ভ্রাতা নয়? আর ইহার ভগিনীরা কি সকলে আমাদের এখানে নাই? তবে এ কোথা হইতে এই সমস্ত পাইল? এইরূপে তাহারা তাঁহাতে বিঘ্ন পাইতে লাগিল। কিন্তু যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, আপনার দেশ ও কুল ছাড়া আর কোথাও ভাববাদী অনাদৃত হন না। আর তাহাদের অবিশ্বাস প্রযুক্ত তিনি সেখানে বিস্তর পরাক্রম-কার্য্য করিলেন না। [1] সেই সময়ে হেরোদ রাজা যীশুর বার্ত্তা শুনিতে পাইলেন, আর আপনার দাসগণকে কহিলেন, ইনি সেই যোহন বাপ্তাইজক; তিনি মৃতদের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন, আর সেই জন্য পরাক্রম সকল তাঁহাতে কার্য্য সাধন করিতেছে। কারণ হেরোদ আপন ভ্রাতা ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্য যোহনকে ধরিয়া বাঁধিয়া কারাগারে রাখিয়াছিলেন; কেননা যোহন তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, উহাকে রাখা আপনার বিধেয় নয়। আর তিনি তাঁহাকে বধ করিতে ইচ্ছা করিলেও লোকসমূহকে ভয় করিতেন, কেননা লোকে তাঁহাকে ভাববাদী বলিয়া মানিত। কিন্তু হেরোদের জন্মদিনের উৎসব উপস্থিত হইলে, হেরোদিয়ার কন্যা সভামধ্যে নাচিয়া হেরোদকে সন্তুষ্ট করিল। এই জন্য তিনি শপথপূর্ব্বক এই প্রতিজ্ঞা করিলেন, তুমি যাহা চাহিবে, তাহাই তোমাকে দিব। তখন সে আপন মাতার প্রবর্ত্তনায় কহিল, যোহন বাপ্তাইজকের মস্তক থালায় করিয়া এখানে আমাকে দিউন। ইহাতে রাজা দুঃখিত হইলেন, কিন্তু আপন শপথ হেতু, এবং যাহারা তাঁহার সঙ্গে বসিয়াছিল, তাহাদের হেতু, তাহা দিতে আজ্ঞা করিলেন, তিনি লোক পাঠাইয়া কারাগারে যোহনের মস্তক ছেদন করাইলেন। আর তাঁহার মস্তকটী একখানি থালায় করিয়া আনিয়া সেই কন্যাকে দেওয়া হইল; আর সে তাহা মাতার নিকটে লইয়া গেল। পরে তাঁহার শিষ্যগণ আসিয়া দেহটী লইয়া গিয়া তাঁহার কবর দিল, এবং যীশুর নিকটে আসিয়া তাঁহাকে সংবাদ দিল। যীশু তাহা শুনিয়া তথা হইতে নৌকাযোগে বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে প্রস্থান করিলেন; আর লোকসমূহ তাহা শুনিয়া নানা নগর হইতে আসিয়া স্থলপথে তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিল। তখন তিনি বাহির হইয়া বিস্তর লোক দেখিয়া তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, এবং তাহাদের পীড়িত লোকদিগকে সুস্থ করিলেন। পরে সন্ধ্যা হইলে শিষ্যগণ নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন, এ স্থান নির্জ্জন, বেলাও গিয়াছে; লোকদিগকে বিদায় করুন, যেন উহারা গ্রামে গ্রামে গিয়া আপনাদের নিমিত্ত খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে। যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, উহাদের যাইবার প্রয়োজন নাই, তোমরাই উহাদিগকে আহার দেও। তাঁহারা তাঁহাকে কহিলেন, আমাদের এখানে কেবল পাঁচখানি রুটী ও দুইটী মাছ ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি কহিলেন, সেগুলি এখানে আমার কাছে আন। পরে তিনি লোকসমূহকে ঘাসের উপরে বসিতে আজ্ঞা করিলেন; আর সেই পাঁচখানি রুটী ও দুইটী মাছ লইয়া স্বর্গের দিকে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং রুটী কয়খানি ভাঙ্গিয়া শিষ্যদিগকে দিলেন, শিষ্যেরা লোকদিগকে দিলেন। তাহাতে সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল; এবং তাঁহারা অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া পূর্ণ বারো ডালা তুলিয়া লইলেন। যাহারা আহার করিয়াছিল, তাহারা স্ত্রী ও শিশু ছাড়া অনুমান পাঁচ সহস্র পুরুষ ছিল। আর যীশু তখনই শিষ্যদিগকে দৃঢ় করিয়া বলিয়া দিলেন, যেন তাঁহারা নৌকায় উঠিয়া, তাঁহার অগ্রে পরপারে যান, আর ইতিমধ্যে তিনি লোকদিগকে বিদায় করিয়া দিবেন। পরে তিনি লোকদিগকে বিদায় করিয়া বিরলে প্রার্থনা করিবার নিমিত্ত পর্ব্বতে উঠিলেন। সন্ধ্যা হইলে তিনি সেই স্থানে একাকী থাকিলেন। কিন্তু নৌকাখানি স্থল হইতে অনেকটা দূরে গিয়া পড়িয়াছিল, তরঙ্গে টলমল করিতেছিল, কারণ বাতাস প্রতিকূল ছিল। পরে চতুর্থ প্রহর রাত্রিতে তিনি সমুদ্রের উপর দিয়া হাঁটিয়া তাঁহাদের নিকটে আসিলেন। তখন শিষ্যেরা তাঁহাকে সমুদ্রের উপর দিয়া হাঁটিতে দেখিয়া ত্রাসযুক্ত হইয়া কহিলেন, এ যে অপচ্ছায়া! আর ভয়ে চেঁচাইতে লাগিলেন। কিন্তু যীশু তখনই তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন, বলিলেন, সাহস কর, এ আমি, ভয় করিও না। তখন পিতর উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, হে প্রভু, যদি আপনি হন, তবে আমাকে জলের উপর দিয়া আপনার নিকটে যাইতে আজ্ঞা করুন। তিনি বলিলেন, আইস; তাহাতে পিতর নৌকা হইতে নামিয়া জলের উপর দিয়া হাঁটিয়া যীশুর কাছে চলিলেন। কিন্তু বাতাস দেখিয়া তিনি ভয় পাইলেন, এবং ডুবিয়া যাইতে যাইতে উচ্চৈঃস্বরে ডাকিয়া কহিলেন, হে প্রভু, আমায় রক্ষা করুন। তখনই যীশু হাত বাড়াইয়া তাঁহাকে ধরিলেন, আর তাঁহাকে কহিলেন, হে অল্পবিশ্বাসি, কেন সন্দেহ করিলে? পরে তাঁহারা নৌকায় উঠিলে বাতাস থামিয়া গেল। আর যাঁহারা নৌকায় ছিলেন, তাঁহারা আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিলেন, সত্যই আপনি ঈশ্বরের পুত্র। পার হইয়া তাঁহারা স্থলে, গিনেষরৎ প্রদেশে, উপস্থিত হইলেন। তথাকার লোকেরা তাঁহাকে চিনিতে পারিয়া চারিদিকে সেই দেশের সর্ব্বত্র সংবাদ পাঠাইল, এবং যত পীড়িত লোক ছিল, সকলকে তাঁহার নিকটে আনাইল; আর তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন উহারা তাঁহার বস্ত্রের থোপমাত্র স্পর্শ করিতে পায়; আর যত লোক স্পর্শ করিল, সকলে সুস্থ হইল। [1] তখন যিরূশালেম হইতে ফরীশীরা ও অধ্যাপকেরা যীশুর নিকটে আসিয়া কহিল, আপনার শিষ্যগণ কি জন্য প্রাচীনদের পরম্পরাগত বিধি লঙ্ঘন করে? কেননা আহার করিবার সময়ে তাহারা হাত ধোয় না। তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরাও আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন কর কেন? কারণ ঈশ্বর বলিয়াছেন, “তুমি আপন পিতাকে ও আপন মাতাকে সমাদর করিও;” আর “যে কেহ পিতার কি মাতার নিন্দা করে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে।” কিন্তু তোমরা বলিয়া থাক, যে ব্যক্তি পিতাকে কি মাতাকে বলে, ‘আমা হইতে যাহা দিয়া তোমার উপকার হইতে পারিত, তাহা ঈশ্বরকে দত্ত হইয়াছে,’ সে আপন পিতাকে বা আপন মাতাকে আর সমাদর করিবে না; এইরূপে তোমরা আপনাদের পরম্পরাগত বিধির জন্য ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করিয়াছ। কপটীরা, যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে বিলক্ষণ ভাববাণী বলিয়াছেন, “এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সমাদর করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাকে; এবং ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্ম্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়।” পরে তিনি লোকদিগকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা শুন ও বুঝ। মুখের ভিতরে যাহা যায়, তাহা যে মনুষ্যকে অশুচি করে, এমন নয়, কিন্তু মুখ হইতে যাহা বাহির হয়, তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে। তখন শিষ্যগণ নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি কি জানেন, এই কথা শুনিয়া ফরীশীরা বিঘ্ন পাইয়াছে? তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, আমার স্বর্গীয় পিতা যে সকল চারা রোপন করেন নাই, সে সকল উপড়াইয়া ফেলা যাইবে। উহাদিগকে থাকিতে দেও, উহারা অন্ধদের অন্ধ পথদর্শক; যদি অন্ধ অন্ধকে পথ দেখায়, উভয়েই গর্ত্তে পড়িবে। পিতর উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, এই দৃষ্টান্তটী আমাদিগকে বুঝাইয়া দিউন। তিনি কহিলেন, তোমরাও কি এখন পর্য্যন্ত অবোধ রহিয়াছ? ইহা কি বুঝ না যে, যাহা কিছু মুখের ভিতরে যায়, তাহা উদরে যায়, পরে বহিঃস্থানে নিক্ষিপ্ত হয়; কিন্তু যাহা যাহা মুখ হইতে বাহির হয়, তাহা অন্তঃকরণ হইতে আইসে, আর তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে। কেননা অন্তঃকরণ হইতে কুচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, মিথ্যাসাক্ষ্য, নিন্দা আইসে। এই সকলই মনুষ্যকে অশুচি করে; কিন্তু অধৌত হস্তে ভোজন করিলে মনুষ্য তাহাতে অশুচি হয় না। পরে যীশু তথা হইতে প্রস্থান করিয়া সোর ও সীদোন প্রদেশে চলিয়া গেলেন। আর দেখ, ঐ অঞ্চলের একটী কনানীয় স্ত্রীলোক আসিয়া এই বলিয়া চেঁচাইতে লাগিল, হে প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন, আমার কন্যাটী ভূতগ্রস্ত হইয়া অত্যন্ত ক্লেশ পাইতেছে। কিন্তু তিনি তাহাকে কিছুই উত্তর দিলেন না। তখন তাঁহার শিষ্যেরা নিকটে আসিয়া তাঁহাকে নিবেদন করিলেন, ইহাকে বিদায় করুন, কেননা এ আমাদের পিছনে পিছনে চেঁচাইতেছে। তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ ছাড়া আর কাহারও নিকটে আমি প্রেরিত হই নাই। কিন্তু স্ত্রীলোকটী আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিল, প্রভু, আমার উপকার করুন। তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, সন্তানদের খাদ্য লইয়া কুকুরদের কাছে ফেলিয়া দেওয়া ভাল নয়। তাহাতে সে কহিল, হাঁ, প্রভু, কেননা কুকুরেরাও আপন আপন কর্ত্তাদের মেজ হইতে যে গুঁড়াগাঁড়া পড়ে, তাহা খায়। তখন যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, হে নারি, তোমার বড়ই বিশ্বাস, তোমার যেমন ইচ্ছা, তেমনি তোমার প্রতি হউক। আর সেই দণ্ড অবধি তাহার কন্যা সুস্থ হইল। পরে যীশু তথা হইতে প্রস্থান করিয়া গালীল-সমুদ্রের ধারে উপস্থিত হইলেন, এবং পর্ব্বতে উঠিয়া সেই স্থানে বসিলেন। আর বিস্তর লোক তাঁহার কাছে আসিতে লাগিল, তাহারা আপনাদের সঙ্গে খঞ্জ, অন্ধ, বোবা, নুলা এবং আরও অনেক লোককে লইয়া তাঁহার চরণের নিকটে ফেলিয়া রাখিল; আর তিনি তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। এইরূপে বোবারা কথা কহিতেছে, নুলারা সুস্থ হইতেছে, খঞ্জেরা চলিতেছে এবং অন্ধেরা দেখিতেছে, ইহা দেখিয়া লোকেরা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল; এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বরের গৌরব করিল। তখন যীশু আপন শিষ্যদিগকে নিকটে ডাকিয়া কহিলেন, এই লোকসমূহের প্রতি আমার করুণা হইতেছে; কেননা ইহারা আজ তিন দিবস আমার সঙ্গে রহিয়াছে, এবং ইহাদের নিকটে খাবার কিছুই নাই; আর আমি ইহাদিগকে অনাহারে বিদায় করিতে ইচ্ছা করি না, পাছে ইহারা পথে মূর্চ্ছা পড়ে। শিষ্যেরা তাঁহাকে কহিলেন, নির্জ্জন স্থানে আমরা কোথায় এত রুটী পাইব যে, এত লোককে তৃপ্ত করিতে পারি? যীশু তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের কাছে কয়খানা রুটী আছে? তাঁহারা কহিলেন, সাতখানা, আর কয়েকটী ছোট মাছ। তখন তিনি লোকদিগকে ভূমিতে বসিতে আজ্ঞা করিলেন। পরে তিনি সেই সাতখানা রুটী ও সেই কয়টী মাছ লইলেন, ধন্যবাদ পূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, এবং শিষ্যদিগকে দিলেন, শিষ্যেরা লোকদিগকে দিলেন। তখন সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল; এবং যে সকল গুঁড়াগাঁড়া অবশিষ্ট রহিল, তাহাতে পূর্ণ সাত ঝুড়ি তাঁহারা উঠাইয়া লইলেন। যাহারা আহার করিয়াছিল, তাহারা স্ত্রী ও শিশু ছাড়া চারি সহস্র পুরুষ। পরে তিনি লোকসমূহকে বিদায় করিয়া নৌকায় উঠিয়া মগদনের সীমাতে উপস্থিত হইলেন। পরে ফরীশীরা ও সদ্দূকীরা নিকটে আসিয়া পরীক্ষা ভাবে তাঁহাকে নিবেদন করিল, যেন তিনি তাহাদিগকে আকাশ হইতে কোন চিহ্ন দেখান। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, সন্ধ্যা হইলে তোমরা বলিয়া থাক, পরিষ্কার দিন হইবে, কারণ আকাশ লাল হইয়াছে। আর প্রাতঃকালে বলিয়া থাক, আজ ঝড় হইবে, কারণ আকাশ লাল ও ঘোর হইয়াছে। তোমরা আকাশের লক্ষণ বুঝিতে পার, কিন্তু কালের চিহ্ন সকল বুঝিতে পার না। এই কালের দুষ্ট ও ব্যভিচারী লোকেরা চিহ্নের অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ব্যতিরেকে আর কোন চিহ্ন তাহাদিগকে দেওয়া যাইবে না। তখন তিনি তাহাদিগকে ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেলেন। শিষ্যেরা অন্য পারে যাইবার সময়ে রুটী লইতে ভুলিয়া গিয়াছিলেন। যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা সতর্ক হও, ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক। তখন তাঁহারা পরস্পর তর্ক করিয়া কহিতে লাগিলেন, আমরা যে রুটী আনি নাই। তাহা বুঝিয়া যীশু কহিলেন, হে অল্পবিশ্বাসীরা, তোমাদের রুটী নাই বলিয়া কেন পরস্পর তর্ক করিতেছ? এখনও কি বুঝ না, মনেও কি পড়ে না, সেই পাঁচ সহস্রের খাদ্য পাঁচখানি রুটী, আর কত ডালা তুলিয়া লইয়াছিলে? এবং সেই চারি সহস্রের খাদ্য সাতখানি রুটী, আর কত ঝুড়ি তুলিয়া লইয়াছিলে? তোমরা কেন বুঝ না যে, আমি তোমাদিগকে রুটীর বিষয় বলি নাই? কিন্তু তোমরা ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক। তখন তাঁহারা বুঝিলেন, তিনি রুটীর তাড়ী হইতে নয়, কিন্তু ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা হইতে সাবধান থাকিবার কথা বলিয়াছেন। পরে যীশু কৈসরিয়া-ফিলিপীর অঞ্চলে গিয়া আপন শিষ্যদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, মনুষ্যপুত্র কে, এ বিষয়ে লোকে কি বলে? তাঁহারা কহিলেন, কেহ কেহ বলে, আপনি যোহন বাপ্তাইজক; কেহ কেহ বলে, আপনি এলিয়; আর কেহ কেহ বলে, আপনি যিরমিয় কিম্বা ভাববাদিগণের কোন এক জন। তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে? শিমোন পিতর উত্তর করিয়া কহিলেন, আপনি সেই খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র। যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, হে যোনার পুত্র শিমোন, ধন্য তুমি! কেননা রক্তমাংস তোমার নিকটে ইহা প্রকাশ করে নাই, কিন্তু আমার স্বর্গস্থ পিতা প্রকাশ করিয়াছেন। আর আমিও তোমাকে কহিতেছি, তুমি পিতর, আর এই পাথরের উপরে আমি আপন মণ্ডলী গাঁথিব, আর পাতালের পুরদ্বার সকল তাহার বিপক্ষে প্রবল হইবে না। আমি তোমাকে স্বর্গ-রাজ্যের চাবিগুলিন দিব; আর তুমি পৃথিবীতে যাহা কিছু বদ্ধ করিবে, তাহা স্বর্গে বদ্ধ হইবে, এবং পৃথিবীতে যাহা কিছু মুক্ত করিবে, তাহা স্বর্গে মুক্ত হইবে। তখন তিনি শিষ্যদিগকে এই আজ্ঞা দিলেন, আমি যে সেই খ্রীষ্ট, এ কথা কাহাকেও বলিও না। সেই সময় অবধি যীশু আপন শিষ্যদিগকে স্পষ্টই বলিতে লাগিলেন যে, তাঁহাকে যিরূশালেমে যাইতে হইবে, এবং প্রাচীনবর্গের, প্রধান যাজকদের ও অধ্যাপকদের হইতে অনেক দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, ও হত হইতে হইবে, আর তৃতীয় দিবসে উঠিতে হইবে। ইহাতে পিতর তাঁহাকে কাছে লইয়া অনুযোগ করিতে লাগিলেন, বলিলেন, প্রভু, ইহা আপনা হইতে দূরে থাকুক, ইহা আপনার প্রতি কখনও ঘটিবে না। কিন্তু তিনি মুখ ফিরাইয়া পিতরকে কহিলেন, আমার সম্মুখ হইতে দূর হও, শয়তান, তুমি আমার বিঘ্নস্বরূপ; কেননা যাহা ঈশ্বরের, তাহা নয়, কিন্তু যাহা মনুষ্যের তাহাই তুমি ভাবিতেছ। তখন যীশু আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদগামী হউক। কেননা যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করিতে ইচ্ছা করে, সে তাহা হারাইবে, আর যে কেহ আমার নিমিত্তে আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা পাইবে। বস্তুতঃ মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ হারায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে? কিম্বা মনুষ্য আপন প্রাণের পরিবর্ত্তে কি দিবে? কেননা মনুষ্যপুত্র আপন দূতগণের সহিত আপন পিতার প্রতাপে আসিবেন, আর তখন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাহার ক্রিয়ানুসারে প্রতিফল দিবেন। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যাহারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না, যে পর্য্যন্ত মনুষ্যপুত্রকে আপনার রাজ্যে আসিতে না দেখিবে। [1] ছয় দিন পরে যীশু পিতর, যাকোব ও তাঁহার ভ্রাতা যোহনকে সঙ্গে করিয়া বিরলে এক উচ্চ পর্ব্বতে লইয়া গেলেন। পরে তিনি তাঁহাদের সাক্ষাতে রূপান্তরিত হইলেন; তাঁহার মুখ সূর্য্যের ন্যায় দেদীপ্যমান, এবং তাঁহার বস্ত্র দীপ্তির ন্যায় শুভ্র হইল। আর দেখ, মোশি ও এলিয় তাঁহাদিগকে দেখা দিলেন, তাঁহারা তাঁহার সহিত কথোপকথন করিতে লাগিলেন। তখন পিতর যীশুকে কহিলেন, প্রভু, এখানে আমাদের থাকা ভাল; যদি আপনার ইচ্ছা হয়, তবে আমি এখানে তিনটী কুটীর নির্ম্মাণ করি, একটী আপনার জন্য, একটী মোশির জন্য এবং একটী এলিয়ের জন্য। তিনি কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে দেখ, একখানি উজ্জ্বল মেঘ তাঁহাদিগকে ছায়া করিল, আর দেখ, সেই মেঘ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁতেই আমি প্রীত, ইহাঁর কথা শুন’। এই কথা শুনিয়া শিষ্যেরা উবুড় হইয়া পড়িলেন, এবং অত্যন্ত ভীত হইলেন। পরে যীশু নিকটে আসিয়া তাঁহাদিগকে স্পর্শ করিয়া কহিলেন, উঠ, ভয় করিও না। তখন তাঁহারা চক্ষু তুলিয়া আর কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না, কেবল যীশু একা ছিলেন। পর্ব্বত হইতে নামিবার সময়ে যীশু তাঁহাদিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, যে পর্য্যন্ত মনুষ্যপুত্র মৃতগণের মধ্য হইতে না উঠেন, সে পর্য্যন্ত তোমরা এই দর্শনের কথা কাহাকেও বলিও না। তখন শিষ্যেরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তবে অধ্যাপকেরা কেন বলেন যে, প্রথমে এলিয়ের আগমন হওয়া আবশ্যক? তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, সত্য বটে, এলিয়া আসিবেন, এবং সকলই পুনঃস্থাপন করিবেন; কিন্তু আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, এলিয় আসিয়া গিয়াছেন, এবং লোকেরা তাঁহাকে চিনে নাই, বরং তাঁহার প্রতি যাহা ইচ্ছা, তাহাই করিয়াছে; তদ্রূপ মনুষ্যপুত্রকেও তাহাদের হইতে দুঃখভোগ করিতে হইবে। তখন শিষ্যেরা বুঝিলেন যে, তিনি তাঁহাদিগকে যোহন বাপ্তাইজকের বিষয় বলিয়াছেন। পরে তাঁহারা লোকসমূহের নিকটে আসিলে এক ব্যক্তি তাঁহার কাছে আসিয়া জানু পাতিয়া কহিল, প্রভু, আমার পুত্রের প্রতি দয়া করুন, কেননা সে মৃগীরোগগ্রস্ত, এবং অত্যন্ত ক্লেশ পাইতেছে, কারণ সে বার বার আগুনে ও বার বার জলে পড়িয়া থাকে। আর আমি আপনার শিষ্যদের নিকটে তাহাকে আনিয়াছিলাম, কিন্তু তাঁহারা তাহাকে সুস্থ করিতে পারিলেন না। যীশু উত্তর করিয়া কহিলেন, হে অবিশ্বাসী ও বিপথগামী বংশ, আমি কত কাল তোমাদের সঙ্গে থাকিব? কত কাল তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করিব? তোমরা উহাকে এখানে আমার কাছে আন। পরে যীশু তাহাকে ধমক্‌ দিলেন, তাহাতে সেই ভূত তাহাকে ছাড়িয়া গেল, আর বালকটী সেই দণ্ড অবধি সুস্থ হইল। তখন শিষ্যেরা বিরলে যীশুর নিকটে আসিয়া কহিলেন, কি জন্য আমরা উহা ছাড়াইতে পারিলাম না? তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের বিশ্বাস অল্প বলিয়া; কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যদি তোমাদের একটী সরিষা-দানার ন্যায় বিশ্বাস থাকে, তবে তোমরা এই পর্ব্বতকে বলিবে, ‘এখান হইতে ঐখানে সরিয়া যাও,’ আর ইহা সরিয়া যাইবে; এবং তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকিবে না। *** গালীলে তাঁহাদের একত্র হইবার সময়ে যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, সম্প্রতি মনুষ্যপুত্র মনুষ্যদের হস্তে সমর্পিত হইবেন; এবং তাহারা তাঁহাকে বধ করিবে, আর তৃতীয় দিবসে তিনি উঠিবেন। ইহাতে তাঁহারা অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন। পরে তাঁহারা কফরনাহূমে আসিলে, যাহারা আধুলি আদায় করিত, তাহারা পিতরের নিকটে আসিয়া বলিল, তোমাদের গুরু কি আধুলি দেন না? তিনি কহিলেন, দিয়া থাকেন। পরে তিনি গৃহমধ্যে আসিলে যীশু অগ্রেই তাঁহাকে কহিলেন, শিমোন, তোমার কেমন বোধ হয়? পৃথিবীর রাজারা কাহাদের হইতে কর বা রাজস্ব গ্রহণ করিয়া থাকেন? কি আপন সন্তানদের হইতে, না অন্য লোক হইতে? পিতর কহিলেন, অন্য লোক হইতে। তখন যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তবে সন্তানেরা স্বাধীন। তথাপি আমরা যেন উহাদের বিঘ্ন না জন্মাই, এই জন্য তুমি সমুদ্রে গিয়া বড়শী ফেল, তাহাতে প্রথমে যে মাছটী উঠিবে, সেইটী ধরিয়া তাহার মুখ খুলিলে একটী টাকা পাইবে; সেইটী লইয়া আমার এবং তোমার নিমিত্ত উহাদিগকে দেও। সেই দণ্ডে শিষ্যেরা যীশুর নিকটে আসিয়া বলিলেন, তবে স্বর্গ-রাজ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? তিনি একটী শিশুকে আপনার নিকটে ডাকিয়া তাঁহাদের মধ্যে দাঁড় করাইলেন, এবং কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা যদি না ফির ও শিশুদের ন্যায় না হইয়া উঠ, তবে কোন মতে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে না। অতএব যে কেহ আপনাকে এই শিশুর মত নত করে, সেই স্বর্গ-রাজ্যে শ্রেষ্ঠ। আর যে কেহ ইহার মত একটী শিশুকে আমার নামে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; কিন্তু যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের মধ্যে এক জনেরও বিঘ্ন জন্মায়, তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রের অগাধ জলে ডুবাইয়া দেওয়া বরং তাহার পক্ষে ভাল। বিঘ্ন প্রযুক্ত জগৎকে ধিক্‌! কেননা বিঘ্ন অবশ্যই উপস্থিত হইবে; কিন্তু ধিক্‌ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা বিঘ্ন উপস্থিত হইবে। আর তোমার হস্ত কিম্বা চরণ যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া ফেলিয়া দেও; দুই হস্ত কিম্বা দুই চরণ লইয়া অনন্ত অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং খঞ্জ কিম্বা নুলা হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল। আর তোমার চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া ফেলিয়া দেও; দুই চক্ষু লইয়া অগ্নিময় নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং একচক্ষু হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল। দেখিও, এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে একটীকেও তুচ্ছ করিও না; কেননা আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তাহাদের দূতগণ স্বর্গে সতত আমার স্বর্গস্থ পিতার মুখ দর্শন করেন। *** তোমাদের কেমন বোধ হয়? কোন ব্যক্তির যদি এক শত মেষ থাকে, আর তাহাদের মধ্যে একটী হারাইয়া যায়, তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটা ছাড়িয়া পর্ব্বতে গিয়া ঐ হারান মেষটীর অন্বেষণ করে না? আর যদি সে কোন ক্রমে সেটী পায়, তবে আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে নিরানব্বইটা হারাইয়া যায় নাই, তাহাদের অপেক্ষা সেইটীর নিমিত্ত সে অধিক আনন্দ করে। সেইরূপ এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়। আর যদি তোমার ভ্রাতা তোমাক নিকটে কোন অপরাধ করে, তবে যাও, যখন কেবল তোমাতে ও তাহাতে থাক, তখন সেই দোষ তাহাকে বুঝাইয়া দেও। যদি সে তোমার কথা শুনে, তুমি আপন ভ্রাতাকে লাভ করিলে। কিন্তু যদি সে না শুনে, তবে আর দুই এক ব্যক্তিকে সঙ্গে লইয়া যাও, যেন “দুই কিম্বা তিন জন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা নিষ্পন্ন হয়।” আর যদি সে তাহাদের কথা অমান্য করে, মণ্ডলীকে বল; আর যদি মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে, সে তোমার নিকটে পরজাতীয় লোকের ও করগ্রাহীর তুল্য হউক। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা পৃথিবীতে যাহা কিছু বদ্ধ করিবে, তাহা স্বর্গে বদ্ধ হইবে; এবং পৃথিবীতে যাহা কিছু মুক্ত করিবে, তাহা স্বর্গে মুক্ত হইবে। আবার আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, পৃথিবীতে তোমাদের দুই জন যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, সেই বিষয়ে যদি একচিত্ত হয়, তবে আমার স্বর্গস্থ পিতা কর্ত্তৃক তাহাদের জন্য তাহা করা যাইবে। কেননা যেখানে দুই কি তিন জন আমার নামে একত্র হয়, সেইখানে আমি তাহাদের মধ্যে আছি। তখন পিতর তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, প্রভু, আমার ভ্রাতা আমার নিকটে কত বার অপরাধ করিলে আমি তাহাকে ক্ষমা করিব? কি সাত বার পর্য্যন্ত? যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমাকে বলিতেছি না, সাত বার পর্য্যন্ত, কিন্তু সত্তর গুণ সাত বার পর্য্যন্ত। এজন্য স্বর্গ-রাজ্য এমন এক জন রাজার তুল্য, যিনি আপন দাসগণের কাছে হিসাব লইতে চাহিলেন। তিনি হিসাব আরম্ভ করিলে, এক জন তাঁহার নিকটে আনীত হইল, যে তাঁহার দশ সহস্র তালন্ত ধারিত। কিন্তু তাহার পরিশোধ করিবার সঙ্গতি না থাকাতে তাহার প্রভু তাহাকে ও তাহার স্ত্রী পুত্রাদি সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া আদায় করিতে আজ্ঞা করিলেন। তাহাতে সে দাস তাঁহার চরণে পড়িয়া প্রণিপাত করিয়া কহিল, হে প্রভু, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধরুন, আমি আপনার সমস্তই পরিশোধ করিব। তখন সে দাসের প্রভু করুণাবিষ্ট হইয়া তাহাকে মুক্ত করিলেন ও তাহার ঋণ ক্ষমা করিলেন। কিন্তু সেই দাস বাহিরে গিয়া তাহার সহদাসদের মধ্যে এক জনকে, দেখিতে পাইল, যে তাহার এক শত সিকি ধারিত; সে তাহাকে ধরিয়া গলাটিপি দিয়া কহিল, তুই যা ধারিস্‌, তাহা পরিশোধ কর্‌। তখন তাহার সহদাস তাহার চরণে পড়িয়া বিনতিপূর্ব্বক কহিল, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধর, আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করিব। তথাপি সে সম্মত হইল না, কিন্তু গিয়া তাহাকে কারাগারে ফেলিয়া রাখিল, যে পর্য্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করে। এই ব্যাপার দেখিয়া তাহার সহদাসেরা বড়ই দুঃখিত হইল, আর আপনাদের প্রভুর কাছে গিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বলিয়া দিল। তখন তাহার প্রভু তাহাকে কাছে ডাকাইয়া কহিলেন, দুষ্ট দাস! তুমি আমার কাছে বিনতি করাতে আমি তোমার ঐ সমস্ত ঋণ ক্ষমা করিয়াছিলাম; আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি তোমারও উচিত ছিল না? আর তাহার প্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া পীড়নকারীদের নিকটে তাহাকে সমর্পণ করিলেন, যে পর্য্যন্ত সে সমস্ত ঋণ পরিশোধ না করে। আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর। এই সকল বাক্য সমাপ্ত করিবার পর যীশু গালীল হইতে প্রস্থান করিলেন, পরে যর্দ্দনের পরপারস্থ যিহূদিয়ার অঞ্চলে উপস্থিত হইলেন; আর বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল, এবং তিনি সেখানে লোকদিগকে সুস্থ করিলেন। আর ফরীশীরা তাঁহার নিকটে আসিয়া পরীক্ষা ভাবে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, যে সে কারণে কি আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করা বিধেয়? তিনি উত্তর করিলেন, তোমরা কি পাঠ কর নাই যে, সৃষ্টিকর্ত্তা আদিতে পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, আর বলিয়াছিলেন, “এই কারণ মনুষ্য পিতা ও মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সে দুই জন একাঙ্গ হইবে”? সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক। তাহারা তাঁহাকে কহিল, তবে মোশি কেন ত্যাগপত্র দিয়া পরিত্যাগ করিবার বিধি দিয়াছেন? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন তোমাদের অন্তঃকরণ কঠিন বলিয়া মোশি তোমাদিগকে আপন আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিবার অনুমতি দিয়াছিলেন, কিন্তু আদি হইতে এরূপ হয় নাই। আর আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, ব্যভিচার দোষ ব্যতিরেকে যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে; এবং যে ব্যক্তি সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করে, সেও ব্যভিচার করে। শিষ্যেরা তাঁহাকে কহিলেন, যদি আপন স্ত্রীর সঙ্গে পুরুষের এরূপ সম্বন্ধ হয়, তবে বিবাহ করা ভাল নয়। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, সকলে এই কথা গ্রহণ করে না, কিন্তু যাহাদিগকে ক্ষমতা দত্ত হইয়াছে, তাহারাই করে। কারণ এমন নপুংসক আছে, যাহারা মাতার উদর হইতে সেইরূপ হইয়া জন্মিয়াছে; আর এমন নপুংসক আছে, যাহাদিগকে মানুষে নপুংসক করিয়াছে; আর এমন নপুংসক আছে, যাহারা স্বর্গ-রাজ্যের নিমিত্তে আপনাদিগকে নপুংসক করিয়াছে। যে গ্রহণ করিতে পারে, সে গ্রহণ করুক। তখন কতকগুলি শিশু তাঁহার নিকটে আনীত হইল, যেন তিনি তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করেন ও প্রার্থনা করেন; তাহাতে শিষ্যেরা তাহাদিগকে ভর্ৎসনা করিলেন। কিন্তু যীশু কহিলেন, শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা স্বর্গ-রাজ্য এই মত লোকদেরই। পরে তিনি তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া সেখান হইতে চলিয়া গেলেন। আর দেখ, এক ব্যক্তি আসিয়া তাঁহাকে বলিল, হে গুরু, অনন্ত জীবন পাইবার জন্য আমি কিরূপ সৎকর্ম্ম করিব? তিনি তাহাকে কহিলেন, আমাকে সতের বিষয় কেন জিজ্ঞাসা কর? সৎ এক জন মাত্র আছেন। কিন্তু তুমি যদি জীবনে প্রবেশ করিতে ইচ্ছা কর, তবে আজ্ঞা সকল পালন কর। সে কহিল, কোন্‌ কোন্ আজ্ঞা? যীশু বলিলেন, এই এই, “নরহত্যা করিও না, ব্যভিচার করিও না, চুরি করিও না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না, পিতা ও মাতাকে সমাদর করিও, এবং তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিও”। সেই যুবক তাঁহাকে কহিল, আমি এ সকলই পালন করিয়াছি, এখন আমার কি ত্রুটি আছে? যীশু তাহাকে কহিলেন, যদি সিদ্ধ হইতে ইচ্ছা কর, তবে চলিয়া যাও, তোমার যাহা যাহা আছে, বিক্রয় কর, এবং দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদগামী হও। কিন্তু এই কথা শুনিয়া সেই যুবক দুঃখিত হইয়া চলিয়া গেল, কারণ তাহার বিস্তর সম্পত্তি ছিল। তখন যীশু আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, ধনবানের পক্ষে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করা দুষ্কর। আবার তোমাদিগকে কহিতেছি, ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করা অপেক্ষা বরং সূচীর ছিদ্র দিয়া উটের যাওয়া সহজ। ইহা শুনিয়া শিষ্যেরা অতিশয় আশ্চর্য্য মনে করিলেন, কহিলেন, তবে কাহার পরিত্রাণ হইতে পারে? যীশু তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, তাহা মনুষ্যের অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের সকলই সাধ্য। তখন পিতর উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি; আমরা তবে কি পাইব? যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা যত জন আমার পশ্চাদগামী হইয়াছ, পুনঃসৃষ্টিকালে, যখন মনুষ্যপুত্র আপন প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন, তখন তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে। আর যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী, কি ভ্রাতা, কি ভগিনী, কি পিতা, কি মাতা, কি সন্তান, কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শত গুণ পাইবে, এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে। কিন্তু যাহারা প্রথম, এমন অনেক লোক শেষে পড়িবে; এবং যাহারা শেষের, এমন অনেক লোক প্রথম হইবে। কেননা স্বর্গ-রাজ্য এমন এক জন গৃহকর্ত্তার তুল্য, যিনি প্রভাত কালে আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রে মজুর লাগাইবার জন্য বাহিরে গেলেন। তিনি মজুরদের সহিত দিন এক সিকি বেতন স্থির করিয়া তাহাদিগকে আপন দ্রাক্ষাক্ষেত্রে প্রেরণ করিলেন। পরে তিনি তিন ঘটিকার সময়ে বাহিরে গিয়া দেখিলেন, অন্য কয়েক জন বাজারে নিষ্কর্ম্মে দাঁড়াইয়া আছে, এবং তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরাও দ্রাক্ষাক্ষেত্রে যাও, যাহা ন্যায্য, তোমাদিগকে দিব; তাহাতে তাহারা গেল। আবার তিনি ছয় ও নয় ঘটিকার সময়েও বাহিরে গিয়া তদ্রূপ করিলেন। পরে এগার ঘটিকার সময়ে বাহিরে গিয়া আর কয়েক জনকে দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিলেন, আর তাহাদিগকে বলিলেন, কি জন্য সমস্ত দিন এখানে নিষ্কর্ম্মে দাঁড়াইয়া আছ? তাহারা তাঁহাকে বলিল, কেহই আমাদিগকে কাজে লাগায় নাই। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরাও দ্রাক্ষাক্ষেত্রে যাও। পরে সন্ধ্যা হইলে সেই দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্ত্তা আপন দেওয়ানকে কহিলেন, মজুরদিগকে ডাকিয়া মজুরী দেও, শেষ জন হইতে আরম্ভ করিয়া প্রথম জন পর্য্যন্ত দেও। তাহাতে যাহারা এগার ঘটিকার সময়ে লাগিয়াছিল, তাহারা আসিয়া এক এক জন এক এক সিকি পাইল। পরে যাহারা প্রথমে লাগিয়াছিল, তাহারা আসিয়া মনে করিল, আমরা বেশী পাইব; কিন্তু তাহারাও এক এক সিকি পাইল। পাইয়া তাহারা সেই গৃহকর্ত্তার বিরুদ্ধে বচসা করিয়া কহিতে লাগিল, শেষের ইহারা ত এক ঘন্টামাত্র খাটিয়াছে, আমরা সমস্ত দিন খাটিয়াছি ও রৌদ্রে পুড়িয়াছি, আপনি ইহাদিগকে আমাদের সমান করিলেন। তিনি উত্তর করিয়া তাহাদের এক জনকে কহিলেন, বন্ধু হে! আমি তোমার প্রতি কিছু অন্যায় করি নাই; তুমি কি আমার নিকটে এক সিকিতে স্বীকার কর নাই? তোমার যাহা পাওনা, তাহা লইয়া চলিয়া যাও; আমার ইচ্ছা, তোমাকে যাহা, ঐ শেষের জনকেও তাহাই দিব। আমার নিজের যাহা, তাহা আপনার ইচ্ছামতে ব্যবহার করিবার অধিকার কি আমার নাই? না আমি দয়ালু বলিয়া তোমার চোখ টাটাইতেছে? এইরূপে যাহারা শেষের, তাহারা প্রথম হইবে, এবং যাহারা প্রথম, তাহারা শেষে পড়িবে। পরে যখন যীশু যিরূশালেমে যাইতে উদ্যত হইলেন, তখন তিনি সেই বারো জন শিষ্যকে বিরলে লইয়া গেলেন, আর পথিমধ্যে তাঁহাদিগকে কহিলেন, দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাইতেছি; আর মনুষ্যপুত্র প্রধান যাজকদের ও অধ্যাপকদের হস্তে সমর্পিত হইবেন; তাহারা তাঁহার প্রাণদণ্ড বিধান করিবে, এবং বিদ্রূপ করিবার, কোড়া মারিবার ও ক্রুশে দিবার জন্য পরজাতীয়দের হস্তে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে; পরে তিনি তৃতীয় দিবসে উঠিবেন। তখন সিবদিয়ের পুত্রদের মাতা আপনার দুই পুত্রকে সঙ্গে লইয়া তাঁহার নিকটে আসিয়া প্রণিপাত পূর্ব্বক তাঁহার কাছে কিছু যাচ্ঞা করিলেন। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কি চাও? তিনি কহিলেন, আজ্ঞা করুন, যেন আপনার রাজ্যে আমার এই দুই পুত্রের এক জন আপনার দক্ষিণ পার্শ্বে, আর এক জন বাম পার্শ্বে, বসিতে পায়। কিন্তু যীশু উত্তর করিয়া কহিলেন, তোমরা কি যাচ্ঞা করিতেছ, তাহা বুঝ না; আমি যে পাত্রে পান করিতে যাইতেছি, তাহাতে কি তোমরা পান করিতে পার? তাঁহারা বলিলেন, পারি। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আমার পাত্রে পান করিবে বটে, কিন্তু যাহাদের জন্য আমার পিতা কর্ত্তৃক স্থান প্রস্তুত করা হইয়াছে, তাহাদের ভিন্ন আর কাহাকেও আমার দক্ষিণ পার্শ্বে ও বাম পার্শ্বে বসিতে দিতে আমার অধিকার নাই। এই কথা শুনিয়া অন্য দশ জন ঐ দুই ভ্রাতার প্রতি রুষ্ট হইলেন। কিন্তু যীশু তাঁহাদিগকে নিকটে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা জান, পরজাতীয়দের অধিপতিরা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং যাহারা মহান্‌, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। তোমাদের মধ্যে সেরূপ হইবে না; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে; এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে তোমাদের দাস হইবে; যেমন মনুষ্যপুত্র পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে, এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন। পরে যিরীহো হইতে তাঁহাদের বাহির হইবার সময়ে বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল। আর দেখ, দুই জন অন্ধ পথের পার্শ্বে বসিয়াছিল; সেই পথ দিয়া যীশু যাইতেছেন শুনিয়া তাহারা চেঁচাইয়া কহিল, প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন। তাহাতে লোক সকল চুপ্‌ চুপ্‌ বলিয়া তাহাদিগকে ধমক্‌ দিল; কিন্তু তাহারা আরও অধিক চেঁচাইয়া বলিল, প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমাদের প্রতি দয়া করুন। তখন যীশু থামিয়া তাহাদিগকে ডাকিলেন, আর বলিলেন, তোমরা কি চাও? আমি তোমাদের জন্য কি করিব? তাহারা তাঁহাকে কহিল, প্রভু, আমাদের চক্ষু যেন খুলিয়া যায়। তখন যীশু করুণাবিষ্ট হইয়া তাহাদের চক্ষু স্পর্শ করিলেন, আর তখনই তাহারা দেখিতে পাইল ও তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল। পরে যখন তাঁহারা যিরূশালেমের নিকটবর্ত্তী হইয়া জৈতুন পর্ব্বতে, বৈৎফগী গ্রামে আসিলেন, তখন যীশু দুই জন শিষ্যকে পাঠাইয়া দিলেন, তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের সম্মুখে ঐ গ্রামে যাও, অমনি দেখিতে পাইবে, একটী গর্দ্দভী বাঁধা আছে, আর তাহার সঙ্গে একটী বৎস, খুলিয়া আমার নিকটে আন। আর যদি কেহ তোমাদিগকে কিছু বলে, তবে বলিবে, ইহাদিগেতে প্রভুর প্রয়োজন আছে; তাহাতে সে তখনই তাহাদিগকে পাঠাইয়া দিবে। এইরূপ ঘটিল, যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বাক্য পূর্ণ হয়, “তোমরা সিয়োন-কন্যাকে বল, দেখ, তোমার রাজা তোমার কাছে আসিতেছেন; তিনি মৃদুশীল, ও গর্দ্দভের উপরে উপবিষ্ট; এবং শাবকের, গর্দ্দভ-বৎসের উপরে উপবিষ্ট।” পরে ঐ শিষ্যেরা গিয়া যীশুর আজ্ঞানুসারে কার্য্য করিলেন, গর্দ্দভীকে ও শাবকটীকে আনিলেন, এবং তাহাদের উপরে আপনাদের বস্ত্র পাতিয়া দিলেন, আর তিনি তাহাদের উপরে বসিলেন। আর ভিড়ের মধ্যে অধিকাংশ লোক আপন আপন বস্ত্র পথে পাতিয়া দিল, এবং অন্য অন্য লোক গাছের ডাল কাটিয়া পথে ছড়াইয়া দিল। আর যে সকল লোক তাঁহার অগ্রপশ্চাৎ যাইতেছিল, তাহারা চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হোশান্না দায়ূদ-সন্তান, ধন্য, যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন; ঊর্দ্ধলোকে হোশান্না। আর তিনি যিরূশালেমে প্রবেশ করিলে নগরময় হুলস্থূল পড়িয়া গেল; সকলে কহিল, উনি কে? তাহাতে লোকসমূহ কহিল, উনি সেই ভাববাদী, গালীলের নাসরতীয় যীশু। পরে যীশু ঈশ্বরের ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিলেন, এবং যত লোক ধর্ম্মধামে ক্রয়বিক্রয় করিতেছিল, সেই সকলকে বাহির করিয়া দিলেন, এবং পোদ্দারদের মেজ ও যাহারা কপোত বিক্রয় করিতেছিল, তাহাদের আসন সকল উল্টাইয়া ফেলিলেন, আর তাহাদিগকে কহিলেন, লেখা আছে, “আমার গৃহ প্রার্থনাগৃহ বলিয়া আখ্যাত হইবে,” কিন্তু তোমরা ইহা “দস্যুগণের গহ্বর” করিতেছ। পরে অন্ধেরা ও খঞ্জেরা ধর্ম্মধামে তাঁহার নিকট আসিল, আর তিনি তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। কিন্তু প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য ক্রিয়া সকল দেখিয়া, আর যে বালকেরা ‘হোশান্না দায়ূদ-সন্তান,’ বলিয়া ধর্ম্মধামে চেঁচাইতেছিল, তাহাদিগকে দেখিয়া, রুষ্ট হইল; এবং তাঁহাকে কহিল, শুনিতেছ, ইহারা কি বলিতেছে? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, হাঁ; তোমরা কি কখনও পাঠ কর নাই যে, “তুমি শিশু ও দুগ্ধপোষ্যদের মুখ হইতে স্তব সম্পন্ন করিয়াছ”? পরে তিনি তাহাদিগকে ছাড়িয়া নগরের বাহিরে বৈথনিয়ায় গেলেন, আর সেই স্থানে রাত্রি যাপন করিলেন। প্রাতঃকালে নগরে ফিরিয়া যাইবার সময়ে তিনি ক্ষুধিত হইলেন। পথের পার্শ্বে একটা ডুমুরগাছ দেখিয়া তিনি তাহার নিকটে গেলেন, এবং পত্র বিনা আর কিছুই দেখিতে পাইলেন না। তখন তিনি গাছটিকে কহিলেন, আর কখনও তোমাতে ফল না ধরুক; আর হঠাৎ সেই ডুমুরগাছটা শুকাইয়া গেল। তাহা দেখিয়া শিষ্যেরা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া কহিলেন, ডুমুরগাছটা হঠাৎ শুকাইয়া গেল কিরূপে? যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে, আর সন্দেহ না কর, তবে তোমরা কেবল ডুমুরগাছের প্রতি এইরূপ করিতে পারিবে তাহা নয়, কিন্তু এই পর্ব্বতকেও যদি বল, ‘উপড়িয়া যাও, আর সমুদ্রে গিয়া পড়’, তাহাই হইবে। আর তোমরা প্রার্থনায় বিশ্বাসপূর্ব্বক যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, সে সকলই পাইবে। পরে তিনি ধর্ম্মধামে আসিলে পর তাঁহার উপদেশ দিবার সময়ে প্রধান যাজকেরা ও লোকদের প্রাচীনবর্গ নিকটে আসিয়া বলিল, তুমি কি ক্ষমতায় এই সকল করিতেছ? আর কেই বা তোমাকে এই ক্ষমতা দিয়াছে? যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আমিও তোমাদিগকে একটী কথা জিজ্ঞাসা করিব; তাহা যদি আমাকে বল, তবে কি ক্ষমতায় এ সকল করিতেছি, তাহা আমিও তোমাদিগকে বলিব। যোহনের বাপ্তিস্ম কোথা হইতে হইয়াছিল? স্বর্গ হইতে না মনুষ্য হইতে? তখন তাহারা পরস্পর তর্ক করিয়া বলিল, যদি বলি স্বর্গ হইতে, তাহা হইলে এ আমাদিগকে বলিবে, তবে তোমরা তাঁহাকে বিশ্বাস কর নাই কেন? আর যদি বলি, মনুষ্য হইতে, লোকসাধারণকে ভয় করি; কারণ সকলে যোহনকে ভাববাদী বলিয়া মানে। তখন তাহারা যীশুকে উত্তর করিয়া কহিল, আমরা জানি না। তিনিও তাহাদিগকে কহিলেন, তবে আমিও কি ক্ষমতায় এ সকল করিতেছি, তোমাদিগকে বলিব না। কিন্তু তোমাদের কেমন বোধ হয়? এক ব্যক্তির দুই পুত্র ছিল; তিনি প্রথম জনের নিকটে গিয়া কহিলেন, বৎস, যাও, আজ দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কর্ম্ম কর। সে উত্তর করিল, আমার ইচ্ছা নাই; শেষে অনুশোচনা করিয়া গেল। পরে তিনি দ্বিতীয় জনের নিকটে গিয়া সেইরূপ কহিলেন। সে উত্তর করিল, কর্ত্তা, আমি যাইতেছি; কিন্তু গেল না। সেই দুইয়ের মধ্যে কে পিতার ইচ্ছা পালন করিল? তাহারা কহিল, প্রথম জন। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, করগ্রাহী ও বেশ্যারা তোমাদের অগ্রে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতেছে। কেননা যোহন ধার্ম্মিকতার পথ দিয়া তোমাদের নিকটে আসিলেন, আর তোমরা তাঁহাকে বিশ্বাস করিলে না; কিন্তু করগ্রাহী ও বেশ্যারা তাঁহাকে বিশ্বাস করিল; আর তোমরা তাহা দেখিয়া শেষেও এরূপ অনুশোচনা করিলে না যে, তাঁহাকে বিশ্বাস করিবে। আর একটী দৃষ্টান্ত শুন; এক জন গৃহকর্ত্তা ছিলেন, তিনি দ্রাক্ষার ক্ষেত্র করিয়া তাহার চারিদিকে বেড়া দিলেন, ও তাহার মধ্যে দ্রাক্ষা-কুণ্ড খনন করিলেন, এবং উচ্চগৃহ নির্ম্মাণ করিলেন; পরে কৃষকদিগকে তাহা জমা দিয়া অন্য দেশে চলিয়া গেলেন। আর ফলের সময় সন্নিকট হইলে তিনি আপন ফল গ্রহণ করিবার জন্য কৃষকদের নিকটে নিজ দাসদিগকে প্রেরণ করিলেন। তখন কৃষকেরা তাঁহার দাসদিগকে ধরিয়া কাহাকেও প্রহার করিল, কাহাকেও বধ করিল, কাহাকেও পাথর মারিল। আবার তিনি পূর্ব্বাপেক্ষা আরও অনেক দাস প্রেরণ করিলেন; তাহাদের প্রতিও তাহারা সেই মত ব্যবহার করিল। অবশেষে তিনি আপনার পুত্রকে তাহাদের নিকটে প্রেরণ করিলেন, বলিলেন, তাহারা আমার পুত্রকে সমাদর করিবে। কিন্তু কৃষকেরা পুত্রকে দেখিয়া পরস্পর বলিল, এই ব্যক্তিই উত্তরাধিকারী, আইস, আমরা ইহাকে বধ করিয়া ইহার অধিকার হস্তগত করি। পরে তাহারা তাঁহাকে ধরিয়া দ্রাক্ষাক্ষেত্রের বাহিরে ফেলিয়া বধ করিল। অতএব দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্ত্তা যখন আসিবেন, তখন সেই কৃষকদিগকে কি করিবেন? তাহারা তাঁহাকে বলিল, সেই দুষ্টদিগকে নিদারুণরূপে বিনষ্ট করিবেন, এবং সেই ক্ষেত্র এমন অন্য কৃষকদিগকে জমা দিবেন, যাহারা ফলের সময়ে তাঁহাকে ফল দিবে। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি কখনও শাস্ত্রে পাঠ কর নাই, “যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল; ইহা প্রভু হইতেই হইয়াছে, ইহা আমাদের দৃষ্টিতে অদ্ভুত”? এই জন্য আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে। আর এই প্রস্তরের উপরে যে পড়িবে, সে ভগ্ন হইবে; কিন্তু এই প্রস্তর যাহার উপরে পড়িবে, তাহাকে চূরমার করিয়া ফেলিবে। তাঁহার এই সকল দৃষ্টান্ত শুনিয়া প্রধান যাজকেরা ও ফরীশীরা বুঝিল যে, তিনি তাহাদেরই বিষয় বলিতেছেন। আর তাহারা তাঁহাকে ধরিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু লোকসাধারণকে ভয় করিল, কেননা লোকে তাঁহাকে ভাববাদী বলিয়া মানিত। যীশু আবার দৃষ্টান্ত দ্বারা কথা কহিলেন, তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, স্বর্গ-রাজ্য এমন এক জন রাজার তুল্য, যিনি আপন পুত্রের বিবাহভোজের আয়োজন করিলেন। সেই ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদিগকে ডাকিবার জন্য তিনি আপন দাসদিগকে প্রেরণ করিলেন; কিন্তু তাহারা আসিতে চাহিল না। তাহাতে তিনি আবার অন্য দাসদিগকে প্রেরণ করিলেন, বলিলেন, নিমন্ত্রিত লোকদিগকে বল, দেখ, আমার ভোজ প্রস্তুত করিয়াছি, আমার বৃষাদি হৃষ্টপুষ্ট পশু সকল মারা হইয়াছে, সকলই প্রস্তুত; তোমরা বিবাহের ভোজে আইস। কিন্তু তাহারা অবহেলা করিয়া কেহ আপন ক্ষেত্রে, কেহ বা আপন ব্যাপারে চলিয়া গেল। অবশিষ্ট সকলে তাঁহার দাসদিগকে ধরিয়া অপমার করিল ও বধ করিল। তাহাতে রাজা ক্রুদ্ধ হইলেন, এবং সৈন্যসামন্ত পাঠাইয়া সেই হত্যাকারীদিগকে বিনষ্ট করিলেন, ও তাহাদের নগর পোড়াইয়া দিলেন। পরে তিনি আপন দাসদিগকে কহিলেন, বিবাহের ভোজ ত প্রস্তুত, কিন্তু ঐ নিমন্ত্রিত লোকেরা যোগ্য ছিল না; অতএব তোমরা রাজপথের মাথায় মাথায় গিয়া যত লোকের দেখা পাও, সকলকে বিবাহের ভোজে ডাকিয়া আন। তাহাতে ঐ দাসেরা রাজপথে গিয়া ভাল মন্দ যত লোকের দেখা পাইল, সকলকেই সংগ্রহ করিয়া আনিল, তাহাতে বিবাহবাটী অতিথিগণে পরিপূর্ণ হইল। পরে রাজা অতিথিদিগকে দেখিবার জন্যে ভিতরে আসিয়া এমন এক ব্যক্তিকে দেখিতে পাইলেন, যাহার বিবাহবস্ত্র ছিল না; তিনি তাহাকে কহিলেন, হে বন্ধু, তুমি কেমন করিয়া বিবাহ-বস্ত্র বিনা এখানে প্রবেশ করিলে? সে নিরুত্তর হইল। তখন রাজা পরিচারকদিগকে কহিলেন, উহার হাত পা বাঁধিয়া উহাকে বাহিরের অন্ধকারে ফেলিয়া দেও; সেখানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে। বাস্তবিক অনেকে আহূত, কিন্তু অল্পই মনোনীত। তখন ফরীশীরা গিয়া মন্ত্রণা করিল, কিরূপে তাঁহাকে কথার ফাঁদে ফেলিতে পারে। আর তাহারা হেরোদীয়দের সহিত আপনাদের শিষ্যগণকে দিয়া তাঁহাকে বলিয়া পাঠাইল, গুরো, আমরা জানি, আপনি সত্য, এবং সত্যরূপে ঈশ্বরের পথের বিষয় শিক্ষা দিতেছেন, এবং আপনি কাহারও বিষয়ে ভীত নহেন, কেননা আপনি মনুষ্যের মুখাপেক্ষা করেন না। ভাল, আমাদিগকে বলুন, আপনার মত কি কৈসরকে কর দেওয়া বিধেয় কি না? কিন্তু যীশু তাহাদের দুষ্টামি বুঝিয়া কহিলেন, কপটীরা, আমার পরীক্ষা কেন করিতেছ? সেই করের মুদ্রা আমাকে দেখাও। তখন তাহারা তাঁহার নিকটে একটী দীনার আনিল। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, এই মূর্ত্তি ও এই নাম কাহার? তাহারা বলিল, কৈসরের। তখন তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তবে কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও। এই কথা শুনিয়া তাহারা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল, এবং তাঁহাকে ছাড়িয়া চলিয়া গেল। সেই দিন সদ্দূকীরা—যাহারা বলে পুনরুত্থান নাই—তাঁহার কাছে আসিল; এবং তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, গুরো, মোশি বলিয়াছেন, কেহ যদি নিঃসন্তান হইয়া মরে, তবে তাহার ভাই তাহার স্ত্রীকে বিবাহ করিয়া আপন ভাইয়ের জন্য বংশ উৎপন্ন করিবে। ভাল, আমাদের মধ্যে সাতটী ভাই ছিল; আর জ্যেষ্ঠ বিবাহের পর মরিয়া গেল, এবং সন্তান না হওয়াতে আপন ভ্রাতার জন্য নিজ স্ত্রীকে রাখিয়া গেল। দ্বিতীয় তৃতীয় প্রভৃতি সপ্তম জন পর্য্যন্ত সেইরূপ করিল। সকলের শেষে সে স্ত্রীও মরিয়া গেল। অতএব পুনরুত্থানে ঐ সাত জনের মধ্যে সে কাহার স্ত্রী হইবে? সকলেই ত তাহাকে বিবাহ করিয়াছিল। যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা ভ্রান্ত হইতেছ, কারণ তোমরা না জান শাস্ত্র, না জান ঈশ্বরের পরাক্রম; কেননা পুনরুত্থানে লোকে বিবাহ করে না, এবং বিবাহিতাও হয় না, বরং স্বর্গে ঈশ্বরের দূতগণের ন্যায় থাকে। কিন্তু মৃতদের পুনরুত্থান বিষয়ে ঈশ্বর তোমাদিগকে যাহা বলিয়াছেন, তাহা কি তোমরা পাঠ কর নাই? তিনি বলেন, “আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর, ও যাকোবের ঈশ্বর;” ঈশ্বর মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের। এই কথা শুনিয়া লোকসমূহ তাঁহার শিক্ষাতে চমৎকার জ্ঞান করিল। ফরীশীরা যখন শুনিতে পাইল, তিনি সদ্দূকীদিগকে নিরুত্তর করিয়াছেন, তখন তাহারা একসঙ্গে আসিয়া যুটিল। আর তাহাদের মধ্যে এক ব্যক্তি, এক জন ব্যবস্থাবেত্তা, পরীক্ষা ভাবে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, গুরো, ব্যবস্থার মধ্যে কোন্‌ আজ্ঞা মহৎ? তিনি তাহাকে কহিলেন, “তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,” এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা। আর দ্বিতীয়টী ইহার তুল্য; “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” এই দুইটী আজ্ঞাতেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদিগ্রন্থও ঝুলিতেছে। আর ফরীশীরা একত্র হইলে যীশু তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, খ্রীষ্টের বিষয়ে তোমাদের কেমন বোধ হয়, তিনি কাহার সন্তান? তাহারা বলিল, দায়ূদের। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তবে দায়ূদ কি প্রকারে আত্মার আবেশে তাঁহাকে প্রভু বলেন? তিনি বলেন,— “প্রভু আমার প্রভুকে কহিলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পদতলে না রাখি।” অতএব দায়ূদ যখন তাঁহাকে প্রভু বলেন, তখন তিনি কি প্রকারে তাঁহার সন্তান? তখন কেহ তাঁহাকে কোন উত্তর দিতে পারিল না; আর সেই দিন অবধি তাঁহাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে কাহারও সাহস হইল না। তখন যীশু লোকসমূহকে ও নিজ শিষ্যদিগকে কহিলেন, অধ্যাপক ও ফরীশীরা মোশির আসনে বসে। অতএব তাহারা তোমাদিগকে যাহা কিছু বলে, তাহা পালন করিও, মানিও, কিন্তু তাহাদের কর্ম্মের মত কর্ম্ম করিও না; কেননা তাহারা বলে, কিন্তু করে না। তাহারা ভারী দুর্ব্বহ বোঝা বাঁধিয়া লোকদের কাঁধে চাপাইয়া দেয়, কিন্তু আপনারা অঙ্গুলি দিয়াও তাহা সরাইতে চাহে না। তাহারা লোককে দেখাইবার জন্যই তাহাদের সমস্ত কর্ম্ম করে; কেননা তাহারা আপনাদের কবচ প্রশস্ত করে, এবং বস্ত্রের থোপ বড় করে, আর ভোজে প্রধান স্থান, সমাজগৃহে প্রধান প্রধান আসন, হাটে বাজারে মঙ্গলবাদ, এবং লোকের কাছে রব্বি [গুরু] বলিয়া সম্ভাষণ, এ সকল ভাল বাসে। কিন্তু তোমরা ‘রব্বি’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের গুরু এক জন, এবং তোমরা সকলে ভ্রাতা। আর পৃথিবীতে কাহাকেও ‘পিতা’ বলিয়া সম্বোধন করিও না, কারণ তোমাদের পিতা এক জন, তিনি সেই স্বর্গীয়। তোমরা ‘আচার্য্য’ বলিয়া সম্ভাষিত হইও না, কারণ তোমাদের আচার্য্য এক জন, তিনি খ্রীষ্ট। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ, সে তোমাদের পরিচারক হইবে। আর যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; আর যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে। কিন্তু হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌, তোমাদিগকে! কারণ তোমরা মনুষ্যদের সম্মুখে স্বর্গরাজ্য রুদ্ধ করিয়া থাক; আপনারাও তাহাতে প্রবেশ কর না, এবং যাহারা প্রবেশ করিতে আইসে, তাহাদিগকে প্রবেশ করিতে দেও না। হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! কারণ এক জনকে যিহূদী-ধর্ম্মাবলম্বী করিবার জন্য তোমরা সমুদ্রে ও স্থলে পরিভ্রমণ করিয়া থাক; আর যখন কেহ হয়, তখন তাহাকে তোমাদের অপেক্ষা দ্বিগুণ নারকী করিয়া তুল। হা অন্ধ পথ-দর্শকেরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! তোমরা বলিয়া থাক, কেহ মন্দিরের দিব্য করিলে তাহা কিছুই নয়, কিন্তু যে কেহ মন্দিরস্থ স্বর্ণের দিব্য করিল, সে আবদ্ধ হইল। মূঢ়েরা ও অন্ধেরা, বল দেখি, কোন্‌টী শ্রেষ্ঠ? স্বর্ণ, না সেই মন্দির, যাহা স্বর্ণকে পবিত্র করিয়াছে? আরও বলিয়া থাক, কেহ যজ্ঞবেদির দিব্য করিলে তাহা কিছুই নয়, কিন্তু যে কেহ তাহার উপরিস্থ উপহারের দিব্য করিল, সে আবদ্ধ হইল। হা অন্ধেরা, বল দেখি, কোন্‌টী শ্রেষ্ঠ? উপহার, না সেই যজ্ঞবেদি, যাহা উপহারকে পবিত্র করে? যে ব্যক্তি যজ্ঞবেদির দিব্য করে, সে ত বেদির ও তাহার উপরিস্থ সমস্তেরই দিব্য করে। আর যে মন্দিরের দিব্য করে, সে মন্দিরের, এবং যিনি তথায় বাস করেন, তাঁহারও দিব্য করে। আর যে স্বর্গের দিব্য করে, সে ঈশ্বরের সিংহাসনের, এবং যিনি তাহাতে উপবিষ্ট, তাঁহারও দিব্য করে। হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা পোদিনা, মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়া থাক; আর ব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর বিষয়—ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস—পরিত্যাগ করিয়াছ; কিন্তু এ সকল পালন করা, এবং ঐ সকলও পরিত্যাগ না করা, তোমাদের উচিত ছিল। অন্ধ পথ-দর্শকেরা, তোমরা মশা ছাঁকিয়া ফেল, কিন্তু উট গিলিয়া থাক। হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা পানপাত্র ও ভোজনপাত্র বাহিরে পরিষ্কার করিয়া থাক, কিন্তু সেগুলির ভিতরে দৌরাত্ম্য ও অন্যায় ভরা। অন্ধ ফরীশী, অগ্রে পানপাত্র ও ভোজনপাত্র ভিতরে পরিষ্কার কর, যেন তাহা বাহিরেও পরিষ্কার হয়। হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা চূণকাম করা কবরের তুল্য; তাহা বাহিরে দেখিতে সুন্দর বটে, কিন্তু ভিতরে মরা মানুষের অস্থি ও সর্ব্বপ্রকার অশুচিতা ভরা। তদ্রূপ তোমরাও বাহিরে লোকদের কাছে ধার্ম্মিক বলিয়া দেখাইয়া থাক, কিন্তু ভিতরে তোমরা কাপট্য ও অধর্ম্মে পরিপূর্ণ। হা অধ্যাপক ও ফরীশীগণ, কপটীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে! কারণ তোমরা ভাববাদিগণের কবর গাঁথিয়া থাক, এবং ধার্ম্মিকগণের সমাধি-স্তম্ভ শোভিত করিয়া থাক, আর বলিয়া থাক, আমরা যদি আমাদের পিতৃপুরুষদের সময়ে থাকিতাম, তবে ভাববাদিগণের রক্তপাতে তাঁহাদের সহভাগী হইতাম না। ইহাতে তোমরা আপনাদের বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিতেছ যে, যাহারা ভাববাদিগণকে বধ করিয়াছিল, তোমরা তাহাদেরই সন্তান। তোমরাও তোমাদের পিতৃপুরুষদের পরিমাণ পূর্ণ কর। সর্পেরা, কালসর্পের বংশেরা, তোমরা কেমন করিয়া বিচারে নরকদণ্ড এড়াইবে? এই কারণ দেখ, আমি তোমাদের নিকটে ভাববাদী, বিজ্ঞ ও অধ্যাপকদিগকে প্রেরণ করিব, তাহাদের মধ্যে কতক জনকে তোমরা বধ করিবে ও ক্রুশে দিবে, কতক জনকে তোমাদের সমাজ-গৃহে কোড়া মারিবে, এবং এক নগর হইতে আর এক নগরে তাড়না করিবে, যেন পৃথিবীতে যত ধার্ম্মিক লোকের রক্তপাত হইয়া আসিতেছে, সে সমস্ত তোমাদের উপরে বর্ত্তে,—ধার্ম্মিক হেবলের রক্তপাত অবধি, বরখিয়ের পুত্র যে সখরিয়কে তোমরা মন্দিরের ও যজ্ঞবেদির মধ্যস্থানে বধ করিয়াছিলে, তাঁহার রক্তপাত পর্য্যন্ত। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই কালের লোকদের উপরে এই সমস্তই বর্ত্তিবে। হা যিরূশালেম, যিরূশালেম, তুমি ভাববাদিগণকে বধ করিয়া থাক, ও তোমার নিকটে যাহারা প্রেরিত হয়, তাহাদিগকে পাথর মারিয়া থাক! কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, তদ্রূপ আমিও কত বার তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না। দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল। কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা এখন অবধি আমাকে আর দেখিতে পাইবে না, যে পর্য্যন্ত না বলিবে, “ধন্য তিনি, যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন।” [1] পরে যীশু ধর্ম্মধাম হইতে বাহির হইয়া গমন করিতেছেন, এমন সময়ে তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে ধর্ম্মধামের গাঁথনি সকল দেখাইবার জন্য নিকটে আসিলেন। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি এই সকল দেখিতেছ না? আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই স্থানের একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে। পরে তিনি জৈতুন পর্ব্বতের উপরে বসিলে শিষ্যেরা বিরলে তাঁহার নিকটে আসিয়া বলিলেন, আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্‌ হইবে? আর আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি? যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, দেখিও, কেহ যেন তোমাদিগকে না ভুলায়। কেননা অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, আমিই সেই খ্রীষ্ট, আর অনেক লোককে ভুলাইবে। আর তোমরা যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনিবে; দেখিও, ব্যাকুল হইও না; কেননা এ সকল অবশ্যই ঘটিবে, কিন্তু তখনও শেষ নয়। কারণ জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে, এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হইবে। কিন্তু এ সকলই যাতনার আরম্ভ মাত্র। সেই সময়ে লোকেরা ক্লেশ দিবার জন্য তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, ও তোমাদিগকে বধ করিবে, আর আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে। আর তৎকালে অনেকে বিঘ্ন পাইবে, এক জন অন্যকে সমর্পণ করিবে, এক জন অন্যকে দ্বেষ করিবে। আর অনেক ভাক্ত ভাববাদী উঠিয়া অনেককে ভুলাইবে। আর অধর্ম্মের বৃদ্ধি হওয়াতে অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হইয়া যাইবে। কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে। আর সর্ব্বজাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে। অতএব যখন দেখিবে, ধ্বংসের যে ঘৃণার্হ বস্তু দানিয়েল ভাববাদী দ্বারা উক্ত হইয়াছে, তাহা পবিত্র স্থানে দাঁড়াইয়া আছে,— যে জন পাঠ করে, সে বুঝুক, —তখন যাহারা যিহূদিয়াতে থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক; যে কেহ ছাদের উপরে থাকে, সে গৃহ হইতে জিনিষপত্র লইবার জন্য নীচে না নামুক; আর যে কেহ ক্ষেত্রে থাকে, সে আপন বস্ত্র লইবার নিমিত্ত পশ্চাতে ফিরিয়া না আসুক। হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রীদিগের সন্তাপ হইবে! আর প্রার্থনা কর, যেন তোমাদের পলায়ন শীতকালে কিম্বা বিশ্রামবারে না ঘটে। কেননা তৎকালে এরূপ “মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না” । আর সেই দিনের সংখ্যা যদি কমাইয়া দেওয়া না যাইত, তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দেওয়া যাইবে। তখন যদি কেহ তোমাদিগকে বলে, দেখ, সেই খ্রীষ্ট এখানে, কিম্বা ওখানে, তোমরা বিশ্বাস করিও না। কেননা ভাক্ত খ্রীষ্টেরা ও ভাক্ত ভাববাদীরা উঠিবে, এবং এমন মহৎ মহৎ চিহ্ন ও অদ্ভুত অদ্ভুত লক্ষণ দেখাইবে যে, যদি হইতে পারে, তবে মনোনীতদিগকেও ভুলাইবে। দেখ, আমি পূর্ব্বেই তোমাদিগকে বলিলাম। অতএব লোকে যদি তোমাদিগকে বলে, ‘দেখ, তিনি প্রান্তরে,’ তোমরা বাহিরে যাইও না; ‘দেখ, তিনি অন্তরাগারে,’ তোমরা বিশ্বাস করিও না। কারণ বিদ্যুৎ যেমন পূর্ব্বদিক্‌ হইতে নির্গত হইয়া পশ্চিমদিক পর্য্যন্ত প্রকাশ পায়, তেমনি মনুষ্যপুত্রের আগমন হইবে। যেখানে মড়া থাকে, সেইখানে শকুন যুটিবে। আর সেই সময়ের ক্লেশের পরেই “সূর্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে ও আকাশমণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে”। আর তখন মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন আকাশে দেখা যাইবে, আর তখন পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী বিলাপ করিবে, এবং “মনুষ্যপুত্রকে আকাশীয় মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিতে” দেখিবে। আর তিনি মহা তূরীধ্বনি সহকারে আপন দূতগণকে প্রেরণ করিবেন; তাঁহারা আকাশের এক সীমা অবধি অন্য সীমা পর্য্যন্ত চারি বায়ু হইতে তাঁহার মনোনীতদিগকে একত্র করিবেন। ডুমুরগাছ হইতে দৃষ্টান্ত শিখ; যখন তাহার শাখা কোমল হইয়া পত্র বাহির করে, তখন তোমরা জানিতে পার, গ্রীষ্মকাল সন্নিকট; সেইরূপ তোমরা ঐ সকল ঘটনা দেখিলেই জানিবে, তিনি সন্নিকট, এমন কি, দ্বারে উপস্থিত। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই কালের লোকদের লোপ হইবে না, যে পর্য্যন্ত না এ সমস্ত সিদ্ধ হয়। আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হইবে, কিন্তু আমার বাক্যের লোপ কখনও হইবে না। কিন্তু সেই দিনের ও সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গের দূতগণও জানেন না, পুত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন। বাস্তবিক নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্রের আগমনও তদ্রূপ হইবে। কারণ জলপ্লাবনের সেই পূর্ব্ববর্ত্তী কালে, জাহাজে নোহের প্রবেশ দিন পর্য্যন্ত, লোকে যেমন ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত, এবং বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল; তদ্রূপ মনুষ্যপুত্রের আগমন হইবে। তখন দুই জন ক্ষেত্রে থাকিবে, এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে। দুইটী স্ত্রীলোক যাঁতা পিষিবে, এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে। অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্‌ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না। কিন্তু ইহা জানিও, চোর কোন্‌ প্রহরে আসিবে, তাহা যদি গৃহকর্ত্তা জানিত, তবে জাগিয়া থাকিত, নিজ গৃহে সিঁধ কাটিতে দিত না। এই জন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্র আসিবেন। এখন, সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনের উপরে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্য দেয়? ধন্য সেই দাস, যাহাকে তাহার প্রভু আসিয়া সেইরূপ করিতে দেখিবেন। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তিনি তাহাকে আপন সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ করিবেন। কিন্তু সেই দুষ্ট দাস যদি মনে মনে বলে, ‘আমার প্রভুর আসিবার বিলম্ব আছে,’ আর যদি আপন সহদাসদিগকে মারিতে, এবং মত্ত লোকদের সঙ্গে ভোজন ও পান করিতে, আরম্ভ করে, তবে যে দিন সে অপেক্ষা না করিবে, এবং যে দণ্ড সে না জানিবে, সেই দিন সেই দণ্ডে সেই দাসের প্রভু আসিবেন; আর তাহাকে দ্বিখণ্ড করিয়া কপটীদের মধ্যে তাহার অংশ নিরূপণ করিবেন; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে। তখন স্বর্গ-রাজ্য এমন দশটী কুমারীর তুল্য বলিতে হইবে, যাহারা আপন আপন প্রদীপ লইয়া বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হইল। তাহাদের মধ্যে পাঁচ জন নির্বুদ্ধি, আর পাঁচ জন সুবুদ্ধি ছিল। কারণ যাহারা নির্বুদ্ধি, তাহারা আপন আপন প্রদীপ লইল, সঙ্গে তৈল লইল না; কিন্তু সুবুদ্ধিরা আপন আপন প্রদীপের সহিত পাত্রে করিয়া তৈল লইল। আর বর বিলম্ব করাতে সকলে ঢুলিতে ঢুলিতে ঘুমাইয়া পড়িল। পরে মধ্য রাত্রে এই উচ্চরব হইল, দেখ, বর! তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হও। তাহাতে সেই কুমারীরা সকলে উঠিল, এবং আপন আপন প্রদীপ সাজাইল। আর নির্বুদ্ধিরা সুবুদ্ধিদিগকে বলিল, তোমাদের তৈল হইতে আমাদিগকে কিছু দেও, কেননা আমাদের প্রদীপ নিবিয়া যাইতেছে। কিন্তু সুবুদ্ধিরা উত্তর করিয়া কহিল, হয় ত তোমাদের ও আমাদের জন্য কুলাইবে না; তোমরা বরং বিক্রেতাদের নিকটে গিয়া আপনাদের জন্য ক্রয় কর। তাহারা ক্রয় করিতে যাইতেছে, ইতিমধ্যে বর আসিলেন; এবং যাহারা প্রস্তুত ছিল, তাহারা তাঁহার সঙ্গে বিবাহবাটীতে প্রবেশ করিল; আর দ্বার রুদ্ধ হইল। শেষে অন্য সকল কুমারীও আসিয়া কহিতে লাগিল, প্রভু, প্রভু, আমাদিগকে দ্বার খুলিয়া দিউন। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমি তোমাদিগকে চিনি না। অতএব জাগিয়া থাক; কেননা তোমরা সেই দিন বা সেই দণ্ড জান না। কারণ মনে কর, যেন কোন ব্যক্তি বিদেশে যাইতেছেন, তিনি আপন দাসদিগকে ডাকিয়া নিজ সম্পত্তি তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন। তিনি এক জনকে পাঁচ তালন্ত, অন্য জনকে দুই তালন্ত, এবং আর এক জনকে এক তালন্ত, যাহার যেরূপ শক্তি, তাহাকে তদনুসারে দিলেন; পরে বিদেশে চলিয়া গেলেন। যে পাঁচ তালন্ত পাইয়াছিল, সে তখনই গেল, তাহা দিয়া ব্যবসা করিল, এবং আর পাঁচ তালন্ত লাভ করিল। যে দুই তালন্ত পাইয়াছিল, সেও তদ্রূপ করিয়া আর দুই তালন্ত লাভ করিল। কিন্তু যে এক তালন্ত পাইয়াছিল, সে গিয়া ভূমিতে গর্ত্ত খুঁড়িয়া আপন প্রভুর টাকা লুকাইয়া রাখিল। দীর্ঘকালের পর সেই দাসদিগের প্রভু আসিয়া তাহাদের নিকট হইতে হিসাব লইলেন। তখন যে পাঁচ তালন্ত পাইয়াছিল, সে আসিয়া আরও পাঁচ তালন্ত আনিয়া কহিল, প্রভু, আপনি আমার নিকটে পাঁচ তালন্ত সমর্পণ করিয়াছিলেন; দেখুন, আর পাঁচ তালন্ত লাভ করিয়াছি। তাহার প্রভু তাহাকে কহিলেন, বেশ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস; তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে, আমি তোমাকে বহু বিষয়ের উপরে নিযুক্ত করিব; তুমি আপন প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও। পরে যে দুই তালন্ত পাইয়াছিল, সেও আসিয়া কহিল, প্রভু, আপনি আমার নিকটে দুই তালন্ত সমর্পণ করিয়াছিলেন; দেখুন, আর দুই তালন্ত লাভ করিয়াছি। তাহার প্রভু তাহাকে কহিলেন, বেশ! উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস; তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে, আমি তোমাকে বহু বিষয়ের উপরে নিযুক্ত করিব; তুমি আপন প্রভুর আনন্দের সহভাগী হও। পরে যে এক তালন্ত পাইয়াছিল, সেও আসিয়া কহিল, প্রভু, আমি জানিতাম, আপনি কঠিন লোক; যেখানে বুনেন নাই, সেইখানে কাটিয়া থাকেন, ও যেখানে ছড়ান নাই, সেইখানে কুড়াইয়া থাকেন। তাই আমি ভীত হইয়া গিয়া আপনার তালন্ত ভূমির মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়াছিলাম; দেখুন, আপনার যাহা আপনি পাইলেন। কিন্তু তাহার প্রভু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, দুষ্ট অলস দাস, তুমি নাকি জানিতে, আমি যেখানে বুনি নাই, সেইখানে কাটি, এবং যেখানে ছড়াই নাই, সেইখানে কুড়াই? তবে পোদ্দারদের হাতে আমার টাকা রাখিয়া দেওয়া তোমার উচিত ছিল; তাহা করিলে আমি আসিয়া আমার যাহা তাহা সুদের সহিত পাইতাম। অতএব তোমরা ইহার নিকট হইতে ঐ তালন্ত লও, এবং যাহার দশ তালন্ত আছে, তাহাকে দেও; কেননা যে কোন ব্যক্তির নিকটে আছে, তাহাকে দত্ত হইবে, তাহাতে তাহার বাহুল্য হইবে; কিন্তু যাহার নাই, তাহার যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে নীত হইবে। আর তোমরা ঐ অনুপযোগী দাসকে বাহিরের অন্ধকারে ফেলিয়া দেও; সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে। আর যখন মনুষ্যপুত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন। আর সমুদয় জাতি তাঁহার সম্মুখে একত্রীকৃত হইবে; পরে তিনি তাহাদের এক জন হইতে অন্য জনকে পৃথক্‌ করিবেন, যেমন পালরক্ষক ছাগ হইতে মেষ পৃথক্‌ করে; আর তিনি মেষদিগকে আপনার দক্ষিণদিকে ও ছাগদিগকে বামদিকে রাখিবেন। তখন রাজা আপনার দক্ষিণ দিকে স্থিত লোকদিগকে বলিবেন, আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও। কেননা আমি ক্ষুধিত হইয়াছিলাম, আর তোমরা আমাকে আহার দিয়াছিলে; পিপাসিত হইয়াছিলাম, আর আমাকে পান করাইয়াছিলে; অতিথি হইয়াছিলাম, আর আমাকে আশ্রয় দিয়াছিলে; বস্ত্রহীন হইয়াছিলাম, আর আমাকে বস্ত্র পরাইয়াছিলে; পীড়িত হইয়াছিলাম, আর আমার তত্ত্বাবধান করিয়াছিলে; কারাগারস্থ হইয়াছিলাম, আর আমার নিকটে আসিয়াছিলে। তখন ধার্ম্মিকেরা উত্তর করিয়া তাঁহাকে বলিবে, প্রভু, কবে আপনাকে ক্ষুধিত দেখিয়া ভোজন করাইয়াছিলাম, কিম্বা পিপাসিত দেখিয়া পান করাইয়াছিলাম? কবেই বা আপনাকে অতিথি দেখিয়া আশ্রয় দিয়াছিলাম, কিম্বা বস্ত্রহীন দেখিয়া বস্ত্র পরাইয়াছিলাম? কবেই বা আপনাকে পীড়িত কিম্বা কারাগারস্থ দেখিয়া আপনার নিকটে গিয়াছিলাম? তখন রাজা উত্তর করিয়া তাহাদিগকে বলিবেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমার এই ভ্রাতৃগণের—এই ক্ষুদ্রতমদিগের—মধ্যে এক জনের প্রতি যখন ইহা করিয়াছিলে, তখন আমারই প্রতি করিয়াছিলে। পরে তিনি বামদিকে স্থিত লোকদিগকেও বলিবেন, ওহে শাপগ্রস্ত সকল, আমার নিকট হইতে দূর হও, দিয়াবলের ও তাহার দূতগণের জন্য যে অনন্ত অগ্নি প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার মধ্যে যাও। কেননা আমি ক্ষুধিত হইয়াছিলাম, আর তোমরা আমাকে আহার দেও নাই; পিপাসিত হইয়াছিলাম, আর আমাকে পান করাও নাই; অতিথি হইয়াছিলাম, আর আমাকে আশ্রয় দেও নাই; বস্ত্রহীন হইয়াছিলাম, আর আমাকে বস্ত্র পরাও নাই; পীড়িত ও কারাগারস্থ হইয়াছিলাম, আর আমার তত্ত্বাবধান কর নাই। তখন তাহারাও উত্তর করিবে, বলিবে, প্রভু, কবে আপনাকে ক্ষুধিত, কি পিপাসিত, কি অতিথি, কি বস্ত্রহীন, কি পীড়িত, কি কারাগারস্থ দেখিয়া আপনার পরিচর্য্যা করি নাই? তখন তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে বলিবেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমরা এই ক্ষুদ্রতমদিগের কোন এক জনের প্রতি যখন ইহা কর নাই, তখন আমারই প্রতি কর নাই। পরে ইহারা অনন্ত দণ্ডে, কিন্তু ধার্ম্মিকেরা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করিবে। [1] যখন যীশু এই সকল কথা শেষ করিলেন, তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, তোমরা জান, দুই দিন পরে নিস্তারপর্ব্ব আসিতেছে, আর মনুষ্যপুত্র ক্রুশে বিদ্ধ হইবার জন্য সমর্পিত হইতেছেন। তখন প্রধান যাজকেরা ও লোকদের প্রাচীনবর্গ কায়াফা নামক মহাযাজকের প্রাঙ্গণে একত্র হইল; আর এই মন্ত্রণা করিল, যেন ছলে যীশুকে ধরিয়া বধ করিতে পারে। কিন্তু তাহারা কহিল, পর্ব্বের সময়ে নয়, পাছে লোকদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। যীশু যখন বৈথনিয়ায় কুষ্ঠী শিমোনের বাটীতে ছিলেন, তখন একটী স্ত্রীলোক শ্বেত প্রস্তরের পাত্রে বহুমূল্য সুগন্ধি তৈল লইয়া তাঁহার নিকটে আসিল, এবং তিনি ভোজনে বসিলে তাঁহার মস্তকে ঢালিয়া দিল। কিন্তু তাহা দেখিয়া শিষ্যেরা বিরক্ত হইয়া কহিলেন, এ অপব্যয় কেন? ইহা ত অনেক টাকায় বিক্রয় করিয়া তাহা দরিদ্রদিগকে দিতে পারা যাইত। কিন্তু যীশু তাহা বুঝিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, স্ত্রীলোকটীকে কেন দুঃখ দিতেছ? এ ত আমার প্রতি সৎকার্য্য করিল। কেননা দরিদ্রেরা তোমাদের কাছে সর্ব্বদাই আছে, কিন্তু তোমরা আমাকে সর্ব্বদা পাইবে না। বস্তুতঃ আমার দেহের উপরে এই সুগন্ধি তৈল ঢালিয়া দেওয়াতে এ আমার সমাধির উপযোগী কর্ম্ম করিল। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, সমুদয় জগতে যে কোন স্থানে এই সুসমাচার প্রচারিত হইবে, সেই স্থানে ইহার এই কর্ম্মের কথাও ইহার স্মরণার্থে বলা যাইবে। তখন বারো জনের মধ্যে এক জন, যাহাকে ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা বলা যায়, সে প্রধান যাজকদের নিকটে গিয়া কহিল, আমাকে কি দিতে চান, বলুন, আমি তাহাকে আপনাদের হস্তে সমর্পণ করিব। তাহারা তাহাকে ত্রিশ রৌপ্যখণ্ড তৌল করিয়া দিল। আর সেই সময় অবধি সে তাঁহাকে সমর্পণ করিবার জন্য সুযোগ অন্বেষণ করিতে লাগিল। পরে তাড়ীশূন্য রুটীর পর্ব্বের প্রথম দিন শিষ্যেরা যীশুর নিকটে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার নিমিত্ত আমরা কোথায় নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করিব? আপনার ইচ্ছা কি? তিনি কহিলেন, তোমরা নগরে অমুক ব্যক্তির নিকট যাও, আর তাহাকে বল, গুরু কহিতেছেন, আমার সময় সন্নিকট; আমি তোমারই গৃহে আমার শিষ্যগণের সহিত নিস্তারপর্ব্ব পালন করিব। তাহাতে শিষ্যেরা যীশুর আদেশ অনুসারে কর্ম্ম করিলেন, ও নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করিলেন। পরে সন্ধ্যা হইলে তিনি সেই বারো জন শিষ্যের সহিত ভোজনে বসিলেন। আর তাঁহাদের ভোজন সময়ে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমাদের মধ্যে এক জন আমাকে সমর্পণ করিবে। তখন তাঁহারা অত্যন্ত দুঃখিত হইয়া প্রত্যেক জন তাঁহাকে বলিতে লাগিলেন, প্রভু, সে কি আমি? তিনি উত্তর করিলেন, যে আমার সঙ্গে ভোজনপাত্রে হাত ডুবাইল, সেই আমাকে সমর্পণ করিবে। মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে যেমন লিখিত আছে, তেমনি তিনি যাইতেছেন; কিন্তু ধিক্‌ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা মনুষ্যপুত্র সমর্পিত হন; সেই মানুষের জন্ম না হইলে তাহার পক্ষে ভাল ছিল। তখন যে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে, সেই যিহূদা কহিল, রব্বি, সে কি আমি? তিনি তাহাকে কহিলেন, তুমিই বলিলে। পরে তাঁহারা ভোজন করিতেছেন, এমন সময়ে যীশু রুটী লইয়া আশীর্ব্বাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, এবং শিষ্যদিগকে দিলেন, আর কহিলেন, লও, ভোজন কর, ইহা আমার শরীর। পরে তিনি পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে দিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে ইহা হইতে পান কর; কারণ ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য, পাপমোচনের নিমিত্ত, পাতিত হয় । আর আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, এখন অবধি আমি এই দ্রাক্ষাফলের রস আর কখনও পান করিব না, সেই দিন পর্য্যন্ত, যখন আমি আপন পিতার রাজ্যে তোমাদের সঙ্গে ইহা নূতন পান করিব। পরে তাঁহারা গীত গান করিয়া বাহির হইয়া জৈতুন পর্ব্বতে গেলেন। তখন যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, এই রাত্রিতে তোমরা সকলে আমাতে বিঘ্ন পাইবে; কেননা লেখা আছে, “আমি পালরক্ষককে আঘাত করিব, তাহাতে পালের মেষেরা ছিন্নভিন্ন হইয়া যাইবে।” কিন্তু উত্থিত হইলে পর আমি তোমাদের অগ্রে গালীলে যাইব। পিতর উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, যদি সকলে আপনাতে বিঘ্ন পায়, আমি কখনও বিঘ্ন পাইব না। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য কহিতেছি, এই রাত্রিতে কুকুড়া ডাকিবার পূর্ব্বে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করিবে। পিতর তাঁহাকে কহিলেন, যদি আপনার সহিত মরিতেও হয়, কোন মতে আপনাকে অস্বীকার করিব না। সেইরূপ সকল শিষ্যই কহিলেন। তখন যীশু তাঁহাদের সহিত গেৎশিমানী নামক এক স্থানে গেলেন, আর আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, আমি যতক্ষণ ওখানে গিয়া প্রার্থনা করি, ততক্ষণ তোমরা এখানে বসিয়া থাক। পরে তিনি পিতরকে এবং সিবদিয়ের দুই পুত্রকে সঙ্গে লইয়া গেলেন, আর দুঃখার্ত্ত ও ব্যাকুল হইতে লাগিলেন। তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমার প্রাণ মরণ পর্য্যন্ত দুঃখার্ত্ত হইয়াছে; তোমরা এখানে থাক, আমার সঙ্গে জাগিয়া থাক। পরে তিনি কিঞ্চিৎ অগ্রে গিয়া উবুড় হইয়া পড়িয়া প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে আমার পিতঃ, যদি হইতে পারে, তবে এই পানপাত্র আমার নিকট হইতে দূরে যাউক; তথাপি আমার ইচ্ছামত না হউক, তোমার ইচ্ছামত হউক। পরে তিনি সেই শিষ্যদের নিকটে আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, আর তিনি পিতরকে কহিলেন, এ কি? এক ঘন্টাও কি আমার সঙ্গে জাগিয়া থাকিতে তোমাদের শক্তি হইল না? জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়; আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল। পুনশ্চ তিনি দ্বিতীয় বার গিয়া এই প্রার্থনা করিলেন, হে আমার পিতঃ, আমি পান না করিলে যদি ইহা দূরে যাইতে না পারে, তবে তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক। পরে তিনি আবার আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, কেননা তাঁহাদের চক্ষু ভারী হইয়া পড়িয়াছিল। আর তিনি পুনরায় তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া গিয়া তৃতীয় বার পূর্ব্বমত কথা বলিয়া প্রার্থনা করিলেন। তখন তিনি শিষ্যদের কাছে আসিয়া কহিলেন, এখন তোমরা নিদ্রা যাও, বিশ্রাম কর, দেখ, সময় উপস্থিত, মনুষ্যপুত্র পাপীদের হস্তে সমর্পিত হন। উঠ, আমরা যাই; এই দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করিতেছে, সে নিকটে আসিয়াছে। তিনি যখন কথা কহিতেছেন, দেখ, যিহূদা, সেই বারো জনের এক জন, আসিল, এবং তাহার সঙ্গে বিস্তর লোক, খড়গ ও যষ্টি লইয়া প্রধান যাজকদের ও লোকদের প্রাচীনবর্গের নিকট হইতে আসিল। যে তাঁহাকে সমর্পণ করিতেছিল, সে তাহাদিগকে এই সঙ্কেত বলিয়াছিল, আমি যাহাকে চুম্বন করিব, সে ঐ ব্যক্তি, তোমরা তাহাকে ধরিবে। সে তখনই যীশুর নিকট গিয়া বলিল, রব্বি, নমস্কার, আর তাঁহাকে আগ্রহপূর্ব্বক চুম্বন করিল। যীশু তাহাকে কহিলেন, মিত্র, যাহা করিতে আসিয়াছ, কর। তখন তাহারা নিকটে আসিয়া যীশুর উপরে হস্তক্ষেপ করিয়া তাঁহাকে ধরিল। আর দেখ, যীশুর সঙ্গীদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাত বাড়াইয়া খড়গ বাহির করিলেন, এবং মহাযাজকের দাসকে আঘাত করিয়া তাহার একটা কাণ কাটিয়া ফেলিলেন। তখন যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমার খড়গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তাহারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে। আর তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতার কাছে বিনতি করিলে তিনি এখনই আমার জন্য দ্বাদশ বাহিনী অপেক্ষা অধিক দূত পাঠাইয়া দিবেন না? কিন্তু তাহা করিলে কেমন করিয়া শাস্ত্রীয় এই বচন সকল পূর্ণ হইবে যে, এরূপ হওয়া আবশ্যক? সেই সময়ে যীশু লোকসমূহকে কহিলেন, লোকে যেমন দস্যু ধরিতে যায়, তেমনি কি তোমরা খড়গ ও যষ্টি লইয়া আমাকে ধরিতে আসিলে? আমি প্রতিদিন ধর্ম্মধামে বসিয়া উপদেশ দিয়াছি, তখন ত আমাকে ধরিলে না। কিন্তু এ সমস্ত ঘটিল, যেন ভাববাদিগণের লিখিত বচনগুলি পূর্ণ হয়। তখন শিষ্যেরা সকলে তাঁহাকে ছাড়িয়া পলাইয়া গেলেন। আর যাহারা যীশুকে ধরিয়াছিল, তাহারা তাঁহাকে মহাযাজক কায়াফার কাছে লইয়া গেল; সেই স্থানে অধ্যাপকেরা ও প্রাচীনবর্গ সমবেত হইয়াছিল। আর পিতর দূরে থাকিয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ মহাযাজকের প্রাঙ্গণ পর্য্যন্ত গমন করিলেন, এবং শেষে কি হয়, তাহা দেখিবার জন্য ভিতরে গিয়া পদাতিকগণের সঙ্গে বসিলেন। তখন প্রধান যাজকগণ এবং সমস্ত মহাসভা যীশুকে বধ করিবার জন্য তাঁহার বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষ্য অন্বেষণ করিল, কিন্তু অনেক মিথ্যাসাক্ষী আসিয়া যুটিলেও তাহা পাইল না। অবশেষে দুই জন আসিয়া বলিল, এই ব্যক্তি বলিয়াছিল, আমি ঈশ্বরের মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেলিতে, আবার তিন দিনের মধ্যে গাঁথিয়া তুলিতে পারি। তখন মহাযাজক উঠিয়া দাঁড়াইয়া তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কি কিছুই উত্তর দিবে না? তোমার বিরুদ্ধে ইহারা কি সাক্ষ্য দিতেছে? কিন্তু যীশু নীরব রহিলেন। মহাযাজক তাঁহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্য দিতেছি, আমাদিগকে বল দেখি, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র? যীশু উত্তর করিলেন, তুমিই বলিলে; আরও আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, এখন অবধি তোমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া থাকিতে এবং আকাশের মেঘরথে আসিতে দেখিবে । তখন মহাযাজক আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, এ ঈশ্বরনিন্দা করিল, আর সাক্ষীতে আমাদের কি প্রয়োজন? দেখ, এখন তোমরা ঈশ্বর-নিন্দা শুনিলে; তোমাদের কি বিবেচনা হয়? তাহারা উত্তর করিয়া কহিল, এ মরিবার যোগ্য। তখন তাহারা তাঁহার মুখে থুথু দিল ও তাঁহাকে ঘুসি মারিল; আর কেহ কেহ তাঁহাকে প্রহার করিয়া কহিল, রে খ্রীষ্ট, আমাদের কাছে ভাববাণী বল্‌, কে তোকে মারিল? ইতিমধ্যে পিতর বাহিরে প্রাঙ্গণে বসিয়াছিলেন; আর এক জন দাসী তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিল, তুমিও সেই গালীলীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে। কিন্তু তিনি সকলের সাক্ষাতে অস্বীকার করিয়া কহিলেন, তুমি কি বলিতেছ, আমি বুঝিতে পারিলাম না। তিনি ফটকের নিকটে গেলে আর এক দাসী তাঁহাকে দেখিয়া সে স্থানের লোকদিগকে কহিল, এ ব্যক্তি সেই নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল। তিনি আবার অস্বীকার করিলেন, দিব্য করিয়া কহিলেন, আমি সে ব্যক্তিকে চিনি না। আর অল্পক্ষণ পরে, যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহারা আসিয়া পিতরকে কহিল, সত্যই তুমিও তাহাদের এক জন, কেননা তোমার ভাষা তোমার পরিচয় দিতেছে। তখন তিনি অভিশাপপূর্ব্বক শপথ করিয়া বলিতে লাগিলেন, আমি সে ব্যক্তিকে চিনি না। তখনই কুকুড়া ডাকিয়া উঠিল। তাহাতে যীশু এই যে কথা বলিয়াছিলেন, ‘কুকুড়া ডাকিবার পূর্ব্বে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করবে,’ তাহা পিতরের মনে পড়িল; এবং তিনি বাহিরে গিয়া অত্যন্ত রোদন করিলেন। প্রভাত হইলে প্রধান যাজকেরা ও লোকদের প্রাচীনবর্গ সকলে যীশুকে বধ করিবার নিমিত্ত তাঁহার বিপক্ষে মন্ত্রণা করিল; আর তাঁহাকে বাঁধিয়া লইয়া গিয়া দেশাধ্যক্ষ পীলাতের নিকটে সমর্পণ করিল। তখন যিহূদা, যে তাঁহাকে সমর্পণ করিয়াছিল, সে যখন বুঝিতে পারিল যে, তাঁহার দণ্ডাজ্ঞা হইয়াছে, তখন অনুশোচনা করিয়া সেই ত্রিশ রৌপ্যমুদ্রা প্রধান যাজক ও প্রাচীনবর্গের নিকটে ফিরাইয়া দিল, আর কহিল, নির্দ্দোষ রক্ত সমর্পণ করিয়া আমি পাপ করিয়াছি। তাহারা বলিল, আমাদের কি? তুমি তাহা বুঝিবে। তখন সে ঐ মুদ্রা সকল মন্দিরের মধ্যে ফেলিয়া দিয়া চলিয়া গেল, গিয়া গলায় দড়ি দিয়া মরিল। পরে প্রধান যাজকেরা সেই সকল মুদ্রা লইয়া কহিল, ইহা ভাণ্ডারে রাখা বিধেয় নয়, কারণ ইহা রক্তের মূল্য। পরে তাহারা মন্ত্রণা করিয়া বিদেশীদের কবর দিবার জন্য ঐ টাকায় কুম্ভকারের ক্ষেত্র ক্রয় করিল। এই জন্য অদ্য পর্য্যন্ত সেই ক্ষেত্রকে রক্তক্ষেত্র বলে। তখন যিরমিয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হইল, “আর তাহারা সেই ত্রিশ রৌপ্যমুদ্রা লইল; তাহা তাঁহার মূল্য, যাঁহার মূল্য নিরূপিত হইয়াছিল, ইস্রায়েল-সন্তানদের কতক লোক যাঁহার মূল্য নিরূপণ করিয়াছিল; তাহারা সেগুলি লইয়া কুম্ভকারের ক্ষেত্রের জন্য দিল, যেমন প্রভু আমার প্রতি আদেশ করিয়াছিলেন।” ইতিমধ্যে যীশুকে দেশাধ্যক্ষের সম্মুখে দাঁড় করান হইল। দেশাধ্যক্ষ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি যিহূদীদের রাজা? যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তুমিই বলিলে। আর যখন প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনবর্গ তাঁহার উপরে দোষারোপ করিতেছিল, তিনি কিছুই উত্তর করিলেন না। তখন পীলাত তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কি শুনিতেছ না, উহারা তোমার বিপক্ষে কত বিষয় সাক্ষ্য দিতেছে? তিনি তাঁহাকে এক কথারও উত্তর দিলেন না; ইহাতে দেশাধ্যক্ষ অতিশয় আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন। আর দেশাধ্যক্ষের এই রীতি ছিল, পর্ব্বের সময়ে তিনি জনসমূহের জন্য এমন এক জন বন্দিকে মুক্ত করিতেন, যাহাকে তাহারা চাহিত। সেই সময়ে তাহাদের এক জন প্রসিদ্ধ বন্দি ছিল, তাহার নাম বারাব্বা। অতএব তাহারা একত্র হইলে পীলাত তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের ইচ্ছা কি, আমি তোমাদের জন্য কাহাকে মুক্ত করিব? বারাব্বাকে, না যীশুকে, যাহাকে খ্রীষ্ট বলে? কারণ তিনি জানিতেন, তাহারা হিংসা বশতঃ তাঁহাকে সমর্পণ করিয়াছিল। তিনি বিচারাসনে বসিয়া আছেন, এমন সময়ে তাঁহার স্ত্রী তাঁহাকে বলিয়া পাঠাইলেন, সেই ধার্ম্মিকের প্রতি তুমি কিছুই করিও না; কারণ আমি আজ স্বপ্নে তাঁহার জন্য অনেক দুঃখ পাইয়াছি। আর প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনবর্গ লোকসমূহকে প্রবৃত্তি দিল, যেন তাহারা বারাব্বাকে চাহিয়া লয় ও যীশুকে সংহার করে। তখন দেশাধ্যক্ষ তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের ইচ্ছা কি? সেই দুই জনের মধ্যে কাহাকে ছাড়িয়া দিব? তাহারা কহিল, বারাব্বাকে। পীলাত তাহাদিগকে বলিলেন, তবে যীশু, যাহাকে খ্রীষ্ট বলে, তাহাকে কি করিব? তাহারা সকলে কহিল, উহাকে ক্রুশে দেওয়া হউক। তিনি কহিলেন, কেন? সে কি অপরাধ করিয়াছে? কিন্তু তাহারা আরও চেঁচাইয়া বলিল, উহাকে ক্রুশে দেওয়া হউক। পীলাত যখন দেখিলেন, তাঁহার চেষ্টা বিফল, বরং আরও গোলযোগ হইতেছে, তখন জল লইয়া লোকদের সাক্ষাতে হাত ধুইয়া কহিলেন, এই ধার্ম্মিক ব্যক্তির রক্তপাতের সম্বন্ধে আমি নির্দ্দোষ, তোমরাই তাহা বুঝিবে। তাহাতে সমস্ত লোক উত্তর করিল, উহার রক্ত আমাদের উপরে ও আমাদের সন্তানদের উপরে বর্ত্তুক। তখন তিনি তাহাদের জন্য বারাব্বাকে ছাড়িয়া দিলেন, এবং যীশুকে কোড়া মারিয়া ক্রুশে দিবার জন্য সমর্পণ করিলেন। তখন দেশাধ্যক্ষের সেনাগণ যীশুকে রাজবাটীতে লইয়া গিয়া তাঁহার নিকটে সমুদয় সেনাদল একত্র করিল। আর তাহারা তাঁহার বস্ত্র খুলিয়া লইয়া তাঁহাকে একখান লোহিত বস্ত্র পরিধান করাইল। আর কাঁটার মুকুট গাঁথিয়া তাঁহার মস্তকে দিল, ও তাঁহার দক্ষিণ হস্তে এক গাছ নল দিল; পরে তাঁহার সম্মুখে জানু পাতিয়া, তাঁহাকে বিদ্রূপ করিয়া বলিল, ‘যিহূদি-রাজ, নমস্কার!’ আর তাহারা তাঁহার গাত্রে থুথু দিল, ও সেই নল লইয়া তাঁহার মস্তকে আঘাত করিতে লাগিল। আর তাঁহাকে বিদ্রূপ করিবার পর বস্ত্রখানি খুলিয়া ফেলিয়া তাহারা আবার তাঁহার নিজের বস্ত্র পরাইয়া দিল, এবং তাঁহাকে ক্রুশে দিবার জন্য লইয়া চলিল। আর বাহির হইয়া তাহারা শিমোন নামে এক জন কুরীণীয় লোকের দেখা পাইল; তাহাকেই তাঁহার ক্রুশ বহন করিবার জন্য বেগার ধরিল। পরে গল্‌গথা নামক স্থানে, অর্থাৎ যাহাকে মাথার খুলির স্থান বলে, সেখানে উপস্থিত হইয়া তাহারা তাঁহাকে পিত্তমিশ্রিত দ্রাক্ষারস পান করিতে দিল; তিনি তাহা আস্বাদন করিয়া পান করিতে চাহিলেন না। পরে তাহারা তাঁহাকে ক্রুশে দিয়া তাঁহার বস্ত্র সকল গুলিবাঁটপূর্ব্বক অংশ করিয়া লইল; এবং সেখানে বসিয়া তাঁহাকে চৌকী দিতে লাগিল। আর উহারা তাঁহার মস্তকের উপরে তাঁহার বিরুদ্ধে এই দোষের কথা লিখিয়া লাগাইয়া দিল, ‘এ ব্যক্তি যীশু, যিহূদীদের রাজা’। তখন দুই জন দস্যু তাঁহার সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ হইল, এক জন দক্ষিণ পার্শ্বে, আর এক জন বাম পার্শ্বে। তখন যে সকল লোক সেই পথ দিয়া যাতায়াত করিতেছিল, তাহারা মাথা নাড়িতে নাড়িতে তাঁহার নিন্দা করিয়া কহিল, ওহে, তুমি না মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেল, আর তিন দিনের মধ্যে গাঁথিয়া তুল! আপনাকে রক্ষা কর; যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, ক্রুশ হইতে নামিয়া আইস। আর সেইরূপ প্রধান যাজকেরা অধ্যাপকগণের ও প্রাচীনবর্গের সহিত বিদ্রূপ করিয়া কহিল, ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করিত, আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না; ও ত ইস্রায়েলের রাজা! এখন ক্রুশ হইতে নামিয়া আইসুক; তাহা হইলে আমরা উহার উপরে বিশ্বাস করিব; ও ঈশ্বরে ভরসা রাখে, এখন তিনি নিস্তার করুন, যদি উহাকে চান; কেননা ও বলিয়াছে, আমি ঈশ্বরের পুত্র। আর যে দুই জন দস্যু তাঁহার সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ হইয়াছিল, তাহারাও সেইরূপে তাঁহাকে তিরস্কার করিল। পরে বেলা ছয় ঘটিকা হইতে নয় ঘটিকা পর্য্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল। আর নয় ঘটিকার সময় যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া ডাকিয়া কহিলেন, “এলী এলী লামা শবক্তানী,” অর্থাৎ “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?” তাহাতে যাহারা সেখানে দাঁড়াইয়াছিল, তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ সেই কথা শুনিয়া কহিল, এ ব্যক্তি এলিয়কে ডাকিতেছে। আর তাহাদের এক জন অমনি দৌড়িয়া গেল, একখান স্পঞ্জ লইয়া তাহাতে সিরকা ভরিল, এবং একটা নলে লাগাইয়া তাঁহাকে পান করিতে দিল। কিন্তু অন্য সকলে কহিল থাক্‌, দেখি, এলিয় উহাকে রক্ষা করিতে আইসেন কি না। পরে যীশু আবার উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া নিজ আত্মাকে সমর্পণ করিলেন। আর দেখ, মন্দিরের তিরস্করিণী উপর হইতে নীচ পর্য্যন্ত চিরিয়া দুইখান হইল, ভূমিকম্প হইল, ও শৈল সকল বিদীর্ণ হইল, এবং কবর সকল খুলিয়া গেল, আর অনেক নিদ্রাগত পবিত্র লোকের দেহ উত্থাপিত হইল; এবং তাঁহার পুনরুত্থানের পর তাঁহারা কবর হইতে বাহির হইয়া পবিত্র নগরে প্রবেশ করিলেন, আর অনেক লোককে দেখা দিলেন। শতপতি এবং যাহারা তাঁহার সঙ্গে যীশুকে চৌকি দিতেছিল, তাহারা ভূমিকম্প ও আর যাহা যাহা ঘটিতেছিল, দেখিয়া অতিশয় ভয় পাইয়া কহিল, সত্যই, ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন। আর সেখানে অনেক স্ত্রীলোক ছিলেন, দূর হইতে দেখিতেছিলেন; তাঁহারা যীশুর পরিচর্য্যা করিতে করিতে গালীল হইতে তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিয়াছিলেন। তাঁহাদের মধ্যে মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোবের ও যোষির মাতা মরিয়ম, এবং সিবদিয়ের পুত্রদের মাতা ছিলেন। পরে সন্ধ্যা হইলে অরিমাথিয়ার এক জন ধনবান্‌ লোক আসিলেন, তাঁহার নাম যোষেফ, তিনি নিজেও যীশুর শিষ্য হইয়াছিলেন। তিনি পীলাতের নিকটে গিয়া যীশুর দেহ যাচ্ঞা করিলেন। তখন পীলাত তাহা দিতে আজ্ঞা করিলেন। তাহাতে যোষেফ দেহটী লইয়া পরিষ্কার চাদরে জড়াইলেন, এবং আপনার নূতন কবরে রাখিলেন—যাহা তিনি শৈলে খুদিয়াছিলেন—আর কবরের দ্বারে একখান বড় পাথর গড়াইয়া দিয়া চলিয়া গেলেন। মগ্দলীনী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম সেখানে ছিলেন, তাঁহারা কবরের সম্মুখে বসিয়া রহিলেন। পরদিন, অর্থাৎ আয়োজন-দিনের পরদিবস, প্রধান যাজকেরা ও ফরীশীরা পীলাতের নিকটে একত্র হইয়া কহিল, মহাশয়, আমাদের মনে পড়িতেছে, সেই প্রবঞ্চক জীবিত থাকিতে বলিয়াছিল, তিন দিনের পরে আমি উঠিব। অতএব তৃতীয় দিবস পর্য্যন্ত তাহার কবর চৌকি দিতে আজ্ঞা করুন; পাছে তাহার শিষ্যেরা আসিয়া তাহাকে চুরি করিয়া লইয়া যায়, আর লোকদিগকে বলে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন; তাহা হইলে প্রথম ভ্রান্তি অপেক্ষা শেষ ভ্রান্তি আরও মন্দ হইবে। পীলাত তাহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের নিকটে প্রহরি-দল আছে; তোমরা গিয়া যথাসাধ্য রক্ষা কর। তাহাতে তাহারা গিয়া প্রহরি-দলের সহিত সেই পাথরে মুদ্রাঙ্ক দিয়া কবর রক্ষা করিতে লাগিল। বিশ্রামদিন অবসান হইলে, সপ্তাহের প্রথম দিনের ঊষারম্ভে, মগ্দলীনী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম কবর দেখিতে আসিলেন। আর দেখ, মহা-ভূমিকম্প হইল; কেননা প্রভুর এক দূত স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়া সেই পাথরখানা সরাইয়া দিলেন, এবং তাহার উপরে বসিলেন। তাঁহার দৃশ্য বিদ্যুতের ন্যায়, এবং তাঁহার বস্ত্র হিমের ন্যায় শুভ্রবর্ণ। তাঁহার ভয়ে প্রহরিগণ কাঁপিতে লাগিল, ও মৃতবৎ হইয়া পড়িল। সেই দূত স্ত্রীলোক কয়টীকে কহিলেন, তোমরা ভয় করিও না, কেননা আমি জানি যে, তোমরা ক্রুশে হত যীশুর অন্বেষণ করিতেছ। তিনি এখানে নাই; কেননা তিনি উঠিয়াছেন, যেমন বলিয়াছিলেন; আইস, প্রভু যেখানে শুইয়াছিলেন, সেই স্থান দেখ। আর শীঘ্র গিয়া তাঁহার শিষ্যদিগকে বল যে, তিনি মৃতদের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন, এবং দেখ, তোমাদের অগ্রে গালীলে যাইতেছেন, সেইখানে তাঁহাকে দেখিতে পাইবে; দেখ, আমি তোমাদিগকে বলিলাম। তখন তাঁহারা সভয়ে ও মহানন্দে শীঘ্র কবর হইতে প্রস্থান করিয়া তাঁহার শিষ্যদিগকে সংবাদ দিবার জন্য দৌড়িয়া গেলেন। আর দেখ, যীশু তাঁহাদের সম্মুখবর্ত্তী হইলেন, কহিলেন, তোমাদের মঙ্গল হউক; তখন তাঁহারা নিকটে আসিয়া তাঁহার চরণ ধরিলেন ও তাঁহাকে প্রণাম করিলেন। তখন যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না; তোমরা যাও, আমার ভ্রাতৃগণকে সংবাদ দেও, যেন তাহারা গালীলে যায়; সেইখানে তাহারা আমাকে দেখিতে পাইবে। তাঁহারা যাইতেছেন, ইতিমধ্যে দেখ, প্রহরি-দলের কেহ কেহ নগরে গিয়া যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, সে সমস্ত বিবরণ প্রধান যাজকদিগকে জানাইল। তখন তাহারা প্রাচীনবর্গের সহিত একত্র হইয়া ও মন্ত্রণা করিয়া ঐ সেনাগণকে অনেক টাকা দিল, কহিল, তোমরা বলিও যে, তাহার শিষ্যগণ রাত্রিকালে আসিয়া, যখন আমরা নিদ্রাগত ছিলাম, তখন তাহাকে চুরি করিয়া লইয়া গিয়াছে। আর যদি এ কথা দেশাধ্যক্ষের কর্ণগোচর হয়, তবে আমরাই তাঁহাকে বুঝাইয়া তোমাদের ভাবনা দূর করিব। তখন তাহারা সেই টাকা লইয়া, যেরূপ শিক্ষা পাইল, সেইরূপ কার্য্য করিল। আর যিহূদীদের মধ্যে সেই জনরব রটিয়া গেল, তাহা অদ্য পর্য্যন্ত রহিয়াছে। পরে একাদশ শিষ্য গালীলে যীশুর নিরূপিত পর্ব্বতে গমন করিলেন, আর তাঁহাকে দেখিয়া প্রণাম করিলেন; কিন্তু কেহ কেহ সন্দেহ করিলেন। তখন যীশু নিকটে আসিয়া তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন, বলিলেন, স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব আমাকে দত্ত হইয়াছে। অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি। যীশু খ্রীষ্টের সুসমাচারের‍ আরম্ভ; তিনি ঈশ্বরের পুত্র। যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থে যেমন লেখা আছে “দেখ, আমি আপন দূতকে তোমার অগ্রে প্রেরণ করি; সে তোমার পথ প্রস্তুত করিবে। প্রান্তরে এক জনের রব, সে ঘোষণা করিতেছে, তোমরা প্রভুর পথ প্রস্তুত কর, তাঁহার রাজপথ সকল সরল কর;” তদনুসারে যোহন উপস্থিত হইলেন, ও প্রান্তরে বাপ্তাইজ করিতে লাগিলেন, এবং পাপমোচনের জন্য মনপরিবর্ত্তনের বাপ্তিস্ম প্রচার করিতে লাগিলেন। তাহাতে সমস্ত যিহূদিয়া দেশ ও যিরূশালেম-নিবাসী সকলে বাহির হইয়া তাঁহার নিকটে যাইতে লাগিল; আর আপন আপন পাপ স্বীকার করিয়া যর্দ্দন নদীতে তাঁহা দ্বারা বাপ্তাইজিত হইতে লাগিল। সেই যোহন উটের লোমের কাপড় পরিতেন, তাঁহার কটিদেশে চর্ম্মপটুকা ছিল, এবং তিনি পঙ্গপাল ও বনমধু ভোজন করিতেন। তিনি প্রচার করিয়া বলিতেন, যিনি আমা অপেক্ষা শক্তিমান, তিনি আমার পশ্চাৎ আসিতেছেন; আমি হেঁট হইয়া তাঁহার পাদুকার বন্ধন খুলিবার যোগ্য নই। আমি তোমাদিগকে জলে বাপ্তাইজ করিলাম, কিন্তু তিনি তোমাদিগকে পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজ করিবেন। সেই সময়ে যীশু গালীলের নাসরৎ হইতে আসিয়া যোহনের দ্বারা যর্দ্দনে বাপ্তাইজিত হইলেন। আর তৎক্ষণাৎ জলের মধ্য হইতে উঠিবার সময়ে দেখিলেন, আকাশ দুইভাগ হইল, এবং আত্মা কপোতের ন্যায় তাঁহার উপরে নামিয়া আসিতেছেন। আর স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমাতেই আমি প্রীত’। আর তৎক্ষণাৎ আত্মা তাঁহাকে প্রান্তরে পাঠাইয়া দিলেন, সেই প্রান্তরে তিনি চল্লিশ দিন থাকিয়া শয়তানের দ্বারা পরীক্ষিত হইলেন; আর তিনি বন্য পশুদের সঙ্গে রহিলেন, এবং স্বর্গীয় দূতগণ তাঁহার পরিচর্য্যা করিতেন। আর যোহন কারাগারে সমর্পিত হইলে পর যীশু গালীলে আসিয়া ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করিয়া বলিতে লাগিলেন, ‘কাল সম্পূর্ণ হইল, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট হইল; তোমরা মন ফিরাও, ও সুসমাচারে বিশ্বাস কর।’ পরে গালীল-সমুদ্রের তীর দিয়া যাইতে যাইতে তিনি দেখিলেন, শিমোন ও তাঁহার ভ্রাতা আন্দ্রিয় সমুদ্রে জাল ফেলিতেছেন, কেননা তাঁহারা মৎস্যধারী ছিলেন। যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস, আমি তোমাদিগকে মনুষ্যধারী করিব। আর তৎক্ষণাৎ তাঁহারা জাল পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন। পরে তিনি কিঞ্চিৎ অগ্রে গিয়া সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও তাঁহার ভ্রাতা যোহনকে দেখিলেন; তাঁহারাও নৌকাতে ছিলেন, জাল সারিতেছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁহাদিগকে ডাকিলেন, তাহাতে তাঁহারা আপনাদের পিতা সিবদিয়কে বেতনজীবীদের সঙ্গে নৌকায় পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন। পরে তাঁহারা কফরনাহূমে প্রবেশ করিলেন, আর তৎক্ষণাৎ তিনি বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে গিয়া উপদেশ দিতে লাগিলেন। তাহাতে লোকে তাঁহার উপদেশে চমৎকৃত হইল, কারণ তিনি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির ন্যায় তাহাদিগকে উপদেশ দিতেন, অধ্যাপকদের ন্যায় নয়। তখন তাহাদের সমাজ-গৃহে এক ব্যক্তি ছিল, তাহাকে অশুচি আত্মায় পাইয়াছিল; সে চেঁচাইয়া কইিল, হে নাসরতীয় যীশু, আপনার সহিত আমাদের সম্পর্ক কি? আপনি কি আমাদিগকে বিনাশ করিতে আসিলেন? আমি জানি, আপনি কে; ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি। তখন যীশু তাহাকে ধমক্‌ দিলেন, চুপ কর, উহা হইতে বাহির হও। তাহাতে সেই অশুচি আত্মা তাহাকে মুচড়াইয়া ধরিয়া উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করিয়া তাহার মধ্য হইতে বাহির হইয়া গেল। ইহাতে সকলে চমৎকৃত হইল, এমন কি, তাহারা পরস্পর বিতর্ক করিয়া কহিল, আ! এ কি? কেমন নূতন উপদেশ! উনি ক্ষমতা সহকারে অশুচি আত্মাদিগকেও আজ্ঞা করেন, আর তাহারা উহাঁর আজ্ঞা মানে। তখন তাঁহার বার্ত্তা তৎক্ষণাৎ সমুদয় গালীল প্রদেশের চারিদিকে ব্যাপিল। পরে সমাজ-গৃহ হইতে বাহির হইয়া তৎক্ষণাৎ তাঁহারা যাকোব ও যোহনের সহিত শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাটীতে প্রবেশ করিলেন। তখন শিমোনের শ্বাশুড়ী জ্বর হইয়া পড়িয়া ছিলেন; আর তাঁহারা তৎক্ষণাৎ তাঁহার কথা তাঁহাকে বলিলেন; তাহাতে তিনি নিকটে গিয়া তাঁহার হস্ত ধরিয়া তাঁহাকে উঠাইলেন। তখন তাঁহার জ্বর ছাড়িয়া গেল, আর তিনি তাঁহাদের পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন। পরে সন্ধ্যাকালে, সূর্য্য অস্ত গেলে লোকেরা সমস্ত পীড়িত লোককে এবং ভূতগ্রস্তদিগকে তাঁহার নিকটে আনিল। আর নগরের সকল লোক দ্বারে একত্র হইল। তাহাতে তিনি নানা প্রকার রোগে পীড়িত অনেক লোককে সুস্থ করিলেন, এবং অনেক ভূত ছাড়াইলেন, আর তিনি ভূতদিগকে কথা কহিতে দিলেন না, কারণ তাহারা তাঁহাকে চিনিত। পরে অতি প্রত্যূষে, রাত্রি পোহাইবার অনেকক্ষণ পূর্ব্বে, তিনি উঠিয়া বাহিরে গেলেন, এবং নির্জ্জন স্থানে গিয়া তথায় প্রার্থনা করিলেন। আর শিমোন ও তাঁহার সঙ্গীরা তাঁহার পশ্চাৎ গেলেন, এবং তাঁহাকে পাইয়া কহিলেন, সমস্ত লোক আপনার অন্বেষণ করিতেছে। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, চল, আমরা অন্য অন্য স্থানে, নিকটবর্ত্তী সকল গ্রামে যাই, আমি সে সকল স্থানেও প্রচার করিব, কেননা সেই জন্যই বাহির হইয়াছি। পরে তিনি সমস্ত গালীল দেশে লোকদের সমাজ-গৃহে গিয়া প্রচার করিতে ও ভূত ছাড়াইতে লাগিলেন। একদা এক জন কুষ্ঠী আসিয়া তাঁহার সম্মুখে বিনতি করিয়া ও জানু পাতিয়া কহিল, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুচি করিতে পারেন। তিনি করুণাবিষ্ট হইয়া হাত বাড়াইয়া তাহাকে স্পর্শ করিলেন, কহিলেন, আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও। তৎক্ষণাৎ কুষ্ঠরোগ তাহাকে ছাড়িয়া গেল, সে শুচিকৃত হইল। তখন তিনি তাহাকে দৃঢ় আজ্ঞা দিয়া বিদায় করিলেন, বলিলেন, দেখিও, কাহাকেও কিছু বলিও না; কিন্তু যাজকের নিকটে গিয়া আপনাকে দেখাও, এবং লোকদের কাছে সাক্ষ্য দিবার ও তোমার শুচীকরণ জন্য মোশির নিরূপিত উপহার উৎসর্গ কর। কিন্তু সে বাহিরে গিয়া সেই কথা এমন অধিক প্রচার করিতে ও চারিদিকে বলিতে লাগিল যে, যীশু আর প্রকাশ্যরূপে কোন নগরে প্রবেশ করিতে পারিলেন না, কিন্তু বাহিরে নির্জ্জন স্থানে থাকিলেন; আর লোকেরা সকল দিক্‌ হইতে তাঁহার নিকটে আসিতে লাগিল। কয়েক দিবস পরে তিনি আবার কফরনাহূমে চলিয়া আসিলে শুনা গেল যে, তিনি ঘরে আছেন। আর এত লোক তাঁহার নিকটে একত্র হইল যে, দ্বারের কাছেও আর স্থান রহিল না। আর তিনি তাহাদের কাছে বাক্য প্রচার করিতে লাগিলেন। তখন লোকেরা চারি জন লোক দিয়া এক জন পক্ষাঘাতীকে বহন করাইয়া তাঁহার কাছে আনিতেছিল। কিন্তু ভিড় প্রযুক্ত তাঁহার নিকটে আসিতে না পারাতে, তিনি যেখানে ছিলেন, সেই স্থানের ছাদ খুলিয়া ফেলিল, আর ছিদ্র করিয়া, যে খাটে পক্ষাঘাতী শুইয়াছিল, তাহা নামাইয়া দিল। তাহাদের বিশ্বাস দেখিয়া যীশু সেই পক্ষাঘাতীকে কহিলেন, বৎস, তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইল। কিন্তু সেখানে কয়েক জন অধ্যাপক বসিয়াছিল; তাহারা মনে মনে এইরূপ তর্ক করিতে লাগিল, এ ব্যক্তি এমন কথা কেন বলিতেছে? এ যে ঈশ্বর-নিন্দা করিতেছে; সেই এক জন, অর্থাৎ ঈশ্বর, ব্যতিরেকে আর কে পাপ ক্ষমা করিতে পারে? তাহারা মনে মনে এইরূপ তর্ক করিতেছে, ইহা যীশু তৎক্ষণাৎ আপন আত্মাতে বুঝিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা মনে মনে এমন তর্ক কেন করিতেছ? কোন্‌টা সহজ, পক্ষাঘাতীকে ‘তোমার পাপ ক্ষমা হইল’ বলা, না ‘উঠ, তোমার শয্যা তুলিয়া বেড়াও’ বলা? কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিতে মনুষ্যপুত্রের ক্ষমতা আছে, ইহা যেন তোমরা জানিতে পার, এই জন্য—তিনি সেই পক্ষাঘাতীকে বলিলেন —তোমাকে বলিতেছি, উঠ, তোমার খাট তুলিয়া লইয়া তোমার ঘরে যাও। তাহাতে সে উঠিল, ও তৎক্ষণাৎ খাট তুলিয়া লইয়া সকলের সাক্ষাতে বাহিরে চলিয়া গেল; ইহাতে সকলে অতিশয় আশ্চর্য্যান্বিত হইল, আর এই বলিয়া ঈশ্বরের গৌরব করিতে লাগিল যে, এমন কখনও দেখি নাই। পরে তিনি আবার বাহির হইয়া সমুদ্র-তীরে গমন করিলেন, এবং সমস্ত লোক তাঁহার নিকটে আসিল, আর তিনি তাহাদিগকে উপদেশ দিলেন। পরে তিনি যাইতে যাইতে দেখিলেন, আল্‌ফেয়ের পুত্র লেবি করগ্রহণ-স্থানে বসিয়া আছেন; তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস; তাহাতে তিনি উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন। পরে তিনি তাঁহার গৃহমধ্যে ভোজন করিতে বসিলেন, আর অনেক করগ্রাহী ও পাপী যীশুর ও তাঁহার শিষ্যগণের সহিত বসিল; কারণ অনেকে উপস্থিত ছিল, আর তাহারা তাঁহার পশ্চাৎ চলিতেছিল। কিন্তু তিনি পাপী ও করগ্রাহীদের সঙ্গে ভোজন করিতেছেন দেখিয়া ফরীশীদের অধ্যাপকেরা তাঁহার শিষ্যদিগকে কহিল, উনি করগ্রাহী ও পাপীদের সঙ্গে ভোজন পান করেন। যীশু তাহা শুনিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, কিন্তু পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে; আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকেই ডাকিতে আসিয়াছি। আর যোহনের শিষ্যেরা ও ফরীশীরা উপবাস করিতেছিল। আর তাহারা যীশুর নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, যোহনের শিষ্যেরা ও ফরীশীদের শিষ্যেরা উপবাস করে, কিন্তু আপনার শিষ্যেরা উপবাস করে না, ইহার কারণ কি? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, বর সঙ্গে থাকিতে কি বাসরঘরের লোকে উপবাস করিতে পারে? যাবৎ তাহাদের সঙ্গে বর থাকেন, তাবৎ তাহারা উপবাস করিতে পারে না। কিন্তু এমন সময় আসিবে, যখন তাহাদের নিকট হইতে বর নীত হইবেন; সেই দিন তাহারা উপবাস করিবে। পুরাতন কাপড়ে কেহ কোরা কাপড়ের তালী দেয় না; দিলে সেই নূতন তালীতে ঐ পুরাতন কাপড় ছিঁড়িয়া যায়, এবং আরও মন্দ ছিদ্র হয়। আর পুরাতন কুপায় কেহ টাট্‌কা দ্রাক্ষারস রাখে না, রাখিলে দ্রাক্ষারসে কুপাগুলি ফাটিয়া যায়; তাহাতে দ্রাক্ষারস নষ্ট হয়, কুপাগুলিও নষ্ট হয়; কিন্তু টাট্‌কা দ্রাক্ষারস নূতন কুপাতে রাখিতে হইবে। আর তিনি বিশ্রামবারে শস্যক্ষেত্র দিয়া যাইতেছিলেন; এবং তাঁহার শিষ্যেরা চলিতে চলিতে শীষ ছিঁড়িতে লাগিলেন। ইহাতে ফরীশীরা তাঁহাকে কহিল, দেখ, যাহা বিধেয় নয়, তাহা উহারা বিশ্রামবারে কেন করিতেছে? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গীরা খাদ্যের অভাবে ক্ষুধিত হইলে তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা কখনও পাঠ কর নাই? তিনি ত অবিয়াথর মহাযাজকের সময়ে ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করিয়া, যে দর্শনরুটী যাজকবর্গ ব্যতিরেকে আর কাহারও ভোজন করা বিধেয় নয়, তাহাই ভোজন করিয়াছিলেন, এবং সঙ্গিগণকেও দিয়াছিলেন। তিনি তাহাদিগকে আরও কহিলেন, বিশ্রামবার মনুষ্যের নিমিত্তই হইয়াছে, মনুষ্য বিশ্রামবারের নিমিত্ত হয় নাই; সুতরাং মনুষ্যপুত্র বিশ্রামবারেরও কর্ত্তা। আর তিনি আবার সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিলেন; সেখানে একটী লোক ছিল, তাহার একখানি হাত শুকাইয়া গিয়াছিল। তখন লোকেরা, তিনি বিশ্রামবারে তাহাকে সুস্থ করেন কি না, দেখিবার জন্য তাঁহার প্রতি দৃষ্টি রাখিল; যেন তাঁহার নামে দোষারোপ করিতে পারে। তখন তিনি সেই শুষ্কহস্ত লোকটীকে কহিলেন, মাঝখানে আসিয়া দাঁড়াও। পরে তাহাদিগকে কহিলেন, বিশ্রামবারে কি করা বিধেয়? ভাল করা না মন্দ করা? প্রাণরক্ষা করা না বধ করা? কিন্তু তাহারা চুপ করিয়া রহিল। তখন তিনি তাহাদের অন্তঃকরণের কাঠিন্যে দুঃখিত হইয়া সক্রোধে চারিদিকে তাহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া সেই লোকটীকে কহিলেন, তোমার হাত বাড়াইয়া দেও; সে তাহা বাড়াইয়া দিল, আর তাহার হাত আগে যেমন ছিল, তেমনি হইল। পরে ফরীশীরা বাহির হইয়া তৎক্ষণাৎ হেরোদীয়দের সহিত তাঁহার বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করিতে লাগিল, কি প্রকারে তাঁহাকে বিনষ্ট করিতে পারে। পরে যীশু আপন শিষ্যদের সহিত সমুদ্রের নিকটে প্রস্থান করিলেন; তাহাতে গালীল হইতে বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গেল। আর যিহূদিয়া, যিরূশালেম, ইদোম, যর্দ্দন নদীর পরপারস্থ দেশ এবং সোর ও সীদোনের চারিদিক্‌ হইতে অনেক লোক, তিনি যে সমস্ত মহৎ মহৎ কার্য্য করিতেছিলেন, তাহা শুনিয়া তাঁহার নিকটে আসিল। তখন তিনি আপন শিষ্যদিগকে বলিলেন, ভিড় প্রযুক্ত যেন একখানি নৌকা তাঁহার জন্য প্রস্তুত থাকে, পাছে লোকে তাঁহার উপরে চাপাচাপি করিয়া পড়ে। কেননা তিনি অনেক লোককে সুস্থ করিলেন, সেই জন্য ব্যাধিগ্রস্ত সকলে তাঁহাকে স্পর্শ করিবার চেষ্টায় তাঁহার গায়ের উপরে পড়িতেছিল। আর অশুচি আত্মারা তাঁহাকে দেখিলেই তাঁহার সম্মুখে পড়িয়া চেঁচাইয়া বলিত, আপনি ঈশ্বরের পুত্র; কিন্তু তিনি তাহাদিগকে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়া দিতেন, যেন তাহারা তাঁহার পরিচয় না দেয়। পরে তিনি পর্ব্বতে উঠিয়া, আপনি যাঁহাদিগকে ইচ্ছা করিলেন, নিকটে ডাকিলেন; তাহাতে তাঁহারা তাঁহার কাছে আসিলেন। আর তিনি বারো জনকে নিযুক্ত করিলেন, যেন তাঁহারা তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে থাকেন, ও যেন তিনি তাঁহাদিগকে প্রচার করিবার জন্য প্রেরণ করেন, এবং যেন তাঁহারা ভূত ছাড়াইবার ক্ষমতা প্রাপ্ত হন। আর তিনি শিমোনকে পিতর, এই নাম দিলেন, এবং সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও সেই যাকোবের ভ্রাতা যোহন, এই দুই জনকে বোনেরগশ, অর্থাৎ মেঘধ্বনির পুত্র, এই উপনাম দিলেন। আর আন্দ্রিয়, ফিলিপ, বর্থলময়, মথি, থোমা, আল্‌ফেয়ের পুত্র যাকোব, থদ্দেয়, ও উদ্যোগী শিমোন, এবং যে তাঁহাকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিল, সেই ইষ্করিয়োতীয় যিহূদা। পরে তিনি গৃহে আসিলেন, আর পুনর্ব্বার এত লোকের সমাগম হইল যে, তাঁহারা আহার করিতেও পারিলেন না। ইহা শুনিয়া তাঁহার আত্মীয়েরা তাঁহাকে ধরিয়া লইতে বাহির হইল, কেননা তাহারা বলিল, সে হতজ্ঞান হইয়াছে। আর যে অধ্যাপকেরা যিরূশালেম হইতে আসিয়াছিল, তাহারা কহিল, ইহাকে বেল্‌সবূবে পাইয়াছে, ভূতগণের অধিপতি দ্বারা এ ভূত ছাড়ায়। তখন তিনি তাহাদিগকে নিকটে ডাকিয়া দৃষ্টান্ত দিয়া কহিলেন, শয়তান কি প্রকারে শয়তানকে ছাড়াইতে পারে? কোন রাজ্য যদি আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তবে সেই রাজ্য স্থির থাকিতে পারে না। আর কোন পরিবার যদি আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হইয়া পড়ে, তবে সেই পরিবার স্থির থাকিতে পারিবে না। আর শয়তান যদি আপনার বিপক্ষে উঠে, ও ভিন্ন হয়, তবে সেও স্থির থাকিতে পারে না, কিন্তু তাহার শেষ হয়। আর অগ্রে সেই বলবান্‌ ব্যক্তিকে না বাঁধিলে কেহ তাহার ঘরে প্রবেশ করিয়া তাহার দ্রব্য লুট করিতে পারে না; কিন্তু বাঁধিলে পর সে তাহার ঘর লুট করিবে। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, মনুষ্য-সন্তানেরা যে সমস্ত পাপকার্য্য ও ঈশ্বরনিন্দা করে, সেই সকলের ক্ষমা হইবে। কিন্তু যে ব্যক্তি পবিত্র আত্মার নিন্দা করে, অনন্তকালেও তাহার ক্ষমা নাই, সে বরং অনন্ত পাপের দায়ী। উহাকে অশুচি আত্মায় পাইয়াছে, তাহাদের এই কথা প্রযুক্ত তিনি এরূপ কহিলেন। আর তাঁহার মাতা ও তাঁহার ভ্রাতৃগণ আসিলেন, এবং বাহিরে দাঁড়াইয়া তাঁহাকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। তখন তাঁহার চারিদিকে লোক বসিয়াছিল; তাহারা তাঁহাকে কহিল, দেখুন, আপনার মাতা ও আপনার ভ্রাতৃগণ বাহিরে আপনার অন্বেষণ করিতেছেন। তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আমার মাতা কে? আমার ভ্রাতারাই বা কাহারা? পরে যাহারা তাঁহার চারিদিকে বসিয়াছিল, তিনি তাহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, এই দেখ, আমার মাতা ও আমার ভ্রাতৃগণ; কেননা যে কেহ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার ভ্রাতা ও ভগিনী ও মাতা। পরে তিনি আবার সমুদ্রের তীরে উপদেশ দিতে লাগিলেন; তাহাতে তাঁহার নিকটে এত অধিক লোক একত্র হইল যে, তিনি একখানি নৌকায় উঠিয়া সমুদ্রে বসিলেন, এবং সমাগত লোক সকল সমুদ্রের তীরে স্থলে থাকিল। তখন তিনি দৃষ্টান্ত দ্বারা তাহাদিগকে অনেক উপদেশ দিতে লাগিলেন। উপদেশের মধ্যে তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, শুন; দেখ, বীজবাপক বীজ বপন করিতে গেল; বপনের সময়ে কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল, তাহাতে পক্ষীরা আসিয়া তাহা খাইয়া ফেলিল। আর কতক বীজ পাষাণময় স্থানে পড়িল, যেখানে অধিক মাটী পাইল না; তাহাতে অধিক মাটী না পাওয়াতে তাহা শীঘ্র অঙ্কুরিত হইয়া উঠিল, কিন্তু সূর্য্য উঠিলে পর পুড়িয়া গেল, এবং তাহার মূল না থাকাতে শুকাইয়া গেল। আর কতক বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহাতে কাঁটাবন বাড়িয়া তাহা চাপিয়া রাখিল, তাহার ফল ধরিল না। আর কতক বীজ উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহা অঙ্কুরিত হইয়া ও বাড়িয়া উঠিয়া ফল দিল; কতক ত্রিশ গুণ, কতক ষাট গুণ, ও কতক শত গুণ ফল দিল। পরে তিনি কহিলেন, যাহার শুনিবার কাণ থাকে, সে শুনুক। যখন তিনি নির্জ্জনে ছিলেন, তাঁহার সঙ্গীরা সেই দ্বাদশ জনের সহিত তাঁহাকে দৃষ্টান্ত কয়টীর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব তোমাদিগকে দত্ত হইয়াছে; কিন্তু ঐ বাহিরের লোকদের নিকটে সকলই দৃষ্টান্ত দ্বারা বলা হইয়া থাকে; যেন তাহারা দেখিয়া দেখে, কিন্তু টের না পায়, এবং শুনিয়া শুনে, কিন্তু না বুঝে, পাছে তাহারা ফিরিয়া আইসে, ও তাহাদিগকে ক্ষমা করা যায়। পরে তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, এই দৃষ্টান্ত কি বুঝিতে পার না? তবে কেমন করিয়া সকল দৃষ্টান্ত বুঝিতে পারিবে? সেই বীজবাপক বাক্য-বীজ বুনে। পথের পার্শ্বে যাহারা, তাহারা এমন লোক যাহাদের মধ্যে বাক্য-বীজ বুন যায়; আর যখন তাহারা শুনে তৎক্ষণাৎ শয়তান আসিয়া, তাহাদের মধ্যে যাহা বপন করা হইয়াছিল, সেই বাক্য হরণ করিয়া লইয়া যায়। আর সেইরূপ যাহারা পাষাণময় ভূমিতে উপ্ত, তাহারা এমন লোক, যাহারা বাক্যটী শুনিয়া তৎক্ষণাৎ আহ্লাদপূর্ব্বক গ্রহণ করে; আর তাহাদের অন্তরে মূল নাই, কিন্তু তাহারা অল্প কালমাত্র স্থির থাকে, পরে সেই বাক্য হেতু ক্লেশ কিম্বা তাড়না ঘটিলে তৎক্ষণাৎ বিঘ্ন পায়। আর অন্য যাহারা কাঁটাবনের মধ্যে উপ্ত, তাহারা এমন লোক, যাহারা বাক্যটী শুনিয়াছে, কিন্তু সংসারের চিন্তা, ধনের মায়া ও অন্যান্য বিষয়ের অভিলাষ ভিতরে গিয়া ঐ বাক্য চাপিয়া রাখে, তাহাতে তাহা ফলহীন হয়। আর যাহারা উত্তম ভূমিতে উপ্ত, তাহারা এমন লোক, যাহারা সেই বাক্য শুনিয়া গ্রাহ্য করে, এবং কেহ ত্রিশ গুণ, কেহ ষাট গুণ, ও কেহ শত গুণ, ফল দেয়। তিনি তাহাদিগকে আরও কহিলেন, কাঠার নীচে কিম্বা খাটের নীচে রাখিবার জন্য কেহ কি প্রদীপ আনে? না দীপাধারের উপরে রাখিবার জন্য? কেননা এমন গুপ্ত কিছুই নাই, যাহা প্রকাশিত হইবে না; এমন লুক্কায়িত কিছুই নাই, যাহা প্রকাশ পাইবে না। যাহার শুনিবার কাণ থাকে, সে শুনুক। আর তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা দেখিও, কি শুন; তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদের নিমিত্ত পরিমাপ করা যাইবে; এবং তোমাদিগকে আরও দেওয়া যাইবে। কারণ যাহার আছে, তাহাকে আরও দেওয়া যাইবে; আর যাহার নাই, তাহার যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে। তিনি আরও কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্য এইরূপ। কোন ব্যক্তি যেন ভূমিতে বীজ বুনে; পরে রাত দিন নিদ্রা যায় ও উঠে, ইতিমধ্যে ঐ বীজ অঙ্কুরিত হইয়া বাড়িয়া উঠে, কিরূপে, তাহা সে জানে না। ভূমি আপনা আপনি ফল উৎপন্ন করে; প্রথমে অঙ্কুর, পরে শীষ, তাহার পর শীষের মধ্যে পূর্ণ শস্য। কিন্তু ফল পাকিলে সে তৎক্ষণাৎ কাস্তে লাগায়, কেননা শস্য কাটিবার সময় উপস্থিত। আর তিনি কহিলেন, আমরা কিসের সহিত ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করিব? কোন্‌ দৃষ্টান্ত দ্বারাই বা তাহা ব্যক্ত করিব? তাহা একটী সরিষা-দানার তুল্য; সেই বীজ ভূমিতে বুনিবার সময়ে ভূমির সকল বীজের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র বটে, কিন্তু বুনা হইলে তাহা অঙ্কুরিত হইয়া সকল শাক হইতে বড় হইয়া উঠে, এবং বড় বড় ডাল ফেলে; তাহাতে আকাশের পক্ষিগণ তাহার ছায়ার নীচে বাস করিতে পারে। এই প্রকার অনেকগুলি দৃষ্টান্ত দ্বারা তিনি তাহাদের শুনিবার ক্ষমতা অনুসারে তাহাদের কাছে বাক্য প্রচার করিতেন; আর দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই বলিতেন না; পরে বিরলে আপন শিষ্যদিগকে সমস্ত বুঝাইয়া দিতেন। সেই দিন সন্ধ্যা হইলে তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, চল, আমরা ওপারে যাই। তখন তাঁহারা লোকদিগকে বিদায় করিয়া, তিনি নৌকাখানিতে যেমন ছিলেন, তেমনি তাঁহাকে সঙ্গে লইয়া গেলেন; এবং আরও নৌকা তাঁহার সঙ্গে ছিল। পরে ভারী ঝড় উঠিল, এবং তরঙ্গমালা নৌকায় এমনি আঘাত করিল যে, নৌকা জলে পূর্ণ হইতে লাগিল। তখন তিনি নৌকার পশ্চাদ্‌ভাগে বালিশে মাথা দিয়া নিদ্রিত ছিলেন; আর তাঁহারা তাঁহাকে জাগাইয়া কহিলেন, হে গুরু, আপনার কি চিন্তা হইতেছে না যে, আমরা মারা পড়িলাম? তখন তিনি জাগিয়া উঠিয়া বাতাসকে ধমক্‌ দিলেন, ও সমুদ্রকে বলিলেন, নীরব হও, স্থির হও; তাহাতে বাতাস থামিল, এবং মহাশান্তি হইল। পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা এরূপ ভীরু হও কেন? এ কেমন, তোমাদের বিশ্বাস নাই? তাহাতে তাঁহারা অতিশয় ভীত হইয়া পরস্পর কহিতে লাগিলেন, ইনি তবে কে যে, বায়ু এবং সমুদ্রও ইহাঁর আজ্ঞা মানে? পরে তাঁহারা সমুদ্রের ওপারে গেরাসেনীদের দেশে উপস্থিত হইলেন। তিনি নৌকা হইতে বাহির হইলে তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি কবরস্থান হইতে তাঁহার সম্মুখে আসিল, তাহাকে অশুচি আত্মায় পাইয়াছিল। সে কবরমধ্যে বাস করিত, এবং কেহ তাহাকে শিকল দিয়াও আর বাঁধিয়া রাখিতে পারিত না। কেননা লোকে বার বার তাহাকে বেড়ী ও শিকল দিয়া বাঁধিত, কিন্তু সে শিকল ছিঁড়িয়া ফেলিত, এবং বেড়ী ভাঙ্গিয়া খণ্ডবিখণ্ড করিত; কেহ তাহাকে বশ করিতে পারিত না। আর সে রাত দিন সর্ব্বদা কবরে ও পর্ব্বতে থাকিয়া চীৎকার করিত, এবং পাথর দিয়া আপনি আপনাকে কাটিত। সে দূর হইতে যীশুকে দেখিয়া দৌড়িয়া আসিল, তাঁহাকে প্রণাম করিল, এবং উচ্চরবে চেঁচাইয়া কহিল, হে যীশু, পরাৎপর ঈশ্বরের পুত্র, আপনার সহিত আমার সম্পর্ক কি? আমি আপনাকে ঈশ্বরের দিব্য দিতেছি, আমাকে যাতনা দিবেন না। কেননা তিনি তাহাকে বলিয়াছিলেন, হে অশুচি আত্মা, এই ব্যক্তি হইতে বাহির হও। তিনি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নাম কি? সে উত্তর করিল, আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকগুলি আছি। পরে সে বিস্তর বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাদিগকে সেই অঞ্চল হইতে পাঠাইয়া না দেন। সেই স্থানে পর্ব্বতের পার্শ্বে এক বৃহৎ শূকরপাল চরিতেছিল। আর তাহারা বিনতি করিয়া কহিল, ঐ শূকরগুলির মধ্যে প্রবেশ করিতে আমাদিগকে পাঠাইয়া দিউন। তিনি তাহাদিগকে অনুমতি দিলেন। তখন সেই অশুচি আত্মারা বাহির হইয়া শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করিল; তাহাতে সেই শূকরপাল, কমবেশ দুই হাজার শূকর, মহাবেগে দৌড়িয়া ঢালু পাড় দিয়া সমুদ্রে গিয়া পড়িল, এবং সমুদ্রে ডুবিয়া মরিল। তখন যাহারা সেগুলিকে চরাইতেছিল, তাহারা পলায়ন করিয়া নগরে ও পল্লীতে পল্লীতে গিয়া সংবাদ দিল। তখন কি ঘটিয়াছে, দেখিবার জন্য লোকেরা আসিল; এবং যীশুর নিকটে আসিয়া দেখে, সেই ভূতগ্রস্থ ব্যক্তি, যাহাকে বাহিনী-ভূতে পাইয়াছিল, সে কাপড় পরিয়া সুবোধ হইয়া বসিয়া আছে; তাহাতে তাহারা ভয় পাইল। আর ঐ ভূতগ্রস্ত লোকটীর ও শূকরপালের ঘটনা যাহারা দেখিয়াছিল, তাহারা তাহাদিগকে সমস্ত বৃত্তান্ত বলিল। তখন তাহারা আপনাদের সীমা হইতে প্রস্থান করিতে তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিল। পরে তিনি নৌকায় উঠিতেছেন, এমন সময়ে যে ব্যক্তিকে ভূতে পাইয়াছিল, সে তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তাঁহার সঙ্গে থাকিতে পারে। কিন্তু তিনি তাহাকে অনুমতি দিলেন না, বরং কহিলেন, তুমি বাটীতে তোমার আত্মীয়গণের নিকটে চলিয়া যাও, এবং প্রভু তোমার জন্য যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছেন, ও তোমার প্রতি যে কৃপা করিয়াছেন, তাহা তাহাদিগকে জ্ঞাত কর। তখন সে প্রস্থান করিয়া, যীশু তাহার জন্য যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছিলেন, তাহা দিকাপলিতে প্রচার করিতে লাগিল; তাহাতে সকলেই আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল। পরে যীশু নৌকায় পুনরায় পার হইয়া আসিলে তাঁহার নিকটে বিস্তর লোকের সমাগম হইল; তখন তিনি সমুদ্র-তীরে ছিলেন। আর সমাজের অধ্যক্ষদের মধ্যে যায়ীর নামে এক জন আসিয়া তাঁহাকে দেখিয়া তাঁহার চরণে পড়িলেন, এবং অনেক বিনতি করিয়া কহিলেন, আমার মেয়েটী মারা যায়, আপনি আসিয়া তাহার উপরে হস্তার্পণ করুন, যেন সে সুস্থ হইয়া বাঁচে। তখন তিনি তাঁহার সঙ্গে চলিলেন; এবং অনেক লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল, ও তাঁহার উপরে চাপাচাপি করিয়া পড়িতে লাগিল। আর একটী স্ত্রীলোক বারো বৎসর অবধি প্রদর রোগগ্রস্ত হইয়াছিল, অনেক চিকিৎসকের দ্বারা বিস্তর ক্লেশ ভোগ করিয়াছিল, এবং সর্ব্বস্ব ব্যয় করিয়াও কিছু উপশম পায় নাই, বরং আরও পীড়িত হইয়াছিল। সে যীশুর বিষয় শুনিয়া ভিড়ের মধ্যে তাঁহার পশ্চাৎ দিকে আসিয়া তাঁহার বস্ত্র স্পর্শ করিল। কেননা সে কহিল, আমি যদি কেবল উহাঁর বস্ত্র স্পর্শ করিতে পাই, তবেই সুস্থ হইব। আর তৎক্ষণাৎ তাহার রক্তস্রোত শুকাইয়া গেল; আর আপনি যে ঐ রোগ হইতে মুক্ত হইয়াছে, ইহা শরীরে টের পাইল। যীশু তৎক্ষণাৎ অন্তরে জানিতে পাইলেন যে, তাঁহা হইতে শক্তি বাহির হইয়াছে, তাই ভিড়ের মধ্যে মুখ ফিরাইয়া বলিলেন, কে আমার বস্ত্র স্পর্শ করিল? তাঁহার শিষ্যেরা বলিলেন, আপনি দেখিতেছেন, লোকেরা আপনার উপরে চাপাচাপি করিয়া পড়িতেছে, তবু বলিতেছেন, কে আমাকে স্পর্শ করিল? কিন্তু কে ইহা করিয়াছিল, তাহাকে দেখিবার জন্য তিনি চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিলেন। তাহাতে সেই স্ত্রীলোকটী ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে, তাহার প্রতি কি করা হইয়াছে জানাতে, তাঁহার সম্মুখে আসিয়া প্রণিপাত করিল, আর সমস্ত সত্য বৃত্তান্ত তাঁহাকে কহিল। তখন তিনি তাহাকে কহিলেন, হে কন্যে, তোমার বিশ্বাস তোমাকে রক্ষা করিল, শান্তিতে চলিয়া যাও, ও তোমার রোগ হইতে মুক্ত থাক। তিনি এই কথা কহিতেছেন, ইতিমধ্যে সমাজ-গৃহের অধ্যক্ষের বাটী হইতে লোক আসিয়া কহিল, আপনার কন্যার মৃত্যু হইয়াছে, গুরুকে আর কেন কষ্ট দিতেছেন? কিন্তু যীশু সে কথা শুনিতে পাইয়া সমাজ-গৃহের অধ্যক্ষকে কহিলেন, ভয় করিও না, কেবল বিশ্বাস কর। আর পিতর, যাকোব এবং যাকোবের ভাই যোহন, এই তিন জন ছাড়া তিনি আর কাহাকেও আপনার সঙ্গে যাইতে দিলেন না। পরে তাঁহারা সমাজের অধ্যক্ষের বাটীতে আসিলেন, আর তিনি দেখিলেন, কোলাহল হইতেছে, লোকেরা অতিশয় রোদন ও বিলাপ করিতেছে। তিনি ভিতরে গিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কোলাহল ও রোদন করিতেছ কেন? বালিকাটী মরে নাই, ঘুমাইয়া রহিয়াছে। ইহাতে তাহারা তাঁহাকে উপহাস করিল; কিন্তু তিনি সকলকে বাহির করিয়া দিয়া, বালিকার পিতামাতাকে এবং আপন সঙ্গীদিগকে লইয়া, যেখানে বালিকাটী ছিল, সেইখানে প্রবেশ করিলেন, পরে তিনি বালিকার হাত ধরিয়া তাহাকে কহিলেন, টালিথা কুমী; অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ এই, বালিকে, তোমাকে বলিতেছি, উঠ। তাহাতে বালিকাটী তৎক্ষণাৎ উঠিয়া বেড়াইতে লাগিল, কেননা তাহার বয়স বারো বৎসর ছিল। ইহাতে তাহারা বড়ই বিস্ময়ে একেবারে চমৎকৃত হইল। পরে তিনি তাহাদিগকে এই দৃঢ় আজ্ঞা দিলেন, যেন কেহ ইহা জানিতে না পায়, আর কন্যাটীকে কিছু আহার দিতে আজ্ঞা করিলেন। পরে তিনি তথা হইতে প্রস্থান করিয়া আপন দেশে আসিলেন, এবং তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন। বিশ্রামবার উপস্থিত হইলে তিনি সমাজ-গৃহে উপদেশ দিতে লাগিলেন; তাহাতে অনেক লোক তাঁহার কথা শুনিয়া চমৎকৃত হইয়া কহিল, ইহার এ সকল কোথা হইতে হইয়াছে? ইহাকে যে জ্ঞান দত্ত হইয়াছে, এবং ইহার হস্ত দ্বারা যে এরূপ পরাক্রম-কার্য্য সকল সম্পন্ন হয়, এই বা কি? এ কি সেই সূত্রধর, মরিয়মের সেই পুত্র এবং যাকোব, যোষি, যিহূদা ও শিমোনের ভাই নয়? এবং ইহার ভগিনীরা কি এখানে আমাদের মধ্যে নাই? এইরূপে তাহারা তাঁহাতে বিঘ্ন পাইতে লাগিল। তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, আপনার দেশ ও আত্মীয় স্বজন এবং আপনার বাটী ভিন্ন আর কোথাও ভাববাদী অসম্মানিত হন না। তখন তিনি সে স্থানে আর কোন পরাক্রম-কার্য্য করিতে পারিলেন না, কেবল কয়েক জন রোগগ্রস্ত লোকের উপরে হস্তার্পণ করিয়া তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। আর তিনি তাহাদের অবিশ্বাস প্রযুক্ত আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন। পরে তিনি চারিদিকে গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিয়া উপদেশ দিলেন। আর তিনি সেই বারো জনকে ডাকিয়া দুই দুই জন করিয়া তাঁহাদিগকে প্রেরণ করিতে আরম্ভ করিলেন; এবং তাঁহাদিগকে অশুচি আত্মাদের উপরে ক্ষমতা দান করিলেন; আর আজ্ঞা করিলেন, তোমরা যাত্রার জন্য এক এক যষ্টি ব্যতিরেকে আর কিছু লইও না, রুটীও না, ঝুলিও না, গেঁজিয়ায় পয়সাও না; কিন্তু পায়ে পাদুকা দেও, আর দুইটা আঙ্‌রাখা পরিও না। তিনি তাঁহাদিগকে আরও কহিলেন, তোমরা যে কোন স্থানে যে বাটীতে প্রবেশ করিবে, সেই স্থান হইতে প্রস্থান করা পর্য্যন্ত সেই বাটীতেই থাকিও। আর যে কোন স্থানের লোকে তোমাদিগকে গ্রহণ না করে, এবং তোমাদের কথাও না শুনে, তথা হইতে প্রস্থান করিবার সময় তাহাদের উদ্দেশে সাক্ষ্যের জন্য আপন আপন পায়ের ধূলা ঝাড়িয়া ফেলিও। পরে তাঁহারা প্রস্থান করিয়া এই কথা প্রচার করিলেন যে, লোকেরা মন ফিরাউক। আর তাঁহারা অনেক ভূত ছাড়াইলেন, ও অনেক পীড়িত লোককে তৈল মাখাইয়া তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। আর হেরোদ রাজা তাঁহার কথা শুনিতে পাইলেন, কেননা তাঁহার নাম প্রসিদ্ধ হইয়াছিল। তখন তিনি বলিলেন, যোহন বাপ্তাইজক মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন, আর সেই জন্য পরাক্রম সকল তাঁহাতে কার্য্য সাধন করিতেছে। কিন্তু কেহ কেহ বলিল, উনি এলিয়; এবং কেহ কেহ বলিল, উনি এক জন ভাববাদী, ভাববাদীদের মধ্যে কোন এক জনের সদৃশ। কিন্তু হেরোদ তাঁহার কথা শুনিয়া বলিলেন, আমি যে যোহনের মস্তক ছেদন করিয়াছি, তিনিই উঠিয়াছেন। কারণ হেরোদ আপন ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার নিমিত্ত আপনি লোক পাঠাইয়া যোহনকে ধরিয়া কারাগারে বদ্ধ করিয়াছিলেন, কেননা তিনি তাহাকে বিবাহ করিয়াছিলেন। কারণ যোহন হেরোদকে বলিয়াছিলেন, ভাইয়ের স্ত্রীকে রাখা আপনার বিধেয় নয়। আর হেরোদিয়া তাঁহার প্রতি কুপিত হইয়া তাঁহাকে বধ করিতে চাহিতেছিল, কিন্তু পারিয়া উঠে নাই। কারণ হেরোদ যোহনকে ধার্ম্মিক ও পবিত্র লোক জানিয়া ভয় করিতেন ও তাঁহাকে রক্ষা করিতেন। আর তাঁহার কথা শুনিয়া তিনি অতিশয় উদ্বিগ্ন হইতেন, এবং তাঁহার কথা শুনিতে ভাল বাসিতেন। পরে এক সুবিধার দিন উপস্থিত হইল, যখন হেরোদ আপনার জন্মদিনে আপন মহৎ লোকদের, সেনাপতিগণের এবং গালীলের প্রধান লোকদের নিমিত্ত এক রাত্রিভোজ প্রস্তুত করিলেন; আর হেরোদিয়ার কন্যা ভিতরে আসিয়া ও নাচিয়া হেরোদ এবং যাঁহারা তাঁহার সঙ্গে ভোজে বসিয়াছিলেন, তাঁহাদের সন্তোষ জন্মাইল। তাহাতে রাজা সেই কন্যাকে কহিলেন, তোমার যাহা ইচ্ছা হয়, আমার কাছে চাও, আমি তোমাকে দিব। আর তিনি শপথ করিয়া তাহাকে কহিলেন, অর্দ্ধেক রাজ্য পর্য্যন্ত হউক, আমার কাছে যাহা চাহিবে, তাহাই তোমাকে দিব। তাহাতে সে বাহিরে গিয়া আপন মাতাকে জিজ্ঞাসা করিল, কি চাহিব? সে বলিল, যোহন বাপ্তাইজকের মস্তক। সে তৎক্ষণাৎ সত্বর রাজার নিকটে আসিয়া তাহা চাহিল, বলিল, আমি ইচ্ছা করি যে, আপনি এখনই যোহন বাপ্তাইজকের মস্তক থালায় করিয়া আমাকে দিউন। তখন রাজা অতিশয় দুঃখিত হইলেও আপন শপথ হেতু, এবং যাহারা ভোজে বসিয়াছিল, তাহাদের ভয়ে, তাহাকে ফিরাইয়া দিতে চাহিলেন না। আর রাজা তৎক্ষণাৎ এক জন সেনাকে পাঠাইয়া যোহনের মস্তক আনিতে আজ্ঞা করিলেন; সে কারাগারে গিয়া তাঁহার মস্তক ছেদন করিল, পরে তাঁহার মস্তক থালায় করিয়া আনিয়া সেই কন্যাকে দিল, এবং কন্যা আপন মাতাকে দিল। এই সংবাদ পাইয়া তাঁহার শিষ্যগণ আসিয়া তাঁহার দেহ লইয়া গিয়া কবরে রাখিল। পরে প্রেরিতেরা যীশুর নিকটে আসিয়া একত্র হইলেন; আর তাঁহারা যাহা কিছু করিয়াছিলেন, ও যাহা কিছু শিক্ষা দিয়াছিলেন, সে সমস্তই তাঁহাকে জানাইলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর। কারণ অনেক লোক আসা যাওয়া করিতেছিল, তাই তাঁহাদের আহার করিবারও অবকাশ ছিল না। পরে তাঁহারা নৌকাযোগে বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে যাত্রা করিলেন। কিন্তু লোকে তাঁহাদিগকে যাইতে দেখিল, এবং অনেকে তাঁহাদিগকে চিনিতে পারিল, তাই সকল নগর হইতে পদব্রজে সেখানে দৌড়িয়া তাঁহাদের অগ্রে গেল। তখন যীশু বাহির হইয়া বিস্তর লোক দেখিয়া তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, কেননা তাহারা পালক-বিহীন মেষপালের ন্যায় ছিল; আর তিনি তাহাদিগকে অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগিলেন। পরে দিবা প্রায় অবসান হইলে তাঁহার শিষ্যগণ নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন, এ নির্জ্জন স্থান, এবং দিবাও অবসান-প্রায়; ইহাদিগকে বিদায় করুন, যেন ইহারা চারিদিকে পল্লীতে পল্লীতে ও গ্রামে গ্রামে গিয়া আপনাদের নিমিত্ত খাদ্য দ্রব্য কিনিতে পারে। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরাই উহাদিগকে আহার দেও। তাঁহারা কহিলেন, আমরা গিয়া কি দুই শত সিকির রুটী কিনিয়া লইয়া উহাদিগকে খাইতে দিব? তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের কাছে কয়খানা রুটী আছে? গিয়া দেখ। তাঁহারা দেখিয়া কহিলেন, পাঁচখানি রুটী এবং দুইটী মাছ আছে। তখন তিনি সকলকে সবুজ ঘাসের উপরে দলে দলে বসাইয়া দিতে আজ্ঞা করিলেন। তাহারা শত শত জন ও পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করিয়া সারি সারি বসিয়া গেল। পরে তিনি সেই পাঁচখানি রুটী ও দুইটী মাছ লইয়া স্বর্গের দিকে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন এবং সেই রুটী কয়খানি ভাঙ্গিয়া লোকদের সম্মুখে রাখিবার জন্য শিষ্যদিগকে দিতে লাগিলেন; আর সেই দুইটী মাছও সকলকে ভাগ করিয়া দিলেন। তাহাতে সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল। পরে তাঁহারা গুঁড়াগাঁড়ায় ভরা বারো ডালা এবং মাছও কিছু তুলিয়া লইলেন। যাহারা সেই রুটী ভোজন করিয়াছিল, তাহারা পাঁচ হাজার পুরুষ। পরে তিনি তৎক্ষণাৎ শিষ্যদিগকে দৃঢ় করিয়া বলিয়া দিলেন, যেন তাঁহারা নৌকায় উঠিয়া তাঁহার অগ্রে পরপারে বৈৎসৈদার দিকে যান, আর ইতিমধ্যে তিনি লোকদিগকে বিদায় দেন। লোকদিগকে বিদায় করিয়া তিনি প্রার্থনা করিবার জন্য পর্ব্বতে চলিয়া গেলেন। যখন সন্ধ্যা হইল, তখন নৌকাখানি সমুদ্রের মাঝখানে ছিল, এবং তিনি একাকী স্থলে ছিলেন। পরে সম্মুখ বাতাস প্রযুক্ত তাঁহারা নৌকা বাহিতে বাহিতে কষ্ট পাইতেছেন দেখিয়া, তিনি প্রায় চতুর্থ প্রহর রাত্রিতে সমুদ্রের উপর দিয়া হাঁটিয়া তাঁহাদের নিকটে আসিলেন, এবং তাঁহাদিগকে ছাড়াইয়া যাইতে উদ্যত হইলেন। কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়া তাঁহাকে হাঁটিতে দেখিয়া তাঁহারা মনে করিলেন, অপচ্ছায়া, আর চেঁচাইয়া উঠিলেন; কারণ সকলেই তাঁহাকে দেখিয়াছিলেন ও ব্যাকুল হইয়াছিলেন। কিন্তু তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন, তাঁহাদিগকে বলিলেন, সাহস কর, এ আমি, ভয় করিও না। পরে তিনি তাঁহাদের নিকটে নৌকায় উঠিলেন, আর বাতাস থামিয়া গেল; তাহাতে তাঁহারা মনে মনে যার পর নাই আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন। কেননা রুটীর বিষয় তাঁহারা বুঝিতে পারেন নাই, তাঁহাদের অন্তঃকরণ কঠিন হইয়া পড়িয়াছিল। পরে তাঁহারা পার হইয়া স্থলে, গিনেষরৎ প্রদেশে, আসিয়া নৌকা লাগাইলেন। আর নৌকা হইতে বাহির হইলে লোকেরা তৎক্ষণাৎ তাঁহাকে চিনিয়া সমুদয় অঞ্চলে চারিদিকে দৌড়িতে লাগিল, আর পীড়িত লোকদিগকে খাটের উপরে করিয়া, তিনি যে কোন স্থানে আছেন শুনিতে পাইল, সেই স্থানে আনিতে লাগিল। আর গ্রামে, কি নগরে, কি পল্লীতে, যে কোন স্থানে তিনি প্রবেশ করিলেন, সেই স্থানে তাহারা পীড়িতদিগকে বাজারে বসাইল; এবং তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন উহারা তাঁহার বস্ত্রের থোপমাত্র স্পর্শ করিতে পায়, আর যত লোক তাঁহাকে স্পর্শ করিল, সকলেই সুস্থ হইল। আর ফরীশীরা ও কয়েক জন অধ্যাপক যিরূশালেম হইতে আসিয়া তাঁহার নিকটে একত্র হইল। তাহারা দেখিল যে, তাঁহার কয়েক জন শিষ্য অশুচি অর্থাৎ অধৌত হস্তে আহার করিতেছে। —ফরীশিগণ ও যিহূদীরা সকলে প্রাচীনদের পরম্পরাগত বিধি মান্য করায় ভাল করিয়া হাত না ধুইয়া আহার করে না। আর বাজার হইতে আসিলে তাহারা স্নান না করিয়া আহার করে না; এবং তাহারা আরও অনেক বিষয় মানিবার আদেশ প্রাপ্ত হইয়াছে, যথা, ঘটী, ঘড়া ও পিত্তলের নানা পাত্র ধৌত করা।— পরে ফরীশীরা ও অধ্যাপকেরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তোমার শিষ্যেরা প্রাচীনদের পরম্পরাগত বিধি অনুসারে চলে না, কিন্তু অশুচি হস্তে আহার করে, ইহার কারণ কি? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, কপটীরা, যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে বিলক্ষণ ভাববাণী বলিয়াছেন, যেমন লেখা আছে, “এই লোকেরা ওষ্ঠাধরে আমার সম্মান করে, কিন্তু ইহাদের অন্তঃকরণ আমা হইতে দূরে থাকে। ইহারা অনর্থক আমার আরাধনা করে, মনুষ্যদের আদেশ ধর্ম্মসূত্র বলিয়া শিক্ষা দেয়।” তোমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা ত্যাগ করিয়া মনুষ্যদের পরম্পরাগত বিধি ধরিয়া রহিয়াছ। তিনি তাহাদিগকে আরও কহিলেন, তোমাদের পরম্পরাগত বিধি পালনের নিমিত্ত তোমরা ঈশ্বরের আজ্ঞা বিলক্ষণ অমান্য করিতেছ। কেননা মোশি বলিয়াছেন, “তুমি আপন পিতাকে ও আপন মাতাকে সমাদর কর,” আর “যে কেহ পিতার কি মাতার নিন্দা করে, তাহার প্রাণদণ্ড হউক।” কিন্তু তোমরা বলিয়া থাক, মনুষ্য যদি পিতাকে কিম্বা মাতাকে বলে, ‘আমা হইতে যাহা দিয়া তোমার উপকার হইতে পারিত, তাহা কর্ব্বান্‌, অর্থাৎ ঈশ্বরকে দত্ত হইয়াছে,’ তোমরা তাহাকে পিতার কি মাতার জন্য আর কিছুই করিতে দেও না। এইরূপে তোমাদের সমর্পিত পরম্পরাগত বিধি দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের বাক্য নিষ্ফল করিতেছ; আর এই প্রকার অনেক ক্রিয়া করিয়া থাক। পরে তিনি লোকসমূহকে পুনরায় কাছে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা সকলে আমার কথা শুন ও বুঝ। মনুষ্যের বাহিরে এমন কিছুই নাই, যাহা তাহার ভিতরে গিয়া তাহাকে অশুচি করিতে পারে; কিন্তু যাহা যাহা মনুষ্য হইতে বাহির হয়, সেই সকলই মনুষ্যকে অশুচি করে। পরে তিনি লোকসমূহের নিকট হইতে গৃহমধ্যে আসিলে তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে সেই দৃষ্টান্তটীর ভাব জিজ্ঞাসা করিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরাও কি এমন অবোধ? তোমরা কি বুঝ না যে, যাহা কিছু বাহির হইতে মনুষ্যের ভিতরে যায়, তাহা তাহাকে অশুচি করিতে পারে না? তাহা ত তাহার হৃদয়ে প্রবেশ করে না, কিন্তু উদরে প্রবেশ করে, এবং বহিঃস্থানে গিয়া পড়ে। এ কথায় তিনি সমস্ত খাদ্য দ্রব্যকে শুচি বলিলেন। তিনি আরও কহিলেন, মনুষ্য হইতে যাহা বাহির হয়, তাহাই মনুষ্যকে অশুচি করে। কেননা ভিতর হইতে, মনুষ্যদের অন্তঃকরণ হইতে, কুচিন্তা বাহির হয় —বেশ্যাগমন, চৌর্য্য, নরহত্যা, ব্যভিচার, লোভ, দুষ্টতা, ছল, লম্পটতা, কুদৃষ্টি, নিন্দা, অভিমান ও মূর্খতা; এই সকল মন্দ বিষয় ভিতর হইতে বাহির হয়, এবং মনুষ্যকে অশুচি করে। পরে তিনি উঠিয়া সে স্থান হইতে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গমন করিলেন। আর তিনি এক বাটীতে প্রবেশ করিলেন, ইচ্ছা করিলেন, যেন কেহ জানিতে না পারে; কিন্তু গুপ্ত থাকিতে পারিলেন না। কারণ তখনই একটী স্ত্রীলোক, যাহার একটী মেয়ে ছিল, আর সেটীকে অশুচি আত্মায় পাইয়াছিল, তাঁহার বিষয় শুনিতে পাইয়া আসিয়া তাঁহার চরণে পড়িল। স্ত্রীলোকটী গ্রীক, জাতিতে সুর-ফৈনীকী। সে তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিল, যেন তিনি তাহার কন্যার ভূত ছাড়াইয়া দেন। তিনি তাহাকে কহিলেন, প্রথমে সন্তানেরা তৃপ্ত হউক, কেননা সন্তানদের খাদ্য লইয়া কুকুরদের কাছে ফেলিয়া দেওয়া ভাল নয়। কিন্তু স্ত্রীলোকটী উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, হাঁ, প্রভু, আর কুকুরেরাও মেজের নীচে ছেলেদের খাদ্যের গুঁড়াগাঁড়া খায়। তখন তিনি তাহাকে বলিলেন, এই বাক্য প্রযুক্ত চলিয়া যাও, তোমার কন্যার ভূত ছাড়িয়া গিয়াছে। পরে সে গৃহে গিয়া দেখিতে পাইল, কন্যাটী শয্যায় শুইয়া আছে, এবং ভূত বাহির হইয়া গিয়াছে। পরে তিনি সোর অঞ্চল হইতে বাহির হইলেন এবং সীদোন হইয়া দিকাপলি অঞ্চলের মধ্য দিয়া গালীল-সাগরের নিকটে আসিলেন। তখন লোকেরা এক জন বধির তোৎলাকে তাঁহার নিকটে আনিয়া তাঁহাকে তাহার উপরে হস্তার্পণ করিতে বিনতি করিল। তিনি তাহাকে ভিড়ের মধ্য হইতে বিরলে এক পার্শ্বে আনিয়া তাহার দুই কর্ণে আপন অঙ্গুলী দিলেন, থুথু ফেলিলেন, ও তাহার জিহ্বা স্পর্শ করিলেন। আর তিনি স্বর্গের দিকে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিয়া দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়িয়া তাহাকে কহিলেন, ইপ্‌ফাথা, অর্থাৎ খুলিয়া যাউক। তাহাতে তাহার কর্ণ খুলিয়া গেল, জিহ্বার বন্ধন মুক্ত হইল, আর সে স্পষ্ট কথা কহিতে লাগিল। পরে তিনি তাহাদিগকে আজ্ঞা করিলেন, তোমরা এ কথা কাহাকেও বলিও না; কিন্তু তিনি যত বার‍ণ করিলেন, ততই তাহারা আরও অধিক প্রচার করিল। আর তাহারা যার পর নাই চমৎকৃত হইল, বলিল, ইনি সকলই উত্তমরূপে করিয়াছেন, ইনি বধিরদিগকে শুনিবার শক্তি, এবং বোবাদিগকে কথা কহিবার শক্তি দান করেন। সেই সময়ে যখন আবার লোকের ভিড় হইল, আর তাহাদের কাছে কিছু খাবার ছিল না, তখন তিনি আপন শিষ্যদিগকে নিকটে ডাকিয়া কহিলেন, এই লোকসমূহের প্রতি আমার করুণা হইতেছে; কেননা ইহারা আজ তিন দিবস আমার সঙ্গে সঙ্গে রহিয়াছে, এবং ইহাদের নিকটে খাবার কিছুই নাই। আর আমি যদি ইহাদিগকে অনাহারে গৃহে বিদায় করি, তবে ইহারা পথে মূর্চ্ছা পড়িবে; আবার ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ দূর হইতে আসিয়াছে। তাঁহার শিষ্যেরা উত্তর করিলেন, এখানে প্রান্তরের মধ্যে কে কোথা হইতে রুটী দিয়া এ সকল লোককে তৃপ্ত করিতে পারিবে? তিনি তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদের কাছে কয়খানা রুটী আছে? তাঁহারা কহিলেন, সাতখানা। পরে তিনি লোকদিগকে ভূমিতে বসিতে আজ্ঞা করিলেন, এবং সেই সাতখানি রুটী লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিয়া লোকদের সম্মুখে রাখিবার জন্য শিষ্যদিগকে দিতে লাগিলেন; তাঁহারা লোকদের সম্মুখে রাখিলেন। তাঁহাদের নিকটে কয়েকটী ছোট ছোট মাছও ছিল, তিনি আশীর্ব্বাদ করিয়া সেগুলিও লোকদের সম্মুখে রাখিতে বলিলেন। তাহাতে লোকেরা আহার করিয়া তৃপ্ত হইল; এবং তাঁহারা অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া সাত ঝুড়ি তুলিয়া লইলেন। লোক ছিল কমবেশ চারি হাজার; পরে তিনি তাহাদিগকে বিদায় করিলেন। আর তখনই তিনি শিষ্যগণের সহিত নৌকায় উঠিয়া দল্‌মনুথা প্রদেশে আসিলেন। পরে ফরীশীরা বাহিরে আসিয়া তাঁহার সহিত বাদানুবাদ করিতে লাগিল, পরীক্ষাভাবে তাঁহার নিকটে আকাশ হইতে এক চিহ্ন দেখিতে চাহিল। তখন তিনি আত্মায় দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়িয়া কহিলেন, এই কালের লোকেরা কেন চিহ্নের অন্বেষণ করে? আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এই লোকদিগকে কোন চিহ্ন দেখান যাইবে না। পরে তিনি তাহাদিগকে ছাড়িয়া আবার নৌকায় উঠিয়া অন্য পারে গেলেন। আর শিষ্যগণ রুটী লইতে ভুলিয়া গিয়াছিলেন, নৌকায় তাঁহাদের কাছে কেবল একখানি ব্যতীত আর রুটী ছিল না। পরে তিনি তাঁহাদিগকে আজ্ঞা করিলেন, সাবধান, তোমরা ফরীশীদের তাড়ীর বিষয়ে ও হেরোদের তাড়ীর বিষয়ে সাবধান থাকিও। তাহাতে তাঁহারা পরস্পর তর্ক করিয়া বলিতে লাগিলেন, আমাদের কাছে ত রুটী নাই। তাহা বুঝিয়া যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের রুটী নাই বলিয়া কেন তর্ক করিতেছ? তোমরা কি এখনও কিছু জানিতে পারিতেছ না, বুঝিতে পারিতেছ না? তোমাদের অন্তঃকরণ কি কঠিন হইয়া রহিয়াছে? চক্ষু থাকিতে কি দেখিতে পাও না? কর্ণ থাকিতে কি শুনিতে পাও না? আর মনেও কি পড়ে না? আমি যখন পাঁচ হাজার লোকের মধ্যে পাঁচখানা রুটী ভাঙ্গিয়া দিয়াছিলাম, তখন তোমরা গুঁড়াগাঁড়ায় ভরা কত ডালা তুলিয়া লইয়াছিলে? তাঁহারা কহিলেন, বারো ডালা। আর যখন চারি হাজার লোকের মধ্যে সাত খানা রুটী ভাঙ্গিয়া দিয়াছিলাম তখন গুঁড়াগাঁড়ায় ভরা কত ঝুড়ি তুলিয়া লইয়াছিলে? তাঁহারা কহিলেন, সাত ঝুড়ি। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি এখনও বুঝিতে পারিতেছ না? পরে তাঁহারা বৈৎসৈদাতে আসিলেন; আর লোকেরা এক জন অন্ধকে তাঁহার নিকটে আনিয়া তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাকে স্পর্শ করেন। তখন তিনি সেই অন্ধের হাত ধরিয়া তাহাকে গ্রামের বাহিরে লইয়া গেলেন; পরে তাহার চক্ষুতে থুথু দিয়া ও তাহার উপরে হস্তার্পণ করিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কিছু দেখিতে পাইতেছ? সে চক্ষু তুলিয়া চাহিল ও বলিল, মানুষ দেখিতেছি, গাছের মতন দেখিতেছি, বেড়াইতেছে। তখন তিনি তাহার চক্ষুর উপরে আবার হস্তার্পণ করিলেন, তাহাতে সে স্থির দৃষ্টি করিল, ও সুস্থ হইল, স্পষ্টরূপে সকলই দেখিতে পাইল। পরে তিনি তাহাকে তাহার বাটীতে পাঠাইয়া দিলেন, বলিলেন, এই গ্রামে প্রবেশ করিও না। পরে যীশু ও তাঁহার শিষ্যগণ প্রস্থান করিয়া কৈসরিয়া ফিলিপী অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে গেলেন। আর পথিমধ্যে তিনি আপন শিষ্যদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কে, এ বিষয়ে লোকে কি বলে? তাঁহারা তাঁহাকে কহিলেন, অনেকে বলে, আমি যোহন বাপ্তাইজক; আর কেহ কেহ বলে, আপনি এলিয়; আর কেহ কেহ বলে, আপনি ভাববাদিগণের মধ্যে এক জন। তিনি তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু তোমরা কি বল? আমি কে? পিতর উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি সেই খ্রীষ্ট। তখন তিনি তাঁহার কথা কাহাকেও বলিতে তাঁহাদিগকে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়া দিলেন। পরে তিনি তাঁহাদিগকে এই শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিলেন যে, মনুষ্যপুত্রকে অনেক দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, এবং প্রাচীনবর্গ, প্রধান যাজক ও অধ্যাপকগণ কর্ত্তৃক অগ্রাহ্য হইতে হইবে, হত হইতে হইবে, আর তিন দিন পরে আবার উঠিতে হইবে। এই কথা তিনি স্পষ্টরূপেই কহিলেন। তাহাতে পিতর তাঁহাকে কাছে লইয়া অনুযোগ করিতে লাগিলেন। কিন্তু তিনি মুখ ফিরাইয়া আপন শিষ্যগণের প্রতি দৃষ্টি করিয়া পিতরকে অনুযোগ করিলেন, বলিলেন, আমার সম্মুখ হইতে দূর হও, শয়তান; কেননা যাহা ঈশ্বরের, তাহা নয়, কিন্তু যাহা মনুষ্যের, তাহাই তুমি ভাবিতেছ। পরে তিনি আপন শিষ্যগণের সহিত লোকসমূহকেও ডাকিয়া কহিলেন, কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদগামী হউক। কেননা যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করিতে ইচ্ছা করে, সে তাহা হারাইবে; কিন্তু যে কেহ আমার এবং সুসমাচারের নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায়, সে তাহা রক্ষা করিবে। বস্তুতঃ মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ খোয়ায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে? কিম্বা মনুষ্য আপন প্রাণের পরিবর্ত্তে কি দিতে পারে? কেননা যে কেহ এই কালের ব্যভিচারী ও পাপিষ্ঠ লোকদের মধ্যে আমাকে ও আমার বাক্যকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করে, মনুষ্যপুত্র তাহাকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করিবেন, যখন তিনি পবিত্র দূতগণের সহিত আপন পিতার প্রতাপে আসিবেন। আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে কয়েক জন আছে, যাহারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না, যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্য পরাক্রমের সহিত আসিতে না দেখে। ছয় দিন পরে যীশু কেবল পিতর, যাকোব ও যোহনকে সঙ্গে করিয়া বিরলে এক উচ্চ পর্ব্বতে লইয়া গেলেন, আর তিনি তাঁহাদের সাক্ষাতে রূপান্তরিত হইলেন। আর তাঁহার বস্ত্র উজ্জ্বল, এবং অতিশয় শুভ্রবর্ণ হইল, পৃথিবীস্থ কোন রজক সেইরূপ শুভ্রবর্ণ করিতে পারে না। আর এলিয় ও মোশি তাঁহাদিগকে দেখা দিলেন; তাঁহারা যীশুর সহিত কথোপকথন করিতে লাগিলেন। তখন পিতর যীশুকে কহিলেন, রব্বি, এখানে আমাদের থাকা ভাল; আমরা তিনটী কুটীর নির্ম্মাণ করি, একটী আপনার জন্য, একটী মোশির জন্য, এবং একটী এলিয়ের জন্য। কারণ কি বলিতে হইবে, তাহা তিনি বুঝিলেন না, কেননা তাঁহারা অত্যন্ত ভীত হইয়াছিলেন। পরে একখানি মেঘ উপস্থিত হইয়া তাঁহাদিগকে ছায়া করিল; আর সেই মেঘ হইতে এই বাণী হইল, ‘ইনি আমার প্রিয় পুত্র, ইহাঁর কথা শুন।’ পরে হঠাৎ তাঁহারা চারিদিকে দৃষ্টি করিয়া আর কাহাকেও দেখিতে পাইলেন না, দেখিলেন, কেবল একা যীশু তাঁহাদের সঙ্গে রহিয়াছেন। পর্ব্বত হইতে নামিবার সময়ে তিনি তাঁহাদিগকে দৃঢ় আজ্ঞা দিয়া কহিলেন, তোমরা যাহা যাহা দেখিলে, তাহা কাহাকেও বলিও না, যাবৎ মৃতগণের মধ্য হইতে মনুষ্যপুত্রের উত্থান না হয়। তখন, মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থান কি, তাঁহারা এই বিষয় পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করতঃ সেই কথা আপনাদের মধ্যে রাখিয়া দিলেন। পরে তাঁহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বলিলেন, অধ্যাপকেরা ত বলেন, প্রথমে এলিয়কে আসিতে হইবে। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, এলিয় প্রথমে আসিয়া সকল বিষয়ের সুধারা পুনঃস্থাপন করিবেন বটে; আর মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে কিরূপেই বা লেখা রহিয়াছে যে, তাঁহাকে অনেক দুঃখ পাইতে ও অবজ্ঞাত হইতে হইবে? কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এলিয়ের বিষয়ে যেরূপ লেখা আছে, তদনুসারে তিনি আসিয়া গিয়াছেন, এবং লোকেরা তাঁহার প্রতি যাহা ইচ্ছা, তাহাই করিয়াছে । পরে তাঁহারা শিষ্যগণের নিকটে আসিয়া দেখিলেন, তাঁহাদের চারিদিকে অনেক লোক, আর অধ্যাপকেরা তাঁহাদের সহিত বাদানুবাদ করিতেছে। তাঁহাকে দেখিবামাত্র সমস্ত লোক অতিশয় চমৎকৃত হইল, ও তাঁহার নিকটে দৌড়িয়া গিয়া তাঁহাকে মঙ্গলবাদ করিল। তিনি তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহাদের সঙ্গে তোমরা কোন্‌ বিষয়ে বাদানুবাদ করিতেছ? তাহাতে লোকদের মধ্যে এক জন উত্তর করিল, হে গুরু, আমার পুত্রটীকে আপনার কাছে আনিয়াছিলাম, তাহাকে বোবা আত্মায় পাইয়াছে, আর সেটী তাহাকে যেখানে ধরে, সেইখানে আছাড় মারে, আর তাহার মুখে ফেনা উঠে, এবং সে দাঁত কিড়মিড় করে, আর কাট হইয়া যায়; আমি আপনার শিষ্যদিগকে তাহা ছাড়াইতে বলিলাম, কিন্তু তাঁহারা পারিলেন না। তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, হে অবিশ্বাসি বংশ, আমি কত কাল তোমাদের নিকটে থাকিব? কত কাল তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করিব? উহাকে আমার নিকটে আন। তাহারা তাহাকে তাঁহার নিকটে আনিল; তাঁহাকে দেখিবামাত্র সেই আত্মা তাহাকে অতিশয় মুচড়াইয়া ধরিল, আর সে ভূমিতে পড়িয়া ফেনা ভাঙ্গিয়া গড়াগড়ি দিতে লাগিল। তখন তিনি তাহার পিতাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহার কত দিন এমন হইয়াছে? সে কহিল, ছেলে বেলা থেকে; আর সেই আত্মা ইহাকে বিনাশ করিবার নিমিত্ত অনেক বার আগুনে ও অনেক বার জলে ফেলিয়া দিয়াছে; কিন্তু আপনি যদি কিছু করিতে পারেন, তবে আমাদের প্রতি দয়া করিয়া উপকার করুন। যীশু তাহাকে কহিলেন, যদি পারেন! যে বিশ্বাস করে, তাহার পক্ষে সকলই সাধ্য। অমনি সেই বালকের পিতা চেঁচাইয়া অশ্রুপাতপূর্ব্বক বলিয়া উঠিল, বিশ্বাস করিতেছি, আমার অবিশ্বাসের প্রতীকার করুন। পরে লোকেরা একসঙ্গে দৌড়িয়া আসিতেছে দেখিয়া যীশু সেই অশুচি আত্মাকে ধমকাইয়া কহিলেন, হে বধির গোঁগা আত্মা, আমিই তোমাকে আজ্ঞা দিতেছি, ইহা হইতে বাহির হও, আর কখনও ইহার মধ্যে প্রবেশ করিও না। তখন সে চেঁচাইয়া তাহাকে অতিশয় মুচড়াইয়া দিয়া বাহির হইয়া গেল; তাহাতে বালকটী মরার মতন হইয়া পড়িল, এমন কি অধিকাংশ লোক বলিল, সে মরিয়া গিয়াছে। কিন্তু যীশু তাহার হাত ধরিয়া তাহাকে তুলিলে সে উঠিল। পরে তিনি গৃহে আসিলে তাঁহার শিষ্যেরা বিজনে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমরা কেন সেটা ছাড়াইতে পারিলাম না? তিনি কহিলেন, প্রার্থনা ভিন্ন আর কিছুতেই এই জাতি বাহির হয় না। সে স্থান হইতে প্রস্থান করিয়া তাঁহারা গালীলের মধ্য দিয়া গমন করিলেন, আর তাঁহার ইচ্ছা ছিল না যে, কেহ তাহা জানিতে পায়। কেননা তিনি আপন শিষ্যদিগকে উপদেশ দিয়া বলিতেন, মনুষ্যপুত্র মনুষ্যদের হস্তে সমর্পিত হইবেন; তাহারা তাঁহাকে বধ করিবে; হত হইলে পর তিনি তিন দিন পরে উঠিবেন। কিন্তু তাঁহারা সেই কথা বুঝিলেন না, এবং তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিতেও ভয় করিলেন। পরে তাঁহারা কফরনাহূমে আসিলেন; আর গৃহমধ্যে উপস্থিত হইলে তিনি তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, পথে তোমরা কোন্‌ বিষয়ে তর্কবিতর্ক করিতেছিলে? তাঁহারা চুপ করিয়া রহিলেন, কারণ কে শ্রেষ্ঠ, পথে পরস্পর এই বিষয়ে বাদানুবাদ করিয়াছিলেন। তখন তিনি বসিয়া সেই বারো জনকে ডাকিয়া কহিলেন, কেহ যদি প্রথম হইতে ইচ্ছা করে, তবে সে সকলের শেষে থাকিবে ও সকলের পরিচারক হইবে। পরে তিনি একটী শিশুকে লইয়া তাঁহাদের মধ্যে দাঁড় করাইয়া দিলেন এবং তাহাকে কোলে করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, যে কেহ আমার নামে ইহার মত কোন শিশুকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর যে কেহ আমাকে গ্রহণ করে, সে আমাকে নয়, কিন্তু যিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তাঁহাকেই গ্রহণ করে। যোহন তাঁহাকে কহিলেন, হে গুরু, আমরা এক ব্যক্তিকে আপনার নামে ভূত ছাড়াইতে দেখিয়াছিলাম, আর তাহাকে বারণ করিতেছিলাম, কারণ সে আমাদের পশ্চাদগমন করে না। কিন্তু যীশু কহিলেন, তাহাকে বারণ করিও না, কারণ এমন কেহ নাই, যে আমার নামে পরাক্রম-কার্য্য করিয়া সহজে আমার নিন্দা করিতে পারে। কারণ যে কেহ আমার বিপক্ষ নয়, সে আমাদের সপক্ষ। বাস্তবিক যে কেহ তোমাদিগকে খ্রীষ্টের লোক বলিয়া এক বাটী জল পান করিতে দেয়, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, সে কোন মতে আপন পুরস্কারে বঞ্চিত হইবে না। আর এই যে ক্ষুদ্রগণ আমাতে বিশ্বাস করে, যে কেহ তাহাদের এক জনের বিঘ্ন জন্মায়, বরং তাহার গলায় বৃহৎ যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রে ফেলিয়া দিলেও তাহার পক্ষে ভাল। আর তোমার হস্ত যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া ফেল; দুই হস্ত লইয়া নরকে, সেই অনির্ব্বাণ অগ্নিতে, যাওয়া অপেক্ষা, বরং নুলা হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল। আর তোমার চরণ যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা কাটিয়া ফেল; দুই চরণ লইয়া নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং খোঁড়া হইয়া জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল। আর তোমার চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উৎপাটন করিয়া ফেল; দুই চক্ষু লইয়া নরকে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপেক্ষা বরং একচক্ষু হইয়া ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা তোমার ভাল; নরকে ত লোকদের কীট মরে না, এবং অগ্নি নির্ব্বাণ হয় না। বস্তুতঃ প্রত্যেক ব্যক্তিকে অগ্নিরূপ লবণে লবণাক্ত করা যাইবে, এবং প্রত্যেক বলিকে লবণে লবণাক্ত করা যাইবে। লবণ ভাল, কিন্তু লবণ যদি লবণত্ব হারায়, তবে তোমরা কিসে তাহা আস্বাদযুক্ত করিবে? তোমরা আপন আপন অন্তরে লবণ রাখ, এবং পরস্পর শান্তিতে থাক। সেই স্থান হইতে উঠিয়া তিনি যিহূদিয়ার অঞ্চলে ও যর্দ্দনের পরপারে আসিলেন; তাহাতে তাঁহার নিকটে আবার লোক সমাগত হইতে লাগিল, এবং তিনি নিজ রীতি অনুসারে আবার তাহাদিগকে উপদেশ দিলেন। তখন ফরীশীরা নিকটে আসিয়া পরীক্ষাভাবে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, স্ত্রী পরিত্যাগ করা কি পুরুষের পক্ষে বিধেয়? তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, মোশি তোমাদিগকে কি আজ্ঞা দিয়াছেন? তাহারা কহিল, ত্যাগপত্র লিখিয়া আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিবার অনুমতি মোশি দিয়াছেন । যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের অন্তঃকরণ কঠিন বলিয়া তিনি এই বিধি লিখিয়াছেন; কিন্তু সৃষ্টির আদি হইতে ঈশ্বর পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে নির্ম্মাণ করিয়াছেন; “এই কারণ মনুষ্য আপন পিতামাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, আর সে দুই জন একাঙ্গ হইবে;” সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক। পরে শিষ্যেরা গৃহে আবার সেই বিষয় তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, যে কেহ আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া অন্যাকে বিবাহ করে, সে তাহার বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে; আর স্ত্রী যদি আপন স্বামীকে পরিত্যাগ করিয়া আর এক জনকে বিবাহ করে, তবে সেও ব্যভিচার করে। পরে লোকেরা কতকগুলি শিশুকে তাঁহার নিকটে আনিল, যেন তিনি তাহাদিগকে স্পর্শ করেন; তাহাতে শিষ্যেরা উহাদিগকে ভর্ৎসনা করিলেন। কিন্তু যীশু তাহা দেখিয়া অসন্তুষ্ট হইলেন, আর তাঁহাদিগকে কহিলেন, শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই। আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে ব্যক্তি শিশুবৎ হইয়া ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোন মতে তাহাতে প্রবেশ করিতে পাইবে না। পরে তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন। পরে তিনি বাহির হইয়া পথে যাইতেছেন, এমন সময়ে এক জন দৌড়িয়া আসিয়া তাঁহার সম্মুখে জানু পাতিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হে সদ্‌গুরু, অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবার জন্য আমি কি করিব? যীশু তাহাকে কহিলেন, আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? এক জন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর। তুমি আজ্ঞা সকল জান, “নরহত্যা করিও না, ব্যভিচার করিও না, চুরি করিও না, মিথ্যাসাক্ষ্য দিও না, প্রবঞ্চনা করিও না, তোমার পিতামাতাকে সমাদর করিও”। সেই ব্যক্তি তাঁহাকে কহিল, হে গুরু, বাল্যকাল অবধি এই সকল পালন করিয়া আসিতেছি। যীশু তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তাহাকে ভাল বাসিলেন, এবং কহিলেন, এক বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে, যাও, তোমার যাহা কিছু আছে, বিক্রয় কর, আর দরিদ্রদিগকে দান কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদগামী হও। এই কথায় সে বিষণ্ণ হইল, দুঃখিত হইয়া চলিয়া গেল, কারণ তাহার বিস্তর সম্পত্তি ছিল। তখন যীশু চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিয়া আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, যাহাদের ধন আছে, তাহাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন দুষ্কর! তাঁহার কথায় শিষ্যেরা চমৎকৃত হইলেন; কিন্তু যীশু পুনর্ব্বার তাঁহাদিগকে কহিলেন, বৎসগণ, যাহারা ধনে নির্ভর করে, ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা তাহাদের পক্ষে কেমন দুষ্কর! ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করা অপেক্ষা বরং সূচীর ছিদ্র দিয়া উটের যাওয়া সহজ। তখন তাঁহারা অতিশয় আশ্চর্য্য মনে করিলেন, কহিলেন, তবে কাহার পরিত্রাণ হইতে পারে? যীশু তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, ইহা মনুষ্যের অসাধ্য বটে, কিন্তু ঈশ্বরের অসাধ্য নয়, কারণ ঈশ্বরের সকলই সাধ্য। তখন পিতর তাঁহাকে বলিতে লাগিলেন, দেখুন, আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদগামী হইয়াছি। যীশু বলিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এমন কেহ নাই, যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটী কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি মাতা কি পিতা কি সন্তানসন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শতগুণ না পাইবে; সে বাটী, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে, এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে। কিন্তু যাহারা প্রথম, এমন অনেক লোক শেষে পড়িবে, ও যাহারা শেষের, তাহারা প্রথম হইবে। একদা তাঁহারা পথে ছিলেন, যিরূশালেমে যাইতেছিলেন, এবং যীশু তাঁহাদের অগ্রে অগ্রে চলিতেছিলেন, তখন তাঁহারা চমৎকার জ্ঞান করিলেন; আর যাঁহারা পশ্চাতে চলিতেছিলেন, তাঁহারা ভয় পাইলেন। পরে তিনি আবার সেই বারো জনকে লইয়া আপনার প্রতি যাহা যাহা ঘটিবে, তাহা তাঁহাদিগকে বলিতে লাগিলেন। তিনি বলিলেন, দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাইতেছি, আর মনুষ্যপুত্র প্রধান যাজক ও অধ্যাপকগণের হস্তে সমর্পিত হইবেন; এবং তাহারা তাঁহার প্রাণদণ্ড বিধান করিবে, এবং পরজাতীয়দের হস্তে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে। আর তাহারা তাঁহাকে বিদ্রূপ করিবে, তাঁহার মুখে থুথু দিবে, তাঁহাকে কোড়া মারিবে ও বধ করিবে; আর তিন দিন পরে তিনি আবার উঠিবেন। পরে সিবদিয়ের দুই পুত্র, যাকোব ও যোহন, তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, হে গুরু, আমাদের বাঞ্ছা এই, আমরা আপনার কাছে যাহা যাচ্ঞা করিব, আপনি তাহা আমাদের জন্য করুন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের বাঞ্ছা কি? তোমাদের নিমিত্ত আমি কি করিব? তাঁহারা কহিলেন, আমাদিগকে এই বর দান করুন, যেন আপনি মহিমাপ্রাপ্ত হইলে আমরা এক জন আপনার দক্ষিণ পার্শ্বে, আর এক জন বাম পার্শ্বে বসিতে পাই। যীশু তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমরা কি যাচ্ঞা করিতেছ, তাহা বুঝ না। আমি যে পাত্রে পান করি, তাহাতে কি তোমরা পান করিতে পার, এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হই, তাহাতে কি তোমরা বাপ্তাইজিত হইতে পার? তাঁহারা বলিলেন, পারি। যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি যে পাত্রে পান করি, তাহাতে তোমরা পান করিবে; এবং আমি যে বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হই, তাহাতে তোমরাও বাপ্তাইজিত হইবে; কিন্তু যাহাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহাদের ভিন্ন আর কাহাকেও আমার দক্ষিণ পার্শ্বে কি বাম পার্শ্বে বসিতে দিতে আমার অধিকার নাই। এই কথা শুনিয়া অন্য দশ জন যাকোব ও যোহনের প্রতি রুষ্ট হইতে লাগিলেন। কিন্তু যীশু তাঁহাদিগকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, তোমরা জান, জাতিগণের মধ্যে যাহারা শাসনকর্ত্তা বলিয়া গণ্য, তাহারা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের মধ্যে যাহারা মহান্‌, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। তোমাদের মধ্যে সেরূপ নয়; কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেহ মহান্‌ হইতে চায়, সে তোমাদের পরিচারক হইবে; এবং তোমাদের মধ্যে যে কেহ প্রধান হইতে চায়, সে সকলের দাস হইবে। কারণ বাস্তবিক মনুষ্যপুত্রও পরিচর্য্যা পাইতে আসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন। পরে তাঁহারা যিরীহোতে আসিলেন। আর তিনি যখন আপন শিষ্যগণের ও বিস্তর লোকের সহিত যিরীহো হইতে বাহির হইয়া যাইতেছেন, তখন তীময়ের পুত্র বর্‌তীময় নামে এক জন অন্ধ ভিক্ষুক পথের পার্শ্বে বসিয়াছিল। সে যখন শুনিতে পাইল, তিনি নাসরতীয় যীশু, তখন চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে যীশু, দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। তখন অনেক লোক চুপ চুপ বলিয়া তাহাকে ধমক্‌ দিল; কিন্তু সে আরও অধিক চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। তখন যীশু থামিয়া বলিলেন, উহাকে ডাক; তাহাতে লোকেরা সেই অন্ধকে ডাকিয়া বলিল, ওহে, সাহস কর, উঠ, উনি তোমাকে ডাকিতেছেন। তখন সে আপনার কাপড় ফেলিয়া লম্ফ দিয়া উঠিয়া যীশুর নিকটে গেল। যীশু তাহাকে কহিলেন, তুমি কি চাও? আমি তোমার নিমিত্ত কি করিব? অন্ধ তাঁহাকে কহিল, রব্বূণী [হে গুরু], যেন দেখিতে পাই। যীশু তাহাকে কহিলেন, চলিয়া যাও, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল। তখনই সে দেখিতে পাইল, এবং পথ দিয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিতে লাগিল। পরে যখন তাঁহারা যিরূশালেমের নিকটবর্ত্তী হইয়া হইয়া জৈতুন পর্ব্বতে বৈৎফগী ও বৈথনিয়া গ্রামে আসিলেন, তখন তিনি আপন শিষ্যদের মধ্যে দুই জনকে পাঠাইয়া দিলেন, তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের সম্মুখে ঐ গ্রামে যাও; তথায় প্রবেশ করিবামাত্র একটী গর্দ্দভশাবক বাঁধা দেখিতে পাইবে, যাহার উপরে কোন মানুষ কখনও বসে নাই; সেটীকে খুলিয়া আন। আর যদি কেহ তোমাদিগকে বলে, এ কর্ম্ম কেন করিতেছ? তবে বলিও, ইহাতে প্রভুর প্রয়োজন আছে; তাহাতে সে তৎক্ষণাৎ সেটীকে এখানে পাঠাইয়া দিবে। তখন তাঁহারা গিয়া দেখিতে পাইলেন, একটী গর্দ্দভশাবক কোন দ্বারের নিকটে, বাহিরে বাঁধা রহিয়াছে, আর তাহা খুলিতে লাগিলেন। তাহাতে যাহারা সেখানে দাঁড়াইয়া ছিল, তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ বলিল, গর্দ্দভশাবকটী খুলিয়া কি করিতেছ? তাহাতে যীশু যেমন বলিয়াছিলেন, তাঁহারা উহাদিগকে সেই মত বলিলেন, আর উহারা তাঁহাদিগকে উহা লইয়া যাইতে দিল। পরে তাঁহারা সেই গর্দ্দভশাবককে যীশুর নিকটে আনিয়া তাহার উপরে আপনাদের কাপড় পাতিয়া দিলেন; আর তিনি তাহার উপরে বসিলেন। তখন অনেকে আপন আপন বস্ত্র পথে পাতিয়া দিল ও অন্যেরা ক্ষেত্র হইতে ডালপালা কাটিয়া পথে ছড়াইয়া দিল। আর যে সকল লোক অগ্রে ও পশ্চাতে যাইতেছিল, তাহারা উচ্চৈঃস্বরে কহিতে লাগিল, হোশান্না! ধন্য তিনি, যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন! ধন্য যে রাজ্য আসিতেছে, আমাদের পিতা দায়ূদের রাজ্য; ঊর্দ্ধলোকে হোশান্না। পরে তিনি যিরূশালেমে প্রবেশ করিয়া ধর্ম্মধামে গেলেন, আর চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিয়া সকলই দেখিয়া বেলা অবসান হওয়াতে সেই বারো জনের সঙ্গে বাহির হইয়া বৈথনিয়াতে গমন করিলেন। পরদিবসে তাঁহারা বৈথনিয়া হইতে বাহির হইয়া আসিলে পর তিনি ক্ষুধার্ত্ত হইলেন; এবং দূর হইতে সপত্র এক ডুমুরগাছ দেখিয়া, হয় ত তাহা হইতে কিছু ফল পাইবেন বলিয়া, কাছে গেলেন; কিন্তু নিকটে গেলে পত্র বিনা আর কিছুই দেখিতে পাইলেন না; কেননা তখন ডুমুরফলের সময় ছিল না। তিনি গাছটীকে বলিলেন, এখন অবধি কেহ কখনও তোমার ফল ভোজন না করুক। এ কথা তাঁহার শিষ্যেরা শুনিতে পাইলেন। পরে তাঁহারা যিরূশালেমে আসিলেন, আর তিনি ধর্ম্মধামের মধ্য গিয়া, যাহারা ধর্ম্মধামের মধ্যে ক্রয় বিক্রয় করিতেছিল, তাহাদিগকে বাহির করিয়া দিতে লাগিলেন, এবং পোদ্দারদের মেজ, ও যাহারা কপোত বিক্রয় করিতেছিল, তাহাদের আসন সকল উল্টাইয়া ফেলিলেন। আর ধর্ম্মধামের মধ্য দিয়া কাহাকেও কোন পাত্র লইয়া যাইতে দিলেন না। আর তিনি উপদেশ দিয়া তাহাদিগকে বলিলেন, ইহা কি লেখা নাই, “আমার গৃহকে সর্ব্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ বলা যাইবে”? কিন্তু তোমরা ইহা “দস্যুগণের গহ্বর” করিয়াছ। এ কথা শুনিয়া প্রধান যাজক ও অধ্যাপকেরা, কিরূপে তাঁহাকে বিনষ্ট করিবে, তাহারই চেষ্টা দেখিতে লাগিল; কেননা তাহারা তাঁহাকে ভয় করিত, কারণ তাঁহার উপদেশে সমস্ত লোক চমৎকৃত হইয়াছিল। আর সন্ধ্যা হইলে তাঁহারা নগরের বাহিরে যাইতেন। প্রাতঃকালে তাঁহারা যাইতে যাইতে দেখিলেন, সেই ডুমুরগাছটী সমূলে শুকাইয়া গিয়াছে। তখন পিতর পূর্ব্বকথা স্মরণ করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, রব্বি, দেখুন, আপনি যে ডুমুরগাছটীকে শাপ দিয়াছিলেন, সেটী শুকাইয়া গিয়াছে। যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখ। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে কেহ এই পর্ব্বতকে বলে, ‘উপড়িয়া যাও, আর সমুদ্রে গিয়া পড়,’ এবং মনে মনে সন্দেহ না করে, কিন্তু বিশ্বাস করে যে, যাহা বলে তাহা ঘটিবে, তবে তাহার জন্য তাহাই হইবে। এই জন্য আমি তোমাদিগকে বলি, যাহা কিছু তোমরা প্রার্থনা ও যাচ্ঞা কর, বিশ্বাস করিও যে, তাহা পাইয়াছ, তাহাতে তোমাদের জন্য তাহাই হইবে। আর তোমরা যখনই প্রার্থনা করিতে দাঁড়াও, যদি কাহারও বিরুদ্ধে তোমাদের কোন কথা থাকে, তাহাকে ক্ষমা করিও; যেন তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা ও তোমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা করেন। পরে তাঁহারা আবার যিরূশালেমে আসিলেন; আর তিনি ধর্ম্মধামের মধ্যে বেড়াইতেছেন, এমন সময়ে প্রধান যাজকেরা, অধ্যাপকগণ ও প্রাচীনবর্গ তাঁহার নিকটে আসিয়া তাঁহাকে বলিল, তুমি কি ক্ষমতায় এই সকল করিতেছ? এ সকল করিতে তোমাকে এই ক্ষমতা কেই বা দিয়াছে? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, আমিও তোমাদিগকে একটী কথা জিজ্ঞাসা করিব, আমাকে উত্তর দেও, তাহা হইলে আমি তোমাদিগকে বলিব, কি ক্ষমতায় এ সকল করিতেছি। যোহনের বাপ্তিস্ম স্বর্গ হইতে হইয়াছিল, না মানুষ হইতে? আমাকে উত্তর দেও। তখন তাহারা পরস্পর বিচার করিয়া বলিল, যদি বলি, স্বর্গ হইতে, তাহা হইলে এ বলিবে, তবে তোমরা তাঁহাকে বিশ্বাস কর নাই কেন? কিন্তু মানুষ হইতে হইল, ইহা কি বলিব? তাহারা লোকসাধারণকে ভয় করিত, কারণ সকলে যোহনকে সত্যই ভাববাদী বলিয়া মানিত। অতএব তাহারা যীশুকে এই উত্তর দিল, আমরা জানি না। তখন যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, তবে আমিও কি ক্ষমতায় এ সকল করিতেছি, তাহা তোমাদিগকে বলিব না। পরে তিনি দৃষ্টান্ত দ্বারা তাহাদের কাছে কথা কহিতে লাগিলেন। এক ব্যক্তি দ্রাক্ষাক্ষেত্র করিয়া তাহার চারিদিকে বেড়া দিলেন, দ্রাক্ষা পেষণার্থ কুণ্ড খনন করিলেন, এবং উচ্চগৃহ নির্ম্মাণ করিলেন; আর কৃষকদিগকে তাহা জমা দিয়া অন্য দেশে চলিয়া গেলেন। পরে কৃষকদের কাছে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের ফলের অংশ পাইবার নিমিত্ত তাহাদের নিকটে উপযুক্ত সময়ে এক দাসকে পাঠাইয়া দিলেন; তাহারা তাহাকে ধরিয়া প্রহার করিল, ও রিক্তহস্তে বিদায় করিয়া দিল। আবার তিনি তাহাদের নিকটে আর এক দাসকে পাঠাইলেন; তাহারা তাহার মাথা ভাঙ্গিয়া দিল ও অপমান করিল। পরে তিনি আর এক জনকে পাঠাইলেন; তাহারা তাহাকে বধ করিল; এবং আর আর অনেকের মধ্যে কাহাকেও প্রহার, কাহাকেও বা বধ করিল। তখন তাঁহার আর এক জন মাত্র ছিলেন, তিনি প্রিয়তম পুত্র; তিনি তাহাদের নিকটে শেষে তাঁহাকেই পাঠাইলেন, বলিলেন, তাহারা আমার পুত্রকে সমাদর করিবে। কিন্তু কৃষকেরা পরস্পর বলিল, এই ত উত্তরাধিকারী, আইস, আমরা ইহাকে বধ করি, তাহাতে অধিকার আমাদেরই হইবে। পরে তাহারা তাঁহাকে ধরিয়া বধ করিল, এবং দ্রাক্ষাক্ষেত্রের বাহিরে ফেলিয়া দিল। সেই দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্ত্তা কি করিবেন? তিনি আসিয়া সেই কৃষকদিগকে বিনষ্ট করিবেন, এবং ক্ষেত্র অন্য লোকদিগকে দিবেন। তোমরা কি এই শাস্ত্রীয় বচনও পাঠ কর নাই, “যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল; ইহা প্রভু হইতেই হইয়াছে, ইহা আমাদের দৃষ্টিতে অদ্ভুদ”? তখন তাহারা তাঁহাকে ধরিতে চেষ্টা করিল, —কিন্তু লোকসাধারণকে ভয় করিল, —কেননা তাহারা বুঝিয়াছিল যে, তিনি তাহাদেরই বিষয়ে সেই দৃষ্টান্ত বলিয়াছিলেন; পরে তাহারা তাঁহাকে পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গেল। পরে তাহারা কয়েক জন ফরীশী ও হেরোদীয়কে তাঁহার নিকটে পাঠাইয়া দিল, যেন তাহারা তাঁহাকে কথার ফাঁদে ধরিতে পারে। তাহারা আসিয়া তাঁহাকে কহিল, গুরো, আমরা জানি, আপনি সত্য, এবং কাহারও বিষয়ে ভীত নহেন; কারণ আপনি মনুষ্যের মুখাপেক্ষা করেন না, কিন্তু সত্যরূপে ঈশ্বরের পথের বিষয় শিক্ষা দিতেছেন; কৈসরকে কর দেওয়া বিধেয় কি না? আমরা দিব, কি না দিব? তিনি তাহাদের কপটতা বুঝিয়া কহিলেন, আমার পরীক্ষা কেন করিতেছ? একটী দীনার মুদ্রা আনিয়া দেও, আমি দেখি। তাহারা আনিল; তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, এই মূর্ত্তি ও এই নাম কাহার? তাহারা বলিল, কৈসরের। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও। তখন তাহারা তাঁহার বিষয়ে অতিশয় আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল। পরে সদ্দূকীরা —যাহারা বলে, পুনরুত্থান নাই—তাঁহার কাছে আসিল, এবং তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, গুরো, মোশি আমাদের জন্য লিখিয়াছেন, কাহারও ভ্রাতা যদি স্ত্রী রাখিয়া মরিয়া যায়, আর তাহার সন্তান না থাকে, তবে তাহার ভাই তাহার স্ত্রীকে বিবাহ করিয়া আপন ভাইয়ের জন্য বংশ উৎপন্ন করিবে। ভাল, সাতটী ভাই ছিল; প্রথম জন একটী স্ত্রীকে বিবাহ করিল, আর সে সন্তান না রাখিয়া মরিয়া গেল। পরে দ্বিতীয় জন তাহাকে বিবাহ করিল, কিন্তু সেও সন্তান না রাখিয়া মরিল; তৃতীয় জনও তদ্রূপ। এইরূপে সাত জনই কোন সন্তান রাখিয়া যায় নাই; সকলের শেষে সে স্ত্রীও মরিয়া গেল। পুনরুত্থানে, যখন তাহারা উঠিবে, সে তাহাদের মধ্যে কাহার স্ত্রী হইবে? তাহারা সাত জনই ত তাহাকে বিবাহ করিয়াছিল। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, ইহাই কি তোমাদের ভ্রান্তির কারণ নয় যে, তোমরা না জান শাস্ত্র, না জান ঈশ্বরের পরাক্রম? মৃতদের মধ্য হইতে উঠিলে পর লোকেরা ত বিবাহ করে না, এবং বিবাহিতাও হয় না, বরং স্বর্গে দূতগণের ন্যায় থাকে। কিন্তু মৃতদের বিষয়ে, তাহারা যে উত্থিত হয়, এই বিষয়ে মোশির গ্রন্থে ঝোপের বৃত্তান্তে ঈশ্বর তাঁহাকে কিরূপ বলিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা পাঠ কর নাই? তিনি বলিয়াছিলেন, “আমি অব্রাহামের ঈশ্বর ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর।” তিনি মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের। তোমরা বড়ই ভ্রান্তিতে পড়িয়াছ। আর অধ্যাপকদের এক জন নিকটে আসিয়া তাঁহাদিগকে তর্ক বিতর্ক করিতে শুনিয়া, এবং যীশু তাঁহাদিগকে বিলক্ষণ উত্তর দিয়াছেন জানিয়া, তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, সকল আজ্ঞার মধ্যে কোন্‌টী প্রথম? যীশু উত্তর করিলেন, প্রথমটী এই, “হে ইস্রায়েল, শুন; আমাদের ঈশ্বর প্রভু একই প্রভু; আর তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।” দ্বিতীয়টী এই, “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” এই দুই আজ্ঞা হইতে বড় আর কোন আজ্ঞা নাই। অধ্যাপক তাঁহাকে কহিল, বেশ, গুরু, আপনি সত্য বলিয়াছেন যে, তিনি এক, এবং তিনি ব্যতীত অন্য নাই; আর সমস্ত অন্তঃকরণ, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়া তাঁহাকে প্রেম করা এবং প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করা সমস্ত হোম ও বলিদান হইতে শ্রেষ্ঠ। তখন সে বুদ্ধিপূর্ব্বক উত্তর দিয়াছে দেখিয়া যীশু তাহাকে কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্য হইতে তুমি দূরবর্ত্তী নও। ইহার পরে তাঁহাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে আর কাহারও সাহস হইল না। আর ধর্ম্মধামে উপদেশ দিবার সময়ে যীশু প্রসঙ্গ করিয়া বলিলেন, অধ্যাপকেরা কেমন করিয়া বলে যে, খ্রীষ্ট দায়ূদের সন্তান? দায়ূদ নিজেই ত পবিত্র আত্মার আবেশে এই কথা কহিয়াছেন, “প্রভু আমার প্রভুকে কহিলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ তোমার শত্রুগণকে তোমার পদতলে না রাখি।” দায়ূদ নিজেই তাঁহাকে প্রভু বলেন, তবে তিনি কিরূপে তাঁহার সন্তান হইলেন? আর সাধারণ লোকে আনন্দপূর্ব্বক তাঁহার কথা শুনিত। আর তিনি আপন উপদেশের মধ্যে তাহাদিগকে বলিলেন, অধ্যাপকদের হইতে সাবধান, তাহারা লম্বা লম্বা কাপড় পরিয়া বেড়াইতে চায়, এবং হাট বাজারে লোকদের মঙ্গলবাদ, সমাজ-গৃহে প্রধান প্রধান আসন এবং ভোজে প্রধান প্রধান স্থান ভাল বাসে। এই যে লোকেরা বিধবাদের বাড়ীশুদ্ধ গ্রাস করে, আর ছলে লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে, ইহারা বিচারে আরও অধিক দণ্ড পাইবে। আর তিনি ভাণ্ডারের সম্মুখে বসিয়া, লোকেরা ভাণ্ডারের মধ্যে কিরূপে মুদ্রা রাখিতেছে, তাহা দেখিতেছিলেন। তখন অনেক ধনবান্‌ তাহার মধ্যে বিস্তর মুদ্রা রাখিল। পরে একটী দরিদ্রা বিধবা আসিয়া দুইটী ক্ষুদ্র মুদ্রা তাহাতে রাখিল, যাহার মূল্য সিকি পয়সা। তখন তিনি আপন শিষ্যগণকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, ভাণ্ডারে যাহারা মুদ্রা রাখিতেছে, তাহাদের সকল অপেক্ষা এই দরিদ্রা বিধবা অধিক রাখিল; কেননা অন্য সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু রাখিয়াছে, কিন্তু এ নিজ অনাটন হইতে, যাহা কিছু ছিল, সমস্ত জীবনোপায় রাখিল। পরে ধর্ম্মধাম হইতে বাহিরে যাইবার সময়ে তাঁহার শিষ্যগণের মধ্যে এক জন তাঁহাকে কহিলেন, হে গুরু, দেখুন, কেমন পাথর ও কেমন গাঁথনি! যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি কি এই সকল বড় বড় গাঁথনি দেখিতেছ? ইহার একখানি পাথর আর একখানি পাথরের উপরে থাকিবে না, সকলই ভূমিসাৎ হইবে। পরে তিনি জৈতুন পর্ব্বতে ধর্ম্মধামের সম্মুখে বসিলে পিতর, যাকোব, যোহন ও আন্দ্রিয় বিরলে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমাদিগকে বলুন দেখি, এই সকল ঘটনা কখন্‌ হইবে? আর এই সমস্তের সিদ্ধি নিকটবর্ত্তী হইবার চিহ্নই বা কি? যীশু তাঁহাদিগকে বলিতে লাগিলেন, দেখিও, কেহ যেন তোমাদিগকে না ভুলায়। অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, আমিই সেই, আর অনেক লোককে ভুলাইবে। কিন্তু তোমরা যখন যুদ্ধের কথা ও যুদ্ধের জনরব শুনিবে, তখন ব্যাকুল হইও না; এ সকল অবশ্যই ঘটিবে, কিন্তু তখনও শেষ নয়। কারণ জাতির বিপক্ষে জাতি, ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে। স্থানে স্থানে ভূমিকম্প হইবে; দুর্ভিক্ষ হইবে; এ সকল যাতনার আরম্ভমাত্র। তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান। লোকে তোমাদিগকে বিচার-সভায় সমর্পণ করিবে, এবং তোমরা সমাজ-গৃহে প্রহারিত হইবে; আর আমার জন্য তোমরা দেশাধ্যক্ষ ও রাজাদের কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত তাহাদের সম্মুখে দাঁড়াইবে। আর অগ্রে সর্ব্বজাতির কাছে সুসমাচার প্রচারিত হওয়া আবশ্যক। কিন্তু লোকে যখন তোমাদিগকে সমর্পণ করিতে লইয়া যাইবে, তখন কি বলিবে, অগ্রে সে জন্য ভাবিত হইও না; বরং সেই দণ্ডে যে কথা তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে, তাহাই বলিও; কেননা তোমরাই যে কথা বলিবে, তাহা নয়, কিন্তু পবিত্র আত্মাই বলিবেন। তখন ভ্রাতা ভ্রাতাকে ও পিতা সন্তানকে মৃত্যুতে সমর্পণ করিবে; এবং সন্তানেরা আপন আপন মাতাপিতার বিপক্ষে উঠিয়া তাহাদিগকে বধ করাইবে। আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে; কিন্তু যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে। পরন্তু যখন তোমরা দেখিবে, ধ্বংসের সেই ঘৃণার্হ বস্তু যেখানে দাঁড়াইবার নয়, সেইখানে দাঁড়াইয়া আছে—যে পাঠ করে, সে বুঝুক, —তখন যাহারা যিহূদিয়াতে থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক; এবং যে কেহ ছাদের উপরে থাকে, সে গৃহ হইতে জিনিষপত্র লইবার জন্য নীচে না নামুক ও তাহার মধ্যে প্রবেশ না করুক; এবং যে কেহ ক্ষেত্রে থাকে, সে আপন বস্ত্র লইবার নিমিত্ত পশ্চাতে ফিরিয়া না যাউক। হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী এবং স্তন্যদাত্রী নারীদের সন্তাপ! আর প্রার্থনা করিও, যেন ইহা শীতকালে না হয়। কেননা তৎকালে এরূপ ক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ ক্লেশ ঈশ্বরের কৃত সৃষ্টির আদি অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখন হইবেও না। আর প্রভু যদি সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া না দিতেন, তবে কোন প্রাণীই রক্ষা পাইত না; কিন্তু তিনি যাহাদিগকে মনোনীত করিয়াছেন, সেই মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমাইয়া দিলেন। আর তৎকালে যদি কেহ তোমাদিগকে বলে, দেখ, সেই খ্রীষ্ট এখানে, কিম্বা দেখ, ওখানে, তোমরা বিশ্বাস করিও না। কেননা ভাক্ত খ্রীষ্টেরা ও ভাক্ত ভাববাদীরা উঠিবে, এবং নানা চিহ্ন ও অদ্ভুদ লক্ষণ দেখাইবে, যেন, যদি হইতে পারে, তবে মনোনীতদিগকেও ভুলায়। কিন্তু তোমরা সাবধান থাকিও। দেখ, আমি পূর্ব্বেই তোমাদিগকে সকলই জানাইলাম। আর সেই সময়ে, সেই ক্লেশের পরে, সূর্য্য অন্ধকার হইবে, চন্দ্র জ্যোৎস্না দিবে না, আকাশ হইতে তারাগণের পতন হইবে, ও আকাশমণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে। আর তখন লোকেরা দেখিবে, মনুষ্যপুত্র মহাপরাক্রম ও প্রতাপের সহিত মেঘযোগে আসিতেছেন। তখন তিনি দূতগণকে প্রেরণ করিয়া পৃথিবীর সীমা অবধি আকাশের সীমা পর্য্যন্ত চারি বায়ু হইতে তাঁহার মনোনীতদিগকে একত্র করিবেন। আর ডুমুরগাছ হইতে দৃষ্টান্ত শিখ; যখন তাহার শাখা কোমল হইয়া পত্র বাহির করে, তখন তোমরা জানিতে পাও গ্রীষ্মকাল সন্নিকট; সেইরূপ তোমরা ঐ সকল ঘটনা দেখিলেই জানিতে পাইবে, তিনি সন্নিকট, এমন কি, দ্বারে উপস্থিত। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে পর্য্যন্ত এ সমস্ত সিদ্ধ না হইবে, সে পর্য্যন্ত এই কালের লোকদের লোপ হইবে না। আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হইবে, কিন্তু আমার বাক্যের লোপ কখনও হইবে না। কিন্তু সেই দিনের বা সেই দণ্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না; স্বর্গস্থ দূতগণও জানেন না, পুত্রও জানেন না, কেবল পিতা জানেন। সাবধান, তোমরা জাগিয়া থাকিও ও প্রার্থনা করিও; কেননা সে সময় কবে হইবে, তাহা জান না। কোন ব্যক্তি যেন আপন বাটী ছাড়িয়া বিদেশে গিয়া প্রবাস করিতেছেন; আর তিনি আপন দাসদিগকে ক্ষমতা দিয়াছেন, প্রত্যেকের কার্য্য নিরূপণ করিয়া দিয়াছেন, এবং দ্বারীকে জাগিয়া থাকিতে আদেশ করিয়াছেন। অতএব তোমরা জাগিয়া থাকিও, কেননা গৃহের কর্ত্তা কখন আসিবেন, কি সন্ধ্যাকালে, কি দুই প্রহর রাত্রিতে, কি কুকুড়াডাকের সময়ে, কি প্রাতঃকালে, তোমরা তাহা জান না; তিনি হঠাৎ আসিয়া যেন তোমাদিগকে নিদ্রিত না দেখিতে পান। আর আমি তোমাদিগকে যাহা বলিতেছি, তাহাই সকলকে বলি, জাগিয়া থাকিও। দুই দিন পরে নিস্তারপর্ব্ব ও তাড়ীশূন্য রুটীর পর্ব্ব; এমন সময়ে প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা, কিরূপে তাঁহাকে কৌশলে ধরিয়া বধ করিতে পারে, তাহারই চেষ্টা করিতেছিল। কেননা তাহারা বলিল, পর্ব্বের সময়ে নয়, পাছে লোকদের মধ্যে গণ্ডগোল হয়। যীশু যখন বৈথনিয়াতে কুষ্ঠী শিমোনের বাটীতে ছিলেন, তখন তিনি ভোজনে বসিলে একটী স্ত্রীলোক শ্বেত প্রস্তরের পাত্রে বহুমূল্য আসল জটামাংসীর তৈল লইয়া আসিল; সে পাত্রটী ভাঙ্গিয়া তাঁহার মস্তকে তৈল ঢালিয়া দিল। কিন্তু উপস্থিত কোন কোন ব্যক্তি বিরক্ত হইয়া পরস্পর কহিল, তৈলের এরূপ অপব্যয় হইল কেন? এই তৈল ত বিক্রয় করিলে তিন শত সিকিরও অধিক পাওয়া যাইত, এবং তাহা দরিদ্রদিগকে দিতে পারা যাইত। আর তাহারা সেই স্ত্রীলোকটীর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করিল। কিন্তু যীশু কহিলেন, ইহাকে থাকিতে দেও, কেন ইহাকে দুঃখ দিতেছ? এ আমার প্রতি সৎকার্য্য করিল। কেননা দরিদ্রেরা তোমাদের কাছে সর্ব্বদাই আছে; তোমরা যখন ইচ্ছা কর, তাহাদের উপকার করিতে পার; কিন্তু আমাকে সর্ব্বদা পাইবে না। এ যাহা করিতে পারিত, তাহাই করিল; অগ্রে আসিয়া সমাধির উপলক্ষে আমার দেহে সুগন্ধি তৈল ঢালিয়া দিল। আর আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, সমুদয় জগতে যে কোন স্থানে সুসমাচার প্রচারিত হইবে, সেই স্থানে ইহার স্মরণার্থে ইহার এই কর্ম্মের কথাও বলা যাইবে। পরে ইষ্করিয়োতীয় যিহূদা, সেই বারো জনের মধ্যে এক জন, প্রধান যাজকদের নিকটে গেল, যেন তাহাদের হস্তে যীশুকে সমর্পণ করিতে পারে। তাহারা শুনিয়া আনন্দিত হইল, এবং তাহাকে টাকা দিতে স্বীকার করিল; তখন সে কোন্‌ সুযোগে তাঁহাকে সমর্পণ করিবে, তাহারই চেষ্টা করিতে লাগিল। তাড়ীশূন্য রুটীর পর্ব্বের প্রথম দিন, যে দিন নিস্তারপর্ব্বের মেষশাবক বলিদান করা হইত, সেই দিন তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে বলিলেন, আমরা কোথায় গিয়া আপনার জন্য নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করিব? আপনার ইচ্ছা কি? তখন তিনি আপন শিষ্যদের মধ্যে দুই জনকে পাঠাইয়া দিলেন, বলিলেন, তোমরা নগরে যাও, এমন এক ব্যক্তি তোমাদের সম্মুখে পড়িবে, যে এক কলশী জল লইয়া আসিতেছে; তাহারই পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইও; আর সে যে বাটীতে প্রবেশ করে, সেই বাটীর কর্ত্তাকে বলিও, গুরু বলিতেছেন, যেখানে আমি আমার শিষ্যগণের সহিত নিস্তারপর্ব্বের ভোজ ভোজন করিতে পারি, আমার সেই অতিথিশালা কোথায়? তাহাতে সে ব্যক্তি তোমাদিগকে উপরের একটী সাজান বড় কুঠরী দেখাইয়া দিবে, সেই স্থানে আমাদের জন্য প্রস্তুত করিও। পরে শিষ্যেরা প্রস্থান করিয়া নগরে গেলেন, আর তিনি যেরূপ বলিয়াছিলেন, সেইরূপ দেখিতে পাইলেন; পরে তাঁহারা নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করিলেন। পরে সন্ধ্যা হইলে তিনি সেই বারো জনের সহিত উপস্থিত হইলেন। তাঁহারা বসিয়া ভোজন করিতেছেন, এমন সময়ে যীশু বলিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তোমাদের এক জন আমাকে সমর্পণ করিবে, সে আমার সহিত ভোজন করিতেছে। তখন তাঁহারা দুঃখিত হইলেন, এবং একে একে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, সে কি আমি? তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, এই বারো জনের মধ্যে এক জন, যে আমার সঙ্গে ভোজনপাত্রে হাত ডুবাইতেছে, সেই। কেননা মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে যেমন লিখিত আছে, তেমনি তিনি যাইতেছেন; কিন্তু ধিক্‌ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা মনুষ্যপুত্র সমর্পিত হন। সেই মানুষের জন্ম না হইলে তাহার পক্ষে ভালই ছিল। তাঁহারা ভোজন করিতেছেন, এমন সময়ে তিনি রুটী লইয়া আশীর্ব্বাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন এবং তাঁহাদিগকে দিলেন, আর কহিলেন, তোমরা লও, ইহা আমার শরীর। পরে তিনি পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে দিলেন, এবং তাঁহারা সকলেই তাহা হইতে পান করিলেন। আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত, যাহা অনেকের জন্য পাতিত হয় । আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে দিন আমি ঈশ্বরের রাজ্যে ইহা নূতন পান করিব, সেই দিন পর্য্যন্ত আমি দ্রাক্ষাফলের রস আর কখনও পান করিব না। পরে তাঁহারা গীত গান করিয়া বাহির হইয়া জৈতুন পর্ব্বতে গেলেন। তখন যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা সকলে বিঘ্ন পাইবে; কেননা লেখা আছে, “আমি পালরক্ষককে আঘাত করিব, তাহাতে মেষেরা ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িবে।” কিন্তু উঠিলে পর আমি তোমাদের অগ্রে গালীলে যাইব। পিতর তাঁহাকে কহিলেন, যদিও সকলে বিঘ্ন পায়, তথাপি আমি পাইব না। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য কহিতেছি, তুমিই আজ, এই রাত্রিতে, কুকুড়া দুইবার ডাকিবার পূর্ব্বে, তিন বার আমাকে অস্বীকার করিবে। কিন্তু তিনি অতিরিক্ত ব্যগ্রতা সহকারে বলিতে লাগিলেন, যদি আপনার সহিত মরিতেও হয়, কোন মতে আপনাকে অস্বীকার করিব না। অন্য সকলেও অদ্রূপ কহিলেন। পরে তাঁহারা গেৎশিমানী নামক এক স্থানে আসিলেন; আর তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, আমি যতক্ষণ প্রার্থনা করি, তোমরা এখানে বসিয়া থাক। পরে তিনি পিতর, যাকোব ও যোহনকে সঙ্গে লইয়া গেলেন, এবং অত্যন্ত বিস্ময়াপন্ন ও উৎকণ্ঠিত হইতে লাগিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমার প্রাণ মরণ পর্য্যন্ত দুঃখার্ত্ত হইয়াছে; তোমরা এখানে থাক, আর জাগিয়া থাক। পরে তিনি কিঞ্চিৎ অগ্রে গিয়া ভূমিতে পড়িলেন, এবং এই প্রার্থনা করিলেন, যদি হইতে পারে, তবে যেন সেই সময় তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া যায়। তিনি কহিলেন, আব্বা, পিতঃ, সকলই তোমার সাধ্য; আমার নিকট হইতে এই পানপাত্র দূর কর; তথাপি আমার ইচ্ছামত না হউক, তোমার ইচ্ছামত হউক। পরে তিনি আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, আর তিনি পিতরকে কহিলেন, শিমোন, তুমি কি ঘুমাইয়া পড়িয়াছ? এক ঘন্টাও কি জাগিয়া থাকিতে তোমার শক্তি হইল না? তোমরা জাগিয়া থাক ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়; আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল। আর তিনি পুনরায় গিয়া সেই কথা বলিয়া প্রার্থনা করিলেন। পরে তিনি আবার আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন; কারণ তাঁহাদের চক্ষু বড়ই ভারী হইয়া পড়িয়াছিল, আর তাঁহাকে কি উত্তর দিবেন, তাহা তাঁহারা বুঝিতে পারিলেন না; পরে তিনি তৃতীয় বার আসিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, এখন তোমরা নিদ্রা যাও, বিশ্রাম কর; যথেষ্ট হইয়াছে; সময় উপস্থিত, দেখ, মনুষ্যপুত্র পাপীদের হস্তে সমর্পিত হন। উঠ, আমরা যাই; এই দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করিতেছে, সে নিকটে আসিয়াছে। আর তিনি যখন কথা কহিতেছেন, তৎক্ষণাৎ যিহূদা, সেই বারো জনের এক জন, আসিল, এবং তাহার সঙ্গে অনেক লোক খড়গ ও যষ্টি লইয়া প্রধান যাজকদের, অধ্যাপকগণের ও প্রাচীনবর্গের নিকট হইতে আসিল। যে তাঁহাকে সমর্পণ করিতেছিল, সে পূর্ব্বে তাহাদিগকে এই সঙ্কেত বলিয়াছিল, আমি যাহাকে চুম্বন করিব, সেই ঐ ব্যক্তি, তোমরা তাহাকে ধরিয়া সাবধানে লইয়া যাইবে। সে আসিয়া তৎক্ষণাৎ তাঁহার নিকটে গিয়া বলিল, রব্বি; আর তাঁহাকে আগ্রহপূর্ব্বক চুম্বন করিল। তখন তাহারা তাঁহার উপরে হস্তক্ষেপ করিয়া তাঁহাকে ধরিল। কিন্তু যাহারা পার্শ্বে দাঁড়াইয়াছিল, তাহাদের মধ্যে এক জন আপন খড়গ খুলিয়া মহাযাজকের দাসকে আঘাত করিল, তাহার একটী কাণ কাটিয়া ফেলিল। তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, যেমন দস্যু ধরিতে যায়, তেমনি কি তোমরা খড়গ ও যষ্টি লইয়া আমাকে ধরিতে আসিলে? আমি প্রতিদিন ধর্ম্মধামে তোমাদের নিকটে থাকিয়া উপদেশ দিয়াছি, তখন ত আমায় ধরিলে না; কিন্তু শাস্ত্রের বচনগুলি সফল হওয়া আবশ্যক। তখন শিষ্যেরা সকলে তাঁহাকে ছাড়িয়া পলাইয়া গেলেন। আর, এক জন যুবক উলঙ্গ শরীরে একখানি চাদর জড়াইয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিতে লাগিল; তাহারা তাহাকে ধরিল, কিন্তু সে সেই চাদরখানি ফেলিয়া উলঙ্গই পলায়ন করিল। পরে তাহারা যীশুকে মহাযাজকের নিকটে লইয়া গেল; তাঁহার সঙ্গে প্রধান যাজকগণ, প্রাচীনবর্গ ও অধ্যাপকেরা সকলে সমবেত হইল। আর পিতর দূরে থাকিয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ভিতরে, মহাযাজকের প্রাঙ্গণ পর্য্যন্ত গেলেন, এবং পদাতিকদের সহিত বসিয়া আগুন পোহাইতে লাগিলেন। তখন প্রধান যাজকগণ ও সমস্ত মহাসভা যীশুকে বধ করিবার জন্য তাঁহার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য অন্বেষণ করিল, কিন্তু পাইল না। কেননা অনেকে তাঁহার বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষ্য দিল বটে, কিন্তু তাহাদের সাক্ষ্য মিলিল না। পরে কএক জন দাঁড়াইয়া তাঁহার বিপক্ষে মিথ্যাসাক্ষ্য দিয়া কহিল, আমরা উহাকে এই কথা বলিতে শুনিয়াছি, আমি এই হস্তকৃত মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেলিব, আর তিন দিনের মধ্যে অহস্তকৃত আর এক মন্দির নির্ম্মাণ করিব। ইহাতেও তাহাদের সাক্ষ্য মিলিল না। তখন মহাযাজক মধ্যস্থানে দাঁড়াইয়া যীশুকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি কিছুই উত্তর দিবে না? তোমার বিরুদ্ধে ইহারা কি সাক্ষ্য দিতেছে? কিন্তু তিনি নীরব রহিলেন, কোন উত্তর দিলেন না। আবার মহাযাজক তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, পরমধন্যের পুত্র? যীশু কহিলেন, আমি সেই; আর তোমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে বসিয়া থাকিতে ও আকাশের মেঘসহ আসিতে দেখিবে। তখন মহাযাজক আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া কহিলেন, আর সাক্ষীতে আমাদের কি প্রয়োজন? তোমরা ত ঈশ্বর-নিন্দা শুনিলে; তোমাদের কি বিবেচনা হয়? তাহারা সকলে তাঁহাকে দোষী করিয়া বলিল, এ মরিবার যোগ্য। তখন কেহ কেহ তাঁহার গায়ে থুথু দিতে লাগিল, এবং তাঁহার মুখ ঢাকিয়া তাঁহাকে ঘুষি মারিতে লাগিল, আর বলিতে লাগিল, ভাববাণী বল না? পরে পদাতিকগণ প্রহার করিতে করিতে তাঁহাকে গ্রহণ করিল। পিতর যখন নীচে প্রাঙ্গণে ছিলেন, তখন মহাযাজকের এক দাসী আসিল; সে পিতরকে আগুন পোহাইতে দেখিয়া তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, তুমিও ত সেই নাসরতীয়ের, সেই যীশুর, সঙ্গে ছিলে। কিন্তু তিনি অস্বীকার করিয়া কহিলেন, তুমি যাহা বলিতেছ, তাহা আমি জানিও না, বুঝিও না। পরে তিনি বাহির হইয়া ফটকের নিকটে গেলেন, আর কুকুড়া ডাকিয়া উঠিল। কিন্তু দাসী তাঁহাকে দেখিয়া, যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহাদিগকেও বলিতে লাগিল, এ ব্যক্তি তাহাদের এক জন। তিনি আবার অস্বীকার করিলেন। কিঞ্চিৎ কাল পরে, যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, আবার তাহারা পিতরকে বলিল, সত্যই তুমি তাহাদের এক জন, কেননা তুমি গালীলীয় লোক। কিন্তু তিনি অভিশাপপূর্ব্বক শপথ করিয়া বলিতে লাগিলেন, তোমরা যে ব্যক্তির কথা বলিতেছ, তাহাকে আমি চিনি না। তৎক্ষণাৎ দ্বিতীয় বার কুকুড়া ডাকিয়া উঠিল; তাহাতে যীশু এই যে কথা বলিয়াছিলেন, ‘কুকুড়া দুই বার ডাকিবার পূর্ব্বে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করিবে,’ তাহা পিতরের মনে পড়িল; এবং তিনি সেই বিষয় চিন্তা করিয়া ক্রন্দন করিতে লাগিলেন। আর প্রভাতেই প্রাচীনবর্গ ও অধ্যাপকদের সঙ্গে প্রধান যাজকগণ এবং সমস্ত মহাসভা মন্ত্রণা করিয়া যীশুকে বাঁধিয়া লইয়া গিয়া পীলাতের নিকটে সমর্পণ করিল। তখন পীলাত তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি যিহূদীদের রাজা? তিনি উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, তুমিই বলিলে। পরে প্রধান যাজকেরা তাঁহার উপরে অনেক দোষারোপ করিতে লাগিল। পীলাত তাঁহাকে আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি কিছুই উত্তর দিবে না? দেখ, ইহারা তোমার উপরে কত দোষারোপ করিতেছে। কিন্তু যীশু আর কিছু উত্তর করিলেন না; তাহাতে পীলাতের আশ্চর্য্য বোধ হইল। পর্ব্বের সময়ে তিনি লোকদের জন্য এমন এক জন বন্দিকে মুক্ত করিতেন, যাহাকে তাহারা চাহিত। সেই সময়ে বারাব্বা নামে এক ব্যক্তি উপপ্লবকারীদের সঙ্গে কারাবদ্ধ ছিল, তাহারা উপপ্লবক্রমে নরহত্যাও করিয়াছিল। তখন লোকসমূহ উপরে গিয়া, তিনি তাহাদের জন্য যাহা করিতেন, তাহা যাচ্ঞা করিতে লাগিল। পীলাত উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদের জন্য যিহূদীদের রাজাকে মুক্ত করিয়া দিব, এই কি তোমাদের বাঞ্ছা? কেননা প্রধান যাজকেরা যে হিংসা বশতঃ তাঁহাকে সমর্পণ করিয়াছিল, তাহা তিনি জানিতে পারিলেন। কিন্তু প্রধান যাজকেরা জনতাকে উত্তেজিত করিয়া বরং আপনাদের জন্য বারাব্বার মুক্তি চাহিতে বলিল। পরে পীলাত আবার উত্তর করিয়া তাহাদিগকে বলিলেন, তবে তোমরা যাহাকে যিহূদীদের রাজা বল, তাহাকে কি করিব? তাহারা পুনর্ব্বার চীৎকার করিয়া বলিল, উহাকে ক্রুশে দেও। পীলাত তাহাদিগকে কহিলেন, কেন? এ কি অপরাধ করিয়াছে? কিন্তু তাহারা অতিশয় চেঁচাইয়া বলিল, উহাকে ক্রুশে দেও। তখন পীলাত লোকসমূহকে সন্তুষ্ট করিবার মানসে তাহাদের জন্য বারব্বাকে মুক্ত করিলেন, এবং যীশুকে কোড়া মারিয়া ক্রুশে দিবার জন্য সমর্পণ করিলেন। পরে সেনারা প্রাঙ্গণের মধ্যে, অর্থাৎ রাজবাটীর ভিতরে, তাঁহাকে লইয়া গিয়া সমস্ত সেনাদলকে ডাকিয়া একত্র করিল। পরে তাঁহাকে বেগুনিয়া কাপড় পরাইল, এবং কাঁটার মুকুট গাঁথিয়া তাঁহার মাথায় দিল, আর তাঁহার বন্দনা করিয়া বলিতে লাগিল, যিহূদি-রাজ, নমস্কার! আর তাঁহার মস্তকে নল দ্বারা আঘাত করিল, তাঁহার গায়ে থুথু দিল, ও হাঁটু পাতিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিল। তাঁহাকে বিদ্রূপ করিবার পর তাহারা ঐ বেগুনিয়া কাপড় খুলিয়া তাঁহার নিজের কাপড় পরাইয়া দিল। পরে তাহারা ক্রুশে দিবার জন্য তাঁহাকে বাহিরে লইয়া গেল। আর শিমোন নামে এক জন কুরীণীয় লোক পল্লীগ্রাম হইতে সেই পথ দিয়া আসিতেছিল, —সে সিকন্দরের ও রূফের পিতা—তাহাকেই তাহারা যীশুর ক্রুশ বহিবার জন্য বেগার ধরিল। পরে তাহারা তাঁহাকে গলগথা নামক স্থানে লইয়া গেল; এই নামের অর্থ ‘মাথার খুলির স্থান’। আর তাহারা তাঁহাকে গন্ধরসে মিশ্রিত দ্রাক্ষারস দিতে চাহিল; কিন্তু তিনি গ্রহণ করিলেন না। পরে তাহারা তাঁহাকে ক্রুশে দিল, এবং তাঁহার বস্ত্র সকল অংশ করিয়া লইল; কে কি লইবে, ইহা স্থির করিবার জন্য গুলিবাঁট করিল। তৃতীয় ঘটিকার সময়ে তাহারা তাঁহাকে ক্রুশে দিল। আর তাঁহার উপরে দোষ-সূচক এই অধিলিপি লিখিত হইল, ‘যিহূদীদের রাজা’। আর তাহারা তাঁহার সহিত দুই জন দস্যুকে ক্রুশে দিল, এক জনকে তাঁহার দক্ষিণে, এক জনকে তাঁহার বামে। আর যে সকল লোক সেই পথ দিয়া যাতায়াত করিতেছিল, তাহারা মাথা নাড়িতে নাড়িতে তাঁহার নিন্দা করিয়া কহিল, ওহে, তুমি না মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেল, আর তিন দিনের মধ্যে গাঁথিয়া তুল! আপনাকে রক্ষা কর, ক্রুশ হইতে নাম। আর সেইরূপ প্রধান যাজকেরাও অধ্যাপকদের সহিত আপনাদের মধ্যে তাঁহাকে বিদ্রূপ করিয়া কহিল, ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করিত, আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না; খ্রীষ্ট, ইস্রায়েলের রাজা, এখন ক্রুশ হইতে নামিয়া আইসুক, দেখিয়া আমরা বিশ্বাস করিব। আর যাহারা তাঁহার সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ হইয়াছিল, তাহারাও তাঁহাকে তিরস্কার করিল। পরে বেলা ছয় ঘটিকা হইতে নয় ঘটিকা পর্য্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল। আর নয় ঘটিকার সময়ে যীশু উচ্চরবে ডাকিয়া কহিলেন, এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী; অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ এই,‘ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’ তাহাতে যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ সেই কথা শুনিয়া বলিল, দেখ, ও এলিয়কে ডাকিতেছে। আর, এক জন দৌড়িয়া একখানি স্পঞ্জে সিরকা ভরিয়া তাহা নলে লাগাইয়া তাঁহাকে পান করিতে দিয়া কহিল, থাক্‌, দেখি, এলিয় উহাকে নামাইতে আইসেন কি না। পরে যীশু উচ্চ রব ছাড়িয়া প্রাণত্যাগ করিলেন। তখন মন্দিরের তিরস্করিণী উপর হইতে নীচ পর্য্যন্ত চিরিয়া দুইখান হইল। আর যে শতপতি তাঁহার সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলেন, তিনি যখন দেখিলেন যে, যীশু এই প্রকারে প্রাণত্যাগ করিলেন, তখন কহিলেন, সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন। কএকটী স্ত্রীলোকও দূরে থাকিয়া দেখিতেছিলেন; তাঁহাদের মধ্যে মগ্দলীনী মরিয়ম, ছোট যাকোবের ও যোশির মাতা মরিয়ম এবং শালোমী ছিলেন; যখন তিনি গালীলে ছিলেন, তখন ইহাঁরা তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিয়া তাঁহার পরিচর্য্যা করিতেন। আরও অনেক স্ত্রীলোক সেখানে ছিলেন, যাঁহারা তাঁহার সঙ্গে যিরূশালেমে আসিয়াছিলেন। পরে সন্ধ্যা হইলে, সেই দিন আয়োজন দিন অর্থাৎ বিশ্রামবারের পূর্ব্বদিন বলিয়া, অরিমাথিয়ার যোষেফ নামক এক জন সম্ভ্রান্ত মন্ত্রী আসিলেন, তিনি নিজেও ঈশ্বরের রাজ্যের অপেক্ষা করিতেন; তিনি সাহসপূর্ব্বক পীলাতের নিকটে গিয়া যীশুর দেহ যাচ্ঞা করিলেন। কিন্তু যীশু যে এত শীঘ্র মরিয়া গিয়াছেন, ইহাতে পীলাত আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, এবং সেই শতপতিকে ডাকাইয়া, তিনি ইহার মধ্যই মরিয়াছেন কি না, জিজ্ঞাসা করিলেন; পরে শতপতির নিকট হইতে জানিয়া যোষেফকে দেহটী দান করিলেন। যোষেফ একখানি চাদর কিনিয়া তাঁহাকে নামাইয়া ঐ চাদরে জড়াইলেন, এবং শৈলে ক্ষোদিত এক কবরে রাখিলেন; পরে কবরের দ্বারে একখান পাথর গড়াইয়া দিলেন। তাঁহাকে যে স্থানে রাখা হইল, তাহা মগ্দলীনী মরিয়ম ও যোশির মাতা মরিয়ম দেখিতে পাইলেন। বিশ্রামদিন অতীত হইলে পর মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোবের মাতা মরিয়ম এবং শালোমী সুগন্ধি দ্রব্য ক্রয় করিলেন, যেন গিয়া তাঁহাকে মাখাইতে পারেন। পরে সপ্তাহের প্রথম দিন তাঁহারা অতি প্রত্যূষে, সূর্য্য উদিত হইলে, কবরের নিকটে আসিলেন। তাঁহারা পরস্পর বলাবলি করিতেছিলেন, কবরের দ্বার হইতে কে আমাদের জন্য পাথরখান সরাইয়া দিবে? এমন সময় তাঁহারা দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিলেন, পাথরখান সরান গিয়াছে; কেননা তাহা অতি বৃহৎ ছিল। পরে তাঁহারা কবরের ভিতরে গিয়া দেখিলেন, দক্ষিণ পার্শ্বে শুক্লবস্ত্র পরিহিত এক জন যুবক বসিয়া আছেন; তাহাতে তাঁহারা অতিশয় বিস্ময়াপন্ন হইলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, বিস্ময়াপন্ন হইও না, তোমরা নাসরতীয় যীশুর অন্বেষণ করিতেছ, যিনি ক্রুশে হত হইয়াছেন; তিনি উঠিয়াছেন, এখানে নাই; দেখ, এই স্থানে তাঁহাকে রাখা গিয়াছিল; কিন্তু তোমরা যাও, তাঁহার শিষ্যগণকে আর পিতরকে বল, তিনি তোমাদের অগ্রে গালীলে যাইতেছেন; যেমন তিনি তোমাদিগকে বলিয়াছিলেন, সেইখানে তোমরা তাঁহাকে দেখিতে পাইবে। তখন তাঁহারা বাহির হইয়া কবর হইতে পলায়ন করিলেন, কারণ তাঁহারা কম্পান্বিতা ও বিস্ময়াপন্না হইয়াছিলেন; আর তাঁহারা কাহাকেও কিছু বলিলেন না; কেননা তাঁহারা ভয় পাইয়াছিলেন। সপ্তাহের প্রথম দিবসে যীশু প্রত্যূষে উঠিলে প্রথমে সেই মগ্দলীনী মরিয়মকে দর্শন দিলেন, যাঁহা হইতে তিনি সাত ভূত ছাড়াইয়াছিলেন। তিনিই গিয়া, যাঁহারা যীশুর সঙ্গে থাকিতেন, তাঁহাদিগকে সংবাদ দিলেন, তখন তাঁহারা শোক ও রোদন করিতেছিলেন। যখন তাঁহারা শুনিলেন যে, তিনি জীবিত আছেন, ও তাঁহাকে দর্শন দিয়াছেন, তখন অবিশ্বাস করিলেন। তৎপরে তাঁহাদের দুই জন যখন পল্লীগ্রামে যাইতেছিলেন, তখন তিনি আর এক আকারে তাঁহাদের কাছে প্রকাশিত হইলেন। তাঁহারা গিয়া অন্য সকলকে ইহা জানাইলেন, কিন্তু তাঁহাদের কথাতেও তাঁহারা বিশ্বাস করিলেন না। তৎপরে সেই এগার জন ভোজনে বসিলে তিনি তাঁহাদের কাছে প্রকাশিত হইলেন, এবং তাঁহাদের অবিশ্বাস ও মনের কঠিনতা প্রযুক্ত তাঁহাদিগকে তিরস্কার করিলেন; কেননা তিনি উঠিলে পর যাঁহারা তাঁহাকে দেখিয়াছিলেন, তাঁহাদের কথায় তাঁহারা বিশ্বাস করেন নাই। আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা সমুদয় জগতে যাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার কর। যে বিশ্বাস করে ও বাপ্তাইজিত হয়, সে পরিত্রাণ পাইবে; কিন্তু যে অবিশ্বাস করে, তাহার দণ্ডাজ্ঞা করা যাইবে। আর যাহারা বিশ্বাস করে, এই চিহ্নগুলি তাহাদের অনুবর্ত্তী হইবে; তাহারা আমার নামে ভূত ছাড়াইবে, তাহারা নূতন নূতন ভাষায় কথা কহিবে, তাহারা সর্প তুলিবে, এবং প্রাণনাশক কিছু পান করিলেও তাহাতে কোন মতে তাহাদের হানি হইবে না; তাহারা পীড়িতদের উপরে হস্তার্পণ করিবে, আর তাহারা সুস্থ হইবে। তাঁহাদের সহিত কথা কহিবার পর প্রভু যীশু ঊর্দ্ধে, স্বর্গে গৃহীত হইলেন, এবং ঈশ্বরের দক্ষিণে বসিলেন। আর তাঁহারা প্রস্থান করিয়া সর্ব্বত্র প্রচার করিতে লাগিলেন; এবং প্রভু সঙ্গে সঙ্গে কার্য্য করিয়া অনুবর্ত্তী চিহ্নসমূহ দ্বারা সেই বাক্য সপ্রমাণ করিলেন। আমেন্‌। প্রথম অবধি যাঁহারা স্বচক্ষে দেখিয়াছেন, এবং বাক্যের সেবা করিয়া আসিয়াছেন, তাঁহারা আমাদিগকে যেমন সমর্পণ করিয়াছেন, তদনুসারে অনেকেই আমাদের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে গৃহীত বিষয়াবলির বিবরণ লিপিবদ্ধ করিতে হস্তক্ষেপ করিয়াছেন, সেই জন্য আমিও প্রথম হইতে সকল বিষয় সবিশেষ অনুসন্ধান করিয়াছি বলিয়া, হে মহামহিম থিয়ফিল, আপনাকে আনুপূর্ব্বিক বিবরণ লেখা বিহিত বুঝিলাম; যেন, আপনি যে সকল বিষয় শিক্ষা পাইয়াছেন, সেই সকল বিষয়ের নিশ্চয়তা জ্ঞাত হইতে পারেন। যিহূদিয়ার রাজা হেরোদের সময়ে অবিয়ের পালার মধ্যে সখরিয় নামে এক জন যাজক ছিলেন; তাঁহার স্ত্রী হারোণবংশীয়া, তাঁহার নাম ইলীশাবেৎ। তাঁহারা দুই জন ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্ম্মিক ছিলেন, প্রভুর সমস্ত আজ্ঞা ও বিধি অনুসারে নির্দ্দোষরূপে চলিতেন। তাঁহাদের সন্তান ছিল না, কেননা ইলীশাবেৎ বন্ধ্যা ছিলেন, এবং দুই জনেরই অধিক বয়স হইয়াছিল। একদা যখন সখরিয় নিজ পালার অনুক্রমে ঈশ্বরের সাক্ষাতে যাজকীয় কার্য্য করিতেছিলেন, তখন যাজকীয় কার্য্যের প্রথানুসারে গুলিবাঁট ক্রমে তাঁহাকে প্রভুর মন্দিরে প্রবেশ করিয়া ধূপ জ্বালাইতে হইল। সেই ধূপদাহের সময়ে সমস্ত লোক বাহিরে থাকিয়া প্রার্থনা করিতেছিল। তখন প্রভুর এক দূত ধূপবেদির দক্ষিণ পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাঁহাকে দর্শন দিলেন। দেখিয়া সখরিয় ত্রাসযুক্ত হইলেন, ভয় তাঁহাকে আক্রমণ করিল। কিন্তু দূত তাঁহাকে বলিলেন, সখরিয়, ভয় করিও না, কেননা তোমার বিনতি গ্রাহ্য হইয়াছে, তোমার স্ত্রী ইলীশাবেৎ তোমার জন্য পুত্র প্রসব করিবেন, ও তুমি তাহার নাম যোহন রাখিবে। আর তোমার আনন্দ ও উল্লাস হইবে, এবং তাহার জন্মে অনেকে আনন্দিত হইবে। কারণ সে প্রভুর সম্মুখে মহান্‌ হইবে, এবং দ্রাক্ষারস কি সুরা কিছুই পান করিবে না; আর সে মাতার গর্ভ হইতেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইবে; এবং ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে অনেককে তাহাদের ঈশ্বর প্রভুর প্রতি ফিরাইবে। সে তাঁহার সম্মুখে এলিয়ের আত্মায় ও পরাক্রমে গমন করিবে, যেন পিতৃগণের হৃদয় সন্তানদের প্রতি, ও অনাজ্ঞাবহদিগকে ধার্ম্মিকদের বিজ্ঞতায় চলিবার জন্য ফিরাইতে পারে, প্রভুর নিমিত্ত সুসজ্জিত এক প্রজামণ্ডলী প্রস্তুত করিতে পারে। তখন সখরিয় দূতকে কহিলেন, কিসে ইহা জানিব? কেননা আমি বৃদ্ধ এবং আমার স্ত্রীরও অধিক বয়স হইয়াছে। দূত উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আমি গাব্রিয়েল, ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া থাকি, তোমার সহিত কথা কহিবার ও তোমাকে এই সকল বিষয়ের সুসমাচার দিবার জন্য প্রেরিত হইয়াছি। আর দেখ, এই সকল যে দিন ঘটিবে, সেই দিন পর্য্যন্ত তুমি নীরব থাকিবে, কথা কহিতে পারিবে না; যেহেতুক আমার এই যে সকল বাক্য যথাসময়ে সফল হইবে, ইহাতে তুমি বিশ্বাস করিলে না। আর লোক সকল সখরিয়ের অপেক্ষা করিতেছিল, এবং মন্দিরের মধ্যে তাঁহার বিলম্ব হওয়াতে তাহারা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিতে লাগিল। পরে তিনি বাহিরে আসিয়া তাহাদের কাছে কথা কহিতে পারিলেন না; তখন তাহারা বুঝিল যে, মন্দিরের মধ্যে তিনি কোন দর্শন পাইয়াছেন; আর তিনি তাহাদের নিকটে নানা সঙ্কেত করিতে থাকিলেন, এবং বোবা হইয়া রহিলেন। পরে তাঁহার উপাসনার সময় পূর্ণ হইলে তিনি নিজ গৃহে চলিয়া গেলেন। এই সময়ের পরে তাঁহার স্ত্রী ইলীশাবেৎ গর্ভবতী হইলেন; আর তিনি পাঁচ মাস আপনাকে সংগোপনে রাখিলেন, বলিলেন, লোকদের মধ্যে আমার অপযশ খণ্ডাইবার নিমিত্ত এই সময়ে দৃষ্টিপাত করিয়া প্রভু আমার প্রতি এইরূপ ব্যবহার করিয়াছেন। পরে ষষ্ঠ মাসে গাব্রিয়েল দূত ঈশ্বরের নিকট হইতে গালীল দেশের নাসরৎ নামক নগরে একটী কুমারীর নিকটে প্রেরিত হইলেন, তিনি দায়ূদ-কুলের যোষেফ নামক পুরুষের প্রতি বাগ্দত্তা হইয়াছিলেন; সেই কুমারীর নাম মরিয়ম। দূত গৃহমধ্যে তাঁহার কাছে আসিয়া কহিলেন, অয়ি মহানুগৃহীতে, মঙ্গল হউক; প্রভু তোমার সহবর্ত্তী। কিন্তু তিনি সেই বাক্যে অতিশয় উদ্বিগ্ন হইলেন, আর মনে মনে আন্দোলন করিতে লাগিলেন, এ কেমন মঙ্গলবাদ? দূত তাঁহাকে কহিলেন, মরিয়ম, ভয় করিও না, কেননা তুমি ঈশ্বরের নিকটে অনুগ্রহ পাইয়াছ। আর দেখ, তুমি গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম যীশু রাখিবে। তিনি মহান্‌ হইবেন, আর তাঁহাকে পরাৎপরের পুত্র বলা যাইবে; আর প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ূদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; তিনি যাকোব-কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন, ও তাঁহার রাজ্যের শেষ হইবে না। তখন মরিয়ম দূতকে কহিলেন, ইহা কিরূপে হইবে? আমি ত পুরুষকে জানি না। দূত উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে; এই কারণ যে পবিত্র সন্তান জন্মিবেন, তাঁহাকে ঈশ্বরের পুত্র বলা যাইবে। আর দেখ, তোমার জ্ঞাতি যে ইলীশাবেৎ, তিনিও বৃদ্ধ বয়সে পুত্রসন্তান গর্ভে ধারণ করিয়াছেন; লোকে যাঁহাকে বন্ধ্যা বলিত, এই তাঁহার ষষ্ঠ মাস। কেননা ঈশ্বরের কোন বাক্য শক্তিহীন হইবে না। তখন মরিয়ম কহিলেন, দেখুন, আমি প্রভুর দাসী; আপনার বাক্যানুসারে আমার প্রতি ঘটুক। পরে দূত তাঁহার নিকট হইতে প্রস্থান করিলেন। তৎকালে মরিয়ম উঠিয়া সত্বর পাহাড় অঞ্চলে যিহূদার এক নগরে গেলেন, এবং সখরিয়ের গৃহে প্রবেশ করিয়া ইলীশাবেৎকে মঙ্গলবাদ করিলেন। আর এইরূপ হইল, যখন ইলীশাবেৎ মরিয়মের মঙ্গলবাদ শুনিলেন, তখন তাঁহার জঠরে শিশুটী নাচিয়া উঠিল; আর ইলীশাবেৎ পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হইলেন, এবং উচ্চরবে মহাশব্দ করিয়া বলিলেন, নারীগণের মধ্যে তুমি ধন্য, এবং ধন্য তোমার জঠরের ফল। আর আমার প্রভুর মাতা আমার কাছে আসিবেন, আমার এমন সৌভাগ্য কোথা হইতে হইল? কেননা দেখ, তোমার মঙ্গলবাদের ধ্বনি আমার কর্ণে প্রবেশ করিবামাত্র শিশুটী আমার জঠরে উল্লাসে নাচিয়া উঠিল। আর ধন্য যিনি বিশ্বাস করিলেন, কারণ প্রভু হইতে যাহা যাহা তাঁহাকে বলা গিয়াছে, সে সমস্ত সিদ্ধ হইবে। তখন মরিয়ম কহিলেন, আমার প্রাণ প্রভুর মহিমা কীর্ত্তন করিতেছে, আমার আত্মা আমার ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরে উল্লাসিত হইয়াছে। কারণ তিনি নিজ দাসীর নীচ অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়াছেন; কেননা দেখ, এই অবধি পুরুষপরম্পরা সকলে আমাকে ধন্য বলিবে। কারণ যিনি পরাক্রমী, তিনি আমার জন্য মহৎ মহৎ কার্য্য করিয়াছেন; এবং তাঁহার নাম পবিত্র। আর যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাঁহার দয়া তাহাদের পুরুষপরম্পরায় বর্ত্তে। তিনি আপন বাহু দ্বারা বিক্রমকার্য্য করিয়াছেন; যাহারা আপনাদের হৃদয়ের কল্পনায় অহঙ্কারী, তাহাদিগকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছেন। তিনি বিক্রমীদিগকে সিংহাসন হইতে নামাইয়া দিয়াছেন, ও নীচদিগকে উন্নত করিয়াছেন; তিনি ক্ষুধার্ত্তদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্যে পূর্ণ করিয়াছেন, এবং ধনবান্‌দিগকে রিক্তহস্তে বিদায় করিয়াছেন। তিনি আপন দাস ইস্রায়েলের উপকার করিয়াছেন, যেন, আমাদের পিতৃগণের প্রতি উক্ত আপন বাক্যানুসারে অব্রাহাম ও তাঁহার বংশের প্রতি চিরতরে করুণা স্মরণ করেন। আর মরিয়ম মাস তিনেক ইলীশাবেতের নিকটে রহিলেন, পরে নিজ গৃহে ফিরিয়া গেলেন। পরে ইলীশাবেতের প্রসবকাল সম্পূর্ণ হইলে তিনি পুত্র প্রসব করিলেন। তখন, তাঁহার প্রতিবাসী ও আত্মীয়গণ শুনিতে পাইল যে, প্রভু তাঁহার প্রতি মহা দয়া করিয়াছেন, আর তাহারা তাঁহার সহিত আনন্দ করিল। পরে তাহারা অষ্টম দিনে বালকটীর ত্বক্‌চ্ছেদ করিতে আসিল, আর তাহার পিতার নামানুসারে তাহার নাম সখরিয় রাখিতে চাহিল। কিন্তু তাহার মাতা উত্তর করিয়া কহিলেন, তাহা নয়, ইহার নাম যোহন রাখা যাইবে। তাহারা তাঁহাকে কহিল, আপনার গোষ্ঠীর মধ্যে এ নামে ত কাহাকেও ডাকা হয় না। পরে তাহারা তাহার পিতাকে সঙ্কেতে জিজ্ঞাসা করিল, আপনার ইচ্ছা কি? ইহার কি নাম রাখা যাইবে? তিনি একখান লিপিফলক চাহিয়া লইয়া লিখিলেন, ইহার নাম যোহন। তাহাতে সকলে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল। আর তখনই তাঁহার মুখ ও তাঁহার জিহ্বা খুলিয়া গেল, আর তিনি কথা কহিলেন, ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতে লাগিলেন। ইহাতে চারিদিকের প্রতিবাসীরা সকলে ভয়গ্রস্ত হইল, আর যিহূদিয়ার পাহাড় অঞ্চলের সর্ব্বত্র লোকে এই সমস্ত কথা বলাবলি করিতে লাগিল। আর যত লোক শুনিল, সকলে তাহা হৃদয়ে স্থান দিয়া বলিতে লাগিল, এ বালকটী তবে কি হইবে? কারণ প্রভুর হস্তও তাহার সহবর্ত্তী ছিল। তখন তাহার পিতা সখরিয় পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন, এবং ভাববাণী বলিলেন; তিনি কহিলেন, ধন্য প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর; কেননা তিনি তত্ত্বাবধান করিয়াছেন, আপন প্রজাদের জন্য মুক্তি সাধন করিয়াছেন, আর আমাদের জন্য আপন দাস দায়ূদের কুলে পরিত্রাণের এক শৃঙ্গ উঠাইয়াছেন, —যেমন তিনি পুরাকাল অবধি তাঁহার সেই পবিত্র ভাববাদিগণের মুখ দ্বারা বলিয়া আসিয়াছেন— আমাদের শত্রুগণ হইতে ও যাহারা আমাদিগকে দ্বেষ করে, তাহাদের সকলের হস্ত হইতে পরিত্রাণ করিয়াছেন। আমাদের পিতৃপুরুষগণের প্রতি কৃপা করিবার জন্য, আপন পবিত্র নিয়ম স্মরণ করিবার জন্য। এ সেই দিব্য, যাহা তিনি আমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহামের কাছে শপথ করিয়াছিলেন, আমাদিগকে এই বর দিবার জন্য, যে আমরা শত্রুগণের হস্ত হইতে নিস্তার পাইয়া, নির্ভয়ে সাধুতায় ও ধার্ম্মিকতায় তাঁহার আরাধনা করিতে পারিব, তাঁহার সাক্ষাতে যাবজ্জীবন করিতে পারিব। আর, হে বালক, তুমি পরাৎপরের ভাববাদী বলিয়া আখ্যাত হইবে, কারণ তুমি প্রভুর সম্মুখে চলিবে, তাঁহার পথ প্রস্তুত করিবার জন্য; তাঁহার প্রজাদের পাপমোচনে তাহাদিগকে পরিত্রাণের জ্ঞান দিবার জন্য। ইহা আমাদের ঈশ্বরের সেই কৃপাযুক্ত স্নেহহেতু হইবে, যদ্দ্বারা ঊর্দ্ধ হইতে ঊষা আমাদের তত্ত্বাবধান করিবে, যাহারা অন্ধকারে ও মৃত্যুচ্ছায়ায় বসিয়া আছে, তাহাদের উপরে দীপ্তি দিবার জন্য, আমাদের চরণ শান্তিপথে চালাইবার জন্য। পরে বালকটী বাড়িয়া উঠিতে এবং আত্মায় বলবান হইতে লাগিল; আর সে যত দিন ইস্রায়েলের নিকটে প্রকাশিত না হইল, তত দিন প্রান্তরে ছিল। সেই সময়ে আগস্ত কৈসরের এই আদেশ বাহির হইল যে, সমুদয় পৃথিবীর লোক নাম লিখিয়া দিবে। সুরিয়ার শাসনকর্ত্তা কুরীণিয়ের সময়ে এই প্রথম নাম লেখান হয়। সকলে নাম লিখিয়া দিবার নিমিত্তে আপন আপন নগরে গমন করিল। আর যোষেফও গালীলের নাসরৎ নগর হইতে যিহূদিয়ায় বৈৎলেহম নামক দায়ূদের নগরে গেলেন, কারণ তিনি দায়ূদের কুল ও গোষ্ঠীজাত ছিলেন; তিনি আপনার বাগ্দত্তা স্ত্রী মরিয়মের সহিত নাম লিখিয়া দিবার জন্য গেলেন; তখন ইনি গর্ভবতী ছিলেন। তাঁহারা সেই স্থানে আছেন, এমন সময়ে মরিয়মের প্রসবকাল সম্পূর্ণ হইল। আর তিনি আপনার প্রথমজাত পুত্র প্রসব করিলেন, এবং তাঁহাকে কাপড়ে জড়াইয়া যাবপাত্রে শোয়াইয়া রাখিলেন, কারণ পান্থশালায় তাঁহাদের জন্য স্থান ছিল না। ঐ অঞ্চলে মেষপালকেরা মাঠে অবস্থিতি করিতেছিল, এবং রাত্রিকালে আপন আপন পাল চৌকি দিতেছিল। আর প্রভুর এক দূত তাহাদের নিকটে আসিয়া দাঁড়াইলেন, এবং প্রভুর প্রতাপ তাহাদের চারিদিকে দেদীপ্যমান হইল; তাহাতে তাহারা অতিশয় ভীত হইল। তখন দূত তাহাদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না, কেননা দেখ, আমি তোমাদিগকে মহানন্দের সুসমাচার জানাইতেছি; সেই আনন্দ সমুদয় লোকেরই হইবে; কারণ অদ্য দায়ূদের নগরে তোমাদের জন্য ত্রাণকর্ত্তা জন্মিয়াছেন; তিনি খ্রীষ্ট প্রভু। আর তোমাদের জন্য ইহাই চিহ্ন, তোমরা দেখিতে পাইবে, একটী শিশু কাপড়ে জড়ান ও যাবপাত্রে শয়ান রহিয়াছে। পরে হঠাৎ স্বর্গীয় বাহিনীর এক বৃহৎ দল ঐ দূতের সঙ্গী হইয়া ঈশ্বরের স্তবগান করিতে করিতে কহিতে লাগিলেন, ঊর্দ্ধলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে [তাঁহার] প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি। দূতগণ তাহাদের নিকট হইতে স্বর্গে চলিয়া গেলে পর মেষপালকেরা পরস্পর কহিল, চল, আমরা একবার বৈৎলেহম পর্য্যন্ত যাই, এবং এই যে ব্যাপার প্রভু আমাদিগকে জানাইলেন, তাহা গিয়া দেখি। পরে তাহারা শীঘ্র গমন করিয়া মরিয়ম ও যোষেফ এবং সেই যাবপাত্রে শয়ান শিশুটীকে দেখিতে পাইল। দেখিয়া বালকটীর বিষয়ে যে কথা তাহাদিগকে বলা হইয়াছিল, তাহা জানাইল। তাহাতে যত লোক মেষপালকগণের মুখে ঐ সব কথা শুনিল, সকলে এই সকল বিষয়ে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল। কিন্তু মরিয়ম সেই সকল কথা হৃদয় মধ্যে আন্দোলন করিতে করিতে মনে সঞ্চয় করিয়া রাখিলেন। আর মেষপালকদিগকে যেরূপ বলা হইয়াছিল, তাহারা তদ্রূপ সকলই দেখিয়া শুনিয়া ঈশ্বরের প্রশংসা ও স্তবগান করিতে করিতে ফিরিয়া আসিল। আর যখন বালকটীর ত্বক্‌ছেদনের জন্য আট দিন পূর্ণ হইল, তখন তাহার নাম যীশু রাখা গেল; এই নাম তাঁহার গর্ভস্থ হইবার পূর্ব্বে দূতের দ্বারা রাখা হইয়াছিল। পরে যখন মোশির ব্যবস্থানুসারে তাঁহাদের শুচি হইবার কাল সম্পূর্ণ হইল, তখন তাঁহারা তাঁহাকে যিরূশালেমে লইয়া গেলেন, যেন তাঁহাকে প্রভুর নিকটে উপস্থিত করেন, যেমন প্রভুর ব্যবস্থায় লেখা আছে, ‘গর্ভ উন্মোচক প্রত্যেক পুরুষ সন্তান প্রভুর উদ্দেশে পবিত্র বলিয়া আখ্যাত হইবে’; আর যেন বলি উৎসর্গ করেন, যেমন প্রভুর ব্যবস্থায় উক্ত হইয়াছে, ‘এক যোড়া ঘুঘু কিম্বা দুই কপোতশাবক’। আর দেখ, শিমিয়োন নামে এক ব্যক্তি যিরূশালেমে ছিলেন, তিনি ধার্ম্মিক ও ভক্ত, ইস্রায়েলের সান্ত্বনার অপেক্ষাতে থাকিতেন, এবং পবিত্র আত্মা তাঁহার উপরে ছিলেন। আর পবিত্র আত্মা দ্বারা তাঁহার কাছে প্রকাশিত হইয়াছিল যে, তিনি প্রভুর খ্রীষ্টকে দেখিতে না পাইলে মৃত্যু দেখিবেন না। তিনি সেই আত্মার আবেশে ধর্ম্মধামে আসিলেন, এবং শিশু যীশুর পিতামাতা যখন তাঁহার বিষয়ে ব্যবস্থার রীতি অনুযায়ী কার্য্য করিবার জন্য তাঁহাকে ভিতরে আনিলেন, তখন তিনি তাঁহাকে কোলে লইলেন, আর ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিলেন, ও কহিলেন, হে স্বামিন্‌, এখন তুমি তোমার বাক্যানুসারে তোমার দাসকে শান্তিতে বিদায় করিতেছ, কেননা আমার নয়নযুগল তোমার পরিত্রাণ দেখিতে পাইল, যাহা তুমি সকল জাতির সম্মুখে প্রস্তুত করিয়াছ, পরজাতিগণের প্রতি প্রকাশিত হইবার জ্যোতি, ও তোমার প্রজা ইস্রায়েলের গৌরব। তাঁহার বিষয়ে কথিত এই সকল কথায় তাঁহার পিতা ও মাতা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিতে লাগিলেন। আর শিমিয়োন তাঁহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং তাঁহার মাতা মরিয়মকে কহিলেন, দেখ, ইনি ইস্রায়েলের মধ্যে অনেকের পতন ও উত্থানের নিমিত্ত, এবং যাহার বিরুদ্ধে কথা বলা যাইবে, এমন চিহ্ন হইবার নিমিত্ত স্থাপিত, —আর তোমার নিজের প্রাণও খড়্গে বিদ্ধ হইবে,— যেন অনেক হৃদয়ের চিন্তা প্রকাশিত হয়। আর হান্না নাম্নী এক ভাববাদিনী ছিলেন, তিনি পনূয়েলের কন্যা, আশের-বংশজাত; তাঁহার অনেক বয়স হইয়াছিল, তিনি কুমারী অবস্থার পর সাত বৎসর স্বামীর সহিত বাস করেন, আর চৌরাশী বৎসর পর্য্যন্ত বিধবা হইয়া থাকেন, তিনি ধর্ম্মধাম হইতে প্রস্থান না করিয়া উপবাস ও প্রার্থনা সহকারে রাত দিন উপাসনা করিতেন। তিনি সেই দণ্ডে উপস্থিত হইয়া ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিলেন, এবং যত লোক যিরূশালেমের মুক্তির অপেক্ষা করিতেছিল, তাহাদিগকে যীশুর কথা বলিতে লাগিলেন। আর প্রভুর ব্যবস্থানুরূপ সমস্ত কার্য্য সাধন করিবার পর তাঁহারা গালীলে, তাঁহাদের নিজ নগর নাসরতে, ফিরিয়া গেলেন। পরে বালকটী বাড়িয়া উঠিতে ও বলবান্‌ হইতে লাগিলেন, জ্ঞানে পূর্ণ হইতে থাকিলেন; আর ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাঁহার উপরে ছিল। তাঁহার পিতামাতা প্রতিবৎসর নিস্তারপর্ব্বের সময়ে যিরূশালেমে যাইতেন। তাঁহার বারো বৎসর বয়স হইলে তাঁহারা পর্ব্বের রীতি অনুসারে যিরূশালেমে গেলেন; এবং পর্ব্বের সময় সমাপ্ত করিয়া যখন ফিরিয়া আসিতেছিলেন, তখন বালক যীশু যিরূশালেমে রহিলেন; আর তাঁহার পিতামাতা তাহা জানিতেন না, কিন্তু তিনি সহযাত্রীদের সঙ্গে আছেন, মনে করিয়া তাঁহারা এক দিনের পথ গেলেন; পরে জ্ঞাতি ও পরিচিত লোকদের মধ্যে তাঁহার অন্বেষণ করিতে লাগিলেন; আর তাঁহাকে না পাইয়া তাঁহার অন্বেষণ করিতে করিতে যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন। তিন দিনের পর তাঁহারা তাঁহাকে ধর্ম্মধামে পাইলেন; তিনি গুরুদিগের মধ্যে বসিয়া তাঁহাদের কথা শুনিতেছিলেন ও তাঁহাদিগকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন; আর যাহারা তাঁহার কথা শুনিতেছিল, তাহারা সকলে তাঁহার বুদ্ধি ও উত্তরে অতিশয় আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল। তাঁহাকে দেখিয়া তাঁহারা চমৎকৃত হইলেন, এবং তাঁহার মাতা তাঁহাকে কহিলেন, বৎস, আমাদের প্রতি এরূপ ব্যবহার কেন করিলে? দেখ, তোমার পিতা এবং আমি কাতর হইয়া তোমার অন্বেষণ করিতেছিলাম। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, কেন আমার অন্বেষণ করিলে? আমার পিতার গৃহে আমাকে থাকিতেই হইবে, ইহা কি জানিতে না? কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে যে কথা বলিলেন, তাহা তাঁহারা বুঝিতে পারিলেন না। পরে তিনি তাঁহাদের সঙ্গে নামিয়া নাসরতে চলিয়া গেলেন, ও তাঁহাদের বশীভূত থাকিলেন। আর তাঁহার মাতা সমস্ত কথা আপন হৃদয়ে রাখিলেন। পরে যীশু জ্ঞানে ও বয়সে এবং ঈশ্বরের ও মনুষ্যের নিকটে অনুগ্রহে বৃদ্ধি পাইতে থাকিলেন। তিবিরিয় কৈসরের রাজত্বের পঞ্চদশ বৎসরে যখন পন্তীয় পীলাত যিহূদিয়ার অধ্যক্ষ, হেরোদ গালীলের রাজা, তাঁহার ভ্রাতা ফিলিপ যিতূরিয়া ও ত্রাখোনীতিয়া প্রদেশের রাজা, এবং লুষাণিয় অবিলীনীর রাজা, তখন হানন ও কায়াফার মহাযাজকত্ব কালে ঈশ্বরের বাণী প্রান্তরে সখরিয়ের পুত্র যোহনের নিকটে উপস্থিত হইল। তাহাতে তিনি যর্দ্দনের নিকটবর্ত্তী সমস্ত দেশে আসিয়া পাপমোচনের জন্য মনপরিবর্ত্তনের বাপ্তিস্ম প্রচার করিতে লাগিলেন; যেমন যিশাইয় ভাববাদীর বাক্য গ্রন্থে লিখিত আছে, “প্রান্তরে এক জনের রব, সে ঘোষণা করিতেছে, তোমরা প্রভুর পথ প্রস্তুত কর, তাঁহার রাজপথ সকল সরল কর। প্রত্যেক উপত্যকা পরিপূরিত হইবে, প্রত্যেক পর্ব্বত ও উপর্ব্বত নিম্ন করা যাইবে, যাহা যাহা বক্র, সে সকল সরল করা যাইবে, যাহা যাহা অসমান, সে সকল সমান করা যাইবে, এবং সমস্ত মর্ত্ত্য ঈশ্বরের পরিত্রাণ দেখিবে।” অতএব যে সকল লোক তাঁহার দ্বারা বাপ্তাইজিত হইতে বাহির হইয়া আসিল, তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, হে সর্পের বংশেরা, আগামী কোপ হইতে পলায়ন করিতে তোমাদিগকে কে চেতনা দিল? অতএব মনপরিবর্ত্তনের উপযুক্ত ফলে ফলবান্‌ হও; এবং মনে মনে বলিতে আরম্ভ করিও না যে, অব্রাহাম আমাদের পিতা; কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ঈশ্বর এই সকল পাথর হইতে অব্রাহামের জন্য সন্তান উৎপন্ন করিতে পারেন আর এখনই বৃক্ষ সকলের মূলে কুঠার লাগান আছে; অতএব যে কোন গাছে উত্তম ফল ধরে না, তাহা কাটিয়া অগ্নিতে ফেলিয়া দেওয়া যায়। তখন লোকেরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তবে আমাদের কি করিতে হইবে? তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, যাহার দুইটী আঙ্‌রাখা আছে, সে, যাহার নাই, তাহাকে একটী দিউক; আর যাহার কাছে খাদ্য দ্রব্য আছে, সেও তদ্রূপ করুক। আর করগ্রাহীরাও বাপ্তাইজিত হইতে আসিল, এবং তাঁহাকে কহিল, গুরো, আমাদের কি করিতে হইবে? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের জন্য যাহা নিরূপিত, তাহার অধিক আদায় করিও না। আর সৈনিকেরাও তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, আমাদেরই বা কি করিতে হইবে? তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, কাহারও প্রতি দৌরাত্ম্য করিও না, অন্যায়পূর্ব্বক কিছু আদায়ও করিও না, এবং তোমাদের বেতনে সন্তুষ্ট থাকিও। আর লোকেরা যখন অপেক্ষায় ছিল, এবং যোহনের বিষয়ে সকলে মনে মনে এই তর্ক বিতর্ক করিতেছিল, কি জানি, ইনিই বা সেই খ্রীষ্ট, তখন যোহন উত্তর করিয়া সকলকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে জলে বাপ্তাইজ করিতেছি বটে, কিন্তু এমন এক জন আসিতেছেন, যিনি আমা অপেক্ষা শক্তিমান, যাঁহার পাদুকার বন্ধন খুলিবার যোগ্য আমি নই; তিনি তোমাদিগকে পবিত্র আত্মা ও অগ্নিতে বাপ্তাইজ করিবেন। তাঁহার কুলা তাঁহার হস্তে আছে; তিনি আপন খামার সুপরিষ্কৃত করিবেন, ও গোম আপন গোলাতে সংগ্রহ করিবেন, কিন্তু তুষ অনির্ব্বাণ অগ্নিতে পোড়াইয়া দিবেন। আরও অনেক উপদেশ দিয়া যোহন লোকদের নিকটে সুসমাচার প্রচার করিতেন। কিন্তু হেরোদ রাজা আপন ভ্রাতার স্ত্রী হেরোদিয়ার বিষয়ে এবং আপনার সমস্ত দুষ্কর্ম্মের বিষয়ে তাঁহা কর্ত্তৃক দোষীকৃত হইলে, নিজ দুষ্কার্য্য সকলের উপরে এইটীও যোগ করিলেন, যোহনকে কারাগারে বদ্ধ করিলেন। আর যখন সমস্ত লোক বাপ্তাইজিত হয়, তখন যীশুও বাপ্তাইজিত হইয়া প্রার্থনা করিতেছেন, এমন সময়ে স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং পবিত্র আত্মা দৈহিক আকারে, কপোতের ন্যায়, তাঁহার উপরে নামিয়া আসিলেন, আর স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, “তুমি আমার প্রিয় পুত্র, তোমাতেই আমি প্রীত।” আর যীশু নিজে, যখন তিনি কার্য্য আরম্ভ করেন, কমবেশ ত্রিশ বৎসর বয়স্ক ছিলেন; তিনি, যেমন ধরা হইত, যোষেফের পুত্র—ইনি এলির পুত্র, ইনি মত্ততের পুত্র, ইনি লেবির পুত্র, ইনি মল্কির পুত্র, ইনি যান্নায়ের পুত্র, ইনি যোষেফের পুত্র, ইনি মত্তথিয়ের পুত্র, ইনি আমোসের পুত্র, ইনি নহূমের পুত্র, ইনি ইষ্‌লির পুত্র, ইনি নগির পুত্র, ইনি মাটের পুত্র, ইনি মত্তথিয়ের পুত্র, ইনি শিমিয়ির পুত্র, ইনি যোষেখের পুত্র, ইনি যূদার পুত্র, ইনি যোহানার পুত্র, ইনি রীষার পুত্র, ইনি সরুব্বাবিলের পুত্র, ইনি শল্টীয়েলের পুত্র, ইনি নেরির পুত্র, ইনি মল্কির পুত্র, ইনি অদ্দীর পুত্র, ইনি কোষমের পুত্র, ইনি ইল্‌মাদমের পুত্র, ইনি এরের পুত্র, ইনি যীশুর পুত্র, ইনি ইলীয়েষরের পুত্র, ইনি যোরীমের পুত্র, ইনি মত্ততের পুত্র, ইনি লেবির পুত্র, ইনি শিমিয়োনের পুত্র, ইনি যূদার পুত্র, ইনি যোষেফের পুত্র, ইনি যোনমের পুত্র, ইনি ইলিয়াকীমের পুত্র, ইনি মিলেয়ার পুত্র, ইনি মিন্নার পুত্র, ইনি মত্তথের পুত্র, ইনি নাথনের পুত্র, ইনি দায়ূদের পুত্র, ইনি যিশয়ের পুত্র, ইনি ওবেদের পুত্র, ইনি বোয়সের পুত্র, ইনি সল্‌মোনের পুত্র, ইনি নহশোনের পুত্র, ইনি অম্মীনাদবের পুত্র, ইনি অদমানের পুত্র, ইনি অর্ণির পুত্র, ইনি হিষ্রোণের পুত্র, ইনি পেরসের পুত্র, ইনি যিহূদার পুত্র, ইনি যাকোবের পুত্র, ইনি ইস্‌হাকের পুত্র, ইনি অব্রাহামের পুত্র, ইনি তেরূহের পুত্র, ইনি নাহোরের পুত্র, ইনি সরূগের পুত্র, ইনি রিয়ুর পুত্র, ইনি পেলগের পুত্র, ইনি এবরের পুত্র, ইনি শেলহের পুত্র, ইনি কৈননের পুত্র, ইনি অর্ফক্‌ষদের পুত্র, ইনি শেমের পুত্র, ইনি নোহের পুত্র, ইনি লেমকের পুত্র, ইনি মথূশেলহের পুত্র, ইনি হনোকের পুত্র, ইনি যেরদের পুত্র, ইনি মহললেলের পুত্র, ইনি কৈননের পুত্র, ইনি ইনোশের পুত্র, ইনি শেথের পুত্র, ইনি আদমের পুত্র, ইনি ঈশ্বরের পুত্র। [1] যীশু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হইয়া যর্দ্দন হইতে ফিরিয়া আসিলেন, এবং চল্লিশ দিন পর্য্যন্ত সেই আত্মার আবেশে প্রান্তর মধ্যে চালিত হইলেন, আর দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হইলেন। সেই সকল দিন তিনি কিছুই আহার করেন নাই; পরে সেই সকল দিন শেষ হইলে ক্ষুধিত হইলেন। তখন দিয়াবল তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এই পাথরখানিকে বল, যেন ইহা রুটী হইয়া যায়। যীশু তাহাকে উত্তর করিলেন, লেখা আছে, “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না।” পরে সে তাঁহাকে উপরে লইয়া গিয়া মুহূর্ত্তকাল মধ্যে জগতের সমস্ত রাজ্য দেখাইল। আর দিয়াবল তাঁহাকে বলিল, তোমাকেই আমি এই সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও এই সকলের প্রতাপ দিব; কেননা ইহা আমার কাছে সমর্পিত হইয়াছে, আর আমার যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে দান করি; অতএব তুমি যদি আমার সম্মুখে পড়িয়া প্রণাম কর, তবে এ সকলই তোমার হইবে। যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, লেখা আছে, “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে”। আর সে তাঁহাকে যিরূশালেমে লইয়া গেল, ও ধর্ম্মধামের চূড়ার উপরে দাঁড় করাইল, এবং তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এ স্থান হইতে নীচে পড়; কেননা লেখা আছে, ‘তিনি আপন দূতগণকে তোমার বিষয়ে আজ্ঞা দিবেন, যেন তাঁহারা তোমাকে রক্ষা করেন’; আর ‘তাঁহারা তোমাকে হস্তে করিয়া তুলিয়া লইবেন, পাছে তোমার চরণে প্রস্তরের আঘাত লাগে।’ যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, উক্ত আছে, “তুমি আপন ঈশ্বর প্রভুর পরীক্ষা করিও না”। আর সমস্ত পরীক্ষা সমাপন করিয়া দিয়াবল কিয়ৎকালের জন্য তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া গেল। তখন যীশু আত্মার পরাক্রমে গালীলে ফিরিয়া গেলেন, এবং তাঁহার কীর্ত্তি চারিদিকের সমুদয় অঞ্চলে ব্যাপিল। আর তিনি তাহাদের সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে উপদেশ দিয়া সকলের দ্বারা গৌরবান্বিত হইতে লাগিলেন। আর তিনি যেখানে পালিত হইয়াছিলেন, সেই নাসরতে উপস্থিত হইলেন, এবং আপন রীতি অনুসারে বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিলেন, ও পাঠ করিতে দাঁড়াইলেন। তখন যিশাইয় ভাববাদীর পুস্তক তাঁহার হস্তে সমর্পিত হইল, আর তিনি পুস্তকখানি খুলিয়া সেই স্থান পাইলেন, যেখানে লেখা আছে, “প্রভুর আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কারণ তিনি আমাকে অভিষিক্ত করিয়াছেন, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করিবার জন্য; তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, বন্দিগণের কাছে মুক্তি প্রচার করিবার জন্য, অন্ধদের কাছে চক্ষুর্দ্দান প্রচার করিবার জন্য, উপদ্রুতদিগকে নিস্তার করিয়া বিদায় করিবার জন্য, প্রভুত প্রসন্নতার বৎসর ঘোষণা করিবার জন্য”। পরে তিনি পুস্তকখানি বন্ধ করিয়া ভৃত্যের হস্তে দিয়া বসিলেন। তাহাতে সমাজ-গৃহে সকলের চক্ষু তাঁহার প্রতি স্থির হইয়া রহিল। আর তিনি তাহাদিগকে বলিতে লাগিলেন, অদ্যই এই শাস্ত্রীয় বচন তোমাদের কর্ণগোচরে পূর্ণ হইল। তাহাতে সকলে তাঁহার বিষয়ে সাক্ষ্য দিল, ও তাঁহার মুখনির্গত মধুর বাক্যে আশ্চর্য্য বোধ করিল; আর কহিল, এ কি যোষেফের পুত্র নহে? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আমাকে অবশ্য এই প্রবাদবাক্য বলিবে, চিকিৎসক, আপনাকেই সুস্থ কর; কফরনাহূমে যাহা যাহা করা হইয়াছে শুনিয়াছি, এখানে এই স্বদেশেও কর। তিনি আরও কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, কোন ভাববাদী স্বদেশে গ্রাহ্য হয় না। আর আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এলিয়ের সময় যখন তিন বৎসর ছয় মাস পর্য্যন্ত আকাশ রুদ্ধ ছিল, ও সমুদয় দেশে মহা-দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হইয়াছিল, তখন ইস্রায়েলের মধ্যে অনেক বিধবা ছিল; কিন্তু এলিয় তাহাদের কাহারও নিকটে প্রেরিত হন নাই, কেবল সীদোন দেশের সারিফতে এক বিধবা স্ত্রীলোকের নিকটে প্রেরিত হইয়াছিলেন। আর ইলীশায় ভাববাদীর সময়ে ইস্রায়েলের মধ্যে অনেক কুষ্ঠী ছিল, কিন্তু তাহাদের কেহই শুচীকৃত হয় নাই, কেবল সুরীয় নামান হইয়াছিল। এই কথা শুনিয়া সমাজ-গৃহে উপস্থিত লোকেরা সকলে ক্রোধে পূর্ণ হইল; আর তাহারা উঠিয়া তাঁহাকে নগরের বাহিরে ঠেলিয়া লইয়া চলিল, এবং যে পর্ব্বতে তাহাদের নগর নির্ম্মিত হইয়াছিল, তাহার অগ্রভাগ পর্য্যন্ত লইয়া গেল, যেন তাঁহাকে নীচে ফেলিয়া দিতে পারে। কিন্তু তিনি তাহাদের মধ্য দিয়া হাঁটিয়া চলিয়া গেলেন। পরে তিনি গালীলের কফরনাহূম নগরে নামিয়া আসিলেন। আর তিনি বিশ্রামবারে লোকদিগকে উপদেশ দিতে লাগিলেন; এবং লোকেরা তাঁহার উপদেশে চমৎকৃত হইল; কারণ তাঁহার বাক্য ক্ষমতা যুক্ত ছিল। তখন ঐ সমাজ-গৃহে এক ব্যক্তি ছিল, তাহাকে অশুচি ভূতের আত্মায় পাইয়াছিল; সে উচ্চরবে চেঁচাইয়া কহিল, আহা, হে নাসরতীয় যীশু, আপনার সহিত আমাদের সম্পর্ক কি? আপনি কি আমাদিগকে বিনাশ করিতে আসিলেন? আমি জানি, আপনি কে, ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি। তখন যীশু তাহাকে ধম্‌কাইয়া কহিলেন, চুপ কর, এবং উহা হইতে বাহির হও, তখন সেই ভূত তাহাকে মাঝখানে ফেলিয়া দিয়া তাহা হইতে বাহির হইয়া গেল, তাহার কোন হানি করিল না। তখন সকলে চমৎকৃত হইল, এবং পরস্পর বলাবলি করিতে লাগিল, এ কেমন কথা? ইনি ক্ষমতায় ও পরাক্রমে অশুচি আত্মাদিগকে আজ্ঞা করেন, আর তাহারা বাহির হইয়া যায়। পরে চারিদিকের অঞ্চলের সর্ব্বত্র তাঁহার কীর্ত্তি ব্যাপিল। পরে তিনি সমাজ-গৃহ হইতে উঠিয়া শিমোনের বাটীতে প্রবেশ করিলেন; তখন শিমোনের শাশুড়ী ভারী জ্বরে পীড়িতা ছিলেন, তাই তাঁহারা তাঁহার নিমিত্তে তাঁহাকে বিনতি করিলেন। তখন তিনি তাঁহার নিকটে দাঁড়াইয়া জ্বরকে ধমক্‌ দিলেন, তাহাতে তাঁহার জ্বর ছাড়িয়া গেল; আর তিনি তৎক্ষণাৎ উঠিয়া তাঁহাদের পরিচর্য্যা করিতে লাগিলেন। পরে সূর্য্য অস্ত যাইবার সময়ে, নানা রোগে রোগী যাহাদের ছিল, তাহারা সকলে তাহাদিগকে তাঁহার নিকটে আনিল; আর তিনি প্রত্যেক জনের উপরে হস্তার্পণ করিয়া তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। আর অনেক লোক হইতে ভূতও বাহির হইল, তাহারা চিৎকার করিয়া কহিল, আপনি ঈশ্বরের পুত্র; কিন্তু তিনি তাহাদিগকে ধমক্‌ দিয়া কথা কহিতে দিলেন না, কারণ তাহারা জানিত যে তিনিই সেই খ্রীষ্ট। পরে প্রভাত হইলে তিনি বাহির হইয়া কোন নির্জ্জন স্থানে গমন করিলেন; আর লোকেরা তাঁহার অন্বেষণ করিল, এবং তাঁহার নিকটে আসিয়া তাঁহাকে নিবারণ করিতে চাহিল, যেন তিনি তাহাদের নিকট হইতে চলিয়া না যান। কিন্তু তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, অন্য অন্য নগরেও আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে হইবে; কেননা সেই জন্যই আমি প্রেরিত হইয়াছি। পরে তিনি যিহূদিয়ার নানা সমাজ-গৃহে প্রচার করিতে লাগিলেন। একদা যখন লোকসমূহ তাঁহার উপরে চাপাচাপি করিয়া পড়িয়া ঈশ্বরের বাক্য শুনিতেছিল, তখন তিনি গিনেষরৎ হ্রদের কূলে দাঁড়াইয়াছিলেন, আর তিনি দেখিলেন, হ্রদের ধারে দুইখান নৌকা রহিয়াছে, কিন্তু ধীবরেরা নৌকা হইতে নামিয়া গিয়া জাল ধুইতেছিল। তাহাতে তিনি ঐ দুইয়ের মধ্যে একখানিতে, শিমোনের নৌকাতে, উঠিয়া স্থল হইতে একটু দূরে যাইতে তাঁহাকে বিনতি করিলেন; আর তিনি নৌকায় বসিয়া লোকসমূহকে উপদেশ দিতে লাগিলেন। পরে কথা শেষ করিয়া তিনি শিমোনকে কহিলেন, তুমি গভীর জলে নৌকা লইয়া চল, আর তোমরা মাছ ধরিবার জন্য তোমাদের জাল ফেল। শিমোন উত্তর করিলেন, হে নাথ, আমরা সমস্ত রাত্রি পরিশ্রম করিয়া কিছুমাত্র পাই নাই, কিন্তু আপনার কথায় আমি জাল ফেলিব। তাঁহারা সেইরূপ করিলে মাছের বড় ঝাঁক ধরা পড়িল, ও তাঁহাদের জাল ছিঁড়িতে লাগিল; তাহাতে তাঁহাদের যে অংশীদারেরা অন্য নৌকায় ছিলেন, তাঁহাদিগকে তাঁহারা সঙ্কেত করিলেন, যেন তাঁহারা আসিয়া তাঁহাদের সাহায্য করেন। তাঁহারা আসিয়া দুইখান নৌকা এমন পূর্ণ করিলেন যে, নৌকা দুখানি ডুবিতে লাগিল। তাহা দেখিয়া শিমোন পিতর যীশুর জানুর উপরে পড়িয়া কহিলেন, আমার নিকট হইতে প্রস্থান করুন, কেননা, হে প্রভু, আমি পাপী। কারণ জালে এত মাছ ধরা পড়িয়াছিল বলিয়া তিনি, ও যাঁহারা তাঁহার সঙ্গে ছিলেন, সকলে চমৎকৃত হইয়াছিলেন; আর সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও যোহন, যাঁহারা শিমোনের অংশীদার ছিলেন, তাঁহারাও সেইরূপ চমৎকৃত হইয়াছিলেন। তখন যীশু শিমোনকে কহিলেন, ভয় করিও না, এখন অবধি তুমি জীবনার্থে মানুষ ধরিবে। পরে তাঁহারা নৌকা কূলে আনিয়া সকলই পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পশ্চাদগামী হইলেন। একদা তিনি কোন নগরে আছেন, এমন সময়ে দেখ, এক জন সর্ব্বাঙ্গকুষ্ঠ; সে যীশুকে দেখিয়া উবুড় হইয়া পড়িয়া বিনতিপূর্ব্বক বলিল, প্রভু, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, তবে আমাকে শুচি করিতে পারেন। তখন তিনি হাত বাড়াইয়া তাহাকে স্পর্শ করিলেন, কহিলেন, আমার ইচ্ছা, তুমি শুচীকৃত হও; আর তখনই তাহার কুষ্ঠ চলিয়া গেল। পরে তিনি তাহাকে আজ্ঞা দিলেন, এই কথা কাহাকেও বলিও না, কিন্তু যাজকের নিকটে গিয়া আপনাকে দেখাও, এবং লোকদের কাছে সাক্ষ্য দিবার জন্য তোমার শুচীকরণ সম্বন্ধে মোশির আজ্ঞানুসারে নৈবেদ্য উৎসর্গ কর। কিন্তু তাঁহার বিষয়ে জনরব আরও অধিক ব্যাপিতে লাগিল; আর কথা শুনিবার জন্য এবং আপন আপন রোগ হইতে সুস্থ হইবার জন্য বিস্তর লোক সমাগত হইতে লাগিল। কিন্তু তিনি কোন না কোন নির্জ্জন স্থানে গিয়া প্রার্থনা করিতেন। আর এক দিবস তিনি উপদেশ দিতেছিলেন, এবং ফরীশীরা ও ব্যবস্থার গুরুরা নিকটে বসিয়াছিল; তাহারা গালীল ও যিহূদিয়ার সমস্ত গ্রাম এবং যিরূশালেম হইতে আসিয়াছিল; আর প্রভুর শক্তি উপস্থিত ছিল, যেন তিনি সুস্থ করেন। আর দেখ, কএকটী লোক এক জনকে খাটে করিয়া আনিল, সে পক্ষাঘাতী; তাহারা তাহাকে ভিতরে আনিয়া তাঁহার সম্মুখে রাখিতে চেষ্টা করিল। কিন্তু ভিড় প্রযুক্ত ভিতরে আনিবার পথ না পাওয়াতে ঘরের ছাদে উঠিল, এবং টালি সমূহের মধ্য দিয়া শয্যাশুদ্ধ তাহাকে মাঝখানে যীশুর সম্মুখে নামাইয়া দিল। তাহাদের বিশ্বাস দেখিয়া তিনি কহিলেন, হে মনুষ্য, তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইল। তখন অধ্যাপকগণ ও ফরীশীরা এই তর্ক করিতে লাগিল, এ কে যে ঈশ্বরনিন্দা করিতেছে? একমাত্র ঈশ্বর ব্যতিরেকে আর কে পাপ ক্ষমা করিতে পারে? যীশু তাহাদের তর্ক জানিয়া উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা মনে মনে কেন তর্ক করিতেছ? কোন্‌টা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা হইল’ বলা, না ‘তুমি উঠিয়া বেড়াও’ বলা? কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিতে মনুষ্যপুত্রের ক্ষমতা আছে, ইহা যেন তোমরা জানিতে পার, এই জন্য—তিনি সেই পক্ষাঘাতীকে বলিলেন, —তোমাকে বলিতেছি, উঠ, তোমার শয্যা তুলিয়া লইয়া তোমার ঘরে যাও। তাহাতে সে তখনই তাহাদের সাক্ষাতে উঠিল, এবং আপন শয্যা তুলিয়া লইয়া ঈশ্বরের গৌরব করিতে করিতে আপন গৃহে চলিয়া গেল। তখন সকলে অতিশয় আশ্চর্য্যান্বিত হইল, আর ঈশ্বরের গৌরব করিতে লাগিল, এবং ভয়ে পরিপূর্ণ হইয়া বলিতে লাগিল, আজ আমরা অলৌকিক ব্যাপার দেখিলাম। তৎপরে তিনি বাহিরে গেলেন, আর দেখিলেন, লেবি নামে এক জন করগ্রাহী করগ্রহণ-স্থানে বসিয়া আছেন; তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস। তাহাতে তিনি সকলই পরিত্যাগ করিয়া উঠিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিলেন। পরে লেবি আপন বাটীতে তাঁহার নিমিত্ত বড় এক ভোজ প্রস্তুত করিলেন, এবং অনেক করগ্রাহী ও অন্য অন্য লোক তাঁহাদের সঙ্গে ভোজনে বসিয়াছিল। তখন ফরীশীরা ও তাহাদের অধ্যাপকেরা তাঁহার শিষ্যদের বিরুদ্ধে বচসা করিয়া কহিতে লাগিল, তোমরা কি কারণ করগ্রাহী ও পাপীদের সঙ্গে ভোজন পান করিতেছ? যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, কিন্তু পীড়িত লোকদেরই প্রয়োজন আছে। আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকেই ডাকিতে আসিয়াছি, যেন তাহারা মন ফিরায়। পরে তাহারা তাঁহাকে কহিল, যোহনের শিষ্যগণ বার বার উপবাস করে ও প্রার্থনা করে, ফরীশীদের শিষ্যেরাও সেইরূপ করে; কিন্তু তোমার শিষ্যেরা ভোজন পান করিয়া থাকে। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, বর সঙ্গে থাকিতে তোমরা কি বাসর-ঘরের লোকদিগকে উপবাস করাইতে পার? কিন্তু সময় আসিবে; আর যখন বর তাহাদের নিকট হইতে নীত হইবেন, তখন তাহারা উপবাস করিবে। আরও তিনি তাহাদিগকে একটী দৃষ্টান্ত কহিলেন, তাহা এই, কহে নূতন কাপড় হইতে টুকরা ছিঁড়িয়া পুরাতন কাপড়ে লাগায় না; তাহা করিলে নূতনটাও ছিঁড়িতে হয়, এবং পুরাতন কাপড়েও সেই নূতনের তালী মিলিবে না। আর পুরাতন কুপায় কেহ টাট্‌কা দ্রাক্ষারস রাখে না; রাখিলে টাট্‌কা দ্রাক্ষারসে কুপাগুলি ফাটিয়া যাইবে, তাহাতে দ্রাক্ষারসও পড়িয়া যাইবে, কুপাগুলিও নষ্ট হইবে। কিন্তু টাট্‌কা দ্রাক্ষারস নূতন কুপাতেই রাখিতে হয়। আর পুরাতন দ্রাক্ষারস পান করিয়া কেহ টাট্‌কা চায় না, কেননা সে বলে, পুরাতনই ভাল। এক দিন বিশ্রামবারে যীশু শস্যক্ষেত্র দিয়া যাইতেছিলেন, এমন সময়ে তাঁহার শিষ্যেরা শীষ ছিঁড়িয়া ছিঁড়িয়া হাতে মাড়িয়া খাইতে লাগিলেন। তাহাতে কএক জন ফরীশী কহিল, বিশ্রামবারে যাহা করা বিধেয় নয়, তোমরা কেন তাহা করিতেছ? যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গীরা ক্ষুধিত হইলে তিনি কি করিয়াছিলেন, তাহাও কি তোমরা পাঠ কর নাই? তিনি ত ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করিয়া, যে দর্শন-রুটী কেবল যাজকবর্গ ব্যতিরেকে আর কাহারও ভোজন করা বিধেয় নয়, তাহা লইয়া আপনি ভোজন করিয়াছিলেন, এবং সঙ্গিগণকে দিয়াছিলেন। পরে তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, মনুষ্যপুত্র বিশ্রামবারের কর্ত্তা। আর এক বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিয়া উপদেশ দিলেন; সেই স্থানে একটী লোক ছিল, তাহার দক্ষিণ হস্ত শুকাইয়া গিয়াছিল। আর অধ্যাপকেরা ও ফরীশীরা, তিনি বিশ্রামবারে সুস্থ করেন কি না, দেখিবার জন্য তাঁহার প্রতি দৃষ্টি রাখিল, যেন তাঁহার নামে দোষারোপ করিবার সূত্র পায়। কিন্তু তিনি তাহাদের চিন্তা জ্ঞাত ছিলেন, আর সেই শুষ্কহস্ত ব্যক্তিকে কহিলেন, উঠ, মাঝখানে দাঁড়াও। তাহাতে সে উঠিয়া দাঁড়াইল। পরে যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করি, বিশ্রামবারে কি করা বিধেয়? ভাল করা না মন্দ করা? প্রাণ রক্ষা করা না নাশ করা? পরে তিনি চারিদিকে তাহাদের সকলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া সেই লোকটীকে বলিলেন, তোমার হাত বাড়াইয়া দেও। সে তাহা করিল, আর তাহার হাত সুস্থ হইল। কিন্তু তাহারা উন্মত্ততায় পূর্ণ হইল, আর যীশুর প্রতি কি করিবে, তাহাই পরস্পর বলাবলি করিতে লাগিল। সেই সময়ে তিনি একদা প্রার্থনা করণার্থে বাহির হইয়া পর্ব্বতে গেলেন, আর ঈশ্বরের নিকটে প্রার্থনা করিতে করিতে সমস্ত রাত্রি যাপন করিলেন। পরে যখন দিবস হইল, তিনি আপন শিষ্যগণকে ডাকিলেন, এবং তাঁহাদের মধ্য হইতে বারো জনকে মনোনীত করিলেন, আর তাঁহাদিগকে ‘প্রেরিত’ নাম দিলেন; —শিমোন, যাঁহাকে তিনি পিতর নামও দিলেন, ও তাঁহার ভ্রাতা আন্দ্রিয়, এবং যাকোব ও যোহন, এবং ফিলিপ ও বর্থলময়, এবং মথি ও থোমা, এবং আল্‌ফেয়ের [পুত্র] যাকোব ও উদ্‌যোগী আখ্যাত শিমোন, যাকোবের [পুত্র] যিহূদা, এবং ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা, যে তাঁহাকে [শত্রু হস্তে] সমর্পণ করে। পরে তিনি তাঁহাদের সহিত নামিয়া এক সমান ভূমির উপরে গিয়া দাঁড়াইলেন; আর তাঁহার অনেক শিষ্য এবং সমস্ত যিহূদিয়া ও যিরূশালেম এবং সোর ও সীদোনের সমুদ্র উপকূল হইতে বিস্তর লোক উপস্থিত হইল; তাহারা তাঁহার বাক্য শুনিবার ও আপন আপন রোগ হইতে সুস্থ হইবার নিমিত্তে তাঁহার নিকটে আসিয়াছিল, এবং যাহারা অশুচি আত্মা দ্বারা উৎপীড়িত হইতেছিল, তাহারা সুস্থ হইল। আর, সমস্ত লোক তাঁহাকে স্পর্শ করিতে চেষ্টা করিল, কেননা তাঁহা হইতে শক্তি নির্গত হইয়া সকলকে সুস্থ করিতেছিল। পরে তিনি আপন শিষ্যগণের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, ধন্য দীনহীনেরা, কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদেরই। ধন্য তোমরা, যাহারা এক্ষণে ক্ষুধিত, কারণ তোমরা পরিতৃপ্ত হইবে। ধন্য তোমরা, যাহারা এক্ষণে রোদন কর, কারণ তোমরা হাসিবে। ধন্য তোমরা, যখন লোকে মনুষ্যপুত্রের নিমিত্ত তোমাদিগকে দ্বেষ করে, আর যখন তোমাদিগকে পৃথক্‌ করিয়া দেয়, ও নিন্দা করে, এবং তোমাদের নাম মন্দ বলিয়া দূর করিয়া দেয়। সেই দিন আনন্দ করিও ও নৃত্য করিও, কেননা দেখ, স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর; কেননা তাহাদের পিতৃপুরুষেরা ভাববাদিগণের প্রতি তাহাই করিত। কিন্তু ধিক্‌ তোমাদিগকে, হা ধনবানেরা, কারণ তোমরা আপনাদের সান্ত্বনা পাইয়াছ। ধিক্‌ তোমাদিগকে, যাহারা এক্ষণে পরিতৃপ্ত, কারণ তোমরা ক্ষুধিত হইবে; ধিক্‌ তোমাদিগকে, যাহারা এক্ষণে হাস্য কর, কারণ তোমরা বিলাপ ও রোদন করিবে। ধিক্‌ তোমাদিগকে, যখন সকল লোকে তোমাদের সুখ্যাতি করে, কারণ তাহাদের পিতৃপুরুষেরা ভাক্ত ভাববাদীদের প্রতি তাহাই করিত। কিন্তু তোমরা যে শুনিতেছ, আমি তোমাদিগকে বলি, তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও; যাহারা তোমাদিগকে দ্বেষ করে, তাহাদের মঙ্গল করিও; যাহারা তোমাদিগকে শাপ দেয়, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিও; যাহারা তোমাদিগকে নিন্দা করে, তাহাদের নিমিত্ত প্রার্থনা করিও। যে তোমার এক গালে চড় মারে, তাহার দিকে অন্য গালও পাতিয়া দিও; এবং যে তোমার চোগা তুলিয়া লয়, তাহাকে আঙ্‌রাখাটীও লইতে বারণ করিও না। যে কেহ তোমার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাকে দিও; এবং যে তোমার দ্রব্য তুলিয়া লয়, তাহার কাছে তাহা আর চাহিও না। আর তোমরা যেরূপ ইচ্ছা কর যে, লোকে তোমাদের প্রতি করে, তোমরাও তাহাদের প্রতি সেইরূপ করিও। আর যাহারা তোমাদিগকে প্রেম করে, তাহাদিগকেই প্রেম করিলে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পাইতে পার? কেননা পাপীরাও, যাহারা তাহাদিগকে প্রেম করে, তাহাদিগকে প্রেম করে। আর যাহারা তোমাদের উপকার করে, যদি তাহাদের উপকার কর, তবে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পাইতে পার? পাপীরাও তাহাই করে। আর যাহাদের কাছে পাইবার আশা থাকে, যদি তাহাদিগকেই ধার দেও, তবে তোমরা কিরূপ সাধুবাদ পাইতে পার? পাপীরাও পাপীদিগকে ধার দেয়, যেন সেই পরিমাণে পুনরায় পায়। কিন্তু তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, তাহাদের ভাল করিও, এবং কখনও নিরাশ না হইয়া ধার দিও, তাহা করিলে তোমাদের মহাপুরস্কার হইবে, এবং তোমরা পরাৎপরের সন্তান হইবে, কেননা তিনি অকৃতজ্ঞদের ও দুষ্টদের প্রতিও কৃপাবান্‌। তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু, তোমরাও তেমনি দয়ালু হও। আর তোমরা বিচার করিও না, তাহাতে বিচারিত হইবে না। আর দোষী করিও না, তাহাতে দোষীকৃত হইবে না। তোমরা ছাড়িয়া দিও, তাহাতে তোমাদেরও ছাড়িয়া দেওয়া যাইবে। দেও, তাহাতে তোমাদিগকেও দেওয়া যাইবে; লোকে বিলক্ষণ পরিমাণে চাপিয়া ঝাঁকরিয়া উপচিয়া তোমাদের কোলে দিবে; কারণ তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদেরও নিমিত্তে পরিমাণ করা যাইবে। আর তিনি তাহাদিগকে একটী দৃষ্টান্তও কহিলেন, অন্ধ কি অন্ধকে পথ দেখাইতে পারে? উভয়েই কি গর্ত্তে পড়িবে না? শিষ্য গুরু হইতে বড় নয়, কিন্তু যে কেহ পরিপক্ব হয়, সে আপন গুরুর তুল্য হইবে। আর তোমার ভ্রাতার চক্ষে যে কুটা আছে, তাহাই কেন দেখিতেছ, কিন্তু তোমার নিজের চক্ষে যে কড়িকাট আছে, তাহা কেন ভাবিয়া দেখিতেছ না? তোমার চক্ষে যে কড়িকাট আছে, তাহা যখন দেখিতেছ না, তখন তুমি কেমন করিয়া আপন ভ্রাতাকে বলিতে পার, ভাই, এস, আমি তোমার চক্ষু হইতে কুটাগাছটা বাহির করিয়া দিই? তোমার নিজের চক্ষে যে কড়িকাট আছে, তাহা ত তুমি দেখিতেছ না! হে কপটী, আগে আপনার চক্ষু হইতে কড়িকাট বাহির করিয়া ফেল, তার পর তোমার ভ্রাতার চক্ষে যে কুটা আছে, তাহা বাহির করিবার নিমিত্ত স্পষ্ট দেখিতে পাইবে। কারণ এমন ভাল গাছ নাই, যাহাতে মন্দ ফল ধরে, এবং এমন মন্দ গাছও নাই, যাহাতে ভাল ফল ধরে। স্ব স্ব ফল দ্বারাই প্রত্যেক গাছ চেনা যায়; লোকে ত কাঁটাবন হইতে ডুমুর সংগ্রহ করে না, এবং শ্যাকুলের ঝোপ হইতে দ্রাক্ষাফল সংগ্রহ করে না। ভাল মানুষ আপন হৃদয়ের ভাল ভাণ্ডার হইতে ভালই বাহির করে; এবং মন্দ মানুষ মন্দ ভাণ্ডার হইতে মন্দই বাহির করে; যেহেতুক হৃদয়ের উপচয় হইতে তাহার মুখ কথা কহে। আর তোমরা কেন আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু, বলিয়া ডাক, অথচ আমি যাহা যাহা বলি, তাহা কর না? যে কেহ আমার নিকটে আসিয়া আমার বাক্য শুনিয়া পালন করে, সে কাহার তুল্য তাহা আমি তোমাদিগকে জানাইতেছি। সে এমন এক ব্যক্তির তুল্য, যে গৃহ নির্ম্মাণ করিতে গিয়া খনন করিল, খুঁড়িয়া গভীর করিল, ও পাষাণের উপরে ভিত্তিমূল স্থাপন করিল; পরে বন্যা আসিলে সেই গৃহে জলস্রোত বেগে বহিল, কিন্তু তাহা হেলাইতে পারিল না, কারণ তাহা উত্তমরূপে নির্ম্মিত হইয়াছিল। কিন্তু যে শুনিয়া পালন না করে, সে এমন এক ব্যক্তির তুল্য, যে মৃত্তিকার উপরে, বিনা ভিত্তিমূলে, গৃহ নির্ম্মাণ করিল; পরে জলস্রোত বেগে বহিয়া সেই গৃহে লাগিল, আর অমনি তাহা পড়িয়া গেল, এবং সেই গৃহের ভঙ্গ ঘোরতর হইল। লোকদের কর্ণগোচরে আপনার সকল কথা সমাপ্ত করিয়া তিনি কফরনাহূমে প্রবেশ করিলেন। তখন এক জন শতপতির একটী দাস পীড়িত হইয়া মৃতপ্রায় হইয়াছিল, সে তাঁহার প্রিয়পাত্র ছিল। তিনি যীশুর সংবাদ শুনিয়া যিহূদীদের কএক জন প্রাচীনকে দিয়া তাঁহার কাছে নিবেদন করিয়া পাঠাইলেন, যেন তিনি আসিয়া তাঁহার দাসকে বাঁচান। তাঁহারা যীশুর কাছে আসিয়া আগ্রহ পূর্ব্বক বিনতি করিয়া বলিতে লাগিলেন, আপনি যে তাঁহার জন্য এই কার্য্য করেন, তিনি তাহার যোগ্য; কেননা তিনি আমাদের জাতিকে প্রেম করেন, আর আমাদের সমাজ-গৃহ তিনি আপনি নির্ম্মাণ করিয়া দিয়াছেন। যীশু তাঁহাদের সঙ্গে গমন করিলেন, আর তিনি বাটীর অনতিদূরে থাকিতেই শতপতি কএক জন বন্ধু দ্বারা তাঁহাকে বলিয়া পাঠাইলেন, প্রভু, আপনাকে কষ্ট দিবেন না; কেননা আমি এমন যোগ্য নই যে, আপনি আমার ছাদের নীচে আইসেন; সেই জন্য আমাকেও আপনার নিকটে আসিবার যোগ্য বুঝিলাম না; আপনি বাক্যে বলুন, তাহাতেই আমার দাস সুস্থ হইবে। কারণ আমিও কর্ত্তৃত্বের অধীনে নিযুক্ত লোক, আবার সেনাগণ আমার অধীন; আর আমি তাহাদের এক জনকে ‘যাও’ বলিলে সে যায়, এবং অন্যকে ‘আইস’ বলিলে সে আইসে, আর আমার দাসকে ‘এই কর্ম্ম কর’ বলিলে সে তাহা করে। এই সকল কথা শুনিয়া যীশু তাঁহার বিষয়ে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, এবং যে লোকসমূহ তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতেছিল, তিনি তাহাদের দিকে ফিরিয়া কহিলেন, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ইস্রায়েলের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস দেখিতে পাই নাই। পরে যাঁহাদিগকে পাঠান হইয়াছিল, তাঁহারা গৃহে ফিরিয়া গিয়া সেই দাসকে সুস্থ দেখিতে পাইলেন। কিছু কাল পরে তিনি নায়িন্‌ নামক নগরে যাত্রা করিলেন, এবং তাঁহার শিষ্যেরা ও বিস্তর লোক তাঁহার সঙ্গে যাইতেছিল। যখন তিনি নগর-দ্বারের নিকটবর্ত্তী হইলেন, দেখ, লোকেরা একটী মরা মানুষকে বহন করিয়া বাহিরে লইয়া যাইতেছিল; সে আপন মাতার একমাত্র পুত্র, এবং সেই মাতা বিধবা; আর নগরের অনেক লোক তাহার সঙ্গে ছিল। তাহাকে দেখিয়া প্রভু তাহার প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন, এবং তাহাকে কহিলেন, কাঁদিও না। পরে নিকটে গিয়া খাট স্পর্শ করিলেন; আর বাহকেরা দাঁড়াইল। তিনি কহিলেন, হে যুবক, তোমাকে বলিতেছি, উঠ। তাহাতে সেই মরা মানুষটী উঠিয়া বসিল, এবং কথা কহিতে লাগিল; পরে তিনি তাহাকে তাহার মাতার হস্তে সমর্পণ করিলেন। তখন সকলে ভয়গ্রস্থ হইল, এবং ঈশ্বরের গৌরব করিয়া বলিতে লাগিল, ‘আমাদের মধ্যে এক জন মহান্‌ ভাববাদীর উদয় হইয়াছে,’ আর ‘ঈশ্বর আপন প্রজাদের তত্ত্বাবধান করিয়াছেন’। পরে সমুদয় যিহূদিয়াতে এবং চারিদিকে সমস্ত অঞ্চলে তাঁহার বিষয়ে এই কথা ব্যাপিয়া গেল। আর যোহনের শিষ্যগণ তাঁহাকে এই সকল বিষয়ের সংবাদ দিল। তাহাতে যোহন আপনার দুই জন শিষ্যকে ডাকিয়া তাহাদের দ্বারা প্রভুর নিকটে জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন, ‘যাঁহার আগমন হইবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না, আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকিব?’ পরে সেই দুই ব্যক্তি তাঁহার কাছে আসিয়া বলিল, যোহন বাপ্তাইজক আমাদের দ্বারা আপনার কাছে এই কথা বলিয়া পাঠাইয়াছেন, যাঁহার আগমন হইবে, সেই ব্যক্তি কি আপনি? না, আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকিব? সেই দণ্ডে তিনি অনেক লোককে রোগ, ব্যাধি ও দুষ্ট আত্মা হইতে সুস্থ করিলেন, এবং অনেক অন্ধকে চক্ষু দিলেন। পরে তিনি ঐ দুই জনকে এই উত্তর দিলেন, তোমরা যাও, যাহা দেখিলে ও শুনিলে, তাহার সংবাদ যোহনকে দেও; অন্ধেরা দেখিতে পাইতেছে, খঞ্জেরা চলিতেছে, কুষ্ঠীরা শুচীকৃত হইতেছে, বধিরেরা শুনিতেছে, মৃতেরা উত্থাপিত হইতেছে, দরিদ্রদের নিকটে সুসমাচার প্রচারিত হইতেছে; আর ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আমাতে বিঘ্নের কারণ না পায়। যোহনের দূতেরা প্রস্থান করিলে পর তিনি লোকদিগকে যোহনের বিষয়ে বলিতে লাগিলেন, তোমরা প্রান্তরে কি দেখিতে গিয়াছিলে? কি বায়ুকম্পিত নল? তবে কি দেখিতে গিয়াছিলে? কি কোমল বস্ত্র পরিহিত কোন ব্যক্তিকে? দেখ, যাহারা জাঁকাল পোষাক পরে এবং ভোগসুখে কাল যাপন করে, তাহারা রাজবাটীতে থাকে। তবে কি দেখিতে গিয়াছিলে? কি এক জন ভাববাদীকে? হাঁ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ভাববাদী হইতেও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে। ইনি সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে লেখা আছে, “দেখ, আমি আপন দূতকে তোমার অগ্রে প্রেরণ করি, সে তোমার অগ্রে তোমার পথ প্রস্তুত করিবে।” আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকলের মধ্যে যোহন হইতে মহান্‌ কেহই নাই; তথাপি ঈশ্বরের রাজ্যে অতি ক্ষুদ্র যে ব্যক্তি, সে তাঁহা হইতেও মহান্‌। আর সমস্ত লোক ও করগ্রাহীরা কথা শুনিয়া যোহনের বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হওয়াতে ঈশ্বরকে ধর্ম্মময় বলিয়া স্বীকার করিল; কিন্তু ফরীশীরা ও ব্যবস্থাবেত্তারা তাঁহার দ্বারা বাপ্তাইজিত না হওয়াতে আপনাদের বিষয়ে ঈশ্বরের মন্ত্রণা বিফল করিল। অতএব আমি কাহার সহিত এই কালের লোকদের তুলনা দিব? তাহারা কিসের তুল্য? তাহারা এমন বালকদের তুল্য, যাহারা বাজারে বসিয়া এক জন আর এক জনকে ডাকিয়া বলে, ‘আমরা তোমাদের নিকটে বাঁশী বাজাইলাম, তোমরা নাচিলে না; আমরা বিলাপ করিলাম, তোমরা কাঁদিলে না।’ কারণ যোহন বাপ্তাইজক আসিয়া রুটী খান না, দ্রাক্ষারসও পান করেন না, আর তোমরা বল, সে ভূতগ্রস্ত। মনুষ্যপুত্র আসিয়া ভোজন পান করেন, আর তোমরা বল, ঐ দেখ, এক জন পেটুক ও মদ্যপায়ী, করগ্রাহীদের ও পাপীদের বন্ধু। কিন্তু প্রজ্ঞা আপনার সকল সন্তান দ্বারা নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হইলেন। আর ফরীশীদের মধ্যে এক জন তাঁহাকে আপনার সঙ্গে ভোজন করিতে নিমন্ত্রণ করিল। তাহাতে তিনি সেই ফরীশীর বাটীতে প্রবেশ করিয়া ভোজনে বসিলেন। আর দেখ, সেই নগরে এক পাপিষ্ঠা স্ত্রীলোক ছিল; সে যখন জানিতে পাইল, তিনি সেই ফরীশীর বাটীতে ভোজনে বসিয়াছেন, তখন একটী শ্বেত প্রস্তরের পাত্রে সুগন্ধি তৈল লইয়া আসিল, এবং পশ্চাৎ দিকে তাঁহার চরণের নিকটে দাঁড়াইয়া রোদন করিতে করিতে চক্ষের জলে তাঁহার চরণ ভিজাইতে লাগিল, এবং আপনার মাথার চুল দিয়া তাহা মুছাইয়া দিল, আর তাঁহার চরণ চুম্বন করিতে করিতে সেই সুগন্ধি তৈল মাখাইতে লাগিল। তাহা দেখিয়া, যে ফরীশী তাঁহাকে নিমন্ত্রণ করিয়াছিল, সে মনে মনে কহিল, এ যদি ভাববাদী হইত, তবে জানিতে পারিত, ইহাকে যে স্পর্শ করিতেছে, সে কে এবং কি প্রকার স্ত্রীলোক, কারণ সে পাপিষ্ঠা। তখন যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলিবার আছে। সে কহিল, গুরো, বলুন। এক মহাজনের দুই জন ঋণী ছিল; এক জন ধারিত পাঁচ শত সিকি, আর এক জন পঞ্চাশ। তাহাদের পরিশোধ করিবার সঙ্গতি না থাকাতে তিনি উভয়কেই ক্ষমা করিলেন। ভাল, তাহাদের মধ্যে কে তাঁহাকে অধিক প্রেম করিবে? শিমোন উত্তর করিল, আমার বোধ হয়, যাহার অধিক ঋণ ক্ষমা করিলেন, সেই। তিনি তাহাকে কহিলেন, যথার্থ বিচার করিলে। আর তিনি সেই স্ত্রীলোকের দিকে ফিরিয়া শিমোনকে কহিলেন, এই স্ত্রীলোকটীকে দেখিতেছ? আমি তোমার বাটীতে প্রবেশ করিলাম, তুমি আমার পা ধুইবার জল দিলে না, কিন্তু এই স্ত্রীলোকটী চক্ষের জলে আমার চরণ ভিজাইয়াছে ও নিজের চুল দিয়া তাহা মুছাইয়া দিয়াছে। তুমি আমাকে চুম্বন করিলে না, কিন্তু যে অবধি আমি ভিতরে আসিয়াছি, এ আমার চরণ চুম্বন করিতেছে, ক্ষান্ত হয় নাই। তুমি তৈল দিয়া আমার মস্তক অভিষিক্ত করিলে না, কিন্তু এ সুগন্ধি দ্রব্যে আমার চরণ অভিষিক্ত করিয়াছে। এই জন্য, তোমাকে কহিতেছি, ইহার যে বহু পাপ, তাহার ক্ষমা হইয়াছে; কেননা এ অধিক প্রেম করিল; কিন্তু যাহাকে অল্প ক্ষমা করা যায়, সে অল্প প্রেম করে। পরে তিনি সেই স্ত্রীলোককে কহিলেন, তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইয়াছে। তখন যাহারা তাঁহার সঙ্গে ভোজনে বসিয়াছিল, তাহারা মনে মনে বলিতে লাগিল, এ কে যে পাপক্ষমাও করে? কিন্তু তিনি সেই স্ত্রীলোককে কহিলেন, তোমার বিশ্বাস তোমাকে পরিত্রাণ করিয়াছে; শান্তিতে প্রস্থান কর। ইহার পরেই তিনি ঘোষণা করিতে করিতে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিলেন, আর তাঁহার সঙ্গে সেই বারো জন, এবং যাঁহারা দুষ্ট আত্মা কিম্বা রোগ হইতে মুক্তা হইয়াছিলেন, এমন কএকটী স্ত্রীলোক ছিলেন, মগ্দলীনী নাম্নী মরিয়ম, যাঁহা হইতে সাত ভূত বাহির হইয়াছিল, যোহানা, যিনি হেরোদের বিষয়াধ্যক্ষ কূষের স্ত্রী, এবং শোশন্না ও অন্য অনেকগুলি স্ত্রীলোক ছিলেন; তাঁহারা আপন আপন সম্পত্তি হইতে তাঁহাদের পরিচর্য্যা করিতেন। আর যখন বিস্তর লোক সমাগত হইতেছিল, এবং ভিন্ন ভিন্ন নগর হইতে লোকেরা তাঁহার নিকট আসিতেছিল, তখন তিনি দৃষ্টান্ত দ্বারা কহিলেন, বীজবাপক আপন বীজ বপন করিতে গেল। বপনের সময়ে কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল, তাহাতে তাহা পদতলে দলিত হইল, ও আকাশের পক্ষিগণ তাহা খাইয়া ফেলিল। আর কতক পাষাণের উপরে পড়িল, তাহাতে তাহা অঙ্কুরিত হইলে রস না পাওয়াতে শুকাইয়া গেল। আর কতক কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহাতে কাঁটা সকল সঙ্গে সঙ্গে অঙ্কুরিত হইয়া তাহা চাপিয়া রাখিল। আর কতক বীজ উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহাতে তাহা অঙ্কুরিত হইয়া শত গুণ ফল উৎপন্ন করিল। এই কথা বলিয়া তিনি উচ্চ রবে কহিলেন, যাহার শুনিতে কাণ থাকে, সে শুনুক। পরে তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ঐ দৃষ্টান্তের ভাব কি? তিনি কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সকল তোমাদিগকে জানিতে দেওয়া হইয়াছে; কিন্তু আর সকলের নিকটে দৃষ্টান্ত দ্বারা বলা গিয়াছে; যেন তাহারা দেখিয়াও না দেখে, এবং শুনিয়াও না বুঝে। দৃষ্টান্তটী এই; সেই বীজ ঈশ্বরের বাক্য। আর তাহারাই পথের পার্শ্বের লোক, যাহারা শুনিয়াছে, পরে দিয়াবল আসিয়া তাহাদের হৃদয় হইতে সেই বাক্য হরণ করিয়া লয়, যেন তাহারা বিশ্বাস করিয়া করিয়া পরিত্রাণ না পায়। আর তাহারাই পাষাণের উপরের লোক, যাহারা শুনিয়া আনন্দপূর্ব্বক সেই বাক্য গ্রহণ করে, কিন্তু তাহাদের মূল নাই, তাহারা অল্প কালমাত্র বিশ্বাস করে, আর পরীক্ষার সময়ে সরিয়া পড়ে। আর যাহা কাঁটাবনের মধ্যে পড়িল, তাহা এমন লোক, যাহারা শুনিয়াছে, কিন্তু চলিতে চলিতে জীবনের চিন্তা ও ধন ও সুখভোগের দ্বারা চাপা পড়ে, এবং পক্ব ফল উৎপন্ন করে না। আর যাহা উত্তম ভূমিতে পড়িল, তাহা এমন লোক, যাহারা সৎ ও উত্তম হৃদয়ে বাক্য শুনিয়া ধরিয়া রাখে, এবং ধৈর্য্য সহকারে ফল উৎপন্ন করে। আর প্রদীপ জ্বালিয়া কেহ পাত্র দিয়া ঢাকে না, কিম্বা খাটের নীচে রাখে না, কিন্তু দীপাধারের উপরেই রাখে, যেন যাহারা ভিতরে যায়, তাহারা আলো দেখিতে পায়। কারণ এমন গুপ্ত কিছুই নাই, যাহা প্রকাশিত হইবে না; এবং এমন লুক্কায়িত কিছুই নাই, যাহা জানা যাইবে না ও প্রকাশ পাইবে না। অতএব দেখিও, তোমরা কিরূপে শুন; কেননা যাহার আছে, তাহাকে দেওয়া যাইবে; আর যাহার নাই, তাহার বোধে যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে। আর তাঁহার মাতা ও ভ্রাতৃগণ তাঁহার নিকটে আসিলেন, কিন্তু জনতা প্রযুক্ত তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারিলেন না। পরে তাঁহাকে জানান হইল, আপনার মাতা ও আপনার ভ্রাতারা আপনাকে দেখিবার বাসনায় বাহিরে দাঁড়াইয়া আছেন। তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, এই যে ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্য শুনে ও পালন করে, ইহারাই আমার মাতা ও ভ্রাতৃগণ। এক দিন তিনি স্বয়ং ও তাঁহার শিষ্যগণ একখানি নৌকায় উঠিলেন; আর তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, আইস, আমরা হ্রদের ওপারে যাই; তাহাতে তাঁহারা খুলিয়া দিলেন। কিন্তু তাঁহারা নৌকা ছাড়িয়া দিলে তিনি নিদ্রা গেলেন, আর হ্রদে ঝড় আসিয়া পড়িল, তাহাতে নৌকা জলে পূর্ণ হইতে লাগিল, ও তাঁহারা সঙ্কটে পড়িলেন। পরে তাঁহারা নিকটে গিয়া তাঁহাকে জাগাইয়া কহিলেন, নাথ, নাথ, আমরা মারা পড়িলাম। তখন তিনি জাগিয়া উঠিয়া বায়ুকে ও জলের তরঙ্গকে ধমক্‌ দিলেন, আর উভয়ই থামিয়া গেল, ও শান্তি হইল। পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের বিশ্বাস কোথায়? তখন তাঁহারা ভীত হইয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, পরস্পর কহিলেন, ইনি তবে কে যে বায়ুকে ও জলকেও আজ্ঞা দেন, আর তাহারা ইহাঁর আজ্ঞা মানে? পরে তাঁহারা গালীলের পরপারস্থ গেরাসেনীদের অঞ্চলে পহুঁছিলেন। আর তিনি স্থলে নামিলে ঐ নগরের একটা ভূতগ্রস্ত লোক সম্মুখে উপস্থিত হইল; সে অনেক দিন হইতে কাপড় পরিত না, ও গৃহে বাস করিত না, কিন্তু কবরে থাকিত। যীশুকে দেখিবামাত্র সে চীৎকার করিয়া উঠিল, এবং তাঁহার সম্মুখে পড়িয়া উচ্চ রবে কহিল, হে যীশু, পরাৎপর ঈশ্বরের পুত্র, আপনার সহিত আমার সম্পর্ক কি? আপনাকে বিনতি করি, আমাকে যাতনা দিবেন না। কারণ তিনি সেই অশুচি আত্মাকে লোকটী হইতে বাহির হইয়া যাইতে আজ্ঞা করিলেন; কেননা ঐ আত্মা দীর্ঘকাল অবধি তাহাকে ধরিয়াছিল, আর শৃঙ্খল ও বেড়ী দ্বারা বদ্ধ হইয়া রক্ষিত হইলেও সে বন্ধন ছিঁড়িয়া ভূতের বশে নির্জ্জন স্থানে চালিত হইত। যীশু তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার নাম কি? সে কহিল, বাহিনী; কেননা অনেক ভূত তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল। পরে তাহারা তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিল, যেন তিনি তাহাদিগকে রসাতলে চলিয়া যাইতে আজ্ঞা না দেন। সেই স্থানে পর্ব্বতের উপরে বৃহৎ এক শূকরপাল চরিতেছিল; তাহাতে ভূতগণ তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাদিগকে শূকরদের মধ্যে প্রবেশ করিতে অনুমতি দেন; তিনি তাহাদিগকে অনুমতি দিলেন। তখন ভূতগণ সেই লোকটী হইতে বাহির হইয়া শূকরদিগের মধ্যে প্রবেশ করিল, তাহাতে সেই পাল বেগে ঢালু পাড় দিয়া দৌড়িয়া গিয়া হ্রদে পড়িয়া ডুবিয়া মরিল। এই ঘটনা দেখিয়া, যাহারা সেগুলিকে চরাইতেছিল, তাহারা পলায়ন করিল, এবং নগরে ও পল্লীতে পল্লীতে সংবাদ দিল। তখন কি ঘটিয়াছে, দেখিবার জন্য লোকেরা বাহির হইল, এবং যীশুর নিকটে আসিয়া দেখিল, যে লোকটী হইতে ভূতগণ বাহির হইয়াছে, সে কাপড় পরিয়া ও সুবোধ হইয়া যীশুর চরণতলে বসিয়া আছে; তাহাতে তাহারা ভয় পাইল। আর যাহারা দেখিয়াছিল, তাহারা সেই ভূতগ্রস্থ কিরূপে সুস্থ হইয়াছিল, তাহা তাহাদিগকে বলিল। তাহাতে গেরাসেনীদের প্রদেশের চারিদিকের সমস্ত লোক তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাদের নিকট হইতে চলিয়া যান; কেননা তাহারা মহাভয়ে আক্রান্ত হইয়াছিল, তখন তিনি নৌকায় উঠিয়া ফিরিয়া আসিলেন। আর যাহা হইতে ভূতগণ বাহির হইয়াছিল, সেই লোকটী প্রার্থনা করিল, যেন তাঁহার সঙ্গে থাকিতে পারে; কিন্তু তিনি তাহাকে বিদায় করিয়া কহিলেন, তুমি তোমার গৃহে ফিরিয়া যাও, এবং তোমার নিমিত্ত ঈশ্বর যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছেন, তাহার বৃত্তান্ত বল। তাহাতে সে চলিয়া গিয়া, যীশু তাহার জন্য যে যে মহৎ কার্য্য করিয়াছেন, তাহা নগরের সর্ব্বত্র প্রচার করিতে লাগিল। যীশু ফিরিয়া আসিলে লোকেরা তাঁহাকে সাদরে গ্রহণ করিল; কারণ সকলে তাঁহার অপেক্ষা করিতেছিল। আর দেখ, যায়ীর নামে এক ব্যক্তি আসিলেন; তিনি সমাজ-গৃহের এক জন অধ্যক্ষ। তিনি যীশুর চরণে পড়িয়া তাঁহার গৃহে আসিতে তাঁহাকে বিনতি করিতে লাগিলেন; কারণ তাঁহার একটী মাত্র কন্যা ছিল, বয়স কমবেশ বারো বৎসর, আর সে মৃতপ্রায় হইয়াছিল। যীশু যখন যাইতেছিলেন, লোকেরা তাঁহার উপরে চাপাচাপি করিয়া পড়িতে লাগিল। আর, একটী স্ত্রীলোক, যে বারো বৎসর অবধি প্রদর রোগগ্রস্ত হইয়াছিল, যে চিকিৎসকদের পিছনে সর্ব্বস্ব ব্যয় করিয়াও কাহারও দ্বারা সুস্থ হইতে পারে নাই, সে পশ্চাৎ দিকে আসিয়া তাঁহার বস্ত্রের থোপ স্পর্শ করিল; আর তৎক্ষণাৎ তাহার রক্তস্রাব বদ্ধ হইল। তখন যীশু কহিলেন, কে আমাকে স্পর্শ করিল? সকলে অস্বীকার করিলে পিতর ও তাঁহার সঙ্গীরা বলিলেন, নাথ, লোকসমূহ চাপাচাপি করিয়া আপনার উপরে পড়িতেছে। কিন্তু যীশু কহিলেন, আমাকে কেহ স্পর্শ করিয়াছে, কেননা আমি টের পাইয়াছি আমা হইতে শক্তি বাহির হইল। স্ত্রীলোকটী যখন দেখিল, সে গুপ্ত নহে, তখন কাঁপিতে কাঁপিতে আসিল, এবং তাঁহার সম্মুখে প্রণিপাত করিয়া, কি নিমিত্ত তাঁহাকে স্পর্শ করিয়াছিল এবং কি প্রকারে তৎক্ষণাৎ সুস্থ হইয়াছিল, তাহা সকল লোকের সাক্ষাতে বর্ণনা করিল। তিনি তাহাকে কহিলেন, বৎসে! তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল; শান্তিতে চলিয়া যাও। তিনি কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে সমাজাধ্যক্ষের বাটী হইতে এক জন আসিয়া কহিল, আপনার কন্যার মৃত্যু হইয়াছে, গুরুকে আর কষ্ট দিবেন না। তাহা শুনিয়া যীশু তাঁহাকে উত্তর করিলেন, ভয় করিও না, কেবল বিশ্বাস কর, তাহাতে সে সুস্থ হইবে। পরে তিনি সেই বাটীতে উপস্থিত হইলে, পিতর, যাকোব ও যোহন এবং বালিকাটীর পিতা ও মাতা ছাড়া আর কাহাকেও প্রবেশ করিতে দিলেন না। তখন সকলে তাহার জন্য কাঁদিতেছিল, ও বিলাপ করিতেছিল। তিনি কহিলেন, কাঁদিও না; সে মরে নাই, ঘুমাইয়া রহিয়াছে। তখন তাহারা তাঁহাকে উপহাস করিল, কেননা তাহারা জানিত, সে মরিয়া গিয়াছে। কিন্তু তিনি তাহার হাত ধরিয়া ডাকিয়া কহিলেন, বালিকে, উঠ। তাহাতে তাহার আত্মা ফিরিয়া আসিল, ও সে তৎক্ষণাৎ উঠিল; আর তিনি তাহাকে কিছু আহার দিতে আজ্ঞা করিলেন। ইহাতে তাহার পিতামাতা চমৎকৃত হইল, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে আজ্ঞা করিলেন, এ ঘটনার কথা কাহাকেও বলিও না। পরে তিনি সেই বারো জনকে একত্র ডাকিয়া তাঁহাদিগকে সমস্ত ভূতের উপরে, এবং রোগ ভাল করিবার জন্য, শক্তি ও কর্ত্তৃত্ব দিলেন; আর ঈশ্বরের রাজ্য প্রচার করিতে এবং আরোগ্য করিতে তাঁহাদিগকে প্রেরণ করিলেন। আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, পথের জন্য কিছুই লইও না, যষ্টিও না, ঝুলিও না, খাদ্যও না, টাকাও না; দুই দুইটা আঙ্‌রাখাও লইও না। আর তোমরা যে কোন বাটীতে প্রবেশ কর, তথায় থাকিও, এবং তথা হইতে প্রস্থান করিও। আর যে সকল লোক তোমাদিগকে গ্রহণ না করে, সেই নগর হইতে প্রস্থান করিবার সময়ে তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের জন্য তোমাদের পায়ের ধূলা ঝাড়িয়া ফেলিও। পরে তাঁহারা প্রস্থান করিয়া চারিদিকে গ্রামে গ্রামে যাইতে লাগিলেন, সর্ব্বত্র সুসমাচার প্রচার এবং আরোগ্য দান করিতে লাগিলেন। আর, যাহা যাহা হইতেছিল, হেরোদ রাজা সমস্তই শুনিতে পাইলেন; এবং তিনি বড় অস্থির হইলেন, কারণ কেহ কেহ বলিত, যোহন মৃতদের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন; আর কেহ কেহ বলিত, এলিয় দর্শন দিয়াছেন; এবং আর কেহ কেহ বলিত, পূর্ব্বকালীন ভাববাদিগণের এক জন উঠিয়াছেন। আর হোরোদ কহিলেন, যোহনের ত আমিই মস্তক ছেদন করিয়াছি; কিন্তু ইনি কে, যাঁহার বিষয়ে এরূপ কথা শুনিতে পাইতেছি? আর তিনি তাঁহাকে দেখিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। পরে প্রেরিতেরা যাহা যাহা করিয়াছিলেন, ফিরিয়া আসিয়া তাহার বৃত্তান্ত যীশুকে কহিলেন। আর তিনি তাঁহাদিগকে সঙ্গে লইয়া বিরলে বৈৎসৈদা নামক নগরে গেলেন। কিন্তু লোকেরা তাহা জানিতে পারিয়া তাঁহার পশ্চাৎ গমন করিল, আর তিনি তাহাদিগকে সদয় ভাবে গ্রহণ করিয়া তাহাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় কথা কহিলেন, এবং যাহাদের সুস্থ হইবার প্রয়োজন ছিল, তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। পরে দিবা অবসান হইতে লাগিল, আর সেই বারো জন নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি এই লোকসমূহকে বিদায় করুন, যেন ইহারা চারিদিকে গ্রামে ও পল্লীতে গিয়া রাত্রিবাস করে ও খাদ্য দ্রব্য দেখিয়া লয়, কেননা এখানে আমরা নির্জ্জন স্থানে আছি। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরাই ইহাদিগকে আহার দেও। তাঁহারা বলিলেন, পাঁচখানা রুটী ও দুইটী মাছের অধিক আমাদের কাছে নাই; তবে কি আমরা গিয়া এই সমস্ত লোকের জন্য খাদ্য কিনিয়া আনিতে পারিব? কারণ তাহারা অনুমান পাঁচ সহস্র পুরুষ ছিল। তখন তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করিয়া উহাদিগকে সারি সারি বসাইয়া দেও। তাঁহারা সেইরূপ করিলেন, সকলকে বসাইয়া দিলেন। পরে তিনি সেই পাঁচখানা রুটী ও দুইটী মাছ লইয়া স্বর্গের দিকে ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিয়া সেইগুলিকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, ও ভাঙ্গিলেন; আর লোকদের সম্মুখে রাখিবার জন্য শিষ্যগণকে দিতে লাগিলেন। তাহাতে সকলে আহার করিয়া তৃপ্ত হইল, এবং তাহারা যাহা অবশিষ্ট রাখিল, সেই সকল গুঁড়াগাঁড়া কুড়াইলে পর বারো ডালা হইল। একদা তিনি বিজনে প্রার্থনা করিতেছিলেন, শিষ্যগণ তাঁহার সঙ্গে ছিলেন; আর তিনি তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি কে, এ বিষয়ে লোকসমূহ কি বলে? তাঁহারা উত্তর করিয়া কহিলেন, যোহন বাপ্তাইজক; কিন্তু কেহ কেহ বলে, আপনি এলিয়; আর কেহ কেহ বলে, পূর্ব্বকালীন ভাববাদিগণের এক জন উঠিয়াছেন। তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে? পিতর উত্তর করিয়া কহিলেন, ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট। তখন তিনি তাঁহাদিগকে দৃঢ়রূপে বলিয়া দিলেন ও আজ্ঞা করিলেন, এ কথা কাহাকেও বলিও না; তিনি কহিলেন, মনুষ্যপুত্রকে অনেক দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, প্রাচীনবর্গ, প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকগণ কর্ত্তৃক অগ্রাহ্য হইতে হইবে, এবং হত হইতে হইবে; আর তৃতীয় দিবসে উঠিতে হইবে। আর তিনি সকলকে বলিলেন, কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, প্রতিদিন আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদগামী হউক। কেননা যে কেহ আপন প্রাণ রক্ষা করিতে ইচ্ছা করে, সে তাহা হারাইবে; কিন্তু যে কেহ আমার নিমিত্ত আপন প্রাণ হারায়, সেই তাহা রক্ষা করিবে। কারণ মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপনাকে নষ্ট করে কিম্বা হারায়, তবে তাহার লাভ কি হইল? কেননা যে কেহ আমাকে ও আমার বাক্যকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করে, মনুষ্যপুত্র যখন আপনার প্রতাপে এবং পিতার ও পবিত্র দূতগণের প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি তাহাকে লজ্জার বিষয় জ্ঞান করিবেন। কিন্তু আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে এমন কএক জন আছে, যাহারা, যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্য না দেখিবে, সেই পর্য্যন্ত কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না। এই সকল কথা বলিবার পরে অনুমান আট দিন গত হইলে তিনি পিতর, যোহন ও যাকোবকে সঙ্গে লইয়া প্রার্থনা করিবার জন্য পর্ব্বতে উঠিলেন। আর তিনি প্রার্থনা করিতেছেন, এমন সময়ে তাঁহার মুখের দৃশ্য অন্যরূপ হইল, এবং তাঁহার বস্ত্র শুভ্র ও চাক্‌চক্যময় হইল। আর দেখ, দুই জন পুরুষ তাঁহার সহিত কথোপকথন করিতে লাগিলেন; তাঁহারা মোশি ও এলিয়; তাঁহারা সপ্রতাপে দেখা দিয়া, তাঁহার সেই যাত্রার বিষয় কথা কহিতে লাগিলেন, যাহা তিনি যিরূশালেমে সমাপন করিতে উদ্যত ছিলেন। তখন পিতর ও তাঁহার সঙ্গীরা নিদ্রায় ভারাক্রান্ত ছিলেন, কিন্তু জাগিয়া উঠিয়া তাঁহার প্রতাপ এবং ঐ দুই ব্যক্তিকে দেখিলেন, যাঁহারা তাঁহার সহিত দাঁড়াইয়া ছিলেন। পরে তাঁহারা তাঁহার নিকট হইতে প্রস্থান করিতেছেন, এমন সময়ে পিতর যীশুকে কহিলেন, নাথ, এখানে আমাদের থাকা ভাল; আমরা তিনটী কুটীর নির্ম্মাণ করি; একটী আপনার জন্য, একটী মোশির জন্য, আর একটী এলিয়ের জন্য; কিন্তু তিনি কি বলিলেন, তাহা বুঝিলেন না। তিনি এই কথা বলিতেছেন, এমন সময়ে একখানি মেঘ আসিয়া তাঁহাদিগকে ছায়া করিল; তাহাতে তাঁহারা সেই মেঘে প্রবেশ করিলে ইহাঁরা ভীত হইলেন। আর সেই মেঘ হইতে এই বাণী হইল, ইনিই আমার পুত্র, আমার মনোনীত, ইহাঁর কথা শুন। এই বাণী হইবামাত্র একা যীশুকে দেখা গেল। আর তাঁহারা নীরব রহিলেন, যাহা যাহা দেখিয়াছিলেন, তাহার কিছুই সেই সময়ে কাহাকেও জ্ঞাত করিলেন না। পরদিন তাঁহারা সেই পর্ব্বত হইতে নামিয়া আসিলে বিস্তর লোক তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিল। আর দেখ, ভিড়ের মধ্য হইতে এক ব্যক্তি উচ্চৈঃস্বরে কহিল, হে গুরু, বিনয় করি, আমার পুত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত করুন, কেননা এটী আমার একমাত্র সন্তান। আর দেখুন, একটা আত্মা ইহাকে আক্রমণ করে, আর এ হঠাৎ চেঁচাইয়া উঠে; এবং সে ইহাকে মুচড়াইয়া ধরে, তাহাতে এ ফেনা বাহির করে, আর সে ইহাকে ক্ষত-বিক্ষত করিয়া কষ্টে ছাড়িয়া যায়। আর আমি আপনার শিষ্যদিগকে নিবেদন করিয়াছিলাম, যেন তাঁহারা এটাকে ছাড়ান, কিন্তু তাঁহারা পারিলেন না। তখন যীশু উত্তর করিয়া কহিলেন, হে অবিশ্বাসী ও বিপথগামী বংশ, কত কাল আমি তোমাদের নিকটে থাকিব ও তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করিব? তোমার পুত্রকে এখানে আন। সে আসিতেছে, এমন সময়ে ঐ ভূত তাহাকে ফেলিয়া দিল, ও ভয়ানক মুচড়াইয়া ধরিল। কিন্তু যীশু সেই অশুচি আত্মাকে ধমক্‌ দিলেন, বালকটীকে সুস্থ করিলেন, ও তাহার পিতার কাছে তাহাকে সমর্পণ করিলেন। তখন সকলে ঈশ্বরের মহিমায় চমৎকৃত হইল। আর তিনি যে সমস্ত কার্য্য করিতেছিলেন, তাহাতে সকল লোক আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলে তিনি আপন শিষ্যগণকে কহিলেন, তোমরা এই সকল বাক্য কর্ণে স্থান দান কর; কেননা সম্প্রতি মনুষ্যপুত্র মনুষ্যদের হস্তে সমর্পিত হইবেন। কিন্তু তাঁহারা এ কথা বুঝিলেন না, এবং ইহা তাঁহাদের হইতে গুপ্ত থাকিল, যাহাতে তাঁহারা বুঝিয়া উঠিতে না পারেন, এবং তাঁহার নিকটে এ কথার বিষয় জিজ্ঞাসা করিতে তাঁহাদের ভয় হইল। আর তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, এই তর্ক তাঁহাদের মধ্যে উপস্থিত হইল। তখন যীশু তাঁহাদের হৃদয়ের তর্ক জানিয়া একটী শিশুকে লইয়া আপনার পার্শ্বে দাঁড় করাইলেন, এবং তাঁহাদিগকে কহিলেন, যে কেহ আমার নামে এই শিশুটীকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; এবং যে কেহ আমাকে গ্রহণ করে, সে তাঁহাকেই গ্রহণ করে, যিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন; কারণ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, সেই মহান্‌। পরে যোহন কহিলেন, নাথ, আমরা এক ব্যক্তিকে আপনার নামে ভূত ছাড়াইতে দেখিয়াছিলাম, আর তাহাকে বারণ করিতেছিলাম, কারণ সে আমাদের সহানুগামী নয়। কিন্তু যীশু তাঁহাকে বলিলেন, বারণ করিও না, কেননা যে তোমাদের বিপক্ষ নয়, সে তোমাদের সপক্ষ। আর যখন তাঁহার ঊর্দ্ধে নীত হইবার সময় পূর্ণ হইয়া আসিতেছিল, তখন তিনি একান্ত মনে যিরূশালেমে যাইতে উন্মুখ হইলেন, এবং আপনার অগ্রে দূতগণ প্রেরণ করিলেন। আর তাঁহারা গিয়া শমরীয়দের কোন গ্রামে প্রবেশ করিলেন, যাহাতে তাঁহার জন্য আয়োজন করিতে পারেন। কিন্তু লোকেরা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না, কেননা তিনি যিরূশালেমে যাইতে উন্মুখ ছিলেন। তাহা দেখিয়া তাঁহার শিষ্য যাকোব ও যোহন বলিলেন, প্রভো, আপনি কি ইচ্ছা করেন যে, এলিয় যেমন করিয়াছিলেন, তেমনি আমরা বলি, আকাশ হইতে অগ্নি নামিয়া আসিয়া ইহাদিগকে ভস্ম করিয়া ফেলুক? কিন্তু তিনি মুখ ফিরাইয়া তাঁহাদিগকে ধমক্‌ দিলেন, আর কহিলেন, তোমরা কি প্রকার আত্মার লোক, তাহা জান না। কারণ মনুষ্যপুত্র মনুষ্যদের প্রাণনাশ করিতে আইসেন নাই, কিন্তু রক্ষা করিতে আসিয়াছেন। পরে তাঁহারা অন্য গ্রামে চলিয়া গেলেন। তাঁহারা পথে যাইতেছেন, এমন সময়ে এক ব্যক্তি তাঁহাকে কহিল, আপনি যে কোন স্থানে যাইবেন, আমি আপনার পশ্চাৎ যাইব। যীশু তাহাকে কহিলেন, শৃগালদের গর্ত্ত আছে, এবং আকাশের পক্ষিগণের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মস্তক রাখিবার স্থান নাই। আর এক জনকে তিনি বলিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস। কিন্তু সে কহিল, প্রভু, অগ্রে আমার পিতার কবর দিয়া আসিতে অনুমতি করুন। তিনি তাহাকে বলিলেন, মৃতেরাই আপন আপন মৃতদের কবর দিউক; কিন্তু তুমি গিয়া ঈশ্বরের রাজ্য ঘোষণা কর। আর এক জন কহিল, প্রভু, আমি আপনার পশ্চাৎ যাইব, কিন্তু অগ্রে নিজ বাটীর লোকদের নিকটে বিদায় লইয়া আসিতে অনুমতি করুন। কিন্তু যীশু তাহাকে কহিলেন, যে কোন ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়া পিছনে ফিরিয়া চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী নয়। তৎপরে প্রভু আরও সত্তর জনকে নিযুক্ত করিলেন, আর আপনি যেখানে যেখানে যাইতে উদ্যত ছিলেন, সেই সমস্ত নগরে ও স্থানে আপনার অগ্রে দুই দুই জন করিয়া তাহাদিগকে প্রেরণ করিলেন। তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প; অতএব শস্যক্ষেত্রের স্বামীর নিকটে প্রার্থনা কর, যেন তিনি নিজ শস্যক্ষেত্রে কার্য্যকারী লোক পাঠাইয়া দেন। তোমরা যাও, দেখ, কেন্দুয়াদের মধ্যে যেমন মেষশাবক, তদ্রূপ তোমাদিগকে প্রেরণ করিতেছি। তোমরা থলী কি ঝুলী কি পাদুকা সঙ্গে লইয়া যাইও না এবং পথের মধ্যে কাহাকেও মঙ্গলবাদ করিও না। আর যে কোন বাটীতে প্রবেশ করিবে, প্রথমে বলিও, এই গৃহে শান্তি বর্ত্তুক। আর তথায় যদি শান্তির সন্তান থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তাহার উপরে অবস্থিতি করিবে, নতুবা তোমাদের প্রতি ফিরিয়া আসিবে। আর সেই বাটীতেই থাকিও, এবং তাহারা যাহা দেয়, তাহাই ভোজন পান করিও; কেননা কার্য্যকারী লোক আপন বেতনের যোগ্য! এক বাটী হইতে অন্য বাটীতে যাইও না। আর তোমরা যে কোন নগরে প্রবেশ কর, লোকেরা যদি তোমাদিগকে গ্রহণ করে, তবে যাহা তোমাদের সম্মুখে রাখা হইবে, তাহাই ভোজন করিও। আর সেখানকার পীড়িতদিগকে সুস্থ করিও, এবং তাহাদিগকে বলিও, ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের সন্নিকট হইল। কিন্তু তোমরা যে কোন নগরে প্রবেশ কর, লোকেরা যদি তোমাদিগকে গ্রহণ না করে, তবে বাহির হইয়া সেই নগরের পথে পথে গিয়া এই কথা বলিও, তোমাদের নগরের যে ধূলা আমাদের পায়ে লাগিয়াছে, তাহাও তোমাদের বিরুদ্ধে ঝাড়িয়া দিই; তথাপি ইহা জানিও যে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট হইল। আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, সেই দিন সেই নগরের দশা হইতে বরং সদোমের দশা সহনীয় হইবে। কোরাসীন, ধিক্‌ তোমাকে! বৈৎসৈদা, ধিক্‌ তোমাকে! কেননা তোমাদের মধ্য যে সকল পরাক্রম কার্য্য করা গিয়াছে, সে সকল যদি সোর ও সীদোনে করা যাইত, তবে অনেক দিন পূর্ব্বে তাহারা চট পরিয়া ভস্মে বসিয়া মন ফিরাইত। কিন্তু বিচারে তোমাদের দশা হইতে বরং সোর ও সীদোনের দশা সহনীয় হইবে। আর হে কফরনাহূম, তুমি না কি স্বর্গ পর্য্যন্ত উচ্চীকৃত হইবে? তুমি পাতাল পর্য্যন্ত নামিয়া যাইবে। যে তোমাদিগকে মানে, সে আমাকেই মানে; এবং যে তোমাদিগকে অগ্রাহ্য করে, সে আমাকেই অগ্রাহ্য করে; আর যে আমাকে অগ্রাহ্য করে, সে তাঁহাকেই অগ্রাহ্য করে, যিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। পরে সেই সত্তর জন আনন্দে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, প্রভু, আপনার নামে ভূতগণও আমাদের বশীভূত হয়। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আমি শয়তানকে বিদ্যুতের ন্যায় স্বর্গ হইতে পতিত দেখিতেছিলাম। দেখ, আমি তোমাদিগকে সর্প ও বৃশ্চিক পদতলে দলিত করিবার, এবং শত্রুর সমস্ত শক্তির উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার ক্ষমতা দিয়াছি। কিছুতেই কোন মতে তোমাদের হানি করিবে না; তথাপি আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, ইহাতে আনন্দ করিও না; কিন্তু তোমাদের নাম যে স্বর্গে লিখিত আছে, ইহাতেই আনন্দ কর। সেই দণ্ডে তিনি পবিত্র আত্মায় উল্লাসিত হইলেন ও কহিলেন, হে পিতঃ, স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে এই সকল প্রকাশ করিয়াছ। হাঁ, পিতঃ, কেননা ইহা তোমার দৃষ্টিতে প্রীতিজনক হইল। সকলই আমার পিতাকর্ত্তৃক আমাকে সমর্পিত হইয়াছে; এবং পুত্র কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পিতা জানেন; আর পিতা কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পুত্র জানেন, আর পুত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন, সে জানে। পরে তিনি শিষ্যগণের প্রতি ফিরিয়া বিরলে কহিলেন, ধন্য সেই সকল চক্ষু, তোমরা যাহা যাহা দেখিতেছ, যাহারা তাহা দেখে। কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যাহা যাহা দেখিতেছ, তাহা অনেক ভাববাদী ও রাজা দেখিতে বাঞ্ছা করিয়াও দেখিতে পান নাই; বরং তোমরা যাহা যাহা শুনিতেছ, তাহা তাঁহারা শুনিতে বাঞ্ছা করিয়াও শুনিতে পান নাই। আর দেখ, এক জন ব্যবস্থাবেত্তা উঠিয়া তাঁহার পরীক্ষা করিয়া কহিল, হে গুরু, কি করিলে আমি অনন্ত জীবনের অধিকারী হইব? তিনি তাহাকে কহিলেন, ব্যবস্থায় কি লেখা আছে? কিরূপ পাঠ করিতেছ? সে উত্তর করিয়া কহিল, “তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত শক্তি ও তোমার সমস্ত চিত্ত দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে, এবং তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” তিনি তাহাকে কহিলেন, যথার্থ উত্তর করিলে; তাহাই কর, তাহাতে জীবন পাইবে। কিন্তু সে আপনাকে নির্দ্দোষ দেখাইবার ইচ্ছায় যীশুকে বলিল, ভাল, আমার প্রতিবাসী কে? এই কথা লইয়া যীশু বলিলেন, এক ব্যক্তি যিরূশালেম হইতে যিরীহোতে নামিয়া যাইতেছিল, এমন সময়ে দস্যুদলের হস্তে পড়িল; তাহারা তাহার বস্ত্র খুলিয়া লইল, এবং তাহাকে আঘাত করিয়া আধমরা ফেলিয়া চলিয়া গেল। ঘটনাক্রমে এক জন যাজক সেই পথ দিয়া নামিয়া যাইতেছিল; সে তাহাকে দেখিয়া এক পার্শ্ব দিয়া চলিয়া গেল। পরে সেইরূপ এক জন লেবীয়ও সেই স্থানে আসিয়া দেখিয়া এক পার্শ্ব দিয়া চলিয়া গেল। কিন্তু এক জন শমরীয় সেই পথ দিয়া যাইতে যাইতে তাহার নিকটে আসিল; আর তাহাকে দেখিয়া করুণাবিষ্ট হইল, এবং নিকটে আসিয়া তৈল ও দ্রাক্ষারস ঢালিয়া দিয়া তাহার ক্ষত সকল বন্ধন করিল; পরে আপন পশুর উপরে তাহাকে বসাইয়া এক পান্থশালায় লইয়া গিয়া তাহার প্রতি যত্ন করিল। পরদিবসে দুইটী সিকি বাহির করিয়া পান্থশালার কর্ত্তাকে দিয়া বলিল, এই ব্যক্তির প্রতি যত্ন করিও, অধিক যাহা কিছু ব্যয় হয়, আমি যখন ফিরিয়া আইসি, তখন পরিশোধ করিব। তোমার কেমন বোধ হয়, এই তিন জনের মধ্যে কে ঐ দস্যুদের হস্তে পতিত ব্যক্তির প্রতিবাসী হইয়া উঠিল? সে কহিল, যে ব্যক্তি তাহার প্রতি দয়া করিল, সেই। তখন যীশু তাহাকে কহিলেন, যাও, তুমিও সেইরূপ কর। আর যখন তাঁহারা যাইতেছিলেন, তিনি কোন গ্রামে প্রবেশ করিলেন, আর মার্থা নামে একটী স্ত্রীলোক আপন গৃহে তাঁহার আতিথ্য করিলেন। মরিয়ম নামে তাঁহার একটী ভগিনী ছিলেন, তিনি প্রভুর চরণের নিকটে বসিয়া তাঁহার বাক্য শুনিতে লাগিলেন। কিন্তু মার্থা পরিচর্য্যা বিষয়ে অধিক ব্যতিব্যস্ত ছিলেন; আর তিনি নিকটে আসিয়া কহিলেন, প্রভু, আপনি কি কিছু মনে করিতেছেন না যে, আমার ভগিনী পরিচর্য্যার ভার একা আমার উপরে ফেলিয়া রাখিয়াছে? অতএব উহাকে বলিয়া দিউন, যেন আমার সাহায্য করে। কিন্তু প্রভু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, মার্থা, মার্থা, তুমি অনেক বিষয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন আছ; কিন্তু অল্প কএকটী বিষয়, বরং একটী মাত্র বিষয় আবশ্যক; বাস্তবিক মরিয়ম সেই উত্তম অংশটী মনোনীত করিয়াছে, যাহা তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে না। এক সময়ে তিনি কোন স্থানে প্রার্থনা করিতেছিলেন; যখন শেষ করিলেন, তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে এক জন তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, আমাদিগকে প্রার্থনা করিতে শিক্ষা দিউন, যেমন যোহনও আপন শিষ্যদিগকে শিক্ষা দিয়াছিলেন। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা যখন প্রার্থনা কর, তখন বলিও, পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক। তোমার রাজ্য আইসুক। আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রতিদিন আমাদিগকে দেও। আর আমাদের পাপ সকল ক্ষমা কর; কেননা আমরাও আপনাদের প্রত্যেক অপরাধীকে ক্ষমা করি। আর আমাদিগকে পরীক্ষাতে আনিও না। আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের মধ্যে কাহারও যদি বন্ধু থাকে, আর সে যদি মধ্যরাত্রে তাহার নিকটে গিয়া বলে, ‘বন্ধু, আমাকে তিনখানা রুটী ধার দেও, কেননা আমার এক বন্ধু পথে যাইতে যাইতে আমার কাছে আসিয়াছেন, তাঁহার সম্মুখে রাখিবার আমার কিছুই নাই;’ তাহা হইলে সেই ব্যক্তি ভিতরে থাকিয়া কি এমন উত্তর দিবে, ‘আমাকে কষ্ট দিও না, এখন দ্বার বদ্ধ, এবং আমার সন্তানেরা আমার কাছে শুইয়া আছে, আমি উঠিয়া তোমাকে দিতে পারি না’? আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, সে যদ্যপি বন্ধু বলিয়া উঠিয়া তাহা না দেয়, তথাপি উহার আগ্রহ প্রযুক্ত উঠিয়া উহার যত প্রয়োজন, তাহা দিবে। আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। কেননা যে কেহ যাচ্ঞা করে, সে গ্রহণ করে, এবং যে অন্বেষণ করে, সে পায়; আর যে দ্বারে আঘাত করে, তাহার জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। তোমাদের মধ্যে এমন পিতা কে, যাহার পুত্র রুটী চাহিলে তাহাকে পাথর দিবে। কিম্বা মাছ চাহিলে মাছের পরিবর্ত্তে সাপ দিবে? কিম্বা ডিম চাহিলে তাহাকে বৃশ্চিক দিবে? অতএব তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন। আর তিনি একটা ভূত ছাড়াইয়াছিলেন, সে গোঁগা। ভূত বাহির হইলে সেই গোঁগা কথা কহিতে লাগিল; তাহাতে লোকেরা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল। কিন্তু তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ বলিল, এ ব্যক্তি ভূতগণের অধিপতি বেল্‌সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়ায়। আর কেহ কেহ পরীক্ষা ভাবে তাঁহার কাছে আকাশ হইতে কোন চিহ্ন চাহিল। কিন্তু তিনি তাহাদের মনের ভাব জানিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, যে কোন রাজ্য আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা উচ্ছিন্ন হয়, এবং গৃহ গৃহের বিপক্ষ হইলে পতিত হয়। আর শয়তানও যদি আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তবে তাহার রাজ্য কি প্রকারে স্থির থাকিবে? কেননা তোমরা বলিতেছ, আমি বেল্‌সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়াই। আর আমি যদি বেল্‌সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের সন্তানেরা কাহার দ্বারা ছাড়ায়? এই জন্য তাহারাই তোমাদের বিচারকর্ত্তা হইবে। কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের অঙ্গুলি দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে সুতরাং ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে আসিয়া পড়িয়াছে। সেই বলবান্‌ ব্যক্তি যখন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকিয়া আপন বাটী রক্ষা করে, তখন তাহার সম্পত্তি নিরাপদে থাকে। কিন্তু যিনি তাহা হইতে অধিক বলবান্‌, তিনি আসিয়া যখন তাহাকে পরাজয় করেন, তখন তাহার সর্ব্বাঙ্গরক্ষক যে সজ্জায় তাহার ভরসা ছিল, তাহা হরণ করিয়া লন, ও তাহার লুটদ্রব্য বিতরণ করেন। যে আমার সপক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষ, এবং যে আমার সহিত কুড়ায় না, সে ছড়াইয়া ফেলে। যখন অশুচি আত্মা মনুষ্য হইতে বাহির হইয়া যায়, তখন জলবিহীন নানা স্থান দিয়া ভ্রমণ করতঃ বিশ্রামের অন্বেষণ করে; কিন্তু না পাইয়া বলে, আমি যেখান হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি, আমার সেই গৃহে ফিরিয়া যাই। পরে আসিয়া তাহা মার্জ্জিত ও শোভিত দেখে। তখন সে গিয়া আপনা হইতে দুষ্ট অপর সাতটা আত্মাকে সঙ্গে লইয়া আইসে, এবং তাহারা সেই স্থানে প্রবেশ করিয়া বাস করে; তাহাতে সেই মনুষ্যের প্রথম দশা হইতে শেষ দশা আরও মন্দ হয়। তিনি এই সকল কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে ভিড়ের মধ্য হইতে কোন একটী স্ত্রীলোক উচ্চৈঃস্বরে তাঁহাকে বলিল, ধন্য সেই গর্ভ, যাহা আপনাকে ধারণ করিয়াছিল, আর সেই স্তন, যাহার দুগ্ধ আপনি পান করিয়াছিলেন। তিনি কহিলেন, সত্য, কিন্তু বরং ধন্য তাহারাই, যাহারা ঈশ্বরের বাক্য শুনিয়া পালন করে। পরে তাঁহার নিকটে উত্তর উত্তর অনেক লোকের সমাগম হইলে তিনি বলিতে লাগিলেন, এই কালের লোকেরা দুষ্ট, ইহারা চিহ্নের অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন তাহাদিগকে দেওয়া যাইবে না। কারণ যোনা যেমন নীনবীয়দের কাছে চিহ্নস্বরূপ হইয়াছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্রও এই কালের লোকদের নিকটে হইবেন। দক্ষিণ দেশের রাণী বিচারে এই কালের লোকদের সহিত উঠিয়া ইহাদিগকে দোষী করিবেন, কেননা শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনিবার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত হইতে আসিয়াছিলেন; আর দেখ, শলোমন হইতেও মহান্‌ এক ব্যক্তি এখানে আছেন। নীনবীয় লোকেরা বিচারে এই কালের লোকদের সহিত দাঁড়াইয়া ইহাদিগকে দোষী করিবে; কেননা তাহারা যোনার প্রচারে মন ফিরাইয়াছিল, আর দেখ, যোনা হইতে মহান্‌ এক ব্যক্তি এখানে আছেন। প্রদীপ জ্বালিয়া কেহ গুপ্ত কুঠরীতে কিম্বা কাঠার নীচে রাখে না, কিন্তু দীপাধারের উপরেই রাখে, যেন, যাহারা ভিতরে যায়, তাহারা আলো দেখিতে পায়। তোমার চক্ষুই শরীরের প্রদীপ; তোমার চক্ষু যখন সরল হয়, তখন তোমার সমুদয় শরীরও দীপ্তিময় হয়; কিন্তু চক্ষু মন্দ হইলে তোমার শরীরও অন্ধকারময় হয়। অতএব দেখিও, তোমার অন্তরে যে দীপ্তি আছে, তাহা অন্ধকার কি না। বাস্তবিক তোমার সমুদয় শরীর যদি দীপ্তিময় হয়, কোনও অংশ অন্ধকারময় না থাকে, তবে প্রদীপ যেমন নিজ তেজে তোমাকে দীপ্তি দান করে, তেমনি তোমার শরীর সম্পূর্ণরূপে দীপ্তিময় হইবে। তিনি কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে এক জন ফরীশী তাঁহাকে ভোজনের নিমন্ত্রণ করিল; আর তিনি ভিতরে গিয়া ভোজনে বসিলেন। ফরীশী দেখিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল যে, ভোজনের অগ্রে তিনি স্নান করেন নাই। কিন্তু প্রভু তাহাকে কহিলেন, তোমরা ফরীশীরা ত পানপাত্র ও ভোজনপাত্র বাহিরে পরিষ্কার করিয়া থাক, কিন্তু তোমাদের ভিতরে দৌরাত্ম্য ও দুষ্টতা ভরা। নির্ব্বোধেরা, যিনি বাহিরের ভাগ নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তিনি কি ভিতরের ভাগও নির্ম্মাণ করেন নাই? বরং ভিতরে যাহা যাহা আছে, তাহা দান কর, আর দেখ, তোমাদের পক্ষে সকলই শুচি। কিন্তু হা ফরীশীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে, কেননা তোমরা পোদিনা, আরুদ ও সকল প্রকার শাকের দশমাংশ দান করিয়া থাক, আর ন্যায়বিচার ও ঈশ্বর-প্রেম উপেক্ষা করিয়া থাক; কিন্তু এ সকল পালন করা, এবং ঐ সকল পরিত্যাগ না করা, তোমাদের উচিত ছিল। হা ফরীশীরা, ধিক্‌ তোমাদিগকে, কেননা তোমরা সমাজ-গৃহে প্রধান আসন, ও হাট বাজারে লোকদের মঙ্গলবাদ ভালবাস। ধিক্‌ তোমাদিগকে, কারণ তোমরা এমন গুপ্ত কবরের তুল্য, যাহার উপর দিয়া লোকে না জানিয়া যাতায়াত করে। তখন ব্যবস্থাবেত্তাদের এক জন উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, হে গুরু, এ কথা বলিয়া আপনি আমাদেরও অপমান করিতেছেন। তিনি কহিলেন, হা ব্যবস্থাবেত্তারা, ধিক্‌ তোমাদিগকেও, কেননা তোমরা মনুষ্যদের উপরে দুর্ব্বহ বোঝা চাপাইয়া দিয়া থাক, কিন্তু আপনারা একটী অঙ্গুলি দিয়া সেই সকল বোঝা স্পর্শ কর না। ধিক্‌ তোমাদিগকে, কেননা তোমরা ভাববাদীদের কবর গাঁথিয়া থাক, আর তোমাদের পিতৃপুরুষেরা তাঁহাদিগকে বধ করিয়াছিল। সুতরাং তোমরা সাক্ষী হইতেছ, এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের কর্ম্মের অনুমোদন করিতেছ; কেননা তাহারা তাঁহাদিগকে বধ করিয়াছিল, আর তোমরা তাঁহাদের কবর গাঁথিয়া থাক। এই কারণ ঈশ্বরের প্রজ্ঞাও কহিলেন, আমি তাহাদের নিকটে ভাববাদী ও প্রেরিতদিগকে প্রেরণ করিব, আর তাহাদিগের মধ্যে তাহারা কাহাকে কাহাকেও বধ করিবে, ও তাড়না করিবে, যেন জগতের পত্তনাবধি যত ভাববাদীর রক্তপাত হইয়াছে, তাহার প্রতিশোধ এই কালের লোকদের কাছে লওয়া যায় —হেবলের রক্ত অবধি সেই সখরিয়ের রক্ত পর্য্যন্ত, যিনি যজ্ঞবেদি ও মন্দিরের মধ্যস্থানে নিহত হইয়াছিলেন —হাঁ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই কালের লোকদের কাছে তাহার প্রতিশোধ লওয়া যাইবে। হা ব্যবস্থাবেত্তারা, ধিক্‌ তোমাদিগকে, কেননা তোমরা জ্ঞানের চাবি হরণ করিয়া লইয়াছ; আপনারা প্রবেশ করিলে না, এবং যাহারা প্রবেশ করিতেছিল, তাহাদিগকেও বাধা দিলে। তিনি সেখান হইতে বাহির হইয়া আসিলে অধ্যাপক ও ফরীশীগণ তাঁহাকে অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করিতে, ও নানা বিষয়ে কথা বলাইবার জন্য উত্তেজনা করিতে লাগিল, তাঁহার মুখের কথা ধরিবার জন্য ফাঁদ পাতিয়া রহিল। ইতিমধ্যে যখন সহস্র সহস্র লোক সমাগত হইয়া এক জন অন্যের উপর পড়িতে লাগিল, তখন তিনি প্রথমে আপন শিষ্যদিগকে বলিতে লাগিলেন, তোমরা ফরীশীদের তাড়ী হইতে সাবধান থাক, তাহা কপটতা। কিন্তু এমন ঢাকা কিছুই নাই, যাহা প্রকাশ পাইবে না, এবং এমন গুপ্ত কিছুই নাই, যাহা জানা যাইবে না। অতএব তোমরা অন্ধকারে যাহা কিছু বলিয়াছ, তাহা আলোতে শুনা যাইবে; এবং অন্তরাগারে কাণে কাণে যাহা বলিয়াছ, তাহা ছাদের উপরে প্রচারিত হইবে। আর, হে আমার বন্ধুরা, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যাহারা শরীর বধ করিয়া পশ্চাৎ আর কিছু করিতে পারে না, তাহাদিগকে ভয় করিও না। তবে কাহাকে ভয় করিবে, তাহা বলিয়া দিই; বধ করিয়া পশ্চাৎ নরকে নিক্ষেপ করিতে যাঁহার ক্ষমতা আছে, তাঁহাকেই ভয় কর; হাঁ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তাঁহাকেই ভয় কর। পাঁচটী চড়াই পাখী কি দুই পয়সায় বিক্রয় হয় না? আর তাহাদের মধ্যে একটীও ঈশ্বরের দৃষ্টিগোচরে গুপ্ত নয়। এমন কি, তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে। ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ। আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে স্বীকার করে, মনুষ্যপুত্রও ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে তাহাকে স্বীকার করিবেন; কিন্তু যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে তাহাকে অস্বীকার করা যাইবে। আর যে কেহ মনুষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা কহে, সে ক্ষমা পাইবে; কিন্তু যে কেহ পবিত্র আত্মার নিন্দা করে, সে ক্ষমা পাইবে না। আর লোকে যখন তোমাদিগকে সমাজ-গৃহে এবং শাসনকর্ত্তাদের ও কর্ত্তৃপক্ষদের সম্মুখে লইয়া যাইবে, তখন কিরূপে কি উত্তর দিবে, অথবা কি বলিবে, সে বিষয়ে ভাবিত হইও না; কেননা কি কি বলা উচিত, তাহা পবিত্র আত্মা সেই দণ্ডে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন। পরে লোকসমূহের মধ্য হইতে এক ব্যক্তি তাঁহাকে বলিল, হে গুরু, আমার ভ্রাতাকে বলুন, যেন আমার সহিত পৈতৃক ধন বিভাগ করে। কিন্তু তিনি তাহাকে কহিলেন, মনুষ্য, তোমাদের উপরে বিচারকর্ত্তা বা বিভাগকর্ত্তা করিয়া আমাকে কে নিযুক্ত করিয়াছে? পরে তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, সাবধান, সর্ব্বপ্রকার লোভ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা করিও, কেননা উপচিয়া পড়িলেও মনুষ্যের সম্পত্তিতে তাহার জীবন হয় না। আর তিনি তাহাদিগকে এই দৃষ্টান্ত কহিলেন, এক জন ধনবানের ভূমিতে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হইয়াছিল। তাহাতে সে মনে মনে বিবেচনা করিতে লাগিল, কি করি? আমার শস্য রাখিবার ত স্থান নাই। পরে কহিল, এইরূপ করিব, আমার গোলাঘর সকল ভাঙ্গিয়া বড় বড় গোলাঘর নির্ম্মাণ করিব, এবং তাহার মধ্যে আমার সমস্ত শস্য ও আমার দ্রব্য রাখিব। আর আপন প্রাণকে বলিব, প্রাণ, বহুবৎসরের নিমিত্ত তোমার জন্য অনেক দ্রব্য সঞ্চিত আছে; বিশ্রাম কর, ভোজন পান কর, আমোদ প্রমোদ কর। কিন্তু ঈশ্বর তাহাকে কহিলেন, হে নির্ব্বোধ, অদ্য রাত্রিতেই তোমার প্রাণ তোমা হইতে দাবি করিয়া লওয়া যাইবে, তবে তুমি এই যে আয়োজন করিলে, এ সকল কাহার হইবে? যে কেহ আপনার জন্য ধন সঞ্চয় করে, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে ধনবান্‌ নয়, সে এইরূপ। পরে তিনি আপন শিষ্যগণকে কহিলেন, এই কারণ আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ‘কি ভোজন করিব’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিম্বা ‘কি পরিব’ বলিয়া শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না। কেননা ভক্ষ্য হইতে প্রাণ ও বস্ত্র হইতে শরীর বড় বিষয়। কাকদের বিষয় আলোচনা কর; তাহারা বুনেও না, কাটেও না; তাহাদের ভাণ্ডারও নাই, গোলাঘরও নাই; আর ঈশ্বর তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; পক্ষিগণ হইতে তোমরা কত অধিক শ্রেষ্ঠ! আর তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হইয়া আপন বয়স এক হস্তমাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে? অতএব তোমরা অতি ক্ষুদ্র কর্ম্মও যদি করিতে না পার, তবে অন্য অন্য বিষয়ে কেন ভাবিত হও? কানুড়পুষ্পের বিষয় বিবেচনা কর, সেগুলি কেমন বাড়ে; সে সকল কোন শ্রম করে না, সূতাও কাটে না, তথাপি আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, শলোমনও আপনার সমস্ত প্রতাপে ইহার একটীর ন্যায় সুসজ্জিত ছিলেন না। ভাল, ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তাহা যদি ঈশ্বর এরূপ বিভূষিত করেন, তবে হে অল্পবিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কত অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন! আর, কি ভোজন করিবে, কি পান করিবে, এ বিষয়ে তোমরা সচেষ্ট হইও না, এবং সন্দিগ্ধচিত্ত হইও না; কেননা জগতের জাতিগণ এই সকল বিষয়ে সচেষ্ট; কিন্তু তোমাদের পিতা জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। তোমরা বরং তাঁহার রাজ্যের বিষয়ে সচেষ্ট হও, তাহা হইলে এই সকলও তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে। হে ক্ষুদ্র মেষপাল, ভয় করিও না, কেননা তোমাদিগকে সেই রাজ্য দিতে তোমাদের পিতার হিতসঙ্কল্প হইয়াছে। তোমাদের যাহা আছে, বিক্রয় করিয়া দান কর। আপনাদের জন্য এমন থলী প্রস্তুত কর, যাহা জীর্ণ হয় না, স্বর্গে অক্ষয় ধন সঞ্চয় কর, যেখানে চোর নিকটে আইসে না, কীটেও ক্ষয় করে না; কেননা যেখানে তোমাদের ধন, সেইখানে তোমাদের মনও থাকিবে। তোমাদের কটি বাঁধিয়া রাখ ও প্রদীপ জ্বালিয়া রাখ; এবং তোমরা এমন লোকদের তুল্য হও, যাহারা আপনাদের প্রভুর অপেক্ষায় থাকে যে, তিনি বিবাহ-ভোজ হইতে কখন ফিরিয়া আসিবেন, যেন তিনি আসিয়া দ্বারে আঘাত করিলে তাহারা তখনই তাঁহার নিমিত্ত দ্বার খুলিয়া দিতে পারে। ধন্য সেই দাসেরা, যাহাদিগকে প্রভু আসিয়া জাগিয়া থাকিতে দেখিবেন। আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তিনি কটি বাঁধিয়া তাহাদিগকে ভোজনে বসাইবেন, এবং নিকটে আসিয়া তাহাদের পরিচর্য্যা করিবেন। যদি দ্বিতীয় প্রহরে কিম্বা যদি তৃতীয় প্রহরে আসিয়া তিনি সেইরূপ দেখেন, তবে তাহারা ধন্য। কিন্তু ইহা জানিও, চোর কোন্‌ দণ্ডে আসিবে, তাহা যদি গৃহকর্ত্তা জানিত, তবে জাগিয়া থাকিত, নিজ গৃহে সিঁধ কাটিতে দিত না। তোমরাও প্রস্তুত থাক; কেননা যে দণ্ড মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্র আসিবেন। তখন পিতর বলিলেন, প্রভু, আপনি কি আমাদিগকে, না সকলকেই এই দৃষ্টান্ত বলিতেছেন? প্রভু কহিলেন, সেই বিশ্বস্ত, সেই বুদ্ধিমান্‌ গৃহাধ্যক্ষ কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনদের উপরে নিযুক্ত করিবেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্যের নিরূপিত অংশ দেয়? ধন্য সেই দাস, যাহাকে তাহার প্রভু আসিয়া সেইরূপ করিতে দেখিবেন। আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তিনি তাহাকে আপন সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ করিয়া নিযুক্ত করিবেন। কিন্তু সেই দাস যদি মনে মনে বলে, আমার প্রভুর আসিবার বিলম্ব আছে, এবং সে দাস দাসীদিগকে প্রহার করিতে, ভোজন পান করিতে ও মত্ত হইতে আরম্ভ করে, তবে যে দিন সে অপেক্ষা না করিবে, ও যে দণ্ড সে না জানিবে, সেই দিন সেই দণ্ডে সেই দাসের প্রভু আসিবেন, এবং তাহাকে দ্বিখণ্ড করিয়া অবিশ্বস্তদের মধ্যে তাহার অংশ নিরূপণ করিবেন। আর সেই দাস, যে নিজ প্রভুর ইচ্ছা জানিয়াও প্রস্তুত হয় নাই, ও তাঁহার ইচ্ছানুযায়ী কর্ম্ম করে নাই, সে অনেক প্রহারে প্রহারিত হইবে। কিন্তু যে না জানিয়া প্রহারের যোগ্য কর্ম্ম করিয়াছে, সে অল্প প্রহারে প্রহারিত হইবে। আর যে কোন ব্যক্তিকে অধিক দত্ত হইয়াছে, তাহার নিকটে অধিক দাবি করা যাইবে; এবং লোকে যাহার কাছে অধিক রাখিয়াছে, তাহার নিকটে অধিক চাহিবে। আমি পৃথিবীতে অগ্নি নিক্ষেপ করিতে আসিয়াছি; আর এখন যদি তাহা প্রজ্বলিত হইয়া থাকে, তবে আর চাই কি? কিন্তু আমাকে এক বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজিত হইতে হইবে, আর তাহা যাবৎ সিদ্ধ না হয়, তাবৎ আমি কত না সঙ্কুচিত হইতেছি! তোমরা কি মনে করিতেছ, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে আসিয়াছি? তোমাদিগকে বলিতেছি, তাহা নয়, বরং বিভেদ। কারণ এখন অবধি এক বাটীতে পাঁচ জন ভিন্ন হইবে, তিন জন দুই জনের বিপক্ষে, ও দুই জন তিন জনের বিপক্ষে; পিতা পুত্রের বিপক্ষে, এবং পুত্র পিতার বিপক্ষে; মাতা কন্যার বিপক্ষে, এবং কন্যা মাতার বিপক্ষে; শাশুড়ী বধূর বিপক্ষে, এবং বধূ শাশুড়ীর বিপক্ষে ভিন্ন হইবে। আর তিনি লোকসমূহকে কহিলেন, তোমরা যখন পশ্চিমে মেঘ উঠিতে দেখ, তখন অমনি বলিয়া থাক, বৃষ্টি আসিতেছে; আর সেইরূপই ঘটে। আর যখন দক্ষিণ বাতাস বহিতে দেখ, তখন বলিয়া থাক, বড় রৌদ্র হইবে; এবং তাহাই ঘটে। কপটীরা, তোমরা পৃথিবীর ও আকাশের ভাব বুঝিতে পার, কিন্তু এই সময় বুঝিতে পার না, এ কেমন? আর ন্যায্য কি, তাহা আপনারাই কেন বিচার কর না? ফলতঃ যখন বিপক্ষের সঙ্গে শাসনকর্ত্তার নিকটে যাইবে, পথের মধ্যে তাহা হইতে মুক্তি পাইতে যত্ন করিও; পাছে সে তোমাকে বিচারকর্ত্তার সম্মুখে টানিয়া লইয়া যায়, আর বিচারকর্ত্তা তোমাকে পদাতিকের হস্তে সমর্পণ করে, এবং পদাতিক তোমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। আমি তোমাকে বলিতেছি, যাবৎ শেষ কড়িটী পর্য্যন্ত পরিশোধ না করিবে, তাবৎ তুমি কোন মতে তথা হইতে বাহিরে আসিতে পাইবে না। সেই সময়ে উপস্থিত কএক জন তাঁহাকে সেই গালীলীয়দের বিষয়ে সংবাদ দিল, যাহাদের রক্ত পীলাত তাহাদের বলির সহিত মিশ্রিত করিয়াছিলেন। তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি মনে করিতেছ, সেই গালীলীয়দের এইরূপ দুর্গতি হইয়াছে বলিয়া তাহারা অন্য সকল গালীলীয় লোক অপেক্ষা অধিক পাপী ছিল? আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তাহা নয়; বরং যদি মন না ফিরাও, তোমরা সকলেই তদ্রূপ বিনষ্ট হইবে। অথবা সেই আঠারো জন, যাহাদের উপরে শীলোহে স্থিত উচ্চগৃহ পড়িয়া গিয়া তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিল, তোমরা কি তাহাদের বিষয়ে মনে করিতেছ যে, তাহারা যিরূশালেম-নিবাসী অন্য সকল লোক অপেক্ষা অধিক অপরাধী ছিল? আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তাহা নয়; বরং যদি মন না ফিরাও, তোমরা সকলেই তদ্রূপ বিনষ্ট হইবে। আর তিনি এই দৃষ্টান্তটী কহিলেন; কোন ব্যক্তির দ্রাক্ষাক্ষেত্রে তাঁহার একটা ডুমুরগাছ রোপিত ছিল; আর তিনি আসিয়া সেই গাছে ফল অন্বেষণ করিলেন, কিন্তু পাইলেন না। তাহাতে তিনি দ্রাক্ষাপালককে কহিলেন, দেখ, আজ তিন বৎসর আসিয়া এই ডুমুরগাছে ফল অন্বেষণ করিতেছি, কিন্তু কিছুই পাইতেছি না; ইহা কাটিয়া ফেল; এটা কেন ভূমিও নষ্ট করে। সে উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, প্রভু, এই বৎসরও ওটা থাকিতে দিউন, আমি উহার মূলের চারিদিকে খুঁড়িয়া সার দিব, তাহার পরে উহাতে ফল ধরে ত ভালই, নয় ত ওটা কাটিয়া ফেলিবেন। তিনি বিশ্রামবারে কোন সমাজগৃহে শিক্ষা দিতেছিলেন। আর দেখ, একটী স্ত্রীলোক, যাহাকে আঠারো বৎসর ধরিয়া দুর্ব্বলতার আত্মায় পাইয়াছিল, সে কুব্জা, কোন মতে সোজা হইতে পারিত না। তাহাকে দেখিয়া যীশু কাছে ডাকিলেন, আর কহিলেন, হে নারি, তোমার দুর্ব্বলতা হইতে মুক্ত হইলে। পরে তিনি তাহার উপরে হস্তার্পণ করিলেন; তাহাতে সে তখনই সোজা হইয়া দাঁড়াইল, আর ঈশ্বরের গৌরব করিতে লাগিল। কিন্তু বিশ্রামবারে যীশু সুস্থ করিয়াছিলেন বলিয়া সমাজাধ্যক্ষ ক্রুদ্ধ হইল, সে উত্তর করিয়া লোকদিগকে বলিল, ছয় দিন আছে, সেই সকল দিনে কর্ম্ম করা উচিত; অতএব ঐ সকল দিনে আসিয়া সুস্থ হইও, বিশ্রামবারে নয়। কিন্তু প্রভু তাহাকে উত্তর দিয়া কহিলেন, কপটীরা, তোমাদের প্রত্যেক জন কি বিশ্রামবারে আপন আপন বলদ কিম্বা গর্দ্দভ যাবপাত্র হইতে খুলিয়া জল খাওয়াইতে লইয়া যায় না? তবে এই স্ত্রীলোক, অব্রাহামের কন্যা, যাহাকে শয়তান, দেখ, আজ আঠারো বৎসর ধরিয়া বাঁধিয়া রাখিয়াছিল, ইহার এই বন্ধন হইতে বিশ্রামবারে মুক্তি পাওয়া কি উচিত নয়? তিনি এই সকল কথা বলিলে তাঁহার বিপক্ষেরা সকলে লজ্জিত হইল; কিন্তু তাঁহার দ্বারা যে সমস্ত মহিমার কার্য্য হইতেছিল, তাহাতে সমস্ত সাধারণ লোক আনন্দিত হইল। তখন তিনি কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্য কিসের তুল্য? আমি কিসের সহিত তাহার তুলনা দিব? তাহা সরিষা-দানার তুল্য, যাহা কোন ব্যক্তি লইয়া আপন উদ্যানে বপন করিল; পরে তাহা বাড়িয়া গাছ হইয়া উঠিল, এবং আকাশের পক্ষিগণ আসিয়া তাহার শাখাতে বাস করিল। আবার তিনি কহিলেন, আমি কিসের সহিত ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা দিব? তাহা এমন তাড়ীর তুল্য, যাহা কোন স্ত্রীলোক লইয়া তিন মাণ ময়দার মধ্যে ঢাকিয়া রাখিল, শেষে সমস্তই তাড়ীময় হইয়া উঠিল। আর তিনি নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিয়া উপদেশ দিতে দিতে যিরূশালেমের দিকে গমন করিতেছিলেন। তখন এক ব্যক্তি তাঁহাকে বলিল, প্রভু, যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছে, তাহাদের সংখ্যা কি অল্প? তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ করিতে প্রাণপণ কর; কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, অনেকে প্রবেশ করিতে চেষ্টা করিবে, কিন্তু পারিবে না। গৃহকর্ত্তা উঠিয়া দ্বার রুদ্ধ করিলে পর তোমরা বাহিরে দাঁড়াইয়া দ্বারে আঘাত করিতে আরম্ভ করিবে, বলিবে, প্রভু, আমাদিগকে দ্বার খুলিয়া দিউন; আর তিনি উত্তর করিয়া তোমাদিগকে বলিবেন, আমি জানি না, তোমরা কোথাকার লোক; তখন তোমরা বলিতে আরম্ভ করিবে, আমরা আপনার সাক্ষাতে ভোজন পান করিয়াছি, এবং আমাদের পথে পথে আপনি উপদেশ দিয়াছেন। কিন্তু তিনি বলিবেন, তোমাদিগকে বলিতেছি, আমি জানি না, তোমরা কোথাকার লোক; হে অধর্ম্মাচারী সকলে, আমার নিকট হইতে দূর হও। সেই স্থানে রোদন ও দন্তঘর্ষণ হইবে; তখন তোমরা দেখিবে, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোব এবং ভাববাদী সকলেই ঈশ্বরের রাজ্যে রহিয়াছেন, আর তোমাদিগকে বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া হইতেছে। আর পূর্ব্ব ও পশ্চিম হইতে, এবং উত্তর ও দক্ষিণ হইতে লোকেরা আসিয়া ঈশ্বরের রাজ্যে বসিবে। আর দেখ, যাহারা শেষের, এমন কোন কোন লোক প্রথম হইবে, এবং যাহারা প্রথম, এমন কোন কোন লোক শেষে পড়িবে। সেই দণ্ডে কএক জন ফরীশী নিকটে আসিয়া তাঁহাকে বলিল, বাহির হও, এ স্থান হইতে চলিয়া যাও; কেননা হেরোদ তোমাকে বধ করিতে চাহিতেছেন। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা গিয়া সেই শৃগালকে বল, দেখ, অদ্য এবং কল্য আমি ভূত ছাড়াইতেছি, ও আরোগ্য সাধন করিতেছি, এবং তৃতীয় দিবসে সিদ্ধকর্ম্মা হইব। যাহা হউক, অদ্য, কল্য ও পরশ্ব আমাকে গমন করিতে হইবে; কারণ এমন হইতে পারে না যে, যিরূশালেমের বাহিরে কোন ভাববাদী বিনষ্ট হয়। যিরূশালেম, যিরূশালেম, তুমি ভাববাদিগণকে বধ করিয়া থাক, ও তোমার নিকটে যাহারা প্রেরিত হয়, তাহাদিগকে পাথর মারিয়া থাক! কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, আমি কত বার তেমনি তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না। দেখ, তোমাদের সেই গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল। আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে সময় পর্য্যন্ত তোমরা না বলিবে, “ধন্য তিনি, যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন,” সেই সময় পর্য্যন্ত তোমরা আমাকে আর দেখিতে পাইবে না। তিনি এক বিশ্রামবারে প্রধান ফরীশীদের এক জন অধ্যক্ষের বাটীতে আহার করিতে গেলেন, আর তাহারা তাঁহার উপরে দৃষ্টি রাখিল। আর দেখ, এক জন জলোদরী তাঁহার সম্মুখে ছিল। যীশু উত্তর করিয়া ব্যবস্থাবেত্তাদিগকে ও ফরীশীগণকে কহিলেন, বিশ্রামবারে আরোগ্য করা বিধেয় কি না? কিন্তু তাহারা চুপ করিয়া রহিল। তখন তিনি তাহাকে ধরিয়া সুস্থ করিলেন, পরে বিদায় দিলেন। আর তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে, যাহার সন্তান কিম্বা বলদ কূপে পড়িলে সে বিশ্রামবারে তৎক্ষণাৎ তাহাকে তুলিবে না? তাহারা এই সকল কথার উত্তর দিতে পারিল না। আর নিমন্ত্রিত লোকেরা কিরূপে প্রধান প্রধান আসন মনোনীত করিতেছে, তাহা লক্ষ্য করিয়া তিনি তাহাদিগকে একটী দৃষ্টান্ত কহিলেন; তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, যখন কেহ তোমাকে বিবাহভোজে নিমন্ত্রণ করে, তখন প্রধান আসনে বসিও না; কি জানি, তোমা হইতে অধিক সম্মানিত আর কোন লোক তাহার দ্বারা নিমন্ত্রিত হইয়াছে, আর যে ব্যক্তি তোমাকে ও তাহাকে নিমন্ত্রণ করিয়াছে, সে আসিয়া তোমাকে বলিবে, ইহাঁকে স্থান দেও; আর তখন তুমি লজ্জিত হইয়া নিম্নতম স্থান গ্রহণ করিতে যাইবে। কিন্তু তুমি যখন নিমন্ত্রিত হও তখন নিম্নতম স্থানে গিয়া বসিও; তাহাতে যে ব্যক্তি তোমাকে নিমন্ত্রণ করিয়াছে, সে যখন আসিবে, তোমাকে বলিবে, বন্ধু, উচ্চতর স্থানে গিয়া বস; তখন যাহারা তোমার সহিত বসিয়া আছে, সেই সকলের সাক্ষাতে তোমার গৌরব হইবে। কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে, আর যে কেহ আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে। আবার যে ব্যক্তি তাঁহাকে নিমন্ত্রণ করিয়াছিল, তাহাকেও তিনি বলিলেন, তুমি যখন মধ্যাহ্ন-ভোজ কিম্বা রাত্রি-ভোজ প্রস্তুত কর, তখন তোমার বন্ধুগণকে, বা তোমার ভ্রাতাদিগকে, বা তোমার জ্ঞাতিদিগকে কিম্বা ধনী প্রতিবাসিগণকে ডাকিও না; কি জানি তাহারাও তোমাকে পালটা নিমন্ত্রণ করিবে, তার তুমি প্রতিদান পাইবে। কিন্তু তুমি যখন ভোজ প্রস্তুত কর, তখন দরিদ্র, নুলা, খঞ্জ ও অন্ধদিগকে নিমন্ত্রণ করিও; তাহাতে ধন্য হইবে, কেননা তোমার প্রতিদান করিতে তাহাদের কিছু নাই, তাই ধার্ম্মিকগণের পুনরুত্থান সময়ে তুমি প্রতিদান পাইবে। এই সকল কথা শুনিয়া, যাহারা বসিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে এক ব্যক্তি তাঁহাকে কহিল, ধন্য সেই ব্যক্তি, যে ঈশ্বরের রাজ্যে ভোজন করিবে। তিনি তাহাকে কহিলেন, কোন ব্যক্তি বড় এক ভোজ প্রস্তুত করিয়া অনেককে নিমন্ত্রণ করিলেন। পরে ভোজনের সময়ে আপন দাস দ্বারা নিমন্ত্রিতদিগকে বলিয়া পাঠাইলেন, আইস, এখন সকলই প্রস্তুত। তখন তাহারা সকলেই একমত হইয়া ক্ষমা ভিক্ষা করিতে লাগিল। প্রথম জন তাহাকে কহিল, আমি একখানি ক্ষেত্র ক্রয় করিলাম, তাহা দেখিতে না গেলে নয়; বিনতি করি, আমাকে ছাড়িয়া দিতে হইবে। আর এক জন কহিল, আমি পাঁচ যোড়া বলদ কিনিলাম, তাহাদের পরীক্ষা করিতে যাইতেছি; বিনতি করি, আমাকে ছাড়িয়া দিতে হইবে। আর এক জন কহিল, আমি বিবাহ করিলাম, এই জন্য যাইতে পারিতেছি না। পরে সে দাস আসিয়া তাহার প্রভুকে এই সমস্ত বৃত্তান্ত জানাইল। তখন সেই গৃহকর্ত্তা ক্রুদ্ধ হইয়া আপন দাসকে কহিলেন, শীঘ্র বাহির হইয়া নগরের পথে পথে ও গলিতে গলিতে যাও, দরিদ্র, নুলা, খঞ্জ ও অন্ধদিগকে এখানে আন। পরে সে দাস কহিল, প্রভু, আপনি যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, তাহা করা গেল, আর এখনও স্থান আছে। তখন প্রভু দাসকে কহিলেন, বাহির হইয়া রাজপথে রাজপথে ও বেড়ায় বেড়ায় যাও, এবং আসিবার জন্য লোকদিগকে পীড়াপীড়ি কর, যেন আমার গৃহ পরিপূর্ণ হয়। কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ঐ নিমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে এক জনও আমার ভোজের আস্বাদ পাইবে না। একদা বিস্তর লোক তাঁহার সঙ্গে যাইতেছিল; তখন তিনি মুখ ফিরাইয়া তাহাদিগকে কহিলেন, যদি কেহ আমার নিকটে আইসে, আর আপন পিতা, মাতা, স্ত্রী সন্তানসন্ততি, ভ্রাতৃগণ, ও ভগিনীগণকে এমন কি, নিজ প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান না করে, তবে সে আমার শিষ্য হইতে পারে না। যে কেহ নিজের ক্রুশ বহন না করে ও আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ না আইসে, সে আমার শিষ্য হইতে পারে না। বাস্তবিক দুর্গ নির্ম্মাণ করিতে ইচ্ছা হইলে তোমাদের মধ্যে কে অগ্রে বসিয়া ব্যয় হিসাব করিয়া না দেখিবে, সমাপ্ত করিবার সঙ্গতি তাহার আছে কি না? কি জানি ভিত্তিমূল বসাইলে পর যদি সে সমাপ্ত করিতে না পারে, তবে যত লোক তাহা দেখিবে, সকলে তাহাকে বিদ্রূপ করিতে আরম্ভ করিবে, বলিবে, এ ব্যক্তি নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ করিয়াছিল, কিন্তু সমাপ্ত করিতে পারিল না। অথবা কোন্‌ রাজা অন্য রাজার সহিত যুদ্ধে সমাঘাত করিতে যাইবার সময়ে অগ্রে বসিয়া বিবেচনা করিবেন না, যিনি বিংশতি সহস্র সৈন্য লইয়া আমার বিরুদ্ধে আসিতেছেন, আমি দশ সহস্র লইয়া কি তাঁহার সম্মুখবর্ত্তী হইতে পারি? যদি না পারেন, তবে শত্রু দূরে থাকিতে তিনি দূত প্রেরণ করিয়া সন্ধির নিয়ম জিজ্ঞাসা করিবেন। ভাল, তদ্রূপ তোমাদের মধ্যে যে কেহ আপনার সর্ব্বস্ব ত্যাগ না করে, সে আমার শিষ্য হইতে পারে না। লবণ ত উত্তম; কিন্তু সেই লবণেরও যদি স্বাদ গিয়া থাকে, তবে তাহা কিসে আস্বাদযুক্ত করা যাইবে? তাহা না ভূমির, না সারঢিবির উপযোগী; লোকে তাহা বাহিরে ফেলিয়া দেয়। যাহার শুনিতে কাণ থাকে সে শুনুক। আর করগ্রাহী ও পাপীরা সকলে তাঁহার বাক্য শুনিবার জন্য তাঁহার নিকটে আসিতেছিল। তাহাতে ফরীশীরা ও অধ্যাপকেরা বচসা করিয়া বলিতে লাগিল, এ ব্যক্তি পাপীদিগকে গ্রহণ করে, ও তাহাদের সহিত আহার ব্যবহার করে। তখন তিনি তাহাদিগকে এই দৃষ্টান্ত কহিলেন। তোমাদের মধ্যে কোন্‌ ব্যক্তি—যাহার এক শত মেষ আছে, ও সেই সকলের মধ্যে একটী হারাইয়া যায়—নিরানব্বইটা প্রান্তরে ছাড়িয়া যায় না, আর যে পর্য্যন্ত সেই হারাণটী না পায়, সে পর্য্যন্ত তাহার অন্বেষণ করিতে যায় না? আর তাহা পাইলে সে আনন্দপূর্ব্বক কাঁধে তুলিয়া লয়। পরে ঘরে আসিয়া বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবাসীদিগকে ডাকিয়া বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটী হারাইয়া গিয়াছিল, তাহা পাইয়াছি। আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তদ্রূপ এক জন পাপী মন ফিরাইলে স্বর্গে আনন্দ হইবে; যাহাদের মন ফিরান অনাবশ্যক, এমন নিরানব্বই জন ধার্ম্মিকের বিষয়ে তত আনন্দ হইবে না। অথবা কোন্‌ স্ত্রীলোক, যাহার দশটী সিকি আছে, সে যদি একটী হারাইয়া ফেলে, তবে প্রদীপ জ্বালিয়া ঘর ঝাঁটি দিয়া যে পর্য্যন্ত তাহা না পায়, ভাল করিয়া খুঁজিয়া দেখে না? আর পাইলে পর সে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবাসিনীগণকে ডাকিয়া বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমি যে সিকিটী হারাইয়া ফেলিয়াছিলাম, তাহা পাইয়াছি। তদ্রূপ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এক জন পাপী মন ফিরাইলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়। আর তিনি কহিলেন, এক ব্যক্তির দুই পুত্র ছিল; তাহাদের মধ্যে কনিষ্ঠ আপন পিতাকে কহিল, পিতঃ, সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়ে, তাহা আমাকে দেও। তাহাতে তিনি তাহাদের মধ্যে ধন বিভাগ করিয়া দিলেন। অল্প দিন পরে সেই কনিষ্ঠ পুত্র সমস্ত একত্র করিয়া লইয়া দূরদেশে চলিয়া গেল, আর তথায় সে অনাচারে নিজ সম্পত্তি উড়াইয়া দিল। সে সমস্ত ব্যয় করিয়া ফেলিলে পর সেই দেশে ভারী আকাল হইল, তাহাতে সে কষ্টে পড়িতে লাগিল। তখন সে গিয়া সেই দেশের এক জন গৃহস্থের আশ্রয় লইল; আর সে তাহাকে শূকর চরাইবার জন্য আপনার মাঠে পাঠাইয়া দিল; তখন, শূকরে যে শুঁটী খাইত, তাহা দিয়া সে উদর পূর্ণ করিতে বাঞ্ছা করিত, আর কেহই তাহাকে দিত না। কিন্তু চেতনা পাইলে সে বলিল, আমার পিতার কত মজুর বেশী বেশী খাদ্য পাইতেছে, কিন্তু আমি এখানে ক্ষুধায় মরিতেছি। আমি উঠিয়া আমার পিতার নিকটে যাইব, তাঁহাকে বলিব, পিতঃ, স্বর্গের বিরুদ্ধে এবং তোমার সাক্ষাতে আমি পাপ করিয়াছি; আমি আর তোমার পুত্র নামের যোগ্য নই; তোমার এক জন মজুরের মত আমাকে রাখ। পরে সে উঠিয়া আপন পিতার নিকটে আসিল। সে দূরে থাকিতেই তাহার পিতা তাহাকে দেখিতে পাইলেন, ও করুণাবিষ্ট হইলেন, আর দৌড়িয়া গিয়া তাহার গলা ধরিয়া তাহাকে চুম্বন করিতে থাকিলেন। তখন পুত্র তাঁহাকে কহিল, পিতঃ, স্বর্গের বিরুদ্ধে ও তোমার সাক্ষাতে আমি পাপ করিয়াছি, আমি আর তোমার পুত্র নামের যোগ্য নই। কিন্তু পিতা আপন দাসদিগকে বলিলেন, শীঘ্র করিয়া সব চেয়ে ভাল কাপড়খানি আন, আর ইহাকে পরাইয়া দেও, এবং ইহার হাতে অঙ্গুরী দেও ও পায়ে জুতা দেও; আর হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটী আনিয়া মার; আমরা ভোজন করিয়া আমোদ প্রমোদ করি; কারণ আমার এই পুত্র মরিয়া গিয়াছিল, এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল। তাহাতে তাহারা আমোদ প্রমোদ করিতে লাগিল। তখন তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র ক্ষেত্রে ছিল; পরে সে আসিতে আসিতে যখন বাটীর নিকটে পঁহুছিল, তখন বাদ্য ও নৃত্যের শব্দ শুনিতে পাইল। আর সে এক জন দাসকে কাছে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, এ সকল কি? সে তাহাকে বলিল, তোমার ভাই আসিয়াছে, এবং তোমার পিতা হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটী মারিয়াছেন, কেননা তিনি তাহাকে সুস্থ পাইয়াছেন। তাহাতে সে ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল, ভিতরে যাইতে চাহিল না; তখন তাহার পিতা বাহিরে আসিয়া তাহাকে সাধ্যসাধনা করিতে লাগিলেন। কিন্তু সে উত্তর করিয়া পিতাকে কহিল, দেখ, এত বৎসর আমি তোমার সেবা করিয়া আসিতেছি, কখনও তোমার আজ্ঞা লঙ্ঘন করি নাই, তথাপি আমাকে কখনও একটী ছাগবৎস দেও নাই, যেন আমি নিজ মিত্রগণের সহিত আমোদ প্রমোদ করিতে পারি; কিন্তু তোমার এই যে পুত্র বেশ্যাদের সঙ্গে তোমার ধন খাইয়া ফেলিয়াছে, সে যখন আসিল, তাহারই জন্য হৃষ্টপুষ্ট বাছুরটী মারিলে। তিনি তাহাকে বলিলেন, বৎস, তুমি সর্ব্বদাই আমার সঙ্গে আছ, আর যাহা যাহা আমার, সকলই তোমার। কিন্তু আমাদের আমোদ প্রমোদ ও আনন্দ করা উচিত হইয়াছে, কারণ তোমার এই ভাই মরিয়া গিয়াছিল, এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল। আর তিনি শিষ্যদিগকেও কহিলেন, এক জন ধনবান্‌ লোক ছিল, তাহার এক দেওয়ান ছিল; সে স্বামীর ধন অপচয় করিতেছে বলিয়া তাহার নিকটে অপবাদিত হইল। পরে সে তাহাকে ডাকিয়া কহিল, তোমার বিষয়ে এ কি কথা শুনিতেছি? তোমার দেওয়ানী-পদের হিসাব দেও, কেননা তুমি আর দেওয়ান থাকিতে পারিবে না। তখন সেই দেওয়ান মনে মনে কহিল, কি করিব? আমার প্রভু ত আমার নিকট হইতে দেওয়ানীপদ লইতেছেন; মাটী কাটিবার বল আমার নাই, ভিক্ষা করিতে আমার লজ্জা হয়। আমার দেওয়ানী পদ গেলে লোকে যেন আপন আপন গৃহে আমাকে গ্রহণ করে, এজন্য যাহা করিব, তাহা বুঝিলাম। পরে সে আপন প্রভুর প্রত্যেক ঋণীকে ডাকিয়া প্রথম জনকে কহিল, তুমি আমার প্রভুর কত ধার? সে বলিল, এক শত মণ তৈল। তখন সে তাহাকে কহিল, তোমার ঋণপত্র লও, এবং শীঘ্র বসিয়া পঞ্চাশ লেখ। পরে সে আর এক জনকে বলিল, তুমি কত ধার? সে বলিল, এক শত বিশি গোম। তখন সে কহিল, তোমার ঋণপত্র লইয়া আশী লেখ। তাহাতে সেই প্রভু সেই অধার্ম্মিক দেওয়ানের প্রশংসা করিল, কারণ সে বুদ্ধিমানের কর্ম্ম করিয়াছিল। বাস্তবিক এই যুগের সন্তানেরা নিজ জাতির সম্বন্ধে দীপ্তির সন্তানগণ অপেক্ষা বুদ্ধিমান। আর আমিই তোমাদিগকে বলিতেছি, আপনাদের জন্যে অধার্ম্মিকতার ধন দ্বারা মিত্র লাভ কর, যেন উহা শেষ হইলে তাহারা তোমাদিগকে সেই অনন্ত আবাসে গ্রহণ করে। যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে বিশ্বস্ত, সে প্রচুর বিষয়েও বিশ্বস্ত; আর যে ক্ষুদ্রতম বিষয়ে অধার্ম্মিক, সে প্রচুর বিষয়েও অধার্ম্মিক। অতএব তোমরা যদি অধার্ম্মিকতার ধনে বিশ্বস্ত না হইয়া থাক, তবে কে বিশ্বাস করিয়া তোমাদের কাছে সত্য ধন রাখিবে? আর যদি পরের বিষয়ে বিশ্বস্ত না হইয়া থাক, তবে কে তোমাদের নিজ বিষয় তোমাদিগকে দিবে? কোন ভৃত্য দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না, কেননা সে হয় এক জনকে ঘৃণা করিবে, অন্যকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনে অনুরক্ত হইবে, অন্যকে তুচ্ছ করিবে। তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না। তখন ফরীশীরা, যাহারা টাকা ভাল বাসিত, এ সকল কথা শুনিতেছিল, আর তাহারা তাঁহাকে উপহাস করিতে লাগিল। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরাই ত মনুষ্যদের সাক্ষাতে আপনাদিগকে ধার্ম্মিক দেখাইয়া থাক, কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের অন্তঃকরণ জানেন; কেননা মনুষ্যদের মধ্যে যাহা উচ্চ, তাহা ঈশ্বরের সাক্ষাতে ঘৃণিত। ব্যবস্থা ও ভাববাদিগণ যোহন পর্য্যন্ত; সেই অবধি ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারিত হইতেছে, এবং প্রত্যেক জন সবলে সেই রাজ্যে প্রবেশ করিতেছে। কিন্তু ব্যবস্থার এক বিন্দু পড়িয়া যাওয়া অপেক্ষা বরং আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হওয়া সহজ। যে কেহ আপনার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া আর এক জনকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে; এবং যে কেহ স্বামীত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে। এক জন ধনবান্‌ লোক ছিল, সে বেগুনে কাপড় ও সূক্ষ্ম বস্ত্র পরিধান করিত, এবং প্রতিদিন জাঁকজমকের সহিত আমোদ প্রমোদ করিত। তাহার ফটক-দ্বারে লাসার নামে এক জন কাঙ্গালকে রাখা হইয়াছিল, সে ঘায়ে ভরা ছিল, এবং সেই ধনবানের মেজ হইতে পতিত গুঁড়াগাঁড়া খাইতে বাঞ্ছা করিত; আবার কুকুকেরাও আসিয়া তাহার ঘা চাটিত। কালক্রমে ঐ কাঙ্গাল মরিয়া গেল, আর স্বর্গদূতগণ তাহাকে লইয়া অব্রাহামের কোলে বসাইলেন। পরে সেই ধনবান্‌ও মরিল, এবং কবরপ্রাপ্ত হইল। আর পাতালে, যাতনার মধ্যে, সে চক্ষু তুলিয়া দূর হইতে অব্রাহামকে এবং তাঁহার কোলে লাসারকে দেখিতে পাইল। তাহাতে সে উচ্চৈঃস্বরে কহিল, পিতঃ, অব্রাহাম, আমার প্রতি দয়া করুন, লাসারকে পাঠাইয়া দিউন, যেন সে অঙ্গুলির অগ্রভাগ জলে ডুবাইয়া আমার জিহ্বা শীতল করে, কেননা এই অগ্নিশিখায় আমি যন্ত্রণা পাইতেছি। কিন্তু অব্রাহাম কহিলেন, বৎস, স্মরণ কর; তোমার সুখ তুমি জীবনকালে পাইয়াছ, আর লাসার তদ্রূপ দুঃখ পাইয়াছে; এখন সে এই স্থানে সান্ত্বনা পাইতেছে, আর তুমি যন্ত্রণা পাইতেছ। আর এ সকল ছাড়া আমাদের ও তোমাদের মধ্যে বৃহৎ এক শূন্যস্থলী স্থির রহিয়াছে, যেন এখান হইতে যাহারা তোমাদের কাছে যাইতে চাহে, তাহারা না পারে, আবার ওখান হইতে আমাদের কাছে কেহ পার হইয়া আসিতে না পারে। তখন সে কহিল, তবে আমি আপনাকে বিনয় করি, পিতঃ, আমার পিতার বাটীতে উহাকে পাঠাইয়া দিউন; কেননা আমার পাঁচটী ভাই আছে; সে গিয়া তাহাদের নিকটে সাক্ষ্য দিউক, যেন তাহারাও এই যাতনাস্থানে না আইসে। কিন্তু অব্রাহাম কহিলেন, তাহাদের নিকটে মোশি ও ভাববাদিগণ আছেন; তাঁহাদেরই কথা তাহারা শুনুক। তখন সে বলিল, তাহা নয়, পিতঃ অব্রাহাম, বরং মৃতদের মধ্য হইতে যদি কেহ তাহাদের নিকটে যায়, তাহা হইলে তাহারা মন ফিরাইবে। কিন্তু তিনি কহিলেন, তাহারা যদি মোশির ও ভাববাদিগণের কথা না শুনে, তবে মৃতগণের মধ্য হইতে কেহ উঠিলেও তাহারা মানিবে না। যীশু আপন শিষ্যদিগকে আরও কহিলেন, বিঘ্ন উপস্থিত না হইবে, এমন হইতে পারে না; কিন্তু ধিক্‌ তাহাকে, যাহার দ্বারা উপস্থিত হইবে! সে যে এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনের বিঘ্ন জন্মায়, ইহা অপেক্ষা বরং তাহার গলায় যাঁতা বাঁধিয়া তাহাকে সমুদ্রে ফেলিয়া দিলে তাহার পক্ষে ভাল। তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাক। তোমার ভ্রাতা যদি পাপ করে, তাহাকে অনুযোগ করিও; আর সে যদি অনুতাপ করে, তাহাকে ক্ষমা করিও। আর যদি সে এক দিনের মধ্যে সাত বার তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে, আর সাত বার তোমার কাছে ফিরিয়া আসিয়া বলে, অনুতাপ করিলাম, তবে তাহাকে ক্ষমা করিও। আর প্রেরিতেরা প্রভুকে কহিলেন, আমাদের বিশ্বাসের বৃদ্ধি করুন। প্রভু কহিলেন, একটী সরিষাদানার মত বিশ্বাস যদি তোমাদের থাকে, তবে ‘তুমি সমূলে উপড়িয়া গিয়া সমুদ্রে রোপিত হও’ এই কথা সুকামিন গাছটীকে বলিলে এ তোমাদের কথা মানিবে। আর তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যাহার দাস হাল বহিয়া কিম্বা মেঘ চরাইয়া ক্ষেত্র হইতে ভিতরে আসিলে সে তাহাকে বলিবে, ‘তুমি এখনই আসিয়া খাইতে বস’? বরং তাহাকে কি বলিবে না, ‘আমি কি খাইব, তাহার আয়োজন কর, এবং আমি যতক্ষণ ভোজন পান করি, ততক্ষণ কোমর বাঁধিয়া আমার সেবা কর, তাহার পর তুমি ভোজন পান করিবে’? সেই দাস আজ্ঞা পালন করিল বলিয়া সে কি তাহার ধন্যবাদ করে? সেই প্রকারে সমস্ত আজ্ঞা পালন করিলে পর তোমরাও বলিও আমার অনুপযোগী দাস, যাহা করিতে বাধ্য ছিলাম, তাহাই করিলাম। যিরূশালেমে যাইবার সময়ে তিনি শমরিয়া ও গালীল দেশের মধ্য দিয়া গমন করিলেন। তিনি কোন গ্রামে প্রবেশ করিতেছেন, এমন সময়ে দশ জন কুষ্ঠী তাঁহার সম্মুখে পড়িল, তাহারা দূরে দাঁড়াইল, আর তাহারা উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, যীশু, নাথ, আমাদিগকে দয়া করুন! তাহাদিগকে দেখিয়া তিনি কহিলেন, যাও, যাজকগণের নিকটে গিয়া আপনাদিগকে দেখাও। যাইতে যাইতে তাহারা শুচীকৃত হইল। তখন তাহাদের এক জন আপনাকে সুস্থ দেখিয়া উচ্চ রবে ঈশ্বরের গৌরব করিতে করিতে ফিরিয়া আসিল, এবং যীশুর চরণে উবুড় হইয়া পড়িয়া তাঁহার ধন্যবাদ করিতে লাগিল; সেই ব্যক্তি শমরীয়। যীশু উত্তর করিয়া কহিলেন, দশ জন কি শুচীকৃত হয় নাই? তবে সেই নয় জন কোথায়? ঈশ্বরের গৌরব করিবার জন্য ফিরিয়া আসিয়াছে, এই অন্যজাতীয় লোকটী ভিন্ন এমন কাহাকেও কি পাওয়া গেল না? পরে তিনি তাহাকে বলিলেন, উঠিয়া চলিয়া যাও, তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিয়াছে। ফরীশীরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, ঈশ্বরের রাজ্য কখন আসিবে? তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্য জাঁকজমকের সহিত আইসে না; আর লোকে বলিবে না, দেখ, এই স্থানে! কিম্বা ঐ স্থানে! কারণ দেখ, ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের মধ্যেই আছে। আর তিনি শিষ্যদিগকে কহিলেন, এমন সময় আসিবে, যখন তোমরা মনুষ্যপুত্রের সময়ের এক দিন দেখিতে ইচ্ছা করিবে, কিন্তু দেখিতে পাইবে না। তখন লোকেরা তোমাদিগকে বলিবে, দেখ, ঐ স্থানে! দেখ, এই স্থানে! যাইও না পশ্চাদগমন করিও না। কেননা বিদ্যুৎ যেমন আকাশের নীচে এক দিক্‌ হইতে চমকাইলে আকাশের নীচে অন্য দিক্‌ পর্য্যন্ত আলোকিত হয়, মনুষ্যপুত্র আপনার দিনে সেইরূপ হইবেন। কিন্তু প্রথমে তাঁহাকে অনেক দুঃখ ভোগ করিতে এবং এই কালের লোকদের কাছে অগ্রাহ্য হইতে হইবে। আর নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্রের সময়েও তদ্রূপ হইবে। লোকে ভোজন পান করিত, বিবাহ করিত, বিবাহিতা হইত, যে পর্য্যন্ত না নোহ জাহাজে প্রবেশ করিলেন, আর জলপ্লাবন আসিয়া সকলকে বিনষ্ট করিল। সেইরূপ লোটের সময়ে যেমন হইয়াছিল—লোকে ভোজন পান, ক্রয় বিক্রয়, বৃক্ষ রোপন ও গৃহ নির্ম্মাণ করিত; কিন্তু যে দিন লোট সদোম হইতে বাহির হইলেন, সেই দিন আকাশ হইতে অগ্নি ও গন্ধক বর্ষিয়া সকলকে বিনষ্ট করিল— মনুষ্যপুত্র যে দিন প্রকাশিত হইবেন, সে দিনেও সেইরূপ হইবে। সেই দিন যে কেহ ছাদের উপরে থাকিবে, আর তাহার জিনিষপত্র ঘরে থাকিবে, সে তাহা লইবার জন্য নীচে না নামুক; আর তদ্রূপ যে কেহ ক্ষেত্রে থাকিবে, সেও পশ্চাতে ফিরিয়া না আইসুক। লোটের স্ত্রীকে স্মরণ করিও । যে কেহ আপন প্রাণ লাভ করিতে চেষ্টা করে, সে তাহা হারাইবে; আর যে কেহ প্রাণ হারায়, সে তাহা বাঁচাইবে। আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, সেই রাত্রিতে দুই জন এক বিছানায় থাকিবে, তাহাদের এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে। দুইটী স্ত্রীলোক একত্র যাঁতা পিষিবে; তাহাদের এক জনকে লওয়া যাইবে, এবং অন্য জনকে ছাড়িয়া যাওয়া হইবে। তখন তাঁহারা উত্তর করিয়া তাঁহাকে বলিলেন, হে প্রভু, কোথায়? তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, যেখানে শব, সেখানেই শকুন যুটিবে। আর তিনি তাঁহাদিগকে এই ভাবের একটী দৃষ্টান্ত কহিলেন যে, তাঁহাদের সর্বদাই প্রার্থনা করা উচিত, নিরুৎসাহ হওয়া উচিত নয়। তিনি বলিলেন, কোন নগরে এক বিচারকর্ত্তা ছিল, সে ঈশ্বরকে ভয় করিত না, মনুষ্যকেও মানিত না। আর সেই নগরে এক বিধবা ছিল, সে তাহার নিকটে আসিয়া বলিত, অন্যায়ের প্রতীকার করিয়া আমার বিপক্ষ হইতে আমাকে উদ্ধার করুন! বিচারকর্ত্তা কিছু কাল পর্য্যন্ত সম্মত হইল না; কিন্তু পরে মনে মনে কহিল, যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না, মনুষ্যকেও মানি না, তথাপি এই বিধবা আমাকে ক্লেশ দিতেছে, এই জন্য অন্যায় হইতে ইহাকে উদ্ধার করিব, পাছে এ সর্ব্বদা আসিয়া আমাকে জ্বালাতন করিয়া তুলে। পরে প্রভু কহিলেন, শুন, ঐ অধার্ম্মিক বিচারকর্ত্তা কি বলে। তবে ঈশ্বর কি আপনার সেই মনোনীতদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতীকার করিবেন না, যাহারা দিবারাত্র তাঁহার কাছে রোদন করে, যদিও তিনি তাহাদের বিষয়ে দীর্ঘসহিষ্ণু? আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তিনি শীঘ্রই তাহাদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার করিবেন। কিন্তু মনুষ্যপুত্র যখন আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন? যাহারা আপনাদের উপরে বিশ্বাস রাখিত, মনে করিত যে, তাহারাই ধার্ম্মিক, এবং অন্য সকলকে হেয়জ্ঞান করিত, এমন কএক জনকে তিনি এই দৃষ্টান্ত কহিলেন। দুই ব্যক্তি প্রার্থনা করিবার জন্য ধর্ম্মধামে গেল; এক জন ফরীশী, আর এক জন করগ্রাহী। ফরীশী দাঁড়াইয়া আপনা আপনি এইরূপ প্রার্থনা করিল, হে ঈশ্বর, আমি তোমার ধন্যবাদ করি যে, আমি অন্য সকল লোকের—উপদ্রবী, অন্যায়ী ও ব্যভিচারীদের —মত কিম্বা ঐ করগ্রাহীর মত নহি; আমি সপ্তাহের মধ্যে দুই বার উপবাস করি, সমস্ত আয়ের দশমাংশ দান করি; কিন্তু করগ্রাহী দূরে দাঁড়াইয়া স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিতেও সাহস পাইল না, বরং সে বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে কহিল, হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি দয়া কর। আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক গণিত হইয়া নিজ গৃহে নামিয়া গেল, ঐ ব্যক্তি নয়; কেননা যে কেহ আপনাকে উচ্চ করে, তাহাকে নত করা যাইবে; কিন্তু যে আপনাকে নত করে, তাহাকে উচ্চ করা যাইবে। আর লোকেরা আপনাদের ছোট শিশুদিগকেও তাঁহার নিকটে আনিল, যেন তিনি তাহাদিগকে স্পর্শ করেন। শিষ্যেরা তাহা দেখিয়া তাহাদিগকে ভর্ৎসনা করিতে লাগিলেন। কিন্তু যীশু তাহাদিগকে নিকটে ডাকিলেন, বলিলেন, শিশুগণকে আমার নিকটে আসিতে দেও, উহাদিগকে বারণ করিও না, কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই। আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে কেহ শিশুবৎ হইয়া ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোন মতে তাহাতে প্রবেশ করিতে পাইবে না। এক জন অধ্যক্ষ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, হে সদ্‌গুরু, কি করিলে আমি অনন্ত জীবনের অধিকারী হইব? যীশু তাহাকে কহিলেন, আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? এক জন ব্যতিরেকে সৎ আর কেহ নাই, তিনি ঈশ্বর। তুমি আজ্ঞা সকল জান, “ব্যভিচার করিও না, নরহত্যা করিও না, চুরি করিও না, মিথ্যাসাক্ষ্য দিও না, তোমার পিতামাতাকে সমাদর করিও।” সে কহিল, বাল্যকাল অবধি এই সকল পালন করিয়া আসিতেছি। এ কথা শুনিয়া যীশু তাহাকে কহিলেন, এখনও এক বিষয়ে তোমার ত্রুটি আছে; তোমার যাহা কিছু আছে, সমস্ত বিক্রয় কর, আর দরিদ্রদিগকে বিতরণ কর, তাহাতে স্বর্গে ধন পাইবে; আর আইস, আমার পশ্চাদ্‌গামী হও। কিন্তু এ কথা শুনিয়া সে অতিশয় দুঃখিত হইল, কারণ সে অতিশয় ধনবান্‌ ছিল। তখন তাহার প্রতি দৃষ্টি করিয়া যীশু কহিলেন, যাহাদের ধন আছে, তাহাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন দুষ্কর! বাস্তবিক ঈশ্বরের রাজ্যে ধনবানের প্রবেশ করা অপেক্ষা বরং সূচীর ছিদ্র দিয়া উষ্ট্রের প্রবেশ করা সহজ। যাহারা শুনিল, তাহারা বলিল, তবে কাহার পরিত্রাণ হইতে পারে? তিনি কহিলেন, যাহা মনুষ্যের অসাধ্য, তাহা ঈশ্বরের সাধ্য। তখন পিতর কহিলেন, দেখুন, আমরা যাহা যাহা নিজের, সে সকল পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদ্‌গামী হইয়াছি। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এমন কেহ নাই, যে ঈশ্বরের রাজ্যের নিমিত্ত বাটী কি স্ত্রী কি ভ্রাতৃগণ কি পিতামাতা কি সন্তানসন্ততি ত্যাগ করিলে, ইহকালে তাহারা বহুগুণ এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন না পাইবে। পরে তিনি সেই বারো জনকে কাছে লইয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাইতেছি; আর ভাববাদিগণ দ্বারা যাহা যাহা লিখিত হইয়াছে, সে সমস্ত মনুষ্যপুত্রে সিদ্ধ হইবে। কারণ তিনি পরজাতীয়দের হস্তে সমর্পিত হইবেন, এবং লোকেরা তাঁহাকে বিদ্রূপ করিবে, তাঁহার অপমান করিবে, তাঁহার গায়ে থুথু দিবে; এবং কোড়া প্রহার করিয়া তাঁহাকে বধ করিবে; পরে তৃতীয় দিবসে তিনি পুনরায় উঠিবেন। এই সকলের কিছুই তাঁহারা বুঝিলেন না, এই কথা তাঁহাদের হইতে গুপ্ত রহিল, এবং কি কি বলা যাইতেছে, তাহা তাঁহারা বুঝিয়া উঠিতে পারিলেন না। আর যখন তিনি যিরীহোর নিকটবর্ত্তী হইলেন, এক জন অন্ধ পথের পার্শ্বে বসিয়া ভিক্ষা করিতেছিল; সে লোকদের গমনের শব্দ শুনিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ইহার কারণ কি? লোকে তাহাকে বলিল, নাসরতীয় যীশু সেখান দিয়া যাইতেছেন। তখন সে উচ্চৈঃস্বরে কহিল, হে যীশু, দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। যাহারা আগে আগে যাইতেছিল, তাহারা চুপ চুপ বলিয়া তাহাকে ধমক্‌ দিল, কিন্তু সে আরও অধিক চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, হে দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন। তখন যীশু থামিয়া তাহাকে তাঁহার নিকটে আনিতে আজ্ঞা করিলেন; পরে সে নিকটে আসিলে তিনি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি চাও? আমি তোমার নিমিত্ত কি করিব? সে কহিল, প্রভু, যেন দেখিতে পাই। যীশু তাহাকে কহিলেন, দেখিতে পাও; তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করিল। তাহাতে সে তৎক্ষণাৎ দেখিতে পাইল, এবং ঈশ্বরের গৌরব করিতে করিতে তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল। তাহা দেখিয়া সকল লোক ঈশ্বরের স্তব করিল। পরে তিনি যিরীহোতে প্রবেশ করিয়া নগরের মধ্য দিয়া যাইতেছিলেন। আর দেখ, সক্কেয় নামে এক ব্যক্তি; সে এক জন প্রধান করগ্রাহী, এবং সে ধনবান্‌ ছিল। আর কে যীশু, সে দেখিতে চেষ্টা করিতেছিল, কিন্তু ভিড় প্রযুক্ত পারিল না, কেননা সে খর্ব্বকায় ছিল। তাই সে আগে দৌড়িয়া গিয়া তাঁহাকে দেখিবার জন্য একটী সুকমোর গাছে উঠিল, কারণ তিনি সেই পথে যাইতেছিলেন। পরে যীশু যখন সেই স্থানে উপস্থিত হইলেন, তখন উপরের দিকে চাহিয়া তাহাকে কহিলেন, সক্কেয়, শীঘ্র নামিয়া আইস, কেননা আজ তোমার গৃহে আমাকে থাকিতে হইবে। তাহাতে সে শীঘ্র নামিয়া আসিল, এবং আনন্দের সহিত তাঁহার আতিথ্য করিল। তাহা দেখিয়া সকলে বচসা করিয়া বলিতে লাগিল, ইনি এক জন পাপীর ঘরে রাত্রি যাপন করিতে গেলেন। তখন সক্কেয় দাঁড়াইয়া প্রভুকে কহিল, প্রভু, দেখুন, আমার সম্পত্তির অর্দ্ধেক আমি দরিদ্রদিগকে দান করি; আর যদি অন্যয়পূর্ব্বক কাহারও কিছু হরণ করিয়া থাকি, তাহার চতুর্গুণ ফিরাইয়া দিই। তখন যীশু তাহাকে কহিলেন, আজ এই গৃহে পরিত্রাণ উপস্থিত হইল; যেহেতুক এ ব্যক্তিও অব্রাহামের সন্তান। কারণ যাহা হারাইয়া গিয়াছিল, তাহার অন্বেষণ ও পরিত্রাণ করিতে মনুষ্যপুত্র আসিয়াছেন। যখন তাহারা এই সকল কথা শুনিতেছিল, তখন তিনি একটী দৃষ্টান্তও কহিলেন, কারণ তিনি যিরূশালেমের নিকটে উপস্থিত হইয়াছিলেন; আর তাহারা অনুমান করিতেছিল যে, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রকাশ তখনই হইবে। অতএব তিনি কহিলেন, ভদ্রবংশীয় এক ব্যক্তি দূরদেশে গেলেন, অভিপ্রায় এই যে, আপনার জন্য রাজপদ লইয়া ফিরিয়া আসিবেন। আর তিনি আপনার দশ জন দাসকে ডাকিয়া দশটী মুদ্রা দিয়া কহিলেন, আমি যে পর্য্যন্ত না আসি, ব্যবসায় কর। কিন্তু তাঁহার প্রজাগণ তাঁহাকে দ্বেষ করিত, তাহারা তাঁহার পশ্চাৎ দূত পাঠাইয়া দিল, কহিল, আমাদের ইচ্ছা নয় যে, এ ব্যক্তি আমাদের উপরে রাজত্ব করে। পরে তিনি রাজপদ প্রাপ্ত হইয়া যখন ফিরিয়া আসিলেন, তখন, যাহাদিগকে টাকা দিয়াছিলেন, সেই দাসদিগকে তাঁহার কাছে ডাকিয়া আনিতে বলিলেন, যেন তিনি জানিতে পারেন, তাহারা ব্যবসায়ে কে কত লাভ করিয়াছে। তখন প্রথম ব্যক্তি নিকটে আসিয়া কহিল, প্রভু, আপনার মুদ্রায় আর দশ মুদ্রা হইয়াছে। তিনি তাহাকে কহিলেন, ধন্য! উত্তম দাস, তুমি অতি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে; এ জন্য দশ নগরের উপরে কর্ত্তৃত্ব কর। দ্বিতীয় ব্যক্তি আসিয়া কহিল, প্রভু, আপনার মুদ্রায় আর পাঁচ মুদ্রা হইয়াছে। তিনি তাহাকেও কহিলেন, তুমিও পাঁচ নগরের কর্ত্তা হও। পরে আর এক জন আসিয়া কহিল, প্রভু, দেখুন, এই আপনার মুদ্রা; আমি ইহা রুমালে বাঁধিয়া রাখিয়াছিলাম; কারণ আমি আপনা হইতে ভীত ছিলাম, কেন না আপনি কঠিন লোক, যাহা রাখেন নাই, তাহা তুলিয়া লন, এবং যাহা বুনেন নাই, তাহা কাটেন। তিনি তাহাকে কহিলেন, দুষ্ট দাস, আমি তোমার নিজ মুখের প্রমাণে তোমার বিচার করিব। তুমি না জানিতে, আমি কঠিন লোক, যাহা রাখি নাই তাহাই তুলিয়া লই, এবং যাহা বুনি নাই তাহাই কাটি? তবে আমার টাকা পোদ্দারদের কাছে কেন রাখ নাই? তাহা করিলে আমি আসিয়া সুদের সহিত তাহা আদায় করিতাম। আর যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, ইহার নিকট হইতে ঐ মুদ্রা লও, এবং যাহার দশ মুদ্রা আছে, তাহাকে দেও। —তাহারা তাঁহাকে কহিল, প্রভু, উহার যে দশ মুদ্রা আছে।— আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কাহারও আছে, তাহাকে দেওয়া যাইবে; কিন্তু যাহার নাই, তাহার যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে। পরন্তু আমার এই যে শত্রুগণ ইচ্ছা করে নাই যে, আমি তাহাদের উপরে রাজত্ব করি, তাহাদিগকে এই স্থানে আন, আর আমার সাক্ষাতে বধ কর। এই সকল কথা বলিয়া তিনি তাঁহাদের অগ্রে অগ্রে চলিলেন, যিরূশালেমের দিকে উঠিতে লাগিলেন। পরে যখন জৈতুন নামক পর্ব্বতের পার্শ্বস্থ বৈৎফগী ও বৈথনিয়ার নিকটবর্ত্তী হইলেন, তখন তিনি দুই জন শিষ্যকে পাঠাইয়া দিলেন, বলিলেন, ঐ সম্মুখস্থ গ্রামে যাও; তথায় প্রবেশ করিবামাত্র একটী গর্দ্দভশাবক বাঁধা দেখিতে পাইবে, যাহাতে কোন মানুষ কখনও বসে নাই; সেটী খুলিয়া আন। আর যদি কেহ তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করে, এটী কেন খুলিতেছ? তবে এইরূপ বলিবে, ইহাতে প্রভুর প্রয়োজন আছে। তখন যাঁহাদিগকে পাঠান হইল, তাঁহারা গিয়া, তিনি যেরূপ বলিয়াছিলেন, সেইরূপই দেখিতে পাইলেন। যখন তাঁহারা গর্দ্দভশাবকটী খুলিতেছিলেন, তখন মালিকেরা তাঁহাদিগকে বলিল, গর্দ্দভশাবকটী খুলিতেছ কেন? তাঁহারা কহিলেন, ইহাতে প্রভুর প্রয়োজন আছে। পরে তাঁহারা সেটীকে যীশুর নিকটে লইয়া আসিলেন, এবং তাহার পৃষ্ঠে আপনাদের বস্ত্র পাতিয়া তাহার উপরে যীশুকে বসাইলেন। পরে যখন তিনি যাইতে লাগিলেন, লোকেরা আপন আপন বস্ত্র পথে পাতিয়া দিতে লাগিল। আর তিনি নিকটবর্ত্তী হইতেছেন, জৈতুন পর্ব্বত হইতে নামিবার স্থানে উপস্থিত হইয়াছেন, এমন সময়ে, সমুদয় শিষ্যদল যে সকল পরাক্রম-কার্য্য দেখিয়াছিল, সেই সমস্তের জন্য আনন্দপূর্ব্বক উচ্চ রবে ঈশ্বরের প্রশংসা করিয়া বলিতে লাগিল, “ধন্য সেই রাজা, যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন; স্বর্গে শান্তি এবং ঊর্দ্ধলোকে মহিমা।” তখন লোকসমূহের মধ্য হইতে কএক জন ফরীশী তাঁহাকে কহিল, গুরো, আপনার শিষ্যদিগকে ধমক্‌ দিউন। তিনি উত্তর করিলেন, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ইহারা যদি চুপ করিয়া থাকে, প্রস্তর সকল চেঁচাইয়া উঠিবে। পরে যখন তিনি নিকটে আসিলেন, তখন নগরটী দেখিয়া তাহার জন্য রোদন করিলেন, কহিলেন, তুমি, তুমিই যদি আজিকার দিনে, যাহা যাহা শান্তিজনক, তাহা বুঝিতে! কিন্তু এখন সে সকল তোমার দৃষ্টি হইতে গুপ্ত রহিল। কারণ তোমার উপরে এমন সময় উপস্থিত হইবে, যে সময়ে তোমার শত্রুগণ তোমার চারিদিকে জাঙ্গাল বাঁধিবে, তোমাকে বেষ্টন করিবে, তোমাকে সর্ব্বদিকে অবরোধ করিবে, এবং তোমাকে ও তোমার মধ্যবর্ত্তী তোমার বৎসগণকে ভূমিসাৎ করিবে, তোমার মধ্যে প্রস্তরের উপরে প্রস্তর থাকিতে দিবে না; কারণ তোমার তত্ত্বাবধানের সময় তুমি বুঝ নাই। পরে তিনি ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিলেন, এবং বিক্রেতাদিগকে বাহির করিতে আরম্ভ করিলেন, তাহাদিগকে কহিলেন, লেখা আছে, “আমার গৃহ প্রার্থনা-গৃহ হইবে,” কিন্তু তোমরা ইহা “দস্যুগণের গহ্বর” করিয়া তুলিয়াছ। আর তিনি প্রতিদিন ধর্ম্মধামে উপদেশ দিতেন। আর প্রধান যাজকেরা ও অধ্যাপকগণ এবং লোকদের প্রধানেরাও তাঁহাকে বিনষ্ট করিতে চেষ্টা করিতে লাগিল; কিন্তু কি করিতে পারে, তাহা দেখিতে পাইল না, কেননা লোকেরা সকলে একাগ্র মনে তাঁহার কথা শুনিত। এক দিন তিনি ধর্ম্মধামে লোকদিগকে উপদেশ দিতেছেন ও সুসমাচার প্রচার করিতেছেন, ইতিমধ্যে প্রধান যাজকেরা ও অধ্যাপকগণ প্রাচীনবর্গের সঙ্গে আসিয়া পড়িল, এবং তাঁহাকে কহিল, আমাদিগকে বল, তুমি কি ক্ষমতায় এই সকল করিতেছ? তোমাকে যে এই ক্ষমতা দিয়াছে, সেই বা কে? তিনি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আমিও তোমাদিগকে একটী কথা জিজ্ঞাসা করি, আমাকে বল; যোহনের বাপ্তিস্ম স্বর্গ হইতে হইয়াছিল, না মনুষ্য হইতে? তখন তাহারা পরস্পর তর্ক করিল, বলিল, যদি বলি, স্বর্গ হইতে, তাহা হইলে এ বলিবে, তোমরা তাঁহাকে বিশ্বাস কর নাই কেন? আর যদি বলি, মনুষ্য হইতে, তবে লোকেরা সকলে আমাদিগকে পাথর মারিবে; কারণ তাহাদের এই ধারণা হইয়াছে যে, যোহন ভাববাদী ছিলেন। তাহারা উত্তর করিল, আমরা জানি না, কোথা হইতে। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তবে আমিও কি ক্ষমতায় এ সকল করিতেছি, তোমাদিগকে বলিব না। পরে তিনি লোকদিগকে এই দৃষ্টান্তকথা কহিতে লাগিলেন; কোন ব্যক্তি দ্রাক্ষার উদ্যান করিয়াছিলেন, পরে তাহা কৃষকদিগকে জমা দিয়া দীর্ঘকালের জন্য অন্য দেশে চলিয়া গেলেন। পরে যথা সময়ে কৃষকদের নিকটে এক দাসকে পাঠাইয়া দিলেন, যেন তাহারা দ্রাক্ষাক্ষেত্রের ফলের অংশ তাঁহাকে দেয়; কিন্তু কৃষকেরা তাহাকে প্রহার করিয়া রিক্তহস্তে বিদায় করিল। পরে তিনি আর এক দাসকে পাঠাইলেন, তাহারা তাহাকেও প্রহার করিয়া অপমানপূর্ব্বক রিক্তহস্তে বিদায় করিল। পরে তিনি তৃতীয় এক জনকে পাঠাইলেন, তাহারা তাহাকেও ক্ষতবিক্ষত করিয়া বাহিরে ফেলিয়া দিল। তখন দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্ত্তা কহিলেন, আমি কি করিব? আমার প্রিয় পুত্রকে পাঠাইব; হয় ত তাহারা তাঁহাকে সমাদর করিবে; কিন্তু কৃষকেরা তাঁহাকে দেখিয়া পরস্পর বলাবলি করিতে লাগিল, এই ব্যক্তিই উত্তরাধিকারী; আইস, আমরা ইহাকে বধ করি, যেন অধিকার আমাদেরই হয়। পরে তাহারা তাঁহাকে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের বাহিরে ফেলিয়া বধ করিল। এক্ষণে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের কর্ত্তা তাহাদিগকে কি করিবেন? তিনি আসিয়া এই কৃষকদিগকে বিনষ্ট করিবেন, এবং ক্ষেত্র অন্য লোকদিগকে দিবেন। এই কথা শুনিয়া তাহারা কহিল, এমন না হউক। কিন্তু তিনি তাহাদের প্রতি দৃষ্টাপাত করিয়া কহিলেন, তবে এ কি লেখা রহিয়াছে, “যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল”? সেই প্রস্তরের উপরে যে পড়িবে, সে ভগ্ন হইবে; কিন্তু সেই প্রস্তর যাহার উপরে পড়িবে, তাহাকে চূরমার করিয়া ফেলিবে। সেই দণ্ডে অধ্যাপকগণ ও প্রধান যাজকেরা তাঁহার উপরে হস্তক্ষেপ করিতে চেষ্টা করিল; আর তাহারা লোকদিগকে ভয় করিল; কেননা তাহারা বুঝিয়াছিল যে, তিনি তাহাদেরই বিষয়ে সেই দৃষ্টান্ত বলিয়াছিলেন। তখন তাহারা তাঁহার উপরে দৃষ্টি রাখিয়া, এমন কএক জন চর পাঠাইয়া দিল, যাহারা ছদ্মবেশী ধার্ম্মিক সাজিবে, যেন তাঁহার কথা ধরিয়া তাঁহাকে রাজদ্বারে ও দেশাধ্যক্ষের কর্ত্তৃত্বে সমর্পণ করিতে পারে। তাহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, হে গুরু, আমরা জানি, আপনি যথার্থ কথা কহেন ও যথার্থ শিক্ষা দেন, কাহারও মুখাপেক্ষা করেন না, কিন্তু সত্যরূপে ঈশ্বরের পথের বিষয়ে শিক্ষা দিতেছেন। কৈসরকে কর দেওয়া আমাদের বিধেয় কি না? কিন্তু তিনি তাহাদের ধূর্ত্ততা বুঝিয়া বলিলেন, আমাকে একটী দীনার দেখাও; ইহাতে কাহার মূর্ত্তি ও নাম আছে? তাহারা কহিল, কৈসরের। তখন তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তবে যাহা যাহা কৈসরের, কৈসরকে দেও, আর যাহা যাহা ঈশ্বরের, ঈশ্বরকে দেও। ইহাতে তাহারা লোকদের সাক্ষাতে তাঁহার কথার কোন ছিদ্র ধরিতে পারিল না, বরং তাঁহার উত্তরে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া চুপ করিয়া রহিল। আর সদ্দূকীদের—যাহারা প্রতিবাদ করিয়া বলে, পুনরুত্থান নাই, তাহাদের—কএক জন নিকটে আসিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, হে গুরু, মোশি আমাদের জন্য লিখিয়াছেন, কাহারও ভ্রাতা যদি স্ত্রী রাখিয়া মরিয়া যায়, আর তাহার সন্তান না থাকে, তবে তাহার ভাই সেই স্ত্রীকে গ্রহণ করিবে, ও আপন ভাইয়ের জন্য বংশ উৎপন্ন করিবে। ভাল, সাতটী ভাই ছিল; প্রথম জন একটী স্ত্রীকে বিবাহ করিল, আর সে সন্তান না রাখিয়া মরিয়া গেল। পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তি সেই স্ত্রীকে বিবাহ করিল; এইরূপে সাত জনই সন্তান না রাখিয়া মরিল। শেষে সে স্ত্রীও মরিয়া গেল। অতএব পুনরুত্থানে সে তাহাদের মধ্যে কাহার স্ত্রী হইবে? তাহারা সাত জনই ত তাহাকে বিবাহ করিয়াছিল। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, এই জগতের সন্তানেরা বিবাহ করে এবং বিবাহিতা হয়। কিন্তু যাহারা সেই জগতের এবং মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থানের অধিকারী হইবার যোগ্য গণিত হইয়াছে, তাহারা বিবাহ করে না এবং বিবাহিতাও হয় না। তাহারা আর মরিতেও পারে না, কেননা তাহারা দূতগণের সমতুল্য, এবং পুনরুত্থানের সন্তান হওয়াতে ঈশ্বরের সন্তান। আবার মৃতগণ যে উত্থাপিত হয়, ইহা মোশিও ঝোপের বৃত্তান্তে দেখাইয়াছেন; কেননা তিনি প্রভুকে “অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর, ও যাকোবের ঈশ্বর” বলেন। ঈশ্বর ত মৃতদের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু জীবিতদের; কেননা তাঁহার সাক্ষাতে সকলেই জীবিত। তখন কএক জন অধ্যাপক কহিল, হে গুরু, আপনি বেশ বলিয়াছেন। বাস্তবিক সেই অবধি তাঁহাকে আর কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে তাহাদের সাহস হইল না। আর তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, লোকে কেমন করিয়া খ্রীষ্টকে দায়ূদের সন্তান বলে? দায়ূদ ত আপনি গীতপুস্তকে বলেন, “প্রভু আমার প্রভুকে কহিলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি।” অতএব দায়ূদ তাঁহাকে প্রভু বলেন; তবে তিনি কি প্রকারে তাঁহার সন্তান? পরে তিনি সকল লোকের কর্ণগোচরে আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, অধ্যাপকগণ হইতে সাবধান, তাহারা লম্বা লম্বা কাপড় পরিয়া বেড়াইতে চায়, এবং হাট বাজারে লোকদের মঙ্গলবাদ, সমাজ-গৃহে প্রধান প্রধান আসন এবং ভোজে প্রধান প্রধান স্থান ভাল বাসে; তাহারা বিধবাদের গৃহ গ্রাস করে; এবং কপট ভাবে লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে, তাহারা বিচারে আরও অধিক দণ্ড পাইবে। পরে তিনি চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, ধনবানেরা ভাণ্ডারে আপন আপন দান রাখিতেছে। আর তিনি দেখিলেন, একটী দীনহীনা বিধবা সেই স্থানে দুইটী সিকি পয়সা রাখিতেছে; তখন তিনি কহিলেন, আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এই দরিদ্রা বিধবা সকলের অপেক্ষা অধিক রাখিল; কেননা ইহারা সকলে আপন আপন অতিরিক্ত ধন হইতে কিছু কিছু দানের মধ্যে রাখিল, কিন্তু এ নিজ অনাটন সত্ত্বেও ইহার যাহা কিছু ছিল, সমুদয় জীবনোপায় রাখিল। আর যখন কেহ কেহ ধর্ম্মধামের বিষয় বলিতেছিল, উহা কেমন সুন্দর সুন্দর প্রস্তরে ও নিবেদিত দ্রব্যে সুশোভিত, তিনি কহিলেন, তোমরা এই যে সকল দেখিতেছ, এমন সময় আসিতেছে, যখন ইহার একখানি পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকিবে না, সমস্তই ভূমিসাৎ হইবে। তাঁহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে গুরু, তবে এ সকল ঘটনা কখন হইবে? আর যখন এ সকল সফল হইবার সময় হইবে, তখন তাহার চিহ্নই বা কি? তিনি কহিলেন, দেখিও, ভ্রান্ত হইও না; কেননা অনেকে আমার নাম ধরিয়া আসিবে, বলিবে, ‘আমিই তিনি’ ও সময় সন্নিকট; তোমরা তাহাদের পশ্চাৎ যাইও না। আর যখন তোমরা যুদ্ধের ও গণ্ডগোলের কথা শুনিবে, ত্রাসযুক্ত হইও না, কেননা প্রথমে এই সকল ঘটিবেই ঘটিবে, কিন্তু তখনই শেষ নয়। পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে। মহৎ মহৎ ভূমিকম্প এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হইবে, আর আকাশে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর লক্ষণ ও মহৎ মহৎ চিহ্ন হইবে; কিন্তু এই সকল ঘটনার পূর্ব্বে লোকেরা তোমাদের উপরে হস্তক্ষেপ করিবে, তোমাদিগকে তাড়না করিবে, সমাজ-গৃহে ও কারাগারে সমর্পণ করিবে; আমার নামের নিমিত্ত তোমরা রাজাদের ও শাসনকর্ত্তাদের সম্মুখে নীত হইবে। সাক্ষ্যের জন্য এই সকল তোমাদের প্রতি ঘটিবে। অতএব মনে মনে স্থির করিও যে, কি উত্তর দিতে হইবে, তাহার নিমিত্ত অগ্রে চিন্তা করিবে না। কেননা আমি তোমাদিগকে এমন মুখ ও বিজ্ঞতা দিব যে, তোমাদের বিপক্ষেরা কেহ প্রতিরোধ করিতে কি উত্তর দিতে পারিবে না। আর তোমরা পিতা-মাতা, ভ্রাতৃগণ, জ্ঞাতি ও বন্ধুগণ কর্ত্তৃকও সমর্পিত হইবে, এবং তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও তাহারা বধ করাইবে। আর আমার নাম প্রযুক্ত তোমরা সকলের ঘৃণিত হইবে। কিন্তু তোমাদের মস্তকের একগাছি কেশও নষ্ট হইবে না। তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে। আর যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক। কেননা তখন প্রতিশোধের সময়, যে সমস্ত কথা লিখিত আছে, সেই সমস্ত পূর্ণ হইবার সময়। হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী স্ত্রীদিগের সন্তাপ! কেননা দেশে বিষম দুর্গতি এবং এই জাতির প্রতি ক্রোধ বর্ত্তিবে। লোকেরা খড়্গধারে পতিত হইবে; এবং বন্দি হইয়া সকল জাতির মধ্যে নীত হইবে; আর জাতিগণের সময় সম্পূর্ণ না হওয়া পর্য্যন্ত যিরূশালেম জাতিগণের পদ দলিত হইবে। আর সূর্য্যে, চন্দ্রে ও নক্ষত্রগণে নানা চিহ্ন প্রকাশ পাইবে, এবং পৃথিবীতে জাতিগণের ক্লেশ হইবে, তাহারা সমুদ্রের ও তরঙ্গের গর্জ্জনে উদ্বিগ্ন হইবে। ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়, মানুষের প্রাণ উড়িয়া যাইবে; কেননা আকাশ-মণ্ডলের পরাক্রম সকল বিচলিত হইবে। আর তৎকালে তাহারা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রম ও মহাপ্রতাপ সহকারে মেঘযোগে আসিতে দেখিবে। কিন্তু এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট। আর তিনি তাহাদিগকে একটী দৃষ্টান্ত কহিলেন, ডুমুর গাছ ও আর সকল গাছ দেখ; যখন সেগুলি পল্লবিত হয়, তখন তাহা দেখিয়া তোমরা আপনারাই বুঝিতে পার যে, এখন গ্রীষ্মকাল সন্নিকট। সেইরূপ তোমরাও যখন এই সকল ঘটিতেছে দেখিবে, তখন জানিবে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট। আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে পর্য্যন্ত সমস্ত সিদ্ধ না হইবে, সেই পর্য্যন্ত এই কালের লোকদের লোপ হইবে না। আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হইবে, কিন্তু আমার বাক্যের লোপ কখনও হইবে না। কিন্তু আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, পাছে ভোগপীড়ায় ও মত্ততায় এবং জীবিকার চিন্তায় তোমাদের হৃদয় ভারগ্রস্ত হয়, আর সেই দিন হঠাৎ ফাঁদের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়ে; কেননা সেই দিন সমস্ত ভূতল-নিবাসী সকলের উপরে উপস্থিত হইবে। কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্‌ হও। আর তিনি প্রতিদিন ধর্ম্মধামে উপদেশ দিতেন, এবং প্রতিরাত্রে বাহিরে গিয়া জৈতুন নামক পর্ব্বতে অবস্থিতি করিতেন। আর সমস্ত লোক তাঁহার কথা শুনিবার জন্য প্রত্যূষে ধর্ম্মধামে তাঁহার নিকটে আসিত। তখন তাড়ীশূন্য রুটীর পর্ব্ব, যাহাকে নিস্তারপর্ব্ব বলে, নিকটবর্ত্তী হইতেছিল; আর প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা কি প্রকারে তাঁহাকে বধ করিতে পারে, তাহারই চেষ্টা করিতেছিল, কেননা তাহারা লোকদিগকে ভয় করিত। আর শয়তান ঈষ্করিয়োতীয় নামক যিহূদার ভিতরে প্রবেশ করিল, এ সেই বারো জনের এক জন। তখন সে গিয়া প্রধান যাজকদের ও সেনাপতিদের সহিত কথোপকথন করিল, কিরূপে তাঁহাকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিতে পারিবে। তখন তাহারা আনন্দিত হইল, ও তাহাকে টাকা দিতে প্রতিজ্ঞা করিল। তাহাতে সে সম্মত হইল, এবং জনতার অগোচরে তাঁহাকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিবার সুযোগ অন্বেষণ করিতে লাগিল। পরে তাড়ীশূন্য রুটীর দিন, অর্থাৎ যে দিন নিস্তারপর্ব্বের মেষশাবক বলিদান করিতে হইত, সেই দিন আসিল। তখন তিনি পিতর ও যোহনকে প্রেরণ করিয়া কহিলেন, তোমরা গিয়া আমাদের জন্য নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত কর, আমরা ভোজন করিব। তাঁহারা বলিলেন, কোথায় প্রস্তুত করিব? আপনার ইচ্ছা কি? তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, দেখ, তোমরা নগরে প্রবেশ করিলে এমন এক ব্যক্তি তোমাদের সম্মুখে পড়িবে, যে ব্যক্তি এক কলশী জল লইয়া আসিতেছে; তোমরা তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ, যে বাটীতে সে প্রবেশ করিবে, তথায় যাইবে। আর তোমরা বাটীর কর্ত্তাকে বলিবে, গুরু আপনাকে বলিতেছেন, যেখানে আমি আমার শিষ্যগণের সহিত নিস্তারপর্ব্বের ভোজ ভোজন করিতে পারি, সেই অতিথিশালা কোথায়? তাহাতে সে তোমাদিগকে সাজান একটী উপরের বড় কুঠরী দেখাইয়া দিবে; সেই স্থানে প্রস্তুত করিও। তাঁহারা গিয়া, তিনি যেরূপ বলিয়াছিলেন, সেইরূপ দেখিতে পাইলেন; আর নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করিলেন। পরে সময় উপস্থিত হইতে তিনি ও তাঁহার সঙ্গে প্রেরিতগণ ভোজনে বসিলেন। তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমার দুঃখভোগের পূর্ব্বে তোমাদের সহিত আমি এই নিস্তারপর্ব্বের ভোজ ভোজন করিতে একান্তই বাঞ্ছা করিয়াছি; কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যে ইহা পূর্ণ না হয়, সেই পর্য্যন্ত আমি ইহা আর ভোজন করিব না। পরে তিনি পানপাত্র গ্রহণ করিয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক কহিলেন, ইহা লও, এবং আপনাদের মধ্যে বিভাগ কর; কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যের আগমন না হয়, এখন অবধি সেই পর্য্যন্ত আমি দ্রাক্ষাফলের রস আর পান করিব না। পরে তিনি রুটী লইয়া ধন্যবাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, এবং তাঁহাদিগকে দিলেন, বলিলেন, ইহা আমার শরীর, যাহা তোমাদের নিমিত্ত দেওয়া যায়, ইহা আমার স্মরণার্থে করিও। আর সেইরূপে তিনি ভোজন শেষ হইলে পানপাত্রটী লইয়া কহিলেন, এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের নিমিত্ত পাতিত হয় । কিন্তু দেখ, যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করিতেছে তাহার হস্ত আমার সহিত মেজের উপরে রহিয়াছে। কেননা যেমন নিরূপিত হইয়াছে, তদনুসারে মনুষ্যপুত্র যাইতেছেন, কিন্তু ধিক্‌ সেই ব্যক্তিকে, যাহার দ্বারা তিনি সমর্পিত হন। তখন তাঁহারা পরস্পর জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, তবে আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করিবে? আর তাঁহাদের মধ্যে এই বিবাদও উৎপন্ন হইল যে, তাঁহাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণ্য। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, জাতিগণের রাজারাই তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের শাসনকর্ত্তারাই ‘হিতকারী’ বলিয়া আখ্যাত হয়। কিন্তু তোমরা সেইরূপ হইও না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে কনিষ্ঠের ন্যায় হউক; এবং যে প্রধান, সে পরিচারকের ন্যায় হউক। কারণ, কে শ্রেষ্ঠ? যে ভোজনে বসে, না যে পরিচর্য্যা করে? যে ভোজনে বসে, সেই কি নয়? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে পরিচারকের ন্যায় রহিয়াছি। তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ; আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি, যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেজে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে। শিমোন, শিমোন, দেখ, গোমের ন্যায় চালিবার জন্য শয়তান তোমাদিগকে আপনার বলিয়া চাহিয়াছে; কিন্তু আমি তোমার নিমিত্ত বিনতি করিয়াছি, যেন তোমার বিশ্বাসের লোপ না হয়; আর তুমিও একবার ফিরিলে পর তোমার ভ্রাতৃগণকে সুস্থির করিও। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, আপনার সঙ্গে আমি কারাগারে যাইতে এবং মরিতেও প্রস্তুত আছি। তিনি কহিলেন, পিতর, আমি তোমাকে বলিতেছি, যে পর্য্যন্ত তুমি আমাকে চিন না বলিয়া তিন বার অস্বীকার না করিবে, সেই পর্য্যন্ত আজ কুকুড়া ডাকিবে না। আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি যখন থলী, ঝুলি ও জুতা ছাড়া তোমাদিগকে পাঠাইয়াছিলাম, তখন তোমাদের কি কিছুর অভাব হইয়াছিল? তাঁহারা কহিলেন, কিছুরই নয়। তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, কিন্তু এখন যাহার থলী আছে, সে তাহা গ্রহণ করুক, সেইরূপ ঝুলিও গ্রহণ করুক; এবং যাহার নাই, সে আপন চোগা বিক্রয় করিয়া খড়্গ ক্রয় করুক। কেননা আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এই যে বচন লিখিত আছে, “আর তিনি অধর্ম্মীদের সহিত গণিত হইলেন,” তাহা আমাতে সিদ্ধ হইতে হইবে; কারণ আমার সম্বন্ধীয় যাহা, তাহা সিদ্ধি পাইতেছে। তখন তাঁহারা কহিলেন, প্রভু, দেখুন, দুইখান খড়্গ আছে। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, এই যথেষ্ট। পরে তিনি বাহির হইয়া আপন রীতি অনুসারে জৈতুন পর্ব্বতে গেলেন, এবং শিষ্যগণও তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। সেই স্থানে উপস্থিত হইলে পর তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমরা প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়। পরে তিনি তাঁহাদের হইতে কমবেশ এক ঢেলার পথ অন্তরে গেলেন, এবং জানু পাতিয়া প্রার্থনা করিতে লাগিলেন, বলিলেন, পিতঃ, যদি তোমার অভিমত হয়, আমা হইতে এই পানপাত্র দূর কর; তথাপি আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক; তখন স্বর্গ হইতে এক দূত দেখা দিয়া তাঁহাকে সবল করিলেন। পরে তিনি মর্ম্মভেদী দুঃখে মগ্ন হইয়া আরও একাগ্র ভাবে প্রার্থনা করিলেন; আর তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল। পরে তিনি প্রার্থনা করিয়া উঠিলে পর শিষ্যদের নিকটে আসিয়া দেখিলেন, তাঁহারা দুঃখ হেতু ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, আর তাঁহাদিগকে বলিলেন, কেন ঘুমাইতেছ? উঠ, প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়। তিনি কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে দেখ, অনেক লোক, এবং যাহার নাম যিহূদা,—সেই বারো জনের মধ্যে এক জন—সে তাহাদের আগে আগে আসিতেছে; সে যীশুকে চুম্বন করিবার জন্য তাঁহার নিকটে আসিল। কিন্তু যীশু তাহাকে কহিলেন, যিহূদা, চুম্বন দ্বারা কি মনুষ্যপুত্রকে সমর্পণ করিতেছ? তখন কি কি ঘটিবে, তাহা দেখিয়া যাঁহারা তাঁহার কাছে ছিলেন, তাঁহারা কহিলেন, প্রভু, আমরা কি খড়্গ দ্বারা আঘাত করিব? আর তাঁহাদের মধ্যে এক ব্যক্তি মহাযাজকের দাসকে আঘাত করিয়া তাহার দক্ষিণ কর্ণ কাটিয়া ফেলিলেন। কিন্তু যীশু উত্তর করিলেন, এই পর্য্যন্ত ক্ষান্ত হও। পরে তিনি তাহার কর্ণ স্পর্শ করিয়া তাহাকে সুস্থ করিলেন। আর তাঁহার বিরুদ্ধে যে প্রধান যাজকগণ, ধর্ম্মধামের সেনাপতিগণ ও প্রাচীনবর্গ আসিয়াছিল, যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, লোকে যেমন দস্যুর বিরুদ্ধে যায়, তেমনি খড়্গ ও লাঠি লইয়া কি তোমরা আসিলে? আমি যখন প্রতিদিন ধর্ম্মধামে তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখন আমার বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার কর নাই; কিন্তু এই তোমাদের সময় এবং অন্ধকারের অধিকার। পরে তাহারা তাঁহাকে ধরিয়া লইয়া গেল, এবং মহাযাজকের বাটীতে আনিল; আর পিতর দূরে থাকিয়া পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। পরে লোকেরা প্রাঙ্গণের মধ্যে আগুন জ্বালিয়া একত্র বসিলে পিতর তাহাদের মধ্যে বসিলেন। তিনি সেই আলোর কাছে বসিলে এক দাসী তাঁহাকে দেখিয়া তাঁহার দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া বলিল, এ ব্যক্তিও উহার সঙ্গে ছিল। কিন্তু তিনি অস্বীকার করিয়া কহিলেন, না নারি! আমি তাহাকে চিনি না। একটু পরে আর এক জন তাঁহাকে দেখিয়া বলিল, তুমিও তাহাদের এক জন। পিতর কহিলেন, ওহে আমি নই। ঘন্টা খানেক পরে আর এক জন দৃঢ়রূপে বলিল, সত্য, এ ব্যক্তিও তাহার সঙ্গে ছিল, কেননা এ গালীলীয় লোক। তখন পিতর কহিলেন, ওহে, তুমি কি বলিতেছ, আমি বুঝিতে পারি না। তিনি কথা বলিতেছিলেন, আর অমনি কুকুড়া ডাকিয়া উঠিল। আর প্রভু মুখ ফিরাইয়া পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন; তাহাতে প্রভু এই যে বাক্য বলিয়াছিলেন, ‘অদ্য কুকুড়া ডাকিবার পূর্ব্বে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করিবে,’ তাহা পিতরের মনে পড়িল। আর তিনি বাহিরে গিয়া অত্যন্ত রোদন করিলেন। আর যে লোকেরা যীশুকে ধরিয়াছিল, তাহারা তাঁহাকে বিদ্রূপ ও প্রহার করিতে লাগিল। আর তাঁহার চক্ষু ঢাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ভাববাণী বল্‌ দেখি, কে তোকে মারিল? আর তাহারা নিন্দা করিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে আরও অনেক কথা কহিতে লাগিল। যখন দিন হইল, তখন লোকদের প্রাচীনবর্গের সমাজ, প্রধান যাজকেরা ও অধ্যাপকগণ একত্র হইল, এবং আপনাদের সভার মধ্যে তাঁহাকে আনাইল, আর বলিল, তুমি যদি সেই খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদিগকে বল। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, যদি তোমাদিগকে বলি, তোমরা বিশ্বাস করিবে না; আর যদি তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করি, কোন উত্তর দিবে না; কিন্তু এখন অবধি মনুষ্যপুত্র ঈশ্বরের পরাক্রমের দক্ষিণ পার্শ্বে উপবিষ্ট থাকিবেন। তখন সকলে বলিল, তবে তুমি কি ঈশ্বরের পুত্র? তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরাই বলিতেছ যে, আমি সেই। তখন তাহারা বলিল, আর সাক্ষ্যে আমাদের কি প্রয়োজন? আমরা আপনারাই ত ইহার মুখে শুনিলাম। পরে তাহারা দল শুদ্ধ সকলে উঠিয়া তাঁহাকে পীলাতের কাছে লইয়া গেল। আর তাহারা তাঁহার উপরে দোষারোপ করিয়া বলিতে লাগিল, আমরা দেখিতে পাইলাম যে, এ ব্যক্তি আমাদের জাতিকে বিগড়িয়া দেয়, কৈসরকে রাজস্ব দিতে বারণ করে, আর বলে যে, আমিই খ্রীষ্ট রাজা। তখন পীলাত তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি যিহূদীদের রাজা? তিনি তাঁহাকে উত্তর করিয়া কহিলেন, তুমিই বলিলে। তখন পীলাত প্রধান যাজকগণকে ও সমাগত লোকদিগকে কহিলেন, আমি এই ব্যক্তির কোন দোষই পাইতেছি না। কিন্তু তাহারা আরও জোর করিয়া বলিতে লাগিল, এ ব্যক্তি সমুদয় যিহূদিয়ায় এবং গালীল অবধি এই স্থান পর্য্যন্ত শিক্ষা দিয়া প্রজাদিগকে উত্তেজিত করে। ইহা শুনিয়া পীলাত জিজ্ঞাসা করিলেন, এ ব্যক্তি কি গালীলীয়? পরে যখন তিনি জানিতে পারিলেন, ইনি হেরোদের অধিকারের লোক, তখন তাঁহাকে হেরোদের নিকটে পাঠাইয়া দিলেন, কেননা সেই সময়ে তিনিও যিরূশালেমে ছিলেন। যীশুকে দেখিয়া হেরোদ অতিশয় আনন্দিত হইলেন, কেননা তিনি তাঁহার বিষয়ে শুনিয়াছিলেন, এই জন্য অনেক দিন হইতে তাঁহাকে দেখিতে বাঞ্ছা করিতেছিলেন, এবং তাঁহার কৃত কোন চিহ্ন দেখিবার আশা করিতে লাগিলেন। তিনি তাঁহাকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু যীশু তাঁহাকে কোন উত্তর দিলেন না। আর প্রধান যাজকগণ ও অধ্যাপকেরা দাঁড়াইয়া উগ্রভাবে তাঁহার উপর দোষারোপ করিতেছিল। আর হেরোদ ও তাঁহার সেনারা তাঁহাকে তুচ্ছ করিলেন, ও বিদ্রূপ করিলেন, এবং জমকাল পোষাক পরাইয়া তাঁহাকে পীলাতের নিকটে ফিরিয়া পাঠাইলেন। সেই দিন হেরোদ ও পীলাত পরস্পর বন্ধু হইয়া উঠিলেন, কেননা পূর্ব্বে তাঁহাদের মধ্যে শত্রুভাব ছিল। পরে পীলাত প্রধান যাজকগণ, অধ্যক্ষগণ ও প্রজাদিগকে একত্র ডাকিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা এ ব্যক্তিকে আমার নিকটে এই বলিয়া আনিয়াছ যে, এ লোককে বিপথে লইয়া যায়; আর দেখ, আমি তোমাদের সাক্ষাতে বিচার করিলেও, তোমরা ইহার উপরে যে সকল দোষ আরোপ করিতেছ, তাহার মধ্যে এই ব্যক্তির কোন দোষই পাইলাম না; আর হেরোদও পান নাই, কেননা তিনি ইহাকে আমাদের নিকটে ফিরিয়া পাঠাইয়াছেন; আর দেখ, এ ব্যক্তি প্রাণদণ্ডের যোগ্য কিছুই করে নাই। অতএব আমি ইহাকে শাস্তি দিয়া ছাড়িয়া দিব। (ঐ পর্ব্বসময়ে তাহাদের জন্য এক জনকে তাঁহার ছাড়িয়া দিতেই হইত।) কিন্তু তাহারা দলশুদ্ধ সকলে চীৎকার করিয়া বলিল, ইহাকে দূর কর, আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছাড়িয়া দেও। নগরের মধ্যে দাঙ্গা ও নরহত্যা হওয়া প্রযুক্ত সেই ব্যক্তি কারাবদ্ধ হইয়াছিল। পরে পীলাত যীশুকে মুক্ত করিবার বাসনায় আবার তাহাদের কাছে কথা বলিলেন। কিন্তু তাহারা চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, ক্রুশে দেও, উহাকে ক্রুশে দেও। পরে তিনি তৃতীয় বার তাহাদিগকে কহিলেন, কেন? এ কি অপরাধ করিয়াছে? আমি ইহার প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন দোষই পাই নাই, অতএব ইহাকে শাস্তি দিয়া ছাড়িয়া দিব। কিন্তু তাহারা উচ্চ রবে উগ্র ভাবে চাহিতে থাকিল, যেন তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়; আর তাহাদের রব প্রবল হইল। তখন পীলাত তাহাদের যাচ্ঞা অনুসারে করিতে আজ্ঞা দিলেন; দাঙ্গা ও নরহত্যা প্রযুক্ত কারাবদ্ধ যে ব্যক্তিকে তাহারা চাহিল, তিনি তাহাকে মুক্ত করিলেন, কিন্তু যীশুকে তাহাদের ইচ্ছার অধীনে সমর্পণ করিলেন। পরে তাহারা তাঁহাকে লইয়া যাইতেছে, ইতিমধ্যে শিমোন নামে এক জন কুরীণীয় লোক পল্লীগ্রাম হইতে আসিতেছিল, তাহারা তাহাকে ধরিয়া তাহার স্কন্ধে ক্রুশ রাখিল, যেন সে যীশুর পশ্চাৎ পশ্চাৎ তাহা বহন করে। আর অনেক লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল; এবং অনেকগুলি স্ত্রীলোক ছিল, তাহারা তাঁহার জন্য হাহাকার ও বিলাপ করিতেছিল। কিন্তু যীশু তাহাদের দিকে ফিরিয়া কহিলেন, ওগো যিরূশালেমের কন্যাগণ, আমার জন্য কাঁদিও না, বরং আপনাদের এবং আপন আপন সন্তান-সন্ততির জন্য কাঁদ। কেননা দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে লোকে বলিবে, ধন্য সেই স্ত্রীলোকেরা, যাহারা বন্ধ্যা, যাহাদের উদর কখনও প্রসব করে নাই, যাহাদের স্তন কখনও দুগ্ধ দেয় নাই। সেই সময়ে লোকেরা পর্ব্বতগণকে বলিতে আরম্ভ করিবে, আমাদের উপরে পড়; এবং উপপর্ব্বতগণকে বলিবে, আমাদিগকে ঢাকিয়া রাখ। কারণ লোকেরা সরস বৃক্ষের প্রতি যদি এমন করে, তবে শুষ্ক বৃক্ষে কি না ঘটিবে? আরও দুই জন লোক, দুই জন দুষ্কর্ম্মকারী, হত হইবার জন্য তাঁহার সঙ্গে নীত হইল। পরে মাথার খুলি নামক স্থানে গিয়া তাহারা তথায় তাঁহাকে এবং সেই দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে ক্রুশে দিল, এক জনকে তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে ও অন্য জনকে বাম পার্শ্বে রাখিল। তখন যীশু কহিলেন, পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না। পরে তাহারা তাঁহার বস্ত্রগুলি বিভাগ করিয়া গুলিবাঁট করিল। লোকসমূহ দাঁড়াইয়া দেখিতেছিল। অধ্যক্ষেরাও তাঁহাকে উপহাস করিয়া বলিতে লাগিল, ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করিত, যদি ও ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট, তাঁহার মনোনীত হয়, আপনাকে রক্ষা করুক; আর সেনাগণও তাঁহাকে বিদ্রূপ করিল, নিকটে গিয়া তাঁহার কাছে অম্লরস লইয়া বলিতে লাগিল, তুমি যদি যিহূদীদের রাজা হও, তবে আপনাকে রক্ষা কর। আর তাঁহার ঊর্দ্ধে এই অধিলিপি ছিল, “এ ব্যক্তি যিহূদীদের রাজা।” আর যে দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে ক্রুশে টাঙ্গান গিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে এক জন তাঁহাকে নিন্দা করিয়া বলিতে লাগিল, তুমি নাকি সেই খ্রীষ্ট? আপনাকে ও আমাদিগকে রক্ষা কর। কিন্তু অন্য জন উত্তর দিয়া তাহাকে অনুযোগ করিয়া কহিল, তুমি কি ঈশ্বরকেও ভয় কর না? তুমি ত একই দণ্ড পাইতেছ। আর আমরা ন্যায়সঙ্গত দণ্ড পাইতেছি; কারণ যাহা যাহা করিয়াছি, তাহারই সমুচিত ফল পাইতেছি; কিন্তু ইনি অপকার্য্য কিছুই করেন নাই। পরে সে কহিল, যীশু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন। তিনি তাহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে। তখন বেলা অনুমান ষষ্ঠ ঘটিকা, আর নবম ঘটিকা পর্য্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল। সূর্য্যের আলো রহিল না, আর মন্দিরের তিরস্করিণী মাঝামাঝি চিরিয়া গেল। আর যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া কহিলেন, পিতঃ তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি; আর এই বলিয়া তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন। যাহা ঘটিল, তাহা দেখিয়া শতপতি ঈশ্বরের গৌরব করিয়া কহিলেন, সত্য, এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক ছিলেন। আর যে সমস্ত লোক এই দৃশ্য দেখিবার জন্য সমাগত হইয়াছিল, তাহারা যাহা যাহা ঘটিল, তাহা দেখিয়া বক্ষে করাঘাত করিতে করিতে ফিরিয়া গেল। আর তাঁহার পরিচিত সকলে, এবং যে স্ত্রীলোকেরা তাঁহার সঙ্গে গালীল হইতে আসিয়াছিলেন, তাঁহারা দূরে দাঁড়াইয়া এই সমস্ত দেখিতেছিলেন। আর দেখ, যোষেফ নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, তিনি মন্ত্রী, এক জন সৎ ও ধার্ম্মিক লোক, এই ব্যক্তি উহাদের মন্ত্রণাতে ও ক্রিয়াতে সম্মত হন নাই; তিনি যিহূদীদের অরিমাথিয়া নগরের লোক; তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের অপেক্ষা করিতেছিলেন। এই ব্যক্তি পীলাতের নিকটে গিয়া যীশুর দেহ যাচ্ঞা করিলেন; পরে তাহা নামাইয়া সরু চাদরে জড়াইলেন, এবং শৈলে খোদিত এমন এক কবরমধ্যে তাঁহাকে রাখিলেন, যাহাতে কখনও কাহাকেও রাখা যায় নাই। সেই দিন আয়োজনের দিন, এবং বিশ্রামবারের আরম্ভ সন্নিকট হইতেছিল। আর যে স্ত্রীলোকেরা তাঁহার সহিত গালীল হইতে আসিয়াছিলেন, তাঁহারা পশ্চাৎ পশ্চাৎ গিয়া সেই কবর, এবং কি প্রকারে তাঁহার দেহ রাখা যায়, তাহা দেখিলেন; পরে ফিরিয়া গিয়া সুগন্ধি দ্রব্য ও তৈল প্রস্তুত করিলেন। বিশ্রামবারে তাঁহারা বিধিমতে বিশ্রাম করিলেন। কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন অতি প্রত্যূষে তাঁহারা কবরের নিকটে আসিলেন, যে সুগন্ধি দ্রব্য প্রস্তুত করিয়াছিলেন, তাহা লইয়া আসিলেন; আর দেখিলেন, কবর হইতে প্রস্তরখানা সরান গিয়াছে, কিন্তু ভিতরে গিয়া প্রভু যীশুর দেহ দেখিতে পাইলেন না। তাঁহারা এই বিষয় ভাবিতেছেন, এমন সময়ে, দেখ, উজ্জ্বল বস্ত্র পরিহিত দুই পুরুষ তাঁহাদের নিকটে দাঁড়াইলেন। তখন তাঁহারা ভীত হইয়া ভূমির দিকে মুখ নত করিলে সেই দুই ব্যক্তি তাঁহাদিগকে কহিলেন, মৃতদের মধ্যে জীবিতের অন্বেষণ কেন করিতেছ? তিনি এখানে নাই, কিন্তু উঠিয়াছেন। গালীলে থাকিতে থাকিতেই তিনি তোমাদিগকে যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ কর; তিনি ত বলিয়াছিলেন, মনুষ্যপুত্রকে পাপী মনুষ্যদের হস্তে সমর্পিত হইতে হইবে, ক্রুশারোপিত হইতে এবং তৃতীয় দিবসে উঠিতে হইবে। তখন তাঁহার সেই কথাগুলি তাঁহাদের স্মরণ হইল; আর তাঁহারা কবর হইতে ফিরিয়া গিয়া সেই এগারো জনকে ও অন্য সকলকে এই সমস্ত সংবাদ দিলেন। ইহাঁরা মগ্দলীনী মরিয়ম, যোহানা ও যাকোবের মাতা মরিয়ম; আর ইহাঁদের সঙ্গে অন্য স্ত্রীলোকেরাও প্রেরিতদিগকে এই সকল কথা বলিলেন। কিন্তু এই সকল কথা তাঁহাদের কাছে গল্পতুল্য বোধ হইল; তাঁহারা তাঁহাদের কথায় অবিশ্বাস করিলেন। তথাপি পিতর উঠিয়া কবরের নিকটে দৌড়িয়া গেলেন, এবং হেঁট হইয়া দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিলেন, কেবল কাপড় পড়িয়া রহিয়াছে; আর যাহা ঘটিয়াছে, তাহাতে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া স্বস্থানে চলিয়া গেলেন। আর দেখ, সেই দিন তাঁহাদের দুই জন যিরূশালেম হইতে চারি ক্রোশ দূরবর্ত্তী ইম্মায়ূ নামক গ্রামে যাইতেছিলেন, এবং তাঁহারা ঐ সকল ঘটনার বিষয়ে পরস্পর কথোপকথন করিতেছিলেন। তাঁহারা কথোপকথন ও পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করিতেছেন, এমন সময়ে যীশু আপনি নিকটে আসিয়া তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে গমন করিতে লাগিলেন; কিন্তু তাঁহাদের চক্ষু রুদ্ধ হইয়াছিল, তাই তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমরা চলিতে চলিতে পরস্পর যে সকল কথা বলাবলি করিতেছ, সে সকল কি? তাঁহারা বিষণ্ণ ভাবে দাঁড়াইয়া রহিলেন। পরে ক্লিয়পা নামে তাঁহাদের এক জন উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি কি একা যিরূশালেমে প্রবাস করিতেছেন, আর এই কয়েক দিনের মধ্যে তথায় যে সকল ঘটনা হইয়াছে, তাহা জানেন না? তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, কি কি প্রকার ঘটনা? তাঁহারা তাঁহাকে বলিলেন, নাসরতীয় যীশু বিষয়ক ঘটনা, যিনি ঈশ্বরের ও সকল লোকের সাক্ষাতে কার্য্যে ও বাক্যে পরাক্রমী ভাববাদী ছিলেন; আর কিরূপে প্রধান যাজকেরা ও আমাদের অধ্যক্ষেরা প্রাণদণ্ডাজ্ঞার জন্য তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন, ও ক্রুশে দিলেন। কিন্তু আমরা আশা করিতেছিলাম যে, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করিবেন। আর এ সব ছাড়া আজ তিন দিন চলিতেছে, এ সকল ঘটিয়াছে। আবার আমাদের কয়েকটী স্ত্রীলোক আমাদিগকে চমৎকৃত করিলেন; তাঁহারা প্রত্যূষে তাঁহার কবরের কাছে গিয়াছিলেন, আর তাঁহার দেহ দেখিতে না পাইয়া আসিয়া কহিলেন, স্বর্গ-দূতদেরও দর্শন পাইয়াছি, তাঁহারা বলেন, তিনি জীবিত আছেন। আর আমাদের সঙ্গীদের মধ্যে কেহ কেহ কবরের কাছে গিয়া, সেই স্ত্রীলোকেরা যেমন বলিয়াছিলেন, তেমনি দেখিতে পাইলেন, কিন্তু তাঁহাকে দেখিতে পান নাই। তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, হে অবোধেরা, এবং ভাববাদিগণ যে সমস্ত কথা বলিয়াছেন, সেই সকলে বিশ্বাস করণে শিথিল-চিত্তেরা, খ্রীষ্টের কি আবশ্যক ছিল না যে, এই সমস্ত দুঃখভোগ করেন ও আপন প্রতাপে প্রবেশ করেন? পরে তিনি মোশি হইতে ও সমুদয় ভাববাদী হইতে আরম্ভ করিয়া সমুদয় শাস্ত্রে তাঁহার নিজের বিষয়ে যে সকল কথা আছে, তাহা তাঁহাদিগকে বুঝাইয়া দিলেন। পরে তাঁহারা যেখানে যাইতেছিলেন, সেই গ্রামের নিকটে উপস্থিত হইলেন; আর তিনি অগ্রে যাইবার লক্ষণ দেখাইলেন। কিন্তু তাঁহারা সাধ্যসাধনা করিয়া কহিলেন, আমাদের সঙ্গে অবস্থিতি করুন, কারণ সন্ধ্যা হইয়া আসিল, বেলা প্রায় গিয়াছে। তাহাতে তিনি তাঁহাদের সঙ্গে অবস্থিতি করিবার জন্য গৃহে প্রবেশ করিলেন। পরে যখন তিনি তাঁহাদের সঙ্গে ভোজনে বসিলেন, তখন রুটী লইয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং ভাঙ্গিয়া তাঁহাদিগকে দিতে লাগিলেন। অমনি তাঁহাদের চক্ষু খুলিয়া গেল, তাঁহারা তাঁহাকে চিনিলেন; আর তিনি তাঁহাদের হইতে অন্তর্হিত হইলেন। তখন তাঁহারা পরস্পর কহিলেন, পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সহিত কথা বলিতেছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ খুলিয়া দিতেছিলেন, তখন আমাদের অন্তরে আমাদের চিত্ত কি উত্তপ্ত হইয়া উঠিতেছিল না? আর তাঁহারা সেই দণ্ডেই উঠিয়া যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন; এবং সেই এগারো জনকে ও তাঁহাদের সঙ্গীদিগকে সমবেত দেখিতে পাইলেন; তাঁহারা বলিলেন, প্রভু নিশ্চয়ই উঠিয়াছেন, এবং শিমোনকে দেখা দিয়াছেন। পরে সেই দুই জন পথের ঘটনার বিষয়, এবং রুটী ভাঙ্গিবার সময়ে তাঁহারা কি প্রকারে তাঁহাকে চিনিতে পারিয়াছিলেন, এই সকল বৃত্তান্ত বলিলেন। তাঁহারা পরস্পর এই সকল কথোপকথন করিতেছেন, ইতিমধ্যে তিনি আপনি তাঁহাদের মধ্যস্থানে দাঁড়াইলেন, ও তাঁহাদিগকে বলিলেন, তোমাদের শান্তি হউক। ইহাতে তাঁহারা মহাভীত ও ত্রাসযুক্ত হইয়া মনে করিলেন, আত্মা দেখিতেছি। তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, কেন উদ্বিগ্ন হইতেছ? তোমাদের অন্তরে বিতর্কের উদয়ই বা কেন হইতেছে? আমার হাত ও আমার পা দেখ, এ আমি স্বয়ং; আমাকে স্পর্শ কর, আর দেখ; কারণ আমার যেমন দেখিতেছ, আত্মার এরূপ অস্থি-মাংস নাই। ইহা বলিয়া তিনি তাঁহাদিগকে হাত ও পা দেখাইলেন। তখনও তাঁহারা আনন্দ প্রযুক্ত অবিশ্বাস করিতেছিলেন এবং আশ্চর্য্য জ্ঞান করিতেছিলেন, তাই তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের কাছে এখানে কি কিছু খাদ্য আছে? তখন তাঁহারা তাঁহাকে একখানি ভাজা মাছ দিলেন। তিনি তাহা লইয়া তাঁহাদের সাক্ষাতে ভোজন করিলেন। পরে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের সঙ্গে থাকিতে থাকিতে আমি তোমাদিগকে যাহা বলিয়াছিলাম, আমার সেই বাক্য এই, মোশির ব্যবস্থায় ও ভাববাদিগণের গ্রন্থে এবং গীতসংহিতায় আমার বিষয়ে যাহা যাহা লিখিত আছে, সে সকল অবশ্য পূর্ণ হইবে। তখন তিনি তাঁহাদের বুদ্ধিদ্বার খুলিয়া দিলেন, যেন তাঁহারা শাস্ত্র বুঝিতে পারেন; আর তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, এইরূপ লিখিত আছে যে, খ্রীষ্ট দুঃখভোগ করিবেন, এবং তৃতীয় দিনে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিবেন; আর তাঁহার নামে পাপমোচনার্থক মনপরিবর্ত্তনের কথা সর্ব্বজাতির কাছে প্রচারিত হইবে—যিরূশালেম হইতে আরম্ভ করা হইবে। তোমরাই এ সকলের সাক্ষী। আর দেখ, আমার পিতা যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা আমি তোমাদের নিকটে প্রেরণ করিতেছি; কিন্তু যে পর্য্যন্ত ঊর্দ্ধ হইতে শক্তিপরিহিত না হও, সেই পর্য্যন্ত তোমরা এই নগরে অবস্থিতি কর। পরে তিনি তাঁহাদিগকে বৈথনিয়ার সম্মুখ পর্য্যন্ত লইয়া গেলেন; এবং হাত তুলিয়া তাঁহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। পরে এইরূপ হইল, তিনি আশীর্ব্বাদ করিতে করিতে তাঁহাদের হইতে পৃথক্‌ হইলেন, এবং ঊর্দ্ধে, স্বর্গে নীত হইতে লাগিলেন। আর তাঁহারা তাঁহাকে প্রণাম করিয়া মহানন্দে যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন; এবং নিরন্তর ধর্ম্মধামে থাকিয়া ঈশ্বেরর ধন্যবাদ করিতে থাকিলেন। আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন। তিনি আদিতে ঈশ্বরের কাছে ছিলেন। সকলই তাঁহার দ্বারা হইয়াছিল, যাহা হইয়াছে, তাহার কিছুই তাঁহা ব্যতিরেকে হয় নাই। তাঁহার মধ্যে জীবন ছিল, এবং সেই জীবন মনুষ্যগণের জ্যোতি ছিল। আর সেই জ্যোতি অন্ধকারের মধ্যে দীপ্তি দিতেছে, আর অন্ধকার তাহা গ্রহণ করিল না। এক জন মনুষ্য উপস্থিত হইলেন, তিনি ঈশ্বর হইতে প্রেরিত হইয়াছিলেন, তাঁহার নাম যোহন। তিনি সাক্ষ্যের জন্য আসিয়াছিলেন, যেন সেই জ্যোতির বিষয়ে সাক্ষ্য দেন, যেন সকলে তাঁহার দ্বারা বিশ্বাস করে। তিনি সেই জ্যোতি ছিলেন না, কিন্তু আসিলেন, যেন সেই জ্যোতির বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। প্রকৃত জ্যোতি ছিলেন, যিনি সকল মনুষ্যকে দীপ্তি দেন, তিনি জগতে আসিতেছিলেন। তিনি জগতে ছিলেন, এবং জগৎ তাঁহার দ্বারা হইয়াছিল, আর জগৎ তাঁহাকে চিনিল না। তিনি নিজ অধিকারে আসিলেন, আর যাহারা তাঁহার নিজের, তাহারা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না। কিন্তু যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন। তাহারা রক্ত হইতে নয়, মাংসের ইচ্ছা হইতে নয়, মানুষের ইচ্ছা হইতেও নয়, কিন্তু ঈশ্বর হইতে জাত। আর সেই বাক্য মাংসে মূর্ত্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ। যোহন তাঁহার বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন, আর উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, ইনি সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে আমি বলিয়াছি, যিনি আমার পশ্চাৎ আসিতেছেন, তিনি আমার অগ্রগণ্য হইলেন, কেননা তিনি আমার পূর্ব্বে ছিলেন। কারণ তাঁহার পূর্ণতা হইতে আমরা সকলে পাইয়াছি, আর অনুগ্রহের উপরে অনুগ্রহ পাইয়াছি; কারণ ব্যবস্থা মোশি দ্বারা দত্ত হইয়াছিল, অনুগ্রহ ও সত্য যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা উপস্থিত হইয়াছে। ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই; একজাত পুত্র, যিনি পিতার ক্রোড়ে থাকেন, তিনিই [তাঁহাকে] প্রকাশ করিয়াছেন। আর যোহনের সাক্ষ্য এই, — যখন যিহূদিগণ কয়েক জন যাজক ও লেবীয়কে দিয়া যিরূশালেম হইতে তাঁহার কাছে এই কথা জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইল, ‘আপনি কে?’ তখন তিনি স্বীকার করিলেন, অস্বীকার করিলেন না; তিনি স্বীকার করিলেন যে, আমি সেই খ্রীষ্ট নই। তাহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তবে কি? আপনি কি এলিয়? তিনি বলিলেন, আমি নই। আপনি কি সেই ভাববাদী? তিনি উত্তর করিলেন, না। তখন তাহারা তাঁহাকে কহিল, আপনি কে? যাঁহারা আমাদিগকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাদিগকে যেন উত্তর দিতে পারি। আপনার বিষয়ে আপনি কি বলেন? তিনি কহিলেন, আমি “প্রান্তরে এক জনের রব, যে ঘোষণা করিতেছে, তোমরা প্রভুর পথ সরল কর,” যেমন যিশাইয় ভাববাদী বলিয়াছিলেন। তাহারা ফরীশীগণের নিকট হইতে প্রেরিত হইয়াছিল। আর তাহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি যদি সেই খ্রীষ্ট নহেন, এলিয়ও নহেন, সেই ভাববাদীও নহেন, তবে বাপ্তাইজ করিতেছেন কেন? যোহন উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আমি জলে বাপ্তাইজ করিতেছি; তোমাদের মধ্যে এক জন দাঁড়াইয়া আছেন, যাঁহাকে তোমরা জান না, যিনি আমার পশ্চাৎ আসিতেছেন; আমি তাঁহার পাদুকার বন্ধন খুলিবারও যোগ্য নহি। যর্দ্দনের পরপারে, বৈথনিয়াতে, যেখানে যোহন বাপ্তাইজ করিতেছিলেন, সেইখানে এই সকল ঘটিল। পরদিন তিনি যীশুকে আপনার নিকটে আসিতে দেখিলেন, আর কহিলেন, ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান। উনি সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে আমি বলিয়াছিলাম, আমার পশ্চাৎ এমন এক ব্যক্তি আসিতেছেন, যিনি আমার অগ্রগণ্য হইলেন, কেননা তিনি আমার পূর্ব্বে ছিলেন। আর আমি তাঁহাকে চিনিতাম না, কিন্তু তিনি যেন ইস্রায়েলের নিকট প্রকাশিত হন, এই জন্য আমি আসিয়া জলে বাপ্তাইজ করিতেছি। আর যোহন সাক্ষ্য দিলেন, কহিলেন, আমি আত্মাকে কপোতের ন্যায় স্বর্গ হইতে নামিতে দেখিয়াছি; তিনি তাঁহার উপরে অবস্থিতি করিলেন। আর আমি তাঁহাকে চিনিতাম না, কিন্তু যিনি আমাকে জলে বাপ্তাইজ করিতে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমাকে বলিলেন, যাঁহার উপরে আত্মাকে নামিয়া অবস্থিতি করিতে দেখিবে, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজ করেন। আর আমি দেখিয়াছি, ও সাক্ষ্য দিয়াছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্র। পরদিন পুনরায় যোহন ও তাঁহার দুই জন শিষ্য দাঁড়াইয়া ছিলেন; আর যীশু বেড়াইতেছিলেন, এমন সময়ে তিনি তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক। সেই দুই শিষ্য তাঁহার এই কথা শুনিয়া যীশুর পশ্চাৎ গমন করিলেন। তাহাতে যীশু ফিরিয়া তাঁহাদিগকে পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতে দেখিয়া বলিলেন, কিসের অন্বেষণ করিতেছ? তাঁহারা কহিলেন, রব্বি—অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ গুরু—আপনি কোথায় থাকেন? তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আইস, দেখিবে। অতএব তাঁহারা গিয়া, তিনি যেখানে থাকেন, দেখিলেন; এবং সেই দিন তাঁহার কাছে থাকিলেন; তখন বেলা অনুমান দশম ঘটিকা। যোহনের কথা শুনিয়া যে দুই জন যীশুর পশ্চাৎ গমন করিয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে এক জন শিমোন পিতরের ভ্রাতা আন্দ্রিয়। তিনি প্রথমে আপন ভ্রাতা শিমোনের দেখা পান, আর তাঁহাকে বলেন, আমরা মশীহের দেখা পাইয়াছি—অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ খ্রীষ্ট [অভিষিক্ত]। তিনি তাঁহাকে যীশুর নিকটে আনিলেন। যীশু তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, তুমি যোহনের পুত্র শিমোন, তোমাকে কৈফা বলা যাইবে, —অনুবাদ করিলে ইহার অর্থ পিতর [পাথর]। পরদিবস তিনি গালীলে যাইতে ইচ্ছা করিলেন, ও ফিলিপের দেখা পাইলেন। আর যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস। ফিলিপ বৈৎসৈদার লোক; আন্দ্রিয় ও পিতর সেই নগরের লোক। ফিলিপ নথনেলের দেখা পাইলেন, আর তাঁহাকে কহিলেন, মোশি ব্যবস্থায় ও ভাববাদিগণ যাঁহার কথা লিখিয়াছেন, আমরা তাঁহার দেখা পাইয়াছি; তিনি নাসরতীয় যীশু, যোষেফের পুত্র। নথনেল তাঁহাকে কহিলেন, নাসরৎ হইতে কি উত্তম কিছু উৎপন্ন হইতে পারে? ফিলিপ তাঁহাকে কহিলেন, আইস, দেখ। যীশু নথনেলকে আপনার নিকটে আসিতে দেখিয়া তাঁহার বিষয়ে কহিলেন, ঐ দেখ, এক জন প্রকৃত ইস্রায়েলীয়, যাহার অন্তরে ছল নাই। নথনেল তাঁহাকে কহিলেন, আপনি কিসে আমাকে চিনিলেন? যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, ফিলিপ তোমাকে ডাকিবার পূর্ব্বে যখন তুমি সেই ডুমুরগাছের তলে ছিলে, তখন তোমাকে দেখিয়াছিলাম। নথনেল তাঁহাকে উত্তর করিলেন, রব্বি, আপনিই ঈশ্বরের পুত্র, আপনিই ইস্রায়েলের রাজা। যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আমি যে তোমাকে বলিলাম, সেই ডুমুরগাছের তলে তোমাকে দেখিয়াছিলাম, সেই জন্য কি বিশ্বাস করিলে? এ সকল হইতেও মহৎ মহৎ বিষয় দেখিবে। আর তিনি তাঁহাকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা দেখিবে, স্বর্গ খুলিয়া গিয়াছে, এবং ঈশ্বরের দূতগণ মনুষ্যপুত্রের উপর দিয়া উঠিতেছেন ও নামিতেছেন। আর তৃতীয় দিবসে গালীলের কান্না নগরে এক বিবাহ হইল, এবং যীশুর মাতা সেখানে ছিলেন; আর সেই বিবাহে যীশুর ও তাঁহার শিষ্যগণেরও নিমন্ত্রণ হইয়াছিল। পরে দ্রাক্ষারসের অকুলান হইলে যীশুর মাতা তাঁহাকে কহিলেন, উহাদের দ্রাক্ষারস নাই। যীশু তাঁহাকে বলিলেন, হে নারি, আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কি? আমার সময় এখনও উপস্থিত হয় নাই। তাঁহার মাতা পরিচারকদিগকে কহিলেন, ইনি তোমাদিগকে যাহা কিছু বলেন, তাহাই কর। সেখানে যিহূদীদের শুচীকরণ রীতি অনুসারে পাথরের ছয়টা জালা বসান ছিল, তাহার এক একটাতে দুই তিন মণ করিয়া জল ধরিত। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, ঐ সকল জালায় জল পূর। তাহারা সেগুলি কাণায় কাণায় পূর্ণ করিল। পরে তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, এখন উহা হইতে কিছু তুলিয়া ভোজাধ্যক্ষের নিকটে লইয়া যাও। তাহারা লইয়া গেল। ভোজাধ্যক্ষ যখন সেই জল, যাহা দ্রাক্ষারস হইয়া গিয়াছিল, আস্বাদন করিলেন, আর তাহা কোথা হইতে আসিল, তাহা জানিতেন না—কিন্তু যে পরিচারকেরা জল তুলিয়াছিল, তাহারা জানিত—তখন ভোজাধ্যক্ষ বরকে ডাকিয়া কহিলেন, সকল লোকেই প্রথমে উত্তম দ্রাক্ষারস পরিবেষণ করে, এবং যথেষ্ট পান করা হইলে পর তাহা অপেক্ষা কিছু মন্দ পরিবেষণ করে; তুমি উত্তম দ্রাক্ষারস এখন পর্য্যন্ত রাখিয়াছ। এইরূপে যীশু গালীলের কান্নাতে এই প্রথম চিহ্নকার্য্য সাধন করিলেন, নিজ মহিমা প্রকাশ করিলেন; আর তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাতে বিশ্বাস করিলেন। পরে তিনি, তাঁহার মাতা ও ভ্রাতৃগণ এবং তাঁহার শিষ্যগণ কফরনাহূমে নামিয়া গেলেন, আর সেখানে বেশী দিন থাকিলেন না। তখন যিহূদীদের নিস্তারপর্ব্ব সন্নিকট ছিল, আর যীশু যিরূশালেমে গেলেন। পরে তিনি ধর্ম্মধামের মধ্যে দেখিলেন, লোকে গো, মেষ ও কপোত বিক্রয় করিতেছে, এবং পোদ্দারেরা বসিয়া আছে; তখন তৃণ দ্বারা এক গাছা কশা প্রস্তুত করিয়া গো, মেষ সমস্তই ধর্ম্মধাম হইতে বাহির করিয়া দিলেন, এবং পোদ্দারদের মুদ্রা ছড়াইয়া ও মেজ উল্টাইয়া ফেলিলেন; আর যাহারা কপোত বিক্রয় করিতেছিল, তাহাদিগকে কহিলেন, এ স্থান হইতে এ সকল লইয়া যাও; আমার পিতার গৃহকে বাণিজ্যের গৃহ করিও না। তাঁহার শিষ্যগণের মনে পড়িল যে, লেখা আছে, “তোমার গৃহনিমিত্তক উদ্যোগ আমাকে গ্রাস করিবে।” তখন যিহূদীরা উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, তুমি আমাদিগকে কি চিহ্ন দেখাইতেছ যে এই সকল করিতেছ? যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা এই মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেল, আমি তিন দিনের মধ্যে ইহা উঠাইব। তখন যিহূদীরা কহিল, এই মন্দির নির্ম্মাণ করিতে ছেচল্লিশ বৎসর লাগিয়াছে; তুমি কি তিন দিনের মধ্যে ইহা উঠাইবে? কিন্তু তিনি আপন দেহরূপ মন্দিরের বিষয় বলিতেছিলেন। অতএব যখন তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিলেন, তখন তাঁহার শিষ্যদিগের মনে পড়িল যে, তিনি এই কথা বলিয়াছিলেন; আর তাঁহারা শাস্ত্রে এবং যীশুর কথিত বাক্যে বিশ্বাস করিলেন। তিনি নিস্তারপর্ব্বের সময়ে যখন যিরূশালেমে ছিলেন, তখন যে সকল চিহ্ন-কার্য্য সাধন করিলেন, তাহা দেখিয়া অনেকে তাঁহার নামে বিশ্বাস করিল। কিন্তু যীশু আপনি তাহাদের উপরে আপনার সম্বন্ধে বিশ্বাস করিলেন না, কারণ তিনি সকলকে জানিতেন, এবং কেহ যে মনুষ্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়, ইহাতে তাঁহার প্রয়োজন ছিল না; কেননা মনুষ্যের অন্তরে কি আছে, তাহা তিনি আপনি জানিতেন। ফরীশীদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিলেন, তাঁহার নাম নীকদীম; তিনি যিহূদীদের এক জন অধ্যক্ষ। তিনি রাত্রিকালে যীশুর নিকটে আসিলেন, এবং তাঁহাকে কহিলেন, রব্বি, আমরা জানি, আপনি ঈশ্বরের নিকট হইতে আগত গুরু; কেননা আপনি এই যে সকল চিহ্ন-কার্য্য সাধন করিতেছেন, ঈশ্বর সহবর্ত্তী না থাকিলে এ সকল কেহ করিতে পারে না। যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, নূতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না। নীকদীম তাঁহাকে কহিলেন, মনুষ্য বৃদ্ধ হইলে কেমন করিয়া তাহার জন্ম হইতে পারে? সে কি দ্বিতীয় বার মাতার গর্ভে প্রবেশ করিয়া জন্মিতে পারে? যীশু উত্তর করিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, যদি কেহ জল এবং আত্মা হইতে না জন্মে, তবে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে না। মাংস হইতে যাহা জাত, তাহা মাংসই; আর আত্মা হইতে যাহা জাত, তাহা আত্মাই। আমি যে তোমাকে বলিলাম, তোমাদের নূতন জন্ম হওয়া আবশ্যক, ইহাতে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না। বায়ু যে দিকে ইচ্ছা করে, সেই দিকে বহে, এবং তুমি তাহার শব্দ শুনিতে পাও; কিন্তু কোথা হইতে আইসে, আর কোথায় চলিয়া যায়, তাহা জান না; আত্মা হইতে জাত প্রত্যেক জন সেইরূপ। নীকদীম উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, এ সকল কি প্রকারে হইতে পারে? যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, তুমি ইস্রায়েলের গুরু, আর এ সকল বুঝিতেছ না? সত্য, সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, আমরা যাহা জানি তাহা বলি, এবং যাহা দেখিয়াছি তাহার সাক্ষ্য দিই; আর তোমরা আমাদের সাক্ষ্য গ্রহণ কর না। আমি পার্থিব বিষয়ের কথা কহিলে তোমরা যদি বিশ্বাস না কর, তবে স্বর্গীয় বিষয়ের কথা কহিলে কেমন করিয়া বিশ্বাস করিবে? আর স্বর্গে কেহ উঠে নাই; কেবল যিনি স্বর্গ হইতে নামিয়াছেন, সেই মনুষ্যপুত্র, যিনি স্বর্গে থাকেন । আর মোশি যেমন প্রান্তরে সেই সর্পকে উচ্চে উঠাইয়াছিলেন, সেইরূপে মনুষ্যপুত্রকেও উচ্চীকৃত হইতে হইবে, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পায়। কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। কেননা ঈশ্বর জগতের বিচার করিতে পুত্রকে জগতে প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু জগৎ যেন তাঁহার দ্বারা পরিত্রাণ পায়। যে তাঁহাতে বিশ্বাস করে, তাহার বিচার করা যায় না; যে বিশ্বাস না করে, তাহার বিচার হইয়া গিয়াছে, যেহেতুক সে ঈশ্বরের একজাত পুত্রের নামে বিশ্বাস করে নাই। আর সেই বিচার এই যে, জগতে জ্যোতি আসিয়াছে, এবং মনুষ্যেরা জ্যোতি হইতে অন্ধকার অধিক ভাল বাসিল, কেননা তাহাদের কর্ম্ম সকল মন্দ ছিল। কারণ যে কেহ কদাচরণ করে, সে জ্যোতি ঘৃণা করে, এবং জ্যোতির নিকটে আইসে না, পাছে তাহার কর্ম্ম সকলের দোষ ব্যক্ত হয়। কিন্তু যে সত্য সাধন করে, সে জ্যোতির নিকটে আইসে, যেন তাহার কর্ম্ম সকল ঈশ্বরে সাধিত বলিয়া সপ্রকাশ হয়। তৎপরে যীশু ও তাঁহার শিষ্যগণ যিহূদিয়া দেশে আসিলেন, আর তিনি সেখানে তাঁহাদের সহিত থাকিলেন, এবং বাপ্তাইজ করিতে লাগিলেন। আর যোহনও শালীমের নিকটবর্ত্তী ঐনোনে বাপ্তাইজ করিতেছিলেন, কারণ সেই স্থানে অনেক জল ছিল; আর লোকেরা আসিয়া বাপ্তাইজিত হইত, কারণ তখনও যোহন কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন নাই। তখন এক জন যিহূদীর সহিত শুচীকরণ বিষয়ে যোহনের শিষ্যদের তর্ক হইল। পরে তাহারা যোহনের নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, রব্বি, যিনি যর্দ্দনের ওপারে আপনার সহিত ছিলেন, যাঁহার বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিয়াছেন, দেখুন, তিনি বাপ্তাইজ করিতেছেন, এবং সকলে তাঁহার নিকটে যাইতেছে। যোহন উত্তর করিয়া কহিলেন, স্বর্গ হইতে মনুষ্যকে যাহা দত্ত হইয়াছে, তাহা ছাড়া সে আর কিছুই গ্রহণ করিতে পারে না। তোমরা আপনারাই আমার সাক্ষী যে, আমি বলিয়াছি, আমি সেই খ্রীষ্ট নহি, কিন্তু তাঁহার অগ্রে প্রেরিত হইয়াছি। যে ব্যক্তি কন্যাকে পাইয়াছে, সেই বর; কিন্তু বরের মিত্র যে দাঁড়াইয়া তাঁহার কথা শুনে, সে বরের রবে অতিশয় আনন্দিত হয়; অতএব আমার এই আনন্দ পূর্ণ হইল। উহাকে বৃদ্ধি পাইতে হইবে, কিন্তু আমাকে হ্রাস পাইতে হইবে। যিনি উপর হইতে আইসেন, তিনি সর্ব্বপ্রধান; যে পৃথিবী হইতে, সে পার্থিব, এবং পৃথিবীরই কথা কহে; যিনি স্বর্গ হইতে আইসেন, তিনি সর্ব্বপ্রধান। তিনি যাহা দেখিয়াছেন ও শুনিয়াছেন, তাহারই সাক্ষ্য দিতেছেন, আর তাঁহার সাক্ষ্য কেহ গ্রহণ করে না। যে তাঁহার সাক্ষ্য গ্রহণ করিয়াছে, সে ইহাতে মুদ্রাঙ্ক দিয়াছে যে, ঈশ্বর সত্য। কারণ ঈশ্বর যাঁহাকে প্রেরণ করিয়াছেন তিনি ঈশ্বরের বাক্য বলেন; কারণ ঈশ্বর আত্মাকে পরিমাণ-পূর্ব্বক দেন না। পিতা পুত্রকে প্রেম করেন, এবং সমস্তই তাঁহার হস্তে দিয়াছেন। যে কেহ পুত্রে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে। প্রভু যখন জানিলেন যে, ফরীশীরা শুনিয়াছে, যীশু যোহন হইতে অধিক শিষ্য করেন এবং বাপ্তাইজ করেন —কিন্তু যীশু নিজে বাপ্তাইজ করিতেন না, তাঁহার শিষ্যগণই করিতেন —তখন তিনি যিহূদিয়া ত্যাগ করিলেন, এবং পুনর্ব্বার গালীলে চলিয়া গেলেন। আর শমরিয়ার মধ্য দিয়া তাঁহাকে যাইতে হইল। তাহাতে তিনি শুখর নামক শমরিয়ার এক নগরের নিকটে গেলেন; যাকোব আপন পুত্র যোষেফকে যে ভূমি দান করিয়াছিলেন, সেই নগর তাহার নিকটবর্ত্তী। আর সেই স্থানে যাকোবের কূপ ছিল। তখন যীশু পথশ্রান্ত হওয়াতে অমনি সেই কূপের পার্শ্বে বসিলেন। বেলা তখন অনুমান ষষ্ঠ ঘটিকা। শমরিয়ার একটী স্ত্রীলোক জল তুলিতে আসিল। যীশু তাহাকে বলিলেন, আমাকে পান করিবার জল দেও। কেননা তাঁহার শিষ্যেরা খাদ্য ক্রয় করিতে নগরে গিয়াছিলেন। তাহাতে শমরীয় স্ত্রীলোকটী বলিল, আপনি যিহূদী হইয়া কেমন করিয়া আমার কাছে পান করিবার জল চাহিতেছেন? আমি ত শমরীয় স্ত্রীলোক। —কেননা শমরীয়দের সহিত যিহূদীদের ব্যবহার নাই। —যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, তুমি যদি জানিতে, ঈশ্বরের দান কি, আর কে তোমাকে বলিতেছেন, ‘আমাকে পান করিবার জল দেও’, তবে তাঁহারই নিকটে তুমি যাচ্ঞা করিতে এবং তিনি তোমাকে জীবন্ত জল দিতেন। স্ত্রীলোকটী তাঁহাকে বলিল, মহাশয়, জল তুলিবার জন্য আপনার কাছে কিছুই নাই, কূপটীও গভীর; তবে সেই জীবন্ত জল কোথা হইতে পাইলেন? আমাদের পিতৃপুরুষ যাকোব হইতে কি আপনি মহান্‌? তিনিই আমাদিগকে এই কূপ দিয়াছেন, আর ইহার জল তিনি নিজে ও তাঁহার পুত্রগণ পান করিতেন, তাঁহার পশুপালও পান করিত। যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, যে কেহ এই জল পান করে, তাহার আবার পিপাসা হইবে; কিন্তু আমি যে জল দিব, তাহা যে কেহ পান করে, তাহার পিপাসা আর কখনও হইবে না; বরং আমি তাহাকে যে জল দিব, তাহা তাহার অন্তরে এমন জলের উনুই হইবে, যাহা অনন্ত জীবন পর্য্যন্ত উথলিয়া উঠিবে। স্ত্রীলোকটী তাঁহাকে বলিল, মহাশয়, সেই জল আমাকে দিউন, যেন আমার পিপাসা না পায়, এবং জল তুলিবার জন্য এতটা পথ হাঁটিয়া আসিতে না হয়। যীশু তাহাকে বলিলেন, যাও, তোমার স্বামীকে এখানে ডাকিয়া লইয়া আইস। স্ত্রীলোকটী উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, আমার স্বামী নাই। যীশু তাহাকে বলিলেন, তুমি ভালই বলিয়াছ যে, আমার স্বামী নাই; কেননা তোমার পাঁচটী স্বামী হইয়া গিয়াছে, আর এখন তোমার যে আছে, সে তোমার স্বামী নয়; এ কথা সত্য বলিলে। স্ত্রীলোকটী তাঁহাকে বলিল, মহাশয়, আমি দেখিতেছি যে, আপনি ভাববাদী। আমাদের পিতৃপুরুষেরা এই পর্ব্বতে ভজনা করিতেন, আর আপনারা বলিয়া থাকেন, যে স্থানে ভজনা করা উচিত, সে স্থানটী যিরূশালেমেই আছে। যীশু তাহাকে বলেন, হে নারি, আমার কথায় বিশ্বাস কর; এমন সময় আসিতেছে, যখন তোমরা না এই পর্ব্বতে, না যিরূশালেমে পিতার ভজনা করিবে। তোমরা যাহা জান না, তাহার ভজনা করিতেছ; আমরা যাহা জানি, তাহার ভজনা করিতেছি, কারণ যিহূদীদের মধ্য হইতেই পরিত্রাণ। কিন্তু এমন সময় আসিতেছে, বরং এখনই উপস্থিত, যখন প্রকৃত ভজনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা করিবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন। ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাঁহার ভজনা করে, তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে। স্ত্রীলোকটী তাঁহাকে বলিল, আমি জানি, মশীহ আসিতেছেন, যাঁহাকে খ্রীষ্ট বলে, —তিনি যখন আসিবেন, তখন আমাদিগকে সকলই জ্ঞাত করিবেন। যীশু তাহাকে বলিলেন, তোমার সহিত কথা কহিতেছি যে আমি, আমিই তিনি। এই সময়ে তাঁহার শিষ্যগণ আসিলেন, এবং আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন যে, তিনি স্ত্রীলোকের সহিত কথা কহিতেছেন, তথাপি কেহ বলিলেন না, আপনি কি চাহেন? কিম্বা, কি জন্য উহার সহিত কথা কহিতেছেন? তখন সে স্ত্রীলোকটী আপন কলশী ফেলিয়া রাখিয়া নগরে গেল, আর লোকদিগকে কহিল, আইস, একটী মানুষকে দেখ, আমি যাহা কিছু করিয়াছি, তিনি সকলই আমাকে বলিয়া দিলেন; তিনিই কি সেই খ্রীষ্ট নহেন? তাহারা নগর হইতে বাহির হইয়া তাঁহার নিকটে আসিতে লাগিল। ইতিমধ্যে শিষ্যেরা তাঁহাকে বিনতি করিয়া কহিলেন, রব্বি, আহার করুন। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, আহারের জন্য আমার এমন খাদ্য আছে, যাহা তোমরা জান না। অতএব শিষ্যেরা পরস্পর বলিতে লাগিলেন, কেহ কি ইহাঁকে খাদ্য আনিয়া দিয়াছে? যীশু তাঁহাদিগকে বলিলেন, আমার খাদ্য এই, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য্য সাধন করি। তোমরা কি বল না, আর চারি মাস পরে শস্য কাটিবার সময় হইবে? দেখ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, চক্ষু তুলিয়া ক্ষেত্রের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, শস্য এখনই কাটিবার মত শ্বেতবর্ণ হইয়াছে। যে কাটে সে বেতন পায়, এবং অনন্ত জীবনের নিমিত্ত শস্য সংগ্রহ করে; যেন, যে বুনে ও যে কাটে, উভয়ে একত্র আনন্দ করে। কেননা এ স্থলে এই কথা সত্য, এক জন বুনে, আর এক জন কাটে। আমি তোমাদিগকে এমন শস্য কাটিতে প্রেরণ করিলাম, যাহার জন্য তোমার পরিশ্রম কর নাই; অন্যেরা পরিশ্রম করিয়াছে, এবং তোমরা তাহাদের শ্রম-ক্ষেত্রে প্রবেশ করিয়াছ। সেই নগরের শমরীয়েরা অনেকে সেই স্ত্রীলোকটী যে সাক্ষ্য দিয়াছিল, আমি যাহা কিছু করিয়াছি, তিনি আমাকে সকলই বলিয়া দিলেন, তাহার এই কথা প্রযুক্ত তাঁহাতে বিশ্বাস করিল। অতএব সেই শমরীয়েরা যখন তাঁহার নিকটে আসিল, তখন তাঁহাকে বিনতি করিল, যেন তিনি তাহাদের কাছে অবস্থিতি করেন; তাহাতে তিনি দুই দিবস সেখানে অবস্থিতি করিলেন। তখন আরও অনেক লোক তাঁহার বাক্য প্রযুক্ত বিশ্বাস করিল; আর তাহারা সেই স্ত্রীলোককে কহিল, এখন যে আমরা বিশ্বাস করিতেছি, সে আর তোমার কথা প্রযুক্ত নয়, কেননা আমরা আপনারা শুনিয়াছি ও জানিতে পারিয়াছি যে, ইনি সত্যই জগতের ত্রাণকর্ত্তা। সেই দুই দিনের পর তিনি তথা হইতে গালীলে গমন করিলেন। কারণ যীশু আপনি এই সাক্ষ্য দিয়াছিলেন যে, ভাববাদী নিজ দেশে সমাদর পান না। অতএব তিনি যখন গালীলে আসিলেন, তখন গালীলীয়েরা তাঁহাকে গ্রহণ করিল, কারণ যিরূশালেমে পর্ব্বের সময়ে তিনি যাহা যাহা করিয়াছিলেন, সে সমস্ত তাহারা দেখিয়াছিল; কেননা তাহারাও সেই পর্ব্বে গিয়াছিল। পরে তিনি আবার গালীলের সেই কান্না নগরে গেলেন, যেখানে জলকে দ্রাক্ষারস করিয়াছিলেন। আর, এক জন রাজপুরুষ ছিলেন, তাঁহার পুত্র কফরনাহূমে পীড়িত ছিল। যীশু যিহূদিয়া হইতে গালীলে আসিয়াছেন, শুনিয়া তিনি তাঁহার নিকটে গেলেন, এবং বিনতি করিলেন, যেন তিনি গিয়া তাঁহার পুত্রকে সুস্থ করেন; কারণ সে মৃতপ্রায় হইয়াছিল। তখন যীশু তাঁহাকে কহিলেন, চিহ্ন এবং অদ্ভুত লক্ষণ যদি না দেখ, তোমরা কোন মতে বিশ্বাস করিবে না। সেই রাজপুরুষ তাঁহাকে কহিলেন, হে প্রভু, আমার ছেলেটী না মরিতে মরিতে আইসুন। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, যাও, তোমার পুত্র বাঁচিল। যীশু সেই ব্যক্তিকে যে কথা বলিলেন, তিনি তাহা বিশ্বাস করিয়া চলিয়া গেলেন। তিনি যাইতেছেন, এমন সময়ে তাঁহার দাসেরা তাঁহার নিকটে আসিয়া বলিল, আপনার বালকটী বাঁচিল। তখন তিনি তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কোন্‌ ঘটিকায় তাহার উপশম আরম্ভ হইয়াছিল? তাহারা তাঁহাকে বলিল, কল্য সপ্তম ঘটিকার সময়ে তাহার জ্বর ছাড়িয়া গিয়াছে। তাহাতে পিতা বুঝিলেন, যীশু সেই ঘটিকাতেই তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, তোমার পুত্র বাঁচিল; আর তিনি আপনি ও তাঁহার সমস্ত পরিবার বিশ্বাস করিলেন। যিহূদিয়া হইতে গালীলে আসিবার পর যীশু আবার এই দ্বিতীয় চিহ্ন-কার্য্য করিলেন। ইহার পরে যিহূদীদের একটী পর্ব্ব উপস্থিত হইল; আর যীশু যিরূশালেমে গেলেন। যিরূশালেমে মেষ দ্বারের নিকট একটী পুষ্করিণী আছে, ইব্রীয় ভাষায় সেটীর নাম বৈথেস্‌দা, তাহার পাঁচটী চাঁদনি ঘাট। সেই সকল ঘাটে বিস্তর রোগী, অন্ধ, খঞ্জ ও শুষ্কাঙ্গ পড়িয়া থাকিত। [তাহারা জলসঞ্চলনের অপেক্ষায় থাকিত। কেননা বিশেষ বিশেষ সময়ে ঐ পুষ্করিণীতে প্রভুর এক দূত নামিয়া আসিতেন ও জল কম্পন করিতেন; সেই জলকম্পের পরে যে কেহ প্রথমে জলে নামিত, তাহার যে কোন রোগ হউক, সে তাহা হইতে মুক্তি পাইত। ] আর সেখানে একটী লোক ছিল, সে আটত্রিশ বৎসরের রোগী। যীশু তাহাকে পড়িয়া থাকিতে দেখিয়া ও দীর্ঘকাল সেই অবস্থায় রহিয়াছে জানিয়া কহিলেন, তুমি কি সুস্থ হইতে চাও? রোগী উত্তর করিল, মহাশয়, আমার এমন কোন লোক নাই যে, যখন জল কম্পিত হয়, তখন আমাকে পুষ্করিণীতে নামাইয়া দেয়; আমি যাইতে যাইতে আর এক জন আমার আগে নামিয়া পড়ে। যীশু তাহাকে কহিলেন, উঠ, তোমার খাট তুলিয়া লইয়া চলিয়া বেড়াও। তাহাতে তৎক্ষণাৎ সেই ব্যক্তি সুস্থ হইল, এবং আপনার খাট তুলিয়া লইয়া চলিয়া বেড়াইতে লাগিল। সেই দিন বিশ্রামবার। অতএব যাহাকে সুস্থ করা হইয়াছিল, তাহাকে যিহূদীরা বলিল, আজ বিশ্রামবার, খাট বহন করা তোমার পক্ষে বিধেয় নয়। কিন্তু সে তাহাদিগকে উত্তর করিল, যিনি আমাকে সুস্থ করিলেন, তিনিই আমাকে বলিলেন, তোমার খাট তুলিয়া লইয়া চলিয়া বেড়াও। তাহারা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, সেই ব্যক্তি কে, যে তোমাকে বলিয়াছে, খাট তুলিয়া লইয়া চলিয়া বেড়াও? কিন্তু যে সুস্থ হইয়াছিল, সে জানিত না, তিনি কে, কারণ সেখানে অনেক লোক থাকাতে যীশু চলিয়া গিয়াছিলেন। তার পরে যীশু ধর্ম্মধামে তাহার দেখা পাইলেন, আর তাহাকে বলিলেন, দেখ, তুমি সুস্থ হইলে; আর পাপ করিও না, পাছে তোমার আরও অধিক মন্দ ঘটে। সেই ব্যক্তি চলিয়া গেল, ও যিহূদীদিগকে বলিল যে, যীশুই তাহাকে সুস্থ করিয়াছেন। আর এই কারণ যিহূদীরা যীশুকে তাড়না করিতে লাগিল, কেননা তিনি বিশ্রামবারে এই সকল করিতেছিলেন। কিন্তু যীশু তাহাদিগকে এই উত্তর দিলেন, আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন, আমিও করিতেছি। এই কারণ যিহূদিগণ তাঁহাকে বধ করিতে আরও চেষ্টা পাইল; কেননা তিনি কেবল বিশ্রামবার লঙ্ঘন করিতেন তাহা নয়, কিন্তু আবার ঈশ্বরকে নিজ পিতা বলিতেন, আপনাকে ঈশ্বরের সমান করিতেন। অতএব যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, পুত্র আপনা হইতে কিছুই করিতে পারেন না, কেবল পিতাকে যাহা করিতে দেখেন, তাহাই করেন; কেননা তিনি যাহা যাহা করেন, পুত্রও সেই সকল তদ্রূপ করেন। কারণ পিতা পুত্রকে ভাল বাসেন, এবং আপনি যাহা যাহা করেন, সকলই তাঁহাকে দেখান; আর ইহা হইতেও মহৎ মহৎ কর্ম্ম তাঁহাকে দেখাইবেন, যেন তোমরা আশ্চর্য্য মনে কর। কেননা পিতা যেমন মৃতদিগকে উঠান ও জীবন দান করেন, তদ্রূপ পুত্রও যাহাদিগকে ইচ্ছা, জীবন দান করেন। কারণ পিতা কাহারও বিচার করেন না, কিন্তু সমস্ত বিচারভার পুত্রকে দিয়াছেন, যেন সকলে যেমন পিতাকে সমাদর করে, তেমনি পুত্রকে সমাদর করে। পুত্রকে যে সমাদর করে না, সে পিতাকে সমাদর করে না, যিনি তাঁহাকে পাঠাইয়াছেন। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে ব্যক্তি আমার বাক্য শুনে, ও যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন প্রাপ্ত হইয়াছে, এবং বিচারে আনীত হয় না, কিন্তু সে মৃত্যু হইতে জীবনে পার হইয়া গিয়াছে। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এমন সময় আসিতেছে, বরং এখন উপস্থিত, যখন মৃতেরা ঈশ্বরের পুত্রের রব শুনিবে, এবং যাহারা শুনিবে, তাহারা জীবিত হইবে। কেননা পিতার যেমন আপনাতে জীবন আছে, তেমনি তিনি পুত্রকেও আপনাতে জীবন রাখিতে দিয়াছেন। আর তিনি তাঁহাকে বিচার করিবার অধিকার দিয়াছেন, কেননা তিনি মনুষ্যপুত্র। ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না; কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং যাহারা সৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা জীবনের পুনরুত্থানের জন্য, ও যাহারা অসৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা বিচারের পুনরুত্থানের জন্য বাহির হইয়া আসিবে। আমি আপনা হইতে কিছুই করিতে পারি না; যেমন শুনি তেমনি বিচার করি; আর আমার বিচার ন্যায্য, কেননা আমি আপনার ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চেষ্টা করি না, কিন্তু আমার প্রেরণকর্ত্তার ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চেষ্টা করি। আমি যদি আপনার বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিই, তবে আমার সাক্ষ্য সত্য নয়। আমার বিষয়ে আর এক জন সাক্ষ্য দিতেছেন; এবং আমি জানি, আমার বিষয়ে তিনি যে সাক্ষ্য দিতেছেন, সেই সাক্ষ্য সত্য। তোমরা যোহনের নিকটে লোক পাঠাইয়াছ, আর তিনি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছেন। কিন্তু আমি যে সাক্ষ্য গ্রহণ করি, তাহা মনুষ্য হইতে নয়; তথাপি আমি এ সকল কহিতেছি, যেন তোমরা পরিত্রাণ পাও। তিনি সেই জ্বলন্ত ও জ্যোতির্ম্ময় প্রদীপ ছিলেন, এবং তোমরা তাঁহার আলোতে কিছু কাল আনন্দ করিতে ইচ্ছুক হইয়াছিলে। কিন্তু যোহনের দত্ত সাক্ষ্য অপেক্ষা আমার গুরুতর সাক্ষ্য আছে; কেননা পিতা আমাকে যে সকল কার্য্য সম্পন্ন করিতে দিয়াছেন, যে সকল কার্য্য আমি করিতেছি, সেই সকল আমার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিতেছে যে, পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। আর পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়াছেন; তাঁহার রব তোমরা কখনও শুন নাই, তাঁহার আকারও দেখ নাই। আর তাঁহার বাক্য তোমাদের অন্তরে অবস্থিতি করে না; কেননা তিনি যাঁহাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তাঁহাকে তোমরা বিশ্বাস কর না। তোমরা শাস্ত্র অনুসন্ধান করিয়া থাক, কারণ তোমরা মনে করিয়া থাক যে, তাহাতেই তোমাদের অনন্ত জীবন রহিয়াছে; আর তাহাই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়; আর তোমরা জীবন পাইবার নিমিত্ত আমার নিকটে আসিতে ইচ্ছা কর না। আমি মনুষ্যদের হইতে গৌরব গ্রহণ করি না! কিন্তু আমি তোমাদিগকে জানি, তোমাদের অন্তরে ত ঈশ্বরের প্রেম নাই। আমি আপন পিতার নামে আসিয়াছি, আর তোমরা আমাকে গ্রহণ কর না; অন্য কেহ যদি আপনার নামে আইসে, তাহাকে তোমরা গ্রহণ করিবে। তোমরা কিরূপে বিশ্বাস করিতে পার? তোমরা ত পরস্পরের নিকটে গৌরব গ্রহণ করিতেছ, এবং একমাত্র ঈশ্বরের নিকট হইতে যে গৌরব আইসে, তাহার চেষ্টা কর না। মনে করিও না যে, আমি পিতার নিকটে তোমাদের উপরে দোষারোপ করিব; এক জন আছেন, যিনি তোমাদের উপরে দোষারোপ করেন; তিনি মোশি, যাঁহার উপরে তোমরা প্রত্যাশা রাখিয়াছ। কারণ যদি তোমরা মোশিকে বিশ্বাস করিতে, তবে আমাকেও বিশ্বাস করিতে, কেননা আমারই বিষয়ে তিনি লিখিয়াছেন। কিন্তু তাঁহার লেখায় যদি বিশ্বাস না কর, তবে আমার কথায় কিরূপে বিশ্বাস করিবে? ইহার পরে যীশু গালীল-সাগরের, অর্থাৎ তিবিরিয়া-সাগরের, অন্য পারে প্রস্থান করিলেন। আর বিস্তর লোক তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতে লাগিল, কেননা তিনি রোগীদের উপরে যে সকল চিহ্নকার্য্য করিতেন, সে সকল তাহারা দেখিত। আর যীশু পর্ব্বতে উঠিলেন, এবং সেখানে আপন শিষ্যদের সহিত বসিলেন। তখন নিস্তারপর্ব্ব, যিহূদীদের পর্ব্ব, সন্নিকট ছিল। আর যীশু চক্ষু তুলিয়া, বিস্তর লোক তাঁহার নিকটে আসিতেছে দেখিয়া, ফিলিপকে বলিলেন, উহাদের আহারার্থে আমরা কোথায় রুটী কিনিতে পাইব? এ কথা তিনি তাঁহার পরীক্ষার নিমিত্ত বলিলেন? কেননা কি করিবেন, তাহা তিনি আপনি জানিতেন। ফিলিপ তাঁহাকে উত্তর করিলেন, উহাদের জন্য দুই শত সিকির রুটীও এরূপ যথেষ্ট নয় যে, প্রত্যেক জন কিছু কিছু পাইতে পারে। তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে এক জন, শিমোন পিতরের ভ্রাতা আন্দ্রিয়, তাঁহাকে কহিলেন, এখানে একটী বালক আছে, তাহার কাছে যবের পাঁচখানা রুটী এবং দুইটী মাছ আছে; কিন্তু এত লোকের মধ্যে তাহাতে কি হইবে? যীশু বলিলেন, লোকদিগকে বসাইয়া দেও। সে স্থানে অনেক ঘাস ছিল। তাহাতে পুরুষেরা, সংখ্যায় অনুমান পাঁচ হাজার লোক, বসিয়া গেল। তখন যীশু সেই রুটী কয়খানি লইলেন, ও ধন্যবাদ করিলেন, এবং যাহারা বসিয়াছিল, তাহাদিগকে ভাগ করিয়া দিলেন; সেইরূপে মাছ কয়টী হইতেও, তাহারা যত ইচ্ছা করিল, দিলেন। আর তাহারা তৃপ্ত হইলে তিনি আপন শিষ্যদিগকে কহিলেন, অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া সকল সংগ্রহ কর, যেন কিছুই নষ্ট না হয়। তাহাতে তাঁহারা সংগ্রহ করিলেন, আর ঐ পাঁচখানা যবের রুটীর গুঁড়াগাঁড়ায় সেই লোকদের ভোজনের পর যাহা বাঁচিয়াছিল, তাহাতে বারো ডালা পূর্ণ করিলেন। অতএব সেই লোকেরা তাঁহার কৃত চিহ্ন-কার্য্য দেখিয়া বলিতে লাগিল, উনি সত্যই সেই ভাববাদী, যিনি জগতে আসিতেছেন। তখন যীশু বুঝিতে পারিলেন যে, তাহারা আসিয়া রাজা করিবার জন্য তাঁহাকে ধরিতে উদ্যত হইয়াছে, তাই আবার নিজে একাকী পর্ব্বতে চলিয়া গেলেন। সন্ধ্যা হইলে তাঁহার শিষ্যেরা সমুদ্রতীরে নামিয়া গেলেন, এবং একখানি নৌকায় উঠিয়া সমুদ্রপারে কফরনাহূমের দিকে গমন করিতে লাগিলেন। সে সময় অন্ধকার হইয়াছিল, এবং যীশু তখনও তাঁহাদের নিকটে আইসেন নাই। আর প্রবল বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় সমুদ্রে ঢেউ উঠিয়াছিল। এইরূপে দেড় বা দুই ক্রোশ বাহিয়া গেলে পর তাঁহারা যীশুকে দেখিতে পাইলেন, তিনি সমুদ্রের উপর দিয়া হাঁটিয়া নৌকার নিকটে আসিতেছেন; ইহাতে তাঁহারা ভয় পাইলেন। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, এ আমি, ভয় করিও না। তখন তাঁহারা তাঁহাকে নৌকাতে গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক হইলেন; আর তাঁহারা যেখানে যাইতেছিলেন, নৌকা তৎক্ষণাৎ সেই স্থলে উপস্থিত হইল। পর দিন, যে জনসমূহ সমুদ্রের পরপারে দাঁড়াইয়াছিল, তাহারা দেখিয়াছিল যে, সেখানে একখানি বই আর নৌকা নাই, এবং যীশু শিষ্যদের সহিত সেই নৌকাতে উঠেন নাই, কেবল তাঁহার শিষ্যেরা প্রস্থান করিয়াছিলেন। —কিন্তু তিবিরিয়া হইতে কয়েকখানি নৌকা, যেখানে প্রভু ধন্যবাদ করিলে লোকেরা রুটী খাইয়াছিল, সেই স্থানের নিকটে আসিয়াছিল। —অতএব লোকেরা যখন দেখিল, যীশু সেখানে নাই, তাঁহার শিষ্যেরাও নাই, তখন তাহারা সেই সকল নৌকায় চড়িয়া যীশুর অন্বেষণে কফরনাহূমে আসিল। আর সমুদ্রের পারে তাঁহাকে পাইয়া কহিল, রব্বি, আপনি এখানে কখন্‌ আসিয়াছেন? যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিয়া কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা চিহ্ন-কার্য্য দেখিয়াছ বলিয়া আমার অন্বেষণ করিতেছ, তাহা নয়; কিন্তু সেই রুটী খাইয়াছিলে ও তৃপ্ত হইয়াছিলে বলিয়া। নশ্বর ভক্ষ্যের নিমিত্ত শ্রম করিও না, কিন্তু সেই ভক্ষ্যের জন্য শ্রম কর, যাহা অনন্ত জীবন পর্য্যন্ত থাকে, যাহা মনুষ্যপুত্র তোমাদিগকে দিবেন, কেননা পিতা —ঈশ্বর—তাঁহাকেই মুদ্রাঙ্কিত করিয়াছেন। তখন তাহারা তাঁহাকে কহিল, আমরা যেন ঈশ্বরের কার্য্য করিতে পারি, এ জন্য আমাদিগকে কি করিতে হইবে? যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বরের কার্য্য এই, যেন তাঁহাতে তোমরা বিশ্বাস কর, যাঁহাকে তিনি প্রেরণ করিয়াছেন। তাহারা তাঁহাকে কহিল, ভাল, আপনি এমন কি চিহ্ন-কার্য্য করিতেছেন, যাহা দেখিয়া আমরা আপনাকে বিশ্বাস করিব? আপনি কি কার্য্য করিতেছেন? আমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রান্তরে মান্না খাইয়াছিলেন, যেমন লেখা আছে, “তিনি ভোজনের জন্য তাহাদিগকে স্বর্গ হইতে খাদ্য দিলেন।” যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, মোশি তোমাদিগকে স্বর্গ হইতে সেই খাদ্য দেন নাই, কিন্তু আমার পিতাই তোমাদিগকে স্বর্গ হইতে প্রকৃত খাদ্য দেন। কেননা ঈশ্বরীয় খাদ্য তাহাই, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, ও জগৎকে জীবন দান করে। তখন তাহারা তাঁহাকে কহিল, প্রভু, চিরকাল সেই খাদ্য আমাদিগকে দিউন। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, আমিই সেই জীবন-খাদ্য। যে ব্যক্তি আমার কাছে আইসে, সে ক্ষুধার্ত্ত হইবে না, এবং যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে তৃষ্ণার্ত্ত হইবে না, কখনও না। কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি যে, তোমরা আমাকে দেখিয়াছ, আর বিশ্বাস কর না। পিতা যে সমস্ত আমাকে দেন, সে সমস্ত আমারই কাছে আসিবে; এবং যে আমার কাছে আসিবে, তাহাকে আমি কোন মতে বাহিরে ফেলিয়া দিব না। কেননা আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য। আর যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার ইচ্ছা এই, তিনি আমাকে যে সমস্ত দিয়াছেন, তাহার কিছুই যেন না হারাই, কিন্তু শেষ দিনে যেন তাহা উঠাই। কারণ আমার পিতার ইচ্ছা এই, যে কেহ পুত্রকে দর্শন করে ও তাঁহাকে বিশ্বাস করে, সে যেন অনন্ত জীবন পায়; আর আমিই তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব। অতএব যিহূদীরা তাঁহার বিষয়ে বচসা করিতে লাগিল, কেননা তিনি বলিয়াছিলেন, আমিই সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে। তাহারা বলিল, এ কি যোষেফের পুত্র সেই যীশু নয়, যাহার পিতা মাতাকে আমরা জানি? এখন এ কেমন করিয়া বলে, আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছি? যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা পরস্পর বচসা করিও না। পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না, আর আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব। ভাববাদিগণের গ্রন্থে লেখা আছে, “তাহারা সকলে ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাইবে।” যে কেহ পিতার নিকটে শুনিয়া শিক্ষা পাইয়াছে, সেই আমার কাছে আইসে। কেহ যে পিতাকে দেখিয়াছে, তাহা নয়; যিনি ঈশ্বর হইতে আসিয়াছেন, কেবল তিনিই পিতাকে দেখিয়াছেন। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে। আমিই জীবন-খাদ্য। তোমাদের পিতৃপুরুষেরা প্রান্তরে মান্না খাইয়াছিল, আর তাহারা মরিয়া গিয়াছে। এ সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, যেন লোকে তাহা খায়, ও না মরে। আমিই সেই জীবন্ত খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে। কেহ যদি এই খাদ্য খায়, তবে সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে, আর আমি যে খাদ্য দিব, সে আমার মাংস, জগতের জীবনের জন্য। অতএব যিহূদীরা পরস্পর বাগ্‌যুদ্ধ করিয়া বলিতে লাগিল, এ ব্যক্তি কেমন করিয়া আমাদিগকে ভোজনের জন্য আপনার মাংস দিতে পারে? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যদি মনুষ্যপুত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই। যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে, এবং আমি তাহাকে শেষ দিনে উঠাইব। কারণ আমার মাংস প্রকৃত ভক্ষ্য, এবং আমার রক্ত প্রকৃত পানীয়। যে আমার মাংস ভোজন ও আমার রক্ত পান করে, সে আমাতে থাকে, এবং আমি তাহাতে থাকি। যেমন জীবন্ত পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, এবং পিতা হেতু আমি জীবিত আছি, সেইরূপ যে কেহ আমাকে ভোজন করে, সেও আমা হেতু জীবিত থাকিবে। এ সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে; পিতৃপুরুষেরা যেমন খাইয়াছিল, এবং মরিয়াছিল, সেইরূপ নয়; এই খাদ্য যে ভোজন করে, সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে। এই সকল কথা তিনি কফরনাহূমে উপদেশ দিবার সময়ে সমাজ-গৃহে কহিলেন। তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে অনেকে এ কথা শুনিয়া বলিল, এ কঠিন কথা, কে ইহা শুনিতে পারে? কিন্তু তাঁহার শিষ্যেরা এই বিষয়ে বচসা করিতেছে, যীশু তাহা অন্তরে জ্ঞাত হইয়া তাহাদিগকে বলিলেন, এই কথায় কি তোমাদের বিঘ্ন জন্মে? তবে মনুষ্যপুত্র পূর্ব্বে যেখানে ছিলেন, সেখানে তোমরা তাঁহাকে উঠিতে দেখিলে কি বলিবে? আত্মাই জীবনদায়ক, মাংস কিছু উপকারী নয়; আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলিয়াছি, তাহা আত্মা ও জীবন; কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ আছে, যাহারা বিশ্বাস করে না। কেননা যীশু প্রথম হইতে জানিতেন, কে কে বিশ্বাস করে না, এবং কেই বা তাঁহাকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিবে। তিনি আরও কহিলেন, এই জন্য আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি, যদি পিতা হইতে ক্ষমতা দত্ত না হয়, তবে কেহই আমার নিকটে আসিতে পারে না। ইহাতে তাঁহার অনেক শিষ্য পিছাইয়া পড়িল, তাঁহার সঙ্গে আর যাতায়াত করিল না। অতএব যীশু সেই বারো জনকে কহিলেন, তোমরাও কি চলিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছ? শিমোন পিতর তাঁহাকে উত্তর করিলেন, প্রভু, কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে; আর আমরা বিশ্বাস করিয়াছি এবং জ্ঞাত হইয়াছি যে, আপনিই ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি। যীশু তাঁহাদিগকে উত্তর করিলেন, তোমরা এই যে বারো জন, আমি কি তোমাদিগকে মনোনীত করি নাই? আর তোমাদের মধ্যেও এক জন দিয়াবল আছে। এই কথা তিনি ঈষ্করিয়োতীয় শিমোনের পুত্র যিহূদার বিষয়ে কহিলেন, কারণ সেই ব্যক্তি তাঁহাকে সমর্পণ করিবে, সে বারো জনের মধ্যে এক জন। এই সকলের পরে যীশু গালীলে ভ্রমণ করিলেন, কেননা যিহূদিগণ তাঁহাকে বধ করিবার চেষ্টা করায় তিনি যিহূদিয়াতে ভ্রমণ করিতে ইচ্ছা করিলেন না। এক্ষণে যিহূদীদের কুটীরবাস পর্ব্ব সন্নিকট হইল। অতএব তাঁহার ভ্রাতৃগণ তাঁহাকে কহিল, এখান হইতে প্রস্থান কর, যিহূদিয়াতে চলিয়া যাও; যেন তুমি যাহা যাহা করিতেছ, তোমার সেই সকল কার্য্য তোমার শিষ্যেরাও দেখিতে পায়। কারণ এমন কেহ নাই যে, গোপনে কর্ম্ম করে, আর আপনি সপ্রকাশ হইতে চেষ্টা করে। তুমি যখন এই সকল কর্ম্ম করিতেছ, তখন আপনাকে জগতের কাছে প্রকাশ কর। —কারণ তাঁহার ভ্রাতারাও তাঁহাতে বিশ্বাস করিত না। —তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, আমার সময় এখনও আইসে নাই, কিন্তু তোমাদের সময় সর্ব্বদাই উপস্থিত। জগৎ তোমাদিগকে ঘৃণা করিতে পারে না, কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে, কারণ আমি তাহার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিই যে, তাহার কর্ম্ম মন্দ। তোমরাই পর্ব্বে যাও; আমি এখনও এই পর্ব্বে যাইতেছি না, কেননা আমার সময় এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই। তাহাদিগকে এই কথা বলিয়া তিনি গালীলে রহিলেন। কিন্তু তাঁহার ভ্রাতৃগণ পর্ব্বে গেলে পর তিনিও গেলেন, প্রকাশ্যরূপে নয়, কিন্তু এক প্রকার গোপনে। তাহাতে যিহূদিগণ পর্ব্বে তাঁহার অন্বেষণ করিল, আর কহিল, সেই ব্যক্তি কোথায়? আর সমাগত লোকেরা তাঁহার বিষয়ে ফুস্‌ ফুস্‌ করিয়া অনেকে কথা কহিতে লাগিল। কেহ কেহ বলিল, তিনি ভাল লোক; আর কেহ কেহ বলিল, তাহা নয়, বরং সে লোকসমূহকে ভুলাইতেছে। কিন্তু যিহূদিগণের ভয়ে কেহ তাঁহার বিষয়ে প্রকাশ্যরূপে কিছু বলিল না। পর্ব্বের মধ্য সময়ে যীশু ধর্ম্মধামে গেলেন, এবং উপদেশ দিতে লাগিলেন। তাহাতে যিহূদীরা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া কহিল, এ ব্যক্তি শিক্ষা না করিয়া কি প্রকারে শাস্ত্রজ্ঞ হইয়া উঠিল? যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিয়া কহিলেন, আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার। যদি কেহ তাঁহার ইচ্ছা পালন করিতে ইচ্ছা করে, সে এই উপদেশের বিষয়ে জানিতে পারিবে, ইহা ঈশ্বর হইতে হইয়াছে, না আমি আপনা হইতে বলি। যে আপনা হইতে বলে, সে আপনারই গৌরব চেষ্টা করে; কিন্তু যিনি আপন প্রেরণকর্ত্তার গৌরব চেষ্টা করেন, তিনি সত্যবাদী, আর তাঁহাতে কোন অধর্ম্ম নাই। মোশি তোমাদিগকে কি ব্যবস্থা দেন নাই? তথাপি তোমাদের মধ্যে কেহই সেই ব্যবস্থা পালন করে না। কেন আমাকে বধ করিতে চেষ্টা করিতেছ? লোকসমূহ উত্তর করিল, তোমাকে ভূতে পাইয়াছে, কে তোমাকে বধ করিতে চেষ্টা করিতেছে? যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, আমি একটী কার্য্য করিয়াছি, আর সে জন্য তোমরা সকলে আশ্চর্য্য বোধ করিতেছ। মোশি তোমাদিগকে ত্বক্‌ছেদবিধি দিয়াছেন—তাহা যে মোশি হইতে হইয়াছে, এমন নয়, পিতৃপুরুষদের হইতে হইয়াছে—এবং তোমরা বিশ্রামবারে মনুষ্যের ত্বক্‌ছেদ করিয়া থাক। মোশির ব্যবস্থা লঙ্ঘন যেন না হয়, তজ্জন্য যদি বিশ্রামবারে মানুষে ত্বক্‌ছেদ প্রাপ্ত হয়, তবে আমি বিশ্রামবারে একটী মানুষকে সর্ব্বাঙ্গীণ সুস্থ করিয়াছি বলিয়া আমার উপরে কি ক্রোধ করিতেছ? দৃশ্য মতে বিচার করিও না, কিন্তু ন্যায্য বিচার কর। তখন যিরূশালেম-নিবাসীদের মধ্যে কয়েক জন কহিল, এ কি সেই নহে, যাহাকে তাঁহারা বধ করিতে চেষ্টা করেন? আর দেখ, এ প্রকাশ্যরূপে কথা কহিতেছে, আর তাঁহারা ইহাকে কিছুই বলেন না; অধ্যক্ষগণ কি বাস্তবিক জানেন যে, এ সেই খ্রীষ্ট? যাহা হউক, এ কোথা হইতে আসিল, তাহা আমরা জানি; খ্রীষ্ট যখন আইসেন, তখন তিনি কোথা হইতে আসিলেন, তাহা কেহ জানে না। তখন যীশু ধর্ম্মধামে উপদেশ দিতে দিতে উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, তোমরা ত আমাকে জান, এবং আমি কোথা হইতে আসিয়াছি, তাহাও জান। আর আমি আপনা হইতে আসি নাই; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি সত্যময়; তোমরা তাঁহাকে জান না; আমিই তাঁহাকে জানি, কেননা আমি তাঁহার নিকট হইতে আসিয়াছি, আর তিনিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। এই জন্য লোকেরা তাঁহাকে ধরিতে চেষ্টা করিল, তথাপি কেহ তাঁহার উপরে হস্তক্ষেপ করিল না, কারণ তখনও তাঁহার সময় উপস্থিত হয় নাই। কিন্তু লোকদের মধ্যে অনেকে তাঁহাতে বিশ্বাস করিল, আর কহিল, খ্রীষ্ট যখন আসিবেন, তখন ইহাঁর কৃত কার্য্য অপেক্ষা তিনি কি অধিক চিহ্ন-কার্য্য করিবেন? ফরীশীরা তাঁহার বিষয়ে লোকদিগকে এই সকল কথা ফুস্‌ ফুস্‌ করিয়া বলিতে শুনিল; আর প্রধান যাজকেরা ও ফরীশীরা তাঁহাকে ধরিয়া আনিবার নিমিত্ত কয়েকজন পদাতিককে পাঠাইয়া দিল। তাহাতে যীশু কহিলেন, আমি এখন অল্প কাল তোমাদের সঙ্গে আছি, তার পর, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার নিকটে যাইতেছি। তোমরা আমার অন্বেষণ করিবে, কিন্তু আমাকে পাইবে না; আর আমি যেখানে আছি, সেখানে তোমরা আসিতে পার না। তখন যিহূদীরা পরস্পর বলিতে লাগিল, এ কোথায় যাইবে যে, আমরা ইহাকে পাইতে পারিব না? এ কি গ্রীকদের মধ্যে ছিন্নভিন্ন লোকদের নিকটে যাইবে, ও গ্রীকদিগকে উপদেশ দিবে? এ যে বলিল, ‘আমার অন্বেষণ করিবে, কিন্তু আমাকে পাইবে না, এবং আমি যেখানে আছি, সেখানে তোমরা আসিতে পার না’, এ কি কথা? শেষ দিন, পর্ব্বের প্রধান দিন, যীশু দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, কেহ যদি তৃষ্ণার্ত্ত হয়, তবে আমার কাছে আসিয়া পান করুক। যে আমাতে বিশ্বাস করে, শাস্ত্রে যেমন বলে, তাহার অন্তর হইতে জীবন্ত জলের নদী বহিবে। যাহারা তাঁহাতে বিশ্বাস করিত, তাহারা যে আত্মাকে পাইবে, তিনি সেই আত্মার বিষয়ে এই কথা কহিলেন; কারণ তখনও আত্মা দত্ত হন নাই, কেননা তখনও যীশু মহিমাপ্রাপ্ত হন নাই। সেই সকল কথা শুনিয়া লোকসমূহের মধ্যে কেহ কেহ বলিল, ইনি সত্যই সেই ভাববাদী। আর কেহ কেহ বলিল, ইনি সেই খ্রীষ্ট। কিন্তু কেহ কেহ বলিল, কেমন? খ্রীষ্ট কি গালীল হইতে আসিবেন? শাস্ত্রে কি বলে নাই, খ্রীষ্ট দায়ূদের বংশ হইতে, এবং দায়ূদ যেখানে ছিলেন, সেই বৈৎলেহম গ্রাম হইতে আসিবেন? এই প্রকারে তাঁহাকে লইয়া লোকসমূহের মধ্যে মতভেদ হইল। আর তাহাদের কতকগুলি লোক তাঁহাকে ধরিতে বাঞ্ছা করিতেছিল, তথাপি কেহ তাঁহার উপরে হস্তক্ষেপ করিল না। তখন পদাতিকেরা প্রধান যাজকদের ও ফরীশীদের নিকটে আসিল। ইহারা তাহাদিগকে বলিল, তাহাকে আন নাই কেন? পদাতিকেরা উত্তর করিল, এ ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই। ফরীশীরা তাহাদিগকে উত্তর করিল, তোমরাও কি ভ্রান্ত হইলে? অধ্যক্ষদের মধ্যে কিম্বা ফরীশীদের মধ্যে কি কেহ উহাতে বিশ্বাস করিয়াছেন? কিন্তু এই যে লোকসমূহ ব্যবস্থা জানে না, ইহারা শাপগ্রস্ত। তখন নীকদীম—তাহাদের মধ্যে এক জন, যিনি পূর্ব্বে তাঁহার কাছে আসিয়াছিলেন—তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, অগ্রে মানুষের নিজের কথা না শুনিয়া, ও সে কি করে, না জানিয়া, আমাদের ব্যবস্থা কি কাহারও বিচার করে? তাহারা উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, তুমিও কি গালীলের লোক? অনুসন্ধান করিয়া দেখ, গালীল হইতে কোন ভাববাদীর উদয় হয় না। [পরে তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন গৃহে গেল, কিন্তু যীশু জৈতুন পর্ব্বতে গেলেন। আর প্রত্যূষে তিনি পুনর্ব্বার ধর্ম্মধামে আসিলেন; এবং সমুদয় লোক তাঁহার নিকটে আসিল; আর তিনি বসিয়া তাহাদিগকে উপদেশ দিতে লাগিলেন। তখন অধ্যাপক ও ফরীশীগণ ব্যভিচারে ধৃতা একটী স্ত্রীলোককে তাঁহার নিকটে আনিল, ও মধ্যস্থানে দাঁড় করাইয়া তাঁহাকে কহিল, হে গুরু, এই স্ত্রীলোকটা ব্যভিচারে, সেই ক্রিয়াতেই, ধরা পড়িয়াছে। ব্যবস্থায় মোশি এ প্রকার লোককে পাথর মারিবার আজ্ঞা আমাদিগকে দিয়াছেন; তবে আপনি কি বলেন? তাহারা তাঁহার পরীক্ষাভাবেই এই কথা কহিল, যেন তাঁহার নামে দোষারোপ করিবার সূত্র পাইতে পারে। কিন্তু যীশু হেঁট হইয়া অঙ্গুলি দ্বারা ভূমিতে লিখিতে লাগিলেন। পরে তাহারা যখন পুনঃ পুনঃ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল তিনি মাথা তুলিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ, সেই প্রথমে ইহাকে পাথর মারুক। পরে তিনি পুনর্ব্বার হেঁট হইয়া অঙ্গুলি দিয়া ভূমিতে লিখিতে লাগিলেন। তখন তাহারা ইহা শুনিয়া, এবং আপন আপন সংবেদ দ্বারা দোষীকৃত হইয়া, একে একে বাহিরে গেল, প্রাচীন লোক অবধি আরম্ভ করিয়া শেষ জন পর্য্যন্ত গেল; তাহাতে কেবল যীশু অবশিষ্ট থাকিলেন, আর সেই স্ত্রীলোকটী মধ্যস্থানে দাঁড়াইয়াছিল। তখন যীশু মাথা তুলিয়া, স্ত্রীলোকটী ছাড়া আর কাহাকেও দেখিতে না পাইয়া, তাহাকে কহিলেন, হে নারি, যাহারা তোমার নামে অভিযোগ করিয়াছিল, তাহারা কোথায়? কেহ কি তোমাকে দোষী করে নাই? সে কহিল, না, প্রভু, কেহ করে নাই। তখন যীশু তাহাকে বলিলেন, আমিও তোমাকে দোষী করি না; যাও, এখন অবধি আর পাপ করিও না।] যীশু আবার লোকদের কাছে কথা কহিলেন, তিনি বলিলেন, আমি জগতের জ্যোতি; যে আমার পশ্চাৎ আইসে, সে কোন মতে অন্ধকারে চলিবে না, কিন্তু জীবনের দীপ্তি পাইবে। তাহাতে ফরীশীরা তাঁহাকে কহিল, তুমি আপনার বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিতেছ; তোমার সাক্ষ্য সত্য নহে। যীশু উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, যদিও আমি আপনার বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিই, তথাপি আমার সাক্ষ্য সত্য; কারণ আমি কোথা হইতে আসিয়াছি, কোথায়ই বা যাইতেছি, তাহা জানি; কিন্তু আমি কোথা হইতে আসি, কোথায়ই বা যাইতেছি তাহা তোমরা জান না। তোমরা মাংস অনুসারে বিচার করিতেছ; আমি কাহারও বিচার করি না। আর যদিও আমি বিচার করি, আমার বিচার সত্য, কেননা আমি একা নহি, কিন্তু আমি আছি, এবং পিতা আছেন, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন। আর তোমাদের ব্যবস্থাতেও লিখিত আছে, দুই জনের সাক্ষ্য সত্য । আমি আপনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিই, আর পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। তখন তাহারা তাঁহাকে বলিল, তোমার পিতা কোথায়? যীশু উত্তর করিলেন, তোমরা আমাকেও জান না, আমার পিতাকেও জান না; যদি আমাকে জানিতে, আমার পিতাকেও জানিতে। এই সকল কথা তিনি ধর্ম্মধামে উপদেশ দিবার সময়ে ভাণ্ডার-গৃহে কহিলেন; এবং কেহ তাঁহাকে ধরিল না, কারণ তখনও তাঁহার সময় উপস্থিত হয় নাই। পরে তিনি আবার তাহাদিগকে কহিলেন, আমি যাইতেছি, আর তোমরা আমার অন্বেষণ করিবে, ও তোমাদের পাপে মরিবে; আমি যেখানে যাইতেছি, সেখানে তোমরা আসিতে পার না। তখন যিহূদীরা বলিল, এ কি আত্মঘাতী হইবে, তাই বলিতেছে, আমি যেখানে যাইতেছি, সেখানে তোমরা আসিতে পার না। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা অধঃস্থানের, আমি ঊর্দ্ধস্থানের; তোমরা এ জগতের, আমি এ জগতের নহি। এই জন্য তোমাদিগকে বলিলাম যে, তোমরা তোমাদের পাপসমূহে মরিবে; কেননা যদি বিশ্বাস না কর যে, আমিই তিনি, তবে তোমাদের পাপসমূহে মরিবে। তখন তাহারা কহিল, তুমি কে? যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, তাহাই ত প্রথম হইতে তোমাদিগকে বলিতেছি । তোমাদের বিষয়ে বলিবার ও বিচার করিবার অনেক কথা আমার আছে; যাহা হউক, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি সত্য, এবং আমি তাঁহার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাই জগৎকে বলিতেছি। —তিনি যে তাহাদিগকে পিতার বিষয় বলিতেছিলেন, ইহা তাহারা বুঝিল না। —তখন যীশু কহিলেন, যখন তোমরা মনুষ্যপুত্রকে উচ্চে উঠাইবে, তখন জানিবে যে, আমিই তিনি, আর আমি আপনা হইতে কিছুই করি না, কিন্তু পিতা আমাকে যেমন শিক্ষা দিয়াছেন, তদনুসারে এই সকল কথা কহি। আর যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আমার সঙ্গে সঙ্গে আছেন; তিনি আমাকে একা ছাড়িয়া দেন নাই, কেননা আমি সর্ব্বদা তাঁহার সন্তোষজনক কার্য্য করি। তিনি এই সকল কথা কহিলে অনেকে তাঁহাতে বিশ্বাস করিল। অতএব যে যিহূদীরা তাঁহাকে বিশ্বাস করিল, তাহাদিগকে যীশু কহিলেন, তোমরা যদি আমার বাক্যে স্থির থাক, তাহা হইলে সত্যই তোমরা আমার শিষ্য; আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে। তাহারা তাঁহাকে উত্তর করিল, আমরা অব্রাহামের বংশ, কখনও কাহারও দাস হই নাই; আপনি কেমন করিয়া বলিতেছেন যে, তোমাদিগকে স্বাধীন করা যাইবে? যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ পাপাচরণ করে, সে পাপের দাস। আর দাস বাটীতে চিরকাল থাকে না; পুত্র চিরকাল থাকেন। অতএব পুত্র যদি তোমাদিগকে স্বাধীন করেন, তবে তোমরা প্রকৃতরূপে স্বাধীন হইবে। আমি জানি, তোমরা অব্রাহামের বংশ; কিন্তু আমাকে বধ করিতে চেষ্টা করিতেছ, কারণ আমার বাক্য তোমাদের অন্তরে স্থান পায় না। আমার পিতার কাছে আমি যাহা যাহা দেখিয়াছি, তাহাই বলিতেছি; আর তোমাদের পিতার কাছে তোমরা যাহা যাহা শুনিয়াছ, তাহাই করিতেছ। তাহারা উত্তর করিয়া তাঁহাকে বলিল, আমাদের পিতা অব্রাহাম। যীশু তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা যদি অব্রাহামের সন্তান হইতে, তবে অব্রাহামের কর্ম্ম করিতে। কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সত্য শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইয়াছি যে আমি, আমাকেই বধ করিতে চেষ্টা করিতেছ; অব্রাহাম এরূপ করেন নাই। তোমাদের পিতার কার্য্য তোমরা করিতেছ। তাহারা তাঁহাকে কহিল, আমরা ব্যভিচারজাত নহি; আমাদের একমাত্র পিতা আছেন, তিনি ঈশ্বর। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বর যদি তোমাদের পিতা হইতেন, তবে তোমরা আমাকে প্রেম করিতে, কেননা আমি ঈশ্বর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি; আমি ত আপনা হইতে আসি নাই, কিন্তু তিনিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। তোমরা কেন আমার কথা বুঝ না? কারণ এই যে, আমার বাক্য শুনিতে পার না। তোমরা আপনাদের পিতা দিয়াবলের, এবং তোমাদের পিতার অভিলাষ সকল পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা; সে আদি হইতেই নরঘাতক, সত্যে থাকে নাই, কারণ তাহার মধ্যে সত্য নাই। সে যখন মিথ্যা বলে, তখন আপনা হইতেই বলে, কেননা সে মিথ্যবাদী ও তাহার পিতা। কিন্তু আমি সত্য বলি, তাই তোমরা আমাকে বিশ্বাস কর না। তোমাদের মধ্যে কে আমাকে পাপী বলিয়া প্রমাণ করিতে পারে? যদি আমি সত্য বলি, তবে তোমরা কেন আমাকে বিশ্বাস কর না? যে কেহ ঈশ্বরের, সে ঈশ্বরের কথা সকল শুনে; এই জন্যই তোমরা শুন না, কারণ তোমরা ঈশ্বরের নহ। যিহূদীরা উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, আমরা কি ভালই বলি না যে, তুমি একজন শমরীয় ও ভূতগ্রস্ত? যীশু উত্তর করিলেন, আমি ভূতগ্রস্ত নহি, কিন্তু আপন পিতাকে সমাদর করি, আর তোমরা আমাকে অনাদর কর। কিন্তু আমি আপনার গৌরব অন্বেষণ করি না; এক জন আছেন, যিনি অন্বেষণ করেন ও বিচার করেন। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, কেহ যদি আমার বাক্য পালন করে, সে কখনও মৃত্যু দেখিবে না। যিহূদীরা তাঁহাকে বলিল, এখন জানিলাম, তুমি ভূতগ্রস্ত; অব্রাহাম ও ভাববাদিগণ মরিয়া গিয়াছেন; আর তুমি বলিতেছ, কেহ যদি আমার বাক্য পালন করে, সে কখনও মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না। তুমি কি আমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম অপেক্ষা বড়? তিনি ত মরিয়াছেন, এবং ভাববাদিগণও মরিয়াছেন; তুমি আপনার বিষয়ে কি বল? যীশু উত্তর করিলেন, আমি যদি আপনাকে গৌরবান্বিত করি; তবে আমার গৌরব কিছুই নয়; আমার পিতাই আমাকে গৌরবান্বিত করিতেছেন, যাঁহার বিষয় তোমরা বলিয়া থাক যে, তিনি তোমাদের ঈশ্বর; আর তোমরা তাঁহাকে জান নাই; কিন্তু আমি তাঁহাকে জানি; আর আমি যদি বলি যে, তাঁহাকে জানি না, তবে তোমাদেরই ন্যায় মিথ্যাবাদী হইব; কিন্তু আমি তাঁহাকে জানি, এবং তাঁহার বাক্য পালন করি। তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম আমার দিন দেখিবার আশায় উল্লাসিত হইয়াছিলেন, এবং তিনি তাহা দেখিলেন ও আনন্দ করিলেন। তখন যিহূদীরা তাঁহাকে কহিল, তোমার বয়স এখনও পঞ্চাশ বৎসর হয় নাই, তুমি কি অব্রাহামকে দেখিয়াছ? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, অব্রাহামের জন্মের পূর্ব্বাবধি আমি আছি। তখন তাহারা তাঁহার উপর ছুড়িয়া মারিবার জন্য পাথর তুলিয়া লইল, যীশু কিন্তু অন্তর্হিত হইলেন, ও ধর্ম্মধাম হইতে বাহিরে গেলেন। আর তিনি যাইতে যাইতে একটী লোককে দেখিতে পাইলেন, সে জন্মাবধি অন্ধ। তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, রব্বি, কে পাপ করিয়াছিল, এ ব্যক্তি, না ইহার পিতামাতা, যাহাতে এ অন্ধ হইয়া জন্মিয়াছে? যীশু উত্তর করিলেন, পাপ এ করিয়াছে, কিম্বা ইহার পিতামাতা করিয়াছে, তাহা নয়; কিন্তু এই ব্যক্তিতে ঈশ্বরের কার্য্য যেন প্রকাশিত হয়, তাই এমন হইয়াছে। যতক্ষণ দিনমান ততক্ষণ, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার কার্য্য আমাদিগকে করিতে হইবে; রাত্রি আসিতেছে, তখন কেহ কার্য্য করিতে পারে না। আমি যখন জগতে আছি, তখন জগতের জ্যোতি রহিয়াছি। এই কথা বলিয়া তিনি ভূমিতে থুথু ফেলিয়া সেই থুথু দিয়া কাদা করিলেন; পরে ঐ ব্যক্তির চক্ষুতে সেই কাদা লেপন করিলেন ও তাহাকে কহিলেন, শীলোহ সরোবরে যাও, ধুইয়া ফেল; অনুবাদ করিলে এই নামের অর্থ ‘প্রেরিত’। তখন সে গিয়া ধুইয়া ফেলিল, এবং দেখিতে দেখিতে আসিল। তখন প্রতিবাসীরা, এবং যাহারা পূর্ব্বে তাহাকে দেখিয়াছিল যে, সে ভিক্ষা করিত, তাহারা বলিতে লাগিল, এ কি সেই নয়, যে বসিয়া ভিক্ষা চাহিত? কেহ কেহ বলিল, সেই বটে; আর কেহ কেহ বলিল, না, কিন্তু তাহারই মত; সে বলিল আমি সেই। তখন তাহারা তাহাকে বলিল, তবে কি প্রকারে তোমার চক্ষু খুলিয়া গেল? সে উত্তর করিল, যীশু নামে সেই ব্যক্তি কাদা করিয়া আমার চক্ষুতে লেপন করিলেন, আর আমাকে বলিলেন, শীলোহে যাও, ধুইয়া ফেল; তাহাতে আমি গিয়া ধুইয়া ফেলিলে দৃষ্টি পাইলাম। তাহারা তাহাকে কহিল, সে ব্যক্তি কোথায়? সে বলিল, তাহা জানি না। পূর্ব্বে যে অন্ধ ছিল, তাহাকে তাহারা ফরীশীদের নিকটে লইয়া গেল। যে দিন যীশু কাদা করিয়া তাহার চক্ষু খুলিয়া দেন, সেই দিন বিশ্রামবার। এই জন্য আবার ফরীশীরাও তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, কিরূপে দৃষ্টি পাইলে? সে তাহাদিগকে কহিল, তিনি আমার চক্ষের উপরে কাদা দিলেন, পরে আমি ধুইয়া ফেলিলাম, আর দেখিতে পাইতেছি। তখন কয়েক জন ফরীশী বলিল, সে ব্যক্তি ঈশ্বর হইতে আইসে নাই, কেননা সে বিশ্রামবার পালন করে না। আর কেহ কেহ বলিল, যে ব্যক্তি পাপী, সে কি প্রকারে এমন সকল চিহ্ন-কার্য্য করিতে পারে? এইরূপে তাহাদের মধ্যে মতভেদ হইল। পরে তাহারা পুনরায় সেই অন্ধকে কহিল, তুমি তাহার বিষয়ে কি বল? কারণ সে তোমারই চক্ষু খুলিয়া দিয়াছে। সে কহিল, তিনি ভাববাদী। যিহূদীরা তাহার বিষয়ে বিশ্বাস করিল না যে, সে অন্ধ ছিল আর দৃষ্টি পাইয়াছে, এই জন্য তাহারা ঐ দৃষ্টিপ্রাপ্ত ব্যক্তির পিতামাতাকে ডাকাইয়া তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিল, এ কি তোমাদের পুত্র, যাহার বিষয়ে তোমরা বলিয়া থাক, এ অন্ধই জন্মিয়াছিল? তবে এখন কি প্রকারে দেখিতে পাইতেছে? তাহার পিতামাতা উত্তর করিয়া কহিল, আমরা জানি, এ আমাদের পুত্র, এবং অন্ধই জন্মিয়াছিল, কিন্তু এখন কি প্রকারে দেখিতে পাইতেছে, তাহা জানি না, এবং কেই বা ইহার চক্ষু খুলিয়া দিয়াছে, তাহাও আমরা জানি না; ইহাকেই জিজ্ঞাসা করুন, এ বয়ঃপ্রাপ্ত, আপনার কথা আপনি বলিবে। তাহার পিতামাতা যিহূদীদিগকে ভয় করিত, সেই জন্য ইহা কহিল; কেননা যিহূদীরা পূর্ব্বেই স্থির করিয়াছিল, কেহ যদি তাঁহাকে খ্রীষ্ট বলিয়া স্বীকার করে, তাহা হইলে সে সমাজচ্যুত হইবে; এই কারণ তাহার পিতামাতা কহিল, এ বয়ঃপ্রাপ্ত, ইহাকেই জিজ্ঞাসা করুন। অতএব যে অন্ধ ছিল, তাহারা দ্বিতীয় বার তাহাকে ডাকিয়া কহিল, ঈশ্বরের গৌরব স্বীকার কর; আমরা জানি যে, সেই ব্যক্তি পাপী। সে উত্তর করিল, তিনি পাপী কি না, তাহা জানি না, একটী বিষয় জানি, আমি অন্ধ ছিলাম, এখন দেখিতে পাইতেছি। তাহারা তাহাকে বলিল, সে তোমার প্রতি কি করিয়াছিল? কি প্রকারে তোমার চক্ষু খুলিয়া দিল? সে উত্তর করিল, এক বার আপনাদিগকে বলিয়াছি, আপনারা শুনেন নাই; তবে আবার শুনিতে চাহেন কেন? আপনারাও কি তাঁহার শিষ্য হইতে চাহেন? তখন তাহারা তাহাকে গালি দিয়া বলিল, তুই সেই ব্যক্তির শিষ্য; আমরা মোশির শিষ্য। আমরা জানি, ঈশ্বর মোশির সঙ্গে কথা বলিয়াছিলেন; কিন্তু এ কোথা হইতে আসিল, তাহা জানি না। সেই ব্যক্তি উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিল, ইহার মধ্যে ত আশ্চর্য্য এই যে, তিনি কোথা হইতে আসিলেন, তাহা আপনারা জানেন না, তথাপি তিনি আমার চক্ষু খুলিয়া দিয়াছেন। আমরা জানি, ঈশ্বর পাপীদের কথা শুনেন। না, কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি ঈশ্বরভক্ত হয়, আর তাঁহার ইচ্ছা পালন করে, তিনি তাহারই কথা শুনেন কখনও শুনা যায় নাই যে, কেহ জন্মান্ধের চক্ষু খুলিয়া দিয়াছে। তিনি যদি ঈশ্বর হইতে না আসিতেন, তবে কিছুই করিতে পারিতেন না। তাহারা উত্তর করিয়া তাহাকে কহিল, তুই একেবারে পাপেই জন্মিয়াছিস্‌, আর তুই আমাদিগকে শিক্ষা দিতেছিস্‌? পরে তাহারা তাহাকে বাহির করিয়া দিল। যীশু শুনিলেন যে, তাহারা তাহাকে বাহির করিয়া দিয়াছে; আর তিনি তাহার দেখা পাইয়া বলিলেন, তুমি কি ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাস করিতেছ? সে উত্তর করিয়া কহিল, প্রভু, তিনি কে? আমি যেন তাঁহাতে বিশ্বাস করি। যীশু তাহাকে কহিলেন, তুমি তাঁহাকে দেখিয়াছ; আর তিনিই তোমার সঙ্গে কথা কহিতেছেন। সে কহিল, বিশ্বাস করিতেছি, প্রভু; আর সে তাঁহাকে প্রণাম করিল। তখন যীশু বলিলেন, বিচারের জন্য আমি এ জগতে আসিয়াছি, যেন যাহারা দেখে না, তাহারা দেখিতে পায়, এবং যাহারা দেখে, তাহারা যেন অন্ধ হয়। ফরীশীদের মধ্যে যাহারা তাঁহার সঙ্গে ছিল, তাহারা এই সকল কথা শুনিল, আর তাঁহাকে কহিল, আমরাও কি অন্ধ না কি? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, যদি অন্ধ হইতে, তোমাদের পাপ থাকিত না; কিন্তু এখন তোমরা বলিয়া থাক, আমরা দেখিতেছি; তোমাদের পাপ রহিয়াছে। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে কেহ দ্বার দিয়া মেষদের খোঁয়াড়ে প্রবেশ না করে, কিন্তু আর কোন দিক্‌ দিয়া উঠে, সে চোর ও দস্যু। কিন্তু যে দ্বার দিয়া প্রবেশ করে, সে মেষদের পালক। তাহাকেই দ্বারী দ্বার খুলিয়া দেয়, এবং মেষেরা তাহার রব শুনে; আর সে নাম ধরিয়া তাহার নিজের মেষদিগকে ডাকে, ও বাহিরে লইয়া যায়। যখন সে নিজের সকলগুলিকে বাহির করে, তখন তাহাদের অগ্রে অগ্রে গমন করে; আর মেষেরা তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলে, কারণ তাহারা তাহার রব জানে। কিন্তু তাহারা কোন মতে অপর লোকের পশ্চাৎ যাইবে না, বরং তাহার নিকট হইতে পলায়ন করিবে; কারণ অপর লোকদের রব তাহারা জানে না। এই দৃষ্টান্তটী যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে যে কি বলিলেন, তাহা তাহারা বুঝিল না। অতএব যীশু পুনর্ব্বার তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, আমিই মেষদিগের দ্বার। যাহারা আমার পূর্ব্বে আসিয়াছিল, তাহারা সকলে চোর ও দস্যু, কিন্তু মেষেরা তাহাদের রব শুনে নাই। আমিই দ্বার, আমা দিয়া যদি কেহ প্রবেশ করে, সে পরিত্রাণ পাইবে, এবং ভিতরে আসিবে ও বাহিরে যাইবে ও চরাণী পাইবে। চোর আইসে, কেবল যেন চুরি, বধ ও বিনাশ করিতে পারে; আমি আসিয়াছি, যেন তাহারা জীবন পায় ও উপচয় পায়। আমিই উত্তম মেষপালক; উত্তম মেষপালক মেষদের জন্য আপন প্রাণ সমর্পণ করে। যে বেতনজীবী, মেষপালক নয়, মেষ সকল যাহার নিজের নয়, সে কেন্দুয়া আসিতে দেখিলে মেষগুলি ফেলিয়া পলায়ন করে; তাহাতে কেন্দুয়া তাহাদিগকে ধরিয়া লইয়া যায়, ও ছিন্নভিন্ন করিয়া ফেলে; সে পলায়ন করে, কারণ সে বেতনজীবী, মেষদিগের জন্য চিন্তা করে না। আমিই উত্তম মেষপালক; আমার নিজের সকলকে আমি জানি, এবং আমার নিজের সকলে আমাকে জানে, যেমন পিতা আমাকে জানেন, ও আমি পিতাকে জানি; এবং মেষদিগের জন্য আমি আপন প্রাণ সমর্পণ করি। আমার আরও মেষ আছে, সে সকল এ খোঁয়াড়ের নয়; তাহাদিগকেও আমার আনিতে হইবে, এবং তাহারা আমার রব শুনিবে, তাহাতে এক পাল, ও এক পালক হইবে। পিতা আমাকে এই জন্য প্রেম করেন, কারণ আমি আপন প্রাণ সমর্পণ করি, যেন পুনরায় তাহা গ্রহণ করি। কেহ আমা হইতে তাহা হরণ করে না, বরং আমি আপনা হইতেই তাহা সমর্পণ করি। তাহা সমর্পণ করিতে আমার ক্ষমতা আছে; এবং পুনরায় তাহা গ্রহণ করিতেও আমার ক্ষমতা আছে; এই আদেশ আমি আপন পিতা হইতে পাইয়াছি। এই সকল বাক্য হেতু যিহূদীদের মধ্যে পুনরায় মতভেদ হইল। তাহাদের মধ্যে অনেকে কহিল, এ ভূতগ্রস্ত ও পাগল, ইহার কথা কেন শুনিতেছে? অন্যেরা বলিল, এ সকল ত ভূতগ্রস্ত লোকের কথা নয়; ভূত কি অন্ধদের চক্ষু খুলিয়া দিতে পারে? সেই সময়ে যিরূশালেমে মন্দির-প্রতিষ্ঠার পর্ব্ব উপস্থিত হইল; তখন শীতকাল; আর যীশু ধর্ম্মধামে শলোমনের বারাণ্ডায় বেড়াইতেছিলেন। তাহাতে যিহূদীরা তাঁহাকে ঘেরিয়া বলিতে লাগিল, আর কত কাল আমাদের প্রাণ দোলায়মান রাখিতেছ? তুমি যদি খ্রীষ্ট হও, স্পষ্ট করিয়া আমাদিগকে বল। যীশু উত্তর করিলেন, আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি, আর তোমরা বিশ্বাস কর না; আমি যে সকল কার্য্য আমার পিতার নামে করিতেছি, সেই সমস্ত আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেছে। কিন্তু তোমরা বিশ্বাস কর না, কারণ তোমরা আমার মেষদের মধ্যে নহ। আমার মেষেরা আমার রব শুনে, আর আমি তাহাদিগকে জানি, এবং তাহারা আমার পশ্চাদগমন করে; আর আমি তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দিই, তাহারা কখনই বিনষ্ট হইবে না, এবং কেহই আমার হস্ত হইতে তাহাদিগকে কাড়িয়া লইবে না। আমার পিতা, যিনি তাহাদের আমাকে দিয়াছেন, তিনি সর্ব্বাপেক্ষা মহান্‌; এবং কেহই পিতার হস্ত হইতে কিছুই কাড়িয়া লইতে পারে না। আমি ও পিতা, আমরা এক। যিহূদীরা আবার তাঁহাকে মারিবার জন্য পাথর তুলিল। যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিলেন, পিতা হইতে তোমাদিগকে অনেক উত্তম কার্য্য দেখাইয়াছি, তাহার কোন্‌ কার্য্য প্রযুক্ত আমাকে পাথর মার? যিহূদীরা তাঁহাকে এই উত্তর দিল, উত্তম কার্য্যের জন্য তোমাকে পাথর মারি না, কিন্তু ঈশ্বর-নিন্দার জন্য, কারণ তুমি মানুষ হইয়া আপনাকে ঈশ্বর করিয়া তুলিতেছ, এই জন্য। যীশু তাহাদিগকে উত্তর করিলেন, তোমাদের ব্যবস্থায় কি লিখিত নাই, “আমি বলিলাম, তোমরা ঈশ্বর”? যাহাদের নিকটে ঈশ্বরের বাক্য উপস্থিত হইয়াছিল, তিনি যদি তাহাদিগকে ঈশ্বর বলিলেন—আর শাস্ত্রের খণ্ডন ত হইতে পারে না— তবে যাঁহাকে পিতা পবিত্র করিলেন ও জগতে প্রেরণ করিলেন, তোমরা কি তাঁহাকে বল যে, তুমি ঈশ্বরনিন্দা করিতেছ, কেননা আমি বলিলাম যে, আমি ঈশ্বরের পুত্র? আমার পিতার কার্য্য যদি না করি, তবে আমাকে বিশ্বাস করিও না। কিন্তু যদি করি, আমাকে বিশ্বাস না করিলেও, সেই কার্য্যে বিশ্বাস কর; যেন তোমরা জানিতে পার ও বুঝিতে পার যে, পিতা আমাতে আছেন, এবং আমি পিতাতে আছি। তাহারা আবার তাঁহাকে ধরিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু তিনি তাহাদের হাত এড়াইয়া বাহির হইয়া গেলেন। পরে তিনি আবার যর্দ্দনের পরপারে, যেখানে যোহন প্রথমে বাপ্তাইজ করিতেন, সেই স্থানে গেলেন; আর তথায় রহিলেন। তাহাতে অনেকে তাঁহার কাছে আসিল, এবং বলিল, যোহন কোন চিহ্ন-কার্য্য করেন নাই, কিন্তু এই ব্যক্তির বিষয়ে যোহন যে সকল কথা বলিয়াছিলেন, সে সকলই সত্য। আর সেখানে অনেকে তাঁহাতে বিশ্বাস করিল। বৈথনিয়ায় এক ব্যক্তি পীড়িত ছিলেন, তাঁহার নাম লাসার; তিনি মরিয়ম ও তাঁহার ভগিনী মার্থার গ্রামের লোক। ইনি সেই মরিয়ম, যিনি প্রভুকে সুগন্ধি তৈল মাখাইয়া দেন, এবং আপন কেশ দিয়া তাঁহার চরণ মুছাইয়া দেন; তাঁহারই ভ্রাতা লাসার পীড়িত ছিলেন। অতএব ভগিনীরা তাঁহাকে বলিয়া পাঠাইলেন, প্রভু, দেখুন, আপনি যাহাকে ভাল বাসেন তাহার পীড়া হইয়াছে। যীশু শুনিয়া কহিলেন, এ পীড়া মৃত্যুর জন্য হয় নাই, কিন্তু ঈশ্বরের গৌরবের নিমিত্ত, যেন ঈশ্বরের পুত্র ইহা দ্বারা গৌরবান্বিত হন। যীশু মার্থাকে ও তাঁহার ভগিনীকে এবং লাসারকে প্রেম করিতেন। যখন তিনি শুনিলেন যে, তাঁহার পীড়া হইয়াছে, তখন যে স্থানে ছিলেন, সেই স্থানে আর দুই দিবস রহিলেন। ইহার পরে তিনি শিষ্যগণকে কহিলেন, আইস, আমরা আবার যিহূদিয়াতে যাই। শিষ্যেরা তাঁহাকে কহিলেন, রব্বি, এই ত যিহূদীরা আপনাকে পাথর মারিবার চেষ্টা করিতেছিল, তবু আপনি আবার সেখানে যাইতেছেন? যীশু উত্তর করিলেন, দিনে কি বারো ঘন্টা নাই? যদি কেহ দিনে চলে, সে উছোট খায় না, কেননা সে এই জগতের দীপ্তি দেখে। কিন্তু যদি কেহ রাত্রিতে চলে, সে উছোট খায়, কেননা দীপ্তি তাহার মধ্যে নাই। তিনি এই কথা কহিলেন; আর ইহার পরে তাঁহাদিগকে বলিলেন, আমাদের বন্ধু লাসার নিদ্রা গিয়াছে, কিন্তু আমি নিদ্রা হইতে তাহাকে জাগাইতে যাইতেছি। তখন শিষ্যেরা তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, সে যদি নিদ্রা গিয়া থাকে, তবে রক্ষা পাইবে। যীশু তাঁহার মৃত্যুর বিষয় বলিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহারা মনে করিলেন যে, তিনি নিদ্রাঘটিত বিশ্রামের কথা বলিতেছেন। অতএব যীশু তখন স্পষ্টরূপে তাঁহাদিগকে কহিলেন, লাসার মরিয়াছে; আর তোমাদের নিমিত্ত আনন্দ করিতেছি যে, আমি সেখানে ছিলাম না, যেন তোমরা বিশ্বাস কর; তথাপি চল, আমরা তাহার কাছে যাই। তখন থোমা, যাঁহাকে দিদুমঃ [যমজ] বলে, তিনি সহ-শিষ্যদিগকে কহিলেন, চল, আমরাও যাই, যেন ইহাঁর সঙ্গে মরি। যীশু আসিয়া শুনিতে পাইলেন, লাসার তখন চারি দিন কবরে আছেন। বৈথনিয়া যিরূশালেমের সন্নিকট, কমবেশ এক ক্রোশ দূর; আর যিহূদীদের অনেকে মার্থা ও মরিয়মের নিকটে আসিয়াছিল, যেন তাঁহাদের ভ্রাতার বিষয়ে তাঁহাদিগকে সান্ত্বনা দিতে পারে। যখন মার্থা শুনিলেন, যীশু আসিতেছেন, তিনি গিয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিলেন, কিন্তু মরিয়ম গৃহে বসিয়া রহিলেন। মার্থা যীশুকে কহিলেন, প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকিতেন, আমার ভাই মরিত না। আর এখনও আমি জানি, আপনি ঈশ্বরের কাছে যে কিছু যাচ্ঞা করিবেন, তাহা ঈশ্বর আপনাকে দিবেন। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমার ভাই আবার উঠিবে। মার্থা তাঁহাকে কহিলেন, আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানে সে উঠিবে। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে; আর যে কেহ জীবিত আছে, এবং আমাতে বিশ্বাস করে, সে কখনও মরিবে না; ইহা কি বিশ্বাস কর? তিনি কহিলেন, হাঁ, প্রভু, আমি বিশ্বাস করিয়াছি যে, জগতে যাঁহার আগমন হইবে, আপনি সেই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র। ইহা বলিয়া তিনি চলিয়া গেলেন, আর আপন ভগিনী মরিয়মকে গোপনে ডাকিয়া কহিলেন, গুরু উপস্থিত, তোমাকে ডাকিতেছেন। তিনি ইহা শুনিয়া শীঘ্র উঠিয়া তাঁহার নিকটে গেলেন। যীশু তখনও গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করেন নাই; যেখানে মার্থা তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন, সেই স্থানেই ছিলেন। তখন যে যিহূদীরা মরিয়মের সঙ্গে গৃহমধ্যে ছিল ও তাঁহাকে সান্ত্বনা করিতেছিল, তাহারা তাঁহাকে শীঘ্র উঠিয়া বাহিরে যাইতে দেখিয়া, তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল, মনে করিল, তিনি কবরের নিকটে রোদন করিতে যাইতেছেন। যীশু যেখানে ছিলেন, মরিয়ম যখন সেখানে আসিলেন, তখন তাঁহাকে দেখিয়া তাঁহার চরণে পড়িয়া বলিলেন, প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকিতেন, আমার ভাই মরিত না। যীশু যখন দেখিলেন, তিনি রোদন করিতেছেন, ও তাঁহারা সঙ্গে সঙ্গে যে যিহূদীরা আসিয়াছিল, তাহারাও রোদন করিতেছে, তখন আত্মাতে উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন ও উদ্বিগ্ন হইলেন, আর কহিলেন, তাহাকে কোথায় রাখিয়াছ? তাঁহারা কহিলেন, প্রভু, আসিয়া দেখুন। যীশু কাঁদিলেন। তাহাতে যিহূদীরা কহিল, দেখ, ইনি তাঁহাকে কেমন ভাল বাসিতেন। কিন্তু তাহাদের কেহ কেহ বলিল, এই যে ব্যক্তি অন্ধের চক্ষু খুলিয়া দিয়াছেন, ইনি কি উহার মৃত্যুও নিবারণ করিতে পারিতেন না? তাহাতে যীশু পুনর্ব্বার অন্তরে উত্তেজিত হইয়া কবরের নিকটে আসিলেন। সেই কবর একটা গহ্বর, এবং তাহার উপরে একখান পাথর ছিল। যীশু বলিলেন, তোমরা পাথরখান সরাইয়া ফেল। মৃত ব্যক্তির ভগিনী মার্থা তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, এখন উহাতে দুর্গন্ধ হইয়াছে, কেননা আজ চারি দিন। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমি কি তোমাকে বলি নাই যে, যদি বিশ্বাস কর, তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখিতে পাইবে? তখন তাহারা পাথরখান সরাইয়া ফেলিল। পরে যীশু উপরের দিকে চক্ষু তুলিয়া কহিলেন, পিতঃ, তোমার ধন্যবাদ করি যে, তুমি আমার কথা শুনিয়াছ। আর আমি জানিতাম, তুমি সর্ব্বদা আমার কথা শুনিয়া থাক; কিন্তু এই যে সকল লোক চারিদিকে দাঁড়াইয়া আছে, ইহাদের নিমিত্তে এই কথা কহিলাম, যেন ইহারা বিশ্বাস করে যে, তুমিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছ। ইহা বলিয়া তিনি উচ্চরবে ডাকিয়া বলিলেন, লাসার, বাহিরে আইস। তাহাতে সেই মৃত ব্যক্তি বাহিরে আসিলেন; তাঁহার চরণ ও হস্ত কবর-বস্ত্রে বদ্ধ ছিল, এবং মুখ গামছায় বাঁধা ছিল। যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, ইহাকে খুলিয়া দেও, ও যাইতে দেও। তখন যিহূদীদের অনেকে, যাহারা মরিয়মের নিকট আসিয়াছিল, এবং যীশু যাহা করিলেন, দেখিয়াছিল, তাহারা তাঁহাতে বিশ্বাস করিল। কিন্তু তাহাদের কেহ কেহ ফরীশীদের নিকটে গেল, এবং যীশু যাহা যাহা করিয়াছিলেন, তাহাদিগকে বলিল। অতএব প্রধান যাজকগণ ও ফরীশীরা সভা করিয়া বলিতে লাগিল আমরা কি করি? এ ব্যক্তি ত অনেক চিহ্ন-কার্য্য করিতেছে। আমরা যদি ইহাকে এইরূপ চলিতে দিই, তবে সকলে ইহাতে বিশ্বাস করিবে; আর রোমীয়েরা আসিয়া আমাদের স্থান ও জাতি উভয়ই কাড়িয়া লইবে। কিন্তু তাহাদের মধ্যে এক জন, কায়াফা, সেই বৎসরের মহাযাজক, তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কিছুই বুঝ না, আর বিবেচনাও কর না যে, তোমাদের পক্ষে এটী ভাল, যেন প্রজাগণের জন্য এক ব্যক্তি মরে, আর সমস্ত জাতি বিনষ্ট না হয়। এই কথা যে তিনি আপনা হইতে বলিলেন, তাহা নয়, কিন্তু সেই বৎসরের মহাযাজক হওয়াতে তিনি এই ভাববাণী বলিলেন যে, সেই জাতির জন্য যীশু মরিবেন। আর কেবল সেই জাতির জন্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের যে সকল সন্তান ছিন্ন ভিন্ন হইয়াছিল, সেই সকলকে যেন একত্র করিয়া এক করেন, এই জন্য। অতএব সেই দিন অবধি তাহারা তাঁহাকে বধ করিবার মন্ত্রণা করিতে লাগিল; তাহাতে যীশু আর প্রকাশ্যরূপে যিহূদীদের মধ্যে যাতায়াত করিলেন না, কিন্তু তথা হইতে প্রান্তরের নিকটবর্ত্তী জনপদে ইফ্রয়িম নামক নগরে গেলেন, আর সেখানে শিষ্যদের সহিত অবস্থিতি করিলেন। তখন যিহূদীদের নিস্তারপর্ব্ব সন্নিকট ছিল, এবং অনেক লোক আপনাদিগকে শুচি করিবার জন্য নিস্তারপর্ব্বের পূর্ব্বে জনপদ হইতে যিরূশালেমে গেল। তাহারা যীশুর অন্বেষণ করিতে লাগিল, এবং ধর্ম্মধামে দাঁড়াইয়া পরস্পর কহিল, তোমাদের কেমন বোধ হয়? তিনি কি পর্ব্বে আসিবেন না? আর প্রধান যাজকেরা ও ফরীশীরা আজ্ঞা করিয়াছিল যে, তিনি কোথায় আছেন, তাহা যদি কেহ জানে, তবে দেখাইয়া দিউক; যেন তাহারা তাঁহাকে ধরিতে পারে। পরে নিস্তারপর্ব্বের ছয় দিন পূর্ব্বে যীশু বৈথনিয়াতে আসিলেন; সেখানে সেই লাসার ছিলেন, যাঁহাকে যীশু মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছিলেন। তাহাতে সেই স্থানে তাঁহার নিমিত্ত ভোজ প্রস্তুত করা হইল, ও মার্থা পরিচর্য্যা করিলেন, এবং যাহারা তাঁহার সঙ্গে ভোজনে বসিয়াছিল, লাসার তাহাদের মধ্যে এক জন ছিলেন। তখন মরিয়ম অর্দ্ধ সের বহুমূল্য জটামাংসীর আতর আনিয়া যীশুর চরণে মাখাইয়া দিলেন, এবং আপন কেশ দ্বারা তাঁহার চরণ মুছাইয়া দিলেন; তাহাতে আতরের সুগন্ধে গৃহ পরিপূর্ণ হইল। কিন্তু ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা, তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে এক জন, যে তাঁহাকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিবে, সে কহিল, এই আতর তিন শত সিকিতে বিক্রয় করিয়া কেন দরিদ্রদিগকে দেওয়া গেল না? সে যে দরিদ্র লোকদের জন্য চিন্তা করিত বলিয়া এই কথা কহিল, তাহা নয়; কিন্তু কারণ এই, সে চোর, আর তাহার নিকটে টাকার থলী থাকাতে তাহার মধ্যে যাহা রাখা যাইত, তাহা হরণ করিত। তখন যীশু কহিলেন, আমার সমাধি-দিনের জন্য ইহাকে উহা রাখিতে দেও। কেননা তোমাদের কাছে দরিদ্রেরা সর্ব্বদাই আছে, কিন্তু আমাকে সর্ব্বদা পাইতেছ না। যিহূদীদের সাধারণ লোকেরা জানিতে পারিল যে, তিনি সেই স্থানে আছেন; আর তাহারা কেবল যীশুর নিমিত্ত আসিল, তাহা নয়, কিন্তু যে লাসারকে তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছিলেন, তাঁহাকেও দেখিতে আসিল। কিন্তু প্রধান যাজকেরা মন্ত্রণা করিল, যেন লাসারকেও বধ করিতে পারে; কেননা তাঁহারই নিমিত্ত যিহূদীদের মধ্যে অনেকে গিয়া যীশুতে বিশ্বাস করিতে লাগিল। পরদিন পর্ব্বে আগত বিস্তর লোক, যীশু যিরূশালেমে আসিতেছেন শুনিতে পাইয়া, খর্জ্জুর-পত্র লইয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে বাহির হইল, আর উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, হোশান্না; ধন্য তিনি, যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন, যিনি ইস্রায়েলের রাজা। তখন যীশু একটী গর্দ্দভশাবক পাইয়া তাহার উপরে বসিলেন, যেমন লেখা আছে, “অয়ি সিয়োন-কন্যে, ভয় করিও না, দেখ, তোমার রাজা আসিতেছেন, গর্দ্দভ-শাবকে চড়িয়া আসিতেছেন।” তাঁহার শিষ্যেরা প্রথমে এই সমস্ত বুঝিলেন না, কিন্তু যীশু যখন মহিমান্বিত হইলেন, তখন তাঁহাদের স্মরণ হইল যে, তাঁহার বিষয়ে এই সকল লিখিত ছিল, আর লোকেরা তাঁহার প্রতি এই সকল করিয়াছে। তিনি যখন লাসারকে কবর হইতে আসিতে ডাকেন, এবং মৃতগণের মধ্য হইতে উঠান, তখন যে লোকসমূহ তাঁহার সঙ্গে ছিল, তাহারা সাক্ষ্য দিতে লাগিল। আর এই কারণ লোকসমূহ গিয়া তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিল, কেননা তাহারা শুনিয়াছিল যে, তিনি সেই চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছেন। তখন ফরীশীরা পরস্পর বলিতে লাগিল, তোমরা দেখিতেছ, তোমাদের সমস্ত চেষ্টা বিফল; দেখ, জগৎসংসার উহার পশ্চাদাগামী হইয়াছে। যাহারা ভজনা করিবার জন্য পর্ব্বে আসিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে কয়েক জন গ্রীক ছিল; ইহারা গালীলের বৈৎসৈদা নিবাসী ফিলিপের নিকটে আসিয়া তাঁহাকে বিনতি করিল, মহাশয়, আমরা যীশুকে দেখিতে ইচ্ছা করি। ফিলিপ আসিয়া আন্দ্রিয়কে বলিলেন, আন্দ্রিয় ও ফিলিপ আসিয়া যীশুকে বলিলেন। তখন যীশু তাঁহাদিগকে উত্তর করিয়া বলিলেন, সময় উপস্থিত, যেন মনুষ্যপুত্র মহিমান্বিত হন। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, গোমের বীজ যদি মৃত্তিকায় পড়িয়া না মরে, তবে তাহা একটী মাত্র থাকে; কিন্তু যদি মরে, তবে অনেক ফল উৎপন্ন করে। যে আপন প্রাণ ভাল বাসে, সে তাহা হারায়; আর যে এই জগতে আপন প্রাণ অপ্রিয় জ্ঞান করে, সে অনন্ত জীবনের নিমিত্ত তাহা রক্ষা করিবে। কেহ যদি আমার পরিচর্য্যা করে, তবে সে আমার পশ্চাদাগামী হউক; তাহাতে আমি যেখানে থাকি, আমার পরিচারকও সেইখানে থাকিবে; কেহ যদি আমার পরিচার্য্যা করে, তবে পিতা তাহার সম্মান করিবেন। এখন আমার প্রাণ উদ্বিগ্ন হইয়াছে; ইহাতে কি বলিব? পিতঃ, এই সময় হইতে আমাকে রক্ষা কর? কিন্তু ইহারই নিমিত্ত আমি এই সময় পর্য্যন্ত আসিয়াছি। পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর। তখন স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘আমি তাহা মহিমান্বিত করিয়াছি, আবার মহিমান্বিত করিব।’ যে লোকসমূহ দাঁড়াইয়া শুনিয়াছিল, তাহারা বলিল, মেঘগর্জ্জন হইল; আর কেহ কেহ বলিল, কোন স্বর্গ-দূত ইহাঁর সহিত কথা কহিলেন। যীশু উত্তর করিয়া কহিলেন, ঐ বাণী আমার জন্য হয় নাই, কিন্তু তোমাদেরই জন্য। এখন এ জগতের বিচার উপস্থিত, এখন এ জগতের অধিপতি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইবে। আর আমি ভূতল হইতে উচ্চীকৃত হইলে সকলকে আমার নিকটে আকর্ষণ করিব। তিনি যে কিরূপ মরণে মরিবেন, তাহা এই বাক্য দ্বারা নির্দ্দেশ করিলেন। তখন লোকসমূহ তাঁহাকে উত্তর করিল, আমরা ব্যবস্থা হইতে শুনিয়াছি যে, খ্রীষ্ট চিরকাল থাকেন; তবে আপনি কি প্রকারে বলিতেছেন যে, মনুষ্যপুত্রকে উচ্চীকৃত হইতে হইবে? সেই মনুষ্য পুত্র কে? তখন যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, আর অল্প কালমাত্র জ্যোতি তোমাদের মধ্যে আছে। যাবৎ তোমাদের কাছে জ্যোতি আছে, যাতায়াত কর, যেন অন্ধকার তোমাদের উপরে আসিয়া না পড়ে; আর যে ব্যক্তি অন্ধকারে যাতায়াত করে, সে কোথায় যায়, তাহা জানে না। যাবৎ তোমাদের কাছে জ্যোতি আছে, সেই জ্যোতিতে বিশ্বাস কর, যেন তোমরা জ্যোতির সন্তান হইতে পার। যীশু এই সকল কথা বলিলেন, আর প্রস্থান করিয়া তাহাদের হইতে লুকাইলেন। কিন্তু যদিও তিনি তাহাদের সাক্ষাতে এত চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছিলেন, তথাপি তাহারা তাঁহাকে বিশ্বাস করিল না; যেন যিশাইয় ভাববাদীর বাক্য পূর্ণ হয়, তিনি ত বলিয়াছিলেন, “হে প্রভু, আমরা যাহা শুনিয়াছি, তাহা কে বিশ্বাস করিয়াছে? আর প্রভুর বাহু কাহার কাছে প্রকাশিত হইয়াছে?” এই জন্য তাহারা বিশ্বাস করিতে পারে নাই, কারণ যিশাইয় আবার বলিয়াছেন, “তিনি তাহাদের চক্ষু অন্ধ করিয়াছেন, তাহাদের হৃদয় কঠিন করিয়াছেন, পাছে তাহারা চক্ষে দেখে, হৃদয়ে বুঝে, এবং ফিরিয়া আইসে, আর আমি তাহাদিগকে সুস্থ করি।” যিশাইয় এই সমস্ত বলিয়াছিলেন, কেননা তিনি তাঁহার মহিমা দেখিয়াছিলেন, আর তাঁহারই বিষয় বলিয়াছিলেন। তথাপি অধ্যক্ষদের মধ্যেও অনেকে তাঁহাতে বিশ্বাস করিল; কিন্তু ফরীশীদের ভয়ে স্বীকার করিল না, পাছে সমাজচ্যুত হয়; কেননা ঈশ্বরের কাছে গৌরব অপেক্ষা তাহারা বরং মনুষ্যদের কাছে গৌরব অধিক ভাল বাসিত। যীশু উচ্চৈঃস্বরে বলিলেন, যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে আমাতে নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহাতেই বিশ্বাস করে; এবং যে আমাকে দর্শন করে, সে তাঁহাকেই দর্শন করে, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন। আমি জ্যোতিঃস্বরূপ হইয়া এই জগতে আসিয়াছি, যেন, যে কেহ আমাতে বিশ্বাস করে, সে অন্ধকারে না থাকে। আর যদি কেহ আমার কথা শুনিয়া পালন না করে, আমি তাহার বিচার করি না, কারণ আমি জগতের বিচার করিতে নয়, কিন্তু জগতের পরিত্রাণ করিতে আসিয়াছি। যে আমাকে অগ্রাহ্য করে, এবং আমার কথা গ্রহণ না করে, তাহার বিচারকর্ত্তা আছে; আমি যে বাক্য বলিয়াছি, তাহাই শেষ দিনে তাহার বিচার করিবে। কারণ আমি আপনা হইতে বলি নাই; কিন্তু কি কহিব ও কি বলিব, তাহা আমার পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমাকে আজ্ঞা করিয়াছেন। আর আমি জানি যে, তাঁহার আজ্ঞা অনন্ত জীবন। অতএব আমি যাহা যাহা বলি, তাহা পিতা আমাকে যেমন কহিয়াছেন, তেমনি বলি। নিস্তারপর্ব্বের পূর্ব্বে যীশু, এই জগৎ হইতে পিতার কাছে আপনার প্রস্থান করিবার সময় উপস্থিত জানিয়া, জগতে অবস্থিত আপনার নিজস্ব যে লোকদিগকে প্রেম করিতেন, তাহাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত প্রেম করিলেন। আর রাত্রিভোজের সময়ে—দিয়াবল তাঁহাকে সমর্পণ করিবার সঙ্কল্প শিমোনের পুত্র ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার হৃদয়ে স্থাপন করিলে পর —তিনি জানিলেন, যে, পিতা সমস্তই তাঁহার হস্তে প্রদান করিয়াছেন ও তিনি ঈশ্বরের নিকট হইতে আসিয়াছেন, আর ঈশ্বরের নিকটে যাইতেছেন; জানিয়া তিনি ভোজ হইতে উঠিলেন, এবং উপরের বস্ত্র খুলিয়া রাখিলেন, আর একখানি গামছা লইয়া কটি বন্ধন করিলেন। পরে তিনি পাত্রে জল ঢালিলেন ও শিষ্যদের পা ধুইয়া দিতে লাগিলেন, এবং যে গামছা দ্বারা কটি বন্ধন করিয়াছিলেন তাহা দিয়া মুছাইয়া দিতে লাগিলেন। এইরূপে তিনি শিমোন পিতরের নিকটে আসিলেন। পিতর তাঁহাকে বলিলেন, প্রভু, আপনি কি আমার পা ধুইয়া দিবেন? যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আমি যাহা করিতেছি, তাহা তুমি এক্ষণে জান না, কিন্তু ইহার পরে বুঝিবে। পিতর তাঁহাকে বলিলেন, আপনি কখনও আমার পা ধুইয়া দিবেন না। যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, যদি তোমাকে ধৌত না করি, তবে আমার সহিত তোমার কোন অংশ নাই। শিমোন পিতর বলিলেন, প্রভু, কেবল পা নয়, আমার হাত ও মাথাও ধুইয়া দিউন। যীশু তাঁহাকে বলিলেন, যে স্নান করিয়াছে, পা ধোয়া ভিন্ন আর কিছুতে তাহার প্রয়োজন নাই, সে ত সর্ব্বাঙ্গে শুচি; আর তোমরা শুচি, কিন্তু সকলে নহ। কেননা যে ব্যক্তি তাঁহাকে সমর্পণ করিবে, তাহাকে তিনি জানিতেন; এই জন্য বলিলেন, তোমরা সকলে শুচি নহ। যখন তিনি তাঁহাদের পা ধুইয়া দিলেন, আর আপনার উপরের বস্ত্র পরিয়া পুনর্ব্বার বসিলেন, তখন তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি তোমাদের প্রতি কি করিলাম, জান? তোমরা আমাকে গুরু ও প্রভু বলিয়া সম্বোধন করিয়া থাক; আর তাহা ভালই বল, কেননা আমি সেই। ভাল, আমি প্রভু ও গুরু হইয়া যখন তোমাদের পা ধুইয়া দিলাম, তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধোয়ান উচিত? কেননা আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম, যেন তোমাদের প্রতি আমি যেমন করিয়াছি, তোমরাও তদ্রূপ কর। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, দাস নিজ প্রভু হইতে বড় নয়, ও প্রেরিত নিজ প্রেরণকর্ত্তা হইতে বড় নয়। এ সকল যখন তোমরা জান, ধন্য তোমরা, যদি এ সকল পালন কর। তোমাদের সকলের বিষয়ে আমি বলিতেছি না; আমি কাহাকে কাহাকে মনোনীত করিয়াছি, তাহা আমি জানি; কিন্তু শাস্ত্রের এই বচন পূর্ণ হওয়া চাই, “যে আমার রুটী খায়, সে আমার বিরুদ্ধে পাদমূল উঠাইয়াছে।” এখন হইতে, ঘটিবার পূর্ব্বে, আমি তোমাদিগকে বলিয়া রাখিতেছি, যেন, ঘটিলে পর তোমরা বিশ্বাস কর যে, আমিই তিনি। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, আমি যে কোন ব্যক্তিকে পাঠাই, তাহাকে যে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে, এবং আমাকে যে গ্রহণ করে, সে তাঁহাকে গ্রহণ করে, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন। এই কথা বলিয়া যীশু আত্মাতে উদ্বিগ্ন হইলেন, আর সাক্ষ্য দিয়া কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমাদের মধ্যে এক জন আমাকে সমর্পণ করিবে। শিষ্যেরা এক জন অন্যের দিকে চাহিতে লাগিলেন, স্থির করিতে পারিলেন না, তিনি কাহার বিষয় বলিলেন। তখন যীশুর শিষ্যদের এক জন, যাঁহাকে যীশু প্রেম করিতেন, তিনি তাঁহার কোলে হেলান দিয়া বসিয়াছিলেন। তখন শিমোন পিতর তাঁহাকে ইঙ্গিত করিলেন ও কহিলেন বল, উনি যাহার বিষয় বলিতেছেন, সে কে? তাহাতে তিনি সেইরূপ বসিয়া থাকাতে যীশুর বক্ষঃস্থলের দিকে পশ্চাতে হেলিয়া বলিলেন, প্রভু, সে কে? যীশু উত্তর করিলেন, যাহার জন্য আমি রুটীখণ্ড ডুবাইব ও যাহাকে দিব, সেই। পরে তিনি রুটীখণ্ড ডুবাইয়া লইয়া ঈষ্করিয়োতীয় শিমোনের পুত্র যিহূদাকে দিলেন। আর সেই রুটীখণ্ডের পরেই শয়তান তাহার মধ্যে প্রবেশ করিল। তখন যীশু তাহাকে কহিলেন, যাহা করিতেছ, শীঘ্র কর। কিন্তু তিনি কি ভাবে তাহাকে এ কথা কহিলেন, যাঁহারা ভোজনে বসিয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে কেহ তাহা বুঝিলেন না; যিহূদার কাছে টাকার থলী থাকাতে কেহ কেহ মনে করিলেন, যীশু তাহাকে বলিলেন, পর্ব্বের নিমিত্ত যাহা যাহা আবশ্যক কিনিয়া আন, কিম্বা সে যেন দরিদ্রদিগকে কিছু দেয়। রুটীখণ্ড গ্রহণ করিয়া সে তৎক্ষণাৎ বাহিরে গেল; তখন রাত্রিকাল। সে বাহিরে গেলে পর যীশু কহিলেন, এখন মনুষ্যপুত্র মহিমান্বিত হইলেন, এবং ঈশ্বর তাঁহাতে মহিমান্বিত হইলেন। ঈশ্বর যখন তাঁহাতে মহিমান্বিত হইলেন, তখন ঈশ্বরও তাঁহাকে আপনাতে মহিমান্বিত করিবেন, আর শীঘ্রই তাঁহাকে মহিমান্বিত করিবেন। বৎসেরা, এখনও অল্পকাল আমি তোমাদের সঙ্গে আছি; তোমরা আমার অন্বেষণ করিবে, আর আমি যেমন যিহূদীদিগকে বলিয়াছিলাম, ‘আমি যেখানে যাইতেছি, সেখানে তোমরা যাইতে পার না,’ তদ্রূপ এখন তোমাদিগকেও বলিতেছি। এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর। তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য। শিমোন পিতর তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, আপনি কোথায় যাইতেছেন? যীশু উত্তর করিলেন, আমি যেখানে যাইতেছি, সেখানে তুমি এখন আমার পশ্চাৎ যাইতে পার না; কিন্তু পরে যাইতে পারিবে। পিতর তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, কি জন্য এখন আপনার পশ্চাৎ যাইতে পারি না? আপনার নিমিত্ত আমি আমার প্রাণ দিব। যীশু উত্তর করিলেন, আমার নিমিত্ত তুমি কি তোমার প্রাণ দিবে? সত্য, সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, যাবৎ তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার না কর, তাবৎ কুকুড়া ডাকিবে না। তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক; ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমাতেও বিশ্বাস কর। আমার পিতার বাটীতে অনেক বাসস্থান আছে, যদি না থাকিত, তোমাদিগকে বলিতাম; কেননা আমি তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করিতে যাইতেছি। আর আমি যখন যাই ও তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করি, তখন পুনর্ব্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; যেন, আমি যেখানে থাকি, তোমরাও সেই খানে থাক। আর আমি যেখানে যাইতেছি, তোমরা তাহার পথ জান। থোমা তাঁহাকে বলিলেন, প্রভু, আপনি কোথায় যাইতেছেন, তাহা আমরা জানি না, পথ কিসে জানিব? যীশু তাঁহাকে বলিলেন, আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না। যদি তোমরা আমাকে জানিতে, তবে আমার পিতাকেও জানিতে; এখন অবধি তাঁহাকে জানিতেছ এবং দেখিয়াছ। ফিলিপ তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, পিতাকে আমাদের দেখাউন, তাহাই আমাদের যথেষ্ট। যীশু তাঁহাকে বলিলেন, ফিলিপ, এত দিন আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, তথাপি তুমি আমাকে কি জান না? যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে; তুমি কেমন করিয়া বলিতেছ, পিতাকে আমাদের দেখাউন? তুমি কি বিশ্বাস কর না যে, আমি পিতাতে আছি এবং পিতা আমাতে আছেন? আমি তোমাদিগকে যে সকল কথা বলি, তাহা আপনা হইতে বলি না; কিন্তু পিতা আমাতে থাকিয়া আপনার কার্য্য সকল সাধন করেন। আমার কথায় বিশ্বাস কর যে, আমি পিতাতে আছি এবং পিতা আমাতে আছেন; আর না হয়, সেই সকল কার্য্য প্রযুক্তই বিশ্বাস কর। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এ সকল হইতেও বড় বড় কার্য্য করিবে; কেননা আমি পিতার নিকটে যাইতেছি; আর তোমরা আমার নামে যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, তাহা আমি সাধন করিব, যেন পিতা পুত্রে মহিমান্বিত হন। যদি আমার নামে আমার কাছে কিছু যাচ্ঞা কর, তবে আমি তাহা করিব। তোমরা যদি আমাকে প্রেম কর, তবে আমার আজ্ঞা সকল পালন করিবে। আর আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব, এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন; তিনি সত্যের আত্মা; জগৎ তাঁহাকে গ্রহণ করিতে পারে না, কেননা সে তাঁহাকে দেখে না, তাঁহাকে জানেও না; তোমরা তাঁহাকে জান, কারণ তিনি তোমাদের নিকটে অবস্থিতি করেন ও তোমাদের অন্তরে থাকিবেন। আমি তোমাদিগকে অনাথ রাখিয়া যাইব না, আমি তোমাদের নিকটে আসিতেছি। আর অল্প কাল গেলে জগৎ আর আমাকে দেখিতে পাইবে না, কিন্তু তোমরা দেখিতে পাইবে; কারণ আমি জীবিত আছি, এই জন্য তোমরাও জীবিত থাকিবে। সেই দিন তোমরা জানিবে যে, আমি আমার পিতাতে আছি, ও তোমরা আমাতে আছ, এবং আমি তোমাদিগেতে আছি। যে ব্যক্তি আমার আজ্ঞা সকল প্রাপ্ত হইয়া সে সকল পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে; আর যে আমাকে প্রেম করে, আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন; এবং আমিও তাহাকে প্রেম করিব, আর আপনাকে তাহার কাছে প্রকাশ করিব। তখন যিহূদা—ঈষ্করিয়োতীয় নয়—তাঁহাকে বলিলেন, প্রভু, কি হইয়াছে যে, আপনি আমাদেরই কাছে আপনাকে প্রকাশ করিবেন, আর জগতের কাছে নয়? যীশু উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, কেহ যদি আমাকে প্রেম করে, তবে সে আমার বাক্য পালন করিবে; আর আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন, এবং আমরা তাহার নিকটে আসিব ও তাহার সহিত বাস করিব। যে আমাকে প্রেম করে না, সে আমার বাক্য সকল পালন করে না। আর তোমরা যে বাক্য শুনিতে পাইতেছ, তাহা আমার নয়, কিন্তু পিতার, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন। তোমাদের নিকটে থাকিতে থাকিতেই আমি এই সকল কথা কহিলাম। কিন্তু সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সে সকল স্মরণ করাইয়া দিবেন। শান্তি আমি তোমাদের কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি; জগৎ যেরূপ দান করে, আমি সেরূপ দান করি না। তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক, ভীতও না হউক। তোমরা শুনিয়াছ যে, আমি তোমাদিগকে বলিয়াছি, আমি যাইতেছি, আবার তোমাদের কাছে আসিতেছি। যদি তোমরা আমাকে প্রেম করিতে, তবে আনন্দ করিতে যে, আমি পিতার নিকটে যাইতেছি; কারণ পিতা আমা অপেক্ষা মহান্‌। আর এখন, ঘটিবার পূর্ব্বে, আমি তোমাদিগকে বলিলাম, যেন ঘটিলে পর তোমরা বিশ্বাস কর। আমি তোমাদের সহিত আর অধিক কথা বলিব না; কারণ জগতের অধিপতি আসিতেছে, আর আমাতে তাহার কিছুই নাই; কিন্তু জগৎ যেন জানিতে পায় যে, আমি পিতাকে প্রেম করি, এবং পিতা আমাকে যেরূপ আজ্ঞা দিয়াছেন, আমি সেইরূপ করি। উঠ, আমরা এ স্থান হইতে প্রস্থান করি। আমি প্রকৃত দ্রাক্ষালতা, এবং আমার পিতা কৃষক। আমাতে স্থিত যে কোন শাখায় ফল না ধরে, তাহা তিনি কাটিয়া ফেলিয়া দেন; এবং যে কোন শাখায় ফল ধরে, তাহা পরিষ্কার করেন, যেন তাহাতে আরও অধিক ফল ধরে। আমি তোমাদিগকে যে বাক্য বলিয়াছি, তৎপ্রযুক্ত তোমরা এখন পরিষ্কৃত আছ। আমাতে থাক, আর আমি তোমাদিগেতে থাকি; শাখা যেমন আপনা হইতে ফল ধরিতে পারে না, দ্রাক্ষালতায় না থাকিলে পারে না, তদ্রূপ আমাতে না থাকিলে তোমরাও পার না। আমি দ্রাক্ষালতা, তোমরা শাখা; যে আমাতে থাকে, এবং যাহাতে আমি থাকি, সেই ব্যক্তি প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হয়; কেননা আমা ভিন্ন তোমরা কিছুই করিতে পার না। কেহ যদি আমাতে না থাকে, তাহা হইলে শাখার ন্যায় তাহাকে বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া যায় ও সে শুকাইয়া যায়; এবং লোকে সেগুলি কুড়াইয়া আগুনে ফেলিয়া দেয়, আর সে সকল পুড়িয়া যায়। তোমরা যদি আমাতে থাক, এবং আমার বাক্য যদি তোমাদিগেতে থাকে, তবে তোমাদের যাহা ইচ্ছা হয়, যাচ্ঞা করিও, তোমাদের জন্য তাহা করা যাইবে। ইহাতেই আমার পিতা মহিমান্বিত হন যে, তোমরা প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হও; আর তোমরা আমার শিষ্য হইবে। পিতা যেমন আমাকে প্রেম করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি; তোমরা আমার প্রেমে অবস্থিতি কর। তোমরা যদি আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, তবে আমার প্রেমে অবস্থিতি করিবে, যেমন আমিও আমার পিতার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি, এবং তাঁহার প্রেমে অবস্থিতি করিতেছি। এই সকল কথা তোমাদিগকে বলিয়াছি, যেন আমার আনন্দ তোমাদিগেতে থাকে, এবং তোমাদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয়। আমার আজ্ঞা এই, তোমরা পরস্পর প্রেম কর, যেমন আমি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি। কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই। আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু। আমি তোমাদিগকে আর দাস বলি না, কেননা প্রভু কি করেন, দাস তাহা জানে না; কিন্তু তোমাদিগকে আমি বন্ধু বলিয়াছি, কারণ আমার পিতার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, সকলই তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছি। তোমরা যে আমাকে মনোনীত করিয়াছ, এমন নয়, কিন্তু আমিই তোমাদিগকে মনোনীত করিয়াছি; আর আমি তোমাদিগকে নিযুক্ত করিয়াছি, যেন তোমরা গিয়া ফলবান্‌ হও, এবং তোমাদের ফল যেন থাকে; যেন তোমরা আমার নামে পিতার নিকটে যাহা কিছু যাচ্ঞা করিবে, তাহা তিনি তোমাদিগকে দেন। এই সকল তোমাদিগকে আজ্ঞা করিতেছি, যেন তোমরা পরস্পর প্রেম কর। জগৎ যদি তোমাদিগকে দ্বেষ করে, তোমরা ত জান, সে তোমাদের অগ্রে আমাকে দ্বেষ করিয়াছে। তোমরা যদি জগতের হইতে, তবে জগৎ আপনার নিজস্ব ভাল বাসিত; কিন্তু তোমরা ত জগতের নহ, বরং আমি তোমাদিগকে জগতের মধ্য হইতে মনোনীত করিয়াছি, এই জন্য জগৎ তোমাদিগকে দ্বেষ করে। আমি তোমাদিগকে যাহা বলিয়াছি, আমার সেই বাক্য স্মরণে রাখিও, ‘দাস আপন প্রভু হইতে বড় নয়;’ লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে; তাহারা যদি আমার বাক্য পালন করিত, তোমাদের বাক্যও পালন করিত। কিন্তু তাহারা আমার নামের জন্য তোমাদের প্রতি এই সমস্ত করিবে, কারণ আমাকে যিনি পাঠাইয়াছেন, তাঁহাকে তাহারা জানে না। আমি যদি না আসিতাম, ও তাহাদের কাছে কথা না বলিতাম, তবে তাহাদের পাপ হইত না; কিন্তু এখন তাহাদের পাপ ঢাকিবার উপায় নাই। যে আমাকে দ্বেষ করে, সে আমার পিতাকেও দ্বেষ করে। যেরূপ কার্য্য আর কেহ কখনও করে নাই, সেইরূপ কার্য্য যদি আমি তাহাদের মধ্যে না করিতাম, তবে তাহাদের পাপ হইত না; কিন্তু এখন তাহারা আমাকে ও আমার পিতাকে, উভয়কেই দেখিয়াছে, এবং দ্বেষ করিয়াছে। কিন্তু এরূপ হইল, যেন তাহাদের ব্যবস্থায় লিখিত এই বাক্য পূর্ণ হয়, “তাহারা অকারণে আমাকে দ্বেষ করিয়াছে” । যাঁহাকে আমি পিতার নিকট হইতে তোমাদের কাছে পাঠাইয়া দিব, সত্যের সেই আত্মা, যিনি পিতার নিকট হইতে বাহির হইয়া আইসেন—যখন সেই সহায় আসিবেন—তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন। আর তোমরাও সাক্ষী, কারণ তোমরা প্রথম হইতে আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ। এই সকল কথা তোমাদিগকে কহিলাম, যেন তোমরা বিঘ্ন না পাও। লোকে তোমাদিগকে সমাজ হইতে বাহির করিয়া দিবে; এমন কি, সময় আসিতেছে, যখন যে কেহ তোমাদিগকে বধ করে, সে মনে করিবে, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে উপাসনা-বলি উৎসর্গ করিলাম। তাহারা এই সকল করিবে, কারণ তাহারা না পিতাকে, না আমাকে জানিতে পারিয়াছে। কিন্তু, আমি তোমাদিগকে এ সকল কহিলাম, যেন এই সকলের সময় যখন উপস্থিত হইবে, তখন তোমরা স্মরণ করিতে পার যে, আমি তোমাদিগকে এই সকল বলিয়াছি। প্রথম হইতে এই সমস্ত তোমাদিগকে বলি নাই, কারণ আমি তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম। কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার নিকটে এখন যাইতেছি, আর তোমাদের মধ্যে কেহ আমাকে জিজ্ঞাসা করে না, কোথায় যাইতেছেন? কিন্তু তোমাদিগকে এই সমস্ত কহিলাম, সেই জন্য তোমাদের হৃদয় দুঃখে পরিপূর্ণ হইয়াছে। তথাপি আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে, সেই সহায় তোমাদের নিকটে আসিবেন না; কিন্তু আমি যদি যাই, তবে তোমাদের নিকটে তাঁহাকে পাঠাইয়া দিব। আর তিনি আসিয়া পাপের সম্বন্ধে, ধার্ম্মিকতার সম্বন্ধে ও বিচারের সম্বন্ধে, জগৎকে দোষী করিবেন। পাপের সম্বন্ধে, কেননা তাহারা আমাতে বিশ্বাস করে না; ধার্ম্মিকতার সম্বন্ধে, কেননা আমি পিতার নিকটে যাইতেছি, ও তোমরা আর আমাকে দেখিতে পাইতেছ না; বিচারের সম্বন্ধে, কেননা এ জগতের অধিপতি বিচারিত হইয়াছে। তোমাদিগকে বলিবার আমার আরও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সে সকল সহ্য করিতে পার না। পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন; কারণ তিনি আপনা হইতে কিছু বলিবেন না, কিন্তু যাহা যাহা শুনেন, তাহাই বলিবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদিগকে জানাইবেন। তিনি আমাকে মহিমান্বিত করিবেন; কেননা যাহা আমার, তাহাই লইয়া তোমাদিগকে জানাইবেন। পিতার যাহা যাহা আছে, সকলই আমার; এই জন্য বলিলাম, যাহা আমার, তিনি তাহাই লইয়া থাকেন, ও তোমাদিগকে জানাইবেন। অল্প কাল পরে তোমরা আমাকে আর দেখিতে পাইতেছ না; এবং আবার অল্প কাল পরে আমাকে দেখিতে পাইবে। ইহাতে শিষ্যদের মধ্যে কয়েক জন পরস্পর বলাবলি করিতে লাগিলেন, উনি আমাদিগকে এ কি বলিতেছেন, ‘অল্প কাল পরে তোমরা আমাকে দেখিতে পাইতেছ না, এবং আবার অল্প কাল পরে আমাকে দেখিতে পাইবে,’ আর, ‘কারণ আমি পিতার নিকটে যাইতেছি’। অতএব তাঁহারা কহিলেন, ইনি এ কি বলিতেছেন, ‘অল্প কাল’? ইনি কি বলেন, আমরা বুঝিতে পারি না। যীশু জানিলেন যে, তাঁহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিতে চাহিতেছেন; তাই তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমি যে বলিয়াছি, অল্প কাল পরে তোমরা আমাকে দেখিতে পাইতেছ না, এবং আবার অল্প কাল পরে আমাকে দেখিতে পাইবে, এই বিষয় কি পরস্পর জিজ্ঞাসা করিতেছ? সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা ক্রন্দন ও বিলাপ করিবে, কিন্তু জগৎ আনন্দ করিবে; তোমরা দুঃখার্ত্ত হইবে, কিন্তু তোমাদের দুঃখ আনন্দে পরিণত হইবে। প্রসবকালে নারী দুঃখ পায়, কারণ তাহার সময় উপস্থিত, কিন্তু সন্তান প্রসব করিলে পর, জগতে একটী মনুষ্য জন্মিল, এই আনন্দে তাহার ক্লেশ আর মনে থাকে না। ভাল, তোমরাও এখন দুঃখ পাইতেছ, কিন্তু আমি তোমাদিগকে আবার দেখিব তাহাতে তোমাদের হৃদয় আনন্দিত হইবে, এবং তোমাদের সেই আনন্দ কেহ তোমাদের হইতে হরণ করে না। আর সেই দিনে তোমরা আমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিবে না। সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, পিতার নিকটে যদি তোমরা কিছু যাচ্ঞা কর, তিনি আমার নামে তোমাদিগকে তাহা দিবেন। এ পর্য্যন্ত তোমরা আমার নামে কিছু যাচ্ঞা কর নাই; যাচ্ঞা কর, তাহাতে পাইবে, যেন তোমাদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয়। আমি উপমা দ্বারা এই সকল বিষয় তোমাদিগকে বলিলাম; এমন সময় আসিতেছে, যখন তোমাদিগকে আর উপমা দ্বারা বলিব না, কিন্তু স্পষ্টরূপে পিতার বিষয় জানাইব। সেই দিন তোমরা আমার নামেই যাচ্ঞা করিবে, আর আমি তোমাদিগকে বলিতেছি না যে, আমিই তোমাদের নিমিত্ত পিতাকে নিবেদন করিব; কারণ পিতা আপনি তোমাদিগকে ভাল বাসেন, কেননা তোমরা আমাকে ভাল বাসিয়াছ, এবং বিশ্বাস করিয়াছ যে, আমি ঈশ্বরের নিকট হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি। আমি পিতা হইতে বাহির হইয়াছি, এবং জগতে আসিয়াছি; আবার জগৎ পরিত্যাগ করিতেছি, এবং পিতার নিকটে যাইতেছি। তাঁহার শিষ্যেরা বলিলেন, দেখুন, এখন আপনি স্পষ্টরূপে বলিতেছেন, কোন উপমা কথা বলিতেছেন না। এখন আমরা জানি, আপনি সকলই জানেন, কেহ যে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, ইহা আপনার আবশ্যক করে না; ইহাতে আমরা বিশ্বাস করিতেছি যে, আপনি ঈশ্বরের নিকট হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছেন। যীশু তাঁহাদিগকে উত্তর করিলেন, এখন বিশ্বাস করিতেছ? দেখ, এমন সময় আসিতেছে, বরং আসিয়াছে, যখন তোমরা ছিন্নভিন্ন হইয়া প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে যাইবে, এবং আমাকে একাকী পরিত্যাগ করিবে; তথাপি আমি একাকী নহি, কারণ পিতা আমার সঙ্গে আছেন। এই সমস্ত তোমাদিগকে বলিলাম, যেন তোমরা আমাতে শান্তি প্রাপ্ত হও। জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি। যীশু এই সকল কথা কহিলেন; আর স্বর্গের দিকে চক্ষু তুলিয়া বলিলেন, পিতঃ, সময় উপস্থিত হইল; তোমার পুত্রকে মহিমান্বিত কর, যেন পুত্র তোমাকে মহিমান্বিত করেন; যেমন তুমি তাঁহাকে মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে কর্ত্তৃত্ব দিয়াছ, যেন, তুমি যে সমস্ত তাঁহাকে দিয়াছ, তিনি তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দেন। আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়। তুমি আমাকে যে কার্য্য করিতে দিয়াছ, তাহা সমাপ্ত করিয়া আমি পৃথিবীতে তোমাকে মহিমান্বিত করিয়াছি। আর এক্ষণে, হে পিতঃ, জগৎ হইবার পূর্ব্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় তোমার নিজের কাছে আমাকে মহিমান্বিত কর। জগতের মধ্য হইতে তুমি আমাকে যে লোকদের দিয়াছ, আমি তাহাদের কাছে তোমার নাম প্রকাশ করিয়াছি। তাহারা তোমারই ছিল, এবং তাহাদের তুমি আমাকে দিয়াছ, আর তাহারা তোমার বাক্য পালন করিয়াছে। এখন তাহারা জানিতে পাইয়াছে যে, তুমি আমাকে যাহা কিছু দিয়াছ, সে সকলই তোমার নিকট হইতে; কেননা তুমি আমাকে যে সকল বাক্য দিয়াছ, তাহা আমি তাহাদিগকে দিয়াছি; আর তাহারা গ্রহণও করিয়াছে, এবং সত্যই জানিয়াছে যে, আমি তোমার নিকট হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি, এবং বিশ্বাস করিয়াছে যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ। আমি তাহাদেরই নিমিত্ত নিবেদন করিতেছি; জগতের নিমিত্ত নিবেদন করিতেছি না, কিন্তু যে সকল আমাকে দিয়াছ, তাহাদের নিমিত্ত; কেননা তাহারা তোমারই। আর আমার সকলই তোমার, ও তোমার সকলই আমার; আর আমি তাহাদিগেতে মহিমান্বিত হইয়াছি। আমি আর জগতে নাই, কিন্তু ইহারা জগতে রহিয়াছে, এবং আমি তোমার নিকটে আসিতেছি। পবিত্র পিতঃ, তোমার নামে তাহাদিগকে রক্ষা কর—যে নাম তুমি আমাকে দিয়াছ—যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক। তাহাদের সঙ্গে থাকিতে থাকিতে আমি তাহাদিগকে তোমার নামে রক্ষা করিয়া আসিয়াছি—যে নাম তুমি আমাকে দিয়াছ—আমি তাহাদিগকে সাবধানে রাখিয়াছি, তাহাদের মধ্যে কেহ বিনষ্ট হয় নাই, কেবল সেই বিনাশ-সন্তান হইয়াছে, যেন শাস্ত্রের বচন পূর্ণ হয়। কিন্তু এখন আমি তোমার নিকটে আসিতেছি, আর জগতে এই সকল কথা কহিতেছি, যেন তাহারা আমার আনন্দ আপনাদিগেতে সম্পূর্ণরূপে প্রাপ্ত হয়। আমি তাহাদিগকে তোমার বাক্য দিয়াছি; আর জগৎ তাহাদিগকে দ্বেষ করিয়াছে, কারণ তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই। আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর। তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই। তাহাদিগকে সত্যে পবিত্র কর; তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ। তুমি যেমন আমাকে জগতে প্রেরণ করিয়াছ, তদ্রূপ আমিও তাহাদিগকে জগতে প্রেরণ করিয়াছি। আর তাহাদের নিমিত্ত আমি আপনাকে পবিত্র করি, যেন তাহারাও সত্যই পবিত্রীকৃত হয়। আর আমি কেবল ইহাদেরই নিমিত্ত নিবেদন করিতেছি, তাহা নয়, কিন্তু ইহাদের বাক্য দ্বারা যাহারা আমাতে বিশ্বাস করে, তাহাদের নিমিত্তও করিতেছি; যেন তাহারা সকলে এক হয়; পিতঃ, যেমন তুমি আমাতে ও আমি তোমাতে, তেমনি তাহারাও যেন আমাদিগেতে থাকে; যেন জগৎ বিশ্বাস করে যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ। আর তুমি আমাকে যে মহিমা দিয়াছ, তাহা আমি তাহাদিগকে দিয়াছি; যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক; আমি তাহাদিগেতে ও তুমি আমাতে, যেন তাহারা সিদ্ধ হইয়া এক হয়; যেন জগৎ জানিতে পায় যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ, এবং আমাকে যেমন প্রেম করিয়াছ, তেমনি তাহাদিগকেও প্রেম করিয়াছ। পিতঃ, আমার ইচ্ছা এই, আমি যেখানে থাকি, তুমি আমায় যাহাদিগকে দিয়াছ, তাহারাও যেন সেখানে আমার সঙ্গে থাকে, যেন তাহারা আমার সেই মহিমা দেখিতে পায়, যাহা তুমি আমাকে দিয়াছ, কেননা জগৎ পত্তনের পূর্ব্বে তুমি আমাকে প্রেম করিয়াছিলে। ধর্ম্মময় পিতঃ, জগৎ তোমাকে জানে নাই, কিন্তু আমি তোমাকে জানি, এবং ইহারা জানিয়াছে যে, তুমিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছ। আর আমি ইহাদিগকে তোমার নাম জানাইয়াছি, ও জানাইব; যেন তুমি যে প্রেমে আমাকে প্রেম করিয়াছ, তাহা তাহাদিগেতে থাকে, এবং আমি তাহাদিগেতে থাকি। এই সমস্ত বলিয়া যীশু আপন শিষ্যগণের সহিত বাহির হইয়া কিদ্রোণ স্রোত পার হইলেন; সেখানে এক উদ্যান ছিল, তাহার মধ্যে তিনি ও তাঁহার শিষ্যগণ প্রবেশ করিলেন। আর যিহূদা, যে তাঁহাকে সমর্পণ করিয়াছিল, সে সেই স্থান জ্ঞাত ছিল, কারণ যীশু অনেক বার আপন শিষ্যগণের সঙ্গে সেই স্থানে একত্র হইতেন। অতএব যিহূদা সৈন্যদলকে, এবং প্রধান যাজকদের ও ফরীশীদের নিকট হইতে পদাতিকদিগকে প্রাপ্ত হইয়া মশাল, দীপ ও অস্ত্রশস্ত্রের সহিত সেখানে আসিল। তখন যীশু, আপনার প্রতি যাহা যাহা ঘটিতেছে, সমস্তই জানিয়া বাহির হইয়া আসিলেন, আর তাহাদিগকে কহিলেন, কাহার অন্বেষণ করিতেছ? তাহারা তাঁহাকে উত্তর করিল, নাসরতীয় যীশুর। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আমিই তিনি। আর যিহূদা যে তাঁহাকে সমর্পণ করিতেছিল, সে তাহাদের সহিত দাঁড়াইয়াছিল। তিনি যখন তাহাদিগকে বলিলেন, আমিই তিনি, তাহারা পিছাইয়া গেল, ও ভূমিতে পড়িল। পরে তিনি তাহাদিগকে আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, কাহার অন্বেষণ করিতেছ? তাহারা বলিল, নাসরতীয় যীশুর। যীশু উত্তর করিলেন, আমি ত তোমাদিগকে বলিলাম যে, আমিই তিনি; অতএব তোমরা যদি আমার অন্বেষণ কর, তবে ইহাদিগকে যাইতে দেও— যেন তিনি এই যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহা পূর্ণ হয়, ‘তুমি আমাকে যে সকল লোক দিয়াছ, আমি তাহাদের কাহাকেও হারাই নাই।’ তখন শিমোন পিতরের নিকটে খড়্গ থাকাতে তিনি তাহা খুলিয়া মহাযাজকের দাসকে আঘাত করিয়া তাহার দক্ষিণ কর্ণ কাটিয়া ফেলিলেন। সেই দাসের নাম মল্ক। তখন যীশু পিতরকে কহিলেন, খড়্গ কোষে রাখ; আমার পিতা আমাকে যে পানপাত্র দিয়াছেন তাহাতে আমি কি পান করিব না? তখন সৈন্যদল, এবং সহস্রপতি ও যিহূদিগণের পদাতিকেরা যীশুকে ধরিল, ও তাঁহাকে বন্ধন করিল, এবং প্রথমে হাননের কাছে লইয়া গেল; কারণ যে কায়াফা সেই বৎসর মহাযাজক ছিলেন, ঐ হানন তাঁহার শ্বশুর। এ সেই কায়াফা, যিনি যিহূদিগণকে এই পরামর্শ দিয়াছিলেন, প্রজালোকদের জন্য এক জনের মরণ ভাল। আর শিমোন পিতর এবং আর এক জন শিষ্য যীশুর পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। সেই শিষ্য মহাযাজকের পরিচিত ছিলেন, এবং যীশুর সহিত মহাযাজকের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করিলেন। কিন্তু পিতর বাহিরে দ্বারদেশে দাঁড়াইয়া রহিলেন। অতএব মহাযাজকের পরিচিত সেই অন্য শিষ্য বাহিরে আসিয়া দ্বার-রক্ষিকাকে বলিয়া পিতরকে ভিতরে লইয়া গেলেন। তখন সেই দ্বার-রক্ষিকা দাসী পিতরকে কহিল, তুমিও কি সেই ব্যক্তির শিষ্যদের এক জন? তিনি কহিলেন, আমি নই। আর দাসেরা ও পদাতিকেরা কয়লার আগুন করিয়া দাঁড়াইয়াছিল, কারণ তখন শীত পড়িয়াছিল, আর তাহারা আগুন পোহাইতে ছিল; এবং পিতরও তাহাদের সঙ্গে দাঁড়াইয়া আগুন পোহাইতেছিলেন। ইতিমধ্যে মহাযাজক যীশুকে তাঁহার শিষ্যগণের ও শিক্ষার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলেন। যীশু তাঁহাকে উত্তর করিলেন, আমি স্পষ্টরূপে জগতের কাছে কথা কহিয়াছি; আমি সর্ব্বদা সমাজ-গৃহে ও ধর্ম্মধামে শিক্ষা দিয়াছি, যেখানে যিহূদীরা সকলে একত্র হয়; গোপনে কিছু কহি নাই। আমাকে কেন জিজ্ঞাসা কর? যাহারা শুনিয়াছে, তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা কর, আমি কি বলিয়াছি; দেখ, আমি কি কি বলিয়াছি, ইহারা জানে। তিনি এই কথা কহিলে পদাতিকদের এক জন, যে নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, সে যীশুকে চড় মারিয়া কহিল, মহাযাজককে এমন উত্তর দিলি? যীশু তাহাকে উত্তর দিলেন, যদি মন্দ বলিয়া থাকি, সেই মন্দের সাক্ষ্য দেও; কিন্তু যদি ভাল বলিয়া থাকি, কি জন্য আমাকে মার? পরে হানন বন্ধন অবস্থায় তাঁহাকে কায়াফা মহাযাজকের নিকটে প্রেরণ করিলেন। শিমোন পিতর দাঁড়াইয়া আগুন পোহাইতেছিলেন। তখন লোকেরা তাঁহাকে কহিল, তুমিও কি উহার শিষ্যদের এক জন? তিনি অস্বীকার করিলেন, বলিলেন, আমি নই। মহাযাজকের এক দাস, পিতর যাহার কাণ কাটিয়া ফেলিয়াছিলেন, তাহার এক জন কুটুম্ব কহিল, আমি কি উদ্যানে উহার সঙ্গে তোমাকে দেখি নাই? তখন পিতর আবার অস্বীকার করিলেন, এবং তৎক্ষণাৎ কুকুড়া ডাকিয়া উঠিল। পরে লোকেরা যীশুকে কায়াফার নিকট হইতে রাজবাটীতে লইয়া গেল; তখন প্রত্যূষকাল; আর তাহারা যেন অশুচি না হয়, কিন্তু নিস্তারপর্ব্বের ভোজ ভোজন করিতে পারে, এই জন্য আপনারা রাজবাটীতে প্রবেশ করিল না। অতএব পীলাত বাহিরে তাহাদের কাছে গেলেন ও বলিলেন, তোমরা এ ব্যক্তির উপরে কি দোষারোপ করিতেছ? তাহারা উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিল, এ যদি দুষ্কর্ম্মকারী না হইত, আমরা আপনার হস্তে ইহাকে সমর্পণ করিতাম না। তখন পীলাত তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরাই উহাকে লইয়া যাও, এবং আপনাদের ব্যবস্থামতে উহার বিচার কর। যিহূদিগণ তাঁহাকে কহিল, কোন ব্যক্তিকে বধ করিতে আমাদের অধিকার নাই— যেন যীশুর সেই বাক্য পূর্ণ হয়, যাহা বলিয়া তিনি দেখাইয়া দিয়াছিলেন, তাঁহার কি প্রকার মৃত্যু হইবে। তখন পীলাত আবার রাজবাটীতে প্রবেশ করিলেন, এবং যীশুকে ডাকিয়া তাঁহাকে বলিলেন, তুমিই কি যিহূদীদের রাজা? যীশু উত্তর করিলেন, তুমি কি ইহা আপনা হইতে বলিতেছ? না অন্যেরা আমার বিষয়ে তোমাকে ইহা বলিয়া দিয়াছে? পীলাত উত্তর করিলেন, আমি কি যিহূদী? তোমারই স্বজাতীয়েরা ও প্রধান যাজকেরা আমার নিকটে তোমাকে সমর্পণ করিয়াছে; তুমি কি করিয়াছ? যীশু উত্তর করিলেন, আমার রাজ্য এ জগতের নয়; যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত, যেন আমি যিহূদীদের হস্তে সমর্পিত না হই; কিন্তু আমার রাজ্য ত এখানকার নয়। তখন পীলাত তাঁহাকে বলিলেন, তবে তুমি কি রাজা? যীশু উত্তর করিলেন, তুমিই বলিতেছ যে আমি রাজা। আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেহ সত্যের, সে আমার রব শুনে। পীলাত তাঁহাকে বলিলেন, সত্য কি? ইহা বলিয়া তিনি আবার বাহিরে যিহূদীদের কাছে গেলেন, এবং তাহাদিগকে বলিলেন, আমি ত ইহার কোনই দোষ পাইতেছি না। কিন্তু তোমাদের এমন এক রীতি আছে যে, আমি নিস্তারপর্ব্বের সময়ে তোমাদের জন্য এক ব্যক্তিকে ছাড়িয়া দিই; ভাল, তোমরা কি ইচ্ছা কর যে, আমি তোমাদের জন্য যিহূদীদের রাজাকে ছাড়িয়া দিব? তাহারা আবার চেঁচাইয়া কহিল, ইহাকে নয়, কিন্তু বারাব্বাকে। সেই বারাব্বা দস্যু ছিল। তখন পীলাত যীশুকে লইয়া কোড়া প্রহার করাইলেন। আর সেনারা কাঁটার মুকুট গাঁথিয়া তাঁহার মস্তকে দিল, এবং তাঁহাকে বেগুনিয়া কাপড় পরাইল; আর তাঁহার নিকটে আসিয়া বলিতে লাগিল, যিহূদি-রাজ নমস্কার; এবং তাঁহাকে চড় মারিতে লাগিল। তখন পীলাত আবার বাহিরে গেলেন ও লোকদিগকে কহিলেন, দেখ, আমি ইহাকে তোমাদের কাছে বাহিরে আনিলাম, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমি ইহার কোনই দোষ পাইতেছি না। যীশু সেই কাঁটার মুকুট ও বেগুনিয়া কাপড় পরিয়াই বাহিরে আসিলেন; আর পীলাত লোকদিগকে কহিলেন, দেখ, সেই মানুষ। তখন যীশুকে দেখিয়াই প্রধান যাজকেরা ও পদাতিকেরা চেঁচাইয়া বলিল, উহাকে ক্রুশে দেও, উহাকে ক্রুশে দেও। পীলাত তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আপনারা ইহাকে লইয়া ক্রুশে দেও; কেননা আমি ইহার কোন দোষ পাইতেছি না। যিহূদীরা তাঁহাকে উত্তর করিল, আমাদের এক ব্যবস্থা আছে, সেই ব্যবস্থা অনুসারে তাহার প্রাণদণ্ড হওয়া উচিত, কারণ সে আপনাকে ঈশ্বরের পুত্র করিয়া তুলিয়াছে। পীলাত যখন এই কথা শুনিলেন, তিনি আরও ভীত হইলেন; এবং আবার রাজবাটীতে প্রবেশ করিলেন ও যীশুকে বলিলেন, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? কিন্তু যীশু তাঁহাকে কোন উত্তর দিলেন না। অতএব পীলাত তাঁহাকে বলিলেন, আমার সঙ্গে কথা কহিতেছ না? তুমি কি জান না যে, তোমাকে ছাড়িয়া দিবার ক্ষমতা আমার আছে, এবং তোমাকে ক্রুশে দিবারও ক্ষমতা আমার আছে? যীশু উত্তর করিলেন, যদি ঊর্দ্ধ হইতে তোমাকে দত্ত না হইত, তবে আমার বিরুদ্ধে তোমার কোন ক্ষমতা থাকিত না; এই জন্য যে ব্যক্তি তোমার হস্তে আমাকে সমর্পণ করিয়াছে, তাহারই পাপ অধিক। এই হেতু পীলাত তাঁহাকে ছাড়িয়া দিতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু যিহূদীরা চেঁচাইয়া বলিল, আপনি যদি উহাকে ছাড়িয়া দেন, তবে আপনি কৈসরের মিত্র নহেন; যে কেহ আপনাকে রাজা করিয়া তুলে, সে কৈসরের বিপক্ষে কথা কহে। এই কথা শুনিয়া পীলাত যীশুকে বাহিরে আনিলেন, এবং শিলাস্তরণ নামক স্থানে বিচারাসনে বসিলেন; সেই স্থানের ইব্রীয় নাম গব্বথা। সেই দিন নিস্তার-পর্ব্বের আয়োজন দিন; বেলা অনুমান ছয় ঘটিকা। পীলাত যিহূদিগণকে বলিলেন, দেখ, তোমাদের রাজা। তাহাতে তাহারা চেঁচাইয়া কহিল, দূর কর, দূর কর, উহাকে ক্রুশে দেও। পীলাত তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের রাজাকে কি ক্রুশে দিব? প্রধান যাজকেরা উত্তর করিল, কৈসর ছাড়া আমাদের অন্য রাজা নাই। তখন তিনি যীশুকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন, যেন তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়। তখন তাহারা যীশুকে লইল; এবং তিনি আপনি ক্রুশ বহন করিতে করিতে বাহির হইয়া মাথার খুলির স্থান নামক স্থানে গেলেন। ইব্রীয় ভাষায় সেই স্থানকে গল্‌গথা বলে। তথায় তাহারা তাঁহাকে ক্রুশে দিল, এবং তাঁহার সহিত আর দুই জনকে দিল, দুই পার্শ্বে দুই জনকে, ও মধ্যস্থানে যীশুকে। আর পীলাত একখান দোষপত্র লিখিয়া ক্রুশের উপরিভাগে লাগাইয়া দিলেন। তাহাতে এই কথা লিখিত ছিল, ‘নাসরতীয় যীশু, যিহূদীদের রাজা।’ তখন যিহূদীরা অনেকে সেই দোষপত্র পাঠ করিল, কারণ যেখানে যীশুকে ক্রুশে দেওয়া হইয়াছিল, সেই স্থান নগরের সন্নিকট, এবং উহা ইব্রীয়, রোমীয় ও গ্রীক ভাষায় লিখিত ছিল। অতএব যিহূদীদের প্রধান যাজকেরা পীলাতকে কহিল, ‘যিহূদীদের রাজা,’ এমন কথা লিখিবেন না, কিন্তু লিখুন যে, ‘এ ব্যক্তি বলিল, আমি যিহূদীদের রাজা’। পীলাত উত্তর করিলেন, যাহা লিখিয়াছি, তাহা লিখিয়াছি। যীশুকে ক্রুশে দিবার পরে সেনারা তাঁহার বস্ত্র সকল লইয়া চারি অংশ করিয়া প্রত্যেক সেনাকে এক এক অংশ দিল, এবং আঙ্‌রাখাটীও লইল; ঐ আঙ্‌রাখায় সেলাই ছিল না, উপর হইতে সমস্তই বোনা। অতএব তাহারা পরস্পর বলিল, ইহা চিরিব না, আইস, আমরা গুলিবাঁট করিয়া দেখি, ইহা কাহার হইবে; যেন শাস্ত্রের এই বচন পূর্ণ হয়, “তাহারা আপনাদের মধ্যে আমার বস্ত্র সকল বিভাগ করিল, আর আমার পরিচ্ছদের জন্য গুলিবাঁট করিল।” বাস্তবিক সেনারা তাহাই করিল। আর যীশুর ক্রুশের নিকটে তাঁহার মাতা, ও তাঁহার মাতার ভগিনী, ক্লোপার [স্ত্রী] মরিয়ম, এবং মগ্দলিনী মরিয়ম, ইহাঁরা দাঁড়াইয়াছিলেন। যীশু মাতাকে দেখিয়া, এবং যাঁহাকে প্রেম করিতেন, সেই শিষ্য নিকটে দাঁড়াইয়া আছেন দেখিয়া, মাতাকে কহিলেন, হে নারি, ঐ দেখ, তোমার পুত্র। পরে তিনি সেই শিষ্যকে কহিলেন, ঐ দেখ, তোমার মাতা। তাহাতে সেই দণ্ড অবধি ঐ শিষ্য তাঁহাকে আপন গৃহে লইয়া গেলেন। ইহার পরে যীশু, সমস্তই এখন সমাপ্ত হইল, জানিয়া শাস্ত্রের বচন যেন সিদ্ধ হয়, এই জন্য কহিলেন, ‘আমার পিপাসা পাইয়াছে’। সেই স্থানে সিরকায় পূর্ণ একটী পাত্র ছিল; তাহাতে লোকেরা সিরকায় পূর্ণ একটী স্পঞ্জ এসোব নলে লাগাইয়া তাঁহার মুখের নিকটে ধরিল। সিরকা গ্রহণ করিবার পর যীশু কহিলেন, ‘সমাপ্ত হইল’; পরে মস্তক নত করিয়া আত্মা সমর্পণ করিলেন। সেই দিন আয়োজন দিন, অতএব বিশ্রামবারে সেই দেহগুলি যেন ক্রুশের উপরে না থাকে—কেননা ঐ বিশ্রামবার মহাদিন ছিল—এই নিমিত্ত যিহূদিগণ পীলাতের নিকটে নিবেদন করিল, যেন তাহাদের পা ভাঙ্গিয়া তাহাদিগকে অন্য স্থানে লইয়া যাওয়া হয়। অতএব সেনারা আসিয়া ঐ প্রথম ব্যক্তির, এবং তাহার সহিত ক্রুশে বিদ্ধ অন্য ব্যক্তির পা ভাঙ্গিল; কিন্তু তাহারা যখন যীশুর নিকটে আসিয়া দেখিল যে, তিনি মরিয়া গিয়াছেন, তখন তাঁহার পা ভাঙ্গিল না। কিন্তু এক জন সেনা বড়শা দিয়া তাঁহার কুক্ষিদেশ বিদ্ধ করিল; তাহাতে অমনি রক্ত ও জল বাহির হইল। যে ব্যক্তি দেখিয়াছে, সেই সাক্ষ্য দিয়াছে, এবং তাহার সাক্ষ্য যথার্থ; আর সে জানে যে, যে সত্য কহিতেছে, যেন তোমরাও বিশ্বাস কর। কারণ এই সকল ঘটিল, যেন এই শাস্ত্রীয় বচন পূর্ণ হয়, “তাঁহার একখানি অস্থিও ভগ্ন হইবে না।” আবার শাস্ত্রের আর একটী বচন এই, “তাহারা যাঁহাকে বিদ্ধ করিয়াছে, তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে।” ইহার পরে অরিমাথিয়ার যোষেফ—যিনি যীশুর শিষ্য ছিলেন, কিন্তু যিহূদীদের ভয়ে গুপ্ত ভাবেই ছিলেন—তিনি পীলাতকে নিবেদন করিলেন, যেন তিনি যীশুর দেহ লইয়া যাইতে পারেন; পীলাত অনুমতি দিলেন, তাহাতে তিনি আসিয়া তাঁহার দেহ লইয়া গেলেন। আর যিনি প্রথমে রাত্রিকালে তাঁহার কাছে আসিয়াছিলেন, সেই নীকদীমও আসিলেন, গন্ধরসে মিশ্রিত অনুমান পঞ্চাশ সের অগুরু লইয়া আসিলেন। তখন তাঁহারা যীশুর দেহ লইয়া যিহূদীদের কবর দিবার রীতি অনুযায়ী ঐ সুগন্ধি দ্রব্যের সহিত মসীনার কাপড় দিয়া বাঁধিলেন। আর যে স্থানে তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়, সেই স্থানে এক উদ্যান ছিল, সেই উদ্যানের মধ্যে এমন এক নূতন কবর ছিল, যাহার মধ্যে কাহাকেও কখনও রাখা হয় নাই। অতএব ঐ দিন যিহূদীদের আয়োজন-দিন বলিয়া, তাঁহারা সেই কবর মধ্যে যীশুকে রাখিলেন, কেননা সেই কবর নিকটেই ছিল। সপ্তাহের প্রথম দিন প্রত্যূষে অন্ধকার থাকিতে থাকিতে মগ্দলীনী মরিয়ম কবরের নিকটে যান, আর দেখেন, কবর হইতে পাথরখান সরান হইয়াছে। তখন তিনি দৌড়িয়া শিমোন পিতরের নিকটে, এবং যীশু যাঁহাকে ভাল বাসিতেন, সেই অন্য শিষ্যের নিকটে আসিলেন, আর তাঁহাদিগকে বলিলেন, লোকে প্রভুকে কবর হইতে তুলিয়া লইয়া গিয়াছে; তাঁহাকে কোথায় রাখিয়াছে, আমরা জানি না। অতএব পিতর ও সেই অন্য শিষ্য বাহির হইয়া কবরের নিকটে যাইতে লাগিলেন। তাঁহারা দুই জন এক সঙ্গে দৌড়িলেন, আর সেই অন্য শিষ্য পিতরকে পশ্চাৎ ফেলিয়া অগ্রে কবরের নিকটে উপস্থিত হইলেন; এবং হেঁট হইয়া ভিতরে চাহিয়া দেখিলেন, কাপড়গুলি পড়িয়া রহিয়াছে, তথাপি ভিতরে প্রবেশ করিলেন না। শিমোন পিতরও তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিলেন, আর তিনি কবরে প্রবেশ করিলেন; এবং দেখিলেন, কাপড়গুলি পড়িয়া রহিয়াছে, আর যে রুমালখানি তাঁহার মস্তকের উপরে ছিল, তাহা সেই কাপড়ের সহিত নাই, স্বতন্ত্র এক স্থানে গুটাইয়া রাখা হইয়াছে। পরে সেই অন্য শিষ্য, যিনি কবরের নিকটে প্রথমে আসিয়াছিলেন, তিনিও ভিতরে প্রবেশ করিলেন, এবং দেখিলেন ও বিশ্বাস করিলেন। কারণ এ পর্য্যন্ত তাঁহারা শাস্ত্রের এই কথা বুঝেন নাই যে, মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠিতে হইবে। পরে ঐ দুই শিষ্য আবার স্বস্থানে চলিয়া গেলেন। কিন্তু মরিয়ম রোদন করিতে করিতে বাহিরে কবরের কাছে দাঁড়াইয়া রহিলেন; এবং রোদন করিতে করিতে হেঁট হইয়া কবরের ভিতরে দৃষ্টিপাত করিলেন; আর দেখিলেন, শুক্ল বস্ত্র পরিহিত দুই জন স্বর্গ-দূত যীশুর দেহ যে স্থানে রাখা হইয়াছিল, এক জন তাহার শিয়রে, অন্য জন পায়ের দিকে বসিয়া আছেন। তাঁহারা তাঁহাকে বলিলেন, নারি, রোদন করিতেছ কেন? তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, লোকে আমার প্রভুকে লইয়া গিয়াছে; কোথায় রাখিয়াছে, জানি না। ইহা বলিয়া তিনি পশ্চাৎ দিকে ফিরিলেন, আর দেখিলেন, যীশু দাঁড়াইয়া আছেন, কিন্তু চিনিতে পারিলেন না যে, তিনি যীশু। যীশু তাঁহাকে বলিলেন, নারি, রোদন করিতেছ কেন? কাহার অন্বেষণ করিতেছ? তিনি তাঁহাকে বাগানের মালি মনে করিয়া কহিলেন, মহাশয়, আপনি যদি তাঁহাকে লইয়া গিয়া থাকেন, আমায় বলুন, কোথায় রাখিয়াছেন; আমিই তাঁহাকে লইয়া যাইব। যীশু তাঁহাকে বলিলেন, মরিয়ম। তিনি ফিরিয়া ইব্রীয় ভাষায় তাঁহাকে কহিলেন, রব্বূণি! ইহার অর্থ, হে গুরু। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমাকে স্পর্শ করিও না, কেননা এখনও আমি ঊর্দ্ধে পিতার নিকটে যাই নাই; কিন্তু তুমি আমার ভ্রাতৃগণের কাছে গিয়া তাহাদিগকে বল, যিনি আমার পিতা ও তোমাদের পিতা, এবং আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর, তাঁহার নিকটে আমি ঊর্দ্ধে যাই। তখন মগ্দলীনী মরিয়ম শিষ্যগণের নিকটে গিয়া এই সংবাদ দিলেন, আমি প্রভুকে দেখিয়াছি, আর তিনি আমাকে এই এই কথা বলিয়াছেন। সেই দিন, সপ্তাহের প্রথম দিন, সন্ধ্যা হইলে, শিষ্যগণ যেখানে ছিলেন, সেই স্থানের দ্বার সকল যিহূদিগণের ভয়ে রুদ্ধ ছিল; এমন সময়ে যীশু আসিয়া মধ্যস্থানে দাঁড়াইলেন, এবং তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের শান্তি হউক; ইহা বলিয়া তিনি তাঁহাদিগকে আপনার দুই হস্ত ও কুক্ষিদেশ দেখাইলেন। অতএব প্রভুকে দেখিতে পাইয়া শিষ্যেরা আনন্দিত হইলেন। তখন যীশু আবার তাঁহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের শান্তি হউক; পিতা যেমন আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তদ্রূপ আমিও তোমাদিগকে পাঠাই। ইহা বলিয়া তিনি তাঁহাদের উপরে ফুঁ দিলেন, আর তাঁহাদিগকে কহিলেন, পবিত্র আত্মা গ্রহণ কর; তোমরা যাহাদের পাপ মোচন করিবে, তাহাদের মোচিত হইল; যাহাদের পাপ রাখিবে, তাহাদের রাখা হইল। যীশু যখন আসিয়াছিলেন, তখন থোমা, সেই বারো জনের এক জন, যাঁহাকে দিদুমঃ বলে, তিনি তাঁহাদের সঙ্গে ছিলেন না। অতএব অন্য শিষ্যেরা তাঁহাকে কহিলেন, আমরা প্রভুকে দেখিয়াছি। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, আমি যদি তাঁহার দুই হাতে প্রেকের চিহ্ন না দেখি, ও সেই প্রেকের স্থানে আমার অঙ্গুলি না দিই, এবং তাঁহার কুক্ষিদেশ মধ্যে আমার হাত না দিই, তবে কোন মতে বিশ্বাস করিব না। আট দিন পরে তাঁহার শিষ্যগণ পুনরায় গৃহ-মধ্যে ছিলেন, এবং থোমা তাঁহাদের সঙ্গে ছিলেন। দ্বার সকল রুদ্ধ ছিল, এমন সময়ে যীশু আসিলেন, মধ্যস্থানে দাঁড়াইলেন, আর কহিলেন, তোমাদের শান্তি হউক। পরে তিনি থোমাকে কহিলেন, এ দিকে তোমার অঙ্গুলি বাড়াইয়া দেও, আমার হাত দুখানি দেখ, আর তোমার হাত বাড়াইয়া দেও, আমার কুক্ষিদেশ মধ্যে দেও; এবং অবিশ্বাসী হইও না, বিশ্বাসী হও। থোমা উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার! যীশু তাঁহাকে বলিলেন, তুমি আমাকে দেখিয়াছ বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছ? ধন্য তাহারা, যাহারা না দেখিয়া বিশ্বাস করিল। যীশু শিষ্যদের সাক্ষাতে আরও অনেক চিহ্ন-কার্য্য করিয়াছিলেন; সে সকল এই পুস্তকে লেখা হয় নাই। কিন্তু এই সকল লেখা হইয়াছে, যেন তোমরা বিশ্বাস কর যে, যীশুই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র, আর বিশ্বাস করিয়া যেন তাঁহার নামে জীবন প্রাপ্ত হও। তৎপরে যীশু তিবিরিয়া-সমুদ্রের তীরে আবার শিষ্যদের নিকটে আপনাকে প্রকাশ করিলেন; আর তিনি এইরূপে আপনাকে প্রকাশ করিলেন। শিমোন পিতর, থোমা, যাঁহাকে দিদুমঃ বলে, গালীলের কান্নানিবাসী নথলেন, সিবদিয়ের দুই পুত্র, এবং তাঁহার শিষ্যদের মধ্যে আর দুই জন, ইহাঁরা একত্র ছিলেন। শিমোন পিতর তাঁহাদিগকে বলিলেন, আমি মাছ ধরিতে যাই। তাঁহারা তাঁহাকে বলিলেন, আমরাও তোমার সঙ্গে যাই। তাঁহারা বাহির হইয়া গিয়া নৌকায় উঠিলেন, আর সেই রাত্রিতে কিছু ধরিতে পারিলেন না। পরে প্রভাত হইয়া আসিতেছে, এমন সময় যীশু তীরে দাঁড়াইলেন, তথাপি শিষ্যেরা চিনিতে পারিলেন না যে, তিনি যীশু। যীশু তাঁহাদিগকে কহিলেন, বৎসেরা, তোমাদের নিকটে কিছু খাবার আছে? তাঁহারা উত্তর করিলেন, না। তখন তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, নৌকার দক্ষিণ পার্শ্বে জাল ফেল, পাইবে। অতএব তাঁহারা জাল ফেলিলেন, এবং এত মাছ পড়িল যে, তাঁহারা আর তাহা টানিয়া তুলিতে পারিলেন না। অতএব, যীশু যাঁহাকে প্রেম করিতেন, সেই শিষ্য পিতরকে বলিলেন, উনি প্রভু। তাহাতে ‘উনি প্রভু’ এই কথা শুনিয়া শিমোন পিতর দেহে কাপড় জড়াইলেন, কেননা তিনি উলঙ্গ ছিলেন, এবং সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়া পড়িলেন। কিন্তু অন্য শিষ্যেরা মাছে পূর্ণ জাল টানিতে টানিতে ছোট নৌকাতে করিয়া আসিলেন; কেননা তাঁহারা স্থল হইতে দূরে ছিলেন না, অনুমান দুই শত হস্ত অন্তর ছিলেন। স্থলে উঠিয়া তাঁহারা দেখেন, কয়লার আগুন রহিয়াছে, ও তাহার উপরে মাছ আর রুটী রহিয়াছে। যীশু তাঁহাদিগকে বলিলেন, যে মাছ এখন ধরিলে, তাহার কিছু আন। শিমোন পিতর উঠিয়া জাল স্থলে টানিয়া তুলিলেন, তাহা এক শত তিপ্পান্নটা বড় মাছে পূর্ণ ছিল, আর এত মাছেও জাল ছিঁড়িল না। যীশু তাঁহাদিগকে বলিলেন, আইস, আহার কর। তখন শিষ্যদের কাহারও এমন সাহস হইল না যে, তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কে?’ তাঁহারা জানিতেন যে, তিনি প্রভু। যীশু আসিয়া ঐ রুটী লইয়া তাঁহাদিগকে দিলেন, আর সেইরূপে মাছও দিলেন। মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিলে পর যীশু এখন এই তৃতীয় বার আপন শিষ্যদিগকে দর্শন দিলেন। তাঁহারা আহার করিলে পর যীশু শিমোন পিতরকে কহিলেন, হে যোহনের পুত্র শিমোন, ইহাদের অপেক্ষা তুমি কি আমাকে অধিক প্রেম কর? তিনি কহিলেন, হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমার মেষশাবকগণকে চরাও। পরে তিনি দ্বিতীয় বার তাঁহাকে কহিলেন, হে যোহনের পুত্র শিমোন, তুমি কি আমাকে প্রেম কর? তিনি কহিলেন, হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভাল বাসি। তিনি তাঁহাকে কহিলেন, আমার মেষগণকে পালন কর। তিনি তৃতীয় বার তাঁহাকে কহিলেন, হে যোহনের পুত্র শিমোন, তুমি কি আমাকে ভাল বাস? পিতর দুঃখিত হইলেন যে, তিনি তৃতীয় বার তাঁহাকে বলিলেন, ‘তুমি কি আমাকে ভাল বাস?’ আর তিনি তাঁহাকে কহিলেন, প্রভু, আপনি সকলই জানেন; আপনি জ্ঞাত আছেন যে, আমি আপনাকে ভাল বাসি। যীশু তাঁহাকে কহিলেন, আমার মেষগণকে চরাও। সত্য, সত্য, আমি তোমাকে কহিতেছি, যখন তুমি যুবা ছিলে, তখন আপনি আপনার কটি বন্ধন করিতে এবং যেখানে ইচ্ছা, বেড়াইতে; কিন্তু যখন বৃদ্ধ হইবে, তখন তোমার হস্ত বিস্তার করিবে, এবং আর এক জন তোমার কটি বন্ধন করিয়া দিবে, ও যেখানে যাইতে তোমার ইচ্ছা নাই, সেইখানে তোমাকে লইয়া যাইবে। এই কথা বলিয়া যীশু নির্দ্দেশ করিলেন যে, পিতর কি প্রকার মৃত্যু দ্বারা ঈশ্বরের গৌরব করিবেন। এই কথা বলিবার পর তিনি তাঁহাকে বলিলেন, আমার পশ্চাৎ আইস। পিতর মুখ ফিরাইয়া দেখিলেন, সেই শিষ্য পশ্চাৎ আসিতেছেন, যাঁহাকে যীশু প্রেম করিতেন এবং যিনি রাত্রিভোজের সময়ে তাঁহার বক্ষঃস্থলের দিকে হেলিয়া পড়িয়া বলিয়াছিলেন, প্রভু, কে আপনাকে শত্রুহস্তে সমর্পণ করিবে? তাঁহাকে দেখিয়া পিতর যীশুকে বলিলেন, প্রভু, ইহার কি হইবে? যীশু তাঁহাকে বলিলেন, আমি যদি ইচ্ছা করি, এ আমার আগমন পর্য্যন্ত থাকে, তাহাতে তোমার কি? তুমি আমার পশ্চাৎ আইস। অতএব ভ্রাতৃগণের মধ্যে এই কথা রটিয়া গেল যে, সেই শিষ্য মরিবেন না; কিন্তু যীশু তাঁহাকে বলেন নাই যে, তিনি মরিবেন না; কেবল বলিয়াছিলেন, আমি যদি ইচ্ছা করি, এ আমার আগমন পর্য্যন্ত থাকে, তাহাতে তোমার কি? সেই শিষ্যই এই সকল বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেছেন, এবং এই সকল লিখিয়াছেন; আর আমরা জানি, তাঁহার সাক্ষ্য সত্য। যীশু আরও অনেক কর্ম্ম করিয়াছিলেন; সে সকল যদি এক এক করিয়া লেখা যায়, তবে আমার বোধ হয়, লিখিতে লিখিতে এত গ্রন্থ হইয়া উঠে যে, জগতেও তাহা ধরে না। হে থিয়ফিল, প্রথম প্রবন্ধটী আমি সেই সকল বিষয় লইয়া রচনা করিয়াছি, যাহা যীশু সেই দিন পর্য্যন্ত সাধন করিতে ও শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন, যে দিনে তিনি আপনার মনোনীত প্রেরিতদিগকে পবিত্র আত্মা দ্বারা আজ্ঞা দিয়া ঊর্দ্ধে নীত হইলেন। আপন দুঃখভোগের পরে তিনি অনেক প্রমাণ দ্বারা তাঁহাদের নিকটে আপনাকে জীবিত দেখাইলেন, ফলতঃ চল্লিশ দিন যাবৎ তাঁহাদিগকে দর্শন দিলেন, এবং ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় নানা কথা বলিলেন। আর তিনি তাঁহাদের সঙ্গে সমবেত হইয়া এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা যিরূশালেম হইতে প্রস্থান করিও না, কিন্তু পিতার অঙ্গীকৃত যে দানের কথা আমার কাছে শুনিয়াছ, তাহার অপেক্ষায় থাক। কেননা যোহন জলে বাপ্তাইজ করিতেন বটে, কিন্তু তোমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হইবে, বেশী দিন পরে নয়। অতএব তাঁহারা একত্র হইয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, প্রভু, আপনি কি এই সময়ে ইস্রায়েলের হাতে রাজ্য ফিরাইয়া আনিবেন? তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, যে সকল সময় কি কাল পিতা নিজ কর্ত্তৃত্বের অধীন রাখিয়াছেন, তাহা তোমাদের জানিবার বিষয় নয়। কিন্তু পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে। এই কথা বলিবার পর তিনি তাঁহাদের দৃষ্টিতে ঊর্দ্ধে নীত হইলেন, এবং একখানি মেঘ তাঁহাদের দৃষ্টিপথ হইতে তাঁহাকে গ্রহণ করিল। তিনি যাইতেছেন, আর তাঁহারা আকাশের দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া আছেন, এমন সময়ে, দেখ, শুক্লবস্ত্র-পরিহিত দুই পুরুষ তাঁহাদের নিকটে দাঁড়াইলেন; আর তাঁহারা কহিলেন, হে গালীলীয় লোকেরা, তোমরা আকাশের দিকে দৃষ্টি করিয়া দাঁড়াইয়া রহিয়াছ কেন? এই যে যীশু তোমাদের নিকট হইতে স্বর্গে ঊর্দ্ধে নীত হইলেন, উহাঁকে যেরূপে স্বর্গে গমন করিতে দেখিলে, সেইরূপে উনি আগমন করিবেন। তখন তাঁহারা জৈতুন নামক পর্ব্বত হইতে যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন। সেই পর্ব্বত যিরূশালেমের নিকটবর্ত্তী, বিশ্রামবারের পথ। নগরে প্রবেশ করিলে পর তাঁহারা যেখানে অবস্থিতি করিতেছিলেন, সেই উপরের কুঠরীতে গেলেন; —পিতর, যোহন, যাকোব ও আন্দ্রিয়, ফিলিপ ও থোমা, বর্থলময় ও মথি, আল্‌ফেয়ের পুত্র যাকোব ও উদ্‌যোগী শিমোন এবং যাকোবের [ভ্রাতা] যিহূদা; ইহাঁরা সকলে স্ত্রীলোকদের, এবং যীশুর মাতা মরিয়মের ও তাঁহার ভ্রাতাদের সঙ্গে একচিত্তে প্রার্থনায় নিবিষ্ট রহিলেন। সেই সময়ে এক দিন—যখন অনুমান এক শত কুড়ি জন এক স্থানে সমবেত ছিলেন,—তখন পিতর ভ্রাতৃগণের মধ্যে দাঁড়াইয়া বলিলেন, ‘হে ভ্রাতৃগণ, যাহারা যীশুকে ধরিয়াছিল, তাহাদের পথদর্শক হইয়াছিল যে যিহূদা, তাহার বিষয়ে পবিত্র আত্মা দায়ূদের মুখ দ্বারা অগ্রে যাহা বলিয়াছিলেন, সেই শাস্ত্রীয় বচন পূর্ণ হওয়া আবশ্যক ছিল। কেননা সে ব্যক্তি আমাদের মধ্যে গণিত, এবং এই পরিচর্য্যার অধিকার প্রাপ্ত ছিল। —সে অধর্ম্মের বেতন দ্বারা একখান ক্ষেত্র লাভ করিল; এবং অধোমুখে ভূমিতে পতিত হইলে তাহার উদর ফাটিয়া যাওয়াতে নাড়ী ভুঁড়ী সকল বাহির হইয়া পড়িল; আর যিরূশালেম-নিবাসী সকল লোকে তাহা জানিতে পারিয়াছিল, এই জন্য তাহাদের ভাষায় ঐ ক্ষেত্র হকলদামা, অর্থাৎ রক্তক্ষেত্র, নামে আখ্যাত। বস্তুতঃ গীতপুস্তকে লেখা আছে, “তাহার নিবাস শূন্য হউক, তাহাতে বাস করে, এমন কেহ না থাকুক;” এবং “অন্য ব্যক্তি তাহার অধ্যক্ষ-পদ প্রাপ্ত হউক।” অতএব যোহনের বাপ্তিস্ম অবধি আরম্ভ করিয়া, যে দিন প্রভু যীশু আমাদের নিকট হইতে ঊর্দ্ধে নীত হন, সেই দিন পর্য্যন্ত, যত দিন তিনি আমাদের কাছে ভিতরে আসিতেন ও বাহিরে যাইতেন, তত দিন সর্ব্বদা যাঁহারা আমাদের সহচর ছিলেন, তাঁহাদের এক ব্যক্তি যে আমাদের সহিত তাঁহার পুনরুত্থানের সাক্ষী হন, ইহা আবশ্যক।’ তখন তাঁহারা এই দুই জনকে দাঁড় করাইলেন, যোষেফ—যাঁহাকে বার্শব্বা বলিয়া ডাকে, যাঁহার উপাধি যুষ্ট, —এবং মত্তথিয়; আর তাঁহারা প্রার্থনা করিলেন, হে প্রভু, তুমি সকলের অন্তঃকরণ জান, যিহূদা নিজ স্থানে যাইবার জন্য এই যে পরিচর্য্যা ও প্রেরিতত্ব ছাড়িয়া গিয়াছে, তাহার স্থান গ্রহণ করিবার জন্য তুমি এই দুইয়ের মধ্যে যাহাকে মনোনীত করিয়াছ, তাহাকে দেখাইয়া দেও। পরে তাঁহারা উভয়ের জন্য গুলিবাঁট করিলেন, আর মত্তথিয়ের নামে গুলি উঠিল; তাহাতে তিনি এগারো জন প্রেরিতের সহিত গণিত হইলেন। পরে পঞ্চাশত্তমীর দিন উপস্থিত হইলে তাঁহারা সকলে একস্থানে সমবেত ছিলেন। আর হঠাৎ আকাশ হইতে প্রচণ্ড বায়ুর বেগের শব্দবৎ একটা শব্দ আসিল, এবং যে গৃহে তাঁহারা বসিয়াছিলেন, সেই গৃহের সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইল। আর অংশ অংশ হইয়া পড়িতেছে, এমন অনেক অগ্নিবৎ জিহ্বা তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল; এবং তাঁহাদের প্রত্যেক জনের উপরে বসিল। তাহাতে তাঁহারা সকলে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন, এবং আত্মা তাঁহাদিগকে যেরূপ বক্তৃতা দান করিলেন, তদনুসারে অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে যিহূদীরা, আকাশের নিম্নস্থিত সমস্ত জাতি হইতে আগত ভক্ত লোকেরা, যিরূশালেমে বাস করিতেছিল। আর সেই ধ্বনি হইলে অনেক লোক সমাগত হইল, এবং তাহারা হতবুদ্ধি হইয়া পড়িল, কারণ প্রত্যেক জন আপন আপন ভাষায় তাঁহাদিগকে কথা কহিতে শুনিতেছিল। তখন সকলে অতিশয় আশ্চর্য্যান্বিত ও চমৎকৃত হইয়া বলিতে লাগিল, দেখ, এই যে লোকেরা কথা কহিতেছে, ইহারা সকলে কি গালীলীয় নহে? তবে আমরা কেমন করিয়া প্রত্যেক জন নিজ নিজ জন্মদেশীয় ভাষায় কথা শুনিতেছি? পার্থীয়, মাদীয় ও এলমীয় লোক, এবং মিসপতামিয়া, যিহূদিয়া ও কাপ্পাদকিয়া, পন্ত ও আশিয়া, ফরুগিয়া ও পাম্ফুলিয়া, মিসর, এবং লুবিয়া দেশস্থ কুরীণীর নিকটবর্ত্তী অঞ্চলনিবাসী, এবং প্রবাসকারী রোমীয়—কি যিহূদী কি যিহূদী-ধর্ম্মাবলম্বী লোক —এবং ক্রীতীয় ও আরবীয় লোক যে আমরা, আমাদের নিজ নিজ ভাষায় উহাদিগকে ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা বলিতে শুনিতেছি। এইরূপে তাহারা সকলে চমৎকৃত হইল ও হতবুদ্ধি হইয়া পরস্পর বলিতে লাগিল, ইহার ভাব কি? অন্য লোকেরা পরিহাস করিয়া বলিল, উহারা মিষ্ট দ্রাক্ষারসে মত্ত হইয়াছে। কিন্তু পিতর এগারো জনের সহিত দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে তাহাদের কাছে বক্তৃতা করিয়া কহিলেন,— হে যিহূদী লোকেরা, হে যিরূশালেম নিবাসী সকলে, তোমরা ইহা জ্ঞাত হও, এবং আমার কথায় কর্ণপাত কর। কেননা তোমরা যে অনুমান করিতেছ, ইহারা মত্ত, তাহা নয়, কারণ এখন বেলা তিন ঘটিকামাত্র। কিন্তু এটী সেই ঘটনা, যাহার কথা যোয়েল ভাববাদী দ্বারা উক্ত হইয়াছে, “শেষ কালে এইরূপ হইবে, ইহা ঈশ্বর বলিতেছেন, আমি মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আপন আত্মা সেচন করিব; তাহাতে তোমাদের পুত্রগণ ও তোমাদের কন্যাগণ ভাববাণী বলিবে, আর তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাইবে, আর তোমাদের প্রাচীনেরা স্বপ্ন দেখিবে। আবার আমার দাসদের উপরে এবং আমার দাসীদের উপরে সেই সময়ে আমি আমার আত্মা সেচন করিব, আর তাহারা ভাববাণী বলিবে। আমি উপরে আকাশে নানা অদ্ভুত লক্ষণ এবং নীচে পৃথিবীতে নানা চিহ্ন রক্ত, অগ্নি ও ধূম-বাষ্প দেখাইব। প্রভুর সেই মহৎ ও প্রসিদ্ধ দিনের আগমনের পূর্ব্বে সূর্য্য অন্ধকার হইয়া যাইবে, চন্দ্র রক্ত হইয়া যাইবে; আর এইরূপ হইবে, যে কেহ প্রভুর নামে ডাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” হে ইস্রায়েলীয়েরা, এই সকল কথা শুন। নাসরতীয় যীশু পরাক্রম-কার্য্য, অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্নসমূহ দ্বারা তোমাদের নিকটে ঈশ্বর কর্ত্তৃক প্রমাণিত মনুষ্য; তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বর তোমাদের মধ্যে ঐ সকল কার্য্য করিয়াছেন, যেমন তোমরা নিজেই জান; সেই ব্যক্তি ঈশ্বরের নিরূপিত মন্ত্রণা ও পূর্ব্বজ্ঞান অনুসারে সমর্পিত হইলে তোমরা তাঁহাকে অধর্ম্মীদের হস্ত দ্বারা ক্রুশে দিয়া বধ করিয়াছিলে। ঈশ্বর মৃত্যু-যন্ত্রণা মুক্ত করিয়া তাঁহাকে উঠাইয়াছেন; কেননা তাঁহাকে ধরিয়া রাখিতে মৃত্যুর সাধ্য ছিল না। কারণ দায়ূদ তাঁহার বিষয়ে বলেন, “আমি প্রভুকে নিয়তই আমার সম্মুখে দেখিতাম; কারণ তিনি আমার দক্ষিণে আছেন, যেন আমি বিচলিত না হই। এই জন্য আমার চিত্ত আনন্দিত ও আমার জিহ্বা উল্লাসিত হইল; আবার আমার মাংসও প্রত্যাশায় প্রবাস করিবে; কারণ তুমি আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না, আর নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না। তুমি আমাকে জীবনের পথ জ্ঞাত করিয়াছ, তোমার শ্রীমুখ দ্বারা আমাকে আনন্দে পূর্ণ করিবে।” ভ্রাতৃগণ, সেই পিতৃকুলপতি দায়ূদের বিষয়ে আমি তোমাদিগকে মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারি যে, তিনি প্রাণত্যাগ করিয়াছেন এবং কবরপ্রাপ্তও হইয়াছেন, আর তাঁহার কবর আজ পর্য্যন্ত আমাদের নিকটে রহিয়াছে। ভাল, তিনি ভাববাদী ছিলেন, এবং জানিতেন, ঈশ্বর দিব্যপূর্ব্বক তাঁহার কাছে এই শপথ করিয়াছিলেন যে, তাঁহার ঔরসজাত এক জনকে তাঁহার সিংহাসনে বসাইবেন; অতএব পূর্ব্ব হইতে দেখিয়া তিনি খ্রীষ্টেরই পুনরুত্থান বিষয়ে এই কথা কহিলেন যে, তাঁহাকে পাতালে পরিত্যাগও করা হয় নাই, তাঁহার মাংস ক্ষয়ও দেখে নাই। এই যীশুকেই ঈশ্বর উঠাইয়াছেন, আমরা সকলেই এই বিষয়ের সাক্ষী। অতএব তিনি ঈশ্বরের দক্ষিণ হস্ত দ্বারা উচ্চীকৃত হওয়াতে, এবং পিতার নিকট হইতে অঙ্গীকৃত পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হওয়াতে, এই যাহা তোমরা দেখিতেছ ও শুনিতেছ, তাহা তিনি সেচন করিলেন। কেননা দায়ূদ স্বর্গারোহণ করেন নাই, কিন্তু আপনি এই কথা বলেন, “প্রভু আমার প্রভুকে কহিলেন, তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি।” অতএব ইস্রায়েলের সমস্ত কুল নিশ্চয় জ্ঞাত হউক যে, যাঁহাকে তোমরা ক্রুশে দিয়াছিলে, সেই যীশুকেই ঈশ্বর প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই করিয়াছেন। এই কথা শুনিয়া তাহাদের হৃদয়ে যেন শেল বিদ্ধ হইল, এবং তাহারা পিতরকে ও অন্য প্রেরিতদিগকে বলিতে লাগিল, ভ্রাতৃগণ, আমরা কি করিব? তখন পিতর তাহাদিগকে কহিলেন, মন ফিরাও, এবং তোমরা প্রত্যেক জন তোমাদের পাপমোচনের নিমিত্ত যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হও; তাহা হইলে পবিত্র আত্মারূপ দান প্রাপ্ত হইবে। কারণ এই প্রতিজ্ঞা তোমাদের জন্য ও তোমাদের সন্তানগণের জন্য এবং দূরবর্ত্তী সকলের জন্য যত লোককে আমাদের ঈশ্বর প্রভু ডাকিয়া আনিবেন। আর আর অনেক কথায় তিনি সাক্ষ্য দিলেন, ও তাহাদিগকে উপদেশ দিয়া কহিলেন, এই কালের কুটিল লোকদের হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর। তখন যাহারা তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল, তাহারা বাপ্তাইজিত হইল; তাহাতে সেই দিন কমবেশ তিন হাজার লোক তাঁহাদের সহিত সংযুক্ত হইল। আর তাহারা প্রেরিতদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায়, রুটী ভাঙ্গায় ও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিল। তখন সকলের ভয় উপস্থিত হইল, এবং প্রেরিতগণ কর্ত্তৃক অনেক অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্ন-কার্য্য সাধিত হইত। আর যাহারা বিশ্বাস করিল, তাহারা সকলে একসঙ্গে সমস্তই সাধারণে রাখিত; আর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া, যাহার যেমন প্রয়োজন, তদনুসারে সকলকে অংশ করিয়া দিত। আর তাহারা প্রতিদিন একচিত্তে ধর্ম্মধামে নিবিষ্ট থাকিয়া এবং বাটীতে রুটী ভাঙ্গিয়া উল্লাসে ও হৃদয়ের সরলতায় খাদ্য গ্রহণ করিত; তাহারা ঈশ্বরের প্রশংসা করিত, এবং সমস্ত লোকের প্রীতির পাত্র হইল। আর যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু দিন দিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন। এক দিন প্রার্থনার নির্দ্দিষ্ট সময়ে, নবম ঘটিকায়, পিতর ও যোহন ধর্ম্মধামে যাইতেছিলেন; এমন সময়ে লোকেরা এক ব্যক্তিকে বহন করিয়া আনিতেছিল, সে মাতার গর্ভ হইতে খঞ্জ; তাহাকে প্রতিদিন ধর্ম্মধামের সুন্দর নামক দ্বারে রাখিয়া দেওয়া হইত, যেন, ধর্ম্মধামে যাহারা প্রবেশ করে, তাহাদের কাছে ভিক্ষা চাহিতে পারে। সে পিতরকে ও যোহনকে ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিতে উদ্যত দেখিয়া ভিক্ষা পাইবার জন্য বিনতি করিতে লাগিল। তাহাতে পিতর যোহনের সহিত তাহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া কহিলেন, আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। তাহাতে সে তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া রহিল, তাঁহাদের নিকট হইতে কিছু পাইবার অপেক্ষা করিতেছিল। কিন্তু পিতর বলিলেন, রৌপ্য কি স্বর্ণ আমার নাই, কিন্তু যাহা আছে, তাহা তোমাকে দান করি; নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের নামে হাঁটিয়া বেড়াও। পরে তিনি তাঁহার দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া তাহাকে তুলিলেন; তাহাতে তৎক্ষণাৎ তাহার চরণ ও গুল্‌ফ সবল হইল; আর সে লম্ফ দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল, ও হাঁটিয়া বেড়াইতে লাগিল, এবং বেড়াইতে বেড়াইতে, লম্ফ দিতে দিতে, ঈশ্বরের প্রশংসা করিতে করিতে তাঁহাদের সহিত ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিল। সমস্ত লোক তাহাকে বেড়াইতে ও ঈশ্বরের প্রশংসা করিতে দেখিল; আর তাহারা তাহাকে চিনিতে পারিল যে, এ সেই ব্যক্তি, যে ধর্ম্মধামের সুন্দর দ্বারে বসিয়া ভিক্ষা করিত; আর তাহার প্রতি যাহা ঘটিয়াছিল, তাহাতে অতিশয় চমৎকৃত ও বিস্ময়াপন্ন হইল। আর সে পিতরকে ও যোহনকে ধরিয়া থাকাতে লোক সকল অতিশয় চমৎকৃত হইয়া তাঁহাদের নিকটে শলোমনের নামে আখ্যাত বারাণ্ডায় দৌড়িয়া আসিল। তাহা দেখিয়া পিতর লোকসমূহকে কহিলেন, হে ইস্রায়েলীয় লোকেরা, এই ব্যক্তির বিষয়ে কেন আশ্চর্য্য জ্ঞান করিতেছ? অথবা আমরাই যে নিজ শক্তি বা ভক্তিগুণে ইহাকে চলিবার শক্তি দিয়াছি, ইহা মনে করিয়া কেনই বা আমাদের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া রহিয়াছ? অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের ঈশ্বর, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, আপনার দাস সেই যীশুকে গৌরবান্বিত করিয়াছেন, যাঁহাকে তোমরা শত্রুহস্তে সমর্পণ করিয়াছিলে, এবং পীলাত যখন তাঁহাকে ছাড়িয়া দিতে স্থির করিয়াছিলেন, তখন তাঁহার সাক্ষাতে তোমরা অস্বীকার করিয়াছিলে। তোমরা সেই পবিত্র ও ধর্ম্মময় ব্যক্তিকে অস্বীকার করিয়াছিলে, এবং চাহিয়াছিলে যেন তোমাদের জন্য এক জন নরঘাতককে দেওয়া হয়, কিন্তু তোমরা জীবনের আদিকর্ত্তাকে বধ করিয়াছিলে; তাঁহাকে ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছেন, আমরা ইহার সাক্ষী। আর তাঁহার নামে বিশ্বাস হেতু, এই যে ব্যক্তিকে তোমরা দেখিতেছ ও জান, তাঁহারই নাম ইহাকে বলবান্‌ করিয়াছে; তাঁহারই দত্ত বিশ্বাস তোমাদের সকলের সাক্ষাতে ইহাকে এই সম্পূর্ণ সুস্থতা দিয়াছে। এখন, হে ভ্রাতৃগণ, আমি জানি, তোমরা অজ্ঞানতা বশতঃ সেই কার্য্য করিয়াছ, যেমন তোমাদের অধ্যক্ষেরাও করিয়াছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর তাঁহার খ্রীষ্টের দুঃখভোগের বিষয়ে যে সকল কথা সমস্ত ভাববাদীর মুখ দ্বারা পূর্ব্বে জ্ঞাত করিয়াছিলেন, সে সকল এইরূপে পূর্ণ করিয়াছেন। অতএব তোমরা মন ফিরাও, ও ফির, যেন তোমাদের পাপ মুছিয়া ফেলা হয়, যেন এইরূপে প্রভুর সম্মুখ হইতে তাপশান্তির সময় উপস্থিত হয়, এবং তোমাদের নিমিত্ত পূর্ব্বনিরূপিত খ্রীষ্টকে, যীশুকে, তিনি যেন প্রেরণ করেন। যাঁহাকে স্বর্গ নিশ্চয়ই গ্রহণ করিয়া রাখিবে, যে পর্য্যন্ত না সমস্ত বিষয়ের পুনঃস্থাপনের কাল উপস্থিত হয়, যে কালের বিষয় ঈশ্বর নিজ পবিত্র ভাববাদিগণের মুখ দ্বারা বলিয়াছেন, যাঁহারা পুরাকাল হইতে হইয়া গিয়াছেন। মোশি ত বলিয়াছিলেন, “প্রভু ঈশ্বর তোমাদের জন্য তোমাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে আমার সদৃশ এক ভাববাদীকে উৎপন্ন করিবেন, তিনি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিবেন, সেই সমস্ত বিষয়ে তোমরা তাঁহার কথা শুনিবে; আর এইরূপ হইবে, যে কোন প্রাণী সেই ভাববাদীর কথা না শুনিবে, সে প্রজা লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে।” আর শমূয়েল ও তাঁহার পরবর্ত্তী যত ভাববাদী কথা বলিয়াছেন, তাঁহারাও সকলে এই কালের কথা বলিয়াছেন। তোমরা ভাববাদিগণের সন্তান, আর সেই নিয়মেরও সন্তান, যাহা ঈশ্বর তোমাদের পিতৃপুরুষদের সহিত স্থাপন করিয়াছিলেন, তিনি ত অব্রাহামকে বলিয়াছিলেন, “আর তোমার বংশে পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল আশীর্ব্বাদ পাইবে।” ঈশ্বর আপন দাসকে উৎপন্ন করিয়া প্রথমে তোমাদেরই নিকটে তাঁহাকে প্রেরণ করিলেন, যেন তিনি তোমাদের অধর্ম্ম সকল হইতে তোমাদের প্রত্যেক জনকে ফিরাইয়া তদ্দ্বারা তোমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করেন। তাঁহারা লোকদের নিকটে কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে যাজকেরা ও ধর্ম্মধামের সেনাপতি এবং সদ্দূকীরা হঠাৎ তাঁহাদের নিকটে আসিয়া উপস্থিত হইল, তাহারা অতিশয় বিরক্ত হইয়াছিল, কারণ তাঁহারা লোকদিগকে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুতেই মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থান প্রচার করিতেন। আর তাহারা তাঁহাদিগকে ধরিয়া পর দিবস পর্য্যন্ত বদ্ধ করিয়া রাখিল, কেননা তখন সন্ধ্যা হইয়াছিল। তথাপি যে সকল লোক বাক্য শুনিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করিল; তাহাতে পুরুষদের সংখ্যা কমবেশ পাঁচ হাজার হইল। পরদিবসে লোকদের অধ্যক্ষেরা, প্রাচীনবর্গ ও অধ্যাপকগণ যিরূশালেমে একত্র হইলেন, এবং হানন মহাযাজক, কায়াফা, যোহন, আলেক্‌সান্দর, আর মহাযাজকের আত্মীয় স্বজন সকলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁহারা উহাঁদিগকে মধ্যস্থানে দাঁড় করাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কি ক্ষমতায় অথবা কি নামে তোমরা এই কর্ম্ম করিয়াছ? তখন পিতর পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, হে লোকদের অধ্যক্ষগণ ও প্রাচীনবর্গ, এক জন দুর্ব্বল মনুষ্যের উপকার সাধন বিষয়ে যদি অদ্য আমাদিগকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কি প্রকারে এ সুস্থ হইয়াছে, তবে আপনারা সকলে ও সমস্ত ইস্রায়েল লোক ইহা জ্ঞাত হউন, নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের নামে, যাঁহাকে আপনারা ক্রুশে দিয়াছিলেন, যাঁহাকে ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইলেন, তাঁহারই গুণে এই ব্যক্তি আপনাদের সম্মুখে সুস্থ শরীরে দাঁড়াইয়া আছে। তিনিই সেই প্রস্তর, যাহা গাঁথকেরা যে আপনারা, আপনাদের দ্বারা অবজ্ঞাত হইয়াছিল, যাহা কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল । আর অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে। তখন পিতরের ও যোহনের সাহস দেখিয়া, এবং ইহাঁরা যে অশিক্ষিত সামান্য লোক, ইহা বুঝিয়া, তাঁহারা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, এবং চিনিতে পারিলেন যে, ইহাঁরা যীশুর সঙ্গে ছিলেন। আর ঐ আরোগ্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি উহাঁদের সঙ্গে দাঁড়াইয়া আছে দেখিয়া কিছুই বিরুদ্ধে বলিতে পারিলেন না। পরে উহাঁদিগকে সভা হইতে বাহিরে যাইতে আজ্ঞা দিয়া তাঁহারা পরস্পর এই পরামর্শ করিতে লাগিলেন, এই লোকদের প্রতি কি করি? কেননা উহাদের কর্ত্তৃক যে একটা প্রসিদ্ধ চিহ্ন-কার্য্য সম্পন্ন হইয়াছে, তাহা যিরূশালেম-নিবাসী সকলের নিকটে প্রকাশ আছে, এবং আমরা তাহা অস্বীকার করিতে পারি না। কিন্তু কথাটা যেন লোকদের মধ্যে আরও রটিয়া না যায়, এই নিমিত্ত ইহাদিগকে ভয় দেখান যাউক, যেন কোন লোককেই আর এই নামে কিছু না বলে। পরে তাঁহারা উহাঁদিগকে ডাকিয়া এই আজ্ঞা দিলেন, তোমরা যীশুর নামে একেবারেই কোন কথা বলিও না, কোন উপদেশও দিও না। কিন্তু পিতর ও যোহন উত্তর করিয়া তাঁহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বরের কথা অপেক্ষা আপনাদের কথা শুনা ঈশ্বরের সাক্ষাতে বিহিত কি না, আপনারা বিচার করুন; কারণ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না। পরে তাঁহারা উহাঁদিগকে আরও ভয় দেখাইয়া ছাড়িয়া দিলেন; লোকভয়ে উহাঁদিগকে দণ্ড দিবার পথ পাইলেন না, কারণ যাহা করা হইয়াছিল, সে জন্য সকল লোক ঈশ্বরের গৌরব করিতেছিল। কেননা সেই আরোগ্য-দানরূপ চিহ্ন-কার্য্য যে ব্যক্তিতে সাধিত হইয়াছিল, তাহার বয়ঃক্রম চল্লিশ বৎসরের অধিক হইয়াছিল। তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া দেওয়া হইলে পর তাঁহারা আপন সঙ্গীদের নিকটে গেলেন, এবং প্রধান যাজকগণ ও প্রাচীনবর্গ তাঁহাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, সে সকলই জানাইলেন। তাহা শুনিয়া সকলে একচিত্তে ঈশ্বরের উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, হে স্বামিন্‌, তুমি আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং এই সকলের মধ্যে যাহা কিছু আছে, সমস্তের নির্ম্মাণকর্ত্তা; তুমি তোমার দাস আমাদের পিতা দায়ূদের মুখ দিয়া, পবিত্র আত্মা দ্বারা, এই কথা বলিয়াছিলে, যথা, “জাতিগণ কেন কলহ করিল? লোকবৃন্দ কেন অনর্থক বিষয় ধ্যান করিল? পৃথিবীর রাজগণ দণ্ডায়মান হইল, শাসনকর্ত্তৃগণ একত্র হইল— প্রভুর বিরুদ্ধে এবং তাঁহার অভিষিক্তের বিরুদ্ধে।” কেননা সত্যই তোমার পবিত্র দাস যীশু, যাঁহাকে তুমি অভিষিক্ত করিয়াছ, তাঁহার বিরুদ্ধে হেরোদ ও পন্তীয় পীলাত জাতিগণের ও ইস্রায়েল-লোকদের সঙ্গে এই নগরে একত্র হইয়াছিল, যেন তোমার হস্ত ও তোমার মন্ত্রণা দ্বারা পূর্ব্বাবধি যে সকল বিষয় নিরূপিত হইয়াছিল, তাহা সম্পন্ন করে। আর এখন, হে প্রভু, উহাদের ভয়প্রদর্শনের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; এবং তোমার এই দাসদিগকে সম্পূর্ণ সাহসের সহিত তোমার বাক্য বলিবার ক্ষমতা দেও, আরোগ্য-দানার্থে তোমার হস্ত বিস্তার কর; আর তোমার পবিত্র দাস যীশুর নামে যেন চিহ্ন-কার্য্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধিত হয়। তাঁহারা প্রার্থনা করিলে, যে স্থানে তাঁহারা সমবেত হইয়াছিলেন, সেই স্থান কাঁপিয়া উঠিল; এবং তাঁহারা সকলেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন ও সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতে থাকিলেন। আর যে বহুসংখ্যক লোক বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহারা একচিত্ত ও একপ্রাণ ছিল; তাহাদের এক জনও আপন সম্পত্তির মধ্যে কিছুই নিজের বলিত না; কিন্তু তাহাদের সকল বিষয় সাধারণে থাকিত। আর প্রেরিতেরা মহাপরাক্রমে প্রভু যীশুর পুনরুত্থান বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন, এবং তাহাদের সকলের উপরে মহা অনুগ্রহ ছিল। এমন কি, তাহাদের মধ্যে কেহই দীনহীন ছিল না; কারণ যাহারা ভূমির অথবা বাটীর অধিকারী ছিল, তাহারা তাহা বিক্রয় করিয়া, বিক্রীত সম্পত্তির মূল্য আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিত; পরে যাহার যেমন প্রয়োজন, তাহাকে তেমনি দেওয়া হইত। আর যোষেফ, যাঁহাকে প্রেরিতেরা বার্ণবা নাম দিয়াছিলেন—অনুবাদ করিলে, এই নামের অর্থ প্রবোধের সন্তান—যিনি লেবীয় এবং জাতিতে কুপ্রীয়, তাঁহার এক খণ্ড ভূমি থাকাতে তিনি তাহা বিক্রয় করিয়া তাহার মূল্য আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিলেন। কিন্তু অননিয় নামে এক ব্যক্তি, এবং তাহার সহিত তাহার স্ত্রী সাফীরা, একটী সম্পত্তি বিক্রয় করিল, এবং স্ত্রীর জ্ঞাতসারে তাহার মূল্যের কিছু রাখিয়া দিল, আর কতক আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিল। তখন পিতর কহিলেন, অননিয়, শয়তান কেন তোমার হৃদয় এমন পূর্ণ করিয়াছে যে, তুমি পবিত্র আত্মার কাছে মিথ্যা বলিলে, এবং ভূমির মূল্য হইতে কতকটা রাখিয়া দিলে? সেই ভূমি থাকিতে কি তোমারই ছিল না? এবং বিক্রীত হইলে পর কি উহা তোমার নিজ অধিকারে ছিল না? তবে এমন বিষয় তোমার হৃদয়ে কেন ধারণ করিলে? তুমি মনুষ্যদের কাছে মিথ্যা কথা কহিলে, এমন নয়, ঈশ্বরেরই কাছে কহিলে। এই সকল কথা শুনিবামাত্র অননিয় পড়িয়া প্রাণ ত্যাগ করিল; আর যাহারা শুনিল, সকলেই অতিশয় ভয়গ্রস্ত হইল। পরে যুবকেরা উঠিয়া তাহাকে বস্ত্রে জড়াইল ও বাহিরে লইয়া গিয়া কবর দিল। আর প্রায় তিন ঘন্টা পরে তাহার স্ত্রীও উপস্থিত হইল, কিন্তু কি ঘটিয়াছে, তাহা সে জানিত না। তখন পিতর তাহাকে উত্তর করিলেন, আমাকে বল দেখি, তোমরা সেই ভূমি কি এত টাকাতে বিক্রয় করিয়াছিলে? সে বলিল, হাঁ, এত টাকাতেই বটে। তাহাতে পিতর তাহাকে কহিলেন, তোমরা প্রভুর আত্মাকে পরীক্ষা করিবার জন্য কেন একপরামর্শ হইলে? দেখ, যাহারা তোমার স্বামীর কবর দিয়াছে, তাহারা দ্বারে পদার্পণ করিতেছে, এবং তোমাকে বাহিরে লইয়া যাইবে। সে তৎক্ষণাৎ তাঁহার চরণে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিল; আর ঐ যুবকেরা ভিতরে আসিয়া তাহাকে মৃত দেখিল, এবং বাহিরে লইয়া গিয়া তাহার স্বামীর পার্শ্বে কবর দিল। তখন সমস্ত মণ্ডলী, এবং যত লোক এই কথা শুনিল, সকলেই অতিশয় ভয়গ্রস্ত হইল। আর প্রেরিতদের হস্ত দ্বারা লোকদের মধ্যে অনেক চিহ্ন-কার্য্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধিত হইত; এবং তাঁহারা সকলে একচিত্তে শলোমনের বারাণ্ডাতে উপস্থিত হইতেন। কিন্তু অন্য লোকদের মধ্যে তাঁহাদের সঙ্গে যোগ দিতে কাহারও সাহস হইত না, তথাপি লোকেরা তাঁহাদিগকে সমাদর করিত। আর উত্তর উত্তর অনেক পুরুষ ও স্ত্রীলোক বিশ্বাসী হইয়া প্রভুতে সংযুক্ত হইতে লাগিল। এমন কি, লোকেরা রোগীদিগকে বাহিরে পথে পথে আনিয়া শয্যায় ও খট্টাতে করিয়া রাখিত, যেন পিতর আসিবার সময়ে অন্ততঃ তাঁহার ছায়া কাহারও কাহারও উপরে পড়ে। আর যিরূশালেমের চারিদিকের নগরসমূহ হইতেও অনেক লোক রোগীদিগকে এবং অশুচি আত্মা দ্বারা ক্লিষ্ট ব্যক্তদিগকে লইয়া সমাগত হইত, আর তাহারা সকলেই সুস্থ হইত। পরে মহাযাজক এবং তাঁহার সঙ্গীরা সকলে অর্থাৎ সদ্দূকি-সম্প্রদায় উঠিলেন, তাঁহারা ঈর্ষাতে পরিপূর্ণ হইলেন, এবং প্রেরিতদিগকে ধরিয়া সাধারণ কারাগারে বদ্ধ করিলেন। কিন্তু রাত্রিকালে প্রভুর এক দূত কারাগারের দ্বার সকল খুলিয়া দিলেন, ও তাঁহাদিগকে বাহিরে আনিয়া কহিলেন, তোমরা যাও, ধর্ম্মধামে দাঁড়াইয়া লোকদিগকে এই জীবনের সমস্ত কথা বল। ইহা শুনিয়া তাঁহারা প্রভাত কালে ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিয়া উপদেশ দিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে মহাযাজক ও তাঁহার সঙ্গীরা আসিয়া মহাসভাকে এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত প্রাচীনদলকে ডাকিয়া একত্র করিলেন, এবং উহাঁদিগকে আনাইবার নিমিত্তে কারাগারে লোক পাঠাইলেন। কিন্তু যে পদাতিকেরা গেল, তাহারা কারাগারে তাঁহাদিগকে পাইল না; তখন ফিরিয়া আসিয়া এই সংবাদ দিল, আমরা দেখিলাম, কারাগার সুদৃঢ়রূপে বদ্ধ, দ্বারে দ্বারে রক্ষকেরা দাঁড়াইয়া আছে, কিন্তু দ্বার খুলিলে ভিতরে কাহাকেও পাইলাম না। এই কথা শুনিয়া ধর্ম্মধামের সেনাপতি এবং প্রধান যাজকেরা ভাবিয়া আকুল হইলেন যে, ইহার পরিণাম কি হইবে। ইতিমধ্যে কোন ব্যক্তি আসিয়া তাঁহাদিগকে এই সংবাদ দিল, দেখুন, আপনারা যে লোকদিগকে কারাগারে রাখিয়াছিলেন, তাহারা ধর্ম্মধামে দাঁড়াইয়া আছে, ও লোকদিগকে উপদেশ দিতেছে। তখন সেনাপতি পদাতিকদিগকে সঙ্গে করিয়া তথায় গিয়া তাঁহাদিগকে আনিলেন, কিন্তু বলের সহিত নয়, কেননা তাঁহারা লোকদিগকে ভয় করিলেন, পাছে লোকে তাঁহাদিগকে পাথর মারে। পরে তাঁহারা তাঁহাদিগকে আনিয়া মহাসভার মধ্যে দাঁড় করাইলেন, আর মহাযাজক তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বলিলেন, আমরা তোমাদিগকে এই নামে উপদেশ দিতে দৃঢ়রূপে নিষেধ করিয়াছিলাম; তথাপি দেখ, তোমরা আপনাদের উপদেশে যিরূশালেম পরিপূর্ণ করিয়াছ, এবং সেই ব্যক্তির রক্ত আমাদের উপরে বর্ত্তাইতে মনস্থ করিতেছ। কিন্তু পিতর ও অন্য প্রেরিতগণ উত্তর করিলেন, মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে। আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সেই যীশুকে উত্থাপন করিয়াছেন, যাঁহাকে আপনারা গাছে টাঙ্গাইয়া বধ করিয়াছিলেন; আর তাঁহাকেই ঈশ্বর অধিপতি ও ত্রাণকর্ত্তা করিয়া আপন দক্ষিণ হস্ত দ্বারা উন্নত করিয়াছেন, যেন ইস্রায়েলকে মনপরিবর্ত্তন ও পাপমোচন দান করেন। এই সকল বিষয়ের আমরা সাক্ষী, এবং যে আত্মা ঈশ্বর আপন আজ্ঞাবহদিগকে দিয়াছেন, সেই পবিত্র আত্মাও সাক্ষী। এই কথা শুনিয়া তাঁহারা মর্ম্মাহত হইলেন, ও উহাঁদিগকে বধ করিবার মনস্থ করিলেন। কিন্তু মহাসভায় গমলীয়েল নামে এক জন ফরীশী, যিনি সকল লোকের নিকটে মান্য ব্যবস্থা-গুরু ছিলেন, তিনি উঠিয়া ঐ লোকদিগকে কিছু ক্ষণের নিমিত্ত বাহির করিবার আজ্ঞা দিলেন। পরে তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, হে ইস্রায়েল-লোকেরা, সেই লোকদের বিষয়ে তোমরা কি করিতে উদ্যত হইয়াছ, তদ্বিষয়ে সাবধান হও। কেননা ইতিপূর্ব্বে থুদা উঠিয়া আপনাকে মহাপুরুষ করিয়া বলিয়াছিল, এবং কমবেশ চারি শত জন তাহার সঙ্গে যোগ দিয়াছিল; সে হত হইল, এবং যত লোক তাহার অনুগত হইয়াছিল, সকলে ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল, কেহই রহিল না। সেই ব্যক্তির পরে নাম লিখিয়া দিবার সময়ে গালীলীয় যিহূদা উঠিয়া কতকগুলি লোককে আপনার পশ্চাৎ টানিয়া লইয়াছিল; সেও বিনষ্ট হইল, এবং যত লোক তাহার অনুগত হইয়াছিল, সকলে ছড়াইয়া পড়িল। এক্ষণে আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা এই লোকদের হইতে ক্ষান্ত হও, তাহাদিগকে থাকিতে দেও; কেননা এই মন্ত্রণা কিম্বা এই ব্যাপার যদি মনুষ্য হইতে হইয়া থাকে, তবে লোপ পাইবে, কিন্তু যদি ঈশ্বর হইতে হইয়া থাকে, তবে তাহাদিগকে লোপ করা তোমাদের সাধ্য নয়, কি জানি, দেখা যাইবে যে, তোমরা ঈশ্বরের সহিত যুদ্ধ করিতেছ। তখন তাঁহারা তাঁহার কথায় সম্মত হইলেন, আর প্রেরিতদিগকে কাছে ডাকিয়া প্রহার করিলেন, এবং যীশুর নামে কোন কথা কহিতে নিষেধ করিয়া ছাড়িয়া দিলেন। তখন তাঁহারা মহাসভার সম্মুখ হইতে চলিয়া গেলেন, আনন্দ করিতে করিতে গেলেন, কারণ তাঁহারা সেই নামের জন্য অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিলেন। আর তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না। আর এই সময়ে, যখন শিষ্যগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছিল, তখন গ্রীক ভাষাবাদী যিহূদীরা ইব্রীয়দের বিপক্ষে বচসা করিতে লাগিল, কেননা দৈনিক পরিচর্য্যায় তাহাদের বিধবারা উপেক্ষিত হইতেছিল। তখন সেই বারো জন [প্রেরিত] শিষ্যসমূহকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, আমরা যে ঈশ্বরের বাক্য ত্যাগ করিয়া ভোজনের পরিচর্য্যা করি, ইহা উপযুক্ত নহে। কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সুখ্যাতিপন্ন এবং আত্মায় ও বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ সাত জনকে দেখিয়া লও; তাঁহাদিগকে আমরা এই কার্য্যের ভার দিব। কিন্তু আমরা প্রার্থনায় ও বাক্যের পরিচর্য্যায় নিবিষ্ট থাকিব। এই কথায় সমস্ত লোক সন্তুষ্ট হইল, আর তাহারা এই কয় জনকে মনোনীত করিল, স্তিফান—ইনি বিশ্বাসে ও পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ ছিলেন—এবং ফিলিপ, প্রখর, নীকানর, তীমোন, পার্মিনা, ও নিকলায়, ইনি আন্তিয়খিয়াস্থ যিহূদী-ধর্ম্মাবলম্বী; তাহারা ইহাঁদিগকে প্রেরিতগণের সম্মুখে উপস্থিত করিল, এবং তাঁহারা প্রার্থনা করিয়া ইহাঁদের উপরে হস্তার্পণ করিলেন। আর ঈশ্বরের বাক্য ব্যাপিয়া গেল, এবং যিরূশালেমে শিষ্যদের সংখ্যা অতিশয় বৃদ্ধি পাইতে লাগিল; আর যাজকদের মধ্যে বিস্তর লোক বিশ্বাসের বশবর্ত্তী হইল। আর স্তিফান অনুগ্রহে ও শক্তিতে পরিপূর্ণ হইয়া লোকদের মধ্যে মহা মহা অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্ন-কার্য্য সাধন করিতে লাগিলেন। কিন্তু যাহাকে লিবর্ত্তীনদের সমাজ-গৃহ বলে, তাহার কয়েক জন, এবং কোন কোন কুরীণীয় ও আলেক্‌সান্দ্রীয় লোক, এবং কিলিকিয়া ও এশিয়ার কতকগুলি লোক উঠিয়া স্তিফানের সহিত বাদানুবাদ করিতে লাগিল। কিন্তু তিনি যে বিজ্ঞতার ও যে আত্মার বলে কথা কহিতেছিলেন, তাহার প্রতিরোধ করিতে তাহাদের সাধ্য হইল না। তখন তাহারা কয়েক জনকে গড়িয়া লইল, আর ইহারা এই কথা কহিল, আমরা ইহাকে মোশির ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করিতে শুনিয়াছি। আর তাহারা লোক সাধারণকে এবং প্রাচীনবর্গ ও অধ্যাপকগণকে উত্তেজিত করিয়া তুলিল, এবং স্তিফানকে আক্রমণ করিয়া ধরিল, ও মহাসভাতে লইয়া গেল; এবং মিথ্যা সাক্ষী দাঁড় করাইয়া দিল, যাহারা কহিল, এই ব্যক্তি পবিত্র স্থানের ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা কহিতে ক্ষান্ত হয় না; কেননা আমরা ইহাকে বলিতে শুনিয়াছি যে, সেই নাসরতীয় যীশু এই স্থান ভাঙ্গিয়া ফেলিবে, এবং মোশি আমাদের কাছে যে সকল নিয়ম-প্রণালী সমর্পণ করিয়াছেন, সে সকল পরিবর্ত্তন করিবে। তখন যাহারা সভায় বসিয়াছিল, তাহারা সকলে তাঁহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া দেখিল, তাঁহার মুখ স্বর্গদূতের মুখের তুল্য। পরে মহাযাজক বলিলেন, এই সকল কথা কি সত্য? তিনি কহিলেন, হে ভ্রাতারা ও পিতারা, শুনুন। আমাদের পিতা অব্রাহাম হারণে বসতি করিবার পূর্ব্বে যে সময়ে মিসপতামিয়ায় ছিলেন, তৎকালে প্রতাপের ঈশ্বর তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন, আর বলিয়াছিলেন, “তুমি স্বদেশ হইতে ও আপন জ্ঞাতি কুটুম্বদের মধ্য হইতে বাহির হও, এবং আমি যে দেশ তোমাকে দেখাই, সেই দেশে চল।” তখন তিনি কল্‌দীয়দের দেশ হইতে বাহির হইয়া গিয়া হারণে বসতি করিলেন; আর তাঁহার পিতার মৃত্যু হইলে পর [ঈশ্বর] তাঁহাকে তথা হইতে এই দেশে আনিলেন, যে দেশে আপনারা এখন বাস করিতেছেন, কিন্তু এই দেশের মধ্যে তাঁহাকে অধিকার দিলেন না, এক পাদ পরিমিত ভূমিও না; আর অঙ্গীকার করিলেন, তিনি তাঁহাকে ও তাঁহার পরে তাঁহার বংশকে অধিকারার্থে তাহা দিবেন, যদিও তখন তাঁহার সন্তান হয় নাই। আর ঈশ্বর এইরূপ বলিলেন যে, “তাঁহার বংশ পরদেশে প্রবাসী থাকিবে, এবং লোকে তাহাদিগকে দাসত্ব করাইবে ও তাহাদের প্রতি চারি শত বৎসর পর্য্যন্ত দৌরাত্ম্য করিবে; আর তাহারা যে জাতির দাস হইবে, আমিই তাহার বিচার করিব,” ঈশ্বর আরও কহিলেন, “তৎপরে তাহারা বাহির হইয়া আসিবে, এবং এই স্থানে আমার আরাধনা করিবে।” আর তিনি তাঁহাকে ত্বক্‌ছেদের নিয়ম দিলেন; আর এইরূপে অব্রাহাম ইস্‌হাককে জন্ম দিলেন, এবং অষ্টম দিবসে তাঁহার ত্বক্‌ছেদ করিলেন; পরে ইস্‌হাক যাকোবের, এবং যাকোব সেই বারো জন পিতৃকুলপতির জন্ম দিলেন। আর পিতৃকুলপতিরা যোষেফের প্রতি ঈর্ষা করিয়া তাঁহাকে বিক্রয় করিলে তিনি মিসরে নীত হন। কিন্তু ঈশ্বর তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন, এবং তাঁহার সমস্ত ক্লেশ হইতে তাঁহাকে উদ্ধার করিলেন, আর মিসর-রাজ ফরৌণের সাক্ষাতে অনুগ্রহ ও বিজ্ঞতা প্রদান করিলেন; তাহাতে ফরৌণ তাঁহাকে মিসরের ও আপন সমস্ত গৃহের অধ্যক্ষ-পদে নিযুক্ত করিলেন। পরে সমস্ত মিসরে ও কনানে দুর্ভিক্ষ হইল, বড়ই ক্লেশ ঘটিল, আর আমাদের পিতৃপুরুষদের ভক্ষ্যের অভাব হইল। কিন্তু মিসরে শস্য আছে শুনিয়া যাকোব আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে প্রথম বার প্রেরণ করিলেন। পরে দ্বিতীয় বারে যোষেফ আপন ভ্রাতাদের পরিচিত হইলেন, এবং যোষেফের জাতি ফরৌণের কাছে ব্যক্ত হইল। পরে যোষেফ আপন পিতা যাকোবকে এবং আপনার সমস্ত জ্ঞাতিকে, পঁচাত্তর প্রাণীকে, আপনার নিকটে ডাকিয়া পাঠাইলেন। তাহাতে যাকোব মিসরে গেলেন, পরে তাঁহার ও আমাদের পিতৃপুরুষদের মৃত্যু হইল। আর তাঁহারা শিখিমে নীত হইলেন, এবং যে কবর অব্রাহাম রৌপ্যমূল্য দিয়া শিখিমে হমোর-সন্তানদের নিকটে ক্রয় করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে সমাহিত হইলেন। পরে, ঈশ্বর অব্রাহামের নিকটে যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, সেই প্রতিজ্ঞা ফলিবার সময় সন্নিকট হইলে, লোকেরা মিসরে বৃদ্ধি পাইয়া বহুসংখ্যক হইয়া উঠিল। অবশেষে মিসরের উপরে এমন আর এক জন রাজা উৎপন্ন হইলেন, যিনি যোষেফকে জানিতেন না। তিনি আমাদের জাতির সহিত চাতুর্য্য ব্যবহার করিলেন; আমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি দৌরাত্ম্য করিলেন, উদ্দেশ্য এই যে, তাঁহাদের শিশু সকলকে বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া হয়, যেন তাহারা জীবিত না থাকে। সেই সময়ে মোশির জন্ম হয়। তিনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সুন্দর ছিলেন, এবং তিনি মাস পর্য্যন্ত পিতার বাটীতে পালিত হইলেন। পরে তাঁহাকে বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া হইলে ফরৌণের কন্যা তুলিয়া লন, ও আপনার পুত্র করিবার উদ্দেশ্যে প্রতিপালন করেন। আর মোশি মিস্রীয়দের সমস্ত বিদ্যায় শিক্ষিত হইলেন, এবং তিনি বাক্যে ও কার্য্যে পরাক্রমী ছিলেন। পরে তাঁহার প্রায় সম্পূর্ণ চল্লিশ বৎসর বয়ঃক্রম হইলে নিজ ভ্রাতৃগণের, ইস্রায়েল-সন্তানগণের, তত্ত্বাবধান করিবার ইচ্ছা তাঁহার হৃদয়ে উঠিল। তখন এক জনের প্রতি অন্যায় করা হইতেছে দেখিয়া তিনি তাহার পক্ষ হইলেন, সেই মিস্রীয় ব্যক্তিকে আঘাত করিয়া উপদ্রুতের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার করিলেন। তিনি মনে করিতেছিলেন, তাঁহার ভ্রাতৃগণ বুঝিয়াছে যে, তাঁহার হস্ত দ্বারা ঈশ্বর তাহাদিগকে পরিত্রাণ দিতেছেন; কিন্তু তাহারা বুঝিল না। আর পর দিবস তাহারা যখন মারামারি করিতেছিল, তখন তিনি তাহাদের কাছে দেখা দিয়া মিলন করাইয়া দিবার চেষ্টা করিলেন, কহিলেন, ওহে, তোমরা পরস্পর ভ্রাতা, এক জন অন্যের প্রতি অন্যায় করিতেছ কেন? কিন্তু প্রতিবাসীর প্রতি অন্যায় করিতেছিল যে ব্যক্তি, সে তাঁহাকে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিয়া কহিল, তোমাকে অধ্যক্ষ ও বিচারকর্ত্তা করিয়া আমাদের উপরে কে নিযুক্ত করিয়াছে? কাল যেমন সেই মিস্রীয়কে বধ করিলে, তেমনি কি আমাকেও বধ করিতে চাহিতেছ? এই কথায় মোশি পলায়ন করিলেন, আর মিদিয়ন দেশে প্রবাসী হইলেন; সেখানে তাঁহার দুই পুত্রের জন্ম হয়। পরে চল্লিশ বৎসর পূর্ণ হইলে সীনয় পর্ব্বতের প্রান্তরে এক দূত একটা ঝোপে অগ্নিশিখায় তাঁহাকে দর্শন দিলেন। মোশি দেখিয়া সেই দৃশ্যে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলেন, আর ভাল করিয়া দেখিবার নিমিত্ত নিকটে যাইতেছেন, এমন সময়ে প্রভুর এই বাণী হইল, “আমি তোমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের ঈশ্বর।” তখন মোশি ত্রাসযুক্ত হওয়াতে ভাল করিয়া দেখিতে সাহস করিলেন না। পরে প্রভু তাঁহাকে কহিলেন, “তোমার পা হইতে জুতা খুলিয়া ফেল; কেননা যে স্থানে তুমি দাঁড়াইয়া আছ, উহা পবিত্র ভূমি। আমি মিসরে স্থিত আমার প্রজাদের দুঃখ বিলক্ষণ দেখিয়াছি, তাহাদের আর্ত্তস্বর শুনিয়াছি, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করিতে নামিয়া আসিয়াছি, এখন আইস, আমি তোমাকে মিসরে প্রেরণ করি।” এই যে মোশিকে তাহারা অস্বীকার করিয়াছিল, বলিয়াছিল, ‘তোমাকে অধ্যক্ষ ও বিচারকর্ত্তা করিয়া কে নিযুক্ত করিয়াছে?’ তাঁহাকেই ঈশ্বর, যে দূত ঝোপে তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন, সেই দূতের হস্তসহ অধ্যক্ষ ও মুক্তিদাতা করিয়া প্রেরণ করিলেন। তিনিই মিসরে, লোহিত সমুদ্রে ও প্রান্তরে চল্লিশ বৎসর কাল নানাবিধ অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্ন-কার্য্য সাধন করিয়া তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন। ইনি সেই মোশি, যিনি ইস্রায়েল-সন্তানগণকে এই কথা বলিয়াছিলেন, “ঈশ্বর তোমাদের জন্য তোমাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে আমার সদৃশ এক জন ভাববাদীকে উৎপন্ন করিবেন।” তিনিই প্রান্তরে মণ্ডলীতে ছিলেন; যে দূত সীনয় পর্ব্বতে তাঁহার কাছে কথা বলিয়াছিলেন, তিনিই তাঁহার এবং আমাদের পিতৃপুরুষদের সহিত ছিলেন। তিনি আমাদিগকে দিবার নিমিত্ত জীবনময় বচন-কলাপ পাইয়াছিলেন। আমাদের পিতৃপুরুষেরা তাঁহার আজ্ঞাবহ হইতে চাহিলেন না, বরং তাঁহাকে ঠেলিয়া ফেলিলেন, আর মনে মনে পুনরায় মিসরের দিকে ফিরিলেন, হারোণকে কহিলেন, “আমাদের নিমিত্ত দেবতা নির্ম্মাণ কর, তাঁহারাই আমাদের অগ্রে অগ্রে যাইবেন, কেননা এই যে মোশি মিসর দেশ হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন, তাঁহার কি হইল, আমরা জানি না।” আর সেই সময়ে তাঁহারা একটা গোবৎস নির্ম্মাণ করিলেন, এবং সেই মূর্ত্তির উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করিলেন, ও আপনাদের হস্তকৃত বস্তুতে আমোদ করিতে লাগিলেন। কিন্তু ঈশ্বর বিমুখ হইলেন, তাঁহাদিগকে আকাশের বাহিনী পূজা করিবার জন্য সমর্পণ করিলেন; যেমন ভাববাদীগণের গ্রন্থে লেখা আছে, “হে ইস্রায়েল-কুল, প্রান্তরে চল্লিশ বৎসর কাল তোমরা কি আমার উদ্দেশে পশুবলি ও উপহার উৎসর্গ করিয়াছিলে? তোমরা বরং মোলকের তাম্বু ও রিফন্‌ দেবতার তারা তুলিয়া বহন করিয়াছিলে, সেই মূর্ত্তিদ্বয়, যাহা তোমরা পূজা করিবার জন্য গড়িয়াছিলে; আর আমি তোমাদিগকে বাবিলের ওদিকে নির্ব্বাসিত করিব।” যেমন তিনি আদেশ করিয়াছিলেন, তদনুযায়ী সাক্ষ্যের তাম্বু প্রান্তরে আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে ছিল। তিনি মোশিকে বলিয়াছিলেন, তুমি যেরূপ আদর্শ দেখিলে, সেই অনুসারে উহা নির্ম্মাণ কর। আর আমাদের পিতৃপুরুষেরা তাঁহাদের সময়ে উহা প্রাপ্ত হইয়া যিহোশূয়ের সহিত আনিলেন, যখন সেই জাতিগণের অধিকারে প্রবেশ করিলেন, যাহাদিগকে ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষদের সম্মুখ হইতে তাড়াইয়া দিলেন। সেই তাম্বু দায়ূদের সময় পর্য্যন্ত রহিল। ইনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইলেন, এবং যাকোবের ঈশ্বরের নিমিত্ত এক আবাস প্রস্তুত করিবার অনুমতি যাচ্ঞা করিলেন; কিন্তু শলোমন তাঁহার জন্য এক গৃহ নির্ম্মাণ করিলেন। তথাপি যিনি পরাৎপর, তিনি হস্তনির্ম্মিত গৃহে বাস করেন না; যেমন ভাববাদী বলেন, “স্বর্গ আমার সিংহাসন, পৃথিবী আমার পাদপীঠ; প্রভু কহেন, তোমরা আমার জন্য কিরূপ গৃহ নির্ম্মাণ করিবে? অথবা আমার বিশ্রাম-স্থান কোথায়? আমারই হস্ত কি এই সকল নির্ম্মাণ করে নাই?” হে শক্তগ্রীবেরা এবং হৃদয়ে ও কর্ণে অচ্ছিন্নত্বকেরা, তোমরা সর্ব্বদা পবিত্র আত্মার প্রতিরোধ করিয়া থাক; তোমাদের পিতৃপুরুষেরা যেমন, তোমরাও তেমনি। তোমাদের পিতৃপুরুষেরা কোন্‌ ভাববাদীকে তাড়না না করিয়াছে? তাহারা তাঁহাদিগকেই বধ করিয়াছিল, যাঁহারা পূর্ব্বে সেই ধর্ম্মময়ের আগমন জ্ঞাপন করিতেন, যাঁহাকে সম্প্রতি তোমরা শত্রুহস্তে সমর্পণ ও বধ করিয়াছ; তোমরাই দূতগণের দ্বারা আদিষ্ট ব্যবস্থা পাইয়াছিলে, কিন্তু পালন কর নাই। এই কথা শুনিয়া তাহারা মর্ম্মাহত হইল, তাঁহার প্রতি দন্তঘর্ষণ করিতে লাগিল। কিন্তু তিনি পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইয়া স্বর্গের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া দেখিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতাপ রহিয়াছে, এবং যীশু ঈশ্বরের দক্ষিণে দাঁড়াইয়া আছেন, আর তিনি বলিলেন, দেখ, আমি দেখিতেছি, স্বর্গ খোলা রহিয়াছে, এবং মনুষ্যপুত্র ঈশ্বরের দক্ষিণে দাঁড়াইয়া আছেন। কিন্তু তাহারা উচ্চৈঃস্বরে চেঁচাইয়া উঠিল, আপন আপন কর্ণ রুদ্ধ করিল, এবং একযোগে তাঁহার উপরে গিয়া পড়িল; আর তাঁহাকে নগর হইতে বাহির করিয়া পাথর মারিতে লাগিল; এবং সাক্ষীগণ আপন আপন বস্ত্র খুলিয়া শৌল নামে এক যুবকের পায়ের কাছে রাখিল। এদিকে তাহারা স্তিফানকে পাথর মারিতেছিল, আর তিনি ডাকিয়া প্রার্থনা করিলেন, হে প্রভু যীশু, আমার আত্মাকে গ্রহণ কর। পরে তিনি হাঁটু পাতিয়া উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, প্রভু, ইহাদের বিপক্ষে এই পাপ ধরিও না। ইহা বলিয়া তিনি নিদ্রাগত হইলেন। আর শৌল তাঁহার হত্যার অনুমোদন করিতে ছিলেন। সেই দিন যিরূশালেমস্থ মণ্ডলীর প্রতি বড়ই তাড়না উপস্থিত হইল, তাহাতে প্রেরিতবর্গ ছাড়া অন্য সকলে যিহূদিয়ার ও শমরিয়ার জনপদে ছিন্নভিন্ন হইয়া পড়িল। আর কয়েক জন ভক্ত লোক স্তিফানের কবর দিলেন, ও তাঁহার নিমিত্ত মহাবিলাপ করিলেন। কিন্তু শৌল মণ্ডলীর উচ্ছেদ সাধন করিতে লাগিলেন, ঘরে ঘরে প্রবেশ করিয়া পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে টানিয়া আনিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতে লাগিলেন। তখন যাহারা ছিন্নভিন্ন হইয়াছিল, তাহারা চারিদিকে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচারের বাক্য প্রচার করিল। আর ফিলিপ শমরিয়ার নগরে গিয়া লোকদের কাছে খ্রীষ্টকে প্রচার করিতে লাগিলেন। আর লোকসমূহ ফিলিপের কথা শুনিয়া ও তাঁহার কৃত চিহ্ন-কার্য্য সকল দেখিয়া একচিত্তে তাঁহার কথায় অবধান করিল। কারণ অশুচি আত্মাবিষ্ট অনেক লোক হইতে সেই সকল আত্মা উচ্চৈঃস্বরে চেঁচাইয়া বাহির হইয়া আসিল, এবং অনেক পক্ষাঘাতী ও খঞ্জ সুস্থ হইল; তাহাতে ঐ নগরে বড়ই আনন্দ হইল। কিন্তু শিমোন নামে এক ব্যক্তি ছিল, সে পূর্ব্বাবধি সেই নগরে যাদুক্রিয়া করিত ও শমরীয় জাতিকে চমৎকৃত করিত, আপনাকে এক জন মহাপুরুষ বলিত; তাহার কথায় ছোট বড় সকলে অবধান করিত, বলিত, এ ব্যক্তি ঈশ্বরের সেই শক্তি, যাহা মহতী নামে আখ্যাত। তাহারা যে তাহার কথায় অবধান করিত, তাহার কারণ এই যে, বহুকাল অবধি সে আপন যাদুক্রিয়া দ্বারা তাহাদিগকে চমৎকৃত করিয়া আসিতেছিল। কিন্তু ফিলিপ ঈশ্বরের রাজ্য ও যীশু খ্রীষ্টের নাম বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিলে তাহারা যখন তাঁহার কথায় বিশ্বাস করিল, তখন পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরাও বাপ্তাইজিত হইতে লাগিল। আর শিমোন আপনিও বিশ্বাস করিল, এবং বাপ্তাইজিত হইয়া ফিলিপের সঙ্গে সঙ্গেই থাকিল; আর অনেক চিহ্ন-কার্য্য ও মহাপরাক্রমের কার্য্য সাধিত হইতেছে দেখিয়া চমৎকৃত হইল। যিরূশালেমে প্রেরিতগণ যখন শুনিতে পাইলেন যে শমরীয়েরা ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করিয়াছে, তখন তাঁহারা পিতর ও যোহনকে তাহাদের নিকটে প্রেরণ করিলেন। তাঁহারা আসিয়া তাহাদের নিমিত্ত প্রার্থনা করিলেন, যেন তাহারা পবিত্র আত্মা পায়; কেননা এ পর্য্যন্ত তাহাদের কাহারও উপরে পবিত্র আত্মা পতিত হন নাই; কেবল তাহারা প্রভু যীশুর নামে বাপ্তাইজিত হইয়াছিল। তখন তাঁহারা তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিলেন, আর তাহারা পবিত্র আত্মা পাইল। আর শিমোন যখন দেখিল, প্রেরিতদের হস্তার্পণ দ্বারা পবিত্র আত্মা দত্ত হইতেছেন, তখন সে তাঁহাদের নিকটে টাকা আনিয়া কহিল, আমাকেও এই ক্ষমতা দিউন, যেন আমি যাহার উপরে হস্তার্পণ করিব, সে পবিত্র আত্মা পায়। কিন্তু পিতর তাহাকে বলিলেন, তোমার রৌপ্য তোমার সঙ্গে বিনষ্ট হউক, কেননা ঈশ্বরের দান তুমি টাকা দিয়া ক্রয় করিতে মনস্থ করিয়াছ। এই বিষয়ে তোমার অংশ কি অধিকার কিছুই নাই; কারণ তোমার হৃদয় ঈশ্বরের সাক্ষাতে সরল নয়। অতএব তোমার এই দুষ্টতা হইতে মন ফিরাও; এবং প্রভুর কাছে বিনতি কর, কি জানি, তোমার হৃদয়ের কল্পনার ক্ষমা হইলেও হইতে পারে; কেননা আমি দেখিতেছি, তুমি কটুভাবরূপ পিত্তে ও অধর্ম্মরূপ বন্ধনে পড়িয়া রহিয়াছ। তখন শিমোন উত্তর করিয়া কহিল, আপনারাই আমার জন্য প্রভুর কাছে বিনতি করুন, যেন আপনারা যাহা যাহা বলিলেন, তাহার কিছুই আমার প্রতি না ঘটে। পরে তাঁহারা সাক্ষ্য দিয়া ও প্রভুর বাক্য বলিয়া যিরূশালেমে ফিরিয়া যাইতে যাইতে শমরীয়দের অনেক গ্রামে সুসমাচার প্রচার করিলেন। পরে প্রভুর এক দূত ফিলিপকে এই কথা কহিলেন, উঠ, দক্ষিণ দিকে, যে পথ যিরূশালেম হইতে ঘসার দিকে নামিয়া গিয়াছে, সেই পথে যাও; সেই স্থান প্রান্তর। তাহাতে তিনি উঠিয়া গমন করিলেন। আর দেখ, ইথিয়পিয়া দেশের এক ব্যক্তি, ইথিয়পীয়দের কান্দাকি রাণীর অধীন উচ্চপদস্থ এক জন নপুংসক, যিনি রাণীর সমস্ত ধনকোষের অধ্যক্ষ ছিলেন, তিনি ভজনা করিবার জন্য যিরূশালেমে আসিয়াছিলেন; পরে ফিরিয়া যাইতেছিলেন, এবং আপন রথে বসিয়া যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থ পাঠ করিতেছিলেন। তখন আত্মা ফিলিপকে কহিলেন, নিকটে যাও, ঐ রথের সঙ্গ ধর। তাহাতে ফিলিপ দৌড়িয়া নিকটে গিয়া শুনিলেন, তিনি যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থ পাঠ করিতেছেন; ফিলিপ কহিলেন, আপনি যাহা পাঠ করিতেছেন, তাহা কি বুঝিতে পারিতেছেন? তিনি কহিলেন, কেহ আমাকে বুঝাইয়া না দিলে কেমন করিয়া বুঝিতে পারিব? পরে তিনি ফিলিপকে আপনার কাছে উঠিয়া বসিতে নিবেদন করিলেন। শাস্ত্রের যে কথা তিনি পড়িতেছিলেন, তাহা এই, “তিনি হত হইবার জন্য মেষের ন্যায় নীত হইলেন, এবং লোমচ্ছেদকের সম্মুখে মেষশাবক যেমন নীরব থাকে, সেইরূপ তিনি মুখ খুলেন না। তাঁহার হীনাবস্থায় তাঁহার সম্বন্ধীয় বিচার অপনীত হইল, তাঁহার সমকালীন লোকদের বর্ণনা কে করিতে পারে? যেহেতুক তাঁহার জীবন পৃথিবী হইতে অপনীত হইল।” নপুংসক উত্তর করিয়া ফিলিপকে বলিলেন, নিবেদন করি, ভাববাদী কাহার বিষয়ে এই কথা কহেন? নিজের বিষয়ে, না অন্য কাহারও বিষয়ে? তখন ফিলিপ মুখ খুলিয়া শাস্ত্রের সেই বচন হইতে আরম্ভ করিয়া তাঁহার কাছে যীশু-বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিলেন। পরে পথে যাইতে যাইতে তাঁহারা কোন এক জলাশয়ের নিকটে উপস্থিত হইলেন; তখন নপুংসক কহিলেন, এই দেখুন, জল আছে; আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি? পরে তিনি রথ থামাইতে আজ্ঞা করিলেন, আর ফিলিপ ও নপুংসক উভয়ে জলমধ্যে নামিলেন এবং ফিলিপ তাঁহাকে বাপ্তাইজ করিলেন। আর যখন তাঁহারা জলের মধ্য হইতে উঠিলেন, তখন প্রভুর আত্মা ফিলিপকে হরণ করিয়া লইয়া গেলেন, এবং নপুংসক আর তাঁহাকে দেখিতে পাইলেন না, ফলে তিনি আনন্দ করিতে করিতে আপন পথে চলিয়া গেলেন। কিন্তু ফিলিপকে অস্‌দোদে দেখিতে পাওয়া গেল; আর তিনি নগরে নগরে ভ্রমণ করিয়া সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে শেষে কৈসরিয়াতে উপস্থিত হইলেন। শৌল তখনও প্রভুর শিষ্যদের বিরুদ্ধে ভয় প্রদর্শন ও হত্যার নিশ্বাস টানিতেছিলেন; তিনি মহাযাজকের নিকটে গিয়া, দম্মেশকস্থ সমাজ সকলের প্রতি পত্র যাচ্ঞা করিলেন, যেন সেই পথাবলম্বী পুরুষ ও স্ত্রী যে সমস্ত লোককে পান, তাহাদিগকে বাঁধিয়া যিরূশালেমে আনিতে পারেন। পরে তিনি যাইতে যাইতে দম্মেশকের নিকট উপস্থিত হইলেন, তখন হঠাৎ আকাশ হইতে আলোক তাঁহার চারিদিকে চমকিয়া উঠিল। তাহাতে তিনি ভূমিতে পড়িয়া শুনিলেন, তাঁহার প্রতি এই বাণী হইতেছে, শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ? তিনি কহিলেন, প্রভু, আপনি কে? প্রভু কহিলেন, আমি যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ; কিন্তু উঠ, নগরে প্রবেশ কর, তোমাকে কি করিতে হইবে, তাহা বলা যাইবে। আর তাঁহার সহপথিকেরা অবাক্‌ হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল, তাহারা ঐ বাণী শুনিল বটে, কিন্তু কাহাকেও দেখিতে পাইল না। পরে শৌল ভূমি হইতে উঠিলেন, কিন্তু চক্ষু মেলিলে পর কিছুই দেখিতে পাইলেন না; আর তাহারা তাঁহার হস্ত ধরিয়া তাঁহাকে দম্মেশকে লইয়া গেল। আর তিনি তিন দিন পর্য্যন্ত দৃষ্টিহীন থাকিলেন, এবং কিছুই ভোজন কি পান করিলেন না। দম্মেশকে অননিয় নামে এক জন শিষ্য ছিলেন। প্রভু তাঁহাকে দর্শনযোগে কহিলেন, অননিয়। তিনি বলিলেন, প্রভু, দেখুন, এই আমি। তখন প্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি উঠিয়া সরল নামক পথে গিয়া যিহূদার বাটীতে তার্ষ নগরীয় শৌল নামক ব্যক্তির অন্বেষণ কর; কেননা দেখ, সে প্রার্থনা করিতেছে; আর সে দেখিয়াছে, অননিয় নামে এক ব্যক্তি আসিয়া তাহার উপরে হস্তার্পণ করিতেছে, যেন সে দৃষ্টি পায়। অননিয় উত্তর করিলেন, প্রভু, আমি অনেকের কাছে এই ব্যক্তির বিষয় শুনিয়াছি, সে যিরূশালেমে তোমার পবিত্রগণের প্রতি কত উপদ্রব করিয়াছে; এই স্থানেও, যত লোক তোমার নামে ডাকে, সেই সকলকে বন্ধন করিবার ক্ষমতা সে প্রধান যাজকদের নিকটে পাইয়াছে। কিন্তু প্রভু তাঁহাকে কহিলেন, তুমি যাও, কেননা জাতিগণের ও রাজগণের এবং ইস্রায়েল-সন্তানগণের নিকটে আমার নাম বহনার্থে সে আমার মনোনীত পাত্র; কারণ আমি তাহাকে দেখাইয়া দিব, আমার নামের জন্য তাহাকে কত ক্লেশ ভোগ করিতে হইবে। তখন অননিয় চলিয়া গিয়া সেই বাটীতে প্রবেশ করিলেন, এবং তাঁহার উপরে হস্তার্পণ করিয়া কহিলেন, ভ্রাতঃ শৌল, প্রভু, সেই যীশু, যিনি তোমার আসিবার পথে তোমাকে দর্শন দিলেন, তিনি আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন তুমি দৃষ্টি পাও এবং পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হও। আর অমনি তাঁহার চক্ষু হইতে যেন আঁইস পড়িয়া গেল, তিনি দৃষ্টি প্রাপ্ত হইলেন, এবং উঠিয়া বাপ্তাইজিত হইলেন; পরে আহার করিয়া বল প্রাপ্ত হইলেন। আর তিনি কয়েক দিন দম্মেশকস্থ শিষ্যগণের সঙ্গে থাকিলেন; এবং অমনি সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে যীশুকে এই বলিয়া প্রচার করিতে লাগিলেন যে, তিনিই ঈশ্বরের পুত্র। আর যাহারা তাঁহার কথা শুনিল, তাহারা সকলে চমৎকৃত হইল, বলিতে লাগিল, এ কি সেই ব্যক্তি নয়, যে, এই নামে যাহারা ডাকে, তাহাদিগকে যিরূশালেমে উৎপাটন করিত, এবং এখানে এই জন্যই আসিয়াছিল, যেন তাহাদিগকে বন্ধন করিয়া প্রধান যাজকদের নিকটে লইয়া যায়? কিন্তু শৌল উত্তর উত্তর শক্তিমান্‌ হইয়া উঠিলেন, এবং দম্মেশক-নিবাসী যিহূদীদিগকে নিরুত্তর করিতে লাগিলেন, প্রমাণ দিতে লাগিলেন যে, ইনিই সেই খ্রীষ্ট। আর, অনেক দিন গত হইলে যিহূদীরা তাঁহাকে বধ করিবার মন্ত্রণা করিল; কিন্তু শৌল তাহাদের চক্রান্ত জানিতে পাইলেন। আর তাহারা যেন তাঁহাকে বধ করিতে পারে, এই জন্য নগর-দ্বার সকলও দিবারাত্র চৌকি দিতে লাগিল। কিন্তু তাঁহার শিষ্যগণ তাঁহাকে রাত্রে লইয়া একটী ঝুড়িতে করিয়া প্রাচীর দিয়া নামাইয়া দিল। পরে তিনি যিরূশালেমে উপস্থিত হইয়া শিষ্যবর্গের সহিত যোগ দিতে চেষ্টা করিলেন; কিন্তু সকলে তাঁহাকে ভয় করিল, তিনি যে শিষ্য, ইহা বিশ্বাস করিল না। তখন বার্ণবা তাঁহার হাত ধরিয়া প্রেরিতদের নিকটে লইয়া গেলেন, এবং পথের মধ্যে তিনি কিরূপে প্রভুকে দেখিতে পাইয়াছেন, ও প্রভু যে তাঁহার সহিত কথা বলিয়াছেন, এবং কিরূপে তিনি দম্মেশকে যীশুর নামে সাহসপূর্ব্বক প্রচার করিয়াছেন, এ সকল তাঁহাদের কাছে বর্ণনা করিলেন। আর শৌল যিরূশালেমে তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিতেন, ভিতরে আসিতেন ও বাহিরে যাইতেন, প্রভুর নামে সাহসপূর্ব্বক প্রচার করিতেন, আর তিনি গ্রীক ভাষাবাদী যিহূদীদের সহিত কথোপকথন ও তর্ক করিতেন; কিন্তু তাহারা তাঁহাকে বধ করিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিল। ভ্রাতৃগণ ইহা জানিতে পাইয়া তাঁহাকে কৈসরিয়াতে লইয়া গেলেন, এবং সেখান হইতে তার্ষ নগরে পাঠাইয়া দিলেন। তখন যিহূদিয়া, গালীল ও শমরিয়ার সর্ব্বত্র মণ্ডলী শান্তিভোগ করিতে ও গ্রথিত হইতে লাগিল, এবং প্রভুর ভয়ে ও পবিত্র আত্মার আশ্বাসে চলিতে চলিতে বহুসংখ্যক হইয়া উঠিল। আর পিতর সকল স্থানে ভ্রমণ করিতে করিতে লুদ্দা-নিবাসী পবিত্রগণের নিকটেও গেলেন। সেই স্থানে তিনি ঐনিয় নামে এক ব্যক্তির দেখা পান, সে আট বৎসর শয্যাগত ছিল, তাহার পক্ষাঘাত হইয়াছিল। পিতর তাহাকে কহিলেন, ঐনিয়, যীশু খ্রীষ্ট তোমাকে সুস্থ করিলেন, উঠ, তোমার শয্যা পাত। তাহাতে সে তৎক্ষণাৎ উঠিল। তখন লুদ্দা ও শারোণ-নিবাসী সমস্ত লোক তাহাকে দেখিতে পাইল, এবং তাহারা প্রভুর প্রতি ফিরিল। আর যাফোতে এক শিষ্যা ছিলেন, তাঁহার নাম টাবিথা, অনুবাদ করিলে এই নামের অর্থ দর্কা [হরিণী]; তিনি নানা সৎক্রিয়া ও দানকার্য্যে ব্যাপৃতা ছিলেন। ঘটনাক্রমে সেই সময়ে তিনি পীড়িত হইয়া মারা পড়েন। তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে ধৌত করিয়া উপরের কুঠরীতে শয়ন করাইয়া রাখিল। আর লুদ্দা যাফোর নিকটবর্ত্তী হওয়াতে, পিতর লুদ্দায় আছেন শুনিয়া, শিষ্যগণ তাঁহার কাছে দুই জন লোক পাঠাইয়া বিনতি করিল, আপনি আমাদের এখান পর্য্যন্ত আসিতে বিলম্ব করিবেন না। তখন পিতর উঠিয়া তাহাদের সহিত চলিলেন। তিনি তথায় উপস্থিত হইলে তাহারা তাঁহাকে সেই উপরের কুঠরীতে লইয়া গেল, আর বিধবারা সকলে তাঁহার চারিদিকে দাঁড়াইয়া রোদন করিতে থাকিল, এবং দর্কা তাহাদের সঙ্গে থাকিবার সময়ে যে সকল আঙ্‌রাখা ও বস্ত্র প্রস্তুত করিয়াছিলেন, সেই সকল দেখাইতে লাগিল। কিন্তু পিতর সকলকে বাহির করিয়া দিয়া হাঁটু পাতিয়া প্রার্থনা করিলেন; পরে সেই দেহের দিকে ফিরিয়া কহিলেন, টাবিথা, উঠ। তাহাতে তিনি চক্ষু মেলিলেন, এবং পিতরকে দেখিয়া উঠিয়া বসিলেন। তখন পিতর হাত দিয়া তাঁহাকে উঠাইলেন, এবং পবিত্রগণকে ও বিধবাদিগকে ডাকিয়া তাঁহাকে জীবিত দেখাইলেন। এই কথা যাফোর সর্ব্বত্র প্রকাশ হইল, এবং অনেক লোক প্রভুর উপরে বিশ্বাস করিল। আর পিতর অনেক দিন যাফোতে, শিমোন নামক এক জন চর্ম্মকারের বাটীতে অবস্থিতি করিলেন। কৈসরিয়াতে কর্ণীলিয় নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, তিনি ইতালীয় নামক সৈন্যদলের এক জন শতপতি। তিনি ভক্ত ছিলেন, এবং সমস্ত পরিবারের সহিত ঈশ্বরকে ভয় করিতেন, তিনি লোকদিগকে বিস্তর দান করিতেন, এবং সর্ব্বদা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিতেন। এক দিন বেলা অনুমান নবম ঘটিকার সময়ে তিনি দর্শনযোগে স্পষ্ট দেখিলেন যে, ঈশ্বরের এক দূত তাঁহার নিকটে ভিতরে আসিয়া বলিতেছেন, কর্ণীলিয়। তখন তিনি তাঁহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া ভীত হইয়া কহিলেন, প্রভু, কি চান? দূত তাঁহাকে বলিলেন, তোমার প্রার্থনা ও তোমার দান সকল স্মরণীয়রূপে ঊর্দ্ধে ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছে। আর এখন তুমি যাফোতে লোক পাঠাইয়া শিমোন, যাহাকে পিতর বলে, তাহাকে ডাকাইয়া আন; সে শিমোন নামে এক জন চর্ম্মকারের বাটীতে অবস্থিতি করিতেছে, তাহার গৃহ সমুদ্রের ধারে। কর্ণীলিয়ের সহিত যে দূত কথা কহিলেন, তিনি চলিয়া গেলে পর কর্ণীলিয় বাড়ীর চাকরদের মধ্যে দুই জনকে, এবং যাহারা সর্ব্বদা তাঁহার সেবা করিত, তাহাদের এক জন ভক্ত সেনাকে ডাকিলেন, আর তাহাদিগকে সকল কথা বলিয়া যাফোতে পাঠাইয়া দিলেন। পরদিন তাহারা পথে যাইতে যাইতে যখন নগরের নিকটে উপস্থিত হইল, তখন পিতর অনুমান ছয় ঘটিকার সময়ে প্রার্থনা করিবার নিমিত্ত ছাদের উপরে উঠিলেন। তিনি ক্ষুধিত হইলেন, তাঁহার আহার করিবার ইচ্ছা হইল; কিন্তু লোকেরা খাদ্য প্রস্তুত করিতেছে, এমন সময়ে তিনি অভিভূত হইয়া পড়িলেন, আর দেখিলেন, আকাশ খুলিয়া গিয়াছে, এবং একখানা বড় চাদরের মত কোন পাত্র নামিয়া আসিতেছে, তাহা চারি কোণে ধরিয়া পৃথিবীতে নামাইয়া দেওয়া হইতেছে; আর তাহার মধ্যে পৃথিবীর সর্ব্বপ্রকার চতুষ্পদ ও সরীসৃপ এবং আকাশের পক্ষী আছে। পরে তাঁহার প্রতি এই বাণী হইল, উঠ, পিতর, বধ করিয়া ভোজন কর। কিন্তু পিতর কহিলেন, প্রভু, এমন না হউক; আমি কখনও কোন অপবিত্র কিম্বা অশুচি দ্রব্য ভোজন করি নাই। তখন দ্বিতীয় বার তাঁহার প্রতি এই বাণী হইল, ঈশ্বর যাহা শুচি করিয়াছেন, তুমি তাহা অপবিত্র বলিও না। এইরূপ তিন বার হইল, পরে তৎক্ষণাৎ ঐ পাত্র আকাশে তুলিয়া লওয়া হইল। পিতর সেই যে দর্শন পাইয়াছিলেন, তাহার কি অর্থ হইতে পারে, এ বিষয়ে মনে মনে চিন্তা করিতেছিলেন, ইতিমধ্যে দেখ, কর্ণীলিয়ের প্রেরিত লোকেরা শিমোনের বাটীর অনুসন্ধান করিয়া ফটক দুয়ারে আসিয়া দাঁড়াইল, আর ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, শিমোন যাঁহাকে পিতর বলে, তিনি কি এখানে অবস্থিতি করেন? পিতর সেই দর্শনের বিষয় ভাবিতেছেন, এমন সময়ে আত্মা কহিলেন, দেখ, তিনটী লোক তোমার অন্বেষণ করিতেছে। কিন্তু তুমি উঠিয়া নীচে যাও, তাহাদের সহিত গমন কর, কিছুমাত্র সন্দেহ করিও না, কারণ আমিই তাহাদিগকে প্রেরণ করিয়াছি। তখন পিতর সেই লোকদের নিকটে নামিয়া গিয়া কহিলেন, দেখ, তোমরা যাহার অন্বেষণ করিতেছ, আমি সেই ব্যক্তি; তোমরা কি নিমিত্ত আসিয়াছ? তাহারা কহিল, শতপতি কর্ণীলিয়, এক জন ধার্ম্মিক লোক, যিনি ঈশ্বরকে ভয় করেন, এবং সমস্ত যিহূদী জাতির মধ্যে যাঁহার সুখ্যাতি আছে, তিনি পবিত্র দূতের দ্বারা এমন আদেশ পাইয়াছেন, যেন আপনাকে ডাকাইয়া নিজ গৃহে আনিয়া আপনার মুখে কথা শুনেন। তখন পিতর তাহাদিগকে ভিতরে ডাকিয়া লইয়া তাহাদের আতিথ্য করিলেন। পরদিন উঠিয়া তিনি তাহাদের সঙ্গে চলিলেন, আর যাফো-নিবাসী ভ্রাতৃগণের মধ্যে কয়েক জনও তাঁহার সঙ্গে গমন করিলেন। পরদিন তাঁহারা কৈসরিয়াতে প্রবেশ করিলেন; তখন কর্ণীলিয় আপন জ্ঞাতিদিগকে ও আত্মীয় বন্ধুগণকে ডাকিয়া একত্র করিয়া তাঁহাদের অপেক্ষা করিতেছিলেন। পরে পিতর যখন প্রবেশ করিলেন, তখন কর্ণীলিয় তাঁহার সহিত দেখা করিয়া তাঁহার চরণে পড়িয়া প্রণাম করিলেন। কিন্তু পিতর তাঁহাকে উঠাইলেন, বলিলেন, উঠুন; আমি আপনিও মনুষ্য। পরে তিনি তাঁহার সহিত আলাপ করিতে করিতে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, অনেক লোক সমাগত হইয়াছে। তখন তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, আপনারা জানেন, অন্য জাতীয় কোন লোকের সঙ্গে যোগ দেওয়া কিম্বা তাহার কাছে আসা যিহূদী লোকের পক্ষে কেমন অবিধেয়; কিন্তু আমাকে ঈশ্বর দেখাইয়া দিয়াছেন যে, কোন মনুষ্যকে অপবিত্র কিম্বা অশুচি বলা অনুচিত। এই নিমিত্ত আমাকে ডাকিয়া পাঠান হইলে আমি কোন আপত্তি না করিয়া আসিয়াছি; এখন জিজ্ঞাসা করি, আপনারা কি কারণ আমাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছেন? তখন কর্ণীলিয় কহিলেন, অদ্য চারি দিন হইল, আমি এত বেলা পর্য্যন্ত নিজ গৃহ মধ্যে নবম ঘটিকার প্রার্থনা করিতেছিলাম, এমন সময়ে, দেখুন, তেজোময় বস্ত্র পরিহিত এক পুরুষ আমার সম্মুখে দাঁড়াইলেন; তিনি কহিলেন, ‘কর্ণীলিয়, তোমার প্রার্থনা গ্রাহ্য হইয়াছে, এবং তোমার দান সকল ঈশ্বরের সাক্ষাতে স্মরণ করা হইয়াছে। অতএব যাফোতে লোক পাঠাইয়া শিমোন, যাহাকে পিতর বলে, তাহাকে ডাকাইয়া আন; সে সমুদ্রের ধারে শিমোন চর্ম্মকারের বাটীতে অবস্থিতি করিতেছে।’ এই নিমিত্ত আমি অবিলম্বে আপনার নিকটে লোক পাঠাইয়া দিলাম; আপনি আসিয়াছেন, ভালই করিয়াছেন। অতএব এখন আমরা সকলে ঈশ্বরের সাক্ষাতে উপস্থিত আছি; প্রভু আপনাকে যে সকল আদেশ করিয়াছেন, তাহা শুনিব। তখন পিতর মুখ খুলিয়া কহিলেন, আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়। তিনি ইস্রায়েলসন্তানগণের নিকটে একটী বাক্য প্রেরণ করিয়াছেন; যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা সন্ধির সুসমাচার প্রচার করিয়াছেন; ইনিই সকলের প্রভু। আপনারা সেই কথা জানেন, যাহা যোহনকর্ত্তৃক প্রচারিত বাপ্তিস্মের পর গালীল হইতে আরম্ভ হইয়া সমুদয় যিহূদিয়াতে ব্যাপিয়া গেল; ফলতঃ নাসরতীয় যীশুর কথা, কিরূপে ঈশ্বর তাঁহাকে পবিত্র আত্মাতে ও পরাক্রমে অভিষেক করিয়াছিলেন; তিনি হিতকার্য্য করিয়া বেড়াইতেন, এবং দিয়াবল কর্ত্তৃক প্রপীড়িত সকল লোককে সুস্থ করিতেন; কারণ ঈশ্বর তাঁহার সহবর্ত্তী ছিলেন। আর তিনি যিহূদীদের জনপদে ও যিরূশালেমে যাহা যাহা করিয়াছেন, আমরা সেই সকলের সাক্ষী; আবার লোকে তাঁহাকে গাছে টাঙ্গাইয়া বধ করিল। তাঁহাকে ঈশ্বর তৃতীয় দিবসে উঠাইলেন, এবং প্রত্যক্ষ হইতে দিলেন; সমস্ত লোকের প্রত্যক্ষ, এমন নয়, কিন্তু পূর্ব্বে ঈশ্বরকর্ত্তৃক নিযুক্ত সাক্ষীদের, অর্থাৎ আমাদের প্রত্যক্ষ হইতে দিলেন, আর আমরা মৃতদের মধ্য হইতে তাঁহার পুনরুত্থান হইলে পর তাঁহার সহিত ভোজন পান করিয়াছি। আর তিনি আদেশ করিলেন, যেন আমরা লোকদের কাছে প্রচার করি ও সাক্ষ্য দিই যে, তাঁহাকেই ঈশ্বর জীবিত ও মৃতদিগের বিচারকর্ত্তা নিযুক্ত করিয়াছেন। তাঁহার পক্ষে ভাববাদীরা সকলে এই সাক্ষ্য দেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে তাঁহার নামের গুণে পাপমোচন প্রাপ্ত হয়। পিতর এই কথা কহিতেছেন, এমন সময়ে যত লোক বাক্য শুনিতেছিল, সকলের উপরে পবিত্র আত্মা পতিত হইলেন। তখন পিতরের সহিত আগত বিশ্বাসী ছিন্নত্বক্‌ লোক সকল চমৎকৃত হইলেন, কারণ পরজাতীয়দের উপরেও পবিত্র আত্মারূপ দানের সেচন হইল; কেননা তাঁহারা উহাঁদিগকে নানা ভাষায় কথা কহিতে ও ঈশ্বরের মহিমা কীর্ত্তন করিতে শুনিলেন। তখন পিতর উত্তর করিলেন, এই যে লোকেরা আমাদেরই ন্যায় পবিত্র আত্মা প্রাপ্ত হইয়াছেন, কেহ কি জল নিবারণ করিয়া ইহাঁদের বাপ্তাইজিত হইবার বাধা দিতে পারে? পরে তিনি যীশু খ্রীষ্টের নামে তাঁহাদিগকে বাপ্তাইজ করিবার আজ্ঞা দিলেন। তখন তাঁহারা কয়েক দিন অবস্থিতি করিতে তাঁহাকে বিনতি করিলেন। পরে প্রেরিতেরা এবং যিহূদিয়াস্থ ভ্রাতৃগণ শুনিতে পাইলেন যে, পরজাতীয় লোকেরাও ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করিয়াছে। আর যখন পিতর যিরূশালেমে আসিলেন, তখন ছিন্নত্বক্‌ লোকেরা তাঁহার সহিত বিবাদ করিয়া কহিলেন, তুমি অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদের গৃহে প্রবেশ করিয়াছ, ও তাহাদের সহিত আহার করিয়াছ। কিন্তু পিতর আরম্ভ করিয়া তাঁহাদিগকে আনুপূর্ব্বিক বৃত্তান্ত বুঝাইয়া দিলেন, কহিলেন, ‘আমি যাফো নগরে প্রার্থনা করিতে ছিলাম, এমন সময়ে অভিভূত হইয়া এক দর্শন পাইলাম, দেখিলাম, একখানা বড় চাদরের মত কোন পাত্র নামিয়া আসিতেছে, তাহা চারি কোণে ধরিয়া আকাশ হইতে নামাইয়া দেওয়া হইতেছে, এবং তাহা আমার নিকট পর্য্যন্ত আসিল। আমি তাহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া চিন্তা করিতে লাগিলাম, আর দেখিলাম, তাহার মধ্যে পৃথিবীর চতুষ্পদ জন্তু, আর বন্য পশু, সরীসৃপ ও আকাশের পক্ষী সকল আছে; আর আমি এক বাণীও শুনিলাম, যাহা আমাকে বলিল, উঠ, পিতর, মার, খাও। কিন্তু আমি কহিলাম, প্রভু, এমন না হউক; কেননা অপবিত্র বা অশুচি কোন দ্রব্য কখনও আমার মুখের ভিতর প্রবেশ করে নাই। কিন্তু দ্বিতীয় বার আকাশ হইতে বাণী উত্তর করিল, ঈশ্বর যাহা শুচি করিয়াছেন, তুমি তাহা অপবিত্র বলিও না। এইরূপ তিনবার হইল; পরে সে সমস্ত আবার আকাশে টানিয়া লওয়া হইল। আর দেখ, অবিলম্বে তিন জন পুরুষ, যে বাটীতে আমরা ছিলাম, তথায় আসিয়া দাঁড়াইল; তাহারা কৈসরিয়া হইতে আমার নিকটে প্রেরিত হইয়াছিল। আর আত্মা আমাকে সন্দেহ না করিয়া তাহাদের সহিত যাইতে বলিলেন। আর এই ছয় জন ভ্রাতাও আমার সহিত গমন করিলেন। পরে আমরা সেই ব্যক্তির বাটীতে প্রবেশ করিলাম। তিনি আমাদিগকে বলিলেন যে, তিনি এক দূতের দর্শন পাইয়াছিলেন, সেই দূত তাঁহার গৃহমধ্যে দাঁড়াইয়া কহিলেন, যাফোতে লোক পাঠাইয়া শিমোন, যাহাকে পিতর বলে, তাহাকে ডাকাইয়া আন; সে তোমাকে এমন কথা বলিবে, যাহা দ্বারা তুমি ও তোমার সমস্ত পরিবার পরিত্রাণ প্রাপ্ত হইবে। পরে আমি কথা কহিতে আরম্ভ করিলে, যেমন প্রথমে আমাদের উপরে হইয়াছিল, তেমনি তাঁহাদের উপরেও পবিত্র আত্মা পতিত হইলেন। তাহাতে প্রভুর কথা আমার স্মরণ হইল, যেমন তিনি বলিয়াছিলেন, ‘যোহন জলে বাপ্তাইজ করিতেন, কিন্তু তোমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হইবে।’ অতএব, তাঁহারা প্রভু যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাসী হইলে পর, যেমন আমাদিগকে, তেমনি যখন তাঁহাদিগকেও ঈশ্বর সমান বর দান করিলেন, তখন আমি কে যে ঈশ্বরকে নিবারণ করিতে পারি? এই সকল কথা শুনিয়া তাঁহারা চুপ করিয়া রহিলেন, এবং ঈশ্বরের গৌরব করিলেন, কহিলেন, তবে ত ঈশ্বর পরজাতীয় লোকদিগকেও জীবনার্থক মনপরিবর্ত্তন দান করিয়াছেন। ইতিমধ্যে স্তিফানের উপলক্ষে যে ক্লেশ ঘটিয়াছিল, তৎপ্রযুক্ত যাহারা ছিন্নভিন্ন হইয়া গিয়াছিল, তাহারা ফৈনীকিয়া, কুপ্র ও আন্তিয়খিয়া পর্য্যন্ত চারিদিকে ভ্রমণ করিয়া কেবল যিহূদীদেরই নিকটে বাক্য প্রচার করিতে লাগিল। কিন্তু তাহাদের মধ্যে কয়েক জন কুপ্রীয় ও কুরীণীয় লোক ছিল; ইহারা আন্তিয়খিয়াতে আসিয়া গ্রীকদের নিকটেও কথা কহিল, প্রভু যীশুর বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করিল। আর প্রভুর হস্ত তাহাদের সহবর্ত্তী ছিল, এবং বহুসংখ্যক লোক বিশ্বাস করিয়া প্রভুর প্রতি ফিরিল। পরে তাহাদের বিষয় যিরূশালেমস্থ মণ্ডলীর কর্ণগোচর হইল; তাহাতে ইহাঁরা আন্তিয়খিয়া পর্য্যন্ত বার্ণবাকে প্রেরণ করিলেন। তিনি উপস্থিত হইয়া ঈশ্বরের অনুগ্রহ দেখিয়া আনন্দ করিলেন; এবং সকলকে আশ্বাস দিতে লাগিলেন, যেন তাহারা হৃদয়ের একাগ্রতায় প্রভুতে স্থির থাকে; কারণ তিনি সৎলোক এবং পবিত্র আত্মায় ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ ছিলেন। আর বিস্তর লোক প্রভুতে সংযুক্ত হইল। পরে তিনি শৌলের অন্বেষণ করিতে তার্ষে গমন করিলেন, এবং তাঁহাকে পাইয়া আন্তিয়খিয়াতে আনিলেন। আর তাঁহারা সম্পূর্ণ এক বৎসর কাল মণ্ডলীতে একত্র হইতেন, এবং অনেক লোককে উপদেশ দিতেন; আর প্রথমে আন্তিয়খিয়াতেই শিষ্যেরা ‘খ্রীষ্টীয়ান’ নামে আখ্যাত হইল। সেই সময়ে কয়েক জন ভাববাদী যিরূশালেম হইতে আন্তিয়খিয়াতে আসিলেন। তাঁহাদের মধ্যে আগাব নামে এক ব্যক্তি উঠিয়া আত্মার আবেশে জানাইলেন যে, সমুদয় পৃথিবীতে মহাদুর্ভিক্ষ হইবে; তাহা ক্লৌদিয়ের অধিকার সময়ে ঘটিল। তাহাতে শিষ্যেরা প্রতিজন স্ব স্ব সঙ্গতি অনুসারে যিহূদিয়া-নিবাসী ভ্রাতৃগণের পরিচর্য্যার জন্য তাঁহাদের কাছে সাহায্য পাঠাইতে স্থির করিলেন; এবং সেই মত কার্য্যও করিলেন, বার্ণবার ও শৌলের হস্ত দ্বারা প্রাচীনবর্গের নিকটে অর্থ পাঠাইয়া দিলেন। তৎকালে হেরোদ রাজা মণ্ডলীর কয়েক জনের প্রতি উপদ্রব করিবার জন্য হস্তক্ষেপ করিলেন। তিনি যোহনের ভ্রাতা যাকোবকে খড়্গ দ্বারা বধ করিলেন। ইহাতে যিহূদীরা সন্তুষ্ট হইল দেখিয়া তিনি আবার পিতরকেও ধরিলেন। তখন তাড়ীশূন্য রুটীর পর্ব্বের সময় ছিল। তিনি তাঁহাকে ধরিয়া কারাগারে রাখিলেন, এবং তাঁহাকে পাহারা দিবার জন্য চারি জনে দল, এমন চারি দল সেনার নিকটে সমর্পণ করিলেন; মনে করিলেন, নিস্তারপর্ব্বের পরে তাঁহাকে লোকদের কাছে আনিয়া উপস্থিত করিবেন। এইরূপে পিতর কারাবদ্ধ থাকিলেন, কিন্তু মণ্ডলী কর্ত্তৃক তাঁহার বিষয়ে ঈশ্বরের নিকটে একাগ্র ভাবে প্রার্থনা হইতেছিল। পরে হেরোদ যে দিন তাঁহাকে বাহিরে আনাইবেন, তাহার পূর্ব্বরাত্রিতে পিতর দুই জন সেনার মধ্যস্থানে দুই শৃঙ্খলে বদ্ধ থাকিয়া নিদ্রাগত ছিলেন, এবং দ্বারদেশে প্রহরীরা কারাগার রক্ষা করিতেছিল। আর দেখ, প্রভুর এক দূত তাঁহার কাছে আসিয়া দাঁড়াইলেন, এবং কারাকক্ষে আলোক প্রকাশ পাইল। তিনি পিতরের কুক্ষিদেশে আঘাত করিয়া তাঁহাকে জাগাইয়া কহিলেন, শীঘ্র উঠ। তখন তাঁহার দুই হস্ত হইতে শৃঙ্খল পড়িয়া গেল। পরে সেই দূত তাঁহাকে কহিলেন, কোমর বাঁধ, ও তোমার জুতা পর। তিনি তাহা করিলেন। পরে দূত তাঁহাকে কহিলেন, গায়ে কাপড় দিয়া আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ আইস। তাহাতে তিনি বাহির হইয়া তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতে লাগিলেন; কিন্তু দূতের দ্বারা যাহা করা হইল, তাহা যে বাস্তবিক, ইহা তিনি বুঝিতে পারিলেন না, বরং মনে করিলেন, তিনি দর্শন দেখিতেছেন। পরে তাঁহারা প্রথম ও দ্বিতীয় প্রহরিদল পশ্চাৎ ফেলিয়া, যেখান দিয়া নগরে যাওয়া যায়, সেই লৌহদ্বারের কাছে উপস্থিত হইলেন; সেই দ্বারের কবাট তাঁহাদের সম্মুখে আপনি খুলিয়া গেল; তাহাতে তাঁহারা বাহির হইয়া একটা রাস্তার শেষ পর্য্যন্ত গমন করিলেন, আর অমনি দূত তাঁহার নিকট হইতে প্রস্থান করিলেন। তখন পিতর সচেতন হইয়া কহিলেন, এখন আমি নিশ্চয় জানিলাম, প্রভু নিজ দূতকে প্রেরণ করিলেন, ও হেরোদের হস্ত হইতে এবং যিহূদী লোকদের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা হইতে আমাকে উদ্ধার করিলেন। এই বিষয় আলোচনা করিয়া তিনি মরিয়মের বাটীর দিকে চলিয়া গেলেন, ইনি সেই যোহনের মাতা, যাঁহাকে মার্ক বলে; সেখানে অনেকে একত্র হইয়াছিল ও প্রার্থনা করিতেছিল। পরে তিনি বাহিরের দ্বারে আঘাত করিলে রোদা নাম্নী একটী দাসী শুনিতে আসিল; এবং পিতরের স্বর চিনিয়া আনন্দ বশতঃ দ্বার খুলিল না, কিন্তু ভিতরে দৌড়িয়া গিয়া সংবাদ দিল, পিতর দ্বারের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন। তাহারা তাহাকে কহিল, তুমি পাগল; কিন্তু সে দৃঢ়রূপে বলিতে লাগিল, না, তাহাই বটে! তখন তাহারা কহিল, উনি তাঁহার দূত। কিন্তু পিতর আঘাত করিতে থাকিলেন; তখন তাহারা দ্বার খুলিয়া তাঁহাকে দেখিতে পাইল, ও চমৎকৃত হইল। তাহাতে তিনি হস্ত দ্বারা নীরব হইবার জন্য ইঙ্গিত করিয়া, প্রভু কিরূপে তাঁহাকে কারাগার হইতে উদ্ধার করিয়া আনিয়াছেন, তাহা তাহাদের কাছে বর্ণনা করিলেন, আর কহিলেন, তোমরা যাকোবকে ও ভ্রাতৃগণকে এই সমাচার দিও; পরে তিনি বাহির হইয়া অন্য স্থানে চলিয়া গেলেন। দিন হইলে পর, পিতর কি হইল, বলিয়া সেনাগণের মধ্যে খুব একটা হুলস্থূল পড়িয়া গেল। পরে হেরোদ তাঁহার সন্ধান করিয়া না পাওয়াতে রক্ষীদিগকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহাদের প্রাণদণ্ড করিতে আজ্ঞা দিলেন, এবং যিহূদিয়া হইতে প্রস্থান করিয়া কৈসরিয়াতে গিয়া অবস্থিতি করিলেন। আর তিনি সোরীয় ও সীদোনীয়দের উপরে বড়ই কুপিত হইয়াছিলেন, কিন্তু তাহারা একমত হইয়া তাঁহার কাছে আসিল, এবং রাজার শয়নাগারের অধ্যক্ষ ব্লাস্তকে সপক্ষ করিয়া সন্ধি যাচ্ঞা করিল, কারণ রাজার দেশ হইতে তাহাদের দেশে খাদ্য সামগ্রী আসিত। তখন এক নিরূপিত দিবসে হেরোদ রাজবস্ত্র পরিধানপূর্ব্বক সিংহাসনে বসিয়া তাহাদের কাছে বক্তৃতা করেন। তখন লোকসমূহ উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, এ দেবতার রব, মানুষের নয়। আর প্রভুর এক দূত তখনই তাঁহাকে আঘাত করিলেন, কেননা তিনি ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করিলেন না; আর তিনি কীটভক্ষিত হইয়া প্রাণত্যাগ করিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বৃদ্ধি পাইতে ও ব্যাপ্ত হইতে থাকিল। আর বার্ণবা ও শৌল আপনাদের পরিচর্য্যা-কার্য্য সম্পন্ন করিবার পর যিরূশালেম হইতে প্রত্যাগমন করিলেন; যোহন যাঁহাকে মার্কও বলে, তাঁহাকে সঙ্গে লইলেন। তখন আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলীতে বার্ণবা, শিমোন, যাঁহাকে নীগের বলে, কুরীণীয় লুকিয়, হেরোদ রাজার সহপালিত মনহেম, এবং শৌল নামে কয়েক জন ভাববাদী ও শিক্ষক ছিলেন। তাঁহারা প্রভুর সেবা ও উপবাস করিতেছিলেন, এমন সময়ে পবিত্র আত্মা কহিলেন, আমি বার্ণবা ও শৌলকে যে কার্য্যে আহ্বান করিয়াছি, সেই কার্য্যের নিমিত্ত আমার জন্য এখন তাহাদিগকে পৃথক্‌ করিয়া দেও। তখন তাঁহারা উপবাস ও প্রার্থনা এবং তাঁহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া তাঁহাদিগকে বিদায় দিলেন। এইরূপে তাঁহারা পবিত্র আত্মা কর্ত্তৃক প্রেরিত হইয়া সিলূকিয়াতে গেলেন, এবং তথা হইতে জাহাজ খুলিয়া কুপ্রে গমন করিলেন। তাঁহারা সালামীতে উপস্থিত হইয়া যিহূদীদের সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করিতে লাগিলেন; এবং যোহনও ভৃত্যরূপে তাঁহাদের সঙ্গে ছিলেন। আর তাঁহারা সমস্ত দ্বীপের মধ্য দিয়া গমন করিয়া পাফঃ নগরে উপস্থিত হইলে এক জন যিহূদী মায়াবী ও ভাক্ত ভাববাদীকে দেখিতে পাইলেন, তাহার নাম বর্‌-যীশু; সে দেশাধ্যক্ষ সের্গিয় পৌলের সঙ্গে ছিল; তিনি এক জন বুদ্ধিমান্‌ লোক। তিনি বার্ণবা ও শৌলকে কাছে ডাকিয়া ঈশ্বরের বাক্য শুনিতে চাহিলেন। কিন্তু ইলুমা, সেই মায়াবী—কেননা অনুবাদ করিলে ইহাই তাহার নামের অর্থ—সেই দেশাধ্যক্ষকে বিশ্বাস হইতে ফিরাইবার চেষ্টায় তাঁহাদের প্রতিরোধ করিতে লাগিল। কিন্তু শৌল, যাঁহাকে পৌলও বলে, পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইয়া তাহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া কহিলেন, হে সর্ব্বপ্রকার ছলে ও সর্ব্বপ্রকার দুষ্টামিতে পরিপূর্ণ, দিয়াবল-সন্তান, সর্ব্বপ্রকার ধার্ম্মিকতার শত্রু, তুমি প্রভুর সরল পথ বিপরীত করিতে কি ক্ষান্ত হইবে না? এখন দেখ, প্রভুর হস্ত তোমার উপরে রহিয়াছে, তুমি অন্ধ হইবে, কিছু কাল সূর্য্য দেখিতে পাইবে না। আর অমনি কুজ্‌ঝটিকা ও অন্ধকার তাহাকে আচ্ছন্ন করিল, তাহাতে সে হাত ধরিয়া চালাইবার লোকের অন্বেষণে এদিক্‌ ওদিক্‌ চলিতে লাগিল। তখন সেই ঘটনা দেখিয়া দেশাধ্যক্ষ প্রভুর উপদেশে চমৎকৃত হইয়া বিশ্বাস করিলেন। পরে পৌল ও তাঁহার সঙ্গিগণ পাফঃ হইতে জাহাজ খুলিয়া পাম্ফুলিয়ার পর্গা নগরে উপস্থিত হইলেন। তখন যোহন তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া যিরূশালেমে ফিরিয়া গেলেন। কিন্তু তাঁহারা পর্গা হইতে অগ্রসর হইয়া পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ায় উপস্থিত হইলেন; এবং বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিয়া বসিলেন। ব্যবস্থা ও ভাববাদি-গ্রন্থের পাঠ সমাপ্ত হইলে সমাজাধ্যক্ষেরা তাঁহাদিগকে বলিয়া পাঠাইলেন, ভ্রাতৃগণ, লোকদের কাছে আপনাদের কোন উপদেশ কথা যদি থাকে, বলুন। তখন পৌল দাঁড়াইয়া হস্ত দ্বারা ইঙ্গিত করিয়া কহিতে লাগিলেন,— হে ইস্রায়েল-লোকেরা, হে ঈশ্বরভীতগণ, শ্রবণ কর। এই ইস্রায়েল-জাতির ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষদিগকে মনোনীত করিয়া লইয়াছিলেন, এবং এই জাতি যখন মিসরদেশে প্রবাস করিতেছিল, তখন তাহাদিগকে উন্নত করিলেন, ও উচ্চ বাহু সহকারে তথা হইতে বাহির করিয়া আনিলেন। আর তিনি প্রান্তরে কমবেশ চল্লিশ বৎসর কাল তাহাদের ব্যবহার সহ্য করিলেন। পরে তিনি কনান দেশে সাত জাতিকে উৎপাটন করিয়া অধিকারার্থে সেই সকল জাতির দেশ তাহাদিগকে দিলেন। এইরূপে কমবেশ চারি শত পঞ্চাশ বৎসর অতীত হইল। তাহার পরে তিনি শমূয়েল ভাববাদীর সময় পর্য্যন্ত বিচারকর্ত্তৃগণ দিলেন। তৎপরে তাহারা এক জন রাজা চাহিল, তাহাতে ঈশ্বর তাহাদিগকে চল্লিশ বৎসরের জন্য বিন্যামীন বংশজাত কীশের পুত্র শৌলকে দিলেন। পরে তিনি তাঁহাকে সরাইয়া দিয়া তাহাদের রাজা হইবার জন্য দায়ূদকে উৎপন্ন করিলেন, যাঁহার পক্ষে তিনি সাক্ষ্য দিয়া বলিলেন, ‘আমি যিশয়ের পুত্র দায়ূদকে পাইয়াছি, সে আমার মনের মত লোক, সে আমার সমস্ত ইচ্ছা পালন করিবে’। তাঁহারই বংশ হইতে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞানুসারে ইস্রায়েলের নিমিত্ত এক ত্রাণকর্ত্তাকে, যীশুকে, উপস্থিত করিলেন; তাঁহার আগমনের অগ্রে যোহন সমস্ত ইস্রায়েল-জাতির কাছে মনপরিবর্ত্তনের বাপ্তিস্ম প্রচার করিয়াছিলেন। আর যোহন আপন নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িতে দৌড়িতে এই কথা কহিতেন, তোমরা আমাকে কোন্‌ ব্যক্তি বলিয়া মনে কর? আমি তিনি নহি; কিন্তু দেখ, আমার পশ্চাৎ এমন এক ব্যক্তি আসিতেছেন, যাঁহার পদের পাদুকার বন্ধন খুলিতেও আমি যোগ্য নহি। হে ভ্রাতৃগণ, অব্রাহাম-বংশের সন্তানগণ, ও তোমরা যত লোক ঈশ্বরকে ভয় কর, আমাদেরই নিকট এই পরিত্রাণের বাক্য প্রেরিত হইয়াছে। কেননা যিরূশালেম-নিবাসীরা এবং তাহাদের অধ্যক্ষেরা তাঁহাকে না জানাতে, এবং ভাববাদিগণের যে সকল বাণী প্রতি বিশ্রামবারে পঠিত হয়, সে সকলও না জানাতে, তাঁহার দণ্ডাজ্ঞা করিয়া সে সকল পূর্ণ করিল। আর প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোনই দোষ না পাইলেও তাহারা পীলাতের নিকটে যাচ্ঞা করিল, যেন তাঁহাকে বধ করা হয়। আর তাঁহার বিষয়ে যে সকল কথা লিখিত ছিল, তাহা সিদ্ধ করিলে পর তাঁহাকে গাছ হইতে নামাইয়া কবরে সমাহিত করিল। কিন্তু ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইলেন। আর যাঁহারা তাঁহার সহিত গালীল হইতে যিরূশালেমে আসিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকে তিনি অনেক দিন পর্য্যন্ত দেখা দিলেন; তাঁহারাই এক্ষণে প্রজালোকদের কাছে তাঁহার সাক্ষী। আর পিতৃগণের কাছে কৃত প্রতিজ্ঞার বিষয়ে আমরা তোমাদিগকে এই সুসমাচার জানাইতেছি যে, ঈশ্বর যীশুকে উঠাইয়া আমাদের সন্তানগণের পক্ষে সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করিয়াছেন, যেমন দ্বিতীয় গীতেও লেখা আছে, “তুমি আমার পুত্র, অদ্য আমি তোমাকে জন্ম দিয়াছি।” আর তিনি যে তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছেন, এবং তাঁহাকে যে আর ক্ষয়ে ফিরিয়া যাইতে হইবে না, এ বিষয়ে ঈশ্বর এইরূপ বলিয়াছেন, “আমি তোমাদিগকে দায়ূদের পবিত্র অটল অঙ্গীকার সকল প্রদান করিব।” কেননা তিনি অন্য গীতেও বলেন, “তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না।” বস্তুতঃ দায়ূদ আপন সমকালীন লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের মন্ত্রণা অনুযায়ী কার্য্য করিবার পর নিদ্রাগত হইলেন, এবং নিজ পিতৃলোকদের নিকটে সংগৃহীত হইলেন, ও ক্ষয় দেখিলেন। কিন্তু ঈশ্বর যাঁহাকে উঠাইয়াছেন, তিনি ক্ষয় দেখেন নাই। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা জানিও, এই ব্যক্তি দ্বারা পাপের মোচন তোমাদিগকে জ্ঞাত করা যাইতেছে; আর মোশির ব্যবস্থাতে তোমরা যে সকল বিষয়ে ধার্ম্মিক গণিত হইতে পারিতে না, যে কেহ বিশ্বাস করে, সে সেই সকল বিষয়ে এই ব্যক্তিতেই ধার্ম্মিক গণিত হয়। অতএব দেখিও, ভাববাদিগণের গ্রন্থে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা যেন তোমাদের প্রতি না ঘটে, “হে অবজ্ঞাকারিগণ, দৃষ্টিপাত কর, আর চমকিয়া উঠ এবং অন্তর্হিত হও; যেহেতুক তোমাদের সময়ে আমি এক কর্ম্ম করিব, সেই কর্ম্মের কথা যদি কেহ তোমাদের কাছে বর্ণনা করে, তোমরা কোন মতে বিশ্বাস করিবে না।” তাঁহাদের বাহিরে যাইবার সময়ে লোকেরা বিনতি করিল, যেন পর বিশ্রামবারে সেই সকল কথা তাহাদের কাছে বলা হয়। আর সমাজ ভঙ্গ হইলে অনেক যিহূদী ও যিহূদিধর্ম্মাবলম্বী ভক্ত লোক পৌল ও বার্ণবার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিল; তাঁহারা তাহাদের সহিত কথা কহিলেন, ঈশ্বরের অনুগ্রহে স্থির থাকিতে তাহাদিগকে প্রবৃত্তি দিলেন। পরবর্ত্তী বিশ্রামবারে নগরের প্রায় সমস্ত লোক ঈশ্বরের বাক্য শুনিতে সমাগত হইল। কিন্তু যিহূদীরা লোকসমারোহ দেখিয়া ঈর্ষাতে পরিপূর্ণ হইল, এবং নিন্দা করিতে করিতে পৌলের কথার প্রতিবাদ করিতে লাগিল। আর পৌল ও বার্ণবা সাহস পূর্ব্বক কথা কহিলেন, বলিলেন, প্রথমে তোমাদেরই নিকটে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করা যায়, ইহা আবশ্যক ছিল; তোমরা যখন তাহা ঠেলিয়া ফেলিতেছ, এবং আপনাদিগকে অনন্ত জীবনের অযোগ্য বিবেচনা করিতেছ, তখন দেখ, আমরা পরজাতিগণের দিকে ফিরিতেছি। কেননা প্রভু আমাদিগকে এইরূপ আজ্ঞা দিয়াছেন, “আমি তোমাকে জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিয়াছি, যেন তুমি পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত পরিত্রাণস্বরূপ হও।” ইহা শুনিয়া পরজাতীয়েরা আহ্লাদিত হইল, ও প্রভুর বাক্যের গৌরব করিতে লাগিল; এবং যত লোক অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত হইয়াছিল, তাহারা বিশ্বাস করিল। আর প্রভুর বাক্য সেই দেশের সর্ব্বত্র ব্যাপিয়া গেল। কিন্তু যিহূদীরা ভক্ত ভদ্র মহিলাদিগকে ও নগরের প্রধানবর্গকে উত্তেজিত করিয়া তুলিল, পৌলের ও বার্ণবার প্রতি তাড়না ঘটাইল, এবং আপনাদের সীমা হইতে তাঁহাদিগকে বাহির করিয়া দিল। তখন তাঁহারা তাহাদের বিরুদ্ধে পায়ের ধূলা ঝাড়িয়া দিয়া ইকনিয়ে গেলেন। আর শিষ্যগণ আনন্দে ও পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইতে থাকিল। পরে ইকনিয়ে তাঁহারা একসঙ্গে যিহূদীদের সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিলেন, এবং এমন ভাবে কথা কহিলেন যে, যিহূদী ও গ্রীকদের বিস্তর লোক বিশ্বাস করিল। কিন্তু যে যিহূদীরা অবাধ্য হইল, তাহারা ভ্রাতৃগণের বিপক্ষে পরজাতীয়দের মনকে উত্তেজিত ও হিংসার্থী করিল। এইরূপে তাঁহারা সেই স্থানে অনেক দিন অবস্থিতি করিলেন, প্রভুর উপরে সাহস বাঁধিয়া কথা কহিতেন; আর তিনিও আপন অনুগ্রহের বাক্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিতেন, তাঁহাদের হস্ত দ্বারা নানা চিহ্ন-কার্য্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধিত হইতে দিতেন। আর নগরের লোকসমূহ দুই দলে বিভক্ত হইল, এক দল যিহূদীদের পক্ষ, অন্য দল প্রেরিতদের পক্ষ হইল। আর পরজাতীয়েরা ও যিহূদীরা, তাহাদের অধ্যক্ষদের সহিত, তাঁহাদিগকে অপমান করিতে ও পাথর মারিতে সচেষ্ট হইলে তাঁহারা তাহা বুঝিয়া লুকায়নিয়ার লুস্ত্রা ও দর্বী নগরে এবং চারিদিকের অঞ্চলে পলায়ন করিলেন; আর তথায় সুসমাচার প্রচার করিতে লাগিলেন। লুস্ত্রায় এক ব্যক্তি বসিয়া থাকিত, তাহার পায়ে বল ছিল না, সে মাতৃগর্ভ হইতে খঞ্জ, কখনও চলে নাই। সেই ব্যক্তি পৌলের কথা শুনিতেছিল; তিনি তাহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া, সুস্থ হইবার জন্য তাহার বিশ্বাস আছে দেখিয়া, উচ্চ রবে বলিলেন, তোমার পায়ে ভর দিয়া সোজা হইয়া দাঁড়াও; তাহাতে সে লাফ দিয়া উঠিল ও হাঁটিতে লাগিল। আর পৌল যাহা করিলেন, তাহা দেখিয়া লোকেরা লুকায়নীয় ভাষায় উচ্চ রবে বলিতে লাগিল, দেবতারা মনুষ্য-রূপ ধারণ করিয়া আমাদের মধ্যে অবতীর্ণ হইয়াছেন। আর তাহারা বার্ণবাকে দ্যুপিতর বলিল, এবং পৌল প্রধান বক্তা, এই জন্য তাঁহাকে মর্কুরিয় বলিল। আর নগরের সম্মুখে দ্যুপিতরের যে মন্দির ছিল, তাহার যাজক কতকগুলি বৃষ ও মালা দ্বারদেশে আনিয়া লোকদের সহিত বলিদান করিতে চাহিল। কিন্তু প্রেরিতেরা, বার্ণবা ও পৌল, তাহা শুনিয়া আপন আপন বস্ত্র ছিঁড়িয়া, দৌড়িয়া বাহির হইয়া লোকদের মধ্যে গিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, মহাশয়েরা, এ সকল কেন করিতেছেন? আমরাও আপনাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী মনুষ্য; আমরা আপনাদিগকে এই সুসমাচার জানাইতেছি যে, এই সকল অসার বস্তু হইতে সেই জীবন্ত ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আসিতে হইবে, যিনি আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং সেই সকলের মধ্যবর্ত্তী সমস্তই নির্ম্মাণ করিয়াছেন। তিনি অতীত পুরুষপরম্পরায় সমস্ত জাতিকে আপন আপন পথে গমন করিতে দিয়াছেন; তথাপি তিনি আপনাকে সাক্ষ্যবিহীন রাখেন নাই, কেননা, তিনি মঙ্গল করিতেছেন, আকাশ হইতে আপনাদিগকে বৃষ্টি এবং ফলোৎপাদক ঋতুগণ দিয়া ভক্ষ্যে ও আনন্দে আপনাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত করিয়া আসিতেছেন। এই সকল কথা বলিয়া তাঁহারা কষ্টে সৃষ্টে তাঁহাদের উদ্দেশে বলিদান করণ হইতে লোকসমূহকে নিবৃত্ত করিলেন। কিন্তু আন্তিয়খিয়া ও ইকনিয় হইতে কয়েক জন যিহূদী আসিল; আর তাহারা লোকসমূহকে প্রবৃত্তি দিয়া পৌলকে পাথর মারিল, এবং নগরের বাহিরে টানিয়া লইয়া গেল, মনে করিল, তিনি মরিয়া গিয়াছেন। কিন্তু শিষ্যগণ তাঁহার চারি পার্শ্বে দাঁড়াইলে তিনি উঠিয়া নগরমধ্যে প্রবেশ করিলেন। পরদিন তিনি বার্ণবার সহিত দর্বীতে চলিয়া গেলেন। আর সেই নগরে সুসমাচার প্রচার করিয়া এবং অনেক লোককে শিষ্য করিয়া তাঁহারা লুস্ত্রায়, ইকনিয়ে ও আন্তিয়খিয়ায় ফিরিয়া গেলেন; যাইতে যাইতে তাঁহারা শিষ্যদের মন সুস্থির করিলেন, এবং তাহাদিগকে আশ্বাস দিতে লাগিলেন, যেন তাহারা বিশ্বাসে স্থির থাকে, আর কহিলেন, অনেক ক্লেশের মধ্য দিয়া আমাদিগকে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে হইবে। আর তাঁহারা তাহাদের জন্য প্রত্যেক মণ্ডলীতে প্রাচীনবর্গ নিযুক্ত করিয়া, এবং উপবাস পূর্ব্বক প্রার্থনা করিয়া, যে প্রভুতে তাহারা বিশ্বাস করিয়াছিল, তাঁহার হস্তে তাহাদিগকে সমর্পণ করিলেন। পরে তাঁহারা পিষিদিয়ার মধ্য দিয়া গমন করিয়া পাম্ফুলিয়ায় উপস্থিত হইলেন। আর তাঁহারা পর্গাতে বাক্য প্রচার করিয়া অত্তালিয়াতে চলিয়া গেলেন; এবং তথা হইতে জাহাজে আন্তিয়খিয়ায় যাত্রা করিলেন, যে কার্য্য তাঁহারা সাধন করিয়া আসিয়াছেন, এই স্থান হইতেই তাঁহারা তজ্জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহে সমর্পিত হইয়াছিলেন। তাঁহারা যখন উপস্থিত হইলেন, ও মণ্ডলীকে একত্র করিলেন, তখন ঈশ্বর তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া যে কত কার্য্য করিয়াছিলেন ও তিনি যে পরজাতীয়দের নিমিত্তে বিশ্বাসদ্বার খুলিয়া দিয়াছিলেন, সেই সকল বর্ণনা করিলেন। পরে তাঁহারা শিষ্যদের সঙ্গে অনেক দিন থাকিলেন। পরে যিহূদিয়া হইতে কয়েকজন লোক আসিয়া ভ্রাতৃগণকে শিক্ষা দিতে লাগিল যে, তোমরা যদি মোশির বিধান অনুসারে ছিন্নত্বক্‌ না হও, তবে পরিত্রাণ পাইতে পারিবে না। আর তাহাদের সহিত পৌলের ও বার্ণবার অনেক বাগ্‌যুদ্ধ ও বাদানুবাদ হইলে পর ভ্রাতৃগণ স্থির করিলেন, সেই তর্কের মীমাংসার জন্য পৌল ও বার্ণবা, এবং তাঁহাদের আরও কয়েক জন, যিরূশালেমে প্রেরিতগণের ও প্রাচীনবর্গের নিকটে যাইবেন। অতএব মণ্ডলী তাঁহাদিগকে আগবাড়ান দিয়া পাঠাইয়া দিলে তাঁহারা ফৈনীকিয়া ও শমরিয়া দেশ দিয়া গমন করিতে করিতে পরজাতীয়দের ফিরিয়া আসিবার বিষয় বর্ণনা করিলেন, এবং সমস্ত ভ্রাতৃগণের পরমানন্দ জন্মাইলেন। পরে তাঁহারা যিরূশালেমে উপস্থিত হইয়া মণ্ডলী, প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ কর্ত্তৃক গৃহীত হইলেন, এবং ঈশ্বর তাঁহাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া যে সকল কার্য্য করিয়াছিলেন, সে সমস্তই বর্ণনা করিলেন। কিন্তু ফরীশী দলের কয়েক জন বিশ্বাসী উঠিয়া বলিতে লাগিল, সেই লোকদের ত্বক্‌ছেদ করা এবং মোশির ব্যবস্থা পালনের আজ্ঞা দেওয়া আবশ্যক। পরে এই বিষয় আলোচনা করিবার জন্য প্রেরিতগণ ও প্রাচীনবর্গ সমবেত হইলেন। আর অনেক বাদানুবাদ হইলে পিতর উঠিয়া তাঁহাদিগকে বলিলেন—‘হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা জান, ইহার অনেক দিন পূর্ব্বে ঈশ্বর তোমাদের মধ্যে আমাকে মনোনীত করিয়াছিলেন, যেন আমার মুখে পরজাতীয়েরা সুসমাচারের বাক্য শুনিয়া বিশ্বাস করে। আর ঈশ্বর, যিনি অন্তঃকরণ জানেন, তিনি তাহাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছেন, আমাদিগকে যেমন, তেমনি তাহাদিগকেও পবিত্র আত্মা দান করিয়াছেন; এবং আমাদের ও তাহাদের মধ্যে ইতর বিশেষ রাখেন নাই, বিশ্বাস দ্বারাই তাহাদের চিত্ত শুচি করিয়াছেন। অতএব এখন তোমরা কেন ঈশ্বরের পরীক্ষা করিতেছ, শিষ্যগণের ঘাড়ে সেই যোঁয়ালি দিতেছ, যাহার ভার না আমাদের পিতৃপুরুষেরা, না আমরা বহন করিতে সমর্থ হইয়াছি? কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, উহারা যেমন, আমরাও তেমনি প্রভু যীশুর অনুগ্রহ দ্বারাই পরিত্রাণ পাইব।’ তখন সমস্ত লোক নীরব হইয়া রহিল; আর বার্ণবার ও পৌলের দ্বারা পরজাতিগণের মধ্যে ঈশ্বর কি কি চিহ্ন-কার্য্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধন করিয়াছেন, তাঁহাদের কাছে তাহার বৃত্তান্ত শ্রবণ করিল। তাঁহাদের কথা সাঙ্গ হইলে পর যাকোব উত্তর করিয়া বলিলেন, ‘হে ভ্রাতৃগণ, আমার কথা শুন। ঈশ্বর আপন নামের জন্য পরজাতিগণের মধ্য হইতে এক দল প্রজা গ্রহণার্থে কিরূপে প্রথমে তাহাদের তত্ত্ব লইয়াছিলেন, তাহা শিমোন বর্ণনা করিয়াছেন। আর ভাববাদিগণের বাক্য তাহার সহিত মিলে, যেমন লিখিত আছে, “ইহার পরে আমি ফিরিয়া আসিব, দায়ূদের পতিত কুটির পুনরায় গাঁথিব, তাহার ধ্বংসস্থান সকল পুনরায় গাঁথিব, আর তাহা পুনরায় স্থাপন করিব; যেন অবশিষ্ট লোক সকল প্রভুর অন্বেষণ করে, আর যে জাতিগণের উপরে আমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে, তাহারা সকলেও করে, প্রভু এই কথা কহেন; তিনি পুরাকাল অবধি এই সকল বিষয় জ্ঞাত করেন।” অতএব আমার বিচার এই, পরজাতিগণের মধ্যে যাহারা ঈশ্বরের প্রতি ফিরে, তাহাদিগকে আমরা কষ্ট দিব না, কেবল তাহাদিগকে লিখিয়া পাঠাইব, যেন তাহারা প্রতিমা সংক্রান্ত অশুচিতা, ব্যভিচার, গলা টিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস, এবং রক্ত, এই সকল হইতে পৃথক্‌ থাকে। কেননা প্রতি নগরে অতি পূর্ব্বকালাবধি মোশির এমন লোক আছে, যাহারা তাঁহাকে প্রচার করে, প্রতি বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে তাঁহার গ্রন্থ পাঠ হইতেছে।’ তখন প্রেরিতগণ প্রাচীনবর্গ সমস্ত মণ্ডলীর সহযোগে, আপনাদের মধ্য হইতে মনোনীত কোন কোন লোককে, অর্থাৎ বার্শব্বা নামে আখ্যাত যিহূদা, এবং সীল, ভ্রাতৃগণের মধ্যে অগ্রগণ্য এই দুই জনকে পৌল ও বার্ণবার সহিত আন্তিয়খিয়ায় পাঠাইতে বিহিত বুঝিলেন; এবং তাঁহাদের হস্তে এইরূপ লিখিয়া পাঠাইলেন—‘আন্তিয়খিয়া, সুরিয়া ও কিলিকিয়ানিবাসী পরজাতীয় ভ্রাতৃগণের নিকটে প্রেরিতগণের ও প্রাচীনগণের, ভ্রাতৃগণের, মঙ্গলবাদ। আমরা শুনিতে পাইয়াছি যে, আমরা যাহাদিগকে কোন আজ্ঞা দিই নাই, এমন কয়েক ব্যক্তি আমাদের মধ্য হইতে গিয়া কথা দ্বারা তোমাদের প্রাণ অস্থির করিয়া তোমাদিগকে উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিয়াছে। এই জন্য আমরা একমত হইয়া কয়েক জনকে মনোনীত করিয়া, আমাদের প্রিয় যে বার্ণবা ও পৌল আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামের নিমিত্ত প্রাণপণ করিয়াছেন, তাঁহাদের সঙ্গে উঁহাদিগকে তোমাদের নিকটে পাঠাইতে বিহিত বুঝিলাম। অতএব যিহূদা ও সালকে প্রেরণ করিলাম, ইঁহারাও বাচনিক তোমাদিগকে সেই সকল বিষয় জ্ঞাত করিবেন। কারণ পবিত্র আত্মার এবং আমাদের ইহা বিহিত বোধ হইল, যেন এই কয়েকটী প্রয়োজনীয় বিষয় ছাড়া তোমাদের উপরে আর কোন ভার না দিই, ফলে প্রতিমার প্রসাদ এবং রক্ত ও গলা টিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস ও ব্যভিচার হইতে পৃথক্‌ থাকা তোমাদের উচিত; এই সকল হইতে আপনাদিগকে সযত্নে রক্ষা করিলে তোমাদের কুশল হইবে। তোমাদের মঙ্গল হউক।’ তখন তাঁহারা বিদায় হইয়া আন্তিয়খিয়ায় আসিলেন, এবং লোকসমূহকে একত্র করিয়া পত্রখানি দিলেন। তাহা পাঠ করিয়া তাহারা সেই আশ্বাসের কথায় আনন্দিত হইল। আর যিহূদা ও সীল, আপনারাও ভাববাদী ছিলেন বলিয়া, অনেক কথা দ্বারা ভ্রাতৃগণকে আশ্বাস দিলেন ও সুস্থির করিলেন। কিছু কাল যাপন করিয়া শেষে, যাঁহারা তাঁহাদিগকে পাঠাইয়াছিলেন, তাঁহাদের কাছে ফিরিয়া যাইবার নিমিত্ত তাঁহারা ভ্রাতৃগণের নিকট হইতে শান্তিতে বিদায় পাইলেন। কিন্তু পৌল ও বার্ণবা আন্তিয়খিয়াতে অবস্থিতি করিলেন, তাঁহারা অন্য অন্য অনেক লোকের সহিত প্রভুর বাক্য লইয়া শিক্ষা দিতেন ও সুসমাচার প্রচার করিতেন। কতক দিন পরে পৌল বার্ণবাকে কহিলেন, চল, আমরা যে সকল নগরে প্রভুর বাক্য প্রচার করিয়াছিলাম, সেই সকল নগরে এখন ফিরিয়া গিয়া ভ্রাতৃগণের তত্ত্বাবধান করি, দেখি, তাহারা কেমন আছে। আর বার্ণবা চাহিলেন, যোহন, যাঁহাকে মার্ক বলে, তাঁহাকেও সঙ্গে লইয়া যাইবেন; কিন্তু পৌল মনে করিলেন, যে ব্যক্তি পাম্ফুলিয়াতে তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া গিয়াছিল, তাঁহাদের সহিত কার্য্যে গমন করে নাই, এমন লোককে সঙ্গে করিয়া লওয়া উচিত নয়। ইহাতে এমন বিতণ্ডা হইল যে, তাঁহারা পরস্পর পৃথক্‌ হইলেন; বার্ণবা মার্ককে সঙ্গে করিয়া জাহাজে কুপ্রে গমন করিলেন; কিন্তু পৌল সীলকে মনোনীত করিয়া, ভ্রাতৃগণের দ্বারা প্রভুর অনুগ্রহে সমর্পিত হইয়া প্রস্থান করিলেন। আর তিনি সুরিয়া ও কিলিকিয়া দিয়া গমন করিতে করিতে মণ্ডলীগণকে সুস্থির করিলেন। পরে তিনি দর্বীতে ও লুস্ত্রায় উপস্থিত হইলেন। আর দেখ, সেখানে তীমথিয় নামে এক শিষ্য ছিলেন; তিনি এক বিশ্বাসিনী যিহূদী মহিলার পুত্র, কিন্তু তাঁহার পিতা গ্রীক; লুস্ত্রা ও ইকনীয় নিবাসী ভ্রাতৃগণ তাঁহার পক্ষে সাক্ষ্য দিত। পৌলের ইচ্ছা হইল, যেন সে ব্যক্তি তাঁহার সঙ্গে গমন করেন; আর তিনি ঐ সকল স্থানের যিহূদীদের নিমিত্ত তাঁহাকে লইয়া তাঁহার ত্বক্‌ছেদ করিলেন; কেননা তাঁহার পিতা যে গ্রীক, ইহা সকলে জানিত। আর তাঁহারা নগরে নগরে ভ্রমণ করিতে করিতে যিরূশালেমস্থ প্রেরিতগণের ও প্রাচীনবর্গের নিরূপিত নিয়মাবলী পালন করিতে ভ্রাতৃগণের হস্তে অর্পণ করিলেন। এইরূপে মণ্ডলীগণ বিশ্বাসে দৃঢ়ীকৃত হইতে থাকিল, এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইল। তাঁহারা ফরুগিয়া ও গালাতিয়া দেশ দিয়া গমন করিলেন, কেননা এশিয়া দেশে বাক্য প্রচার করিতে পবিত্র আত্মা কর্ত্তৃক নিবারিত হইয়াছিলেন; আর মুশিয়া দেশের নিকটে উপস্থিত হইয়া তাঁহারা বিথুনিয়ায় যাইতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু যীশুর আত্মা তাঁহাদিগকে যাইতে দিলেন না। তখন তাঁহারা মুশিয়া দেশ ছাড়িয়া ত্রোয়াতে চলিয়া গেলেন। আর রাত্রিকালে পৌল এক দর্শন পাইলেন; এক মাকিদনীয় পুরুষ দাঁড়াইয়া বিনতিপূর্ব্বক তাঁহাকে বলিতেছে, পার হইয়া মাকিদনিয়াতে আসিয়া আমাদের উপকার করুন। তিনি সেই দর্শন পাইলে আমরা অবিলম্বে মাকিদনিয়া দেশে যাইতে চেষ্টা করিলাম, কারণ বুঝিলাম, তথাকার লোকদের নিকটে সুসমাচার প্রচার করিতে ঈশ্বর আমাদিগকে ডাকিয়াছেন। আমরা ত্রোয়া হইতে জলযাত্রা করিয়া সোজা পথে সামথ্রাকীতে, এবং তাহার পরদিন নিয়াপলিতে উপস্থিত হইলাম। তথা হইতে ফিলিপীতে গেলাম; উহা মাকিদনিয়ার ঐ বিভাগের প্রথম নগর, রোমীয় উপনিবেশ। সেই নগরে আমরা কয়েক দিন অবস্থিতি করিলাম। আর বিশ্রামবারে নগরদ্বারের বাহিরের নদীতীরে গেলাম, মনে করিলাম, সেখানে প্রার্থনাস্থান আছে; আর আমরা বসিয়া সমাগত স্ত্রীলোকদের কাছে কথা কহিতে লাগিলাম। আর থুয়াতীরা নগরের লুদিয়া নাম্নী একটী ঈশ্বর-ভক্ত স্ত্রীলোক, যিনি বেগুনিয়া কাপড় বিক্রয় করিতেন, আমাদের কথা শুনিতেছিলেন; আর প্রভু তাঁহার হৃদয় খুলিয়া দিলেন, যেন তিনি পৌলের কথায় মনোযোগ করেন। তিনি ও তাঁহার পরিবার বাপ্তাইজিত হইলে পর তিনি বিনতি করিয়া কহিলেন, আপনারা যদি আমাকে প্রভুতে বিশ্বাসিনী বলিয়া বিবেচনা করিয়া থাকেন, তবে আমার গৃহে আসিয়া অবস্থিতি করুন। আর তিনি আমাদিগকে সাধ্যসাধনা করিয়া লইয়া গেলেন। এক দিন আমরা সেই প্রার্থনাস্থানে যাইতেছিলাম, এমন সময়ে দৈবজ্ঞ আত্মাবিষ্টা এক দাসী আমাদের সম্মুখে পড়িল; সে ভাগ্যকথন দ্বারা তাহার কর্ত্তাদের বিস্তর লাভ জন্মাইত। সে পৌলের এবং আমাদের পশ্চাৎ চলিতে চলিতে চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, এই ব্যক্তিরা পরাৎপর ঈশ্বরের দাস, ইহাঁরা তোমাদিগকে পরিত্রাণের পথ জানাইতেছেন। সে অনেক দিন পর্য্যন্ত এইরূপ করিতে থাকিল। কিন্তু পৌল বিরক্ত হইয়া মুখ ফিরাইয়া সেই আত্মাকে কহিলেন, আমি যীশু খ্রীষ্টের নামে তোমাকে আজ্ঞা দিতেছি, ইহা হইতে বাহির হইয়া যাও; তাহাতে সেই দণ্ডেই সে বাহির হইয়া গেল। কিন্তু তাহার কর্ত্তারা, লাভের প্রত্যাশা বাহির হইয়া গেল দেখিয়া, পৌলকে ও সীলকে ধরিয়া বাজারে অধ্যক্ষদের সম্মুখে টানিয়া লইয়া গেল; এবং শাসনকর্ত্তাদের নিকটে তাঁহাদিগকে আনিয়া বলিল, এই ব্যক্তিরা আমাদের নগর অতিশয় অস্থির করিয়া তুলিতেছে; ইহারা যিহূদী; আর আমরা রোমীয়, আমাদের যেরূপ রীতিনীতি গ্রহণ কি পালন করিতে নাই, ইহারা তাহাই প্রচার করিতেছে। তাহাতে লোকসমূহ তাঁহাদের বিরুদ্ধে উঠিল, এবং শাসনকর্ত্তারা তাঁহাদের বস্ত্র খুলিয়া ফেলিয়া দিলেন, ও বেত্রাঘাত করিতে আজ্ঞা দিলেন, এবং তাঁহাদিগকে বিস্তর প্রহার করাইলে পর কারাগারে নিক্ষেপ করিলেন, এবং সাবধানে রক্ষা করিতে কারারক্ষককে আজ্ঞা দিলেন। এই প্রকার আদেশ প্রাপ্ত হইয়া সে তাঁহাদিগকে ভিতর-কারাগারে বদ্ধ করিল, এবং তাহাদের পায়ে হাড়িকাঠ দিয়া রাখিল। কিন্তু মধ্যরাত্রে পৌল ও সীল প্রার্থনা করিতে করিতে ঈশ্বরের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিতেছিলেন, এবং বন্দিগণ তাঁহাদের গান কাণ পাতিয়া শুনিতেছিল। তখন হঠাৎ মহাভূমিকম্প হইল, এমন কি, কারাগারের ভিত্তিমূল কাঁপিয়া উঠিল; আর অমনি সমস্ত দ্বার খুলিয়া গেল, ও সকলের বন্ধন মুক্ত হইল। তাহাতে কারারক্ষক নিদ্রা হইতে জাগিয়া উঠিয়া, ও কারাগারের দ্বার সকল খুলিয়া গিয়াছে দেখিয়া, খড়্গ নিষ্কোষ করিয়া আপনার প্রাণ নষ্ট করিতে উদ্যত হইল, মনে করিল, বন্দিগণ পলায়ন করিয়াছে। কিন্তু পৌল উচ্চ রবে ডাকিয়া কহিলেন, ওহে, আপনার হিংসা করিও না, কেননা আমরা সকলেই এই স্থানে আছি। তখন সে আলো আনিতে বলিয়া ভিতরে দৌড়িয়া গেল, এবং ত্রাসে কাঁপিতে কাঁপিতে পৌলের ও সীলের সম্মুখে পড়িল; আর তাঁহাদিগকে বাহিরে আনিয়া বলিল, মহাশয়েরা, পরিত্রাণ পাইবার জন্য আমাকে কি করিতে হইবে? তাঁহারা কহিলেন, তুমি ও তোমার পরিবার প্রভু যীশুতে বিশ্বাস কর, তাহাতে পরিত্রাণ পাইবে। পরে তাঁহারা তাহাকে এবং তাহার বাটীতে উপস্থিত সকল লোককে ঈশ্বরের বাক্য বলিলেন। আর রাত্রির সেই দণ্ডেই সে তাঁহাদিগকে লইয়া তাঁহাদের প্রহারের ক্ষত সকল ধৌত করিল; এবং সে আপনি ও তাহার সকল লোক অবিলম্বে বাপ্তাইজিত হইল। পরে সে তাঁহাদিগকে উপরে গৃহমধ্যে লইয়া গিয়া তাঁহাদের সম্মুখে আহারীয় দ্রব্য রাখিল; এবং সমস্ত পরিবারের সহিত ঈশ্বরে বিশ্বাস করাতে অতিশয় আহ্লাদিত হইল। দিবস হইলে শাসনকর্ত্তারা বেত্রধরদের দ্বারা বলিয়া পাঠাইলেন, সেই লোকদিগকে ছাড়িয়া দেও। তাহাতে কারারক্ষক পৌলকে এই সংবাদ দিল যে, শাসনকর্ত্তারা আপনাদিগকে ছাড়িয়া দিতে বলিয়া পাঠাইয়াছেন, অতএব আপনারা এখন বাহির হইয়া শান্তিতে প্রস্থান করুন। কিন্তু পৌল তাহাদিগকে কহিলেন, তাঁহারা আমাদিগকে বিচারে দোষী না করিয়া সর্ব্বসাধারণের সাক্ষাতে প্রহার করাইয়া কারাগারে নিক্ষেপ করিয়াছেন, আমরা ত রোমীয় লোক, এক্ষণে কি গোপনে আমাদিগকে বাহির করিয়া দিতেছেন? তাহা হইবে না; তাঁহারা নিজে আসিয়া আমাদিগকে বাহিরে লইয়া যাউন। তখন বেত্রধরেরা শাসনকর্ত্তাদিগকে এই কথার সংবাদ দিল। তাহাতে তাঁহারা যে রোমীয়, এ কথা শুনিয়া শাসনকর্ত্তারা ভীত হইলেন, এবং আসিয়া তাঁহাদিগকে বিনতি করিলেন, আর বাহিরে লইয়া গিয়া নগর হইতে প্রস্থান করিতে অনুরোধ করিলেন। তখন তাঁহারা কারাগার হইতে বাহির হইয়া লুদিয়ার বাটীতে প্রবেশ করিলেন; আর ভ্রাতৃগণের সঙ্গে দেখা হইলে তাঁহাদিগকে আশ্বাস দিলেন; পরে প্রস্থান করিলেন। পরে তাঁহারা আম্ফিপলি ও অপল্লোনিয়া দিয়া গমন করিয়া থিষলনীকীতে আসিলেন। সেই স্থানে যিহূদীদের এক সমাজ-গৃহ ছিল; আর পৌল আপন রীতি অনুসারে তাহাদের কাছে গেলেন, এবং তিন বিশ্রামবারে তাহাদের সহিত শাস্ত্রের কথা লইয়া প্রসঙ্গ করিলেন, অর্থ বুঝাইয়া দিলেন, এবং দেখাইলেন যে, খ্রীষ্টের মৃত্যুভোগ ও মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থান করা আবশ্যক ছিল, এবং এই যে যীশুকে আমি তোমাদের কাছে প্রচার করিতেছি, তিনিই সেই খ্রীষ্ট। তাহাতে তাহাদের মধ্যে কয়েক জন প্রত্যয় করিল, এবং পৌলের এ সীলের সহিত যোগ দিল; আর ভক্ত গ্রীকদিগের মধ্যে বিস্তর লোক ও অনেকগুলি প্রধান মহিলা তাঁহাদের সহিত যোগ দিলেন। কিন্তু যিহূদীরা ঈর্ষাপরবশ হইয়া, বাজারের কয়েক জন দুষ্ট লোককে সঙ্গে লইয়া, জনতা করিয়া নগরে গোলযোগ বাধাইয়া দিল, এবং যাসোনের বাটী আক্রমণ করিয়া লোকদের কাছে আনিবার জন্য তাঁহাদের অন্বেষণ করিল। কিন্তু তাঁহাদিগকে না পাওয়াতে তাহারা যাসোন এবং কয়েক ভ্রাতাকে নগরাধ্যক্ষদের সম্মুখে টানিয়া লইয়া গেল, ও চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, এই যে লোকেরা জগৎ-সংসারকে লণ্ডভণ্ড করিয়া ফেলিয়াছে, ইহারা এ স্থানেও উপস্থিত হইল; যাসোন ইহাদের আতিথ্য করিয়াছে; আর ইহারা সকলে কৈসরের বিধিকলাপের বিরুদ্ধাচরণ করে ও বলে, যীশু নামে আর এক জন রাজা আছেন। এই সকল কথা শুনাইয়া তাহারা জনতাকে ও নগরাধ্যক্ষদিগকে উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিল। তখন তাঁহারা যাসোনের ও আর সকলের জামিন লইয়া তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া দিলেন। পরে ভ্রাতৃগণ অবিলম্বে পৌলকে ও সীলকে রাত্রিযোগে বিরয়াতে পাঠাইয়া দিলেন। তখায় উপস্থিত হইয়া তাঁহারা যিহূদীদের সমাজগৃহে গমন করিলেন। থিষলনীকীর যিহূদীদের অপেক্ষা ইহারা ভদ্র ছিল; কেননা ইহারা সম্পূর্ণ আগ্রহপূর্ব্বক বাক্য গ্রহণ করিল, আর এ সকল বাস্তবিকই এইরূপ কি না, তাহা জানিবার জন্য প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করিতে লাগিল। অতএব তাহাদের মধ্যে অনেকে, এবং গ্রীকদিগের মধ্যেও অনেক সম্ভ্রান্ত মহিলা ও পুরুষ, বিশ্বাস করিলেন। কিন্তু থিষলনীকীর যিহূদীরা যখন জানিতে পাইল যে বিরয়াতেও পৌলকর্ত্তৃত ঈশ্বরের বাক্য প্রচারিত হইয়াছে, তখন তাহারা সেখানেও আসিয়া লোকসমূহকে অস্থির ও উদ্বিগ্ন করিয়া তুলিতে লাগিল। তখন ভ্রাতৃগণ অবিলম্বে পৌলকে সমুদ্র পর্য্যন্ত যাইবার জন্য প্রেরণ করিলেন; আর সীল ও তীমথিয় সেখানে রহিলেন। আর যাহারা পৌলকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়াছিল, তাহারা তাঁহাকে আথীনী পর্য্যন্ত লইয়া গেল; পরে, তোমরা সীলকে ও তীমথিয়কে অতি সত্বর আমার কাছে আসিতে বলিবে, এই আজ্ঞা পাইয়া প্রস্থান করিল। পৌল যখন তাঁহাদের অপেক্ষায় আথীনীতে ছিলেন, তখন সেই নগর প্রতিমাতে পরিপূর্ণ দেখিয়া তাঁহার অন্তরে তাঁহার আত্মা উত্তপ্ত হইয়া উঠিল। অতএব তিনি সমাজ-গৃহে যিহূদী ও ভক্ত লোকদের কাছে, এবং বাজারে প্রতিদিন যাহাদের সঙ্গে দেখা হইত, তাহাদের কাছে কথা প্রসঙ্গ করিতেন। আবার ইপিকুরেয় ও স্তোয়িকীয় কয়েক জন দার্শনিক তাঁহার সহিত তর্ক-বিতর্ক করিতে লাগিল। আর কেহ কেহ কহিল, এ বাচালটা কি বলিতে চায়? আর কেহ কেহ বলিল, উহাকে বিজাতীয় দেবতাদের প্রচারক বলিয়া বোধ হয়; কারণ তিনি যীশু ও পুনরুত্থান বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিতেন। পরে তাহারা তাঁহার হাত ধরিয়া আরেয়পাগে লইয়া গিয়া কহিল, এই যে নূতন শিক্ষা আপনি প্রচার করিতেছেন, ইহা কি প্রকার, আমরা কি জানিতে পারি? কারণ আপনি কতকগুলি অদ্ভুত কথা আমাদের কাণে তুলিতেছেন; অতএব আমরা জানিতে বাসনা করি; এ সকল কথার অর্থ কি। (আথীনীয় সকল লোক ও তথাকার প্রবাসী বিদেশীরা কেবল নূতন কোন কথা বলা বা শুনা ছাড়া আর কিছুতে কালক্ষেপ করিত না।) তখন পৌল আরেয়পাগের মধ্যস্থলে দাঁড়াইয়া কহিলেন, হে আথীনীয় লোকেরা, দেখিতেছি, তোমরা সর্ব্ববিষয়ে বড়ই দেবতাভক্ত। কেননা বেড়াইবার সময়ে তোমাদের উপাস্য বস্তু সকল দেখিতে দেখিতে একটী বেদি দেখিলাম, যাহার উপরে লিখিত আছে, ‘অপরিচিত দেবের উদ্দেশে।’ অতএব তোমরা যে অপরিচিতের ভজনা করিতেছ, তাঁহাকে আমি তোমাদের নিকটে প্রচার করি। ঈশ্বর, যিনি জগৎ ও তন্মধ্যস্থ সমস্ত বস্তু নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তিনিই স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, সুতরাং হস্তনির্ম্মিত মন্দিরে বাস করেন না; কোন কিছুর অভাব প্রযুক্ত মনুষ্যদের হস্ত দ্বারা সেবিতও হন না, তিনিই সকলকে জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন। আর তিনি এক ব্যক্তি হইতে মনুষ্যদের সকল জাতিকে উৎপন্ন করিয়াছেন, যেন তাহারা সমস্ত ভূতলে বাস করে; তিনি তাহাদের নির্দ্দিষ্ট কাল ও নিবাসের সীমা স্থির করিয়াছেন; যেন তাহারা ঈশ্বরের অন্বেষণ করে, যদি কোন মতে হাঁতড়িয়া হাঁতড়িয়া তাঁহার উদ্দেশ পায়; অথচ তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন। কেননা তাঁহাতেই আমাদের জীবন, গতি ও সত্তা; যেমন তোমাদের কয়েক জন কবিও বলিয়াছেন, ‘কারণ আমরাও তাঁহার বংশ’। অতএব আমরা যখন ঈশ্বরের বংশ, তখন ঈশ্বরের স্বরূপকে মনুষ্যের শিল্প ও কল্পনা অনুসারে ক্ষোদিত স্বর্ণের কি রৌপ্যের কি প্রস্তরের সদৃশ জ্ঞান করা আমাদের কর্ত্তব্য নহে। ঈশ্বর সেই অজ্ঞানতার কাল উপেক্ষা করিয়াছিলেন, কিন্তু এখন সর্ব্বস্থানের সকল মনুষ্যকে মনপরিবর্ত্তন করিতে আজ্ঞা দিতেছেন; কেননা তিনি একটী দিন স্থির করিয়াছেন, যে দিনে আপনার নিরূপিত ব্যক্তি দ্বারা ন্যায়ে জগৎ-সংসারের বিচার করিবেন; এই বিষয়ে সকলের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়াছেন, ফলতঃ মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন। তখন মৃতগণের পুনরুত্থানের কথা শুনিয়া কেহ কেহ উপহাস করিতে লাগিল; কিন্তু আর কেহ কেহ বলিল, আপনার কাছে এ বিষয় আর একবার শুনিব। এইরূপে পৌল তাহাদের মধ্য হইতে প্রস্থান করিলেন। কিন্তু কোন কোন ব্যক্তি তাঁহার সঙ্গ ধরিল ও বিশ্বাস করিল; তাহাদের মধ্যে আরেয়পাগীয় দিয়নুষিয়, এবং দামারী নাম্নী একটী স্ত্রীলোক, ও তাঁহাদের সহিত আর কয়েক জন ছিলেন। তৎপরে পৌল আথীনী হইতে প্রস্থান করিয়া করিন্থে আসিলেন। আর তিনি আক্বিলা নামে এক যিহূদীর দেখা পাইলেন; ইনি জাতিতে পন্তীয়, অল্প দিন পূর্ব্বে আপন স্ত্রী প্রিষ্কিল্লার সহিত ইতালিয়া হইতে আসিয়াছিলেন, কেননা ক্লৌদিয় সমুদয় যিহূদীকে রোম হইতে চলিয়া যাইতে আজ্ঞা করিয়াছিলেন। পৌল তাঁহাদের কাছে গেলেন। আর তিনি সমব্যবসায়ী হওয়াতে তাঁহাদের সঙ্গে অবস্থিতি করিলেন, ও তাঁহারা কর্ম্ম করিতে লাগিলেন, কেননা তাঁহারা তাম্বু নির্ম্মাণ ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রতি বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে কথা প্রসঙ্গ করিতেন, এবং যিহূদী ও গ্রীকদিগকে বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি দিতেন। যখন সীল ও তীমথিয় মাকিদনিয়া হইতে আসিলেন, তখন পৌল বাক্যে নিবিষ্ট ছিলেন, যীশুই যে খ্রীষ্ট, ইহার প্রমাণ যিহূদীদিগকে দিতেছিলেন। কিন্তু তাহারা প্রতিরোধ ও নিন্দা করাতে তিনি বস্ত্র ঝাড়িয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের রক্ত তোমাদেরই মস্তকে বর্ত্তুক, আমি শুচি; এখন অবধি আমি পরজাতীয়দের নিকটে চলিলাম। পরে তিনি তথা হইতে প্রস্থান করিয়া তিতিয় যুষ্ট নামে এক জন ঈশ্বর-ভক্তের বাটীতে প্রবেশ করিলেন, ইহার বাটী সমাজ-গৃহের পার্শ্বে ছিল। আর সমাজাধ্যক্ষ ক্রীষ্প সমস্ত পরিবারের সহিত প্রভুতে বিশ্বাস করিলেন; এবং করিন্থীয়দের মধ্যে অনেক লোক শুনিয়া বিশ্বাস করিল, ও বাপ্তাইজিত হইল। আর প্রভু রাত্রিকালে দর্শনযোগে পৌলকে কহিলেন, ভয় করিও না, বরং কথা বল, নীরব থাকিও না; কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি, তোমার হিংসা করণার্থে কেহই তোমাকে আক্রমণ করিবে না; কেননা এই নগরে আমার অনেক প্রজা আছে। তাহাতে তিনি দেড় বৎসর অবস্থিতি করিয়া তাহাদের মধ্যে ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দিলেন। আর গাল্লিয়ো যখন আখায়ার দেশাধ্যক্ষ, তখন যিহূদীরা একযোগে পৌলের বিপক্ষে উঠিল, ও তাঁহাকে বিচারাসনের সম্মুখে লইয়া গিয়া কহিল, এই ব্যক্তি ব্যবস্থার বিপরীতে ঈশ্বরের ভজনা করিতে লোকদিগকে কুপ্রবৃত্তি দেয়। কিন্তু যখন পৌল মুখ খুলিতে উদ্যত হইলেন, তখন গাল্লিয়ো যিহূদীদিগকে কহিলেন, কোন প্রকার অপরাধ কিম্বা দুষ্কার্য্য যদি হইত, তবে, হে যিহূদীরা, তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করা আমার পক্ষে যুক্তিসঙ্গত হইত; কিন্তু বাক্য বা নাম বা তোমাদের ব্যবস্থা সম্বন্ধীয় প্রশ্ন যদি হয়, তবে তোমরা আপনারাই তাহা বুঝিবে, আমি সেই প্রকার বিষয়ের বিচারকর্ত্তা হইতে চাহি না। পরে তিনি তাহাদিগকে বিচারাসন হইতে তাড়াইয়া দিলেন। তাহাতে সকলে সমাজাধ্যক্ষ সোস্থিনিকে ধরিয়া বিচারাসনের সম্মুখে প্রহার করিতে লাগিল; আর গাল্লিয়ো সে সকল বিষয়ে কিছু মনোযোগ করিলেন না। পৌল আরও অনেক দিন অবস্থিতি করিবার পর ভ্রাতৃগণের নিকটে বিদায় লইয়া সমুদ্র-পথে সুরিয়া দেশে প্রস্থান করিলেন, এবং তাঁহার সঙ্গে প্রিষ্কিল্লা ও আক্বিলাও গেলেন; তিনি কিংক্রিয়াতে মস্তক মুণ্ডন করিয়াছিলেন, কেননা তাঁহার এক মানত ছিল। পরে তাঁহারা ইফিষে পঁহুছিলেন, আর তিনি ঐ দুই জনকে সে স্থানে রাখিলেন; কিন্তু আপনি সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিয়া যিহূদীদের কাছে কথা প্রসঙ্গ করিলেন। আর তাহারা আপনাদের নিকটে আর কিছু দিন থাকিতে তাঁহাকে বিনতি করিলেও তিনি সম্মত হইলেন না; কিন্তু তাহাদের কাছে বিদায় লইলেন, বলিলেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা হইলে আমি আবার তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব। পরে তিনি জলপথে ইফিষ হইতে প্রস্থান করিলেন। আর কৈসরিয়ায় উপস্থিত হইয়া [যিরূশালেমে] গেলেন, এবং মণ্ডলীকে মঙ্গলবাদ করিয়া তথা হইতে আন্তিয়খিয়ায় চলিয়া গেলেন। সেখানে কিছুকাল অতিবাহিত করিয়া তিনি প্রস্থান করিলেন, এবং ক্রমে গালাতিয়া দেশ ও ফরুগিয়া ভ্রমণ করিতে করিতে শিষ্য সকলকে সুস্থির করিলেন। আপল্লো নামক এক জন যিহূদী ইফিষে আসিলেন; তিনি জাতিতে আলেক্‌সান্দ্রীয়, একজন সুবক্তা, এবং শাস্ত্রে ক্ষমতাপন্ন ছিলেন। তিনি প্রভুর পথের বিষয়ে শিক্ষা পাইয়াছিলেন, এবং আত্মাতে উত্তপ্ত হওয়াতে যীশুর বিষয়ে সূক্ষ্মরূপে কথা বলিতেন ও শিক্ষা দিতেন, কিন্তু কেবল যোহনের বাপ্তিস্ম জ্ঞাত ছিলেন। তিনি সমাজ-গৃহে সাহসপূর্ব্বক কথা কহিতে আরম্ভ করিলেন। আর প্রিষ্কিল্লা ও আক্বিলা তাঁহার উপদেশ শুনিয়া তাঁহাকে আপনাদের নিকটে আনিলেন, এবং ঈশ্বরের পথ আরও সূক্ষ্মরূপে বুঝাইয়া দিলেন। পরে তিনি আখায়াতে যাইবার মানস করিলে ভ্রাতৃগণ উৎসাহ দিলেন, আর তাঁহাকে গ্রহণ করিতে শিষ্যদিগকে পত্র লিখিলেন; তাহাতে তিনি তথায় উপস্থিত হইয়া, যাহারা অনুগ্রহ দ্বারা বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহাদের বিস্তর উপকার করিলেন। কারণ যীশুই যে খ্রীষ্ট, ইহা শাস্ত্রীয় বচন দ্বারা প্রমাণ করিয়া তিনি ক্ষমতার সহিত লোকসাধারণের সাক্ষাতে যিহূদিগণকে একেবারে নিরুত্তর করিলেন। আপল্লো যে সময়ে করিন্থে ছিলেন, সে সময়ে পৌল উত্তর অঞ্চল দিয়া গমন করিয়া ইফিষে আসিলেন। তথায় কয়েক জন শিষ্যের দেখা পাইলেন; আর তাহাদিগকে বলিলেন, বিশ্বাসী হইয়া তোমরা কি পবিত্র আত্মা পাইয়াছিলে? তাহারা তাঁহাকে কহিল, পবিত্র আত্মা যে আছেন, তাহাও আমরা শুনি নাই। তিনি কহিলেন, তবে কিসে বাপ্তাইজিত হইয়াছিলে? তাহারা কহিল, যোহনের বাপ্তিস্মে। পৌল কহিলেন, যোহন মনপরিবর্ত্তনের বাপ্তিস্মে বাপ্তাইজ করিতেন, লোকদিগকে বলিতেন, যিনি তাঁহার পরে আসিবেন, তাঁহাতে অর্থাৎ যীশুতে তাহাদিগকে বিশ্বাস করিতে হইবে। এ কথা শুনিয়া তাহারা প্রভু যীশুর নামে বাপ্তাইজিত হইল। আর পৌল তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিলে পবিত্র আত্মা তাহাদের উপরে আসিলেন, তাহাতে তাহারা নানা ভাষায় কথা কহিতে এবং ভাববাণী বলিতে লাগিল। তাহারা সর্ব্বশুদ্ধ বারো জন পুরুষ ছিল। পরে তিনি সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিয়া তিন মাস সাহস পূর্ব্বক কথা কহিলেন, ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে কথা প্রসঙ্গ করিতে ও প্রবৃত্তি দিতে লাগিলেন। কিন্তু যখন কয়েক জন কঠিন ও অবাধ্য হইয়া লোকসমূহের সাক্ষাতে সেই পথের নিন্দা করিতে লাগিল, তখন তিনি তাহাদের নিকট হইতে চলিয়া গিয়া শিষ্যগণকে পৃথক্‌ করিলেন ও প্রতিদিন তূরাণ্ণের বিদ্যালয়ে কথা প্রসঙ্গ করিতে লাগিলেন। এইরূপে দুই বৎসর কাল চলিল; তাহাতে এশিয়া-নিবাসী যিহূদী ও গ্রীক সকলেই প্রভুর বাক্য শুনিতে পাইল। আর ঈশ্বর পৌলের হস্ত দ্বারা অসামান্য পরাক্রম-কার্য্য সাধন করিতেন; এমন কি, তাঁহার গাত্র হইতে রুমাল কিম্বা গামছা পীড়িত লোকদের নিকটে আনিলে ব্যাধি তাহাদিগকে ছাড়িয়া যাইত, এবং দুষ্ট আত্মারা বাহির হইয়া যাইত। আর কয়েক জন পর্য্যটনকারী যিহূদী ওঝাও দুষ্ট আত্মাবিষ্ট লোকদের কাছে প্রভু যীশুর নাম জপ করিতে প্রবৃত্ত হইয়া বলিতে লাগিল, পৌল যাঁহাকে প্রচার করেন, সেই যীশুর দিব্য দিয়া তোমাদিগকে বলিতেছি। আর স্কিবা নামে এক জন যিহূদী প্রধান যাজকের সাত পুত্র ছিল, তাহারা এই প্রকার করিত। তাহাতে দুষ্ট আত্মা উত্তর করিয়া তাহাদিগকে কহিল, যীশুকে আমি জানি, পৌলকেও চিনি, কিন্তু তোমরা কে? তখন যে ব্যক্তি দুষ্ট আত্মাবিষ্ট, সে তাহাদের উপরে লাফ দিয়া পড়িল, দুই জনকে পরাভব করিয়া তাহাদের উপরে এমন বল প্রকাশ করিল যে, তাহারা উলঙ্গ ও ক্ষতবিক্ষত হইয়া সেই গৃহ হইতে পলায়ন করিল। আর ইহা ইফিষ-নিবাসী যিহূদী ও গ্রীক সকলেই জানিতে পাইল, তাহাতে সকলে ভয়গ্রস্ত হইল, এবং প্রভু যীশুর নাম মহিমান্বিত হইতে লাগিল। আর যাহারা বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহাদের অনেকে আসিয়া আপন আপন ক্রিয়া স্বীকার ও প্রকাশ করিতে লাগিল। আর যাহারা যাদুক্রিয়া করিত, তাহাদের মধ্যে অনেকে আপন আপন পুস্তক আনিয়া একত্র করিয়া সকলের সাক্ষাতে পোড়াইয়া ফেলিল; সে সকলের মূল্য গণনা করিলে দেখা গেল, পঞ্চাশ সহস্র রৌপ্যমুদ্রা। এইরূপে সপরাক্রমে প্রভুর বাক্য বৃদ্ধি পাইতে ও প্রবল হইতে লাগিল। এই সকল কার্য্য সম্পন্ন হইলে পর পৌল আত্মায় সঙ্কল্প করিলেন যে, তিনি মাকিদনিয়া ও আখায়া যাইবার পর যিরূশালেমে যাইবেন, তিনি কহিলেন, তথায় যাইবার পর আমাকে রোম নগরও দেখিতে হইবে। আর যাঁহারা তাঁহার পরিচর্য্যা করিতেন, তাঁহাদের দুই জনকে, তীমথিয় ও ইরাস্তকে, মাকিদনিয়াতে প্রেরণ করিয়া তিনি আপনি কিছু কাল এশিয়ায় রহিলেন। আর সেই সময়ে এই পথের বিষয় বিষম হুলস্থূল পড়িয়া গেল। কারণ দীমীত্রিয় নামে এক জন স্বর্ণকার দীয়ানার রৌপ্যময় মন্দির নির্ম্মাণ করিত, এবং শিল্পকরদিগকে যথেষ্ট কাজ যোগাইয়া দিত। সেই ব্যক্তি তাহাদিগকে এবং সেই ব্যবসায়ের কারিকরদিগকে ডাকিয়া কহিল, মহাশয়েরা, আপনারা জানেন, এই কাজের দ্বারা আমাদের ধনাগম হয়। আর আপনারা দেখিতেছেন, ও শুনিতেছেন, কেবল এই ইফিষে নয়, প্রায় সমস্ত এশিয়ায় এই পৌল বিস্তর লোককে প্রবৃত্তি দিয়া ফিরাইয়াছে, এই বলিয়াছে, যে, যাহারা হস্তনির্ম্মিত, তাহারা ঈশ্বর নয়। ইহাতে এই আশঙ্কা হইতেছে, কেবল আমাদের এই ব্যবসায়ের দুর্নাম হইবে, তাহা নয়; কিন্তু মহাদেবী দীয়ানার মন্দির নগণ্য হইয়া পড়িবে, আবার যাঁহাকে সমস্ত এশিয়া, এমন কি, জগৎসংসার পূজা করে, তিনিও মহিমাচ্যুত হইবেন। এই কথা শুনিয়া তাহারা ক্রোধে পরিপূর্ণ হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, ইফিষীয়দের দীয়ানাই মহাদেবী। তাহাতে নগর গণ্ডগোলে পরিপূর্ণ হইল; পরে লোকেরা একযোগে রঙ্গভূমিতে বেগে দৌড়িল, আর মাকিদনিয়ার গায় ও আরিষ্টার্খ নামে পৌলের দুই জন সহযাত্রীকে ধরিয়া লইয়া গেল। তখন পৌল লোকদের কাছে যাইবার মানস করিলে শিষ্যগণ তাঁহাকে যাইতে দিল না। আর এশিয়ার অধ্যক্ষদের মধ্যে কয়েক জন তাঁহার বন্ধু ছিলেন বলিয়া তাঁহার কাছে লোক পাঠাইয়া এই নিবেদন করিলেন, যেন তিনি রঙ্গভূমিতে আপনার বিপদ ঘটাইতে না যান। তখন নানা লোকে নানা কথা বলিয়া চেঁচাইতেছিল, কেননা সভা গোলযোগে পরিপূর্ণ হইয়াছিল, এবং কি জন্য সমাগত হইয়াছিল, তাহা অধিকাংশ লোক জানিত না। তখন যিহূদীরা আলেক্‌সান্দারকে সম্মুখে উপস্থিত করায় লোকেরা জনতার মধ্য হইতে তাহাকে বাহির করিল; তাহাতে আলেক্‌সান্দার হস্ত দ্বারা ইঙ্গিত করিয়া লোকসমূহের কাছে পক্ষসমর্থন করিতে উদ্যত হইল। কিন্তু যখন তাহারা জানিতে পারিল যে, সে যিহূদী, তখন সকলে একস্বরে অনুমান দুই ঘন্টা কাল এই বলিয়া চেঁচাইতে থাকিল, ‘ইফিষীয়দের দীয়ানাই মহাদেবী’। শেষে নগরের সম্পাদক জনতাকে ক্ষান্ত করিয়া কহিলেন, হে ইফিষীয় লোক সকল, বলে দেখি, ইফিষীয়দের নগরী যে মহাদেবী দীয়ানার, এবং আকাশ হইতে পতিতা প্রতিমার গৃহমার্জ্জিকা, ইহা মনুষ্যদের মধ্যে কে না জানে? অতএব এ কথা অখণ্ডনীয় হওয়াতে তোমাদের ক্ষান্ত থাকা, এবং অবিবেচনার কোন কার্য্য না করা উচিত। কারণ এই যে লোকদিগকে তোমরা এ স্থানে আনিয়াছ, ইহারা ত মন্দির-অপহারকও নয়, আমাদের দেবীর নিন্দকও নয়। অতএব যদি কাহারও বিরুদ্ধে দীমীত্রিয়ের ও তাহার সঙ্গী শিল্পকরদের কোন কথা থাকে, তবে আদালত খোলা আছে, দেশাধ্যক্ষগণও আছেন, তাহারা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করুক। কিন্তু তোমাদের অন্য কোন দাবী দাওয়া যদি থাকে, তবে নিয়মিত সভায় তাহার নিষ্পত্তি হইবে। বস্তুতঃ অদ্যকার ঘটনা প্রযুক্ত উপপ্লবদোষে দোষী বলিয়া আমাদের নামে অভিযোগ হইবার আশঙ্কাও আছে, যেহেতুক ইহার কোন কারণ নাই, এই জনসমাগমের বিষয়ে উত্তর দিবার উপায়মাত্র আমাদের নাই। ইহা বলিয়া তিনি সভাকে বিদায় করিলেন। সেই কোলাহল নিবৃত্ত হইলে পর পৌল শিষ্যগণকে ডাকিয়া পাঠাইলেন, এবং আশ্বাস দিলেন, ও মঙ্গলবাদপূর্ব্বক বিদায় গ্রহণ করিয়া মাকিদনিয়াতে যাইবার নিমিত্ত প্রস্থান করিলেন। পরে সেই অঞ্চল দিয়া গমন করিতে করিতে অনেক কথা দ্বারা শিষ্যদিগকে আশ্বাস দিয়া গ্রীস দেশে উপস্থিত হইলেন। সেই স্থানে তিন মাস যাপন করিয়া যখন তিনি জলপথে সুরিয়া দেশে যাইতে উদ্যত হইলেন, তখন যিহূদীরা তাঁহার বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করাতে, তিনি মাকিদনিয়া দিয়া ফিরিয়া যাইতে স্থির করিলেন। আর বিরয়া নগরীয় পুর্হের পুত্র সোপাত্র, থিষলনীকীয় আরিষ্টার্খ ও সিকুন্দ, দর্ব্বী নগরীয় গায়, তীমথিয়, এবং এশিয়ার তুখিক ও ত্রফিম, ইঁহারা তাঁহার সঙ্গে গেলেন। ইঁহারা অগ্রসর হইয়া ত্রোয়াতে আমাদের অপেক্ষা করিতেছিলেন। পরে তাড়ীশূন্য রুটীর পর্ব্বদিন গত হইলে আমরা ফিলিপী হইতে জলপথে প্রস্থান করিয়া পাঁচ দিনে ত্রোয়াতে তাঁহাদের নিকটে উপস্থিত হইলাম; সেখানে সাত দিন অবস্থিতি করিলাম। আর সপ্তাহের প্রথম দিনে আমরা রুটী ভাঙ্গিবার জন্য একত্র হইলে পৌল পরদিন প্রস্থান করিতে উদ্যত ছিলেন বলিয়া শিষ্যদের কাছে কথা প্রসঙ্গ করিয়া মধ্যরাত্রি পর্য্যন্ত বক্তৃতা করিলেন। আমরা যে উপরিস্থ কুঠরীতে সভাস্থ হইয়াছিলাম, সেখানে অনেক প্রদীপ ছিল। আর উতুখ নামে এক জন যুবক বাতায়নে বসিয়াছিল, সে ঘোর নিদ্রায় মগ্ন হইয়া পড়িয়াছিল; এবং পৌল আরও অনেক ক্ষণ পর্য্যন্ত কথা প্রসঙ্গ করিলে সে নিদ্রায় মগ্ন হওয়াতে তেতালা হইতে নীচে পড়িয়া গেল, তাহাতে লোকেরা তাহাকে মরা তুলিয়া লইল। তখন পৌল নামিয়া গিয়া তাহার গায়ের উপরে পড়িলেন, ও তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া কহিলেন, তোমরা কোলাহল করিও না; কেননা ইহার মধ্যে প্রাণ আছে। পরে তিনি উপরে গিয়া রুটী ভাঙ্গিয়া ভোজন করিয়া অনেক্ষ ক্ষণ, এমন কি, রাত্রি প্রভাত পর্য্যন্ত কথাবর্ত্তা কহিলেন, এইরূপে প্রস্থান করিলেন। আর তাহারা সেই বালককে জীবিত আনিয়া অসামান্য আশ্বাস প্রাপ্ত হইল। আর আমরা অগ্রে গিয়া জাহাজে উঠিয়া, আঃসে যাত্রা করিলাম, সেখান হইতে পৌলকে তুলিয়া লইব মনস্থ করিলাম; কারণ তিনি স্থলপথে যাইবেন বলিয়া ইহা স্থির করিয়াছিলেন। পরে তিনি আঃসে আমাদের সঙ্গ ধরিলে আমরা তাঁহাকে তুলিয়া লইয়া মিতুলীনীতে আসিলাম। তথা হইতে জাহাজ খুলিয়া পরদিন খীয়ের সম্মুখে উপস্থিত হইলাম; দ্বিতীয় দিনে সামঃ দ্বীপে লাগাইলাম, পরদিন মিলীতে আসিলাম। কারণ পৌল ইফিষ ফেলিয়া যাইতে স্থির করিয়াছিলেন, যাহাতে এশিয়াতে তাঁহার কালবিলম্ব না হয়; তিনি ত্বরা করিতেছিলেন, যেন সাধ্য হইলে পঞ্চাশত্তমীর দিন যিরূশালেমে উপস্থিত থাকিতে পারেন। মিলীত হইতে তিনি ইফিষে লোক পাঠাইয়া মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে ডাকাইয়া আনিলেন। তাঁহারা তাঁহার নিকটে উপস্থিত হইলে তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন,—তোমরা জান, এশিয়া দেশে আসিয়া, আমি প্রথম দিন অবধি তোমাদের সঙ্গে কিরূপে সমস্ত কাল যাপন করিয়াছি, সম্পূর্ণ নম্র মনে ও অশ্রুপাতের সহিত এবং যিহূদীদের ষড়যন্ত্র হইতে উৎপন্ন নানা পরীক্ষার মধ্যে থাকিয়া প্রভুর দাস্যকর্ম্ম করিয়াছি; কোন হিতকথা গোপন না করিয়া তোমাদিগকে সকলই জানাইতে, এবং সাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে শিক্ষা দিতে, সঙ্কুচিত হই নাই; ঈশ্বরের প্রতি মনপরিবর্ত্তন এবং আমাদের প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস বিষয়ে যিহূদী ও গ্রীকদের নিকটে সাক্ষ্য দিয়া আসিতেছি। আর এখন দেখ, আমি আত্মাতে বদ্ধ হইয়া যিরূশালেমে গমন করিতেছি; সে স্থানে আমার প্রতি কি কি ঘটিবে, তাহা জানি না। এই মাত্র জানি, পবিত্র আত্মা প্রতি নগরে আমার কাছে এই বলিয়া সাক্ষ্য দিতেছেন যে, বন্ধন ও ক্লেশ আমার অপেক্ষা করিতেছে। কিন্তু আমি নিজ প্রাণকেও কিছুর মধ্যে গণ্য করি না, আমার পক্ষে মহামূল্য গণ্য করি না, যেন নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িতে পারি, এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহের সুসমাচারের পক্ষে সাক্ষ্য দিবার যে পরিচর্যাপদ প্রভু যীশু হইতে পাইয়াছি, তাহা সমাপ্ত করিতে পারি। আর এখন দেখ, আমি জানি যে, যাহাদের মধ্যে আমি সেই রাজ্য প্রচার করিয়া বেড়াইয়াছি, সেই তোমরা সকলে আমার মুখ আর দেখিতে পাইবে না; এই কারণ অদ্য তোমাদিগকে এই সাক্ষ্য দিতেছি যে, সকলের রক্তের দায় হইতে আমি শুচি; কারণ আমি তোমাদিগকে ঈশ্বরের সমস্ত মন্ত্রণা জ্ঞাত করিতে সঙ্কুচিত হই নাই। তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান, এবং পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে অধ্যক্ষ করিয়া যাহার মধ্যে নিযুক্ত করিয়াছেন, সেই সমস্ত পালের বিষয়ে সাবধান হও, ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীকে পালন কর, যাহাকে তিনি নিজ রক্ত দ্বারা ক্রয় করিয়াছেন। আমি জানি, আমি গেলে পর দুরন্ত কেন্দুয়ারা তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করিবে, পালের প্রতি মমতা করিবে না; এবং তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে। অতএব জাগিয়া থাক; স্মরণ কর, আমি তিন বৎসর কাল রাত দিন প্রত্যেকজনকে অশ্রুপাতের সহিত চেতনা দিতে ক্ষান্ত হই নাই। আর এখন প্রভুর নিকটে, ও তাঁহার অনুগ্রহের বাক্যের নিকটে তোমাদিগকে সমর্পণ করিলাম, তিনি তোমাদিগকে গাঁথিয়া তুলিতে ও পবিত্রীকৃত সকলের মধ্যে দায়াধিকার দিতে সমর্থ। আমি কাহারও রৌপ্যের কি স্বর্ণের কি বস্ত্রের প্রতি লোভ করি নাই। তোমরা আপনারা জান, আমার নিজের এবং আমার সঙ্গীদের অভাব দূর করণার্থে এই দুই হস্ত কার্য্য করিয়াছে। সকল বিষয়ে আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছি যে, এই প্রকারে পরিশ্রম করিয়া দুর্ব্বলদিগের সাহায্য করিতে হইবে, এবং প্রভু যীশুর বাক্য স্মরণ করা উচিত, কেননা তিনি আপনি বলিয়াছেন, গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়। এই কথা কহিয়া তিনি হাঁটু পাতিয়া সকলের সহিত প্রার্থনা করিলেন। তাহাতে সকলে বিস্তর রোদন করিলেন, এবং পৌলের গলা ধরিয়া তাঁহাকে চুম্বন করিতে লাগিলেন; সর্ব্বাপেক্ষা তাঁহার উক্ত এই কথার জন্য অধিক দুঃখ করিলেন যে, তাঁহারা তাঁহার মুখ আর দেখিতে পাইবেন না। পরে জাহাজ পর্য্যন্ত তাঁহাকে রাখিয়া আসিতে গেলেন। তাঁহাদের নিকট হইতে কষ্টে বিদায় লইয়া, জাহাজ খুলিয়া দিয়া, আমরা সোজা পথে কো দ্বীপে আসিলাম, পরদিন রোদঃ দ্বীপে, এবং তথা হইতে পাতারায় উপস্থিত হইলাম। আর এমন একখানি জাহাজ পাইলাম, যাহা পার হইয়া ফৈনীকিয়ায় যাইবে, আমরা তাহাতে উঠিয়া যাত্রা করিলাম। পরে কুপ্র দ্বীপ দেখা দিলে তাহা বামদিকে ফেলিয়া আমরা সুরিয়া দেশে গিয়া সোরে নামিলাম; কেননা সেখানে জাহাজের মাল ফেলিতে হইল। আর তথাকার শিষ্যগণের সন্ধান করিয়া আমরা সাত দিন তথায় অবস্থিতি করিলাম; ইঁহারা আত্মার দ্বারা পৌলকে বলিলেন, যেন তিনি যিরূশালেমে না যান। সেই কয়েকদিন যাপন করিলে পর আমরা বাহির হইয়া প্রস্থান করিলাম, তখন তাঁহারা সকলে স্ত্রী পুত্র লইয়া নগরের বাহির পর্য্যন্ত আমাদিগকে রাখিয়া যাইতে আসিলেন; তথায় সমুদ্রতীরে হাঁটু পাতিয়া আমরা প্রার্থনাপূর্ব্বক পরস্পর বিদায় গ্রহণ করিলাম; পরে আমরা জাহাজে উঠিলাম, ও তাঁহারা স্বস্থানে ফিরিয়া গেলেন। পরে সোর ছাড়িয়া আমরা জলযাত্রা শেষ করিয়া তলিমায়িতে উপস্থিত হইলাম, এবং ভ্রাতৃগণকে মঙ্গলবাদ করিয়া এক দিন তাঁহাদের সঙ্গে রহিলাম। পরদিন আমরা প্রস্থান করিয়া কৈসরিয়াতে আসিলাম, এবং সুসমাচার-প্রচারক ফিলিপ, যিনি সেই সাত জনের এক জন, তাঁহার বাটীতে প্রবেশ করিয়া তাঁহার সঙ্গে অবস্থিতি করিলাম। সেই ব্যক্তির চারিটী কুমারী কন্যা ছিলেন, তাঁহারা ভাববাণী বলিতেন। সেই স্থানে আমরা অনেক দিন অবস্থিতি করিলে যিহূদিয়া হইতে আগাব নামে এক জন ভাববাদী উপস্থিত হইলেন। আর তিনি আমাদের নিকটে আসিয়া পৌলের কটিবন্ধন লইয়া আপনার হাত পা বাঁধিয়া কহিলেন, পবিত্র আত্মা এই কথা কহিতেছেন, যে ব্যক্তির এই কটিবন্ধন, তাহাকে যিহূদীরা যিরূশালেমে এইরূপে বাঁধিবে, এবং পরজাতীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবে। ইহা শুনিয়া তথাকার ভ্রাতৃগণ ও আমরা পৌলকে বিনতি করিলাম, যেন তিনি যিরূশালেমে না যান। তখন পৌল উত্তর করিলেন, তোমরা এ কি করিতেছ? ক্রন্দন করিয়া আমার হৃদয় চূর্ণ করিতেছ? কারণ আমি প্রভু যীশুর নামের নিমিত্ত যিরূশালেমে কেবল বদ্ধ হইতে, তাহা নয়, বরং মরিতেও প্রস্তুত আছি। এইরূপে তিনি আমাদের কথা শুনিতে অসম্মত হইলে আমরা ক্ষান্ত হইয়া বলিলাম, প্রভুরই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক। এই সকল দিনের শেষে আমরা জিনিষপত্র গুছাইয়া লইয়া যিরূশালেমে যাত্রা করিলাম। আর কৈসরিয়া হইতে কয়েক জন শিষ্য আমাদের সঙ্গে চলিলেন; তাঁহারা কুপ্র দ্বীপের ম্নাসোন নামক এক জনকে সঙ্গে করিয়া আনিলেন; ইনি এক জন আদিম শিষ্য; ইঁহারই বাটীতে আমাদের অতিথি হইবার কথা। যিরূশালেমে উপস্থিত হইলে পর ভ্রাতৃগণ সানন্দে আমাদিগকে গ্রহণ করিলেন। পরদিন পৌল আমাদের সহিত যাকোবের বাটীতে প্রবেশ করিলেন; তথায় প্রাচীনবর্গ সকলে উপস্থিত হইলেন। পরে তিনি তাঁহাদিগকে মঙ্গলবাদ করিয়া, ঈশ্বর তাঁহার পরিচর্য্যা দ্বারা পরজাতিগণের মধ্যে যে সকল কার্য্য সাধন করিয়াছিলেন, তাহার বৃত্তান্ত এক একটী করিয়া তাঁহাদিগকে জানাইলেন। আর তাহা শুনিয়া তাঁহারা ঈশ্বরের গৌরব করিলেন, এবং তাঁহাকে বলিলেন, ভ্রাতঃ, তুমি দেখিতেছ, যিহূদীদের মধ্যে কত সহস্র লোক বিশ্বাসী হইয়াছে, আর তাহারা সকলে ব্যবস্থার পক্ষে উদ্‌যোগী। আর তোমার বিষয়ে তাহারা এই সংবাদ পাইয়াছে যে, তুমি পরজাতীয়দের মধ্যে প্রবাসী সমস্ত যিহূদীকে মোশির পথ পরিত্যাগ করিতে শিক্ষা দিয়া বলিয়া থাক, যেন তাহারা শিশুদের ত্বক্‌ছেদ না করে ও যথারীতি না চলে। অতএব এখন কি করা যায়? তাহারা ত শুনিতে পাইবেই যে, তুমি আসিয়াছ। অতএব আমরা তোমাকে যাহা বলি, তাহাই কর। আমাদের এমন চারি জন পুরুষ আছে, যাহারা মানত করিয়াছে; তুমি তাহাদিগকে লইয়া তাহাদের সহিত আপনাকেও শুচি কর, এবং তাহাদের মস্তক মুণ্ডনের জন্য ব্যয় কর। তাহা করিলে সকলে জানিবে, তোমার বিষয়ে যে সকল সংবাদ উহারা পাইয়াছে, সে কিছু নয়, বরং তুমি নিজেও ব্যবস্থা-পালন করিয়া যথানিয়মে চলিতেছ। কিন্তু যে পরজাতীয়েরা বিশ্বাসী হইয়াছে, তাহাদের বিষয়ে আমরা বিচার করিয়া লিখিয়াছি যে, প্রতিমার প্রসাদ, রক্ত, গলা টিপিয়া মারা প্রাণীর মাংস এবং ব্যভিচার, এই সকল হইতে যেন তাহারা আপনাদিগকে রক্ষা করে। তখন পৌল সেই কয়েক জনকে লইয়া পরদিন তাহাদের সহিত শুচি হইয়া ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিলেন, এবং তাহাদের প্রত্যেকের নিমিত্ত নৈবেদ্য উৎসর্গ করা পর্য্যন্ত শুচীকরণ কার্য্যে কত দিন লাগিবে, তাহা জানাইলেন। আর সেই সাত দিন প্রায় সমাপ্ত হইলে এসিয়া দেশের যিহূদীরা ধর্ম্মধামের মধ্যে তাঁহার দেখা পাইয়া সমস্ত জনতাকে উত্তেজিত করিয়া তুলিল, এবং তাঁহাকে ধরিয়া চেঁচাইয়া বলিতে লাগিল, ‘হে ইস্রায়েল-লোক সকল, সাহায্য কর; এ সেই ব্যক্তি, যে সর্ব্বত্র সকলকে আমাদের জাতির ও ব্যবস্থার এবং এই স্থানের বিরুদ্ধে শিক্ষা দেয়; আবার এ গ্রীকদিগকেও ধর্ম্মধামের মধ্যে আনিয়াছে, ও এই পবিত্র স্থান অপবিত্র করিয়াছে।’ কারণ তাহারা পূর্ব্বে নগরের মধ্যে ইফিষীয় ত্রফিমকে পৌলের সঙ্গে দেখিয়াছিল, মনে করিয়াছিল, পৌল তাহাকে ধর্ম্মধামের মধ্যে আনিয়া থাকিবেন। তখন সমুদয় নগর উত্তেজিত হইয়া উঠিল, লোকেরা দৌড়িয়া আসিল, এবং পৌলকে ধরিয়া ধর্ম্মধামের বাহিরে টানিয়া লইয়া গেল, আর অমনি দ্বার সকল রুদ্ধ করা হইল। এইরূপে তাহারা তাঁহাকে বধ করিতে চেষ্টা করিলে সৈন্যদলের সহস্রপতির কাছে এই সংবাদ আসিল যে, সমুদয় যিরূশালেমে গণ্ডগোল উপস্থিত। অমনি তিনি সেনাদিগকে ও শতপতিদিগকে সঙ্গে লইয়া তাহাদের নিকটে দৌড়িয়া আসিলেন; তাহাতে লোকেরা সহস্রপতিকে ও সেনাদিগকে দেখিতে পাইয়া পৌলকে প্রহার করিতে নিবৃত্ত হইল। তখন সহস্রপতি নিকটে আসিয়া তাঁহাকে ধরিলেন, ও দুই শৃঙ্খলে বাঁধিতে আজ্ঞা দিলেন, এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, এ কে, আর এ কি করিয়াছে? তাহাতে জনতার মধ্যে চেঁচাইয়া কেহ কেহ এক প্রকার, কেহ কেহ অন্য প্রকার কথা কহিল; আর তিনি কোলাহল প্রযুক্ত কিছুই নিশ্চয় করিতে না পারাতে তাঁহাকে দুর্গে লইয়া যাইতে আজ্ঞা দিলেন। তখন সোপানের উপরে উপস্থিত হইলে জনতার চণ্ডতা প্রযুক্ত সেনারা পৌলকে বহন করিতে লাগিল; কেননা লোকের ভিড় পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিতেছিল, আর উচ্চৈঃস্বরে বলিতেছিল, উহাকে দূর কর। তাহারা পৌলকে দুর্গের ভিতরে লইয়া যাইতে উদ্যত হইলে পৌল সহস্রপতিকে কহিলেন, আপনার কাছে কি কিছু বলিতে পারি? তিনি কহিলেন, তুমি কি গ্রীক জান? তবে তুমি কি সেই মিস্রীয় নহ, যে ইহার পূর্ব্বে উপপ্লব করিয়াছিল, ও গুপ্তহন্তাদের মধ্যে চারি সহস্র জনকে সঙ্গে করিয়া প্রান্তরে গিয়াছিল? তখন পৌল কহিলেন, আমি যিহূদী, কিলিকিয়াস্থ তার্ষের লোক, সামান্য নগরের পৌর নহি; আপনাকে বিনতি করি, লোকদের নিকটে আমাকে কথা বলিতে অনুমতি দিউন। আর তিনি অনুমতি দিলে পৌল সোপানের উপরে দাঁড়াইয়া লোকদের নিকটে হস্ত দ্বারা ইঙ্গিত করিলেন; তখন সকলে নিস্তব্ধ হইলে তিনি তাহাদিগকে ইব্রীয় ভাষায় বলিতে লাগিলেন, ভ্রাতারা ও পিতারা, আমি এক্ষণে আপনাদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করিতেছি, শ্রবণ করুন। তখন তিনি ইব্রীয় ভাষায় তাহাদের কাছে কথা কহিতেছেন শুনিয়া তাহারা আরও শান্ত হইল। পরে তিনি কহিলেন, আমি যিহূদী, কিলিকিয়ার তার্ষ নগরে আমার জন্ম; কিন্তু এই নগরে গমলীয়েলের চরণে মানুষ হইয়াছি, পৈতৃক ব্যবস্থার সূক্ষ্ম নিয়মানুসারে শিক্ষিত হইয়াছি; আর আপনারা সকলে অদ্যাপি যেমন আছেন, তেমনি আমিও ঈশ্বরের পক্ষে উদ্যোগী ছিলাম। আমি প্রাণনাশ পর্য্যন্ত এই পথের প্রতি উপদ্রব করিতাম, পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে বাঁধিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতাম। এ বিষয়ে মহাযাজক ও সমস্ত প্রাচীনবর্গও আমার সাক্ষী; তাঁহাদের নিকট হইতে আমি ভ্রাতৃগণের সমীপে পত্র লইয়া, দম্মেশকে যাত্রা করিয়াছিলাম; যাহারা তথায় ছিল, তাহাদিগকেও বাঁধিয়া যিরূশালেমে আনিবার জন্য গিয়াছিলাম, যেন তাহাদের দণ্ড হয়। আর যাইতে যাইতে দম্মেশকের নিকটে উপস্থিত হইলে বেলা দুই প্রহরের সময়ে হঠাৎ আকাশ হইতে মহা আলো আমার চারিদিকে চমকিয়া উঠিল। তাহাকে আমি ভূমিতে পড়িয়া গেলাম, ও শুনিলাম, এক বাণী আমাকে বলিতেছে, শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ? আমি উত্তর করিলাম, প্রভু, আপনি কে? তিনি আমাকে কহিলেন, আমি নাসরতীয় যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ। আর যাহারা আমার সঙ্গে ছিল, তাহারা সেই আলো দেখিতে পাইল বটে, কিন্তু যিনি আমার সহিত কথা কহিতেছিলেন, তাঁহার বাণী শুনিতে পাইল না। পরে আমি বলিলাম, প্রভু, আমি কি করিব? প্রভু আমাকে কহিলেন, উঠিয়া দম্মেশকে যাও, তোমাকে যাহা যাহা করিতে হইবে বলিয়া নিরূপিত আছে, সে সমস্ত সেখানেই তোমাকে বলা যাইবে। পরে আমি সেই আলোর তেজে দৃষ্টিহীন হওয়াতে আমার সঙ্গীরা হাত ধরিয়া আমাকে লইয়া চলিল, আর আমি দম্মেশকে উপস্থিত হইলাম। পরে অননিয় নামে এক ব্যক্তি, যিনি ব্যবস্থা অনুসারে ভক্ত, এবং তত্রনিবাসী সমুদয় যিহূদীর কাছে সুখ্যাতিপন্ন ছিলেন, তিনি আমার নিকটে আসিয়া পার্শ্বে দাঁড়াইয়া কহিলেন, ভ্রাতঃ শৌল, দৃষ্টিপ্রাপ্ত হও; তাহাতে আমি সেই দণ্ডেই তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম। পরে তিনি কহিলেন, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তোমাকে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন তুমি তাঁহার ইচ্ছা জ্ঞাত হও, এবং সেই ধর্ম্মময়কে দেখিতে ও তাঁহার মুখের বাণী শুনিতে পাও; কারণ তুমি যাহা যাহা দেখিয়াছ ও শুনিয়াছ, সেই বিষয়ে সকল মনুষ্যের নিকটে তাঁহার সাক্ষী হইবে। আর এখন কেন বিলম্ব করিতেছ? উঠ, তাঁহার নামে ডাকিয়া বাপ্তাইজিত হও, ও তোমার পাপ ধুইয়া ফেল। তাহার পরে আমি যিরূশালেমে ফিরিয়া আসিয়া এক দিন ধর্ম্মধামে প্রার্থনা করিতেছিলাম, এমন সময়ে অভিভূত হইয়া তাঁহাকে দেখিলাম, তিনি আমাকে কহিলেন, ত্বরা কর, শীঘ্র যিরূশালেম হইতে বাহির হও, কেননা এই লোকেরা আমার বিষয়ে তোমার সাক্ষ্য গ্রাহ্য করিবে না। আমি কহিলাম, প্রভু, তাহারা ত জানে যে, যাহারা তোমাতে বিশ্বাস করিত, আমি প্রতি সমাজ-গৃহে তাহাদিগকে কারাবদ্ধ করিতাম ও প্রহার করিতাম; আর যখন তোমার সাক্ষী স্তিফানের রক্তপাত হয়, তখন আমি আপনি নিকটে দাঁড়াইয়া সম্মতি দিতেছিলাম, ও যাহারা তাঁহাকে বধ করিতেছিল, তাহাদের বস্ত্র রক্ষা করিতেছিলাম। তিনি আমাকে কহিলেন, প্রস্থান কর, কেননা আমি তোমাকে দূরে পরজাতিগণের কাছে প্রেরণ করিব। লোকেরা এই পর্য্যন্ত তাঁহার কথা শুনিল, পরে উচ্চৈঃস্বরে কহিল, উহাকে পৃথিবী হইতে দূর করিয়া দেও, উহার বাঁচিয়া থাকা ত উচিত হয় নাই। পরে তাহারা চেঁচাইয়া বস্ত্র ফেলিয়া দিয়া আকাশে ধূলি উড়াইতে লাগিল; তাহাতে সহস্রপতি পৌলকে দুর্গের ভিতরে লইয়া যাইবার আজ্ঞা দিলেন, এবং বলিলেন, কোড়া প্রহার দ্বারা ইহার পরীক্ষা করিতে হইবে, যেন তিনি জানিতে পারেন, লোকে কি দোষ দিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে এরূপ চেঁচাইতেছে। পরে যখন তাহারা কশা দিয়া তাঁহাকে বাঁধিল, তখন, যে শতপতি নিকটে দাঁড়াইয়াছিলেন, পৌল তাঁহাকে কহিলেন, যে ব্যক্তি রোমীয়, এবং বিচারে দোষীকৃত হয় নাই, তাহাকে কোড়া প্রহার করা কি আপনাদের পক্ষে বিধেয়? ইহা শুনিয়া সেই শতপতি সহস্রপতির নিকটে গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আপনি কি করিতে উদ্যত হইয়াছেন? এ ব্যক্তি যে রোমীয়। তাহাতে সহস্রপতি নিকটে গিয়া তাঁহাকে কহিলেন, বল দেখি, তুমি কি রোমীয়? তিনি কহিলেন, হাঁ। সহস্রপতি উত্তর করিলেন, এই পৌরাধিকার আমি বহু অর্থ দিয়া ক্রয় করিয়াছি। পৌল কহিলেন, কিন্তু আমি জন্মের দ্বারাই রোমীয়। অতএব যাহারা তাঁহার পরীক্ষা করিতে উদ্যত ছিল, তাহারা তখনই তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া গেল; আর তিনি যে রোমীয়, তাহা জানিয়া, ও তাঁহাকে বাঁধিয়াছিলেন বলিয়া, সহস্রপতিও ভীত হইলেন। কিন্তু পরদিন, যিহূদীরা তাঁহার উপর কি জন্য দোষারোপ করিতেছে, তাহা নিশ্চয় করিবার মানসে সহস্রপতি তাঁহাকে মুক্ত করিলেন, ও প্রধান যাজকগণ ও সমস্ত মহাসভাকে একত্র হইতে আজ্ঞা দিলেন, এবং পৌলকে নামাইয়া তাঁহাদের নিকটে উপস্থিত করিলেন। আর পৌল মহাসভার দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া কহিলেন, হে ভ্রাতৃগণ, অদ্য পর্য্যন্ত আমি সর্ব্ববিষয়ে সৎসংবেদে ঈশ্বরের প্রজারূপে আচরণ করিয়া আসিতেছি। তখন অননিয় মহাযাজক, যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহাদিগকে আজ্ঞা দিলেন, যেন তাঁহার মুখে আঘাত করে। তখন পৌল তাঁহাকে কহিলেন, হে শুক্লীকৃত ভিত্তি, ঈশ্বর তোমাকে আঘাত করিবেন; তুমি ব্যবস্থা অনুসারে আমার বিচার করিতে বসিয়াছ, আর ব্যবস্থার বিপরীতে আমাকে আঘাত করিতে আজ্ঞা দিতেছ? তাহাতে যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহারা কহিল, তুমি কি ঈশ্বরের মহাযাজককে কটুবাক্য কহিতেছ? পৌল কহিলেন, হে ভ্রাতৃগণ, আমি জানিতাম না যে, উনি মহাযাজক; কেননা লিখিত আছে, “তুমি স্বজাতীয় লোকদের অধ্যক্ষকে দুর্ব্বাক্য বলিও না।” কিন্তু পৌল যখন বুঝিতে পারিলেন যে, তাহাদের একাংশ সদ্দূকী ও একাংশ ফরীশী, তখন মহাসভার মধ্যে উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, হে ভ্রাতৃগণ, আমি ফরীশী এবং ফরীশীদের সন্তান; মৃতদের প্রত্যাশা ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে আমার বিচার হইতেছে। তিনি এই কথা বলিতে না বলিতে ফরীশী ও সদ্দূকীদের মধ্যে বিরোধ উৎপন্ন হইল, সভার মধ্যে দুই দল হইয়া উঠিল। কারণ সদ্দূকীরা বলে, পুনরুত্থান নাই, স্বর্গদূত বা আত্মা নাই; কিন্তু ফরীশীরা উভয়ই স্বীকার করে। তখন মহাকোলাহল হইল, এবং ফরীশী পক্ষীয় অধ্যাপকদের মধ্যে কয়েক জন লোক উঠিয়া দাঁড়াইয়া বাগ্‌যুদ্ধ করিয়া বলিতে লাগিল, আমরা এই ব্যক্তির কোন দোষ দেখিতে পাই না; কোন আত্মা কিম্বা কোন দূত যদি ইহার সহিত কথা কহিয়াই থাকেন, তবে কি? এইরূপে ভারী বিরোধ হইলে, পাছে তাহারা পৌলকে খণ্ড খণ্ড করিয়া ছিঁড়িয়া ফেলে, এই ভয়ে সহস্রপতি আজ্ঞা দিলেন, সৈন্যদল নামিয়া গিয়া তাহাদের মধ্য হইতে পৌলকে কাড়িয়া দুর্গে লইয়া যাউক। পর রাত্রিতে প্রভু পৌলের নিকটে দাঁড়াইয়া কহিলেন, সাহস কর, কেননা আমার বিষয়ে যেমন যিরূশালেমে সাক্ষ্য দিয়াছ, তদ্রূপ রোমেও দিতে হইবে। দিন হইলে যিহূদীরা ষড়যন্ত্র করিয়া আপনাদিগকে এক অভিশাপে আবদ্ধ করিল, বলিল, আমরা যে পর্য্যন্ত পৌলকে বধ না করিব, সে পর্য্যন্ত ভোজন কি পান করিব না। চল্লিশ জনের অধিক লোক একসঙ্গে শপথ করিয়া এই প্রকারে চক্রান্ত করিল। তাহারা প্রধান যাজকদের ও প্রাচীনবর্গের নিকটে গিয়া কহিল, আমরা এক মহা অভিশাপে আপনাদিগকে আবদ্ধ করিয়াছি, যে পর্য্যন্ত পৌলকে বধ না করিব, সে পর্য্যন্ত কিছুরই স্বাদ গ্রহণ করিব না। অতএব আপনারা এখন মহাসভার সহিত সহস্রপতির কাছে এই আবেদন করুন, যেন তিনি আপনাদের কাছে তাহাকে নামাইয়া আনিয়া দেন, বলুন যে, আপনারা আরও সূক্ষ্মরূপে তাহার বিষয়ে বিচার করিতে উদ্যত হইয়াছেন; আর সে নিকটে উপস্থিত হইবার পূর্ব্বেই আমরা তাহাকে বধ করিতে প্রস্তুত রহিলাম। কিন্তু পৌলের ভাগিনেয় তাহাদের এই ঘাঁটি বসাইবার কথা শুনিতে পাইয়া চলিয়া গিয়া দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিয়া পৌলকে জানাইল। তাহাতে পৌল একজন শতপতিকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, সহস্রপতির নিকটে এই যুবককে লইয়া যাউন; কারণ তাঁহার কাছে ইহার কিছু বলিবার আছে। তাহাতে তিনি তাহাকে সঙ্গে লইয়া সহস্রপতির নিকটে গিয়া কহিলেন, বন্দি পৌল আমাকে কাছে ডাকিয়া আপনার নিকটে এই যুবককে আনিতে নিবেদন করিল, কেননা আপনার কাছে ইহার কিছু বলিবার আছে। তখন সহস্রপতি তাহার হস্ত ধরিয়া এক পার্শ্বে লইয়া গিয়া গোপনে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমার কাছে তোমার কি বলিবার আছে? সে কহিল, যিহূদীরা আপনার কাছে এই নিবেদন করিবার মন্ত্রণা করিয়াছে, যেন আপনি কল্য আরও সূক্ষ্মরূপে পৌলের বিষয়ে অনুসন্ধান করিবার নিমিত্ত তাঁহাকে মহাসভার কাছে লইয়া যান। অতএব আপনি তাহাদের কথা গ্রাহ্য করিবেন না। কেননা তাহাদের মধ্যে চল্লিশ জনের অধিক লোক তাঁহার জন্য ঘাঁটি বসাইয়াছে; তাহারা এক অভিশাপে আপনাদিগকে বদ্ধ করিয়াছে, যে পর্য্যন্ত তাঁহাকে বধ না করিবে, সে পর্য্যন্ত ভোজন কি পান করিবে না, আর এখনই প্রস্তুত আছে, আপনার অনুমতির অপেক্ষা করিতেছে। তখন সহস্রপতি ঐ যুবককে এই আজ্ঞা দিয়া বিদায় করিলেন, তুমি যে এই সকল আমাকে জ্ঞাত করিয়াছ, তাহা কাহাকেও বলিও না। পরে তিনি দুই জন শতপতিকে কাছে ডাকিয়া বলিয়া দিলেন, কৈসরিয়া পর্য্যন্ত যাইবার নিমিত্ত রাত্রি তিন ঘটিকার সময়ে দুই শত সেনা ও সত্তর জন অশ্বারোহী এবং দুই শত বড়শাধারী লোক প্রস্তুত রাখিও। আর তিনি বাহন যোগাইতে আজ্ঞা করিলেন, যেন তাহারা পৌলকে তাহার উপরে চড়াইয়া নিরাপদে দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্সের নিকটে পঁহুছাইয়া দেয়। পরে তিনি এই মর্ম্মে একখানি পত্র লিখিলেন, মহামহিম দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্সের সমীপে ক্লৌদিয় লুষিয়ের মঙ্গলবাদ। যিহূদীরা এক ব্যক্তিকে ধরিয়া বধ করিতে উদ্যত হইলে আমি সেনাগণ সহ উপস্থিত হইয়া ইহাকে রক্ষা করিলাম, কেননা জানিতে পাইলাম যে, এই ব্যক্তি রোমীয়। পরে তাহারা কি কারণ ইহার উপরে দোষারোপ করিতেছে, তাহা জানিবার মানসে তাহাদের মহাসভাতে ইহাকে নামাইয়া লইয়া গেলাম। তাহাতে আমি বুঝিলাম, তাহাদের ব্যবস্থা সম্বন্ধীয় কোন কোন বিবাদ প্রযুক্ত ইহার উপরে দোষারোপ হইয়াছে, কিন্তু প্রাণদণ্ডের বা শৃঙ্খলের যোগ্য কোন দোষ প্রযুক্ত ইহার নামে অভিযোগ হয় নাই। আর এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে চক্রান্ত হইবে, এই সমাচার পাইয়া আমি অবিলম্বেই আপনার নিকটে ইহাকে পাঠাইয়া দিলাম। ইহার উপরে যাহারা দোষারোপ করিয়াছে, তাহাদিগকেও আদেশ করিলাম, তাহারা আপনার কাছে ইহার বিরুদ্ধে যাহা বলিবার থাকে, বলুক। পরে সেনারা প্রাপ্ত আদেশ অনুসারে পৌলকে লইয়া রাত্রিকালে আন্তিপাত্রিতে গেল। পরদিন অশ্বারোহীদিগকে তাঁহার সঙ্গে যাইবার জন্য রাখিয়া তাহারা দুর্গে ফিরিয়া আসিল। উহারা কৈসরিয়াতে পঁহুছিয়া দেশাধ্যক্ষের হস্তে পত্রখানি সমর্পণ করিয়া পৌলকেও তাঁহার কাছে উপস্থিত করিল। তিনি পত্র পাঠ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, এ কোন্‌ প্রদেশের লোক? তখন, তিনি কিলিকিয়া প্রদেশের লোক, ইহা জানিতে পাইয়া দেশাধ্যক্ষ কহিলেন, যাহারা তোমার উপরে দোষারোপ করিয়াছে, তাহারা যখন আসিবে, তখন তোমার কথা শুনিব। পরে তিনি হেরোদের রাজবাটীতে তাঁহাকে রাখিতে আজ্ঞা দিলেন। পাঁচ দিন পরে অননিয় মহাযাজক কয়েক জন প্রাচীন এবং তর্তুল্ল নামে এক জন উকীলকে সঙ্গে করিয়া তথায় গেলেন, এবং তাঁহারা পৌলের বিরুদ্ধে দেশাধ্যক্ষের নিকটে আবেদন করিলেন; পৌলের ডাক হইলে পর তর্তুল্ল তাঁহার নামে এই বলিয়া দোষারোপ করিতে লাগিল, হে মহামহিম ফীলিক্স, আপনার দ্বারা আমরা মহাশান্তি ভোগ করিতে পাইতেছি, এবং আপনার পরিণামদর্শিতাগুণে এই জাতির নানাবিধ অমঙ্গল নিবারিত হইতেছে, ইহা আমরা সর্ব্বতোভাবে সর্ব্বত্র সম্পূর্ণ কৃতজ্ঞতা সহকারে স্বীকার করিতেছি। কিন্তু কথার বাহুল্যে যেন আপনাকে কষ্ট না দিই, এই জন্য বিনতি করি, আপনি নিজ দয়াগুণে আমাদের স্বল্প কথা শ্রবণ করুন। কারণ আমরা দেখিতে পাইলাম, এই ব্যক্তি মহামারীস্বরূপ, জগতের সমস্ত যিহূদীর মধ্যে কলহ জনক, এবং নাসরতীয় দলের অগ্রণী, আর এ ধর্ম্মধামও অশুচি করিবার চেষ্টা করিয়াছিল। আমরা ইহাকে ধরিয়াছি। এই যে সকল বিষয়ে ইহার উপরে দোষারোপ করিতেছি, আপনি নিজে ইহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে সে সমস্ত জানিতে পারিবেন। যিহূদিগণও সায় দিয়া বলিল, এই সকল কথা ঠিক। পরে দেশাধ্যক্ষ পৌলকে কথা বলিবার জন্য ইঙ্গিত করিলে তিনি এই উত্তর করিলেন, আপনি অনেক বৎসর অবধি এই জাতির বিচার করিয়া আসিতেছেন, ইহা জানাতে আমি স্বচ্ছন্দে আত্মপক্ষ সমর্থন করিতেছি। আপনি জানিতে পারিবেন, অদ্য বারো দিনের অধিক হয় নাই, আমি ভজনা করণার্থে যিরূশালেমে গিয়াছিলাম। আর ইহারা ধর্ম্মধামে আমাকে কাহারও সহিত বাদবিতণ্ডা করিতে, কিম্বা জনতাকে উত্তেজিত করিতে দেখে নাই, সমাজ-গৃহেও নয়, নগরেও নয়। আর এক্ষণে ইহারা আমার উপরে যে সকল দোষারোপ করিতেছে, আপনার কাছে সে সমস্ত সপ্রমাণ করিতে পারে না। কিন্তু আপনার নিকটে আমি ইহা স্বীকার করি, ইহারা যাহাকে দল বলে, সেই পথ অনুসারে আমি পৈতৃক ঈশ্বরের আরাধনা করিয়া থাকি; যাহা যাহা ব্যবস্থার অনুযায়ী এবং যাহা যাহা ভাববাদি-গ্রন্থে লিখিত আছে, সে সমস্ত বিশ্বাস করি। আর ইহারাও যেমন প্রতীক্ষা করিয়া থাকে, সেইরূপ আমি ঈশ্বরে এই প্রত্যাশা করিতেছি যে, ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে। আর এ বিষয়ে আমিও ঈশ্বরের ও মনুষ্যের প্রতি বিঘ্নহীন সংবেদ রক্ষা করিতে নিরন্তর যত্ন করিয়া থাকি। অনেক বৎসর পরে আমি স্বজাতির কাছে দান লইবার এবং নৈবেদ্য উৎসর্গ করিবার জন্য আসিয়াছিলাম; এই উপলক্ষে লোকেরা আমাকে ধর্ম্মধামে শুচীকৃত অবস্থায় দেখিয়াছিল, জনতাও হয় নাই, গণ্ডগোলও হয় নাই; কিন্তু এশিয়া দেশের কতকগুলি যিহূদী উপস্থিত ছিল, তাহাদেরই উচিত ছিল, যেন আপনার কাছে আমার বিরুদ্ধে যদি তাহাদের কোন কথা থাকে, তবে উপস্থিত হয়, এবং দোষারোপ করে। নতুবা এই উপস্থিত লোকেরাই বলুক, আমি মহাসভার সম্মুখে দাঁড়াইলে ইহারা আমার কি অপরাধ পাইয়াছে? না, কেবল এই এক কথা, যাহা তাহাদের মধ্যে দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিয়াছিলাম ‘মৃতদের পুনরুত্থান বিষয়ে অদ্য আপনাদের সম্মুখে আমার বিচার হইতেছে’। তখন ফীলিক্স, সেই পথের কথা অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্মরূপে জ্ঞাত হওয়াতে, বিচার স্থগিত রাখিলেন, কহিলেন, লুষিয় সহস্রপতি যখন আসিবেন, তখন আমি তোমাদের বিচার নিষ্পত্তি করিব। পরে তিনি শতপতিকে এই আজ্ঞা দিলেন, তুমি ইহাকে আবদ্ধ রাখ, কিন্তু স্বচ্ছন্দে রাখিও, ইহার কোন আত্মীয়কে ইহার সেবা করণার্থে আসিতে বারণ করিও না। কয়েক দিন পরে ফীলিক্স দ্রুষিল্লা নাম্নী আপন যিহূদী ভার্য্যার সহিত আসিয়া পৌলকে ডাকিয়া পাঠাইলেন ও তাঁহার মুখে খ্রীষ্ট যীশুর প্রতি বিশ্বাসের বিষয় শ্রবণ করিলেন। পৌল ন্যায়পরতার, ইন্দ্রিয়দমনের এবং আগামী বিচারের বিষয় বর্ণনা করিলে ফীলিক্স ভীত হইয়া উত্তর করিলেন, এখনকার মত যাও, উপযুক্ত সময় পাইলে আমি তোমাকে ডাকাইব। তিনি আশাও করিয়াছিলেন যে, পৌল তাঁহাকে টাকা দিবেন, এই জন্য পুনঃ পুনঃ তাঁহাকে ডাকাইয়া তাঁহার সহিত আলাপ করিতেন। কিন্তু দুই বৎসর অতীত হইলে পর্কিয় ফীষ্ট ফীলিক্সের পদ প্রাপ্ত হইলেন, আর ফীলিক্স যিহূদীদের প্রীতির পাত্র হইবার ইচ্ছা করিয়া পৌলকে বন্দি রাখিয়া গেলেন। ফীষ্ট সেই প্রদেশে উপস্থিত হইবার তিন দিন পরে কৈসরিয়া হইতে যিরূশালেমে গেলেন। তাহাতে প্রধান যাজকগণ এবং যিহূদীদের প্রধান প্রধান লোক তাঁহার নিকটে পৌলের বিরুদ্ধে আবেদন করিলেন; আর বিনতিপূর্ব্বক তাঁহার বিরুদ্ধে এই অনুগ্রহ যাচ্ঞা করিতে লাগিলেন, যেন পৌলকে যিরূশালেমে ডাকিয়া পাঠান। তাঁহারা পথিমধ্যে তাঁহাকে বধ করিবার জন্য ঘাঁটি বসাইতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু ফীষ্ট উত্তর করিলেন, পৌল কৈসরিয়াতে আবদ্ধ আছে; আমিও সেখানে অবিলম্বে প্রস্থান করিব। অতএব তোমাদের মধ্যে যাহারা ক্ষমতাপন্ন, তাহারা আমার সহিত সেখানে গিয়া, সেই ব্যক্তির কোন দোষ যদি থাকে, তবে তাহার উপরে দোষারোপ করুক। আর তাঁহাদের নিকটে আট দশ দিনের অনধিক কাল অবস্থিতি করিয়া তিনি কৈসরিয়াতে নামিয়া গেলেন; এবং পরদিন বিচারাসনে বসিয়া পৌলকে আনিতে আজ্ঞা করিলেন। তিনি উপস্থিত হইলে যিরূশালেম হইতে আগত যিহূদীরা তাঁহার চারিদিকে দাঁড়াইয়া তাঁহার বিপক্ষে অনেক ভারী ভারী দোষের কথা উত্থাপন করিতে লাগিল, কিন্তু তাহার প্রমাণ দর্শাইতে পারিল না। এদিকে পৌল আপনার পক্ষ সমর্থন করিয়া বলিলেন, যিহূদীদের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, ধর্ম্মধামের বিরুদ্ধে, কিম্বা কৈসরের বিরুদ্ধে আমি কোন অপরাধ করি নাই। কিন্তু ফীষ্ট যিহূদীদের প্রীতি-পাত্র হইবার ইচ্ছা করাতে পৌলকে উত্তর করিয়া কহিলেন, তুমি কি যিরূশালেমে গিয়া সেখানে আমার সাক্ষাতে এই সকল বিষয়ে বিচারিত হইতে সম্মত? পৌল বলিলেন, আমি কৈসরের বিচারাসনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছি, এখানে আমার বিচার হওয়া উচিত। আমি যিহূদীদের প্রতি কিছু অন্যায় করি নাই, ইহা আপনিও বিলক্ষণ জানেন। তবে যদি আমি অপরাধী হই, এবং মৃত্যুর যোগ্য কিছু করিয়া থাকি, তাহা হইলে মরিতে অস্বীকার করি না; কিন্তু ইহারা আমার উপরে যে সকল দোষারোপ করিতেছে, এ সকল যদি কিছুই না হয় তবে ইহাদের হস্তে আমাকে সমর্পণ করিতে কাহারও অধিকার নাই; আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি। তখন ফীষ্ট মন্ত্রিসভার সহিত পরামর্শ করিয়া উত্তর করিলেন, তুমি কৈসরের নিকটে আপীল করিলে; কৈসরের কাছেই যাইবে। পরে কয়েক দিন গত হইলে আগ্রিপ্প রাজা এবং বর্ণীকী কৈসরিয়ায় উপস্থিত হইলেন, এবং ফীষ্টকে মঙ্গলবাদ করিলেন। তাঁহারা অনেক দিন সেখানে অবস্থিতি করিলে ফীষ্ট রাজার কাছে পৌলের কথা উপস্থিত করিয়া কহিলেন, ফীলিক্স একটা লোককে বন্দি রাখিয়া গিয়াছেন; যখন আমি যিরূশালেমে ছিলাম, তখন যিহূদীদের প্রধান যাজকগণ ও প্রাচীনবর্গ সেই ব্যক্তির বিষয় আবেদন করিয়া তাহার বিরুদ্ধে দণ্ডাজ্ঞা যাচ্ঞা করিয়াছিল। আমি তাহাদিগকে এই উত্তর দিয়াছিলাম, যাহার নামে দোষারোপ হয়, সে যাবৎ দোষারোপকারীদের সহিত সম্মুখাসম্মুখি না হয়, এবং আরোপিত দোষ সম্বন্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনের অবসর না পায়, তাবৎ কোন ব্যক্তিকে সমর্পণ করা রোমীয়দের প্রথা নয়। পরে তাহারা একসঙ্গে এ স্থানে আসিলে আমি কাল বিলম্ব না করিয়া পরদিন বিচারাসনে বসিয়া সেই ব্যক্তিকে আনিতে আজ্ঞা করিলাম। পরে দোষারোপকারীরা দাঁড়াইয়া, আমি যে প্রকার দোষ অনুমান করিয়াছিলাম, সেই প্রকার কোন দোষ তাহার বিষয়ে উত্থাপন করিল না; কিন্তু তাহার বিরুদ্ধে আপনাদের নিজ ধর্ম্ম বিষয়ে, এবং যীশু নামে কোন মৃত ব্যক্তি, যাহাকে পৌল জীবিত বলিত, তাহার বিষয়ে কয়েকটী তর্ক উপস্থিত করিল। তখন এ সকল বিষয় কিরূপে অনুসন্ধান করিতে হইবে, আমি স্থির করিতে না পারিয়া বলিলাম, তুমি কি যিরূশালেমে গিয়া সেখানে এই বিষয়ে বিচারিত হইতে সম্মত? তখন পৌল আপীল করিয়া সম্রাটের বিচারের জন্য রক্ষিত থাকিতে প্রার্থনা করায়, আমি যে পর্য্যন্ত তাহাকে কৈসরের নিকটে পাঠাইয়া দিতে না পারি, সে পর্য্যন্ত আবদ্ধ রাখিতে আজ্ঞা দিলাম। তখন আগ্রিপ্প ফীষ্টকে কহিলেন, আমিও সেই ব্যক্তির নিকটে কথা শুনিতে চাহিয়াছিলাম। ফীষ্ট কহিলেন, কল্য শুনিতে পাইবেন। অতএব পরদিন আগ্রিপ্প ও বর্ণীকী মহা আড়ম্বরের সহিত আসিলেন, এবং সহস্রপতিগণের ও নগরের প্রধান লোকদের সহিত সভাস্থলে প্রবিষ্ট হইলেন, আর ফীষ্টের আজ্ঞায় পৌল আনীত হইলেন। তখন ফীষ্ট কহিলেন, হে রাজন্‌ আগ্রিপ্প, এবং আমাদের সহিত সভাস্থ মহাশয়েরা, আপনারা ইহাকে দেখিতেছেন, ইহার বিষয়ে যিহূদীদের দল সমেত সকল লোক যিরূশালেমে এবং এই স্থানে আমার নিকটে আবেদন করিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিয়াছিল, উহার আর বাঁচিয়া থাকা উচিত নয়। কিন্তু আমি দেখিতে পাইলাম, এ প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন কর্ম্ম করে নাই, তথাপি এ ব্যক্তি আপনি সম্রাটের নিকট আপীল করাতে ইহাকে পাঠাইতে স্থির করিয়াছি। আমার প্রভুর কাছে ইহার বিষয়ে লিখিতে পারি, আমার এমন নিশ্চিত কিছুই নাই; সেই জন্য আপনাদের কাছে, বিশেষতঃ হে রাজন্‌ আগ্রিপ্প, আপনার কাছে ইহাকে উপস্থিত করিলাম; যেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হইলে পর লিখিবার কিছু সূত্র পাই। কেননা বন্দি পাঠাইবার সময়ে তাহার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা নির্দ্দেশ না করা আমার অসঙ্গত বোধ হয়। পরে আগ্রিপ্প পৌলকে কহিলেন, তোমার পক্ষে যাহা বলিবার আছে, তোমাকে বলিতে অনুমতি দেওয়া যাইতেছে। তখন পৌল হস্ত বিস্তার করিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করিতে লাগিলেন— হে রাজন্‌ আগ্রিপ্প, যিহূদীরা আমার উপরে যে সকল দোষারোপ করে, সে সম্বন্ধে অদ্য আপনার সাক্ষাতে আত্মপক্ষ সমর্থন করিতে পাইতেছি, এজন্য আমি আমাকে ধন্য মনে করি; বিশেষ কারণ এই, যিহূদীদের সমস্ত রীতিনীতি ও তর্ক সম্বন্ধে আপনি অভিজ্ঞ। অতএব নিবেদন করি, সহিষ্ণুতাপূর্ব্বক আমার কথা শ্রবণ করুন। বাল্যকাল অবধি আমার আচার ব্যবহার, যাহা আদি হইতে স্বজাতীয়দের মধ্যে এবং যিরূশালেমে হইয়া আসিয়াছে, তাহা যিহূদীরা সকলেই জানে; তাহারা প্রথমাবধি আমাকে জ্ঞাত হওয়াতে ইচ্ছা করিলে এ সাক্ষ্য দিতে পারে যে, আমাদের ধর্ম্মের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সূক্ষ্মাচারী সম্প্রদায় অনুসারে আমি ফরীশী মতে জীবন যাপন করিতাম। আর আমাদের পিতৃপুরুষদের নিকটে ঈশ্বর কর্ত্তৃক যাহা অঙ্গীকৃত হইয়াছে, তাহার প্রত্যাশা প্রযুক্ত আমি এখন বিচারিত হইবার জন্য দাঁড়াইয়াছি। আমাদের দ্বাদশ বংশ দিবারাত্র একাগ্রমনে আরাধনা করিতে করিতে সেই অঙ্গীকারের ফল পাইবার প্রত্যাশা করিতেছে; আর হে রাজন্‌, সেই প্রত্যাশার বিষয়েই যিহূদিগণ কর্ত্তৃক আমার উপরে দোষারোপ হইতেছে। ঈশ্বর যদি মৃতগণকে উঠান, তবে তাহা আপনাদের বিচারে কেন বিশ্বাসের অযোগ্য বোধ হয়? আমিই ত মনে করিতাম যে, নাসরতীয় যীশুর নামের বিরুদ্ধে অনেক কার্য্য করা আমার কর্ত্তব্য। আর আমি যিরূশালেমে তাহাই করিতাম; প্রধান যাজকদের নিকটে ক্ষমতা প্রাপ্ত হইয়া পবিত্রগণের মধ্যে অনেককে আমি কারাগারে বদ্ধ করিতাম, ও তাঁহাদের প্রাণদণ্ডের সময়ে সম্মতি প্রকাশ করিতাম, আর সমস্ত সমাজগৃহে বার বার তাঁহাদিগকে শাস্তি দিয়া বলপূর্ব্বক ধর্ম্মনিন্দা করাইতে চেষ্টা করিতাম, এবং তাঁহাদের বিরুদ্ধে অতিমাত্র উন্মত্ত হইয়া বিদেশীয় নগর পর্য্যন্তও তাঁহাদিগকে তাড়না করিতাম। এই উপলক্ষে প্রধান যাজকদের নিকটে ক্ষমতা ও আজ্ঞাপত্র লইয়া আমি দম্মেশকে যাইতেছিলাম, এমন সময়ে, হে রাজন্‌, মধ্যাহ্নকালে পথিমধ্যে দেখিলাম, আকাশ হইতে সূর্য্যতেজ অপেক্ষাও তেজোময় জ্যোতি আমার ও আমার সহযাত্রীদের চারিদিকে দেদীপ্যমান। তখন আমরা সকলে ভূমিতে পতিত হইলে আমি এক বাণী শুনিলাম, উহা ইব্রীয় ভাষায় আমাকে বলিল, ‘শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ? কন্টকের মুখে পদাঘাত করা তোমার দুষ্কর।’ তখন আমি বলিলাম, ‘প্রভু, আপনি কে?’ প্রভু কহিলেন, ‘আমি যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ? কিন্তু উঠ, তোমার পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াও, তুমি যে যে বিষয়ে আমাকে দেখিয়াছ, ও যে যে বিষয়ে আমি তোমাকে দর্শন দিব, সেই সকল বিষয়ে যেন তোমাকে সেবক ও সাক্ষী নিযুক্ত করি, এই অভিপ্রায়ে তোমাকে দর্শন দিলাম। আমি যাহাদের নিকটে তোমাকে প্রেরণ করিতেছি, সেই প্রজালোকদের ও পরজাতীয় লোকদের হইতে তোমাকে উদ্ধার করিব, যেন তুমি তাহাদের চক্ষু খুলিয়া দেও, যেন তাহারা অন্ধকার হইতে জ্যোতির প্রতি, এবং শয়তানের কর্ত্তৃত্ব হইতে ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসে, যেন আমাতে বিশ্বাস করণ দ্বারা পাপের মোচন ও পবিত্রীকৃত লোকদের মধ্যে অধিকার প্রাপ্ত হয়।’ এ জন্য, হে রাজন্‌ আগ্রিপ্প, আমি সেই স্বর্গীয় দর্শনের অবাধ্য হইলাম না; কিন্তু প্রথমে দম্মেশকের লোকদের কাছে, পরে যিরূশালেমে ও যিহূদিয়ার সমস্ত জনপদে, এবং পরজাতিদের কাছে প্রচার করিতে লাগিলাম যে, তাহারা যেন মন ফিরায়, ও ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসে, মনপরিবর্ত্তনের উপযোগী কার্য্য করে। এই কারণ যিহূদীরা ধর্ম্মধামে আমাকে ধরিয়া বধ করিতে চেষ্টা করিতেছিল। কিন্তু ঈশ্বর হইতে সাহায্য প্রাপ্ত হইয়া আমি অদ্য পর্য্যন্ত দাঁড়াইয়া আছি, ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সকলের কাছে সাক্ষ্য দিতেছি, ভাববাদিগণ এবং মোশিও যাহা ঘটিবে বলিয়া গিয়াছেন, ইহা ছাড়া আর কিছুই বলিতেছি না। আর তাহা এই, খ্রীষ্টকে দুঃখভোগ করিতে হইবে, আর তিনিই প্রথম, মৃতগণের পুনরুত্থান দ্বারা, প্রজালোক পরজাতীয় লোক উভয়ের কাছে দীপ্তি প্রচার করিবেন। এইরূপে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করিতেছেন, এমন সময়ে ফীষ্ট উচ্চ রবে কহিলেন, পৌল, তুমি পাগল; বহু বিদ্যাভ্যাস তোমাকে পাগল করিয়া তুলিতেছে। পৌল কহিলেন, হে মহামহিম ফীষ্ট, আমি পাগল নহি, কিন্তু সত্যের ও সুবোধের উক্তি প্রচার করিতেছি। বাস্তবিক রাজা এ সকল বিষয় জানেন, আর তাঁহারই সাক্ষাতে আমি সাহসপূর্ব্বক কথা কহিতেছি; কারণ আমার ধারণা এই যে, ইহার কিছুই রাজার অগোচর নহে; যেহেতুক ইহা কোণের মধ্যে করা যায় নাই। হে রাজন্‌ আগ্রিপ্প, আপনি কি ভাববাদিগণকে বিশ্বাস করেন? আমি জানি, আপনি বিশ্বাস করেন। তখন আগ্রিপ্প পৌলকে কহিলেন, তুমি অল্পেই আমাকে খ্রীষ্টীয়ান করিতে চেষ্টা পাইতেছ। পৌল কহিলেন, ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করিতেছি, অল্পে হউক কি অধিকে হউক, কেবল আপনি নন, কিন্তু অন্য যত লোক অদ্য আমার কথা শুনিতেছেন, সকলেই যেন এই বন্ধন ছাড়া আমি যেমন, তেমনি হন। তখন রাজা, দেশাধ্যক্ষ ও বর্ণীকী এবং তাঁহাদের সঙ্গে উপবিষ্ট লোকেরা উঠিলেন; আর অন্য স্থানে গিয়া পরস্পর আলাপ করিয়া বলিলেন, এই ব্যক্তি প্রাণদণ্ডের কিম্বা বন্ধনের যোগ্য কিছুই করে না। আর আগ্রিপ্প ফীষ্টকে কহিলেন, এই ব্যক্তি যদি কৈসরের নিকটে আপীল না করিত, তবে মুক্তি পাইতে পারিত। যখন স্থির হইল যে, আমরা জাহাজে ইতালিয়ায় যাত্রা করিব, তখন পৌল ও অন্য কয়েক জন বন্দি আগস্তীয় সৈন্যদলের যুলিয় নামে এক জন শতপতির হস্তে সমর্পিত হইলেন। পরে আমরা এমন একখান আদ্রামুত্তীয় জাহাজে উঠিয়া যাত্রা করিলাম, যে জাহাজ এশিয়ার উপকূলের নানা স্থানে যাইবে। মাকিদনিয়ার থিষলনীকী-নিবাসী আরিষ্টার্খ আমাদের সঙ্গে ছিলেন। পরদিন আমরা সীদোনে লাগাইলাম; আর যুলিয় পৌলের প্রতি সৌজন্য ব্যবহার করিয়া তাঁহাকে বন্ধুবান্ধবের নিকটে গিয়া প্রাণ জুড়াইবার অনুমতি দিলেন। পরে তথা হইতে জাহাজ খুলিয়া সম্মুখ বাতাস হওয়াতে আমরা কুপ্র দ্বীপের আড়ালে আড়ালে চলিলাম। পরে কিলিকিয়ার ও পাম্ফুলিয়ার সম্মুখস্থ সমুদ্র পার হইয়া লুকিয়া দেশস্থ মুরায় উপস্থিত হইলাম। সেই স্থানে শতপতি ইতালিয়াতে যাইতে উদ্যত একখান আলেক্‌সান্দ্রীয় জাহাজ দেখিতে পাইয়া আমাদিগকে সেই জাহাজে তুলিয়া দিলেন। পরে বহু দিবস ধীরে ধীরে চলিয়া কষ্টে ক্লীদের সম্মুখে উপস্থিত হইলে, বাতাসে আর অগ্রসর হইতে না পারাতে, আমরা সল্‌মোনীর সম্মুখ দিয়া ক্রীতী দ্বীপের আড়ালে চলিলাম। পরে কষ্টে উপকূলের নিকট দিয়া যাইতে যাইতে ‘সুন্দর পোতাশ্রয়’ নামক স্থানে উপস্থিত হইলাম। লাসেয়া নগর সেই স্থানের নিকটবর্ত্তী। এইরূপে অনেক দিন অতিবাহিত হওয়াতে, এবং উপবাস-পর্ব্ব অতীত হইয়াছিল বলিয়া জলযাত্রা সঙ্কটজনক হওয়াতে, পৌল তাহাদিগকে পরামর্শ দিয়া কহিলেন, মহাশয়েরা, আমি দেখিতেছি যে, এই যাত্রায় অনিষ্ট ও অনেক ক্ষতি হইবে, তাহা কেবল মালের ও জাহাজের, এমন নয়, আমাদের প্রাণেরও হইবে। কিন্তু শতপতি পৌলের কথা অপেক্ষা প্রধান নাবিকের ও জাহাজের কর্ত্তার কথায় অধিক কর্ণপাত করিলেন। আর ঐ পোতাশ্রয়ে শীতকাল যাপনের সুবিধা না হওয়াতে অধিকাংশ লোক সেখান হইতে যাত্রা করিবার পরামর্শ করিল, যেন কোন প্রকারে ফৈনীকায় পঁহুছিয়া সেখানে শীতকাল যাপন করিতে পারে। সেই স্থান ক্রীতীর এক পোতাশ্রয়, তাহা উত্তরপূর্ব্ব ও দক্ষিণপূর্ব্ব অভিমুখীন। পরে যখন দক্ষিণ বায়ু মন্দ মন্দ বহিতে লাগিল, তখন তাহারা, অভিপ্রায় সিদ্ধ হইল মনে করিয়া জাহাজ খুলিয়া ক্রীতীর কূলের অতি নিকট দিয়া চলিতে লাগিল। কিন্তু অল্প কাল পরে কূল হইতে উরাকুলো নামে অতি প্রচণ্ড এক বায়ু আঘাত করিতে লাগিল। তখন জাহাজ ঝড়ের মধ্যে পড়িয়া বায়ুর প্রতিরোধ করিতে না পারাতে আমরা তাহা ভাসিয়া যাইতে দিলাম। পরে কৌদা নামে একটী ক্ষুদ্র দ্বীপের আড়ালে আড়ালে চলিয়া বহুকষ্টে নৌকাখানি আপনাদের বশ করিতে পারিলাম। তখন মাল্লারা তাহা তুলিয়া লইয়া, নানা উপায়ে জাহাজের পার্শ্বে বাঁধিয়া দৃঢ় করিল; আর পাছে সূর্ত্তি নামক চড়াতে গিয়া পড়ে, এই ভয়ে সাজ নামাইয়া অমনি চলিল। ঝড়ের অতিশয় উৎপাত প্রযুক্ত পরদিন তাহারা মাল জলে ফেলিয়া দিতে লাগিল। তৃতীয় দিবসে তাহারা স্বহস্তে জাহাজের সরঞ্জাম ফেলিয়া দিল। আর অনেক দিন পর্য্যন্ত সূর্য্য কি তারা প্রকাশ না পাওয়াতে, এবং ভারী ঝড়ে উৎপাত করাতে, আমাদের রক্ষা পাইবার সমস্ত আশা ক্রমে দূরীভূত হইল। তখন সকলে অনেক দিন অনাহারে থাকিলে পর পৌল তাহাদের মধ্যে দাঁড়াইয়া কহিলেন, হে মহাশয়েরা, আমার কথা গ্রাহ্য করিয়া ক্রীতী হইতে জাহাজ না ছাড়া, এই অনিষ্ট ও ক্ষতি হইতে না দেওয়া, আপনাদের উচিত ছিল। কিন্তু এক্ষণে আমার পরামর্শ এই, আপনারা সাহস করুন, কেননা আপনাদের কাহারও প্রাণের হানি হইবে না, কেবল জাহাজের হইবে। কারণ আমি যে ঈশ্বরের লোক এবং যাঁহার সেবা করি, তাঁহার এক দূত গত রাত্রিতে আমার নিকটে দাঁড়াইয়া কহিলেন, পৌল, ভয় করিও না, কৈসরের সম্মুখে তোমাকে দাঁড়াইতে হইবে। আর দেখ, যাহারা তোমার সঙ্গে যাইতেছে, ঈশ্বর তাহাদের সকলকেই তোমায় দান করিয়াছেন। অতএব মহাশয়েরা সাহস করুন, কেননা ঈশ্বরে আমার এমন বিশ্বাস আছে যে, আমার নিকটে যেরূপ উক্ত হইয়াছে, সেইরূপই ঘটিবে। কিন্তু কোন দ্বীপে গিয়া আমাদিগকে পড়িতে হইবে। এইরূপে আমরা আদ্রিয়া সমুদ্রে ইতস্ততঃ চালিত হইতে হইতে যখন চতুর্দ্দশ রাত্রি উপস্থিত হইল, তখন প্রায় মধ্যরাত্রে মাল্লারা অনুমান করিতে লাগিল যে, তাহারা কোন দেশের নিকটবর্ত্তী হইতেছে। আর তাহারা জল মাপিয়া বিশ বাঁউ জল পাইল; একটু পরে পুনর্ব্বার জল মাপিয়া পনর বাঁউ পাইল। তখন পাছে আমরা শৈলময় স্থানে গিয়া পড়ি, এই আশঙ্কায় তাহারা জাহাজের পশ্চাদ্‌ভাগ হইতে চারিটী লঙ্গর ফেলিয়া দিবসের আকাঙ্খায় থাকিল। আর মাল্লারা জাহাজ হইতে পলায়ন করিবার চেষ্টা করিতেছিল, এবং গলহীর কিঞ্চিৎ অগ্রে লঙ্গর ফেলিবার ছল করিয়া নৌকাখানি সমুদ্রে নামাইয়া দিয়াছিল, এই জন্য পৌল শতপতিকে ও সেনাদিগকে কহিলেন, উহারা জাহাজে না থাকিলে আপনারা রক্ষা পাইতে পারিবেন না। তখন সেনারা নৌকাখানির রজ্জু কাটিয়া তাহা জলে পড়িতে দিল। পরে দিন হইয়া আসিতেছে, এমন সময়ে পৌল সকল লোককে কিছু আহার করিতে বিনতি করিয়া কহিলেন, অদ্য চৌদ্দ দিন হইল, আপনারা অপেক্ষা করিয়া আছেন, কিছু খাদ্য গ্রহন না করিয়া অনাহারে কালক্ষেপ করিতেছেন। অতএব বিনতি করি, আহার করুন, কেননা তাহা আপনাদের রক্ষার জন্য উপকারী হইবে; কারণ আপনাদের কাহারও মস্তকের এক গাছি কেশও নষ্ট হইবে না। ইহা বলিয়া পৌল রুটী লইয়া সকলের সাক্ষাতে ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিলেন, পরে তাহা ভাঙ্গিয়া ভোজন করিতে আরম্ভ করিলেন। তখন সকলে সাহস প্রাপ্ত হইল, এবং আপনারাও আহার করিল। সেই জাহাজে আমরা সর্ব্বশুদ্ধ দুই শত ছেয়াত্তর প্রাণী ছিলাম। সকলে খাদ্যে তৃপ্ত হইলে পর তাহারা সমস্ত গম সমুদ্রে ফেলিয়া দিয়া জাহাজের ভার লাঘব করিল। দিন হইলে তাহারা সেই স্থল চিনিতে পারিল না। কিন্তু এমন এক খাড়ী দেখিতে পাইল, যাহার বালুকাময় তীর ছিল; আর পরামর্শ করিল, যদি পারে, তবে সেই তীরের উপরে যেন জাহাজ তুলিয়া দেয়। তাহারা লঙ্গর সকল কাটিয়া সমুদ্রে ত্যাগ করিল, এবং সঙ্গে সঙ্গে হাইলের বন্ধন খুলিয়া দিল; পরে বাতাসের সম্মুখে অগ্রভাগের পাইল তুলিয়া সেই বালুকাময় তীরের অভিমুখে চলিতে লাগিল। কিন্তু দুই দিকে সমুদ্রাহত কোন স্থানে গিয়া পড়াতে চড়ার উপরে জাহাজ আটকাইল, তাহাতে গলহী বাধিয়া গিয়া অচল হইয়া রহিল, কিন্তু পশ্চাদ্ভাগ প্রবল তরঙ্গের আঘাতে ভাঙ্গিয়া যাইতে লাগিল। তখন সেনারা বন্দিদিগকে বধ করিবার পরামর্শ করিল, পাছে কেহ সাঁতার দিয়া পলায়ন করে। কিন্তু শতপতি পৌলকে রক্ষা করিবার বাসনায় তাহাদিগকে সেই সঙ্কল্প হইতে ক্ষান্ত করিলেন, আর এই আজ্ঞা দিলেন, যাহারা সাঁতার জানে, তাহারা অগ্রে ঝাঁপ দিয়া ডাঙ্গায় উঠুক; আর অবশিষ্ট সকলে তক্তা কিম্বা জাহাজের যাহা পায়, তাহা ধরিয়া ডাঙ্গায় উঠুক। এইরূপে সকলে ডাঙ্গায় উঠিয়া রক্ষা পাইল। আমরা রক্ষা পাইলে পর জানিতে পারিলাম যে, সেই দ্বীপের নাম মিলিতা। আর তথাকার বর্ব্বরেরা আমাদের প্রতি অসাধারণ সৌজন্য প্রকাশ করিল, বস্তুতঃ উপস্থিত বৃষ্টি ও শীত প্রযুক্ত আগুন জ্বালিয়া আমাদের সকলকে অভ্যর্থনা করিল। কিন্তু পৌল এক বোঝা কাষ্ঠ কুড়াইয়া ঐ আগুনের উপরে ফেলিয়া দিলে আগুনের উত্তাপে একটা কালসর্প বাহির হইয়া তাঁহার হাতে লাগিয়া রহিল। তখন ঐ বর্ব্বরেরা তাঁহার হাতে সেই জন্তুটা ঝুলিতেছে দেখিয়া পরস্পর বলাবলি করিতে লাগিল, এই ব্যক্তি নিশ্চয় খুনী, সমুদ্র হইতে রক্ষা পাইলেও ধর্ম্ম ইহাকে বাঁচিতে দিলেন না। কিন্তু তিনি হাত ঝাড়িয়া জন্তুটাকে আগুনের মধ্যে ফেলিয়া দিলেন, ও তাঁহার কিছুই হানি হইল না। তখন তাহারা অপেক্ষা করিতে লাগিল যে, তিনি ফুলিয়া পড়িবেন, কিম্বা হঠাৎ মরিয়া ভূমিতে পড়িয়া যাইবেন; কিন্তু অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত অপেক্ষায় থাকিলে পর, তাঁহার প্রতি কোন বিষম ব্যাপার ঘটিতেছে না দেখিয়া, তাহারা অন্য বিচার করিয়া বলিতে লাগিল, উনি দেবতা। ঐ স্থানের নিকটে সেই দ্বীপের পুব্লিয় নামক প্রধানের ভূসম্পত্তি ছিল; তিনি আমাদিগকে সাদরে গ্রহণ করিয়া সৌজন্য সহকারে তিন দিন পর্য্যন্ত আমাদের আতিথ্য করিলেন। তৎকালে পুব্লিয়ের পিতা জ্বর ও আমাশয় রোগে পীড়িত হইয়া শয্যাগত ছিলেন। আর পৌল ভিতরে তাঁহার নিকটে গিয়া প্রার্থনাপূর্ব্বক তাঁহার উপরে হস্তার্পণ করিয়া তাঁহাকে সুস্থ করিলেন। এই ঘটনা হইলে পর অন্য যত রোগী ঐ দ্বীপে ছিল, তাহারা আসিয়া সুস্থ হইল। আর তাহারা বিস্তর সমাদরে আমাদিগকে সমাদর করিল, এবং আমাদের প্রস্থান সময়ে নানাপ্রকার প্রয়োজনীয় সামগ্রী জাহাজে আনিয়া দিল। তিন মাস গত হইলে পর আমরা আলেক্‌সান্দ্রীয় এক জাহাজে উঠিয়া যাত্রা করিলাম; সেই জাহাজ ঐ দ্বীপে শীতকাল যাপন করিয়াছিল, তাহার চিহ্ন যমজ-দেব। পরে সুরাকূষে লাগাইয়া আমরা সেখানে তিন দিবস থাকিলাম। আর তথা হইতে ঘুরিয়া ঘুরিয়া রীগিয়ে উপস্থিত হইলাম; এক দিনের পর দক্ষিণ বাতাস উঠিল, আর দ্বিতীয় দিন পূতিয়লীতে উপস্থিত হইলাম। সেই স্থানে কয়েক জন ভ্রাতার দেখা পাইলাম, আর তাঁহারা অনুনয় বিনয় করিলে সাত দিন তাঁহাদের সঙ্গে অবস্থিতি করিলাম; এইরূপে আমরা রোমে উপস্থিত হই। আর তথা হইতে ভ্রাতৃগণও আমাদের সংবাদ পাইয়া অপ্পিয়ের হাট ও তিন সরাই পর্য্যন্ত আমাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছিলেন; তাঁহাদিগকে দেখিয়া পৌল ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া সাহস প্রাপ্ত হইলেন। রোমে আমাদের উপস্থিত হইবার পরে পৌল আপন প্রহরী সৈনিকের সহিত স্বতন্ত্র বাস করিবার অনুমতি পাইলেন। আর তিন দিনের পর তিনি যিহূদীদের প্রধান প্রধান লোককে ডাকাইয়া একত্র করিলেন; এবং তাঁহারা সমাগত হইলে তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, হে ভ্রাতৃগণ, আমি যদিও স্বজাতীয়দের কিম্বা পৈতৃক রীতিনীতির বিরুদ্ধে কিছুই করি নাই, তথাপি যিরূশালেম হইতে প্রেরিত বন্দিরূপে রোমীয়দের হস্তে সমর্পিত হইয়াছিলাম। আর তাহারা, আমার বিচার করিয়া প্রাণদণ্ডের যোগ্য কোন দোষ না পাওয়াতে, আমাকে মুক্তি দিতে চাহিয়াছিল; কিন্তু যিহূদীরা প্রতিবাদ করায় আমি কৈসরের কাছে আপীল করিতে বাধ্য হইলাম; স্বজাতীয়দের উপরে দোষারোপ করিবার কোন কথা যে আমার ছিল, তাহা নয়। সেই কারণ আমি আপনাদের সহিত সাক্ষাৎ ও কথোপকথন করিবার জন্য আপনাদিগকে আহ্বান করিলাম; কারণ ইস্রায়েলের প্রত্যাশা হেতুই আমি এই শৃঙ্খলে বদ্ধ রহিয়াছি। তাহারা তাঁহাকে কহিল, আমরা আপনার বিষয়ে যিহূদিয়া হইতে কোন পত্র পাই নাই; অথবা ভ্রাতৃগণের মধ্যেও কেহ এখানে আসিয়া আপনার বিষয়ে মন্দ সংবাদ দেন নাই, বা মন্দ কথাও বলেন নাই। কিন্তু আপনার মত কি, তাহা আমরা আপনার মুখে শুনিতে বাসনা করি; কারণ এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে, সর্ব্বত্র লোকে ইহার বিরুদ্ধে কথা বলিয়া থাকে। পরে তাঁহারা একটী দিন নিরূপণ করিয়া সেই দিন অনেকে তাঁহার বাসায় তাঁহার কাছে আসিলেন; তাঁহাদের কাছে তিনি প্রাতঃকাল অবধি সন্ধ্যা পর্য্যন্ত ব্যাখ্যা করিয়া ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন, এবং মোশির ব্যবস্থা ও ভাববাদিগণের গ্রন্থ লইয়া যীশুর বিষয়ে তাঁহাদিগকে বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন। তাহাতে কেহ কেহ তাঁহার কথায় প্রত্যয় করিলেন, আর কেহ কেহ অবিশ্বাস করিলেন। এইরূপে তাঁহাদের মধ্যে মতের একতা না হওয়ায় তাঁহারা বিদায় হইতে লাগিলেন; যাইবার পূর্ব্বে পৌল এই একটী কথা বলিয়া দিলেন, পবিত্র আত্মা যিশাইয় ভাববাদীর দ্বারা আপনাদের পিতৃপুরুষদিগকে এই কথা ভালই বলিয়াছিলেন, যথা, “এই লোকদের নিকটে গিয়া বল, তোমরা শ্রবণে শুনিবে, কিন্তু কোন মতে বুঝিবে না, এবং চক্ষে দেখিবে, কিন্তু কোন মতে জানিবে না; কেননা এই লোকদের চিত্ত অসাড় হইয়াছে, শুনিতে তাহাদের কর্ণ ভারী হইয়াছে, ও তাহারা চক্ষু মুদ্রিত করিয়াছে, পাছে তাহারা চক্ষে দেখে, এবং কর্ণে শুনে, হৃদয়ে বুঝে, এবং ফিরিয়া আইসে, আর আমি তাহাদিগকে সুস্থ করি।” অতএব আপনারা জ্ঞাত হউন, পরজাতীয়দের কাছে ঈশ্বরের এই পরিত্রাণ প্রেরিত হইল; আর তাহারা শুনিবে। আর পৌল সম্পূর্ণ দুই বৎসর পর্য্যন্ত নিজের ভাড়াটিয়া ঘরে থাকিলেন, এবং যত লোক তাঁহার নিকটে আসিত, সকলকেই গ্রহণ করিয়া সম্পূর্ণ সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের রাজ্যের কথা প্রচার করিতেন, এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে উপদেশ দিতেন, কেহ তাঁহাকে বাধা দিত না। পৌল, যীশু খ্রীষ্টের দাস, আহূত প্রেরিত, ঈশ্বরের সুসমাচারের জন্য পৃথক্‌কৃত— যে সুসমাচার ঈশ্বর পবিত্র শাস্ত্রে আপন ভাববাদিগণের দ্বারা পূর্ব্বে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন; তাহা তাঁহার পুত্র বিষয়ক, যিনি মাংসের সম্বন্ধে দায়ূদের বংশজাত, যিনি পবিত্রতার আত্মার সম্বন্ধে মৃতগণের পুনরুত্থান দ্বারা সপরাক্রমে ঈশ্বরের পুত্র বলিয়া নির্দ্দিষ্ট; তিনি যীশু খ্রীষ্ট, আমাদের প্রভু, যাঁহার দ্বারা আমরা তাঁহার নামের পক্ষে সকল জাতির মধ্যে বিশ্বাসের আজ্ঞাবহতার উদ্দেশে অনুগ্রহ ও প্রেরিতত্ব প্রাপ্ত হইয়াছি; তাহাদের মধ্যে তোমরাও আছ, যীশু খ্রীষ্টের আহূত লোক— রোমে ঈশ্বরের প্রিয় আহূত পবিত্র যত লোক আছেন, সেই সর্ব্বজন সমীপেষু। আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। প্রথমতঃ আমি যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা তোমাদের সকলের জন্য আমার ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি যে, তোমাদের বিশ্বাস সমস্ত জগতে পরিকীর্ত্তিত হইতেছে। কারণ ঈশ্বর, যাঁহার আরাধনা আমি আপন আত্মাতে তাঁহার পুত্রের সুসমাচারে করিয়া থাকি, তিনি আমার সাক্ষী যে, আমি নিরন্তর তোমাদের নাম উল্লেখ করিয়া থাকি, আমার প্রার্থনাকালে আমি সর্ব্বদা যাচ্ঞা করিয়া থাকি, যেন এক কালের পরে সম্প্রতি কোন প্রকারে ঈশ্বরের ইচ্ছায় তোমাদের নিকটে যাইবার বিষয়ে সফলকাম হইতে পারি। কেননা আমি তোমাদিগকে দেখিবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছি, যেন তোমাদিগকে এমন কোন আত্মিক বর প্রদান করি, যাহাতে তোমরা স্থিরীকৃত হও; অর্থাৎ যাহাতে তোমাদের ও আমার, উভয় পক্ষের, আন্তরিক বিশ্বাস দ্বারা তোমাদিগেতে আমি আপনিও সঙ্গে সঙ্গে আশ্বাস পাই। আর হে ভ্রাতৃগণ, আমার ইচ্ছা নয় যে, তোমরা এ বিষয় অজ্ঞাত থাক, আমি বার বার তোমাদের কাছে আসিবার মনস্থ করিয়াছি—আর এ পর্য্যন্ত নিবারিত হইয়া আসিয়াছি—যেন পরজাতীয় অন্য সকল লোকের মধ্যে যেমন, তেমনি তোমাদের মধ্যেও কোন ফল প্রাপ্ত হই। গ্রীক ও বর্ব্বর, বিজ্ঞ ও অজ্ঞ, সকলের কাছে আমি ঋণী। তদনুসারে আমার যতটা সাধ্য, আমি রোম-নিবাসী তোমাদের কাছেও সুসমাচার প্রচার করিতে উৎসুক। কেননা আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমতঃ যিহূদীর পক্ষে, আর গ্রীকেরও পক্ষে। কারণ ঈশ্বর-দেয় এক ধার্ম্মিকতা সুসমাচারে প্রকাশিত হইতেছে, তাহা বিশ্বাসমূলক ও বিশ্বাসজনক, যেমন লেখা আছে, “কিন্তু ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে”। কারণ ঈশ্বরের ক্রোধ স্বর্গ হইতে সেই মনুষ্যদের সমস্ত ভক্তিহীনতা ও অধার্ম্মিকতার উপরে প্রকাশিত হইতেছে, যাহারা অধার্ম্মিকতায় সত্যের প্রতিরোধ করে। কেননা ঈশ্বরের বিষয়ে যাহা জানা যাইতে পারে, তাহা তাহাদের মধ্যে সপ্রকাশ আছে, কারণ ঈশ্বর তাহা তাহাদের কাছে প্রকাশ করিয়াছেন। ফলতঃ তাঁহার অদৃশ্য গুণ, অর্থাৎ তাঁহার অনন্ত পরাক্রম ও ঈশ্বরত্ব, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে, এ জন্য তাহাদের উত্তর দিবার পথ নাই; কারণ ঈশ্বরকে জ্ঞাত হইয়াও তাহারা তাঁহাকে ঈশ্বর বলিয়া তাঁহার গৌরব করে নাই, ধন্যবাদও করে নাই; কিন্তু আপনাদের তর্কবিতর্কে অসার হইয়া পড়িয়াছে, এবং তাহাদের অবোধ হৃদয় অন্ধকার হইয়া গিয়াছে। আপনাদিগকে বিজ্ঞ বলিয়া তাহারা মূর্খ হইয়াছে, এবং ক্ষয়ণীয় মনুষ্যের ও পক্ষীর ও চতুষ্পদের ও সরীসৃপের মূর্ত্তিবিশিষ্ট প্রতিকৃতির সহিত অক্ষয় ঈশ্বরের গৌরব পরিবর্ত্তন করিয়াছে। এই কারণ ঈশ্বর তাহাদিগকে আপন আপন হৃদয়ের নানা অভিলাষে এমন অশুচিতায় সমর্পণ করিলেন যে, তাহাদের দেহ তাহাদিগেতে অনাদৃত হইতেছে; কারণ তাহারা মিথ্যার সহিত ঈশ্বরের সত্য পরিবর্ত্তন করিয়াছে, এবং সৃষ্ট বস্তুর পূজা ও আরাধনা করিয়াছে, সেই সৃষ্টিকর্ত্তার নয়, যিনি যুগে যুগে ধন্য। আমেন। এই জন্য ঈশ্বর তাহাদিগকে জঘন্য রিপুর বশে সমর্পণ করিয়াছেন; এমন কি, তাহাদের স্ত্রীলোকেরা স্বাভাবিক ব্যবহারের পরিবর্ত্তে স্বভাবের বিপরীত ব্যবহার করিয়াছে। আর পুরুষেরাও তদ্রূপ স্বাভাবিক স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ করিয়া পরস্পর কামানলে প্রজ্বলিত হইয়াছে, পুরুষ পুরুষে কুৎসিত ক্রিয়া সম্পন্ন করিয়াছে, এবং আপনাদিগেতে নিজ নিজ বিপথগমনের সমুচিত প্রতিফল পাইয়াছে। আর যেমন তাহারা ঈশ্বরকে আপনাদের জ্ঞানে ধারণ করিতে সম্মত হয় নাই, তেমনি ঈশ্বর তাহাদিগকে অনুচিত ক্রিয়া করিতে ভ্রষ্ট মতিতে সমর্পণ করিলেন। তাহারা সর্ব্বপ্রকার অধার্ম্মিকতা, দুষ্টতা, লোভ ও হিংসাতে পরিপূরিত, মাৎসর্য্য, বধ, বিবাদ, ছল ও দুর্বৃত্তিতে পূর্ণ; কর্ণেজপ, পরীবাদক, ঈশ্বর-ঘৃণিত, দুর্বিনীত, উদ্ধত, আত্মশ্লাঘী, মন্দ বিষয়ের উৎপাদক, পিতামাতার অনাজ্ঞাবহ, নির্ব্বোধ, নিয়ম-ভঙ্গকারী, স্নেহরহিত, নির্দ্দয়। তাহারা ঈশ্বরের এই বিচার জ্ঞাত ছিল যে, যাহারা এইরূপ আচরণ করে, তাহারা মৃত্যুর যোগ্য, তথাপি তাহারা তদ্রূপ আচরণ করে, কেবল তাহা নয়, কিন্তু তদাচারী সকলের অনুমোদন করে। অতএব, হে মনুষ্য, তুমি যে বিচার করিতেছ, তুমি যে কেহ হও, তোমার উত্তর দিবার পথ নাই; কারণ যে বিষয়ে তুমি পরের বিচার করিয়া থাক, সেই বিষয়ে আপনাকেই দোষী করিয়া থাক; কেননা তুমি যে বিচার করিতেছ; তুমি সেই মত আচরণ করিয়া থাক। আর আমরা জানি, যাহারা এইরূপ আচরণ করে, তাহাদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বিচার সত্যের অনুযায়ী। আর হে মনুষ্য, যাহারা এইরূপ আচরণ করে, তুমি যখন তাহাদের বিচার করিয়া থাক, আবার আপনিও তদ্রূপ করিয়া থাক, তখন তুমি কি এই মীমাংসা করিতেছ যে, তুমি ঈশ্বরের বিচার এড়াইবে? অথবা তাঁহার মধুর ভাব ও ধৈর্য্য ও চিরসহিষ্ণুতারূপ ধন কি হেয়জ্ঞান করিতেছ? ঈশ্বরের মধুর ভাব যে তোমাকে মনপরিবর্ত্তনের দিকে লইয়া যায়, ইহা কি জান না? কিন্তু তোমার কঠিন ভাব এবং অপরিবর্ত্তনশীল চিত্ত অনুসারে তুমি আপনার জন্য এমন ক্রোধ সঞ্চয় করিতেছ, যাহা ক্রোধের ও ঈশ্বরের ন্যায়বিচার-প্রকাশের দিনে আসিবে; তিনি ত প্রত্যেক মনুষ্যকে তাহার কার্য্যানুযায়ী ফল দিবেন, সৎক্রিয়ায় ধৈর্য্য সহযোগে যাহারা প্রতাপ, সমাদর ও অক্ষয়তার অন্বেষণ করে, তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দিবেন; কিন্তু যাহারা প্রতিযোগী, এবং সত্যের অবাধ্য ও অধার্ম্মিকতার বাধ্য, তাহাদের প্রতি ক্রোধ ও রোষ, ক্লেশ ও সঙ্কট বর্ত্তিবে; প্রথমে যিহূদীর, পরে গ্রীকেরও উপরে, কদাচারী মনুষ্যমাত্রের প্রাণের উপরে বর্ত্তিবে। কিন্তু সদাচারী প্রত্যেক মনুষ্যের প্রতি, প্রথমে যিহূদীর, পরে গ্রীকেরও প্রতি প্রতাপ, সমাদর ও শান্তি বর্ত্তিবে। কেননা ঈশ্বরের কাছে মুখাপেক্ষা নাই। কারণ ব্যবস্থাবিহীন অবস্থায় যত লোক পাপ করিয়াছে, ব্যবস্থাবিহীন অবস্থায় তাহাদের বিনাশও ঘটিবে; আর ব্যবস্থার অধীনে থাকিয়া যত লোক পাপ করিয়াছে, ব্যবস্থা দ্বারাই তাহাদের বিচার করা যাইবে। কারণ যাহারা ব্যবস্থা শুনে, তাহারা যে ঈশ্বরের কাছে ধার্ম্মিক, এমন নয়, কিন্তু যাহারা ব্যবস্থা পালন করে, তাহারাই ধার্ম্মিক গণিত হইবে— কেননা যে পরজাতিরা কোন ব্যবস্থা পায় নাই, তাহারা যখন স্বভাবতঃ ব্যবস্থানুযায়ী আচরণ করে, তখন কোন ব্যবস্থা না পাইলেও আপনাদের ব্যবস্থা আপনারাই হয়; যেহেতুক তাহারা ব্যবস্থার কার্য্য আপন আপন হৃদয়ে লিখিত বলিয়া দেখায়, তাহাদের সংবেদও সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষ্য দেয়, এবং তাহাদের নানা বিতর্ক পরস্পর হয় তাহাদিগকে দোষী করে, না হয় তাহাদের পক্ষ সমর্থন করে— যে দিন ঈশ্বর আমার সুসমাচার অনুসারে যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা মনুষ্যদের গুপ্ত বিষয় সকলের বিচার করিবেন। তুমি হয় ত যিহূদী নামে আখ্যাত, ব্যবস্থার উপরে নির্ভর করিতেছ, ঈশ্বরের শ্লাঘা করিতেছ, ব্যবস্থা হইতে শিক্ষাপ্রাপ্ত হওয়াতে তাঁহার ইচ্ছা জ্ঞাত আছ, এবং যাহা যাহা ভিন্ন, সেই সকলের পরীক্ষা করিয়া থাক, নিশ্চয় বুঝিয়াছ যে, তুমিই অন্ধদের পথ-দর্শক, অন্ধকারবাসীদের দীপ্তি, অবোধদের গুরু, শিশুদের শিক্ষক, ব্যবস্থায় জ্ঞানের ও সত্যের অবয়ব পাইয়াছ। ভাল, তুমি যে পরকে শিক্ষা দিতেছ, তুমি কি আপনাকে শিক্ষা দেও না? তুমি যে চুরি করিতে নাই বলিয়া প্রচার করিতেছ, তুমি কি চুরি করিতেছ? তুমি যে ব্যভিচার করিতে নাই বলিতেছ, তুমি কি ব্যভিচার করিতেছ? তুমি যে প্রতিমা ঘৃণা করিতেছ, তুমি কি দেবালয় লুট করিতেছ? তুমি যে ব্যবস্থার শ্লাঘা করিতেছ, তুমি কি ব্যবস্থালঙ্ঘন দ্বারা ঈশ্বরের অনাদর করিতেছ? কেননা যেমন লিখিত আছে, সেইরূপ ‘তোমাদের হইতে জাতিগণের মধ্যে ঈশ্বরের নাম নিন্দিত হইতেছে’। বাস্তবিক ত্বক্‌ছেদে লাভ আছে বটে, যদি তুমি ব্যবস্থা পালন কর, কিন্তু যদি ব্যবস্থা লঙ্ঘন কর, তবে তোমার ত্বক্‌ছেদ অত্বক্‌ছেদ হইয়া পড়িল। অতএব অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোক যদি ব্যবস্থার বিধি সকল পালন করে, তবে তাহার অত্বক্‌ছেদ কি ত্বক্‌ছেদ বলিয়া গণিত হইবে না? আর স্বাভাবিক অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোক যদি ব্যবস্থা পালন করে, তবে অক্ষর ও ত্বক্‌ছেদ সত্ত্বেও ব্যবস্থা লঙ্ঘন করিতেছ যে তুমি, সে কি তোমার বিচার করিবে না? কেননা বাহিরে যে যিহূদী সে যিহূদী নয়, এবং বাহিরে মাংসে কৃত যে ত্বক্‌ছেদ তাহা ত্বক্‌ছেদ নয়। কিন্তু আন্তরিক যে যিহূদী সেই যিহূদী, এবং হৃদয়ের যে ত্বক্‌ছেদ, যাহা অক্ষরে নয়, আত্মায়, তাহাই ত্বক্‌ছেন, তাহার প্রশংসা মনুষ্য হইতে হয় না, কিন্তু ঈশ্বর হইতে হয়। তবে যিহূদীর বেশি কি আছে? ত্বক্‌ছেদেরই বা লাভ কি? তাহা সর্ব্বপ্রকারে প্রচুর। প্রথমতঃ এই যে, ঈশ্বরের বচনকলাপ তাহাদের নিকটে গচ্ছিত হইয়াছিল। ভাল, কেহ কেহ যদি অবিশ্বাসী হইয়া থাকে, তাহাতেই বা কি? তাহাদের অবিশ্বাস কি ঈশ্বরের বিশ্বাস্যতা নিষ্ফল করিবে? তাহা দূরে থাকুক, বরং ঈশ্বরকে সত্য বলিয়া স্বীকার করা যাউক, মনুষ্যমাত্র মিথ্যাবাদী হয়, হউক; যেমন লেখা আছে, “তুমি যেন তোমার বাক্যে ধর্ম্মময় প্রতিপন্ন হও, এবং তোমার বিচারকালে বিজয়ী হও।” কিন্তু আমাদের অধার্ম্মিকতা যদি ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা সাব্যস্ত করে, তবে কি বলিব? ঈশ্বর যিনি ক্রোধে প্রতিফল দেন, তিনি কি অন্যায়ী? —আমি মানুষের মত কহিতেছি— তাহা দূরে থাকুক, কেননা তাহা হইলে ঈশ্বর কেমন করিয়া জগতের বিচার করিবেন? কিন্তু আমার মিথ্যায় যদি ঈশ্বরের সত্য তাঁহার গৌরবার্থে উপচিয়া পড়ে, তবে আমিও বা এখন পাপী বলিয়া আর বিচারিত হইতেছি কেন? আর কেনই বা বলিব না—যেমন আমাদের নিন্দা আছে, এবং যেমন কেহ কেহ বলে যে, আমরা বলিয়া থাকি —‘আইস, মন্দ কর্ম্ম করি, যেন উত্তম ফল ফলে’? তাহাদের দণ্ডাজ্ঞা ন্যায্য। তবে দাঁড়াইল কি? আমাদের অবস্থা কি অন্য লোকদের হইতে শ্রেষ্ঠ? তাহা দূরে থাকুক; কারণ আমরা ইতিপূর্ব্বে যিহূদী ও গ্রীক উভয়ের বিরুদ্ধে দোষ দিয়াছি যে, সকলেই পাপের অধীন। যেমন লিখিত আছে, “ধার্ম্মিক কেহই নাই, এক জনও নাই, বুঝে, এমন কেহই নাই, ঈশ্বরের অন্বেষণ করে, এমন কেহই নাই। সকলেই বিপথে গিয়াছে, তাহারা একসঙ্গে অকর্ম্মণ্য হইয়াছে; সৎকর্ম্ম করে এমন কেহই নাই, এক জনও নাই। তাহাদের কণ্ঠ অনাবৃত কবরস্বরূপ; তাহারা জিহ্বাতে ছলনা করিয়াছে; তাহাদের ওষ্ঠাধরের নিম্নে কালসর্পের বিষ থাকে; তাহাদের মুখ অভিশাপ ও কটুকাটব্যে পূর্ণ; তাহাদের চরণ রক্তপাতের জন্য ত্বরান্বিত। তাহাদের পথে পথে ধ্বংস ও বিনাশ, এবং শান্তির পথ তাহারা জানে নাই; ঈশ্বর-ভয় তাহাদের চক্ষুর অগোচর।” আর আমরা জানি, ব্যবস্থা যাহা কিছু বলে, তাহা ব্যবস্থার অধীন লোকদিগকে বলে; যেন প্রত্যেক মুখ বদ্ধ এবং সমস্ত জগৎ ঈশ্বরের বিচারের অধীন হয়। যেহেতুক ব্যবস্থার কার্য্য দ্বারা কোন প্রাণী তাঁহার সাক্ষাতে ধার্ম্মিক গণিত হইবে না, কেননা ব্যবস্থা দ্বারা পাপের জ্ঞান জন্মে। কিন্তু এখন ব্যবস্থা ব্যতিরেকেই ঈশ্বর-দেয় ধার্ম্মিকতা প্রকাশিত হইয়াছে, আর ব্যবস্থা ও ভাববাদিগণ কর্ত্তৃক তাহার পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া হইতেছে। ঈশ্বর-দেয় সেই ধার্ম্মিকতা যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা যাহারা বিশ্বাস করে, তাহাদের সকলের প্রতি বর্ত্তে—কারণ প্রভেদ নাই; কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরববিহীন হইয়াছে— উহারা বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্ম্মিক গণিত হয়। তাঁহাকেই ঈশ্বর তাঁহার রক্তে বিশ্বাস দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদর্শন করিয়াছেন; যেন তিনি আপন ধার্ম্মিকতা দেখান—কেননা ঈশ্বরের সহিষ্ণুতায় পূর্ব্বকালে কৃত পাপ সকলের প্রতি উপেক্ষা করা হইয়াছিল— যেন এক্ষণে যথাকালে আপন ধার্ম্মিকতা দেখান, যেন তিনি নিজে ধার্ম্মিক থাকেন, এবং যে কেহ যীশুতে বিশ্বাস করে, তাহাকেও ধার্ম্মিক গণনা করেন। অতএব শ্লাঘা কোথায় রহিল? তাহা দূরীকৃত হইল। কিরূপ ব্যবস্থা দ্বারা? কার্য্যের ব্যবস্থা দ্বারা? না; কিন্তু বিশ্বাসের ব্যবস্থা দ্বারা। কেননা আমাদের মীমাংসা এই যে, ব্যবস্থার কার্য্য ব্যতিরেকে বিশ্বাস দ্বারাই মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়। ঈশ্বর কি কেবল যিহূদীদের ঈশ্বর, পরজাতীয়দেরও কি নহেন? হাঁ, পরজাতীয়দেরও ঈশ্বর, কেননা বাস্তবিক ঈশ্বর এক, আর তিনি ছিন্নত্বক্‌ লোকদিগকে বিশ্বাসহেতু, এবং অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকদিগকে বিশ্বাস দ্বারা ধার্ম্মিক গণনা করিবেন। তবে আমরা কি বিশ্বাস দ্বারা ব্যবস্থা নিষ্ফল করিতেছি? তাহা দূরে থাকুক; বরং ব্যবস্থা সংস্থাপন করিতেছি। তবে কি বলিব? মাংসের সম্বন্ধে আমাদের আদিপিতা যে অব্রাহাম, তিনি কি প্রাপ্ত হইয়াছেন? কারণ অব্রাহাম যদি কার্য্য হেতু ধার্ম্মিক গণিত হইয়া থাকেন, তবে শ্লাঘার বিষয় তাঁহার আছে; কিন্তু ঈশ্বরের কাছে নাই; কেননা শাস্ত্রে কি বলে? “অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল।” যে কার্য্য করে, তাহার বেতন ত তাহার পক্ষে অনুগ্রহের বিষয় বলিয়া নয়, প্রাপ্য বলিয়া গণিত হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি কার্য্য করে না—তাঁহারই উপরে বিশ্বাস করে, যিনি ভক্তিহীনকে ধার্ম্মিক গণনা করেন—তাহার বিশ্বাসই ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হয়। এই প্রকারে দায়ূদও সেই ব্যক্তিকে ধন্য বলিয়া উল্লেখ করেন, যাহার পক্ষে ঈশ্বর কার্য্য ব্যতিরেকে ধার্ম্মিকতা গণনা করেন, যথা, “ধন্য তাহারা, যাহাদের অধর্ম্ম ক্ষমা হইয়াছে, যাহাদের পাপ আচ্ছাদিত হইয়াছে; ধন্য সেই ব্যক্তি, যাহার পক্ষে প্রভু পাপ গণনা করেন না”। ভাল, এই ‘ধন্য’ শব্দ কি ছিন্নত্বক্‌ লোকেই বর্ত্তে, না অচ্ছিন্নত্বক্‌ লোকেও বর্ত্তে? কারণ আমরা বলি, অব্রাহামের পক্ষে তাঁহার বিশ্বাস ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইয়াছিল। কোন্‌ অবস্থায় গণিত হইয়াছিল? ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায়, না অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায়? ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় নয়, কিন্তু অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায়। আর তিনি ত্বকছেদচিহ্ন পাইয়াছিলেন; ইহা সেই বিশ্বাসের ধার্ম্মিকতার মুদ্রাঙ্ক ছিল, যে বিশ্বাস অচ্ছিন্নত্বক্‌ থাকিতে তাঁহার ছিল; উদ্দেশ্য এই, যেন অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় যাহারা বিশ্বাস করে, তিনি তাহাদের সকলের পিতা হন, যেন তাহাদের পক্ষে সেই ধার্ম্মিকতা গণিত হয়; আর যেন ছিন্নত্বক্‌ লোকদেরও পিতা হন; অর্থাৎ যাহারা ছিন্নত্বক্‌ কেবল তাহাদের নয়, কিন্তু অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় আমাদের পিতা অব্রাহামের যে বিশ্বাস ছিল, যাহারা তাঁহার পদচিহ্ন দিয়া গমন করে, তিনি তাহাদেরও পিতা। কারণ ব্যবস্থা দ্বারা নয়, কিন্তু বিশ্বাসের ধার্ম্মিকতা দ্বারা অব্রাহামের বা তাঁহার বংশের প্রতি জগতের দায়াধিকারী হইবার প্রতিজ্ঞা করা হইয়াছিল। কেননা যাহারা ব্যবস্থাবলম্বী, তাহারা যদি দায়াধিকারী হয়, তবে বিশ্বাসকে নিরর্থক করা হইল, এবং সেই প্রতিজ্ঞাকে নিষ্ফল করা হইল। ব্যবস্থা ত ক্রোধ সাধন করে; কিন্তু যেখানে ব্যবস্থা নাই, সেখানে ব্যবস্থালঙ্ঘনও নাই। এই জন্য উহা বিশ্বাস দ্বারা হয়, যেন অনুগ্রহ অনুসারে হয়; অভিপ্রায় এই, যেন সেই প্রতিজ্ঞা সমস্ত বংশের পক্ষে কেবল ব্যবস্থাবলম্বী বংশের পক্ষে নয়, কিন্তু অব্রাহামের বিশ্বাসাবলম্বী বংশেরও পক্ষে অটল থাকে; তিনি আমাদের সকলের পিতা, (যেমন লিখিত আছে, “আমি তোমাকে বহু জাতির পিতা করিলাম,” ) সেই ঈশ্বরের সাক্ষাতেই পিতা, যাঁহাকে তিনি বিশ্বাস করিলেন, যিনি মৃতগণকে জীবন দেন, এবং যাহা নাই, তাহা আছে বলেন; অব্রাহাম প্রত্যাশা না থাকিলেও প্রত্যাশাযুক্ত হইয়া বিশ্বাস করিলেন, যেন ‘এইরূপ তোমার বংশ হইবে,’ এই বচন অনুসারে তিনি বহুজাতির পিতা হন। আর বিশ্বাসে দুর্ব্বল না হইয়া, তাঁহার বয়স প্রায় শত বৎসর হইলেও, তিনি আপনার মৃতকল্প শরীর, এবং সারার গর্ভের মৃতকল্পতাও টের পাইলেন বটে, তথাপি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার প্রতি লক্ষ্য করিয়া অবিশ্বাস বশতঃ সন্দেহ করিলেন না; কিন্তু বিশ্বাসে বলবান্‌ হইলেন, ঈশ্বরের গৌরব করিলেন, এবং নিশ্চয় জানিলেন, ঈশ্বর যাহা প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা সফল করিতে সমর্থও আছেন। আর এই কারণ তাঁহার পক্ষে উহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল। তাঁহার পক্ষে গণিত হইল, ইহা যে কেবল তাঁহার জন্য লিখিত হইয়াছে, এমন নয়, কিন্তু আমাদেরও জন্য; আমাদের পক্ষেও তাহা গণিত হইবে, কেননা যিনি আমাদের প্রভু যীশুকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, আমরা তাঁহার উপরে বিশ্বাস করিতেছি। সেই যীশু আমাদের অপরাধের নিমিত্ত সমর্পিত হইলেন, এবং আমাদের ধার্ম্মিকগণনার নিমিত্ত উত্থাপিত হইলেন। অতএব বিশ্বাসহেতু ধার্ম্মিক গণিত হওয়াতে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে সন্ধি লাভ করিয়াছি; আর তাঁহারই দ্বারা আমরা বিশ্বাসে এই অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ লাভ করিয়াছি, যাহার মধ্যে দাঁড়াইয়া আছি, এবং ঈশ্বরের প্রতাপের প্রত্যাশায় শ্লাঘা করিতেছি। কেবল তাহা নয়, কিন্তু নানাবিধ ক্লেশেও শ্লাঘা করিতেছি, কারণ আমরা জানি, ক্লেশ ধৈর্য্যকে, ধৈর্য্য পরীক্ষাসিদ্ধতাকে এবং পরীক্ষাসিদ্ধতা প্রত্যাশাকে উৎপন্ন করে; আর প্রত্যাশা লজ্জাজনক হয় না, যেহেতুক আমাদিগকে দত্ত পবিত্র আত্মা দ্বারা ঈশ্বরের প্রেম আমাদের হৃদয়ে সেচিত হইয়াছে। কেননা যখন আমরা শক্তিহীন ছিলাম, তখন খ্রীষ্ট উপযুক্ত সময়ে ভক্তিহীনদের নিমিত্ত মরিলেন। বস্তুতঃ ধার্ম্মিকের নিমিত্ত প্রায় কেহ প্রাণ দিবে না, সজ্জনের নিমিত্ত হয় ত কেহ সাহস করিয়া প্রাণ দিলেও দিতে পারে। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন। সুতরাং সম্প্রতি তাঁহার রক্তে যখন ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছি, তখন আমরা কত অধিক নিশ্চয় তাঁহা দ্বারা ঈশ্বরের ক্রোধ হইতে পরিত্রাণ পাইব। কেননা যখন আমরা শত্রু ছিলাম, তখন যদি ঈশ্বরের সহিত তাঁহার পুত্রের মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত হইলাম, তবে সম্মিলিত হইয়া কত অধিক নিশ্চয় তাঁহার জীবনে পরিত্রাণ পাইব। কেবল তাহা নয়, কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা ঈশ্বরের শ্লাঘাও করিয়া থাকি, যাঁহার দ্বারা এখন আমরা সেই সম্মিলন লাভ করিয়াছি। অতএব যেমন এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল; —কারণ ব্যবস্থার পূর্ব্বেও জগতে পাপ ছিল; কিন্তু ব্যবস্থা না থাকিলে পাপ গণিত হয় না। তথাপি যাহারা আদমের আজ্ঞালঙ্ঘনের সাদৃশ্যে পাপ করে নাই, আদম অবধি মোশি পর্য্যন্ত তাহাদের উপরেও মৃত্যু রাজত্ব করিয়াছিল। আর আদম সেই ভাবী ব্যক্তির প্রতিরূপ। কিন্তু অপরাধ যেরূপ, অনুগ্রহ-দানটী সেরূপ নয়। কেননা সেই একের অপরাধে যখন অনেকে মরিল, তখন ঈশ্বরের অনুগ্রহ, এবং আর এক ব্যক্তির—যীশু খ্রীষ্টের—অনুগ্রহে দত্ত দান, অনেকের প্রতি আরও অধিক উপচিয়া পড়িল। আর, এক ব্যক্তি পাপ করাতে যেমন ফল হইল, এই দান তেমন নয়; কেননা বিচার এক ব্যক্তি হইতে দণ্ডাজ্ঞা পর্য্যন্ত, কিন্তু অনুগ্রহদান অনেক অপরাধ হইতে ধার্ম্মিকগণনা পর্য্যন্ত। কারণ সেই একের অপরাধে যখন সেই একের দ্বারা মৃত্যু রাজত্ব করিল, তখন সেই আর এক ব্যক্তি দ্বারা, যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা, যাহারা অনুগ্রহের ও ধার্ম্মিকতাদানের উপচয় পায়, তাহারা কত অধিক নিশ্চয় জীবনে রাজত্ব করিবে। অতএব যেমন এক অপরাধ দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে দণ্ডাজ্ঞা পর্য্যন্ত ফল উপস্থিত হইল, তেমনি ধার্ম্মিকতার একটী কার্য্য দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে জীবনদায়ক ধার্ম্মিক-গণনা পর্য্যন্ত ফল উপস্থিত হইল। কারণ যেমন সেই এক মনুষ্যের অনাজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে পাপী বলিয়া ধরা হইল, তেমনি সেই আর এক ব্যক্তির আজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে ধার্ম্মিক বলিয়া ধরা হইবে। আর ব্যবস্থা তৎপরে পার্শ্বে উপস্থিত হইল, যেন অপরাধের বাহুল্য হয়; কিন্তু যেখানে পাপের বাহুল্য হইল, সেখানে অনুগ্রহ আরও উপচিয়া পড়িল; যেন পাপ যেমন মৃত্যুতে রাজত্ব করিয়াছিল, তেমনি আবার অনুগ্রহ ধার্ম্মিকতা দ্বারা, অনন্ত জীবনের নিমিত্ত, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা, রাজত্ব করে। তবে কি বলিব? অনুগ্রহের বাহুল্য যেন হয় এই নিমিত্ত কি পাপে থাকিব? তাহা দূরে থাকুক। আমরা ত পাপের সম্বন্ধে মরিয়াছি, আমরা কি প্রকারে আবার পাপে জীবন যাপন করিব? অথবা তোমরা কি জান না যে, আমরা যত লোক খ্রীষ্ট যীশুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, সকলে তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি? অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনতায় চলি। কেননা যখন আমরা তাঁহার মৃত্যুর সাদৃশ্যে তাঁহার সহিত একীভূত হইয়াছি, তখন অবশ্য পুনরুত্থানের সাদৃশ্যেও হইব। আমরা ত ইহা জানি যে, আমাদের পুরাতন মনুষ্য তাঁহার সহিত ক্রুশারোপিত হইয়াছে, যেন পাপদেহ শক্তিহীন হয়, যাহাতে আমরা পাপের দাস আর না থাকি। কেননা যে মরিয়াছে, সে পাপ হইতে ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছে। আর আমরা যখন খ্রীষ্টের সহিত মরিয়াছি, তখন বিশ্বাস করি যে, তাঁহার সহিত জীবনপ্রাপ্তও হইব। কারণ আমরা জানি, মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন বলিয়া খ্রীষ্ট আর কখনও মরেন না, তাঁহার উপরে মৃত্যুর আর কর্ত্তৃত্ব নাই। ফলতঃ তাঁহার যে মৃত্যু হইয়াছে, তদ্দ্বারা তিনি পাপের সম্বন্ধে একবারই মরিলেন; এবং তাঁহার যে জীবন আছে, তদ্দ্বারা তিনি ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত আছেন। তদ্রূপ তোমরাও আপনাদিগকে পাপের সম্বন্ধে মৃত, কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত বলিয়া গণনা কর। অতএব পাপ তোমাদের মর্ত্ত্য দেহে রাজত্ব না করুক—করিলে তোমরা তাহার অভিলাষ-সমূহের আজ্ঞাবহ হইয়া পড়িবে; আর আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে পাপের কাছে সমর্পণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে মৃতদের মধ্য হইতে জীবিত জানিয়া ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর, এবং আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্ম্মিকতার অস্ত্ররূপে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ কর। কেননা পাপ তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে না; কারণ তোমরা ব্যবস্থার অধীন নহ, কিন্তু অনুগ্রহের অধীন। তবে দাঁড়াইল কি? আমরা ব্যবস্থার অধীন নই, অনুগ্রহের অধীন, এই জন্য কি পাপ করিব? তাহা দূরে থাকুক। তোমরা কি জান না যে, আজ্ঞা পালনার্থে যাহার নিকটে দাসরূপে আপনাদিগকে সমর্পণ কর, যাহার আজ্ঞা মান, তোমরা তাহারই দাস; হয় মৃত্যুজনক পাপের দাস, নয় ধার্ম্মিকতাজনক আজ্ঞাপালনের দাস? কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হউক যে, তোমরা পাপের দাস ছিলে বটে, পরন্তু শিক্ষার যে আদর্শে সমর্পিত হইয়াছ, অন্তঃকরণের সহিত সেই আদর্শের আজ্ঞাবহ হইয়াছ; এবং পাপ হইতে স্বাধীনীকৃত হইয়া তোমরা ধার্ম্মিকতার দাস হইয়াছ। তোমাদের মাংসের দুর্ব্বলতা প্রযুক্ত আমি মানুষের মত কহিতেছি। কারণ, তোমরা যেমন পূর্ব্বে অধর্ম্মের নিমিত্তে আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অশুচিতার ও অধর্ম্মের কাছে দাসরূপে সমর্পণ করিয়াছিলে, তেমনি এখন পবিত্রতার নিমিত্তে আপন আপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধার্ম্মিকতার কাছে দাসরূপে সমর্পণ কর। কেননা যখন তোমরা পাপের দাস ছিলে, তখন ধার্ম্মিকতার সম্বন্ধে স্বাধীন ছিলে। ভাল, এক্ষণে যে সমস্ত বিষয়ে তোমাদের লজ্জা বোধ হয়, তৎকালে সেই সকলে তোমাদের কি ফল হইত? বাস্তবিক সে সকলের পরিণাম মৃত্যু। কিন্তু এখন পাপ হইতে স্বাধীনীকৃত হইয়া, এবং ঈশ্বরের দাস হইয়া তোমরা পবিত্রতার জন্য ফল পাইতেছ, এবং তাহার পরিণাম অনন্ত জীবন। কেননা পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন। অথবা হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা কি জান না—কারণ যাহারা ব্যবস্থা জানে, আমি তাহাদিগকেই বলিতেছি, —মনুষ্য যত কাল জীবিত থাকে, তত কাল পর্য্যন্ত ব্যবস্থা তাহার উপরে কর্ত্তৃত্ব করে? কারণ যত দিন স্বামী জীবিত থাকে, তত দিন সধবা স্ত্রী ব্যবস্থা দ্বারা তাহার কাছে আবদ্ধ থাকে; কিন্তু স্বামী মরিলে সে স্বামীর ব্যবস্থা হইতে মুক্ত হয়। সুতরাং যদি সে স্বামী জীবিত থাকিতে অন্য পুরুষের হয়, তবে ব্যভিচারিণী বলিয়া আখ্যাত হইবে; কিন্তু স্বামী মরিলে সে ঐ ব্যবস্থা হইতে স্বাধীন হয়, অন্য স্বামীর হইলেও ব্যভিচারিণী হইবে না। অতএব, হে আমার ভ্রাতৃগণ, খ্রীষ্টের দেহ দ্বারা ব্যবস্থার সম্বন্ধে তোমাদেরও মৃত্যু হইয়াছে, যেন তোমরা অন্যের হও, যিনি মৃতদের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন, তাঁহারই হও; যেন আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে ফল উৎপন্ন করি। কেননা যখন আমরা মাংসের বশে ছিলাম, তখন ব্যবস্থা হেতু পাপ-বাসনা সকল মৃত্যুর নিমিত্ত ফল উৎপন্ন করিবার জন্য আমাদের অঙ্গমধ্যে কার্য্য সাধন করিত। কিন্তু এক্ষণে আমরা ব্যবস্থা হইতে মুক্ত হইয়াছি; কেননা যাহাতে আবদ্ধ ছিলাম, তাহার সম্বন্ধে মরিয়াছি, যেন আমরা অক্ষরের প্রাচীনতায় নয়, কিন্তু আত্মার নূতনতায় দাস্যকর্ম্ম করি। তবে কি বলিব? ব্যবস্থা কি পাপ? তাহা দূরে থাকুক; বরং পাপ কি, তাহা আমি জানিতাম না, কেবল ব্যবস্থা দ্বারা জানিয়াছি; কেননা “লোভ করিও না,” এই কথা যদি ব্যবস্থা না বলিত, তবে লোভ কি, তাহা জানিতাম না; কিন্তু পাপ সুযোগ পাইয়া সেই আজ্ঞা দ্বারা আমার অন্তরে সর্ব্বপ্রকার লোভ সম্পন্ন করিল; কেননা ব্যবস্থা ব্যতিরেকে পাপ মৃত থাকে। আর আমি এক সময়ে ব্যবস্থা ব্যতিরেকে জীবিত ছিলাম, কিন্তু আজ্ঞা আসিলে পাপ জীবিত হইয়া উঠিল, আর আমি মরিলাম; এবং জীবনজনক যে আজ্ঞা, তাহা আমার মৃত্যুজনক বলিয়া দেখা গেল। ফলতঃ পাপ সুযোগ পাইয়া আজ্ঞা দ্বারা আমাকে প্রবঞ্চনা করিল, ও তদ্দ্বারা আমাকে বধ করিল। অতএব ব্যবস্থা পবিত্র, এবং আজ্ঞা পবিত্র, ন্যায্য ও উত্তম। তবে যাহা উত্তম, তাহাই কি আমার মৃত্যুস্বরূপ হইল? তাহা দূরে থাকুক। বরং পাপই এইরূপ হইল, যেন উত্তম বস্তু দ্বারা আমার মৃত্যু সাধনে তাহা পাপ বলিয়া প্রকাশ পায়, যেন আজ্ঞা দ্বারা পাপ অতিশয় পাপিষ্ঠ হইয়া উঠে। কারণ আমরা জানি, ব্যবস্থা আত্মিক, কিন্তু আমি মাংসময়, পাপের অধীনে বিক্রীত। কারণ আমি যাহা সাধন করি, তাহা জানি না; কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহাই যে কাজে করি, এমন নয়, বরং যাহা ঘৃণা করি, তাহাই করি। কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি না, তাহাই যখন করি, তখন ব্যবস্থা যে উত্তম, ইহা স্বীকার করি। এইরূপ হওয়াতে সেই কার্য্য আর আমি সাধন করি না, আমাতে বাসকারী পাপ তাহা করে। যেহেতুক আমি জানি যে আমাতে, অর্থাৎ আমার মাংসে, উত্তম কিছুই বাস করে না; আমার ইচ্ছা উপস্থিত বটে, কিন্তু উত্তম ক্রিয়া সাধন উপস্থিত নয়। কেননা আমি যাহা ইচ্ছা করি, সেই উত্তম ক্রিয়া করি না; কিন্তু মন্দ, যাহা ইচ্ছা করি না, কাজে তাহাই করি। পরন্তু যাহা আমি ইচ্ছা করি না, তাহা যদি করি, তবে তাহা আর আমি সম্পন্ন করি না, কিন্তু আমাতে বাসকারী পাপ তাহা করে। অতএব আমি এই ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি যে, সৎকার্য্য করিতে ইচ্ছা করিলেও মন্দ আমার কাছে উপস্থিত হয়। বস্তুতঃ আন্তরিক মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি। কিন্তু আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে। দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি! এই মৃত্যুর দেহ হইতে কে আমাকে নিস্তার করিবে? আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি। অতএব আমি আপনি মন দিয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থার দাসত্ব করি, কিন্তু মাংস দিয়া পাপ-ব্যবস্থার দাসত্ব করি। অতএব এখন, যাহারা খ্রীষ্ট যীশুতে আছে, তাহাদের প্রতি কোন দণ্ডাজ্ঞা নাই। কেননা খ্রীষ্ট যীশুতে জীবনের আত্মার যে ব্যবস্থা, তাহা আমাকে পাপের ও মৃত্যুর ব্যবস্থা হইতে মুক্ত করিয়াছে। কারণ ব্যবস্থা মাংস দ্বারা দুর্ব্বল হওয়াতে যাহা করিতে পারে নাই, ঈশ্বর তাহা করিয়াছেন, নিজ পুত্রকে পাপময় মাংসের সাদৃশ্যে এবং পাপার্থক বলিরূপে পাঠাইয়া দিয়া মাংসে পাপের দণ্ডাজ্ঞা করিয়াছেন, যেন আমরা যাহারা মাংসের বশে নয়, কিন্তু আত্মার বশে চলিতেছি, ব্যবস্থার ধর্ম্মবিধি সেই আমাদিগেতে সিদ্ধ হয়। কেননা যাহারা মাংসের বশে আছে, তাহারা মাংসিক বিষয় ভাবে; কিন্তু যাহারা আত্মার বশে আছে, তাহারা আত্মিক বিষয় ভাবে। কারণ মাংসের ভাব মৃত্যু, কিন্তু আত্মার ভাব জীবন ও শান্তি। কেননা মাংসের ভাব ঈশ্বরের প্রতি শত্রুতা, কারণ তাহা ঈশ্বরের ব্যবস্থার বশীভূত হয় না, বাস্তবিক হইতে পারেও না। আর যাহারা মাংসের অধীনে থাকে, তাহারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করিতে পারে না। কিন্তু তোমরা মাংসের অধীনে নও, আত্মার অধীনে রহিয়াছ, যদি বাস্তবিক ঈশ্বরের আত্মা তোমাদিগেতে বাস করেন। কিন্তু খ্রীষ্টের আত্মা যাহার নাই, সে খ্রীষ্টের নয়। আর যদি খ্রীষ্ট তোমাদিগেতে থাকেন, তবে দেহ পাপ প্রযুক্ত মৃত বটে, কিন্তু আত্মা ধার্ম্মিকতা প্রযুক্ত জীবন। আর যিনি মৃতগণের মধ্য হইতে যীশুকে উঠাইলেন, তাঁহার আত্মা যদি তোমাদিগেতে বাস করেন, তবে যিনি মৃতগণের মধ্য হইতে খ্রীষ্ট যীশুকে উঠাইলেন, তিনি তোমাদের অন্তরে বাসকারী আপন আত্মা দ্বারা তোমাদের মর্ত্ত্য দেহকেও জীবিত করিবেন। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা ঋণী, কিন্তু মাংসের কাছে নয় যে, মাংসের বশে জীবন যাপন করিব। কারণ যদি মাংসের বশে জীবন যাপন কর, তবে তোমরা নিশ্চয় মরিবে, কিন্তু যদি আত্মাতে দেহের ক্রিয়া সকল মৃত্যুসাৎ কর, তবে জীবিত থাকিবে। কেননা যত লোক ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা চালিত হয়, তাহারাই ঈশ্বরের পুত্র। বস্তুতঃ তোমরা দাসত্বের আত্মা পাও নাই যে, আবার ভয় করিবে; কিন্তু দত্তকপুত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকিয়া উঠি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আর যখন সন্তান, তখন দায়াদ, ঈশ্বরের দায়াদ ও খ্রীষ্টের সহদায়াদ—যদি বাস্তবিক আমরা তাঁহার সহিত দুঃখভোগ করি, যেন তাঁহার সহিত প্রতাপান্বিতও হই। কারণ আমার মীমাংসা এই, আমাদের প্রতি যে প্রতাপ প্রকাশিত হইবে, তাহার সঙ্গে এই বর্তমান কালের দুঃখভোগ তুলনার যোগ্য নয়। কেননা সৃষ্টির ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা ঈশ্বরের পুত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে। কারণ সৃষ্টি অসারতার বশীকৃত হইল, স্বইচ্ছায় যে হইল, তাহা নয়, কিন্তু বশীকর্ত্তার নিমিত্ত; এই প্রত্যাশায় হইল যে, সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে। কারণ আমরা জানি, সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে। কেবল তাহা নয়; কিন্তু আত্মারূপ অগ্রিমাংশ পাইয়াছি যে আমরা, আমরা আপনারাও দত্তকপুত্রতার—আপন আপন দেহের মুক্তির—অপেক্ষা করিতে করিতে অন্তরে আর্ত্তস্বর করিতেছি। কেননা প্রত্যাশায় আমরা পরিত্রাণ প্রাপ্ত হইয়াছি; কিন্তু দৃষ্টিগোচর যে প্রত্যাশা, তাহা প্রত্যাশাই নয়। কেননা যে যাহা দেখে, সে তাহার প্রত্যাশা কেন করিবে? কিন্তু আমরা যাহা দেখিতে না পাই, তাহার প্রত্যাশা যদি করি, তবে ধৈর্য্য সহকারে তাহার অপেক্ষায় থাকি। আর সেইরূপে আত্মাও আমাদের দুর্ব্বলতায় সাহায্য করেন; কেননা উচিত মতে কি প্রার্থনা করিতে হয়, তাহা আমরা জানি না, কিন্তু আত্মা আপনি অবক্তব্য আর্ত্তস্বর দ্বারা আমাদের পক্ষে অনুরোধ করেন। আর যিনি হৃদয় সকলের অনুসন্ধান করেন, তিনি জানেন, আত্মার ভাব কি, কারণ ইনি পবিত্রগণের পক্ষে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই অনুরোধ করেন। আর আমরা জানি, যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আহূত, তাহাদের পক্ষে সকলই মঙ্গলার্থে একসঙ্গে কার্য্য করিতেছে। কারণ তিনি যাহাদিগকে পূর্ব্বে জানিলেন, তাহাদিগকে আপন পুত্রের প্রতিমূর্ত্তির অনুরূপ হইবার জন্য পূর্ব্বে নিরূপণও করিলেন; যেন ইনি অনেক ভ্রাতার মধ্যে প্রথমজাত হন। আর তিনি যাহাদিগকে পূর্ব্বে নিরূপণ করিলেন, তাহাদিগকে আহ্বানও করিলেন; আর যাহাদিগকে আহ্বান করিলেন, তাহাদিগকে ধার্ম্মিক গণিতও করিলেন; আর যাহাদিগকে ধার্ম্মিক গণিত করিলেন, তাহাদিগকে প্রতাপান্বিতও করিলেন। এই সকল ধরিয়া আমরা কি বলিব? ঈশ্বর যখন আমাদের সপক্ষ, তখন আমাদের বিপক্ষ কে? যিনি নিজ পুত্রের প্রতি মমতা করিলেন না, কিন্তু আমাদের সকলের নিমিত্ত তাঁহাকে সমর্পণ করিলেন, তিনি কি তাঁহার সহিত সমস্তই আমাদিগকে অনুগ্রহ-পূর্ব্বক দান করিবেন না? ঈশ্বরের মনোনীতদের বিপক্ষে কে অভিযোগ করিবে? ঈশ্বর ত তাহাদিগকে ধার্ম্মিক করেন; কে দোষী করিবে? খ্রীষ্ট যীশু ত মরিলেন, বরং উত্থাপিতও হইলেন; আর তিনিই ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন, আবার আমাদের পক্ষে অনুরোধ করিতেছেন। খ্রীষ্টের প্রেম হইতে কে আমাদিগকে পৃথক করিবে? কি ক্লেশ? কি সঙ্কট? কি তাড়না? কি দুর্ভিক্ষ? কি উলঙ্গতা? কি প্রাণ-সংশয়? কি খড়্গ? যেমন লেখা আছে, “তোমার জন্য আমরা সমস্ত দিন নিহত হইতেছি; আমরা বধ্য মেষের ন্যায় গণিত হইলাম।” কিন্তু যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, তাঁহারই দ্বারা আমরা এই সকল বিষয়ে বিজয়ী অপেক্ষাও অধিক বিজয়ী হই। কেননা আমি নিশ্চয় জানি, কি মৃত্যু, কি জীবন, কি দূতগণ, কি আধিপত্য সকল, কি উপস্থিত বিষয় সকল, কি ভাবী বিষয় সকল, কি পরাক্রম সকল, কি ঊর্দ্ধ স্থান, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু, কিছুই আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে আমাদিগকে পৃথক্‌ করিতে পারিবে না। আমি খ্রীষ্টে সত্য কহিতেছি, মিথ্যা কহিতেছি না, আমার সংবেদও পবিত্র আত্মাতে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিতেছে যে, আমার হৃদয়ে ভারী দুঃখ ও নিরন্তর যাতনা হইতেছে। কেননা আমার ভ্রাতৃগণের জন্য, যাহারা মাংসের সম্বন্ধে আমার স্বজাতীয় তাহাদের জন্য, আমিই যেন খ্রীষ্ট হইতে পৃথক্‌ থাকিয়া শাপাস্পদ হই, এমন কামনা করিতে পারিতাম। কারণ তাহারা ইস্রায়েলীয়; দত্তকপুত্রতা, প্রতাপ, ধর্ম্মনিয়ম সকল, ব্যবস্থাদান, আরাধনা ও প্রতিজ্ঞাসমূহ তাহাদেরই, পিতৃপুরুষেরা তাহাদের, এবং মাংসের সম্বন্ধে তাহাদেরই মধ্য হইতে খ্রীষ্ট উৎপন্ন হইয়াছেন, যিনি সর্ব্বোপরিস্থ ঈশ্বর, যুগে যুগে ধন্য, আমেন। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য যে বিফল হইয়া পড়িয়াছে, এমন নহে; কারণ যাহারা ইস্রায়েল হইতে উৎপন্ন, তাহারা সকলেই যে ইস্রায়েল, তাহা নয়; আর অব্রাহামের বংশ বলিয়া তাহারা যে সকলেই সন্তান, তাহাও নয়, কিন্তু “ইস্‌হাকেই তোমার বংশ আখ্যাত হইবে।” ইহার অর্থ এই, যাহারা মাংসের সন্তান, তাহারা যে ঈশ্বরের সন্তান, এমন নয়, কিন্তু প্রতিজ্ঞার সন্তানগণই বংশ বলিয়া গণিত হয়। কেননা “এই ঋতুতেই আমি আসিব, তখন সারার এক পুত্র হইবে,” ইহা প্রতিজ্ঞারই বাক্য। কেবল তাহা নয়, কিন্তু আবার রিবিকা এক ব্যক্তি হইতে, আমাদের পিতৃপুরুষ ইস্‌হাক হইতে, গর্ভবতী হইলে পর, যখন সন্তানেরা ভূমিষ্ঠ হয় নাই, এবং ভাল মন্দ কিছুই করে নাই, তখন—ঈশ্বরের নির্ব্বাচনানুরূপ সঙ্কল্প যেন স্থির থাকে, কর্ম্ম হেতু নয়, কিন্তু আহ্বানকারীর ইচ্ছা হেতু— তাঁহাকে বলা গিয়াছিল, “জ্যেষ্ঠ কনিষ্ঠের দাস হইবে” যেমন লিখিত আছে, “আমি যাকোবকে প্রেম করিয়াছি, কিন্তু এষৌকে অপ্রেম করিয়াছি।” তবে আমরা কি বলিব? ঈশ্বরে কি অন্যায় আছে? তাহা দূরে থাকুক। কারণ তিনি মোশিকে বলেন, “আমি যাহাকে দয়া করি, তাহাকে দয়া করিব; ও যাহার প্রতি করুণা করি, তাহার প্রতি করুণা করিব।” অতএব যে ইচ্ছা করে, বা যে দৌড়ে, তাহা হইতে এটী হয় না, কিন্তু দয়াকারী ঈশ্বর হইতে হয়। কেননা শাস্ত্র ফরৌণকে বলে, “আমি এই জন্যই তোমাকে উঠাইয়াছি, যেন তোমাতে আমার পরাক্রম দেখাই, আর যেন সমস্ত পৃথিবীতে আমার নাম কীর্ত্তিত হয়।” অতএব তিনি যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে দয়া করেন; এবং যাহাকে ইচ্ছা, তাহাকে কঠিন করেন। ইহাতে তুমি আমাকে বলিবে, তবে তিনি আবার দোষ ধরেন কেন? কারণ তাঁহার ইচ্ছার প্রতিরোধ কে করে? হে মনুষ্য, বরং, তুমি কে যে ঈশ্বরের প্রতিবাদ করিতেছ? নির্ম্মিত বস্তু কি নির্ম্মাতাকে বলিতে পারে, আমাকে এরূপ কেন গড়িলে? কিম্বা কাদার উপরে কুম্ভকারের কি এমন অধিকার নাই যে, একই মৃৎপিণ্ড হইতে একটী সমাদরের পাত্র, আর একটা অনাদরের পাত্র গড়িতে পারে? আর ইহাতেই বা কি?—যদি ঈশ্বর আপন ক্রোধ দেখাইবার ও আপন পরাক্রম জানাইবার ইচ্ছা করিয়া, বিনাশার্থে পরিপক্ব ক্রোধপাত্রদের প্রতি বিপুল সহিষ্ণুতায় ধৈর্য্য করিয়া থাকেন, এবং [এই জন্য করিয়া থাকেন,] যেন সেই দয়াপাত্রদের উপরে আপন প্রতাপ-ধন জ্ঞাত করেন, যাহাদিগকে প্রতাপের নিমিত্ত পূর্ব্বে প্রস্তুত করিয়াছেন, আর যাহাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, কেবল যিহূদীদের মধ্যে হইতে নয়, পরজাতিদেরও মধ্য হইতে আমাদিগকেই করিয়াছেন। যেমন তিনি হোশেয়-গ্রন্থেও বলেন, “যাহারা আমার প্রজা নয়, তাহাদিগকে আমি নিজ প্রজা বলিব, এবং যে প্রিয়তমা ছিল না, তাহাকে প্রিয়তমা বলিব। আর যে স্থানে তাহাদিগকে বলা গিয়াছিল, ‘তোমরা আমার প্রজা নও,’ সেই স্থানে তাহাদিগকে বলা যাইবে ‘জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র’।” আর যিশাইয় ইস্রায়েলের বিষয়ে এই কথা উচ্চৈঃস্বরে বলেন, “ইস্রায়েল-সন্তানগণের সংখ্যা যদি সমুদ্রের বালুকার ন্যায়ও হয়, অবশিষ্টাংশই পরিত্রাণ পাইবে; যেহেতুক প্রভু পৃথিবীতে আপন বাক্য, সাধন করিবেন, তাহা সম্পূর্ণ ও সংক্ষিপ্ত করিবেন।” আর যেমন যিশাইয় পূর্ব্বে বলিয়াছিলেন, “বাহিনীগণের প্রভু যদি আমাদের জন্য একটী বীজ অবশিষ্ট না রাখিতেন, তবে আমরা সদোমের তুল্য হইতাম, ও ঘমোরার তুল্য হইতাম।” তবে আমরা কি বলিব? পরজাতীয়েরা, যাহারা ধার্ম্মিকতার অনুধাবন করিত না, তাহারা ধার্ম্মিকতা পাইয়াছে, বিশ্বাসমূলক ধার্ম্মিকতা পাইয়াছে; কিন্তু ইস্রায়েল ধার্ম্মিকতার ব্যবস্থার অনুধাবন করিয়াও সেই ব্যবস্থা পর্য্যন্ত পঁহুছে নাই। কারণ কি? বিশ্বাস দ্বারা নয়, কিন্তু যেন কর্ম্ম দ্বারা তাহারা অনুধাবন করিত। তাহারা সেই ব্যাঘাতজনক প্রস্তরে ব্যাঘাত পাইল; যেমন লেখা আছে, “দেখ, আমি সিয়োনে ব্যাঘাতজনক প্রস্তর ও বিঘ্নজনক পাষাণ স্থাপন করিতেছি; আর যে তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না।” ভ্রাতৃগণ, আমার হৃদয়ের সুবাসনা এবং তাহাদের জন্য ঈশ্বরের কাছে বিনতি এই, যেন তাহাদের পরিত্রাণ হয়। কেননা আমি তাহাদের পক্ষে এই সাক্ষ্য দিতেছি যে, ঈশ্বরের বিষয়ে তাহাদের উদ্যোগ আছে, কিন্তু তাহা জ্ঞানানুযায়ী নয়। ফলতঃ ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা না জানায়, এবং নিজ ধার্ম্মিকতা স্থাপন করিবার চেষ্টা করায়, তাহারা ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার বশীভূত হয় নাই; কেননা ধার্ম্মিকতার নিমিত্ত, প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে, খ্রীষ্টই ব্যবস্থার পরিণাম। কারণ মোশি লিখেন, যে ব্যক্তি ব্যবস্থামূলক ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করে, সে তদ্দ্বারা জীবিত থাকিবে। কিন্তু বিশ্বাসমূলক ধার্ম্মিকতা এইরূপ বলে, মনে মনে বলিও না, ‘কে স্বর্গে আরোহণ করিবে?’—অর্থাৎ খ্রীষ্টকে নামাইয়া আনিবার জন্য—; অথবা ‘কে অগাধলোকে নামিবে?’—অর্থাৎ মৃতদের মধ্য হইতে খ্রীষ্টকে ঊর্দ্ধে আনিবার জন্য। কিন্তু কি বলে? ‘সেই বার্ত্তা তোমার নিকটবর্ত্তী, তোমার মুখে ও তোমার হৃদয়ে রহিয়াছে,’ অর্থাৎ বিশ্বাসেরই সেই বার্ত্তা, যাহা আমরা প্রচার করি। কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে। কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্ম্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য। কেননা শাস্ত্র বলে, “যে কেহ তাঁহার উপরে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না।” কারণ যিহূদী ও গ্রীকে কিছুই প্রভেদ নাই; কেননা সকলেরই একমাত্র প্রভু; যত লোক তাঁহাকে ডাকে, সেই সকলের পক্ষে তিনি ধনবান্‌। কারণ, “যে কেহ প্রভুর নামে ডাকে, সে পরিত্রাণ পাইবে।” তবে তাহারা যাঁহাতে বিশ্বাস করে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিবে? আর যাঁহার কথা শুনে নাই, কেমন করিয়া তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে? আর প্রচারক না থাকিলে কেমন করিয়া শুনিবে? আর প্রেরিত না হইলে কেমন করিয়া প্রচার করিবে? যেমন লিখিত আছে, “যাহারা মঙ্গলের সুসমাচার প্রচার করে, তাহাদের চরণ কেমন শোভা পায়।” কিন্তু সকলে সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় নাই। কারণ যিশাইয় কহেন, “হে প্রভু, আমরা যাহা শুনাইয়াছি, তাহা কে বিশ্বাস করিয়াছে?” অতএব বিশ্বাস শ্রবণ হইতে এবং শ্রবণ খ্রীষ্টের বাক্য দ্বারা হয়। কিন্তু আমি বলি, তাহারা কি শুনিতে পায় নাই? পাইয়াছে বই কি! “তাহাদের স্বর ব্যাপ্ত হইল সমস্ত পৃথিবীতে, তাহাদের বাক্য জগতের সীমা পর্য্যন্ত।” কিন্তু আমি বলি, ইস্রায়েল কি জানিতে পায় নাই? প্রথমে মোশি কহেন, “আমি ন-জাতি দ্বারা তোমাদের অন্তর্জ্বালা জন্মাইব; মূঢ় জাতি দ্বারা তোমাদিগকে ক্রুদ্ধ করিব।” আর যিশাইয় অতিশয় সাহসপূর্ব্বক বলেন, “যাহারা আমার অন্বেষণ করে নাই, তাহারা আমাকে পাইয়াছে, যাহারা আমার কাছে জিজ্ঞাসা করে নাই, তাহাদিগকে দর্শন দিয়াছি।” কিন্তু ইস্রায়েলের বিষয়ে তিনি কহেন, “আমি সমস্ত দিন অবাধ্য ও প্রতিকূলবাদী প্রজাবৃন্দের প্রতি হস্ত বিস্তার করিয়াছিলাম।” তবে আমি বলি, ঈশ্বর কি আপন প্রজাবৃন্দকে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিয়াছেন? তাহা দূরে থাকুক; আমিও ত এক জন ইস্রায়েলীয়, অব্রাহামের বংশজাত, বিন্যামীনের গোত্রজ। ঈশ্বর আপনার যে প্রজাবৃন্দকে পূর্ব্বে জ্ঞাত ছিলেন, তাহাদিগকে ঠেলিয়া ফেলেন নাই। অথবা তোমরা কি জান না, এলিয়ের ইতিহাসে শাস্ত্র কি বলে? তিনি ইস্রায়েলের বিপক্ষে ঈশ্বরের নিকটে এইরূপে অনুরোধ করেন, “প্রভু, তাহারা তোমার ভাববাদিগণকে বধ করিয়াছে, তোমার যজ্ঞবেদি সকল উৎপাটন করিয়াছে, আর আমি একাই অবশিষ্ট রহিলাম, আর তাহারা আমার প্রাণ লইতে চেষ্টা করিতেছে।” কিন্তু ঈশ্বরীয় বাণী তাঁহার প্রতি কি বলে? “বালের সম্মুখে যাহারা হাঁটু পাতে নাই, এমন সাত সহস্র লোককে আমি আপনার নিমিত্ত অবশিষ্ট রাখিয়াছি।” তদ্রূপ এই বর্ত্তমান কালেও অনুগ্রহের নির্ব্বাচন অনুসারে অবশিষ্ট এক অংশ রহিয়াছে। তাহা যখন অনুগ্রহে হইয়া থাকে, তখন আর কার্য্যহেতু হয় নাই; নতুবা অনুগ্রহ আর অনুগ্রহই রহিল না। তবে কি? ইস্রায়েল যাহার অন্বেষণ করে, তাহা পায় নাই, কিন্তু নির্ব্বাচিতেরা তাহা পাইয়াছে; অন্য সকলে কঠিনীভূত হইয়াছে, যেমন লিখিত আছে, “ঈশ্বর তাহাদিগকে জড়তার আত্মা দিয়াছেন; এমন চক্ষু দিয়াছেন, যাহা দেখিতে পায় না; এমন কর্ণ দিয়াছেন, যাহা শুনিতে পায় না, অদ্য পর্য্যন্ত;” —আর দায়ূদ বলেন, “তাহাদের মেজ তাহাদের জন্য ফাঁদ ও পাশস্বরূপ হউক, তাহা বিঘ্ন ও প্রতিফলস্বরূপ হউক। তাহাদের চক্ষু অন্ধ হউক, যেন তাহারা দেখিতে না পায়; তুমি তাহাদের পৃষ্ঠ সর্ব্বদা কুব্জ করিয়া রাখ।” তবে আমি বলি, তাহারা কি পতনের নিমিত্ত উছোট খাইয়াছে? তাহা দূরে থাকুক; বরং তাহাদের পতনে পরজাতীয়দের কাছে পরিত্রাণ উপস্থিত, যেন তাহাদের অন্তর্জ্বালা জন্মে। ভাল, তাহাদের পতনে যখন জগতের ধনাগম হইল, এবং তাহাদের ক্ষতিতে যখন পরজাতীয়দের ধনাগম হইল, তখন তাহাদের পূর্ণতায় আরও কত অধিক না হইবে, কিন্তু, হে পরজাতীয়েরা, তোমাদিগকে বলিতেছি; পরজাতীয়দের জন্য প্রেরিত বলিয়া আমি নিজ পরিচর্য্যা-পদের গৌরব করিতেছি; যদি কোন প্রকারে আমার স্বজাতীয়দের অন্তর্জ্বালা জন্মাইয়া তাহাদের মধ্যে কতকগুলিন লোকের পরিত্রাণ করিতে পারি। কারণ তাহাদের দূরীকরণে যখন জগতের সম্মিলন হইল, তখন তাহাদিগকে গ্রহণ করণে মৃতদের মধ্য হইতে জীবনলাভ বই আর কি হইবে? আর অগ্রিমাংশ যদি পবিত্র হয়, তবে সূজীর তালও পবিত্র; এবং মূল যদি পবিত্র হয়, তবে শাখা সকলও পবিত্র। আর কতকগুলি শাখা যদি ভাঙ্গিয়া ফেলা হইল, এবং তুমি বন্য জিতবৃক্ষের চারা হইলেও যদি তাহাদের মধ্যে তোমাকে কলমরূপে লাগান গেল, আর তুমি জিতবৃক্ষের রসের মূলের অংশী হইলে, তবে সেই শাখা সকলের বিরুদ্ধে শ্লাঘা করিও না; কিন্তু যদি শ্লাঘা কর, তুমি মূলকে ধারণ করিতেছ না, কিন্তু মূলই তোমাকে ধারণ করিতেছে। ইহাতে তুমি বলিবে, আমাকে কলমরূপে লাগাইবার জন্যই কতকগুলি শাখা ভাঙ্গিয়া ফেলা হইয়াছে। বেশ কথা, অবিশ্বাস হেতুই উহাদিগকে ভাঙ্গিয়া ফেলা হইয়াছে, এবং বিশ্বাস হেতুই তুমি দাঁড়াইয়া আছ। উচ্চ উচ্চ বিষয় ভাবিও না, বরং ভয় কর; কেননা ঈশ্বর যখন সেই প্রকৃত শাখাগুলির প্রতি মমতা করেন নাই, তখন তোমার প্রতিও মমতা করিবেন না। অতএব ঈশ্বরের মধুর ভাব ও কঠোর ভাব দেখ; যাহারা পতিত হইল, তাহাদের প্রতি কঠোর ভাব, এবং তোমার প্রতি ঈশ্বরের মধুর ভাব, যদি তুমি সেই মধুর ভাবের শরণাপন্ন থাক; নতুবা তুমিও ছিন্ন হইবে। আবার উহারা যদি আপনাদের অবিশ্বাসে না থাকে, তবে উহাদিগকেও লাগান যাইবে, কারণ ঈশ্বর উহাদিগকে আবার লাগাইতে সমর্থ আছেন। বস্তুতঃ যেটী স্বভাবতঃ বন্য জিতবৃক্ষ, তোমাকে তাহা হইতে কাটিয়া লইয়া যখন স্বভাবের বিপরীতে উত্তম জিতবৃক্ষে লাগান গিয়াছে, তখন প্রকৃত শাখা যে উহারা উহাদিগকে নিজ জিতবৃক্ষে লাগান যাইবে, ইহা কত অধিক নিশ্চয়। কারণ, ভ্রাতৃগণ, তোমরা যেন আপনাদের জ্ঞানে বুদ্ধিমান্‌ না হও, এজন্য আমি ইচ্ছা করি না যে, তোমরা এই নিগূঢ়তত্ত্ব অজ্ঞাত থাক যে, কতক পরিমাণে ইস্রায়েলের কঠিনতা ঘটিয়াছে, যে পর্য্যন্ত পরজাতীয়দের পূর্ণ সংখ্যা প্রবেশ না করে; আর এই প্রকারে সমস্ত ইস্রায়েল পরিত্রাণ পাইবে; যেমন লিখিত আছে, “সিয়োন হইতে মুক্তিদাতা আসিবেন; তিনি যাকোব হইতে ভক্তিহীনতা দূর করিবেন; আর ইহাই তাহাদের পক্ষে আমার নিয়ম, যখন আমি তাহাদের পাপ সকল হরণ করিব।” উহারা সুসমাচারের সম্বন্ধে তোমাদের নিমিত্ত শত্রু, কিন্তু নির্ব্বাচনের সম্বন্ধে পিতৃপুরুষগণের নিমিত্ত প্রিয়পাত্র। কেননা ঈশ্বরের অনুগ্রহদান সকল ও তাঁহার আহ্বান অনুশোচনা-রহিত। ফলতঃ তোমরা যেমন পূর্ব্বে ঈশ্বরের অবাধ্য ছিলে, কিন্তু এখন উহাদের অবাধ্যতা প্রযুক্ত দয়া পাইয়াছ, তেমনি ইহারাও এখন অবাধ্য হইয়াছে, যেন তোমাদের দয়াপ্রাপ্তিতে তাহারাও এখন দয়া পায়। কেননা ঈশ্বর সকলকেই অবাধ্যতার কাছে রুদ্ধ করিয়াছেন, যেন তিনি সকলেরই প্রতি দয়া করিতে পারেন। আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়! কেননা প্রভুর মন কে জানিয়াছে? “তাঁহার মন্ত্রীই বা কে হইয়াছে?” অথবা কে অগ্রে তাঁহাকে কিছু দান করিয়াছে যে, এজন্য তাহার প্রত্যুপকার করিতে হইবে? যেহেতুক সকলই তাঁহা হইতে ও তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত। যুগে যুগে তাঁহারই গৌরব হউক। আমেন। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের নানা করুণার অনুরোধে আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা। আর এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ। বস্তুতঃ আমাকে যে অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, তাহার গুণে আমি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী প্রত্যেক জনকে বলিতেছি, আপনার বিষয়ে যেমন বোধ করা উপযুক্ত, কেহ তদপেক্ষা বড় বোধ না করুক; কিন্তু ঈশ্বর যাহাকে যে পরিমাণে বিশ্বাস বিতরণ করিয়াছেন, তদনুসারে সে সুবোধ হইবারই চেষ্টায় আপনার বিষয়ে বোধ করুক। কেননা যেমন আমাদের এক দেহে অনেক অঙ্গ, কিন্তু সকল অঙ্গের একরূপ কার্য্য নয়, তেমনি এই অনেকে যে আমরা, আমরা খ্রীষ্টে এক দেহ এবং প্রত্যেকে পরস্পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। আর আমাদিগকে যে অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, তদনুসারে যখন আমরা বিশেষ বিশেষ বর প্রাপ্ত হইয়াছি, তখন সেই বর যদি ভাববাণী হয়, তবে আইস, বিশ্বাসের পরিমাণ অনুসারে ভাববাণী বলি; অথবা তাহা যদি পরিচর্য্যা হয়, তবে সেই পরিচর্য্যায় নিবিষ্ট হই; অথবা যে শিক্ষা দেয়, সে শিক্ষাদানে, কিম্বা যে উপদেশ দেয়, সে উপদেশ দানে নিবিষ্ট হউক; যে দান করে, সে সরল ভাবে, যে শাসন করে, সে উদ্যোগ সহকারে, যে দয়া করে, সে হৃষ্টচিত্তে করুক। প্রেম নিষ্কপট হউক। যাহা মন্দ তাহা নিতান্তই ঘৃণা কর; যাহা ভাল তাহাতে আসক্ত হও। ভ্রাতৃপ্রেমে পরস্পর স্নেহশীল হও; সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর। যত্নে শিথিল হইও না, আত্মায় উত্তপ্ত হও, প্রভুর দাসত্ব কর, প্রত্যাশায় আনন্দ কর, ক্লেশে ধৈর্য্যশীল হও, প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাক, পবিত্রগণের অভাবের সহভাগী হও, অতিথি-সেবায় রত হও। যাহারা তাড়না করে, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ কর, আশীর্ব্বাদ কর, শাপ দিও না। যাহারা আনন্দ করে, তাহাদের সহিত আনন্দ কর; যাহারা রোদন করে, তাহাদের সহিত রোদন কর। তোমরা পরস্পরের প্রতি একমনা হও, উচ্চ উচ্চ বিষয় ভাবিও না, কিন্তু অবনত বিষয় সকলের সহিত আকর্ষিত হও। আপনাদের জ্ঞানে বুদ্ধিমান্‌ হইও না। মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর। যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক। হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও, কারণ লেখা আছে, “প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু বলেন।” বরং “তোমার শত্রু যদি ক্ষুধিত হয়, তাহাকে ভোজন করাও; যদি সে পিপাসিত হয়, তাহাকে পান করাও; কেননা তাহা করিলে তুমি তাহার মস্তকে জ্বলন্ত অঙ্গারের রাশি করিয়া রাখিবে।” তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর। প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক; কেননা ঈশ্বরের নিরূপিত ব্যতিরেকে কর্ত্তৃত্ব হয় না; এবং যে সকল কর্ত্তৃপক্ষ আছেন, তাঁহারা ঈশ্বর-নিযুক্ত। অতএব যে কেহ কর্ত্তৃত্বের প্রতিরোধী হয়, সে ঈশ্বরের নিয়োগের প্রতিরোধ করে; আর যাহারা প্রতিরোধ করে, তাহারা আপনাদের উপরে বিচারাজ্ঞা প্রাপ্ত হইবে। কেননা শাসনকর্ত্তারা সৎকার্য্যের প্রতি নয়, কিন্তু মন্দ কার্য্যের প্রতি ভয়াবহ। আর তুমি কি কর্ত্তৃপক্ষের কাছে নির্ভয় হইতে চাহ? সদাচরণ কর, করিলে তাঁহার নিকট হইতে প্রশংসা পাইবে। কেননা সদাচরণের নিমিত্ত তিনি তোমার পক্ষে ঈশ্বরেরই পরিচারক। কিন্তু যদি মন্দ আচরণ কর, তবে ভীত হও, কেননা তিনি বৃথা খড়্গ ধারণ করেন না; কারণ তিনি ঈশ্বরের পরিচারক, যে মন্দ আচরণ করে, ক্রোধ সাধনের জন্য তাহার প্রতিশোধদাতা। অতএব কেবল ক্রোধের ভয়ে নয়, কিন্তু সংবেদেরও নিমিত্ত বশীভূত হওয়া আবশ্যক। কারণ এই জন্য তোমরা রাজকরও দিয়া থাক; কেননা তাঁহারা ঈশ্বরের সেবাকারী, সেই কার্য্যে নিবিষ্ট রহিয়াছেন। যাহার যাহা প্রাপ্য, তাহাকে তাহা দেও। যাঁহাকে কর দিতে হয়, কর দেও; যাঁহাকে শুল্ক দিতে হয়, শুল্ক দেও; যাঁহাকে ভয় করিতে হয়, ভয় কর; যাঁহাকে সমাদর করিতে হয়, সমাদর কর। তোমরা কাহারও কিছুই ধারিও না, কেবল পরস্পর প্রেম ধারিও; কেননা পরকে যে প্রেম করে, সে ব্যবস্থা পূর্ণরূপে পালন করিয়াছে। কারণ “ব্যভিচার করিও না, নরহত্যা করিও না, চুরি করিও না, লোভ করিও না,” এবং আর যে কোন আজ্ঞা থাকুক, সে সকল এই বচনে সঙ্কলিত হইয়াছে, “প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিও।” প্রেম প্রতিবাসীর অনিষ্ট সাধন করে না, অতএব প্রেমই ব্যবস্থার পূর্ণসাধন। আর এরূপ কর, কারণ তোমরা এই কাল জ্ঞাত আছ; ফলতঃ এখন তোমাদের নিদ্রা হইতে জাগিবার সময় হইল; কেননা যখন আমরা বিশ্বাস করিয়াছিলাম, তখন অপেক্ষা এখন পরিত্রাণ আমাদের আরও সন্নিকট। রাত্রি প্রায় গেল, দিবস আগতপ্রায়; অতএব আইস, আমরা অন্ধকারের ক্রিয়া সকল ত্যাগ করি, এবং দীপ্তির রণসজ্জা পরিধান করি। আইস, রঙ্গরসে ও মত্ততায় নয়, লম্পটতায় ও স্বেচ্ছাচারিতায় নয়, বিবাদে ও ঈর্ষায় নয়, কিন্তু দিবসের উপযুক্ত শিষ্ট ভাবে চলি। কিন্তু তোমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে পরিধান কর, অভিলাষ পূর্ণ করিবার জন্য নিজ মাংসের নিমিত্ত চিন্তা করিও না। বিশ্বাসে যে দুর্ব্বল, তাহাকে গ্রহণ কর, কিন্তু তর্কবিতর্ক সম্বন্ধীয় বিষয়ের বিচারার্থে নয়। এক ব্যক্তির বিশ্বাস আছে যে, সর্ব্বপ্রকার দ্রব্যই খাইতে পারে, কিন্তু যে দুর্ব্বল, সে শাক খায়। যে যাহা ভোজন করে, সে এমন ব্যক্তিকে তুচ্ছা না করুক, যে তাহা ভোজন করে না; এবং যে যাহা ভোজন না করে, সে এমন ব্যক্তির বিচার না করুক, যে তাহা ভোজন করে; কারণ ঈশ্বর তাহাকে গ্রহণ করিয়াছেন। তুমি কে, যে অপরের ভৃত্যের বিচার কর? নিজ প্রভুরই নিকটে হয় সে স্থির থাকে, নয় পতিত হয়। বরং তাহাকে স্থির রাখা যাইবে, কেননা প্রভু তাহাকে স্থির রাখিতে পারেন। এক জন এক দিন হইতে অন্য দিন অধিক মান্য করে; আর এক জন সকল দিনকেই সমানরূপে মান্য করে; প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন মনে স্থিরনিশ্চয় হউক। দিন যে মানে, সে প্রভুর উদ্দেশেই মানে; আর যে ভোজন করে, সে প্রভুর উদ্দেশেই ভোজন করে, কেননা সে ঈশ্বরের ধন্যবাদ করে; এবং যে ভোজন করে না, সেও প্রভুর উদ্দেশেই ভোজন করে না, এবং ঈশ্বরের ধন্যবাদ করে। কারণ আমাদের মধ্যে কেহ আপনার উদ্দেশে জীবিত থাকে না, এবং কেহ আপনার উদ্দেশে মরে না। কেননা যদি আমরা জীবিত থাকি, তবে প্রভুরই উদ্দেশে জীবিত থাকি; এবং যদি মরি, তবে প্রভুরই উদ্দেশে মরি। অতএব আমরা জীবিত থাকি বা মরি, আমরা প্রভুরই। কারণ এই উদ্দেশে খ্রীষ্ট মরিলেন ও জীবিত হইলেন, যেন তিনি মৃত ও জীবিত উভয়েরই প্রভু হন। কিন্তু তুমি কেন তোমার ভ্রাতার বিচার কর? কেনই বা তুমি তোমার ভ্রাতাকে তুচ্ছ কর? আমরা সকলেই ত ঈশ্বরের বিচারাসনের সম্মুখে দাঁড়াইব। কেননা লিখিত আছে, “প্রভু কহিতেছেন, আমার জীবনের দিব্য, আমার কাছে প্রত্যেক জানু পাতিত হইবে, এবং প্রত্যেক জিহ্বা ঈশ্বরের গৌরব স্বীকার করিবে।” সুতরাং আমাদের প্রত্যেক জনকে ঈশ্বরের কাছে আপন আপন নিকাশ দিতে হইবে। অতএব, আইস, আমরা পরস্পর কেহ কাহারও বিচার আর না করি, বরং তোমরা এই বিচার কর যে, ভ্রাতার ব্যাঘাতজনক কি বিঘ্নজনক কিছু রাখা অকর্ত্তব্য। আমি জানি, এবং প্রভু যীশুতে নিশ্চয় বুঝিয়াছি, কোন বস্তুই স্বভাবতঃ অপবিত্র নয়; কিন্তু যে যাহা অপবিত্র জ্ঞান করে, তাহারই পক্ষে তাহা অপবিত্র। বস্তুতঃ তোমার ভ্রাতা যদি খাদ্য সামগ্রী প্রযুক্ত দুঃখিত হয়, তবে তুমি আর প্রেমের নিয়মে চলিতেছ না। যাহার নিমিত্ত খ্রীষ্ট মরিলেন, তোমার খাদ্য সামগ্রী দ্বারা তাহাকে নষ্ট করিও না। অতএব তোমাদের যাহা ভাল, তাহা নিন্দার বিষয় না হউক। কারণ ঈশ্বরের রাজ্য ভোজন পান নয়, কিন্তু ধার্ম্মিকতা, শান্তি এবং পবিত্র আত্মাতে আনন্দ। কেননা যে এ বিষয়ে খ্রীষ্টের দাসত্ব করে, সে ঈশ্বরের প্রীতিপাত্র, এবং মনুষ্যদের কাছেও পরীক্ষাসিদ্ধ। অতএব যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, আমরা সেই সকলের অনুধাবন করি। খাদ্যের নিমিত্ত ঈশ্বরের কর্ম্ম ভাঙ্গিয়া ফেলিও না। সকল বস্তুই শুচি বটে, কিন্তু যে ব্যক্তির যাহা ভোজন করিলে ব্যাঘাত জন্মে, তাহার পক্ষে তাহা মন্দ। মাংস ভক্ষণ বা দ্রাক্ষারস পান, অথবা যে কিছুতে তোমার ভ্রাতা ব্যাঘাত কি বিঘ্ন পায়, কি দুর্ব্বল হয়, এমন কিছুই না করা ভাল। তোমার যে বিশ্বাস আছে, তাহা আপনার কাছেই ঈশ্বরের সম্মুখে রাখ। ধন্য সেই ব্যক্তি, যে, যাহা গ্রাহ্য করে, তাহাতে আপনার বিচার না করে। কিন্তু যাহার সন্দেহ আছে, সে যদি ভোজন করে, তবে সে দোষী সাব্যস্ত হইল, কারণ তাহার ভোজন বিশ্বাসমূলক নয়; আর যাহা কিছু বিশ্বাসমূলক নয়, তাহাই পাপ। কিন্তু বলবান্‌ যে আমরা, আমাদের উচিত, যেন দুর্ব্বলদিগের দুর্ব্বলতা বহন করি, আর আপনাদিগকে তুষ্ট না করি। আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক। কারণ খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না, বরং যেমন লিখিত আছে, “যাহারা তোমাকে তিরস্কার করে, তাহাদের তিরস্কার আমার উপরে পড়িল।” কারণ পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই। ধৈর্য্যের ও সান্ত্বনার ঈশ্বর এমন বর দিউন, যাহাতে তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর অনুরূপে পরস্পর একমনা হও, যেন তোমরা একচিত্তে এক মুখে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বরের ও পিতার গৌরব কর। অতএব যেমন খ্রীষ্ট তোমাদিগকে গ্রহণ করিলেন, তেমনি ঈশ্বরের গৌরবের জন্য তোমরা এক জন অন্যকে গ্রহণ কর। কেননা আমি বলি যে, ঈশ্বরের সত্যের জন্যই খ্রীষ্ট ত্বক্‌ছেদ সম্বন্ধীয় পরিচারক হইয়াছেন, যেন তিনি পিতৃপুরুষদিগকে দত্ত প্রতিজ্ঞা সকল স্থির করেন, এবং পরজাতীয়েরা যেন ঈশ্বরের দয়ার জন্যই তাঁহার গৌরব করে; যেমন লিখিত আছে, “এই জন্য আমি জাতিগণের মধ্যে তোমার গৌরব স্বীকার করিব, তোমার নামের উদ্দেশে স্তোত্র গান করিব।” আবার তিনি বলেন, “জাতিগণ! তাঁহার প্রজাদের সহিত হর্ষনাদ কর।” আবার, “সমস্ত জাতি, প্রভুর প্রশংসা কর, সমস্ত লোকবৃন্দ তাঁহার প্রশংসা করুক।” আবার যিশাইয় বলেন, “যিশয়ের মূল থাকিবে, আর জাতিগণের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতে এক জন দাঁড়াইবেন, তাঁহারই উপরে জাতিগণ প্রত্যাশা রাখিবে।” প্রত্যাশার ঈশ্বর তোমাদিগকে বিশ্বাস দ্বারা সমস্ত আনন্দে ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করুন, যেন তোমরা পবিত্র আত্মার পরাক্রমে প্রত্যাশায় উপচিয়া পড়। আর, হে আমার ভ্রাতৃগণ, আমি আপনিও তোমাদের বিষয়ে নিশ্চয় বুঝিতেছি যে, তোমরা আপনারা মঙ্গলভাবে পূর্ণ, সমুদয় জ্ঞানে পরিপূর্ণ, পরস্পরকে চেতনাপ্রদানেও সমর্থ। তথাপি তোমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিতেছি বলিয়া কয়েকটী বিষয় অপেক্ষাকৃত সাহসপূর্ব্বক লিখিলাম, কারণ ঈশ্বরকর্ত্তৃক আমাকে এই অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, যেন আমি পরজাতীয়দের নিকটে খ্রীষ্ট যীশুর সেবক হইয়া, ঈশ্বরের সুসমাচারের যাজকত্ব করি, যেন পরজাতীয়েরা পবিত্র আত্মাতে পবিত্রীকৃত উপহাররূপে গ্রাহ্য হয়। অতএব খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরসম্বন্ধীয় বিষয়ে আমার শ্লাঘা করিবার অধিকার আছে। কেননা আমি সে বিষয়ে এমন একটী কথাও বলিতে সাহস করিব না, যাহা পরজাতীয়দিগকে আজ্ঞাবহ করণার্থে খ্রীষ্ট আমা দ্বারা সাধন করেন নাই; তিনি বাক্যে ও কার্য্যে, নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণের পরাক্রমে, পবিত্র আত্মার পরাক্রমে এইরূপ সাধন করিয়াছেন যে, যিরূশালেম হইতে ইল্লুরিকা পর্য্যন্ত চারিদিকে আমি খ্রীষ্টের সুসমাচার সম্পূর্ণরূপে প্রচার করিয়াছি। আর আমার লক্ষ্য এই, খ্রীষ্টের নাম যে স্থানে কখনও উচ্চারিত হয় নাই, এমন স্থানে যেন সুসমাচার প্রচার করি, পরের স্থাপিত ভিত্তিমূলের উপরে যেন না গাঁথি; কিন্তু যেমন লিখিত আছে, “তাঁহার সংবাদ যাহাদিগকে দেওয়া যায় নাই, তাহারা দেখিতে পাইবে; এবং যাহারা শুনে নাই, তাহারা বুঝিবে।” এই কারণ বশতঃ আমি তোমাদের নিকটে যাইতে অনেক বার নিবারিত হইয়া আসিয়াছি। কিন্তু এখন এই সকল অঞ্চলে আমার আর স্থান নাই, এবং অনেক বৎসর ধরিয়া আকাঙ্ক্ষা করিয়া আসিতেছি যে, স্পেন দেশে যাইবার সময়ে তোমাদের ওখানে যাইব; কারণ আশা করি যে, যাইবার সময়ে তোমাদিগকে দেখিব, এবং প্রথমে তোমাদের সহবাসে কতক পরিমাণে তৃপ্ত হইলে তোমরা আমাকে সেখানে আগাইয়া দিবে। কিন্তু এক্ষণে পবিত্রদিগের পরিচর্য্যা করিতে যিরূশালেমে যাইতেছি। কারণ যিরূশালেমস্থ পবিত্রদিগের মধ্যে যাহারা দীনহীন, তাহাদের জন্য মাকিদনিয়া ও আখায়া দেশীয়েরা প্রীত হইয়া সহভাগিতাসূচক কিছু চাঁদা সংগ্রহ করিয়াছে। বাস্তবিক তাহারা প্রীত হইয়াই তাহা করিয়াছে, আর তাহারা উহাদের কাছে ঋণীও আছে; কেননা যখন পরজাতীয়েরা আত্মিক বিষয়ে তাহাদের সহভাগী হইয়াছে, তখন উহারাও সাংসারিক বিষয়ে তাহাদের সেবা করিবার জন্য ঋণী। অতএব সেই কর্ম্ম সম্পন্ন করিবার এবং মুদ্রাঙ্ক দিয়া সেই ফল তাহাদিগকে দিবার পর, আমি তোমাদের নিকট দিয়া স্পেন দেশে গমন করিব। আর আমি জানি, যখন তোমাদের নিকটে আসিব, তখন খ্রীষ্টের আশীর্ব্বাদের পূর্ণতায় আসিব। ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপরোধে এবং আত্মার প্রেমের উপরোধে আমি তোমাদিগকে বিনতি করি, তোমরা ঈশ্বরের কাছে আমার নিমিত্ত প্রার্থনা দ্বারা আমার সহিত প্রাণপণ কর, যেন আমি যিহূদিয়াস্থ অবাধ্য লোকদের হইতে রক্ষা পাই, এবং যিরূশালেমের নিমিত্ত আমার যে পরিচর্য্যা, তাহা যেন পবিত্রদিগের নিকটে গ্রাহ্য হয়; ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমি যেন তোমাদের নিকটে আনন্দে উপস্থিত হইয়া তোমাদের সঙ্গে প্রাণ জুড়াইতে পারি। শান্তির ঈশ্বর তোমাদের সকলের সঙ্গে থাকুন। আমেন। আমাদের ভগিনী, কিংক্রিয়াস্থ মণ্ডলীর পরিচারিকা, ফৈবীর জন্য আমি তোমাদের কাছে সুপারিস করিতেছি, যেন তোমরা তাঁহাকে প্রভুতে, পবিত্রগণের যথাযোগ্য ভাবে, গ্রহণ কর, এবং যে কোন বিষয়ে তোমাদের হইতে উপকারের তাঁহার প্রয়োজন হইতে পারে, তাহা কর; কেননা তিনিও অনেকের এবং আমার নিজেরও উপকারিণী হইয়াছেন। খ্রীষ্ট যীশুতে আমার সহকারী প্রিষ্কা ও আক্কিলাকে মঙ্গলবাদ কর; তাঁহারা আমার প্রাণের নিমিত্তে আপনাদের গ্রীবা পাতিয়া দিয়াছিলেন; কেবল আমিই যে তাঁহাদের ধন্যবাদ করি, এমন নয়, কিন্তু পরজাতীয়দের সমুদয় মণ্ডলীও করে; আর তাঁহাদের গৃহস্থিত মণ্ডলীকেও মঙ্গলবাদ কর। আমার প্রিয় ইপেনিত, যিনি খ্রীষ্টের উদ্দেশে এশিয়া দেশের অগ্রিমাংশ, তাঁহাকে মঙ্গলবাদ কর। মরিয়ম, যিনি তোমাদের নিমিত্ত বহু পরিশ্রম করিয়াছেন, তাঁহাকে মঙ্গলবাদ কর। আমার স্বজাতীয় ও আমার সহবন্দি আন্দ্রনীক ও যূনিয়কে মঙ্গলবাদ কর; তাঁহারা প্রেরিতদের মধ্যে সুপরিচিত ও আমার পূর্ব্বে খ্রীষ্টের আশ্রিত হন। প্রভুতে আমার প্রিয় যে আম্‌প্লিয়াত, তাঁহাকে মঙ্গলবাদ কর। খ্রীষ্টে আমাদের সহকারী ঊর্ব্বাণকে এবং আমার প্রিয় স্তাখুকে মঙ্গলবাদ কর। খ্রীষ্টে পরীক্ষাসিদ্ধ আপিল্লিকে মঙ্গলবাদ কর। আরিষ্টবুলের পরিজনগণকে মঙ্গলবাদ কর। আমার স্বজাতীয় হেরোদিয়োনকে মঙ্গলবাদ কর। নার্কিসের পরিজনবর্গের মধ্যে যাঁহারা প্রভুতে আছেন, তাঁহাদিগকে মঙ্গলবাদ কর। ক্রফেণা ও ক্রফোষা, যাঁহারা প্রভুতে পরিশ্রম করেন, তাঁহাদিগকে মঙ্গলবাদ কর। প্রিয়া পর্ষী, যিনি প্রভুতে অত্যন্ত পরিশ্রম করিয়াছেন, তাঁহাকে মঙ্গলবাদ কর। প্রভুতে মনোনীত রূফকে, আর তাঁহার মাতাকে —যিনি আমারও মাতা—মঙ্গলবাদ কর। অসুঙ্ক্রিত, ফ্রিগোন, হর্ম্মিপাত্রোবা, হর্ম্মা, এবং তাঁহাদের সঙ্গের ভ্রাতৃগণকে মঙ্গলবাদ কর। ফিললগ ও যুলিয়া, নীরিয় ও তাঁহার ভগিনী এবং ওলুম্প, ও তাঁহাদের সঙ্গের সমস্ত পবিত্র লোককে মঙ্গলবাদ কর। তোমরা পবিত্র চুম্বনে পরস্পর মঙ্গলবাদ কর। খ্রীষ্টের সমস্ত মণ্ডলী তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছে। ভ্রাতৃগণ, আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা যে শিক্ষা পাইয়াছ, তাহার বিপরীতে যাহারা দলাদলি ও বিঘ্ন জন্মায়, তাহাদিগকে চিনিয়া রাখ ও তাহাদের হইতে দূরে থাক। কেননা এই প্রকার লোকেরা আমাদের প্রভু খ্রীষ্টের দাসত্ব করে না, কিন্তু আপন আপন উদরের দাসত্ব করে, এবং মধুর বাক্য ও স্তুতিবাদ দ্বারা সরল লোকদের মন ভুলায়। কেননা তোমাদের আজ্ঞাবহতার কথা সকল লোকের নিকটে ব্যাপিয়াছে। অতএব তোমাদের জন্য আমি আনন্দ করিতেছি; কিন্তু আমার ইচ্ছা এই যে, তোমরা উত্তম বিষয়ে বিজ্ঞ ও মন্দ বিষয়ে অমায়িক হও। আর শান্তির ঈশ্বর ত্বরায় শয়তানকে তোমাদের পদতলে দলিত করিবেন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের সহবর্ত্তী হউক। আমার সহকারী তীমথিয় এবং আমার স্বজাতীয় লুকিয়, যাসোন ও সোষিপাত্র তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। এই পত্রলেখক আমি তর্ত্তিয় প্রভুতে তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছি। আমার এবং সমস্ত মণ্ডলীর আতিথ্যকারী গায়ঃ তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। এই নগরের ধনাধ্যক্ষ ইরাস্ত এবং ভ্রাতা ক্বার্ত্ত তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। যিনি তোমাদিগকে সুস্থির করিতে সমর্থ—আমার সুসমাচার অনুসারে ও যীশু খ্রীষ্ট-বিষয়ক প্রচার অনুসারে, সেই নিগূঢ়তত্ত্বের প্রকাশ অনুসারে, যাহা অনাদি কাল অবধি অকথিত ছিল, কিন্তু সম্প্রতি ব্যক্ত হইয়াছে, এবং ভাববাদিগণের লিখিত গ্রন্থ দ্বারা সনাতন ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে, বিশ্বাসের আজ্ঞাবহতার নিমিত্তে, সর্ব্বজাতির নিকটে জ্ঞাত করা গিয়াছে, যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা সেই একমাত্র প্রজ্ঞাবান্‌ ঈশ্বরের গৌরব যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে হউক। আমেন। পৌল, ঈশ্বরের ইচ্ছাক্রমে যীশু খ্রীষ্টের আহূত প্রেরিত, এবং ভ্রাতা সোস্থিনি —করিন্থে স্থিত ঈশ্বরের মণ্ডলীর সমীপে, খ্রীষ্ট যীশুতে পবিত্রীকৃত ও আহূত পবিত্রগণের সমীপে, এবং যাহারা সর্ব্বস্থানে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ডাকে, তাহাদের সর্ব্বজন সমীপে; তিনি তাহাদের এবং আমাদের প্রভু। আমাদের পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ খ্রীষ্ট যীশুতে তোমাদিগকে দত্ত হইয়াছে, তাহার জন্য আমি তোমাদের বিষয়ে নিয়ত ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি; কেননা তাঁহাতেই তোমরা সর্ব্ববিষয়ে, সর্ব্ববিধ বাক্যে ও সর্ব্ববিধ জ্ঞানে ধনবান্‌ হইয়াছ, এইরূপে খ্রীষ্টের সাক্ষ্য তোমাদের মধ্যে স্থিরীকৃত হইয়াছে। এজন্য তোমরা কোন বরে পিছাইয়া পড় নাই; আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশের অপেক্ষা করিতেছ; আর তিনি তোমাদিগকে শেষ পর্য্যন্ত স্থির রাখিবেন, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দিনে অনিন্দনীয় রাখিবেন। ঈশ্বর বিশ্বাস্য, যাঁহার দ্বারা তোমরা তাঁহার পুত্র আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সহভাগিতার নিমিত্ত আহূত হইয়াছ। কিন্তু হে ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে আমি তোমাদিগকে বিনয় করিয়া বলি, তোমরা সকলে একই কথা বল, তোমাদের মধ্যে দলাদলি না হউক, কিন্তু এক মনে ও এক বিচারে পরিপক্ব হও। কেননা, হে আমার ভ্রাতৃগণ, আমি ক্লোয়ীর পরিজনের দ্বারা তোমাদের বিষয়ে সংবাদ পাইয়াছি যে, তোমাদের মধ্যে বিবাদ আছে। আমি এই কথা বলিতেছি যে, তোমরা প্রতিজন বলিয়া থাক, আমি পৌলের, আর আমি আপল্লোর, আর আমি কৈফার, আর আমি খ্রীষ্টের। খ্রীষ্ট কি বিভক্ত হইয়াছেন? পৌল কি তোমাদের নিমিত্ত ক্রুশে হত হইয়াছে? অথবা পৌলের নামে কি তোমরা বাপ্তাইজিত হইয়াছ? ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি যে, আমি তোমাদের মধ্যে ক্রীষ্প ও গায়ঃ ব্যতীত আর কাহাকেও বাপ্তাইজ করি নাই, যেন কেহ না বলে যে, তোমরা আমার নামে বাপ্তাইজিত হইয়াছ। আর স্তিফানের পরিজনকেও বাপ্তাইজ করিয়াছি, আর কাহাকেও যে বাপ্তাইজ করিয়াছি, তাহা জানি না। কারণ খ্রীষ্ট আমাকে বাপ্তাইজ করিবার নিমিত্ত প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু সুসমাচার প্রচার করিবার নিমিত্ত; তাহাও বিজ্ঞানের বাক্যে নয়, যেন খ্রীষ্টের ক্রুশ বিফল না হয়। কারণ সেই ক্রুশের কথা, যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদের কাছে মূর্খতা, কিন্তু পরিত্রাণ পাইতেছি যে আমরা, আমাদের কাছে তাহা ঈশ্বরের পরাক্রমস্বরূপ। কারণ লিখিত আছে, “আমি জ্ঞানবান্‌দের জ্ঞান নষ্ট করিব, বিবেচক লোকদের বিবেচনা ব্যর্থ করিব।” জ্ঞানবান্‌ কোথায়? অধ্যাপক কোথায়? এই যুগের বাদানুবাদকারী কোথায়? ঈশ্বর কি জগতের জ্ঞানকে মূর্খতায় পরিণত করেন নাই? কারণ, ঈশ্বরের জ্ঞানক্রমে যখন জগৎ নিজ জ্ঞান দ্বারা ঈশ্বরকে জানিতে পায় নাই, তখন প্রচারের মূর্খতা দ্বারা বিশ্বাসকারীদের পরিত্রাণ করিতে ঈশ্বরের সুবাসনা হইল। কেননা যিহূদীরা চিহ্ন চায়, এবং গ্রীকেরা জ্ঞানের অন্বেষণ করে; কিন্তু আমরা ক্রুশে হত খ্রীষ্টকে প্রচার করি; তিনি যিহূদীদের কাছে বিঘ্ন ও পরজাতিদের কাছে মূর্খতাস্বরূপ, কিন্তু যিহূদী ও গ্রীক, আহূত সকলের কাছে খ্রীষ্ট ঈশ্বরেরই পরাক্রম ও ঈশ্বরেরই জ্ঞানস্বরূপ। কেননা ঈশ্বরের যে মূর্খতা, তাহা মনুষ্যদের অপেক্ষা অধিক জ্ঞানযুক্ত, এবং ঈশ্বরের যে দুর্ব্বলতা, তাহা মনুষ্যদের অপেক্ষা অধিক সবল। কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদের আহ্বান দেখ, যেহেতুক মাংস অনুসারে জ্ঞানবান্‌ অনেক নাই, পরাক্রমী অনেক নাই, উচ্চ পদস্থ অনেক নাই; কিন্তু ঈশ্বর জগতীস্থ মূর্খ বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন জ্ঞানবান্‌দিগকে লজ্জা দেন; এবং ঈশ্বর জগতের দুর্ব্বল বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন শক্তিমন্ত বিষয় সকলকে লজ্জা দেন; এবং জগতের যাহা যাহা নীচ ও যাহা যাহা তুচ্ছ, যাহা যাহা কিছু নয়, সেই সকল ঈশ্বর মনোনীত করিলেন, যেন, যাহা যাহা আছে, সে সকল অকিঞ্চন করেন; যেন কোন মর্ত্ত্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে শ্লাঘা না করে। কিন্তু তাঁহা হইতে তোমরা সেই খ্রীষ্ট যীশুতে আছ, যিনি হইয়াছেন আমাদের জন্য ঈশ্বর হইতে জ্ঞান—ধার্ম্মিকতা ও পবিত্রতা এবং মুক্তি —যেমন লেখা আছে, “যে ব্যক্তি শ্লাঘা করে, সে প্রভুতেই শ্লাঘা করুক”। আর, হে ভ্রাতৃগণ, আমি যখন তোমাদের নিকটে গিয়াছিলাম, তখন গিয়া বাক্যের কি জ্ঞানের উৎকৃষ্টতা অনুসারে তোমাদিগকে যে ঈশ্বরের সাক্ষ্য জ্ঞাত করিতেছিলাম, তাহা নয়। কেননা আমি মনে স্থির করিয়াছিলাম, তোমাদের মধ্যে আর কিছুই জানিব না, কেবল যীশু খ্রীষ্টকে, এবং তাঁহাকে ক্রুশে হত বলিয়াই, জানিব। আর আমি তোমাদের কাছে দুর্ব্বলতা, ভয় ও মহাকম্পযুক্ত ছিলাম, আর আমার বাক্য ও আমার প্রচার জ্ঞানের প্ররোচক বাক্যযুক্ত ছিল না, বরং আত্মার ও পরাক্রমের প্রদর্শনযুক্ত ছিল, যেন তোমাদের বিশ্বাস মনুষ্যদের জ্ঞানযুক্ত না হইয়া ঈশ্বরের পরাক্রমযুক্ত হয়। তথাপি আমরা সিদ্ধদের মধ্যে জ্ঞানের কথা কহিতেছি, কিন্তু সেই জ্ঞান এই যুগের নয়, এবং এই যুগের শাসনকর্ত্তাদেরও নয়, ইঁহারা ত অকিঞ্চন হইয়া পড়িতেছেন। কিন্তু আমরা নিগূঢ়তত্ত্বরূপে ঈশ্বরের সেই জ্ঞানের কথা কহিতেছি, সেই গুপ্ত জ্ঞান, যাহা ঈশ্বর আমাদের প্রতাপের জন্য যুগপর্য্যায়ের পূর্ব্বে নিরূপণ করিয়াছিলেন। এই যুগের শাসনকর্ত্তাদের মধ্যে কেহ তাহা জানেন নাই; কেননা যদি জানিতেন, তবে প্রতাপের প্রভুকে ক্রুশে দিতেন না। কিন্তু, যেমন লেখা আছে, “চক্ষু যাহা দেখে নাই, কর্ণ যাহা শুনে নাই, এবং মনুষ্যের হৃদয়াকাশে যাহা উঠে নাই। যাহা ঈশ্বর, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন।” কারণ আমাদের কাছে ঈশ্বর তাঁহার আত্মা দ্বারা তাহা প্রকাশ করিয়াছেন, কেননা আত্মা সকলই অনুসন্ধান করেন, ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলও অনুসন্ধান করেন। কারণ মনুষ্যের বিষয়গুলি মনুষ্যদের মধ্যে কে জানে? কেবল মনুষ্যের অন্তরস্থ আত্মা জানে; তেমনি ঈশ্বরের বিষয়গুলি কেহ জানে না, কেবল ঈশ্বরের আত্মা জানেন। কিন্তু আমরা জগতের আত্মাকে পাই নাই, বরং ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি, যেন ঈশ্বর অনুগ্রহপূর্ব্বক আমাদিগকে যাহা যাহা দান করিয়াছেন, তাহা জানিতে পারি। আমরা সেই সকল বিষয়েরই কথা, মানুষিক শিক্ষানুরূপ জ্ঞানের বাক্য দ্বারা নয়, কিন্তু আত্মার শিক্ষানুরূপ বাক্য দ্বারা কহিতেছি; আত্মিক বিষয় আত্মিক বিষয়ের সহিত যোগ করিতেছি। কিন্তু প্রাণিক মনুষ্য ঈশ্বরের আত্মার বিষয়গুলি গ্রহণ করে না, কেননা তাহার কাছে সে সকল মূর্খতা; আর সে সকল সে জানিতে পারে না, কারণ তাহা আত্মিক ভাবে বিচারিত হয়। কিন্তু যে আত্মিক, সে সমস্ত বিষয়ের বিচার করে; আর তাহার বিচার কাহারও দ্বারা হয় না। কেননা “কে প্রভুর মন জানিয়াছে যে, তাঁহাকে উপদেশ দিতে পারে?” কিন্তু খ্রীষ্টের মন আমাদের আছে। আর, হে ভ্রাতৃগণ, আমি তোমাদিগকে আত্মিক লোকদের ন্যায় সম্ভাষণ করিতে পারি নাই, কিন্তু মাংসময় লোকদের ন্যায়, খ্রীষ্ট সম্বন্ধীয় শিশুদের ন্যায় সম্ভাষণ করিয়াছি। আমি তোমাদিগকে দুগ্ধ পান করাইয়াছিলাম, অন্ন দিই নাই, কেননা তখন তোমাদের শক্তি হয় নাই, এমন কি, এখনও তোমাদের শক্তি হয় নাই; কারণ এখনও তোমরা মাংসিক রহিয়াছ; বাস্তবিক যখন তোমাদের মধ্যে ঈর্ষা ও বিবাদ রহিয়াছে, তখন তোমরা কি মাংসিক নও, এবং মানুষের রীতিক্রমে কি চলিতেছ না? কেননা যখন তোমাদের এক জন বলে, আমি পৌলের, আর এক জন, আমি আপল্লোর, তখন তোমরা কি মনুষ্যমাত্র নও? ভাল, আপল্লো কি? আর পৌল কি? তাহারা ত পরিচারকমাত্র, যাহাদের দ্বারা তোমরা বিশ্বাসী হইয়াছ; আর এক এক জনকে প্রভু যেমন দিয়াছেন। আমি রোপন করিলাম, আপল্লো জল সেচন করিলেন, কিন্তু ঈশ্বর বৃদ্ধি দিতে থাকিলেন। অতএব রোপক কিছু নয়, সেচকও কিছু নয়, বৃদ্ধিদাতা ঈশ্বরই সার। আর রোপক ও সেচক উভয়েই এক, এবং যাহার যেরূপ নিজের শ্রম, সে তদ্রূপ নিজের বেতন পাইবে। কারণ আমরা ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী; তোমরা ঈশ্বরেরই ক্ষেত্র, ঈশ্বরেরই গাঁথনি। ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ আমাকে দত্ত হইয়াছে, তদনুসারে আমি জ্ঞানবান্‌ গাঁথকের ন্যায় ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছি; আর তাহার উপরে অন্যে গাঁথিতেছে; কিন্তু প্রত্যেক জন দেখুক, কিরূপে সে তাহার উপরে গাঁথে। কেননা কেবল যাহা স্থাপিত হইয়াছে, তাহা ব্যতীত অন্য ভিত্তিমূল কেহ স্থাপন করিতে পারে না, তিনি যীশু খ্রীষ্ট। কিন্তু এই ভিত্তিমূলের উপরে স্বর্ণ, রৌপ্য, বহুমূল্য প্রস্তর, কাষ্ঠ, খড়, নাড়া দিয়া যদি কেহ গাঁথে তবে প্রত্যেক ব্যক্তির কর্ম্ম সপ্রকাশ হইবে। কারণ সেই দিন তাহা ব্যক্ত করিবে, কেননা সেই দিনের প্রকাশ অগ্নিতেই হয়; আর প্রত্যেকের কর্ম্ম যে কি প্রকার, সেই অগ্নিই তাহার পরীক্ষা করিবে; যে যাহা গাঁথিয়াছে, তাহার সেই কর্ম্ম যদি থাকে, তবে সে বেতন পাইবে। যাহার কর্ম্ম পুড়িয়া যায়, সে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে, কিন্তু সে আপনি পরিত্রাণ পাইবে। তথাপি এরূপে পাইবে, যেন অগ্নির মধ্য দিয়া উত্তীর্ণ হইবে। তোমরা কি জান না যে, তোমরা ঈশ্বরের মন্দির, এবং ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে বাস করেন? যদি কেহ ঈশ্বরের মন্দির নষ্ট করে, তবে ঈশ্বর তাহাকে নষ্ট করিবেন, কেননা ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র, আর সেই মন্দির তোমরাই। কেহ আপনাকে বঞ্চনা না করুক। তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি আপনাকে এই যুগে জ্ঞানবান্‌ বলিয়া মনে করে, তবে সে জ্ঞানবান্‌ হইবার জন্য মূর্খ হউক। যেহেতুক এই জগতের যে জ্ঞান, তাহা ঈশ্বরের নিকটে মূর্খতা। কারণ লেখা আছে, “তিনি জ্ঞানবান্‌দিগকে তাহাদের ধূর্ত্ততায় ধরেন।” পুনশ্চ, “প্রভু জ্ঞানবান্‌দের তর্কবিতর্ক জানেন যে, সে সকল অসার।” অতএব কেহ মনুষ্যদের শ্লাঘা না করুক। কেননা সকলই তোমাদের; — পৌল, কি আপল্লো, কি কৈফা, কি জগৎ, কি জীবন, কি মরণ, কি উপস্থিত বিষয়, কি ভবিষ্যৎ বিষয়, সকলই তোমাদের; আর তোমরা খ্রীষ্টের, ও খ্রীষ্ট ঈশ্বরের। লোকে আমাদিগকে এরূপ মনে করুক যে, আমরা খ্রীষ্টের সেবক ও ঈশ্বরের নিগূঢ়তত্ত্বরূপ ধনের অধ্যক্ষ। আর এ স্থলে ধনাধ্যক্ষের এই গুণ চাই, যেন তাহাকে বিশ্বস্ত দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু তোমাদের দ্বারা কিম্বা মানুষিক বিচার দিনের সভা দ্বারা যে আমার বিচার হয়, ইহা আমার মতে অতি ক্ষুদ্র বিষয়; এমন কি, আমি আমার নিজেরও বিচার করি না। কারণ আমি আমার নিজের বিরুদ্ধে কিছু জানি না, তথাপি ইহাতে আমি নির্দ্দোষ বলিয়া প্রতিপন্ন হইতেছি না; কিন্তু যিনি আমার বিচার করেন, তিনি প্রভু। অতএব তোমরা সময়ের পূর্ব্বে, যে পর্য্যন্ত প্রভু না আইসেন, সেই পর্য্যন্ত কোন বিচার করিও না; তিনিই অন্ধকারের গুপ্ত বিষয় সকল দীপ্তিতে আনিবেন, এবং হৃদয়সমূহের মন্ত্রণা সকল প্রকাশ করিবেন; আর তৎকালে প্রত্যেক জন ঈশ্বর হইতে আপন আপন প্রশংসা পাইবে। হে ভ্রাতৃগণ, আমি আপনার ও আপল্লোর উদাহরণ দিয়া তোমাদের নিমিত্তে এই সকল কথা কহিলাম; যেন আমাদের দ্বারা তোমরা এই শিক্ষা পাও যে, যাহা লিখিত আছে, তাহা অতিক্রম করিতে নাই, তোমরা কেহ যেন এক জনের পক্ষে অন্য জনের বিপক্ষে গর্ব্ব না কর। কেননা কে তোমাকে বিশিষ্ট করে? আর যাহা না পাইয়াছ, এমনই বা তোমার কি আছে? আর যখন পাইয়াছ; তখন যেন পাও নাই, এরূপ শ্লাঘা কেন করিতেছ? তোমরা এখন পূর্ণ হইয়াছ! এখন ধনবান্‌ হইয়াছ! আমাদের ছাড়া রাজত্ব পাইয়াছ! আর রাজত্ব পাইলে ভালই হইত, তোমাদের সহিত আমরাও রাজত্ব পাইতাম। কারণ আমার বোধ হয়, প্রেরিতগণ যে আমরা, ঈশ্বর আমাদিগকে বধ্য লোকদের ন্যায় শেষের বলিয়া দেখাইয়াছেন; কেননা আমরা জগতের ও দূতগণের ও মনুষ্যদের কৌতুকাস্পদ হইয়াছি। আমরা খ্রীষ্টের নিমিত্ত মূর্খ, কিন্তু তোমরা খ্রীষ্টে বুদ্ধিমান্‌; আমরা দুর্ব্বল, কিন্তু তোমরা বলবান্‌; তোমরা গৌরবান্বিত, কিন্তু আমরা অনাদৃত। এখনকার এই দণ্ড পর্য্যন্ত আমরা ক্ষুধার্ত্ত, তৃষ্ণার্ত্ত ও বস্ত্রহীন রহিয়াছি, আর মুষ্ট্যাঘাতে আহত হইতেছি, ও অস্থির-বাস রহিয়াছি; এবং স্বহস্তে কার্য্য করিয়া পরিশ্রম করিতেছি; নিন্দিত হইতে হইতে আশীর্ব্বাদ করিতেছি, তাড়িত হইতে হইতে সহ্য করিতেছি, অপবাদিত হইতে হইতে বিনয় করিতেছি; অদ্য পর্য্যন্ত আমরা যেন জগতের আবর্জ্জনা, সকল বস্তুর জঞ্জাল হইয়া রহিয়াছি। আমি তোমাদিগকে লজ্জা দিবার জন্য নয়, কিন্তু আমার প্রিয় বৎস বলিয়া তোমাদিগকে চেতনা দিবার জন্য এই সকল লিখিতেছি। কেননা যদিও খ্রীষ্টে তোমাদের দশ সহস্র পরিপালক থাকে, তথাচ পিতা অনেক নয়; কারণ খ্রীষ্ট যীশুতে সুসমাচার দ্বারা আমিই তোমাদিগকে জন্ম দিয়াছি। অতএব তোমাদিগকে বিনয় করি, তোমরা আমার অনুকারী হও। এই অভিপ্রায়ে আমি তীমথিয়কে তোমাদের নিকটে পাঠাইয়াছি; তিনি প্রভুতে আমার প্রিয় ও বিশ্বস্ত বৎস; তিনি তোমাদিগকে খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় আমার পন্থা সকল স্মরণ করাইবেন, যাহা আমি সর্ব্বত্র সর্ব্ব মণ্ডলীতে শিক্ষা দিয়া থাকি। আমি তোমাদের নিকটে আসিব না বলিয়া কেহ কেহ গর্ব্বিত হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু প্রভু যদি ইচ্ছা করেন, তবে আমি অবিলম্বে তোমাদের নিকটে আসিব, এবং যাহারা গর্ব্বিত হইয়া উঠিয়াছে, তাহাদের কথা নয়, কিন্তু পরাক্রম জানিব। কেননা ঈশ্বরের রাজ্য কথায় নয়, কিন্তু পরাক্রমে। তোমাদের ইচ্ছা কি? আমি কি বেত লইয়া তোমাদের কাছে যাইব? না প্রেমে ও মৃদুতার আত্মায় যাইব? বাস্তবিক শুনা যাইতেছে যে তোমাদের মধ্যে ব্যভিচার আছে, আর এমন ব্যভিচার, যাহা পরজাতীয়দের মধ্যেও নাই, এমন কি, তোমাদের মধ্যে এক জন আপন পিতার ভার্য্যাকে রাখিয়াছে। আর তোমরা গর্ব্ব করিতেছ! বরং বিলাপ কর নাই কেন, যেন এমন কর্ম্ম যে ব্যক্তি করিয়াছে, তাহাকে তোমাদের মধ্য হইতে বাহির করিয়া দেওয়া হয়? আমি, দেহে অনুপস্থিত হইলেও আত্মাতে উপস্থিত হইয়া, যে ব্যক্তি এই প্রকারে সেই কার্য্য করিয়াছে, উপস্থিত ব্যক্তির ন্যায় তাহার বিচার করিয়াছি; আমাদের প্রভু যীশুর নামে তোমরা এবং আমার আত্মা সমাগত হইলে, আমাদের প্রভু যীশুর পরাক্রম সহকারে তাদৃশ ব্যক্তিকে মাংসের বিনাশার্থে শয়তানের হস্তে সমর্পণ করিতে হইবে, যেন প্রভু যীশুর দিনে আত্মা পরিত্রাণ পায়। তোমাদের শ্লাঘা করা ভাল নয়। তোমরা কি জান না যে, অল্প তাড়ী সূজীর সমস্ত তাল তাড়ীময় করিয়া ফেলে। পুরাতন তাড়ী বাহির করিয়া দেও; যেন তোমরা নূতন তাল হইতে পার—তোমরা ত তাড়ীশূন্য। কারণ আমাদের নিস্তারপর্ব্বীয় মেষশাবক বলীকৃত হইয়াছেন, তিনি খ্রীষ্ট। অতএব আইস, আমরা পুরাতন তাড়ী দিয়া নয়, হিংসা ও দুষ্টতার তাড়ী দিয়া নয়, কিন্তু সরলতা ও সত্যশীলতার তাড়ীশূন্য রুটী দিয়া পর্ব্বটী পালন করি। আমি আমার পত্রে তোমাদিগকে লিখিয়াছিলাম যে, ব্যভিচারীদের সংসর্গে থাকিতে নাই; এই জগতের ব্যভিচারী কি লোভী কি পরধনগ্রাহী কি প্রতিমাপূজকদের সংসর্গ একেবারে ছাড়িতে হইবে, তাহা নয়, কেননা তাহা হইলে সুতরাং জগতের বাহিরে যাওয়া তোমাদের আবশ্যক হইয়া পড়ে। কিন্তু এখন তোমাদিগকে লিখিতেছি যে, ভ্রাতা নামে আখ্যাত কোন ব্যক্তি যদি ব্যভিচারী কি লোভী কি প্রতিমাপূজক কি কটুভাষী কি মাতাল কি পরধনগ্রাহী হয়, তবে তাহার সংসর্গে থাকিতে নাই, এমন ব্যক্তির সহিত আহার করিতেও নাই। বস্তুতঃ বাহিরের লোকদের বিচারে আমার কাজ কি? ভিতরের লোকদের বিচার কি তোমরা কর না? কিন্তু বাহিরের লোকদের বিচার ঈশ্বর করিবেন। তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সেই দুষ্টকে বাহির করিয়া দেও। তোমাদের মধ্যে কি কাহারও সাহস হয় যে, আর এক জনের বিরুদ্ধে কোন কথা থাকিলে তাহার বিচার পবিত্রগণের কাছে লইয়া না গিয়া অধার্ম্মিকদের কাছে লইয়া যায়? অথবা তোমরা কি জান না যে, পবিত্রগণ জগতের বিচার করিবেন? আর জগতের বিচার যদি তোমাদের দ্বারা হয়, তবে তোমরা কি যৎসামান্য বিষয়ের বিচার করিবার অযোগ্য? তোমরা কি জান না যে, আমরা দূতগণের বিচার করিব? ইহজীবন সংক্রান্ত বিষয় ত সামান্য কথা। অতএব তোমাদের দ্বারা যদি ইহজীবন সংক্রান্ত বিষয়ের বিচার হয়, তবে মণ্ডলীতে যাহারা কিছুরই মধ্যে গণ্য নয়, তাহাদিগকেই কি বিচারে বসাইয়া থাক? আমি তোমাদের লজ্জার নিমিত্ত এই কথা কহিতেছি। এ কেমন? তোমাদের মধ্যে কি এমন জ্ঞানবান্‌ এক জনও নাই যে, ভ্রাতায় ভ্রাতায় বিবাদ হইলে তাহার নিষ্পত্তি করিয়া দিতে পারে? কিন্তু ভ্রাতার সহিত ভ্রাতা বিচার-স্থানে বিবাদ করে, তাহা আবার অবিশ্বাসীদের কাছে। তোমরা যে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিচার চাও, ইহাতে তোমাদের বিশেষ ক্ষতি হইতেছে। বরং অন্যায় সহ্য কর না কেন? বরং বঞ্চিত হও না কেন? কিন্তু তোমরাই অন্যায় করিতেছ, বঞ্চনা করিতেছ, আর তাহা ভ্রাতৃগণের প্রতিই করিতেছ। অথবা তোমরা কি জান না যে, অধার্ম্মিকেরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না? ভ্রান্ত হইও না; যাহারা ব্যভিচারী কি প্রতিমাপূজক কি পারদারিক কি স্ত্রীবৎ আচারী কি পুঙ্গামী কি চোর কি লোভী কি মাতাল কি কটুভাষী কি পরধনগ্রাহী, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না। আর তোমরা কেহ কেহ সেই প্রকার লোক ছিলে; কিন্তু তোমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মায় আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ, পবিত্রীকৃত হইয়াছ, ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছ। সকলই আমার পক্ষে বিধেয়, কিন্তু সকলই যে হিতজনক, তাহা নয়; সকলই আমার পক্ষে বিধেয়, কিন্তু আমি কিছুরই কর্ত্তৃত্বাধীন হইব না। খাদ্য উদরের নিমিত্ত, এবং উদর খাদ্যের নিমিত্ত, কিন্তু ঈশ্বর উভয়ের লোপ করিবেন। দেহ ব্যভিচারের নিমিত্ত নয়, কিন্তু প্রভুর নিমিত্ত, এবং প্রভু দেহের নিমিত্ত। আর ঈশ্বর আপন পরাক্রমের দ্বারা প্রভুকে উঠাইয়াছেন, আমাদিগকেও উঠাইবেন। তোমরা কি জান না যে, তোমাদের দেহ খ্রীষ্টের অঙ্গ? তবে আমি কি খ্রীষ্টের অঙ্গ লইয়া গিয়া বেশ্যার অঙ্গ করিব? তাহা দূরে থাকুক। অথবা তোমরা কি জান না, যে ব্যক্তি বেশ্যাতে সংযুক্ত হয়, সে তাহার সহিত এক দেহ হয়? কারণ তিনি বলেন, “সে দুই জন একাঙ্গ হইবে।” কিন্তু যে ব্যক্তি প্রভুতে সংযুক্ত হয়, সে তাঁহার সহিত একাত্মা হয়। তোমরা ব্যভিচার হইতে পলায়ন কর। মনুষ্য অন্য যে কোন পাপ করে, তাহা তাহার দেহের বহির্ভূত; কিন্তু যে ব্যভিচার করে, সে নিজ দেহের বিরুদ্ধে পাপ করে। অথবা তোমরা কি জান যে, তোমাদের দেহ পবিত্র আত্মার মন্দির, যিনি তোমাদের অন্তরে থাকেন, যাঁহাকে তোমরা ঈশ্বর হইতে প্রাপ্ত হইয়াছ? আর তোমরা নিজের নও, কারণ মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ। অতএব তোমাদের দেহে ঈশ্বরের গৌরব কর। আবার তোমরা যে সকল কথা লিখিয়াছ, তাহার বিষয়;— স্ত্রীলোককে স্পর্শ না করা মনুষ্যের ভাল; কিন্তু ব্যভিচার নিবারণের জন্য প্রত্যেক পুরুষের নিজের নিজের ভার্য্যা থাকুক, এবং প্রত্যেক স্ত্রীর নিজের নিজের স্বামী থাকুক। স্বামী স্ত্রীকে তাহার প্রাপ্য দিউক; আর তদ্রূপ স্ত্রীও স্বামীকে দিউক। নিজ দেহের উপর স্ত্রীর কর্ত্তৃত্ব নাই, কিন্তু স্বামীর আছে; আর তদ্রূপ নিজ দেহের উপরে স্বামীর কর্ত্তৃত্ব নাই, কিন্তু স্ত্রীর আছে। তোমরা এক জন অন্যকে বঞ্চিত করিও না; কেবল প্রার্থনার নিমিত্তে অবকাশ পাইবার জন্য উভয়ে একপরামর্শ হইয়া কিছু কাল পৃথক্‌ থাকিতে পার; পরে পুনর্ব্বার একত্র হইবে, যেন শয়তান তোমাদের অসংযমতা প্রযুক্ত তোমাদিগকে পরীক্ষায় না ফেলে। কিন্তু আমি আজ্ঞার মত নয়, কেবল অনুমতির মত এ কথা কহিতেছি। আর আমার ইচ্ছা এই যে, সকল মনুষ্যই আমার মত হয়; কিন্তু প্রত্যেক জন ঈশ্বর হইতে আপন আপন অনুগ্রহ-দান পাইয়াছে, এক জন এক প্রকার, অন্য জন অন্য প্রকার। পরন্তু অবিবাহিত লোকদের ও বিধবাদের কাছে আমার কথা এই, তাহারা যদি আমার মত থাকিতে পারে, তবে তাহাদের পক্ষে তাহাই ভাল; কিন্তু তাহারা যদি ইন্দ্রিয় দমন করিতে না পারে, তবে বিবাহ করুক; কেননা আগুনে জ্বলা অপেক্ষা বরং বিবাহ করা ভাল। আর বিবাহিত লোকদিগকে এই আজ্ঞা দিতেছি—আমি দিতেছি তাহা নয়, কিন্তু প্রভুই দিতেছেন—স্ত্রী স্বামীর নিকট হইতে চলিয়া না যাউক— যদি চলিয়া যায়, তবে সে অবিবাহিতা থাকুক, কিম্বা স্বামীর সহিত সম্মিলিতা হউক—আর স্বামীও স্ত্রীকে পরিত্যাগ না করুক। কিন্তু আর সকলকে আমি বলি, প্রভু নয়; যদি কোন ভ্রাতার অবিশ্বাসিনী স্ত্রী থাকে, আর সেই নারী তাহার সহিত বাস করিতে সম্মতা হয়, তবে সে তাহাকে পরিত্যাগ না করুক; আবার যে স্ত্রীর অবিশ্বাসী স্বামী আছে, আর সেই ব্যক্তি তাহার সহিত বাস করিতে সম্মত হয়, তবে সে স্বামীকে পরিত্যাগ না করুক। কেননা অবিশ্বাসী স্বামী সেই স্ত্রীতে পবিত্রীকৃত হইয়াছে, এবং অবিশ্বাসিনী স্ত্রী সেই ভ্রাতাতে পবিত্রীকৃতা হইয়াছে; তাহা না হইলে তোমাদের সন্তানগণ অশুচি হইত, কিন্তু বাস্তবিক তাহারা পবিত্র। তথাপি অবিশ্বাসী যদি চলিয়া যায়, চলিয়া যাউক; এমন স্থলে সেই ভ্রাতা কি সেই ভগিনী দাসত্বে বদ্ধ নহে, কিন্তু ঈশ্বর আমাদিগকে শান্তিতেই আহ্বান করিয়াছেন। কারণ, হে নারি, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্বামীকে পরিত্রাণ করিবে কি না? অথবা হে স্বামী, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্ত্রীকে পরিত্রাণ করিবে কি না? কেবল প্রভু যাহাকে যেমন অংশ দিয়াছেন, ঈশ্বর যাহাকে যেমন আহ্বান করিয়াছেন, সে তেমনি চলুক। আর এই প্রকার নিয়ম আমি সমস্ত মণ্ডলীতে করিয়া থাকি। কেহ কি ছিন্নত্বক্‌ হইয়া আহূত হইয়াছে? সে ত্বক্‌ছেদ লোপ না করুক। কেহ কি অচ্ছিন্নত্বক্‌ অবস্থায় আহূত হইয়াছে? সে ছিন্নত্বক্‌ না হউক। ত্বক্‌ছেদ কিছু নয়, অত্বক্‌ছেদও কিছু নয়, কিন্তু ঈশ্বরের আজ্ঞা পালনই সার। যে ব্যক্তি যে আহ্বানে আহূত হইয়াছে, সে তাহাতেই থাকুক। তুমি কি দাস হইয়াই আহূত হইয়াছ? ভাবিত হইও না; কিন্তু যদি স্বাধীন হইতে পার, বরং তাহা অবলম্বন কর। কেননা প্রভুতে আহূত যে দাস, সে প্রভুর স্বাধীনীকৃত লোক; তদ্রূপ আহূত যে স্বাধীন লোক, সে খ্রীষ্টের দাস। তোমরা মূল্য দ্বারা ক্রীত হইয়াছ, মনুষ্যদের দাস হইও না। হে ভ্রাতৃগণ, প্রত্যেক জন যে অবস্থায় আহূত হইয়াছে, সেই অবস্থায় ঈশ্বরের কাছে থাকুক। আর কুমারীদের বিষয়ে আমি প্রভুর কোন আজ্ঞা পাই নাই, কিন্তু বিশ্বস্ত হইবার জন্য প্রভুর দয়াপ্রাপ্ত লোকের ন্যায় আমার মত প্রকাশ করিতেছি। ফলে আমার বোধ হয়, উপস্থিত সঙ্কট প্রযুক্ত ইহাই ভাল, অর্থাৎ অমনি থাকা মনুষ্যের পক্ষে ভাল। তুমি কি স্ত্রীর সঙ্গে সম্বন্ধ? মুক্ত হইতে চেষ্টা করিও না। তুমি কি স্ত্রী হইতে মুক্ত? স্ত্রীর চেষ্টা করিও না। কিন্তু বিবাহ করিলেও তোমার পাপ হয় না; আর কুমারী যদি বিবাহ করে, তবে তাহারও পাপ হয় না। তথাপি এইরূপ লোকদের দৈহিক ক্লেশ ঘটিবে; আর তোমাদের প্রতি আমার মমতা হইতেছে। কিন্তু আমি এই কথা বলিতেছি, ভ্রাতৃগণ, সময় সঙ্কুচিত, এখন হইতে যাহাদের স্ত্রী আছে, তাহারা এমন চলুক, যেন তাহাদের স্ত্রী নাই; এবং যাহারা রোদন করিতেছে, তাহারা যেন রোদন করিতেছে না; যাহারা আনন্দ করিতেছে, তাহারা যেন আনন্দ করিতেছে না; যাহারা ক্রয় করিতেছে, তাহারা যেন কিছুই রাখে নাই; আর যাহারা সংসার ভোগ করিতেছে, যেন পূর্ণমাত্রায় করিতেছে না, যেহেতুক এই সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে। কিন্তু আমার বাসনা এই যে, তোমরা চিন্তা-রহিত হও। যে অবিবাহিত, সে প্রভুর বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে প্রভুকে সন্তুষ্ট করিবে। কিন্তু যে বিবাহিত, সে সংসারের বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করিবে; তাই তাহার বিভিন্নতা ঘটে। আর অবিবাহিতা স্ত্রী ও কুমারী প্রভুর বিষয় চিন্তা করে, যেন দেহে ও আত্মাতে পবিত্রা হয়; কিন্তু বিবাহিতা স্ত্রী সংসারের বিষয় চিন্তা করে, কিরূপে স্বামীকে সন্তুষ্ট করিবে। এই কথা আমি তোমাদের নিজের হিতের জন্য বলিতেছি; তোমাদের গলায় রজ্জু দিবার জন্য নয়, কিন্তু তোমরা যেন শিষ্টাচরণ কর, এবং একাগ্রমনে প্রভুতে আসক্ত থাক। কিন্তু যদি কাহারও বোধ হয় যে, সে তাহার কুমারী কন্যার প্রতি অশিষ্টাচরণ করিতেছে, যদি সৌকুমার্য্য অতীত হইয়া থাকে, আর এই প্রকার হওয়া আবশ্যক হয়, তবে সে যাহা ইচ্ছা করে, তাহা করুক; ইহাতে তাহার পাপ নাই, বিবাহ হউক। কিন্তু যে ব্যক্তি হৃদয়ে স্থির, যাহার কোন প্রয়োজন নাই, এবং আপনি আপন ইচ্ছা সম্বন্ধে কর্ত্তা, সে যদি আপন কন্যাকে কুমারী রাখিতে হৃদয়ে স্থির করিয়া থাকে, তবে ভাল করে। অতএব যে আপন কুমারী কন্যার বিবাহ দেয়, সে ভাল করে; এবং যে না দেয়, সে আরও ভাল করে। যত দিন স্বামী জীবিত থাকে, তত দিন স্ত্রী আবদ্ধা থাকে, কিন্তু স্বামী নিদ্রাগত হইলে পর সে স্বাধীনা হয়, যাহাকে ইচ্ছা করে, তাহার সহিত বিবাহিতা হইতে পারে, কিন্তু কেবল প্রভুতেই। তথাপি আমার মতানুসারে সে অমনি থাকিলে আরও ধন্যা। আর আমার বোধ হয়, আমিও ঈশ্বরের আত্মাকে পাইয়াছি। আর প্রতিমার কাছে উৎসৃষ্ট বলির বিষয়;—আমরা জানি যে, আমাদের সকলের জ্ঞান আছে। জ্ঞান গর্ব্বিত করে, কিন্তু প্রেমই গাঁথিয়া তুলে। যদি কেহ মনে করে, সে কিছু জানে, তবে যেরূপ জানিতে হয়, তদ্রূপ এখনও জানে না; কিন্তু যদি কেহ ঈশ্বরকে প্রেম করে, সেই তাঁহার জানা লোক। ভাল, প্রতিমার কাছে উৎসৃষ্ট বলি ভোজন বিষয়ে আমরা জানি, প্রতিমা জগতে কিছুই নয়, এবং ঈশ্বর এক ছাড়া দ্বিতীয় নাই। কেননা কি স্বর্গে কি পৃথিবীতে যাহাদিগকে দেবতা বলা যায়, এমন কতকগুলি যদিও আছে—বাস্তবিক অনেক দেবতা ও অনেক প্রভু আছে— তথাপি আমাদের জ্ঞানে একমাত্র ঈশ্বর সেই পিতা, যাঁহা হইতে সকলই হইয়াছে, ও আমরা যাঁহারই জন্য; এবং একমাত্র প্রভু সেই যীশু খ্রীষ্ট, যাঁহার দ্বারা সকলই হইয়াছে, এবং আমরা যাঁহারই দ্বারা আছি। তবে কিনা সকলের এ জ্ঞান নাই; কিন্তু কতক লোক অদ্যাপি প্রতিমার সংস্রবে থাকায় প্রতিমার কাছে উৎসৃষ্ট বলি জ্ঞানেই বলি ভোজন করে; এবং তাহাদের সংবেদ দুর্ব্বল বলিয়া কলুষিত হয়। কিন্তু খাদ্য দ্রব্য আমাদিগকে ঈশ্বরের কাছে গ্রাহ্য করায় না; ভোজন না করিলে আমাদের ক্ষতি হয় না, ভোজন করিলেও আমাদের বৃদ্ধি হয় না। কিন্তু সাবধান, তোমাদের এই ক্ষমতা যেন কোন ক্রমে দুর্ব্বলদের ব্যাঘাতজনক না হয়। কারণ, তোমার ত জ্ঞান আছে, তোমাকে যদি কেহ দেবালয়ে ভোজনে বসিতে দেখে, তবে সে দুর্ব্বল লোক বলিয়া তাহার সংবেদ কি প্রতিমার কাছে উৎসৃষ্ট বলি ভোজন করিতে সাহস পাইবে না? বস্তুতঃ তোমার জ্ঞান দ্বারা সেই ভ্রাতা যাহার নিমিত্ত খ্রীষ্ট মরিয়াছেন, সেই দুর্ব্বল ব্যক্তি নষ্ট হয়। এইরূপে ভ্রাতৃগণের বিরুদ্ধে পাপ করিলে, ও তাহাদের দুর্ব্বল সংবেদে আঘাত করিলে, তোমরা খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে পাপ কর। অতএব খাদ্য দ্রব্য যদি আমার ভ্রাতার বিঘ্ন জন্মায়, তবে আমি কখনও মাংস ভোজন করিব না, পাছে আমার ভ্রাতার বিঘ্ন জন্মাই। আমি কি স্বাধীন নই? আমি কি প্রেরিত নই? আমাদের প্রভু যীশুকে আমি কি দেখি নাই? তোমরাই কি প্রভুতে আমার কৃত কর্ম্ম নও? আমি যদ্যপি অন্য লোকদের জন্য প্রেরিত না হই, তথাপি তোমাদের জন্য বটে, কেননা প্রভুতে তোমরাই আমার প্রেরিতপদের মুদ্রাঙ্ক। যাহারা আমার পরীক্ষা করে, তাহাদের কাছে আমার উত্তর এই। ভোজন পান করিবার অধিকার কি আমাদের নাই? অন্য সকল প্রেরিত ও প্রভুর ভ্রাতৃগণ ও কৈফা, ইহাঁদের ন্যায় কোন ধর্ম্মভগিনীকে বিবাহ করিয়া সঙ্গে লইয়াই নানা স্থানে যাইবার অধিকার কি আমাদের নাই? কিম্বা পরিশ্রম ত্যাগ করিবার অধিকার কি কেবল আমার ও বার্ণবার নাই? কে কখন আপনি ধন ব্যয় করিয়া যুদ্ধে যায়? কে দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করে, আর তাহার ফল না খায়? অথবা কে পাল চরায়, আর পালের দুগ্ধ না খায়? আমি কি মানুষের মত এ সকল কথা কহিতেছি? অথবা ব্যবস্থায়ও কি ইহা বলে না? কারণ মোশির ব্যবস্থায় লেখা আছে, “শস্যমর্দ্দনকারী বলদের মুখে জাল্‌তি বাঁধিও না।” ঈশ্বর কি বলদেরই বিষয় চিন্তা করেন? কিম্বা সর্ব্বথা আমাদের নিমিত্ত ইহা কহেন? বস্তুতঃ আমাদেরই নিমিত্ত ইহা লিখিত হইয়াছে, কারণ যে চাষ করে, প্রত্যাশাতেই চাষ করা তাহার উচিত; এবং যে শস্য মাড়ে, ভাগ পাইবার প্রত্যাশাতেই শস্য মাড়া তাহার উচিত। আমরা যখন তোমাদের কাছে আত্মিক বীজ বপন করিয়াছি, তখন যদি তোমাদের মাংসিক ফল গ্রহণ করি, তবে তাহা কি মহৎ বিষয়? যদি তোমাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার অন্য লোকদের অধিকার থাকে, তবে আমাদের কি আরও অধিকার নাই? তথাচ আমরা এই কর্ত্তৃত্ব ব্যবহার করি নাই, বরং সকলই সহ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টের সুসমাচারের কোন বাধা না জন্মাই। তোমরা কি জান না যে, পবিত্র বিষয়ের কার্য্য যাহারা করে, তাহারা পবিত্র স্থানের বস্তু খায়, এবং যজ্ঞবেদির সেবা যাহারা করে, তাহারা যজ্ঞবেদির সহিত অংশী হয়? সেইরূপে প্রভু সুসমাচার প্রচারকদের জন্য এই বিধান করিয়াছেন যে, তাহাদের উপজীবিকা সুসমাচার হইতে হইবে। কিন্তু আমি ইহার কিছুই ব্যবহার করি নাই, আর আমার সম্বন্ধে যে এরূপ করা হইবে, সে জন্য আমি এ সকল লিখিতেছি না; কেননা কেহ যে আমার শ্লাঘা নিষ্ফল করিবে, তাহা অপেক্ষা বরং আমার মরণ ভাল। কারণ, আমি যদিও সুসমাচার প্রচার করি, তবু আমার শ্লাঘা করিবার কিছুই নাই; কেননা অবশ্য বহনীয় ভার আমার উপরে অর্পিত; ধিক্‌ আমাকে, যদি আমি সুসমাচার প্রচার না করি। বস্তুতঃ আমি যদি স্ব-ইচ্ছায় ইহা করি, তবে আমার পুরস্কার আছে; কিন্তু যদি স্ব-ইচ্ছায় না করি, তবু ধনাধ্যক্ষের কার্য্য আমার হস্তে সমর্পিত রহিয়াছে। তবে আমার পুরস্কার কি? তাহা এই যে, সুসমাচার প্রচার করিতে করিতে আমি সেই সুসমাচারকে ব্যয়-রহিত করি, যেন সুসমাচার সম্বন্ধে যে কর্ত্তৃত্ব আমার আছে, তাহার পূর্ণ ব্যবহার না করি। কারণ সকলের অনধীন হইলেও আমি সকলের দাসত্ব স্বীকার করিলাম, যেন অধিক লোককে লাভ করিতে পারি। আমি যিহূদীদিগকে লাভ করিবার জন্য যিহূদীদের কাছে যিহূদীর ন্যায় হইলাম; আপনি ব্যবস্থার অধীন না হইলেও আমি ব্যবস্থার অধীন লোকদিগকে লাভ করিবার জন্য ব্যবস্থাধীনদিগের কাছে ব্যবস্থাধীনের ন্যায় হইলাম। আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থাবিহীন নই, বরং খ্রীষ্টের ব্যবস্থার অনুগত রহিয়াছি, তথাপি ব্যবস্থাবিহীন লোকদিগকে লাভ করিবার জন্য ব্যবস্থাবিহীনদের কাছে ব্যবস্থাবিহীনের ন্যায় হইলাম। দুর্ব্বলদিগকে লাভ করিবার জন্য আমি দুর্ব্বলদের কাছে দুর্ব্বল হইলাম; সর্ব্বথা কতকগুলি লোককে পরিত্রাণ করিবার জন্য আমি সর্ব্বজনের কাছে সর্ব্ববিধ হইলাম। আমি সকলই সুসমাচারের জন্য করি, যেন তাহার সহভাগী হই। তোমরা কি জান না যে, দৌড়ের স্থলে যাহারা দৌড়ে, তাহারা সকলে দৌড়ে, কিন্তু কেবল এক জন পুরস্কার পায়? তোমরা এরূপে দৌড়, যেন পুরস্কার পাও। আর যে কেহ মল্লযুদ্ধ করে, সে সর্ব্ববিষয়ে ইন্দ্রিয়দমন করে। তাহারা ক্ষয়ণীয় মুকুট পাইবার জন্য তাহা করে, কিন্তু আমরা অক্ষয় মুকুট পাইবার জন্য করি। অতএব আমি এরূপে দৌড়িতেছি যে বিনালক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্টিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না। বরং আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি। কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, আমার ইচ্ছা নয় যে, তোমরা অজ্ঞাত থাক যে, আমাদের পিতৃপুরুষেরা সকলে সেই মেঘের নীচে ছিলেন, ও সকলে সমুদ্রের মধ্য দিয়া গমন করিয়াছিলেন; এবং সকলে মোশির উদ্দেশে মেঘে ও সমুদ্রে বাপ্তাইজিত হইয়াছিলেন, এবং সকলে একই আত্মিক ভক্ষ্য ভোজন করিয়াছিলেন; আর, সকলে একই আত্মিক পেয় পান করিয়াছিলেন; কারণ, তাঁহারা এমন এক আত্মিক শৈল হইতে পান করিতেন, যাহা তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে যাইতেছিল; আর সেই শৈল খ্রীষ্ট। কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকের প্রতি ঈশ্বর প্রীত হন নাই; ফলতঃ তাঁহারা প্রান্তরে নিপাতিত হইলেন। এই সকল বিষয় আমাদের দৃষ্টান্তস্বরূপে ঘটিয়াছিল, যেন তাঁহারা যেমন অভিলাষ করিয়াছিলেন, আমরা তেমনি মন্দ বিষয়ের অভিলাষ না করি। আবার যেমন তাঁহাদের মধ্যে কতক লোক হইয়াছিল, তোমরা তেমনি প্রতিমাপূজক হইও না; যথা লিখিত আছে, “লোকেরা ভোজন পান করিতে বসিল, পরে ক্রীড়া করিতে উঠিল।” আর যেমন তাঁহাদের মধ্য কতক লোক ব্যভিচার করিয়াছিল, এবং এক দিনে তেইশ হাজার লোক মারা পড়িল, আমরা যেন তেমনি ব্যভিচার না করি। আর যেমন তাঁহাদের মধ্যে কতক লোক পরীক্ষা করিয়াছিল, এবং সর্পের দ্বারা বিনষ্ট হইয়াছিল, আমরা যেন তেমনি প্রভুর পরীক্ষা না করি। আর যেমন তাঁহাদের মধ্যে কতক লোক বচসা করিয়াছিল, এবং সংহারকের দ্বারা বিনষ্ট হইয়াছিল, তোমরা তেমনি বচসা করিও না। এই সকল তাহাদের প্রতি দৃষ্টান্তস্বরূপে ঘটিয়াছিল, এবং আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে। অতএব যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়। মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই; আর ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার। অতএব, হে আমার প্রিয়েরা, প্রতিমাপূজা হইতে পলায়ন কর। আমি তোমাদিগকে বুদ্ধিমান্‌ জানিয়া বলিতেছি; আমি যাহা বলি, তোমরাই বিচার কর। আমরা ধন্যবাদের যে পানপাত্র লইয়া ধন্যবাদ করি, তাহা কি খ্রীষ্টের রক্তের সহভাগিতা নয়? আমরা যে রুটী ভাঙ্গি, তাহা কি খ্রীষ্টের শরীরের সহভাগিতা নয়? কারণ অনেকে যে আমরা, আমরা এক রুটী, এক শরীর; কেননা আমরা সকলে সেই এক রুটীর অংশী। মাংসের সম্বন্ধে যাহারা ইস্রায়েল, তাহাদিগকে দেখ; যাহারা বলি ভোজন করে, তাহারা কি যজ্ঞবেদির সহভাগী নয়? তবে আমি কি বলিতেছি? প্রতিমার কাছে উৎসৃষ্ট বলি কি কিছুরই মধ্যে গণ্য? অথবা প্রতিমা কি কিছুরই মধ্যে গণ্য? বরং পরজাতিগণ যাহা যাহা বলিদান করে, তাহা ভূতদের উদ্দেশে বলিদান করে, ঈশ্বরের উদ্দেশে নয়; আর আমার এমন ইচ্ছা নয় যে, তোমরা ভূতদের সহভাগী হও। প্রভুর পানপাত্র ও ভূতদের পানপাত্র, তোমরা এই উভয় পাত্রে পান করিতে পার না; প্রভুর মেজ ও ভূতদের মেজ, তোমরা এই উভয় মেজের অংশী হইতে পার না। অথবা আমরা কি প্রভুর অন্তর্জ্বালা জন্মাইতেছি? তাঁহা হইতে কি আমরা বলবান্‌? সকলই বিধেয়, কিন্তু সকলই যে হিতজনক, তাহা নয়; সকলই বিধেয়, কিন্তু সকলই যে গাঁথিয়া তুলে, তাহা নয়। কেহই স্বার্থ চেষ্টা না করুক, বরং প্রত্যেক জন পরের মঙ্গল চেষ্টা করুক। যে কোন দ্রব্য বাজারে বিক্রয় হয়, সংবেদের জন্য কিছু জিজ্ঞাসা না করিয়া তাহা ভোজন করিও; যেহেতুক “পৃথিবী ও তাহার সমস্ত বস্তু প্রভুরই।” অবিশ্বাসীদের মধ্যে কেহ যদি তোমাদিগকে নিমন্ত্রণ করে, আর তোমরা যাইতে ইচ্ছা কর, তবে সংবেদের জন্য কিছুই জিজ্ঞাসা না করিয়া, যে কোন সামগ্রী তোমাদের সম্মুখে রাখা হয়, তাহাই ভোজন করিও। কিন্তু যদি কেহ তোমাদিগকে বলে, এ প্রতিমার কাছে উৎসৃষ্ট বলি, তবে যে জানাইল, তাহার জন্য, এবং সংবেদের জন্য তাহা ভোজন করিও না। যে সংবেদের কথা আমি বলিলাম, তাহা তোমার নয়, কিন্তু সেই অন্য ব্যক্তির। কারণ আমার স্বাধীনতা কেন পরের সংবেদের দ্বারা বিচারিত হইবে? যদি আমি ধন্যবাদের সহিত ভোজন করি, তবে যাহার নিমিত্তে আমি ধন্যবাদ করি, তাহার জন্য কেন নিন্দিত হই? অতএব তোমরা ভোজন, কি পান, কি যাহা কিছু কর, সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর। কি যিহূদী, কি গ্রীক, কি ঈশ্বরের মণ্ডলী, কাহারও বিঘ্ন জন্মাইও না; যেমন আমিও সকল বিষয়ে সকলের প্রীতিকর হই, আপনার হিত চেষ্টা করি না, কিন্তু অনেকের হিত চেষ্টা করি, যেন তাহারা পরিত্রাণ পায়। যেমন আমিও খ্রীষ্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও। আমি তোমাদের প্রশংসা করিতেছি যে, তোমরা সকল বিষয়ে আমাকে স্মরণ করিয়া থাক, এবং তোমাদের কাছে শিক্ষামালা যেরূপ সমর্পণ করিয়াছি, সেইরূপই তাহা ধরিয়া আছ। কিন্তু আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জান যে, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর। যে কোন পুরুষ মস্তক আবৃত রাখিয়া প্রার্থনা করে, কিম্বা ভাববাণী বলে, সে আপন মস্তকের অপমান করে। কিন্তু যে কোন স্ত্রী অনাবৃত মস্তকে প্রার্থনা করে, কিম্বা ভাববাণী বলে, সে আপন মস্তকের অপমান করে; কারণ সে নির্ব্বিশেষে মুণ্ডিতার সমান হইয়া পড়ে। ভাল, স্ত্রী যদি মস্তক আবৃত না রাখে, সে চুলও কাটিয়া ফেলুক; কিন্তু চুল কাটিয়া ফেলা কি মস্তক মুণ্ডন করা যদি স্ত্রীর লজ্জার বিষয় হয়, তবে মস্তক আবৃত রাখুক। বাস্তবিক মস্তক আবরণ করা পুরুষের উচিত নয়, কেননা সে ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি ও গৌরব; কিন্তু স্ত্রী পুরুষের গৌরব। কারণ পুরুষ স্ত্রীলোক হইতে নয়, বরং স্ত্রীলোক পুরুষ হইতে। আর স্ত্রীর নিমিত্ত পুরুষের সৃষ্টি হয় নাই, কিন্তু পুরুষের নিমিত্ত স্ত্রীর। এই কারণ স্ত্রীর মস্তকে কর্ত্তৃত্বের চিহ্ন রাখা কর্ত্তব্য—দূতগণের জন্য। তথাপি প্রভুতে স্ত্রীও পুরুষ ছাড়া নয়, আবার পুরুষও স্ত্রী ছাড়া নয়। কারণ যেমন পুরুষ হইতে স্ত্রী, তেমনি আবার স্ত্রী দিয়া পুরুষ হইয়াছে, কিন্তু সকলই ঈশ্বর হইতে। তোমরা আপনাদের মধ্যে বিচার কর, অনাবৃত মস্তকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা কি স্ত্রীর উপযুক্ত? স্বয়ং প্রকৃতিও কি তোমাদিগকে শিক্ষা দেয় না যে, পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে, তবে তাহা তাহার অপমানের বিষয়; কিন্তু স্ত্রীলোক যদি লম্বা চুল রাখে; তবে তাহা তাহার গৌরবের বিষয়; কারণ সেই চুল আবরণের পরিবর্ত্তে তাহাকে দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু কেহ যদি বিবাদী হওয়া বিহিত বোধ করে, তবে এই প্রকার ব্যবহার আমাদের নাই, এবং ঈশ্বরের মণ্ডলীগণেরও নাই। কিন্তু এই আদেশ দিবার উপলক্ষে আমি তোমাদের প্রশংসা করি না, কারণ তোমরা যে সমবেত হইয়া থাক, তাহাতে ভাল না হইয়া বরং মন্দই হয়। কারণ প্রথমতঃ, শুনিতে পাইতেছি, যখন তোমরা মণ্ডলীতে সমবেত হও, তখন তোমাদের মধ্যে দলাদলি হইয়া থাকে, এবং ইহা কতকটা বিশ্বাস করিতেছি। আর বাস্তবিক তোমাদের মধ্যে দলভেদ হওয়া আবশ্যক, যেন তোমাদের মধ্যে যাহারা পরীক্ষাসিদ্ধ তাহারা প্রকাশিত হয়। যাহা হউক, তোমরা যখন এক স্থানে সমবেত হও, তখন প্রভুর ভোজ ভোজন করা হয় না, কেননা ভোজনকালে প্রত্যেক জন অপরের অগ্রে তাহার নিজের ভোজ গ্রহণ করে, তাহাতে এক জন ক্ষুধিত থাকে, আর এক জন বা মত্ত হয়। এ কেমন? ভোজন পান করিবার জন্য কি তোমাদের বাড়ী নাই? অথবা তোমরা কি ঈশ্বরের মণ্ডলীকে অবজ্ঞা করিতেছ, এবং যাহাদের কিছু নাই, তাহাদিগকে লজ্জা দিতেছ? আমি তোমাদিগকে কি বলিব? কি তোমাদের প্রশংসা করিব? এ বিষয়ে প্রশংসা করি না। কারণ আমি প্রভু হইতে এই শিক্ষা পাইয়াছি এবং তোমাদিগকে সমর্পণও করিয়াছি যে, প্রভু যীশু যে রাত্রিতে সমর্পিত হন, সেই রাত্রিতে তিনি রুটী লইলেন, এবং ধন্যবাদপূর্ব্বক ভাঙ্গিলেন, ও কহিলেন, ‘ইহা আমার শরীর, ইহা তোমাদের জন্য; আমার স্মরণার্থে ইহা করিও’। সেই প্রকারে তিনি ভোজনের পর পানপাত্রও লইয়া কহিলেন, ‘এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম; তোমরা যত বার পান করিবে, আমার স্মরণার্থে ইহা করিও’। কারণ যত বার তোমরা এই রুটী ভোজন কর, এবং এই পানপাত্রে পান কর, তত বার প্রভুর মৃত্যু প্রচার করিয়া থাক, যে পর্য্যন্ত তিনি না আইসেন। অতএব যে কেহ অযোগ্যরূপে প্রভুর রুটী ভোজন কিম্বা পানপাত্রে পান করিবে, সে প্রভুর শরীরের ও রক্তের দায়ী হইবে। কিন্তু মনুষ্য আপনার পরীক্ষা করুক, এবং এই প্রকারে সেই রুটী ভোজন ও সেই পানপাত্রে পান করুক। কেননা যে ব্যক্তি ভোজন ও পান করে, সে যদি তাঁহার শরীর না চিনে, তবে সে আপনার বিচারাজ্ঞা ভোজন পান করে। এই কারণ তোমাদের মধ্যে বিস্তর লোক দুর্ব্বল ও পীড়িত আছে, এবং অনেকে নিদ্রাগত হইতেছে। আমরা যদি আপনাদিগকে আপনারা চিনিতাম, তবে আমরা বিচারিত হইতাম না; কিন্তু আমরা যখন প্রভু কর্ত্তৃক বিচারিত হই, তখন শাসিত হই, যেন জগতের সহিত দণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত না হই। অতএব, হে আমার ভ্রাতৃগণ তোমরা যখন ভোজন করিবার জন্য সমবেত হও, তখন এক জন অন্যের অপেক্ষা করিও। যদি কাহারও ক্ষুধা লাগে, তবে সে বাটীতে ভোজন করুক; তোমাদের সমবেত হওয়া যেন বিচারাজ্ঞার হেতু না হয়। আর সকল বিষয়, যখন আমি আসিব, তখন আদেশ করিব। আর হে ভ্রাতৃগণ, আত্মিক দান সকলের বিষয়ে তোমরা যে অজ্ঞাত থাক, আমার এ ইচ্ছা নয়। তোমরা জান, যখন তোমরা পরজাতীয় ছিলে, তখন যেমন চালিত হইতে, তেমনি অবাক্‌ প্রতিমাগণের দিকেই চালিত হইতে। এই জন্য আমি তোমাদিগকে জানাইতেছি যে, ঈশ্বরের আত্মায় কথা কহিলে, কেহ বলে না, ‘যীশু শাপগ্রস্ত’, এবং পবিত্র আত্মার আবেশ ব্যতিরেকে কেহ বলিতে পারে না, ‘যীশু প্রভু’। অনুগ্রহ দান নানা প্রকার, কিন্তু আত্মা এক; এবং পরিচর্য্যা নানা প্রকার, কিন্তু প্রভু এক; এবং ক্রিয়াসাধক গুণ নানা প্রকার, কিন্তু ঈশ্বর এক; তিনি সকলেতে সকল ক্রিয়ার সাধনকর্ত্তা। কিন্তু প্রত্যেক জনকে হিতের জন্য আত্মার আবির্ভাব দত্ত হয়। কারণ এক জনকে সেই আত্মা দ্বারা প্রজ্ঞার বাক্য দত্ত হয়, আর এক জনকে সেই আত্মানুসারে জ্ঞানের বাক্য, আর এক জনকে সেই আত্মাতে বিশ্বাস, আর এক জনকে সেই একই আত্মাতে আরোগ্য সাধনের নানা অনুগ্রহ-দান, আর এক জনকে পরাক্রম-কার্য্য-সাধক গুণ, আর এক জনকে ভাববাণী, আর এক জনকে আত্মাদিগকে চিনিয়া লইবার শক্তি, আর এক জনকে নানাবিধ ভাষা কহিবার শক্তি, এবং আর এক জনকে বিশেষ বিশেষ ভাষার অর্থ করিবার শক্তি দত্ত হয়; কিন্তু এই সকল কর্ম্ম সেই একমাত্র আত্মা সাধন করেন; তিনি সবিশেষ বিভাগ করিয়া যাহাকে যাহা দিতে বাসনা করেন, তাহাকে তাহা দেন। কেননা যেমন দেহ এক, আর তাহার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অনেক, এবং দেহের সমুদয় অঙ্গ, অনেক হইলেও, এক দেহ হয়, খ্রীষ্টও সেইরূপ। ফলতঃ আমরা কি যিহূদী কি গ্রীক, কি দাস কি স্বাধীন, সকলেই এক দেহ হইবার জন্য একই আত্মাতে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, এবং সকলেই এক আত্মা হইতে পায়িত হইয়াছি। আর বাস্তবিক দেহ একটী অঙ্গ নয়, অনেক। পা যদি বলে, আমি ত হাত নই, তজ্জন্য দেহের অংশ নই, তবে তাহা যে দেহের অংশ নহে, এমন নয়। আর কর্ণ যদি বলে, আমি ত চক্ষু নই, তজ্জন্য দেহের অংশ নই, তবে তাহা যে দেহের অংশ নহে, এমন নয়। সমস্ত দেহ যদি চক্ষু হইত, তবে শ্রবণ কোথায় থাকিত? এবং সমস্তই যদি শ্রবণ হইত, তবে ঘ্রাণ কোথায় থাকিত? কিন্তু এখন ঈশ্বর অঙ্গ সকল এক এক করিয়া দেহের মধ্যে যেমন ইচ্ছা করিয়াছেন, সেইরূপ বসাইয়াছেন। নতুবা সমস্তই যদি একটী অঙ্গ হইত, তবে দেহ কোথায় থাকিত? কিন্তু এখন অঙ্গ অনেক বটে, কিন্তু দেহ এক। আর চক্ষু হস্তকে বলিতে পারে না, তোমাতে আমার প্রয়োজন নাই; আবার মাথাও পা দুখানিকে বলিতে পারে না, তোমাদিগেতে আমার প্রয়োজন নাই; বরং দেহের যে সকল অঙ্গকে অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল বলিয়া বোধ হয়, সেইগুলি অধিক প্রয়োজনীয়। আর আমরা দেহের যে সকল অঙ্গকে অপেক্ষাকৃত অনাদরণীয় বলিয়া জ্ঞান করি, সেইগুলিকে অধিক আদরে ভূষিত করি, এবং আমাদের যে অঙ্গগুলি শ্রীহীন, সেইগুলি অধিকতর সুশ্রী প্রাপ্ত হয়; কিন্তু আমাদের যে সকল অঙ্গ সুশ্রী, সেগুলির সে প্রয়োজন নাই। বাস্তবিক, ঈশ্বর দেহ সংগঠিত করিয়াছেন, অসম্পূর্ণকে অধিক আদর করিয়াছেন, যেন দেহের মধ্যে বিচ্ছেদ না হয়, বরং অঙ্গ সকল যেন পরস্পরের জন্য সমভাবে চিন্তা করে। আর এক অঙ্গ দুঃখ পাইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই দুঃখ পায়, এবং এক অঙ্গ গৌরব প্রাপ্ত হইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই আনন্দ করে। তোমরা খ্রীষ্টের দেহ, এবং এক এক জন এক একটী অঙ্গ। আর ঈশ্বর মণ্ডলীতে প্রথমতঃ প্রেরিতগণকে, দ্বিতীয়তঃ ভাববাদিগণকে, তৃতীয়তঃ উপদেশকগণকে স্থাপন করিয়াছেন; তৎপরে নানাবিধ পরাক্রমকার্য্য, তৎপরে আরোগ্যসাধক অনুগ্রহ-দান, উপকার, শাসনপদ, নানাবিধ ভাষা [দিয়াছেন]। সকলেই কি প্রেরিত? সকলেই কি ভাববাদী? সকলেই কি উপদেশক? সকলেই কি পরাক্রম কার্য্যকারী? সকলেই কি আরোগ্যসাধক অনুগ্রহ-দান পাইয়াছে? সকলেই কি বিশেষ বিশেষ ভাষা বলে? সকলেই কি অর্থ বুঝাইয়া দেয়? তোমরা শ্রেষ্ঠ দান সকল প্রাপ্ত হইতে যত্নবান্‌ হও। পরন্তু আমি তোমাদিগকে আরও উৎকৃষ্ট এক পথ দেখাইতেছি। যদি আমি মনুষ্যদের, এবং দূতগণেরও ভাষা বলি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমি শব্দকারক পিত্তল ও ঝম্‌ঝম্‌কারী করতাল হইয়া পড়িয়াছি। আর যদি ভাববাণী প্রাপ্ত হই, এ সমস্ত নিগূঢ়তত্ত্বে ও সমস্ত জ্ঞানে পারদর্শী হই, এবং যদি আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকে যাহাতে আমি পর্ব্বত স্থানান্তর করিতে পারি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমি কিছুই নহি। আর যথাসর্ব্বস্ব যদি দরিদ্রদিগকে খাওয়াইয়া দিই, এবং পোড়াইবার জন্য আপন দেহ দান করি, কিন্তু আমার প্রেম না থাকে, তবে আমার কিছুই লাভ নাই। প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে; সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না। কিন্তু যদি ভাববাণী থাকে, তাহার লোপ হইবে; যদি বিশেষ বিশেষ ভাষা থাকে, সে সকল শেষ হইবে; যদি জ্ঞান থাকে, তাহার লোপ হইবে। কেননা আমরা কতক অংশে জানি, এবং কতক অংশে ভাববাণী বলি; কিন্তু যাহা পূর্ণ তাহা আসিলে, যাহা অংশমাত্র তাহার লোপ হইবে। আমি যখন শিশু ছিলাম, তখন শিশুর ন্যায় কথা কহিতাম, শিশুর ন্যায় চিন্তা করিতাম, শিশুর ন্যায় বিচার করিতাম; এখন মানুষ হইয়াছি বলিয়া শিশুভাবগুলি ত্যাগ করিয়াছি। কারণ এখন আমরা দর্পণে অস্পষ্ট দেখিতেছি, কিন্তু তৎকালে সম্মুখাসম্মুখি হইয়া দেখিব; এখন আমি কতক অংশে জানিতে পাই, কিন্তু তৎকালে আমি আপনি যেমন পরিচিত হইয়াছি, তেমনি পরিচয় পাইব। আর এখন বিশ্বাস, প্রত্যাশা, প্রেম, এই তিনটী আছে, আর ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ। তোমরা প্রেমের অনুধাবন কর, আবার আত্মিক বর সকলের জন্য উদ্‌যোগী হও, বিশেষতঃ যেন ভাববাণী বলিতে পার। কেননা যে ব্যক্তি বিশেষ ভাষায় কথা বলে, সে মানুষের কাছে নয়, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে বলে; কারণ কেহ তাহা বুঝে না, বরং সে আত্মার নিগূঢ়তত্ত্ব বলে। কিন্তু যে ব্যক্তি ভাববাণী বলে, সে মনুষ্যের কাছে গাঁথিয়া তুলিবার এবং আশ্বাস ও সান্ত্বনার কথা কহে। যে ব্যক্তি বিশেষ ভাষায় কথা বলে, সে আপনাকে গাঁথিয়া তুলে, কিন্তু যে ভাববাণী বলে, সে মণ্ডলীকে গাঁথিয়া তুলে। আমি ইচ্ছা করি, যেন তোমরা সকলে বিশেষ বিশেষ ভাষায় কথা বলিতে পার, কিন্তু অধিক ইচ্ছা করি, যেন ভাববাণী বলিতে পার; কেননা যে বিশেষ বিশেষ ভাষায় কথা বলে, মণ্ডলীকে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য সে যদি অর্থ বুঝাইয়া না দেয়, তবে ভাববাণী-প্রচারক তাহা হইতে মহান্‌। এখন, হে ভ্রাতৃগণ, আমি তোমাদের নিকটে আসিয়া যদি বিশেষ বিশেষ ভাষায় কথা বলি, কিন্তু তোমাদের কাছে প্রত্যাদেশ কিম্বা জ্ঞান কিম্বা ভাববাণী কিম্বা উপদেশক্রমে কথা না বলি, তবে আমা হইতে তোমাদের কি উপকার দর্শিবে? বাঁশী হউক, কি বীণা হউক, ধ্বনিযুক্ত নিষ্প্রাণ বস্তুও যদি তাল মান না রাখিয়া বাজে, তবে বাঁশীতে বা বীণাতে কি বাজিতেছে, তাহা কিসে জানা যাইবে? বস্তুতঃ তূরীর ধ্বনি যদি অস্পষ্ট হয়, তবে কে যুদ্ধের জন্য সুসজ্জ হইবে? তেমনি তোমরা যদি জিহ্বা দ্বারা, যাহা সহজে বুঝা যায়, এমন কথা না বল, তবে কি বলা হইতেছে, তাহা কিসে জানা যাইবে? বরঞ্চ তোমাদের কথা আকাশকেই বলা হইবে। হয় ত জগতে এত প্রকার রব আছে, আর রববিহীন কিছুই নাই। ভাল, আমি যদি রব বিশেষের অর্থ না জানি, তবে যে জন বলে, তাহার পক্ষে আমি বর্ব্বর হইব, এবং আমার পক্ষে সেই বক্তা বর্ব্বর। অতএব তোমরা যখন বিবিধ আত্মিক বরের জন্য উদ্যোগী, তখন চেষ্টা কর, যেন মণ্ডলীকে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য উপচয় প্রাপ্ত হও। এই জন্য যে ব্যক্তি বিশেষ ভাষায় কথা বলে, সে প্রার্থনা করুক, যেন অর্থ বুঝাইয়া দিতে পারে। কেননা যদি আমি বিশেষ ভাষায় প্রার্থনা করি, তবে আমার আত্মা প্রার্থনা করে, কিন্তু আমার বুদ্ধি ফলহীন থাকে। তবে দাঁড়াইল কি? আমি আত্মাতে প্রার্থনা করিব, বুদ্ধিতেও প্রার্থনা করিব; আত্মাতে গান করিব, বুদ্ধিতেও গান করিব। নতুবা যদি তুমি আত্মাতে ধন্যবাদ কর, তবে যে ব্যক্তি সামান্য শ্রোতার স্থান পূর্ণ করে, সে কেমন করিয়া তোমার ধন্যবাদে ‘আমেন্‌’ বলিবে? তুমি কি বলিতেছ, তাহা ত সে জানে না। কারণ তুমি সুন্দররূপে ধন্যবাদ দিতেছ বটে, কিন্তু সেই ব্যক্তিকে গাঁথিয়া তোলা হয় না। ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি, তোমাদের সকলের অপেক্ষা আমি অধিক ভাষায় কথা বলিয়া থাকি; কিন্তু মণ্ডলীর মধ্যে, বিশেষ ভাষায় দশ সহস্র কথা অপেক্ষা, বরং বুদ্ধি দ্বারা পাঁচটী কথা কহিতে চাই, যেন অন্য লোকদিগকেও শিক্ষা দিতে পারি। ভ্রাতৃগণ, তোমরা বুদ্ধিতে বালক হইও না, বরঞ্চ হিংসাতে শিশুগণের ন্যায় হও, কিন্তু বুদ্ধিতে পরিপক্ব হও। ব্যবস্থায় লেখা আছে, “আমি পরভাষীদের দ্বারা এবং পরদেশীদের ওষ্ঠ দ্বারা এই জাতির কাছে কথা কহিব, কিন্তু তাহা করিলেও তাহারা আমার কথা শুনিবে না, ইহা প্রভু বলেন।” অতএব সেই বিশেষ বিশেষ ভাষা বিশ্বাসীদের নিমিত্ত নয়, বরং অবিশ্বাসীদেরই নিমিত্ত চিহ্নস্বরূপ; কিন্তু ভাববাণী অবিশ্বাসীদের নিমিত্ত নয়, বরং বিশ্বাসীদেরই নিমিত্ত। অতএব সমস্ত মণ্ডলী এক স্থানে সমবেত হইলে যদি সকলে বিশেষ বিশেষ ভাষায় কথা বলে, এবং কতকগুলি সামান্য কি অবিশ্বাসী লোক প্রবেশ করে, তবে তাহারা কি বলিবে না যে, তোমরা পাগল? কিন্তু সকলে যদি ভাববাণী বলে, আর কোন অবিশ্বাসী কি সামান্য ব্যক্তি প্রবেশ করে, তবে সে সকলের দ্বারা দোষীকৃত হয়, সে সকলের দ্বারা বিচারিত হয়, তাহার হৃদয়ের গুপ্ত ভাব সকল প্রকাশ পায়; এবং এইরূপে সে অধোমুখে পড়িয়া ঈশ্বরের ভজনা করিবে, বলিবে, ঈশ্বর বাস্তবিকই তোমাদের মধ্যবর্ত্তী। ভ্রাতৃগণ, তবে দাঁড়াইল কি? তোমরা যখন সমবেত হও, তখন কাহারও গীত থাকে, কাহারও উপদেশ থাকে, কাহারও প্রত্যাদেশ থাকে, কাহারও বিশেষ ভাষা থাকে, কাহারও অর্থব্যাখ্যা থাকে, সকলই গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত হউক। যদি কেহ বিশেষ ভাষায় কথা বলে, তবে দুই জন, কিম্বা অধিক হইলে তিন জন বলুক, পালানুক্রমেই বলুক, আর এক জন অর্থ বুঝাইয়া দিউন। কিন্তু অর্থকারক না থাকিলে সেই ব্যক্তি মণ্ডলীতে নীরব হইয়া থাকুক, কেবল আপনার ও ঈশ্বরের উদ্দেশে কথা বলুক, আর ভাববাদীরা দুই কিম্বা তিন জন করিয়া কথা বলুক, অন্য সকলে বিচার করুক। কিন্তু এমন আর কাহারও কাছে যদি কিছু প্রকাশিত হয়, যে বসিয়া রহিয়াছে, তবে প্রথম ব্যক্তি নীরব থাকুক। কারণ তোমরা সকলে এক এক করিয়া ভাববাণী বলিতে পার, যেন সকলেই শিক্ষা পায়, ও সকলেই আশ্বাসিত হয়। আর ভাববাদীদের আত্মা ভাববাদীদের বশে আছে; কেননা ঈশ্বর গোলযোগের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু শান্তির। যেমন পবিত্রগণের সমস্ত মণ্ডলীতে হইয়া থাকে, স্ত্রীলোকেরা মণ্ডলীতে নীরব থাকুক, কেননা কথা কহিবার অনুমতি তাহাদিগকে দেওয়া যায় না, বরং যেমন ব্যবস্থাও বলে, তাহারা বশীভূতা হইয়া থাকুক। আর যদি তাহারা কিছু শিখিতে চায়, তবে নিজ নিজ স্বামীকে ঘরে জিজ্ঞাসা করুক, কারণ মণ্ডলীতে স্ত্রীলোকের কথা বলা লজ্জার বিষয়। বল দেখি, ঈশ্বরের বাক্য কি তোমাদেরই নিকট হইতে বাহির হইয়াছিল? কিম্বা কেবল তোমাদেরই কাছে আসিয়াছিল? কেহ যদি আপনাকে ভাববাদী কিম্বা আত্মিক বলিয়া মনে করে, তবে সে বুঝুক, আমি তোমাদের কাছে যাহা যাহা লিখিলাম, সে সকল প্রভুর আজ্ঞা। কিন্তু কেহ যদি না জানে, সে না জানুক। অতএব, হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা ভাববাণী বলিবার জন্য উদ্যোগী হও, এবং বিশেষ বিশেষ ভাষা কহিতে বারণ করিও না। কিন্তু সকলই শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে করা হউক। হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে সেই সুসমাচার জানাইতেছি, যে সুসমাচার তোমাদের নিকট প্রচার করিয়াছি, যাহা তোমরা গ্রহণও করিয়াছ, যাহাতে তোমরা দাঁড়াইয়া আছ; আর তাহারই দ্বারা, আমি তোমাদের কাছে যে কথাতে সুসমাচার প্রচার করিয়াছি, তাহা যদি ধরিয়া রাখ, তবে পরিত্রাণ পাইতেছ; নচেৎ তোমরা বৃথা বিশ্বাসী হইয়াছ। ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন; আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন; তাহার পরে একেবারে পাঁচশতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন, তাহাদের অধিকাংশ লোক অদ্যাপি বর্ত্তমান রহিয়াছে, কিন্তু কেহ কেহ নিদ্রাগত হইয়াছে। তাহার পরে তিনি যাকোবকে, পরে সকল প্রেরিতকে দেখা দিলেন। সকলের শেষে অকাল-জাতের ন্যায় যে আমি, আমাকেও দেখা দিলেন। কেননা পেরিতগণের মধ্যে আমি সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র, বরং প্রেরিত নামে আখ্যাত হইবার অযোগ্য, কারণ আমি ঈশ্বরের মণ্ডলীর তাড়না করিতাম। কিন্তু আমি যাহা আছি, ঈশ্বরের অনুগ্রহেই আছি; এবং আমার প্রতি প্রদত্ত তাঁহার অনুগ্রহ নিরর্থক হয় নাই, বরং তাঁহাদের সকলের অপেক্ষা আমি অধিক পরিশ্রম করিয়াছি; আমি করিয়াছি, তাহা নয়, কিন্তু আমার সহবর্ত্তী ঈশ্বরের অনুগ্রহই করিয়াছে; অতএব আমিই হই, আর তাঁহারাই হউন, আমরা এইরূপ প্রচার করি, এবং তোমরা এইরূপ বিশ্বাস করিয়াছ। ভাল, খ্রীষ্ট যখন এই বলিয়া প্রচারিত হইতেছেন যে, তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন, তখন তোমাদের কেহ কেহ কেমন করিয়া বলিতেছ যে, মৃতগণের পুনরুত্থান নাই? মৃতগণের পুনরুত্থান যদি না হয়, তবে খ্রীষ্টও ত উত্থাপিত হন নাই। আর খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে ত আমাদের প্রচারও বৃথা, তোমাদের বিশ্বাসও বৃথা। আবার আমরা যে ঈশ্বরের সম্বন্ধে মিথ্যা সাক্ষী, ইহাই প্রকাশ পাইতেছে; কারণ আমরা ঈশ্বরের বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিয়াছি যে, তিনি খ্রীষ্টকে উত্থাপন করিয়াছেন; কিন্তু যদি মৃতগণের উত্থাপন না হয়, তাহা হইলে তিনি তাঁহাকে উত্থাপন করেন নাই। কেননা মৃতগণের উত্থাপন যদি না হয়, তবে খ্রীষ্টও উত্থাপিত হন নাই। আর খ্রীষ্ট যদি উত্থাপিত না হইয়া থাকেন, তাহা হইলে তোমাদের বিশ্বাস অলীক, এখনও তোমরা আপন আপন পাপে রহিয়াছ। সুতরাং যাহারা খ্রীষ্টে নিদ্রাগত হইয়াছে, তাহারাও বিনষ্ট হইয়াছে। সুধু এই জীবনে যদি খ্রীষ্টে প্রত্যাশা করিয়া থাকি, তবে আমরা সকল মনুষ্যের মধ্যে অধিক দুর্ভাগা। কিন্তু বাস্তবিক খ্রীষ্ট মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন, তিনি নিদ্রাগতদের অগ্রিমাংশ। কেননা মনুষ্য দ্বারা যখন মৃত্যু আসিয়াছে, তখন আবার মনুষ্য দ্বারা মৃতগণের পুনরুত্থান আসিয়াছে। কারণ আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে। কিন্তু প্রত্যেক জন আপন আপন শ্রেণীতে; খ্রীষ্ট অগ্রিমাংশ, পরে খ্রীষ্টের লোক সকল তাঁহার আগমনকালে। তৎপরে পরিণাম হইবে; তখন তিনি সমস্ত আধিপত্য এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব ও পরাক্রম লোপ করিলে পর পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন। কেননা যাবৎ তিনি “সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন,” তাঁহাকে রাজত্ব করিতেই হইবে। শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে। কারণ “তিনি সকলই বশীভূত করিয়া তাঁহার পদতলে রাখিলেন” । কিন্তু যখন তিনি বলেন যে, সকলই বশীভূত করা হইয়াছে, তখন স্পষ্ট দেখা যায়, যিনি সকলই তাঁহার বশীভূত করিলেন, তাঁহাকে বাদ দেওয়া হইল। আর সকলই তাঁহার বশীভূত করা হইলে পর পুত্র আপনিও তাঁহার বশীভূত হইবেন, যিনি সকলই তাঁহার বশে রাখিয়াছিলেন; যেন ঈশ্বরই সর্ব্বেসর্ব্বা হন। নতুবা, মৃতদের নিমিত্ত যাহারা বাপ্তাইজিত হয়, তাহারা কি করিবে? মৃতেরা যদি একেবারেই উত্থাপিত না হয়, তাহা হইলে উহাদের নিমিত্ত তাহারা আবার কেন বাপ্তাইজিত হয়? আর আমরাই বা কেন ঘন্টায় ঘন্টায় বিপদের মধ্যে পড়ি? ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে তোমাদের বিষয়ে আমার যে শ্লাঘা, তাহার দোহাই দিয়া বলিতেছি, আমি প্রতিদিন মরিতেছি। ইফিষে পশুদের সহিত যে যুদ্ধ করিয়াছি, তাহা যদি মানুষের মত করিয়া থাকি, তবে তাহাতে আমার কি ফল দর্শে? মৃতেরা যদি উত্থাপিত না হয়, তবে “আইস, আমরা ভোজন পান করি, কেননা কল্য মরিব”। ভ্রান্ত হইও না, কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে। ধার্ম্মিক হইবার জন্য চেতন হও, পাপ করিও না, কেননা কাহারও কাহারও ঈশ্বর-জ্ঞান নাই; আমি তোমাদের লজ্জার নিমিত্ত এই কথা কহিতেছি। কিন্তু কেহ বলিবে, মৃতেরা কি প্রকারে উত্থাপিত হয়? কি প্রকার দেহেই বা আইসে? হে নির্ব্বোধ, তুমি আপনি যাহা বুন, তাহা না মরিলে জীবিত করা যায় না। আর যাহা বুন, যে দেহ উৎপন্ন হইবে, তুমি তাহা বুন না; বরং গোমেরই হউক, কি অন্য কোন কিছুরই হউক, বীজমাত্র বুনিতেছ; আর ঈশ্বর তাহাকে যে দেহ দিতে ইচ্ছা করিলেন, তাহাই দেন; আর তিনি প্রত্যেক বীজকে তাহার নিজের দেহ দেন। সকল মাংস এক প্রকার মাংস নয়; কিন্তু মনুষ্যের এক প্রকার, পশুর মাংস অন্য প্রকার, পক্ষীর মাংস অন্য প্রকার, ও মৎস্যের অন্য প্রকার। আর স্বর্গীয় দেহ আছে, ও পার্থিব দেহ আছে; কিন্তু স্বর্গীয় দেহগুলির এক প্রকার তেজ, ও পার্থিব দেহগুলির অন্য প্রকার। সূর্য্যের এক প্রকার তেজ, চন্দ্রের আর এক প্রকার তেজ, ও নক্ষত্রগণের আর এক প্রকার তেজ; কারণ তেজ সম্বন্ধে একটী নক্ষত্র হইতে অন্য নক্ষত্র ভিন্ন। মৃতগণের পুনরুত্থানও তদ্রূপ। ক্ষয়ে বপন করা যায়, অক্ষয়তায় উত্থাপন করা হয়; অনাদরে বপন করা যায়, গৌরবে উত্থাপন করা হয়; দুর্ব্বলতায় বপন করা যায়, শক্তিতে উত্থাপন করা হয়; প্রাণিক দেহ বপন করা যায়, আত্মিক দেহ উত্থাপন করা হয়। যখন প্রাণিক দেহ আছে, তখন আত্মিক দেহও আছে। এইরূপ লেখাও আছে, প্রথম “মনুষ্য” আদম “সজীব প্রাণী হইল;” শেষ আদম জীবনদায়ক আত্মা হইলেন। কিন্তু যাহা আত্মিক, তাহা প্রথম নয়, বরং যাহা প্রাণিক, তাহাই প্রথম; যাহা আত্মিক তাহা পশ্চাৎ। প্রথম মনুষ্য মৃত্তিকা হইতে, মৃন্ময়, দ্বিতীয় মনুষ্য স্বর্গ হইতে। মৃন্ময় ব্যক্তিরা সেই মৃন্ময়ের তুল্য, এবং স্বর্গীয় ব্যক্তিরা সেই স্বর্গীয়ের তুল্য। আর আমরা যেমন সেই মৃন্ময়ের প্রতিমূর্ত্তি ধারণ করিয়াছি, তেমনি সেই স্বর্গীয় ব্যক্তির প্রতিমূর্ত্তিও ধারণ করিব। আমি এই বলি, ভ্রাতৃগণ, রক্ত মাংস ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হইতে পারে না; এবং ক্ষয় অক্ষয়তার অধিকারী হয় না। দেখ, আমি তোমাদিগকে এক নিগূঢ়তত্ত্ব বলি; আমরা সকলে নিদ্রাগত হইব না, কিন্তু সকলে রূপান্তরীকৃত হইব; এই মুহূর্ত্তের মধ্যে, চক্ষুর পলকে, শেষ তূরীধ্বনিতে হইব; কেননা তূরী বাজিবে, তাহাতে মৃতেরা অক্ষয় হইয়া উত্থাপিত হইবে, এবং আমরা রূপান্তরীকৃত হইব। কারণ এই ক্ষয়ণীয়কে অক্ষয়তা পরিধান করিতে হইবে, এবং এই মর্ত্ত্যকে অমরতা পরিধান করিতে হইবে। আর এই ক্ষয়ণীয় যখন অক্ষয়তা পরিহিত হইবে, এবং এই মর্ত্ত্য যখন অমরতা পরিহিত হইবে, তখন এই যে কথা লিখিত আছে, তাহা সফল হইবে, “মৃত্যু জয়ে কবলিত হইল”। “মৃত্যু, তোমার জয় কোথায়? মৃত্যু, তোমার হুল কোথায়?” মৃত্যুর হুল পাপ, ও পাপের বল ব্যবস্থা। কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হউক, তিনি আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমাদিগকে জয় প্রদান করেন। অতএব, হে আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ, সুস্থির হও, নিশ্চল হও, প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়, কেননা তোমরা জান যে, প্রভুতে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়। আর পবিত্রগণের নিমিত্ত চাঁদার সম্বন্ধে, আমি গালাতিয়া দেশস্থ মণ্ডলী সকলকে যে আজ্ঞা দিয়াছি, তদনুসারে তোমরাও কর। সপ্তাহের প্রথম দিনে তোমরা প্রত্যেকে আপনাদের নিকটে কিছু কিছু রাখিয়া আপন আপন সঙ্গতি অনুসারে অর্থ সঞ্চয় কর; যেন আমি যখন আসিব, তখনই চাঁদা না হয়। পরে আমি উপস্থিত হইলে, তোমরা যাহাদিগকে যোগ্য মনে করিবে, আমি তাহাদিগকে পত্র দিয়া তাহাদের দ্বারা তোমাদের সেই দান যিরূশালেমে পাঠাইয়া দিব। আর আমারও যদি যাওয়া উপযুক্ত হয়, তবে তাহারা আমার সঙ্গে যাইবে। মাকিদনিয়া দেশ দিয়া যাত্রা সমাপ্ত হইলেই আমি তোমাদের ওখানে যাইব, কেননা আমি মাকিদনিয়া দেশ দিয়া যাইতে উদ্যত আছি। আর হয় ত তোমাদের নিকটে কিছু দিন অবস্থিতি করিব, কি জানি, শীতকালও যাপন করিব; তাহা হইলে আমি যেখানেই যাই, তোমরা আমাকে আগাইয়া দিয়া আসিতে পারিবে। কেননা তোমাদের সহিত এবার পথঘটিত সাক্ষাৎ করিতে বাসনা করি না; কারণ আমার প্রত্যাশা এই যে, যদি প্রভুর অনুমতি হয়, আমি তোমাদের কাছে কিছু কাল থাকিব। কিন্তু পঞ্চাশত্তমী পর্য্যন্ত আমি ইফিষে আছি; কারণ আমার সম্মুখে এক দ্বার খোলা রহিয়াছে, তাহা বৃহৎ ও কার্য্যসাধক; আর বিপক্ষ অনেক। তীমথিয় যদি আইসেন, তবে দেখিও, যেন তিনি তোমাদের কাছে নির্ভয়ে থাকেন, কেননা যেমন আমি করি, তেমনি তিনি প্রভুর কার্য্য করিতেছেন; অতএব কেহ তাঁহাকে হেয়জ্ঞান না করুক। কিন্তু তাঁহাকে শান্তিতে আগাইয়া দিবে, যেন তিনি আমার নিকটে আসিতে পারেন, কারণ আমি অপেক্ষা করিতেছি যে, তিনি ভ্রাতৃগণের সহিত আসিবেন। আর আপল্লো ভ্রাতার বিষয়ে বলিতেছি; আমি তাঁহাকে অনেক বিনতি করিয়াছিলাম, যেন তিনি ভ্রাতৃগণের সহিত তোমাদের কাছে যান; কিন্তু এখন যাইতে কোন প্রকারে তাঁহার ইচ্ছা হইল না; সুযোগ পাইলেই যাইবেন। তোমরা জাগিয়া থাক, বিশ্বাসে দাঁড়াইয়া থাক, বীরত্ব দেখাও, বলবান্‌ হও। তোমাদের সকল কার্য্য প্রেমে হউক। আর হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে নিবেদন করিতেছি;—তোমরা স্তিফানের পরিজনকে জান, তাঁহারা আখায়া দেশের অগ্রিমাংশ, এবং পবিত্রগণের পরিচর্য্যায় আপনাদিগকে নিযুক্ত করিয়াছেন;— তোমরাও এই প্রকার লোকদের, এবং যত জন কার্য্যে সাহায্য করেন, ও পরিশ্রম করেন, সেই সকলের বশবর্ত্তী হও। স্তিফানের, ফর্তুনাতের ও আখায়িকের আগমনে আমি আনন্দ করিতেছি, কেননা তোমাদের ত্রুটি তাঁহারা পূর্ণ করিয়াছেন; কারণ তাঁহারা আমার এবং তোমাদেরও আত্মাকে আপ্যায়িত করিয়াছেন। অতএব তোমরা এই প্রকার লোকদিগকে চিনিয়া মান্য করিও। এশিয়ার মণ্ডলী সকল তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছে। আক্বিলা ও প্রিষ্কা এবং তাঁহাদের গৃহস্থিত মণ্ডলী তোমাদিগকে প্রভুতে অনেক মঙ্গলবাদ করিতেছেন। ভ্রাতৃগণ সকলে তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। তোমরা পবিত্র চুম্বনে পরস্পর মঙ্গলবাদ কর। আমার মঙ্গলবাদ আমি পৌল স্বহস্তে লিখিলাম। কোন ব্যক্তি যদি প্রভুকে ভাল না বাসে, তবে সে শাপগ্রস্ত হউক; মারাণ আথা [প্রভু আসিতেছেন]। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের সহবর্ত্তী হউক। খ্রীষ্ট যীশুতে আমার প্রেম তোমাদের সকলের সহবর্ত্তী হউক। পৌল, ঈশ্বরের ইচ্ছায় খ্রীষ্ট যীশুর প্রেরিত, এবং তীমথিয় ভ্রাতা,—করিন্থে ঈশ্বরের যে মণ্ডলী আছে, এবং সমস্ত আখায়া দেশে যে সকল পবিত্র লোক আছেন, তাঁহাদের সর্ব্বজন সমীপে। আমাদের পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনিই করুণাসমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর; তিনি আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন, যেন আমরা নিজে ঈশ্বরদত্ত যে সান্ত্বনায় সান্ত্বনাপ্রাপ্ত হই, সেই সান্ত্বনা দ্বারা সমস্ত ক্লেশের পাত্রদিগকে সান্ত্বনা করিতে পারি। কেননা খ্রীষ্টের দুঃখভোগ যেমন আমাদের প্রতি উপচিয়া পড়ে, তেমনি খ্রীষ্ট দ্বারা আমাদের সান্ত্বনাও উপচিয়া পড়ে। আর আমরা যদি ক্লেশ পাই, তবে তাহা তোমাদের সান্ত্বনার ও পরিত্রাণের নিমিত্ত; অথবা যদি সান্ত্বনা পাই, তবে তাহা তোমাদের সান্ত্বনার নিমিত্ত; সেই সান্ত্বনা সেই একই প্রকার ধৈর্য্যযুক্ত দুঃখভোগে কার্য্য সাধন করিতেছে, যে প্রকার দুঃখ আমরাও ভোগ করিতেছি। আর তোমাদের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা দৃঢ়; কেননা আমরা জানি, তোমরা যেমন দুঃখভোগের, তেমনি সান্ত্বনারও সহভাগী। কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, এশিয়ায় আমাদের যে ক্লেশ ঘটিয়াছিল, তোমরা যে সে বিষয় অজ্ঞাত থাক, ইহা আমাদের ইচ্ছা নয়; ফলতঃ আত্যন্তিক দুঃখভারে আমরা শক্তির অতিরিক্তরূপে ভারগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছিলাম; এমন কি, জীবনের আশাও ছাড়িয়া দিয়াছিলাম; বরং আমরা আপনাদের অন্তরে এই উত্তর পাইয়াছিলাম যে, মৃত্যু আসিতেছে, যেন আপনাদের উপরে নির্ভর না দিয়া মৃতগণের উত্থাপনকারী ঈশ্বরের উপরে নির্ভর দিই। তিনিই এত বড় মৃত্যু হইতে আমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছেন ও উদ্ধার করিবেন; আমরা তাঁহাতেই প্রত্যাশা করিয়াছি যে, ইহার পরেও তিনি উদ্ধার করিবেন; ইহাতে তোমরাও বিনতি দ্বারা আমাদের পক্ষে সাহায্য করিতেছ, যেন অনেকের দ্বারা যে অনুগ্রহ-দান আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে, তন্নিমিত্ত অনেক মুখ হইতে আমাদের পক্ষে ধন্যবাদ প্রদান করা হয়। কারণ আমাদের শ্লাঘা এই, আমাদের সংবেদ সাক্ষ্য দিতেছে যে, ঈশ্বর-দত্ত পবিত্রতায় ও সরলতায়, মাংসিক বিজ্ঞতায় নয়, কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহে, আমরা জগতের মধ্যে, এবং আরও বাহুল্যরূপে তোমাদের প্রতি আচরণ করিয়াছি; আমরা ত আর কোন বিষয় তোমাদিগকে লিখিতেছি না, কেবল তাহাই লিখিতেছি, যাহা তোমরা পাঠ করিয়া থাক, অথবা স্বীকার করিয়া থাক, আর আশা করি, তোমরা শেষ পর্য্যন্ত তাহা স্বীকার করিবে। বাস্তবিক তোমরা কতক পরিমাণে আমাদিগকে এই বলিয়া স্বীকার করিয়াছ যে, আমরা যেমন তোমাদের শ্লাঘার হেতু, আমাদের প্রভু যীশুর দিনে তোমরাও তেমনি আমাদের শ্লাঘার হেতু। আর এই দৃঢ় বিশ্বাস প্রযুক্ত আমার এই মানস ছিল যে, আমি অগ্রে তোমাদের কাছে যাইব, যেন তোমরা দ্বিতীয় বার অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও; আর তোমাদের নিকট দিয়া মাকিদনিয়ায় গমন করিব, পরে মাকিদনিয়া হইতে আবার তোমাদের কাছে যাইব, আর তোমরা আমাকে যিহূদিয়ার পথে আগাইয়া দিয়া আসিবে। ভাল, এরূপ মানস করায় কি আমি চাঞ্চল্য প্রকাশ করিয়াছিলাম? অথবা আমি যে সকল মনস্থ করি, সে সকল মনস্থ কি মাংসের মতে করিয়া থাকি যে, আমার কাছে হাঁ হাঁ ও না না হইবে? বরং ঈশ্বর যেমন বিশ্বাস্য, তেমনি তোমাদের প্রতি আমাদের বাক্য ‘হাঁ’ আবার ‘না’ হয় না। ফলতঃ ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্ট, যিনি আমাদের দ্বারা, অর্থাৎ আমার ও সীলের ও তীমথিয়ের দ্বারা তোমাদের নিকটে প্রচারিত হইয়াছেন, তিনি ‘হাঁ’ আবার ‘না’ হন নাই, কিন্তু তাঁহাতেই ‘হাঁ’ হইয়াছে; কারণ ঈশ্বরের যত প্রতিজ্ঞা, তাঁহাতেই সে সকলের ‘হাঁ’ হয়, সে জন্য তাঁহার দ্বারা ‘আমেন’ও হয়, যেন আমাদের দ্বারা ঈশ্বরের গৌরব হয়। আর যিনি তোমাদের সহিত আমাদিগকে খ্রীষ্টে স্থির করিতেছেন, এবং আমাদিগকে অভিষিক্ত করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর; আর তিনি আমাদিগকে মুদ্রাঙ্কিতও করিয়াছেন, এবং আমাদের হৃদয়ে আত্মাকে বায়না দিয়াছেন। কিন্তু আমি আপন প্রাণের উপরে ঈশ্বরকে সাক্ষী মানিয়া কহিতেছি, তোমাদের প্রতি মমতা করাতেই এখন পর্য্যন্ত করিন্থে আসি নাই। আমরা যে তোমাদের বিশ্বাসের উপরে প্রভুত্ব করি, এমন নয়, বরং তোমাদের আনন্দের সহকারী হই; কারণ বিশ্বাসেই তোমরা দাঁড়াইয়া আছে। আর আমি নিজে এই স্থির করিয়াছিলাম যে, পুনর্ব্বার মনোদুঃখ লইয়া তোমাদের নিকটে যাইব না। কেননা আমি যদি তোমাদিগকে দুঃখিত করি, তবে আমার আনন্দদায়ক কে? কেবল সেই, যে আমা দ্বারা দুঃখিত হয়। আর এই অভিপ্রায়ে সেই কথা লিখিয়াছিলাম, যেন আমি আসিলে যাহাদের হইতে আমার আনন্দিত হওয়া উপযুক্ত, তাহাদের হইতে মনোদুঃখ না জন্মে; কেননা তোমাদের সকলের বিষয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, আমার আনন্দে তোমাদের সকলেরই আনন্দ। কারণ অনেক ক্লেশ ও মনোবেদনার মধ্যে অনেক অশ্রুপাত করিতে করিতে তোমাদিগকে লিখিয়াছিলাম; তোমরা যেন দুঃখিত হও, সে জন্য নয়, কিন্তু তোমাদের প্রতি আমার যে অতিমাত্র প্রেম আছে, তাহা যেন জ্ঞাত হও। কিন্তু কেহ যদি দুঃখ দিয়া থাকে, তবে সে আমাকে দুঃখ দেয় নাই, কিন্তু কতক পরিমাণে—আমি যেন বেশী পীড়ন না করি,—তোমাদের সকলকেই দিয়াছে। অধিকাংশ লোকের দ্বারা তাদৃশ ব্যক্তি যে দণ্ড পাইয়াছে, তাহাই তাহার পক্ষে যথেষ্ট। অতএব তোমরা বরং তাহাকে ক্ষমা করিলে ও সান্ত্বনা করিলে ভাল হয়, পাছে অতিরিক্ত মনোদুঃখে তাদৃশ ব্যক্তি কবলিত হয়। এ কারণ বিনতি করি, তোমরা তাহার প্রতি প্রেম স্থির কর, কারণ তোমরা সর্ব্ববিষয়ে আজ্ঞাবহ কি না, ইহার প্রমাণ জ্ঞাত হইবার নিমিত্ত তোমাদিগকে লিখিয়াছিলাম। যাহার কোন দোষ তোমরা ক্ষমা কর, আমিও ক্ষমা করি; কেননা আমিও যদি কিছু ক্ষমা করিয়া থাকি, তবে তোমাদের নিমিত্তে খ্রীষ্টের সাক্ষাতে তাহা ক্ষমা করিয়াছি, যেন আমরা শয়তানকর্ত্তৃক প্রতারিত না হই; কেননা তাহার কল্পনা সকল আমরা অজ্ঞাত নই। আমি যখন খ্রীষ্টের সুসমাচারের জন্য ত্রোয়াতে গিয়াছিলাম, আর প্রভুতে আমার সম্মুখে একটী দ্বার খোলা হইয়াছিল, তখন আমার ভ্রাতা তীতকে না পাওয়াতে আমার আত্মায় কিছু আরাম পাই নাই; কিন্তু আমি তাহাদের নিকট হইতে বিদায় লইয়া মাকিদনিয়ায় চলিয়া গেলাম। আর ধন্য ঈশ্বর, তিনি সর্ব্বদা আমাদিগকে লইয়া খ্রীষ্টে বিজয়-যাত্রা করেন, এবং তাঁহার সম্বন্ধীয় জ্ঞানের সুগন্ধ আমাদের দ্বারা সর্ব্বস্থানে প্রকাশ করেন; কারণ যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছে ও যাহারা বিনাশ পাইতেছে, উভয়ের কাছে আমরা ঈশ্বরের পক্ষে খ্রীষ্টের সুগন্ধস্বরূপ। এক পক্ষের প্রতি আমরা মৃত্যুমূলক মৃত্যুজনক গন্ধ, অন্য পক্ষের প্রতি জীবনমূলক জীবনদায়ক গন্ধ। আর এই সকলের জন্য উপযুক্ত কে? আমরা ত সেই অনেকের ন্যায় যে ঈশ্বরের বাক্যে ভাঁজ দিই, তাহা নয়; কিন্তু সরল ভাবে, ঈশ্বরের আদেশক্রমে, আমরা ঈশ্বরের সম্মুখে খ্রীষ্টে কথা কহিতেছি। আমরা কি পুনর্ব্বার আপনাদের প্রশংসা করিতে আরম্ভ করিতেছি? অথবা তোমাদের প্রতি কিম্বা তোমাদের হইতে সুখ্যাতি-পত্রে কি অন্য কাহারও কাহারও ন্যায় আমাদেরও প্রয়োজন আছে? তোমরাই আমাদের পত্র, আমাদের হৃদয়ে লিখিত পত্র, যাহা সকল মনুষ্য জানে ও পাঠ করে; ফলতঃ তোমরা খ্রীষ্টের পত্র, আমাদের পরিচর্য্যায় সাধিত পত্র বলিয়া প্রকাশ পাইতেছ; তাহা কালী দিয়া নয়, কিন্তু জীবন্ত ঈশ্বরের আত্মা দিয়া, প্রস্তর-ফলকে নয়, কিন্তু মাংসময় হৃদয়ফলকে লিখিত হইয়াছে। আর খ্রীষ্ট দ্বারা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের এইরূপ দৃঢ় বিশ্বাস হইয়াছে। আমরা যে আপনারাই কিছুর মীমাংসা করিতে নিজ গুণে উপযুক্ত তাহা নয়; কিন্তু আমাদের উপযোগিতা ঈশ্বর হইতে উৎপন্ন; তিনিই আমাদিগকে নূতন নিয়মের পরিচারক, অক্ষরের নয়, কিন্তু আত্মার পরিচারক হইবার উপযুক্তও করিয়াছেন; কারণ অক্ষর বধ করে, কিন্তু আত্মা জীবনদায়ক। কিন্তু মৃত্যুর যে পরিচর্য্যা-পদ প্রস্তরে লিখিত ও ক্ষোদিত, তাহা যদি এমন তেজযুক্ত হইয়া আসিল যে, ইস্রায়েল-সন্তানগণ মোশির মুখের তেজ প্রযুক্ত তাঁহার মুখের দিকে একদৃষ্টে চাহিতে পারিল না, — সেই তেজ ত লোপ পাইতেছিল—তবে কেন আত্মার পরিচর্য্যা-পদ বরং আরও তেজযুক্ত হইবে না? কেননা দণ্ডাজ্ঞার পরিচর্য্যা-পদ যদি তেজস্বরূপ হইল, তবে ধার্ম্মিকতার পরিচর্য্যা-পদ তেজে আরও অধিক উপচিয়া পড়ে। কারণ যাহা তেজযুক্ত করা হইয়াছিল, তাহা এ বিষয়ে সেই অতিরিক্ত তেজ প্রযুক্ত তেজযুক্ত হয় নাই। কেননা যাহা লোপ পাইতেছে, তাহা যদি তেজযুক্ত হইল, তবে যাহা স্থায়ী, তাহা কত অধিক তেজযুক্ত। অতএব, আমাদের এই প্রকার প্রত্যাশা থাকাতে আমরা অতি স্পষ্ট কথা ব্যবহার করি; আর মোশির মত করি না; তিনি ত আপন মুখে আবরণ দিতেন, যেন ইস্রায়েল-সন্তানগণ একদৃষ্টে চাহিয়া যাহা লোপ পাইতেছিল, তাহার পরিণাম না দেখে। কিন্তু তাহাদের মন কঠিনীভূত হইয়াছিল। কেননা পুরাতন নিয়মের পাঠে সেই আবরণ অদ্য পর্য্যন্ত রহিয়াছে, খোলা যায় না, কেননা তাহা খ্রীষ্টেই লোপ পায়; কিন্তু অদ্য পর্য্যন্ত যে কোন সময়ে মোশি পাঠ করা হয়, তখন তাহাদের হৃদয়ের উপরে আবরণ থাকে। কিন্তু হৃদয় যখন প্রভুর প্রতি ফিরে, তখন আবরণ উঠাইয়া ফেলা হয়। আর প্রভুই সেই আত্মা; এবং যেখানে প্রভুর আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা। কিন্তু আমরা সকলে অনাবৃত মুখে প্রভুর তেজ দর্পণের ন্যায় প্রতিফলিত করিতে করিতে তেজ হইতে তেজ পর্য্যন্ত যেমন প্রভু হইতে, আত্মা হইতে হইয়া থাকে, তেমনি সেই মূর্ত্তিতে স্বরূপান্তরীকৃত হইতেছি। এই জন্য আমরা এই পরিচর্য্যা-পদ প্রাপ্ত হওয়ায়, যেরূপে দয়া পাইয়াছি, তদনুসারে নিরুৎসাহ হই না; বরং লজ্জার গুপ্ত কার্য্যসমূহে জলাঞ্জলি দিয়াছি, ধূর্ত্ততায় চলি না, ঈশ্বরের বাক্যে ভাঁজ দিই না, কিন্তু সত্য প্রকাশ দ্বারা ঈশ্বরের সাক্ষাতে মনুষ্যমাত্রের সংবেদের কাছে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি। কিন্তু আমাদের সুসমাচার যদি আবৃত থাকে, তবে যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদেরই কাছে আবৃত থাকে। তাহাদের মধ্যে এই যুগের দেব অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচারদীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়। বস্তুতঃ আমরা আপনাদিগকে নয়, কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুতেই প্রভু বলিয়া প্রচার করিতেছি, এবং আপনাদিগকে যীশুর নিমিত্ত তোমাদের দাস বলিয়া দেখাইতেছি। কারণ যে ঈশ্বর বলিয়াছিলেন, ‘অন্ধকারের মধ্য হইতে দীপ্তি প্রকাশিত হইবে,’ তিনিই আমাদের হৃদয়ে দীপ্তি প্রকাশ করিলেন, যেন যীশু খ্রীষ্টের মুখমণ্ডলে ঈশ্বরের গৌরবের জ্ঞান দীপ্তি প্রকাশ পায়। কিন্তু এই ধন মৃন্ময় পাত্রে করিয়া আমরা ধারণ করিতেছি, যেন পরাক্রমের উৎকর্ষ ঈশ্বরের হয়, আমাদের হইতে নয়। আমরা সর্ব্বপ্রকারে ক্লিষ্ট হইতেছি, কিন্তু সঙ্কটাপন্ন হই না; হতবুদ্ধি হইতেছি, কিন্তু নিরাশ হই না; তাড়িত হইতেছি, কিন্তু পরিত্যক্ত হই না; অধঃক্ষিপ্ত হইতেছি, কিন্তু বিনষ্ট হই না। আমরা সর্ব্বদা এই দেহে যীশুর মৃত্যু বহন করিয়া বেড়াইতেছি, যেন যীশুর জীবনও আমাদের দেহে প্রকাশ পায়। কেননা আমরা জীবিত হইয়াও যীশুর জন্য সর্ব্বদাই মৃত্যু-মুখে সমর্পিত হইতেছি, যেন আমাদের মর্ত্ত্য মাংসে যীশুর জীবনও প্রকাশ পায়। এইরূপে আমাদিগেতে মৃত্যু, কিন্তু তোমাদিগেতে জীবন কার্য্য সাধন করিতেছে। পরন্তু বিশ্বাসের সেই আত্মা আমাদের আছে, যেরূপ লেখা আছে, “আমি বিশ্বাস করিলাম, তাই কথা কহিলাম; তেমনি আমরাও বিশ্বাস করিতেছি, তাই কথাও কহিতেছি; কেননা আমরা জানি, যিনি প্রভু যীশুকে উঠাইয়াছেন, তিনি যীশুর সহিত আমাদিগকেও উঠাইবেন, এবং তোমাদের সহিত উপস্থিত করিবেন। কারণ সকলই তোমাদের নিমিত্ত, যেন ঈশ্বরের অনুগ্রহ অধিক লোকের দ্বারা বহুলীকৃত হইয়া ঈশ্বরের গৌরবার্থে প্রচুর ধন্যবাদের কারণ হইয়া উঠে। এই জন্য আমরা নিরুৎসাহ হই না, কিন্তু আমাদের বাহ্য মনুষ্য যদ্যপি ক্ষীণ হইতেছে, তথাপি আন্তরিক মনুষ্য দিন দিন নূতনীকৃত হইতেছে। বস্তুতঃ আপাততঃ আমাদের যে লঘুতর ক্লেশ হইয়া থাকে, তাহা উত্তর উত্তর অনুপমরূপে আমাদের জন্য অনন্তকালস্থায়ী গুরুতর প্রতাপ সাধন করিতেছে; আমরা ত দৃশ্য বস্তু লক্ষ্য না করিয়া অদৃশ্য বস্তু লক্ষ্য করিতেছি; কারণ যাহা যাহা দৃশ্য, তাহা ক্ষণকালস্থায়ী, কিন্তু যাহা যাহা অদৃশ্য, তাহা অনন্তকালস্থায়ী। কারণ আমরা জানি, যদি আমাদের এই তাম্বুরূপ পার্থিব বাটী ভাঙ্গিয়া যায়, তবে ঈশ্বরদত্ত এক গাঁথনি আমাদের আছে, সেই বাটী অহস্তনির্ম্মিত, অনন্তকালস্থায়ী ও স্বর্গে স্থিত। কারণ বাস্তবিক আমরা এই তাম্বুর মধ্যে থাকিয়া আর্ত্তস্বর করিতেছি, ইহার উপরে স্বর্গ হইতে প্রাপ্য আবাস-পরিহিত হইবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছি; পরিহিত হইলে পর আমরা ত উলঙ্গ থাকিব না। আর বাস্তবিক এই তাম্বুতে থাকিয়া আমরা ভারাক্রান্ত হওয়াতে আর্ত্তস্বর করিতেছি; কেননা আমরা পরিচ্ছদ-বিহীন হইতে বাঞ্ছা করি না, কিন্তু ইহার উপরে পরিহিত হইতে বাঞ্ছা করি, যেন যাহা মর্ত্ত্য, তাহা জীবনের দ্বারা কবলিত হয়। আর যিনি আমাদিগকে ইহারই নিমিত্ত প্রস্তুত করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর, তিনি আমাদিগকে আত্মা বায়না দিয়াছেন। অতএব আমরা সর্ব্বদা সাহস করিতেছি, আর জানি, যত দিন এই দেহে নিবাস করিতেছি, তত দিন প্রভু হইতে দূরে প্রবাস করিতেছি; কেননা আমরা বিশ্বাস দ্বারা চলি, বাহ্য দৃশ্য দ্বারা নয়। আমরা সাহস করিতেছি, এবং দেহ হইতে দূরে প্রবাস ও প্রভুর কাছে নিবাস করা অধিক বাঞ্ছনীয় জ্ঞান করিতেছি। আর এই কারণ আমরা লক্ষ্য রাখিতেছি, নিবাসে থাকি, কিম্বা প্রবাসী হই, যেন তাঁহারই প্রীতির পাত্র হই। কারণ আমাদের সকলকেই খ্রীষ্টের বিচারাসনের সম্মুখে প্রত্যক্ষ হইতে হইবে, যেন সৎকার্য্য হউক, কি অসৎকার্য্য হউক, প্রত্যেক জন আপনার কৃত কার্য্য অনুসারে দেহ দ্বারা উপার্জ্জিত ফল পায়। অতএব প্রভুর ভয় কি, তাহা জানাতে আমরা মনুষ্যদিগকে বুঝাইয়া লওয়াইতেছি, কিন্তু ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ রহিয়াছি; আর আমি প্রত্যাশা করি যে, আমরা তোমাদের সংবেদেরও প্রত্যক্ষ রহিয়াছি। আমরা পুনরায় তোমাদের কাছে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি না, কিন্তু আমাদের পক্ষে শ্লাঘা করিবার সুযোগ তোমাদিগকে দিতেছি, যেন, যাহারা হৃদয়ে নয়, সাক্ষাতে শ্লাঘা করে, তোমরা তাহাদিগকে উত্তর দিতে পার। কেননা যদি আমরা হতবুদ্ধি হইয়া থাকি, তবে তাহা ঈশ্বরের জন্য; এবং যদি সুবুদ্ধি হই, তবে তাহা তোমাদের জন্য। কারণ খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে; কেননা আমরা এরূপ বিচার করিয়াছি যে, এক জন সকলের জন্য মরিলেন, সুতরাং সকলেই মরিল; আর তিনি সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে, যিনি তাহাদের জন্য মরিয়াছিলেন, ও উত্থাপিত হইলেন। অতএব এখন অবধি আমরা আর কাহাকেও মাংস অনুসারে জানি না; যদিও খ্রীষ্টকে মাংস অনুসারে জানিয়া থাকি, তথাপি এখন আর জানি না। ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে। আর, সকলই ঈশ্বর হইতে হইয়াছে; তিনি খ্রীষ্ট দ্বারা আপনার সহিত আমাদের সম্মিলন করিয়াছেন, এবং সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদ আমাদিগকে দিয়াছেন; বস্তুতঃ ঈশ্বর খ্রীষ্টে আপনার সহিত জগতের সম্মিলন করাইয়া দিতে ছিলেন, তাহাদের অপরাধ সকল তাহাদের বলিয়া গণনা করিলেন না; এবং সেই সম্মিলনের বার্ত্তা আমাদিগকে সমর্পণ করিয়াছেন। অতএব খ্রীষ্টের পক্ষেই আমরা রাজদূতের কর্ম্ম করিতেছি; ঈশ্বর যেন আমাদের দ্বারা নিবেদন করিতেছেন, আমরা খ্রীষ্টের পক্ষে এই বিনতি করিতেছি, তোমরা ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হও। যিনি পাপ জানেন নাই, তাঁহাকে তিনি আমাদের পক্ষে পাপস্বরূপ করিলেন, যেন আমরা তাঁহাতে ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা-স্বরূপ হই। আর তাঁহার সঙ্গে কার্য্য করিতে করিতে আমরা নিবেদনও করিতেছি, তোমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃথা গ্রহণ করিও না। কেননা তিনি কহেন, “আমি প্রসন্নতার সময়ে তোমার প্রার্থনা শুনিলাম, এবং পরিত্রাণের দিবসে তোমার সাহায্য করিলাম।” দেখ, এখন সুপ্রসন্নতার সময়; দেখ, এখন পরিত্রাণের দিবস। —আমরা কোন বিষয়ে কোন ব্যাঘাত জন্মাই না, যেন সেই পরিচর্য্যা-পদ কলঙ্কিত না হয়; কিন্তু ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া সর্ব্ববিষয়ে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি, —বিপুল ধৈর্য্যে, নানা প্রকার ক্লেশে, অনাটনে, সঙ্কটে, প্রহারে, কারাবাসে, উপপ্লবে, পরিশ্রমে, অনিদ্রায়, অনাহারে; শুদ্ধতায়, জ্ঞানে, চিরসহিষ্ণুতায়, মধুর ভাবে, পবিত্র আত্মায়, অকপট প্রেমে, সত্যের বাক্যে, ঈশ্বরের পরাক্রমে; দক্ষিণ ও বাম হস্তে ধার্ম্মিকতার অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা, গৌরব ও অনাদরক্রমে, অখ্যাতি ও সুখ্যাতিক্রমে; আমরা প্রবঞ্চকের ন্যায়, অথচ সত্যবাদী; অপরিচিতের ন্যায়, অথচ সুপরিচিত; ম্রিয়মাণের ন্যায়, অথচ দেখ, জীবিত আছি; শাসিতের ন্যায়, অথচ হত নহি; দুঃখিতের ন্যায়, কিন্তু সর্ব্বদা আনন্দিত; দীনহীনের ন্যায়, কিন্তু অনেকের ধনদাতা; আমাদের যেন কিছুই নাই, অথচ আমরা সর্ব্বাধিকারী। হে করিন্থীয়েরা, তোমাদের প্রতি আমাদের মুখ খোলা রহিয়াছে, আমাদের হৃদয় প্রশস্ত রহিয়াছে। তোমরা আমাদিগেতে সঙ্কুচিত নহ; কিন্তু আপন আপন অন্তরে সঙ্কুচিত রহিয়াছ। আমি তোমাদিগকে বৎসের ন্যায় জানিয়া বলিতেছি, অনুরূপ প্রতিদানের জন্য তোমরাও প্রশস্ত হও। তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না; কেননা ধর্ম্মে ও অধর্ম্মে পরস্পর কি সহযোগিতা? অন্ধকারের সহিত দীপ্তিরই বা কি সহভাগিতা? আর বলীয়ালের [পাপদেবের] সহিত খ্রীষ্টের কি ঐক্য? অবিশ্বাসীর সহিত বিশ্বাসীরই বা কি অংশ? আর প্রতিমাদের সহিত ঈশ্বরের মন্দিরেরই বা কি সম্পর্ক? আমরাই ত জীবন্ত ঈশ্বরের মন্দির, যেমন ঈশ্বর বলিয়াছেন, “আমি তাহাদের মধ্যে বসতি করিব ও গমনাগমন করিব; এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে।” অতএব “তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক্‌ হও, ইহা প্রভু কহিতেছেন, এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না; তাহাতে আমিই তোমাদিগকে গ্রহণ করিব, এবং তোমাদের পিতা হইব, ও তোমরা আমার পুত্র কন্যা হইবে, ইহা সর্ব্বশক্তিমান্‌ প্রভু কহেন।” অতএব, প্রিয়তমেরা এই সকল প্রতিজ্ঞার অধিকারী হওয়াতে আইস, আমরা মাংসের ও আত্মার সমস্ত মালিন্য হইতে আপনাদিগকে শুচি করি, ঈশ্বরভয়ে পবিত্রতা সিদ্ধ করি। তোমরা আমাদিগকে মনে স্থান দেও; আমরা কাহারও অন্যায় করি নাই, কাহাকেও নষ্ট করি নাই, কাহাকেও ঠকাই নাই। আমি দোষী করিবার জন্য এ কথা কহিতেছি, তাহা নয়; কেননা পূর্ব্বে বলিয়াছি, তোমরা আমাদের হৃদয়ে এমন গাঁথা রহিয়াছ যে, মরি ত একসঙ্গে, বাঁচি ত একসঙ্গে। তোমাদের কাছে আমার বড়ই সাহস; তোমাদের পক্ষে আমি বড়ই শ্লাঘা করি; আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমি সান্ত্বনাতে পরিপূর্ণ, আমি আনন্দে উথলিয়া পড়িতেছি। কারণ যখন আমরা মাকিদনিয়াতে আসিয়াছিলাম, তখনও আমাদের মাংসের কিছুমাত্র শান্তি ছিল না; কিন্তু সর্ব্বদিকে ক্লিষ্ট হইতেছিলাম; বাহিরে যুদ্ধ, অন্তরে ভয় ছিল। তথাপি ঈশ্বর, যিনি অবনতদিগকে সান্ত্বনা করেন, তিনি তীতের আগমন দ্বারা আমাদিগকে সান্ত্বনা করিলেন; আর কেবল তাঁহার আগমন দ্বারা নয়, কিন্তু তোমাদের মধ্যে তিনি যে সান্ত্বনায় সান্ত্বনা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, তাহা দ্বারাও সান্ত্বনা করিলেন। কারণ তিনি তোমাদের অনুরাগ, তোমাদের বিলাপ, ও আমার পক্ষে তোমাদের উদ্যোগ বিষয়ক সংবাদ দিলেন, তাহাতে আমি আরও আনন্দিত হইলাম। কেননা যদিও আমার পত্র দ্বারা তোমাদিগকে দুঃখিত করিয়াছিলাম, তবু অনুশোচনা করি না—যদিও অনুশোচনা করিয়াছিলাম—কেননা আমি দেখিতে পাইতেছি যে, সেই পত্র তোমাদের মনোদুঃখ জন্মাইয়াছে, কিন্তু তাহা কেবল কিয়ৎকালের জন্য; এখন আমি আনন্দ করিতেছি; তোমাদের মনোদুঃখ হইয়াছে, সে জন্য নয়, কিন্তু তোমাদের মনোদুঃখ যে মনপরিবর্ত্তন-জনক হইয়াছে, সেই জন্য; কারণ ঈশ্বরের মতানুযায়ী মনোদুঃখ তোমাদের হইয়াছে, যেন আমাদের দ্বারা কোন বিষয়ে তোমাদের ক্ষতি না হয়। কারণ ঈশ্বরের মতানুযায়ী যে মনোদুঃখ, তাহা পরিত্রাণজনক এমন মনপরিবর্ত্তন উৎপন্ন করে, যাহা অনুশোচনীয় নয়; কিন্তু জগতের মনোদুঃখ মৃত্যু সাধন করে। কারণ দেখ, এই বিষয়টী, অর্থাৎ ঈশ্বরের মতানুযায়ী যে মনোদুঃখ তোমাদের হইয়াছে, তাহা তোমাদের পক্ষে কত যত্ন সাধন করিয়াছে! আর কেমন দোষপ্রক্ষালন, আর কেমন বিরক্তি, আর কেমন ভয়, আর কেমন অনুরাগ, আর কেমন উদ্যোগ, আর কেমন প্রতীকার! সর্ব্ববিষয়ে তোমরা আপনাদিগকে ঐ ব্যাপারে শুদ্ধ দেখাইয়াছ। অতএব আমি যদিও তোমাদের কাছে লিখিয়াছিলাম, তথাপি অপরাধীর জন্য কিম্বা যাহার বিরুদ্ধে অপরাধ করা হইয়াছে, তাহার জন্য নয়, কিন্তু আমাদের পক্ষে তোমাদের যে যত্ন আছে, তাহা যেন ঈশ্বরের সাক্ষাতে তোমাদের প্রত্যক্ষ হয়, এই জন্য লিখিয়াছিলাম। সেই কারণ আমরা সান্ত্বনা পাইলাম; আর আমাদের সেই সান্ত্বনার উপরে তীতের আনন্দে আরও প্রচুর আনন্দ প্রাপ্ত হইলাম, কারণ তোমাদের সকলের দ্বারা তাঁহার আত্মা আপ্যায়িত হইয়াছে। কেননা তাঁহার কাছে আমি কোন বিষয়ে যদি তোমাদের জন্য শ্লাঘা করিয়া থাকি, তাহাতে লজ্জিত হই নাই; কিন্তু আমরা যেমন তোমাদের কাছে সকলই সত্যভাবে বলিয়াছি, তেমনি তীতের কাছে আমাদের কৃত সেই শ্লাঘাও সত্য হইল। আর তোমরা সকলে কেমন আজ্ঞাবহ ছিলে, কেমন সভয় ও সকম্পে তাঁহাকে গ্রহণ করিয়াছিলে, তাহা স্মরণ করিতে করিতে তোমাদের প্রতি তাঁহার স্নেহ অধিক প্রবল হইয়াছে। আমি আনন্দ করিতেছি যে, সর্ব্ববিষয়ে তোমাদের সম্বন্ধে আমার আশ্বাস জন্মিয়াছে। আর ভ্রাতৃগণ, মাকিদনিয়া, দেশস্থ মণ্ডলীসমূহে ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, তাহা আমরা তোমাদিগকে জ্ঞাত করিতেছি। ফলতঃ ক্লেশরূপ মহাপরীক্ষার মধ্যেও তাহাদের আনন্দের উপচয় এবং অগাধ দীনতা তাহাদের দানশীলতারূপ ধনের উদ্দেশে উপচিয়া পড়িয়াছে। কেননা আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তাহারা সাধ্য পর্য্যন্ত, বরং সাধ্যের অতিরিক্ত পরিমাণে স্ব-ইচ্ছায় দান করিয়াছিল, বিস্তর অনুনয় সহকারে সেই অনুগ্রহের সম্বন্ধে, এবং পবিত্রগণের পরিচর্য্যায় সহভাগিতার সম্বন্ধে, আমাদের কাছে অনুরোধ করিয়াছিল। ইহাতে তাহারা যে আমাদের আশামত কর্ম্ম করিল, কেবল তাহা নয়, বরং ঈশ্বরের ইচ্ছাক্রমে আপনাদিগকেই প্রথমে প্রভুর এবং আমাদের উদ্দেশে প্রদান করিল। সেই জন্য আমরা তীতকে অনুরোধ করিলাম, যেন তিনি পূর্ব্বে যেমন আরম্ভ করিয়াছিলেন, তেমনি তোমাদের মধ্যে সেই অনুগ্রহ-কার্য্য সমাপ্তও করেন। ভাল, তোমরা যেমন সর্ব্ববিষয়ে উপচিয়া পড়িতেছ—বিশ্বাসে, বক্তৃতায়, জ্ঞানে, সর্ব্বপ্রকার যত্নে, এবং আমাদের প্রতি তোমাদের প্রেমে —তেমনি যেন এই অনুগ্রহ-কার্য্যেও উপচিয়া পড়। আমি আদেশ স্বরূপে বলিতেছি না, কিন্তু অন্য লোকদের যত্ন দ্বারা তোমাদেরও প্রেমের যথার্থতা পরীক্ষা করিতেছি। কেননা তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ জ্ঞাত আছ, তিনি ধনবান্‌ হইলেও তোমাদের নিমিত্ত দরিদ্র হইলেন, যেন তোমরা তাঁহার দরিদ্রতায় ধনবান্‌ হও। আর এ বিষয়ে আমার মত জানাইতেছি; কারণ তোমাদের পক্ষে ইহা মঙ্গলকর, যেহেতুক তোমরা গত বৎসর হইতে কেবল কার্য্য করিতে নয়, কিন্তু ইচ্ছা করিতেও প্রথমে আরম্ভ করিয়াছ। আর এখন সেই কার্য্যও সমাপ্ত কর; যেমন ইচ্ছা করায় আগ্রহ ছিল, তদ্রূপ যাহার যাহা আছে, তদনুসারে যেন সমাপ্তিও হয়। কেননা যদি আগ্রহ থাকে, তবে যাহার যাহা আছে, তদনুসারে তাহা গ্রাহ্য হয়; যাহার যাহা নাই, তদনুসারে নয়। কেননা এ কথা বলি না যে, অন্য সকলের আরাম ও তোমাদের যেন ক্লেশ হয়, বরং সাম্যভাবের নিয়মানুসারে হউক; এই বর্ত্তমান সময়ে তোমাদের উপচয়ে উহাদের অভাব পূর্ণ হউক, যেন আবার উহাদের উপচয়ে তোমাদের অভাব পূর্ণ হয়, এইরূপে যেন সাম্যভাব হয়; যেমন লেখা আছে, “যে অধিক সংগ্রহ করিল, তাহার অতিরিক্ত হইল না; এবং যে অল্প সংগ্রহ করিল, তাহার অভাব হইল না।” কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হউক, তিনি তীতের হৃদয়ে তোমাদের নিমিত্ত সেই প্রকার যত্ন প্রদান করিয়াছেন; তীত আমাদের অনুরোধ গ্রাহ্য করিলেন বটে, কিন্তু তিনি নিজে অধিক যত্নবান্‌ হওয়াতে স্ব-ইচ্ছায় তোমাদের নিকটে চলিলেন। আর আমরা তাঁহার সঙ্গে সেই ভ্রাতাকে পাঠাইলাম, সুসমাচার সম্বন্ধীয় যাঁহার প্রশংসা সমুদয় মণ্ডলীতে ব্যাপিয়াছে; কেবল তাহা নয়, কিন্তু তিনি সেই অনুগ্রহ-কার্য্য সম্বন্ধে আমাদের সহচর হইবার জন্য মণ্ডলীগণ কর্ত্তৃক নির্ব্বাচিতও হইয়াছেন, যে কার্য্য প্রভুর গৌরব ও আমাদের আগ্রহ প্রকাশার্থে আমাদের পরিচর্য্যায় সম্পাদিত হইতেছে। আমরা সাবধানে চলিতেছি, পাছে এই যে মহাদানের পরিচর্য্যা আমাদের দ্বারা সম্পাদিত হইতেছে, এই বিষয়ে কেহ আমাদের উপরে দোষারোপ করে। কারণ কেবল প্রভুর সাক্ষাতে নয় মনুষ্যদের সাক্ষাতে যাহা উত্তম, তাহাও আমরা চিন্তা করি। আর উহাঁদের সহিত আমাদের সেই ভ্রাতাকে পাঠাইলাম, যাঁহাকে আমরা অনেক বার অনেক বিষয়ে পরীক্ষা করিয়া যত্নবান্‌ দেখিয়াছি, এবং তোমাদের প্রতি তাঁহার দৃঢ় বিশ্বাস হেতু এবার আরও যত্নবান্‌ দেখিতেছি। তীতের বিষয় যদি বলিতে হয়, তবে তিনি আমার সহভাগী ও তোমাদের পক্ষে আমার সহকারী। আমাদের ভ্রাতৃগণের বিষয় যদি বলিতে হয়, তাঁহারা মণ্ডলীগণের প্রেরিত, খ্রীষ্টের গৌরব। অতএব তোমাদের প্রেম এবং তোমাদের পক্ষে আমাদের শ্লাঘা, এই উভয়ের প্রমাণ মণ্ডলীগণের সাক্ষাতে তাঁহাদিগকে প্রদর্শন কর। বাস্তবিক পবিত্রগণের পরিচর্য্যা করিবার বিষয়ে তোমাদিগকে আমার লেখা বাহুল্য; কারণ আমি তোমাদের আগ্রহ জানি, এবং তোমাদের পক্ষে সে বিষয়ে মাকিদনীয়দের কাছে এই শ্লাঘা করিয়া থাকি যে, গত বৎসর হইতে আখায়া প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে; আর তোমাদের উদ্যোগ তাহাদের অধিকাংশ লোককে উৎসাহিত করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু আমি সেই ভ্রাতৃগণকে পাঠাইয়াছি, যেন তোমাদের পক্ষে আমাদের শ্লাঘা এই বিষয়ে ব্যর্থ না হয়, যেন আমি যেমন বলিয়াছি, তদনুসারে তোমরা প্রস্তুত হও; নতুবা কি জানি, মাকিদনীয় কোন কোন লোক আমার সহিত আসিয়া যদি তোমাদিগকে প্রস্তুত না দেখে, তবে সেই দৃঢ় প্রত্যাশার বিষয়ে আমাদের (বলিতে চাহি না যে তোমাদেরও) লজ্জা জন্মিবে; এই জন্য আমি ভ্রাতৃগণকে এই অনুরোধ করা আবশ্যক বুঝিলাম, যেন তাঁহারা অগ্রে তোমাদের নিকটে যান, এবং পূর্ব্বে অঙ্গীকৃত তোমাদের সেই দান ঠিকঠাক করেন, যেন এইরূপে তাহা পীড়াপীড়ির বিষয় বলিয়া নয়, কিন্তু বদান্যতার বিষয় বলিয়া প্রস্তুত থাকে। কিন্তু আমি বলি এই, যে অল্প পরিমাণে বীজ বুনে, সে অল্প পরিমাণে শস্যও কাটিবে; আর যে ব্যক্তি আশীর্ব্বাদের সহিত বীজ বুনে, সে আশীর্ব্বাদের সহিত শস্যও কাটিবে। প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন। আর ঈশ্বর তোমাদিগকে সর্ব্বপ্রকার অনুগ্রহের উপচয় দিতে সমর্থ; যেন সর্ব্ববিষয়ে সর্ব্বদা সর্ব্বপ্রকার প্রাচুর্য্য থাকায় তোমরা সর্ব্বপ্রকার সৎকর্ম্মের নিমিত্ত উপচিয়া পড়। যেমন লেখা আছে, “সে ছড়াইয়া দিয়াছে, দরিদ্রদিগকে দান করিয়াছে, তাহার ধার্ম্মিকতা চিরস্থায়ী।” আর যিনি বপনকারীকে বীজ ও আহারের জন্য খাদ্য যোগাইয়া থাকেন, তিনি তোমাদের বপনের বীজ যোগাইবেন এবং প্রচুর করিবেন, আর তোমাদের ধার্ম্মিকতার ফল বৃদ্ধি করিবেন; এইরূপে তোমরা সর্ব্বপ্রকার দানশীলতার নিমিত্তে সর্ব্ববিষয়ে ধনবান্‌ হইবে, আর এই দানশীলতা আমাদের দ্বারা ঈশ্বরের প্রতি ধন্যবাদ সম্পন্ন করে। কেননা এই সেবারূপ পরিচর্য্যা-কর্ম্ম পবিত্রগণের অভাব পূর্ণ করিতেছে, কেবল তাহা নয়, বরং অনেক ধন্যবাদের দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশেও উপচিয়া পড়িতেছে। কেননা তোমাদের এই পরিচর্য্যাঘটিত পরীক্ষাসিদ্ধতা হেতু তাহারা ঈশ্বরের গৌরব করিতেছে, খ্রীষ্টের সুসমাচারের প্রতি তোমাদের স্বীকৃত আজ্ঞাবহতা প্রযুক্ত, এবং উহাদের প্রতি ও সকলের প্রতি সহভাগিতানুরূপ দানশীলতা প্রযুক্ত করিতেছে; আর তোমাদের প্রতি ঈশ্বরের অতি মহৎ অনুগ্রহ হেতু তাহারা তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা করিতে করিতে তোমাদের জন্য আকাঙ্ক্ষা করিতেছে। ঈশ্বরের বর্ণনাতীত দানের নিমিত্ত তাঁহার ধন্যবাদ হউক। আর আমি পৌল নিজে খ্রীষ্টের মৃদুতা ও সৌজন্য দ্বারা তোমাদিগকে অনুনয় করিতেছি। আমি নাকি সম্মুখে তোমাদের মধ্যে বিনত, কিন্তু অসাক্ষাতে তোমাদের প্রতি সাহসিক। কিন্তু আমি বিনতি করিতেছি, কাহারও কাহারও বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ভাবে যে সাহস দেখান আবশ্যক মনে করি, সাক্ষাৎ হইলে যেন আমাকে সেই সাহস দেখাইতে না হয়; তাহারা আমাদের বিষয়ে মনে করে যে, আমরা মাংসের বশে চলিয়া থাকি। আমরা মাংসে চলিতেছি বটে, কিন্তু মাংসের বশে যুদ্ধযাত্রা করিতেছি না; কারণ আমাদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র মাংসিক নহে, কিন্তু দুর্গসমূহ ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে পরাক্রমী। আমরা বিতর্ক সকল এবং ঈশ্বর-জ্ঞানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত উচ্চ বস্তু ভাঙ্গিয়া ফেলিতেছি, এবং সমুদয় চিন্তাকে বন্দি করিয়া খ্রীষ্টের আজ্ঞাবহ করিতেছি; আর তোমাদের আজ্ঞাবহতা সম্পূর্ণ হইলে পর সমস্ত অবাধ্যতার সমুচিত দণ্ড দিতে প্রস্তুত আছি। যাহা সম্মুখে আছে, তোমরা তাহাই নিরীক্ষণ করিতেছ। কেহ যদি নিজের উপরে বিশ্বাস রাখিয়া বলে, আমি খ্রীষ্টের লোক, তবে সে পুনর্ব্বার আপনা আপনি বিচার করিয়া বুঝুক, সে যেমন, আমরাও তেমনি খ্রীষ্টের লোক। বাস্তবিক আমাদের কর্ত্তৃত্ব বিষয়ে কিঞ্চিৎ অধিক শ্লাঘা করিলেও আমি লজ্জা পাইব না; প্রভু তোমাদের উৎপাটনের নিমিত্ত নয়, কিন্তু তোমাদিগকে গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত সেই কর্ত্তৃত্ব দিয়াছেন; আমি পত্রগুলির দ্বারা যে তোমাদিগকে ভয় দেখাইতেছি, এমন মনে করিও না। কেহ কেহ বলে, তাঁহার পত্র সকল ভারযুক্ত ও তেজস্বী বটে, কিন্তু সাক্ষাতে তাঁহার শরীর দুর্ব্বল এবং তাঁহার বাক্য হেয়। এরূপ লোক বুঝুক যে, আমরা অনুপস্থিতি কালে পত্র দ্বারা বাক্যে যেমন, উপস্থিতি কালে কার্য্যেও তেমনি। কেননা এমন কোন কোন লোকের সহিত আমরা আপনাদিগকে গণনা করিতে কি তুলনা দিতে সাহস করি না, যাহারা আপনারাই আপনাদের প্রশংসা করে; কিন্তু উহারা আপনাদের পরিমাণ-দণ্ডে আপনাদিগকে পরিমাণ করে, এবং আপনাদের সহিত আপনাদের তুলনা করে বলিয়া বুঝে না। আমরা কিন্তু পরিমাণের অতিরিক্ত শ্লাঘা করিব না, বরং ঈশ্বর পরিমাণ বলিয়া আমাদের পক্ষে যে সীমা নিরূপণ করিয়াছেন, তাহার পরিমাণ অনুসারে শ্লাঘা করিব; তাহা তোমাদের নিকট পর্য্যন্তও যায়। ফলতঃ তাহা তোমাদের নিকট পর্য্যন্ত যায় না, এই বলিয়া আমরা যে সীমা অতিক্রম করিতেছি, এমন নয়, কেননা খ্রীষ্টের সুসমাচার লইয়া আমরা তোমাদের নিকট পর্য্যন্তও প্রথমে উপস্থিত হইয়াছিলাম। আমরা পরিমাণ না মানিয়া যে পরের পরিশ্রমের শ্লাঘা করি, তাহা নয়; কিন্তু প্রত্যাশা করি যে, তোমাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পাইলে আমাদের সীমা অনুসারে তোমাদের মধ্যে আরও অপর্য্যাপ্তরূপে বিস্তারিত হইব; তাহাতে তোমাদের পরবর্ত্তী অঞ্চলেও সুসমাচার প্রচার করিতে পাইব; পরের সীমার মধ্যে যাহা প্রস্তুত হইয়াছে, তাহার উপলক্ষে শ্লাঘা করিব না। তবে “যে শ্লাঘা করে, সে প্রভুতেই শ্লাঘা করুক;” কেননা আপনার প্রশংসা যে করে, সে নয়, কিন্তু প্রভু যাহার প্রশংসা করেন, সেই পরীক্ষাসিদ্ধ। আমার ইচ্ছা, যেন একটু নির্ব্বুদ্ধিতার বিষয়ে তোমরা আমার প্রতি সহিষ্ণুতা কর; তোমরা আমার প্রতি সহিষ্ণুতা করিতেছই ত। কারণ ঈশ্বরীয় অন্তর্জ্বালায় তোমাদের জন্য আমার অন্তর্জ্বালা হইতেছে, কেননা আমি তোমাদিগকে সতী কন্যা বলিয়া একই বর খ্রীষ্টের হস্তে সমর্পণ করিবার জন্য বাগ্দান করিয়াছি। কিন্তু আশঙ্কা হইতেছে, পাছে সর্প যেমন আপন ধূর্ত্ততায় হবাকে প্রতারণা করিয়াছিল, তেমনি তোমাদের মন খ্রীষ্টের প্রতি সরলতা ও শুদ্ধতা হইতে ভ্রষ্ট হয়। কোন আগন্তুক যদি এমন আর এক যীশুকে প্রচার করে, যাহাকে আমরা প্রচার করি নাই, কিম্বা তোমরা যদি এমন অন্যবিধ আত্মা পাও, যাহা প্রাপ্ত হও নাই, বা এমন অন্যবিধ সুসমাচার পাও, যাহা গ্রহণ কর নাই, তবে বিলক্ষণ সহিষ্ণুতা করিতেছ! কারণ আমার বিচার এই যে, সেই প্রেরিত-চূড়ামণিদের হইতে আমি একটুও পিছনে নহি। কিন্তু যদিও আমি বক্তৃতায় সামান্য, তথাপি জ্ঞানে সামান্য নই; ইহা আমরা সর্ব্ববিষয়ে সকল লোকের মধ্যে তোমাদের কাছে প্রকাশ করিয়াছি। অথবা আমি কি পাপ করিয়াছি যে, তোমাদের উন্নতির নিমিত্তে আপনাকে বিনত করিয়াছি, বিনা বেতনে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করিয়াছি? তোমাদের পরিচর্য্যা করিবার জন্য আমি অন্য অন্য মণ্ডলীকে লুট করিয়া বেতন গ্রহণ করিয়াছি; এবং যখন তোমাদের নিকটে ছিলাম, তখন আমার অভাব হইলেও কাহারও ভারস্বরূপ হই নাই, কেননা মাকিদনিয়া হইতে ভ্রাতৃগণ আসিয়া আমার অভাব দূর করিলেন। হাঁ, আমি যাহাতে কোন বিষয়ে তোমাদের ভারস্বরূপ না হই, আপনাকে এরূপে রক্ষা করিয়াছি, এবং রক্ষা করিব। খ্রীষ্টের সত্য যখন আমাতে আছে, তখন আখায়ার কোন অঞ্চলে কেহ আমার এই শ্লাঘা নিবারণ করিতে পারিবে না। কেন? আমি তোমাদিগকে প্রেম করি না বলিয়া কি? ঈশ্বর জাননে। কিন্তু যাহা করিতেছি, তাহা আরও করিব; যাহারা সুযোগ পাইতে ইচ্ছা করে, তাহাদের সুযোগ যেন খণ্ডন করিতে পারি; তাহারা যে বিষয়ের শ্লাঘা করে, সেই বিষয়ে যেন আমাদের সমান হইয়া পড়ে। কেননা এরূপ লোকেরা ভাক্ত প্রেরিত, প্রতারক কর্ম্মকারী, তাহারা খ্রীষ্টের প্রেরিতদের বেশ ধারণ করে। আর ইহা আশ্চর্য্য নয়, কেননা শয়তান আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে। সুতরাং তাহার পরিচারকেরাও যে ধার্ম্মিকতার পরিচারকদের বেশ ধারণ করে, ইহা মহৎ বিষয় নয়; তাহাদের পরিণাম তাহাদের ক্রিয়ানুসারে হইবে। আমি পুনর্ব্বার বলিতেছি, কেহ আমাকে নির্ব্বোধ জ্ঞান না করুক; কিন্তু তোমরা যদি কর, তবে আমাকে নির্ব্বোধ বলিয়াই গ্রাহ্য কর, যেন আমিও একটু শ্লাঘা করি। এই যে কথা বলিতেছি, ইহা প্রভুর মতানুসারে বলিতেছি না, কিন্তু এক প্রকার নির্ব্বুদ্ধিতায় এই শ্লাঘার নিশ্চয়জ্ঞানে বলিতেছি। অনেকে যখন মাংস অনুসারে শ্লাঘা করিতেছে, তখন আমিও শ্লাঘা করিব। কেননা তোমরা নিজে বুদ্ধিমান্‌ বলিয়া নির্ব্বোধ লোকদের প্রতি আনন্দের সহিত সহিষ্ণুতা করিয়া থাক; কারণ কেহ যদি তোমাদিগকে দাস করে, যদি তোমাদিগকে খাইয়া ফেলে, যদি তোমাদিগকে ধরিয়া লয়, যদি দর্প করে, যদি তোমাদের গালে চড় মারে, তবে তোমরা সহিষ্ণুতা করিয়া থাক। আমি অনাদর স্বীকারপূর্ব্বক বলিতেছি, আমরা যেন দুর্ব্বল ছিলাম; তথাপি যে বিষয়ে অন্য কেহ সাহস করে—নির্ব্বুদ্ধিতায় বলিতেছি—সেই বিষয়ে আমিও সাহস করি। উহারা কি ইব্রীয়? আমিও তাহাই। উহারা কি ইস্রায়েলীয়? আমিও তাহাই। উহারা কি অব্রাহামের বংশ? আমিও তাহাই। উহারা কি খ্রীষ্টের পরিচারক? —হতবুদ্ধির ন্যায় বলিতেছি—আমি অধিকতররূপে; আমি পরিশ্রমে অতিমাত্ররূপে, কারাবন্ধনে অতিমাত্ররূপে, প্রহারে অতিরিক্তরূপে, প্রাণসংশয়ে অনেক বার। যিহূদীদের হইতে পাঁচ বার ঊনচল্লিশ আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছি। তিন বার বেত্রাঘাত, এক বার প্রস্তরাঘাত, তিন বার নৌকাভঙ্গ সহ্য করিয়াছি, অগাধ জলে এক দিবারাত্র যাপন করিয়াছি; যাত্রায় অনেক বার, নদীসঙ্কটে, দস্যুসঙ্কটে, স্বজাতি-ঘটিত সঙ্কটে, পরজাতি-ঘটিত সঙ্কটে, নগরসঙ্কটে, মরুসঙ্কটে, সমুদ্রসঙ্কটে, ভাক্ত-ভ্রাতৃগণের মধ্যে ঘটিত সঙ্কটে, পরিশ্রমে ও আয়াসে, অনেক বার নিদ্রার অভাবে, ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায়, অনেক বার অনাহারে, শীতে ও উলঙ্গতায়। আর সকল বিষয়ের কথা থাকুক, একটী বিষয় প্রতিদিন আমার উপরে চাপিয়া রহিয়াছে, —সমস্ত মণ্ডলীর চিন্তা। কে দুর্ব্বল হইলে আমি দুর্ব্বল না হই? কে বিঘ্ন পাইলে আমি না পুড়ি? যদি শ্লাঘা করিতে হয়, তবে আমার নানা দুর্ব্বলতার বিষয়ে শ্লাঘা করিব। প্রভু যীশুর ঈশ্বর ও পিতা, যিনি যুগে যুগে ধন্য, তিনি জানেন যে, আমি মিথ্যা কথা বলিতেছি না। দম্মেশকে আরিতা রাজার নিযুক্ত শাসনকর্ত্তা আমাকে ধরিবার চেষ্টায় দম্মেশকীয়দের সেই নগরে পাহারা দেওয়াইতেছিলেন; আর একটী ঝুড়িতে করিয়া প্রাচীরস্থ বাতায়ন দিয়া আমাকে নামাইয়া দেওয়া হয়, তাই তাঁহার হাত এড়াইয়াছিলাম। শ্লাঘা করা আমার পক্ষে আবশ্যক, তাহা হিতজনক নয় বটে, কিন্তু প্রভুর নানা দর্শন ও প্রত্যাদেশের কথা কহিব। আমি খ্রীষ্টের আশ্রিত এক ব্যক্তিকে জানি, চৌদ্দ বৎসর হইল—সশরীরে কি না, জানি না; অশরীরে কি না, জানি না; ঈশ্বর জানেন—এমন ব্যক্তি তৃতীয় স্বর্গ পর্য্যন্ত নীত হইয়াছিল। আর এমন ব্যক্তির বিষয়ে আমি জানি—সশরীরে কি অশরীরে, তাহা আমি জানি না ঈশ্বর জানেন— সে পরমদেশে নীত হইয়া অকথনীয় কথা শুনিয়াছিল, তাহা বলা মনুষ্যের বিধেয় নয়। এমন ব্যক্তির জন্য শ্লাঘা করিব; কিন্তু আপনার জন্য শ্লাঘা করিব না, কেবল নানা দুর্ব্বলতার শ্লাঘা করিব। বাস্তবিক শ্লাঘা করিবার ইচ্ছা করিলেও আমি নির্ব্বোধ হইব না, কারণ সত্যই বলিব। তথাপি ক্ষান্ত রহিলাম, পাছে কেহ আমাকে যেরূপ দেখিতে পায় ও আমার মুখে যেরূপ শুনিতে পায়, আমাকে তদপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলিয়া জ্ঞান করে। আর ঐ প্রত্যাদেশের অতি মহত্ত্ব হেতু আমি যেন অতিমাত্র দর্প না করি, এই কারণে আমার মাংসে একটা কন্টক, শয়তানের এক দূত, আমাকে দত্ত হইল, যেন সে আমাকে মুষ্ট্যাঘাত করে, যেন আমি অতিমাত্র দর্প না করি। এই বিষয় লইয়া আমি প্রভুর কাছে তিন বার নিবেদন করিয়াছিলাম, যেন উহা আমাকে ছাড়িয়া যায়। আর তিনি আমাকে বলিয়াছেন, আমার অনুগ্রহ তোমার পক্ষে যথেষ্ট; কেননা আমার শক্তি দুর্ব্বলতায় সিদ্ধি পায়। অতএব আমি বরং অতিশয় আনন্দের সহিত নানা দুর্ব্বলতায় শ্লাঘা করিব, যেন খ্রীষ্টের শক্তি আমার উপরে অবস্থিতি করে। এই হেতু খ্রীষ্টের নিমিত্ত নানা দুর্ব্বলতা, অপমান, অনাটন, তাড়না, সঙ্কট ঘটিলে আমি প্রীত হই, কেননা যখন আমি দুর্ব্বল, তখনই বলবান্‌। আমি নির্ব্বোধ হইলাম; তোমরাই আমার পক্ষে তাহা আবশ্যক করিয়াছ; কারণ আমার প্রশংসা করা তোমাদেরই উচিত ছিল; কেননা যদিও আমি কিছুই নই, তবু সেই প্রেরিত-চূড়ামণিদের হইতে কিছুতেই পিছনে পড়ি নাই। প্রেরিতের চিহ্ন সকল তোমাদের মধ্যে সম্পূর্ণ ধৈর্য্য সহকারে, নানা চিহ্নকার্য্য, অদ্ভুত লক্ষণ ও পরাক্রমকার্য্য দ্বারা, সম্পন্ন হইয়াছে। বল দেখি, অন্য সকল মণ্ডলী অপেক্ষা তোমরা কিসে অপকৃষ্ট হইলে? আমি আপনি তোমাদের গলগ্রহ হই নাই, এইমাত্র; আমার এই অন্যায়টী ক্ষমা কর। দেখ, এই তৃতীয় বার আমি তোমাদের কাছে যাইতে প্রস্তুত আছি; আর আমি তোমাদের গলগ্রহ হইব না; কেননা আমি তোমাদের কোন দ্রব্যের চেষ্টা নয়, তোমাদেরই চেষ্টা করিতেছি; কারণ পিতামাতার জন্য ধন সঞ্চয় করা সন্তানদের কর্ত্তব্য নয়, বরং সন্তানদের জন্য পিতামাতার কর্ত্তব্য। আর আমি অতিশয় আনন্দের সহিত তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত ব্যয় করিব, এবং ব্যয়িতও হইব। আমি যখন তোমাদিগকে অধিক প্রেম করি, তখন কি অল্পতর প্রেম প্রাপ্ত হই? যাহা হউক, আমি তোমাদিগকে ভারগ্রস্ত করি নাই, কিন্তু ধূর্ত্ত হওয়াতে নাকি ছলে ধরিয়াছি! আমি তোমাদের কাছে যাঁহাদিগকে পাঠাইয়াছিলাম, তাঁহাদের কাহারও দ্বারা কি তোমাদিগকে ঠকাইয়াছি? আমি তীতকে অনুরোধ করিয়াছিলাম, এবং তাঁহার সঙ্গে সেই ভ্রাতাকে পাঠাইয়াছিলাম; তীত কি তোমাদিগকে ঠকাইয়াছেন? আমরা কি একই আত্মায়, একই পদচিহ্ন দিয়া চলি নাই? এ যাবৎ তোমরা মনে করিতেছ যে, আমরা তোমাদেরই নিকটে দোষ কাটাইবার কথা কহিতেছি। আমরা ঈশ্বরেরই সাক্ষাতে খ্রীষ্টে কথা কহিতেছি; আর, প্রিয়তমেরা, সকলই তোমাদিগকে গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত কহিতেছি। কেননা আমার ভয় হয়, পাছে উপস্থিত হইলে আমি তোমাদিগকে যেরূপ দেখিতে চাই, সেইরূপ না দেখি, এবং তোমরা আমাকে যেরূপ দেখিতে না চাও, সেইরূপ দেখ, পাছে কোন মতে বিবাদ, ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা, পরনিন্দা, কাণ-ভাঙ্গানি, দর্প, গণ্ডগোল বাধিয়া উঠে; পাছে আমি পুনর্ব্বার আসিলে আমার ঈশ্বর তোমাদের কাছে আমাকে নত করেন, এবং যাহারা পূর্ব্বে পাপ করিয়াছিল, তথাপি আপনাদের কৃত অশুচি ক্রিয়া, ব্যভিচার ও লম্পটাচার বিষয়ে অনুতাপ করে নাই, এমন অনেক লোকের জন্য আমাকে বিলাপ করিতে হয়। এই তৃতীয় বার আমি তোমাদের কাছে যাইতেছি। “দুই কিম্বা তিন সাক্ষীর মুখে সকল কথা নিষ্পন্ন হইবে।” দ্বিতীয় বার উপস্থিত হইলে পর এখন অনুপস্থিত আছি বলিয়া, যাহারা পূর্ব্বে পাপ করিয়াছে, তাহাদিগকে ও অন্য সকলকে আমি আগেই বলিয়াছি ও আগেই কহিতেছি, যদি আবার আসি, আমি মমতা করিব না; কারণ খ্রীষ্ট যিনি আমাতে কথা কহেন, তোমরা ত তাঁহারই বিষয়ে প্রমাণ খুঁজিতেছ; তিনি তোমাদের পক্ষে দুর্ব্বল নহেন, বরং তোমাদের মধ্যে শক্তিমান্‌। কেননা তিনি দুর্ব্বলতা প্রযুক্ত ক্রুশারোপিত হইয়াছিলেন বটে, কিন্তু ঈশ্বরের শক্তি প্রযুক্ত জীবিত আছেন। আর আমরাও তাঁহাতে দুর্ব্বল, কিন্তু তোমাদের পক্ষে ঈশ্বরের শক্তি প্রযুক্ত তাঁহার সহিত জীবিত থাকিব। আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর। অথবা তোমরা কি আপনাদের সম্বন্ধে জান না যে, যীশু খ্রীষ্ট তোমাদিগেতে আছেন? অবশ্য যদি তোমরা অপ্রামাণিক না হও। কিন্তু আশা করি, তোমরা জানিবে যে, আমরা অপ্রামাণিক নহি। আর আমরা ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি, যেন তোমরা কোন মন্দ কার্য্য না কর, আমরা যেন প্রমাণ-সিদ্ধ বলিয়া প্রতীয়মান হই, সে জন্য নয়, বরং যদিও আমরা অপ্রামাণিকের ন্যায় হই, তোমরা যেন সৎকর্ম্ম কর। কারণ আমরা সত্যের বিপক্ষে কিছুই করিতে পারি না, কেবল সত্যের সপক্ষে করিতে পারি। বাস্তবিক আমরা যখন দুর্ব্বল ও তোমরা বলবান্‌, তখন আমরা আনন্দ করি; আর ইহার জন্য প্রার্থনাও করি, যেন তোমরা পরিপক্ব হও। এই কারণ আমি অনুপস্থিত হইয়া এই সকল কথা লিখিলাম, যেন উপস্থিত হইলে প্রভুর দত্ত ক্ষমতানুসারে তীক্ষ্ণ ভাব প্রয়োগ করিতে না হয়; সেই ক্ষমতা তিনি ভাঙ্গিয়া ফেলিবার নিমিত্ত নয়, কিন্তু গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্তই আমাকে দিয়াছেন। অবশেষে বলি, হে ভ্রাতৃগণ। আনন্দ কর, পরিপক্ব হও, আশ্বাস গ্রহণ কর, একভাববিশিষ্ট হও, শান্তিতে থাক; তাহাতে প্রেমের ও শান্তির ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিবেন। পবিত্র চুম্বনে পরস্পর মঙ্গলবাদ কর। পবিত্র লোক সকল তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ, ও ঈশ্বরের প্রেম, এবং পবিত্র আত্মার সহভাগিতা তোমাদের সকলের সহবর্ত্তী হউক। পৌল প্রেরিত—মনুষ্যদের হইতে নয়, মনুষ্যের দ্বারাও নয়, কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা, এবং যিনি মৃতগণের মধ্য হইতে তাঁহাকে উঠাইয়াছেন, সেই পিতা ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত— এবং আমার সহবর্ত্তী সকল ভ্রাতা, গালাতিয়ার মণ্ডলীগণের সমীপে। আমাদের পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক; ইনি আমাদের পাপসমূহের জন্য আপনাকে প্রদান করিলেন, যেন আমাদের ঈশ্বর ও পিতার ইচ্ছানুসারে আমাদিগকে এই উপস্থিত মন্দ যুগ হইতে উদ্ধার করেন। যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে ঈশ্বরের মহিমা হউক। আমেন। আমার আশ্চর্য্য বোধ হইতেছে যে, খ্রীষ্টের অনুগ্রহে যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, তোমরা এত শীঘ্র তাঁহা হইতে অন্যবিধ সুসমাচারের দিকে ফিরিয়া যাইতেছ। তাহা আর কোন সুসমাচার নয়; কেবল এমন কতকগুলি লোক আছে, যাহারা তোমাদিগকে অস্থির করে, এবং খ্রীষ্টের সুসমাচার বিকৃত করিতে চায়। কিন্তু আমরা তোমাদের নিকটে যে সুসমাচার প্রচার করিয়াছি, তাহা ছাড়া অন্য সুসমাচার যদি কেহ প্রচার করে —আমরাই করি, কিম্বা স্বর্গ হইতে আগত কোন দূতই করুক—তবে সে শাপগ্রস্ত হউক। আমরা পূর্ব্বে যেরূপ বলিয়াছি, তদ্রূপ আমি এখন আবার বলিতেছি, তোমরা যাহা গ্রহণ করিয়াছ, তাহা ছাড়া আর কোন সুসমাচার যদি কেহ তোমাদের নিকটে প্রচার করে, তবে সে শাপগ্রস্ত হউক। আমি কি এখন মানুষকে লওয়াইতেছি না ঈশ্বরকে? অথবা আমি কি মানুষকে সন্তুষ্ট করিতে চেষ্টা করিতেছি? যদি এখনও মানুষকে সন্তুষ্ট করিতাম, তবে খ্রীষ্টের দাস হইতাম না। কেননা, হে ভ্রাতৃগণ, আমার দ্বারা যে সুসমাচার প্রচারিত হইয়াছে, তাহার বিষয়ে তোমাদিগকে জানাইতেছি যে, তাহা মানুষের মতানুযায়ী নয়। কেননা আমি মানুষের কাছে তাহা গ্রহণও করি নাই, এবং শিক্ষাও পাই নাই; কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের প্রত্যাদেশ দ্বারা পাইয়াছি। তোমরা ত যিহূদী-ধর্ম্মে আমার পূর্ব্বকার আচার ব্যবহারের কথা শুনিয়াছ; আমি ঈশ্বরের মণ্ডলীকে অতিমাত্র তাড়না করিতাম ও তাহা উৎপাটন করিতাম; আর পরম্পরাগত পৈতৃক রীতিনীতি পালনে অতিশয় উদ্যোগী হওয়াতে আমার স্বজাতীয় সমবয়স্ক অনেক লোক অপেক্ষা যিহূদী-ধর্ম্মে উত্তর উত্তর অগ্রসর হইতেছিলাম। কিন্তু যিনি আমাকে আমার মাতার গর্ভ হইতে পৃথক্‌ করিয়াছেন, এবং আপন অনুগ্রহ দ্বারা আহ্বান করিয়াছেন, তিনি যখন আপন পুত্রকে আমাতে প্রকাশ করিবার সুবাসনা করিলেন, যেন আমি পরজাতিগণের মধ্যে তাঁহার বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করি, তখন আমি ক্ষণমাত্রও রক্তমাংসের সহিত পরামর্শ করিলাম না, এবং যিরূশালেমে আমার পূর্ব্ববর্ত্তী প্রেরিতগণের কাছে গেলাম না, কিন্তু আরব দেশে চলিয়া গেলাম, পরে দম্মেশকে ফিরিয়া আসিলাম। তার পর তিন বৎসর গত হইলে কৈফার সহিত পরিচিত হইবার নিমিত্তে যিরূশালেমে গেলাম, এবং পনরো দিন তাঁহার কাছে রহিলাম। কিন্তু প্রেরিতগণের মধ্য অন্য কাহাকেও দেখিলাম না, কেবল প্রভুর ভ্রাতা যাকোবকে দেখিলাম। এই যে সকল কথা তোমাদিগকে লিখিতেছি, দেখ, ঈশ্বরের সাক্ষাতে কহিতেছি, আমি মিথ্যা বলিতেছি না। তারপর আমি সুরিয়ার ও কিলিকিয়ার অঞ্চলসমূহে গেলাম। আর তখনও আমি যিহূদিয়াস্থ খ্রীষ্টাশ্রিত মণ্ডলীগণের চাক্ষুষ পরিচিত ছিলাম না। তাহারা কেবল শুনিতে পাইয়াছিল, যে ব্যক্তি পূর্ব্বে আমাদিগকে তাড়না করিত, সে এখন সেই বিশ্বাস বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিতেছে, যাহা পূর্ব্বে উৎপাটন করিত; এবং আমার উপলক্ষে তাহারা ঈশ্বরের গৌরব করিতে লাগিল। পরে চৌদ্দ বৎসর গত হইলে আমি বার্ণবার সহিত পুনরায় যিরূশালেমে গেলাম, তীতকেও সঙ্গে লইলাম। আর প্রত্যাদেশক্রমে গমন করিলাম, এবং যে সুসমাচার পরজাতিগণের মধ্যে প্রচার করিয়া থাকি, তথাকার লোকদের কাছে তাহার ব্যাখ্যা করিলাম, কিন্তু যাঁহারা গণ্যমান্য, তাঁহাদের কাছে বিরলে করিলাম, পাছে [দেখা যায় যে] আমি বৃথা দৌড়িতেছি বা দৌড়িয়াছি। এমন কি, তীত, যিনি আমার সঙ্গে ছিলেন, তিনি গ্রীক হইলেও তাঁহাকে ত্বক্‌ছেদ স্বীকার করিতে বাধ্য করা গেল না। গুপ্তরূপে আনীত সেই কয়েক জন ভাক্ত ভ্রাতার জন্য এইরূপ হইল; খ্রীষ্ট যীশুতে আমাদের যে স্বাধীনতা আছে, তাহার ছিদ্রান্বেষণ করিবার জন্য তাহারা গুপ্তরূপে প্রবেশ করিয়াছিল, যেন আমাদিগকে দাস করিয়া রাখিতে পারে। আমরা এক দণ্ডমাত্রও অধীনতা স্বীকার দ্বারা তাহাদের বশবর্ত্তী হইলাম না, যেন সুসমাচারের সত্য তোমাদের নিকটে থাকে। আর যাঁহারা গণ্যমান্য বলিয়া খ্যাত—তাঁহারা কি প্রকার লোক ছিলেন, ইহাতে আমার কিছু আইসে যায় না, ঈশ্বর মনুষ্যের মুখাপেক্ষা করেন না—বস্তুতঃ সেই গণমান্য ব্যক্তিরা আমাকে কিছুই দেন না; বরং পক্ষান্তরে যখন দেখিলেন, ছিন্নত্বক্‌দের মধ্যে যেমন পিতরকে, তেমনি অচ্ছিন্নত্বকদের মধ্যে আমাকে সুসমাচারের ভার দত্ত হইয়াছে— কারণ ছিন্নত্বক্‌দের কাছে প্রেরিতত্বকর্ম্মের নিমিত্তে যিনি পিতরে কার্য্য সাধন করিলেন, তিনি পরজাতিগণের নিমিত্তে আমাতেও কার্য্য সাধন করিলেন— যখন তাঁহারা আমাকে প্রদত্ত সেই অনুগ্রহ জ্ঞাত হইলেন, তখন যাকোব, কৈফা ও যোহন—যাঁহারা স্তম্ভরূপে মান্য—আমাকে ও বার্ণবাকে সহভাগিতার দক্ষিণ হস্ত দিলেন, যেন আমরা পরজাতিগণের কাছে যাই, আর তাঁহারা ছিন্নত্বক্‌দের কাছে যান; কেবল চাহিলেন যেন আমরা দরিদ্রদিগকে স্মরণ করি; আর তাহাই করিতে আমিও যত্নবান্‌ ছিলাম। কিন্তু কৈফা যখন আন্তিয়খিয়ায় আসিলেন, তখন আমি মুখের উপরেই তাঁহার প্রতিরোধ করিলাম, কারণ তিনি দোষী হইয়াছিলেন। ফলতঃ যাকোবের নিকট হইতে কয়েক জনের আসিবার পূর্ব্বে তিনি পরজাতীয়দের সহিত আহার ব্যবহার করিতেন, কিন্তু উহারা আসিলে পর তিনি ছিন্নত্বক্‌দের ভয়ে পিছাইয়া পড়িতে ও আপনাকে পৃথক্‌ রাখিতে লাগিলেন। আর তাঁহার সহিত অন্য সকল যিহূদীও কপট ব্যবহার করিল; এমন কি, বার্ণবাও তাঁহাদের কাপট্যের টানে আকর্ষিত হইলেন। কিন্তু আমি যখন দেখিলাম, তাঁহারা সুসমাচারের সত্য অনুসারে সরল পথে চলেন না, তখন আমি সকলের সাক্ষাতে কৈফাকে কহিলাম, তুমি নিজে যিহূদী হইয়া যদি যিহূদীদের মত নয়, কিন্তু পরজাতিগণের মত আচরণ কর, তবে কেন পরজাতিগণকে যিহূদীদের মত আচরণ করিতে বাধ্য করিতেছ? আমরা জাতিতে যিহূদী, আমরা পরজাতীয় পাপী নহি; তথাপি বুঝিয়াছি, ব্যবস্থার কার্য্য হেতু নয়, কেবল যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়, সেই জন্য আমরাও খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাসী হইয়াছি, যেন ব্যবস্থার কার্য্য হেতু নয়, কিন্তু খ্রীষ্টে বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই; কারণ ব্যবস্থার কার্য্য হেতু কোন মর্ত্ত্য ধার্ম্মিক গণিত হইবে না। কিন্তু আমরা খ্রীষ্টে ধার্ম্মিক গণিত হইবার চেষ্টা করিতে গিয়া আপনারাও যদি পাপী বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়া থাকি, তবে তৎপ্রযুক্ত খ্রীষ্ট কি পাপের পরিচারক? তাহা দূরে থাকুক। কারণ আমি যাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছি, তাহাই যদি পুনর্ব্বার গাঁথি, তবে আপনাকেই অপরাধী বলিয়া দাঁড় করাই। আমি ত ব্যবস্থার দ্বারা ব্যবস্থার উদ্দেশে মরিয়াছি, যেন ঈশ্বরের উদ্দেশে জীবিত হই। খ্রীষ্টের সহিত আমি ক্রুশারোপিত হইয়াছি, আমি আর জীবিত নই, কিন্তু খ্রীষ্টই আমাতে জীবিত আছেন; আর এখন মাংসে থাকিতে আমার যে জীবন আছে, তাহা আমি বিশ্বাসে, ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাসেই, যাপন করিতেছি; তিনিই আমাকে প্রেম করিলেন, এবং আমার নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন। আমি ঈশ্বরের অনুগ্রহ বিফল করি না; কারণ ব্যবস্থা দ্বারা যদি ধার্ম্মিকতা হয়, তাহা হইলে সুতরাং খ্রীষ্ট অকারণে মরিলেন। হে অবোধ গালাতীয়েরা, কে তোমাদিগকে মুগ্ধ করিল? তোমাদেরই চক্ষের সম্মুখে যীশু খ্রীষ্ট ত ক্রুশারোপিত বলিয়া স্পষ্টাক্ষরে লিখিত হইয়াছিলেন। কেবল এই কথা তোমাদের কাছে জানিতে চাহি, তোমরা কি ব্যবস্থার কার্য্য হেতু আত্মাকে পাইয়াছ? না বিশ্বাসের বার্ত্তা শ্রবণ হেতু? তোমরা কি এমন অবোধ? আত্মাতে আরম্ভ করিয়া এখন কি মাংসে সমাপ্ত করিতেছ? তোমরা এত দুঃখ কি বৃথাই ভোগ করিয়াছ—যদি বাস্তবিক বৃথা হইয়া থাকে? বল দেখি, যিনি তোমাদিগকে আত্মা যোগাইয়া দেন ও তোমাদের মধ্যে পরাক্রম-কার্য্য সাধন করেন, তিনি কি ব্যবস্থার কার্য্য হেতু তাহা করেন? না বিশ্বাসের বার্ত্তা শ্রবণ হেতু? যেমন অব্রাহাম “ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, আর তাহাই তাঁহার পক্ষে ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল।” অতএব জানিও, যাহারা বিশ্বাসাবলম্বী, তাহারাই অব্রাহামের সন্তান। আর বিশ্বাস হেতু ঈশ্বর পরজাতিদিগকে ধার্ম্মিক গণনা করেন, শাস্ত্র ইহা অগ্রে দেখিয়া অব্রাহামের কাছে আগেই সুসমাচার প্রচার করিয়াছিল, যথা, “তোমাতে সমস্ত জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে”। অতএব যাহারা বিশ্বাসাবলম্বী, তাহারা বিশ্বাসী অব্রাহামের সহিত আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হয়। বাস্তবিক যাহারা ব্যবস্থার ক্রিয়াবলম্বী, তাহারা সকলে শাপের অধীন, কারণ লেখা আছে, “যে কেহ ব্যবস্থাগ্রন্থে লিখিত সমস্ত কথা পালন করিবার জন্য তাহাতে স্থির না থাকে, সে শাপগ্রস্ত”। কিন্তু ব্যবস্থার দ্বারা কেহই ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্ম্মিক গণিত হয় না, ইহা সুস্পষ্ট, কারণ “ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচিবে”। কিন্তু ব্যবস্থা বিশ্বাসমূলক নয়, বরং “যে কেহ এই সকল পালন করে, সেই তাহাতে বাঁচিবে”। খ্রীষ্টই মূল্য দিয়া আমাদিগকে ব্যবস্থার শাপ হইতে মুক্ত করিয়াছেন, কারণ তিনি আমাদের নিমিত্তে শাপস্বরূপ হইলেন; কেননা লেখা আছে, “যে কেহ গাছে টাঙ্গান যায়, সে শাপগ্রস্ত”; যেন অব্রাহামের প্রাপ্ত আশীর্ব্বাদ খ্রীষ্ট যীশুতে পরজাতিগণের প্রতি বর্ত্তে, আমরা যেন বিশ্বাস দ্বারা অঙ্গীকৃত আত্মাকে প্রাপ্ত হই। হে ভ্রাতৃগণ, আমি মনুষ্যের মত বলিতেছি। মনুষ্যের নিয়মপত্র হইলেও তাহা যখন স্থিরীকৃত হয়, তখন কেহ তাহা বিফল করে না, কিম্বা তাহাতে নূতন কথা যোগ করে না। ভাল, অব্রাহামের প্রতি ও তাঁহার বংশের প্রতি প্রতিজ্ঞা সকল উক্ত হইয়াছিল। তিনি বহুবচনে ‘আর বংশ সকলের প্রতি’ না বলিয়া, একবচনে বলেন, “আর তোমার বংশের প্রতি”; সেই বংশ খ্রীষ্ট। আমি এই বলি, যে নিয়ম ঈশ্বরকর্ত্তৃক পূর্ব্বে স্থিরীকৃত হইয়াছিল, চারি শত ত্রিশ বৎসর পরে, উৎপন্ন ব্যবস্থা সেই নিয়মকে উঠাইয়া দিতে পারে না, যাহাতে প্রতিজ্ঞাকে বিফল করিবে। কারণ দায়াধিকার যদি ব্যবস্থামূলক হয়, তবে আর প্রতিজ্ঞামূলক হইতে পারে না; কিন্তু অব্রাহামকে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা দ্বারাই তাহা দান করিয়াছেন। তবে ব্যবস্থা কি? অপরাধের কারণ তাহা যোগ করা হইয়াছিল, যে পর্য্যন্ত না সেই বংশ আইসেন, যাঁহার কাছে প্রতিজ্ঞা করা গিয়াছিল, আর তাহা দূতগণ দ্বারা, এক জন মধ্যস্থের হস্তে, বিধিবদ্ধ হইল। এক জনের মধ্যস্থ ত হয় না, কিন্তু ঈশ্বর এক। তবে ব্যবস্থা কি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা-কলাপের প্রতিকূল? তাহা দূরে থাকুক। ফলতঃ যদি এমন ব্যবস্থা দত্ত হইত, যাহা জীবন দান করিতে পারে, তবে ধার্ম্মিকতা অবশ্য ব্যবস্থামূলক হইত। কিন্তু শাস্ত্র সকলই পাপের অধীনতায় রুদ্ধ করিয়াছে, যেন প্রতিজ্ঞার ফল, যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস হেতু, বিশ্বাসীদিগকে দেওয়া যায়। কিন্তু বিশ্বাস আসিবার পূর্ব্বে আমরা ব্যবস্থার অধীনে রক্ষিত হইতেছিলাম, যে বিশ্বাস পরে প্রকাশিত হইবে, তাহার অপেক্ষায় রুদ্ধ ছিলাম। এই প্রকারে ব্যবস্থা খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য আমাদের পরিচালক দাস হইয়া উঠিল, যেন আমরা বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই। কিন্তু যে অবধি বিশ্বাস আসিল, সেই অবধি আমরা আর পরিচালক দাসের অধীন নহি। কেননা তোমরা সকলে, খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা, ঈশ্বরের পুত্র হইয়াছ; কারণ তোমরা যত লোক খ্রীষ্টের উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছ, সকলে খ্রীষ্টকে পরিধান করিয়াছ। যিহূদী কি গ্রীক আর হইতে পারে না, দাস কি স্বাধীন আর হইতে পারে না, নর ও নারী আর হইতে পারে না, কেননা খ্রীষ্ট যীশুতে তোমরা সকলেই এক। আর তোমরা যদি খ্রীষ্টের হও, তবে সুতরাং অব্রাহামের বংশ, প্রতিজ্ঞানুসারে দায়াধিকারী। কিন্তু আমি বলি, দায়াধিকারী যত কাল বালক থাকে, তত কাল সর্ব্বস্বের স্বামী হইলেও দাসে ও তাহাতে কিছুমাত্র প্রভেদ নাই; কিন্তু পিতার নিরূপিত সময় পর্য্যন্ত সে পালকদের ও ধনাধ্যক্ষদের অধীন থাকে। তেমনি আমরাও যখন বালক ছিলাম, তখন জগতের অক্ষরমালার অধীন দাস ছিলাম। কিন্তু কাল সম্পূর্ণ হইলে ঈশ্বর আপনার নিকট হইতে আপন পুত্রকে প্রেরণ করিলেন; তিনি স্ত্রীজাত, ব্যবস্থার অধীনে জাত হইলেন, যেন তিনি মূল্য দিয়া ব্যবস্থার অধীন লোকদিগকে মুক্ত করেন, যেন আমরা দত্তকপুত্রত্ব প্রাপ্ত হই। আর তোমরা পুত্র, এই কারণ ঈশ্বর আপন পুত্রের আত্মাকে আপনার নিকট হইতে আমাদের হৃদয়ে প্রেরণ করিলেন; ইনি “আব্বা, পিতা” বলিয়া ডাকেন। অতএব তুমি আর দাস নও, বরং পুত্র; আর যখন পুত্র, তখন ঈশ্বরকর্ত্তৃক দায়াধিকারীও হইয়াছ। পরন্তু সেই সময়ে তোমরা ঈশ্বরকে না জানিয়া, যাহারা স্বভাবতঃ ঈশ্বর নহে, তাহাদের দাস ছিলে; কিন্তু এখন ঈশ্বরের পরিচয় পাইয়াছ, বরং ঈশ্বরকর্ত্তৃক পরিচিত হইয়াছ; তবে কেমন করিয়া পুনর্ব্বার ঐ দুর্ব্বল অকিঞ্চন অক্ষরমালার প্রতি ফিরিতেছ, আবার ফিরিয়া সেগুলির দাস হইতে চাহিতেছ? তোমরা বিশেষ বিশেষ দিন, মাস, ঋতু ও বৎসর পালন করিতেছ। তোমাদের বিষয়ে আমার ভয় হয়; কি জানি, তোমাদের মধ্যে বৃথা পরিশ্রম করিয়াছি। হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে এই বিনয় করিতেছি, তোমরা আমার মত হও, কেননা আমিও তোমাদের মত। তোমরা আমার কোন অপকার কর নাই; আর তোমরা জান, আমি মাংসের কোন দুর্ব্বলতা হেতুই প্রথমবার তোমাদের নিকটে সুসমাচার প্রচার করিয়াছিলাম; আর আমার মাংসে তোমাদের যে পরীক্ষা হইয়াছিল, তাহা তোমরা হেয়জ্ঞান কর নাই, ঘৃণাবোধও কর নাই, বরং ঈশ্বরের এক দূতের ন্যায়, খ্রীষ্ট যীশুর ন্যায়, আমাকে গ্রহণ করিয়াছিলে। তবে তোমাদের সেই আত্ম-ধন্যবাদ কোথায় গেল? কেননা আমি তোমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দিতেছি যে, সাধ্য থাকিলে তোমরা আপন আপন চক্ষু উৎপাটন করিয়া আমাকে দিতে। তবে তোমাদের কাছে সত্য বলাতে কি তোমাদের শত্রু হইয়াছি? তাহারা যে সযত্নে তোমাদের অন্বেষণ করিতেছে, তাহা ভাল ভাবে করে না; বরং তাহারা তোমাদিগকে বাহিরে রাখিতে চায়, যেন তোমরা সযত্নে তাহাদেরই অন্বেষণ কর। কেবল তোমাদের নিকটে আমার উপস্থিতি-কালে নয়, কিন্তু সর্ব্বদাই উত্তম বিষয়ে সযত্নে অন্বেষিত হওয়া ভাল; তোমরা ত আমার বৎস, আমি পুনরায় তোমাদিগকে লইয়া প্রসব-যন্ত্রণা ভোগ করিতেছি, যাবৎ না তোমাদিগেতে খ্রীষ্ট মূর্ত্তিমান্‌ হন; কিন্তু আমার ইচ্ছা এই যে, এক্ষণে তোমাদের নিকটে উপস্থিত হইয়া অন্য স্বরে কথা কহি; কেননা তোমাদের বিষয়ে ব্যাকুল হইতেছি। বল দেখি, তোমরা ত ব্যবস্থার অধীন থাকিতে ইচ্ছা করিতেছ, তোমরা কি ব্যবস্থার কথা শুন না? কারণ লেখা আছে যে, অব্রাহামের দুই পুত্র ছিল, একটী দাসীর পুত্র, একটী স্বাধীনার পুত্র। কিন্তু ঐ দাসীর পুত্র মাংস অনুসারে, স্বাধীনার পুত্র প্রতিজ্ঞার গুণে জন্মিয়াছিল। এ সকল কথার রূপক অর্থ আছে, কারণ ঐ দুই স্ত্রী দুই নিয়ম; একটী সীনয় পর্ব্বত হইতে উৎপন্ন ও দাসত্বের জন্য প্রসবকারিণী; সে হাগার। আর এ হাগার আরব দেশস্থ সীনয় পর্ব্বত; এবং সে এখনকার যিরূশালেমের সমতুল্য, কেননা সে নিজ সন্তানগণের সহিত দাসত্বে রহিয়াছে। কিন্তু ঊর্দ্ধস্থ যিরূশালেম স্বাধীনা, আর সে আমাদের জননী। কেননা লেখা আছে, “অয়ি বন্ধ্যে, অপ্রসূতে, আনন্দ কর, অয়ি প্রসব-যন্ত্রণা-রহিতে, উচ্চধ্বনি কর ও হর্ষনাদ কর, কেননা সধবার সন্তান অপেক্ষা বরং অনাথার সন্তান অধিক।” পরন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, ইস্‌হাকের ন্যায় তোমরা প্রতিজ্ঞার সন্তান। কিন্তু মাংস অনুসারে জাত ব্যক্তি যেমন তৎকালে আত্মানুসারে জাতকে তাড়না করিত, তেমনি এখনও হইতেছে। তথাপি শাস্ত্রে কি বলে? “ঐ দাসীকে ও উহার পুত্রকে বাহির করিয়া দেও; কেননা ঐ দাসীর পুত্র কোন ক্রমে স্বাধীনার পুত্রের সহিত দায়াধিকারী হইবে না।” অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা দাসীর সন্তান নই, আমরা স্বাধীনার সন্তান। স্বাধীনতার নিমিত্তই খ্রীষ্ট আমাদিগকে স্বাধীন করিয়াছেন; অতএব তোমরা স্থির থাক, এবং দাসত্বযোঁয়ালিতে আর বদ্ধ হইও না। দেখ, আমি পৌল তোমাদিগকে কহিতেছি, যদি তোমরা ত্বক্‌ছেদ প্রাপ্ত হও, তবে খ্রীষ্ট হইতে তোমাদের কিছুই লাভ হইবে না। যে কোন মনুষ্য ত্বক্‌ছেদ প্রাপ্ত হয়, তাহাকে আমি পুনরায় এই সাক্ষ্য দিতেছি যে, সে ঋণশোধের ন্যায় সমস্ত ব্যবস্থা পালন করিতে বাধ্য। তোমরা যে সকল লোক ব্যবস্থা দ্বারা ধার্ম্মিক গণিত হইতে যত্ন করিতেছ, তোমরা খ্রীষ্ট হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছ, তোমরা অনুগ্রহ হইতে পতিত হইয়াছ। কারণ আমরা আত্মার দ্বারা বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিকতার প্রত্যাশা-সিদ্ধির অপেক্ষা করিতেছি। কারণ খ্রীষ্ট যীশুতে ত্বক্‌ছেদের কোন শক্তি নাই, অত্বক্‌ছেদেরও নাই, কিন্তু প্রেম দ্বারা কার্য্যসাধক বিশ্বাসই শক্তিযুক্ত। তোমরা সুন্দররূপে দৌড়িতেছিলে; কে তোমাদিগকে বাধা দিল যে, তোমরা সত্যের দ্বারা প্রবর্ত্তিত হও না? যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, এই প্রবর্ত্তনা তাঁহা হইতে হয় নাই। অল্প তাড়ী সূজীর সমস্ত তাল তাড়ীময় করে। তোমাদের বিষয়ে প্রভুতে আমার এমন দৃঢ় প্রত্যয় আছে যে, তোমাদের অন্য কোন ভাব হইবে না, কিন্তু যে তোমাদিগকে উদ্বিগ্ন করে, সে ব্যক্তি যেই হউক, বিচারসিদ্ধ দণ্ড ভোগ করিবে। হে ভ্রাতৃগণ, আমি যদি এখনও ত্বক্‌ছেদ প্রচার করি, তবে আর তাড়না ভোগ করি কেন? তাহা হইলে সুতরাং ক্রুশের বিঘ্ন লুপ্ত হইয়াছে। যাহারা তোমাদিগকে অস্থির করিতেছে, তাহারা আপনাদিগকে ছিন্নাঙ্গও করুক। কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা স্বাধীনতার জন্য আহূত হইয়াছ; কেবল দেখিও, সেই স্বাধীনতাকে মাংসের পক্ষে সুযোগ করিও না, বরং প্রেমের দ্বারা এক জন অন্যের দাস হও। যেহেতুক সমস্ত ব্যবস্থা এই একটী বচনে পূর্ণ হইয়াছে, যথা, “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” কিন্তু তোমরা যদি পরস্পর দংশাদংশি ও গেলাগেলি কর, তবে দেখিও, যেন পরস্পরের দ্বারা কবলিত না হও। কিন্তু আমি বলি, তোমরা আত্মার বশে চল, তাহা হইলে মাংসের অভিলাষ পূর্ণ করিবে না। কেননা মাংস আত্মার বিরুদ্ধে, এবং আত্মা মাংসের বিরুদ্ধে অভিলাষ করে; কারণ এই দুইয়ের একটী অন্যটীর বিপরীত, তাই তোমরা যাহা ইচ্ছা কর, তাহা সাধন কর না। কিন্তু যদি আত্মা দ্বারা চালিত হও, তবে তোমরা ব্যবস্থার অধীন নও। আবার মাংসের কার্য্য সকল প্রকাশ আছে; সেগুলি এই—বেশ্যাগমন, অশুচিতা, স্বৈরিতা, প্রতিমাপূজা, কুহক, নানা প্রকার শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা, বিচ্ছিন্নতা, দলভেদ, মাৎসর্য্য, মত্ততা, রঙ্গরস ও তৎসদৃশ অন্য অন্য দোষ। এই সকলের বিষয়ে আমি তোমাদিগকে অগ্রে বলিতেছি, যেমন পূর্ব্বে বলিয়াছিলাম, যাহারা এই প্রকার আচরণ করে, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না। কিন্তু আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন; এই প্রকার গুণের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নাই। আর যাহারা খ্রীষ্ট যীশুর, তাহারা মাংসকে তাহার মতি ও অভিলাষ শুদ্ধ ক্রুশে দিয়াছে। আমরা যদি আত্মার বশে জীবন ধারণ করি, তবে আইস, আমরা আত্মার বশে চলি; অনর্থক দর্প না করি, পরস্পরকে জ্বালাতন না করি, পরস্পর হিংসাহিংসি না করি। ভ্রাতৃগণ, যদি কেহ কোন অপরাধে ধরাও পড়ে, তবে আত্মিক যে তোমরা, তোমরা সেই প্রকার ব্যক্তিকে মৃদুতার আত্মায় সুস্থ কর, আপনাকে দেখ, পাছে তুমিও পরীক্ষাতে পড়। তোমরা পরস্পর এক জন অন্যের ভার বহন কর; এইরূপে খ্রীষ্টের ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে পালন কর। কেননা যদি কেহ মনে করে, আমি কিছু, কিন্তু বাস্তবিক সে কিছুই নয়, তবে সে আপনি আপনাকে ভুলায়। কিন্তু প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়; কারণ প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে। কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের বাক্য বিষয়ে শিক্ষা পায়, সে শিক্ষককে সমস্ত উত্তম বিষয়ে সহভাগী করুক। তোমরা ভ্রান্ত হইও না, ঈশ্বরকে পরিহাস করা যায় না; কেননা মনুষ্য যাহা কিছু বুনে তাহাই কাটিবে। ফলতঃ আপন মাংসের উদ্দেশে যে বুনে, সে মাংস হইতে ক্ষয়রূপ শস্য পাইবে; কিন্তু আত্মার উদ্দেশে যে বুনে, সে আত্মা হইতে অনন্ত জীবনরূপ শস্য পাইবে। আর আইস, আমরা সৎকর্ম্ম করিতে করিতে নিরুৎসাহ না হই; কেননা ক্লান্ত না হইলে যথাসময়ে শস্য পাইব। এজন্য আইস, আমরা যেমন সুযোগ পাই, তেমনি সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি। দেখ, আমি কত বড় অক্ষরে স্বহস্তে তোমাদিগকে লিখিলাম। যে সকল লোক মাংসে সুরূপ দেখাইতে ইচ্ছা করে, তাহারাই তোমাদিগকে ত্বক্‌ছেদ প্রাপ্ত হইতে বাধ্য করিতেছে; ইহার অভিপ্রায় এই মাত্র, যেন খ্রীষ্টের ক্রুশ প্রযুক্ত তাহাদের প্রতি তাড়না না ঘটে। কেননা যাহারা ত্বক্‌ছেদ প্রাপ্ত হয়, তাহারা আপনারাও ব্যবস্থা পালন করে না; বরং তাহাদের ইচ্ছা এই যে, তোমরা ত্বক্‌ছেদ প্রাপ্ত হও, যেন তাহারা তোমাদের মাংসে শ্লাঘা করিতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশ ছাড়া আমি যে আর কোন বিষয়ে শ্লাঘা করি, তাহা দূরে থাকুক; তাহারই দ্বারা আমার জন্য জগৎ, এবং জগতের জন্য আমি ক্রুশারোপিত। কারণ ত্বক্‌ছেদ কিছুই নয়, অত্বক্‌ছেদও নয়, কিন্তু নূতন সৃষ্টিই সার। আর যে সকল লোক এই সূত্রানুসারে চলিবে, তাহাদের উপরে “শান্তি” ও দয়া বর্ত্তুক, ঈশ্বরের “ইস্রায়েলের উপরে বর্ত্তুক”। এখন হইতে কেহ আমাকে ক্লেশ না দিউক, কেননা আমি যীশুর দান-চিহ্ন সকল আপন দেহে বহন করিতেছি। হে ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের আত্মার সহবর্ত্তী হউক। আমেন। পৌল, ঈশ্বরের ইচ্ছায় খ্রীষ্ট যীশুর প্রেরিত, —ইফিষে স্থিত পবিত্র ও খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাসী জনগণ সমীপে। আমাদের পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা, যিনি আমাদিগকে সমস্ত আত্মিক আশীর্ব্বাদে স্বর্গীয় স্থানে খ্রীষ্টে আশীর্ব্বাদ করিয়াছেন; কারণ তিনি জগৎপত্তনের পূর্ব্বে খ্রীষ্টে আমাদিগকে মনোনীত করিয়াছিলেন, যেন আমরা তাঁহার সাক্ষাতে প্রেমে পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক হই; তিনি আমাদিগকে যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আপনার জন্য দত্তকপুত্রতার নিমিত্ত পূর্ব্ব হইতে নিরূপণও করিয়াছিলেন; ইহা তিনি নিজ ইচ্ছার হিতসঙ্কল্প অনুসারে, নিজ অনুগ্রহের প্রতাপের প্রশংসার্থে করিয়াছিলেন। সেই অনুগ্রহে তিনি আমাদিগকে সেই প্রিয়তমে অনুগৃহীত করিয়াছেন, যাঁহাতে আমরা তাঁহার রক্ত দ্বারা মুক্তি, অর্থাৎ অপরাধ সকলের মোচন পাইয়াছি; ইহা তাঁহার সেই অনুগ্রহ-ধন অনুসারে হইয়াছে, যাহা তিনি সমস্ত জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে আমাদের প্রতি উপচিয়া পড়িতে দিয়াছেন। ফলতঃ তিনি আমাদিগকে আপন ইচ্ছার নিগূঢ়তত্ত্ব জ্ঞাত করিয়াছেন, তাঁহার সেই হিতসঙ্কল্প অনুসারে যাহা তিনি কালের পূর্ণতার বিধান লক্ষ্য করিয়া তাঁহাতে পূর্ব্বে সঙ্কল্প করিয়াছিলেন। তাহা এই, স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্তই খ্রীষ্টেই সংগ্রহ করা যাইবে, তাঁহাতেই করা যাইবে, যাঁহাতে আমরা ঈশ্বরের অধিকারস্বরূপও হইয়াছি। বাস্তবিক যিনি সকলই আপন ইচ্ছার মন্ত্রণানুসারে সাধন করেন, তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আমরা পূর্ব্বে নিরূপিত হইয়াছিলাম; উদ্দেশ্য এই, পূর্ব্ব হইতে খ্রীষ্টে প্রত্যাশা করিয়াছি যে আমরা, আমাদের দ্বারা যেন ঈশ্বরের প্রতাপের প্রশংসা হয়। খ্রীষ্টে থাকিয়া তোমরাও সত্যের বাক্য, তোমাদের পরিত্রাণের সুসমাচার, শুনিয়া এবং তাঁহাতে বিশ্বাসও করিয়া সেই অঙ্গীকৃত পবিত্র আত্মা দ্বারা মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছ; সেই আত্মা ঈশ্বরের নিজস্বের মুক্তির নিমিত্ত, তাঁহার প্রতাপের প্রশংসার নিমিত্ত আমাদের দায়াধিকারের বায়না। এই কারণ প্রভু যীশুতে যে বিশ্বাস এবং সমস্ত পবিত্র লোকের প্রতি যে প্রেম তোমাদের মধ্যে আছে, তাহার কথা শুনিয়া আমিও তোমাদের নিমিত্ত ধন্যবাদ করিতে ক্ষান্ত হই না, আমার প্রার্থনাকালে তোমাদের নাম উল্লেখ পূর্ব্বক তাহা করি, যেন আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর, প্রতাপের পিতা, আপনার তত্ত্বজ্ঞানে জ্ঞানের ও প্রত্যাদেশের আত্মা তোমাদিগকে দেন; যাহাতে তোমাদের হৃদয়ের চক্ষু আলোকময় হয়, যেন তোমরা জানিতে পাও, তাঁহার আহ্বানের প্রত্যাশা কি, পবিত্রগণের মধ্যে তাঁহার দায়াধিকারের প্রতাপ-ধন কি, এবং বিশ্বাসকারী যে আমরা, আমাদের প্রতি তাঁহার পরাক্রমের অনুপম মহত্ত্ব কি। ইহা তাঁহার শক্তির পরাক্রমের সেই কার্য্যসাধনের অনুযায়ী, যাহা তিনি খ্রীষ্টে সাধন করিয়াছেন; ফলতঃ তিনি তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছেন, এবং স্বর্গীয় স্থানে নিজ দক্ষিণ পার্শ্বে বসাইয়াছেন, সমস্ত আধিপত্য, কর্ত্তৃত্ব, পরাক্রম, ও প্রভুত্বের উপরে, এবং যত নাম কেবল ইহযুগে নয়, কিন্তু পরযুগেও উল্লেখ করা যায়, তৎসমুদয়ের উপরে পদান্বিত করিলেন। আর তিনি সমস্তই তাঁহার চরণের নীচে বশীভূত করিলেন, এবং তাঁহাকেই সকলের উপরে উচ্চ মস্তক করিয়া মণ্ডলীকে দান করিলেন; সেই মণ্ডলী তাঁহার দেহ, তাঁহারই পূর্ণতাস্বরূপ, যিনি সর্ব্ববিষয়ে সমস্তই পূরণ করেন। আর যখন তোমরা আপন আপন অপরাধে ও পাপে মৃত ছিলে, তখন তিনি তোমাদিগকেও জীবিত করিলেন; সেই সকলেতে তোমরা পূর্ব্বে চলিতে, এই জগতের যুগ অনুসারে, আকাশের কর্ত্তৃত্বাধিপতির অনুসারে, যে আত্মা এখন অবাধ্যতার সন্তানগণের মধ্যে কার্য্য করিতেছে, সেই আত্মার অধিপতির অনুসারে চলিতে। সেই লোকদের মধ্যে আমরাও সকলে পূর্ব্বে আপন আপন মাংসের অভিলাষ অনুসারে আচরণ করিতাম, মাংসের ও মনের বিবিধ ইচ্ছা পূর্ণ করিতাম, এবং অন্য সকলের ন্যায় স্বভাবতঃ ক্রোধের সন্তান ছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর, দয়াধনে ধনবান্‌ বলিয়া, আপনার যে মহাপ্রেমে আমাদিগকে প্রেম করিলেন, তৎপ্রযুক্ত আমাদিগকে, এমন কি, অপরাধে মৃত আমাদিগকে, খ্রীষ্টের সহিত জীবিত করিলেন—অনুগ্রহেই তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ— এবং তিনি খ্রীষ্ট যীশুতে আমাদিগকে তাঁহার সহিত উঠাইলেন ও তাঁহার সহিত স্বর্গীয় স্থানে বসাইলেন; উদ্দেশ্য এই, খ্রীষ্ট যীশুতে আমাদের প্রতি প্রদর্শিত তাঁহার মধুর ভাব দ্বারা যেন তিনি আগামী যুগপর্য্যায়ে আপনার অনুপম অনুগ্রহ-ধন প্রকাশ করেন। কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই দান; তাহা কর্ম্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে। কারণ আমরা তাঁহারই রচনা, খ্রীষ্ট যীশুতে বিবিধ সৎক্রিয়ার নিমিত্ত সৃষ্ট; সেগুলি ঈশ্বর পূর্ব্বে প্রস্তুত করিয়াছিলেন, যেন আমরা সেই পথে চলি। অতএব স্মরণ কর, পূর্ব্বে মাংসের সম্বন্ধে পরজাতীয় তোমরা—ত্বক্‌ছেদ, মাংসে হস্তকৃত ত্বক্‌ছেদ নামে যাহারা আখ্যাত, তাহাদের নিকটে অত্বক্‌ছেদ নামে আখ্যাত তোমরা— তৎকালে তোমরা খ্রীষ্ট হইতে বিভিন্ন, ইস্রায়েলের প্রজাধিকারের বহিঃস্থ, এবং প্রতিজ্ঞাযুক্ত নিয়মগুলির অসম্পর্কীয় ছিলে, তোমাদের আশা ছিল না, আর তোমরা জগতের মধ্যে ঈশ্বরবিহীন ছিলে। কিন্তু এখন খ্রীষ্ট যীশুতে, পূর্ব্বে দূরবর্ত্তী ছিলে যে তোমরা, তোমরা খ্রীষ্টের রক্ত দ্বারা নিকটবর্ত্তী হইয়াছ। কেননা তিনিই আমাদের সন্ধি; তিনি উভয়কে এক করিয়াছেন, এবং মধ্যবর্ত্তী বিচ্ছেদের ভিত্তি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছেন, শত্রুতাকে, বিধিবদ্ধ আজ্ঞাকলাপরূপ ব্যবস্থাকে, নিজ মাংসে লুপ্ত করিয়াছেন; যেন উভয়কে আপনাতে একই নূতন মনুষ্যরূপে সৃষ্টি করেন, এইরূপে সন্ধি করেন; এবং ক্রুশে শত্রুতাকে বধ-করণ পূর্ব্বক সেই ক্রুশ দ্বারা এক দেহে ঈশ্বরের সহিত উভয় পক্ষের মিলন করিয়া দেন। আর তিনি আসিয়া “দূরবর্ত্তী” যে তোমরা, তোমাদের কাছে “সন্ধির, ও নিকটবর্ত্তীদের কাছেও সন্ধির” সুসমাচার জানাইয়াছেন। কেননা তাঁহারই দ্বারা আমরা উভয় পক্ষের লোক এক আত্মায় পিতার নিকটে উপস্থিত হইবার ক্ষমতা পাইয়াছি। অতএব তোমরা আর অসম্পর্কীয় ও প্রবাসী নহ, কিন্তু পবিত্রগণের সহপ্রজা এবং ঈশ্বরের বাটীর লোক। তোমাদিগকে প্রেরিত ও ভাববাদিগণের ভিত্তিমূলের উপরে গাঁথিয়া তোলা হইয়াছে; তাহার প্রধান কোণস্থ প্রস্তর স্বয়ং খ্রীষ্ট যীশু। তাঁহাতেই প্রত্যেক গাঁথনি সুসংলগ্ন হইয়া প্রভুতে পবিত্র মন্দির হইবার জন্য বৃদ্ধি পাইতেছে; তাঁহাতে আত্মাতে ঈশ্বরের আবাস হইবার নিমিত্ত তোমাদিগকেও এক সঙ্গে গাঁথিয়া তোলা হইতেছে। এই জন্য আমি পৌল, তোমাদের অর্থাৎ পরজাতীয়দের নিমিত্ত খ্রীষ্ট যীশুর বন্দি— ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ-বিধান তোমাদের উদ্দেশে আমাকে দত্ত হইয়াছে, তাহার কথা তোমরা ত শুনিয়াছ। ফলতঃ প্রত্যাদেশ দ্বারা সেই নিগূঢ়তত্ত্ব আমাকে জ্ঞাত করা হইয়াছে, যেমন আমি পূর্ব্বে সংক্ষেপে লিখিয়াছি; তোমরা তাহা পাঠ করিলে খ্রীষ্ট সম্বন্ধীয় নিগূঢ়তত্ত্বে আমার ব্যুৎপত্তি বুঝিতে পারিবে। বিগত পুরুষপরম্পরায় সেই নিগূঢ়তত্ত্ব মনুষ্যসন্তানদিগকে এইরূপে জ্ঞাত করা যায় নাই, যেরূপে এখন আত্মাতে তাঁহার পবিত্র প্রেরিত ও ভাববাদিগণের নিকটে প্রকাশিত হইয়াছে। ফলতঃ সুসমাচার দ্বারা খ্রীষ্ট যীশুতে পরজাতীয়েরা সহদায়াদ, দেহের সহাঙ্গ ও প্রতিজ্ঞার সহভাগী হয়; ঈশ্বরের অনুগ্রহের যে দান তাঁহার শক্তির কার্য্যসাধন অনুসারে আমাকে দত্ত হইয়াছে, তদনুসারে আমি সেই সুসমাচারের পরিচারক হইয়াছি। আমি সমস্ত পবিত্রগণের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম হইলেও আমাকে এই অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, যাহাতে পরজাতিদের কাছে আমি খ্রীষ্টের সেই ধনের বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করি, যে ধনের সন্ধান করিয়া উঠা যায় না; এবং যাহা আদি অবধি সমুদয়ের সৃষ্টিকর্ত্তা ঈশ্বরের কাছে গুপ্ত থাকিয়া আসিয়াছে, সেই নিগূঢ়তত্ত্বের বিধান কি, তাহা প্রকাশ করি; উদ্দেশ্য এই, যেন এখন মণ্ডলী দ্বারা স্বর্গীয় স্থানস্থ আধিপত্য ও কর্ত্তৃত্ব সকলকে ঈশ্বরের বহুবিধ প্রজ্ঞা জ্ঞাত করা যায়, যুগপর্য্যায়ের সেই সঙ্কল্প অনুসারে যে সঙ্কল্প তিনি আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে করিয়াছিলেন। তাঁহাতেই আমরা তাঁহার উপরে বিশ্বাস দ্বারা সাহস, এবং দৃঢ় প্রত্যয়পূর্ব্বক উপস্থিত হইবার ক্ষমতা, পাইয়াছি। অতএব আমার যাচ্ঞা এই, তোমাদের নিমিত্ত আমার যে সকল ক্লেশ হইতেছে, তাহাতে যেন নিরুৎসাহ না হও; সে সকল তোমাদের গৌরব। এই জন্য, স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকুল যাঁহা হইতে নাম পাইয়াছে, সেই পিতার কাছে আমি জানু পাতিতেছি, যেন তিনি আপনার প্রতাপ-ধন অনুসারে তোমাদিগকে এই বর দেন, যাহাতে তোমরা তাঁহার আত্মা দ্বারা আন্তরিক মনুষ্যের সম্বন্ধে শক্তিতে সবলীকৃত হও; যেন বিশ্বাস দ্বারা খ্রীষ্ট তোমাদের হৃদয়ে বাস করেন; যেন তোমরা প্রেমে বদ্ধমূল ও সংস্থাপিত হইয়া সমস্ত পবিত্রগণের সহিত বুঝিতে সমর্থ হও যে, সেই প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা, ও গভীরতা কি, এবং জ্ঞানাতীত যে খ্রীষ্টের প্রেম, তাহা যেন জানিতে সমর্থ হও, এই প্রকারে যেন ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতার উদ্দেশে পূর্ণ হও। পরন্তু, যে শক্তি আমাদিগেতে কার্য্য সাধন করে, সেই শক্তি অনুসারে যিনি আমাদের সমস্ত যাচ্ঞার ও চিন্তার নিতান্ত অতিরিক্ত কর্ম্ম করিতে পারেন, মণ্ডলীতে এবং খ্রীষ্ট যীশুতে যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে সমস্ত পুরুষানুক্রমে তাঁহারই মহিমা হউক। আমেন। অতএব প্রভুতে বন্দি আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা যে আহ্বানে আহূত হইয়াছ, তাহার যোগ্যরূপে চল। সম্পূর্ণ নম্রতা ও মৃদুতা সহকারে, দীর্ঘসহিষ্ণুতা সহকারে চল; প্রেমে পরস্পর ক্ষমাশীল হও, শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে যত্নবান্‌ হও। দেহ এক, এবং আত্মা এক; যেমন আবার তোমাদের আহ্বানের একই প্রত্যাশায় তোমরা আহূত হইয়াছ। প্রভু এক, বিশ্বাস এক, বাপ্তিস্ম এক, সকলের ঈশ্বর ও পিতা এক, তিনি সকলের উপরে, সকলের নিকটে ও সকলের অন্তরে আছেন। কিন্তু খ্রীষ্টের দানের পরিমাণ অনুসারে আমাদের প্রত্যেক জনকে অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে। এই জন্য উক্ত আছে, “তিনি ঊর্দ্ধে উঠিয়া বন্দিগণকে বন্দি করিলেন, মনুষ্যদিগকে নানা বর দান করিলেন।” ভাল, তিনি ‘উঠিলেন’, ইহার তাৎপর্য্য কি? না এই যে, তিনি পৃথিবীর নীচতর স্থানে নামিয়াছিলেন। যিনি নামিয়াছিলেন, তিনিই সকল স্বর্গের ঊর্দ্ধে উঠিয়াছেন, যেন সকলই পূরণ করেন। আর তিনিই কয়েক জনকে প্রেরিত, কয়েক জনকে ভাববাদী, কয়েক জনকে সুসমাচার-প্রচারক ও কয়েক জনকে পালক ও শিক্ষাগুরু করিয়া দান করিয়াছেন, পবিত্রগণকে পরিপক্ব করিবার নিমিত্ত করিয়াছেন, যেন পরিচর্য্যা-কার্য্য সাধিত হয়, যেন খ্রীষ্টের দেহকে গাঁথিয়া তোলা হয়, যাবৎ আমরা সকলে ঈশ্বরের পুত্র বিষয়ক বিশ্বাসের ও তত্ত্বজ্ঞানের ঐক্য পর্য্যন্ত, সিদ্ধ পুরুষের অবস্থা পর্য্যন্ত, খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ পর্য্যন্ত, অগ্রসর না হই; যেন আমরা আর বালক না থাকি, মনুষ্যদের ঠকামিতে, ধূর্ত্ততায়, ভ্রান্তির চাতুরীক্রমে তরঙ্গাহত এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত না হই; কিন্তু প্রেমে সত্যনিষ্ঠ হইয়া সর্ব্ববিষয়ে তাঁহার উদ্দেশে বৃদ্ধি পাই, যিনি মস্তক, তিনি খ্রীষ্ট, তাঁহা হইতে সমস্ত দেহ, প্রত্যেক সন্ধি যে উপকার যোগায়, তদ্দ্বারা যথাযথ সংলগ্ন ও সংযুক্ত হইয়া প্রত্যেক ভাগের স্ব স্ব পরিমাণানুযায়ী কার্য্য অনুসারে দেহের বৃদ্ধি সাধন করিতেছে, আপনাকেই প্রেমে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য করিতেছে। অতএব আমি এই বলিতেছি, ও প্রভুতে দৃঢ়রূপে আদেশ করিতেছি, তোমরা আর পরজাতীয়দের ন্যায় চলিও না; তাহারা আপন আপন মনের অসার ভাবে চলে; তাহারা চিত্তে অন্ধীভূত, ঈশ্বরের জীবনের বহির্ভূত হইয়াছে, আন্তরিক অজ্ঞানতা প্রযুক্ত, হৃদয়ের কঠিনতা প্রযুক্ত হইয়াছে। তাহারা অসাড় হইয়া সলোভে সর্ব্বপ্রকার অশুচি ক্রিয়া করিবার জন্য আপনাদিগকে স্বৈরিতায় সমর্পণ করিয়াছে। কিন্তু তোমরা খ্রীষ্টের বিষয়ে এরূপ শিক্ষা পাও নাই; তাঁহারই বাক্য ত শুনিয়াছ, এবং যীশুতে যে সত্য আছে, তদনুসারে তাঁহাতেই শিক্ষিত হইয়াছ; যেন তোমরা পূর্ব্বকালীন আচরণ সম্বন্ধে সেই পুরাতন মনুষ্যকে ত্যাগ কর, যাহা প্রতারণার বিবিধ অভিলাষ মতে ভ্রষ্ট হইয়া পড়িতেছে; আর আপন আপন মনের ভাবে যেন ক্রমশঃ নবীনীকৃত হও, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান কর, যাহা সত্যের ধার্ম্মিকতায় ও সাধুতায় ঈশ্বরের সাদৃশ্যে সৃষ্ট হইয়াছে। অতএব তোমরা, যাহা মিথ্যা, তাহা ত্যাগ করিয়া প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সহিত সত্য আলাপ করিও; কারণ আমরা পরস্পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ক্রুদ্ধ হইলে পাপ করিও না; সূর্য্য অস্ত না যাইতে যাইতে তোমাদের কোপাবেশ শান্ত হউক; আর দিয়াবলকে স্থান দিও না। চোর আর চুরি না করুক, বরং স্বহস্তে সদ্ব্যাপারে পরিশ্রম করুক, যেন দীনহীনকে দিবার জন্য তাহার হাতে কিছু থাকে। তোমাদের মুখ হইতে কোন প্রকার কদালাপ বাহির না হউক, কিন্তু প্রয়োজনমতে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য সদালাপ বাহির হউক, যেন যাহারা শুনে, তাহাদিগকে অনুগ্রহ দান করা হয়। আর ঈশ্বরের সেই পবিত্র আত্মাকে দুঃখিত করিও না, যাঁহার দ্বারা তোমরা মুক্তির দিনের অপেক্ষায় মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছ। সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক। তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন। অতএব প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও। আর প্রেমে চল, যেমন খ্রীষ্টও তোমাদিগকে প্রেম করিলেন এবং আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশে, সৌরভের নিমিত্ত, উপহার ও বলিরূপে আপনাকে উৎসর্গ করিলেন। কিন্তু বেশ্যাগমনের ও সর্ব্বপ্রকার অশুদ্ধতার বা লোভের নামও যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, যেমন পবিত্রগণের উপযুক্ত। আর কুৎসিত ব্যবহার এবং প্রলাপ কিম্বা শ্লেষোক্তি, এই সকল অনুচিত ব্যবহার যেন না হয়, বরং যেন ধন্যবাদ দেওয়া হয়। কেননা তোমরা নিশ্চয় জানিতেছ, বেশ্যাগামী কি অশুদ্ধাচারী কি লোভী—সে ত প্রতিমাপূজক—কেহই খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পায় না। অনর্থক বাক্য দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে না ভুলায়; কেননা এই সকল দোষ প্রযুক্ত অবাধ্যতার সন্তানগণের উপরে ঈশ্বরের ক্রোধ বর্ত্তে। অতএব তাহাদের সহভাগী হইও না; কারণ তোমরা এক সময়ে অন্ধকার ছিলে, কিন্তু এখন প্রভুতে দীপ্তি হইয়াছ; দীপ্তির সন্তানদের ন্যায় চল —কেননা সর্ব্বপ্রকার মঙ্গলভাবে, ধার্ম্মিকতায় ও সত্যে দীপ্তির ফল হয়— প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা কর। আর অন্ধকারের ফলহীন কর্ম্ম সকলের সহভাগী হইও না, বরং সেগুলির দোষ দেখাইয়া দেও। কেননা উহারা গোপনে যে সকল কর্ম্ম করে, তাহা উচ্চারণ করাও লজ্জার বিষয়। কিন্তু দোষ দেখাইয়া দেওয়া হইলে সকলই দীপ্তি দ্বারা প্রকাশ হইয়া পড়ে; বস্তুতঃ যাহা প্রকাশ হইয়া পড়ে, তাহা সকলই দীপ্তিময়। এই জন্য উক্ত আছে, “হে নিদ্রাগত ব্যক্তি, জাগ্রৎ হও, এবং মৃতগণের মধ্য হইতে উঠ, তাহাতে খ্রীষ্ট তোমার উপরে আলোক উদয় করিবেন।” অতএব তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল। সুযোগ কিনিয়া লও, কেননা এই কাল মন্দ। এই কারণ নির্ব্বোধ হইও না, কিন্তু প্রভুর ইচ্ছা কি তাহা বুঝ। আর দ্রাক্ষারসে মত্ত হইও না, তাহাতে নষ্টামি আছে; কিন্তু আত্মাতে পরিপূর্ণ হও; গীত, স্তোত্র ও আত্মিক সঙ্কীর্ত্তনে পরস্পর আলাপ কর; আপন আপন অন্তঃকরণে প্রভুর উদ্দেশে গান ও বাদ্য কর; সর্ব্বদা সর্ব্ববিষয়ের নিমিত্ত আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ কর; খ্রীষ্টের ভয়ে এক জন অন্য জনের বশীভূত হও। নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্ত্তা; কিন্তু মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভূত, তেমনি নারীগণ সর্ব্ববিষয়ে আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হউক। স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন; যেন তিনি জলস্নান দ্বারা বাক্যে তাহাকে শুচি করিয়া পবিত্র করেন, যেন আপনি আপনার কাছে মণ্ডলীকে প্রতাপান্বিত অবস্থায় উপস্থিত করেন, যেন তাহার কলঙ্ক বা সঙ্কোচ বা এই প্রকার আর কোন কিছু না থাকে, বরং সে যেন পবিত্র ও অনিন্দনীয় হয়। এইরূপে স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য। আপন স্ত্রীকে যে প্রেম করে, সে আপনাকেই প্রেম করে। কেহ ত কখনও নিজ মাংসের প্রতি দ্বেষ করে নাই, বরং সকলে তাহার ভরণ পোষণ ও লালন পালন করে; যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর প্রতি করিতেছেন; কেননা আমরা তাঁহার দেহের অঙ্গ। “এই জন্য মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং সেই দুই জন একাঙ্গ হইবে।” এই নিগূঢ়তত্ত্ব মহৎ, কিন্তু আমি খ্রীষ্টের উদ্দেশে ও মণ্ডলীর উদ্দেশে ইহা কহিলাম। তথাপি তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর; কিন্তু স্ত্রীর উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় করে। সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য। “তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও,”—এ ত প্রতিজ্ঞাসহযুক্ত প্রথম আজ্ঞা— “যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে দীর্ঘায়ু হও।” আর পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল। দাসেরা, তোমরা যেমন খ্রীষ্টের আজ্ঞাবহ, তেমনি ভয় ও কম্প সহকারে, তোমাদের অন্তঃকরণের সরলতায়, মাংস অনুযায়ী আপন আপন প্রভুদিগের আজ্ঞাবহ হও; মনুষ্যের তুষ্টিকরের ন্যায় চাক্ষুষ সেবা না করিয়া, বরং খ্রীষ্টের দাসের ন্যায় প্রাণের সহিত ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিতেছ বলিয়া, মনুষ্যের সেবা নয়, বরং প্রভুরই সেবা করিতেছ বলিয়া, প্রণয় ভাবেই দাস্যকর্ম্ম কর; জানিও, কোন সৎকর্ম্ম করিলে প্রত্যেক ব্যক্তি, সে দাস হউক কি স্বাধীন হউক, প্রভু হইতে তাহার ফল পাইবে। আর প্রভুগণ, তোমরা তাহাদের প্রতি তদ্রূপ ব্যবহার কর, ভর্ৎসনা ত্যাগ কর, জানিও, তাহাদের এবং তোমাদেরও প্রভু স্বর্গে আছেন, আর তিনি কাহারও মুখাপেক্ষা করেন না। শেষ কথা এই, তোমরা প্রভুতে ও তাঁহার শক্তির পরাক্রমে বলবান্‌ হও। ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান কর, যেন দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার। কেননা রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে। এই জন্য তোমরা ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা গ্রহণ কর, যেন সেই কুদিনে প্রতিরোধ করিতে এবং সকলই সম্পন্ন করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে পার। অতএব সত্যের কটিবন্ধনীতে বদ্ধকটি হইয়া, ধার্ম্মিকতার বুকপাটা পরিয়া, এবং শান্তির সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা চরণে দিয়া দাঁড়াইয়া থাক; এই সকল ছাড়া বিশ্বাসের ঢালও গ্রহণ কর, যাহার দ্বারা তোমরা সেই পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ নির্ব্বাণ করিতে পারিবে; এবং পরিত্রাণের শিরস্ত্রাণ ও আত্মার খড়্গ, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ কর। সর্ব্ববিধ প্রার্থনা ও বিনতি সহকারে সর্ব্বসময়ে আত্মাতে প্রার্থনা কর, এবং ইহার নিমিত্ত সম্পূর্ণ অভিনিবেশ ও বিনতিসহ জাগিয়া থাক, সমস্ত পবিত্র লোকের জন্য এবং আমার পক্ষে বিনতি কর, যেন মুখ খুলিবার উপযুক্ত বক্তৃতা আমাকে দেওয়া যায়, যাহাতে আমি সাহস পূর্ব্বক সেই সুসমাচারের নিগূঢ়তত্ত্ব জ্ঞাত করিতে পারি, যাহার নিমিত্ত আমি শৃঙ্খলে বদ্ধ হইয়া রাজদূতের কর্ম্ম করিতেছি; যেমন কথা বলা আমার উচিত, তেমনি যেন সেই বিষয়ে সাহস দেখাইতে পারি। আর আমার বিষয়, আমার কিরূপ চলিতেছে, তাহা যেন তোমরাও জানিতে পার, তন্নিমিত্ত প্রভুতে প্রিয় ভ্রাতা ও বিশ্বস্ত পরিচারক যে তুখিক, তিনি তোমাদিগকে সকলই জ্ঞাত করিবেন। আমি তাঁহাকে তোমাদের কাছে সেই জন্যই পাঠাইলাম, যেন তোমরা আমাদের সমস্ত সংবাদ জ্ঞাত হও, এবং তিনি যেন তোমাদের হৃদয়ে আশ্বাস দেন। পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে শান্তি, এবং বিশ্বাসের সহিত প্রেম, ভ্রাতৃগণের প্রতি বর্ত্তুক। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে যাহারা অক্ষয়ভাবে প্রেম করে, অনুগ্রহ সেই সকলের সহবর্ত্তী হউক। পৌল ও তীমথিয়, খ্রীষ্ট যীশুর দাস—খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত যত পবিত্র লোক ফিলিপীতে আছেন, তাঁহাদের এবং অধ্যক্ষগণ ও পরিচারকগণের সমীপে। আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। যখনই তোমাদিগকে স্মরণ হয়, সর্ব্বদাই আমি আমার সমস্ত বিনতিতে তোমাদের সকলের জন্য আনন্দ সহকারে বিনতি করতঃ আমার ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি; কারণ প্রথম দিবসাবধি অদ্য পর্য্যন্ত সুসমাচারের পক্ষে তোমাদের সহভাগিতা আছে। ইহাতেই আমার দৃঢ় প্রত্যয় এই যে, তোমাদের অন্তরে যিনি উত্তম কার্য্য আরম্ভ করিয়াছেন, তিনি যীশু খ্রীষ্টের দিন পর্য্যন্ত তাহা সিদ্ধ করিবেন। আর তোমাদের সকলের বিষয়ে আমার এই ভাব রাখা ন্যায্য; কেননা আমি তোমাদিগকে হৃদয়ের মধ্যে রাখি; যেহেতুক আমার বন্ধন সম্বন্ধে এবং সুসমাচারের পক্ষসমর্থনে ও প্রতিপাদন সম্বন্ধে তোমরা সকলে আমার সহিত অনুগ্রহের সহভাগী হইয়াছ। কারণ ঈশ্বর আমার সাক্ষী যে, খ্রীষ্ট যীশুর স্নেহে আমি তোমাদের সকলের জন্য কেমন আকাঙ্ক্ষী। আর আমি এই প্রার্থনা করিয়া থাকি, তোমাদের প্রেম যেন তত্ত্বজ্ঞানে ও সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্যে উত্তর উত্তর উপচিয়া পড়ে; এইরূপে তোমরা যেন, যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার, তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পার, খ্রীষ্টের দিন পর্য্যন্ত যেন তোমরা সরল ও বিঘ্নরহিত থাক, যেন ধার্ম্মিকতার সেই ফলে পূর্ণ হও, যাহা যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা পাওয়া যায়, এইরূপে যেন ঈশ্বরের গৌরব ও প্রশংসা হয়। এখন হে ভ্রাতৃগণ, আমার বাসনা এই যে, তোমরা জান, আমার সম্বন্ধে যাহা যাহা ঘটিয়াছে, তদ্দ্বারা বরং সুসমাচারের পথ পরিষ্কার হইয়াছে; বিশেষতঃ সমস্ত স্কন্ধাবারে এবং অন্যান্য সকলের নিকটে আমার বন্ধন খ্রীষ্ট সম্বন্ধীয় বলিয়া প্রকাশ পাইয়াছে; এবং প্রভুতে স্থিত অধিকাংশ ভ্রাতা আমার বন্ধন হেতু দৃঢ়প্রত্যয়ী হইয়া নির্ভয়ে ঈশ্বরের বাক্য কহিতে অধিক সাহসী হইয়াছে। সত্য, কেহ কেহ, এমন কি, মাৎসর্য্য ও বিবাদেচ্ছা প্রযুক্ত, আর কেহ কেহ সুবাসনা প্রযুক্ত খ্রীষ্টকে প্রচার করিতেছে। ইহারা প্রেমে করিতেছে, কারণ জানে যে, আমি সুসমাচারের পক্ষ সমর্থন করিতে নিযুক্ত রহিয়াছি। কিন্তু উহারা প্রতিযোগিতা বশতঃ খ্রীষ্টকে প্রচার করিতেছে, বিশুদ্ধ ভাবে নয়, আমার বন্ধন ক্লেশযুক্ত করিবে মনে করিতেছে। তবে কি? একটী কথা নিশ্চয় কপটতায় কি সত্যভাবে, যে কোন প্রকারে হউক, খ্রীষ্ট প্রচারিত হইতেছেন; আর ইহাতেই আমি আনন্দ করিতেছি, হাঁ, পরেও আনন্দ করিব। কেননা আমি জানি, তোমাদের প্রার্থনা এবং যীশু খ্রীষ্টের আত্মার যোগান দ্বারা ইহা আমার পরিত্রাণের সপক্ষ হইবে। এইরূপে আমার ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা ও প্রত্যাশা এই যে, আমি কোন প্রকারে লজ্জাপন্ন হইব না, বরং সম্পূর্ণ সাহস সহকারে, যেমন সর্ব্বদা তেমনি এখনও, খ্রীষ্ট জীবন দ্বারা হউক, কি মৃত্যু দ্বারা হউক, আমার দেহে মহিমান্বিত হইবেন। কেননা আমার পক্ষে জীবন খ্রীষ্ট, এবং মরণ লাভ। কিন্তু মাংসে যে জীবন, তাহাই যদি আমার কর্ম্মের ফল হয়, তবে কোন্‌টী মনোনীত করিব, তাহা বলিতে পারি না। অথচ আমি দুইয়েতে সঙ্কুচিত হইতেছি; আমার বাসনা এই যে, প্রস্থান করিয়া খ্রীষ্টের সঙ্গে থাকি, কেননা তাহা বহুগুণে অধিক শ্রেয়ঃ; কিন্তু মাংসে থাকা তোমাদের জন্য অধিক আবশ্যক। আর এই দৃঢ় প্রত্যয় আছে বলিয়া আমি জানি যে থাকিব, এমন কি, বিশ্বাসে তোমাদের উন্নতি ও আনন্দের নিমিত্ত তোমাদের সকলের কাছে থাকিব, যেন তোমাদের কাছে আমার পুনরাগমন দ্বারা খ্রীষ্ট যীশুতে তোমাদের শ্লাঘা আমাতে উপচিয়া পড়ে। কেবল, খ্রীষ্টের সুসমাচারের যোগ্যরূপে তাঁহার প্রজাদের মত আচরণ কর; আমি আসিয়া তোমাদিগকে দেখি, কি অনুপস্থিত থাকি, আমি যেন তোমাদের বিষয়ে শুনিতে পাই যে, তোমরা এক আত্মাতে স্থির আছ, এক প্রাণে সুসমাচারের বিশ্বাসের পক্ষে মল্লযুদ্ধ করিতেছ; এবং কোন বিষয়ে বিপক্ষগণ কর্ত্তৃক ত্রাসযুক্ত হইতেছ না; তাহা উহাদের জন্য বিনাশের, কিন্তু তোমাদের পরিত্রাণের প্রমাণ, আর এটি ঈশ্বরদত্ত। যেহেতুক তোমাদিগকে খ্রীষ্টের নিমিত্ত এই বর দেওয়া হইয়াছে, যেন কেবল তাঁহাতে বিশ্বাস কর, তাহা নয়, কিন্তু তাঁহার নিমিত্ত দুঃখভোগও কর; কারণ আমাতে যেরূপ দেখিয়াছ, এবং এখনও আমাতে হইতেছে শুনিতেছ, সেইরূপ প্রাণপণ তোমাদেরও হইতেছে। অতএব খ্রীষ্টে যদি কোন আশ্বাস, যদি প্রেমের কোন সান্ত্বনা, যদি আত্মার কোন সহভাগিতা, যদি কোন স্নেহ ও করুণা থাকে, তবে তোমরা আমার আনন্দ পূর্ণ কর—একই বিষয় ভাব, এক প্রেমের প্রেমী, একপ্রাণ, এক ভাববিশিষ্ট হও। প্রতিযোগিতার কিম্বা অনর্থক দর্পের বশে কিছুই করিও না, বরং নম্রভাবে প্রত্যেক জন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর; এবং প্রত্যেক জন আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখ। খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক। ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন। এই কারণ ঈশ্বর তাঁহাকে অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন, এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল-নিবাসীদের “সমুদয় জানু পাতিত হয়, এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে” যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু, এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন। অতএব, হে আমার প্রিয়তমেরা, তোমরা সর্ব্বদা যেমন আজ্ঞাবহ হইয়া আসিতেছ, তেমনি আমার সাক্ষাতে যেরূপ কেবল সেইরূপ নয়, বরং এখন আরও অধিকতররূপে আমার অসাক্ষাতে, সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন কর। কারণ ঈশ্বরই আপন হিতসঙ্কল্পের নিমিত্ত তোমাদের অন্তরে ইচ্ছা ও কার্য্য উভয়ের সাধনকারী। তোমরা বচসা ও তর্কবিতর্ক বিনা সমস্ত কার্য্য কর, যেন তোমরা অনিন্দনীয় ও অমায়িক হও, এই কালের সেই কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের নিষ্কলঙ্ক সন্তান হও, যাহাদের মধ্যে তোমরা জগতে জ্যোতির্গণের ন্যায় প্রকাশ পাইতেছ, জীবনের বাক্য ধরিয়া রহিয়াছ; ইহাতে খ্রীষ্টের দিনে আমি এই শ্লাঘা করিবার হেতু পাইব যে, আমি বৃথা দৌড়ি নাই, বৃথা পরিশ্রমও করি নাই। কিন্তু তোমাদের বিশ্বাসের যজ্ঞে ও সেবায় যদি আমি পেয় নৈবেদ্যরূপে সেচিতও হই, তথাপি আনন্দ করিতেছি, আর তোমাদের সকলের সঙ্গে আনন্দ করিতেছি। সেই প্রকারে তোমরাও আনন্দ কর, আর আমার সঙ্গে আনন্দ কর। আমি প্রভু যীশুতে প্রত্যাশা করিতেছি যে, তীমথিয়কে শীঘ্রই তোমাদের কাছে পাঠাইব, যেন তোমাদের অবস্থা জানিয়া আমারও প্রাণ জুড়ায়। কারণ আমার কাছে এমন সমপ্রাণ কেহই নাই যে, প্রকৃতরূপে তোমাদের বিষয় চিন্তা করিবে। কেননা উহারা সকলে যীশু খ্রীষ্টের বিষয় নয়, কিন্তু আপন আপন বিষয় চেষ্টা করে। কিন্তু তোমরা ইহাঁর পক্ষে এই প্রমাণ জ্ঞাত আছ যে, পিতার সহিত সন্তান যেমন, আমার সহিত ইনি তেমনি সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছেন। অতএব আশা করি, আমার কি ঘটে, তাহা দেখিতে পাইলেই তাঁহাকে তোমাদের নিকটে পাঠাইয়া দিব। আর প্রভুতে আমার দৃঢ় প্রত্যয় এই যে, আমি আপনিও ত্বরায় উপস্থিত হইব। পরন্তু আমার ভ্রাতা, সহকর্ম্মী ও সহসেনা, এবং তোমাদের প্রেরিত ও আমার প্রয়োজনীয় উপকারার্থক সেবক ইপাফ্রদীতকে তোমাদের নিকটে পাঠাইয়া দেওয়া আমার আবশ্যক বোধ হইল। কেননা তিনি তোমাদের সকলকে দেখিবার জন্য আকাঙ্ক্ষী ছিলেন, এবং তোমরা তাঁহার পীড়ার সংবাদ শুনিয়াছ বলিয়া তিনি ব্যাকুল হইয়াছিলেন। আর বাস্তবিক তিনি পীড়ায় মৃতকল্প হইয়াছিলেন; কিন্তু ঈশ্বর তাঁহার প্রতি দয়া করিয়াছেন, আর কেবল তাঁহার প্রতি নয়, আমার প্রতিও দয়া করিয়াছেন, যেন দুঃখের উপর দুঃখ আমার না হয়। এই জন্য আমি অধিক যত্নপূর্ব্বক তাঁহাকে পাঠাইলাম, যেন তোমরা তাঁহাকে দেখিয়া পুনর্ব্বার আনন্দ কর, আমারও দুঃখের লাঘব হয়। অতএব তোমরা তাঁহাকে প্রভুতে সম্পূর্ণ আনন্দ সহকারে গ্রহণ করিও, এবং এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর করিও; কেননা খ্রীষ্টের কার্য্যের নিমিত্তে তিনি মৃত্যুমুখে উপস্থিত হইয়াছিলেন, ফলতঃ আমার সেবায় তোমাদের ত্রুটি পূরণার্থে প্রাণপণ করিয়াছিলেন। শেষ কথা এই, হে আমার ভ্রাতৃগণ, প্রভুতে আনন্দ কর। একই কথা তোমাদিগকে পুনঃ পুনঃ লিখিতে আমার আয়াস বোধ হয় না, আর তাহা তোমাদের রক্ষার নিমিত্ত। সেই কুকুরদের হইতে সাবধান, সেই দুষ্ট কার্য্যকারীদের হইতে সাবধান, সেই ছিন্ন লোকদের হইতে সাবধান। আমরাই ত ছিন্নত্বক্‌ লোক, আমরা যাহারা ঈশ্বরের আত্মাতে আরাধনা করি, এবং খ্রীষ্ট যীশুতে শ্লাঘা করি, মাংসে প্রত্যয় করি না। তথাপি আমি মাংসেও দৃঢ় প্রত্যয়ী হইতে পারিতাম। যদি অন্য কেহ বোধ করে যে, সে মাংসে প্রত্যয় করিতে পারে, আমি অধিক করিতে পারি। আমি অষ্টম দিনে ত্বক্‌ছেদপ্রাপ্ত, ইস্রায়েল-জাতীয় বিন্যামীন বংশীয়, ইব্রিকুলজাত ইব্রীয়, ব্যবস্থার সম্বন্ধে ফরীশী, উদ্যোগ সম্বন্ধে মণ্ডলীর তাড়নাকারী, ব্যবস্থাগত ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধে অনিন্দনীয় গণ্য ছিলাম। কিন্তু যাহা যাহা আমার লাভ ছিল, সে সমস্ত খ্রীষ্টের নিমিত্ত ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিলাম। আর বাস্তবিক আমার প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর জ্ঞানের শ্রেষ্ঠতা প্রযুক্ত আমি সকলই ক্ষতি বলিয়া গণ্য করিতেছি; তাঁহার নিমিত্ত সমস্তেরই ক্ষতি সহ্য করিয়াছি, এবং তাহা মলবৎ গণ্য করিতেছি, যেন খ্রীষ্টকে লাভ করি, এবং তাঁহাতেই যেন আমাকে দেখিতে পাওয়া যায়; আমার নিজের ধার্ম্মিকতা যাহা ব্যবস্থা হইতে প্রাপ্য, তাহা যেন আমার না হয়, কিন্তু যে ধার্ম্মিকতা খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা হয়, বিশ্বাসমূলক যে ধার্ম্মিকতা ঈশ্বর হইতে পাওয়া যায়, তাহাই যেন আমার হয়; যেন আমি তাঁহাকে, তাঁহার পুনরুত্থানের পরাক্রম ও তাঁহার দুঃখভোগের সহভাগিতা জানিতে পারি, এইরূপে তাঁহার মৃত্যুর সমরূপ হই; কোন মতে যদি মৃতগণের মধ্য হইতে পুনরুত্থানের ভাগী হইতে পারি। আমি যে এখন পাইয়াছি, কিম্বা এখন সিদ্ধ হইয়াছি, তাহা নয়; কিন্তু যাহার নিমিত্ত খ্রীষ্ট যীশু কর্ত্তৃক ধৃত হইয়াছি, কোন ক্রমে তাহা ধরিবার চেষ্টায় দৌড়িতেছি। ভ্রাতৃগণ, আমি যে তাহা ধারিয়াছি, আপনার বিষয়ে এমন বিচার করি না; কিন্তু একটী কাজ করি, পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধদিক্‌স্থ আহ্বানের পণ পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি। অতএব আইস, আমরা যত লোক সিদ্ধ, সকলে এই বিষয় ভাবি; আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের অন্যবিধ ভাব থাকে, তবে ঈশ্বর তোমাদের কাছে তাহাও প্রকাশ করিবেন। পরন্তু আইস, আমরা যে পর্য্যন্ত পঁহুছিয়াছি, সেই একই ধারায় চলি। ভ্রাতৃগণ, তোমরা সকলে মিলিয়া আমার অনুকারী হও, এবং আমরা যেমন তোমাদের আদর্শ, তেমনি আমাদের ন্যায় যাহারা চলে, তাহাদের প্রতি দৃষ্টি রাখ। কেননা অনেকে এমন চলিতেছে, যাহাদের বিষয়ে তোমাদিগকে বার বার বলিয়াছি, এবং এখনও রোদন করিতে করিতে বলিতেছি, তাহারা খ্রীষ্টের ক্রুশের শত্রু; তাহাদের পরিণাম বিনাশ; উদর তাহাদের ঈশ্বর, এবং নিজ লজ্জাতেই তাহাদের গৌরব; তাহারা পার্থিব বিষয় ভাবে। কারণ আমরা স্বর্গপুরীর প্রজা; আর তথা হইতে আমরা ত্রাণকর্ত্তার, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের, আগমন প্রতীক্ষা করিতেছি; তিনি আমাদের দীনতার দেহকে রূপান্তর করিয়া নিজ প্রতাপের দেহের সমরূপ করিবেন, যে কার্য্যসাধক-শক্তিতে তিনি সকলই আপনার বশীভূত করিতে পারেন, তাহারই গুণে করিবেন। অতএব, হে আমার ভ্রাতৃগণ, প্রিয়তমেরা ও আকাঙ্ক্ষার পাত্রেরা, আমার আনন্দ ও মুকুটস্বরূপেরা, প্রিয়তমেরা, তোমরা এই প্রকারে প্রভুতে স্থির থাক। আমি ইবদিয়াকে বিনতি করিয়া, ও সুন্তুখীকে বিনতি করিয়া বলিতেছি, তোমরা প্রভুতে একই বিষয় ভাব। আবার, হে প্রকৃত সহযুগ্য, তোমাকেও বিনয় করিতেছি, তুমি ইহাঁদের সাহায্য কর, কেননা ইঁহারা সুসমাচারে আমার সহিত পরিশ্রম করিয়াছিলেন, ক্লীমেন্ত এবং আমার আর আর সহকর্ম্মচারীও তাহা করিয়াছিলেন, তাঁহাদের নাম জীবন-পুস্তকে লেখা আছে। তোমরা প্রভুতে সর্ব্বদা আনন্দ কর; পুনরায় বলিব, আনন্দ কর। তোমাদের শান্ত ভাব মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক। প্রভু নিকটবর্ত্তী। কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে। অবশেষে, হে ভ্রাতৃগণ, যাহা যাহা সত্য, যাহা যাহা আদরণীয়, যাহা যাহা ন্যায্য, যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্‌গুণ ও যে কোন কীর্ত্তি হউক, সেই সকল আলোচনা কর। তোমরা আমার কাছে যাহা যাহা শিখিয়াছ, গ্রহণ করিয়াছ, শুনিয়াছ ও দেখিয়াছ, সেই সকল কর; তাহাতে শান্তির ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকিবেন। কিন্তু আমি প্রভুতে বড়ই আনন্দিত হইলাম যে, এত কালের পর এক্ষণে তোমরা আমার জন্য চিন্তা করিতে নূতন উদ্দীপনা পাইয়াছ; এই বিষয়ে তোমরা চিন্তা করিতে ছিলে, কিন্তু সুযোগ প্রাপ্ত হও নাই। এই কথা আমি অনাটন সম্বন্ধে বলিতেছি না, কেননা আমি যে অবস্থায় থাকি, তাহাতে সন্তুষ্ট থাকিতে শিখিয়াছি। আমি অবনত হইতে জানি, উপচয় ভোগ করিতেও জানি; প্রত্যেক বিষয়ে ও সর্ব্ববিষয়ে আমি তৃপ্ত কি ক্ষুধিত হইতে, উপচয় কি অনাটন ভোগ করিতে দীক্ষিত হইয়াছি। যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি। তথাপি তোমরা আমার ক্লেশের সহভাগী হইয়া ভালই করিয়াছ। আর, হে ফিলিপীয়েরা, তোমরাও জান, সুসমাচারের আদিতে, যখন আমি মাকিদনিয়া হইতে প্রস্থান করিয়াছিলাম, তখন কোন মণ্ডলী দেনা পাওনা বিষয়ে আমার সহভাগী হয় নাই, কেবল তোমরাই হইয়াছিলে। বাস্তবিক থিষলনীকীতেও তোমরা এক বার, বরং দুই বার আমার প্রয়োজনীয় উপকার পাঠাইয়াছিলে। আমি দানপ্রাপ্তির চেষ্টা করিতেছি না, কিন্তু সেই ফলের চেষ্টা করিতেছি, যাহা তোমাদের হিসাবে বহু লাভজনক হইবে। আমার সকলই আছে, বরঞ্চ উপচিয়া পড়িতেছে; আমি তোমাদের হইতে ইপাফ্রদীতের হাতে যাহা যাহা পাইয়াছি তাহাতে পরিপূর্ণ হইয়াছি, তাহা সৌরভস্বরূপ ঈশ্বরের প্রীতিজনক গ্রাহ্য বলি। আর আমার ঈশ্বর গৌরবে খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত আপন ধন অনুসারে তোমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকার পূর্ণরূপে সাধন করিবেন। আমাদের ঈশ্বর ও পিতার মহিমা যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে হউক। আমেন। তোমরা খ্রীষ্ট যীশুতে প্রত্যেক পবিত্র লোককে মঙ্গলবাদ কর। আমার সঙ্গী ভ্রাতৃগণ তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। সকল পবিত্র লোক, বিশেষতঃ যাঁহারা কৈসরের বাটীর লোক, তাঁহারা তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের আত্মার সহবর্ত্তী হউক। পৌল, ঈশ্বরের ইচ্ছায় খ্রীষ্ট যীশুর প্রেরিত, এবং তীমথিয় ভ্রাতা—কলসীতে যে সকল পবিত্র লোক ও বিশ্বস্ত ভ্রাতা খ্রীষ্টে আছেন, তাঁহাদের সমীপে। আমাদের পিতা ঈশ্বর হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। আমরা সর্ব্বদা তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনাকালে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি; কেননা খ্রীষ্ট যীশুতে যে বিশ্বাস এবং সমস্ত পবিত্র লোকের প্রতি যে প্রেম তোমাদের আছে, তাহার সংবাদ শুনিয়াছি; ইহার মূল সেই প্রত্যাশিত বিষয়, যাহা তোমাদের নিমিত্ত স্বর্গে রাখা হইয়াছে। তাহার বৃত্তান্ত তোমরা সেই সুসমাচারের সত্যের বাক্যে পূর্ব্বে শুনিয়াছ, যে সুসমাচার তোমাদের কাছে উপস্থিত হইয়াছে, যেমন সমস্ত জগতেও ফলবান্‌ ও বর্দ্ধিষ্ণু হইতেছে; তোমাদের মধ্যেও সেই দিন অবধি হইতেছে, যে দিনে তোমরা তাহা শুনিয়াছিলে, এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ সত্যরূপে জ্ঞাত হইয়াছিলে। তোমরা আমাদের প্রিয় সহদাস ইপাফ্রার কাছে সেইরূপ শিক্ষা পাইয়াছ; তিনি তোমাদের নিমিত্তে খ্রীষ্টের বিশ্বস্ত পরিচারক; আত্মাতে তোমাদের প্রেমের বিষয়ও তিনি আমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছেন। এই কারণ আমরাও, যে দিন সেই সংবাদ শুনিয়াছি, সেই দিন অবধি তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা ও বিনতি করিতে ক্ষান্ত হই নাই, যেন তোমরা সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হও, আর তদ্দ্বারা প্রভুর যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ কর, সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্‌ ও ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও, আনন্দের সহিত সম্পূর্ণ ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা প্রকাশার্থে তাঁহার প্রতাপের পরাক্রম অনুসারে সমস্ত শক্তিতে শক্তিমান্‌ হও; আর পিতার ধন্যবাদ কর, যিনি তোমাদিগকে দীপ্তিতে পবিত্রগণের অধিকারের অংশী হইবার উপযুক্ত করিয়াছেন। তিনিই আমাদিগকে অন্ধকারের কর্ত্তৃত্ব হইতে উদ্ধার করিয়া আপন প্রেমভূমি পুত্রের রাজ্যে আনয়ন করিয়াছেন; ইহাঁতেই আমরা মুক্তি, পাপের মোচন, প্রাপ্ত হইয়াছি। ইনিই অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি, সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত; কেননা তাঁহাতেই সকলই সৃষ্ট হইয়াছে; স্বর্গে ও পৃথিবীতে, দৃশ্য কি অদৃশ্য যে কিছু আছে, সিংহাসন হউক, কি প্রভুত্ব হউক, কি আধিপত্য হউক, কি কর্ত্তৃত্ব হউক, সকলই তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার নিমিত্ত সৃষ্ট হইয়াছে; আর তিনিই সকলের অগ্রে আছেন, ও তাঁহাতেই সকলের স্থিতি হইতেছে। আর তিনিই দেহের অর্থাৎ মণ্ডলীর মস্তক তিনি আদি, মৃতগণের মধ্য হইতে প্রথমজাত, যেন সর্ব্ববিষয়ে তিনি অগ্রগণ্য হন। কারণ [ঈশ্বরের] এই হিতসঙ্কল্প হইল, যেন সমস্ত পূর্ণতা তাঁহাতেই বাস করে, এবং তাঁহার ক্রুশের রক্ত দ্বারা সন্ধি করিয়া, তাঁহার দ্বারা যেন আপনার সহিত কি স্বর্গস্থিত, কি মর্ত্ত্যস্থিত, সকলই সম্মিলিত করেন, তাঁহার দ্বারাই করেন। আর পূর্ব্বে চিত্তে দুষ্ক্রিয়াতে বহিঃস্থ ও শত্রু ছিলে যে তোমরা, তোমাদিগকে তিনি এখন খ্রীষ্টের মাংসময় দেহে মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত করিলেন, যেন পবিত্র, নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ করিয়া আপনার সাক্ষাতে উপস্থিত করেন, যদি তোমরা বিশ্বাসে বদ্ধমূল ও অটল হইয়া স্থির থাক, এবং সেই সুসমাচারের প্রত্যাশা হইতে বিচলিত না হও, যাহা শুনিয়াছ, যাহা আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে প্রচারিত হইয়াছে, আমি পৌল যাহার পরিচারক হইয়াছি। এখন তোমাদের নিমিত্ত আমার যে সকল দুঃখভোগ হইয়া থাকে, তাহাতে আনন্দ করিতেছি, এবং খ্রীষ্টের ক্লেশভোগের যে অংশ অপূর্ণ রহিয়াছে তাহা আমার মাংসে তাঁহার দেহের নিমিত্ত পূর্ণ করিতেছি; সেই দেহ মণ্ডলী। তোমাদের পক্ষে ঈশ্বরের যে দেওয়ানী কার্য্য আমাকে দত্ত হইয়াছে, তদনুসারে আমি মণ্ডলীর পরিচারক হইয়াছি, যেন আমি ঈশ্বরের বাক্য সম্পূর্ণরূপে প্রচার করি; তাহা সেই নিগূঢ়তত্ত্ব, যাহা যুগযুগানুক্রমে ও পুরুষপুরুষানুক্রমে গুপ্ত ছিল, কিন্তু এখন তাঁহার পবিত্রগণের কাছে প্রকাশিত হইল; কারণ পরজাতিগণের মধ্যে সেই নিগূঢ়তত্ত্বের গৌরব-ধন কি, তাহা পবিত্রগণকে জ্ঞাত করিতে ঈশ্বরের বাসনা হইল; তাহা তোমাদের মধ্যবর্ত্তী খ্রীষ্ট, গৌরবের আশা; তাঁহাকেই আমরা ঘোষণা করিতেছি, সমস্ত জ্ঞানে প্রত্যেক মনুষ্যকে সচেতন করিতেছি ও প্রত্যেক মনুষ্যকে শিক্ষা দিতেছি, যেন প্রত্যেক মনুষ্যকে খ্রীষ্টে সিদ্ধ করিয়া উপস্থিত করি; আর তাঁহার যে কার্য্যসাধক শক্তি আমাতে সপরাক্রমে নিজ কার্য্য সাধন করিতেছে, তদনুসারে প্রাণপণ করিয়া আমি সেই অভিপ্রায়ে পরিশ্রমও করিতেছি। কারণ আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জানিতে পার, তোমাদের ও লায়দিকেয়াস্থ লোকদের জন্য, ও যত লোক আমার মাংসময় মুখ দেখে নাই, তাহাদের জন্য, আমি কত দূর প্রাণপণ করিতেছি; যেন তাহাদের হৃদয় আশ্বাস পায়, তাহারা প্রেমে পরস্পর সংসক্ত হইয়া জ্ঞানের নিশ্চয়তারূপ সমস্ত ধনে ধনী হইয়া উঠে, যেন ঈশ্বরের নিগূঢ়তত্ত্ব, অর্থাৎ খ্রীষ্টকে জানিতে পায়। ইহাঁর মধ্যে জ্ঞানের ও বিদ্যার সমস্ত নিধি গুপ্ত রহিয়াছে। এ কথা বলিতেছি, যেন কেহ প্ররোচক বাক্যে তোমাদিগকে না ভুলায়। কেননা যদিও আমি মাংসে অনুপস্থিত, তথাপি আত্মাতে তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি, এবং আনন্দপূর্ব্বক তোমাদের সুশৃঙ্খলা ও খ্রীষ্টে বিশ্বাসরূপ সুদৃঢ় গাঁথনি দেখিতে পাইতেছি। অতএব খ্রীষ্ট যীশুকে, প্রভুকে, যেমন গ্রহণ করিয়াছ, তেমনি তাঁহাতেই চল; তাঁহাতেই বদ্ধমূল ও সংগ্রথিত হইয়া প্রাপ্ত শিক্ষানুসারে বিশ্বাসে দৃঢ়ীভূত হও, এবং ধন্যবাদ সহকারে উপচিয়া পড়। দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়; কেননা তাঁহাতেই ঈশ্বরত্বের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে, এবং তোমরা তাঁহাতে পূর্ণীকৃত হইয়াছ, যিনি সমস্ত আধিপত্যের ও কর্ত্তৃত্বের মস্তক। আর তাঁহাতেই তোমরা অহস্তকৃত ত্বক্‌ছেদে, মাংসের দেহ বস্ত্রবৎ পরিত্যাগে, খ্রীষ্টের ত্বক্‌ছেদে, ছিন্নত্বক্‌ হইয়াছ; ফলতঃ বাপ্তিস্মে তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছ, এবং তাহাতে তাঁহার সহিত উত্থাপিতও হইয়াছ, ঈশ্বরের কার্য্যসাধনে বিশ্বাস দ্বারা হইয়াছ, যিনি তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছেন। আর ঈশ্বর তোমাদিগকে, অপরাধে ও তোমাদের মাংসের অত্বক্‌ছেদে মৃত তোমাদিগকে, তাঁহার সহিত জীবিত করিয়াছেন, আমাদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করিয়াছেন; আমাদের প্রতিকূলে যে বিধিবদ্ধ হস্তলেখ্য আমাদের বিরুদ্ধ ছিল, তাহা মুছিয়া ফেলিয়াছেন, এবং প্রেক দিয়া ক্রুশে লটকাইয়া দূর করিয়াছেন। আর আধিপত্য ও কর্ত্তৃত্ব সকল দূর করিয়া দিয়া ক্রুশেই সেই সকলের উপরে বিজয়-যাত্রা করিয়া তাহাদিগকে স্পষ্টরূপে দেখাইয়া দিলেন। অতএব ভোজন কি পান, কি উৎসব, কি অমাবস্যা, কি বিশ্রামবার, এই সকলের সম্বন্ধে কেহ তোমাদের বিচার না করুক; এ সকল ত আগামী বিষয়ের ছায়ামাত্র, কিন্তু দেহ খ্রীষ্টের। নম্রতায় ও দূতগণের পূজায় স্বেচ্ছাচারী কোন ব্যক্তি তোমাদিগকে বিজয়মুকুটে বঞ্চিত না করুক; সে যাহা যাহা দেখিয়াছে, সেই গুলিতেই বিচরণ করে, আপন মাংসময় মনের গর্ব্বে বৃথা গর্ব্বিত হয়, কিন্তু সেই মস্তক ধারণ করে না, যাঁহা হইতে সমস্ত দেহ, গ্রন্থি ও বন্ধন দ্বারা পোষিত ও সংসক্ত হইয়া, ঈশ্বরীয় বৃদ্ধিতে বৃদ্ধি পাইতেছে। তোমরা যখন জগতের অক্ষরমালা ছাড়িয়া খ্রীষ্টের সহিত মরিয়াছ, তখন কেন জগজ্জীবীদের ন্যায় এই সকল বিধির অধীন হইতেছ, যথা, ধরিও না, আস্বাদ লইও না, স্পর্শ করিও না? সেই সকল বস্তু ত ভোগ দ্বারা ক্ষয় পাইবার নিমিত্তই হইয়াছে। ঐ সকল বিধি মনুষ্যদের বিবিধ আদেশ ও ধর্ম্মসূত্রের অনুরূপ। স্বেচ্ছাপূজা, নম্রতা ও দেহের প্রতি নির্দ্দয়তাক্রমে এই সকল জ্ঞান নামে কীর্ত্তিত বটে, তথাপি মাংসের পোষকতার বিরুদ্ধে কিছুর মধ্যে গণ্য নহে। অতএব তোমরা যখন খ্রীষ্টের সহিত উত্থাপিত হইয়াছ, তখন সেই ঊর্দ্ধ স্থানের বিষয় চেষ্টা কর, যেখানে খ্রীষ্ট আছেন, ঈশ্বরের দক্ষিণে বসিয়া আছেন। ঊর্দ্ধস্থ বিষয় ভাব, পৃথিবীস্থ বিষয় ভাবিও না। কেননা তোমরা মরিয়াছ, এবং তোমাদের জীবন খ্রীষ্টের সহিত ঈশ্বরে গুপ্ত রহিয়াছে। আমাদের জীবনস্বরূপ খ্রীষ্ট যখন প্রকাশিত হইবেন, তখন তোমরাও তাঁহার সহিত সপ্রতাপে প্রকাশিত হইবে। অতএব তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কু-অভিলাষ, এবং লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা। এই সকলের কারণ অবাধ্যতার সন্তানগণের প্রতি ঈশ্বরের ক্রোধ উপস্থিত হয়। পূর্ব্বে যখন তোমরা এ সকলে জীবন ধারণ করিতে, তখন তোমরাও এই সকলে চলিতে। কিন্তু এখন তোমরাও এ সকল ত্যাগ কর,—ক্রোধ, রাগ, হিংসা, নিন্দা ও তোমাদের মুখনির্গত কুৎসিত আলাপ। এক জন অন্য জনের কাছে মিথ্যা কথা কহিও না; কেননা তোমরা পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করিয়াছ, এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করিয়াছ, যে আপন সৃষ্টিকর্ত্তার প্রতিমূর্ত্তি অনুসারে তত্ত্বজ্ঞানের নিমিত্ত নূতনীকৃত হইতেছে। এস্থানে গ্রীক কি যিহূদী, ছিন্নত্বক্‌ কি অচ্ছিন্নত্বক্‌, বর্ব্বর, স্কুথীয়, দাস, স্বাধীন বলিয়া কিছু হইতে পারে না, কিন্তু খ্রীষ্টই সর্ব্বেসর্ব্বা। অতএব তোমরা, ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের, পবিত্র ও প্রিয় লোকদের, উপযোগী মতে করুণার চিত্ত, মধুর ভাব, নম্রতা, মৃদুতা, সহিষ্ণুতা পরিধান কর। পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর; প্রভু যেমন তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন, তোমরাও তেমনি কর। আর এই সকলের উপরে প্রেম পরিধান কর; তাহাই সিদ্ধির যোগবন্ধন। আর খ্রীষ্টের শান্তি তোমাদের হৃদয়ে কর্ত্তৃত্ব করুক; তোমরা ত তাহারই নিমিত্ত এক দেহে আহূত হইয়াছ; আর কৃতজ্ঞ হও। খ্রীষ্টের বাক্য প্রচুররূপে তোমাদের অন্তরে বাস করুক; তোমরা সমস্ত বিজ্ঞতায় গীত, স্ত্রোত্র ও আত্মিক সঙ্কীর্ত্তন দ্বারা পরস্পর শিক্ষা ও চেতনা দান কর; অনুগ্রহে আপন আপন হৃদয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশে গান কর। আর বাক্যে কি কার্য্যে যাহা কিছু কর, সকলই প্রভু যীশুর নামে কর, তাঁহার দ্বারা পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতে করিতে ইহা কর। নারীগণ, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও, যেমন প্রভুতে উপযুক্ত। স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে প্রেম কর, তাহাদের প্রতি কটুব্যবহার করিও না। সন্তানেরা, তোমরা সর্ব্ববিষয়ে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহাই প্রভুতে তুষ্টিজনক। পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়। দাসেরা, যাহারা মাংসের সম্বন্ধে তোমাদের প্রভু, তোমরা তাহাদের আজ্ঞাবহ হও; চাক্ষুষ সেবা দ্বারা মনুষ্যের তুষ্টিকরের মত নয়, কিন্তু অন্তঃকরণের সরলতায় প্রভুকে ভয় করিয়া আজ্ঞাবহ হও। যাহা কিছু কর, প্রাণের সহিত কার্য্য কর, মনুষ্যের কর্ম্ম নয়, কিন্তু প্রভুরই কর্ম্ম বলিয়া কর; কেননা তোমরা জান, প্রভু হইতে তোমরা দায়াধিকাররূপ প্রতিদান পাইবে; তোমরা প্রভু খ্রীষ্টেরই দাসত্ব করিতেছ; বস্তুতঃ যে অন্যায় করে, সে আপনার কৃত অন্যায়ের প্রতিফল পাইবে; আর [প্রভুর কাছে] মুখাপেক্ষা নাই। প্রভুরা, তোমরা দাসদের প্রতি ন্যায় ও সাম্য ব্যবহার কর, জানিও যে, তোমাদেরও এক প্রভু স্বর্গে আছেন। তোমরা প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাক, ধন্যবাদ সহকারে এ বিষয়ে জাগিয়া থাক। আর তৎসঙ্গে আমাদের জন্যও প্রার্থনা কর, যেন ঈশ্বর আমাদের জন্য বাক্যের দ্বার খুলিয়া দেন, যেন খ্রীষ্টের সেই নিগূঢ়তত্ত্ব জ্ঞাত করিতে পারি, যাহার জন্য আমি বন্ধনযুক্তও আছি, যেন আমার যেমন বলা উচিত, তেমনি তাহা প্রকাশ করিতে পারি। তোমরা বাহিরের লোকদের প্রতি বুদ্ধিপূর্ব্বক আচরণ কর, সুযোগ কিনিয়া লও। তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক, লবণে আস্বাদযুক্ত হউক, কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা যেন তোমরা জানিতে পার। প্রভুতে প্রিয় ভ্রাতা, বিশ্বস্ত পরিচারক ও সহদাস যে তুখিক, তিনি তোমাদিগকে আমার সমস্ত বিষয় জানাইবেন। তোমাদের কাছে তাঁহাকে এই কারণ পাঠাইলাম, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমরা কেমন আছি, এবং তিনি যেন তোমাদের হৃদয়কে আশ্বাস দেন। আর বিশ্বস্ত ও প্রিয় ভ্রাতা ওনীষিমকেও সঙ্গে পাঠাইলাম, যিনি তোমাদেরই এক জন। ইহাঁরা এখানকার সমস্ত সমাচার তোমাদিগকে জ্ঞাত করিবেন। আমার সহবন্ধি আরিষ্টার্খ, এবং বার্ণবার কুটুম্ব, মার্ক—যাঁহার বিষয়ে তোমরা আজ্ঞা পাইয়াছ; তিনি যদি তোমাদের কাছে উপস্থিত হন, তবে তাঁহাকে গ্রহণ করিও—ও যুষ্ট নামে আখ্যাত যীশু, ইহাঁরা তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন; ছিন্নত্বক্‌ লোকদের মধ্যে কেবল এই কয়েক জন ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে আমার সহকারী; ইহাঁরা আমার সান্ত্বনাজনক হইয়াছেন। ইপাফ্রা তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন, তিনি ত তোমাদেরই এক জন, খ্রীষ্ট যীশুর দাস; তিনি সতত প্রার্থনায় তোমাদের পক্ষে মল্লযুদ্ধ করিতেছেন, যেন তোমরা ঈশ্বরের সমস্ত ইচ্ছাতে সিদ্ধ ও কৃতনিশ্চয় হইয়া দাঁড়াইয়া থাক। কারণ আমি তাঁহার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিতেছি যে, তোমাদের জন্য এবং যাঁহারা লায়দিকেয়াতে ও যাঁহারা হিয়রাপলিতে আছেন, তাঁহাদের জন্য তাঁহার বড়ই যত্ন। লূক, সেই প্রিয় চিকিৎসক, এবং দীমা তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। তোমরা লায়দিকেয়া-নিবাসী ভ্রাতৃগণকে, এবং নুম্ফাকে ও তাঁহার গৃহস্থিত মণ্ডলীকে মঙ্গলবাদ কর। আর তোমাদের মধ্যে এই পত্র পাঠ হইলে পর দেখিও, যেন, লায়দিকেয়াস্থ মণ্ডলীতেও ইহা পাঠ করা হয়; এবং লায়দিকেয়া হইতে যে পত্র পাইবে, তাহা যেন তোমরাও পাঠ কর। আর আর্খিপ্পকে বলিও, তুমি প্রভুতে যে পরিচারকের পদ পাইয়াছ সে বিষয়ে দেখিও, যেন তাহা সম্পন্ন কর। এই মঙ্গলবাদ আমি পৌল স্বহস্তে লিখিলাম। তোমরা আমার বন্ধন স্মরণ করিও। অনুগ্রহ তোমাদের সহবর্ত্তী হউক। পৌল, সীল ও তীমথিয়—পিতা ঈশ্বরে ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টে স্থিত থিষলনীকীয়দের মণ্ডলী সমীপে। অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। আমরা প্রার্থনাকালে তোমাদের নাম উল্লেখ করিয়া তোমাদের সকলের নিমিত্ত সতত ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি; আমরা তোমাদের বিশ্বাসের কার্য্য, প্রেমের পরিশ্রম ও আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বিষয়ক প্রত্যাশার ধৈর্য্য আমাদের ঈশ্বর ও পিতার সাক্ষাতে অবিরত স্মরণ করিয়া থাকি; কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, ঈশ্বরের প্রেমপাত্রগণ, আমরা জানি, তোমরা মনোনীত লোক, কেননা আমাদের সুসমাচার তোমাদের কাছে কেবল বাক্যে নয়, কিন্তু শক্তিতে ও পবিত্র আত্মায় ও অতিশয় নিশ্চয়তায় উপস্থিত হইয়াছিল; তোমরা ত জান, আমরা তোমাদের কাছে তোমাদের নিমিত্ত কি প্রকার লোক হইয়াছিলাম। আর তোমরা বহু ক্লেশের মধ্যে পবিত্র আত্মার আনন্দে বাক্যটী গ্রহণ করিয়া আমাদের এবং প্রভুরও অনুকারী হইয়াছ; এইরূপে মাকিদনিয়া ও আখায়াস্থ সমস্ত বিশ্বাসী লোকের আদর্শ হইয়াছ; কেননা তোমাদের হইতে প্রভুর বাক্য ধ্বনিত হইয়াছে, কেবল মাকিদনিয়াতে ও আখায়াতে নয়, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের যে বিশ্বাস, তাহার বার্ত্তা সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইয়াছে; এই জন্য আমাদের কিছু বলিবার প্রয়োজন নাই। কারণ তাহারা আপনারা আমাদের বিষয়ে এই বার্ত্তা প্রচার করিয়া থাকে যে, তোমাদের নিকটে আমরা কিরূপে উপস্থিত হইয়াছিলাম, আর তোমরা কিরূপে প্রতিমাগণ হইতে ঈশ্বরের দিকে ফিরিয়া আসিয়াছ, যেন জীবন্ত সত্য ঈশ্বরের সেবা করিতে পার, এবং যাঁহাকে তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছেন, যিনি আগামী ক্রোধ হইতে আমাদের উদ্ধারকর্ত্তা, যেন স্বর্গ হইতে তাঁহার সেই পুত্রের অর্থাৎ যীশুর অপেক্ষা করিতে পার। বস্তুতঃ, ভ্রাতৃগণ, তোমরা আপনারাই জান, তোমাদের নিকটে আমাদের যে উপস্থিতি, তাহা নিষ্ফল হয় নাই। বরং ফিলিপীতে পূর্ব্বে দুঃখভোগ ও অপমান ভোগ করিলে পর, তোমরা জান, আমরা আমাদের ঈশ্বরে সাহসী হইয়া অতিশয় প্রাণপণে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচারের কথা বলিয়াছিলাম। কেননা আমাদের উপদেশ ভ্রান্তিমূলক কি অশুচিতামূলক বা ছলযুক্ত নয়। কিন্তু ঈশ্বর যেমন আমাদিগকে পরীক্ষাসিদ্ধ করিয়া আমাদের উপরে সুসমাচারের ভার রাখিয়াছেন, তেমনি কথা কহিতেছি; মানুষকে সন্তুষ্ট করিব বলিয়া নয়, কিন্তু ঈশ্বর, যিনি আমাদের অন্তঃকরণ পরীক্ষা করেন, তাঁহাকে সন্তুষ্ট করিব বলিয়াই কহিতেছি। কারণ, তোমরা জান, আমরা কখনও চাটুবাদে কিম্বা লোভজন্য ছলে লিপ্ত হই নাই, ঈশ্বর ইহার সাক্ষী; আর মনুষ্যদের হইতে সম্মান পাইতে চেষ্টা করি নাই, তোমাদের হইতেও নয়, অন্যদের হইতেও নয়, যদিও খ্রীষ্টের প্রেরিত বলিয়া আমরা ভারস্বরূপ হইলেও হইতে পারিতাম; কিন্তু যেমন স্তন্যদাত্রী নিজ বৎসদিগের লালন পালন করে, তেমনি তোমাদের মধ্যে কোমল ভাব দেখাইয়াছিলাম; সেইরূপে আমরা তোমাদিগকে স্নেহ করাতে কেবল ঈশ্বরের সুসমাচার নয়, আপন আপন প্রাণও তোমাদিগকে দিতে সন্তুষ্ট ছিলাম, যেহেতুক তোমরা আমাদের প্রিয়পাত্র হইয়াছিলে। বস্তুতঃ, হে ভ্রাতৃগণ, আমাদের পরিশ্রম ও আয়াস তোমাদের স্মরণে আছে; তোমাদের কাহারও ভারস্বরূপ যেন না হই, তজ্জন্য আমরা দিবারাত্র কার্য্য করিতে করিতে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করিয়াছিলাম। আর বিশ্বাসী যে তোমরা, তোমাদের কাছে আমরা কেমন সাধু, ধার্ম্মিক ও নির্দ্দোষাচারী ছিলাম, তাহার সাক্ষী তোমরা আছ, ঈশ্বরও আছেন। তোমরা ত জান, পিতা যেমন আপন সন্তানদিগকে, তেমনি আমরা তোমাদের প্রত্যেক জনকে আশ্বাস দিতাম, সান্ত্বনা করিতাম, ও দৃঢ়রূপে আদেশ দিতাম, যেন তোমরা ঈশ্বরের যোগ্য রূপে চল, যিনি আপন রাজ্যে ও প্রতাপে তোমাদিগকে আহ্বান করিতেছেন। আর এই জন্য আমরাও অবিরত ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতেছি যে, আমাদের কাছে ঈশ্বরের বার্ত্তারূপ বাক্য প্রাপ্ত হইয়া তোমরা মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা গ্রহণ করিয়াছিলে; তাহা ঈশ্বরের বাক্যই বটে, এবং বিশ্বাসী যে তোমরা, তোমাদের মধ্যে নিজ কার্য্য সাধনও করিতেছে। কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, যিহূদিয়ায় খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের যে সকল মণ্ডলী আছে, তোমরা তাহাদের অনুকারী হইয়াছ; কেননা উহারা যিহূদীদের হইতে যে প্রকার দুঃখ পাইয়াছে, তোমরাও তোমাদের স্বজাতীয় লোকদের হইতে সেই প্রকার দুঃখ পাইয়াছ; যিহূদীরা প্রভু যীশুকে এবং ভাববাদিগণকে বধ করিয়াছিল, আবার আমাদিগকেও তাড়না করিয়াছিল; তাহারা ঈশ্বরের তুষ্টিকর নয়, এবং সকল মনুষ্যের বিপরীত; তাহারা আমাদিগকে পরজাতীয়দের পরিত্রাণের জন্য তাহাদের কাছে কথা বলিতে বারণ করিতেছে; এইরূপে সতত আপনাদের পাপের পরিমাণ পূর্ণ করিতেছে; কিন্তু তাহাদের নিকটে চূড়ান্ত ক্রোধ উপস্থিত হইল। আর, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা অল্পকালের জন্য হৃদয়ে নয়, কেবল প্রত্যক্ষে তোমাদের হইতে বিরহিত হইলে পর অতিশয় আকাঙ্ক্ষা সহকারে তোমাদের মুখ দেখিবার নিমিত্ত আরও অধিক যত্ন করিয়াছিলাম। কারণ আমরা, বিশেষতঃ আমি পৌল, একবার ও দুইবার, তোমাদের কাছে যাইতে বাঞ্ছা করিয়াছিলাম, কিন্তু শয়তান আমাদের বাধা দিল। কেননা আমাদের প্রত্যাশা, বা আনন্দ, বা শ্লাঘার মুকুট কি? আমাদের প্রভু যীশুর সাক্ষাতে তাঁহার আগমনকালে তোমরাই কি নও? বাস্তবিক তোমরাই আমাদের গৌরব ও আনন্দভূমি। এজন্য আর ধৈর্য্য ধরিতে না পারাতে আথীনীতে একাকী থাকা আমরা বিহিত বুঝিয়াছিলাম, এবং আমাদের ভ্রাতা ও খ্রীষ্টের সুসমাচারে ঈশ্বরের পরিচারক যে তীমথিয়, তাঁহাকে পাঠাইয়াছিলাম, যেন তিনি তোমাদিগকে সুস্থির করেন, এবং তোমাদের বিশ্বাসের সম্বন্ধে আশ্বাস দেন, যেন এই সকল ক্লেশে কেহ চঞ্চল না হয়; কারণ তোমরা আপনারাই জান, আমরা ইহারই জন্য নিযুক্ত। আর বাস্তবিক আমাদের ক্লেশ যে ঘটিবে, ইহা আমরা অগ্রে, যখন তোমাদের নিকটে ছিলাম, তখন তোমাদিগকে বলিয়াছিলাম; আর তাহাই ঘটিয়াছে, এবং তোমরা তাহা জান। এ জন্য আমিও আর ধৈর্য্য ধরিতে না পারাতে তোমাদের বিশ্বাসের তত্ত্ব জানিবার নিমিত্ত উহাঁকে পাঠাইয়াছিলাম, ভাবিয়াছিলাম, পাছে পরীক্ষক কোন প্রকারে তোমাদের পরীক্ষা করিয়াছে বলিয়া আমাদের পরিশ্রম বৃথা হইয়া পড়ে। কিন্তু এখন তীমথিয় তোমাদের নিকট হইতে আমাদের কাছে আসিয়া তোমাদের বিশ্বাস ও প্রেমের শুভ সংবাদ আমাদিগকে দিয়াছেন, এবং বলিয়াছেন, তোমরা সর্বদা স্নেহ ভাবে আমাদিগকে স্মরণ করিতেছ, যেমন আমরাও তোমাদিগকে দেখিতে চাই, তেমনি আমাদিগকে দেখিতে আকাঙ্ক্ষা করিতেছ; এজন্য, হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদের বিষয়ে আমরা সমস্ত সঙ্কটের ও ক্লেশের মধ্যে তোমাদের বিশ্বাস দ্বারা আশ্বাস পাইলাম; কেননা যদি তোমরা প্রভুতে স্থির থাক, তবে এখন আমরা বাঁচি। বাস্তবিক তোমাদের কারণ আমরা আপন ঈশ্বরের সাক্ষাতে যে সকল আনন্দে আনন্দ করি, তাহার প্রতিদান বলিয়া তোমাদের জন্য ঈশ্বরকে কি প্রকার ধন্যবাদ দিতে পারি? আমরা যেন তোমাদের মুখ দেখিতে পাই, এবং তোমাদের বিশ্বাসের ত্রুটি সকল পূর্ণ করিতে পারি, এই জন্য রাত দিন অতিশয় প্রার্থনা করিতেছি। আর আমাদের ঈশ্বর ও পিতা আপনি এবং আমাদের প্রভু যীশু তোমাদের কাছে আমাদের পথ সুগম করুন। আর যেমন আমরাও তোমাদের প্রতি উপচিয়া পড়ি, তেমনি প্রভু তোমাদিগকে পরস্পরের ও সকলের প্রতি প্রেমে বর্দ্ধিষ্ণু করুন ও উপচিয়া পড়িতে দিউন; এইরূপে আপনার সমস্ত পবিত্রগণ সহ আমাদের প্রভু যীশুর আগমন কালে যেন তিনি আমাদের ঈশ্বর ও পিতার সাক্ষাতে তোমাদের হৃদয় পবিত্রতায় অনিন্দনীয়রূপে সুস্থির করেন। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, অবশেষে আমরা প্রভু যীশুতে তোমাদিগকে বিনয় করিতেছি, চেতনা দিয়া বলিতেছি, কিরূপে চলিয়া ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করিতে হয়, এ বিষয়ে আমাদের কাছে যে শিক্ষা গ্রহণ করিয়াছ, আর যেরূপ চলিতেছ, তদনুসারে অধিক উপচিয়া পড়। কেননা প্রভু যীশুর দ্বারা আমরা তোমাদিগকে কি কি আদেশ দিয়াছি, তাহা তোমরা জান। ফলতঃ ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, তোমাদের পবিত্রতা; —যেন তোমরা ব্যভিচার হইতে দূরে থাক, তোমাদের প্রত্যেক জন যেন, যাহারা ঈশ্বরকে জানে না, সেই পরজাতীয়দের ন্যায় কামাভিলাষে নয়, কিন্তু পবিত্রতায় ও সমাদরে নিজ নিজ পাত্র লাভ করিতে জানে। কেহ যেন সীমা অতিক্রম করিয়া এই ব্যাপারে আপন ভ্রাতাকে না ঠকায়; কেননা আমরা পূর্ব্বে তোমাদিগকে যেমন বলিয়াছি ও সাক্ষ্য দিয়াছি তদনুসারে, প্রভু এই সকলের প্রতিফলদাতা। কারণ ঈশ্বর আমাদিগকে অশুচিতার নিমিত্ত নয়, কিন্তু পবিত্রতায় আহ্বান করিয়াছেন। এই জন্য যে ব্যক্তি অগ্রাহ্য করে, সে মনুষ্যকে অগ্রাহ্য করে তাহা নয়, বরং ঈশ্বরকেই অগ্রাহ্য করে, যিনি নিজ পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে প্রদান করেন। আর ভ্রাতৃপ্রেম সম্বন্ধে তোমাদিগকে কিছু লেখা অনাবশ্যক, কারণ তোমরা আপনারা পরস্পর প্রেম করিবার জন্য ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাইয়াছ; আর বাস্তবিক সমস্ত মাকিদনিয়া-নিবাসী সমুদয় ভ্রাতৃগণের প্রতি তাহা করিতেছ। কিন্তু তোমাদিগকে বিনয় করিয়া বলিতেছি, ভ্রাতৃগণ, আরও অধিক উপচিয়া পড়, আর শান্ত ভাবে থাকিতে ও আপন আপন কার্য্য করিতে এবং স্বহস্তে পরিশ্রম করিতে সযত্ন হও—যেমন আমরা তোমাদিগকে আদেশ দিয়াছি— যেন বহিঃস্থ লোকদের প্রতি তোমরা শিষ্টাচারী হও, এবং তোমাদের কিছুরই অভাব না থাকে। কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা চাহি না যে, যাহারা নিদ্রাগত হয়, তাহাদের বিষয়ে তোমরা অজ্ঞাত থাক; যেন যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত তোমরা দুঃখার্ত্ত না হও। কেননা আমরা যখন বিশ্বাস করি যে, যীশু মরিয়াছেন, এবং উঠিয়াছেন, তখন জানি, ঈশ্বর যীশু দ্বারা নিদ্রাগত লোকদিগকেও সেইরূপে তাঁহার সহিত আনয়ন করিবেন। কেননা আমরা প্রভুর বাক্য দ্বারা তোমাদিগকে ইহা বলিতেছি যে, আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা প্রভুর আগমন পর্য্যন্ত অবশিষ্ট থাকিব, আমরা কোন ক্রমে সেই নিদ্রাগত লোকদের অগ্রগামী হইব না। কারণ প্রভু স্বয়ং আনন্দধ্বনি সহ, প্রধান দূতের রব সহ, এবং ঈশ্বরের তূরীবাদ্য সহ স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিবেন, আর যাহারা খ্রীষ্টে মরিয়াছে, তাহারা প্রথমে উঠিবে। পরে আমরা যাহারা জীবিত আছি, যাহারা অবশিষ্ট থাকিব, আমরা আকাশে প্রভুর সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত সকসঙ্গে তাহাদের সহিত মেষযোগে নীত হইব; আর এইরূপে সতত প্রভুর সঙ্গে থাকিব। অতএব তোমরা এই সকল কথা বলিয়া এক জন অন্য জনকে সান্ত্বনা দেও। কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, বিশেষ বিশেষ কালের ও সময়ের বিষয়ে তোমাদিগকে কিছু লেখা অনাবশ্যক। কারণ তোমরা আপনারা বিলক্ষণ জান, রাত্রিকালে যেমন চোর, তেমনি প্রভুর দিন আসিতেছে। লোকে যখন বলে, শান্তি ও অভয়, তখনই তাহাদের কাছে যেমন গর্ভবতীর প্রসব-বেদনা উপস্থিত হইয়া থাকে, তেমনি আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হয়; আর তাহারা কোন ক্রমে এড়াইতে পারিবে না। কিন্তু, ভ্রাতৃগণ, তোমরা অন্ধকারে নও যে, সেই দিন চোরের ন্যায় তোমাদের উপরে আসিয়া পড়িবে। তোমরা ত সকলে দীপ্তির সন্তান ও দিবসের সন্তান; আমরা রাত্রিরও নই, অন্ধকারেরও নই। অতএব আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই। কারণ যাহারা নিদ্রা যায়, তাহারা রাত্রিতেই নিদ্রা যায়; এবং যাহারা মদ্যপায়ী, তাহারা রাত্রিতেই মত্ত হয়। কিন্তু আমরা দিবসের বলিয়া আইস, মিতাচারী হই, বিশ্বাস ও প্রেমরূপ বুকপাটা পরি, এবং পরিত্রাণের আশারূপ শিরস্ত্র মস্তকে দিই; কেননা ঈশ্বর আমাদিগকে ক্রোধের জন্য নিযুক্ত করেন নাই, কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা পরিত্রাণ লাভের জন্য; তিনি আমাদের নিমিত্ত মরিলেন, যেন আমরা জাগিয়া থাকি বা নিদ্রা যাই, তাঁহার সঙ্গেই জীবিত থাকি। অতএব যেমন তোমরা করিয়াও থাক, তেমনি তোমরা পরস্পরকে আশ্বাস দেও, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুল। কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা তোমাদিগকে নিবেদন করিতেছি; যাঁহারা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন ও প্রভুতে তোমাদের উপরে নিযুক্ত আছেন, এবং তোমাদিগকে চেতনা দেন, তাঁহাদিগকে চিনিয়া লও, আর তাঁহাদের কর্ম্ম প্রযুক্ত তাঁহাদিগকে প্রেমে অতিশয় সমাদর কর। আপনাদের মধ্যে ঐক্য রাখ। আর, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা তোমাদিগকে বিনয় করিতেছি, যাহারা অনিয়মিতরূপে চলে, তাহাদিগকে চেতনা দেও, ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর, দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও। দেখিও, যেন অপকারের পরিশোধে কেহ কাহারও অপকার না কর, কিন্তু পরস্পরের এবং সকলের প্রতি সর্ব্বদা সদাচরণের অনুধাবন কর। [16,17] সতত আনন্দ কর; অবিরত প্রার্থনা কর; *** সর্ব্ববিষয়ে ধন্যবাদ কর; কারণ খ্রীষ্ট যীশুতে ইহাই তোমাদের উদ্দেশে ঈশ্বরের ইচ্ছা। আত্মাকে নির্ব্বাণ করিও না। [20,21] ভাববাণী তুচ্ছ করিও না। সর্ব্ববিষয়ের পরীক্ষা কর; যাহা ভাল, তাহা ধরিয়া রাখ। *** সর্ব্বপ্রকার মন্দ বিষয় হইতে দূরে থাক। আর শান্তির ঈশ্বর আপনি তোমাদিগকে সর্ব্বতোভাবে পবিত্র করুন; এবং তোমাদের অবিকল আত্মা, প্রাণ ও দেহ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমন কালে অনিন্দনীয়রূপে রক্ষিত হউক। যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করেন, তিনি বিশ্বস্ত, তিনিই তাহা করিবেন। ভ্রাতৃগণ, আমাদের নিমিত্ত প্রার্থনা কর। সকল ভ্রাতাকে পবিত্র চুম্বনে মঙ্গলবাদ কর। আমি তোমাদিগকে প্রভুর দিব্য দিয়া বলিতেছি, সমুদয় ভ্রাতার কাছে যেন এই পত্র পাঠ করা হয়। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের সহবর্ত্তী হউক। পৌল, সীল ও তীমথিয়—আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টে স্থিত থিষলনীকীয়দের মণ্ডলী সমীপে। পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। হে ভ্রাতৃগণ, আমরা তোমাদের নিমিত্ত সর্ব্বদা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে বাধ্য; আর তাহা করা উপযুক্ত, কেননা তোমাদের বিশ্বাস অতিশয় বাড়িতেছে, এবং পরস্পরের প্রতি তোমাদের প্রত্যেক জনের প্রেম উপচিয়া পড়িতেছে। এই জন্য, তোমরা যে সকল তাড়না ও ক্লেশ সহ্য করিতেছ, সেই সকলের মধ্যে তোমাদের ধৈর্য্য ও বিশ্বাস থাকায় আমরা আপনারা ঈশ্বরের মণ্ডলী সকলের মধ্যে তোমাদের শ্লাঘা করিতেছি। আর উহা ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের স্পষ্ট লক্ষণ, যাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সেই রাজ্যের যোগ্য বলিয়া গণ্য হইবে, যাহার নিমিত্ত দুঃখভোগও করিতেছ। বাস্তবিক ঈশ্বরের কাছে ইহা ন্যায্য যে, যাহারা তোমাদিগকে ক্লেশ দেয়, তিনি তাহাদিগকে প্রতিফলরূপে ক্লেশ দিবেন, এবং ক্লেশ পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদিগকে আমাদের সহিত বিশ্রাম দিবেন, [ইহা তখনই হইবে] যখন প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন, এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন। তাহারা প্রভুর মুখ হইতে ও তাঁহার শক্তির প্রতাপ হইতে অনন্তকালস্থায়ী বিনাশরূপ দণ্ড ভোগ করিবে, ইহা সেই দিন ঘটিবে, যে দিন তিনি আপন পবিত্রগণে গৌরবান্বিত হইবার, এবং যাহারা বিশ্বাস করিয়াছে, তাহাদের সকলেতে চমৎকারের পাত্র হইবার জন্য আগমন করিবেন; আমরা তোমাদের কাছে যে সাক্ষ্য দিয়াছি, তাহা ত বিশ্বাসে গৃহীত হইয়াছে। এই জন্য আমরা তোমাদের নিমিত্ত সর্ব্বদা এই প্রার্থনাও করিতেছি, যেন আমাদের ঈশ্বর তোমাদিগকে তোমাদের আহ্বানের যোগ্য বলিয়া গণ্য করেন, আর মঙ্গলভাবের সমস্ত বাসনা ও বিশ্বাসের কর্ম্ম সপরাক্রমে সম্পূর্ণ করিয়া দেন; যেন আমাদের ঈশ্বরের ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ অনুসারে আমাদের প্রভু যীশুর নাম তোমাদিগেতে গৌরবান্বিত হয়, এবং তাঁহাতে তোমরাও গৌরবান্বিত হও। আবার, হে ভ্রাতৃগণ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমন ও তাঁহার নিকটে আমাদের সংগৃহীত হইবার বিষয়ে তোমাদিগকে এই বিনতি করিতেছি; তোমরা কোন আত্মা দ্বারা, বা কোন বাক্য দ্বারা, অথবা, আমরা লিখিয়াছি মনে করিয়া কোন পত্র দ্বারা, মনের স্থিরতা হইতে বিচলিত বা উদ্বিগ্ন হইও না, ভাবিও না যে প্রভুর দিন উপস্থিত হইল; কেহ কোন মতে যেন তোমাদিগকে না ভুলায়; কেননা প্রথমে সেই ধর্ম্ম-ভ্রষ্টতা উপস্থিত হইবে, এবং সেই পাপপুরুষ, সেই বিনাশ-সন্তান, প্রকাশ পাইবে, যে প্রতিরোধী হইবে ও ‘ঈশ্বর’ নামে আখ্যাত বা পূজ্য সকলের হইতে আপনাকে বড় করিবে, এমন কি, ঈশ্বরের মন্দিরে বসিয়া আপনাকে ঈশ্বর বলিয়া দেখাইবে। তোমাদের কি মনে পড়ে না, আমি পূর্ব্বে যখন তোমাদের কাছে ছিলাম, তখন তোমাদিগকে এই সকল বলিয়াছিলাম? আর সে যেন স্বসময়ে প্রকাশ পায়, এই জন্য কিসে তাহাকে বাধা দিয়া রাখিতেছে, তাহা তোমরা জান। কারণ অধর্ম্মের নিগূঢ়তত্ত্ব এখনই কার্য্য সাধন করিতেছে; কেবল এখন এক জন যে পর্য্যন্ত সে দূরীভূত না হয়, বাধা দিয়া রাখিতেছে। আর তখন সেই অধর্ম্মী প্রকাশ পাইবে, যাহাকে প্রভু যীশু আপন মুখের নিশ্বাস দ্বারা সংহার করিবেন, ও আপন আগমনের প্রকাশ দ্বারা লোপ করিবেন। সেই ব্যক্তির আগমন শয়তানের কার্য্যসাধন অনুসারে মিথ্যার সমস্ত পরাক্রম ও নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ সহকারে হইবে, এবং যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদের সম্বন্ধে অধার্ম্মিকতার সমস্ত প্রতারণা সহকারে হইবে; কারণ তাহারা পরিত্রাণ পাইবার নিমিত্ত সত্যের প্রেম গ্রহণ করে নাই। আর সেই জন্য ঈশ্বর তাহাদের কাছে ভ্রান্তির কার্য্যসাধন পাঠান, যাহাতে তাহারা সেই মিথ্যায় বিশ্বাস করিবে; যেন সেই সকলের বিচার হয়, যাহারা সত্যে বিশ্বাস করিত না, কিন্তু অধার্ম্মিকতায় প্রীত হইত। কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, প্রভুর প্রিয়তমেরা, আমরা তোমাদের নিমিত্ত সর্ব্বদা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে বাধ্য; কেননা ঈশ্বর আদি হইতে তোমাদিগকে আত্মার পবিত্রতাপ্রদানে ও সত্যের বিশ্বাসে পরিত্রাণের জন্য মনোনীত করিয়াছেন; এবং সেই অভিপ্রায়ে আমাদের সুসমাচার দ্বারা তোমাদিগকে আহ্বানও করিয়াছেন, যেন তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রতাপ লাভ করিতে পার। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, স্থির থাক, এবং আমাদের বাক্য অথবা পত্র দ্বারা যে সকল শিক্ষা পাইয়াছ, তাহা ধরিয়া রাখ। আর আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আপনি, ও আমাদের পিতা ঈশ্বর, যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, এবং অনুগ্রহ দ্বারা অনন্তকালস্থায়ী সান্ত্বনা ও উত্তম প্রত্যাশা দিয়াছেন, তিনি তোমাদের হৃদয়কে সান্ত্বনা দিউন, এবং সমস্ত উত্তম কার্য্যে ও বাক্যে সুস্থির করুন। শেষকথা এই; হে ভ্রাতৃগণ, আমাদের নিমিত্ত প্রার্থনা কর; যেন, যেমন তোমাদের মধ্যে হইতেছে, তেমনি প্রভুর বাক্য দ্রুতগতি ও গৌরবান্বিত হয়, আর আমরা যেন অশিষ্ট ও মন্দ লোকদের হইতে উদ্ধার পাই; কেননা সকলের বিশ্বাস নাই। কিন্তু প্রভু বিশ্বস্ত; তিনিই তোমাদিগকে সুস্থির করিবেন ও মন্দ হইতে রক্ষা করিবেন। আর তোমাদের সম্বন্ধে প্রভুতে আমাদের এই দৃঢ় প্রত্যয় আছে যে, আমরা যাহা যাহা আদেশ করি, সেই সকল তোমরা পালন করিতেছ ও করিবে। আর প্রভু তোমাদের হৃদয়কে ঈশ্বরের প্রেমের পথে ও খ্রীষ্টের ধৈর্য্যের পথে চালাউন। আর, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে তোমাদিগকে এই আদেশ দিতেছি, যে কোন ভ্রাতা অনিয়মিতরূপে চলে, এবং তোমরা আমাদের নিকট হইতে যে শিক্ষা পাইয়াছ, তদনুসারে চলে না, তাহার সঙ্গ ত্যাগ কর; কারণ কি প্রকারে আমাদের অনুকারী হইতে হয়, তাহা তোমরা আপনারাই জান; কেননা তোমাদের মধ্যে আমরা অনিয়মিতাচারী ছিলাম না; আর বিনামূল্যে কাহারও কাছে অন্ন ভোজন করিতাম না, বরং তোমাদের কাহারও ভারস্বরূপ যেন না হই, তজ্জন্য পরিশ্রম ও আয়াস সহকারে রাত দিন কার্য্য করিতাম। আমাদের যে অধিকার নাই, তাহা নয়; কিন্তু তোমাদের নিকটে আপনাদিগকে আদর্শরূপে দেখাইতে চাহিলাম, যেন তোমরা আমাদের অনুকারী হও। কারণ আমরা যখন তোমাদের কাছে ছিলাম, তখন তোমাদিগকে এই আদেশ দিতাম যে, যদি কেহ কার্য্য করিতে না চায়, তবে সে আহারও না করুক। বাস্তবিক আমরা শুনিতে পাইতেছি, তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ অনিয়মিতরূপে চলিতেছে, কোন কার্য্য না করিয়া অনধিকারচর্চ্চা করিয়া থাকে। এই প্রকার লোকদিগকে আমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে আদেশ ও উপদেশ দিতেছি, তাহারা শান্ত ভাবে কার্য্য করিয়া আপনাদেরই অন্ন ভোজন করুক। আর, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা সৎকর্ম্ম করিতে নিরুৎসাহ হইও না। আর যদি কেহ এই পত্র দ্বারা কথিত আমাদের বাক্য না মানে, তবে তাহাকে চিহ্নিত করিয়া রাখ, তাহার সংসর্গে থাকিও না, যেন সে লজ্জিত হয়; অথচ তাহাকে শত্রু জ্ঞান করিও না, কিন্তু ভ্রাতা বলিয়া চেতনা দেও। আর শান্তির প্রভু স্বয়ং সর্ব্বদা সর্ব্বপ্রকারে তোমাদিগকে শান্তি প্রদান করুন। প্রভু তোমাদের সকলের সহবর্ত্তী হউন। এই মঙ্গলবাদ আমি পৌল স্বহস্তে লিখিলাম। প্রত্যেক পত্রে ইহাই চিহ্ন; আমি এইরূপ লিখিয়া থাকি। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের সকলের সহবর্ত্তী হউক। পৌল, আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের এবং আমাদের প্রত্যাশা-ভূমি খ্রীষ্ট যীশুর আজ্ঞা অনুসারে, খ্রীষ্ট যীশুর প্রেরিত, —বিশ্বাস সম্বন্ধে আমার যথার্থ বৎস তীমথিয়ের সমীপে। পিতা ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশু হইতে অনুগ্রহ, দয়া ও শান্তি বর্ত্তুক। মাকিদনিয়ায় যাইবার সময়ে যেমন আমি তোমাকে অনুরোধ করিয়াছিলাম যে, তুমি ইফিষে থাকিয়া কতকগুলি লোককে এই আদেশ দেও, যেন তাহারা অন্যবিধ শিক্ষা না দেয়, এবং গল্প ও অসীম বংশাবলিতে মনোযোগ না করে, [তেমনি এখন করিতেছি]; কেননা সে সকল বরং বিতণ্ডা উপস্থিত করে, ঈশ্বরের যে ধনাধ্যক্ষের কার্য্য বিশ্বাস সম্বন্ধীয়, তাহা উপস্থিত করে না। কিন্তু সেই আদেশের পরিণাম প্রেম, যাহা শুচি হৃদয়, সৎসংবেদ ও অকল্পিত বিশ্বাস হইতে উৎপন্ন; কতকগুলি লোক এই সকলের পথ হইতে ভ্রষ্ট হইয়া অলীক বাচালতারূপ বিপথে গিয়াছে। তাহারা ব্যবস্থার শিক্ষক হইতে চায়, অথচ যাহা বলে, ও যাহার বিষয়ে দৃঢ় নিশ্চয় ভাবে কথা কহে, তাহা বুঝে না। কিন্তু আমরা জানি, ব্যবস্থা উত্তম, যদি কেহ বিধিমতে উহা ব্যবহার করে, ইহা জানিয়া করে যে, ধার্ম্মিকের জন্য নহে, কিন্তু যাহারা অধর্ম্মী ও অদম্য, ভক্তিহীন ও পাপী, অসাধু ও ধর্ম্মবিরূপক, পিতৃহন্তা ও মাতৃহন্তা, নরহন্তা, ব্যভিচারী, পুঙ্গামী, মনুষ্যচোর, মিথ্যাবাদী, মিথ্যাশপথকারী, তাহাদের জন্য, এবং আর যাহা কিছু নিরাময় শিক্ষার বিপরীত, তাহার জন্য ব্যবস্থা স্থাপিত হইয়াছে। ইহা পরম ধন্য ঈশ্বরের সেই গৌরবের সুসমাচারের অনুযায়ী, যে সুসমাচার আমার নিকটে গচ্ছিত হইয়াছে। যিনি আমাকে শক্তি দিয়াছেন, আমাদের সেই প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তিনি আমাকে বিশ্বস্ত জ্ঞান করিয়া পরিচর্য্যায় নিযুক্ত করিয়াছেন, যদিও পূর্ব্বে আমি ধর্ম্মনিন্দক, তাড়নাকারী ও অপমানকারী ছিলাম; কিন্তু দয়া পাইয়াছি, কেননা না বুঝিয়া অবিশ্বাসের বশে সেই সকল কর্ম্ম করিতাম; আর আমাদের প্রভুর অনুগ্রহ, খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাস ও প্রেম সহকারে, অতি প্রচুররূপে উপচিয়া পড়িয়াছে। এই কথা বিশ্বসনীয় ও সর্ব্বতোভাবে গ্রহণের যোগ্য যে, খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের পরিত্রাণ করিবার জন্য জগতে আসিয়াছেন; তাহাদের মধ্যে আমি অগ্রগণ্য; কিন্তু এই জন্য দয়া পাইয়াছি, যেন যীশু খ্রীষ্ট এই অগ্রগণ্য আমাতে সম্পূর্ণ দীর্ঘসহিষ্ণুতা প্রদর্শন করেন, যাহাতে আমি তাহাদের আদর্শ হইতে পারি, যাহারা অনন্ত জীবনের নিমিত্ত তাঁহাতে বিশ্বাস করিবে। যিনি যুগপর্য্যায়ের রাজা, অক্ষয় অদৃশ্য একমাত্র ঈশ্বর, যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে তাঁহারই সমাদর ও মহিমা হউক। আমেন। বৎস তীমথিয়, তোমার বিষয়ে পূর্ব্বকার সকল ভাববাণী অনুসারে আমি তোমার নিকটে এই আদেশ সমর্পণ করিলাম, যেন তুমি সেই সকলের গুণে উত্তম যুদ্ধ করিতে পার, যেন বিশ্বাস ও সৎসংবেদ রক্ষা কর; সৎসংবেদ দূরে ফেলাতে কাহারও কাহারও বিশ্বাসরূপ নৌকা ভগ্ন হইয়াছে। তাহাদের মধ্যে হুমিনায় ও আলেক্‌সান্দর রহিয়াছে; আমি তাহাদিগকে শয়তানের হস্তে সমর্পণ করিলাম, যেন তাহারা শাসিত হইয়া ধর্ম্মনিন্দা ত্যাগ করিতে শিক্ষা পায়। আমার সর্ব্বপ্রথম নিবেদন এই, যেন সকল মনুষ্যের নিমিত্ত, বিনতি, প্রার্থনা, অনুরোধ, ধন্যবাদ করা হয়; [বিশেষতঃ] রাজাদের ও উচ্চপদস্থ সকলের নিমিত্ত; যেন আমরা সম্পূর্ণ ভক্তিতে ও ধীরতায় নিরুদ্বেগ ও প্রশান্ত জীবন যাপন করিতে পারি। তাহাই আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের সম্মুখে উত্তম ও গ্রাহ্য; তাঁহার ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে। কারণ একমাত্র ঈশ্বর আছেন; ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থও আছেন, তিনি মনুষ্য, খ্রীষ্ট যীশু, তিনি সকলের নিমিত্ত মুক্তির মূল্যরূপে আপনাকে প্রদান করিয়াছেন; এই সাক্ষ্য যথাসময়ে দাতব্য; আমি এই উদ্দেশ্যে প্রচারক ও প্রেরিত বলিয়া নিযুক্ত; সত্য বলিতেছি, মিথ্যা বলিতেছি না; বিশ্বাসে ও সত্যে আমি পরজাতীয়দের শিক্ষক। অতএব আমার বাসনা এই, সকল স্থানে পুরুষেরা বিনা ক্রোধে ও বিনাবিতর্কে শুচি হস্ত তুলিয়া প্রার্থনা করুক। সেই প্রকারে নারীগণও সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়, কিন্তু—যাহা ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী নারীগণের যোগ্য—সৎক্রিয়ায় ভূষিতা হউক। নারী সম্পূর্ণ বশ্যতাপূর্ব্বক মৌনভাবে শিক্ষা করুক। আমি উপদেশ দিবার কিম্বা পুরুষের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার অনুমতি নারীকে দিই না, কিন্তু মৌনভাবে থাকিতে বলি। কারণ প্রথমে আদমকে, পরে হবাকে নির্ম্মাণ করা হইয়াছিল। আর আদম প্রবঞ্চিত হইলেন না, কিন্তু নারী প্রবঞ্চিতা হইয়া অপরাধে পতিতা হইলেন। তথাপি যদি আত্মসংযমের সহিত বিশ্বাসে, প্রেমে ও পবিত্রতায় তাহারা স্থির থাকে, তবে নারী সন্তান প্রসব দিয়া পরিত্রাণ পাইবে। এই কথা বিশ্বসনীয়, যদি কেহ অধ্যক্ষপদের আকাঙ্ক্ষী হন, তবে তিনি উত্তম কার্য্য বাঞ্ছা করেন। অতএব ইহা আবশ্যক যে, অধ্যক্ষ অনিন্দনীয়, এক স্ত্রীর স্বামী, মিতাচারী, আত্মসংযমী, পরিপাটী, অতিথিসেবক, এবং শিক্ষাদানে নিপুন হন; মদ্যপানে আসক্ত কিম্বা প্রহারক না হন, কিন্তু ক্ষান্ত, নির্ব্বিরোধ ও অর্থলোভ-শূন্য হন, আপন ঘরের শাসন উত্তমরূপে করেন, এবং সম্পূর্ণ ধীরতা সহকারে সন্তানগণকে বশে রাখেন; কিন্তু যদি কেহ ঘর শাসন করিতে না জানে, সে কেমন করিয়া ঈশ্বরের মণ্ডলীর তত্ত্বাবধান করিবে? তিনি নূতন শিষ্য না হউন পাছে গর্ব্বান্ধ হইয়া দিয়াবলের বিচারে পতিত হন। আর বহিঃস্থ লোকদের কাছেও উত্তম সাক্ষ্য প্রাপ্ত হওয়া তাঁহার আবশ্যক, পাছে তিরস্কারে ও দিয়াবলের জালে পতিত হন। সেইরূপ পরিচারকদেরও আবশ্যক, যেন তাঁহারা ধীন হন, যেন দ্বিবাক্যবাদী, বহু মদ্যপানে আসক্ত, কুৎসিত লাভের আকাঙ্ক্ষী না হন, এবং শুচি সংবেদে বিশ্বাসের নিগূঢ়তত্ত্ব ধারণ করেন। আর অগ্রে তাঁহাদেরও পরীক্ষা করা হউক, যদি তাঁহারা অনিন্দনীয় হন, তবে পরিচারকের কর্ম্ম করুন। তদ্রূপ স্ত্রীলোকেরাও ধীরা, অনপবাদিকা, মিতাচারিণী এবং সর্ব্ববিষয়ে বিশ্বস্তা হউন। পরিচারকেরা এক এক জন এক এক স্ত্রীর স্বামী হউন, এবং সন্তান সন্ততি ও আপন আপন ঘর উত্তমরূপে শাসন করুন। কেননা যাঁহারা উত্তমরূপে পরিচারকের কার্য্য করিয়াছেন, তাঁহারা আপনাদের জন্য সুপ্রতিষ্ঠা, এবং খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে অতিশয় সাহস লাভ করেন। আমি শীঘ্রই তোমার নিকটে উপস্থিত হইব, এমন আশা করিয়া তোমাকে এই সকল লিখিলাম; কিন্তু যদি আমার বিলম্ব হয়, তবে যেন তুমি জানিতে পার যে, ঈশ্বরের গৃহমধ্যে কেমন আচার ব্যবহার করিতে হয়; সেই গৃহ ত জীবন্ত ঈশ্বরের মণ্ডলী, সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি। আর ভক্তির নিগূঢ়তত্ত্ব মহৎ, ইহা সর্ব্বসম্মত, যিনি মাংসে প্রকাশিত হইলেন, আত্মাতে ধার্ম্মিক প্রতিপন্ন হইলেন, দূতগণের নিকট দর্শন দিলেন, জাতিগণের মধ্যে প্রচারিত হইলেন, জগতে বিশ্বাস দ্বারা গৃহীত হইলেন, সপ্রতাপে ঊর্দ্ধে নীত হইলেন। কিন্তু আত্মা স্পষ্টই বলিতেছেন, উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে। ইহা এমন মিথ্যাবাদীদের কপটতায় ঘটিবে, যাহাদের নিজ সংবেদ তপ্ত লৌহের দাগের মত দাগযুক্ত হইয়াছে। তাহারা বিবাহ নিষেধ করে, এবং বিবিধ খাদ্যের ব্যবহার নিষেধ করে, যাহা যাহা ঈশ্বর এই অভিপ্রায়ে সৃষ্টি করিয়াছেন, যেন, যাহারা বিশ্বাসী ও সত্যের তত্ত্ব জানে, তাহারা ধন্যবাদ-পূর্ব্বক ভোজন করে। বাস্তবিক ঈশ্বরের সৃষ্ট সমস্ত বস্তুই ভাল; ধন্যবাদ সহকারে গ্রহণ করিলে কিছুই অগ্রাহ্য নয়, কেননা ঈশ্বরের বাক্য এবং প্রার্থনা দ্বারা তাহা পবিত্রীকৃত হয়। এই সকল কথা ভ্রাতৃগণকে মনে করাইয়া দিলে তুমি খ্রীষ্ট যীশুর উত্তম পরিচারক হইবে; যে বিশ্বাসের ও উত্তম শিক্ষার অনুসরণ করিয়া আসিতেছ, তাহার বাক্যে পোষিত থাকিবে; কিন্তু ধর্ম্মবিরূপক এবং জরাতুর স্ত্রীলোকের যোগ্য গল্প সকল অগ্রাহ্য কর। আর ভক্তিতে দক্ষ হইতে অভ্যাস কর; কেননা শারীরিক দক্ষতার অভ্যাস অল্প বিষয়ে সুফলদায়ক হয়; কিন্তু ভক্তি সর্ব্ববিষয়ে সুফলদায়িকা, তাহা বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিজ্ঞাযুক্ত। এই কথা বিশ্বসনীয় এবং সর্ব্বতোভাবে গ্রহণের যোগ্য; কারণ ইহারই নিমিত্ত আমরা পরিশ্রম ও প্রাণপণ করিতেছি; কেননা যিনি সমস্ত মনুষ্যের, বিশেষতঃ বিশ্বাসীবর্গের ত্রাণকর্ত্তা, আমরা সেই জীবন্ত ঈশ্বরের প্রত্যাশা করিয়া আসিতেছি। তুমি এই সকল বিষয় আজ্ঞা কর ও শিক্ষা দেও। তোমার যৌবন কাহাকেও তুচ্ছ করিতে দিও না; কিন্তু বাক্যে, আচার ব্যবহারে, প্রেমে, বিশ্বাসে, ও শুদ্ধতায় বিশ্বাসিগণের আদর্শ হও। আমি যতদিন না আসি, তুমি পাঠ করিতে এবং প্রবোধ ও শিক্ষা দিতে নিবিষ্ট থাক। তোমার অন্তরস্থ সেই অনুগ্রহ-দান অবহেলা করিও না, যাহা ভাববাণী দ্বারা প্রাচীনবর্গের হস্তার্পণ সহকারে তোমাকে দত্ত হইয়াছে। এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর, এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়। আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে। তুমি কোন প্রাচীনকে তিরস্কার করিও না, কিন্তু তাঁহাকে পিতার ন্যায়, যুবকদিগকে ভ্রাতার ন্যায়, প্রাচীনাদিগকে মাতার ন্যায়, যুবতীদিগকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভাবে ভগিনীর ন্যায় জানিয়া অনুনয় কর। যাহারা প্রকৃত বিধবা, সেই বিধবাদিগকে সমাদর কর। কিন্তু যদি কোন বিধবার পুত্র কি পৌত্রগণ থাকে, তবে তাহারা প্রথমতঃ নিজ বাটীর লোকদের প্রতি ভক্তি প্রকাশ করিতে ও পিতামাতার প্রত্যুপকার করিতে শিক্ষা করুক; কেননা তাহাই ঈশ্বরের সাক্ষাতে গ্রাহ্য। যে স্ত্রী প্রকৃত বিধবা ও অনাথা, সে ঈশ্বরের উপরে প্রত্যাশা রাখিয়া রাত দিন বিনতি ও প্রার্থনায় নিবিষ্টা থাকে। কিন্তু যে বিলাসিনী, সে জীবদ্দশায় মৃতা। এই সমস্ত আজ্ঞা কর, যেন তাহারা অনিন্দনীয় হয়। কিন্তু কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে। বিধবা বলিয়া কেবল তাহাকেই গণনা করা হউক, যাহার বয়স ষাট বৎসরের নীচে নয়, ও যাহার একমাত্র স্বামী ছিল, এবং যাহার পক্ষে নানা সৎকর্ম্মের প্রমাণ পাওয়া যায়; অর্থাৎ যদি সে সন্তানদের লালন পালন করিয়া থাকে, যদি অতিথিসেবা করিয়া থাকে, যদি পবিত্রদিগের পা ধুইয়া থাকে, যদি ক্লিষ্টদিগের উপকার করিয়া থাকে, যদি সমস্ত সৎকর্ম্মের অনুসরণ করিয়া থাকে। কিন্তু যুবতী বিধবাদিগকে অস্বীকার কর, কেননা খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে বিলাসিনী হইলে তাহারা বিবাহ করিতে চায়; তাহারা প্রথম বিশ্বাস অগ্রাহ্য করাতে দণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত হয়। ইহা ছাড়া তাহারা বাড়ী বাড়ী ঘুরিয়া বেড়াইয়া অলস হইতে শিখে; কেবল অলসও নয়, বরং বাচাল ও অনধিকারচর্চ্চাকারিণী হইতে ও অনুচিত কথা কহিতে শিখে। অতএব আমার বাসনা এই, যুবতী [বিধবারা] বিবাহ করুক, সন্তান প্রসব করুক, গৃহে কর্ত্তৃত্ব করুক, বিপক্ষকে নিন্দা করিবার কোন সূত্র না দিউক। কেননা ইতিপূর্ব্বেও কেহ কেহ শয়তানের পশ্চাৎ বিপথগামিনী হইয়াছে। যদি কোন বিশ্বাসিনী মহিলার ঘরে বিধবাগণ থাকে, তিনি তাহাদের উপকার করুন; মণ্ডলী ভারগ্রস্ত না হউক, যেন প্রকৃত বিধবাগণের উপকার করিতে পারে। যে প্রাচীনেরা উত্তমরূপে শাসন করেন, বিশেষতঃ যাঁহারা বাক্যে ও শিক্ষাদানে পরিশ্রম করেন, তাঁহারা দ্বিগুণ সমাদরের যোগ্য গণিত হউন। কারণ শাস্ত্রে বলে, “শস্যমর্দ্দনকারী বলদের মুখে জাল্‌তি বাঁধিও না;” আর, “কার্য্যকারী আপন বেতনের যোগ্য।” দুই তিন সাক্ষী ব্যতিরেকে কোন প্রাচীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রাহ্য করিও না। যাহারা পাপ করে, তাহাদিগকে সকলের সাক্ষাতে অনুযোগ কর; যেন অন্য সকলেও ভয় পায়। আমি ঈশ্বরের, খ্রীষ্ট যীশুর ও মনোনীত দূতগণের সাক্ষাতে তোমাকে এই দৃঢ় আজ্ঞা দিতেছি, তুমি পূর্ব্বধারণা ব্যতিরেকে এই সকল বিধি পালন কর, পক্ষপাতের বশে কিছুই করিও না। কাহারও উপরে হস্তার্পণ করিতে সত্বর হইও না, এবং পরপাপের ভাগী হইও না; আপনাকে শুদ্ধ করিয়া রক্ষা কর। এখন অবধি কেবল জল পান করিও না, কিন্তু তোমার উদরের জন্য ও তোমার বার বার অসুখ হয় বলিয়া কিঞ্চিৎ দ্রাক্ষারস ব্যবহার করিও। কোন কোন লোকের পাপ সুস্পষ্ট, বিচারের পথে অগ্রগামী; আবার কোন কোন লোকের পাপ তাহাদের পশ্চাদগামী। সৎকর্ম্মও তদ্রূপ সুস্পষ্ট; আর যাহা যাহা অন্যবিধ, সেগুলি গুপ্ত রাখিতে পারা যায় না। যে সকল লোক যোঁয়ালির অধীন দাস, তাহারা আপন আপন কর্ত্তাদিগকে সম্পূর্ণ সমাদরের যোগ্য জ্ঞান করুক, যেন ঈশ্বরের নাম এবং শিক্ষা নিন্দিত না হয়। আর যাহাদের বিশ্বাসী কর্ত্তা আছে, তাহারা তাঁহাদিগকে ভ্রাতা বলিয়া তুচ্ছ জ্ঞান না করুক; বরং আরও যত্নে দাস্যকর্ম্ম করুক, কেননা যাঁহারা সেই সদ্ব্যবহারের ফল ভোগ করেন, তাঁহারা বিশ্বাসী ও প্রেমের পাত্র। এই সকল শিক্ষা দেও ও অনুনয় কর। যদি কেহ অন্যবিধ শিক্ষা দেয়, এবং নিরাময় বাক্য, অর্থাৎ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বাক্য, ও ভক্তির অনুরূপ শিক্ষা স্বীকার না করে, তবে সে গর্ব্বান্ধ, কিছুই জানে না, কিন্তু বিতণ্ডা ও বাগ্‌যুদ্ধের বিষয়ে রোগগ্রস্ত হইয়াছে; এ সকলের ফল মাৎসর্য্য, বিরোধ, বিবিধ নিন্দা, কুসন্দেহ, এবং নষ্ট বিবেক ও হীনসত্য লোকদের চিরবিসংবাদ; এ প্রকার লোকেরা ভক্তিকে লাভের উপায় জ্ঞান করে। বাস্তবিকই ভক্তি, সন্তোষযুক্ত হইলে, মহালাভের উপায়, কেননা আমরা জগতে কিছুই সঙ্গে আনি নাই, কিছুই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেও পারি না; কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব। কিন্তু যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে। কেননা ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে। কিন্তু তুমি, হে ঈশ্বরের লোক, এই সকল হইতে পলায়ন কর; এবং ধার্ম্মিকতা, ভক্তি, বিশ্বাস, প্রেম, ধৈর্য্য, মৃদুভাব, এই সকলের অনুধাবন কর। বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর; অনন্ত জীবন ধরিয়া রাখ; তাহারই নিমিত্ত তুমি আহূত হইয়াছ, এবং অনেক সাক্ষীর সাক্ষাতে সেই উত্তম প্রতিজ্ঞা স্বীকার করিয়াছ। সকলের জীবনদাতা ঈশ্বরের সাক্ষাতে, এবং যিনি পন্তীয় পীলাতের কাছে সেই উত্তম প্রতিজ্ঞারূপ সাক্ষ্য দিয়াছিলেন, সেই খ্রীষ্ট যীশুর সাক্ষাতে, আমি তোমাকে এই আজ্ঞা করিতেছি, তুমি ধর্ম্মবিধি নিষ্কলঙ্ক ও অনিন্দনীয় রাখ; প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সেই প্রকাশপ্রাপ্তি পর্য্যন্ত, যাহা সেই পরমধন্য ও একমাত্র সম্রাট, রাজত্বকারীদের রাজা ও প্রভুত্বকারীদের প্রভু, উপযুক্ত সময়-সমূহে প্রদর্শন করিবেন; যিনি অমরতার একমাত্র অধিকারী, অগম্য দীপ্তিনিবাসী, যাঁহাকে মনুষ্যদের মধ্যে কেহ কখনও দেখিতে পায় নাই, দেখিতে পারেও না; তাঁহারই সমাদর ও অনন্তকালস্থায়ী পরাক্রম হউক। আমেন্‌। যাহারা এই যুগে ধনবান্‌, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, যেন তাহারা গর্ব্বিতমনা না হয়, এবং ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে; যেন পরের উপকার করে, সৎক্রিয়ারূপ ধনে ধনবান্‌ হয়, দানশীল হয়, সহভাগীকরণে তৎপর হয়; এইরূপে তাহারা আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করুক, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে। হে তীমথিয়, তোমার কাছে যাহা গচ্ছিত হইয়াছে, তাহা সাবধানে রাখ; যাহা অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত, তাহার ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর ও বিরোধবাণী হইতে বিমুখ হও; সেই বিদ্যা অঙ্গীকার করিয়া কেহ কেহ বিশ্বাস সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে। অনুগ্রহ তোমাদের সহবর্ত্তী হউক। পৌল, খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় জীবনের প্রতিজ্ঞানুসারে ঈশ্বরের ইচ্ছায় খ্রীষ্ট যীশুর প্রেরিত,—আমার প্রিয় বৎস তীমথিয়ের সমীপে। পিতা ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশু হইতে অনুগ্রহ, দয়া ও শান্তি বর্ত্তুক। ঈশ্বর, যাঁহার আরাধনা আমি পিতৃপুরুষাবধি শুচি সংবেদে করিয়া থাকি, তাঁহার ধন্যবাদ করি যে, আমার বিনতিতে সতত তোমাকে স্মরণ করিতেছি; তোমার অশ্রুপাত স্মরণ করিয়া রাত দিন তোমাকে দেখিবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছি, যেন আনন্দে পূর্ণ হই; তোমার অন্তরস্থ অকল্পিত বিশ্বাসের কথা স্মরণ করিতেছি, যাহা অগ্রে তোমার মাতামহী লোয়ীর ও তোমার মাতা উনীকীর অন্তরে বাস করিত, এবং আমার নিশ্চয় বোধ হয়, তোমার অন্তরেও বাস করিতেছে। এই কারণ তোমাকে স্মরণ করাইয়া দিতেছি যে, আমার হস্তার্পণ দ্বারা ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ-দান তোমাতে আছে, তাহা উদ্দীপিত কর। কেননা ঈশ্বর আমাদিগকে ভীরুতার আত্মা দেন নাই, কিন্তু শক্তির, প্রেমের ও সুবুদ্ধির আত্মা দিয়াছেন। অতএব আমাদের প্রভুর সাক্ষ্যের বিষয়ে, এবং তাঁহার বন্দি যে আমি, আমার বিষয়ে তুমি লজ্জিত হইও না, কিন্তু ঈশ্বরের শক্তি অনুসারে সুসমাচারের সহিত ক্লেশভোগ স্বীকার কর; তিনিই আমাদিগকে পরিত্রাণ দিয়াছেন, এবং পবিত্র আহ্বানে আহ্বান করিয়াছেন, আমাদের কার্য্য অনুসারে, এমন নয়, কিন্তু নিজ সঙ্কল্প ও অনুগ্রহ অনুসারে করিয়াছেন; সেই অনুগ্রহ অনাদিকালের পূর্ব্বে খ্রীষ্ট যীশুতে আমাদিগকে দত্ত হইয়াছিল, এবং এখন আমাদের ত্রাণকর্ত্তা খ্রীষ্ট যীশুর প্রকাশ প্রাপ্তি দ্বারা প্রকাশিত হইল, যিনি মৃত্যুকে শক্তিহীন করিয়াছেন, এবং সুসমাচার দ্বারা জীবন ও অক্ষয়তাকে দীপ্তিতে আনিয়াছেন। সেই সুসমাচারের সম্বন্ধে আমি প্রচারক, প্রেরিত ও গুরু বলিয়া নিযুক্ত হইয়াছি। এই কারণ এত দুঃখভোগও করিতেছি, তথাপি লজ্জিত হই না, কেননা যাঁহাকে বিশ্বাস করিয়াছি, তাঁহাকে জানি, এবং দৃঢ়রূপে প্রত্যয় করিতেছি যে, আমি তাঁহার কাছে যাহা গচ্ছিত রাখিয়াছি, তিনি সেই দিনের জন্য তাহা রক্ষা করিতে সমর্থ। তুমি আমার কাছে যাহা যাহা শুনিয়াছ, সেই নিরাময় বাক্যসমূহের আদর্শ খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে ও প্রেমে ধারণ কর। তোমার কাছে যে উত্তম ধন গচ্ছিত আছে, তাহা যিনি আমাদের অন্তরে বাস করেন, সেই পবিত্র আত্মা দ্বারা রক্ষা কর। তুমি জান, এশিয়াতে যাহারা আছে, তাহারা সকলে আমার নিকট হইতে সরিয়া পড়িয়াছে; তাহাদের মধ্যে ফুগিল্ল ও হর্ম্মগিনি আছে। প্রভু অনীষিফরের পরিবারকে দয়া প্রদান করুন, কেননা তিনি বার বার আমার প্রাণ জুড়াইয়াছেন, এবং আমার শৃঙ্খল হেতু লজ্জিত হন নাই; বরং তিনি রোমে উপস্থিত হইলে যত্নপূর্ব্বক অনুসন্ধান করিয়া আমার সঙ্গে দেখা করিয়াছিলেন— প্রভু তাঁহাকে এই বর দিউন, যেন সেই দিন তিনি প্রভুর নিকট দয়া পান—আর ইফিষে তিনি কত পরিচর্য্যা করিয়াছিলেন, তাহা তুমি বিলক্ষণ জ্ঞাত আছ। অতএব, হে আমার বৎস, তুমি খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত অনুগ্রহে বলবান্‌ হও। আর অনেক সাক্ষীর মুখে যে সকল বাক্য আমার কাছে শুনিয়াছ, সে সকল এমন বিশ্বস্ত লোকদিগকে সমর্পণ কর, যাহারা অন্য অন্য লোককেও শিক্ষা দিতে সক্ষম হইবে। তুমি খ্রীষ্ট যীশুর উত্তম যোদ্ধার মত [আমার] সহিত ক্লেশভোগ স্বীকার কর। কেহ যুদ্ধ করিবার সময়ে আপনাকে সাংসারিক ব্যাপাররূপ পাশে বদ্ধ হইতে দেয় না, যেন তাহাকে যে ব্যক্তি যোদ্ধা করিয়া নিযুক্ত করিয়াছে, তাহারই তুষ্টিকর হইতে পারে। আবার কোন ব্যক্তি যদি মল্লযুদ্ধ করে, সে বিধিমত যুদ্ধ না করিলে মুকুটে বিভূষিত হয় না। সে কৃষক পরিশ্রম করে, সেই প্রথমে ফলের ভাগী হয় ইহা উপযুক্ত। আমি যাহা বলি, তাহা বিবেচনা কর; কারণ প্রভু সর্ব্ববিষয়ে তোমাকে বুদ্ধি দিবেন। যীশু খ্রীষ্টকে স্মরণ কর; আমার সুসমাচার অনুসারে তিনি মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত, দায়ূদের বংশজাত; সেই সুসমাচার সম্বন্ধে আমি দুষ্কর্ম্মকারীর ন্যায় বন্ধনদশা পর্য্যন্ত ক্লেশভোগ করিতেছি; কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বদ্ধ হয় নাই। এই কারণ আমি মনোনীতদের নিমিত্ত সকলই সহ্য করি, যেন তাহারাও খ্রীষ্ট যীশুতে স্থিত পরিত্রাণ অনন্তকালীয় প্রতাপের সহিত প্রাপ্ত হয়। এই কথা বিশ্বসনীয়; কারণ আমরা যদি তাঁহার সহিত মরিয়া থাকি, তাঁহার সহিত জীবিতও হইব; যদি সহ্য করি, তাঁহার সহিত রাজত্বও করিব; যদি তাঁহাকে অস্বীকার করি, তিনিও আমাদিগকে অস্বীকার করিবেন; আমরা যদি অবিশ্বস্ত হই, তিনি বিশ্বস্ত থাকেন; কারণ তিনি আপনাকে অস্বীকার করিতে পারেন না। এই সকল কথা স্মরণ করাইয়া দেও, প্রভুর সাক্ষাতে দৃঢ় প্রমাণ দেও, যেন লোকেরা বাগ্‌যুদ্ধ না করে, কেননা তাহাতে কোন ফল দর্শে না, যাহারা শুনে, তাহাদের নিপাত হয়। তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে। কিন্তু ধর্ম্মবিরূপক নিঃসার শব্দাড়ম্বর হইতে পৃথক্‌ থাক; কেননা সেই প্রকার লোক ভক্তিলঙ্ঘনে অধিক অগ্রসর হইবে, এবং তাহাদের বাক্য গলিত ক্ষতের ন্যায় উত্তর উত্তর ক্ষয় করিবে। হুমিনায় ও ফিলীত তাহাদের মধ্যে; ইহারা সত্যের সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে, বলিতেছে, পুনরুত্থান হইয়া গিয়াছে, এবং কাহারও কাহারও বিশ্বাস উল্টাইয়া ফেলিতেছে। তথাপি ঈশ্বর-স্থাপিত দৃঢ় ভিত্তিমূল স্থির রহিয়াছে, তাহার উপরে এই কথা মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছে, “প্রভু জানেন, কে কে তাঁহার”; এবং “যে কেহ প্রভুর নাম করে, সে অধার্ম্মিকতা হইতে দূরে থাকুক।” কিন্তু কোন বৃহৎ বাটীতে কেবল স্বর্ণের ও রৌপ্যের পাত্র নয়, কাষ্ঠের ও মৃত্তিকার পাত্রও থাকে; তাহার কতকগুলি সমাদরের, কতকগুলি অনাদরের পাত্র। অতএব যদি কেহ আপনাকে এই সকল হইতে শুচি করে, তবে সে সমাদরের পাত্র, পবিত্রীকৃত, কর্ত্তার কার্য্যের উপযোগী, সমস্ত সৎক্রিয়ার নিমিত্ত প্রস্তুত হইবে। কিন্তু তুমি যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন কর; এবং যাহারা শুচি হৃদয়ে প্রভুতে ডাকে, তাহাদের সহিত ধার্ম্মিকতা, বিশ্বাস, প্রেম ও শান্তির অনুধাবন কর। কিন্তু মূঢ় ও অজ্ঞান বিতণ্ডা সকল অস্বীকার কর; তুমি জান, এ সকল যুদ্ধ উৎপন্ন করে। আর যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে; কিন্তু সকলের প্রতি কোমল, শিক্ষাদানে নিপুন, সহনশীল হওয়া, এবং মৃদু ভাবে বিরোধিগণকে শাসন করা তাহার উচিত; হয় ত ঈশ্বর তাহাদিগকে মনপরিবর্ত্তন দান করিবেন, যেন তাহারা সত্যের তত্ত্বজ্ঞান প্রাপ্ত হয়, এবং তাঁহার ইচ্ছা সাধনের নিমিত্ত প্রভুর দাসের দ্বারা দিয়াবলের ফাঁদ হইতে জীবনার্থে ধৃত হইয়া চেতনা পাইয়া বাঁচে। কিন্তু ইহা জানিও, শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী, ধর্ম্মনিন্দক, পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্‌বিদ্বেষী, বিশ্বাসঘাতক, দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ, ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় হইবে; লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী হইবে; তুমি এরূপ লোকদের হইতে সরিয়া যাও। ইহাদেরই মধ্যে এমন লোক আছে, যাহারা ছলপূর্ব্বক গৃহে গৃহে প্রবেশ করিয়া পাপে ভারাক্রান্ত ও নানাবিধ অভিলাষে চালিতা যে স্ত্রীলোকেরা সতত শিক্ষা করে, তথাপি সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে না, তাহাদিগকে বন্দি করিয়া ফেলে। আর যান্নি ও যাম্ব্রি যেমন মোশির প্রতিরোধ করিয়াছিল, তদ্রূপ ইহারা সত্যের প্রতিরোধ করিতেছে, এই লোকেরা নষ্টবিবেক, বিশ্বাস সম্বন্ধে অপ্রামাণিক। কিন্তু ইহারা আর অগ্রসর হইতে পারিবে না; কারণ যেমন উহাদেরও হইয়াছিল, তেমনি ইহাদের মূঢ়তা সকলের কাছে ব্যক্ত হইবে। কিন্তু তুমি আমার শিক্ষা, আচার ব্যবহার, সঙ্কল্প, বিশ্বাস, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, প্রেম, ধৈর্য্য, নানাবিধ তাড়না, ও দুঃখভোগের অনুসরণ করিয়াছ; আন্তিয়খিয়াতে, ইকনিয়ে, লুস্ত্রায় আমার প্রতি কি কি ঘটিয়াছিল; কত তাড়না সহ্য করিয়াছি। আর সেই সমস্ত হইতে প্রভু আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন। আর যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, পরের ভ্রান্তি জন্মাইয়া ও আপনারা ভ্রান্ত হইয়া, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে। কিন্তু তুমি যাহা যাহা শিখিয়াছ ও যাহার যাহার প্রমাণ জ্ঞাত হইয়াছ, তাহাতেই স্থির থাক; তুমি ত জান যে, কাহাদের কাছে শিখিয়াছ। আরও জান, তুমি শিশুকাল অবধি পবিত্র শাস্ত্রকলাপ জ্ঞাত আছ, সে সকল খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাস দ্বারা তোমাকে পরিত্রাণের নিমিত্ত জ্ঞানবান্‌ করিতে পারে। ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়। আমি ঈশ্বরের সাক্ষাতে, এবং যিনি জীবিত ও মৃতগণের বিচার করিবেন, সেই খ্রীষ্ট যীশুর সাক্ষাতে, তাঁহার প্রকাশপ্রাপ্তি ও তাঁহার রাজ্যের দোহাই দিয়া, তোমাকে এই দৃঢ় আজ্ঞা দিতেছি; তুমি বাক্য প্রচার কর, সময়ে অসময়ে কার্য্যে অনুরক্ত হও, সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতা ও শিক্ষাদান-পূর্ব্বক অনুযোগ কর, ভর্ৎসনা কর, চেতনা দেও। কেননা এমন সময় আসিবে, যে সময় লোকেরা নিরাময় শিক্ষা সহ্য করিবে না, কিন্তু কাণচুল্‌কানিবিশিষ্ট হইয়া আপন আপন অভিলাষ অনুসারে আপনাদের জন্য রাশি রাশি গুরু ধরিবে, এবং সত্য হইতে কাণ ফিরাইয়া গল্পের দিকে বিপথে যাইবে। কিন্তু তুমি সর্ব্ববিষয়ে মিতাচারী হও, দুঃখভোগ স্বীকার কর, সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর, তোমার পরিচর্য্যা সম্পন্ন কর। কেননা, এখন আমি পেয় নৈবেদ্যের ন্যায় ঢালা যাইতেছি, এবং আমার প্রস্থানের সময় উপস্থিত হইয়াছে। আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরূপিত পথের শেষ পর্য্যন্ত দৌড়িয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি। এখন অবধি আমার নিমিত্ত ধার্ম্মিকতার মুকুট তোলা রহিয়াছে; প্রভু, সেই ধর্ম্মময় বিচারকর্ত্তা, সেই দিন আমাকে তাহা দিবেন; কেবল আমাকে নয়, বরং যত লোক তাঁহার প্রকাশপ্রাপ্তি ভাল বাসিয়াছে, সেই সকলকেও দিবেন। তুমি শীঘ্র আমার কাছে আসিতে যত্ন কর; কেননা দীমা এই বর্ত্তমান যুগ ভাল বাসাতে আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, এবং থিষলনীকীতে গিয়াছে; ক্রীষ্কেন্ত গালাতিয়াতে, তীত দাল্‌মাতিয়াতে গিয়াছেন; একা লূক মাত্র আমার সঙ্গে আছেন। তুমি মার্ককে সঙ্গে করিয়া আইস, কেননা তিনি পরিচর্য্যা বিষয়ে আমার বড় উপকারী। আর তুখিককে আমি ইফিষে পাঠাইয়াছি। ত্রোয়াতে কার্পের কাছে যে শালখানি রাখিয়া আসিয়াছি, তুমি আসিবার সময়ে সেখানি এবং পুস্তকগুলি, বিশেষতঃ চর্ম্মের পুস্তক কয়খানি, সঙ্গে করিয়া আনিও। আলেক্‌সান্দর কাংস্যকার আমার বিস্তর অপকার করিয়াছে; প্রভু তাহার কর্ম্মের সমুচিত প্রতিফল তাহাকে দিবেন। তুমিও সেই ব্যক্তি হইতে সাবধান থাকিও, কেননা সে আমাদের বাক্যের অত্যন্ত প্রতিরোধ করিয়াছিল। আমার প্রথম বার আত্মপক্ষসমর্থন কালে কেহ আমার পক্ষে উপস্থিত হইল না; সকলে আমাকে পরিত্যাগ করিল; ইহা তাহাদের প্রতি গণিত না হউক। কিন্তু প্রভু আমার নিকটে দাঁড়াইলেন, এবং আমাকে বলবান্‌ করিলেন, যেন আমা দ্বারা প্রচার-কার্য্য সম্পন্ন হয় এবং পরজাতীয় সকল লোক তাহা শুনিতে পায়; আর আমি সিংহের মুখ হইতে রক্ষা পাইলাম। প্রভু আমাকে সমুদয় মন্দ কর্ম্ম হইতে রক্ষা করিবেন এবং আপনার স্বর্গীয় রাজ্যে উত্তীর্ণ করিবেন। যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে তাঁহার মহিমা হউক। আমেন। প্রিষ্কাকে ও আক্বিলাকে এবং অনীষিফরের পরিবারকে মঙ্গলবাদ কর। ইরাস্ত করিন্থে রহিয়াছেন, এবং ত্রফিম পীড়িত হওয়াতে আমি তাঁহাকে মিলীতে রাখিয়া আসিয়াছি। তুমি শীতকালের পূর্ব্বে আসিতে যত্ন করিও। ঊবুল, পুদেন্ত, লীন, ক্লৌদিয়া এবং সকল ভ্রাতা তোমাকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। প্রভু তোমার আত্মার সহবর্ত্তী হউন। অনুগ্রহ তোমাদের সহবর্ত্তী হউক। পৌল, ঈশ্বরের দাস ও যীশু খ্রীষ্টের প্রেরিত, ঈশ্বরের মনোনীতগণের বিশ্বাস অনুসারে, এবং ভক্তি অনুযায়ী সত্যের তত্ত্বজ্ঞান অনুসারে, যে সত্য সেই অনন্ত জীবনের আশাযুক্ত, যাহা মিথ্যাকথনে অসমর্থ ঈশ্বর অতি পূর্ব্ব কালে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, এবং যথাসময়ে আপন বাক্য ঘোষণাতে ব্যক্ত করিলেন; আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে সেই ঘোষণার ভার আমার নিকটে সমর্পিত হইয়াছে —সাধারণ বিশ্বাসের সম্বন্ধে আমার যথার্থ বৎস তীতের সমীপে। পিতা ঈশ্বর এবং আমাদের ত্রাণকর্ত্তা খ্রীষ্ট যীশু হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ত্তুক। আমি তোমাকে এই কারণে ক্রীতীতে রাখিয়া আসিয়াছি, যেন যাহা যাহা অসম্পূর্ণ, তুমি তাহা ঠিক করিয়া দেও, এবং যেমন আমি তোমাকে আদেশ দিয়াছিলাম, প্রত্যেক নগরে প্রাচীনদিগকে নিযুক্ত কর; যে ব্যক্তি অনিন্দনীয় ও কেবল এক স্ত্রীর স্বামী, যাঁহার সন্তানগণ বিশ্বাসী, নষ্টামি দোষে অপবাদিত বা অদম্য নয় (তাহাকে নিযুক্ত কর)। কেননা ইহা আবশ্যক যে, অধ্যক্ষ ঈশ্বরের ধনাধ্যক্ষ বলিয়া অনিন্দনীয় হন; স্বেচ্ছাচারী কি আশুক্রোধী কি মদ্যপানে আসক্ত কি প্রহারক কি কুৎসিত লাভের লোভী না হন, কিন্তু অতিথিসেবক, সৎপ্রেমিক, সংযত, ন্যায়পরায়ণ, সাধু ও জিতেন্দ্রিয় হন, এবং শিক্ষানুরূপ বিশ্বসনীয় বাক্য ধরিয়া থাকেন, এই প্রকারে যেন তিনি নিরাময় শিক্ষাতে উপদেশ দিতে এবং প্রতিকূলবাদীদের দোষ ব্যক্ত করিতে সমর্থ হন। কারণ অনেক অদম্য লোক, অসার বাক্যবাদী ও বুদ্ধিভ্রামক লোক আছে, বিশেষতঃ ত্বক্‌ছেদীদের মধ্যে আছে; তাহাদের মুখ বদ্ধ করা চাই। তাহারা কুৎসিত লাভের অনুরোধে অনুপযুক্ত শিক্ষা দিয়া কখন কখন একেবারে ঘর উল্টাইয়া ফেলে। তাহাদের এক জন, তাহাদের এক স্বদেশীয় ভাববাদী বলিয়াছেন, ‘ক্রীতীয়েরা নিয়ত মিথ্যাবাদী, হিংস্র জন্তু, অলস পেটুক’। এই সাক্ষ্য সত্য; এ জন্য তুমি তাহাদিগকে তীক্ষ্ণভাবে অনুযোগ কর; যেন তাহারা বিশ্বাসে নিরাময় হয়, যিহূদীয় গল্পে, ও সত্য হইতে বিমুখ মনুষ্যদের আজ্ঞায়, মনোযোগ না করে। শুচিগণের পক্ষে সকলই শুচি; কিন্তু কলুষিত ও অবিশ্বাসীদের পক্ষে কিছুই শুচি নয়, বরং তাহাদের মন ও সংবেদ উভয়ই কলুষিত হইয়া পড়িয়াছে। তাহারা স্বীকার করে যে, ঈশ্বরকে জানে, কিন্তু কার্য্যে তাঁহাকে অস্বীকার করে; তাহারা ঘৃণাস্পদ ও অবাধ্য এবং সমস্ত সৎক্রিয়ার পক্ষে অপ্রামাণিক। কিন্তু তুমি নিরাময় শিক্ষার উপযুক্ত কথা বল। বৃদ্ধদিগকে বল, যেন তাঁহারা মিতাচারী, ধীর, সংযত [এবং] বিশ্বাসে, প্রেমে, ধৈর্য্যে নিরাময় হন। সেইরূপে প্রাচীনাদিগকে বল, যেন তাঁহারা আচার ব্যবহারে ভয়শীলা হন, অপবাদিকা কি বহুমদ্যের দাসী না হন, সুশিক্ষাদায়িনী হন; তাঁহারা যেন যুবতীদিগকে সংযত করিয়া তুলেন, যেন ইহারা পতিপ্রিয়া, সন্তানপ্রিয়া, সংযতা, সতী, গৃহকার্য্যে ব্যাপৃতা, সুশীলা, ও আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হয়, এইরূপে যেন ঈশ্বরের বাক্য নিন্দিত না হয়। সেইরূপে যুবকদিগকে সংযত হইতে আদেশ কর। আর আপনি সর্ব্ববিষয়ে সৎক্রিয়ার আদর্শ হও, শিক্ষাতে অবিকার্য্যতা, ধীরতা, এবং অদূষ্য নিরাময় বাক্য প্রদর্শন কর; যেন বিপক্ষ আমাদের বিষয়ে মন্দ বলিবার সূত্র না পাওয়াতে লজ্জিত হয়। দাসগণকে বল, যেন তাহারা আপন আপন স্বামীর বশীভূত ও সর্ব্ববিষয়ে সন্তোষদায়ক হয়, প্রতিবাদ না করে, কিছুই আত্মসাৎ না করে, কিন্তু সর্ব্বপ্রকার উত্তম বিশ্বস্ততা দেখায়; যেন তাহারা আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের শিক্ষা সর্ব্ববিষয়ে ভূষিত করে। কেননা ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা সমুদয় মনুষ্যের জন্য পরিত্রাণ আনয়ন করে, তাহা আমাদিগকে শাসন করিতেছে, যেন আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি, এবং পরমধন্য আশাসিদ্ধির জন্য, এবং মহান্‌ ঈশ্বর ও আমাদের ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের প্রতাপের প্রকাশপ্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা করি। ইনি আমাদের নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন, যেন মূল্য দিয়া আমাদিগকে সমস্ত অধর্ম্ম হইতে মুক্ত করেন, এবং আপনার নিমিত্ত নিজস্ব প্রজাবর্গকে, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গকে, শুচি করেন। তুমি এই সকল কথা বল, এবং সম্পূর্ণ ক্ষমতার সহিত উপদেশ দেও, ও অনুযোগ কর; তোমাকে তুচ্ছ করিতে কাহাকেও দিও না। তুমি তাহাদিগকে স্মরণ করাইয়া দেও, যেন তাহারা আধিপত্যের ও কর্ত্তৃত্বের বশীভূত হয়, বাধ্য হয়, সর্ব্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, কাহারও নিন্দা না করে, নির্ব্বিরোধ ও ক্ষান্তশীল হয়, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়। কেননা পূর্ব্বে আমরাও নির্ব্বোধ, অবাধ্য, ভ্রান্ত, নানাবিধ অভিলাষের ও সুখভোগের দাস, হিংসাতে ও মাৎসর্য্যে কালক্ষেপকারী, ঘৃণার্হ ও পরস্পর দ্বেষকারী ছিলাম। কিন্তু যখন আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের মধুর স্বভাব এবং মানবজাতির প্রতি প্রেম প্রকাশিত হইল, তখন তিনি আমাদের কৃত ধর্ম্মকর্ম্মহেতু নয়, কিন্তু আপনার দয়ানুসারে, পুনর্জন্মের স্নান ও পবিত্র আত্মার নূতনীকরণ দ্বারা আমাদিগকে পরিত্রাণ করিলেন, সেই আত্মাকে তিনি আমাদের ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমাদের উপরে প্রচুররূপে ঢালিয়া দিলেন; যেন তাঁহারই অনুগ্রহে ধার্ম্মিক গণিত হইয়া আমরা অনন্ত জীবনের প্রত্যাশানুসারে দায়াধিকারী হই। এই কথা বিশ্বসনীয়; আর আমার বাসনা এই যে, এই সকল বিষয়ে তুমি দৃঢ়নিশ্চয়তায় কথা বল; যাহারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী হইয়াছে, তাহারা যেন সৎকার্য্যে ব্যাপৃত হইবার চিন্তা করে। এই সকল বিষয় মনুষ্যদের পক্ষে উত্তম ও সুফলদায়ক। কিন্তু তুমি মূঢ়তার সকল বিতণ্ডা, বংশাবলি, বিবাদ এবং ব্যবস্থাবিষয়ক বাগ্‌যুদ্ধ হইতে দূরে থাক; কেননা এ সকল নিষ্ফল ও অসার। যে ব্যক্তি দলভেদী, তাহাকে দুই এক বার চেতনা দিবার পর অগ্রাহ্য কর; জানিও, এরূপ ব্যক্তি বিগড়াইয়া গিয়াছে, এবং সে পাপ করে, আপনি আপনাকেই দোষী করে। আমি যখন তোমার নিকটে আর্ত্তিমাকে কিম্বা তুখিককে পাঠাই, তখন তুমি নীকপলিতে আমার কাছে আসিতে যত্নবান্‌ হইও; কেননা সেই স্থানে আমি শীতকাল যাপন করিতে স্থির করিয়াছি। ব্যবস্থাবেত্তা সীনাকে এবং আপল্লোকে যত্নপূর্ব্বক পাঠাইয়া দেও, তাঁহাদের যেন কোন বিষয়ের অভাব না হয়। আর আমাদের লোকেরাও প্রয়োজনীয় উপকারার্থে সৎকার্য্যে ব্যাপৃত হইতে অভ্যাস করুক, যেন ফলহীন হইয়া না পড়ে। আমার সঙ্গীরা সকলে তোমাকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। যাঁহারা বিশ্বাস সম্বন্ধে আমাদিগকে ভালবাসেন, তাঁহাদিগকে মঙ্গলবাদ দেও। অনুগ্রহ তোমাদের সকলের সহবর্ত্তী হউক। পৌল, খ্রীষ্ট যীশুর বন্দি, এবং ভ্রাতা তীমথিয়-আমাদের প্রেমপাত্র ও সহকারী ফিলীমন, আপ্পিয়া ভগিনী ও আমাদের সহসেনা আর্খিপ্প এবং তোমার গৃহস্থিত মণ্ডলী সমীপে। আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট হইতে অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। আমি আমার প্রার্থনাকালে তোমার নাম উল্লেখ করিয়া সর্ব্বদা আমার ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া থাকি, কেননা তোমার যে প্রেম ও যে বিশ্বাস প্রভু যীশুর প্রতি ও সমস্ত পবিত্র লোকের প্রতি আছে, সে কথা শুনিতে পাইতেছি; আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত উত্তম বিষয়ের জ্ঞানে যেন তোমার বিশ্বাসের সহভাগিতা খ্রীষ্টের উদ্দেশে কার্য্যসাধক হয়, এই প্রার্থনা করিতেছি। কেননা তোমার প্রেমে আমি অনেক আনন্দ ও আশ্বাস পাইয়াছি, কারণ, হে ভ্রাতা, তোমার দ্বারা পবিত্রগণের প্রাণ জুড়াইয়াছে। অতএব, যাহা উপযুক্ত, তদ্বিষয়ে তোমাকে আজ্ঞা দিতে যদিও খ্রীষ্টে আমার সম্পূর্ণ সাহস আছে, তথাপি আমি প্রেম প্রযুক্ত বরং বিনতি করিতেছি—ঈদৃশ ব্যক্তি, সেই বৃদ্ধ পৌল, এবং এখন আবার খ্রীষ্ট যীশুর বন্দি—আমি নিজ বৎসের বিষয়ে, বন্ধন-দশায় যাহাকে জন্ম দিয়াছি, সেই ওনীষিমের বিষয়ে তোমাকে বিনতি করিতেছি। সে পূর্ব্বে তোমার অনুপযোগী ছিল, কিন্তু এখন তোমার ও আমার, উভয়ের উপযোগী। তাহাকেই আমি তোমার কাছে ফিরিয়া পাঠাইলাম, অর্থাৎ আমার নিজ প্রাণতুল্য ব্যক্তিকে পাঠাইলাম। আমি তাহাকে আমার কাছে রাখিতে চাহিয়াছিলাম, যেন সুসমাচারের বন্ধনদশায় সে তোমার পরিবর্ত্তে আমার পরিচর্য্যা করে। কিন্তু তোমার সম্মতি বিনা কিছু করিতে ইচ্ছা করিলাম না, যেন তোমার সৌজন্য আবশ্যকতার ফল না হইয়া স্ব-ইচ্ছার ফল হয়। কারণ হয় ত সে এই হেতুই কিয়ৎ কালের নিমিত্ত পৃথকীকৃত হইয়াছিল, যেন তুমি অনন্তকালের জন্য তাহাকে পাইতে পার; পুনরায় দাসের ন্যায় নয়, কিন্তু দাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির, প্রিয় ভ্রাতার ন্যায়; বিশেষরূপে সে আমার প্রিয়, এবং মাংসের ও প্রভুর, উভয়ের সম্বন্ধে তোমার কত অধিক প্রিয়। অতএব যদি আমাকে সহভাগী জান, তবে আমার তুল্য বলিয়া তাহাকে গ্রহণ করিও। আর যদি সে তোমার প্রতি কোন অন্যায় করিয়া থাকে, কিম্বা তোমার কিছু ধারে, তবে তাহা আমার বলিয়া গণ্য কর; আমি পৌল স্বহস্তে ইহা লিখিলাম; আমিই পরিশোধ করিব—তুমি যে আমার কাছে ঋণবৎ আপনাকেও ধার, তোমাকে এ কথা বলিতে চাই না। হাঁ, ভ্রাতা, প্রভুতে তোমা হইতে আমার লাভ হউক; তুমি খ্রীষ্টে আমার প্রাণ জুড়াও। তোমার আজ্ঞাবহতায় দৃঢ় বিশ্বাস আছে বলিয়া তোমাকে লিখিলাম; যাহা বলিলাম, তুমি তদপেক্ষাও অধিক করিবে, ইহা জানি। কিন্তু আবার আমার জন্য বাসাও প্রস্তুত করিয়া রাখিও, কেননা আশা করি, তোমাদের প্রার্থনার দ্বারা তোমাদিগকে প্রদত্ত হইব। খ্রীষ্ট যীশুতে আমার সহবন্দি ইপাফ্রা তোমাকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন, মার্ক, আরিষ্টার্খ, দীমা ও লূক, আমার এই সহকারিগণও করিতেছেন। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ তোমাদের আত্মার সহবর্ত্তী হউক। আমেন। ঈশ্বর পূর্ব্বকালে বহুভাগে ও বহুরূপে ভাববাদিগণে পিতৃলোকদিগকে কথা বলিয়া, এই শেষ কালে পুত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছেন। তিনি ইঁহাকেই সর্ব্বাধিকারী দায়াদ করিয়াছেন, এবং ইঁহারই দ্বারা যুগকলাপের রচনাও করিয়াছেন। ইনি তাঁহার প্রতাপের প্রভা ও তত্ত্বের মুদ্রাঙ্ক, এবং আপন পরাক্রমের বাক্যে সমুদয়ের ধারণকর্ত্তা হইয়া পাপ ধৌত করিয়া ঊর্দ্ধলোকে মহিমার দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন। স্বর্গদূতগণ অপেক্ষা যে পরিমাণে উৎকৃষ্ট নামের অধিকার পাইয়াছেন, তিনি সেই পরিমাণে শ্রেষ্ঠ হইয়াছেন। কারণ ঈশ্বর ঐ দূতগণের মধ্যে কাহাকে কোন্‌ সময়ে বলিয়াছেন, “তুমি আমার পুত্র, আমি অদ্য তোমাকে জন্ম দিয়াছি,” আবার, “আমি তাঁহার পিতা হইব, ও তিনি আমার পুত্র হইবেন”? আর যখন তিনি প্রথমজাতকে আবার জগতে আনেন, তখন বলেন, “ঈশ্বরের সকল দূত ইহাঁর ভজনা করুক”। আর দূতগণের বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি আপন দূতগণকে বায়ুস্বরূপ করেন, আপন সেবকদিগকে অগ্নিশিখাস্বরূপ করেন।” কিন্তু পুত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, “হে ঈশ্বর, তোমার সিংহাসন অনন্তকালস্থায়ী; আর সারল্যের শাসনদণ্ডই তাঁহার রাজ্যের শাসনদণ্ড। তুমি ধার্ম্মিকতাকে প্রেম, ও দুষ্টতাকে ঘৃণা করিয়াছ; এই কারণ ঈশ্বর, তোমার ঈশ্বর, তোমাকে অভিষিক্ত করিয়াছেন, তোমার সখাগণ অপেক্ষা অধিক পরিমাণে আনন্দ-তৈলে।” আর, “হে প্রভু, তুমিই আদিতে পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করিয়াছ, আকাশমণ্ডলও তোমার হস্তের রচনা। সে সকল বিনষ্ট হইবে, কিন্তু তুমিই নিত্যস্থায়ী; সে সমস্ত বস্ত্রের ন্যায় জীর্ণ হইয়া পড়িবে, তুমি পরিচ্ছদের ন্যায় সে সকল জড়াইবে, বস্ত্রের ন্যায় জড়াইবে, আর সে সমস্তের পরিবর্ত্তন হইবে; কিন্তু তুমি যে, সেই আছ, এবং তোমার বৎসর সকল কখনও শেষ হইবে না।” কিন্তু তিনি দূতগণের মধ্যে কাহাকে কোন্‌ সময়ে বলিয়াছেন, “তুমি আমার দক্ষিণে বস, যাবৎ আমি তোমার শত্রুগণকে তোমার পাদপীঠ না করি”? উহাঁরা সকলে কি সেবাকারী আত্মা নহেন? যাহারা পরিত্রাণের অধিকারী হইবে, উহাঁরা কি তাহাদের পরিচর্য্যার জন্য প্রেরিত নহেন? এই জন্য যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা আমাদের উচিত, পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই। কেননা দূতগণ দ্বারা কথিত বাক্য যদি দৃঢ় হইল, এবং লোকে কোন প্রকারে তাহা লঙ্ঘন করিলে কিম্বা তাহার অবাধ্য হইলে যদি ন্যায়সিদ্ধ প্রতিফল দত্ত হইল, তবে এমন মহৎ এই পরিত্রাণ অবহেলা করিলে আমরা কি প্রকারে রক্ষা পাইব? ইহা ত প্রথমে প্রভুর দ্বারা কথিত, ও যাহারা শুনিয়াছিল, তাহাদের দ্বারা আমাদের নিকটে দৃঢ়ীকৃত হইল; ঈশ্বরও সাক্ষ্য প্রদান করিতেছেন, নানা চিহ্ন, অদ্ভুত লক্ষণ ও বহুরূপ পরাক্রম-কার্য্য এবং পবিত্র আত্মার বর বিতরণ দ্বারা আপন ইচ্ছানুসারেই করিতেছেন। বাস্তবিক যে ভাবী জগতের কথা আমরা কহিতেছি, তাহা তিনি দূতগণের অধীন করেন নাই। বরং কোন স্থানে কেহ সাক্ষ্য দিয়া বলিয়াছেন, “মনুষ্য কি যে তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্যসন্তানই বা কি যে তাহার তত্ত্বাবধান কর? তুমি দূতগণ অপেক্ষা তাহাকে অল্পই ন্যূন করিয়াছ, প্রতাপ ও সমাদর-মুকুটে বিভূষিত করিয়াছ; এবং তোমার হস্তকৃত বস্তু সকলের উপরে তাহাকে স্থাপন করিয়াছ; সকলই তাহার পদতলে তাহার অধীন করিয়াছ।” বস্তুতঃ সকলই তাহার অধীন করাতে তিনি তাহার অনধীন কিছুই অবশিষ্ট রাখেন নাই; কিন্তু এখন এ পর্য্যন্ত, আমরা সকলই তাহার অধীনীকৃত দেখিতেছি না। কিন্তু দূতগণ অপেক্ষা যিনি অল্পই ন্যূনীকৃত হইলেন, সেই ব্যক্তিকে অর্থাৎ যীশুকে দেখিতেছি, তিনি মৃত্যুভোগ হেতু প্রতাপ ও সমাদরমুকুটে বিভূষিত হইয়াছেন, যেন ঈশ্বরের অনুগ্রহে সকলের নিমিত্ত মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করেন। কেননা যাঁহার কারণ সকলই ও যাঁহার দ্বারা সকলই হইয়াছে, ইহা তাঁহার উপযুক্ত ছিল যে, তিনি অনেক পুত্রকে প্রতাপে আনয়ন সম্বন্ধে তাহাদের পরিত্রাণের আদিকর্ত্তাকে দুঃখভোগ দ্বারা সিদ্ধ করেন। কারণ যিনি পবিত্র করেন ও যাহারা পবিত্রীকৃত হয়, সকলে এক হইতে উৎপন্ন; এই হেতু তিনি তাহাদিগকে ভ্রাতা বলিতে লজ্জিত নহেন। তিনি বলেন, “আমি আমার ভ্রাতৃগণের কাছে তোমার নাম প্রচার করিব, মণ্ডলীর মধ্যে তোমার প্রশংসা গান করিব।” আবার “আমি তাঁহারই শরণাপন্ন থাকিব।” আবার, “দেখ, আমি ও সেই সন্তানগণ, যাহাদিগকে ঈশ্বর আমায় দিয়াছেন।” ভাল, সেই সন্তানগণ যখন রক্তমাংসের ভাগী, তখন তিনি আপনিও তদ্রূপ তাহার ভাগী হইলেন, যেন মৃত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন, এবং যাহারা মৃত্যুর ভয়ে যাবজ্জীবন দাসত্বের অধীন ছিল, তাহাদিগকে উদ্ধার করেন। কারণ তিনি ত দূতগণের সাহায্য করেন না, কিন্তু অব্রাহামের বংশের সাহায্য করিতেছেন। অতএব সর্ব্ববিষয়ে আপন ভ্রাতৃগণের তুল্য হওয়া তাঁহার উচিত ছিল, যেন তিনি প্রজাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবার নিমিত্ত ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কার্য্যে দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাযাজক হন। কেননা তিনি আপনি পরীক্ষিত হইয়া দুঃখভোগ করিয়াছেন বলিয়া পরীক্ষিতগণের সাহায্য করিতে পারেন। অতএব, হে পবিত্র ভ্রাতৃগণ, স্বর্গীয় আহ্বানের অংশিগণ, তোমরা আমাদের ধর্ম্ম-প্রতিজ্ঞার প্রেরিত ও মহাযাজকের প্রতি, যীশুর প্রতি, দৃষ্টি রাখ; মোশি যেমন তাঁহার সমস্ত গৃহের মধ্যে ছিলেন, তেমনি তিনিও আপন নিয়োগকর্ত্তার কাছে বিশ্বস্ত ছিলেন। বস্তুতঃ গৃহের সংস্থাপক যে পরিমাণে গৃহ অপেক্ষা অধিক সমাদর পান, সেই পরিমাণে ইনি মোশি অপেক্ষা অধিক গৌরবের যোগ্যপাত্র বলিয়া গণিত হইয়াছেন। কেননা প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর। আর মোশি তাঁহার সমস্ত গৃহের মধ্যে সেবকবৎ বিশ্বস্ত ছিলেন; যাহা যাহা পরে বক্তব্য ছিল, সেই সকলের বিষয় সাক্ষ্য দিবার নিমিত্তই ছিলেন; কিন্তু খ্রীষ্ট তাঁহার গৃহের উপরে পুত্রবৎ [বিশ্বস্ত]; আর যদি আমরা আমাদের সাহস ও আমাদের প্রত্যাশার শ্লাঘা শেষ পর্য্যন্ত দৃঢ়রূপে ধারণ করি, তবে তাঁহার গৃহ আমরাই। অতএব, পবিত্র আত্মা যেমন বলেন, “অদ্য যদি তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর, তবে আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না, যেমন সেই বিদ্রোহস্থানে, প্রান্তরের মধ্যে সেই পরীক্ষার দিবসে ঘটিয়াছিল; তথায় তোমাদের পিতৃপুরুষেরা বিচার করিয়া আমার পরীক্ষা লইল, এবং চল্লিশ বৎসর কাল আমার কার্য্য দেখিল; এই জন্য আমি এই জাতির প্রতি অসন্তুষ্ট হইলাম, আর কহিলাম, ইহারা সর্ব্বদা হৃদয়ে ভ্রান্ত হয়; আর তাহারা আমার পথ জ্ঞাত হইল না; তখন আমি আপন ক্রোধে এই শপথ করিলাম, ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না।” ভ্রাতৃগণ, দেখিও, পাছে অবিশ্বাসের এমন মন্দ হৃদয় তোমাদের কাহারও মধ্যে থাকে যে, তোমরা জীবন্ত ঈশ্বর হইতে সরিয়া পড়। বরং তোমরা দিন দিন পরস্পর চেতনা দেও, যাবৎ ‘অদ্য’ নামে আখ্যাত সময় থাকে, যেন তোমাদের মধ্যে কেহ পাপের প্রতারণায় কঠিনীভূত না হয়। কেননা আমরা খ্রীষ্টের সহভাগী হইয়াছি, যদি আদি হইতে আমাদের নিশ্চয়জ্ঞান শেষ পর্য্যন্ত দৃঢ় করিয়া ধারণ করি। ফলতঃ উক্ত আছে, “অদ্য যদি তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর, তবে আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না, যেমন সেই বিদ্রোহস্থানে।” বল দেখি, কাহারা শুনিয়া বিদ্রোহ করিয়াছিল? মোশি দ্বারা মিসর হইতে আনীত সমস্ত লোক কি নয়? কাহাদের প্রতিই বা তিনি চল্লিশ বৎসর অসন্তুষ্ট ছিলেন? তাহাদের প্রতি কি নয়, যাহারা পাপ করিয়াছিল, যাহাদের শব প্রান্তরে পতিত হইল? তিনি কাহাদের বিরুদ্ধেই বা এই শপথ করিয়াছিলেন যে, “ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না,” অবাধ্যদের বিরুদ্ধে কি নয়? ইহাতে আমরা দেখিতে পাইতেছি যে, অবিশ্বাস প্রযুক্তই তাহারা প্রবেশ করিতে পারিল না। অতএব আমাদের ভয় থাকা উচিত, পাছে তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিবার প্রতিজ্ঞা থাকিয়া গেলেও এমন বোধ হয় যে, তোমাদের কেহ তাহা হইতে বঞ্চিত হইয়াছে। কেননা যেরূপ উহাদের নিকটে তদ্রূপ আমাদের নিকটেও সুসমাচার প্রচারিত হইয়াছিল বটে, তথাপি সেই শ্রুত বাক্যে উহাদের কোন ফল দর্শিল না, কারণ শ্রোতাদের কাছে তাহা বিশ্বাসের সহিত মিশ্রিত ছিল না। বাস্তবিক বিশ্বাস করিয়াছি যে আমরা, আমরা সেই বিশ্রামে প্রবেশ করিতে পাইতেছি; যেমন তিনি বলিয়াছেন, “তখন আমি আপন ক্রোধে এই শপথ করিলাম, ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না,” যদিও তাঁহার কর্ম্ম জগতের পত্তনাবধি সমাপ্ত ছিল। কেননা তিনি এক স্থানে সপ্তম দিনের বিষয়ে এইরূপ বলিয়াছিলেন, “এবং সপ্তম দিনে ঈশ্বর আপনার সমস্ত কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিলেন।” আবার এই স্থানে তিনি কহেন, “ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না।” অতএব বাকী রহিল এই যে, কতকগুলি লোক বিশ্রামে প্রবেশ করিবে, আর যাহাদের নিকটে সুসমাচার অগ্রে প্রচারিত হইয়াছিল, তাহারা অবাধ্যতা প্রযুক্ত প্রবেশ করিতে পায় নাই; আবার তিনি পুনরায় এক দিন নিরূপণ করিয়া দায়ূদ-গ্রন্থে এত কালের পর বলেন, “অদ্য,” যেমন পূর্ব্বে বলা হইয়াছে, “অদ্য যদি তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর, তবে আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না।” বস্তুতঃ যিহোশূয় যদি তাহাদিগকে বিশ্রাম দিতেন, তবে ঈশ্বর তৎপরে অন্য দিনের কথা কহিতেন না। সুতরাং ঈশ্বরের প্রজাদের নিমিত্ত বিশ্রামকালের ভোগ বাকী রহিয়াছে। ফলতঃ যেরূপ ঈশ্বর আপন কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিয়াছিলেন, তেমনি যে ব্যক্তি তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিয়াছে, সেও আপনার কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিতে পাইল। অতএব আইস, আমরা সেই বিশ্রামে প্রবেশ করিতে যত্ন করি, যেন কেহ অবাধ্যতার সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে পতিত না হয়। কেননা ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়্গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক; আর তাঁহার সাক্ষাতে কোন সৃষ্ট বস্তু অপ্রকাশিত নয়; কিন্তু তাঁহার চক্ষুর্গোচরে সকলই নগ্ন ও অনাবৃত রহিয়াছে, যাঁহার কাছে আমাদিগকে নিকাশ দিতে হইবে। ভাল, আমরা এক মহান্‌ মহাযাজককে পাইয়াছি, যিনি স্বর্গ সকল দিয়া গমন করিয়াছেন, তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্র; অতএব আইস, আমরা ধর্ম্মপ্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়রূপে ধারণ করি। কেননা আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে। অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই। বস্তুতঃ প্রত্যেক মহাযাজক মনুষ্যদের মধ্য হইতে গৃহীত হইয়া মনুষ্যদের পক্ষে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কার্য্যে নিযুক্ত হন, যেন তিনি পাপার্থক উপহার ও বলি উৎসর্গ করেন। তিনি অজ্ঞান ও ভ্রান্ত সকলের প্রতি কোমল ব্যবহার করিতে সমর্থ, কারণ তিনি আপনিও দুর্ব্বলতায় বেষ্টিত; এবং সেই দুর্ব্বলতা হেতু যেমন প্রজাগণের জন্য, তেমনি আপনার জন্যও পাপনিমিত্তক নৈবেদ্য উৎসর্গ করা তাঁহার অবশ্য কর্ত্তব্য। আর, কেহ আপনার জন্য সেই সমাদর লয় না, কিন্তু ঈশ্বরকর্ত্তৃক আহূত হইয়াই তাহা পায়; হারোণও সেই প্রকারে পাইয়াছিলেন। খ্রীষ্টও তদ্রূপ মহাযাজক হইবার নিমিত্ত আপনি আপনাকে গৌরবান্বিত করিলেন না, কিন্তু তিনিই করিয়াছিলেন, যিনি তাঁহাকে কহিলেন, “তুমি আমার পুত্র, আমি অদ্য তোমাকে জন্ম দিয়াছি।” সেইরূপ অন্য গীতেও তিনি কহেন, “তুমিই মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে অনন্তকালীন যাজক।” ইনি মাংসে প্রবাসকালে প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে তাঁহারই নিকটে প্রার্থনা ও বিনতি উৎসর্গ করিয়াছিলেন, যিনি মৃত্যু হইতে তাঁহাকে রক্ষা করিতে সমর্থ, এবং আপন ভক্তি প্রযুক্ত উত্তর পাইলেন; যদিও তিনি পুত্র ছিলেন, তথাপি যে সকল দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, তদ্দ্বারা আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন; এবং সিদ্ধ হইয়া আপনার আজ্ঞাবহ সকলের অনন্ত পরিত্রাণের কারণ হইলেন; ঈশ্বরকর্ত্তৃক মল্কীষেদকের রীতি অনুযায়ী মহাযাজক বলিয়া অভিভাষিত হইলেন। তাঁহার বিষয়ে আমাদের অনেক কথা আছে, তাহার অর্থ ব্যক্ত করা দুষ্কর, কারণ তোমরা শ্রবণে শিথিল হইয়াছ। বস্তুতঃ এত কালের মধ্যে শিক্ষক হওয়া তোমাদের উচিত ছিল, কিন্তু কেহ যে তোমাদিগকে ঈশ্বরীয় বচনকলাপের আদিম কথার অক্ষরমালা শিক্ষা দেয়, ইহা তোমাদের পক্ষে পুনর্ব্বার আবশ্যক হইয়াছে; এবং তোমরা এমন লোক হইয়া পড়িয়াছ, যাহাদের দুগ্ধে প্রয়োজন, কঠিন খাদ্যে নয়। কেননা যে দুগ্ধপোষ্য, সে ত ধার্ম্মিকতার বাক্যে অভ্যস্ত নয়; কারণ সে শিশু। কিন্তু কঠিন খাদ্য সেই সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য, যাহাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে। অতএব আইস, আমরা খ্রীষ্টবিষয়ক আদিম কথা পশ্চাৎ ফেলিয়া সিদ্ধির চেষ্টায় অগ্রসর হই; পুনর্ব্বার এই ভিত্তিমূল স্থাপন না করি, যথা মৃত ক্রিয়া হইতে মনপরিবর্ত্তন, ও ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস, নানা বাপ্তিস্ম ও হস্তার্পণের শিক্ষা, মৃতগণের পুনরুত্থান ও অনন্তকালার্থক বিচার। ঈশ্বরের অনুমতি হইলে তাহাই করিব। কেননা যাহারা একবার দীপ্তি প্রাপ্ত হইয়াছে, ও স্বর্গীয় দানের রসাস্বাদন করিয়াছে, ও পবিত্র আত্মার ভাগী হইয়াছে, এবং ঈশ্বরের মঙ্গলবাক্যের ও ভাবী যুগের নানা পরাক্রমের রসাস্বাদন করিয়াছে, পরে ধর্ম্মভ্রষ্ট হইয়াছে, মনপরিবর্ত্তনার্থে আবার তাহাদিগকে নূতন করিতে পারা যায় না; কেননা তাহারা আপনাদের বিষয়ে ঈশ্বরের পুত্রকে পুনরায় ক্রুশে দেয় ও প্রকাশ্য নিন্দাস্পদ করে। কারণ যে ভূমি আপনার উপরে পুনঃ পুনঃ পতিত বৃষ্টি পান করিয়াছে, আর যাহাদের নিমিত্ত উহা চাষ করা গিয়াছে, তাহাদের জন্য উপযুক্ত ওষধি উৎপন্ন করে, তাহা ঈশ্বর হইতে আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হয়; কিন্তু যদি কাঁটাবন ও শ্যাকুল উৎপন্ন করে, তবে তাহা অকর্ম্মণ্য ও শাপের সমীপবর্ত্তী, জ্বলনই তাহার পরিণাম। কিন্তু, প্রিয়তমেরা, যদ্যপি আমরা এইরূপ বলিতেছি, তথাপি তোমাদের বিষয়ে এমন দৃঢ় প্রত্যয় করিতেছি যে, তোমাদের অবস্থা ইহা অপেক্ষা ভাল এবং পরিত্রাণসহযুক্ত। কেননা ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং তোমরা পবিত্রগণের যে পরিচর্য্যা করিয়াছ ও করিতেছ, তদ্দ্বারা তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না। কিন্তু আমাদের বাসনা এই, যেন তোমাদের প্রত্যেক জন একই প্রকার যত্ন দেখায়, যাহাতে শেষ পর্য্যন্ত প্রত্যাশার পূর্ণতা থাকিবে; যেন তোমরা শিথিল না হও, কিন্তু যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী, তাহাদের অনুকারী হও। কেননা ঈশ্বর যখন অব্রাহামের নিকটে প্রতিজ্ঞা করিলেন, তখন মহত্তর কোন ব্যক্তির নামে শপথ করিতে না পারাতে আপনারই নামে শপথ করিলেন, কহিলেন, “আমি অবশ্যই তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব, এবং তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব।” আর এইরূপে দীর্ঘসহিষ্ণুতা করিয়া তিনি প্রতিজ্ঞা প্রাপ্ত হইলেন। মনুষ্যেরা ত মহত্তর ব্যক্তির নাম লইয়া শপথ করে; এবং দৃঢ়ীকরণার্থে শপথই তাহাদের সমস্ত প্রতিকূলবাদের অন্তক। এই ব্যাপারে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞার দায়াধিকারীদিগকে আপন মন্ত্রণার অপরিবর্ত্তনীয়তা আরও অতিরিক্তরূপে দেখাইবার বাসনায় শপথের প্রয়োগ দ্বারা মধ্যস্থতা করিলেন; অভিপ্রায় এই, যে ব্যাপারে মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য, এমন অপরিবর্ত্তনীয় দুই ব্যাপার দ্বারা আমরা—যাহারা সম্মুখস্থ প্রত্যাশা ধরিবার জন্য শরণার্থে পলায়ন করিয়াছি—যেন দৃঢ় আশ্বাস প্রাপ্ত হই। আমাদের সেই প্রত্যাশা আছে, তাহা প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ, অটল ও দৃঢ়, এবং তিরস্করিণীর ভিতরে যায়। আর সেই স্থানে আমাদের নিমিত্ত, অগ্রগামী হইয়া যীশু প্রবেশ করিয়াছেন, মল্কীষেদকের রীতি অনুযায়ী অনন্তকালীন মহাযাজক হইয়াছেন। সেই যে মল্কীষেদক, যিনি শালেমের রাজা ও পরাৎপর ঈশ্বরের যাজক ছিলেন, অব্রাহাম যখন রাজাদের সংহার হইতে ফিরিয়া আইসেন, তিনি তখন তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিলেন, ও তাঁহাকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং অব্রাহাম তাঁহাকে সমস্তের দশমাংশ দিলেন। প্রথমে তাঁহার নামের তাৎপর্য্য ব্যাখ্যা করিলে তিনি ‘ধার্ম্মিকতার রাজা’, পরে ‘শালেমের রাজা’, অর্থাৎ শান্তিরাজ; তাঁহার পিতা নাই, মাতা নাই, পূর্ব্বপুরুষাবলি নাই, আয়ুর আদি কি জীবনের অন্ত নাই; কিন্তু তিনি ঈশ্বরের পুত্রের সদৃশীকৃত; তিনি নিত্যই যাজক থাকেন। বিবেচনা করিয়া দেখ, তিনি কেমন মহান্‌, যাঁহাকে সেই পিতৃকুলপতি অব্রাহাম উত্তম উত্তম লুটদ্রব্য লইয়া দশমাংশ দান করিয়াছিলেন। আর লেবির সন্তানদের মধ্যে যাহারা যাজকত্ব প্রাপ্ত হয়, তাহারা ব্যবস্থানুসারে প্রজাবৃন্দের অর্থাৎ নিজ ভ্রাতৃগণের কাছে দশমাংশ গ্রহণ করিবার বিধি পাইয়াছে, যদিও তাহারা অব্রাহামের বংশ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে; কিন্তু ঐ যে ব্যক্তি তাহাদের বংশজাত বলিয়া নির্দ্দিষ্ট নহেন, তিনি অব্রাহাম হইতে দশমাংশ লইয়াছিলেন, এবং প্রতিজ্ঞাকলাপের সেই অধিকারীকেই আশীর্ব্বাদ করিয়াছিলেন। ক্ষুদ্রতর পাত্র গুরুতর পাত্রকর্ত্তৃক আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হয়, এই কথা ত সমস্ত প্রতিবাদের বহির্ভূত। আবার এই স্থলে মরণশীল মনুষ্যেরাই দশমাংশ পায়, কিন্তু ঐ স্থলে তিনি পান, যাঁহার বিষয়ে এমন সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছে যে, তিনি জীবনবিশিষ্ট। আবার ইহাও বলিলে বলা যাইতে পারে যে, অব্রাহামের দ্বারা দশমাংশগ্রাহী লেবি আপনি দশমাংশ দিয়াছেন, কারণ যখন মল্কীষেদক তাঁহার পিতার সহিত সাক্ষাৎ করেন, তখন লেবি পিতার কটিতে ছিলেন। অতএব যদি লেবীয় যাজকত্ব দ্বারা সিদ্ধি হইতে পারিত—সেই যাজকত্বের অধীনেই ত প্রজাবৃন্দ ব্যবস্থা পাইয়াছিল—তবে আবার কি প্রয়োজন ছিল যে, মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে অন্যবিধ এক যাজক উৎপন্ন হইবেন, এবং তাঁহাকে হারোণের রীতি অনুযায়ী বলিয়া ধরা হইবে না? যাজকত্ব যখন পরিবর্ত্তিত হয়, তখন ব্যবস্থারও পরিবর্ত্তন হয়, ইহা আবশ্যক। এ সকল কথা যাঁহার উদ্দেশে বলা যায়, তিনি ত অন্যবিধ বংশভুক্ত; সেই বংশের মধ্যে যজ্ঞবেদির সেবাধিকারী কেহই হয় নাই। ফলতঃ আমাদের প্রভু যিহূদা হইতে উদিত হইয়াছেন, ইহা সুস্পষ্ট; কিন্তু সেই বংশের উদ্দেশে মোশি যাজকদের বিষয়ে কিছুই বলেন নাই। আমাদের কথা আরও অধিক স্পষ্ট হইয়া পড়ে, যখন মল্কীষেদকের সাদৃশ্য অনুযায়ী আর এক জন যাজক উৎপন্ন হন, যিনি মাংসিক বিধির নিয়ম অনুযায়ী হন নাই, কিন্তু অলোপ্য জীবনের শক্তি অনুযায়ী হইয়াছেন। কেননা তিনি এই সাক্ষ্য প্রাপ্ত হইতেছেন, “তুমিই মল্কীষেদকের রীতি অনুসারে অনন্তকালীন যাজক।” কারণ এক পক্ষে পূর্ব্বকার বিধির দুর্ব্বলতা ও নিষ্ফলতা প্রযুক্ত তাহার লোপ হইতেছে —কেননা ব্যবস্থা কিছুই সিদ্ধ করে নাই—পক্ষান্তরে এমন এক শ্রেষ্ঠ প্রত্যাশা আনা হইতেছে, যদ্দ্বারা আমরা ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হই। অধিকন্তু ইহা বিনা শপথে হয় নাই। উহারা ত বিনা শপথে যাজক হইয়া আসিতেছে; কিন্তু ইনি শপথ সহকারে তাঁহারই দ্বারা নিযুক্ত, তিনি তাঁহার বিষয়ে কহিলেন, “প্রভু এই শপথ করিলেন, আর তিনি অনুশোচনা করিবেন না, তুমিই অনন্তকালীন যাজক।” অতএব যীশু এইরূপ মহৎ বিষয়েও উৎকৃষ্টতর নিয়মের প্রতিভূ হইয়াছেন। আর উহারা অনেক যাজক হইয়া আসিতেছে, কারণ মৃত্যু উহাদিগকে চিরকাল থাকিতে দেয় না। কিন্তু তিনি ‘অনন্তকাল’ থাকেন, তাই তাঁহার যাজকত্ব অপরিবর্ত্তনীয়। এই জন্য, যাহারা তাঁহা দিয়া ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করিতে পারেন, কারণ তাহাদের নিমিত্ত অনুরোধ করণার্থে তিনি সতত জীবিত আছেন। বস্তুতঃ আমাদের জন্য এমন এক মহাযাজক উপযুক্ত ছিলেন, যিনি সাধু, অহিংসক, বিমল, পাপিগণ হইতে পৃথক্‌কৃত, এবং স্বর্গ সকল অপেক্ষা উচ্চীকৃত। ঐ মহাযাজকগণের ন্যায় প্রতিদিন অগ্রে নিজ পাপের, পরে প্রজাবৃন্দের পাপের নিমিত্ত নৈবেদ্য উৎসর্গ করা ইহাঁর পক্ষে আবশ্যক নয়, কারণ আপনাকে উৎসর্গ করাতে ইনি সেই কার্য্য একবারে সাধন করিয়াছেন। কেননা ব্যবস্থা যে মহাযাজকদিগকে নিযুক্ত করে, তাহারা দুর্ব্বলতাবিশিষ্ট মনুষ্য; কিন্তু ব্যবস্থার পশ্চাৎকালীয় ঐ শপথের বাক্য যাঁহাকে নিযুক্ত করে, তিনি অনন্তকালের জন্য সিদ্ধিপ্রাপ্ত পুত্র। এই সমস্ত কথার সার এই, আমাদের এমন এক মহাযাজক আছেন, যিনি স্বর্গে, মহিমা-সিংহাসনের দক্ষিণে, উপবিষ্ট হইয়াছেন। তিনি পবিত্র স্থানের, এবং যে তাম্বু মনুষ্যকর্ত্তৃক নয়, কিন্তু প্রভুকর্ত্তৃক স্থাপিত হইয়াছে, সেই প্রকৃত তাম্বুর সেবক। ফলতঃ প্রত্যেক মহাযাজক উপহার ও বলি উৎসর্গ করিতে নিযুক্ত হন, অতএব ইহাঁরও অবশ্য কিছু উৎসর্জ্জনীয় আছে। বস্তুতঃ ইনি যদি পৃথিবীতে থাকিতেন, তবে একেবারে যাজকই হইতেন না; কারণ যাহারা ব্যবস্থানুসারে উপহারাদি উৎসর্গ করে, এমন লোক আছে। তাহারা স্বর্গীয় বিষয়ের দৃষ্টান্ত ও ছায়া লইয়া আরাধনা করে, যেমন মোশি যখন তাম্বুর নির্ম্মাণ সম্পন্ন করিতে উদ্যত ছিলেন, তখন এই আদেশ পাইয়াছিলেন, [ঈশ্বর] কহেন, “দেখিও, পর্ব্বতে তোমাকে যে আদর্শ দেখান গেল, সেইরূপ সকলই করিও।” কিন্তু এখন ইনি সেই পরিমাণে উৎকৃষ্টতর সেবকত্ব পাইয়াছেন, যে পরিমাণে তিনি এমন এক শ্রেষ্ঠ নিয়মের মধ্যস্থ হইয়াছেন, যাহা শ্রেষ্ঠ প্রতিজ্ঞাকলাপের উপরে স্থাপিত হইয়াছে। কারণ ঐ প্রথম নিয়ম যদি নির্দ্দোষ হইত, তবে দ্বিতীয় এক নিয়মের অন্য স্থানের চেষ্টা করা যাইত না। পরন্তু তিনি লোকদিগকে দোষ দিয়া বলেন, “প্রভু কহেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যখন আমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত ও যিহূদা-কুলের সহিত এক নূতন নিয়ম সম্পন্ন করিব, সেই নিয়মানুসারে নয়, যাহা আমি সেই দিন তাহাদের পিতৃগণের সহিত করিয়াছিলাম, যে দিন মিসর দেশ হইতে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিবার জন্য তাহাদের হস্ত গ্রহণ করিয়াছিলাম; কেননা তাহারা আমার নিয়মে স্থির রহিল না, আর আমিও তাহাদের প্রতি অবহেলা করিলাম, ইহা প্রভু বলেন। কিন্তু সেই কালের পর আমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত এই নিয়ম স্থির করিব, ইহা প্রভু বলেন; আমি তাহাদের চিত্তে আমার ব্যবস্থা দিব, আর তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব, এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে। আর তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন সহপ্রজাকে, এবং প্রত্যেকে আপন আপন ভ্রাতাকে শিক্ষা দিবে না, বলিবে না, ‘তুমি প্রভুকে জ্ঞাত হও’; কারণ তাহারা ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সকলেই আমাকে জ্ঞাত হইবে। কেননা আমি তাহাদের অপরাধ সকল ক্ষমা করিব, এবং তাহাদের পাপ সকল আর কখনও স্মরণে আনিব না।” ‘নূতন’ বলাতে তিনি প্রথমটী পুরাতন করিয়াছেন; কিন্তু যাহা পুরাতন ও জীর্ণ হইতেছে, তাহা অন্তর্হিত হইতে উদ্যত। ভাল, ঐ প্রথম নিয়ম অনুসারেও আরাধনার নানা ধর্ম্মবিধি এবং পার্থিব একটী ধর্ম্মধাম ছিল। কারণ একটী তাম্বু নির্ম্মিত হইয়াছিল, সেটী প্রথম, তাহার মধ্যে দীপবৃক্ষ, মেজ ও দর্শনরুটীর শ্রেণী ছিল; ইহার নাম পবিত্র স্থান। আর দ্বিতীয় তিরস্করিণীর পরে অতি পবিত্র স্থান নামক তাম্বু ছিল; তাহা সুবর্ণময় ধূপধানী ও সর্ব্বদিকে স্বর্ণমণ্ডিত নিয়ম-সিন্দুক বিশিষ্ট; ঐ সিন্দুকে ছিল মান্নাধারী স্বর্ণময় ঘট, ও হারোণের মঞ্জরিত যষ্টি, ও নিয়মের দুই প্রস্তরফলক, এবং তাহার উপরে প্রতাপের সেই দুই করূব ছিল, যাহারা পাপাবরণ ছায়া করিত; এই সকলের সবিশেষ কথা বলা এখন নিষ্প্রয়োজন। উক্ত সকল বস্তু এইরূপে প্রস্তুত হইলে যাজকগণ আরাধনার কার্য্য সকল সম্পন্ন করিবার জন্য ঐ প্রথম তাম্বুতে নিত্য প্রবেশ করে; কিন্তু দ্বিতীয় তাম্বুতে বৎসরের মধ্যে এক বার মহাযাজক একাকী প্রবেশ করেন; তিনি আবার রক্ত বিনা প্রবেশ করেন না, সেই রক্ত তিনি আপনার নিমিত্ত ও প্রজা লোকদের অজ্ঞানকৃত পাপের নিমিত্ত উৎসর্গ করেন। ইহাতে পবিত্র আত্মা যাহা জ্ঞাপন করেন, তাহা এই, সেই প্রথম তাম্বু যাবৎ স্থাপিত থাকে, তাবৎ পবিত্র স্থানে প্রবেশের পথ প্রকাশিত হয় নাই। সেই তাম্বু এই উপস্থিত সময়ের নিমিত্ত দৃষ্টান্ত; সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে এমন উপহার ও যজ্ঞ উৎসর্গ করা হয়, যাহা আরাধনাকারীকে সংবেদগত সিদ্ধি দিতে পারে না; সে সমস্তই খাদ্য, পেয় ও বিবিধ বাপ্তিস্ম সহযুক্ত, সে সকল কেবল মাংসের ধর্ম্মবিধিমাত্র, সংশোধনের সময় পর্য্যন্ত পালনীয়। কিন্তু খ্রীষ্ট, আগত উত্তম উত্তম বিষয়ের মহাযাজকরূপে উপস্থিত হইয়া, যে মহত্তর ও সিদ্ধতর তাম্বু অহস্তকৃত, অর্থাৎ এই সৃষ্টির অসম্পর্কীয়, সেই তাম্বু দিয়া—ছাগদের ও গোবৎসদের রক্তের গুণে নয়, কিন্তু নিজ রক্তের গুণে—একবারে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিয়াছেন, ও অনন্তকালীয় মুক্তি উপার্জ্জন করিয়াছেন। কারণ ছাগদের ও বৃষদের রক্ত এবং অশুচিদের উপরে প্রোক্ষিত গাভী-ভস্ম যদি মাংসের শুচিতার জন্য পবিত্র করে, তবে, যিনি অনন্তজীবী আত্মা দ্বারা নির্দ্দোষ বলিরূপে আপনাকেই ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করিয়াছেন, সেই খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে কত অধিক নিশ্চয় শুচি না করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করিতে পার! আর এই কারণ তিনি এক নূতন নিয়মের মধ্যস্থ; যেন, প্রথম নিয়ম সম্বন্ধীয় অপরাধ সকলের মোচনার্থ মৃত্যু ঘটিয়াছে বলিয়া, যাহারা আহূত হইয়াছে, তাহারা অনন্তকালীয় দায়াধিকার বিষয়ক প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হয়। কেননা যে স্থলে নিয়ম-পত্র থাকে, সেই স্থলে নিয়মকারীর মৃত্যু হওয়া আবশ্যক। কারণ মৃত্যু হইলেই নিয়ম-পত্র স্থির হয়, যেহেতুক নিয়মকারী জীবিত থাকিতে তাহা কখনও বলবৎ হয় না। সেই জন্য ঐ প্রথম নিয়মের সংস্কারও রক্ত ব্যতিরেকে হয় নাই। কারণ প্রজাসমূহের কাছে মোশি দ্বারা ব্যবস্থানুসারে সকল আজ্ঞার প্রস্তাব সাঙ্গ হইলে পর, তিনি জল ও সিন্দূরবর্ণ মেষলোম ও এসোবের সহিত গোবৎসদের ও ছাগদের রক্ত লইয়া পুস্তকখানিতে ও সমস্ত প্রজাবৃন্দের গাত্রে ছিটাইয়া দিলেন, কহিলেন, “এ সেই নিয়মের রক্ত, যে নিয়ম ঈশ্বর তোমাদের উদ্দেশে আদেশ করিলেন।” আর তিনি তাম্বুতে ও সেবাকার্য্যের সমস্ত সামগ্রীতেও সেইরূপে রক্ত ছিটাইয়া দিলেন। আর ব্যবস্থানুসারে প্রায় সকলই রক্তে শুচিকৃত হয়, এবং রক্তসেচন ব্যতিরেকে পাপমোচন হয় না। ভাল, যাহা যাহা স্বর্গস্থ বিষয়ের দৃষ্টান্ত, সেগুলির ঐ সকলের দ্বারা শুচীকৃত হওয়া আবশ্যক ছিল; কিন্তু যাহা যাহা স্বয়ং স্বর্গীয়, সেগুলির ইহা হইতে শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ দ্বারা শুচীকৃত হওয়া আবশ্যক। কেননা খ্রীষ্ট হস্তকৃত পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন নাই—এ ত প্রকৃত বিষয়গুলির প্রতিরূপমাত্র—কিন্তু স্বর্গেই প্রবেশ করিয়াছেন, যেন তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন। আর মহাযাজক যেমন বৎসর সৎসর পরের রক্ত লইয়া পবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন, তদ্রূপ খ্রীষ্ট যে অনেক বার আপনাকে উৎসর্গ করিবেন, তাহাও নয়; কেননা তাহা হইলে জগতের পত্তনাবধি অনেক বার তাঁহাকে মৃত্যু ভোগ করিতে হইত। কিন্তু বাস্তবিক তিনি এক বার, যুগপর্য্যায়ের পরিণামে, আত্মযজ্ঞ দ্বারা পাপ নাশ করিবার নিমিত্ত, প্রকাশিত হইয়াছেন। আর যেমন মনুষ্যের নিমিত্ত এক বার মৃত্যু, তৎপরে বিচার নিরূপিত আছে, তেমনি খ্রীষ্টও ‘অনেকের পাপভার তুলিয়া লইবার’ নিমিত্ত এক বার উৎসৃষ্ট হইয়াছেন; তিনি দ্বিতীয় বার, বিনা পাপে, তাহাদিগকে দর্শন দিবেন, যাহারা পরিত্রাণের নিমিত্ত তাঁহার অপেক্ষা করে। কারণ ব্যবস্থা আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়াবিশিষ্ট, তাহা সেই সকল বিষয়ের অবিকল মূর্ত্তি নহে; সুতরাং একরূপ যে সকল বার্ষিক যজ্ঞ নিয়ত উৎসর্গ করা যায়, তদ্দ্বারা, যাহারা নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে ব্যবস্থা কখনও সিদ্ধ করিতে পারে না। যদি পারিত, তবে ঐ যজ্ঞ কি শেষ হইত না? কেননা আরাধনাকারীরা একবার শুচীকৃত হইলে তাহাদের কোন পাপ-সংবেদ আর থাকিত না। কিন্তু ঐ সকল যজ্ঞে বৎসর বৎসর পুনর্ব্বার পাপ স্মরণ করা হয়। কারণ বৃষের কি ছাগের রক্ত যে পাপ হরণ করিবে, ইহা হইতেই পারে না। এই কারণ খ্রীষ্ট জগতে প্রবেশ করিবার সময়ে বলেন, “তুমি যজ্ঞ ও নৈবেদ্য ইচ্ছা কর নাই, কিন্তু আমার জন্য দেহ রচনা করিয়াছ; হোমে ও পাপার্থক বলিদানে তুমি প্রীত হও নাই। তখন আমি কহিলাম, দেখ, আমি আসিয়াছি, —গ্রন্থখানিতে আমার বিষয় লিখিত আছে—হে ঈশ্বর, যেন তোমার ইচ্ছা পালন করি।” উপরে তিনি কহেন, “যজ্ঞ, নৈবেদ্য, হোম ও পাপার্থক বলিদান তুমি ইচ্ছা কর নাই, এবং তাহাতে প্রীতও হও নাই”—এই সকল ব্যবস্থানুসারে উৎসৃষ্ট হয় —তৎপরে তিনি বলিলেন, “দেখ, তোমার ইচ্ছা পালন করিবার জন্য আসিয়াছি।” তিনি প্রথম বিষয় লোপ করিতেছেন, যেন দ্বিতীয় বিষয় স্থির করেন। সেই ইচ্ছাক্রমে, যীশু খ্রীষ্টের দেহ একবার উৎসর্গ করণ দ্বারা, আমরা পবিত্রীকৃত হইয়া রহিয়াছি। আর প্রত্যেক যাজক দিন দিন সেবা করিবার এবং একরূপ নানা যজ্ঞ পুনঃপুনঃ উৎসর্গ করিবার জন্য দাঁড়ায়; সেই সকল যজ্ঞ কখনও পাপ হরণ করিতে পারে না। কিন্তু ইনি পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন, এবং তদবধি অপেক্ষা করিতেছেন, যে পর্য্যন্ত তাঁহার শত্রুগণ তাঁহার পাদপীঠ না হয়। কারণ যাহারা পবিত্রীকৃত হয়, তাহাদিগকে তিনি একই নৈবেদ্য দ্বারা চিরকালের জন্য সিদ্ধ করিয়াছেন। আর পবিত্র আত্মাও আমাদের কাছে সাক্ষ্য দিতেছেন, কারণ অগ্রে তিনি বলেন, “সেই কালের পর, প্রভু কহেন, আমি তাহাদের সহিত এই নিয়ম স্থির করিব, আমি তাহাদের হৃদয়ে আমার ব্যবস্থা দিব, আর তাহাদের চিত্তে তাহা লিখিব,” তৎপরে তিনি বলেন, “এবং তাহাদের পাপ ও অধর্ম্ম সকল আর কখনও স্মরণে আনিব না।” ভাল, যে স্থলে এই সকলের মোচন হয়, সেই স্থলে পাপার্থক নৈবেদ্য আর হয় না। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, যীশু আমাদের জন্য ‘তিরস্করিণী’ দিয়া, অর্থাৎ আপন মাংস দিয়া, যে পথ সংস্কার করিয়াছেন, আমরা সেই নূতন ও জীবন্ত পথে, যীশুর রক্তের গুণে পবিত্র স্থানে প্রবেশ করিতে সাহস প্রাপ্ত হইয়াছি; এবং ঈশ্বরের গৃহের উপরে নিযুক্ত মহান্‌ এক যাজকও আমাদের আছেন; এই জন্য আইস, আমরা সত্য হৃদয় সহকারে বিশ্বাসের কৃতনিশ্চয়তায় [ঈশ্বরের] নিকটে উপস্থিত হই; আমরা ত হৃদয়প্রোক্ষণ-পূর্ব্বক মন্দ হইতে মুক্ত, এবং শুচি জলে স্নাত দেহবিশিষ্ট হইয়াছি; আইস, আমাদের প্রত্যাশার অঙ্গীকার অটল করিয়া ধরি, কেননা যিনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তিনি বিশ্বস্ত; এবং আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই। কারণ সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পাইলে পর যদি আমরা স্বেচ্ছাপূর্ব্বক পাপ করি, তবে পাপার্থক আর কোন যজ্ঞ অবশিষ্ট থাকে না, কেবল থাকে বিচারের ভয়ঙ্কর প্রতীক্ষা এবং বিপক্ষদিগকে গ্রাস করিতে উদ্যত অগ্নির চণ্ডতা। কেহ মোশির ব্যবস্থা অমান্য করিলে সে দুই বা তিন সাক্ষীর প্রমাণে বিনা করুণায় হত হয়; ভাবিয়া দেখ, যে ব্যক্তি ঈশ্বরের পুত্রকে পদতলে দলিত করিয়াছে, এবং নিয়মের যে রক্ত দ্বারা সে পবিত্রীকৃত হইয়াছিল, তাহা সামান্য জ্ঞান করিয়াছে, এবং অনুগ্রহের আত্মার অপমান করিয়াছে, সে কত অধিক নিশ্চয় ঘোরতর দণ্ডের যোগ্য না হইবে! কেননা এই কথা যিনি বলিয়াছেন, তাঁহাকে আমরা জানি, “প্রতিশোধ দেওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব;” আবার, “প্রভু আপন প্রজাবৃন্দের বিচার করিবেন।” জীবন্ত ঈশ্বরের হস্তে পতিত হওয়া ভয়ানক বিষয়। তোমরা বরং পূর্ব্বকার সেই সময় স্মরণ কর, যখন তোমরা দীপ্তিপ্রাপ্ত হইয়া নানা দুঃখভোগরূপ ভারী সংগ্রাম সহ্য করিয়াছিলে, একে ত তিরস্কারে ও ক্লেশে কৌতুকাস্পদ হইয়াছিলে, তাহাতে আবার সেই প্রকার দুর্দ্দশাপন্ন লোকদের সহভাগী হইয়াছিলে। কেননা তোমরা বন্দিগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করিয়াছিলে, এবং আনন্দপূর্ব্বক আপন আপন সম্পত্তির লুট স্বীকার করিয়াছিলে, কারণ তোমরা জানিতে, তোমাদের আরও উত্তম নিজ সম্পত্তি আছে, আর তাহা নিত্যস্থায়ী। অতএব তোমাদের সেই সাহস ত্যাগ করিও না, যাহা মহাপুরস্কারযুক্ত। কেননা ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিয়া প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হও। কারণ “আর অতি অল্প কাল বাকী আছে, যিনি আসিতেছেন, তিনি আসিবেন, বিলম্ব করিবেন না। কিন্তু আমার ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতুই বাঁচিবে, আর যদি সরিয়া পড়ে, তবে আমার প্রাণ তাহাতে প্রীত হইবে না।” পরন্তু আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক। আর বিশ্বাস প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান, অদৃশ্য বিষয়ের প্রমাণ প্রাপ্তি। কারণ এই সম্বন্ধেই প্রাচীনগণের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল। বিশ্বাসে আমরা বুঝিতে পারি যে, যুগকলাপ ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা রচিত হইয়াছে, সুতরাং কোন প্রত্যক্ষ বস্তু হইতে এই সকল দৃশ্য বস্তুর উৎপত্তি হয় নাই। বিশ্বাসে হেবল ঈশ্বরের উদ্দেশে কয়িন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ উৎসর্গ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা তাঁহার পক্ষে এই সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল যে, তিনি ধার্ম্মিক; ঈশ্বর তাঁহার উপহারের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছিলেন; এবং তদ্দ্বারা তিনি মৃত হইলেও এখনও কথা কহিতেছেন। বিশ্বাসে হনোক লোকান্তরে নীত হইলেন, যেন মৃত্যু না দেখিতে পান; তাঁহার উদ্দেশ আর পাওয়া গেল না, কেননা ঈশ্বর তাঁহাকে লোকান্তরে লইয়া গেলেন। বস্তুতঃ লোকান্তরে নীত হইবার পূর্ব্বে তাঁহার পক্ষে এই সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল যে, তিনি ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র ছিলেন। কিন্তু বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা। বিশ্বাসে নোহ, যাহা যাহা তখন দেখা যাইতেছিল না, এমন বিষয়ে আদেশ পাইয়া ভক্তিযুক্ত ভয়ে আবিষ্ট হইয়া আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা জগৎকে দোষী করিলেন ও আপনি বিশ্বাসানুরূপ ধার্ম্মিকতার অধিকারী হইলেন। বিশ্বাসে অব্রাহাম, যখন আহূত হইলেন, তখন যে স্থান অধিকারার্থে প্রাপ্ত হইবেন, সেই স্থানে যাইবার আজ্ঞা মান্য করিলেন, এবং কোথায় যাইতেছেন তাহা না জানিয়া যাত্রা করিলেন। বিশ্বাসে তিনি বিদেশের ন্যায় প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবাসী হইলেন, তিনি সেই প্রতিজ্ঞার সহাধিকারী ইস্‌হাক ও যাকোবের সহিত তাম্বুতেই বাস করিতেন; কারণ তিনি ভিত্তিমূলবিশিষ্ট সেই নগরের অপেক্ষা করিতেছিলেন, যাহার স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর। বিশ্বাসে স্বয়ং সারাও বংশ উৎপাদনের শক্তি পাইলেন, যদিও তাঁহার অতিরিক্ত বয়স হইয়াছিল, কেননা তিনি প্রতিজ্ঞাকারীকে বিশ্বাস্য জ্ঞান করিয়াছিলেন। এই জন্য এক ব্যক্তি হইতে, এমন কি, মৃতকল্প ব্যক্তি হইতে, এত লোক উৎপন্ন হইল, যাহারা সংখ্যায় আকাশের তারাগণের তুল্য, এবং সমুদ্রতীরস্থ গণনাতীত বালুকার তুল্য। বিশ্বাসানুরূপে ইহাঁরা সকলে মরিলেন; ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই, কিন্তু দূর হইতে তাহা দেখিতে পাইয়া সাদর সম্ভাষণ করিয়াছিলেন, এবং আপনারা যে পৃথিবীতে বিদেশী ও প্রবাসী, ইহা স্বীকার করিয়াছিলেন। কারণ যাঁহারা এরূপ কথা বলেন, তাঁহারা যে নিজ দেশের অন্বেষণ করিতেছেন, ইহাই স্পষ্ট ব্যক্ত করেন। আর যে দেশ হইতে বাহির হইয়াছিলেন, সেই দেশ যদি মনে রাখিতেন, তবে ফিরিয়া যাইবার সুযোগ অবশ্য পাইতেন। কিন্তু এখন তাঁহারা আরও উত্তম দেশের, অর্থাৎ স্বর্গীয় দেশের, আকাঙ্ক্ষা করিতেছেন। এই জন্য ঈশ্বর তাঁহাদের ঈশ্বর বলিয়া আখ্যাত হইতে, তাঁহাদের বিষয়ে লজ্জিত নহেন; কারণ তিনি তাঁহাদের নিমিত্ত এক নগর প্রস্তুত করিয়াছেন। বিশ্বাসে অব্রাহাম পরীক্ষিত হইয়া ইস্‌হাককে উৎসর্গ করিয়াছিলেন; এমন কি, যিনি প্রতিজ্ঞা সকল সানন্দে গ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনি আপনার সেই একজাত পুত্রকে উৎসর্গ করিতেছিলেন, যাঁহার বিষয়ে তাঁহাকে বলা হইয়াছিল, “ইস্‌হাকে তোমার বংশ আখ্যাত হইবে”; তিনি মনে স্থির করিয়াছিলেন, ঈশ্বর মৃতগণের মধ্য হইতেও উত্থাপন করিতে সমর্থ; আবার তিনি তথা হইতে দৃষ্টান্তরূপে তাঁহাকে ফিরিয়া পাইলেন। বিশ্বাসে ইস্‌হাক আগামী বিষয়ের উদ্দেশেও যাকোবকে ও এষৌকে আশীর্ব্বাদ করিলেন। বিশ্বাসে যাকোব মৃত্যুকালে যোষেফের উভয় পুত্রকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, এবং আপন যষ্টির অগ্রভাগে নির্ভর করিয়া ভজনা করিলেন। বিশ্বাসে যোষেফ মৃত্যুকালে ইস্রায়েল-সন্তানগণের প্রস্থানের বিষয়ে উল্লেখ করিলেন, এবং আপন অস্থিসমূহের বিষয়ে আদেশ দিলেন। বিশ্বাসে, মোশি জন্মিলে পর, তিন মাস পর্য্যন্ত পিতামাতা কর্ত্তৃক গোপনে রক্ষিত হইলেন, কেননা তাঁহারা দেখিলেন, শিশুটী সুন্দর; আর রাজার আজ্ঞাতে ভীত হইলেন না। বিশ্বাসে মোশি বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে পর ফরৌণের কন্যার পুত্র বলিয়া আখ্যাত হইতে অস্বীকার করিলেন; তিনি পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিলেন; তিনি মিসরের সমস্ত ধন অপেক্ষা খ্রীষ্টের দুর্নাম মহাধন জ্ঞান করিলেন, কেননা, তিনি পুরস্কারদানের প্রতি দৃষ্টি রাখিতেন। বিশ্বাসে তিনি মিসর ত্যাগ করিলেন, রাজার কোপ হইতে ভীত হন নাই, কারণ যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন। বিশ্বাসে তিনি নিস্তারপর্ব্ব ও রক্তের প্রোক্ষণ স্থাপন করিলেন, যেন প্রথমজাতদের সংহারকর্ত্তা তাহাদিগকে স্পর্শ না করেন। বিশ্বাসে লোকেরা শুষ্ক ভূমির ন্যায় লোহিত সমুদ্রের মধ্য দিয়া গমন করিল, কিন্তু মিস্রীয়গণ সেই চেষ্টা করিতে গিয়া কবলিত হইল। বিশ্বাসে যিরীহোর প্রাচীর, সাত দিন প্রদক্ষিণ করা হইলে পর, পড়িয়া গেল। বিশ্বাসে রাহব বেশ্যা, শান্তির সহিত চরদিগের অভ্যর্থনা করাতে, অবাধ্যদের সহিত বিনষ্ট হইল না। আর অধিক কি বলিব? গিদিয়োন, বারক, শিম্‌শোন, যিপ্তহ, এবং দায়ূদ ও শমূয়েল ও ভাববাদিগণ, এই সকলের বৃত্তান্ত বলিতে গেলে সময়ের অকুলান হইবে। বিশ্বাস দ্বারা ইহাঁরা নানা রাজ্য পরাজয় করিলেন, ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করিলেন, নানা প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হইলেন, সিংহদের মুখ বদ্ধ করিলেন, অগ্নির তেজ নির্ব্বাণ করিলেন, খড়্গের মুখ এড়াইলেন, দুর্ব্বলতা হইতে বলপ্রাপ্ত হইলেন, যুদ্ধে বিক্রান্ত হইলেন, অন্যজাতীয়দের সৈন্যশ্রেণী তাড়াইয়া দিলেন। নারীগণ আপন আপন মৃত লোককে পুনরুত্থান দ্বারা পুনঃপ্রাপ্ত হইলেন; অন্যেরা প্রহার দ্বারা নিহত হইলেন, মুক্তি গ্রহণ করেন নাই, যেন শ্রেষ্ঠ পুনরুত্থানের ভাগী হইতে পারেন। আর অন্যেরা বিদ্রূপের ও কশাঘাতের, অধিকন্তু বন্ধনের ও কারাগারের পরীক্ষা ভোগ করিলেন; তাঁহারা প্রস্তরাঘাতে হত, পরীক্ষিত, করাত দ্বারা বিদীর্ণ, খড়্গ দ্বারা নিহত হইলেন; তাঁহারা মেষের ও ছাগের চর্ম্ম পরিয়া বেড়াইতেন, দীনহীন, ক্লীষ্ট, উপদ্রুত হইতেন; এই জগৎ যাঁহাদের যোগ্য ছিল না, তাঁহারা প্রান্তরে প্রান্তরে, পাহাড়ে পাহাড়ে, গুহায় গুহায় ও পৃথিবীর গহ্বরে গহ্বরে ভ্রমণ করিতেন। আর বিশ্বাস প্রযুক্ত ইহাঁদের সকলের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল, কিন্তু ইহাঁরা প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হন নাই; কেননা ঈশ্বর আমাদের নিমিত্ত পূর্ব্বাবধি কোন শ্রেষ্ঠ বিষয় লক্ষ্য করিয়াছিলেন, যেন তাঁহারা আমাদের ব্যতিরেকে সিদ্ধি না পান। অতএব এমন বৃহৎ সাক্ষিমেঘে বেষ্টিত হওয়াতে আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা ও সহজ বাধাজনক পাপ ফেলিয়া দিয়া ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি; বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি; তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন। তাঁহাকেই আলোচনা কর, যিনি আপনার বিরুদ্ধে পাপিগণের এমন প্রতিবাদ সহ্য করিয়াছিলেন, যেন প্রাণের ক্লান্তিতে অবসন্ন না হও। তোমরা পাপের সহিত যুদ্ধ করিতে করিতে এখনও রক্তব্যয় পর্য্যন্ত প্রতিরোধ কর নাই; আর তোমরা সেই আশ্বাসবাক্য ভুলিয়া গিয়াছ, যাহা পুত্র বলিয়া তোমাদের সহিত কথাবার্ত্তা কহিতেছে, “হে আমার পুত্র, প্রভুর শাসন তুচ্ছ করিও না, তাঁহার দ্বারা অনুযুক্ত হইলে ক্লান্ত হইও না। কেননা প্রভু যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন, যে কোন পুত্রকে গ্রহণ করেন, তাহাকেই প্রহার করেন।” শাসনের জন্যই তোমরা সহ্য করিতেছ; যেমন পুত্রদের প্রতি, তেমনি ঈশ্বর তোমাদের প্রতি ব্যবহার করিতেছেন; কেননা পিতা যাহাকে শাসন না করেন, এমন পুত্র কোথায়? কিন্তু তোমাদের শাসন যদি না হয়—সকলেই ত তাহার ভাগী—তবে সুতরাং তোমরা জারজ, পুত্র নও। আবার আমাদের মাংসের পিতারা আমাদের শাসনকারী ছিলেন, এবং আমরা তাঁহাদিগকে সমাদর করিতাম; তবে যিনি আত্মা সকলের পিতা, আমরা কি অনেকগুণ অধিক পরিমাণে তাঁহার বশীভূত হইয়া জীবন ধারণ করিব না? উহাঁরা ত অল্পদিনের নিমিত্ত, উহাঁদের যেমন বিহিত বোধ হইত, তেমনই শাসন করিতেন, কিন্তু ইনি হিতের নিমিত্তই করিতেছেন, যেন আমরা তাঁহার পবিত্রতার ভাগী হই। কোন শাসনই আপাততঃ আনন্দের বিষয় বোধ হয় না, কিন্তু দুঃখের বিষয় বোধ হয়; তথাপি তদ্দ্বারা যাহাদের অভ্যাস জন্মিয়াছে, তাহা পরে তাহাদিগকে ধার্ম্মিকতার শান্তিযুক্ত ফল প্রদান করে। অতএব তোমরা শিথিল হস্ত ও অবশ হাঁটু সবল কর; এবং আপন আপন চরণের জন্য সরল পথ প্রস্তুত কর, যেন যাহা খঞ্জ তাহা স্থানচ্যুত না হয়, বরং সুস্থ হয়। সকলের সহিত শান্তির অনুধাবন কর, এবং যাহা ব্যতিরেকে কেহই প্রভুর দর্শন পাইবে না, সেই পবিত্রতার অনুধাবন কর; সাবধান হইয়া দেখ, পাছে কেহ ঈশ্বরের অনুগ্রহ হইতে বঞ্চিত হয়; পাছে তিক্ততার কোন মূল অঙ্কুরিত হইয়া তোমাদিগকে উৎপীড়িত করে, এবং ইহাতে অধিকাংশ লোক দূষিত হয়; পাছে কেহ ব্যভিচারী বা ধর্ম্মবিরূপক হয়, যেমন এষৌ, সে ত এক বারের খাদ্যের নিমিত্ত আপন জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রয় করিয়াছিল। তোমরা ত জান, তৎপরে যখন সে আশীর্ব্বাদের অধিকারী হইতে বাঞ্ছা করিল, তখন সজল নয়নে সযত্নে তাহার চেষ্টা করিলেও অগ্রাহ্য হইল, কারণ সে মনপরিবর্ত্তনের স্থান পাইল না। কারণ তোমরা সেই স্পৃশ্য ও অগ্নিতে প্রজ্বলিত পর্ব্বত, কৃষ্ণবর্ণ মেঘ, অন্ধকার, ঝড়, তূরীর ধ্বনি ও বাক্যের শব্দ এই সকলের নিকট উপস্থিত হও নাই। সেই শব্দ যাহারা শুনিয়াছিল, তাহারা প্রার্থনা করিয়াছিল, যেন তাহাদের কাছে আর কথা বলা না হয়; কারণ এই আজ্ঞা তাহারা সহ্য করিতে পারিল না, “যদি কোন পশু পর্ব্বত স্পর্শ করে, তবে সেও প্রস্তারাঘাতে হত হইবে”; এবং সেই দর্শন এমন ভয়ঙ্কর ছিল যে, মোশি কহিলেন, “আমি নিতান্তই ভীত ও কম্পিত হইতেছি”। কিন্তু তোমরা এই সকলের নিকটে উপস্থিত হইয়াছ, যথা, সিয়োন পর্ব্বত, জীবন্ত ঈশ্বরের পুরী স্বর্গীয় যিরূশালেম, অযুত অযুত দূত, স্বর্গে লিখিত প্রথমজাতদের সাধারণ সভা ও মণ্ডলী, সকলের বিচারকর্ত্তা ঈশ্বর, সিদ্ধিপ্রাপ্ত ধার্ম্মিকগণের আত্মা, নূতন নিয়মের মধ্যস্থ যীশু, এবং প্রোক্ষণের রক্ত, যাহা হেবল হইতেও উত্তম কথা বলে। দেখিও, যিনি কথা বলেন, তাঁহার কথা শুনিতে অসম্মত হইও না; কারণ যিনি পৃথিবীতে আদেশবাণী বলিয়াছিলেন, তাঁহার কথা শুনিতে অসম্মত হওয়াতে যখন ঐ লোকেরা রক্ষা পাইল না, তখন যিনি স্বর্গ হইতে বলিতেছেন, তাঁহা হইতে বিমুখ হইলে আমরা যে রক্ষা পাইব না, ইহা কত অধিক গুণে নিশ্চিত! তৎকালে তাঁহার রব পৃথিবীকে কম্পান্বিত করিয়াছিল; কিন্তু এখন তিনি এই প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, “আমি আর একবার কেবল পৃথিবীকে নয়, আকাশমণ্ডলকেও কম্পান্বিত করিব।” এখানে “আর একবার,” এই শব্দে নির্দ্দিষ্ট হইতেছে, সেই কম্পমান সকল বিষয় নির্ম্মিত বলিয়া দূরীকৃত হইবে, যেন অকম্পমান বিষয় সকল স্থায়ী হয়। অতএব অকম্পনীয় রাজ্য পাইবার অধিকারী হওয়াতে, আইস, আমরা সেই অনুগ্রহ অবলম্বন করি, যদ্দ্বারা ভক্তি ও ভয় সহকারে ঈশ্বরের প্রীতিজনক আরাধনা করিতে পারি। কেননা আমাদের ঈশ্বর গ্রাসকারী অগ্নিস্বরূপ। ভ্রাতৃপ্রেম স্থির থাকুক। তোমরা অতিথিসেবা ভুলিয়া যাইও না; কেননা তদ্দ্বারা কেহ কেহ না জানিয়া দূতগণেরও আতিথ্য করিয়াছেন। আপনাদিগকে সহবন্দি জানিয়া বন্দিগণকে স্মরণ করিও, আপনাদিগকে দেহবাসী জানিয়া দুর্দ্দশাপন্ন সকলকে স্মরণ করিও। সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন। তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক; তোমাদের যাহা আছে, তাহাতে সন্তুষ্ট থাক; কারণ তিনিই বলিয়াছেন, “আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।” অতএব আমরা সাহসপূর্ব্বক বলিতে পারি, “প্রভু আমার সহায়, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিবে?” যাঁহারা তোমাদিগকে ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া গিয়াছেন, তোমাদের সেই নেতাদিগকে স্মরণ কর, এবং তাঁহাদের আচরণের শেষগতি আলোচনা করিতে করিতে তাঁহাদের বিশ্বাসের অনুকারী হও। যীশু খ্রীষ্ট কল্য ও অদ্য এবং অনন্তকাল যে, সেই আছেন। তোমরা বহুবিধ এবং বিজাতীয় শিক্ষা দ্বারা বিপথে চালিত হইও না; কেননা হৃদয় যে অনুগ্রহ দ্বারা স্থিরীকৃত হয়, তাহা ভাল; খাদ্য বিশেষ অবলম্বন করা ভাল নয়, তদাচারীদের কোন সুফল দর্শে নাই। আমাদের এক যজ্ঞবেদি আছে, তাহার সামগ্রী ভোজন করিবার ক্ষমতা তাহাদের নাই, যাহারা তাম্বু সম্বন্ধে আরাধনা করে। কারণ যে যে প্রাণীর রক্ত পাপার্থক উপহাররূপে মহাযাজকের দ্বারা পবিত্র স্থানের ভিতরে লইয়া যাওয়া হয়, সেই সকলের দেহ শিবিরের বাহিরে পোড়াইয়া দেওয়া যায়। এই কারণ যীশুও, নিজ রক্ত দ্বারা প্রজাবৃন্দকে পবিত্র করিবার নিমিত্ত, পুরদ্বারের বাহিরে মৃত্যু ভোগ করিলেন। অতএব আইস, আমরা তাঁহার দুর্নাম বহন করিতে করিতে শিবিরের বাহিরে তাঁহার নিকটে গমন করি। কারণ এখানে আমাদের চিরস্থায়ী নগর নাই; কিন্তু আমরা সেই আগামী নগরের অন্বেষণ করিতেছি। অতএব আইস, আমরা তাঁহারই দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিয়ত স্তব-বলি, অর্থাৎ তাঁহার নাম স্বীকারকারী ওষ্ঠাধরের ফল, উৎসর্গ করি। আর উপকার ও সহভাগিতার কার্য্য ভুলিও না, কেননা সেই প্রকার যজ্ঞে ঈশ্বর প্রীত হন। তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরিকার্য্য করিতেছেন, —যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। আমাদের নিমিত্ত প্রার্থনা কর, কেননা আমরা নিশ্চয় জানি, আমাদের সৎসংবেদ আছে, সর্ব্ববিষয়ে সদাচরণ করিতে বাঞ্ছা করিতেছি। পরন্তু আমি যেন শীঘ্রই তোমাদিগকে পুনদত্ত হই, তজ্জন্য অধিক বিনতিপূর্ব্বক তোমাদিগকে প্রার্থনা করিতে বলিলাম। আর শান্তির ঈশ্বর, যিনি অনন্তকালস্থায়ী নিয়মের রক্ত প্রযুক্ত সেই মহান্‌ পাল-রক্ষককে, আমাদের প্রভু যীশুকে, মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়া আনিয়াছেন, তিনি আপনার ইচ্ছা সাধনার্থে তোমাদিগকে সমস্ত উত্তম বিষয়ে পরিপক্ব করুন, আপনার দৃষ্টিতে যাহা প্রীতিজনক, তাহা আমাদের অন্তরে, যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা, সম্পন্ন করুন; যুগে যুগে তাঁহার মহিমা হউক। আমেন। হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা এই উপদেশ-বাক্য সহ্য কর; আমি ত সঙ্ক্ষেপে তোমাদিগকে লিখিলাম। আমাদের ভ্রাতা তীমথিয় মুক্তি পাইয়াছেন, ইহা জ্ঞাত হইবে; তিনি যদি শীঘ্র আইসেন, তবে আমি তাঁহার সহিত তোমাদিগকে দেখিব। তোমরা আপনাদের সকল নেতাকে ও সকল পবিত্র লোককে মঙ্গলবাদ কর। ইতালিয়ার লোকেরা তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছে। অনুগ্রহ তোমাদের সকলের সহবর্ত্তী হউক। আমেন। ঈশ্বরের ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দাস যাকোব—নানা দেশে ছিন্নভিন্ন দ্বাদশ বংশের সমীপে। মঙ্গল হউক। হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও; জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্যসাধন করে। আর সেই ধৈর্য্য সিদ্ধ কার্য্যবিশিষ্ট হউক, যেন তোমরা সিদ্ধ ও সম্পূর্ণ হও, কোন বিষয়ে তোমাদের অভাব না থাকে। যদি তোমাদের কাহারও জ্ঞানের অভাব হয়, তবে সে ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করুক; তিনি সকলকে অকাতরে দিয়া থাকেন, তিরস্কার করেন না; তাহাকে দত্ত হইবে। কিন্তু সে বিশ্বাসপূর্ব্বক যাচ্ঞা করুক কিছু সন্দেহ না করুক; কেননা যে সন্দেহ করে, সে বায়ুতাড়িত বিলোড়িত সমুদ্র-তরঙ্গের তুল্য। সেই ব্যক্তি যে প্রভুর নিকটে কিছু পাইবে, এমন বোধ না করুক; সে দ্বিমনা লোক, আপনার সকল পথে অস্থির। অবনত ভ্রাতা আপন উন্নতির শ্লাঘা করুক; আর ধনবান্‌ আপন অবনতির শ্লাঘা করুক, কেননা সে তৃণপুষ্পের ন্যায় বিগত হইবে। ফলতঃ সূর্য্য সতাপে উঠিল, ও তৃণ শুষ্ক করিল, তাহাতে তাহার পুষ্প ঝরিয়া পড়িল, এবং তাহার রূপের লাবণ্য নষ্ট হইয়া গেল; তেমনি ধনবানও আপনার সকল গতিতে ম্লান হইয়া পড়িবে। ধন্য সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষা সহ্য করে; কারণ পরীক্ষাসিদ্ধ হইলে পর সে জীবনমুকুট প্রাপ্ত হইবে, তাহা প্রভু তাহাদিগকেই দিতে অঙ্গীকার করিয়াছেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে। পরীক্ষার সময়ে কেহ না বলুক, ঈশ্বর হইতে আমার পরীক্ষা হইতেছে; কেননা মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে, এবং পাপ পরিপক্ব হইয়া মৃত্যুকে জন্ম দেয়। হে আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ, ভ্রান্ত হইও না। সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে, যাঁহাতে অবস্থান্তর কিম্বা পরিবর্ত্তনজনিত ছায়া হইতে পারে না। তিনি নিজ বাসনায় সত্যের বাক্য দ্বারা আমাদিগকে জন্ম দিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহার সৃষ্ট বস্তু সকলের এক প্রকার অগ্রিমাংশ হই। হে আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ, তোমরা ইহা জ্ঞাত আছ। কিন্তু তোমাদের প্রত্যেক জন শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর হউক, কারণ মনুষ্যের ক্রোধ ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতার অনুষ্ঠান করে না। অতএব তোমরা সকল অশুচিতা এবং দুষ্টতার উচ্ছ্বাস ফেলিয়া দিয়া, মৃদুভাবে সেই রোপিত বাক্য গ্রহণ কর, যাহা তোমাদের প্রাণের পরিত্রাণ সাধন করিতে পারে। আর বাক্যের কার্য্যকারী হও, আপনাদিগকে ভুলাইয়া শ্রোতামাত্র হইও না। কেননা যে কেহ বাক্যের শ্রোতামাত্র, কার্য্যকারী নয়, সে এমন ব্যক্তির তুল্য, যে দর্পণে আপনার স্বাভাবিক মুখ দেখে; কারণ সে আপনাকে দেখিল, চলিয়া গেল, আর সে কিরূপ লোক, তাহা তখনই ভুলিয়া গেল। কিন্তু যে কেহ হেঁট হইয়া স্বাধীনতার সিদ্ধ ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে, ও তাহাতে নিবিষ্ট থাকে, ভুলিয়া যাইবার শ্রোতা না হইয়া কার্য্যকারী হয়, সেই আপন কার্য্যে ধন্য হইবে। যে ব্যক্তি আপনাকে ধর্ম্মশীল বলিয়া মনে করে, আর আপন জিহ্বাকে বল্‌গা দ্বারা বশে না রাখে, কিন্তু নিজ হৃদয়কে ভুলায়, তাহার ধর্ম্ম অলীক। ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা, এবং সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম্ম। হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের—প্রতাপের প্রভুর—বিশ্বাস মুখাপেক্ষার সহিত ধারণ করিও না। কেননা যদি তোমাদের সমাজ-গৃহে স্বর্ণময় অঙ্গুরীয়ে ও শুভ্র বস্ত্রে ভূষিত কোন ব্যক্তি আইসে, এবং মলিন বস্ত্র পরিহিত কোন দরিদ্রও আইসে, আর তোমরা সেই শুভ্রবস্ত্র পরিহিত ব্যক্তির মুখ চাহিয়া বল, ‘আপনি এখানে উত্তম স্থানে বসুন,’ কিন্তু সেই দরিদ্রকে যদি বল, ‘তুমি ওখানে দাঁড়াও, কিম্বা আমার পাদপীঠের তলে বস,’ তাহা হইলে তোমরা কি আপনাদের মধ্যে ভেদাভেদ করিতেছ না, এবং মন্দ বিতর্কে লিপ্ত বিচারকর্ত্তা হইতেছ না? হে আমার প্রিয় ভ্রাতৃগণ, শুন, সংসারে যাহারা দরিদ্র, ঈশ্বর কি তাহাদিগকে মনোনীত করেন নাই, যেন তাহারা বিশ্বাসে ধনবান্‌ হয়, এবং যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে, তাহাদের কাছে অঙ্গীকৃত রাজ্যের অধিকারী হয়? কিন্তু তোমরা সেই দরিদ্রকে অনাদর করিয়াছ। ধনবানেরাই কি তোমাদের প্রতি উপদ্রব করে না? তাহারাই কি তোমাদিগকে টানিয়া বিচার-স্থানে লইয়া যায় না? যে উত্তম নাম তোমাদের উপরে কীর্ত্তিত হইয়াছে, তাহারাই কি সেই নামের নিন্দা করে না? যাহা হউক, “তুমি আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিও,” এই শাস্ত্রীয় বচনানুসারে যদি তোমরা রাজকীয় ব্যবস্থা পালন কর, তবে ভাল করিতেছ। কিন্তু যদি মুখাপেক্ষা কর, তবে পাপাচরণ করিতেছ, এবং ব্যবস্থা দ্বারা আজ্ঞালঙ্ঘী বলিয়া দোষীকৃত হইতেছ। কারণ যে কেহ সমস্ত ব্যবস্থা পালন করে, কেবল একটী বিষয়ে উছোট খায়, সে সকলেরই দায়ী হইয়াছে। কেননা যিনি বলিয়াছেন, “ব্যভিচার করিও না,” তিনিই আবার বলিয়াছেন, “নরহত্যা করিও না;” ভাল, তুমি যদি ব্যভিচার না করিয়া নরহত্যা কর, তাহা হইলে, ব্যবস্থার লঙ্ঘনকারী হইয়াছ। তোমরা স্বাধীনতার ব্যবস্থা দ্বারা বিচারিত হইবে বলিয়া তদনুরূপ কথা বল ও কার্য্য কর। কেননা যে ব্যক্তি দয়া করে নাই, বিচার তাহার প্রতি নির্দ্দয়; দয়াই বিচারজয়ী হইয়া শ্লাঘা করে। হে আমার ভ্রাতৃগণ, যদি কেহ বলে, আমার বিশ্বাস আছে, আর তাহার কর্ম্ম না থাকে, তবে তাহার কি ফল দর্শিবে? সেই বিশ্বাস কি তাহার পরিত্রাণ করিতে পারে? কোন ভ্রাতা কিম্বা ভগিনী বস্ত্রহীন ও দৈবসিক খাদ্যবিহীন হইলে যদি তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি তাহাদিগকে বলে, কুশলে যাও, উষ্ণ ও তৃপ্ত হও, কিন্তু তোমরা তাহাদিগকে শরীরের প্রয়োজনীয় বস্তু না দেও, তবে তাহাতে কি ফল দর্শিবে? তদ্রূপ বিশ্বাসও কর্ম্মবিহীন হইলে আপনি একা বলিয়া তাহা মৃত। কিন্তু কেহ বলিবে, তোমার বিশ্বাস আছে, আর আমার কর্ম্ম আছে; তোমার কর্ম্মবিহীন বিশ্বাস আমাকে দেখাও, আর আমি তোমাকে আমার কর্ম্ম হইতে বিশ্বাস দেখাইব। তুমি বিশ্বাস করিতেছ যে, ঈশ্বর এক, ভালই করিতেছ; ভূতেরাও তাহা বিশ্বাস করে, এবং ভয়ে কাঁপে। কিন্তু, হে অসার মনুষ্য, তুমি কি জানিতে চাও যে, কর্ম্মবিহীন বিশ্বাস কোন কাজের নয়? আমাদের পিতা অব্রাহাম কর্ম্মহেতু, অর্থাৎ যজ্ঞবেদির উপরে আপন পুত্র ইস্‌হাককে উৎসর্গকরণ হেতু, কি ধার্ম্মিক গণিত হইলেন না? তুমি দেখিতেছ, বিশ্বাস তাঁহার ক্রিয়ার সহকারী ছিল, এবং কর্ম্মহেতু বিশ্বাস সিদ্ধ হইল; তাহাতে এই শাস্ত্রীয় বচন পূর্ণ হইল, “অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল,” আর তিনি “ঈশ্বরের বন্ধু” এই নাম পাইলেন। তোমরা দেখিতেছ, কর্ম্মহেতু মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়, সুধু বিশ্বাসহেতু নয়। আবার রাহব বেশ্যাও কি সেই প্রকারে কর্ম্মহেতু ধার্ম্মিক গণিতা হইল না? সে ত দূতগণকে অতিথি করিয়াছিল, এবং অন্য পথ দিয়া বাহিরে পাঠাইয়া দিয়াছিল। বাস্তবিক যেমন আত্মাবিহীন দেহ মৃত, তেমনি কর্ম্মবিহীন বিশ্বাসও মৃত। হে আমার ভ্রাতৃগণ, অনেকে উপদেশক হইও না; তোমরা জান, অন্য অপেক্ষা আমাদের ভারী বিচার হইবে। কারণ আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই। যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়, তবে সে সিদ্ধ পুরুষ, সমস্ত শরীরকেই বল্‌গা দ্বারা বশে রাখিতে সমর্থ। অশ্বেরা যেন আমাদের বাধ্য হয়, সেই জন্য আমরা যদি তাহাদের মুখে বল্‌গা দিই, তবে তাহাদের সমস্ত শরীরও ফিরাই। আর দেখ, জাহাজগুলিও অতি প্রকাণ্ড, এবং প্রচণ্ড বায়ুতে চালিত হয়, তথাপি সে সকলকে অতি ক্ষুদ্র হাইল দ্বারা কর্ণধারের মনের ইচ্ছা যে দিকে হয়, সেই দিকে ফিরান যায়। তদ্রূপ জিহ্বাও ক্ষুদ্র অঙ্গ বটে, কিন্তু মহাদর্পের কথা কহে। দেখ, কেমন অল্প অগ্নি কেমন বৃহৎ বন প্রজ্বলিত করে! জিহ্বাও অগ্নি; আমাদের অঙ্গসমূহের মধ্যে জিহ্বা অধর্ম্মের জগৎ হইয়া রহিয়াছে; তাহা সমস্ত দেহ কলঙ্কিত করে, ও প্রকৃতির চক্রকে প্রজ্বলিত করে, এবং আপনি নরকানলে জ্বলিয়া উঠে। কারণ পশুর ও পক্ষীর, সরীসৃপের ও সমুদ্রচর জন্তুর সমস্ত স্বভাবকে মানবস্বভাব দ্বারা দমন করিতে পারা যায় ও দমন করা গিয়াছে; কিন্তু জিহ্বাকে দমন করিতে কোন মনুষ্যের সাধ্য নাই; উহা অশান্ত মন্দ বিষয়, মৃত্যুজনক বিষে পরিপূর্ণ। উহার দ্বারাই আমরা প্রভু পিতার ধন্যবাদ করি, আবার উহার দ্বারাই ঈশ্বরের সাদৃশ্যে জাত মনুষ্যদিগকে শাপ দিই। একই মুখ হইতে ধন্যবাদ ও শাপ বাহির হয়। হে আমার ভ্রাতৃগণ, এ সকল এমন হওয়া অনুচিত। উনুই কি একই ছিদ্র দিয়া মিষ্ট ও তিক্ত দুই প্রকার জল বাহির করে? হে আমার ভ্রাতৃগণ, ডুমুরগাছে কি জিতফল, অথবা দ্রাক্ষালতায় কি ডুমুরফল ধরিতে পারে? লোণা জলও মিষ্ট জল দিতে পারে না। তোমাদের মধ্যে জ্ঞানবান্‌ ও বুদ্ধিমান্‌ কে? সে সদাচরণ দ্বারা জ্ঞানের মৃদুতায় নিজ ক্রিয়া দেখাইয়া দিউক। কিন্তু তোমাদের হৃদয়ে যদি তিক্ত ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা রাখ, তবে সত্যের বিরুদ্ধে শ্লাঘা করিও না ও মিথ্যা কহিও না। সেই জ্ঞান এমন নয়, যাহা উপর হইতে নামিয়া আইসে, বরং তাহা পার্থিব, প্রাণিক, পৈশাচিক। কেননা যেখানে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা, সেইখানে অস্থিরতা ও সমুদয় দুষ্কর্ম্ম থাকে। কিন্তু যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট। আর যাহারা শান্তি-আচরণ করে, তাহাদের জন্য শান্তিতে ধার্ম্মিকতাফলের বীজ বপন করা যায়। তোমাদের মধ্যে কোথা হইতে যুদ্ধ ও কোথা হইতে বিবাদ উৎপন্ন হয়? তোমাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যে সকল সুখাভিলাষ যুদ্ধ করে, সে সকল হইতে কি নয়? তোমরা অভিলাষ করিতেছ, কিন্তু প্রাপ্ত হও না; তোমরা নরহত্যা ও ঈর্ষা করিতেছ, কিন্তু পাইতে পার না; তোমরা বিবাদ ও যুদ্ধ করিয়া থাক, কিছু প্রাপ্ত হও না, কারণ তোমরা যাচ্ঞা কর না। যাচ্ঞা করিতেছ, তথাপি ফল পাইতেছ না; কারণ মন্দ ভাবে যাচ্ঞা করিতেছ, যেন আপন আপন সুখাভিলাষে ব্যয় করিতে পার। হে ব্যভিচারিণীগণ, তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা? সুতরাং যে কেহ জগতের মিত্র হইতে বাসনা করে, সে আপনাকে ঈশ্বরের শত্রু করিয়া তুলে। অথবা তোমরা কি মনে কর যে, শাস্ত্রের বচন ফলহীন? যে আত্মা তিনি আমাদের অন্তরে বাস করাইয়াছেন, সেই আত্মা কি মাৎসর্য্যের নিমিত্ত স্নেহ করেন? বরং তিনি আরও অনুগ্রহ প্রদান করেন; এই কারণ শাস্ত্র বলে, “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।” অতএব তোমরা ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে। ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন। হে পাপিগণ, হস্ত শুচি কর; হে দ্বিমনা লোক সকল, হৃদয় বিশুদ্ধ কর। তাপিত ও শোকার্ত্ত হও, এবং রোদন কর; তোমাদের হাস্য শোকে, এবং আনন্দ বিষাদে পরিণত হউক। প্রভুর সাক্ষাতে নত হও, তাহাতে তিনি তোমাদিগকে উন্নত করিবেন। হে ভ্রাতৃগণ, পরস্পর পরীবাদ করিও না; যে ব্যক্তি ভ্রাতার পরীবাদ করে, কিম্বা ভ্রাতার বিচার করে, সে ব্যবস্থার পরীবাদ করে ও ব্যবস্থার বিচার করে। কিন্তু তুমি যদি ব্যবস্থার বিচার কর, তবে ব্যবস্থার পালনকারী না হইয়া বিচারকর্ত্তা হইয়াছ। একমাত্র ব্যবস্থাপক ও বিচারকর্ত্তা আছেন, তিনিই পরিত্রাণ করিতে ও বিনষ্ট করিতে পারেন। কিন্তু তুমি কে যে প্রতিবাসীর বিচার কর? এখন দেখ, তোমাদের কেহ কেহ বলে, অদ্য কিম্বা কল্য আমরা অমুক নগরে যাইব, এবং সেখানে এক বৎসর যাপন করিব, বাণিজ্য করিব ও লাভ করিব। তোমরা ত কল্যকার তত্ত্ব জান না; তোমাদের জীবন কি প্রকার? তোমরা ত বাষ্পস্বরূপ, যাহা ক্ষণেক দৃশ্য থাকে, পরে অন্তর্হিত হয়। উহার পরিবর্ত্তে বরং ইহা বল, ‘প্রভুর ইচ্ছা হইলেই আমরা বাঁচিয়া থাকিব, এবং এ কাজটী বা ও কাজটী করিব’। কিন্তু এখন তোমরা আপন আপন দর্পে শ্লাঘা করিতেছ; এই প্রকারের সমস্ত শ্লাঘা মন্দ। বস্তুতঃ যে কেহ সৎকর্ম্ম করিতে জানে, অথচ না করে, তাহার পাপ হয়। এখন দেখ, হে ধনবানেরা, তোমাদের উপরে যে সকল দুর্দ্দশা আসিতেছে, সে সকলের জন্য রোদন ও হাহাকার কর। তোমাদের ধন পচিয়া গিয়াছে, ও তোমাদের বস্ত্র সকল কীট-ভক্ষিত হইয়াছে; তোমাদের স্বর্ণ ও রৌপ্য কলঙ্কিত হইয়াছে; আর তাহার কলঙ্ক তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে, এবং অগ্নির ন্যায় তোমাদের মাংস খাইবে। তোমরা শেষকালে ধন সঞ্চয় করিয়াছ। দেখ, যে মজুরেরা তোমাদের ক্ষেত্রের শস্য কাটিয়াছে, তাহারা তোমাদের দ্বারা যে বেতনে বঞ্চিত হইয়াছে, তাহার চীৎকার করিতেছে, এবং সেই শস্যচ্ছেদকদের আর্ত্তনাদ বাহিনীগণের প্রভুর কর্ণে প্রবিষ্ট হইয়াছে। তোমরা পৃথিবীতে সুখভোগ ও বিলাস করিয়াছ, তোমরা হত্যার দিনে আপন আপন হৃদয় তৃপ্ত করিয়াছ। তোমরা ধার্ম্মিককে দোষী করিয়াছ, বধ করিয়াছ; তিনি তোমাদের প্রতিরোধ করেন না। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা প্রভুর আগমন পর্য্যন্ত দীর্ঘসহিষ্ণু থাক। দেখ, কৃষক ভূমির বহুমূল্য ফলের অপেক্ষা করে এবং যত দিন তাহা প্রথম ও শেষ বর্ষা না পায়, তত দিন তাহার বিষয়ে দীর্ঘসহিষ্ণু থাকে। তোমরাও দীর্ঘসহিষ্ণু থাক, আপন আপন হৃদয় সুস্থির কর, কেননা প্রভুর আগমন সন্নিকট। হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা এক জন অন্য জনের বিরুদ্ধে আর্ত্তস্বর করিও না, যেন বিচারিত না হও; দেখ, বিচারকর্ত্তা দ্বারের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন। হে ভ্রাতৃগণ, যে ভাববাদীরা প্রভুর নামে কথা বলিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকে দুঃখভোগের ও দীর্ঘসহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত বলিয়া মান। দেখ, যাহারা স্থির রহিয়াছে, তাহাদিগকে আমরা ধন্য বলি। তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ; প্রভুর পরিণামও দেখিয়াছ, ফলতঃ প্রভু স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়। আবার, হে আমার ভ্রাতৃগণ, আমার সর্ব্বপ্রধান কথা এই, তোমরা দিব্য করিও না; স্বর্গের কি পৃথিবীর কি অন্য কিছুরই দিব্য করিও না। বরং তোমাদের হাঁ হাঁ এবং না না হউক, পাছে বিচারে পতিত হও। তোমাদের মধ্যে কেহ কি দুঃখ ভোগ করিতেছে? সে প্রার্থনা করুক। কেহ কি প্রফুল্ল আছে? সে গান করুক। তোমাদের মধ্যে কেহ কি রোগগ্রস্ত? সে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান করুক; এবং তাঁহারা প্রভুর নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিয়া তাহার উপরে প্রার্থনা করুন। তাহাতে বিশ্বাসের প্রার্থনা সেই পীড়িত ব্যক্তিকে সুস্থ করিবে, এবং প্রভু তাহাকে উঠাইবেন; আর সে যদি পাপ করিয়া থাকে, তবে তাহার মোচন হইবে। অতএব তোমরা এক জন অন্য জনের কাছে আপন আপন পাপ স্বীকার কর, ও এক জন অন্য জনের নিমিত্ত প্রার্থনা কর, যেন সুস্থ হইতে পার। ধার্ম্মিকের বিনতি কার্য্যসাধনে মহাশক্তিযুক্ত। এলিয় আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী মনুষ্য ছিলেন; আর তিনি দৃঢ়তার সহিত প্রার্থনা করিলেন, যেন বৃষ্টি না হয়, এবং তিন বৎসর ছয় মাস ভূমিতে বৃষ্টি হইল না। পরে তিনি আবার প্রার্থনা করিলেন; আর আকাশ জল প্রদান করিল, এবং ভূমি নিজ ফল উৎপন্ন করিল। হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমাদের মধ্যে যদি কেহ সত্য হইতে ভ্রান্ত হয়, এবং কেহ তাহাকে ফিরাইয়া আনে, তবে জানিও, যে ব্যক্তি কোন পাপীকে তাহার পথ-ভ্রান্তি হইতে ফিরাইয়া আনে, সে তাহার প্রাণকে মৃত্যু হইতে রক্ষা করিবে, এবং পাপরাশি আচ্ছাদন করিবে। পিতর, যীশু খ্রীষ্টের প্রেরিত,—পন্ত, গালাতিয়া, কাপ্পাদকিয়া, এশিয়া ও বিথুনিয়া দেশে যে ছিন্নভিন্ন প্রবাসিগণ পিতা ঈশ্বরের পূর্ব্বজ্ঞান অনুসারে আত্মার পবিত্রীকরণে আজ্ঞাবহতার জন্য ও যীশু খ্রীষ্টের রক্তপ্রোক্ষণের জন্য মনোনীত হইয়াছেন, তাঁহাদের সমীপে। অনুগ্রহ ও শান্তি প্রচুররূপে তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম দিয়াছেন, অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকারের নিমিত্ত দিয়াছেন; সেই দায়াধিকার স্বর্গে তোমাদের নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে; এবং ঈশ্বরের শক্তিতে তোমরাও পরিত্রাণের নিমিত্ত বিশ্বাস দ্বারা রক্ষিত হইতেছ, যে পরিত্রাণ শেষকালে প্রকাশিত হইবার জন্য প্রস্তুত আছে। ইহাতে তোমরা উল্লাস করিতেছ, যদিও অবকাশমতে এখন অল্প কাল নানাবিধ পরীক্ষায় দুঃখার্ত্ত হইতেছ, যেন, সে সুবর্ণ নশ্বর হইলেও অগ্নি দ্বারা পরীক্ষিত হয়, তাহা অপেক্ষাও মহামূল্য তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে প্রশংসা, গৌরব ও সমাদরজনক হইয়া প্রত্যক্ষ হয়। তোমরা তাঁহাকে না দেখিয়াও প্রেম করিতেছ; এখন দেখিতে পাইতেছ না, তথাপি তাঁহাতে বিশ্বাস করিয়া অনির্ব্বচনীয় ও গৌরবযুক্ত আনন্দে উল্লাস করিতেছ, এবং তোমাদের বিশ্বাসের পরিণাম অর্থাৎ আত্মার পরিত্রাণ প্রাপ্ত হইতেছ। সেই পরিত্রাণের বিষয় ভাববাদিগণ সযত্নে আলোচনা ও অনুসন্ধান করিয়াছিলেন, তাঁহারা তোমাদের জন্য নিরূপিত অনুগ্রহের বিষয়ে ভাববাণী বলিতেন। তাঁহারা এই বিষয় অনুসন্ধান করিতেন, খ্রীষ্টের আত্মা, যিনি তাঁহাদের অন্তরে ছিলেন, তিনি যখন খ্রীষ্টের জন্য নিরূপিত বিবিধ দুঃখভোগ ও তদনুবর্ত্তী গৌরবের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেছিলেন, তখন তিনি কোন্‌ ও কি প্রকার সময়ের প্রতি লক্ষ্য করিয়াছিলেন। তাঁহাদের কাছে ইহা প্রকাশিত হইয়াছিল যে, তাঁহারা আপনাদের জন্য নয়, কিন্তু তোমাদেরই জন্য ঐ সকল বিষয়ের পরিচারক ছিলেন; সেই সকল বিষয় যাঁহারা স্বর্গ হইতে প্রেরিত পবিত্র আত্মার গুণে তোমাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করিয়াছেন, তাঁহাদের দ্বারা এখন তোমাদিগকে জ্ঞাত করা গিয়াছে; আর স্বর্গদূতেরা হেঁট হইয়া তাহা দেখিবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছেন। অতএব তোমরা আপন আপন মনের কটি বাঁধিয়া মিতাচারী হও, এবং যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে যে অনুগ্রহ তোমাদের নিকটে আনীত হইবে, তাহার অপেক্ষাতে সম্পূর্ণ প্রত্যাশা রাখ। আজ্ঞাবহতার সন্তান বলিয়া তোমরা তোমাদের পূর্ব্বকার অজ্ঞানতাকালের অভিলাষের অনুরূপ হইও না, কিন্তু যিনি তোমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, সেই পবিত্রতমের ন্যায় আপনারাও সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র হও; কেননা লেখা আছে, “তোমরা পবিত্র হইবে, কারণ আমি পবিত্র”। আর যিনি বিনা মুখাপেক্ষায় প্রত্যেক ব্যক্তির ক্রিয়ানুযায়ী বিচার করেন, তাঁহাকে যদি পিতা বলিয়া ডাক, তবে সভয়ে আপন আপন প্রবাসকাল যাপন কর। তোমরা ত জান, তোমাদের পিতৃপুরুষগণের সমর্পিত অলীক আচার ব্যবহার হইতে তোমরা ক্ষয়ণীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা, মুক্ত হও নাই, কিন্তু নির্দ্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরূপ খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্ত দ্বারা মুক্ত হইয়াছ। তিনি জগৎপত্তনের অগ্রে পূর্ব্বলক্ষিত ছিলেন, কিন্তু কালের পরিণামে তোমাদের নিমিত্ত প্রকাশিত হইলেন; তোমরা তাঁহারই দ্বারা সেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী হইয়াছ, যিনি তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উঠাইয়াছেন ও গৌরব দিয়াছেন; এইরূপে তোমাদের বিশ্বাস ও প্রত্যাশা ঈশ্বরের প্রতি রহিয়াছে। তোমরা সত্যের আজ্ঞাবহতায় অকল্পিত ভ্রাতৃপ্রেমের নিমিত্ত আপন আপন প্রাণকে বিশুদ্ধ করিয়াছ বলিয়া অন্তঃকরণে পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর; কারণ তোমরা ক্ষয়ণীয় বীর্য্য হইতে নয়, কিন্তু অক্ষয় বীর্য্য হইতে ঈশ্বরের জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য দ্বারা পুনর্জাত হইয়াছ। কেননা “মর্ত্ত্যমাত্র তৃণের তুল্য, ও তাহার সমস্ত কান্তি তৃণপুষ্পের তুল্য; তৃণ শুষ্ক হইয়া গেল, এবং পুষ্প ঝরিয়া পড়িল, কিন্তু প্রভুর বাক্য চিরকাল থাকে।” আর এ সেই সুসমাচারের বাক্য, যাহা তোমাদের নিকটে প্রচারিত হইয়াছে। অতএব তোমরা সমস্ত দুষ্টতা ও সমস্ত ছল এবং কপটতা ও মাৎসর্য্য ও সমস্ত পরীবাদ ত্যাগ করিয়া নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর, যেন তাহার গুণে পরিত্রাণের জন্য বৃদ্ধি পাও, যদি তোমরা এমন আস্বাদ পাইয়া থাক যে, প্রভু মঙ্গলময় । তোমরা তাঁহারই নিকটে,—মনুষ্যকর্ত্তৃক অগ্রাহ্য, কিন্তু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মনোনীত ও মহামূল্য জীবন্ত প্রস্তরের নিকটে —আসিয়া জীবন্ত প্রস্তরের ন্যায় আত্মিক গৃহস্বরূপে গাঁথিয়া তোলা যাইতেছ, যেন পবিত্র যাজকবর্গ হইয়া যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা ঈশ্বরের গ্রাহ্য আত্মিক বলি উৎসর্গ করিতে পার। কেননা শাস্ত্রে এই কথা পাওয়া যায়, “দেখ, আমি সিয়োনে কোণের এক মনোনীত মহামূল্য প্রস্তর স্থাপন করি; তাঁহার উপর যে বিশ্বাস করে, সে লজ্জিত হইবে না।” অতএব তোমরা যাহারা বিশ্বাস করিতেছ, ঐ মহামূল্যতা তোমাদেরই জন্য; কিন্তু যাহারা বিশ্বাস করে না, তাহাদের জন্য “যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল;” আবারা তাহা হইয়া উঠিল, “ব্যঘাতজনক প্রস্তর ও বিঘ্নজনক পাষাণ।” বাক্যের অবাধ্য হওয়াতে তাহারা ব্যাঘাত পায়, এবং তাহার জন্যই নিযুক্ত হইয়াছিল। কিন্তু তোমরা “মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ, যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর,” যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন। পূর্ব্বে তোমরা “প্রজা ছিলে না, কিন্তু এখন ঈশ্বরের প্রজা হইয়াছ; দয়া প্রাপ্ত ছিলে না কিন্তু এখন দয়া পাইয়াছ।” প্রিয়তমেরা, আমি নিবেদন করি, তোমরা বিদেশী ও প্রবাসী বলিয়া মাংসিক অভিলাষ সকল হইতে নিবৃত্ত হও, সেগুলি আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ; তাহা হইলে তাহারা যে বিষয়ে দুষ্কর্ম্মকারী বলিয়া তোমাদের পরীবাদ করে, স্বচক্ষে তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিলে সেই বিষয়ে তত্ত্বাবধানের দিনে ঈশ্বরের গৌরব করিবে। তোমরা প্রভুর নিমিত্ত মানবসৃষ্ট সমস্ত নিয়োগের বশীভূত হও, রাজার বশীভূত হও, তিনি প্রধান; দেশাধ্যক্ষদের বশীভূত হও, তাঁহারা দুরাচারদের প্রতিফল দিবার নিমিত্ত ও সদাচারদের প্রশংসার নিমিত্ত তাঁহার দ্বারা প্রেরিত। কেননা ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, যেন এইরূপে তোমরা সদাচরণ করিতে করিতে নির্ব্বোধ মনুষ্যদের অজ্ঞানতাকে নিরুত্তর কর। আপনাদিগকে স্বাধীন জান; আর স্বাধীনতাকে দুষ্টতার আবরণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে ঈশ্বরের দাস জান। সকলকে সমাদর কর, ভ্রাতৃসমাজকে প্রেম কর, ঈশ্বরকে ভয় কর, রাজাকে সমাদর কর। হে দাসগণ, তোমরা সম্পূর্ণ ভয়ের সহিত আপন আপন স্বামিগণের বশীভূত হও; কেবল সজ্জন ও শান্ত স্বামীদের নয়, কিন্তু কুটিল স্বামীদেরও বশীভূত হও। কেননা কেহ যদি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সংবেদ প্রযুক্ত অন্যায় ভোগ করিয়া দুঃখ সহ্য করে, তবে তাহাই সাধুবাদের বিষয়। বস্তুতঃ পাপ করিয়া চপেটাঘাত প্রাপ্ত হইলে যদি তোমরা সহ্য কর, তবে তাহাতে সুখ্যাতি কি? কিন্তু সদাচরণ করিয়া দুঃখ ভোগ করিলে যদি সহ্য কর, তবে তাহাই ত ঈশ্বরের কাছে সাধুবাদের বিষয়। কারণ তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ; কেননা খ্রীষ্টও তোমাদের নিমিত্ত দুঃখ ভোগ করিলেন, এ বিষয়ে তোমাদের জন্য এক আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন কর; “তিনি পাপ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই”। তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপর ভার রাখিতেন। তিনি আমাদের “পাপভার তুলিয়া লইয়া” আপনি নিজে দেহে কাষ্ঠের উপরে বহন করিলেন, যেন আমরা পাপের পক্ষে মরিয়া ধার্ম্মিকতার পক্ষে জীবিত হই; “তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমরা আরোগ্য প্রাপ্ত হইয়াছ”। কেননা তোমরা “মেষের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছিলে,” কিন্তু এখন তোমাদের প্রাণের পালক ও অধ্যক্ষের কাছে ফিরিয়া আসিয়াছ। তদ্রূপ, হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়। আর কেশবিন্যাস ও স্বর্ণাভরণ কিম্বা বস্ত্র পরিধানরূপ বাহ্য ভূষণ, তাহা নয়, কিন্তু হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য, মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার অক্ষয় শোভা, তাহাদের ভূষণ হউক; তাহাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য। কেননা পূর্ব্বকালের যে পবিত্র নারীগণ ঈশ্বরে প্রত্যাশা রাখিতেন, তাঁহারাও সেই প্রকারে আপনাদিগকে ভূষিত করিতেন, আপন আপন স্বামীর বশীভূত হইতেন; যেমন সারা অব্রাহামের আজ্ঞা মানিতেন, নাথ বলিয়া তাঁহাকে ডাকিতেন; তোমরা যদি সদাচরণ কর ও কোন মহাভয়ে ভীত না হও, তবে তাঁহারই সন্তান হইয়া উঠিয়াছ। তদ্রূপ, হে স্বামিগণ, স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্ব্বল পাত্র বলিয়া তাহাদের সহিত জ্ঞানপূর্ব্বক বাস কর, তাহাদিগকে আপনাদের সহিত জীবনের অনুগ্রহের সহাধিকারিণী জানিয়া সমাদর কর; যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়। অবশেষে বলি, তোমরা সকলে সমমনা, পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক; স্নেহবান্‌ ও নম্রমনা হও। মন্দের পরিশোধে মন্দ করিও না, এবং নিন্দার পরিশোধে নিন্দা করিও না; বরং আশীর্ব্বাদ কর, কেননা আশীর্ব্বাদের অধিকারী হইবার নিমিত্তই তোমরা আহূত হইয়াছ। কারণ “যে ব্যক্তি জীবন ভাল বাসিতে চায়, ও মঙ্গলের দিন দেখিতে চায়, সে মন্দ হইতে আপন জিহ্বাকে, ছলনাবাক্য হইতে আপন ওষ্ঠকে নিবৃত্ত করুক। সে মন্দ হইতে ফিরুক ও সদাচরণ করুক, শান্তির চেষ্টা করুক, ও তাহার অনুধাবন করুক। কেননা ধার্ম্মিকগণের প্রতি প্রভুর চক্ষু আছে; তাহাদের বিনতির প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে; কিন্তু প্রভুর মুখ দুরাচারদের প্রতিকূল।” আর যদি তোমরা সদাচরণের পক্ষে উদ্যোগী হও, তবে কে তোমাদের হিংসা করিবে? কিন্তু যদিও ধার্ম্মিকতার নিমিত্ত দুঃখভোগ কর, তবু তোমরা ধন্য। আর তোমরা উহাদের ভয়ে ভীত হইও না, এবং উদ্বিগ্ন হইও না, বরং হৃদয়মধ্যে খ্রীষ্টকে প্রভু বলিয়া পবিত্র করিয়া মান। যে কেহ তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাক। কিন্তু মৃদুতা ও ভয় সহকারে উত্তর দিও, সৎসংবেদ রক্ষা কর, যেন যাহারা তোমাদের খ্রীষ্টগত সদাচরণের দুর্নাম করে, তাহারা তোমাদের পরীবাদ করণ বিষয়ে লজ্জা পায়। কারণ দুরাচরণ জন্য দুঃখভোগ করণ অপেক্ষা বরং—ঈশ্বরের যদি এমন ইচ্ছা হয়—সদাচরণ জন্য দুঃখভোগ করা আরও ভাল। কারণ খ্রীষ্টও এক বার পাপসমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন—সেই ধার্ম্মিক ব্যক্তি অধার্ম্মিকদের নিমিত্ত—যেন আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যান। তিনি মাংসে হত, কিন্তু আত্মায় জীবিত হইলেন। আবার আত্মাতে গমন করিয়া কারাবদ্ধ সেই আত্মাদিগের কাছে ঘোষণা করিলেন, যাহারা পূর্ব্বকালে, নোহের সময়ে, জাহাজ প্রস্তুত হইতে হইতে যখন ঈশ্বরের দীর্ঘসহিষ্ণুতা বিলম্ব করিতেছিল, তখন অবাধ্য ছিল। সেই জাহাজে অল্প লোক, অর্থাৎ আটটী প্রাণ, জল দ্বারা রক্ষা পাইয়াছিল। আর এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম —অর্থাৎ মাংসের মালিন্যত্যাগ নয়, কিন্তু ঈশ্বরের নিকটে সৎসংবেদের নিবেদন—তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে। তিনি স্বর্গে গমন করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে আছেন; দূতগণও কর্ত্তৃত্ব সকল ও পরাক্রমসমূহ তাঁহার বশীকৃত হইয়াছে। অতএব খ্রীষ্ট মাংসে দুঃখভোগ করিয়াছেন বলিয়া তোমরাও সেই ভাবে আপনাদিগকে সজ্জীভূত কর—কেননা মাংসে যাহার দুঃখভোগ হইয়াছে, সে পাপ হইতে বিরত হইয়াছে— যেন আর মনুষ্যদের অভিলাষে নয়, কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছায় মাংসবাসের অবশিষ্ট কাল যাপন কর। কেননা পরজাতীয়দের বাসনা সাধন করিয়া, লম্পটতা, সুখাভিলাষ, মদ্যপান, রঙ্গরস পানার্থক সভা ও ঘৃণার্হ প্রতিমাপূজারূপ পথে চলিয়া যে কাল অতীত হইয়াছে, তাহাই যথেষ্ট। এ বিষয়ে তোমরা উহাদের সঙ্গে একই নষ্টামির পঙ্কের দিকে ধাবমান হইতেছ না দেখিয়া তাহারা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিয়া নিন্দা করে। কিন্তু যিনি জীবিত ও মৃত সকলের বিচার করিতে উদ্যত তাঁহারই কাছে উহাদিগকে নিকাশ দিতে হইবে। কারণ এই অভিপ্রায়ে মৃতগণের কাছেও সুসমাচার প্রচারিত হইয়াছিল, যেন তাহারা মনুষ্যদের অনুরূপে মাংসে বিচারিত হয়, কিন্তু ঈশ্বরের অনুরূপে আত্মায় জীবিত থাকে। কিন্তু সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; অতএব সংযমশীল হও, এবং প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক। সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর; কেননা “প্রেম পাপরাশি আচ্ছাদন করে ।” বিনা বচসাতে পরস্পর অতিথি সেবা কর। তোমরা যে যেমন অনুগ্রহদান পাইয়াছ, তদনুসারে ঈশ্বরের বহুবিধ অনুগ্রহ-ধনের উত্তম অধ্যক্ষের মত পরস্পর পরিচর্য্যা কর। যদি কেহ কথা বলে, সে এমন বলুক, যেন ঈশ্বরের বাণী বলিতেছে; যদি পরিচর্য্যা করে, সে ঈশ্বর-দত্ত শক্তি অনুসারে করুক; যেন সর্ব্ববিষয়ে যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা ঈশ্বর গৌরবান্বিত হন। মহিমা ও পরাক্রম যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে তাঁহারই। আমেন। প্রিয়েরা, তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে, ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না; বরং যে পরিমাণে খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগী হইতেছ, সেই পরিমাণে আনন্দ কর, যেন তাঁহার প্রতাপের প্রকাশকালে উল্লাস সহকারে আনন্দ করিতে পার। তোমরা যদি খ্রীষ্টের নাম প্রযুক্ত তিরস্কৃত হও, তবে তোমরা ধন্য; কেননা প্রতাপের আত্মা, এমন কি, ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের উপরে অবস্থিতি করিতেছেন। তোমাদের মধ্যে কেহ যেন নরঘাতক কি চোর কি দুষ্কর্ম্মকারী কি পরাধিকারচর্চ্চক বলিয়া দুঃখভোগ না করে। কিন্তু যদি কেহ খ্রীষ্টীয়ান বলিয়া দুঃখভোগ করে, তবে সে লজ্জিত না হউক; কিন্তু এই নামে ঈশ্বরের গৌরব করুক। কেননা ঈশ্বরের গৃহে বিচার আরম্ভ হইবার সময় হইল; আর যদি তাহা প্রথমে আমাদিগেতে আরম্ভ হয়, তবে যাহারা ঈশ্বরের সুসমাচারের অবাধ্য, তাহাদের পরিণাম কি হইবে? আর ধার্ম্মিকের পরিত্রাণ যদি কষ্টে হয়, তবে ভক্তিহীন ও পাপী কোথায় মুখ দেখাইবে? অতএব যাহারা ঈশ্বরের ইচ্ছাক্রমে দুঃখভোগ করে, তাহারা সদাচরণ করিতে করিতে আপন আপন প্রাণকে বিশ্বস্ত সৃষ্টিকর্ত্তার হস্তে গচ্ছিত রাখুক। অতএব তোমাদের মধ্যে যে প্রাচীনবর্গ আছেন, তাঁহাদিগকে আমি—সহপ্রাচীন, খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সাক্ষী, এবং প্রকাশিতব্য ভাবী প্রতাপের সহভাগী আমি—বিনতি করিতেছি; তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে পাল আছে, তাহা পালন কর; অধ্যক্ষের কার্য্য কর, আবশ্যকতা প্রযুক্ত নয়, কিন্তু ইচ্ছাপূর্ব্বক, ঈশ্বরের অভিমতে, কুৎসিত লাভার্থে নয়, কিন্তু উৎসুকভাবে কর; নিরূপিত অধিকারের উপরে কর্ত্তৃত্বকারীরূপে নয়, কিন্তু পালের আদর্শ হইয়াই কর। তাহাতে প্রধান পালক প্রকাশিত হইলে তোমরা অম্লান প্রতাপমুকুট পাইবে। তদ্রূপ, হে যুবকেরা, তোমরা প্রাচীনদের বশীভূত হও; আর তোমরা সকলেই এক জন অন্যের সেবার্থে নম্রতায় কটিবন্ধন কর, কেননা “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।” অতএব তোমরা ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হও, যেন তিনি উপযুক্ত সময়ে তোমাদিগকে উন্নত করেন; তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন। তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক; তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে। তোমরা বিশ্বাসে অটল থাকিয়া তাহার প্রতিরোধ কর; তোমরা জান, জগতে অবস্থিত তোমাদের ভ্রাতৃবর্গেও সেই প্রকার নানা দুঃখভোগ সম্পন্ন হইতেছে। আর সমস্ত অনুগ্রহের ঈশ্বর, যিনি তোমাদিগকে খ্রীষ্টে আপনার অনন্ত প্রতাপ প্রদানার্থে আহ্বান করিয়াছেন, তিনি আপনি তোমাদের ক্ষণিক দুঃখভোগের পর তোমাদিগকে পরিপক্ব, সুস্থির, সবল, বদ্ধমূল করিবেন। যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে তাঁহারই পরাক্রম হউক। আমেন। বিশ্বস্ত ভ্রাতা সীলের দ্বারা—তাঁহাকে আমি সেইরূপই জ্ঞান করি—সংক্ষেপে তোমাদিগকে লিখিয়া প্রবোধ দিলাম, এবং ইহা যে ঈশ্বরের সত্য অনুগ্রহ, এমন সাক্ষ্যও দিলাম; তোমরা ইহাতে স্থির থাক। তোমাদের সহমনোনীতা বাবিলস্থা [মণ্ডলী] এবং আমার পুত্র মার্ক তোমাদিগকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। তোমরা প্রেমচুম্বনে পরস্পর মঙ্গলবাদ কর। তোমরা যত লোক খ্রীষ্টে আছ, তোমাদের সকলের প্রতি শান্তি বর্ত্তুক। শিমোন পিতর, যীশু খ্রীষ্টের দাস ও প্রেরিত—যাঁহারা আমাদের ঈশ্বরের ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের ধার্ম্মিকতায় আমাদের সহিত সমরূপ বহুমূল্য বিশ্বাস প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাঁহাদের সমীপে। ঈশ্বরে এবং আমাদের প্রভু যীশুর তত্ত্বজ্ঞানে অনুগ্রহ ও শান্তি প্রচুররূপে তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। কারণ যিনি নিজ গৌরবে ও সদ্‌গুণে আমাদিগকে আহ্বান করিয়াছেন, তাঁহার তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা তাঁহার ঈশ্বরীয় শক্তি আমাদিগকে জীবন ও ভক্তি সম্বন্ধীয় সমস্ত বিষয় প্রদান করিয়াছে। আর ঐ গৌরবে ও উৎকর্ষে তিনি আমাদিগকে মহামূল্য অথচ অতি মহৎ প্রতিজ্ঞা সকল প্রদান করিয়াছেন, যেন তদ্দ্বারা তোমরা অভিলাষমূলক সংসারব্যাপী ক্ষয় হইতে পলায়ন করিয়া, ঈশ্বরীয় স্বভাবের সহভাগী হও। আর ইহারই জন্য তোমরা সম্পূর্ণ যত্ন প্রয়োগ করিয়া আপনাদের বিশ্বাসে সদ্‌গুণ, ও সদ্‌গুণে জ্ঞান, ও জ্ঞানে জিতেন্দ্রিয়তা, ও জিতেন্দ্রিয়তায় ধৈর্য্য, ও ধৈর্য্যে ভক্তি, ও ভক্তিতে ভ্রাতৃস্নেহ, ও ভ্রাতৃস্নেহে প্রেম যোগাও। কেননা এই সমস্ত যদি তোমাদিগকে থাকে ও উপচিয়া পড়ে, তবে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে তোমাদিগকে অলস কি ফলহীন থাকিতে দিবে না। কারণ এই সমস্ত যাহার নাই, সে অন্ধ, অদূরদর্শী, আপন পূর্ব্বপাপসমূহের মার্জ্জনা ভুলিয়া গিয়াছে। অতএব, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা যে আহূত ও মনোনীত, তাহা নিশ্চয় করিতে অধিক যত্ন কর, কেননা এ সকল করিলে, তোমরা কখনও উছোট খাইবে না; কারণ এইরূপে আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনন্ত রাজ্যে প্রবেশ করিবার অধিকার প্রচুররূপে তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে। এই কারণ আমি তোমাদিগকে এই সকল সর্ব্বদা স্মরণ করাইয়া দিতে প্রস্তুত থাকিব; যদিও তোমরা এ সকল জান, এবং বর্ত্তমান সত্যে সুস্থিরও আছ। আর আমি যত দিন এই তাম্বুতে থাকি, তত দিন তোমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিয়া জাগ্রৎ রাখা বিহিত জ্ঞান করি। কারণ আমি জানি, আমার এই তাম্বু পরিত্যাগ শীঘ্রই ঘটিবে, তাহা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টই আমাকে জানাইয়াছেন। আর তোমরা যাহাতে আমার যাত্রার পরে সর্ব্বদা এই সকল স্মরণ করিতে পার, এমন যত্নও করিব। কারণ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরাক্রম ও আগমনের বিষয় যখন তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছিলাম, তখন আমরা কৌশলকল্পিত গল্পের অনুগামী হই নাই, কিন্তু তাঁহার মহিমার চাক্ষুষ সাক্ষী হইয়াছিলাম। ফলতঃ তিনি পিতা ঈশ্বর হইতে সমাদর ও গৌরব পাইয়াছিলেন, সেই মহিমাযুক্ত প্রতাপ কর্ত্তৃক তাঁহার কাছে এই বাণী উপনীত হইয়াছিল, “ইনিই আমার পুত্র, আমার প্রিয়তম, ইহাঁতেই আমি প্রীত।” আর স্বর্গ হইতে উপনীত সেই বাণী আমরাই শুনিয়াছি, যখন তাঁহার সঙ্গে পবিত্র পর্ব্বতে ছিলাম। আর ভাববাণীর বাক্য দৃঢ়তর হইয়া আমাদের নিকটে রহিয়াছে; তোমরা যে সেই বাণীর প্রতি মনোযোগ করিতেছ, তাহা ভালই করিতেছ; তাহা এমন প্রদীপের তুল্য, যাহা যে পর্য্যন্ত দিনের আরম্ভ না হয় এবং প্রভাতীয় তারা তোমাদের হৃদয়ে উদিত না হয়, সেই পর্য্যন্ত অন্ধকারময় স্থানে দীপ্তি দেয়। প্রথমে ইহা জ্ঞাত হও যে, শাস্ত্রীয় কোন ভাববাণী বক্তার নিজ ব্যাখ্যার বিষয় নয়; কারণ ভাববাণী কখনও মনুষ্যের ইচ্ছাক্রমে উপনীত হয় নাই, কিন্তু মনুষ্যেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়া ঈশ্বর হইতে যাহা পাইয়াছেন, তাহাই বলিয়াছেন। কিন্তু প্রজাবৃন্দের মধ্যে ভাক্ত ভাববাদিগণও উৎপন্ন হইয়াছিল; সেই প্রকারে তোমাদের মধ্যেও ভাক্ত গুরুরা উপস্থিত হইবে, তাহারা গোপনে বিনাশজনক দলভেদ উপস্থিত করিবে, যিনি তাহাদিগকে ক্রয় করিয়াছেন, সেই অধিপতিকেও অস্বীকার করিবে, এইরূপে শীঘ্র আপনাদের বিনাশ ঘটাইবে। আর অনেকে তাহাদের স্বৈরাচারের অনুগামী হইবে; তাহাদের কারণ সত্যের পথ নিন্দিত হইবে। লোভের বশে তাহারা কল্পিত বাক্য দ্বারা তোমাদের হইতে অর্থলাভ করিবে; তাহাদের বিচারাজ্ঞা দীর্ঘকাল বিলম্ব করে নাই, এবং তাহাদের বিনাশ ঢুলিয়া পড়ে নাই। কারণ ঈশ্বর পাপে পতিত দূতগণকে ক্ষমা করেন নাই, কিন্তু নরকে ফেলিয়া বিচারার্থে রক্ষিত হইবার জন্য অন্ধকারের কারাকূপে সমর্পণ করিলেন। আর তিনি পুরাতন জগতের প্রতি মমতা করেন নাই, কিন্তু যখন ভক্তিহীনদের জগতে জলপ্লাবন আনিলেন, তখন আর সাত জনের সহিত ধার্ম্মিকতার প্রচারক নোহকে রক্ষা করিলেন। আর সদোম ও ঘমোরা নগর ভস্মীভূত করিয়া উৎপাটনরূপ দণ্ড দিলেন, যাহারা ভক্তিবিরুদ্ধ আচরণ করিবে, তাহাদের দৃষ্টান্তস্বরূপ করিলেন; আর সেই ধার্ম্মিক লোটকে উদ্ধার করিলেন, যিনি ধর্ম্মহীনদের স্বৈরাচারে ক্লিষ্ট হইতেন। কেননা সেই ধার্ম্মিক ব্যক্তি তাহাদের মধ্যে বাস করিতে করিতে, দেখিয়া শুনিয়া তাহাদের অধর্ম্মকার্য্য প্রযুক্ত দিন দিন আপন ধর্ম্মশীল প্রাণকে যাতনা দিতেন। ইহাতে জানি, প্রভু ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে, এবং অধার্ম্মিকদিগকে দণ্ডাধীনে বিচারদিনের জন্য রাখিতে জানেন। বিশেষতঃ যাহারা মাংসের অনুবর্ত্তী হইয়া অশুচি ভোগের অভিলাষে চলে, ও প্রভুত্ব অবজ্ঞা করে, তাহাদিগকে দণ্ড দিবেন। তাহারা দুঃসাহসী, স্বেচ্ছাচারী; যাহারা গৌরবের পাত্র, তাহাদের নিন্দা করিতে ভয় করে না। স্বর্গদূতগণ যদিও বলে ও পরাক্রমে মহত্তর, তথাপি প্রভুর কাছে তাঁহারাও উহাঁদের বিরুদ্ধে নিন্দাপূর্ণ বিচার উপস্থিত করেন না। কিন্তু ইহারা, ধৃত হইবার ও ক্ষয় পাইবার নিমিত্ত জাত বুদ্ধিবিহীন প্রাণীমাত্র পশুদের ন্যায়, যাহা না বুঝে, তাহার নিন্দা করিতে করিতে আপনাদের ক্ষয়ে ক্ষয় পাইবে, অন্যায়ের বেতনস্বরূপে অন্যায় ভোগ করিবে। তাহারা দিনমানে উদরতৃপ্তিকে সুখ জ্ঞান করে; তাহারা কলঙ্ক ও মলস্বরূপ, তাহারা তোমাদের সহিত ভোজন পান করিয়া আপন আপন প্রেমভোজে বিলাস করে। তাহাদের চক্ষু ব্যভিচারে পরিপূর্ণ এবং পাপ হইতে নিরস্ত হইতে পারে না; তাহারা চঞ্চলমতিদিগকে প্রলোভিত করে; তাহাদের হৃদয় অর্থলালসায় অভ্যস্ত; তাহারা শাপের সন্তান। তাহারা সোজা পথ ত্যাগ করিয়া বিপথগামী হইয়াছে, বিয়োরের পুত্র বিলিয়মের পথানুগামী হইয়াছে; সেই ব্যক্তি ত অধার্ম্মিকতার বেতন ভাল বাসিত; কিন্তু সে নিজ অপরাধের জন্য তিরস্কৃত হইল; এক বাক্‌শক্তিহীন গর্দ্দভ মনুষ্যের রবে কথা বলিয়া সেই ভাববাদীর ক্ষিপ্ততা নিবারণ করিল। এই লোকেরা নির্জল উনুই, ঝড়ে চালিত কুজ্‌ঝটিকা, তাহাদের জন্য ঘোরতর অন্ধকার সঞ্চিত রহিয়াছে। কারণ তাহারা অসার গর্ব্বের কথা কহিয়া মাংসিক সুখাভিলাষে, লম্পটতায়, সেই লোকদিগকে প্রলোভিত করে, যাহারা ভ্রমাচারীদের হইতে সম্প্রতি পলায়ন করিতেছে। তাহারা তাহাদের কাছে স্বাধীনতার প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু আপনারা ক্ষয়ের দাস; কেননা যে যাহার দ্বারা পরাভূত, সে তাহার দাসত্বে আনীত। কারণ আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞানে সংসারের অশুচি বিষয়সমূহ এড়াইবার পর যদি তাহারা পুনরায় তাহাতে পাশবদ্ধ হইয়া পরাভূত হয়, তবে তাহাদের প্রথম দশা অপেক্ষা শেষ দশা আরও মন্দ হইয়া পড়ে। কেননা ধার্ম্মিকতার পথ জানিয়া তাহাদের কাছে সমর্পিত পবিত্র আজ্ঞা হইতে সরিয়া যাওয়া অপেক্ষা বরং সেই পথ অজ্ঞাত থাকা তাহাদের পক্ষে আরও ভাল ছিল। তাহাদিগেতে এই সত্য প্রবাদ ফলিয়াছে,— “কুকুর ফিরে আপন বমির দিকে,” আর ধৌত শূকর ফিরে কাদায় গড়াগড়ি দিতে। এখন প্রিয়তমেরা, আমি এই দ্বিতীয় পত্র তোমাদিগকে লিখিতেছি। উভয় পত্রে তোমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিয়া তোমাদের সরল চিত্তকে জাগ্রত করিতেছি, যেন তোমরা পবিত্র ভাববাদিগণ কর্ত্তৃক পূর্ব্বকথিত বাক্য সকল, এবং তোমাদের প্রেরিতগণের দ্বারা দত্ত ত্রাণকর্ত্তা প্রভুর আজ্ঞা স্মরণ কর। প্রথমে ইহা জ্ঞাত হও যে, শেষকালে উপহাসের সহিত উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে; তাহারা আপন আপন অভিলাষ অনুসারে চলিবে, এবং বলিবে, তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়? কেননা যে অবধি পিতৃলোকেরা নিদ্রাগত হইয়াছেন, সেই অবধি সমস্তই সৃষ্টির আরম্ভ অবধি যেমন, তেমনই রহিয়াছে। বস্তুতঃ সেই লোকেরা ইচ্ছাপূর্ব্বক ইহা ভুলিয়া যায় যে, আকাশমণ্ডল, এবং জল হইতে ও জল দ্বারা স্থিতিপ্রাপ্ত পৃথিবী ঈশ্বরের বাক্যের গুণে প্রাক্কালে ছিল; তদ্দ্বারা তখনকার জগৎ জলে আপ্লাবিত হইয়া নষ্ট হইয়াছিল। আবার সেই বাক্যের গুণে এই বর্ত্তমান কালের আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী অগ্নির নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে, ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের দিন পর্য্যন্ত রক্ষিত হইতেছে। কিন্তু প্রিয়তমেরা, তোমরা এই কথা ভুলিও না যে, প্রভুর কাছে এক দিন সহস্র বৎসরের সমান, এবং সহস্র বৎসর এক দিনের সমান। প্রভু নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা। কিন্তু প্রভুর দিন চোরের ন্যায় আসিবে; তখন আকাশমণ্ডল হূহূ শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে, এবং পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল পুড়িয়া যাইবে। এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই, যে দিনের হেতু আকাশমণ্ডল জ্বলিয়া বিলীন হইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া গলিয়া যাইবে। কিন্তু তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে। অতএব, প্রিয়তমেরা, তোমরা যখন এই সকলের অপেক্ষা করিতেছ, তখন যত্ন কর, যেন তাঁহার কাছে তোমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়! আর আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান কর; যেমন আমাদের প্রিয় ভ্রাতা পৌলও তাঁহাকে দত্ত জ্ঞান অনুসারে তোমাদিগকে লিখিয়াছেন, আর যেমন তাঁহার সকল পত্রেও এই বিষয়ের প্রসঙ্গ করিয়া তিনি এই প্রকার কথা কহেন; তাহার মধ্যে কোন কোন কথা বুঝা কষ্টকর; অজ্ঞান ও চঞ্চল লোকেরা যেমন অন্য সমস্ত শাস্ত্রলিপি, তেমনি সেই কথাগুলিরও বিরূপ অর্থ করে, আপনাদেরই বিনাশার্থে করে। অতএব, প্রিয়তমেরা, তোমরা এ সকল অগ্রে জানিয়া সাবধান থাক, পাছে ধর্ম্মহীনদের ভ্রান্তিতে আকর্ষিত হইয়া নিজ স্থিরতা হইতে ভ্রষ্ট হও; কিন্তু আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ ও জ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও। এখন ও অনন্তকাল পর্য্যন্ত তাঁহার গৌরব হউক। আমেন। যাহা আদি হইতে ছিল, যাহা আমরা শুনিয়াছি, যাহা স্বচক্ষে দেখিয়াছি, যাহা নিরীক্ষণ করিয়াছি এবং স্বহস্তে স্পর্শ করিয়াছি, জীবনের সেই বাক্যের বিষয় (লিখিতেছি) —আর সেই জীবন প্রকাশিত হইলেন, এবং আমরা দেখিয়াছি, ও সাক্ষ্য দিতেছি; এবং যিনি পিতার কাছে ছিলেন ও আমাদের কাছে প্রকাশিত হইলেন, সেই আনন্ত জীবনস্বরূপের সংবাদ তোমাদিগকে দিতেছি, —আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহার সংবাদ তোমাদিগকেও দিতেছি, যেন আমাদের সহিত তোমাদেরও সহভাগিতা হয়। আর আমাদের যে সহভাগিতা, তাহা পিতার এবং তাঁহার পুত্র যীশু খ্রীষ্টের সহিত। আমাদের আনন্দ যেন সম্পূর্ণ হয়, এই জন্য এ সকল লিখিতেছি। আমরা যে বার্ত্তা তাঁহার কাছে শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইতেছি, তাহা এই, ঈশ্বর জ্যোতি, এবং তাঁহার মধ্যে অন্ধকারের লেশমাত্র নাই। আমরা যদি বলি যে, তাঁহার সহিত আমাদের সহভাগিতা আছে, আর যদি অন্ধকারে চলি, তবে মিথ্যা বলি, সত্য আচরণ করি না। কিন্তু তিনি যেমন জ্যোতিতে আছেন, আমরাও যদি তেমনি জ্যোতিতে চলি, তবে পরস্পর আমাদের সহভাগিতা আছে, এবং তাঁহার পুত্র যীশুর রক্ত আমাদিগকে সমস্ত পাপ হইতে শুচি করে। আমরা যদি বলি যে, আমাদের পাপ নাই, তবে আপনারা আপনাদিগকে ভুলাই, এবং সত্য আমাদের অন্তরে নাই। যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্ম্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন, এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্ম্মিকতা হইতে শুচি করিবেন। যদি আমরা বলি যে, পাপ করি নাই, তবে তাঁহাকে মিথ্যাবাদী করি, এবং তাঁহার বাক্য আমাদের অন্তরে নাই। হে আমার বৎসেরা, তোমাদিগকে এই সকল লিখিতেছি, যেন তোমরা পাপ না কর। আর যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট। আর তিনিই আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত, কেবল আমাদের নয়, কিন্তু সমস্ত জগতেরও পাপার্থক। আর আমরা ইহাতেই জানিতে পারি যে, তাঁহাকে জানি, যদি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি। যে ব্যক্তি বলে, আমি তাঁহাকে জানি, তথাপি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন না করে, সে মিথ্যাবাদী এবং তাহার অন্তরে সত্য নাই। কিন্তু যে তাঁহার বাক্য পালন করে, তাহার অন্তরে সত্যই ঈশ্বরের প্রেম সিদ্ধ হইয়াছে। ইহাতেই আমরা জানিতে পারি যে, তাঁহাতে আছি; যে বলে, আমি তাঁহাতে থাকি, তাহার উচিত যে তিনি যেরূপ চলিতেন, সেও তদ্রূপ চলে। প্রিয়তমেরা, আমি তোমাদিগকে নূতন আজ্ঞা লিখিতেছি না; বরং এমন এক পুরাতন আজ্ঞা লিখিতেছি, যাহা তোমরা আদি হইতে পাইয়াছ; তোমরা যে বাক্য শুনিয়াছ, তাহাই এই পুরাতন আজ্ঞা। আবার আমি তোমাদিগকে এক নূতন আজ্ঞা লিখিতেছি, ইহা তাঁহাতে ও তোমাদিগেতে সত্য; কারণ অন্ধকার ঘুচিয়া যাইতেছে, এবং প্রকৃত জ্যোতি এখন প্রকাশ পাইতেছে। যে বলে, আমি জ্যোতিতে আছি, আর আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে এখনও অন্ধকারে রহিয়াছে। যে আপন ভ্রাতাকে প্রেম করে, সে জ্যোতিতে থাকে, এবং তাহার অন্তরে বিঘ্নের কারণ নাই। কিন্তু যে আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে অন্ধকারে আছে, এবং অন্ধকারে চলে, আর কোথায় যায় তাহা জানে না, কারণ অন্ধকার তাহার চক্ষু অন্ধ করিয়াছে। বৎসেরা, আমি তোমাদিগকে লিখিতেছি, কারণ তাঁহার নামের গুণে তোমাদের পাপসমূহের ক্ষমা হইয়াছে। পিতারা, তোমাদিগকে লিখিতেছি, কারণ যিনি আদি হইতে আছেন, তোমরা তাঁহাকে জান। যুবকেরা, তোমাদিগকে লিখিতেছি, কারণ তোমরা সেই পাপাত্মাকে জয় করিয়াছ। শিশুগণ, তোমাদিগকে লিখিলাম, কারণ তোমরা পিতাকে জান। পিতারা, তোমাদিগকে লিখিলাম, কারণ যিনি আদি হইতে আছেন, তোমরা তাঁহাকে জান। যুবকেরা, তোমাদিগকে লিখিলাম, কারণ তোমরা বলবান্‌ এবং ঈশ্বরের বাক্য তোমাদের অন্তরে বাস করে, আর তোমরা সেই পাপাত্মাকে জয় করিয়াছ। তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে। আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী। শিশুগণ, শেষকাল উপস্থিত, আর তোমরা যেমন শুনিয়াছ যে, খ্রীষ্টারি আসিতেছে, তেমনি এখনই অনেক খ্রীষ্টারি হইয়াছে; ইহাতে আমরা জানি যে, শেষকাল উপস্থিত। তাহারা আমাদের হইতে বাহির হইয়াছে; কিন্তু আমাদের ছিল না; কেননা যদি আমাদের হইত, তবে আমাদের সঙ্গে থাকিত; কিন্তু তাহারা বাহির হইয়াছে, যেন প্রকাশ হইয়া পড়ে যে, সকলে আমাদের নয়। আর তোমরা সেই পবিত্রতম হইতে অভিষেক পাইয়াছ, ও সকলেই জ্ঞান পাইয়াছ । তোমরা সত্য জান না বলিয়া যে আমি তোমাদিগকে লিখিলাম, তাহা নয়; বরং সত্য জান, এবং কোন মিথ্যা কথা সত্য হইতে হয় না বলিয়া লিখিলাম। যীশুই খ্রীষ্ট, ইহা যে অস্বীকার করে, সে বই আর মিথ্যাবাদী কে? সেই ব্যক্তি খ্রীষ্টারি, যে পিতাকে ও পুত্রকে অস্বীকার করে। যে কেহ পুত্রকে অস্বীকার করে, সে পিতাকেও পায় নাই; যে ব্যক্তি পুত্রকে স্বীকার করে, সে পিতাকেও পাইয়াছে। তোমরা আদি হইতে যাহা শুনিয়াছ, তাহা তোমাদের অন্তরে থাকুক; আদি হইতে যাহা শুনিয়াছ, তাহা যদি তোমাদের অন্তরে থাকে, তবে তোমরাও পুত্রে ও পিতাতে থাকিবে। আর ইহা তাঁহারই সেই প্রতিজ্ঞা, যাহা তিনি আপনি আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তাহা অনন্ত জীবন। যাহারা তোমাদিগকে ভ্রান্ত করিতে চায়, তাহাদের বিষয়ে এই সকল তোমাদিগকে লিখিলাম। আর তোমরা তাঁহা হইতে যে অভিষেক পাইয়াছ, তাহা তোমাদের অন্তরে রহিয়াছে, এবং কেহ যে তোমাদিগকে শিক্ষা দেয়, ইহাতে তোমাদের প্রয়োজন নাই; কিন্তু তাঁহার সেই অভিষেক যেমন সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিতেছে, এবং তাহা যেমন সত্য, মিথ্যা নয়, এমন কি, তাহা যেমন তোমাদিগকে শিক্ষা দিয়াছে, তেমনি তোমরা তাঁহাতে থাক । আর এখন, হে বৎসেরা, তাঁহাতে থাক, যেন তিনি যখন প্রকাশিত হন, তখন আমরা সাহসযুক্ত হই, তাঁহার আগমনে তাঁহা হইতে লজ্জিত না হই। যদি জান যে তিনি ধার্ম্মিক, তবে ইহাও জানিতে পার, যে কেহ ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহা হইতে জাত। দেখ, পিতা আমাদিগকে কেমন প্রেম প্রদান করিয়াছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান বলিয়া আখ্যাত হই; আর আমরা তাহাই বটে। এই জন্য জগৎ আমাদিগকে জানে না, কারণ সে তাঁহাকে জানে নাই। প্রিয়তমেরা, এখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান; এবং কি হইব, তাহা এ পর্য্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই। আমরা জানি, তিনি যখন প্রকাশিত হইবেন, তখন আমরা তাঁহার সমরূপ হইব; কারণ তিনি যেমন আছেন, তাঁহাকে তেমনি দেখিতে পাইব। আর তাঁহার উপরে এই প্রত্যাশা যে কাহারও আছে, সে আপনাকে বিশুদ্ধ করে, যেমন তিনি বিশুদ্ধ। যে কেহ পাপাচরণ করে, সে ব্যবস্থালঙ্ঘনও করে, আর ব্যবস্থালঙ্ঘনই পাপ। আর তোমরা জান, পাপভার লইয়া যাইবার নিমিত্ত তিনি প্রকাশিত হইলেন, এবং তাঁহাতে পাপ নাই। যে কেহ তাঁহাতে থাকে, সে পাপ করে না; যে কেহ পাপ করে, সে তাঁহাকে দেখে নাই এবং জানেও নাই। বৎসেরা, কেহ যেন তোমাদিগকে ভ্রান্ত না করে; যে ধর্ম্মাচরণ করে সে ধার্ম্মিক, যেমন তিনি ধার্ম্মিক। যে পাপাচরণ করে, সে দিয়াবলের; কেননা দিয়াবল আদি হইতে পাপ করিতেছে, ঈশ্বরের পুত্র এই জন্যই প্রকাশিত হইলেন, যেন দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করেন। যে কেহ ঈশ্বর হইতে জাত, সে পাপাচরণ করে না, কারণ তাঁহার বীর্য্য তাহার অন্তরে থাকে; এবং সে পাপ করিতে পারে না, কারণ সে ঈশ্বর হইতে জাত। ইহাতে ঈশ্বরের সন্তানগণ এবং দিয়াবলের সন্তানগণ প্রকাশ হইয়া পড়ে; যে কেহ ধর্ম্মাচরণ না করে, এবং যে ব্যক্তি আপন ভ্রাতাকে প্রেম না করে, সে ঈশ্বরের লোক নয়। কেননা তোমরা আদি হইতে যে বার্ত্তা শুনিয়াছ, তাহা এই, আমাদের পরস্পর প্রেম করা কর্ত্তব্য; কয়িন যেমন সেই পাপাত্মার লোক, এবং আপন ভ্রাতাকে বধ করিয়াছিল, তেমন যেন না হই। আর সে কেন তাঁহাকে বধ করিয়াছিল? কারণ এই যে, তাহার নিজের কার্য্য মন্দ, কিন্তু তাহার ভ্রাতার কার্য্য ধর্ম্মানুযায়ী ছিল। ভ্রাতৃগণ, জগৎ যদি তোমাদিগকে ঘৃণা করে, তবে আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না। আমরা জানি যে, মৃত্যু হইতে জীবনে উত্তীর্ণ হইয়াছি, কারণ ভ্রাতৃগণকে প্রেম করি; যে কেহ প্রেম না করে, সে মৃত্যু মধ্যে থাকে। যে কেহ আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে নরঘাতক; এবং তোমরা জান, অনন্ত জীবন কোন নরঘাতকের অন্তরে অবস্থিতি করে না। তিনি আমাদের নিমিত্তে আপন প্রাণ দিলেন, ইহাতে আমরা প্রেম জ্ঞাত হইয়াছি; এবং আমরাও ভ্রাতাদের নিমিত্ত আপন আপন প্রাণ দিতে বাধ্য। কিন্তু যাহার সাংসারিক জীবনোপায় আছে, সে আপন ভ্রাতাকে দীনহীন দেখিলে যদি তাহার প্রতি আপন করুণা রোধ করে, তবে ঈশ্বরের প্রেম কেমন করিয়া তাহার অন্তরে থাকে? বৎসেরা, আইস, আমরা বাক্যে কিম্বা জিহ্বাতে নয়, কিন্তু কার্য্যে ও সত্যে প্রেম করি। ইহাতে জানিব যে, আমরা সত্যের, এবং তাঁহার সাক্ষাতে আপনাদের হৃদয় আশ্বাসযুক্ত করিব, কারণ আমাদের হৃদয় যদি আমাদিগকে দোষী করে, ঈশ্বর আমাদের হৃদয় অপেক্ষা মহান্‌, এবং সকলই জানেন। প্রিয়তমেরা, আমাদের হৃদয় যদি আমাদিগকে দোষী না করে, তবে ঈশ্বরের উদ্দেশে আমাদের সাহস লাভ হয়; এবং যে কিছু যাচ্ঞা করি, তাহা তাঁহার নিকটে পাই; কেননা আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি, এবং তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা যাহা প্রীতিজনক, তাহা করি। আর তাঁহার আজ্ঞা এই, যেন আমরা তাঁহার পুত্র যীশু খ্রীষ্টের নামে বিশ্বাস করি, এবং পরস্পর প্রেম করি, যেমন তিনি আমাদিগকে আজ্ঞা দিয়াছেন। আর যে ব্যক্তি তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করে, সে তাঁহাতে থাকে, ও তিনি তাহাতে থাকেন; আর তিনি আমাদিগকে যে আত্মা দিয়াছেন, তাঁহার দ্বারা আমরা জানি যে, তিনি আমাদিগেতে থাকেন। প্রিয়তমেরা, তোমরা সকল আত্মাকে বিশ্বাস করিও না, বরং আত্মা সকলের পরীক্ষা করিয়া দেখ তাহারা ঈশ্বর হইতে কি না; কারণ অনেক ভাক্ত ভাববাদী জগতে বাহির হইয়াছে। ইহাতে তোমরা ঈশ্বরের আত্মাকে জানিতে পার; যে কোন আত্মা যীশু খ্রীষ্টকে মাংসে আগত বলিয়া স্বীকার করে, সে ঈশ্বর হইতে। আর যে কোন আত্মা যীশুকে স্বীকার না করে, সে ঈশ্বর হইতে নয়; আর তাহাই খ্রীষ্টারির আত্মা, যাহার বিষয়ে তোমরা শুনিয়াছ যে, তাহা আসিতেছে, এবং সম্প্রতি তাহা জগতে আছে। বৎসেরা, তোমরা ঈশ্বর হইতে, এবং উহাদিগকে জয় করিয়াছ; কারণ যিনি তোমাদের মধ্যবর্ত্তী, তিনি জগতের মধ্যবর্ত্তী ব্যক্তি অপেক্ষা মহান্‌। উহারা জগৎ হইতে, এই কারণ জগতের কথা কহে, এবং জগৎ উহাদের কথা শুনে। আমরা ঈশ্বর হইতে; ঈশ্বরকে যে জানে, সে আমাদের কথা শুনে; যে ঈশ্বর হইতে নয়, সে আমাদের কথা শুনে না। ইহাতেই আমরা সত্যের আত্মাকে ও ভ্রান্তির আত্মাকে জানিতে পারি। প্রিয়তমেরা, আইস, আমরা পরস্পর প্রেম করি; কারণ প্রেম ঈশ্বরের; এবং যে কেহ প্রেম করে, সে ঈশ্বর হইতে জাত এবং ঈশ্বরকে জানে। যে প্রেম করে না, সে ঈশ্বরকে জানে না, কারণ ঈশ্বর প্রেম। আমাদিগেতে ঈশ্বরের প্রেম ইহাতেই প্রকাশিত হইয়াছে যে, ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্রকে জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহা দ্বারা জীবন লাভ করিতে পারি। ইহাতেই প্রেম আছে; আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করিয়াছিলাম, তাহা নয়; কিন্তু তিনিই আমাদিগকে প্রেম করিলেন, এবং আপন পুত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হইবার জন্য প্রেরণ করিলেন। প্রিয়তমেরা, ঈশ্বর যখন আমাদিগকে এমন প্রেম করিয়াছেন, তখন আমরাও পরস্পর প্রেম করিতে বাধ্য। ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই; যদি আমরা পরস্পর প্রেম করি, তবে ঈশ্বর আমাদিগেতে থাকেন, এবং তাঁহার প্রেম আমাদিগেতে সিদ্ধ হয়। ইহাতে আমরা জানি যে, আমরা তাঁহাতে থাকি, এবং তিনি আমাদিগেতে থাকেন, কারণ তিনি আপন আত্মা আমাদিগকে দান করিয়াছেন। আর আমরা দেখিয়াছি ও সাক্ষ্য দিতেছি যে, পিতা পুত্রকে জগতের ত্রাণকর্ত্তা করিয়া প্রেরণ করিয়াছেন। যে কেহ স্বীকার করিবে যে, যীশু ঈশ্বরের পুত্র, ঈশ্বর তাহাতে থাকেন, এবং সে ঈশ্বরে থাকে। আর ঈশ্বরের যে প্রেম আমাদিগেতে আছে, তাহা আমরা জানি, ও বিশ্বাস করিয়াছি। ঈশ্বর প্রেম; আর প্রেমে যে থাকে, সে ঈশ্বরে থাকে, এবং ঈশ্বর তাহাতে থাকেন। ইহাতেই প্রেম আমাদের সঙ্গে সিদ্ধ হইয়াছে, যেন বিচার-দিনে আমাদের সাহস লাভ হয়; কেননা তিনি যেমন আছেন, আমরাও এই জগতে তেমনি আছি। প্রেমে ভয় নাই, বরং সিদ্ধ প্রেম ভয়কে বাহির করিয়া দেয়, কেননা ভয় দণ্ডযুক্ত, আর যে ভয় করে, সে প্রেমে সিদ্ধ হয় নাই। আমরা প্রেম করি, কারণ তিনিই প্রথমে আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন। যদি কেহ বলে, আমি ঈশ্বরকে প্রেম করি, আর আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে মিথ্যাবাদী; কেননা যাহাকে দেখিয়াছে, আপনার সেই ভ্রাতাকে যে প্রেম না করে, সে যাঁহাকে দেখে নাই, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করিতে পারে না। আর আমরা তাঁহা হইতে এই আজ্ঞা পাইয়াছি যে, ঈশ্বরকে যে প্রেম করে, সে আপন ভ্রাতাকেও প্রেম করুক। যে কেহ বিশ্বাস করে যে, যীশুই সেই খ্রীষ্ট, সে ঈশ্বর হইতে জাত; এবং যে কেহ জন্মদাতাকে প্রেম করে, সে তাঁহা হইতে জাত ব্যক্তিকেও প্রেম করে। ইহাতে আমরা জানিতে পারি যে, ঈশ্বরের সন্তানগণকে প্রেম করি, যখন ঈশ্বরকে প্রেম করি ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি। কেননা ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়; কারণ যাহা কিছু ঈশ্বর হইতে জাত, তাহা জগৎকে জয় করে; এবং যে জয় জগৎকে জয় করিয়াছে, তাহা এই, আমাদের বিশ্বাস। কে জগৎকে জয় করে? কেবল সেই, যে বিশ্বাস করে, যীশু ঈশ্বরের পুত্র। তিনি সেই, যিনি জল ও রক্ত দিয়া আসিয়াছিলেন, যীশু খ্রীষ্ট; কেবল জলে নয়, কিন্তু জলে ও রক্তে। আর আত্মাই সাক্ষ্য দিতেছেন, কারণ আত্মা সেই সত্য। বস্তুতঃ তিনে সাক্ষ্য দিতেছেন, আত্মা ও জল ও রক্ত, এবং সেই তিনের সাক্ষ্য একই। আমরা যদি মনুষ্যদের সাক্ষ্য গ্রহণ করি, তবে ঈশ্বরের সাক্ষ্য মহত্তর; ফলতঃ ঈশ্বরের সাক্ষ্য এই যে, তিনি আপন পুত্রের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়াছেন। ঈশ্বরের পুত্রে যে বিশ্বাস করে, ঐ সাক্ষ্য তাহার অন্তরে থাকে; ঈশ্বরে যে বিশ্বাস না করে, সে তাঁহাকে মিথ্যাবাদী করিয়াছে; কারণ ঈশ্বর আপন পুত্রের বিষয়ে যে সাক্ষ্য দিয়াছেন, তাহা সে বিশ্বাস করে নাই। আর সেই সাক্ষ্য এই যে, ঈশ্বর আমাদিগকে অনন্ত জীবন দিয়াছেন, এবং সেই জীবন তাঁহার পুত্রে আছে। পুত্রকে যে পাইয়াছে সে সেই জীবন পাইয়াছে; ঈশ্বরের পুত্রকে যে পায় নাই, সে সেই জীবন পায় নাই। তোমরা যাহারা ঈশ্বরের পুত্রের নামে বিশ্বাস করিতেছ, আমি তোমাদিগকে এই সকল কথা লিখিলাম, যেন তোমরা জানিতে পার যে, তোমরা অনন্ত জীবন পাইয়াছ। আর তাঁহার উদ্দেশে আমরা এই সাহস প্রাপ্ত হইয়াছি যে, যদি তাঁহার ইচ্ছানুসারে কিছু যাচ্ঞা করি, তবে তিনি আমাদের যাচ্ঞা শুনেন। আর যদি জানি যে, আমরা যাহা যাচ্ঞা করি, তিনি তাহা শুনেন, তবে ইহাও জানি যে, আমরা তাঁহার কাছে যাহা যাচ্ঞা করিয়াছি, সেই সকল পাইয়াছি। যদি কেহ আপন ভ্রাতাকে এমন পাপ করিতে দেখে, যাহা মৃত্যুজনক নয়, তবে সে যাচ্ঞা করিবে, এবং [ঈশ্বর] তাহাকে জীবন দিবেন—যাহারা মৃত্যুজনক পাপ করে না, তাহাদিগকেই দিবেন। মৃত্যুজনক পাপ আছে, সে বিষয়ে আমি বলি না যে, তাহাকে বিনতি করিতে হইবে। সমস্ত অধার্ম্মিকতাই পাপ; আর এমন পাপ আছে, যাহা মৃত্যুজনক নয়। আমরা জানি, যে কেহ ঈশ্বর হইতে জাত, সে পাপ করে না, কিন্তু যে ঈশ্বর হইতে জাত, সে আপনাকে রক্ষা করে, এবং সেই পাপাত্মা তাহাকে স্পর্শ করে না। আমরা জানি যে, আমরা ঈশ্বর হইতে; আর সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে। আর আমরা জানি যে, ঈশ্বরের পুত্র আসিয়াছেন, এবং আমাদিগকে এমন বুদ্ধি দিয়াছেন, যাহাতে আমরা সেই সত্যময়কে জানি; এবং আমরা সেই সত্যময়ে, তাঁহার পুত্র যীশু খ্রীষ্টে আছি; তিনিই সত্যময় ঈশ্বর এবং অনন্ত জীবন। বৎসেরা, তোমরা প্রতিমাগণ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর। এই প্রাচীন—মনোনীতা মহিলা ও তাঁহার সন্তানগণের সমীপে; যাঁহাদিগকে আমি সত্যে প্রেম করি (কেবল আমি নয়, বরং যত লোক সত্য জানে, সকলেই করে), সেই সত্য প্রযুক্ত, যাহা আমাদিগেতে বাস করিতেছে, এবং অনন্তকাল আমাদের সঙ্গে থাকিবে। অনুগ্রহ, দয়া, শান্তি, পিতা ঈশ্বর হইতে, এবং সেই পিতার পুত্র যীশু খ্রীষ্ট হইতে, সত্যে ও প্রেমে আমাদের সঙ্গে থাকিবে। আমি অতিশয় আনন্দ করি, কেননা দেখিতে পাইয়াছি, যেমন আমরা পিতা হইতে আদেশ প্রাপ্ত হইয়াছি, তোমার সন্তানদের মধ্যে কেহ কেহ তেমনি সত্যে চলিতেছে। আর এখন, অয়ি মহিলে, আমি তোমাকে নূতন আজ্ঞা লিখিবার মত নয়, কিন্তু আদি হইতে আমরা যে আজ্ঞা পাইয়াছি, তদনুসারে তোমাকে এই বিনতি করিতেছি, যেন আমরা পরস্পর প্রেম করি। আর প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞানুসারে চলি; আজ্ঞাটী এই, যেমন তোমরা আদি হইতে শুনিয়াছ, যেন তোমরা উহাতে চল। কারণ অনেক ভ্রামক জগতে বাহির হইয়াছে; যীশু খ্রীষ্ট মাংসে আগমন করিয়াছেন, ইহা তাহারা স্বীকার করে না; এই ত সেই ভ্রামক ও খ্রীষ্টারি। আপনাদের বিষয়ে সাবধান হও; আমরা যাহা সাধন করিয়াছি, তাহা যেন তোমরা না হারাও, কিন্তু যেন সম্পূর্ণ পুরস্কার পাও। যে কেহ অগ্রে চলে, এবং খ্রীষ্টের শিক্ষাতে না থাকে, সে ঈশ্বরকে পায় নাই; সেই শিক্ষাতে যে থাকে, সে পিতা ও পুত্র উভয়কে পাইয়াছে। যদি কেহ সেই শিক্ষা না লইয়া তোমাদের কাছে আইসে, তবে তাহাকে বাটীতে গ্রহণ করিও না, এবং তাহাকে ‘মঙ্গল হউক’ বলিও না। কেননা যে তাহাকে ‘মঙ্গল হউক’ বলে, সে তাহার দুষ্কর্ম্ম সকলের সহভাগী হয়। তোমাদিগকে লিখিবার অনেক কথা ছিল; কাগজ ও কালী ব্যবহার করিতে আমার ইচ্ছা হইল না। কিন্তু প্রত্যাশা করি যে, আমি তোমাদের কাছে গিয়া সম্মুখাসম্মুখি হইয়া কথাবার্ত্তা কহিব, যেন আমাদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয়। তোমার মনোনীতা ভগিনীর সন্তানগণ তোমাকে মঙ্গলবাদ করিতেছে। এই প্রাচীন—প্রিয়তম গায়ের সমীপে, যাঁহাকে আমি সত্যে প্রেম করি। প্রিয়তম, প্রার্থনা করি, যেমন তোমার প্রাণ কুশলপ্রাপ্ত, সর্ব্ববিষয়ে তুমি তেমনি কুশলপ্রাপ্ত ও সুস্থ থাক। কারণ আমি অতিশয় আনন্দিত হইলাম যে, ভ্রাতৃগণ আসিয়া তোমার সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দিলেন, যেমন তুমি সত্যে চলিতেছ। আমার সন্তানগণ সত্যে চলে, ইহা শুনিলে যে আনন্দ হয়, তদপেক্ষা মহত্তর আনন্দ আমার নাই। প্রিয়তম, সেই ভ্রাতৃগণের, এমন কি, সেই বিদেশীদের প্রতি যাহা যাহা করিয়া থাক, তাহা বিশ্বাসীর উপযুক্ত কার্য্য। তাঁহারা মণ্ডলীর সাক্ষাতে তোমার প্রেমের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়াছেন; তুমি যদি ঈশ্বরের উপযোগীরূপে তাঁহাদিগকে সযত্নে পাঠাইয়া দেও, তবে ভালই করিবে। কারণ সেই নামের অনুরোধে তাঁহারা বাহির হইয়াছেন, পরজাতীয়দের কাছে কিছুই গ্রহণ করেন না। অতএব আমরা এই প্রকার লোকদিগকে সাদরে গ্রহণ করিতে বাধ্য, যেন সত্যের সহকারী হইতে পারি। আমি মণ্ডলীকে কিছু লিখিয়াছিলাম, কিন্তু তাহাদের প্রাধান্যপ্রিয় দিয়ত্রিফি আমাদিগকে গ্রাহ্য করে না। এই জন্য, যদি আমি আসি, তবে সে যে সকল কার্য্য করে, তাহা স্মরণ করাইব, কেননা সে দুর্ব্বাক্য দ্বারা আমাদের গ্লানি করে; এবং তাহাতেও সন্তুষ্ট নয়, সে আপনিও ভ্রাতৃগণকে গ্রাহ্য করে না, আর যাহারা গ্রাহ্য করিতে ইচ্ছা করে, তাহাদিগকেও বারণ করে এবং মণ্ডলী হইতে বাহির করিয়া দেয়। প্রিয়তম, যাহা মন্দ, তাহার অনুকারী হইও না, কিন্তু যাহা উত্তম, তাহার অনুকারী হও। যে উত্তম কার্য্য করে, সে ঈশ্বর হইতে; যে মন্দ কার্য্য করে, সে ঈশ্বরকে দর্শন করে নাই। দীমীত্রিয়ের পক্ষে সকলে, এমন কি, স্বয়ং সত্য সাক্ষ্য দিয়াছে; এবং আমরাও সাক্ষ্য দিতেছি; আর তুমি জান, আমাদের সাক্ষ্য সত্য। তোমাকে লিখিবার অনেক কথা ছিল, কিন্তু কালী ও লেখনী দ্বারা লিখিতে ইচ্ছা হয় না। আশা করি, অবিলম্বে তোমাকে দেখিব, তখন আমরা সম্মুখাসম্মুখি হইয়া কথাবার্ত্তা করিব। তোমার প্রতি শান্তি বর্ত্তুক। বন্ধুগণ তোমাকে মঙ্গলবাদ করিতেছেন। তুমি প্রত্যেকের নাম করিয়া বন্ধুদিগকে মঙ্গলবাদ কর। যিহূদা, যীশু খ্রীষ্টের দাস, এবং যাকোবের ভ্রাতা-যাঁহারা পিতা ঈশ্বরে প্রেমপাত্র ও যীশু খ্রীষ্টের নিমিত্ত রক্ষিত, সেই আহূতগণের সমীপে। দয়া, শান্তি ও প্রেম প্রচুররূপে তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। প্রিয়তমেরা, আমাদের সাধারণ পরিত্রাণের বিষয়ে তোমাদিগকে কিছু লিখিতে নিতান্ত যত্নবান্‌ হওয়াতে আমি বুঝিলাম, পবিত্রগণের কাছে একবারে সমর্পিত বিশ্বাসের পক্ষে প্রাণপণ করিতে তোমাদিগকে আশ্বাস দিয়া লেখা আবশ্যক। যেহেতু এমন কয়েক জন গোপনে প্রবিষ্ট হইয়াছে, যাহারা এই দণ্ডাজ্ঞার পাত্ররূপে পূর্ব্বে লিখিত হইয়াছিল; তাহারা ভক্তিহীন, আমাদের ঈশ্বরের অনুগ্রহ লম্পটতায় পরিণত করে, এবং আমাদের একমাত্র অধিপতি ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে। কিন্তু যদিও তোমরা সকলই একবারে জানিয়া লইয়াছ, তথাপি আমার বাসনা এই, যেন তোমাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিই যে, প্রভু মিসর দেশ হইতে প্রজাদিগকে নিস্তার করিয়া পশ্চাৎ অবিশ্বাসীদিগকে বিনষ্ট করিয়াছিলেন। আর যে স্বর্গদূতেরা আপনাদের আধিপত্য রক্ষা না করিয়া নিজ বাসস্থান ত্যাগ করিয়াছিল, তাহাদিগকে তিনি মহাদিনের বিচারার্থে ঘোর অন্ধকারের অধীনে অনন্তকালীয় শৃঙ্খলে বদ্ধ রাখিয়াছেন। সেই প্রকার সদোম ও ঘমোরা এবং তন্নিকটস্থ নগর সকল ইহাদের ন্যায় নিতান্ত বেশ্যাগামী এবং বিজাতীয় মাংসের চেষ্টায় বিপথগামী হইয়া, অনন্ত অগ্নির দণ্ড ভোগ করতঃ দৃষ্টান্তরূপে প্রত্যক্ষ রহিয়াছে। তথাপি ইহারাও সেইরূপে স্বপ্ন দেখিতে দেখিতে মাংসকে অশুচি করে, প্রভুত্ব অগ্রাহ্য করে, যাহারা গৌরবের পাত্র, তাহাদের নিন্দা করে। কিন্তু প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল যখন মোশির দেহের বিষয়ে দিয়াবলের সহিত বাদানুবাদ করিলেন, তখন নিন্দাযুক্ত নিষ্পত্তি করিতে সাহস করিলেন না, কিন্তু কহিলেন, প্রভু তোমাকে ভর্ৎসনা করুন। কিন্তু ইহারা যাহা যাহা না বুঝে, তাহারই নিন্দা করে; এবং বুদ্ধিবিহীন পশুদের ন্যায় যাহা যাহা স্বভাবতঃ জ্ঞাত হয়, সেই সকলেতে নষ্ট হয়। ধিক্‌ তাহাদিগকে! কারণ তাহারা কয়িনের পথে চলিয়া গিয়াছে, এবং বেতনের লোভে বিলিয়মের ভ্রান্তি-পথে গিয়া পড়িয়াছে, এবং কোরহের প্রতিবাদে বিনষ্ট হইয়াছে। তাহারা তোমাদের সহিত ভোজন পান করিবার সময়ে তোমাদের প্রেম-ভোজে ব্যাঘাতক, তাহারা এমন পালক যে নির্ভয়ে আপনাদিগকেই চরায়; তাহারা বায়ু চালিত নির্জল মেঘ; হেমন্তকালের ফলহীন, দুই বার মৃত ও উন্মূলিত বৃক্ষ; নিজ লজ্জারূপ ফেনা উৎক্ষেপকারী প্রচণ্ড সামুদ্রিক তরঙ্গ; ভ্রমণকারী তারা, যাহাদের নিমিত্ত অনন্তকালের জন্য ঘোরতর অন্ধকার সঞ্চিত রহিয়াছে। আর আদম অবধি সপ্তম পুরুষ যে হনোক, তিনিও এই লোকদের উদ্দেশে এই ভাববাণী বলিয়াছেন, “দেখ, প্রভু আপন অযুত অযুত পবিত্র লোকের সহিত আসিলেন, যেন সকলের বিচার করেন; আর ভক্তিহীন সকলে আপনাদের যে সকল ভক্তিবিরুদ্ধ কার্য্য দ্বারা ভক্তিহীনতা দেখাইয়াছে, এবং ভক্তিহীন পাপিগণ তাঁহার বিরুদ্ধে যে সকল কঠোর বাক্য কহিয়াছে, তৎপ্রযুক্ত তাহাদিগকে যেন ভর্ৎসনা করেন।” ইহারা বচসাকারী, স্বভাগ্যনিন্দক আপন আপন অভিলাষের অনুগামী; আর তাহাদের মুখ মহাগর্ব্বের কথা বলে, এবং তাহারা লাভার্থে মনুষ্যদের তোষামোদ করে। কিন্তু, প্রিয়তমেরা, ইতিপূর্ব্বে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রেরিতগণ যে সকল কথা বলিয়াছেন, তোমরা সে সকল স্মরণ কর; তাঁহারা ত তোমাদিগকে বলিতেন, শেষকালে, উপহাসকেরা উপস্থিত হইবে, তাহারা আপন আপন ভক্তিবিরুদ্ধ অভিলাষ অনুসারে চলিবে। উহারা দলভেদকারী, প্রাণিক, আত্মাবিহীন। কিন্তু, প্রিয়তমেরা, তোমরা আপনাদের পরম পবিত্র বিশ্বাসের উপরে আপনাদিগকে গাঁথিয়া তুলিতে তুলিতে, পবিত্র আত্মাতে প্রার্থনা করিতে করিতে, ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর, এবং অনন্ত জীবনের জন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়ার অপেক্ষায় থাক। আর কতক লোকের প্রতি, যাহারা সন্দিহান, তাহাদের প্রতি দয়া কর, অগ্নি হইতে টানিয়া লইয়া রক্ষা কর; আর কতক লোকের প্রতি সভয়ে দয়া কর; মাংসের দ্বারা কলঙ্কিত বস্ত্রও ঘৃণা কর। আর যিনি তোমাদিগকে উছোট খাওয়া হইতে রক্ষা করিতে, এবং আপন প্রতাপের সাক্ষাতে নির্দ্দোষ অবস্থায় সানন্দে উপস্থিত করিতে পারেন, যিনি একমাত্র ঈশ্বর আমাদের ত্রাণকর্ত্তা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা তাঁহারই প্রতাপ, মহিমা, পরাক্রম ও কর্ত্তৃত্ব হউক, সকল যুগের পূর্ব্বাবধি, আর এখন, এবং সমস্ত যুগপর্য্যায়ে হউক। আমেন। যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত বাক্য, ঈশ্বর যাহা তাঁহাকে দান করিলেন, যেন তিনি, যাহ যাহা শীঘ্র ঘটিবে, সেই সকল আপন দাসগণকে দেখাইয়া দেন; আর তিনি নিজের দূত প্রেরণ করিয়া আপন দাস যোহনকে তাহা জ্ঞাত করিলেন। সেই যোহন ঈশ্বরের বাক্যের সম্বন্ধে, এবং যীশু খ্রীষ্টের সাক্ষ্যের সম্বন্ধে, যাহা যাহা দেখিয়াছে, তাহার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিল। ধন্য, যে এই ভাববাণীর বাক্য সকল পাঠ করে, ও যাহারা শ্রবণ করে, এবং ইহাতে লিখিত কথা সকল পালন করে; কেননা কাল সন্নিকট। যোহন—এশিয়ায় স্থিত সপ্ত মণ্ডলীর সমীপে। যিনি আছেন, ও যিনি ছিলেন, ও যিনি আসিতেছেন, তাঁহা হইতে, এবং তাঁহার সিংহাসনের সম্মুখবর্ত্তী সপ্ত আত্মা হইতে, এবং যিনি ‘‘বিশ্বস্ত সাক্ষী,” মৃতগণের মধ্যে ‘‘প্রথমজাত” ও ‘‘পৃথিবীর রাজাদের কর্ত্তা,” সেই যীশু খ্রীষ্ট হইতে, অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের প্রতি বর্ত্তুক। যিনি অামাদিগকে প্রেম করেন, ও নিজ রক্তে অামাদের পাপ হইতে আমাদিগকে মুক্ত করিয়াছেন, এবং অামাদিগকে রাজ্যস্বরূপ ও অাপন ঈশ্বর ও পিতার যাজক করিয়াছেন, তাঁহার মহিমা ও পরাক্রম যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে হউক। আমেন। দেখ, তিনি “মেঘ সহকারে আসিতেছেন,” আর প্রত্যেক চক্ষু তাঁহাকে দেখিবে, এবং “যাহারা তাঁহাকে বিদ্ধ করিয়াছিল, তাহারাও দেখিবে;” আর পৃথিবীর “সমস্ত বংশ তাঁহার জন্য বিলাপ” করিবে । হাঁ, আমেন। আমি আল্‌ফা এবং ওমিগা, আদি এবং অন্ত, ইহা প্রভু ঈশ্বর কহিতেছেন, যিনি আছেন ও যিনি ছিলেন, ও যিনি আসিতেছেন, যিনি সর্ব্বশক্তিমান্‌। আমি যোহন, তোমাদের ভ্রাতা, এবং যীশু সম্বন্ধীয় ক্লেশভোগে রাজ্যে ও ধৈর্য্যে তোমাদের সহভাগী, ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রযুক্ত পাট্‌ম নামক দ্বীপে উপস্থিত হইলাম। আমি প্রভুর দিনে আত্মাবিষ্ট হইলাম, এবং আমার পশ্চাৎ তূরীধ্বনিবৎ এক মহারব শুনিলাম। কেহ কহিলেন, তুমি যাহা দেখিতেছ, তাহা পত্রিকায় লিখ, এবং ইফিষ, স্মুর্ণা, পর্গাম, থুয়াতীরা, সার্দ্দি, ফিলাদিল্‌ফিয়া ও লায়দিকেয়া, এই সপ্ত মণ্ডলীর নিকটে পাঠাইয়া দেও। তাহাতে আমার প্রতি যাঁহার বাণী হইতেছিল, তাঁহাকে দেখিবার জন্য আমি মুখ ফিরাইলাম; মুখ ফিরাইয়া দেখিলাম, সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষ, ও সেই সকল দীপবৃক্ষের মধ্যে “মনুষ্যপুত্রের ন্যায় এক ব্যক্তি”; তিনি পাদপর্য্যন্ত পরিচ্ছদে আচ্ছন্ন, এবং “বক্ষঃস্থলে সুবর্ণ পটুকায় বদ্ধকটি; তাঁহার মস্তক ও কেশ শুক্লবর্ণ মেষলোমের ন্যায়, হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ, এবং তাঁহার চক্ষু অগ্নিশিখার তুল্য, এবং তাঁহার চরণ অগ্নিকুণ্ডে পরিষ্কৃত সুপিত্তলের তুল্য, এবং তাঁহার রব বহুজলের রবের তুল্য”; আর তাঁহার দক্ষিণ হস্তে সপ্ত তারা আছে, এবং তাঁহার মুখ হইতে তীক্ষ্ণ দ্বিধার তরবারি নির্গত হইতেছে, এবং তাঁহার মুখমণ্ডল নিজ তেজে বিরাজমান সূর্য্যের তুল্য। তাঁহাকে দেখিবামাত্র আমি মৃতবৎ হইয়া তাঁহার চরণে পড়িলাম। তখন তিনি আমার গাত্রে দক্ষিণ হস্ত দিয়া কহিলেন, ভয় করিও না, আমি প্রথম ও শেষ ও জীবন্ত; আমি মরিয়াছিলাম, আর দেখ, আমি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত; আর মৃত্যুর ও পাতালের চাবি আমার হস্তে আছে। অতএব তুমি যাহা যাহা দেখিলে, এবং যাহা যাহা আছে, ও ইহার পরে যাহা যাহা হইবে, সে সমস্তই লিখ। আমার দক্ষিণ হস্তে যে সপ্ত তারা দেখিলে, তাহার নিগূঢ়তত্ত্ব এবং সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষ এই; সেই সপ্ত তারা ঐ সপ্ত মণ্ডলীর দূত, এবং সেই সপ্ত দীপবৃক্ষ ঐ সপ্ত মণ্ডলী। ইফিষস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;—যিনি নিজ দক্ষিণ হস্তে সেই সপ্ত তারা ধারণ করেন, যিনি সেই সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষের মধ্যে গমনাগমন করেন, তিনি এই কথা কহেন; আমি জানি তোমার কার্য্য সকল এবং তোমার পরিশ্রম ও ধৈর্য্য; আর আমি জানি যে, তুমি দুষ্টদিগকে সহ্য করিতে পার না, এবং আপনাদিগকে প্রেরিত বলিলেও যাহারা প্রেরিত নয়, তাহাদিগকে পরীক্ষা করিয়াছ ও মিথ্যাবাদী নিশ্চয় করিয়াছ; এবং তোমার ধৈর্য্য আছে, আর তুমি আমার নামের জন্য ভার বহন করিয়াছ, ক্লান্ত হও নাই। তথাচ তোমার বিরুদ্ধে আমার কথা আছে, তুমি আপন প্রথম প্রেম পরিত্যাগ করিয়াছ। অতএব স্মরণ কর, কোথা হইতে পতিত হইয়াছ, এবং মন ফিরাও ও প্রথম কর্ম্ম সকল কর; নতুবা যদি মন না ফিরাও, আমি তোমার নিকটে আসিব ও তোমার দীপবৃক্ষ স্বস্থান হইতে দূর করিব। কিন্তু এইটী তোমার আছে; আমি যে নীকলায়তীয়দের কার্য্য ঘৃণা করি, তাহা তুমিও ঘৃণা করিতেছ। যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। যে জয় করে, তাহাকে আমি ঈশ্বরের “পরমদেশস্থ জীবনবৃক্ষের” ফল ভোজন করিতে দিব। আর স্মূর্ণাস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;— যিনি প্রথম ও শেষ, যিনি মরিয়াছিলেন, আর জীবিত হইলেন, তিনি এই কথা কহেন। আমি জানি তোমার ক্লেশ ও দীনতা, তথাপি, তুমি ধনবান্‌; এবং আপনাদিগকে যিহূদী বলিলেও যাহারা যিহূদী নয়, কিন্তু শয়তানের সমাজ, তাহাদের ধর্ম্ম-নিন্দাও আমি জানি। তোমাকে যে সকল দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহাতে ভয় করিও না। দেখ, তোমাদের পরীক্ষার জন্য দিয়াবল তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও কারাগারে নিক্ষেপ করিতে উদ্যত আছে, তাহাতে দশ দিন পর্য্যন্ত তোমাদের ক্লেশ হইবে। তুমি মরণ পর্য্যন্ত বিশ্বস্ত থাক, তাহাতে আমি তোমাকে জীবন-মুকুট দিব। যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। যে জয় করে, সে দ্বিতীয় মৃত্যু দ্বারা হিংসিত হইবে না। আর পর্গামস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;— যিনি তীক্ষ্ণ দ্বিধার খড়গ ধারণ করেন, তিনি এই কথা কহেন; আমি জানি, তুমি কোথায় বাস করিতেছ, সেখানে শয়তানের সিংহাসন রহিয়াছে। আর তুমি আমার নাম দৃঢ়রূপে ধারণ করিতেছ, আমার বিশ্বাস অস্বীকার কর নাই; আমার সেই সাক্ষী, আমার সেই বিশ্বস্ত লোক আন্তিপা যখন তোমাদের মধ্যে তথায় নিহত হইয়াছিল, যেখানে শয়তান বাস করে, তখনও বিশ্বাস অস্বীকার কর নাই। তথাচ তোমার বিরুদ্ধে আমার কয়েকটী কথা আছে, কেননা তুমি সেই স্থানে বিলিয়মের শিক্ষাবলম্বী কয়েক জনকে রাখিতেছ; সেই ব্যক্তি ইস্রায়েল-সন্তানদের সম্মুখে বিঘ্ন ফেলিয়া রাখিতে বালাককে শিক্ষা দিয়াছিল, যেন তাহারা প্রতিমার কাছে উৎসৃষ্ট বলি ভক্ষণ ও বেশ্যাগমন করে । তদ্রূপ তুমিও সেই ভাবে নীকলায়তীয়দের শিক্ষাবলম্বী কয়েক জনকে রাখিতেছ। অতএব মন ফিরাও, নতুবা আমি শীঘ্রই তোমার নিকটে আসিব, এবং আমার মুখের তরবারি দ্বারা তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিব। যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। যে জয় করে, তাহাকে আমি গুপ্ত “মান্না” দিব; এবং একখানি শ্বেত প্রস্তর তাহাকে দিব, সেই প্রস্তরের উপরে “নূতন এক নাম” লেখা আছে; আর কেহই সেই নাম জানে না, কেবল যে তাহা গ্রহণ করে, সেই জানে। আর থুয়াতীরাস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;— যিনি ঈশ্বরের পুত্র, যাঁহার চক্ষু অগ্নিশিখার তুল্য, ও যাঁহার চরণ সুপিত্তলের সদৃশ, তিনি এই কথা কহেন; আমি জানি তোমার কর্ম্ম সকল ও তোমার প্রেম ও বিশ্বাস ও পরিচর্য্যা ও ধৈর্য্য, আর তোমার প্রথম কর্ম্ম অপেক্ষা প্রচুরতর শেষ কর্ম্ম আমি জানি। তথাচ তোমার বিরুদ্ধে আমার কথা আছে; ঈষেবল নাম্নী যে নারী আপনাকে ভাববাদিনী বলে, তুমি তাহাকে থাকিতে দিতেছ, এবং সে আমারই দাসগণকে বেশ্যাগমন ও প্রতিমার কাছে উৎসৃষ্ট বলি ভক্ষণ করিতে শিক্ষা দিয়া ভুলাইতেছে। আমি তাহাকে মন ফিরাইবার জন্য সময় দিয়াছিলাম, কিন্তু সে নিজ ব্যভিচার হইতে মন ফিরাইতে চায় না। দেখ, আমি তাহাকে শয্যাগত করিব, এবং যাহারা তাহার সহিত ব্যভিচার করে, তাহারা যদি তাহার কার্য্য হইতে মন না ফিরায়, তবে তাহাদিগকে মহাক্লেশে ফেলিয়া দিব; আর আমি মারী দ্বারা তাহার সন্তানগণকে বধ করিব; তাহাতে সমস্ত মণ্ডলী জানিতে পারিবে, “আমি মর্ম্মের ও হৃদয়ের অনুসন্ধানকারী, আর আমি তোমাদের প্রত্যেক জনকে আপন আপন কার্য্যানুযায়ী ফল দিব” । কিন্তু থুয়াতীরাতে অবশিষ্ট তোমাদের যত জন সেই শিক্ষা গ্রহণ করে নাই,—লোকে যাহাকে গভীরতত্ত্ব বলে, শয়তানের সেই গভীরতত্ত্ব সকল যাহারা জ্ঞাত হয় নাই—তাহাদিগকে বলিতেছি, তোমাদের উপরে আমি অন্য কোন ভার অর্পন করি না; কেবল যাহা তোমাদের আছে, তাহা আমার আগমন পর্য্যন্ত দৃঢ়রূপে ধারণ কর। আর যে জয় করে, ও শেষ পর্য্যন্ত আমার আদিষ্ট কার্য্য সকল পালন করে, তাহাকে আমি আপনি পিতা হইতে যেরূপ পাইয়াছি, তদ্রূপ “জাতিগণের উপরে কর্ত্তৃত্ব দিব; তাহাতে সে লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে এমনি শাসন করিবে যে, কুম্ভকারের মৃৎপাত্রের ন্যায় চুরমার হইয়া যাইবে” । আর আমি প্রভাতীয় তারা তাহাকে দিব। যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। আর সার্দ্দিস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;— যিনি ঈশ্বরের সপ্ত আত্মা এবং সপ্ত তারা ধারণ করেন, তিনি এই কথা কহেন; আমি জানি তোমার কার্য্য সকল; তোমার জীবন নামমাত্র; তুমি মৃত। জাগ্রৎ হও, এবং অবশিষ্ট যে সকল বিষয় মৃতকল্প হইল, তাহা সুস্থির কর; কেননা আমি তোমার কোন কার্য্য আমার ঈশ্বরের সাক্ষাতে সিদ্ধ দেখি নাই। অতএব তুমি স্মরণ কর, কিরূপে প্রাপ্ত হইয়াছ ও শুনিয়াছ, আর তাহা পালন কর, এবং মন ফিরাও। যদি জাগ্রৎ না হও, তবে আমি চোরের ন্যায় আসিব; এবং কোন্‌ দণ্ডে তোমার নিকটে আসিব, তাহা তুমি জানিতে পারিবে না । তথাপি সার্দ্দিতে তোমার এমন কয়েকটী লোক আছে, যাহারা আপন আপন বস্ত্র মলিন করে নাই; তাহারা শুক্ল পরিচ্ছদে আমার সহিত গমনাগমন করিবে; কেননা তাহারা যোগ্য। যে জয় করে, সে তদ্রূপ শুক্ল বস্ত্র পরিহিত হইবে; এবং আমি তাহার নাম কোন ক্রমে জীবন-পুস্তক হইতে মুছিয়া ফেলিব না, কিন্তু আমার পিতার সাক্ষাতে ও তাঁহার দূতগণের সাক্ষাতে তাহার নাম স্বীকার করিব। যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। আর ফিলাদিল্‌ফিয়াস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;— যিনি পবিত্র, যিনি সত্যময়, যিনি “দায়ূদের চাবি ধারণ করেন, যিনি খুলিলে কেহ রুদ্ধ করে না, ও রুদ্ধ করিলে কেহ খুলে না,” তিনি এই কথা কহেন; আমি জানি তোমার কার্য্য সকল; দেখ, আমি তোমার সম্মুখে এক খোলা দ্বার রাখিলাম, তাহা রুদ্ধ করিতে কাহারও সাধ্য নাই; কেননা তোমার কিঞ্চিৎ শক্তি আছে, আর তুমি আমার বাক্য পালন করিয়াছ, আমার নাম অস্বীকার কর নাই। দেখ, শয়তানের সমাজের যে লোকেরা আপনাদিগকে যিহূদী বলিলেও যিহূদী নয়, কিন্তু মিথ্যা কথা বলে, তাহাদের কোন কোন লোককে ইহাই দিব; দেখ, আমি তোমার চরণসমীপে তাহাদিগকে উপস্থিত করিয়া প্রণিপাত করাইব; এবং তাহারা জানিতে পারিবে যে, আমি তোমাকে প্রেম করিয়াছি। তুমি আমার ধৈর্য্যের কথা রক্ষা করিয়াছ, এই কারণ আমিও তোমাকে সেই পরীক্ষাকাল হইতে রক্ষা করিব, যাহা পৃথিবীনিবাসীদের পরীক্ষা করিবার জন্য সমস্ত জগতে উপস্থিত হইবে। আমি শীঘ্র আসিতেছি; তোমার যাহা আছে, তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ কর, যেন কেহ তোমার মুকুট অপহরণ না করে। যে জয় করে, তাহাকে আমি আমার ঈশ্বরের মন্দিরে স্তম্ভস্বরূপ করিব, এবং সে আর কখনও তথা হইতে বাহিরে যাইবে না; এবং তাহার উপরে আমার ঈশ্বরের নাম লিখিব, এবং আমার ঈশ্বরের নগরী যে নূতন যিরূশালেম স্বর্গ হইতে, আমার ঈশ্বরের নিকট হইতে নামিবে, তাহার নাম এবং আমার নূতন নাম লিখিব। যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। আর লায়দিকেয়াস্থ মণ্ডলীর দূতকে লিখ;— যিনি আমেন, যিনি বিশ্বাস্য ও সত্যময় সাক্ষী, যিনি ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি, তিনি এই কথা কহেন; আমি জানি তোমার কার্য্য সকল, তুমি না শীতল না তপ্ত; তুমি হয় শীতল হইলে, নয় তপ্ত হইলে ভাল হইত। এইরূপে তুমি কদুষ্ণ, না তপ্ত না শীতল, এই জন্য আমি নিজ মুখ হইতে তোমাকে বমন করিতে উদ্যত হইয়াছি। তুমি কহিতেছ, আমি ধনবান্‌, ধন সঞ্চয় করিয়াছি, আমার কিছুরই অভাব নাই; কিন্তু জান না যে, তুমিই দুর্ভাগ্য, কৃপাপাত্র, দরিদ্র, অন্ধ ও উলঙ্গ। আমি তোমাকে এক পরামর্শ দিই; তুমি আমার কাছে এই সকল দ্রব্য ক্রয় কর—অগ্নি দ্বারা পরিষ্কৃত স্বর্ণ, যেন ধনবান্‌ হও; শুক্ল বস্ত্র, যেন বস্ত্র পরিহিত হও, আর তোমার উলঙ্গতার লজ্জা প্রকাশিত না হয়; চক্ষুতে লেপনীয় অঞ্জন, যেন দেখিতে পাও। আমি যত লোককে ভালবাসি, সেই সকলকে অনুযোগ করি ও শাসন করি; অতএব উদ্যোগী হও, ও মন ফিরাও। দেখ, আমি দ্বারে দাঁড়াইয়া আছি, ও আঘাত করিতেছি; কেহ যদি আমার রব শুনে ও দ্বার খুলিয়া দেয়, তবে আমি তাহার কাছে প্রবেশ করিব, ও তাহার সহিত ভোজন করিব, এবং সেও আমার সহিত ভোজন করিবে। যে জয় করে, তাহাকে আমার সহিত আমার সিংহাসনে বসিতে দিব, যেমন আমি আপনি জয় করিয়াছি, এবং আমার পিতার সহিত তাঁহার সিংহাসনে বসিয়াছি। যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন। ইহার পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, স্বর্গে এক দ্বার খোলা রহিয়াছে, এবং প্রথম যে রব শুনিয়াছিলাম, যেন তূরীর রব আমার সহিত কথা কহিতেছিল, সেই রব শুনিলাম, কেহ বলিতেছেন, এই স্থানে উঠিয়া আইস, ইহার পরে যাহা যাহা অবশ্য ঘটিবে, সেই সকল আমি তোমাকে দেখাই। আমি তখনই আত্মাবিষ্ট হইলাম; আর দেখ, স্বর্গে এক সিংহাসন স্থাপিত, সেই সিংহাসনের উপরে এক ব্যক্তি বসিয়া আছেন। যিনি বসিয়া আছেন, তিনি দেখিতে সূর্য্যকান্তের ও সার্দ্দীয় মণির তুল্য; আর সেই সিংহাসনের চারিদিকে মেঘধনুক, তাহা দেখিতে মরকত মণির তুল্য। আর সেই সিংহাসনের চারিদিকে চব্বিশটী সিংহাসন আছে, সেই সকল সিংহাসনে চব্বিশ জন প্রাচীন বসিয়া আছেন, তাঁহারা শুক্লবস্ত্রপরিহিত এবং তাঁহাদের মস্তকের উপরে সুবর্ণ মুকুট। সেই সিংহাসন হইতে বিদ্যুৎ, রব ও মেঘগর্জ্জন বাহির হইতেছে; এবং সেই সিংহাসনের সম্মুখে অগ্নিময় সপ্ত প্রদীপ জ্বলিতেছে, তাহা ঈশ্বরের সপ্ত আত্মা। আর সেই সিংহাসনের সম্মুখে যেন স্ফটিকবৎ কাচময় এক সমুদ্র আছে, এবং সিংহাসনের মধ্যে ও সিংহাসনের চারিদিকে চারি প্রাণী আছেন; তাঁহারা সম্মুখে ও পশ্চাতে চক্ষুতে পরিপূর্ণ। প্রথম প্রাণী সিংহের তুল্য, দ্বিতীয় প্রাণী গোবৎসের তুল্য, তৃতীয় প্রাণী মনুষ্যের ন্যায় মুখমণ্ডলবিশিষ্ট, এবং চতুর্থ প্রাণী উড্ডীয়মান ঈগল পক্ষীর তুল্য। সেই চারি প্রাণীর প্রত্যেকের ছয় ছয়টী পক্ষ, এবং তাঁহারা চারিদিকে ও ভিতরে চক্ষুতে পরিপূর্ণ; আর তাঁহারা দিবারাত্র অবিশ্রামে এই কথা কহিতেছেন, ‘পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র প্রভু ঈশ্বর সর্ব্বশক্তিমান্‌, যিনি ছিলেন, ও যিনি আছেন, ও যিনি আসিতেছেন।’ আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, যিনি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত, সেই প্রাণিবর্গ যখন তাঁহার প্রতাপ ও সমাদর ও ধন্যবাদ কীর্ত্তন করিবেন, তখন যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার সম্মুখে ঐ চব্বিশ জন প্রাচীন প্রণিপাত করিবেন, এবং যিনি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত, তাঁহার ভজনা করিবেন, আর আপন আপন মুকুট সিংহাসনের সম্মুখে নিক্ষেপ করিয়া বলিবেন, ‘হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।’ আর, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, আমি তাঁহার দক্ষিণ হস্তে এক পুস্তক দেখিলাম; তাহা ভিতরে ও বাহিরে লিখিত ও সপ্ত মুদ্রায় মুদ্রাঙ্কিত। পরে আমি দেখিলাম, এক শক্তিমান্‌ দূত মহারবে এই কথা ঘোষণা করিতেছেন, ঐ পুস্তক খুলিবার ও তাহার মুদ্রা সকল খুলিবার যোগ্য কে? কিন্তু স্বর্গে কি পৃথিবীতে কি পৃথিবীর নীচে সেই পুস্তক খুলিতে অথবা তাহার প্রতি দৃষ্টি করিতে কাহারও সাধ্য হইল না। তখন আমি বিস্তর রোদন করিতে লাগিলাম, কারণ সেই পুস্তক খুলিবার ও তাহার প্রতি দৃষ্টি করিবার যোগ্য কাহাকেও পাওয়া গেল না। তাহাতে সেই প্রাচীনবর্গের মধ্যে এক জন আমাকে কহিলেন, রোদন করিও না; দেখ, যিনি যিহূদাবংশীয় সিংহ, দায়ূদের মূলস্বরূপ, তিনি ঐ পুস্তক ও উহার সপ্ত মুদ্রা খুলিবার নিমিত্ত বিজয়ী হইয়াছেন। পরে আমি দেখিলাম, ঐ সিংহাসনের ও চারি প্রাণীর মধ্যে ও প্রাচীনবর্গের মধ্যে এক মেষশাবক দাঁড়াইয়া আছেন, তাঁহাকে যেন বধ করা হইয়াছিল; তাঁহার সপ্ত শৃঙ্গ ও সপ্ত চক্ষু; সেই চক্ষু সমস্ত পৃথিবীতে প্রেরিত ঈশ্বরের সপ্ত আত্মা। পরে তিনি আসিয়া, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার দক্ষিণ হস্ত হইতে সেই পুস্তক গ্রহণ করিলেন। তিনি যখন পুস্তকখানি গ্রহণ করেন, তখন ঐ চারি প্রাণী ও চব্বিশ জন প্রাচীন মেষশাবকের সাক্ষাতে প্রণিপাত করিলেন; তাঁহাদের প্রত্যেকের কাছে একটী বীণা ও সুগন্ধি ধূপে পরিপূর্ণ স্বর্ণময় বাটি ছিল; সেই ধূপ পবিত্রগণের প্রার্থনাস্বরূপ। আর তাঁহারা এক নূতন গীত গান করেন, বলেন, ‘তুমি ঐ পুস্তক গ্রহণ করিবার ও তাহার মুদ্রা খুলিবার যোগ্য; কেননা তুমি হত হইয়াছ, এবং আপনার রক্ত দ্বারা সমুদয় বংশ ও ভাষা ও জাতি ও লোকবৃন্দ হইতে ঈশ্বরের নিমিত্ত লোকদিগকে ক্রয় করিয়াছ; এবং আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে তাহাদিগকে রাজ্য ও যাজক করিয়াছ; আর তাহারা পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করিবে।’ পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, এবং সেই সিংহাসনের ও প্রাণিবর্গের ও প্রাচীনবর্গের চারিদিকে অনেক দূতের রব শুনিলাম; তাঁহাদের সংখ্যা অযুত গুণ অযুত ও সহস্র গুণ সহস্র। তাঁহারা উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, ‘মেষশাবক, যিনি হত হইয়াছিলেন, তিনিই পরাক্রম ও ধন ও জ্ঞান ও শক্তি ও সমাদর ও গৌরব ও ধন্যবাদ, এই সকল গ্রহণ করিবার যোগ্য।’ পরে স্বর্গে ও পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচে ও সমুদ্রের উপরে যে সকল সৃষ্ট বস্তু, এবং এই সকলের মধ্যে যাহা কিছু আছে, সমস্তেরই এই বাণী শুনিলাম, ‘যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার প্রতি ও মেষশাবকের প্রতি ধন্যবাদ ও সমাদর ও গৌরব ও কর্ত্তৃত্ব যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে বর্ত্তুক।’ আর সেই চারি প্রাণী কহিলেন, আমেন। আর সেই প্রাচীনেরা প্রণিপাত করিয়া ভজনা করিলেন। পরে আমি দেখিলাম, যখন সেই মেষশাবক সেই সপ্তের মধ্যে প্রথম মুদ্রা খুলিলেন, তখন আমি সেই চারি প্রাণীর মধ্যে এক প্রাণীর মেঘগর্জ্জনের তুল্য এই বাণী শুনিলাম, আইস। আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, এক শুক্লবর্ণ অশ্ব, এবং তাহার উপরে যিনি বসিয়া আছেন, তিনি ধনুর্ধারী, ও তাঁহাকে এক মুকুট দত্ত হইল; এবং তিনি জয় করিতে করিতে ও জয় করিবার জন্য বাহির হইলেন। আর তিনি যখন দ্বিতীয় মুদ্রা খুলিলেন, তখন আমি দ্বিতীয় প্রাণীর এই বাণী শুনিলাম, আইস। পরে আর একটী অশ্ব বাহির হইল, সেটী লোহিতবর্ণ, এবং যে তাহার উপরে বসিয়া আছে, তাহাকে ক্ষমতা দত্ত হইল, যেন সে পৃথিবী হইতে শান্তি অপহরণ করে, আর যেন মনুষ্যেরা পরস্পরকে বধ করে; এবং একখান বৃহৎ খড়গ তাহাকে দত্ত হইল। পরে তিনি যখন তৃতীয় মুদ্রা খুলিলেন, তখন আমি তৃতীয় প্রাণীর এই বাণী শুনিলাম, আইস। পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, এক কৃষ্ণবর্ণ অশ্ব, এবং যে তাহার উপরে বসিয়া আছে, তাহার হস্তে এক তুলাদণ্ড। পরে আমি চারি প্রাণীর মধ্য হইতে নির্গত এইরূপ বাণী শুনিলাম, এক সের গোমের মূল্য এক সিকি, আর তিন সের যবের মূল্য এক সিকি, এবং তুমি তৈলের ও দ্রাক্ষারসের হিংসা করিও না। পরে তিনি যখন চতুর্থ মুদ্রা খুলিলেন, তখন আমি চতুর্থ প্রাণীর এই বাণী শুনিলাম, আইস। পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, এক পাণ্ডুবর্ণ অশ্ব, এবং যে তাহার উপরে বসিয়া আছে, তাহার নাম মৃত্যু, এবং পাতাল তাহার অনুগমন করিতেছে; আর তাহাদিগকে পৃথিবীর চতুর্থ অংশের উপরে কর্ত্তৃত্ব দত্ত হইল, যেন তাহারা তরবারি, দুর্ভিক্ষ, মারী ও বনপশু দ্বারা বধ করে। পরে তিনি যখন পঞ্চম মুদ্রা খুলিলেন, তখন আমি দেখিলাম, বেদির নীচে সেই লোকদের প্রাণ আছে, যাঁহারা ঈশ্বরের বাক্য প্রযুক্ত, এবং তাঁহাদের কাছে যে সাক্ষ্য ছিল, তৎপ্রযুক্ত নিহত হইয়াছিলেন। তাঁহারা উচ্চ রবে ডাকিয়া কহিলেন, হে পবিত্র সত্যময় অধিপতি, বিচার করিতে এবং পৃথিবী নিবাসীদিগকে আমাদের রক্তপাতের প্রতিফল দিতে কত কাল বিলম্ব করিবে? তখন তাঁহাদের প্রত্যেককে শুক্ল বস্ত্র দত্ত হইল, এবং তাঁহাদিগকে বলা হইল যে, তাঁহাদের যে সহদাস ও ভ্রাতৃগণকে তাঁহাদের ন্যায় নিহত হইতে হইবে, যে পর্য্যন্ত তাঁহাদের সংখ্যা পূর্ণ না হয়; আর কিঞ্চিৎ কাল বিরাম করিতে হইবে। পরে আমি দেখিলাম, তিনি যখন ষষ্ঠ মুদ্রা খুলিলেন, তখন মহাভূমিকম্প হইল; এবং সূর্য্য লোমজাত কম্বলের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ ও পূর্ণচন্দ্র রক্তের ন্যায় হইল; আর ডুমুরগাছ প্রবল বায়ুতে দোলায়িত হইয়া যেমন আপনার অপক্ব ফল ফেলিয়া দেয়, তেমনি আকাশমণ্ডলস্থ তারা সকল পৃথিবীতে পতিত হইল; আর আকাশমণ্ডল সঙ্কুচ্যমান পুস্তকের ন্যায় অপসারিত হইল, এবং সমস্ত পর্ব্বত ও দ্বীপ স্ব স্ব স্থান হইতে চালিত হইল। আর পৃথিবীর রাজারা ও মহতেরা ও সহস্রপতিগণ ও ধনবানেরা ও বিক্রমিবর্গ এবং সমস্ত দাস ও স্বাধীন লোক গুহাতে ও পর্ব্বতীয় শৈলে আপনাদিগকে লুকাইল, আর পর্ব্বত ও শৈল সকলকে কহিতে লাগিল, আমাদের উপরে পতিত হও, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তাঁহার সম্মুখ হইতে এবং মেষশাবকের ক্রোধ হইতে আমাদিগকে লুকাইয়া রাখ; কেননা তাঁহাদের ক্রোধের মহাদিন আসিয়া পড়িল, আর কে দাঁড়াইতে পারে? তার পরে আমি দেখিলাম, পৃথিবীর চারি কোণে চারি দূত দাঁড়াইয়া আছেন; তাঁহারা পৃথিবীর চারি বায়ু ধরিয়া রাখিতেছেন, যেন পৃথিবীর কিম্বা সমুদ্রের কিম্বা কোন বৃক্ষের উপরে বায়ু না বহে। পরে দেখিলাম, আর এক দূত সূর্য্যের উদয় স্থান হইতে উঠিয়া আসিতেছেন, তাঁহার কাছে জীবন্ত ঈশ্বরের মুদ্রা আছে; তিনি উচ্চৈঃস্বরে ডাকিয়া, যে চারি দূতকে পৃথিবীর ও সমুদ্রের হানি করিবার ক্ষমতা প্রদত্ত হইয়াছিল, তাঁহাদিগকে কহিলেন, আমরা যে পর্য্যন্ত আমাদের ঈশ্বরের দাসগণকে ললাটে মুদ্রাঙ্কিত না করি, সে পর্য্যন্ত তোমরা পৃথিবীর কিম্বা সমুদ্রের কিম্বা বৃক্ষসমূহের হানি করিও না। পরে আমি ঐ মুদ্রাঙ্কিত লোকদের সংখ্যা শুনিলাম; ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত বংশের এক লক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র লোক মুদ্রাঙ্কিত। যিহূদা-বংশের দ্বাদশ সহস্র লোক মুদ্রাঙ্কিত; রূবেণ-বংশের দ্বাদশ সহস্র; গাদ-বংশের দ্বাদশ সহস্র; আশের-বংশের দ্বাদশ সহস্র; নপ্তালি-বংশের দ্বাদশ সহস্র; মনঃশি-বংশের দ্বাদশ সহস্র; শিমিয়োন-বংশের দ্বাদশ সহস্র; লেবি-বংশের দ্বাদশ সহস্র; ইষাখর-বংশের দ্বাদশ সহস্র; সবূলূন-বংশের দ্বাদশ সহস্র; যোষেফ-বংশের দ্বাদশ সহস্র; বিন্যামীন-বংশের দ্বাদশ সহস্র লোক মুদ্রাঙ্কিত। ইহার পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না; তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষশাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; তাহারা শুক্লবস্ত্র পরিহিত, ও তাহাদের হস্তে খর্জ্জুর পত্র; এবং তাহারা উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া কহিতেছে, ‘পরিত্রাণ আমাদের ঈশ্বরের, যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, এবং মেষশাবকের দান।’ আর, সমুদয় দূত সিংহাসনের ও প্রাচীনবর্গের ও চারি প্রাণীর চারিদিকে দাঁড়াইয়া ছিলেন; তাঁহারা সিংহাসনের সম্মুখে অধোমুখে প্রণিপাত করিয়া ঈশ্বরের ভজনা করিয়া কহিলেন, ‘আমেন; ধন্যবাদ ও গৌরব ও জ্ঞান ও প্রশংসা ও সমাদর ও পরাক্রম ও শক্তি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে আমাদের ঈশ্বরের প্রতি বর্ত্তুক। আমেন।’ পরে প্রাচীনবর্গের মধ্যে এক জন আমাকে কহিলেন, শুক্লবস্ত্রপরিহিত এই লোকেরা কে, ও কোথা হইতে আসিল? আমি তাঁহাকে বলিলাম, হে আমার প্রভু, তাহা আপনিই জানেন। তিনি আমাকে কহিলেন, ইহারা সেই লোক, যাহারা সেই মহাক্লেশের মধ্য হইতে আসিয়াছে, এবং মেষশাবকের রক্তে আপন আপন বস্ত্র ধৌত করিয়াছে, ও শুক্লবর্ণ করিয়াছে। এই জন্য ইহারা ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে আছে; এবং তাহারা দিবারাত্র তাঁহার মন্দিরে তাঁহার আরাধনা করে, আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি ইহাদের উপরে আপন তাম্বু বিস্তার করিবেন। “ইহারা আর কখনও ক্ষুধিত হইবে না, আর কখনও তৃষ্ণার্ত্তও হইবে না, এবং ইহাদিগেতে রৌদ্র বা কোন উত্তাপ লাগিবে না; কারণ সিংহাসনের মধ্যস্থিত মেষশাবক ইহাদিগকে পালন করিবেন, এবং জীবন-জলের উনুইয়ের নিকটে গমন করাইবেন, আর ঈশ্বর ইহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” আর তিনি যখন সপ্তম মুদ্রা খুলিলেন, তখন স্বর্গে অর্দ্ধ ঘটিকা পর্য্যন্ত নিঃশব্দতা হইল। পরে আমি সেই সপ্ত দূতকে দেখিলাম, যাঁহারা ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া থাকেন; তাঁহাদিগকে সপ্ত তূরী দত্ত হইল। পরে আর এক দূত আসিয়া বেদির নিকটে দাঁড়াইলেন, তাঁহার হস্তে স্বর্ণধূপধানী ছিল; এবং তাঁহাকে প্রচুর ধূপ দত্ত হইল, যেন তিনি তাহা সিংহাসনের সম্মুখস্থ স্বর্ণবেদির উপরে সকল পবিত্র লোকের প্রার্থনায় যোগ করেন। তাহাতে পবিত্রগণের প্রার্থনার সহিত দূতের হস্ত হইতে ধূপের ধূম ঈশ্বরের সম্মুখে উঠিল। পরে ঐ দূত ধূপধানী লইয়া বেদির অগ্নিতে পূর্ণ করিয়া পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিলেন; তাহাতে মেঘ-গর্জ্জন, রব, বিদ্যুৎ ও ভূমিকম্প হইল। পরে সপ্ত তূরীধারী সেই সপ্ত দূত তূরী বাজাইতে প্রস্তুত হইলেন। প্রথম দূত তূরী বাজাইলেন, আর রক্তমিশ্রিত শিলা ও অগ্নি উপস্থিত হইয়া পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, তাহাতে পৃথিবীর তৃতীয় অংশ পুড়িয়া গেল, ও বৃক্ষসমূহের তৃতীয় অংশ পুড়িয়া গেল, এবং সমুদয় হরিদ্বর্ণ তৃণ পুড়িয়া গেল। পরে দ্বিতীয় দূত তূরী বাজাইলেন, আর যেন অগ্নিতে প্রজ্বলিত এক মহাপর্ব্বত সমুদ্র মধ্যে নিক্ষিপ্ত হইল; তাহাতে সমুদ্রের তৃতীয় অংশ রক্ত হইয়া গেল ও সমুদ্রমধ্যস্থ তৃতীয় অংশ জীবনবিশিষ্ট সৃষ্ট জন্তু মরিয়া গেল, এবং জাহাজ সমুদয়ের তৃতীয় অংশ নষ্ট হইল। পরে তৃতীয় দূত তূরী বাজাইলেন, আর প্রদীপের ন্যায় প্রজ্বলিত এক বৃহৎ তারা আকাশ হইতে পড়িয়া গেল, নদ নদীর তৃতীয় অংশের ও জলের উনুই সকলের উপরে পড়িল। সেই তারার নাম নাগদানা, তাহাতে তৃতীয় অংশ জল নাগদানা হইয়া উঠিল, এবং জল তিক্ত হওয়া প্রযুক্ত অনেক লোক মরিয়া গেল। পরে চতুর্থ দূত তূরী বাজাইলেন, আর সূর্য্যের তৃতীয় অংশ ও চন্দ্রের তৃতীয় অংশ ও তারাগণের তৃতীয় অংশ আহত হইল, যেন প্রত্যেকের তৃতীয় অংশ অন্ধকারময় হয়, এবং দিবসের তৃতীয় ভাগ আলোকরহিত হয়, আর রাত্রিও তদ্রূপ হয়। পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর আকাশের মধ্যপথে উড়িয়া যাইতেছে, এমন এক ঈগল পক্ষীর বাণী শুনিলাম, সে উচ্চ রবে বলিল, অবশিষ্ট যে তিন দূত তূরী বাজাইবেন, তাঁহাদের তূরীধ্বনি হেতু, পৃথিবীনিবাসীদের সন্তাপ, সন্তাপ, সন্তাপ হইবে। পরে পঞ্চম দূত তূরী বাজাইলেন, আর আমি স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে পতিত একটা তারা দেখিলাম; তাহাকে অগাধলোকের কূপের চাবি দত্ত হইল। তাহাতে সে অগাধলোকের কূপ খুলিল, আর ঐ কূপ হইতে বৃহৎ ভাটির ধূমের ন্যায় ধূম উঠিল; কূপ হইতে উত্থিত সেই ধূমে সূর্য্য ও আকাশ অন্ধকারাবৃত হইল। পরে ঐ ধূম হইতে পঙ্গপাল বাহির হইয়া পৃথিবীতে আসিল, আর তাহাদিগকে পৃথিবীস্থ বৃশ্চিকের ক্ষমতার ন্যায় ক্ষমতা দত্ত হইল। আর তাহাদিগকে বলা হইল, পৃথিবীস্থ তৃণের কি হরিদ্বর্ণ শাকের কি কোন বৃক্ষের হানি করিও না, কেবল সেই মনুষ্যদেরই হানি কর, যাহাদের ললাটে ঈশ্বরের মুদ্রাঙ্ক নাই। উহাদিগকে বধ করিবার অনুমতি নয়, কেবল পাঁচ মাস পর্য্যন্ত যাতনা দিবার অনুমতি তাহাদিগকে দত্ত হইল; তাহাদের আঘাতে বৃশ্চিকাহত মনুষ্যের যাতনাতুল্য যাতনা হয়। তৎকালে মনুষ্যেরা মৃত্যুর অন্বেষণ করিবে, কিন্তু কোন মতে তাহার উদ্দেশ পাইবে না; তাহারা মরিবার আকাঙ্ক্ষা করিবে, কিন্তু মৃত্যু তাহাদের হইতে পলায়ন করিবে। ঐ পঙ্গপালের আকৃতি যুদ্ধার্থে সজ্জীভূত অশ্বগণের ন্যায়, ও তাহাদের মস্তকে যেন সুবর্ণের তুল্য মুকুট ছিল, এবং তাহাদের মুখ মনুষ্য-মুখের ন্যায়; আর তাহাদের কেশ স্ত্রীলোকের কেশের ন্যায়, ও তাহাদের দন্ত সিংহ-দন্তের ন্যায়। আর তাহাদের বুকপাটা লৌহ-বুকপাটার ন্যায়, ও তাহাদের পক্ষের শব্দ রথের, যুদ্ধে ধাবমান বহু অশ্বের শব্দতুল্য। আর বৃশ্চিকের ন্যায় তাহাদের লাঙ্গুল ও হুল আছে; এবং পাঁচ মাস মনুষ্যদের হানি করিতে তাহাদের ক্ষমতা ঐ লাঙ্গুলে রহিয়াছে। ঐ পঙ্গপালের রাজা অগাধলোকের দূত, তাহার নাম ইব্রীয় ভাষায় আবদ্দোন, ও গ্রীক ভাষায় তাহার নাম আপল্লুয়োন [বিনাশক]। প্রথম সন্তাপ গত হইল; দেখ, ইহার পরে আরও দুই সন্তাপ আসিতেছে। পরে ষষ্ঠ দূত তূরী বাজাইলেন, আর আমি ঈশ্বরের সম্মুখস্থ স্বর্ণবেদির চারি শৃঙ্গ হইতে এক বাণী শুনিতে পাইলাম; উহা সেই ষষ্ঠ তূরীধারী দূতকে কহিল, ইউফ্রেটীস মহানদীর সমীপে যে চারি দূত বদ্ধ আছে, তাহাদিগকে মুক্ত কর। তখন মনুষ্যজাতির তৃতীয় অংশকে বধ করিবার জন্য যে চারি দূতকে সেই দণ্ড, ও দিন ও মাস ও বৎসরের জন্য প্রস্তুত করা হইয়াছিল, তাহারা মুক্ত হইল। ঐ অশ্বারোহী সৈন্যের সংখ্যা দুই সহস্র লক্ষ; আমি তাহাদের সেই সংখ্যা শুনিলাম। আর দর্শনে আমি সেই অশ্বগণ ও তদারোহী ব্যক্তিদিগকে এইরূপ দেখিতে পাইলাম, তাহাদের বুকপাটা অগ্নিময় ও নীলবর্ণ ও গন্ধকময়, এবং অশ্বগণের মস্তক সিংহ-মস্তকের ন্যায়, ও তাহাদের মুখ হইতে অগ্নি, ধূম ও গন্ধক বাহির হইতেছে। ঐ তিন আঘাত দ্বারা, তাহাদের মুখ হইতে নির্গত অগ্নি, ধূম ও গন্ধক দ্বারা, তৃতীয় অংশ মনুষ্য হত হইল। কেননা সেই অশ্বদের শক্তি তাহাদের মুখে ও তাহাদের লাঙ্গুলে; কারণ তাহাদের লাঙ্গুল সর্পের তুল্য এবং মস্তকবিশিষ্ট; তদ্দ্বারাই তাহারা হানি করে। এই সকল আঘাতে যাহারা হত হইল না, সেই অবশিষ্ট মনুষ্যেরা আপন আপন হস্তকৃত কর্ম্ম হইতে মন ফিরাইল না, অর্থাৎ ভূতগণের ভজনা হইতে, এবং “যে প্রতিমাগণ দেখিতে বা শুনিতে বা চলিতে পারে না, সেই সকল স্বর্ণ, রৌপ্য, পিত্তল, প্রস্তর ও কাষ্ঠময় প্রতিমাগণের” ভজনা হইতে নিবৃত্ত হইল না। আর তাহারা আপন আপন নরহত্যা, আপন আপন কুহক, আপন আপন ব্যভিচার ও আপন আপন চৌর্য্য হইতেও মন ফিরাইল না। পরে আমি আর এক শক্তিমান্‌ দূতকে স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিতে দেখিলাম। তাঁহার পরিচ্ছদ মেঘ, তাঁহার মস্তকের উপরে মেঘধনুক, তাঁহার মুখ সূর্য্যতুল্য, তাঁহার চরণ অগ্নিস্তম্ভতুল্য, এবং তাঁহার হস্তে খোলা একখানি ক্ষুদ্র পুস্তক ছিল। তিনি সমুদ্রে দক্ষিণ চরণ ও স্থলে বাম চরণ রাখিলেন; এবং সিংহগর্জ্জনের ন্যায় হুঙ্কারশব্দে চীৎকার করিলেন; আর তিনি চীৎকার করিলে সপ্ত মেঘধ্বনি আপন আপন রব শুনাইল। সেই সপ্ত মেঘধ্বনি কথা কহিলে আমি লিখিতে উদ্যত হইলাম; আর স্বর্গ হইতে এই বাণী শুনিলাম, ঐ সপ্ত মেঘধ্বনি যাহা কহিল, তাহা মুদ্রাঙ্কিত কর, লিখিও না। পরে সেই দূত, যাঁহাকে আমি সমুদ্রের উপরে ও স্থলের উপরে দাঁড়াইতে দেখিয়াছিলাম, তিনি স্বর্গের প্রতি “আপন দক্ষিণ হস্ত উঠাইলেন, আর যিনি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত, যিনি আকাশ ও তন্মধ্যস্থ বস্তু সকলের এবং পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থ বস্তু সকলের এবং সমুদ্র ও তন্মধ্যস্থ বস্তু সকলের সৃষ্টি করিয়াছিলেন, তাঁহার নামে এই শপথ করিলেন”, আর বিলম্ব হইবে না; কিন্তু সপ্তম দূতের ধ্বনির দিনসমূহে, যখন তিনি তূরী বাজাইতে উদ্যত হইবেন, তখন ঈশ্বরের নিগূঢ়তত্ত্ব সমাপ্ত হইবে, যেমন তিনি আপন দাস ভাববাদিগণকে এই মঙ্গলবার্ত্তা জানাইয়াছিলেন। পরে, স্বর্গ হইতে যে বাণী শুনিয়াছিলাম, তাহা আমার সহিত আবার আলাপ করিয়া কহিল, যাও, সমুদ্রের ও স্থলের উপরে দণ্ডায়মান ঐ দূতের হস্ত হইতে সেই খোলা পুস্তকখানি লও। তখন আমি সেই দূতের নিকটে গিয়া তাঁহাকে কহিলাম, ঐ ক্ষুদ্র পুস্তকখানি আমাকে দিউন। তিনি আমাকে কহিলেন, লও, খাইয়া ফেল; ইহা তোমার উদরকে তিক্ত করিয়া তুলিবে, কিন্তু তোমার মুখে মধুর ন্যায় মিষ্ট লাগিবে। তখন আমি দূতের হস্ত হইতে সেই ক্ষুদ্র পুস্তক গ্রহণ করিয়া খাইয়া ফেলিলাম; তাহা মুখে মধুর ন্যায় মিষ্ট লাগিল, কিন্তু খাইয়া ফেলিলে পর আমার উদর তিক্ত বোধ হইল। পরে তাঁহারা আমাকে কহিলেন, অনেক প্রজাবৃন্দের ও জাতির ও ভাষার ও রাজার বিষয়ে তোমাকে আবার ভাববাণী বলিতে হইবে। পরে যষ্টির ন্যায় এক নল আমাকে দত্ত হইল; এক জন কহিলেন, উঠ, ঈশ্বরের মন্দির ও যজ্ঞবেদি ও যাহারা তাহার মধ্যে ভজনা করে, তাহাদিগকে পরিমাণ কর। কিন্তু মন্দিরের বহিঃস্থিত প্রাঙ্গণ বাদ দেও, তাহা পরিমাণ করিও না, কারণ তাহা জাতিগণকে দত্ত হইয়াছে; বিয়াল্লিশ মাস পর্য্যন্ত তাহারা পবিত্র নগরকে পদতলে দলন করিবে। আর আমি আপনার দুই সাক্ষীকে কার্য্য দিব, তাঁহারা চটপরিহিত হইয়া এক সহস্র দুই শত ষাট দিন পর্য্যন্ত ভাববাণী বলিবেন। তাঁহারা সেই দুই জিতবৃক্ষ ও দুই দীপবৃক্ষস্বরূপ, যাঁহারা পৃথিবীর প্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন। আর যদি কেহ তাঁহাদের হানি করিতে চায়, তবে তাঁহাদের মুখ হইতে অগ্নি বাহির হইয়া তাঁহাদের শত্রুগণকে গ্রাস করে; যদি কেহ তাঁহাদের হানি করিতে চায়, তবে সেইরূপে তাহাকে হত হইতে হইবে। আকাশ রুদ্ধ করিতে তাঁহাদের ক্ষমতা আছে, যেন তাঁহাদের ভাববাণী কথনের সমস্ত দিন বৃষ্টি না হয়; এবং জল রক্ত করিবার জন্য জলের উপরে ক্ষমতা, এবং যত বার ইচ্ছা করেন পৃথিবীকে সমস্ত আঘাতে আঘাত করিবার ক্ষমতা তাঁহাদের আছে। তাঁহারা আপনাদের সাক্ষ্য সমাপ্ত করিলে পর, অগাধলোক হইতে যে পশু উঠিবে, সে তাঁহাদের সহিত যুদ্ধ করিবে, আর তাঁহাদিগকে জয় করিয়া বধ করিবে। আর তাঁহাদের শব সেই মহানগরের চকে পড়িয়া থাকিবে, যে নগরকে আত্মিক ভাবে সদোম ও মিসর বলে, আবার যেখানে তাঁহাদের প্রভু ক্রুশারোপিত হইয়াছিলেন। আর লোকবৃন্দের ও বংশবৃন্দের ও ভাষাসমূহের ও জাতিবৃন্দের লোক সাড়ে তিন দিন পর্য্যন্ত তাঁহাদের শব দেখিবে, আর তাঁহাদের শব কবরে রাখিবার অনুমতি দিবে না। আর পৃথিবী-নিবাসীরা তাঁহাদের বিষয়ে আনন্দিত হইবে, আমোদপ্রমোদ করিবে, ও পরস্পর উপঢৌকন পাঠাইবে, কেননা এই দুই ভাববাদী পৃথিবী-নিবাসীদিগকে যন্ত্রণা দিতেন। পরে সেই সাড়ে তিন দিন গত হইলে, “ঈশ্বর হইতে জীবনের নিশ্বাস তাঁহাদের মধ্যে প্রবেশ করিল, তাহাতে তাঁহারা চরণে ভর দিয়া দাঁড়াইলেন,” এবং যাহারা তাঁহাদিগকে দেখিল, তাহারা অতিশয় ত্রাসযুক্ত হইল। পরে তাঁহারা শুনিলেন, স্বর্গ হইতে তাঁহাদের প্রতি এই উচ্চ রব হইতেছে, এই স্থানে উঠিয়া আইস; তখন তাঁহারা মেঘযোগে স্বর্গে উঠিয়া গেলেন, এবং তাঁহাদের শত্রুগণ তাঁহাদিগকে দেখিল। সেই দণ্ডে মহাভূমিকম্প হইল, তাহাতে নগরের দশমাংশ পতিত হইল; সেই ভূমিকম্পে সপ্ত সহস্র মনুষ্য হত হইল, এবং অবশিষ্ট সকলে ভীত হইল, ও স্বর্গের ঈশ্বরের গৌরব করিল। দ্বিতীয় সন্তাপ গত হইল; দেখ, তৃতীয় সন্তাপ শীঘ্রই আসিতেছে। পরে সপ্তম দূত তূরী বাজাইলেন, তখন স্বর্গে উচ্চ রবে এইরূপ বাণী হইল, ‘জগতের রাজ্য আমাদের প্রভুর ও তাঁহার খ্রীষ্টের হইল, এবং তিনি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন।’ পরে সেই চব্বিশ জন প্রাচীন, যাঁহারা ঈশ্বরের সম্মুখে আপন আপন সিংহাসনে বসিয়া থাকেন, তাঁহারা অধোমুখে প্রণিপাত করিয়া ঈশ্বরের ভজনা করিয়া কহিতে লাগিলেন, ‘হে প্রভু ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্‌, তুমি আছ ও ছিলে, আমরা তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি আপন মহাপরাক্রম গ্রহণ করিয়া রাজত্ব করিয়াছ। আর জাতিগণ ক্রুদ্ধ হইয়াছিল, কিন্তু তোমার ক্রোধ উপস্থিত হইল, আর মৃত লোকদের বিচার করিবার সময় এবং তোমার দাস ভাববাদিগণকে ও পবিত্রগণকে ও যাহারা তোমার নাম ভয় করে, তাহাদের ক্ষুদ্র ও মহান সকলকে পুরস্কার দিবার, এবং পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ করিবার সময় উপস্থিত হইল।’ পরে ঈশ্বরের স্বর্গস্থ মন্দিরের দ্বার মুক্ত হইল, তাহাতে তাঁহার মন্দিরের মধ্যে তাঁহার নিয়ম-সিন্দুক দেখা গেল, এবং বিদ্যুৎ ও রব ও মেঘধ্বনি ও ভূমিকম্প ও মহাশিলাবৃষ্টি হইল। আর স্বর্গমধ্যে এক মহৎ চিহ্ন দেখা গেল। একটী স্ত্রীলোক ছিল, সূর্য্য তাহার পরিচ্ছদ, ও চন্দ্র তাহার পদের নীচে, এবং তাহার মস্তকের উপরে দ্বাদশ তারার এক মুকুট। সে গর্ভবতী, আর ব্যথিতা হইয়া চেঁচাইতেছে, সন্তান প্রসবের জন্য ব্যথা খাইতেছে। আর স্বর্গমধ্যে আর এক চিহ্ন দেখা গেল, দেখ, এক প্রকাণ্ড লোহিতবর্ণ নাগ, তাহার সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ এবং সপ্ত মস্তকে সপ্ত কিরীট, আর তাহার লাঙ্গুল আকাশের তৃতীয়াংশ নক্ষত্র আকর্ষণ করিয়া পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিল। যে স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসব করিতে উদ্যত, সেই নাগ তাহার সম্মুখে দাঁড়াইল, যেন সে প্রসব করিবামাত্র তাহার সন্তানকে গ্রাস করিতে পারে। পরে সেই স্ত্রীলোকটী “এক পুত্রসন্তান প্রসব করিল; যিনি লৌহদণ্ড দ্বারা সমস্ত জাতিকে শাসন করিবেন।” আর তাহার সন্তানটী ঈশ্বরের ও তাঁহার সিংহাসনের নিকটে নীত হইলেন। আর সেই স্ত্রীলোকটী প্রান্তরে পলায়ন করিল; তথায় এক সহস্র দুই শত ষাট দিন পর্য্যন্ত প্রতিপালিতা হইবার জন্য ঈশ্বরকর্ত্তৃক প্রস্তুত তাহার একটী স্থান আছে। আর স্বর্গে যুদ্ধ হইল; মীখায়েল ও তাঁহার দূতগণ ঐ নাগের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তাহাতে সেই নাগ ও তাহার দূতগণও যুদ্ধ করিল, কিন্তু জয়ী হইল না, এবং স্বর্গে তাহাদের স্থান আর পাওয়া গেল না। আর সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়, সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, এবং তাহার দূতগণও তাহার সঙ্গে নিক্ষিপ্ত হইল। তখন আমি স্বর্গে এই উচ্চ রব শুনিলাম, ‘এখন পরিত্রাণ ও পরাক্রম ও রাজত্ব আমাদের ঈশ্বরের, এবং কর্ত্তৃত্ব তাঁহার খ্রীষ্টের অধিকার হইল; কেননা যে আমাদের ভ্রাতৃগণের উপরে দোষারোপকারী, যে দিবারাত্র আমাদের ঈশ্বরের সম্মুখে তাহাদের নামে দোষারোপ করে, সে নিপাতিত হইল। আর মেষশাবকের রক্ত প্রযুক্ত, এবং আপন আপন সাক্ষ্যের বাক্য প্রযুক্ত, তাহারা তাহাকে জয় করিয়াছে; আর তাহারা মৃত্যু পর্য্যন্ত আপন আপন প্রাণও প্রিয় জ্ঞান করে নাই। অতএব, হে স্বর্গ ও তন্নিবাসিগণ, আনন্দ কর; পৃথিবী ও সমুদ্রের সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।’ পরে যখন ঐ নাগ দেখিল সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে, তখন, যে স্ত্রীলোকটী পুত্রসন্তানটী প্রসব করিয়াছিল, সে সেই স্ত্রীলোকটীর প্রতি তাড়না করিতে লাগিল। তখন সেই স্ত্রীলোকটীকে বৃহৎ ঈগল পক্ষীর দুই পক্ষ দত্ত হইল, যেন সে প্রান্তরে, নিজ স্থানে উড়িয়া যায়, যেখানে ঐ নাগের দৃষ্টি হইতে দূরে ‘এক কাল ও দুই কাল ও অর্দ্ধ কাল’ পর্য্যন্ত সে প্রতিপালিতা হয়। পরে সেই সর্প আপন মুখ হইতে স্ত্রীলোকটীর পশ্চাৎ নদীবৎ জলধারা উদগীরণ করিল, যেন তাহাকে জলস্রোতে ভাসাইয়া দিতে পারে। আর পৃথিবী সেই স্ত্রীলোকটীকে সাহায্য করিল, পৃথিবী আপন মুখ খুলিয়া নাগের মুখ হইতে উদগীর্ণ নদী কবলিত করিল। আর সেই স্ত্রীলোকটীর প্রতি নাগ ক্রোধান্বিত হইল, আর তাহার বংশের সেই অবশিষ্ট লোকদের সহিত, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিতে গেল। আর সে সমুদ্রের বালুকার উপরে দাঁড়াইল। আর আমি দেখিলাম, “সমুদ্রের মধ্য হইতে এক পশু উঠিতেছে; তাহার দশ শৃঙ্গ” ও সপ্ত মস্তক; এবং তাহার শৃঙ্গগুলিতে দশ কিরীট, এবং তাহার মস্তকগুলিতে ঈশ্বরনিন্দার কতিপয় নাম। সেই যে পশুকে আমি দেখিলাম, সে “চিতাবাঘের তুল্য, আর তাহার চরণ ভল্লুকের ন্যায়, এবং মুখ সিংহমুখের ন্যায়”; আর সেই নাগ আপনার পরাক্রম ও আপনার সিংহাসন ও মহৎ কর্ত্তৃত্ব তাহাকে দান করিল। পরে দেখিলাম, তাহার ঐ সকল মস্তকের মধ্যে একটা মস্তক যেন মৃত্যুজনক আঘাতে আহত হইয়াছিল, আর তাহার সেই মৃত্যুজনক আঘাতের প্রতীকার করা হইল; আর সমুদয় পৃথিবী চমৎকার জ্ঞান করিয়া সেই পশুর পশ্চাৎ চলিল। আর তাহারা নাগের ভজনা করিল, কেননা সে সেই পশুকে আপন কর্ত্তৃত্ব দিয়াছিল; আর তাহারা সেই পশুর ভজনা করিল, কহিল, এই পশুর তুল্য কে? এবং ইহার সহিত কে যুদ্ধ করিতে পারে? আর এমন এক মুখ তাহাকে দত্ত হইল, যাহা দর্প ও ঈশ্বর-নিন্দা করে, এবং তাহাকে বিয়াল্লিশ মাস পর্য্যন্ত কার্য্য করিবার ক্ষমতা দেওয়া গেল। তাহাতে সে ঈশ্বরের নিন্দা করিতে মুখ খুলিল, তাঁহার নামের ও তাঁহার তাম্বুর, এবং স্বর্গবাসী সকলের নিন্দা করিতে লাগিল। আর পবিত্রগণের সহিত যুদ্ধ করিবার ও তাহাদিগকে জয় করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইল; এবং তাহাকে সমস্ত বংশের ও লোকবৃন্দের ও ভাষার ও জাতির উপরে কর্ত্তৃত্ব দত্ত হইল। তাহাতে পৃথিবী-নিবাসীদের সমস্ত লোক তাহার ভজনা করিবে, যাহাদের নাম জগৎপত্তনের সময়াবধি হত মেষশাবকের জীবন পুস্তকে লিখিত নাই। যদি কাহারও কাণ থাকে, সে শুনুক। যদি কেহ বন্দিত্বের পাত্র থাকে, সে বন্দিত্বে যাইবে; যদি কেহ খড়গ দ্বারা হত্যা করে, তাহাকে খড়গ দ্বারা হত হইতে হইবে। এস্থলে পবিত্রগণের ধৈর্য্য ও বিশ্বাস দেখা যায়। পরে আমি আর এক পশুকে দেখিলাম, সে স্থল হইতে উঠিল, এবং মেষশাবকের ন্যায় তাহার দুই শৃঙ্গ ছিল, আর সে নাগের ন্যায় কথা কহিত। সে ঐ প্রথম পশুর সমস্ত কর্ত্তৃত্ব তাহার সাক্ষাতে পরিচালনা করে; এবং যে প্রথম পশুর মৃত্যুজনক আঘাতের প্রতীকার করা হইয়াছিল, পৃথিবীকে ও তন্নিবাসীদিগকে তাহার ভজনা করায়। আর সে মহৎ মহৎ চিহ্ন-কার্য্য করে; এমন কি মনুষ্যদের সাক্ষাতে স্বর্গ হইতে পৃথিবীতে অগ্নি নামায়। এইরূপে সেই পশুর সাক্ষাতে যে সকল চিহ্ন-কার্য্য করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইয়াছে, তদ্দ্বারা সে পৃথিবীনিবাসীদের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীনিবাসীদিগকে বলে, ‘যে পশু খড়গ দ্বারা আহত হইয়াও বাঁচিয়া ছিল, তাহার এক প্রতিমা-নির্ম্মাণ কর।’ আর তাহাকে এই ক্ষমতা দত্ত হইল যে, সে ঐ পশুর প্রতিমার মধ্যে নিশ্বাস প্রদান করে, যেন ঐ পশুর প্রতিমা কথা কহিতে পারে, ও এমন করিতে পারে যে, যত লোক সেই পশুর প্রতিমার ভজনা না করিবে, তাহাদিগকে বধ করা হয়। আর সে ক্ষুদ্র ও মহান্‌, ধনী ও দরিদ্র, স্বাধীন ও দাস, সকলকেই দক্ষিণ হস্তে কিম্বা ললাটে ছাব ধারণ করায়; আর ঐ পশুর ছাব অর্থাৎ নাম কিম্বা নামের সংখ্যা যে কেহ ধারণ না করে, তাহার ক্রয় বিক্রয় করিবার অধিকার বদ্ধ করে। এস্থলে জ্ঞান দেখা যায়। যে বুদ্ধিমান্‌, সে ঐ পশুর সংখ্যা গণনা করুক; কেননা তাহা মনুষ্যের সংখ্যা, এবং সেই সংখ্যা ছয় শত ছেষট্টি। পরে আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, সেই মেষশাবক সিয়োন পর্ব্বতের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন, এবং তাঁহার সহিত এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোক, তাহাদের ললাটে তাঁহার নাম ও তাঁহার পিতার নাম লিখিত। পরে স্বর্গ হইতে বহু জলের কল্লোল ও মহামেঘধ্বনির ন্যায় রব শুনিলাম; যে রব শুনিলাম, তাহাতে বোধ হইল, যেন বীণাবাদকদল আপন আপন বীণা বাজাইতেছে; আর তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও সেই চারি প্রাণীর ও প্রাচীনবর্গের সম্মুখে নূতন একটী গীত গান করে; পৃথিবী হইতে ক্রীত সেই এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোক ব্যতিরেকে আর কেহ সেই গীত শিখিতে পারিল না। ইহারা রমণীদের সংসর্গে কলুষিত হয় নাই, কারণ ইহারা অমৈথুন। যে কোন স্থানে মেষশাবক গমন করেন, সেই স্থানে ইহারা তাঁহার অনুগামী হয়। ইহারা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের নিমিত্ত অগ্রিমাংশ বলিয়া মনুষ্যদের মধ্য হইতে ক্রীত হইয়াছে। আর “তাহাদের মুখে কোন মিথ্যা কথা পাওয়া যায় নাই;” তাহারা নির্দ্দোষ। পরে আমি আর এক দূতকে দেখিলাম, তিনি আকাশের মধ্য পথে উড়িতেছেন, তাঁহার কাছে অনন্তকালীন সুসমাচার আছে, যেন তিনি পৃথিবী-নিবাসীদিগকে, প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দকে, সুসমাচার জানান; তিনি উচ্চ রবে এই কথা কহিলেন, ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহাকে গৌরব প্রদান কর, কেননা তাঁহার বিচার-সময় উপস্থিত; যিনি স্বর্গ, পৃথিবী, সমুদ্র ও জলের উনুই সকল উৎপন্ন করিয়াছেন, তাঁহার ভজনা কর। পরে তাঁহার পশ্চাৎ দ্বিতীয় এক দূত আসিলেন, তিনি কহিলেন, “পড়িল, পড়িল সেই মহতী বাবিল, যে সমস্ত জাতিকে আপনার বেশ্যাক্রিয়ার রোষমদিরা পান করাইয়াছে।” পরে তৃতীয় এক দূত উহাঁদের পশ্চাৎ আসিলেন, তিনি উচ্চ রবে কহিলেন, যদি কেহ সেই পশু ও তাহার প্রতিমূর্ত্তির ভজনা করে, আর নিজ ললাটে কি হস্তে ছাব ধারণ করে, তবে সেই ব্যক্তিও ঈশ্বরের সেই “রোষ-মদিরা পান করিবে, যাহা তাঁহার কোপের পানপাত্রে অমিশ্রিতরূপে প্রস্তুত হইয়াছে”; এবং পবিত্র দূতগণের সাক্ষাতে ও মেষশাবকের সাক্ষাতে “অগ্নিতে ও গন্ধকে যাতনা পাইবে। তাহাদের যাতনার ধূম যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে উঠে”; যাহারা সেই পশু ও তাহার প্রতিমূর্ত্তির ভজনা করে, এবং যে কেহ তাহার নামের ছাব ধারণ করে, তাহারা দিবাতে কি রাত্রিতে কখনও বিশ্রাম পায় না। এস্থলে সেই পবিত্রগণের ধৈর্য্য দেখা যায়, যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা ও যীশুর বিশ্বাস পালন করে। পরে আমি স্বর্গ হইতে এই বাণী শুনিলাম, তুমি লিখ, ধন্য সেই মৃতেরা যাহারা এখন অবধি প্রভুতে মরে, হাঁ, আত্মা কহিতেছেন, তাহারা আপন আপন শ্রম হইতে বিশ্রাম পাইবে; কারন তাহাদের কার্য্য সকল তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে। আর আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, শুভ্রবর্ণ একখানি মেঘ, “সেই মেঘের উপরে মনুষ্যপুত্রের ন্যায় এক ব্যক্তি” বসিয়া আছেন, তাঁহার মস্তকে সুবর্ণ মুকুট ও তাঁহার হস্তে একখানি তীক্ষ্ণ কাস্ত্যা। পরে মন্দির হইতে আর এক দূত বাহির হইয়া, যিনি মেঘের উপরে বসিয়া আছেন, তাঁহাকে উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া কহিলেন, “আপনার কাস্ত্যা লাগাউন, শস্য ছেদন করুন; কারণ শস্যচ্ছেদনের সময় আসিয়াছে;” কেননা পৃথিবীর শস্য শুকাইয়া গেল। তাহাতে, যিনি মেঘের উপরে বসিয়া আছেন, তিনি আপন কাস্ত্যা পৃথিবীতে লাগাইলেন, ও পৃথিবীর শস্যচ্ছেদন করা হইল। পরে স্বর্গস্থ মন্দির হইতে আর এক দূত বাহির হইলেন; তাঁহারও হস্তে একখানি তীক্ষ্ণ কাস্ত্যা ছিল। আর যজ্ঞবেদি হইতে অন্য এক দূত বাহির হইলেন, তিনি অগ্নির উপরে কর্ত্তৃত্ববিশিষ্ট, তিনি ঐ তীক্ষ্ণ কাস্ত্যাধারী ব্যক্তিকে উচ্চ রবে এই কথা কহিলেন, তোমার তীক্ষ্ণ কাস্ত্যা লাগাও, পৃথিবীর দ্রাক্ষালতার গুচ্ছ সকল ছেদন কর, কেননা তাহার ফল পাকিয়াছে। তাহাতে ঐ দূত পৃথিবীতে আপন কাস্ত্যা লাগাইয়া পৃথিবীর দ্রাক্ষা-গুচ্ছ ছেদন করিলেন, আর ঈশ্বরের রোষের মহাকুণ্ডে নিক্ষেপ করিলেন। পরে নগরের বাহিরে ঐ কুণ্ডে তাহা দলন করা গেল, তাহাতে কুণ্ড হইতে রক্ত বাহির হইল, এবং অশ্বগণের বল্‌গা পর্য্যন্ত উঠিয়া এক সহস্র ছয় শত তীর ব্যাপ্ত হইল। পরে আমি স্বর্গে আর এক চিহ্ন দেখিলাম, তাহা মহৎ ও অদ্ভুত; সপ্ত দূতকে সপ্ত আঘাত লইয়া আসিতে দেখিলাম; সেই সকল শেষ আঘাত, কেননা সেই সকলে ঈশ্বরের রোষ সমাপ্ত হইল। আর আমি দেখিলাম, যেন অগ্নিমিশ্রিত কাচময় সমুদ্র; এবং যাহারা সেই পশু ও তাহার প্রতিমা ও তাহার নামের সংখ্যার উপরে বিজয়ী হইয়াছে, তাহারা ঐ কাচময় সমুদ্রের তীরে দাঁড়াইয়া আছে, তাহাদের হস্তে ঈশ্বরের বীণা। আর তাহারা ঈশ্বরের দাস মোশির গীত ও মেষশাবকের গীত গায়, বলে, “মহৎ ও আশ্চর্য্য তোমার ক্রিয়া সকল, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্‌; ন্যায্য ও সত্য তোমার মার্গ সকল, হে জাতিগণের রাজন্‌! হে প্রভু, কে না ভীত হইবে? এবং তোমার নামের গৌরব কে না করিবে? কেননা একমাত্র তুমিই সাধু, কেননা সমস্ত জাতি আসিয়া তোমার সম্মুখে ভজনা করিবে, কেননা তোমার ধর্ম্মক্রিয়া সকল প্রকাশিত হইয়াছে।” আর তাহার পরে আমি দেখিলাম, স্বর্গে সাক্ষ্য-তাম্বুর মন্দির খুলিয়া দেওয়া হইল; তাহাতে ঐ সপ্ত আঘাতের কর্ত্তা সপ্ত দূত মন্দির হইতে বাহিরে আসিলেন, তাঁহারা বিমল ও উজ্জ্বল মসীনা-বস্ত্র পরিহিত, এবং তাঁহাদের বক্ষঃস্থলে সুবর্ণ পটুকা বদ্ধ। পরে চারি প্রাণীর মধ্যে এক প্রাণী ঐ সপ্ত দূতকে সপ্ত সুবর্ণ বাটি দিলেন, সেগুলি যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত ঈশ্বরের রোষে পরিপূর্ণ। তাহাতে ঈশ্বরের প্রতাপ হইতে ও তাঁহার পরাক্রম হইতে উৎপন্ন ধূমে মন্দির পরিপূর্ণ হইল; এবং ঐ সপ্ত দূতের সপ্ত আঘাত সমাপ্ত না হওয়া পর্য্যন্ত কেহ মন্দিরে প্রবেশ করিতে পারিল না। পরে আমি মন্দির হইতে এক উচ্চ বাণী শুনিলাম, তাহা ঐ সপ্ত দূতকে কহিল, তোমরা যাও, ঈশ্বরের রোষের ঐ সপ্ত বাটি পৃথিবীতে ঢালিয়া দেও। পরে প্রথম দূত গিয়া পৃথিবীর উপরে আপন বাটি ঢালিলেন, তাহাতে সেই পশুর ছাববিশিষ্ট ও তাহার প্রতিমার ভজনাকারী মনুষ্যদের গাত্রে ব্যথাজনক দুষ্ট ক্ষত জন্মিল। পরে দ্বিতীয় দূত সমুদ্রের উপরে আপন বাটি ঢালিলেন, তাহাতে তাহা মৃত লোকের রক্তের তুল্য হইল, এবং সমস্ত জীবিত প্রাণী, সমুদ্রচর জীবগণ, মরিল। পরে তৃতীয় দূত নদনদী ও জলের উনুই সকলের উপরে আপন বাটি ঢালিলেন, তাহাতে সে সকল রক্ত হইয়া গেল। তখন আমি জলসমূহের দূতের এই বাণী শুনিলাম, হে সাধু, তুমি আছ ও তুমি ছিলে, তুমি ন্যায়পরায়ণ, কারণ এরূপ বিচারাজ্ঞা করিয়াছ; কেননা উহারা পবিত্রগণের ও ভাববাদীদের রক্তপাত করিয়াছিল; আর তুমি উহাদিগকে পানার্থে রক্ত দিয়াছ; তাহারা ইহার যোগ্য। পরে আমি যজ্ঞবেদির এই বাণী শুনিলাম, হাঁ, হে প্রভু ঈশ্বর, সর্ব্বশক্তিমান্‌, তোমার বিচারাজ্ঞা সকল সত্য ও ন্যায্য। পরে চতুর্থ দূত সূর্য্যের উপরে আপন বাটি ঢালিলেন; তাহাতে অগ্নি দ্বারা মনুষ্যদিগকে তাপিত করিবার ক্ষমতা তাহাকে দত্ত হইল। তখন মনুষ্যেরা মহা উত্তাপে তাপিত হইল, এবং যিনি এই সকল আঘাতের উপরে কর্ত্তৃত্ব করেন, সেই ঈশ্বরের নামের নিন্দা করিল; তাঁহাকে গৌরব প্রদান করিবার জন্য মন ফিরাইল না। পরে পঞ্চম দূত সেই পশুর সিংহাসনের উপরে আপন বাটি ঢালিলেন; তাহাতে তাহার রাজ্য অন্ধকারময় হইল, এবং লোকেরা বেদনা প্রযুক্ত আপন আপন জিহ্বা চর্ব্বণ করিতে লাগিল; এবং আপনাদের বেদনা ও ক্ষত প্রযুক্ত স্বর্গের ঈশ্বরের নিন্দা করিল; আপন আপন ক্রিয়া হইতে মন ফিরাইল না। পরে ষষ্ঠ দূত ইউফ্রেটীস মহানদীতে আপন বাটি ঢালিলেন; তাহাতে নদীর জল শুষ্ক হইয়া গেল, যেন সূর্য্যোদয় স্থান হইতে আগমনকারী রাজাদের জন্য পথ প্রস্তুত করা যাইতে পারে। পরে আমি দেখিলাম, সেই নাগের মুখ ও পশুর মুখ ও ভাক্ত ভাববাদীর মুখ হইতে ভেকের ন্যায় তিনটি অশুচি আত্মা বাহির হইল। তাহারা ভূতদের আত্মা, নানা চিহ্ন-কার্য্য করে; তাহারা জগৎ সমুদয়ের রাজাদের নিকটে গিয়া, সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের সেই মহাদিনের যুদ্ধার্থে তাহাদিগকে একত্র করে। —দেখ, আমি চোরের ন্যায় আসিতেছি; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে জাগিয়া থাকে, এবং আপন বস্ত্র রক্ষা করে, যেন সে উলঙ্গ হইয়া না বেড়ায়, এবং লোকে তাহার অপমান না দেখে। —পরে উহারা, ইব্রীয় ভাষায় যাহাকে হর্‌মাগিদোন বলে, সেই স্থানে তাহাদিগকে একত্র করিল। পরে সপ্তম দূত আকাশের উপরে আপন বাটি ঢালিলেন, তাহাতে মন্দিরের মধ্য হইতে, সিংহাসন হইতে, এই মহাবাণী বাহির হইল, ‘হইয়াছে’। আর বিদ্যুৎ ও শব্দ ও মেঘধ্বনি হইল, এবং এক মহাভূমিকম্প হইল, পৃথিবীতে মনুষ্যের উৎপত্তিকাল অবধি যেমন কখনও হয় নাই, এমন প্রচণ্ড মহাভূমিকম্প হইল। তাহাতে মহানগরী তিন ভাগে বিভক্ত হইল, এবং জাতিগণের নগর সকল পতিত হইল; এবং মহতী বাবিলকে ঈশ্বরের সাক্ষাতে স্মরণ করা গেল, যেন ঈশ্বরের ক্রোধের রোষমদিরাতে পূর্ণ পানপাত্র তাহাকে দেওয়া যায়। আর প্রত্যেক দ্বীপ পলায়ন করিল, ও পর্ব্বতগণকে আর পাওয়া গেল না। আর আকাশ হইতে মনুষ্যদের উপরে বৃহৎ বৃহৎ শিলাবর্ষণ হইল, তাহার এক একটী এক এক তালন্ত পরিমিত; এই শিলা-বৃষ্টিরূপ আঘাত প্রযুক্ত মনুষ্যেরা ঈশ্বরের নিন্দা করিল; কারণ সেই আঘাত অতিশয় ভারী। পরে ঐ সপ্ত বাটি যাঁহাদের হস্তে ছিল, সেই সপ্ত দূতের মধ্যে এক জন আসিয়া আমার সঙ্গে আলাপ করিয়া কহিলেন, আইস, “বহু জলের উপরে বসিয়া আছে” যে ঐ মহাবেশ্যা, আমি তোমাকে তাহার বিচারসিদ্ধ দণ্ড দেখাই, “যাহার সহিত পৃথিবীর রাজগণ ব্যভিচার করিয়াছে, এবং পৃথিবী-নিবাসীরা যাহার বেশ্যাক্রিয়ার মদিরাতে মত্ত হইয়াছে”। পরে তিনি আত্মাতে আমাকে প্রান্তর মধ্যে লইয়া গেলেন; তাহাতে আমি এক নারীকে দেখিলাম, সে সিন্দূরবর্ণ পশুর উপরে বসিয়া আছে; সেই পশু ধর্ম্মনিন্দার নামে পরিপূর্ণ, এবং তাহার সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ। আর সেই নারী বেগুনিয়া ও সিন্দূরবর্ণ বস্ত্র পরিহিতা, এবং সুবর্ণে ও মূল্যবান্‌ মণিতে ও মুক্তায় মণ্ডিতা, এবং তাহার হস্তে সুবর্ণময় এক পানপাত্র আছে, ইহা ঘৃণার্হ দ্রব্যে ও তাহার বেশ্যাক্রিয়ার মালিন্যে পরিপূর্ণ। আর তাহার ললাটে এই নাম লিখিত আছে, এক নিগূঢ়তত্ত্ব; আর আমি দেখিলাম, সেই নারী পবিত্রগণের রক্তে ও যীশুর সাক্ষিগণের রক্তে মত্তা। তাহাকে দেখিয়া আমার অতিশয় আশ্চর্য্য বোধ হইল। আর সেই দূত আমাকে কহিলেন, তুমি আশ্চর্য্য জ্ঞান করিলে কেন? আমি ঐ নারীর ও উহার বাহনের অর্থাৎ যাহার সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ, সেই পশুর নিগূঢ়তত্ত্ব তোমাকে জানাই। তুমি যে পশুকে দেখিলে, সে ছিল, কিন্তু নাই; সে অগাধলোক হইতে উঠিবে ও বিনাশে যাইবে। আর পৃথিবী-নিবাসী যত লোকের নাম জগতের পত্তনাবধি জীবন-পুস্তকে লিখিত হয় নাই, তাহারা যখন সেই পশুকে দেখিবে যে ছিল, এখন নাই, পরে হইবে, তখন আশ্চর্য্য জ্ঞান করিবে। এস্থলে জ্ঞানযুক্ত মন দেখা যায়। ঐ সপ্ত মস্তক সপ্ত পর্ব্বত, তাহাদের উপরে ঐ নারী বসিয়া আছে; এবং তাহারা সপ্ত রাজা; তাহাদের পাঁচ জন পতিত হইয়াছে, এক জন আছে, আর এক জন এ পর্য্যন্ত আইসে নাই; আসিলে তাহাকে অল্পকাল থাকিতে হইবে। আর যে পশু ছিল, এখন নাই, সে আপনি অষ্টম; সে সেই সাতটীর একটী, এবং সে বিনাশে যায়। আর তুমি যে দশ শৃঙ্গ দেখিলে, সে দশ রাজা; তাহারা এ পর্য্যন্ত রাজ্য প্রাপ্ত হয় নাই, কিন্তু এক ঘন্টার নিমিত্তে সেই পশুর সহিত রাজাদের ন্যায় কর্ত্তৃত্ব পাইবে। তাহারা একমনা, এবং আপনাদের পরাক্রম ও কর্ত্তৃত্ব সেই পশুকে দেয়। তাহারা মেষশাবকের সহিত যুদ্ধ করিবে, আর মেষশাবক তাহাদিগকে জয় করিবেন, কারণ “তিনি প্রভুদের প্রভু ও রাজাদের রাজা;” এবং যাঁহারা তাঁহার সহবর্ত্তী, আহূত ও মনোনীত ও বিশ্বস্ত, তাঁহারাও জয় করিবেন। আর তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি যে জল দেখিলে, ঐ বেশ্যা যাহাতে বসিয়া আছে, সেই জল প্রজাবৃন্দ ও লোকারণ্য ও জাতিবৃন্দ ও ভাষাসমূহ। আর তুমি যে ঐ দশ শৃঙ্গ এবং পশুটা দেখিলে তাহারা সেই বেশ্যাকে ঘৃণা করিবে, এবং তাহাকে অনাথা ও নগ্না করিবে, তাহার মাংস ভক্ষণ করিবে, এবং তাহাকে আগুনে পোড়াইয়া দিবে। কেননা ঈশ্বর তাহাদের হৃদয়ে এই প্রবৃত্তি দিয়াছিলেন, যেন তাহারা তাঁহারই মানস পূর্ণ করে, এবং একমনা হয়; আর যে পর্য্যন্ত ঈশ্বরের বাক্য সকল সিদ্ধ না হয়, সেই পর্য্যন্ত আপন আপন রাজ্য সেই পশুকে দেয়। আর তুমি যে নারীকে দেখিলে, সে ঐ মহানগরী, যাহা পৃথিবীর রাজগণের উপরে রাজত্ব করিতেছে। এই সকলের পরে আমি স্বর্গ হইতে আর এক দূতকে নামিয়া আসিতে দেখিলাম; তিনি মহাক্ষমতাপন্ন এবং তাঁহার প্রতাপে পৃথিবী দীপ্তিময় হইল। তিনি প্রবল রবে ডাকিয়া কহিলেন, ‘পড়িল, পড়িল মহতী বাবিল; সে ভূতগণের আবাস, সমস্ত অশুচি আত্মার কারাগার, ও সমস্ত অশুচি ও ঘৃণার্হ পক্ষীর কারাগার হইয়া পড়িয়াছে। কেননা সমুদয় জাতি তাহার বেশ্যা ক্রিয়ার রোষমদিরা পান করিয়াছে, এবং পৃথিবীর রাজগণ তাহার সহিত ব্যভিচার করিয়াছে, এবং পৃথিবীর বণিকেরা তাহার বিলাসিতার প্রতাবে ধনবান্‌ হইয়াছে।’ পরে আমি স্বর্গ হইতে এইরূপ আর এক বাণী শুনিলাম, ‘হে আমার প্রজাগণ, উহা হইতে বাহিরে আইস, যেন উহার পাপ সকলের সহভাগী না হও, এবং উহার আঘাত সকল যেন প্রাপ্ত না হও। কেননা উহার পাপ আকাশ পর্য্যন্ত সংলগ্ন হইয়াছে এবং ঈশ্বর উহার অপরাধ সকল স্মরণ করিয়াছেন। সে যেরূপ ব্যবহার করিত, তোমরাও তাহার প্রতি সেইরূপ ব্যবহার কর; আর তাহার ক্রিয়ানুসারে দ্বিগুণ, দ্বিগুণ প্রতিফল তাহাকে দেও; সে যে পাত্রে পেয় প্রস্তুত করিত, সেই পাত্রে তাহার জন্য দ্বিগুণ পরিমাণে পেয় প্রস্তুত কর। সে যত আত্মগৌরব ও বিলাস করিত, তাহাকে তত যন্ত্রণা ও শোক দেও। কেননা সে মনে মনে বলিতেছে, আমি রাণীর মত সিংহাসনে বসিয়া আছি, বিধবা নহি, কোন মতে শোক দেখিব না। এই জন্য একই দিনে তাহার আঘাত সকল—মৃত্যু, শোক ও দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হইবে; এবং তাহাকে আগুনে পোড়াইয়া দেওয়া যাইবে; কারণ তাহার বিচারকর্ত্তা প্রভু ঈশ্বর শক্তিমান্‌। আর পৃথিবীর যে সকল রাজা তাহার সঙ্গে ব্যভিচার ও বিলাস করিত, তাহারা তাহার দাহের ধূম দেখিয়া তাহার জন্য রোদন ও বক্ষে করাঘাত করিবে; তাহার যন্ত্রণার ভয়ে দূরে দাঁড়াইয়া তাহারা বলিবে, হায়! হায়! সেই মহানগরীর, বাবিলের সেই পরাক্রান্তা নগরীর সন্তাপ, কারণ এক ঘন্টার মধ্যেই তোমার বিচার উপস্থিত! আর পৃথিবীর বণিকেরা তাহার নিমিত্ত রোদন ও বিলাপ করিতেছে; কারণ তাহাদের বাণিজ্য-দ্রব্য কেহ আর ক্রয় করে না; এই সকল বাণিজ্য-দ্রব্য—স্বর্ণ, রৌপ্য, বহুমূল্য মণি, মুক্তা, মসীনা-বস্ত্র, বেগুনিয়া বস্ত্র, পট্টবস্ত্র, সিন্দূরবর্ণ বস্ত্র; সর্ব্বপ্রকার চন্দন কাষ্ঠ, হস্তিদন্তের সর্ব্বপ্রকার পাত্র, বহুমূল্য কাষ্ঠের ও পিত্তলের লৌহের ও মর্ম্মরের সর্ব্বপ্রকার পাত্র, এবং দারুচিনি, এলাচি, ধূপ, সুগন্ধি লেপ্যদ্রব্য, কুন্দুরু, মদিরা, তৈল, উত্তম সূজী ও গোম, পশু ও মেষ; এবং অশ্ব, রথ ও দাস ও মনুষ্যদের প্রাণ। আর তোমার প্রাণের অভিলষিত ফলসমূহ তোমা হইতে গিয়াছে, এবং তোমার সমস্ত শোভা ও ভূষা তোমা হইতে বিনষ্ট হইয়াছে; লোকে তাহা আর কখনও পাইবে না। ঐ সকলের যে বণিকেরা তাহার ধনে ধনবান্‌ হইয়াছিল, তাহারা তাহার যন্ত্রণার ভয়ে দূরে দাঁড়াইয়া রোদন ও বিলাপ করিতে করিতে বলিবে, হায়! হায়! সেই মহানগরীর সন্তাপ, যে মসীনা-বস্ত্র, বেগুনিয়া বস্ত্র ও সিন্দূরবর্ণ বস্ত্র পরিহিতা ছিল, এবং সুবর্ণে ও বহুমূল্য মণি মুক্তায় মণ্ডিতা ছিল; কারণ এক ঘন্টার মধ্যেই সেই মহাসম্পত্তি ধ্বংস হইল। আর প্রত্যেক কর্ণধার, ও জলপথে যে কেহ গমন করে, এবং মাল্লারা ও সমুদ্রব্যবসায়ীরা সকলে দূরে দাঁড়াইল, এবং তাহার দাহের ধূম দেখিয়া উচ্চৈঃস্বরে কহিল, সেই মহানগরীর তুল্য কোন্‌ নগর? আর তাহারা মস্তকে ধূলা দিয়া রোদন ও বিলাপ করিতে করিতে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল, হায়! হায়! সেই মহানগরীর সন্তাপ, যাহার ঐশ্বর্য্য দ্বারা সমুদ্রগামী জাহাজের কর্ত্তারা সকলে ধনবান্‌ হইত; কারণ এক ঘন্টার মধ্যেই সে ধ্বংস হইয়া গেল। হে স্বর্গ, হে পবিত্রগণ, হে প্রেরিতগণ, হে ভাববাদিগণ, তোমরা তাহার বিষয়ে আনন্দ কর; কেননা সে তোমাদের প্রতি যে অন্যায় করিয়াছে, ঈশ্বর তাহার প্রতীকার করিয়াছেন। পরে এক শক্তিমান দূত বৃহৎ এক পাট যাঁতার তুল্য একখান প্রস্তর লইয়া সমুদ্রে নিক্ষেপ করিয়া কহিলেন, ইহার ন্যায় মহানগরী বাবিল মহাবলে নিপাতিতা হইবে, আর কখনও তাহার উদ্দেশ পাওয়া যাইবে না। বীণাবাদকদের, গায়কদের, বংশীবাদকদের ও তূরীবাদকদের ধ্বনি তোমার মধ্যে আর কখনও শুনা যাইবে না; এবং আর কখনও কোন প্রকার শিল্পকারকে তোমার মধ্যে পাওয়া যাইবে না; এবং যাঁতার শব্দ আর কখনও তোমার মধ্যে শুনা যাইবে না; এবং প্রদীপের শিখা আর কখনও তোমার মধ্যে জ্বলিবে না; এবং বর কন্যার রব আর কখনও তোমার মধ্যে শুনা যাইবে না; কারণ তোমার বণিকেরা পৃথিবীর মহল্লোক ছিল, কারণ তোমার মায়াতে সমস্ত জাতি ভ্রান্ত হইত। আর ভাববাদিগণের ও পবিত্রগণের রক্ত, এবং যত লোক পৃথিবীতে হত হইয়াছে, সেই সকলের রক্ত ইহার মধ্যে পাওয়া গেল। এই সকলের পরে আমি যেন স্বর্গস্থিত বৃহৎ লোকারণ্যের মহারব শুনিলাম, তাহারা বলিতেছে—হাল্লিলূয়া, পরিত্রাণ ও প্রতাপ ও পরাক্রম আমাদের ঈশ্বরেরই; কেননা তাঁহার বিচারাজ্ঞা সকল সত্য ও ন্যায্য; কারণ যে মহাবেশ্যা আপন বেশ্যাক্রিয়া দ্বারা পৃথিবীকে ভ্রষ্ট করিত, তিনি তাহার বিচার করিয়াছেন, তাহার হস্ত হইতে আপন দাসগণের রক্তপাতের পরিশোধ লইয়াছেন। পরে তাহারা দ্বিতীয় বার কহিল, হাল্লিলূয়া; আর যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে সেই বেশ্যার ধূম উঠিতেছে। পরে সেই চব্বিশ জন প্রাচীন ও চারি প্রাণী প্রণিপাত করিয়া সিংহাসনে উপবিষ্ট ঈশ্বরের ভজনা করিলেন, কহিলেন, আমেন; হাল্লিলূয়া। পরে সেই সিংহাসন হইতে এই বাণী নির্গত হইল, হে ঈশ্বরের দাসগণ, তোমরা যাহারা তাঁহাকে ভয় কর, তোমরা ক্ষুদ্র কি মহান্‌ সকলে আমাদের ঈশ্বরের স্তবগান কর। পরে আমি বৃহৎ লোকারণ্যের রব ও বহুজলের কল্লোল ও প্রবল মেঘগর্জ্জনের ন্যায় এই বাণী শুনিলাম, হাল্লিলূয়া, কেননা আমাদের ঈশ্বর প্রভু, যিনি সর্ব্বশক্তিমান্‌, তিনি রাজত্ব গ্রহণ করিলেন। আইস, আমরা আনন্দ ও উল্লাস করি, এবং তাঁহাকে গৌরব প্রদান করি, কারণ মেষশাবকের বিবাহ উপস্থিত হইল, এবং তাঁহার ভার্য্যা আপনাকে প্রস্তুত করিল। আর ইহাকে এই বর দত্ত হইল যে, সে উজ্জ্বল ও শুচি মসীনা-বস্ত্রে আপনাকে সজ্জিত করে, কারণ সেই মসীনা-বস্ত্র পবিত্রগণের ধর্ম্মাচরণ। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি লিখ, ধন্য তাহারা, যাহারা মেষশাবকের বিবাহভোজে নিমন্ত্রিত। আবার তিনি আমাকে কহিলেন, এ সকল ঈশ্বরের সত্য বাক্য। তখন আমি তাঁহাকে ভজনা করিবার জন্য তাঁহার চরণে পড়িলাম। তাহাতে তিনি আমাকে কহিলেন, দেখিও, এমন কর্ম্ম করিও না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার যে ভ্রাতৃগণ যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে, তাহাদেরও সহদাস; ঈশ্বরেরই ভজনা কর; কেননা যীশুর যে সাক্ষ্য, তাহাই ভাববাণীর আত্মা। পরে আমি দেখিলাম, স্বর্গ খুলিয়া গেল, আর দেখ, শ্বেতবর্ণ একটী অশ্ব; যিনি তাহার উপরে বসিয়া আছেন, তিনি বিশ্বাস্য ও সত্যময় নামে আখ্যাত, এবং তিনি ধর্ম্মশীলতায় বিচার ও যুদ্ধ করেন। তাঁহার চক্ষু অগ্নিশিখা, এবং তাঁহার মস্তকে অনেক কিরীট; এবং তাঁহার একটী লিখিত নাম আছে, যাহা তিনি ব্যতীত অন্য কেহ জানে না। আর তিনি রক্তে ডুবান বস্ত্র পরিহিত; এবং “ঈশ্বরের বাক্য”—এই নামে আখ্যাত। আর স্বর্গস্থ সৈন্যগণ তাঁহার অনুগমন করে, তাহারা শুক্লবর্ণ অশ্বে আরোহী, এবং শ্বেত শুচি মসীনা-বস্ত্র পরিহিত। আর তাঁহার মুখ হইতে এক তীক্ষ্ণ তরবারি নির্গত হয়, যেন তদ্দ্বারা তিনি জাতিগণকে আঘাত করেন; আর তিনি লৌহদণ্ড দ্বারা তাহাদিগকে শাসন করিবেন; এবং তিনি সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বরের প্রচণ্ড ক্রোধরূপ মদিরাকুণ্ড দলন করেন। আর তাঁহার পরিচ্ছদে ও ঊরুদেশে এই নাম লেখা আছে,— পরে আমি দেখিলাম, এক জন দূত সূর্য্যমধ্যে দাঁড়াইয়া আছেন; আর তিনি উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া, আকাশের মধ্যপথে যে সকল পক্ষী উড়িয়া যাইতেছে, সে সকলকে কহিলেন, আইস, ঈশ্বরের মহাভোজে একত্র হও, যেন রাজগণের মাংস, সহস্রপতিবর্গের মাংস, শক্তিমান্‌ লোকদের মাংস, অশ্বগণের ও তদারোহীদের মাংস, এবং স্বাধীন ও দাস, ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সকল মনুষ্যের মাংস ভক্ষণ কর। পরে আমি দেখিলাম, ঐ অশ্বারোহী ব্যক্তির ও তাঁহার সৈন্যের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য সেই পশু ও পৃথিবীর রাজগণ ও তাহাদের সৈন্যগণ একত্র হইল। তাহাতে সেই পশু ধরা পড়িল, এবং যে ভাক্ত ভাববাদী তাহার সাক্ষাতে চিহ্ন-কার্য্য করিয়া পশুর ছাবধারী ও তাহার প্রতিমার ভজনাকারীদের ভ্রান্তি জন্মাইত, সেও তাহার সঙ্গে ধরা পড়িল; তাহারা উভয়ে জীবন্তই প্রজ্বলিত গন্ধকময় অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল। আর অবশিষ্ট সকলে সেই অশ্বারোহী ব্যক্তির মুখ হইতে নির্গত তরবারি দ্বারা হত হইল; এবং সমস্ত পক্ষী তাহাদের মাংসে তৃপ্ত হইল। পরে আমি স্বর্গ হইতে এক দূতকে নামিয়া আসিতে দেখিলাম, তাঁহার হস্তে অগাধলোকের চাবি এবং বড় এক শৃঙ্খল ছিল। তিনি সেই নাগকে ধরিলেন; এ সেই পুরাতন সর্প, এ দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ]; তিনি তাহাকে সহস্র বৎসর বদ্ধ রাখিলেন, আর তাহাকে অগাধলোকের মধ্যে ফেলিয়া দিয়া সেই স্থানের মুখ বদ্ধ করিয়া মুদ্রাঙ্কিত করিলেন; যেন ঐ সহস্র বৎসর সম্পূর্ণ না হইলে সে জাতিবৃন্দকে আর ভ্রান্ত করিতে না পারে; তৎপরে অল্প কালের নিমিত্ত তাহাকে মুক্ত হইতে হইবে। পরে আমি কয়েকটী সিংহাসন দেখিলাম; সেগুলির উপরে কেহ কেহ বসিলেন, তাঁহাদিগকে বিচার করিবার ভার দত্ত হইল। আর যীশুর সাক্ষ্য ও ঈশ্বরের বাক্যের নিমিত্ত যাহারা কুঠার দ্বারা হত হইয়াছিল, এবং যাহারা সেই পশুকে ও তাহার প্রতিমাকে ভজনা করে নাই, আর আপন আপন ললাটে ও হস্তে তাহার ছাব ধারণ করে নাই, তাহাদের প্রাণও দেখিলাম; তাহারা জীবিত হইয়া সহস্র বৎসর খ্রীষ্টের সহিত রাজত্ব করিল। যে পর্য্যন্ত সেই সহস্র বৎসর সমাপ্ত না হইল, সে পর্য্যন্ত অবশিষ্ট মৃতেরা জীবিত হইল না। ইহা প্রথম পুনরুত্থান। যে কেহ এই প্রথম পুনরুত্থানের অংশী হয়, সে ধন্য ও পবিত্র; তাহাদের উপরে দ্বিতীয় মৃত্যুর কোন কর্ত্তৃত্ব নাই; কিন্তু তাহারা ঈশ্বরের ও খ্রীষ্টের যাজক হইবে, এবং সেই সহস্র বৎসর তাঁহার সঙ্গে রাজত্ব করিবে। সেই সহস্র বৎসর সমাপ্ত হইলে শয়তানকে তাহার কারা হইতে মুক্ত করা যাইবে। তাহাতে সে “পৃথিবীর চারি কোণে স্থিত জাতিগণকে, গোগ ও মাগোগকে”, ভ্রান্ত করিয়া যুদ্ধে একত্র করিবার জন্য বাহির হইবে; তাহাদের সংখ্যা সমুদ্রের বালুকার তুল্য। তাহারা পৃথিবীর বিস্তার দিয়া আসিয়া পবিত্রগণের শিবির এবং প্রিয় নগরটী ঘেরিল; তখন “স্বর্গ হইতে অগ্নি পড়িয়া তাহাদিগকে গ্রাস করিল।” আর তাহাদের ভ্রান্তিজনক দিয়াবল “অগ্নি ও গন্ধকের” হ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল, যেখানে ঐ পশু ও ভাক্ত ভাববাদীও আছে; আর তাহারা যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে দিবারাত্র যন্ত্রণা ভোগ করিবে। পরে আমি “এক বৃহৎ শ্বেতবর্ণ সিংহাসন ও যিনি তাহার উপরে বসিয়া আছেন,” তাঁহাকে দেখিতে পাইলাম; তাঁহার সম্মুখ হইতে পৃথিবী ও আকাশ পলায়ন করিল; “তাহাদের নিমিত্ত আর স্থান পাওয়া গেল না”। আর আমি দেখিলাম, ক্ষুদ্র ও মহান্‌ সমস্ত মৃত লোক সেই সিংহাসনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; পরে “কয়েকখান পুস্তক খোলা গেল”, এবং আর একখানি পুস্তক, অর্থাৎ জীবন-পুস্তক খোলা গেল, এবং মৃতেরা পুস্তকসমূহে লিখিত প্রমাণে “আপন আপন কার্য্যানুসারে” বিচারিত হইল। আর সমুদ্র আপনার মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং মৃত্যু ও পাতাল আপনাদের মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন কার্য্যানুসারে বিচারিত হইল। পরে মৃত্যু ও পাতাল অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল; তাহাই, অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু। আর জীবন-পুস্তকে যে কাহারও নাম লিখিত পাওয়া গেল না, সে অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল। পরে আমি “এক নূতন আকাশ ও এক নূতন পৃথিবী” দেখিলাম; কেননা প্রথম আকাশ ও প্রথম পৃথিবী লুপ্ত হইয়াছে; এবং সমুদ্র আর নাই। আর আমি দেখিলাম, “পবিত্র নগরী, নূতন যিরূশালেম,” স্বর্গ হইতে, ঈশ্বরের নিকট হইতে, নামিয়া আসিতেছে; সে আপন বরের নিমিত্ত বিভূষিতা কন্যার ন্যায় প্রস্তুত হইয়াছিল। পরে আমি সিংহাসন হইতে এই উচ্চ বাণী শুনিলাম, দেখ, মনুষ্যদের সহিত ঈশ্বরের আবাস; তিনি তাহাদের সহিত বাস করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার প্রজা হইবে; এবং ঈশ্বর আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকিবেন, ও তাহাদের ঈশ্বর হইবেন। আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল। আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি কহিলেন, দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি। পরে তিনি কহিলেন, লিখ, কেননা এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, হইয়াছে; আমি আল্‌ফা এবং ওমিগা আদি এবং অন্ত; যে পিপাসিত, আমি তাহাকে জীবনজলের উনুই হইতে বিনামূল্যে জল দিব। যে জয় করে, সে এই সকলের অধিকারী হইবে; এবং আমি তাহার ঈশ্বর হইব, ও সে আমার পুত্র হইবে। কিন্তু যাহারা ভীরু, বা অবিশ্বাসী, বা ঘৃণার্হ, বা নরঘাতক, বা বেশ্যাগামী, বা মায়াবী বা প্রতিমাপূজক, তাহাদের এবং সমস্ত মিথ্যাবাদীর অংশ অগ্নি ও গন্ধকে প্রজ্বলিত হ্রদে হইবে; ইহাই দ্বিতীয় মৃত্যু। আর যে সপ্ত দূতের কাছে সপ্ত শেষ আঘাতে পরিপূর্ণ সপ্ত বাটি ছিল, তাঁহাদের মধ্যে এক দূত আসিয়া আমার সঙ্গে আলাপ করিয়া কহিলেন, আইস, আমি তোমাকে সেই কন্যাকে, মেষশাবকের ভার্য্যাকে দেখাই। পরে “তিনি আত্মাতে আমাকে এক উচ্চ মহাপর্ব্বতে লইয়া গিয়া” পবিত্র নগরী যিরূশালেমকে দেখাইলেন, সে স্বর্গ হইতে, ঈশ্বরের নিকট হইতে, নামিয়া আসিতেছিল, সে ঈশ্বরের প্রতাপবিশিষ্ট; তাহার জ্যোতিঃ বহুমূল্য মণির, স্ফটিকবৎ নির্ম্মল সূর্য্যকান্তমণির তুল্য। তাহার বৃহৎ ও উচ্চ প্রাচীর আছে, দ্বাদশ পুরদ্বার আছে; সেই সকল দ্বারে দ্বাদশ দূত থাকেন, এবং “কয়েকটী নাম সেগুলির উপরে লিখিত আছে, সে সকল ইস্রায়েল-সন্তানদের দ্বাদশ বংশের নাম; পূর্ব্বদিকে তিন দ্বার, উত্তরদিকে তিন দ্বার, দক্ষিণদিকে তিন দ্বার ও পশ্চিমদিকে তিন দ্বার”। আর নগরের প্রাচীরের দ্বাদশ ভিত্তিমূল, সেগুলির উপরে মেষশাবকের দ্বাদশ প্রেরিতের দ্বাদশ নাম আছে। আর যিনি আমার সঙ্গে আলাপ করিতেছিলেন, তাঁহার হস্তে ঐ নগর ও তাহার দ্বার সকল ও তাহার প্রাচীর “মাপিবার জন্য একটী সুবর্ণ নল” ছিল। ঐ নগর চতুষ্কোণ, তাহার দৈর্ঘ্য ও বিস্তার সমান। আর তিনি সেই নল দ্বারা নগর মাপিলে দ্বাদশ সহস্র তীর পরিমাণ হইল, তাহার দৈর্ঘ্য, বিস্তার ও উচ্চতা এক সমান। পরে তাহার প্রাচীর মাপিলে, মনুষ্যের অর্থাৎ দূতের পরিমাণ অনুসারে এক শত চোয়াল্লিশ হস্ত হইল। প্রাচীরের গাঁথনি সূর্য্যকান্তমণির, এবং নগর নির্ম্মল কাচের সদৃশ পরিষ্কৃত সুবর্ণময়। নগরের প্রাচীরের ভিত্তিমূল সকল সর্ব্ববিধ মূল্যবান্‌ মণিতে ভূষিত; প্রথম ভিত্তিমূল সূর্য্যকান্তের, দ্বিতীয় নীলকান্তের, তৃতীয় তাম্রমণির, চতুর্থ মরকতের, পঞ্চম বৈদূর্য্যের, ষষ্ঠ সার্দ্দীয় মণির, সপ্তম স্বর্ণমণির, অষ্টম গোমেদকের, নবম পদ্মরাগের, দশম লশুনীয়ের, একাদশ পেরোজের, দ্বাদশ কটাহেলার। আর দ্বাদশ দ্বার দ্বাদশটী মুক্তা, এক এক দ্বার এক এক মুক্তায় নির্ম্মিত; এবং নগরের চক স্বচ্ছ কাচবৎ বিমল সুবর্ণময়। আর আমি নগরের মধ্যে কোন মন্দির দেখিলাম না; কারণ সর্ব্বশক্তিমান্‌ প্রভু ঈশ্বর এবং মেষশাবক স্বয়ং তাহার মন্দিরস্বরূপ। “আর সেই নগরে দীপ্তিদানার্থে সূর্য্যের বা চন্দ্রের কিছু প্রয়োজন নাই; কারণ ঈশ্বরের প্রতাপ তাহা আলোকময় করে, এবং মেষশাবক তাহার প্রদীপস্বরূপ। আর জাতিগণ তাহার দীপ্তিতে গমনাগমন করিবে; এবং পৃথিবীর রাজারা তাহার মধ্যে আপন আপন প্রতাপ আনেন। ঐ নগরের দ্বার সকল দিবাতে কখনও বদ্ধ হইবে না, বাস্তবিক সেখানে রাত্রি হইবে না। আর জাতিগণের প্রতাপ ও ঐশ্বর্য্য তাহার মধ্যে আনীত হইবে।” আর অপবিত্র কিছু অথবা ঘৃণ্যকারী ও মিথ্যাকারী কেহ কদাচ তাহাতে প্রবেশ করিতে পাইবে না; কেবল মেষশাবকের জীবন-পুস্তকে যাহাদের নাম লিখিত আছে, তাহারাই প্রবেশ করিবে। আর তিনি আমাকে “জীবন-জলের নদী” দেখাইলেন, তাহা স্ফটিকের ন্যায় উজ্জ্বল, তাহা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন হইতে নির্গত হইয়া তথাকার চকের মধ্যস্থানে বহিতেছে; “নদীর এপারে ওপারে জীবন-বৃক্ষ আছে, তাহা দ্বাদশ বার ফল উৎপন্ন করে, এক এক মাসে আপন আপন ফল দেয়, এবং সেই বৃক্ষের পত্র জাতিগণের আরোগ্য নিমিত্তক”। এবং “কোন শাপ আর হইবে না;” আর ঈশ্বরের ও মেষশাবকের সিংহাসন তাহার মধ্যে থাকিবে; এবং তাঁহার দাসেরা তাঁহার আরাধনা করিবে, ও তাঁহার মুখ দর্শন করিবে, এবং তাঁহার নাম তাহাদের ললাটে থাকিবে। সেখানে রাত্রি আর হইবে না, এবং প্রদীপের আলোকে কিম্বা সূর্য্যের আলোকে লোকদের কিছু প্রয়োজন হইবে না, কারণ “প্রভু ঈশ্বর তাহাদিগকে আলোকিত করিবেন; এবং তাহারা যুগপর্য্যায়ের যুগে যুগে রাজত্ব করিবে”। পরে তিনি আমাকে কহিলেন, এই সকল বচন বিশ্বসনীয় ও সত্য; এবং যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, তাহা আপন দাসদিগকে দেখাইবার জন্য প্রভু, ভাববাদিগণের আত্মা সকলের ঈশ্বর, আপন দূতকে প্রেরণ করিয়াছেন। আর দেখ, আমি শীঘ্রই আসিতেছি; ধন্য সেই জন, যে এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল পালন করে। আমি যোহন এই সমস্ত দেখিলাম ও শুনিলাম। এই সকল দেখিলে ও শুনিলে পর, যে দূত আমাকে এই সমস্ত দেখাইতেছিলেন, আমি ভজনা করিবার জন্য তাঁহার চরণের সম্মুখে পড়িলাম। আর তিনি আমাকে কহিলেন, দেখিও, এমন কর্ম্ম করিও না; আমি তোমার সহদাস, এবং তোমার ভ্রাতা ভাববাদিগণের ও এই গ্রন্থে লিখিত বচন পালনকারিগণের সহদাস; ঈশ্বরেরই ভজনা কর। আর তিনি আমাকে কহিলেন, তুমি এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল মুদ্রাঙ্কিত করিও না; কেননা সময় সন্নিকট। যে অধর্ম্মাচারী, সে ইহার পরেও অধর্ম্মাচরণ করুক; এবং যে কলুষিত, সে ইহার পরেও কলুষিত হউক; এবং যে ধার্ম্মিক, সে ইহার পরেও ধর্ম্মাচরণ করুক; এবং যে পবিত্র, সে ইহার পরেও পবিত্রীকৃত হউক। “দেখ, আমি শীঘ্র আসিতেছি; এবং আমার দাতব্য পুরস্কার আমার সহবর্ত্তী, যাহার যেমন কার্য্য, তাহাকে তেমন ফল দিব। আমি আল্‌ফা এবং ওমিগা, প্রথম ও শেষ,” আদি এবং অন্ত। ধন্য তাহারা, যাহারা আপন আপন পরিচ্ছদ ধৌত করে, যেন তাহারা জীবনবৃক্ষের অধিকারী হয়, এবং দ্বার সকল দিয়া নগরে প্রবেশ করে। বাহিরে রহিয়াছে কুক্কুরগণ, মায়াবিগণ, বেশ্যাগামীরা, নরঘাতকেরা ও প্রতিমাপূজকেরা, এবং যে কেহ মিথ্যা কথা ভাল বাসে ও রচনা করে। আমি যীশু আপন দূতকে পাঠাইলাম, যেন সে মণ্ডলীগণের নিমিত্ত তোমাদের কাছে এই সকল সাক্ষ্য দেয়। আমি দায়ূদের মূল ও বংশ, উজ্জ্বল প্রভাতীয় নক্ষত্র। আর আত্মা ও কন্যা কহিতেছেন, আইস। যে শুনে, সেও বলুক, আইস। আর যে পিপাসিত, সে আইসুক; যে ইচ্ছা করে, সে বিনামূল্যেই জীবন-জল গ্রহণ করুক। যাহারা এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল শুনে, তাহাদের প্রত্যেক জনের কাছে আমি সাক্ষ্য দিয়া বলিতেছি, যদি কেহ ইহার সহিত আর কিছু যোগ করে, তবে ঈশ্বর সেই ব্যক্তিকে এই গ্রন্থে লিখিত আঘাত সকল যোগ করিবেন; আর যদি কেহ এই ভাববাণী-গ্রন্থের বচন হইতে কিছু হরণ করে, তবে ঈশ্বর এই গ্রন্থে লিখিত জীবন-বৃক্ষ হইতে ও পবিত্র নগর হইতে তাহার অংশ হরণ করিবেন। যিনি এই সকল কথার সাক্ষ্য দেন, তিনি কহিতেছেন, সত্য, আমি শীঘ্র আসিতেছি। আমেন; প্রভু যীশু, আইস। প্রভু যীশুর অনুগ্রহ পবিত্রগণের সঙ্গে থাকুক। আমেন।