সৃষ্টির শুরুতেই ঈশ্বর মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। পৃথিবীর উপরটা তখনও কোন বিশেষ আকার পায় নি, আর তার মধ্যে জীবন্ত কিছুই ছিল না; তার উপরে ছিল অন্ধকারে ঢাকা গভীর জল। ঈশ্বরের আত্মা সেই জলের উপরে চলাফেরা করছিলেন। তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হোক, আর তাতে জল দু’ভাগ হয়ে যাক।” এইভাবে ঈশ্বর জলের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি করলেন এবং নীচের জল ও উপরের জল আলাদা করলেন। তাতে উপরের জল ও নীচের জল আলাদা হয়ে গেল। ঈশ্বর যে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি করেছিলেন তার নাম তিনি দিলেন আকাশ। এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল দ্বিতীয় দিন। এর পর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের সব জল এক জায়গায় জমা হোক এবং শুকনা জায়গা দেখা দিক।” আর তা-ই হল। ঈশ্বর সেই শুকনা জায়গার নাম দিলেন ভূমি, আর সেই জমা হওয়া জলের নাম দিলেন সমুদ্র। ঈশ্বর দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। তারপর ঈশ্বর বললেন, “ভূমির উপরে ঘাস গজিয়ে উঠুক; আর এমন সব শস্য ও শাক-সব্‌জীর গাছ হোক যাদের নিজের নিজের বীজ থাকবে। ভূমির উপর বিভিন্ন জাতের ফলের গাছও গজিয়ে উঠুক যেগুলোতে তাদের নিজের নিজের ফল ধরবে; আর সেই সব ফলের মধ্যে থাকবে তাদের নিজের নিজের বীজ।” আর তা-ই হল। ভূমির মধ্যে ঘাস, নিজের বীজ আছে এমন সব বিভিন্ন জাতের শস্য ও শাক-সব্‌জীর গাছ এবং বিভিন্ন জাতের ফলের গাছের জন্ম হল; আর সেই সব ফলের মধ্যে তাদের নিজের নিজের বীজ ছিল। ঈশ্বর দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল তৃতীয় দিন। তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের মধ্যে আলো দেয় এমন সব কিছু দেখা দিক, আর তা রাত থেকে দিনকে আলাদা করুক। সেগুলো আলাদা আলাদা দিন, ঋতু আর বছরের জন্য চিহ্ন হয়ে থাকুক। আকাশ থেকে সেগুলো পৃথিবীর উপর আলো দিক।” আর তা-ই হল। ঈশ্বর দু’টা বড় আলো তৈরী করলেন। তাদের মধ্যে বড়টিকে দিনের উপর রাজত্ব করবার জন্য, আর ছোটটিকে রাতের উপর রাজত্ব করবার জন্য তৈরী করলেন। তা ছাড়া তিনি তারাও তৈরী করলেন। তিনি সেগুলোকে আকাশের মধ্যে স্থাপন করলেন যাতে সেগুলো পৃথিবীর উপর আলো দেয়, দিন ও রাতের উপর রাজত্ব করে আর অন্ধকার থেকে আলোকে আলাদা করে রাখে। ঈশ্বর দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল চতুর্থ দিন। তারপর ঈশ্বর বললেন, “জল বিভিন্ন জীবন্ত প্রাণীর ঝাঁকে ভরে উঠুক, আর পৃথিবীর উপরে আকাশের মধ্যে বিভিন্ন পাখী উড়ে বেড়াক।” এইভাবে ঈশ্বর সমুদ্রের বড় বড় প্রাণী এবং জলের মধ্যে ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ানো বিভিন্ন জাতের জীবন্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন জাতের পাখীও সৃষ্টি করলেন। তাদের প্রত্যেকের নিজের নিজের জাতি অনুসারে বংশ বৃদ্ধি করবার ক্ষমতা রইল। ঈশ্বর দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। ঈশ্বর তাদের এই বলে আশীর্বাদ করলেন, “বংশবৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হয়ে তোমরা নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলো, আর তা দিয়ে সমুদ্রের জল পূর্ণ কর। পৃথিবীর উপরে পাখীরাও নিজের নিজের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলুক।” এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল পঞ্চম দিন। তারপর ঈশ্বর বললেন, “মাটি থেকে এমন সব জীবন্ত প্রাণীর জন্ম হোক যাদের নিজের নিজের জাতকে বাড়িয়ে তুলবার ক্ষমতা থাকবে। তাদের মধ্যে গৃহপালিত, বন্য ও বুকে-হাঁটা প্রাণী থাকুক।” আর তা-ই হল। ঈশ্বর পৃথিবীর সব রকমের বন্য, গৃহপালিত এবং বুকে-হাঁটা প্রাণী সৃষ্টি করলেন। এদের সকলেরই নিজের নিজের জাতকে বাড়িয়ে তুলবার ক্ষমতা রইল। ঈশ্বর দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। তারপর ঈশ্বর বললেন, “আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি। তারা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী, পশু, বুকে-হাঁটা প্রাণী এবং সমস্ত পৃথিবীর উপর রাজত্ব করুক।” পরে ঈশ্বর তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে। ঈশ্বর তাঁদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমরা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হও, আর নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে পৃথিবী ভরে তোলো এবং পৃথিবীকে নিজেদের শাসনের অধীনে আন। এছাড়া তোমরা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী এবং মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো প্রত্যেকটি জীবন্ত প্রাণীর উপরে রাজত্ব কর।” এর পরে ঈশ্বর বললেন, “দেখ, পৃথিবীর উপরে প্রত্যেকটি শস্য ও শাক-সব্‌জী যার নিজের বীজ আছে এবং প্রত্যেকটি গাছ যার ফলের মধ্যে তার বীজ রয়েছে সেগুলো আমি তোমাদের দিলাম। এগুলোই তোমাদের খাবার হবে। পৃথিবীর উপরের প্রত্যেকটি পশু, আকাশের প্রত্যেকটি পাখী এবং বুকে-হাঁটা প্রত্যেকটি প্রাণী, এক কথায় সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর খাবারের জন্য আমি সমস্ত শস্য ও শাক-সব্‌জী দিলাম।” আর তা-ই হল। ঈশ্বর তাঁর নিজের তৈরী সব কিছু দেখলেন। সেগুলো সত্যিই খুব চমৎকার হয়েছিল। এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই হল ষষ্ঠ দিন। এইভাবে মহাকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যেকার সব কিছু তৈরী করা শেষ হল। ঈশ্বর তাঁর সব সৃষ্টির কাজ ছয় দিনে শেষ করলেন; তিনি সপ্তম দিনে সৃষ্টির কোন কাজ করলেন না। এই সপ্তম দিনটিকে তিনি আশীর্বাদ করে নিজের উদ্দেশ্যে আলাদা করলেন, কারণ ঐ দিনে তিনি কোন সৃষ্টির কাজ করেন নি। তবে মাটির তলা থেকে জল উঠত এবং তাতেই মাটি ভিজত। পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর মাটি দিয়ে একটি পুরুষ মানুষ তৈরী করলেন এবং তার নাকে ফুঁ দিয়ে তার ভিতরে জীবন-বায়ু ঢুকিয়ে দিলেন। তাতে সেই মানুষ একটি জীবন্ত প্রাণী হল। এর আগে সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্ব দিকে এদন দেশে একটা বাগান করেছিলেন, আর সেখানেই তিনি তাঁর গড়া মানুষটিকে রাখলেন। সেখানকার মাটিতে তিনি এমন সব গাছ জন্মিয়েছিলেন যা দেখতেও সুন্দর এবং যার ফল খেতেও ভাল। তা ছাড়া বাগানের মাঝখানে তিনি “জীবন-গাছ” ও “ভাল-মন্দ-জ্ঞানের গাছ” নামে দু’টি গাছও জন্মিয়েছিলেন। সেই বাগানে জলের যোগান দিত এমন একটা নদী যেটা এদন দেশের মধ্য থেকে বের হয়েছিল এবং চারটা শাখানদীতে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। প্রথম নদীটার নাম পীশোন। এটা হবীলা দেশের চারপাশ দিয়ে বয়ে গেছে। সেখানে সোনা পাওয়া যায়, আর সেই দেশের সোনা খুব ভাল। এছাড়া সেখানে গুগ্‌গুলু ও বৈদূর্য মণিও পাওয়া যায়। দ্বিতীয় নদীটার নাম গীহোন। এই নদী কূশ দেশের চারপাশ দিয়ে বয়ে গেছে। তৃতীয় নদীটার নাম হিদ্দেকল। এটা অশূর দেশের পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে। চতুর্থ নদীটার নাম হল ফরাৎ। সদাপ্রভু ঈশ্বর সেই মানুষটিকে নিয়ে এদন বাগানে রাখলেন যাতে তিনি তাতে চাষ করতে পারেন ও তার দেখাশোনা করতে পারেন। পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর তাঁকে আদেশ দিয়ে বললেন, “তুমি তোমার খুশীমত এই বাগানের যে কোন গাছের ফল খেতে পার; কিন্তু ভাল-মন্দ-জ্ঞানের যে গাছটি রয়েছে তার ফল তুমি খাবে না, কারণ যেদিন তুমি তার ফল খাবে সেই দিন নিশ্চয়ই তোমার মৃত্যু হবে।” পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর বললেন, “মানুষটির পক্ষে একা থাকা ভাল নয়। আমি তার জন্য একজন উপযুক্ত সংগী তৈরী করব।” সদাপ্রভু ঈশ্বর মাটি থেকে ভূমির যে সব জীবজন্তু ও আকাশের পাখী তৈরী করেছিলেন সেগুলো সেই মানুষটির কাছে আনলেন। সদাপ্রভু দেখতে চাইলেন তিনি সেগুলোকে কি বলে ডাকেন। তিনি সেই সব জীবন্ত প্রাণীগুলোর যেটিকে যে নামে ডাকলেন সেটির সেই নামই হল। তিনি প্রত্যেকটি গৃহপালিত ও বন্য পশু এবং আকাশের পাখীর নাম দিলেন, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সেই পুরুষ মানুষটির, অর্থাৎ আদমের কোন উপযুক্ত সংগী দেখা গেল না। সেইজন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমের উপর একটা গভীর ঘুম নিয়ে আসলেন, আর তাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন তিনি তাঁর একটা পাঁজর তুলে নিয়ে সেই জায়গাটা বন্ধ করে দিলেন। আদম থেকে তুলে নেওয়া সেই পাঁজরটা দিয়ে সদাপ্রভু ঈশ্বর একজন স্ত্রীলোক তৈরী করে তাঁকে আদমের কাছে নিয়ে গেলেন। তাঁকে দেখে আদম বললেন, “এবার হয়েছে। এঁর হাড়-মাংস আমার হাড়-মাংস থেকেই তৈরী। পুরুষ লোকের দেহের মধ্য থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এঁকে স্ত্রীলোক বলা হবে।” এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে আর তারা দু’জন একদেহ হবে। তখন আদম এবং তাঁর স্ত্রী উলংগ থাকতেন, কিন্তু তাতে তাঁদের কোন লজ্জাবোধ ছিল না। সদাপ্রভু ঈশ্বরের তৈরী ভূমির জীবজন্তুদের মধ্যে সাপ ছিল সবচেয়ে চালাক। এই সাপ একদিন সেই স্ত্রীলোকটিকে বলল, “ঈশ্বর কি সত্যি তোমাদের বলেছেন যে, বাগানের সব গাছের ফল তোমরা খেতে পারবে না?” উত্তরে স্ত্রীলোকটি বললেন, “বাগানের গাছের ফল আমরা খেতে পারি। তবে বাগানের মাঝখানে যে গাছটি রয়েছে তার ফল সম্বন্ধে ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমরা তার ফল খাবেও না, ছোঁবেও না। তা করলে তোমাদের মৃত্যু হবে।’ ” তখন সাপ স্ত্রীলোকটিকে বলল, “কখনও না, কিছুতেই তোমরা মরবে না। ঈশ্বর জানেন, যেদিন তোমরা সেই গাছের ফল খাবে সেই দিনই তোমাদের চোখ খুলে যাবে। তাতে ভাল-মন্দের জ্ঞান পেয়ে তোমরা ঈশ্বরের মতই হয়ে উঠবে।” স্ত্রীলোকটি যখন বুঝলেন যে, গাছটার ফলগুলো খেতে ভাল হবে এবং সেগুলো দেখতেও সুন্দর আর তা ছাড়া জ্ঞান লাভের জন্য কামনা করবার মতও বটে, তখন তিনি কয়েকটা ফল পেড়ে নিয়ে খেলেন। সেই ফল তিনি তাঁর স্বামীকেও দিলেন এবং তাঁর স্বামীও তা খেলেন। এতে তখনই তাঁদের দু’জনের চোখ খুলে গেল। তাঁরা বুঝতে পারলেন যে, তাঁরা উলংগ অবস্থায় আছেন। তখন তাঁরা কতগুলো ডুমুরের পাতা একসংগে জুড়ে নিয়ে নিজেদের জন্য খাটো ঘাগ্‌রা তৈরী করে নিলেন। যখন সন্ধ্যার বাতাস বইতে শুরু করল তখন তাঁরা সদাপ্রভু ঈশ্বরের গলার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি বাগানের মধ্যে বেড়াচ্ছিলেন। তখন আদম ও তাঁর স্ত্রী বাগানের গাছপালার মধ্যে নিজেদের লুকালেন যাতে সদাপ্রভু ঈশ্বরের সামনে তাঁদের পড়তে না হয়। সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ডেকে বললেন, “তুমি কোথায়?” তিনি বললেন, “বাগানের মধ্যে আমি তোমার গলার আওয়াজ শুনেছি। কিন্তু আমি উলংগ, তাই ভয়ে লুকিয়ে আছি।” তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর বললেন, “তুমি যে উলংগ সেই কথা কে তোমাকে বলল? যে গাছের ফল খেতে আমি তোমাকে নিষেধ করেছিলাম তা কি তুমি খেয়েছ?” আদম বললেন, “যে স্ত্রীলোককে তুমি আমার সংগিনী হিসাবে দিয়েছ সে-ই আমাকে ঐ গাছের ফল দিয়েছে আর আমি তা খেয়েছি।” তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর সেই স্ত্রীলোককে বললেন, “তুমি এ কি করেছ?” স্ত্রীলোকটি বললেন, “ঐ সাপ আমাকে ছলনা করে ভুলিয়েছে আর সেইজন্য আমি তা খেয়েছি।” তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর সেই সাপকে বললেন, “তোমার এই কাজের জন্য ভূমির সমস্ত গৃহপালিত আর বন্য প্রাণীদের মধ্যে তুমি সবচেয়ে বেশী অভিশপ্ত। তুমি সারা জীবন পেটের উপর ভর করে চলবে এবং ধুলা খাবে। আমি তোমার ও স্ত্রীলোকের মধ্যে এবং তোমার বংশ ও স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে আসা বংশের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করব। সেই বংশের একজন তোমার মাথা পিষে দেবে আর তুমি তার পায়ের গোড়ালীতে ছোবল মারবে।” তারপর তিনি সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “আমি তোমার গর্ভকালীন অবস্থায় তোমার কষ্ট অনেক বাড়িয়ে দেব। তুমি যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে সন্তান প্রসব করবে। স্বামীর জন্য তোমার খুব কামনা হবে, আর সে তোমার উপর কর্তৃত্ব করবে।” তারপর তিনি আদমকে বললেন, “যে গাছের ফল খেতে আমি নিষেধ করেছিলাম তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনে তা খেয়েছ। তাই তোমার দরুন মাটি অভিশপ্ত হল। সারা জীবন ভীষণ পরিশ্রম করে তবে তুমি মাটির ফসল খাবে। তোমার জন্য মাটিতে কাঁটাগাছ ও শিয়ালকাঁটা গজাবে, কিন্তু তোমার খাবার হবে ক্ষেতের ফসল। যে মাটি থেকে তোমাকে তৈরী করা হয়েছিল সেই মাটিতে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তোমাকে খেতে হবে। তোমার এই ধুলার দেহ ধুলাতেই ফিরে যাবে।” আদম তাঁর স্ত্রীর নাম দিলেন হবা (যার মানে “জীবন”), কারণ তিনি সমস্ত জীবিত লোকদের মা হবেন। আদম ও তাঁর স্ত্রীর জন্য সদাপ্রভু ঈশ্বর পশুর চামড়ার পোশাক তৈরী করে তাঁদের পরিয়ে দিলেন। তারপর সদাপ্রভু ঈশ্বর বললেন, “দেখ, ভাল-মন্দের জ্ঞান পেয়ে মানুষ আমাদের একজনের মত হয়ে উঠেছে। এবার তারা যেন জীবন-গাছের ফল পেড়ে খেয়ে চিরকাল বেঁচে না থাকে সেইজন্য আমাদের কিছু করা দরকার।” এই বলে সদাপ্রভু ঈশ্বর মাটির তৈরী মানুষকে মাটি চাষ করবার জন্য এদন বাগান থেকে বের করে দিলেন। এইভাবে তিনি তাঁদের তাড়িয়ে দিলেন। তারপর তিনি জীবন-গাছের কাছে যাওয়ার পথ পাহারা দেবার জন্য এদন বাগানের পূর্ব দিকে করূবদের রাখলেন, আর সেই সংগে সেখানে একখানা জ্বলন্ত তলোয়ারও রাখলেন যা অনবরত ঘুরতে থাকল। আদম তাঁর স্ত্রী হবার কাছে গেলে পর হবা গর্ভবতী হলেন, আর কয়িন নামে তাঁর একটি ছেলে হল। তখন হবা বললেন, “সদাপ্রভু আমাকে একটি পুরুষ সন্তান দিয়েছেন।” পরে তাঁর গর্ভে কয়িনের ভাই হেবলের জন্ম হল। হেবল ভেড়ার পাল চরাত আর কয়িন জমি চাষ করত। পরে এক সময়ে কয়িন সদাপ্রভুর কাছে তার জমির ফসল এনে উৎসর্গ করল। হেবলও তার পাল থেকে প্রথমে জন্মেছে এমন কয়েকটা ভেড়া এনে তার চর্বিযুক্ত অংশগুলো উৎসর্গ করল। সদাপ্রভু হেবল ও তার উৎসর্গ গ্রাহ্য করলেন, কিন্তু কয়িন ও তার উৎসর্গ গ্রাহ্য করলেন না। এতে কয়িনের খুব রাগ হল আর সে মুখ কালো করে রইল। এই অবস্থা দেখে সদাপ্রভু কয়িনকে বললেন, “কেন তুমি রাগ করেছ আর কেনই বা মুখ কালো করে আছ? যদি তুমি ভাল কাজ কর তাহলে কি তোমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে না? কিন্তু যদি ভাল কাজ না কর তবে তো পাপ তোমাকে পাবার জন্য তোমার দরজায় এসে বসে থাকবে; কিন্তু তাকে তোমার বশে আনতে হবে।” এর পর একদিন মাঠে থাকবার সময় কয়িন তার ভাই হেবলের সংগে কথা বলছিল, আর তখন সে হেবলকে আক্রমণ করে মেরে ফেলল। তখন সদাপ্রভু কয়িনকে বললেন, “তোমার ভাই হেবল কোথায়?” কয়িন বলল, “আমি জানি না। আমার ভাইয়ের দেখাশোনার ভার কি আমার উপর?” তখন সদাপ্রভু বললেন, “এ তুমি কি করেছ? দেখ, জমি থেকে তোমার ভাইয়ের রক্ত আমার কাছে কাঁদছে। জমি যখন তোমার হাত থেকে তোমার ভাইয়ের রক্ত গ্রহণ করবার জন্য মুখ খুলেছে তখন জমির অভিশাপই তোমার উপর পড়ল। তুমি যখন জমি চাষ করবে তখন তা আর তোমাকে তেমন ফসল দেবে না। তুমি পলাতক হয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে।” তখন কয়িন সদাপ্রভুকে বলল, “এই শাস্তি আমার সহ্যের বাইরে। আজ তুমি আমাকে জমি থেকে তাড়িয়ে দিলে, যার ফলে আমি তোমার চোখের আড়াল হয়ে যাব। পলাতক হয়ে যখন আমি পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব তখন যার সামনে আমি পড়ব সে-ই আমাকে খুন করতে পারে।” তখন সদাপ্রভু তাকে বললেন, “তাহলে যে তোমাকে খুন করবে তার উপর সাতগুণ প্রতিশোধ নেওয়া হবে।” এই বলে সদাপ্রভু কয়িনের জন্য এমন একটা চিহ্নের ব্যবস্থা করলেন যাতে কেউ তাকে হাতে পেয়েও খুন না করে। এর পরে কয়িন সদাপ্রভুর সামনে থেকে চলে গিয়ে এদনের পূর্ব দিকে নোদ নামে একটা দেশে বাস করতে লাগল। পরে কয়িন তার স্ত্রীর কাছে গেলে সে গর্ভবতী হল এবং হনোকের জন্ম হল। তখন কয়িন একটা শহর তৈরী করছিল। সে তার ছেলের নাম অনুসারে শহরটার নাম রাখল হনোক। হনোকের ছেলের নাম ঈরদ; ঈরদের ছেলের নাম মহূয়ায়েল; মহূয়ায়েলের ছেলের নাম মথূশায়েল; মথূশায়েলের ছেলের নাম লেমক। লেমকের দু’টি স্ত্রী ছিল। তার একজনের নাম আদা, অন্যজনের নাম সিল্লা। আদার গর্ভে যাবলের জন্ম হল। যারা তাম্বুতে তাম্বুতে বাস করে এবং পশুপালন করে জীবন কাটায় এই যাবল তাদের পূর্বপুরুষ। যাবলের ভাইয়ের নাম ছিল যূবল। যারা বীণা ও বাঁশী বাজায় যূবল তাদের সকলের পূর্বপুরুষ। সিল্লার গর্ভে তূবল-কয়িনের জন্ম হল। ব্রোঞ্জ আর লোহার সব রকমের যন্ত্রপাতি তৈরী করা ছিল তার কাজ। তূবল-কয়িনের বোনের নাম ছিল নয়মা। একদিন লেমক তার দুই স্ত্রীকে বলল, “আদা আর সিল্লা, তোমরা আমার কথা শোন; লেমকের স্ত্রীরা, আমার কথায় কান দাও। যে লোক আমাকে জখম করেছে, অর্থাৎ যে যুবক আমার গায়ে হাত তুলেছে, আমি তাকে খুন করেছি। কয়িনকে খুন করবার প্রতিশোধ যদি সাতগুণ হয়, তবে লেমককে খুন করবার প্রতিশোধ হবে সাতাত্তর গুণ।” পরে আদম আবার তাঁর স্ত্রীর কাছে গেলেন এবং তাঁর স্ত্রীর একটি ছেলে হল। তাঁর স্ত্রী তার নাম রাখলেন শেথ। হবা বললেন, “কয়িন হেবলকে খুন করেছে বলে ঈশ্বর হেবলের জায়গায় আমাকে আর একটি সন্তান দিলেন।” পরে শেথের একটি ছেলে হল। তিনি তার নাম রাখলেন ইনোশ। সেই সময় থেকে লোকেরা সদাপ্রভুকে তাঁর যোগ্য সম্মান দিতে শুরু করল। এই হল আদমের বংশের কথা। মানুষ সৃষ্টি করবার সময় ঈশ্বর তাঁকে তাঁর নিজের মত করে সৃষ্টি করলেন; সৃষ্টি করলেন পুরুষ এবং স্ত্রীলোক করে এবং তাঁদের আশীর্বাদ করলেন। সৃষ্টির সময়ে তিনি তাঁদের নাম দিলেন মানুষ। একশো ত্রিশ বছর বয়সে আদমের একটি ছেলের জন্ম হল। ছেলেটি বাইরে এবং ভিতরে তাঁরই মত হয়েছিল। আদম তার নাম দিলেন শেথ। শেথের জন্মের পর আদম আরও আটশো বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ের জন্ম হয়েছিল। মোট ন’শো ত্রিশ বছর বেঁচে থাকবার পর আদম মারা গেলেন। শেথের একশো পাঁচ বছর বয়সে তাঁর ছেলে ইনোশের জন্ম হল। ইনোশের জন্মের পর শেথ আরও আটশো সাত বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। মোট ন’শো বারো বছর বেঁচে থাকবার পর শেথ মারা গেলেন। ইনোশের নব্বই বছর বয়সে তাঁর ছেলে কৈননের জন্ম হল। কৈননের জন্মের পর ইনোশ আরও আটশো পনেরো বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। মোট ন’শো পাঁচ বছর বেঁচে থাকবার পর ইনোশ মারা গেলেন। কৈননের সত্তর বছর বয়সে তাঁর ছেলে মহললেলের জন্ম হল। মহললেলের জন্মের পর কৈনন আরও আটশো চল্লিশ বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। মোট ন’শো দশ বছর বেঁচে থাকবার পর কৈনন মারা গেলেন। মহললেলের পঁয়ষট্টি বছর বয়সে তাঁর ছেলে যেরদের জন্ম হল। যেরদের জন্মের পর মহললেল আরও আটশো ত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। মোট আটশো পঁচানব্বই বছর বেঁচে থাকবার পর মহললেল মারা গেলেন। যেরদের একশো বাষট্টি বছর বয়সে তাঁর ছেলে হনোকের জন্ম হল। হনোকের জন্মের পর যেরদ আরও আটশো বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। মোট ন’শো বাষট্টি বছর বেঁচে থাকবার পর যেরদ মারা গেলেন। হনোকের পঁয়ষট্টি বছর বয়সে তাঁর ছেলে মথূশেলহের জন্ম হল। মথূশেলহের জন্মের পর তিনশো বছর পর্যন্ত ঈশ্বরের সংগে হনোকের যোগাযোগ-সম্বন্ধ ছিল। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। হনোক মোট তিনশো পঁয়ষট্টি বছর এই পৃথিবীতে ছিলেন। তারপর তাঁকে আর দেখা গেল না। ঈশ্বরের সংগে তাঁর যোগাযোগ-সম্বন্ধ ছিল বলে ঈশ্বর তাঁকে নিজের কাছেই নিয়ে গিয়েছিলেন। মথূশেলহের একশো সাতাশি বছর বয়সে তাঁর ছেলে লেমকের জন্ম হল। লেমকের জন্মের পর মথূশেলহ আরও সাতশো বিরাশি বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ের জন্ম হয়েছিল। মোট ন’শো উনসত্তর বছর বেঁচে থাকবার পর মথূশেলহ মারা গেলেন। লেমকের একশো বিরাশি বছর বয়সে তাঁর একটি ছেলের জন্ম হল। তিনি বললেন, “আমাদের সব পরিশ্রমের মধ্যে, বিশেষ করে সদাপ্রভু মাটিকে অভিশাপ দেবার পর তার উপর আমাদের যে পরিশ্রম করতে হয় তার মধ্যে এই ছেলেটিই আমাদের সান্ত্বনা দেবে।” এই বলে তিনি তাঁর নাম দিলেন নোহ। নোহের জন্মের পর লেমক আরও পাঁচশো পঁচানব্বই বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। মোট সাতশো সাতাত্তর বছর বেঁচে থাকবার পর লেমক মারা গেলেন। নোহের বয়স পাঁচশো বছর পার হয়ে গেলে পর তাঁর ছেলে শেম, হাম আর যেফতের জন্ম হয়েছিল। এই অবস্থা দেখে সদাপ্রভু বললেন, “আমার আত্মা চিরকাল ধরে মানুষকে চেতনা দিতে থাকবেন না, কারণ মানুষ মৃত্যুর অধীন। আমি তাদের আরও একশো বিশ বছর সময় দিচ্ছি।” ঈশ্বরের সন্তানদের সংগে এই মেয়েদের মিলনের ফলে যে সন্তানদের জন্ম হল তারা ছিল পুরানো দিনের নাম-করা শক্তিশালী লোক। সেই সময় এবং তার পরেও পৃথিবীতে নেফিলীয় নামে এক জাতের লোক ছিল। সদাপ্রভু দেখলেন পৃথিবীতে মানুষের দুষ্টতা খুবই বেড়ে গেছে, আর তার অন্তরের সব চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই কেবল মন্দের দিকে ঝুঁকে আছে। কিন্তু নোহের উপরে সদাপ্রভু সন্তুষ্ট রইলেন। এই হল নোহের জীবনের কথা। নোহ একজন সৎ লোক ছিলেন। তাঁর সময়কার লোকদের মধ্যে তিনিই ছিলেন খাঁটি। ঈশ্বরের সংগে তাঁর যোগাযোগ-সম্বন্ধ ছিল। শেম, হাম আর যেফৎ নামে নোহের তিনটি ছেলে ছিল। সেই সময় ঈশ্বরের কাছে গোটা দুনিয়াটাই পাপের দুর্গন্ধে এবং অত্যাচার-অবিচারে ভরে উঠেছিল। ঈশ্বর জগতের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, তা দুর্গন্ধময় হয়ে গেছে, কারণ দুনিয়ার মানুষের স্বভাবে পচন ধরেছে। এই অবস্থা দেখে ঈশ্বর নোহকে বললেন, “গোটা মানুষ জাতটাকেই আমি ধ্বংস করে ফেলব বলে ঠিক করেছি। মানুষের জন্যই পৃথিবী অত্যাচার-অবিচারে ভরে উঠেছে। মানুষের সংগে দুনিয়ার সব কিছুই আমি ধ্বংস করতে যাচ্ছি। তুমি গোফর কাঠ দিয়ে তোমার নিজের জন্য একটা জাহাজ তৈরী কর। তার মধ্যে কতগুলো কামরা থাকবে; আর সেই জাহাজের বাইরে এবং ভিতরে আল্‌কাত্‌রা দিয়ে লেপে দেবে। জাহাজটা তুমি এইভাবে তৈরী করবে: সেটা লম্বায় হবে তিনশো হাত, চওড়ায় পঞ্চাশ হাত, আর তার উচ্চতা হবে ত্রিশ হাত। জাহাজটার ছাদ থেকে নীচে এক হাত পর্যন্ত চারদিকে একটা খোলা জায়গা রাখবে আর দরজাটা হবে জাহাজের এক পাশে। জাহাজটাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থাকবে। আর দেখ, আমি পৃথিবীতে এমন একটা বন্যার সৃষ্টি করব যাতে আকাশের নীচে যে সব প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছে তারা সব ধ্বংস হয়ে যায়। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীই তাতে মারা যাবে। “কিন্তু আমি তোমার জন্য আমার ব্যবস্থা স্থাপন করব। তুমি গিয়ে জাহাজে উঠবে আর তোমার সংগে থাকবে তোমার ছেলেরা, তোমার স্ত্রী ও তোমার ছেলেদের স্ত্রীরা। তোমার সংগে বাঁচিয়ে রাখবার জন্য তুমি প্রত্যেক জাতের জীবন্ত প্রাণী থেকে স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে এক এক জোড়া করে জাহাজে তুলে নেবে। প্রত্যেক জাতের পাখী, জীবজন্তু ও বুকে-হাঁটা প্রাণী এক এক জোড়া করে তোমার কাছে আসবে যাতে তুমি তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পার; আর তুমি সব রকমের খাবার জিনিস জোগাড় করে মজুদ করে রাখবে। সেগুলোই হবে তোমার ও তাদের খাবার।” নোহ তা-ই করলেন। ঈশ্বরের আদেশমত তিনি সব কিছুই করলেন। এর পরে সদাপ্রভু নোহকে আবার বললেন, “তুমি ও তোমার পরিবারের সবাই জাহাজে উঠবে। আমি দেখতে পাচ্ছি, এখনকার লোকদের মধ্যে কেবল তুমিই সৎ আছ। তুমি শুচি পশুর প্রত্যেক জাতের মধ্য থেকে স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে সাত জোড়া করে তোমার সংগে নেবে, আর অশুচি পশুর মধ্য থেকেও স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে এক জোড়া করে নেবে। আকাশে উড়ে বেড়ায় এমন শুচি পাখীদের মধ্য থেকেও স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে সাত জোড়া করে তোমার সংগে নেবে। পৃথিবীর উপর তাদের বংশ বাঁচিয়ে রাখবার জন্যই তুমি তা করবে। আমি আর সাত দিন পরে পৃথিবীর উপরে বৃষ্টি পড়বার ব্যবস্থা করব। তাতে চল্লিশ দিন আর চল্লিশ রাত ধরে বৃষ্টি পড়তে থাকবে। আমি ভূমিতে যে সব প্রাণী সৃষ্টি করেছি তাদের প্রত্যেকটিকে পৃথিবীর উপর থেকে মুছে ফেলব।” সদাপ্রভুর আদেশ মতই নোহ সব কাজ করলেন। পৃথিবীতে বন্যা শুরু হওয়ার সময় নোহের বয়স ছিল ছ’শো বছর। বন্যা থেকে রক্ষা পাবার জন্য নোহ, তাঁর স্ত্রী, তাঁর ছেলেরা এবং ছেলেদের স্ত্রীরা সেই জাহাজে গিয়ে উঠলেন। সেই সাত দিন পার হয়ে গেলে পর পৃথিবীতে বন্যা হল। নোহের বয়স যখন ছ’শো বছর চলছিল, সেই বছরের দ্বিতীয় মাসের সতেরো দিনের দিন মাটির নীচের সমস্ত জল হঠাৎ বের হয়ে আসতে লাগল আর আকাশেও যেন ফাটল ধরল। চল্লিশ দিন আর চল্লিশ রাত ধরে পৃথিবীর উপরে বৃষ্টি পড়তে থাকল। যেদিন বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করল সেই দিন নোহ, তাঁর স্ত্রী, তাঁর ছেলে শেম, হাম ও যেফৎ এবং তাঁর তিন ছেলের স্ত্রীরা গিয়ে জাহাজে উঠেছিলেন। তাঁদের সংগে প্রত্যেক জাতের এক এক জোড়া করে বন্য ও গৃহপালিত পশু, বুকে-হাঁটা প্রাণী আর সব রকম পাখীও উঠেছিল। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা সব প্রাণীরাই জোড়ায় জোড়ায় নোহের কাছে জাহাজে গিয়ে উঠেছিল। ঈশ্বর নোহকে আদেশ দেবার সময় যা বলেছিলেন সেই অনুসারে স্ত্রী-পুরুষ মিলেই তারা উঠেছিল। এর পর সদাপ্রভু জাহাজের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। তারপর থেকে চল্লিশ দিন ধরে পৃথিবীতে বন্যার জল বেড়েই চলল। জল বেড়ে যাওয়াতে জাহাজটা মাটি ছেড়ে উপরে ভেসে উঠল। পরে পৃথিবীর উপরে জল আরও বেড়ে গেল এবং জাহাজটা জলের উপরে ভাসতে লাগল। পৃথিবীর উপরে জল কেবল বেড়েই চলল; ফলে যেখানে যত বড় বড় পাহাড় ছিল সব ডুবে গেল। সমস্ত পাহাড়-পর্বত ডুবিয়ে জল আরও পনেরো হাত উপরে উঠে গেল। এর ফলে মাটির উপরে ঘুরে বেড়ানো সমস্ত প্রাণী, পাখী, গৃহপালিত আর বন্য পশু, ঝাঁক বেঁধে চলে বেড়ানো ছোট ছোট প্রাণী এবং সমস্ত মানুষ মারা গেল। শুকনা মাটির উপর যে সব প্রাণী বাস করত, অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে যারা বেঁচে ছিল তারা সবাই মরে গেল। ঈশ্বর এইভাবে ভূমির সমস্ত প্রাণী পৃথিবীর উপর থেকে মুছে ফেললেন। তাতে মানুষ, পশু, বুকে-হাঁটা প্রাণী এবং আকাশের পাখী পৃথিবীর উপর থেকে মুছে গেল। কেবল নোহ এবং তাঁর সংগে যাঁরা জাহাজে ছিলেন তাঁরাই বেঁচে রইলেন। পৃথিবী একশো পঞ্চাশ দিন জলে ডুবে রইল। জাহাজে নোহ এবং তাঁর সংগে যে সব গৃহপালিত ও বন্য পশু ছিল ঈশ্বর তাদের কথা ভুলে যান নি। তিনি পৃথিবীর উপরে বাতাস বহালেন, তাতে জল কমতে লাগল। এর আগেই মাটির নীচের সমস্ত জল বের হওয়া এবং আকাশের সব ফাটলগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়াও থেমে গিয়েছিল। তাতে মাটির উপরকার জল সরে যেতে থাকল, আর বন্যা শুরু হওয়ার একশো পঞ্চাশ দিন পরে দেখা গেল জল অনেক কমে গেছে। সপ্তম মাসের সতেরো দিনের দিন জাহাজটা অরারটের পাহাড়শ্রেণীর উপরে গিয়ে আট্‌কে রইল। এর পরেও জল কমে যেতে লাগল, আর দশম মাসের প্রথম দিনে পাহাড়শ্রেণীর চূড়া দেখা দিল। এর চল্লিশ দিন পরে নোহ জাহাজের যে জানলাটা তৈরী করেছিলেন সেটা খুললেন, আর সেই জানলা দিয়ে তিনি একটা দাঁড়কাক ছেড়ে দিলেন। মাটির উপর থেকে জল শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়কাকটা এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করতে লাগল। মাটির উপর থেকে জল কমে গেছে কিনা তা জানবার জন্য নোহ এর পর একটা কবুতর ছেড়ে দিলেন। কিন্তু তখনও গোটা পৃথিবীর উপরে জল ছিল, তাই কোথাও পা রাখবার জায়গা না পেয়ে সেটা জাহাজে নোহের কাছে ফিরে আসল। নোহ হাত বাড়িয়ে সেই কবুতরকে জাহাজে নিজের কাছে নিলেন। তারপর তিনি আরও সাত দিন অপেক্ষা করে আবার সেই কবুতরটা জাহাজ থেকে ছেড়ে দিলেন। সন্ধ্যাবেলা কবুতরটা জাহাজে নোহের কাছে ফিরে আসল আর তার ঠোঁটে ছিল জলপাই গাছ থেকে এইমাত্র ছিঁড়ে আনা একটা পাতা। এতে নোহ বুঝতে পারলেন মাটির উপর থেকে জল কমে গেছে। তিনি আরও সাত দিন অপেক্ষা করে আবার সেই কবুতরটা ছেড়ে দিলেন, কিন্তু এবার সেটা আর তাঁর কাছে ফিরে আসল না। নোহের বয়স তখন ছ’শো এক বছর চলছিল। সেই বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনেই মাটির উপর থেকে জল সরে গিয়েছিল। তখন নোহ জাহাজের ছাদ খুলে ফেলে তাকিয়ে দেখলেন যে, মাটির উপরটা শুকাতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় মাসের সাতাশ দিনের মধ্যে মাটি একেবারে শুকিয়ে গেল। তখন ঈশ্বর নোহকে বললেন, “তুমি তোমার স্ত্রীকে আর তোমার ছেলেদের ও তাদের স্ত্রীদের নিয়ে জাহাজ থেকে বের হয়ে এস, আর সেই সংগে সমস্ত পশু-পাখী এবং বুকে-হাঁটা প্রাণী, অর্থাৎ যত জীবজন্তু আছে তাদের সকলকেই বের করে নিয়ে এস। আমি চাই যেন পৃথিবীতে তাদের বংশ অনেক বেড়ে যায় এবং বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা দ্বারা তারা সংখ্যায় বেড়ে ওঠে।” তখন নোহ তাঁর স্ত্রীকে আর তাঁর ছেলেদের ও তাঁদের স্ত্রীদের নিয়ে জাহাজ থেকে বের হয়ে আসলেন। তাঁদের সংগে সব পশু-পাখী এবং বুকে-হাঁটা প্রাণী, অর্থাৎ মাটির উপরে ঘুরে বেড়ানো সমস্ত প্রাণী নিজের নিজের জাত অনুসারে বের হয়ে গেল। তারপর নোহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করলেন এবং প্রত্যেক জাতের শুচি পশু ও পাখী থেকে কয়েকটা নিয়ে সেই বেদীর উপরে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। সদাপ্রভু সেই উৎসর্গের গন্ধে খুশী হলেন এবং মনে মনে বললেন, “মানুষের দরুন আর কখনও আমি মাটিকে অভিশাপ দেব না, কারণ ছোটবেলা থেকেই তো মানুষের মনের ঝোঁক মন্দের দিকে। এবার যেমন আমি সমস্ত জীবন্ত প্রাণীকে ধ্বংস করেছি তেমন আর কখনও করব না। যতদিন এই পৃথিবী থাকবে ততদিন নিয়ম মত বীজ বোনা আর ফসল কাটা, ঠাণ্ডা আর গরম, শীতকাল আর গরমকাল এবং দিন ও রাত হতেই থাকবে।” ঈশ্বর নোহ আর তাঁর ছেলেদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমরা বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা দ্বারা সংখ্যায় বেড়ে ওঠো এবং পৃথিবী ভরে তোলো। পৃথিবীর সব জীবজন্তু, আকাশের পাখী, বুকে-হাঁটা প্রাণী, আর সমুদ্রের মাছ তোমাদের ভীষণ ভয় করে চলবে। এগুলো তোমাদের হাতেই দেওয়া হল। জীবন্ত ও ঘুরে বেড়ানো সমস্ত প্রাণীই তোমাদের খাবার হবে। খাবার হিসাবে আমি আগে যেমন তোমাদের শস্য ও শাক-সব্‌জী দিয়েছিলাম তেমনি এখন এই সবও তোমাদের দিলাম; কিন্তু প্রাণ সুদ্ধ, অর্থাৎ রক্ত সুদ্ধ মাংস তোমরা খাবে না। কেউ যদি তোমাদের খুন করে তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের রক্তের বদলে তার রক্ত, অর্থাৎ তার প্রাণ দাবি করব, সে পশু হোক বা মানুষ হোক। মানুষের প্রাণ যে মানুষ নেয় তারও প্রাণ নিতে হবে- এ-ই আমার দাবি। ঈশ্বর মানুষকে তাঁর মত করেই সৃষ্টি করেছেন; সেইজন্য কোন মানুষকে যদি কেউ খুন করে তবে অন্য একজনকে সেই খুনীর প্রাণ নিতে হবে। তোমরা তোমাদের বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা দ্বারা নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলো। তোমরা পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে পড় এবং নিজেদের সংখ্যা আরও বাড়াও।” সেই ব্যবস্থা হল এই যে, বন্যার জল দিয়ে আর কখনও সমস্ত প্রাণীকে মেরে ফেলা হবে না এবং গোটা পৃথিবী ধ্বংস করে দেবার মত বন্যাও আর হবে না।” যখন আমি উপরে মেঘ জমা করব তখন তার মধ্যে এই ধনুক দেখা দেবে, আর তখনই তোমার এবং সমস্ত জীবজন্তুর জন্য আমার এই ব্যবস্থার কথা আমি মনে করব। এতে জল আর কখনও বন্যা হয়ে সমস্ত প্রাণীকে ধ্বংস করবে না। মেঘের মধ্যে যখন সেই ধনুক দেখা দেবে তখন আমি তা দেখে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর জন্য আমার এই চিরস্থায়ী ব্যবস্থার কথা মনে করব।” ঈশ্বর তারপর নোহকে বললেন, “পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর জন্য আমি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছি এটাই হল তার চিহ্ন।” জাহাজ থেকে নোহের ছেলে শেম, হাম আর যেফৎ বের হয়ে এসেছিলেন। পরে কনান নামে হামের একটি ছেলে হয়েছিল। নোহের এই তিন ছেলের বংশধরেরাই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। নোহ চাষ-আবাদ করতে আরম্ভ করলেন এবং একটা আংগুর ক্ষেত করলেন। তিনি একদিন আংগুর-রস খেয়ে মাতাল হলেন এবং নিজের তাম্বুর মধ্যে উলংগ হয়ে পড়ে রইলেন। কনানের বাবা হাম তাঁর বাবার এই অবস্থা দেখলেন এবং বাইরে গিয়ে তাঁর দুই ভাইকে তা জানিয়ে দিলেন। কিন্তু শেম আর যেফৎ নিজেদের কাঁধের উপরে একটা কাপড় নিলেন এবং পিছু হেঁটে গিয়ে তাঁদের বাবাকে ঢেকে দিয়ে আসলেন। তাঁদের মুখ উল্টাদিকে ফিরানো ছিল বলে বাবার উলংগ অবস্থা তাঁদের চোখে পড়ল না। নেশা কেটে গেলে পর নোহ তাঁর ছোট ছেলের ব্যবহারের কথা জানতে পারলেন। তখন তিনি বললেন, “কনান অভিশপ্ত হোক। সে তার ভাইদের সবচেয়ে নীচু ধরনের চাকর হোক।” তিনি আরও বললেন, “ধন্য শেমের ঈশ্বর সদাপ্রভু। কনান শেমের চাকর হোক। ঈশ্বর করুন, যেফৎ যেন অনেক জায়গা জুড়ে থাকে। সে শেমের তাম্বুতে বাস করুক আর কনান তার চাকর হোক।” বন্যার পরে নোহ আরও সাড়ে তিনশো বছর বেঁচে ছিলেন। মোট সাড়ে ন’শো বছর বেঁচে থাকবার পর তিনি মারা গেলেন। এই হল নোহের ছেলে শেম, হাম আর যেফতের বংশের কথা। বন্যার পরে তাঁদেরও ছেলে হয়েছিল। যেফতের ছেলেরা হল গোমর, মাগোগ, মাদয়, যবন, তূবল, মেশক ও তীরস। গোমরের ছেলেরা হল অস্কিনস, রীফৎ ও তোগর্ম। যবনের ছেলেরা হল ইলীশা, তর্শীশ, কিত্তীম ও দোদানীম। এদের বংশের লোকেরাই শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষা, পরিবার ও জাতি অনুসারে সাগর পারের ভিন্ন ভিন্ন দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছিল। হামের ছেলেরা হল কূশ, মিসর, পূট ও কনান। কূশের ছেলেরা হল সবা, হবীলা, সপ্তা, রয়মা ও সপ্তকা। রয়মার ছেলেরা হল শিবা ও দদান। কূশের একটি ছেলে হয়েছিল যাঁর নাম ছিল নিম্রোদ। এই নিম্রোদ পৃথিবীতে একজন ক্ষমতাশালী পুরুষ হয়ে উঠেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে তিনি ছিলেন একজন বেপরোয়া শিকারী। সেইজন্য কথায় বলে, “লোকটা যেন সদাপ্রভুর চোখে একজন বেপরোয়া শিকারী নিম্রোদ।” শিনিয়র দেশের বাবিল, এরক, অক্কদ ও কল্‌নী নামে জায়গাগুলো নিয়ে তিনি রাজত্ব করতে শুরু করলেন। কনানের বড় ছেলের নাম ছিল সীদোন। তার পরে হেতের জন্ম হয়েছিল। যিবূষীয়, ইমোরীয়, গির্গাশীয়, হিব্বীয়, অর্কীয়, সীনীয়, অর্বদীয়, সমারীয় এবং হমাতীয়েরাও ছিল কনানের বংশের লোক। পরে এই সব কনানীয় পরিবারগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল। সীদোন শহর থেকে গরারে যাওয়ার পথে গাজা পর্যন্ত এবং গাজা থেকে সদোম, ঘমোরা, অদ্‌মা ও সবোয়ীমে যাওয়ার পথে লাশা পর্যন্ত কনানীয়দের দেশের সীমা ছিল। পরিবার, ভাষা, দেশ ও জাতি হিসাবে এরাই ছিল হামের বংশের লোক। যেফতের বড় ভাই শেমেরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। শেম ছিলেন এবর ও তাঁর সন্তানদের পূর্বপুরুষ। শেমের ছেলেরা হল এলম, অশূর, অর্ফক্‌ষদ, লূদ ও অরাম। অরামের ছেলেরা হল ঊষ, হূল, গেথর ও মশ। অর্ফক্‌ষদের ছেলের নাম শেলহ এবং শেলহের ছেলের নাম এবর। এবরের দু’টি ছেলে হয়েছিল। তাদের একজনের নাম ছিল পেলগ। তার সময়ে পৃথিবী ভাগ হয়েছিল বলেই তার এই নাম দেওয়া হয়েছিল। পেলগের ভাইয়ের নাম ছিল যক্তন। যক্তনের ছেলেরা হল অল্‌মোদদ, শেলফ, হৎসর্মাবৎ, যেরহ, হদোরাম, ঊষল, দিক্ল, ওবল, অবীমায়েল, শিবা, ওফীর, হবীলা ও যোবব। এরা সবাই ছিল যক্তনের ছেলে। মেষা থেকে পূর্ব দিকে সফারে যাওয়ার পথে যে পাহাড়ী এলাকা ছিল তার সমস্ত জায়গায় এরা বাস করত। পরিবার, ভাষা, দেশ ও জাতি হিসাবে এরাই ছিল শেমের বংশের লোক। এরাই হল বংশ এবং জাতি হিসাবে নোহের ছেলেদের বিভিন্ন পরিবার। বন্যার পরে এদের বংশের লোকেরাই বিভিন্ন জাতি হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। তখনকার দিনে সারা দুনিয়ার মানুষ কেবল একটি ভাষাতেই কথা বলত এবং তাদের শব্দগুলোও ছিল একই। পরে তারা পূর্ব দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শিনিয়র দেশে একটা সমভূমি পেয়ে সেখানেই বাস করতে লাগল। তারা একে অন্যকে বলল, “চল, আমরা ইট তৈরী করে আগুনে পুড়িয়ে নিই।” এই বলে তারা পাথরের বদলে ইট এবং চুন-সুরকির বদলে আল্‌কাত্‌রা ব্যবহার করতে লাগল। তারা বলল, “এস, আমরা নিজেদের জন্য একটা শহর তৈরী করি এবং এমন একটা উঁচু ঘর তৈরী করি যার চূড়া গিয়ে আকাশে ঠেকবে। এতে আমাদের সুনামও হবে আর আমরা সারা জগতে ছড়িয়েও পড়ব না।” মানুষ যে শহর ও উঁচু ঘর তৈরী করছিল তা দেখবার জন্য সদাপ্রভু নেমে আসলেন। তিনি বলেছিলেন, “এরা একই জাতির লোক এবং এদের ভাষাও এক; সেইজন্যই এই কাজে তারা হাত দিয়েছে। নিজেদের মতলব হাসিল করবার জন্য এর পর এরা আর কোন বাধাই মানবে না। কাজেই এস, আমরা নীচে গিয়ে তাদের ভাষায় গোলমাল বাধিয়ে দিই যাতে তারা একে অন্যের কথা বুঝতে না পারে।” তারপর সদাপ্রভু সেই জায়গা থেকে তাদের সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলেন। এতে তাদের সেই শহর তৈরীর কাজও বন্ধ হয়ে গেল। এইজন্য সেই জায়গার নাম হল বাবিল, কারণ সেখানেই সদাপ্রভু সারা পৃথিবীতে ভাষার মধ্যে গোলমাল বাধিয়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি তাদের পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই হল শেমের বংশের কথা। বন্যার দু’বছর পরে যখন শেমের বয়স একশো বছর তখন তাঁর ছেলে অর্ফক্‌ষদের জন্ম হল। অর্ফক্‌ষদের জন্মের পরে শেম আরও পাঁচশো বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। অর্ফক্‌ষদের পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে তাঁর ছেলে শেলহের জন্ম হল। শেলহের জন্মের পরে অর্ফক্‌ষদ আরও চারশো তিন বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। শেলহের ত্রিশ বছর বয়সে তাঁর ছেলে এবরের জন্ম হল। এবরের জন্মের পরে শেলহ আরও চারশো তিন বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। এবরের চৌত্রিশ বছর বয়সে তাঁর ছেলে পেলগের জন্ম হল। পেলগের জন্মের পরে এবর আরও চারশো ত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। পেলগের ত্রিশ বছর বয়সে তাঁর ছেলে রিয়ূর জন্ম হল। রিয়ূর জন্মের পরে পেলগ আরও দু’শো নয় বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। রিয়ূর বত্রিশ বছর বয়সে তাঁর ছেলে সরূগের জন্ম হল। সরূগের জন্মের পরে রিয়ূ আরও দু’শো সাত বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। সরূগের ত্রিশ বছর বয়সে তাঁর ছেলে নাহোরের জন্ম হল। নাহোরের জন্মের পরে সরূগ আরও দু’শো বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। নাহোরের উনত্রিশ বছর বয়সে তাঁর ছেলে তেরহের জন্ম হল। তেরহের জন্মের পরে নাহোর আরও একশো উনিশ বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে তাঁর আরও ছেলেমেয়ে হয়েছিল। তেরহের সত্তর বছর বয়সের পর তাঁর ছেলে অব্রাম, নাহোর ও হারণের জন্ম হয়েছিল। এই হল তেরহের বংশের কথা। তেরহের ছেলেদের নাম ছিল অব্রাম, নাহোর ও হারণ, আর হারণের ছেলের নাম লোট। হারণ তাঁর বাবা বেঁচে থাকতেই তাঁর জন্মস্থান কল্‌দীয় দেশের ঊর শহরে মারা গিয়েছিলেন। অব্রাম আর নাহোর দু’জনেই বিয়ে করেছিলেন। অব্রামের স্ত্রীর নাম ছিল সারী আর নাহোরের স্ত্রীর নাম ছিল মিল্‌কা। মিল্‌কা আর যিষ্কা ছিল হারণের মেয়ে। সারী বন্ধ্যা ছিলেন; তাঁর কোন ছেলেমেয়ে হয় নি। অব্রাম, লোট ও সারীকে নিয়ে তেরহ কনান দেশে যাবার জন্য কল্‌দীয় দেশের ঊর শহর থেকে যাত্রা করলেন। অব্রাম ছিলেন তেরহের ছেলে, লোট ছিলেন তেরহের নাতি, অর্থাৎ হারণের ছেলে, আর সারী ছিলেন তেরহের ছেলে অব্রামের স্ত্রী। প্রথমে তাঁরা হারণ নামে এক শহর পর্যন্ত গেলেন এবং সেখানে বাস করতে লাগলেন। তেরহ দু’শো পাঁচ বছর বয়সে হারণ শহরেই মারা গেলেন। পরে সদাপ্রভু অব্রামকে বললেন, “তুমি তোমার নিজের দেশ, তোমার আত্মীয়-স্বজন এবং তোমার বাবার বাড়ী-ঘর ছেড়ে আমি তোমাকে যে দেশ দেখাব সেই দেশে যাও। তোমার মধ্য থেকে আমি একটি মহা জাতি সৃষ্টি করব। আমি তোমাকে আশীর্বাদ করব এবং এমন করব যাতে তোমার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আর তোমার মধ্য দিয়ে লোকে আশীর্বাদ পায়। যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে আমি তাদের আশীর্বাদ করব, আর যারা তোমাকে অভিশাপ দেবে আমি তাদের অভিশাপ দেব। তোমার মধ্য দিয়েই পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতি আশীর্বাদ পাবে।” সদাপ্রভুর কথামতই অব্রাম তখন বেরিয়ে পড়লেন আর লোটও তাঁর সংগে গেলেন। হারণ শহর ছেড়ে যাবার সময় অব্রামের বয়স ছিল পঁচাত্তর বছর। তিনি তাঁর স্ত্রী সারী আর ভাইপো লোটকে নিয়ে বের হলেন। নিজেদের সব কিছু নিয়ে এবং যে সব দাস-দাসীদের তাঁরা হারণে পেয়েছিলেন তাদের নিয়ে তিনি কনান দেশের দিকে যাত্রা করে সেখানে গিয়ে পৌঁছালেন। কনান দেশের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে অব্রাম শিখিম শহরের কাছে মোরির এলোন গাছ পর্যন্ত গেলেন। তখনও কনানীয়েরা সেই দেশে বাস করছিল। পরে সদাপ্রভু অব্রামকে দেখা দিয়ে বললেন, “এই দেশটাই আমি তোমার বংশকে দেব।” যিনি তাঁকে দেখা দিয়েছিলেন সেই সদাপ্রভুর উদ্দেশে অব্রাম তখন সেখানে একটা বেদী তৈরী করলেন। তারপর সেখান থেকে তিনি বৈথেল শহরের পূর্ব দিকের পাহাড়ী এলাকায় এগিয়ে গেলেন এবং পশ্চিমে বৈথেল আর পূর্বে অয় শহরের মাঝামাঝি এক জায়গায় তাঁর তাম্বু ফেললেন। সদাপ্রভুর উদ্দেশে সেখানেও তিনি একটা বেদী তৈরী করলেন এবং সদাপ্রভুকে তাঁর যোগ্য সম্মান দিলেন। পরে তিনি সেখান থেকে সরতে সরতে নেগেভ নামে দক্ষিণের মরু-এলাকার দিকে চলে গেলেন। পরে কনান দেশে এক দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সেই দুর্ভিক্ষ এত ভীষণ হয়ে উঠল যে, অব্রাম কিছুকালের জন্য মিসর দেশে বাস করতে গেলেন। মিসর দেশের কাছাকাছি এসে অব্রাম তাঁর স্ত্রী সারীকে বললেন, “শোন, আমি জানি তুমি খুব সুন্দরী। তুমি যখন মিসরীয়দের চোখে পড়বে তখন তারা ভাববে তুমি আমার স্ত্রী। আর এই ভেবে তারা তোমাকে রেখে আমাকে মেরে ফেলবে। সেইজন্য তুমি তাদের বোলো যে, তুমি আমার বোন। তাতে তোমার দরুন তারা আমার সংগে ভাল ব্যবহার করবে এবং আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।” অব্রাম যখন মিসরে গেলেন তখন মিসরীয়েরা দেখল সারী খুব সুন্দরী। ফরৌণের, অর্থাৎ রাজার দরবারের লোকেরাও তাঁকে দেখে ফরৌণের কাছে তাঁর প্রশংসা করে অনেক কথা বলল। ফলে সারীকে রাজবাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হল। আর সারীর দরুন ফরৌণ অব্রামের সংগে ভাল ব্যবহার করতে লাগলেন। তিনি অব্রামকে অনেক ভেড়া, গরু, গাধা, গাধী, উট এবং দাস-দাসী দিলেন। কিন্তু অব্রামের স্ত্রী সারীর দরুন সদাপ্রভু ফরৌণ ও তাঁর বাড়ীর সমস্ত লোকদের মধ্যে নানা রকমের ভীষণ অসুখের সৃষ্টি করলেন। এই বলে ফরৌণ তাঁর লোকদের হুকুম দিলেন আর তারা অব্রামের সব কিছু সুদ্ধ তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে বিদায় দিল। তখন অব্রাম তাঁর স্ত্রী ও তাঁর সব কিছু নিয়ে মিসর দেশ থেকে বের হয়ে নেগেভ নামে দক্ষিণের মরু-এলাকার দিকে গেলেন, আর লোটও তাঁর সংগে গেলেন। লোট, যিনি অব্রামের সংগে গিয়েছিলেন, তাঁর নিজেরও অনেক গরু, ভেড়া, ছাগল এবং তাম্বু ছিল। তবে জায়গাটা এমন ছিল না যাতে তাঁরা দু’জনে এক জায়গায় বাস করতে পারেন। পশু এবং তাম্বু তাঁদের দু’জনেরই এত বেশী ছিল যে, তা নিয়ে তাঁদের এক জায়গায় থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে অব্রাম আর লোটের রাখালদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ দেখা দিল। তা ছাড়া সেই সময় কনানীয় ও পরিষীয়েরাও সেই দেশে বাস করছিল। তখন অব্রাম লোটকে বললেন, “দেখ, আমরা দু’জনে নিকট আত্মীয়। সেইজন্য তোমার ও আমার মধ্যে এবং তোমার ও আমার রাখালদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ না হওয়াই উচিৎ। গোটা দেশটাই তো তোমার সামনে পড়ে আছে। তাই এস, আমরা আলাদা হয়ে যাই। তুমি বাঁ দিকটা বেছে নিলে আমি ডান দিকে যাব, আর ডান দিকটা বেছে নিলে আমি বাঁ দিকে যাব।” তখন লোট চেয়ে দেখলেন যর্দন নদীর দক্ষিণ দিকের সমভূমিতে প্রচুর জল আছে এবং জায়গাটা দেখতে প্রায় সদাপ্রভুর বাগানের মত, আর তা না হলেও অন্ততঃ সোয়রে যাবার পথে মিসর দেশের মত। তখনও সদাপ্রভু সদোম ও ঘমোরা শহর ধ্বংস করে ফেলেন নি। তখন লোট যর্দন নদীর দক্ষিণ দিকের সমস্ত সমভূমিটা নিজের জন্য বেছে নিয়ে পূর্ব দিকে সরে গেলেন। এইভাবে তাঁরা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। অব্রাম কনান দেশে এবং লোট সেই সমভূমির শহরগুলোর মাঝখানে বাস করতে লাগলেন। তিনি সদোম শহরের কাছে তাম্বু ফেলেছিলেন। সদোমের লোকেরা খুব খারাপ ছিল এবং সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তারা ভীষণ পাপ করছিল। লোট আলাদা হয়ে যাবার পর সদাপ্রভু অব্রামকে বললেন, “তুমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছ সেখান থেকে উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে একবার চেয়ে দেখ। যে সব জায়গা তুমি দেখবে তা আমি তোমাকে ও তোমার বংশকে চিরকালের জন্য দেব। আমি তোমার বংশের লোকদের পৃথিবীর ধূলিকণার মত অসংখ্য করব। পৃথিবীর ধূলিকণা যদি কেউ গুণে শেষ করতে পারে তবে তোমার বংশের লোকদেরও গোণা যাবে। সারা দেশটা তুমি একবার ঘুরে এস, কারণ এই দেশটাই আমি তোমাকে দেব।” তখন অব্রাম তাঁর তাম্বু তুলে নিলেন এবং হিব্রোণ এলাকার মম্রি নামে একজন লোকের এলোন বনের কাছে তা খাটালেন। সেখানেও তিনি সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করলেন। শিনিয়র দেশের রাজা অম্রাফল, ইল্লাসরের রাজা অরিয়োক, এলমের রাজা কদর্লায়োমর এবং গোয়ীমের রাজা তিদিয়ল- এই চারজন রাজা এক হয়ে একবার সদোমের রাজা বিরা, ঘমোরার রাজা বির্শা, অদ্‌মার রাজা শিনাব, সবোয়িমের রাজা শিমেবর এবং বিলার, অর্থাৎ সোয়রের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। এই পাঁচজন রাজা তাঁদের সৈন্যদল একত্র করে সিদ্দীম উপত্যকায় গেলেন। এই জায়গাটাকে মরু-সাগর বলা হয়। এর আগে এই রাজারা বারো বছর পর্যন্ত রাজা কদর্লায়োমরের অধীনে ছিলেন, কিন্তু তেরো বছরে এসে তাঁরা বিদ্রোহ করলেন। তারপর এই রাজারা ঘুরে গিয়ে ঐনমিষ্পটে, অর্থাৎ কাদেশে গেলেন। তাঁরা অমালেকীয়দের সমস্ত দেশটা জয় করে নিলেন এবং হৎসসোন-তামর শহরে যে ইমোরীয়েরা ছিল তাদের হারিয়ে দিলেন। সিদ্দীম উপত্যকাতে আল্‌কাত্‌রায় ভরা অনেক গর্ত ছিল। যখন সদোম আর ঘমোরার রাজারা পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁদের লোকদের মধ্যে কেউ কেউ সেই আল্‌কাত্‌রার গর্তে পড়ে গেল, আর অন্যেরা পাহাড়ে পালিয়ে গেল। যে রাজারা জয়ী হয়েছিলেন তাঁরা সদোম ও ঘমোরার সমস্ত ধন-সম্পদ ও খাবার-দাবার লুট করে নিয়ে চলে গেলেন। অব্রামের ভাইপো লোট তখন সদোমে বাস করছিলেন। সেই রাজারা তাঁর সমস্ত ধন-সম্পদ সুদ্ধ তাঁকেও ধরে নিয়ে গেলেন। পরে একজন লোক পালিয়ে এসে ইব্রীয় অব্রামকে সেই খবর দিল। অব্রাম সেই সময় ইমোরীয় মম্রির এলোন বনের কাছে বাস করছিলেন। মম্রি ছিলেন ইষ্কোল ও আনেরের ভাই। অব্রামের সংগে এঁরা বন্ধুত্বের চুক্তিতে বাঁধা ছিলেন। অব্রাম যখন শুনলেন যে, তাঁর আত্মীয়কে সেই রাজারা ধরে নিয়ে গেছেন তখন তিনি যুদ্ধের শিক্ষা পাওয়া তাঁর তিনশো আঠারো জন দাসকে যুদ্ধে নামালেন এবং দান শহর পর্যন্ত শত্রুদের তাড়া করে নিয়ে গেলেন। এই দাসেরা তাঁর বাড়ীতেই জন্মেছিল। তিনি নিজের লোকজনদের কয়েকটি দলে ভাগ করলেন এবং তাদের নিয়ে রাতের বেলা শত্রুদের আক্রমণ করে তাঁদের হারিয়ে দিলেন। তারপর তাঁদের তাড়া করতে করতে তিনি দামেস্কের উত্তরে হোবা পর্যন্ত গেলেন। লুট করা সমস্ত জিনিস তিনি ফিরিয়ে আনলেন এবং তাঁর ভাইপো লোটকে তাঁর ধন-সম্পদ সুদ্ধ উদ্ধার করলেন। সেই সংগে সমস্ত স্ত্রীলোক ও অন্যান্য লোকদেরও উদ্ধার করে নিয়ে আসা হল। কদর্লায়োমর এবং তাঁর সংগী-রাজাদের হারিয়ে দিয়ে যখন অব্রাম ফিরে আসলেন তখন সদোমের রাজা তাঁর সংগে দেখা করবার জন্য শাবী উপত্যকায়, অর্থাৎ রাজার উপত্যকায় বের হয়ে আসলেন। শালেমের রাজা মল্কীষেদক অব্রামের জন্য রুটি ও আংগুর-রস নিয়ে আসলেন। তিনি ছিলেন মহান ঈশ্বরের পুরোহিত। তিনি অব্রামকে আশীর্বাদ করে বললেন, “যিনি মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সেই মহান ঈশ্বর অব্রামকে আশীর্বাদ করুন। যিনি আপনার শত্রুদের আপনার হাতে দিয়েছেন সেই মহান ঈশ্বরের গৌরব হোক।” তখন অব্রাম তাঁর উদ্ধার করা জিনিসের দশভাগের একভাগ মল্কীষেদককে দিলেন। পরে সদোমের রাজা অব্রামকে বললেন, “আপনি ধন-সম্পদ সব রেখে দিন কিন্তু লোকজন আমাকে ফিরিয়ে দিন।” উত্তরে অব্রাম সদোমের রাজাকে বললেন, “যিনি মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সেই মহান ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে হাত তুলে আমি প্রতিজ্ঞা করে বলছি যে, আপনার কোন জিনিস, এমন কি, একটু সুতা কিম্বা পায়ের চটির একটা বাঁধন পর্যন্ত আমি নেব না। এই প্রতিজ্ঞা আমি করছি যাতে আপনি বলতে না পারেন, ‘আমার ধনেই অব্রাম ধনী হয়েছে।’ আমার লোকেরা যা খেয়েছে তা ছাড়া আমি আর কিছুই নিচ্ছি না; তবে আনের, ইষ্কোল ও মম্রি, যাঁরা আমার সংগে গিয়েছিলেন, তাঁদের পাওনা ভাগ তাঁদের নিতে দিন।” এর পর সদাপ্রভু অব্রামকে দর্শনের মধ্য দিয়ে বললেন, “অব্রাম, ভয় কোরো না। ঢালের মত করে আমিই তোমাকে রক্ষা করব, আর তোমার পুরস্কার হবে মহান।” অব্রাম বললেন, “হে সদাপ্রভু, আমার প্রভু, তুমি আমাকে কি দেবে? আমার তো কোন ছেলেমেয়ে নেই। আমার মৃত্যুর পরে দামেস্কের ইলীয়েষর আমার সম্পত্তির অধিকারী হবে। তুমি কি আমাকে কোন সন্তান দিয়েছ? কাজেই আমার বাড়ীর একজন দাসই তো আমার পরে আমার বিষয়-সম্পত্তির অধিকারী হবে।” তখন সদাপ্রভু অব্রামকে বললেন, “না, অধিকারী সে হবে না। তোমার নিজের সন্তানই তোমার সম্পত্তির অধিকারী হবে।” পরে সদাপ্রভু অব্রামকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বললেন, “আকাশের দিকে তাকাও এবং যদি পার ঐ তারাগুলো গুণে শেষ কর। তোমার বংশের লোকেরা ঐ তারার মতই অসংখ্য হবে।” অব্রাম সদাপ্রভুর কথা বিশ্বাস করলেন আর সদাপ্রভু সেইজন্য তাঁকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন। সদাপ্রভু অব্রামকে বললেন, “আমি সদাপ্রভু। এই দেশের অধিকারী হবার জন্য আমিই তোমাকে কল্‌দীয়দের ঊর শহর থেকে বের করে এনেছি।” তখন অব্রাম বললেন, “হে সদাপ্রভু, আমার প্রভু, আমি কি করে জানব যে, এই দেশটা আমার অধিকারে আসবে?” উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “তুমি আমার কাছে একটা বক্‌না বাছুর, একটা ছাগী আর একটা পুরুষ ভেড়া নিয়ে এস। সেগুলোর প্রত্যেকটার বয়স যেন তিন বছর হয়। সেই সংগে একটা ঘুঘু আর একটা কবুতরের বাচ্চাও নিয়ে এস।” অব্রাম তা-ই করলেন। তিনি সেগুলো এনে সমান দু’টুকরা করে প্রত্যেকটা টুকরা তার অন্য টুকরার উল্টাদিকে সাজিয়ে রাখলেন, কিন্তু পাখীগুলো তিনি টুকরা করলেন না। তখন শকুন এসে মরা পশুগুলোর উপর পড়ল, কিন্তু অব্রাম সেগুলো তাড়িয়ে দিলেন। যখন সূর্য ডুবে যাচ্ছিল তখন অব্রাম ঘুমিয়ে পড়লেন। গভীর ঘুমের মধ্যে একটা ভয়ংকর অন্ধকার তাঁর উপর নেমে আসল। তখন সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তুমি এই কথা নিশ্চয় করে জেনো, তোমার বংশের লোকেরা এমন একটা দেশে গিয়ে বাস করবে যা তাদের নিজেদের নয়। সেখানে তারা অন্যদের দাস হয়ে চারশো বছর পর্যন্ত অত্যাচার ভোগ করবে। কিন্তু যে জাতি তাদের দাস করে রাখবে সেই জাতিকে আমি শাস্তি দেব। পরে তারা অনেক ধন-দৌলৎ নিয়ে সেই দেশ থেকে বের হয়ে আসবে। তবে তার আগেই তুমি অনেক বয়সে শান্তিতে মারা গিয়ে কবর পাবে এবং তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবে। কিন্তু তোমার বংশের চতুর্থ পুরুষের লোকেরা এখানে ফিরে আসবে, কারণ পাপ করতে করতে ইমোরীয়েরা এখনও এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছায় নি যার জন্য আমাকে তাদের শাস্তি দিতে হবে।” সূর্য ডুবে গিয়ে যখন একেবারে অন্ধকার হয়ে গেল তখন ধূমায় ভরা একটা জ্বলন্ত চুলা এবং একটা জ্বলন্ত মশাল দেখা দিল। সেগুলো সেই সাজিয়ে রাখা পশুর টুকরাগুলোর মধ্য দিয়ে চলে গেল। সদাপ্রভু সেই দিনই অব্রামের জন্য এই বলে একটা ব্যবস্থা স্থাপন করলেন, “মিসরের নদী থেকে আরম্ভ করে মহানদী ইউফ্রেটিস পর্যন্ত সমস্ত দেশটা আমি তোমার বংশকে দিলাম। এর মধ্যে থাকবে কেনীয়, কনিষীয়, কদ্‌মোনীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, রফায়ীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, গির্গাশীয় ও যিবূষীয়দের দেশ।” অব্রামের স্ত্রী সারীর তখনও কোন ছেলেমেয়ে হয় নি। হাগার নামে তাঁর একজন মিসরীয় দাসী ছিল। একদিন সারী অব্রামকে বললেন, “দেখ, সদাপ্রভু আমাকে বন্ধ্যা করেছেন। সেইজন্য তুমি আমার দাসীর কাছে যাও। হয়তো তার মধ্য দিয়ে আমি সন্তান লাভ করব।” অব্রাম সারীর কথায় রাজী হলেন। তাই কনান দেশে অব্রামের দশ বছর কেটে যাওয়ার পর সারী তাঁর মিসরীয় দাসী হাগারের সংগে অব্রামের বিয়ে দিলেন। অব্রাম হাগারের কাছে গেলে পর সে গর্ভবতী হল। যখন হাগার বুঝতে পারল যে, সে গর্ভবতী হয়েছে তখন সে তার মনিবের স্ত্রীকে তুচ্ছ করতে লাগল। এতে সারী অব্রামকে বললেন, “আমার প্রতি তার এই অন্যায়ের জন্য আসলে তুমিই দায়ী। আমার এই দাসীকে আমি তোমার বিছানায় তুলে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন গর্ভবতী হয়েছে জেনে সে আমাকে তুচ্ছ করতে শুরু করেছে। তাহলে তোমার ও আমার মধ্যে কে দোষী তা এখন সদাপ্রভুই বিচার করুন।” উত্তরে অব্রাম সারীকে বললেন, “দেখ, তোমার দাসী তো তোমার হাতেই আছে। তোমার যা ভাল মনে হয় তার প্রতি তুমি তা-ই কর।” তখন সারী হাগারের প্রতি এমন নিষ্ঠুর ব্যবহার করতে লাগলেন যে, হাগার তাঁর কাছ থেকে পালিয়ে গেল। পথে মরু-এলাকার মধ্যে একটা জলের ফোয়ারার কাছে সদাপ্রভুর দূত হাগারকে দেখতে পেলেন। ফোয়ারাটা ছিল শূর নামে একটা জায়গায় যাবার পথে। স্বর্গদূত বললেন, “সারীর দাসী হাগার, তুমি কোথা থেকে আসছ আর কোথায়ই বা যাচ্ছ?” উত্তরে হাগার বলল, “আমি আমার মনিবের স্ত্রী সারীর কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছি।” তখন সদাপ্রভুর দূত বললেন, “তোমার মনিবের স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে আবার তার অধীনতা স্বীকার করে নাও।” তিনি তাকে আরও বললেন, “আমি তোমার বংশের লোকদের সংখ্যা এমন বাড়িয়ে তুলব যে, তাদের সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না।” তিনি তাকে আরও বললেন, “দেখ, তুমি গর্ভবতী। তোমার একটি ছেলে হবে। আর সেই ছেলেটির নাম তুমি ইশ্মায়েল (যার মানে ‘ঈশ্বর শোনেন’) রাখবে, কারণ তোমার দুঃখের কান্নায় সদাপ্রভু কান দিয়েছেন। তবে মানুষ হলেও সে বুনো গাধার মত হবে। সে সকলকে শত্রু করে তুলবে আর অন্যেরাও তাকে শত্রু বলে মনে করবে। সে তার ভাইদের দেশের কাছে বাস করবে।” এই কথা শুনে হাগার মনে মনে বলল, “আমি কি তাহলে সত্যিই তাঁকে দেখলাম যাঁর চোখের সামনে আমি আছি?” সদাপ্রভু, যিনি হাগারের সংগে কথা বলছিলেন, তাঁকে উদ্দেশ্য করে হাগার তখন বলল, “তুমি ঈশ্বর, যাঁর চোখের সামনে আমি আছি।” সেইজন্য কাদেশ ও বেরদের মধ্যে যে কূয়াটা রয়েছে তার নাম হল বের্‌-লহয়-রোয়ী (যার মানে “যিনি জীবন্ত এবং আমায় দেখছেন, তাঁর কূয়া”)। পরে হাগারের একটি ছেলে হল, আর অব্রাম ছেলেটির নাম দিলেন ইশ্মায়েল। অব্রামের ছিয়াশি বছর বয়সে ইশ্মায়েলের জন্ম হয়েছিল। অব্রামের বয়স যখন নিরানব্বই বছর তখন সদাপ্রভু তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, “আমিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। তুমি আমার সংগে যোগাযোগ-সম্বন্ধ রাখ এবং আমার ইচ্ছামত চল। তোমার জন্য আমি আমার ব্যবস্থা স্থির করব আর তোমার বংশ অনেক বাড়িয়ে দেব।” এতে অব্রাম মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন, আর ঈশ্বর তাঁর সংগে কথা বলতে লাগলেন। তিনি বললেন, “তোমার জন্য আমার এই ব্যবস্থাতে আমার যা করবার রয়েছে তা এই: তুমি অনেক জাতির পিতা হবে। তোমাকে অব্রাম (যার মানে ‘মহান পিতা’) বলে আর ডাকা হবে না, কিন্তু এখন থেকে তোমার নাম হবে অব্রাহাম (যার মানে ‘অনেক লোকের পিতা’); কারণ আমি তোমাকে অনেকগুলো জাতির আদিপিতা করে রেখেছি। আমি তোমার বংশ অনেক বাড়িয়ে দেব। তোমার মধ্য থেকে আমি অনেক জাতির সৃষ্টি করব, আর তোমার মধ্য থেকে অনেক রাজার জন্ম হবে। এই ব্যবস্থার সম্বন্ধ যে কেবল তোমার আর আমার মধ্যে চলবে তা নয়; তা চলবে তোমার সন্তানদের ও আমার মধ্যে বংশের পর বংশ ধরে। এটা হবে একটা চিরকালের ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় আমি তোমার এবং তোমার পরে তোমার বংশের লোকদেরও ঈশ্বর হলাম। যে কনান দেশে তুমি এখন বিদেশী হয়ে বাস করছ তার সবটাই চিরকালের সম্পত্তি হিসাবে আমি তোমাকে ও তোমার বংশকে দিলাম। আমি তাদের সকলেরই ঈশ্বর হলাম।” ঈশ্বর অব্রাহামকে আরও বললেন, “এই ব্যবস্থায় তোমার যা করবার রয়েছে তা এই: তুমি ও তোমার সমস্ত সন্তানেরা বংশের পর বংশ ধরে এই ব্যবস্থা মেনে চলবে। আমার এই যে ব্যবস্থা, যার চিহ্ন হিসাবে তোমাদের প্রত্যেকটি পুরুষের সুন্নত করাতে হবে, তা তোমার ও তোমার বংশের লোকদের মেনে চলতে হবে। তোমাদের প্রত্যেকের পুরুষাংগের সামনের চামড়া কেটে ফেলতে হবে। তোমার ও আমার মধ্যে এই যে ব্যবস্থা স্থির করা হল, এটাই হবে তার চিহ্ন। বংশের পর বংশ ধরে তোমাদের প্রত্যেকটি পুুরুষ সন্তানের জন্মের আট দিনের দিন এই সুন্নতের অনুষ্ঠান করতে হবে। তোমার বংশের কেউ না হয়ে তোমার বাড়ীর দাস হলেও তাদের সবাইকে এই সুন্নত করাতে হবে, তা তারা তোমার বাড়ীতে জন্মেছে এমন কোন দাসের সন্তানই হোক বা টাকা দিয়ে বিদেশীর কাছ থেকে কিনে নেওয়া দাসই হোক। আমি আবার বলছি, যে দাস তোমার বাড়ীতে জন্মেছে কিম্বা যাকে টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে সুন্নত করাতেই হবে। এটাই হবে তোমাদের দেহে আমার চিরকালের ব্যবস্থার চিহ্ন। যে লোকের পুরুষাংগের সামনের চামড়া কাটা নয় তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলা হবে, কারণ সে আমার ব্যবস্থা অমান্য করেছে।” ঈশ্বর অব্রাহামকে আরও বললেন, “তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলে ডাকবে না। তার নাম হবে সারা। আমি তাকে আশীর্বাদ করে তারই মধ্য দিয়ে তোমাকে একটা পুত্রসন্তান দেব। আমি তাকে আরও আশীর্বাদ করব যাতে সে অনেক জাতির এবং তাদের রাজাদের আদিমাতা হয়।” এই কথা শুনে অব্রাহাম মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং হেসে মনে মনে বললেন, “তাহলে সত্যিই একশো বছরের বুড়োর সন্তান হবে, আর তা হবে নব্বই বছরের স্ত্রীর গর্ভে!” পরে অব্রাহাম ঈশ্বরকে বললেন, “আহা, ইশ্মায়েলই যেন তোমার দয়ায় বেঁচে থাকে!” তখন ঈশ্বর বললেন, “তোমার স্ত্রী সারার সত্যিই ছেলে হবে, আর তুমি তার নাম রাখবে ইস্‌হাক (যার মানে ‘হাসা’)। তার ও তার বংশের লোকদের জন্য আমি আমার চিরকালের ব্যবস্থা চালু রাখব। তবে ইশ্মায়েল সম্বন্ধে তুমি যা বললে তা আমি শুনলাম। শোন, আমি তাকেও আশীর্বাদ করব এবং অনেক সন্তান দিয়ে তার বংশের লোকদের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে দেব। সে-ও বারোজন গোষ্ঠী-নেতার আদিপিতা হবে এবং তার মধ্য থেকে আমি একটা মহাজাতি গড়ে তুলব। কিন্তু ইস্‌হাকের জন্যই আমি আমার ব্যবস্থা চালু রাখব। সামনের বছর এই সময়ে সে সারার কোলে আসবে।” অব্রাহামের সংগে কথা বলা শেষ করে ঈশ্বর তাঁর কাছ থেকে উপরের দিকে উঠে গেলেন। ঈশ্বরের কথামত অব্রাহাম সেই দিনই ইশ্মায়েলের সুন্নত করালেন। সেই সংগে তিনি তাঁর কেনা কিম্বা ঘরে জন্মেছে এমন সব দাসদের, অর্থাৎ তাঁর বাড়ীর প্রত্যেকটি পুরুষের সুন্নত করালেন। অব্রাহামের নিজের যখন সুন্নত করানো হল তখন তাঁর বয়স ছিল নিরানব্বই বছর, আর তাঁর ছেলে ইশ্মায়েলের বয়স ছিল তেরো। একই দিনে অব্রাহাম ও তাঁর ছেলে ইশ্মায়েলের সুন্নত করানো হয়েছিল। সেই সংগে বাড়ীর অন্য সব পুরুষদের, অর্থাৎ যারা তাঁর বাড়ীতে জন্মেছিল এবং বিদেশীদের কাছ থেকে যাদের কেনা হয়েছিল তাদের সকলেরই সুন্নত করানো হয়েছিল। অব্রাহাম যখন মম্রির এলোন বনের কাছে বাস করছিলেন তখন সদাপ্রভু একদিন তাঁকে দেখা দিয়েছিলেন। অব্রাহাম সেই দিন দুপুরের রোদে তাঁর তাম্বুর দরজায় বসে ছিলেন। আমি একটু জল আনিয়ে দিচ্ছি, আপনারা পা ধুয়ে নিন। তারপর আপনারা এই গাছের তলায় একটুক্ষণ বিশ্রাম করুন। আপনাদের এই দাসের এখানে যখন এসেছেন তখন আমি কিছু খাবার নিয়ে আসি, তাতে সতেজ হয়ে আপনারা আবার যাত্রা করতে পারবেন।” উত্তরে তাঁরা বললেন, “বেশ ভাল, আপনি যা বললেন তা-ই করুন।” অব্রাহাম তখনই তাম্বুর ভিতরে গিয়ে সারাকে বললেন, “তাড়াতাড়ি করে আঠারো কেজি ভাল ময়দা নিয়ে মেখে কিছু রুটি তৈরী করে দাও।” অব্রাহাম তারপর দৌড়ে গিয়ে গরুর পাল থেকে ভাল দেখে একটা কচি বাছুর নিয়ে তাঁর দাসকে দিলেন। সেই দাসও তাড়াতাড়ি সেটা রান্না করতে নিয়ে গেল। পরে অব্রাহাম দই, টাট্‌কা দুধ এবং রান্না করা মাংস নিয়ে তাঁদের পরিবেশন করলেন। তাঁরা যখন খাচ্ছিলেন তখন অব্রাহাম তাঁদের পাশে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা অব্রাহামকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার স্ত্রী সারা কোথায়?” তিনি বললেন, “তাম্বুর ভিতরে আছেন।” তখন তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, “সামনের বছর এই সময়ে আমি নিশ্চয়ই আপনার কাছে আবার আসব। তখন আপনার স্ত্রী সারার কোলে একটি ছেলে থাকবে।” সারা অব্রাহামের পিছনে তাম্বুর দরজার কাছ থেকে সব কথা শুনছিলেন। তখন অব্রাহাম আর সারার অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল এবং সারার ছেলেমেয়ে হবার বয়স আর ছিল না। তাই সারা মনে মনে হেসে বললেন, “আমার স্বামী এখন বুড়ো হয়ে গেছেন আর আমিও ক্ষয় হয়ে এসেছি; সহবাসের আনন্দ কি আবার আমার কাছে ফিরে আসবে?” তখন সদাপ্রভু অব্রাহামকে বললেন, “সারা কেন এই কথা বলে হাসল যে, এই বুড়ো বয়সে সত্যিই কি তার সন্তান হবে? সদাপ্রভুর কাছে অসম্ভব বলে কি কিছু আছে? সামনের বছর ঠিক এই সময়ে আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসব আর তখন সারার কোলে একটি ছেলে থাকবে।” সারা তখন ভয় পেয়ে হাসবার কথা অস্বীকার করে বললেন, “না, আমি তো হাসি নি।” কিন্তু সদাপ্রভু বললেন, “তা সত্যি নয়; তুমি হেসেছ বৈকি!” এর পরে সেই তিনজন সেখান থেকে উঠলেন এবং নীচে সদোমের দিকে চেয়ে দেখলেন। অব্রাহাম তাঁদের এগিয়ে দেবার জন্য তাঁদের সংগে কিছু দূর গেলেন। পরে সদাপ্রভু বললেন, “আমি যা করতে যাচ্ছি তা কি অব্রাহামের কাছ থেকে লুকাব? অব্রাহাম আর তার বংশের লোকদের মধ্য থেকেই তো একটা মহান শক্তিশালী জাতির সৃষ্টি হবে এবং তারই মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে। আমি সদাপ্রভু এই উদ্দেশ্যেই তাকে বেছে নিয়েছি যেন সে তার সন্তান আর বাড়ীর অন্য সবাইকে সৎ এবং ন্যায় কাজ করে আমার ইচ্ছা মেনে চলবার উপদেশ দেয়। যদি তারা অব্রাহামের কথা শুনে সেইভাবে চলে, তবে আমি সদাপ্রভু অব্রাহাম সম্বন্ধে যা বলেছি তা সবই করব।” তারপর সদাপ্রভু বললেন, “সদোম ও ঘমোরার বিরুদ্ধে ভীষণ হৈ চৈ চলছে, আর তাদের পাপও জঘন্য রকমের। সেইজন্য আমি এখন নীচে গিয়ে দেখতে চাই যে, তারা যা করেছে বলে আমি শুনছি তা সত্যিই অতটা মন্দ কি না। আর যদি তা না হয় তাও আমি জানতে পারব।” তখন অন্য দু’জন ঘুরে সদোমের দিকে চলতে লাগলেন আর অব্রাহাম সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। পরে অব্রাহাম সদাপ্রভুর দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বললেন, “কিন্তু আপনি কি খারাপ লোকদের সংগে সৎ লোকদেরও মুছে ফেলবেন? শহরের মধ্যে যদি পঞ্চাশজন সৎ লোক থাকে তবে সেই পঞ্চাশজনের দরুন গোটা শহরটাকে রেহাই না দিয়ে কি সত্যিই আপনি তা ধ্বংস করে ফেলবেন? এটা আপনার পক্ষে অসম্ভব। সৎ আর খারাপের প্রতি একই রকম ব্যবহার করে তাদের একসংগে মেরে ফেলা যে আপনার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। সমস্ত দুনিয়ার যিনি বিচারকর্তা তিনি কি ন্যায়বিচার না করে পারেন?” তখন সদাপ্রভু বললেন, “যদি সদোম শহরে পঞ্চাশজনও সৎ লোক পাওয়া যায়, তবে তাদের দরুন গোটা শহরটাকেই আমি রেহাই দেব।” অব্রাহাম বললেন, “দেখুন, আমি ধুলা ও ছাই ছাড়া আর কিছুই নই, তবুও আমি সাহস করে আমার প্রভুর সংগে কথা বলছি। ধরুন, যদি পঞ্চাশজন সৎ লোক না হয়ে পাঁচজন কম হয় তাহলে কি সেই পাঁচজন কম হওয়ার জন্য আপনি গোটা শহরটা ধ্বংস করে ফেলবেন?” তিনি বললেন, “আমি যদি সেখানে পঁয়তাল্লিশজনকেও পাই তবে আমি তা ধ্বংস করব না।” অব্রাহাম তাঁকে আবার বললেন, “ধরুন, যদি সেখানে মাত্র চল্লিশজন সৎ লোক পাওয়া যায়?” তিনি বললেন, “সেই চল্লিশজনের জন্যই আমি তা ধ্বংস করব না।” অব্রাহাম বললেন, “আমার প্রভু যেন আমার কথায় অসন্তুষ্ট না হন। আচ্ছা, যদি সেখানে ত্রিশজনকে পাওয়া যায়?” তিনি বললেন, “যদি আমি ত্রিশজনকেও সেখানে পাই তবে আমি তা ধ্বংস করব না।” অব্রাহাম বললেন, “আমি যখন সাহস করে প্রভুর সংগে কথা বলছি তখন আরও বলছি, যদি সেখানে বিশজনকে পাওয়া যায়?” তিনি বললেন, “সেই বিশজনের জন্যই আমি তা ধ্বংস করব না।” তখন অব্রাহাম বললেন, “আমার প্রভু যেন অসন্তুষ্ট না হন, আমি আর একবার মাত্র বলছি, যদি সেখানে দশজনকে পাওয়া যায়?” তিনি বললেন, “সেই দশজনের জন্যই আমি তা ধ্বংস করব না।” অব্রাহামের সংগে কথা বলা শেষ করে সদাপ্রভু সেখান থেকে চলে গেলেন আর অব্রাহামও তাঁর বাড়ীতে ফিরে গেলেন। সেই দিনই সন্ধ্যাবেলায় সেই দু’জন স্বর্গদূত সদোম শহরে গিয়ে পৌঁছালেন। লোট তখন শহরের ফটকের কাছে বসে ছিলেন। তাঁদের দেখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং মাটিতে উবুড় হয়ে প্রণাম করে বললেন, “দেখুন, আর এগিয়ে না গিয়ে আপনারা দয়া করে আপনাদের এই দাসের ঘরে আসুন এবং হাত-পা ধুয়ে নিয়ে রাতটুকু কাটান। খুব ভোরে উঠেই না হয় আবার চলতে শুরু করবেন।” উত্তরে তাঁরা বললেন, “না, আমরা এই শহর-চকেই রাত কাটাব।” কিন্তু লোট যখন খুব সাধাসাধি করতে লাগলেন তখন তাঁরা তাঁর সংগে গিয়ে তাঁর বাড়ীতে ঢুকলেন। পরে লোট খামিহীন রুটি সেঁকে তাঁদের জন্য একটা ভোজের আয়োজন করলেন, আর তাঁরাও খাওয়া-দাওয়া করলেন। কিন্তু তাঁরা শুতে যাবার আগেই সদোম শহরের সব জোয়ান ও বুড়োরা এসে বাড়ীটা ঘেরাও করল। তারা লোটকে ডেকে বলল, “আজ রাতে যে দু’জন লোক তোমার এখানে এসেছে তারা কোথায়? তাদের বের করে আমাদের কাছে নিয়ে এস। আমরা ঐ দু’জন পুরুষের সংগে ব্যভিচার করব।” তখন লোট দরজার বাইরে লোকদের সামনে গেলেন এবং তাঁর পিছনে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললেন, “ভাইয়েরা আমার, আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, তোমরা এই রকম খারাপ কাজ কোরো না। দেখ, আমার দু’টি মেয়ে আছে। তারা কখনও কোন পুরুষের সংগে থাকে নি। তাদের আমি তোমাদের কাছে বের করে নিয়ে আসছি। তাদের সংগে তোমরা যা খুশী কর, কিন্তু এই লোকদের উপর কিছু কোরো না, কারণ তাঁরা আমার ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।” কিন্তু তারা বলল, “যা, যা, পথ থেকে সরে দাঁড়া!” তারা আরও বলল, “লোকটা আমাদের এখানে এসেছে বিদেশী হিসাবে, আর তারপর থেকে আমাদের উপর কেবল মোড়লি করে বেড়াচ্ছে। এখন আমরা ওদের চেয়েও তোর সংগে আরও খারাপ ব্যবহার করব।” এই বলে তারা এগিয়ে গিয়ে ঘরের দরজাটা ভেংগে ফেলবার উদ্দেশ্যে লোটকে ভীষণভাবে ঠেলতে লাগল। তখন সেই দু’জন লোক হাত বাড়িয়ে লোটকে ঘরের ভিতরে টেনে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। তারপর তাঁরা আলোর ঝলক দিলেন, আর তাতে দরজার বাইরে দাঁড়ানো জোয়ান ও বুড়ো লোকেরা হঠাৎ চোখে আর দেখতে পেল না। ফলে সেই লোকগুলো দরজা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে পড়ল। পরে সেই দু’জন লোক লোটকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই শহরে তোমার জামাই, ছেলে, মেয়ে কিম্বা আর কোন আত্মীয়-স্বজন আছে কি? তাদের সবাইকে নিয়ে এই জায়গা থেকে তুমি বের হয়ে যাও, কারণ এই এলাকা ধ্বংস করে ফেলবার জন্য আমরা তৈরী হয়ে আছি। এই এলাকার লোকদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর কাছে এত ভীষণ হৈ চৈ হচ্ছে যে, তিনি তা ধ্বংস করবার জন্য আমাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন।” তখন লোট বাইরে গিয়ে যারা তাঁর জামাই হবে তাদের বললেন, “তোমরা তাড়াতাড়ি এই জায়গা ছেড়ে চলে যাও, কারণ সদাপ্রভু এই শহরটা ধ্বংস করবার জন্য তৈরী হয়ে আছেন।” কিন্তু তারা মনে করল তিনি তামাশা করছেন। সকাল হলে পর সেই স্বর্গদূতেরা লোটকে তাগাদা দিয়ে বললেন, “শীঘ্র কর। তোমার স্ত্রী এবং তোমার দুই মেয়ে যারা এখানে আছে তাদের নিয়ে বের হয়ে যাও। তা না হলে যে শাস্তি এই শহরের উপর নেমে আসছে তুমিও তার মধ্যে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।” লোট কিন্তু যাই-যাচ্ছি করতে লাগলেন। কিন্তু সদাপ্রভুর দয়া তাঁর উপর ছিল বলে সেই দু’জন তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী ও মেয়েদের হাত ধরে টেনে শহরের বাইরে নিয়ে আসলেন। সবাইকে বের করে নিয়ে আসবার পর সেই দু’জনের একজন বললেন, “বাঁচতে চাও তো পালাও। পিছনে তাকিয়ো না এবং এই সমভূমির কোন জায়গায় থেমো না। পাহাড়ে পালিয়ে যাও; তা না হলে তোমরাও মারা পড়বে।” তখন লোট বললেন, “না, না। দেখুন, আপনার এই দাসের উপর আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন, আর আমার প্রাণ রক্ষা করে আপনি আমার জন্য যা করবার তার চেয়েও বেশী করেছেন। কিন্তু আমি পাহাড়ে পালিয়ে যেতে পারব না। তার আগেই হয়তো এই বিপদ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে আর আমি মারা যাব। দেখুন, পালিয়ে যেতে হলে ঐ ছোট গ্রামটাই তো কাছে। প্রাণ বাঁচাবার জন্য আমাকে ওখানে পালিয়ে যেতে দিন। গ্রামটা মোটেই বড় নয়।” স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “আমি তোমার এই অনুরোধ রাখলাম। যে গ্রামটার কথা তুমি বললে সেটা আমি ধ্বংস করব না। কিন্তু তাড়াতাড়ি করে সেখানে পালিয়ে যাও। তুমি সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমি কিছুই করতে পারছি না।” লোটের কথার জন্যই সেই গ্রামটার নাম হল সোয়র (যার মানে “ছোট”)। লোট যখন সোয়রে গিয়ে পৌঁছালেন তখন সূর্য উঠে গেছে। তার পরেই সদাপ্রভু স্বর্গের সদাপ্রভুর কাছ থেকে সদোম ও ঘমোরার উপর গন্ধক ও আগুনের বৃষ্টি শুরু করলেন। তিনি সেই শহর দু’টি, সমস্ত সমভূমিটা, শহরের সমস্ত লোক এবং সেখানকার জমির উপর জন্মেছে এমন সব কিছু ধ্বংস করে দিলেন। লোটের স্ত্রী লোটের পিছনে পড়ে পিছন দিকে ফিরে তাকালেন, আর তাতে তিনি লবণের একটা থাম হয়ে গেলেন। পরের দিন অব্রাহাম খুব ভোরে উঠে সেই জায়গায় গেলেন যেখানে আগের দিন তিনি সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি নীচে সদোম, ঘমোরা এবং সমস্ত সমভূমিটার দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, প্রকাণ্ড চুল্লী থেকে যেমন ধূমা ওঠে তেমনি সেই সব এলাকা থেকে ধূমা উঠছে। এইভাবে লোট যেখানে বাস করতেন ঈশ্বর সেই সমভূমির শহরগুলো ধ্বংস করবার সময় অব্রাহামের কথা ভেবে লোটকে ঐখানকার বিপদের মাঝখান থেকে সরিয়ে এনেছিলেন। সোয়রে থাকতে সাহস হল না বলে লোট তাঁর মেয়ে দু’টিকে নিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে পাহাড়ী এলাকায় চলে গেলেন। সেখানে একটা গুহায় তাঁরা থাকতে লাগলেন। পরে একদিন বড় মেয়েটি ছোট মেয়েটিকে বলল, “বাবা তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। এই এলাকায় এমন কোন পুরুষ লোক নেই যিনি এসে জগতের নিয়ম মত আমাদের বিয়ে করতে পারেন। চল, আমরা আমাদের বাবাকে আংগুর-রস খাইয়ে মাতাল করে তাঁর কাছে যাই। তাতে বাবার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বংশ রক্ষা করতে পারব।” সেই কথামত সেই দিন রাতের বেলা তারা তাদের বাবাকে আংগুর-রস খাইয়ে মাতাল করল। তারপর বড় মেয়েটি তার বাবার সংগে শুতে গেল, কিন্তু কখন সে শুলো আর কখনই বা উঠে গেল লোট তা টেরও পেলেন না। পরের দিন বড়টি ছোটটিকে বলল, “দেখ, কাল রাতে আমি বাবার সংগে শুয়েছিলাম। চল, আজ রাতেও তাঁকে তেমনি করে মাতাল করি, তারপর তুমি গিয়ে তাঁর সংগে শোবে। তাহলে বাবার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বংশ রক্ষা করতে পারব।” এইভাবে তারা সেই রাতেও তাদের বাবাকে আংগুর-রস খাইয়ে মাতাল করল এবং ছোট মেয়েটি বাবার সংগে শুতে গেল। মেয়েটি কখন যে তাঁর কাছে শুলো এবং কখনই বা উঠে গেল তিনি তা টেরও পেলেন না। এইভাবে লোটের দুই মেয়েই তাদের বাবার দ্বারা গর্ভবতী হল। পরে বড় মেয়েটির একটি ছেলে হলে সে তার নাম রাখল মোয়াব (যার মানে “বাবার কাছ থেকে”)। এই মোয়াবই এখনকার মোয়াবীয়দের আদিপিতা। পরে ছোট মেয়েটিরও একটি ছেলে হল, আর সে তার নাম রাখল বিন্‌-অম্মি (যার মানে “আমার বংশের সন্তান”)। সে এখনকার অম্মোনীয়দের আদিপিতা। পরে অব্রাহাম মম্রি থেকে নেগেভ নামে দক্ষিণের মরু-এলাকার দিকে চলে গেলেন। সেখানে তিনি কাদেশ শহর আর শূরের মাঝামাঝি একটা জায়গায় বাস করতে লাগলেন। সেখান থেকে তিনি কিছু দিনের জন্য গরার শহরে গিয়ে রইলেন। সেখানে তিনি তাঁর স্ত্রী সারাকে আবার নিজের বোন বলে পরিচয় দিলেন। সেইজন্য সেখানকার রাজা অবীমেলক লোক পাঠিয়ে সারাকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু রাতের বেলা ঈশ্বর অবীমেলককে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন, “যে স্ত্রীলোকটিকে তুমি নিয়ে এসেছ, তার স্বামী আছে। তাকে নিয়ে আসবার দরুন তুমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আছ।” অবীমেলক কিন্তু তখনও সারার কাছে যান নি; তাই উত্তরে তিনি বললেন, “প্রভু, নির্দোষ হলেও কি একটা জাতিকে আপনি ধ্বংস করে ফেলবেন? সেই লোকটি তো নিজেই আমাকে বলেছে যে, সে তার বোন, আর সেই স্ত্রীলোকটিও বলেছে যে, সে তার ভাই। আমি সরল মনে এই কাজ করেছি; তা ছাড়া বাইরেও আমার ব্যবহারের মধ্যে কোন দোষ ছিল না।” ঈশ্বর স্বপ্নের মধ্যেই তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, আমি জানি তুমি সরল মনেই এই কাজ করেছ। আমি তোমাকে সেইজন্যই তাকে ছুঁতে দিই নি এবং আমার বিরুদ্ধে পাপ কাজ থেকে তোমাকে ঠেকিয়ে রেখেছি। এখন তুমি তাকে তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দাও। লোকটি একজন নবী। সে তোমার জন্য প্রার্থনা করবে, আর তাতে তোমার প্রাণ রক্ষা পাবে। কিন্তু যদি তাকে ফিরিয়ে না দাও, তবে মনে রেখো, তুমি ও তোমার লোকেরা একজনও মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে না।” এতে অবীমেলক খুব ভোরে উঠে তাঁর অধীনে যারা কাজ করত তাদের সকলকে ডেকে সব কিছু জানালেন। এই কথা শুনে তাঁর লোকেরা খুব ভয় পেল। তখন অবীমেলক অব্রাহামকে ডেকে বললেন, “আপনি আমাদের সংগে এ কি রকম ব্যবহার করলেন? আমি আপনার কাছে কি দোষ করেছি যে, আপনি আমাকে এবং আমার রাজ্যকে এত বড় পাপের দায়ে ফেললেন? এই রকম ব্যবহার করা আপনার মোটেই উচিত হয় নি।” অবীমেলক আরও বললেন, “আপনি কি মনে করে এই কাজ করলেন?” উত্তরে অব্রাহাম বললেন, “আমি ভেবেছিলাম, এই জায়গার লোকদের ঈশ্বর-ভয় বলে কিছু নেই। কাজেই আমার স্ত্রীকে পাবার জন্য তারা হয়তো আমাকে মেরে ফেলবে। তা ছাড়া সে আমার বোনও বটে, কারণ মা আলাদা হলেও আমরা দু’জন একই বাবার সন্তান, যদিও এখন সে আমার স্ত্রী। ঈশ্বর যখন আমাকে আমার বাবার বাড়ী থেকে বের করে আনলেন তখন আমি আমার স্ত্রীকে বলেছিলাম, ‘তুমি যে আমাকে ভালবাস তা এইভাবে দেখিয়ো। আমরা যেখানেই যাই না কেন, তুমি আমাকে তোমার ভাই বলে পরিচয় দিয়ো।’ ” এর পর অবীমেলক কতগুলো ভেড়া, গরু এবং দাস-দাসী অব্রাহামকে দিলেন, আর সেই সংগে তাঁর স্ত্রী সারাকেও তাঁর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। পরে তিনি অব্রাহামকে বললেন, “দেখুন, আমার গোটা দেশটাই আপনার সামনে রয়েছে। আপনার যেখানে খুশী সেখানে আপনি বাস করুন।” তারপর তিনি সারাকে বললেন, “দেখুন, আমি আপনার প্রতি যে অন্যায় করেছি তা আপনার সব লোকদের সামনে যেন ঢাকা পড়ে যায় সেইজন্য আপনার ভাইকে এক হাজার রূপার টুকরা দিচ্ছি। এতে সকলের সামনেই প্রমাণ হবে যে, আপনি কোন দোষ করেন নি।” এর পর অব্রাহাম ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন। তাতে ঈশ্বর অবীমেলক, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর অন্যান্য স্ত্রীলোকদের সুস্থ করলেন। এতে তাঁরা সন্তান লাভের ক্ষমতা ফিরে পেলেন। অব্রাহামের স্ত্রী সারার দরুন সদাপ্রভু অবীমেলকের বাড়ীর সমস্ত স্ত্রীলোকদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সদাপ্রভু তাঁর কথামতই সারার দিকে মনোযোগ দিলেন এবং তিনি তাঁর জন্য যা করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা করলেন। এতে সারা গর্ভবতী হলেন। অব্রাহামের বুড়ো বয়সে সারার গর্ভে তাঁর ছেলের জন্ম হল। ঈশ্বর যে সময়ের কথা বলেছিলেন সেই সময়েই তার জন্ম হল। অব্রাহাম সারার গর্ভের এই সন্তানের নাম রাখলেন ইস্‌হাক। ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে অব্রাহাম আট দিনের দিন তাঁর ছেলে ইস্‌হাকের সুন্নত করালেন। অব্রাহামের বয়স যখন একশো বছর তখন তাঁর ছেলে ইস্‌হাকের জন্ম হয়েছিল। সারা বলেছিলেন, “ঈশ্বর আমার মুখে হাসি ফুটালেন, আর সেই কথা শুনে অন্যের মুখেও হাসি ফুটবে।” তিনি আরও বলেছিলেন, “সারা যে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াবে এই কথা এর আগে কে অব্রাহামকে বলতে পারত? অথচ তাঁর এই বুড়ো বয়সেই তাঁর সন্তান আমার কোলে আসল।” ইস্‌হাক বড় হলে পর যেদিন তাকে মায়ের দুধ ছাড়ানো হল সেই দিন অব্রাহাম একটা বড় ভোজ দিলেন। সারা দেখলেন, মিসরীয় হাগারের গর্ভে অব্রাহামের যে সন্তানটি জন্মেছে সে ইস্‌হাককে নিয়ে তামাশা করছে। এই অবস্থা দেখে তিনি অব্রাহামকে বললেন, “ছেলে সুদ্ধ ঐ দাসীকে বের করে দাও, কারণ ঐ ছেলে আমার ইস্‌হাকের সংগে বিষয়-সম্পত্তির অধিকারী হতে পারবে না।” ছেলে ইশ্মায়েলের এই ব্যাপার নিয়ে অব্রাহামের মনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে বললেন, “তোমার দাসী ও তার ছেলেটির কথা ভেবে তুমি মন খারাপ কোরো না। সারা তোমাকে যা বলছে তুমি তা-ই কর, কারণ ইস্‌হাকের বংশকেই তোমার বংশ বলে ধরা হবে। তবে সেই দাসীর ছেলের মধ্য দিয়েও আমি একটা জাতি গড়ে তুলব, কারণ সে-ও তো তোমার সন্তান।” তখন অব্রাহাম খুব ভোরে উঠে কিছু খাবার আর জলে ভরা একটা চামড়ার থলি হাগারের কাঁধে তুলে দিলেন। তারপর ছেলেটিকে তার হাতে দিয়ে তাকে বিদায় করে দিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে হাগার বের্‌-শেবার মরু-এলাকায় ঘুরে বেড়াতে লাগল। থলির জল যখন ফুরিয়ে গেল তখন সে ছেলেটিকে একটা ঝোপের তলায় শুইয়ে রাখল। তারপর একটা তীর ছুঁড়লে যতদূর যায় আন্দাজ ততটা দূরে গিয়ে সে বসে রইল। “ছেলেটির মৃত্যু যেন আমাকে দেখতে না হয়,” মনে মনে এই কথা বলে সেখানে বসেই সে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। ছেলেটির কান্না কিন্তু ঈশ্বরের কানে গিয়ে পৌঁছাল। তখন ঈশ্বরের দূত স্বর্গ থেকে হাগারকে ডেকে বললেন, “হাগার, তোমার কি হয়েছে? ভয় কোরো না, কারণ ছেলেটি যেখানে আছে সেখান থেকেই তার কান্না ঈশ্বরের কানে গিয়ে পৌঁছেছে। তুমি উঠে ছেলেটিকে তুলে শান্ত কর, কারণ আমি তার মধ্য দিয়ে একটা মহাজাতি গড়ে তুলব।” তারপর ঈশ্বর হাগারের চোখ খুলে দিলেন, তাতে সে একটা জলে ভরা কূয়া দেখতে পেল। সেই কূয়ার কাছে গিয়ে সে তার চামড়ার থলিটা ভরে নিয়ে ছেলেটিকে জল খাওয়াল। ঈশ্বর সেই ছেলেটির দেখাশোনা করতে থাকলেন, আর সে বড় হয়ে উঠতে লাগল। সে মরু-এলাকায় বাস করত আর তীর-ধনুক ব্যবহারে পাকা হয়ে উঠল। পারণ নামে এক মরু-এলাকায় সে বাস করতে লাগল। মিসর দেশের এক মেয়ের সংগে তার মা তার বিয়ে দিল। সেই সময় অবীমেলক ও তাঁর প্রধান সেনাপতি ফীখোল অব্রাহামের কাছে এসে বললেন, “দেখা যাচ্ছে, আপনার সব কাজের মধ্যে ঈশ্বর আপনার সংগে আছেন। কাজেই ঈশ্বরের নামে আপনি এখন আমার কাছে এই শপথ করুন যে, আমার বা আমার সন্তানদের সংগে কিম্বা আমার বংশধরদের কারও সংগে আপনি কোন ছলনার কাজ করবেন না। আমি যেমন করে আপনার সংগে বিশ্বস্তভাবে ব্যবহার করেছি, ঠিক তেমনি করে আপনিও আমার সংগে এবং যে দেশে আপনি বিদেশী হয়ে বাস করছেন সেই দেশের লোকদের সংগে বিশ্বস্তভাবে ব্যবহার করবেন।” অব্রাহাম বললেন, “হ্যাঁ, আমি শপথ করছি।” তবে তিনি একটা কূয়ার ব্যাপারে নালিশ জানিয়ে অবীমেলককে বললেন যে, তাঁর দাসেরা তা জোর করে তাঁর কাছ থেকে দখল করে নিয়েছে। উত্তরে অবিমেলক বললেন, “এই কাজ কে করেছে তা আমি জানি না। আগে তো আপনি এই কথা আমাকে বলেন নি। আজকেই আমি এই কথা শুনলাম।” তারপর অব্রাহাম কতগুলো ভেড়া ও গরু এনে অবীমেলককে দিলেন এবং তাঁরা দু’জনে একটা চুক্তি করলেন। পরে অব্রাহাম তাঁর ভেড়ার পাল থেকে সাতটা বাচ্চা-ভেড়ী আলাদা করে নিলেন। এ দেখে অবীমেলক তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ব্যাপার কি? এই সাতটা আলাদা করা বাচ্চা-ভেড়ীর মানে?” অব্রাহাম বললেন, “আপনি এগুলো গ্রহণ করুন। এই কূয়াটা যে আমিই খুঁড়েছি এগুলো তার প্রমাণ।” সেইজন্যই সেই জায়গাটার নাম হল বের্‌-শেবা (যার মানে “শপথের কূয়া”), কারণ এখানেই তাঁরা দু’জনে শপথ করেছিলেন। বের্‌-শেবাতে এই চুক্তি করবার পর অবীমেলক ও তাঁর প্রধান সেনাপতি ফীখোল তাঁদের দেশে, অর্থাৎ পলেষ্টীয়দের দেশে ফিরে গেলেন। অব্রাহাম বের্‌-শেবাতে সদাপ্রভুকে, অর্থাৎ যাঁর শুরু এবং শেষ নেই সেই ঈশ্বরকে তাঁর যোগ্য সম্মান দিলেন। তিনি সেখানে একটা ঝাউ গাছ লাগালেন। অব্রাহাম পলেষ্টীয়দের দেশে বেশ কিছুকাল রইলেন। এই সমস্ত ঘটনার পর ঈশ্বর অব্রাহামকে এক পরীক্ষায় ফেললেন। ঈশ্বর তাঁকে ডাকলেন, “অব্রাহাম।” অব্রাহাম উত্তর দিলেন, “এই যে আমি।” ঈশ্বর বললেন, “তোমার ছেলেকে, অদ্বিতীয় ছেলে ইস্‌হাককে, যাকে তুমি এত ভালবাস তাকে নিয়ে তুমি মোরিয়া এলাকায় যাও। সেখানে যে পাহাড়টার কথা আমি তোমাকে বলব তার উপরে তুমি তাকে পোড়ানো-উৎসর্গ হিসাবে উৎসর্গ কর।” সেইজন্য অব্রাহাম খুব ভোরে উঠে একটা গাধার পিঠে গদি চাপালেন। তারপর তাঁর ছেলে ইস্‌হাক ও দু’জন দাসকে সংগে নিলেন, আর পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য কাঠ কেটে নিয়ে যে জায়গার কথা ঈশ্বর তাঁকে বলেছিলেন সেই দিকে রওনা হলেন। তিন দিনের দিন অব্রাহাম চোখ তুলে চাইতেই দূর থেকে সেই জায়গাটা দেখতে পেলেন। তখন তিনি তাঁর দাসদের বললেন, “তোমরা গাধাটা নিয়ে এখানেই থাক; আমার ছেলে আর আমি ওখানে যাব। ওখানে আমাদের উপাসনা শেষ করে আবার আমরা তোমাদের কাছে ফিরে আসব।” এই বলে অব্রাহাম পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য কাঠের বোঝাটা তাঁর ছেলে ইস্‌হাকের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে নিজে আগুনের পাত্র ও ছোরা নিলেন। তারপর তাঁরা দু’জনে একসংগে হাঁটতে লাগলেন। তখন ইস্‌হাক তাঁর বাবা অব্রাহামকে ডাকলেন, “বাবা।” অব্রাহাম বললেন, “কেন বাবা, কি বলছ?” ইস্‌হাক বললেন, “পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য কাঠ আর আগুন রয়েছে দেখছি, কিন্তু ভেড়ার বাচ্চা কোথায়?” অব্রাহাম বললেন, “বাবা, পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য ঈশ্বর নিজেই ভেড়ার বাচ্চা যুগিয়ে দেবেন।” এই সব কথা বলতে বলতে তাঁরা এগিয়ে গেলেন। যে জায়গার কথা ঈশ্বর অব্রাহামকে বলে দিয়েছিলেন তাঁরা সেখানে গিয়ে পৌঁছালেন। সেখানে পৌঁছে অব্রাহাম একটা বেদী তৈরী করে তার উপর কাঠ সাজালেন। পরে ইস্‌হাকের হাত-পা বেঁধে তাঁকে সেই বেদীর কাঠের উপর রাখলেন। তারপর অব্রাহাম ছেলেটিকে মেরে ফেলবার জন্য ছোরা হাতে নিলেন। এমন সময় সদাপ্রভুর দূত স্বর্গ থেকে তাঁকে ডাকলেন, “অব্রাহাম, অব্রাহাম!” অব্রাহাম উত্তর দিলেন, “এই যে আমি।” দূত বললেন, “ছেলেটিকে মেরে ফেলবার জন্য হাত তুলো না বা তার প্রতি আর কিছুই কোরো না। তুমি যে ঈশ্বরভক্ত তা এখন বুঝা গেল, কারণ আমার উদ্দেশে তুমি তোমার ছেলেকে, অদ্বিতীয় ছেলেকেও উৎসর্গ করতে পিছ্‌পা হও নি।” অব্রাহাম তখন চারদিকে তাকালেন এবং দেখলেন তাঁর পিছনে একটা ভেড়া রয়েছে আর তার শিং ঝোপে আট্‌কে আছে। তখন অব্রাহাম গিয়ে ভেড়াটা নিলেন এবং ছেলের বদলে সেই ভেড়াটাই তিনি পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করলেন। তিনি সেই জায়গাটার নাম দিলেন যিহোবা-যিরি (যার মানে “সদাপ্রভু যোগান”)। সেইজন্য আজও লোকে বলে, “সদাপ্রভুর পাহাড়ে সদাপ্রভুই যুগিয়ে দেন।” আমি নিশ্চয়ই তোমাকে অনেক আশীর্বাদ করব, আর আকাশের তারার মত এবং সমুদ্র-পারের বালুকণার মত তোমার বংশের লোকদের অসংখ্য করব। তোমার বংশের লোকেরা তাদের শত্রুদের শহরগুলো জয় করে নেবে, আর তোমার বংশের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে। তুমি আমার আদেশ পালন করেছ বলেই তা হবে।” এর পর অব্রাহাম তাঁর দাসদের কাছে ফিরে আসলেন। তখন সকলে একসংগে সেখান থেকে বের্‌-শেবাতে ফিরে গেলেন; এখানেই অব্রাহাম বাস করতেন। এই সব ঘটনার পরে অব্রাহাম শুনতে পেলেন যে, এর মধ্যে তাঁর ভাই নাহোরের স্ত্রী মিল্‌কার কয়েকটি ছেলে হয়েছে। নাহোরের বড় ছেলের নাম ছিল ঊষ। পরে বূষ আর কমূয়েলের জন্ম হয়েছিল। কমূয়েলের ছেলের নাম ছিল অরাম। নাহোরের অন্য ছেলেদের নাম কেষদ, হসো, পিল্‌দশ, যিদ্‌লফ ও বথূয়েল। বথূয়েলের মেয়ের নাম ছিল রিবিকা। অব্রাহামের ভাই নাহোরের স্ত্রী মিল্‌কার গর্ভে এই আটটি ছেলের জন্ম হয়েছিল। নাহোরের একজন উপস্ত্রী ছিল; তার নাম ছিল রূমা। তার গর্ভে টেবহ, গহম, তহশ ও মাখার জন্ম হয়েছিল। পরে তিনি তাঁর মৃতা স্ত্রীর পাশ থেকে উঠে গিয়ে সেখানকার হিত্তীয়দের বললেন, “আমি অন্য দেশ থেকে এসে বিদেশী হিসাবে আপনাদের মধ্যে বাস করছি। সেইজন্য দয়া করে কবরস্থান করবার জন্য আমাকে আপনাদের মধ্যে একটু জায়গা ছেড়ে দিন যেন সেখানে আমি আমার মৃতা স্ত্রীকে কবর দিতে পারি।” এর উত্তরে হিত্তীয়েরা বলল, “দেখুন, আপনি আমাদের কথা শুনুন। আপনি এখানে আমাদের মধ্যে ঈশ্বরের নিযুক্ত একজন নেতা হয়ে আছেন। আমাদের সবচেয়ে ভাল কবরটাতেই আপনি আপনার মৃতা স্ত্রীর কবর দিন। আপনার স্ত্রীকে কবর দেবার জন্য আমাদের মধ্যে কেউই তার নিজের কবর ছেড়ে দিতে আপত্তি করবে না।” তখন অব্রাহাম উঠে দাঁড়ালেন এবং সেই এলাকার হিত্তীয় বাসিন্দাদের সামনে মাটিতে মাথা ঠেকালেন। অব্রাহাম আবার মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে তাদের সম্মান দেখালেন। তারপর সবাই যাতে শুনতে পায় সেইভাবে তিনি ইফ্রোণকে বললেন, “আপত্তি না থাকলে আপনি দয়া করে আমার কথা শুনুন। জমিটা আমি দাম দিয়ে নিতে চাই। দয়া করে আপনি জমির দামটা গ্রহণ করুন যাতে আমি ওখানে আমার মৃতা স্ত্রীকে কবর দিতে পারি।” উত্তরে ইফ্রোণ অব্রাহামকে বললেন, “আপনি আমার কথা শুনুন। ঐ জমিটার দাম হল চার কেজি আটশো গ্রাম রূপা, কিন্তু আমার বা আপনার কাছে ওটা তেমন কিছু নয়। আপনি বরং গিয়ে ওখানেই আপনার মৃতা স্ত্রীকে কবর দিন।” ইফ্রোণের কথা শুনে অব্রাহাম ব্যবসায়ীদের মাপ অনুসারে চার কেজি আটশো গ্রাম রূপা তাঁকে মেপে দিলেন। ইফ্রোণ হিত্তীয়দের সামনে এই চার কেজি আটশো গ্রাম রূপার কথাই বলেছিলেন। এর পরে অব্রাহাম কনান দেশের মম্রি শহরের কাছে, অর্থাৎ হিব্রোণের কাছে মক্‌পেলার গুহাতে তাঁর স্ত্রী সারাকে কবর দিলেন। এমনি করে মক্‌পেলার ঐ গুহা সুদ্ধ জমিটা কবরস্থান হিসাবে হিত্তীয়দের হাত থেকে অব্রাহামের হাতে আসল। অব্রাহাম তখন বেশ বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন আর বয়সও তাঁর অনেক হয়েছিল। সদাপ্রভু তাঁকে সব দিক থেকেই আশীর্বাদ করেছিলেন। বাড়ীর সবচেয়ে পুরানো যে দাসের উপর তাঁর সব কিছুর ভার ছিল তাকে তিনি একদিন বললেন, “তোমার হাতখানা আমার ঊরুর নীচে রাখ। যিনি স্বর্গ ও পৃথিবীর ঈশ্বর সেই সদাপ্রভুর সামনে আমি তোমাকে এই দিব্য করাচ্ছি: আমি যে কনানীয়দের মধ্যে বাস করছি তাদের মধ্য থেকে কোন মেয়েকে আমার ছেলের স্ত্রী হিসাবে তুমি বেছে নেবে না। তার বদলে তুমি আমার দেশে গিয়ে আমার বংশের লোকদের মধ্য থেকে একটি মেয়েকে আমার ছেলে ইস্‌হাকের জন্য বেছে নেবে।” এই কথা শুনে সেই দাস অব্রাহামকে বলল, “যদি সেই মেয়ে আমার সংগে এই দেশে আসতে রাজী না হয়, তাহলে যে দেশ ছেড়ে আপনি এসেছেন সেই দেশেই কি আবার আপনার ছেলেকে আমি নিয়ে যাব?” অব্রাহাম বললেন, “সাবধান, আমার ছেলেকে তুমি কখনও সেখানে নিয়ে যাবে না। স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাকে আমার বাবার বাড়ী-ঘর ও আমার জন্মস্থান থেকে বের করে এনেছেন। তিনি আমার সংগে কথা বলেছিলেন এবং শপথ করে বলেছিলেন যে, এই দেশ তিনি আমার বংশকে দেবেন। তিনি তোমার আগেই তাঁর দূতকে সেখানে পাঠিয়ে দেবেন যাতে আমার ছেলের স্ত্রী হওয়ার জন্য তুমি সেখান থেকে একটি মেয়ে নিয়ে আসতে পার। কিন্তু সেই মেয়ে যদি তোমার সংগে আসতে রাজী না হয়, তবে আমার এই দিব্য থেকে তুমি মুক্ত। কিন্তু আমার ছেলেকে তুমি কখনও সেখানে নিয়ে যাবে না।” তখন সেই দাস তার মনিব অব্রাহামের ঊরুর নীচে হাত রেখে এই ব্যাপারে তাঁর কাছে শপথ করল। এর পর সেই দাস তার মনিবের উটের পাল থেকে দশটা উট নিল। পরে মনিবের সব রকম জিনিস থেকে কিছু কিছু নিয়ে সে অরাম-নহরয়িম দেশের উদ্দেশে রওনা হল। সেখানকার যে শহরটিতে নাহোর বাস করতেন সে সেখানে গেল। শহরটার বাইরে একটা কূয়া ছিল। সেই দাস সেখানে পৌঁছে তার উটগুলোকে সেই কূয়ার পাশে হাঁটু পেতে বসাল। তখন প্রায় সন্ধ্যার কাছাকাছি, মেয়েদের জল তুলে নেবার সময়। সেই দাস এই বলে প্রার্থনা করল, “হে সদাপ্রভু, আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর, আজ এর সব কিছু তুমি তোমার হাতে নাও এবং আমার মনিব অব্রাহামকে দেওয়া তোমার কথা রাখ। দেখ, এই শহরের মেয়েরা জল নিতে বের হয়ে আসছে, আর আমি এই কূয়ার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। ঐ মেয়েদের একজনকে আমি বলব, ‘আপনার কলসী নামিয়ে আমাকে জল খেতে দিন।’ তার উত্তরে যদি সেই মেয়ে বলে, ‘আপনি জল খান, আর আপনার উটগুলোকেও আমি জল খাওয়াব,’ তাহলে সেই মেয়েই যেন তোমার দাস ইস্‌হাকের জন্য তোমার বেছে রাখা মেয়ে হয়। এতেই আমি জানতে পারব যে, তুমি আমার মনিবকে দেওয়া তোমার কথা রেখেছ।” তার কথা শেষ হতে না হতেই রিবিকা কলসী কাঁধে শহর থেকে বের হয়ে আসলেন। তিনি ছিলেন বথূয়েলের মেয়ে। বথূয়েল ছিলেন অব্রাহামের ভাই নাহোরের স্ত্রী মিল্‌কার ছেলে। রিবিকা বললেন, “এই নিন, জল খান।” এই কথা বলেই তিনি তাড়াতাড়ি করে কলসীটা কাঁধ থেকে হাতে নিয়ে তাকে জল খেতে দিলেন। জল খাওয়াবার পর রিবিকা তাকে বললেন, “আমি আপনার উটগুলোর জন্যও জল তুলে দেব যতক্ষণ না ওদের জল খাওয়া শেষ হয়।” এই বলে তিনি তাড়াতাড়ি করে পশুদের জল খাওয়াবার গামলাটায় তাঁর কলসীর জল ঢেলে দিয়ে আবার দৌড়ে কূয়ার কাছে গেলেন। এইভাবে তিনি সব উটগুলোর জন্য জল তুলে দিলেন। সদাপ্রভু তার এই যাত্রা সফল করেছেন কি না তা জানবার জন্য সেই দাস চুপ করে রিবিকাকে লক্ষ্য করতে লাগল। উটগুলোর জল খাওয়া শেষ হলে পর সে প্রায় ছয় গ্রাম ওজনের একটা সোনার নথ আর দুই হাতের জন্য একশো বিশ গ্রাম ওজনের দু’টি সোনার বালা বের করে রিবিকাকে দিয়ে বলল, “আপনি কার মেয়ে? আপনি কি বলতে পারেন আপনার বাবার বাড়ীতে আমাদের থাকবার জায়গা হবে কি না?” রিবিকা বললেন, “আমার বাবার নাম বথূয়েল। তিনি মিল্‌কা ও নাহোরের ছেলে।” তিনি আরও বললেন, “আমাদের বাড়ীতে যথেষ্ট খড় ও ভূষি আছে এবং থাকবার জায়গাও রয়েছে।” তখন সেই দাস মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে সদাপ্রভুকে তার অন্তরের ভক্তি জানিয়ে বলল, “ধন্য সদাপ্রভু, যিনি আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর! তিনি আমার মনিবকে তাঁর দেওয়া কথা রাখতে ও বিশ্বস্ততা দেখাতে ভুলে যান নি। আমাকেও তিনি পথ দেখিয়ে আমার মনিবের ভাইয়ের বাড়ীতে নিয়ে এসেছেন।” রিবিকা কিন্তু দৌড়ে গিয়ে বাড়ীর সবাইকে আর বাড়ীর প্রধান তাঁর মাকে এই কথা জানালেন। লাবন তাকে বললেন, “হে সদাপ্রভুর আশীর্বাদের পাত্র, আসুন। কেন বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন? আমি আপনাদের জন্য ঘর এবং উটগুলোর জন্য জায়গা ঠিক করে রেখে এসেছি।” এই কথা শুনে সেই দাস তাঁদের বাড়ীতে গেল। লাবন উটগুলোর বোঝা নামিয়ে রেখে তাদের খড় আর ভূষি খেতে দিলেন। তারপর তিনি সেই দাস ও তার সংগের লোকদের পা ধোওয়ার জল দিলেন। কিন্তু যখন তার সামনে খাবার দেওয়া হল তখন সে বলল, “আমি কেন এখানে এসেছি তা খুলে না বলা পর্যন্ত কিছুই মুখে দেব না।” লাবন বললেন, “আচ্ছা, বলুন।” তখন সে বলল, “আমি অব্রাহামের দাস। আমার মনিবকে সদাপ্রভু অনেক আশীর্বাদ করেছেন; আজ তিনি বেশ বড়লোক। সদাপ্রভু তাঁকে অনেক গরু-ভেড়া, সোনা-রূপা, দাস-দাসী এবং উট ও গাধা দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী সারার অনেক বয়সে তাঁরই গর্ভে আমার মনিবের একটি ছেলের জন্ম হয়েছে, আর সেই ছেলেকেই তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দিয়েছেন। তিনি আমাকে এই বলে শপথ করিয়ে নিয়েছেন যে, তিনি যে দেশে বাস করছেন সেই কনান দেশের কোন মেয়েকে আমি যেন তাঁর ছেলের স্ত্রী হবার জন্য বেছে না নিই। তার বদলে যেন আমি তাঁর বাবার বাড়ীতে গিয়ে তাঁর বংশের লোকদের মধ্য থেকেই একটি মেয়েকে তাঁর ছেলের জন্য বেছে নিই। তখন আমি আমার মনিবকে বললাম, ‘কিন্তু মেয়েটি যদি আমার সংগে আসতে না চায়? ’ “তিনি আমাকে বললেন, ‘সদাপ্রভু, যাঁকে আমি মেনে চলি, তিনিই তাঁর দূতকে তোমার সংগে পাঠিয়ে দেবেন যাতে তোমার যাত্রা সফল হয়। এতে তুমি আমার বাবার বাড়ীতে গিয়ে আমার নিজের লোকদের মধ্য থেকে একটি মেয়েকে আমার ছেলের জন্য বেছে নিতে পারবে। তাঁদের কাছে গেলে পর যদি তাঁরা কোন মেয়েকে না দেন তবে তুমি আমার এই দিব্য থেকে মুক্ত হবে।’ “সেইজন্য আমি আজ ঐ কূয়াটার কাছে এসে মনে মনে প্রার্থনা করে বললাম, ‘হে সদাপ্রভু, আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর, দয়া করে তুমি আমার এই যাত্রা সফল কর। দেখ, আমি এই কূয়ার কাছে দাঁড়িয়ে আছি। শহর থেকে যদি কোন মেয়ে বের হয়ে জল তুলতে আসে তবে আমি তাকে বলব যেন সে তার কলসী থেকে আমাকে একটু জল খেতে দেয়। তাতে যদি সে আমাকে বলে যে, সে আমাকে জল খাওয়াবে আর আমার উটগুলোর জন্যও জল তুলে দেবে, তবে সে-ই যেন আমার মনিবের ছেলের জন্য তোমার বেছে রাখা মেয়ে হয়।’ “আমার প্রার্থনা শেষ হওয়ার আগেই রিবিকা কলসী কাঁধে কূয়ায় এসে জল তুলতে লাগলেন। আমি তাঁকে বললাম, ‘দয়া করে আমাকে একটু জল খেতে দিন।’ “তিনি তাড়াতাড়ি করে কাঁধ থেকে কলসীটা নামিয়ে বললেন, ‘এই নিন, জল খান। আমি আপনার উটগুলোকেও জল খাওয়াব।’ তখন আমি জল খেলাম আর তিনি আমার উটগুলোকেও জল খাওয়ালেন। “তারপর আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কার মেয়ে? ’ “তিনি বললেন, ‘আমি নাহোর ও মিল্‌কার ছেলে বথূয়েলের মেয়ে।’ “এই কথা শুনে আমি তাঁর নাকে নথ ও দুই হাতে বালা পরিয়ে দিলাম। তারপর আমি মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে সদাপ্রভুকে আমার অন্তরের ভক্তি জানালাম। আমি আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দিলাম, কারণ তিনিই আমাকে ঠিক পথে চালিয়ে এনেছেন যাতে আমি আমার মনিবের ভাইয়ের ছেলের মেয়েকে তাঁর ছেলের জন্য নিয়ে যেতে পারি। এখন আপনারা আমার মনিবের প্রতি বিশ্বস্তভাবে কর্তব্য করবেন কি না তা আমাকে বলুন। যদি তা না করেন তবে আমাকে তা-ও জানিয়ে দিন যাতে আমি অন্য কোথাও যেতে পারি।” তখন লাবন ও বথূয়েল বললেন, “ব্যাপারটা তবে সদাপ্রভু থেকেই হয়েছে। কাজেই এতে আপনাকে আমাদের হ্যাঁ বা না বলবার কিছুই নেই। রিবিকা তো এখানেই রয়েছে; ওকে আপনি নিয়ে যান। সদাপ্রভুর কথামতই আপনার মনিবের ছেলের সংগে তার বিয়ে হোক।” অব্রাহামের দাস এই কথা শুনে মাটিতে উবুড় হয়ে সদাপ্রভুকে তার অন্তরের ভক্তি জানাল। তারপর সে সোনা ও রূপার গহনা এবং কাপড়-চোপড় বের করে রিবিকাকে দিল, আর রিবিকার ভাই এবং মাকেও অনেক দামী দামী জিনিস দিল। পরে সে ও তার সংগের লোকেরা খাওয়া-দাওয়া করে রাতটা সেখানেই কাটাল। পরদিন তারা যখন ভোরে ঘুম থেকে উঠল তখন সেই দাস বলল, “এবার আমাকে বিদায় দিন যাতে আমি আমার মনিবের কাছে ফিরে যেতে পারি।” কিন্তু রিবিকার মা ও ভাই বললেন, “মেয়েটা আরও দিন দশেক আমাদের কাছে থাকুক, তারপর সে যাবে।” সেই দাস তাঁদের বলল, “সদাপ্রভু যখন আমার এই যাত্রা সফল করেছেন তখন আমাকে আর ধরে রাখবেন না। আমাকে বিদায় দিন যাতে আমি আমার মনিবের কাছে ফিরে যেতে পারি।” তাঁরা বললেন, “তাহলে আমরা মেয়েটিকে ডেকে তার মুখ থেকেই তার মতটা শুনি।” তাঁরা রিবিকাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি এই লোকটির সংগে যেতে চাও?” রিবিকা বললেন, “হ্যাঁ, যাব।” তখন তাঁর ভাইয়েরা অব্রাহামের দাস ও তার লোকদের সংগে তাঁদের বোন ও তাঁর ধাইমাকে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা রিবিকাকে আশীর্বাদ করে বললেন, “বোন, তুমি অসংখ্য সন্তানের মা হও। তোমার সন্তানেরা যেন শত্রুদের সমস্ত শহর জয় করে নিতে পারে।” এর পর রিবিকা ও তাঁর দাসীরা প্রস্তুত হয়ে উটে চড়ে অব্রাহামের দাসের পিছনে পিছনে চলল। এইভাবে সেই দাস রিবিকাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ইস্‌হাক তখন নেগেভে থাকতেন। এর মধ্যে তিনি বের্‌-লহয়-রোয়ী নামে জায়গাটার কাছে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে সেই দিনই বিকাল বেলায় ধ্যান করবার জন্য তিনি মাঠে গেলেন। সেখানে চোখ তুলে চাইতেই তিনি দেখলেন কতগুলো উট আসছে। রিবিকাও চোখ তুলে চাইলেন, আর দূর থেকে ইস্‌হাককে দেখে তিনি উটের পিঠ থেকে নেমে পড়লেন। তারপর তিনি সেই দাসকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ঐ যে লোকটি মাঠের মধ্য দিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন উনি কে?” উত্তরে সেই দাস বলল, “উনিই তো আমার মনিব।” এই কথা শুনে রিবিকা চাদর দিয়ে নিজেকে ঢাকলেন। তখন সেই দাস যা যা করে এসেছে সব কথা ইস্‌হাককে জানাল। ইস্‌হাক তখন রিবিকাকে তাঁর মা সারার তাম্বুতে নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে বিয়ে করলেন। রিবিকার প্রতি ভালবাসাই মায়ের মৃত্যুর পর তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছিল। অব্রাহাম কটূরা নামে আর একটি স্ত্রীলোককে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর গর্ভে সিম্রণ, যক্‌ষণ, মদান, মিদিয়ন, যিশ্‌বক ও শূহের জন্ম হয়েছিল। শিবা ও দদান ছিল যক্‌ষণের সন্তান। অশূরীয়, লটূশীয় ও লিয়ূম্মীয়েরা ছিল দদানের বংশের লোক। ঐফা, এফর, হনোক, অবীদ ও ইল্‌দায়া ছিল মিদিয়নের সন্তান। এরা সবাই ছিল কটূরার সন্তান এবং তাঁর সন্তানদের বংশ। অব্রাহাম তাঁর সমস্ত ধন-সম্পত্তি ইস্‌হাককে দিয়েছিলেন। অবশ্য তাঁর উপস্ত্রীদের সন্তানদেরও তিনি বেঁচে থাকতেই অনেক কিছু দান করেছিলেন। এই সন্তানদের তিনি ইস্‌হাকের সংগে না রেখে দূরে পূর্ব দিকের একটা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। অব্রাহাম মোট একশো পঁচাত্তর বছর বেঁচে ছিলেন। একটি সুন্দর ও সুখী জীবন কাটিয়ে অনেক বয়সে তিনি মারা গিয়ে তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন। মম্রি শহরের পূর্ব দিকে হিত্তীয় সোহরের ছেলে ইফ্রোণের জমিতে মক্‌পেলার গুহায় তাঁর ছেলে ইস্‌হাক ও ইশ্মায়েল তাঁকে কবর দিলেন। এই জমিটাই তিনি হিত্তীয়দের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন। এখানেই তাঁর স্ত্রী সারাকে এবং তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। অব্রাহামের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ইস্‌হাককে ঈশ্বর আশীর্বাদ করলেন। ইস্‌হাক বের্‌-লহয়-রোয়ীর কাছে বাস করতে থাকলেন। সারার দাসী মিসরীয় হাগারের গর্ভে অব্রাহামের ছেলে ইশ্মায়েলের জন্ম হয়েছিল। এই হল ইশ্মায়েলের বংশের কথা: জন্ম অনুসারে তাঁর ছেলেদের নাম হল, প্রথমে নবায়োৎ, তারপর কেদর, অদ্‌বেল, মিব্‌সম, মিশ্‌ম, দূমা, মসা, হদদ, তেমা, যিটূর, নাফীশ ও কেদমা। ইশ্মায়েলের এই বারোজন ছেলেই ছিলেন বারো গোষ্ঠীর সর্দার। তাঁদের নাম অনুসারেই তাঁদের গ্রাম এবং গ্রামের বাইরে তাম্বু-ফেলা জায়গাগুলোর নাম রাখা হয়েছিল। ইশ্মায়েল মোট একশো সাঁইত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন। তারপর তিনি মারা গিয়ে তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন। হবীলা থেকে শূর পর্যন্ত যে জায়গাটা ছিল তাঁর বংশের লোকেরা সেখানে বাস করত। জায়গাটা ছিল মিসরের কাছে, আসিরিয়া যাবার পথে। তাদের ভাই ইস্‌হাকের বংশধরদের দেশের কাছে তারা বাস করত। এই হল অব্রাহামের ছেলে ইস্‌হাকের জীবনের ইতিহাস। অব্রাহামের ছেলে ইস্‌হাক। ইস্‌হাক চল্লিশ বছর বয়সে রিবিকাকে বিয়ে করেছিলেন। রিবিকা ছিলেন পদ্দন-অরাম দেশের অরামীয় বথূয়েলের মেয়ে এবং অরামীয় লাবনের বোন। ইস্‌হাকের স্ত্রী বন্ধ্যা ছিলেন বলে ইস্‌হাক তাঁর জন্য সদাপ্রভুর কাছে ভিক্ষা চাইলেন। সদাপ্রভু তা মঞ্জুর করলেন এবং রিবিকা গর্ভবতী হলেন। তাঁর গর্ভের মধ্যে যমজ সন্তান ছিল এবং তারা একে অন্যের সংগে ঠেলাঠেলি করতে লাগল। সেইজন্য রিবিকা বললেন, “আমার এই রকম হচ্ছে কেন?” এই বলে ব্যাপারটা কি, তা জানবার জন্য তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে গেলেন। সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তোমার গর্ভে দু’টি ভিন্ন জাতির শুরু হয়েছে, জন্ম থেকেই তারা দু’টি ভিন্ন বংশ হবে। একটির চেয়ে আর একটির শক্তি বেশী হবে, বড়টি তার ছোটটির দাস হবে।” সন্তান প্রসবের সময় দেখা গেল সত্যিই তাঁর গর্ভে যমজ সন্তান রয়েছে। প্রথমে যে ছেলেটির জন্ম হল তার গায়ের রং ছিল লাল এবং তার গা পশমের জামার মত লোমে ঢাকা। এইজন্য তার নাম রাখা হল এষৌ (যার মানে “লোমশ”)। তারপর এষৌর পায়ের গোড়ালি-ধরা অবস্থায় তার ভাইয়ের জন্ম হল। এইজন্য তার নাম রাখা হল যাকোব (যার মানে “গোড়ালি-ধরা”)। ইস্‌হাকের ষাট বছর বয়সে তাঁর স্ত্রীর গর্ভে এদের জন্ম হয়েছিল। এই ছেলেরা বড় হলে পর এষৌ খুব ভাল শিকারী হলেন। তিনি বাইরে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতেন, কিন্তু যাকোব ছিলেন শান্ত স্বভাবের। তিনি বাড়ীতে থাকতেই ভালবাসতেন। শিকার করা মাংস খাওয়ার দিকে ইস্‌হাকের একটা ঝোঁক ছিল বলে তিনি এষৌকে বেশী ভালবাসতেন, কিন্তু রিবিকা বেশী ভালবাসতেন যাকোবকে। একদিন যাকোব ডাল রান্না করছেন, এমন সময় এষৌ মাঠ থেকে ফিরে আসলেন। তখন তিনি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি যাকোবকে বললেন, “আমি খুব ক্লান্ত। তোমার ঐ লাল জিনিস থেকে আমাকে কিছুটা খেতে দাও।” এই কথার জন্য এষৌর আর এক নাম হল ইদোম (যার মানে “লাল”)। যাকোব বললেন, “কিন্তু বড় ছেলে হিসাবে তোমার যে অধিকার সেটা আজ তুমি আমার কাছে বিক্রি কর।” এষৌ বললেন, “দেখ, আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে, বড় ছেলের অধিকার দিয়ে আমি কি করব?” যাকোব বললেন, “আগে তুমি আমার কাছে শপথ কর।” তখন এষৌ শপথ করে বড় ছেলের অধিকার যাকোবের কাছে বিক্রি করে দিলেন। যাকোব এর পর এষৌকে রুটি ও ডাল খেতে দিলেন, আর এষৌ খাওয়া-দাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেলেন। এইভাবে এষৌ তাঁর বড় ছেলে হওয়ার অধিকারকে কোন দামই দিলেন না। অব্রাহামের সময়ের মত এবারও দেশে একটা দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। সেইজন্য ইস্‌হাক গরার শহরে পলেষ্টীয়দের রাজা অবীমেলকের কাছে চলে গেলেন। তখন সদাপ্রভু ইস্‌হাককে দেখা দিয়ে বললেন, “তুমি মিসরে যেয়ো না। আমি তোমাকে যে দেশের কথা বলব সেই দেশেই থাক। এখন এই দেশে তুমি কিছুকালের জন্য বাস করবে। আমি নিজে তোমার সংগে থেকে তোমাকে আশীর্বাদ করব। এই সব দেশ আমি তোমাকে ও তোমার বংশের লোকদেরই দেব। এছাড়া আমি তোমার বাবা অব্রাহামের কাছে যে শপথ করেছিলাম তাও বজায় রাখব। আমি তোমার বংশের লোকদের আকাশের তারার মত অসংখ্য করব এবং এই সব দেশ তাদের দেব। তোমার বংশের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত জাতি আশীর্বাদ পাবে, কারণ অব্রাহাম আমার বাধ্য থেকে আমার সমস্ত দাবি, আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ পালন করেছিল।” সেইজন্য ইস্‌হাক গরার শহরেই রয়ে গেলেন। কিন্তু সেখানকার লোকেরা যখন তাঁর স্ত্রীর কথা জিজ্ঞাসা করল তখন তিনি তাঁকে তাঁর বোন বলে পরিচয় দিলেন। তাঁকে তাঁর স্ত্রী বলতে তিনি ভয় পেলেন; মনে করলেন রিবিকা সুন্দরী বলে সেখানকার লোকেরা রিবিকাকে পাবার জন্য তাঁকে মেরে ফেলবে। ইস্‌হাক অনেক দিন সেখানে কাটালেন। একদিন পলেষ্টীয়দের রাজা অবীমেলক জানলা দিয়ে তাকালেন। তিনি দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, ইস্‌হাক তাঁর স্ত্রী রিবিকাকে আদর করছেন। এতে তিনি ইস্‌হাককে ডেকে বললেন, “দেখুন, রিবিকা নিশ্চয়ই আপনার স্ত্রী; আপনি কেন তাঁকে আপনার বোন বলেছেন?” উত্তরে ইস্‌হাক বললেন, “কারণ আমি মনে করেছিলাম তাঁর জন্যই হয়তো আমাকে মারা পড়তে হবে।” অবীমেলক বললেন, “কিন্তু আমাদের সংগে আপনি এ কি ব্যবহার করলেন? যে কোন লোক তো আপনার স্ত্রীকে তার শোবার সংগিনী করতে পারত। এতে আপনি পাপের দায়ে আমাদের দায়ী করতেন।” এর পরে অবীমেলক সমস্ত লোকের উপর এই বলে এক কড়া আদেশ জারি করলেন যে, কেউ যদি ইস্‌হাক কিম্বা তাঁর স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে তবে নিশ্চয়ই তাকে মেরে ফেলা হবে। ইস্‌হাক সেই বছরেই সেই দেশে চাষ করে একশো গুণ ফসল পেলেন। সদাপ্রভু তাঁকে আশীর্বাদ করলেন, আর তাতে তিনি ধনী হয়ে উঠলেন। তাঁর অবস্থা দিন দিন ভাল হতে হতে শেষে তিনি এক বিরাট সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠলেন। তাঁর ভেড়া, গরু ও দাস-দাসীর সংখ্যা এত বেড়ে গেল যে, তা দেখে পলেষ্টীয়েরা তাঁকে হিংসা করতে লাগল। অব্রাহামের সময়ে তাঁর দাসেরা যে সব কূয়া খুঁড়েছিল পলেষ্টীয়েরা সেগুলো মাটি ফেলে বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে অবীমেলক ইস্‌হাককে বললেন, “আপনি আমাদের কাছ থেকে চলে যান, কারণ আপনি আমাদের চেয়ে বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।” কাজেই ইস্‌হাক সেখান থেকে সরে গিয়ে গরারের শুকনা নদীর উপরে তাম্বু ফেলে বাস করতে লাগলেন। সেখানে তাঁর বাবা অব্রাহামের সময়ে যে সব কূয়া খোঁড়া হয়েছিল ইস্‌হাক আবার সেই কূয়াগুলো খুঁড়িয়ে নিলেন, কারণ অব্রাহামের মৃত্যুর পর পলেষ্টীয়েরা সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। তাঁর বাবা সেই কূয়াগুলোর যেটির যে নাম দিয়েছিলেন তিনি সেটির সেই নামই দিলেন। ইস্‌হাকের দাসেরা সেই শুকনা নদীতে কূয়া খুঁড়তে গিয়ে এমন একটা কূয়া খুঁজে পেল যার তলা থেকে জল উঠছিল। কিন্তু গরারের রাখালেরা ইস্‌হাকের রাখালদের সংগে ঝগড়া করে বলল, “এই জল আমাদের।” এই ঝগড়ার জন্য ইস্‌হাক সেই কূয়ার নাম দিলেন এষক (যার মানে “ঝগড়া”)। পরে ইস্‌হাকের রাখালেরা আর একটা কূয়া খুঁড়ল, কিন্তু সেটা নিয়েও তারা ঝগড়া করতে লাগল। এ দেখে ইস্‌হাক সেটার নাম দিলেন সিট্‌না (যার মানে “শত্রুতা”)। তারপর ইস্‌হাক সেখান থেকে সরে গিয়ে আর একটা কূয়া খুঁড়ালেন। এবার কিন্তু পলেষ্টীয়েরা তা নিয়ে কোন ঝগড়া-বিবাদ করল না। ইস্‌হাক সেই কূয়াটার নাম রাখলেন রহোবোৎ (যার মানে “অনেক জায়গা”)। তিনি বললেন, “শেষ পর্যন্ত সদাপ্রভুই আমাদের জায়গা করে দিলেন যাতে আমরা এখানেই সংখ্যায় বেড়ে উঠতে পারি।” পরে ইস্‌হাক সেখান থেকে সরে বের্‌-শেবাতে গেলেন। সেই রাতেই সদাপ্রভু তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, “আমি তোমার বাবা অব্রাহামের ঈশ্বর। কোন ভয় কোরো না, কারণ আমি তোমার সংগে আছি। আমার দাস অব্রাহামের জন্যই আমি তোমাকে আশীর্বাদ করব এবং তোমার বংশ বাড়িয়ে দেব।” তখন ইস্‌হাক সেখানে একটা বেদী তৈরী করলেন এবং সদাপ্রভুকে তাঁর যোগ্য সম্মান দিলেন। সেখানেই তিনি তাঁর তাম্বু ফেললেন এবং তাঁর দাসেরা আর একটা কূয়া খুঁড়ল। এর পর অবীমেলক তাঁর মন্ত্রী অহূষৎ ও প্রধান সেনাপতি ফীখোলকে নিয়ে গরার থেকে ইস্‌হাকের কাছে আসলেন। ইস্‌হাক তাঁদের বললেন, “আপনারা আমার কাছে কেন এসেছেন? আপনারা তো হিংসা করে আমাকে আপনাদের কাছ থেকে দূর করে দিয়েছেন।” তাঁরা বললেন, “আমরা এখন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি সদাপ্রভু আপনার সংগে আছেন। তাই আমরা ঠিক করেছি আপনার ও আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি হওয়া দরকার। আসুন, আমরা এই শপথ করি যে, আমরা যেমন আপনার কোন ক্ষতি করি নি বরং ভাল ব্যবহার করে আপনাকে শান্তিতে বিদায় দিয়েছি তেমনি আপনিও আমাদের কোন ক্ষতি করবেন না। আপনি এখন সদাপ্রভুর আশীর্বাদের পাত্র।” এর পর ইস্‌হাক তাঁদের জন্য একটা ভোজের আয়োজন করলেন, আর তাঁরাও খাওয়া-দাওয়া করলেন। পরদিন ভোরে উঠে তাঁরা একে অন্যের কাছে শপথ করলেন। তারপর ইস্‌হাক যখন তাঁদের বিদায় দিলেন তখন তাঁরা মনে শান্তি নিয়ে রওনা হলেন। সেই দিনই ইস্‌হাকের দাসেরা এসে তাদের খোঁড়া একটা কূয়ার কথা তাঁকে জানিয়ে বলল, “আমরা জলের খোঁজ পেয়েছি।” ইস্‌হাক সেই কূয়াটার নাম দিলেন শিবিয়া (যার মানে “শপথ”)। সেইজন্য আজও সেই শহরটার নাম বের্‌-শেবা রয়ে গেছে। এষৌ চল্লিশ বছর বয়সে হিত্তীয় বেরির মেয়ে যিহূদীৎ এবং হিত্তীয় এলোনের মেয়ে বাসমত্‌কে বিয়ে করলেন। এই দু’জন স্ত্রীলোক ইস্‌হাক ও রিবিকার জীবন বিষিয়ে তুলেছিল। বুড়ো বয়সে ইস্‌হাকের চোখে দেখবার ক্ষমতা এত কমে গেল যে, শেষে তিনি আর দেখতেই পেতেন না। একদিন তিনি তাঁর বড় ছেলে এষৌকে ডেকে বললেন, “বাবা আমার।” এষৌ উত্তর দিলেন, “এই যে আমি।” ইস্‌হাক বললেন, “দেখ, আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি; কবে যে মারা যাই তা বলতে পারি না। তুমি এক কাজ কর; তোমার অস্ত্র, অর্থাৎ তীর-ধনুক নিয়ে শিকার করবার জন্য মাঠে যাও আর আমার জন্য কিছু শিকার করে আন। তারপর আমার পছন্দমত ভাল খাবার তৈরী করে আমার কাছে নিয়ে এস, যাতে তা খেয়ে মারা যাবার আগে আমি তোমাকে আশীর্বাদ করে যেতে পারি।” ইস্‌হাক যখন তাঁর আদরের ছেলে এষৌর সংগে কথা বলছিলেন তখন রিবিকা তা শুনছিলেন। তাই এষৌ যখন শিকার করতে গেলেন, তখন রিবিকাও তাঁর আদরের ছেলে যাকোবকে বললেন, “দেখ, আমি শুনলাম, তোমার বাবা তোমার ভাই এষৌকে বলেছেন, ‘তুমি আমার জন্য কিছু শিকার করে এনে ভাল খাবার তৈরী কর। তা খেয়ে আমি মারা যাবার আগে সদাপ্রভুকে সাক্ষী রেখে তোমাকে আশীর্বাদ করে যেতে চাই।’ তাই বাবা, আমি তোমাকে এখন যা করতে বলি তুমি ঠিক তা-ই কর। তুমি এখনই গিয়ে ছাগলের পাল থেকে দু’টা মোটাসোটা বাচ্চা এনে আমাকে দাও। আমি তা দিয়ে তোমার বাবার পছন্দমত ভাল খাবার তৈরী করে দেব। পরে তুমি তা তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাবে যেন তা খেয়ে তিনি মারা যাবার আগে তোমাকে আশীর্বাদ করেন।” তখন যাকোব তাঁর মাকে বললেন, “কিন্তু আমার ভাই এষৌর গা তো লোমে ভরা, আর আমার গায়ে লোম নেই। বাবা হয়তো আমার গায়ে হাত বুলাবেন আর ভাববেন আমি তাঁর সংগে ঠাট্টা করছি। ফলে আশীর্বাদের বদলে আমি নিজের উপর অভিশাপই ডেকে আনব।” কিন্তু তাঁর মা তাঁকে বললেন, “বাবা, তোমার সেই অভিশাপ আমার উপরে পড়ুক। তুমি কেবল আমার কথা শোন আর গিয়ে দু’টা ছাগলের বাচ্চা আমাকে এনে দাও।” কাজেই যাকোব গিয়ে ছাগলের বাচ্চা এনে তাঁর মাকে দিলেন, আর রিবিকা যাকোবের বাবার পছন্দমত ভাল খাবার তৈরী করলেন। তারপর তিনি তাঁর বড় ছেলের সবচেয়ে ভাল জামা-কাপড় নিয়ে তাঁর ছোট ছেলেকে পরিয়ে দিলেন; কাপড়গুলো ঘরেই ছিল। যাকোবের হাতে ও গলায় যেখানে লোম ছিল না সেখানে তিনি ছাগলের বাচ্চার চামড়া জড়িয়ে দিলেন। তারপর নিজের তৈরী সেই ভাল খাবার ও রুটি যাকোবের হাতে তুলে দিলেন। যাকোব তাঁর বাবার কাছে গিয়ে ডাকলেন, “বাবা।” উত্তরে ইস্‌হাক বললেন, “এই যে আমি। তুমি কে, বাবা?” যাকোব তাঁর বাবাকে বললেন, “আমি তোমার বড় ছেলে এষৌ। তুমি আমাকে যা করতে বলেছিলে আমি তা করেছি। এখন তুমি উঠে বস আর আমার শিকার করে আনা মাংস খাও যাতে তুমি আমাকে আশীর্বাদ করতে পার।” উত্তরে ইস্‌হাক তাঁর ছেলেকে বললেন, “বাবা, তুমি কি করে এত তাড়াতাড়ি শিকার পেয়ে গেলে?” উত্তরে যাকোব বললেন, “পেলাম তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর পরিচালনায়।” তখন ইস্‌হাক যাকোবকে বললেন, “আমার কাছে এস বাবা, যাতে তোমার গায়ে হাত দিয়ে আমি বুঝতে পারি তুমি সত্যিই আমার ছেলে এষৌ কি না।” যাকোব তাঁর বাবা ইস্‌হাকের আরও কাছে গেলেন। ইস্‌হাক তাঁর গায়ে হাত দিয়ে দেখে বললেন, “গলার স্বরটা যাকোবের বটে, কিন্তু হাত দু’টা তো এষৌর।” যাকোবের হাত তাঁর ভাই এষৌর মতই লোমে ভরা ছিল বলে ইস্‌হাক তাঁকে চিনতে পারলেন না। যাহোক, তিনি তাঁকে আশীর্বাদ করবার জন্য তৈরী হলেন। তবুও তিনি তাঁকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি সত্যিই আমার ছেলে এষৌ?” যাকোব বললেন, “হ্যাঁ, বাবা।” ইস্‌হাক বললেন, “তাহলে তোমার শিকার-করা মাংসের কিছুটা আমার কাছে নিয়ে এস, যাতে আমি তা খেয়ে তোমাকে আশীর্বাদ করে যেতে পারি।” তখন যাকোব ইস্‌হাকের কাছে খাবার নিয়ে গেলেন, আর ইস্‌হাক তা থেকে খেলেন। এর পর যাকোব তাঁকে আংগুর-রস দিলেন আর ইস্‌হাক তা খেলেন। তারপর তাঁর বাবা ইস্‌হাক তাঁকে বললেন, “বাবা, কাছে এসে তুমি আমাকে চুম্বন কর।” তখন যাকোব কাছে গিয়ে তাঁকে চুম্বন করলেন, আর ইস্‌হাক তাঁর গায়ের কাপড়ের গন্ধ পেয়ে তাঁকে এই বলে আশীর্বাদ করলেন: “এই তো আমার ছেলের গন্ধ, সদাপ্রভুর আশীর্বাদ-করা জমির মতই এই গন্ধ। ঈশ্বর যেন তোমাকে আকাশের শিশির দেন, আর তোমার জমিতে উর্বরতা দেন; তাতে তুমি প্রচুর ফসল আর নতুন আংগুর-রস পাবে। বিভিন্ন জাতি তোমার সেবা করুক, আর সব লোক তোমাকে প্রণাম করুক। তোমার গোষ্ঠীর লোকদের তুমি মনিব হও, তারা তোমাকে প্রণাম করুক। যারা তোমাকে অভিশাপ দেবে তাদের উপর অভিশাপ পড়ুক; যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে তাদের উপরে আশীর্বাদ নেমে আসুক।” ইস্‌হাক যাকোবকে আশীর্বাদ করা শেষ করলেন। যাকোব তাঁর বাবা ইস্‌হাকের সামনে থেকে যেতে না যেতেই তাঁর ভাই এষৌ শিকার করে ঘরে ফিরে আসলেন। তিনিও ভাল খাবার তৈরী করে তাঁর বাবার কাছে এনে বললেন, “বাবা, উঠে বসে তোমার ছেলের শিকার করে আনা মাংস খেয়ে আমাকে আশীর্বাদ কর।” তাঁর বাবা তাঁকে বললেন, “তুমি কে?” এষৌ বললেন, “আমি তোমার বড় ছেলে এষৌ।” এই কথা শুনে ইস্‌হাকের গায়ে ভীষণ কাঁপুনি ধরে গেল। তিনি বললেন, “তবে যে আমার কাছে শিকারের মাংস নিয়ে এসেছিল সে কে? তুমি আসবার আগেই আমি তা খেয়েছি এবং তাকে আশীর্বাদও করেছি, আর সেই আশীর্বাদের ফল সে পাবেই।” এষৌ তাঁর বাবার কথা শুনে এক বুক-ফাটা কান্নায় ভেংগে পড়লেন। তারপর তিনি তাঁর বাবাকে বললেন, “বাবা, আমাকে, আমাকেও আশীর্বাদ কর।” ইস্‌হাক বললেন, “তোমার ভাই এসে ছলনা করে তোমার পাওনা আশীর্বাদ নিয়ে গেছে।” এষৌ বললেন, “তার এই যাকোব নামটা দেওয়া ঠিকই হয়েছে, কারণ এই নিয়ে দু’বার সে আমাকে আমার জায়গা থেকে সরিয়ে দিল। বড় ছেলে হিসাবে আমার যে অধিকার তা সে আগেই নিয়ে নিয়েছে আর এবার আমার আশীর্বাদও নিয়ে গেল।” এষৌ আরও বললেন, “আমার জন্য কি কোন আশীর্বাদই রাখ নি?” উত্তরে ইস্‌হাক বললেন, “দেখ, আমি তাকে তোমার মনিব করেছি এবং তার গোষ্ঠীর সবাইকে তার দাস করেছি। আমি তার জন্য ফসল ও নতুন আংগুর-রসের ব্যবস্থা করেছি। এর পর বাবা, আমি তোমার জন্য আর কি করতে পারি?” তখন এষৌ তাঁর বাবাকে কাকুতি-মিনতি করে বললেন, “বাবা, তোমার কাছে কি ঐ একটা আশীর্বাদই ছিল? বাবা, তুমি আমাকে, আমাকেও আশীর্বাদ কর।” এই বলে এষৌ গলা ছেড়ে কাঁদতে লাগলেন। তখন তাঁর বাবা বললেন, “যে জমিতে তুমি বাস করবে সেই জমি উর্বর হবে না; সেখানে আকাশের শিশিরও পড়বে না। তলোয়ারই হবে তোমার জীবন, তুমি তোমার ভাইয়ের দাস হয়ে থাকবে। কিন্তু যখন তুমি অধৈর্য হয়ে উঠবে তখন তুমি তোমার ঘাড় থেকে তার জোয়াল ঠেলে ফেলে দেবে।” যাকোব তাঁর বাবার কাছ থেকে আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন বলে এষৌ তাঁকে হিংসা করতে লাগলেন। তিনি মনে মনে বললেন, “আমার বাবার জন্য শোক করবার দিন ঘনিয়ে এসেছে। তার পরেই আমি আমার ভাই যাকোবকে খুন করব।” রিবিকা তাঁর বড় ছেলে এষৌর এই সব কথা জানতে পেরে লোক পাঠিয়ে ছোট ছেলে যাকোবকে ডেকে এনে বললেন, “শোন, তোমার ভাই এষৌ তোমাকে মেরে ফেলবার আশায় নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিছু দিন পরে যখন তার রাগ পড়ে যাবে এবং সে ভুলে যাবে তুমি তার বিরুদ্ধে কি করেছ, তখন আমি লোক পাঠিয়ে তোমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনব। কেন আমি একই দিনে তোমাদের দু’জনকে হারাব?” পরে রিবিকা ইস্‌হাককে বললেন, “এই হিত্তীয় মেয়েগুলোর জন্য আমার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে না। এর উপর যাকোবও যদি এই দেশের কোন হিত্তীয় মেয়েকে বিয়ে করে তবে আমার বেঁচে থেকে কি লাভ?” রিবিকার কথা শুনে ইস্‌হাক যাকোবকে ডেকে আশীর্বাদ করলেন এবং তাঁকে এই আদেশ দিলেন, “তুমি কনান দেশের কোন মেয়েকে বিয়ে কোরো না। তুমি পদ্দন-অরাম দেশে তোমার মায়ের বাবা বথূয়েলের বাড়ীতে যাও। সেখানে থাকবার সময় তোমার মামা লাবনের কোন মেয়েকে তুমি বিয়ে কোরো। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তোমাকে আশীর্বাদ করুন আর তোমাকে অনেক সন্তানের পিতা হবার ক্ষমতা দিন। তিনি তোমার বংশের লোকদের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলুন। তাতে তারা হবে একটা বহু গোষ্ঠীর জাতি। যে আশীর্বাদ তিনি অব্রাহামকে করেছিলেন সেই আশীর্বাদই তিনি তোমাকে এবং তোমার পরে তোমার বংশের লোকদের করুন। যে দেশ ঈশ্বর অব্রাহামকে দিয়েছিলেন, যেখানে তুমি এখন বিদেশী হিসাবে আছ, সেই দেশটা যেন তোমার অধিকারে আসে।” এই বলে ইস্‌হাক যাকোবকে পাঠিয়ে দিলেন, আর যাকোবও পদ্দন-অরামে অরামীয় বথূয়েলের ছেলে লাবনের কাছে গেলেন। লাবন ছিলেন যাকোব ও এষৌর মা রিবিকার ভাই। পরে এষৌ শুনলেন যে, ইস্‌হাক যাকোবকে আশীর্বাদ করে পদ্দন-অরামের কোন মেয়েকে বিয়ে করবার জন্য সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও শুনলেন, ইস্‌হাক যাকোবকে আশীর্বাদ করবার সময় আদেশ দিয়ে বলেছিলেন যেন সে কোন কনানীয় মেয়েকে বিয়ে না করে। এষৌ দেখলেন, যাকোব তাঁর মা-বাবার কথামত পদ্দন-অরামে চলে গেছেন। এতে এষৌ বুঝলেন যে, তাঁর বাবা ইস্‌হাক কনানীয় স্ত্রীলোকদের উপর খুশী নন। তাই দু’টি স্ত্রী থাকলেও তিনি অব্রাহামের ছেলে ইশ্মায়েলের বাড়ীতে গিয়ে তাঁর মেয়ে মহলত্‌কে বিয়ে করলেন। মহলৎ ছিল নবায়োতের বোন। এদিকে যাকোব বের্‌-শেবা ছেড়ে হারণ শহরের দিকে যাত্রা করলেন। পথে এক জায়গায় বেলা ডুবে গেলে পর তিনি সেখানেই রাতটা কাটালেন। সেখানে কতগুলো পাথর পড়ে ছিল। যাকোব সেগুলোর একটা মাথার নীচে দিয়ে শুয়ে পড়লেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন মাটির উপরে একটা সিঁড়ি দাঁড়িয়ে আছে এবং তার মাথাটা গিয়ে স্বর্গে ঠেকেছে। তিনি দেখলেন ঈশ্বরের দূতেরা তার উপর দিয়ে ওঠা-নামা করছেন, আর সদাপ্রভু তার উপরে দাঁড়িয়ে বলছেন, “আমি সদাপ্রভু। আমি তোমার পূর্বপুরুষ অব্রাহামের ঈশ্বর এবং ইস্‌হাকেরও ঈশ্বর। তুমি যেখানে শুয়ে আছ সেই দেশ আমি তোমাকে এবং তোমার বংশের লোকদের দেব। তোমার বংশের লোকেরা পৃথিবীর ধূলিকণার মত অসংখ্য হবে। পূর্ব-পশ্চিমে এবং উত্তর-দক্ষিণে তোমার বংশ ছড়িয়ে পড়বে। পৃথিবীর সমস্ত জাতি তোমার ও তোমার বংশের মধ্য দিয়ে আশীর্বাদ পাবে। আমি তোমার সংগে সংগে আছি; তুমি যেখানেই যাও না কেন আমি তোমাকে রক্ষা করব। এই দেশেই আবার আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনব। আমি তোমাকে যা বলেছি তা পূর্ণ না করা পর্যন্ত আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না।” পরে যাকোব ঘুম থেকে উঠে বললেন, “তাহলে সদাপ্রভু নিশ্চয়ই এই জায়গায় আছেন অথচ আমি তা বুঝতে পারি নি।” এই কথা ভেবে তাঁর মনে ভয় হল। তিনি বললেন, “কি ভয়ংকর এই জায়গা! এটা ঈশ্বরের থাকবার জায়গা ছাড়া আর কিছু নয়; স্বর্গের দরজা এখানেই।” যাকোব ভোরে উঠলেন এবং যে পাথরটা তিনি মাথার নীচে দিয়েছিলেন সেটা থামের মত করে দাঁড় করিয়ে তার উপরে তেল ঢেলে দিলেন। তিনি জায়গাটার নাম দিলেন বৈথেল (যার মানে “ঈশ্বরের ঘর”)। এই জায়গাটার কাছের শহরটার আগের নাম ছিল লূস। এর পর যাকোব শপথ করে বললেন, “যদি ঈশ্বর আমার এই যাত্রাপথে আমাকে রক্ষা করেন, যদি তিনি আমাকে খোরাক-পোশাক যুগিয়ে দেন, যদি আমি আবার আমার বাবার বাড়ীতে ভালোয় ভালোয় ফিরে আসতে পারি, তবে এই সদাপ্রভুকেই আমি আমার ঈশ্বর বলে মানব। এই যে পাথর আমি এখানে থামের মত করে দাঁড় করিয়ে রাখলাম এখানেই হবে ঈশ্বরের ঘর। হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে যা কিছু দেবে তার দশ ভাগের এক ভাগ নিশ্চয়ই আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেব।” পরে যাকোব চলতে চলতে পূর্বদেশীয় লোকদের জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে চারদিকে তাকিয়ে তিনি মাঠের মধ্যে একটা কূয়া দেখতে পেলেন। সেই কূয়ার পাশে ভেড়ার তিনটা পাল শুয়ে ছিল। রাখালেরা সেখান থেকেই তাদের জল খাওয়াত। কূয়াটার মুখে খুব বড় একটা পাথর বসানো ছিল। যখন সমস্ত ভেড়ার পাল জড়ো হত তখন রাখালেরা কূয়ার মুখ থেকে পাথরটা সরিয়ে দিয়ে ভেড়াগুলোকে জল খাওয়াত। তারপর পাথরটা আবার কূয়ার মুখে বসিয়ে রাখত। যাকোব রাখালদের জিজ্ঞাসা করলেন, “ভাইয়েরা, আপনারা কোথাকার লোক?” তারা বলল, “হারণ শহরের।” যাকোব তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা কি নাহোরের নাতি লাবনকে চেনেন?” তারা বলল, “হ্যাঁ, চিনি।” যাকোব তাদের বললেন, “তিনি কি ভাল আছেন?” তারা বলল, “হ্যাঁ, তিনি ভালই আছেন। ঐ তো তাঁর মেয়ে রাহেল ভেড়ার পাল নিয়ে আসছে।” যাকোব বললেন, “দেখুন, বেলা পড়তে এখনও অনেক দেরি আছে। সব পশু এক জায়গায় জড়ো হওয়ার সময় এখনও হয় নি। আপনারা বরং আপনাদের ভেড়াগুলোকে জল খাইয়ে আবার চরাতে নিয়ে যান।” কিন্তু তারা বলল, “না, আমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। সব পশুর পাল একসংগে জড়ো হলে পর কূয়ার মুখ থেকে পাথরটা সরানো হবে, আর তখন আমরা ভেড়াগুলোকে জল খাওয়াতে পারব।” যাকোব তখনও সেই লোকদের সংগে কথা বলছেন এমন সময় রাহেল তাঁর বাবার ভেড়াগুলো নিয়ে সেখানে আসলেন, কারণ তিনি সেই পাল চরাতেন। যাকোব তাঁর মামা লাবনের মেয়ে ও তাঁর ভেড়ার পাল দেখে কূয়ার কাছে গেলেন এবং কূয়ার মুখ থেকে পাথরটা সরিয়ে দিয়ে ভেড়াগুলোকে জল খাওয়ালেন। তারপর তিনি রাহেলকে চুম্বন করে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন। তিনি রাহেলকে জানালেন যে, তিনি তাঁর বাবার আত্মীয়, রিবিকার ছেলে। এই কথা শুনে রাহেল দৌড়ে গিয়ে তাঁর বাবাকে সেই খবর দিলেন। লাবন তাঁর বোনের ছেলে যাকোবের আসবার খবর পেয়ে দৌড়ে তাঁর সংগে দেখা করতে গেলেন। তিনি তাঁকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করলেন এবং তাঁকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। তখন যাকোব লাবনকে তাঁর আসবার সব কথা জানালেন। লাবন তাঁকে বললেন, “সত্যিই আমাদের গায়ে একই রক্ত বইছে।” এর পর যাকোব লাবনের বাড়ীতে এক মাস কাটালেন। একদিন লাবন বললেন, “তুমি আমার আত্মীয় বলেই কি বিনা বেতনে আমার কাজ করবে? তোমাকে কি দিতে হবে আমাকে বল।” লাবনের দু’টি মেয়ে ছিল। বড়টির নাম লেয়া আর ছোটটির নাম রাহেল। লেয়ার থাকবার মধ্যে ছিল শুধু দু’টি সুন্দর চোখ, কিন্তু রাহেলের দেহের গড়ন ও চেহারা সবই ছিল সুন্দর। যাকোব রাহেলকে ভালবাসতেন বলে তিনি বললেন, “আপনার ছোট মেয়ে রাহেলের জন্য সাত বছর আমি আপনার কাজ করব।” লাবন বললেন, “রাহেলকে অন্য কোন লোকের হাতে দেবার চেয়ে তোমার হাতে দেওয়াই ভাল। তুমি আমার কাছেই থাক।” এর পর যাকোব রাহেলের জন্য সাত বছর কাজ করলেন। যাকোব রাহেলকে ভালবাসতেন বলে সেই বছরগুলো তাঁর কাছে মাত্র কয়েক দিন বলে মনে হল। তারপর যাকোব লাবনকে বললেন, “আমার কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যাঁর জন্য আমি কাজ করেছি এবার তাঁকে আমার হাতে তুলে দিন যেন তাঁকে নিয়ে আমি বাস করতে পারি।” তখন লাবন সেই এলাকার সব লোকদের ডেকে একটা ভোজ দিলেন। পরে রাত হলে তিনি তাঁর মেয়ে লেয়াকে যাকোবের কাছে দিয়ে আসলেন, আর যাকোবও তাঁর সংগে থাকলেন। লাবন তাঁর দাসী সিল্পাকেও লেয়ার দাসী হিসাবে দিয়েছিলেন। সকাল হলে পর যাকোব আশ্চর্য হয়ে দেখলেন যে, তিনি লেয়া। সেইজন্য তিনি লাবনকে বললেন, “আপনি আমার সংগে এ কি রকম ব্যবহার করলেন? এতদিন কি আমি রাহেলের জন্যই আপনার কাজ করি নি? তবে কেন আপনি আমাকে ঠকালেন?” লাবন বললেন, “বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়ের বিয়ে দেওয়া আমাদের দেশের নিয়ম নয়। তুমি এই বিয়ের উৎসব-সপ্তাটা পার হতে দাও। তারপর অন্য মেয়েটিকেও তোমাকে দেওয়া হবে। তবে তার জন্য তোমাকে আরও সাত বছর আমার কাজ করতে হবে।” যাকোব তাঁর কথা মেনে নিয়ে সেই উৎসব-সপ্তাটা শেষ করলেন। তারপর লাবন তাঁর মেয়ে রাহেলকেও যাকোবের সংগে বিয়ে দিলেন, আর তাঁর দাসী বিল্‌হাকে রাহেলের দাসী হিসাবে দিলেন। যাকোব রাহেলের সংগেও থাকলেন। তিনি লেয়ার চেয়ে রাহেলকে বেশী ভালবাসতেন। এর পর তিনি আরও সাত বছর লাবনের অধীনে কাজ করলেন। লেয়াকে অবহেলা করা হচ্ছে দেখে সদাপ্রভু তাঁকে গর্ভধারণ করবার ক্ষমতা দিলেন, কিন্তু রাহেল বন্ধ্যা হয়ে রইলেন। লেয়া গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর একটি ছেলে হল। তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন রূবেণ (যার মানে “ঐ দেখ, একটি ছেলে”), কারণ তিনি বলেছিলেন, “সদাপ্রভু আমার দুঃখ দেখেছেন, তাই এখন থেকে আমার স্বামী নিশ্চয়ই আমাকে ভালবাসবেন।” এর পর লেয়া আবার গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর আর একটি ছেলে হল। তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন শিমিয়োন (যার মানে “তিনি শোনেন”), কারণ তিনি বলেছিলেন, “আমাকে অবহেলা করবার কথা সদাপ্রভুর কানে গিয়ে পৌঁছেছে, সেইজন্য তিনি আমাকে এই ছেলেটিও দিলেন।” তার পরে তিনি আবার গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর আর একটি ছেলে হল। তিনি বললেন, “এইবার আমার স্বামী আমার সংগে যুক্ত হবেন, কারণ আমি তাঁর তিনটি ছেলে গর্ভে ধারণ করেছি।” এই বলে তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন লেবি (যার মানে “যুক্ত”)। পরে তিনি আবার গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর আর একটি ছেলে হল। তিনি বললেন, “এইবার আমি সদাপ্রভুর গৌরব করব।” তাই তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন যিহূদা (যার মানে “গৌরব”)। তারপর কিছুকালের জন্য তাঁর আর কোন ছেলেমেয়ে হয় নি। রাহেল যখন দেখলেন তিনি যাকোবের কোন সন্তানের মা হতে পারছেন না তখন তাঁর বোনের প্রতি তাঁর মনে হিংসা জাগল। তিনি যাকোবকে বললেন, “আমাকে সন্তান দাও, তা না হলে আমি মরব।” তখন রাহেলের উপর যাকোবের খুব রাগ হল। তিনি বললেন, “আমি ঈশ্বর নাকি? তিনিই তো তোমাকে বন্ধ্যা করেছেন।” রাহেল বললেন, “আমার দাসী বিল্‌হাকে নাও। তুমি তার কাছে যাও যাতে তার মধ্য দিয়ে আমি সন্তান কোলে পাই, আর এইভাবে আমিও একটা পরিবার গড়ে তুলতে পারি।” এই বলে রাহেল তাঁর দাসী বিল্‌হার সংগে যাকোবের বিয়ে দিলেন, আর যাকোবও তার কাছে গেলেন। এতে বিল্‌হা গর্ভবতী হল এবং তার একটি ছেলে হল। তখন রাহেল বললেন, “ঈশ্বর আমার প্রতি সুবিচার করেছেন এবং আমার কান্না শুনে আমাকে একটি ছেলে দিয়েছেন।” এইজন্য তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন দান (যার মানে “সুবিচার”)। পরে রাহেলের দাসী বিল্‌হা আবার গর্ভবতী হল, আর এই নিয়ে দুইবার সে যাকোবের ছেলের মা হল। তখন রাহেল বললেন, “ঈশ্বরকে আমার পক্ষে রেখে আমি আমার বোনের সংগে পাল্লা দিয়েছি আর তাতে আমি জয়ী হয়েছি।” তাই তিনি ছেলেটির নাম দিলেন নপ্তালি (যার মানে “আমার পাল্লা”)। এদিকে লেয়া যখন দেখলেন তাঁর নিজের আর সন্তান হচ্ছে না তখন তিনি তাঁর দাসী সিল্পার সংগে যাকোবের বিয়ে দিলেন। তাতে লেয়ার দাসী সিল্পার গর্ভে যাকোবের একটি ছেলে হল। তখন লেয়া বললেন, “কি সৌভাগ্য আমার!” এই বলে তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন গাদ (যার মানে “সৌভাগ্য”)। পরে সিল্পা আর একবার যাকোবের ছেলের মা হল। তখন লেয়া বললেন, “কি সুখ আমার! স্ত্রীলোকেরা সবাই আমাকে সুখী বলবে।” তাই তিনি ছেলেটির নাম দিলেন আশের (যার মানে “সুখী”)। গম কাটবার সময় রূবেণ মাঠে গিয়ে কতগুলো দূদাফল পেল এবং সেগুলো এনে তার মা লেয়াকে দিল। তখন রাহেল লেয়াকে বললেন, “তোমার ছেলে যে দূদাফল এনেছে তা থেকে আমাকে কয়েকটা দাও।” কিন্তু লেয়া তাঁকে বললেন, “তুমি আমার স্বামীকে দখল করে নিয়েছ, সেটা কি যথেষ্ট হয় নি? আবার তুমি আমার ছেলের আনা দূদাফলও নিতে চাও?” উত্তরে রাহেল বললেন, “তাহলে তোমার ছেলের আনা দূদাফলের বদলে আজ রাতে তিনি তোমার সংগে থাকবেন।” সন্ধ্যাবেলা যাকোবকে মাঠ থেকে ফিরে আসতে দেখেই লেয়া বের হয়ে এসে তাঁকে বললেন, “আজ তুমি আমার সংগে থাকবে, কারণ আমার ছেলের আনা দূদাফল দিয়ে আমি তোমাকে কিনে নিয়েছি।” কাজেই সেই রাতে যাকোব লেয়ার ঘরে শুতে গেলেন। ঈশ্বর লেয়ার প্রার্থনা শুনলেন আর তিনি গর্ভবতী হয়ে পঞ্চমবারের মত যাকোবের ছেলের মা হলেন। তখন লেয়া বললেন, “আমি আমার স্বামীর হাতে আমার দাসীকে দিয়েছিলাম বলে ঈশ্বর আমাকে তার পুরস্কার দিলেন।” সেইজন্য তিনি ছেলেটির নাম দিলেন ইষাখর (যার মানে “পুরস্কার”)। এর পর লেয়া আবার গর্ভবতী হয়ে ষষ্ঠবার যাকোবের ছেলের মা হলেন। তখন লেয়া বললেন, “ঈশ্বর আমাকে খুব ভাল একটা উপহার দিলেন। এখন থেকে আমার স্বামী আমাকে আমার পাওনা সম্মান দেবেন, কারণ আমার গর্ভে তাঁর ছয়টি ছেলের জন্ম হয়েছে।” এই বলে তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন সবূলূন (যার মানে “সম্মান”)। তারপর লেয়ার একটি মেয়ে হল। তিনি মেয়েটির নাম রাখলেন দীণা। এর পরে ঈশ্বর রাহেলের দিকে মনোযোগ দিলেন। তিনি রাহেলের প্রার্থনার উত্তরে তাঁকে গর্ভধারণের ক্ষমতা দান করলেন। এতে রাহেল গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর একটি ছেলে হল। তখন তিনি বললেন, “ঈশ্বর আমার অসম্মান দূর করেছেন।” তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন যোষেফ (যার মানে “তিনি যেন আরও দেন”), কারণ তিনি বলেছিলেন, “সদাপ্রভু আমাকে আরও একটি ছেলে দান করুন।” রাহেলের গর্ভে যোষেফের জন্ম হলে পর যাকোব লাবনকে বললেন, “এবার আমাকে বিদায় দিন যাতে আমি নিজের দেশে এবং নিজের বাড়ীতে ফিরে যেতে পারি। আমার ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীদের জন্যই আমি আপনার কাজ করেছি। এবার তাদের নিয়ে আমাকে চলে যেতে দিন। আপনি তো নিজেই জানেন কিভাবে আমি আপনার কাজ করেছি।” কিন্তু লাবন তাঁকে বললেন, “যদি আমার উপর তোমার অসন্তুষ্ট হবার কোন কারণ না থাকে তবে যেয়ো না। নানা রকম লক্ষণ থেকে আমি বুঝতে পেরেছি যে, তোমার জন্যই সদাপ্রভু আমাকে আশীর্বাদ করেছেন।” তিনি আরও বললেন, “তোমার নিজের বেতন তুমি নিজেই স্থির কর। আমি তা-ই তোমাকে দেব।” কিন্তু যাকোব তাঁকে বললেন, “আমি কিভাবে আপনার কাজ করেছি এবং আমার হাতে আপনার পশুপালের অবস্থা কি হয়েছে, তা আপনি নিজেই জানেন। আমি আসবার আগে আপনার পশুধন বেশী ছিল না, কিন্তু এখন তা বেড়ে গিয়ে অনেক বেশী হয়েছে। আমি যেখানেই পা ফেলেছি সেখানেই সদাপ্রভু আপনাকে আশীর্বাদ করেছেন। কিন্তু এখন আমার নিজের পরিবারের কথা ভাববার সময় হয়েছে।” তখন লাবন বললেন, “তোমাকে আমার কি দিতে হবে?” যাকোব বললেন, “আমাকে আপনার কিছুই দিতে হবে না। তবে আপনি যদি আমার একটা কথা রাখেন তাহলে আমি আবার আপনার পশুর পাল চরাব ও তাদের যত্ন করব। আমি আজই আপনার সমস্ত পশুপালের মধ্যে গিয়ে সেখান থেকে ছোট ছোট এবং বড় বড় ছাপের ভেড়া ও ছাগল আর ভেড়ার কালো বাচ্চাগুলো আলাদা করে রাখতে চাই। সেগুলোই হবে আমার বেতন। ভবিষ্যতে যখনই আপনি আমার বেতনের কথা ভাববেন তখন এগুলো থেকেই প্রমাণ হবে যে, আমি কোন অন্যায় করি নি। ছোট ছোট এবং বড় বড় ছাপ নেই এমন কোন ছাগল আর কালো নয় এমন কোন ভেড়ার বাচ্চা যদি আমার পশুপালের মধ্যে পাওয়া যায় তবে সেগুলো চুরির মাল বলে ধরে নেওয়া হবে।” লাবন বললেন, “বেশ, ভাল কথা। তুমি যা বলেছ তা-ই হোক।” লাবন কিন্তু সেই দিনই তাঁর পশুপাল থেকে যাকোবের পাওনা ডোরাকাটা ও বড় বড় ছাপের সব ছাগল এবং ছোট ছোট ও বড় বড় ছাপের সব ছাগী, অর্থাৎ যাদের গায়ে জায়গায় জায়গায় সাদা লোম ছিল সেগুলো আর ভেড়ার কালো বাচ্চাগুলো সরিয়ে রাখলেন। এগুলোর দেখাশোনার ভার তিনি তাঁর ছেলেদের হাতে দিলেন। তারপর তিনি যাকোবের কাছ থেকে তিন দিনের পথ দূরে সরে গেলেন, আর যাকোব লাবনের বাকী পশুগুলোর দেখাশোনা করতে লাগলেন। পরে যাকোব লিব্‌নী, লূস ও আর্মোণ গাছের কাঁচা ডাল নিয়ে তার উপর থেকে রেখার মত করে ছাল ছাড়িয়ে নিলেন। তাতে মধ্যে মধ্যে তার নীচের সাদা কাঠ দেখা যেতে লাগল। পশুর পাল যখন জল খেতে আসত তখন তিনি সেই ডালগুলো নিয়ে তাদের সামনে জলের গামলাগুলোর মধ্যে রাখতেন। এখানেই তারা জল খাবার জন্য জড়ো হত এবং মিলিত হত। এইভাবে সেই ডালগুলোর সামনে মিলিত হবার পর তাদের যে সব বাচ্চা হত সেগুলো হত ডোরাকাটা না হয় বড় বড় কিম্বা ছোট ছোট ছাপের। যাকোব বাচ্চা-ছাগল ও বাচ্চা-ভেড়াগুলোকে আলাদা করতেন, আর বাচ্চা-ছাগী ও বাচ্চা-ভেড়ীগুলো নিয়ে লাবনের ডোরাকাটা এবং কালো রংয়ের ছাগল-ভেড়ার পালের মধ্যে রাখতেন। এইভাবে তিনি তাঁর নিজের জন্য আলাদা একটা পশুপাল গড়ে তুললেন আর সেটাকে তিনি লাবনের পশুপালের সংগে মেশাতেন না। এছাড়া বেশী শক্তিশালী পশুগুলো মিলিত হওয়ার সময় তিনি তাদের জলের গামলার মধ্যে তাদের চোখের সামনে ঐ ডালগুলো রাখতেন যাতে সেই ডালগুলোর সামনেই তারা মিলিত হয়। কিন্তু তিনি দুর্বল ভেড়া বা ছাগলগুলোর সামনে সেই ডালগুলো রাখতেন না। তাতে লাবনের পশুগুলো হত দুর্বল আর যাকোবের পশুগুলো হত শক্তিশালী। যাকোব এইভাবে খুব ধনী হয়ে উঠলেন। তাঁর পশুপাল, উট, গাধা এবং দাস-দাসীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। যাকোব শুনলেন লাবনের ছেলেরা এই সব কথা বলে বেড়াচ্ছে যে, যাকোব তাদের বাবার সব কিছু নিয়ে নিয়েছে এবং তাদের বাবার সম্পত্তি দিয়েই সে তার এই সব সম্পত্তি করেছে। যাকোব এ-ও লক্ষ্য করলেন যে, তাঁর প্রতি লাবনের আগের সেই মনোভাব আর নেই। তখন সদাপ্রভু যাকোবকে বললেন, “তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের দেশে নিজের লোকদের কাছে ফিরে যাও। আমি তোমার সংগে সংগে আছি।” তখন যাকোব লোক পাঠিয়ে মাঠে যেখানে তাঁর পশুপাল ছিল সেখানে রাহেল ও লেয়াকে ডেকে আনালেন। তারপর তিনি তাঁদের বললেন, “আমি লক্ষ্য করেছি আমার প্রতি তোমাদের বাবার আগের সেই মনোভাব আর নেই, কিন্তু আমার বাবার ঈশ্বর আমার সংগে সংগে আছেন। তোমরা তো জান যে, আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়েই তোমাদের বাবার কাজ করেছি, অথচ তিনি আমাকে ঠকিয়েছেন এবং দশ-দশবার আমার বেতন বদল করেছেন। যাহোক, ঈশ্বর তাঁকে আমার কোন ক্ষতি করতে দেন নি। যখন তোমাদের বাবা বলেছেন, ‘তোমার বেতন হবে এমন সব পশু যাদের গায়ে ছোট ছোট ছাপ আছে,’ তখন পালের সব পশুগুলোই সেই রকম বাচ্চা দিয়েছে। আবার যখন তিনি বলেছেন, ‘তোমার বেতন হবে ডোরাকাটা পশু,’ তখন পালের সব পশুগুলোই ডোরাকাটা বাচ্চা দিয়েছে। ঈশ্বর এইভাবে তোমাদের বাবার পালের পশু নিয়ে আমাকে দিয়েছেন। “একবার পশুগুলো মিলিত হবার সময় আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম। চারদিকে তাকিয়ে আমি যেন দেখলাম, ছাগীদের উপর যে সব ছাগলগুলো উঠছে সেগুলো ডোরাকাটা এবং বড় বড় ও ছোট ছোট ছাপের। স্বপ্নের মধ্যে ঈশ্বরের দূত আমাকে ডাকলেন, ‘যাকোব।’ আমি বললাম, ‘এই যে আমি।’ তিনি বললেন, ‘তুমি চোখ তুলে দেখ, ছাগীদের উপর যে সব ছাগলগুলো উঠছে সেগুলো ডোরাকাটা এবং বড় বড় ও ছোট ছোট ছাপের। লাবন তোমার প্রতি যা করেছে তা সবই আমি দেখেছি। আমি সেই বৈথেলের ঈশ্বর যেখানে তুমি থামের উপর তেল ঢেলে দিয়ে আমার কাছে শপথ করেছিলে। এখন এই দেশ ছেড়ে তোমার জন্মস্থানে ফিরে যাও।’ ” এই কথা শুনে রাহেল ও লেয়া বললেন, “বাবার সম্পত্তির কোন অংশ আমাদের এখনও নেই আর পরেও থাকবে না। তিনি তো আমাদের বাইরের লোক বলেই মনে করেন, কারণ তিনি আমাদের বিক্রি করে দিয়েছেন এবং যা পেয়েছেন তা খেয়ে বসে আছেন। সেইজন্য আমাদের বাবার সম্পত্তি থেকে ঈশ্বর যা নিয়েছেন সেগুলো নিশ্চয়ই এখন আমাদের এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের। কাজেই ঈশ্বর তোমাকে যা বলেছেন তুমি এখন তা-ই কর।” এই সময় লাবন তাঁর ভেড়াগুলোর লোম কাটবার জন্য গিয়েছিলেন, আর এই সুযোগে রাহেল তাঁর বাবার পারিবারিক দেবমূর্তিগুলো চুরি করে নিলেন। যাকোব তাঁর যাওয়ার কথা অরামীয় লাবনকে না জানিয়ে তাঁর উপর একটা চালাকি খাটালেন। এইভাবে যাকোব তাঁর নিজের সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে গেলেন। তিনি ইউফ্রেটিস নদী পার হয়ে গিলিয়দ এলাকার পাহাড়ী অঞ্চলের দিকে যেতে লাগলেন। এর তিন দিনের দিন লাবন জানতে পারলেন যে, যাকোব পালিয়েছেন। তখন তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে যাকোবের পিছনে ধাওয়া করে সাত দিনের পথ গেলেন, আর গিলিয়দের পাহাড়ী অঞ্চলে গিয়ে তাঁর নাগাল পেলেন। কিন্তু ঈশ্বর রাতের বেলা স্বপ্নে অরামীয় লাবনের কাছে এসে বললেন, “সাবধান! যাকোবকে ভাল-মন্দ কিছুই বোলো না।” যাকোব পাহাড়ের উপর তাম্বু ফেলেছিলেন, আর সেখানেই লাবন গিয়ে তাঁকে ধরলেন। লাবন ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরাও গিলিয়দের সেই একই পাহাড়ে তাঁদের তাম্বু ফেললেন। পরে লাবন যাকোবকে বললেন, “তুমি এ কি করলে? কেন আমাকে ঠকালে আর আমার মেয়েদের যুদ্ধে বন্দীর মত করে নিয়ে আসলে? কেন তুমি চালাকি করে আমাকে না বলে গোপনে পালিয়ে আসলে? আমাকে বললে তো আমি আনন্দের সংগে, গান করে, খঞ্জনি ও বীণা বাজিয়ে তোমাকে বিদায় দিতাম। তুমি আমার মেয়েদের ও নাতি-নাত্‌নীদের চুম্বন করতেও আমাকে দিলে না; তুমি বোকার মত কাজ করেছ। তোমাদের ক্ষতি করবার ক্ষমতা যে আমার হাতে নেই, তা নয়। কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর গত রাতে আমাকে বলেছেন, ‘সাবধান! যাকোবকে ভাল-মন্দ কিছুই বোলো না।’ বেশ, তোমার বাবার বাড়ী যাবার জন্যই না হয় তোমার প্রাণ কাঁদছিল আর তাই তুমি বেরিয়ে পড়েছ, কিন্তু আমার পারিবারিক দেবতাগুলো চুরি করে এনেছ কেন?” যাকোব উত্তরে তাঁকে বললেন, “আমার ভয় হয়েছিল, কারণ আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো জোর করে আপনার মেয়েদের আমার কাছ থেকে কেড়ে রেখে দেবেন। তাই আমি পালিয়ে এসেছি। আপনি যার কাছে আপনার ঐ দেবতাগুলো পাবেন তাকে মেরে ফেলা হবে। আমার সমস্ত জিনিসপত্রের মধ্যে যদি আপনার কোন কিছু থেকে থাকে তবে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের সামনে তা খোঁজ করে নিয়ে নিন।” সেই দেবমূর্তিগুলো যে রাহেলই চুরি করে এনেছেন তা যাকোব জানতেন না। তখন লাবন একে একে যাকোব, লেয়া ও দুই দাসীর তাম্বুতে ঢুকলেন কিন্তু সেখানে তিনি সেগুলো পেলেন না। পরে তিনি লেয়ার তাম্বু থেকে বের হয়ে রাহেলের তাম্বুতে গিয়ে ঢুকলেন। রাহেল কিন্তু সেই দেবমূর্তিগুলো নিয়ে উটের গদির নীচে রেখেছিলেন এবং সেই সময় তিনি সেই গদির উপরে বসে ছিলেন। লাবন তাঁর তাম্বুর সব জায়গায় হাত্‌ড়ে দেখলেন কিন্তু সেখানেও সেগুলো পেলেন না। শেষে রাহেল তাঁর বাবাকে বললেন, “দেখুন, আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি না বলে আপনি বিরক্ত হবেন না, কারণ এখন আমার মাসিকের সময়।” কাজেই লাবন খোঁজাখুঁজি করেও সেই দেবমূর্তিগুলো পেলেন না। তখন যাকোব রেগে গিয়ে ঝগড়ার সুরে লাবনকে বললেন, “আমার অপরাধ কোথায়, আর আমার অন্যায়ই বা কোথায় যে, আপনি এমনি করে আমার পিছনে তাড়া করে এসেছেন? আমার সমস্ত জিনিসপত্র হাত্‌ড়ে দেখে আপনার সংসারের কোন্‌ জিনিসটা পেলেন? পেয়ে থাকলে তা আমার ও আপনার আত্মীয়-স্বজনদের সামনে রাখুন যাতে তাঁরা আমাদের দুই পক্ষেরই বিচার করতে পারেন। আমি এই বিশ বছর আপনার সংগে কাটিয়েছি। এর মধ্যে আপনার কোন ভেড়ী বা ছাগীর গর্ভ নষ্ট হয় নি, কিম্বা আপনার পালের কোন ভেড়াও আমি মেরে খাই নি। এমন কি, বুনো জন্তুর মেরে ফেলা কোন পশুও আমি আপনার কাছে নিয়ে যাই নি। সেই ক্ষতি আমি নিজেই বহন করেছি। কোন পশু চুরি হয়ে গেলে- তা দিনে হোক বা রাতে হোক- আপনি আমার কাছ থেকে তার ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। আমি দিনে পুড়েছি গরমে আর রাতে কেঁপেছি ঠাণ্ডায়, আমার চোখে ঘুম ছিল না। এ-ই ছিল আমার অবস্থা। যে বিশ বছর আমি আপনার বাড়ীতে ছিলাম তার চৌদ্দ বছর আমি আপনার কাজ করেছি আপনার দুই মেয়ের জন্য, আর ছয় বছর কেটেছে আপনার পশুপালের পিছনে। এর মধ্যে আপনি দশ-দশবার আমার বেতন বদল করেছেন। আমার বাবার ঈশ্বর, যিনি অব্রাহামের ঈশ্বর এবং ইস্‌হাকের ভক্তির পাত্র, তিনি যদি আমার সংগে না থাকতেন তবে নিশ্চয়ই আপনি এখন আমাকে খালি হাতেই বিদায় করতেন। ঈশ্বর আমার কষ্ট ও কঠিন পরিশ্রম দেখেছেন। সেইজন্যই তিনি গত রাতে এর সুবিচার করেছেন।” এই কথার উত্তরে লাবন যাকোবকে বললেন, “এই মেয়েরা আমারই মেয়ে, এই ছেলেমেয়েরা আমারই নাতি-নাত্‌নী, আর এই সব পশুর পালও আমার। তুমি এখানে যা কিছু দেখছ তা সবই আমার; তবু আজকে আমার এই মেয়েদের বা তাদের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে আমার করবার কিছু নেই। তার চেয়ে এস, আমরা দু’জনে একটা চুক্তি করি যা তোমার ও আমার মধ্যে সাক্ষী হয়ে থাকবে।” লাবন সেই ঢিবির নাম রাখলেন যিগর্‌-সাহদূথা (যার মানে “সাক্ষ্য-ঢিবি”), কিন্তু যাকোব তাঁর নিজের ভাষায় তার নাম দিলেন গল্‌-এদ (যার মানেও “সাক্ষ্য-ঢিবি”)। লাবন বললেন, “এই ঢিবিটাই আজ তোমার ও আমার মধ্যে সাক্ষী হয়ে রইল।” এইজন্য এই ঢিবিটার নাম দেওয়া হয়েছিল গল্‌-এদ। তা ছাড়া এর আর একটা নাম দেওয়া হয়েছিল মিসপা (যার মানে “পাহারা-স্থান”), কারণ লাবন বলেছিলেন, “আমরা যখন আর একে অন্যকে দেখব না তখন সদাপ্রভুই যেন আমার ও তোমার উপর চোখ রাখেন। যদি তুমি আমার মেয়েদের সংগে খারাপ ব্যবহার কর, কিম্বা আমার মেয়েরা থাকতেও অন্য স্ত্রী গ্রহণ কর, তবে আর কেউ আমাদের সংগে না থাকলেও মনে রেখো, ঈশ্বরই আমাদের সাক্ষী হয়ে রইলেন।” লাবন যাকোবকে আরও বললেন, “এই ঢিবির দিকে চেয়ে দেখ, আর এই যে থামটা আমি আমার ও তোমার মধ্যে রেখেছি সেটার দিকেও চেয়ে দেখ। এই ঢিবি আর থাম দু’টাই এই কথার সাক্ষী হয়ে রইল যে, এই ঢিবি পার হয়ে আমি তোমার ক্ষতি করতে যাব না, আর তুমিও এই ঢিবি কিম্বা থাম পার হয়ে আমার ক্ষতি করতে আসবে না। তা করলে অব্রাহামের ঈশ্বর এবং নাহোর ও তাঁদের বাবার দেবতারাই যেন আমাদের বিচার করেন।” যাকোব কিন্তু তাঁরই নামে শপথ করলেন যিনি তাঁর বাবা ইস্‌হাকের ভক্তির পাত্র ছিলেন। এর পর যাকোব সেই পাহাড়ে পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন এবং তাঁর আত্মীয়দের খাওয়া-দাওয়া করতে ডাকলেন। খাওয়া-দাওয়ার পর সেই পাহাড়ের উপরেই তাঁরা রাতটা কাটালেন। পরদিন খুব ভোরে উঠে লাবন তাঁর মেয়েদের ও নাতি-নাত্‌নীদের চুম্বন ও আশীর্বাদ করলেন। তারপর বিদায় নিয়ে তিনি তাঁর বাড়ীর দিকে ফিরে চললেন। যাকোবও তাঁর পথে চললেন। পথে এক জায়গায় তিনি ঈশ্বরের দূতদের দেখলেন। তাঁদের দেখে তিনি বললেন, “এটা ঈশ্বরের ছাউনি।” এইজন্য তিনি সেই জায়গার নাম রাখলেন মহনয়িম (যার মানে “দুই ছাউনি”)। যাকোব তাঁর আগে আগে সেয়ীর, অর্থাৎ ইদোম দেশে তাঁর ভাই এষৌর কাছে কয়েকজন লোক পাঠালেন। তিনি তাদের বলে দিলেন যেন তারা তাঁর মনিব এষৌকে জানায় যে, তাঁর দাস যাকোব বলছে, “আমি এই পর্যন্ত লাবনের কাছে ছিলাম। আমার গরু-গাধা, ছাগল-ভেড়া এবং দাস-দাসী সবই আছে। আমার মনিবের কাছে দয়া পাব এই আশা করেই আমি আগে থেকেই আপনাকে খবর দিচ্ছি।” লোকগুলো ফিরে এসে যাকোবকে বলল, “আমরা আপনার ভাই এষৌর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি এখন চারশো লোক নিয়ে আপনার সংগে দেখা করতে আসছেন।” এই কথা শুনে ভীষণ ভয়ে যাকোবের মন অস্থির হয়ে উঠল। তিনি তাঁর সংগের লোকজন, ছাগল-ভেড়া, গরু-গাধা ও উট দুই দলে ভাগ করলেন। তিনি ভাবলেন, এষৌ যদি এসে এক দলকে আক্রমণ করে তবে অন্য দলটি পালাতে পারবে। যাকোব ঈশ্বরের কাছে এই বলে প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহামের ঈশ্বর, আমার বাবা ইস্‌হাকের ঈশ্বর, তুমিই তো আমাকে বলেছ আমার দেশে, আমার নিজের লোকদের কাছে ফিরে যেতে, আর সেখানেই তুমি আমার মংগল করবে। তোমার এই দাসকে তুমি যে সমস্ত দয়া ও বিশ্বস্ততা দেখিয়েছ আমি তার যোগ্য নই। কেবল একখানা লাঠি হাতে নিয়ে আমি এই যর্দন নদী পার হয়েছিলাম, কিন্তু এখন আমার সংগে রয়েছে দু’টা বড় দল। আমি মিনতি করি, আমার ভাই এষৌর হাত থেকে তুমি আমাকে রক্ষা কর। আমার ভয় হচ্ছে সে এসে আমাদের মেরে ফেলবে, মা-শিশু কাউকেই রেহাই দেবে না। কিন্তু তুমি তো বলেছিলে, ‘আমি নিশ্চয়ই তোমার মংগল করব এবং তোমার বংশের লোকদের সমুদ্র পারের বালুকণার মত করব যা গুণে শেষ করা যায় না।’ ” যাকোব সেই রাতটা সেখানেই কাটালেন। তাঁর যা কিছু ছিল তার মধ্য থেকে তিনি তাঁর ভাই এষৌর জন্য একটা উপহার ঠিক করে রাখলেন। সেগুলো বিভিন্ন দলে ভাগ করে দাসদের হাতে দিয়ে তিনি তাদের বলে দিলেন, “প্রত্যেকটি দলের শেষে কিছু জায়গা রেখে তোমরা আমার আগে আগে যাও।” প্রথম দলের দাসকে তিনি আদেশ দিয়ে বললেন, “আমার ভাই এষৌর সংগে দেখা হলে তিনি যখন জিজ্ঞাসা করবেন, ‘কোথায় যাচ্ছ? তুমি কার লোক? তোমার সামনের ঐ পশুগুলোই বা কার? ’ তখন তুমি বলবে, ‘এগুলো আপনার দাস যাকোবের। তিনি আমার মনিব এষৌর জন্য এই উপহার পাঠিয়েছেন, আর তিনি আমাদের পিছনেই আছেন।’ ” এইভাবে তিনি দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অন্যান্য দাস যারা পশুর দল নিয়ে যাচ্ছিল তাদের প্রত্যেককেই আদেশ দিলেন, “এষৌর সংগে দেখা হলে তোমরাও ঠিক এই কথাই বলবে। আর শেষে বলবে, ‘আপনার দাস যাকোব আমাদের পিছনেই আছেন।’ ” যাকোব মনে মনে এই চিন্তা করলেন, “আমার আগে আগে যে উপহার যাচ্ছে তা দিয়ে আমি তাঁকে শান্ত করে নেব। তার পরে যখন তাঁর সংগে আমার দেখা হবে তখন আমাকে গ্রহণ করতে হয়তো তাঁর কোন আপত্তি থাকবে না।” কাজেই উপহারের জিনিসগুলো তাঁর আগে চলে গেল, কিন্তু সেই রাতটা তিনি সেখানেই কাটালেন। সেই রাতেই যাকোব উঠে তাঁর দুই স্ত্রী, দুই দাসী ও এগারোজন ছেলেকে হেঁটে পার হওয়া যায় এমন একটা জায়গা দিয়ে যব্বোক নদীর ওপারে রেখে আসলেন। তাঁর আর যা কিছু ছিল সেই সবও তাদের সংগে পাঠিয়ে দিলেন। তাতে যাকোব একাই রয়ে গেলেন। তখন একজন লোক এসে ভোর না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সংগে কুস্তি করলেন। সেই লোকটি যখন দেখলেন যে, তিনি যাকোবকে হারাতে পারছেন না তখন কুস্তি চলবার সময় তিনি যাকোবের ঊরুর জোড়ায় আঘাত করলেন। তাতে তাঁর ঊরুর হাড় ঠিক জায়গা থেকে সরে গেল। তখন সেই লোকটি বললেন, “ভোর হয়ে আসছে, এবার আমাকে ছেড়ে দাও।” যাকোব বললেন, “আমাকে আশীর্বাদ না করা পর্যন্ত আমি আপনাকে ছাড়ব না।” লোকটি বললেন, “তোমার নাম কি?” তিনি বললেন, “আমার নাম যাকোব।” লোকটি বললেন, “তুমি ঈশ্বর ও মানুষের সংগে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছ বলে তোমার নাম আর যাকোব থাকবে না, তোমার নাম হবে ইস্রায়েল (যার মানে ‘যিনি ঈশ্বরের সংগে যুদ্ধ করেন’)।” যাকোব তাঁকে বললেন, “মিনতি করি, আপনি বলুন আপনার নাম কি?” তিনি বললেন, “তুমি আমার নাম জিজ্ঞাসা করছ কেন?” এই কথা বলেই তিনি যাকোবকে আশীর্বাদ করলেন। তখন যাকোব সেই জায়গাটার নাম রাখলেন পনূয়েল (যার মানে “ঈশ্বরের মুখ”)। তিনি বললেন, “আমি ঈশ্বরকে সামনাসামনি দেখেও বেঁচে রয়েছি।” যাকোব যখন পনূয়েল থেকে রওনা দিলেন তখন সূর্য উঠে গেছে। তাঁর ঊরুর অবস্থার জন্য তিনি খোঁড়াতে লাগলেন। এইজন্যই ইস্রায়েলীয়েরা আজও ঊরুর জোড়ার উপরকার মাংস খায় না, কারণ ঊরুর জোড়ার উপরেই যাকোবকে আঘাত করা হয়েছিল। পথ চলতে চলতে যাকোব দেখলেন যে, এষৌ চারশো লোক সংগে নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি তখন লেয়া, রাহেল আর সেই দুই দাসীর মধ্যে সন্তানদের ভাগ করে দিলেন। দাসী ও তাদের সন্তানদের তিনি প্রথমে রাখলেন। তারপর রাখলেন লেয়া ও তাঁর সন্তানদের এবং শেষে রাখলেন রাহেল ও যোষেফকে। কিন্তু তিনি নিজে তাঁদের আগে আগে গেলেন। যেতে যেতে তিনি মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে সাতবার ভাইকে প্রণাম করলেন এবং এইভাবে তাঁর কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তখন এষৌ তাঁর কাছে দৌড়ে এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরে তাঁর কাঁধে মাথা রাখলেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন। তারপর তাঁরা দু’জনেই কাঁদতে লাগলেন। পরে এষৌ মুখ তুলে ঐ সব স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়েদের দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার সংগে এরা কারা?” যাকোব বললেন, “ঈশ্বর দয়া করে আপনার দাসকে এই সব ছেলেমেয়ে দিয়েছেন।” প্রথমে দাসীরা তাদের সন্তানদের নিয়ে এগিয়ে গিয়ে এষৌকে প্রণাম করল। তারপর লেয়া তাঁর সন্তানদের নিয়ে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন। শেষে রাহেল আর যোষেফ এগিয়ে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন। তখন এষৌ বললেন, “যে সব দলবলের সংগে পথে আমার দেখা হল সেগুলো কিসের জন্য?” যাকোব বললেন, “ওগুলো আমার মনিবের কাছ থেকে দয়া পাবার জন্য।” কিন্তু এষৌ বললেন, “ভাই, আমার যথেষ্ট আছে। তোমার যা আছে তা তোমারই থাক্‌।” যাকোব বললেন, “না, না, আমি আপনাকে মিনতি করে বলছি, যদি আমার উপর আপনার দয়া থাকে তবে আমার দেওয়া এই উপহার আপনি নিন। যখন আপনি আমাকে খুশী মনে গ্রহণই করেছেন তখন আমার কাছে আপনার মুখ দেখা ঈশ্বরের মুখ দেখার মতই। ঈশ্বর আমার প্রতি দয়া করেছেন, আর আমার যথেষ্ট আছে। সেইজন্য এই যে উপহার আপনার কাছে আনা হয়েছে তা আপনি নিন।” যাকোব এইভাবে সাধাসাধি করবার পর এষৌ তা গ্রহণ করলেন। পরে এষৌ বললেন, “চল, এবার আমরা যাই। আমি তোমার সংগে সংগেই যাব।” যাকোব তাঁকে বললেন, “কিন্তু প্রভু, আপনি তো জানেন যে, এই সব ছেলেমেয়েদের বয়স বেশী নয়। তা ছাড়া যে সব গরু ও ভেড়া তাদের বাচ্চাকে দুধ দিচ্ছে তাদের কথাও আমাকে ভাবতে হবে। যদি একদিনও এদের তাড়াহুড়া করে নিয়ে যাওয়া হয় তবে সবগুলোই মরে যাবে। না প্রভু, তার চেয়ে বরং আপনি আমার আগে আগেই যান। সেয়ীরে আপনার কাছে গিয়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত সামনের পশুপাল এবং ছেলেমেয়েদের চলবার ক্ষমতা বুঝে আমাকে ধীরেসুস্থেই চলতে হবে।” তখন এষৌ বললেন, “তাহলে আমার সংগের কয়েকজন লোককে আমি তোমার কাছে রেখে যাই।” যাকোব বললেন, “তার কি দরকার? আমার মনিবের কাছ থেকে আমি দয়া পেয়েছি সেটাই তো যথেষ্ট।” কাজেই এষৌ সেই দিনই সেয়ীরের পথে রওনা হয়ে গেলেন, আর যাকোব যাত্রা করে সুক্কোতে গিয়ে পৌঁছালেন। তিনি নিজের জন্য সেখানে একটা ঘর তৈরী করলেন এবং তাঁর পশুপালের জন্য কয়েকটা কুঁড়ে-ঘর তৈরী করলেন। এইজন্যই সেই জায়গাটার নাম হয়েছিল সুক্কোৎ (যার মানে “কুঁড়ে-ঘর”)। সেখানে তিনি একটা বেদী তৈরী করে তার নাম দিলেন এল্‌-ইলোহে-ইস্রায়েল (যার মানে “ইস্রায়েলের ঈশ্বরই ঈশ্বর”)। দীণার প্রতি তার টান খুব বেশী হল। সে তাকে ভালবেসে ফেলল এবং তার কাছে ভালবাসার কথা বলতে লাগল। পরে শিখিম তার বাবা হমোরকে বলল, “এই মেয়েটির সংগে আমার বিয়ের বন্দোবস্ত কর।” শিখিম যে তাঁর মেয়ে দীণার ইজ্জত নষ্ট করেছে সেই কথা যাকোবের কানে গেল। কিন্তু তাঁর ছেলেরা তখন পশুপাল নিয়ে মাঠে ছিল, কাজেই তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি চুপ করে রইলেন। শিখিমের বাবা হমোর যাকোবের সংগে কথা বলবার জন্য শহর থেকে বের হয়ে আসল। এর মধ্যে কথাটা শুনে যাকোবের ছেলেরা মাঠ থেকে ফিরে আসল। তারা যেমন মনে কষ্ট পেল তেমনি ভীষণ রেগেও গেল, কারণ যাকোবের মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করে শিখিম ইস্রায়েলের প্রতি একটা অপমানের কাজ করেছিল, যা করা তার মোটেই উচিত ছিল না। কিন্তু হমোর যাকোব ও তাঁর ছেলেদের বলল, “আপনার মেয়ের প্রতি আমার ছেলের প্রাণের টান রয়েছে। আমার ছেলের সংগে আপনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিন। আমাদের সংগে আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা চালু করুন। আপনাদের মেয়েদের আমাদের দিন এবং আমাদের মেয়েদের আপনারা নিন। আপনারা আমাদের মধ্যে বাস করুন। গোটা দেশটাই তো আপনাদের সামনে পড়ে আছে। আপনারা এখানেই থাকুন, খুশী মত চলাফেরা করুন এবং ধন-সম্পত্তির মালিক হন।” এছাড়া শিখিমও মেয়েটির বাবা ও ভাইদের বলল, “আমার উপর যদি আপনাদের দয়া হয়, তবে আপনারা আমার কাছে যা চাইবেন আমি তা-ই দেব। এই বিয়ের পণ আর উপহার হিসাবে আপনারা যা দাবি করবেন আমি তা সবই দেব। আপনারা কেবল মেয়েটিকে আমার সংগে বিয়ে দিন।” তবে একটা কাজ করলে আমরা এতে রাজী হতে পারি। সেটা হল, আপনাদের প্রত্যেকটি পুরুষকে সুন্নত করিয়ে আমাদের মত হতে হবে। তাহলে আমাদের মেয়েদের আপনাদের দেব এবং আপনাদের মেয়েদের আমরা নেব; আর আমরা আপনাদের সংগে এক জাতি হয়ে বাস করব। কিন্তু যদি আপনারা আমাদের কথা না শোনেন এবং সুন্নত করাবার কথা মেনে না নেন, তবে আমাদের মেয়েকে নিয়ে আমরা এখান থেকে চলে যাব।” তাদের এই কথায় হমোর ও তার ছেলে শিখিম খুশী হল। পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানী লোক শিখিম আর দেরি না করে কথাটা মেনে নিল, কারণ যাকোবের মেয়ের প্রতি তার খুব টান ছিল। সেইজন্য শহরের ফটকের কাছে গিয়ে হমোর ও তার ছেলে শিখিম সেখানকার লোকদের বলল, “এই লোকেরা আমাদের বন্ধু। আমাদের দেশে তাদের থাকবার জন্য অনেক জায়গাও রয়েছে। এরা এখানেই থাকুক আর খুশীমত চলাফেরা করুক। চলুন, আমরা তাদের মেয়েদের নিই এবং আমাদের মেয়েদেরও তাদের দিই। শুধুমাত্র একটা কাজ করলে তারা আমাদের সংগে বাস করে এক জাতি হতে রাজী আছে। সেটা হল, তাদের মত করে আমাদের মধ্যেকার প্রত্যেকটি পুরুষের সুন্নত করাতে হবে। তাদের গরু-ভেড়া, বিষয়-সম্পত্তি এবং সমস্ত পশুপাল আমাদের মধ্যেই থাকবে। তাই আসুন, আমরা তাদের কথায় রাজী হই। তাহলে তারা আমাদের সংগে বাস করবে।” এতে শহরের পুরুষ লোকেরা সকলেই হমোর ও তার ছেলে শিখিমের কথায় রাজী হল, আর তাদের সকলের সুন্নত করানো হল। এর তিন দিনের দিন যখন পুরুষেরা ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিল তখন দীণার নিজের ভাই, অর্থাৎ যাকোবের দুই ছেলে শিমিয়োন ও লেবি তলোয়ার নিয়ে শহরে ঢুকে প্রতিটি পুরুষকে মেরে ফেলল। এই রকম কিছু হবে বলে শহরের কারও মনে কোন সন্দেহ ছিল না। তারা হমোর আর তার ছেলেকেও মেরে ফেলল এবং শিখিমের ঘর থেকে দীণাকে নিয়ে চলে আসল। যে শহরে তাদের বোনের ইজ্জত নষ্ট করা হয়েছিল যাকোবের অন্য সব ছেলেরা সেখানে ঢুকে মৃত দেহগুলো দেখতে পেল এবং শহরটা লুট করল। শহরের ভিতরে এবং বাইরে লোকদের যত গরু-ভেড়া এবং গাধা ছিল তারা সেগুলোও নিয়ে নিল। তারা তাদের সমস্ত ধন-দৌলৎ এবং তাদের ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীদের লুট করে নিল; এমন কি, তাদের ঘরের মধ্যে যা ছিল তাও বাদ পড়ল না। যাকোব এর পরে শিমিয়োন ও লেবিকে বললেন, “তোমরা এই দেশের লোকদের কাছে, বিশেষ করে কনানীয় ও পরিষীয়দের কাছে আমাকে ঘৃণার পাত্র করে তুলে বিপদে ফেলেছ। আমার লোকেরা সংখ্যায় কম। তারা একত্র হয়ে আমাকে আক্রমণ করবে, আর তাতে পরিবার সুদ্ধ আমি মারা পড়ব।” এতে শিমিয়োন ও লেবি বলল, “কিন্তু আমাদের বোনকে কি কারও বেশ্যা ভাবা উচিত?” এর পর ঈশ্বর যাকোবকে বললেন, “তুমি এখন বৈথেলে গিয়ে থাক। তোমার ভাই এষৌর কাছ থেকে পালিয়ে যাবার সময় যিনি তোমাকে দেখা দিয়েছিলেন সেই ঈশ্বরের উদ্দেশে তুমি সেখানে একটা বেদী তৈরী কর।” তখন যাকোব তাঁর নিজের লোকদের ও সংগের অন্যান্য লোকদের বললেন, “তোমাদের কাছে যে সব দেবমূর্তি আছে তা ফেলে দাও ও নিজেদের শুচি করে নাও এবং তোমাদের কাপড়-চোপড়ও বদলে ফেল। তারপর চল, আমরা বৈথেলে যাই। সেখানে আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করব যিনি আমার বিপদের দিনে এগিয়ে এসেছিলেন এবং সব জায়গাতেই আমার সংগে সংগে থেকেছেন।” তখন তাদের কাছে যত দেবমূর্তি ছিল সেগুলো তারা যাকোবের হাতে তুলে দিল। সেই সংগে কানের গহনাগুলোও দিল। যাকোব সেগুলো নিয়ে শিখিম শহরের কাছে এলোন গাছটার নীচে পুঁতে রাখলেন। তারপর তারা রওনা হল। তাদের যাওয়ার পথে ঈশ্বর আশেপাশের শহরের লোকদের মধ্যে এমন একটা ভয়ের ভাব সৃষ্টি করলেন যার ফলে যাকোবের লোকদের পিছনে কেউ তাড়া করে গেল না। যাকোব ও তাঁর সংগের অন্য সবাই কনান দেশের লূস শহরে, অর্থাৎ বৈথেলে গিয়ে পৌঁছালেন। সেখানে তিনি একটা বেদী তৈরী করলেন। তিনি সেই জায়গাটার নাম দিলেন এল্‌-বৈথেল (যার মানে “বৈথেলের ঈশ্বর”), কারণ ভাইয়ের কাছ থেকে পালিয়ে আসবার সময় ঈশ্বর সেখানেই তাঁর কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যে রিবিকার ধাইমা দবোরা মারা গেলেন। তাঁকে বৈথেলের কাছে একটা এলোন গাছের নীচে কবর দেওয়া হল। সেইজন্য সেই জায়গাটার নাম রাখা হল অলোন্‌-বাখুৎ (যার মানে “কান্না-গাছ”)। ঈশ্বর তাঁকে আরও বললেন, “আমিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর। তুমি অনেক সন্তানের পিতা হয়ে সংখ্যায় বেড়ে ওঠো। তোমার মধ্য থেকেই একটা জাতি গড়ে উঠবে, আর গড়ে উঠবে একটা বহু গোষ্ঠীর জাতি। তোমার বংশে অনেক রাজার জন্ম হবে। যে দেশ আমি অব্রাহাম আর ইস্‌হাককে দিয়েছিলাম সেই দেশ আমি তোমাকে দেব। সেই দেশ আমি তোমার পরে তোমার বংশের লোকদের দেব।” ঈশ্বর যে জায়গায় যাকোবের সংগে কথা বলেছিলেন পরে তিনি সেখান থেকে উপরের দিকে উঠে গেলেন। ঠিক সেই জায়গাতেই যাকোব একটা পাথর থামের মত করে খাড়া করলেন এবং তার উপর তিনি ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তার উপর তিনি তেলও ঢেলে দিলেন। ঈশ্বর যেখানে তাঁর সংগে কথা বলেছিলেন যাকোব সেই জায়গার নাম রাখলেন বৈথেল। তারপর যাকোব ও তাঁর পরিবার বৈথেল থেকে যাত্রা করলেন। তাঁরা ইফ্রাথের পথে কিছু দূর যেতেই রাহেলের প্রসব-বেদনা শুরু হল এবং তাঁর খুব কষ্ট হতে লাগল। প্রসব কালে তাঁর যন্ত্রণা যখন ভীষণ বেড়ে গেল তখন ধাত্রী তাঁকে বলল, “ভয় কোরো না, এবারও তোমার একটা ছেলে হবে।” কিন্তু রাহেল মারা গেলেন। মারা যাবার সময় তিনি ছেলেটির নাম রাখলেন বিনোনী (যার মানে “আমার দুঃখের ছেলে”)। কিন্তু তার বাবা তার নাম রাখলেন বিন্যামীন (যার মানে “সৌভাগ্যের ছেলে”)। রাহেলের মৃত্যু হলে পর ইফ্রাথে, অর্থাৎ বৈৎলেহমে যাবার পথেই তাঁকে কবর দেওয়া হল। যাকোব তাঁর কবরের উপরে থামের মত করে একটা পাথর স্থাপন করলেন। সেটা আজও রাহেলের কবরের চিহ্ন হিসাবে সেখানেই আছে। এর পর ইস্রায়েল, অর্থাৎ যাকোব আবার চলতে লাগলেন। তিনি মিগ্‌দল-এদর নামে জায়গাটা পিছনে ফেলে এসে তাঁর তাম্বু ফেললেন। ইস্রায়েল যখন সেই এলাকায় বাস করছিলেন তখন রূবেণ তার বাবার উপস্ত্রী বিল্‌হার সংগে ব্যভিচার করল। কথাটা ইস্রায়েলের কানে গেল। যাকোবের বারোজন ছেলে ছিল। লেয়ার গর্ভে যাকোবের প্রথম সন্তান রূবেণের জন্ম হয়েছিল। তারপর জন্মেছিল শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন। রাহেলের গর্ভে জন্মেছিল যোষেফ আর বিন্যামীন। রাহেলের দাসী বিল্‌হার গর্ভে জন্মেছিল দান আর নপ্তালি। লেয়ার দাসী সিল্পার গর্ভে জন্মেছিল গাদ আর আশের। পদ্দন-অরামে যাকোবের এই সব ছেলেদের জন্ম হয়েছিল। শেষে যাকোব কিরিয়ৎ-অর্বের, অর্থাৎ হিব্রোণের কাছে মম্রি শহরে তাঁর বাবা ইস্‌হাকের কাছে আসলেন। এই এলাকাতেই অব্রাহাম ও ইস্‌হাক বাস করতেন। ইস্‌হাক একশো আশি বছর বেঁচে ছিলেন। একটি পরিপূর্ণ জীবন কাটিয়ে তিনি বুড়ো বয়সে মারা গিয়ে তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন। তাঁর ছেলে এষৌ আর যাকোব তাঁকে কবর দিলেন। এই হল এষৌর, অর্থাৎ ইদোমের বংশের কথা। এষৌ কনানীয় মেয়েদের বিয়ে করেছিলেন। সেই মেয়েরা হল হিত্তীয় এলোনের মেয়ে আদা আর হিব্বীয় সিবিয়োনের নাত্‌নী, অর্থাৎ অনার মেয়ে অহলীবামা। এছাড়া তিনি ইশ্মায়েলের মেয়ে, অর্থাৎ নবায়োতের বোন বাসমত্‌কেও বিয়ে করেছিলেন। এদের মধ্যে আদার গর্ভে ইলীফস এবং বাসমতের গর্ভে রূয়েলের জন্ম হয়েছিল; আর অহলীবামার গর্ভে যিয়ূশ, যালম ও কোরহের জন্ম হয়েছিল। কনান দেশেই এষৌর এই সব ছেলেদের জন্ম হয়েছিল। পরে এষৌ তাঁর স্ত্রীদের, ছেলেমেয়েদের এবং বাড়ীর অন্য সবাইকে আর গরু, ভেড়া, অন্যান্য পশু ও কনান দেশে আয় করা সমস্ত ধন-দৌলৎ নিয়ে তাঁর ভাই যাকোবের কাছ থেকে অনেক দূরে আর একটা দেশে চলে গেলেন। এষৌ আর যাকোবের পশুধন এত বেশী ছিল যে, তাঁদের পক্ষে এক সংগে বাস করা সম্ভব হল না; তাঁরা যেখানে ছিলেন সেখানে তাঁদের দু’জনের পশুপাল চরাবার মত যথেষ্ট জায়গা ছিল না। সেইজন্য এষৌ সেয়ীরের পাহাড়ী এলাকাতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করতে লাগলেন। এষৌর আর এক নাম ছিল ইদোম। এই হল সেয়ীরের পাহাড়ী এলাকায় ইদোমীয়দের পূর্বপুরষ এষৌর বংশের কথা। এষৌর ছেলেদের নাম ইলীফস আর রূয়েল। ইলীফস আদার ছেলে ও রূয়েল বাসমতের ছেলে। ইলীফসের ছেলেরা হল তৈমন, ওমার, সফো, গয়িতম ও কনস। এষৌর ছেলে ইলীফসের তিম্না নামে একজন উপস্ত্রী ছিল। তার গর্ভে অমালেকের জন্ম হয়েছিল। এরা সবাই এষৌর স্ত্রী আদার নাতি। রূয়েলের ছেলেরা হল নহৎ, সেরহ, শম্ম ও মিসা। এরা এষৌর স্ত্রী বাসমতের নাতি। সিবিয়োনের নাত্‌নীর, অর্থাৎ অনার মেয়ে অহলীবামার ছেলেরা হল যিয়ূশ, যালম ও কোরহ। এষৌর ছেলেদের মধ্যে কয়েকজন গোষ্ঠীর সর্দার হয়েছিলেন। এষৌর বড় ছেলে ইলীফসের যে ছেলেরা সর্দার হয়েছিলেন তাঁরা হলেন তৈমন, ওমার, সফো, কনস, কোরহ, গয়িতম ও অমালেক। ইদোম দেশে এঁরাই ছিলেন আদার ছেলে ইলীফসের বংশধর। রূয়েলের যে ছেলেরা গোষ্ঠী-সর্দার হয়েছিলেন তাঁরা হলেন নহৎ, সেরহ, শম্ম ও মিসা। এঁরা ছিলেন এষৌর স্ত্রী বাসমতের ছেলে রূয়েলের বংশধর। ইদোম দেশে এঁদের জন্ম হয়েছিল। এষৌর স্ত্রী অহলীবামার যে ছেলেরা গোষ্ঠী-সর্দার হয়েছিলেন তাঁরা হলেন যিয়ূশ, যালম ও কোরহ। এঁরা ছিলেন অনার মেয়ে অহলীবামার সন্তান। এঁরা এষৌর, অর্থাৎ ইদোমের বংশ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী-সর্দার। লোটনের ছেলেদের নাম হল হোরী আর হেমম। লোটনের বোনের নাম তিম্না। শোবলের ছেলেদের নাম হল অল্‌বন, মানহৎ, এবল, শফো এবং ওনম। সিবিয়োনের ছেলেদের নাম হল অয়া ও অনা। এই অনাই তাঁর বাবা সিবিয়োনের গাধা চরাতে গিয়ে মরু-এলাকার মধ্যে গরম জলের ফোয়ারার খোঁজ পেয়েছিলেন। অনার ছেলের নাম হল দিশোন ও মেয়ের নাম অহলীবামা। দিশোনের ছেলেদের নাম হল হিম্‌দন, ইশ্‌বন, যিত্রণ ও করাণ। এৎসরের ছেলেদের নাম হল বিল্‌হন, সাবন ও আকন। দীশনের ছেলেদের নাম হল ঊষ ও অরাণ। হোরীয় সর্দারদের নাম ছিল লোটন, শোবল, সিবিয়োন, অনা, দিশোন, এৎসর ও দীশন। এঁরাই ছিলেন সেয়ীর, অর্থাৎ ইদোম দেশের হোরীয় জাতির বিভিন্ন গোষ্ঠীর সর্দার। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে রাজশাসন আরম্ভ হবার আগে ইদোম দেশে যে সব রাজারা রাজত্ব করেছিলেন এই হল তাঁদের কথা: বিয়োরের ছেলে বেলা ইদোমের রাজা হয়েছিলেন; তাঁর রাজধানীর নাম ছিল দিন্‌হাবা। বেলার মৃত্যুর পর তাঁর জায়গায় বস্রা শহরের সেরহের ছেলে যোবব রাজা হয়েছিলেন। যোববের মৃত্যুর পর তৈমনীয়দের দেশের হূশম তাঁর জায়গায় রাজা হয়েছিলেন। হূশমের মৃত্যুর পর তাঁর জায়গায় বদদের ছেলে হদদ রাজা হয়েছিলেন। তিনি মোয়াব দেশের মিদিয়নীয়দের হারিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল অবীৎ। হদদের মৃত্যুর পর তাঁর জায়গায় মস্রেকা শহরের স্ন রাজা হয়েছিলেন। স্নের মৃত্যুর পর তাঁর জায়গায় সেই এলাকার নদীর পারের রহোবোৎ শহরের শৌল রাজা হয়েছিলেন। শৌলের মৃত্যুর পর তাঁর জায়গায় অক্‌বোরের ছেলে বাল্‌হানন রাজা হয়েছিলেন। অক্‌বোরের ছেলে বাল্‌হাননের মৃত্যুর পর তাঁর জায়গায় হদর রাজা হয়েছিলেন। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল পায়ূ, আর তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল মহেটবেল। তিনি মট্রেদের মেয়ে এবং মেষাহবের নাত্‌নী। এষৌর যে সব বংশের লোক বিভিন্ন গোষ্ঠী ও এলাকার সর্দার ছিলেন তাঁদের নাম হল তিম্ন, অল্‌বা, যিথেৎ, অহলীবামা, এলা, পীনোন, কনস, তৈমন, মিব্‌সর, মগ্‌দীয়েল ও ঈরম। এঁরা ছিলেন ইদোমীয়দের পূর্বপুরুষ এষৌর বংশের লোক এবং ইদোমীয় সর্দার। দেশের যে সব এলাকায় তাঁরা বাস করতেন তাঁদের নাম অনুসারেই সেই সমস্ত এলাকার নাম দেওয়া হয়েছিল। যাকোব কনান দেশেই বাস করতে লাগলেন। তাঁর বাবাও সেখানে বাস করতেন। এই হল যাকোবের পরিবারের কাহিনী। যোষেফ তাঁর ভাইদের সংগে ছাগল ও ভেড়ার পাল চরাতেন। তাঁর এই ভাইয়েরা ছিল তাঁর সৎমা বিল্‌হা ও সিল্পার ছেলে। তাঁর বয়স যখন সতেরো বছর তখন তিনি তাঁর এই ভাইদের খারাপ চালচলনের কথা তাঁর বাবাকে জানালেন। বুড়ো বয়সের সন্তান বলে যোষেফকে ইস্রায়েল তাঁর অন্য ছেলেদের চেয়ে বেশী ভালবাসতেন। তিনি তাঁকে একটা পুরো হাতার লম্বা জামা বানিয়ে দিয়েছিলেন। ভাইয়েরা যখন বুঝল যে, বাবা তাদের চেয়ে যোষেফকেই বেশী ভালবাসেন তখন তারা তাঁকে হিংসা করতে লাগল। তারা কোন কথাই তাঁর সংগে ভাল মনে বলতে পারত না। একদিন যোষেফ একটা স্বপ্ন দেখলেন। তিনি সেই কথা তাঁর ভাইদের বলাতে তারা তাঁকে আরও বেশী হিংসা করতে লাগল। যোষেফ তাদের বলেছিলেন, “শোন, আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি দেখলাম, আমরা ক্ষেতে কেটে রাখা শস্যের আঁটি বাঁধছি; কিন্তু আশ্চর্য এই যে, আমার আঁটিটা সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর তোমাদের আঁটিগুলো আমার আঁটিটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে প্রণাম করল।” তখন তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে বলল, “তুই কি সত্যিই ভাবছিস্‌ তুই রাজা হবি আর আমাদের উপর হুকুম চালাবি?” এইভাবে তাঁর স্বপ্ন আর তাঁর কথার জন্য তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে আরও বেশী করে হিংসা করতে লাগল। এর পর যোষেফ আরও একটা স্বপ্ন দেখলেন এবং তাঁর ভাইদের জানালেন। তিনি বললেন, “দেখ, আমি আবার একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি দেখলাম সূর্য, চাঁদ আর এগারোটা তারা আমাকে প্রণাম করছে।” এই স্বপ্নের কথা তিনি তাঁর বাবা ও ভাইদের কাছে বললে পর তাঁর বাবা তাঁকে বকুনি দিয়ে বললেন, “তুমি এ কি রকম স্বপ্ন দেখলে? তোমার মা, ভাইয়েরা এবং আমি কি সত্যিই এসে তোমার সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে তোমাকে প্রণাম করব?” এর পর যোষেফের প্রতি তাঁর ভাইদের মন হিংসায় ভরে উঠল, কিন্তু তাঁর বাবা কথাগুলো মনে গেঁথে রাখলেন, কাউকে বললেন না। পরে যোষেফের ভাইয়েরা তাদের বাবার ছাগল ও ভেড়া চরাবার জন্য শিখিমে গেল। তখন একদিন ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “তোমার ভাইয়েরা শিখিমে ছাগল ও ভেড়ার পাল চরাচ্ছে। আমি চাই যেন তুমি তাদের কাছে যাও।” যোষেফ বললেন, “আচ্ছা, আমি যাব।” যোষেফ বললেন, “আমি আমার ভাইদের খুঁজছি। আপনি কি জানেন তাঁরা কোথায় ছাগল ও ভেড়ার পাল চরাচ্ছেন?” লোকটি বলল, “তারা এখান থেকে চলে গেছে। আমি তাদের বলতে শুনেছিলাম, ‘চল, আমরা দোথনে যাই।’ ” তখন যোষেফ তাঁর ভাইদের খোঁজে দোথনে গিয়ে তাদের দেখা পেলেন। ভাইয়েরা দূর থেকে যোষেফকে দেখতে পেল এবং তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছাবার আগেই তারা তাঁকে মেরে ফেলবার ষড়যন্ত্র করল। তারা একে অন্যকে বলল, “ঐ দেখ, স্বপ্ন-দর্শক আসছে। চল, এখনই আমরা ওকে শেষ করে একটা গর্তের মধ্যে ফেলে দিই। পরে আমরা বলব, কোন বুনো জানোয়ার তাকে খেয়ে ফেলেছে, আর তার পরে আমরা দেখব ওর স্বপ্নের দশাটা কি হয়।” কিন্তু রূবেণ এই কথা শুনে তাদের হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করবার চেষ্টায় বলল, “ওকে প্রাণে মেরো না।” সে তাদের পরামর্শ দিয়ে বলল, “খুন-খারাবি করতে যেয়ো না। ওর গায়ে হাত না তুলে বরং ওকে এই মরু-এলাকার এই গর্তটার মধ্যে ফেলে দাও।” পরে যোষেফকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে বাবার হাতে তুলে দেবে মনে করেই সে এই কথাটা বলল। যোষেফ তাঁর ভাইদের কাছে এসে পৌঁছামাত্র তারা জোর করে তাঁর গা থেকে সেই পুরো হাতার লম্বা জামাটা খুলে নিল। তারপর তারা তাঁকে ধরে সেই গর্তের মধ্যে ফেলে দিল। গর্তটায় কোন জল ছিল না, সেটা খালি ছিল। এর পর যোষেফের ভাইয়েরা খাওয়া-দাওয়া করতে বসে দেখতে পেল গিলিয়দ থেকে একদল ইশ্মায়েলীয় ব্যবসায়ী আসছে। উটের পিঠে করে তারা সুগন্ধি মসলা, গুগ্‌গুলু ও গন্ধরস নিয়ে মিসর দেশে যাচ্ছিল। তখন যিহূদা তার ভাইদের বলল, “ধর, ভাইকে মেরে ফেলে আমরা কথাটা গোপন করলাম। তাতে আমাদের লাভটা কি? ও তো আমাদের নিজের ভাই, আমাদেরই রক্ত-মাংস। তাই ওর গায়ে হাত না দিয়ে বরং এস, আমরা ওকে ইশ্মায়েলীয়দের কাছে বিক্রি করে দিই।” ভাইয়েরা তার কথাটা মেনে নিল। সেই মিদিয়নীয় ব্যবসায়ীরা কাছে আসতেই ভাইয়েরা যোষেফকে গর্ত থেকে টেনে তুলল এবং বিশ টুকরা রূপার বদলে ইশ্মায়েলীয়দের কাছে তাঁকে বেঁচে দিল। সেই ব্যবসায়ীরা যোষেফকে মিসরে নিয়ে গেল। তারা তখন একটা ছাগল কেটে তার রক্তে যোষেফের সেই জামাটা ডুবাল। পরে তারা সেটা তাদের বাবার কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, “আমরা এটা কুড়িয়ে পেয়েছি। তুমি ভাল করে দেখ, জামাটা তোমার ছেলের কি না।” যাকোব জামাটা চিনতে পেরে বললেন, “এই জামাটা আমার ছেলেরই। তাকে কোন বুনো জানোয়ারে খেয়ে ফেলেছে। জানোয়ারটা যে তাকে টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।” যাকোব তাঁর কাপড় ছিঁড়ে কোমরে ছালার চট জড়িয়ে তাঁর ছেলের জন্য অনেক দিন পর্যন্ত শোক করলেন। তাঁর অন্য সব ছেলেমেয়েরা তাঁকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করল, কিন্তু কোন সান্ত্বনার কথাই তিনি শুনলেন না। তিনি বললেন, “শোক করতে করতেই আমি মৃতস্থানে আমার ছেলের কাছে যাব।” এইভাবে যাকোব যোষেফের জন্য কাঁদতে লাগলেন। এদিকে মিদিয়নীয়েরা যোষেফকে মিসরে নিয়ে গিয়ে পোটীফরের কাছে বিক্রি করে দিল। পোটীফর ছিলেন ফরৌণের একজন কর্মচারী, তাঁর রক্ষীদলের প্রধান। এর পর যিহূদা তার ভাইদের ছেড়ে অদুল্লম গ্রামের একজন লোকের সংগে বাস করতে গেল। লোকটির নাম ছিল হীরা। সেখানে থাকবার সময় শূয় নামে একজন কনানীয় লোকের মেয়ে তার নজরে পড়ে গেল। মেয়েটিকে সে বিয়ে করল। পরে মেয়েটি গর্ভবতী হল এবং তাঁর একটি ছেলে হল। যিহূদা ছেলেটির নাম রাখল এর। পরে সে আবার গর্ভবতী হল এবং তার একটি ছেলে হল। মা ছেলেটির নাম রাখল ওনন। তারপর আবার সে গর্ভবতী হল এবং তার আর একটি ছেলে হল। সে তার নাম রাখল শেলা। এই ছেলেটির জন্মের সময় তারা কষীব গ্রামে ছিল। পরে যিহূদা তার বড় ছেলে এরের সংগে তামর নামে একটি মেয়ের বিয়ে দিল। কিন্তু যিহূদার এই ছেলে এর সদাপ্রভুর চোখে এত খারাপ ছিল যে, তিনি তাকে আর বাঁচতে দিলেন না। যিহূদা তখন ওননকে বলল, “তোমার ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে তুমি বিয়ে কর। তার দেবর হিসাবে তোমার যা করা উচিত তা কর এবং তোমার ভাইয়ের হয়ে তার বংশ রক্ষা কর।” ওনন জানত যে, সেই বংশ তার নিজের হবে না। ভাইয়ের হয়ে বংশ রক্ষা করবার অনিচ্ছার দরুন যতবার সে তার ভাইয়ের স্ত্রীর কাছে গেল ততবারই সে বাইরে মাটিতে বীর্যপাত করল। কিন্তু তার এই ব্যবহারে সদাপ্রভু অসন্তুষ্ট হলেন। সেইজন্য তাকেও তিনি আর বাঁচতে দিলেন না। তখন যিহূদা তার ছেলের বউ তামরকে বলল, “যতদিন না আমার ছেলে শেলা বড় হয় ততদিন তুমি তোমার বাবার বাড়ীতে গিয়ে বিধবা হিসাবে বাস করতে থাক।” যিহূদার মনে এই ভয় হয়েছিল, হয়তো শেলাও তার অন্য ভাইদের মত মারা যাবে। যিহূদার কথায় তামর তার বাবার বাড়ীতে গিয়ে থাকতে লাগল। এর অনেক দিন পরে যিহূদার স্ত্রী, অর্থাৎ শূয়ের মেয়ে মারা গেল। তার জন্য শোক প্রকাশের সময় শেষ হয়ে গেলে পর যিহূদা ও তাঁর অদুল্লমীয় বন্ধু হীরা তিম্না গ্রামে গেল। যে লোকেরা যিহূদার ভেড়ার লোম কাটত তারা সেই গ্রামেই ছিল। এর আগে একজন লোক তামরকে গিয়ে বলেছিল, “দেখ, তোমার শ্বশুর তাঁর ভেড়ার লোম ছাঁটাইয়ের জন্য তিম্নায় যাচ্ছেন।” তামর লক্ষ্য করেছিল যে, শেলার বয়স হলেও শ্বশুর তাঁর কথামত শেলার সংগে তার বিয়ে দেন নি। সেইজন্য সে বিধবার কাপড়-চোপড় ছেড়ে মুখ ঢেকে গায়ে কাপড় জড়িয়ে ঐনয়িমের ফটকের কাছে গিয়ে বসে রইল। ঐনয়িম ছিল তিম্না যাবার পথে। সে মুখ ঢেকে রেখেছিল বলে যিহূদা তাকে দেখে বেশ্যা মনে করল। তাই সে রাস্তার ধারে তামরের কাছে গিয়ে বলল, “এস, তোমার সংগে শুতে যাই।” নিজের ছেলের বউকে সে চিনতেই পারল না। তামর বলল, “এইজন্য আপনি আমাকে কি দেবেন?” যিহূদা বলল, “আমার পাল থেকে আমি তোমাকে একটা ছাগলের বাচ্চা পাঠিয়ে দেব।” তামর বলল, “সেটা না পাঠানো পর্যন্ত আপনি আমার কাছে কিছু বন্ধক রেখে যাবেন কি?” যিহূদা বলল, “কি বন্ধক রাখব?” সে বলল, “দড়ি সুদ্ধ আপনার সীলমোহরখানা আর আপনার হাতের লাঠিটা।” তখন যিহূদা সেগুলো তার কাছে জমা রেখে তার সংগে মিলিত হল, আর তার ফলে তামর গর্ভবতী হল। এর পর তামর উঠে চলে গেল, আর মাথার কাপড় খুলে ফেলে সে আবার বিধবার কাপড়-চোপড় পরল। পরে স্ত্রীলোকটির কাছ থেকে সেই বন্ধক রাখা জিনিসগুলো ফেরৎ আনবার জন্য যিহূদা তার অদুল্লমীয় বন্ধুকে দিয়ে একটা ছাগলের বাচ্চা পাঠিয়ে দিল। কিন্তু সে তাকে খুঁজে পেল না। তখন সে সেখানকার লোকদের জিজ্ঞাসা করল, “ঐনয়িমে রাস্তার ধারে যে মন্দির-বেশ্যাটি ছিল সে কোথায়?” তারা বলল, “এখানে তো কোন মন্দির-বেশ্যা নেই।” তখন সে যিহূদার কাছে ফিরে গিয়ে বলল, “আমি তাকে খুঁজে পেলাম না। এছাড়া ওখানকার লোকেরা বলল যে, ওখানে কোন মন্দির-বেশ্যা নেই।” যিহূদা বলল, “তাহলে ঐ জিনিসগুলো ওর কাছেই থাক্‌, না হলে লোকে আমাদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করবে। তা ছাড়া ছাগলের বাচ্চাটা তো আমি পাঠিয়েই দিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি তাকে খুঁজে পাও নি।” এর প্রায় তিন মাস পরে যিহূদা শুনতে পেল যে, তার ছেলের বউ তামর ব্যভিচার করেছে, আর তার ফলে সে এখন গর্ভবতী হয়েছে। এই কথা শুনে যিহূদা বলল, “ওকে বের করে এনে পুড়িয়ে ফেলা হোক।” তামরকে যখন বের করে আনা হচ্ছিল তখন সে তার শ্বশুরকে বলে পাঠাল, “আমার গর্ভে যাঁর সন্তান আছে এই সব জিনিস তাঁর।” তারপর সে বলল, “দয়া করে একবার পরীক্ষা করে দেখবেন কি, এই দড়ি সুদ্ধ সীলমোহরখানা ও লাঠিটা কার?” যিহূদা সেগুলো চিনতে পেরে বলল, “সে তো তাহলে আমার তুলনায় অনেক ভাল, কারণ আমার ছেলে শেলার সংগে আমি তার বিয়ে দিই নি।” এর পর সে আর কখনও তামরের সংগে শোয় নি। সন্তান প্রসবের সময় দেখা গেল তামরের গর্ভে যমজ সন্তান রয়েছে। প্রসবের সময় একটি সন্তান তার হাত বের করল। তখন ধাত্রী একটা লাল সুতা তার হাতে বেঁধে দিয়ে বলল, “এটির জন্ম আগে হল।” কিন্তু আশ্চর্য এই যে, সেই সন্তানটি যখন তার হাত ভিতরে টেনে নিল তখনই তার ভাই বের হয়ে আসল। তখন ধাত্রী বলল, “কি করে তুমি বাধা ভেংগে বেরিয়ে আসলে?” এইজন্য তার নাম রাখা হল পেরস (যার মানে “বাধা ভাংগা”)। তারপর তার ভাই হাতে লাল সুতা বাঁধা অবস্থায় বের হয়ে আসল। তার নাম দেওয়া হল সেরহ। এর মধ্যে যোষেফকে মিসর দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইশ্মায়েলীয়েরাই তাঁকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে পোটীফর নামে ফরৌণের একজন মিসরীয় কর্মচারী যোষেফকে তাদের কাছ থেকে কিনে নিলেন। পোটীফর ছিলেন ফরৌণের রক্ষীদলের প্রধান। সদাপ্রভু যোষেফের সংগে সংগে ছিলেন। সেইজন্য তিনি সব কাজে সফল হতে লাগলেন। তাঁকে তাঁর মিসরীয় মনিবের বাড়ীতেই রাখা হল। সদাপ্রভু যে তাঁর সংগে সংগে আছেন এবং তাঁর হাতের সব কাজই সফল করে তুলছেন তা তাঁর মনিবের চোখ এড়ালো না। তাতে যোষেফ তাঁর সুনজরে পড়লেন এবং তিনি তাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত সেবাকারী করে নিলেন। তাঁর ঘর-সংসার ও বিষয়-সম্পত্তির দেখাশোনার ভারও তিনি তাঁর উপর দিলেন। যোষেফকে এই সব ভার দেবার পর থেকে যোষেফের দরুন সদাপ্রভু সেই মিসরীয় মনিবের সব কিছুকে আশীর্বাদ করতে লাগলেন। পোটীফরের ঘর-বাড়ীর এবং ক্ষেত-খামারের সব কিছুকেই সদাপ্রভু আশীর্বাদ করলেন। এ দেখে পোটীফর তাঁর সব কিছুর ভার যোষেফের উপর ছেড়ে দিলেন। যোষেফের উপর সব ভার ছিল বলে পোটীফর একমাত্র নিজের খাওয়া ছাড়া আর কিছু নিয়ে চিন্তা করতেন না। যোষেফের দেহের গড়ন এবং চেহারা সুন্দর ছিল। কিছু দিনের মধ্যে যোষেফ তাঁর মনিবের স্ত্রীর নজরে পড়ে গেলেন। একদিন সে যোষেফকে বলল, “আমার বিছানায় এস।” কিন্তু যোষেফ তাতে রাজী হলেন না। তিনি বললেন, “দেখুন, আমি এই বাড়ীতে আছি বলেই আমার মনিব কোন কিছুর জন্য চিন্তা করেন না। তাঁর সব কিছুর ভার তিনি আমার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। এই বাড়ীতে আমার উপরে আর কেউ নেই। আপনি তাঁর স্ত্রী, সেইজন্য একমাত্র আপনাকে ছাড়া আর সবাইকে তিনি আমার অধীন করেছেন। এই অবস্থায় আমি কি করে এত বড় একটা জঘন্য কাজ করে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করতে পারি?” পোটীফরের স্ত্রী দিনের পর দিন সেই একই কথা বলতে লাগল। কিন্তু যোষেফ তার সংগে শোবার এই অনুরোধে কান দিলেন না, এমন কি, তার কাছাকাছি থাকতেও রাজি হলেন না। একদিন কোন কাজের জন্য যোষেফ বাড়ীর ভিতরে গেলেন। তখন বাড়ীর কেউই সেখানে ছিল না। এমন সময় পোটীফরের স্ত্রী যোষেফের কাপড় টেনে ধরে বলল, “আমার বিছানায় এস।” যোষেফ তখন কাপড়টা তার হাতে ফেলে রেখেই বাইরে পালিয়ে গেলেন। আমার চিৎকার আর হাঁকডাক শুনে সে তার কাপড়টা আমার কাছে ফেলে রেখেই বাইরে পালিয়ে গেছে।” যোষেফের মনিব বাড়ী ফিরে না আসা পর্যন্ত কাপড়টা সে তার কাছেই রেখে দিল। পরে সে পোটীফরের কাছে এই কথা জানাতে গিয়ে বলল, “তুমি যে ইব্রীয় দাসকে আমাদের কাছে এনেছ সে আমাকে অপমান করবার মতলবে আমার ঘরে ঢুকেছিল। কিন্তু আমি চিৎকার ও হাঁকডাক করাতে সে আমার কাছে তার কাপড় ফেলে রেখেই বাইরে পালিয়ে গেছে।” স্ত্রীর কথা শুনে যোষেফের মনিব রেগে আগুন হয়ে গেলেন, কারণ তাঁর স্ত্রী বলেছিল, “এমনি ধরনের ব্যবহারই তোমার দাস আমার সংগে করেছে।” প্রধান জেলরক্ষক জেলের সমস্ত কয়েদীদের ভার যোষেফের উপরে দিলেন যেন সেখানকার সব কাজকর্ম যোষেফের ইচ্ছামত হয়। যোষেফের হাতে যে সব কাজের ভার ছিল সেগুলো প্রধান জেলরক্ষককে আর দেখাশোনা করতে হত না, কারণ সদাপ্রভু যোষেফের সংগে ছিলেন, আর এইজন্য যোষেফ যাতে হাত দিতেন তা সদাপ্রভু সফল করতেন। এই সব ঘটনার পরে মিসরের রাজার দু’জন কর্মচারী রাজার বিরুদ্ধে অন্যায় করে বসল। এদের মধ্যে একজন ছিল প্রধান রুটিকার আর অন্যজন ছিল প্রধান পানীয় পরিবেশক। ফরৌণ এই দু’জনের উপর এত বিরক্ত হয়েছিলেন যে, তিনি যোষেফের মনিবের, অর্থাৎ রক্ষীদল-প্রধানের বাড়ীর জেলের ভিতরে তাদের আটক করে রাখলেন। যোষেফও সেই একই জায়গায় বন্দী ছিলেন। সকালবেলা যোষেফ সেই দু’জনের কাছে গিয়ে দেখলেন তারা খুব মন-মরা হয়ে আছে। তা দেখে যোষেফ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনাদের আজ এত মন-মরা দেখাচ্ছে কেন?” উত্তরে তারা তাঁকে বলল, “আমরা দু’জনেই একটা করে স্বপ্ন দেখেছি, কিন্তু তার মানে বলে দেয় এমন কেউ এখানে নেই।” যোষেফ তাদের বললেন, “মানে বলে দেবার ক্ষমতা কি ঈশ্বরের হাতে নেই? আপনাদের স্বপ্নের কথা আমাকে বলুন।” তখন সেই প্রধান পানীয় পরিবেশক যোষেফকে তার স্বপ্নের কথা বলল। সে বলল, “স্বপ্নে আমি আমার সামনে একটা আংগুর গাছ দেখলাম। তার তিনটা ডাল। সেই ডালে কুঁড়ি ধরবার সংগে সংগে ফুল ফুটল আর থোকায় থোকায় আংগুর ধরে পেকে উঠল। ফরৌণের আংগুর-রসের পেয়ালাটা তখন আমার হাতেই ছিল। আমি সেই আংগুরগুলো নিয়ে তাতে রস বের করে সেটা ফরৌণের হাতে দিলাম।” যোষেফ তাকে বললেন, “এই হল আপনার স্বপ্নের মানে। তিনটা ডাল মানে তিন দিন। এই তিন দিনের মধ্যে ফরৌণ আপনাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে আগের কাজে বহাল করবেন। পানীয় পরিবেশক হিসাবে আপনি আগের মত করে আবার ফরৌণের হাতে পেয়ালা তুলে দেবেন। তবে সুদিনে আমার কথা ভুলে যাবেন না। এর বদলে ফরৌণের কাছে আপনি আমার কথা বলবেন, যাতে আপনার সাহায্যে আমি এই কয়েদখানা থেকে বের হয়ে যেতে পারি। সত্যি বলতে কি, ইব্রীয়দের দেশ থেকে আমাকে জোর করে ধরে আনা হয়েছে, আর এই দেশে এসেও আমি এমন কিছু করি নি যার জন্য আমাকে এই গর্তে আটক করে রাখা যায়।” প্রধান রুটিকার যখন দেখল যে, পানীয় পরিবেশকের স্বপ্নের একটা ভাল অর্থ রয়েছে তখন সে যোষেফকে বলল, “আমিও একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি দেখলাম আমার মাথার উপরে তিন টুকরি ময়দার রুটি রয়েছে। উপরের টুকরিতে ছিল ফরৌণের জন্য অনেক রকমের রুটি আর পিঠা। কিন্তু পাখীরা এসে আমার মাথার উপরের সেই টুকরি থেকে খেতে লাগল।” উত্তরে যোষেফ বললেন, “এই হল আপনার স্বপ্নের মানে। তিনটা টুকরি মানে তিন দিন। এই তিন দিনের মধ্যে ফরৌণ আপনার মাথা কেটে নিয়ে দেহটা গাছে ঝুলিয়ে রাখবেন, আর পাখীরা এসে আপনার দেহ থেকে মাংস ঠুক্‌রে খাবে।” এর তিন দিনের দিন ফরৌণ তাঁর অধীনে যে সব লোকেরা কাজ করত তাদের একটা ভোজ দিলেন। সেই দিন ছিল তাঁর জন্মদিন। ফরৌণ সেই দিন তাঁর প্রধান পানীয় পরিবেশক ও তাঁর প্রধান রুটিকারকে বের করে সেই সব লোকদের সামনে আনলেন। তিনি তাঁর প্রধান পানীয় পরিবেশককে তার আগের কাজে বহাল করলেন, আর তারপর থেকে সে তাঁর হাতে পেয়ালা তুলে দিতে লাগল। কিন্তু প্রধান রুটিকারের দেহটা তিনি গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন। যোষেফ তাদের স্বপ্নের মানে যেমন বলেছিলেন তাদের প্রতি তেমনই ঘটল। কিন্তু যোষেফের কথা সেই প্রধান পানীয় পরিবেশকের মনে রইল না; তাঁর কথা সে একেবারে ভুলে গেল। এই ঘটনার পুরো দু’বছর পরে ফরৌণ একটা স্বপ্ন দেখলেন। তিনি দেখলেন, তিনি নীল নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছেন, আর আশ্চর্য এই যে, তখন নদীর মধ্য থেকে সাতটা সুন্দর, মোটাসোটা গরু উঠে এসে নল বনে চরে বেড়াতে লাগল। এই গরুগুলোর পরে সেই নদী থেকে আরও সাতটা গরু উঠে আসল। সেগুলো ছিল বিশ্রী ও রোগা। সেগুলো এসে নদীর ধারে অন্য গরুগুলোর পাশে দাঁড়াল। তারপর ঐ বিশ্রী, রোগা গরুগুলো সেই সুন্দর, মোটাসোটা সাতটা গরু খেয়ে ফেলল। এরপর ফরৌণের ঘুম ভেংগে গেল। পরে তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন এবং দ্বিতীয়বার স্বপ্ন দেখলেন। তিনি দেখলেন একই গমের বোঁটায় সাতটা পুষ্ট ও তাজা শীষ গজালো। তারপর গজালো আরও সাতটা অপুষ্ট শীষ। এগুলো পূবের বাতাসের গরমে শুকিয়ে গিয়েছিল। সেই অপুষ্ট শীষগুলো ঐ সাতটা পুষ্ট এবং বড় শীষ গিলে ফেলল। তারপর ফরৌণের ঘুম ভেংগে গেল। তিনি বুঝতে পারলেন যে, তিনি যা দেখেছেন তা স্বপ্নমাত্র। কিন্তু সকালের দিকে তাঁর মনটা কেমন অস্থির হয়ে উঠল। তিনি লোক পাঠিয়ে মিসর দেশের সব যাদুকর ও গুণিনকে ডেকে আনালেন। তিনি স্বপ্নে যা দেখেছেন তা তাদের কাছে বললেন, কিন্তু কেউই তার মানে বলতে পারল না। তখন ফরৌণের প্রধান পানীয় পরিবেশক তাঁকে বলল, “মহারাজ, আজ আমার একটা দোষের কথা আমার মনে পড়েছে। একবার মহারাজ তাঁর বাড়ীর দাস-দাসীদের উপরে রেগে গিয়েছিলেন। তিনি রক্ষীদল-প্রধানের বাড়ীর বন্দীখানায় প্রধান রুটিকারের সংগে আমাকেও বন্দী করে রেখেছিলেন। তখন একই রাতে আমরা দু’জনেই একটা করে স্বপ্ন দেখলাম। প্রত্যেকটি স্বপ্নেরই বিশেষ অর্থ ছিল। রক্ষীদল-প্রধানের দাস একজন ইব্রীয় যুবকও সেখানে ছিল। আমরা তাকে আমাদের স্বপ্নের কথা বললাম। তখন সে আমাদের দু’জনের স্বপ্নের অর্থ আমাদের বলে দিল। সে আমাদের স্বপ্নের যে অর্থ বলেছিল ঠিক সেইমত সব কিছু ঘটল। মহারাজ আবার আমাকে আমার কাজে বহাল করলেন কিন্তু রুটিকারকে গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন।” তখন ফরৌণ যোষেফকে ডেকে আনবার জন্য লোক পাঠালেন, আর তারা তাড়াতাড়ি করে জেলখানা থেকে তাঁকে বের করে আনল। যোষেফ দাড়ি কামিয়ে কাপড়-চোপড় বদলে ফরৌণের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তখন ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি, কিন্তু কেউই তার মানে বলতে পারছে না। আমি শুনেছি যে, তোমার কাছে স্বপ্নের ঘটনা বললে পর তুমি তার মানে বলতে পার।” উত্তরে যোষেফ ফরৌণকে বললেন, “সেই ক্ষমতা আমার নেই। তবে ঈশ্বর মহারাজের স্বপ্নের অর্থ বলে দিয়ে তাঁর মন শান্ত করবেন।” তখন ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “স্বপ্নে দেখলাম, আমি নীল নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছি, আর আশ্চর্য এই যে, নদীর মধ্য থেকে সাতটা সুন্দর, মোটাসোটা গরু উঠে এসে নল বনে চরে বেড়াতে লাগল। এর পর আরও সাতটা গরু উঠে আসল। সেগুলো ছিল রোগা, বিশ্রী ও দেখতে মরার মত। সারা মিসর দেশের কোথাও এই ধরনের বিশ্রী গরু কখনও আমার চোখে পড়ে নি। পরে সেই রোগা, বিশ্রী গরুগুলো আগেকার সাতটা মোটাসোটা গরুগুলো খেয়ে ফেলল, অথচ তাদের দেখে মনে হল না যে, সেই মোটাসোটা গরুগুলো তারা খেয়েছে, কারণ আগের মত তারা দেখতে বিশ্রীই রয়ে গেল। তার পরেই আমার ঘুম ভেংগে গেল। পরে আমি আবার স্বপ্ন দেখলাম। আমি দেখলাম একটা বোঁটায় সাতটা বড় এবং তাজা গমের শীষ গজালো। তার পরে সাতটা শুকনা, অপুষ্ট শীষ গজালো। সেগুলো পূবের বাতাসের গরমে শুকিয়ে গিয়েছিল। এই সাতটা অপুষ্ট শীষ সেই তাজা সাতটা শীষ গিলে ফেলল। আমি এই সব কথা যাদুকরদের বলেছিলাম, কিন্তু কেউই এর মানে আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারল না।” তখন যোষেফ ফরৌণকে বললেন, “মহারাজের এই দু’টি স্বপ্নই আসলে এক। ঈশ্বর যা করতে যাচ্ছেন তা তিনি মহারাজের কাছে প্রকাশ করেছেন। সাতটা মোটাসোটা গরুর মানে সাত বছর আর তাজা সাতটা গমের শীষের মানেও সাত বছর। আপনার দু’টি স্বপ্নই আসলে এক। পরে উঠে আসা সাতটা রোগা, বিশ্রী গরু আর পূবের বাতাসের গরমে শুকিয়ে যাওয়া অপুষ্ট সাতটা শীষ, এ দু’টার মানে হল সাতটা দুর্ভিক্ষের বছর। ঈশ্বর যা করতে যাচ্ছেন তা তিনি মহারাজকে দেখিয়েছেন, আর সেই কথাই আমি মহারাজকে বলেছি। সারা মিসর দেশে এমন সাতটা বছর আসছে যখন প্রচুর ফসল জন্মাবে, আর তার পরেই আসছে সাতটা দুর্ভিক্ষের বছর। তখন আগেকার প্রচুর ফসলের কথা লোকের মন থেকে মুছে যাবে, কারণ এই দুর্ভিক্ষ দেশকে শেষ করে দেবে। এই দুর্ভিক্ষের দরুন দেশের সুদিনের কথা লোকের মনেও থাকবে না। এই দুর্ভিক্ষ হবে ভয়ংকর। এই স্বপ্ন মহারাজকে দু’বার দেখানো হয়েছে। এর মানে হল, ঈশ্বর এই ব্যাপারে তাঁর মন স্থির করে ফেলেছেন এবং শীঘ্রই তিনি তা ঘটাবেন। “সেইজন্য এখন মহারাজ এমন একজন লোককে খুঁজে বের করুন যিনি জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান। তাঁর উপর আপনি মিসর দেশের ভার দিন। তা ছাড়া অন্যান্য কর্মচারীও আপনি নিযুক্ত করুন। দেশে ঐ সাত বছরে যখন প্রচুর ফসল হবে, তখন তাঁরাই তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ সংগ্রহ করবেন। সেই লোকেরা যেন ঐ সব সুদিনের বাড়তি শস্য সংগ্রহ করে মহারাজের অধীনে প্রত্যেকটি শহরে ভবিষ্যতে খাওয়ার জন্য মজুদ করে রাখেন এবং তা রক্ষা করবার ব্যবস্থা করেন। সাত বছর মিসর দেশে যে দুর্ভিক্ষ হবে তখনকার খাবার হিসাবে যেন শস্য মজুদ করে রাখা হয়, যাতে দুর্ভিক্ষের সময় দেশের লোক মারা না যায়।” যোষেফের এই ব্যবস্থার কথাটা ফরৌণ ও তাঁর সব কর্মচারীদের কাছে ভাল বলে মনে হল। ফরৌণ তাঁর কর্মচারীদের বললেন, “এই লোকটির মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যা এই পৃথিবীর নয়। এর মত আর কাকে আমরা খুঁজে পাব?” এর পর ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার ঈশ্বর যখন তোমার কাছেই এই সব প্রকাশ করেছেন তখন তোমার মত জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান আর কে আছে? কাজেই রাজবাড়ীর সমস্ত ভার তোমাকেই নিতে হবে। তোমার মুখের হুকুম মেনেই আমার সমস্ত লোকেরা চলবে। কেবল রাজা হিসাবে আমি তোমার উপরে থাকব।” ফরৌণ যোষেফকে আরও বললেন, “মনে রেখ, আমি সারা মিসর দেশের উপর তোমাকে নিযুক্ত করলাম।” তারপর ফরৌণ নিজের হাত থেকে সীলমোহর দেওয়ার আংটিটা খুলে নিয়ে যোষেফের হাতে পরিয়ে দিলেন। তিনি তাঁকে সুন্দর কাপড় পরিয়ে তাঁর গলায় একটা সোনার হার দিলেন। এর পর তিনি যোষেফকে তাঁর রাজ্যের দ্বিতীয় রথে বসালেন। রথ চলবার সময় যোষেফের আগে আগে ঘোষণা করা হল, “হাঁটু পাত, হাঁটু পাত।” এইভাবে ফরৌণ যোষেফের উপর সমস্ত মিসর দেশের ভার দিলেন। পরে তিনি যোষেফকে বললেন, “যদিও আমি এখনও রাজাই আছি তবুও সারা মিসর দেশের লোক তোমার হুকুমেই ওঠা-বসা করবে।” ফরৌণ যোষেফের নতুন নাম দিলেন সাফনৎ-পানেহ। ওন্‌ শহরের পুরোহিত পোটীফেরের মেয়ে আসনতের সংগে তিনি যোষেফের বিয়ে দিলেন। এর পর যোষেফ গোটা মিসর দেশটা ঘুরে আসবার জন্য বেরিয়ে পড়লেন। যোষেফ যখন মিসরের রাজা ফরৌণের কাজে নিযুক্ত হলেন তখন তাঁর বয়স ছিল ত্রিশ বছর। তিনি ফরৌণের রাজসভা থেকে বের হয়ে মিসর দেশের সমস্ত জায়গা ঘুরে আসলেন। প্রচুর ফসলের সেই সাত বছরে দেশে অনেক ফসল হল। তখন যোষেফ সেই সাত বছর ধরে মিসরের সমস্ত বাড়তি শস্য শহরের গোলাঘরগুলোতে মজুদ করলেন। তিনি প্রত্যেক শহরে তার চারপাশের ক্ষেতগুলো থেকে ফসল এনে জমা করলেন। এইভাবে তিনি সমুদ্রের বালুকণার মত প্রচুর শস্য মজুদ করলেন। এত বেশী শস্য জমা হতে লাগল যে, তা আর মাপা সম্ভব হল না। তাই তিনি তা মেপে নেওয়া বন্ধ করে দিলেন। দুর্ভিক্ষের আগে ওন্‌ শহরের পুরোহিত পোটীফেরের মেয়ে আসনতের গর্ভে যোষেফের দু’টি ছেলের জন্ম হয়েছিল। যোষেফ তাঁর বড় ছেলের নাম রাখলেন মনঃশি (যার মানে “ভুলে যাওয়া”)। তিনি বললেন, “ঈশ্বর আমার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট এবং আমার বাবার বাড়ীর কথা আমার মন থেকে মুছে ফেলেছেন।” তারপর তিনি তাঁর দ্বিতীয় ছেলের নাম রাখলেন ইফ্রয়িম (যার মানে “ফলবান”)। তিনি বললেন, “যে দেশে আমি দুঃখ-কষ্ট পেয়েছি সেই দেশেই ঈশ্বর আমাকে ফলবান করেছেন।” এর পর মিসর দেশে প্রচুর ফসলের সাত বছর শেষ হয়ে গেল। তারপর শুরু হল দুর্ভিক্ষের সাত বছর। যোষেফের কথামতই সব কিছু হল। আশেপাশের দেশগুলোও এই দুর্ভিক্ষ থেকে রেহাই পেল না, কিন্তু সারা মিসর দেশে কোথাও খাবারের অভাব হল না। খিদেয় কষ্ট পেয়ে মিসর দেশের লোকেরা যখন ফরৌণের কাছে গিয়ে খাবার চাইল তখন ফরৌণ তাদের বললেন, “তোমরা যোষেফের কাছে যাও। তিনি তোমাদের যা করতে বলেন, তোমরা তা-ই কর।” এই দুর্ভিক্ষ দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। মিসর দেশে দুর্ভিক্ষ যখন ভয়ংকর হয়ে উঠল তখন যোষেফ সমস্ত গোলাঘরগুলো খুলে দিলেন এবং মিসরীয়দের কাছে শস্য বিক্রি করতে লাগলেন। অন্যান্য দেশেও দুর্ভিক্ষ এত ভীষণ হয়ে উঠল যে, সেখানকার লোকেরাও যোষেফের কাছ থেকে শস্য কিনবার জন্য মিসরে আসতে লাগল। যাকোব যখন শুনতে পেলেন যে, মিসর দেশে খাবার শস্য রয়েছে তখন তিনি তাঁর ছেলেদের বললেন, “তোমরা একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে আছ কেন?” তিনি আরও বললেন, “শোন, আমি শুনেছি মিসর দেশে শস্য আছে। তোমরা সেখানে গিয়ে আমাদের জন্য কিছু শস্য কিনে আন যাতে আমরা প্রাণে বেঁচে থাকি, মারা না যাই।” তখন যোষেফের দশজন ভাই শস্য কিনে আনবার জন্য মিসরে গেল। যাকোব কিন্তু যোষেফের নিজের ভাই বিন্যামীনকে তাদের সংগে পাঠালেন না। তার কোন বিপদ ঘটতে পারে বলে তাঁর ভয় হচ্ছিল। অন্য যে সব লোক শস্য কিনতে মিসর দেশে যাচ্ছিল তাদের দলে ইস্রায়েলের ছেলেরাও ছিল, কারণ কনান দেশেও দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। যোষেফ ছিলেন মিসর দেশের শাসনকর্তা। দেশের সমস্ত লোকের কাছে শস্য বিক্রির ভার তাঁরই উপর ছিল। তাই যোষেফের ভাইয়েরা তাঁর কাছে গিয়ে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে তাঁকে প্রণাম করল। যোষেফ ভাইদের দেখে চিনতে পারলেন, কিন্তু না চেনার ভান করে কর্কশভাবে তাদের বললেন, “তোমরা কোথা থেকে এসেছ?” তারা বলল, “আমরা কনান দেশ থেকে শস্য কিনতে এসেছি।” যোষেফ তাঁর ভাইদের চিনতে পারলেও ভাইয়েরা কিন্তু তাঁকে চিনতে পারল না। তাদের সম্বন্ধে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই কথা তখন তাঁর মনে পড়ল। তিনি তাদের বললেন, “তোমরা গুপ্তচর। আমাদের দেশের কোন্‌ কোন্‌ জায়গায় রক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই তোমরা তা দেখে নেওয়ার জন্য এসেছ।” তারা তাঁকে বলল, “না, হুজুর, আপনার দাসেরা শস্য কিনতে এসেছে। আমরা সবাই একই বাবার সন্তান। আমরা অসৎ নই। আপনার দাসেরা গুপ্তচর নয়।” তখন যোষেফ আবার তাদের বললেন, “না, না, আমাদের দেশের কোন্‌ কোন্‌ জায়গায় রক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই, তোমরা তা দেখে নিতে এসেছ।” কিন্তু তারা বলল, “আপনার দাসেরা সব সুদ্ধ বারো ভাই। আমরা কনান দেশের একজন লোকেরই সন্তান। আমাদের সবচেয়ে ছোট ভাইটি এখন বাবার কাছে রয়েছে, আর আমাদের অন্য এক ভাই বেঁচে নেই।” যোষেফ তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সম্বন্ধে যা বলেছি তা-ই ঠিক, তোমরা গুপ্তচর। এতেই তোমাদের পরীক্ষা হয়ে যাবে- তোমাদের ছোট ভাই যতক্ষণ পর্যন্ত এখানে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এখান থেকে ছাড়া পাবে না। আমার এই কথাটা আমি ফরৌণের জীবনের দিব্য দিয়েই বলছি। তোমাদের ছোট ভাইকে নিয়ে আসবার জন্য তোমাদের মধ্য থেকে একজনকে পাঠিয়ে দাও, আর বাকীরা সব বন্দী থাক। তোমাদের কথা সত্যি কি না এতেই তার প্রমাণ হবে। কিন্তু যদি তাকে নিয়ে না আস তবে ফরৌণের জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি যে, তোমরা গুপ্তচর।” এই বলে যোষেফ তিন দিন পর্যন্ত তাদের সবাইকে জেলে বন্দী করে রাখলেন। তৃতীয় দিনে যোষেফ তাদের বললেন, “আমি যা বলছি তা কর এবং প্রাণ রক্ষা কর, কারণ আমি ঈশ্বরকে ভয় করি। তোমরা যদি সত্যিই সৎ লোক হও তবে তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে একজন এই জেলে বন্দী থাকুক, আর বাকী সবাই তোমাদের উপবাসী পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে চলে যাক। তোমাদের কথা যে সত্যি তা প্রমাণ করবার জন্য তোমাদের ছোট ভাইকে আমার কাছে নিয়ে এস। তা হলেই তোমরা মৃত্যু থেকে রেহাই পাবে।” তারা তাতেই রাজী হল। তারপর তারা একে অন্যকে বলল, “সত্যিই আমাদের সেই ভাইয়ের প্রতি আমরা যা করেছি তাতে আমরা দোষী। সে যখন আমাদের কাছে কাকুতি-মিনতি করছিল তখন তার মনের কষ্ট দেখেও আমরা তার কথায় কান দিই নি। সেইজন্য আমাদের উপর এই কষ্ট এসেছে।” রূবেণ তাদের বলল, “আমি তো তোমাদের বলেছিলাম, ‘তার প্রতি কোন অন্যায় কোরো না,’ কিন্তু তোমরা তা শোন নি। এখন তার রক্তের শোধ দেবার সময় এসেছে।” যোষেফ যে তাদের কথাগুলো বুঝতে পারছেন তা তারা বুঝল না, কারণ দোভাষীর মধ্য দিয়ে তিনি তাদের সংগে কথাবার্তা বলছিলেন। যোষেফ তখন তাদের কাছ থেকে সরে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন, তারপর ফিরে এসে তাদের সংগে আবার কথা বললেন। তিনি তাদের মধ্য থেকে শিমিয়োনকে বেছে নিয়ে তাদের চোখের সামনেই তাকে বাঁধবার হুকুম দিলেন। পরে যোষেফ হুকুম দিলেন যেন তাদের বস্তাগুলো শস্য দিয়ে ভরে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেকের টাকা তার বস্তায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া পথের জন্য তাদের যা দরকার তা দেবার হুকুমও তিনি দিলেন। যোষেফের আদেশ মতই তাদের জন্য সব কিছু করা হল। এর পর তারা তাদের গাধার পিঠে শস্যের বোঝা চাপিয়ে রওনা হয়ে গেল। বিশ্রামের জায়গায় পৌঁছে তাদের মধ্যে একজন যখন গাধাকে খাবার দিতে গিয়ে বস্তা খুলল তখনই সে তার টাকাটা দেখতে পেল। টাকাটা বস্তার মুখেই ছিল। তখন সে তার ভাইদের বলল, “দেখ, দেখ, আমার টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। আমার বস্তাতেই সেই টাকা রয়েছে।” এই ব্যাপার দেখে ভয়ে যেন তাদের প্রাণ উড়ে গেল। তারা কাঁপতে কাঁপতে একে অন্যের দিকে ফিরে বলল, “ঈশ্বর আমাদের প্রতি এ কি করলেন!” কনান দেশে ফিরে গিয়ে তারা তাদের বাবাকে সব কথা জানিয়ে বলল, “যে লোকটি সেই দেশের কর্তা তিনি খুব কর্কশভাবে আমাদের সংগে কথা বলেছেন। তিনি মনে করেছেন আমরা গুপ্তচর হিসাবে সেই দেশে গিয়েছি। কিন্তু আমরা তাঁকে বলেছি, ‘আমরা সৎ লোক, গুপ্তচর নই। আমরা বারো ভাই, একই বাবার বারোটি ছেলে। আমাদের মধ্যে একজন মারা গেছে, আর সবচেয়ে ছোটটি এখন কনান দেশে বাবার কাছে রয়েছে।’ “তখন সেই লোকটি, যিনি দেশের কর্তা, তিনি আমাদের বললেন, ‘আমি এর থেকেই বুঝে নেব যে, তোমরা সৎ লোক। তোমরা তোমাদের এক ভাইকে আমার কাছে রেখে তোমাদের উপবাসী পরিবারের জন্য যা দরকার তা নিয়ে চলে যাও, আর তোমাদের ছোট ভাইকে আমার কাছে নিয়ে এস। তাহলেই আমি বুঝতে পারব যে, তোমরা সৎ লোক, গুপ্তচর নও। তখন আমি তোমাদের ভাইকে তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দেব, আর তোমরা এই দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে।’ ” এর পর তারা তাদের বস্তা খালি করবার সময় অবাক হয়ে দেখল যে, তাদেরও প্রত্যেকের টাকার থলি প্রত্যেকের বস্তার মধ্যেই রয়েছে। এই ব্যাপার দেখে তারা ও তাদের বাবা ভয় পেলেন। তিনি তাদের বললেন, “তোমরা আমাকে সন্তানহারা করেছ। যোষেফ নেই, শিমিয়োন নেই, আর এখন আবার তোমরা বিন্যামীনকেও নিতে চাইছ। এই সব কষ্টের বোঝা আমাকেই বইতে হবে।” তখন রূবেণ তার বাবাকে বলল, “আমি যদি বিন্যামীনকে তোমার কাছে ফিরিয়ে আনতে না পারি তবে তুমি আমার দুই ছেলেকে মেরে ফেলো। বিন্যামীনকে তুমি আমার হাতে ছেড়ে দাও, আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে আনবই।” কিন্তু যাকোব বললেন, “না, আমার এই ছেলে তোমাদের সংগে যাবে না। তার ভাই মারা গেছে, আর সে এখন একাই বেঁচে আছে। তোমাদের যাত্রাপথে যদি তার কোন বিপদ হয় তবে এই বুড়ো বয়সে অনেক দুঃখ দিয়ে তোমরা আমাকে মৃতস্থানে পাঠাবে।” কনান দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা আরও ভীষণ হয়ে উঠল। মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলের, অর্থাৎ যাকোবের ছেলেরা যে শস্য এনেছিল তা শেষ হয়ে গেলে পর তাদের বাবা বললেন, “তোমরা আবার গিয়ে আমাদের জন্য কিছু শস্য কিনে আন।” যিহূদা তাঁকে বলল, “কিন্তু সেই লোকটি আমাদের কড়াভাবে হুম্‌কি দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের ভাই তোমাদের সংগে না থাকলে তোমরা আর আমার সামনে আসবে না।’ তুমি যদি আমাদের ভাইকে আমাদের সংগে যেতে দাও তবেই আমরা গিয়ে তোমার জন্য শস্য কিনে আনতে পারব। কিন্তু তাকে যেতে না দিলে আমরাও যাব না। লোকটি আমাদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের ভাই তোমাদের সংগে না থাকলে তোমরা আর আমার সামনে আসবে না।’ ” তখন ইস্রায়েল বললেন, “তোমরা আমার সংগে কেন এমন খারাপ ব্যবহার করলে? তোমাদের যে আর একজন ভাই আছে সেই কথা কেন বলতে গেলে?” তারা বলল, “কিন্তু লোকটি আমাদের ও আমাদের পরিবার সম্বন্ধে বিশেষভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের বাবা কি এখনও বেঁচে আছেন? তোমাদের কি আর কোন ভাই আছে? ’ কাজেই আমরা সেইভাবেই তাঁর কথার উত্তর দিয়েছিলাম। তখন আমরা কি করে জানব যে, তিনি বলবেন, ‘তোমাদের ভাইকে নিয়ে এস’?” তখন যিহূদা তার বাবাকে বলল, “ওকে আমার সংগে যেতে দাও। আমরা তাড়াতাড়ি করে রওনা হয়ে যাই যাতে তুমি ও আমরা এবং আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রাণে বেঁচে থাকি, মারা না যাই। আমি নিজেই ওর জন্য জামিন রইলাম। ওর জন্য তুমি আমাকেই দায়ী কোরো। আমি যদি ওকে তোমার কাছে ফিরিয়ে না এনে দিই তবে চিরকাল আমি তোমার কাছে দোষী হয়ে থাকব। যদি আমরা এত দেরি না করতাম তবে নিশ্চয়ই এতদিনে আমরা আরও দু’বার গিয়ে ফিরে আসতে পারতাম।” তাদের বাবা তখন বললেন, “যদি তা-ই করতে হয়, তবে এক কাজ কর। উপহার হিসাবে সেই লোকটির জন্য তোমাদের বস্তায় করে এই দেশের সবচেয়ে ভাল ভাল জিনিস থেকে কিছু কিছু করে নিয়ে যাও, যেমন গুগ্‌গুলু, মধু, সুগন্ধি মসলা, গন্ধরস, পেস্তা ও বাদাম। আর তোমরা সংগে করে দ্বিগুণ টাকা নাও, কারণ বস্তার মুখে যে টাকা তারা ফিরিয়ে দিয়েছে তা-ও ফেরৎ দিতে হবে। হয়তো তারা ভুল করে তা দিয়ে দিয়েছে। তোমাদের ভাইকে সংগে নিয়ে তোমরা তাড়াতাড়ি করে সেই লোকটির কাছে ফিরে যাও। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর করুন যেন সেই লোকটি তোমাদের দয়া করেন, আর তোমাদের সেই ভাই ও বিন্যামীনকে তোমাদের হাতে ছেড়ে দেন; আর যদি আমাকে সন্তানহারা হতেই হয় তবে না হয় তা-ই হলাম।” তখন তারা সেই উপহার, দ্বিগুণ টাকা ও বিন্যামীনকে নিয়ে রওনা হয়ে গেল। মিসর দেশে পৌঁছে তারা যোষেফের সামনে উপস্থিত হল। তাদের সংগে বিন্যামীনকে দেখে যোষেফ তাঁর বাড়ীর তদারককারীকে বললেন, “ঐ লোকদের বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যাও আর মাংস রান্নার ব্যবস্থা কর। এই সব লোক দুপুরবেলা আমার সংগে খাবে।” যোষেফ যা বললেন তদারককারী তা-ই করল। সে ঐ লোকদের যোষেফের বাড়ীতে নিয়ে চলল। যোষেফের বাড়ীতে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেখে সেই লোকেরা ভয়ে বলাবলি করতে লাগল, “আগের বারে যে টাকা আমাদের বস্তার মধ্যে ফেরৎ গিয়েছিল তারই জন্য আমাদের ওখানে নেওয়া হচ্ছে। এইবার তিনি আমাদের দোষ দেখিয়ে আমাদের ধরে নিয়ে যাবেন, আর আমাদের গাধাগুলো কেড়ে নিয়ে আমাদের তাঁর দাস বানিয়ে রাখবেন।” কাজেই তারা যোষেফের বাড়ীর দরজার সামনে এসে বাড়ীর তদারককারীকে বলল, “হুজুর, আমরা এর আগেও একবার শস্য কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু ফিরে যাবার পথে বিশ্রামের জায়গায় পৌঁছে আমাদের বস্তা খুলতেই দেখি আমাদের পুরো টাকাই যার যার বস্তার মুখে রয়েছে। আমরা এখন সেই টাকা ফিরিয়ে এনেছি। এছাড়া শস্য কিনবার জন্য সংগে করে আমরা আরও টাকা এনেছি। সেই টাকা আমাদের বস্তায় কে দিয়ে দিয়েছিল তা আমরা জানি না।” সেই তদারককারী বলল, “সব ঠিক আছে, ভয় নেই। তোমাদের ও তোমাদের বাবার ঈশ্বরই সেই দান তোমাদের বস্তায় রেখেছিলেন। তোমাদের টাকা আমি পেয়েছি।” এই বলে সে শিমিয়োনকে বের করে তাদের কাছে নিয়ে আসল। তারপর সে সবাইকে যোষেফের বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গিয়ে জল দিল আর তারা পা ধু’ল। সে তাদের গাধাগুলোকেও খেতে দিল। যোষেফ দুপুরে আসবেন বলে তারা তাদের উপহারগুলো ঠিক করে রাখল। তারা শুনেছিল তাদের খাওয়া-দাওয়া সেখানেই হবে। যোষেফ যখন বাড়ী আসলেন তখন তারা তাদের সেই উপহার বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে দিল এবং মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁকে প্রণাম করল। তারা ভাল আছে কিনা সেই খবর নেবার পরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের যে বুড়ো বাবার কথা তোমরা বলেছিলে তিনি কি ভাল আছেন? তিনি কি এখনও বেঁচে আছেন?” উত্তরে তারা বলল, “আপনার দাস আমাদের বাবা এখনও বেঁচে আছেন এবং ভালই আছেন।” এই বলে তারা মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে যোষেফকে সম্মান জানাল। যোষেফ চারদিকে চেয়ে তাঁর নিজের ভাই বিন্যামীনকে দেখে বললেন, “এ-ই কি তোমাদের সেই ছোট ভাই যার কথা তোমরা আমাকে বলেছিলে?” তারপর তিনি বিন্যামীনকে বললেন, “ঈশ্বর তোমাকে দয়া করুন!” ভাইকে দেখে যোষেফের অন্তর ভীষণভাবে দুলে উঠল। তিনি একটা কাঁদবার জায়গার খোঁজে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বের হয়ে গেলেন এবং নিজের কামরায় ঢুকে কাঁদতে লাগলেন। পরে চোখ-মুখ ধুয়ে তিনি বের হয়ে আসলেন এবং নিজেকে সামলে নিয়ে খাবার পরিবেশনের হুকুম দিলেন। পরিবেশনকারীরা যোষেফকে, তাঁর ভাইদের এবং যে মিসরীয়েরা যোষেফের বাড়ীতে খেত, তাদের আলাদা আলাদা জায়গায় খেতে দিল। মিসরীয়েরা ইব্রীয়দের সংগে খাওয়া-দাওয়া করত না, কারণ সেটা ছিল তাদের কাছে একটা ঘৃণার কাজ। যোষেফের সামনে তাঁর ভাইদের বয়স অনুসারে পর পর বসানো হয়েছিল। এতে তারা আশ্চর্য হয়ে একে অন্যের মুখের দিকে তাকাতে লাগল। যোষেফ তাঁর নিজের টেবিল থেকে কিছু কিছু খাবার ভাইদের দেবার ব্যবস্থা করলেন। অন্য যে কোন ভাইয়ের চেয়ে বিন্যামীনকে পাঁচগুণ বেশী দেওয়া হল। এইভাবে তারা যোষেফের সংগে খাওয়া-দাওয়া করল। প্রচুর পরিমাণে আংগুর-রস খেয়ে তারা খুশী হয়ে উঠল। তারপর যোষেফ তাঁর বাড়ীর তদারককারীকে এই বলে আদেশ দিলেন, “শস্য এরা যা নিয়ে যেতে পারে তা-ই তাদের বস্তায় ভরে দিয়ো, আর প্রত্যেকের টাকা তার বস্তার মুখে দিয়ে দিয়ো। যে সবচেয়ে ছোট তার বস্তার মুখে আমার রূপার বাটিটা আর শস্যের জন্য তার দেওয়া টাকাও দিয়ে দিয়ো।” যোষেফ তাকে যা করতে বললেন সে তা-ই করল। পর দিন ভোর হতেই গাধায় করে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হল। তারা সবেমাত্র শহর থেকে বের হয়েছে কিন্তু বেশী দূরে যায় নি, এমন সময় যোষেফ তাঁর বাড়ীর তদারককারীকে বললেন, “তাড়াতাড়ি করে ঐ লোকদের পিছনে যাও। ওদের নাগাল পেলে পর বলবে, ‘তোমরা উপকারের বদলে অপকার করে আসলে কেন? ঐ বাটিতে করেই তো আমার মনিব পান করেন এবং ওটা দিয়েই গোণাপড়ার কাজ করেন। তোমরা এই কাজ করে খুব অন্যায় করেছ।’ ” পথে সেই তদারককারী তাদের নাগাল পেয়ে সেই কথা বলল। কিন্তু তারা তাকে বলল, “হুজুর, আপনি এই সব কথা কেন বলছেন? আপনার দাসেরা এই রকম কাজ কখনও করবে না। দেখুন, গতবারে আমাদের বস্তার মুখে যে টাকা পেয়েছিলাম তা আমরা কনান দেশ থেকে আবার ফিরিয়ে এনেছিলাম। এর পর আপনার মনিবের বাড়ী থেকে আমরা রূপা বা সোনা চুরি করে আনব কেন? যদি সেই বাটি আপনার এই দাসদের কারও কাছে পাওয়া যায় তবে তাকে যেন মেরে ফেলা হয়, আর তখন আমরাও আমাদের মনিবের দাস হয়ে থাকব।” সেই তদারককারী বলল, “বেশ, তোমরা যা বললে তা-ই হোক। কিন্তু যার কাছে সেই বাটি পাওয়া যাবে কেবল সে-ই আমার দাস হয়ে থাকবে। অন্য কারও কোন দোষ থাকবে না।” তখন প্রত্যেকে তাড়াতাড়ি করে তার বস্তা মাটিতে নামিয়ে খুলল। সেই তদারককারী তখন বড় ভাইয়ের বস্তা থেকে আরম্ভ করে ছোট ভাইয়ের বস্তা পর্যন্ত খুঁজে দেখল, আর বিন্যামীনের বস্তায় সেই বাটি পাওয়া গেল। এই ব্যাপার দেখে তারা তাদের কাপড় ছিঁড়ল। তারপর তারা তাদের গাধার পিঠে প্রত্যেকের বস্তা চাপিয়ে আবার শহরে ফিরে গেল। যিহূদা ও তার ভাইয়েরা যে সময় যোষেফের বাড়ীতে গেল যোষেফ তখনও সেখানে ছিলেন। তারা তাঁর সামনে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ল। তখন যোষেফ তাদের বললেন, “তোমরা এ কি করেছ? আমার মত লোক যে সত্যিই সব কিছু গুণে বের করতে পারে তা কি তোমরা জানতে না?” যিহূদা বলল, “হুজুরকে আমরা আর কি বলব? কি উত্তরই বা দেব? আর কেমন করেই বা নিজেদের নির্দোষ বলে প্রমাণ করব? আপনার দাসদের দোষ তো ঈশ্বরই দেখিয়ে দিয়েছেন। যার কাছে সেই বাটিটা পাওয়া গেছে সে আর আমরা সবাই হুজুরের দাস হলাম।” কিন্তু যোষেফ বললেন, “এই কাজ আমি কখনও করতে পারি না। যার কাছে সেই বাটি পাওয়া গেছে কেবল সে-ই আমার দাস হবে। কিন্তু তোমরা নিশ্চিন্তে তোমাদের বাবার কাছে ফিরে যাও।” তখন যিহূদা যোষেফের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, “হুজুর, আপনি ফরৌণের জায়গায় আছেন, সেইজন্য আপনার দাসকে আপনার কাছে দু’টি কথা বলবার অনুমতি দিন। আপনার দাসের উপর আপনি রাগ করবেন না। হুজুর, আপনার দাসদের আপনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমাদের বাবা কি বেঁচে আছেন এবং তোমাদের আর কোন ভাই আছে কি? ’ তাতে আমরা হুজুরকে বলেছিলাম, ‘আমাদের বুড়ো বাবা বেঁচে আছেন এবং তাঁর বুড়ো বয়সের একটি ছেলে আছে। তার ভাই মারা গেছে, আর একই মায়ের সন্তান হিসাবে এখন সে একাই কেবল পড়ে আছে। তাই তার বাবা তাকে খুব ভালবাসেন।’ “তারপর আপনি আপনার দাসদের বলেছিলেন, ‘তাকে আমার কাছে নিয়ে এস; আমি তাকে দেখতে চাই।’ কিন্তু আমরা হুজুরকে বলেছিলাম, ‘ছেলেটি তার বাবাকে ছেড়ে আসতে পারবে না। যদি আসে তবে তার বাবা মারা যাবেন।’ কিন্তু আপনি আপনার দাসদের বলেছিলেন, ‘তোমাদের ছোট ভাইকে সংগে করে না আনলে তোমরা আর আমার সামনে আসবে না।’ সেইজন্য আমরা ফিরে গিয়ে আপনার দাসকে, অর্থাৎ আমার বাবাকে হুজুরের সব কথাই জানিয়েছিলাম। “পরে আমাদের বাবা বললেন, ‘তোমরা ফিরে গিয়ে আমাদের জন্য আরও কিছু শস্য কিনে নিয়ে এস।’ তখন আমরা বললাম, ‘আমাদের ছোট ভাই যদি আমাদের সংগে যায় তবেই আমরা যাব। তা না হলে আমরা সেখানে যেতে পারব না। আমাদের ছোট ভাই যদি আমাদের সংগে না থাকে তবে আমরা সেই লোকটির সামনেই যেতে পারব না।’ “তখন আপনার দাস, অর্থাৎ আমার বাবা আমাদের বললেন, ‘তোমরা তো জান আমার ঐ স্ত্রীর দু’টি ছেলে হয়েছিল। একবার তাদের একজন আমার সামনে থেকে বেরিয়ে গেল, আর শেষে আমি বুঝতে পারলাম যে, নিশ্চয়ই কোন জানোয়ার তাকে টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলেছে। তারপর থেকে তাকে আমি আর দেখতে পাই নি। এখন যদি তোমরা একেও আমার কাছ থেকে নিয়ে যাও আর তার কোন ক্ষতি হয়, তবে এই বুড়ো বয়সে অনেক দুঃখ-বেদনার মধ্য দিয়ে তোমরা আমাকে মৃতস্থানে পাঠাবে।’ আপনার দাস আমি আমার বাবার কাছে ছেলেটির জন্য এই বলে জামিন রয়েছি, ‘যদি আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে না আনি তবে বাবা, চিরকালের জন্য আমি তোমার কাছে দোষী হয়ে থাকব।’ কাজেই হুজুর, দয়া করে ছেলেটির বদলে আমাকে আপনার দাসের মত করে রাখুন, আর ছেলেটিকে তার ভাইদের সংগে ফিরে যেতে দিন। এই ছেলেটিকে না নিয়ে আমি কি করে আমার বাবার কাছে ফিরে যাব? তা করলে তাঁর দুঃখ-বেদনা আমাকে নিজের চোখে দেখতে হবে।” তখন যোষেফ তাঁর কর্মচারীদের সামনে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। তিনি জোর গলায় বললেন, “আমার সামনে থেকে সবাই সরে যাক।” কাজেই ভাইদের কাছে যখন তিনি নিজের পরিচয় দিলেন তখন সেখানে আর কেউ ছিল না। তিনি এত জোরে কাঁদতে লাগলেন যে, মিসরীয়েরা তা শুনতে পেল এবং সেই খবর ফরৌণের বাড়ীতে গিয়ে পৌঁছাল। যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “আমি যোষেফ! আমার বাবা কি এখনও বেঁচে আছেন?” এই কথা শুনে তাঁর ভাইয়েরা ভয়ে কাঁপতে লাগল; তারা তাঁর কথার উত্তরই দিতে পারল না। তখন যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “তোমরা আমার কাছে এস।” তারা কাছে আসলে পর তিনি বললেন, “আমিই তোমাদের সেই ভাই যোষেফ; যারা মিসরে যাচ্ছিল তাদের কাছে তোমরা আমাকে বিক্রি করে দিয়েছিলে। তবে তোমরা আমাকে বিক্রি করে দিয়েছিলে বলে এখন দুঃখ পেয়ো না বা নিজেদের উপর রাগ কোরো না। মানুষের প্রাণ রক্ষা করবার জন্যই ঈশ্বর তোমাদের আগে আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। দুর্ভিক্ষ চলছে এই দু’বছর ধরে। এটা আরও পাঁচ বছর চলবে। তখন ফসল বোনাও হবে না কাটাও হবে না। পৃথিবীতে বিশেষ করে তোমাদের বংশ বাঁচিয়ে রাখবার জন্য এবং ধ্বংসের হাত থেকে আশ্চর্যভাবে উদ্ধার করে তোমাদের প্রাণ রক্ষা করবার জন্য ঈশ্বরই তোমাদের আগে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে, তোমরা আমাকে এখানে পাঠাও নি, ঈশ্বরই পাঠিয়েছেন। তিনি আমাকে ফরৌণের বাবার জায়গায় রেখেছেন এবং তাঁর পরিবারের কর্তা করেছেন। এছাড়া তিনি আমাকে সারা মিসর দেশের শাসনকর্তা করেছেন। “এখন তোমরা তাড়াতাড়ি করে বাবার কাছে গিয়ে বল যে, তাঁর ছেলে যোষেফ এই কথা বলছে, ‘ঈশ্বর আমাকে সারা মিসর দেশের কর্তা করেছেন। তুমি আর দেরি না করে আমার কাছে চলে এস। তুমি এসে গোশন এলাকায় বাস কর। তাতে তুমি, তোমার ছেলেমেয়ে, তোমার নাতিপুতি, তোমার পশু ও ভেড়ার পাল এবং তোমার যা কিছু আছে সব নিয়ে আমার কাছে থাকতে পারবে। তোমার, তোমার পরিবারের ও তোমার আর সকলের যাতে কোন অভাব না হয় সেইজন্য আমি সেখানেই তোমাদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করব, কারণ দুর্ভিক্ষ শেষ হতে এখনও পাঁচ বছর বাকী আছে।’ “আমি যে নিজের মুখেই এই সব বলছি তা তোমরা নিজের চোখেই দেখছ, আর আমার ভাই বিন্যামীনও দেখছে। মিসর দেশে আমার যত মান-সম্মান আর যা কিছু দেখছ তার সবই গিয়ে বাবাকে নিশ্চয় জানাবে। এখন তোমরা তাড়াতাড়ি করে গিয়ে বাবাকে এখানে নিয়ে এস।” এর পর যোষেফ তাঁর ভাই বিন্যামীনের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন আর বিন্যামীনও তাঁর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। তারপর যোষেফ তাঁর সব ভাইদের চুম্বন করলেন এবং তাদেরও গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন। তখন তাঁর ভাইয়েরা তাঁর সংগে কথা বলল। যোষেফের ভাইদের আসবার খবর ফরৌণের বাড়ীতে পৌঁছালে পর ফরৌণ ও তাঁর কর্মচারীরা খুশী হলেন। ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার ভাইদের বল যেন তারা তাদের গাধার পিঠে শস্য বোঝাই করে কনান দেশে ফিরে যায়, আর তাদের বাবা ও তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে তোমার কাছে চলে আসে। তুমি তাদের জানিয়ে দাও যে, মিসর দেশের সবচেয়ে ভাল ভাল জিনিস তুমি তাদের দেবে আর দেশের সবচেয়ে ভাল খাবার তারা খেতে পাবে। এছাড়া তোমার উপর আমার এই হুকুম রইল যে, তুমি তোমার ভাইদের বলবে যেন তারা তাদের স্ত্রী ও ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য মিসর দেশ থেকে গাড়ী নিয়ে যায়, আর তাদের বাবাকে নিয়ে চলে আসে। তারা যেন সংসারের জিনিসপত্রের জন্য না ভাবে, কারণ সারা মিসর দেশের ভাল ভাল জিনিসই তো তাদের।” ইস্রায়েলের ছেলেরা তা-ই করল। ফরৌণের আদেশ অনুসারে যোষেফ তাদের জন্য গাড়ী ও পথের খাবারের ব্যবস্থা করলেন। তিনি তাদের প্রত্যেককে এক সেট করে কাপড় দিলেন, কিন্তু বিন্যামীনকে দিলেন পাঁচ সেট কাপড় আর তিনশো রূপার টুকরা। তিনি তাঁর বাবার জন্য দশটা গাধা এবং দশটা গাধী পাঠিয়ে দিলেন। সেই দশটা গাধার পিঠে মিসরের ভাল ভাল জিনিস বোঝাই করা ছিল, আর গাধীগুলোর পিঠে ছিল শস্য, রুটি আর অন্যান্য খাবার জিনিস। এগুলো ছিল তাঁর বাবার যাত্রা পথের খাবার। এই সব ব্যবস্থা করে তিনি তাঁর ভাইদের পাঠিয়ে দিলেন। যাবার সময় তিনি তাদের বলে দিলেন, “তোমরা পথে ঝগড়া-বিবাদ কোরো না।” কিন্তু যোষেফ তাদের যা যা বলেছিলেন তা শুনে এবং তাঁকে নিয়ে যাবার জন্য যোষেফ যে গাড়ী পাঠিয়েছিলেন তা দেখে তাদের বাবা যাকোবের সেই ভাবটা কেটে গেল। তিনি বললেন, “আমার ছেলে যোষেফ যে এখনও বেঁচে আছে সেটাই যথেষ্ট। মরবার আগে আমি গিয়ে তাকে একবার দেখব।” ইস্রায়েল তাঁর সব কিছু নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। বের্‌-শেবাতে এসে তিনি তাঁর বাবা ইস্‌হাকের ঈশ্বরের উদ্দেশে কয়েকটা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। ঈশ্বর রাতের বেলায় ইস্রায়েলকে দর্শনের মধ্য দিয়ে তাঁর সংগে কথা বললেন। তিনি ডাকলেন, “যাকোব, যাকোব।” যাকোব উত্তর দিলেন, “এই যে আমি।” ঈশ্বর বললেন, “আমি ঈশ্বর, তোমার বাবার ঈশ্বর। মিসর দেশে যেতে ভয় কোরো না, কারণ আমি সেখানে তোমার মধ্য থেকে একটা মস্ত বড় জাতির সৃষ্টি করব। আমি তোমার সংগে সংগে মিসরে যাব এবং আবার আমি তোমাকে নিশ্চয়ই ফিরিয়ে নিয়ে আসব। মৃত্যুকালে যোষেফ নিজের হাতে তোমার চোখ বন্ধ করে দেবে।” এর পর যাকোব বের্‌-শেবা ছেড়ে রওনা হলেন। ফরৌণ তাঁদের নিয়ে যাবার জন্য যে সব গাড়ী পাঠিয়েছিলেন ইস্রায়েলের ছেলেরা তাতে করেই তাদের বাবাকে এবং স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলল। যে সব পশু ও ধন-সম্পত্তি তারা কনান দেশে লাভ করেছিল সেই সব নিয়ে যাকোব ও তাঁর পরিবারের সবাই মিসরে গেলেন। যাকোব তাঁর ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাত্‌নীদের, অর্থাৎ তাঁর বংশের সবাইকে নিয়ে মিসরে গেলেন। ইস্রায়েলীয়েরা, অর্থাৎ যাকোব ও তাঁর বংশের লোকেরা যারা মিসরে গিয়েছিল তাদের তালিকা: যাকোবের বড় ছেলে রূবেণ। রূবেণের ছেলে হনোক, পল্‌লু, হিষ্রোণ ও কর্মি। শিমিয়োনের ছেলে যিমূয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর ও শৌল। শৌল একজন কনানীয় স্ত্রীলোকের সন্তান। লেবির ছেলে গের্শোন, কহাৎ ও মরারি। যিহূদার ছেলে এর, ওনন, শেলা, পেরস ও সেরহ। এর ও ওনন কনান দেশেই মারা গিয়েছিল। পেরসের ছেলে হিষ্রোণ ও হামূল। ইষাখরের ছেলে তোলয়, পূয়, যোব ও শিম্রোণ। সবূলূনের ছেলে সেরদ, এলোন ও যহলেল। মেয়ে দীণা সুদ্ধ এরা ছিল লেয়ার মধ্য দিয়ে যাকোবের বংশধর। এরা পদ্দন-অরামে জন্মেছিল। যাকোবের এই বংশধরেরা ছিল মোট তেত্রিশজন। গাদের ছেলে সিফিয়োন, হগি, শূনী, ইষ্‌বোন, এরি, অরোদী ও অরেলী। আশেরের ছেলে যিম্না, যিশ্‌বা, যিশ্‌বি, বরিয় ও তাদের বোন সেরহ। বরিয়ের ছেলে হেবর ও মল্কীয়েল। লাবন তাঁর মেয়ে লেয়াকে সিল্পা নামে যে দাসী দিয়েছিলেন এরা সবাই তার মধ্য দিয়ে যাকোবের বংশধর। সিল্পা ও যাকোবের এই বংশধরেরা ছিল মোট ষোলজন। যাকোবের স্ত্রী রাহেলের ছেলে যোষেফ ও বিন্যামীন। যোষেফের ছেলে মনঃশি ও ইফ্রয়িম মিসর দেশে জন্মেছিল। এদের মা ছিলেন ওন্‌ শহরের পুরোহিত পোটীফেরের মেয়ে আসনৎ। বিন্যামীনের ছেলে বেলা, বেখর, অস্‌বেল, গেরা, নামন, এহী, রোশ, মুপ্‌পীম, হুপ্‌পীম ও অর্দ। এরা ছিল রাহেলের মধ্য দিয়ে যাকোবের বংশধর। এরা ছিল মোট চৌদ্দজন। দানের ছেলে হূশীম। নপ্তালির ছেলে যহসিয়েল, গূনি, যেৎসর ও শিল্লেম। লাবন তাঁর মেয়ে রাহেলকে বিল্‌হা নামে যে দাসী দিয়েছিলেন, এরা সবাই তার মধ্য দিয়ে যাকোবের বংশধর। যাকোব ও বিল্‌হার এই বংশধরেরা মোট ছিল সাতজন। যাকোবের সংগে যারা মিসর দেশে গিয়েছিল, অর্থাৎ তাঁর নিজের বংশধরেরা ছিল মোট ছেষট্টিজন; এই সংখ্যার মধ্যে তাঁর ছেলেদের স্ত্রীদের ধরা হয় নি। মিসর দেশে যোষেফের যে দু’টি ছেলের জন্ম হয়েছিল এবং যাকোবের পরিবারের যারা মিসরে গিয়েছিল তারা ছিল মোট সত্তরজন। যাকোব আগে যিহূদাকে যোষেফের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যাতে যোষেফ যিহূদাকে গোশনে যাবার পথ দেখিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সবাই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। যোষেফ তাঁর বাবা ইস্রায়েলের সংগে দেখা করবার জন্য তাঁর রথ সাজিয়ে নিয়ে গোশনে গেলেন। বাবার সংগে দেখা হতেই তিনি তাঁর গলা জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলেন। পরে ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “তুমি যে এখনও বেঁচে আছ তা আমি নিজের চোখেই দেখলাম। এখন আমি মরতে প্রস্তুত আছি।” এর পর যোষেফ তাঁর ভাইদের ও তাঁর বাবার পরিবারের অন্যান্য লোকদের বললেন, “আমি ফরৌণের কাছে গিয়ে বলব, ‘আমার ভাইয়েরা ও আমার বাবার বংশের লোকজন কনান দেশ থেকে আমার কাছে এসেছেন। পশুপালনই তাঁদের কাজ; তাঁরা ছাগল-ভেড়া চরান, আর সেইজন্য সংগে করে তাঁরা তাঁদের ছাগল, ভেড়া, গরু ও সমস্ত জিনিসপত্র এনেছেন।’ ফরৌণ তোমাদের ডেকে যখন জিজ্ঞাসা করবেন, ‘আপনারা কি কাজ করেন? ’ তখন তোমরা বলবে, ‘আপনার এই দাসেরা ও তাদের পূর্বপুরুষেরা ছোটকাল থেকে এই পর্যন্ত পশু পালন করে আসছে।’ তাতে তোমরা গোশনে বাস করবার অনুমতি পাবে। যারা ছাগল-ভেড়া চরায় মিসরীয়েরা তাদের ঘৃণার চোখে দেখে।” যোষেফ ফরৌণের কাছে গিয়ে বললেন, “আমার বাবা ও ভাইয়েরা তাঁদের ছাগল, ভেড়া, গরু এবং তাঁদের সব কিছু নিয়ে কনান দেশ ছেড়ে চলে এসেছেন। তাঁরা এখন গোশনে এসে পৌঁছেছেন।” ভাইদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে তিনি ফরৌণের সামনে উপস্থিত করলেন। ফরৌণ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা কি কাজ করেন?” তারা বলল, “আপনার এই দাসেরা ছাগল-ভেড়া চরায়। তাদের পূর্বপুরুষেরাও তাই করতেন।” তারা আরও বলল, “আমরা এই দেশে কিছুকালের জন্য থাকতে এসেছি। কনান দেশে এখন ভীষণ দুর্ভিক্ষ চলছে বলে সেখানে আমাদের ছাগল-ভেড়ার চরে খাবার ঘাস নেই। তাই দয়া করে আপনার দাসদের গোশনে থাকবার অনুমতি দিন।” ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার বাবা ও ভাইয়েরা তোমার কাছেই এসেছেন। গোটা মিসর দেশটাই তো তোমার সামনে পড়ে আছে। দেশের সবচেয়ে ভাল জায়গায় তোমার বাবা ও ভাইদের বাস করতে দাও। তাঁরা গোশনেই বাস করুন। তাঁদের মধ্যে যোগ্য লোক পেলে তাঁদের উপর আমার পশুপালেরও ভার দাও।” এর পর যোষেফ তাঁর বাবা যাকোবকে এনে ফরৌণের সামনে উপস্থিত করলেন, আর যাকোব ফরৌণকে আশীর্বাদ করলেন। ফরৌণ যাকোবকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার বয়স কত হল?” যাকোব বললেন, “এই পৃথিবীতে কিছুদিনের বাসিন্দা হিসাবে আমার একশো ত্রিশ বছর কেটে গেছে। এই দিনগুলোর সংখ্যা খুব বেশী নয়, আর তা দুঃখেই কেটেছে। তবে কিছুদিনের বাসিন্দা হিসাবে আমার পূর্বপুরুষেরা যতদিন কাটিয়ে গেছেন আমি ততদিন কাটাতে পারি নি।” এর পর যাকোব ফরৌণকে আশীর্বাদ করে সেখান থেকে বিদায় নিলেন। যোষেফ তাঁর বাবা ও ভাইদের স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করলেন। ফরৌণের আদেশ মত মিসর দেশের সবচেয়ে ভাল জায়াগাটাই তিনি তাঁদের সম্পত্তি হিসাবে দান করলেন। জায়গাটার নাম ছিল রামিষেষ। যোষেফ তাঁর বাবা, ভাইদের ও তাঁদের পরিবারগুলোকে খাবারের যোগান দিতে লাগলেন। ছেলেমেয়েদের সংখ্যা হিসাবেই তা দেওয়া হত। পরে দুর্ভিক্ষের অবস্থা এমন ভীষণ হয়ে উঠল যে, সারা দেশের কোথাও আর খাবার রইল না। দুর্ভিক্ষের দরুন মিসর এবং কনান দেশ একেবারে কাহিল হয়ে পড়ল। মিসর এবং কনান দেশের লোকেরা যে শস্য কিনল তার দাম বাবদ যোষেফ ঐ দু’টা দেশে যত টাকা ছিল তা তুলে নিয়ে ফরৌণের রাজবাড়ীতে জমা দিলেন। যখন মিসর ও কনান দেশের সব টাকা ফুরিয়ে গেল তখন মিসরীয়েরা যোষেফের কাছে এসে বলল, “আমাদের খেতে দিন। আমরা কি আপনার চোখের সামনেই মারা যাব? টাকা-পয়সা আমাদের যা ছিল সব ফুরিয়ে গেছে।” যোষেফ বললেন, “তাহলে তোমাদের গরু-ভেড়া সব আমাকে দাও। তোমাদের টাকা যখন ফুরিয়ে গেছে তখন ওগুলোর বদলেই আমি তোমাদের খাবার দেব।” তখন তারা তাদের সব গরু-ভেড়া যোষেফের কাছে আনতে লাগল। ছাগল, ভেড়া, গরু, ঘোড়া ও গাধার বদলে তিনি তাদের খাবার দিতে লাগলেন। সমস্ত পশু জমা রেখে তিনি গোটা বছরটাই তাদের খাওয়ালেন। সেই বছরটা কেটে গেলে পর তার পরের বছরে লোকেরা এসে যোষেফকে বলল, “হুজুরের কাছে আমরা লুকাব না যে, আমাদের টাকা-পয়সা সব খরচ হয়ে গেছে, আর আমাদের পশুগুলোও হুজুরের। এখন আমাদের এই দেহ এবং জায়গা-জমি ছাড়া হুজুরকে দেবার মত আর আমাদের কিছুই নেই। তাই জমি সুদ্ধ আমরা সবাই আপনার চোখের সামনেই শেষ হয়ে যাব কেন? সেইজন্য আপনি আমাদের ও আমাদের জায়গা-জমি সব নিয়ে নিন, আর তার বদলে আমাদের খাবার দিন। জায়গা-জমি সুদ্ধ আমরা সবাই ফরৌণের দাস হয়ে থাকব। এর পরে আমরা যাতে মারা না গিয়ে প্রাণে বেঁচে থাকতে পারি সেইজন্য আপনি আমাদের কিছু বীজও দিন। তাহলে আমাদের জমিও নষ্ট হবে না।” তখন যোষেফ মিসর দেশের সমস্ত জমি ফরৌণের নামে কিনে নিলেন। দুর্ভিক্ষ এমন ভীষণ হল যে, মিসরীয়েরা সকলেই তাদের জায়গা-জমি বিক্রি করে দিল। এইভাবেই মিসর দেশের সমস্ত জায়গা-জমি ফরৌণের হাতে এসে গেল। যোষেফ মিসর দেশের এক সীমা থেকে অন্য সীমা পর্যন্ত যত লোক ছিল তাদের সবাইকে শহরে সরিয়ে আনলেন। তিনি কেবল পুরোহিতদের জায়গা-জমি কিনলেন না। এই পুরোহিতেরা ফরৌণের কাছ থেকে ভাতা পেতেন এবং তা দিয়েই তাঁরা চলতেন। সেইজন্য তাঁরা তাঁদের জমি বিক্রি করেন নি। যোষেফ লোকদের বললেন, “দেখ, ফরৌণের পক্ষ থেকে আমি আজ তোমাদের এবং তোমাদের জায়গা-জমি কিনে নিলাম। তোমরা এখন এই বীজ নাও, আর তা নিয়ে জমিতে বোন। ফসল কাটবার পর তোমরা সব ফসলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরৌণকে দেবে, আর বাকী চার ভাগ জমির বীজের জন্য এবং নিজের ও পরিবারের লোকদের আর ছেলেমেয়েদের খাবারের জন্য রাখবে।” তখন লোকেরা বলল, “আপনি আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। হুজুরের দয়া পেয়ে আমরা ফরৌণের দাস হয়ে থাকব।” পরে যোষেফ মিসর দেশের জায়গা-জমি সম্বন্ধে এই আইন পাশ করলেন যে, সব ফসলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরৌণের হবে। এই আইনটা আজও মিসর দেশে চলছে। কেবল পুরোহিতদের জমিগুলোই ফরৌণের সম্পত্তির মধ্যে পড়ে নি। ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশের গোশনে বাস করতে লাগল। সেখানে তারা জায়গা-জমি করল। তাদের অনেক সন্তান হল এবং তারা সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠল। যাকোব মিসর দেশে আরও সতেরো বছর বেঁচে রইলেন। কাজেই তিনি মোট একশো সাতচল্লিশ বছর বেঁচে ছিলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে ইস্রায়েল তাঁর ছেলে যোষেফকে ডেকে বললেন, “যদি আমার প্রতি তোমার টান থাকে তবে আমার ঊরুর নীচে তোমার হাত রেখে আমাকে কথা দাও যে, তুমি আমার প্রতি তোমার কর্তব্যে বিশ্বস্ত থাকবে। আমাকে মিসরে কবর দিয়ো না, কারণ আমি আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে কবর পেতে চাই। তুমি আমার মৃতদেহ মিসর দেশ থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে আমার পূর্বপুরুষেরা যেখানে কবর পেয়েছেন সেখানেই আমাকে কবর দিয়ো।” যোষেফ বললেন, “তুমি যা বললে আমি তা-ই করব।” তখন যাকোব বললেন, “তাহলে তুমি আমার কাছে শপথ কর।” যোষেফ তাঁর কাছে শপথ করলেন। তখন ইস্রায়েল বিছানার মাথার দিকে তাঁর মাথা ঠেকিয়ে ঈশ্বরকে অন্তরের ভক্তি জানালেন। এর কিছু দিন পরে যোষেফ খবর পেলেন যে, তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তখন তিনি তাঁর দুই ছেলে মনঃশি আর ইফ্রয়িমকে সংগে নিয়ে সেখানে গেলেন। যখন যাকোবকে বলা হল যে, তাঁর ছেলে যোষেফ তাঁর কাছে এসেছেন, তখন তিনি তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে টেনে তুলে বিছানার উপর উঠে বসলেন। তারপর যাকোব যোষেফকে বললেন, “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কনান দেশের লূস শহরে আমাকে দেখা দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে অনেক সন্তানের পিতা হবার ক্ষমতা দিলাম এবং তোমার বংশের লোকদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেব। আমি তোমার মধ্য থেকে একটা বহুগোষ্ঠীর জাতি সৃষ্টি করব, আর তোমার পরে এই দেশটা আমি চিরকালের সম্পত্তি হিসাবে তোমার বংশের লোকদের দেব।’ আমি তোমার কাছে আসবার আগে তোমার যে দু’টি ছেলের মিসরে জন্ম হয়েছে তাদের আমার সন্তানদের মধ্যেই ধরা হবে। রূবেণ আর শিমিয়োন যেমন আমার তেমনি ইফ্রয়িম আর মনঃশিও আমার। কিন্তু এদের পরে তোমার আর যে সব সন্তান হবে তাদের তোমার বলেই ধরা হবে। সম্পত্তির অধিকারী হওয়ার সময় মনঃশি অথবা ইফ্রয়িমের নামে তাদের তা হতে হবে। পদ্দন থেকে বের হয়ে কনান দেশের ইফ্রাথ থেকে কিছু দূরে থাকতেই রাহেল মারা গেলেন, আর তাতে আমি খুব দুঃখ পেলাম। ইফ্রাথের পথে, অর্থাৎ বৈৎলেহমের পথে আমি তাঁকে কবর দিলাম।” এর পরে যোষেফের ছেলেদের দিকে তাকিয়ে ইস্রায়েল জিজ্ঞাসা করলেন, “ওরা কারা?” উত্তরে যোষেফ তাঁর বাবাকে বললেন, “ওরা আমার ছেলে। ঈশ্বর এই দেশেই ওদের আমাকে দিয়েছেন।” ইস্রায়েল বললেন, “ওদের আমার কাছে নিয়ে এস। আমি ওদের আশীর্বাদ করতে চাই।” বুড়ো বয়সে চোখে দেখবার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ইস্রায়েল ভাল করে দেখতে পাচ্ছিলেন না। সেইজন্য যোষেফ তাঁর ছেলেদের তাঁর বাবার কাছে নিয়ে গেলেন। তখন ইস্রায়েল তাদের জড়িয়ে ধরে চুম্বন করলেন। তিনি যোষেফকে বললেন, “আমি আর তোমার মুখ দেখতে পাব বলে ভাবি নি, কিন্তু ঈশ্বর কেবল তোমাকে নয়, তোমার ছেলেদেরও আমাকে দেখতে দিলেন।” তখন যোষেফ তাঁর বাবার হাঁটুর পাশ থেকে তাঁর ছেলেদের সরিয়ে দিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁর বাবাকে প্রণাম করলেন। যোষেফ তারপর তাঁর দুই ছেলেকে আবার ইস্রায়েলের কাছে আনলেন। তিনি ইফ্রয়িমকে ডান হাতে ধরে ইস্রায়েলের বাঁ দিকে এবং মনঃশিকে বাঁ হাতে ধরে তাঁর ডান দিকে রাখলেন। কিন্তু ইস্রায়েল আড়াআড়ি ভাবে হাত বাড়িয়ে ডান হাত যোষেফের ছোট ছেলে ইফ্রয়িমের মাথায় রাখলেন; আর মনঃশি যোষেফের বড় ছেলে হলেও তার মাথায় রাখলেন তাঁর বাঁ হাত। তারপর তিনি যোষেফকে আশীর্বাদ করে বললেন, “সেই ঈশ্বর, যাঁর ইচ্ছামত আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম আর ইস্‌হাক চলতেন, আমার জীবনের প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত যিনি আমাকে রাখালের মত পালন করে আসছেন, সেই স্বর্গদূত, যিনি আমাকে সমস্ত বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন, তিনি এই ছেলেদের আশীর্বাদ করুন। এদের মধ্য দিয়েই আমার ও আমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম ও ইস্‌হাকের নাম বেঁচে থাকুক। আমাদের দেশের মধ্যে তাদের বংশের লোকেরা সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠুক।” কিন্তু তাঁর বাবা তাতে আপত্তি জানিয়ে বললেন, “আমি তা জানি বাবা, আমি তা জানি। সেও মহান হবে এবং তার বংশের লোকেরা একটা জাতি হয়ে গড়ে উঠবে। কিন্তু তার ছোট ভাই তার চেয়েও মহান হবে এবং তার বংশের লোকদের মধ্য থেকে অনেকগুলো জাতি গড়ে উঠবে।” ইস্রায়েল তারপর ছেলে দু’টিকে আশীর্বাদ করলেন এবং বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা কাউকে আশীর্বাদ করবার সময় তোমাদের নাম করে বলবে, ‘ঈশ্বর তোমাকে ইফ্রয়িম ও মনঃশির মত করুন।’ ” এই বলে তিনি মনঃশির চেয়ে ইফ্রয়িমকে বড় স্থান দিলেন। তারপর ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “দেখ, আমার মৃত্যুর সময় প্রায় এসে গেছে। কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের সংগে থাকবেন এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের দেশে তোমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। তোমার ভাইদের চেয়ে কিছু বেশী সম্পত্তি আমি তোমাকে দিলাম। যে জায়গাটা আমি তলোয়ার ও ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করে ইমোরীয়দের হাত থেকে নিয়ে নিয়েছিলাম সেই জায়গাটাই আমি তোমাকে দিলাম।” পরে যাকোব তাঁর ছেলেদের ডেকে বললেন, “তোমরা সবাই আমার কাছে এস। ভবিষ্যতে তোমাদের জীবনে যা ঘটবে তা আমি তোমাদের বলে যাচ্ছি। “যাকোবের ছেলেরা, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; তোমাদের বাবা ইস্রায়েল কি বলছেন তা শোন। “রূবেণ, তুমি আমার বড় ছেলে; তুমি আমার বল, আমার যৌবনের শক্তির প্রথম ফল; তুমি সম্মান ও শক্তিতে তোমার ভাইদের সবার উপরে। কিন্তু তুমি যেন অশান্ত জলের মাতামাতি, সেইজন্য তোমার সেই উঁচু স্থান আর থাকবে না। আমার স্ত্রীর কাছে গিয়ে তুমি আমার বিছানা অপবিত্র করেছ। “শিমিয়োন আর লেবি দুই ভাই; তারা অনিষ্ট করবার জন্যই তলোয়ার ধরে। তাদের গোপন ষড়যন্ত্রে আমার কোন অংশ নেই, আমি তাদের দলে নই। তারা রাগের বশে মানুষ খুন করেছে, আর নিজেদের খেয়াল-খুশী মত গরুর পায়ের শিরা কেটে দিয়েছে। তাদের এই ভয়ংকর রাগ, এই নিষ্ঠুর ক্রোধ অভিশপ্ত হোক। আমি তাদের গোষ্ঠী যাকোবের বংশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেব, আর ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে তাদের ছড়িয়ে দেব। “যিহূদা, তোমার ভাইয়েরা তোমার প্রশংসা করবে। শত্রুদের ঘাড় ধরে তুমি তাদের জব্দ করবে; তোমার ভাইয়েরা তোমাকে প্রণাম করবে। যিহূদা, তুমি সিংহের বাচ্চা; শিকারের মাংস খাওয়া শেষ করে আমার এই ছেলে উঠে আসে; সিংহ ও সিংহীর মত করে সে বসে আর শুয়ে পড়ে। কে তাকে জাগাবে? যতদিন না শীলো আসেন এবং সমস্ত জাতি তাঁর আদেশ মেনে চলে, ততদিন রাজদণ্ড যিহূদারই বংশে থাকবে; আর তার দু’হাঁটুর মাঝখানে থাকবে বিচার দণ্ড। যিহূদা আংগুর গাছে তার গাধা বাঁধবে, আর আংগুরের সেরা ডালে বাঁধবে গাধার বাচ্চাটা। আংগুর-রসে সে তার কাপড় কাচবে, আর আংগুরের রাংগা রসে কাচবে পোশাক। তার চোখের রং আংগুর-রসের রংয়ের চেয়েও গাঢ় হবে, আর তার দাঁত দুধের চেয়েও সাদা হবে। “সবূলূন সাগরের ধারে বাস করবে; সে জাহাজ ভিড়বার বন্দর হবে; তার দেশের সীমানা সীদোনের দিকে চলে যাবে। “ইষাখর যেন একটা শক্তিশালী গাধা। তার শোবার জায়গা হবে ভেড়ার খোঁয়াড় দু’টার মাঝখানে। সে দেখবে তার বিশ্রামের দেশটা সুন্দর ও আরামের, তাই বোঝা বইবার জন্য সে কাঁধ নীচু করবে আর দাসের মত কঠিন পরিশ্রমকেও মেনে নেবে। “দান ইস্রায়েলের একটা গোষ্ঠী হিসাবে তার লোকদের বিচার করবে। সে হবে চলার পথের সাপ, ভয়ংকর বিষাক্ত সাপ; সে ঘোড়ার পায়ে ছোবল মারবে, আর ঘোড়সওয়ার উল্টে পিছন দিকে পড়ে যাবে। “হে সদাপ্রভু, তুমি উদ্ধার করবে আমি সেই অপেক্ষায় আছি। “গাদকে সৈন্যের দল আক্রমণ করবে, কিন্তু সে-ও তাদের পাল্টা আক্রমণ করবে। “আশেরের জমিতে প্রচুর পরিমাণে ভাল ফসল জন্মাবে; সে রাজার উপযুক্ত খাবার যোগান দেবে। “নপ্তালি যেন বাঁধন-ছাড়া হরিণী; তার মুখে আছে সুন্দর সুন্দর কথা। “যোষেফ যেন ফলে ভরা গাছ, জলের কিনারার ফলে ভরা গাছ; তার ডালগুলো দেয়াল ছাড়িয়ে গেছে। ধনুকধারীরা তাকে ভীষণভাবে আক্রমণ করেছে, তীর ছুঁড়ে তাকে বিপদে ফেলেছে। কিন্তু তার ধনুক তেমনি স্থির রয়েছে আর হাত রয়েছে তেমনি পটু, কারণ যাকোবের সেই শক্তিশালী ঈশ্বরের হাত তার পিছনে রয়েছে। তার পিছনে রয়েছে সেই পালক, ইস্রায়েলের সেই পাথর। তোমার বাবার ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তোমাকে উপর থেকে আকাশের আশীর্বাদ আর মাটির তলা থেকে ফোয়ারার আশীর্বাদ দেবেন। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দিয়ে আর তার বুকে দুধ দিয়ে তিনি তোমাকে আশীর্বাদ করবেন। তোমার বাবার পাওয়া আশীর্বাদ তার পূর্বপুরুষদের পাওয়া আশীর্বাদকে ছাড়িয়ে গেছে; তা অনেক কাল আগের পাহাড় পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। সেই আশীর্বাদ যোষেফের মাথার উপর পড়ুক; পড়ুক তারই মাথায় যে তার ভাইদের মধ্যে প্রধান। “বিন্যামীন যেন একটা হিংস্র নেকড়ে বাঘ; সকালে সে খায় শিকারের পশু আর সন্ধ্যায় লুটের জিনিস ভাগ করে।” এরাই হল ইস্রায়েলের বারোটি গোষ্ঠী। তাদের বাবা তাদের আশীর্বাদ করবার সময় এই সব কথাই বলেছিলেন। তিনি প্রত্যেককেই তার পাওনা আশীর্বাদ দিয়েছিলেন। পরে যাকোব তাঁর ছেলেদের এই নির্দেশ দিলেন, “পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবার সময় আমার এসে গেছে। হিত্তীয় ইফ্রোণের জমিতে যে গুহা আছে সেই গুহাতে আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে আমাকে কবর দিয়ো। এটাই কনান দেশের মম্রির কাছে মক্‌পেলার জমির সেই গুহা। কবরস্থান করবার জন্য অব্রাহাম জমি সুদ্ধ এই গুহা হিত্তীয় ইফ্রোণের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন। সেখানেই অব্রাহাম ও তাঁর স্ত্রী সারাকে কবর দেওয়া হয়েছে। ইস্‌হাক ও তাঁর স্ত্রী রিবিকাকেও সেখানে কবর দেওয়া হয়েছে। সেখানেই আমি লেয়াকে কবর দিয়েছি। গুহা সুদ্ধ এই জমিটাই হিত্তীয়দের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল।” যাকোব তাঁর ছেলেদের নির্দেশ দেওয়া শেষ করে বিছানার উপর তাঁর পা দু’টা তুলে নিয়ে শুয়ে পড়লেন। তারপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন। তখন যোষেফ তাঁর বাবার মুখের উপর পড়ে কাঁদতে লাগলেন এবং তাঁকে চুম্বন করলেন। পরে তিনি তাঁর অধীন ডাক্তারদের আদেশ দিলেন যেন তাঁরা তাঁর বাবার দেহটা সুগন্ধি মসলা দিয়ে রক্ষা করবার ব্যবস্থা করেন। তাঁরা তা-ই করলেন। এতে তাঁদের চল্লিশ দিন কেটে গেল। এই কাজে চল্লিশ দিনই লাগত। মিসরীয়েরা ইস্রায়েলের জন্য সত্তর দিন ধরে শোক-প্রকাশের অনুষ্ঠান করল। এই শোক-প্রকাশের সময় পার হয়ে গেলে পর যোষেফ ফরৌণের বাড়ীর কর্মচারীদের বললেন, “যদি তোমরা আমার উপর সন্তুষ্ট থাক তবে ফরৌণকে গিয়ে আমার এই কথাটা জানাও যে, বাবা মারা যাবার সময় আমাকে এই বলে শপথ করিয়ে নিয়েছেন, আমি যেন কনান দেশে তাঁর ঠিক করে রাখা কবরটিতে তাঁর কবর দিই। তাঁকে এই অনুরোধ কর যেন তিনি সেই কাজের জন্য আমাকে যেতে দেন। তাঁকে বল কাজ শেষ করেই আমি আবার ফিরে আসব।” এর উত্তরে ফরৌণ বলে পাঠালেন, “তিনি তোমাকে যে শপথ করিয়েছেন সেইমতই তুমি গিয়ে তাঁকে কবর দাও।” তখন যোষেফ তাঁর বাবাকে কবর দেবার জন্য গেলেন। ফরৌণের সব কর্মচারীরা, অর্থাৎ তাঁর দরবারের এবং মিসরের সমস্ত সম্মানিত লোকেরা যোষেফের সংগে গেলেন। এছাড়া যোষেফের নিজের এবং তাঁর বাবার পরিবারের সকলে ও তাঁর ভাইয়েরাও তাঁর সংগে গেল। গোশনে তারা কেবল রেখে গেল তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের ও তাদের গরু-ভেড়ার পাল। অনেক রথ ও ঘোড়সওয়ার নিয়ে তারা একটা বিরাট দল হয়ে যোষেফের সংগে চলল। যর্দন নদীর অন্য পারে আটদের খামার বাড়ী পর্যন্ত গিয়ে যোষেফ সাত দিন ধরে তাঁর বাবার উদ্দেশে শোক-প্রকাশের অনুষ্ঠান করলেন। লোকেরাও খুব জোরে জোরে কান্নাকাটি করল। আটদের খামারে তাদের এইভাবে শোক প্রকাশ করতে দেখে সেই দেশের বাসিন্দারা, অর্থাৎ কনানীয়েরা বলল, “মিসরীয়দের এটা একটা গভীর শোক-প্রকাশ।” সেইজন্য যর্দন নদীর অন্য পারের এই জায়গাটার নাম দেওয়া হয়েছিল আবেল্‌-মিস্রয়ীম (যার মানে “মিসরীয়দের শোক-প্রকাশ”)। ইস্রায়েল তাঁর ছেলেদের যা করতে বলেছিলেন তা তারা করল। তারা তাঁর দেহ কনান দেশে নিয়ে গেল এবং মম্রির কাছে মক্‌পেলার জমির গুহাতে তাঁকে কবর দিল। কবরস্থান করবার জন্য জমি সুদ্ধ এই গুহাটাই অব্রাহাম হিত্তীয় ইফ্রোণের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন। বাবাকে কবর দেবার পর যোষেফ, তাঁর ভাইয়েরা এবং যত লোক তাঁর বাবাকে কবর দিতে গিয়েছিল তারা সবাই মিসরে ফিরে গেল। বাবা মারা গেছেন দেখে যোষেফের ভাইয়েরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, “যোষেফের মনে যদি আমাদের উপর প্রতিশোধ নেবার ভাব থাকে, আর আমরা তার প্রতি যে অন্যায় করেছি যদি সে তার শোধ নেয়, তখন আমরা কি করব?” এর পর তাঁর ভাইয়েরা তাঁর সামনে এসে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বলল, “আমরা তোমার দাস।” কিন্তু যোষেফ তাদের বললেন, “তোমরা ভয় কোরো না। ঈশ্বরের জায়গায় দাঁড়াবার আমি কে? তোমরা আমার অমংগল করতে চেয়েছিলে, কিন্তু ঈশ্বর তার ভিতর দিয়ে মংগলের পরিকল্পনা করেছিলেন যাতে অনেক লোকের প্রাণ রক্ষা পায়; আর আজ তা-ই হচ্ছে। কাজেই তোমরা ভয় কোরো না। আমি তোমাদের ও তোমাদের ছেলেমেয়েদের খাবারের যোগান দেব।” এই সব আশার কথা বলে তিনি তাদের সান্ত্বনা দিলেন। যোষেফ ও তাঁর বাবার পরিবারের লোকেরা মিসরেই বাস করতে লাগলেন। যোষেফ একশো দশ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি ইফ্রয়িমের তিন পুরুষ পর্যন্ত দেখে গিয়েছিলেন। এছাড়া মাখীরের ছেলেমেয়েদেরও জন্মের পর যোষেফের কোলেই রাখা হয়েছিল। মাখীর ছিল মনঃশির ছেলে। পরে এক সময় যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “আমার মরবার সময় হয়ে এসেছে, তবে এটা নিশ্চয় যে, ঈশ্বর তোমাদের দেখাশোনা করবেন। তিনি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে যে দেশ দেবেন বলে শপথ করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই দেশেই তিনি তোমাদের এখান থেকে নিয়ে যাবেন।” তারপর যোষেফ ইস্রায়েলীয়দের শপথ করিয়ে বললেন, “ঈশ্বর নিশ্চয়ই তোমাদের দেখাশোনা করবেন। এখান থেকে যাবার সময় তোমরা আমার হাড়গুলো তুলে নিয়ে যেয়ো।” একশো দশ বছর বয়সে যোষেফ মারা গেলেন। তখন তাঁর দেহটা সুগন্ধি মসলা দিয়ে মৃতদেহ রাখবার একটা বাক্সে করে মিসরেই রাখা হল। পরে যোষেফ, তাঁর ভাইয়েরা এবং তাঁদের সময়কার সবাই মারা গেলেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা কম ছিল না; তারা সংখ্যায় বেড়ে উঠে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং খুব শক্তিশালী হয়ে উঠল, আর তাদের দিয়ে মিসর দেশটা ভরে গেল। পরে এক সময় মিসর দেশের সমস্ত ক্ষমতা এমন একজন নতুন রাজার হাতে গেল যিনি যোষেফের বিষয় কিছুই জানতেন না। তিনি তাঁর প্রজাদের বললেন, “দেখ, ইস্রায়েলীয়েরা আমাদের চেয়ে সংখ্যায় এবং শক্তিতে বেড়ে উঠেছে। তাদের সংখ্যা যেন আর বাড়তে না পারে সেইজন্য এস, আমরা তাদের সংগে কৌশল খাটিয়ে চলি; তা না হলে যুদ্ধের সময়ে তারা হয়তো আমাদের শত্রুদের সংগে হাত মিলিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং পরে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।” তাই কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের উপর অত্যাচার করবার উদ্দেশ্যে মিসরীয়েরা তাদের উপর সর্দার নিযুক্ত করল। ফরৌণের শস্য মজুদ করবার জন্য ইস্রায়েলীয়েরা পিথোম ও রামিষেষ নামে দু’টা শহর তৈরী করল। কিন্তু তাদের উপর যতই অত্যাচার করা হল ততই তারা সংখ্যায় বেড়ে গিয়ে দেশের সব দিকে ছড়িয়ে পড়ল। এতে ইস্রায়েলীয়দের দরুন মিসরীয়দের মনে খুব ভয় হল। তারা তাদের আরও কঠিন পরিশ্রম করতে বাধ্য করল। ক্ষেতের অন্য সব কাজের সংগে তারা তাদের উপর চুনসুরকি আর ইটের কাজের কঠিন পরিশ্রমও চাপিয়ে দিল এবং তাদের জীবন তেতো করে তুলল। এই সব কঠিন কাজ করাতে গিয়ে মিসরীয়েরা তাদের প্রতি খুব নিষ্ঠুর ব্যবহার করত। এছাড়া শিফ্রা ও পূয়া নামে দু’জন ইব্রীয়, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয় ধাইকে মিসরের রাজা বলে দিলেন, “সন্তান প্রসব করবার সময় ইব্রীয় স্ত্রীলোকদের সাহায্য করতে গিয়ে তোমরা ভাল করে লক্ষ্য করবে তাদের সন্তানেরা ছেলে না মেয়ে; ছেলে হলে তাদের মেরে ফেলবে আর মেয়ে হলে বাঁচিয়ে রাখবে।” কিন্তু সেই ধাইয়েরা ঈশ্বরকে ভয় করে চলত। তাই মিসরের রাজার আদেশ মত কাজ না করে তারা ছেলেদেরও বাঁচিয়ে রাখতে লাগল। তখন রাজা সেই ধাইদের ডাকিয়ে এনে বললেন, “কেন তোমরা এই কাজ করছ? ছেলেদের বাঁচিয়ে রাখছ কেন?” উত্তরে তারা ফরৌণকে বলল, “ইব্রীয় স্ত্রীলোকেরা মিসরীয় স্ত্রীলোকদের মত নয়। তাদের শক্তি এত বেশী যে, ধাই তাদের কাছে পৌঁছাবার আগেই তাদের সন্তান হয়ে যায়।” ঈশ্বর সেই ধাইদের মংগল করলেন। ইস্রায়েলীয়দের লোকসংখ্যা বাড়তেই থাকল এবং তারা খুব শক্তিশালী হয়ে উঠল। সেই ধাইয়েরা ঈশ্বরকে ভক্তি করত বলে তিনি তাদের সন্তানদের দিয়ে বংশ গড়ে তুললেন। পরে ফরৌণ তাঁর প্রজাদের উপর এই আদেশ জারি করলেন, “ইব্রীয়দের মধ্যে কোন ছেলের জন্ম হলে তোমরা তাকে নীল নদীতে ফেলে দেবে, কিন্তু মেয়েদের সবাইকে বাঁচিয়ে রাখবে।” এই সময়ে লেবির গোষ্ঠীর একজন লোক একই গোষ্ঠীর একটি মেয়েকে বিয়ে করলেন। মেয়েটি গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর একটি ছেলে হল। ছেলেটি দেখতে খুব সুন্দর ছিল। সেইজন্য তার মা তাকে তিন মাস পর্যন্ত লুকিয়ে রাখলেন। কিন্তু যখন তাকে আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হল না তখন তিনি নল দিয়ে বোনা একটা টুকরি নিয়ে তাতে মেটে তেল ও আলকাতরা লেপে দিলেন আর ছেলেটিকে তার মধ্যে শুইয়ে সেটা নীল নদীর পারে জলের মধ্যে একটা নলবনে রেখে আসলেন। ছেলেটির দশা কি হয় তা দেখবার জন্য তার বোন সেখান থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পরে ফরৌণের মেয়ে নদীতে স্নান করতে আসলেন। তাঁর দাসীরা তখন নদীর পারে ঘোরাফেরা করছিল। এমন সময় তিনি নলবনের মধ্যে সেই টুকরিটা দেখতে পেয়ে সেটা তাঁর কাছে নিয়ে আসবার জন্য একজন দাসীকে পাঠিয়ে দিলেন। সেটা খুলে তিনি আশ্চর্য হয়ে দেখলেন একটা ছেলে তার মধ্যে কাঁদছে। ছেলেটির উপর রাজকন্যার খুব মায়া হল। তিনি বললেন, “এটি ইব্রীয়দের কোন ছেলে।” তখন ছেলেটির বোন এসে ফরৌণের মেয়েকে বলল, “আমি কি আপনার জন্য একজন ইব্রীয় স্ত্রীলোক ডেকে আনব, যে একে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে? ” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যাও।” তখন মেয়েটি গিয়ে ছেলেটির মাকেই ডেকে আনল। ফরৌণের মেয়ে তাঁকে বললেন, “এই ছেলেটিকে নিয়ে গিয়ে আমার হয়ে তোমার বুকের দুধ খাইয়ে লালন-পালন কর। এর জন্য আমি তোমাকে বেতন দেব।” তখন সেই স্ত্রীলোকটি ছেলেটিকে নিয়ে গিয়ে দুধ খাইয়ে তাকে লালন-পালন করতে লাগলেন। ছেলেটি একটু বড় হলে পর স্ত্রীলোকটি তাকে ফরৌণের মেয়ের কাছে নিয়ে গেলেন, আর তিনি তাকে নিজের ছেলে হিসাবে গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, “ওকে আমি জল থেকে তুলে এনেছি।” সেইজন্য তিনি তার নাম দিলেন মোশি। পরে বড় হয়ে মোশি একদিন তাঁর নিজের জাতির লোকদের সংগে দেখা করতে গিয়ে দেখলেন, কি ভীষণ পরিশ্রম তাদের করতে হচ্ছে। তাঁর চোখে পড়ল যে, তাঁর নিজের ইব্রীয় জাতির একজন লোককে একজন মিসরীয় মারধর করছে। তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন তিনি সেই মিসরীয়কে মেরে ফেলে বালি চাপা দিয়ে রাখলেন। পরদিন তিনি আবার বাইরে গিয়ে দু’জন ইব্রীয়কে মারামারি করতে দেখলেন। যে দোষী তাকে তিনি বললেন, “কেন তুমি তোমার ভাইকে মারছ? ” লোকটি বলল, “কে তোমাকে আমাদের নেতা ও শাসনকর্তা করেছে? সেই মিসরীয়ের মত আমাকেও মেরে ফেলতে চাও নাকি? ” এই কথা শুনে মোশি ভয় পেলেন। তিনি ভাবলেন, নিশ্চয়ই ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেছে। ফরৌণ এই ঘটনা জানতে পেরে মোশিকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু মোশি ফরৌণের কাছ থেকে পালিয়ে মিদিয়ন দেশে বাস করবার জন্য চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একটা কূয়ার ধারে বসে রইলেন। সেখানকার মিদিয়নীয় পুরোহিতের সাতটি মেয়ে ছিল। তারা তাদের বাবার ভেড়াগুলোকে জল খাওয়াবার জন্য জল তুলে গামলা ভরতে সেই জায়গায় গেল। কিন্তু কয়েকজন রাখাল এসে কূয়ার কাছ থেকে সেই মেয়েদের তাড়িয়ে দিল। এই ব্যাপার দেখে মোশি উঠে তাদের সাহায্য করলেন এবং তাদের ভেড়াগুলোকে জল খেতে দিলেন। সেই মেয়েরা তাদের বাবা রূয়েলের কাছে ফিরে গেলে পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আজ তোমরা এত তাড়াতাড়ি কি করে ফিরে আসলে? ” তারা বলল, “রাখালদের হাত থেকে একজন মিসরীয় আমাদের রক্ষা করেছেন। কেবল তা-ই নয়, তিনি জল তুলে আমাদের ভেড়াগুলোকেও জল খাইয়েছেন।” তিনি তাঁর মেয়েদের জিজ্ঞাসা করলেন, “লোকটি কোথায়? তোমরা তাকে ফেলে আসলে কেন? তাকে ডেকে এনে কিছু খেতে দাও।” পরে মোশি সেই পুরোহিতের সংগে থাকতে রাজী হলেন এবং তিনি মোশির সংগে তাঁর মেয়ে সিপ্পোরার বিয়ে দিলেন। সিপ্পোরার একটি ছেলে হলে পর মোশি তার নাম রাখলেন গের্শোম, কারণ তিনি বলেছিলেন, “আমি পরদেশের বাসিন্দা হয়ে আছি।” এর অনেক দিন পরে মিসরের রাজা মারা গেলেন। এদিকে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের গোলামীর দরুন কাতর হয়ে হাহাকার করতে লাগল। এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পাবার জন্য তাদের এই কান্না উপরে ঈশ্বরের কাছে গিয়ে পৌঁছাল। ঈশ্বর তাদের কাতর স্বর শুনলেন এবং অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের জন্য যে ব্যবস্থা তিনি স্থাপন করেছিলেন সেই কথা ভাবলেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের দিকে চেয়ে দেখলেন এবং তাদের দিকে মনোযোগ দিলেন। একদিন মোশি তাঁর শ্বশুর যিথ্রোর, অর্থাৎ রূয়েলের ছাগল-ভেড়ার পাল চরাচ্ছিলেন। যিথ্রো ছিলেন মিদিয়নীয়দের একজন পুরোহিত। ছাগল-ভেড়ার পাল চরাতে চরাতে মোশি মরু-এলাকার অন্য ধারে ঈশ্বরের পাহাড় হোরেবের কাছে গিয়ে পৌঁছালেন। সেখানে একটা ঝোপের মাঝখানে জ্বলন্ত আগুনের মধ্য থেকে সদাপ্রভুর দূত তাঁকে দেখা দিলেন। মোশি দেখলেন যে, ঝোপটাতে আগুন জ্বললেও সেটা পুড়ে যাচ্ছে না। এই ব্যাপার দেখে তিনি মনে মনে বললেন, “আমি এক পাশে গিয়ে এই আশ্চর্য ব্যাপারটা দেখব, দেখব ঝোপটা পুড়ে যাচ্ছে না কেন।” ঝোপটা দেখবার জন্য মোশি একপাশে যাচ্ছেন দেখে সদাপ্রভু ঈশ্বর ঝোপের মধ্য থেকে ডাকলেন, “মোশি, মোশি।” মোশি বললেন, “এই যে আমি।” সদাপ্রভু বললেন, “আর কাছে এসো না। তুমি পবিত্র জায়গায় দাঁড়িয়ে আছ। তোমার পায়ের জুতা খুলে ফেল। আমি তোমার বাবার ঈশ্বর; আমি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের ঈশ্বর।” তখন মোশি তাঁর মুখ ঢেকে ফেললেন, কারণ ঈশ্বরের দিকে তাকাতে তাঁর ভয় হল। সদাপ্রভু বললেন, “মিসর দেশে আমার লোকদের উপরে যে অত্যাচার হচ্ছে তা আমার নজর এড়ায় নি। মিসরীয় সর্দারদের অত্যাচারে ইস্রায়েলীয়েরা যে হাহাকার করছে তা আমি শুনেছি। তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা আমি জানি। মিসরীয়দের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবার জন্য আমি নেমে এসেছি। আমি তাদের সেই দেশ থেকে বের করে কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশে নিয়ে যাব। দেশটা বেশ বড় এবং সুন্দর; সেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই। ইস্রায়েলীয়দের কান্না এখন আমার কাছে এসে পৌঁছেছে। মিসরীয়েরা কিভাবে তাদের উপর অত্যাচার করছে তা-ও আমি দেখেছি। কাজেই তুমি এখন যাও। আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে পাঠাচ্ছি। তুমি গিয়ে আমার লোকদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের মিসর থেকে বের করে আনবে।” কিন্তু মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “আমি এমন কেউ নই যে, ফরৌণের কাছে গিয়ে মিসর থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে আনতে পারি।” ঈশ্বর বললেন, “আমিই তোমার সংগে থাকব। তুমি মিসর থেকে লোকদের বের করে আনবে আর তোমরা এই পাহাড়েই আমার উপাসনা করবে। আমিই যে তোমাকে পাঠালাম এটাই হবে তোমার কাছে তার চিহ্ন।” তখন মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “কিন্তু আমি গিয়ে ইস্রায়েলীয়দের যখন বলব তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরই আমাকে তাদের কাছে পাঠিয়েছেন, তখন তারা হয়তো আমাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘তাঁর নাম কি?’ সেই সময়ে আমি তাদের কি উত্তর দেব? ” ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “যিনি ‘আমি আছি’ আমিই তিনি। তুমি ইস্রায়েলীয়দের বলবে যে, ‘আমি আছি’ তাদের কাছে তোমাকে পাঠিয়েছেন। তুমি তাদের আরও বলবে যে, তাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে তাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমার চিরকালের নাম সদাপ্রভু। বংশের পর বংশ ধরে আমাকে এই নামেই লোকে মনে রাখবে। তুমি গিয়ে ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতাদের একসংগে জড়ো করে তাদের বলবে যে, তাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তোমাকে দেখা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের দিকে এবং মিসরে তোমাদের প্রতি যা করা হচ্ছে তার দিকে আমার খেয়াল আছে। সেইজন্যই আমি বলছি, মিসরের অত্যাচার থেকে বের করে আমি তোমাদের কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশে নিয়ে যাব। সেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই।’ “ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতারা তোমার কথায় কান দেবে। তুমি ও তারা মিলে মিসরের রাজার কাছে গিয়ে বলবে, ‘ইব্রীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুই আমাদের সংগে দেখা দিয়ে কথা বলেছেন। কাজেই আপনি দয়া করে আমাদের যেতে দিন, যাতে আমরা মরু-এলাকার মধ্যে তিন দিনের পথ গিয়ে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ করতে পারি।’ আমি জানি শক্ত হাতে পড়লেও মিসরের রাজা তোমাদের যেতে দেবে না। কাজেই আমার শক্তি ব্যবহার করে আমি এমন সব আশ্চর্য কাজের মধ্য দিয়ে মিসরকে আঘাত করব যার ফলে ফরৌণ তোমাদের যেতে দেবে। ইস্রায়েলীয়দের প্রতি মিসরীয়দের মনে আমি এমন একটা দয়ার মনোভাব সৃষ্টি করব যাতে মিসর থেকে বের হয়ে যাবার সময় তোমাদের খালি হাতে যেতে না হয়। প্রত্যেক ইব্রীয় স্ত্রীলোক তার প্রতিবেশী এবং নিজের ঘরে আছে এমন সব মিসরীয় স্ত্রীলোকদের কাছ থেকে সোনা ও রূপার জিনিস আর কাপড়-চোপড় চেয়ে নেবে। তারপর সেগুলো দিয়ে তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের সাজাবে। এইভাবেই মিসরীয়দের জিনিস ইস্রায়েলীয়েরা অধিকার করে নেবে।” এই কথার উত্তরে মোশি বললেন, “কিন্তু যদি ইস্রায়েলীয়েরা আমাকে অবিশ্বাস করে আর আমার কথা না শোনে? তারা তো বলতে পারে, ‘না, সদাপ্রভু তোমাকে দেখা দেন নি।’ ” তখন সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তোমার হাতে ওটা কি? ” তিনি বললেন, “একটা লাঠি।” সদাপ্রভু বললেন, “ওটা মাটিতে ফেল।” মোশি লাঠিটা মাটিতে ফেলতেই সেটা একটা সাপ হয়ে গেল। তখন মোশি সেটার কাছ থেকে দৌড়ে পালালেন। কিন্তু সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার হাত বাড়িয়ে ওটার লেজ ধর।” মোশি তা করতেই তাঁর হাতে আবার সেটা লাঠি হয়ে গেল। তারপর সদাপ্রভু বললেন, “তুমি এটা করবে যাতে তারা বিশ্বাস করতে পারে যে, তাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের ঈশ্বর সদাপ্রভু সত্যিসত্যিই তোমাকে দেখা দিয়েছেন।” সদাপ্রভু তাঁকে আবার বললেন, “তোমার হাত কোমর-বাঁধনির উপরের দিকে কাপড়ের ভাঁজের ভিতরে রাখ।” মোশি তা-ই করলেন। কিন্তু যখন তিনি তা বের করে আনলেন তখন দেখা গেল চর্মরোগে তাঁর হাতের উপর যেন তুষারের আস্তর পড়ে গেছে। তখন সদাপ্রভু বললেন, “তোমার হাত আবার ওখানে রাখ।” তিনি তা-ই করলেন। যখন তিনি হাতটা বের করে আনলেন তখন দেখা গেল তাঁর হাতটা তাঁর শরীরের অন্যান্য অংশের মত সুস্থ হয়ে গেছে। তখন সদাপ্রভু বললেন, “যদি তারা তোমাকে অবিশ্বাস করে কিম্বা প্রথম চিহ্নটার কোন দাম না দেয় তবে হয়তো তারা দ্বিতীয়টা বিশ্বাস করবে। কিন্তু যদি তারা এই দু’টার কোনটাই বিশ্বাস না করে কিম্বা তোমার কথায় কান না দেয় তবে তুমি নীল নদী থেকে কিছুটা জল তুলে নিয়ে মাটির উপর ঢেলে দেবে। তাতে মাটির উপরকার সেই জলটুকু রক্ত হয়ে যাবে।” মোশি সদাপ্রভুকে বললেন, “কিন্তু প্রভু, আমি কোন কালেই ভাল করে কথা বলতে পারি না। আগেও পারি নি আর তোমার এই দাসের সংগে তুমি কথা বলবার পরেও পারছি না। আমার মুখে কথা আট্‌কে যায়, আমার জিভ্‌ ভারী।” কিন্তু সদাপ্রভু তাকে বললেন, “মানুষের মুখ কে তৈরী করেছেন? কে তাকে বোবা, বয়রা বা অন্ধ করেছেন? আর কে-ই বা তাকে চোখে দেখবার শক্তি দিয়েছেন? সে কি আমি সদাপ্রভু নই? তুমি এবার যাও। আমি নিজেই তোমাকে কথা বলতে সাহায্য করব আর যা বলবার তা তোমাকে শিখিয়ে দেব।” উত্তরে মোশি বললেন, “হে প্রভু, আমি মিনতি করছি, আর কাউকে দিয়ে তুমি এই খবর পাঠিয়ে দাও।” এই কথা শুনে সদাপ্রভু মোশির উপর ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। তিনি বললেন, “তোমার ভাই লেবীয় হারোণ কি নেই? আমি জানি সে খুব ভাল করে কথা বলতে পারে। সে তোমার সংগে দেখা করতে আসছে। তোমাকে দেখে সে খুব খুশী হবে। তুমি যখন তার সংগে কথা বলবে তখন তাকে বলে দেবে কি বলতে হবে। আমি তোমাদের দু’জনকে কথা বলতে সাহায্য করব এবং কি করতে হবে তা তোমাদের শিখিয়ে দেব। তোমার হয়ে হারোণই লোকদের সংগে কথা বলবে, যেন তার মুখই তোমার মুখ আর তুমিই যেন তার ঈশ্বর। তোমার এই লাঠিটা তুমি হাতে করে নিয়ে যাবে আর ওটা দিয়েই ঐ সব আশ্চর্য কাজ করবে।” এর পর মোশি তাঁর শ্বশুর যিথ্রোর কাছে ফিরে গিয়ে তাঁকে বললেন, “মিসর দেশে আমার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আমাকে ফিরে যেতে দিন। আমি গিয়ে দেখতে চাই তাঁরা এখনও বেঁচে আছেন কিনা।” যিথ্রো মোশিকে বললেন, “আচ্ছা যাও, তোমার মংগল হোক।” মিদিয়ন দেশে থাকতেই সদাপ্রভু মোশিকে বলেছিলেন, “তুমি এখন মিসরে ফিরে যাও। যে সব লোক তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল তারা আর বেঁচে নেই।” তখন মোশি তাঁর স্ত্রী ও ছেলেদের একটা গাধার পিঠে বসালেন এবং তাদের নিয়ে মিসর দেশে ফিরে চললেন। ঈশ্বরের সেই লাঠিটাও তিনি হাতে করে নিলেন। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে যে সব আশ্চর্য কাজ করবার ক্ষমতা দিয়েছি তুমি মিসর দেশে ফিরে গিয়ে ফরৌণের সামনে তার সবগুলোই করবে। কিন্তু আমি তার মন এমন কঠিন করে দেব যার ফলে সে লোকদের যেতে দেবে না। তার পরে তুমি ফরৌণকে বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘ইস্রায়েল আমার প্রথম ছেলে। আমার উপাসনা করবার জন্য আমার প্রথম ছেলেকে যেতে দিতে আমি তোমাকে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি তাকে যেতে দিলে না বলে আমি তোমার প্রথম ছেলেকে মেরে ফেলতে যাচ্ছি।’ ” মিসরে যাবার পথে একটা রাত কাটাবার জায়গায় সদাপ্রভু মোশিকে মেরে ফেলবার উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁর মুখোমুখি হলেন। তখন সিপ্পোরা একটা ধারালো পাথর দিয়ে তাঁর ছেলের পুরুষাংগের সামনের চামড়া কেটে নিলেন। তারপর সেটা মোশির পায়ে ছুঁইয়ে বললেন, “তুমি রক্তপাত করে পাওয়া আমার স্বামী।” তখন সদাপ্রভু মোশিকে রেহাই দিলেন। সুন্নত করাবার ব্যাপারে সিপ্পোরা সেই কথা বলেছিলেন। এর পরে সদাপ্রভু হারোণকে বললেন, “মরু-এলাকায় গিয়ে তুমি মোশির সংগে দেখা কর।” তখন তিনি গেলেন এবং ঈশ্বরের পাহাড়ে মোশির দেখা পেয়ে তাঁকে চুম্বন করলেন। সদাপ্রভু মোশিকে যা বলতে পাঠিয়েছেন তা মোশি হারোণকে জানালেন। এছাড়া যে সব আশ্চর্য কাজ করবার আদেশ সদাপ্রভু তাঁকে দিয়েছেন তা-ও মোশি হারোণকে বুঝিয়ে বললেন। এর পরে মোশি ও হারোণ মিসরে গিয়ে সমস্ত ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতাদের একসংগে জড়ো করলেন। সদাপ্রভু মোশিকে যে সব কথা বলেছিলেন তা সবই হারোণ তাঁদের জানালেন এবং লোকদের সামনে সেই আশ্চর্য কাজগুলো করে দেখালেন। তাতে লোকেরা বিশ্বাস করল। তারা যখন শুনল যে, সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের দুঃখ-দুর্দশা দেখেছেন এবং তাদের কথা ভেবেছেন তখন তারা মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে সদাপ্রভুকে তাদের অন্তরের ভক্তি জানাল। পরে মোশি ও হারোণ গিয়ে ফরৌণকে বললেন, “সদাপ্রভু্‌, যিনি ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর, তিনি বলছেন, ‘আমার লোকেরা যাতে মরু-এলাকায় গিয়ে আমার উদ্দেশে একটা উৎসবের অনুষ্ঠান করতে পারে সেইজন্য তাদের যেতে দাও।’ ” কিন্তু ফরৌণ বললেন, “কে আবার এই সদাপ্রভু, যে আমি তার আদেশ মেনে ইস্রায়েলীয়দের যেতে দেব? এই সদাপ্রভুকেও আমি চিনি না আর ইস্রায়েলীয়দেরও আমি যেতে দেব না।” তখন তাঁরা বললেন, “ইব্রীয়দের ঈশ্বর আমাদের দেখা দিয়েছেন। তাই আপনি দয়া করে আমাদের যেতে দিন যাতে আমরা মরু-এলাকায় তিন দিনের পথ গিয়ে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করতে পারি। তা না হলে তিনি হয়তো কোন মড়ক বা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের উপর শাস্তি আনবেন।” উত্তরে মিসরের রাজা তাঁদের বললেন, “মোশি ও হারোণ, তোমরা কাজ থেকে লোকদের মন সরিয়ে দিচ্ছ কেন? যাও, তোমরা কাজে ফিরে যাও। দেখ, দেশে তোমাদের লোকসংখ্যা এখন বেড়ে গেছে, আর তোমাদের দরুন তারা কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে।” ফরৌণ সেই দিনই দাসদের উপর নিযুক্ত-করা অত্যাচারী সর্দারদের ও ইস্রায়েলীয় পরিচালকদের এই হুকুম দিলেন, “ইট তৈরীর জন্য লোকদের তোমরা আর খড়কুটা দেবে না। তারা নিজেরাই নিজেদের খড় যোগাড় করে নেবে। কিন্তু তবুও তারা আগে যতগুলো ইট তৈরী করত ঠিক ততগুলোই তোমরা তাদের কাছ থেকে বুঝে নেবে, একটাও কমাবে না। লোকগুলো অলস বলেই তারা গিয়ে তাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করবার কথা নিয়ে হৈ-চৈ করছে। তোমরা তাদের উপর আরও ভারী কাজ চাপিয়ে দাও, যাতে মিথ্যা কথায় কান না দিয়ে তারা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।” তখন দাসদের উপর নিযুক্ত-করা অত্যাচারী সর্দারেরা ও ইস্রায়েলীয় পরিচালকেরা বাইরে গিয়ে লোকদের বলল, “ফরৌণ বলছেন যে, তিনি আর তোমাদের খড়ের যোগান দেবেন না। তোমরা যেখানে পাও সেখান থেকে খড়কুটা যোগাড় করে নেবে। কিন্তু তাতে তোমাদের কাজ একটুও কমিয়ে দেওয়া হবে না।” কাজেই লোকেরা খড়ের বদলে নাড়া যোগাড় করবার জন্য মিসর দেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। সেই সর্দারেরা তাদের তাড়া দিয়ে বলতে লাগল, “আগে খড় যোগান দেবার সময় তোমরা রোজ যতগুলো ইট তৈরী করতে এখনও তোমাদের ঠিক ততগুলোই তৈরী করে দিতে হবে।” পরে একদিন ফরৌণের সেই সর্দারেরা তাদের নিযুক্ত ইস্রায়েলীয় পরিচালকদের মারধর করে বলল, “যতগুলো করে ইট রোজ তোমাদের তৈরী করবার কথা তোমরা আগের মত তা করছ না কেন? তোমরা আজকেও তা কর নি আর তার আগের দিনও কর নি।” এতে ইস্রায়েলীয় পরিচালকেরা ফরৌণের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে বলল, “আপনার দাসদের সংগে আপনি এ কি রকম ব্যবহার করছেন? কোন খড়কুটা আমাদের দেওয়া হয় না, অথচ সর্দারেরা আমাদের ইট তৈরী করতে বলেন। আর দেখুন, আপনার দাসদের মারধর করা হচ্ছে, কিন্তু দোষটা আপনার নিজের লোকদেরই।” উত্তরে ফরৌণ তাদের বললেন, “তোমরা অলস, খুব কুঁড়ে। সেইজন্যই তোমরা বলছ, ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করবার জন্য আমাদের যেতে দিন।’ যাও, কাজ কর গিয়ে। তোমাদের আর খড়কুটা দেওয়া হবে না, তবুও তোমাদের যতগুলো ইট তৈরী করবার কথা তা করতেই হবে।” তখন ইস্রায়েলীয় পরিচালকেরা বুঝল যে, তারা বিপদে পড়েছে, কারণ তাদের বলা হয়েছিল আগে প্রতিদিন তারা যতগুলো করে ইট তৈরী করত এখনও ঠিক ততগুলোই করতে হবে। তারা ফরৌণের সামনে থেকে বের হয়ে এসে মোশি ও হারোণের দেখা পেল। তাঁরা তাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। পরিচালকেরা তাঁদের বলল, “সদাপ্রভু যেন আপনাদের শাস্তি দেন, কারণ ফরৌণ ও তাঁর কর্মচারীদের কাছে আপনারা আমাদের একটা দুর্গন্ধের মত করে তুলেছেন, আর তাতে আমাদের মেরে ফেলবার তলোয়ার তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।” তখন মোশি ফিরে গিয়ে সদাপ্রভু্‌কে বললেন, “হে প্রভু, এই জাতিকে কেন তুমি কষ্টে ফেলেছ? কেনই বা তুমি আমাকে পাঠিয়েছ? তোমার নামে ফরৌণের কাছে কথা বলবার পর থেকেই এই লোকদের উপর বিপদ নেমে এসেছে। কই তুমি তোমার লোকদের রক্ষা করলে? ” সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি দেখে নিয়ো, ফরৌণের অবস্থা এবার আমি কি করি। আমার শক্ত হাতে পড়ে সে লোকদের ছেড়ে দেবে। হ্যাঁ, আমার শক্ত হাতে পড়ে সে তার দেশ থেকে তাদের তাড়িয়ে বের করবে।” ঈশ্বর মোশিকে আরও বললেন, “আমি সদাপ্রভু। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হিসাবে আমি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে দেখা দিতাম, কিন্তু সদাপ্রভু হিসাবে আমি যে কি, তা তাদের কাছে প্রকাশ করতাম না। আমি তাদের জন্য আমার ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম। সেই ব্যবস্থায় আমি বলেছিলাম যে, তারা বিদেশী হিসাবে যেখানে বাস করত সেই কনান দেশটা আমি তাদের দেব। মিসরীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের দাস বানিয়ে রেখেছে। তাদের কান্না শুনে সেই ব্যবস্থার কথা আমি ভাবলাম। সেইজন্য তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি সদাপ্রভু। মিসরীয়দের চাপিয়ে দেওয়া বোঝার তলা থেকে আমি তোমাদের বের করে নিয়ে আসব। তাদের দাসত্ব থেকে আমি তোমাদের উদ্ধার করব। হাত বাড়িয়ে তাদের ভীষণ শাস্তি দিয়ে আমি তোমাদের মুক্ত করব। তারপর আমার নিজের লোক হিসাবে আমি তোমাদের গ্রহণ করব আর তোমাদের ঈশ্বর হব। তখন তোমরা জানতে পারবে যে, আমি সদাপ্রভুই তোমাদের ঈশ্বর, আর মিসরীয়দের বোঝার তলা থেকে আমিই তোমাদের বের করে এনেছি। যে দেশ দেবার শপথ আমি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে করেছিলাম সেই দেশেই আমি তোমাদের নিয়ে যাব এবং সেই দেশের অধিকার আমি তোমাদের দেব। আমিই সদাপ্রভু।’ ” মোশি গিয়ে এই সব কথা ইস্রায়েলীয়দের জানালেন, কিন্তু নিষ্ঠুরতার মধ্যে দাসের কাজ করতে করতে মন-মরা হয়ে পড়েছিল বলে তারা মোশির কথায় কান দিল না। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি মিসরের রাজা ফরৌণকে গিয়ে বল যেন সে তার দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের যেতে দেয়।” উত্তরে মোশি সদাপ্রভুকে বললেন, “কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরাই যদি আমার কথা না শোনে তবে ফরৌণ আমার কথায় কান দেবেন কেন, বিশেষ করে আমার কথা যখন জড়িয়ে যায়? ” তখন সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “তোমরা ইস্রায়েলীয়দের এবং মিসরের রাজা ফরৌণকে জানাও যে, সদাপ্রভু তোমাদের আদেশ দিয়েছেন যাতে তোমরা ইস্রায়েলীয়দের মিসর থেকে বের করে নিয়ে যাও।” এঁরাই ছিলেন রূবেণ, শিমিয়োন ও লেবি-গোষ্ঠীর বংশের প্রধান: ইস্রায়েলের বড় ছেলে রূবেণের ছেলেরা হল হনোক, পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্মি। এঁরা রূবেণের গোষ্ঠীর বংশ-পিতা ছিলেন। শিমিয়োনের ছেলেরা হল যিমূয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর ও তাঁর কনানীয় স্ত্রীর গর্ভের ছেলে শৌল। এঁরা শিমিয়োনের গোষ্ঠীর বংশ-পিতা ছিলেন। জন্ম অনুসারে পর পর লেবির ছেলেরা হল গের্শোন, কহাৎ ও মরারি। লেবি একশো সাইত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন। অম্রমের ছেলেরা হল হারোণ ও মোশি। অম্রম তাঁর বাবার বোন যোকেবদকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর গর্ভে এঁদের জন্ম হয়েছিল। অম্রম একশো সাঁইত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন। যিষ্‌হরের ছেলেরা হল কোরহ, নেফগ ও সিখ্রি। উষীয়েলের ছেলেরা হল মীশায়েল, ইল্‌সাফন ও সিথ্রী। হারোণের ছেলেরা হল নাদব, অবীহূ, ইলিয়াসর ও ঈথামর। হারোণ অম্মীনাদবের মেয়ে নহশোনের বোন ইলীশেবাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর গর্ভে এঁদের জন্ম হয়েছিল। কোরহের ছেলেরা হল অসীর, ইল্‌কানা, অবীয়াসফ। এঁরা কোরহীয়দের বংশ-পিতা ছিলেন। ইলিয়াসরের ছেলে হল পীনহস। হারোণের ছেলে ইলিয়াসর পূটীয়েলের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁর গর্ভে পীনহসের জন্ম হয়েছিল। এঁরাই ছিলেন লেবি-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের প্রধান লোক। এই হারোণ ও মোশিকেই সদাপ্রভু বলেছিলেন যেন তাঁরা সৈন্যদলের মত করে ইস্রায়েলীয়দের মিসর দেশ থেকে বের করে নিয়ে আসেন। এই মোশি ও হারোণই মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে নিয়ে যাবার কথা মিসরের রাজা ফরৌণকে বলেছিলেন। কিন্তু মোশি তখন সদাপ্রভুকে বলেছিলেন, “ফরৌণ আমার কথায় কান দেবেন কেন, বিশেষ করে আমার কথা যখন জড়িয়ে যায়? ” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “দেখ, ফরৌণের কাছে আমি তোমাকে ঈশ্বরের মত করব, আর তোমার ভাই হারোণ হবে তোমার নবী। আমি তোমাকে যে সব আদেশ দিচ্ছি তা সবই তুমি প্রকাশ করবে। তোমার ভাই হারোণ ফরৌণকে বলবে, যেন সে তার দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের যেতে দেয়। আমি যখন আমার শক্তি ব্যবহার করে মিসর দেশের মধ্য থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে আনব তখন মিসরীয়েরা বুঝতে পারবে যে, আমি সদাপ্রভু।” সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন তাঁরা ঠিক তেমনই করলেন। ফরৌণের সংগে কথা বলবার সময়ে মোশির বয়স ছিল আশি আর হারোণের তিরাশি। সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে আরও বললেন, “ফরৌণ যখন তোমাদের কোন আশ্চর্য কাজ করে দেখাতে বলবে, তখন তুমি হারোণকে বোলো, ‘ফরৌণের সামনে তোমার লাঠিটা ফেল,’ আর তাতে সেটা সাপ হয়ে যাবে।” সদাপ্রভু তাঁদের যা বলেছিলেন মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়ে ঠিক তা-ই করলেন। হারোণ তাঁর লাঠিটা ফরৌণ ও তাঁর কর্মচারীদের সামনে ফেললেন, আর সেটা সাপ হয়ে গেল। ফরৌণ গুণিনদের এবং নেশার জিনিস কাজে লাগানো কুহকীদের, অর্থাৎ তাঁর যাদুকরদের ডেকে পাঠালেন। তারাও তাদের যাদুমন্ত্রের জোরে সেই একই কাজ করল। তারা প্রত্যেকেই তাদের লাঠি মাটিতে ফেলল এবং সেগুলো সাপ হয়ে গেল, কিন্তু হারোণের লাঠিটা তাদের লাঠিগুলোকে গিলে ফেলল। তবে সদাপ্রভু তাঁদের যা বলেছিলেন তা-ই হল। ফরৌণের মন কঠিন হয়ে রইল; তিনি মোশি ও হারোণের কথা শুনলেন না। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণের মন শক্ত হয়ে আছে, তাই সে লোকদের যেতে দিচ্ছে না। কাল সকালে ফরৌণ যখন বাইরে নদীর ঘাটে যাবে, তখন তুমি তার সংগে দেখা করবার জন্য নীল নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থেকো। যে লাঠিটা সাপ হয়ে গিয়েছিল সেটাও হাতে রেখো। তাকে বোলো, ‘ইব্রীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাকে এই কথা বলতে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন যে, তাঁর লোকেরা যাতে মরু-এলাকাতে তাঁর উপাসনা করতে পারে সেইজন্য আপনি যেন তাদের যেতে দেন। কিন্তু এই পর্যন্ত আপনি তাঁর কথায় কান দেন নি। সেইজন্য সদাপ্রভু বলছেন, তিনিই যে সদাপ্রভু তা আপনি এই চিহ্ন দেখে বুঝতে পারবেন।’ তুমি বলবে, ‘আমি এখন আমার হাতের এই লাঠিটা দিয়ে নীল নদীর জলে আঘাত করতে যাচ্ছি আর তাতে নদীর জল রক্ত হয়ে যাবে। এর ফলে সব মাছ মরে যাবে আর এমন পচা দুর্গন্ধ বের হবে যে, জল খেতে গিয়ে মিসরীয়েরা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেবে।’ ” পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “হারোণকে বল যেন সে তার লাঠিটা হাতে নেয় এবং মিসরের সমস্ত নদী, খাল, পুকুর ও জমা করে রাখা জলের দিকে তার হাতখানা বাড়িয়ে ঘুরিয়ে আনে। তাতে সমস্ত জল রক্ত হয়ে যাবে। মিসর দেশের সব জায়গাতেই রক্ত দেখা যাবে; এমন কি, কাঠ ও পাথরের পাত্রের জলও বাদ যাবে না।” মোশি ও হারোণ সদাপ্রভুর আদেশ মত সব কিছু করলেন। ফরৌণ ও তাঁর কর্মচারীদের সামনে হারোণ তাঁর লাঠিটা তুলে নীল নদীর জলে আঘাত করলেন। তাতে নীল নদীর সমস্ত জল রক্ত হয়ে গেল। নদীর মাছ সব মরে গিয়ে এমন দুর্গন্ধ বের হতে লাগল যে, মিসরীয়েরা সেই জল খেতে পারল না। মিসর দেশের সব জায়গাতেই রক্ত দেখা গেল। তখন মিসরীয় যাদুকরেরা তাদের যাদুমন্ত্রের জোরে সেই একই কাজ করল। তাই ফরৌণের মন আরও কঠিন হয়ে উঠল। সদাপ্রভু যা বলেছিলেন তা-ই হল; মোশি ও হারোণের কথা ফরৌণ শুনলেন না, বরং পিছন ফিরে নিজের বাড়ীতে গিয়ে ঢুকলেন। তিনি সেই দিকে খেয়ালই করলেন না। নদীর জল খাওয়া গেল না দেখে মিসরীয়েরা জলের জন্য নদীর আশেপাশে মাটি খুঁড়ল। নীল নদীর উপর সদাপ্রভুর এই আঘাত নেমে আসবার পর সাত দিন কেটে গেল। তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণকে গিয়ে এই কথা বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার উপাসনা করবার জন্য আমার লোকদের যেতে দাও। যদি তুমি তাদের যেতে না দাও তবে সারা দেশের উপর আমি ব্যাঙের উৎপাত সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। নীল নদী ব্যাঙে ভরে যাবে, আর নদী থেকে সেগুলো উঠে আসবে এবং তোমার ঘর-বাড়ীতে, তোমার শোবার ঘরে, তোমার বিছানাতে, তোমার কর্মচারীদের ঘরে, তোমার লোকদের ঘরে, তোমার চুলাতে এবং তোমার ময়দা মাখবার পাত্রে গিয়ে উঠবে। সেই ব্যাঙগুলো তোমার উপর এবং তোমার লোকদের ও তোমার কর্মচারীদের উপর গিয়ে উঠবে।’ ” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণকে এই কথা বলবে, ‘মিসর দেশের সব নদী, খাল ও পুকুরের উপরে লাঠি সুদ্ধ তোমার হাতখানা বাড়িয়ে দেশের উপর ব্যাঙ তুলে নিয়ে এস।’ ” তখন হারোণ মিসরের সব জলের উপর তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাতে ব্যাঙ উঠে এসে দেশটা ছেয়ে ফেলল। যাদুকরেরাও তাদের যাদুমন্ত্রের জোরে সেই একই কাজ করল। তারাও মিসর দেশে ব্যাঙ আনল। ফরৌণ তখন মোশি ও হারোণকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “তোমরা সদাপ্রভুর কাছে মিনতি কর যেন তিনি আমার ও আমার লোকদের উপর থেকে এই ব্যাঙের উৎপাত সরিয়ে নেন। তখন আমি লোকদের যেতে দেব যাতে তারা গিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করতে পারে।” মোশি ফরৌণকে বললেন, “ব্যাঙগুলো যাতে আপনাকে ও আপনার ঘর-বাড়ী ছেড়ে চলে গিয়ে কেবল নদীর মধ্যে থাকে, সেইজন্য বলুন কখন আমি আপনার ও আপনার কর্মচারী ও লোকদের জন্য মিনতি করব। সময়টা আপনিই ঠিক করুন।” উত্তরে ফরৌণ বললেন, “তবে সেটা কালকেই হোক।” মোশি বললেন, “তা-ই হবে। এতে আপনি বুঝতে পারবেন যে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর মত কেউ নেই। ব্যাঙগুলো আপনাকে এবং আপনার বাড়ী-ঘর, আপনার কর্মচারী ও আপনার লোকদের ছেড়ে চলে যাবে। সেগুলো কেবল নীল নদীর মধ্যেই থাকবে।” এই কথা বলে মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছ থেকে চলে গেলেন। ফরৌণের উপর সদাপ্রভু যে ব্যাঙের উৎপাত এনেছিলেন সেই সম্বন্ধে মোশি সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করলেন। তখন সদাপ্রভু তাঁর কথামতই কাজ করলেন। ঘর-বাড়ি, উঠান ও জায়গা-জমিতে যত ব্যাঙ ছিল সব মরে গেল। লোকেরা সেগুলো এনে নানা জায়গায় জড়ো করল আর তাতে দেশের মধ্যে এক ভীষণ দুর্গন্ধের সৃষ্টি হল। কিন্তু ব্যাঙের উৎপাত থেকে রেহাই পেয়ে ফরৌণ আবার তাঁর মন শক্ত করে মোশি ও হারোণের কথা শুনলেন না। সদাপ্রভু যা বলেছিলেন তা-ই হল। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “হারোণকে তার লাঠি তুলে মাটিতে ধূলার উপর আঘাত করতে বল। তাতে সেই ধূলা মশা হয়ে সারা মিসর দেশটা ছেয়ে ফেলবে।” হারোণ ও মোশি তা-ই করলেন। হারোণ তাঁর হাতখানা বাড়িয়ে লাঠি দিয়ে মাটিতে ধূলার উপর আঘাত করলেন আর তাতে মানুষ ও পশুর উপর মশার উৎপাত দেখা দিল। মিসর দেশের সমস্ত ধূলাই মশা হয়ে গেল। যাদুকরেরা তাদের যাদুমন্ত্রের জোরে মশা নিয়ে আসবার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। মানুষ এবং পশুর উপর মশা বসতে লাগল। এই অবস্থা দেখে যাদুকরেরা ফরৌণকে বলল, “এতে ঈশ্বরের আংগুলের ছোঁয়া রয়েছে।” কিন্তু তবুও ফরৌণের মন কঠিনই রয়ে গেল; তিনি মোশি ও হারোণের কথায় কান দিলেন না। সদাপ্রভু যা বলেছিলেন তা-ই হল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি খুব ভোরে উঠবে এবং ফরৌণ যখন বাইরে নদীর ঘাটে যাবে তখন তুমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে। তাকে বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার উপাসনা করবার জন্য আমার লোকদের যেতে দাও। যদি তা না দাও তবে আমি তোমার উপর এবং তোমার সব কর্মচারী ও তোমার লোকদের উপর আর তোমার বাড়ী-ঘরে ঝাঁকে ঝাঁকে পোকা পাঠাচ্ছি। মিসরীয়দের বাড়ী-ঘর এবং সব জায়গা নানা রকম পোকায় ভরে যাবে। কিন্তু সেই দিন গোশন এলাকাটা আমি বাদ দেব, কারণ আমার লোকেরা সেখানে বাস করছে। সেখানে কোন পোকার উৎপাত থাকবে না। তা থেকে তোমরা জানতে পারবে যে, আমি সদাপ্রভুই এই দেশে আছি। আমার লোকদের আমি রেহাই দেব, তোমার লোকদের নয়। আগামী কাল এই আশ্চর্য ব্যাপার দেখা যাবে।’ ” সদাপ্রভু তা-ই করলেন। ফরৌণের রাজবাড়ীতে এবং তাঁর কর্মচারীদের বাড়ীতে ঝাঁকে ঝাঁকে পোকা ঢুকল। এই সব পোকার উৎপাতে সারা মিসর দেশটার সর্বনাশ হতে লাগল। তখন ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “তোমরা এই দেশের মধ্যেই কোথাও গিয়ে তোমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে পশু উৎসর্গ কর।” মোশি বললেন, “কিন্তু এটা করা কি ঠিক হবে? আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমরা যা উৎসর্গ করব তা মিসরীয়দের কাছে ঘৃৃণার জিনিস। মিসরীয়েরা যা ঘৃণা করে তা-ই যদি আমরা তাদের চোখের সামনে উৎসর্গ করি তবে কি তারা আমাদের পাথর মারবে না? সেইজন্য আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ মতই মরু-এলাকার মধ্যে তিন দিনের পথ গিয়ে তাঁর উদ্দেশে আমাদের পশু উৎসর্গ করতে হবে।” ফরৌণ বললেন, “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু উৎসর্গের জন্য আমি মরু-এলাকাতেই তোমাদের যেতে দেব। কিন্তু তোমরা বেশী দূরে যাবে না। এবার তোমরা আমার জন্য মিনতি কর।” মোশি বললেন, “আমি আপনার কাছ থেকে গিয়েই সদাপ্রভুর কাছে মিনতি করব যেন কালই মহারাজ এবং তাঁর কর্মচারীদের ও তাঁর লোকদের উপর থেকে এই পোকার উৎপাত চলে যায়। কিন্তু সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করবার জন্য যেতে না দিয়ে মহারাজ যেন আমাদের আবার ফাঁকি না দেন।” এর পর মোশি ফরৌণের কাছ থেকে গিয়ে সদাপ্রভুর কাছে মিনতি করলেন, আর সদাপ্রভুও মোশির কথামত কাজ করলেন। তিনি ফরৌণ এবং তাঁর কর্মচারী ও তাঁর লোকদের উপর থেকে পোকার উৎপাত সরিয়ে দিলেন। একটা পোকাও আর রইল না। কিন্তু এবারও ফরৌণ তাঁর মন শক্ত করলেন এবং লোকদের যেতে দিলেন না। এর পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণের কাছে গিয়ে বল যে, ইব্রীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার উপাসনা করবার জন্য আমার লোকদের যেতে দাও। কিন্তু তা না দিয়ে যদি তুমি তাদের ধরেই রাখ, তবে মাঠে তোমার ঘোড়া, গাধা, উট, গরু, ভেড়া, ছাগল, এক কথায় তোমার সব পশুপালের উপর আমি শীঘ্রই নিজের হাতে এক ভীষণ মড়কের ব্যবস্থা করব। কিন্তু আমি ইস্রায়েলীয়দের পশুপালগুলোকে মিসরীয়দের পশুপাল থেকে আলাদা করে দেখব। তাদের যে সব পশু আছে তার একটাও মরবে না।’ ” মড়কটা কখন হবে তা-ও সদাপ্রভু ঠিক করলেন। তিনি বললেন, “কালকেই এই দেশের উপর আমি এটা ঘটাব।” পরের দিন সদাপ্রভু তা-ই করলেন। তাতে মিসরীয়দের সব পশু মরে গেল, কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের পাল থেকে একটা পশুও মরল না। ফরৌণ লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে, ইস্রায়েলীয়দের একটা পশুও মরে নি। তবুও ফরৌণের মন শক্ত হয়ে রইল; তিনি লোকদের যেতে দিলেন না। তারপর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “চুল্লী থেকে তোমরা কয়েক মুঠো কালি নাও। ফরৌণের চোখের সামনেই মোশি তা আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিক। সেগুলো মিহি ধূলার মত হয়ে সারা মিসর দেশে নেমে আসবে। তাতে সারা মিসর দেশের মানুষ ও পশুর গায়ে ফোড়া উঠে ঘা হয়ে যাবে।” তখন মোশি ও হারোণ চুল্লী থেকে কালি নিয়ে ফরৌণের সামনে দাঁড়ালেন। মোশি তা আকাশে ছুঁড়ে দিলে পর মানুষ ও পশুর গায়ে ফোড়া উঠে ঘা হয়ে গেল। যাদুকরেরা মোশির সামনে দাঁড়াতে পারল না, কারণ অন্যান্য মিসরীয়দের মত তাদেরও ফোড়া হয়েছিল। কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের মন কঠিন করলেন। তাতে সদাপ্রভু যা বলেছিলেন তা-ই হল। মোশি ও হারোণের কথায় ফরৌণ কান দিলেন না। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি খুব সকালে উঠে ফরৌণের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, আর তাকে বলবে যে, ইব্রীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার উপাসনা করবার জন্য আমার লোকদের যেতে দাও, কারণ এর পর তোমার উপরে এবং তোমার কর্মচারী ও লোকদের উপরে আমি আমার সমস্ত আঘাতের ব্যবস্থা করব। তখন তুমি বুঝতে পারবে যে, সারা পৃথিবীতে আমার মত কেউ নেই। এর মধ্যেই আমি আমার শক্তি ব্যবহার করে তোমার ও তোমার লোকদের উপর এমন এক মড়কের ব্যবস্থা করতে পারতাম যাতে তোমরা পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে যেতে। কিন্তু আমি তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি যেন তোমাকে আমার শক্তি দেখাতে পারি এবং সারা পৃথিবীতে যেন আমার নাম প্রচারিত হয়। তুমি এখনও আমার লোকদের বিরুদ্ধে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রেখেছ আর তাদের যেতে দিচ্ছ না। সেইজন্য কালকে ঠিক এই সময়ে আমি এমন এক ভয়ংকর শিলাবৃষ্টি পাঠিয়ে দেব যা মিসর দেশের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত আর কখনও হয় নি। এইজন্য মাঠে তোমার যত পশু এবং মানুষ আছে লোক পাঠিয়ে তাদের আশ্রয়ের জায়গায় নিয়ে এস। কোন লোক বা পশু ঘরে না এসে যদি মাঠে থেকে যায় তবে শিলের আঘাতে তারা মারা যাবে।’ ” তখন ফরৌণের কর্মচারীদের মধ্যে যারা সদাপ্রভুর কথায় ভয় পেল তারা তাড়াতাড়ি তাদের দাসদের ও পশুপাল ঘরে নিয়ে আসল। কিন্তু যারা তা অগ্রাহ্য করল তারা তাদের দাসদের ও পশুপাল মাঠেই রেখে দিল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আকাশের দিকে তোমার হাত বাড়িয়ে দাও। তাতে সারা মিসর দেশের মানুষ, পশু ও মাঠের গাছ-গাছড়ার উপর শিল পড়বে।” তখন মোশি আকাশের দিকে তাঁর লাঠি উঁচু করে ধরলেন। তাতে সদাপ্রভু এমন করলেন যার ফলে মেঘ গর্জন করতে ও শিলাবৃষ্টি হতে লাগল এবং মাটির উপর বাজ পড়তে লাগল। এইভাবেই সদাপ্রভু মিসর দেশের উপর শিলাবৃষ্টি পাঠালেন। শুধু যে কেবল শিল পড়ল তা নয়, তার সংগে সংগে অনবরত বিদ্যুৎ চম্‌কাতে লাগল। মিসর রাজ্যের আরম্ভ থেকে এই পর্যন্ত সারা দেশে এই রকম ভীষণ ঝড় আর কখনও হয় নি। মিসর দেশের মাঠগুলোতে যে সব মানুষ ও পশু ছিল শিল তাদের কাউকে রেহাই দিল না। শিলের আঘাতে মাঠের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেল এবং গাছের ডালপালা ভেংগে পড়ল। কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা যেখানে থাকত সেই গোশন এলাকায় শিল পড়ল না। ফরৌণ তখন মোশি ও হারোণকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “এবার আমি পাপ করেছি। সদাপ্রভু ঠিক কাজ করেছেন। আমি আর আমার লোকেরাই দোষী। তুমি সদাপ্রভুর কাছে মিনতি কর। মেঘের গর্জন ও শিল পড়া যথেষ্ট হয়েছে। এবার আমি তোমাদের যেতে দেব। এখানে আর তোমাদের থাকতে হবে না।” মোশি তাঁকে বললেন, “শহর থেকে বের হয়ে গিয়েই আমি সদাপ্রভুর কাছে হাত মেলে প্রার্থনা করব। তাতে মেঘের গর্জনও থেমে যাবে, শিলও আর পড়বে না। এতে আপনি বুঝতে পারবেন যে, পৃথিবীটা সদাপ্রভুরই। কিন্তু আমি জানি যে, আপনি এবং আপনার কর্মচারীরা সদাপ্রভু ঈশ্বরকে এখনও ভয় করেন না।” শিলাবৃষ্টির দরুন মিসরের সব মসীনা আর যব একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় যবের শীষ বের হয়েছিল আর মসীনা গাছে ফুল এসেছিল, কিন্তু সরস এবং নীরস গমের কোনটাই নষ্ট হয় নি কারণ তখনও সেগুলো পাকবার সময় হয় নি। এর পর মোশি ফরৌণের কাছ থেকে চলে গেলেন। শহর থেকে বের হয়ে তিনি সদাপ্রভুর কাছে হাত মেলে প্রার্থনা করলেন। তখন মেঘের গর্জন ও শিল পড়া বন্ধ হল। মাটির উপর মুষলধারে বৃষ্টি পড়াও থেমে গেল। কিন্তু ফরৌণ ও তাঁর কর্মচারীরা যখন দেখলেন যে, বৃষ্টি, শিল ও মেঘের গর্জন বন্ধ হয়ে গেছে তখন তাঁরা আবার পাপ করতে লাগলেন। তাঁরা আবার তাদের মন শক্ত করলেন। সদাপ্রভু মোশির মধ্য দিয়ে যেমন বলেছিলেন তেমনি ফরৌণের মন কঠিন হয়ে রইল; তিনি ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিলেন না। মোশি ও হারোণ তখন ফরৌণের কাছে গিয়ে বললেন, “ইব্রীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আর কতদিন তুমি আমার সামনে মাথা নোয়াতে অস্বীকার করবে? আমার উপাসনা করবার জন্য আমার লোকদের যেতে দাও। যদি তুমি আমার লোকদের যেতে দিতে রাজী না হও তবে কালকেই আমি তোমার দেশের মধ্যে পংগপাল নিয়ে আসব। সেগুলো এসে দেশটা এমনভাবে ঢেকে ফেলবে যে, মাটি পর্যন্ত দেখা যাবে না। শিলাবৃষ্টির হাত থেকে যা রেহাই পেয়েছে সেগুলো সব এই পংগপাল খেয়ে ফেলবে। মাঠে যে সব গাছপালা গজাচ্ছে সেগুলোও তারা খেয়ে ফেলবে। তারপর তোমার ও তোমার সব কর্মচারীদের এবং অন্যান্য সমস্ত মিসরীয়দের বাড়ী-ঘর এই সব পংগপালে ভরে যাবে। এই দেশে আসবার পর থেকে আজ পর্যন্ত তোমার বাপ-দাদারা এবং তাদের বাপ-দাদারাও কখনও এমন হতে দেখে নি।’ ” এই কথা বলবার পর মোশি পিছন ফিরে ফরৌণের কাছ থেকে চলে গেলেন। তখন ফরৌণের কর্মচারীরা তাঁকে বলল, “এই লোকটা আর কতদিন আমাদের ফাঁদ হয়ে থাকবে? ঐ লোকগুলো যেন তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপাসনা করতে পারে সেইজন্য তাদের যেতে দিন। আপনি কি বুঝতে পারছেন না যে, মিসর দেশটা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল? ” কাজেই মোশি ও হারোণকে আবার ফরৌণের কাছে নিয়ে আসা হল। ফরৌণ তাঁদের বললেন, “যাও, তোমরা গিয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপাসনা কর। কিন্তু তোমাদের সংগে আর কারা যাবে? ” উত্তরে মোশি বললেন, “আমাদের শিশু ও বৃদ্ধ, আমাদের ছেলেমেয়ে এবং আমাদের গরু-ভেড়া সবই আমাদের সংগে যাবে, কারণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমাদের একটা উৎসব পালন করতে হবে।” তখন ফরৌণ তাঁদের বললেন, “যদি কখনও আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে তোমাদের যেতে দিই তবে তোমাদের ঐ সদাপ্রভুটাও যেন তোমাদের সংগে থাকে। সাবধান! তোমাদের উদ্দেশ্য ভাল নয়। না, তা হবে না। তোমরা তো সদাপ্রভুর উপাসনা করতে যেতে চাইছ, তবে কেবল পুরুষেরাই যাক।” এর পর ফরৌণের সামনে থেকে মোশি এবং হারোণকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “মিসর দেশের উপর তোমার হাত বাড়িয়ে দাও। তাতে মাঠের সবুজ সব কিছু, অর্থাৎ শিলাবৃষ্টি থেকে রেহাই পাওয়া সব কিছু পংগপাল এসে খেয়ে ফেলবে।” তখন মোশি মিসর দেশের উপরে তাঁর লাঠিটা বাড়িয়ে ধরলেন; আর সদাপ্রভু এমন করলেন যার দরুন সেই দেশের উপর সারা দিন ও সারা রাত ধরে পূবের বাতাস বইল। সকালবেলা সেই পূবের বাতাস ঝাঁকে ঝাঁকে পংগপাল নিয়ে আসল। এতে সারা মিসর দেশের উপর অসংখ্য পংগপাল এসে সব জায়গায় বসল। এত বেশী পংগপাল আগে আর কখনও দেখা যায় নি, কখনও দেখা যাবেও না। সেই সব পংগপাল সারা দেশটা এমনভাবে ঢেকে ফেলল যে, মাটির উপরটা কালো দেখাতে লাগল। মাঠে সবুজ সব কিছু আর গাছে যে সব ফল শিলাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেয়েছিল সেগুলো সব তারা খেয়ে ফেলল। সারা মিসর দেশের গাছপালাতে সবুজ বলতে কিছুই রইল না। তখন ফরৌণ তাড়াতাড়ি মোশি ও হারোণকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু ও তোমাদের বিরুদ্ধে আমি পাপ করেছি। তাই দয়া করে তোমরা কেবল এবারের মত আমার পাপ ক্ষমা কর। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে মিনতি কর যেন তিনি আমার উপর থেকে এই মৃত্যুর ছায়া সরিয়ে নেন।” তখন মোশি ফরৌণের কাছ থেকে গিয়ে সদাপ্রভুর কাছে মিনতি করলেন। তাতে সদাপ্রভু বাতাসের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন আর পশ্চিম দিক থেকে একটা জোর বাতাস এসে পংগপালগুলো উড়িয়ে নিয়ে লোহিত সাগরে ফেলল। সারা মিসর দেশে আর একটাও পংগপাল রইল না। কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের মন কঠিন করলেন; তিনি ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিলেন না। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আকাশের দিকে তোমার হাত বাড়িয়ে দাও। তাতে হাত দিয়ে ছোঁয়ার মত অন্ধকারে দেশটা ডুবে যাবে।” তখন মোশি আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন, আর তাতে তিন দিন পর্যন্ত গাঢ় অন্ধকারে সারা মিসর দেশটা ডুবে রইল। ঐ তিন দিন পর্যন্ত কেউ কাউকে দেখতেও পেল না এবং ঘর ছেড়ে কেউ বাইরেও গেল না। কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা যেখানে ছিল সেখানে আলোর অভাব হল না। তখন ফরৌণ মোশিকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “যাও, গিয়ে সদাপ্রভুর উপাসনা কর। তোমাদের ছেলেমেয়েরাও তোমাদের সংগে যেতে পারবে, কিন্তু তোমাদের গরু-ভেড়ার পাল এখানে থাকবে।” উত্তরে মোশি বললেন, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো ও অন্যান্য উৎসর্গের পশু আপনাকেই যুগিয়ে দিতে হবে। আমাদের গরু-ভেড়াগুলোও আমাদের সংগে নিয়ে যেতে হবে। তাদের একটা খুরও আমরা এখানে ফেলে যেতে পারব না। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপাসনার জন্য এগুলোর মধ্য থেকে কতগুলো আমাদের দরকারে লাগবে। সেখানে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা বুঝতে পারছি না সদাপ্রভুর উপাসনার জন্য কোন্‌ কোন্‌ পশু আমাদের লাগবে।” সদাপ্রভু কিন্তু ফরৌণের মন কঠিন করলেন আর তাতে তাদের যেতে দিতে তিনি রাজী হলেন না। ফরৌণ মোশিকে বললেন, “আমার কাছ থেকে দূর হও। সাবধান! আর কখনও আমার সামনে এসো না। যেদিন তুমি আমার সামনে পড়বে সেই দিনই তোমার মরণ হবে।” মোশি বললেন, “আপনি যা বলছেন তা-ই হবে। আমার নিজের ইচ্ছায় আমি আর আপনার সামনে আসব না।” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আমি ফরৌণ ও মিসর দেশকে আর একটা আঘাত দেব। তার পরে ফরৌণ এখান থেকে তোমাদের যেতে দেবে। তবে সে যখন তোমাদের যেতে দেবে তখন এখান থেকে তোমাদের সে একেবারে তাড়িয়েই বিদায় করবে। তুমি ইস্রায়েলীয়দের বলবে, স্ত্রী-পুরুষ সকলেই যেন তাদের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সোনা ও রূপার জিনিস চেয়ে নেয়।” এদিকে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের প্রতি মিসরীয়দের মনে একটা দয়ার ভাব জাগিয়ে দিলেন। এছাড়া মোশিও ফরৌণের কর্মচারীদের ও মিসরের লোকদের চোখে একজন মহান লোক ছিলেন। মোশি ফরৌণকে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন, তিনি মাঝরাতে মিসর দেশের মধ্য দিয়ে যাবেন। তাতে মিসর দেশের সব পরিবারের প্রথম ছেলে মারা যাবে। সিংহাসনের অধিকারী ফরৌণের প্রথম ছেলে থেকে শুরু করে জাঁতা ঘুরানো দাসীর প্রথম ছেলে পর্যন্ত কেউ বাদ যাবে না। এছাড়া পশুদেরও প্রথম পুরুষ বাচ্চা মরে যাবে। এতে গোটা মিসর দেশে এমন কান্নার রোল উঠবে যা আগে কখনও ওঠে নি এবং আর কখনও উঠবেও না। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে একটা কুকুরের ডাক পর্যন্ত শোনা যাবে না, তা মানুষ দেখেই হোক বা পশু দেখেই হোক। এতে আপনারা জানতে পারবেন যে, সদাপ্রভু মিসরীয় এবং ইস্রায়েলীয়দের আলাদা করে দেখেন। আপনার এই সব কর্মচারী এসে আমার সামনে হাঁটু পেতে বলবে, ‘আপনি আপনার সব লোকজন নিয়ে বের হয়ে যান!’ তারপর আমি চলে যাব।” এই কথা বলে মোশি রেগে আগুন হয়ে ফরৌণের কাছ থেকে চলে গেলেন। সদাপ্রভু মোশিকে বলেছিলেন, “মিসর দেশে আমার আশ্চর্য কাজের সংখ্যা যেন বেড়ে যায় সেইজন্যই ফরৌণ তোমার কথা শুনবে না।” এই সব আশ্চর্য কাজ মোশি ও হারোণ ফরৌণের সামনে করলেন, কিন্তু সদাপ্রভু ফরৌণের মন কঠিন করলেন বলে তিনি তাঁর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিলেন না। পরে সদাপ্রভু মিসর দেশে মোশি ও হারোণকে বললেন, “এই মাসটাই হবে তোমাদের প্রথম মাস, তোমাদের বছরের প্রথম মাস। তোমরা সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জড়ো করে বলে দাও যেন এই মাসের দশ তারিখে প্রত্যেকটি পরিবারের কর্তা নিজের পরিবারের জন্য একটা করে ভেড়ার বাচ্চা বেছে নেয়। প্রত্যেক বাড়ীর জন্য একটা করে ভেড়ার বাচ্চা নিতে হবে। কোন পরিবারের জন্য যদি একটা গোটা ভেড়ার বাচ্চা না লাগে, তবে পাশের বাড়ীর লোকদের সংগে তা ভাগ করে নিতে হবে। দুই পরিবারের লোকসংখ্যা অনুসারে প্রত্যেকে কি পরিমাণে খেতে পারবে তা বুঝে ভেড়ার বাচ্চাটা নিতে হবে। সেই বাচ্চাটা হবে ছাগল বা ভেড়ার পাল থেকে বেছে নেওয়া একটা এক বছরের পুরুষ বাচ্চা। তার শরীরে যেন কোথাও কোন খুঁত না থাকে। বাচ্চাটা এই মাসের চৌদ্দ তারিখ পর্যন্ত রাখতে হবে। তারপর সেই দিন বেলা ডুবে গেলে পর গোটা ইস্রায়েল সমাজের প্রত্যেকটি পরিবার নিজের নিজের ভেড়ার বাচ্চা কাটবে। তারপর যে সব ঘরে তারা সেই ভেড়ার মাংস খাবে সেই সব ঘরের দরজার চৌকাঠের দু’পাশে এবং উপরে কিছু রক্ত নিয়ে লাগিয়ে দেবে। সেই রাতেই তারা সেই মাংস আগুনে সেঁকে খামিহীন রুটি এবং তেতো শাকের সংগে খাবে। সেই মাংস তোমরা কাঁচা বা জলে সিদ্ধ করে খাবে না, কিন্তু মাথা, পা এবং ভিতরের অংশগুলো সুদ্ধ তা আগুনে সেঁকে নিয়ে খাবে। সকাল পর্যন্ত তার কোন কিছুই ফেলে রেখো না। যদি কিছু বাকী থাকে তবে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। তোমরা এই অবস্থায় তা খাবে: তোমাদের কাপড় থাকবে কোমরে গুটানো, পায়ে থাকবে জুতা এবং হাতে লাঠি। তোমরা তাড়াহুড়া করে খাবে। এটা হল সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্বের ভোজ। সেই রাতেই আমি মিসর দেশের ভিতর দিয়ে যাব এবং মানুষের প্রথম ছেলে ও পশুর প্রথম পুরুষ বাচ্চাকে মেরে ফেলব। আমি মিসরের সব দেব-দেবতাদের শাস্তি দেব; আমি সদাপ্রভু। কিন্তু তোমাদের ঘরে যে রক্ত লাগানো থাকবে সেটাই হবে তোমাদের নিশানা। আর আমি সেই রক্ত দেখে তোমাদের বাদ দিয়ে এগিয়ে যাব। তাতে মিসর দেশের উপর আমার আঘাতের বিপদ থেকে তোমরা রেহাই পেয়ে যাবে। তোমাদের জন্য সেই দিনটা হবে একটা স্মরণীয় দিন। সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই পর্বটা একটা চিরকালের নিয়ম হিসাবে তোমরা বংশের পর বংশ ধরে পালন করবে। “তোমরা সাত দিন পর্যন্ত খামিহীন রুটি খাবে। তোমাদের বাড়ীতে যত খামি আছে প্রথম দিনেই তোমরা তা সব সরিয়ে ফেলবে। এই সাত দিনের মধ্যে যদি কেউ খামি দেওয়া রুটি খায় তবে তাকে ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে মুছে ফেলা হবে। প্রথম এবং সপ্তম দিনে তোমরা পবিত্র মিলন-সভা করবে। এই দু’দিন তোমরা নিজেদের খাবার তৈরী করা ছাড়া আর কোন কাজ করবে না। খামিহীন রুটির এই যে পর্ব তা একটা চিরকালের নিয়ম হিসাবে তোমরা বংশের পর বংশ ধরে পালন করবে, কারণ এই দিনেই সৈন্যদলের মত করে আমি মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে আনব। তোমরা প্রথম মাসের চৌদ্দ তারিখের সন্ধ্যাবেলা থেকে শুরু করে সেই মাসের একুশ তারিখের সন্ধ্যাবেলা পর্যন্ত খামিহীন রুটি খাবে। এই সাত দিন তোমাদের বাড়ীতে যেন কোন খামি না থাকে। যদি কেউ খামি-দেওয়া কোন কিছু খায়, তবে তাকে ইস্রায়েলীয় সমাজ থেকে মুছে ফেলা হবে, সে তোমাদের জাতির লোকই হোক বা অন্য জাতির লোকই হোক। তোমরা যেখানেই থাক না কেন এই সাত দিন তোমরা খামি দেওয়া কোন কিছু খাবে না; রুটিও খাবে খামিহীন।” তখন মোশি ইস্রায়েলীয়দের বৃদ্ধ নেতাদের ডেকে বললেন, “তোমাদের পরিবারের জন্য ভেড়ার বাচ্চা বেছে নিয়ে উদ্ধার-পর্বের উদ্দেশ্যে তা কাটবে। তারপর এসোব ঝোপ থেকে এক গোছা ডাল নিয়ে বাটিতে রাখা রক্তে ডুবিয়ে সেই রক্ত দরজার চৌকাঠের দু’পাশে ও উপরের কাঠে লাগিয়ে দেবে; আর সকাল না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যাবে না। মিসরীয়দের আঘাত করবার সময় সদাপ্রভু যখন মিসর দেশের ভিতর দিয়ে যাবেন তখন তোমাদের দরজার চৌকাঠে রক্ত দেখে তিনি তোমাদের দরজা বাদ দিয়ে এগিয়ে যাবেন। যিনি এই ধ্বংসের কাজ করবেন তাঁকে তিনি তোমাদের বাড়ীতে ঢুকে তোমাদের আঘাত করতে দেবেন না। “এই পর্ব সব সময় তোমরা ও তোমাদের বংশধরেরা একটা নিয়ম হিসাবে পালন করবে। সদাপ্রভু যে দেশ তোমাদের দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন সেই দেশে গিয়েও তোমরা এই অনুষ্ঠান পালন করবে। তোমাদের ছেলেমেয়েরা যখন তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘এই অনুষ্ঠানের মানে কি? ’ তখন তোমরা বলবে, ‘এটা হল সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্বের উৎসর্গ, কারণ মিসর দেশে থাকবার সময় তিনি ইস্রায়েলীয়দের বাড়ীগুলো বাদ দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি মিসরীয়দের মেরে ফেলেছিলেন কিন্তু আমাদের রক্ষা করেছিলেন।’ ” এর পর ইস্রায়েলীয়েরা মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে সদাপ্রভুকে তাদের অন্তরের ভক্তি জানাল। মোশি ও হারোণকে সদাপ্রভু যে আদেশ দিয়েছিলেন ইস্রায়েলীয়েরা ফিরে গিয়ে সেইমত কাজ করল। তারপর চৌদ্দ তারিখের মাঝরাতে সদাপ্রভু মিসর দেশের প্রত্যেকটি প্রথম ছেলেকে মেরে ফেললেন। এতে রাজ-সিংহাসনের অধিকারী ফরৌণের প্রথম ছেলে থেকে জেলখানার কয়েদীর প্রথম ছেলে পর্যন্ত, এমন কি, পশুদেরও প্রথম পুরুষ বাচ্চা মারা পড়ল। সেই রাতে ফরৌণ ও তাঁর সব কর্মচারী এবং মিসরের প্রত্যেকটি লোক ঘুম থেকে জেগে উঠল; আর সারা মিসর দেশে একটা কান্নার রোল পড়ে গেল, কারণ এমন একটাও বাড়ী ছিল না যেখানে কেউ মারা যায় নি। ফরৌণ সেই রাতেই মোশি ও হারোণকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “তোমরা ইস্রায়েলীয়দের সংগে নিয়ে আমার লোকদের মধ্য থেকে বের হয়ে যাও। তোমরা যেমন বলেছ সেইভাবে গিয়ে সদাপ্রভুর উপাসনা কর। তোমাদের কথামত যাবার সময়ে তোমাদের গরু-ভেড়ার পালও নিয়ে যেয়ো, আর আমাকেও আশীর্বাদ কোরো।” মিসরীয়দেরও ভয় হল যে, তারাও হয়তো মারা পড়বে। এইজন্য তারা ইস্রায়েলীয়দের তাগাদা দিতে লাগল যেন তারা তাড়াতাড়ি করে তাদের দেশ থেকে বের হয়ে যায়। এতে ইস্রায়েলীয়েরা খামি মেশাবার আগেই তাদের ময়দা মাখবার পাত্র সুদ্ধ ময়দার তালগুলো তাদের কাপড়ে বেঁধে নিয়ে কাঁধে ফেলল। ইস্রায়েলীয়েরা মোশির কথামত মিসরীয়দের কাছ থেকে সোনা-রূপার জিনিস এবং কাপড়-চোপড় চেয়ে নিল। তারা যা চাইবে মিসরীয়েরা যাতে তাদের তা-ই দেয় সেইজন্য সদাপ্রভু আগেই মিসরীয়দের মনে ইস্রায়েলীয়দের প্রতি একটা দয়ার মনোভাব সৃষ্টি করেছিলেন। এইভাবে তারা মিসরীয়দের অনেক কিছু অধিকার করে নিলেন। তারপর ইস্রায়েলীয়েরা রামিষেষ থেকে সুক্কোতের দিকে রওনা হল। প্রায় ছয় লক্ষ পুরুষ লোক হেঁটে চলল। তাদের সংগে স্ত্রীলোক এবং ছেলেমেয়েরাও ছিল। ইস্রায়েলীয়েরা ছাড়া আরও অনেক লোক এবং গরু-ভেড়া সুদ্ধ একটা বিরাট পশুর দলও তাদের সংগে ছিল। যে খামিহীন ময়দার তাল তারা মিসর থেকে নিয়ে এসেছিল পথে তারা তা দিয়ে রুটি তৈরী করে নিল। এত তাড়াহুড়ো করে মিসর থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছিল যে, তারা ময়দার সংগে খামি মেশাবারও সময় পায় নি আর পথে খাবার জন্য কোন কিছু তৈরীও করে নিতে পারে নি। মিসর দেশে ইস্রায়েলীয়েরা মোট চারশো ত্রিশ বছর বাস করেছিল। চারশো ত্রিশ বছর শেষ হবার দিনই সদাপ্রভুর সমস্ত লোক সৈন্যদলের মত করে মিসর দেশ ছেড়ে বের হয়ে এসেছিল। সদাপ্রভু সেই রাতে পাহারা দিয়ে মিসর দেশ থেকে তাদের বের করে এনেছিলেন বলে বংশের পর বংশ ধরে ইস্রায়েলীয়দেরও সদাপ্রভুর কথা মনে করে সেই রাতটা জেগে কাটাতে হয়। পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “উদ্ধার-পর্বের ভেড়ার বাচ্চা সম্বন্ধে কতগুলো নিয়ম আমি তোমাদের দিচ্ছি। অন্য কোন জাতির লোক এর মাংস খেতে পারবে না। টাকা দিয়ে কেনা দাস সুন্নত করাবার পরে তা খেতে পারবে। তোমাদের মধ্যে বাস করতে এসেছে কিম্বা টাকা দিয়ে খাটানো হচ্ছে এমন অন্য কোন জাতির লোক তা খেতে পারবে না। যে বাড়ীতে ভেড়ার বাচ্চা কাটা হবে সেই বাড়ীতেই তা খেতে হবে। বাড়ীর বাইরে তা নেওয়া চলবে না এবং সেই ভেড়ার একটা হাড়ও ভাংগা চলবে না। “ইস্রায়েলীয়দের সকলকেই এই পর্ব পালন করতে হবে। তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যদি সদাপ্রভুর উদ্দেশে করা এই উদ্ধার-পর্ব পালন করতে চায় তবে আগে তার পরিবারের সব পুরুষের সুন্নত করাতে হবে। তারপর সে ইস্রায়েলীয়দের মতই তা পালন করতে পারবে। কিন্তু সুন্নত করানো হয় নি এমন কোন লোক এই পর্বের মাংস খেতে পারবে না। ইস্রায়েলীয়দের জন্য এবং তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্যান্য জাতির লোকদের জন্য এই একই নির্দেশ রইল।” সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে যে আদেশ দিয়েছিলেন ইস্রায়েলীয়েরা ঠিক তা-ই করেছিল। সদাপ্রভু সেই দিনই সৈন্যদলের মত করে ইস্রায়েলীয়দের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তান আমার উদ্দেশ্যে আলাদা কর, সে মানুষের হোক বা পশুর হোক। প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তান আমার।” তখন মোশি লোকদের বললেন, “এই দিনটির কথা স্মরণ করবার জন্য তোমরা দিনটি পালন করবে, কারণ এই দিনেই তোমরা মিসরের গোলামী থেকে বের হয়ে এসেছ। সদাপ্রভুই তাঁর শক্তি দেখিয়ে সেই দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন। এই দিনে তোমরা খামি দেওয়া কিছু খাবে না। আবীব মাসের এই দিনেই তোমরা বের হয়ে এসেছ। যখন সদাপ্রভু তোমাদের কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশে নিয়ে যাবেন তখন তোমরা বছরের এই মাসেই এই অনুষ্ঠান পালন করবে। ওটাই সেই দেশ যা সদাপ্রভু তোমাদের দেবেন বলে তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করেছিলেন। সেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই। “এই পর্ব পালন করবার সময় সাত দিন ধরে তোমরা খামিহীন রুটি খাবে। তারপর সাত দিনের দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা উৎসব করবে। এই সাত দিন তোমাদের খাওয়ার রুটি হবে খামিহীন। তোমাদের সারা দেশের মধ্যে সেই দিন যেন খামি এবং খামি দেওয়া কোন কিছু পাওয়া না যায়। সেই দিন তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের ছেলেকে বলবে, ‘আমি যখন মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছিলাম তখন সদাপ্রভু আমার জন্য যা করেছিলেন তা মনে করে আমি এটা করছি।’ এইভাবে তোমরা সদাপ্রভুর দেওয়া এই নির্দেশের কথা শিক্ষা দেবে। এই নিয়ম পালন এমন একটা চিহ্ন হবে যা হাত ও কপালের স্মরণ-চিহ্নের মত তোমাদের মনে করিয়ে দেবে যে, সদাপ্রভু তাঁর শক্তি দেখিয়ে মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন। বছরের পর বছর ধরে নির্দিষ্ট সময়ে তোমরা এই নিয়ম পালন করবে। সদাপ্রভু তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই প্রতিজ্ঞা অনুসারে তিনি যখন কনানীয়দের দেশে তোমাদের নিয়ে গিয়ে অধিকার হিসাবে তা তোমাদের দেবেন, তখন তোমরাও তোমাদের প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তানকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে দিয়ে দেবে। পশুর প্রত্যেকটা প্রথম পুরুষ বাচ্চা সদাপ্রভুর। কিন্তু তোমরা গাধার প্রথম পুরুষ বাচ্চার বদলে একটা ভেড়ার বাচ্চা দিয়ে তা ছাড়িয়ে নেবে। যদি তা করা না যায় তবে তোমরা গাধার বাচ্চাটার ঘাড় ভেংগে দেবে। তোমরা তোমাদের প্রত্যেকটি প্রথম ছেলেকেও ছাড়িয়ে নেবে। “ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা এর মানে তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে তখন তোমরা প্রত্যেকে বলবে, ‘সদাপ্রভু মিসরের গোলামীর হাত থেকে তাঁর শক্তি দেখিয়ে আমাদের বের করে এনেছিলেন। ফরৌণ একগুঁয়েমি করে যখন আমাদের আসতে দিচ্ছিল না তখন সদাপ্রভু মিসর দেশের মানুষ ও পশুর প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তানকে মেরে ফেলেছিলেন। সেইজন্য আমি আমার পশুর প্রত্যেকটা প্রথম পুরুষ বাচ্চা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করছি এবং আমার প্রথম ছেলেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছি। এটা এমন একটা চিহ্ন হবে যা হাত ও কপালের স্মরণ-চিহ্নের মত তোমাকে মনে করিয়ে দেবে যে, সদাপ্রভু তাঁর শক্তি দেখিয়ে মিসর থেকে আমাদের বের করে এনেছিলেন।’ ” ফরৌণ যখন ইস্রায়েলীয়দের বিদায় করে দিলেন তখন ঈশ্বর তাদের পলেষ্টীয়দের দেশের মধ্য দিয়ে নিয়ে গেলেন না, যদিও সেটাই ছিল সবচেয়ে সোজা পথ। ঈশ্বর বলেছিলেন সেই দেশের মধ্য দিয়ে যাবার সময়ে যদি তারা যুদ্ধ করবার অবস্থায় পড়ে তবে হয়তো মন বদলিয়ে তারা আবার মিসর দেশে ফিরে যাবে। সেইজন্য ঈশ্বর তাদের মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে লোহিত সাগরের দিকে নিয়ে চললেন। ইস্রায়েলীয়েরা সৈন্যদলের মত করে মিসর দেশ থেকে বের হয়ে গেল। মোশি যোষেফের হাড়গুলো সংগে নিলেন, কারণ এই ব্যাপারে যোষেফ ইস্রায়েলীয়দের শপথ করিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “ঈশ্বর নিশ্চয়ই তোমাদের দেখাশোনা করবেন। এখান থেকে যাবার সময় তোমরা আমার হাড়গুলো তুলে সংগে করে নিয়ে যেয়ো।” এর পর তারা সুক্কোৎ শহর থেকে যাত্রা শুরু করে মরু-এলাকার কিনারায় এথম নামে এক জায়গায় গিয়ে তাদের ছাউনি ফেলল। সদাপ্রভু তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য দিনের বেলায় মেঘের থামের মধ্যে আর রাতের বেলায় আলো দেবার জন্য আগুনের থামের মধ্যে উপস্থিত থেকে তাদের আগে আগে যেতেন। এতে তারা দিনে ও রাতে সব সময়েই চলতে পারত। দিনের বেলায় মেঘের থাম আর রাতের বেলায় আগুনের থাম সব সময় লোকদের সামনে থাকত। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল যেন তারা ঘুরে গিয়ে সমুদ্র ও মিগ্‌দোলের মাঝামাঝি পী-হহীরোৎ নামে জায়গাটার কাছে তাদের ছাউনি ফেলে। জায়গাটা সমুদ্রের ধারে বাল্‌-সফোনের সামনের দিকে। এ দেখে ফরৌণ মনে করবে ইস্রায়েলীয়েরা কি করবে তা ঠিক করতে না পেরে দেশের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে করতে মরু-এলাকায় আট্‌কা পড়েছে। আমি ফরৌণের মন কঠিন করব আর সে তাদের পিছনে তাড়া করবে। কিন্তু ফরৌণ ও তার সৈন্যদল হবে আমার গৌরব প্রকাশের উপায়। এতেই মিসরীয়েরা জানতে পারবে যে, আমি সদাপ্রভু।” ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর কথামতই কাজ করল। মিসরের রাজা ফরৌণকে যখন বলা হল যে, ইস্রায়েলীয়েরা পালিয়ে গেছে তখন তাদের সম্বন্ধে ফরৌণ ও তাঁর কর্মচারীদের মন বদলে গেল। তাঁরা বললেন, “এ আমরা কি করলাম? তাদের বিদায় করে দিয়ে তো আমরা আমাদের সব দাস হারালাম।” এই কথা বলে ফরৌণ তাঁর রথ সাজাবার হুকুম দিয়ে তাঁর সৈন্যদের একত্র করে সংগে নিয়ে গেলেন। তিনি ছ’শো বাছাই করা রথ তো নিলেনই, তা ছাড়া মিসরীয় অন্যান্য সব রথও সংগে নিলেন। এক একটা রথ এক একজন সেনাপতি চালাচ্ছিলেন। সদাপ্রভু মিসরের রাজা ফরৌণের মন কঠিন করে দিয়েছিলেন। ফলে ইস্রায়েলীয়েরা যখন সাহসের সংগে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি তাদের পিছনে তাড়া করে গেলেন। তাঁর সব ঘোড়া, রথ, ঘোড়সওয়ার ও সৈন্যদল নিয়ে মিসরীয়েরা তাদের পিছনে তাড়া করে তাদের কাছাকাছি এসে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা এই সময় সমুদ্রের ধারে বাল্‌-সফোনের সামনের দিকে পী-হহীরোতের কাছে ছিল। ফরৌণ ও তাঁর দলবলকে তাদের পিছনে আসতে দেখে ইস্রায়েলীয়েরা খুব ভয় পেয়ে সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল। তারা মোশিকে বলল, “মিসরে কবর দেবার জায়গা নেই বলেই কি মরবার জন্য আপনি এই মরু-এলাকায় আমাদের এনেছেন? মিসর থেকে বের করে এনে আপনি আমাদের এ কি করলেন? মিসরে থাকতেই কি আমরা আপনাকে বলি নি, ‘আমাদের এখানেই থাকতে দিন; আমরা মিসরীয়দের গোলামীই করব’? এখানে এই মরু-এলাকার মধ্যে মরবার চেয়ে মিসরীয়দের গোলামী করা আমাদের পক্ষে অনেক ভাল ছিল।” মোশি তাদের বললেন, “ভয় কোরো না। তোমরা যেখানে আছ সেখানেই থাক এবং সদাপ্রভুর উদ্ধার করবার কাজটা একবার দেখ। তিনি আজকেই তোমাদের জন্য তা করবেন। যে মিসরীয়দের আজকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ এর পর তাদের আর কোন কালেই দেখতে পাবে না। তোমরা কেবল চুপ করে থাক। সদাপ্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন।” এর পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি আমার কাছে কান্নাকাটি করছ কেন? ইস্রায়েলীয়দের এগিয়ে যেতে বল। তুমি তোমার লাঠিটা তুলে নাও এবং সমুদ্রের উপর তোমার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সমুদ্রকে দু’ভাগ কর। তাতে সমুদ্রের মধ্যে শুকনা জমির উপর দিয়ে ইস্রায়েলীয়েরা হেঁটে চলে যাবে। কিন্তু আমি মিসরীয়দের মন এমন কঠিন করব যে, তারা ইস্রায়েলীয়দের পিছনে পিছনে সমুদ্রের মধ্যে ঢুকে যাবে। এতে ফরৌণ ও তার সমস্ত সৈন্যদল, রথ ও ঘোড়সওয়ার আমার গৌরব প্রকাশের উপায় হবে। তা দেখে মিসরীয়েরা বুঝতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” পরে মোশি সমুদ্রের উপরে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিলেন; আর সদাপ্রভু সারা রাত ধরে একটা পূবের বাতাস জোরে বইয়ে সমুদ্রের জল দু’পাশে সরিয়ে দিলেন। তিনি জলকে দু’ভাগ করে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে একটা শুকনা পথ তৈরী করলেন। ইস্রায়েলীয়েরা সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে শুকনা মাটির পথ ধরে হেঁটে চলল। তাদের ডানে বাঁয়ে সমুদ্রের জল দেয়ালের মত হয়ে দু’পাশে দাঁড়িয়ে রইল। এই ব্যাপার দেখে মিসরীয়েরা পিছন থেকে ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করল। ফরৌণের সব ঘোড়া, রথ ও ঘোড়সওয়ার তাদের পিছনে পিছনে সমুদ্রের মধ্যে গিয়ে ঢুকল। ভোর রাতে সদাপ্রভু মেঘ ও আগুনের থামের মধ্য থেকে মিসরীয় সৈন্যদলের দিকে চেয়ে দেখলেন আর তাদের মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলেন। এছাড়া তিনি রথের চাকাগুলোও খুলে ফেললেন; তাতে রথ চালাতে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছিল। মিসরীয়েরা তখন বলল, “চল, আমরা ইস্রায়েলীয়দের ছেড়ে পালাই, কারণ সদাপ্রভুই ইস্রায়েলীয়দের হয়ে মিসরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “সমুদ্রের উপরে তোমার হাত বাড়িয়ে দাও। তাতে জল আবার ফিরে এসে মিসরীয়দের উপর এবং তাদের রথ ও ঘোড়সওয়ারদের উপর পড়বে।” তখন মোশি তাঁর হাত সমুদ্রের উপরে বাড়িয়ে দিলেন। ভোর বেলায় সমুদ্রের জল নিজের জায়গায় ফিরে আসল। মিসরীয়েরা তখন ডানে-বাঁয়ে ছুটাছুটি করছিল, কিন্তু সদাপ্রভু তাদের সাগরের ঢেউয়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেলেন। সমুদ্রের জল ফিরে এসে রথ ও ঘোড়সওয়ারদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের পিছনে তাড়া করে আসা ফরৌণের গোটা সৈন্যদলটাকে ডুবিয়ে দিল। তাদের একজনও আর বেঁচে রইল না। ইস্রায়েলীয়েরা কিন্তু সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে শুকনা পথ ধরে চলে গিয়েছিল। তাদের ডানে-বাঁয়ে জল দেয়ালের মত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সদাপ্রভু এইভাবেই সেই দিন মিসরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করেছিলেন। ইস্রায়েলীয়েরা মিসরীয়দের মৃতদেহ সমুদ্রের কিনারে পড়ে থাকতে দেখল। সদাপ্রভু মিসরীয়দের বিরুদ্ধে তাঁর যে মহাশক্তি ব্যবহার করলেন তা দেখে ইস্রায়েলীয়দের মনে তাঁর প্রতি একটা ভয়ের ভাব জেগে উঠল। তারা সদাপ্রভুর ও তাঁর দাস মোশির উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে চলতে লাগল। এর পর মোশি ও ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই গান গাইলেন: “আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান করব, কারণ লোকের চোখে তাঁর মহিমা বেড়ে গেল। ঘোড়া আর ঘোড়সওয়ারের দলগুলোকে তিনিই সাগরের জলে ফেলে দিলেন। সদাপ্রভুই আমার শক্তি, তিনিই আমার গান; আমার উদ্ধার তাঁরই মধ্যে রয়েছে। সদাপ্রভুই আমার ঈশ্বর; আমি তাঁরই প্রশংসা-গান করব। তিনি আমার বাবার ঈশ্বর; আমি তাঁর মহিমা গান গাইব। তাঁর নাম সদাপ্রভু, তিনি বীর যোদ্ধা। ফরৌণের রথ আর সৈন্যদলগুলোকে তিনিই সাগরের জলে ফেলে দিলেন; ফরৌণের বাছাই করা কর্মচারীর দল লোহিত সাগরে ডুবে মরল। তারা গভীর জলে ঢাকা পড়ল আর পাথরের মত করে সাগরের তলায় ডুবে গেল। “হে সদাপ্রভু, ক্ষমতায় মহান তোমার ঐ ডান হাতখানা, হ্যাঁ ঐ ডান হাতখানা শত্রুকে চুরমার করল। যারা তোমার বিরুদ্ধে দাঁড়াল তোমার মহান মহিমায় তুমি তাদের নীচে ফেলে দিলে; তোমার পাঠানো জ্বলন্ত ক্রোধ খড়কুটার মত তাদের পুড়িয়ে ফেলল। তোমার নিঃশ্বাসের ঝাপটায় জল জড়ো হয়ে উঠল। ঢেউ ভরা সব জল ঢিবির মত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, আর অথৈ জল জমাট বাঁধল সাগরের বুকে। “শত্রু বলল, ‘আমি ওদের তাড়া করব, ধরে ফেলব আর ওদের জিনিস ভাগ করে নেব; আমি নিজেকে পূর্ণ করে নেব ঐ সব জিনিস দিয়ে। আমি তলোয়ার হাতে ওদের তাড়া করব।’ কিন্তু তুমি ফুঁ দিয়ে বাতাস বহালে, আর সাগরও তাদের ঢেকে ফেলল। তারা গভীর জলের তলায় সীসার মত করে ডুবে গেল। “হে সদাপ্রভু, দেবতাদের মধ্যে কে আছে তোমার মত? কে আছে তোমার মত এমন পবিত্রতায় মহান আর মহিমায় ভয়ংকর? এমন আশ্চর্য কাজের শক্তি কার আছে? তোমার ডান হাতখানা তুমি বাড়িয়ে দিলে, আর পৃথিবী তাদের গিলে ফেলল। তোমার অটল ভালবাসায় তুমি যাদের ছাড়িয়ে আনলে তাদের তুমিই চালিয়ে নেবে। তোমার নিজের শক্তিতে তোমার পবিত্র বাসস্থানে তুমি তাদের চালিয়ে আনবে। সেই কথা শুনে অন্য জাতিরা ভীষণ ভয়ে কাঁপবে, আর পলেষ্টীয়দের মন দারুণ ব্যথায় কাতর হবে। তুমিই তোমার লোকদের এনে চারার মত করে লাগিয়ে দেবে তোমার নিজের পাহাড়ে। হে সদাপ্রভু, তোমার নিজের হাতে করা ওটাই তোমার বাসস্থান; হে প্রভু, তোমার নিজের হাতে গড়া ওটাই সেই পবিত্র স্থান; হে সদাপ্রভু, যুগ যুগ ধরে তুমিই রাজত্ব করবে।” ফরৌণের সমস্ত ঘোড়া, রথ আর ঘোড়সওয়ার যখন সমুদ্রের মধ্যে ঢুকল তখন সদাপ্রভু সমুদ্রের জল তাদের উপর ফিরিয়ে আনলেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা সমুদ্রের মাঝখানে শুকনা জমির উপর দিয়ে হেঁটে চলে গিয়েছিল। হারোণের বোন মরিয়ম ছিলেন একজন মহিলা-নবী। তিনি খঞ্জনি হাতে নিলেন, আর তাঁর পিছনে পিছনে অন্যান্য স্ত্রীলোকেরাও খঞ্জনি হাতে নাচতে নাচতে বের হয়ে আসল। মোশির গানের উত্তরে মরিয়ম এই গান গাইলেন: “তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান কর, কারণ লোকের চোখে তাঁর মহিমা বেড়ে গেল। ঘোড়া আর ঘোড়সওয়ারের দলগুলোকে তিনিই ফেলে দিলেন সাগরের জলে।” পরে মোশি লোহিত সাগর থেকে ইস্রায়েলীয়দের নিয়ে চললেন। তারা প্রথমে শূর নামে এক মরু-এলাকায় গেল। সেই মরু-এলাকায় তিন দিন পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে তারা কোথাও জল পেল না। পরে তারা মারা নামে একটা মরুদ্যানের কাছে উপস্থিত হল, কিন্তু তেতো বলে সেখানকার জল তারা খেতে পারল না। সেইজন্য সেই জায়গার নাম হয়েছিল মারা (যার মানে “তেতো”)। এতে লোকেরা বিরক্তির সংগে মোশিকে বলল, “এখন আমরা খাবার জল পাব কোথায়? ” এই কথা শুনে মোশি গিয়ে সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করতে লাগলেন। তিনি মোশিকে একটা গাছ দেখিয়ে দিলেন। মোশি সেটা জলে ফেলে দিলেন আর সেই জল খাবার উপযুক্ত হল। সদাপ্রভু সেখানে তাদের পরীক্ষায় ফেলেছিলেন এবং তাদের জন্য একটা নিয়ম ও আইন স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা মেনে তাঁর চোখে যা উচিৎ তা-ই কর এবং তাঁর আদেশে কান দাও ও তাঁর দেওয়া সমস্ত নিয়ম পালন কর, তাহলে মিসরীয়দের উপর আমি যে সব রোগ এনেছিলাম তা তোমাদের উপর আনব না। আমি সদাপ্রভুই তোমাদের সুস্থতা দান করি।” এর পর তারা এলীম নামে একটা মরুদ্যানের কাছে উপস্থিত হল। সেখানে বারোটা ফোয়ারা এবং সত্তরটা খেজুর গাছ ছিল। সেই ফোয়ারার জলের কাছেই তারা ছাউনি ফেলল। ইস্রায়েলীয়দের দলটা এলীম থেকে আবার যাত্রা শুরু করল। মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পর দ্বিতীয় মাসের পনের দিনের দিন তারা সিন মরু-এলাকায় গিয়ে পৌঁছাল। এই জায়গাটা ছিল এলীম ও সিনাই পাহাড়ের মাঝখানে। সিন মরু-এলাকায় ইস্রায়েলীয়দের গোটা দলটা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে নানা কথা বলতে লাগল। তারা তাঁদের বলল, “মিসর দেশে সদাপ্রভুর হাতে আমরা কেন মরলাম না। সেখানে আমরা মাংসের হাঁড়ি সামনে নিয়ে পেট ভরে রুটি-মাংস খেতাম। আমাদের এই গোটা দলটাকে না খাইয়ে মেরে ফেলবার জন্যই আপনারা আমাদের এই মরু-এলাকার মধ্যে এনেছেন।” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আমি এমন করব যাতে তোমাদের জন্য স্বর্গ থেকে বৃষ্টির মত করে খাবার ঝরে পড়ে। লোকেরা প্রতিদিন বাইরে গিয়ে সেখান থেকে মাত্র সেই দিনের খাবার কুড়িয়ে নেবে। তারা আমার নির্দেশ মত চলবে কি না সেই বিষয়ে আমি তাদের পরীক্ষা নেব। সপ্তার ষষ্ঠ দিনে তারা যেন অন্য দিনের চেয়ে দুই গুণ কুড়িয়ে এনে খাবার তৈরী করে।” মোশি আরও বললেন, “সন্ধ্যাবেলায় যখন সদাপ্রভু তোমাদের মাংস দেবেন আর সকালবেলায় দেবেন প্রচুর রুটি তখনই তোমরা বুঝবে যে, সদাপ্রভুই তোমাদের মিসর থেকে বের করে এনেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তোমরা যত কথা বলেছ তা সব তিনি শুনেছেন। আমরা কে? এই সব কথা তোমরা আসলে আমাদের বিরুদ্ধে বলছ না, বলছ সদাপ্রভুরই বিরুদ্ধে।” তারপর মোশি হারোণকে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের এই কথা বলতে বললেন, “সদাপ্রভু তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের অনেক কথা বলতে শুনেছেন, কাজেই তোমরা তাঁর সামনে এগিয়ে যাও।” হারোণ যখন ইস্রায়েলীয়দের কাছে কথা বলছিলেন তখন তারা মরু-এলাকার দিকে তাকিয়ে দেখল; আর আশ্চর্য এই যে, সেখানে মেঘের মধ্যে তারা সদাপ্রভুর মহিমা দেখতে পেল। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা আমার বিরুদ্ধে যে সব কথা বলেছে তা আমি শুনেছি। তাদের এই কথা বল যে, তারা সন্ধ্যাবেলায় মাংস খাবে আর সকালবেলায় খাবে পেট ভরে রুটি। এতে তারা জানতে পারবে যে, আমি সদাপ্রভুই তাদের ঈশ্বর।” সন্ধ্যাবেলায় অনেক ভারুই পাখী এসে তাদের ছাউনি-এলাকাটা ছেয়ে ফেলল। সকালবেলায় দেখা গেল ছাউনির চারপাশটা শিশিরে ঢাকা পড়ে গেছে। যখন সেই শিশির মিলিয়ে গেল তখন মাটিতে মাছের আঁশের মত পাতলা এক রকম জিনিস দেখা গেল। সেগুলো দেখতে ছিল পড়ে থাকা তুষারের মত। তা দেখে ইস্রায়েলীয়েরা একজন অন্যজনকে বলল, “ওগুলো কি? ” ওগুলো যে কি, তা তারা জানত না। তখন মোশি তাদের বললেন, “ওগুলোই সেই রুটি যা সদাপ্রভু তোমাদের খেতে দিয়েছেন। সদাপ্রভু তোমাদের এই আদেশ দিয়েছেন, প্রত্যেকে যেন তার পরিবারের দরকার মত কুড়ায়। তাম্বুর প্রত্যেকের জন্য যেন এক ওমর করে কুড়ানো হয়।” ইস্রায়েলীয়েরা তা-ই করল। কেউ কুড়ালো বেশী, কেউ কুড়ালো কম। কিন্তু ওমরের মাপে দেখা গেল, যারা অনেক কুড়ালো তাদের বেশী হল না আর যারা অল্প কুড়ালো তাদের কম পড়ল না। প্রত্যেকেই পরিবারের দরকার মত তা কুড়িয়েছিল। তারপর মোশি তাদের বললেন, “সকালের জন্য তোমরা এর কিছুই রেখে দিয়ো না।” কিন্তু কেউ কেউ মোশির কথা না শুনে সকালের জন্য কিছু রেখে দিল। তাতে সেগুলোতে পোকা ধরল আর দুর্গন্ধ হয়ে গেল। এই অবস্থা দেখে মোশি তাদের উপর রাগে জ্বলে উঠলেন। লোকেরা প্রত্যেক দিন সকালে যার পরিবারে যতটুকু দরকার ততটুকুই কুড়িয়ে আনত। কিন্তু রোদ কড়া হলে সেগুলো গলে যেত। সপ্তার ছয় দিনের দিন তারা দুই গুণ করে, অর্থাৎ দুই ওমর করে প্রত্যেকের জন্য কুড়াল, আর ইস্রায়েলীয়দের নেতারা এসে সেই কথা মোশিকে জানালেন। তখন মোশি তাঁদের বললেন, “এটা সদাপ্রভুরই কথা। আগামী কাল বিশ্রামবার, সদাপ্রভুরই পবিত্র বিশ্রামবার। কাজেই যতটা সেঁকে নেবার নাও আর যতটুকু সিদ্ধ করবার সিদ্ধ করে নাও; বাকীটা পরের দিন সকালের জন্য রেখে দিয়ো।” মোশির আদেশ মতই তারা সকালের জন্য বাকী অংশটা রেখে দিল। সেই দিন ওগুলোতে গন্ধও হল না, পোকাও ধরল না। মোশি তখন বললেন, “আজ তোমরা ওগুলোই খাও কারণ আজকে সদাপ্রভুর নির্দিষ্ট করা বিশ্রাম দিন। আজকে তোমরা মাঠের মধ্যে ওগুলো দেখতে পাবে না। তোমরা সপ্তার ছয় দিন তা কুড়াবে কিন্তু সাত দিনের দিন তা পাবে না, কারণ সেই দিন হল বিশ্রামবার।” তবুও সপ্তম দিনে কিছু লোক ওগুলো কুড়াবার জন্য বাইরে গেল, কিন্তু কিছুই পেল না। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আর কতদিন তোমরা আমার আদেশ ও নির্দেশ অমান্য করে চলবে? দেখ, তোমাদের জন্য বিশ্রামবারের এই ব্যবস্থা তোমাদের সদাপ্রভুই করেছেন। সেইজন্য ছয় দিনের দিন তিনি দু’দিনের খাবার তোমাদের যোগান দিচ্ছেন। তাই সপ্তম দিনে তোমরা কেউ ঘরের বাইরে যাবে না, ভিতরেই থাকবে।” কাজেই লোকেরা সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিল। ইস্রায়েলীয়েরা সেই খাবারকে বলত মান্না (যার মানে “ওগুলো কি? ”)। এগুলোর আকার ছিল ধনে বীজের মত আর তা দেখতে সাদাটে; তার স্বাদ ছিল মধু দেওয়া পিঠার মত। পরে মোশি বললেন, “সদাপ্রভু আদেশ করেছেন যেন তোমরা তোমাদের বংশধরদের জন্য এক ওমর পরিমাণ মান্না তুলে রাখ, যাতে তারা দেখতে পায় সদাপ্রভু মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে আনবার পরে মরু-এলাকায় কি খাবার তোমাদের খেতে দিয়েছিলেন।” মোশি হারোণকে বললেন, “তুমি একটা পাত্রে করে এক ওমর মান্না নিয়ে সদাপ্রভুর সামনে রাখ যেন বংশের পর বংশ ধরে তা থাকে।” সেই মান্না যাতে বংশের পর বংশ ধরে তোলা থাকে সেইজন্য হারোণ পরে মোশিকে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে সাক্ষ্য-ফলকের সামনে তা নিয়ে রেখেছিলেন। লোকে বাস করে এমন একটা জায়গায়, অর্থাৎ কনান দেশের সীমানায় না আসা পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়েরা চল্লিশ বছর ধরে এই মান্না খেয়েছিল। এক ওমরের মাপ হল এক কেজি আটশো গ্রামের সমান। পরে সদাপ্রভুর আদেশে ইস্রায়েলীয়দের দলটা সিন মরু-এলাকা থেকে যাত্রা করে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় এগিয়ে যেতে যেতে শেষে রফীদীমে গিয়ে ছাউনি ফেলল। কিন্তু সেখানে খাবার জল ছিল না। এইজন্য তারা মোশির সংগে ঝগড়া করে বলল, “আমাদের খাবার জল দিন।” মোশি তাদের বললেন, “তোমরা আমার সংগে কেন ঝগড়া করছ, আর কেনই বা তোমরা সদাপ্রভুকে পরীক্ষা করে দেখছ? ” কিন্তু লোকেরা পিপাসায় কাতর হয়েছিল, সেইজন্য তারা মোশির বিরুদ্ধে নানা কথা বলল। তারা বলল, “আমরা যাতে জলের অভাবে মারা যাই সেইজন্যই কি আপনি আমাদের এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের ও পশুগুলো মিসর থেকে নিয়ে এসেছেন? ” এই কথা শুনে মোশি সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করে বললেন, “আমি এই লোকদের নিয়ে কি করব? আর একটু হলেই তো তারা আমাকে পাথর মারবে।” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের কয়েকজন বৃদ্ধ নেতাকে সংগে নিয়ে তুমি লোকদের আগে চলে যাও। যে লাঠি দিয়ে তুমি নীল নদীকে আঘাত করেছিলে সেটাই হাতে নিয়ে এগিয়ে যাও। তারপর আমি হোরেব পাহাড়ের কাছে তোমার সামনে একটা পাথরের উপর গিয়ে দাঁড়াব। তুমি সেই পাথরের গায়ে আঘাত করবে আর তাতে লোকদের খাবার জন্য সেখান থেকে জল বের হয়ে আসবে।” ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতাদের সামনে মোশি তা-ই করলেন। লোকেরা এই রফীদীমে ঝগড়া করেছিল এবং বলেছিল, “সদাপ্রভু কি আমাদের সংগে আছেন, না নেই? ” এই কথাগুলো দিয়ে সদাপ্রভুকে তারা পরীক্ষা করে দেখেছিল। সেইজন্য মোশি এই জায়গাটার দু’টা নাম দিয়েছিলেন মঃসা (যার মানে “পরীক্ষা”) এবং মরীবা (যার মানে “ঝগড়া”)। এই সময়ে অমালেকীয় সৈন্যেরা ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য রফীদীমে উপস্থিত হল। তখন মোশি যিহোশূয়কে বললেন, “তুমি আমাদের মধ্য থেকে লোক বেছে নিয়ে অমালেকীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাও। আমি কালকে ঈশ্বরের সেই লাঠিটা আমার হাতে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে দাঁড়াব।” মোশি যিহোশূয়কে যা বলেছিলেন তিনি তা-ই করলেন। তিনি অমালেকীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। এর মধ্যে মোশি, হারোণ ও হূর সেই পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে উঠলেন। যুদ্ধের সময়ে মোশি যতক্ষণ তাঁর হাত তুলে রাখতেন ততক্ষণ ইস্রায়েলীয়েরা জয়ী হত; আবার যখনই হাত নামাতেন তখন অমালেকীয়েরা জয়ী হত। এইভাবে মোশির হাত ভারী হয়ে উঠল। তখন তাঁরা একটা পাথর নিয়ে আসলেন, আর মোশি তার উপরে বসলেন। হারোণ ও হূর দু’পাশে থেকে তাঁর হাত দু’টা উঁচু করে ধরে রাখলেন। এতে বেলা ডুবে না যাওয়া পর্যন্ত তাঁর হাত দু’টা একই অবস্থায় রইল। তাতে যিহোশূয় যুদ্ধে অমালেকীয়দের হারিয়ে দিলেন। এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “এই যুদ্ধের কথা মনে রাখবার জন্য তুমি একটা বইয়ে তা লিখে রাখ এবং যিহোশূয়কে বলে দাও যে, পৃথিবীর উপর থেকে অমালেকীয়দের নাম আমি একেবারেই মুছে ফেলব।” পরে মোশি একটা বেদী তৈরী করে তার নাম দিলেন যিহোবা নিঃষি (যার মানে “সদাপ্রভুই আমার পতাকা”)। মোশি বললেন, “সদাপ্রভুর সিংহাসনের বিরুদ্ধে হাত তোলা হয়েছে, সেইজন্য বংশের পর বংশ ধরে সদাপ্রভু অমালেকীয়দের বিরুদ্ধে থাকবেন।” ঈশ্বর তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের ও মোশির জন্য যা করেছিলেন তা সবই মোশির শ্বশুর মিদিয়নীয় পুরোহিত যিথ্রোর কানে গিয়েছিল। সদাপ্রভু কেমন করে মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে এনেছিলেন তিনি তা-ও শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি অন্য ছেলেটার নাম দিয়েছিলেন ইলীয়েষর (যার মানে “ঈশ্বর আমার সহায়”); কারণ তিনি বলেছিলেন, “আমার বাবার ঈশ্বরই আমাকে সাহায্য করেছেন। তিনিই যুদ্ধে ফরৌণের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন।” ঈশ্বরের পাহাড়ের কাছে যে মরু-এলাকায় মোশি তাম্বু ফেলেছিলেন সেখানে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে তাঁর শ্বশুর যিথ্রো উপস্থিত হলেন। এর আগেই তিনি মোশিকে বলে পাঠিয়েছিলেন, “আমি তোমার শ্বশুর যিথ্রো। তোমার স্ত্রী ও ছেলে দু’টি নিয়ে আমি তোমার কাছে আসছি।” খবর পেয়ে মোশি তাঁর শ্বশুরের সংগে দেখা করবার জন্য বের হয়ে আসলেন। তিনি তাঁকে প্রণাম করলেন ও চুম্বন করলেন। তাঁরা একে অন্যের খবরাখবর জিজ্ঞাসা করে তাম্বুর ভিতরে গেলেন। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ হয়ে ফরৌণ ও মিসরীয়দের প্রতি যা করেছেন তা সবই মোশি তাঁর শ্বশুরকে জানালেন। যাত্রাপথে তাঁদের কষ্টের কথা এবং কিভাবে ঈশ্বর তাঁদের উদ্ধার করেছেন সেই সব কথাও তিনি তাঁকে জানালেন। তাই এখন আমি বুঝতে পারছি যে, সব দেবতার চেয়ে সদাপ্রভুই মহান, কারণ দেবতারা যে সব বিষয়ে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে গর্ব করত সেই সব বিষয়ে সদাপ্রভুই মহান।” এর পর যিথ্রো ঈশ্বরের উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ ও অন্যান্য উৎসর্গের জন্য পশু নিয়ে আসলেন। পরে হারোণ ও ইস্রায়েলীয়দের সব বৃদ্ধ নেতারা ঈশ্বরের সামনে মোশির শ্বশুরের সংগে খেতে বসলেন। পরের দিন মোশি লোকদের বিচার করবার জন্য বসলেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকেরা মোশির সামনে দাঁড়িয়ে রইল। লোকদের নিয়ে মোশিকে এই সব করতে দেখে তাঁর শ্বশুর বললেন, “তুমি লোকদের নিয়ে এ কি করছ? তুমি কেন একা বিচার করতে বসেছ, আর সব লোক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে? ” এর উত্তরে মোশি তাঁর শ্বশুরকে বললেন, “ঈশ্বরের ইচ্ছা জানবার জন্যই লোকেরা আমার কাছে আসে। কোন ঝগড়া-বিবাদ দেখা দিলে তারা আমার কাছে আসে আর আমি দু’পক্ষেরই বিচার করি, আর ঈশ্বরের নিয়ম ও নির্দেশ তাদের বুঝিয়ে দিই।” তখন মোশির শ্বশুর বললেন, “তুমি যেভাবে তা করছ তা ভাল নয়। এতে তুমি ও তোমার লোকেরা নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। কাজটা এত ভারী যে, তোমার একার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়। এবার আমার একটা পরামর্শ শোন, আর তাতে ঈশ্বরও তোমার সংগে থাকবেন। তুমি বরং ঈশ্বরের কাছে লোকদের প্রতিনিধি হয়ে লোকদের ঝগড়া-বিবাদ ঈশ্বরের সামনে নিয়ে যেয়ো। তারপর তুমি তাঁর সমস্ত নিয়ম ও নির্দেশ সম্বন্ধে তাদের হুঁশিয়ার করে দেবে। এছাড়া কিভাবে চলতে হবে এবং কি কাজ তাদের করতে হবে তা তুমি তাদের বুঝিয়ে দেবে। তুমি সমস্ত লোকদের মধ্য থেকে এমন সব যোগ্য লোকদের বেছে নেবে যারা ঈশ্বরভক্ত, সত্যবাদী এবং অন্যায় লাভ ঘৃণা করে। তাদের তুমি লোকদের নেতা হিসাবে নিযুক্ত করবে- কাউকে কাউকে হাজারের উপর, কাউকে কাউকে শয়ের উপর, কাউকে কাউকে পঞ্চাশের উপর এবং কাউকে কাউকে দশের উপর। এরাই সব সময় লোকদের বিচার করবে। ছোটখাটো ব্যাপারের বিচার তারা করবে আর বড় বড় ব্যাপারগুলো তোমার কাছে আনবে। এতে তোমার কাজ সহজ হবে কারণ তারাও তোমার বোঝার কিছুটা বইবে। ঈশ্বরের আদেশ পেয়ে যদি তুমি এই রকম কর তবেই তুমি এই কাজের চাপ সহ্য করতে পারবে আর লোকেরাও শান্তিতে যে যার জায়গায় ফিরে যাবে।” মোশি তাঁর শ্বশুরের পরামর্শ মেনে নিলেন এবং তিনি যা বললেন তা-ই করলেন। তিনি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে যোগ্য লোকদের বেছে নিয়ে নেতা হিসাবে তাঁদের নিযুক্ত করলেন- কাউকে কাউকে হাজারের উপর, কাউকে কাউকে শয়ের উপর, কাউকে কাউকে পঞ্চাশের উপর এবং কাউকে কাউকে দশের উপর। তাঁরাই সব সময় লোকদের বিচার করতেন। তাঁরা কঠিন ব্যাপারগুলো মোশির কাছে নিয়ে যেতেন, কিন্তু ছোটখাটো ব্যাপারগুলোর মীমাংসা নিজেরাই করতেন। পরে মোশি তাঁর শ্বশুরকে বিদায় দিলেন আর তিনি নিজের দেশে চলে গেলেন। মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পরে তৃতীয় মাসে ইস্রায়েলীয়েরা সিনাই মরু-এলাকায় গিয়ে পৌঁছাল। তারা রফীদীম ছেড়ে এসে সিনাই পাহাড়ের সামনে সিনাই মরু-এলাকায় ছাউনি ফেলল। পরে মোশি পাহাড়ের উপরে ঈশ্বরের কাছে উঠে গেলেন। সেই সময় সদাপ্রভু পাহাড়ের উপর থেকে তাঁকে ডেকে বললেন, “তুমি যাকোবের বংশধর ইস্রায়েলীয়দের বল যে, তারা নিজেরাই দেখেছে, মিসরীয়দের দশা আমি কি করেছি। ঈগল পাখীর ডানায় বয়ে নেবার মত করে আমি ইস্রায়েলীয়দের নিজের কাছে নিয়ে এসেছি। সেইজন্য যদি তারা আমার সব কথা মেনে চলে এবং আমার ব্যবস্থা পালন করে তবে পৃথিবীর সব জাতির মধ্য থেকে তারাই হবে আমার নিজের বিশেষ সম্পত্তি, কারণ দুনিয়ার সব লোকই আমার অধিকারে। আমার এই লোকদের দিয়েই গড়া হবে আমার পুরোহিতদের রাজ্য এবং এই জাতিই হবে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করা জাতি। এই কথাগুলো তুমি ইস্রায়েলীয়দের জানিয়ে দাও।” তখন মোশি নেমে এসে ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতাদের ডেকে একত্র করলেন এবং সদাপ্রভু তাঁকে যে সব কথা বলতে বলেছিলেন তা সবই তাঁদের বললেন। এই কথা শুনে সব লোক একসংগে বলল, “সদাপ্রভু যা বলেছেন আমরা তা সবই করব।” লোকেরা যা বলল মোশি গিয়ে তা সদাপ্রভুকে জানালেন। এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমার সংগে যখন কথা বলব তখন লোকেরা যাতে তা শুনতে পায় সেইজন্য আমি একটা ঘন মেঘের মধ্যে থেকে তোমাদের কাছে আসব। তাহলে লোকেরা সব সময় তোমার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে।” লোকেরা যা বলেছিল মোশি পরে তা সদাপ্রভুকে বললেন। লোকদের জন্য তুমি পাহাড়ের চারদিকে একটা সীমানা ঠিক করে দেবে এবং তাদের সাবধান করে দিয়ে বলবে, যেন তারা পাহাড়ের উপর না আসে কিম্বা পাহাড়ের গায়ে হাত না দেয়। যে ঐ পাহাড় ছোঁবে তাকে নিশ্চয়ই মেরে ফেলা হবে। তবে তার গায়ে হাত না দিয়ে তাকে পাথর মেরে কিম্বা তীর দিয়ে মেরে ফেলতে হবে। মানুষ হোক বা পশু হোক তাকে আর বেঁচে থাকতে দেওয়া হবে না। কেবলমাত্র একটানা কতক্ষণ শিঙা বাজাবার পরই তারা পাহাড়ের কাছে আসতে পারবে।” এর পর মোশি পাহাড় থেকে নেমে এসে লোকদের শুচি করলেন আর লোকেরা তাদের কাপড়-চোপড় ধুয়ে নিল। তারপর মোশি তাদের বললেন, “তৃতীয় দিনের জন্য তোমরা প্রস্তুত হও। এই সময়ের মধ্যে তোমরা কেউ স্ত্রীর সংগে মিলিত হবে না।” তৃতীয় দিনের সকালবেলা মেঘের গর্জন হতে লাগল এবং বিদ্যুৎ চম্‌কাতে থাকল আর পাহাড়ের উপরে একখণ্ড ঘন মেঘ দেখা দিল। এছাড়া খুব জোরে জোরে শিঙার আওয়াজ হতে লাগল। এই সব দেখেশুনে ছাউনির মধ্যেকার সমস্ত লোক কেঁপে উঠল। তখন ঈশ্বরের সামনে যাবার জন্য মোশি ছাউনি থেকে লোকদের বের করে নিয়ে গেলেন। লোকেরা পাহাড়ের নীচে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সিনাই পাহাড়টা ধূমায় ঢেকে গেল, কারণ সদাপ্রভু পাহাড়ের উপর আগুনের মধ্যে নেমে আসলেন। চুল্লী থেকে যেমন ধূমা ওঠে ঠিক সেইভাবে ধূমা উঠতে লাগল আর গোটা পাহাড়টা ভীষণভাবে কাঁপতে লাগল। শিঙার আওয়াজ আরও জোরে জোরে হতে লাগল। তখন মোশি ঈশ্বরের সংগে কথা বললেন আর ঈশ্বরও জোরে কথা বলে তাঁর উত্তর দিলেন। সদাপ্রভু সিনাই পাহাড়ের চূড়ায় নেমে এসে মোশিকে ডাকলেন আর মোশি পাহাড়ের উপর উঠে গেলেন। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি নীচে নেমে গিয়ে লোকদের সাবধান করে দাও যেন তারা সদাপ্রভুকে দেখবার জন্য সীমানা ডিংগিয়ে চলে না আসে। তা করলে অনেকেই মারা পড়বে। এমন কি, সদাপ্রভুর কাছে যাওয়াই যাদের কাজ, সেই পুরোহিতদেরও নিজেদের শুচি করে নিতে হবে। তা না করলে সদাপ্রভু তাদের ভীষণ শাস্তি দেবেন।” উত্তরে মোশি সদাপ্রভুকে বললেন, “কিন্তু লোকেরা তো সিনাই পাহাড়ের উপর আসতে পারবে না। তুমিই তো আমাদের সাবধান করে বলে দিয়েছ, যেন আমরা পাহাড়ের চারদিকে সীমানা-চিহ্ন দিয়ে তা তোমার জন্য আলাদা করে রাখি।” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি নীচে নেমে যাও। তারপর তুমি ও হারোণ আবার উপরে উঠে এসো। কিন্তু পুরোহিতেরা বা লোকেরা যেন সীমানা ডিংগিয়ে আমার কাছে উঠে না আসে। তা করলে আমি তাদের ভীষণ শাস্তি দেব।” এই কথা শুনে মোশি নেমে গিয়ে সব কথা লোকদের জানালেন। এর পর ঈশ্বর বললেন, “হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমি সদাপ্রভুই তোমাদের ঈশ্বর। মিসর দেশের গোলামী থেকে আমিই তোমাদের বের করে এনেছি। “আমার জায়গায় কোন দেবতাকে দাঁড় করাবে না। “পূজার উদ্দেশ্যে তোমরা কোন মূর্তি তৈরী করবে না, তা আকাশের কোন কিছুর মত হোক বা মাটির উপরকার কোন কিছুর মত হোক কিম্বা জলের মধ্যেকার কোন কিছুর মত হোক। তোমরা তাদের পূজাও করবে না, তাদের সেবাও করবে না, কারণ কেবলমাত্র আমি সদাপ্রভুই তোমাদের ঈশ্বর। আমার পাওনা ভক্তি আমি চাই। যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের পাপের শাস্তি আমি তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত দিয়ে থাকি। কিন্তু যারা আমাকে ভালবাসে এবং আমার সব আদেশ পালন করে, হাজার হাজার পুরুষ পর্যন্ত তাদের প্রতি আমার বুক ভরা দয়া থাকবে। “কোন বাজে উদ্দেশ্যে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম নেবে না। যে তা করবে তাকে সদাপ্রভু শাস্তি দেবেন। “বিশ্রামবার আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে এবং তা পালন করবে। সপ্তার ছয় দিন তোমরা পরিশ্রম করবে এবং তোমাদের সমস্ত কাজ করবে, কিন্তু সপ্তম দিনটা হল তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে বিশ্রামের দিন। সেই দিন তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়ে, তোমাদের দাস-দাসী, তোমাদের পশু বা তোমাদের শহর ও গ্রামে বাস-করা অন্য জাতির লোক, মোট কথা, কারও কোন কাজ করা চলবে না। সদাপ্রভু ছয় দিনে মহাকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং সেগুলোর মধ্যেকার সব কিছু তৈরী করেছিলেন, কিন্তু সপ্তম দিনে সেই কাজ আর করেন নি। সেইজন্য তিনি এই বিশ্রাম দিনটাকে আশীর্বাদ করে তাঁর নিজের জন্য আলাদা করেছিলেন। “তোমাদের মা-বাবাকে সম্মান করে চলবে। তাতে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া দেশে তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকবে। “খুন কোরো না। “ব্যভিচার কোরো না। “চুরি কোরো না। “কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না। “অন্যের ঘর-দুয়ার, স্ত্রী, দাস-দাসী, গরু-গাধা কিম্বা আর কিছুর উপর লোভ কোরো না।” ইস্রায়েলীয়েরা যখন বিদ্যুৎ চম্‌কাতে এবং পাহাড় থেকে ধুমা উঠতে দেখল আর মেঘের গর্জন ও শিঙার আওয়াজ শুনল তখন তারা দূরে দাঁড়িয়ে কাঁপতে লাগল। তারা মোশিকে বলল, “আপনি আমাদের সংগে কথা বলুন, আমরা শুনব; কিন্তু ঈশ্বর যদি আমাদের সংগে কথা বলেন তবে আমরা মারা পড়ব।” তখন মোশি লোকদের বললেন, “তোমরা ভয় কোরো না। ঈশ্বর তোমাদের পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছেন যাতে তোমাদের মনে ভক্তির ভাব থাকে এবং তার ফলে তোমরা পাপ না কর। সেইজন্যই তিনি এসেছেন।” লোকেরা দূরে দাঁড়িয়ে রইল আর মোশি ঈশ্বরের কাছে সেই ঘন মেঘের দিকে এগিয়ে গেলেন। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের এই কথা বল, ‘আমি সদাপ্রভু স্বর্গ থেকে যে তোমাদের সংগে কথা বলেছি তা তোমরা নিজের চোখে দেখেছ। তাই উপাসনার জন্য তোমরা কোন কিছু তৈরী করে আমার সংগে দাঁড় করাবে না। সোনা বা রূপা দিয়ে নিজেদের জন্য কোন দেব-দেবতাও তৈরী করবে না। তোমরা মাটি দিয়ে আমার জন্য একটা বেদী তৈরী করবে, আর তার উপর তোমাদের পোড়ানো-উৎসর্গ এবং যোগাযোগ-উৎসর্গের গরু-ছাগল-ভেড়া উৎসর্গ করবে। যে সব জায়গায় আমি আমার নাম স্মরণ করিয়ে দেবার ব্যবস্থা করব সেই সব জায়গায় আমি উপস্থিত হয়ে তোমাদের আশীর্বাদ করব। পাথর দিয়ে আমার জন্য কোন বেদী তৈরী করতে গিয়ে সেই পাথরগুলো কাটবে না। তার উপর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে তোমরা তা অপবিত্র করে ফেলবে। আমার বেদী এমনভাবে তৈরী কোরো যাতে তার উপর সিঁড়ি দিয়ে উঠতে না হয়, কারণ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে তোমাদের উলংগতা প্রকাশ পাবে।’ ” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের সামনে তুমি আমার এই সব নিয়ম তুলে ধরবে। “দাস হিসাবে যদি কোন ইব্রীয় লোককে তোমরা কিনে নাও, তবে ছয় বছর সে তোমাদের অধীনে কাজ করবে, কিন্তু সাত বছরের সময় তার কাছ থেকে কিছু না নিয়ে এমনিই তাকে ছেড়ে দিতে হবে। যদি সে একা তোমাদের কাছে এসে থাকে তবে সে একাই চলে যাবে, কিন্তু যদি সে তার স্ত্রীকেও সংগে এনে থাকে তবে তাকেও তার সংগে যেতে দিতে হবে। সেই দাসের বিয়ে যদি তার মনিবই দিয়ে থাকে আর তার ছেলেমেয়ে হয়ে থাকে তবে সেই স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে মনিবেরই থেকে যাবে; সে একাই বের হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সেই দাস স্পষ্ট করে জানায় যে, সে তার মনিব, তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভালবাসে এবং তাদের ছেড়ে চলে যাবার ইচ্ছা তার নেই, তবে তার মনিব তাকে ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত করবে। তারপর দরজা বা দরজার চৌকাঠের কাছে তাকে নিয়ে গিয়ে তুরপুন দিয়ে তার কানটা ফুটা করে দেবে। তাতে সে সারা জীবন তার মনিবের দাস হয়ে থাকবে। “যদি কেউ তার মেয়েকে দাসী হিসাবে বিক্রি করে তবে দাসের মত করে সেই দাসীকে ছেড়ে দেওয়া চলবে না। কিন্তু যে মনিব তাকে নিজের জন্য পছন্দ করে নিয়েছে সে যদি তার উপর খুশী হতে না পারে তবে টাকার বদলে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। অন্য জাতির কোন লোকের কাছে তাকে বিক্রি করা চলবে না, কারণ তার প্রতি মনিব তার কর্তব্য করে নি। যদি মনিব তার ছেলের জন্য তাকে পছন্দ করে নিয়ে থাকে তবে নিজের মেয়ের মত সব অধিকার তাকে দিতে হবে। সেই মনিব সেই দাসীকে বিয়ে করবার পরেও যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তবুও সে তার খোরাক-পোশাক দিতে বাধ্য থাকবে এবং দেহের দিক থেকে তার যা পাওনা তা-ও তাকে দিতে হবে। সে যদি এই সব কর্তব্য না করে তবে কোন টাকা না নিয়েই তাকে চলে যেতে দিতে হবে। “কোন লোককে আঘাত করবার ফলে যদি তার মৃত্যু হয় তবে আঘাতকারীকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। কিন্তু খুন করবার মতলব যদি তার না থেকে থাকে, যদি এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা হয় যাতে আমি বাধা দিই নি, তবে সে এমন একটা জায়গায় পালিয়ে যেতে পারবে যা আমি তোমাদের জন্য ঠিক করে দেব। যদি কেউ আগে থেকে ভেবে-চিন্তে ইচ্ছা করেই অন্য কাউকে মেরে ফেলে বেদীর কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়, তবে সেখান থেকেও তাকে ধরে এনে মেরে ফেলতে হবে। “বাবাকে কিম্বা মাকে যে আঘাত করে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। “যদি কেউ কাউকে চুরি করে নিয়ে এসে বিক্রি করে দেয় কিম্বা যদি তাকে তার সংগে পাওয়া যায়, তবে অবশ্যই তাকে মেরে ফেলতে হবে। “যার কথায় মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। “যদি কেউ তার দাস বা দাসীকে লাঠি দিয়ে মারে আর তার ফলে সে মারা যায় তবে আঘাতকারীকে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু যদি সে তার পরে দু-এক দিন বেঁচে থাকে তবে আঘাতকারীকে শাস্তি দেওয়া চলবে না, কারণ সে তার নিজেরই সম্পত্তি। “মারামারি করতে গিয়ে যদি কেউ কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোককে এমনভাবে আঘাত করে যাতে তার গর্ভ নষ্ট হয়ে যায় কিন্তু আর কোন ক্ষতি না হয়, তবে সেই স্ত্রীলোকটির স্বামীর দাবি এবং বিচারকেরা যা ঠিক করে দেবে সেই অনুসারেই আঘাতকারীকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু যদি এছাড়া অন্য কোন ক্ষতি হয় তবে এইভাবে তাকে শাস্তি দিতে হবে, যেমন প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত, হাতের বদলে হাত, পায়ের বদলে পা; পোড়ানোর বদলে পোড়ানো, ঘায়ের বদলে ঘা এবং কালশিরার বদলে কালশিরা। “যদি কেউ তার দাস বা দাসীর কোন চোখে আঘাত করলে তা নষ্ট হয়ে যায় তবে তার বদলে তাকে এমনিই চলে যেতে দিতে হবে। যদি সে আঘাত করে তার দাঁত ফেলে দেয় তবে তার বদলেও তাকে এমনি চলে যেতে দিতে হবে। “যদি কোন গরু গুঁতিয়ে কোন পুরষ বা স্ত্রীলোককে মেরে ফেলে তবে পাথর ছুঁড়ে সেই গরুটাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। সেই গরুর মাংস কেউ খাবে না এবং গরুর মালিক কোন শাস্তি পাবে না। তবে গরুটার যদি গুঁতানোর অভ্যাস থাকে আর তার মালিককে সাবধান করে দেবার পরেও সে তাকে আট্‌কে না রাখে আর সেই গরুটা কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোককে মেরে ফেলে, তবে পাথর ছুঁড়ে সেই গরুটাকে মেরে ফেলতে হবে এবং তার মালিককেও মেরে ফেলতে হবে। কিন্তু যদি মালিকের কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয় তবে সেই ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে মালিক তার নিজের জীবন রক্ষা করতে পারবে। সেই গরুটা যদি কোন ছেলে বা মেয়েকে গুঁতিয়ে মেরে ফেলে তবে তার বেলায়ও একই নিয়ম খাটবে। কোন গরু যদি কোন দাস বা দাসীকে গুঁতিয়ে মেরে ফেলে তবে তার মনিবকে সেই গরুর মালিক তিনশো ষাট গ্রাম রূপা দেবে, আর সেই গরুটাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে হবে। “যদি কোন জমির মালিক তার জমির কোন গর্তের মুখ খুলে রাখে কিম্বা কোন গর্ত খুঁড়ে ঠিক মত তার মুখ ঢাকা দিয়ে না রাখে আর সেই গর্তে যদি কোন গরু বা গাধা পড়ে যায়, তবে তাকেই তার ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। সেই গরু বা গাধার মালিককে সেই ক্ষতিপুরণ দিতে হবে; তবে মরা গরু বা গাধাটা তার হয়ে যাবে। “কোন লোকের গরু যদি অন্য কোন লোকের গরুকে গুঁতিয়ে মেরে ফেলে, তবে জ্যান্ত গরুটাকে বিক্রি করে তার টাকা ও মরা গরুটা তারা দু’জনে সমান ভাগে ভাগ করে নেবে। কিন্তু যদি আগে থেকে জানা থাকে যে, গরুটা গুঁতায় কিন্তু তার মালিক তাকে আট্‌কে না রেখে থাকে তবে সেই মালিককে গরুর বদলে গরু দিতে হবে এবং মরা গরুটা তার হয়ে যাবে। “যদি কোন লোক কোন গরু বা ভেড়া চুরি করে এনে মেরে ফেলে কিম্বা বিক্রি করে দেয়, তবে তাকে একটা গরুর বদলে পাঁচটা গরু এবং একটা ভেড়ার বদলে চারটা ভেড়া ফিরিয়ে দিতে হবে। “যদি কোন চোর চুরি করবার জন্য ঘরে ঢুকবার সময়ে ধরা পড়ে আর আহত হয়ে মারা যায়, তবে যার আঘাতে সে মারা গেল সে খুনের দায়ে দায়ী হবে না। কিন্তু যদি সূর্য উঠবার পরে তা হয় তবে সে সেই খুনের জন্য দায়ী হবে। “চোরকে চুরি করা জিনিসের জন্য অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কিন্তু যদি তার কিছু না থাকে তবে তাকেই বিক্রি করে সেই টাকা আদায় করে নিতে হবে। চুরি করা গরু, গাধা বা ভেড়া যদি চোরের কাছে জ্যান্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তবে চোরকে সেগুলো একটার বদলে দু’টা করে ফিরিয়ে দিতে হবে। “যদি কেউ তার গরু-ভেড়া কোন মাঠে বা আংগুর ক্ষেতে চরাতে গিয়ে ছেড়ে দেয় আর সেগুলো অন্য কোন লোকের ক্ষেতে ঢুকে ফসল খেয়ে ফেলে, তবে তার নিজের শস্য ক্ষেতের বা আংগুর ক্ষেতের সবচেয়ে ভাল ফসল দিয়ে তার ক্ষতিপূরণ করতে হবে। “যদি কোন জায়গা থেকে আগুন কাঁটাঝোপে গিয়ে লাগে এবং পরে ছড়িয়ে গিয়ে গাদা করে রাখা কিম্বা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা শস্য কিম্বা গোটা ক্ষেতখানা পুড়িয়ে ফেলে, তবে আগুনটা যে জ্বালিয়েছিল তাকেই তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি কেউ কারও কাছে টাকা-পয়সা বা জিনিসপত্র রাখতে দেয় আর তার ঘর থেকে তা চুরি হয়ে যায়, তবে চোর ধরা পড়লে চোর তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু যদি চোর ধরা না পড়ে তবে ঘরের কর্তা নিজেই সেই সব নিয়েছে কিনা তা স্থির করবার জন্য তাকে ঈশ্বরের কাছে উপস্থিত হতে হবে। অন্যের দখলে আছে এমন কোন গরু বা গাধা বা ভেড়া বা পরনের কাপড় কিম্বা অন্য যে কোন হারানো জিনিস দেখে যদি কেউ বলে সেটা তার, তবে তা মীমাংসার জন্য দুই পক্ষকেই ঈশ্বরের কাছে গিয়ে উপস্থিত হতে হবে। ঈশ্বর যাকে দোষী বলে স্থির করবেন সে অন্যজনকে তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেবে। “যদি কেউ তার গাধা, গরু, ভেড়া কিম্বা অন্য কোন পশু কারও কাছে রাখতে দেয় আর তা মরে যায় বা আঘাত পায় কিম্বা কেড়ে নেওয়া হয় অথচ কেউ এই সব হতে দেখে নি, তবে সেই লোকই যে সেটা করে নি তা সদাপ্রভুর সামনে শপথ করে তাকে ব্যাপারটার মীমাংসা করতে হবে। সেই পশুর মালিককে তখন তা মেনে নিতে হবে এবং কোন ক্ষতিপূরণ সে দাবি করতে পারবে না। কিন্তু সেই লোকের কাছ থেকে যদি সেটা চুরি হয়ে যায় তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। যদি কোন হিংস্র জন্তু সেই পশুটাকে ছিঁড়ে ফেলে তবে তা প্রমাণ করবার জন্য তাকে পড়ে থাকা অংশগুলো নিয়ে এসে দেখাতে হবে। এই অবস্থায় তাকে আর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। “কারও কাছ থেকে চেয়ে আনা কোন পশু যদি মালিকের অনুপস্থিতিতে আহত হয় বা মরে যায় তবে যে তা চেয়ে এনেছে তাকে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু মালিকের সামনেই যদি তা হয় তবে তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। কিন্তু পশুটা যদি টাকা দিয়ে ভাড়া করে আনা হয়ে থাকে তবে সেই টাকাই তার ক্ষতিপূরণ হবে। “কারও সংগে বিয়ের সম্বন্ধ হয় নি এমন কোন কুমারী মেয়েকে যদি কেউ ভুলিয়ে এনে তার সংগে ব্যভিচার করে, তবে সেই লোকটাকে তার বিয়ের পণ দিতে হবে এবং মেয়েটা তার স্ত্রী হবে। যদি মেয়েটির বাবা কিছুতেই তার কাছে মেয়ে দিতে রাজী না হয় তা হলেও তাকে এই বিয়ের পণ দিতে হবে। “কোন যাদুকারিণীকে বেঁচে থাকতে দেবে না। “কোন পশুর সংগে যদি কেউ ব্যভিচার করে তবে অবশ্যই তাকে মেরে ফেলতে হবে। “সদাপ্রভুকে ছাড়া যদি কেউ কোন দেবতার কাছে কিছু উৎসর্গ করে তবে তাকেও মেরে ফেলতে হবে। “কোন বিদেশীর সংগে খারাপ ব্যবহার কোরো না বা তার উপর অত্যাচার কোরো না, কারণ মিসর দেশে তোমরাও একদিন বিদেশী ছিলে। “কোন বিধবা বা কোন অনাথ ছেলে বা মেয়েকে কষ্ট দিয়ো না। যদি তা কর এবং সে আমার কাছে কাঁদে তবে নিশ্চয়ই আমি তার কান্নায় কান দেব। তখন আমার ক্রোধ জ্বলে উঠবে এবং তোমরা যুদ্ধে মারা পড়বে। তাতে তোমাদের স্ত্রীরা বিধবা হবে এবং ছেলেমেয়েরা তাদের বাবাকে হারাবে। “আমার কোন অভাবী লোককে যদি তুমি টাকা ধার দাও তবে মহাজনের মত করে তার কাছ থেকে কোন সুদ নিয়ো না। যদি তুমি কারও গায়ের চাদর বন্ধক রাখ তবে সূর্য ডুবে যাবার আগেই তা ফিরিয়ে দিতে হবে, কারণ ওটাই তার গায়ে দেবার জন্য একমাত্র কাপড়। ওটা না থাকলে সে কি গায়ে দিয়ে শোবে? যদি সে এইজন্য আমার কাছে কাঁদে তবে আমি তার কান্না শুনব, কারণ আমার অন্তর দয়াতে পূর্ণ। “ঈশ্বরকে অপমান কোরো না কিম্বা তোমাদের শাসনকর্তাকে অভিশাপ দিয়ো না। “তোমাদের ফসল এবং আংগুর-রস থেকে আমাকে যা দেবার তা দিতে দেরি কোরো না। তোমাদের প্রথম ছেলে আমাকে দিতে হবে। তোমাদের গরু ও ভেড়ার বেলায়ও তা-ই করবে। সাত দিন পর্যন্ত তাদের বাচ্চাগুলো মায়ের কাছে থাকবে, তারপর আট দিনের দিন সেগুলো আমাকে দিয়ে দিতে হবে। “তোমরা হবে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করা লোক। সেইজন্য এমন কোন পশুর মাংস তোমরা খাবে না যা কোন হিংস্র জানোয়ারে ছিঁড়ে মাঠে ফেলে রেখেছে; তা কুকুরকে খেতে দেবে। “মিথ্যা গুজব রটাবে না। তা করে অন্যায়ের পক্ষ নিয়ে দুষ্ট লোককে সাহায্য করবে না। দশজনে অন্যায় করছে বলে তুমিও তা করতে যেয়ো না। কোন মকদ্দমায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বেশীর ভাগ লোকের সাথে মিলে ন্যায়বিচারে বাধা দিয়ো না। কোন গরীব লোকের বিচার করতে গিয়ে সে গরীব বলেই তার পক্ষ নেবে না। “তোমার শত্রুর কোন গরু বা গাধাকে যদি অন্য কোথাও চলে যেতে দেখ তবে সেটা অবশ্যই তার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাকে ঘৃণা করে এমন কোন লোকের গাধাকে যদি বোঝার ভারে পড়ে যেতে দেখ তবে সেই লোককে সেই অবস্থায় রেখে চলে যেয়ো না। তুমি অবশ্যই তাকে তা তুলতে সাহায্য করবে। “কোন গরীব লোকের মকদ্দমায় অন্যায় বিচার কোরো না। সাজানো মামলা থেকে দূরে থাকবে এবং কোন নির্দোষ কিম্বা সৎ লোককে মৃত্যুর শাস্তি দিয়ো না। এই অন্যায় যে করবে তাকে আমি রেহাই দেব না। ঘুষ খেয়ো না, কারণ যার চোখ আছে তাকেও ঘুষ অন্ধ করে দেয়। ঘুষ সৎ লোকের কথায়ও প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। “বিদেশীর উপর অত্যাচার কোরো না। বিদেশী হওয়া যে কেমন তা তোমরা নিজেরাই জান, কারণ মিসর দেশে তোমরাও একদিন বিদেশী ছিলে। “পর পর ছয় বছর তোমরা ক্ষেতে চাষ করবে এবং ফসল কাটবে, কিন্তু সপ্তম বছরে জমি চাষও করবে না এবং কোন কিছু বুনবেও না। তাতে এমনি যা জন্মাবে তোমাদের মধ্যেকার গরীব লোকেরা তা থেকে খাবার পাবে আর যা পড়ে থাকবে তা বুনো পশুরা খেতে পারবে। তোমাদের আংগুর ও জলপাই বাগানের ব্যাপারেও ঐ একই নিয়ম পালন করবে। “তোমরা সপ্তার ছয় দিন কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনে কোন কাজ করবে না। তাতে তোমাদের গরু ও গাধা বিশ্রাম পাবে এবং তোমাদের ঘরে জন্মেছে এমন দাস ও দাসী আর অন্যান্য জাতির লোকেরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পাবে। “আমি তোমাদের যে যে নির্দেশ দিলাম তার প্রত্যেকটা অবশ্যই পালন করবে। কোন দেবতার নাম মুখে আনবে না, তা যেন তোমাদের মুখে শোনা না যায়। “প্রতি বছর তোমরা আমার উদ্দেশে তিনটা করে পর্ব পালন করবে। তোমরা খামিহীন রুটির পর্ব পালন করবে। আমি তোমাদের যে আদেশ দিয়েছি সেইমতই তোমরা সাত দিন ধরে খামিহীন রুটি খাবে। আবীব মাসের নির্দিষ্ট সময়ে এটা পালন করবে, কারণ সেই মাসেই তোমরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছ। কেউ যেন তখন খালি হাতে আমার কাছে না আসে। তোমরা ক্ষেতে যা বুনবে তার প্রথম ফসল দিয়ে ফসল কাটবার পর্ব পালন করবে। কৃষিকাজের শেষ মাসে ক্ষেত থেকে ফসল তুলবার সময়ে তোমরা ফসল মজুদের পর্ব পালন করবে। বছরে তিনবার করে তোমাদের সব পুরুষ লোক প্রভু সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হবে। “যখন তোমরা আমার উদ্দেশে পশুর রক্ত উৎসর্গ করবে তখন তার সংগে যেন কোন খামি-দেওয়া রুটি উৎসর্গ করা না হয়। পর্বের সময় আমার উদ্দেশে যে সব পশু উৎসর্গ করবে তার কোন চর্বিযুক্ত অংশ যেন সকাল পর্যন্ত পড়ে না থাকে। তোমাদের ক্ষেত থেকে কেটে আনা প্রথম ফসলের সবচেয়ে ভাল অংশটা তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘরে নিয়ে যাবে। ছাগলের বাচ্চার মাংস তার মায়ের দুধে রান্না করবে না। “যে জায়গা আমি ঠিক করে রেখেছি সেখানে তোমাদের নিয়ে যাবার জন্য এবং পথে রক্ষা করবার জন্য আমি তোমাদের আগে আগে একজন দূতকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তোমরা তাঁর কথা শুনবে এবং তা মেনে চলবে। তোমরা তাঁর বিরুদ্ধে মন তেতো কোরো না। তোমাদের বিদ্রোহ তিনি ক্ষমা করবেন না, কারণ আমিই তাঁর মধ্যে আছি। তোমরা যদি তাঁর কথায় কান দাও এবং আমি যা যা বলেছি তা কর তবে আমি তোমাদের শত্রুদের শত্রু হব এবং যারা তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে আমি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব। ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, কনানীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়েরা যে দেশে বাস করে আমার দূত তোমাদের আগে আগে থেকে সেই দেশে তোমাদের নিয়ে যাবে। আমি তাদের সকলকেই ধ্বংস করে ফেলব। তোমরা তাদের দেবতাদের পূজা কিম্বা সেবা করবে না এবং সেখানকার লোকেরা যা করে তা করবে না। তোমরা তাদের দেব-দেবতার মূর্তিগুলো ভেংগে ফেলবে এবং তাদের পূজার পাথরগুলোও টুকরা টুকরা করে ফেলবে। তোমরা কেবল তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই, অর্থাৎ আমারই সেবা করবে। তাতে তোমাদের খাবার ও জলের উপরে আমার আশীর্বাদ থাকবে এবং আমিই তোমাদের সব অসুখ-বিসুখ দূর করে দেব। তখন তোমাদের দেশের কারও গর্র্ভের সন্তান নষ্ট হবে না এবং কেউ বন্ধ্যা থাকবে না। আমি তোমাদের পূর্ণ আয়ু পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখব। “তোমরা যে সব জাতির কাছে যাবে তাদের মনে আমার সম্বন্ধে একটা ভয়ের ভাব আমি আগেই জাগিয়ে দেব এবং তাদের মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করব। তোমাদের সব শত্রুরা পিছন ফিরে পালিয়ে যাবে। হিব্বীয়, কনানীয় ও হিত্তীয়দের তোমাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেবার জন্য আমি তোমাদের আগে আগে ভিমরুল পাঠিয়ে দেব। তবে আমি যে তাদের এক বছরের মধ্যেই সবাইকে তাড়িয়ে দেব তা নয়, কারণ তা করলে দেশটা খালি পড়ে থাকবে আর বুনো জীব-জানোয়ারের সংখ্যা তোমাদের পক্ষে অনেক বেশী হয়ে যাবে। তোমরা সংখ্যায় বেড়ে গিয়ে সারা দেশটা অধিকার করে না নেওয়া পর্যন্ত আমি সেই জাতিদের কিছু কিছু করে দেশ থেকে তাড়িয়ে বের করে দেব। “এক দিকে লোহিত সাগর থেকে পলেষ্টীয়দের দেশের সাগর পর্যন্ত এবং অন্য দিকে মরু-এলাকা থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত তোমাদের দেশের সীমানা আমি স্থির করে দেব। সেই দেশে যারা বাস করছে তাদের আমি তোমাদের হাতে তুলে দেব আর তোমাদের সামনে থেকে তোমরা তাদের তাড়িয়ে বের করে দেবে। তাদের সংগে কিম্বা তাদের দেবতাদের সংগে কোন চুক্তি করবে না। তোমাদের দেশের মধ্যে তাদের বাস করতে দেবে না। তা করলে তারা আমার বিরুদ্ধে তোমাদের পাপে টেনে নিয়ে যাবে, কারণ যদি তোমরা তাদের দেব-দেবতার সেবা কর তবে নিশ্চয়ই তোমরা তার ফাঁদে আট্‌কা পড়ে যাবে।” পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “হারোণ, নাদব, অবীহূ আর ইস্রায়েলীয়দের সত্তরজন বৃদ্ধ নেতা এবং তুমি আমার কাছে উঠে এস। আসবার সময়ে তোমরা দূরে থেকে উবুড় হয়ে আমাকে ভক্তি জানাবে। কিন্তু তুমি একাই আমার কাছে এগিয়ে আসবে, অন্যেরা আসবে না। এরা ছাড়া অন্য ইস্রায়েলীয়েরা যেন তোমার সংগে উঠে না আসে।” মোশি যখন ফিরে গিয়ে লোকদের কাছে সদাপ্রভুর সমস্ত কথা বললেন এবং তাঁর সব আইন ঘোষণা করলেন তখন লোকেরা একসংগে বলল, “সদাপ্রভু যা যা বলেছেন আমরা তা সবই করব।” সদাপ্রভু যে সব কথা বলেছিলেন মোশি তা লিখে রাখলেন। পরের দিন মোশি খুব সকালে উঠে পাহাড়ের নীচে একটা বেদী তৈরী করলেন এবং ইস্রায়েলীয় বারো গোষ্ঠীর কথা মনে করে বারোটা পাথরের থাম তৈরী করলেন। তারপর তিনি কয়েকজন ইস্রায়েলীয় যুবককে পাঠিয়ে দিলেন আর তারা গিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে অনেকগুলো পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল এবং যোগাযোগ-উৎসর্গ হিসাবে অনেক ষাঁড়ও উৎসর্গ করল। মোশি উৎসর্গের রক্তের অর্ধেকটা নিয়ে কয়েকটা পাত্রে রাখলেন এবং বাকী অর্ধেক তিনি বেদীর উপরে ছিটিয়ে দিলেন। তারপর তিনি ব্যবস্থা-লেখা বইটা নিয়ে লোকদের পড়ে শোনালেন। এর উত্তরে লোকেরা বলল, “আমরা বাধ্য থাকব এবং সদাপ্রভু যা যা বলেছেন তা সবই পালন করব।” এই কথা শুনে মোশি রক্ত নিয়ে লোকদের উপর ছিটিয়ে দিয়ে বললেন, “এই সেই ব্যবস্থার রক্ত, যে ব্যবস্থা সদাপ্রভু তোমাদের জন্য এই সব কথা অনুসারে স্থির করেছেন।” ইস্রায়েলীয়দের এই সব নেতারা যদিও ঈশ্বরকে দেখলেন তবু তিনি তাঁদের মেরে ফেললেন না। তাঁরা তাঁকে দেখলেন এবং খাওয়া-দাওয়া করলেন। তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি পাহাড়ের উপরে আমার কাছে উঠে এসে কিছুকাল এখানেই থাক। লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য পাথরের যে ফলকের উপর আমি আইন-কানুন ও আদেশ লিখে রেখেছি তা আমি তোমাকে দেব।” এই কথা শুনে মোশি তাঁর সাহায্যকারী যিহোশূয়কে নিয়ে রওনা হলেন। তারপর তিনি ঈশ্বরের পাহাড়ে গিয়ে উঠলেন। তিনি বৃদ্ধ নেতাদের বলে গেলেন, “আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনারা এখানেই অপেক্ষা করুন। হারোণ আর হূর আপনাদের সংগে রইলেন। ঝগড়া-বিবাদ হলে লোকেরা যেন তাঁদের কাছে যায়।” মোশি পাহাড়ে উঠবার সময় পাহাড়টা মেঘে ঢেকে গেল, আর সিনাই পাহাড়ের উপর সদাপ্রভুর মহিমা স্থির হয়ে রইল। ছয় দিন পর্যন্ত পাহাড়টা মেঘে ঢাকা রইল। তারপর সপ্তম দিনে সেই মেঘের মধ্য থেকে সদাপ্রভু মোশিকে ডাকলেন। ইস্রায়েলীয়দের চোখে সদাপ্রভুর মহিমা জ্বলন্ত আগুনের মত হয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দেখা দিল। পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে মোশি সেই মেঘের ভিতরে ঢুকে গেলেন। তিনি চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত সেই পাহাড়ে রইলেন। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের বল যেন তারা আমার জন্য ভক্তি-উপহার নিয়ে আসে। নিজের ইচ্ছায় যারা তা আনবে তুমি তাদের কাছ থেকে তা বুঝে নেবে। তারা যেন এই সব উপহার আনে: সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জ; নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং মসীনা সুতা; ছাগলের লোম; লাল রং-করা ভেড়ার চামড়া এবং শুশুকের চামড়া; বাবলা কাঠ; আলো জ্বালাবার জন্য জলপাইয়ের তেল; অভিষেক-তেল ও সুগন্ধি ধূপের জন্য মশলা; এফোদ ও বুক-ঢাকনের উপরে বসাবার জন্য বৈদূর্যমণি এবং অন্যান্য দামী পাথর। ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে তুমি আমার থাকবার জন্য একটা পবিত্র জায়গা তৈরী করিয়ে নেবে। তাতে আমি তাদের মধ্যে বাস করব। যে নমুনা আমি তোমাকে দেখাতে যাচ্ছি ঠিক সেই রকম করেই তুমি আমার এই আবাস-তাম্বু ও সব আসবাবপত্র তৈরী করাবে। “বাব্‌লা-কাঠ দিয়ে তারা একটা সিন্দুক তৈরী করবে। সেটা লম্বায় হবে আড়াই হাত, চওড়ায় ও উচ্চতায় দেড় হাত। তার ভিতর ও বাইরে খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে এবং তার চার কিনারা ধরে থাকবে সোনার নক্‌শা। ছাঁচে ফেলে চারটা সোনার কড়া তৈরী করে তার চারটা পায়ায় লাগাতে হবে- এপাশে দু’টা, ওপাশে দু’টা। তারপর বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দু’টা ডাণ্ডা তৈরী করে তা সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। সিন্দুকটা বয়ে নেবার জন্য তার দুই পাশের কড়ার মধ্য দিয়ে সেই ডাণ্ডা দু’টা ঢুকিয়ে দেবে। ডাণ্ডা দু’টা সেই সিন্দুকের কড়ার মধ্যে ঢুকানোই থাকবে; সেগুলো খুলে নেওয়া চলবে না। যে সাক্ষ্য-ফলক আমি তোমাকে দেব তা তুমি এই সিন্দুকের মধ্যে রাখবে। “খাঁটি সোনা দিয়ে সেই সিন্দুকের জন্য একটা ঢাকনা তৈরী করাবে, যার উপর পাপ ঢাকা দেওয়া হবে। এই ঢাকনাটা লম্বায় হবে আড়াই হাত এবং চওড়ায় দেড় হাত। সেই ঢাকনার কিনারায় সোনা পিটিয়ে দু’টি করূবের মূর্তি তৈরী করাতে হবে। করূব দু’টি সিন্দুকের দুই কিনারায় থাকবে। সেই করূব দু’টি এমনভাবে ঢাকনা থেকে তৈরী করাতে হবে যাতে সমস্তটা মিলে মাত্র একটা জিনিসই হয়। তাদের ডানাগুলো উপর দিকে মেলে দেওয়া থাকবে এবং তার ছায়ার নীচে থাকবে সিন্দুকের ঢাকনাটা। করূবেরা সামনাসামনি দাঁড়িয়ে থাকবে এবং তাদের চোখ থাকবে ঢাকনাটার দিকে। এই ঢাকনাটা সিন্দুকের উপর রাখতে হবে এবং যে সাক্ষ্য-ফলক আমি তোমাকে দেব সেটা তুমি সেই সিন্দুকের মধ্যে রাখবে। এই সাক্ষ্য-সিন্দুকের ঢাকনার উপরে করূব দু’টির মাঝখানে আমি তোমার সংগে দেখা করে ইস্রায়েলীয়দের জন্য আমার সমস্ত আদেশ তোমাকে দেব। “বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দুই হাত লম্বা, এক হাত চওড়া ও দেড় হাত উঁচু করে একটা টেবিল তৈরী করাতে হবে। খাঁটি সোনা দিয়ে সেটা মুড়িয়ে দেবে এবং তার চার কিনারা ধরে থাকবে সোনার নক্‌শা। টেবিলটার চারপাশের কিনারায় চার আংগুল উঁচু করে একটা বেড় তৈরী করাতে হবে, আর তার উপরেও সোনা দিয়ে নক্‌শার কাজ করাতে হবে। টেবিলের চার কোণাতে চার পায়ার উপরে চারটা সোনার কড়া তৈরী করিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। সেই কড়াগুলো টেবিলের কিনারায় ঐ উঁচু বেড়ের কাছাকাছি থাকবে যাতে টেবিলটা বয়ে নেবার জন্য সেগুলোর মধ্য দিয়ে ডাণ্ডা ঢুকানো যায়। ডাণ্ডা দু’টা বাব্‌লা কাঠ দিয়ে তৈরী করে সোনা দিয়ে মুড়াতে হবে এবং তা দিয়ে টেবিলটা বয়ে নিতে হবে। টেবিলের বড় এবং ছোট থালাগুলো আর যে সব কলসী ও বাটি থেকে ঢালন-উৎসর্গের জিনিস ঢালতে হবে তা সবই খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। সেই টেবিলের উপরে আমার সামনে সম্মুখ-রুটি রাখতে হবে, আর তা যেন সব সময় সেখানে থাকে। “খাঁটি সোনা দিয়ে একটা বাতিদান তৈরী করাতে হবে। তার নীচের অংশ এবং তা থেকে উঠে যাওয়া ডাঁটিটা সোনা পিটিয়ে তৈরী করাবে। তার ফুলের মত বাটিগুলো, কুঁড়ি ও ফুল বাতিদান থেকে বের হয়ে আসবে এবং সমস্তটা মিলে মাত্র একটা জিনিসই হবে। বাতিদানের দু’পাশ দিয়ে তিনটা তিনটা করে মোট ছয়টা ডাল থাকবে। ফুল ও কুঁড়ি সুদ্ধ বাদাম ফুলের মত দেখতে তিনটা বাটি প্রথম ডালের মাঝে মাঝে থাকবে। তার পরের ডালেও ঐ রকম তিনটা বাটি থাকবে। বাতিদান থেকে বের হয়ে আসা ছয়টা ডাল একই রকম হবে। বাতিদানের ডাঁটিটার মাঝে মাঝেও ফুল ও কুঁড়ি সুদ্ধ বাদাম ফুলের মত দেখতে চারটা বাটি থাকবে। বাতিদান থেকে বের হয়ে আসা মোট ছয়টা ডালের মধ্যে প্রথম দু’টা যেখানে মিশবে তার নীচে থাকবে একটা কুঁড়ি, দ্বিতীয় দু’টার নীচে আর একটা কুঁড়ি এবং তৃতীয় দু’টার নীচে আর একটা কুঁড়ি। কুঁড়ি এবং ডাল সবই বাতিদান থেকে বের হয়ে আসবে এবং সমস্তটা মিলে একটা জিনিসই হবে। সবটাই খাঁটি সোনা পিটিয়ে তৈরী করাতে হবে। তারপর খাঁটি সোনা দিয়ে সাতটা প্রদীপ তৈরী করিয়ে ঐ বাতিদানের উপর এমনভাবে বসাতে হবে যাতে প্রদীপগুলো জ্বালালে পর বাতিদানের সামনের জায়গাটায় আলো পড়ে। সল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা এবং সল্‌তের পোড়া অংশ রাখবার জন্য কয়েকটা পাত্রও খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। সব কিছু সুদ্ধ বাতিদানটা তৈরী করবার জন্য ত্রিশ কেজি খাঁটি সোনা দরকার হবে। এই পাহাড়ের উপরে তোমাকে যে নমুনা দেখানো হল ঠিক সেইমতই যেন সব কিছু তৈরী করা হয় তা দেখো। “আমার আবাস-তাম্বু দশ টুকরা কাপড় দিয়ে তৈরী করাতে হবে। টুকরাগুলো পাকানো মসীনা সুতা এবং নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। ওস্তাদ কারিগর দিয়ে তার মধ্যে করূবদের ছবি বুনিয়ে নেবে। টুকরাগুলো সব একই মাপের হবে- লম্বায় আটাশ হাত এবং চওড়ায় চার হাত। টুকরাগুলো পাঁচটা পাঁচটা করে একসংগে জুড়ে দু’টা বড় টুকরা করতে হবে। প্রথম বড় টুকরাটার একপাশের চওড়ার দিকের কিনারা ধরে নীল সুতা দিয়ে কতগুলো ফাঁস তৈরী করাবে। দ্বিতীয় বড় টুকরাতেও ঠিক তা-ই করাতে হবে। এইভাবে পঞ্চাশটা ফাঁস প্রথম বড় টুকরার কিনারায় এবং আরও পঞ্চাশটা ফাঁস দ্বিতীয় বড় টুকরার কিনারায় থাকবে। দুই বড় টুকরার এই ফাঁসগুলো একটা আর একটার ঠিক উল্টা দিকে থাকবে। তারপর পঞ্চাশটা সোনার আংটা তৈরী করে সেগুলো ফাঁসের মধ্যে ঢুকিয়ে সেই বড় টুকরা দু’টা আট্‌কে দিতে হবে। তাতে দু’টা বড় টুকরা দিয়ে একটা আবাস-তাম্বু হবে। “আবাস-তাম্বুর উপরের অংশ ঢেকে দেবার জন্য ছাগলের লোম দিয়ে চাদরের মত করে এগারটা টুকরা বুনিয়ে নিতে হবে। টুকরাগুলো একই মাপের হবে- ত্রিশ হাত লম্বা ও চার হাত চওড়া। তা থেকে পাঁচটা টুকরা একসংগে জুড়ে নিয়ে একটা বড় টুকরা করতে হবে। বাকী ছয়টা টুকরা একসংগে জুড়ে নিয়ে আর একটা বড় টুকরা করতে হবে। এই বড় টুকরার মধ্যে যে টুকরাটা বেশী থাকবে সেটা তাম্বুর সামনের দিকে দু’ভাঁজ করে দিতে হবে। প্রথম বড় টুকরাটা একপাশের চওড়ার দিকের কিনারা ধরে পঞ্চাশটা ফাঁস তৈরী করাতে হবে; দ্বিতীয় বড় টুকরাতেও ঠিক তা-ই করাতে হবে। তারপর ব্রোঞ্জ দিয়ে পঞ্চাশটা আংটা তৈরী করিয়ে তা ফাঁসের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে সেই বড় টুকরা দু’টা একসংগে আট্‌কে দিতে হবে। তাতে বড় টুকরা দু’টা মিলে একটা তাম্বু-ঢাকন হবে। প্রথম বড় টুকরাটার যে অর্ধেকটা পিছন দিকে ঝুলে পড়বে সেটা সেইভাবেই থাকবে। ছাগলের লোমের টুকরাখানা তলার কাপড় থেকে দু’পাশে এক হাত করে বড় হবার দরুন তা দু’পাশে ঝুলে পড়ে গোটা আবাস-তাম্বুটা ঢেকে ফেলবে। তার উপরটা ঢেকে দেবার জন্য লাল রং করা ভেড়ার চামড়া দিয়ে একটা ঢাকনি তৈরী করাতে হবে, আর তার উপরটা ঢেকে দিতে হবে শুশুকের চামড়ার ঢাকনি দিয়ে। “আবাস-তাম্বুর জন্য বাব্‌লা কাঠ দিয়ে কতগুলো খাড়া ফ্রেম তৈরী করাতে হবে। প্রত্যেকটা ফ্রেম দশ হাত লম্বা আর দেড় হাত চওড়া হবে। প্রত্যেক ফ্রেমের দু’টা করে পায়া থাকবে। আবাস-তাম্বুর সব ফ্রেমগুলো একই রকম করে তৈরী করাতে হবে। দক্ষিণ দিকের জন্য বিশটা ফ্রেম তৈরী করাতে হবে। ঐ ফ্রেমগুলোর প্রত্যেকটা পায়ার নীচে বসাবার জন্য চল্লিশটা রূপার পা-দানি তৈরী করাবে- প্রত্যেকটা ফ্রেমের জন্য দু’টা করে, অর্থাৎ প্রত্যেকটা পায়ার জন্য একটা করে। তাম্বুর পশ্চিম দিকের জন্য, অর্থাৎ পিছন দিকের জন্য ছয়টা ফ্রেম, আর পিছন দিকের দুই কোণার জন্যও আরও দু’টা ফ্রেম তৈরী করাবে। এই ফ্রেম দু’টার প্রত্যেকটা দুই কোণার দু’টা ফ্রেমের সংগে একত্র করে নীচ থেকে উপর পর্যন্ত জোড়া দিতে হবে। প্রত্যেকটি কোণার দুই ফ্রেম ও পাশের ফ্রেমটা আংটা দিয়ে একসংগে জুড়ে দিতে হবে। দুই কোণা একই রকম হবে। এতে পিছন দিকে আটটা ফ্রেম হবে এবং প্রত্যেকটা ফ্রেমের নীচে দেবার জন্য দু’টা করে মোট ষোলটা রূপার পা-দানি থাকবে। উপর এবং নীচের হুড়কাগুলোর মধ্যেকার লম্বা হুড়কাটা ফ্রেমের মাঝখান দিয়ে এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত চলে যাবে। ফ্রেমগুলো সোনা দিয়ে মুড়াতে হবে এবং হুড়কাগুলো ঢুকাবার জন্য সোনার কড়া তৈরী করে ফ্রেমে লাগাতে হবে। সেই হুড়কাগুলোও সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নেবে। “এই পাহাড়ের উপরে তোমাকে আবাস-তাম্বুর যে নমুনা দেখানো হল তুমি ঠিক সেইমত করেই সেটা তৈরী করাবে। “নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে একটা পর্দা তৈরী করাবে। ওস্তাদ কারিগর দিয়ে তার উপরে করূবদের ছবি বুনিয়ে নেবে। সেই পর্দাটা বাব্‌লা কাঠের চারটা খুঁটির সংগে লাগানো সোনার হুক থেকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। খুঁটিগুলো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে এবং সেগুলো রূপার পা-দানির উপর দাঁড়িয়ে থাকবে। পর্দাটা উপরের মসীনার কাপড়ে লাগানো আংটার নীচে ঝুলানো থাকবে। এই পর্দার পিছনে সাক্ষ্য-সিন্দুকটি রাখবে। পর্দাটা মহাপবিত্র স্থান ও পবিত্র স্থানের মাঝখানে থেকে দু’টি স্থানকে আলাদা করে রাখবে। এই মহাপবিত্র স্থানের ভিতরে সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরে তার ঢাকনাটা রাখবে। এই পর্দাটার বাইরে পবিত্র স্থানের মধ্যে উত্তর পাশে টেবিলটা রাখতে হবে আর তার উল্টাদিকে দক্ষিণ পাশে থাকবে বাতিদানটা। “তাম্বুর দরজার জন্যও একটা পর্দা তৈরী করাতে হবে। সেটা হবে নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে সেলাই করে নক্‌শা করা জিনিস। এই পর্দার জন্য সোনার হুক এবং বাব্‌লা কাঠের পাঁচটা খুঁটি তৈরী করাবে। খুঁটিগুলো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। সেই খুঁটিগুলো বসাবার জন্য ব্রোঞ্জ দিয়ে পাঁচটা পা-দানি তৈরী করাবে। “বাব্‌লা কাঠ দিয়ে পাঁচ হাত লম্বা, পাঁচ হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু করে একটা চৌকো বেদী তৈরী করাবে। বেদীটা তৈরী করবার সময় তার চার কোণার কাঠ এমনভাবে চেঁছে ফেলতে হবে যাতে চারটা শিং তৈরী হয়। তাতে শিং সুদ্ধ বেদীটা একটা গোটা জিনিস হবে। ব্রোঞ্জ দিয়ে সমস্ত বেদীটা মুড়ে দেবে। বেদীর ছাই ফেলবার পাত্র ও হাতা, উৎসর্গের রক্ত রাখবার বাটি, মাংস তুলবার কাঁটা এবং আগুন রাখবার পাত্র সবই ব্রোঞ্জের তৈরী হবে। ব্রোঞ্জ দিয়ে একটা ঝাঁঝরি, অর্থাৎ জাল্‌তি তৈরী করাবে। তার চার কোণায় চারটা ব্রোঞ্জের কড়া লাগাবে। বেদীর চারপাশ থেকে বের হয়ে আসা তাকের নীচে এই ঝাঁঝরি রাখবে। সেটা বেদীর নীচ থেকে উপরের দিকে মাঝামাঝি জায়গায় থাকবে। বেদীর জন্য বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দু’টা ডাণ্ডা তৈরী করাতে হবে এবং সেই ডাণ্ডা দু’টা ব্রোঞ্জ দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। এই ডাণ্ডাগুলো কড়ার মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তাতে বেদীটা বয়ে নেবার সময় ডাণ্ডাগুলো বেদীর দু’পাশে থাকবে। বেদীটা তক্তা দিয়ে তৈরী হবে এবং তার ভিতরটা ফাঁকা থাকবে। এই পাহাড়ের উপরে তোমাকে যেমন দেখানো হল ঠিক তেমনি করেই তুমি সেটা তৈরী করাবে। “আবাস-তাম্বুর চারদিকে একটা উঠান থাকবে। এর দক্ষিণ দিকটা হবে একশো হাত। সেই দিকে থাকবে পাকানো মসীনা সুতার পর্দা। সেই পর্দাগুলো খাটাবার জন্য বিশটা খুঁটি থাকবে। খুঁটির নীচে থাকবে একটা করে ব্রোঞ্জের পা-দানি, আর খুঁটির সংগে লাগানো থাকবে রূপার হুক আর বাঁধন-পাত। উঠানের উত্তর দিকটাও হবে একশো হাত। সেখানেও থাকবে পর্দা, বিশটা খুঁটি, বিশটা ব্রোঞ্জের পা-দানি এবং খুঁটির সংগে থাকবে রূপার হুক আর বাঁধন-পাত। “উঠানের পশ্চিম দিকটা হবে পঞ্চাশ হাত। সেখানেও কতগুলো পর্দা ও দশটা খুঁটি থাকবে আর খুঁটির নীচে থাকবে একটা করে পা-দানি। উঠানের পূর্ব দিকটাও হবে পঞ্চাশ হাত। “উঠানের দরজার জন্য চারটা খুঁটি, চারটা পা-দানি এবং বিশ হাত লম্বা একটা পর্দা থাকবে। পর্দাটা হবে নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতার একটা নক্‌শা করা জিনিস। উঠানের চারদিকের সব খুঁটিতে রূপার হুক ও বাঁধন-পাত এবং ব্রোঞ্জের পা-দানি থাকবে। উঠানটা লম্বায় হবে একশো হাত এবং পাশে পঞ্চাশ হাত। তার চারদিকের পর্দাগুলো পাঁচ হাত করে উঁচু হবে এবং সেগুলো তৈরী হবে পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে, আর খুঁটিগুলোতে থাকবে ব্রোঞ্জের পা-দানি। আবাস-তাম্বুতে যে সব জিনিসপত্র ব্যবহার করা হবে, সেগুলো যে কাজেই ব্যবহার করা হোক না কেন সবই ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী করাতে হবে। এমন কি, তাম্বুর এবং উঠানের পর্দার গোঁজগুলোও হবে ব্রোঞ্জের। “বাতিদানে যাতে আলো জ্বালিয়ে রাখা যায় সেইজন্য তুমি ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দাও যেন তারা ছেঁচা জলপাইয়ের খাঁটি তেল তোমার কাছে নিয়ে আসে। এই মিলন-তাম্বুর সাক্ষ্য-সিন্দুকের সামনে যে পর্দা থাকবে সেই পর্দার বাইরে হারোণ ও তার ছেলেরা সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সদাপ্রভুর সামনে প্রদীপগুলোর দেখাশোনা করবে। ইস্রায়েলীয়েরা যেন বংশের পর বংশ ধরে স্থায়ী নিয়ম হিসাবে এটা পালন করে। “তুমি ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে তোমার ভাই হারোণ ও তার ছেলে নাদব, অবীহূ, ইলীয়াসর এবং ঈথামরকে তোমার কাছে ডেকে পাঠাও। তারা পুরোহিত হয়ে আমার সেবা করবে। সম্মান এবং সাজের উদ্দেশ্যে তোমার ভাই হারোণের জন্য তুমি পবিত্র পোশাক তৈরী করাবে। আমি যে সব ওস্তাদ কারিগরকে জ্ঞানদানকারী পবিত্র আত্মাকে দিয়ে পূর্ণ করে রেখেছি, তুমি তাদের বলে দাও যেন তারা হারোণের জন্য এমন পোশাক তৈরী করে যা তাকে পুরোহিত হিসাবে আমার সেবা করবার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে। তার এই পোশাকের মধ্যে থাকবে বুক-ঢাকন, এফোদ, বাইরের জামা, চেক্‌ কাপড়ের ভিতরের জামা, পাগড়ি ও কোমর-বাঁধনি। তোমার ভাই হারোণ ও তাঁর ছেলেরা যাতে পুরোহিত হয়ে আমার সেবা করতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের জন্য পবিত্র পোশাক তৈরী করাবে। পোশাক তৈরী করবার কাজে তারা সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা ও মসীনা সুতা ব্যবহার করবে। “এফোদটা তৈরী করাতে হবে সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে। এটা হবে একটা ওস্তাদী হাতের কাজ। এফোদের কাঁধের অংশটা বেঁধে রাখবার জন্য দু‘টা ফিতা তৈরী করে এফোদের দুই কোণায় জুড়ে দিতে হবে। এফোদের সংগে জোড়া লাগানো কোমরের পটিটাও এফোদের মতই সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। তুমি দু’টা বৈদুর্যমণি নিয়ে তার উপর ইস্রায়েলের ছেলেদের নাম খোদাই করাবে। তাদের জন্ম অনুসারে পর পর ছয়টা নাম একটা পাথরে আর বাকী ছয়টা নাম অন্য পাথরে খোদাই করাতে হবে। “আমার নির্দেশ জানবার জন্য বুক-ঢাকন তৈরী করাতে হবে। এটা হবে একটা ওস্তাদী হাতের কাজ। এফোদের মত এটাও তৈরী করাতে হবে সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে। এটা হবে লম্বায় আধ হাত ও চওড়ায় আধ হাত একটা চৌকো দুই ভাঁজ করা কাপড়। এর উপর চার সারি দামী পাথর বসাতে হবে। প্রথম সারিতে থাকবে সার্দীয়মণি, পীতমণি ও পান্না; দ্বিতীয় সারিতে চুনি, নীলকান্তমণি ও হীরা; তৃতীয় সারিতে গোমেদ, অকীকমণি ও পদ্মরাগ; চতুর্থ সারিতে পোখরাজ, বৈদূর্যমণি ও সূর্যকান্তমণি। পাথরগুলো সোনার জালির উপর বসাতে হবে। ইস্রায়েলের বারোটি ছেলের জন্য মোট বারোটা পাথর থাকবে। তার প্রত্যেকটিতে বারোটি গোষ্ঠীর একটি করে নাম খোদাই করানো থাকবে, যেমন করে সীলমোহর খোদাই করা হয়। “এই বুক-ঢাকনের জন্য খাঁটি সোনা দড়ির মত পাকিয়ে দু’টা শিকল তৈরী করাবে। সোনার দু’টা কড়া তৈরী করিয়ে বুক-ঢাকনের উপরের দুই কোণায় লাগিয়ে দেবে, আর শিকল দু’টা সেই কড়া দু’টার সংগে আট্‌কে দেবে। এফোদের সামনের দিকে কাঁধের ফিতার উপরে সোনার যে জালি থাকবে সেই জালির সংগে শিকলের অন্য দিকটা আট্‌কে দেবে। তা ছাড়া আরও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করিয়ে বুক-ঢাকনের অন্য দুই কোণায় লাগাবে। এই দু’টা থাকবে এফোদের কাছে বুক-ঢাকনের তলায়। তা ছাড়াও আরও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করিয়ে এফোদের কাঁধের ফিতার সোজাসুজি নীচের দিকে এফোদের কোমরের পটির ঠিক উপরে যে সেলাই থাকবে তার কাছে লাগিয়ে দেবে। তারপর বুক- ঢাকনের তলায় যে কড়া থাকবে তার সংগে কোমরের পটির কড়াটা নীল দড়ি দিয়ে বেঁধে দেবে। তাতে বুক-ঢাকনটা এফোদের উপর থেকে সরে যাবে না। “পবিত্র স্থানে ঢুকবার সময় হারোণ আমার নির্দেশ জানবার জন্য এই বুক-ঢাকনখানার উপর লেখা ইস্রায়েলের ছেলেদের নাম বুকে বয়ে নিয়ে যাবে। এই বুক-ঢাকনখানা সব সময় সদাপ্রভুর সামনে তাদের তুলে ধরবে। বুক-ঢাকনের ভাঁজের ভিতরে রাখবে ঊরীম ও তুম্মীম। তাতে হারোণ যখন সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হবে তখন সেগুলো তার বুকে থাকবে। এতে হারোণ সদাপ্রভুর সামনে সব সময়েই ইস্রায়েলীয়দের জন্য আমার নির্দেশ জানবার উপায় তার বুকে বইবে। “এফোদের নীচে যে লম্বা জামাটা থাকবে তার পুরোটাই নীল সুতা দিয়ে তৈরী করাবে। মাথা ঢুকাবার জন্য তার মাঝখানটা খোলা থাকবে। এই খোলা জায়গাটা যাতে ছিঁড়ে না যায় সেইজন্য তার চারদিকের কিনারা বুনে শক্ত করে দিতে হবে। নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা দিয়ে ডালিম ফল তৈরী করে এই জামাটার নীচের মুড়ির চারপাশে ঝুলিয়ে দেবে। সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে দেবে সোনার ঘণ্টা। নীচের সমস্ত মুড়িটা ধরে থাকবে একটা করে ডালিম আর একটা করে ঘণ্টা। সদাপ্রভুর সেবা করবার সময়ে হারোণ এই পোশাক পরবে। সে যখন পবিত্র স্থানে সদাপ্রভুর সামনে যাবে এবং সেখান থেকে বের হয়ে আসবে তখন এই ঘণ্টাগুলোর আওয়াজ শোনা যাবে আর তাতে তার জীবন রক্ষা পাবে। “একটা খাঁটি সোনার পাত তৈরী করিয়ে তার উপর সীলমোহর খোদাই করবার মত করে এই কথাগুলো খোদাই করিয়ে নেবে: ‘সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা।’ সেই পাতটা পাগড়ির সামনের দিকে থাকবে এবং নীল দড়ি দিয়ে তা বাঁধা থাকবে। এটা থাকবে হারোণের কপালের উপর। যে সব পবিত্র জিনিস ইস্রায়েলীয়েরা উৎসর্গ করবার জন্য নিয়ে আসবে তার সমস্ত দোষ-ত্রুটির বোঝা হারোণই বইবে। সদাপ্রভু যাতে তাদের গ্রহণ করেন সেইজন্য হারোণের কপালের উপর এই সোনার পাতটা সব সময় থাকবে। “পুরোহিতের ভিতরের জামাটা তৈরী করাবে মসীনা সুতার চেক্‌ কাপড় দিয়ে আর পাগড়িটা তৈরী করাবে সেই একই সুতা দিয়ে। কোমর-বাঁধনিটা হবে একটা নক্‌শা করা জিনিস। “সম্মান ও সাজের উদ্দেশ্যে তুমি হারোণের ছেলেদের জন্যও জামা, কোমর-বাঁধনি ও মাথার টুপি তৈরী করাবে। তোমার ভাই হারোণ ও তার ছেলেদের এই সব পোশাক পরিয়ে নিয়ে তুমি তাদের তেল দিয়ে অভিষেক করে পুরোহিতের পদে বহাল করবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে তুমি তাদের আলাদা করে নেবে যাতে তারা পুরোহিত হয়ে আমার সেবা করতে পারে। কোমর থেকে ঊরু পর্যন্ত ঢাকবার জন্য মসীনার কাপড়ের জাংগিয়া তৈরী করাবে। হারোণ ও তার ছেলেরা যখন মিলন-তাম্বুতে ঢুকবে কিম্বা পবিত্র স্থানের বেদীতে সেবার কাজ করবার জন্য এগিয়ে যাবে তখন তারা এই জাংগিয়া পরবে। এতে তারা দোষমুক্ত থাকবে এবং মারা পড়বে না। হারোণ এবং তার বংশধরদের জন্য এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম। “পুরোহিত হয়ে যাতে তারা আমার সেবা করতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের আমার উদ্দেশ্যে এইভাবে আলাদা করে নেবে। তুমি একটা ষাঁড় ও দু‘টা ভেড়া নেবে। সেগুলোর দেহে যেন কোন খুঁত না থাকে। তারপর মিহি ময়দা দিয়ে রুটি, তেলের ময়ান দেওয়া পিঠা আর তেল লাগানো চাপাটি তৈরী করবে। এর কোনটাতেই খামি দেবে না। সেগুলো একটা টুকরির মধ্যে রাখবে এবং সেই ষাঁড় ও ভেড়া দু’টার সংগে টুকরিটা আমার সামনে রাখবে। তারপর হারোণ ও তার ছেলেদের মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে নিয়ে যাবে এবং জল দিয়ে তাদের শরীর ধুয়ে দেবে। পরে সেই বিশেষ পোশাকগুলো নিয়ে হারোণকে ভিতরের জামা, এফোদের নীচে পরবার লম্বা জামা, এফোদ এবং বুক-ঢাকনটা পরিয়ে দেবে। পাকা হাতে বোনা কোমরের পটির সংগে এফোদটা বেঁধে দেবে। তারপর তার মাথার উপর পাগড়ি পরিয়ে দিয়ে তার উপর সেই সোনার পাতের পবিত্র মুকুটটা লাগিয়ে দেবে। এর পর অভিষেকের তেল নিয়ে তার মাথায় ঢেলে দিয়ে তাকে অভিষেক করবে। “পরে সেই ষাঁড়টাকে তুমি মিলন-তাম্বুর সামনে আনবে, আর হারোণ ও তার ছেলেরা ওটার মাথার উপর তাদের হাত রাখবে। তারপর মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর সামনে তুমি ষাঁড়টা কাটবে। পরে কিছুটা রক্ত নিয়ে তুমি আংগুল দিয়ে বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে আর বাকী রক্ত বেদীর গোড়ায় ঢেলে দেবে। তারপর পেটের ভিতরের অংশগুলোর উপরকার চর্বি, মেটের উপরের অংশ এবং চর্বি সুদ্ধ বৃক্ক দু’টা নিয়ে বেদীর উপর পুড়িয়ে ফেলবে। ষাঁড়টার মাংস, চামড়া এবং গোবর সুদ্ধ নাড়ীভুঁড়ি ইস্রায়েলীয়দের ছাউনি থেকে দূরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। এটা একটা পাপ-উৎসর্গ। “তারপর সেই ভেড়া দু’টার একটা নিয়ে আসবে। হারোণ ও তার ছেলেরা সেই ভেড়াটার মাথার উপর তাদের হাত রাখবে। এর পর ভেড়াটা কেটে তার রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। পরে ভেড়াটা কেটে টুকরা টুকরা করে তার পা এবং পেটের ভিতরকার অংশগুলো ধুয়ে নিয়ে মাথা ও অন্যান্য টুকরাগুলোর সংগে রাখবে। তারপর তার সবটাই বেদীর উপর পুড়িয়ে ফেলবে। এটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ, অর্থাৎ সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে করা উৎসর্গ, যার গন্ধে তিনি খুশী হন। “তারপর অন্য ভেড়াটাও নেবে এবং হারোণ ও তার ছেলেরা তার মাথার উপরে তাদের হাত রাখবে। পরে ভেড়াটা কেটে তার কিছু রক্ত নিয়ে হারোণ ও তার ছেলেদের ডান কানের লতিতে এবং ডান হাত ও পায়ের বুড়ো আংগুলে লাগিয়ে দেবে। এছাড়া আরও কিছু রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। তারপর কিছু অভিষেকের তেল এবং বেদী থেকে কিছু রক্ত নিয়ে হারোণ ও তার ছেলেদের গায়ে এবং পোশাকের উপর ছিটিয়ে দেবে। এতে পোশাক সুদ্ধ তাকে ও তার ছেলেদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নেওয়া হবে। “তারপর তুমি সেই ভেড়াটার চর্বি, চর্বিভরা লেজ, পেটের ভিতরের অংশগুলোর উপরকার চর্বি, মেটের উপরের অংশ, চর্বি-জড়ানো বৃক্ক দু’টা এবং ডান দিকের ঊরুটা নেবে। এটা হল পদে বহাল করবার অনুষ্ঠানের ভেড়া। তারপর সদাপ্রভুর সামনে রাখা খামিহীন রুটির টুকরি থেকে একটা রুটি, একটা তেলে ময়ান দেওয়া পিঠা ও চাপাটি নেবে। এগুলো সব হারোণ ও তার ছেলেদের হাতে দিয়ে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে সদাপ্রভুর সামনে তা দোলাবে। তারপর সেগুলো তাদের হাত থেকে নিয়ে বেদীর উপর পোড়ানো-উৎসর্গের সংগে পুড়িয়ে ফেলবে। এটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে করা উৎসর্গ যার গন্ধে তিনি খুশী হন। হারোণের পুরোহিত-পদে বহাল-অনুষ্ঠানের এই ভেড়াটার বুকের অংশ নিয়ে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে সদাপ্রভুর সামনে তা দোলাবে। এটা তোমার ভাগে পড়বে। “হারোণ ও তার ছেলেদের পুরোহিত-পদে বহাল-অনুষ্ঠানের ভেড়াটা থেকে নেওয়া দোলন-উৎসর্গের মাংস এবং উৎসর্গ করা ঊরুর মাংস সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে। এইভাবে ইস্রায়েলীয়দের করা সব যোগাযোগ-উৎসর্গের এই অংশগুলো সব সময় হারোণ ও তার ছেলেদের দেওয়া হবে। এই অংশগুলোই হবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ইস্রায়েলীয়দের দান। “হারোণের পবিত্র পোশাকগুলো তার বংশধরেরা পাবে। এগুলো পরিয়েই তাদের অভিষেক ও পুরোহিতের পদে বহাল করতে হবে। হারোণের পরে তার যে ছেলে পুরোহিত হয়ে মিলন-তাম্বুর পবিত্র স্থানে সেবা করতে যাবে তাকে সাত দিন পর্যন্ত এই পোশাক গায়ে রাখতে হবে। “বহাল-অনুষ্ঠানের এই ভেড়াটার মাংস নিয়ে একটা পবিত্র জায়গায় সিদ্ধ করতে হবে। মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে হারোণ ও তার ছেলেরা টুকরিতে রাখা রুটির সংগে এই মাংস খাবে। তাদের পুরোহিতের কাজে বহাল করবার জন্য এবং আমার উদ্দেশ্যে তাদের আলাদা করে নেবার জন্য যে সব উৎসর্গ করা খাবার পাপ ঢাকবার কাজে ব্যবহার করা হবে তা হারোণ ও তার ছেলেদের খেতে হবে। অন্য কেউ তা খেতে পারবে না, কারণ তা পবিত্র খাবার। এই বহাল-অনুষ্ঠানের ভেড়ার কোন মাংস বা রুটি যদি সকাল পর্যন্ত থেকে যায় তবে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তা যেন কেউ না খায়, কারণ সেটা পবিত্র খাবার। “হারোণ ও তার ছেলেদের প্রতি আমি যা যা তোমাকে করতে বললাম তা সবই তুমি করবে। এই বহাল-অনুষ্ঠানটি তুমি সাত দিন ধরে করবে। পাপ ঢাকা দেবার জন্য পাপ-উৎসর্গ হিসাবে তুমি সেই সাত দিনের প্রত্যেক দিন একটা করে ষাঁড় উৎসর্গ করবে। পাপ ঢাকা দেবার অনুষ্ঠান দ্বারা বেদীটা শুচি করে নেবে এবং তেল ঢেলে সেটা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নেবে। বেদীটা শুচি করে নেবার জন্য সাত দিন পর্যন্ত প্রতিদিন পাপ ঢাকা দেবার অনুষ্ঠান দ্বারা সেটা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিতে হবে। তাতে সেই বেদীটা একটা মহাপবিত্র জিনিস হবে। তার ছোঁয়ায় যা কিছু আসবে তা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা হতে হবে। “এর পর থেকে সেই বেদীর উপর প্রত্যেক দিন নিয়মিত ভাবে দু’টা করে ভেড়ার বাচ্চা উৎসর্গ করতে হবে; তার প্রত্যেকটার বয়স হবে এক বছর। একটা উৎসর্গ করতে হবে সকালবেলায় আর অন্যটি সন্ধ্যাবেলায়। প্রথম ভেড়াটার সংগে এক কেজি আটশো গ্রাম মিহি ময়দা প্রায় এক লিটার ছেঁচা জলপাইয়ের তেলের সংগে মিশিয়ে উৎসর্গ করতে হবে। এছাড়া ঢালন-উৎসর্গ হিসাবে প্রায় এক লিটার আংগুর-রসও উৎসর্গ করতে হবে। সন্ধ্যাবেলায় যে ভেড়াটা উৎসর্গ করা হবে তার সংগে সকালবেলার মত সেই একই রকমের শস্য-উৎসর্গ এবং ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। এটা হবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে করা উৎসর্গ যার গন্ধে তিনি খুশী হন। “বংশের পর বংশ ধরে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর, অর্থাৎ আমার সামনে নিয়মিত ভাবে এই পোড়ানো-উৎসর্গ করতে হবে। সেখানেই আমি তোমাদের সংগে দেখা করব এবং তোমার সংগে কথা বলব। ইস্রায়েলীয়দের সংগে আমি সেখানে দেখা করব এবং আমার মহিমা সেই জায়গাটাকে আলাদা করে রাখবে। “আমি মিলন-তাম্বু ও বেদী আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখব এবং পুরোহিত হয়ে আমার সেবা করবার জন্য হারোণ ও তার ছেলেদেরও আলাদা করে রাখব। আমি ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর হয়ে তাদের মধ্যে বাস করব। তখন তারা জানতে পারবে যে, আমি সদাপ্রভুই তাদের ঈশ্বর। আমি তাদের মধ্যে বাস করব বলেই মিসর দেশ থেকে তাদের বের করে এনেছি। আমি সদাপ্রভুই তাদের ঈশ্বর। “ধূপ জ্বালাবার জন্য তুমি বাব্‌লা কাঠ দিয়ে একটা বেদী তৈরী করাবে। বেদীটা হবে চৌকো- এক হাত লম্বা, এক হাত চওড়া আর দু’হাত উঁচু। শিং সুদ্ধ গোটা বেদীটা মাত্র একটা জিনিসই হবে। বেদীর উপরটা, তার চারপাশ এবং শিংগুলো খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে আর তার চার কিনারা ধরে থাকবে সোনার নক্‌শা। বেদীর দু’পাশে নক্‌শার নীচে দু’টা করে সোনার কড়া লাগাতে হবে যাতে তার ভিতর দিয়ে ডাণ্ডা ঢুকিয়ে সেটা বয়ে নেওয়া যায়। সেই ডাণ্ডাগুলো বাব্‌লা কাঠ দিয়ে তৈরী করে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। সাক্ষ্য-সিন্দুকের কাছে, অর্থাৎ সাক্ষ্য-ফলকের উপরকার ঢাকনাটার কাছে যে পর্দা থাকবে এই বেদীটা তার সামনে রাখবে; সেখানেই আমি তোমার সংগে দেখা করব। “প্রত্যেক দিন সকালে বাতিগুলো ঠিক করে রাখবার সময় হারোণ ঐ বেদীর উপর সুগন্ধি ধূপ জ্বালাবে। বেলা শেষে বাতি ধরাবার সময়েও আবার সে ধূপ জ্বালাবে। এতে তোমাদের বংশের পর বংশ ধরে সদাপ্রভুর সামনে নিয়মিত ভাবে ধূপ জ্বলবে। এই বেদীর উপর অন্য কোন ধূপ জ্বালাবে না কিম্বা কোন পোড়ানো-উৎসর্গ বা শস্য-উৎসর্গ বা ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করবে না। পাপ ঢাকবার জন্য পাপ-উৎসর্গের রক্ত বেদীর শিংগুলোর উপরে লাগিয়ে দিয়ে হারোণ বছরে একবার করে বেদীটা শুচি করে নেবে। এইভাবে বছরে একবার করে বংশের পর বংশ ধরে মহাপুরোহিতকে এই কাজ করে যেতে হবে। এটা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে মহাপবিত্র বেদী।” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের লোকসংখ্যা জানবার জন্য যখন লোকগণনা করা হবে সেই সময় প্রত্যেককেই সদাপ্রভুকে রূপা দিয়ে তার জীবন-মূল্য দিতে হবে। এতে লোকগণনার দরুন যে বিপদ আসবার কথা তা তাদের উপর আসবে না। গুণে রাখা লোকদের দলে যাবার আগে প্রত্যেককে দশ গ্রাম ওজনের ধর্মীয় শেখেলের আধা শেখেল করে দিতে হবে। এই আধা শেখেল হবে সদাপ্রভুর। যারা গুণে রাখা দলে যাবে, অর্থাৎ যাদের বয়স বিশ বছর কিম্বা তার বেশী, সদাপ্রভুকে তাদের এটা দিতেই হবে। জীবন-মূল্য হিসাবে সদাপ্রভুকে এটা দেবার সময় ধনীরও আধা শেখেলের বেশী দিতে হবে না, আবার গরীবেরও এর কম দেওয়া চলবে না। ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে এই সব জীবন-মূল্যের রূপা নিয়ে মিলন-তাম্বুর কাজে ব্যবহার করতে হবে। এই সব জীবন-মূল্য যা তোমাদের জীবনের বদলে দেওয়া হবে তা সদাপ্রভুর সামনে ইস্রায়েলীয়দের তুলে ধরবে।” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “হাত-পা ধোওয়ার জন্য ব্রোঞ্জ দিয়ে একটা গামলা আর তা বসাবার জন্য ব্রোঞ্জেরই একটা আসন তৈরী করাতে হবে। মিলন-তাম্বু ও বেদীর মাঝামাঝি জায়গায় সেটা বসিয়ে তার মধ্যে জল রাখবে। ঐ জল দিয়ে হারোণ ও তাঁর ছেলেরা হাত-পা ধোবে। তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি কতগুলো ভাল জাতের মশলা, অর্থাৎ পাঁচ কেজি গন্ধরস, আড়াই কেজি সুগন্ধি দারচিনি, আড়াই কেজি বচ, আর পাঁচ কেজি দারচিনি ফুলের কুঁড়ি নেবে। এছাড়া সাড়ে তিন লিটার জলপাইয়ের তেলও নেবে। সুগন্ধি জিনিস তৈরী করবার মত করে তুমি এই সব সুগন্ধি মশলা একসংগে মিশিয়ে নিয়ে অভিষেকের জন্য তেল তৈরী করাবে। এটাই হবে পবিত্র অভিষেক-তেল। এই অভিষেক-তেল দিয়ে তুমি মিলন-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক, টেবিল ও তার উপরকার জিনিসপত্র, বাতিদান ও তার সাজ-সরঞ্জাম, ধূপ-বেদী, পোড়ানো-উৎসর্গের বেদী ও তার সব পাত্র এবং আসন সুদ্ধ গামলাটা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নেবে। তাতে সেগুলো মহাপবিত্র জিনিস হবে। তার ছোঁয়ায় যা আসবে তা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা হতে হবে। “হারোণ ও তার ছেলেরা যাতে পুরোহিত হয়ে আমার সেবা করতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের অভিষেক করে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নেবে। তুমি ইস্রায়েলীয়দের জানাবে যে, বংশের পর বংশ ধরে এটাই হবে তাদের পবিত্র অভিষেক-তেল। সাধারণ লোকদের গায়ে তারা যেন তা না দেয় এবং ঐ সব মশলা দিয়ে তারা যেন এই নিয়মে কোন তেলও তৈরী না করে। এই তেল পবিত্র; সেইজন্য তাদেরও সেটা সেইভাবেই দেখতে হবে। যদি কেউ এই রকম সুগন্ধি জিনিস তৈরী করে কিম্বা পুরোহিত ছাড়া আর কারও গায়ে তা দেয় তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।” এর কিছুটা নিয়ে গুঁড়া করে মিলন-তাম্বুর মধ্যে সাক্ষ্য-ফলকের সামনে রাখবে। সেখানেই আমি তোমার সংগে দেখা করব। এই ধূপ তোমরা মহাপবিত্র জিনিস বলে মনে করবে। কেউ যেন এই নিয়মে এই সব সুগন্ধি জিনিস দিয়ে নিজের ব্যবহারের জন্য কোন ধূপ তৈরী না করে। এটা যে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা তা তোমরা মনে রাখবে। সুগন্ধি জিনিস হিসাবে ব্যবহারের জন্য যদি কেউ তা তৈরী করে তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “দেখ, আমি যিহূদা-গোষ্ঠীর ঊরির ছেলে বৎসলেলকে বেছে নিয়েছি। ঊরি হল হূরের ছেলে। আমি এই বৎসলেলকে ঈশ্বরের আত্মা দিয়ে পূর্ণ করেছি। আমি তাকে জ্ঞান, বিবেচনাশক্তি, অভিজ্ঞতা এবং সব রকম কারিগরী কাজের ক্ষমতা দিয়ে রেখেছি। তাতে সে নিজের মন থেকে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জের উপর সুন্দর সুন্দর নক্‌শা তৈরী করতে পারবে, দামী দামী পাথর কাটতে ও বসাতে পারবে আর কাঠের এবং অন্য সব রকম হাতের কাজও করতে পারবে। এছাড়া তাকে সাহায্য করবার জন্য আমি দান-গোষ্ঠীর অহীষামকের ছেলে অহলীয়াবকেও বেছে নিয়েছি। যে সব ওস্তাদ কারিগর এই কাজ করবে তাদেরও আমি এমন জ্ঞান দিয়ে রেখেছি যাতে তোমাকে দেওয়া আমার আদেশ মতই তারা সব জিনিস তৈরী করতে পারে। এই সব জিনিস এই: মিলন-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক ও তার উপরকার ঢাকনা, তাম্বুর আসবাবপত্র, টেবিল ও তার সংগের জিনিসপত্র, খাঁটি সোনার বাতিদান ও তার জিনিসপত্র, ধূপ-বেদী, অভিষেকের তেল আর পবিত্র স্থানের জন্য সুগন্ধি ধূপও এই সব জিনিসের মধ্যে রয়েছে। তোমাকে দেওয়া আমার আদেশ অনুসারেই যেন তারা সেগুলো তৈরী করে।” “তোমরা বিশ্রামবার পালন করবে, কারণ এই দিনটা তোমাদের জন্য আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা হয়েছে। যদি কেউ এই দিনটা পালন না করে তবে তাকে মেরে ফেলতে হবে; যদি কেউ এই দিনে কোন কাজ করে তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। তোমরা সপ্তাহের ছয় দিন কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনটা হবে বিশ্রামের দিন, আর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে সেটা একটা আলাদা করে রাখা দিন। যদি কেউ এই দিনে কাজ করে তবে তাকে মেরে ফেলতে হবে। একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে এই বিশ্রামবার ইস্রায়েলীয়দের বংশের পর বংশ ধরে পালন করতে হবে। এই দিনটা আমার ও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে চিরকালের জন্য একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, কারণ আমি ছয় দিনের মধ্যে মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি এবং সপ্তম দিনে আমি কোন কাজ করি নি।” সিনাই পাহাড়ের উপর মোশির কাছে এই সব কথা বলা শেষ করে সদাপ্রভু তাঁকে দু’খানা সাক্ষ্য-ফলক দিলেন। এই দু’টা পাথরের ফলকের উপর ঈশ্বর নিজেই তাঁর আদেশ লিখেছিলেন। পাহাড় থেকে নেমে আসতে মোশির দেরি হচ্ছে দেখে লোকেরা হারোণের চারপাশে জড়ো হয়ে বলল, “পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আপনি আমাদের দেব-দেবতা তৈরী করে দিন কারণ ঐ মোশি, যে আমাদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছে, তার কি হয়েছে আমরা জানি না।” উত্তরে হারোণ তাদের বললেন, “তোমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কানের সোনার গহনা খুলে এনে আমাকে দাও।” তাতে সকলে তাদের কানের গহনা খুলে এনে হারোণকে দিল। লোকেরা হারোণকে যা দিল তা গলিয়ে ছাঁচে ফেলে যন্ত্রপাতির সাহায্যে তিনি বাছুরের আকারে একটা মূর্তি তৈরী করলেন। সেটা দেখে ইস্রায়েলীয়েরা বলল, “ভাইয়েরা, এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের দেব-দেবতা। মিসর দেশ থেকে এই দেব-দেবতারাই তোমাদের বের করে এনেছেন।” এই ব্যাপার দেখে হারোণ সেই বাছুরের সামনে একটা বেদী তৈরী করে এই কথা ঘোষণা করলেন, “আগামী কাল সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসব হবে।” পরের দিন লোকেরা খুব সকালে উঠে পোড়ানো-উৎসর্গ এবং যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। তার পরে তারা খাওয়া-দাওয়া করতে বসল এবং পরে হৈ-হল্লা করে আমোদ-প্রমোদ করবার জন্য উঠে দাঁড়াল। এতে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি নীচে নেমে যাও। তোমার ঐ সব লোক যাদের তুমি মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছ তারা জঘন্য হয়ে গেছে। এর মধ্যেই তারা আমার আদেশ থেকে দূরে সরে গেছে। তারা নিজেদের জন্য বাছুরের আকারে একটা মূর্তি তৈরী করে নিয়েছে। তারা মাটিতে পড়ে তাকে প্রণাম করেছে এবং তার উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ করে বলেছে, ‘ভাইয়েরা, এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের দেব-দেবতা। এই দেব-দেবতারাই মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন।’ ” সদাপ্রভু মোশিকে আরও বললেন, “এই সব লোকদের আমি জানি। এরা একটা একগুঁয়ে জাতি। তুমি আমাকে বাধা দিয়ো না। তাদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ আগুনের মত জ্বলতে থাকুক। আমি তাদের ধ্বংস করে ফেলব। তারপর তোমার মধ্য দিয়ে আমি একটা মহা জাতির সৃষ্টি করব।” মোশি তখন তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুকে কাকুতি-মিনতি করে বললেন, “সদাপ্রভু, তোমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে মহা শক্তিতে যাদের তুমি মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছ তোমার সেই লোকদের উপর কেন তোমার এত ক্রোধ? কেন মিসরীয়েরা এই কথা বলবার সুযোগ পাবে যে, পাহাড়ী এলাকার মাঝখানে এনে তাদের মেরে ফেলে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলবার মন্দ ইচ্ছা নিয়েই তুমি তাদের বের করে এনেছ? তোমার এই ভীষণ ক্রোধ তুমি থামাও। দয়া কর, তোমার লোকদের উপর তুমি এই বিপদ এনো না। তোমার দাস অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও ইস্রায়েলের কথা মনে কর। তুমি নিজের নামেই শপথ করে তাঁদের বলেছিলে, তাঁদের বংশধরদের আকাশের তারার মতই অসংখ্য করে তুলবে আর তোমার প্রতিজ্ঞা করা দেশের গোটাটাই চিরকালের অধিকার হিসাবে তাঁদের বংশধরদের দেবে।” এই কথা শুনে সদাপ্রভুর মনে দয়া হল। তাঁর লোকদের উপর যে বিপদ আনবার কথা তিনি বলেছিলেন তা আর আনলেন না। এর পর মোশি সাক্ষ্য-ফলক দু’টি হাতে করে পাহাড় থেকে নীচে নেমে গেলেন। ফলক দু’টার সামনে এবং পিছনে দু’দিকেই লেখা ছিল। সেই দু’টা ছিল ঈশ্বরের নিজের হাতের কাজ, আর তার উপর খোদাই করা লেখাটিও ছিল তাঁর। যিহোশূয় লোকদের চেঁচামেচি শুনে মোশিকে বললেন, “ছাউনি থেকে যুদ্ধের আওয়াজ আসছে।” উত্তরে মোশি বললেন, “সেটা যুদ্ধে জয়লাভের আওয়াজও নয়, যুদ্ধে হেরে যাবার আওয়াজও নয়। আমি যা শুনতে পাচ্ছি তা গানের আওয়াজ।” তারপর মোশি ছাউনির কাছাকাছি গিয়ে ঐ বাছুরটা আর লোকদের নাচানাচি দেখতে পেলেন। তা দেখে তিনি রাগে জ্বলে উঠলেন এবং হাতের পাথর-ফলক দু’টা ছুঁড়ে ফেললেন। তাতে সেই দু’টা পাহাড়ের নীচে পড়ে টুকরা টুকরা হয়ে ভেংগে গেল। মোশি তাদের তৈরী সেই বাছুরের মূর্তিটা আগুনে পুড়িয়ে দিলেন। তারপর সেটা গুঁড়া করে জলের উপর ছড়িয়ে দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের খাওয়ালেন। তিনি হারোণকে বললেন, “ঐ লোকেরা তোমার কি করেছিল যে, তুমি তাদের এই রকম ভীষণ পাপের মধ্যে টেনে আনলে? ” উত্তরে হারোণ বললেন, “তুমি রাগ কোরো না, তোমার তো জানা আছে মন্দের দিকেই এই সব লোকের ঝোঁক। তারা এসে আমাকে বলল, ‘পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আপনি আমাদের দেব-দেবতা তৈরী করে দিন, কারণ ঐ মোশি, যে মিসর দেশ থেকে আমাদের বের করে এনেছে, তার কি হয়েছে আমরা জানি না।’ এই কথা শুনে আমি তাদের বললাম, যাদের সোনার গহনা আছে তারা যেন তা খুলে আমার কাছে নিয়ে আসে। তারা আমাকে সোনা এনে দেবার পর আমি তা আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম আর এই বাছুরটা বের হয়ে আসল।” মোশি দেখলেন লোকগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বুঝতে পারলেন হারোণ তাদের হাতের বাইরে যেতে দিয়েছে আর তাতেই শত্রুর কাছে তারা হাসির পাত্র হয়ে উঠেছে। মোশি ছাউনিতে ঢুকবার পথে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমরা যারা সদাপ্রভুর পক্ষে আছ তারা আমার কাছে এস।” তাতে লেবি-গোষ্ঠীর সবাই তাঁর কাছে জড়ো হল। তখন তিনি তাদের বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের কোমরে তলোয়ার বেঁধে নাও, আর ছাউনির সব জায়গায় গিয়ে যাকে সামনে পাও তাকেই মেরে ফেল- সে ভাই হোক, বন্ধু হোক বা প্রতিবেশী হোক।’ ” লেবীয়েরা মোশির আদেশ মতই কাজ করল। তাতে সেই দিন প্রায় তিন হাজার লোক মারা পড়ল। তারপর মোশি বললেন, “তোমরা আজই সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করে নাও, কারণ তোমরা নিজের নিজের ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পিছপা হও নি। সেইজন্য আজ তোমরা সদাপ্রভুর আশীর্বাদ পেলে।” পরের দিন মোশি লোকদের বললেন, “তোমরা ভীষণ পাপ করেছ। কিন্তু আমি এখন সদাপ্রভুর কাছে উঠে যাচ্ছি। হয়তো তোমাদের পাপ ঢাকা দেবার একটা ব্যবস্থা আমি করতে পারব।” মোশি সদাপ্রভুর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, “হায় সদাপ্রভু! এই লোকেরা ভীষণ পাপ করে ফেলেছে। তারা নিজেদের জন্য সোনার দেব-দেবতা তৈরী করে নিয়েছে। কিন্তু তুমি এখন দয়া করে তাদের পাপ ক্ষমা করে দাও, আর যদি তা না কর তবে তোমার লেখা বই থেকে আমার নামটাও মুছে দাও।” উত্তরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “যারা আমার বিরুদ্ধে পাপ করেছে কেবল তাদের নামই আমি আমার বই থেকে মুছে ফেলব। শোন, যে জায়গার কথা আমি বলেছি তুমি এখন গিয়ে লোকদের সেখানে নিয়ে যাও। আমার দূত তোমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। যখন শাস্তি দেবার সময় আসবে তখন আমি তাদের পাপের শাস্তি দেব।” হারোণের তৈরী বাছুরটা নিয়ে লোকেরা যা করেছিল তার জন্য সদাপ্রভু তাদের উপর মহা বিপদ পাঠিয়ে দিলেন। তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার যে লোকদের তুমি মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছ তাদের নিয়ে তুমি এই জায়গা ছেড়ে আমার প্রতিজ্ঞা করা দেশে যাও। সেই দেশ সম্বন্ধে আমি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, আমি তাদের বংশধরদের তা দেব। আমি তোমাদের আগে আগে একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে সেই দেশ থেকে কনানীয়, ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের তাড়িয়ে দেব। সেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই। কিন্তু তোমরা একটা একগুঁয়ে জাতি বলে আমি তোমাদের সংগে যাব না, গেলে পথেই আমি তোমাদের শেষ করে দেব।” এই বিপদের কথা শুনে লোকেরা কান্নাকাটি করতে লাগল। তারা কেউ আর কোন গহনাগাঁটি পরল না, কারণ সদাপ্রভু মোশিকে বলেছিলেন, “ইস্রায়েলীয়দের বল যে, তারা একটা একগুঁয়ে জাতি। সেইজন্য যদি আমি এক মুহূর্তের জন্যও তাদের সংগে থাকি, তবে আমি তাদের শেষ করে দেব। তাদের গায়ে গহনাগাঁটি যা আছে তা এখন তারা খুলে ফেলুক। তারপর আমি ঠিক করব তাদের নিয়ে আমি কি করব।” কাজেই ইস্রায়েলীয়েরা হোরেব পাহাড়েই তাদের গহনাগাঁটি খুলে ফেলল; তারা আর কখনও তা পরে নি। মোশি ইস্রায়েলীয়দের ছাউনির বাইরে দূরে একটা বিশেষ তাম্বু খাটাতেন আর সেটাকে তিনি বলতেন “মিলন-তাম্বু।” সদাপ্রভুর কাছ থেকে কেউ কিছু জানতে চাইলে সে ঐ মিলন-তাম্বুর কাছে যেত। মোশি যখন সেই মিলন-তাম্বুতে যেতেন তখন লোকেরা নিজের নিজের তাম্বুর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত এবং তিনি সেই তাম্বুতে না ঢোকা পর্যন্ত তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। মোশি সেই তাম্বুতে ঢুকবার পর মেঘের থামটি নেমে আসত এবং সদাপ্রভু যতক্ষণ মোশির সংগে কথা বলতেন ততক্ষণ পর্যন্ত তা তাম্বুর দরজার কাছে থাকত। লোকেরা যখনই এই থামটিকে তাম্বুর দরজার কাছে দেখত তখন প্রত্যেকে উঠে নিজের নিজের তাম্বুর দরজার কাছে থেকে মাটিতে উবুড় হয়ে সদাপ্রভুকে ভক্তি জানাত। মানুষ যেমন মুখোমুখি হয়ে বন্ধুর সংগে কথা বলে সদাপ্রভু ঠিক তেমনি করেই মোশির সংগে কথা বলতেন। পরে মোশি ইস্রায়েলীয়দের ছাউনিতে ফিরে যেতেন কিন্তু নূনের ছেলে যিহোশূয় মিলন-তাম্বু ছেড়ে যেতেন না। যিহোশূয় নামে এই যুবকটি ছিলেন মোশির সাহায্যকারী। পরে মোশি সদাপ্রভুকে বললেন, “তুমি আমাকে এই লোকদের নিয়ে যেতে বলেছ, কিন্তু আমার সংগে কাকে পাঠাবে তা তো বলছ না। তুমি বলেছ তুমি আমাকে তোমার নিজের বলেই জান আর আমার উপর তোমার দয়া রয়েছে। যদি আমি তোমার দয়া পেয়েই থাকি তবে তুমি কি উদ্দেশ্যে কি কর তা আমাকে জানতে দাও যাতে আমি তোমাকে বুঝতে পারি আর তোমার দয়ার মধ্যে থাকতে পারি। মনে রেখ, এই জাতি তোমারই।” উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “আমি নিজেই তোমার সংগে যাব এবং তোমাকে বিশ্রাম দেব।” মোশি তাঁকে বললেন, “তুমি যদি আমাদের সংগে না যাও তবে এখান থেকে আমাদের পাঠিয়ো না। তুমি আমাদের সংগে না গেলে লোকে কি করে বুঝবে যে, আমার উপর ও তোমার লোকদের উপর তোমার দয়া রয়েছে? আমি ও তোমার লোকেরা যে পৃথিবীর অন্যান্য লোকদের চেয়ে আলাদা তা আর কি দিয়ে বুঝা যাবে? ” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি যা বললে আমি তা করব, কারণ আমার দয়া তোমার উপর রয়েছে আর আমি তোমাকে আমার নিজের বলেই জানি।” মোশি বললেন, “তা হলে তোমার মহিমা আমাকে দেখাও।” সদাপ্রভু বললেন, “আমি আমার সব মহত্ব তোমার সামনে তুলে ধরব। তোমার সামনে আমি আমার ‘সদাপ্রভু’ নাম ঘোষণা করব। আমার যাকে ইচ্ছা তাকে দয়া করব, যাকে ইচ্ছা তাকে করুণা করব। কিন্তু তুমি আমার মুখ দেখতে পাবে না, কারণ আমাকে দেখবার পর কেউ বেঁচে থাকতে পারে না।” তারপর সদাপ্রভু বললেন, “তুমি আমার কাছে এই জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখ। এই পাথরের পাহাড়ের থাকটার উপরে গিয়ে তুমি দাঁড়াবে। আমার মহিমা যখন তোমার সামনে দিয়ে চলে যাবে তখন আমি তোমাকে পাহাড়ের ফাটলের মধ্যে সরিয়ে দেব এবং আমি চলে না যাওয়া পর্যন্ত তোমাকে আমার হাত দিয়ে ঢেকে রাখব। তারপর আমি আমার হাত সরিয়ে নিলে তুমি আমার পিছনের দিকটা দেখতে পাবে, কিন্তু আমার মুখ দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি প্রথম পাথর-ফলকের মত আবার দু’টা পাথর-ফলক তৈরী করে নাও। তোমার ভেংগে ফেলা ফলক দু’টার উপর যে কথাগুলো লেখা ছিল তা আমি আবার এই নতুন ফলক দু’টার উপর লিখে দেব। সকালবেলা প্রস্তুত হয়ে তুমি সিনাই পাহাড়ে উঠবে। সেখানে পাহাড়ের চূড়ায় তুমি আমার সামনে উপস্থিত হবে। কেউ যেন তোমার সংগে না থাকে কিম্বা পাহাড়ের কোনখানে যেন কাউকে দেখা না যায়; এমন কি, পাহাড়ের সামনেও যেন কোন গরু, ছাগল বা ভেড়া ঘাস খেতে না আসে।” মোশি তখন প্রথম পাথর-ফলকের মত আবার দু’টা পাথর-ফলক তৈরী করে নিলেন এবং সদাপ্রভুর আদেশ মত খুব সকালে সিনাই পাহাড়ে উঠলেন। সেই দু’টা পাথরের ফলক তিনি হাতে করে নিয়ে গেলেন। সদাপ্রভু মেঘের মধ্যে থেকে নেমে এসে মোশির কাছে দাঁড়ালেন এবং তাঁর “সদাপ্রভু” নাম ঘোষণা করলেন। তিনি মোশির সামনে দিয়ে এই কথা ঘোষণা করতে করতে গেলেন, “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, তিনি মমতায় পূর্ণ দয়াময় ঈশ্বর। তিনি সহজে অসন্তুষ্ট হন না। তাঁর অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার সীমা নেই। তাঁর অটল ভালবাসা হাজার হাজার পুরুষ পর্যন্ত থাকে। তিনি অন্যায়, বিদ্রোহ ও পাপ ক্ষমা করেন, কিন্তু দোষীকে শাস্তি দিয়ে থাকেন। তিনি বাবার অন্যায়ের শাস্তি তার বংশের তিন-চার পুরুষ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন।” এর উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “আমি এক ব্যবস্থা স্থাপন করছি। তোমার সমস্ত লোকের সামনে আমি এমন সব আশ্চর্য কাজ করব যা এর আগে জগতের কোন জাতির সামনে করা হয় নি। যে লোকদের মধ্যে তুমি বাস করছ তারা দেখতে পাবে যে, আমি সদাপ্রভু তোমাদের জন্য যে কাজ করতে যাচ্ছি তা মানুষের মনে কত ভয় ও ভক্তি জাগায়। আজ আমি তোমাদের যে আদেশ দেব তা তোমরা পালন করবে। ইমোরীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবুষীয়দের আমি তোমাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেব। সাবধান! যে দেশে তোমরা যাচ্ছ সেই দেশের লোকদের সংগে তোমরা কোন চুক্তি করবে না; তা করলে তারা তোমাদের মধ্যে একটা ফাঁদ হয়ে থাকবে। তোমরা তাদের বেদীগুলো ভেংগে ফেলবে, তাদের পূজার পাথরগুলো টুকরা টুকরা করে ফেলবে আর তাদের পূজার আশেরা-খুঁটিগুলো কেটে ফেলবে। তোমরা কোন দেবতার উপাসনা করবে না, কারণ সদাপ্রভুর নাম হল পাওনা ভক্তি পাবার আগ্রহী ঈশ্বর; তিনি তাঁর পাওনা ভক্তি চান। “যারা সেই দেশে বাস করে তাদের সংগে কোন চুক্তি করবে না, কারণ তারা যখন অসতীর মনোভাব নিয়ে তাদের দেবতার পূজায় নিজেদের তুলে দেবে আর তাদের উদ্দেশে পশু বলি দেবে তখন তারা তোমাদের নিমন্ত্রণ করবে আর তোমরা তাদের বলি দেওয়া মাংস খাবে। এছাড়া তোমরা তাদের মেয়েদের সংগে যখন তোমাদের ছেলেদের বিয়ে দেবে তখন ঐ সব মেয়ে অসতীর মনোভাব নিয়ে তাদের দেব-দেবতার পূজায় নিজেদের তুলে দেবে এবং তোমাদের ছেলেদেরও তাতে টেনে নেবে। “তোমরা ধাতু দিয়ে কোন প্রতিমা তৈরী করবে না। “তোমরা খামিহীন রুটির পর্ব পালন করবে। আমি তোমাদের যেমন আদেশ দিয়েছি সেইমতই তোমরা সাত দিন খামিহীন রুটি খাবে। আবীব মাসের নির্দিষ্ট সময়ে তোমরা এই পর্ব পালন করবে, কারণ ঐ মাসেই তোমরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছিলে। “গর্ভের প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তান আমার। এমন কি, তোমাদের সমস্ত পশুপালের প্রত্যেকটি পুরুষ বাচ্চাও আমার। তবে গাধার প্রথম পুরুষ বাচ্চার বদলে একটা ভেড়ার বাচ্চা দিয়ে গাধার বাচ্চাটাকে ছাড়িয়ে নেবে। সেই বাচ্চাটাকে যদি ছাড়িয়ে নেওয়া না যায় তবে তার ঘাড় ভেংগে দিতে হবে। তোমাদের প্রত্যেকটি প্রথম ছেলেকেও ছাড়িয়ে নিতে হবে। “পর্বের সময়ে কেউ যেন খালি হাতে আমার কাছে না আসে। “সপ্তার ছয় দিন তোমরা কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেবে। এমন কি, চাষ করবার ও ফসল কাটবার মৌসুমেও তা করতে হবে। গম কাটবার সময়ে প্রথমে কাটা গম দিয়ে সাত সপ্তাহের পর্ব পালন করবে আর কৃষিকাজের শেষ মাসে পালন করবে ফসল মজুদের পর্ব। বছরে তিনবার তোমাদের সব পুরুষদের প্রভু সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হতে হবে। তিনিই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর। দেশের ভিতরকার সব জাতিকেই আমি তোমাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেব এবং তোমাদের দেশের সীমানা বাড়িয়ে দেব। বছরে তিনবার করে যখন তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হবার জন্য যাবে তখন কেউ তোমাদের জায়গা-জমির উপর লোভ করবে না। “যখন তোমরা আমার উদ্দেশে পশুর রক্ত উৎসর্গ করবে তখন তার সংগে যেন খামি দেওয়া কোন কিছু উৎসর্গ করা না হয়। উদ্ধার-পর্বের উৎসর্গ-করা কোন কিছুই সকাল পর্যন্ত যেন পড়ে না থাকে। তোমাদের ক্ষেত থেকে কেটে আনা প্রথম ফসলের সবচেয়ে ভাল অংশটা তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘরে নিয়ে যাবে। “ছাগলের বাচ্চার মাংস তার মায়ের দুধে রান্না করবে না।” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “এই সব কথা তুমি লিখে রাখ কারণ এই সব কথা অনুসারেই তোমার ও ইস্রায়েলীয়দের জন্য আমি আমার ব্যবস্থা স্থাপন করেছি।” সিনাই পাহাড়ের উপরে মোশি সদাপ্রভুর কাছে চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি রুটি কিম্বা জল কিছুই খান নি। সদাপ্রভু সেই পাথরের ফলক দু’টির উপর তাঁর ব্যবস্থার কথাগুলো আবার লিখে দিলেন, আর সেগুলোই হল সেই দশ আজ্ঞা। মোশি যখন সাক্ষ্য-ফলক দু’টা হাতে নিয়ে সিনাই পাহাড় থেকে নেমে আসলেন তখন তিনি টের পান নি যে, সদাপ্রভুর সংগে কথা বলবার দরুন তাঁর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। হারোণ ও সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা মোশির এই উজ্জ্বল মুখ দেখে তাঁর কাছে যেতে ভয় পেল। কিন্তু মোশি তাঁদের ডাকলে পর হারোণ ও ইস্রায়েলীয়দের নেতারা তাঁর কাছে আসলেন। তখন মোশি তাঁদের সংগে কথা বললেন। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা সকলে তাঁর কাছে আসল আর তিনি সিনাই পাহাড়ে দেওয়া সদাপ্রভুর সমস্ত আদেশ তাদের জানালেন। মোশি লোকদের সংগে কথা বলা শেষ করে নিজের মুখটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। কিন্তু এর পর থেকে যখনই তিনি সদাপ্রভুর সংগে কথা বলবার জন্য তাঁর সামনে যেতেন তখন তিনি তাঁর মুখের উপরকার কাপড়টা সরিয়ে ফেলতেন। সদাপ্রভুর সামনে থেকে বের হয়ে না আসা পর্যন্ত তাঁর মুখ খোলাই থাকত। সেখানে তিনি যে সব আদেশ পেতেন সেখান থেকে বের হয়ে এসে তিনি ইস্রায়েলীয়দের তা জানাতেন। লোকেরা দেখত যে, মোশির মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেছে। মোশি আবার তাঁর মুখ ঢেকে দিতেন এবং সদাপ্রভুর সংগে কথা বলতে না যাওয়া পর্যন্ত তাঁর মুখ ঢাকাই থাকত। পরে মোশি ইস্রায়েলীয়দের জড়ো করে বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের পালন করবার জন্য এই সব আদেশ দিয়েছেন। সপ্তার ছয় দিন তোমরা কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনটি হবে তোমাদের একটা আলাদা করে রাখা দিন, সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামের দিন। সেই দিনে যে কাজ করবে তাকে মেরে ফেলতে হবে। বিশ্রামবারে তোমাদের কোন ঘরে যেন আগুন জ্বালানো না হয়।” নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা আর মসীনা সুতা; ছাগলের লোম; লাল রং করা ভেড়ার চামড়া, শুশুকের চামড়া; বাব্‌লা কাঠ; আলো জ্বালাবার জন্য জলপাইয়ের তেল; অভিষেক-তেল ও সুগন্ধি ধূপের জন্য মশলা; এফোদ ও বুক-ঢাকনের উপরে বসাবার জন্য বৈদূর্যমণি ও অন্যান্য দামী পাথর। “তোমাদের মধ্যে যারা ওস্তাদ কারিগর তারা এসে সদাপ্রভু যা আদেশ করেছেন তা তৈরী করবে। সেগুলো হল আবাস-তাম্বু ও তার উপরকার ছাউনি; সমস্ত আংটা, ফ্রেম, হুড়কা, খুঁটি এবং পা-দানি; ডাণ্ডা সুদ্ধ সাক্ষ্য-সিন্দুক, তার ঢাকনা এবং তা আড়াল করে রাখবার পর্দা; ডাণ্ডা সুদ্ধ টেবিল ও তার জিনিসপত্র এবং সদাপ্রভুর সম্মুখ-রুটি; আলোর জন্য বাতিদান ও তার জিনিসপত্র, তার প্রদীপ আর আলো জ্বালাবার তেল; ডাণ্ডা সুদ্ধ ধূপ-বেদী; অভিষেক-তেল এবং সুগন্ধি ধূপ; আবাস-তাম্বুর দরজার পর্দা; ব্রোঞ্জের ঝাঁঝরি সুদ্ধ পোড়ানো-উৎসর্গের বেদী, তার ডাণ্ডা ও বাসন-কোসন; আসন সুদ্ধ ব্রোঞ্জের গামলা; খুঁটি ও খুঁটির পা-দানি সুদ্ধ উঠানের পর্দা ও উঠানে ঢুকবার দরজার পর্দা; উঠানের পর্দার ও আবাস-তাম্বুর গোঁজ ও দড়ি; পবিত্র তাম্বু-ঘরে সেবা-কাজের জন্য পোশাক, অর্থাৎ পুরোহিত হারোণের জন্য বুনানো পবিত্র পোশাক এবং তার ছেলেদের পুরোহিত হিসাবে সেবা-কাজের পোশাক।” এর পর ইস্রায়েলীয়েরা মোশির কাছ থেকে চলে গেল। অন্তর থেকে সাড়া পেয়ে তারা নিজের ইচ্ছায় সদাপ্রভুকে দেবার উদ্দেশ্যে মিলন-তাম্বু তৈরী ও তার সেবা-কাজের জন্য এবং পুরোহিতের পবিত্র পোশাকের জন্য দরকার মত সব কিছু নিয়ে ফিরে আসল। পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের মধ্যে যাদের মনে ইচ্ছা হল তারা নানা রকম সোনার গহনাও নিয়ে আসল। তার মধ্যে ছিল কাপড় আট্‌কাবার পিন, কানের গহনা, আংটি এবং অন্যান্য রকমের গহনা। সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোলন-উৎসর্গের জন্য তারা এই সব দিল। যাদের কাছে নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং মসীনা সুতা কিম্বা ছাগলের লোম, লাল রং করা ভেড়ার চামড়া কিম্বা শুশুকের চামড়া ছিল তারা সেগুলো নিয়ে আসল। যাদের কাছে রূপা ও ব্রোঞ্জ ছিল তারা সেগুলো সদাপ্রভুকে দেবার জন্য নিয়ে আসল। আবাস-তাম্বু তৈরীর কাজে লাগতে পারে এমন বাব্‌লা কাঠ যাদের কাছে ছিল তারা তা নিয়ে আসল। যে স্ত্রীলোকেরা সুতা কাটবার কাজে ওস্তাদ তারা নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং মসীনা সুতা নিজের হাতে কেটে আনল। যারা অন্তর থেকে সাড়া পেল এবং সুতা কাটবার কাজ জানত সেই সব স্ত্রীলোকেরা ছাগলের লোম দিয়ে সুতা তৈরী করে আনল। এফোদ ও বুক-ঢাকনের উপরে বসাবার জন্য নেতারা বৈদূর্যমণি ও অন্যান্য দামী পাথর নিয়ে আসলেন। বাতি জ্বালাবার তেল এবং অভিষেক-তেল ও সুগন্ধি ধূপ তৈরী করবার জন্য তাঁরা মশলা ও জলপাইয়ের তেলও নিয়ে আসলেন। মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু যা করবার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই সব কাজ করবার জন্য ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোক এবং পুরুষদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা হল তারা সদাপ্রভুকে দেবার জন্য যার যা খুশী নিয়ে আসল। তাতে তিনি নিজের মন থেকে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জের উপর সুন্দর সুন্দর নক্‌শা তৈরী করতে পারবেন, দামী দামী পাথর কাটতে ও বসাতে পারবেন আর কাঠের এবং অন্যান্য সুন্দর সুন্দর হাতের কাজও করতে পারবেন। এছাড়া অন্যদের এই সব কাজ শিখাবার ক্ষমতাও সদাপ্রভু বৎসলেলকে ও দান-গোষ্ঠীর অহীষামকের ছেলে অহলীয়াবকে দিয়েছেন। তিনি তাঁদের নানা রকম হাতের কাজ, নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা ও মসীনা সুতা দিয়ে সেলাই করে নক্‌শা তোলার কাজ এবং তাঁতের কাজ করবার ক্ষমতা দিয়েছেন। তাঁরা সব রকম হাতের কাজ করতে পারবেন এবং নিজের মন থেকে নানা রকম নক্‌শাও করতে পারবেন। “সেইজন্য কি করে এই পবিত্র তাম্বু-ঘরটা তৈরী করতে হবে তা বুঝবার জন্য সদাপ্রভু বৎসলেল, অহলীয়াব এবং অন্যান্য যে সব কারিগরদের জ্ঞান ও বিবেচনাশক্তি দিয়েছেন তাঁরা যেন সদাপ্রভুর আদেশ মতই সেই সব কাজ করেন।” মোশি এর পর এই সমস্ত কাজ করবার জন্য বৎসলেল ও অহলীয়াবকে ডাকলেন এবং এমন সব ওস্তাদ কারিগরদের ডাকলেন যাদের সদাপ্রভু কাজের ক্ষমতা দিয়েছেন এবং যারা অন্তর থেকে সাড়া পেয়েছে। পবিত্র তাম্বু-ঘরটা তৈরী করবার জন্য ইস্রায়েলীয়দের আনা সমস্ত জিনিস তাঁরা মোশির কাছ থেকে বুঝে নিলেন। লোকেরা কিন্তু প্রত্যেক দিন সকালে নিজেদের ইচ্ছামত আরও জিনিস আনতেই থাকল। তখন মোশির আদেশে তারা ইস্রায়েলীয়দের ছাউনির সব জায়গায় বলে পাঠাল, পুরুষ বা স্ত্রীলোক কেউই পবিত্র তাম্বু-ঘরের জন্য যেন আর কোন জিনিস নিয়ে না আসে। এতে লোকেরা জিনিস আনা বন্ধ করল, কারণ যে সব জিনিস তাদের জমা হয়েছিল কাজটা শেষ করবার পক্ষে তা প্রয়োজনের চেয়ে বেশী ছিল। যারা কাজ করছিল তাদের মধ্যেকার ওস্তাদ কারিগরেরা পাকানো মসীনা সুতা এবং নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতার তৈরী দশ টুকরা কাপড় দিয়ে আবাস-তাম্বুটা তৈরী করল। ওস্তাদ কারিগর দিয়ে তার মধ্যে করূবদের ছবি বুনানো হল। টুকরাগুলো সব একই মাপের তৈরী করা হল- লম্বায় আটাশ হাত এবং চওড়ায় চার হাত। টুকরাগুলো পাঁচটা পাঁচটা করে জুড়ে নিয়ে দু’টা বড় টুকরা তৈরী করা হল। প্রথম বড় টুকরাটার চওড়ার দিকের এক পাশের কিনারা ধরে নীল সুতা দিয়ে কতগুলো ফাঁস তৈরী করা হল। দ্বিতীয় বড় টুকরাতেও ঠিক তা-ই করা হল। এইভাবে পঞ্চাশটা ফাঁস প্রথম বড় টুকরার কিনারায় এবং পঞ্চাশটা ফাঁস দ্বিতীয় বড় টুকরার কিনারায় তৈরী করা হল। এই দুই বড় টুকরার ফাঁসগুলো একটা আর একটার ঠিক উল্টাদিকে রইল। তারপর পঞ্চাশটা সোনার আংটা তৈরী করে সেগুলো ফাঁসের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে সেই বড় টুকরা দু’টা আট্‌কে দেওয়া হল। তাতে দু’টা বড় টুকরা দিয়ে একটা আবাস-তাম্বু হল। আবাস-তাম্বুর উপরটা ঢেকে দেবার জন্য ছাগলের লোম দিয়ে চাদরের মত করে এগারটা টুকরা বুনিয়ে নেওয়া হল। টুকরাগুলো একই মাপের করা হল- ত্রিশ হাত লম্বা ও চার হাত চওড়া। তা থেকে পাঁচটা টুকরা একসংগে জুড়ে নিয়ে একটা বড় টুকরা তৈরী করা হল। বাকী ছয়টা টুকরা একসংগে জুড়ে নিয়ে আর একটা বড় টুকরা তৈরী করা হল। প্রথম বড় টুকরাটার চওড়ার দিকের এক পাশের কিনারা ধরে পঞ্চাশটা ফাঁস তৈরী করা হল, আর দ্বিতীয় বড় টুকরাতেও ঠিক তা-ই করা হল। তারপর ব্রোঞ্জ দিয়ে পঞ্চাশটা আংটা তৈরী করে সেই বড় টুকরা দু’টা একসংগে আট্‌কে দেওয়া হল। তাতে বড় টুকরা দু’টা মিলে একটা তাম্বু-ঢাকন হল। লাল রং করা ভেড়ার চামড়া দিয়ে তার উপরকার ছাউনি তৈরী করা হল আর তার উপরকার ছাউনি দেওয়া হল শুশুকের চামড়া দিয়ে। আবাস-তাম্বুর জন্য বাব্‌লা কাঠ দিয়ে কতগুলো খাড়া ফ্রেম তৈরী করা হল। প্রত্যেকটা ফ্রেম দশ হাত লম্বা আর দেড় হাত চওড়া করা হল, আর প্রত্যেকটা ফ্রেমে দু’টা করে পায়া দেওয়া হল। আবাস-তাম্বুর সব ফ্রেম একই রকম করে তৈরী করা হল। দক্ষিণ দিকের জন্য বিশটা ফ্রেম তৈরী করা হল। ঐ ফ্রেমগুলোর প্রত্যেকটার পায়ার নীচে বসাবার জন্য চল্লিশটা রূপার পা-দানি তৈরী করা হল- প্রত্যেকটা ফ্রেমের জন্য দু’টা করে, অর্থাৎ প্রত্যেকটা পায়ার জন্য একটা করে। এই ফ্রেম দু’টার প্রত্যেকটি দুই কোণার দু’টা ফ্রেমের সংগে একত্র করে নীচ থেকে উপর পর্যন্ত জোড়া দেওয়া হল। প্রত্যেকটি কোণার দুই ফ্রেম ও পাশের ফ্রেমটা আংটা দিয়ে একসংগে জুড়ে দেওয়া হল। দুই কোণা একই রকম করা হল। এতে পিছন দিকে আটটা ফ্রেম এবং প্রত্যেকটা ফ্রেমের নীচে দেবার জন্য দু’টা করে মোট ষোলটা রূপার পা-দানি তৈরী করা হল। উপর এবং নীচের হুড়কাগুলোর মধ্যেকার লম্বা হুড়কাটা ফ্রেমের মাঝখান দিয়ে এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত চলে গেল। ফ্রেমগুলো সোনা দিয়ে মুড়ানো হল এবং হুড়কাগুলো ঢুকাবার জন্য সোনার কড়া তৈরী করে ফ্রেমে লাগিয়ে দেওয়া হল। হুড়কাগুলোও সোনা দিয়ে মুড়ানো হল। কারিগরেরা নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে একটা পর্দা তৈরী করল। ওস্তাদ কারিগর দিয়ে তার উপরে করূবদের ছবি বুনিয়ে নেওয়া হল। সেই পর্দার জন্য চারটা বাব্‌লা কাঠের খুঁটি তৈরী করা হল এবং খুঁটিগুলো সোনা দিয়ে মুড়ানো হল। সেই খুঁটিগুলোর জন্য কতগুলো সোনার হুক তৈরী করা হল এবং খুঁটিগুলো বসাবার জন্য চারটা রূপার পা-দানি তৈরী করা হল। তাম্বুর দরজার জন্যও সেলাই করে নক্‌শা তোলার মত করে নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে একটা পর্দা তৈরী করা হল। এই পর্দার জন্য হুক সুদ্ধ পাঁচটা খুঁটি তৈরী করা হল। খুঁটির মাথা ও তার বাঁধন-পাত সোনা দিয়ে মুড়ানো হল। খুঁটিগুলো বসাবার জন্য ব্রোঞ্জ দিয়ে পাঁচটা পা-দানি তৈরী করা হল। বৎসলেল বাব্‌লা কাঠ দিয়ে সাক্ষ্য-সিন্দুকটা তৈরী করলেন। সেটা আড়াই হাত লম্বা, দেড় হাত চওড়া এবং দেড় হাত উঁচু করে তৈরী করা হল। তার ভিতর এবং বাইরে খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়ানো হল এবং তার চার কিনারা ধরে রইল সোনার নক্‌শা। ছাঁচে ফেলে চারটা সোনার কড়া তৈরী করে তার চারটা পায়ায় লাগানো হল- এপাশে দু’টা, ওপাশে দু’টা। তারপর বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দু’টা ডাণ্ডা তৈরী করে তা সোনা দিয়ে মুড়ানো হল। সিন্দুকটা বয়ে নেবার জন্য তার দু’পাশের কড়ার মধ্য দিয়ে সেই দু’টা ডাণ্ডা ঢুকিয়ে দেওয়া হল। তারপর বৎসলেল খাঁটি সোনা দিয়ে সিন্দুকের ঢাকনাটা তৈরী করলেন। সেটা লম্বায় হল আড়াই হাত এবং চওড়ায় দেড় হাত। ঢাকনাটার কিনারার সোনা পিটিয়ে দু’টি করূব তৈরী করা হল। করূব দু’টি সিন্দুকের দুই কিনারায় রইল। সেই করূব দু’টি ঢাকনা থেকে এমনভাবে তৈরী করা হল যাতে সমস্তটা মিলে মাত্র একটা জিনিসই হয়। তাদের ডানাগুলো উপর দিকে মেলে দেওয়া হল এবং সেই ডানার ছায়ার নীচে রইল সিন্দুকের ঢাকনাটা। করূবেরা সামনাসামনি দাঁড়িয়ে রইল এবং তাদের চোখ রইল ঢাকনাটার দিকে। বৎসলেল বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দুই হাত লম্বা, এক হাত চওড়া ও দেড় হাত উঁচু করে একটা টেবিল তৈরী করলেন। তিনি সেটা খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নিলেন এবং তার চার কিনারা ধরে রইল সোনার নক্‌শা। টেবিলটার চারপাশের কিনারায় চার আংগুল উঁচু করে একটা বেড় তৈরী করা হল। সেই বেড়ের উপর সোনা দিয়ে নক্‌শার কাজ করা হল। ছাঁচে ফেলে চারটা সোনার কড়া তৈরী করে টেবিলের চার কোণায় চারটা পায়ার উপরে লাগিয়ে দেওয়া হল। সেই কড়াগুলো টেবিলের কিনারায় ঐ উঁচু বেড়ের কাছাকাছি লাগানো হল যাতে টেবিলটা বয়ে নেবার জন্য কড়ার মধ্য দিয়ে ডাণ্ডা ঢুকানো যায়। টেবিলটা বয়ে নেবার ডাণ্ডাগুলো বাব্‌লা কাঠ দিয়ে তৈরী করে সোনা দিয়ে মুড়ানো হল। টেবিলের জিনিসপত্র খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরী করা হল। সেগুলো হল বড় ও ছোট থালাগুলো আর ঢালন-উৎসর্গের সব কলসী ও বাটি। খাঁটি সোনা দিয়ে বৎসলেল একটা বাতিদান তৈরী করলেন। তার নীচের অংশ এবং তা থেকে উঠে যাওয়া ডাঁটিটা সোনা পিটিয়ে তৈরী করা হল। তার ফুলের মত বাটিগুলো, কুঁড়ি ও ফুল বাতিদান থেকে বের হয়ে আসল এবং সমস্তটা মিলে মাত্র একটা জিনিসই হল। বাতিদানের দু’পাশ দিয়ে তিনটা তিনটা করে মোট ছয়টা ডাল তৈরী করা হল। প্রথম ডালের মাঝে মাঝে ফুল ও কুঁড়ি সুদ্ধ বাদাম ফুলের মত দেখতে তিনটা বাটি তৈরী করা হল। তার পরের ডালেও তা-ই করা হল। বাতিদান থেকে বের হয়ে আসা ছয়টা ডাল একই রকম হল। বাতিদানের ডাঁটিটার মাঝে মাঝেও ফুল ও কুঁড়ি সুদ্ধ বাদাম ফুলের মত দেখতে চারটা বাটি তৈরী করা হল। বাতিদান থেকে বের হয়ে আসা মোট ছয়টা ডালের মধ্যে প্রথম দু’টি যেখানে মিশেছে তার নীচে রইল একটা কুঁড়ি, দ্বিতীয় দু’টির নীচে আর একটা কুঁড়ি এবং তৃতীয় দু’টির নীচে আর একটা কুঁড়ি। কুঁড়ি এবং ডাল সবই বাতিদান থেকে বের হয়ে আসল এবং সমস্তটা মিলে একটা জিনিসই হল। সবটাই খাঁটি সোনা পিটিয়ে তৈরী করা হল। খাঁটি সোনা দিয়ে সাতটা প্রদীপ, সল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা ও সল্‌তের পোড়া অংশ রাখবার জন্য কয়েকটা পাত্র তৈরী করা হল। ত্রিশ কেজি খাঁটি সোনা দিয়ে এই বাতিদানটা ও তার সব জিনিসপত্র তৈরী করা হল। বৎসলেল বাব্‌লা কাঠ দিয়ে চৌকো একটা ধূপ-বেদী তৈরী করলেন। এক হাত লম্বা, এক হাত চওড়া ও দুই হাত উঁচু করে বেদীটা তৈরী করা হল। শিং সুদ্ধ গোটা বেদীটা মাত্র একটা জিনিসই হল। বেদীর উপরটা, তার চারপাশ এবং শিংগুলো খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হল। বেদীটার চার কিনারা ধরে রইল সোনার নক্‌শা। বেদীর দু’পাশে নক্‌শার নীচে দু’টা করে সোনার কড়া লাগানো হল যাতে তার ভিতর দিয়ে ডাণ্ডা ঢুকিয়ে সেটা বয়ে নেওয়া যায়। সেই ডাণ্ডাগুলো বাব্‌লা কাঠ দিয়ে তৈরী করে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নেওয়া হল। এছাড়া সুগন্ধি জিনিস তৈরী করবার মত করে খাঁটি সুগন্ধি ধূপ এবং পবিত্র অভিষেক- তেলও তৈরী করা হল। বৎসলেল পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য বাব্‌লা কাঠ দিয়ে পাঁচ হাত লম্বা, পাঁচ হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু করে একটা চৌকো বেদী তৈরী করলেন। বেদীটা তৈরী করবার সময় তার চার কোণার কাঠ এমনভাবে চেঁছে ফেলা হল যার ফলে চারটা শিং তৈরী হল। তাতে শিং সুদ্ধ বেদীটা একটা গোটা জিনিসই হল। তারপর ব্রোঞ্জ দিয়ে গোটা বেদীটা মুড়ে দেওয়া হল। বেদীর ছাই ফেলবার পাত্র, হাতা, উৎসর্গের রক্ত রাখবার বাটি, মাংস তুলবার কাঁটা এবং আগুন রাখবার পাত্র- সবই ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী করা হল। বেদীর জন্য ব্রোঞ্জ দিয়ে একটা ঝাঁঝরি, অর্থাৎ একটা জালতি তৈরী করা হল। বেদীর চারপাশ থেকে বের হয়ে আসা তাকের নীচে এই ঝাঁঝরিটা রাখা হল। তাতে সেটা বেদীর নীচ থেকে উপরের দিকে মাঝামাঝি জায়গায় রইল। ডাণ্ডা ঢুকাবার জন্য ব্রোঞ্জের সেই ঝাঁঝরির চার কোণায় ব্রোঞ্জেরই চারটা কড়া তৈরী করা হল। বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দু’টা ডাণ্ডা তৈরী করা হল এবং সেই ডাণ্ডা দু’টা ব্রোঞ্জ দিয়ে মুড়ানো হল। এই ডাণ্ডাগুলো কড়ার মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হল যাতে বেদীটা বয়ে নেবার সময় ডাণ্ডাগুলো বেদীর দু’পাশে থাকে। বেদীটা তক্তা দিয়ে তৈরী করা হল এবং তার ভিতরটা ফাঁকা রইল। ব্রোঞ্জ দিয়ে একটা গামলা তৈরী করা হল। যে সব মেয়েরা সেবা-কাজের জন্য মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে আসত তাদের ব্রোঞ্জের আয়না দিয়ে সেই গামলাটা ও তার আসন তৈরী করা হল। এর পরে বৎসলেল আবাস-তাম্বুর চারদিকের উঠানের ব্যবস্থা করলেন। উঠানের দক্ষিণ দিকের একশো হাত জায়গার জন্য পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে কতগুলো পর্দা তৈরী করা হল। সেই পর্দাগুলো খাটাবার জন্য বিশটা খুঁটি তৈরী করা হল। খুঁটি বসাবার জন্য ব্রোঞ্জের বিশটা পা-দানি আর খুঁটির সংগে লাগাবার জন্য রূপার হুক আর বাঁধন-পাত তৈরী করা হল। উঠানের উত্তর দিকের একশো হাত জায়গার জন্যও বিশটা খুঁটি, খুঁটি বসাবার জন্য ব্রোঞ্জের বিশটা পা-দানি আর খুঁটির সংগে লাগাবার জন্য রূপার হুক আর বাঁধন-পাত তৈরী করা হল। উঠানের পশ্চিম দিকের পঞ্চাশ হাত জায়গার জন্য কতগুলো পর্দা, দশটি খুঁটি, দশটা পা-দানি এবং খুঁটির সংগের রূপার হুক আর বাঁধন-পাত তৈরী করা হল। উঠানের পূর্ব দিকটাও হল পঞ্চাশ হাত। উঠানের চারপাশের সমস্ত পর্দা পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে তৈরী করা হল। খুঁটি বসাবার পা-দানিগুলো ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী করা হল। খুঁটির সংগে লাগাবার হুক আর বাঁধন-পাত তৈরী করা হল রূপা দিয়ে। খুঁটির মাথাও রূপা দিয়ে মুড়ানো হল। উঠানের সব খুঁটিতে রূপার বাঁধন-পাত লাগানো হল। উঠানের দরজার জন্যও একটা পর্দা তৈরী করা হল। এটা নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা ও পাকানো মসীনা সুতার একটা নক্‌শা করা জিনিস। এই পর্দা বিশ হাত লম্বা এবং উঠানের অন্যান্য পর্দার মত পাঁচ হাত উঁচু করে তৈরী করা হল। এই পর্দার জন্য চারটা খুঁটি ও চারটা ব্রোঞ্জের পা-দানি তৈরী করা হল। খুঁটির হুক ও বাঁধন-পাত রূপা দিয়ে তৈরী করা হল। খুঁটির মাথাও রূপা দিয়ে মুড়ানো হল। আবাস-তাম্বুর এবং উঠানের পর্দার গোঁজগুলো ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী করা হল। আবাস-তাম্বু, অর্থাৎ সাক্ষ্য-তাম্বুটা তৈরী করতে যে সব জিনিস লেগেছিল মোশির আদেশে প্রথম থেকেই পুরোহিত হারোণের ছেলে ঈথামরের পরিচালনায় লেবীয়েরা তার হিসাব রেখেছিল। সদাপ্রভু মোশিকে যা তৈরী করতে আদেশ দিয়েছিলেন সেই আদেশ অনুসারে যিহূদা-গোষ্ঠীর ঊরির ছেলে বৎসলেল সব কিছু তৈরী করেছিলেন। তিনি ছিলেন হূরের নাতি। বৎসলেলকে সাহায্য করেছিলেন দান-গোষ্ঠীর অহীষামকের ছেলে অহলীয়াব। তিনি ছিলেন হাতের কাজ ও নমুনা তৈরীর কাজে ওস্তাদ। এছাড়া তিনি নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং মসীনা সুতা দিয়ে নক্‌শা তুলবার কাজেও ওস্তাদ ছিলেন। দোলন-উৎসর্গের মোট আটশো সাতাত্তর কেজি তিনশো গ্রাম সোনা এই পবিত্র তাম্বু-ঘরের কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। এই মাপ ছিল ধর্মীয় মাপ। তার মধ্যে তিন হাজার কেজি রূপা দিয়ে আবাস-তাম্বু ও পর্দার জন্য পা-দানি তৈরী করা হয়েছিল। এক একটা পা-দানির জন্য ত্রিশ কেজি করে রূপা দিয়ে মোট একশোটা পা-দানি তৈরী করা হয়েছিল। আর বাকী সতেরো কেজি সাড়ে সাতশো গ্রাম রূপা খুঁটির হুক, খুঁটির মাথা মুড়ানো এবং খুঁটির বাঁধন-পাতের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। দোলন-উৎসর্গ থেকে দুই হাজার একশো চব্বিশ কেজি ব্রোঞ্জ পাওয়া গিয়েছিল। তা দিয়ে তারা মিলন-তাম্বুর দরজার জন্য পা-দানি, ব্রোঞ্জের বেদী, ব্রোঞ্জের ঝাঁঝরি ও সমস্ত বাসন-কোসন, চারদিকের উঠানের ও সেখানকার দরজার জন্য পা-দানি এবং আবাস-তাম্বু ও চারদিকের উঠানের সমস্ত গোঁজ তৈরী করেছিল। পবিত্র তাম্বু-ঘরে সেবা-কাজের সময় পরবার জন্য তারা নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা দিয়ে পোশাক বুনল। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেই অনুসারেই তারা হারোণের জন্য পুরোহিতের কাজের পবিত্র পোশাক তৈরী করল। সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে বৎসলেল এফোদটা তৈরী করলেন। তারা সোনা পিটিয়ে পাতলা পাত তৈরী করল এবং তা সুতার মত করে কেটে নিল যাতে নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং মসীনা সুতার সংগে সোনার সুতাও ব্যবহার করা যায়। এটা একটা ওস্তাদী হাতের কাজ। এফোদের কাঁধের অংশটা বেঁধে রাখবার জন্য ফিতা তৈরী করে এফোদের দুই কোণায় জুড়ে দেওয়া হল। এফোদের সংগে জোড়া লাগানো কোমরের পটিটাও দেখতে এফোদের মতই হল। সেটাও সোনা এবং নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে তৈরী করা হল। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই সব কিছু করা হল। তারপর বুক-ঢাকনটা তৈরী করা হল। এটা একটা ওস্তাদী হাতের কাজ। এফোদের মতই সেটা সোনা এবং নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে তৈরী করা হল। এটা লম্বায় আধ হাত ও চওড়ায় আধ হাত একটা চৌকো দুই ভাঁজ করা কাপড়। এর উপর তারা চার সারি দামী পাথর বসাল। প্রথম সারিতে রইল সার্দীয়মণি, পীতমণি ও পান্না; দ্বিতীয় সারিতে চুণি, নীলকান্তমণি ও হীরা; তৃতীয় সারিতে গোমেদ, অকীকমণি ও পদ্মরাগ, আর চতুর্থ সারিতে পোখরাজ, বৈদূর্যমণি ও সূর্যকান্তমণি। পাথরগুলো সোনার জালির উপর বসানো হল। ইস্রায়েলের বারোজন ছেলের জন্য মোট বারোটা পাথর বসানো হল। তার প্রত্যেকটির মধ্যে বারোটা গোষ্ঠীর একটি করে নাম খোদাই করা হয়েছিল, যেমন করে সীলমোহর খোদাই করা হয়। বুক-ঢাকনের জন্য তারা খাঁটি সোনা দড়ির মত পাকিয়ে দু’টা শিকল তৈরী করল। তারা দু’টা সোনার জালি ও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করল এবং কড়া দু’টা বুক-ঢাকনের উপরের দুই কোণায় লাগিয়ে দিল, আর শিকল দু’টা সেই কড়া দু’টার সংগে আট্‌কে দিল। এফোদের সামনের দিকে কাঁধের ফিতার উপর সোনার জালির সংগে শিকলের অন্য দিকটা আট্‌কে দেওয়া হল। তা ছাড়া তারা আরও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করে বুক-ঢাকনের অন্য দুই কোণায় লাগিয়ে দিল। এই দু’টা রইল এফোদের কাছে বুক-ঢাকনের তলায়। তা ছাড়া তারা আরও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করে এফোদের কাঁধের ফিতার সোজাসুজি নীচের দিকে এফোদের কোমরের পটির ঠিক উপরে যে সেলাই আছে তার কাছে লাগিয়ে দেওয়া হল। তারপর বুক-ঢাকনের তলার কড়ার সংগে কোমরের পটির কড়াটা নীল দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হল। তাতে বুক-ঢাকনটা এফোদের উপর ঠিক জায়গায় রইল। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই সব কিছু করা হল। এফোদের নীচে পরবার লম্বা জামাটার পুরোটাই তারা নীল সুতা দিয়ে বুনে নিল। মাথা ঢুকাবার জন্য জামার মাঝখানটা খোলা রইল এবং যাতে সেটা ছিঁড়ে না যায় সেইজন্য তার চারদিকে পটির মত করে বুনে নেওয়া হল। নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের পাকানো সুতা দিয়ে ডালিম ফল তৈরী করে এই জামাটার নীচের মুড়ির চারপাশে ঝুলিয়ে দেওয়া হল। তারপর খাঁটি সোনা দিয়ে ঘণ্টা তৈরী করে সেই ডালিমগুলোর ফাঁকে ফাঁকে লাগিয়ে দেওয়া হল। সেবা-কাজের সময় পরবার এই জামাটার নীচের সমস্ত মুড়ি ধরে রইল একটা করে ডালিম আর একটা করে ঘণ্টা। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই সব কিছু করা হল। হারোণ ও তাঁর ছেলেদের জন্য মসীনা সুতা দিয়ে জামা বোনা হল। তাদের পাগড়ি ও মাথার টুপি মসীনা সুতা দিয়ে তৈরী করা হল আর জাংগিয়া তৈরী করা হল পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে। তাদের কোমর-বাঁধনি পাকানো মসীনা সুতা এবং নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা দিয়ে তৈরী করা হল। এটা একটা নক্‌শা করা জিনিস। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই সব কিছু করা হল। তারপর তারা খাঁটি সোনা দিয়ে একটা পাত তৈরী করল। এটা একটা পবিত্র মুকুট। সীলমোহর খোদাই করবার মত করে সেই পাতের উপর এই কথা খোদাই করা হল, “সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা।” সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেই অনুসারেই সেটা তারা নীল দড়ি দিয়ে পাগড়ির সংগে বেঁধে দিল। এই রকম করেই আবাস-তাম্বুর, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুর সব কিছু তৈরীর কাজ শেষ হল। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই ইস্রায়েলীয়েরা সব কাজ করল। তারপর তারা সেই আবাস-তাম্বুর জন্য তৈরী করা সব কিছু মোশির কাছে নিয়ে গেল। সেগুলো হল আবাস-তাম্বু ও তার সমস্ত সাজ-সরঞ্জাম, আংটা, ফ্রেম, হুড়কা, খুঁটি ও পা-দানি; লাল রং করা ভেড়ার চামড়া ও শুশুকের চামড়ার ছাউনি দু’টা এবং মহাপবিত্র স্থান আড়াল করবার পর্দা; ডাণ্ডা সুদ্ধ সাক্ষ্য-সিন্দুক এবং তার ঢাকনা; টেবিল ও তার জিনিসপত্র এবং সদাপ্রভুর সম্মুখ-রুটি; প্রদীপের সারি সুদ্ধ খাঁটি সোনার বাতিদান এবং তার জিনিসপত্র ও আলো জ্বালাবার তেল; সোনার বেদী, অভিষেকের তেল, সুগন্ধি ধূপ ও আবাস-তাম্বুর দরজার পর্দা; ব্রোঞ্জের ঝাঁঝরি ও ব্রোঞ্জের বেদী, তার ডাণ্ডাগুলো এবং তার সব বাসন-কোসন; গামলা ও তা বসাবার আসন; উঠানের খুঁটি, পা-দানি ও তার পর্দা এবং উঠানে ঢুকবার দরজার পর্দা; উঠানের পর্দার গোঁজ ও দড়ি; আবাস-তাম্বুর, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুর সব সাজ-সরঞ্জাম; পবিত্র তাম্বু-ঘরে সেবা-কাজের জন্য পোশাক, অর্থাৎ পুরোহিত হারোণের জন্য বুনানো পবিত্র পোশাক এবং তাঁর ছেলেদের পুরোহিত হিসাবে সেবা-কাজের পোশাক। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই ইস্রায়েলীয়েরা সমস্ত কাজ করেছিল। মোশি তাদের সব কাজ দেখে বুঝলেন যে, সদাপ্রভুর আদেশ মতই সব কাজ করা হয়েছে। এতে মোশি ইস্রায়েলীয়দের আশীর্বাদ করলেন। এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “বৎসরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে তুমি আবাস-তাম্বুটা, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুটা দাঁড় করাবে। তার মধ্যে সাক্ষ্য-সিন্দুকটা রেখে তার পর্দা দিয়ে সেটা আড়াল করে দেবে। টেবিলটাও ভিতরে এনে তার উপর যা রাখবার তা সাজিয়ে রাখবে। পরে বাতিদানটা এনে প্রদীপগুলো জ্বালিয়ে দেবে। সাক্ষ্য-সিন্দুকের সামনে সোনার ধূপ-বেদীটা রাখবে এবং আবাস-তাম্বুর দরজায় পর্দা টাংগাবে। আবাস-তাম্বুর, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীটা রাখবে। এই বেদী এবং মিলন-তাম্বুর মাঝামাঝি জায়গায় গামলাটা রেখে তাতে জল রাখবে। তারপর উঠানের চারপাশ ঘিরে পর্দা টাংগাবে এবং তার দরজায়ও পর্দা দেবে। “পরে অভিষেক-তেল নেবে এবং আবাস-তাম্বু ও তার মধ্যেকার সব কিছুর উপরে সেই তেল দিয়ে তা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নেবে। তাতে সেগুলো পবিত্র জিনিস হবে। সব বাসন-কোসন সুদ্ধ পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীটার উপরও অভিষেক-তেল দিয়ে বেদীটা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নেবে। তাতে সেটা মহাপবিত্র জিনিস হবে। আসন সুদ্ধ গামলাটার উপর অভিষেক-তেল দিয়ে তা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নেবে। “তারপর হারোণ ও তাঁর ছেলেদের মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে এনে জল দিয়ে তাদের গা ধোয়াবে। পরে হারোণকে পবিত্র পোশাকগুলো পরিয়ে অভিষেক করে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করবে যাতে সে পুরোহিত হয়ে আমার সেবা করতে পারে। হারোণের ছেলেদের কাছে এনে তাদের পুরোহিতের জামা পরিয়ে দেবে। তারপর তাদের বাবার মত করে তাদেরও অভিষেক করবে যাতে তারা পুরোহিত হয়ে আমার সেবা করতে পারে। এই অভিষেক দ্বারা যে পুরোহিত-পদের সৃষ্টি হবে তা বংশের পর বংশ ধরে চলতে থাকবে।” সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন মোশি সেইমতই সব কিছু করলেন। দ্বিতীয় বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে আবাস-তাম্বুটা দাঁড় করানো হল। সেটা দাঁড় করাতে গিয়ে মোশি পা-দানিগুলো বসিয়ে ফ্রেমগুলো খাড়া করলেন। তিনি হুড়কাগুলো লাগালেন এবং খুঁটিগুলো বসালেন। তারপর সদাপ্রভুর আদেশ মত তিনি আবাস-তাম্বুর উপরে ছাগলের লোম দিয়ে বুনানো টুকরাটি বিছিয়ে দিলেন এবং তার উপর দিলেন ছাউনি দু’টা। তারপর মোশি সাক্ষ্য-ফলক দু’টা নিয়ে সিন্দুকের ভিতরে রাখলেন এবং সিন্দুকটার গায়ে ডাণ্ডা লাগালেন আর তার উপরে রাখলেন তার ঢাকনাখানা। তারপর সদাপ্রভুর আদেশ মত তিনি সিন্দুকটা আবাস-তাম্বুর ভিতরে নিয়ে গেলেন এবং তার পর্দাটা ঝুলিয়ে সেটা আড়াল করে রাখলেন। তারপর তিনি আবাস-তাম্বুর দরজায় পর্দা টাংগালেন। আবাস-তাম্বুর, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে তিনি পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীটা রাখলেন এবং সদাপ্রভুর আদেশ মত তিনি তার উপর পোড়ানো-উৎসর্গের এবং শস্য-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। সেই বেদী এবং মিলন-তাম্বুর মাঝামাঝি জায়গায় তিনি গামলাটা বসালেন এবং হাত-পা ধোওয়ার জন্য তাতে জল রাখলেন। সেই গামলার জলেই মোশি, হারোণ ও তাঁর ছেলেরা হাত-পা ধুতেন। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই মিলন-তাম্বুতে ঢুকবার আগে কিম্বা বেদীর কাছে যাবার আগে তাঁরা তাঁদের হাত-পা ধুয়ে নিতেন। বেদী ও আবাস-তাম্বুর চারপাশে তিনি পর্দা খাটিয়ে উঠানের ব্যবস্থা করলেন এবং তার দরজায় পর্দা দিলেন। এইভাবে মোশি তাঁর কাজ শেষ করলেন। তারপর মেঘ এসে মিলন-তাম্বুটা ঢেকে ফেলল এবং সদাপ্রভুর মহিমায় আবাস-তাম্বুটা পূর্ণ হয়ে গেল। আবাস-তাম্বুটা, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুটা মেঘে ঢাকা এবং সদাপ্রভুর মহিমায় পূর্ণ ছিল বলে মোশি সেখানে ঢুকতে পারলেন না। ইস্রায়েলীয়দের সারা যাত্রাপথে যখনই আবাস-তাম্বুর উপর থেকে মেঘ উঠে যেত কেবল তখনই তারা বের হয়ে পড়ত; কিন্তু মেঘ উঠে না গেলে তারা বের না হয়ে মেঘ উঠবার জন্য অপেক্ষা করে থাকত। ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত যাত্রাপথে দিনের বেলায় তাদের চোখের সামনে আবাস-তাম্বুর উপরে থাকত সদাপ্রভুর এই মেঘ আর রাতের বেলায় সেই মেঘের মধ্যে থাকত আগুন। “যদি সে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান গরু দিয়ে করতে চায় তবে সেটা হতে হবে একটা খুঁতহীন ষাঁড়। সদাপ্রভু যাতে তার উপর সন্তুষ্ট হন সেইজন্য তাকে সেই ষাঁড়টা মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে উপস্থিত করতে হবে। পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য আনা সেই ষাঁড়টার মাথার উপরে সে তার হাত রাখবে; আর সেটা তার জায়গায় তার পাপ ঢাকবার জন্য গ্রহণ করা হবে। তারপর সদাপ্রভুর সামনে সে সেই ষাঁড়টা কাটবে আর হারোণের পুরোহিত ছেলেরা তার রক্ত নিয়ে মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে রাখা বেদীটার চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। উৎসর্গকারী ঐ পোড়ানো-উৎসর্গের ষাঁড়টার চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তার মাংস খণ্ড খণ্ড করে কাটবে। পুরোহিত হারোণের ছেলেরা সেই বেদীর উপরে আগুন জ্বালিয়ে তার উপর কাঠ সাজাবে। তারপর তারা বেদীর উপরকার জ্বলন্ত কাঠের উপরে সেই ষাঁড়ের মাথা, চর্বি ও মাংসের খণ্ডগুলো সাজাবে। উৎসর্গকারী সেটার পা এবং পেটের ভিতরের সমস্ত অংশগুলো জলে ধুয়ে দেবে এবং পুরোহিত সেগুলো সুদ্ধ গোটা ষাঁড়টাই বেদীর উপরে পুড়িয়ে ফেলবে। এটা পোড়ানো-উৎসর্গ, আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। “এই পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান যদি ভেড়া বা ছাগল দিয়ে করা হয় তবে সেটা হতে হবে একটা খুঁতহীন পুরুষ ভেড়া বা ছাগল। উৎসর্গকারী সেটা বেদীর উত্তর পাশে নিয়ে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে কাটবে, আর হারোণের পুরোহিত ছেলেরা তার রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। উৎসর্গকারী সেটা খণ্ড খণ্ড করে কাটবে আর পুরোহিত তার চর্বি, মাথা ও মাংসের খণ্ডগুলো নিয়ে বেদীর উপরকার জ্বলন্ত কাঠের উপর সাজাবে। উৎসর্গকারী সেটার পা ও পেটের ভিতরের অংশগুলো জলে ধুয়ে দেবে আর পুরোহিত সেগুলো সুদ্ধ গোটা পশুটাই বেদীর উপর পুড়িয়ে ফেলবে। এটা পোড়ানো-উৎসর্গ, আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। “সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান যদি কোন পাখী দিয়ে করা হয় তবে উৎসর্গকারীকে একটা ঘুঘু বা কবুতর আনতে হবে। পুরোহিত সেটা বেদীর কাছে নিয়ে যাবে এবং তার মাথাটা মুচ্‌ড়ে গলা থেকে আলাদা করে নিয়ে বেদীর উপরে পুড়িয়ে দেবে আর রক্তটা চেপে বের করে বেদীর একপাশের গায়ের উপর ফেলবে। উৎসর্গকারী পাখীটার গলার থলি ও তার মধ্যেকার সব কিছু বেদীর পূর্ব দিকে ছাইয়ের গাদায় ফেলে দেবে। সে ডানা ধরে পাখীটা এমন ভাবে ছিঁড়বে যেন সেটা দুই টুকরা হয়ে না যায়। তারপর পুরোহিত সেটা নিয়ে বেদীর উপরকার জ্বলন্ত কাঠের উপর পুড়িয়ে দেবে। এটা পোড়ানো-উৎসর্গ, আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। এই শস্য-উৎসর্গের জিনিসের বাদবাকী যা থাকবে তা হারোণ ও তার ছেলেদের পাওনা হবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা সমস্ত উৎসর্গের মধ্যে শস্য-উৎসর্গের এই বাকী অংশটুকু মহাপবিত্র জিনিস। “যদি কেউ তন্দুরে সেঁকা কোন জিনিস দিয়ে শস্য-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে চায় তবে সেটা হতে হবে খামিহীন মিহি ময়দা দিয়ে তৈরী। সেটা তেলের ময়ান দেওয়া পিঠা হতে পারে কিম্বা তেল লাগানো চাপাটি হতে পারে। সেই শস্য-উৎসর্গ যদি তাওয়ায় ভাজা কোন জিনিস হয় তবে সেটা হতে হবে তেলের ময়ান দেওয়া খামিহীন মিহি ময়দা দিয়ে তৈরী। তারপর তা টুকরা টুকরা করে তার উপর তেল ঢেলে দিতে হবে; এটা একটা শস্য-উৎসর্গ। সেই শস্য-উৎসর্গ যদি কড়াইতে ভাজা কোন জিনিস হয় তবে সেটা হতে হবে তেল ও মিহি ময়দা দিয়ে তৈরী। সদাপ্রভুর উদ্দেশে শস্য-উৎসর্গের জন্য এই সব জিনিস এনে পুরোহিতের হাতে দিতে হবে আর পুরোহিত তা বেদীর কাছে নিয়ে যাবে। শস্য-উৎসর্গের যে অংশটা পুরো উৎসর্গের বদলে দেওয়া হবে পুরোহিত তা আলাদা করে নিয়ে বেদীর উপর পুড়িয়ে দেবে। এটা আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। এই শস্য-উৎসর্গের জিনিসের বাদবাকী যা থাকবে তা হারোণ ও তার ছেলেদের পাওনা হবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা সমস্ত উৎসর্গের মধ্যে শস্য-উৎসর্গের এই বাকী অংশটুকু মহাপবিত্র জিনিস। “সদাপ্রভুর উদ্দেশে শস্য-উৎসর্গের জন্য তারা যা কিছু আনবে তা যেন খামি না দিয়ে তৈরী করা হয়। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের জিনিসের মধ্যে খামি বা মধু দেওয়া চলবে না। প্রথমে তোলা ফসল উৎসর্গ করবার জন্য তারা খামি ও মধু সদাপ্রভুর কাছে নিয়ে যেতে পারবে, কিন্তু যে উৎসর্গের গন্ধে তিনি খুশী হন এমন উৎসর্গ হিসাবে খামি ও মধু বেদীর উপর পোড়ানো চলবে না। শস্য-উৎসর্গের জন্য যে সব জিনিস আনা হবে তার মধ্যে লবণ দিতে হবে। ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর তাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন তার দরুন শস্য-উৎসর্গ থেকে লবণ বাদ দেওয়া চলবে না; তাদের সমস্ত উৎসর্গের মধ্যে লবণ দিতেই হবে। “সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করবার জন্য যদি তারা প্রথমে তোলা ফসলের মধ্য থেকে কোন শস্য আনে তবে সেই নতুন শস্য মোটা করে ভেংগে নিয়ে আগুনে ঝল্‌সে আনতে হবে। তার উপর তেল ঢেলে দিতে হবে এবং লোবান রাখতে হবে; এটা একটা শস্য-উৎসর্গ। সেই ভেংগে নেওয়া শস্য ও তেলের যে অংশটা পুরো উৎসর্গের বদলে দেওয়া হবে পুরোহিত সেই অংশটা এবং সমস্ত লোবান নিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ হিসাবে পুড়িয়ে ফেলবে। “যদি কেউ সদাপ্রভুর উদ্দেশে কোন যোগাযোগ-উৎসর্গ করতে চায় আর তার উৎসর্গের পশুটা যদি গরুর পাল থেকে নেওয়া হয়, তবে সেটা স্ত্রী বা পুরুষ যা-ই হোক না কেন তার গায়ে যেন কোন খুঁত না থাকে। উৎসর্গের জন্য আনা সেই পশুটার মাথার উপর উৎসর্গকারী তার হাত রাখবে এবং মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে সেটা কাটবে। তারপর হারোণের ছেলেরা, অর্থাৎ পুরোহিতেরা তার রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য উৎসর্গকারীকে এই যোগাযোগ-উৎসর্গের পশু থেকে কতগুলো অংশ বের করে পুরোহিতকে দিতে হবে। এই অংশগুলো হল সেই পশুর পেটের ভিতরের বিভিন্ন অংশের উপরকার চর্বি এবং সেগুলোর সংগে জড়ানো চর্বি, বৃক্ক দু’টি ও তার সংগে জড়ানো কোমরের কাছের চর্বি এবং বৃক্কের সংগে বের করে আনা কলিজার উপরের অংশ। বেদীতে জ্বলন্ত কাঠের উপরে যেখানে পোড়ানো-উৎসর্গ জ্বলতে থাকবে তার উপরে হারোণের ছেলেরা এগুলো রেখে পুড়িয়ে ফেলবে। এটা আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। “সদাপ্রভুর উদ্দেশে যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য যদি কেউ পাল থেকে কোন ভেড়া বা ছাগল নিয়ে আসে তবে সেটা স্ত্রী বা পুরুষ যা-ই হোক না কেন তার গায়ে যেন কোন খুঁত না থাকে। উৎসর্গের জন্য যদি সে একটা ভেড়ার বাচ্চা আনে তবে তাকে সেটা সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করতে হবে। সেই ভেড়ার বাচ্চার মাথার উপরে সে তার হাত রাখবে এবং মিলন-তাম্বুর সামনে সেটা কাটবে। তারপর হারোণের ছেলেরা তার রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য উৎসর্গকারীকে এই যোগাযোগ-উৎসর্গের পশু থেকে কতগুলো অংশ বের করে পুরোহিতকে দিতে হবে। এই অংশগুলো হল সেই পশুটার চর্বি, মেরুদণ্ডের নীচ থেকে কেটে নেওয়া চর্বিভরা গোটা লেজটা, পেটের ভিতরের বিভিন্ন অংশের উপরকার চর্বি এবং সেগুলোর সংগে জড়ানো চর্বি, বৃক্ক দু’টি ও তার সংগে জড়ানো কোমরের কাছের চর্বি এবং বৃক্কের সংগে বের করে আনা মেটের উপরের অংশ। পুরোহিত এগুলো নিয়ে উৎসর্গ করা খাবার হিসাবে বেদীর উপর পুড়িয়ে ফেলবে। এটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা। “যদি সে এই উৎসর্গের জন্য একটা ছাগল নিয়ে আসে তবে সেটা তাকে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করতে হবে। তার মাথার উপরে সে হাত রাখবে এবং মিলন-তাম্বুর সামনে সেটা কাটবে। এর পর হারোণের ছেলেরা তার রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। উৎসর্গকারী যে পশুটা উৎসর্গ করবে তা থেকে কতগুলো অংশ তাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য বের করে পুরোহিতকে দিতে হবে। এই অংশগুলো হল সেই পশুটার পেটের ভিতরের বিভিন্ন অংশের উপরকার চর্বি এবং সেগুলোর সংগে জড়ানো চর্বি, বৃক্ক দু’টি ও তার সংগে জড়ানো কোমরের কাছের চর্বি এবং বৃক্কের সংগে বের করে আনা মেটের উপরের অংশ। পুরোহিত এগুলো নিয়ে উৎসর্গ করা খাবার হিসাবে বেদীর উপর পুড়িয়ে ফেলবে। এটা আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। উৎসর্গ করা পশুর চর্বির সমস্তটাই সদাপ্রভুর। তোমরা যেখানেই বাস কর না কেন তোমরা কোন চর্বি বা রক্ত খাবে না। এটাই হবে বংশের পর বংশ ধরে তোমাদের জন্য একটা চিরস্থায়ী নিয়ম।” “কোন মহাপুরোহিত যদি ঐরকম কোন অন্যায় করে ফেলে যার দরুন সমস্ত লোক দোষী হয়, তবে তার জন্য তাকে পাপ-উৎসর্গ হিসাবে সদাপ্রভুর কাছে একটা খুঁতহীন ষাঁড় নিয়ে আসতে হবে। মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর সামনে সেটা তাকে উপস্থিত করতে হবে। সে তার মাথার উপরে হাত রাখবে এবং সদাপ্রভুর সামনে সেটা কাটবে। তারপর মহাপুরোহিত সেই ষাঁড়ের কিছুটা রক্ত নিয়ে মিলন-তাম্বুর মধ্যে যাবে। সে সেই রক্তে নিজের আংগুল ডুবিয়ে কিছুটা রক্ত সদাপ্রভুর সামনে পবিত্র স্থানের পর্দার দিকে সাতবার ছিটিয়ে দেবে। এর পর সে কিছু রক্ত নিয়ে মিলন-তাম্বুর মধ্যে সদাপ্রভুর সামনে যে সুগন্ধি ধূপের বেদী আছে তার শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে। বাকী রক্তটা নিয়ে সে মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে যে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদী আছে তার গোড়ায় ঢেলে দেবে। পাপ-উৎসর্গের জন্য আনা সেই ষাঁড়ের সমস্ত চর্বি সে বের করে নেবে। এই চর্বি হল পেটের ভিতরের অংশগুলোর উপরকার চর্বি এবং সেগুলোর সংগে জড়ানো চর্বি, বৃক্ক দু’টি ও তার সংগে জড়ানো কোমরের কাছের চর্বি এবং বৃক্কের সংগে বের করে আনা মেটের উপরের অংশ। যোগাযোগ-উৎসর্গের গরুর মধ্য থেকে চর্বি বের করবার মত করে এই উৎসর্গের ষাঁড়ের চর্বিও বের করে নিতে হবে। তারপর পুরোহিত সেই চর্বিগুলো নিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীর উপরে পুড়িয়ে দেবে। “গোটা ইস্রায়েল জাতি যদি মনে অন্যায়ের ইচ্ছা না রেখে সদাপ্রভুর নিষেধ করা কোন কিছু করে ফেলে তবে তারা তা না জানলেও দোষী হবে। যখন তারা জানতে পারবে যে, তারা অন্যায় করেছে তখন পাপ-উৎসর্গের জন্য তাদের সকলের তরফ থেকে একটা ষাঁড় এনে মিলন-তাম্বুর সামনে উপস্থিত করতে হবে। তারপর ইস্রায়েলীয়দের বৃদ্ধ নেতারা সদাপ্রভুর সামনে সেই ষাঁড়ের মাথার উপর হাত রাখবে। পুরোহিত সদাপ্রভুর সামনেই সেটা কাটবে। তারপর মহাপুরোহিত সেই ষাঁড়ের কিছুটা রক্ত নিয়ে মিলন-তাম্বুর মধ্যে যাবে। সেই রক্তে নিজের আংগুল ডুবিয়ে কিছুটা রক্ত সদাপ্রভুর সামনে পবিত্র স্থানের পর্দার দিকে সাত বার ছিটিয়ে দেবে। তারপর সে কিছু রক্ত নিয়ে মিলন-তাম্বুর মধ্যে সদাপ্রভুর সামনে যে সুগন্ধি ধূপের বেদী আছে তার শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে। তারপর মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে যে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদী আছে তার গোড়ায় সে বাকী রক্ত ঢেলে দেবে। পুরোহিত সেই ষাঁড়ের বাদবাকী অংশ ছাউনির বাইরে নিয়ে পাপ-উৎসর্গের অন্য ষাঁড়টার অংশগুলোর মত করেই পুড়িয়ে ফেলবে। এটাই হল গোটা ইস্রায়েল জাতির পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান। “কোন নেতা যদি মনে অন্যায়ের ইচ্ছা না রেখে তার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিষেধ করা কোন কিছু করে ফেলে তবে সে দোষী হবে। যখন তাকে তার অন্যায় দেখিয়ে দেওয়া হবে তখন উৎসর্গ করবার জন্য তাকে একটা খুঁতহীন পুরুষ ছাগল আনতে হবে। সে ঐ ছাগলটার মাথার উপরে হাত রাখবে এবং পোড়ানো-উৎসর্গের পশু কাটবার জায়গায় সদাপ্রভুর সামনে সেটা কাটবে; এটা একটা পাপ-উৎসর্গ। তারপর পুরোহিত পাপ-উৎসর্গের জন্য আনা পশুটার কিছু রক্ত আংগুলে করে নিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে; বাকী রক্ত সে বেদীর গোড়ায় ঢেলে দেবে। যোগাযোগ-উৎসর্গের পশুর চর্বির মত করেই এর সমস্ত চর্বি বেদীর উপরে পুড়িয়ে দিতে হবে। এইভাবে পুরোহিত সেই নেতার অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে আর তাতে তাকে ক্ষমা করা হবে। “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে অন্য কোন লোক যদি মনে অন্যায়ের ইচ্ছা না রেখে সদাপ্রভুর নিষেধ করা কোন কিছু করে ফেলে তবে সে দোষী হবে। যখন তাকে তার অন্যায় দেখিয়ে দেওয়া হবে তখন সেই অন্যায়ের জন্য উৎসর্গ হিসাবে তাকে একটা খুঁতহীন ছাগী আনতে হবে। সে সেই পাপ-উৎসর্গের ছাগীটার মাথার উপর হাত রাখবে এবং পোড়ানো-উৎসর্গের পশু কাটবার জায়গায় সেটা কাটবে। তারপর পুরোহিত আংগুলে করে তার কিছুটা রক্ত নিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে; বাকী রক্ত সে বেদীর গোড়ায় ঢেলে দেবে। যোগাযোগ-উৎসর্গের পশুর চর্বি বের করবার মত করে সে এই উৎসর্গের পশুর সমস্ত চর্বি বের করে নিয়ে তা বেদীর উপর পুড়িয়ে দেবে। এর গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। এইভাবে পুরোহিত সেই লোকের অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে এবং তাতে তাকে ক্ষমা করা হবে। “পাপ-উৎসর্গের জন্য যদি কেউ ভেড়ার বাচ্চা আনে, তবে সেটা খুঁতহীন এবং স্ত্রীজাতের হতে হবে। তার মাথার উপর সে হাত রাখবে এবং পোড়ানো-উৎসর্গের পশু কাটবার জায়গায় সে পাপ-উৎসর্গের ভেড়ীটা কাটবে। তারপর পুরোহিত তার আংগুলে করে পাপ-উৎসর্গের ভেড়ীটা থেকে কিছু রক্ত নিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে; বাকী রক্ত সে বেদীর গোড়ায় ঢেলে দেবে। যোগাযোগ-উৎসর্গের ভেড়ার চর্বি বের করবার মত করেই সে এর সমস্ত চর্বি বের করে নেবে। তারপর সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা জিনিসের উপরে এই চর্বিও সে বেদীর উপরে পুড়িয়ে ফেলবে। এইভাবে পুরোহিত সেই লোকের অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে এবং তাতে তাকে ক্ষমা করা হবে। “নিজের দেখা বা শোনা কোন ব্যাপারের বিচারের সময়ে সাক্ষ্য দেবার সুযোগ পেয়েও যদি কেউ চুপ করে থাকে তবে সেটা তার পক্ষে পাপ হবে এবং সেই অন্যায়ের জন্য তাকে দায়ী করা হবে। “যদি কেউ না জেনে কোন অশুচি কিছু ছুঁয়ে ফেলে তবে সে নিজেও অশুচি হবে এবং দোষী হবে, সেটা কোন অশুচি বুনো বা পোষা প্রাণীর মৃতদেহই হোক কিম্বা যে কোন ছোটখাটো প্রাণীর মৃতদেহই হোক। “যা মানুষকে অশুচি করে মানুষের দেহের এমন অশুচি কোন কিছু যদি কেউ না জেনে ছুঁয়ে ফেলে তবে তা জানবার পরে সে দোষী হবে। “অসাবধান হয়ে শপথ করে ফেলতে পারে এমন কোন বিষয়ে কেউ যদি চিন্তা না করে ভাল-মন্দ কিছু করবার শপথ করে বসে তবে সেটা না জেনে করলেও তা জানবার পরে সে দোষী হবে। “এই সব অন্যায়ের কোন একটা করে যদি কেউ দোষী হয় তবে যে অন্যায় সে করেছে তা তাকে স্বীকার করতে হবে। তখন সেই অন্যায়ের জরিমানা হিসাবে তাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা বাচ্চা-ভেড়ী কিম্বা বাচ্চা-ছাগী নিয়ে আসতে হবে, আর পুরোহিত তার অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে। “যদি সে বাচ্চা-ভেড়ী আনতে না পারে, তবে তার সেই অন্যায়ের জরিমানা হিসাবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাকে দু’টা ঘুঘু না হয় দু’টা কবুতর আনতে হবে। তার মধ্যে একটা হবে পাপ-উৎসর্গের জন্য আর অন্যটা পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য। সে তা এনে পুরোহিতের হাতে দেবে আর পুরোহিত প্রথমে পাপ-উৎসর্গের জন্য আনা পাখীটা উৎসর্গ করবে। সে সেটা দুই টুকরা না করে মাথাটা গলা থেকে মুচ্‌ড়ে আলগা করে নেবে। তারপর সে পাখীটা থেকে কিছু রক্ত নিয়ে বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে, আর বাকী রক্ত চেপে বের করে বেদীর গোড়ায় ফেলবে; এটা একটা পাপ-উৎসর্গ। অন্য পাখীটা দিয়ে নিয়ম অনুসারে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে পুরোহিত তার সেই অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে; তাতে তাকে ক্ষমা করা হবে। “যদি সে দু’টা ঘুঘু বা দু’টা কবুতর আনতে না পারে, তবে পাপ-উৎসর্গের জন্য তাকে এক কেজি আটশো গ্রাম মিহি ময়দা আনতে হবে। এটা পাপ-উৎসর্গ বলে সে তার উপর তেলও ঢালবে না বা লোবানও রাখবে না। সেই ময়দা সে পুরোহিতের কাছে নিয়ে যাবে। পুরো উৎসর্গের বদলে পুরোহিত তা থেকে এক মুঠো ময়দা তুলে নিয়ে বেদীতে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের জিনিসের উপর পুড়িয়ে ফেলবে; এটা একটা পাপ-উৎসর্গ। সে যে অন্যায় করেছে পুরোহিত এইভাবে তা ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে আর তাতে তাকে ক্ষমা করা হবে। এই উৎসর্গের জিনিসের বাদবাকী অংশ শস্য-উৎসর্গের জিনিসের মতই পুরোহিতের পাওনা হবে।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “মনে অন্যায়ের ইচ্ছা না রেখে যদি কেউ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা জিনিসের ব্যাপারে তাঁর আদেশ অমান্য করে, তবে তার অন্যায়ের জরিমানা হিসাবে সদাপ্রভুর কাছে তাকে একটা খুঁতহীন পুরুষ ভেড়া আনতে হবে। এটা একটা দোষ-উৎসর্গ। তা ছাড়া ধর্মীয় শেখেল অনুসারে যতটা রূপা তুমি ভেড়াটার দাম ঠিক করে দেবে সেই পরিমাণ রূপা তাকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে হবে। সেই পবিত্র জিনিসের ব্যাপারে সে অন্যায় করেছে বলে তাকে এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া ভেড়াটার দামের সংগে আরও পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম তাকে পুরোহিতের হাতে দিতে হবে। পুরোহিত সেই ভেড়াটা নিয়ে দোষ-উৎসর্গ হিসাবে তা উৎসর্গ করে তার অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে আর তাতে তাকে ক্ষমা করা হবে। “যদি কেউ না জেনে সদাপ্রভুর নিষেধ করা কোন কিছু করে অন্যায় করে ফেলে তবে সে দোষী হবে এবং সেইজন্য তাকে দায়ী হতে হবে। তখন সে তার দোষ-উৎসর্গের জন্য তোমার ঠিক করে দেওয়া মূল্যের একটা খুঁতহীন ভেড়া এনে পুরোহিতের হাতে দেবে। সে না জেনে যে অন্যায় করেছে তার জন্য পুরোহিত তার অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে; তাতে তাকে ক্ষমা করা হবে। এটা একটা দোষ-উৎসর্গ, কারণ সে সদাপ্রভুর কাছে দোষী।” অন্যায়ের জরিমানা হিসাবে সে তোমার ঠিক করে দেওয়া মূল্যের একটা খুঁতহীন পুরুষ ভেড়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোষ-উৎসর্গের জন্য পুরোহিতের কাছে নিয়ে আসবে। পুরোহিত তা দিয়ে সদাপ্রভুর সামনে তার পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে। এই সব পাপের যেটা করেই সে দোষী হোক না কেন, তাকে ক্ষমা করা হবে।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “হারোণ ও তার ছেলেদের জানিয়ে দাও যে, এই হল পোড়ানো-উৎসর্গের নিয়ম। পোড়ানো-উৎসর্গের জিনিস সারা রাত ধরে সকাল পর্যন্ত বেদীর আগুনের উপর থাকবে, আর বেদীর আগুন জ্বালিয়েই রাখতে হবে। সকালবেলায় পুরোহিত তার মসীনার জামা ও জাংগিয়া পরে বেদীর উপরকার পোড়ানো-উৎসর্গের ছাই তুলে নিয়ে বেদীর পাশে রাখবে। তারপর সে এই কাপড় ছেড়ে অন্য কাপড় পরে ছাউনির বাইরে কোন শুচি জায়গায় সেই ছাই নিয়ে যাবে। বেদীর উপরে আগুন জ্বালিয়েই রাখতে হবে, তা নিভতে দেওয়া চলবে না। প্রত্যেক দিন সকালবেলা পুরোহিত সেই আগুনের উপর কাঠ দেবে এবং তাতে পোড়ানো-উৎসর্গ সাজিয়ে তার উপর যোগাযোগ-উৎসর্গের চর্বি পোড়াবে। বেদীর আগুন সব সময় জ্বলতেই থাকবে, তা নিভে গেলে চলবে না। “এই হল শস্য-উৎসর্গের নিয়ম। হারোণের ছেলেরা শস্য-উৎসর্গের জিনিস বেদীর কাছে সদাপ্রভুর সামনে নিয়ে যাবে। পুরোহিত তা থেকে এক মুঠো মিহি ময়দা, তেল এবং শস্য-উৎসর্গের জিনিসের উপরে রাখা সমস্ত লোবান তুলে নিয়ে পুরো উৎসর্গের বদলে তা বেদীর উপর পুড়িয়ে দেবে। এর গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। উৎসর্গের জিনিসের বাদবাকী অংশ হারোণ ও তার ছেলেরা খাবে। তা তাদের খেতে হবে খামি না মিশিয়ে কোন পবিত্র জায়গায়, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুর উঠানে। তা যেন খামি মিশিয়ে সেঁকা না হয়। আমার উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের জিনিসের এই অংশ আমি তাদের দিলাম। পাপ-উৎসর্গ এবং দোষ-উৎসর্গের মত শস্য-উৎসর্গের এই অংশটাও মহাপবিত্র জিনিস। হারোণের বংশের সব পুরুষ লোকই তা খেতে পারবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের জিনিসের এই অংশটা বংশের পর বংশ ধরে তাদের পাওনা। এই অংশটা যে ছোঁবে তাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা হতে হবে।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে আরও বললেন, “হারোণের অভিষেকের দিনে হারোণ ও তার ছেলেরা নিয়মিত শস্য-উৎসর্গের মত এক কেজি আটশো গ্রাম মিহি ময়দা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিয়ে আসবে। তার অর্ধেকটা সকালে আর অর্ধেকটা সন্ধ্যায় উৎসর্গ করতে হবে। শস্য-উৎসর্গ হিসাবে সেই ময়দা তেলের ময়ান দিয়ে তাওয়ায় ভেজে টুকরা টুকরা অবস্থায় সদাপ্রভুর কাছে উপস্থিত করতে হবে। এর গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। হারোণের পরে তার যে ছেলেকে মহাপুরোহিত-পদের জন্য অভিষেক করা হবে তাকেও এই উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। এটা সদাপ্রভুর নিয়মিত পাওনা, আর তার সবটাই পুড়িয়ে দিতে হবে। পুরোহিতের আনা শস্য-উৎসর্গের সবটাই পুড়িয়ে ফেলতে হবে; তা খাওয়া চলবে না।” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “হারোণ ও তার ছেলেদের বল যে, এই হল পাপ-উৎসর্গের নিয়ম। পোড়ানো-উৎসর্গের পশু কাটবার জায়গায় সদাপ্রভুর সামনে পাপ-উৎসর্গের পশুও কাটতে হবে। এই উৎসর্গের মাংস মহাপবিত্র জিনিস। যে পুরোহিত এই উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে সে এই মাংস খাবে। কোন পবিত্র জায়গায়, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুর উঠানে তা খেতে হবে। এই মাংস যে ছোঁবে তাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা হতে হবে। যদি কাপড়ে পশুটার রক্তের ছিটা লাগে তবে পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকায় তা ধুয়ে ফেলতে হবে। যে মাটির হাঁড়ীতে এই উৎসর্গের মাংস সিদ্ধ করা হবে তা ভেংগে ফেলতে হবে, কিন্তু যদি ব্রোঞ্জের পাত্রে তা সিদ্ধ করা হয় তবে সেটা মেজে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পুরোহিত-পরিবারের যে কোন পুরুষ লোক তা খেতে পারবে। এটা মহাপবিত্র জিনিস। পবিত্র স্থানে পাপ ঢাকা দেবার উদ্দেশ্যে যদি পাপ-উৎসর্গের কোন পশুর রক্ত মিলন-তাম্বুতে নিয়ে যাওয়া হয় তবে তার মাংস খাওয়া চলবে না, তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। “এই হল দোষ-উৎসর্গের নিয়ম। এই উৎসর্গের মাংস মহাপবিত্র জিনিস। পোড়ানো-উৎসর্গের পশু কাটবার জায়গায় দোষ-উৎসর্গের পশুও কাটতে হবে এবং তার রক্ত বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর সমস্ত চর্বিই উৎসর্গ করতে হবে, অর্থাৎ চর্বিভরা লেজ, পেটের ভিতরের অংশগুলোর উপরকার চর্বি, বৃক্ক দু’টি ও তার সংগে জড়ানো কোমরের কাছের চর্বি এবং বৃক্কের সংগে বের করে আনা মেটের উপরের অংশ। পুরোহিত সেগুলো নিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ হিসাবে বেদীর উপর তা পুড়িয়ে দেবে। এটা একটা দোষ-উৎসর্গ। পুরোহিত-পরিবারের যে কোন পুরুষ লোক তা খেতে পারবে, কিন্তু তা খেতে হবে পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকায়। এটা মহাপবিত্র জিনিস। “পাপ-উৎসর্গ ও দোষ-উৎসর্গ একই নিয়মে করতে হবে। যে পুরোহিত এই দু’টা উৎসর্গের যে কোন একটার অনুষ্ঠান করে উৎসর্গকারীর পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে উৎসর্গের মাংস সেই পুরোহিতেরই পাওনা হবে। পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান যে পুরোহিত করবে সে তার নিজের জন্য সেই উৎসর্গের পশুর চামড়া রেখে দিতে পারবে। তন্দুরে সেঁকা কিম্বা কড়াইতে বা তাওয়ায় ভাজা শস্য-উৎসর্গের জিনিস সেই পুরোহিতেরই পাওনা হবে যে সেই শস্য-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। তেল মিশানো হোক বা শুকনা হোক প্রত্যেকটি শস্য-উৎসর্গের জিনিস থেকে হারোণের সব ছেলেরা সমান অংশ পাবে। “এই হল সদাপ্রভুর উদ্দেশে আনা যোগাযোগ-উৎসর্গের নিয়ম। যদি এই যোগাযোগ-উৎসর্গ কেউ সদাপ্রভুকে কৃতজ্ঞতা জানাবার জন্য করতে চায় তবে এই কৃতজ্ঞতার উৎসর্গের সংগে থাকবে তেলের ময়ান দেওয়া খামিহীন পিঠা, তেল লাগানো খামিহীন চাপাটি এবং তেলের ময়ান দেওয়া ভাল করে ঠাসা মিহি ময়দার পিঠা। কৃতজ্ঞতার জন্য এই যোগাযোগ-উৎসর্গের জিনিসের সংগে কিছু খামি দেওয়া রুটিও থাকতে হবে। সদাপ্রভুকে দেবার জন্য সে ঐ প্রত্যেক রকমের জিনিস থেকে এক একটা করে আনবে। যে পুরোহিত যোগাযোগ-উৎসর্গের পশুর রক্ত ছিটাবে এগুলো তারই পাওনা হবে। কৃতজ্ঞতা জানাবার এই উৎসর্গের মাংস উৎসর্গের দিনেই খেয়ে ফেলতে হবে, সকাল পর্যন্ত তা রেখে দেওয়া চলবে না। “এই যোগযোগ-উৎসর্গ যদি কোন মানত পূরণ করবার জন্য করা হয় কিম্বা উৎসর্গকারী নিজের ইচ্ছায় তা করে তবে সেই উৎসর্গের মাংস সেই দিনেই খেতে হবে। যদি কিছু বাকী থেকে যায় তবে তা পরের দিনও খাওয়া চলবে, কিন্তু যদি তৃতীয় দিন পর্যন্ত থেকে যায় তবে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যদি সেই মাংস তৃতীয় দিনেও খাওয়া হয় তবে সদাপ্রভু সেই উৎসর্গ গ্রহণ করবেন না। উৎসর্গকারীর পক্ষে সেটা ধরা হবে না, কারণ সেই মাংস তখন একটা অশুচি জিনিস হয়ে দাঁড়াবে। যে সেই মাংস খাবে তাকে সেই অন্যায়ের জন্য দায়ী করা হবে। “যোগাযোগ-উৎসর্গের মাংসে যদি কোন অশুচি জিনিসের ছোঁয়া লাগে তবে তা খাওয়া চলবে না, তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তবে ছোঁয়া না লাগলে যারা শুচি আছে তারা তা খেতে পারবে। কেউ যদি অশুচি অবস্থায় সদাপ্রভুর কাছে উৎসর্গ করা যোগাযোগ-উৎসর্গের মাংস খায় তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। যদি কেউ মানুষের বা পশুর কোন অশুচি জিনিস কিম্বা অন্য কোন অশুচি ঘৃণার জিনিস ছুঁয়ে ফেলে আর তার পরে সদাপ্রভুর কাছে উৎসর্গ করা যোগাযোগ-উৎসর্গের মাংস খায় তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।” মরা পশুর কিম্বা বুনো জন্তুর ছিঁড়ে ফেলা পশুর চর্বি তোমরা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবে কিন্তু তা খেতে পারবে না। যে সব পশু দিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা যায় তার চর্বি যে খাবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। কোন পাখী বা পশুর রক্ত খাওয়া তোমাদের চলবে না, তা তোমরা যেখানেই বাস কর না কেন। যদি কেউ রক্ত খায় তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।” যোগাযোগ-উৎসর্গের পশুর ডান পাশের ঊরুর মাংসটা পুরোহিতকে দিয়ে দিতে হবে। হারোণের যে ছেলে যোগাযোগ-উৎসর্গের পশুর রক্ত ও চর্বি উৎসর্গ করবে সে-ই তার পাওনা হিসাবে ডান দিকের ঊরুর মাংসটা পাবে। ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত যোগাযোগ-উৎসর্গ থেকে আমার উদ্দেশে দুলিয়ে রাখা বুকের মাংস আর উৎসর্গ করা ঊরুর মাংস আমি পুরোহিত হারোণ ও তার ছেলেদের দিলাম। এটা ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে তাদের নিয়মিত পাওনা অংশ হবে।” হারোণ ও তাঁর ছেলেদের যেদিন পুরোহিত হিসাবে সদাপ্রভুর সেবা করবার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল সেই দিনে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের পশু থেকে এই অংশটা তাঁদের পাওনা বলে ঠিক করে রাখা হয়েছিল। যেদিন তাঁদের অভিষেক করা হয়েছিল সেই দিনই সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দিয়েছিলেন যেন তারা বংশের পর বংশ ধরে নিয়মিত ভাবে এই অংশটা তাঁদের দেয়। এই হল পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ, পাপ-উৎসর্গ, দোষ-উৎসর্গ, বহাল-অনুষ্ঠানের উৎসর্গ এবং যোগাযোগ-উৎসর্গের নিয়ম। সদাপ্রভু সিনাই মরু-এলাকায় ইস্রায়েলীয়দের যেদিন তাঁর উদ্দেশে উৎসর্গের জিনিস আনবার আদেশ দিয়েছিলেন সেই দিনই তিনি সিনাই পাহাড়ের উপরে মোশিকে এই সব নিয়ম দিয়েছিলেন। এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের এখানে নিয়ে এস। সেই সংগে তাদের পোশাক, অভিষেকের তেল, পাপ-উৎসর্গের ষাঁড়, দু’টা ভেড়া এবং খামিহীন রুটির টুকরিও নিয়ে এস। মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জড়ো কর।” সদাপ্রভুর আদেশ মতই মোশি সব কিছু করলেন। মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা এসে জড়ো হল। তখন মোশি তাদের বললেন, “সদাপ্রভু এই সব করবার আদেশ দিয়েছেন।” এই কথা বলে তিনি হারোণ ও তাঁর ছেলেদের সামনে নিয়ে এসে জল দিয়ে তাঁদের স্নান করালেন। তারপর তিনি হারোণকে ভিতরের জামা পরিয়ে কোমর-বাঁধনিটা বেঁধে দিলেন। তিনি এফোদের নীচের জামা ও তার উপর এফোদটা তাঁকে পরিয়ে দিলেন আর এফোদের সংগে জোড়া লাগানো কোমরের পটি দিয়ে এফোদটা বেঁধে দিলেন। তাতে এফোদটা তাঁর গায়ে আট্‌কে রইল। তার উপর তিনি বুক-ঢাকনটা পরিয়ে দিয়ে তার ভিতরে ঊরীম আর তুম্মীম রাখলেন। তারপর পাগড়িটা হারোণের মাথার উপর রেখে পবিত্র মুকুটটা, অর্থাৎ সেই সোনার পাতটা পাগড়ির সামনের দিকে বসিয়ে দিলেন। সব কিছু মোশি সদাপ্রভুর আদেশ মতই করলেন। তারপর তিনি আবাস-তাম্বু আর তার ভিতরকার সব কিছুর উপরে অভিষেক-তেল দিলেন এবং এইভাবে তিনি সেগুলো সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিলেন। সেই তেলের কিছুটা নিয়ে তিনি বেদীর উপর সাতবার ছিটিয়ে দিলেন। সেই তেল দিয়ে তিনি বেদী ও তার সমস্ত বাসন-কোসন এবং আসন সুদ্ধ গামলাটা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিলেন। তারপর তিনি অভিষেক-তেলের কিছুটা নিয়ে হারোণের মাথার উপর ঢেলে দিয়ে তাঁকে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করবার জন্য অভিষেক করলেন। পরে তিনি হারোণের ছেলেদের সামনে এনে তাঁদের গায়ে জামা পরিয়ে দিলেন এবং কোমরে কোমর-বাঁধনি বেঁধে মাথায় টুপি পরিয়ে দিলেন। সব কিছুই মোশি সদাপ্রভুর আদেশ মত করলেন। তারপর তিনি পাপ-উৎসর্গের ষাঁড়টা নিয়ে আসলেন। হারোণ ও তাঁর ছেলেরা ষাঁড়টার মাথার উপর তাঁদের হাত রাখলেন। তারপর মোশি সেই ষাঁড়টা কেটে তা থেকে কিছুটা রক্ত নিলেন এবং বেদীটা শুচি করবার জন্য আংগুল দিয়ে সেই রক্ত বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দিলেন। বাকী রক্ত তিনি বেদীর গোড়ায় ঢেলে দিলেন। এইভাবে তিনি পাপ ঢাকা দেবার অনুষ্ঠানের দ্বারা বেদীটা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিলেন। তারপর তিনি ষাঁড়টার পেটের ভিতরের সমস্ত চর্বি, মেটের উপরের অংশ আর চর্বি সুদ্ধ বৃক্ক দু’টা নিয়ে বেদীর উপর পুড়িয়ে দিলেন। কিন্তু ষাঁড়টার চামড়া, মাংস ও গোবর তিনি ছাউনির বাইরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেললেন। মোশি সব কিছু সদাপ্রভুর আদেশ মতই করলেন। তারপর তিনি পোড়ানো-উৎসর্গের ভেড়াটা আনলেন। হারোণ ও তাঁর ছেলেরা ভেড়াটার মাথার উপর তাঁদের হাত রাখলেন। মোশি সেই ভেড়াটা কেটে বেদীর চারপাশের গায়ে রক্ত ছিটিয়ে দিলেন। তিনি ভেড়াটা কয়েক খণ্ড করে নিয়ে তার মাথা, মাংসের খণ্ড এবং চর্বি পুড়িয়ে দিলেন। ভেড়াটার পেটের ভিতরকার অংশ ও পাগুলো তিনি জল দিয়ে ধুয়ে নিয়ে গোটা ভেড়াটাই পোড়ানো-উৎসর্গ হিসাবে বেদীর উপরে পুড়িয়ে দিলেন। এটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। মোশি সব কিছু সদাপ্রভুর আদেশ মতই করলেন। তারপর তিনি অন্য ভেড়াটা, অর্থাৎ বহাল-অনুষ্ঠানের ভেড়াটা নিয়ে আসলেন। হারোণ ও তাঁর ছেলেরা ভেড়াটার মাথার উপর হাত রাখলেন। মোশি সেই ভেড়াটা কাটলেন এবং তা থেকে কিছুটা রক্ত নিয়ে হারোণের ডান কানের লতিতে এবং ডান হাত ও ডান পায়ের বুড়ো আংগুলে লাগিয়ে দিলেন। তারপর তিনি হারোণের ছেলেদের সামনে নিয়ে আসলেন এবং তাঁদের ডান কানের লতিতে এবং ডান হাত ও ডান পায়ের বুড়ো আংগুলে কিছুটা রক্ত লাগিয়ে দিলেন। এর পর তিনি বেদীর চারপাশের গায়ে রক্ত ছিটিয়ে দিলেন। তিনি ভেড়াটার চর্বি, চর্বিভরা লেজটা, পেটের ভিতরের সমস্ত চর্বি, মেটের উপরের অংশ, চর্বি জড়ানো বৃক্ক দু’টা এবং ডানপাশের ঊরুটা নিলেন। তারপর সদাপ্রভুর সামনে রাখা খামিহীন রুটির টুকরি থেকে তিনি একটা রুটি, তেলের ময়ান দেওয়া একটা পিঠা ও একটা চাপাটি নিয়ে সেই চর্বি ও ঊরুর উপর রাখলেন। সেগুলো সব তিনি হারোণ ও তাঁর ছেলেদের হাতে দিয়ে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে তা সদাপ্রভুর সামনে দোলালেন। তারপর তিনি সেগুলো তাঁদের হাত থেকে নিয়ে বহাল-অনুষ্ঠানের উৎসর্গ হিসাবে বেদীর উপরকার পোড়ানো-উৎসর্গের উপরে সেগুলো পুড়িয়ে দিলেন। এটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্যে একটা, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। তারপর তিনি তাঁর নিজের পাওনা অংশটা, অর্থাৎ বহাল-অনুষ্ঠানের ভেড়ার বুকের অংশটা নিয়ে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে সদাপ্রভুর সামনে দোলালেন। সব কিছু মোশি সদাপ্রভুর আদেশ মতই করলেন। এর পর মোশি কিছুটা অভিষেকের তেল ও বেদী থেকে কিছুটা রক্ত নিয়ে হারোণ ও তাঁর ছেলেদের উপর এবং তাঁদের পোশাকের উপর ছিটিয়ে দিলেন। এইভাবে হারোণ ও তাঁর ছেলেদের এবং তাঁদের পোশাক সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা হল। মোশি তারপর হারোণ ও তাঁর ছেলেদের বললেন, “তোমরা মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে এই মাংস সিদ্ধ কর এবং সেখানেই বহাল-অনুষ্ঠানের টুকরির রুটি দিয়ে তা খাও, কারণ আমি এই আদেশ দিয়েছিলাম যে, তোমার ও তোমার ছেলেদের তা খেতে হবে। খাওয়ার পর যে মাংস ও রুটি বাকী থাকবে তা তোমরা পুড়িয়ে ফেলবে। তোমাদের এই বহাল-অনুষ্ঠান সাত দিন ধরে চলবে। সেইজন্য এই অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই সাত দিন তোমরা মিলন-তাম্বুর দরজার বাইরে যাবে না। আজকে যা করা হল তা সদাপ্রভুর আদেশেই তোমাদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা হিসাবে করা হল। তোমরা যাতে মারা না পড় সেইজন্য আজ থেকে সাত দিন পর্যন্ত তোমরা দিনরাত মিলন-তাম্বুর ভিতরে থাকবে এবং সদাপ্রভুর চাহিদা অনুসারে কাজ করবে। আমি এই আদেশই পেয়েছি।” মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু যা করতে আদেশ করেছিলেন হারোণ ও তাঁর ছেলেরা তা সবই করলেন। বহাল-অনুষ্ঠানের আট দিনের দিন হারোণ ও তাঁর ছেলেদের এবং ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতাদের মোশি ডেকে পাঠালেন। তিনি হারোণকে বললেন, “তোমার পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য তুমি একটা এঁড়ে বাছুর ও পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ভেড়া এনে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত কর। তাদের গায়ে যেন কোন খুঁত না থাকে। তারা মোশির আদেশ মত সমস্ত জিনিস মিলন-তাম্বুর সামনে নিয়ে আসল আর ইস্রায়েলীয়েরা সবাই গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়াল। মোশি তখন তাদের বললেন, “সদাপ্রভুর মহিমা যাতে তোমাদের সামনে প্রকাশ পায় সেইজন্যই তিনি তোমাদের এই সব করবার আদেশ দিয়েছেন।” তারপর তিনি হারোণকে বললেন, “তুমি বেদীর কাছে গিয়ে তোমার পাপ-উৎসর্গ ও পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে তোমার নিজের ও সেই সংগে লোকদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা কর। এছাড়া লোকদের ঐ সব উৎসর্গের অনুষ্ঠান করেও তুমি তাদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা কর; সদাপ্রভু তা-ই আদেশ করেছেন।” এতে হারোণ বেদীর কাছে গিয়ে তাঁর নিজের পাপ-উৎসর্গের বাছুরটা কাটলেন। তাঁর ছেলেরা তার রক্ত নিয়ে তাঁর কাছে গেল। হারোণ সেই রক্তে তাঁর আংগুল ডুবিয়ে কিছু রক্ত নিয়ে বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দিলেন আর বাকী রক্ত তিনি বেদীর গোড়ায় ঢেলে দিলেন। মোশিকে সদাপ্রভু যে আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই হারোণ সেই পাপ-উৎসর্গের বাছুরের চর্বি, বৃক্ক দু’টি এবং মেটের উপরের অংশ বেদীর উপরে পুড়িয়ে দিলেন। মাংস আর চামড়া তিনি ছাউনির বাইরে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেললেন। তারপর হারোণ পোড়ানো-উৎসর্গের ভেড়াটা কাটলেন। তাঁর ছেলেরা তার রক্ত এনে তাঁর হাতে দিলেন আর তিনি তা বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। তাঁরা পোড়ানো-উৎসর্গের ভেড়াটার মাথা এবং মাংসের খণ্ডগুলো এক এক করে হারোণের হাতে দিলেন আর হারোণ সেগুলো বেদীর উপরে পুড়িয়ে ফেললেন। ভেড়াটার পেটের ভিতরের অংশ ও পা তিনি ধুয়ে নিয়ে বেদীর উপরকার পোড়ানো-উৎসর্গের উপরে রেখে সেগুলো পুড়িয়ে দিলেন। হারোণ তারপর লোকদের উৎসর্গের পশুগুলো আনলেন। তিনি লোকদের পাপ-উৎসর্গের ছাগলটা নিয়ে কাটলেন এবং আগের মত করে এটা দিয়েও পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তারপর তিনি তাদের পোড়ানো-উৎসর্গের পশু দু’টা এনে সদাপ্রভুর দেওয়া নিয়ম অনুসারে উৎসর্গ করলেন। সকালবেলার পোড়ানো-উৎসর্গ ছাড়াও শস্য-উৎসর্গের জন্য আনা জিনিস থেকে তিনি এক মুঠো তুলে নিয়ে বেদীর উপরে পুড়িয়ে দিলেন। তিনি লোকদের যোগাযোগ-উৎসর্গের গরু ও ভেড়াটা কাটলেন। তাঁর ছেলেরা সেগুলোর রক্ত এনে তাঁর হাতে দিলেন আর তিনি তা বেদীর চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। মোশি তাঁকে যেমন আদেশ করেছিলেন সেইমতই তিনি দোলন-উৎসর্গ হিসাবে বুকের মাংস এবং ডানপাশের ঊরুটা নিয়ে সদাপ্রভুর সামনে দোলালেন। তারপর হারোণ লোকদের দিকে হাত বাড়িয়ে তাদের আশীর্বাদ করলেন। তিনি পাপ-উৎসর্গ, পোড়ানো-উৎসর্গ এবং যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান শেষ করে বেদী থেকে নেমে আসলেন। এর পর মোশি ও হারোণ মিলন-তাম্বুর ভিতরে গেলেন। সেখান থেকে বের হয়ে এসে তাঁরা লোকদের আশীর্বাদ করলেন। তখন সমস্ত লোকের সামনে সদাপ্রভুর মহিমা দেখা দিল। সদাপ্রভুর কাছ থেকে আগুন বের হয়ে এসে বেদীর উপরকার পোড়ানো-উৎসর্গ আর সমস্ত চর্বি পুড়িয়ে ফেলল। এই ব্যাপার দেখে লোকেরা চিৎকার করে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ল। হারোণের ছেলে নাদব ও অবীহূ তাদের আগুনের পাত্রে করে আগুন নিয়ে তার উপর ধূপ দিল। তারা সদাপ্রভুর নির্দেশের বাইরে অন্য আগুনে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ধূপ উৎসর্গ করল। এর দরুন সদাপ্রভুর কাছ থেকে আগুন বের হয়ে এসে তাদের পুড়িয়ে দিল, আর তারা সদাপ্রভুর সামনেই মারা গেল। তখন মোশি হারোণকে বললেন, “সদাপ্রভু বলেছেন, ‘যারা আমার কাছে আসে তারা যেন আমাকে পবিত্র বলে মান্য করে। লোকদের চোখে তারা যেন আমার সম্মান তুলে ধরে।’ ” হারোণ চুপ করে রইলেন। পরে মোশি মীশায়েল ও ইলীষাফণকে ডেকে বললেন, “এখানে এস; পবিত্র তাম্বু-ঘরের সামনে থেকে তোমাদের ভাইয়ের ছেলেদের দেহগুলো ছাউনির বাইরে নিয়ে যাও।” মীশায়েল ও ইলীষাফণ ছিল হারোণের কাকা উষীয়েলের ছেলে। মোশির আদেশে তারা এসে নাদব ও অবীহূর দেহ দু’টা ছাউনির বাইরে নিয়ে গেল। তখনও তাদের দেহে পুরোহিতের জামা ছিল। মোশি তারপর হারোণ ও তাঁর দুই ছেলে ইলীয়াসর ও ঈথামরকে বললেন, “দুঃখে তোমাদের চুলের বাঁধন খুলে দিয়ো না আর কাপড়ও ছিঁড়ো না। তা করলে তোমরা মারা পড়বে আর গোটা ইস্রায়েল জাতির উপর সদাপ্রভু অসন্তুষ্ট হবেন। তবে সদাপ্রভু যাদের আগুন দিয়ে মেরে ফেলেছেন তাদের জন্য তোমাদের আত্মীয়-স্বজনেরা, অর্থাৎ অন্যান্য ইস্রায়েলীয়েরা শোক-প্রকাশ করতে পারে। তোমাদের গায়ে সদাপ্রভুর অভিষেক-তেল দেওয়া হয়েছে, কাজেই তোমরা মিলন-তাম্বুর দরজার বাইরে যাবে না, গেলে মারা পড়বে।” তাঁরা মোশির কথা মেনে নিলেন। এর পর সদাপ্রভু হারোণকে বললেন, “তুমি ও তোমার ছেলেরা আংগুর-রস বা মদ খেয়ে মিলন-তাম্বুতে ঢুকো না, ঢুকলে তোমরা মারা যাবে। বংশের পর বংশ ধরে এটা হবে তোমাদের একটা চিরস্থায়ী নিয়ম। কোন্‌টা পবিত্র আর কোন্‌টা পবিত্র নয় এবং কোন্‌টা শুচি আর কোন্‌টা অশুচি তা বুঝে তোমাদের চলতে হবে। এছাড়া সদাপ্রভু মোশির মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের যে সব নিয়ম দিয়েছেন তা-ও তোমরা তাদের শিখাবে।” মোশি তারপর হারোণ ও তাঁর বাকী দু’জন ছেলে ইলীয়াসর ও ঈথামরকে বললেন, “সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের মধ্য থেকে শস্য-উৎসর্গের যে অংশটা বাকী আছে তা তোমরা বেদীর পাশে নিয়ে গিয়ে খাও, কিন্তু সেটা খামি ছাড়াই খেতে হবে। এটা মহাপবিত্র জিনিস। এটা তোমরা পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকায় নিয়ে খাবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের এই অংশটুকু তোমার ও তোমার ছেলেদের পাওনা। এই আদেশই আমি পেয়েছি। তবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে দুলিয়ে রাখা বুকের মাংস এবং ঊরু তুমি ও তোমার ছেলেমেয়েরা সবাই খেতে পারবে। এগুলো তোমরা কোন শুচি জায়গায় খাবে। ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত যোগাযোগ-উৎসর্গের এই অংশটুকু তোমাকে ও তোমার ছেলেমেয়েদের দেওয়া হয়েছে। আগুনে-করা উৎসর্গের জন্য যখন চর্বি আনা হবে তখন সদাপ্রভুর সামনে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে দোলাবার জন্য ঊরু ও বুকের মাংসও আনতে হবে। সদাপ্রভুর আদেশ মত এই ঊরু ও বুকের মাংস তোমার ও তোমার ছেলেমেয়েদের নিয়মিত পাওনা।” যে ছাগলটা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা হয়েছিল তার মাংস সম্বন্ধে খোঁজ নিয়ে মোশি জানতে পারলেন যে, তা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এতে তিনি হারোণের বাকী দুই ছেলে ইলীয়াসর ও ঈথামরের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, “পাপ-উৎসর্গের মাংস কেন তোমরা পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকার মধ্যে খেয়ে ফেল নি? এটা তো মহাপবিত্র জিনিস। সদাপ্রভুর সামনে ইস্রায়েলীয়দের পাপ ঢেকে তাদের শাস্তি থেকে মুক্ত করবার জন্যই তা তোমাদের দেওয়া হয়েছিল। ঐ ছাগলের রক্ত যখন পবিত্র স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় নি তখন আমার আদেশ মত পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকার মধ্যেই তার মাংস তোমাদের খেয়ে ফেলা উচিত ছিল।” এর উত্তরে হারোণ মোশিকে বললেন, “আজ সদাপ্রভুর সামনে তাদের পাপ-উৎসর্গ ও পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের পরে আমার উপর এই সব ঘটনা ঘটে গেল। আজকের দিনে আমি সেই পাপ-উৎসর্গের মাংস খেলে কি সদাপ্রভু খুশী হতেন?” উত্তরটা শুনে মোশি খুশী হলেন। কোন কোন পশু কেবল জাবর কাটে, আবার কোন কোন পশুর কেবল চেরা খুর আছে; সেগুলো তোমাদের খাওয়া চলবে না। উট জাবর কাটলেও তার খুর চেরা নয়, সেইজন্য তা তোমাদের পক্ষে অশুচি। শাফনও জাবর কাটে কিন্তু তার খুর চেরা নয়, সেইজন্য তা-ও তোমাদের পক্ষে অশুচি। খরগোস জাবর কাটলেও তার খুর চেরা নয়, সেইজন্য তা-ও অশুচি। শূকরের খুর একেবারে দু’ভাগে চেরা, কিন্তু সে জাবর কাটে না, তাই তা তোমাদের পক্ষে অশুচি। এগুলোর মাংস তোমরা খাবে না এবং তাদের মৃতদেহও ছোঁবে না। এগুলো তোমাদের পক্ষে অশুচি। “সমুদ্র ও নদীর জলে যে সব প্রাণী বাস করে তাদের মধ্যে যাদের ডানা এবং গায়ে আঁশ আছে সেগুলো তোমরা খেতে পারবে। কিন্তু যেগুলোর ডানা আর আঁশ নেই সেগুলো ঘৃণার জিনিস বলে তোমাদের ধরে নিতে হবে- তা জলে ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ানো প্রাণীই হোক কিম্বা অন্যান্য প্রাণীই হোক। ঘৃণার জিনিস বলে সেগুলো খাওয়া তোমাদের চলবে না এবং সেগুলোর মৃতদেহও ঘৃণার জিনিস বলে তোমাদের ধরে নিতে হবে। জলে বাস করে অথচ ডানা আর আঁশ নেই এমন সব প্রাণীদের ঘৃণার জিনিস বলে ধরে নিতে হবে। “কতগুলো পাখীও আছে যেগুলো ঘৃণার জিনিস বলে তোমাদের ধরে নিতে হবে, আর সেইজন্য সেগুলো তোমাদের খাওয়া চলবে না। সেগুলো হল ঈগল, শকুন, কালো শকুন, কালপেঁচা, হাড়গিলা, হুতুম পেঁচা, সাদা পেঁচা, মরু-পেঁচা, সিন্ধুবাজ, সারস, সব রকমের বক, হুপ্‌পু পাখী আর বাদুড়। “যে সব চার পায়ে হাঁটা পোকা উড়ে বেড়ায় সেগুলোকে ঘৃণার জিনিস বলে ধরে নিতে হবে। তবে তার মধ্যে যেগুলোর হাঁটু আছে বলে মাটির উপর লাফিয়ে বেড়াতে পারে সেগুলোর কোন কোনটা তোমরা খেতে পারবে। সেগুলো হল সব রকমের পংগপাল, বাঘা-ফড়িং, ঝিঁঝি কিম্বা ঘাস-ফড়িং। কিন্তু অন্য যে সব উড়ে বেড়ানো পোকার চারটা করে পা আছে সেগুলোকে ঘৃণার জিনিস বলে ধরে নিতে হবে। “এগুলো দিয়ে তোমরা অশুচি হবে। যে কেউ তাদের মৃতদেহ ছোঁবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। যদি কেউ তাদের কোন একটার মৃতদেহ হাত দিয়ে তোলে তবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে আর সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। “যে সব পশুর খুর চেরা হলেও পুরোপুরি দুই ভাগে ভাগ করা নয় কিম্বা যে সব পশু জাবর কাটে না সেগুলো তোমাদের পক্ষে অশুচি। যে এগুলো ছোঁবে সে অশুচি হবে। চার পায়ে হাঁটা জীবজন্তুর মধ্যে যেগুলো থাবায় ভর করে চলে সেগুলো তোমাদের পক্ষে অশুচি। যে তাদের মৃতদেহ ছোঁবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। যে কেউ তাদের মৃতদেহ হাত দিয়ে তুলবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে আর সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। এই সব জীবজন্তু তোমাদের পক্ষে অশুচি। “যে সব ছোটখাটো প্রাণী মাটির উপর ঘুরে বেড়ায় সেগুলোর মধ্যে বেজী, ইঁদুর, সব রকমের গিরগিটি; তক্ষক, গোসাপ, টিকটিকি, রক্তচোষা এবং কাঁকলাস তোমাদের পক্ষে অশুচি। ছোটখাটো প্রাণীদের মধ্যে এগুলোই হবে তোমাদের পক্ষে অশুচি। এদের মরা দেহ যে ছোঁবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। এগুলোর যে কোন একটা মরে কোন জিনিসের উপর পড়লে সেটা অশুচি হবে- সেটা কাঠ, কাপড়, চামড়া কিম্বা চট যা দিয়েই তৈরী হোক না কেন আর যে কোন কাজেরই হোক না কেন। সেই জিনিসটা জলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। সেটা সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে, তারপর তা শুচি হবে। এগুলোর মধ্যে কোন একটা যদি কোন মাটির পাত্রের মধ্যে পড়ে তবে তার ভিতরকার সব কিছু অশুচি হয়ে যাবে। সেই পাত্রটা ভেংগে ফেলতে হবে। সেই পাত্রের জল যদি কোন খাওয়ার জিনিসের উপর পড়ে তবে সেই খাওয়ার জিনিসও অশুচি হয়ে যাবে। সেই পাত্রের মধ্যে যদি কোন পানীয় থাকে তবে তা-ও অশুচি হয়ে যাবে। এগুলোর মরা দেহ কোন কিছুর উপর পড়লে তা-ও অশুচি হয়ে যাবে। এগুলো কোন তন্দুরে বা কোন চুলায় পড়লে তা ভেংগে ফেলতে হবে। সেই তন্দুর বা চুলা অশুচি, আর তোমাদের তা অশুচি বলেই মানতে হবে। তবে সেগুলো যদি কোন ফোয়ারা কিম্বা কূয়ার মধ্যে পড়ে তবে সেই ফোয়ারা বা কূয়া অশুচি হবে না; কিন্তু এদের মরা দেহ যে ছোঁবে সে নিজে অশুচি হবে। জমিতে বুনবার জন্য রাখা কোন বীজের উপর যদি এগুলোর কোন মরা দেহ পড়ে তবে তা অশুচি হবে না; কিন্তু বীজের উপর জল দেওয়া হলে পর যদি তা পড়ে তবে সেই বীজ তোমাদের পক্ষে অশুচি হবে। “তোমাদের খাওয়ায় বাধা নেই এমন কোন পশু মরে গেলে যে তার মরা দেহ ছোঁবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। কেউ যদি সেই মরা পশুর মাংস খায় তবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে এবং সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। কেউ যদি সেই মরা পশু হাত দিয়ে তোলে তবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে এবং সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। “যে সব ছোটখাটো প্রাণী মাটির উপর ঘুরে বেড়ায় তোমাদের তা ঘৃণার জিনিস বলে ধরে নিতে হবে। সেগুলো তোমাদের খাওয়া চলবে না। মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো ছোটখাটো কোন প্রাণীই তোমরা খাবে না। সেগুলো সবই ঘৃণার জিনিস- সেগুলো পেটের উপর ভর দিয়েই চলুক আর চার পায়ে বা অনেক পায়েই হাঁটুক। সেগুলোর কোনটা দিয়ে তোমরা নিজেদের ঘৃণার পাত্র করে তুলবে না। তোমরা সেগুলো দিয়ে নিজেদের অশুচি করবে না কিম্বা সেগুলোকে তোমাদের অশুচি করতে দেবে না। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। সেইজন্য তোমরা আমার উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করে রাখবে এবং পবিত্র হবে, কারণ আমি পবিত্র। মাটির উপরে ঘুরে বেড়ানো ছোটখাটো কোন প্রাণী দিয়ে তোমরা নিজেদের অশুচি করবে না, কারণ আমি সদাপ্রভু; তোমাদের ঈশ্বর হওয়ার জন্য আমি মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছি। আমি পবিত্র বলে তোমাদেরও পবিত্র হতে হবে। “পশু, পাখী এবং জলের মধ্যেকার প্রাণী আর মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো সব ছোটখাটো প্রাণীদের সম্বন্ধে এই হল আমার আইন। কোন্‌টা শুচি আর কোন্‌টা অশুচি, কোন্‌ পশুর মাংস তোমরা খেতে পারবে আর কোন্‌ পশুর মাংস তোমরা খেতে পারবে না তা বুঝে তোমাদের চলতে হবে।” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল, যদি কোন স্ত্রীলোক গর্ভবতী হয় এবং তার ছেলে হয় তবে সে তার মাসিকের সময়ের মতই অশুচি হবে। তার এই অশুচি অবস্থা সাত দিন চলবে। আট দিনের দিন ছেলেটির সুন্নত করাতে হবে। তারপর সেই স্ত্রীলোককে তার রক্তস্রাব থেকে শুচি হবার জন্য তেত্রিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার শুচি হওয়ার আগের এই দিনগুলো কেটে না যাওয়া পর্যন্ত সে কোন পবিত্র জিনিস ছুঁতে পারবে না কিম্বা পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকায় যেতে পারবে না। কিন্তু যদি তার মেয়ে হয় তবে তার মাসিকের সময়ের মতই সে অশুচি হবে, কিন্তু তার এই অশুচি অবস্থা চলবে দু’সপ্তা। তারপর তাকে তার রক্তস্রাব থেকে শুচি হওয়ার জন্য ছেষট্টি দিন অপেক্ষা করতে হবে। “ছেলে বা মেয়ের জন্মের পরে তার শুচি হওয়ার আগের দিনগুলো কেটে যাবার পর তাকে মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে পুরোহিতের কাছে পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য এক বছরের একটা ভেড়ার বাচ্চা এবং পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা কবুতর কিম্বা একটা ঘুঘু নিয়ে যেতে হবে। পুরোহিত সেগুলো সদাপ্রভুর সামনে উৎসর্গ করে তার অশুচিতা ঢাকা দেবে, আর তারপর সে তার রক্তস্রাবের অশুচি অবস্থা থেকে শুচি হবে। সন্তান জন্মের পর স্ত্রীলোকের জন্য এই হল নিয়ম। উৎসর্গের জন্য যদি সে ভেড়ার বাচ্চা আনতে না পারে তবে তাকে দু’টা ঘুঘু না হয় দু’টা কবুতর আনতে হবে। তার মধ্যে একটা হবে পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য আর অন্যটা হবে পাপ-উৎসর্গের জন্য। এইভাবে পুরোহিত তার অশুচিতা ঢাকা দেবে আর সে শুচি হবে।” এর পর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “যদি কারও গায়ের চামড়ার কোন জায়গা ফুলে ওঠে কিম্বা ফুসকুড়ি দেখা দেয় কিম্বা কিছুটা জায়গা চক্‌চকে বলে মনে হয় যা পরে কোন খারাপ চর্মরোগে দাঁড়াতে পারে, তবে তাকে পুরোহিত হারোণ কিম্বা তার ছেলেদের, অর্থাৎ পুরোহিতদের কারও কাছে নিয়ে যেতে হবে। পুরোহিত তার চামড়ার সেই জায়গাটা দেখবে। সেখানকার লোম যদি সাদা হয়ে গিয়ে থাকে আর রোগটা চামড়া ছাড়িয়ে আরও গভীরে চলে গেছে বলে মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে ওটা একটা খারাপ চর্মরোগ। পুরোহিত তাকে দেখবার পর তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে। তবে তার চামড়ার সেই চক্‌চকে জায়গাটুকু যদি সাদা হয় কিন্তু চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে না গিয়ে থাকে আর সেখানকার লোমও যদি সাদা না হয়ে গিয়ে থাকে, তবে পুরোহিত সেই লোককে সাত দিন পর্যন্ত অন্য লোকদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। সেই সাত দিনের শেষ দিন পুরোহিত তাকে আবার দেখবে। যদি এর মধ্যে সেই রোগটা চামড়ার উপরে ছড়িয়ে না গিয়ে যেমন ছিল তেমনিই থেকে যায় তবে সে আরও সাত দিন তাকে সরিয়ে রাখবে। সেই সাত দিনের শেষ দিন পুরোহিত তাকে আবার দেখবে। যদি এর মধ্যে তার রোগটা চামড়ার উপর ছড়িয়ে না গিয়ে প্রায় মিলিয়ে গিয়ে থাকে তবে সে তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ ওটা কেবল একটা ফুসকুড়ি, আর কিছু নয়। তখন লোকটাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে আর তারপর সে শুচি হবে। “কিন্তু পুরোহিত তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবার পরে যদি সেই ফুসকুড়ি তার চামড়ার উপরে ছড়িয়ে পড়ে তবে আবার তাকে পুরোহিতের কাছে যেতে হবে। তখন পুরোহিত তাকে আবার দেখবে। যদি এর মধ্যে সত্যিই সেটা চামড়ার উপর ছড়িয়ে গিয়ে থাকে তবে সে তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ ওটা একটা খারাপ চর্মরোগ। তবে বুঝতে হবে ওটা একটা পুরানো খারাপ চর্মরোগ। তখন পুরোহিত তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে। তাকে অন্যদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবার দরকার নেই, কারণ সে তো অশুচি হয়েই আছে। কিন্তু যদি লক্ষণটা অন্য রকম হয়ে রোগটা তার সারা গায়ে বেরিয়ে গিয়ে থাকে আর পুরোহিতের যতটা চোখে পড়ে তাতে যদি মনে হয় রোগীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা গায়েই তা আছে, তবে সে তাকে ভাল করে দেখবে। তাতে যদি দেখা যায় সত্যিই তা তার সারা গায়েই রয়েছে কিন্তু তা সাদা হয়ে গেছে তবে সে তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবে। তার সারা গা সাদা হয়ে গেছে বলে সে অশুচি নয়। কিন্তু তার পরে যদি তার গায়ে কোন কাঁচা ঘা দেখা দেয় তবে সে অশুচি হবে। পুরোহিত সেই ঘা দেখবার পর তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে। সেই ঘা অশুচি; তার খারাপ চর্মরোগ হয়েছে। পরে সেই কাঁচা ঘায়ের অবস্থা বদলে গিয়ে যদি তা সাদা হয়ে যায় তবে তাকে আবার পুরোহিতের কাছে যেতে হবে। তখন পুরোহিত তাকে আবার দেখবে। তার সারা গায়ে বেরিয়ে যাওয়া রোগটা যদি সত্যিই সাদা হয়ে গিয়ে থাকে তবে সে তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ সে শুচি। পুরোহিত তাকে দেখবে। যদি সেটা চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে চলে গিয়ে থাকে এবং সেখানকার লোমও সাদা হয়ে গিয়ে থাকে তবে পুরোহিত তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ সেটা ফোড়ার জায়গায় বের হওয়া খারাপ চর্মরোগ। কিন্তু পুরোহিত যদি কোন সাদা লোম সেখানে দেখতে না পায় এবং সেটা যদি চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে না গিয়ে প্রায় মিলিয়ে যাবার মত হয়ে গিয়ে থাকে তবে পুরোহিত তাকে সাত দিন পর্যন্ত অন্যদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। কিন্তু যদি দেখা যায় সেটা চামড়ার উপর ছড়িয়ে যাচ্ছে তবে পুরোহিত তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ ওটা একটা রোগ। কিন্তু সেটার যদি কোন পরিবর্তন না হয় এবং ছড়িয়েও না পড়ে তবে বুঝতে হবে যে, ওটা ফোড়াটার একটা দাগ মাত্র। পুরোহিত তখন তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবে। “যদি কারও গায়ে কোন জায়গা পুড়ে যায় আর সেই পোড়া জায়গার কাঁচা ঘায়ের মধ্যে লাল্‌চে-সাদা কিম্বা সাদা চক্‌চকে কোন কিছু দেখা যায়, তবে পুরোহিত সেটা পরীক্ষা করে দেখবে। যদি দেখা যায় সেখানকার লোম সাদা হয়ে গেছে আর সেই অংশটা চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে চলে গেছে তবে বুঝতে হবে যে, সেই পোড়া জায়গায় খারাপ চর্মরোগ ফুটে বেরিয়েছে। পুরোহিত তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ ওটা একটা খারাপ চর্মরোগ। কিন্তু পুরোহিত পরীক্ষা করে যদি দেখতে পায় যে, সেখানকার লোম সাদা হয় নি এবং সেই অংশটা চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে চলে যায় নি বরং প্রায় মিলিয়ে গেছে, তবে পুরোহিত তাকে সাত দিনের জন্য অন্যদের থেকে সরিয়ে রাখবে। ঐ সাত দিনের শেষ দিন পুরোহিত তাকে আবার পরীক্ষা করে যদি দেখতে পায় যে, চামড়ার উপর সেটা ছড়িয়ে পড়েছে তবে পুরোহিত তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ ওটা একটা খারাপ চর্মরোগ। কিন্তু সেই অংশটা যদি যেমন ছিল তেমনি থেকে যায় এবং রোগটা চামড়ার উপর না ছড়িয়ে প্রায় মিলিয়ে যাবার মত হয়ে গিয়ে থাকে, তবে বুঝতে হবে পুড়বার দরুন ওটা ফুলে উঠেছে। তখন পুরোহিত তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ ওটা একটা পোড়া দাগ মাত্র। “যদি কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোকের মাথা বা দাড়ির মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে পুরোহিত তাকে পরীক্ষা করে দেখবে। যদি তার মনে হয় তা চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে চলে গেছে এবং তার মধ্যেকার লোমও হলুদ আর সরু হয়ে গেছে তবে সে সেই লোককে অশুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ ওটা এক রকম চুলকানি- মাথা এবং দাড়ির খারাপ চর্মরোগ। কিন্তু রোগ পরীক্ষা করবার সময় পুরোহিতের যদি মনে হয় যে, তা চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে চলে যায় নি কিন্তু তার মধ্যে যে লোম রয়েছে তা কালো নয়, তবে সেই রোগীকে সে সাত দিন পর্যন্ত অন্যদের থেকে সরিয়ে রাখবে। তারপর সেই সাত দিনের শেষ দিনে পুরোহিত আবার তা পরীক্ষা করে যদি দেখে সেই চুলকানি ছড়িয়ে পড়ে নি এবং তার মধ্যেকার লোমও হলুদ নয় আর মনে হয় তা চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে যায় নি, তবে চুলকানির জায়গাটা বাদ দিয়ে সেই লোকের বাদবাকী চুল বা লোম কামিয়ে ফেলতে হবে। এর পর পুরোহিত আরও সাত দিন তাকে অন্যদের থেকে সরিয়ে রাখবে। ঐ সাত দিনের শেষ দিন পুরোহিত তার সেই চুলকানি আবার পরীক্ষা করে যদি দেখে যে, সেটা চামড়ার উপরে ছড়িয়ে পড়ে নি আর মনে হয় সেটা চামড়া ছাড়িয়ে গভীরে যায় নি, তবে পুরোহিত তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবে। তারপর তাকে কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে আর তখন সে শুচি হবে। তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবার পর যদি তার গায়ে সেই চুলকানি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়, তবে পুরোহিত তাকে আবার দেখবে। যদি দেখা যায় সেই চুলকানি ছড়িয়ে পড়েছে তবে লোম হলুদ হয়েছে কি না তা ভাল করে পরীক্ষা করে দেখবার দরকার নেই, কারণ লোকটি অশুচি। কিন্তু পুরোহিত যদি মনে করে তা যেমন ছিল তেমনই আছে আর সেই চুলকানির জায়গায় কালো লোম গজিয়েছে তাহলে বুঝতে হবে সেটা ভাল হয়ে গেছে। সে শুচি হয়েছে এবং পুরোহিত তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবে। “কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোকের চামড়ার উপর যদি কোন চক্‌চকে, অর্থাৎ সাদা চক্‌চকে দাগ দেখা দেয়, তাহলে পুরোহিত তা পরীক্ষা করে দেখবে। যদি সেই দাগগুলো ফ্যাকাশে সাদা হয় তাহলে বুঝতে হবে চামড়ার উপরে শ্বেতী হয়েছে আর তাতে কোন ক্ষতি হবে না, সে শুচি। “যদি কোন লোকের চুল উঠে গিয়ে মাথায় টাক পড়ে যায় তবে সে অশুচি হবে না। মাথার সামনের চুল উঠে গিয়ে যদি কারও কপালের উপরটায় টাক পড়ে যায় তাহলেও সে অশুচি হবে না। কিন্তু যদি তার টাকপড়া মাথায় বা কপালে রোগের কোন লাল্‌চে-সাদা রংয়ের লক্ষণ দেখা দেয় তবে বুঝতে হবে তার মাথায় বা কপালে খারাপ চর্মরোগ বের হয়েছে। পুরোহিত তাকে পরীক্ষা করতে গিয়ে যদি দেখে যে, খারাপ চর্মরোগের মত তার মাথার বা কপালের লাল্‌চে-সাদা অংশটা ফুলে উঠেছে, তবে বুঝতে হবে লোকটির খারাপ চর্মরোগ হয়েছে এবং সে অশুচি। তার মাথার সেই রোগের জন্য পুরোহিত তাকে অশুচি বলে ঘোষণা করবে। “এই রকম রোগ যার হবে তাকে ছেঁড়া কাপড় পরতে হবে। সে চুল খুলে রাখবে। তাকে তার মুখের নীচের দিকটা ঢেকে চিৎকার করে বলতে হবে, ‘অশুচি, অশুচি।’ তার দেহে যতদিন সেই ছোঁয়াচে রোগ থাকবে ততদিন সে অশুচি থাকবে। তাকে ছাউনির বাইরে একা থাকতে হবে। আর সেই জায়গাটা দেখতে যদি কিছুটা সবুজ কিম্বা লাল্‌চে হয় তবে বুঝতে হবে সেটা এক রকমের ক্ষয়-করা ছাৎলা। সেটা তখন পুরোহিতকে দেখাতে হবে। পুরোহিত সেটা ভাল করে দেখে সাত দিনের জন্য সেই জিনিসটা অন্য সব জিনিস থেকে সরিয়ে রাখবে। “কিন্তু পুরোহিত যদি দেখে যে, সেই কাপড় কিম্বা টানা-পোড়েনের সুতা কিম্বা চামড়া বা চামড়ার জিনিসের উপরে সেটা না ছড়িয়ে একই জায়গায় রয়ে গেছে, তবে সে ঐ জিনিসটা ধুয়ে ফেলবার আদেশ দেবে। তারপর সে ওটা আরও সাত দিন পর্যন্ত অন্য সব জিনিস থেকে সরিয়ে রাখবে। তারপর পুরোহিত আবার তা দেখবে। সেটা ছড়িয়ে না পড়লেও যদি দেখতে একই রকম থেকে যায় তবে বুঝতে হবে জিনিসটা অশুচি। জিনিসটার ভিতরে-বাইরে যেদিকেই সেই ছাৎলা থাকুক না কেন, সেটা আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে। জিনিসটা ধোওয়ার পরে পুরোহিত যদি দেখে যে, জায়গাটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে তবে সেই ফ্যাকাশে জায়গাটা তাকে ছিঁড়ে ফেলতে হবে। কিন্তু ঐ জিনিসটাতে যদি আবার ছাৎলা দেখা দেয় তবে বুঝতে হবে ওটা ছড়িয়ে পড়ছে। ঐ ছাৎলা-ধরা জিনিসটা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। জিনিসটা ধোওয়ার পরে যদি দেখা যায় ছাৎলা মিলিয়ে গেছে তবে সেটা আবার ধুয়ে নিতে হবে, আর তাতে সেটা শুচি হবে।” এই সব নিয়ম অনুসারে ক্ষয়-করা ছাৎলা-ধরা পশমী বা মসীনার কাপড়, টানা বা পোড়েনের কোন সুতা কিম্বা চামড়ার কোন জিনিস শুচি বা অশুচি বলে ঘোষণা করতে হবে। তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “খারাপ চর্মরোগ হয়েছে এমন কোন লোকের শুচি হবার দিনে এই নিয়ম পালন করতে হবে। তাকে পুরোহিতের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পুরোহিত ছাউনির বাইরে গিয়ে তাকে পরীক্ষা করে দেখবে। যদি দেখা যায় সেই চর্মরোগ থেকে লোকটি সুস্থ হয়েছে, তবে তাকে শুচি করবার জন্য পুরোহিত দু’টা জ্যান্ত শুচি পাখী, কিছু এরস কাঠ, লাল রংয়ের সুতা এবং এসোব গাছের ডাল নিয়ে আসতে বলবে। তারপর পুরোহিত আদেশ দেবে যেন স্রোত থেকে তুলে আনা এবং মাটির পাত্রে রাখা জলের উপরে সেই পাখী দু’টার একটাকে কেটে ফেলা হয়। পুরোহিত জ্যান্ত পাখীটা, এরস কাঠ, লাল রংয়ের সুতা এবং এসোব গাছের ডাল স্রোতের জলের উপরে কেটে ফেলা সেই পাখীটার রক্তে ডুবাবে। যাকে সেই চর্মরোগ থেকে শুচি করা হবে তার উপর পুরোহিত সাতবার সেই রক্ত ছিটিয়ে দিয়ে তাকে শুচি বলে ঘোষণা করবে। এর পর পুরোহিতকে খোলা মাঠে সেই জ্যান্ত পাখীটাকে ছেড়ে দিতে হবে। যাকে শুচি করা হবে সে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলবে, গা ও মাথার সমস্ত লোম ও চুল কামাবে এবং জলে স্নান করে ফেলবে। তারপর সে শুচি হবে। এর পর সে ছাউনিতে ঢুকতে পারবে কিন্তু তাকে সাত দিন তার নিজের তাম্বুর বাইরে থাকতে হবে। সেই সাত দিনের শেষ দিন তাকে তার দেহের সব চুল, অর্থাৎ তার মাথার চুল, দাড়ি, ভুরু এবং দেহের লোম কামিয়ে ফেলতে হবে। তারপর তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর তারপর সে সম্পূর্ণ শুচি হবে। “তার পরের দিন সে দু’টা ভেড়ার বাচ্চা আর একটা এক বছরের ভেড়ী নিয়ে আসবে। সেগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। সেই সংগে শস্য-উৎসর্গের জন্য সে পাঁচ কেজি চারশো গ্রাম তেল মিশানো মিহি ময়দা ও পৌনে দুই লিটার তেল নিয়ে আসবে। যে পুরোহিত তার শুচি হওয়ার অনুষ্ঠান করছে সে তাকে এবং উৎসর্গের জন্য আনা তার জিনিসগুলো মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করবে। “পুরোহিত সেই ভেড়া দু’টার একটা আর সেই পৌনে দুই লিটার তেল নিয়ে দোষ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে এবং দোলন-উৎসর্গ হিসাবে সদাপ্রভুর সামনে তা দোলাবে। পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকায় যেখানে পাপ-উৎসর্গ ও পোড়ানো-উৎসর্গের পশু কাটা হয় সেখানে সেই ভেড়াটা কাটতে হবে। পাপ-উৎসর্গের মাংসের মত দোষ-উৎসর্গের মাংসও পুরোহিতের পাওনা। এই মাংস মহাপবিত্র জিনিস। যে লোকটিকে শুচি করা হবে পুরোহিত দোষ-উৎসর্গের পশু থেকে কিছুটা রক্ত নিয়ে তার ডান কানের লতিতে এবং ডান হাত ও ডান পায়ের বুড়ো আংগুলে লাগিয়ে দেবে। এর পরে সেই তেলের কিছুটা সে তার বাঁ হাতের তালুতে ঢেলে নেবে। তারপর ডান হাতের বুড়ো আংগুলের পরের আংগুল দিয়ে বাঁ হাত থেকে তেল তুলে নিয়ে সাতবার তা সদাপ্রভুর সামনে ছিটাবে। তারপর তার হাতের বাকী তেল থেকে কিছুটা নিয়ে সে লোকটির ডান কানের লতিতে এবং ডান হাত ও ডান পায়ের বুড়ো আংগুলে দোষ-উৎসর্গের রক্তের উপরে লাগিয়ে দেবে। হাতের বাকী তেলটুকু সে লোকটির মাথায় দেবে। এইভাবে সদাপ্রভুর সামনে সে তার অশুচিতা ঢাকা দেবে। তারপর আট দিনের দিন শুচি হবার জন্য লোকটিকে এই সব জিনিস এনে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর সামনে পুরোহিতের কাছে দিতে হবে। পুরোহিত দোষ-উৎসর্গের ভেড়াটা এবং ঐ তেল নিয়ে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে সদাপ্রভুর সামনে দোলাবে। সেই উৎসর্গের জন্য কেটে নেওয়া ভেড়াটার কিছু রক্ত নিয়ে পুরোহিত লোকটির ডান কানের লতিতে এবং ডান হাত ও ডান পায়ের বুড়ো আংগুলে লাগিয়ে দেবে। লোকটির ডান কানের লতি এবং ডান হাত ও ডান পায়ের বুড়ো আংগুলের যে সব জায়গায় পুরোহিত দোষ-উৎসর্গের পশুর রক্ত লাগিয়েছে সেই সব জায়গাতেই সেই তেলের কিছুটা নিয়ে সে লাগিয়ে দেবে। সদাপ্রভুর সামনে তার অশুচিতা ঢাকা দেবার জন্য সে তার হাতের বাকী তেলটুকু লোকটির মাথায় দেবে। যাদের খারাপ চর্মরোগ হয়েছে অথচ শুচি হওয়ার জন্য যে উৎসর্গের জিনিস আনবার কথা বলা হয়েছে তা আনবার ক্ষমতা নেই তাদের জন্য এই হল নিয়ম। তারপর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “যে কনান দেশটা সম্পত্তি হিসাবে আমি তোমাদের দিতে যাচ্ছি সেই দেশে তোমরা ঢুকবার পর সেখানকার কোন বাড়িতে আমি যদি ছড়িয়ে পড়া ক্ষয়-করা ছাৎলা পড়বার ব্যবস্থা করি, তবে ঘরের মালিক পুরোহিতের কাছে গিয়ে বলবে, ‘আমার বাড়িতে ছাৎলার মত কি একটা দেখতে পাচ্ছি।’ পুরোহিত তা দেখবার জন্য ঘরে ঢুকবার আগেই আদেশ দেবে যেন ঘর থেকে সব কিছু বের করে ফেলা হয়, যাতে ঘরের কোন কিছুই অশুচি বলে ঘোষণা করা না হয়। তারপর পুরোহিত সেই ঘরে ঢুকে তা পরীক্ষা করে দেখবে। দেয়ালের ছাৎলা পরীক্ষা করবার সময় যদি দেখা যায় জায়গাটা দেয়ালের গা থেকে নীচু হয়ে গেছে আর ছাৎলার রং সবুজ বা লাল্‌চে এবং সেটা যদি আরও গভীরে চলে গেছে বলে তার মনে হয়, তবে সে সেই ঘর থেকে বের হয়ে এসে ঘরের দরজাটা সাত দিনের জন্য বন্ধ করে দেবে। সেই সাত দিনের শেষের দিন সে ফিরে এসে ঘরটা আবার পরীক্ষা করে দেখবে। যদি সেই ছাৎলা দেয়ালের উপর ছড়িয়ে গিয়ে থাকে, তবে সে আদেশ দেবে যেন সেখানকার ছাৎলা-ধরা পাথরগুলো বের করে শহরের বাইরে কোন অশুচি জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ঘরের ভিতরের সব দেয়াল চেঁছে ফেলে সেই চাঁছা অংশগুলো শহরের বাইরে কোন অশুচি জায়গায় ফেলে দিতে হবে। তারপর যেখান থেকে পাথর খুলে নেওয়া হয়েছে সেখানে নতুন পাথর বসিয়ে নতুন মাটি দিয়ে লেপে দিতে হবে। “দেয়ালটা থেকে পাথর খুলে ফেলে, চেঁছে, মাটি দিয়ে লেপবার পর ঘরের দেয়ালে যদি আবার ছাৎলা দেখা দেয়, তবে পুরোহিত আবার গিয়ে তা দেখবে। যদি দেখা যায় সেই ছাৎলা ঘরটায় ছড়িয়ে পড়েছে, তবে বুঝতে হবে সেটা একটা ক্ষয়-করা ছাৎলা, আর সেই ঘরটা অশুচি। তখন ঘরটার পাথর, লেপে দেওয়া মাটি এবং কাঠ সবই ভেংগে ফেলতে হবে এবং শহরের বাইরে কোন অশুচি জায়গায় নিয়ে সেগুলো ফেলে দিতে হবে। “সাত দিন বন্ধ রাখবার সময় যদি কেউ ঘরটার ভিতরে যায় তবে সে সেই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। যদি কেউ সেই ঘরে খায় বা ঘুমায় তবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে। “তবে সেই ঘরটা লেপে দেওয়ার পরে পুরোহিত তা পরীক্ষা করতে এসে যদি দেখে ছাৎলা ছড়িয়ে পড়ে নি তাহলে ঘরটা সে শুচি বলে ঘোষণা করবে, কারণ সেই ঘরটা আর ছাৎলা-ধরা অবস্থায় নেই। ঘরটা শুচি করবার জন্য পুরোহিতকে দু’টা পাখী, কিছু এরস কাঠ, লাল রংয়ের সুতা এবং এসোব গাছের ডাল নিতে হবে। তারপর মাটির পাত্রে রাখা স্রোত থেকে তুলে আনা জলের উপরে একটা পাখী তাকে কাটতে হবে; আর সেই এরস কাঠ, এসোবের ডাল, লাল রংয়ের সুতা এবং জ্যান্ত পাখীটা নিয়ে কেটে ফেলা অন্য পাখীটার রক্ত-মেশা স্রোতের জলে ডুবাতে হবে এবং ঘরটার উপরে সাতবার তা ছিটিয়ে দিতে হবে। পাখীর রক্ত, স্রোতের জল, জ্যান্ত পাখী, এরস কাঠ, এসোবের ডাল এবং লাল রংয়ের সুতা দিয়ে সে সেই ঘরটা শুচি করবে। তারপর সেই জ্যান্ত পাখীটা সে শহরের বাইরে খোলা মাঠে ছেড়ে দেবে। এইভাবে সে ঘরটার অশুচিতা ঢাকা দিলে পর ঘরটা শুচি হবে।” এই সব দিক থেকে মানুষ বা জিনিস কখন শুচি আর কখন অশুচি হয় এই নিয়মের মধ্যে সেই নির্দেশ রয়েছে। এই হল খারাপ চর্মরোগ ও ক্ষয়-করা ছাৎলা সম্বন্ধে নিয়ম। সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “তোমরা ইস্রায়েলীয়দের জানিয়ে দাও, কোন লোকের পুরুষাংগের যে কোন রকমের অস্বাভাবিক স্রাব অশুচি। এই স্রাব পুরুষকে এমন এক অশুচি অবস্থায় ফেলবে যে, তা চলতেই থাকুক বা আট্‌কে থাকুক সে অশুচি থাকবেই। এই অবস্থায় সে যে বিছানায় শোবে বা যে আসনে বসবে তা অশুচি হয়ে যাবে। যে লোকের স্রাব হচ্ছে তার বিছানা যে ছোঁবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। যে তার বসা কোন আসনে বসবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। যে লোকের স্রাব হচ্ছে সেই লোককে যে ছোঁবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। যে লোকের স্রাব হচ্ছে সে যদি কোন শুচি লোকের গায়ে থুথু ফেলে তবে সেই শুচি লোকটিকে কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সন্ধ্যা পর্যন্ত সে অশুচি অবস্থায় থাকবে। যে লোকের স্রাব হচ্ছে সে কিছুতে চড়ে কোথাও যাবার সময়ে যে আসনের উপর বসবে তা অশুচি হয়ে যাবে। তার বসা কোন আসন যদি কেউ ছোঁয় তবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। সেই আসন যে তুলবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সন্ধ্যা পর্যন্ত সে অশুচি অবস্থায় থাকবে। যে লোকের স্রাব হচ্ছে সে যদি জলে হাত না ধুয়ে কাউকে ছোঁয় তবে সেই লোকটিকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সন্ধ্যা পর্যন্ত সে অশুচি অবস্থায় থাকবে। যে লোকের স্রাব হচ্ছে সে যদি কোন মাটির পাত্র ছোঁয় তবে তা ভেংগে ফেলতে হবে, আর কাঠের পাত্র হলে তা জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। “যখন কোন লোকের স্রাব থেমে যাবে তখন থেকে শুচি হবার জন্য সাত দিন গুণে সপ্তম দিনে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে স্রোতের জলে স্নান করে ফেলতে হবে আর তখন সে শুচি হবে। আট দিনের দিন তাকে দু’টা ঘুঘু না হয় দু’টা কবুতর নিয়ে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর সামনে আসতে হবে এবং তা পুরোহিতের কাছে দিতে হবে। পুরোহিত সেই দু’টার একটা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের এবং অন্যটা দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। স্রাবের দরুন লোকটির যে অশুচি অবস্থা হয়েছিল তার জন্য পুরোহিত এইভাবে সদাপ্রভুর সামনে তার অশুচিতা ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে। “কোন পুরুষের বীর্যপাত হলে তাকে জল দিয়ে তার গোটা দেহটা ধুয়ে ফেলতে হবে, আর সন্ধ্যা পর্যন্ত সে অশুচি অবস্থায় থাকবে। কোন কাপড় বা চামড়ার জিনিষে বীর্য লাগলে সেটা জলে ধুয়ে ফেলতে হবে, আর সন্ধ্যা পর্যন্ত সেটা অশুচি থাকবে। কোন পুরুষ যখন কোন স্ত্রীলোককে নিয়ে শোয় তখন বীর্যপাত হলে দু’জনকেই জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। “স্ত্রীলোকের নিয়মিত মাসিকের রক্তের দরুন অশুচি অবস্থা সাত দিন ধরে চলবে। এই সময় যে তাকে ছোঁবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সে যেটার উপর শোবে বা বসবে তা সবই অশুচি হবে। যে তার বিছানা ছোঁবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সন্ধ্যা পর্যন্ত সে অশুচি অবস্থায় থাকবে। সেই স্ত্রীলোক যার উপর বসেছে তা যদি কেউ ছোঁয়, তবে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে তাকে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। তার বিছানা বা আসন যে ছোঁবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। যদি কোন পুরুষ এই রকম স্ত্রীলোককে নিয়ে শোয় এবং তার মাসিকের রক্ত তার গায়ে লাগে তবে সে সাত দিন পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। এই সাত দিনের মধ্যে সে যে বিছানায় শোবে তা-ও অশুচি হবে। “মাসিক ছাড়াও যদি কোন স্ত্রীলোকের অনেক দিন ধরে রক্তস্রাব হতে থাকে কিম্বা মাসিকের নিয়মিত সময় পার হয়ে যাবার পরেও যদি তার স্রাব হতে থাকে তবে যতদিন ধরে তা চলবে ততদিন পর্যন্ত সে তার মাসিকের সময়ের মতই অশুচি অবস্থায় থাকবে। মাসিকের সময়ে যেমন হয় তেমনি এই স্রাবের সময়েও সে যে বিছানায় শোবে এবং যার উপর বসবে তা অশুচি হবে। যে সেই বিছানা বা আসন ছোঁবে সে-ও অশুচি হবে; তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। তার সেই রক্তস্রাব থেমে যাবার পরেও তাকে গুণে সাতটা দিন কাটাতে হবে এবং ঐ দিনেই সে শুচি হবে। আট দিনের দিন তাকে দু’টা ঘুঘু না হয় দু’টা কবুতর নিয়ে মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে পুরোহিতের কাছে যেতে হবে। পুরোহিত সেই দু’টার একটা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের এবং অন্যটা দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। এইভাবে পুরোহিত সদাপ্রভুর সামনে তার রক্তস্রাবের অশুচিতা ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে।” শেষে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে আমার আবাস-তাম্বু রয়েছে। তোমরা সমস্ত অশুচিতা থেকে তাদের দূরে রাখবে যাতে তারা আবাস-তাম্বুটা অশুচি করে তাদের অশুচিতার মধ্যে মারা না পড়ে।” হারোণের দুই ছেলে অন্যায়ভাবে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হয়ে মারা যাবার পরে সদাপ্রভু মোশির সংগে কথা বললেন। তিনি বললেন, “তোমার ভাই হারোণকে বল, সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরকার ঢাকনার সামনে যে পর্দা রয়েছে তার পিছনে সেই পবিত্র জায়গায় সে যেন তার খুশীমত যখন-তখন না যায়। তা করলে সে মারা যাবে, কারণ সেই ঢাকনার উপরে মেঘের মধ্যে আমি প্রকাশিত থাকি। “সেখানে ঢুকবার আগে সে যেন নিজেকে এইভাবে তৈরী করে নেয়। তাকে পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড় ও পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ভেড়া নিতে হবে। তার পরনে থাকবে পবিত্র মসীনার জামা আর নীচে থাকবে মসীনার তৈরী জাংগিয়া। তাকে মসীনার কোমর-বাঁধনি কোমরে বাঁধতে হবে আর মাথায় দিতে হবে মসীনার পাগড়ি। এগুলো পবিত্র পোশাক। তা পরবার আগে তাকে জলে স্নান করে নিতে হবে। পাপ-উৎসর্গের জন্য ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে তাকে দু’টা ছাগল এবং পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ভেড়া নিতে হবে। হারোণকে তার নিজের ও তার বংশধরদের পাপ ঢাকা দেবার জন্য পাপ-উৎসর্গের ষাঁড়টা উৎসর্গ করতে হবে। তারপর সেই দু’টা ছাগল নিয়ে তাকে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর সামনে নিয়ে যেতে হবে। তাকে গুলিবাঁট করে দেখতে হবে যে, তার মধ্যে কোন্‌ ছাগলটা সদাপ্রভুর জন্য আর কোন্‌টা অজাজেলের জন্য। যে ছাগলটা সদাপ্রভুর বলে দেখা যাবে হারোণ সেটা নিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। কিন্তু গুলিবাঁটে যে ছাগলটা অজাজেলের জন্য উঠবে সেটা জ্যান্ত অবস্থাতেই সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করতে হবে এবং পাপ ঢাকা দেবার উদ্দেশ্যে অজাজেলের জন্য মরু-এলাকায় পাঠিয়ে দিতে হবে। “হারোণ তার নিজের ও তার বংশধরদের পাপ ঢাকা দেবার উদ্দেশ্যে তার নিজের পাপ-উৎসর্গের জন্য আনা সেই ষাঁড়টা নিয়ে কাটবে। সদাপ্রভুর সামনে যে বেদী রয়েছে সে সেই বেদী থেকে আগুনের পাত্রে জ্বলন্ত কয়লা ভরে নেবে আর মিহি করে গুঁড়ো করা দু’মুঠো সুগন্ধি ধূপও নেবে। এগুলো নিয়ে সে পর্দার পিছনে যাবে। সেখানে সদাপ্রভুর সামনে সে আগুনের উপরে ধূপ দেবে। সেই ধূপের ধূমায় সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরের ঢাকনাটা ঢাকা পড়ে যাবে আর তাতে সে মারা পড়বে না। তারপর তাকে সেই ষাঁড়ের কিছুটা রক্ত নিয়ে আংগুল দিয়ে ঢাকনাটার সামনের দিকের কিনারায় তা ছিটিয়ে দিতে হবে। এর পর আংগুল দিয়ে তাকে আরও কিছুটা রক্ত নিয়ে ঢাকনার সামনে সাতবার ছিটিয়ে দিতে হবে। “তারপর তাকে লোকদের পাপ-উৎসর্গের ছাগলটা কাটতে হবে এবং তার রক্ত নিয়ে পর্দার পিছনে গিয়ে ষাঁড়ের রক্ত দিয়ে যা করবার কথা বলা হয়েছে তা-ই করতে হবে। সিন্দুকের ঢাকনার উপরে ও সামনে সেই রক্ত তাকে ছিটিয়ে দিতে হবে। ইস্রায়েলীয়েরা যে পাপই করে থাকুক না কেন, তাদের সেই অশুচিতা এবং অবাধ্যতার দরুন মহাপবিত্র স্থানের অশুচিতা হারোণ এইভাবেই ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে। ইস্রায়েলীয়দের অশুচিতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা মিলন-তাম্বুর জন্যও তাকে সেই একই ব্যবস্থা করতে হবে। মহাপবিত্র স্থানে ঢুকে যতক্ষণ পর্যন্ত হারোণ তার নিজের ও তার বংশধরদের এবং গোটা ইস্রায়েল জাতির পাপ ঢাকা দেবার কাজ শেষ করে বের হয়ে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ মিলন-তাম্বুতে থাকতে পারবে না। মিলন-তাম্বু থেকে বের হয়ে এসে হারোণ সদাপ্রভুর সামনে যে বেদী রয়েছে সেখানে গিয়ে বেদীটার অশুচিতা ঢাকা দেবে। সেই ষাঁড় ও ছাগলটার কিছু রক্ত নিয়ে সে তা বেদীর শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে। বেদীটা শুচি করবার জন্য এবং সেটা ইস্রায়েলীয়দের অশুচিতা থেকে পবিত্র করবার জন্য সে আংগুল দিয়ে তার উপর সাতবার রক্ত ছিটিয়ে দেবে। “মহাপবিত্র স্থান, মিলন-তাম্বু এবং বেদীর অশুচিতা ঢাকা দেবার অনুষ্ঠান শেষ করে হারোণ সেই জ্যান্ত ছাগলটা নিয়ে আসবে। সে তার দুই হাত সেই জ্যান্ত ছাগলটার মাথার উপর রাখবে এবং ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত অন্যায় ও অবাধ্যতা, অর্থাৎ তাদের সমস্ত পাপ স্বীকার করে তা ছাগলটার মাথার উপর চাপিয়ে দেবে। তারপর এই কাজের জন্য তৈরী হয়ে আছে এমন একজন লোককে দিয়ে সে সেটা মরু-এলাকায় পাঠিয়ে দেবে। সেই লোকটিই সেটাকে মরু-এলাকায় ছেড়ে দিয়ে আসবে। ছাগলটা কোন নির্জন জায়গায় তাদের সমস্ত অন্যায় বয়ে বেড়াবে। “মহাপবিত্র স্থানে ঢুকবার আগে হারোণ যে সব মসীনার কাপড় পরবে মিলন-তাম্বুতে ফিরে এসে সেগুলো তাকে খুলে সেখানেই রেখে দিতে হবে। তারপর সে পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকায় গিয়ে জলে স্নান করে পুরোহিতের নিয়মিত কাপড়-চোপড় পরবে। এর পর সে বের হয়ে এসে তার নিজের ও লোকদের জন্য একটা করে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে তার নিজের ও লোকদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে। পাপ-উৎসর্গের পশুর চর্বি তাকে বেদীর উপর পুড়িয়ে দিতে হবে। যে লোকটি অজাজেলের জন্য ছাগলটাকে ছেড়ে দিয়ে আসবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে, আর তারপর সে ছাউনির মধ্যে ঢুকতে পারবে। পাপ ঢাকা দেবার জন্য পাপ-উৎসর্গের যে ষাঁড় ও ছাগলের রক্ত মহাপবিত্র স্থানে নিয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর দেহ ছাউনির বাইরে নিয়ে গিয়ে চামড়া, মাংস এবং গোবর সুদ্ধ সব কিছু পুড়িয়ে দিতে হবে। যে লোকটি তা পোড়াবার জন্য নিয়ে যাবে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে আর তার পরে সে ছাউনির মধ্যে ঢুকতে পারবে। “এর পর যা বলছি তা তোমাদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম হয়ে থাকবে। বছরের সপ্তম মাসের দশম দিনের দিন তোমরা প্রত্যেকে নিজের অন্তর ভেংগেচুরে কষ্টস্বীকার করবে। সেই দিন কোন কাজ করা চলবে না। ইস্রায়েলীয়ই হোক কিম্বা ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকই হোক, সকলকেই তা মানতে হবে, কারণ এই দিনেই তোমাদের পাপ ঢাকা দেবার অনুষ্ঠান করে তোমাদের শুচি করে নেওয়া হবে, আর তার পরে তোমরা সদাপ্রভুর সামনে তোমাদের সমস্ত পাপ থেকে শুচি হবে। এই দিনটা হবে তোমাদের কাজ থেকে বিশ্রামের দিন। এই দিনে তোমরা প্রত্যেকে নিজের অন্তর ভেংগেচুরে কষ্টস্বীকার করবে। এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম। “এটা হবে তোমাদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম। বছরে একবার করে ইস্রায়েলীয়দের সব পাপের জন্য এই পাপ ঢাকা দেবার অনুষ্ঠান করতে হবে।” মোশিকে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ মতই সব কিছু করা হয়েছিল। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “সদা-প্রভুর এই আদেশ তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জানিয়ে দাও। তাদের বল, ইস্রায়েলীয়েরা এখন যে সব পশু মাঠে-ময়দানে উৎসর্গ করছে তা যাতে তারা সদাপ্রভুর কাছে নিয়ে আসে সেইজন্য এই আদেশ দেওয়া হল। তাদের সেগুলো মিলন-তাম্বুর দরজায় পুরোহিতের কাছে এনে সদাপ্রভুর উদ্দেশে যোগাযোগ-উৎসর্গ হিসাবে উৎসর্গ করতে হবে। মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর যে বেদী রয়েছে তার গায়ে সেই পশুর রক্ত পুরোহিতকে ছিটিয়ে দিতে হবে আর সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধ হিসাবে সেই পশুর চর্বি পুড়িয়ে দিতে হবে। সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে ছাগ-দেবতাদের উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করে তাদের আর নিজেদের বিকিয়ে দেওয়া চলবে না। এটা একটা স্থায়ী নিয়ম হিসাবে বংশের পর বংশ ধরে তাদের পালন করতে হবে। “কোন ইস্রায়েলীয় কিম্বা তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যদি রক্ত খায় তবে তার দিক থেকে আমি আমার মুখ ফিরিয়ে নেব এবং তার জাতি থেকে তাকে মুছে ফেলব, কারণ রক্তেই থাকে প্রাণীর প্রাণ। সেইজন্যই তোমাদের প্রাণের বদলে আমি তা দিয়ে বেদীর উপরে তোমাদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা দিয়েছি। রক্তের মধ্যে প্রাণ আছে বলেই তা পাপ ঢাকা দেয়। সেইজন্যই আমি ইস্রায়েলীয়দের বলছি, তারা এবং তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যেন রক্ত না খায়। কোন ইস্রায়েলীয় কিম্বা তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যদি খাওয়ার মত কোন পশু বা পাখী শিকার করে আনে তবে তাকে তার রক্ত বের করে সেই রক্ত মাটি চাপা দিয়ে রাখতে হবে, কারণ সমস্ত প্রাণীর প্রাণ রয়েছে তার জীবন্ত দেহের রক্তে। সেইজন্যই আমি ইস্রায়েলীয়দের বলেছি যেন তারা কোন প্রাণীর রক্ত না খায়, কারণ রক্তই হল প্রত্যেকটি প্রাণীর প্রাণ। যে সেই রক্ত খাবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। “কেউ যদি মরা পশুর বা বুনো জন্তুতে ছিঁড়ে ফেলা পশুর মাংস খায়- সে ইস্রায়েলীয়ই হোক বা তাদের মধ্যে বাস-করা অন্য জাতির লোকই হোক- তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে। সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে, তারপর সে শুচি হবে। কিন্তু সে যদি কাপড়-চোপড় না ধোয় এবং স্নান না করে তবে তাকে তার অন্যায়ের জন্য দায়ী করা হবে।” সেইজন্য তোমরা যেখানে বাস করতে সেই মিসর দেশের লোকেরা যা করে তোমরা তা করবে না এবং আমি যেখানে তোমাদের নিয়ে যাচ্ছি সেই কনান দেশের লোকেরা যা করে তা-ও তোমরা করবে না। তোমরা সেই সব লোকদের চালচলন অনুসারে চলবে না। তোমাদের চলতে হবে আমার আইন-কানুন অনুসারে। আমার দেওয়া নিয়ম তোমাদের যত্নের সংগে পালন করতে হবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। আমার নিয়ম ও আইন-কানুন তোমাদের পালন করতে হবে, কারণ যে তা পালন করবে সে তার মধ্য দিয়েই জীবন পাবে। আমি সদাপ্রভু। “নিকট সম্বন্ধ আছে এমন কোন আত্মীয়ার সংগে দেহের মিলন চলবে না। আমি সদাপ্রভু। তোমাদের মধ্যে কেউ যেন নিজের মায়ের সংগে দেহে মিলিত হয়ে বাবার অসম্মান না করে। সে তার মা; মায়ের সংগে দেহের মিলন চলবে না। সৎমায়ের সংগে দেহের মিলন চলবে না। তা করলে বাবাকে অসম্মান করা হবে। নিজের বোন বা সৎবোনের সংগে দেহের মিলন চলবে না- সে বাবার মেয়ে হোক বা মায়ের মেয়ে হোক, আর তাদের জন্ম একই বাড়ীতে হোক বা ভিন্ন ভিন্ন জায়গাতেই হোক। ছেলে বা মেয়ের ঘরের নাতনীর সংগে দেহের মিলন চলবে না; তাতে নিজেরই অসম্মান হবে। সৎমায়ের গর্ভে যে বোনের জন্ম হয়েছে তার সংগে দেহের মিলন চলবে না। সে বোন। পিসীমার সংগে দেহের মিলন চলবে না, কারণ তার সংগে বাবার রক্তের সম্বন্ধ রয়েছে। মাসীমার সংগে দেহের মিলন চলবে না, কারণ তার সংগে মায়ের রক্তের সম্বন্ধ রয়েছে। বাবার কোন ভাইয়ের স্ত্রীর সংগে দেহের মিলন চলবে না, কারণ সে কাকীমা বা জেঠিমা। ছেলের বৌয়ের সংগে দেহের মিলন চলবে না। সে ছেলের স্ত্রী বলেই তার সংগে দেহের মিলন চলবে না। ভাইয়ের স্ত্রীর সংগে দেহের মিলন চলবে না। তা করলে ভাইকে অসম্মান করা হবে। একই সংগে কোন স্ত্রীলোক ও তার মেয়ের সংগে দেহের মিলনের সম্বন্ধ রাখা চলবে না। সেই স্ত্রীলোকের ছেলে বা মেয়ের ঘরের নাতনীর সংগে দেহের মিলন চলবে না, কারণ সেই স্ত্রীলোকের সংগে তাদের রক্তের সম্বন্ধ রয়েছে। এটা একটা নোংরা কাজ। স্ত্রী বেঁেচ থাকতে স্ত্রীর বোনকে সতীন হিসাবে বিয়ে করা চলবে না। “মাসিকের অশুচি অবস্থার সময় কোন স্ত্রীলোকের সংগে দেহের মিলনের জন্য যাওয়া চলবে না। অন্য কারও স্ত্রীর সংগে দেহে মিলিত হয়ে নিজেকে অশুচি করা চলবে না। “তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার ছেলে বা মেয়েকে মোলক দেবতার কাছে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ না করে কিম্বা অন্য কোন ভাবে নিজের ঈশ্বরের নামের পবিত্রতা নষ্ট না করে। আমি সদাপ্রভু। “স্ত্রীলোকের সংগে দেহে মিলিত হবার মত করে পুরুষের সংগে পুরুষের দেহে মিলিত হওয়া চলবে না। এটা একটা জঘন্য কাজ। পশুর সংগে দেহে মিলিত হয়ে কোন পুরুষের নিজেকে অশুচি করা চলবে না। কোন পশুর সংগে কোন স্ত্রীলোকের দেহের মিলন চলবে না। এই সব মিলন স্বাভাবিক নিয়মের বিরুদ্ধে। “এই রকমের কোন কাজ করে তোমাদের মধ্যে কেউ যেন নিজেকে অশুচি না করে, কারণ তোমাদের সামনে থেকে যে সব জাতিকে আমি তাড়িয়ে দেব তারাও ঐভাবে নিজেদের অশুচি করেছে। এতে তাদের দেশটা পর্যন্ত অশুচি হয়ে গেছে। তাই অন্যায়ের জন্য দেশটাকে আমি শাস্তি দিচ্ছি আর দেশটাও তার লোকদের বমি করে ফেলে দিতে যাচ্ছে। কিন্তু তোমরা আমার নিয়ম ও আইন-কানুন মেনে চলবে। তোমাদের জাতির কিম্বা তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যেন এই রকমের কোন জঘন্য কাজ না করে। আগে থেকে যারা ঐদেশে বাস করে আসছে তারা ঐ সব কাজ করে দেশটাকে অশুচি করে ফেলেছে। তোমরাও যদি দেশটা অশুচি কর তবে সেখানকার আগের জাতিদের মত দেশটা তোমাদেরও বমি করে ফেলে দেবে। “যদি কেউ এই ধরনের কোন জঘন্য কাজ করে তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। আমার আদেশগুলো তোমরা মেনে চলবে এবং সেখানে পৌঁছে আগের বাসিন্দাদের জঘন্য চালচলনের কোনটাই তোমরা গ্রহণ করবে না। এই সব দিয়ে তোমরা নিজেদের অশুচি করবে না। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর।” তোমরা তোমাদের মা-বাবাকে ভক্তি করবে এবং আমার বিশ্রামবার পালন করবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। মূর্তিপূজা করা তোমাদের চলবে না কিম্বা নিজেদের উপাসনার জন্য ছাঁচে ফেলে ধাতু দিয়ে কোন দেব-দেবতা তৈরী করা চলবে না। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। “তোমরা যখন সদাপ্রভুর উদ্দেশে কোন যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে তখন তা এমন ভাবে করবে যাতে সদাপ্রভু তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হন। অনুষ্ঠানের দিনে কিম্বা তার পরের দিনের মধ্যেই উৎসর্গের মাংস তোমাদের খেয়ে ফেলতে হবে। তৃতীয় দিনে যদি কিছু বাকী থেকেই যায় তবে তা পুড়িয়ে দিতে হবে, কারণ তৃতীয় দিনে সেই মাংস অশুচি হয়ে যায়। যদি কেউ সেই মাংস খায় তবে সদাপ্রভু সেই উৎসর্গ আর গ্রহণ করবেন না। যে তা খাবে তাকে তার অন্যায়ের জন্য দায়ী করা হবে, কারণ তাতে আমার পবিত্র জিনিসকে অপবিত্র করা হবে। সেই লোককে তার জাতি থেকে মুছে ফেলতে হবে। “ফসল কাটবার সময়ে তোমরা ক্ষেতের কিনারার ফসল কাটবে না এবং ক্ষেতে যা পড়ে থাকবে তা-ও কুড়াবে না। আংগুর ক্ষেত থেকে আংগুর তোলা হয়ে গেলে আবার তোমরা সেই ক্ষেতে আংগুর তুলতে যাবে না এবং পড়ে থাকা আংগুর কুড়াবে না। গরীব ও ভিন্ন জাতির লোকদের জন্য তা রেখে দিতে হবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। “চুরি করা চলবে না, কাউকে ঠকানো চলবে না, মিথ্যা কথা বলা চলবে না। আমার নাম নিয়ে মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করে তোমাদের ঈশ্বরের নামের পবিত্রতা নষ্ট করা চলবে না। আমি সদাপ্রভু। “কোন মানুষের উপর অন্যায় সুবিধা নেওয়া কিম্বা জুলুম করে তার জিনিস নেওয়া চলবে না। মজুরের দিনের পাওনা দিনেই দিয়ে দিতে হবে; তা সকাল পর্যন্ত আট্‌কে রাখা চলবে না। যে কানে শোনে না তাকে অভিশাপ দেবে না কিম্বা যে চোখে দেখে না তার পথে উছোট খাবার মত কোন জিনিস রাখবে না। তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে চলবে। আমি সদাপ্রভু। “অন্যায় বিচার করা চলবে না। বিচারে ছোট-বড় কারও পক্ষ নেওয়া চলবে না; তোমরা প্রত্যেকের প্রতি ন্যায়বিচার করবে। কারও নিন্দা করে বেড়ানো চলবে না। কোন মানুষের প্রাণের ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু করা চলবে না। আমি সদাপ্রভু। “অন্যের প্রতি মনের মধ্যে ঘৃণা পুষে রাখা চলবে না। অন্যের দোষ অবশ্যই দেখিয়ে দিতে হবে যাতে তার দরুন তোমরা নিজেরা দোষী না হও। প্রতিশোধ নেওয়া চলবে না, কিম্বা কারও বিরুদ্ধে মনের মধ্যে হিংসার ভাব পুষে রাখা চলবে না। প্রত্যেক মানুষকে নিজের মত করে ভালবাসতে হবে। আমি সদাপ্রভু। “আমার নিয়ম মেনে চলতে হবে। বিভিন্ন জাতের পশুদের মধ্যে দেহের মিলন ঘটানো চলবে না। একই ক্ষেতে দুই রকম বীজ বোনা চলবে না। দুই জাতের সুতায় বোনা কাপড় পরা চলবে না। “অন্যের সংগে বিয়ের সম্বন্ধ করা হয়েছে অথচ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় নি কিম্বা মুক্তি দেওয়া হয় নি এমন কোন দাসীর সংগে যদি কেউ দেহে মিলিত হয় তাহলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। সেই দু’জনকে মেরে ফেলা চলবে না কারণ মেয়েটিকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় নি। কিন্তু সেই লোককে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তার দোষ-উৎসর্গ হিসাবে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে একটা ভেড়া নিয়ে আসতে হবে। দোষ-উৎসর্গের সেই ভেড়াটা দিয়ে পুরোহিতকে সদাপ্রভুর সামনে তার সেই পাপ ঢাকা দিতে হবে। তাতে তার সেই পাপ ক্ষমা করা হবে। “তোমাদের দেশে গিয়ে যদি তোমরা কোন ফলের গাছ লাগাও তবে তার ফল তোমাদের তিন বছর পর্যন্ত নিষেধ করা ফল বলে ধরতে হবে। ঐ সময়ের মধ্যে ঐ ফল খাওয়া তোমাদের চলবে না। চতুর্থ বছরে গাছের সমস্ত ফল সদাপ্রভুর গৌরবের জন্য তাঁর উদ্দেশে উৎসর্গ করতে হবে। পঞ্চম বছর থেকে তোমরা সেই গাছের ফল খেতে পারবে। এতে তোমাদের গাছে প্রচুর ফলন হবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। “রক্ত সুদ্ধ কোন মাংস খাওয়া চলবে না। লক্ষণ-বিদ্যা কিম্বা মায়াবিদ্যা ব্যবহার করা চলবে না। মাথার দু’পাশের চুল কাটা বা দাড়ির আগা ছাঁটা চলবে না। মৃত লোকদের জন্য শোক-প্রকাশ করতে গিয়ে দেহের কোন জায়গা ক্ষত করা চলবে না। দেহে কোন উল্‌কি-চিহ্ন দেওয়া চলবে না। আমি সদাপ্রভু। “নিজের মেয়েকে বেশ্যা বানিয়ে তাকে নীচে নামানো চলবে না। তা করলে দেশে বেশ্যাগিরি বেড়ে যাবে এবং শেষে দেশ নোংরামিতে ভরে যাবে। আমার আদেশ করা বিশ্রামের দিনগুলো পালন করতে হবে এবং আমার আবাস-তাম্বুর প্রতি ভক্তি রাখতে হবে। আমি সদাপ্রভু। “যারা ভূতের মাধ্যম হয় কিম্বা যারা মন্দ আত্মার সংগে সম্বন্ধ রাখে তাদের কাছে যাওয়া চলবে না, কারণ তারা তোমাদের অশুচি করে তুলবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। “যারা বৃদ্ধ তারা কাছে আসলে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের সম্মান করতে হবে। তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে। আমি সদাপ্রভু। “তোমাদের দেশে তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকের সংগে খারাপ ব্যবহার করা চলবে না। নিজের জাতির লোকের সংগে যেমন ব্যবহার করা হয় তার সংগে তেমনই ব্যবহার করতে হবে। তাকে নিজের মত করে ভালবাসতে হবে, কারণ তোমরাও মিসরীয়দের মধ্যে অন্য জাতির লোক ছিলে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। “বিচারে রায় দিতে অথবা কোন কিছু লম্বায় কিম্বা ওজনে কিম্বা পরিমাণে কতখানি তা মাপতে গিয়ে তোমরা অন্যায় কোরো না। তোমাদের দাঁড়িপাল্লা, বাটখারা এবং অন্যান্য মাপের জিনিস যেন ঠিক হয়। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। মিসর দেশ থেকে আমিই তোমাদের বের করে এনেছি। আমার সমস্ত নিয়ম তোমাদের পালন করতে হবে এবং সমস্ত আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। আমি সদাপ্রভু।” তার দিক থেকে আমি মুখ ফিরিয়ে নেব এবং তার জাতি থেকে আমি তাকে মুছে ফেলব, কারণ মোলক দেবের কাছে তার সন্তান উৎসর্গ করে সে আমার পবিত্র তাম্বু অশুচি করেছে এবং আমার পবিত্র নামের পবিত্রতা নষ্ট করেছে। মোলক দেবের কাছে সন্তান উৎসর্গ করবার সময়ে যদি দেশের লোকেরা তা দেখেও না দেখে এবং উৎসর্গকারীকে মেরে না ফেলে, তবে সেই উৎসর্গকারী এবং তার পরিবার থেকে আমি নিজেই মুখ ফিরিয়ে নেব। তাকে এবং তার সংগে যারা আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে মোলক দেবের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছে তাদের আমি ইস্রায়েল জাতি থেকে মুছে ফেলব। “যে লোক আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে ভূতের মাধ্যমের কাছে কিম্বা মন্দ আত্মার সংগে সম্বন্ধ রাখে এমন লোকের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেয় আমি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব এবং তার জাতি থেকে তাকে মুছে ফেলব। তোমরা আমার উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করে নিয়ে পবিত্র হও, কারণ আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। আমার নিয়ম তোমাদের ধরে রাখতে হবে এবং সেইমত চলতে হবে। আমি সদাপ্রভু, আমিই তোমাদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিয়েছি। “যার কথায় মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। সেই অশ্রদ্ধার দরুন সে নিজের মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী। “যদি কেউ তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সংগে, অর্থাৎ অন্য কোন লোকের স্ত্রীর সংগে ব্যভিচার করে তবে ব্যভিচারী এবং ব্যভিচারিণী দু’জনকেই মেরে ফেলতে হবে। যে তার সৎমায়ের সংগে দেহে মিলিত হয় সে তার বাবাকে অসম্মান করে। তা করলে তাকে এবং তার সৎমাকে মেরে ফেলতে হবে। তারা নিজেদের মৃত্যুর জন্য নিজেরাই দায়ী। কেউ যদি তার ছেলের বৌয়ের সংগে দেহে মিলিত হয় তবে তাদের দু’জনকেই মেরে ফেলতে হবে। তাদের মিলন স্বাভাবিক নিয়মের বিরুদ্ধে। তারা নিজেদের মৃত্যুর জন্য নিজেরাই দায়ী। স্ত্রীলোকের সংগে দেহে মিলিত হবার মত করে যদি কেউ পুরুষের সংগে মিলিত হয় তবে তা দু’জনের পক্ষেই একটা জঘন্য ব্যাপার। তাদের মেরে ফেলতে হবে। তারা নিজেদের মৃত্যুর জন্য নিজেরাই দায়ী। যে লোক কোন মেয়েকে এবং তার মাকেও বিয়ে করে সে নোংরা কাজ করে। যদি কেউ তা করে তবে সেই লোক ও সেই দু’জন স্ত্রীলোককে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে হবে যাতে এই রকম নোংরা ব্যাপার তোমাদের মধ্যে না ঘটে। কোন পশুর সংগে কেউ যদি দেহে মিলিত হয় তবে তাকে ও সেই পশুটাকে মেরে ফেলতে হবে। কোন স্ত্রীলোক যদি কোন পশুর সংগে দেহে মিলিত হবার চেষ্টা করে তবে সেই স্ত্রীলোক ও সেই পশুটাকে মেরে ফেলতে হবে। তাদের মেরে ফেলতেই হবে। তারা নিজেদের মৃত্যুর জন্য নিজেরাই দায়ী। “নিজের বোনকে অথবা সৎবোনকে বিয়ে করে তার সংগে দেহে মিলিত হওয়া একটা লজ্জার কাজ- সেই বোন মায়ের দিক থেকেই হোক কিম্বা বাবার দিক থেকেই হোক। যারা তা করবে লোকদের চোখের সামনেই তাদের মেরে ফেলতে হবে। এই কাজ করে বোনকে অসম্মান করবার জন্য তাকে দায়ী করা হবে। কোন স্ত্রীলোকের মাসিকের সময়ে যে লোক তার সংগে দেহে মিলিত হয় সে সেই স্ত্রীলোকটির রক্তস্রাবের মর্যাদা দেয় না আর সেই স্ত্রীলোকটি নিজেও তার মর্যাদা রাখে না। তাদের দু’জনকেই তাদের জাতি থেকে মুছে ফেলতে হবে। কেউ যেন মাসীমা বা পিসীমার সংগে দেহে মিলিত না হয়। এতে রক্তের সম্বন্ধ রয়েছে এমন একজন আত্মীয়াকে অসম্মান করা হয়। এর জন্য তাদের দু’জনকেই দায়ী করা হবে। যদি কেউ কাকীমা, জেঠিমা বা মাসীমার সংগে দেহে মিলিত হয়, তবে সে তার কাকা, জেঠা বা মামার অসম্মান করে। এর জন্য তাদের দু’জনকেই দায়ী করা হবে। তারা সন্তানহীন অবস্থায় মরবে। ভাই জীবিত থাকতে যে তার স্ত্রীকে বিয়ে করে সে একটা জঘন্য কাজ করে। এতে সে তার ভাইয়ের অসম্মান করে। তাদের কোন সন্তান হবে না। “আমি তোমাদের যে দেশে বাস করবার জন্য নিয়ে যাচ্ছি সেই দেশ যাতে তোমাদের বমি করে ফেলে না দেয় সেইজন্য আমার সমস্ত নিয়ম ও আইন-কানুন তোমাদের পালন করতে হবে। তোমাদের সামনে থেকে আমি যে সব জাতিকে তাড়িয়ে দিতে যাচ্ছি তোমরা ঐ সব জাতির চালচলন অনুসারে চলবে না। তাদের ঐ সব চালচলনের জন্যই আমি তাদের খুব ঘৃণার চোখে দেখি। আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, তাদের দেশ তোমাদের অধীনে আসবে। দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই এমন একটা দেশ সম্পত্তি হিসাবে আমি তোমাদের দেব। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। অন্য সব জাতি থেকে আমিই তোমাদের আলাদা করেছি। সেইজন্য পশু এবং পাখীর মধ্যে কোন্‌গুলো শুচি আর কোন্‌গুলো অশুচি তা বুঝে তোমাদের চলতে হবে। যে সব পশু-পাখী বা মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো ছোটখাটো প্রাণী তোমাদের জন্য আমি অশুচি বলে আলাদা করে দিয়েছি, সেগুলোর কোনটা দিয়েই যেন তোমরা নিজেদের ঘৃণার পাত্র করে না তোল। আমি সদাপ্রভু পবিত্র বলে তোমাদেরও পবিত্র হতে হবে; আর আমিই তোমাদের আমার নিজের লোক হওয়ার জন্য অন্য সব জাতি থেকে আলাদা করে নিয়েছি। “যে সব পুরুষ বা স্ত্রীলোক ভূতের মাধ্যম হয় কিম্বা যারা মন্দ আত্মার সংগে সম্বন্ধ রাখে তাদের শাস্তি হবে মৃত্যু। তাদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে হবে। নিজেদের মৃত্যুর জন্য তারা নিজেরাই দায়ী।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি পুরোহিতদের, অর্থাৎ হারোণের ছেলেদের বল যে, তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কেউ মারা গেলে তার দরুন কোন পুরোহিতের নিজেকে অশুচি করা চলবে না। তবে মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই- এই রকম কাছে সম্বন্ধের লোকদের জন্য তার নিজেকে অশুচি করা চলবে। তা ছাড়া বিয়ে হয় নি বলে যে বোন তার সংসারে আছে তার জন্যও তার নিজেকে অশুচি করা চলবে। স্ত্রীর দিক থেকে যারা আত্মীয় তাদের জন্য নিজেকে অশুচি করে আলাদা করা অবস্থা থেকে সাধারণ অবস্থায় তার নেমে আসা চলবে না। “পুরোহিতদের মাথা কামানো, দাড়ির আগা ছাঁটা কিম্বা দেহের কোন জায়গা ক্ষত করা চলবে না। তা করে তারা তাদের ঈশ্বরের নামের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারবে না। তারা যেন তাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে থাকে। পুরোহিতেরাই সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে, আর সেইজন্যই সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে তাদের আলাদা হয়ে থাকতে হবে। এই উৎসর্গের জিনিসই হল তাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করা খাবার। বেশ্যা, পতিতা বা স্বামীর ছেড়ে দেওয়া কোন স্ত্রীলোককে তাদের বিয়ে করা চলবে না। যিনি তাদের ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্যে তারা আলাদা করে রাখা। হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরাও পুরোহিতদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা লোক হিসাবে দেখবে, কারণ তারা তোমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে খাবার উৎসর্গ করবার কাজ করে। আলাদা করে রাখা লোক বলেই তাদের দেখতে হবে, কারণ আমি সদাপ্রভু নিজেই পবিত্র এবং আমিই তোমাদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি। কোন পুরোহিতের মেয়ের যদি বেশ্যাগিরির দরুন পতন হয় তবে সে তার বাবাকেই আলাদা করা অবস্থা থেকে সাধারণ অবস্থায় নামিয়ে আনে। সেই মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। “মহাপুরোহিত, অর্থাৎ ভাইদের মধ্যে যার মাথায় অভিষেক-তেল ঢালা হয়েছে এবং বহাল করবার অনুষ্ঠান দ্বারা যে মহাপুরোহিতের পবিত্র পোশাক পরবার অধিকার পেয়েছে, শোক-প্রকাশের জন্য তার চুলের বাঁধন খুলে দেওয়া কিম্বা তার কাপড় ছেঁড়া চলবে না। একমাত্র কুমারী মেয়েকে সে বিয়ে করতে পারবে। বিধবা কিম্বা স্বামী যাকে ছেড়ে দিয়েছে কিম্বা বেশ্যা হয়ে যে নিজেকে অশুচি করেছে এমন কোন স্ত্রীলোককে তার বিয়ে করা চলবে না। কেবলমাত্র নিজের জাতির কুমারী মেয়েকেই তার বিয়ে করা চলবে, যাতে সে গোটা বংশের মধ্যে তার নিজের সন্তানদের আলাদা করা অবস্থা থেকে সাধারণ অবস্থায় নামিয়ে না আনে। আমি সদাপ্রভু, আমিই মহাপুরোহিতকে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণকে বল যে, দেহে খুঁত নিয়ে তার কোন বংশধর তার ঈশ্বরের উদ্দেশে খাবার উৎসর্গ করতে বেদীর কাছে যেতে পারবে না। দেহে খুঁত নিয়ে পুরোহিত হারোণের কোন বংশধর বেদীর কাছে গিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা কোন উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পারবে না। খুঁত রয়েছে বলে সে বেদীর কাছে গিয়ে তার ঈশ্বরের উদ্দেশে কোন খাবার উৎসর্গ করতে পারবে না। অবশ্য ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করা খাবারের মধ্যে পবিত্র এবং মহাপবিত্র সব খাবারই সে খেতে পারবে, কিন্তু তার দেহে খুঁত আছে বলে সে পবিত্র স্থানের পর্দার কাছে কিম্বা বেদীর সামনে গিয়ে আমার পবিত্র জায়গাগুলোর পবিত্রতা নষ্ট করতে পারবে না। আমি সদাপ্রভু, আমিই পুরোহিতদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি।” মোশি গিয়ে এই সব কথা হারোণ ও তাঁর ছেলেদের এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জানালেন। এর পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের বল, আমার উদ্দেশে ইস্রায়েলীয়দের উৎসর্গ-করা পবিত্র জিনিস তাদের সম্মানের চোখে দেখতে হবে। তা না করলে তারা আমার পবিত্র নামের পবিত্রতা নষ্ট করবে। আমি সদাপ্রভু। তুমি তাদের বলবে তাদের বংশধরদের মধ্যে যদি কেউ অশুচি অবস্থায় সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করা কোন পবিত্র জিনিসের কাছে আসে তবে তাকে আমার সামনে থেকে মুছে ফেলতে হবে। আমি সদাপ্রভু। সূর্য ডুববার পর যখন সে শুচি হবে তখন সে তা খেতে পারবে, কারণ ওগুলোই তার খাবার। সে কোন মরা পশু কিম্বা বুনো জন্তুতে ছিঁড়ে ফেলা পশুর মাংস খেয়ে নিজেকে অশুচি করতে পারবে না। আমি সদাপ্রভু। “আমি পুরোহিতদের যে সব নির্দেশ দিয়েছি তা তাদের পালন করতে হবে। তা না করলে তারা দোষী হবে এবং অশুচি হওয়ার দরুন তারা মারা যাবে। আমি সদাপ্রভুই তাদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি। “পুরোহিতের পরিবারের লোক ছাড়া আর কেউ উৎসর্গ করা পবিত্র জিনিস খেতে পারবে না। পুরোহিতের কোন অতিথি বা মজুর তা খেতে পারবে না। কিন্তু পুরোহিতের কেনা কোন দাস এবং তার বাড়ীতে জন্মেছে এমন কোন দাস তা খেতে পারবে। পুরোহিতের মেয়ে যদি পুরোহিত ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করে তবে সে উৎসর্গ করা পবিত্র জিনিস খেতে পারবে না। কিন্তু পুরোহিতের কোন বিধবা মেয়ে কিম্বা স্বামীর ছেড়ে দেওয়া সন্তানহীন মেয়ে যদি বাবার বাড়ীতে আগের মত থাকবার জন্য ফিরে আসে তবে সে তার পিতার খাবারের অংশ পাবে। পুরোহিতের পরিবারের নয় এমন কেউ তা খেতে পারবে না। যদি সে ভুল করে উৎসর্গ করা পবিত্র জিনিস খেয়ে ফেলে তবে সে পুরোহিতকে ক্ষতিপূরণ দেবে। সেই জিনিসের দামের সংগে তাকে আরও পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম বেশী দিতে হবে। এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বল, কোন ইস্রায়েলীয় কিম্বা তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যদি মানত পূরণের জন্য কিম্বা নিজের ইচ্ছায় করা উৎসর্গ হিসাবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের কোন দান নিয়ে আসে, তবে সেটা হতে হবে একটা খুঁতহীন ষাঁড়, ভেড়া কিম্বা ছাগল। তা না হলে সেই উৎসর্গে তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন না। খুঁত রয়েছে এমন কিছু যেন সে না আনে, কারণ তাতে তার কোন উপকার হবে না। যদি কেউ মানত পূরণের জন্য কিম্বা নিজের ইচ্ছায় করা উৎসর্গ হিসাবে সদাপ্রভুর কাছে যোগাযোগ-উৎসর্গ করতে চায় এবং তার জন্য গরু, ভেড়া বা ছাগল নিয়ে আসে তবে সেটা হতে হবে খুঁতহীন। তার দেহে কোন খুঁত থাকলে সেটা উৎসর্গ হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গের জন্য কেউ যেন এমন কোন পশু না আনে যার চোখ অন্ধ কিম্বা যার হাড় ভেংগে গেছে কিম্বা যার দেহের কোন অংশ কাটা বা কেটে ফেলা হয়েছে কিম্বা যার দেহে পুঁজ-পড়া ঘা কিম্বা চুলকানি রোগ কিম্বা খোস-পাঁচড়া রয়েছে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ হিসাবে এগুলোর কোনটাই যেন বেদীর উপর তোলা না হয়। কিন্তু যে গরু বা ভেড়ার দেহের কোন অংশ অস্বাভাবিক ভাবে লম্বা বা খাটো তেমন গরু বা ভেড়া নিজের ইচ্ছায় করা উৎসর্গের মধ্যে থাকতে পারে, তবে মানত পূরণ করবার উৎসর্গ হিসাবে তা গ্রহণ করা হবে না। কোন পশুর অণ্ডকোষ যদি থেঁৎলে কিম্বা পিষে কিম্বা ছিঁড়ে কিম্বা কেটে গিয়ে থাকে তবে তা তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ কোরো না। তোমাদের নিজেদের দেশে গিয়েও তোমরা তা কোরো না। অন্য জাতির কোন লোকের হাত থেকে তোমরা এই রকম পশু নিয়ে তোমাদের ঈশ্বরের উৎসর্গ করা খাবার হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। সেগুলোতে খুঁত এবং দোষ রয়েছে বলে তাতে তোমাদের কোন উপকার হবে না।” তারপর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “জন্মের পরে গরু, ভেড়া বা ছাগলের বাচ্চাকে তার মায়ের সংগে সাত দিন পর্যন্ত থাকতে দিতেই হবে। আট দিনের দিন থেকে সেগুলো সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে। গাভী ও তার বাছুর কিম্বা ভেড়ী ও তার বাচ্চা একই দিনে কাটা চলবে না। সদাপ্রভুর উদ্দেশে যদি তোমরা কোন কৃতজ্ঞতা-উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর তবে তা এমনভাবে করতে হবে যাতে তিনি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হন। উৎসর্গের দিনেই তার মাংস খেয়ে ফেলতে হবে; পরের দিন সকাল পর্যন্ত তার কিছু রেখে দেওয়া চলবে না। আমি সদাপ্রভু। আমার আদেশ তোমাদের মানতে হবে এবং সেইমত চলতে হবে। আমি সদাপ্রভু। তোমরা আমার পবিত্র নামের পবিত্রতা নষ্ট কোরো না। তোমরা আমাকে পবিত্র বলে মান্য করবে। আমি সদাপ্রভুই তোমাদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি। তোমাদের ঈশ্বর হওয়ার জন্যই আমি মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছি। আমি সদাপ্রভু।” সপ্তার ছয় দিন তোমরা কাজ করতে পারবে কিন্তু সপ্তম দিনটা হবে বিশ্রামবার, অর্থাৎ পবিত্র মিলন-সভার দিন। এই দিন তোমরা কোন কাজ করবে না। তোমরা যেখানেই বাস কর না কেন এই দিনটা হবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামবার।” সদাপ্রভুর যে সব নির্দিষ্ট করা পর্ব, অর্থাৎ যে সব পবিত্র মিলন-সভা তোমরা সেগুলোর নির্দিষ্ট দিনে ঘোষণা করবে তা এই: বছরের প্রথম মাসের চৌদ্দ তারিখের সন্ধ্যাবেলা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্ব শুরু হবে। সেই মাসেরই পনেরো তারিখে সদাপ্রভুর উদ্দেশে খামিহীন রুটির পর্ব শুরু হবে। সাত দিন পর্যন্ত তোমাদের খামিহীন রুটি খেতে হবে। এই সাত দিনের প্রথম দিনে পবিত্র মিলন-সভা হবে এবং সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। এই সাত দিনের প্রত্যেক দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমাদের একটা করে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। সপ্তম দিনে তোমাদের পবিত্র মিলন-সভা হবে এবং সেই দিন তোমরা কোন পরিশ্রমের কাজ করতে পারবে না। পুরোহিত সেই আঁটি নিয়ে সদাপ্রভুর সামনে দোলাবে। তাতে সদাপ্রভু তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। পুরোহিতকে তা দোলাতে হবে বিশ্রামবারের পরের দিন। পুরোহিত যেদিন সেই আঁটি দোলাবে সেই দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ হিসাবে এক বছরের একটা খুঁতহীন ভেড়ার বাচ্চা তোমাদের উৎসর্গ করতে হবে। তার সংগে শস্য-উৎসর্গ হিসাবে তেলের ময়ান দেওয়া তিন কেজি ছ’শো গ্রাম মিহি ময়দা উৎসর্গ করতে হবে। এটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। এর সংগে ঢালন-উৎসর্গ হিসাবে এক লিটার আংগুর-রস দিতে হবে। তোমাদের ঈশ্বরের কাছে এই উৎসর্গ করবার দিন পর্যন্ত তোমাদের এই নতুন শস্য থেকে খাওয়া চলবে না। তা ছাড়া তা থেকে তৈরী কোন রুটি কিম্বা তা আগুনে ঝল্‌সে নিয়েও খাওয়া চলবে না। তোমরা যেখানেই বাস কর না কেন বংশের পর বংশ ধরে এটা হবে তোমাদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম। “বিশ্রামবারের পরের দিন, অর্থাৎ যেদিন তোমরা দোলন-উৎসর্গের জন্য শস্যের আঁটি নিয়ে আসবে, সেই দিন থেকে গুণে পর পর সাতটা সপ্তা বাদ দিতে হবে। এই সপ্তম সপ্তার বিশ্রামবারের পরের দিন, অর্থাৎ দোলন-উৎসর্গের পর পঞ্চাশ দিনের দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমরা নতুন গম উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। তোমরা বাড়ী থেকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে তোমাদের প্রথমে তোলা ফসলের কিছু অংশ নিয়ে আসবে। সেই দোলন-উৎসর্গের জিনিস হবে সাড়ে তিন কেজি মিহি ময়দার তৈরী খামি দেওয়া দু’টা রুটি। এই রুটির সংগে সাতটা এক বছরের খুঁতহীন ভেড়ার বাচ্চা, একটা ষাঁড় এবং দু’টা ভেড়া আনতে হবে। এই পশুগুলো দিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে, আর তার সংগে থাকবে তার সংগেকার নিয়মিত শস্য-উৎসর্গ এবং ঢালন-উৎসর্গ। এগুলো সব আগুনে-করা উৎসর্গ, যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। তারপর তোমরা পাপ-উৎসর্গ হিসাবে একটা ছাগল এবং যোগাযোগ-উৎসর্গ হিসাবে এক বছরের দু’টা ভেড়ার বাচ্চা উৎসর্গ করবে। পুরোহিত সদাপ্রভুর সামনে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে সেই দু’টা ভেড়ার বাচ্চা এবং প্রথমে তোলা ফসলের তৈরী রুটি নিয়ে দোলাবে। এগুলো সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করা পবিত্র জিনিস যা পুরোহিতের পাওনা। সেই দিন তোমরা একটা পবিত্র মিলন-সভা ঘোষণা করবে। সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। তোমরা যেখানেই বাস কর না কেন বংশের পর বংশ ধরে এটা হবে তোমাদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম। “তোমরা যখন তোমাদের জমির ফসল কাটবে তখন জমির কিনারার ফসলগুলো তোমরা কাটবে না এবং পড়ে থাকা শস্য কুড়িয়ে নেবে না। সেগুলো গরীব এবং দেশে বাস করা অন্য জাতির লোকদের জন্য ফেলে রাখতে হবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর।” সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। সেই দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে।” সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “এই সপ্তম মাসের দশ দিনের দিনটা হবে পাপ ঢাকা দেবার দিন। সেই দিন তোমাদের একটা পবিত্র মিলন-সভা হবে এবং নিজেদের অন্তর ভেংগেচুরে কষ্টস্বীকার করতে হবে। তোমাদের সেই দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনষ্ঠান করতে হবে। সেই দিন তোমাদের কোন কাজ করা চলবে না, কারণ সেটাই হল পাপ ঢাকা দেবার দিন। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে সেই দিন তোমাদের পাপ ঢাকা দেওয়া হবে। সেই দিন যে কষ্টস্বীকার করবে না তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। সেই দিন যদি কেউ কোন কাজ করে তবে আমি তাকে তার জাতির মধ্য থেকে ধ্বংস করে ফেলব। সেই দিন তোমাদের কোন কাজই করা চলবে না। তোমরা যেখানেই বাস কর না কেন বংশের পর বংশ ধরে এটাই হল তোমাদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম। সেই দিনটা হবে তোমাদের জন্য একটা বিশ্রামের দিন। সেই দিন তোমাদের কষ্টস্বীকার করতে হবে। সেই মাসের নবম দিনের সন্ধ্যা থেকে শুরু করে পরের দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত তোমরা এই বিশ্রামের দিন পালন করবে।” এই সাত দিনের প্রথম দিনে তোমাদের পবিত্র মিলন-সভা হবে। সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। এই সাত দিনের প্রত্যেক দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। তারপর অষ্টম দিনেও তোমাদের পবিত্র মিলন-সভা হবে এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। এটা শেষ দিনের বিশেষ সভা; সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। “এই পর্বগুলো সবই সদাপ্রভু ঠিক করে দিয়েছেন। তোমরা যাতে এই সময় আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পার সেইজন্য তোমাদের পবিত্র মিলন-সভা হবে। যে সব উৎসর্গ তোমাদের করতে হবে তা হল পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ, পশু-উৎসর্গ এবং ঢালন-উৎসর্গ। এই সব উৎসর্গগুলো নির্দিষ্ট করা দিনে তোমাদের করতে হবে। যে উৎসর্গগুলোর কথা আগেই বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এই উৎসর্গগুলো ধরা হবে না। সেগুলো হল, সদাপ্রভুর বিশ্রামবারের উৎসর্গ, সদাপ্রভুকে দেওয়া অন্যান্য সমস্ত দান, মানত এবং নিজের ইচ্ছায় করা উৎসর্গ। “সপ্তম মাসের পনেরো দিনের দিন জমি থেকে ফসল তুলে নেওয়ার পর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সাত দিন ধরে এই কুঁড়ে-ঘরের পর্ব পালন করতে হবে। এই সাত দিনের প্রথম দিনটা এবং অষ্টম দিনটা হবে তোমাদের বিশ্রামের দিন। প্রথম দিনে তোমাদের নিজেদের জন্য গাছের সবচেয়ে ভাল ফল, খেজুর পাতা, উইলো গাছ এবং অন্যান্য পাতা ভরা গাছের ডাল নিয়ে আসবে। তারপর সাত দিন ধরে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে আনন্দ-উৎসব করবে। প্রত্যেক বছর সাত দিন ধরে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমাদের এই পর্ব পালন করতে হবে। বংশের পর বংশ ধরে এটা হবে তোমাদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম। সপ্তম মাসে তোমাদের এই পর্ব পালন করতে হবে। সাত দিন তোমরা কুঁড়ে-ঘরে বাস করবে। ইস্রায়েল বংশে যারা জন্মেছে তাদের সবাইকেই এই সময় কুঁড়ে-ঘরে থাকতে হবে। এর মধ্য দিয়ে তোমাদের বংশধরেরা জানবে যে, আমি মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে এনে কুঁড়ে-ঘরে বাস করিয়েছিলাম। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর।” এর পর মোশি গিয়ে সদাপ্রভুর ঠিক করে দেওয়া সব পর্বের কথা ইস্রায়েলীয়দের জানালেন। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দাও যেন তারা বাতিদানের জন্য তোমার কাছে ছেঁচা জলপাইয়ের খাঁটি তেল নিয়ে আসে যাতে প্রদীপগুলো নিয়মিত ভাবে জ্বালিয়ে রাখা যায়। মিলন-তাম্বুর মধ্যে সাক্ষ্য-সিন্দুকের পর্দার বাইরে হারোণকে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সদাপ্রভুর সামনে প্রদীপগুলোর দেখাশোনা করতে হবে। বংশের পর বংশ ধরে এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম। সদাপ্রভুর সামনে-রাখা খাঁটি সোনার বাতিদানের উপরকার প্রদীপগুলোর নিয়মিত ভাবেই দেখাশোনা করতে হবে। “মিহি ময়দা দিয়ে বারোটা রুটি সেঁকে নিতে হবে। প্রত্যেকটা রুটির জন্য তিন কেজি ছ’শো গ্রাম ময়দা নিতে হবে। তারপর সদাপ্রভুর সামনে রাখা খাঁটি সোনার টেবিলের উপর ঐ রুটিগুলো ছয়টা ছয়টা করে দুই সারিতে সাজিয়ে রাখতে হবে। প্রত্যেকটি রুটির সারির কাছে খাঁটি লোবান রাখতে হবে। রুটির বদলে এই লোবান দিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ করতে হবে। ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ থেকে এই রুটি প্রত্যেক বিশ্রামবারে নিয়মিত ভাবে সদাপ্রভুর সামনে সাজিয়ে রাখতে হবে। তাদের এই রুটি রাখবার কাজটা হবে একটা চিরকালের নিয়ম। এই রুটি হারোণ ও তার ছেলেরা পবিত্র তাম্বু-ঘরের এলাকায় খাবে, কারণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের জিনিসের মধ্যে এটা একটা মহাপবিত্র জিনিস। এটা তাদের সব সময়কার পাওনা।” ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে এমন একজন লোক বাস করত যার মা ছিল ইস্রায়েলীয় আর বাবা মিসরীয়। ছাউনির মধ্যে সেই লোকটির সংগে একজন ইস্রায়েলীয়ের মারামারি বেধে গেল। এতে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “যে লোকটি অভিশাপ দিয়েছে তাকে ছাউনির বাইরে নিয়ে যাও। যারা তাকে সেই অভিশাপ দিতে শুনেছে তারা সবাই তার মাথার উপর হাত রাখুক, তারপর ইস্রায়েলীয়েরা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলুক। তুমি ইস্রায়েলীয়দের জানিয়ে দাও যদি কেউ তার ঈশ্বরকে অভিশাপ দেয় তবে তাকে তার জন্য দায়ী করা হবে। মন্দ উদ্দেশ্যে যে সদাপ্রভুর নাম নেবে তাকে মেরে ফেলতেই হবে। ইস্রায়েলীয়েরা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে। ইস্রায়েলীয়ই হোক বা তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকই হোক, যে কেউ মন্দ উদ্দেশ্যে সদাপ্রভুর নাম নেবে তাকে মেরে ফেলতেই হবে। “যদি কেউ কাউকে খুন করে তবে তাকেও মেরে ফেলতে হবে। যদি কেউ অন্যের পশু মেরে ফেলে তবে তাকে একটা প্রাণের বদলে আর একটা প্রাণ দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি কেউ কাউকে আঘাত করে আর তাতে তার দেহের ক্ষতি হয় তবে সে যা করেছে তার প্রতিও তা-ই করতে হবে- হাড় ভাংবার বদলে হাড় ভাংগা, চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত। সে অন্যের যে ক্ষতি করেছে তারও সেই ক্ষতি করতে হবে। পশু মেরে ফেললে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, কিন্তু মানুষ মেরে ফেললে মরতে হবে। ইস্রায়েলীয় এবং তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোক, সকলের উপরে এই একই নিয়ম খাটবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর।” মোশি ইস্রায়েলীয়দের এই সব কথা জানালেন। যে লোকটি অভিশাপ দিয়েছিল লোকেরা তাকে তার পরেই ছাউনির বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলল। সদাপ্রভু মোশিকে যে আদেশ দিয়েছিলেন ইস্রায়েলীয়েরা তা-ই করল। ছয় বছর তোমরা জমিতে বীজ বুনবে আর আংগুর গাছের ডাল ছেঁটে দেবে এবং ফসল তুলে আনবে। কিন্তু সপ্তম বছরে জমিগুলোকে বিশ্রামের সময় দিতে হবে। এটা হবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রাম। সেই সময় তোমরা জমিতে বীজ বুনবে না এবং আংগুর গাছের ডাল ছাঁটবে না। তখন জমিতে যা নিজে থেকে জন্মাবে তা তোমরা কেটে মজুত করবে না কিম্বা অযত্নের মধ্যে যে সব আংগুর হবে তা-ও তুলে আনবে না। জমিগুলোকে এক বছর বিশ্রাম দিতে হবে। বিশ্রাম-বছরে জমিতে যা নিজে থেকে জন্মাবে তা-ই তোমাদের নিজেদের, দাস-দাসীদের, তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির মজুর ও অন্যান্য লোকদের, পোষা প্রাণীদের এবং দেশের মধ্যেকার বুনো পশুদের খাবার হবে। এই সময় জমিতে যা জন্মাবে তা-ই তোমরা খাবে। “সাতটা সপ্তম বছর, অর্থাৎ সাতটা বিশ্রাম-বছর পর পর তোমাদের গুণে যেতে হবে। এইভাবে সাতটা বিশ্রাম বছর পার হয়ে গেলে ঊনপঞ্চাশ বছর হবে। তার পরের বছরের সাত মাসের দশ দিনের দিন, অর্থাৎ পাপ ঢাকা দেবার দিনে তোমাদের দেশের সব জায়গায় শিংগা বাজাতে হবে। এই পঞ্চাশ বছরের বছরটা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিয়ে দেশের সমস্ত লোকের কাছে মুক্তি ঘোষণা করতে হবে। তোমাদের জন্য এই বছরটা হবে ‘ফিরে পাওয়ার বছর।’ এই বছরে তোমরা প্রত্যেকে যে যার বংশে এবং পরিবারের সম্পত্তিতে ফিরে যাবে। প্রত্যেক পঞ্চাশ বছরের শেষ বছরটা তোমাদের জন্য ফিরে পাওয়ার বছর হবে। এই বছরে তোমরা বীজ বুনবে না এবং নিজে থেকে জমিতে যা জন্মাবে তা কেটে আনবে না কিম্বা অযত্নের মধ্যে যে সব আংগুর জন্মাবে তা তুলে আনবে না। এটা হবে একটা ফিরে পাওয়ার বছর এবং তোমাদের তা পবিত্র বলে মানতে হবে। জমি থেকে এমনি যা পাওয়া যাবে তা-ই তোমাদের খেতে হবে। “ফিরে পাওয়ার বছরে তোমরা প্রত্যেকে যে যার পরিবারের সম্পত্তিতে ফিরে যাবে। তোমরা নিজেদের মধ্যে জমি কেনা-বেচা করবার সময়ে কারও উপর অন্যায় কোরো না। যে জমি কিনবে তাকে ফিরে পাওয়ার বছরের পর কত বছর হয়ে গেছে তা হিসাব করে সেই জমি কিনতে হবে এবং যে সেই জমি বিক্রি করবে তাকেও হিসাব করে দেখতে হবে সামনের ফিরে পাওয়ার বছর আসবার আগে কত বছর পর্যন্ত জমিটা থেকে ফসল তোলা যাবে। যদি দেখা যায় বেশ কিছু বছর ফসল কাটা যাবে তবে জমির দাম বাড়াতে হবে কিন্তু কম হলে দাম কমাতে হবে, কারণ আসলে জমি থেকে কতবার ফসল তোলা যাবে সেই সংখ্যাটাই বিক্রি করা হচ্ছে। তোমরা কেউ কারও উপর অন্যায় কোরো না। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের ঈশ্বরকে ভয় করে চল, কারণ আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। “তোমরা আমার নিয়মগুলো পালন করবে এবং আমার আইন-কানুন মেনে চলবে; তাতে তোমরা দেশে নিরাপদে বাস করতে পারবে। তখন তোমরা জমি থেকে পুরো ফসল পাবে এবং পেট ভরে খেয়ে নিরাপদে সেখানে বাস করতে পারবে। তোমরা হয়তো জিজ্ঞাসা করবে, ‘সপ্তম বছরে আমরা যদি বীজ না বুনি এবং ফসল না কাটি তবে কি খাব?’ এর উত্তর হল ষষ্ঠ বছরে আমি তোমাদের এমনভাবে আশীর্বাদ করব যাতে সেই বছর তিন বছর চলবার মত ফসল হয়। ফলে অষ্টম বছরে বীজ বুনবার সময়েও পুরানো ফসল থেকে তোমাদের খাওয়া চলবে এবং নবম বছরে ফসল না তোলা পর্যন্ত সেই জমা ফসল থেকেই তোমরা খেতে পারবে। “চিরদিনের জন্য কারও জমি বিক্রি করা চলবে না, কারণ সব জমি আমার আর আমার সামনে তোমরা সেখানে পরদেশী বাসিন্দা হয়ে বাস করবে। তোমাদের প্রত্যেকের কিনে নেওয়া জমি যাতে আবার ছাড়িয়ে নেওয়া যায় সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। তোমাদের কোন ইস্রায়েলীয় ভাই যদি গরীব হয়ে গিয়ে তার পরিবারের জমির কিছু অংশ বিক্রি করে দেয় তবে তার সবচেয়ে নিকট আত্মীয়কে এসে সেই বিক্রি করা সম্পত্তি ছাড়িয়ে নিতে হবে। তার হয়ে তা ছাড়িয়ে নেবার মত কেউ না থাকলেও যদি সে নিজেই নিজের অবস্থার উন্নতি করে তা ছাড়িয়ে নিতে পারে, তবে তা বিক্রি করবার পরের বছরগুলো তাকে গুণে দেখতে হবে এবং বাকী বছরগুলোর টাকা যে জমি কিনেছিল তাকে ফেরৎ দিতে হবে। এর পরে সে তার নিজের জমিতে ফিরে যেতে পারবে। কিন্তু টাকা ফিরিয়ে দেবার মত অবস্থা যদি সে করতে না পারে তবে যে জমি সে বিক্রি করেছে তা ফিরে পাওয়ার বছর পর্যন্ত যে তা কিনেছে তার হাতেই থাকবে। ফিরে পাওয়ার বছরে সেই জমি ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তখন সে নিজের জমিতে ফিরে যেতে পারবে। “দেয়াল-ঘেরা কোন শহরের কোন বাড়ী যদি কেউ বিক্রি করে তবে বিক্রি করবার পর সম্পূর্ণ এক বছর পর্যন্ত তা ছাড়িয়ে নেবার অধিকার তার থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সে তা ছাড়িয়ে নিতে পারবে। বাড়ীটা যদি এক বছরের মধ্যে ছাড়িয়ে নেওয়া না হয় তবে যে তা কিনেছে স্থায়ীভাবে সেটা তার ও তার বংশধরদের হয়ে যাবে। ফিরে পাওয়ার বছরেও সেটা ফিরিয়ে দিতে হবে না। কিন্তু যে সব গ্রামের চারপাশে দেয়াল নেই সেখানকার বাড়ীগুলো খোলা জমি-জায়গার মতই ধরে নিতে হবে। সেগুলো ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে এবং ফিরে পাওয়ার বছরে সেগুলো ফেরতও দিতে হবে। তবে সম্পত্তি হিসাবে পাওয়া লেবীয়দের সব গ্রাম ও শহর এবং সেগুলোর মধ্যেকার বাড়ীগুলো তাদের সব সময়েই ছাড়িয়ে নেবার অধিকার থাকবে। লেবীয়দের বিক্রি করা সম্পত্তি, অর্থাৎ লেবীয়দের গ্রামে ও শহরে তাদের বিক্রি করা বাড়ী-ঘর যদি কোন লেবীয় ছাড়িয়ে নিতে চায়, তবে ফিরে পাওয়ার বছরে সে তা ছাড়িয়ে নিতে পারবে, কারণ ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে লেবীয়দের গ্রাম ও শহরের বাড়ী-ঘরই তাদের সম্পত্তি। কিন্তু তাদের গ্রাম ও শহরের পশু চরাবার মাঠ বিক্রি করতে পারবে না; সেগুলো তাদের চিরকালের সম্পত্তি। “তোমাদের কোন ইস্রায়েলীয় ভাই যদি গরীব অবস্থায় পড়ে নিজের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতে না পারে, তবে যাতে সে তোমাদের মধ্যেই বাস করতে পারে সেইজন্য পরদেশী বাসিন্দাকে যেভাবে সাহায্য করা হয় তাকেও সেইভাবে সাহায্য করতে হবে। তোমরা তার কাছ থেকে কোন রকম সুদ নিতে পারবে না, বরং লোকটি যাতে তোমাদের মধ্যে বাস করতে পারে সেইজন্য তোমাদের ঈশ্বরকে তোমরা ভয় করে চলবে। তবে টাকা ধার দিলে কোন সুদ নেওয়া চলবে না এবং তার কাছে কোন খাবার জিনিস বিক্রি করলে কোন লাভ নেওয়া চলবে না। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। কনান দেশ দেবার জন্য এবং তোমাদের ঈশ্বর হওয়ার জন্য আমিই মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছি। “তোমাদের কোন ইস্রায়েলীয় ভাই যদি গরীব অবস্থায় পড়ে নিজেকে তোমাদের কারও কাছে বিক্রি করে দেয় তবে তোমরা তাকে দাসের মত খাটাবে না। অন্য জাতির মজুরের সংগে, অর্থাৎ অন্য জাতির বাসিন্দার সংগে যে রকম ব্যবহার করা হয় তার সংগে সেই রকমই ব্যবহার করতে হবে। সে তার জন্য ফিরে পাওয়ার বছর পর্যন্ত কাজ করবে। তারপর তাকে ও তার ছেলেমেয়েদের ছেড়ে দিতে হবে। সে তখন তার নিজের বংশের ও পূর্বপুরুষদের জমিতে ফিরে যাবে। ইস্রায়েলীয়েরা আমারই দাস; আমিই তাদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছি; তাই আর কারও দাস হিসাবে তাদের বিক্রি করা চলবে না। তোমরা কেউ কারও প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার কোরো না; তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে ভয় করে চলবে। “তোমাদের আশেপাশে যে জাতিগুলো থাকবে তাদের মধ্য থেকে তোমরা দাস-দাসী কিনে নিতে পারবে। তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকদের মধ্য থেকে এবং তাদের বংশের যারা তোমাদের দেশে জন্মেছে তাদের মধ্য থেকেও তোমরা নিজের সম্পত্তি হিসাবে দাস-দাসী নিতে পারবে। এই সব দাস-দাসীদের তোমরা সম্পত্তির অংশ হিসাবে ছেলেমেয়েদের দিয়ে যেতে পারবে। তোমরা তাদের সারা জীবন দাস হিসাবে রাখতে পারবে, কিন্তু তোমাদের নিজের জাতি ইস্রায়েলীয়দের প্রতি তোমরা নিষ্ঠুর ব্যবহার করতে পারবে না। “তোমাদের মধ্যে কোন পরদেশী বাসিন্দা যদি ধনী হয়ে ওঠে আর তোমাদের কেউ যদি গরীব অবস্থায় পড়ে তার কাছে কিম্বা তার বংশেরও কারও কাছে নিজেকে বিক্রি করে দেয়, তবে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার অধিকার তার থাকবে। তার নিজের কোন ভাই তাকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। তা ছাড়া কাকা বা জেঠা কিম্বা কাকাত-জেঠাত ভাই কিম্বা বংশের এমন কেউ যার সংগে তার রক্তের সম্বন্ধ আছে সে-ও তাকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। অবস্থার উন্নতি করতে পারলে সে নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। যে বছর সে নিজেকে বিক্রি করবে সেই বছর থেকে আরম্ভ করে ফিরে পাওয়ার বছর পর্যন্ত কত বছর হয় সেটা সে আর তার মালিক হিসাব করে দেখবে। সেই কয় বছর একজন মজুরের যা পাওনা হবে সেই হিসাবে তার মুক্তি-মূল্য ঠিক করতে হবে। ফিরে পাওয়ার বছর আসতে যদি অনেক বছর বাকী থেকে যায় তবে যে দামে সে নিজেকে বিক্রি করেছে সেই দামের একটা মোটা অংশ নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য তার দিতে হবে। ফিরে পাওয়ার বছর আসতে যদি অল্প কয়েক বছর বাকী থাকে তবে হিসাব করে সেইমত টাকা দিয়ে সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। বছর হিসাবে রাখা মজুরের মত করে তাকে দেখতে হবে এবং তোমাদের নজর রাখতে হবে যাতে তার মালিক তার প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার না করে। এগুলোর কোন উপায়েই যদি তাকে ছাড়িয়ে নেওয়া না হয় তবে তাকে ও তার ছেলেমেয়েদের ফিরে পাওয়ার বছরে ছেড়ে দিতেই হবে। ইস্রায়েলীয়েরা একমাত্র আমারই দাস। আমিই তাদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছি; তারা আমারই দাস। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। “কোন রকম দেব-দেবীর মূর্তি তোমাদের তৈরী করা চলবে না। নিজেদের জন্য কাঠে খোদাই-করা মূর্তি কিম্বা কোন পূজার পাথর তোমাদের স্থাপন করা চলবে না। পূজা করবার জন্য তোমরা পাথরে খোদাই করা কোন মূর্তি তোমাদের দেশে রাখবে না। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। আমার বিশ্রামের দিন ও বছরগুলো তোমাদের পালন করতে হবে; আমার পবিত্র তাম্বুর প্রতি তোমাদের শ্রদ্ধা রাখতে হবে। আমি সদাপ্রভু। তখন তোমাদের গম মাড়াই করা চলবে আংগুর তুলবার সময় পর্যন্ত এবং আংগুর তোলা চলবে বীজ বুনবার সময় পর্যন্ত। তোমরা তখন পেট ভরে খেতে পাবে এবং দেশের মধ্যে নিরাপদে বাস করবে। “দেশে তখন আমি শান্তি দেব। তোমরা শান্তিতে ঘুমাবে; কারও কাছ থেকে কোন ভয়ের কারণ তোমাদের থাকবে না। আমি দেশ থেকে হিংস্র জন্তু-জানোয়ার দূর করে দেব। কোন সৈন্য-সামন্ত তোমাদের দেশ আক্রমণ করতে আসবে না। তোমরা তোমাদের শত্রুদের তাড়া করবে এবং শত্রুরা তোমাদের সামনেই মারা পড়বে। মাত্র পাঁচজন মিলে তোমরা একশোজন শত্রুকে এবং একশোজন মিলে দশ হাজার শত্রুকে তাড়া করবে, আর শত্রুরা তোমাদের সামনে মারা পড়বে। আমি তোমাদের তখন দয়ার চোখে দেখব এবং বংশবৃৃদ্ধি করে তোমাদের লোকসংখ্যা বাড়িয়ে তুলব, আর তোমাদের সংগে আমি আমার ব্যবস্থা ঠিক রাখব। নতুন শস্য রাখবার জন্য গোলাঘর খালি করবার সময়েও আগের বছরের শস্য থেকেই তোমাদের খাওয়া চলতে থাকবে। আমি তোমাদের দিক থেকে আমার মুখ ফিরাব না। তোমাদের মধ্যেই আমি আমার বাসস্থান করব। আমি তোমাদের সংগে চলাফেরা করব এবং তোমাদের ঈশ্বর হব আর তোমরা আমার নিজের লোক হবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। মিসর দেশ থেকে আমিই তোমাদের বের করে এনেছি যাতে মিসরীয়দের দাস হয়ে আর তোমাদের থাকতে না হয়। কাঁধের জোয়াল ভেংগে ফেলে আমিই তোমাদের মাথা উঁচু করে হাঁটবার অবস্থায় এনেছি। “কিন্তু তোমরা যদি আমার কথা না শোন এবং এই সব আদেশ পালন না কর, যদি তোমরা আমার নিয়মগুলো অগ্রাহ্য কর এবং আমার আইন-কানুন তুচ্ছ কর, যদি তোমরা আমার আদেশ পালন না করে আমার ব্যবস্থা খেলাপ কর, তবে আমি তোমাদের উপর যা করব তা এই- আমি তোমাদের উপর হঠাৎ কোন দেহ ক্ষয় করা রোগ এবং ভীষণ রকমের জ্বর নিয়ে আসব। এই সব রোগে তোমাদের দেখবার ক্ষমতা এবং গায়ের শক্তি কমতে থাকবে। তখন তোমরা বীজ বুনলেও কোন লাভ হবে না, তোমাদের ফসল শত্রুরাই খাবে। আমি তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব আর তোমরা তোমাদের শত্রুদের কাছে হেরে যাবে। তোমাদের ঘৃণাকারীরাই তোমাদের শাসন করবে এবং কেউ তোমাদের তাড়া না করলেও তোমরা পালিয়ে যাবে। “এই সবের পরেও যদি তোমরা আমার কথা না শোন তবে আমি তোমাদের পাপের সাতগুণ শাস্তি দেব। আমি তোমাদের শক্তির অহংকার চুরমার করে দেব। আমি তোমাদের মাথার উপরকার আকাশ লোহার মত আর পায়ের তলার মাটি ব্রোঞ্জের মত শক্ত করে দেব। তখন তোমরা মিছামিছিই খেটে মরবে; তোমাদের জমিতে তখন ফসলও হবে না, গাছ-গাছড়ায় ফলও ধরবে না। “তোমাদের মনে যদি আমার প্রতি শত্রুভাব থাকে এবং যদি তোমরা আমার কথায় কান দিতে না চাও তবে তোমাদের পাপের শাস্তি আমি সাতগুণ বাড়িয়ে দেব। আমি তোমাদের মধ্যে হিংস্র জন্তু পাঠিয়ে দেব। সেগুলো তোমাদের ছেলেমেয়েদের খেয়ে ফেলবে, তোমাদের পশুপাল ধ্বংস করবে আর তোমাদের লোকসংখ্যা কমিয়ে দেবে। এতে তোমাদের রাস্তাঘাটগুলো খালি পড়ে থাকবে। “এই সব ঘটনার পরেও যদি তোমরা আমার শাসন মেনে না নিয়ে আমার বিরুদ্ধে চলতে থাক, তবে আমি নিজে তোমাদের শত্রু হয়ে তোমাদের পাপের সাতগুণ শাস্তি দেব। আমার ব্যবস্থা খেলাপ করবার দরুন আমি তোমাদের উপর যুদ্ধ নিয়ে আসব। শত্রু দেখে যখন তোমরা শহরে গিয়ে ঢুকবে তখন তোমাদের মধ্যে আমি মড়ক লাগিয়ে দেব, আর তাতে তোমরা শত্রুর হাতে গিয়ে পড়বে। আমি তোমাদের খাবারের অভাব ঘটাব। তখন দশজন স্ত্রীলোকের রুটি সেঁকতে একটার বেশী তন্দুর লাগবে না, আর খাবার সময়ে তোমরা রুটি মেপে মেপে দেবে। তোমরা পেট ভরে খেতে পাবে না। “এই সবের পরেও যদি তোমরা আমার কথায় কান না দিয়ে আমার বিরুদ্ধে চলতেই থাক, তবে আমিও ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে চলব এবং তোমাদের পাপের সাতগুণ শাস্তি দেব। তখন খিদের জ্বালায় তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের মাংস খাবে। আমি তোমাদের পূজার উঁচু স্থানগুলো ধ্বংস করে ফেলব, ধূপ-বেদী ভেংগে ফেলব এবং তোমাদের প্রাণহীন দেব-দেবীর উপর তোমাদের মৃতদেহগুলো গাদা করব, আর আমি তোমাদের ভীষণ ঘৃণার চোখে দেখব। আমি তোমাদের গ্রাম ও শহরগুলো এবং উপাসনার ঘরগুলো ধ্বংস করে ফেলব। তোমাদের উৎসর্গের গন্ধ আমি গ্রহণ করব না। আমি তোমাদের দেশ এমন ধ্বংসের অবস্থায় ফেলে রাখব যা দেখে তোমাদের শত্রু-বাসিন্দারাও আঁত্‌কে উঠবে। বিভিন্ন জাতির মধ্যে আমি তোমাদের ছড়িয়ে রাখব এবং তলোয়ার হাতে তোমাদের পিছনে পিছনে তাড়া করব। তোমাদের দেশের সব জমি, শহর ও গ্রাম ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকবে। “যখন তোমরা তোমাদের শত্রুদের দেশে থাকবে তখন ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকা তোমাদের সেই দেশটা তার পাওনা সব বিশ্রাম-বছর ভোগ করতে থাকবে। হ্যাঁ, তখন তোমাদের দেশটা বিশ্রাম পাবে এবং তার পাওনা বিশ্রাম-বছরগুলো ভোগ করবে। তোমরা নিজেরা দেশে বাস করবার সময় তোমাদের জমিগুলো বিশ্রাম-বছরগুলোতেও বিশ্রাম পায় নি বলে যখন দেশ ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকবে তখন জমিগুলো বিশ্রাম পাবে। তোমাদের মধ্যে যারা শত্রুদের দেশে বেঁচে থাকবে তাদের অন্তরে আমি এমন ভয় ঢুকিয়ে দেব যে, বাতাসে পাতা নড়বার শব্দেও তারা ছুটে পালাবে। যুদ্ধের ভয়ে যেমন করে মানুষ ছুটে পালায় তেমনি করেই তারা ছুটে পালাবে। পিছনে কেউ তাড়া করে না গেলেও তারা ছুটতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবে। কেউ তাদের পিছনে তাড়া না করলেও যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচবার জন্য ছুটে যাওয়া লোকের মত করে দৌড়াতে গিয়ে তারা একে অন্যের উপর পড়বে। শত্রুদের সামনে তোমরা দাঁড়াতে পারবে না। বিভিন্ন জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তোমরা মারা যাবে, শত্রুদের দেশ তোমাদের গিলে খাবে। তার পরেও তোমাদের মধ্যে যারা সেখানে পড়ে থাকবে তারা তাদের নিজেদের এবং পূর্বপুরুষদের দোষের দরুন শেষ হয়ে যেতে থাকবে। তাহলে আমি যাকোব, ইস্‌হাক ও অব্রাহামের সংগে আমার ব্যবস্থার কথা এবং তাদের দেশের কথা মনে করব। বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাবার পরে ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকা তাদের দেশটা তার পাওনা সব বিশ্রাম-বছর ভোগ করতে থাকবে। আমার আইন-কানুন অগ্রাহ্য এবং নিয়ম ঘৃণা করবার দরুন দোষের শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবুও শত্রুদের দেশে থাকবার সময়ে আমি তাদের এমনভাবে অগ্রাহ্য করব না বা ঘৃণার চোখে দেখব না যাতে তারা একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায় এবং এইভাবে তাদের সংগে আমার ব্যবস্থা খেলাপ হয়ে যায়। আমি সদাপ্রভু তাদের ঈশ্বর। তাদের জন্যই তাদের পূর্বপুরুষদের সংগে আমার ব্যবস্থার কথা আমি মনে করব। এই পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর হব বলে অন্যান্য জাতির চোখের সামনে দিয়ে মিসর দেশ থেকে আমি তাদের বের করে এনেছি। আমি সদাপ্রভু।” এগুলোই হল সেই সব আদেশ, আইন-কানুন ও নিয়ম যা সিনাই পাহাড়ে মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু তাঁর ব্যবস্থা হিসাবে ইস্রায়েলীয়দের জন্য স্থাপন করেছিলেন। ঐ বয়সের স্ত্রীলোকের জন্য তিনশো গ্রাম রূপা; পাঁচ থেকে বিশ বছর বয়সের ছেলের জন্য দু’শো গ্রাম রূপা, ঐ বয়সের মেয়ের জন্য একশো গ্রাম রূপা; এক মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সের ছেলের জন্য পঞ্চাশ গ্রাম রূপা, ঐ বয়সের মেয়ের জন্য ত্রিশ গ্রাম রূপা; ষাট বছর বা তার বেশী বয়সের পুরুষের জন্য দেড়শো গ্রাম রূপা, ঐ বয়সের স্ত্রীলোকের জন্য একশো গ্রাম রূপা। “মানতকারী যদি গরীব হয় আর এই নির্দিষ্ট করা মূল্য দিতে না পারে তবে তাকে উৎসর্গ করবার লোকটিকে নিয়ে পুরোহিতের কাছে যেতে হবে। পুরোহিত তখন মানতকারীর দেবার ক্ষমতা বুঝে তার মূল্য ঠিক করে দেবে। “সে যদি সদাপ্রভুর গ্রহণযোগ্য উৎসর্গের কোন পশু মানত করে থাকে তবে সদাপ্রভুকে দেওয়া সেই পশুটা পবিত্র বলে ধরতে হবে। সেই পশুটার বদলে অন্য পশু সে দিতে পারবে না। সেটা ভাল হলে তার বদলে মন্দটা কিম্বা মন্দ হলে তার বদলে ভালটা দেওয়া চলবে না। যদি সে একটা পশুর বদলে অন্য একটা পশু দেয় তবে দু’টা পশুই পবিত্র বলে ধরা হবে। সদাপ্রভুর গ্রহণযোগ্য উৎসর্গ নয় এমন কোন অশুচি পশু যদি কেউ মানত করে তবে পশুটাকে পুরোহিতের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পশুটা কি অবস্থায় আছে পুরোহিত তা বিচার করে তার যে দাম ঠিক করে দেবে সেটাই হবে তার দাম। মানতকারী যদি সেটা ছাড়িয়ে নিতে চায় তবে সেই পশুর দামের সংগে তাকে আরও পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম বেশী দিতে হবে। “যদি কেউ তার বাড়ীটা উৎসর্গ করে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখে তবে পুরোহিত বাড়ীটার অবস্থা বিচার করে তার যে দাম ঠিক করে দেবে সেটাই হবে তার দাম। আলাদা করে রাখা বাড়ীটা যদি সে ছাড়িয়ে নিতে চায় তবে বাড়ীটার দামের সংগে তাকে আরও পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম বেশী দিতে হবে। তারপর বাড়ীটা আবার তার হয়ে যাবে। “কেউ যদি তার পরিবারের সম্পত্তির একটা অংশ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখে তবে সেই জমিতে যতটা বীজ বোনা যায় সেই অনুসারে তার দাম ধরতে হবে। প্রতি একশো আশি কেজি যবের বীজের জন্য আধা কেজি করে রূপা ধরতে হবে। ফিরে পাওয়ার বছরে যদি সে তার জমি সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখে তবে পুরোহিত এই নিয়মে যে দাম ঠিক করে দেবে জমিটার দাম তা-ই থাকবে। কিন্তু ফিরে পাওয়ার বছরের পরে যদি সে তার জমি আলাদা করে রাখে তবে তার পরের ফিরে পাওয়ার বছর আসতে যত বছর বাকী থাকবে সেটা হিসাব করে পুরোহিত তার দাম ঠিক করবে। তাতে ঐ নিয়মে ঠিক করা পুরো দামের চেয়ে এই দাম কম হবে। কোন জমি-উৎসর্গকারী যদি তার জমি ছাড়িয়ে নিতে চায় তবে সেই জমির ঠিক করা দামের সংগে তাকে আরও পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম বেশী দিতে হবে। এর পর জমিটা আবার তার হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সে জমিটা ছাড়িয়ে না নেয় কিম্বা আর কারও কাছে বিক্রি করে দেয় তবে সেটা আর ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে না। ফিরে পাওয়ার বছরে যখন জমিটা খালাস হবে তখন সেটা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন জমির মতই সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা হয়ে যাবে। তখন সেটা হবে পুরোহিতের সম্পত্তি। নিজের পরিবারের জমির কোন অংশ নয় এমন কোন কিনে নেওয়া জমি যদি কেউ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখে, তবে পুরোহিত ফিরে পাওয়ার বছর পর্যন্ত হিসাব করে তার দাম ঠিক করে দেবে। সেই দিনই সেই জমির দাম তাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র জিনিস হিসাবে দিয়ে দিতে হবে। জমিটা সে যার কাছ থেকে কিনবে ফিরে পাওয়ার বছরে তা আবার তার কাছে, অর্থাৎ জমির আগের মালিকের কাছে চলে যাবে। সব কিছুর দাম ধর্মীয় শেখেলের ওজন অনুসারেই ঠিক করতে হবে। দশ গ্রামে একটা ধর্মীয় শেখেল হয়। “কোন পশুর প্রথম পুরুষ বাচ্চা কেউ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখতে পারবে না, কারণ সব পশুর প্রথম বাচ্চাই সদাপ্রভুর। বাচ্চাটা গরুরই হোক বা ভেড়ারই হোক সেটা সদাপ্রভুর। যদি সেটা কোন অশুচি পশুর প্রথম বাচ্চা হয় তবে পুরোহিতের ঠিক করে দেওয়া দামের সংগে আরও পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম বেশী দিয়ে সেটা সে ছাড়িয়ে নিতে পারবে। যদি সে সেটা ছাড়িয়ে না নেয় তবে সেই ঠিক করে দেওয়া দামেই সেটা বিক্রি করে দিতে হবে। “কিন্তু যদি কেউ তার নিজের কোন কিছু সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন বলে ঘোষণা করে তবে সে সেটা আর বিক্রি করতে বা ছাড়িয়ে নিতে পারবে না- সেটা পরিবারের জমিই হোক অথবা মানুষ কিম্বা পশুই হোক। এই রকম ভাবে যা কিছু ধ্বংসের অভিশাপের অধীন বলে ঘোষণা করা হয় তা সবই সদাপ্রভুর উদ্দেশে মহাপবিত্র জিনিস বলে ধরতে হবে। যদি কোন লোককে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন বলে ঘোষণা করা হয় তবে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়া চলবে না, তাকে মেরে ফেলতে হবে। “জমি থেকে যা পাওয়া যাবে তার দশ ভাগের এক ভাগ সদাপ্রভুর- তা জমির ফসলই হোক কিম্বা গাছের ফলই হোক। তা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা। কেউ যদি তার সেই দশ ভাগের এক ভাগ ছাড়িয়ে নিতে চায় তবে তার দামের সংগে তাকে আরও পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম বেশী দিতে হবে। প্রত্যেকের পশুপালের দশ ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ রাখালের লাঠির নীচ দিয়ে চলে যাওয়া প্রতিটি দশম পশু হবে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা। এই দশম পশুগুলো ভাল কি মন্দ তা দেখা চলবে না কিম্বা একটার বদলে অন্য একটা দেওয়া চলবে না। যদি কেউ তা করে তবে সেই দশম পশুটা এবং তার বদলে যে পশুটা সে দেবে সেটাও সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা হয়ে যাবে এবং তা আর ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে না।” সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের জন্য এই সব আদেশ সিনাই পাহাড়ে মোশির কাছে দিয়েছিলেন। ॥ভব ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পর দ্বিতীয় বছরের দ্বিতীয় মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভু সিনাই মরু-এলাকায় মিলন-তাম্বুর মধ্যে মোশির সংগে কথা বললেন। তিনি বললেন, প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে একজন করে লোক তোমাকে সাহায্য করবে, আর সেই লোকটিকে হতে হবে তার বংশের নেতা। যারা তোমাকে সাহায্য করবে তাদের নাম হল রূবেণ-গোষ্ঠীর শদেয়ূরের ছেলে ইলীষূর, শিমিয়োন-গোষ্ঠীর সূরীশদ্দয়ের ছেলে শলুমীয়েল, যিহূদা-গোষ্ঠীর অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন, ইষাখর-গোষ্ঠীর সূয়ারের ছেলে নথনেল, সবূলূন-গোষ্ঠীর হেলোনের ছেলে ইলীয়াব, যোষেফের ছেলেদের মধ্যে ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর অম্মীহূদের ছেলে ইলীশামা আর মনঃশি-গোষ্ঠীর পদাহসূরের ছেলে গমলীয়েল, বিন্যামীন-গোষ্ঠীর গিদিয়োনির ছেলে অবীদান, দান-গোষ্ঠীর অম্মীশদ্দয়ের ছেলে অহীয়েষর, আশের-গোষ্ঠীর অক্রণের ছেলে পগীয়েল, গাদ-গোষ্ঠীর দ্যূয়েলের ছেলে ইলীয়াসফ, আর নপ্তালি-গোষ্ঠীর ঐননের ছেলে অহীরঃ।” ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে এই সব লোকদের নিযুক্ত করা হল। এঁরা হলেন তাঁদের পূর্বপুরুষদের গোষ্ঠীর নেতা এবং ইস্রায়েলীয়দের বিভিন্ন বংশের কর্তা। সিনাই মরু-এলাকায় মোশি সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে লোকদের গণনা করলেন। ইস্রায়েলের বড় ছেলে রূবেণের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে এক এক করে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। রূবেণ-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল ছেচল্লিশ হাজার পাঁচশো। শিমিয়োনের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে গণনা করে এক এক করে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। শিমিয়োন-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল ঊনষাট হাজার তিনশো। গাদের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। গাদ-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল পঁয়তাল্লিশ হাজার ছ’শো পঞ্চাশ। যিহূদার বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। যিহূদা-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল চুয়াত্তর হাজার ছ’শো। ইষাখরের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। ইষাখর-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল চুয়ান্ন হাজার চারশো। সবূলূনের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। সবূলূন-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল সাতান্ন হাজার চারশো। যোষেফের ছেলেদের মধ্যে ইফ্রয়িমের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। ইফ্রয়িম-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল চল্লিশ হাজার পাঁচশো। মনঃশির বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। মনঃশি-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল বত্রিশ হাজার দু’শো। বিন্যামীনের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। বিন্যামীন-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল পঁয়ত্রিশ হাজার চারশো। দানের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। দান-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল বাষট্টি হাজার সাতশো। আশেরের বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। আশের-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল একচল্লিশ হাজার পাঁচশো। নপ্তালির বংশধরদের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল, বংশ ও পরিবারের পরিচয় অনুসারে তাদের নাম লিখে নেওয়া হল। নপ্তালি-গোষ্ঠী থেকে যাদের পাওয়া গেল তাদের সংখ্যা হল তিপ্পান্ন হাজার চারশো। মোশি, হারোণ ও ইস্রায়েলীয়দের বারোজন নেতা এই সব লোকদের সংখ্যা গণনা করলেন। এঁরা প্রত্যেকেই তাঁর নিজের বংশের নেতা ছিলেন। সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাওয়ার মত হয়েছিল পরিবার অনুসারে তাদের গণনা করা হল। তাদের মোট সংখ্যা ছিল ছয় লক্ষ তিন হাজার পাঁচশো পঞ্চাশ। কিন্তু এদের সংগে লেবি-গোষ্ঠীর লোকদের গণনা করা হয় নি। সদাপ্রভু মোশিকে বলেছিলেন, “তুমি লেবি-গোষ্ঠীকে গণনা করবে না, কিম্বা লোকগণনার সময় অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে তাদের ধরবে না। সাক্ষ্য-তাম্বুর সাজ-সরঞ্জাম ও তার সমস্ত কিছুর দেখাশোনার ভার তুমি তাদের উপর দেবে। তাদের কাজ হবে আবাস-তাম্বু এবং তার সমস্ত সাজ-সরঞ্জাম বয়ে নেওয়া। এর দেখাশোনার ভার তাদেরই নিতে হবে এবং তাদেরই এর চারপাশে তাম্বু খাটিয়ে থাকতে হবে। আবাস-তাম্বুটা যখন অন্য কোথাও নিয়ে যেতে হবে তখন লেবীয়েরাই সেটা খুলে নেবে এবং যখন সেটা খাটাতে হবে তখন তাদেরই তা খাটাতে হবে। অন্য কেউ তার কাছে গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে। নিজের নিজের দল অনুসারে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের তাম্বু খাটাবে। প্রত্যেককেই তার নিজের বিভাগীয় জায়গায় বিভাগীয় পতাকার তলায় থাকতে হবে। যাতে ইস্রায়েলীয়দের উপর সদাপ্রভুর শাস্তি নেমে না আসে সেইজন্য সাক্ষ্য-তাম্বুর চারপাশে লেবীয়দের তাম্বু খাটিয়ে থাকতে হবে। সাক্ষ্য-তাম্বুর দেখাশোনার জন্য লেবীয়েরাই দায়ী থাকবে।” সদাপ্রভু মোশিকে যা আদেশ করেছিলেন ইস্রায়েলীয়েরা ঠিক তা-ই করল। এর পর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “মিলন-তাম্বু থেকে কিছু দূরে তার চারপাশে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের ছাউনি ফেলবে। প্রত্যেকজনকে তার বিভাগীয় পতাকা এবং বংশের নিশানের কাছে থাকতে হবে। যিহূদা-বিভাগের গণনা করা মোট লোকসংখ্যা হল এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার চারশো। এদেরই প্রথমে রওনা হতে হবে। রূবেণ-বিভাগের গণনা করা মোট লোকসংখ্যা হল এক লক্ষ একান্ন হাজার চারশো পঞ্চাশ। এদেরই দ্বিতীয় দল হিসাবে রওনা হতে হবে। “তারপর মিলন-তাম্বু নিয়ে রওনা হবে লেবি-গোষ্ঠীর লোকেরা। এরা থাকবে সব বিভাগের মাঝখানে। একের পর এক যেভাবে তারা তাম্বু খাটাবে সেইভাবেই তাদের পর পর রওনা হতে হবে। প্রত্যেকজনকে তার নিজের বিভাগের সংগে থাকতে হবে। ইফ্রয়িম-বিভাগের গণনা করা মোট লোকসংখ্যা হল এক লক্ষ আট হাজার একশো। এদেরই তৃতীয় দল হিসাবে রওনা হতে হবে। দান-বিভাগের গণনা করা মোট লোকসংখ্যা হল এক লক্ষ সাতান্ন হাজার ছ’শো। এদেরই সবার শেষে নিজেদের বিভাগের সংগে রওনা হতে হবে।” এই সব ইস্রায়েলীয়দের বংশ অনুসারে গণনা করা হয়েছিল। বিভিন্ন বিভাগের গণনা করা মোট লোকসংখ্যা হল ছয় লক্ষ তিন হাজার পাঁচশো পঞ্চাশ। সদাপ্রভু মোশিকে যে আদেশ দিয়েছিলেন সেই অনুসারে ইস্রায়েলীয়দের গণনার সময়ে লেবীয়দের বাদ দেওয়া হয়েছিল। মোশিকে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ মতই ইস্রায়েলীয়েরা সমস্ত কিছু করত। তাঁর আদেশ মতই তারা নিজ নিজ বিভাগে তাম্বু খাটাত এবং তাঁর আদেশ মতই তারা নিজ নিজ বংশ ও পরিবার অনুসারে যাত্রা করত। এই হল হারোণ ও মোশির বংশের কথা যখন সদাপ্রভু সিনাই পাহাড়ে মোশির সংগে কথা বলেছিলেন। কিন্তু নাদব আর অবীহূ সিনাই মরু-এলাকায় সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিয়মের বাইরের আগুনে ধূপ জ্বালাবার সময় সদাপ্রভুর সামনেই মারা গিয়েছিলেন। তাঁদের কোন ছেলে ছিল না বলে ইলীয়াসর ও ইথামর তাঁদের বাবা বেঁচে থাকতেই পুরোহিত হিসাবে সেবার কাজ করেছিলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “লেবি-গোষ্ঠীর লোকদের ডেকে এনে হারোণের হাতে দাও যেন তারা তাকে সাহায্য করতে পারে। তারা সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের হয়ে মিলন-তাম্বুতে হারোণের অধীনে আবাস-তাম্বুর কাজ করবে। তারাই মিলন-তাম্বুর সাজ-সরঞ্জামের দেখাশোনা এবং আবাস-তাম্বুর কাজ করে ইস্রায়েলীয়দের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে। লেবীয়দের তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের হাতে দিয়ে দাও। ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে এদের সবাইকে হারোণের হাতে দিয়ে দিতে হবে। পুরোহিত হিসাবে কাজ করবার জন্য তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের নিযুক্ত কর। তারা ছাড়া আর কেউ যদি পুরোহিতের কাজ করতে যায় তবে তাকে মেরে ফেলা হবে।” সদাপ্রভু মোশিকে আরও বললেন, “ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোকদের প্রথম ছেলের জায়গায় আমি ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে লেবীয়দের নিয়েছি। লেবীয়েরা আমার, কারণ ইস্রায়েলীয়দের সব প্রথম ছেলেই আমার। মিসর দেশের প্রথম ছেলেদের মেরে ফেলবার সময় আমি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেকার প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তানকে আমার জন্য আলাদা করে রেখেছি- সে মানুষের হোক বা পশুর হোক। তারা আমার; আমি সদাপ্রভু।” সিনাই মরু-এলাকায় সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি পরিবার ও বংশ অনুসারে লেবীয়দের সংখ্যা গণনা কর। এক মাস ও তার বেশী বয়সের সমস্ত পুরুষদের গণনা কর।” সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে মোশি লেবীয়দের গণনা করলেন। লেবির ছেলেদের নাম ছিল গের্শোন, কহাৎ ও মরারি। গের্শোনের ছেলে লিব্‌নি ও শিমিয়ি ছিলেন দু’টি বংশের পিতা। কহাতের ছেলে অম্রাম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল ছিলেন চারটি বংশের পিতা। মরারির ছেলে মহলি ও মূশি ছিলেন দু’টি বংশের পিতা। এই হল বংশ-পিতা অনুসারে লেবি-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের পরিচয়। গের্শোন ছিলেন লিব্‌নি ও শিমিয়ি বংশের পূর্বপুরুষ। এই বংশগুলোর এক মাস ও তার বেশী বয়সের সমস্ত পুরুষদের গণনার পর দেখা গেল যে, তাদের সংখ্যা সাত হাজার পাঁচশো। পশ্চিম দিকে আবাস-তাম্বুর পিছনে গের্শোনীয়দের তাম্বু ফেলতে বলা হয়েছিল। গের্শোনীয় বংশগুলোর নেতা ছিলেন লায়েলের ছেলে ইলীয়াসফ। মিলন-তাম্বু সম্বন্ধে গের্শোনীয়দের দায়িত্ব ছিল আবাস-তাম্বু, তার উপর বিছানো ছাগলের লোমের ঢাকন, তার উপরকার ছাউনি দু’টা, মিলন-তাম্বুতে ঢুকবার দরজার পর্দা, উঠানের পর্দাগুলো, আবাস-তাম্বু ও বেদীর চারপাশে যে উঠান আছে সেখানে ঢুকবার দরজার পর্দা এবং আবাস-তাম্বুর সমস্ত দড়িগুলোর দেখাশোনা করা আর এগুলোর সংগেকার অন্য সমস্ত কাজ করা। কহাৎ ছিলেন অম্রাম, যিষহর, হিব্রোণ ও উষীয়েলের বংশের পূর্বপুরুষ। এই বংশগুলোর এক মাস ও তার বেশী বয়সের সমস্ত পুরুষদের সংখ্যা হল আট হাজার ছ’শো। পবিত্র তাম্বুর দেখাশোনার ভার ছিল কহাতীয়দের উপর। আবাস-তাম্বুর দক্ষিণ দিকে কহাতীয়দের তাম্বু ফেলতে বলা হয়েছিল। কহাতীয় বংশগুলোর নেতা ছিলেন উষীয়েলের ছেলে ইলীষাফণ। কহাতীয়দের দায়িত্ব ছিল সাক্ষ্য-সিন্দুক, টেবিল, বাতিদান, বেদীগুলো, পবিত্র তাম্বুর সেবা-কাজে ব্যবহারের জিনিসপত্র এবং মহাপবিত্র স্থানের পর্দার দেখাশোনা করা আর এগুলোর সংগেকার অন্য সমস্ত কাজ করা। লেবীয়দের প্রধান নেতা ছিলেন পুরোহিত হারোণের ছেলে ইলীয়াসর। পবিত্র তাম্বুর দেখাশোনা করবার ভার যাদের দেওয়া হয়েছিল তাদের দেখাশোনা করবার জন্য ইলীয়াসরকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। মরারি ছিলেন মহলি ও মূশির বংশের পূর্বপূরুষ। এই বংশগুলোর এক মাস ও তার বেশী বয়সের সমস্ত পুরুষদের গণনার পর দেখা গেল যে, তাদের সংখ্যা ছয় হাজার দু’শো। মরারীয় বংশগুলোর নেতা ছিলেন অবীহয়িলের ছেলে সূরীয়েল। আবাস-তাম্বুর উত্তর দিকে তাদের তাম্বু ফেলতে বলা হয়েছিল। মরারীয়দের দায়িত্ব ছিল আবাস-তাম্বুর ফ্রেম, তার হুড়কা, খুঁটি, পা-দানি ও তার সমস্ত জিনিসপত্র, চারদিকের উঠানের খুঁটি আর পা-দানি, উঠানের পর্দার গোঁজ ও দড়িগুলো দেখাশোনা করা এবং এগুলোর সংগেকার অন্য সব কাজ করা। মিলন-তাম্বুর সামনে, অর্থাৎ আবাস-তাম্বুর পূর্ব দিকে মোশি, হারোণ ও তাঁর ছেলেদের তাম্বু ফেলতে বলা হয়েছিল। তাঁদের দায়িত্ব ছিল ইস্রায়েলীয়দের হয়ে পবিত্র তাম্বুর সমস্ত কাজ পরিচালনা করা। তাঁরা ছাড়া আর কেউ পবিত্র তাম্বুর কাছে গেলে তাকে মেরে ফেলতে বলা হয়েছিল। সদাপ্রভুর আদেশে বংশ অনুসারে মোশি ও হারোণের গণনা করা লেবীয় পুরুষদের মোট সংখ্যা হয়েছিল বাইশ হাজার। এরা প্রত্যেকেই ছিল এক মাস ও তার বেশী বয়সের। এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে প্রথমে জন্মেছে এমন সব এক মাস ও তার বেশী বয়সের সমস্ত পুরুষদের সংখ্যা গণনা করে তাদের নামের একটি তালিকা তৈরী কর। ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত প্রথম পুরুষ সন্তানদের জায়গায় লেবীয়দের এবং ইস্রায়েলীয়দের পশুর প্রথম বাচ্চার জায়গায় লেবীয়দের পশুর প্রথম বাচ্চা আমার বলে ধরে নেবে। আমি সদাপ্রভু।” সদাপ্রভুর দেওয়া আদেশ অনুসারে মোশি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে প্রথমে জন্মেছে এমন সব পুুরুষদের গণনা করলেন। প্রথমে জন্মেছে এমন সব এক মাস ও তার বেশী বয়সের পুরুষদের নাম লিখবার পর দেখা গেল যে, তাদের মোট সংখ্যা বাইশ হাজার দু’শো তিয়াত্তর। সদাপ্রভু মোশিকে আরও বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত প্রথম পুরুষ সন্তানদের জায়গায় লেবীয়দের এবং ইস্রায়েলীয়দের পশুর প্রথম বাচ্চার জায়গায় লেবীয়দের পশুর প্রথম বাচ্চা ধরে নেবে। লেবীয়েরা হবে আমার; আমি সদাপ্রভু। তাদের ছাড়িয়ে নেবার এই রূপা তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের দিয়ে দেবে।” লেবীয়দের দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের ছাড়িয়ে নেবার পরে ইস্রায়েলীয়দের যে সংখ্যাটা বাড়তি রইল মোশি তাদের ছাড়িয়ে নেবার রূপা আদায় করলেন। ইস্রায়েলীয়দের প্রথম পুরুষ সন্তানদের কাছ থেকে তিনি ধর্মীয় মাপের ওজন অনুসারে তের কেজি ছ’শো পঞ্চাশ গ্রাম রূপা আদায় করলেন। মোশি সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে এই ছাড়িয়ে নেবার রূপা হারোণ ও তাঁর ছেলেদের দিলেন। সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “তোমরা লেবীয়দের মধ্য থেকে বংশ ও পরিবার অনুসারে কহাতীয়দের সংখ্যা গণনা কর। ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সের যে কহাতীয় পুরুষেরা মিলন-তাম্বুর কাজ করতে আসবে কেবল তাদের সংখ্যা গণনা করবে। “মিলন-তাম্বুতে কহাতীয়দের কাজ হবে মহাপবিত্র জিনিসগুলোর দেখাশোনা করা। তাম্বু তুলে যাত্রার সময় হলে হারোণ ও তার ছেলেরা আবাস-তাম্বুর ভিতরে গিয়ে সাক্ষ্য-সিন্দুক আড়াল করবার পর্দাটা নামিয়ে তা দিয়ে সিন্দুকটা ঢেকে দেবে। তারপর তারা শুশুকের চামড়া দিয়ে সেটা ঢেকে তার উপর এমন একটা কাপড় বিছিয়ে দেবে যার সবটাই নীল রংয়ের, আর সাক্ষ্য-সিন্দুকের ডাণ্ডাগুলো জায়গামত ঢুকিয়ে দেবে। সম্মুখ-রুটি রাখবার টেবিলের উপর তারা একটা নীল কাপড় বিছিয়ে তার উপর টেবিলের বড় ও ছোট থালাগুলো, বাটি এবং ঢালন-উৎসর্গের কলসীগুলো রাখবে। যে রুটিগুলো সব সময় টেবিলের উপর থাকে সেগুলো টেবিলের উপরেই থাকবে। এগুলোর উপর একটি লাল রংয়ের কাপড় বিছিয়ে শুশুকের চামড়া দিয়ে ঢেকে দেবে আর টেবিলের ডাণ্ডাগুলো জায়গামত ঢুকিয়ে দেবে। আলো দেবার জন্য যে বাতিদানটা আছে সেটা ও তার সব প্রদীপ, সল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা ও সল্‌তের পোড়া অংশ রাখবার পাত্র এবং বাতিতে তেল যোগান দেবার পাত্র তারা একটা নীল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেবে। তারপর তারা সমস্ত সাজ-সরঞ্জাম সুদ্ধ বাতিদানটা শুশুকের চামড়ায় জড়িয়ে সেটা তার বয়ে নেবার তক্তার উপর রাখবে। সোনার বেদীটার উপর একটা নীল কাপড় বিছিয়ে তারা সেটা শুশুকের চামড়া দিয়ে ঢেকে দেবে এবং বেদীর ডাণ্ডাগুলো জায়গামত ঢুকিয়ে দেবে। পবিত্র তাম্বুর কাজে ব্যবহার করবার সমস্ত জিনিসপত্র তারা নীল কাপড়ে জড়িয়ে শুশুকের চামড়া দিয়ে ঢেকে সেটা তার বয়ে নেবার তক্তার উপরে রাখবে। ব্রোঞ্জের বেদীটার সমস্ত ছাই ফেলে দিয়ে তারা একটা বেগুনী রংয়ের কাপড় তার উপর বিছিয়ে দেবে। তারপর তার উপর তারা বেদীর কাজের সমস্ত বাসন-কোসন, আগুন রাখবার পাত্র, মাংস তুলবার কাঁটা, হাতা ও উৎসর্গের রক্ত রাখবার বাটি রাখবে। তারা তার উপর শুশুকের চামড়া বিছিয়ে দেবে এবং তার ডাণ্ডাগুলো জায়গামত ঢুকিয়ে দেবে। “হারোণ ও তার ছেলেরা যখন এই সব পবিত্র জিনিসপত্র ও পবিত্র তাম্বুর সাজ-সরঞ্জাম ঢাকা দেওয়া শেষ করবে এবং লোকেরা তাম্বু তুলে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হবে তখন কহাতীয়েরা এই সব বয়ে নেবার জন্য আসবে। কিন্তু কোন পবিত্র জিনিষে তাদের হাত দেওয়া চলবে না। তা করলে তারা মারা পড়বে। মিলন-তাম্বুতে যে সব জিনিস থাকবে কহাতীয়দের সেগুলো বয়ে নিতে হবে। বাতির তেল, সুগন্ধি ধূপ, নিয়মিত শস্য-উৎসর্গ এবং অভিষেক-তেলের ভার থাকবে পুরোহিত হারোণের ছেলে ইলীয়াসরের উপর। পুরো আবাস-তাম্বু ও তার মধ্যেকার সমস্ত কিছুর, অর্থাৎ পবিত্র তাম্বুর ও তার সাজ-সরঞ্জামের ভার থাকবে ইলীয়াসরের উপর।” এর পর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “তোমরা দেখো যেন লেবি-গোষ্ঠীর মধ্য থেকে কহাতীয় বংশগুলো মুছে না যায়। যাতে তারা মহাপবিত্র জিনিসগুলোর কাছে গিয়ে মারা না পড়ে বরং বেঁচে থাকে সেই উদ্দেশ্যে হারোণ ও তার ছেলেরা পবিত্র তাম্বুর মধ্যে গিয়ে প্রত্যেকের কাজ এবং কি তাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে তা ঠিক করে দেবে। কিন্তু সেই সমস্ত পবিত্র জিনিস দেখবার জন্য কহাতীয়দের ভিতরে যাওয়া চলবে না, এক মুহূর্তের জন্যও না। তা করলে তারা মারা পড়বে।” সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “পরিবার ও বংশ অনুসারে তুমি গের্শোনীয়দেরও সংখ্যা গণনা কর। ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সের যে গের্শোনীয় পুরুষেরা মিলন-তাম্বুর কাজ করতে আসবে কেবল তাদের সংখ্যা গণনা করবে। এছাড়া আবাস-তাম্বু ও বেদীর চারপাশের উঠানের পর্দা, উঠানে ঢুকবার দরজার পর্দা, আবাস-তাম্বু খাটাবার দড়ি এবং এগুলো কাজে লাগাবার সমস্ত দরকারী জিনিসও তাদের বয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই সমপর্কে আর যত কাজ আছে তার সমস্তই গের্শোনীয়দের করতে হবে। বোঝা বইবার কাজ হোক কিম্বা আর অন্য যে কোন কাজ হোক, সমস্ত কাজই হারোণ ও তার ছেলেদের নির্দেশমত তাদের করতে হবে। যে সব জিনিস বয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের দায়িত্ব তা তোমরাই তাদের বলে দেবে। মিলন-তাম্বুতে গের্শোনীয় বংশগুলোর এই হল কাজ। তাদের কাজকর্মের দেখাশোনা করবার ভার থাকবে পুরোহিত হারোণের ছেলে ঈথামরের উপর। “বংশ ও পরিবার অনুসারে তোমরা মরারীয়দের সংখ্যা গণনা কর। ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সের যে মরারীয় পুরুষেরা মিলন-তাম্বুর কাজ করতে আসবে কেবল তাদের সংখ্যা গণনা করবে। মিলন-তাম্বুর কাজে মরারীয়দের দায়িত্ব হল আবাস-তাম্বুর সমস্ত ফ্রেম, হুড়কা, খুঁটি ও পা-দানিগুলো বয়ে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া, চারপাশের উঠানের সমস্ত পা-দানি সুদ্ধ খুঁটি, তাম্বুর গোঁজ, উঠানের পর্দার দড়ি ও সেগুলোর সমস্ত যন্ত্রপাতি এবং সেগুলো কাজে লাগাবার সমস্ত দরকারী জিনিসও তাদের বয়ে নিয়ে যেতে হবে। কে কি বয়ে নিয়ে যাবে তা তোমরাই তাদের ঠিক করে দেবে। এই হল মিলন-তাম্বুর কাজে মরারীয় বংশগুলোর দায়িত্ব। তাদের কাজকর্মের দেখাশোনা করবার ভার থাকবে পুরোহিত হারোণের ছেলে ঈথামরের উপর।” বংশ ও পরিবার অনুসারে মোশি, হারোণ ও ইস্রায়েলীয় নেতারা কহাতীয়দের গণনা করলেন। ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত যাদের মিলন-তাম্বুতে কাজ করতে আসবার কথা, বংশ অনুসারে তাদের গণনা করবার পর দেখা গেল তাদের সংখ্যা দু’হাজার সাতশো পঞ্চাশ। এটাই ছিল ঐ সব কহাতীয় বংশগুলোর মোট সংখ্যা। মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুর দেওয়া হুকুম অনুসারেই মোশি ও হারোণ তাদের সংখ্যা গণনা করেছিলেন। বংশ ও পরিবার অনুসারে গের্শোনীয়দের গণনা করা হয়েছিল। ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত যাদের মিলন-তাম্বুতে কাজ করতে আসবার কথা, বংশ ও পরিবার অনুসারে তাদের গণনা করবার পর দেখা গেল তাদের সংখ্যা দু’হাজার ছ’শো ত্রিশ। এটাই হয়েছিল ঐ সব গের্শোনীয় বংশগুলোর মোট সংখ্যা। সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে মোশি ও হারোণ তাদের গণনা করেছিলেন। বংশ ও পরিবার অনুসারে মরারীয়দের গণনা করা হয়েছিল। ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত যাদের মিলন-তাম্বুতে কাজ করতে আসবার কথা, বংশ অনুসারে তাদের গণনা করবার পর দেখা গেল তাদের সংখ্যা তিন হাজার দু’শো। এটাই হয়েছিল ঐ সব মরারীয় বংশগুলোর মোট সংখ্যা। মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুর দেওয়া আদেশ অনুসারে মোশি ও হারোণ তাদের গণনা করেছিলেন। মোশি, হারোণ ও ইস্রায়েলীয় নেতারা এইভাবে বংশ ও পরিবার অনুসারে সমস্ত লেবীয়দের গণনা করেছিলেন। মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুর দেওয়া আদেশ অনুসারে প্রত্যেককেই তার কাজ এবং কি বয়ে নিয়ে যেতে হবে তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। মোশিকে সদাপ্রভু যে আদেশ দিয়েছিলেন সেই অনুসারে এইভাবে লেবীয়দের লোকসংখ্যা গণনা করা হয়েছিল। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের এই আদেশ দাও যেন তারা ছাউনি থেকে এমন সব লোকদের সরিয়ে দেয় যাদের কোন চর্মরোগ রয়েছে কিম্বা যাদের দেহ থেকে কোন রকম স্রাব হচ্ছে কিম্বা মৃতদেহের দরুন যারা অশুচি হয়ে পড়েছে। সে স্ত্রীলোক হোক বা পুরুষ হোক তাকে সরিয়ে দিতে হবে। এই সব লোকেরা যাতে ছাউনি অশুচি না করে সেইজন্য ছাউনি থেকে তাদের বাইরে সরিয়ে দিতে হবে, কারণ সেখানে আমি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে বাস করি।” ইস্রায়েলীয়েরা তা-ই করল। তারা সেই সব লোকদের ছাউনির বাইরে সরিয়ে দিল। সদাপ্রভু মোশিকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন ইস্রায়েলীয়েরা তা-ই করেছিল। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল, মানুষ সাধারণত যে সব পাপ করে তার কোন একটা করে যদি কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোক সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয় তবে তাকে দোষী বলে ধরা হবে। সে যে পাপ করেছে তা তাকে স্বীকার করতে হবে। সে যার উপর অন্যায় করেছে তাকে তার অন্যায়ের পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যে জিনিস সম্বন্ধে সে অন্যায় করেছে সেই জিনিসের দামের সংগে আরও পাঁচ ভাগের এক ভাগ দাম যোগ করে তাকে দিতে হবে। ক্ষতিপূরণ নেবার জন্য যদি সেই লোকের কোন নিকট আত্মীয় না থাকে তবে তা সদাপ্রভুর পাওনা হবে। সেই ক্ষতিপূরণ এবং তার পাপ ঢাকা দেবার ভেড়াটা পুরোহিতকে দিতে হবে। যে সব পবিত্র জিনিস ইস্রায়েলীয়েরা পুরোহিতের কাছে নিয়ে আসবে তা সবই পুরোহিতের হবে। প্রত্যেকের উৎসর্গ করা জিনিস পুরোহিতের হবে। পুরোহিতের হাতে দেওয়া জিনিস পুরোহিতেরই হবে।” “পুরোহিত সেই স্ত্রীলোকটিকে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড় করাবে। তারপর সে একটা মাটির পাত্রে কিছু পবিত্র জল নেবে এবং আবাস-তাম্বুর মেঝে থেকে কিছু ধূলা তুলে নিয়ে সেই জলের মধ্যে দেবে। স্ত্রীলোকটিকে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড় করাবার পর পুরোহিত তার চুল খুলে দেবে এবং অন্যায় তুলে ধরবার জন্য আনা উৎসর্গের জিনিস, অর্থাৎ সন্দেহের দরুন শস্য-উৎসর্গের জিনিস তার হাতে দেবে। পুরোহিত তার নিজের হাতে রাখবে অভিশাপ নিয়ে আসা তেতো জল। তারপর পুরোহিত স্ত্রীলোকটিকে শপথ করিয়ে নিয়ে তাকে বলবে, ‘বিয়ের পর কোন লোক যদি তোমার সংগে ব্যভিচার না করে থাকে এবং তুমি যদি কুপথে গিয়ে অসতী না হয়ে থাক তবে অভিশাপ আনা এই তেতো জল যেন তোমার কোন ক্ষতি না করে। কিন্তু বিয়ের পর কুপথে গিয়ে কারও সংগে ব্যভিচার করে যদি তুমি অসতী হয়ে থাক’- এই পর্যন্ত বলে পুরোহিত সেই স্ত্রীলোকটিকে দিয়ে তার নিজের উপর অভিশাপ ডেকে আনবার একটা শপথ করিয়ে নিয়ে আবার বলবে, ‘তবে সদাপ্রভু এমন করুন যাতে স্ত্রী-অংগ অকেজো হয়ে তোমার পেট ফুলে ওঠে, যার ফলে তোমার লোকেরাই অভিশাপ এবং শপথের সময়ে তোমার নাম ব্যবহার করবে। এই অভিশাপের জল তোমার দেহে ঢুকে যেন এমনভাবে কাজ করে যাতে তোমার পেট ফুলে ওঠে ও তোমার স্ত্রী-অংগ অকেজো হয়ে যায়।’ “এর উত্তরে স্ত্রীলোকটিকে বলতে হবে, ‘তা-ই হোক।’ “পুরোহিত এই সমস্ত অভিশাপ চামড়ার উপর লিখে জল ঢেলে লেখাটা সেই তেতো জলে ফেলবে। অভিশাপের সেই তেতো জল সেই স্ত্রীলোকটিকে খাওয়ালে পর সেই জল তার পেটে গিয়ে তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দেবে। প্রথমে পুরোহিত স্ত্রীলোকটির হাত থেকে সন্দেহের দরুন আনা সেই শস্য-উৎসর্গ নিয়ে সদাপ্রভুর সামনে দুলিয়ে তা বেদীর কাছে নিয়ে যাবে। পুরোহিত তারপর পুরো উৎসর্গের বদলে তা থেকে এক মুঠো তুলে নিয়ে বেদীর উপর পুড়িয়ে দেবে। তারপর সে সেই জল স্ত্রীলোকটিকে খেতে দেবে। স্ত্রীলোকটি যদি অসতী হয়ে স্বামীর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে থাকে তবে অভিশাপের এই জল তাকে খাওয়াবার পর তা তার পেটে গিয়ে তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দেবে। তার পেট ফুলে উঠবে এবং স্ত্রী-অংগ অকেজো হয়ে যাবে আর তার লোকেরা তার নাম অভিশাপ হিসাবে ব্যবহার করবে। কিন্তু স্ত্রীলোকটি যদি অসতী না হয়ে নির্দোষ থাকে তবে তাকে যে দোষ দেওয়া হয়েছিল তা থেকে সে খালাস পাবে এবং সন্তানের মা হবার ক্ষমতা তার থেকেই যাবে। এতে স্বামী অন্যায় করবার নালিশ থেকে মুক্ত থাকবে, কিন্তু অন্যায় করে থাকলে স্ত্রীলোকটি তার ফল ভোগ করবে।” সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের জানিয়ে দাও, যদি কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোক নাসরীয় হিসাবে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে থাকবার বিশেষ শপথ করে, তবে তার আংগুর-রস কিম্বা কোন রকমের মদ খাওয়া চলবে না। সে আংগুর-রস কিম্বা মদ থেকে তৈরী সিরকাও খেতে পারবে না। এমন কি, টাটকা আংগুর-রস, আংগুর কিম্বা কিশমিশ খাওয়াও তার চলবে না। মোট কথা, সে যতদিন নাসরীয় থাকবে ততদিন আংগুর ফলের কোন কিছুই সে খেতে পারবে না, এর বীচিও নয় কিম্বা খোসাও নয়। “যতদিন পর্যন্ত সে নাসরীয় হিসাবে নিজেকে আলাদা করে রাখবে বলে শপথ করেছে ততদিন পর্যন্ত তার মাথায় ক্ষুর লাগানো চলবে না। সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে থাকবার সময়ে তাকে সদাপ্রভুর হয়েই থাকতে হবে। তার চুল লম্বা হতে দিতে হবে। এই সময় সে কোন মৃতদেহের কাছে যেতে পারবে না। মা-বাবা-ভাই-বোনদের কেউ মারা গেলেও তার নিজেকে অশুচি করা চলবে না, কারণ তার মাথায় রয়েছে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে থাকবার চিহ্ন। তার এই আলাদা হয়ে থাকবার সম্পূর্ণ সময়ে তাকে সদাপ্রভুর হয়ে থাকতে হবে। “যদি কেউ হঠাৎ তার সামনে মারা যায় এবং তাতে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে রাখা তার চুল অশুচি হয়ে যায় তবে সাত দিনের দিন, অর্থাৎ তার শুচি হবার দিন তাকে মাথা কামিয়ে ফেলতে হবে। আট দিনের দিন তাকে মিলন-তাম্বুর দরজায় পুরোহিতের কাছে দু’টা ঘুঘু না হয় দু’টা কবুতর নিয়ে যেতে হবে। মৃতদেহের কাছে উপস্থিত থাকবার দরুন সে অশুচি হয়েছে বলে তার অশুচিতা ঢাকা দেবার জন্য পুরোহিত একটা পাখী দিয়ে পাপ-উৎসর্গ এবং অন্যটা দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গ করবে। ঐ দিনই তার মাথার চুল তাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে নতুন করে রাখতে হবে, আর সেই সংগে তার নিজেকে আগের মত সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবার শপথ করতে হবে। এছাড়া দোষ-উৎসর্গের জন্য তাকে এক বছরের একটা ভেড়ার বাচ্চা আনতে হবে। এর আগে যতদিন সে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে থেকেছে সেই দিনগুলো বাতিল হয়ে যাবে, কারণ সেই সময়ে সে অশুচি হয়েছিল। “সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে একজন নাসরীয়ের আলাদা হয়ে থাকবার সময়টা পার হয়ে যাওয়ার পর এই অনুষ্ঠান পালন করতে হবে। তাকে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে যেতে হবে। সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাকে উৎসর্গ হিসাবে পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য এক বছরের একটা খুঁতহীন বাচ্চা-ভেড়া, পাপ-উৎসর্গের জন্য এক বছরের একটা খুঁতহীন বাচ্চা-ভেড়ী এবং যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য একটা খুঁতহীন ভেড়া আনতে হবে। এগুলোর সংগে থাকবে এর সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের জিনিস এবং এক টুকরি খামিহীন রুটি। এই রুটিগুলো হবে তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দার পিঠা ও তেল লাগানো চাপাটি। পুরোহিতকে এগুলো সদাপ্রভুর সামনে নিয়ে রাখতে হবে এবং তাকে পাপ-উৎসর্গের ও পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। এছাড়া তাকে যোগাযোগ-উৎসর্গের ভেড়াটা কেটে তা উৎসর্গ করবার সময় টুকরির খামিহীন রুটিগুলোও উৎসর্গ করতে হবে আর এর সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করতে হবে। তারপর মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে নাসরীয়কে তার সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে রাখা চুল কামিয়ে ফেলতে হবে। এই চুল নিয়ে সে যোগাযোগ-উৎসর্গের নীচে আগুনে ফেলে দেবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে রাখা চুল কামানো হয়ে গেলে পর পুরোহিত ভেড়াটার একটা সিদ্ধ করা কাঁধ আর টুকরি থেকে একটা খামিহীন পিঠা ও চাপাটি নিয়ে সেই নাসরীয়ের হাতে দেবে। তারপর পুরোহিত দোলন-উৎসর্গ হিসাবে তা সদাপ্রভুর সামনে দোলাবে। এগুলো পবিত্র এবং পুরোহিতের পাওনা। এছাড়া দুলিয়ে রাখা বুকের মাংস এবং উৎসর্গ করা ঊরুও পুরোহিতের পাওনা। এই সব হয়ে গেলে পর সেই নাসরীয় আংগুর-রস খেতে পারবে। “নাসরীয়ের জন্য এই হল নিয়ম। সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে থাকবার শপথ অনুসারে তাকে এই সব উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। এছাড়া যদি সে নিজের ক্ষমতামত আরও কিছু দেবার শপথ করে থাকে তবে তা-ও তাকে দিতে হবে। সে যা প্রতিজ্ঞা করেছে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে থাকবার নিয়ম অনুসারে তাকে এর সবই দিতে হবে।” সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের বল যে, তারা এই কথা বলে ইস্রায়েলীয়দের উপর আশীর্বাদ উচ্চারণ করবে: ‘সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্বাদ করুন ও রক্ষা করুন; সদাপ্রভুর দয়া আলোর মত তোমার উপর পড়ুক; তাঁর করুণা তোমার উপর থাকুক। সদাপ্রভু তাঁর মুখ তোমার দিকে ফিরান এবং তোমাকে শান্তি দিন।’ “এইভাবে তারা ইস্রায়েলীয়দের উপর আমার নাম উচ্চারণ করবে, তাতে আমিই তাদের আশীর্বাদ করব।” যেদিন আবাস-তাম্বুটা খাটানো শেষ হল সেই দিন মোশি তার উপর অভিষেক-তেল দিয়ে গোটা তাম্বুটা এবং তার সাজ-সরঞ্জাম সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিলেন। তিনি বেদী ও তার বাসন-কোসনের উপর অভিষেক তেল দিয়ে সেগুলোও আলাদা করে নিলেন। তারপর ইস্রায়েলীয়দের নেতারা, অর্থাৎ বংশের নেতারা উপহার আনলেন। এঁরাই হলেন সেই সব গোষ্ঠী-নেতা যাঁদের উপর গণনা করা লোকদের দেখাশোনার ভার ছিল। উপহার হিসাবে তাঁরা ছয়টা ছই দেওয়া গরুর গাড়ি এবং বারোটা বলদ সদাপ্রভুর সামনে এনে রাখলেন। তাতে প্রত্যেক নেতার পক্ষ থেকে একটা করে বলদ আর প্রতি দু’জনের পক্ষ থেকে একটা করে গরুর গাড়ি দেওয়া হল। তাঁরা সেগুলো এনে আবাস-তাম্বুর সামনে রাখলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এদের কাছ থেকে এগুলো গ্রহণ কর যাতে সেগুলো মিলন-তাম্বুর কাজে লাগানো যায়। লেবীয়দের কাজ অনুসারে তুমি এগুলো তাদের মধ্যে ভাগ করে দাও।” সেইজন্য মোশি সেই গাড়ি ও বলদগুলো লেবীয়দের ভাগ করে দিলেন। গের্শোনীয়দের কাজ অনুসারে তিনি দু’টা গাড়ি ও চারটা বলদ তাদের দিলেন, আর মরারীয়দের কাজ অনুসারে তিনি তাদের চারটা গাড়ি ও আটটা বলদ দিলেন। এদের সকলের দেখাশোনার ভার ছিল পুরোহিত হারোণের ছেলে ঈথামরের উপর। মোশি কহাতীয়দের কিছুই দিলেন না, কারণ পবিত্র জিনিসগুলোর দেখাশোনার ভার ছিল তাদের উপর এবং সেগুলোই ছিল তাদের কাঁধে করে বয়ে নেওয়ার কথা। অভিষেক-তেল দিয়ে বেদীটির উৎসর্গের অনুষ্ঠান আরম্ভ হবার পর থেকে নেতারা তাঁদের উপহার এনে বেদীর সামনে রাখতে লাগলেন। সদাপ্রভু মোশিকে বলেছিলেন, “প্রতিদিন এক একজন করে নেতা বেদী-উৎসর্গের উদ্দেশ্যে তার উপহার নিয়ে আসবে।” প্রথম দিন যে নেতা তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন তিনি হলেন যিহূদা-গোষ্ঠীর নেতা অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল অম্মীনাদবের ছেলে নহশোনের উপহার। দ্বিতীয় দিনে ইষাখর-গোষ্ঠীর নেতা সূয়ারের ছেলে নথনেল তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল সূয়ারের ছেলে নথনেলের উপহার। তৃতীয় দিনে সবূলূন-গোষ্ঠীর নেতা হেলোনের ছেলে ইলীয়াব তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল হেলোনের ছেলে ইলীয়াবের উপহার। চতুর্থ দিনে রূবেণ-গোষ্ঠীর নেতা শদেয়ূরের ছেলে ইলীষূর তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল শদেয়ূরের ছেলে ইলীষূরের উপহার। পঞ্চম দিনে শিমিয়োন-গোষ্ঠীর নেতা সূরীশদ্দয়ের ছেলে শলুমীয়েল তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল সূরীশদ্দয়ের ছেলে শলুমীয়েলের উপহার। ষষ্ঠ দিনে গাদ-গোষ্ঠীর নেতা দ্যূয়েলের ছেলে ইলীয়াসফ তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল দ্যূয়েলের ছেলে ইলীয়াসফের উপহার। সপ্তম দিনে ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর নেতা অম্মীহূদের ছেলে ইলীশামা তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল অম্মীহূদের ছেলে ইলীশামার উপহার। অষ্টম দিনে মনঃশি-গোষ্ঠীর নেতা পদাহসূরের ছেলে গমলীয়েল তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল পদাহসূরের ছেলে গমলীয়েলের উপহার। নবম দিনে বিন্যামীন-গোষ্ঠীর নেতা গিদিয়োনির ছেলে অবীদান তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল গিদিয়োনির ছেলে অবীদানের উপহার। দশম দিনে দান-গোষ্ঠীর নেতা অম্মীশদ্দয়ের ছেলে অহীয়েষর তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল অম্মীশদ্দয়ের ছেলে অহীয়েষরের উপহার। একাদশ দিনে আশের-গোষ্ঠীর নেতা অক্রণের ছেলে পগীয়েল তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল অক্রণের ছেলে পগীয়েলের উপহার। দ্বাদশ দিনে নপ্তালি-গোষ্ঠীর নেতা ঐননের ছেলে অহীরঃ তাঁর উপহার নিয়ে আসলেন। তাঁর উপহার ছিল শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দায় ভরা ধর্মীয় মাপের এক কেজি তিনশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার থালা এবং একই জিনিষে ভরা সাতশো গ্রাম ওজনের একটা রূপার বাটি; ধূপে ভরা একশো গ্রাম ওজনের একটা সোনার ছোট থালা; পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া, একটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া; পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা; যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, পাঁচটা ভেড়া, পাঁচটা পাঁঠা ও পাঁচটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। এগুলো ছিল ঐননের ছেলে অহীরয়ের উপহার। অভিষেক-তেল দিয়ে বেদীটির উৎসর্গের অনুষ্ঠান আরম্ভ হবার পর থেকে ইস্রায়েলীয় নেতারা যে সমস্ত উপহার এনেছিলেন সেগুলো হল বারোটা রূপার থালা, বারোটা রূপার বাটি এবং বারোটা সোনার ছোট থালা। ধর্মীয় মাপ অনুসারে প্রত্যেকটা রূপার থালার ওজন ছিল এক কেজি তিনশো গ্রাম এবং প্রত্যেকটা রূপার বাটির ওজন ছিল সাতশো গ্রাম। রূপার সমস্ত পাত্রগুলোর মোট ওজন হয়েছিল চব্বিশ কেজি। ধর্মীয় মাপ অনুসারে প্রত্যেকটা ধূপে ভরা সোনার ছোট থালার ওজন ছিল একশো গ্রাম। সোনার বারোটা ছোট থালার মোট ওজন হয়েছিল এক কেজি দু’শো গ্রাম। এছাড়া পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য মোট দেওয়া হয়েছিল বারোটা ষাঁড়, বারোটা ভেড়া এবং এক বছরের বারোটা বাচ্চা-ভেড়া। এগুলোর সংগে ছিল এর সংগেকার শস্য-উৎসর্গের জিনিস। পাপ-উৎসর্গের জন্য দেওয়া হয়েছিল বারোটা পাঁঠা। যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য মোট দেওয়া হয়েছিল চব্বিশটা ষাঁড়, ষাটটা ভেড়া, ষাটটা পাঁঠা এবং ষাটটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া। বেদীটির অভিষেকের পর এর উৎসর্গের জন্য এই সমস্ত উপহার আনা হয়েছিল। এর পর মোশি যখন সদাপ্রভুর সংগে কথা বলবার জন্য মিলন-তাম্বুতে ঢুকতেন তখন সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরকার ঢাকনার কিনারার করূব দু’টির মাঝখানের জায়গা থেকে তাঁর কথা শুনতে পেতেন। এইভাবে সদাপ্রভু মোশির সংগে কথা বলতেন। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণকে বল, বাতিদানের সাতটা প্রদীপ তাকে এমনভাবে বসাতে হবে যাতে সেগুলোর আলো বাতিদানের সামনের জায়গাটায় পড়ে।” হারোণ তা-ই করলেন। মোশিকে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ মতই তিনি প্রদীপগুলো এমনভাবে বসালেন যাতে বাতিদানের উপর সেগুলোর সল্‌তে সামনের দিকে থাকে। বাতিদানটার গোড়া থেকে আগার ফুলগুলো পর্যন্ত সবটাই সোনা পিটিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। সদাপ্রভু মোশিকে যে নমুনা দেখিয়েছিলেন ঠিক সেইরকম করেই বাতিদানটা তৈরী করা হয়েছিল। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে লেবীয়দের বের করে নিয়ে তাদের শুচি কর। এইভাবে তুমি তাদের শুচি করবে: তাদের উপর শুচি করবার জল ছিটিয়ে দেবে। তারপর তারা তাদের সারা দেহ কামিয়ে কাপড়-চোপড় ধুয়ে নিজেদের শুচি করে নেবে। পরে তারা একটা ষাঁড় এবং এর সংগেকার শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া মিহি ময়দা নিয়ে আসবে। পাপ-উৎসর্গের জন্য তোমাকে আর একটা ষাঁড় আনিয়ে নিতে হবে। এর পরে তুমি মিলন-তাম্বুর সামনে লেবীয়দের নিয়ে আসবে এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সেখানে একত্র করবে। লেবীয়দের তুমি সদাপ্রভুর সামনে আনবে এবং ইস্রায়েলীয়েরা তাদের উপর হাত রাখবে। হারোণ ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে লেবীয়দের সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করবে যেন তারা সদাপ্রভুর কাজে হাত দিতে পারে। তারপর লেবীয়েরা সেই দু’টা ষাঁড়ের উপর হাত রাখবে আর তুমি তার একটা দিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পাপ-উৎসর্গ এবং অন্যটা দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে তাদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করবে। লেবীয়দের তুমি হারোণ ও তার ছেলেদের সামনে দাঁড় করাবে এবং সদাপ্রভুর কাছে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে তাদের উৎসর্গ করবে। এইভাবে তুমি অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের থেকে লেবীয়দের আলাদা করে নেবে, আর তাতে তারা আমার হবে। “এইভাবে লেবীয়দের শুচি করে নিয়ে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে উৎসর্গ করবার পরে তারা মিলন-তাম্বুতে কাজ করবার জন্য আসবে। সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে এরাই সম্পূর্ণভাবে আমার, আর কারও নয়। প্রত্যেক ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোকের প্রথম পুরুষ সন্তানের বদলে আমি লেবীয়দের আমার নিজের করে নিচ্ছি। প্রথমে জন্মেছে এমন প্রত্যেকটি ইস্রায়েলীয় পুরুষ সন্তান আমার- সে মানুষেরই হোক বা পশুরই হোক। মিসরীয়দের প্রথম পুরুষ সন্তান মেরে ফেলবার সময় আমি ইস্রায়েলীয়দের প্রথম পুরুষ সন্তান আমার জন্য আলাদা করে রেখেছিলাম। প্রথমে জন্মেছে সেই সমস্ত ইস্রায়েলীয় সন্তানদের জায়গায় আমি এখন লেবীয়দের গ্রহণ করছি। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেকার এই লেবীয়দের আমি হারোণ ও তার ছেলেদের দান করছি, যাতে তারা ইস্রায়েলীয়দের হয়ে মিলন-তাম্বুতে কাজ করে এবং তাদের পাপ ঢাকবার ব্যবস্থা করে। তার ফলে ইস্রায়েলীয়েরা পবিত্র তাম্বুর কাছে গেলেও তাদের উপর কোন বিপদ নেমে আসবে না।” সদাপ্রভু লেবীয়দের সম্বন্ধে মোশিকে যে সব আদেশ দিয়েছিলেন মোশি, হারোণ এবং অন্য সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা লেবীয়দের নিয়ে তা-ই করলেন। লেবীয়েরা নিজেদের শুচি করে নিল এবং কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলল। তারপর হারোণ সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোলন-উৎসর্গ হিসাবে তাদের উৎসর্গ করলেন এবং শুচি করে নেবার জন্য তাদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করলেন। এর পর লেবীয়েরা হারোণ ও তার ছেলেদের অধীনে মিলন-তাম্বুতে তাদের কাজ করতে গেল। সদাপ্রভু মোশিকে যে সব আদেশ দিয়েছিলেন তারা লেবীয়দের নিয়ে ঠিক তা-ই করলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “লেবীয়দের সম্বন্ধে এই নিয়ম থাকবে যে, তাদের মধ্যে পঁচিশ কিম্বা তার বেশী বয়সের লোকেরা মিলন-তাম্বুর কাজ করতে আসবে, কিন্তু পঞ্চাশ বছর বয়সের পরে ঐ কাজ থেকে তাদের অবসর নিতে হবে; তারা আর কাজ করবে না। তখন এই লোকেরা মিলন-তাম্বুতে তাদের ভাইদের সংগে দেখাশোনার কাজে সাহায্য করতে পারবে কিন্তু নিজেরা কোন কাজে হাত দিতে পারবে না। এই নিয়ম অনুসারে তুমি লেবীয়দের কাজ ঠিক করে দেবে।” ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার দ্বিতীয় বছরের প্রথম মাসে সিনাই মরু-এলাকায় সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা যেন নির্দিষ্ট সময়ে উদ্ধার-পর্ব পালন করে। তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ে, অর্থাৎ এই মাসের চৌদ্দ দিনের দিন বেলা ডুবে গেলে পর সমস্ত নিয়ম-কানুন অনুসারে এই পর্ব পালন করে।” এই কথা শুনে মোশি ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার-পর্ব পালন করতে বললেন। তাতে তারা বছরের প্রথম মাসের চৌদ্দ দিনের দিন বেলা ডুবে গেলে পর সিনাই মরু-এলাকায় তা পালন করল। সদাপ্রভু মোশিকে যে আদেশ দিয়েছিলেন ইস্রায়েলীয়েরা ঠিক সেইমতই সব কিছু করল। সেই সময় তাদের মধ্যে কয়েকজন লোক একটা মৃতদেহের ছোঁয়া লাগবার দরুন অশুচি অবস্থায় পড়ে সেই দিন উদ্ধার-পর্ব পালন করতে পারল না। তারা সেই দিনই মোশি ও হারোণের কাছে গেল। তারা মোশিকে বলল, “একটা মৃতদেহের ছোঁয়া লাগবার দরুন আমরা অশুচি অবস্থায় আছি। তাই বলে অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের সংগে আমরা নির্দিষ্ট সময়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করতে পারব না কেন?” উত্তরে মোশি বললেন, “তোমাদের সম্বন্ধে সদাপ্রভুর আদেশ জেনে না নেওয়া পর্যন্ত তোমরা অপেক্ষা কর।” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের বল যে, তাদের কিম্বা তাদের বংশধরদের মধ্যে যদি কেউ কেউ মৃতদেহের ছোঁয়া লাগবার দরুন অশুচি অবস্থায় পড়ে কিম্বা তারা যদি লম্বা যাত্রাপথে থাকে তবুও তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্ব পালন করতে পারবে। দ্বিতীয় মাসের চৌদ্দ দিনের দিন বেলা ডুবে গেলে পর তাদের এই পর্ব পালন করতে হবে। খামিহীন রুটি আর তেতো শাকের সংগে তাদের উদ্ধার-পর্বের মাংস খেতে হবে। সকাল পর্যন্ত কিছু ফেলে রাখা চলবে না কিম্বা কোন হাড় ভাংগা চলবে না। উদ্ধার-পর্ব পালনের সময় সমস্ত নিয়ম তাদের মেনে চলতে হবে। কিন্তু অশুচি নয় কিম্বা যাত্রাপথেও নয় এমন কোন লোক যদি উদ্ধার-পর্ব পালন না করে, তবে সে নির্দিষ্ট সময়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করে নি বলে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। তাকে তার পাপের ফল ভোগ করতেই হবে। “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির কোন লোক যদি সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্ব পালন করতে চায়, তবে তাকে এই পর্বের নিয়ম-কানুুন অনুসারেই তা পালন করতে হবে। ইস্রায়েলীয় এবং অন্য জাতির সবাইকে একই নিয়ম পালন করতে হবে।” যেদিন আবাস-তাম্বু, অর্থাৎ সাক্ষ্য-তাম্বু খাটানো হল সেই দিন সেটি সদাপ্রভুর মেঘে ঢেকে গেল। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত আবাস-তাম্বুর উপরকার সেই মেঘ আগুনের মত দেখাল। তারপর থেকে অবস্থাটা ঐরকমই হতে লাগল। আবাস-তাম্বুটি সেই মেঘে ঢাকা থাকত আর রাতের বেলা তা আগুনের মত দেখাত। আবাস-তাম্বুর উপর থেকে যখন মেঘ সরে যেত তখন ইস্রায়েলীয়েরা যাত্রা শুরু করত। কিন্তু যেখানে সেই মেঘ স্থির হয়ে দাঁড়াত সেখানে তারা তাম্বু ফেলত। সদাপ্রভুর আদেশেই তারা যাত্রা করত আবার সদাপ্রভুর আদেশেই তাম্বু ফেলত। আবাস-তাম্বুর উপর যতক্ষণ মেঘ থাকত ইস্রায়েলীয়েরা ততক্ষণ তাম্বু ফেলে সেখানেই থাকত। আবাস-তাম্বুর উপরে মেঘ যখন বেশী দিন ধরে থাকত ইস্রায়েলীয়েরা তখন সদাপ্রভুর নির্দেশ মেনে নিয়ে যাত্রা বন্ধ রাখত। কখনও কখনও মেঘ আবাস-তাম্বুর উপরে মাত্র কয়েক দিন থাকত। ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর আদেশে তাম্বু ফেলত আবার তাঁরই আদেশে যাত্রা শুরু করত। কখনও কখনও মেঘ মাত্র সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত থাকত। সকালবেলা মেঘ সরে গেলে পর তারা আবার যাত্রা শুরু করত। মেঘ সরে গেলেই তারা চলতে শুরু করত- তা দিনেই হোক বা রাতেই হোক। দু’দিন হোক বা এক মাস হোক কিম্বা তার বেশী সময় হোক, যতদিন মেঘ আবাস-তাম্বুর উপরে থাকত ইস্রায়েলীয়েরা তাম্বু ফেলে সেখানেই থাকত, যাত্রা করত না। কিন্তু মেঘ সরে গেলেই তারা আবার চলতে শুরু করত। সদাপ্রভুর আদেশেই তারা তাম্বু ফেলত আবার সদাপ্রভুর আদেশেই যাত্রা করত। মোশির মধ্য দিয়ে দেওয়া আদেশ অনুসারেই তারা সদাপ্রভুর নির্দেশ মেনে চলত। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি রূপা পিটিয়ে দু’টা তূরী তৈরী করে নাও। ইস্রায়েলীয়দের ডেকে জড়ো করবার জন্য এবং বিভিন্ন দলের যাত্রা শুরু করবার জন্য তুমি তা বাজাবে। যখন দু’টা তূরীই বাজানো হবে তখন ইস্রায়েলীয়েরা সকলে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে তোমার সামনে এসে জড়ো হবে। যখন একটা তূরী বাজানো হবে তখন ইস্রায়েলের বিভিন্ন বংশের নেতারা তোমার সামনে এসে জড়ো হবে। তূরী যখন প্রথমবার বাজানো হবে তখন যে দলগুলো পূর্ব দিকে তাম্বু ফেলে আছে তারা রওনা হবে। দ্বিতীয় বার বাজানো হলে দক্ষিণ দিকের দলগুলো রওনা হবে। এটা হল বেরিয়ে পড়বার সংকেত। লোকদের একসংগে জড়ো করতে হলে তুমি দু’টা তূরীই বাজাবে কিন্তু তার সংকেত হবে আলাদা রকমের। “এই তূরী বাজাবে হারোণের ছেলেরা, অর্থাৎ পুরোহিতেরা। এটা হবে তোমাদের ও তোমাদের বংশধরদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম। নিজের দেশে থাকবার সময় যখন তোমরা কোন অত্যাচারী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাবে তখন দু’টা তূরীই বাজিয়ে সংকেত দেবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তখন তোমাদের কথা ভেবে শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করবেন। তোমাদের আনন্দ-উৎসবের সময়ে, তোমাদের জন্য নির্দিষ্ট করা বিভিন্ন পর্বের সময়ে ও মাসের আরম্ভে যখন তোমরা পোড়ানো-উৎসর্গের ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে তখন তোমরা তূরী বাজাবে। তা দিয়ে তোমাদের ঈশ্বরের সামনে তোমাদের তুলে ধরা হবে। আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর।” দ্বিতীয় বছরের দ্বিতীয় মাসের বিশ দিনের দিন সাক্ষ্য-তাম্বুর উপর থেকে মেঘ সরে গেল। তখন ইস্রায়েলীয়েরা সিনাই মরু-এলাকা ছেড়ে বের হয়ে পড়ল। সেই মেঘ পারণ মরু-এলাকায় এসে স্থির হয়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত তারা চলতেই থাকল। মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুর দেওয়া আদেশ অনুসারে তারা এই প্রথম বারের মত যাত্রাপথে পা বাড়াল। প্রথমেই রওনা হল যিহূদা-বিভাগের বিভিন্ন দল তাদের বিভাগীয় পতাকার তলায়। যিহূদা-গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন। ইষাখর-গোষ্ঠীর লোকদের ভার ছিল সূয়ারের ছেলে নথনেলের উপর, আর সবূলূন-গোষ্ঠীর লোকদের ভার ছিল হেলোনের ছেলে ইলীয়াবের উপর। তারপর আবাস-তাম্বুটা খুলে ফেলা হল আর গের্শোনীয় ও মরারীয়েরা সেটা বয়ে নিয়ে চলল। এদের পরে রওনা হল রূবেণ-বিভাগের বিভিন্ন দল তাদের বিভাগীয় পতাকার তলায়। রূবেণ-গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন শদেয়ূরের ছেলে ইলীষূর। শিমিয়োন-গোষ্ঠীর লোকদের ভার ছিল সূরীশদ্দয়ের ছেলে শলুমীয়েলের উপর, আর গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের ভার ছিল দ্যূয়েলের ছেলে ইলীয়াসফের উপর। এদের পরে আবাস-তাম্বুর পবিত্র জিনিসপত্র নিয়ে কহাতীয়েরা রওনা হল। কহাতীয়েরা পৌঁছাবার আগেই আবাস-তাম্বুটা খাটিয়ে ফেলবার কথা ছিল। এদের পরে রওনা হল ইফ্রয়িম-বিভাগের বিভিন্ন দল তাদের বিভাগীয় পতাকার তলায়। ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন অম্মীহূদের ছেলে ইলীশামা। মনঃশি-গোষ্ঠীর লোকদের ভার ছিল পদাহসূরের ছেলে গমলীয়েলের উপর, আর বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকদের ভার ছিল গিদিয়োনির ছেলে অবীদানের উপর। সবার শেষে রওনা হল দান-বিভাগের বিভিন্ন দল তাদের বিভাগীয় পতাকার তলায়। এরা রক্ষীদল হিসাবে সমস্ত দলগুলোর পিছনে গেল। দান-গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন অম্মীশদ্দয়ের ছেলে অহীয়েষর। আশের-গোষ্ঠীর লোকদের ভার ছিল অক্রণের ছেলে পগীয়েলের উপর, আর নপ্তালি-গোষ্ঠীর লোকদের ভার ছিল ঐননের ছেলে অহীরয়ের উপর। ইস্রায়েলীয় বিভিন্ন দলগুলো এইভাবে পর পর রওনা হয়ে গিয়েছিল। এর পর মোশি তাঁর শ্বশুর মিদিয়নীয় রূয়েলের ছেলে হোববকে বললেন, “সদাপ্রভু যে দেশ আমাদের দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন আমরা সেই দেশের দিকে রওনা হচ্ছি। তুমি আমাদের সংগে চল। আমরা তোমার মংগলই করব, কারণ সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের অনেক মংগল করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।” উত্তরে হোবব বলল, “না, আমি যাব না। আমি আমার নিজের দেশে নিজের লোকদের কাছে ফিরে যাচ্ছি।” কিন্তু মোশি বললেন, “না, না, তুমি আমাদের ছেড়ে চলে যেয়ো না। তোমার জানা আছে মরু-এলাকার মধ্যে কোথায় আমাদের তাম্বু ফেলা উচিত, কাজেই তুমি হবে আমাদের চোখ। তুমি যদি আমাদের সংগে আস তবে সদাপ্রভু আমাদের যে মংগল করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তার ভাগ আমরা তোমাকেও দেব।” এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর পাহাড়ের কাছ থেকে রওনা হয়ে তিন দিনের পথ এগিয়ে গেল। তাদের বিশ্রামের জন্য একটা জায়গা খুঁজে বের করবার উদ্দেশ্যে সেই তিন দিন পর্যন্ত সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি তাদের আগে আগে গেল। ছাউনি তুলে রওনা হওয়ার পর দিনের বেলা সদাপ্রভুর মেঘ ইস্রায়েলীয়দের উপরে থাকত। যখনই সাক্ষ্য-সিন্দুকটি রওনা হত মোশি বলতেন, “হে সদাপ্রভু, ওঠো। তোমার শত্রুরা সব ছড়িয়ে পড়ুক আর যারা তোমাকে ঘৃণার চোখে দেখে তারা তোমার সামনে থেকে পালিয়ে যাক।” যখনই সেটি থামত তিনি বলতেন, “হে সদাপ্রভু, অসংখ্য ইস্রায়েলীয়দের কাছে তুমি ফিরে এস।” ইস্রায়েলীয়দের যে সব দুঃখ-কষ্ট হচ্ছিল তা নিয়ে তারা সদাপ্রভুর সামনে চেঁচামেচি করতে লাগল। তা শুনে সদাপ্রভু ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন। তাঁর পাঠানো আগুন তাদের মধ্যে জ্বলতে লাগল এবং ছাউনির কিনারার কিছু লোককে পুড়িয়ে মারল। এতে লোকেরা মোশির কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল আর তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। তাতে আগুন নিভে গেল। সদাপ্রভুর এই আগুন তাদের মধ্যে জ্বলেছিল বলে সেই জায়গাটার নাম হল তবেরা। ইস্রায়েলীয়দের সংগে অন্যান্য জাতির যে লোকেরা ছিল তারা অন্য রকম খাবারের লোভে পাগল হয়ে উঠল। তাদের দেখাদেখি ইস্রায়েলীয়েরা আবার কান্নাকাটি করে বলতে লাগল, “হায়, যদি আমরা মাংস খেতে পেতাম! মিসর দেশে বিনা পয়সায় মাছ খাবার কথা আমাদের মনে পড়ছে। এছাড়া শসা, তরমুজ, পিঁয়াজ, সবজী পিঁয়াজ এবং রসুনের কথাও আমাদের মনে পড়ছে। কিন্তু এখন আমাদের ভিতরটা শুকিয়ে গেছে। মান্না ছাড়া আমাদের চোখে আর কিছুই পড়ছে না।” মান্নার আকার ছিল ধনে বীজের মত, আর তা দেখতে ছিল গুগ্‌গুলুর মত। লোকেরা ঘুরে ঘুরে সেগুলো কুড়িয়ে আনত আর জাঁতায় কিম্বা হামানদিস্তায় গুঁড়া করে নিত। সেগুলো তারা হাঁড়ির মধ্যে সিদ্ধ করত কিম্বা তা দিয়ে রুটি বানাত। তার স্বাদ ছিল জলপাইয়ের তেল দিয়ে বানানো পিঠার মত। রাতে ছাউনি-এলাকায় শিশির পড়ত আর তার উপর পড়ত মান্না। মোশি শুনতে পেলেন প্রত্যেক পরিবারের লোকেরা তাদের নিজের নিজের তাম্বুর দরজার কাছে কাঁদছে। এতে সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠলেন আর মোশিও বিরক্ত হলেন। তিনি সদাপ্রভুকে বললেন, “তুমি তোমার দাসকে কেন এই বিপদে ফেলেছ? তোমাকে অসন্তুষ্ট করবার মত আমি এমন কি করেছি যে, তুমি এই সমস্ত লোকদের বোঝা আমার উপর চাপিয়েছ? আমি কি এই সব লোকদের পেটে ধরেছি? আমি কি এদের প্রসব করেছি? তুমি এদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশ দেবার শপথ করেছিলে সেখানে কেন তুমি আমাকে পালক-পিতার মত করে তাদের কোলে করে নিয়ে যেতে বলছ? এই সমস্ত লোকদের জন্য আমি কোথায় মাংস পাব? তারা আমার কাছে কেবলই ‘মাংস খেতে দাও’ বলে কান্নাকাটি করছে। তাদের বোঝা খুব ভারী, আমার একার পক্ষে তা বয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তুমি যদি আমার অবস্থা এই রকমই কর তবে এখনই তুমি আমাকে মেরে ফেল। যদি আমি তোমার দয়া পেয়েই থাকি তবে নিজের চোখে আমার নিজের সর্বনাশ আমাকে দেখতে দিয়ো না।” সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যাদের তুমি নেতা এবং সম্মানিত লোক বলে জান তাদের মধ্য থেকে সত্তরজন বৃদ্ধ নেতাকে আমার কাছে নিয়ে এস। তুমি তাদের মিলন-তাম্বুর কাছে এসে তোমার সংগে দাঁড়াতে বল। আমি সেখানে নেমে এসে তোমার সংগে কথা বলব। তোমার উপর যে আত্মা রয়েছেন আমি তাঁকে তাদের উপরেও দেব। লোকদের বোঝা বয়ে নিতে তারাই তোমাকে সাহায্য করবে। তাতে তোমাকে আর একা বোঝা বইতে হবে না। তুমি লোকদের বল, ‘তোমরা নিজেদের সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিয়ে কালকের জন্য প্রস্তুত হও, কারণ কালকেই তোমরা মাংস খেতে পাবে। তোমরা সদাপ্রভুর কাছে কেঁদে কেঁদে মাংস খাবার কথা বলেছিলে আর জানিয়েছিলে যে, এর চেয়ে মিসর দেশেই তোমরা ভাল ছিলে। তাই এখন তিনি তোমাদের মাংস দেবেন আর তোমরা তা খাবে। সেই মাংস যে তোমরা কেবল একদিন, দু’দিন, পাঁচ দিন, দশ দিন কিম্বা বিশ দিন খাবে তা নয়, খাবে গোটা এক মাস ধরে। তখন সেই মাংস তোমাদের নাক দিয়ে বেরিয়ে আসবে আর মাংসে তোমাদের অরুচি ধরে যাবে। এই সব হবে কারণ যিনি তোমাদের মধ্যে রয়েছেন সেই সদাপ্রভুকে তোমরা অগ্রাহ্য করেছ আর তাঁর সামনে কেঁদে কেঁদে বলেছ যে, মিসর দেশ ছেড়ে আসা তোমাদের উচিত হয় নি।’ ” এই কথা শুনে মোশি বললেন, “যুদ্ধ করবার মত লোকই আমার সংগে রয়েছে ছয় লক্ষ, আর তুমি বলছ পুরো এক মাস ধরে তুমি তাদের মাংস খেতে দেবে। তাদের গরু-ভেড়া সমস্ত কাটলেও তাদের পক্ষে যথেষ্ট হবে না। সমুদ্রের সমস্ত মাছ ধরে আনলেও তাতে তাদের কুলাবে না।” উত্তরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “সদাপ্রভুর ক্ষমতা কি এতই কম? আমার কথাটা তোমার কাছে সত্যি হয়ে ওঠে কি না তা তুমি এবার দেখতে পাবে।” এই কথা শুনে মোশি বাইরে গিয়ে সদাপ্রভু যা বলেছেন তা লোকদের জানালেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের সত্তরজন বৃদ্ধ নেতাকে এনে মিলন-তাম্বুর সামনে দাঁড় করালেন। তখন সদাপ্রভু সেই মেঘে ঘেরাও হয়ে নেমে এসে মোশির সংগে কথা বললেন। মোশির উপর যে আত্মা ছিলেন তাঁকে তিনি ঐ সত্তরজন বৃদ্ধ নেতার উপরেও দিলেন। যখন সেই আত্মা তাঁদের উপর আসলেন তখন কিছুকালের জন্য তাঁরা নবী হিসাবে কথা বললেন। ইল্‌দদ আর মেদদ নামে দু’জন লোক ছাউনির মধ্যেই রয়ে গিয়েছিলেন। বেছে নেওয়া বৃদ্ধ নেতাদের মধ্যে এই দু’জনও ছিলেন, কিন্তু তারা মিলন-তাম্বুর কাছে যান নি। তবুও তাঁদের উপর সেই আত্মা এসেছিলেন। তাতে তাঁরাও ঐ সময় ছাউনির মধ্যে নবী হিসাবে কথা বলতে লাগলেন। একজন যুবক দৌড়ে গিয়ে মোশিকে বললেন, “ইল্‌দদ আর মেদদ ছাউনির ভিতরে নবী হিসাবে কথা বলছেন।” তখন নূনের ছেলে যিহোশূয় মোশিকে বললেন, “হে আমার প্রভু, ওদের চুপ করবার নির্দেশ দিন।” যিহোশূয় যুবা বয়স থেকে মোশির সাহায্যকারী ছিলেন। উত্তরে মোশি বললেন, “আমার মান-সম্মানটাই তোমার কাছে বড় হয়ে উঠল? আমি চাই সদাপ্রভুর সব লোকেরাই যেন নবী হয় এবং সদাপ্রভু যেন তাঁর আত্মা তাদের উপর দেন।” এর পর মোশি ও ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতারা ছাউনিতে ফিরে গেলেন। পরে সদাপ্রভু একটা বাতাস বহালেন। সেই বাতাস সমুদ্র থেকে ভারুই পাখী ঠেলে এনে ছাউনির চারপাশে এক দিনের পথ জুড়ে এমনভাবে ফেলে দিল যে, সেগুলো মাটি থেকে দু’হাত পর্যন্ত উঁচু হয়ে গাদা হয়ে রইল। সেই দিন ও সেই রাত এবং তার পরের সারাটা দিন লোকেরা বাইরে গিয়ে ভারুই পাখী কুড়িয়ে আনল। তারা প্রত্যেকেই কমপক্ষে এক হাজার আটশো কেজি করে কুড়াল। সেগুলো তারা ছাউনির চারপাশে বিছিয়ে রাখল। কিন্তু সেই মাংস মুখে দিয়ে চিবাতে না চিবাতেই লোকদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। তিনি তাদের উপর একটা ভীষণ মড়ক পাঠিয়ে দিলেন। সেইজন্য সেই জায়গাটার নাম দেওয়া হল কিব্রোৎ-হত্তাবা (যার মানে “লোভীদের কবর”), কারণ লোকেরা সেখানে লোভীদের কবর দিয়েছিল। এর পর লোকেরা কিব্রোৎ-হত্তাবা ছেড়ে হৎসেরোতে গিয়ে সেখানে রইল। মোশি একজন কূশীয় স্ত্রীলোককে বিয়ে করেছিলেন। এই কূশীয় স্ত্রীলোকটির দরুন মরিয়ম ও হারোণ মোশির বিরুদ্ধে বলতে লাগলেন, “সদাপ্রভু কি শুধু মোশির মধ্য দিয়েই কথা বলেছেন? আমাদের মধ্য দিয়ে কি তিনি কথা বলেন নি?” সদাপ্রভু এই সব কথা শুনলেন। আসলে মোশি ছিলেন একজন নম্র লোক, পৃথিবীর যে কোন লোকের চেয়ে নম্র। হারোণ ও মরিয়মের কথা শোনামাত্র সদাপ্রভু মোশি, হারোণ ও মরিয়মকে বললেন, “তোমরা তিনজনই বের হয়ে মিলন-তাম্বুর কাছে এস।” এই কথা শুনে তাঁরা তিনজন বের হয়ে আসলেন। কিন্তু আমার দাস মোশির সংগে আমি তা করি না। সে আমার পরিবারের সমস্ত কাজ বিশ্বস্তভাবে করে। আমি তার সংগে সামনাসামনি পরিষ্কার ভাবে কথা বলি, কোন ধাঁধার ভিতর দিয়ে নয়। সদাপ্রভু যে আকারে দেখা দেন সে তা দেখতে পায়। এর পরেও তোমরা আমার দাস মোশির বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পেলে না?” হারোণ ও মরিয়মের উপর সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। পরে তিনি চলে গেলেন। সেই মেঘটা যখন মিলন-তাম্বু ছেড়ে উপরে উঠে গেল তখন দেখা গেল যে, মরিয়মের দেহ খারাপ চর্মরোগে বরফের মত সাদা হয়ে গেছে। হারোণ মরিয়মের দিকে ফিরে তাঁর গায়ে চর্মরোগ দেখতে পেলেন। এই অবস্থা দেখে তিনি মোশিকে বললেন, “হে আমার প্রভু, আমরা বোকামি করে যে পাপ করে ফেলেছি তা আমাদের বিরুদ্ধে তুমি ধরে রেখো না। যে শিশু মৃত অবস্থায় অর্ধেকটা ক্ষয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে জন্মেছে মরিয়মকে তুমি সেই রকম থাকতে দিয়ো না।” তখন মোশি চিৎকার করে সদাপ্রভুকে ডেকে বললেন, “হে ঈশ্বর, তুমি তাকে সুস্থ করে দাও।” উত্তরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তার বাবা যদি তার মুখে থুথু দিত তবে কি সে সাত দিন সেই লজ্জা বয়ে বেড়াত না? সাত দিন তাকে ছাউনির বাইরে বন্ধ করে রাখ, তারপর তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে।” সেইজন্য মরিয়মকে সাত দিন পর্যন্ত ছাউনির বাইরে বন্ধ করে রাখা হল। তাকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত লোকেরা যাত্রা বন্ধ রাখল। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা হৎসেরোৎ ছেড়ে পারণ মরু-এলাকায় গিয়ে তাম্বু ফেলল। এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “যে কনান দেশ আমি ইস্রায়েলীয়দের দিতে যাচ্ছি তার সম্বন্ধে খোঁজ-খবর নিয়ে আসবার জন্য তুমি বারো গোষ্ঠীর প্রত্যেকটি থেকে একজন করে নেতা পাঠিয়ে দাও।” সদাপ্রভুর আদেশ পেয়ে মোশি তা-ই করলেন। তিনি পারণ মরু-এলাকা থেকে যাঁদের পাঠিয়ে দিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন ইস্রায়েলীয়দের নেতা। এঁরা হলেন, রূবেণ-গোষ্ঠীর সক্কূরের ছেলে শম্মূয়; শিমিয়োন-গোষ্ঠীর হোরির ছেলে শাফট; যিহূদা-গোষ্ঠীর যিফুন্নির ছেলে কালেব; ইষাখর-গোষ্ঠীর যোষেফের ছেলে যিগাল; ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর নূনের ছেলে হোশেয়; বিন্যামীন-গোষ্ঠীর রাফূর ছেলে পল্‌টি; সবূলূন-গোষ্ঠীর সোদির ছেলে গদ্দীয়েল; যোষেফ-গোষ্ঠীর, অর্থাৎ মনঃশি-গোষ্ঠীর সূষির ছেলে গদ্দি; দান-গোষ্ঠীর গমল্লির ছেলে অম্মীয়েল; মোশি এই লোকদেরই কনান দেশের খোঁজ-খবর নিয়ে আসবার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি নূনের ছেলে হোশেয়ের নাম দিয়েছিলেন যিহোশূয়। কনান দেশে পাঠাবার সময় মোশি তাঁদের বলে দিলেন, “তোমরা নেগেভের মধ্য দিয়ে গিয়ে পাহাড়ী এলাকায় ঢুকবে। দেশটা কেমন তা তোমরা দেখবে। তোমরা দেখবে, সেখানে যারা বাস করে তারা দুর্বল না শক্তিশালী এবং সংখ্যায় তারা বেশী না কম, কি রকম দেশে তারা বাস করে এবং সেটা ভাল, না মন্দ। যে সব শহরে তারা বাস করে সেগুলো কি দেয়াল ছাড়া, না দেয়াল ঘেরা? সেখানকার মাটিতে কি ভাল ফসল জন্মায়, না জন্মায় না? সেখানে গাছপালা আছে, না নেই? সেখানকার কিছু ফল নিয়ে আসবার জন্য তোমরা খুব চেষ্টা করবে।” সেই সময় আংগুর তোলা মাত্র শুরু হয়েছিল। তখন তারা গিয়ে সীন মরু-এলাকা থেকে শুরু করে হমাতের দিকে রহোব পর্যন্ত দেশটার খোঁজ-খবর নিয়ে আসলেন। তাঁরা নেগেভের মধ্য দিয়ে গিয়ে হিব্রোণ শহরে উপস্থিত হলেন। হিব্রোণ শহরটা গড়ে উঠেছিল মিসরের সোয়ন শহর গড়ে উঠবার সাত বছর আগে। সেখানে অনাকের বংশের অহীমান, শেশয় ও তল্‌ময় নামে তিনজন লোক ছিল। নেতারা ইষ্কোল উপত্যকাতে গিয়ে এক থোকা আংগুর সুদ্ধ একটা ডাল কেটে নিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন সেটা লাঠিতে ঝুলিয়ে বয়ে নিয়ে এসেছিলেন। এছাড়া তাঁরা কিছু ডালিম আর ডুমুরও নিয়ে এসেছিলেন। ইস্রায়েলীয়েরা সেখানে সেই আংগুরের থোকাটা কেটেছিলেন বলে সেই জায়গার নাম হয়েছিল ইষ্কোল উপত্যকা। দেশটার খোঁজ-খবর নিয়ে তাঁরা চল্লিশ দিন পরে ফিরে আসলেন। সেই নেতারা পারণ মরু-এলাকার কাদেশে মোশি, হারোণ এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে ফিরে আসলেন। তাঁরা মোশি, হারোণ এবং অন্যান্য লোকদের কাছে সব কথা জানালেন এবং সেই দেশের ফল দেখালেন। তাঁরা মোশিকে বললেন, “আপনি আমাদের যে দেশে পাঠিয়েছিলেন আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। দেশটাতে সত্যিই দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই। এই হল সেখানকার ফল। কিন্তু যারা সেখানে বাস করে তাদের গায়ে শক্তি বেশী এবং তাদের শহরগুলোও বেশ বড় বড় আর দেয়াল দিয়ে ঘেরা। অনাকের বংশের লোকদেরও আমরা সেখানে দেখেছি। অমালেকীয়েরা থাকে নেগেভে; হিত্তীয়, যিবূষীয় ও ইমোরীয়েরা থাকে পাহাড়ী এলাকায় আর কনানীয়েরা থাকে সমুদ্রের কাছে এবং যর্দন নদীর কিনারা ধরে।” তখন মোশির সামনে যে সব লোক ছিল কালেব তাদের গোলমাল থামিয়ে বললেন, “সেখানে গিয়ে দেশটা আমাদের দখল করে নেওয়া উচিত। আমরা তা নিশ্চয়ই করতে পারব।” কিন্তু যাঁরা তাঁর সংগে গিয়েছিলেন তাঁরা বললেন, “ঐ লোকদের সংগে যুদ্ধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়; আমাদের চেয়ে তাদের গায়ে শক্তি বেশী।” তাঁরা যে দেশটার খোঁজ-খবর নিয়ে এসেছিলেন ইস্রায়েলীয়দের কাছে সেই দেশ সম্বন্ধে একটা বাজে কথা রটিয়ে দিয়ে বললেন, “আমরা যে দেশের খোঁজ-খবর নিয়ে এসেছি সেই দেশটা তার বাসিন্দাদের গিলে খেয়ে ফেলে। যে সব লোক আমরা সেখানে দেখেছি তারা দেখতে খুব বড়। আমরা সেখানে নেফিলীয়দের দেখেছি। অনাকের বংশের লোকেরা তো জাতে নেফিলীয়। তাদের দেখে আমরা নিজেদের মনে করলাম ঘাস-ফড়িং আর তারাও আমাদের তা-ই মনে করল।” এই কথা শুনে ইস্রায়েলীয়েরা সকলে চেঁচামেচি করতে লাগল। তারা সারা রাত ধরে কান্নাকাটি করল। মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে তারা অনেক কথা বলল। তারা সবাই মিলে তাঁদের বলল, “মিসর দেশে বা এই মরু-এলাকায় মারা যাওয়াই ছিল আমাদের পক্ষে ভাল। যুদ্ধে মারা যাবার জন্য কেন সদাপ্রভু আমাদের সেই দেশে নিয়ে যাচ্ছেন? তারা আমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কেড়ে নেবে। এর চেয়ে মিসরে ফিরে যাওয়া কি আমাদের ভাল নয়?” তারা একে অন্যকে বলল, “চল, একজন নেতা ঠিক করে নিয়ে আমরা মিসরেই ফিরে যাই।” এই অবস্থা দেখে মোশি ও হারোণ ইস্রায়েলীয়দের গোটা দলটার সামনেই মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন। সদাপ্রভু যদি আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন তবে সেই দেশটায় তিনি আমাদের নিয়ে যাবেন যেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই, আর তিনি সেটা আমাদের দেবেন। তবে তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোরো না। তোমরা সেই দেশের লোকদের ভয় কোরো না; তাদের গিলে খেতে আমাদের দেরি হবে না। তাদের আর রক্ষার উপায় নেই। তাদের তোমরা ভয় কোরো না কারণ সদাপ্রভু আমাদের সংগে রয়েছেন।” কিন্তু দলের সবাই যিহোশুয় ও কালেবকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবার কথা বলতে লাগল। তখন মিলন-তাম্বু থেকে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সামনে সদাপ্রভুর মহিমা দেখা দিল। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “আর কত কাল এই লোকগুলো আমাকে তুচ্ছ করে চলবে? তাদের মধ্যে আমি যে সব আশ্চর্য চিহ্ন দেখিয়েছি তার পরেও আর কতকাল তারা আমাকে অবিশ্বাস করবে? আমি একটা মড়ক আনব আর প্রতিজ্ঞা করা দেশের অধিকার তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেব, কিন্তু তোমার মধ্য থেকে আমি তাদের চেয়েও বড় এবং শক্তিশালী একটা জাতি সৃষ্টি করব।” এই কথা শুনে মোশি সদাপ্রভুকে বললেন, “তা যদি কর তবে কথাটা মিসরীয়দের কানে যাবে। তাদের মধ্য থেকেই তো তুমি তোমার নিজের ক্ষমতায় এই সব লোকদের নিয়ে এসেছ। সেই কথা তখন মিসরীয়েরা এই দেশের লোকদেরও বলবে। হে সদাপ্রভু, এর মধ্যেই এই দেশের লোকেরা শুনেছে যে, তুমি ইস্রায়েলীয়দের সংগে সংগে আছ, আর হে সদাপ্রভু, তোমাকে খুব কাছেই দেখা যায়। তারা শুনেছে যে, তোমার মেঘ এদের উপর আছে আর দিনের বেলা তুমি মেঘের থামের মধ্যে এবং রাতের বেলা আগুনের থামের মধ্যে থেকে এদের আগে আগে চল। তাই তুমি যদি এদের সবাইকে একসংগে মেরে ফেল তবে যে সব জাতি তোমার সম্বন্ধে ঐ সব কথা শুনেছে তারা বলবে যে, সদাপ্রভু ঐ লোকদের কাছে যে দেশ দেবার শপথ করেছিলেন সেখানে নিয়ে যাবার ক্ষমতা নেই বলেই তিনি মরু-এলাকাতে তাদের মেরে ফেলেছেন। “এখন হে প্রভু, তুমি তোমার ক্ষমতা দেখাও। তুমি তো ঘোষণা করেছিলে, ‘সদাপ্রভু সহজে অসন্তুষ্ট হন না, তাঁর ভালবাসার সীমা নেই এবং তিনি অন্যায় ও বিদ্রোহ ক্ষমা করেন, কিন্তু দোষীকে তিনি শাস্তি দিয়ে থাকেন; তিনি বাবার অন্যায়ের শাস্তি তার বংশের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন।’ মিসর দেশ ছেড়ে আসবার সময় থেকে এই পর্যন্ত তুমি যেমন তাদের ক্ষমা করে আসছ তেমনি তোমার সেই অটল ভালবাসার সংগে মিল রেখে তুমি এই লোকদের অন্যায় ক্ষমা কর।” তখন সদাপ্রভু বললেন, “তোমার কথামত আমি তাদের পাপ ক্ষমা করলাম। কিন্তু আমি বেঁচে আছি এই কথা যেমন সত্যি এবং সারা দুনিয়া আমার মহিমায় পরিপূর্ণ এই কথা যেমন সত্যি তেমনই সত্যি যে, কিন্তু আমার দাস কালেবের মনে সেই রকম ভাব নেই এবং সে আমার কথা পুরোপুরি মেনে চলে। সেইজন্য যে দেশে সে গিয়েছিল আমি তাকে সেই দেশে নিয়ে যাব আর তার বংশধরেরা তা সম্পত্তি হিসাবে পাবে। সেই সব উপত্যকায় এখন অমালেকীয় ও কনানীয়েরা বাস করছে। তোমরা আগামী কাল পিছন ফিরে আকাবা উপসাগরের রাস্তা ধরে মরু-এলাকার দিকে যাত্রা করবে।” এর পর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “আর কতকাল এই দুষ্ট জাতি আমার বিরুদ্ধে বক্‌বক্‌ করবে? তাদের বক্‌বক্‌ করা আমি শুনেছি।” সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে ইস্রায়েলীয়দের বলতে বললেন, “আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমি সদাপ্রভু তোমাদের যা বলতে শুনেছি তা-ই আমি তোমাদের প্রতি করব। তোমাদের মধ্যে বিশ বছর বা তারও বেশী বয়সের যাদের লোকগণনার সময় গোণা হয়েছিল, অর্থাৎ যারা আমার বিরুদ্ধে বক্‌বক্‌ করেছিল, তাদের মৃতদেহ এই মরু-এলাকাতেই পড়ে থাকবে। বাস করবার জন্য যে দেশ তোমাদের দেব বলে আমি শপথ করেছিলাম একমাত্র যিফুন্নির ছেলে কালেব ও নূনের ছেলে যিহোশূয় ছাড়া আর কেউ সেই দেশে ঢুকতে পারবে না। তোমাদের যে ছেলেমেয়েদের কেড়ে নেওয়া হবে বলে তোমরা বলেছিলে সেই ছেলেমেয়েদেরই আমি সেই দেশে নিয়ে যাব। এই ছেলেমেয়েরাই সেই দেশ ভোগ করবে যা তোমরা পায়ে ঠেলে দিয়েছ। তোমাদের মৃতদেহ এই মরু-এলাকায় পড়ে থাকবে। তোমাদের শেষ লোকটি এই মরু-এলাকায় মরে না যাওয়া পর্যন্ত তোমাদের অবিশ্বস্ততার জন্য তোমাদের ছেলেমেয়েরা চল্লিশ বছর ধরে এখানে ভেড়া চরিয়ে বেড়াবে। দেশটা দেখে আসতে যে চল্লিশ দিন লেগেছিল তার প্রত্যেক দিনের জন্য এক বছর করে মোট চল্লিশ বছর পর্যন্ত তোমরা তোমাদের অন্যায়ের জন্য কষ্ট ভোগ করবে এবং বুঝবে যে, আমি বিরুদ্ধে থাকলে অবস্থাটা কেমন হয়। এই দুষ্ট জাতির লোকেরা যারা আমার বিরুদ্ধে দল পাকিয়েছে তারা সবাই এই মরু-এলাকাতেই শেষ হয়ে যাবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” দেশটার খোঁজ-খবর নিয়ে আসবার জন্য মোশির পাঠিয়ে দেওয়া যে দলটা ফিরে এসে বাজে কথা ছড়িয়ে দিয়ে মোশির বিরুদ্ধে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বক্‌বক্‌ করবার উস্‌কানি দিয়েছিল, অর্থাৎ যে লোকেরা সেই দেশ সম্বন্ধে বাজে কথা ছড়িয়ে দেবার জন্য দায়ী ছিল তারা সবাই সদাপ্রভুর সামনে মড়কে মারা গেল। বেঁচে রইলেন কেবল নূনের ছেলে যিহোশূয় এবং যিফুন্নির ছেলে কালেব। মোশি সদাপ্রভুর কথা সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জানালেন। তাতে মনের দুঃখে তারা ভেংগে পড়ল। পরের দিন খুব সকালে তারা সেই পাহাড়ী এলাকার দিকে যাবার জন্য তৈরী হয়ে বলল, “এই যে আমরা যাচ্ছি। আমরা পাপ করে ফেলেছি; এখন আমরা সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা করা দেশেই যাব।” কিন্তু মোশি বললেন, “তোমরা সদাপ্রভুর আদেশের বিরুদ্ধে যাচ্ছ কেন? তোমাদের এই কাজ সফল হবে না। তোমরা যেয়ো না, কারণ সদাপ্রভু তোমাদের সংগে নেই। শত্রুদের কাছে তোমরা হেরে যাবে। সেখানে তোমরা অমালেকীয় ও কনানীয়দের সামনে পড়বে। তোমরা সদাপ্রভুর কাছ থেকে সরে গেছ বলে তিনি তোমাদের সংগে থাকবেন না। তাতে তোমরা যুদ্ধে মারা পড়বে।” তবুও তারা দুঃসাহস করে সেই পাহাড়ী এলাকার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু মোশি গেলেন না আর সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকও ছাউনির মধ্যে রয়ে গেল। তাদের দেখে সেই পাহাড়ী এলাকার অমালেকীয় ও কনানীয়েরা নেমে এসে তাদের আক্রমণ করল এবং হর্মা শহর পর্যন্ত তাদের তাড়িয়ে নিয়ে গেল। পশুটা ভেড়া হলে তার সংগে শস্য-উৎসর্গের জন্য তেল মিশানো মিহি ময়দা আনতে হবে। ময়দার পরিমাণ হবে তিন কেজি ছ’শো গ্রাম আর তেলের পরিমাণ হবে সোয়া লিটার। ঢালন-উৎসর্গের জন্য আনতে হবে সোয়া লিটার আংগুর-রস। তারপর সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধের জন্য তা সদাপ্রভুর কাছে উৎসর্গ করতে হবে। যদি তোমরা পোড়ানো-উৎসর্গ কিম্বা বিশেষ মানত পূরণের উৎসর্গ কিম্বা যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য আমার কাছে কোন গরু নিয়ে আস, তবে তার সংগে শস্য-উৎসর্গের জন্য তেল মিশানো মিহি ময়দা আনতে হবে। ময়দার পরিমাণ হবে পাঁচ কেজি চারশো গ্রাম আর তেলের পরিমাণ হবে পৌনে দুই লিটার। এর সংগে ঢালন-উৎসর্গের জন্য পৌনে দুই লিটার আংগুর-রসও আনতে হবে। এটা একটা আগুনে-করা উৎসর্গ যার গন্ধে আমি খুশী হই। “প্রত্যেকটা ষাঁড় কিম্বা ভেড়া, প্রত্যেকটা বাচ্চা-ভেড়া কিম্বা পাঁঠা এইভাবে উৎসর্গ করতে হবে। তোমরা যত পশুই উৎসর্গ কর না কেন প্রত্যেকটা পশু এই নিয়মে উৎসর্গ করতে হবে। সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধের জন্য আগুনে-করা উৎসর্গ করবার সময় প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়কে এই নিয়মে উৎসর্গ করতে হবে। অন্য জাতির কোন লোক কিম্বা তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্য কেউ যদি সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধের জন্য আগুনে-করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে তবে তাকে ঠিক তোমাদের মতই সমস্ত কিছু করতে হবে। বংশের পর বংশ ধরে এই নিয়ম চলবে। তোমাদের সমাজে সকলের জন্য একই নিয়ম চালু থাকবে- সে তোমরাই হও কিম্বা তোমাদের মধ্যে বাস করা ভিন্ন জাতির লোকই হোক। বংশের পর বংশ ধরে তা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম। এই ব্যাপারে আমার কাছে তোমরাও যা ভিন্ন জাতির লোকেরাও তা। তোমাদের জন্য এবং তোমাদের মধ্যে বাস করা ভিন্ন জাতির লোকদের জন্য একই নির্দেশ ও একই আইন-কানুন চলবে।” প্রথমে তোলা শস্যের ময়দা ঠেসে নিয়ে তা দিয়ে একখানা পিঠা তৈরী করে খামার-বাড়ীর দান হিসাবে তা উৎসর্গ করতে হবে। প্রথমে তোলা শস্যের এই উৎসর্গ বংশের পর বংশ ধরে আমার উদ্দেশে তোমাদের করতে হবে। পুরোহিতকে গোটা ইস্রায়েল জাতির সেই অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে তাদের ক্ষমা করা হবে, কারণ তারা ইচ্ছা করে তা করে নি এবং তাদের ভুলের জন্য তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ এবং পাপ-উৎসর্গের ব্যবস্থা করেছে। এতে গোটা ইস্রায়েল জাতিকে এবং তার মধ্যে বাস করা ভিন্ন জাতির লোকদের ক্ষমা করা হবে, কারণ এই ভুলের মধ্যে তারা সবাই জড়িত ছিল। “কিন্তু যদি মাত্র একজন লোক ভুল করে কোন অন্যায় করে ফেলে তবে পাপ-উৎসর্গের জন্য তাকে এক বছরের একটা ছাগী আনতে হবে। ভুল করে যে লোক এইভাবে অন্যায় করবে পুরোহিতকে সদাপ্রভুর সামনে সেই লোকটির অন্যায় ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই অন্যায় ঢাকা দেওয়া হলে পর তাকে ক্ষমা করা হবে। ভুল করে অন্যায় করে ফেলেছে এমন প্রত্যেকটি লোকের জন্য এই একই নিয়ম খাটবে- সেই লোক ইস্রায়েলীয়ই হোক কিম্বা অন্য জাতির লোকই হোক। “কিন্তু ইস্রায়েলীয় কিম্বা তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকদের মধ্য থেকে যদি কেউ ইচ্ছা করে অন্যায় করে তবে সে সদাপ্রভুকে অপমান করে। তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। সদাপ্রভুর কথা তুচ্ছ করবার এবং তাঁর আদেশ অমান্য করবার দরুন তাকে অবশ্যই মুছে ফেলতে হবে, আর তার দোষ তার উপরেই থেকে যাবে।” ইস্রায়েলীয়েরা মরু-এলাকায় থাকবার সময় একজন লোককে বিশ্রামবারে কাঠ কুড়াতে দেখা গেল। যারা তাকে কাঠ কুড়াতে দেখল তারা তাকে মোশি, হারোণ এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে নিয়ে গেল। এই রকম লোককে নিয়ে কি করতে হবে তা বলা হয় নি বলে তাঁরা তাকে আটক করে রাখলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “লোকটাকে মেরে ফেলতে হবে। ছাউনির বাইরে নিয়ে গিয়ে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা তাকে পাথর মারবে।” কাজেই ইস্রায়েলীয়েরা মোশির মধ্য দিয়ে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ মত তাকে ছাউনির বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলল। সেই থোপ্‌নাগুলো বাঁধবে যেন সেগুলোর দিকে চোখ পড়লে আমার সমস্ত আদেশের কথা তোমাদের মনে পড়ে এবং তোমরা তা মেনে চল। তাহলে তোমরা আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে তোমাদের অন্তরের আর চোখের কামনার কাছে নিজেদের তুলে দেবে না। তখন আমার সমস্ত আদেশ পালন করবার কথা তোমাদের মনে থাকবে এবং তোমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তোমরা আলাদা করা লোক হয়ে থাকবে। আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। তোমাদের ঈশ্বর হওয়ার জন্য আমিই মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছি। আমিই সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর।” তারা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে দল বেঁধে এসে বলল, “আপনারা খুব বাড়াবাড়ি করছেন। গোটা ইস্রায়েলীয় সমাজের প্রত্যেকেই সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা এবং সদাপ্রভুও তাদের সংগে আছেন। তবে আপনারা কেন সদাপ্রভুর লোকদের উপরে নিজেদের তুলে ধরেছেন?” এই কথা শুনে মোশি মাটির উপর উবুড় হয়ে পড়লেন। তিনি কোরহ ও তার দলের লোকদের বললেন, “কাল সকালেই সদাপ্রভু দেখিয়ে দেবেন কে তাঁর লোক এবং কে তাঁর উদ্দেশ্যে আলাদা করা। তিনিই সেই লোককে তাঁর সামনে যেতে দেবেন। যাকে তিনি বেছে নেবেন তাকে তিনি তাঁর সামনে যেতে দেবেন। মোশি কোরহকে আরও বললেন, “তোমরা লেবীয়েরা এখন আমার কথা শোন। এটাই কি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট নয় যে, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সমাজের অন্য লোকদের থেকে তোমাদের আলাদা করে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন যাতে তোমরা সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বুর কাজ করতে পার এবং সমাজের লোকদের সেবা করবার জন্য তাদের সামনে দাঁড়াতে পার? তিনি তোমাকে এবং অন্য সব লেবীয়দের নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু তোমরা এখন পুরোহিতের পদটাও দখল করে নিতে চাইছ। তুমি ও তোমার দলের সব লোকেরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধেই দল পাকিয়েছ। হারোণ কে যে, তোমরা তার বিরুদ্ধে বক্‌বক্‌ করছ?” এর পর মোশি ইলীয়াবের ছেলে দাথন ও অবীরামকে ডেকে পাঠালেন কিন্তু তারা বলে পাঠাল, “আমরা যাব না। তুমি এই মরু-এলাকায় মেরে ফেলবার জন্যই এমন দেশ থেকে আমাদের বের করে এনেছ যেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব ছিল না। এটাই কি যথেষ্ট নয়? তার উপর এখন আবার আমাদের কর্তা হতে চাইছ। এছাড়া তুমি তো সেই রকম কোন দুধ আর মধুতে ভরা দেশে আমাদের নিয়ে যাও নি কিম্বা জমাজমি এবং আংগুর ক্ষেতের অধিকারও দাও নি। তুমি কি এই লোকদের অন্ধ করে রাখতে চাইছ? না, আমরা যাব না।” এই কথা শুনে মোশি ভীষণ রেগে গিয়ে সদাপ্রভুকে বললেন, “তুমি ওদের উৎসর্গ গ্রহণ কোরো না। আমি ওদের কাছ থেকে একটা গাধা পর্যন্ত নিই নি আর ওদের কোন ক্ষতিও করি নি।” তারপর মোশি কোরহকে বললেন, “কাল তোমাকে ও তোমার দলের সবাইকে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হতে হবে। তুমি ও তোমার দলের লোকদের এবং সেই সংগে হারোণকেও উপস্থিত হতে হবে। প্রত্যেককে তার ধূপদানিতে ধূপ দিতে হবে; মোট দু’শো পঞ্চাশটা ধূপদানিতে ধূপ দিয়ে সদাপ্রভুর সামনে তা উৎসর্গ করতে হবে। তোমাকে এবং হারোণকেও ধূপদানিতে ধূপ উৎসর্গ করতে হবে।” মোশির কথামত প্রত্যেকে নিজের নিজের ধূপদানিতে আগুন ও ধূপ নিয়ে মিলন-তাম্বুর দরজার সামনে মোশি ও হারোণের সংগে গিয়ে দাঁড়াল। কোরহ যখন মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে সমাজের সমস্ত লোকদের জড়ো করে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল তখন তাদের সকলের সামনে সদাপ্রভুর মহিমা দেখা দিল। সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “তোমরা অন্য সমস্ত লোক থেকে আলাদা হয়ে যাও, যাতে আমি তাদের এই মুহূর্তে শেষ করে দিতে পারি।” কিন্তু মোশি ও হারোণ মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, “হে ঈশ্বর, তুমি সমস্ত মানুষের প্রাণদাতা। কেবল একজন মানুষ পাপ করেছে বলে কি তুমি গোটা ইস্রায়েলীয় সমাজের উপর তোমার ক্রোধ প্রকাশ করবে?” তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল যেন তারা কোরহ, দাথন আর অবীরামের তাম্বুর কাছ থেকে সরে যায়।” এই কথা শুনে মোশি উঠে দাথন ও অবীরামের কাছে গেলেন আর ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতারা তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। মোশি ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “তোমরা এই দুষ্ট লোকদের তাম্বুর কাছ থেকে সরে যাও। তাদের কোন জিনিস তোমরা ছুঁয়ো না; যদি তা কর তবে তাদের পাপের জন্য তোমাদেরও শেষ করে ফেলা হবে।” এই কথা শুনে লোকেরা কোরহ, দাথন ও অবীরামের তাম্বুর কাছ থেকে সরে গেল। এর মধ্যে দাথন ও অবীরাম তাদের স্ত্রী ও ছোট-বড় ছেলেমেয়েদের নিয়ে তাম্বুর দরজার কাছে বের হয়ে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। মোশি তখন ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “এতেই তোমরা বুঝতে পারবে যে, আমি যা করছি তা করবার জন্য সদাপ্রভুই আমাকে পাঠিয়েছেন; এটা আমার মনগড়া কিছু নয়। এই সমস্ত লোকদের যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, আর অন্য মানুষের যা হয় তা থেকে আলাদা কিছু না হয় তাহলে বুঝতে হবে সদাপ্রভু আমাকে পাঠান নি। কিন্তু সদাপ্রভু যদি সম্পূর্ণ নতুন কিছু করেন এবং পৃথিবী মুখ খুলে যদি তাদের এবং তাদের সব কিছু গিলে ফেলে আর যদি তারা জ্যান্ত অবস্থায় মৃতস্থানে চলে যায় তবে তোমরা বুঝবে যে, এই লোকেরা সদাপ্রভুকে তুচ্ছ করেছে।” মোশির এই কথা বলা শেষ হওয়ার সংগে সংগে ঐ সব লোকদের পায়ের নীচের মাটি দু’ভাগ হয়ে গেল, আর পৃথিবী মুখ খুলে কোরহের পরিবারের সমস্ত লোক এবং সব কিছু গিলে ফেলল। তাদের যা কিছু ছিল সব নিয়ে তারা জ্যান্ত অবস্থায় মৃতস্থানে চলে গেল। তারপর তাদের উপরকার সেই ফাটলটা বন্ধ হয়ে গেল। তারা ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের কান্নায় চারপাশের সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা চিৎকার করে এই কথা বলতে বলতে ছুটে পালাল, “পৃথিবী হয়তো আমাদেরও গিলে ফেলবে।” এদিকে যে দু’শো পঞ্চাশজন লোক ধূপ উৎসর্গ করছিল সদাপ্রভুর কাছ থেকে আগুন বের হয়ে এসে তাদের পুড়িয়ে ফেলল। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি পুরোহিত হারোণের ছেলে ইলীয়াসরকে বল যেন সে ঐ পোড়া জায়গা থেকে ধুপদানিগুলো বের করে নিয়ে কয়লাগুলো কিছু দূরে নিয়ে ছড়িয়ে দেয়, কারণ ধূপদানিগুলো আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করা হয়ে গেছে। পাপ করবার দরুন যে সমস্ত লোককে মরতে হয়েছে ধূপদানিগুলো তাদেরই। কিন্তু সেগুলো সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল বলে সেগুলো তাঁর উদ্দেশ্যে আলাদা করা হয়ে গেছে। সেইজন্য তুমি সেগুলো পিটিয়ে পাত তৈরী করে তা দিয়ে বেদীটা মুড়িয়ে দিয়ো। এটা যেন ইস্রায়েলীয়দের কাছে একটা চিহ্ন হয়ে থাকে।” যে লোকদের পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের আনা ব্রোঞ্জের ধূপদানিগুলো পুরোহিত ইলীয়াসর জড়ো করলেন। তারপর বেদীটা মুড়াবার জন্য তিনি সেগুলো পিটিয়ে পাত তৈরী করালেন। মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু তাঁকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি তা-ই করলেন। এটা করা হল যাতে ইস্রায়েলীয়েরা মনে রাখে যে, হারোণের বংশধর ছাড়া আর কেউ ধূপ জ্বালাবার জন্য সদাপ্রভুর সামনে যেতে পারবে না; যদি কেউ যায় তবে তার অবস্থা কোরহ ও তার দলের লোকদের মতই হবে। এর পরের দিন ইস্রায়েলীয় সমাজের সবাই মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে বক্‌বক্‌ করতে লাগল এবং বলল, “তোমরাই সদাপ্রভুর লোকদের মেরে ফেলেছ।” কিন্তু যখন সমাজের সব লোকেরা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে জড়ো হয়ে মিলন-তাম্বুর দিকে ঘুরে দাঁড়াল তখন হঠাৎ মিলন-তাম্বুটা সেই মেঘে ঢেকে গেল এবং সদাপ্রভুর মহিমা প্রকাশ পেল। তখন মোশি ও হারোণ মিলন-তাম্বুর সামনে গেলেন, আর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তোমরা এদের কাছ থেকে সরে যাও; আমি এখনই এদের শেষ করে দেব।” এই কথা শুনে তাঁরা মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন। তারপর মোশি হারোণকে বললেন, “তোমার ধূপদানি নিয়ে তাতে বেদীর আগুন ভরে তার উপর ধূপ দাও আর তাড়াতাড়ি করে ঐ লোকদের কাছে গিয়ে তাদের পাপ ঢাকবার ব্যবস্থা কর। সদাপ্রভুর ক্রোধ প্রকাশ পেয়েছে, মড়ক শুরু হয়ে গেছে।” তখন হারোণ মোশির কথামতই ধূপদানিতে আগুন আর ধূপ দিয়ে ঐ সব লোকদের মধ্যে ছুটে গেলেন। এর মধ্যেই লোকদের মাঝে মড়ক শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু হারোণ ধূপ উৎসর্গ করে তাদের পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করলেন। তিনি জীবিত ও মৃতদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালেন আর মড়ক থেমে গেল। কোরহের দরুন যারা মারা গিয়েছিল তারা ছাড়া আরও চৌদ্দ হাজার সাতশো লোক মড়কে মারা গেল। মড়ক থেমে যাবার পরে হারোণ মিলন-তাম্বুর দরজায় মোশির কাছে ফিরে গেলেন। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের কাছে গিয়ে বল যেন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের গোষ্ঠী অনুসারে প্রত্যেক গোষ্ঠীর নেতার কাছ থেকে একটা করে মোট বারোটা লাঠি তোমাকে দেয়। নেতাদের প্রত্যেকের নাম তুমি তার লাঠির উপর লিখবে। লেবি-গোষ্ঠীর লাঠিতে লিখবে হারোণের নাম, কারণ পূর্বপুরুষদের গোষ্ঠী অনুসারে প্রত্যেক গোষ্ঠীর নেতার জন্য একটা করেই লাঠি থাকবে। মিলন-তাম্বুর মধ্যে সাক্ষ্য-সিন্দুকের সামনে যেখানে তোমাদের সংগে আমার দেখা হয় সেখানে লাঠিগুলো রাখবে। আমার বেছে নেওয়া লোকের লাঠির গায়ে অংকুর দেখা দেবে। এইভাবে তোমাদের বিরুদ্ধে ইস্রায়েলীয়দের অনবরত বক্‌বক করবার হাত থেকে আমি রেহাই পাব।” কাজেই মোশি সব কথা ইস্রায়েলীয়দের জানালেন, আর পূর্বপুরুষদের গোষ্ঠী অনুসারে তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠী-নেতা তাঁকে একটা করে মোট বারোটা লাঠি দিলেন। সেই লাঠিগুলোর মধ্যে হারোণের লাঠিও ছিল। মোশি সেই লাঠিগুলো নিয়ে সাক্ষ্য-তাম্বুর মধ্যে সদাপ্রভুর সামনে রাখলেন। পরের দিন মোশি সাক্ষ্য-তাম্বুতে ঢুকে দেখলেন, লেবি-গোষ্ঠীর পক্ষে রাখা হারোণের লাঠির গায়ে কেবল যে অংকুর দেখা দিয়েছে তা নয় তাতে কুঁড়ি হয়ে, ফুল ফুটে বাদামও ধরেছে। মোশি তখন সদাপ্রভুর সামনে থেকে সমস্ত লাঠি বের করে এনে ইস্রায়েলীয়দের সামনে রাখলেন। তারা সেই লাঠিগুলো দেখল, আর নেতারা প্রত্যেকে নিজের নিজের লাঠি তুলে নিলেন। এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “বিদ্রোহকারীদের কাছে একটা স্মরণচিহ্ন হয়ে থাকবার জন্য তুমি হারোণের লাঠিটা আবার সাক্ষ্য-সিন্দুকের সামনে রেখে দাও। এতে তুমি আমার বিরুদ্ধে তাদের বক্‌বক করা থামিয়ে দিতে পারবে, যার ফলে তারা আর মারা পড়বে না।” সদাপ্রভু মোশিকে যে আদেশ দিলেন তিনি ঠিক তা-ই করলেন। এই সব দেখে ইস্রায়েলীয়েরা মোশিকে বলল, “আমরা মরে গেলাম, ধ্বংস হয়ে গেলাম, সবাই ধ্বংস হয়ে গেলাম! কেউ যদি সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বুর কাছে যায় তবে সে মারা পড়বে; তাহলে আমরা কি সবাই মারা পড়ব?” সদাপ্রভু হারোণকে বললেন, “পবিত্র তাম্বুর বিরুদ্ধে যে সব অন্যায় করা হবে তার দায়িত্ব বহন করতে হবে তোমাকে, তোমার ছেলেদের এবং তোমার বংশের অন্যান্য লোকদের। এছাড়া পুরোহিতের কাজের মধ্যে যে সমস্ত অন্যায় হবে তার দায়িত্বও তোমাকে ও তোমার ছেলেদের বহন করতে হবে। তুমি তোমার পূর্বপুরুষের গোষ্ঠী থেকে অন্য সব লেবীয়দের নিয়ে এস, যাতে তোমার সংগে যোগ দিয়ে তারা সাক্ষ্য-তাম্বুর সামনে সেবার কাজে তোমাকে ও তোমার ছেলেদের সাহায্য করতে পারে। তোমার অধীনে থেকে সাক্ষ্য-তাম্বুর সমস্ত কাজ তাদের করতে হবে, কিন্তু পবিত্র তাম্বুর কোন জিনিসের কাছে কিম্বা বেদীর কাছে তাদের যাওয়া চলবে না। তা করলে তোমরা ও তারা সবাই মারা পড়বে। তারা তোমার কাজে যোগ দেবে; মিলন-তাম্বুর দেখাশোনার ভার, অর্থাৎ সেই তাম্বুর সমস্ত কাজের ভার তাদের উপর থাকবে। কিন্তু তোমাদের কাছে লেবীয়েরা ছাড়া অন্য কারও যাওয়া চলবে না। ইস্রায়েলীয়দের উপর যাতে আবার আমার ক্রোধ প্রকাশ না পায় সেইজন্য পবিত্র তাম্বুর ও বেদীর দেখাশোনার ভার থাকবে তোমাদের উপর। দান হিসাবে তোমাদের হাতে তুলে দেবার জন্য আমি নিজেই ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে লেবীয়দের বেছে নিয়েছি। মিলন-তাম্বুর কাজ করবার জন্য সদাপ্রভুর কাছে তাদের উৎসর্গ করা হয়েছে। কিন্তু পুরোহিত হিসাবে কেবল তুমি ও তোমার ছেলেরা বেদীর ও পর্দার ভিতরকার কাজকর্ম করতে পারবে। পুরোহিতের পদ আমি দান হিসাবে তোমাদের দিচ্ছি। লেবীয়েরা ছাড়া আর কেউ যদি মিলন-তাম্বুর এলাকার কাছে আসে তবে তাকে মেরে ফেলা হবে।” এর পর সদাপ্রভু হারোণকে বললেন, “আমার কাছে যে সব জিনিস উৎসর্গ করা হয় তার সমস্ত দায়িত্বভার আমি নিজেই তোমাকে দিয়েছি। আমার উদ্দেশে ইস্রায়েলীয়দের উৎসর্গ-করা সমস্ত পবিত্র জিনিস আমি তোমার ও তোমার বংশধরদের সব সময়কার পাওনা হিসাবে দিলাম। মহাপবিত্র উৎসর্গের জন্য, অর্থাৎ শস্য-উৎসর্গ, পাপ-উৎসর্গ এবং দোষ-উৎসর্গের জন্য ইস্রায়েলীয়েরা আমার কাছে যা নিয়ে আসবে আর যে অংশ বেদীর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে না তা তোমরা নেবে; তা হবে তোমার ও তোমার বংশধরদের পাওনা। পবিত্র জিনিস যেভাবে খেতে হয় তোমরা সেইভাবেই তা খাবে। তোমাদের সমস্ত পুরুষ লোক তা খেতে পারবে। সেগুলো পবিত্র বলে তাদের মনে করতে হবে। ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া সমস্ত দোলন-উৎসর্গের জিনিসও তোমার হবে। সেগুলো আমি তোমাকে ও তোমার বংশের সকলকে সব সময়কার পাওনা হিসাবে দিচ্ছি। তোমার পরিবারের মধ্যে যারা শুচি অবস্থায় থাকবে তারা তা খেতে পারবে। “ইস্রায়েলীয়েরা তাদের প্রথমে তোলা ফসলের সবচেয়ে ভাল যে জলপাই তেল, নতুন আংগুর-রস ও শস্য সদাপ্রভুকে দেবে তা সবই আমি তোমাকে দিলাম। সদাপ্রভুর কাছে আনা তাদের জমির প্রথম ফসল তোমার হবে। তোমার পরিবারে যারা শুচি অবস্থায় থাকবে তারা তা খেতে পারবে। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন বলে ঘোষণা করা প্রত্যেকটি জিনিস তোমার হবে। সদাপ্রভুর কাছে ইস্রায়েলীয়দের উৎসর্গ করা প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তান তোমার হবে- সে মানুষের হোক বা পশুর হোক। মানুষের প্রথম পুরুষ সন্তানকে তুমি অবশ্যই ছাড়িয়ে নিতে দেবে এবং অশুচি পশুর প্রথম পুরুষ বাচ্চাকেও তুমি ছাড়িয়ে নিতে দেবে। একমাস বয়স হলে পর ঠিক করা মুক্তির মূল্যে, অর্থাৎ দশ গ্রাম ওজনের ধর্মীয় শেখেলের পাঁচ শেখেল রূপা দিয়ে, মানুষের প্রথম পুরুষ সন্তানকে তুমি ছাড়িয়ে নিতে দেবে। কিন্তু প্রথমে জন্মেছে এমন এঁড়ে বাছুর কিম্বা ভেড়া বা ছাগলের পুরুষ বাচ্চা ছাড়িয়ে নিতে দেওয়া চলবে না। এগুলো পবিত্র। তুমি বেদীর উপরে সেগুলোর রক্ত ছিটিয়ে দেবে এবং আগুনে-করা উৎসর্গ হিসাবে তাদের চর্বি পুড়িয়ে দেবে। এর গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। দোলন-উৎসর্গের বুকের মাংস ও ডান দিকের ঊরুর মাংসের মত এগুলোর মাংসও তোমার পাওনা হবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে ইস্রায়েলীয়দের উৎসর্গ করা সমস্ত পবিত্র জিনিস আমি তোমাকে ও তোমার ছেলেমেয়েদের সব সময়কার পাওনা হিসাবে দিলাম। এটা সদাপ্রভুর চোখে তোমার ও তোমার বংশের সকলের জন্য একটা চিরকালের অটল ব্যবস্থা।” এর পর সদাপ্রভু হারোণকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের দেশে তুমি কোন সম্পত্তির অধিকারী হবে না এবং জমাজমির কোন অংশও তুমি পাবে না। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে আমিই তোমার পাওনা অংশ, আমিই তোমার সম্পত্তি। “ইস্রায়েলীয়েরা তাদের আয়ের যে দশ ভাগের এক ভাগ আমাকে দেবে তা আমি পাওনা হিসাবে লেবীয়দের দিলাম। মিলন-তাম্বুর সেবার কাজের বদলে তারা তা পাবে। এখন থেকে অন্য ইস্রায়েলীয়েরা আর মিলন-তাম্বুর কাছে যেতে পারবে না। তা করলে তারা তাদের পাপের ফল ভোগ করবে আর মারা যাবে। লেবীয়েরাই মিলন-তাম্বুর কাজ করবে এবং সেই সমপর্কে তাদের সব অন্যায়ের জন্য তারাই দায়ী হবে। বংশের পর বংশ ধরে এটাই হবে একটা স্থায়ী নিয়ম। অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে লেবীয়েরা কোন সম্পত্তির অধিকারী হবে না। তার বদলে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর কাছে দান হিসাবে তাদের আয়ের যে দশ ভাগের এক ভাগ উপস্থিত করবে তা-ই আমি পাওনা হিসাবে তাদের দিলাম। সেইজন্যই আমি সদাপ্রভু তাদের সম্বন্ধে বলেছি, লেবীয়েরা অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে কোন সম্পত্তির অধিকারী হবে না।” এই উৎসর্গই তোমাদের পক্ষে তোমাদের নিজেদের খামার-বাড়ীর ফসল এবং নিজেদের মাড়াই করা আংগুর-রস হিসাবে ধরা হবে। তোমরা অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে তাদের আয়ের যে দশ ভাগের এক ভাগ পাবে তার মধ্য থেকে এইভাবে তোমাদেরও সদাপ্রভুর উদ্দেশে কিছু উৎসর্গ করতে হবে। এই দশ ভাগের এক ভাগ থেকে সদাপ্রভুর অংশটা তোমরা পুরোহিত হারোণের হাতে দেবে। যা কিছু তোমাদের দেওয়া হবে তার মধ্য থেকে সবচেয়ে ভাল অংশটা, যা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা, তার সবটাই তোমরা সদাপ্রভুর পাওনা হিসাবে দেবে। “সবচেয়ে ভাল অংশটা সদাপ্রভুকে দেবার পরে যা বাকী থাকবে তা তোমাদের পক্ষে তোমাদের নিজেদের খামার-বাড়ীর ফসল এবং নিজেদের মাড়াই করা আংগুর-রস হিসাবে ধরা হবে। তোমরা ও তোমাদের পরিবার যে কোন জায়গায় তা খেতে পারবে কারণ সেটা হবে মিলন-তাম্বুতে তোমাদের কাজের বেতন। এতে তোমাদের কোন দোষ হবে না, কারণ সবচেয়ে ভাল অংশটাই তোমরা সদাপ্রভুকে দিয়েছ। তাহলে তোমরা ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া পবিত্র জিনিস অপবিত্র করবার দোষে দোষী হবে না এবং তোমরা মারাও যাবে না।” এর পর সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “এ হল আমার দেওয়া আইন-কানুনের একটা ধারা: তোমরা ইস্রায়েলীয়দের এমন একটা লাল রংয়ের বক্‌না গরু তোমাদের কাছে আনতে বলবে যার দেহে কোন দোষ বা খুঁত নেই এবং যার কাঁধে কখনও জোয়াল চাপানো হয় নি। সেটা তোমরা পুরোহিত ইলীয়াসরকে দেবে। ছাউনির বাইরে নিয়ে তার সামনে এটা কাটতে হবে। তারপর পুরোহিত ইলীয়াসর তার আংগুলে করে কিছু রক্ত নিয়ে মিলন-তাম্বুর সামনের দিকে সাত বার ছিটিয়ে দেবে। তার সামনেই গরুটার চামড়া, মাংস, রক্ত ও নাড়িভুঁড়ি সুদ্ধ গোবর পুড়িয়ে দিতে হবে। গরুটা যখন পুড়তে থাকবে তখন পুরোহিতকে কিছু এরস কাঠ, এসোব ও লাল রংয়ের সুতা তার উপর ছুঁড়ে দিতে হবে। এর পর পুরোহিতকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে নিয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে। তারপর সে ছাউনির মধ্যে যেতে পারবে, তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে অশুচি অবস্থায় থাকতে হবে। যে সেই গরুটা পোড়াবে তাকেও তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে জলে স্নান করে ফেলতে হবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সে অশুচি অবস্থায় থাকবে। শুচি অবস্থায় আছে এমন কোন লোক সেই গরুটার ছাই তুলে নিয়ে ছাউনির বাইরে কোন শুচি জায়গায় রাখবে। সেই ছাই ইস্রায়েলীয়েরা শুচি করবার জল তৈরী করবার জন্য রেখে দেবে। এটা অশুচিতা থেকে শুচি হওয়ার জন্য ব্যবহার করতে হবে। যে লোকটি সেই গরুর ছাই তুলে নেবে তাকেও তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে এবং সে-ও সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। এটা হবে ইস্রায়েলীয় এবং তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম। “যদি কেউ কারো মৃতদেহ ছোঁয় তবে সে সাত দিন পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। তৃতীয় ও সপ্তম দিনে তাকে শুচি করবার জল দিয়ে নিজেকে শুচি করিয়ে নিতে হবে আর তারপর সে শুচি হবে। কিন্তু যদি সে তৃতীয় ও সপ্তম দিনে এইভাবে নিজেকে শুচি করিয়ে না নেয় তবে সে অশুচিই থেকে যাবে। যদি কেউ কারও মৃতদেহ ছোঁবার পর নিজেকে শুচি করিয়ে না নেয় তবে সে সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বু অশুচি করে। সেই লোককে ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। তার গায়ে শুচি করবার জল ছিটানো হয় নি বলে সে অশুচিই থাকবে এবং তার অশুচিতা তার উপরে থেকে যাবে। “কোন লোক তাম্বুর ভিতরে মারা গেলে এই আইন মানতে হবে- যারা সেই তাম্বুর ভিতরে ঢুকবে আর যারা ঐ তাম্বুতেই ছিল তারা সাত দিন পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। সেখানকার যে সমস্ত পাত্র ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করা হয় নি বলে খোলা অবস্থায় ছিল সেগুলোও অশুচি হয়ে গেছে। “যুদ্ধে কিম্বা স্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়ে খোলা মাঠে পড়ে আছে এমন কাউকে যদি কেউ ছোঁয় তবে সে সাত দিন পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। কেউ যদি মানুষের হাড় কিম্বা কবর ছোঁয় তবে সে-ও সাত দিন পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। “এই সব অশুচি লোকদের অশুচিতা থেকে শুচি করবার উদ্দেশ্যে যে পশু পোড়ানো হয়েছে তার কিছু ছাই একটা পাত্রের মধ্যে রেখে তার উপর স্রোতের জল ঢেলে দিতে হবে। তারপর শুচি অবস্থায় আছে এমন একজন লোক এসোবের কয়েকটা ডাল সেই জলে ডুবিয়ে নিয়ে সেই তাম্বু, তার ভিতরকার জিনিসপত্র ও লোকদের উপর তা ছিটিয়ে দেবে। মানুষের হাড় কিম্বা কবর কিম্বা মেরে ফেলা বা মরে যাওয়া লোককে ছুঁয়েছে এমন লোকের উপরেও সেই জল ছিটিয়ে দিতে হবে। শুচি অবস্থায় থাকা লোকটি অশুচি অবস্থায় পড়া লোকের উপর তৃতীয় ও সপ্তম দিনে সেই জল ছিটিয়ে দেবে এবং সপ্তম দিনে সে তাকে শুচি করবে। যাকে শুচি করা হচ্ছে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলে জলে স্নান করে ফেলতে হবে এবং সেই দিন সন্ধ্যা থেকে সে শুচি হবে। অশুচি হওয়ার পর যদি কেউ নিজেকে শুচি করিয়ে না নেয় তবে তাকে তার সমাজের মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে, কারণ নিজেকে শুচি না করে সে সদাপ্রভুর পবিত্র তাম্বু অশুচি করেছে। শুচি করবার জল তার উপর ছিটানো হয় নি বলে সে অশুচি। ইস্রায়েলীয়দের জন্য এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম। “যে লোক এই শুচি করবার জল ছিটাবে তাকেও তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি কেউ এই শুচি করবার জল ছোঁয় তবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে। অশুচি অবস্থায় থাকা লোকটি যা কিছু ছোঁবে তা অশুচি হয়ে যাবে এবং তার ছোঁওয়া জিনিস যে ছোঁবে সে-ও সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি অবস্থায় থাকবে।” বছরের প্রথম মাসে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সীন মরু-এলাকায় পৌঁছে কাদেশের কাছে গিয়ে রইল। মরিয়ম সেখানে মারা গেলেন এবং তাঁকে কবর দেওয়া হল। সেখানে জল না থাকায় ইস্রায়েলীয়েরা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে দল পাকালো। তারা মোশির সংগে ঝগড়া করে বলল, “আমাদের ভাইয়েরা যখন সদাপ্রভুর সামনে মারা গেল তখন যদি আমরাও মরতাম তবে ভাল হত। কেন তুমি সদাপ্রভুর লোকদের এই মরু-এলাকায় নিয়ে আসলে যাতে পশুপাল সুদ্ধ আমরা মারা যাই? মিসর দেশ থেকে কেন তুমি আমাদের এই ভীষণ জায়গায় নিয়ে আসলে? এই জায়গায় না আছে কোন শস্য বা ডুমুর ফল, না আছে আংগুর লতা বা ডালিম ফল; তার উপর খাবার জলও এখানে নেই।” এতে মোশি ও হারোণ তাদের কাছ থেকে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে গিয়ে উবুড় হয়ে পড়লেন। তখন সদাপ্রভুর মহিমা তাঁদের সামনে প্রকাশ পেল। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি সেই লাঠিটা নাও আর তুমি ও তোমার ভাই হারোণ ইস্রায়েলীয়দের এক জায়গায় জড়ো কর। ঐ যে বিরাট পাথরটা রয়েছে তুমি ইস্রায়েলীয়দের সামনে ওটাকে বল আর তাতে ওটা জল দেবে। ইস্রায়েলীয়েরা এবং তাদের পশুপাল যাতে খেতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের জন্য পাথর থেকে জল বের করে আনবে।” সদাপ্রভুর আদেশ মতই তাঁর সামনে থেকে মোশি সেই লাঠিটা তুলে নিলেন। মোশি ও হারোণ সেই পাথরটার কাছে লোকদের একসংগে জড়ো করলেন। তারপর মোশি তাদের বললেন, “বিদ্রোহীরা শোন, আমরা কি তোমাদের জন্য এই পাথরটা থেকে জল বের করে আনব?” এই কথা বলে মোশি হাত উঠিয়ে তাঁর লাঠি দিয়ে সেই পাথরটাকে দু’বার আঘাত করলেন; তাতে সেখান থেকে জোরে অনেক জল বের হয়ে আসতে লাগল আর ইস্রায়েলীয়েরা ও তাদের পশুপাল তা খেল। কিন্তু সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “তোমরা আমার উপর নির্ভর কর নি এবং ইস্রায়েলীয়দের সামনে আমাকে পবিত্র বলে মান্য কর নি। তাই যে দেশ আমি ইস্রায়েলীয়দের দেব তোমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে পারবে না।” সেই জলকে বলা হল মরীবা (যার মানে “ঝগড়া”)। এখানে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর সংগে ঝগড়া করেছিল আর সদাপ্রভু এখানেই তাদের মধ্যে নিজের পবিত্রতা প্রকাশ করেছিলেন। পরে মোশি কাদেশ থেকে লোক পাঠিয়ে ইদোম দেশের রাজাকে বলে পাঠালেন, “আমরা, আপনার ইস্রায়েলীয় ভাইয়েরা, আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। আপনি আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা জানেন। আপনি আপনার দেশের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে দিন। আমরা কোন শস্য ক্ষেত কিম্বা আংগুর ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাব না, কিম্বা কোন কূয়া থেকে জলও খাব না। আমরা রাজপথ দিয়ে চলে যাব এবং আপনার রাজ্য পার হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ডানে কি বাঁয়ে পা বাড়াব না।” কিন্তু উত্তরে ইদোমের রাজা বললেন, “না, তোমরা এখান দিয়ে যেতে পারবে না। যদি তোমরা যাওয়ার চেষ্টা কর তবে আমরা যুদ্ধ করবার জন্য বের হয়ে তোমাদের আক্রমণ করব।” ইস্রায়েলীয়েরা তাঁর উত্তরে বলে পাঠাল, “আমরা সদর রাস্তা ধরে যাব। আমাদের পশুপাল কিম্বা আমরা যদি আপনার দেশ থেকে কোন জল খাই তবে আমরা তার দাম দিয়ে দেব। আমরা কেবল পায়ে হেঁটে পার হয়ে যেতে চাই, আর কিছু নয়।” ইদোমীয়েরা আবার বলে পাঠাল, “না, এখান দিয়ে তোমাদের যাওয়া চলবে না।” এর পর ইদোমীয়েরা অনেক সৈন্য নিয়ে তাদের ক্ষমতা জাহির করে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে বের হয়ে আসল। ইদোমীয়েরা তাদের দেশের মধ্য দিয়ে যেতে দিতে অস্বীকার করল বলে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের কাছ থেকে ফিরে চলে গেল। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা কাদেশ থেকে রওনা হয়ে হোর পাহাড়ের কাছে গিয়ে উপস্থিত হল। সেখানে ইদোমের সীমানার কাছে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “হারোণকে তার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যেতে হবে। যে দেশ আমি ইস্রায়েলীয়দের দেব তার সেখানে যাওয়া হবে না, কারণ মরীবাতে সেই জলের ব্যাপারে তোমরা আমার আদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলে। হারোণ ও তার ছেলে ইলীয়াসরকে নিয়ে তুমি হোর পাহাড়ের উপরে যাও। সেখানে হারোণের গা থেকে পুরোহিতের পোশাক খুলে নিয়ে সেটা তার ছেলে ইলীয়াসরকে পরিয়ে দাও, কারণ হারোণ তার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবে; সে সেখানেই মারা যাবে।” মোশি সদাপ্রভুর আদেশ মত কাজ করলেন। তাঁরা সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সামনে হোর পাহাড়ে উঠে গেলেন। তারপর মোশি হারোণের গা থেকে পুরোহিতের পোশাক খুলে নিয়ে সেটা তাঁর ছেলে ইলীয়াসরকে পরিয়ে দিলেন। হারোণ সেই পাহাড়ের চূড়ায় মারা গেলেন। তারপর মোশি ও ইলীয়াসর পাহাড় থেকে নেমে আসলেন। ইস্রায়েলীয়েরা সবাই যখন জানতে পারল যে, হারোণ মারা গেছেন তখন গোটা ইস্রায়েল জাতি ত্রিশ দিন পর্যন্ত তাঁর জন্য শোক করল। অরাদের কনানীয় রাজা নেগেভে বাস করতেন। ইস্রায়েলীয়েরা অথারীমের পথ ধরে আসছে শুনে তিনি তাদের আক্রমণ করে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেলেন। তখন ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর কাছে মানত করে বলল, “অরাদের এই লোকদের তুমি যদি আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দাও, তবে আমরা তাদের গ্রাম ও শহরগুলো একেবারে ধ্বংস করে ফেলব।” সদাপ্রভু তাদের এই বিশেষ অনুরোধ শুনলেন এবং সেই কনানীয়দের তাদের হাতের মুঠোয় এনে দিলেন। ইস্রায়েলীয়েরা তাদের এবং তাদের গ্রাম ও শহরগুলো একেবারে ধ্বংস করে ফেলল। সেইজন্য ঐ জায়গাটার নাম হল হর্মা (যার মানে “ধ্বংসের অধীন”)। তখন সদাপ্রভু তাদের মধ্যে এক রকম বিষাক্ত সাপ পাঠিয়ে দিলেন। সেগুলোর কামড়ে অনেক ইস্রায়েলীয় মারা গেল। তখন লোকেরা গিয়ে মোশিকে বলল, “সদাপ্রভু ও আপনার বিরুদ্ধে কথা বলে আমরা পাপ করেছি। আপনি এখন সদাপ্রভুর কাছে অনুরোধ করুন যেন তিনি এই সব সাপ আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে নেন।” তখন মোশি লোকদের জন্য অনুরোধ করলেন। এর উত্তরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি একটা সাপ তৈরী করে একটা খুঁটির উপরে রাখ। যাকে সাপে কামড়াবে সে ওটার দিকে তাকালে বেঁচে যাবে।” তখন মোশি একটা ব্রোঞ্জের সাপ তৈরী করে একটা খুঁটির উপরে লাগিয়ে রাখলেন। কাউকে সাপে কামড়ালে সে ঐ ব্রোঞ্জের সাপের দিকে চেয়ে দেখত আর তাতে সে বেঁচে যেত। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা যাত্রা করে ওবোতে গিয়ে ছাউনি ফেলল। তারপর তারা ওবোৎ থেকে যাত্রা করে মরু-এলাকার মধ্যে ইয়ী-অবারীমে গিয়ে ছাউনি ফেলল। ইয়ী-অবারীম ছিল মোয়াবের পূর্ব দিকে মরু-এলাকার মধ্যে। তারপর সেখান থেকে যাত্রা করে তারা সেরদ উপত্যকাতে গিয়ে ছাউনি ফেলল। সেখান থেকে যাত্রা করে তারা অর্ণোন নদীর ওপারে গিয়ে ছাউনি ফেলল। ইমোরীয়দের দেশ থেকে যে মরু-এলাকাটা শুরু হয়েছে তার মধ্যে ছিল এই অর্ণোন নদীটা। নদীটার এক পাশে ছিল মোয়াব আর অন্য পাশে ছিল ইমোরীয়দের দেশ। সেখান থেকে যাত্রা করে ইস্রায়েলীয়েরা বের নামে একটা কূয়ার কাছে আসল। এই কূয়ার কাছে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি লোকদের একসংগে জড়ো কর, আমি তাদের জল দেব।” তখন ইস্রায়েলীয়েরা এই গানটা করল: “হে কূয়া, তুমি জলে ভরে ওঠো। তোমরা এই কূয়ার বিষয় নিয়ে গান কর। এটা সেই কূয়া যা শাসনকর্তারা শাসনদণ্ডের জোরে খুঁড়েছেন, যা গণ্যমান্য লোকেরা লাঠির জোরে করেছেন।” তারপর ইস্রায়েলীয়েরা সেই মরু-এলাকা থেকে মত্তানায়, ইস্রায়েলীয়েরা ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের কাছে লোক পাঠিয়ে অনুরোধ করল, “আপনার রাজ্যের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে দিন। আমরা রাস্তা ছেড়ে কোন জমির মধ্যে বা আংগুর ক্ষেতে যাব না, কিম্বা কোন কূয়া থেকে জলও খাব না। আপনার রাজ্য পার হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ধরেই চলতে থাকব।” কিন্তু সীহোন তাঁর রাজ্যের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিলেন না। তিনি তাঁর সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে মরু-এলাকায় ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। তিনি যহস শহরে উপস্থিত হয়ে ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করলেন। এই যুদ্ধে ইস্রায়েলীয়েরা তাঁকে মেরে ফেলে অর্ণোন থেকে যব্বোক নদী পর্যন্ত তাঁর দেশটা অধিকার করে নিল। তারা কেবল অম্মোনীয়দের সীমানা পর্যন্ত অধিকার করতে পেরেছিল, কারণ অম্মোনীয়দের দেশের সীমানাটা এমন ছিল যা ডিংগিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। ইস্রায়েলীয়েরা হিষ্‌বোন ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো সুদ্ধ ইমোরীয়দের সমস্ত শহর দখল করে নিল এবং সেখানে বাস করতে লাগল। হিষ্‌বোন ছিল ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের রাজধানী। তিনি মোয়াব দেশের আগেকার রাজার সংগে যুদ্ধ করে তাঁর কাছ থেকে অর্ণোন নদী পর্যন্ত সমস্ত দেশটা দখল করে নিয়েছিলেন। এইজন্যই কবিরা বলেছেন: “তোমরা হিষ্‌বোনে এসে শহরটা আবার গড়ে তোলো। সীহোনের শহরটা আবার গড়ে তোলা হোক। সীহোনের শহর হিষ্‌বোন থেকে আগুন বেরিয়ে এসে মোয়াব দেশের আর্‌ শহরটা পুড়িয়ে দিল আর অর্ণোন নদীর কাছের উঁচু জায়গার বাসিন্দাদের পুড়িয়ে দিল। হায় মোয়াব! হে কমোশ দেবতার লোকেরা, তোমরা ধ্বংস হয়ে গেছ। কমোশের ছেলেরা পালিয়ে গিয়েছে আর মেয়েরা ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের বন্দিনী হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। দীবোন পর্যন্ত হিষ্‌বোন ধ্বংস হয়ে গেছে। মেদবা পর্যন্ত চলে গেছে যে নোফঃ সেই জায়গা পর্যন্ত আমরা ধ্বংস করেছি।” এর পর ইস্রায়েলীয়েরা ইমোরীয়দের দেশে বাস করতে লাগল। মোশি যাসের শহরে গুপ্তচর পাঠিয়ে দেবার পর ইস্রায়েলীয়েরা সেই শহরের আশেপাশের গ্রামগুলো দখল করে নিল এবং সেখানকার ইমোরীয়দের তাড়িয়ে দিল। তারপর তারা ঘুরে বাশন দেশের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগল। তখন বাশনের রাজা ওগ তাঁর সমস্ত সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বের হয়ে তাদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য ইদ্রিয়ী শহরে উপস্থিত হলেন। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “রাজা ওগকে ভয় কোরো না, কারণ আমি তার দেশ এবং তাকে ও তার সমস্ত সৈন্য-সামন্তকে তোমার হাতের মুঠোয় দিয়ে দিয়েছি। ইমোরীয়দের রাজা সীহোন, যে হিষ্‌বোনে রাজত্ব করত, তুমি তার অবস্থা যা করেছ এর অবস্থাও তা-ই করবে।” তখন তারা ওগকে এবং তাঁর ছেলেদের ও তাঁর সমস্ত সৈন্য-সামন্তদের মেরে ফেলল। শেষ পর্যন্ত তাঁর আর কেউ বেঁচে রইল না। তারা তাঁর দেশটাও অধিকার করে নিল। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা মোয়াবের সমভূমিতে গিয়ে যিরীহো শহরের উল্টা দিকে যর্দন নদীর ওপারে তাদের ছাউনি ফেলল। ইস্রায়েলীয়েরা ইমোরীয়দের যে অবস্থা করেছিল তা সবই সিপ্পোরের ছেলে মোয়াবের রাজা বালাক দেখেছিলেন। এত লোক দেখে মোয়াবীয়েরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ইস্রায়েলীয়দের দেখে সত্যিই মোয়াবীয়েরা ভীষণ ভয় পেয়েছিল। এই লোকেরা আমার চেয়ে শক্তিশালী; সেইজন্য আপনি এসে এই লোকদের অভিশাপ দিন। তাহলে হয়তো আমি তাদের হারিয়ে দিয়ে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে পারব। আমি এই কথা জানি যে, আপনি যাদের আশীর্বাদ করেন তারা সত্যিই আশীর্বাদ পায় আর যাদের অভিশাপ দেন তাদের উপর অভিশাপ পড়ে।” তখন ভাগ্য গণনা করবার টাকা নিয়ে মোয়াব ও মিদিয়নের বৃদ্ধ নেতারা রওনা হয়ে গেলেন। বালাক যা বলেছিলেন তা তাঁরা গিয়ে বিলিয়মের কাছে বললেন। তখন বিলিয়ম তাঁদের বললেন, “আপনারা এখানে রাতটা কাটান। সদাপ্রভু আমাকে যে উত্তর দেবেন তা আমি আপনাদের জানাব।” কাজেই মোয়াবীয় নেতারা তাঁর সংগে রইলেন। ঈশ্বর এসে বিলিয়মকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার সংগে এই লোকগুলো কারা?” উত্তরে বিলিয়ম ঈশ্বরকে বললেন, “মোয়াবের রাজা সিপ্পোরের ছেলে বালাক আমার কাছে খবর পাঠিয়ে বলেছেন, ‘মিসর দেশ থেকে একদল লোক বের হয়ে এসে দেশটা ছেয়ে ফেলেছে। এখন আপনি এসে আমার হয়ে এই লোকদের অভিশাপ দিন। তাহলে হয়তো আমি যুদ্ধ করে এদের তাড়িয়ে দিতে পারব।’ ” কিন্তু ঈশ্বর বিলিয়মকে বললেন, “তুমি ওদের সংগে যাবে না এবং ঐ লোকদের কোন অভিশাপও দেবে না, কারণ ওরা আমার আশীর্বাদ পাওয়া লোক।” পরের দিন সকালে বিলিয়ম ঘুম থেকে উঠে বালাকের পাঠানো নেতাদের বললেন, “আপনারা নিজেদের দেশে ফিরে যান। সদাপ্রভু আমাকে আপনাদের সংগে যেতে দিতে রাজী নন।” কাজেই মোয়াবীয় নেতারা ফিরে গিয়ে বালাককে বললেন, “বিলিয়ম আমাদের সংগে আসতে অস্বীকার করেছেন।” তখন বালাক অন্য নেতাদের পাঠালেন। তাঁরা আগের নেতাদের চেয়ে সংখ্যায় যেমন বেশী তেমনি আরও সম্মানিত। তাঁরা বিলিয়মের কাছে গিয়ে বললেন, “সিপ্পোরের ছেলে বালাক এই কথা বলেছেন যে, কোন কিছুই যেন আপনাকে তাঁর কাছে যেতে বাধা না দেয়। তিনি আপনাকে অনেক সম্মানের অধিকারী করবেন এবং আপনি যা বলবেন তা-ই করবেন। তিনি চান যেন আপনি গিয়ে তাঁর পক্ষ থেকে ঐ লোকদের অভিশাপ দেন।” উত্তরে বিলিয়ম তাঁদের বললেন, “বালাক যদি সোনা-রূপায় ভরা তাঁর রাজবাড়ীটাও আমাকে দেন তবুও আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশের বাইরে গিয়ে আমি কোন কাজই করতে পারব না- কাজটা ছোটই হোক বা বড়ই হোক। তবে আপনারাও রাতটা এখানে কাটান; সদাপ্রভু আমাকে আর কি বলেন তা আমি জেনে নেব।” সেই রাতে ঈশ্বর এসে বিলিয়মকে বললেন, “এই লোকেরা যখন তোমাকে ডাকতে এসেছে তখন তুমি তাদের সংগে যাও, কিন্তু আমি তোমাকে যা বলব তুমি কেবল তা-ই করবে।” পরদিন সকালে বিলিয়ম ঘুম থেকে উঠে তাঁর গাধীর উপর গদি চাপিয়ে মোয়াবীয় নেতাদের সংগে চললেন, কিন্তু তাঁকে যেতে দেখে ঈশ্বর তাঁর উপর খুব অসন্তুষ্ট হলেন। তাঁকে বাধা দেবার জন্য সদাপ্রভুর দূত পথে দাঁড়িয়ে রইলেন। বিলিয়ম গাধীর উপর চড়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর দু’জন চাকর তাঁর সংগে ছিল। সদাপ্রভুর দূতকে তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাধীটা রাস্তা ছেড়ে মাঠে নেমে গেল। গাধীটাকে আবার রাস্তায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিলিয়ম তাকে মারতে লাগলেন। সদাপ্রভুর দূত তারপর দু’টা আংগুর ক্ষেতের মাঝখানের একটা সরু পথের উপর গিয়ে দাঁড়ালেন। পথটার দু’দিকেই দেয়াল ছিল। সদাপ্রভুর দূতকে দেখে গাধীটা দেয়ালের গা ঘেঁষে চলল। তাতে বিলিয়মের একটা পায়ে ভীষণ ঘষা লাগল। তখন বিলিয়ম আবার গাধীটাকে মারতে লাগলেন। এর পর সদাপ্রভুর দূত এগিয়ে গিয়ে পথের এমন একটা সরু জায়গায় দাঁড়ালেন যেখানে ডানে-বাঁয়ে ঘুরবার পথ ছিল না। সদাপ্রভুর দূতকে দেখে গাধীটা বিলিয়মকে নিয়ে শুয়ে পড়ল। এতে বিলিয়ম রেগে গিয়ে লাঠি দিয়ে গাধীটাকে মারলেন। তখন সদাপ্রভু গাধীটার মুখ খুলে দিলেন। সে বিলিয়মকে বলল, “আমি আপনার কি করেছি যে, আপনি এই নিয়ে তিনবার আমাকে মারলেন?” উত্তরে বিলিয়ম সেই গাধীকে বললেন, “তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ। আমার হাতে যদি একটা তলোয়ার থাকত তাহলে এখনই আমি তোমাকে মেরে ফেলতাম।” গাধীটা বিলিয়মকে বলল, “আমি কি আপনার সেই গাধী নই যার উপর আপনি সারা জীবন চড়ে আসছেন? আপনার সংগে কি এই রকম ব্যবহার করা আমার অভ্যাস?” বিলিয়ম বললেন, “না, তা কর নি।” এর পর সদাপ্রভু বিলিয়মের চোখ খুলে দিলেন আর তিনি সদাপ্রভুর দূতকে তলোয়ার হাতে রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তাতে তিনি মাথা নীচু করে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন। সদাপ্রভুর দূত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার গাধীটাকে তুমি এই নিয়ে তিনবার মারলে কেন? তুমি আমার সামনেই আমার বিরুদ্ধে যাচ্ছ বলে আমি তোমাকে বাধা দিতে এখানে এসেছি। গাধীটা আমাকে দেখে এই তিনবার আমার সামনে থেকে সরে গেছে। যদি সে সরে না যেত, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে এতক্ষণে মেরে ফেলতাম আর গাধীটাকে বাঁচিয়ে রাখতাম।” তখন বিলিয়ম সদাপ্রভুর দূতকে বললেন, “আমি পাপ করেছি। আমি বুঝতে পারি নি যে, আপনি আমাকে বাধা দেবার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। আপনি যদি অসন্তুষ্ট হন তবে আমি ফিরে যাব।” সদাপ্রভুর দূত বিলিয়মকে বললেন, “তুমি ঐ লোকদের সংগে যাও, কিন্তু আমি তোমাকে যা বলতে বলব তুমি কেবল তা-ই বলবে।” বিলিয়ম তখন বালাকের পাঠানো নেতাদের সংগে গেলেন। বিলিয়মের আসবার কথা শুনে বালাক তাঁকে এগিয়ে নেবার জন্য অর্ণোন নদীর তীরে মোয়াবীয়দের শহরে গেলেন। এই শহরটা ছিল তাঁর রাজ্যের শেষ সীমানায়। বালাক বিলিয়মকে বললেন, “আমি কি আপনাকে জরুরী তলব পাঠাই নি? তবে কেন আপনি আমার কাছে আসেন নি? আপনাকে পুরস্কার দেবার ক্ষমতা কি আমার নেই?” উত্তরে বিলিয়ম বললেন, “আমি এখন আপনার কাছে এসেছি। কিন্তু আমার নিজের কোন কথা বলবার ক্ষমতা নেই। ঈশ্বর যে কথা আমার মুখে যুগিয়ে দেবেন আমাকে কেবল তা-ই বলতে হবে।” এর পর বিলিয়ম বালাকের সংগে কিরিয়ৎ-হুষোৎ গ্রামে গেলেন। বালাক গরু ও ভেড়া উৎসর্গ করে কিছু মাংস বিলিয়ম ও তাঁর সংগে যে নেতারা ছিলেন তাঁদের দিলেন। পরের দিন সকালবেলা বালাক বিলিয়মকে নিয়ে বামোৎ-বাল পাহাড়ে গেলেন। বিলিয়ম সেখান থেকে ইস্রায়েলীয়দের একটা অংশ দেখতে পেলেন। তারপর বিলিয়ম বালাককে বললেন, “আপনি আমার জন্য এখানে সাতটা বেদী তৈরী করে সাতটা ষাঁড় ও সাতটা ভেড়া উৎসর্গের জন্য প্রস্তুত করুন।” বালাক বিলিয়মের কথামতই কাজ করলেন এবং দু’জনে মিলে প্রত্যেকটি বেদীর উপরে একটা করে ষাঁড় ও একটা করে ভেড়া উৎসর্গ করলেন। তারপর বিলিয়ম বালাককে বললেন, “যে পশুগুলো দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা হল আপনি সেগুলোর কাছে থাকুন আর আমি ওদিকে যাচ্ছি। হয়তো সদাপ্রভু আমার সংগে দেখা করতে আসবেন। তিনি আমার কাছে যা প্রকাশ করবেন আমি তা আপনার কাছে বলব।” এই কথা বলে বিলিয়ম এমন একটা পাহাড়ের উপরে উঠে গেলেন যেখানে কোন গাছপালা ছিল না। তখন ঈশ্বর তাঁর সংগে দেখা করলেন। বিলিয়ম বললেন, “আমি সাতটা বেদী তৈরী করেছি এবং প্রত্যেকটি বেদীর উপর একটা করে ষাঁড় ও একটা করে ভেড়া উৎসর্গ করেছি।” তখন সদাপ্রভু বিলিয়মের মুখে কতগুলো কথা যুগিয়ে দিয়ে বললেন, “তুমি বালাকের কাছে ফিরে গিয়ে তাকে এই সব বল।” বিলিয়ম বালাকের কাছে ফিরে গেলেন। তিনি দেখলেন, বালাক মোয়াবের সমস্ত নেতাদের নিয়ে তাঁর উৎসর্গ-করা পশুর কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। তখন বিলিয়ম ঈশ্বরের দেওয়া এই কথা বলতে লাগলেন: “বালাক আমাকে অরাম দেশ থেকে নিয়ে আসলেন, পূবের পাহাড়গুলোর কাছ থেকে মোয়াব-রাজা আমাকে নিয়ে আসলেন। তিনি বললেন, ‘আমার হয়ে আপনি যাকোবকে অভিশাপ দিন, ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে অমংগলের কথা বলুন।’ ঈশ্বর যাদের কোন অভিশাপ দেন নি, কেমন করে আমি তাদের অভিশাপ দেব? সদাপ্রভু যাদের বিরুদ্ধে অমংগলের কথা বলেন নি, কেমন করে আমি তাদের বিরুদ্ধে অমংগলের কথা বলব? পাহাড়ের চূড়া থেকে আমি তাদের দেখছি; তাদের আমি পাহাড়ের উপর থেকে লক্ষ্য করছি। আমি দেখছি এমন একটা জাতিকে যে অন্যদের থেকে দূরে থাকে; অন্য সব জাতির সংগে নিজেদের এক করে দেখে না। যাকোবের বংশধরেরা ধূলিকণার মত অসংখ্য, কে তাদের গুণে দেখতে পারে? ইস্রায়েলের চার ভাগের একভাগও কি কারও পক্ষে গোণা সম্ভব? ঐ সৎ লোকদের মতই যেন আমার মৃত্যু হয়; আমার শেষ যেন হয় তাদেরই মত।” এই কথা শুনে বালাক বিলিয়মকে বললেন, “আপনি আমার এ কি করলেন? আমার শত্রুদের অভিশাপ দেবার জন্য আমি আপনাকে আনলাম আর আপনি কি না তাদের আশীর্বাদ করলেন।” উত্তরে বিলিয়ম বললেন, “সদাপ্রভু আমার মুখে যে কথা যুগিয়ে দিয়েছেন তা কি আমি না বলে থাকতে পারি?” পরে বালাক বিলিয়মকে বললেন, “আপনি আমার সংগে আর এক জায়গায় আসুন। সেখান থেকে আপনি ইস্রায়েলীয়দের দেখতে পাবেন। আপনি তাদের সবাইকে যে দেখতে পাবেন তা নয়, কেবল তাদের একটা অংশই দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনি আমার পক্ষ থেকে তাদের অভিশাপ দেবেন।” এই বলে বালাক তাঁকে পিস্‌গা পাহাড়শ্রেণীর উপরে যে সোফীম মাঠ আছে সেখানে নিয়ে গেলেন। সেখানে তিনি সাতটা বেদী তৈরী করে প্রত্যেকটার উপরে একটা করে ষাঁড় আর একটা করে ভেড়া উৎসর্গ করলেন। তারপর বিলিয়ম বালাককে বললেন, “যে পশুগুলো দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা হল আপনি সেগুলোর কাছে থাকুন, আর আমি ঐদিকে গিয়ে সদাপ্রভুর সংগে দেখা করি।” সদাপ্রভু বিলিয়মের সংগে দেখা করে তাঁর মুখে কতগুলো কথা যুগিয়ে দিয়ে বললেন, “তুমি বালাকের কাছে ফিরে গিয়ে তাকে এই কথা বল।” কাজেই বিলিয়ম বালাকের কাছে গেলেন। তিনি দেখলেন বালাক মোয়াবের নেতাদের নিয়ে তাঁর উৎসর্গ করা পশুর কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। বালাক তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সদাপ্রভু আপনাকে কি বলেছেন?” বিলিয়ম তখন ঈশ্বরের দেওয়া এই কথা বলতে লাগলেন: “বালাক রাজা উঠুন, শুনুন; হে সিপ্পোরের ছেলে, আমার কথায় কান দিন। ঈশ্বর তো মানুষ নন যে, মিথ্যা বলবেন; মানুষ থেকে তাঁর জন্মও নয় যে, মন বদলাবেন। তিনি যা বলেন করেনও তা, তাঁর প্রতিজ্ঞা তিনি সর্বদা পূর্ণ করেন। আমি আশীর্বাদ করবার জন্য আদেশ পেয়েছি। তিনি ইস্রায়েলকে আশীর্বাদ করেছেন, আমি তা বদলাতে পারি না। যাকোবের মধ্যে তিনি কোন অন্যায় দেখেন নি, ইস্রায়েলের ভাগ্যে কোন দুঃখ রাখেন নি। তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদের সংগে আছেন, আর তাদের রাজার জয়ধ্বনি রয়েছে তাদের মধ্যে। মিসর থেকে তিনি তাদের বের করে এনেছেন, তিনি তাদের পক্ষে বুনো ষাঁড়ের শক্তির মত। যাকোবের উপর কোন যাদুবিদ্যা খাটবে না; ইস্রায়েলের উপর খাটবে না কোন মন্ত্রতন্ত্র। যাকোব, অর্থাৎ ইস্রায়েল সম্বন্ধে এ খন এই কথা বলা যায়, ‘ঈশ্বর যা করেছেন তা দেখ।’ এই সব লোক উঠে দাঁড়াবে সিংহীর মত করে, আর সিংহের মত করে নিজেদের তুলে ধরবে। শিকার করা প্রাণীর রক্ত ও মাংস খেয়ে না ফেলা পর্যন্ত তারা বিশ্রাম করবে না।” এই কথা শুনে বালাক বলে উঠলেন, “থামুন, আপনি তাদের অভিশাপও দেবেন না, আশীর্বাদও করবেন না।” উত্তরে বিলিয়ম বললেন, “আমি কি আপনাকে বলি নি যে, সদাপ্রভু যা বলবেন তা আমাকে করতেই হবে?” পরে বালাক বিলিয়মকে বললেন, “চলুন, আমি আপনাকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাই। হয়তো ঈশ্বর খুশী হয়ে সেখান থেকে আপনাকে আমার পক্ষ থেকে তাদের অভিশাপ দিতে দেবেন।” এই বলে বালাক তাঁকে পিয়োর পাহাড়ের উপরে নিয়ে গেলেন যেখান থেকে মরু-এলাকার যিশীমোন দেখা যায়। তখন বিলিয়ম বললেন, “এখানে আমার জন্য সাতটা বেদী তৈরী করুন আর সাতটা ষাঁড় ও সাতটা ভেড়া উৎসর্গের জন্য প্রস্তুত করুন।” বিলিয়মের কথামত বালাক তা-ই করলেন। তিনি প্রত্যেকটি বেদীর উপরে একটা করে ষাঁড় ও একটা করে ভেড়া উৎসর্গ করলেন। বিলিয়ম যখন দেখলেন যে, ইস্রায়েলীয়দের আশীর্বাদ করাই সদাপ্রভুর ইচ্ছা তখন তিনি অন্যান্য বারের মত যাদুমন্ত্রের সাহায্য নেবার চেষ্টা করলেন না। তিনি মরু-এলাকার দিকে তাঁর মুখ ফিরালেন। তিনি চেয়ে দেখলেন, ইস্রায়েলীয়দের বিভিন্ন গোষ্ঠীর তাম্বু পর পর খাটানো রয়েছে। তখন ঈশ্বরের আত্মা তাঁর উপর আসলেন, আর তিনি ঈশ্বরের দেওয়া এই কথা বলতে লাগলেন: “বিয়োরের ছেলে বিলিয়ম এই কথা বলছে, যার চোখ খোলা রয়েছে সে এই কথা বলছে, যে লোক ঈশ্বরের বাক্য শুনছে আর সর্বশক্তিমানের দেওয়া দর্শন দেখছে, যে মাটির উপর উবুড় হয়ে পড়েছে আর যার চোখের ঠুলি খুলে গেছে, সে এই কথা বলছে: হে যাকোব, তোমার তাম্বুগুলো কি সুন্দর! হে ইস্রায়েল, কি সুন্দর তোমার থাকবার জায়গা! সেগুলো পড়ে আছে উপত্যকার মত, পড়ে আছে নদীর ধারের বাগানের মত, সদাপ্রভুর লাগানো অগুরু গাছের মত, জলের ধারের এরস গাছের মত। ভারে বওয়া কলসী থেকে জল উপ্‌চে পড়বে, তাদের বীজ অনেক জল পেতে থাকবে। তাদের রাজা হবে অগাগের চেয়েও মহান, তাদের রাজ্য মহিমায় অনেক উঁচুতে থাকবে। ঈশ্বর মিসর থেকে তাদের বের করে এনেছেন, তিনিই তাদের পক্ষে বুনো ষাঁড়ের শক্তির মত। তাদের বিরুদ্ধে যে সব জাতি দাঁড়াবে তারা তাদের গিলে ফেলবে, তাদের হাড় টুকরা টুকরা করবে, তীর দিয়ে তাদের বিঁধে ফেলবে। সিংহ ও সিংহীর মত তারা গুঁড়ি মারবে আর শুয়ে পড়বে, তখন কে তাদের জাগাতে সাহস করবে? যারা তোমাদের আশীর্বাদ করে তাদের উপর তেমনি আশীর্বাদ পড়ুক; আর যারা অভিশাপ দেয়, তাদের উপর তেমনি অভিশাপ পড়ুক।” এই কথা শুনে বালাক বিলিয়মের উপর রেগে আগুন হয়ে উঠলেন। তিনি হাতে হাত চাপড়ে তাঁকে বললেন, “আমার শত্রুদের অভিশাপ দেবার জন্য আমি আপনাকে ডেকে এনেছিলাম কিন্তু এই নিয়ে তিনবার আপনি তাদের আশীর্বাদ করলেন। আপনি এক্ষুনি বাড়ী চলে যান। আমি আপনাকে অনেক পুরস্কার দেব বলেছিলাম কিন্তু সদাপ্রভু তা আপনাকে পেতে দিলেন না।” উত্তরে বিলিয়ম বালাককে বললেন, “আমি কি আপনার পাঠানো লোকদের বলি নি যে, যদিও বালাক সোনা-রূপায় ভরা রাজবাড়ীটা আমাকে দেন তবুও আমার নিজের ইচ্ছায় আমি ভাল-মন্দ কিছুই করতে পারব না বা সদাপ্রভুর আদেশের বাইরে যেতে পারব না, আর সদাপ্রভু যা বলবেন কেবল তা-ই আমাকে বলতে হবে? আমি এখন আমার লোকদের কাছে ফিরে যাচ্ছি, কিন্তু তার আগে আমি আপনাকে সাবধান করে বলে দিয়ে যাচ্ছি এই জাতি ভবিষ্যতে আপনার জাতির প্রতি কি করবে।” বিলিয়ম তখন ঈশ্বরের দেওয়া এই কথা বলতে লাগলেন: “বিয়োরের ছেলে বিলিয়িম এই কথা বলছে, যার চোখ খোলা রয়েছে সে এই কথা বলছে, যে লোক ঈশ্বরের বাক্য শুনছে আর মহান ঈশ্বরের কাছ থেকে জ্ঞান পাচ্ছে, যে সর্বশক্তিমানের দেওয়া দর্শন দেখছে, যে মাটির উপর উবুড় হয়ে পড়েছে, আর যার চোখের ঠুলি খুলে গেছে, সে এই কথা বলছে: ‘এখন না হলেও আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছি, যদিও তিনি কাছে নন তবুও তাঁর উপর আমার চোখ পড়ছে। একটা তারা উঠবে যাকোবের বংশে, একটা রাজদণ্ড উঠবে ইস্রায়েলের মধ্য থেকে। মোয়াবীয়দের আর শেথের সন্তানদের মাথা তিনি চুরমার করে দেবেন। শত্রুরা ইদোমকে, অর্থাৎ সেয়ীরকে দখল করবে, কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা বীরের মত কাজ করবে। যাকোবের বংশ থেকে একজন শাসনকর্তা আসবেন, শহরের বাকী বেঁচে থাকা ইদোমীয়দের তিনি ধ্বংস করে ফেলবেন।’ ” অমালেকীয়দের দেখে বিলিয়ম ঈশ্বরের দেওয়া এই কথা বলতে লাগলেন: “সব জাতির মধ্যে অমালেকীয়েরা ছিল প্রধান, কিন্তু ধ্বংসেই তার শেষ হবে।” তারপর বিলিয়ম কেনীয়দের দেখে ঈশ্বরের দেওয়া এই কথা বলতে লাগলেন: “তোমাদের থাকবার জায়গা চিরস্থায়ী; পাহাড়ে তোমাদের বাসা রয়েছে। কিন্তু কেনীয়েরা, শেষে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে; আসিরিয়া কতকাল তোমাদের আর বন্দী করে রাখবে?” তারপর বিলিয়ম ঈশ্বরের দেওয়া এই কথা বলতে লাগলেন: “হায়! ঈশ্বর যখন এই সব করবেন, তখন কি কেউ বেঁচে থাকতে পারবে? সাইপ্রাস দ্বীপের কিনারা থেকে জাহাজ এসে দমন করবে আসিরীয় আর এবরীয়দের; কিন্তু সাইপ্রাসের লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাবে।” এর পর বিলিয়ম উঠে বাড়ীর দিকে রওনা হলেন আর বালাকও তাঁর নিজের পথে চলে গেলেন। শিটীম শহরের কাছে থাকবার সময় ইস্রায়েলীয়েরা মোয়াবীয় স্ত্রীলোকদের সংগে ব্যভিচার শুরু করেছিল। এই সব স্ত্রীলোকেরা তাদের দেব-দেবীর উদ্দেশে পশুবলির উৎসবে ইস্রায়েলীয়দের নিমন্ত্রণ করেছিল, আর ইস্রায়েলীয়েরাও তাদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করে সেই সমস্ত দেবতাদের পূজা করেছিল। এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা পিয়োর পাহাড়ের বাল দেবতার পূজায় যোগ দিতে লাগল। তাতে তাদের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠল। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি সমস্ত ইস্রায়েলীয় নেতাদের ধরে মেরে ফেল এবং দিনের আলোতে আমার সামনে তাদের দেহগুলো ফেলে রাখ। এতে ইস্রায়েলীয়দের উপর থেকে আমার সেই ভীষণ ক্রোধ দূর হবে।” তখন মোশি ইস্রায়েলীয় বিচারকর্তাদের বললেন, “তোমাদের অধীন যে সব লোকেরা পিয়োরের বাল দেবতার পূজায় যোগ দিয়েছে তাদের প্রত্যেককেই তোমাদের মেরে ফেলতে হবে।” এতে মোশি ও ইস্রায়েলীয়েরা সবাই যখন মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে কান্নাকাটি করছিল সেই সময় একজন ইস্রায়েলীয় তাদের চোখের সামনে দিয়েই একজন মিদিয়নীয় স্ত্রীলোককে তার পরিবারের লোকদের মধ্যে নিয়ে গেল। কিন্তু যারা ঐ মড়কে মারা গেল তাদের সংখ্যা ছিল চব্বিশ হাজার। তখন সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “পুরোহিত হারোণের নাতি, অর্থাৎ ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস ইস্রায়েলীয়দের উপর থেকে আমার ক্রোধ দূর করেছে। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে সে আমার পাওনা ভক্তি সম্বন্ধে আমারই মত আগ্রহী। তাই আমার পাওনা ভক্তি সম্বন্ধে আমার গভীর আগ্রহ থাকলেও আমি তাদের শেষ করে দিই নি। সেইজন্য তুমি তাকে বল যে, আমি তার জন্য একটা মংগলের ব্যবস্থা স্থাপন করছি। সে তার ঈশ্বরের পাওনা ভক্তি সম্বন্ধে আগ্রহী হয়ে ইস্রায়েলীয়দের পাপ ঢাকা দেবার কাজ করেছে বলে আমি তার জন্য এমন ব্যবস্থা স্থাপন করছি যাতে পুরোহিতের পদ তার ও তার বংশধরদের মধ্যে চিরকাল ধরে থাকে।” যে ইস্রায়েলীয় লোকটিকে সেই মিদিয়নীয় স্ত্রীলোকের সংগে মেরে ফেলা হয়েছিল তার নাম ছিল সিম্রি। সে ছিল শালূর ছেলে এবং শিমিয়োন-গোষ্ঠীর একটি বংশের নেতা। যে মিদিয়নীয় স্ত্রীলোকটিকে মেরে ফেলা হয়েছিল তার নাম ছিল কস্‌বী। সে ছিল মিদিয়ন দেশের সূর নামে একটি বংশের নেতার মেয়ে। পরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “মিদিয়নীয়দের তোমরা শত্রু হিসাবে দেখবে এবং তাদের মেরে ফেলবে, কারণ পিয়োরের দেবতার পূজা এবং কস্‌বীর ব্যাপার নিয়ে কৌশল খাটিয়ে তোমাদের ভুল পথে নিয়ে গিয়ে তারা তোমাদের শত্রু হয়েছে। তুমি তো জান যে, এই কস্‌বী ছিল তাদের আত্মীয়া এবং একজন মিদিয়নীয় সর্দারের মেয়ে। পিয়োরের বাল দেবতার পূজার ফলে যখন তোমাদের মধ্যে মড়ক দেখা দিয়েছিল তখন ঐ স্ত্রীলোকটিকে মেরে ফেলা হয়েছিল।” মড়ক থেমে যাওয়ার পরে সদাপ্রভু মোশি ও পুরোহিত হারোণের ছেলে ইলিয়াসরকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যাদের বয়স বিশ বা তার বেশী, অর্থাৎ যারা যুদ্ধে যাবার মত হয়েছে, পরিবার অনুসারে তোমরা তাদের সংখ্যা গণনা কর।” কাজেই যিরীহোর উল্টা দিকে যর্দন নদীর ধারে মোয়াবের যে সমভূমি আছে সেখানে পুরোহিত ইলিয়াসর ও মোশি নেতাদের বললেন, “সদাপ্রভু মোশিকে যে আদেশ দিয়েছেন সেই অনুসারে তোমরা বিশ বছর বা তার বেশী বয়সের পুরুষ লোকদের গণনা কর।” যে ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছিল লোক গণনার সময় তাদের নাম লেখা হয়েছিল। ইস্রায়েলের প্রথম ছেলে রূবেণের বংশধর: এরা হল হনোক থেকে হনোকীয় বংশ, পল্লু থেকে পল্লুয়ীয় বংশ, হিষ্রোণ থেকে হিষ্রোণীয় বংশ এবং কর্মী থেকে কর্মীয় বংশ। এগুলো রূবেণ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল তেতাল্লিশ হাজার সাতশো ত্রিশ। পল্লুর ছেলের নাম ছিল ইলীয়াব, আর ইলীয়াবের ছেলেদের নাম হল নমূয়েল, দাথন ও অবীরাম। এই দাথন আর অবীরাম ছিল ইস্রায়েলীয়দের সেই দু’জন নেতা যারা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। আবার কোরহের দল যখন সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তখন এরাও সেই দলের মধ্যে ছিল। কোরহের সংগে এই দু’জনকেও পৃথিবী হাঁ করে গিলে ফেলেছিল; আর কোরহের দলের দু’শো পঞ্চাশ জন আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল। এগুলো ইস্রায়েলীয়দের জন্য সতর্ক করবার চিহ্ন হয়ে রইল। তবে কোরহের ছেলেরা সেই সময় মারা যায় নি। শিমিয়োনের বংশধর: এরা হল নমূয়েল থেকে নমূয়েলীয় বংশ, যামীন থেকে যামীনীয় বংশ, যাখীন থেকে যাখীনীয় বংশ, সেরহ থেকে সেরহীয় বংশ এবং শৌল থেকে শৌলীয় বংশ। এগুলো শিমিয়োন-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল বাইশ হাজার দু’শো। গাদের বংশধর: এরা হল সিফোন থেকে সিফোনীয় বংশ, হগি থেকে হগীয় বংশ, শূনি থেকে শূনীয় বংশ, ওষ্ণি থেকে ওষ্ণীয় বংশ, এরি থেকে এরীয় বংশ, আরোদ থেকে আরোদীয় বংশ এবং অরেলি থেকে অরেলীয় বংশ। এগুলো গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল চল্লিশ হাজার পাঁচশো। পেরসের বংশধরদের বংশ হল হিষ্রোণ থেকে হিষ্রোণীয় বংশ এবং হামূল থেকে হামূলীয় বংশ। এগুলো যিহূদা-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল ছিয়াত্তর হাজার পাঁচশো। ইষাখরের বংশধর: এরা হল তোলয় থেকে তোলয়ীয় বংশ, পূয় থেকে পূনীয় বংশ, যাশূব থেকে যাশূবীয় বংশ এবং শিম্রোণ থেকে শিম্রোণীয় বংশ। এগুলো ইষাখর-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল চৌষট্টি হাজার তিনশো। সবূলূনের বংশধর: এরা হল সেরদ থেকে সেরদীয় বংশ, এলোন থেকে এলোনীয় বংশ এবং যহলেল থেকে যহলেলীয় বংশ। এগুলো সবূলূন-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল ষাট হাজার পাঁচশো। মনঃশি আর ইফ্রয়িমের মধ্য দিয়ে যোষেফের বংশধর: মনঃশির বংশধরদের বংশ হল মাখীর থেকে মাখীরীয় বংশ এবং গিলিয়দ থেকে গিলিয়দীয় বংশ। গিলিয়দ ছিল মাখীরের ছেলে। গিলিয়দের বংশধরদের বংশ হল ঈয়েষর থেকে ঈয়েষরীয় বংশ, হেলক থেকে হেলকীয় বংশ, অস্রীয়েল থেকে অস্রীয়েলীয় বংশ, শেখম থেকে শেখমীয় বংশ, শিমীদা থেকে শিমীদায়ীয় বংশ এবং হেফর থেকে হেফরীয় বংশ। হেফরের ছেলে সলফাদের কোন ছেলে ছিল না, কেবল মেয়ে ছিল। সেই মেয়েদের নাম হল মহলা, নোয়া, হগ্‌লা, মিল্কা ও তির্সা। এগুলো মনঃশি-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল বাহান্ন হাজার সাতশো। ইফ্রয়িমের বংশধরদের বংশ হল শূথলহ থেকে শূথলহীয় বংশ, বেখর থেকে বেখরীয় বংশ এবং তহন থেকে তহনীয় বংশ। শূথলহের বংশধরদের বংশ হল এরণ থেকে এরণীয় বংশ। এগুলো ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকদের বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল বত্রিশ হাজার পাঁচশো। বংশ অনুসারে এরাই ছিল যোষেফের বংশধর। বিন্যামীনের বংশধর: এরা হল বেলা থেকে বেলায়ীয় বংশ, অস্‌বেল থেকে অস্‌বেলীয় বংশ, অহীরাম থেকে অহীরামীয় বংশ, শূফম থেকে শূফমীয় বংশ এবং হূফম থেকে হূফমীয় বংশ। অর্দ ও নামানের মধ্য দিয়ে বেলার বংশধরদের বংশ হল অর্দ থেকে অর্দীয় বংশ এবং নামান থেকে নামানীয় বংশ। এগুলো বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকদের বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল পয়তাল্লিশ হাজার ছ’শো। দানের বংশধর: এরা হল শূহম থেকে শূহমীয় বংশ। এরাই ছিল দান-গোষ্ঠীর লোক। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল চৌষট্টি হাজার চারশো। আশেরের বংশধর: এরা হল যিম্ন থেকে যিম্নীয় বংশ, যিস্‌বি থেকে যিস্‌বীয় বংশ এবং বরিয় থেকে বরিয়ীয় বংশ। বরিয়ের বংশধরদের বংশ হল হেবর থেকে হেবরীয় বংশ আর মল্কীয়েল থেকে মল্কীয়েলীয় বংশ। আশেরের মেয়ের নাম ছিল সারহ। এগুলো আশের-গোষ্ঠীর লোকদের বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা ছিল তিপ্পান্ন হাজার চারশো। নপ্তালির বংশধর: এরা হল যহসীয়েল থেকে যহসীয়েলীয় বংশ, গূনি থেকে গূনীয় বংশ, যেৎসর থেকে যেৎসরীয় বংশ এবং শিল্লেম থেকে শিল্লেমীয় বংশ। এগুলো নপ্তালি-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশ। এদের মধ্য থেকে গণনা করা লোকদের সংখ্যা হল পঁয়তাল্লিশ হাজার চারশো। গণনা করা ইস্রায়েলীয়দের মোট সংখ্যা হয়েছিল ছয় লক্ষ এক হাজার সাতশো ত্রিশ। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “গণনা করা লোকদের সংখ্যা অনুসারে দেশটা ভাগ করে দিতে হবে যাতে তারা তার অধিকারী হয়। যে গোষ্ঠীর লোকসংখ্যা বেশী সেই গোষ্ঠীকে বেশী এবং যে গোষ্ঠীর লোকসংখ্যা কম সেই গোষ্ঠীকে কম জায়গা দিতে হবে। প্রত্যেক গোষ্ঠী তার গণনা করা লোকদের সংখ্যা অনুসারে জায়গার অধিকারী হবে। কোথায় কোন্‌ গোষ্ঠী জায়গা পাবে তা গুলিবাঁট করে ঠিক করতে হবে। প্রত্যেক বংশের পাওনা অংশ তার গোষ্ঠীর নামে দেওয়া এলাকার মধ্যেই থাকবে। গোষ্ঠীর লোকসংখ্যা কম হোক বা বেশী হোক গুলিবাঁটের মধ্য দিয়েই জায়গা ঠিক করা হবে।” বংশ হিসাবে গণনা করা লেবীয়েরা হল গের্শোন থেকে গের্শোনীয় বংশ, কহাৎ থেকে কহাতীয় বংশ এবং মরারি থেকে মরারীয় বংশ। গের্শোন, কহাৎ ও মরারির বংশধরদের বংশ হল লিব্‌নীয় বংশ, হিব্রোণীয় বংশ, মহলীয় বংশ, মূশীয় বংশ এবং কোরহীয় বংশ। কহাতের এক বংশধরের নাম ছিল অম্রাম। অম্রামের স্ত্রীর নাম ছিল যোকেবদ। মিসর দেশে লেবি-গোষ্ঠীর মধ্যে তাঁর জন্ম হয়েছিল। তাঁর গর্ভে অম্রামের ছেলে হারোণ ও মোশি এবং তাঁদের বোন মরিয়মের জন্ম হয়েছিল। হারোণের ছেলেদের নাম ছিল নাদব, অবীহূ, ইলিয়াসর ও ঈথামর। সদাপ্রভুর কাছে নিয়মের বাইরের আগুনে ধূপ উৎসর্গ করতে গিয়ে নাদব আর অবীহূ মারা গিয়েছিলেন। এক মাস বা তার বেশী বয়সের লেবীয় পুরুষের সংখ্যা ছিল তেইশ হাজার। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে এদের কোন জায়গার অধিকার দেওয়া হয় নি বলে অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের সংগে এদের গোণা হয় নি। যিরীহোর উল্টাদিকে যর্দন নদীর ধারে মোয়াবের সমভূমিতে লোকগণনার সময় মোশি ও পুরোহিত ইলিয়াসর এই লোকদেরই গণনা করেছিলেন। কিন্তু মোশি ও পুরোহিত হারোণ যখন সিনাই মরু-এলাকায় ইস্রায়েলীয়দের গণনা করেছিলেন তখন এই সব লোকদের কেউ তাদের মধ্যে ছিল না। ঐ সব ইস্রায়েলীয়দের সম্বন্ধেই সদাপ্রভু বলেছিলেন যে, তারা নিশ্চয়ই মরু-এলাকায় মারা পড়বে। আর সত্যিই তাদের মধ্যে যিফূন্নির ছেলে কালেব ও নূনের ছেলে যিহোশূয় ছাড়া আর কেউই বেঁচে ছিল না। সলফাদের মেয়েরা ছিল যোষেফের ছেলে মনঃশির বংশের। মনঃশির ছেলের নাম মাখীর, মাখীরের ছেলের নাম গিলিয়দ, গিলিয়দের ছেলের নাম হেফর এবং হেফরের ছেলের নাম সলফাদ। সলফাদের মেয়েদের নাম হল মহলা, নোয়া, হগ্‌লা, মিল্কা ও তির্সা। এই মেয়েরা মিলন-তাম্বুতে ঢুকবার পথে গিয়ে মোশি আর পুরোহিত ইলিয়াসর এবং সমস্ত নেতা ও ইস্রায়েলীয়দের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “আমাদের বাবা মরু-এলাকায় মারা গেছেন। কোরহের যে সব লোকেরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে দল পাকিয়েছিল তিনি তাদের মধ্যে ছিলেন না; তিনি নিজের পাপেই মারা গেছেন। তাঁর কোন ছেলে নেই, কিন্তু তাই বলে কেন আমাদের বাবার নাম তাঁর বংশ থেকে মুছে যাবে? বাবার বংশের লোকদের সংগে আমাদের সম্পত্তির অধিকার দিন।” তখন মোশি তাদের এই ব্যাপারটা সদাপ্রভুর সামনে তুলে ধরলেন। এর উত্তরে সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “সলফাদের মেয়েরা ঠিক কথাই বলেছে। তাদের বাবার বংশের লোকদের সংগে তাদেরও নিশ্চয়ই সম্পত্তির অধিকার তোমাকে দিতে হবে। তারা যাতে তাদের বাবার সম্পত্তি পায় তা তোমাকে দেখতে হবে। তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল যদি কেউ ছেলে না রেখে মারা যায় তবে তার সম্পত্তির অধিকার তার মেয়ে পাবে। যদি তার মেয়ে না থাকে তবে তার ভাইয়েরা তার সম্পত্তির অধিকারী হবে। যদি তার ভাই না থাকে তবে সম্পত্তির অধিকার তার বাবার ভাইয়েরা পাবে। যদি বাবার কোন ভাই না থাকে তবে তার বংশের সবচেয়ে নিকট জনকে সেই সম্পত্তির অধিকার দিতে হবে। সেই সম্পত্তি সে-ই পাবে। মোশিকে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে এটা হবে ইস্রায়েলীয়দের আইনের একটা ধারা।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি অবারীম পাহাড়শ্রেণীর মধ্যেকার এই পাহাড়টায় উঠে যে দেশ আমি ইস্রায়েলীয়দের দিয়েছি সেটা দেখে নাও। তোমার ভাই হারোণ যেমন তার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেছে দেশটা দেখবার পর তোমাকেও তেমনি তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যেতে হবে। এর কারণ হল, সীন মরু-এলাকায় ইস্রায়েলীয়েরা যখন জলের জন্য বিদ্রোহ করেছিল তখন ইস্রায়েলীয়দের সামনে আমাকে পবিত্র বলে মান্য করবার আদেশ তোমরা অমান্য করেছিলে।” এটা সীন মরু-এলাকায় কাদেশের মরীবার জলের কথা। এর উত্তরে সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “নূনের ছেলে যিহোশূয়ের মধ্যে ঈশ্বরের আত্মা আছেন। তুমি তাকে এনে তার উপর তোমার হাত রাখ। তুমি তাকে পুরোহিত ইলিয়াসর ও ইস্রায়েলীয়দের সামনে উপস্থিত করে তাদের সামনেই তাকে কাজের ভার দাও। তোমাকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তার কিছুটা তুমি তার হাতে দাও যাতে ইস্রায়েলীয়েরা সবাই তাকে মেনে চলে। তাকে পুরোহিত ইলিয়াসরের কাছে যেতে হবে, আর ইলিয়াসর তার হয়ে ঊরীমের সাহায্যে সদাপ্রভুর নির্দেশ জেনে নেবে। ইলিয়াসরের আদেশেই তাকে এবং ইস্রায়েলীয়দের অন্য সবাইকে চলতে হবে।” মোশি ঈশ্বরের আদেশ মতই কাজ করলেন। তিনি যিহোশূয়কে পুরোহিত ইলিয়াসর ও ইস্রায়েলীয়দের সামনে উপস্থিত করলেন। তারপর সদাপ্রভুর নির্দেশ মত তাঁর উপর হাত রেখে তাঁকে কাজের ভার দিলেন। তিনি তাদের এই কথাও বলতে বললেন, “আগুনে-করা উৎসর্গের জন্য সদাপ্রভুর সামনে প্রত্যেক দিনের নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য তোমাদের এক বছরের দু’টা খুঁতহীন বাচ্চা-ভেড়া আনতে হবে। তার একটা বাচ্চা সকালে উৎসর্গ করবে ও অন্যটা করবে বেলা ডুবে গেলে পর। এর সংগে থাকবে শস্য-উৎসর্গের জন্য এক কেজি আটশো গ্রাম মিহি ময়দা। এই ময়দার সংগে প্রায় এক লিটার জলপাই-ছেঁচা তেল মিশিয়ে আনতে হবে। এটা সেই নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ যা সিনাই পাহাড়ে স্থাপন করা হয়েছিল। এটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা একটা উৎসর্গ যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। প্রত্যেকটা ভেড়ার সংগে প্রায় এক লিটার মদ দিয়ে ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। পবিত্র তাম্বুর উঠানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই ঢালন-উৎসর্গের জিনিস ঢেলে দিতে হবে। ভেড়ার অন্য বাচ্চাটা বেলা ডুবে গেলে পর উৎসর্গ করতে হবে। তার সংগে থাকবে সকালবেলার মত শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ। এটা একটা আগুনে-করা উৎসর্গ যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। “বিশ্রামবারে দু’টা এক বছরের খুঁতহীন ভেড়ার বাচ্চা উৎসর্গ করতে হবে। তার সংগে থাকবে তার সংগেকার ঢালন-উৎসর্গের জিনিস এবং শস্য-উৎসর্গের জন্য তেলের ময়ান দেওয়া তিন কেজি ছ’শো গ্রাম মিহি ময়দা। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ এবং তার সংগেকার ঢালন-উৎসর্গ ছাড়াও প্রত্যেক বিশ্রামবারে এই পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। “প্রত্যেক মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য দু’টা ষাঁড়, একটা ভেড়া এবং এক বছরের সাতটা বাচ্চা-ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে। সেগুলোর প্রত্যেকটাকেই খুঁতহীন হতে হবে। ঢালন-উৎসর্গের জন্য প্রত্যেকটা ষাঁড়ের সংগে পৌনে দুই লিটার আংগুর-রস দিতে হবে; ভেড়াটার সংগে দিতে হবে সোয়া লিটার এবং প্রত্যেকটা বাচ্চা-ভেড়ার সংগে দিতে হবে প্রায় এক লিটার। এটা হল মাসিক পোড়ানো-উৎসর্গ। বছরের প্রত্যেক মাসে এটা করতে হবে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ এবং তার সংগেকার ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া একটা পাঁঠা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। “বছরের প্রথম মাসের চৌদ্দ তারিখে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্ব পালন করতে হবে। সেই মাসের পনেরো তারিখে একটা উৎসব করতে হবে। তখন সাত দিন ধরে খামিহীন রুটি খেতে হবে। প্রথম দিনে একটি পবিত্র মিলন-সভা করতে হবে এবং সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। সেই দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ হিসাবে দু’টা ষাঁড়, একটা ভেড়া এবং সাতটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। সেগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। এগুলোর সংগে তোমাদের পাপ ঢাকা দেবার উদ্দেশ্যে পাপ-উৎসর্গের জন্য একটি পাঁঠাও আনতে হবে। সকালবেলার নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ছাড়া এই সব উৎসর্গও করতে হবে। এইভাবে সাত দিনের প্রত্যেক দিন সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধ হিসাবে এই সব খাবার দিয়ে আগুনে-করা উৎসর্গ করতে হবে। নিয়মিত যে পোড়ানো-উৎসর্গ এবং তার সংগেকার ঢালন-উৎসর্গ রয়েছে তার উপর এটাও করতে হবে। সপ্তম দিনে একটি পবিত্র মিলন-সভা করবে এবং সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। “সাত সপ্তাহের পর্বের দিনে, অর্থাৎ প্রথমে তোলা ফসল উৎসর্গ করবার দিনে যখন তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নতুন ফসল উৎসর্গ করবে সেই দিন তোমাদের একটি পবিত্র মিলন-সভা করতে হবে এবং সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। সেই দিন সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধ হিসাবে তোমাদের দু’টা ষাঁড়, একটা ভেড়া এবং সাতটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া দিয়ে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। পাপ ঢাকা দেবার জন্য এগুলোর সংগে তোমাদের একটা পাঁঠাও আনতে হবে। এই সব উৎসর্গ এবং তার সংগেকার ঢালন-উৎসর্গের সংগে নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করতে হবে। পশুগুলোর গায়ে যেন কোন খুঁত না থাকে। “সপ্তম মাসের পয়লা তারিখে তোমরা একটি পবিত্র মিলন-সভা করবে। সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। ঐ দিনটা হবে তোমাদের শিংগা বাজাবার দিন। সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধ হিসাবে তোমরা সেই দিন একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া এবং সাতটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া দিয়ে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। এগুলো হতে হবে খুঁতহীন। পাপ ঢাকা দেবার উদ্দেশ্যে পাপ-উৎসর্গের জন্য তোমাদের একটা পাঁঠাও আনতে হবে। প্রত্যেক মাসের ও প্রত্যেক দিনের নির্দিষ্ট করা পোড়ানো-উৎসর্গ এবং তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া এই সব উৎসর্গও করতে হবে। এগুলো সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গ যার গন্ধে সদাপ্রভু খুশী হন। “এই সপ্তম মাসের দশ তারিখেও একটি পবিত্র মিলন-সভা করতে হবে। এই দিনে তোমরা প্রত্যেকে নিজের অন্তর ভেংগেচুরে কষ্ট স্বীকার করবে এবং সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখবে। সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধ হিসাবে তোমাদের একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া এবং সাতটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া দিয়ে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। তার প্রত্যেকটাকেই খুঁতহীন হতে হবে। পাপ ঢাকা দেবার পাপ-উৎসর্গ ও নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গের সংগেকার শস্য-উৎসর্গ এবং এগুলোর সংগেকার ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া আরও একটি পাপ-উৎসর্গের জন্য একটি পাঁঠাও আনতে হবে। “সপ্তম মাসের পনেরো তারিখেও একটি পবিত্র মিলন-সভা করতে হবে এবং সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে সাত দিন ধরে উৎসব পালন করবে। সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধ হিসাবে একটা আগুনে-করা উৎসর্গ করতে হবে। এর জন্য তেরটা ষাঁড়, দু’টা ভেড়া এবং চৌদ্দটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া দিয়ে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠাও আনতে হবে। “উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বারোটা ষাঁড়, দু’টা ভেড়া এবং চৌদ্দটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। এই সব ষাঁড়, ভেড়া ও বাচ্চা-ভেড়ার সংখ্যা যত হবে তাদের সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের সংখ্যাও তত হবে; আর তা হবে আগের দেওয়া নিয়ম অনুসারে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ছাড়া একটা পাঁঠা দিয়ে পাপ উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে এবং এগুলোর সংগে দিতে হবে তাদের সংগেকার ঢালন-উৎসর্গ। “উৎসবের তৃতীয় দিনে এগারোটা ষাঁড়, দু’টা ভেড়া এবং চৌদ্দটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। এই সব ষাঁড়, ভেড়া ও বাচ্চা-ভেড়ার সংখ্যা যত হবে তাদের সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের সংখ্যাও তত হবে; আর তা হবে আগের দেওয়া নিয়ম অনুসারে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া একটা পাঁঠা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করতে হবে। “পর্বের চতুর্থ দিনে দশটা ষাঁড়, দু’টা ভেড়া এবং চৌদ্দটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। এই সব ষাঁড়, ভেড়া ও বাচ্চা-ভেড়ার সংখ্যা যত হবে তাদের সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের সংখ্যাও তত হবে; আর তা হবে আগের দেওয়া নিয়ম অনুসারে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া একটা পাঁঠা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করতে হবে। “উৎসবের পঞ্চম দিনে নয়টা ষাঁড়, দু’টা ভেড়া এবং চৌদ্দটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। এই সব ষাঁড়, ভেড়া ও বাচ্চা-ভেড়ার সংখ্যা যত হবে তাদের সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের সংখ্যাও তত হবে; আর তা হবে আগের দেওয়া নিয়ম অনুসারে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া একটা পাঁঠা দিয়ে পাপ উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করতে হবে। “উৎসবের ষষ্ঠ দিনে আটটা ষাঁড়, দু’টা ভেড়া এবং চৌদ্দটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। এই সব ষাঁড়, ভেড়া ও বাচ্চা-ভেড়ার সংখ্যা যত হবে তাদের সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের সংখ্যাও তত হবে; আর তা হবে আগের দেওয়া নিয়ম অনুসারে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া একটা পাঁঠা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করতে হবে। “উৎসবের সপ্তম দিনে সাতটা ষাঁড়, দু’টা ভেড়া এবং চৌদ্দটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। এই সব ষাঁড়, ভেড়া ও বাচ্চা-ভেড়ার সংখ্যা যত হবে তাদের সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের সংখ্যাও তত হবে; আর তা হবে আগের দেওয়া নিয়ম অনুসারে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া একটা পাঁঠা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করতে হবে। “অষ্টম দিনে শেষ দিনের বিশেষ সভা করতে হবে এবং সেই দিন তোমাদের কোন পরিশ্রমের কাজ করা চলবে না। সদাপ্রভুকে খুশী করবার গন্ধ হিসাবে তাঁর উদ্দেশে একটি আগুনে-করা উৎসর্গ করতে হবে। এর জন্য একটা ষাঁড়, একটা ভেড়া এবং সাতটা এক বছরের বাচ্চা-ভেড়া দিয়ে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। এগুলোর প্রত্যেকটাকে খুঁতহীন হতে হবে। ষাঁড়, ভেড়া ও বাচ্চা-ভেড়ার সংখ্যা যত হবে তাদের সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের সংখ্যাও তত হবে; আর তা হবে আগের দেওয়া নিয়ম অনুসারে। নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গ ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গ ছাড়া একটা পাঁঠা দিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠানও করতে হবে। “মানত পূরণ এবং নিজের ইচ্ছায় করা উৎসর্গ হিসাবে তোমরা যে সমস্ত পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ, ঢালন-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে সেগুলো ছাড়াও প্রত্যেকটা নির্দিষ্ট পর্বের সময়ে তার উপযুক্ত উৎসর্গ সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমাদের করতে হবে।” সদাপ্রভু যে সমস্ত আদেশ মোশিকে দিয়েছিলেন তা তিনি ইস্রায়েলীয়দের জানালেন। কিন্তু সেই কথা শুনবার সংগে সংগে যদি তার বাবা তাকে বারণ করে তবে তার মানত বা যে সব প্রতিজ্ঞার দ্বারা সে নিজেকে বেঁধেছে তা বাতিল হয়ে যাবে। তার বাবা বারণ করেছে বলে সদাপ্রভু তার মানত বা প্রতিজ্ঞা ভাংগা ক্ষমা করবেন। কিন্তু সেই কথা শুনবার সংগে সংগে যদি তার স্বামী তাকে বারণ করে তবে তার সেই মানত বা চিন্তা-ভাবনা না করে করা প্রতিজ্ঞার বাঁধন নাকচ হয়ে যাবে আর সদাপ্রভুও তার মানত বা প্রতিজ্ঞা ভাংগা ক্ষমা করবেন। “বিধবা কিম্বা স্বামী যাকে ছেড়ে দিয়েছে এমন কোন স্ত্রীলোক যদি কোন মানত করে কিম্বা প্রতিজ্ঞার দ্বারা নিজেকে বাঁধে তবে তাকে তা পূরণ করতেই হবে। কিন্তু যদি তার স্বামী সেই কথা শুনবার সংগে সংগে তা নাকচ করে দেয় তবে তার সেই মানত কিম্বা প্রতিজ্ঞা বাতিল হয়ে যাবে। তার স্বামী সেই সব নাকচ করেছে বলে সদাপ্রভু তার মানত বা প্রতিজ্ঞা ভাংগা ক্ষমা করবেন। স্ত্রী যে মানত করবে কিম্বা শপথ করে কোন কিছু ত্যাগ করবার প্রতিজ্ঞা করবে তা মেনে নেওয়া বা নাকচ করে দেবার অধিকার স্বামীর থাকবে। কিন্তু যদি তার স্বামী দিনের পর দিন সেই বিষয়ে কিছু না বলে চুপ করে থাকে তবে তাতে তার স্ত্রীর মানত বা প্রতিজ্ঞার বাঁধন পাকা হয়ে যায়। সব কথা শুনবার সংগে সংগে তার এই যে চুপ করে থাকা তা তার স্ত্রীর মানত বা প্রতিজ্ঞাকে পাকা করে দেয়। কিন্তু সব কথা শুনবার পরে সেই দিনই যেতে দিয়ে যদি স্বামী সেই সব নাকচ না করে তবে স্ত্রীর তা পূরণ না করবার দোষ গিয়ে পড়বে তার স্বামীর উপর।” এই সব ব্যাপারে স্বামী ও স্ত্রীর সমপর্ক এবং বাবা ও বাবার বাড়ীতে থাকা মেয়ের সমপর্ক সম্বন্ধে সদাপ্রভু মোশিকে এই সমস্ত নিয়ম দিয়েছিলেন। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ থেকে মিদিয়-নীয়দের অন্যায়ের জন্য তাদের পাওনা শাস্তি দাও। তারপর তোমাকে তোমার পূর্বপরুষদের কাছে চলে যেতে হবে।” তখন মোশি ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “মিদিয়নীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে যুদ্ধের সাজে সাজিয়ে নাও, যাতে তারা সদাপ্রভুর হয়ে মিদিয়নীয়দের পাওনা শাস্তি দিতে পারে। ইস্রায়েলীয়দের প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে এক হাজার করে লোক নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়ে দাও।” কাজেই ইস্রায়েলীয়দের বারোটা গোষ্ঠী থেকে এক হাজার করে বারো হাজার লোককে যুুদ্ধের সাজে সাজানো হল। মোশি প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে এক হাজার করে লোক নিয়ে তাদের যুদ্ধে পাঠিয়ে দিলেন। তাদের সংগে গেলেন পুরোহিত ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস। সংকেত দেবার তূরীগুলো এবং কয়েকটি পবিত্র জিনিস তিনি সংগে নিলেন। মোশিকে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ মতই তারা মিদিয়নীয়দের সংগে যুদ্ধ করে সমস্ত পুরুষ লোকদের মেরে ফেলল। অন্যান্যদের সংগে মিদিয়নীয়দের পাঁচজন রাজাকেও তারা মেরে ফেলল। তাঁদের নাম হল ইবি, রেকম, সূর, হূর ও রেবা। ইস্রায়েলীয়েরা বিয়োরের ছেলে বিলিয়মকেও মেরে ফেলল। তারা মিদিয়নীয়দের স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়েদের বন্দী করল আর তাদের সমস্ত গরু, ছাগল ও ভেড়ার পাল এবং জিনিসপত্র লুট করে নিল। মিদিয়নীয়েরা যে সব শহরে বাস করত সেই সব শহরগুলো এবং শহরের বাইরে তাম্বু খাটিয়ে বাস করবার জায়গাগুলো তারা পুড়িয়ে দিল। মোশি, পুরোহিত ইলিয়াসর এবং ইস্রায়েলীয়দের নেতারা সবাই ছাউনির বাইরে তাদের সংগে দেখা করতে গেলেন। পিয়োর পাহাড়ের ঘটনায় এরাই তো বিলিয়মের পরামর্শে ইস্রায়েলীয়দের সদাপ্রভুর কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যার ফলে সদাপ্রভুর লোকদের মধ্যে মড়ক দেখা দিয়েছিল। এখন তোমরা এই সব ছেলেদের এবং যারা কুমারী নয় এমন সব স্ত্রীলোকদের মেরে ফেল; কিন্তু যারা কুমারী তাদের তোমরা নিজেদের জন্য বাঁচিয়ে রাখ। “তোমাদের মধ্যে যারা কাউকে মেরেছে কিম্বা মেরে ফেলা কাউকে ছুঁয়েছে তাদের সাত দিন পর্যন্ত ছাউনির বাইরে থাকতে হবে। তৃতীয় এবং সপ্তম দিনে তোমাদের নিজেদের ও বন্দী করে আনা লোকদের শুচি করে নিতে হবে। সমস্ত কাপড়-চোপড় এবং চামড়া, কাঠ ও ছাগলের লোমের তৈরী সমস্ত জিনিসপত্র তোমরা শুচি করে নেবে।” যে সব সৈন্যেরা যুদ্ধে গিয়েছিল পুরোহিত ইলিয়াসর তাদের বললেন, “এই হল মোশির মধ্য দিয়ে দেওয়া সদাপ্রভুর আইন-কানুনের একটা ধারা। সপ্তম দিনে তোমরা তোমাদের কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলবে আর তখন তোমরা শুচি হবে এবং ছাউনির মধ্যে যেতে পারবে।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “পুরোহিত ইলিয়াসর, ইস্রায়েলীয়দের বংশের নেতারা এবং তুমি বন্দী করে আনা সমস্ত মানুষ ও পশুদের সংখ্যা গণনা কর। লুটের সব কিছু দু’ভাগ করে এক ভাগ দাও সৈন্যদের যারা যুদ্ধ করেছে আর অন্য ভাগ দাও সমাজের বাদবাকী লোকদের। সেই সব সৈন্যদের ভাগে যত মানুষ, গরু, গাধা, ভেড়া ও ছাগল পড়বে তার প্রতি পাঁচশো থেকে একটা করে সদাপ্রভুর কর্‌ হিসাবে আলাদা করে রাখতে হবে। সৈন্যদের ভাগের এই কর্‌ তুমি সদাপ্রভুর পাওনা অংশ হিসাবে পুরোহিত ইলিয়াসরের হাতে দেবে। ইস্রায়েলীয়দের ভাগে যে সমস্ত মানুষ, গরু, গাধা, ভেড়া, ছাগল বা অন্য যে কোন পশু পড়বে তার প্রতি পঞ্চাশটা থেকে একটা করে আলাদা করে রাখবে। সেগুলো তুমি লেবীয়দের হাতে দেবে যাদের উপর আবাস-তাম্বুর দেখাশোনার ভার রয়েছে।” সদাপ্রভু মোশিকে যে সব আদেশ দিলেন সেইমতই তিনি ও পুরোহিত ইলিয়াসর সব কিছু করলেন। সৈন্যদের আনা লুট থেকে যা বাকী রইল তা হল ছয় লক্ষ পঁচাত্তর হাজার ভেড়া ও ছাগল, সদাপ্রভু মোশিকে যে আদেশ দিয়েছিলেন সেইমতই তিনি সদাপ্রভুর এই পাওনা কর্‌ নিয়ে পুরোহিত ইলিয়াসরের হাতে দিলেন। সেই ইস্রায়েলীয়েরা যে অর্ধেক ভাগ পেল তার মধ্য থেকে মোশি প্রতি পঞ্চাশজন কুমারী মেয়ে থেকে একজন করে এবং প্রতি পঞ্চাশটা পশু থেকে একটা করে নিয়ে সদাপ্রভুর আদেশ মত লেবীয়দের দিলেন, যাদের উপর সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বুর দেখাশোনার ভার ছিল। তাই আমরা প্রত্যেকে যে সমস্ত সোনার বাজু, বালা, সীলমোহর করবার আংটি, কানের দুল ও গলার হার পেয়েছি, আমাদের পাপ ঢাকা দেবার উদ্দেশ্যে আমরা সেগুলো সদাপ্রভুর কাছে উৎসর্গ করতে নিয়ে এসেছি।” তখন মোশি ও পুরোহিত ইলিয়াসর তাদের কাছ থেকে সেই সব সোনার গহনাগুলো নিলেন। মোশি ও ইলিয়াসর হাজারপতি ও শতপতিদের যে সব সোনা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন তার ওজন হল প্রায় একশো আটষট্টি কেজি। এছাড়া সৈন্যেরা সকলেই নিজের নিজের জন্য জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে এসেছিল। সদাপ্রভু যাতে ইস্রায়েলীয়দের প্রতি খেয়াল রাখেন সেইজন্য মোশি ও পুরোহিত ইলিয়াসর হাজারপতি ও শতপতিদের কাছ থেকে সোনার জিনিসগুলো নিয়ে মিলন-তাম্বুতে রাখলেন। রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের গরু, ছাগল ও ভেড়ার বড় বড় পাল ছিল। তারা দেখতে পেল যাসের ও গিলিয়দ দেশ পশু পালন করবার পক্ষে খুব উপযুক্ত জায়গা। তা দেখে তারা মোশি ও পুরোহিত ইলিয়াসর এবং ইস্রায়েলীয় সমাজের নেতাদের গিয়ে বলল, যদি আমাদের উপর আপনার দয়া হয় তবে আপনার এই দাসদের এই জায়গাগুলো সম্পত্তি হিসাবে দিন। যর্দন নদীর ওপারে আমাদের নিয়ে যাবেন না।” এতে মোশি গাদ ও রূবেণ-গোষ্ঠীর লোকদের বললেন, “তোমাদের ভাইয়েরা যুদ্ধ করতে যাবে আর তোমরা এখানে বসে থাকবে? সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের যে দেশ দিয়েছেন তোমরা তাদের সেখানে যাবার উৎসাহ ভেংগে দিচ্ছ কেন? দেশটা দেখে আসবার জন্য যখন আমি তোমাদের বাপ-দাদাদের কাদেশ-বর্ণেয় থেকে পাঠিয়েছিলাম তখন তারাও ঠিক এই রকমই করেছিল। ইষ্কোল উপত্যকা পর্যন্ত গিয়ে দেশটা দেখে আসবার পর তারা সদাপ্রভুর দেওয়া দেশে ইস্রায়েলীয়দের যাওয়ার উৎসাহ ভেংগে দিয়েছিল। সেই দিন সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠেছিলেন এবং তিনি শপথ করে বলেছিলেন, ‘যে দেশ দেবার কথা আমি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে শপথ করে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসা বিশ বা তার বেশী বয়সের লোকদের মধ্যে কেউ তা দেখতে পাবে না, কারণ তারা আমার কথা পুরোপুরি মেনে চলে নি। একমাত্র কনিসীয় যিফূন্নির ছেলে কালেব ও নূনের ছেলে যিহোশূয় সেই দেশ দেখতে পাবে, কারণ তারাই আমার কথা পুরোপুরি মেনে চলেছে।’ ইস্রায়েলীয়দের প্রতি সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠেছিলেন এবং তাঁর চোখে মন্দ কাজ করা সেই সব লোকগুলো শেষ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত চল্লিশ বছর ধরে তিনি তাদের মরু-এলাকার মধ্যে নানা জায়গায় ঘুরিয়েছেন। “আর তোমরা, পাপীরা, তোমাদের বাপ-দাদাদের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছ আর ইস্রায়েলীয়দের প্রতি সদাপ্রভুর ক্রোধের আগুন আরও বাড়িয়ে তুলছ। তোমরা যদি তাঁর কথামত না চল, তবে তিনি এবারও এই সব লোকদের মরু-এলাকাতেই ফেলে রাখবেন, আর তোমরা হবে তাদের ধ্বংসের কারণ।” তখন তারা মোশির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, “আমরা কেবল এখানে আমাদের পশুপালের ঘর ও আমাদের পরিবারের জন্য শহর তৈরী করতে চাইছি। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের তাদের নিজেদের জায়গায় পৌঁছিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা যুুদ্ধের সাজে তাদের আগে আগে যেতে প্রস্তুত আছি। এর মধ্যে আমাদের পরিবার দেয়াল-ঘেরা শহরে বাস করবে যাতে এই সব দেশের লোকদের হাত থেকে তারা রক্ষা পায়। ইস্রায়েলীয়েরা প্রত্যেকে তার সম্পত্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের ঘরে ফিরে আসব না। যর্দন নদীর ওপারে ইস্রায়েলীয়দের সংগে আমরা কোন সম্পত্তি নেব না, কারণ নদীর পূর্ব পারেই তো আমরা তা পেয়ে যাচ্ছি।” তবে দেশটা সদাপ্রভুর অধীনে আসলে পর তোমরা ফিরে আসতে পারবে এবং সদাপ্রভু ও ইস্রায়েল জাতির প্রতি তোমাদের কর্তব্য থেকে রেহাই পাবে; আর তখন সদাপ্রভুর ইচ্ছায় এই জায়গাটা তোমাদের সম্পত্তি হবে। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তবে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তোমরা পাপ করবে। তোমরা এটা জেনে রেখো যে, তোমাদের পাপ তোমাদের রেহাই দেবে না। তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য শহর তৈরী করতে পার এবং ছাগল-ভেড়ার ঘরও বানাতে পার, কিন্তু যে কাজ করবার প্রতিজ্ঞা তোমরা করেছ তা তোমাদের করতে হবে।” তখন গাদ ও রূবেণ-গোষ্ঠীর লোকেরা মোশিকে বলল, “আপনি আমাদের মনিব, আপনি আমাদের যে আদেশ দিলেন আমরা, আপনার দাসেরা, তা পালন করব। আমাদের ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, ছাগল-ভেড়া ও গরুর পাল ওখানে গিলিয়দের শহরগুলোতেই থাকবে। কিন্তু আমরা আমাদের মনিবের কথামত যুদ্ধ করবার জন্য যুদ্ধের সাজে সদাপ্রভুর সামনে নদী পার হয়ে যাব।” তখন মোশি এই লোকদের সম্বন্ধে পুরোহিত ইলিয়াসর, নূনের ছেলে যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলীয় গোষ্ঠীর ভিন্ন ভিন্ন বংশের নেতাদের আদেশ দিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “গাদ ও রূবেণ-গোষ্ঠীর পুরুষেরা যদি সবাই যুদ্ধের সাজে সদাপ্রভুর সামনে যুদ্ধ করবার জন্য তোমাদের সংগে যর্দন নদী পার হয়ে যায়, তবে যখন দেশটা তোমাদের অধীনে আসবে তখন তোমরা সম্পত্তি হিসাবে গিলিয়দ দেশটা তাদের দিয়ে দেবে। কিন্তু যদি তারা তা না করে তবে কনান দেশেই তোমাদের সংগে তাদের সম্পত্তি নিতে হবে।” এই কথা শুনে গাদ ও রূবেণ-গোষ্ঠীর লোকেরা বলল, “সদাপ্রভু যা বলেছেন আপনার দাসেরা তা করবে। আমরা সদাপ্রভুর সামনে যুদ্ধের সাজ পরে নদী পার হয়ে কনান দেশে যাব, কিন্তু নদীর এই পারেই থাকবে আমাদের সম্পত্তি।” মোশি তখন ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের রাজ্য ও বাশনের রাজা ওগের রাজ্য গাদ ও রূবেণ-গোষ্ঠীর লোকদের এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের ভাগে রাখলেন। এই মনঃশি যোষেফের ছেলে। গ্রাম ও শহর এবং সেগুলোর চারদিকের জায়গা সুদ্ধ সমস্ত দেশটাই তিনি তাদের জন্য রাখলেন। গাদ-গোষ্ঠীর লোকেরা দীবোন, অটারোৎ, অরোয়ের, অট্‌রোৎ-শোফন, যাসের, যগ্‌বিহ, বৈৎ-নিম্রা ও বৈৎ-হারণ নামে কতগুলো গ্রাম ও শহর দেয়াল দিয়ে ঘিরে ঠিক করে নিল আর তাদের গরু-ভেড়ার ঘরও তৈরী করল। মনঃশির ছেলে মাখীরের বংশধরেরা গিলিয়দে গিয়ে দেশটা আগেই দখল করে নিয়েছিল এবং যে সব ইমোরীয়েরা সেখানে ছিল তাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। সেইজন্য মোশি মনঃশির বংশধর মাখীরীয়দের ভাগে গিলিয়দ এলাকাটা রাখলেন। তারা সেখানে থাকতে লাগল। যায়ীর নামে মনঃশির এক বংশধর গিয়ে ইমোরীয়দের গ্রামগুলো দখল করে নিয়েছিল এবং সেগুলোর নাম দিয়েছিল হব্বোৎ-যায়ীর। নোবহ গিয়ে কনাৎ ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো দখল করে নিয়ে নিজের নাম অনুসারে জায়গাটার নাম দিয়েছিল নোবহ। মোশি ও হারোণের পরিচালনায় ইস্রায়েলীয়েরা সৈন্যদলের মত করে মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পর ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে চলছিল। যাত্রাপথে তারা যে সমস্ত জায়গায় থেমেছিল সদাপ্রভুর আদেশে মোশি তা লিখে রাখলেন। তারা যে সমস্ত জায়গায় থেমেছিল তা এই: উদ্ধার-পর্বের পরের দিন বছরের প্রথম মাসের পনেরো তারিখে ইস্রায়েলীয়েরা রামিষেষ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। সমস্ত মিসরীয়দের চোখের সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে তারা বের হয়ে গিয়েছিল। মিসরীয়েরা তখন তাদের প্রথম ছেলেদের কবর দিচ্ছিল। সদাপ্রভু তাদের প্রথম সন্তানদের মেরে ফেলেছিলেন এবং তাদের দেব-দেবতাদের শাস্তি দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলীয়েরা রামিষেষ ছেড়ে এসে সুক্কোতে ছাউনি ফেলেছিল। তারপর তারা সুক্কোৎ ছেড়ে গিয়ে মরু-এলাকার ধারে এথম বলে একটি জায়গায় তাদের ছাউনি ফেলেছিল। এথম ছেড়ে তারা বাল-সফোনের সামনে পী-হহীরোতে ফিরে এসে মিগ্‌দোলের কাছে ছাউনি ফেলেছিল। তারা পী-হহীরোৎ ছেড়ে সাগর পার হয়ে এথম মরু-এলাকাতে গিয়ে উঠেছিল এবং তার মধ্য দিয়ে তিন দিনের পথ গিয়ে মারাতে ছাউনি ফেলেছিল। মারা ছেড়ে তারা এলীমে গিয়ে ছাউনি ফেলেছিল। সেখানে বারোটা জলের ফোয়ারা ও সত্তরটা খেজুর গাছ ছিল। পরে তারা এলীম ছেড়ে সুয়েজ উপসাগরের ধারে গিয়ে ছাউনি ফেলেছিল। তারপর তারা সুয়েজ উপসাগরের কাছ থেকে গিয়ে সিন মরু-এলাকাতে ছাউনি ফেলেছিল। সিন মরু-এলাকা ছেড়ে তারা দপ্‌কাতে গিয়ে ছাউনি ফেলেছিল। দপ্‌কা ছেড়ে তারা আলূশে গিয়ে ছাউনি ফেলেছিল। আলূশ ছেড়ে তারা রফীদীমে গিয়ে ছাউনি ফেলেছিল। এখানে লোকদের জন্য কোন খাবার জল ছিল না। এর পর তারা সীন মরু-এলাকার মধ্যে কাদেশে গিয়ে ছাউনি ফেলেছিল। কাদেশ ছেড়ে তারা ইদোমের সীমানার কাছে হোর পাহাড়ে গিয়ে ছাউনি ফেলেছিল। ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পর চল্লিশ বছরের পঞ্চম মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর আদেশে পুরোহিত হারোণ হোর পাহাড়ের উপরে উঠে গিয়েছিলেন এবং সেখানে মারা গিয়েছিলেন। হোর পাহাড়ের উপর হারোণের মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল একশো তেইশ বছর। এর মধ্যে অরাদের কনানীয় রাজা ইস্রায়েলীয়দের আসবার খবর শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি কনান দেশের নেগেভে বাস করতেন। তারপর তারা অবারীম পাহাড়শ্রেণী ছেড়ে যিরীহোর উল্টাদিকে যর্দন নদীর ধারে মোয়াবের সমভূমিতে গিয়ে ছাউনি ফেলেছিল। এই ছাউনি তারা ফেলেছিল যর্দন নদীর কিনারা ধরে মোয়াবের সমভূমিতে বৈৎ-যিশীমোৎ থেকে আবেল-শিটীম শহর পর্যন্ত। “তারপর তোমরা সেই দেশটা দখল করে নিয়ে সেখানে বাস করবে কারণ দখল করবার জন্যই দেশটা আমি তোমাদের দিয়েছি। তোমরা গুলিবাঁট করে বিভিন্ন বংশের জায়গা ঠিক করে নেবে। বংশের লোকসংখ্যা বেশী হলে বেশী জায়গা এবং কম হলে কম জায়গা দিতে হবে। গুলিবাঁটে যে বংশের জায়গা যেখানে পড়বে সেই বংশকে সেখানেই জায়গা নিতে হবে। গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশগুলো গোষ্ঠীর এলাকার মধ্যেই জায়গা পাবে। “কিন্তু তোমরা যদি ঐ দেশের বাসিন্দাদের দূর করে না দাও তবে যাদের তোমরা থাকতে দেবে তারা তোমাদের চোখে বড়শীর মত এবং পাঁজরে কাঁটার মত হবে। তোমরা ঐ দেশে বাস করবার সময় তারা তোমাদের কষ্ট দেবে। তখন আমি তোমাদের প্রতি তা-ই করব যা আমি তাদের প্রতি করব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম।” তারপর তা সেখান থেকে ঘুরে মিসর নামে যে শুকনা নদী আছে তা ধরে ভূমধ্য সাগরে গিয়ে শেষ হবে। “তোমাদের দেশের পশ্চিম দিকের সীমানা হবে ভূমধ্য সাগর। এটাই হবে তোমাদের পশ্চিম দিকের শেষ সীমা। “পূর্ব দিকের সীমানার জন্য তোমরা হৎসর-ঐনন থেকে শফাম পর্যন্ত একটা সীমারেখা ঠিক করে নেবে। এই সীমারেখা শফাম থেকে ঐনের পূর্ব দিকের রিব্লা পর্যন্ত নেমে যাবে এবং কিন্নেরৎ সাগরের ঢালু জায়গাগুলো ধরে চলতে থাকবে। তারপর এই সীমারেখা যর্দন নদী ধরে মরু-সাগরে গিয়ে শেষ হবে। “চারদিকের এই সব সীমারেখার ভিতরে এটাই হবে তোমাদের দেশ।” এর পর মোশি ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দিয়ে বললেন, “তোমরা গুলিবাঁটের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুর আদেশ মত দেশটা তোমাদের নয় গোষ্ঠী এবং মনঃশির অর্ধেক গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ করে নিয়ে তোমাদের সম্পত্তি করে নেবে, কারণ রূবেণ-গোষ্ঠী, গাদ-গোষ্ঠী ও মনঃশির অর্ধেক গোষ্ঠীর বংশগুলো তাদের সম্পত্তি আগেই পেয়ে গেছে। পথে যিরীহোর উল্টাদিকে যর্দনের পূর্ব পারে তারা সেই সম্পত্তি পেয়েছে।” সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “যারা সম্পত্তি হিসাবে দেশটা তোমাদের মধ্যে ভাগ করে দেবে তারা হল পুরোহিত ইলিয়াসর ও নূনের ছেলে যিহোশূয়। সম্পত্তি ভাগ করবার কাজে সাহায্য করবার জন্য প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে একজন করে নেতা নিতে হবে। সেই নেতারা হল যিহূদা-গোষ্ঠীর যিফূন্নির ছেলে কালেব; শিমিয়োন-গোষ্ঠীর অম্মীহূদের ছেলে শমূয়েল; বিন্যামীন-গোষ্ঠীর কিশ্‌লোনের ছেলে ইলীদদ; দান-গোষ্ঠীর নেতা যগ্‌লির ছেলে বুক্কি; যোষেফের ছেলে মনঃশি-গোষ্ঠীর নেতা এফোদের ছেলে হন্নীয়েল; যোষেফের ছেলে ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর নেতা শিপ্তনের ছেলে কমূয়েল; সবূলূন-গোষ্ঠীর নেতা পর্ণকের ছেলে ইলীষাফণ; ইষাখর-গোষ্ঠীর নেতা অস্‌সনের ছেলে পল্‌টিয়েল; আশের-গোষ্ঠীর নেতা শলোমির ছেলে অহীহূদ; নপ্তালি-গোষ্ঠীর নেতা অম্মীহূদের ছেলে পদহেল।” কনান দেশে ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে সম্পত্তি হিসাবে জায়গা ভাগ করে দেবার জন্য সদাপ্রভু এই সমস্ত লোকদের নিযুক্ত করেছিলেন। এতে লেবীয়েরা বাস করবার জন্য গ্রাম ও শহর পাবে আর তাদের গরু-ভেড়া-ছাগল ও অন্যান্য পশু চরাবার মাঠও পাবে। “যে সব গ্রাম ও শহর তোমরা লেবীয়দের দেবে তার চারপাশের পশু চরাবার মাঠের জায়গাগুলো যেন গ্রাম বা শহরের দেওয়াল থেকে এক হাজার হাত পর্যন্ত হয়। প্রত্যেকটা গ্রাম বা শহর মাঝখানে রেখে তার বাইরে উত্তর ও দক্ষিণে দু’হাজার এবং পূর্ব ও পশ্চিমে দু’হাজার হাত মেপে দেবে। এই সব জায়গাগুলো তারা তাদের গ্রাম বা শহরের পশু চরাবার মাঠ হিসাবে পাবে। “তোমরা যে সব গ্রাম ও শহর লেবীয়দের দেবে তার মধ্যে ছয়টা হবে আশ্রয়-শহর। কেউ কাউকে মেরে ফেললে ঐ সমস্ত আশ্রয়-শহরের কোন একটাতে সে পালিয়ে যেতে পারবে। এগুলো ছাড়া তোমরা তাদের আরও বেয়াল্লিশটা গ্রাম দেবে। মোট আটচল্লিশটা গ্রাম ও শহর লেবীয়দের দিতে হবে এবং তার প্রত্যেকটার চারপাশে পশু চরাবার মাঠ থাকবে। ইস্রায়েলীয়দের সম্পত্তি থেকে লেবীয়দের যে সব গ্রাম ও শহর দেওয়া হবে তা প্রত্যেক গোষ্ঠীর পাওয়া সম্পত্তির পরিমাণ বুঝে দিতে হবে। যে গোষ্ঠীর ভাগে বেশী গ্রাম ও শহর পড়বে সেই গোষ্ঠী থেকে বেশী এবং যে গোষ্ঠীর ভাগে কম গ্রাম ও শহর পড়বে সেই গোষ্ঠী থেকে কম নেবে।” যার প্রতিশোধ নেবার কথা, এগুলো হবে তার হাত থেকে রক্ষা পাবার আশ্রয়-শহর, যাতে খুনের দায়ে পড়া লোক ইস্রায়েলীয়দের বিচার-সভার সামনে দাঁড়াবার আগে মারা না পড়ে। এই যে ছয়টা শহর তোমরা লেবীয়দের দেবে সেগুলো হবে তোমাদের আশ্রয়-শহর। এগুলোর তিনটা থাকবে যর্দন নদীর পূর্ব পারে আর তিনটা থাকবে কনান দেশের মধ্যে। এই ছয়টা হবে ইস্রায়েলীয়দের, ইস্রায়েলীয় করে নেওয়া বাসিন্দাদের এবং পরদেশী বাসিন্দাদের আশ্রয়-শহর। কোন লোক হঠাৎ কাউকে মেরে ফেললে সেখানে পালিয়ে যেতে পারবে। “কোন লোক যদি লোহার কিছু দিয়ে কাউকে আঘাত করে আর তাতে সে মারা যায় তবে সে খুনী। সেই খুনীকে মেরে ফেলতে হবে। যা দিয়ে মানুষ মেরে ফেলা যায় এমন কোন পাথর যদি কারও হাতে থাকে আর তা দিয়ে যদি সে কাউকে আঘাত করে আর তাতে সে মারা যায় তবে সে খুনী। সেই খুনীকে মেরে ফেলতে হবে। যা দিয়ে মানুষ মেরে ফেলা যায় এমন কোন কাঠের জিনিস যদি কারও হাতে থাকে আর তা দিয়ে যদি সে কাউকে আঘাত করে আর তাতে সে মারা যায় তবে সে খুনী। সেই খুনীকে মেরে ফেলতে হবে। খুন হওয়া লোকটার রক্তের প্রতিশোধ যার নেবার কথা তাকেই সেই খুনীকে মেরে ফেলতে হবে; দেখা পেলেই সে যেন তাকে মেরে ফেলে। বিচার-সভার লোকেরা তখন রক্তের প্রতিশোধ যার নেবার কথা তার হাত থেকে খুনের জন্য দায়ী করা লোকটাকে রক্ষা করে আবার তাকে সেই আশ্রয়-শহরে পাঠিয়ে দেবে যেখানে সে পালিয়ে গিয়েছিল। পবিত্র তেল দিয়ে অভিষেক করা মহাপুরোহিতের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সেই লোকটাকে সেখানে থাকতে হবে। মহাপুরোহিতের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সেই লোকটিকে আশ্রয়-শহরের ভিতরেই থাকতে হবে। কেবলমাত্র মহাপুরোহিতের মৃত্যুর পরেই সে নিজের জায়গাতে ফিরে আসতে পারবে। তোমরা দেশের মধ্যে যেখানেই বাস কর না কেন, বংশের পর বংশ ধরে তোমাদের জন্য এগুলো হল আইনের কতগুলো ধারা। “সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করেই খুনীকে মেরে ফেলা চলবে। তবে কেবলমাত্র একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করে কাউকে মেরে ফেলা চলবে না। মৃত্যুই যার পাওনা শাস্তি এমন কোন খুনীকে টাকা নিয়ে মুক্তি দেওয়া চলবে না। তাকে মেরে ফেলতেই হবে। আশ্রয়-শহরে পালিয়ে যাওয়া কোন লোককে টাকার বদলে মহাপুরোহিতের মৃত্যুর আগে তার জায়গা-জমিতে ফিরে গিয়ে বাস করতে দেওয়া চলবে না। তোমরা তোমাদের দেশকে অশুচি করবে না, কারণ রক্তপাত হলে দেশ অশুচি হয়। যে দেশে রক্তপাত হয়েছে রক্তপাতকারীর রক্ত ছাড়া আর কোনভাবেই সেই দেশের অশুচিতা ঢাকা দেওয়া যায় না। তোমরা যে দেশে থাকবে আমিও সেখানে থাকব বলে সেই দেশ অশুচি করা চলবে না। আমি সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে বাস করি।” যোষেফের বংশধরদের বংশ থেকে গিলিয়দের বিভিন্ন বংশের নেতারা এসে মোশি এবং ইস্রায়েলীয়দের অন্যান্য বংশের নেতাদের সংগে কথা বললেন। গিলিয়দ ছিল মাখীরের ছেলে এবং মনঃশির নাতি। তাঁরা বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে দেশের জায়গা-জমি গুলিবাঁট করে ঠিক করবার আদেশ দেবার সময় সদাপ্রভু আমাদের মনিবকে বলেছিলেন আমাদের ভাই সলফাদের সম্পত্তি যেন তার মেয়েদের দেওয়া হয়। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের অন্য গোষ্ঠীর লোকদের সংগে যদি এই মেয়েদের বিয়ে হয় তবে আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পত্তি থেকে তাদের সম্পত্তি বের হয়ে গিয়ে যোগ হবে তাদের স্বামীদের গোষ্ঠীর সম্পত্তিতে, আর তাতে আমাদের গোষ্ঠীর সম্পত্তির ভাগ থেকে কিছু অংশ চলে যাবে। ইস্রায়েলীয়দের ফিরে পাওয়ার বছরে তাদের সম্পত্তি শেষ পর্যন্ত গিয়ে যোগ হবে তাদের স্বামীদের গোষ্ঠীর সম্পত্তিতে। এইভাবে আমাদের পূর্বপুরুষদের গোষ্ঠীর সম্পত্তি থেকে তাদের সম্পত্তি বের করে নেওয়া হবে।” তখন সদাপ্রভুর আদেশ মত মোশি ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “যোষেফের ছেলেদের এই গোষ্ঠীর লোকেরা যা বলছে তা ঠিক। তাই সলফাদের মেয়েদের সম্বন্ধে সদাপ্রভু এই আদেশ দিচ্ছেন যে, তারা প্রত্যেকে যাকে খুশী তাকে বিয়ে করতে পারে, তবে যাকে সে বিয়ে করবে তাকে তার বাবার গোষ্ঠীর লোক হতে হবে। ইস্রায়েলীয়দের সম্পত্তি এক গোষ্ঠী থেকে অন্য গোষ্ঠীতে যেতে পারবে না। প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়কেই তার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া গোষ্ঠীর সম্পত্তি ধরে রাখতে হবে। ইস্রায়েলীয়দের প্রত্যেকে যাতে পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তির মালিক থাকতে পারে সেইজন্য ইস্রায়েলীয় গোষ্ঠীর প্রত্যেকটি মেয়ে-ওয়ারিশকে তার বাবার গোষ্ঠীর কাউকে বিয়ে করতে হবে। কোন সম্পত্তিই এক গোষ্ঠী থেকে অন্য গোষ্ঠীতে চলে যেতে পারবে না। ইস্রায়েলীয়দের প্রত্যেক গোষ্ঠীকেই তার পাওয়া সম্পত্তি ধরে রাখতে হবে।” যোষেফের ছেলে মনঃশির বংশধরদের বংশের মধ্যেই তারা বিয়ে করল। তাতে তাদের সম্পত্তি তাদের বাবার বংশ ও গোষ্ঠীর মধ্যেই থেকে গেল। যিরীহোর উল্টাদিকে যর্দন নদীর ধারে মোয়াবের সমভূমিতে সদাপ্রভু মোশির মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের এই সব আদেশ ও নিয়ম দিয়েছিলেন। ॥ভব মোশি যর্দন নদীর পূর্ব দিকের মরু-এলাকায়, অর্থাৎ অরাবাতে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে অনেক কথা বলেছিলেন। তিনি যেখানে সেই সব কথা বলেছিলেন সেই জায়গাটা ছিল সূফের সামনের দিকে। তার এক দিকে ছিল পারণ এবং অন্য দিকে ছিল তোফল, লাবন, হৎসেরোৎ ও দীষাহব। হোরেব থেকে সেয়ীর পাহাড়ের রাস্তা ধরে কাদেশ-বর্ণেয় পর্যন্ত যেতে এগারো দিন লাগে। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সম্বন্ধে মোশিকে যে সব নির্দেশ দিয়েছিলেন তা তিনি তাদের যাত্রার চল্লিশ বছরের এগারো মাসের পয়লা তারিখে তাদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন। ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে এবং ইদ্রিয়ী শহরে বাশন দেশের রাজা ওগকে হারিয়ে দেবার পরে তিনি তা প্রকাশ করেছিলেন। সীহোন রাজত্ব করতেন হিষ্‌বোনে এবং ওগ রাজত্ব করতেন অষ্টারোতে। আইন-কানুনের এই সব কথা মোশি যর্দন নদীর পূর্ব দিকে মোয়াব দেশে ইস্রায়েলীয়দের বুঝিয়ে বলতে লাগলেন। তিনি বললেন, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হোরেব পাহাড়ে আমাদের বলেছিলেন, ‘এই পাহাড়ে তোমাদের অনেক দিন কেটে গেছে। এখন তোমরা ছাউনি তুলে নিয়ে ইমোরীয়দের পাহাড়ী এলাকা এবং তার আশেপাশের জায়গার লোকদের কাছে যাও। তারা অরাবাতে, উঁচু পাহাড়ী এলাকায়, নীচের পাহাড়ী এলাকায়, নেগেভে এবং সাগরের কিনারায় বাস করে। এই জায়গাগুলো হল কনানীয়দের দেশ সুদ্ধ লেবানন হয়ে মহানদী ইউফ্রেটিস পর্যন্ত সমস্ত জায়গাটা। দেখ, আমি ঐ জায়গাগুলো তোমাদের দিয়ে রেখেছি। আমি সদাপ্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক, যাকোব ও তাদের পরে তাদের বংশধরদের যে দেশ দেবার শপথ করেছিলাম তোমরা সেখানে গিয়ে সেই দেশ অধিকার কর।’ “সেই সময় আমি তোমাদের বলেছিলাম, ‘আমার একার পক্ষে তোমাদের বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের লোকসংখ্যা এত বাড়িয়ে দিয়েছেন যে, আজকে তোমরা আকাশের তারার মত অসংখ্য হয়ে উঠেছ। তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সংখ্যা আরও হাজার গুণ বাড়িয়ে দিন এবং তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারেই তিনি তোমাদের আশীর্বাদ করুন। কিন্তু আমি একা কি করে তোমাদের সব ঝগড়া-বিবাদ মিটাবার ভার ও বোঝা বহন করব? তোমরা তোমাদের প্রত্যেকটা গোষ্ঠী থেকে কয়েকজন করে জ্ঞানবান, বুদ্ধিমান ও অভিজ্ঞ লোক বেছে নাও; আমি তাদের উপর তোমাদের দেখাশোনার ভার দেব।’ “তোমরা তার উত্তরে বলেছিলে, ‘আপনি যা বলছেন তা-ই করা ভাল।’ সেইজন্য আমি তোমাদের গোষ্ঠীগুলো থেকে জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ সর্দারদের নিয়ে তোমাদের উপরে হাজারপতি, শতপতি, পঞ্চাশপতি, দশপতি এবং অন্যান্য কর্মচারী নিযুক্ত করেছিলাম। এই সব বিচারকদের তখন আমি বলেছিলাম, ‘তোমরা ঝগড়া-বিবাদের সময়ে দু’পক্ষের কথা শুনে ন্যায়ভাবে বিচার করবে- সেই ঝগড়া ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্যেই হোক কিম্বা ইস্রায়েলীয় এবং ভিন্ন জাতির লোকদের মধ্যেই হোক। বিচারের ব্যাপারে তোমরা কারও পক্ষ নেবে না এবং বড়-ছোট সবার কথাই শুনবে। বিচারের কাজটা আসলে ঈশ্বরের; তাই কোন মানুষকে তোমরা ভয় করবে না। যদি কোন বিচার তোমাদের কাছে শক্ত বলে মনে হয় তবে তোমরা তা আমার কাছে নিয়ে আসবে, আমি সেই বিচার করব।’ তোমাদের যা করতে হবে তা-ও আমি তখন তোমাদের বলে দিয়েছিলাম। “এর পর আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশে আমরা হোরেব পাহাড় ছেড়ে ইমোরীয়দের পাহাড়ী এলাকার দিকে রওনা হলাম। কত বড় এবং কত ভয়ানক মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়েছিল তা তোমরা দেখেছ। এইভাবে আমরা কাদেশ-বর্ণেয়তে গিয়ে পৌঁছালাম। তারপর আমি তোমাদের বললাম, ‘তোমরা ইমোরীয়দের পাহাড়ী এলাকাতে এসে গেছ; এটা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের দিতে যাচ্ছেন। দেখ, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া গোটা দেশটাই তোমাদের সামনে রয়েছে। তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথামত তোমরা গিয়ে দেশটা দখল কর। তোমরা ভয় কোরো না, নিরাশও হয়ো না।’ “তখন তোমরা সবাই এসে আমাকে বললে, ‘কয়েকজন লোককে আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হোক, যাতে তারা দেশটা দেখে এসে আমাদের বলতে পারে কোন্‌ পথে আমাদের সেখানে যেতে হবে এবং কোন্‌ কোন্‌ শহর আমাদের সামনে পড়বে।’ “তোমাদের কথাটা আমার কাছে ভালই মনে হল। তাই আমি তোমাদের প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে একজন করে মোট বারোজন লোক বেছে নিলাম। তারা তোমাদের ছেড়ে ঐ পাহাড়ী এলাকায় উঠে গেল এবং ইষ্কোল উপত্যকায় গিয়ে ভাল করে সব কিছু দেখে আসল। তারা সেই দেশের কিছু ফল সংগে করে নিয়ে এসে আমাদের বলল, ‘আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশটা আমাদের দিতে যাচ্ছেন তা সত্যিই চমৎকার।’ “কিন্তু তোমরা সেই দেশে যেতে চাইলে না। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে। তোমরা নিজেদের তাম্বুর মধ্যে বক্‌বক্‌ করতে শুরু করলে এবং বললে, ‘সদাপ্রভু আমাদের ঘৃণা করেন। সেইজন্য ইমোরীয়দের হাতে তুলে দিয়ে ধ্বংস করে ফেলবার জন্যই তিনি আমাদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছেন। আমরা কি করে সেখানে যাই? আমাদের ভাইয়েরাই আমাদের মন ভেংগে দিয়েছে। তারা বলেছে, ওখানকার লোকগুলো তাদের চেয়ে শক্তিশালী ও লম্বা; তাদের শহরগুলোও বড় বড় এবং তাদের চারদিকে রয়েছে আকাশ-ছোঁয়া দেয়াল। সেখানে তারা অনাকীয়দেরও দেখেছে।’ “তা শুনে আমি তোমাদের বললাম, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, ঐ লোকদের ভয় কোরো না। তবুও তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর কর নি। তিনিই তো তাম্বু ফেলবার জায়গা ঠিক করবার জন্য এবং পথ দেখিয়ে তোমাদের নিয়ে যাবার জন্য রাতে আগুনের মধ্যে ও দিনে মেঘের মধ্যে থেকে যাত্রাপথে তোমাদের আগে আগে গিয়েছিলেন। “তোমাদের দরুন সদাপ্রভু আমার উপরও ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছিলেন, ‘ঐ দেশে তোমারও ঢোকা হবে না, কিন্তু তোমার সাহায্যকারী নূনের ছেলে যিহোশূয় ঢুকবে। তুমি যিহোশূয়কে উৎসাহ দাও, কারণ সে-ই দেশটা দখল করে ইস্রায়েলীয়দের অধিকার হিসাবে দেবে। যে সব ছেলেমেয়েদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে বলে তোমরা বলেছিলে তোমাদের সেই সব ছেলেমেয়েরা, যাদের ভাল-মন্দের জ্ঞান এখনও হয় নি, তারাই সেই দেশে ঢুকবে। আমি দেশটা তাদেরই দেব এবং তারা তা দখল করবে। এখন তোমরা পিছন ফিরে আকাবা উপসাগরের পথ ধরে মরু-এলাকার দিকে রওনা হয়ে যাও।’ “এই কথা শুনে তোমরা বলেছিলে, ‘আমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছি। এখন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে আমরা গিয়ে যুদ্ধ করব।’ এই বলে তোমরা সবাই অস্ত্রশস্ত্র নিলে। তোমরা ভেবেছিলে পাহাড়ী এলাকায় উঠে যাওয়া খুব সহজ। “কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে বললেন, ‘তুমি তাদের বলে দাও যেন তারা যুদ্ধ করবার জন্য ওখানে উঠে না যায় কারণ আমি তাদের সংগে থাকব না; তাই তারা শত্রুদের কাছে হেরে যাবে।’ “আমি তোমাদের সেই কথা জানালাম কিন্তু তোমরা তাতে কান দিলে না। তোমরা সদাপ্রভুর আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে বুক ফুলিয়ে পাহাড়ী এলাকায় উঠে গেলে। তা দেখে যে সব ইমোরীয়েরা ঐ পাহাড়ী এলাকায় বাস করত তারা তোমাদের বিরুদ্ধে বের হয়ে আসল। এক ঝাঁক মৌমাছির মত তারা তোমাদের তাড়া করল আর সেয়ীরের মধ্যে হর্মা পর্যন্ত তোমাদের মারতে মারতে নিয়ে গেল। তোমরা ফিরে এসে সদাপ্রভুর কাছে কাঁদতে লাগলে, কিন্তু তিনি তোমাদের কান্না শুনলেন না; তিনি কান বন্ধ করে রইলেন। এইভাবে তোমরা কাদেশে অনেক দিন রইলে এবং সেখানেই তোমাদের অনেক দিন কেটে গেল। “সদাপ্রভু আমাকে যেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন সেইভাবে আমরা তারপর পিছন ফিরে আকাবা উপসাগরের পথ ধরে মরু-এলাকার দিকে রওনা হলাম। সেয়ীরের পাহাড়ী এলাকা ঘুরে যেতে আমাদের অনেক দিন কেটে গেল। তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, ‘তোমরা অনেক দিন ধরে এই পাহাড়ী এলাকায় ঘুরছ; এইবার উত্তর দিকে ফের।’ তারপর তিনি আমাকে তোমাদের বলতে বললেন, ‘তোমাদের ভাই সেয়ীরের বাসিন্দা এষৌর বংশধরদের রাজ্যের মধ্য দিয়ে এখন তোমাদের যেতে হবে। তোমাদের দেখে তারা ভয় পাবে কিন্তু তোমরা খুব সাবধান থেকো। তোমরা এষৌর বংশধরদের যুদ্ধের উস্‌কানি দেবে না, কারণ আমি তাদের দেশের কোন অংশই তোমাদের দেব না, এমন কি, পা রাখবার জায়গা পর্যন্ত না। আমি সেয়ীরের এই পাহাড়ী এলাকা এষৌকে তার নিজের দেশ হিসাবে দিয়েছি। তাদের কাছ থেকে খাবার ও জল তোমাদের টাকা দিয়ে কিনে খেতে হবে।’ “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সব কাজেই তোমাদের আশীর্বাদ করেছেন। এই মস্ত বড় মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে যাবার সময়ে তিনি তোমাদের দেখাশোনা করেছেন। এই চল্লিশটা বছর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সংগেই থেকেছেন আর তোমাদের কোন কিছুর অভাব হয় নি। “কাজেই আমরা আমাদের ভাই সেয়ীরের বাসিন্দা এষৌর বংশধরদের ছেড়ে চলে আসলাম। অরাবার যে পথটা এলৎ ও ইৎসিয়োন-গেবর থেকে বের হয়ে এসেছে সেই পথ ছেড়ে আমরা মোয়াবের মরু-এলাকার পথ ধরে চলতে লাগলাম। তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, ‘তোমরা মোয়াবীয়দের বিরক্ত কোরো না কিম্বা যুদ্ধের উস্‌কানি দিয়ো না, কারণ তাদের দেশের কোন অংশই আমি তোমাদের দেব না। আমি সম্পত্তি হিসাবে আর্‌ শহরটা লোটের বংশধরদের দিয়েছি।’ ” আগে এমীয়েরা ঐ এলাকায় বাস করত। এমীয় জাতির লোকেরা ছিল শক্তিশালী, সংখ্যায় অনেক এবং অনাকীয়দের মত লম্বা। অনাকীয়দের মত এমীয়দেরও রফায়ীয় বলা হত কিন্তু মোয়াবীয়েরা তাদের বলত এমীয়। সেয়ীরে হোরীয়েরা বাস করত, কিন্তু পরে এষৌর বংশধরেরা তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সদাপ্রভু সম্পত্তি হিসাবে ইস্রায়েলীয়দের যে দেশ দিয়েছিলেন সেখানে তারা যা করেছিল এষৌর বংশধরেরাও ঠিক তা-ই করল; তারা হোরীয়দের ধ্বংস করে দিয়ে তাদের জায়গায় নিজেরা বাস করতে লাগল। “তারপর সদাপ্রভু বললেন, ‘এখন তোমরা উঠে সেরদ উপত্যকা পার হয়ে যাও।’ আর আমরা সেটা পার হয়ে আসলাম। কাদেশ-বর্ণেয় ছেড়ে সেরদ উপত্যকা পার হয়ে আসতে আমাদের আটত্রিশ বছর কেটে গিয়েছিল। কাদেশ-বর্ণেয় ছেড়ে আসবার আগে ছাউনিতে যে সব সৈন্য ছিল তারা সবাই এই আটত্রিশ বছরের মধ্যে সদাপ্রভুর শপথ করে বলা কথা অনুসারে মারা গিয়েছিল। ছাউনি থেকে তাদের একেবারে ধ্বংস করে ফেলবার জন্য সদাপ্রভু তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন, যে পর্যন্ত না তারা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তোমরা যখন অম্মোনীয়দের কাছে গিয়ে পৌঁছাবে তখন তাদের বিরক্ত করবে না বা যুদ্ধের উস্‌কানি দেবে না, কারণ অম্মোনীয়দের দেশের কোন অংশই আমি তোমাদের দেব না। লোটের বংশধরদের আমি সেটা সম্পত্তি হিসাবে দিয়ে রেখেছি।’ ” ঐ দেশটাকে রফায়ীদের দেশ বলেও মনে করা হত, কারণ সেখানে তারা আগে বাস করত; অম্মোনীয়েরা তাদের সম্‌সুম্মীয় জাতির লোক বলত। রফায়ীয়েরা শক্তিশালী এবং সংখ্যায় অনেক ছিল। তারা ছিল অনাকীয়দের মত লম্বা। সদাপ্রভু অম্মোনীয়দের দিয়ে তাদের ধ্বংস করে ফেলেছিলেন; অম্মোনীয়েরা রফায়ীয়দের তাড়িয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় বাস করছিল। সদাপ্রভু এষৌর বংশধরদের ব্যাপারেও সেই একই কাজ করেছিলেন। তিনি তাদের দিয়ে হোরীয়দের ধ্বংস করেছিলেন। তারা হোরীয়দের তাড়িয়ে দিয়ে তাদের জায়গা সেয়ীরে আজও বাস করছে। ক্রীট থেকে ক্রীটীয়েরা এসে অব্বীয়দের ধ্বংস করে দিয়ে তাদের জায়গায় বাস করছিল। অব্বীয়েরা তখন গাজা পর্যন্ত সমস্ত গ্রামে বাস করত। “তারপর সদাপ্রভু বলেছিলেন, ‘তোমরা বের হয়ে পড় এবং অর্ণোন নদী পার হয়ে যাও। দেখ, আমি হিষ্‌বোনের ইমোরীয় রাজা সীহোন ও তার দেশ তোমাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি। তোমরা তার দেশটা দখল করতে শুরু করে তাকে যুদ্ধে নামতে বাধ্য কর। আজ থেকে আমি পৃথিবীর সমস্ত জাতির মধ্যে তোমাদের সম্বন্ধে একটা ভয়ের ভাব ও কাঁপুনি ধরাতে শুরু করব। তারা তোমাদের কথা শুনলে কাঁপতে থাকবে এবং তোমাদের দরুন তাদের মনে ভীষণ দুশ্চিন্তা জাগবে।’ “এর পর আমি শান্তি বজায় রাখবার উদ্দেশ্যে কদেমোৎ মরু-এলাকা থেকে হিষ্‌বোনের রাজা সীহোনের কাছে বলে পাঠালাম, ‘আপনার দেশের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে দিন। আমরা ডানে-বাঁয়ে না গিয়ে সদর রাস্তা ধরেই চলে যাব। কিন্তু হিষ্‌বোনের রাজা সীহোন তাতে রাজী হলেন না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর মন কঠিন করেছিলেন ও অন্তর একগুঁয়েমিতে ভরে দিয়েছিলেন যাতে তিনি তোমাদের হাতে পড়েন, আর এখন তা-ই ঘটেছে। “পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, ‘দেখ, সীহোন ও তার রাজ্য আমি তোমার হাতে তুলে দিতে আরম্ভ করেছি। তুমি এখন গিয়ে তার দেশটা জয় করবার কাজে হাত দাও এবং সেখানে বাস করতে শুরু কর।’ সেই সময়ে আমরা তাঁর সমস্ত গ্রাম ও শহর দখল করে নিলাম এবং তাদের পুরুষ, স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়েদের একেবারে ধ্বংস করে ফেললাম; তাদের কাউকেই আমরা বাঁচিয়ে রাখি নি। কিন্তু পশুপাল এবং শহর থেকে লুট করা জিনিসপত্র আমরা নিজেদের জন্য নিয়ে আসলাম। অর্ণোন উপত্যকার কিনারায় অরোয়ের শহর এবং সেই উপত্যকার মধ্যেকার গ্রামটা থেকে শুরু করে গিলিয়দ পর্যন্ত এমন কোন শক্তিশালী গ্রাম বা শহর রইল না যা আমরা জয় করে নিতে পারি নি। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সেগুলো সবই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কেবল অম্মোনীয়দের জায়গা, যব্বোক নদীর কিনারার জায়গা, পাহাড়ের মধ্যেকার জায়গা এবং অন্যান্য যে সব জায়গায় যেতে তিনি নিষেধ করেছিলেন, সেই সব জায়গায় তোমরা যাও নি। “এর পর আমরা ঘুরে বাশন দেশের দিকে যাওয়ার রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। আমাদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য বাশনের রাজা ওগ তাঁর সমস্ত সৈন্য-নামন্ত নিয়ে বের হয়ে ইদ্রিয়ী শহরে আসলেন। তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, ‘তুমি তাকে ভয় কোরো না, কারণ তাকে ও তার দেশ ও সৈন্য-সামন্ত আমি তোমার হাতে দিয়ে দিয়েছি। তুমি হিষ্‌বোনে বাসকারী ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের অবস্থা যা করেছিলে এর অবস্থাও তা-ই করবে।’ “এইভাবে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু বাশনের রাজা ওগ ও তাঁর সমস্ত সৈন্য-সামন্তকে আমাদের হাতে দিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা তাদের সবাইকে মেরে ফেলেছিলাম; কাউকেই বাঁচিয়ে রাখি নি। সেই সময় আমরা তাঁর সব গ্রাম ও শহরগুলো নিয়ে নিয়েছিলাম। তাঁর ষাটটা শহরের সবগুলোই আমরা দখল করে নিয়েছিলাম; একটাও বাদ রাখি নি। গোটা অর্গোব এলাকাটা, অর্থাৎ বাশনের মধ্যে ওগের গোটা রাজ্যটা আমরা দখল করে নিয়েছিলাম। এই সব শহরগুলো উঁচু উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল আর তাতে ছিল ফটক আর হুড়কা। অনেকগুলো দেয়াল ছাড়া গ্রামও সেখানে ছিল। আমরা সেই সব গ্রাম ও শহর সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। হিষ্‌বোনের রাজা সীহোনের প্রতি আমরা যেমন করেছিলাম তেমনি করে তাদের পুরুষ, স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়ে এবং প্রত্যেকটা গ্রাম ও শহর আমরা একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে সমস্ত পশুপাল এবং লুট করে আনা জিনিসপত্র আমরা নিজেদের জন্য নিয়ে এসেছিলাম। “সেই সময় আমরা অর্ণোন নদী থেকে হর্মোণ পাহাড় পর্যন্ত যর্দন নদীর পূর্ব দিকের এলাকাটা এই দু’জন ইমোরীয় রাজার হাত থেকে নিয়ে নিয়েছিলাম। সীদোনীয়েরা হর্মোণকে সিরিয়োণ বলে আর ইমোরীয়েরা বলে সনীর। ঐ মালভূমির সমস্ত গ্রাম ও শহর, সব গিলিয়দ এলাকা এবং বাশনের রাজা ওগের রাজ্যের সল্‌খা ও ইদ্রিয়ী শহর পর্যন্ত গোটা বাশন দেশটা আমরা দখল করে নিয়েছিলাম। রফায়ীয়দের বাকী লোকদের মধ্যে কেবল বাশনের রাজা ওগই বেঁচে ছিলেন। তাঁর লোহার তৈরী শোবার খাটটা ছিল লম্বায় প্রমাণ হাতের নয় হাত আর চওড়ায় চার হাত। ওটা এখনও অম্মোনীয়দের রব্বা শহরে আছে। “আমাদের অধিকার করা জায়গা থেকে আমি তখন অর্ণোন নদীর কাছে অরোয়ের শহরের বাইরে উত্তর দিকের এলাকাটা এবং গিলিয়দের পাহাড়ী এলাকার অর্ধেক ও সেখানকার সব গ্রাম ও শহর রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের দিলাম। গিলিয়দ দেশের বাকী অংশ এবং রাজা ওগের গোটা বাশন রাজ্যটা আমি মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোককে দিলাম। “বাশনের মধ্যেকার সমস্ত অর্গোব এলাকাটাকে রফায়ীদের দেশ বলা হত। যায়ীর নামে মনঃশির এক বংশধর গশূরীয় ও মাখাথীয়দের সীমানা পর্যন্ত গোটা অর্গোব এলাকাটা দখল করে নিজের নাম অনুসারে তার নাম রেখেছিল। তাই এখন বাশনকে হব্বোৎ-যায়ীর বলা হয়ে থাকে। “আমি মাখীরকে গিলিয়দ এলাকাটা দিলাম। কিন্তু গিলিয়দ থেকে অর্ণোন উপত্যকার মাঝখানের সীমারেখাটা পর্যন্ত সমস্ত জায়গা এবং সেখান থেকে অম্মোনীয়দের সীমানা যব্বোক নদী পর্যন্ত আমি রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের দিলাম। পশ্চিম দিকে তাদের শেষ সীমানা ছিল অরাবার যর্দন নদীর যে অংশটা কিন্নেরৎ থেকে পিস্‌গা পাহাড়শ্রেণীর ঢালু অংশের নীচে অরাবার সমুদ্র, অর্থাৎ মরু-সাগর পর্যন্ত চলে গেছে সেই অংশটা। “তারপর আমি তাদের বললাম, ‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই জায়গাটা তোমাদের দখল করবার জন্য দিয়েছেন। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যাদের গায়ে জোর আছে সেই সব লোকদের যুদ্ধের জন্য তৈরী হয়ে ইস্রায়েলীয় ভাইদের আগে আগে নদী পার হয়ে যেতে হবে। তবে তোমাদের যে সব গ্রাম ও শহর দেওয়া হল সেখানে তোমাদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে আর পশুপাল রেখে যেতে পারবে। আমি জানি তোমাদের পশু অনেক। সদাপ্রভু যতদিন পর্যন্ত তোমাদের মত করে তোমাদের ভাইদেরও বিশ্রামের সুযোগ না দেন এবং যর্দনের ওপারে যে দেশটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদের দিতে যাচ্ছেন তা তারা অধিকার না করে ততদিন পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ করে যেতে হবে। তার পরে এই যে জায়গা-জমি তোমাদের দেওয়া হল এখানে তোমরা ফিরে আসতে পারবে।’ “সেই সময় আমি যিহোশূয়কে বললাম, ‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই দু’জন রাজার অবস্থা কি করেছেন তা তো তুমি নিজের চোখেই দেখেছ। তোমরা যেখানে যাচ্ছ সেখানকার সব রাজ্যগুলোর অবস্থাও সদাপ্রভু তা-ই করবেন। তোমরা তাদের ভয় কোরো না; তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজে তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন।’ “সেই সময় আমি সদাপ্রভুকে মিনতি করে বলেছিলাম, ‘হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি যে কত মহান এবং শক্তিশালী তা তোমার দাসকে দেখাতে আরম্ভ করেছ। স্বর্গে বা পৃথিবীতে কোন্‌ দেবতা আছে যে, তুমি যে সব কাজ করেছ তা করতে পারে এবং তুমি যে শক্তি দেখিয়েছ তা দেখাতে পারে? যর্দন পার হয়ে গিয়ে ঐ চমৎকার দেশটা, অর্থাৎ ঐ পাহাড়ী দেশটা আর লেবানন আমাকে দেখতে দাও।’ “কিন্তু তোমাদের দরুন সদাপ্রভু আমার উপর বিরক্ত হওয়াতে আমার কথা তিনি শুনলেন না। তিনি বললেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। এই বিষয়ে আমাকে আর বোলো না। তুমি পিস্‌গার চূড়ায় উঠে উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে চেয়ে দেখ। যর্দন নদী পার হয়ে যখন তোমার যাওয়া হবে না তখন নিজের চোখে দেশটা একবার দেখে নাও। যিহোশূয়কে কি করতে হবে তা তুমি তাকে বলে দাও; তাকে উৎসাহ ও সাহস দাও, কারণ সে-ই আগে আগে গিয়ে লোকদের পার করে নিয়ে যাবে এবং যে দেশটা তুমি দেখতে যাচ্ছ তা তাদের দিয়ে অধিকার করাবে।’ সেইজন্য আমরা বৈৎ-পিয়োরের উল্টা দিকের উপত্যকায় থেকে গেলাম। “ইস্রায়েলীয়েরা, আমি তোমাদের যে সব নিয়ম ও আইন-কানুন শিক্ষা দিতে যাচ্ছি তা তোমরা এখন শোন। এগুলো তোমাদের মেনে চলতে হবে যাতে তোমরা বেঁচে থাক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ তোমাদের দিতে যাচ্ছেন সেখানে গিয়ে তা অধিকার করে নিতে পার। আমি তোমাদের যে আদেশ দিচ্ছি তার সংগে কিছু যোগ কোরো না এবং তা থেকে কিছু বাদও দিয়ো না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর যে সব আদেশ আমি তোমাদের দিচ্ছি তা তোমরা মেনে চলবে। “সদাপ্রভু বাল-পিয়োরে যা করেছিলেন তা তো তোমরা নিজের চোখেই দেখেছ। তোমাদের মধ্যে যারা পিয়োরের বাল দেবতার পূজা করেছিল তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদের প্রত্যেককে তোমাদের মধ্য থেকে ধ্বংস করেছেন, কিন্তু তোমরা যারা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে আঁকড়ে ধরেছিলে, তোমরা সবাই এখনও বেঁচে আছ। “আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ মেনে আমি তোমাদের নিয়ম ও আইন-কানুন শিক্ষা দিয়েছি, যাতে যে দেশ তোমরা অধিকার করতে যাচ্ছ সেই দেশে তা পালন করতে পার। তোমরা এই সব যত্নের সংগে পালন করবে। এগুলো পালন করবার মধ্য দিয়ে অন্যান্য জাতির লোকদের সামনে তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রকাশ পাবে। তারা এই সব নিয়মের বিষয় শুনে বলবে, ‘জাতি হিসাবে এরা সত্যিই মহান এবং জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান।’ এমন আর কোন্‌ মহান জাতি আছে যাদের দেব-দেবতারা তাদের কাছে থাকে, যেমন করে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডাকলে তাঁকে কাছে পাওয়া যায়? এমন আর কোন্‌ মহান জাতি আছে যাদের নিয়ম ও আইন-কানুন তোমাদের কাছে আজকে আমার দেওয়া নিয়ম-কানুনের মত ন্যায়ে ভরা? “যতদিন তোমরা বেঁচে থাকবে ততদিন তোমরা সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের উপর কড়া নজর রাখবে যাতে তোমরা চোখে যা দেখেছ তা ভুলে না যাও এবং তোমাদের অন্তর থেকে তা মুছে না যায়। এই সব তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের এবং তাদের পরে তাদের ছেলেমেয়েদের শিখাবে। তোমরা সেই দিনের কথা মনে কর যেদিন তোমরা হোরেবে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হয়েছিলে। সেই দিন তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার কথা শুনবার জন্য তুমি লোকদের আমার সামনে জড়ো কর যাতে তারা এই পৃথিবীতে সারা জীবন আমাকেই ভক্তি করে চলতে শিখতে পারে আর তাদের ছেলেমেয়েদের আমার আদেশের কথা শিক্ষা দিতে পারে।’ তখন তোমরা কাছে গিয়ে সেই পাহাড়ের নীচে দাঁড়িয়ে ছিলে; আর তখন অন্ধকারে ঘেরা পাহাড়টা মেঘ ও ঘন অন্ধকারে ভরা আকাশ পর্যন্ত জ্বলছিল। সেই সময় আগুনের মধ্য থেকে সদাপ্রভু তোমাদের কাছে কথা বলেছিলেন। তোমরা তাঁর কথা শুনেছিলে কিন্তু কোন চেহারা দেখতে পাও নি, কেবল স্বরই শুনেছিলে। তিনি তোমাদের কাছে তাঁর ব্যবস্থা, অর্থাৎ তাঁর দশ আজ্ঞা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি সেই দশ আজ্ঞা তোমাদের মেনে চলতে বলেছিলেন এবং তা দু’টি পাথরের ফলকের উপর লিখে দিয়েছিলেন। যর্দন নদী পার হয়ে যে দেশ তোমরা অধিকার করতে যাচ্ছ সেই দেশে গিয়ে তোমাদের যে নিয়ম ও আইন-কানুন পালন করে চলতে হবে তা তোমাদের শিক্ষা দেবার জন্য সেই সময় সদাপ্রভু আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। “হোরেব পাহাড়ে যেদিন সদাপ্রভু আগুনের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে কথা বলেছিলেন সেই দিন তোমরা কোন চেহারা দেখতে পাও নি। সেইজন্য তোমরা নিজেদের উপর খুব কড়া নজর রাখবে, যাতে তোমরা কুপথে গিয়ে পূজার উদ্দেশ্যে কোন প্রতিমা খোদাই না কর কিম্বা কোন চেহারার মূর্তি তৈরী না কর- তা পুরুষের বা স্ত্রীলোকেরই হোক, কিম্বা মাটির উপরকার কোন জন্তুর বা আকাশে উড়ে বেড়ানো কোন পাখীরই হোক, কিম্বা বুকে-হাঁটা কোন প্রাণীর বা জলের নীচের কোন মাছেরই হোক। আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্য, চাঁদ ও তারা, এক কথায় মহাকাশে সাজিয়ে রাখা সমস্ত আলোদানকারী জিনিসগুলো যখন তোমাদের চোখে পড়বে তখন পৃথিবীর সমস্ত জাতিকে দেওয়া তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর এই সব জিনিসগুলোকে প্রণাম এবং পূজা করে তোমরা বিপথে চলে যেয়ো না। মনে রেখো, সদাপ্রভু তোমাদের বেছে নিয়েছেন এবং লোহা গলানো হাপরের মত যে মিসর দেশ সেখান থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন যেন তোমরা তাঁরই লোক হতে পার, আর তোমরা এখন তা-ই হয়েছ। “তোমাদের দরুন সদাপ্রভু আমার উপর অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি শপথ করে বলেছিলেন যে, সম্পত্তি হিসাবে যে চমৎকার দেশটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দিতে যাচ্ছেন, যর্দন নদী পার হয়ে আমার সেখানে যাওয়া হবে না। আমি এখানেই মারা যাব, যর্দন নদী পার হতে পারব না; কিন্তু তোমরা নদী পার হয়ে সেই চমৎকার দেশটা অধিকার করতে যাচ্ছ। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন, সাবধান, তা তোমরা ভুলে যেয়ো না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিষেধ করা কোন কিছুর মূর্তি তৈরী করা তোমাদের চলবে না, কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হলেন সব কিছু পুড়িয়ে দেওয়া আগুন; তাঁর পাওনা ভক্তি সম্বন্ধে তিনি খুব আগ্রহী। “তোমরা এবং তোমাদের বংশধরেরা সেই দেশে অনেক দিন বাস করবার পর যখন তোমরা কুপথে গিয়ে পূজার জন্য মূর্তি তৈরী করবে আর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে যা খারাপ তা করে তাঁকে অসন্তুষ্ট করে তুলবে, সেই সময়ের জন্য আমি আজকের এই দিনে মহাকাশ ও পৃথিবীকে তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী রেখে বলছি, তোমরা যর্দন নদী পার হয়ে যে দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ সেই দেশে তোমরা অল্প দিনেই শেষ হয়ে যাবে। তোমরা সেখানে বেশী দিন বাস করতে পারবে না, নিশ্চয়ই ধ্বংস হয়ে যাবে। সদাপ্রভু নানা জাতির মধ্যে তোমাদের ছড়িয়ে দেবেন এবং যাদের মধ্যে তিনি তোমাদের তাড়িয়ে দেবেন তোমাদের খুব কম লোকই তাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে। সেখানে তোমরা মানুষের তৈরী কাঠের ও পাথরের দেবতার পূজা করবে যারা না পারে দেখতে, না পারে শুনতে, না পারে খেতে, না পারে গন্ধ নিতে। কিন্তু সেখান থেকে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিকে মন ফিরাবে এবং তাতে তোমরা তাঁর কাছ থেকে সাড়া পাবে, অবশ্য যখন তোমরা তোমাদের সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে তা করবে। যখন তোমরা কষ্টে পড়বে এবং এই সব তোমাদের উপর ঘটে যাবে তখন ভবিষ্যতের সেই দিনগুলোতে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরে আসবে এবং তাঁর বাধ্য হয়ে চলবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু করুণাময়; তিনি তোমাদের ছেড়ে যাবেন না বা ধ্বংস করবেন না, কিম্বা শপথ করে তোমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন তা ভুলে যাবেন না। “ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করবার পর থেকে তোমাদের সময়কার অনেক আগের দিনগুলোতে তোমরা খুঁজে দেখ; আকাশের এক দিক থেকে অন্য দিক পর্যন্ত খুঁজে দেখ যে, যা যা ঘটেছে তার মত মহান আর কিছু ঘটেছে কি না, কিম্বা তার মত আর কোন কিছুর কথা শোনা গেছে কি না, কিম্বা তোমাদের মত করে অন্য কোন জাতির লোক আগুনের মধ্য থেকে ঈশ্বরকে কথা বলতে শুনে বেঁচে আছে কি না। তোমরা খুঁজে দেখ যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের চোখের সামনে মিসর দেশে তোমাদের জন্য যা করেছিলেন কোন দেবতা কখনও সেইভাবে পরীক্ষা দ্বারা, আশ্চর্য কাজ ও চিহ্ন দ্বারা, যুদ্ধ দ্বারা, কঠোর ও শক্তিশালী হাত দ্বারা এবং মহান ও ভয় জাগানো কাজ দ্বারা কোন জাতিকে অন্য জাতির মধ্য থেকে নিজের জন্য বের করে এনেছে কি না। “তোমরা যাতে জানতে পার যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর এবং তিনি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই, সেইজন্যই এই সব তোমাদের দেখানো হয়েছিল। তোমাদের তাঁর শাসনের আওতায় আনবার জন্য তিনি স্বর্গ থেকে তাঁর স্বর তোমাদের শুনতে দিয়েছিলেন আর পৃথিবীতে দেখিয়েছিলেন তাঁর মহান আগুন, আর সেই আগুনের মধ্য থেকে তোমরা তাঁর কথা শুনতে পেয়েছিলে। তিনি তোমাদের পূর্বপুরুষদের ভালবাসতেন এবং তাঁদের পরে তাঁদের বংশধরদের বেছে নিয়েছেন। সেইজন্য তিনি নিজে উপস্থিত থেকে তাঁর মহাশক্তি দ্বারা মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন। তিনি তা করেছেন যাতে তোমাদের চেয়েও বড় এবং শক্তিশালী জাতিগুলোকে তোমাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের দেশে তোমাদের নিয়ে যেতে পারেন এবং সম্পত্তি হিসাবে তা তোমাদের দিতে পারেন; আর আজ তা-ই হয়েছে। “আজকে তোমরা এই কথাটা জেনে রাখ এবং অন্তরে গেঁথে রাখ যে, সদাপ্রভুই উপরে স্বর্গের এবং নীচে পৃথিবীর ঈশ্বর, আর তিনি ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বর নেই। তোমাদের ও তোমাদের পরে তোমাদের সন্তানদের যেন মংগল হয় এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ চিরকালের জন্য তোমাদের দিচ্ছেন তাতে যেন তোমরা অনেকদিন বেঁচে থাকতে পার সেইজন্য আমি যে সব আইন-কানুন ও আদেশ আজ তোমাদের দিচ্ছি তা তোমরা মেনে চলবে।” তাঁরা সীহোনের ও বাশনের রাজা ওগের দেশ অধিকার করে নিয়েছিলেন। এই দুই ইমোরীয় রাজার রাজ্য দু’টি ছিল যর্দনের পূর্ব দিকে। অর্ণোন উপত্যকার কিনারার অরোয়ের শহর থেকে সীওন পাহাড়, অর্থাৎ হর্মোণ পাহাড় পর্যন্ত ছিল এই দুই রাজ্য। তার মধ্যে রয়েছে যর্দনের পূর্ব দিকের গোটা অরাবা এলাকাটা। এটা পিস্‌গা পাহাড়শ্রেণীর ঢালু অংশের নীচে অরাবার সাগর পর্যন্ত চলে গেছে। মোশি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের ডেকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা, আজ আমি তোমাদের কাছে যে সব নিয়ম ও নির্দেশ প্রকাশ করছি তোমরা তা শোন। তোমরা সেগুলো শিখে রাখবে এবং তা যত্নের সংগে পালন করবে। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু হোরেব পাহাড়ে আমাদের জন্য একটি ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন। সেই ব্যবস্থা তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দেন নি, দিয়েছেন আমাদের কাছে, আজ আমরা যারা এখানে বেঁচে রয়েছি আমাদের সকলের কাছে। সদাপ্রভু সেই পাহাড়ের উপরে আগুনের মধ্য থেকে তোমাদের সামনেই কথা বলেছিলেন। সেই সময় আগুনের ভয়ে তোমরা পাহাড়ের উপর ওঠো নি বলে আমি তোমাদের ও সদাপ্রভুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে তাঁর কথা তোমাদের কাছে প্রকাশ করেছিলাম। তখন সদাপ্রভু বলেছিলেন, ‘আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। মিসর দেশের গোলামী থেকে আমিই তোমাদের বের করে এনেছি। ‘আমার জায়গায় কোন দেব-দেবতা দাঁড় করাবে না। ‘পূজার উদ্দেশ্যে তোমরা কোন মূর্তি তৈরী করবে না, তা আকাশের কোন কিছুর মত হোক বা মাটির উপরকার কোন কিছুর মত হোক কিম্বা জলের মধ্যেকার কোন কিছুর মত হোক। তোমরা তাদের পূজাও করবে না, তাদের সেবাও করবে না, কারণ কেবলমাত্র আমি সদাপ্রভুই তোমাদের ঈশ্বর। আমার পাওনা ভক্তি আমি চাই। যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের পাপের শাস্তি আমি তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত দিয়ে থাকি। কিন্তু যারা আমাকে ভালবাসে এবং আমার আদেশ পালন করে হাজার হাজার পুরুষ পর্যন্ত তাদের প্রতি আমার অটল ভালবাসা থাকবে। ‘কোন বাজে উদ্দেশ্যে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম নেবে না। যে তা করবে তাকে সদাপ্রভু শাস্তি দেবেন। ‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যেমন আদেশ করেছেন তেমনি করে তোমরা বিশ্রামবার আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে এবং তা পালন করবে। সপ্তাহের ছয় দিন তোমরা পরিশ্রম করবে এবং তোমাদের সমস্ত কাজ করবে, কিন্তু সপ্তম দিনটি হল তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামের দিন। সেই দিন তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়ে, তোমাদের দাস ও দাসী, তোমাদের গরু ও গাধা কিম্বা অন্য কোন পশু কিম্বা তোমাদের গ্রাম ও শহরে বাস করা অন্য জাতির লোক- কারও কোন কাজ করা চলবে না। এতে তোমাদের দাস ও দাসীও তোমাদের মত বিশ্রাম পাবে। মনে রেখো, তোমরাও মিসর দেশে দাসই ছিলে এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর কঠোর এবং শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে সেখান থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন। সেইজন্যই তিনি বিশ্রামবার পালন করবার আদেশ তোমাদের দিয়েছেন। ‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ মেনে তোমরা তোমাদের মা-বাবাকে সম্মান করে চলবে। তাতে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া দেশে তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকবে এবং তোমাদের মংগল হবে। ‘খুন কোরো না। ‘ব্যভিচার কোরো না। ‘চুরি কোরো না। ‘কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না। ‘অন্যের স্ত্রীর উপর লোভ কোরো না। অন্যের ঘর-দুয়ার, জমা-জমি, দাস-দাসী, গরু-গাধা কিম্বা আর কিছুর উপর লোভ কোরো না।’ “সেই পাহাড়ের উপর আগুন, মেঘ ও গাঢ় অন্ধকারের মধ্য থেকে সদাপ্রভু এই আদেশগুলোই তোমাদের সকলের কাছে জোরে ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়া তিনি তোমাদের কাছে আর কিছু বলেন নি। পরে তিনি সেগুলো দু’টি পাথরের ফলকের উপর লিখে আমার কাছে দিয়েছিলেন। “সেই দিন যখন পাহাড়টা জ্বলছিল আর অন্ধকারের মধ্য থেকে তোমরা তাঁর স্বর শুনতে পেয়েছিলে তখন তোমাদের সব গোষ্ঠী-সর্দারেরা আর বৃদ্ধ নেতারা আমার কাছে উঠে এসেছিলেন। তোমরা তখন বলেছিলে, ‘আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে কত গৌরবময় ও মহান তা তিনি আমাদের দেখিয়েছেন আর আগুনের মধ্য থেকে আমরা তাঁর স্বর শুনতে পেয়েছি। আজকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, ঈশ্বর কারও কাছে কথা বলবার পরেও সে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু এর পর আমরা মারা পড়তে যাব কেন? এই মহান আগুন তো আমাদের পুড়িয়ে ফেলবে; আর বেশীক্ষণ যদি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর স্বর শুনতে পাই তবে আমরা মারা পড়বই। মানুষের মধ্যে এমন কে আছে যে, আমাদের মত করে আগুনের মধ্য থেকে জীবন্ত ঈশ্বরের স্বর শুনবার পরেও বেঁচে আছে? আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যা বলেছেন, আপনিই কাছে গিয়ে তা শুনে আসুন। তিনি আপনাকে যা বলবেন তা আমাদের জানিয়ে দেবেন; আমরা তা শুনে সেইমতই চলব।’ “আমার সংগে যখন তোমরা কথা বলছিলে তখন সদাপ্রভু তোমাদের কথা শুনেছিলেন এবং আমাকে বলেছিলেন, ‘এই লোকেরা তোমাকে যা বলেছে তা আমি শুনেছি। তারা যা বলেছে তা ভালই। আমাকে ভক্তি করবার এবং আমার আদেশ পালন করে চলবার এই মনোভাব যেন তাদের সব সময় থাকে। তাতে তাদের ও তাদের সন্তানদের চিরস্থায়ী মংগল হবে। “‘তুমি তাদের তাম্বুতে ফিরে যেতে বল, কিন্তু তুমি এখানে আমার কাছে থাক। আমি তোমাকে সেই সমস্ত আদেশ, আইন ও নিয়ম দেব যা তোমাকে তাদের শিখাতে হবে, যেন অধিকার করবার জন্য যে দেশ আমি তাদের দিতে যাচ্ছি সেখানে তারা সেগুলো পালন করে চলে।’ “কাজেই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যা করবার আদেশ দিয়েছেন তা তোমাদের যত্নের সংগে পালন করতে হবে; তা থেকে একটুও এদিক-সেদিক হওয়া চলবে না। যাতে তোমরা বাঁচতে পার এবং তোমাদের মংগল হয় আর যে দেশ তোমরা অধিকার করবে সেখানে অনেক দিন বেঁচে থাকতে পার সেইজন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে যে পথে তোমাদের চলবার আদেশ দিয়েছেন তোমরা সেই সব পথেই চলবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ তোমাদের শিক্ষা দেবার জন্য আমাকে আদেশ দিয়েছেন, যেন যর্দন নদী পার হয়ে যে দেশ তোমরা অধিকার করতে যাচ্ছ সেখানে তোমরা তা পালন করে চল। এতে তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়েরা ও তাদের বংশধরেরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করে তাঁর দেওয়া এই সব নিয়ম ও আদেশ সারা জীবন পালন করবে এবং তার ফলে অনেক দিন বেঁচে থাকবে। ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা আমার কথা শোন এবং সতর্ক হয়ে এই সব মেনে চল, যাতে দুধ আর মধুতে ভরা সেই দেশে যাবার পরে তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তোমাদের মংগল হয় আর তোমরা সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠতে পার। “ইস্রায়েলীয়েরা, শোন, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এক। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ ও সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভালবাসবে। এই সব আদেশ যা আজ আমি তোমাদের দিচ্ছি তা যেন তোমাদের অন্তরে থাকে। তোমাদের ছেলেমেয়েদের তোমরা বার বার করে সেগুলো শিখাবে। ঘরে বসে থাকবার সময়, পথে চলবার সময়, শোবার সময় এবং বিছানা থেকে উঠবার সময় তোমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তোমরা তা মনে রাখবার চিহ্ন হিসাবে তোমাদের হাতে বেঁধে রাখবে এবং কপালে লাগিয়ে রাখবে। তোমাদের বাড়ীর দরজার চৌকাঠে ও ফটকে তোমরা সেগুলো লিখে রাখবে। “তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে দেশ দেবার কথা শপথ করে বলেছিলেন সেখানে তিনি তোমাদের নিয়ে যাবেন। সেখানে রয়েছে এমন সব সুন্দর ও বড় বড় শহর যা তোমরা নিজেরা তৈরী কর নি, “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তোমরা ভক্তি করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে এবং তাঁর নামেই শপথ করবে। তোমাদের আশেপাশে যে সব জাতি থাকবে তোমরা তাদের দেব-দেবতাদের পিছনে যাবে না, কারণ তোমাদের মধ্যে তোমাদের যে ঈশ্বর সদাপ্রভু রয়েছেন তিনি তাঁর পাওনা ভক্তি সম্বন্ধে খুব আগ্রহী; দেব-দেবতাদের পিছনে গেলে তোমাদের বিরুদ্ধে তাঁর ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠবে, আর তিনি পৃথিবীর উপর থেকে তোমাদের ধ্বংস করে ফেলবেন। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে পরীক্ষা করতে যেয়ো না, যেমন তোমরা মঃসাতে করেছিলে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে সব আদেশ, সাবধানের কথা আর নিয়ম দিয়েছিলেন তা অবশ্যই তোমাদের পালন করতে হবে। “ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেরা তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই যে সব সাবধানের কথা, নিয়ম ও নির্দেশ তোমাদের দিয়েছেন সেই সবের মানে কি?’ তখন তোমরা তাদের বলবে, ‘মিসর দেশে আমরা ফরৌণের দাস ছিলাম, কিন্তু সদাপ্রভু শক্তিশালী হাত ব্যবহার করে সেখান থেকে আমাদের বের করে এনেছেন। সদাপ্রভু আমাদের চোখের সামনে ফরৌণ ও তাঁর বাড়ীর সকলের উপর এবং মিসর দেশের উপর বড় বড় এবং ভয়ংকর চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ করেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে তিনি আমাদের বের করে এনেছিলেন যাতে আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশ দেবার শপথ তিনি করেছিলেন সেই দেশে নিয়ে গিয়ে আমাদের তা দিতে পারেন। আজকের মত যেন সব সময় আমাদের মংগল হয় আর আমরা বেঁচে থাকতে পারি সেইজন্য সদাপ্রভু আমাদের এই সব নিয়ম পালন করতে এবং আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করতে আদেশ দিয়েছেন। আমরা যদি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে তাঁর আদেশ মত এই আইন-কানুন মেনে চলবার দিকে মন দিই, তবে সেটাই হবে আমাদের পক্ষে তাঁর ইচ্ছামত চলা।’ “তোমরা যে দেশ অধিকার করবার জন্য যাচ্ছ সেখানে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তোমাদের নিয়ে যাবেন এবং অনেক জাতিকে তোমাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেবেন। এই জাতিগুলো হল হিত্তীয়, গির্গাষীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়। এই সাতটি জাতিই লোকসংখ্যায় এবং শক্তিতে তোমাদের চেয়ে বড়। তিনি যখন তাদের তোমাদের হাতের মুঠোয় এনে দেবেন এবং তোমরা তাদের হারিয়ে দেবে তখন তোমরা তাদের একেবারে ধ্বংস করে ফেলবে। তোমরা তাদের সংগে কোন সন্ধি করবে না এবং তাদের প্রতি কোন দয়া দেখাবে না। তোমরা তাদের সংগে কোন বিয়ের সম্বন্ধ স্থাপন করবে না। তোমাদের মেয়েদেরও তোমরা তাদের ছেলেদের হাতে দেবে না এবং তাদের মেয়েদেরও তোমরা তোমাদের ছেলেদের জন্য আনবে না, কারণ সেই মেয়েরা তোমাদের ছেলেদের আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেবে এবং দেব-দেবতার পূজা করাবে। তাতে সদাপ্রভুর ক্রোধের আগুন তোমাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠবে এবং সংগে সংগে তোমাদের ধ্বংস করে ফেলবে। তোমরা ঐ সব জাতির বেদীগুলো ভেংগে ফেলবে, পূজার পাথরগুলো চুরমার করে দেবে, পূজার আশেরা-খুঁটিগুলো কেটে ফেলবে এবং মূর্তিগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেবে। তোমরা এমন একটি জাতি যাকে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তোমরা যেন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিজের লোক ও সম্পত্তি হও সেইজন্য পৃথিবীর সমস্ত জাতির মধ্য থেকে তিনি তোমাদের বেছে নিয়েছেন। “অন্য জাতির চেয়ে তোমাদের লোকসংখ্যা বেশী মনে করে যে সদাপ্রভু তোমাদের সংগে নিজেকে ভালবাসার বাঁধনে বেঁধেছেন কিম্বা তোমাদের বেছে নিয়েছেন তা নয়, কারণ অন্য সব জাতির চেয়ে তোমাদের লোকসংখ্যা কম। তিনি তা করেছেন তোমাদের প্রতি তাঁর অটল ভালবাসার জন্য এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে তিনি যে শপথ করেছিলেন তা রক্ষা করবার জন্য। সেইজন্যই তিনি শক্তিশালী হাত ব্যবহার করে তোমাদের বের করে এনেছেন এবং মিসরের রাজা ফরৌণের হাত থেকে আর গোলামীর দেশ থেকে তোমাদের মুক্ত করেছেন। কাজেই তোমরা জেনে রেখো যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই ঈশ্বর। তিনি বিশ্বস্ত; যারা তাঁকে ভালবাসে ও তাঁর আদেশগুলো পালন করে তাদের জন্য তিনি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন তা তিনি হাজার হাজার পুরুষ পর্যন্ত রক্ষা করেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অটল ভালবাসা দেখান। কিন্তু যারা তাঁকে ভালবাসে না তাদের ধ্বংস করে তিনি তার শোধ দেন; আর তা করতে তিনি দেরি করেন না। কাজেই আজ আমি তোমাদের যে সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ দিচ্ছি তা তোমরা যত্নের সংগে পালন করবে। “যদি তোমরা এই সব নিয়মের দিকে মনোযোগ দাও এবং তা যত্নের সংগে পালন কর, তবে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে শপথ করেছিলেন সেই অনুসারে তোমাদের জন্য তিনি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন তা তিনি রক্ষা করবেন এবং তোমাদের প্রতি অটল ভালবাসা দেখাবেন। তিনি তোমাদের ভালবাসবেন, আশীর্বাদ করবেন এবং তোমাদের লোকসংখ্যা বাড়িয়ে দেবেন। যে দেশ তোমাদের দেবার কথা তিনি তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করে বলেছিলেন সেই দেশে তিনি তোমাদের আশীর্বাদ করবেন। তাতে তোমাদের অনেক সন্তান হবে, তোমাদের জমি থেকে তোমরা প্রচুর পরিমাণে শস্য, আংগুর-রস ও তেল পাবে, আর তোমাদের গরু, ছাগল ও ভেড়ারও অনেক বাচ্চা হবে। অন্য সব লোকদের চেয়ে তোমরা বেশী আশীর্বাদ পাবে। তোমাদের কেউই সন্তানহীন থাকবে না এবং তোমাদের পালের কোন পশুই বাচ্চাহীন থাকবে না। সদাপ্রভু সব রোগ থেকে তোমাদের মুক্ত রাখবেন। মিসরে যে সব ভীষণ রোগ তোমরা দেখেছ তা তিনি তোমাদের উপর হতে দেবেন না, কিন্তু যারা তোমাদের ঘৃণা করে তাদের উপর সেই সব হতে দেবেন। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের হাতের মুঠোয় যে সব জাতি এনে দেবেন তাদের সবাইকে তোমাদের ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তাদের তোমরা দয়া দেখাবে না এবং তাদের দেবতাদেরও পূজা করবে না, কারণ তা তোমাদের পক্ষে ফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে। “তোমরা মনে মনে বলতে পার, ‘এই সব জাতির লোকেরা আমাদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী; আমরা কেমন করে তাদের তাড়িয়ে বের করে দেব? ’ কিন্তু তোমরা তাদের ভয় কোরো না। ফরৌণ ও সারা মিসর দেশের উপর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কি করেছিলেন তা ভুলে যেয়ো না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে সব ভীষণ পরীক্ষা দ্বারা, আশ্চর্য কাজ ও চিহ্ন দ্বারা এবং তাঁর কঠোর এবং শক্তিশালী হাত দ্বারা তোমাদের বের করে এনেছেন তা তো তোমরা নিজেদের চোখেই দেখেছ। তোমরা এখন যে সব জাতিদের দেখে ভয় পাচ্ছ তাদের উপরও তিনি তা-ই করবেন। “এর পরেও তাদের মধ্যে যারা বেঁচে যাবে এবং তোমাদের কাছ থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখবে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদের মধ্যে ভিমরুল পাঠিয়ে দেবেন আর তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমরা তাদের ভয় কোরো না, কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যিনি তোমাদের মধ্যে আছেন, তিনি মহান ও ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগানো ঈশ্বর। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তোমাদের সামনে থেকে ঐ সব জাতিকে আস্তে আস্তে তাড়িয়ে দেবেন। তাদের সবাইকে তোমরা একসংগে তাড়িয়ে দেবে না, কারণ তাহলে তোমাদের চারপাশে বুনো জানোয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু ভীষণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে তোমাদের হাতে তাদের তুলে দেবেন যতক্ষণ না তারা একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের রাজাদের তিনি তোমাদের হাতে তুলে দেবেন আর তোমরা তাদের নাম পৃথিবী থেকে মুছে ফেলবে। কেউ তোমাদের বাধা দিয়ে রাখতে পারবে না; তোমরা তাদের ধ্বংস করে ফেলবে। তাদের দেব-দেবতার মূর্তিগুলো তোমরা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। তোমরা তাদের গায়ের সোনা-রূপার লোভ করবে না। নিজেদের জন্য তোমরা তা নেবে না, কারণ তা করলে তোমরা ওগুলোর ফাঁদে পড়বে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ওগুলো ঘৃণার জিনিস। কোন ঘৃণার জিনিস তোমাদের ঘরে আনবে না। ওগুলো তোমরা মনে-প্রাণে ঘৃণা ও তুচ্ছ করবে, কারণ ওগুলোর উপর রয়েছে ধ্বংসের অভিশাপ। ওগুলো যদি তোমরা ঘরে আন তবে তোমাদের উপরও ধ্বংসের অভিশাপ নেমে আসবে। “আজ আমি তোমাদের যে সব আদেশ দিচ্ছি তার প্রত্যেকটা পালন করবার দিকে তোমরা মন দাও, যাতে তোমরা বেঁচে থাক ও সংখ্যায় বেড়ে ওঠো আর সদাপ্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশ দেবার কথা শপথ করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেখানে ঢুকে তা অধিকার করতে পার। মনে করে দেখ, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই চল্লিশটা বছর কিভাবে মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে সারাটা পথ তোমাদের চালিয়ে এনেছেন। তোমাদের অহংকার ভেংগে দেবার জন্য এবং তোমাদের মনে কি আছে, অর্থাৎ তোমরা তাঁর আদেশ পালন করবে কি না, তা পরীক্ষায় ফেলে দেখাবার জন্য তিনি এই কাজ করেছেন। খিদেয় কষ্ট দিয়ে এবং যে মান্নার কথা তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের জানা ছিল না তা খাইয়ে তিনি তোমাদের অহংকার ভেংগে দিয়েছেন। এতে তিনি তোমাদের এই শিক্ষা দিতে চেয়েছেন যে, মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, কিন্তু সদাপ্রভুর মুখের প্রত্যেকটি কথাতেই বাঁচে। এই চল্লিশ বছর তোমাদের গায়ের কাপড় নষ্ট হয় নি এবং পা-ও ফুলে যায় নি। এই কথা তোমাদের অন্তরে জেনে রেখো যে, বাবা যেমন ছেলেকে শাসন করেন ঠিক সেইভাবে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের শাসন করেন। “তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ পালন করবে, তাঁর পথে চলবে এবং তাঁকে ভক্তি করবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে চমৎকার দেশটিতে তোমাদের নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে রয়েছে পাহাড় ও উপত্যকা দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী, ফোয়ারা আর মাটির তলার জল। সেখানে রয়েছে প্রচুর গম ও যব, আংগুর ও ডুমুর গাছ এবং ডালিম, জলপাইয়ের তেল আর মধু। সেই দেশে তোমরা পাবে প্রচুর খাবার এবং কোন কিছুরই অভাব তোমাদের থাকবে না। সেখানকার পাথরে রয়েছে লোহা। সেখানকার পাহাড় থেকে তোমরা তামা খুঁড়ে তুলতে পারবে। “তোমরা সেখানে খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হবার পর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া ঐ চমৎকার দেশটির জন্য তাঁর গৌরব করবে। তোমরা সতর্ক থাকবে যেন আজ আমি তাঁর যে সব আদেশ, নির্দেশ ও নিয়ম তোমাদের দিচ্ছি তা অমান্য করে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে না যাও। যদি তোমরা সতর্ক না থাক, তবে তোমরা যখন খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হবে আর সুন্দর সুন্দর বাড়ী-ঘর তৈরী করে সেখানে বাস করতে থাকবে, যখন তোমাদের পালের গরু-ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা বেড়ে যাবে আর তোমাদের অনেক সোনা-রূপা হবে এবং তোমাদের সব কিছু বেড়ে যাবে, তখন তোমরা অহংকারী হয়ে উঠবে এবং যিনি মিসর দেশের গোলামী থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন তোমাদের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তোমরা ভুলে যাবে। তিনি তোমাদের এক বিরাট, ভয়ংকর, শুকনা, জলহীন এবং বিষাক্ত সাপ ও কাঁকড়া-বিছায় ভরা মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি শক্ত পাথরের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য জল বের করেছেন। তিনি সেই মরু-এলাকায় তোমাদের মান্না খেতে দিয়েছেন যার কথা তোমাদের পূর্বপুরুষেরা কখনও জানেন নি। তোমাদের পরীক্ষা করবার জন্য ও অহংকার ভেংগে দেবার জন্য তিনি তা দিয়েছিলেন যাতে শেষ পর্যন্ত তোমাদের মংগল হয়। তোমরা হয়তো কেউ মনে মনে বলতে পার, ‘আমার নিজের শক্তিতে, নিজের হাতে কাজ করে আমি এই সব ধন-সম্পত্তি করেছি।’ কিন্তু তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা ভুলে যেয়ো না; তিনিই এই সব করবার ক্ষমতা তোমাদের দিয়েছেন, আর এইভাবে তিনি তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে ব্যবস্থার কথা শপথ করে বলেছিলেন তা তিনি এখন পূর্ণ করে চলেছেন। “যদি তোমরা কখনও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে গিয়ে দেব-দেবতাদের পিছনে যাও এবং তাদের সেবা ও পূজা কর, তবে আজ আমি তোমাদের বিরুদ্ধে এই কথা নিশ্চয় করে বলছি যে, তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। সদাপ্রভু তোমাদের সামনে যে সব জাতিকে ধ্বংস করছেন তাদের মত তোমরাও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর অবাধ্য হওয়ার দরুন ধ্বংস হয়ে যাবে। “ইস্রায়েলীয়েরা, শোন। যে সব জাতি তোমাদের চেয়ে লোকসংখ্যায় এবং শক্তিতে বড় তোমরা এখন গিয়ে তাদের আকাশ ছোঁয়া দেয়াল দিয়ে ঘেরা বড় বড় শহরগুলো দখল করবার জন্য যর্দন নদী পার হতে যাচ্ছ। সেখানকার লোকেরা অনাকীয়; তারা লম্বা ও শক্তিশালী। তোমরা অনাকীয়দের বিষয়ে জান; তাদের সম্বন্ধে তোমরা এই কথা বলতে শুনেছ, ‘অনাকীয়দের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে এমন লোক কোথায়? ’ কিন্তু তোমরা এই কথা জেনে রেখো যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই ধ্বংসকারী আগুনের মত তোমাদের আগে আগে যর্দন নদী পার হয়ে যাচ্ছেন। তিনি তাদের ধ্বংস করে দেবেন; তিনিই তোমাদের কাছে তাদের হার মানাবেন। তোমাদের কাছে সদাপ্রভু যে আশ্বাস দিয়েছেন সেই অনুসারে তোমরা তাদের তাড়িয়ে দেবে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের শেষ করে ফেলবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সামনে থেকে তাদের তাড়িয়ে দেবার পর তোমাদের কেউ যেন মনে মনে না বলে, ‘আমি নির্দোষ বলেই সদাপ্রভু এই দেশ অধিকার করবার জন্য আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন।’ আসলে তা নয়; এই সব জাতির লোকদের মন্দতার জন্যই সদাপ্রভু তোমাদের সামনে থেকে তাদের তাড়িয়ে দিতে যাচ্ছেন। নির্দোষ কিম্বা সৎ বলেই যে তোমরা তাদের দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ তা নয়, বরং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে যে কথা প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলেন তা পূরণ করবার জন্যই তিনি এই সব জাতির মন্দতার দরুন তোমাদের সামনে থেকে তাদের তাড়িয়ে দেবেন। কাজেই তোমরা জেনে রেখো, তোমরা নির্দোষ বলেই যে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই চমৎকার দেশটা তোমাদের অধিকার করতে দিচ্ছেন তা নয়। তোমরা তো একটা একগুঁয়ে জাতি। “তোমরা মরু-এলাকায় তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ক্রোধ কিভাবে জাগিয়ে তুলেছিলে তা মনে রেখো, কখনও ভুলে যেয়ো না। মিসর ছেড়ে আসবার দিন থেকে শুরু করে এখানে পৌঁছানো পর্যন্ত তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ভাব মনে পুষে আসছ। তোমরা হোরেবে এমন ভাবে সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিলে যে, তার দরুন তিনি তোমাদের ধ্বংস করে ফেলতে চেয়েছিলেন। সদাপ্রভু যে ব্যবস্থা তোমাদের জন্য স্থাপন করেছেন সেই ব্যবস্থা লেখা পাথরের ফলক দু’টা গ্রহণ করবার জন্য আমি পাহাড়ের উপর উঠে চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত সেখানেই ছিলাম। তখন আমি জল বা রুটি কিছুই খাই নি। সদাপ্রভুর নিজের লেখা রয়েছে এমন দু’টা পাথরের ফলক সদাপ্রভু আমাকে দিয়েছিলেন। তোমরা সবাই যেদিন সদাপ্রভুর সামনে জড়ো হয়েছিলে সেই দিন তিনি পাহাড়ের উপরে আগুনের মধ্য থেকে যে সব আদেশ তোমাদের কাছে ঘোষণা করেছিলেন সেগুলো ঐ ফলক দু’টার উপর লেখা ছিল। “সেই চল্লিশ দিন আর চল্লিশ রাত কেটে যাওয়ার পর সদাপ্রভু ঐ ব্যবস্থা লেখা পাথরের ফলক দু’টা আমাকে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি আর দেরি না করে এখনই নীচে নেমে যাও, কারণ যে লোকদের তুমি মিসর থেকে বের করে এনেছ তারা কুপথে গেছে। যে পথে চলবার আদেশ আমি দিয়েছিলাম এর মধ্যেই তারা তা থেকে দূরে সরে গেছে এবং পূজার জন্য ছাঁচে ফেলে একটা মূর্তি তৈরী করে নিয়েছে।’ “সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, ‘আমি এই লোকগুলোকে দেখেছি; এরা একটা একগুঁয়ে জাতি। না, তুমি আমাকে বাধা দিয়ো না; আমি তাদের ধ্বংস করে ফেলব এবং পৃথিবী থেকে তাদের নাম মুছে ফেলব। তারপর তোমার মধ্য দিয়ে আমি আরও শক্তিশালী এবং আরও বড় একটা জাতির সৃষ্টি করব।’ “এর পর আমি পাহাড় থেকে নেমে আসলাম; তখনও পাহাড়ে আগুন জ্বলছিল, আর আমার হাতে ছিল ব্যবস্থা লেখা সেই ফলক দু’টা। আমি চেয়ে দেখলাম, তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছ; পূজার জন্য তোমরা ছাঁচে ফেলে একটা বাছুরের মূর্তি তৈরী করে নিয়েছ। সদাপ্রভু তোমাদের যে পথে চলবার আদেশ দিয়েছিলেন তোমরা ঐটুকু সময়ের মধ্যেই সেই পথ থেকে সরে গেছ। কাজেই আমি সেই পাথরের ফলক দু’টা আমার হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। তোমাদের চোখের সামনেই সেই দু’টি টুকরা টুকরা হয়ে ভেংগে গেল। “সদাপ্রভুর চোখে মন্দ এমন সব পাপ করে তোমরা তাঁর ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিলে বলে আমি আগের বারের মত আবার চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত সদাপ্রভুর সামনে উবুড় হয়ে পড়ে রইলাম; জল বা রুটি কিছুই মুখে দিলাম না। সদাপ্রভুর ভীষণ অসন্তোষকে আমি ভয় করেছিলাম, কারণ তোমাদের ধ্বংস করে ফেলবার মত ক্রোধ তাঁর হয়েছিল। কিন্তু এবারও সদাপ্রভু আমার কথা শুনেছিলেন। হারোণকে ধ্বংস করে ফেলবার মত ক্রোধও তাঁর হয়েছিল কিন্তু সেই সময় আমি হারোণের জন্যও মিনতি করেছিলাম। তোমাদের সেই পাপের জিনিসটা, অর্থাৎ তোমাদের তৈরী সেই বাছুরটা নিয়ে আমি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলাম। তারপর আমি সেটা ধূলার মত গুঁড়া করে নিয়ে পাহাড় থেকে বয়ে আসা নদীর স্রোতে ফেলে দিয়েছিলাম। “তবিয়েরাতে, মঃসাতে ও কিব্রোৎ-হত্তাবাতেও তোমরা সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিলে। সদাপ্রভু কাদেশ-বর্ণেয় থেকে তোমাদের রওনা করে দেবার সময়ে বলেছিলেন, ‘যে দেশ আমি তোমাদের দিয়েছি তোমরা গিয়ে তা অধিকার কর।’ কিন্তু তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে। তোমরা তাঁকে বিশ্বাসও কর নি, তাঁর কথায় কানও দাও নি। আমি যখন থেকে তোমাদের জেনেছি তখন থেকেই দেখছি যে, তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে কেবল বিদ্রোহই করে চলেছ। “সদাপ্রভু তোমাদের ধ্বংস করে দেবার কথা বলেছিলেন বলে আমি সেই চল্লিশ দিন আর চল্লিশ রাত সদাপ্রভুর সামনে উবুড় হয়ে পড়ে ছিলাম। তাঁর কাছে আমি এই বলে প্রার্থনা করেছিলাম, ‘হে প্রভু সদাপ্রভু, তোমার লোকদের তুমি ধ্বংস করে ফেলো না। তারা তো তোমারই সম্পত্তি যাদের তুমি তোমার মহাশক্তি দ্বারা মুক্ত করেছ এবং তোমার শক্তিশালী হাত ব্যবহার করে মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছ। তোমার দাস অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কথা মনে কর। এই লোকদের একগুঁয়েমি, মন্দতা ও পাপের দিকে চেয়ে দেখো না। তা করলে যে দেশ থেকে তুমি আমাদের বের করে এনেছ সেই দেশের লোকেরা বলবে, সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা করা দেশে তাদের নিয়ে যেতে পারেন নি বলে কিম্বা তিনি তাদের ঘৃণা করেন বলে তাদের মেরে ফেলবার জন্য এই মরু-এলাকায় নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এরা তো তোমারই লোক, তোমারই সম্পত্তি যাদের তুমি তোমার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মহাশক্তিতে বের করে এনেছ।’ “সেই সময় সদাপ্রভু্‌ আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি দুই টুকরা পাথর কেটে আগের পাথর-ফলক দু’টার মত করে নাও এবং পাহাড়ের উপরে আমার কাছে উঠে এস। সেই সংগে কাঠের একটি সিন্দুকও তৈরী করে নিয়ো। আগের যে ফলক দু’টা তুমি ভেংগে ফেলেছ তার উপর যে কথা লেখা ছিল আমি তা-ই এই ফলক দু’টার উপর লিখে দেব। তারপর তুমি সেই দু’টা নিয়ে সিন্দুকটির মধ্যে রাখবে।’ “সেইজন্য আমি বাবলা কাঠ দিয়ে একটি সিন্দুক তৈরী করলাম এবং দুই টুকরা পাথর কেটে আগের ফলক দু’টার মত করে নিলাম। তারপর সেই দু’টা হাতে করে পাহাড়ের উপর উঠে গেলাম। সদাপ্রভু প্রথম ফলক দু’টার উপর যে কথা লিখেছিলেন এই দু’টার উপরও তা-ই লিখে ফলক দু’টা আমাকে দিলেন। সেই কথাগুলোই হল তাঁর সেই দশ আজ্ঞা যা তিনি তোমাদের সকলের একসংগে জড়ো হওয়ার দিনে পাহাড়ের উপর আগুনের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে ঘোষণা করেছিলেন। তারপর সদাপ্রভুর আদেশ মত আমি পাহাড় থেকে নীচে নেমে এসে আমার তৈরী করা সেই সিন্দুকটার মধ্যে ফলক দু’টা রাখলাম। সেগুলো এখনও সেখানে আছে।” ইস্রায়েলীয়েরা পরে বেরোৎ-বনে-যাকন থেকে রওনা হয়ে মোষেরোতে পৌঁছেছিল। সেখানেই হারোণ মারা গিয়েছিলেন এবং তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। তাঁর ছেলে ইলিয়াসর তাঁর জায়গায় মহাপুরোহিত হয়েছিলেন। তারপর ইস্রায়েলীয়েরা গুধগোদায় গিয়েছিল এবং সেখান থেকে গিয়েছিল যট্‌বাথায়। যট্‌বাথায় অনেকগুলো ছোট নদী ছিল। সেই সময় সদাপ্রভু তাঁর ব্যবস্থা-সিন্দুক বয়ে নেবার জন্য এবং সেবা-কাজের উদ্দেশ্যে তাঁর সামনে দাঁড়াবার জন্য আর তাঁর নামে আশীর্বাদ উচ্চারণ করবার জন্য লেবীয়দের বেছে নিয়েছিলেন। এই সব কাজ তারা আজও করছে। সেইজন্যই লেবীয়েরা তাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্যে সম্পত্তির কোন ভাগ বা অধিকার পায় নি; তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা অনুসারে সদাপ্রভুই তাদের সম্পত্তি। “আগের বারের মত সেই বারও আমি চল্লিশ দিন আর চল্লিশ রাত পাহাড়ের উপর ছিলাম আর সেই বারও সদাপ্রভু আমার কথা শুনেছিলেন। তোমাদের ধ্বংস করে দেবার ইচ্ছা তাঁর ছিল না। সদাপ্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুমি গিয়ে তাদের পরিচালনা করে নিয়ে যাও, যাতে তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমি যে দেশ দেবার শপথ করেছিলাম সেখানে গিয়ে তারা তা অধিকার করে নিতে পারে।’ “আকাশ ও তার উপরকার সব কিছু এবং পৃথিবী ও তার মধ্যেকার সব কিছুই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর। তবুও তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি তাঁর টান ছিল বলে তিনি তাদের ভালবেসেছিলেন। তিনি সমস্ত জাতির মধ্য থেকে তাদের বংশধরদের, অর্থাৎ তোমাদের বেছে নিয়েছেন আর আজও তোমরা সেই বেছে নেওয়া জাতিই আছ। সেইজন্য তোমরা তোমাদের অন্তরের সুন্নত কর; একগুঁয়ে হয়ে আর থেকো না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সব দেব-দেবতার উপরে এবং তিনি প্রভুদের প্রভু। তিনি মহান, শক্তিশালী এবং ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগানো ঈশ্বর। তিনি কারও পক্ষ নেন না এবং ঘুষও খান না। অনাথ ও বিধবাদের অধিকার তিনি রক্ষা করেন এবং তোমাদের মধ্যে বাস করা বিদেশীদের খেতে পরতে দিয়ে তাঁর ভালবাসা দেখান। তিনি তাদের খেতে পরতে দেন। তোমরাও বিদেশী বাসিন্দাদের ভালবেসো, কারণ মিসরে তোমরাও বিদেশী বাসিন্দা ছিলে। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করবে এবং তাঁর সেবা করবে; তাঁকেই আঁকড়ে ধরে থাকবে এবং তাঁর নামেই শপথ করবে। তিনিই তোমাদের গৌরব, তিনিই তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা নিজেদের চোখে যে সব মহৎ ও ভয় জাগানো আশ্চর্য কাজ দেখেছ তা তিনি তোমাদের জন্যই করেছেন। তোমাদের যে পূর্বপুরুষেরা মিসরে গিয়েছিলেন তাঁরা সংখ্যায় ছিলেন মাত্র সত্তরজন আর এখন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সংখ্যা করেছেন আকাশের তারার মত অসংখ্য। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভাল-বাসবে আর তিনি যা চান তা করবে এবং তাঁর নিয়ম, নির্দেশ ও আদেশ সব সময় পালন করবে। আজ তোমরা মনে রেখো যে, আমি এই সব কথা তোমাদেরই বলছি, তোমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে বলছি না, কারণ তারা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গড়ে তুলবার কাজ জানেও নি দেখেও নি। তারা তাঁর মহিমা এবং তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া কঠোর ও শক্তিশালী হাত দেখে নি। মিসরের মধ্যে মিসরের রাজা ফরৌণ ও তাঁর সারা দেশের উপর তিনি যে সব চিহ্ন কাজ এবং অন্যান্য কাজ করেছিলেন তা-ও তারা দেখে নি। মিসরীয় সৈন্যদল, তাদের ঘোড়া ও রথগুলোর প্রতি তিনি যা করেছিলেন এবং তারা যখন তোমাদের পিছনে তাড়া করে আসছিল তখন কেমন করে তিনি লোহিত সাগরের জলে তাদের ডুবিয়ে দিয়েছিলেন আর কেমন করে তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তা-ও তারা দেখে নি। তোমরা এখানে এসে না পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি মরু-এলাকায় তোমাদের জন্য যা করেছিলেন তা-ও তোমাদের ছেলেমেয়েরা দেখে নি। তিনি রূবেণ-গোষ্ঠীর ইলীয়াবের ছেলে দাথন ও অবীরামের প্রতি যা করেছিলেন, অর্থাৎ যেভাবে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের মাঝখানে পৃথিবী মুখ খুলে তাদের ও তাদের পরিবারের লোকজন, তাদের তাম্বু এবং তাদের সমস্ত জীবন্ত প্রাণীকে গিলে ফেলেছিল তা-ও তারা দেখে নি। কিন্তু সদাপ্রভুর এই সব বড় বড় কাজ তোমরাই নিজেদের চোখে দেখেছ। তোমরা যে দেশটা দখল করতে যাচ্ছ সেটা মিসর দেশের মত নয় যেখান থেকে তোমরা এসেছ। তোমরা সেখানে বীজ বুনতে, আর সব্‌জী ক্ষেতে যেমন করা হয় তেমনি করে সেখানে পা দিয়ে জল সেচের কাজ করতে। কিন্তু যর্দন নদী পার হয়ে যে দেশটা তোমরা দখল করতে যাচ্ছ সেটা পাহাড় আর উপত্যকায় ভরা; সেই দেশ জল পায় আকাশ থেকে। সেই দেশের দেখাশোনা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই করেন। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব সময় তাঁর চোখ সেই দেশের উপর রয়েছে। “কাজেই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভালবাসা ও সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা করবার যে আদেশ আজ আমি তোমাদের দিলাম তা তোমরা বিশ্বস্তভাবে পালন করবে। তা করলে সদাপ্রভু সময়মত, অর্থাৎ শরৎ ও বসন্তকালে তোমাদের দেশের উপর বৃষ্টি দেবেন যার ফলে তোমরা প্রচুর শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেল পাবে। সদাপ্রভু তোমাদের পশুপালের জন্য মাঠে ঘাস হতে দেবেন। তা ছাড়া তোমরাও প্রাণ ভরে খেতে পাবে। “তোমরা কিন্তু সতর্ক থেকো, তা না হলে তোমরা ছলনায় পড়ে সদাপ্রভুর কাছ থেকে সরে যাবে এবং দেব-দেবতার সেবা ও পূজা করবে। এতে তোমাদের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠবে এবং তিনি আকাশের দরজা বন্ধ করে দেবেন, যার ফলে বৃষ্টিও হবে না এবং জমিতে ফসলও হবে না। যে চমৎকার দেশটা সদাপ্রভু তোমাদের দিচ্ছেন সেখান থেকে তোমরা অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তোমাদের অন্তর ও মনে আমার এই কথাগুলো গেঁথে রাখবে, তা মনে রাখবার চিহ্ন হিসাবে হাতে বেঁধে রাখবে এবং কপালে লাগিয়ে রাখবে। তোমাদের ছেলেমেয়েদের সেগুলো শিখাবে। ঘরে বসে থাকবার সময়, পথে চলবার সময়, শোবার সময় এবং বিছানা থেকে উঠবার সময় তোমরা এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তোমাদের বাড়ীর দরজার চৌকাঠে এবং ফটকে তোমরা সেগুলো লিখে রাখবে। যদি তোমরা এই সব কর তবে যে দেশ দেবার শপথ সদাপ্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে করেছিলেন সেই দেশে তোমরা ও তোমাদের ছেলেমেয়েরা ততকাল বেঁচে থাকবে যতকাল এই পৃথিবীর উপর মহাকাশ থাকবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভালবাসবার, তাঁর পথে চলবার এবং তাঁকে আঁকড়ে ধরে রাখবার এই যে সব আদেশ আমি তোমাদের দিলাম তা তোমরা যত্নের সংগে পালন করবে। তা করলে সদাপ্রভুই তোমাদের সামনে থেকে ঐ সব জাতিগুলোকে বের করে দেবেন, আর তোমরা তোমাদের চেয়েও বড় বড় এবং শক্তিশালী জাতিকে বেদখল করবে। দক্ষিণের মরু-এলাকা থেকে লেবানন পর্যন্ত এবং ইউফ্রেটিস নদী থেকে ভুমধ্য সাগর পর্যন্ত তোমরা যেখানে পা ফেলবে সেই জায়গাই তোমাদের হবে। কোন লোকই তোমাদের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। তোমরা সেই দেশের যেখানেই যাবে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে সেখানকার লোকদের মনে তোমাদের সম্বন্ধে একটা ভয়ের ভাব ও কাঁপুনি ধরিয়ে দেবেন। “দেখ, আজ আমি তোমাদের সামনে একটা আশীর্বাদ ও একটা অভিশাপ তুলে ধরছি। আজ আমি তোমাদের কাছে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর যে আদেশগুলো দিলাম তা যদি তোমরা পালন কর, তবে এই আশীর্বাদ তোমাদের হবে। কিন্তু যদি তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ অমান্য কর এবং যে পথে চলবার আদেশ আমি আজ দিয়েছি তা থেকে সরে গিয়ে তোমাদের কাছে নতুন এমন দেব-দেবতার পিছনে যাও, তবে তোমাদের উপর অভিশাপ পড়বে। দখল করবার জন্য তোমরা যে দেশে ঢুকতে যাচ্ছ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন সেই দেশে তোমাদের নিয়ে যাবেন তখন গরিষীম পাহাড়ের উপর থেকে সেই আশীর্বাদের কথা তোমরা ঘোষণা করবে আর অভিশাপের কথা ঘোষণা করবে এবল পাহাড়ের উপর থেকে। তোমরা তো জান, যর্দন নদীর পশ্চিম দিকের রাস্তার পশ্চিমে গিল্‌গলের কাছাকাছি অরাবার বাসিন্দা কনানীয়দের দেশের মধ্যে মোরির এলোন গাছগুলোর কাছে ঐ পাহাড় দু’টা রয়েছে। “তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদা-প্রভু যে দেশ তোমাদের দখল করবার জন্য দিয়েছেন সেখানে সারা জীবন এই সব নিয়ম ও নির্দেশ যত্নের সংগে তোমাদের পালন করতে হবে। তোমরা যে সমস্ত জাতিদের বেদখল করতে যাচ্ছ তারা যে সব ছোট-বড় পাহাড়ের উপরে ও ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছের নীচে তাদের দেব-দেবতার পূজা করে সেই জায়গাগুলো তোমরা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেবে। তাদের বেদীগুলো ভেংগে দেবে, পূজার পাথরগুলো চুরমার করে দেবে, পূজার আশেরা-খুঁটিগুলো পুড়িয়ে দেবে, দেব-দেবীর মূর্তিগুলো ভেংগে ফেলে দেবে এবং এইভাবে সেই সব জায়গা থেকে তাদের দেব-দেবতাদের নাম মুছে ফেলবে। “তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপাসনা তাদের পূজার মত করে করবে না। কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য তোমাদের সব গোষ্ঠীকে দেওয়া জায়গা থেকে যে জায়গাটা তাঁর বাসস্থান হিসাবে বেছে নেবেন তোমরা সেখানেই তাঁর উপাসনার জন্য যাবে। তোমরা তোমাদের পোড়ানো-উৎসর্গ এবং অন্যান্য পশু-উৎসর্গ, তোমাদের আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ, তোমাদের বিশেষ দান এবং মানত-পূরণের উৎসর্গ, তোমাদের নিজেদের ইচ্ছায় করা উৎসর্গ এবং তোমাদের গরু-ছাগল-ভেড়ার প্রথম বাচ্চা সেখানেই নিয়ে যাবে। সেখানেই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে তোমরা ও তোমাদের পরিবারের লোকেরা খাওয়া-দাওয়া করবে এবং তাঁর আশীর্বাদ অনুসারে পাওয়া তোমাদের পরিশ্রমের ফল নিয়ে তোমরা আনন্দ করবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সম্পত্তি হিসাবে যে দেশ তোমাদের দিচ্ছেন তোমরা যর্দন নদী পার হয়ে গিয়ে যখন সেই দেশে বাস করতে থাকবে তখন তিনি তোমাদের চারপাশের শত্রুদের সংগে লড়াই থেকে তোমাদের বিশ্রাম দেবেন, আর তোমরা নিরাপদে সেখানে বাস করতে পারবে। তখন তিনি নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য যে জায়গাটা তাঁর বাসস্থান হিসাবে বেছে নেবেন সেখানে তোমরা আমার আদেশ করা সব জিনিস নিয়ে আসবে- তোমাদের পোড়ানো-উৎসর্গ ও অন্যান্য পশু-উৎসর্গ, তোমাদের আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ, বিশেষ দান এবং তোমাদের বাছাই করা জিনিস যা তোমরা সদাপ্রভুর কাছে মানত করেছ। সেখানে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়েরা, তোমাদের দাস ও দাসীরা এবং তোমাদের গ্রাম ও শহরের লেবীয়েরা যাদের নিজের বলতে কোন জায়গা-জমি কিম্বা সম্পত্তি নেই তোমরা সবাই আনন্দ করবে। দেখো, যেন তোমাদের খুশীমত যে কোন জায়গায় তোমরা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান না কর। তোমাদের গোষ্ঠীগুলোকে দেওয়া জায়গা থেকে যে জায়গাটা সদাপ্রভু বেছে নেবেন সেখানেই তোমরা ঐ সব পোড়ানো-উৎসর্গ করবে আর সেখানেই তোমরা আমার আদেশ করা সব কিছু করবে। “তবে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করে যে সব পশু দেবেন তা তোমরা যে কোন গ্রামে বা শহরে কেটে তোমাদের খুশীমত মাংস খেতে পারবে, যেমন করে তোমাদের শুচি-অশুচি সব লোকেরা কৃষ্ণসার কিম্বা হরিণের মাংস খায়। কিন্তু রক্ত খাওয়া তোমাদের চলবে না; তা জলের মত করে মাটিতে ঢেলে দিতে হবে। এছাড়া তোমাদের শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেলের দশ ভাগের এক ভাগ, গরু-ছাগল-ভেড়ার প্রথম বাচ্চা, তোমাদের মানত করা জিনিস, তোমাদের নিজের ইচ্ছায় করা কোন উৎসর্গ এবং বিশেষ দান তোমাদের নিজেদের গ্রাম বা শহরের মধ্যে খাওয়া চলবে না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া জায়গায় তাঁর সামনে এগুলো তোমাদের খেতে হবে। তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়েরা, তোমাদের দাস-দাসীরা এবং তোমাদের গ্রাম ও শহরের লেবীয়েরা তা খাবে এবং তোমাদের পরিশ্রমের ফল নিয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে আনন্দ করবে। তোমাদের দেশে তোমরা যতদিন বাস করবে ততদিন লেবীয়দের প্রতি তোমাদের খেয়াল রাখতে হবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তোমাদের দেশের সীমানা বাড়িয়ে দেবার পরে যখন তোমরা মাংস খাবার ইচ্ছা নিয়ে বলবে, ‘মাংস খাব,’ তখন তোমরা খুশীমত মাংস খেতে পারবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য যে জায়গাটা বেছে নেবেন সেটা যদি তোমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে হয়, তবে আমার দেওয়া আদেশ অনুসারে তোমরা সদাপ্রভুর দেওয়া গরু-ভেড়ার পাল থেকে পশু নিয়ে কাটতে পারবে এবং যার যার গ্রাম ও শহরে খুশীমত মাংস খেতে পারবে। কৃষ্ণসার কিম্বা হরিণের মাংসের মতই তোমরা তা খাবে। শুচি-অশুচি সবাই তা খেতে পারবে। কিন্তু সাবধান! রক্ত খাবে না, কারণ রক্তই হল প্রাণ, আর তোমরা মাংসের সংগে সেই প্রাণ খাবে না। তোমরা রক্ত খাবে না, তা জলের মত করে মাটিতে ঢেলে দেবে। তোমাদের ও তোমাদের পরে তোমাদের সন্তানদের যাতে মংগল হয় সেইজন্য তোমরা রক্ত খাবে না; তাহলে সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করা হবে। “সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া জায়গায় তোমাদের পবিত্র জিনিস এবং মানতের জিনিস নিয়ে যেতে হবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেদীর উপর তোমরা তোমাদের পোড়ানো-উৎসর্গের মাংস ও রক্ত উৎসর্গ করবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেদীর গায়ে তোমাদের উৎসর্গ করা পশুর রক্ত ঢেলে দিতে হবে, কিন্তু তার মাংস তোমরা খেতে পারবে। তোমাদের ও তোমাদের পরে তোমাদের ছেলেমেয়েদের যাতে সব সময় মংগল হয় সেইজন্য আমার দেওয়া এই সব আদেশ তোমরা যত্নের সংগে পালন করবে, কারণ তা করলে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে যা ন্যায় এবং ভাল তা-ই করা হবে। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপাসনা তাদের পূজার মত করে করবে না, কারণ তাদের দেব-দেবতার পূজায় তারা এমন সব জঘন্য কাজ করে যা সদাপ্রভু ঘৃণা করেন। এমন কি, তারা তাদের দেব-দেবতার কাছে তাদের ছেলেমেয়েদের আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করে। “আমি তোমাদের যে যে আদেশ দিলাম সেই সব তোমরা পালন করবে; এর সংগে কিছু যোগও দেবে না, আবার এর থেকে কিছু বাদও দেবে না। তবে তোমরা সেই নবী বা স্বপ্ন-দেখা লোকের কথা শুনো না। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তোমাদের সব মন-প্রাণ দিয়ে ভালবাস কিনা তা তিনি তোমাদের পরীক্ষায় ফেলে দেখিয়ে দিচ্ছেন। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথামতই তোমাদের চলতে হবে এবং তাঁকেই ভক্তি করতে হবে। তোমরা তাঁর আদেশ পালন করবে ও তাঁর বাধ্য হয়ে চলবে; তোমরা তাঁর সেবা করবে ও তাঁকেই আঁকড়ে ধরে থাকবে। সেই নবী বা সেই স্বপ্ন-দেখা লোকটাকে মেরে ফেলতে হবে, কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন এবং সেই গোলামীর দেশ থেকে তোমাদের মুক্ত করেছেন, সে তাঁরই বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উস্‌কানি দিয়েছে এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে পথে চলতে তোমাদের আদেশ করেছেন সেই পথ থেকে তোমাদের ফিরাতে চেষ্টা করেছে। তোমাদের মধ্য থেকে সেই মন্দতা তোমরা শেষ করে দেবে। তবে তার ডাকে সাড়া দিয়ো না বা তার কথায় কান দিয়ো না। তাকে কোন দয়া দেখাবে না; তাকে রেহাই দেবে না, কিম্বা তাকে রক্ষাও করবে না। তাকে মেরে ফেলতেই হবে। তাকে মেরে ফেলবার কাজটা তুমি নিজের হাতেই আরম্ভ করবে, তারপর অন্য সবাই যোগ দেবে। যিনি তোমাকে মিসর দেশের গোলামী থেকে বের করে এনেছেন তোমার সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিক থেকে সে তোমাকে ফিরাবার চেষ্টা করেছে বলে তাকে তুমি পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে। তাতে ইস্রায়েলীয়েরা সকলে সেই কথা শুনে ভয় পাবে এবং তোমাদের মধ্যে কেউ আর এই রকম মন্দ কাজ করবে না। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে সব গ্রাম বা শহর তোমাদের বাস করবার জন্য দিতে যাচ্ছেন তার কোনটা সম্বন্ধে হয়তো তোমরা শুনতে পাবে যে, সেখানকার ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে কিছু দুষ্ট লোক দেখা দিয়েছে যারা সেখানকার লোকদের এই বলে বিপথে টেনে নিয়ে গিয়েছে, ‘চল, আমরা দেব-দেবতার পূজা করি,’ যে দেব-দেবতারা তোমাদের কাছে নতুন। তা-ই যদি হয় তবে ব্যাপারটা তোমাদের খুব ভাল করে খোঁজ-খবর নিয়ে পরীক্ষা ও তদন্ত করে দেখতে হবে। আর তা যদি সত্যি বলে প্র্রমাণিত হয় যে, এই জঘন্য কাজ তোমাদের মধ্যে করা হয়েছে, তবে সেখানকার সব বাসিন্দাদের অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। সেই গ্রাম বা শহর এবং তার লোকজন ও পশুপাল তোমরা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেবে। সেখানকার সব লুট করা জিনিস তোমরা শহর-চকের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে সমস্ত জিনিস ও সেই গ্রাম বা শহর তোমরা তোমাদের সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের মত করে সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেবে। সেই জায়গাটা চিরদিনের জন্য যেন একটা ধ্বংসের স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে; আর কখনও যেন সেটা তৈরী করা না হয়। সদাপ্রভু যাতে তাঁর ভয়ংকর ক্রোধ থেকে ফেরেন সেইজন্য তোমাদের হাতে যেন এই সব জিনিসের একটাও দেখা না যায়, কারণ তার উপর রয়েছে ধ্বংসের অভিশাপ। তাহলে তিনি তোমাদের দয়া ও করুণা করবেন এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করা প্রতিজ্ঞা অনুসারে তোমাদের বংশ বাড়িয়ে দেবেন, কারণ আজ আমি তোমাদের যে সব আদেশ দিচ্ছি তা পালন করে এবং তাঁর চোখে যা ভাল তা-ই করে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাধ্য হয়েছ। “তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সন্তান। সেইজন্য মৃত লোকদের জন্য শোক প্রকাশ করতে গিয়ে দেহের কোন জায়গায় তোমাদের ক্ষত করা চলবে না, কিম্বা মাথার সামনের চুল কামানো চলবে না। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে একটা আলাদা করা জাতি। পৃথিবীর সমস্ত জাতিগুলোর মধ্য থেকে সদাপ্রভু তোমাদের বেছে নিয়েছেন যাতে তোমরা তাঁর নিজের বিশেষ সম্পত্তি হও। “তোমরা কোন ঘৃণার জিনিস খাবে না। যে সব পশুর মাংস তোমরা খেতে পারবে সেগুলো হল গরু, ভেড়া, ছাগল, হরিণ, কৃষ্ণসার, চিতি-হরিণ, বুনো ছাগল, পিছন-সাদা হরিণ, সাদা হরিণ এবং পাহাড়ী ভেড়া। যে সব পশুর খুর পুরোপুরি দুই ভাগে চেরা এবং যারা জাবর কাটে সেই সব পশুর মাংস তোমরা খেতে পারবে। কিন্তু মাত্র জাবর কাটা কিম্বা শুধু খুর চেরা পশুর মাংস তোমরা খাবে না। তোমরা উট, খরগোস ও শাফন খাবে না, কারণ সেগুলো জাবর কাটলেও তাদের খুর চেরা নয়। তাই সেগুলো তোমাদের পক্ষে অশুচি। শূকরও অশুচি; খুর চেরা হলেও সে জাবর কাটে না। তোমরা এগুলোর মাংস খাবে না কিম্বা তাদের মৃতদেহও ছোঁবে না। “জলে বাস করা প্রাণীদের মধ্যে যেগুলোর ডানা ও আঁশ আছে সেগুলো তোমরা খেতে পারবে, কিন্তু যেগুলোর ডানা ও আঁশ নেই সেগুলো তোমরা খেতে পারবে না। তোমাদের পক্ষে সেগুলো অশুচি। “ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায় এমন সব পোকা তোমাদের পক্ষে অশুচি। সেগুলো তোমরা খাবে না; কিন্তু যে সব প্রাণীর ডানা আছে এবং শুচি সেগুলো তোমরা খেতে পারবে। “মরে পড়ে থাকা কোন প্রাণী তোমরা খাবে না, কারণ তোমরা তোমাদের সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে একটা আলাদা করা জাতি। তোমাদের গ্রাম বা শহরে বাস করা অন্য জাতির কোন লোককে তোমরা সেটা দিয়ে দিতে পারবে এবং সে তা খেতে পারবে, কিম্বা তোমরা কোন বিদেশীর কাছে সেটা বিক্রি করে দিতে পারবে। “ছাগলের বাচ্চার মাংস তার মায়ের দুধে রান্না করবে না। “প্রত্যেক বছর তোমাদের জমিতে যে সব ফসল হবে তার দশ ভাগের এক ভাগ তোমরা অবশ্যই আলাদা করে রাখবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে যাতে তোমরা ভক্তি করতে শেখ সেইজন্য তোমাদের শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেলের দশ ভাগের এক ভাগ এবং তোমাদের পালের গরু-ভেড়া-ছাগলের প্রথম বাচ্চার মাংস তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে তোমাদের এমন জায়গায় খেতে হবে যে জায়গাটা তিনি নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য তাঁর বাসস্থান হিসাবে বেছে নেবেন। কিন্তু যদি সেই জায়গা খুব দূরে হয় এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের এত আশীর্বাদ করে থাকেন যে, সেই দশ ভাগের এক ভাগ সদাপ্রভুর সেই জায়গা অনেক দূর বলে তোমাদের পক্ষে বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তবে তা বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেই বেছে নেওয়া জায়গায় যাবে। সেই টাকা দিয়ে তোমরা তোমাদের খুশীমত জিনিস কিনবে, যেমন গরু-ছাগল-ভেড়া, আংগুর-রস, অন্য কোন মদ কিম্বা তোমাদের খুশীমত আর কিছু। তারপর তোমরা তোমাদের পরিবার নিয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ করবে। যে লেবীয়েরা তোমাদের গ্রাম বা শহরে বাস করে তাদের কথা তোমরা ভুলে যেয়ো না, কারণ নিজেদের বলতে তাদের কোন জায়গা-জমি বা সম্পত্তি নেই। “প্রত্যেক তৃতীয় বছরের শেষে তোমাদের সেই বছরের ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ শহরে নিয়ে এসে তোমরা জমা করবে। এতে লেবীয়েরা, যাদের নিজেদের বলতে কোন জায়গা-জমি বা সম্পত্তি নেই এবং সেখানকার বিদেশী বাসিন্দারা, বিধবারা আর অনাথ ছেলেমেয়েরা প্রাণ ভরে খেতে পাবে। এতে তোমাদের সব কাজে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করবেন। “প্রতি সপ্তম বছরের শেষে অন্যদের কাছ থেকে তোমাদের পাওনা সব মকুব করে দেবে। এই নিয়মে তা মকুব করতে হবে: প্রত্যেক ইস্রায়েলীয় পাওনাদার অন্য ইস্রায়েলীয়কে দেওয়া সব ঋণ মকুব করে দেবে। ঋণ মকুব করে দেবার জন্য সদাপ্রভু যে সময় ঠিক করে দিয়েছেন তা ঘোষণা করা হয়েছে বলে কোন ইস্রায়েলীয় ভাইয়ের কাছ থেকে ঋণ শোধের দাবি করা চলবে না। ভিন্ন জাতির লোকদের কাছ থেকে ঋণ শোধের দাবি করা চলবে, কিন্তু তোমাদের ভাইদের ঋণ তোমাদের মকুব করে দিতে হবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তোমাদের আশীর্বাদ করবেন, আর তাতে তোমরা অনেক জাতির লোককে ঋণ দেবে, কিন্তু কারও কাছ থেকে তোমাদের ঋণ নিতে হবে না। তোমরা অনেক জাতিকে শাসন করবে কিন্তু কেউ তোমাদের শাসন করবে না। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ তোমাদের দিতে যাচ্ছেন সেই দেশের কোন জায়গায় যদি তোমাদের ভাইদের মধ্যে কেউ গরীব থাকে, তবে তার উপর তোমাদের অন্তর কঠিন কোরো না, কিম্বা সেই গরীব ভাইয়ের জন্য তোমাদের হাত মুঠো করে রেখো না। তোমাদের হাত যেন খোলা থাকে; তার দরকার মত তাকে অবশ্যই ধার দেবে। সাবধান, তোমাদের মনে এই খারাপ চিন্তাকে আমল দিয়ো না যে, সপ্তম বছর, অর্থাৎ ঋণ মকুবের বছর প্রায় এসে গেছে। এই চিন্তা করে তোমাদের সেই অভাবী ভাইয়ের প্রতি বিরুদ্ধ মনোভাব নিয়ে তাকে খালি হাতে বিদায় কোরো না। যদি তা কর তবে তা নিয়ে সে তোমাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর কাছে কাতর হয়ে বিচার চাইবে আর তোমরা অন্যায়ের জন্য দোষী হবে। মনে অনিচ্ছার ভাব না রেখে খোলা হাতে তাকে দেবে; তাহলে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সব কাজে আশীর্বাদ করবেন এবং তোমরা যাতে হাত দেবে তাতেই আশীর্বাদ পাবে। গরীব লোক অবশ্য দেশে সব সময়ই থাকবে। সেইজন্য আমি তোমাদের এই আদেশ দিচ্ছি যে, তোমাদের ভাইদের প্রতি এবং দেশের গরীব ও অভাবী লোকদের প্রতি তোমাদের হাত যেন খোলা থাকে। “যদি কোন ইব্রীয় পুরুষ বা স্ত্রীলোককে তোমাদের কাছে বিক্রি করা হয়, তবে ছয় বছর তোমাদের কাজ করবার পরে সপ্তম বছরে তাকে অবশ্যই তোমাদের ছেড়ে দিতে হবে। ছেড়ে দেবার সময়ে তাকে খালি হাতে বিদায় করবে না। তোমরা তাকে খোলা হাতে তোমাদের পাল থেকে ছাগল ও ভেড়া, খামার থেকে শস্য এবং আংগুর মাড়াইয়ের জায়গা থেকে আংগুর-রস দেবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে পরিমাণে আশীর্বাদ করেছেন তোমরা সেই পরিমাণেই তাকে দেবে। মনে রেখো, মিসর দেশে তোমরাও দাস ছিলে এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের মুক্ত করেছেন। সেইজন্য আজ আমি তোমাদের এই আদেশ দিচ্ছি। “কিন্তু তোমাদের ও তোমাদের পরিবারের লোকদের প্রতি ভালবাসার দরুন এবং তোমাদের কাছে সুখে আছে বলে যদি সেই দাস জানায় যে, সে তোমাদের ছেড়ে যাবে না, তবে তোমরা তার কানের লতি দরজার উপর রেখে তুরপুণ দিয়ে ছেঁদা করে দেবে; তাতে সে সারা জীবন তোমাদের দাস হয়ে থাকবে। তোমাদের দাসীর বেলায়ও তা-ই করবে। “দাস কিম্বা দাসীকে মুক্ত করে দেওয়াটা তোমার কোন কষ্টের ব্যাপার বলে মনে কোরো না, কারণ এই ছয় বছর সে তোমাদের জন্য যে কাজ করেছে তার দাম দু’জন মজুরের মজুরির সমান। তাদের মুক্ত করে দিলে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সব কিছুতে আশীর্বাদ করবেন। “তোমাদের গরু-ভেড়া ও ছাগলের প্রত্যেকটা প্রথম পুরুষ বাচ্চা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে। তোমাদের গরুর প্রথম বাচ্চাকে কাজে লাগাবে না এবং ছাগল ও ভেড়ার প্রথম বাচ্চার লোম কাটবে না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া জায়গায় প্রত্যেক বছর তোমরা তোমাদের পরিবার নিয়ে তাঁর সামনে সেগুলোর মাংস খাবে। কিন্তু সেই সব পশুর কোনটার যদি কোন খুঁত থাকে, অর্থাৎ যদি সেটা খোঁড়া কিম্বা অন্ধ হয় কিম্বা তার দেহে আর কোন বড় রকমের দোষ থাকে, তবে সেটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করবে না। সেটা তোমরা নিজের জায়গাতেই খাবে। শুচি-অশুচি যে কোন লোকই তা কৃষ্ণসার বা হরিণের মাংসের মতই খেতে পারবে। কিন্তু তোমরা তার রক্ত খাবে না; জলের মত করে তা মাটিতে ঢেলে দেবে। “আবীব মাসে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমরা উদ্ধার-পর্ব পালন করবে। এই আবীব মাসেই একদিন রাতের বেলায় তিনি মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছিলেন। নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য সদাপ্রভু তাঁর বাসস্থান হিসাবে যে জায়গাটা বেছে নেবেন, সেখানে তোমরা তোমাদের গরু বা ছাগল-ভেড়ার পাল থেকে পশু নিয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্বের উৎসর্গ করবে। সেই পশুর মাংস তোমরা খামি দেওয়া রুটির সংগে খাবে না। সাত দিন ধরে তোমাদের দুঃখ স্মরণ করানো খামিহীন রুটি খেতে হবে, কারণ ভয়ে তাড়াহুড়া করে তোমরা মিসর দেশ ছেড়ে চলে এসেছিলে। এতে মিসর দেশ থেকে বেরিয়ে আসবার কথা তোমাদের সারা জীবন মনে থাকবে। এই সাত দিন সারা দেশে তোমাদের মধ্যে যেন খামি দেওয়া কোন কিছু পাওয়া না যায়। পর্বের প্রথম দিনের সন্ধ্যাবেলা তোমরা যে মাংস উৎসর্গ করবে তা যেন সকাল পর্যন্ত পড়ে না থাকে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া আর কোন শহরে তোমরা উদ্ধার-পর্বের পশু উৎসর্গ করবে না; যে জায়গাটা তিনি নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য তাঁর বাসস্থান হিসাবে বেছে নেবেন কেবল সেখানেই তা উৎসর্গ করবে। যেদিন তোমরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছ প্রত্যেক বছরের সেই দিনে সূর্য ডুববার সময় সন্ধ্যাবেলায় উদ্ধার-পর্বের পশু উৎসর্গ করবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে জায়গাটা বেছে নেবেন সেখানেই তোমরা সেই মাংস রান্না করে খাবে। তার পরের দিন সকালে তোমরা তোমাদের ঘরে ফিরে যাবে। ছয় দিন ধরে তোমরা খামিহীন রুটি খাবে আর সাত দিনের দিন তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে শেষ দিনের মিলন-সভার আয়োজন করবে এবং সেই দিন কোন কাজ করবে না। “মাঠের ফসল কাটা আরম্ভ করা থেকে তোমরা গুণে সাতটা সপ্তাহ বাদ দেবে। তারপর তোমাদের নিজের ইচ্ছায় করা উৎসর্গ দিয়ে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সাত সপ্তাহের পর্ব পালন করবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে পরিমাণে আশীর্বাদ করেছেন তা বুঝে তোমরা এই উৎসর্গের জিনিস দেবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য তাঁর বাসস্থান হিসাবে যে জায়গাটা বেছে নেবেন সেখানে তাঁর সামনে তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়েরা, তোমাদের দাস ও দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে বাস করা লেবীয়েরা, বিদেশী বাসিন্দারা, অনাথ ছেলেমেয়েরা আর বিধবারা- তোমরা সবাই আনন্দ করবে। মিসর দেশে তোমরাও যে দাস ছিলে সেই কথাটা মনে রেখে তোমরা এই সব নিয়ম যত্নের সংগে পালন করবে। “তোমাদের খামার এবং আংগুর মাড়াই করবার জায়গা থেকে সব কিছু তুলে রাখবার পরে সাত দিন তোমরা কুঁড়ে-ঘরের পর্ব পালন করবে। তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়েরা, তোমাদের দাস ও দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে বাস করা লেবীয়েরা, বিদেশী বাসিন্দারা, অনাথ ছেলেমেয়েরা আর বিধবারা- তোমরা সবাই এই পর্বে আনন্দ করবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে জায়গা বেছে নেবেন সেখানেই তোমরা তাঁর উদ্দেশে সাত দিন ধরে এই পর্ব পালন করবে, কারণ তোমাদের তোলা সব ফসল এবং সব কাজে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করবেন আর তোমাদের আনন্দ পূর্ণ হবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া জায়গায় বছরে তিনবার, অর্থাৎ খামিহীন রুটির পর্বের সময়, সাত সপ্তাহের পর্বের সময় এবং কুঁড়ে-ঘরের পর্বের সময় তোমাদের সব পুরুষ লোকদের সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হতে হবে। কেউ যেন খালি হাতে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত না হয়। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে পরিমাণে আশীর্বাদ করেছেন তা বুঝে তোমাদের প্রত্যেকেই যেন কিছু না কিছু নিয়ে আসে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে সব গ্রাম ও শহর দিতে যাচ্ছেন তার প্রত্যেকটিতে প্রত্যেক গোষ্ঠীর জন্য তোমরা বিচারক ও কর্মচারী নিযুক্ত করবে। তারা ন্যায়ভাবে লোকদের বিচার করবে। তোমরা অন্যায় বিচার করবে না কিম্বা কারও পক্ষ নেবে না। তোমরা ঘুষ নেবে না, কারণ ঘুষ জ্ঞানীদের চোখ অন্ধ করে দেয় এবং নির্দোষ লোকদের কথায় প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। যে দেশটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দিচ্ছেন, তোমরা যাতে বেঁচে থেকে তা ভোগ-দখল করতে পার সেইজন্য তোমরা কেবল ন্যায়কেই মেনে চলবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমরা এমন কোন গরু বা ছাগল বা ভেড়া উৎসর্গ করবে না যার কোন খুঁত বা দোষ আছে, কারণ তিনি তা ঘৃণা করেন। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া গ্রাম বা শহরগুলোর কোনটাতে হয়তো দেখা যাবে যে, তোমাদের মধ্যেকার কোন পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া ব্যবস্থা অমান্য করে তাঁর চোখে যা মন্দ তা করছে। সে হয়তো আমার আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে দেব-দেবতার সেবা করছে এবং সেই সব দেব-দেবতা কিম্বা সূর্য, চাঁদ বা আকাশের তারাগুলোর পূজা করছে। যদি এই সব তোমাদের জানানো হয়, তবে তোমরা তা ভাল করে তদন্ত করে দেখবে। যদি তা সত্যি হয় এবং এই রকম ঘৃণার কাজ ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়, তবে যে পুরুষ বা স্ত্রীলোক এই রকম জঘন্য কাজ করেছে তোমরা তাকে গ্রাম বা শহরের ফটকের কাছে নিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে। কোন মানুষকে মেরে ফেলতে হলে দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথার উপর নির্ভর করে তা করতে হবে; মাত্র একজন সাক্ষীর কথার উপর নির্ভর করে তা করা চলবে না। সেই লোকটিকে মেরে ফেলবার জন্য সাক্ষীরাই প্র্রথমে পাথর ছুঁড়বে, তারপর ছুঁড়বে অন্যান্য সব লোকেরা। এইভাবে তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে সেই মন্দতা শেষ করে দেবে। “যদি এমন সব মামলা তোমাদের আদালতে আসে যেগুলোর বিচার করা তোমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়- সেটা রক্তপাতের জন্যই হোক কিম্বা ঝগড়া-বিবাদের জন্যই হোক কিম্বা আঘাতের জন্যই হোক- তবে সেই মামলা নিয়ে সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া জায়গায় তোমাদের যেতে হবে। তোমরা তখন সেই সময়কার বিচারক এবং লেবীয়দের মধ্যে যারা পুরোহিত তাদের কাছে যাবে। তোমরা বিষয়টা তাদের বুঝিয়ে বলবে আর তারাই তোমাদের সেই বিচারের রায় দেবে। সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া জায়গাতে তারা তোমাদের কাছে যে রায় জানাবে তোমরা তা কাজে লাগাবে। তবে সাবধান, তারা তোমাদের যা যা করতে বলবে তার কোনটাই তোমরা বাদ দেবে না। তারা আইন-কানুন সম্বন্ধে তোমাদের যা শিক্ষা দেবে এবং যে রায় দেবে সেই মতই তোমরা কাজ করবে। তারা তোমাদের যা করতে বলবে তোমরা ঠিক তা-ই করবে, এদিক ওদিক করবে না। যদি কোন লোক অহংকারের বশে সেই বিচারকের কথা কিম্বা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবাকারী সেই পুরোহিতের কথা শুনতে রাজী না হয়, তবে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে। তোমরা ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে এই রকমের মন্দতা শেষ করে দেবে। তাহলে সমস্ত লোক সেই কথা শুনে ভয় পাবে এবং এই রকম অহংকারের ভাব আর দেখাবে না। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশটা তোমাদের দিতে যাচ্ছেন সেখানে গিয়ে তা দখল করে যখন তোমরা সেখানে বাস করতে থাকবে এবং বলবে, ‘আমাদের আশেপাশের জাতিগুলোর মত এস, আমরা আমাদের জন্য একজনকে রাজা হিসাবে বেছে নিই,’ তখন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যাকে ঠিক করে দেবেন তাকেই তোমরা তোমাদের রাজা করবে। সে যেন তোমাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্যে একজন হয়। যে তোমাদের ইস্রায়েলীয় ভাই নয় এমন ভিন্ন জাতির কোন লোককে তোমরা তোমাদের রাজা করবে না। সেই রাজা যেন নিজের জন্য অনেক ঘোড়া জোগাড় করবার দিকে মন না দেয় এবং তার পরে আরও ঘোড়া জোগাড় করবার জন্য ইস্রায়েলীয়দের মিসর দেশে না পাঠায়, কারণ সদাপ্রভু তোমাদের বলেছেন, ‘তোমরা ঐ পথে আর ফিরে যাবে না।’ সে যেন অনেক বিয়ে না করে; তাতে তার মন বিপথে যাবে। সে যেন নিজের জন্য অতিরিক্ত সোনা ও রূপা জড়ো না করে। “লেবীয়দের মধ্যে যারা পুরোহিত তাদের কাছে আইন-কানুনের যে বই আছে সিংহাসনে বসবার সময় তাকে সেই বই থেকে তার নিজের জন্য সব আইন-কানুন একটি বইয়ে নকল করে নিতে হবে। সেটা তার কাছেই থাকবে এবং সারা জীবন তাকে তা পড়তে হবে যাতে সে তার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করতে শেখে এবং এই আইন-কানুন ও নিয়মের কথাগুলো মেনে চলে। এর ফলে অন্যান্য ইস্রায়েলীয় ভাইদের চেয়ে নিজেকে বড় করে দেখবার ভাব তার মনে আসবে না এবং আইন-কানুন থেকে সে এদিক ওদিক সরে যাবে না। এতে সে ও তার বংশধরেরা ইস্রায়েলীয়দের উপর অনেক দিন রাজত্ব করতে পারবে। “লেবীয় পুরোহিতেরা এবং লেবি-গোষ্ঠীর অন্যান্য লোকেরা বাকী ইস্রায়েলীয়দের মত কোন জায়গা-জমি কিম্বা সম্পত্তি পাবে না। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে করা উৎসর্গের জন্য যে সব জিনিস আনা হবে এবং সদাপ্রভুকে আর যা কিছু দেওয়া হবে তা-ই তারা খাবে। ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্যে তাদের সম্পত্তি বলে কিছু থাকবে না। সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে সদাপ্রভুই হবেন তাদের সম্পত্তি। “লোকেরা যে সব গরু-ছাগল-ভেড়া উৎসর্গ করবে সেগুলোর কাঁধ, চোয়ালের মাংস এবং পাকস্থলী তারা পুরোহিতকে দেবে; এগুলো হবে পুরোহিতের পাওনা। তোমাদের প্রথমে তোলা ফসল, নতুন আংগুর-রস ও তেল আর ছাগল-ভেড়ার গা থেকে প্রথমবার কেটে নেওয়া লোম তোমরা পুরোহিতদের দেবে, কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্য থেকে লেবীয়দের এবং তাদের বংশধরদের বেছে নিয়েছেন, যেন তারা সব সময় সদাপ্রভুর নামে সেবার কাজ করতে পারে। “ইস্রায়েলীয়দের দেশের কোন লেবীয় যদি তার বাসস্থান ছেড়ে সত্যিকারের ইচ্ছা নিয়ে সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া জায়গায় যায়, তবে অন্যান্য লেবীয় ভাইদের মত সে-ও সেখানে তার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে সেবার কাজ করতে পারবে। তার বাবার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র বিক্রি করে টাকা পেলেও সেখানকার লেবীয়দের সংগে সে সমান ভাগের অধিকারী হবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে দেশ দিতে যাচ্ছেন সেখানে গিয়ে সেখানকার জাতিগুলো যে সব জঘন্য কাজ করে তোমরা তা করতে শিখবে না। তোমাদের মধ্যে যেন এমন কোন লোক না থাকে যে তার নিজের সন্তানকে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে, যে গোণাপড়া করে কিম্বা মায়াবিদ্যা খাটায় কিম্বা লক্ষণ দেখে ভবিষ্যতের কথা বলে, যে যাদু করে, যে মন্ত্রতন্ত্র খাটায়, যে ভূতের মাধ্যম হয়, যে মন্দ আত্মার সংগে সম্বন্ধ রাখে এবং যে মৃত লোকের সংগে যোগাযোগ রাখে। এই সব কাজ যে করে সদাপ্রভু তাকে জঘন্য মনে করেন। এই সব জঘন্য কাজের জন্যই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু ঐ সব জাতি তোমাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে তোমাদের নির্দোষ থাকতে হবে। “তোমরা যে সব জাতিদের বেদখল করবে তারা মায়াবিদ্যা ব্যবহারকারী ও গণকদের কথায় কান দেয়, কিন্তু তোমাদের বেলায় এই সব ব্যাপারে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিষেধ রয়েছে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য আমার মত একজন নবী দাঁড় করাবেন। তাঁর কথামত তোমাদের চলতে হবে। হোরেব পাহাড়ের কাছে যেদিন তোমরা সবাই সদাপ্রভুর সামনে জড়ো হয়েছিলে সেই দিন তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে তা-ই চেয়েছিলে। তোমরা বলেছিলে, ‘আর আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা শুনতে কিম্বা এই মহান আগুন দেখতে চাই না; তা হলে আমরা মারা যাব।’ “সদাপ্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘তারা ভালই বলেছে। আমি তাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্য থেকে তাদের জন্য তোমার মত একজন নবী দাঁড় করাব। তার মুখ দিয়েই আমি আমার কথা বলব, আর আমি যা বলতে তাকে আদেশ দেব সে তা-ই তাদের বলবে। সেই নবী আমার নাম করে যে কথা বলবে কেউ যদি আমার সেই কথা না শোনে, তবে আমি নিজেই সেই লোককে দায়ী করব। কিন্তু আমি আদেশ দিই নি এমন কোন কথা যদি কোন নবী আমার নাম করে বলতে সাহস করে কিম্বা সে যদি দেব-দেবতার নামে কথা বলে, তবে তাকে মেরে ফেলতে হবে।’ “কোন একটা কথা সম্বন্ধে তোমরা মনে মনে বলতে পার, ‘সদাপ্রভু এই কথা বলেছেন কিনা তা আমরা কি করে জানব? ’ কোন নবী যদি সদাপ্রভুর নাম করে কোন কথা বলে আর তা যদি অসত্য হয় কিম্বা না ঘটে, তবে বুঝতে হবে সেই কথা সদাপ্রভু বলেন নি। সেই নবী দুঃসাহস করে ঐ কথা বলেছে। তাকে তোমরা ভয় কোরো না। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ তোমাদের দখল করবার জন্য দেবেন সেখানকার জাতিদের যখন তিনি ধ্বংস করে ফেলবেন এবং তোমরা তাদের বদলে তাদের গ্রামে বা শহরে ও বাড়ী-ঘরে বাস করতে থাকবে, “মনে কোন হিংসা না রেখে যদি কেউ হঠাৎ কাউকে মেরে ফেলে এবং নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য তার কাছের আশ্রয়-শহরটিতে পালিয়ে যায় তবে তার সম্বন্ধে এই হল নিয়ম। ধরে নাও, একজন লোক অন্য আর একজনের সংগে বনে কাঠ কাটতে গেল। সেখানে গাছ কাটতে গিয়ে কুড়াল দিয়ে কোপ দেবার সময়ে কুড়ালের ফলাটা ফস্‌কিয়ে গিয়ে অন্য লোকটিকে আঘাত করল এবং তাতে সে মারা গেল। এই অবস্থায় ঐ লোকটি তার কাছের আশ্রয়-শহরটিতে গিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পারবে। তা না হলে রক্তের শোধ যার নেবার কথা সে রাগের বশে তাকে তাড়া করতে পারে আর আশ্রয়-শহর কাছে না হলে তাকে মেরে ফেলতে পারে, যদিও মনে হিংসা নিয়ে মেরে ফেলে নি বলে মৃত্যু তার পাওনা শাস্তি নয়। সেইজন্য আমি তোমাদের নিজেদের জন্য তিনটা শহর আলাদা করে রাখবার আদেশ দিচ্ছি। তোমরা এটা করবে যাতে সম্পত্তি হিসাবে যে দেশটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দিতে যাচ্ছেন সেই দেশের উপর নির্দোষ লোকের রক্তপাত না হয় এবং রক্তপাতের দোষে তোমরা দোষী না হও। “কিন্তু যদি কেউ হিংসা করে কাউকে মেরে ফেলবার জন্য ওৎ পেতে বসে থাকে এবং তাকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে আর তার পরে তার কাছের আশ্রয়-শহরটিতে পালিয়ে যায়, তবে তার শহরের বৃদ্ধ নেতারা লোক পাঠিয়ে সেই শহর থেকে তাকে ধরে আনবে এবং রক্তের শোধ যার নেবার কথা তার হাতে তাকে মেরে ফেলবার জন্য তুলে দেবে। তাকে তোমরা কোন দয়া দেখাবে না। তোমরা ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে নির্দোষ লোকের রক্তপাতের দোষ মুছে ফেলবে। তাতে তোমাদের মংগল হবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশটা দখল করবার জন্য তোমাদের দিচ্ছেন সেখানে তোমাদের পূর্বপুরুষদের রাখা কোন সীমানা-চিহ্ন তোমরা সরাবে না। “যদি কারও বিরুদ্ধে দোষ বা অন্যায় করবার নালিশ আনা হয়, তবে মাত্র একজন সাক্ষী দাঁড়ালে চলবে না; দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথা ছাড়া কোন বিষয় সত্যি বলে প্রমাণিত হতে পারবে না। “যদি কেউ ক্ষতি করবার মনোভাব নিয়ে কারও বিরুদ্ধে কোন অন্যায় কাজের নালিশ আনে, তবে সেই ব্যাপারে জড়িত সেই দু’জনকে তখনকার পুরোহিত ও বিচারকদের কাছে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়াতে হবে। বিচারকেরা ব্যাপারটা ভাল করে তদন্ত করে দেখবে। যদি সে তার ইস্রায়েলীয় ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবার দরুন মিথ্যাবাদী বলে ধরা পড়ে, তবে সে তার ভাইয়ের প্রতি যা করতে চেয়েছিল তা-ই তার প্রতি করতে হবে। তোমাদের মধ্য থেকে এই রকমের মন্দতা শেষ করে দিতে হবে। এই কথা শুনে অন্য সব ইস্রায়েলীয়েরা ভয় পাবে এবং এই রকম অন্যায় আর কখনও তারা করবে না। তোমরা তার প্রতি কোন দয়া দেখাবে না- প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত, হাতের বদলে হাত এবং পায়ের বদলে পা নেবে। “যুদ্ধ করতে গিয়ে শত্রুর পক্ষে তোমাদের চেয়ে বেশী ঘোড়া, রথ ও সৈন্যদল দেখে তোমরা ভয় পেয়ো না, কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন তিনি তোমাদের সংগে থাকবেন। শত্রুদের সংগে যুদ্ধ করে তোমাদের জয়ী করবার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তোমাদের সংগে যাচ্ছেন।’ “তারপর তাদের নেতারা সৈন্যদের বলবে, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ নতুন ঘর তৈরী করে তা প্রতিষ্ঠা না করে থাকে তবে সে বাড়ী যাক; তা না হলে সে যুদ্ধে মারা গেলে অন্য কেউ সেই ঘর প্রতিষ্ঠা করবে। কেউ যদি আংগুর ক্ষেত করে তার ফল না খেয়ে থাকে তবে সে-ও বাড়ী যাক; তা না হলে সে যুদ্ধে মারা গেলে অন্যে সেই ক্ষেত ভোগ করবে। বিয়ের সম্বন্ধের পরে যদি কেউ বিয়ে না করে থাকে তবে সে-ও বাড়ী যাক; তা না হলে সে যুদ্ধে মারা গেলে অন্যে সেই স্ত্রীলোককে বিয়ে করবে।’ সেই নেতারা আরও বলবে, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ ভয় পেয়ে থাকে কিম্বা সাহস হারিয়ে থাকে, তবে তা দেখে যাতে অন্য ইস্রায়েলীয় ভাইদের মনোবল নষ্ট হয়ে না যায় সেইজন্য সে বাড়ী ফিরে যাক।’ সৈন্যদের কাছে কথা বলা শেষ করে নেতারা সৈন্যদের বিভিন্ন দলের উপরে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করবে। “তোমরা কোন গ্রাম বা শহর আক্রমণ করতে যাওয়ার আগে সেখানকার লোকদের কাছে বিনা যুদ্ধে অধীনতা মেনে নেবার প্রস্তাব করবে। যদি তাতে তারা রাজী হয়ে তাদের ফটক খুলে দেয় তবে সেখানকার সমস্ত লোকেরা তোমাদের অধীন হবে এবং তোমাদের জন্য কাজ করতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু তারা যদি সেই প্রস্তাবে রাজী না হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে তবে সেই জায়গা তোমরা আক্রমণ করবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন সেই জায়গাটা তোমাদের হাতে তুলে দেবেন তখন সেখানকার সব পুরুষ লোকদের তোমরা মেরে ফেলবে। তবে স্ত্রীলোক, ছেলেমেয়ে, পশুপাল এবং সেই জায়গার অন্য সব কিছু তোমরা লুটের জিনিস হিসাবে নিজেদের জন্য নিতে পারবে। শত্রুদের দেশ থেকে লুট করা যে সব জিনিস তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দেবেন তা তোমরা ভোগ করতে পারবে। যে সব শহর তোমাদের দেশ থেকে দূরে আছে, যেগুলো তোমাদের কাছের জাতিগুলোর শহর নয়, সেগুলোর প্রতি তোমরা এই রকম করবে। কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সম্পত্তি হিসাবে যে সব জাতিদের গ্রাম ও শহর তোমাদের দিতে যাচ্ছেন সেখানকার কাউকেই তোমরা বাঁচিয়ে রাখবে না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে তোমরা হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়দের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলবে। তা না করলে তারা তাদের দেব-দেবতার পূজা করবার সময়ে যে সব জঘন্য কাজ করে তা তোমরাও শিখবে আর তাতে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করবে। “তোমরা অনেক দিন ধরে যখন কোন গ্রাম বা শহর ঘেরাও করে রেখে তা দখল করবার জন্য যুদ্ধ করতে থাকবে তখন কুড়াল দিয়ে সেখানকার কোন গাছ নষ্ট করবে না, কারণ সেগুলোর ফল তোমরা খেতে পারবে। সেগুলো তোমরা কেটে ফেলবে না। মাঠের সেই গাছগুলো তো আর মানুষ নয় যে, সেগুলোকে তোমাদের আক্রমণ করতে হবে। তবে যেগুলো ফলের গাছ নয় বলে তোমাদের জানা থাকবে সেগুলো তোমরা কেটে ফেলতে পারবে এবং যে জায়গার লোকেরা তোমাদের সংগে যুদ্ধ করছে তারা হেরে না যাওয়া পর্যন্ত সেই গাছগুলো তোমরা আক্রমণ করবার কাজে ব্যবহার করতে পারবে। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ দখল করবার জন্য তোমাদের দিতে যাচ্ছেন সেখানকার কোন মাঠে হয়তো কাউকে খুন হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যেতে পারে, কিন্তু কে তাকে খুন করেছে তা জানা নেই। এই অবস্থায় তোমাদের বৃদ্ধ নেতারা ও বিচারকেরা বাইরে গিয়ে সেই মৃতদেহ থেকে কাছের গ্রাম বা শহরগুলো কত দূরে তা মেপে দেখবে। মৃতদেহ থেকে যে জায়গাটা সবচেয়ে কাছে পড়বে সেখানকার বৃদ্ধ নেতাদের এমন একটা বক্‌না বাছুর নিতে হবে যাকে কখনও কাজে লাগানো হয় নি এবং যার কাঁধে কখনও জোয়াল দেওয়া হয় নি। যেখানে কখনও চাষ করা কিম্বা বীজ বোনা হয় নি এবং যেখানে একটা নদী বয়ে যাচ্ছে, বক্‌না বাছুরটাকে তেমন একটা উপত্যকায় তাদের নিয়ে যেতে হবে। সেই উপত্যকায় তারা বক্‌না বাছুরটার ঘাড় ভেংগে দেবে। তারপর পুরোহিতেরা, অর্থাৎ লেবি-গোষ্ঠীর লোকেরা সামনে এগিয়ে যাবে, কারণ সেবা-কাজ করবার জন্য, সদাপ্রভুর নামে আশীর্বাদ উচ্চারণ করবার জন্য এবং ঝগড়া-বিবাদ ও মারধরের বিচার করবার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদেরই বেছে নিয়েছেন। তারপর সবচেয়ে কাছের গ্রাম বা শহরের বৃদ্ধ নেতারা সেই ঘাড় ভাংগা বাছুরটার উপর তাদের হাত ধুয়ে ফেলবে। এর পর তারা বলবে, ‘এই রক্তপাত আমরা নিজেরা করি নি এবং হতেও দেখি নি। হে সদাপ্রভু, তোমার মুক্ত করা ইস্রায়েলীয়দের তুমি ক্ষমা কর। এই লোকটির রক্তপাতের জন্য তুমি তোমার লোকদের দায়ী কোরো না।’ এতে সেই রক্তপাতের দোষ ক্ষমা করা হবে। এইভাবে তোমরা নিজেদের মধ্য থেকে নির্দোষ লোকের রক্তপাতের দোষ মুছে ফেলতে পারবে, কারণ তখন সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করা হবে। “শত্রুদের সংগে যুদ্ধ করতে গিয়ে যখন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের হাতে তাদের তুলে দেবেন আর তোমরা তাদের বন্দী করবে, তখন যদি তাদের মধ্যেকার কোন সুন্দরী স্ত্রীলোককে দেখে তোমাদের কারও তাকে ভাল লাগে তবে সে তাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে। স্ত্রীলোকটিকে সে তার বাড়ীতে নিয়ে যাবে। তারপর স্ত্রীলোকটি তার চুল কামিয়ে ফেলবে ও নখ কেটে ফেলবে, আর বন্দী হবার সময়ে তার গায়ে যে সব কাপড়-চোপড় ছিল তা খুলে ফেলবে। এর পর তার বাড়ীতে থেকে সেই স্ত্রীলোকটি পুরো এক মাস তার মা-বাবার জন্য শোক করবে। তারপর সেই লোকটি তাকে বিয়ে করে তার স্বামী হবে এবং স্ত্রীলোকটিও তার স্ত্রী হবে। পরে যদি স্ত্রীলোকটির উপর সে অখুশী হয় তবে তাকে যেখানে ইচ্ছা চলে যেতে দিতে হবে। সে তাকে বিক্রি করতে পারবে না কিম্বা দাসী হিসাবে রাখতে পারবে না, কারণ সে তার অসম্মান করেছে। “এমন হতে পারে যে, একজন লোকের দু’জন স্ত্রী আছে, আর তাদের একজনকেই সে ভালবাসে অন্যজনকে নয়। তাদের দু’জনেরই যদি ছেলে হয় আর প্রথম ছেলের জন্ম হয় সেই স্ত্রীর গর্ভে যাকে সে ভালবাসে না, তবে সম্পত্তি উইল করে দেবার সময়ে যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেকে বাদ দিয়ে অন্য স্ত্রীর ছেলেটিকে প্রথম ছেলের পাওনা অধিকার দেওয়া চলবে না, কারণ যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেটিই আসলে তার প্রথম ছেলে। যে স্ত্রীকে সে ভালবাসে না তার ছেলেকে তার সম্পত্তি থেকে অন্য যে কোন ছেলের চেয়ে দ্বিগুণ ভাগ দিয়ে সেই ছেলেই যে প্রথম ছেলে তা তাকে স্বীকার করতে হবে। সেই ছেলেই তার বাবার পুরুষ-শক্তির প্রথম ফল। প্রথম ছেলের অধিকার তারই পাওনা। “যদি কারও ছেলে একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী হয়, যদি সে কিছুতেই মা-বাবার কথা না শোনে এবং তাদের শাসন না মানে, তবে তার মা-বাবা তাকে তাদের গ্রাম বা শহরের ফটকে বৃদ্ধ নেতাদের কাছে নিয়ে যাবে। তারা সেই বৃদ্ধ নেতাদের বলবে, ‘আমাদের এই ছেলে ভীষণ একগুঁয়ে এবং বিদ্রোহী; সে আমাদের অগ্রাহ্য করে চলে। সে মাতাল এবং টাকা-পয়সা উড়িয়ে দেয়।’ তখন সেই জায়গার সমস্ত পুরুষেরা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে। এইভাবে তোমাদের মধ্য থেকে সেই মন্দতা শেষ করে দিতে হবে। তাতে ইস্রায়েলীয়েরা সবাই এই কথা শুনে ভয় পাবে। “যদি কোন লোক মৃত্যুর শাস্তি পাবার মত কোন দোষ করে এবং তাকে মেরে ফেলে গাছে টাংগিয়ে রাখা হয়, তবে সকাল পর্যন্ত তার দেহ গাছে টাংগিয়ে রাখা চলবে না। সেই দিনই তাকে কবর দিয়ে ফেলতে হবে, কারণ গাছে টাংগিয়ে রাখা লোক ঈশ্বরের অভিশপ্ত। সম্পত্তি হিসাবে যে দেশটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দিতে যাচ্ছেন তা তোমরা অশুচি করবে না। “তোমাদের ইস্রায়েলীয় ভাইয়ের কোন গরু বা ভেড়াকে পথ হারিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে দেখলে তোমরা চুপ করে বসে থাকবে না। তোমরা অবশ্যই সেটা তার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। যদি সেই ভাই তোমাদের বাড়ীর পাশের কেউ না হয় কিম্বা ভাইটি কে তা যদি জানা না থাকে, তাহলে সেটা তোমরা নিয়ে যাবে এবং সেই ভাই সেটার খোঁজে না আসা পর্যন্ত নিজের বাড়ীতে রেখে দেবে। সে আসলে পর সেটা তাকে ফিরিয়ে দেবে। তোমাদের ভাইয়ের গাধা কিম্বা গায়ের কাপড় কিম্বা তার হারিয়ে যাওয়া অন্য কিছু চোখে পড়লেও তোমরা ঐ রকম করবে, চুপ করে বসে থাকবে না। “তোমাদের ভাইয়ের গাধা কিম্বা গরু রাস্তায় পড়ে গেছে দেখতে পেলে চুপ করে বসে থাকবে না। সেটা যাতে উঠে দাঁড়ায় সেইজন্য অবশ্যই তুমি তাকে সাহায্য করবে। “কোন স্ত্রীলোক যেন পুরুষের সাজে না সাজে কিম্বা কোন পুরুষ যেন স্ত্রীলোকের পোশাক না পরে। যে তা করে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাকে ঘৃণা করেন। “তোমরা চলতে চলতে পথের পাশে কোন গাছে কিম্বা মাটির উপরে যদি এমন কোন পাখীর বাসা দেখতে পাও যেখানে পাখীর মা বাচ্চাদের উপর বসে আছে কিম্বা ডিমের উপর তা দিচ্ছে, তবে বাচ্চা সুদ্ধ মাকে তোমরা ধরে নিয়ে যাবে না। তোমরা বাচ্চাগুলো নিতে পার কিন্তু মাকে অবশ্যই তোমাদের ছেড়ে দিতে হবে। এতে তোমাদের মংগল হবে আর তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকবে। “বাড়ী তৈরী করবার সময় তোমরা সেটার ছাদের চারপাশটা দেয়ালের মত করে কিছুটা উঁচু করে দেবে, যাতে কেউ ছাদের উপর থেকে পড়ে মারা গেলে বাড়ীর লোকেরা তার মৃত্যুর জন্য দায়ী না হয়। “আংগুর ক্ষেতে তোমরা দুই জাতের বীজ লাগাবে না; তা করলে সেই বীজের ফসল এবং ক্ষেতের আংগুর দুই-ই তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। “তোমরা বলদ আর গাধা একসংগে জুড়ে চাষ করবে না। “তোমরা পশম আর মসীনা সুতা মিশিয়ে বোনা কাপড় পরবে না। “তোমাদের গায়ের চাদরের চার কোণায় থোপ্‌না লাগাবে। আর এখন সে তার নিন্দা করে বলছে যে, সে তাকে কুমারী অবস্থায় পায় নি। কিন্তু এই দেখুন, আমার মেয়ের কুমারী অবস্থার প্রমাণ।’ এই বলে তারা বৃদ্ধ নেতাদের সামনে তার ব্যবহার করা কাপড় মেলে ধরবে। তখন বৃদ্ধ নেতারা তার স্বামীকে শাস্তি দেবে। তার কাছ থেকে তারা জরিমানা হিসাবে এক কেজি রূপা আদায় করে মেয়েটির বাবাকে দেবে, কারণ সে একজন ইস্রায়েলীয় কুমারী মেয়ের নামে বদনাম করেছে। এছাড়া মেয়েটি তার স্ত্রী-ই থাকবে এবং তার স্বামী জীবনে কখনও তাকে ছেড়ে দিতে পারবে না। “কিন্তু কথাটা যদি সত্যি হয় এবং মেয়েটির কুমারী অবস্থার কোন প্রমাণ পাওয়া না যায়, তবে মেয়েটিকে তার বাবার বাড়ীর দরজার কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেই জায়গার পুরুষ লোকেরা সেখানে পাথর ছুঁড়ে তাকে মেরে ফেলবে। বাবার বাড়ীতে থাকবার সময়ে ব্যভিচার করে সে ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে ভীষণ ঘৃণার কাজ করেছে। তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে এই রকম মন্দতা শেষ করে দেবে। “কোন লোককে যদি অন্য কারও স্ত্রীর সংগে শুতে দেখা যায় তবে যে তার সংগে শুয়েছে সেই পুরুষ ও সেই স্ত্রীলোক দু’জনকেই মেরে ফেলতে হবে। তোমরা ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে এই রকম মন্দতা শেষ করে দেবে। “বিয়ে ঠিক হয়ে আছে এমন কোন কুমারী মেয়েকে গ্রাম বা শহরের মধ্যে পেয়ে যদি কেউ তার সংগে শোয়, তবে তাদের দু’জনকেই সেখানকার ফটকের কাছে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে হবে। মেয়েটিকে মেরে ফেলতে হবে কারণ গ্রাম বা শহরের মধ্যে থেকেও সে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে নি, আর পুরুষটিকে মেরে ফেলতে হবে কারণ সে অন্যের স্ত্রীকে নষ্ট করেছে। তোমাদের মধ্য থেকে এই রকম মন্দতা তোমরা শেষ করে দেবে। “বিয়ে ঠিক হয়ে আছে এমন কোন মেয়েকে নির্জন খোলা মাঠে পেয়ে যদি কেউ জোর করে তার সংগে শোয় তবে যে লোকটি তা করবে কেবল তাকেই মেরে ফেলতে হবে। মেয়েটির প্রতি তোমরা কিছু করবে না; মৃত্যুর শাস্তি পাবার মত কোন পাপ সে করে নি। এটা একজন আর একজনকে ধরে মেরে ফেলবার মতই, কারণ লোকটি মেয়েটিকে খোলা মাঠে পেয়েছিল আর বিয়ের কথা দেওয়া মেয়েটি যদিও চিৎকার করেছিল তবুও তাকে রক্ষা করবার মত কেউ সেখানে ছিল না। “বিয়ে ঠিক হয় নি এমন কোন কুমারী মেয়েকে পেয়ে যদি কেউ জোর করে তার সংগে শোয় আর যদি তারা ধরা পড়ে, তবে লোকটিকে মেয়ের বাবাকে আধা কেজি রূপা দিতে হবে। মেয়েটিকে নষ্ট করেছে বলে তাকে তার বিয়ে করতে হবে। সে জীবনে কখনও তাকে ছেড়ে দিতে পারবে না। “সৎমাকে কারও বিয়ে করা চলবে না; তাতে সে বাবার স্ত্রীর সংগে ব্যভিচার করে বাবাকে অসম্মান করবে। “যার অণ্ডকোষ থেঁৎলে দেওয়া কিম্বা পুরুষাংগ কেটে ফেলা হয়েছে সে সদাপ্রভুর লোকদের সমাজে যোগ দিতে পারবে না। “কোন জারজ লোক সদাপ্রভুর লোকদের সমাজে যোগ দিতে পারবে না; তার চৌদ্দ পুরুষেও কেউ তা করতে পারবে না। “কোন অম্মোনীয় কিম্বা মোয়াবীয় সদাপ্রভুর লোকদের সমাজে যোগ দিতে পারবে না; তার চৌদ্দ পুরুষেও কেউ তা কখনও করতে পারবে না। মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পরে তোমাদের যাত্রার পথে তারা খাবার ও জল নিয়ে তোমাদের কাছে এগিয়ে আসে নি, বরং তোমাদের অভিশাপ দেবার জন্য তারা অরাম-নহরয়িম দেশের পথোর শহর থেকে বিয়োরের ছেলে বিলিয়মকে টাকা দিয়ে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু বিলিয়মের কথায় সায় দেন নি; তোমাদের ভালবাসেন বলে তিনি বরং এমন করলেন যাতে সেই অভিশাপ তোমাদের আশীর্বাদ হয়ে ওঠে। তোমরা যতদিন বাঁচবে ততদিন এদের কোন উপকার বা মংগলের চেষ্টা করবে না। “কিন্তু ইদোমীয়দের তোমরা ঘৃণা করবে না, কারণ তারা তোমাদের ভাই। মিসরীয়দেরও ঘৃণা করবে না, কারণ তাদের দেশে তোমরা বিদেশী হিসাবে বাস করতে। তোমাদের মধ্যে বাস করবার পরে তৃতীয় পুরুষ থেকে এরা সদাপ্রভুর লোকদের সমাজে যোগ দিতে পারবে। “শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে ছাউনি ফেলবার পরে সমস্ত রকম অশুচিতা থেকে তোমরা দূরে থাকবে। রাতে বীর্যপাতের দরুন যদি তোমাদের কেউ অশুচি হয়, তবে তাকে ছাউনির বাইরে গিয়ে থাকতে হবে। বিকাল হয়ে আসলে তাকে স্নান করে ফেলতে হবে। সূর্য ডুবে গেলে পর সে ছাউনিতে ফিরে যেতে পারবে। “পায়খানার জন্য ছাউনির বাইরে তোমাদের একটা জায়গা ঠিক করে নিতে হবে। তোমাদের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে মাটি খুঁড়বার জন্য একটা কিছু রাখতে হবে। পায়খানা করবার আগে তোমরা সেটা দিয়ে গর্ত করে পায়খানা মাটি চাপা দিয়ে দেবে। তোমাদের রক্ষা করবার জন্য এবং তোমাদের শত্রুদের তোমাদের হাতে তুলে দেবার জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের ছাউনির মধ্যে ঘুরে বেড়ান। সেইজন্য তোমাদের ছাউনি পবিত্র অবস্থায় রাখতে হবে যাতে তোমাদের মধ্যে জঘন্য কিছু দেখে তিনি তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন। “কারও দাস যদি তোমাদের কাছে এসে আশ্রয় নেয় তবে তার মনিবের হাতে তাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। সেই দাস তোমাদের মধ্যে যেখানে বাস করতে চায় তাকে সেখানেই বাস করতে দিয়ো; তাকে কষ্ট দিয়ো না। “কোন ইস্রায়েলীয় স্ত্রীলোক যেন মন্দির-বেশ্যা না হয়; কোন ইস্রায়েলীয় পুরুষও যেন মন্দির-বেশ্যার জীবন না কাটায়। পুরুষ হোক বা স্ত্রীলোক হোক যে বেশ্যার জীবন কাটায় তার রোজগারের টাকা মানত পূরণের জন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘরে আনা চলবে না, কারণ এই রকম পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের সদাপ্রভু ঘৃণা করেন। “তোমরা কোন ইস্রায়েলীয় ভাইয়ের কাছ থেকে সুদ নেবে না- সেই সুদ টাকা-পয়সার উপরেই হোক কিম্বা খাবার জিনিসের উপরেই হোক কিম্বা অন্য যে কোন জিনিসের উপরেই হোক। অন্য জাতির লোকদের কাছ থেকে তোমরা সুদ নিতে পার কিন্তু কোন ইস্রায়েলীয় ভাইয়ের কাছ থেকে নয়। এইভাবে চললে তোমরা যে দেশ দখল করতে যাচ্ছ সেখানে তোমরা যাতে হাত দেবে তাতেই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করবেন। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে যদি তোমরা কোন মানত কর তবে তা পূরণ করতে দেরি কোরো না, কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কখনও তা ছেড়ে দেবেন না। তা পূরণ না করলে তোমাদের পাপ হবে; কিন্তু মানত না করলে পাপ হবে না। তোমরা মুখ দিয়ে যে মানতের কথা উচ্চারণ করবে তা তোমাদের পূরণ করতেই হবে, কারণ তোমরা নিজের ইচ্ছায় নিজের মুখেই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে সেই মানত করেছ। “অন্য কারো আংগুর ক্ষেতে গিয়ে তোমরা খুশীমত আংগুর খেতে পারবে, কিন্তু তা নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন কিছুতে তুলে রাখা চলবে না। কারও শস্য ক্ষেতে গিয়ে তোমরা হাত দিয়ে শীষ ছিঁড়তে পারবে, কিন্তু ফসলের গায়ে কাস্তে লাগানো চলবে না। “বিয়ে করবার পরে যদি কেউ স্ত্রীর মধ্যে কোন দোষ দেখে তার উপর অসন্তুষ্ট হয় আর ত্যাগপত্র লিখে তার হাতে দিয়ে তাকে বাড়ী থেকে বিদায় করে দেয়, তবে তার প্রথম স্বামী, যে তাকে বিদায় করে দিয়েছিল সে তাকে আর বিয়ে করতে পারবে না, কারণ সে অশুচি হয়ে গেছে। এই রকমের বিয়ে সদাপ্রভু ঘৃণা করেন। সম্পত্তি হিসাবে যে দেশটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দিতে যাচ্ছেন তোমরা এইভাবে তার উপর পাপ ডেকে আনবে না। “অল্পদিন হয় বিয়ে করেছে এমন কোন লোককে যুদ্ধে পাঠানো চলবে না কিম্বা তার উপর অন্য কোন কাজের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। সে যাকে বিয়ে করেছে তার সন্তুষ্টির জন্য এক বছর পর্যন্ত এই সব কাজ থেকে রেহাই দিয়ে তাকে বাড়ীতে থাকতে দিতে হবে। “ঋণের বন্ধক হিসাবে কারও জাঁতা কিম্বা তার উপরের পাথরটাও নেওয়া চলবে না, কারণ তাতে লোকটির বেঁচে থাকবার উপায়টাই বন্ধক নেওয়া হবে। “যদি দেখা যায়, কোন লোক কোন ইস্রায়েলীয় ভাইকে চুরি করে নিয়ে দাস হিসাবে ব্যবহার করছে কিম্বা বিক্রি করে দিয়েছে, তবে সেই চোরকে মরতে হবে। তোমাদের মধ্য থেকে তোমরা এই রকম মন্দতা শেষ করে দেবে। “চর্মরোগ দেখা দিলে তোমাদের সতর্ক হতে হবে এবং লেবীয় পুরোহিতেরা যে নির্দেশ দেবে তা যত্নের সংগে পালন করতে হবে। আমি তাদের যে আদেশ দিয়েছি তোমাদের সাবধান হয়ে সেইমত চলতে হবে। মিসর দেশ থেকে বেরিয়ে আসবার পরে পথে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু মরিয়মের ব্যাপারে যে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন তা ভুলে যেয়ো না। “কাউকে কিছু ধার দিয়ে বন্ধক হিসাবে কোন জিনিস নেবার জন্য তার বাড়ীর মধ্যে যেয়ো না। তোমরা বাইরে থেকো এবং যাকে তুমি ধার দিচ্ছ তাকেই বন্ধক দেবার জিনিসটা বাইরে তোমাদের কাছে নিয়ে আসতে দিয়ো। লোকটি যদি গরীব হয় তবে তার বন্ধক রাখা কাপড়টা নিজের কাছে রেখে দিয়ে ঘুমাতে যেয়ো না। সন্ধ্যার সময় তাকে তা ফিরিয়ে দিতেই হবে যাতে সে তা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে পারে। এতে সে তোমাদের মংগল কামনা করবে, আর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে সেই ফিরিয়ে দেবার কাজটা হবে তোমাদের পক্ষে তাঁর ইচ্ছামত চলা। “পাওনার ব্যাপারে কোন গরীব এবং অভাবী মজুরের প্রতি অন্যায় করবে না- সে তোমাদের কোন ইস্রায়েলীয় ভাই হোক কিম্বা তোমাদের দেশের ভিন্ন জাতির কোন বাসিন্দাই হোক। সূর্য ডুববার আগেই তোমরা তার মজুরি দিয়ে দেবে, কারণ সে গরীব এবং সেই মজুরির উপরেই সে নির্ভর করছে। তা না করলে তোমাদের পাপ হবে, আর সে তোমাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর কাছে কাতর হয়ে বিচার চাইতে পারে। “ছেলেমেয়েদের পাপের জন্য বাবাকে কিম্বা বাবার পাপের জন্য ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলা চলবে না। প্রত্যেককেই তার নিজের পাপের জন্য মরতে হবে। “বিদেশী বাসিন্দা কিম্বা অনাথের প্রতি অন্যায় বিচার হতে দিয়ো না। কোন বিধবার কাছ থেকে বন্ধক হিসাবে তার গায়ের কাপড় নিয়ো না। মনে রেখো, মিসর দেশে তোমরা দাস ছিলে আর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সেখান থেকে তোমাদের মুক্ত করে এনেছেন। সেইজন্যই আমি তোমাদের এই সব করবার আদেশ দিচ্ছি। “তোমাদের জমির ফসল কাটবার পরে যদি শস্যের কোন আঁটি তোমরা সংগে নিতে ভুলে যাও তবে সেটা আর ফিরে আনতে যেয়ো না। বিদেশী বাসিন্দা, অনাথ এবং বিধবাদের জন্য সেটা ফেলে রেখো। তাতে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সব কাজেই তোমাদের আশীর্বাদ করবেন। জলপাই পাড়বার সময় তোমরা একই ডাল থেকে দু’বার ফল পাড়তে যেয়ো না। যা থেকে যাবে তা বিদেশী বাসিন্দা, অনাথ ও বিধবাদের জন্য রেখে দিয়ো। তোমাদের আংগুর ক্ষেতের আংগুর তুলবার সময় তোমরা একই ডাল থেকে দু’বার আংগুর তুলো না। যা থেকে যাবে তা বিদেশী বাসিন্দা, অনাথ ও বিধবাদের জন্য রেখে দিয়ো। ভুলে যেয়ো না তোমরা মিসর দেশে দাস ছিলে। সেইজন্য আমি তোমাদের এই সব করতে আদেশ দিচ্ছি। “যদি লোকদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ দেখা দেয় আর তা আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় তবে বিচারকেরা তার বিচার করে নির্দোষকে নির্দোষ এবং দোষীকে দোষী বলে রায় দেবে। সেই রায়ে দোষীকে যদি মার দেবার নির্দেশ দেওয়া হয় তবে বিচারক তাকে মাটিতে শুইয়ে দোষ অনুসারে যে কয়টা ঘা তার পাওনা তা তাঁর নিজের সামনেই দেওয়াবে, কিন্তু চল্লিশটার বেশী ঘা তাকে দেওয়া চলবে না। এর বেশী দিলে একজন ইস্রায়েলীয় ভাইকে সকলের সামনে অসম্মান করা হবে। “শস্য মাড়াই করবার সময়ে বলদের মুখে জাল্‌তি বেঁধো না। “ভাইয়েরা এক পরিবার হয়ে বাস করবার সময়ে যদি এক ভাই ছেলে না রেখে মারা যায়, তবে তার বিধবা স্ত্রী পরিবারের বাইরে আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। তার স্বামীর ভাই তাকে বিয়ে করবে এবং তার প্রতি স্বামীর ভাইয়ের যে কর্তব্য তা পালন করবে। তাহলে তার যে প্রথম ছেলে হবে সে সেই মৃত ভাইয়ের নাম রক্ষা করবে আর সেই ভাইয়ের নাম ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে মুছে যাবে না। কিন্তু সে যদি ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করতে না চায় তবে সেই স্ত্রী গ্রাম বা শহরের ফটকে বৃদ্ধ নেতাদের কাছে গিয়ে বলবে, ‘আমার স্বামীর ভাই ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে তার ভাইয়ের নাম রক্ষা করতে রাজী নয়। আমার প্রতি তার যে কর্তব্য তা সে পালন করতে চায় না।’ তখন সেখানকার বৃদ্ধ নেতারা সেই লোকটিকে ডেকে বুঝাবেন। এর পরেও যদি সে বলতে থাকে যে, সে তাকে বিয়ে করতে রাজী নয়, তবে তার ভাইয়ের স্ত্রী বৃদ্ধ নেতাদের সামনেই লোকটির কাছে গিয়ে তার পা থেকে এক পাটি জুতা খুলে নেবে এবং তার মুখে থুথু দিয়ে বলবে, ‘ভাইয়ের বংশ যে রক্ষা করতে চায় না তার প্রতি এ-ই করা হয়।’ ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে সেই লোকের বংশকে বলা হবে ‘জুতাহারার বংশ।’ “দু’জন লোক মারামারি করবার সময়ে যদি তাদের একজনের স্ত্রী তার স্বামীকে অন্যজনের হাত থেকে রক্ষা করবার উদ্দেশ্যে কাছে গিয়ে অন্য লোকটির পুরুষাংগ চেপে ধরে, তবে তোমরা সেই স্ত্রীলোকের হাত কেটে ফেলবে। তাকে তোমরা কোন দয়া দেখাবে না। “তোমাদের থলিতে যেন একই ওজন দেখাবার জন্য দু’টা করে বাট্‌খারা না থাকে, একটা বেশী ওজনের আর একটা কম ওজনের। তোমাদের বাড়ীতে যেন একই মাপ দেখাবার জন্য দু’টা করে পাত্র না থাকে, একটা বেশী মাপের আর একটা কম মাপের। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের যে দেশ দিতে যাচ্ছেন সেখানে যেন তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকতে পার সেইজন্য তোমাদের ঠিক এবং উচিত মাপের বাট্‌খারা ও পাত্র রাখতে হবে। এর কারণ হল, যে এই সব করে, অর্থাৎ যে ঠকিয়ে বেড়ায় তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাকে ঘৃণা করেন। “তোমরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পরে অমালেকীয়েরা পথে তোমাদের সংগে যা করেছিল তা ভুলে যেয়ো না। তোমাদের শ্রান্ত-ক্লান্ত অবস্থায় যারা পিছনে পড়েছিল তারা তাদের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। তারা ঈশ্বরকে ভয় করে নি। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশটা সম্পত্তি হিসাবে দখল করবার জন্য তোমাদের দিতে যাচ্ছেন সেখানে তোমাদের চারপাশের শত্রুদের সংগে লড়াই থেকে তিনি যখন তোমাদের বিশ্রাম দেবেন তখন পৃথিবীর উপর থেকে অমালেকীয়দের চিহ্ন তোমাদের একেবারে মুছে ফেলতে হবে। এই কথা তোমরা ভুলে যেয়ো না। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশটা সম্পত্তি হিসাবে তোমাদের দিতে যাচ্ছেন তোমরা সেটা দখল করে যখন সেখানে বাস করতে থাকবে, তখন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া সেই দেশের জমিতে তোমরা যে সব ফসল ফলাবে তার প্রথমে তোলা কিছু ফসল টুকরিতে রাখবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য যে জায়গাটা তাঁর বাসস্থান হিসাবে বেছে নেবেন সেই ফসল তোমরা সেখানে নিয়ে যাবে। তখন যে পুরোহিত থাকবে তোমরা প্রত্যেকে তাকে বলবে, ‘আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে আজ আমি স্বীকার করছি যে, তিনি যে দেশটা আমাদের দেবেন বলে আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করেছিলেন সেই দেশে আমি এসে গেছি।’ তখন পুরোহিত তোমাদের হাত থেকে সেই সব টুকরি নিয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেদীর সামনে রাখবে। তারপর তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে বলবে, ‘আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন একজন অরামীয় যাযাবর। তিনি মাত্র কয়েকজন লোক নিয়ে মিসর দেশে চলে গিয়েছিলেন এবং সেখানে বাস করবার সময় তাঁর মধ্য দিয়ে একটি মহান ও শক্তিশালী জাতির সৃষ্টি হয়েছিল যার লোকসংখ্যা ছিল অনেক। কিন্তু মিসরীয়েরা আমাদের সংগে ভাল ব্যবহার করে নি। তারা আমাদের কষ্ট দিয়েছিল এবং আমাদের উপর একটা কঠিন পরিশ্রমের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল। তখন আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করলাম। তিনি আমাদের কান্না শুনলেন, আমাদের কষ্ট ও পরিশ্রম দেখলেন; আরও দেখলেন আমাদের উপর কি রকম অত্যাচার করা হচ্ছে। সেইজন্য তিনি তাঁর কঠোর এবং শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে ভয় জাগানো কাজ এবং আশ্চর্য চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ দেখিয়ে মিসর দেশ থেকে আমাদের বের করে আনলেন। তিনি আমাদের এখানে এনেছেন এবং দুধ আর মধুতে ভরা এই দেশ আমাদের দিয়েছেন। সেইজন্য হে সদাপ্রভু, তোমার দেওয়া জমির প্রথমে তোলা ফসল আমি তোমার কাছেই এনেছি।’ এই বলে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে তোমরা তোমাদের টুকরি রাখবে এবং মাথা নীচু করে তাঁকে ভক্তি জানাবে। তোমাদের এবং তোমাদের পরিবারকে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে সব ভাল ভাল জিনিস দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন তা নিয়ে তোমরা, লেবীয়েরা এবং তোমাদের মধ্যেকার বিদেশী বাসিন্দারা আনন্দ করবে। “প্রত্যেক তৃতীয় বছরে তোমাদের সব ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ আদায় করা শেষ হলে পর সেগুলো তোমরা লেবীয়, বিদেশী বাসিন্দা, অনাথ এবং বিধবাদের দেবে। তাতে ঐ সব লোকেরা তোমাদের দেশের মধ্যে খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হবে। তারপর তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে বলবে, ‘আমি তোমার আদেশ অনুসারে আমার আয় থেকে তোমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা অংশটা বাড়ী থেকে বের করে এনে লেবীয়, বিদেশী বাসিন্দা, অনাথ এবং বিধবাদের দিয়েছি। তোমার আদেশ আমি অমান্য করি নি কিম্বা সেগুলোর একটাও আমি ভুলে যাই নি। মৃতদের জন্য শোক প্রকাশের অবস্থায় আমি তোমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা অংশ থেকে কোন কিছু খাই নি, কিম্বা অশুচি অবস্থায় তা বাড়ী থেকে বের করি নি, কিম্বা তা থেকে কোন অংশ মৃত লোকদের উদ্দেশে দান করি নি। আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথামত কাজ করেছি। তোমার আদেশ করা সব কিছুই আমি করেছি। হে সদাপ্রভু, তোমার পবিত্র বাসস্থান স্বর্গ থেকে তুমি নীচে তাকিয়ে দেখ আর তোমার লোকদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের তুমি আশীর্বাদ কর। আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে তোমার শপথ করা প্রতিজ্ঞা অনুসারে দুধ আর মধুতে ভরা যে দেশ তুমি আমাদের দিয়েছ সেই দেশকেও আশীর্বাদ কর।’ “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আজ তোমাদের এই সমস্ত নিয়ম ও নির্দেশ মেনে চলবার আদেশ দিচ্ছেন। তোমরা সতর্ক হয়ে সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে তা পালন করবে। আজকেই তোমরা স্বীকার করেছ যে, সদাপ্রভুই তোমাদের ঈশ্বর আর তাঁর পথেই তোমরা চলবে। তোমরা স্বীকার করেছ যে, তাঁর নিয়ম, আদেশ ও নির্দেশ তোমরা পালন করবে এবং তাঁর কথামতই চলবে। আর সদাপ্রভুও আজকে ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তোমরা তাঁরই লোক এবং তাঁর নিজের বিশেষ সম্পত্তি হয়েছ। তাঁর সব আদেশ তোমাদের মেনে চলতে হবে। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, প্রশংসা, সুনাম ও গৌরবের দিক থেকে তাঁর সৃষ্ট অন্যান্য জাতিদের উপরে তিনি তোমাদের স্থান দেবেন এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তোমরা হবে তাঁর উদ্দেশ্যে একটা আলাদা করা জাতি।” মোশি ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতাদের সংগে নিয়ে লোকদের বললেন, “যে সব আদেশ আজ আমি তোমাদের দিচ্ছি তা তোমরা পালন করবে। তোমরা যর্দন নদী পার হয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া দেশে গিয়ে কতগুলো বড় বড় পাথর খাড়া করে নেবে এবং সেগুলো চুন দিয়ে লেপে দেবে, আর সেগুলোর উপর এই আইন-কানুনের সব কথাগুলো লিখবে। তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের কাছে করা তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে দুধ আর মধুতে ভরা যে দেশটি তোমাদের দিতে যাচ্ছেন তোমরা সেখানে যাওয়ার পর, অর্থাৎ যর্দন নদী পার হয়ে যাওয়ার পর আমার আজকের আদেশ অনুসারে তোমরা এবল পাহাড়ের উপর সেই পাথরগুলো খাড়া করে নিয়ে চুন দিয়ে লেপে দেবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে তোমরা সেখানে একটা পাথরের বেদী তৈরী করবে। পাথরগুলোর উপর তোমরা কোন লোহার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবে না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর এই বেদীটা তোমরা গোটা গোটা পাথর দিয়ে তৈরী করবে আর তার উপর তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। সেখানে তোমরা যোগাযোগ-উৎসর্গেরও অনুষ্ঠান করবে ও সেই উৎসর্গের জিনিস খেয়ে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে আনন্দ করবে। যে পাথরগুলো তোমরা খাড়া করে নেবে তার উপর এই আইন-কানুনের সব কথাগুলো খুব স্পষ্ট করে লিখবে।” এর পর মোশি লেবীয় পুরোহিতদের নিয়ে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা চুপ করে শোন। আজ তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিজের লোক হয়েছ। তোমরা তাঁর বাধ্য হয়ে চলবে। আজ আমি যে সব আদেশ ও নিয়ম তোমাদের দিচ্ছি তা তোমরা পালন করে চলবে।” ঐ দিনই মোশি লোকদের এই আদেশ দিলেন, “তোমরা যর্দন নদী পার হয়ে যাবার পর যখন সদাপ্রভুর আশীর্বাদ উচ্চারণ করা হবে তখন শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর, যোষেফ ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকেরা গরিষীম পাহাড়ের উপরে থাকবে। আর যখন তাঁর অভিশাপ উচ্চারণ করা হবে তখন রূবেণ, গাদ, আশের, সবূলূন, দান ও নপ্তালি-গোষ্ঠীর লোকেরা এবল পাহাড়ের উপরে থাকবে। “লেবীয়েরা তখন সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সামনে চিৎকার করে এই কথা বলবে: ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে ছাঁচে ফেলে কিম্বা কাঠ বা পাথর খোদাই করে কোন মূর্তি তৈরী করে এবং পূজার জন্য তা গোপন জায়গায় স্থাপন করে। এই সব মূর্তি সদাপ্রভুর ঘৃণার জিনিস, কারিগরের হাতের কাজ মাত্র।’ তখন সবাই বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে মা কিম্বা বাবাকে অসম্মান করে।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে অন্য লোকের জমির সীমানা-চিহ্ন সরিয়ে দেয়।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে অন্ধকে ভুল পথে নিয়ে যায়।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে বিদেশী বাসিন্দা, অনাথ এবং বিধবাদের প্রতি অন্যায় বিচার হতে দেয়।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে তার সৎমায়ের সংগে ব্যভিচার করে, কারণ তাতে তার বাবাকে সে অসম্মান করে।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে পশুর সংগে দেহে মিলিত হয়।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে তার সৎবোনের সংগে ব্যভিচার করে- সে বাবার মেয়ে হোক কিম্বা মায়ের মেয়ে হোক।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে তার শাশুড়ীর সংগে ব্যভিচার করে।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে কাউকে গোপনে খুন করে।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে নির্দোষ লোককে খুন করবার জন্য ঘুষ নেয়।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ ‘সেই লোক অভিশপ্ত, যে এই আইন-কানুনের কথাগুলো পালন করে না এবং তার ক্ষমতাকে অস্বীকার করে।’ তখন সকলে বলবে, ‘আমেন।’ “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি যদি তোমাদের পূর্ণ বাধ্যতা থাকে এবং আজ আমি তাঁর যে সব আদেশ তোমাদের দিচ্ছি তা যদি তোমরা যত্নের সংগে পালন কর, তবে তিনি পৃথিবীর অন্য সব জাতির উপরে তোমাদের স্থান দেবেন। তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাধ্য হও তবে এই সব আশীর্বাদ তোমরা পাবে আর তা তোমাদের সংগে থাকবে: তোমাদের বাসস্থান ও ক্ষেত-খামারের সব কিছুতে তোমরা আশীর্বাদ পাবে। তোমরা আশীর্বাদ পাবে যার ফলে তোমাদের পরিবারের অনেক সন্তান, ক্ষেতে প্রচুর ফসল এবং পালের গরু-ছাগল-ভেড়ার অনেক বাচ্চা হবে। তোমাদের ফসলের ঝুড়ি ও ময়দা ঠাঁসবার পাত্র আশীর্বাদ পাবে। প্রতিদিনকার জীবনে তোমরা আশীর্বাদ পাবে। “যারা শত্রু হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে সদাপ্রভু এমন করবেন যাতে তারা তোমাদের কাছে হেরে যায়। তারা এক দিক দিয়ে তোমাদের আক্রমণ করতে এসে সাত দিক দিয়ে পালিয়ে যাবে। “তোমাদের গোলাঘরের উপর সদাপ্রভুর আশীর্বাদ থাকবে এবং যে কাজে তোমরা হাত দেবে তাতেই তিনি আশীর্বাদ করবেন। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর দেওয়া দেশে তোমাদের আশীর্বাদ করবেন। “যদি তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশগুলো পালন কর এবং তাঁর পথে চল তবে তিনি তাঁর শপথ করে প্রতিজ্ঞা অনুসারে, তাঁর আলাদা করা জাতি হিসাবে তোমাদের দাঁড় করাবেন। তখন পৃথিবীর সমস্ত জাতি দেখতে পাবে যে, সদাপ্রভুর নামেই তোমাদের পরিচয়, আর তাতে তারা তোমাদের ভয় করে চলবে। যে দেশটা তোমাদের দেবেন বলে সদাপ্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করেছিলেন সেই দেশে তিনি তোমাদের প্রচুর দান করবেন, অর্থাৎ তিনি তোমাদের পরিবারে অনেক ছেলেমেয়ে, পশুপালে অনেক বাচ্চা ও ক্ষেতে অনেক ফসল দেবেন। “তোমাদের দেশে সময়মত বৃষ্টি দিয়ে তোমাদের হাতের সব কাজে আশীর্বাদ করবার জন্য সদাপ্রভু তাঁর দানের ভাণ্ডার, অর্থাৎ আকাশ খুলে দেবেন। তোমরা অনেক জাতিকে ঋণ দিতে পারবে, কিন্তু কারও কাছ থেকে তোমাদের ঋণ নিতে হবে না। সদাপ্রভু এমন করবেন যাতে তোমরা সকলের মাথার উপরে থাক, পায়ের তলায় নয়। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর যে সব আদেশ আজ আমি তোমাদের দিচ্ছি তাতে যদি তোমরা কান দাও এবং যত্নের সংগে তা পালন কর, তবে সব সময় তোমাদের স্থান থাকবে উপরে, নীচে নয়। আজ আমি তোমাদের যে সব আদেশ দিচ্ছি, দেব-দেবতার পিছনে গিয়ে এবং তাদের পূজা করে তোমরা তা থেকে এদিক ওদিক সরে যাবে না। “কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথায় কান না দাও এবং আজকের দেওয়া আমার এই সব আদেশ ও নিয়ম যত্নের সংগে পালন না কর, তবে এই সব অভিশাপ তোমাদের উপর নেমে আসবে এবং তোমাদের সংগে থাকবে: তোমাদের বাসস্থান ও ক্ষেত-খামারের সব কিছুতে তোমরা অভিশপ্ত হবে। তোমাদের ফসলের ঝুড়ি ও ময়দা ঠাঁসবার পাত্র অভিশপ্ত হবে। তোমরা অভিশপ্ত হবে যার ফলে তোমাদের পরিবারে কম ছেলেমেয়ে, ক্ষেতে কম ফসল এবং পালের গরু, ছাগল ও ভেড়ার কম বাচ্চা হবে। প্রতিদিনকার জীবনে তোমরা অভিশপ্ত হবে। “মন্দ কাজ করে সদাপ্রভুকে ত্যাগ করবার অপরাধে তোমাদের সমস্ত কাজে তিনি তোমাদের অভিশাপ দেবেন, বিশৃঙ্খলায় ফেলবেন আর তিরস্কার করবেন, যার ফলে তোমরা ক্ষয় হতে হতে অল্প সময়ের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমরা যে দেশ দখল করতে যাচ্ছ সদাপ্রভু সেখানে এমন করবেন যাতে তোমাদের মধ্যে মড়ক লেগেই থাকে আর শেষ পর্যন্ত তোমরা দেশ থেকে একেবারে শেষ হয়ে যাও। ক্ষয় রোগ, তিন রকমের মারাত্মক জ্বর, যুদ্ধ, গরম শুকনা বাতাস এবং ছাৎলা- এই সব সদাপ্রভু তোমাদের উপর নিয়ে আসবেন এবং তোমাদের কষ্ট দেবেন যতক্ষণ না তোমরা ধ্বংস হয়ে যাও। তোমাদের মাথার উপরের আকাশ হবে ব্রোঞ্জের মত শক্ত, আর পায়ের তলার মাটি হবে লোহার মত শক্ত। সদাপ্রভু এমন করবেন যাতে তোমাদের দেশে বৃষ্টির বদলে আকাশ থেকে ধূলা আর বালি পড়ে। সেগুলো তোমাদের উপর পড়বে যতক্ষণ না তোমরা শেষ হয়ে যাও। “সদাপ্রভু এমন করবেন যাতে তোমরা তোমাদের শত্রুদের সামনে হেরে যাও। তোমরা এক দিক দিয়ে তাদের আক্রমণ করবে কিন্তু তাদের সামনে থেকে পালিয়ে যাবে সাত দিক দিয়ে। পৃথিবীর অন্য সব রাজ্যের লোকেরা তোমাদের অবস্থা দেখে ভয়ে আঁতকে উঠবে। তোমাদের মৃতদেহ হবে আকাশের পাখী এবং পৃথিবীর পশুদের খাবার, আর তাদের তাড়িয়ে দেবার জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না। সদাপ্রভু মিসরীয়দের সেই ফোড়া, আব, চুলকানি আর পাঁচড়া দিয়ে তোমাদের কষ্ট দেবেন যা থেকে কেউ তোমাদের ভাল করতে পারবে না। তিনি পাগলামি ও অন্ধতা দিয়ে এবং চিন্তাশক্তি নষ্ট করে দিয়ে তোমাদের আরও কষ্ট দেবেন। অন্ধ লোক যেমন অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ায় তেমনি করে তোমরা দিনের বেলাতেই হাতড়ে বেড়াবে; তোমাদের কোন কাজই সফল হবে না। তোমাদের উপর সব সময় অত্যাচার আর লুট চলবে; তা থেকে তোমাদের উদ্ধার করবার জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না। “যে স্ত্রীলোকের সংগে তোমার বিয়ে ঠিক হবে অন্য লোকে তার ইজ্জত নষ্ট করবে। তোমরা বাড়ী তৈরী করবে কিন্তু তাতে থাকতে পারবে না। তোমরা আংগুর ক্ষেত করবে কিন্তু তার ফল মুখে দিতে পারবে না। তোমাদের চোখের সামনেই তোমাদের গরু কাটা হবে, কিন্তু তার এক টুকরা মাংসও তোমাদের পেটে যাবে না। তোমাদের গাধাকে জোর করে তোমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হবে, কিন্তু তা আর ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। তোমাদের ভেড়া তোমাদের শত্রুদের হাতে গিয়ে পড়বে; আর এই বিপদে তোমাদের উদ্ধার করতে কেউ এগিয়ে আসবে না। তোমাদের ছেলেমেয়েরা অন্য জাতির হাতে পড়বে। দিনের পর দিন তাদের আসবার পথ চেয়ে তোমাদের চোখ অন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু কিছু করবার শক্তি তোমাদের হাতে থাকবে না। তোমাদের অচেনা জাতির লোকেরা তোমাদের জমির ফসল ও পরিশ্রমের ফল ভোগ করবে আর তোমাদের সারাটা জীবন ধরে তোমরা কেবল অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার ভোগ করবে। তোমরা যা দেখবে তা তোমাদের পাগল করে দেবে। সদাপ্রভু তোমাদের হাঁটুতে ও পায়ে এমন সব বিষফোড়া দিয়ে কষ্ট দেবেন যা কখনও ভাল হবে না। সেই ফোড়া তোমাদের পায়ের তলা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত সব জায়গায় হবে। “যাকে তোমরা রাজা করে তোমাদের উপরে বসাবে সদাপ্রভু তাকে এবং তোমাদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমন এক জাতির হাতে ফেলবেন যাকে তোমরাও জান না এবং তোমাদের পূর্বপুরুষেরাও জানত না। সেখানে তোমরা কাঠ আর পাথরের দেবমূর্তির পূজা করবে। সদাপ্রভু তোমাদের যে সব জাতির মধ্যে তাড়িয়ে দেবেন তারা তোমাদের অবস্থা দেখে ভয়ে আঁতকে উঠবে, আর তারা তোমাদের ঠাট্টা-তামাশা করবে ও কটুকথায় বিঁধবে। “তোমরা বুনবে অনেক কিন্তু কাটবে কম, কারণ পংগপালে ফসল খেয়ে ফেলবে। তোমরা আংগুর ক্ষেত করবে এবং তার যত্নও নেবে কিন্তু পোকায় তার ফল খেয়ে ফেলবে বলে তোমরা তা তুলতেও পারবে না কিম্বা তার রসও খেতে পারবে না। তোমাদের সারা দেশে জলপাই গাছ থাকবে কিন্তু তার ফল ঝরে পড়ে যাবে বলে জলপাই তেল মাখা তোমাদের হবে না। যে সব ছেলেমেয়ে তোমাদের হবে তারা তোমাদের কাছে থাকবে না, কারণ তাদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে। ঝাঁকে ঝাঁকে পংগপাল এসে তোমাদের দেশের গাছ-গাছড়া ও ফসল খেয়ে ফেলবে। “তোমাদের মধ্যে বাস করা অন্যান্য জাতির লোকেরা তোমাদের উপরে উঠতে থাকবে আর তোমরা নামতে থাকবে তাদের নীচে। তারাই তোমাদের ঋণ দেবে কিন্তু তোমরা তাদের ঋণ দিতে পারবে না। তারা থাকবে তোমাদের মাথার উপরে আর তোমরা থাকবে তাদের পায়ের তলায়। “এই সব অভিশাপ তোমাদের উপরে নেমে আসবে। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাধ্য না হওয়ার দরুন এবং তিনি যে সব আদেশ ও নিয়ম দিয়েছেন তা পালন না করবার দরুন এই সব অভিশাপ তোমাদের পিছনে তাড়া করে আসবে ও তোমাদের ধরে ফেলবে এবং শেষ পর্যন্ত তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। এই অভিশাপগুলো আশ্চর্য চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ হিসাবে তোমাদের ও তোমাদের বংশধরদের উপর চিরকাল থাকবে। “সদাপ্রভু দূর থেকে, পৃথিবীর শেষ সীমানা থেকে এমন এক জাতিকে তোমাদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসবেন যাদের ভাষা তোমরা বুঝবে না। ঈগল পাখীর মত করে সেই জাতি ছোঁ মেরে তোমাদের উপর নেমে আসবে। তারা হবে ভীষণ চেহারার লোক। তারা বুড়োদের সম্মান করবে না আর ছেলেমেয়েদের দয়ামায়া করবে না। তারা তোমাদের পশুর বাচ্চা ও ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলবে এবং শেষ পর্যন্ত তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা তোমাদের জন্য কোন ফসল, নতুন আংগুর-রস কিম্বা তেল কিম্বা গরুর বাছুর বা ভেড়ার বাচ্চা বাকী রাখবে না, আর শেষ পর্যন্ত তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা তোমাদের গ্রাম ও শহরগুলো ঘেরাও করে রাখবে, আর শেষ পর্যন্ত তোমাদের উঁচু ও শক্ত দেয়ালগুলো ভেংগে পড়বে যার উপর তোমরা এত ভরসা করছ। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশ তোমাদের দিতে যাচ্ছেন সেই দেশের সমস্ত গ্রাম ও শহর তারা ঘেরাও করবে। “সেগুলো ঘেরাও করে রাখবার সময় শত্রুরা তোমাদের এমন কষ্টে ফেলবে যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সন্তানদেরই খাবে, অর্থাৎ তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া ছেলেমেয়েদের মাংস খাবে। তখন তোমাদের মধ্যে যে লোক কোমল স্বভাবের আর ভাল অবস্থায় মানুষ হয়েছে, তার অন্তরও এমন হবে যে, নিজের ভাইয়ের প্রতি, কিম্বা প্রিয় স্ত্রীর প্রতি, কিম্বা জীবিত ছেলেমেয়েদের প্রতি তার কোন দয়ামায়া থাকবে না। যে সন্তানের মাংস সে খাবে তার একটুও সে তাদের দেবে না, কারণ শত্রুরা যখন তোমাদের গ্রাম বা শহর ঘেরাও করে রেখে তোমাদের কষ্টে ফেলবে তখন এছাড়া আর কোন খাবারই তার কাছে থাকবে না। তোমাদের মধ্যে যে স্ত্রীলোক কোমল স্বভাবের এবং এমন ভাল অবস্থায় মানুষ হয়েছে যে তাকে কোন দিন মাটিতে পা ফেলতে হয় নি, তারও তার প্রিয় স্বামী ও ছেলেমেয়েদের প্রতি কোন দয়ামায়া থাকবে না। সন্তান জন্মের পর সেই সন্তান এবং তার পরে দেহ থেকে বের হয়ে আসা ফুল, এর কোনটাই সে তাদের খেতে দেবে না। তোমাদের ঘেরাও করে রাখবার সময় তোমাদের শত্রুরা যখন তোমাদের কষ্টে ফেলবে তখন সে নিজেই সেই ফুল ও সন্তান চুপিচুপি খাবে। “এই বইয়ে যে সব আইন-কানুন লেখা রয়েছে তা যদি তোমরা যত্নের সংগে মেনে না চল, অর্থাৎ ‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু’ বলে তাঁর এই যে গৌরবপূর্ণ ও ভয় জাগানো নামটি রয়েছে যদি তোমরা সেই নামের সম্মান না কর, তবে সদাপ্রভু তোমাদের ও তোমাদের বংশধরদের উপর এমন সব ভীষণ ও অদ্ভুত রকমের আঘাত ও কষ্ট দেওয়া রোগ নিয়ে আসবেন যা অনেক দিন ধরে চলবে। মিসর দেশে যে সব রোগ দেখে তোমরা ভয় পেতে, তিনি সেই সবই তোমাদের উপর আনবেন আর সেগুলো তোমাদের ছাড়বে না। এছাড়া সদাপ্রভু এমন সব রোগ ও আঘাত তোমাদের উপর আনবেন যার কথা এই আইন-কানুনের বইয়ের মধ্যে লেখা নেই, আর শেষ পর্যন্ত তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমাদের লোকসংখ্যা আকাশের তারার মত হলেও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি অবাধ্যতার দরুন তোমরা তখন মাত্র অল্প কয়েকজনই বেঁচে থাকবে। যে আনন্দে সদাপ্রভু তোমাদের মংগল করেছেন ও তোমাদের লোকসংখ্যা বাড়িয়ে তুলেছেন সেই আনন্দে তখন তিনি তোমাদের ধ্বংস করে শেষ করে দেবেন। যে দেশ তোমরা দখল করতে যাচ্ছ সেই দেশ থেকে শিকড় সুদ্ধ তোমাদের তুলে ফেলা হবে। “তারপর সদাপ্রভু পৃথিবীর এক সীমা থেকে অন্য সীমা পর্যন্ত সমস্ত জাতির মধ্যে তোমাদের ছড়িয়ে দেবেন। তোমরা সেখানে তোমাদের এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের অজানা কাঠের ও পাথরের দেবমূর্তির পূজা করবে। সেই সব জাতির মধ্যে তোমরা শান্তি পাবে না, আর তোমাদের বিশ্রাম করবার নিজের কোন জায়গা থাকবে না। সেখানে সদাপ্রভু তোমাদের মন দুশ্চিন্তায় ভরে তুলবেন এবং আশা করে চেয়ে থাকা চোখ তোমাদের ক্লান্ত করে তুলবেন, আর তোমাদের অন্তর নিরাশায় ভরে দেবেন। কি হবে না হবে এই ভাবটা তোমাদের পেয়ে বসবে; আর দিনরাত ভয়-ভরা অন্তরে তোমরা বেঁচে থাকা সম্বন্ধে কখনও নিশ্চিত হতে পারবে না। তোমরা সকালবেলা বলবে, ‘সন্ধ্যা হোক,’ আর সন্ধ্যাবেলা বলবে, ‘সকাল হোক,’ কারণ তোমাদের অন্তর ভয়ে ভরা থাকবে আর চোখ অনেক কিছু দেখবে। মিসরে যাওয়া সম্বন্ধে আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, সেই পথে আর কখনও তোমাদের পা দিতে হবে না; কিন্তু সদাপ্রভু তখন জাহাজ ভরে ভরে তোমাদের মিসরে ফেরৎ পাঠাবেন। সেখানে তোমরা দাস ও দাসী হিসাবে শত্রুদের কাছে নিজেদের বিক্রি করতে চাইবে কিন্তু কেউ তোমাদের কিনবে না।” সদাপ্রভু হোরেব পাহাড়ে মোশির মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের জন্য একটা ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন, আর এগুলো হল তাঁর দ্বিতীয় ব্যবস্থার শর্ত যা তিনি মোশিকে মোয়াব দেশে ইস্রায়েলীয়দের জন্য স্থাপন করতে বলেছিলেন। মোশি সব ইস্রায়েলীয়দের ডেকে বললেন, “সদাপ্রভু মিসর দেশের ফরৌণ ও তাঁর সমস্ত কর্মচারীর প্রতি এবং তাঁর গোটা দেশটার প্রতি যা করেছিলেন তা তোমরা নিজেরাই দেখেছ। তাঁদের সেই মহাপরীক্ষা এবং সদাপ্রভুর দেখানো আশ্চর্য চিহ্ন এবং তাঁর বড় বড় আশ্চর্য কাজ তোমরা নিজেদের চোখেই দেখেছ। কিন্তু তোমরা সদাপ্রভুর কাছ থেকে আজ পর্যন্ত সেগুলো বুঝবার মন, দেখবার চোখ ও শুনবার কান পাও নি। চল্লিশ বছর মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুই তোমাদের চালিয়ে নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে তোমাদের গায়ের কাপড় এবং জুতা নষ্ট হয়ে যায় নি। রুটি, আংগুর-রস কিম্বা অন্য কোন মদ তোমরা খেতে পাও নি। সদাপ্রভুই তা করেছেন যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, তিনিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। “তোমরা এই জায়গায় পৌঁছালে পর হিষ্‌বোনের রাজা সীহোন ও বাশনের রাজা ওগ আমাদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য বের হয়ে এসেছিলেন, কিন্তু আমরা তাঁদের হারিয়ে দিয়েছি। আমরা তাঁদের দেশ নিয়ে সম্পত্তি হিসাবে তা রূবেণীয়, গাদীয় ও মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোককে দিয়েছি। সেইজন্য তোমরা এই ব্যবস্থার সব আদেশগুলো যত্নের সংগে মেনে চলবে যাতে সব কাজেই তোমাদের মংগল হয়। “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে আজ তোমরা সবাই এসে দাঁড়িয়েছ- দাঁড়িয়েছে তোমাদের সর্দারেরা ও প্রধানেরা, তোমাদের বৃদ্ধ নেতারা ও কর্মচারীরা এবং অন্যান্য সব ইস্রায়েলীয়েরা। তোমাদের সংগে রয়েছে তোমাদের ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীলোকেরা; আর রয়েছে তোমাদের ছাউনিতে বাস-করা অন্য জাতির লোকেরা যারা তোমাদের কাঠ কাটে ও জল তোলে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের জন্য আজ নিশ্চয়তার শপথ করে যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন সেই শপথ ও ব্যবস্থা মেনে নেবার জন্য তোমরা এখানে এসে দাঁড়িয়েছ। সদাপ্রভু আজ তা স্থাপন করছেন যাতে তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে করা শপথ এবং তোমাদের কাছে করা প্রতিজ্ঞা অনুসারে তিনি তোমাদের ঈশ্বর হতে পারেন এবং আজকের দিনে পাকাপাকি ভাবে তোমাদের তাঁর নিজের লোক করে নিতে পারেন। “তোমরা নিজেরাই জান, মিসর দেশে আমরা কি রকম জীবন কাটিয়েছি এবং কিভাবে বিভিন্ন দেশের মধ্য দিয়ে এখানে এসে পৌঁছেছি। কাঠ, পাথর, সোনা ও রূপার তৈরী জঘন্য মূর্তি ও প্রতিমা তোমরা ঐ সব লোকদের মধ্যে দেখেছ। তোমরা দেখে নাও যেন তোমাদের মধ্যে আজ এমন কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোক কিম্বা কোন বংশ বা গোষ্ঠী না থাকে যার অন্তর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ফেলে ঐ সব জাতির দেব-দেবতার পূজা করতে আগ্রহী। যদি সেই রকম কেউ থাকে তবে তোমাদের মধ্যে সে হবে এমন একটা শিকড়ের মত যা পরে বিষাক্ত তেতো গাছ হয়ে উঠবে। এই রকম লোক এই শপথ করা কথাগুলো শুনবার সময় যদি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করে এবং মনে মনে ভাবে, নিজের ইচ্ছামত চলতে থাকলেও সে নিরাপদে থাকবে, তাহলে তোমাদের সকলের উপরেই সে সর্বনাশ ডেকে আনবে। সদাপ্রভু কখনও তাকে ক্ষমা করতে রাজী হবেন না। সেই লোকের বিরুদ্ধে তাঁর ক্রোধ জ্বলে উঠবে আর তাঁর অন্তরে তাঁর পাওনা ভক্তির আগ্রহ জেগে উঠবে। এই বইয়ে যে সব অভিশাপের কথা লেখা আছে তা সবই তার উপর পড়বে। সদাপ্রভু পৃথিবী থেকে তার নাম মুছে ফেলবেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্য থেকে অমংগলের জন্য তাকেই বেছে নেবেন, আর তিনি এই আইন-কানুনের বইয়ে লেখা ব্যবস্থার মধ্যে যে সব অভিশাপের কথা বলা হয়েছে সেই কথা অনুসারে তা করবেন। “এইভাবে এই দেশের উপর যে সব আঘাত নেমে আসবে এবং সদাপ্রভু যে সব রোগ দেশের উপর পাঠিয়ে দেবেন সেই বিষয়ে তোমাদের বংশধরেরা আর দূর দেশ থেকে আসা বিদেশীরা তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে। গোটা দেশটা লবণ আর গন্ধকে পুড়ে পড়ে থাকবে। তাতে কিছুই বোনা হবে না, কিছুই গজাবে না আর কোন ঘাস বা ঝোপ-ঝাড় তার উপর থাকবে না। এই দেশের অবস্থা হবে সদোম, ঘমোরা, অদ্‌মা ও সবোয়িমের মত, যা সদাপ্রভু তাঁর ভয়ংকর ক্রোধে জ্বলে উঠে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তা দেখে অন্য সব জাতি জিজ্ঞাসা করবে, ‘সদাপ্রভু কেন এই দেশটার এই দশা করেছেন? কেন তাঁর এই ভয়ংকর জ্বলন্ত ক্রোধ? ’ “এর উত্তর হবে, ‘কারণ এই জাতি তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ব্যবস্থা ত্যাগ করেছে, যে ব্যবস্থা মিসর দেশ থেকে তাদের বের করে আনবার পর তিনি তাদের জন্য স্থাপন করেছিলেন। তারা তাঁকে ফেলে তাদের কাছে নতুন দেব-দেবতার পূজা করেছে ও তাদের সামনে মাথা নীচু করেছে, যাদের পূজা করবার নির্দেশ সদাপ্রভু দেন নি। সেইজন্যই সদাপ্রভুর ক্রোধ এই দেশের উপর জ্বলে উঠেছে আর তিনি এই বইয়ে লেখা সব অভিশাপ এই দেশের উপর ঢেলে দিয়েছেন। ভীষণ ক্রোধে, ভয়ংকর জ্বলন্ত ক্রোধে, তিনি দেশ থেকে তাদের উপ্‌ড়ে নিয়ে অন্য দেশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন, আর আজও তারা সেখানেই আছে।’ “গোপন সব কিছু আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ব্যাপার, কিন্তু প্রকাশিত সব কিছু চিরকালের জন্য আমাদের ও আমাদের সন্তানদের, যেন এই আইন-কানুনের সমস্ত কথা আমরা পালন করে চলতে পারি। “আমি তোমাদের সামনে যে আশীর্বাদ ও অভিশাপ তুলে ধরলাম তা সবই তোমাদের উপর আসবে। তারপর তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে সব জাতির মধ্যে তোমাদের ছড়িয়ে দেবেন তাদের মধ্যে বাস করবার সময় এই সব কথায় তোমরা মন দেবে। সেই সময় যখন তোমরা ও তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরে আসবে এবং আজ আমি তোমাদের যে সব আদেশ দিচ্ছি তা পালন করে মনে-প্রাণে তাঁর ইচ্ছামত চলবে, তখন সদাপ্রভু বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে তোমাদের ফিরিয়ে আনবেন। তিনি তোমাদের প্রতি করুণা করবেন এবং যে সব জাতিদের মধ্যে তোমাদের ছড়িয়ে দেবেন তাদের মধ্য থেকে তিনি আবার তোমাদের কুড়িয়ে আনবেন। আকাশের শেষ সীমানায়ও যদি তোমাদের ফেলে দেওয়া হয় সেখান থেকেও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের কুড়িয়ে আনবেন। তোমাদের পূর্বপুরুষদের দেশেই তিনি তোমাদের ফিরিয়ে আনবেন আর তোমরা তা আবার দখল করবে। তিনি তোমাদের অনেক মংগল করবেন এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের চেয়েও তোমাদের লোকসংখ্যা বাড়িয়ে দেবেন। তোমরা যাতে তোমাদের সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে তাঁকে ভালবেসে বেঁচে থাক সেইজন্য তিনি তোমাদের ও তোমাদের বংশধরদের অন্তরের সুন্নত করবেন। এই সব অভিশাপ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের শত্রুদের উপর আনবেন যারা তোমাদের ঘৃণা ও অত্যাচার করবে। তখন তোমরা আবার সদাপ্রভুর বাধ্য হয়ে চলবে আর তাঁর যে সব আদেশ আজ আমি তোমাদের দিচ্ছি তা মেনে চলবে। “তখন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সব দিক থেকে তোমাদের মংগল করবেন। তিনি তোমাদের কাজকর্মে আশীর্বাদ করবেন এবং তোমাদের সন্তানের সংখ্যা, পশুর বাচ্চা এবং জমির ফসল বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর তাঁর যে আনন্দ ছিল তোমাদের উপর আবার সেই আনন্দ নিয়ে তিনি তোমাদের মংগল করবেন- অবশ্য যদি তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাধ্য হয়ে এই আইন-কানুনের বইয়ে লেখা তাঁর সব আদেশ ও নিয়ম পালন কর আর মনে-প্রাণে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিকে ফেরো। “আজ আমি তোমাদের যে আদেশ দিচ্ছি তা পালন করা তোমাদের পক্ষে তেমন শক্ত নয় কিম্বা এই আদেশ তোমাদের নাগালের বাইরেও নয়। এই আদেশ স্বর্গে তুলে রাখা কোন জিনিস নয় যে, তোমরা বলবে, ‘কে স্বর্গে গিয়ে তা এনে আমাদের শোনাবে যাতে আমরা তা পালন করতে পারি? ’ এটা সমুদ্রের ওপারের কোন জিনিসও নয় যে, তোমরা বলবে, ‘কে সমুদ্র পার হয়ে গিয়ে তা এনে আমাদের শোনাবে যাতে আমরা তা পালন করতে পারি? ’ সদাপ্রভুর কথা তোমাদের সংগেই রয়েছে; রয়েছে তোমাদের মুখে ও অন্তরে যাতে তোমরা তা পালন করতে পার। “দেখ, আজ আমি তোমাদের সামনে যা তুলে ধরছি তা হল জীবন ও মংগল কিম্বা মৃত্যু ও অমংগল। আজ তোমাদের কাছে আমার আদেশ এই যে, তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভালবাসবে, তাঁর পথে চলবে এবং তাঁর আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ মেনে চলবে। তাহলে তোমরা বাঁচবে এবং সংখ্যায় বেড়ে উঠবে, আর যে দেশ তোমরা দখল করবার জন্য যাচ্ছ সেখানে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করবেন। “কিন্তু যদি তোমাদের অন্তর তাঁর কাছ থেকে সরে যায় এবং তোমরা তাঁর অবাধ্য হও আর যদি তোমরা দেব-দেবতার পূজার টানে তাদের কাছে মাথা নীচু কর, তবে আজ আমি তোমাদের বলে দিচ্ছি যে, তোমরা নিশ্চয়ই ধ্বংস হয়ে যাবে। যর্দন নদী পার হয়ে যে দেশ তোমরা দখল করতে যাচ্ছ সেখানে তোমরা বেশী দিন বেঁচে থাকবে না। পরে মোশি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “আমার বয়স একশো বিশ বছর হয়ে গেছে। আমার কাজ আর আমি করতে পারছি না। সদাপ্রভুও আমাকে বলেছেন যে, যর্দন নদী পার হয়ে যাওয়া আমার হবে না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজেই নদী পার হয়ে তোমাদের আগে আগে যাবেন। তোমাদের সামনে থেকে ঐ সব জাতিদের তিনিই ধ্বংস করে দেবেন আর তোমরা তাদের দেশ দখল করে নেবে। সদাপ্রভুর কথা অনুসারে যিহোশূয়ই নদী পার হয়ে তোমাদের আগে আগে যাবে। ইমোরীয়দের রাজা সীহোন এবং ওগ আর তাঁদের দেশ যেমন সদাপ্রভু ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তেমনি করে তিনি সেই সব জাতিও ধ্বংস করে ফেলবেন। তাদের তিনি তোমাদের হাতে তুলে দেবেন আর আমি তাদের প্রতি যা করবার আদেশ দিয়েছি তোমরা তাদের প্রতি তা-ই করবে। তোমরা শক্ত হও ও মনে সাহস আন। তাদের দেখে তোমরা ভয় পেয়ো না কিম্বা কেঁপে উঠো না, কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তোমাদের সংগে যাবেন। তিনি কখনও তোমাদের ছেড়ে যাবেন না বা ত্যাগ করবেন না।” এর পর মোশি যিহোশূয়কে ডাকলেন এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সামনে তাঁকে বললেন, “তুমি শক্তিশালী হও ও মনে সাহস আন, কারণ তোমাকেই এই লোকদের সংগে সেই দেশে যেতে হবে যে দেশটা এদের দেবার শপথ সদাপ্রভু এদের পূর্বপুরুষদের কাছে করেছিলেন। তোমাকেই সেই দেশটা সম্পত্তি হিসাবে এদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। সদাপ্রভু নিজেই তোমার আগে আগে যাবেন এবং তোমার সংগে থাকবেন। তিনি কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবেন না বা ত্যাগ করবেন না। তুমি ভয় কোরো না, উৎসাহ হারায়ো না।” লেবি-গোষ্ঠীর পুরোহিতেরা, যাঁরা সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুকটি বয়ে নিয়ে যেতেন, মোশি সমস্ত আইন-কানুন লিখে তাঁদের হাতে ও ইস্রায়েলীয়দের বৃদ্ধ নেতাদের হাতে দিলেন। পুরুষ, স্ত্রীলোক, ছেলেমেয়ে এবং তোমাদের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের ভিন্ন জাতির লোকদের ডেকে তোমরা একসংগে জড়ো করবে, যাতে তারা তা শুনতে পারে এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তি করতে শেখে আর এই আইন-কানুনের সমস্ত কথা যত্নের সংগে পালন করে। এইভাবে তাদের ছেলেমেয়েরা, যাদের এই আইন-কানুনের কথা জানা থাকবে না, তারাও তা শুনতে পাবে এবং এই শিক্ষা পাবে যে, যর্দন পার হয়ে যে দেশটা তোমরা দখল করতে যাচ্ছ সেখানে সারা জীবন তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তাদের ভক্তি করতে হবে।” এর পর সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার মৃত্যুর দিন কাছে এসে গেছে। যিহোশূয়কে ডেকে নিয়ে তুমি মিলন-তাম্বুতে যাও। সেখানে আমি তাকে তার কাজের ভার দেব।” কাজেই মোশি ও যিহোশূয় মিলন-তাম্বুতে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হলেন। তখন সদাপ্রভু মেঘের থামের মধ্যে সেই তাম্বুতে উপস্থিত হলেন এবং সেই থামটি তাম্বুর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে বিশ্রাম করতে যাচ্ছ, কিন্তু এই লোকেরা যে দেশে ঢুকতে যাচ্ছে সেখানে খুব শীঘ্রই তারা আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে সেখানকার দেবপূজায় নিজেদের বিকিয়ে দেবে। তারা আমাকে ত্যাগ করবে এবং আমি তাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছি তারা তার খেলাপ করবে। যেদিন তারা তা করবে সেই দিন ক্রোধে আমি তাদের ত্যাগ করব। আমি তাদের কাছ থেকে আমার মুখ ফিরিয়ে নেব আর তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন তাদের উপর অনেক বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট নেমে আসবে। সেই দিন তারা বলবে, ‘আমাদের ঈশ্বর আমাদের সংগে নেই বলেই আমাদের উপর এই সব বিপদ এসেছে।’ তারা দেব-দেবতাদের দিকে ফিরে যে সব মন্দ কাজ করবে সেইজন্য আমি নিশ্চয়ই সেই দিন আমার মুখ ফিরিয়ে নেব। “তোমরা এখন এই গানটা লিখে নাও। এটা ইস্রায়েলীয়দের শিখাবে এবং তাদের দিয়ে গাওয়াবে, যাতে তাদের বিরুদ্ধে এটা আমার পক্ষে একটা সাক্ষী হয়ে থাকে। তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমার শপথ করা সেই দুধ আর মধুতে ভরা দেশে যখন আমি তাদের নিয়ে যাব আর যখন তারা পেট ভরে খেয়ে সুখে থাকবে তখন তারা আমাকে তুচ্ছ করে আমার ব্যবস্থার খেলাপ করে দেব-দেবতার পিছনে গিয়ে তাদের পূজা করবে। ফলে তাদের উপর যখন অনেক বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট নেমে আসবে তখন এই গানটাই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে, কারণ তাদের বংশধরেরা গানটা ভুলে যাবে না। আমার শপথ করে প্রতিজ্ঞা করা দেশে তাদের নিয়ে যাওয়ার আগেই আমি জানি যে, তাদের অন্তরে এখন কি রয়েছে।” মোশি ঐ দিন গানটা লিখে ইস্রায়েলীয়দের শিখিয়েছিলেন। নূনের ছেলে যিহোশূয়কে সদাপ্রভু এই আদেশ দিলেন, “তুমি শক্তিশালী হও ও মনে সাহস আন। যে দেশ দেবার প্রতিজ্ঞা আমি শপথ করে ইস্রায়েলীয়দের কাছে করেছিলাম সেখানে তুমিই তাদের নিয়ে যাবে। আমি নিজেই তোমার সংগে থাকব।” মোশি এই আইন-কানুন আগাগোড়া একটি বইয়ে লিখে নিলেন। তারপর সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী লেবীয়দের তিনি বললেন, “আইন-কানুনের এই বইটা নিয়ে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকের পাশে রাখ। এটা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে সেখানে থাকবে। তোমরা যে কেমন একগুঁয়ে ও বিদ্রোহী তা আমার জানা আছে। আমি তোমাদের মধ্যে বেঁচে থাকতেই যখন তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছ তখন আমি মারা যাওয়ার পরে আরও কত বেশী করেই না তা করবে। তোমরা তোমাদের গোষ্ঠীর বৃদ্ধ নেতাদের ও কর্মচারীদের সবাইকে আমার সামনে জড়ো কর। আমি তাদের এই সব কথা বলতে চাই আর মহাকাশ ও পৃথিবীকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী রেখে যেতে চাই। আমি জানি যে, আমার মৃত্যুর পরে তোমরা একেবারেই খারাপ হয়ে যাবে এবং যে পথে আমি তোমাদের চলবার নির্দেশ দিয়েছি তোমরা তা থেকে সরে যাবে। ভবিষ্যতে তোমাদের উপর বিপদ নেমে আসবে, কারণ সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তোমরা তা করবে এবং তোমাদের নিজের হাতে গড়া মূর্তি দিয়ে তোমরা তাঁকে অসন্তুষ্ট করে তুলবে।” তারপর মোশি এই গানের কথাগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের শোনালেন: হে মহাকাশ, আমার কথায় কান দাও; হে পৃথিবী, আমার মুুখের কথা শোন। আমার শিক্ষা বৃষ্টির মত করে ঝরে পড়ুক, আমার কথা শিশিরের মত করে নেমে আসুক। হালকা এক পস্‌লা বৃষ্টির মত করে তা নতুন ঘাসের উপর ঝরে পড়ুক, আর গাছ-গাছড়ার উপর ভারী বৃষ্টি হয়ে তা পড়ুক। আমি সদাপ্রভুর নাম ঘোষণা করব। তোমরা আমাদের ঈশ্বরের মহিমা-গান কর। তিনিই আশ্রয়-পাহাড়, তাঁর কাজ নিখুঁত; তাঁর সমস্ত পথ ন্যায়ের পথ। তিনি নির্ভরযোগ্য ঈশ্বর, তিনি কোন অন্যায় করেন না; তিনি ন্যায়বান ও সৎ। তাঁর প্রতি তাঁর লোকেরা জঘন্য ব্যবহার করেছে। তাদের অন্তরের কলংকের জন্য তারা আর তাঁর সন্তান নয়। তারা অবিশ্বস্ত, তাদের মন সরল নয়। হে অবুঝ, বুদ্ধিহীন জাতি! এমনি করেই কি তোমরা সদাপ্রভুকে শোধ দেবে? তিনি কি তোমাদের পিতা ও সৃষ্টিকর্তা নন? তিনিই তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন; তিনিই জাতি হিসাবে তোমাদের স্থাপন করেছেন। সেই পুরানো দিনগুলোর কথা মনে কর; তোমাদের অনেক দিন আগেকার পূর্বপুরুষদের কথা ভেবে দেখ। সেই সব দিনের কথা তোমাদের পিতাদের জিজ্ঞাসা কর, তাঁরা তোমাদের বলবেন; বুড়ো লোকদের জিজ্ঞাসা কর, তাঁরা তোমাদের বুঝিয়ে বলবেন। মহান ঈশ্বর যখন বিভিন্ন জাতিকে সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন, আর মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন জাতিতে ভাগ করলেন, তখন ইস্রায়েল জাতির লোকসংখ্যা মনে রেখে তিনি অন্য জাতিদের সীমানা ঠিক করে দিলেন। সদাপ্রভুর পাওনা ভাগই হল তাঁর লোকেরা; যাকোব, হ্যাঁ, ইস্রায়েল জাতি হল তাঁর পাওনা সম্পত্তি। তিনি তাকে এক মরু-এলাকায় পেলেন, পেলেন গর্জন-ভরা এক নির্জন জায়গায়। তিনি তাকে ঘিরে রাখলেন, যত্ন করলেন; তাকে চোখের মণির মত করে পাহারা দিয়ে রাখলেন, যেমন করে ঈগল পাখী তার বাসায় বাচ্চাদের চঞ্চল করে তোলে, যেমন করে তাদের উপর সে আস্তে আস্তে উড়তে থাকে, যেমন করে তাদের তুলে নেবার জন্য তার ডানা মেলে দেয়, আর যেমন করে তার পাখার উপর তাদের বয়ে নিয়ে যায়। সদাপ্রভু একাই তাকে চালিয়ে নিয়ে আসলেন, তাঁর সংগে ছিল না কোন দেব-দেবতা। বিজয়ী হিসাবে তাকে তিনি চালিয়ে নিয়ে গেলেন দেশের এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে; তাকে ক্ষেতের ফসল খেতে দিলেন। তিনি তাকে খাওয়ালেন সেই মধু যা পাহাড়ের ফাটলে পাওয়া যায়, আর তাকে শক্ত পাথুরে জমির জলপাইয়ের তেল খাওয়ালেন। তিনি তাকে খাওয়ালেন গরুর দুধের দই আর ছাগল ও ভেড়ার দুধ, আর খাওয়ালেন মোটাসোটা ভেড়ার বাচ্চার মাংস, ছাগলের মাংস আর বাশন দেশের পুরুষ ভেড়ার মাংস। তিনি তাকে খাওয়ালেন পরিপুষ্ট গম। হে ইস্রায়েল, তুমি গেঁজে ওঠা আংগুর-রস খেয়েছ। কিন্তু মোটা হয়ে যিশুরূণ লাথি মারল। হে যিশুরূণ, তুমি অতিরিক্ত খেয়ে ভারী ও মোটা হয়েছ। তারপর সে তার সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে ত্যাগ করল, আর ছোট করে দেখল তার আশ্রয়-পাহাড়কে। দেবতা পূজায় তাঁর লোকেরা তাঁর পাওনা ভক্তির আগ্রহে আগুন লাগাল, জঘন্য মূর্তি পূজায় তাঁর ক্রোধ জাগাল। তারা বলি দিল মন্দ আত্মাদের উদ্দেশে যারা ঈশ্বর নয়, তারা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল নতুন দেব-দেবতার উদ্দেশে, যারা মাত্র কিছুদিন আগে দেখা দিয়েছে, যাদের তোমাদের পূর্বপুরুষেরা ভয় করত না। সেই আশ্রয়-পাহাড় তোমরা অবহেলা করেছ যিনি তোমাদের পিতা; সেই ঈশ্বরকে তোমরা ভুলে গেছ যিনি মায়ের মত প্রসব-বেদনার মধ্য দিয়ে তোমাদের পৃথিবীতে এনেছেন। তা দেখে সদাপ্রভু তাঁর ছেলেমেয়েদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, কারণ তারা তাঁর ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছিল। তিনি বললেন, “আমি তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব, শেষে তাদের দশা কি হয় দেখব; কারণ এরা উল্টা পথে চলা জাতি, অবিশ্বস্ত সন্তান। ঈশ্বর নয় এমন দেবতার পূজা করে তারা আমার পাওনা ভক্তির আগ্রহে আগুন লাগিয়েছে; অসার প্রতিমার পূজা করে তারা আমার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছে। জাতিই নয় এমন জাতির হাতে ফেলে আমিও তাদের অন্তরে আগুন জ্বালাব; একটা অবুঝ জাতির হাতে ফেলে তাদের ক্রোধ জাগাব। আমার ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠেছে; সেই আগুন জ্বলছে মৃতস্থানের সবচেয়ে নীচু জায়গা পর্যন্ত। সেই আগুন পৃথিবী ও তার সব ফসল খেয়ে ফেলবে আর আগুন লাগাবে সব পাহাড়ের তলায়। “আমি সমস্ত বিপদ এনে তাদের উপর জড়ো করব; আমার সব তীর আমি তাদেরই উপর শেষ করব। আমি তাদের উপর দেহ ক্ষয় করা দুর্ভিক্ষ, ধ্বংসকারী মড়ক আর কষ্ট ভরা রোগ পাঠিয়ে দেব। তাদের বিরুদ্ধে আমি বুনো দাঁতাল পশু আর বুকে ভর করে চলা বিষাক্ত সাপ পাঠিয়ে দেব। শহরের বাইরে তলোয়ারের ঘায়ে তাদের সন্তানেরা মারা পড়বে, আর বাড়ীর ভিতরে ভয়ের রাজত্ব চলবে। তাদের সব যুবক-যুবতী, ছোট ছেলেমেয়ে আর বুড়োরা ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বলেছিলাম, আমি তাদের টুকরা টুকরা করে ফেলব, তাদের কথা মানুষের মন থেকে মুছে ফেলব। কিন্তু আমি জানতাম এতে শত্রু বড়াই করবে আর না বুঝে বলবে যে, তাদেরই জয় হয়েছে; সদাপ্রভু এই সব কিছুই করেন নি।” ইস্রায়েল জাতির মধ্যে ভাল বুদ্ধি দেবার লোক নেই, তাদের বিচারবুদ্ধি বলে কিছু নেই। বুদ্ধি থাকলে এই কথাটা তারা বুঝত, বুঝত তাদের শেষ দশা কি হবে। কি করে একজন হাজার জনকে তাড়ায়, কি করে দু’জনকে দেখে দশ হাজার পালায়, যদি না তাদের আশ্রয়-পাহাড় শত্রুদের হাতে তাদের বিকিয়ে দিয়ে থাকেন, যদি না সদাপ্রভু শত্রুদের হাতে তাদের তুলে দিয়ে থাকেন? শত্রুদের আশ্রয়-পাহাড় আমাদের আশ্রয়-পাহাড়ের মত নয়, এটা আমাদের শত্রুদেরও রায়। সদাপ্রভু বললেন, “তাদের আংগুর গাছ সদোমের আংগুর গাছ থেকে আর ঘমোরার ক্ষেত থেকে এসেছে। তাদের আংগুরে রয়েছে বিষ, তাদের আংগুরের থোকা তেতো। তাদের আংগুর-রস হল সাপের বিষ, গোখ্‌রা সাপের ভয়ংকর বিষ। আমার কাছেই তা তোলা আছে, আমার ভাণ্ডার ঘরে সীলমোহর করা আছে। অন্যায়ের শাস্তি দেবার অধিকার আমারই; যার যা পাওনা আমি তাকে তা-ই দেব। সময় হলেই শত্রুদের পা পিছ্‌লে যাবে; তাদের ধ্বংসের দিন তাদের কাছে এসে গেছে। তাদের জন্য যা ঠিক করে রাখা হয়েছে, তা শীঘ্রই তাদের উপর এসে পড়বে।” সদাপ্রভু যখন দেখবেন, তাঁর লোকদের শক্তি ফুরিয়ে গেছে, দাস বা স্বাধীন কারও আর শক্তি নেই, তখন তিনি তাঁর লোকদের পক্ষ নেবেন, তাঁর দাসদের উপর করুণা করবেন। তিনি তখন বলবেন, “কোথায় এখন তাদের দেব-দেবতারা? কোথায় তাদের সেই পাহাড় যাঁর কাছে তারা আশ্রয় নিয়েছিল? কোথায় সেই দেব-দেবতারা যারা তাদের বলির পশুর চর্বি খেয়েছিল, খেয়েছিল তাদের ঢালন-উৎসর্গের আংগুর-রস? এখন তারা এসে তোমাদের সাহায্য করুক, আর তোমাদের আশ্রয় দিক। এবার তোমরা ভেবে দেখ যে, আমিই তিনি; আমি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই। মরণ-বাঁচন আমারই হাতে, আমি ক্ষত করেছি, আমিই সুস্থ করব; আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারে এমন কেউ নেই। আমি হাত তুলে শপথ করে বলছি, আমার জীবনের দিব্য যে, যখন আমার ঝক্‌ঝকে তলোয়ারে আমি শান দেব, আমার বিচারের রায়কে কাজে লাগাবার জন্য তা হাতে নেব, তখন আমার শত্রুদের আমি শাস্তি দেব, আর যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের যা পাওনা তা তাদের দেব। মেরে ফেলা আর বন্দী লোকদের রক্ত খাইয়ে আমার তীরগুলোকে আমি মাতাল করে তুলব; আমার তলোয়ার মাংস খাবে, লম্বা-চুলওয়ালা শত্রুর মাথার মাংস খাবে।” হে সমস্ত জাতির লোকেরা, তোমরা সদাপ্রভুর লোকদের সংগে তাঁর প্রশংসা কর, কারণ তিনি তাঁর দাসদের রক্তের শোধ নেবেন, তাঁর শত্রুদের শাস্তি দেবেন আর তাঁর দেশ ও তাঁর লোকদের পাপ ঢাকবার ব্যবস্থা করবেন। মোশি আর নূনের ছেলে যিহোশূয় গিয়ে এই গানের সব কথা লোকদের শোনালেন। তোমাদের জন্য এগুলো বাজে কথা নয়, এগুলো তোমাদের জীবন। যর্দন নদী পার হয়ে তোমরা যে দেশ দখল করতে যাচ্ছ সেখানে এই কথাগুলো পালন করে তোমরা অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারবে।” সেই দিনই সদাপ্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি যিরীহোর উল্টা দিকে মোয়াব দেশের অবারীম পাহাড়শ্রেণীর মধ্যে নবো পাহাড়ে গিয়ে ওঠো এবং সম্পত্তি হিসাবে যে কনান দেশটা আমি ইস্রায়েলীয়দের দিচ্ছি তা একবার দেখে নাও। তোমার ভাই হারোণ যেমন হোর পাহাড়ে মারা গিয়ে তার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেছে তেমনি করে তুমিও নবো পাহাড়ে উঠে মারা যাবে এবং তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবে। এর কারণ হল, সীন মরু-এলাকায় কাদেশের মরীবার জলের কাছে ইস্রায়েলীয়দের সামনে তোমরা আমার প্রতি অবিশ্বস্ততার কাজ করেছিলে এবং ইস্রায়েলীয়দের সামনে আমাকে পবিত্র বলে মান্য কর নি। সেইজন্য যে দেশটা আমি ইস্রায়েলীয়দের দিতে যাচ্ছি তা তুমি কেবল দূর থেকে দেখতে পাবে কিন্তু সেখানে তোমার ঢোকা হবে না।” ঈশ্বরের লোক মোশি মৃত্যুর আগে ইস্রায়েলীয়দের এই বলে আশীর্বাদ করেছিলেন, “সদাপ্রভু সিনাই থেকে আসলেন, তিনি সেয়ীর থেকে তাদের উপর আলো দিলেন; তাঁর আলো পারণ পাহাড় থেকে ছড়িয়ে পড়ল। তিনি লক্ষ লক্ষ পবিত্র স্বর্গদূতদের মাঝখান থেকে আসলেন; তাঁর ডান হাতে রয়েছে তাদের জন্য আগুন ভরা আইন। “সত্যিই তিনি তাঁর নিজের লোকদের ভালবাসেন। পবিত্র দূতেরা তাঁর অধীনে রয়েছেন, তাঁরা সবাই তাঁর পায়ে নত হয়ে আছেন; তাঁরই কাছে তাঁরা আদেশ পান। আমাদের কাছে মোশি যে আইন-কানুন দিয়েছিলেন, সেটাই হল যাকোব-গোষ্ঠীর ধন। যখন ইস্রায়েলীয় সর্দারেরা জড়ো হলেন, তাদের সংগে ইস্রায়েলীয় সব গোষ্ঠী জড়ো হল, তখন সদাপ্রভুই ছিলেন যিশুরূণের রাজা।” রূবেণ সম্বন্ধে মোশি বলেছিলেন, “রূবেণকে বাঁচিয়ে রাখ, মৃত্যু তার দূরে রাখ; তার লোকসংখ্যা যেন কম থাকে।” যিহূদা সমন্ধে তিনি বলেছিলেন, “হে সদাপ্রভু, তুমি যিহূদার কথা শোন; তার লোকদের মধ্যে তাকে ফিরিয়ে আন। তার নিজের দু’হাত সে যুদ্ধে লাগায়; শত্রুর বিরুদ্ধে তুমি তার সহায় হও।” লেবি সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “তোমার ভক্তের কাছে তোমার তূম্মীম ও ঊরীম আছে; মঃসাতে তুমি তার পরীক্ষা করেছিলে, মরীবার জলের কাছে তার সংগে ঝগড়া করেছিলে। নিজের বাপ-মাকে বড় করে না দেখে, নিজের ভাইদের স্বীকার না করে, নিজের ছেলেমেয়েদের অস্বীকার করে, সে তোমার বাক্য পাহারা দিয়েছে আর তোমার ব্যবস্থা রক্ষা করেছে। তোমার আদেশ সে যাকোবকে শিখায়, আর আইন-কানুন শিখায় ইস্রায়েলকে। সে তোমার সামনে ধূপ জ্বালায়, তোমার বেদীর উপরে পোড়ানো-উৎসর্গ করে। হে সদাপ্রভু, তুমি তার সম্পত্তিতে আশীর্বাদ কর, তার সব কাজে তুমি খুশী হও। তুমি তার শত্রুর কোমর ভেংগে দাও; যারা তাকে ঘৃণা করে তাদের কোমর ভেংগে দাও, যেন তারা আর দাঁড়াতে না পারে।” বিন্যামীন সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “সদাপ্রভু যাকে ভালবাসেন সে নিরাপদে তাঁর কাছে থাকবে; তিনি সব সময় তাকে আড়ালে রাখেন; তাঁরই পিঠের উপর তার স্থান।” যোষেফ সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “সদাপ্রভু তার দেশকে যেন আশীর্বাদ করেন আকাশের মহামূল্য শিশির দিয়ে, মাটির নীচের জল দিয়ে, সূর্যের সেরা দান দিয়ে, মৌসুমের সেরা ফসল দিয়ে, পুরানো পাহাড়ের সম্পদ দিয়ে, চিরকালের পাহাড়ের ধন দিয়ে, ভরা দুনিয়ার ভাল ভাল জিনিস দিয়ে, আর জ্বলন্ত ঝোপে যিনি ছিলেন তাঁর দয়া দিয়ে। যোষেফের মাথায় এই সব আশীর্বাদ ঝরে পড়ুক; ভাইদের মধ্যে যে মহৎ তাঁরই মাথায় ঝরে পড়ুক এই সব আশীর্বাদ। তার মহিমা প্রথমে জন্মানো ষাঁড়ের মত, তার মাথায় রয়েছে বুনো ষাঁড়ের শিং। তা দিয়ে সে গুঁতাবে দুনিয়ার সব জাতিকে, এমন কি, এর শেষ সীমানার জাতিকেও। এই রকমই হবে ইফ্রয়িমের লক্ষ লক্ষ আর মনঃশির হাজার হাজার লোক।” সবূলূন সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “সবূলূন বাইরের কাজে খুশী হোক, আর ইষাখর খুশী হোক ঘরের কাজে। লোকদের তারা পাহাড়ের ধারে ডাকবে; সেখানে যোগ্য মনোভাব নিয়ে তারা পশু-উৎসর্গ করবে। সাগর থেকে তারা তুলবে সাগরের ধন, আর বালি থেকে তুলে আনবে বালির তলার ধন।” গাদ সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “ধন্য তিনি, যিনি গাদের রাজ্যের সীমা বাড়াবেন। সে সিংহের মত বসবে আর শত্রুর মাথা ও হাত ছিঁড়বে। সব জায়গার সেরা জায়গা সে বেছে নিয়েছে; নেতার যোগ্য পাওনা তার জন্য রাখা আছে। যুদ্ধে জড়ো হওয়া সর্দারদের মধ্যে সে-ই সদাপ্রভুর ন্যায়-ভরা হুকুম পালন করেছে, পালন করেছে ইস্রায়েলকে দেওয়া সদাপ্রভুর নিয়ম।” দান সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “সে যেন বাশন থেকে লাফিয়ে আসা সিংহের বাচ্চা।” নপ্তালি সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “নপ্তালি সদাপ্রভুর করুণায় পূর্ণ; তাঁরই আশীর্বাদে সে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। তুমি তোমার সীমানার মধ্যে নিয়ে এস গালীল সাগর ও তার দক্ষিণের দেশ।” আশের সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন, “আশের অন্যের চেয়ে বেশী আশীর্বাদ পাবে; সে যেন ভাইদের প্রিয় হয়, তার পা দু’খানা যেন জলপাই তেলের মধ্যে ডুবে থাকে। লোহা আর ব্রোঞ্জের আগল দিয়ে তার সদর দরজা বাঁধা থাকবে। যতদিন সে বেঁচে থাকবে ততদিন তার দেহে শক্তি থাকবে।” তিনি বলেছিলেন, “যিশুরূণের ঈশ্বরের মত আর কেউ নেই। তোমার সাহায্যকারী হবার জন্য মেঘের উপর চড়ে নিজের মহিমায় তিনি আকাশ-পথে চলেন। যিনি আদিকালের ঈশ্বর তিনিই তোমার আশ্রয়; তাঁর চিরকালের হাতে তিনিই তোমাকে ধরে আছেন। তোমার সামনে যত শত্রু আছে তিনি তাদের তাড়িয়ে দেবেন; তিনি বলবেন, ‘এদের ধ্বংস কর।’ ইস্রায়েল তাই নিরাপদে থাকবে। যাকোবের ঝরণা থাকবে বিপদ-সীমার বাইরে; সেখানে থাকবে প্রচুর শস্য ও নতুন আংগুর-রস, তার উপরে আকাশের শিশির ঝরে পড়বে। হে ইস্রায়েল, তুমি ধন্য! তুমিই সদাপ্রভুর উদ্ধার-করা জাতি, তোমার মত আর কোন জাতি নেই। তিনিই তোমার সাহায্যের ঢাল, তোমার গৌরবের তলোয়ার। শত্রুরা তোমার সামনে থর থর করে কাঁপবে, আর তুমি তাদের পিঠ মাড়িয়ে চলে যাবে।” এর পর মোশি মোয়াবের সমভূমি থেকে যিরীহোর উল্টাদিকে পিস্‌গা পাহাড়শ্রেণীর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু নবো পাহাড়ে উঠে গেলেন। সেখান থেকে সদাপ্রভু তাঁকে গোটা দেশটা দেখালেন। তিনি তাঁকে গিলিয়দ থেকে দান পর্যন্ত সমস্ত জায়গা, নপ্তালির সমস্ত জায়গা, ইফ্রয়িম ও মনঃশির জায়গা এবং পশ্চিম দিকে সমুদ্র পর্যন্ত যিহূদার সমস্ত জায়গাটা দেখালেন। এছাড়া তিনি তাঁকে নেগেভ এবং খেজুর-শহর যিরীহো এবং তার কাছের যর্দন নদীর দক্ষিণ দিকের সমভূমি থেকে সোয়র পর্যন্ত সমস্ত এলাকাটা দেখালেন। তারপর সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “এই সেই দেশ যা আমি অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে শপথ করে বলেছিলাম, ‘দেশটা আমি তোমার বংশধরদের দেব।’ দেশটা আমি তোমাকে নিজের চোখে দেখে নেবার সুযোগ দিলাম, কিন্তু নদী পার হয়ে তোমার সেখানে যাওয়া হবে না।” সদাপ্রভু যা বলেছিলেন সেই অনুসারে সদাপ্রভুর দাস মোশি ঐ মোয়াব দেশেই মারা গেলেন। মোয়াব দেশের বৈৎ-পিয়োরের কাছে যে উপত্যকা ছিল সেখানে সদাপ্রভুই তাঁকে কবর দিলেন, কিন্তু তাঁর কবরটা যে কোথায় তা আজ পর্যন্ত কেউ জানে না। মারা যাওয়ার সময়ে মোশির বয়স ছিল একশো বিশ বছর। তখনও তাঁর দেখবার শক্তি দুর্বল হয় নি কিম্বা তাঁর গায়ের জোরও কমে যায় নি। ইস্রায়েলীয়েরা মোয়াবের সমভূমিতে ত্রিশ দিন পর্যন্ত মোশির জন্য কান্নাকাটি করেছিল। তারপর তাদের কান্নাকাটি ও শোক-প্রকাশের সময় শেষ হল। নূনের ছেলে যিহোশূয়ের উপর মোশি হাত রেখেছিলেন বলে তিনি জ্ঞানদানকারী পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়েছিলেন। সেইজন্য ইস্রায়েলীয়েরা তাঁর কথামত চলতে লাগল এবং মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু তাদের যে আদেশ দিয়েছিলেন তা পালন করতে লাগল। আজ পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে মোশির মত আর কোন নবীর জন্ম হয় নি যাঁর কাছে সদাপ্রভু বন্ধুর মত সামনাসামনি কথা বলতেন। সদাপ্রভু মোশিকে মিসর দেশে ফরৌণ ও তাঁর কর্মচারী এবং তাঁর গোটা দেশের উপর যে সব আশ্চর্য চিহ্ন ও কাজ করবার জন্য পাঠিয়েছিলেন সেই রকম কাজ আর কেউ করে নি। সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের চোখের সামনে মোশি যে মহাশক্তি দেখিয়েছিলেন কিম্বা যে সব ভয় জাগানো কাজ করেছিলেন তা আর কেউ কখনও করে নি। ॥ভব সদাপ্রভুর দাস মোশির মৃত্যুর পর সদাপ্রভু মোশির সাহায্যকারী নূনের ছেলে যিহোশূয়কে বললেন, “আমার দাস মোশির মৃত্যু হয়েছে। সেইজন্য এখন তুমি ও এই সব ইস্রায়েলীয়েরা ঐ যর্দন নদী পার হয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত হও এবং যে দেশ আমি ইস্রায়েলীয়দের দিতে যাচ্ছি সেখানে যাও। তোমরা যে সব জায়গায় পা ফেলবে তা সবই আমি তোমাদের দেব। মোশির কাছে সেই প্রতিজ্ঞাই আমি করেছিলাম। তোমাদের দেশ হবে মরু-এলাকা থেকে লেবানন পর্যন্ত এবং পূর্বে মহানদী ইউফ্রেটিস ও পশ্চিমে ভূমধ্য সাগর পর্যন্ত, অর্থাৎ হিত্তীয়দের গোটা এলাকাটা। তুমি যতদিন বেঁচে থাকবে কেউ তোমার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না। আমি যেমন মোশির সংগে ছিলাম তেমনি তোমার সংগেও থাকব; আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে যাব না কিম্বা ত্যাগ করব না। “তুমি শক্তিশালী হও, মনে সাহস আন, কারণ যে দেশ দেবার কথা আমি এই লোকদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করে বলেছিলাম, সেই দেশ এই লোকদের অধিকার হিসাব তোমাকেই ভাগ করে দিতে হবে। তুমি শক্তিশালী হও ও সাহসে বুক বাঁধ। আমার দাস মোশি তোমাকে যে আইন-কানুন দিয়ে গেছে সেই সব আইন-কানুন পালন করবার দিকে মন দেবে, তা থেকে একটুও এদিক ওদিক সরবে না। এতে তুমি যেখানেই যাবে সেখানেই সফল হবে। আইন-কানুনের এই বইয়ের মধ্যে যা লেখা আছে তা যেন সব সময় তোমার মুখে থাকে। এর মধ্যে যা লেখা আছে তা যাতে তুমি পালন করবার দিকে মন দিতে পার সেইজন্য দিনরাত তা নিয়ে তুমি গভীরভাবে চিন্তা করবে। তাতে সব কিছুতে তুমি সফল হবে এবং তোমার মংগল হবে। আমি তোমাকে আদেশ দিয়েছি, কাজেই তুমি শক্তিশালী হও ও মনে সাহস আন। ভয় কোরো না কিম্বা নিরাশ হোয়ো না, কারণ তুমি যেখানেই যাও না কেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সংগে থাকবেন।” এই কথা শুনে যিহোশূয় লোকদের নেতাদের বললেন, “তোমরা ছাউনিতে গিয়ে লোকদের বল যেন তারা তাদের খাবার-দাবার নিয়ে প্রস্তুত থাকে। তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশটা তাদের সম্পত্তি হিসাবে দিতে যাচ্ছেন সেখানে গিয়ে তা দখল করে নেবার জন্য তিন দিনের মধ্যেই তাদের এখান থেকে যর্দন নদী পার হয়ে যেতে হবে।” রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর সবাইকে এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোককে যিহোশূয় বললেন, “সদাপ্রভুর দাস মোশি যে প্রতিজ্ঞা তোমাদের কাছে করেছিলেন তা তোমরা মনে করে দেখ। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সব কিছু থেকে তোমাদের বিশ্রাম দিয়েছেন এবং এই দেশটাও তোমাদের দিয়েছেন।’ যর্দনের পূর্ব দিকের যে জায়গাটা মোশি তোমাদের দিয়েছেন সেখানে তোমাদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে এবং পশুপাল থাকতে পারবে, কিন্তু তোমাদের মধ্যে যারা যুদ্ধ করতে পারে তাদের সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে তোমাদের ভাইদের আগে আগে নদী পার হয়ে যেতে হবে। সদাপ্রভু যতদিন তোমাদের মত করে তোমাদের ভাইদেরও সব কিছু থেকে বিশ্রাম না দেন এবং যতদিন তারা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দেওয়া দেশটা দখল করে না নেয় ততদিন তোমরা ভাইদের সাহায্য করতে থাকবে। তার পরে তোমরা ফিরে এসে তোমাদের নিজেদের জায়গা সম্পূর্ণভাবে দখল করতে পারবে যা সদাপ্রভুর দাস মোশি যর্দনের পূর্ব দিকে তোমাদের দিয়ে গেছেন।” উত্তরে তারা যিহোশূয়কে বলল, “আপনি আমাদের যে সব আদেশ দিয়েছেন তা আমরা পালন করব আর আমাদের যেখানে পাঠাবেন সেখানেই যাব। আমরা যেমন মোশির সব কথা মেনে চলতাম, আপনার বেলায়ও তা-ই করব। আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন মোশির সংগে ছিলেন তেমনি যেন আপনার সংগেও থাকেন। কেউ যদি আপনার কোন আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার কথামত না চলে তবে তাকে মেরে ফেলা হবে। আপনি শুধু শক্তিশালী হন এবং সাহস করুন।” নূনের ছেলে যিহোশূয় শিটীম থেকে দু’জন গুপ্তচরকে এই কথা বলে গোপনে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা গিয়ে সেই দেশটা এবং বিশেষ করে যিরীহো শহরটা ভাল করে দেখে এস।” এই কথা শুনে তারা যিরীহো শহরে গেল। সেখানে তারা রাহব নামে এক বেশ্যার বাড়ীতে গিয়ে রইল। এর মধ্যে যিরীহো শহরের রাজার কানে গেল যে, দেশের খোঁজ-খবর নেবার জন্য সন্ধ্যাবেলায় কয়েকজন ইস্রায়েলীয় এখানে এসেছে। রাজা এই কথা শুনে রাহবের কাছে বলে পাঠালেন, “যারা এসে তোমার ঘরে ঢুকেছে তাদের বের করে আন, কারণ তারা গোটা দেশটার খোঁজ-খবর নেবার জন্য এসেছে।” রাহব কিন্তু ঐ দু’জন লোককে লুকিয়ে রেখেছিল। সে বলল, “হ্যাঁ, লোকগুলো আমার এখানে এসেছিল বটে, কিন্তু তারা কোথা থেকে এসেছিল তা আমি জানি না। সন্ধ্যাবেলা শহরের ফটক বন্ধ করবার একটু আগেই তারা চলে গেছে। তারা কোন্‌ পথে গেছে তা আমি জানি না। আপনারা এখনই তাদের পিছনে পিছনে গেলে হয়তো তাদের ধরে ফেলতে পারবেন।” আসলে রাহব ঐ দু’জনকে ছাদের উপরে নিয়ে গিয়ে সেখানে তার মেলে দেওয়া মসীনার ডাঁটা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল। রাহবের কথা শুনে সেই লোকেরা গুপ্তচরদের ধরবার জন্য বেরিয়ে পড়ল। যর্দন নদীর যেখান দিয়ে হেঁটে পার হওয়া যায় তারা সেখানে যাওয়ার পথ ধরে চলল। তারা শহরের বাইরে যাবার সংগে সংগেই শহরের ফটক বন্ধ হয়ে গেল। মিসর দেশ থেকে আপনাদের বের হয়ে আসবার পর সদাপ্রভু কেমন করে লোহিত সাগরের জল আপনাদের সামনে থেকে শুকিয়ে ফেলেছিলেন তা আমরা শুনেছি। সীহোন আর ওগ নামে যর্দনের পূর্ব পারের দু’জন ইমোরীয় রাজাকে ধ্বংস করে দিয়ে আপনারা তাদের কি দশা করেছিলেন তা-ও আমরা শুনেছি। এই সব শুনে আমাদের অন্তরের সব আশা-ভরসা ফুরিয়ে গেছে এবং আপনাদের ভয়ে সবাই সাহস হারিয়ে ফেলেছে। আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই স্বর্গের এবং পৃথিবীর ঈশ্বর। আমি আপনাদের প্রতি বিশ্বস্ত হয়েছি, তাই এখন আপনারা আপনাদের সদাপ্রভুর নামে আমার কাছে শপথ করুন যে, আমাদের পরিবারের প্রতিও আপনারা বিশ্বস্ত থাকবেন। এই ব্যাপারে আপনারা আমাকে এমন একটা চিহ্ন দিন যা থেকে আমি বুঝতে পারি যে, আপনারা আমার মা-বাবা, ভাই-বোন এবং তাদের সব লোকদের প্রাণ বাঁচাবেন এবং মৃত্যুর হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবেন।” এই কথা শুনে সেই দু’জন তাকে বলল, “আমরা যদি আমাদের কথামত কাজ না করি তবে তোমাদের বদলে আমাদের প্রাণ যাক। তুমি যদি আমাদের এই সব কথা প্রকাশ না কর তবে সদাপ্রভু যখন এই দেশটা আমাদের দেবেন তখন আমরা তোমাদের সংগে ভাল ব্যবহার করব এবং তোমাদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকব।” স্ত্রীলোকটি যে বাড়ীতে বাস করত সেটা ছিল শহরের চারপাশের দেয়ালের একটা অংশ; তাই সে জানলার ভিতর দিয়ে দড়ির সাহায্যে তাদের নীচে নামিয়ে দিল। সে তাদের বলল, “আপনাদের যারা ধরতে গেছে তারা যাতে আপনাদের খুঁজে না পায় সেইজন্য আপনারা পাহাড়ে চলে যান। আপনারা তিন দিন সেখানে লুকিয়ে থাকবেন; তারপর সেই লোকেরা ফিরে আসলে পর আপনারা আপনাদের পথে চলে যাবেন।” তখন যদি কেউ তোমার বাড়ী থেকে বেরিয়ে রাস্তায় যায় তবে সে নিজেই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে। আমরা তার জন্য দায়ী হব না। কিন্তু যারা তোমার সংগে এই বাড়ীর মধ্যে থাকবে তাদের কারও উপর যদি হাত দেওয়া হয় তবে তার মৃত্যুর জন্য আমরা দায়ী থাকব। তবে যদি তুমি আমাদের এই সব কথা প্রকাশ করে দাও তাহলে তুমি আমাদের দিয়ে যে শপথ করিয়ে নিয়েছ তা থেকে আমরা মুক্ত হব।” উত্তরে স্ত্রীলোকটি বলল, “ঠিক আছে, আপনারা যা বললেন তা-ই হোক।” এই বলে স্ত্রীলোকটি তাদের বিদায় দিল আর তারা চলে গেল। সেই লাল দড়িটা রাহব জানালায় বেঁধে রাখল। সেই দু’জন ইস্রায়েলীয় ঐ জায়গা ছেড়ে পাহাড়ে গেল এবং তিন দিন সেখানে রইল। যারা তাদের ধরতে বের হয়েছিল এর মধ্যে তারা সারা রাস্তায় তাদের খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ফিরে গেল। তারপর সেই দু’জন ইস্রায়েলীয়ও ফিরে গেল। তারা পাহাড় থেকে নীচে নেমে আসল এবং নদী পার হয়ে নূনের ছেলে যিহোশূয়ের কাছে গিয়ে তাদের যা যা ঘটেছিল তা সব বলল। তারা যিহোশূয়কে বলল, “এই কথা ঠিক যে, সদাপ্রভু গোটা দেশটাই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। আমাদের ভয়ে সেখানকার সমস্ত লোক একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।” যিহোশূয় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সংগে শিটীম থেকে রওনা হয়ে যর্দন নদীর কাছে গেলেন। নদীটা পার না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে রইল। তাতে তোমরা বুঝতে পারবে তোমাদের কোন্‌ পথে যেতে হবে, কারণ তোমরা এর আগে কখনও এই পথে যাও নি। কিন্তু তোমরা সাক্ষ্য-সিন্দুকের কাছ থেকে প্রায় দু’হাজার হাত দূরে থাকবে, তার কাছে যাবে না।” এর পর যিহোশূয় লোকদের বললেন, “তোমরা নিজেদের শুচি করে নাও, কারণ কালকে সদাপ্রভু তোমাদের মধ্যে অনেক আশ্চর্য কাজ করবেন।” পরে তিনি পুরোহিতদের বললেন, “আপনারা সাক্ষ্য-সিন্দুকটি তুলে নিয়ে লোকদের আগে আগে নদী পার হয়ে যান।” কাজেই তাঁরা সাক্ষ্য-সিন্দুকটি তুলে নিয়ে লোকদের আগে আগে যেতে লাগলেন। তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “আজ থেকে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের চোখে আমি তোমার সম্মান বৃদ্ধি করতে আরম্ভ করব, যাতে তারা বুঝতে পারে যে, আমি যেমন মোশির সংগে ছিলাম তেমনি তোমার সংগেও আছি। তুমি সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী পুরোহিতদের বলে দাও যেন তারা যর্দন নদীর কিনারায় পৌঁছে এগিয়ে গিয়ে জলের মধ্যে দাঁড়ায়।” যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “তোমরা এখানে এস এবং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যা বলেছেন তা শোন। জীবন্ত ঈশ্বর যে তোমাদের মধ্যে আছেন আর তিনিই যে কনানীয়, হিত্তীয়, হিব্বীয়, পরিষীয়, গির্গাষীয়, ইমোরীয় আর যিবূষীয়দের নিশ্চয়ই তোমাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেবেন তা তোমরা এইভাবে বুঝতে পারবে। যিনি সমস্ত জগতের প্রভু তাঁর সাক্ষ্য-সিন্দুকটি তোমাদের আগে আগে যর্দন নদীর মধ্যে যাবে। এখন তোমরা ইস্রায়েলীয় বারোটি গোষ্ঠীর প্রত্যেকটি থেকে একজন করে মোট বারোজন লোক বেছে নাও। তোমরা দেখবে সমস্ত জগতের প্রভু সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী পুরোহিতেরা যেই যর্দনের জলে পা দেবে অমনি তার ভাটির দিকে বয়ে যাওয়া জলের স্রোত থেমে যাবে আর তার জল উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।” লোকেরা যর্দন নদী পার হওয়ার জন্য যখন ছাউনি তুলে ফেলল তখন সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী পুরোহিতেরা তাদের আগে আগে চললেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত ইস্রায়েলীয় যর্দন নদী পার না হল ততক্ষণ পর্যন্ত সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী পুরোহিতেরা যর্দন নদীতে শুকনা মাটির উপর দাঁড়িয়ে রইলেন; আর গোটা জাতিই শুকনা মাটির উপর দিয়ে পার হয়ে গেল। এইভাবে গোটা ইস্রায়েল জাতি যর্দন পার হওয়ার পর সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “তুমি প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে একজন করে মোট বারোজন লোক বেছে নাও। তাদের বল, নদীর মধ্যে যে জায়গায় পুরোহিতেরা দাঁড়িয়ে আছে তারা যেন সেই জায়গা থেকে বারোটা পাথর কুড়িয়ে নিয়ে তোমাদের সংগে যায় এবং আজ রাতে তোমরা যে জায়গায় থাকবে সেখানে ওগুলো রাখে।” ইস্রায়েলীয়েরা যিহোশূয়ের আদেশ মতই কাজ করল। সদাপ্রভু যিহোশূয়কে যা বলেছিলেন সেই মতই ইস্রায়েলীয়েরা তাদের বারোটা গোষ্ঠীর জন্য যর্দন নদীর মাঝখান থেকে বারোটা পাথর কুড়িয়ে নিল। তারপর সেগুলো নিয়ে তারা যেখানে রাতটা কাটাল সেখানে রেখে দিল। যর্দন নদীর যে জায়গায় সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী পুরোহিতেরা দাঁড়িয়ে ছিলেন যিহোশূয় সেখানে আরও বারোটা পাথর রাখলেন। পাথরগুলো আজও সেখানে আছে। নদী পার হওয়ার আদেশ সম্বন্ধে মোশি যিহোশূয়কে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। কাজেই লোকদের বলবার জন্য যিহোশূয়কে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে লোকেরা সব কিছু না করা পর্যন্ত সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী পুরোহিতেরা নদীতে দাঁড়িয়েই রইলেন আর লোকেরা তাড়াতাড়ি নদী পার হয়ে গেল। তারা সবাই পার হওয়ার পর সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুক নিয়ে পুরোহিতেরা লোকদের চোখের সামনে এপারে এসে উঠলেন। মোশি যে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন সেই অনুসারে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর সবাই এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে ইস্রায়েলীয়দের আগে আগে পার হয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধ করবার জন্য প্রায় চল্লিশ হাজার লোক অস্ত্র হাতে সদাপ্রভুকে সামনে রেখে নদী পার হয়ে যিরীহোর সমভূমিতে গেল। সেই দিন সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের চোখে যিহোশূয়কে সম্মানিত করলেন। তার ফলে লোকেরা মোশির মত করে যিহোশূয়ের সারা জীবন ধরে তাঁকে ভক্তি করেছিল। সদাপ্রভু যিহোশূূয়কে বলেছিলেন, “সাক্ষ্য-সিন্দুক বহনকারী পুরোহিতদের যর্দন নদী থেকে উঠে আসবার আদেশ দাও।” সেইজন্য যিহোশূয় পুরোহিতদের যর্দন নদী থেকে উঠে আসবার আদেশ দিয়েছিলেন। তাতে যে পুরোহিতেরা সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুক বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা নদীর মাঝখান থেকে উঠে এসে শুকনা মাটিতে পা দেওয়ার সংগে সংগে নদীর স্রোত আবার বইতে লাগল এবং আগের মতই তার দু’পার জলে ভেসে গেল। বছরের প্রথম মাসের দশ দিনের দিন লোকেরা যর্দন থেকে উঠে এসে যিরীহোর পূর্ব সীমানায় গিল্‌গলে গিয়ে ছাউনি ফেলল, আর যিহোশূয় এই গিল্‌গলেই যর্দন থেকে তুলে আনা বারোটা পাথর রাখলেন। তারপর তিনি ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “ভবিষ্যতে তোমাদের বংশধরেরা যখন এই পাথরগুলোর মানে তাদের বাবাদের জিজ্ঞাসা করবে, তখন তোমরা তাদের বলবে, ‘ইস্রায়েলীয়েরা শুকনা মাটির উপর দিয়ে হেঁটে এই যর্দন নদী পার হয়ে গিয়েছিল।’ আমরা লোহিত সাগর পার হয়ে না আসা পর্যন্ত তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন আমাদের সামনে সাগরটা শুকনা অবস্থায় রেখেছিলেন তেমনি যর্দন নদীতেও তা-ই করলেন। তোমরা নদীটা পার হয়ে না আসা পর্যন্ত তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সামনে যর্দন নদী শুকনা অবস্থায় রেখেছিলেন। তিনি এই কাজ করেছিলেন যাতে পৃথিবীর সমস্ত জাতি জানতে পারে যে, সদাপ্রভুর হাত শক্তিশালী আর যাতে তোমরা সব সময় তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে চল।” যর্দন নদীর পশ্চিম দিকের ইমোরীয়দের সমস্ত রাজারা এবং সাগর পারের সমস্ত কনানীয় রাজারা যখন শুনলেন যে, আমরা পার হয়ে আসবার সময় সদাপ্রভু কিভাবে যর্দনের জল আমাদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে শুকিয়ে দিয়েছিলেন তখন তাদের আশা-ভরসা সব ফুরিয়ে গেল; ইস্রায়েলীয়দের সামনে দাঁড়াবার সাহস আর তাঁদের রইল না। সেই সময় সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “তুমি চক্‌মকি পাথরের কতগুলো ছুরি তৈরী করিয়ে নাও এবং তা দিয়ে আগের মত এই ইস্রায়েলীয়দের সুন্নত করাও।” এই কথা শুনে যিহোশূয় চক্‌মকি পাথরের কতগুলো ছুরি তৈরী করালেন এবং তা দিয়ে গিবিয়োৎ হারালোতে (যার মানে “সুন্নত করবার পাহাড়”) ইস্রায়েলীয়দের সুন্নত করালেন। যে জন্য তিনি এই কাজ করলেন তা এই: যুদ্ধে যাবার বয়স হয়েছে এমন যে সব পুরুষ লোক মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছিল তারা মিসর ছেড়ে আসবার পর পথে মরু-এলাকায় মারা গিয়েছিল। যারা মিসর ছেড়ে বের হয়ে এসেছিল তাদের সুন্নত করানো হয়েছিল; কিন্তু মিসর থেকে বের হয়ে আসবার পর যাত্রাপথে মরু-এলাকায় যাদের জন্ম হয়েছিল তাদের কারও সুন্নত করানো হয় নি। মিসর থেকে বেরিয়ে আসবার সময় যাদের যুদ্ধ করবার মত বয়স হয়েছিল তারা সবাই মারা না যাওয়া পর্যন্ত চল্লিশ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের মরু-এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল, কারণ তারা সদাপ্রভুর কথা মেনে চলে নি। সদাপ্রভু তাদের শপথ করে বলেছিলেন যে, তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দুধ আর মধুতে ভরা যে দেশটা আমাদের দেবেন বলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা তারা দেখতে পাবে না। তাই তাদের জায়গায় তাদের ছেলেদের তিনি দাঁড় করালেন আর যিহোশূয় এদেরই সুন্নত করালেন। যাত্রাপথে তাদের সুন্নত করানো হয় নি বলে তারা তখনও সুন্নত-না-করানো অবস্থায় ছিল। সব লোকদের সুন্নত করানো হল আর তারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সেই জায়গাতে ছাউনির মধ্যেই রইল। এর পর সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “মিসরে তোমাদের যে অসম্মান ছিল তা আমি আজ তোমাদের কাছ থেকে দূর করে দিলাম।” সেইজন্য আজও ঐ জায়গাটাকে গিল্‌গল বলা হয়ে থাকে। সেই মাসের চৌদ্দ দিনের দিন সন্ধ্যাবেলায় যিরীহোর সমভূমির গিল্‌গলে ছাউনি ফেলে থাকবার সময় ইস্রায়েলীয়েরা উদ্ধার-পর্ব পালন করল। তার পরের দিনই তারা সেই দেশের ফসল থেকে তৈরী খামিহীন রুটি আর ভাজা শস্য খেল। যেদিন তারা ঐ দেশের খাবার খেল তার পরের দিন থেকে মান্না পড়া বন্ধ হয়ে গেল। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা আর মান্না পায় নি। সেই বছর থেকে তারা কনান দেশের ফসল খেতে লাগল। যিরীহোর কাছাকাছি গেলে পর যিহোশূয় খোলা তলোয়ার হাতে একজন লোককে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। যিহোশূয় তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কার পক্ষের লোক- আমাদের, না আমাদের শত্রুদের?” উত্তরে তিনি বললেন, “আমি কারও পক্ষের লোক নই। আমি সদাপ্রভুর সৈন্যদলের সেনাপতি; এখন আমি এখানে এসেছি।” এই কথা শুনে যিহোশূয় মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে প্রণাম করলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার প্রভু তাঁর দাসকে কি কিছু বলতে চান?” সদাপ্রভুর সৈন্যদলের সেনাপতি উত্তরে বললেন, “তোমার পায়ের জুতা খুলে ফেল, কারণ তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছ সেই জায়গাটা পবিত্র।” যিহোশূয় তা-ই করলেন। সেই সময় ইস্রায়েলীয়দের জন্য যিরীহো শহরের ফটকগুলো শক্ত করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে কেউ বের হয়েও আসত না আবার কেউ ভিতরেও ঢুকত না। সদাপ্রভু তখন যিহোশূয়কে বললেন, “দেখ, আমি যিরীহো শহরটা, তার রাজা এবং তার সমস্ত বীর যোদ্ধাদের তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। তোমরা সমস্ত সৈন্যেরা মিলে শহরের বাইরের চারদিকটা একবার ঘুরে এস; ছয় দিন ধরে তা-ই করবে। সাতজন পুরোহিত সাতটা শিংগা নিয়ে ব্যবস্থা-সিন্দুকের আগে আগে যাবে। সপ্তম দিনে তোমরা শহরের চারদিকটা সাতবার ঘুরবে এবং তার সংগে পুরোহিতেরা শিংগা বাজাবে। যখন তোমরা শুনবে সেই পুরোহিতেরা শিংগায় একটানা আওয়াজ তুলেছে তখন সব লোকেরা খুব জোরে চিৎকার করে উঠবে। তাতে শহরের দেয়াল ধ্বসে পড়ে যাবে আর তখন ইস্রায়েলীয়েরা তার উপর দিয়ে সোজা ভিতরে ঢুকে যাবে।” তখন নূনের ছেলে যিহোশূয় পুরোহিতদের ডেকে বললেন, “আপনারা সাক্ষ্য-সিন্দুকটি তুলে নিন এবং সাতজন পুরোহিত সাতটা শিংগা নিয়ে সদাপ্রভুর সিন্দুকের আগে আগে যান।” তারপর তিনি লোকদের হুকুম দিলেন, “তোমরা এগিয়ে যাও এবং শহরের বাইরের চারদিকে একবার ঘুরে এস। সৈন্যেরা সদাপ্রভুর সিন্দুকের আগে আগে যাবে।” লোকদের কাছে যিহোশূয়ের কথা বলা শেষ হলে পর সদাপ্রভুর সামনে সাতজন পুরোহিত সাতটা শিংগা নিয়ে বাজাতে বাজাতে চললেন আর তাঁদের পিছনে পিছনে চলল সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুক। যে পুরোহিতেরা শিংগা বাজাচ্ছিলেন তাঁদের আগে আগে চলল অস্ত্র হাতে একদল সৈন্য আর সিন্দুকের পিছনে পিছনে চলল পিছনে থাকা রক্ষীদল। পুরোহিতেরা সারা পথেই শিংগা বাজাতে থাকলেন। যিহোশূয় আগেই লোকদের এই আদেশ দিয়েছিলেন, “তোমরা চিৎকার করবে না কিম্বা জোরে কথা বলবে না কিম্বা মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের করবে না। যেদিন আমি তোমাদের চিৎকার করতে বলব কেবল সেই দিনই তোমরা চিৎকার করবে।” এইভাবে যিহোশূয়ের আদেশে সদাপ্রভুর সিন্দুকটি শহরের চারদিকে একবার ঘুরিয়ে আনা হল। তারপর লোকেরা তাদের ছাউনিতে ফিরে গেল এবং রাতটা সেখানেই কাটাল। পরের দিন যিহোশূয় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলেন আর পুরোহিতেরা সদাপ্রভুর সিন্দুকটি তুলে নিলেন। সাতজন পুরোহিত সাতটা শিংগা নিয়ে বাজাতে বাজাতে সদাপ্রভুর সিন্দুকের আগে আগে চললেন। অস্ত্র হাতে একদল সৈন্য তাঁদের আগে আগে চলল আর সদাপ্রভুর সিন্দুকের পিছনে চলল পিছনে থাকা রক্ষীদল; পুরো সময় ধরে শিংগার আওয়াজ শোনা গেল। এইভাবে দ্বিতীয় দিনেও তারা শহরের চারদিকটা একবার ঘুরে এসে ছাউনিতে ফিরে গেল। তারা ছয় দিন সেই রকম করল। সপ্তম দিনে তারা ভোর হতেই উঠে পড়ল আর ঐ একইভাবে সাতবার শহরের চারদিকটা ঘুরল। কেবল সেই দিনই তারা শহরের চারদিকটা সাতবার ঘুরল। সপ্তম বার ঘুরবার সময় যখন পুরোহিতেরা শিংগাতে একটানা আওয়াজ তুললেন তখন যিহোশূয় লোকদের হুকুম দিলেন, “তোমরা খুব জোরে চিৎকার কর, কারণ সদাপ্রভু শহরটা তোমাদের দিয়েছেন। শহর ও তার মধ্যেকার সব কিছু সদাপ্রভুর দেওয়া ধ্বংসের অভিশাপের অধীন। কেবল বেশ্যা রাহব ও তার ঘরে যে সব লোক রয়েছে তারা বেঁচে থাকবে, কারণ আমাদের পাঠানো লোকদের সে লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু যে সব জিনিস ধ্বংসের অভিশাপের অধীন তা থেকে তোমরা দূরে থাকবে যাতে সেখান থেকে কোন কিছু নিজের জন্য নিয়ে তোমরা নিজেদের উপর সর্বনাশ ডেকে না আন। তা করলে তোমরা ইস্রায়েলীয়দের ছাউনির উপর সর্বনাশ ডেকে আনবে এবং তাদের বিপদের মধ্যে ফেলবে। সমস্ত সোনা, রূপা এবং ব্রোঞ্জ ও লোহার জিনিসপত্র সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা; সেইজন্য সেগুলো তাঁর ধনভাণ্ডারে যাবে।” শিংগা বেজে উঠবার সংগে সংগে লোকেরা খুব জোরে চিৎকার করে উঠল। শিংগার আওয়াজে যখন লোকেরা ভীষণভাবে চিৎকার করে উঠল তখন যিরীহো শহরের দেয়াল ধ্বসে পড়ে গেল। তাতে সমস্ত লোক শহরের মধ্যে ঢুকে পড়ল এবং তা দখল করে নিল। তারা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো, গরু, ভেড়া, গাধা ইত্যাদি সমস্ত প্রাণীদের শেষ করে দিল। যে দু’জন গুপ্তচর দেশটা দেখে নেবার জন্য এসেছিল যিহোশূয় তাদের বললেন, “তোমরা ঐ বেশ্যার কাছে যে শপথ করেছিলে সেই অনুসারে তোমরা তার বাড়ীতে গিয়ে তাকে এবং তার সমস্ত লোকদের বের করে নিয়ে এস।” এই কথা শুনে সেই যুবক গুপ্তচরেরা রাহবের বাড়ীর ভিতরে ঢুকে তাকে, তার মা-বাবাকে, তার ভাইদের এবং বাড়ীর অন্যান্যদের বের করে নিয়ে আসল। তারা রাহবের পরিবারের সবাইকে বের করে এনে ইস্রায়েলীয়দের ছাউনির বাইরে একটা জায়গায় থাকতে দিল। তারপর তারা গোটা শহরটা এবং তার মধ্যেকার সব কিছু পুড়িয়ে দিল, কিন্তু সোনা, রূপা এবং ব্রোঞ্জ ও লোহার জিনিসপত্র সদাপ্রভুর ঘরের ধনভাণ্ডারে জমা দিল। যিহোশূয় যে দু’জন গুপ্তচরকে যিরীহোতে পাঠিয়েছিলেন রাহব বেশ্যা তাদের লুকিয়ে রেখেছিল বলে যিহোশূয় তাকে, তার বাবার পরিবারের লোকদের এবং বাড়ীর অন্যান্যদের রক্ষা করেছিলেন। রাহব আজও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে বাস করছে। এর পর যিহোশূয় শপথ করে বলেছিলেন, “এই যিরীহো শহরটা যে লোক আবার গড়ে তুলবে তার উপর সদাপ্রভুর এই অভিশাপ পড়বে: প্রথম ছেলের জীবন দিয়ে সে তার ভিত্তি গাঁথবে, আর ছোট ছেলের জীবন দিয়ে তার ফটকগুলো গড়ে তুলবে।” সদাপ্রভু যিহোশূয়ের সংগে রইলেন, আর দেশের সব জায়গায় তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। যিরীহো শহরের ধ্বংসের অভিশাপের অধীনে থাকা জিনিসের ব্যাপারে ইস্রায়েলীয়েরা অবিশ্বস্ত হয়েছিল। যিহূদা-গোষ্ঠীর কর্মির ছেলে আখন ঐ সব জিনিস থেকে কয়েকটা নিজের জন্য নিয়েছিল। কর্মি ছিল সব্দির ছেলে আর সেরহের নাতি। আখনের এই কাজের জন্য ইস্রায়েলীয়দের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধ জ্বলে উঠেছিল। যিহোশূয় যিরীহো থেকে অয় শহরে লোক পাঠালেন। সেই শহরটা ছিল বৈথেল শহরের পূর্ব দিকে বৈৎ-আবন শহরের কাছে। সেই লোকদের পাঠাবার সময় তিনি তাদের বলে দিলেন, “তোমরা গিয়ে দেশটা ভাল করে দেখে এস।” কাজেই লোকগুলো গিয়ে গোপনে অয় শহরের খোঁজ-খবর নিল। পরে তারা যিহোশূয়ের কাছে ফিরে এসে বলল, “অয় শহরের বিরুদ্ধে সব লোকদের যাওয়ার দরকার নেই। ওটা দখল করবার জন্য দুই কিম্বা তিন হাজার লোক পাঠিয়ে দিন। এই নিয়ে সব লোকদের কষ্ট দেবেন না, কারণ সেখানকার লোকসংখ্যা খুব কম।” সেইজন্য কমবেশি তিন হাজার লোক সেখানে গেল; কিন্তু তারা অয় শহরের লোকদের কাছে হেরে গিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হল। শহরের ফটকের কাছ থেকে অয় শহরের লোকেরা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে শবারীম পর্যন্ত নিয়ে গেল এবং শবারীমের ঢালু জায়গায় তাদের ছত্রিশজনকে মেরে ফেলল। এতে ইস্রায়েলীয়দের মনোবল একেবারে ভেংগে পড়ল। তখন যিহোশূয় ও ইস্রায়েলীয়দের বৃদ্ধ নেতারা নিজেদের কাপড় ছিঁড়ে সদাপ্রভুর সিন্দুকের সামনে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটির উপর উবুড় হয়ে পড়ে রইলেন। তাঁরা নিজেদের মাথার উপর ধুলা ছিটিয়ে দিলেন। যিহোশূয় বললেন, “হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি কেন আমাদের এই জাতিকে যর্দন পার করে এনে ধ্বংস করবার জন্য ইমোরীয়দের হাতে তুলে দিলে? হায়, আমরা যদি যর্দনের ওপারে থেকেই খুশী থাকতাম! হে প্রভু, ইস্রায়েলীয়েরা শত্রুদের কাছে হার মেনে পালিয়ে আসবার পরে আমার আর বলবার কি থাকতে পারে? কনানীয়েরা এবং এই দেশের অন্যান্য লোকেরা এই কথা শুনতে পাবে আর তারা আমাদের ঘেরাও করবে এবং দুনিয়ার বুক থেকে আমাদের নাম মুছে ফেলবে। এর পর তুমি কি করে তোমার সুনাম রক্ষা করবে?” তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “উঠে দাঁড়াও। কেন তুমি উবুড় হয়ে পড়ে আছ? ইস্রায়েলীয়েরা পাপ করেছে; আমি তাদের আমার যে ব্যবস্থা পালন করতে বলেছিলাম তা তারা পালন করে নি। যে সব জিনিস ধ্বংসের অভিশাপের অধীন তার কতগুলো তারা নিয়েছে; তারা চুরি করেছে, মিথ্যা কথা বলেছে আর সেই সব জিনিস নিয়ে তারা তাদের নিজেদের জিনিসের সংগে রেখেছে। সেইজন্যই ইস্রায়েলীয়েরা তাদের শত্রুদের সামনে দাঁড়াতে পারছে না; তারা পিছন ফিরে পালাচ্ছে, কারণ তারা ধ্বংসের অভিশাপের অধীন হয়ে পড়েছে। ধ্বংসের অভিশাপের অধীন কতগুলো জিনিস তোমাদের কাছে আছে। যদি তোমরা সেগুলো ধ্বংস করে না ফেল তবে আমি আর তোমাদের সংগে থাকব না। “তুমি গিয়ে লোকদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে নাও। তাদের বল যেন তারা কালকের জন্য নিজেদের শুচি করে। ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে ইস্রায়েল, তোমাদের মধ্যে এমন কতগুলো জিনিস রয়েছে যা ধ্বংসের অভিশাপের অধীন। সেগুলো তোমাদের মধ্য থেকে দূর করে না ফেলা পর্যন্ত তোমরা তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না। কাজেই, সকালবেলা তোমরা গোষ্ঠী অনুসারে আমার সামনে এসে দাঁড়াবে। যে গোষ্ঠী আমার হাতে ধরা পড়বে সেই গোষ্ঠী বংশ অনুসারে এগিয়ে আসবে; তার মধ্যে যে বংশ আমার হাতে ধরা পড়বে সেই বংশের লোকেরা পরিবার অনুসারে এগিয়ে আসবে; তার মধ্যে যে পরিবার আমার হাতে ধরা পড়বে সেই পরিবারের লোকেরা এক একজন করে এগিয়ে আসবে। যা ধ্বংসের অভিশাপের অধীন তা যে লোকটির কাছে আছে বলে ধরা পড়বে তাকে তার সব কিছু সুদ্ধ আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা অমান্য করেছে এবং এমন একটা কাজ করেছে যা ইস্রায়েলীয়দের পক্ষে একটা লজ্জার ব্যাপার।’ ” পরের দিন খুব ভোরে যিহোশূয় গোষ্ঠী অনুসারে ইস্রায়েলীয়দের সদাপ্রভুর সামনে আনলেন, তাতে যিহূদা-গোষ্ঠী ধরা পড়ল। তারপর যিহূদা-গোষ্ঠীর বংশগুলো এগিয়ে আসলে পর সেরহীয় বংশ ধরা পড়ল। তারপর সেরহীয় বংশের নেতারা এক এক করে এগিয়ে আসলে পর সব্দি ধরা পড়ল। পরে সব্দির পরিবারের লোকেরা এক এক করে সামনে আসলে পর যিহূদা-গোষ্ঠীর কর্মির ছেলে আখন ধরা পড়ল। কর্মি ছিল সব্দির ছেলে আর সেরহের নাতি। যিহোশূয় তখন আখনকে বললেন, “বাবা, সত্যি কথা বলে ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব কর, তাঁর প্রশংসা কর; তুমি যা করেছ তা আমাকে বল, গোপন কোরো না।” উত্তরে আখন বলল, “এই কথা সত্যি যে, আমি ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছি। আমি যে কাজ করেছি তা এই: আমি লুটের মালের মধ্যে শিনিয়র দেশের সুন্দর একটা কাপড়, প্রায় আড়াই কেজি রূপা আর ছ’শো গ্রাম ওজনের একটা সোনার খণ্ড দেখে লোভ সামলাতে না পেরে তা নিয়েছি। ওগুলো আমার তাম্বুর ভিতরে মাটির নীচে লুকানো আছে আর সবগুলোর নীচে আছে রূপা।” এই কথা শুনে যিহোশূয় লোক পাঠিয়ে দিলেন। তারা দৌড়ে সেই তাম্বুর মধ্যে গিয়ে দেখল সেখানে জিনিসগুলো লুকানো রয়েছে, আর সব কিছুর নীচে রয়েছে রূপা। তারা সেগুলো তাম্বু থেকে বের করে যিহোশূয় ও সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে নিয়ে আসল এবং সদাপ্রভুর সামনে সেগুলো বিছিয়ে রাখল। পরে যিহোশূয় ও সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সেরহের বংশধর আখনকে নিয়ে আখোর উপত্যকায় গেল। তারা সংগে নিল সেই রূপা, কাপড়, সোনার খণ্ড, আখনের ছেলেমেয়ে, তার গরু-গাধা-ভেড়া, তার তাম্বু আর তার যা কিছু ছিল সব। তারপর যিহোশূয় বললেন, “কেন তুমি আমাদের উপর এই বিপদ ডেকে আনলে? আজ সদাপ্রভুও তোমার উপর বিপদ আনবেন।” তখন সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা প্রথমে আখনকে ও পরে তার পরিবারের সবাইকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলল। তারপর সব কিছু সুদ্ধ তাদের পুড়িয়ে ফেলল। আখনের দেহের উপরে তারা অনেক পাথর জড়ো করে একটা স্তূপ করে রাখল। সেটা আজও রয়েছে। এর পর সদাপ্রভু তাঁর ক্রোধ থেকে ফিরলেন। এইজন্যই ঐ জায়গাটাকে এর পর থেকে আখোর উপত্যকা বলা হয়ে থাকে। পরে সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “তুমি ভয় কোরো না এবং নিরাশ হোয়ো না। তোমার সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে তুমি অয় শহরটা আবার আক্রমণ করতে যাও। অয় শহরের রাজা, তার লোকজন, তার শহর এবং দেশটা আমি তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। যিরীহো শহর এবং তার রাজার প্রতি তুমি যা করেছিলে অয় শহর ও তার রাজার প্রতিও তা-ই করবে। তবে সেখানকার লুটের জিনিসপত্র ও পশুর পাল তোমরা নিজেদের জন্য নিতে পারবে। শহরের পিছন দিকে তুমি একদল সৈন্য লুকিয়ে রাখবে।” আমি আমার সংগের লোকজন নিয়ে শহরের দিকে এগিয়ে যাব। তারা যখন আগের বারের মত আমাদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য বের হয়ে আসবে তখন আমরা তাদের সামনে থেকে পালিয়ে যাব। তারা আমাদের পিছনে তাড়া করবে, বলবে, ‘ওরা আগের মতই আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।’ এইভাবে আমরা শহর থেকে তাদের দূরে নিয়ে যাব। আমরা যখন তাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাব, তখন তোমরা সেই গোপন জায়গা থেকে উঠে গিয়ে শহরটা দখল করে নেবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই সেটা তোমাদের হাতে তুলে দেবেন। তোমরা শহরটা দখল করে নিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দেবে। সদাপ্রভু যা আদেশ করেছেন তোমরা তা-ই করবে। তোমাদের উপর এই আমার আদেশ।” এর পর যিহোশূয় তাদের পাঠিয়ে দিলেন। তারা গিয়ে অয় শহরের পশ্চিম দিকে একটা জায়গায় লুকিয়ে থাকল। জায়গাটা ছিল বৈথেল আর অয়ের মাঝামাঝি। যিহোশূয় কিন্তু সেই রাতটা বাকী সৈন্যদের সংগেই কাটালেন। পরের দিন ভোরবেলা যিহোশূয় তাঁর সৈন্যদের জড়ো করলেন। তারপর তিনি এবং ইস্রায়েলীয় নেতারা তাদের আগে আগে অয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন। যিহোশূয়ের সংগের সৈন্যেরা সব এগিয়ে গেল এবং শহরের কাছাকাছি গিয়ে শহরের সামনের দিকটায় উপস্থিত হল। অয় শহরের উত্তর দিকে তারা ছাউনি ফেলল। শহর এবং তাদের ছাউনির মাঝখানে ছিল আখোর উপত্যকা। যিহোশূয় প্রায় পাঁচ হাজার সৈন্য শহরের পশ্চিম দিকে বৈথেল ও অয়ের মাঝামাঝি একটা জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের সৈন্যদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে রাখল- যারা ছাউনিতে থাকবে তাদের রাখল অয় শহরের উত্তর দিকে আর যারা লুকিয়ে থাকবে তাদের রাখল শহরের পশ্চিম দিকে। সেই রাতে যিহোশূয় উপত্যকায় ছিলেন। ইস্রায়েলীয়দের দেখে অয়ের রাজা তাদের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য ভোরবেলায় তাড়াতাড়ি করে উঠে সমস্ত লোকদের নিয়ে শহর থেকে বের হয়ে অরাবা সমভূমির কাছে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গেলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, শহরের পিছন দিকে তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈন্য লুকিয়ে রয়েছে। যিহোশূয় এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয় তাদের সামনে থেকে পালিয়ে যাওয়ার ভান করে মরু-এলাকার পথ দিয়ে ছুটে গেল। তখন ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করবার জন্য অয়ের সমস্ত লোকদের ডাকা হল। তারা যিহোশূয়ের পিছনে তাড়া করল এবং এইভাবে শহর থেকে তাদের দূরে নিয়ে যাওয়া হল। ইস্রায়েলীয়দের পিছনে ছুটে যায় নি এমন একজন পুরুষ লোকও অয় কিম্বা বৈথেলে রইল না। তারা শহরের ফটক খোলা রেখেই ইস্রায়েলীয়দের পিছনে পিছনে ছুটে গেল। তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “তোমার হাতের ঐ তলোয়ারখানা অয় শহরের দিকে বাড়িয়ে ধর, কারণ তোমার হাতেই আমি শহরটা তুলে দেব।” যিহোশূয় তখন তাঁর তলোয়ার অয় শহরের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন; সংগে সংগে লুকিয়ে থাকা সেই সৈন্যেরা তাদের জায়গা থেকে তাড়াতাড়ি উঠে শহরের দিকে দৌড়ে গেল। তারা সেখানে ঢুকে তা দখল করে নিল এবং অল্প সময়ের মধ্যেই শহরে আগুন ধরিয়ে দিল। অয়ের লোকেরা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল তাদের শহর থেকে ধূমা আকাশে উঠছে; কিন্তু তাদের আর কোন দিকে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব হল না, কারণ যে ইস্রায়েলীয়েরা মরু-এলাকার দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল তারা এর মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। যিহোশূয় এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা যখন দেখল যে, তাদের লুকিয়ে থাকা সৈন্যেরা শহরটা দখল করে নিয়েছে এবং শহর থেকে ধূমা উঠছে তখন তারা অয় শহরের লোকদের আক্রমণ করল। লুকিয়ে থাকা সৈন্যেরাও অয়ের লোকদের আক্রমণ করবার জন্য শহর থেকে বের হয়ে আসল। তাতে অয়ের লোকেরা দু’টা ইস্রায়েলীয় দলের মাঝখানে আট্‌কা পড়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা তাদের সবাইকে মেরে ফেলল, কাউকে বাঁচিয়ে রাখল না কিম্বা যেতেও দিল না। তবে অয় শহরের রাজাকে তারা জীবন্ত অবস্থায় ধরে যিহোশূয়ের কাছে নিয়ে গেল। যে মাঠে, অর্থাৎ যে মরু-এলাকায় অয় শহরের লোকেরা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে অয়ের লোকদের সবাইকে মেরে ফেলবার পর সমস্ত ইস্রায়েলীয় অয় শহরে ফিরে আসল এবং শহরের মধ্যে যারা ছিল তারা তাদেরও মেরে ফেলল। সেই দিন অয় শহরের সমস্ত লোক, অর্থাৎ বারো হাজার স্ত্রী-পুরুষ মারা পড়ল। অয় শহরে যারা ছিল তারা সবাই শেষ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত যিহোশূয় তলোয়ার সুদ্ধ হাতখানা বাড়িয়ে রাখলেন। সদাপ্রভু যিহোশূয়কে যেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন সেইমতই ইস্রায়েলীয়েরা সেই শহরের পশুপাল এবং লুট করা জিনিস নিজেদের জন্য নিয়ে নিল। এইভাবে যিহোশূয় অয় শহরটা পুড়িয়ে দিয়ে সেটাকে চিরকালের জন্য একটা ধ্বংসের স্তূপ করে রাখলেন; আজও সেটা একটা পোড়ো জায়গা হয়ে আছে। তিনি অয় শহরের রাজাকে মেরে ফেলে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছে টাংগিয়ে রাখলেন। সন্ধ্যাবেলা তিনি তাঁর দেহটা গাছ থেকে নামিয়ে শহরের ফটকে ঢুকবার পথে ছুঁড়ে ফেলবার আদেশ দিলেন। লোকেরা তাঁর উপর পাথর দিয়ে একটা বড় স্তূপ করে রাখল। সেটা আজও রয়েছে। এবল পাহাড়ের উপরে ইস্রায়েলীয়দের সামনে যিহোশূয় পাথরের উপরে মোশির লেখা আইন-কানুন নকল করলেন। ইস্রায়েলীয়েরা এবং তাদের মধ্যে বাসকারী অন্য জাতির লোকেরা, তাদের বৃদ্ধ নেতারা, কর্মচারীরা এবং বিচারকর্তারা, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয় সমাজের সমস্ত লোক সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুকের দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিল; তারা সিন্দুক বহনকারী লেবীয় পুরোহিতদের সামনে ছিল। তাদের অর্ধেক লোক দাঁড়াল গরিষীম পাহাড়ের সামনে আর অর্ধেক লোক দাঁড়াল এবল পাহাড়ের সামনে। সদাপ্রভুর দাস মোশি এই কথা আগেই বলেছিলেন যখন তিনি ইস্রায়েলীয়দের উপর আশীর্বাদ করবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর যিহোশূয় আইন-কানুনের বইয়ে যে সমস্ত আশীর্বাদ এবং অভিশাপের কথা লেখা ছিল তা হুবহু পড়ে শোনালেন। মোশি এই ব্যাপারে যে সব আদেশ দিয়েছিলেন তার একটি শব্দও বাদ না দিয়ে যিহোশূয় গোটা ইস্রায়েল সমাজকে তা পড়ে শোনালেন। এই সমাজের মধ্যে স্ত্রীলোক, ছেলেমেয়ে এবং তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকেরাও ছিল। যর্দন নদীর পশ্চিম দিকের রাজারা এই সব কথা শুনতে পেলেন। এঁরা ছিলেন উঁচু পাহাড়ী এলাকার এবং তার নীচের পাহাড়ী এলাকার দেশগুলোর আর লেবানন পর্যন্ত ভূমধ্য সাগরের সমস্ত কিনারা ধরে যে দেশগুলো ছিল সেগুলোর রাজা। এঁরা ছিলেন হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়দের রাজা। ইস্রায়েলীয়দের সম্বন্ধে সব কথা শুনে তাঁরা এক মন হয়ে যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য একজোট হলেন। তারা পায়ে দিল পুরানো ও তালি দেওয়া জুতা এবং গায়ে পরল পুরানো কাপড়। পথে খাবার হিসাবে তারা যে সব রুটি নিল তা ছিল টুকরা টুকরা শুকনা রুটি। এইভাবে তারা গিল্‌গলে ইস্রায়েলীয়দের ছাউনিতে যিহোশূয়ের সামনে উপস্থিত হল। তারা তাঁকে ও ইস্রায়েলীয়দের বলল, “আমরা অনেক দূর দেশ থেকে এসেছি; আপনারা আমাদের সংগে সন্ধি করুন।” তখন ইস্রায়েলীয়েরা সেই হিব্বীয়দের বলল, “খুব সম্ভব আপনারা আমাদের কাছাকাছিই থাকেন। যদি তা-ই হয় তবে কেমন করে আমরা আপনাদের সংগে সন্ধি করব?” তারা যিহোশূয়কে বলল, “দেখুন, আমরা আপনার দাস।” তখন যিহোশূয় তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা কারা, আর কোথা থেকেই বা এসেছেন?” উত্তরে তারা বলল, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সুনাম শুনে আপনার এই দাসেরা অনেক দূর দেশ থেকে এসেছে। তিনি মিসর দেশে যা করেছিলেন তার খবর আমরা পেয়েছি। এছাড়া তিনি হিষবোনের রাজা সীহোন এবং অষ্টারোতে বাসকারী বাসনের রাজা ওগ- যর্দনের পূর্ব দিকের এই দুই ইমোরীয় রাজার যে দশা করেছিলেন তার কথাও আমরা শুনেছি। আমাদের বৃদ্ধ নেতারা এবং আমাদের দেশের বাসিন্দারা সবাই আমাদের এই নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন যাত্রাপথের জন্য খাবার সংগে নিয়ে আপনাদের সংগে দেখা করে বলি, ‘আমরা আপনাদের দাস এবং আপনারা আমাদের সংগে একটা সন্ধি করুন।’ আপনাদের কাছে রওনা হওয়ার দিনে আমরা বাড়ী থেকে গরম গরম রুটি বেঁধে নিয়ে বের হয়েছিলাম, কিন্তু এখন দেখুন, সেই রুটি শুকিয়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। আংগুর-রস রাখবার থলিগুলোও ভরে নিয়েছিলাম এবং সেগুলো নতুন ছিল কিন্তু দেখুন, এখন সেগুলো কি রকম ফেটে গেছে। এত দূরের পথ আসতে আমাদের পায়ের জুতা আর গায়ের কাপড়ও পুরানো হয়ে গেছে।” ইস্রায়েলীয়েরা তাদের খাবার নিয়ে দেখল বটে কিন্তু সদাপ্রভুর মতামত জিজ্ঞাসা করল না। যিহোশূয় তাদের সংগে সন্ধি করলেন এবং তাদের মেরে ফেলবেন না বলে একটা চুক্তি করলেন, আর ইস্রায়েলীয় সমাজের নেতারাও সেই সম্বন্ধে শপথ করলেন। গিবিয়োনীয়দের সংগে সন্ধি করবার তিন দিন পরেই ইস্রায়েলীয়েরা শুনতে পেল যে, তারা আসলে তাদের প্রতিবেশী আর তারা কাছেই বাস করে। তখন ইস্রায়েলীয়েরা তাদের এলাকার দিকে রওনা হল আর তিন দিনের দিন সেখানে গিয়ে পেীঁছাল। তাদের এলাকায় ছিল গিবিয়োন, কফীরা, বেরোৎ ও কিরিয়ৎ-যিয়ারীম শহর। ইস্রায়েলীয়েরা কিন্তু তাদের আক্রমণ করল না, কারণ তাদের সমাজের নেতারা ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে তাদের কাছে শপথ করেছিলেন। এতে নেতাদের বিরুদ্ধে গোটা ইস্রায়েল সমাজটাই বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগল। তাতে সমস্ত নেতারা তাদের বললেন, “আমরা ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে তাদের কাছে শপথ করেছি তাই এখন আমরা তাদের গায়ে হাত তুলতে পারি না। তবে আমরা তাদের জন্য এই কাজ করব, আমরা তাদের প্রাণে মারব না যেন আমরা তাদের কাছে যে শপথ করেছি তা ভাংবার দরুন সদাপ্রভুর ক্রোধ আমাদের উপর না পড়ে।” তাঁরা আরও বললেন, “তারা বেঁচে থাকুক।” সেইজন্য গিবিয়োনীয়দের সম্বন্ধে নেতাদের কথা অনুসারে তারা ইস্রায়েলীয় সমাজের সমস্ত লোকদের জন্য কাঠ কাটবার এবং জল আনবার লোক হল। এর পর যিহোশূয় গিবিয়োনীয়দের ডেকে বললেন, “তোমরা আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে থাক এই কথা বলে কেন আমাদের ঠকালে? আসলে তোমরা তো আমাদের কাছেই বাস কর। সেইজন্য তোমাদের উপর এই অভিশাপ রইল যে, আমার ঈশ্বরের ঘরের জন্য তোমরা কাঠ কাটবার আর জল আনবার কাজ করবে। এই দাসের কাজ করা থেকে তোমরা কখনো রেহাই পাবে না।” উত্তরে তারা যিহোশূয়কে বলল, “এই গোটা দেশটাই আপনাদের দেবার জন্য এবং আপনাদের সামনে থেকে এই দেশের সবাইকে মুছে ফেলবার জন্য যে আদেশ আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর দাস মোশিকে দিয়েছিলেন তা পরিষ্কার ভাবেই আপনার এই দাসদের কাছে বলা হয়েছিল। সেইজন্য আপনাদের বিষয়ে সব কথা শুনে প্রাণের ভয়ে আমরা এই কাজ করেছি। আমরা এখন আপনার হাতেই আছি; আপনার যা ভাল এবং উচিত বলে মনে হয় আমাদের প্রতি আপনি তা-ই করুন।” সেইজন্য যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের হাত থেকে তাদের বাঁচালেন; তারা তাদের মেরে ফেলল না। যিহোশূয় গিবিয়োনীয়দের সেই দিনই হুকুম দিলেন যেন তারা ইস্রায়েলীয়দের জন্য এবং সদাপ্রভু যে জায়গা বেছে নেবেন সেই জায়গায় সদাপ্রভুর বেদীর জন্য কাঠ কাটবার ও জল আনবার কাজ করে। আজও তারা সেই কাজ করছে। যিরূশালেমের রাজা অদোনী-ষেদক শুনতে পেলেন যে, যিহোশূয় অয় শহরটা অধিকার করে নিয়ে তা একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং তিনি যিরীহো ও তার রাজার দশা যা করেছিলেন অয় ও তার রাজার দশাও তা-ই করেছেন। তিনি আরও শুনলেন যে, গিবিয়োনীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের সংগে সন্ধি করেছে এবং তারা তাদের সংগে আছে। এতে তিনি ও তাঁর লোকেরা খুব ভয় পেলেন, কারণ গিবিয়োন ছিল রাজধানীর মতই একটা বড় শহর। এটা ছিল অয় শহরের চেয়েও বড় এবং তার সব পুরুষ লোকেরাই ছিল শক্তিশালী। সেইজন্য হিব্রোণের রাজা হোহম, যর্মূতের রাজা পিরাম, লাখীশের রাজা যাফিয় এবং ইগ্লোনের রাজা দবীরের কাছে যিরূশালেমের রাজা অদোনী-ষেদক এই অনুরোধ করে পাঠালেন, “আপনারা এসে আমাকে গিবিয়োন শহরটা আক্রমণ করতে সাহায্য করুন, কারণ তারা যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলীয়দের সংগে সন্ধি করেছে।” এই কথা শুনে সেই পাঁচজন ইমোরীয় রাজা, অর্থাৎ যিরূশালেম, হিব্রোণ, যর্মূত, লাখীশ ও ইগ্লোনের রাজা তাঁদের সৈন্যদল এক জায়গায় জড়ো করলেন। তারপর তাঁদের সৈন্যদল নিয়ে তাঁরা এগিয়ে গিয়ে গিবিয়োনের কাছাকাছি ছাউনি ফেললেন এবং শহরটা আক্রমণ করলেন। তখন গিবিয়োনীয়েরা গিল্‌গলের ছাউনিতে যিহোশূয়ের কাছে এই খবর পাঠাল, “আপনার দাসদের ত্যাগ করবেন না। আপনারা তাড়াতাড়ি এসে আমাদের রক্ষা করুন, আমাদের সাহায্য করুন, কারণ পাহাড়ী এলাকা থেকে ইমোরীয় রাজারা এসে আমাদের বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যদল একসংগে জড়ো করেছে।” এই খবর পেয়ে যিহোশূয় তাঁর গোটা সৈন্যদল নিয়ে গিল্‌গল থেকে এগিয়ে গেলেন। তার মধ্যে ছিল ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত বীর যোদ্ধারা। সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “তুমি তাদের ভয় কোরো না; আমি তাদের তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। তারা কেউ তোমার সামনে দাঁড়াতে পারবে না।” গিল্‌গল থেকে বেরিয়ে সারা রাত হাঁটবার পর যিহোশূয় হঠাৎ তাদের আক্রমণ করলেন। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে তাদের একটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় ফেলে দিলেন। তাতে সদাপ্রভু গিবিয়োনে ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে তাদের অনেককে মেরে ফেললেন। বৈৎ-হোরোণে উঠে যাবার রাস্তা ধরে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে তাদের তাড়া করালেন এবং অসেকা ও মক্কেদা পর্যন্ত সারা রাস্তা তাদের মারতে মারতে নিয়ে গেলেন। ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে তারা যখন বৈৎ-হোরোণ ছেড়ে অসেকায় নেমে আসবার পথ ধরে পালিয়ে যাচ্ছিল তখন সদাপ্রভু আকাশ থেকে বড় বড় শিলা তাদের উপরে ফেললেন। ফলে ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধে যত না লোক মরল তার চেয়ে বেশী মরল এই শিলাতে। যেদিন সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের হাতে ইমোরীয়দের তুলে দিলেন সেই দিন ইস্রায়েলীয়দের সামনেই যিহোশূয় সদাপ্রভুকে বললেন, “হে সূর্য, গিবিয়োনের উপর তুমি স্থির হয়ে দাঁড়াও, হে চাঁদ, অয়ালোন উপত্যকায় তুমি গিয়ে দাঁড়াও।” তাই সূর্য স্থির হয়ে দাঁড়াল আর চাঁদের গতি থেমে গেল, যে পর্যন্ত না ইস্রায়েল তার শত্রুদলের উপর শোধ নিল।” এই কথা যাশেরের বইতে লেখা আছে। তখন সূর্য আকাশের মাঝখানে গিয়ে থেমে রইল এবং অস্ত যেতে প্রায় পুরো একটা দিন দেরি করল। এর আগে বা পরে এমন দিন আর কখনও আসে নি যখন সদাপ্রভু এমনিভাবে মানুষের কথা রেখেছেন। সেই দিন সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের হয়ে যুদ্ধ করছিলেন। এর পর যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের নিয়ে গিল্‌গলের ছাউনিতে ফিরে গেলেন। সেই পাঁচজন ইমোরীয় রাজা পালিয়ে গিয়ে মক্কেদা শহরের কাছে একটা গুহাতে লুকিয়েছিলেন। কিন্তু তোমরা থেমো না; তোমাদের শত্রুদের তাড়া করে নিয়ে যাও, পিছন দিক থেকে তাদের আক্রমণ কর এবং তাদের নিজেদের শহরে ফিরে যেতে দিয়ো না। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের হাতে তাদের তুলে দিয়েছেন।” এইভাবে যিহোশূয় ও ইস্রায়েলীয়েরা ইমোরীয়দের ধ্বংস করে ফেলল। এতে প্রায় সবাই মারা পড়ল; কিন্তু যে কয়েকজন বাকী ছিল তারা তাদের দেয়াল-ঘেরা শহরে গিয়ে ঢুকল। এর পর ইস্রায়েলীয়দের সৈন্যেরা সবাই মক্কেদার ছাউনিতে নিরাপদে যিহোশূয়ের কাছে ফিরে গেল। ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলবার সাহস পেল না। তারপর যিহোশূয় বললেন, “গুহার মুখ খুলে ঐ পাঁচজন রাজাকে বের করে আমার কাছে নিয়ে এস।” তাতে সেই গুহা থেকে সেই পাঁচজন রাজাকে তারা বের করে নিয়ে আসল। এঁরা ছিলেন যিরূশালেম, হিব্রোণ, যর্মূত, লাখীশ ও ইগ্লোনের রাজা। তারা যখন সেই রাজাদের যিহোশূয়ের কাছে নিয়ে আসল তখন তিনি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের ডাকলেন এবং তাঁর সংগে যে সেনাপতিরা যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের বললেন, “তোমরা এখানে এসে ঐ রাজাদের ঘাড়ে তোমাদের পা রাখ।” এতে তারা এগিয়ে গিয়ে ঐ রাজাদের ঘাড়ের উপর তাদের পা রাখল। যিহোশূয় তাদের বললেন, “তোমরা ভয় কোরো না, হতাশ হোয়ো না। তোমরা শক্তিশালী হও ও মনে সাহস আন। তোমরা যে সব শত্রুদের সংগে যুদ্ধ করতে যাবে তাদের সকলের অবস্থা সদাপ্রভু এই রকম করবেন।” তারপর যিহোশূয় সেই রাজাদের মেরে ফেলে পাঁচটা গাছে তাঁদের টাংগিয়ে দিলেন। বিকাল পর্যন্ত তাঁদের দেহ গাছে টাংগানোই রইল। সূর্য ডুবে যাওয়ার সময় যিহোশূয়ের আদেশে লোকেরা গাছ থেকে তাঁদের দেহগুলো নামিয়ে ফেলল এবং যে গুহাতে তাঁরা লুকিয়ে ছিলেন তার মধ্যে সেই দেহগুলো ছুঁড়ে ফেলল। গুহার মুখটা তারা বড় বড় পাথর দিয়ে ঢেকে দিল। সেগুলো আজও সেখানে রয়েছে। যিহোশূয় সেই দিনই মক্কেদা অধিকার করে নিলেন। তিনি সেই শহরের রাজা ও সমস্ত লোকদের মেরে ফেললেন এবং সেখানকার সব জীবন্ত প্রাণীদের শেষ করে দিলেন, কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না। তিনি যিরীহোর রাজার যে অবস্থা করেছিলেন মক্কেদার রাজার অবস্থাও তা-ই করলেন। পরে যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের সকলকে নিয়ে মক্কেদা থেকে লিব্‌নার দিকে এগিয়ে গিয়ে তা আক্রমণ করলেন। সদাপ্রভু সেই শহর ও সেখানকার রাজাকে ইস্রায়েলীয়দের হাতে তুলে দিলেন। যিহোশূয় সেই শহরের লোকদের ও সব জীবন্ত প্রাণীদের মেরে ফেললেন, কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না। তিনি যিরীহোর রাজার যে অবস্থা করেছিলেন সেখানকার রাজার অবস্থাও তা-ই করলেন। এর পর যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের সবাইকে নিয়ে লিব্‌না থেকে লাখীশের দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি লাখীশ ঘেরাও করে তা আক্রমণ করলেন। সদাপ্রভু লাখীশ ইস্রায়েলীয়দের হাতে তুলে দিলেন। দ্বিতীয় দিনে যিহোশূয় সেটা অধিকার করে নিলেন। যিহোশূয় লিব্‌না শহরে যেমন করেছিলেন সেইভাবে লাখীশের লোকদের ও সব জীবন্ত প্রাণীদের মেরে ফেললেন। এর মধ্যে গেষরের রাজা হোরম লাখীশের লোকদের সাহায্য করতে এসেছিলেন কিন্তু যিহোশূয় তাঁকে ও তাঁর সৈন্যদলকে হারিয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত আর কেউই বেঁচে রইল না। তারপর যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের সবাইকে নিয়ে লাখীশ থেকে ইগ্লোনের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারা ইগ্লোন ঘেরাও করে তা আক্রমণ করল। সেই দিনই তারা ইগ্লোন অধিকার করে নিল এবং সেখানকার লোকদের মেরে ফেলল। লাখীশে যিহোশূয় যেমন করেছিলেন সেইভাবেই তিনি ইগ্লোনের সব জীবন্ত প্রাণীদের একেবারে শেষ করে দিলেন। এর পর যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের সবাইকে নিয়ে ইগ্লোন থেকে হিব্রোণে গিয়ে শহরটা আক্রমণ করলেন। তারা শহরটা অধিকার করে নিয়ে সেখানকার লোকদের, তাদের রাজাকে, তার আশেপাশের গ্রামগুলোর সমস্ত লোকদের ও হিব্রোণের সব জীবন্ত প্রাণীদের মেরে ফেলল। যিহোশূয় ইগ্লোনে যেমন করেছিলেন তেমনি সেখানে কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না; তিনি হিব্রোণ ও তার সমস্ত লোকদের একেবারে শেষ করে দিলেন। পরে যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের সবাইকে নিয়ে ঘুরে গিয়ে দবীর শহর আক্রমণ করলেন। তারা সেই শহর, তার রাজা এবং তার গ্রামগুলো অধিকার করে নিয়ে সেখানকার সবাইকে মেরে ফেলল। তারা সেখানকার সব জীবন্ত প্রাণীদের একেবারে শেষ করে দিল। যিহোশূয় কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না; তিনি লিব্‌না ও তার রাজা এবং হিব্রোণের অবস্থা যা করেছিলেন দবীর ও তার রাজার অবস্থাও তা-ই করলেন। এইভাবে যিহোশূয় সমস্ত এলাকাটা জয় করে নিলেন। তার মধ্যে ছিল উঁচু পাহাড়ী এলাকা, নেগেভ, নীচু পাহাড়ী এলাকা ও পাহাড়ের গায়ের ঢালু জায়গা। তিনি সেই এলাকার রাজাদেরও হারিয়ে দিলেন এবং সেখানকার কাউকেই বাঁচিয়ে রাখলেন না। ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন আদেশ করেছিলেন সেইভাবে তিনি সমস্ত জীবন্ত প্রাণীদের একেবারে শেষ করে দিয়েছিলেন। যিহোশূয় কাদেশ-বর্ণেয় থেকে গাজা পর্যন্ত এবং গোটা গোশন এলাকা, এমন কি, গিবিয়োন পর্যন্ত সমস্ত লোকদের হারিয়ে দিয়েছিলেন। এইভাবে একবার যুদ্ধ করতে বেরিয়ে যিহোশূয় এই সব রাজাদের ও তাঁদের দেশগুলো জয় করে নিয়েছিলেন, কারণ ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। এর পর যিহোশূয় সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের নিয়ে গিল্‌গলের ছাউনিতে ফিরে গেলেন। হাৎসোরের রাজা যাবীন এই সব শুনে মাদোনের রাজা যোবব এবং শিম্রোণের ও অক্‌ষফের রাজাদের কাছে খবর পাঠালেন। এছাড়া তিনি উত্তর দিকের অন্যান্য যে সব রাজা ছিলেন তাঁদের কাছেও খবর পাঠালেন। সেই রাজ্যগুলো ছিল উঁচু পাহাড়ী এলাকায়, কিন্নেরতের দক্ষিণে অরাবা সমভূমিতে, নীচু পাহাড়ী এলাকায় এবং পশ্চিমে দোরের পাহাড়ী জায়গায়। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম দিকের কনানীয়দের কাছে এবং পাহাড়ী এলাকার ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয় ও যিবূষীয়দের কাছে আর হর্মোণ পাহাড়ের নীচে মিসপা এলাকার হিব্বীয়দের কাছেও খবর পাঠালেন। এই সব রাজারা তাঁদের সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে বের হয়ে আসলেন। তাতে সাগরের কিনারার বালুকণার মত অনেক সৈন্যের একটা মস্ত বড় দল হল। তাঁদের সংগে ছিল অনেক ঘোড়া এবং রথ। এই সব রাজারা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় একত্র হয়ে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য মেরোম নামে এক ফোয়ারার কাছে ছাউনি ফেললেন। তখন সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “তুমি তাদের ভয় কোরো না, কারণ কালকে আমি এই সময়ের মধ্যে ইস্রায়েলীয়দের সামনে তাদের সবাইকে শেষ করে দেব। তুমি তাদের ঘোড়াগুলোর পায়ের শিরা কেটে দেবে এবং রথগুলো পুড়িয়ে ফেলবে।” তখন যিহোশূয় তাঁর সমস্ত সৈন্য নিয়ে মেরোম ফোয়ারার কাছে তাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে তাদের উপর আক্রমণ চালালেন। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের হাতে তাদের তুলে দিলেন। ইস্রায়েলীয়েরা তাদের মারতে মারতে মহাসীদোন, মিষ্রফোৎ-ময়িম এবং পূর্ব দিকে মিসপী উপত্যকা পর্যন্ত তাড়া করে নিয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আর কেউ বেঁচে রইল না। সদাপ্রভু যিহোশূয়কে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন যিহোশূয় শত্রুদের প্রতি তা-ই করলেন। তিনি তাদের ঘোড়াগুলোর পায়ের শিরা কেটে দিলেন এবং রথগুলো পুড়িয়ে ফেললেন। তারপর যিহোশূয় ফিরে গিয়ে হাৎসোর অধিকার করে নিলেন এবং সেখানকার রাজাকে মেরে ফেললেন। হাৎসোর ছিল ঐ সব রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রধান। ইস্রায়েলীয়েরা হাৎসোরের সবাইকে একেবারে ধ্বংস করে দিল, একটা জীবন্ত প্রাণীকেও বাঁচিয়ে রাখল না। এর পর যিহোশূয় শহরটা পুড়িয়ে ফেললেন। যিহোশূয় ঐ সব রাজাদের শহরগুলো দখল করে নিয়ে সেখানকার রাজাদের বন্দী করলেন। তিনি সেই রাজাদের ও সেখানকার লোকদের মেরে ফেললেন। সদাপ্রভুর দাস মোশির আদেশ অনুসারে তিনি তাদের একেবারে ধ্বংস করে দিলেন। কিন্তু টিলার উপর যে সব শহর ছিল সেগুলোর কোনটাই ইস্রায়েলীয়েরা পোড়ালো না, কেবল হাৎসোর যিহোশূয় পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই শহরগুলো থেকে যে সব জিনিসপত্র ও পশুপাল লুট করা হয়েছিল সেগুলো ইস্রায়েলীয়েরা নিজেদের জন্য নিয়ে গেল; কিন্তু সমস্ত লোককে তারা একেবারে শেষ করে দিল, একটা জীবন্ত প্রাণীকেও তারা বাঁচিয়ে রাখল না। সদাপ্রভু তাঁর দাস মোশিকে যে সব আদেশ দিয়েছিলেন মোশি যিহোশূয়কে তা জানিয়েছিলেন, আর যিহোশূয় সেই সব আদেশ পালন করেছিলেন। সদাপ্রভু মোশিকে যে সব আদেশ দিয়েছিলেন যিহোশূয় তার একটাও অমান্য করেন নি। এইভাবে যিহোশূয় গোটা দেশটাই দখল করে নিলেন। তার মধ্যে ছিল উঁচু পাহাড়ী এলাকা, সমস্ত নেগেভ, সমস্ত গোশন এলাকা, নীচু পাহাড়ী জায়গাগুলো, অরাবা সমভূমি এবং ইস্রায়েলের উত্তর দিকের উঁচু পাহাড়ী এলাকা ও তার নীচের জায়গাগুলো। এক কথায় সেয়ীর পাহাড়শ্রেণীর দিকে উঠে যাওয়া হালক পাহাড় থেকে হর্মোণ পাহাড়ের নীচে লেবানন উপত্যকার বাল্‌গাদ পর্যন্ত সমস্ত জায়গাটাই যিহোশূয় অধিকার করে নিলেন। তিনি ঐ সব জায়গার রাজাদের ধরে মেরে ফেললেন। যিহোশূয় অনেক দিন ধরে এই সব রাজাদের সংগে যুদ্ধ করেছিলেন। একমাত্র গিবিয়োনের বাসিন্দা হিব্বীয়েরা ছাড়া আর কোন শহরের লোকেরা ইস্রায়েলীয়দের সংগে সন্ধি করে নি; ইস্রায়েলীয়েরা যুদ্ধ করে তাদের সবাইকে হারিয়ে দিয়েছিল। সদাপ্রভু ঐ সব লোকদের মন কঠিন করে দিয়েছিলেন যাতে তারা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর তাতে তারা যেন ধ্বংসের অভিশাপের অধীন হয় এবং কোন রকম দয়া না পেয়ে মারা যায়। এই আদেশই সদাপ্রভু মোশিকে দিয়েছিলেন। এর পর যিহোশূয় গিয়ে পাহাড়ী এলাকার অনাকীয়দেরও মেরে ফেললেন। এই এলাকার মধ্যে ছিল হিব্রোণ, দবীর ও অনাব শহর এবং যিহূদা ও ইস্রায়েলের সমস্ত পাহাড়ী জায়গাগুলো। তিনি অনাকীয়দের এবং তাদের শহর ও গ্রামগুলো একেবারে ধ্বংস করে দিলেন। ইস্রায়েলীয়দের দেশের মধ্যে কোন অনাকীয় আর বেঁচে রইল না; কেবল গাজা, গাৎ ও অস্‌দোদে কিছু কিছু অনাকীয় বেঁচে রইল। সদাপ্রভু মোশিকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই অনুসারে যিহোশূয় গোটা দেশটা দখল করে নিলেন এবং গোষ্ঠী অনুসারে সম্পত্তি হিসাবে তা ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। দেশে তখনকার মত যুদ্ধ থেমে গিয়েছিল। অরাবা সমভূমির সমস্ত পূর্ব অংশটা সুদ্ধ অর্ণোন উপত্যকা থেকে হর্মোণ পাহাড় পর্যন্ত যর্দন নদীর পূর্ব দিকের ইমোরীয়দের রাজা সীহোন ও বাশনের রাজা ওগকে ইস্রায়েলীয়েরা হারিয়ে দিয়ে তাঁদের এলাকা দখল করে নিয়েছিল। ইমোরীয়দের রাজা সীহোন হিষ্‌বোনে থেকে রাজত্ব করতেন। অর্ণোন উপত্যকার কিনারার অরোয়ের থেকে, অর্থাৎ উপত্যকার মাঝখান থেকে অম্মোনীয়দের দেশের সীমানা যব্বোক নদী পর্যন্ত সমস্ত এলাকাটা তাঁর শাসনের অধীনে ছিল। এই এলাকার মধ্যে ছিল গিলিয়দের অর্ধেক অংশ। এছাড়া কিন্নেরৎ সাগর থেকে অরাবার সাগর, অর্থাৎ লবণ সমুদ্র এবং বৈৎ-যিশীমোতের পথ পর্যন্ত আর দক্ষিণ দিকে পিস্‌গা পাহাড়ের নীচ পর্যন্ত অরাবা সমভূমির পূর্ব অংশটা তঁাঁর শাসনের অধীনে ছিল। রফায়ীয়দের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল বাশনের রাজা ওগ ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি অষ্টারোৎ এবং ইদ্রিয়ীতে থেকে রাজত্ব করতেন। হর্মোণ পাহাড়, সল্‌খা, গশূরীয় ও মাখাথীয়দের সীমানা পর্যন্ত সমস্ত বাশন দেশটা এবং হিষ্‌বোনের রাজা সীহোনের রাজ্যের সীমা পর্যন্ত গিলিয়দের বাকী অর্ধেক অংশ তাঁর শাসনের অধীনে ছিল। ইস্রায়েলীয়েরা এবং সদাপ্রভুর দাস মোশি এই দু’জন রাজাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাদের জায়গাগুলো সম্পত্তি হিসাবে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর সবাইকে এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোককে দিয়ে গিয়েছিলেন। লেবানন উপত্যকার বাল্‌গাদ থেকে সেয়ীর পাহাড়শ্রেণীর দিকে উঠে যাওয়া হালক পাহাড় পর্যন্ত যর্দন নদীর পশ্চিম দিকের এলাকার রাজাদের যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলীয়েরা হারিয়ে দিয়েছিল। তাদের জায়গাগুলো যিহোশূয় সম্পত্তি হিসাবে ইস্রায়েলীয়দের বিভিন্ন গোষ্ঠী অনুসারে ভাগ করে দিয়েছিলেন। এই জায়গাগুলো হল উঁচু পাহাড়ী এলাকা, নীচু পাহাড়ী জায়গা, অরাবা, পাহাড়ের ঢালু জায়গা, পূর্ব দিকের মরু-এলাকা এবং নেগেভ। এগুলো ছিল হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়দের জায়গা। এই সব জায়গার যে রাজাদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁরা হলেন: যিরীহোর রাজা, বৈথেলের কাছে অয়ের রাজা, দবীরের রাজা, গেদরের রাজা, হর্মার রাজা, অরাদের রাজা, অফেকের রাজা, লশারোণের রাজা, মাদোনের রাজা, হাৎসোরের রাজা, শিম্রোণ-মরোণের রাজা, অক্‌ষফের রাজা, তানকের রাজা, মগিদ্দোর রাজা, বয়স বেড়ে গিয়ে যিহোশূয় যখন বুড়ো হয়ে গেলেন তখন সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তুমি বুড়ো হয়েছ, তোমার বয়স হয়ে গেছে, অথচ দেশের এমন অনেক অংশ রয়ে গেছে যা এখনও দখল করা হয় নি। ইস্রায়েলীয়দের নয় গোষ্ঠী এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোককে তুমি সম্পত্তি হিসাবে তা ভাগ করে দেবে।” মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোক এবং রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকেরা যর্দনের পূর্ব দিকের জায়গাটা সম্পত্তি হিসাবে আগেই পেয়েছিল। সদাপ্রভুর দাস মোশি তাদের জন্য সেই জায়গা ঠিক করে দিয়ে গিয়েছিলেন। গিলিয়দ এলাকা, গশূরীয় ও মাখাথীয়দের জায়গা, গোটা হর্মোণ পাহাড় আর সল্‌খা পর্যন্ত সমস্ত বাশন দেশটাও তার মধ্যে রয়েছে। এটা ছিল বাশনের রাজা ওগের রাজ্য। তিনি অষ্টারোৎ ও ইদ্রিয়ীতে থেকে রাজত্ব করতেন। রফায়ীয়দের মধ্যে তখনও যাঁরা বেঁচে ছিল তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। মোশি তাদের হারিয়ে দিয়ে তাদের দেশটা অধিকার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা এই গশূরীয় ও মাখাথীয়দের তাড়িয়ে দেয় নি; সেইজন্য তারা আজও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে বাস করছে। লেবি-গোষ্ঠীকে মোশি কিন্তু কোন সম্পত্তির অধিকারী করেন নি, কারণ সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে আগুনে-করা উৎসর্গের জিনিসই হল তাদের সম্পত্তি। হিষ্‌বোন ও সমভূমির মধ্যেকার গ্রাম ও শহরগুলো। এই গ্রাম ও শহরগুলো হল দীবোন, বামোৎ-বাল, বৈৎ-বাল্‌-মিয়োন, যহস, কদেমোৎ, মেফাৎ, কিরিয়াথয়িম, সিব্‌মা, উপত্যকার মধ্যে পাহাড়ের উপরের সেরৎ-শহর, বৈৎ-পিয়োর, পিস্‌গা পাহাড়ের ঢালু জায়গা এবং বৈৎ-যিশীমোৎ। এগুলো ছিল সমভূমির মধ্যেকার গ্রাম ও শহর এবং হিষ্‌বোনের ইমোরীয় রাজা সীহোনের গোটা রাজ্য। মোশি এই রাজাকে এবং ইবি, রেকম, সুর, হূর ও রেবা নামে মিদিয়নীয় সর্দারদের হারিয়ে দিয়েছিলেন। এঁরা ঐ এলাকায় বাস করতেন এবং সীহোনের অধীনে শাসনকর্তা ছিলেন। যুদ্ধে যাদের মেরে ফেলা হয়েছিল তারা ছাড়া ইস্রায়েলীয়েরা বিয়োরের ছেলে গণক বিলিয়মকেও মেরে ফেলেছিল। যর্দন নদী ছিল রূবেণীয়দের এলাকার পশ্চিম সীমানা। এই সব শহর ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো রূবেণ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের লোকেরা সম্পত্তি হিসাবে পেয়েছিল। এছাড়া তার মধ্যে ছিল হিষ্‌বোন থেকে রামৎ-মিসপী ও বটোনীম পর্যন্ত এবং মহনয়িম থেকে দবীরের সীমা পর্যন্ত সমস্ত জায়গাটা, আর উপত্যকার মধ্যেকার বৈৎ-হারম, বৈৎ-নিম্রা, সুক্কোৎ, সাফোন এবং হিষ্‌বোনের রাজা সীহোনের রাজ্যের বাকী অংশ এবং কিন্নেরত সাগরের দক্ষিণ দিক পর্যন্ত যর্দন নদীর পূর্বের কিনারা ধরে সমস্ত এলাকাটা। এই সব শহর ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো গাদ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের লোকেরা সম্পত্তি হিসাবে পেয়েছিল। গিলিয়দের অর্ধেক জায়গা এবং অষ্টারোৎ ও ইদ্রিয়ী শহর। এই দুই শহর থেকে বাশনের রাজা ওগ রাজত্ব করতেন। এই জায়গাগুলো মনঃশির ছেলে মাখীরের অর্ধেক লোকের বিভিন্ন বংশগুলোকে দেওয়া হয়েছিল। মোশি যর্দনের ওপারে যিরীহোর পূর্ব দিকে মোয়াবের সমভূমিতে ঐ সব জায়গা সম্পত্তি হিসাবে ভাগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু লেবি-গোষ্ঠীকে তিনি কোন সম্পত্তি দেন নি; তাদের কাছে সদাপ্রভু যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই অনুসারে ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুই ছিলেন তাদের সম্পত্তি। অন্যান্য ইস্রায়েলীয়েরা কনান দেশে সম্পত্তি হিসাবে জায়গা-জমি পেল। পুরোহিত ইলীয়াসর, নূনের ছেলে যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলীয়দের ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর পরিবার-কর্তারা তাদের তা ভাগ করে দিলেন। সদাপ্রভু মোশির মধ্য দিয়ে যেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই মতই ইস্রায়েলীয়দের সাড়ে নয় গোষ্ঠীর মধ্যে গুলিবাঁট করে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। মোশি আড়াই গোষ্ঠীর সম্পত্তি যর্দনের পূর্ব দিকে আগেই দিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি লেবি-গোষ্ঠীকে ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে কোন সম্পত্তি দেন নি। মনঃশি আর ইফ্রয়িম নামে যোষেফের দুই ছেলের মধ্য দিয়ে দু’টি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছিল। লেবীয়েরা জমির ভাগ পেল না বটে, কিন্তু তারা বাস করবার ও জিনিসপত্র রাখবার জন্য কতগুলো গ্রাম ও শহর এবং গরু-ভেড়া চরাবার জন্য আশেপাশের মাঠ পেল। সদাপ্রভু মোশিকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন ইস্রায়েলীয়েরা সেই অনুসারেই দেশটা ভাগ করে নিয়েছিল। যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা গিল্‌গলে যিহোশূয়ের কাছে গেল এবং কনিসীয় যিফুন্নির ছেলে কালেব তাঁকে বললেন, “সদাপ্রভু কাদেশ-বর্ণেয়তে ঈশ্বরের লোক মোশির কাছে আমার ও আপনার সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তা আপনার জানা আছে। সদাপ্রভুর দাস মোশি দেশটার খোঁজ-খবর নিয়ে আসবার জন্য যখন আমাকে কাদেশ-বর্ণেয় থেকে পাঠিয়েছিলেন তখন আমার বয়স ছিল চল্লিশ বছর। দেশটা দেখেশুনে আমি যা বুঝতে পেরেছিলাম সেই অনুসারেই আমি তাঁর কাছে খবর এনে দিয়েছিলাম, কিন্তু যে ভাইয়েরা আমার সংগে গিয়েছিল তারা লোকদের নিরাশ করে তুলেছিল। তবে আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা পুরোপুরিই মেনে চলেছিলাম। সেইজন্য মোশি সেই দিন আমার কাছে শপথ করে বলেছিলেন, ‘তুমি যে জায়গাটা ঘুরে দেখে এসেছ তা চিরকালের জন্য তোমার ও তোমার বংশধরদের সম্পত্তি হয়ে থাকবে, কারণ তুমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা পুরোপুরিই মেনে চলেছিলে।’ “মরু-এলাকায় যখন ইস্রায়েলীয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর সদাপ্রভু মোশিকে এই কথা বলেছিলেন তখন থেকে তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে এই পঁয়তাল্লিশ বছর তিনি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, আর এখন আমার বয়স পঁচাশি বছর হয়েছে। মোশি যেদিন আমাকে পাঠিয়েছিলেন সেই দিনের মত আজও আমি শক্তিশালী আছি; তখনকার মত এখনও আমার যুদ্ধে যাবার এবং সমস্ত কাজ করবার শক্তি আছে। এই যে পাহাড়ী এলাকাটা দেবার প্রতিজ্ঞা সদাপ্রভু সেদিন আমার কাছে করেছিলেন তা আপনি আমাকে দিন। সেই সময় আপনি নিজেই শুনেছিলেন যে, অনাকীয়েরা সেখানে বাস করে আর তাদের শহরগুলোও বেশ বড় বড় এবং দেয়াল-ঘেরা। কিন্তু সদাপ্রভু আমার সংগে থাকলে তাঁর কথা অনুসারেই আমি তাদের তাড়িয়ে দেব।” এই কথা শুনে যিহোশূয় যিফুন্নির ছেলে কালেবকে আশীর্বাদ করলেন এবং সম্পত্তি হিসাবে হিব্রোণ শহরটা তাঁকে দিলেন। সেই থেকে হিব্রোণ কনিসীয় যিফুন্নির ছেলে কালেবের অধিকারে রয়েছে, কারণ তিনি ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা পুরোপুরিই মেনে চলেছিলেন। অনাকীয়দের মধ্যে অর্ব নামে একজন ক্ষমতাশালী লোকের নাম অনুসারে হিব্রোণকে আগে কিরিয়ৎ-অর্ব বলা হত। এর পর দেশে যুদ্ধ থেমে গিয়েছিল। গুলিবাঁট অনুসারে যিহূদা-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশগুলোকে যে জায়গা দেওয়া হল তার সীমানা ইদোমীয়দের দেশের সীমানা পর্যন্ত, অর্থাৎ সীন মরু-এলাকার দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাল। সেখান থেকে অস্‌মোন বরাবর গিয়ে মিসর নামে যে শুকনা নদী আছে তার সংগে যুক্ত হয়ে ভূমধ্য সাগরে গিয়ে শেষ হল। এটাই হল তোমাদের দক্ষিণের সীমা। সেখান থেকে সীমারেখাটা আখোর উপত্যকা থেকে দবীর পর্যন্ত উঠে গেল এবং তা উত্তর দিকে উপত্যকার দক্ষিণে অদুম্মীমে উঠে যাওয়ার পথের উল্টাদিকে গিল্‌গল পর্যন্ত চলে গেল। গিল্‌গল থেকে ঐন্‌-শেমশের স্রোত পর্যন্ত গিয়ে সেটা ঐন্‌-রোগেলে বের হয়ে আসল। সেখান থেকে সেটা যিবূশীয়দের শহরের, অর্থাৎ যিরূশালেমের দক্ষিণের ঢালু জায়গাটা বরাবর গিয়ে বেন-হিন্নোমের উপত্যকায় উঠে গেল। সেখান থেকে সীমারেখাটা রফায়ীম উপত্যকার উত্তর সীমার হিন্নোম উপত্যকার পশ্চিমে যে পাহাড় আছে সেখানে উঠে গেল। সেই সীমারেখাটা তারপর পাহাড়ের উপর থেকে নিপ্তোহের ফোয়ারার দিকে চলে গেল। সেখান থেকে ইফ্রোণ পাহাড়ের গ্রামগুলোর কাছ দিয়ে বের হয়ে সেটা বালার দিকে, অর্থাৎ কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের দিকে নেমে গেল। বালা থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরে সেটা সেয়ীর পাহাড়ে গেল; তারপর যিয়ারীম পাহাড়ের, অর্থাৎ কসালোনের উত্তর দিকের ঢালু জায়গা বরাবর গিয়ে সেটা বৈৎ-শেমশে নেমে তিম্না পর্যন্ত গেল। তারপর সেই সীমারেখাটা ইক্রোণের উত্তর দিকের ঢালু জায়গায় গিয়ে শিক্করোণের দিকে ঘুরে সোজা বালা পাহাড়ে গেল এবং যব্‌নিয়েলে পৌঁছে ভূমধ্য সাগরে গিয়ে শেষ হল। পশ্চিম দিকের সীমানা হল ভূমধ্য সাগরের কিনারা। এই হল যিহূদা-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের জায়গার চারপাশের সীমারেখা। যিহোশূয় সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে যিফুন্নির ছেলে কালেবকে যিহূদা-গোষ্ঠীর জায়গার মধ্যে কিরিয়ৎ-অর্ব, অর্থাৎ হিব্রোণ শহরটা দিয়েছিলেন। অর্ব ছিল অনাকীয়দের পূর্বপুরুষ। পরে শেশয়, অহীমান ও তল্‌ময় নামে তিনজন অনাকীয়কে কালেব হিব্রোণ থেকে তাড়িয়ে দিলেন। এরা ছিল অনাকের বংশধর। কালেব সেখান থেকে দবীরের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। আগে দবীরের নাম ছিল কিরিয়ৎ-সেফর। কালেব বলেছিলেন, “যে কেউ কিরিয়ৎ-সেফর আক্রমণ করে অধিকার করতে পারবে তার সংগে আমি আমার মেয়ে অক্‌ষার বিয়ে দেব।” এই কথা শুনে কনষের বংশধর কালেবের ভাই অৎনীয়েল তা অধিকার করল। তাই কালেব তার মেয়ে অক্‌ষাকে অৎনীয়েলের সংগে বিয়ে দিলেন। অৎনীয়েলের কাছে যাওয়ার পর অক্‌ষা তাকে উসকানি দিতে লাগল যাতে সে অক্‌ষার বাবার কাছ থেকে একটা জমি চেয়ে নেয়। পরে অক্‌ষা গাধার পিঠ থেকে নামলে পর কালেব তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মা, তুমি কি চাও?” সে বলল, “বাবা, তুমি আমার একটা কথা রাখ। তুমি আমাকে যখন নেগেভ মরু-এলাকায় জায়গা দিয়েছ তখন জলের ফোয়ারাগুলোও আমাকে দাও।” এই কথা শুনে কালেব তাকে সেখানকার উঁচু ও নীচু জায়গার ফোয়ারাগুলো দিলেন। যিহূদা-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশগুলোকে যে সম্পত্তি দেওয়া হল তা এই। ইদোমের কাছে নেগেভে তাদের এলাকার একেবারে দক্ষিণে তারা যে শহর ও গ্রামগুলো পেয়েছিল সেগুলোর নাম হল: কব্‌সেল, এদর, যাগুর, কীনা, দীমোনা, অদাদা, কেদশ, হাৎসোর, যিৎনন, সীফ, টেলম, বালোৎ, হাৎসোর-হদত্তা, করিয়োৎ-হিষ্রোণ, অর্থাৎ হাৎসোর, লবায়োৎ, শিল্‌হীম, ঐন ও রিম্মোণ। মোট ঊনত্রিশটা শহর এবং তাদের আশেপাশের গ্রামগুলো তারা পেয়েছিল। নীচু পাহাড়ী এলাকার মধ্যে তারা যে সব শহর ও গ্রাম পেয়েছিল সেগুলো হল: ইষ্টায়োল, সরা, অশ্‌না, সানোহ, ঐন্‌-গন্নীম, তপূহ, ঐনম, যর্মূৎ, অদুল্লম, সোখো, অসেকা, শারয়িম, অদীথয়িম, গদেরা ও গদেরোথয়িম। এই চৌদ্দটা শহর ও তাদের আশেপাশের গ্রামগুলো তারা পেয়েছিল। কব্বন, লহমম, কিৎলীশ, গদেরোৎ, বৈৎ-দাগোন, নয়মা ও মক্কেদা। এই ষোলটা শহর এবং এগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম তারা পেয়েছিল। ইক্রোণ শহর এবং তার আশেপাশের জায়গা ও গ্রামগুলো, ইক্রোণের পশ্চিম দিকে অস্‌দোদের সমস্ত গ্রাম, অস্‌দোদ এবং তার আশেপাশের সমস্ত জায়গা ও গ্রাম এবং মিসরের শুকনা নদী ও ভূমধ্য সাগরের কিনারা পর্যন্ত গাজা ও তার আশেপাশের সমস্ত জায়গা ও এই সব গ্রাম তারা পেয়েছিল। ঊঁচু পাহাড়ী এলাকার মধ্যে তারা যে সব শহর ও গ্রাম পেয়েছিল সেগুলো হল: শামীর, যত্তীর, সোখো, দন্না, কিরিয়ৎ-সন্না, অর্থাৎ দবীর, অনাব, ইষ্টিমোয়, আনীম, গোশন, হোলোন ও গীলো। এই এগারটা শহর ও এগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম তারা পেয়েছিল। হল্‌হূল, বৈৎ-সূর, গদোর, মারৎ, বৈৎ-অনোৎ ও ইল্‌তকোন। এই ছয়টা শহর ও এগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম তারা পেয়েছিল। কিরিয়ৎ-বাল, অর্থাৎ কিরিয়ৎ-যিয়ারিম আর রব্বা। এই দু’টা শহর ও এগুলোর আশেপাশের জায়গা তারা পেয়েছিল। মরু-এলাকায় তারা যে সব শহর ও গ্রাম পেয়েছিল সেগুলো হল: বৈৎ-অরাবা, মিদ্দীন, সকাখা, নিব্‌শন, লবণ-নগর ও ঐন্‌-গদী। এই ছয়টা শহর ও এগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম তারা পেয়েছিল। যিহূদা-গোষ্ঠী কিন্তু যিবূষীয়দের তাড়িয়ে দিতে পারে নি। যিবূশীয়েরা ছিল যিরূশালেমের বাসিন্দা। যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকদের সংগে যিবূশীয়েরা আজও সেখানে বাস করছে। গুলিবাঁট অনুসারে যোষেফ-গোষ্ঠীর লোকদের যে জায়গা দেওয়া হল তার সীমানা শুরু হল যিরীহোর উল্টাদিকে যিরীহোর ফোয়ারাটার পূর্ব দিকে যর্দন নদী থেকে। তারপর সীমারেখাটা মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়ে বৈথেলের পাহাড়ী এলাকায় উঠে গেল। বৈথেল থেকে সেটা লূসে গেল এবং লূস থেকে অটারোতে অর্কীয়দের জায়গা পর্যন্ত গেল। তারপর সীমারেখাটা পশ্চিমে নেমে গিয়ে নীচের বৈৎ-হোরোণের এলাকা পর্যন্ত যফ্‌লেটীয়দের জায়গায় গিয়ে সেখান থেকে গেষরে গেল এবং ভূমধ্য সাগরে গিয়ে সীমানাটা শেষ হল। যোষেফের ছেলে মনঃশি ও ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকেরা এই সব সম্পত্তি পেল। যানোহ থেকে সেটা নেমে গিয়ে অটারোৎ এবং নারঃ হয়ে যিরীহোর সীমা ঘেঁসে যর্দনে গিয়ে পড়ল। উত্তর দিকের সেই সীমারেখা তপূহ থেকে পশ্চিম দিকে কান্না শুকনা নদী হয়ে ভূমধ্য সাগরে গিয়ে শেষ হল। এই হল ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের সম্পত্তি। এছাড়া মনঃশি-গোষ্ঠীর সম্পত্তির মধ্যেকার কতগুলো শহর ও তাদের আশেপাশের গ্রামগুলো ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীকে দেওয়া হয়েছিল। গেষরে যে সব কনানীয়েরা বাস করত তাদের তারা তাড়িয়ে বের করে দেয় নি। আজও তারা ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকদের সংগে বাস করছে; তবে ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর দাস হিসাবে তাদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। মনঃশি যোষেফের বড় ছেলে ছিল বলে গুলিবাঁট দ্বারা তার গোষ্ঠীকেও একটা জায়গা দেওয়া হয়েছিল। মনঃশির বড় ছেলের নাম ছিল মাখীর। মাখীর হল গিলিয়দের বাবা। মাখীর একজন বড় যোদ্ধা ছিল বলে সে গিলিয়দ ও বাশনের অধিকার আগেই পেয়েছিল। কিন্তু মনঃশি-গোষ্ঠীর বাকী সব বংশের লোকদের, অর্থাৎ অবীয়েষর, হেলক, অস্রীয়েল, শেখম, হেফর এবং শমীদার বংশের লোকদের কনান দেশে জায়গা-জমি দেওয়া হয়েছিল। বংশের দিক থেকে এরাই ছিল যোষেফের ছেলে মনঃশির বাকী সব পুরুষ বংশধর। মনঃশির ছেলে মাখীর, মাখীরের ছেলে গিলিয়দ, গিলিয়দের ছেলে হেফর, এবং হেফরের ছেলে সল্‌ফাদ। সল্‌ফাদের কেবল মেয়ে ছিল, ছেলে ছিল না। সেই মেয়েদের নাম হল মহলা, নোয়া হগ্‌লা, মিল্কা ও তির্সা। এই মেয়েরা পুরোহিত ইলিয়াসর ও নূনের ছেলে যিহোশূয় এবং নেতাদের কাছে গিয়ে বলল, “আমাদের গোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে আমাদেরও সম্পত্তির একটা অংশ দেবার আদেশ সদাপ্রভু মোশিকে দিয়েছিলেন।” এই কথা শুনে যিহোশূয় সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে তাদের বাবার ভাইদের সংগে তাদেরও সম্পত্তির অধিকার দিলেন। যর্দনের পূর্ব দিকের গিলিয়দ ও বাশন ছাড়াও মনঃশি-গোষ্ঠীর ভাগে পড়ল আরও দশ খণ্ড জমি, কারণ মনঃশি-গোষ্ঠীর এই মেয়েরা তাদের গোষ্ঠীর ছেলেদের সংগে সম্পত্তির অধিকার পেল; আর মনঃশি-গোষ্ঠীর বাকী বংশধরেরা গিলিয়দ এলাকাটা পেল। মনঃশি-গোষ্ঠীর জায়গার সীমারেখা আশের থেকে শুরু হয়ে শিখিমের কাছে মিক্‌মথৎ পর্যন্ত গেল। তারপর সেটা দক্ষিণ দিকে গেল, যার ফলে ঐন্‌-তপূহের বাসিন্দারা মনঃশি-গোষ্ঠীর এলাকার মধ্যে পড়ে গেল। তপূহের আশেপাশের জায়গা অবশ্য মনঃশি-গোষ্ঠীর ভাগে পড়েছিল কিন্তু মনঃশি-গোষ্ঠীর সীমারেখার সংগে লাগানো তপূহ শহরটা ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর অধিকারে পড়ল। তারপর সেই সীমারেখাটা দক্ষিণে কান্না শুকনা নদী পর্যন্ত নেমে গেল। ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর কতগুলো শহর ও গ্রাম মনঃশি-গোষ্ঠীর সীমানায় পড়ে গিয়েছিল। মনঃশি-গোষ্ঠীর সীমারেখা সেই শুকনা নদীর উত্তর দিক দিয়ে গিয়ে শেষ হয়েছিল ভুমধ্য সাগরে। শুকনা নদীর দক্ষিণে ছিল ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর জায়গা আর উত্তরে ছিল মনঃশি-গোষ্ঠীর জায়গা। মনঃশি-গোষ্ঠীর পশ্চিম সীমানা ছিল ভূমধ্য সাগর, উত্তরে ছিল আশের-গোষ্ঠীর সীমানা এবং পূর্ব দিকে ছিল ইষাখর-গোষ্ঠীর সীমানা। ইষাখর ও আশের-গোষ্ঠীর সীমানার মধ্যেকার বৈৎ-শান, যিব্‌লিয়ম ও সেগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম মনঃশি-গোষ্ঠীকে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া দোর, ঐন্‌-দোর, তানক ও মগিদ্দোর লোক সুদ্ধ এই সব শহর এবং সেগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম মনঃশি-গোষ্ঠীকে দেওয়া হয়েছিল। শেষ তিনটা শহর ও তাদের সংগেকার গ্রামগুলো ছিল পাহাড়ী এলাকায়। মনঃশি-গোষ্ঠীর লোকেরা কিন্তু ঐ সব শহর ও গ্রাম দখল করতে পারে নি, কারণ কনানীয়েরা স্থির করেছিল যে, তারা ঐ জায়গা ছেড়ে যাবে না। তবে ইস্রায়েলীয়েরা যখন শক্তিশালী হয়ে উঠল তখন তারা কনানীয়দের তাদের দাস হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু দেশ থেকে তাদের সবাইকে তারা তাড়িয়ে দিল না। যোষেফ-গোষ্ঠীর লোকেরা গিয়ে যিহোশূয়কে বলল, “সম্পত্তি হিসাবে কেন আপনি আমাদের মাত্র একটা ভাগ দিয়েছেন? সদাপ্রভুর আশীর্বাদে আমাদের লোকসংখ্যা অনেক।” উত্তরে যিহোশূয় বললেন, “লোকসংখ্যা যদি তোমাদের এতই বেশী এবং ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকাতে যদি তোমাদের না কুলায় তবে পরীষীয় ও রফায়ীয়দের দেশের বন-জংগল কেটে ফেলে নিজেদের জন্য জমি তৈরী করে নাও।” যোষেফ-গোষ্ঠীর লোকেরা উত্তরে বলল, “পাহাড়ী এলাকার জায়গায় আমাদের কুলায় না এবং যে সব কনানীয়েরা সমভূমির বৈৎ-শান ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে এবং যিষ্রিয়েল উপত্যকায় বাস করে তাদের সকলেরই লোহার রথ আছে।” যিহোশূয় যোষেফের বংশধরদের, অর্থাৎ ইফ্রয়িম ও মনঃশি-গোষ্ঠীর লোকদের বললেন, “তোমাদের লোকও বেশী, শক্তিও বেশী। তোমরা কেবল একটা ভাগ পাবে না। বন-জংগলে ভরা পাহাড়ী এলাকাটাও তোমরা পাবে। তোমাদের সেটা কেটে পরিষ্কার করে নিতে হবে। জংগল ও তার সংগেকার সব জমিজমা তোমাদের অধিকারে থাকবে। কনানীয়দের লোহার রথ থাকলেও এবং তারা শক্তিশালী হলেও তোমরা তাদের তাড়িয়ে দেবে।” সেইজন্য যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যে দেশটা তোমাদের দিয়েছেন তোমরা সম্পত্তি হিসাবে তার দখল নিতে আর কতদিন দেরি করবে? তোমরা প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে তিনজন করে লোক নিযুক্ত কর। দেশটা ভাল করে দেখেশুনে সব কিছু লিখে আনবার জন্য আমি তাদের পাঠিয়ে দেব যাতে তাদের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া যায়। কাজ শেষ করে তারা আমার কাছে ফিরে আসবে। গোটা দেশটা তারা সাত ভাগে ভাগ করবে। দক্ষিণ দিকে যিহূদা-গোষ্ঠীকে যে জায়গা দেওয়া হয়েছে তারা সেখানে থাকবে, আর উত্তর দিকে থাকবে যোষেফের বংশধরেরা। দেশের সেই সাতটা ভাগের প্রত্যেকটি সম্বন্ধে সব কিছু লিখে তোমরা তা আমার কাছে নিয়ে আসবে, আর আমি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে তোমাদের জন্য গুলিবাঁট করব। তবে লেবীয়েরা তোমাদের সংগে কোন ভাগ পাবে না, কারণ সদাপ্রভুর পুরোহিত হিসাবে সেবা-কাজ করাই হল তাদের সম্পত্তি। গাদ ও রূবেণ-গোষ্ঠীর লোকেরা এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোক আগেই যর্দন নদীর পূর্ব দিকে তাদের সম্পত্তি পেয়ে গেছে। সদাপ্রভুর দাস মোশিই তা তাদের দিয়ে গেছেন।” সেই লোকেরা দেশটা সম্বন্ধে সব কিছু লিখে আনবার জন্য রওনা হবার সময়ে যিহোশূয় তাদের বলে দিলেন, “তোমরা গিয়ে দেশটা ভাল করে দেখেশুনে তার সব কিছু লিখে আমার কাছে নিয়ে আসবে। তারপর আমি এখানে, এই শীলোতে, সদাপ্রভুর সামনে তোমাদের জন্য গুলিবাঁট করব।” কাজেই সেই লোকেরা দেশের সব জায়গায় গেল। তারা দেশটার বাকী অংশ সাত ভাগ করে প্রত্যেক ভাগের শহর ও গ্রামগুলোর নাম ও সেগুলোর সম্বন্ধে সব কিছু এক এক করে বইয়ের মধ্যে লিখে নিয়ে শীলোর ছাউনিতে যিহোশূয়ের কাছে ফিরে আসল। যিহোশূয় শীলোতে সদাপ্রভুর সামনে ইস্রায়েলীয়দের জন্য গুলিবাঁট করলেন এবং সেখানে তাদের গোষ্ঠী অনুসারে দেশটা ভাগ করে দিলেন। গুলিবাঁট করলে পর বিন্যামীন-গোষ্ঠীর নাম উঠল। সেই গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশকে যে জায়গা দেওয়া হল তা গুলিবাঁট অনুসারে যিহূদা এবং যোষেফ-গোষ্ঠীর জায়গার মাঝখানে পড়ল। উত্তর দিকে তাদের জমির সীমারেখা যর্দন নদী থেকে শুরু হয়ে যিরীহোর উত্তর দিকের ঢালু জায়গা পার হয়ে পশ্চিম দিকে পাহাড়ী এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়ে বৈৎ-আবনের মরু-এলাকা পর্যন্ত চলে গেল। সেখান থেকে সীমারেখাটা লূসের, অর্থাৎ বৈথেলের দক্ষিণের ঢালু জায়গাটায় গিয়ে নীচের বৈৎ-হোরোণের দক্ষিণে যে পাহাড় আছে সেই পাহাড়ের উপরে অটারোৎ-অদ্দরে নেমে গেল। তারপর সেই সীমারেখাটা বৈৎ-হোরোণের দক্ষিণের পাহাড়ের পশ্চিম দিক হয়ে দক্ষিণ দিকে ঘুরে গেল এবং কিরিয়ৎ-বাল, অর্থাৎ কিরিয়ৎ-যিয়ারীম পর্যন্ত গেল। কিরিয়ৎ-যিয়ারীম ছিল যিহূদা-গোষ্ঠীর একটা শহর। এটা হল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর পশ্চিম দিকের সীমানা। তাদের দক্ষিণ দিকের সীমারেখা পশ্চিমে কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের সীমানা থেকে শুরু হয়ে নিপ্তোহের ফোয়ারা পর্যন্ত গেল। তারপর সেই সীমারেখাটা রফায়ীম উপত্যকার উত্তরে বেন-হিন্নোম উপত্যকার সামনের পাহাড়ের নীচ পর্যন্ত নেমে গেল। তারপর সেটা হিন্নোম উপত্যকার মধ্য দিয়ে যিবূশীয়দের শহরের দক্ষিণ দিকের ঢালু জায়গা বরাবর গিয়ে ঐন্‌-রোগেল পর্যন্ত চলে গেল। তারপর সেই সীমারেখাটা উত্তর দিকে ঘুরে ঐন্‌-শেমশ হয়ে অদুম্মীমে উঠে যাওয়ার পথের সামনে গলীলোতে গিয়ে রূবেণের বংশধর বোহনের পাথর পর্যন্ত নেমে গেল। তারপর সেটা অরাবার উত্তর দিকের ঢালু জায়গাটায় গিয়ে অরাবাতে নেমে গেল। তারপর সেই সীমারেখা বৈৎ-হগ্লার উত্তর দিকের ঢালু জায়গাটা ধরে লবণ সমুদ্রের উত্তর দিকের উপসাগরে, অর্থাৎ যর্দন নদীর মোহনায় গিয়ে পড়ল। এটাই ছিল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর দক্ষিণ দিকের সীমানা। তাদের পূর্ব দিকের সীমানা ছিল যর্দন নদী। এটাই ছিল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের সম্পত্তির চারপাশের সীমানা। বিন্যামীন-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের ভাগে যে গ্রাম ও শহরগুলো পড়েছিল সেগুলো হল যিরীহো, বৈৎ-হগ্লা, এমক-কশিশ, বৈৎ-অরাবা, সমারয়িম, বৈথেল, অব্বীম, পারা, অফ্রা, কফর-অম্মোনী, অফ্‌নি ও গেবা। এই বারোটা শহর এবং সেগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম তারা পেয়েছিল। এছাড়া তারা গিবিয়োন, রামা, বেরোৎ, দ্বিতীয় বার গুলিবাঁট করলে পর শিমিয়োন-গোষ্ঠীর নাম উঠল এবং তার বিভিন্ন বংশের জায়গা ঠিক করে দেওয়া হল। তাদের সম্পত্তি যিহূদা-গোষ্ঠীর জায়গার মধ্যে পড়ল। শিমিয়োন-গোষ্ঠীর সম্পত্তির মধ্যে পড়ল বের্‌-শেবা, শেবা, মোলাদা, বৈৎ-লবায়োৎ ও শারূহন নামে তেরটা শহর ও সেগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম। সেই সম্পত্তি যিহূদা-গোষ্ঠীর ভাগ থেকে নেওয়া হয়েছিল, কারণ যিহূদা-গোষ্ঠীর দরকারের চেয়েও বেশী জায়গা তাদের ভাগে পড়েছিল। সেইজন্যই যিহূদা-গোষ্ঠীর জায়গার মধ্যে শিমিয়োন-গোষ্ঠী তাদের সম্পত্তি পেয়েছিল। তৃতীয় বার গুলিবাঁট করলে পর সবূলূন-গোষ্ঠীর নাম উঠল এবং তার বিভিন্ন বংশের জায়গা ঠিক করে দেওয়া হল। তাদের জায়গার সীমানা ছিল সারীদ পর্যন্ত। সেখান থেকে সীমারেখাটা পশ্চিম দিকে মারালা পর্যন্ত গিয়ে দব্বেশৎ হয়ে যকিয়ামের কাছের স্রোতে গিয়ে পড়ল। সেই সীমারেখাটা সারীদ থেকে পূর্ব দিকে ঘুরে কিশ্‌লোৎ-তাবোর গ্রাম পর্যন্ত গেল এবং তারপর দাবরৎ হয়ে যাফিয়তে উঠে গেল। সবূলূন-গোষ্ঠীর জায়গার মধ্যে ছিল কটৎ, নহলাল, শিম্রোণ, যিদালা ও বৈৎ-লেহম গ্রাম। তাদের ভাগে পড়েছিল বারোটা শহর ও সেগুলোর আশেপাশের গ্রাম। এই সব শহর ও সেগুলোর আশেপাশের গ্রাম সবূলূন-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের সম্পত্তি হল। চতুর্থ বার গুলিবাঁট করলে পর ইষাখর-গোষ্ঠীর নাম উঠল এবং তার বিভিন্ন বংশের জায়গা ঠিক করে দেওয়া হল। তাদের জায়গার মধ্যে পড়ল যিষ্রিয়েল, কসুল্লোৎ, শূনেম, তাদের জায়গার সীমারেখা তাবোর, শহৎসূমা ও বৈৎ-শেমশ হয়ে যর্দনে গিয়ে শেষ হল। ষোলটা শহর ও সেগুলোর আশেপাশের সব গ্রাম তাদের ভাগে পড়ল। এই সব শহর ও সেগুলোর আশেপাশের গ্রাম ইষাখর-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের সম্পত্তি হল। পঞ্চম বার গুলিবাঁট করলে পর আশের-গোষ্ঠীর নাম উঠল এবং তার বিভিন্ন বংশের জায়গা ঠিক করে দেওয়া হল। তাদের জায়গার মধ্যে পড়ল হিল্‌কৎ, হলী, বেটন, অক্‌ষফ, তারপর সেই সীমারেখা এব্রোণ, রহোব, হম্মোন ও কান্না হয়ে মহাসীদোন পর্যন্ত চলে গেল। এই সব শহর ও সেগুলোর আশেপাশের গ্রাম আশের-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের সম্পত্তি হল। ষষ্ঠ বার গুলিবাঁট করলে পর নপ্তালি-গোষ্ঠীর নাম উঠল এবং তার বিভিন্ন বংশের জায়গা ঠিক করে দেওয়া হল। তাদের জায়গার সীমারেখা হেলফ এবং সানন্নীমের এলোন গাছ থেকে শুরু হয়ে অদামী-নেকব ও যব্‌নিয়েল পেরিয়ে লক্কুম পর্যন্ত গেল এবং যর্দন নদীতে গিয়ে শেষ হল। তারপর সেই সীমারেখাটা পশ্চিম দিকে গিয়ে অস্‌নোৎ-তাবোরের মধ্য দিয়ে হুক্কোকে বের হয়ে আসল। দক্ষিণে সবূলূন-গোষ্ঠীর সীমা পর্যন্ত, পশ্চিমে আশের-গোষ্ঠীর সীমা পর্যন্ত এবং পূর্ব দিকে যর্দনের কাছে যিহূদা পর্যন্ত ছিল নপ্তালি-গোষ্ঠীর সীমানা। তাদের জায়গার মধ্যে এই দেয়াল-ঘেরা গ্রামগুলো ছিল: সিদ্দীম, সের, হম্মৎ, রক্কৎ, কিন্নেরৎ, অদামা, রামা, হাৎসোর, কেদশ, ইদ্রিয়ী, ঐন্‌-হাৎসোর, যিরোণ, মিগ্‌দল-এল, হোরেম, বৈৎ-অনাৎ ও বৈৎ-শেমশ। ঊনিশটা শহর ও সেুগলোর আশেপাশের গ্রাম তাদের ভাগে পড়ল। এই সব শহর ও সেগুলোর আশেপাশের গ্রাম নপ্তালি-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের সম্পত্তি হল। সপ্তম বার গুলিবাঁট করলে পর দান-গোষ্ঠীর নাম উঠল এবং তার বিভিন্ন বংশের জায়গা ঠিক করে দেওয়া হল। তাদের সম্পত্তির মধ্যে পড়ল: সরা, ইষ্টায়োল, ঈর্‌-শেমশ, যিহূদ, বনে-বরক, গাৎ-রিম্মোণ, মেয়র্কোণ, রক্কোন এবং যাফোর সামনের এলাকা। দান-গোষ্ঠী তাদের ভাগের জায়গাটার সবটুকুর দখল নেয় নি বলে তাদের পক্ষে জায়গাটা ছোট হয়েছিল। সেইজন্য তারা লেশম শহরটা আক্রমণ করে সেখানকার লোকদের হারিয়ে দিল এবং সবাইকে মেরে ফেলে তা দখল করল। তারা লেশমে বাস করতে লাগল এবং তাদের পূর্বপুরুষের নাম অনুসারেই সেই জায়গাটার নাম রাখল “দান।” এই সব শহর ও সেগুলোর আশেপাশের গ্রাম দান-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের সম্পত্তি হল। পুরোহিত ইলিয়াসর, নূনের ছেলে যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলীয়দের ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর বংশ-কর্তারা শীলোতে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে সদাপ্রভুর সামনে গুলিবাঁট করে এই সব জায়গাগুলোই ঠিক করে দিয়েছিলেন। এইভাবেই তাঁরা দেশটা ভাগ করবার কাজ শেষ করলেন। এর পর সদাপ্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল, ‘মোশির মধ্য দিয়ে আমি তোমাকে যে নির্দেশ দিয়েছি সেইমতই তারা যেন কতগুলো আশ্রয়-শহর ঠিক করে নেয়। যদি কেউ হঠাৎ করে কিম্বা খুন করবার ইচ্ছা মনে না রেখে কাউকে মেরে ফেলে তাহলে সে সেখানে পালিয়ে যেতে পারবে এবং রক্তের শোধ যার নেবার কথা তার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এই সব আশ্রয়-শহরের কোন একটার কাছে পৌঁছে শহরের ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে সেখানকার বৃদ্ধ নেতাদের কাছে সে নিজের সম্বন্ধে সব কথা খুলে বলবে। তারপর তারা তাকে তাদের শহরে ঢুকতে দেবে এবং তার থাকবার জন্য একটা জায়গা দেবে। রক্তের শোধ যার নেবার কথা সে যদি তার পিছনে তাড়া করে আসে তবে খুনের দায়ে পড়া লোকটিকে তারা তার হাতে ছেড়ে দেবে না, কারণ সেই লোককে মেরে ফেলবার পিছনে আগে থেকে তার মনে কোন ইচ্ছা বা হিংসা ছিল না। বিচার-সভায় যতদিন না তার বিচার হয় এবং সেই সময়কার মহাপুরোহিতের যতদিন না মৃত্যু হয় ততদিন পর্যন্ত তাকে সেই আশ্রয়-শহরে থাকতে হবে। এর পর যেখান থেকে সে পালিয়ে এসেছিল সেখানে তার নিজের বাড়ীতে ফিরে যেতে পারবে।’ ” সেইজন্য ইস্রায়েলীয়েরা আশ্রয়-শহর হিসাবে নপ্তালি-গোষ্ঠীর ভাগের পাহাড়ী এলাকার গালীলের কেদশ, ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর ভাগের পাহাড়ী এলাকার শিখিম এবং যিহূদা-গোষ্ঠীর ভাগের পাহাড়ী এলাকার কিরিয়ত-অর্ব, অর্থাৎ হিব্রোণ আলাদা করে রাখল। যিরীহোর উল্টাদিকে যর্দনের পূর্ব দিকে তারা রূবেণ-গোষ্ঠীর ভাগের সমভূমির মরু-এলাকার মধ্যে বেৎসর, গাদ-গোষ্ঠীর ভাগের গিলিয়দের রামোৎ এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর ভাগের বাশনের গোলন আশ্রয়-শহর হিসাবে ঠিক করল। কোন ইস্রায়েলীয় কিম্বা তাদের মধ্যে বাস করা অন্য কোন জাতির লোক যদি কাউকে হঠাৎ মেরে ফেলে তবে সে এই সব ঠিককরা শহরগুলোর কোন একটাতে পালিয়ে যেতে পারবে। রক্তের শোধ যার নেবার কথা বিচার-সভায় খুনের দায়ে পড়া লোকটির বিচার না হওয়া পর্যন্ত সে তাকে মেরে ফেলতে পারবে না। লেবি-গোষ্ঠীর বংশকর্তারা পুরোহিত ইলিয়াসর, নূনের ছেলে যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলীয়দের অন্যান্য গোষ্ঠীর বংশ-কর্তাদের কাছে গেলেন। তাঁরা কনান দেশের শীলোতে তাঁদের বললেন, “আমাদের বাস করবার জন্য গ্রাম এবং আমাদের পশুপাল চরাবার জন্য গ্রামের আশেপাশের মাঠ দেবার কথা সদাপ্রভু মোশির মধ্য দিয়ে আপনাদের আদেশ দিয়েছিলেন।” কাজেই সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের নিজেদের সম্পত্তি থেকে কতগুলো গ্রাম ও পশু চরাবার মাঠ লেবীয়দের দিল। গুলিবাঁট করলে পর প্রথমে কহাতীয় বংশের নাম উঠল। এই লেবীয়দের মধ্যে যারা পুরোহিত হারোণের বংশধর তারা যিহূদা, শিমিয়োন ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর জায়গা থেকে তেরটা গ্রাম ও শহর পেল। কহাতের বংশের বাকী লোকদের ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর পরিবারগুলোর জায়গা থেকে ও দান-গোষ্ঠীর এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের জায়গা থেকে দশটা গ্রাম ও শহর দেওয়া হল। গুলিবাঁট করে ইষাখর-গোষ্ঠীর পরিবার-গুলোর জায়গা থেকে, আশের ও নপ্তালি-গোষ্ঠীর জায়গা থেকে এবং বাশন দেশের বাসিন্দা মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের জায়গা থেকে গের্শোনের বংশধরদের তেরটা গ্রাম ও শহর দেওয়া হল। রূবেণ, গাদ ও সবূলূন-গোষ্ঠীর জায়গা থেকে মরারির বংশধরদের বিভিন্ন পরিবার বারোটা গ্রাম ও শহর পেল। মোশির মধ্য দিয়ে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে ইস্রায়েলীয়েরা গুলিবাঁট করে এই সব গ্রাম ও শহর এবং সেগুলোর সংগেকার পশু চরবার মাঠ লেবীয়দের দিল। যিহূদা-গোষ্ঠীর পাহাড়ী এলাকার কিরিয়ৎ-অর্ব, অর্থাৎ হিব্রোণ ও তার চারপাশের পশু চরাবার মাঠ তাদের দেওয়া হল। অর্ব ছিল অনাকীয়দের পূর্বপুরুষ। তবে হিব্রোণের চারপাশের জায়গা ও গ্রামগুলো আগেই যিফুন্নির ছেলে কালেবকে সম্পত্তি হিসাবে দেওয়া হয়েছিল। পুরোহিতেরা, অর্থাৎ হারোণের বংশধরেরা মোট তেরটা গ্রাম ও শহর এবং সেগুলোর সংগেকার পশু চরাবার মাঠ পেল। লেবীয়দের কহাতীয় বংশের বাকী পরিবারগুলোকে ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর জায়গা থেকে কতগুলো গ্রাম ও শহর দেওয়া হল। মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের জায়গা থেকে তানক ও গাৎ-রিম্মোণ নামে দু’টা গ্রাম ও সেগুলোর সংগেকার পশু চরবার মাঠ তাদের দেওয়া হল। পশু চরাবার মাঠ সুদ্ধ এই দশটা গ্রাম ও শহর কহাতীয় বংশের বাকী পরিবারগুলোকে দেওয়া হল। মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের জায়গা থেকে বাশন দেশের গোলন ও বীষ্টরা নামে দু’টা গ্রাম ও সেগুলোর সংগেকার পশু চরাবার মাঠ লেবি-গোষ্ঠীর গের্শোনীয়দের দেওয়া হল। এর মধ্যে গোলন ছিল খুনের আসামীর আশ্রয়-শহর। নপ্তালি-গোষ্ঠীর জায়গা থেকে তাদের দেওয়া হল গালীলের কেদশ, হম্মোৎ-দোর ও কর্তন নামে তিনটা গ্রাম ও সেগুলোর সংগেকার পশু চরাবার মাঠ। এর মধ্যে কেদশ ছিল খুনের আসামীর আশ্রয়-শহর। পশু চরাবার মাঠ সুদ্ধ এই তেরটা গ্রাম ও শহর গের্শোনীয়দের বিভিন্ন পরিবারকে দেওয়া হল। মোট বারোটা গ্রাম লেবীয়দের বাকী বংশটিকে, অর্থাৎ মরারীয়দের বিভিন্ন পরিবারকে দেওয়া হল। ইস্রায়েলীয়দের অধিকার করা জায়গার মধ্যে পশু চরাবার মাঠ সুদ্ধ মোট আটচল্লিশটা গ্রাম ও শহর ছিল লেবীয়দের। এগুলোর প্রত্যেকটার চারপাশে পশু চরাবার মাঠ ছিল। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের পূর্বপুরুষদের কাছে যে সব জায়গা দেবার শপথ করেছিলেন তার সবগুলোই তিনি তাদের দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলীয়েরা সেই সব দেশ দখল করে নিয়ে সেখানে বাস করতে লাগল। তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে সদাপ্রভুর শপথ অনুসারে তিনি চারদিকের সব যুদ্ধ থেকে তাদের বিশ্রাম দিলেন। কোন শত্রুই তাদের সামনে দাঁড়াতে পারে নি। সদাপ্রভু তাদের সমস্ত শত্রুদের তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের মংগল করবার যে সব প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার একটাও অপূর্ণ থাকে নি, সবগুলোই পূর্ণ হয়েছিল। অনেক দিন পর্যন্ত, এমন কি, আজ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের ভাইদের ছেড়ে যাও নি, বরং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের উপর যে কাজের ভার দিয়েছিলেন তা তোমরা শেষ করেছ। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তিনি যুদ্ধ থেকে তোমাদের ভাইদের বিশ্রাম দিয়েছেন; কাজেই সদাপ্রভুর দাস মোশি যর্দনের ওপারে তোমাদের যে জায়গা দিয়েছেন সেখানকার বাড়ীতে এবার তোমরা ফিরে যাও। কিন্তু যে সব আদেশ ও আইন-কানুন সদাপ্রভুর দাস মোশি তোমাদের দিয়ে গেছেন তা পালন করবার দিকে মন দিয়ো। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভালবেসো, তাঁর সমস্ত পথে চোলো, তাঁর সব আদেশ পালন কোরো, তাঁকে আঁকড়ে ধোরো এবং তোমাদের সমস্ত মন ও প্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা কোরো।” এর পর যিহোশূয় তাদের আশীর্বাদ করে বিদায় দিলেন আর তারা তাদের বাড়ীতে ফিরে গেল। মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের মোশি বাশন দেশটা দিয়েছিলেন, আর যিহোশূয় বাকী অর্ধেক লোকদের জায়গা দিয়েছিলেন তাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের সংগে যর্দনের পশ্চিম দিকে। যিহোশূয় তাদের বাড়ীতে যাবার জন্য বিদায় দেবার সময় আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, “তোমাদের প্রচুর ধন-সম্পদ হয়েছে, যেমন পশুর বড় বড় পাল, সোনা, রূপা, ব্রোঞ্জ, লোহা ও অনেক কাপড়-চোপড়। এগুলো নিয়ে এবার তোমরা তোমাদের বাড়ীতে ফিরে যাও। তোমাদের শত্রুদের কাছ থেকে লুট করা এই সব জিনিস তোমরা তোমাদের ভাইদের সংগে ভাগ করে নিয়ো।” কাজেই সদাপ্রভু মোশিকে যে আদেশ দিয়েছিলেন সেই অনুসারে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর সবাই এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোক নিজেদের জন্য যে জায়গা পেয়েছিল সেই গিলিয়দ এলাকায় ফিরে যাবার জন্য কনান দেশে শীলোতে ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে বিদায় নিল। তারপর তারা কনান দেশের যর্দন এলাকায় উপস্থিত হয়ে নদীর কাছেই সকলের চোখে পড়বার মত বড় একটা বেদী তৈরী করল। বাকী ইস্রায়েলীয়েরা যখন শুনল যে, তাদের জায়গায় কনান দেশের সীমায় যর্দন এলাকার নদীর কাছে তারা একটা বেদী তৈরী করেছে, তখন বাকী ইস্রায়েলীয়েরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার জন্য শীলোতে জড়ো হল। তারা পুরোহিত ইলিয়াসরের ছেলে পীনহসকে গিলিয়দে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের কাছে পাঠাল। তারা তাদের প্রত্যেক গোষ্ঠী থেকে একজন করে মোট দশজন নেতাকে পীনহসের সংগে পাঠাল। এই দশজনের প্রত্যেকে ছিলেন ইস্রায়েলীয় বংশের কর্তা। তাঁরা গিলিয়দে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকদের এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের কাছে গিয়ে বললেন, “সদাপ্রভুর সমাজের সকলেই বলছেন, ‘আপনারা কেমন করে এইভাবে ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন? কেমন করে আপনারা আজ সদাপ্রভুর পথ থেকে সরে গেলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিজেদের জন্য এই বেদী তৈরী করলেন? পিয়োরে আমরা যে পাপ করেছিলাম তার জন্য সদাপ্রভুর সমাজের লোকদের মধ্যে মড়ক দেখা দিয়েছিল; আজও আমরা সেই পাপ থেকে নিজেদের শুচি করি নি। সেই পাপের ফলে কি আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা হয় নি যে, এখন আবার আপনারা সদাপ্রভুর পথ থেকে সরে যেতে চাইছেন? আজকে যদি আপনারা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন তবে কালকেই তিনি আমাদের গোটা ইস্রায়েলীয় সমাজের উপর ক্রোধ প্রকাশ করবেন। যে দেশ আপনাদের অধিকারে রয়েছে তা যদি অশুচি হয়ে গিয়ে থাকে তবে আপনারা পার হয়ে সদাপ্রভুর দেশে আসুন। এখানে সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বু রয়েছে। আপনারা আমাদের সংগেই বাস করুন। কিন্তু আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেদী ছাড়া আর কোন বেদী নিজেদের জন্য তৈরী করে সদাপ্রভুর এবং আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবেন না। যে সব জিনিস ধ্বংসের অভিশাপের অধীন ছিল সেই সম্বন্ধে সেরহের ছেলে আখন অবিশ্বস্ত হয়েছিল বলে সদাপ্রভুর ক্রোধ কি গোটা ইস্রায়েল সমাজের উপর পড়ে নি? সে তো তার পাপের জন্য একা মারা যায় নি।’ ” এই কথা শুনে রূবেণ ও গাদ-গোষ্ঠীর লোকেরা এবং মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকেরা উত্তরে ইস্রায়েলীয় বিভিন্ন বংশের কর্তাদের বলল, “সর্বমহান ঈশ্বর সদাপ্রভু! সর্বমহান ঈশ্বর সদাপ্রভু! তিনি তো জানেনই আর ইস্রায়েলীয়েরাও জানুক। এটা যদি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহ কিম্বা অবাধ্যতার কাজ হয়ে থাকে তবে আপনারা আজকে আমাদের রেহাই দেবেন না। যদি আমরা সদাপ্রভুর পথ থেকে সরে যাবার জন্য এবং পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ কিম্বা যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার উদ্দেশ্যে নিজেদের জন্য এই বেদী তৈরী করে থাকি তবে সদাপ্রভু নিজেই আমাদের শাস্তি দিন। “আমরা এই বেদীটা তৈরী করেছি এই ভয়ে যে, হয়তো বা কোনদিন আপনাদের বংশধরেরা আমাদের বংশধরদের বলবে, ‘ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সংগে তোমাদের কি সম্বন্ধ? রূবেণীয় ও গাদীয়েরা, সদাপ্রভু তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে যর্দন নদীকে সীমানা হিসাবে রেখেছেন। সদাপ্রভুর উপর তোমাদের কোন দাবি নেই।’ এইভাবে হয়তো আপনাদের বংশধরেরা সদাপ্রভুর প্রতি আমাদের বংশধরদের ভক্তির মনোভাব নষ্ট করে দেবে। “কাজেই আমরা বলেছিলাম, ‘এস, আমরা একটা বেদী তৈরী করি।’ কিন্তু সেটা কোন পোড়ানো-উৎসর্গ কিম্বা অন্যান্য পশু-উৎসর্গের উদ্দেশ্যে নয়। এটা আপনাদের ও আমাদের মধ্যে এবং আমাদের বংশধরদের মধ্যে এই সাক্ষ্যই দেবে যে, আমরা সদাপ্রভুর সামনেই আমাদের পোড়ানো-উৎসর্গ ও অন্যান্য পশু-উৎসর্গ এবং যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে তাঁর উপাসনা করব। তাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের বংশধরেরা আমাদের বংশধরদের এই কথা বলতে পারবে না, ‘সদাপ্রভুর উপর তোমাদের কোন দাবি নেই।’ “আমরা ভেবেছিলাম যে, তারা যদি আমাদের বা আমাদের বংশধরদের ঐ কথা বলে তবে তার উত্তরে আমরা বলব, ‘সদাপ্রভুর বেদীর মত দেখতে অবিকল এই বেদীটার দিকে তোমরা চেয়ে দেখ। পোড়ানো-উৎসর্গ এবং অন্যান্য পশু-উৎসর্গের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা এটা তৈরী করেন নি কিন্তু করেছিলেন তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এটা যেন একটা সাক্ষী হয়ে থাকে।’ “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বুর সামনে যে বেদী আছে সেটা ছাড়া পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ এবং অন্যান্য পশু-উৎসর্গ করবার জন্য অন্য কোন বেদী তৈরী করে আমরা যে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে তাঁর পথ থেকে আজ সরে যাব তা আমাদের কাছ থেকে দূরে থাকুক।” রূবেণ, গাদ ও মনঃশি-গোষ্ঠীর লোকেরা পুরোহিত পীনহস এবং ইস্রায়েলীয় সমাজের নেতাদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয় বংশগুলোর কর্তাদের যা বলল তাতে তাঁরা সন্তুষ্ট হলেন। পুরোহিত ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস তাঁদের বললেন, “আজকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, সদাপ্রভু আমাদের সংগেই আছেন, কারণ আপনারা এই ব্যাপারে সদাপ্রভুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করেন নি। আপনারা সদাপ্রভুর হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের বাঁচালেন।” এর পর ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস এবং নেতারা গিলিয়দে রূবেণীয় ও গাদীয়দের কাছ থেকে কনান দেশে ফিরে গিয়ে সব কথা ইস্রায়েলীয়দের জানালেন। তা শুনে তারা খুশী হল এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিল। রূবেণীয় এবং গাদীয়েরা যে দেশে বাস করত তা ধ্বংস করে দেবার জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার কথা তারা আর বলল না। রূবেণীয় ও গাদীয়েরা সেই বেদীটার নাম দিল, “আমাদের মধ্যে এটাই হল সাক্ষী যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।” ইস্রায়েলীয়দের চারপাশের শত্রুদের হাত থেকে সদাপ্রভু তাদের বিশ্রাম দেবার পর বেশ অনেক দিন কেটে গেল। এর মধ্যে যিহোশুয়ের অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল, তিনি বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। একদিন তিনি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের, অর্থাৎ তাদের বৃদ্ধ নেতাদের, কর্তাদের, বিচারকর্তাদের ও কর্মচারীদের ডেকে বললেন, “দেখ, আমার বয়স অনেক হয়েছে, আমি বুড়ো হয়ে গেছি। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের জন্য এই সব জাতির প্রতি যা করেছেন তা তো তোমরা নিজেদের চোখেই দেখেছ। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজেই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করেছেন। যর্দন নদী থেকে পশ্চিমে ভূমধ্য সাগর পর্যন্ত যে সব জাতিদের আমি ধ্বংস করে দিয়েছি এবং যে সব জাতি এখনও বাকী রয়ে গেছে তাদের সকলের জায়গা আমি তোমাদের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্পত্তি হিসাবে ভাগ করে দিয়েছি। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজেই বাকী ঐ সব জাতিগুলোকে তোমাদের পথ থেকে সরিয়ে দেবেন। তোমাদের সামনে থেকে তিনি তাদের তাড়িয়ে বের করে দেবেন আর তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তাদের জায়গা দখল করে নেবে। “কাজেই তোমরা তোমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে মোশির আইন-কানুনের বইয়ে যা লেখা আছে তার সবই পালন কোরো; তা থেকে এদিক ওদিক সরে যেয়ো না। যে জাতিগুলো তোমাদের মধ্যে রয়ে গেছে তাদের সংগে মেলামেশা কোরো না; তাদের দেব-দেবতাদের নাম পর্যন্ত মুখে এনো না বা তাদের নামে শপথ কোরো না। সেগুলোর পূজা কোরো না কিম্বা তাদের সামনে মাথা নীচু কোরো না। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে আঁকড়ে ধরে রেখো, যেমন আজ পর্যন্ত তোমরা করে আসছ। “বড় বড় এবং শক্তিশালী জাতিগুলোকে তোমাদের সামনে থেকে সদাপ্রভুই তাড়িয়ে দিয়েছেন। আজ পর্যন্ত কেউ তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নি। তোমাদের একজন এক হাজার জনকে তাড়িয়ে দিতে পারছে, কারণ তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তিনি তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করছেন। সেইজন্য তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভালবাসবার ব্যাপারে তোমরা পুরোপুরি মনোযোগী হও। “কিন্তু এই জাতিগুলোর মধ্যে যে সব লোক প্রাণে বেঁচে গিয়ে তোমাদের মধ্যে রয়েছে তোমরা যদি সদাপ্রভুকে ছেড়ে তাদের সংগে যোগ দাও, কিম্বা তাদের সংগে বিয়ের সম্বন্ধ স্থাপন কর, কিম্বা তাদের সংগে মেলামেশা কর, তাহলে তোমরা এই কথা নিশ্চয় করে জেনো যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই সব জাতিদের তোমাদের সামনে থেকে আর তাড়িয়ে দেবেন না। তার বদলে তারা এমন জাল আর ফাঁদ হয়ে উঠবে যার মধ্যে তোমরা গিয়ে ধরা পড়বে এবং তারা হবে তোমাদের পিঠের চাবুক আর চোখের কাঁটা। এই যে চমৎকার দেশটা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের দিয়েছেন শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। “জগতের সবাই যে পথে যায় এখন আমিও সেই পথে যাচ্ছি। এই কথা তোমাদের বেশ ভাল করে জানা আছে যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের মংগল করবার যে সব প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার একটাও বিফল হয় নি। প্রত্যেকটি প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হয়েছে, একটাও অপূর্ণ থাকে নি। এর পর যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত গোষ্ঠীকে শিখিমে এক জায়গায় জড়ো করলেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের বৃদ্ধ নেতাদের, কর্তাদের, বিচারকর্তাদের এবং কর্মচারীদের ডাকলেন। তাতে তাঁরা ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হলেন। যিহোশূয় সমস্ত লোকদের বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলেছেন, ‘অনেক কাল আগে তোমাদের পূর্বপুরুষেরা ইউফ্রেটিস নদীর ওপারে বাস করত এবং দেব-দেবতার পূজা করত। তাদের মধ্যে একজন ছিল অব্রাহাম ও নাহোরের বাবা তেরহ। কিন্তু আমি তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামকে নদীর ওপার থেকে নিয়ে এসে কনান দেশের সব জায়গায় ঘুরালাম এবং তার বংশ অনেক বাড়িয়ে দিলাম। আমি তাকে ইস্‌হাককে দান করলাম, আর ইস্‌হাককে দান করলাম যাকোব আর এষৌকে। সেয়ীরের পাহাড়ী এলাকাটা আমি এষৌকে সম্পত্তি হিসাবে দিলাম, কিন্তু যাকোব ও তার ছেলেরা গেল মিসর দেশে। “ ‘তারপর আমি মোশি ও হারোণকে পাঠালাম। আমার কাজ দ্বারা আমি মিসরীয়দের আঘাত করলাম, আর তার পরে আমি তোমাদের বের করে আনলাম। তোমাদের পূর্বপুরুষেরা মিসর থেকে বের হয়ে সমুদ্রের কাছে আসল। এদিকে মিসরীয়েরা রথ ও ঘোড়সওয়ার নিয়ে লোহিত সাগর পর্যন্ত তাদের পিছনে পিছনে তাড়া করে আসল। কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা আমার কাছে কান্নাকাটি করলে পর আমি তাদের ও মিসরীয়দের মাঝখানে অন্ধকার করে দিলাম। আমি মিসরীয়দের উপর সাগরের জল ফিরিয়ে এনে তাদের তলিয়ে দিলাম। মিসরীয়দের অবস্থা আমি কি করেছিলাম তা তো তোমরা নিজেরাই দেখেছ। তারপর তোমরা অনেক দিন মরু-এলাকায় বাস করেছ। “ ‘এর পর আমি যর্দনের পূর্ব দিকের বাসিন্দা ইমোরীয়দের দেশে তোমাদের নিয়ে আসলাম। তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল কিন্তু আমি তোমাদের হাতে তাদের তুলে দিলাম। তোমাদের সামনে থেকে আমি তাদের ধ্বংস করে ফেললাম আর তোমরা তাদের দেশ দখল করে নিলে। পরে সিপ্পোরের ছেলে মোয়াবের রাজা বালাক ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য প্রস্তুত হল এবং তোমাদের অভিশাপ দেবার জন্য বিয়োরের ছেলে বিলিয়মকে ডেকে আনল। কিন্তু বিলিয়মের কথায় কান দিতে আমি রাজী হই নি, তাই সে বারবারই তোমাদের আশীর্বাদ করেছিল। বালাকের হাত থেকে আমিই তোমাদের উদ্ধার করলাম। “ ‘তারপর তোমরা যর্দন পার হয়ে যিরীহোতে আসলে। যিরীহো শহরের লোকেরা এবং ইমোরীয়, পরিষীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, গির্গাশীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়েরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল, কিন্তু আমি তাদের সবাইকে তোমাদের হাতে তুলে দিলাম। আমি তোমাদের আগে আগে ভিমরুল পাঠিয়ে দিলাম; ভিমরুলগুলো তোমাদের সামনে থেকে সেই দু’জন ইমোরীয় রাজাকে তাড়িয়ে দিল। তোমরা যে তোমাদের তলোয়ার বা তীর-ধনুক দিয়ে এটা করেছ তা নয়। যে জমিতে তোমরা কোন পরিশ্রম কর নি এবং যে শহর ও গ্রাম তোমরা গড়ে তোল নি আমি সেগুলো তোমাদের দিলাম। তোমরা সেই সব শহর ও গ্রামে এখন বাস করছ; তা ছাড়া যে আংগুর ক্ষেত তোমরা কর নি আর যে জলপাই গাছ তোমরা লাগাও নি সেগুলোর ফলও তোমরা খাচ্ছ।’ ” তারপর যিহোশূয় বললেন, “এখন তোমরা খাঁটি অন্তরে বিশ্বস্তভাবে সদাপ্রভুকে ভক্তি কর এবং তাঁর সেবা কর। তোমাদের পূর্বপুরুষেরা ইউফ্রেটিস নদীর ওপারে ও মিসর দেশে যে সব দেব-দেবতার পূজা করতেন সেগুলো তোমরা দূর করে দিয়ে সদাপ্রভুর সেবা কর। কিন্তু সদাপ্রভুর সেবা করতে যদি তোমাদের পছন্দ না হয় তবে যার সেবা তোমরা করবে তা আজই ঠিক করে নাও। তোমাদের পূর্বপুরুষেরা ইউফ্রেটিস নদীর ওপারে থাকতে যে সব দেব-দেবতার পূজা করতেন তাদের সেবা করবে, না কি যাদের দেশে তোমরা বাস করছ সেই ইমোরীয়দের দেব-দেবতাদের সেবা করবে? তবে আমি ও আমার পরিবারের সবাই সদাপ্রভুর সেবা করব।” উত্তরে লোকেরা বলল, “সদাপ্রভুকে ত্যাগ করে দেব-দেবতার পূজা করা যেন আমাদের দ্বারা কখনও না হয়। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু নিজেই আমাদের ও আমাদের পূর্বপুরুষদের মিসর দেশ থেকে, সেই দাসত্বের দেশ থেকে বের করে এনেছেন এবং আমাদের চোখের সামনেই সেই সব বড় বড় আশ্চর্য কাজ করেছেন। আমাদের সারা যাত্রা পথে এবং যে সব জাতির মধ্য দিয়ে আমরা এসেছি তাদের হাত থেকে তিনিই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। এই দেশের বাসিন্দা ইমোরীয়দের এবং অন্যান্য সব জাতিদের সদাপ্রভুই আমাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরাও সদাপ্রভুর সেবা করব, কারণ তিনিই আমাদের ঈশ্বর।” এই কথা শুনে যিহোশূয় লোকদের বললেন, “কিন্তু তোমরা তাঁর সেবা করতে পারবে না, কারণ তিনি পবিত্র ঈশ্বর, তাঁর পাওনা ভক্তি তিনি আর কাউকে পেতে দেবেন না। তোমাদের বিদ্রোহ ও তোমাদের পাপ তিনি ক্ষমা করবেন না। তোমরা যদি সদাপ্রভুকে ত্যাগ করে দেব-দেবতার সেবা কর তবে তিনি তোমাদের দিক থেকে ফিরবেন এবং যদিও তিনি আগে তোমাদের মংগল করেছেন কিন্তু তখন তোমাদের উপর অমংগল এনে তোমাদের শেষ করে দেবেন।” এতে লোকেরা যিহোশূয়কে বলল, “না, আমরা সদাপ্রভুরই সেবা করব।” তখন যিহোশূয় বললেন, “এই কথার দ্বারা তোমরা নিজেরাই নিজেদের সাক্ষী হয়ে রইলে যে, সদাপ্রভুকেই তোমরা সেবা করবার জন্য বেছে নিয়েছ।” উত্তরে তারা বলল, “হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী রইলাম।” যিহোশূয় বললেন, “তাহলে তোমাদের মধ্যে যে সব দেব-দেবতা আছে তা এখনই তোমরা দূর করে দাও এবং ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপরেই তোমাদের মন রাখ।” তখন সবাই যিহোশূয়কে বলল, “আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই সেবা করব এবং তাঁরই আদেশ পালন করব।” যিহোশূয় সেই দিন ইস্রায়েলীয়দের জন্য একটা ব্যবস্থা স্থির করলেন এবং শিখিমে আইন ও নিয়ম পালন করবার জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। সমস্ত কিছু তিনি ঈশ্বরের আইন-কানুনের একটা বইয়ে লিখে রাখলেন। তিনি একটা বড় পাথর নিয়ে সদাপ্রভুর পবিত্র জায়গার কাছে এলোন গাছের তলায় স্থাপন করলেন। পরে তিনি সমস্ত লোকদের বললেন, “এই পাথরটা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে থাকবে। সদাপ্রভু আমাদের কাছে যে সব কথা বলেছেন তা এই পাথরটা শুনেছে। যদি তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে অস্বীকার কর তবে এটা তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।” এর পর যিহোশূয় সবাইকে তাদের নিজের নিজের জায়গা-জমিতে পাঠিয়ে দিলেন। এই সব ঘটনার পর সদাপ্রভুর দাস নূনের ছেলে যিহোশূয় একশো দশ বছর বয়সে মারা গেলেন। লোকেরা গাশ পাহাড়ের উত্তরে তাঁর সম্পত্তির মধ্যে, অর্থাৎ ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার তিম্নৎ-সেরহে তাঁকে কবর দিল। যিহোশূয়ের জীবনকালে এবং তাঁর পরে যে সব বৃদ্ধ নেতারা ইস্রায়েলীয়দের জন্য সদাপ্রভু যা কিছু করেছিলেন তা দেখেছিলেন তাঁদের জীবনকালে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর সেবা করেছিল। যোষেফের হাড়গুলো, যা ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশ থেকে নিয়ে এসেছিল, সেগুলো তারা শিখিমে কবর দিয়ে রেখেছিল। যাকোব এই জায়গাটা শিখিমের বাবা হমোরের ছেলেদের কাছ থেকে একশো কসীতা দিয়ে কিনে নিয়েছিলেন। এই জায়গাটা যোষেফের বংশধরদের সম্পত্তির মধ্যে পড়েছিল। পরে হারোণের ছেলে ইলিয়াসর মারা গেলে তাঁকে গিবিয়াতে কবর দেওয়া হল। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার এই জায়গাটা তাঁর ছেলে পীনহসকে দেওয়া হয়েছিল। ॥ভব যিহোশূয়ের মৃত্যুর পর ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করল, “আমাদের হয়ে কনানীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য প্রথমে কারা যাবে?” উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “প্রথমে যাবে যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা; আমি তাদের হাতেই দেশটা তুলে দিয়েছি।” এই কথা শুনে যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের ভাই শিমিয়োন-গোষ্ঠীর লোকদের বলল, “যে জায়গাটা আমাদের ভাগে পড়েছে সেখানকার কনানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য তোমরা আমাদের সংগে চল, আর আমরাও তোমাদের জায়গা দখলের জন্য তোমাদের সংগে যাব।” এতে শিমিয়োন-গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের সংগে গেল। যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা আক্রমণ করলে পর সদাপ্রভু তাদের হাতে কনানীয় ও পরিষীয়দের তুলে দিলেন। তাদের দশ হাজার লোককে তারা বেষক শহরে মেরে ফেলল। সেখানে তারা অদোনী-বেষককে দেখতে পেয়ে তাঁর সংগে যুদ্ধ করল এবং কনানীয় ও পরিষীয়দের হারিয়ে দিল। অদোনী-বেষক যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তারা তাঁকে তাড়া করে ধরে তাঁর হাত ও পায়ের বুড়ো আংগুল কেটে ফেলল। এতে অদোনী-বেষক বললেন, “আমি সত্তরজন রাজার হাত ও পায়ের বুড়ো আংগুল কেটে ফেলেছিলাম। তারা আমার টেবিলের তলা থেকে এঁটোকাঁটা কুড়িয়ে খেত। আমি তাদের প্রতি যা করেছিলাম ঈশ্বরও আমার প্রতি তা-ই করলেন।” পরে তারা অদোনী-বেষককে যিরূশালেমে নিয়ে গেলে পর তিনি সেখানে মারা গেলেন। যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা যিরূশালেম আক্রমণ করে তা অধিকার করে নিল। তারা শহরের লোকদের মেরে ফেলে শহরটাতে আগুন লাগিয়ে দিল। এর পর তারা উঁচু পাহাড়ী এলাকা, নেগেভ ও নীচু পাহাড়ী এলাকার বাসিন্দা কনানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল। হিব্রোণের বাসিন্দা কনানীয়দের বিরুদ্ধে এগিয়ে গিয়ে তারা শেশয়, অহীমান ও তল্‌ময়কে হারিয়ে দিল। হিব্রোণের আগের নাম ছিল কিরিয়ৎ-অর্ব। সেখান থেকে তারা দবীর শহরের লোকদের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেল। দবীরের আগের নাম ছিল কিরিয়ৎ-সেফর। কালেব বললেন, “যে লোক কিরিয়ৎ-সেফর আক্রমণ করে অধিকার করতে পারবে তার সংগে আমি আমার মেয়ে অক্‌ষার বিয়ে দেব।” এই কথা শুনে কনষের বংশধর কালেবের ছোট ভাই অৎনীয়েল তা অধিকার করল। তাই কালেব তাঁর মেয়ে অক্‌ষাকে অৎনীয়েলের সংগে বিয়ে দিলেন। অৎনীয়েলের কাছে যাওয়ার পর অক্‌ষা তাকে উসকানি দিতে লাগল যেন সে তার বাবার কাছ থেকে একটা জমি চেয়ে নেয়। পরে অক্‌ষা গাধার পিঠ থেকে নামলে পর কালেব তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মা, তুমি কি চাও?” অক্‌ষা বলল, “বাবা, তুমি আমার একটা কথা রাখ। তুমি আমাকে যখন নেগেভে জায়গা দিয়েছ তখন ফোয়ারাগুলোও আমাকে দাও।” এই কথা শুনে কালেব তাকে সেখানকার উঁচু ও নীচু জায়গার ফোয়ারাগুলো দিলেন। মোশির শ্বশুরের বংশধরেরা, যারা জাতিতে কেনীয় ছিল, তারা খেজুর-শহর থেকে বের হয়ে অরাদ এলাকার দক্ষিণে যিহূদা-গোষ্ঠীর মরু-এলাকায় গেল এবং সেখানকার লোকদের সংগে বাস করতে লাগল। যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের ভাই শিমিয়োন-গোষ্ঠীর লোকদের সংগে গিয়ে সফাৎ শহরের বাসিন্দা কনানীয়দের আক্রমণ করল এবং তাদের শহরটা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিল। সেইজন্য শহরটার নাম দেওয়া হল হর্মা (যার মানে “ধ্বংস”)। যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা গাজা, অস্কিলোন ও ইক্রোণ শহর এবং সেগুলোর আশেপাশের জায়গা দখল করে নিল। সদাপ্রভু যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকদের সংগে ছিলেন। তারা পাহাড়ী এলাকা দখল করে নিয়েছিল বটে, কিন্তু সমভূমি থেকে লোকদের তাড়িয়ে দিতে পারে নি, কারণ তাদের লোহার রথ ছিল। মোশির প্রতিজ্ঞা অনুসারে কালেবকে হিব্রোণ শহরটা দেওয়া হল। অনাকের তিন ছেলেকে কালেব হিব্রোণ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকেরা যিরূশালেমে বাসকারী যিবূষীয়দের বেদখল করতে পারে নি। বিন্যামীন-গোষ্ঠীর সংগে যিবূষীয়েরা আজও সেখানে বাস করছে। যোষেফের বংশধরেরা বৈথেল শহর আক্রমণ করতে গেল। সদাপ্রভু তাদের সংগে ছিলেন। তারা শহরটা ভাল করে দেখেশুনে আসবার জন্য সেখানে কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দিল। বৈথেলের আগের নাম ছিল লূস। সেই লোকেরা শহর থেকে একজন লোককে বেরিয়ে আসতে দেখে তাকে বলল, “শহরে ঢুকবার পথটা তুমি আমাদের দেখিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কোন ক্ষতি করব না।” সে তাদের পথ দেখিয়ে দিলে পর তারা গিয়ে শহরের লোকদের মেরে ফেলল, কিন্তু সেই লোক ও তার বংশের লোকদের রেহাই দিল। এর পর সেই লোকটি হিত্তীয়দের দেশে গিয়ে একটা শহর তৈরী করল এবং তার নাম দিল লূস। আজও শহরটার ঐ নামই আছে। মনঃশি-গোষ্ঠীর লোকেরা বৈৎ-শান, তানক, দোর, যিব্লিয়ম ও মগিদ্দো শহরের এবং সেগুলোর চারপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের তাড়িয়ে দিতে পারে নি, কারণ এই সব জায়গার কনানীয়েরা স্থির করেছিল যে, তারা ঐ দেশ ছেড়ে যাবে না। ইস্রায়েলীয়েরা যখন শক্তিশালী হয়ে উঠল তখন তারা ঐ সব লোকদের তাদের দাস হতে বাধ্য করল কিন্তু তাদের একেবারে তাড়িয়ে দিল না। ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকেরাও গেষর থেকে কনানীয়দের বের করে দেয় নি। তারা সেখানে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল। সবূলূন-গোষ্ঠীর লোকেরাও কিট্‌রোণ ও নহলোল থেকে কনানীয়দের বের করে দেয় নি। তারা সেখানে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, তবে সবূলূন-গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের দাস হতে বাধ্য করল। আশের-গোষ্ঠীর লোকেরাও অক্কো, সীদোন, অহলব, অক্‌ষীব, হেল্‌বা, অফীক ও রহোবের লোকদের তাড়িয়ে দেয় নি। তারা সেই দেশের বাসিন্দা কনানীয়দের মধ্যে বাস করতে লাগল, কারণ তারা তাদের বের করে দেয় নি। নপ্তালি-গোষ্ঠীর লোকেরাও বৈৎ-শেমশ ও বৈৎ-অনাতের লোকদের তাড়িয়ে দেয় নি; তারা সেখানকার কনানীয় লোকদের মধ্যে বাস করতে লাগল এবং তাদের দাস হতে বাধ্য করল। ইমোরীয়েরা দান-গোষ্ঠীর লোকদের পাহাড়ী এলাকায় আটক রাখল; সমভূমিতে তাদের নামতে দিল না। ইমোরীয়েরা হেরস পাহাড়, অয়ালোন ও শাল্‌বীমে থাকবে বলেই স্থির করল; কিন্তু যোষেফের বংশের লোকদের শক্তি যখন বেড়ে গেল তখন তারা ইমোরীয়দের দাস হতে বাধ্য করল। অক্রব্বীম নামে উঠে যাওয়ার পথ থেকে সেলা ছাড়িয়ে ছিল ইমোরীয়দের এলাকা। সদাপ্রভুর দূত গিল্‌গল থেকে বোখীমে এসে ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “আমি মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছি আর যে দেশ দেবার শপথ আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে করেছিলাম সেই দেশে তোমাদের নিয়ে এসেছি। আমি বলেছিলাম, ‘তোমাদের জন্য আমার স্থাপন করা ব্যবস্থা আমি কখনও ভাঙ্গব না। তোমরা এই দেশের লোকদের সংগে কোন চুক্তি করবে না বরং তাদের বেদীগুলো ভেংগে ফেলবে।’ কিন্তু তোমরা আমার কথার অবাধ্য হয়েছ। তোমরা কেমন করে এই রকম কাজ করলে? সেইজন্য এখন আমি তোমাদের বলছি যে, আমি তোমাদের কাছ থেকে এই লোকদের তাড়িয়ে দেব না; তারা তোমাদের জন্য ফাঁদ হবে, কারণ তোমরা তাদের দেব-দেবতাদের ফাঁদে পড়বে।” সদাপ্রভুর দূত যখন ইস্রায়েলীয়দের কাছে এই সব কথা বললেন তখন তারা জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। তারা সেই জায়গাটার নাম দিল বোখীম (যার মানে “বিলাপকারী”)। সদাপ্রভুর উদ্দেশে সেখানে তারা পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের বিদায় দেওয়ার পর তারা যে যার ভাগের জায়গা দখল করবার জন্য চলে গেল। যিহোশূয় যত দিন বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর পরে বৃদ্ধ নেতারা যত দিন বেঁচে ছিলেন ততদিন ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর সেবা করেছিল। ইস্রায়েলীয়দের জন্য সদাপ্রভু যে সমস্ত মহৎ কাজ করেছিলেন সেই বৃদ্ধ নেতারা তা দেখেছিলেন। সদাপ্রভুর দাস নূনের ছেলে যিহোশূয় একশো দশ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। লোকেরা তাঁকে তাঁর নিজের সম্পত্তির মধ্যে তিম্নৎ-হেরস নামে একটা জায়গায় কবর দিয়েছিল। জায়গাটা ছিল ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর পাহাড়ী এলাকার গাশ পাহাড়ের উত্তর দিকে। যিহোশূয়ের সময়কার ইস্রায়েলীয়েরা মারা গিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবার পর তাদের জায়গায় আসল তাদের বংশধরেরা। এরা সদাপ্রভুকে জানত না এবং সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের জন্য যা করেছিলেন তা-ও জানত না। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তারা তা-ই করত। তারা বাল দেবতাদের পূজা করত। তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি তাদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন তাঁকে তারা বার বার ত্যাগ করত। তারা তাদের চারপাশের জাতিদের বিভিন্ন দেব-দেবতার দিকে ঝুঁকে পড়ত এবং সেগুলোর পূজা করত, আর তাতে তারা সদাপ্রভুর ক্রোধ জাগিয়ে তুলত। এইভাবে তারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করে বাল দেবতা ও অষ্টারোৎ দেবীর পূজা করত। সেইজন্য সদাপ্রভু ক্রোধে লুটকারীদের হাতে ইস্রায়েলীয়দের তুলে দিতেন। তারা তাদের জিনিসপত্র লুট করে নিত। তাদের চারপাশের শত্রুদের হাতে তিনি তাদের তুলে দিতেন, কাজেই তারা শত্রুদের বিরুদ্ধে আর দাঁড়াতে পারত না। ইস্রায়েলীয়েরা যখন যুদ্ধে যেত তখন সদাপ্রভু শপথ করে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই অনুসারে তাঁর হাত তাদের অমংগলের জন্য তাদের বিরুদ্ধে থাকত, তাই তারা মহা বিপদের মধ্যে ছিল। তখন সদাপ্রভু তাদের মধ্যে শাসনকর্তা দাঁড় করাতেন। তাঁরা লুটকারীদের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করতেন, কিন্তু তবুও ইস্রায়েলীয়েরা এই শাসনকর্তাদের কথায় কান দিত না। সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে তারা দেব-দেবতাদের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিত এবং তাদের পূজা করত। তাদের পূর্বপুরুষেরা সদাপ্রভুর আদেশ পালন করে যে বাধ্যতার পথে চলতেন তারা সেই পথে না চলে অল্পকালের মধ্যেই সেই পথ থেকে সরে যেত। সদাপ্রভু যখনই তাদের জন্য কোন শাসনকর্তা নিযুক্ত করতেন তখন তিনি তাঁর সংগে থাকতেন। সেই শাসনকর্তা যতদিন বেঁচে থাকতেন ততদিন পর্যন্ত সদাপ্রভু শত্রুদের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করতেন। অত্যাচারীদের হাতে যন্ত্রণা ও কষ্ট পেয়ে তারা যখন কান্নাকাটি করত তখন তাদের উপর সদাপ্রভুর দয়া হত। কিন্তু সেই শাসনকর্তা মারা গেলে লোকেরা আবার দেব-দেবতার দিকে ঝুঁকে পড়ত এবং তাদের সেবা ও পূজা করে তাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে আরও জঘন্য পথে ফিরে যেত। তারা কিছুতেই তাদের মন্দ অভ্যাস আর একগুঁয়েমির পথ ছাড়ত না। সেইজন্য সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের উপর ক্রোধে জ্বলে উঠে বললেন, “এই জাতির পূর্বপুরুষদের সময় আমি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম তা এরা পালন করে নি এবং আমার কথাও শোনে নি। সেইজন্য যিহোশূয় মারা যাবার সময়ে যে সব জাতি দেশে রয়ে গেছে তাদের আমি ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে তাড়িয়ে দেব না। ইস্রায়েলীয়েরা তাদের পূর্বপুরুষদের মত আমার পথে চলে কি না আমি এই সব জাতিদের দিয়েই তাদের পরীক্ষা করব।” সদাপ্রভু ঐ সব জাতিগুলোকে সংগে সংগে তাড়িয়ে বের করে না দিয়ে দেশে রেখে দিয়েছিলেন। তিনি যিহোশূয়ের হাতে তাদের তুলে দেন নি। যে সব ইস্রায়েলীয়দের কনান দেশের কোন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল না তাদের পরীক্ষায় ফেলে শিক্ষা দেবার জন্য সদাপ্রভু কতগুলো জাতিকে দেশের মধ্যেই রেখে দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলীয়দের বংশধরেরা যারা আগে কোন দিন যুদ্ধ করে নি তাদের যুদ্ধের ব্যাপারে শিক্ষিত করে তুলবার জন্য তিনি তা করেছিলেন। সেই সব জাতিগুলো হল, পলেষ্টীয়েরা ও তাদের পাঁচজন শাসনকর্তা, সমস্ত কনানীয়েরা এবং সীদোনীয় ও হিব্বীয়েরা। বাল্‌-হর্মোণ পাহাড় থেকে হমাৎ গ্রাম পর্যন্ত লেবাননের যে পাহাড়ী এলাকাটা আছে এই হিব্বীয়েরা সেখানে থাকত। সদাপ্রভু মোশির মধ্য দিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের যে আদেশ দিয়েছিলেন তা এই ইস্রায়েলীয়েরা মেনে চলে কি না তা পরীক্ষা করবার জন্য এই সব জাতিকে রেখে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে ইস্রায়েলীয়েরা কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় এবং যিবূষীয়দের মধ্যে বাস করতে লাগল। তারা তাদের মেয়েদের বিয়ে করত এবং নিজেদের মেয়েদের তাদের ছেলেদের সংগে বিয়ে দিত আর তাদের দেব-দেবতাদের পূজা করত। ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতে লাগল। তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে গিয়ে বাল দেবতাদের আর আশেরা দেবীদের পূজা করতে লাগল। সেইজন্য ইস্রায়েলের প্রতি সদাপ্র্রভুর ক্রোধ জ্বলে উঠল এবং তিনি অরাম-নহরয়িমের রাজা কূশন-রিশিয়াথয়িমের হাতে তাদের তুলে দিলেন। তারা আট বছর তাঁর অধীনে রইল। কিন্তু তারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করলে পর তিনি তাদের উদ্ধার করবার জন্য একজন উদ্ধারকর্তা দাঁড় করালেন। তিনি হলেন কনষের বংশধর কালেবের ছোট ভাই অৎনীয়েল। সদাপ্রভুর আত্মা তাঁর উপর আসলে পর তিনি ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা হলেন। তিনি যখন যুদ্ধ করতে গেলেন তখন সদাপ্রভু অরামের রাজা কূশন-রিশিয়াথয়িমকে তাঁর হাতে তুলে দিলেন, আর তিনি তাঁকে হারিয়ে দিলেন। কনষের বংশধর অৎনীয়েলের মৃত্যু পর্যন্ত দেশে চল্লিশ বছর শান্তি ছিল। পরে সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ ইস্রায়েলীয়েরা আবার তা-ই করতে আরম্ভ করল। কাজেই সদাপ্রভু মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী করে তুললেন। অম্মোনীয় ও অমালেকীয়দের সংগে নিয়ে ইগ্লোন ইস্রায়েলীয়দের আক্রমণ করলেন এবং খেজুর-শহরটা অধিকার করে নিলেন। ইস্রায়েলীয়েরা আঠারো বছর মোয়াবের রাজা ইগ্লোনের অধীনে রইল। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল, আর তিনি তাদের জন্য এহূদ নামে একজন উদ্ধারকর্তা দাঁড় করালেন। তিনি ছিলেন বিন্যামীন-গোষ্ঠীর গেরার ছেলে। তিনি বাঁ হাতে কাজ করতেন। মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে কর্‌ দেবার জন্য ইস্রায়েলীয়েরা তাঁকে পাঠিয়ে দিল। তিনি এক হাত লম্বা দু’দিকে ধার দেওয়া একটা ছোরা বানিয়ে তাঁর কাপড়ের নীচে ডান ঊরুর সংগে বেঁধে নিলেন। তিনি গিয়ে মোয়াবের রাজা ইগ্লোনকে সেই কর্‌ দিলেন। রাজা ইগ্লোন ছিলেন খুব মোটা। কর্‌ দেবার পর যারা কর্‌ বয়ে এনেছিল এহূদ তাদের বিদায় করে দিলেন, কিন্তু তিনি নিজে গিল্‌গলের কাছের খোদাই করা পাথরগুলো পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এসে বললেন, “মহারাজ, আপনাকে আমার একটা গোপন খবর দেবার আছে।” রাজা তাঁর লোকদের বললেন, “তোমরা চুপ কর”; এতে তাঁর লোকেরা তাঁর কাছ থেকে চলে গেল। তখন রাজা তাঁর ছাদের ঠাণ্ডা-ঘরে একা বসে ছিলেন, আর এহূদ তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “আপনাকে আমার একটা খবর দেবার আছে; খবরটা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে।” এই কথা শুনে রাজা উঠে দাঁড়ালেন, আর এহূদ বাঁ হাত দিয়ে তাঁর ডান দিকের ঊরু থেকে ছোরাটা টেনে বের করে নিয়ে রাজার পেটে সেটা ঢুকিয়ে দিলেন। বাঁট সুদ্ধ ছোরাটা পেটে ঢুকে গিয়ে চর্বিতে ঢাকা পড়ে গেল, কারণ এহূদ ছোরাটা টেনে বের করে নেন নি। ছোরাটা পিছন দিকে খানিকটা বের হয়ে ছিল। তারপর এহূদ বারান্দায় বের হয়ে এসে ঘরের দরজা টেনে দিয়ে তালা বন্ধ করে দিলেন। এহূদ চলে যাবার পর চাকরেরা এসে দেখল উপরের ঘরের দরজা তালা দেওয়া। তারা বলল, “নিশ্চয় তিনি ভিতরের ঘরে পায়খানায় গেছেন।” তারা অনেকক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করল, কিন্তু তবুও তিনি দরজা খুলছেন না দেখে তারা লজ্জা ভেংগে চাবি এনে দরজা খুলে ফেলল। তারা দেখল তাদের মনিব মরা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। চাকরেরা অপেক্ষা করবার সময় এহূদ পালিয়ে গিয়ে খোদাই করা পাথরগুলো পিছনে ফেলে সিয়ীরাতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় তিনি শিংগা বাজালে পর ইস্রায়েলীয়েরা তাঁর সংগে পাহাড় থেকে নীচে নেমে এসে তাঁর পিছনে পিছনে চলল, কারণ তিনি তাদের হুকুম দিয়েছিলেন, “আমার পিছনে পিছনে এস; সদাপ্রভু তোমাদের শত্রু মোয়াবীয়দের তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।” কাজেই তারা তাঁর পিছনে পিছনে নেমে গিয়ে মোয়াবের কাছে যর্দন নদীর যে জায়গাগুলো হেঁটে পার হওয়া যায় সেগুলো দখল করে নিল। তারা কাউকে সেই সব জায়গা দিয়ে পার হতে দিল না। সেই সময় তারা দশ হাজার মোয়াবীয়কে মেরে ফেলল। এই মোয়াবীয়েরা সবাই স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী ছিল, কিন্তু তাদের একজন লোকও পালিয়ে যেতে পারে নি। সেই দিনই মোয়াব দেশটা ইস্রায়েলীয়দের অধীনে আনা হল, আর আশি বছর দেশে শান্তি বজায় রইল। এহূদের পরে অনাতের ছেলে শম্‌গর শাসনকর্তা হলেন। তিনি গরু চরানো লাঠি দিয়ে পলেষ্টীয়দের ছ’শো লোককে মেরে ফেলেছিলেন। তিনিও ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করেছিলেন। এহূদ মারা যাবার পরে ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতে লাগল। কাজেই সদাপ্র্রভু যাবীন নামে একজন কনানীয় রাজার হাতে তাদের তুলে দিলেন। যাবীন হাৎসোরে থেকে রাজত্ব করতেন। তাঁর সেনাপতির নাম ছিল সীষরা। তিনি হরোশৎ-হগোয়িম নামে একটা জায়গায় বাস করতেন। যাবীনের ন’শো লোহার রথ ছিল এবং তিনি বিশ বছর ধরে ইস্রায়েলীয়দের উপর ভীষণভাবে অত্যাচার করে আসছিলেন। সেইজন্য ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি করতে লাগল। সেই সময় লপ্পীদোতের স্ত্রী দবোরা একজন মহিলা-নবী ছিলেন। তিনিই তখন ইস্রায়েলীয়দের শাসন করতেন। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার রামা ও বৈথেলের মাঝামাঝি একটা জায়গায় দবোরা তাঁর খেজুর গাছের তলায় বসতেন, আর ইস্রায়েলীয়েরা নিজেদের ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসার জন্য তাঁর কাছে আসত। তিনি নপ্তালি দেশের কেদশ শহর থেকে অবীনোয়মের ছেলে বারককে ডেকে পাঠালেন এবং তাঁকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনাকে এই আদেশ দিচ্ছেন, ‘তুমি নপ্তালি আর সবূলূন-গোষ্ঠী থেকে দশ হাজার লোক সংগে নাও এবং তাবোর পাহাড়ের দিকে তাদের নিয়ে যাও। আমি যাবীনের সেনাপতি সীষরাকে তার সৈন্যদল ও রথ সুদ্ধ কীশোন নদীর কাছে নিয়ে যাব এবং তোমার হাতে তাদের তুলে দেব।’ ” বারক দবোরাকে বললেন, “আপনি যদি আমার সংগে যান তবেই আমি যাব, তা না হলে আমি যাব না।” দবোরা বললেন, “ঠিক আছে, আমি আপনার সংগে যাব, কিন্তু এই যুদ্ধে জয়ের গৌরব আপনি পাবেন না, কারণ সদাপ্রভু একজন স্ত্রীলোকের হাতে সীষরাকে তুলে দেবেন।” এই কথা বলে দবোরা বারকের সংগে কেদশে গেলেন। বারক সেখানে সবূলূন ও নপ্তালি-গোষ্ঠীর লোকদের ডাকলেন। তাতে দশ হাজার লোক তাঁর সংগে গেল আর দবোরাও তাঁর সংগে গেলেন। এর আগেই হেবর নামে একজন কেনীয় অন্যান্য কেনীয়দের, অর্থাৎ মোশির শ্বশুর হোববের বংশধরদের ছেড়ে কেদশের কাছে সানন্নীমের এলোন গাছের পাশে তাঁর তাম্বু ফেলেছিলেন। তখন দবোরা বারককে বললেন, “আপনি এগিয়ে যান, সদাপ্রভু আজকেই সীষরাকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন। সদাপ্রভু তো আপনার আগে আগে গেছেন।” তখন বারক তাবোর পাহাড় থেকে নীচে নেমে গেলেন আর তাঁর পিছনে পিছনে দশ হাজার লোক গেল। বারক যখন আক্রমণ করলেন তখন তাঁর সামনে সদাপ্রভু সীষরা ও তাঁর সমস্ত রথ ও সৈন্য-সামন্তকে বিশৃঙ্খল করে দিলেন। তখন সীষরা তাঁর রথ ফেলে পালিয়ে গেলেন। বারক কিন্তু হরোশৎ-হগোয়িম পর্যন্ত তাদের রথ এবং সৈন্যদলের পিছনে তাড়া করে গেলেন। সীষরার সমস্ত সৈন্যদের মেরে ফেলা হল, একজনও বাকী রইল না। সীষরা দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে কেনীয় হেবরের স্ত্রী যায়েলের তাম্বুতে গিয়ে উঠলেন, কারণ হাৎসোরের রাজা যাবীন এবং কেনীয় হেবরের বংশের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। সীষরাকে ডেকে আনবার জন্য যায়েল তাম্বু থেকে বের হয়ে তাঁকে বলল, “হে আমার প্রভু, আসুন, ভিতরে আসুন; আপনি ভয় পাবেন না।” কাজেই সীষরা তার তাম্বুতে ঢুকলেন আর যায়েল তাঁকে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখল। সীষরা বললেন, “আমার পিপাসা পেয়েছে, আমাকে একটু জল দাও।” যায়েল দুধ রাখবার চামড়ার থলি খুলে তাঁকে দুধ খেতে দিল ও তারপর আবার তাঁকে ঢেকে রাখল। তারপর সীষরা তাকে বললেন, “তুমি তাম্বুর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাক। যদি কেউ এসে জিজ্ঞাসা করে ভিতরে কেউ আছে কি না তবে তাকে বলবে, ‘নেই।’ ” পরে সীষরা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে সেখানে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমন সময় যায়েল তাম্বুর একটা গোঁজ আর হাতুড়ী নিল। তারপর চুপিচুপি তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর কপালের একপাশ দিয়ে গোঁজটা এমনভাবে ঢুকিয়ে দিল যে, সেটা মাটিতে গেঁথে গেল। তাতে সীষরা মারা গেলেন। বারক সীষরাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে গিয়ে হাজির হলেন। তখন যায়েল তাঁকে ডেকে আনবার জন্য বাইরে বেরিয়ে এসে বলল, “আসুন, আপনি যাকে খুঁজছেন আমি তাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।” বারক তার সংগে ভিতরে গিয়ে দেখলেন সীষরা মরে পড়ে আছেন আর তাঁর কপালে তাম্বুর গোঁজটা ঢুকে আছে। ঐ দিনই ঈশ্বর কনানীয় রাজা যাবীনকে ইস্রায়েলীয়দের অধীনে আনলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইস্রায়েলীয়েরা দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে লাগল আর শেষ পর্যন্ত তাঁকে ধ্বংস করে ফেলল। সেই দিন দবোরা আর অবীনোয়মের ছেলে বারক এই গান করলেন: ইস্রায়েলের নেতারা যুদ্ধে লোকদের পরিচালনা করলেন, আর লোকেরাও নিজের ইচ্ছায় এগিয়ে গেল। সদাপ্রভুর গৌরব হোক! ওহে রাজারা, আপনারা শুনুন; ওহে শাসনকর্তারা, আপনারা শুনুন; আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান গাইব, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রশংসা-গান গাইব। হে সদাপ্রভু, তুমি যখন সেয়ীর থেকে রওনা হলে, ইদোম দেশ থেকে বেরিয়ে গেলে, তখন পৃথিবী কেঁপে উঠল আর আকাশ থেকে মেঘ জলধারা ঢেলে দিল। তখন সদাপ্রভুর সামনে পাহাড়-পর্বত কেঁপে উঠল, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে সিনাই পাহাড় কেঁপে উঠল। অনাতের ছেলে শম্‌গর আর যায়েলের সময়ে সদর রাস্তা ছেড়ে পথিকেরা ঘুর পথে চলত। তখন ইস্রায়েলীয়দের গ্রামে কেউ বাস করত না; যতদিন না আমি দবোরা ইস্রায়েলীয়দের মায়ের মত হলাম, ততদিন তাদের গ্রামগুলো জনশূন্য ছিল। তারা যখন নতুন দেব-দেবতার দিকে মন দিল তখন তাদের শহর-ফটকের কাছে যুদ্ধ হল। চল্লিশ হাজার ইস্রায়েলীয়ের হাতে একটা ঢালও ছিল না, একটা বর্শাও ছিল না। আমার মন চলে গেল ইস্রায়েলের সেই সব নেতাদের কাছে যারা নিজের ইচ্ছায় যুদ্ধ করতে গেল; সদাপ্রভুর গৌরব হোক! তোমরা যারা সাদা গাধীর উপর চড়ে আর কম্বলের গদির উপর বসে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছ, তোমরা এই সব বিষয় নিয়ে গান কর। শোন, জল তুলবার জায়গায় লোকেরা বলাবলি করছে; তারা ইস্রায়েলের গ্রামের লোকদের জন্য সদাপ্রভুর উদ্ধার-কাজের কথা বলছে। এসব শুনে সদাপ্রভুর লোকেরা শহরের ফটকগুলোর কাছে গেল। জাগো দবোরা, জাগো! জাগো, জাগো, গান গাও। ওহে অবীনোয়মের ছেলে বারক, ওঠো; যুদ্ধে যারা ধরা পড়েছে তাদের নিয়ে যাও। তারপর বেঁচে থাকা লোকেরা গণ্যমান্য লোকদের কাছে আসল; সদাপ্রভুর লোকেরা যুদ্ধ করবার জন্য আসল আমার কাছে। কিছু লোক আসল ইফ্রয়িম থেকে যেখানে অমালেকীয়েরা বাস করত; তারা আসল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকদের পিছনে। মাখীর থেকে নেতারা আসলেন, আর সবূলূন থেকে শাসনকর্তারা আসলেন দণ্ড হাতে নিয়ে। ইষাখরের সেনাপতিরা দবোরার সংগে গেলেন; ইষাখরের লোকেরা দৌড়ে উপত্যকায় নেমে গেল বারকের পিছে পিছে। রূবেণের সৈন্যদল শক্তভাবে মন স্থির করল। হে রূবেণের লোকেরা, কেন তোমরা ভেড়ার খোঁয়াড় দু’টার মাঝখানে বসে ছিলে? তোমরা কি রাখালদের বাঁশী শুনতে চেয়েছিলে? রূবেণের সৈন্যদলের মধ্যে ভীষণ মতের অমিল হল। গিলিয়দের লোকেরা রয়ে গেল যর্দনের ওপারে। দান-গোষ্ঠী কেন রয়ে গেল জাহাজের কাছে? আশের-গোষ্ঠীর লোকেরা সাগরের পারে রয়ে গেল; তারা বন্দরের কাছেই রয়ে গেল। যুদ্ধে সবূলূনের লোকেরা জীবনের ঝুঁকি নিল; যুুদ্ধের মাঠের উঁচু জায়গাগুলোতে নপ্তালির লোকেরাও জীবনের ঝুঁকি নিল। রাজারা, কনানের রাজারা এসে যুদ্ধ করল; মগিদ্দোর জলের কাছে তানকে তারা যুদ্ধ করল, কিন্তু কোন রূপা তারা লুটে নিতে পারল না। আকাশ থেকে তারাগুলোই যুদ্ধ করল, নিজের নিজের বাঁধা পথে থেকে যুদ্ধ করল সীষরার বিরুদ্ধে। সেই পুরাকালের নদীর জল, সেই কীশোন নদীর জল শত্রুদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল। হে আমার অন্তর, শক্ত হয়ে এগিয়ে চল। তারপর মাটি কেঁপে উঠল ঘোড়ার খুরের ঘায়ে আর শক্তিশালী ঘোড়াগুলো চলল খট্‌-খটা-খট্‌ করে। সদাপ্রভুর দূত বললেন, “মেরোসকে অভিশাপ দাও, ভীষণভাবে অভিশাপ দাও সেখানকার লোকদের; তারা কেউ যুদ্ধে সদাপ্রভুর সংগে যোগ দেয় নি, যোগ দেয় নি শক্তিশালীদের বিরুদ্ধে। কেনীয় হেবরের স্ত্রী যায়েল ধন্যা, ধন্যা সে স্ত্রীলোকদের মধ্যে; সে তাম্বুবাসী স্ত্রীলোকদের মধ্যে ধন্যা। সীষরা জল চাইলে সে তাকে এনে দিল দুধ; সুন্দর বাটিতে করে এনে দিল ঘন করা দুধ। পরে সে হাতে নিল তাম্বু বাঁধার গোঁজ, আর ডান হাতে ধরল কর্মকারের হাতুড়ী; সে সীষরাকে আঘাত করে তার মাথা ফাটিয়ে দিল আর কপালে বিঁধিয়ে দিল সেই গোঁজখানা। তার পায়ের কাছে সীষরা পড়ে গেল আর যেখানে পড়ল সেখানেই সে পড়ে রইল; তার পায়ের কাছে যেখানে সে পড়েছিল সেখানেই সে মরে গেল। সীষরার মা জানলা দিয়ে চেয়ে দেখল, জালির পিছন থেকে সে চেঁচিয়ে বলল, “তার রথ আসতে কেন এত দেরি হচ্ছে? তার রথের চাকার শব্দ কেন এখনও শোনা যাচ্ছে না?” তার বুদ্ধিমতী সংগিনীরা এর উত্তর দিল; সেও মনে মনে বলতে লাগল, “নিশ্চয়ই তারা লুটের জিনিস পেয়েছে আর ভাগ করে নিচ্ছে নিজেদের মধ্যে; প্রত্যেক পুরুষের জন্য একটা বা দু’টা করে মেয়ে আর সীষরার জন্য রংগীন পোশাক, ॥য়৫ ফুল তোলা রংগীন পোশাক, গলার চারপাশে সুন্দর করে ফুল তোলা পোশাক- এ সবই কি তারা লুট হিসাবে পায় নি?” হে সদাপ্রভু, তোমার শত্রুরা সকলেই এভাবে ধ্বংস হয়ে যাক; কিন্তু যারা তোমাকে ভালবাসে তারা যেন সূর্যের মত শক্তিমান হয়ে ওঠে। এর পর দেশে চল্লিশ বছর শান্তি ছিল। পরে ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতে লাগল। এতে তিনি মিদিয়নীয়দের হাতে তাদের তুলে দিলেন আর তারা সাত বছর পর্যন্ত তাদের অধীনে রইল। ইস্রায়েলীয়দের উপর মিদিয়নীয়দের অত্যাচার এত বেড়ে গেল যে, ইস্রায়েলীয়েরা পাহাড়ের ফাটলে, গুহায় এবং পাহাড়ের উপরকার দুর্গগুলোতে আশ্রয়ের জায়গা করে নিল। ইস্রায়েলীয়েরা যখন তাদের ফসল বুনত তখন মিদিয়নীয়, অমালেকীয় এবং পূর্ব দেশের লোকেরা এসে তাদের দেশ আক্রমণ করত। তারা ইস্রায়েলীয়দের দেশ আক্রমণ করে গাজা পর্যন্ত সমস্ত জায়গার ফসল নষ্ট করে দিত। ইস্রায়েলীয়েরা খেয়ে বাঁচতে পারে এমন কোন কিছুই মিদিয়নীয়দের হাত থেকে রেহাই পেত না, এমন কি, ভেড়া, গরু আর গাধাও না। তারা তাদের পশুর পাল ও তাম্বু নিয়ে পংগপালের ঝাঁকের মত আসত; তাদের লোক ও উটের সংখ্যা গোণা যেত না। তারা দেশটা ধ্বংস করে দেবার উদ্দেশ্যেই আসত। মিদিয়নীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের অবস্থা এমন খারাপ করে তুলল যে, তারা সাহায্যের জন্য ঈশ্বরের কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল। মিসরের ক্ষমতা থেকে আর সমস্ত অত্যাচারীদের হাত থেকে আমিই তোমাদের রক্ষা করেছি। তোমাদের সামনে থেকে আমিই তাদের তাড়িয়ে দিয়ে তাদের দেশ তোমাদের দিয়েছি। আমি তোমাদের বলেছিলাম যে, আমি সদাপ্রভুই তোমাদের ঈশ্বর। যাদের দেশে তোমরা বাস করছ সেই ইমোরীয়দের দেব-দেবতাদের পূজা তোমরা করবে না;’ কিন্তু তোমরা আমার কথা শোন নি।” একদিন সদাপ্রভুর দূত এসে অফ্রা গ্রামের এলোন গাছের তলায় বসলেন। এই জায়গাটা ছিল অবিয়েষ্রীয় বংশের যোয়াশের অধিকারে। সেখানে তার ছেলে গিদিয়োন মিদিয়নীয়দের কাছ থেকে গম লুকাবার জন্য আংগুর মাড়াবার জায়গায় তা ঝাড়ছিলেন। সেই সময় সদাপ্রভুর দূত গিদিয়োনকে দেখা দিয়ে বললেন, “হে শক্তিশালী যোদ্ধা, সদাপ্রভু তোমার সংগে আছেন।” উত্তরে গিদিয়োন বললেন, “কিন্তু হে আমার প্রভু, যদি সদাপ্রভু আমাদের সংগে থাকেন তবে এই সব আমাদের উপর ঘটল কেন? কোথায় গেল তাঁর সেই সব আশ্চর্য কাজ যার কথা বলতে গিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের বলতেন যে, সদাপ্রভুই মিসর দেশ থেকে তাঁদের বের করে এনেছেন? কিন্তু তিনি তো এখন আমাদের ত্যাগ করেছেন এবং মিদিয়নীয়দের হাতে তুলে দিয়েছেন।” সদাপ্রভু তাঁর দিকে ফিরে বললেন, “তোমার এই শক্তিতেই তুমি যাও এবং মিদিয়নীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার কর, কারণ আমিই তোমাকে পাঠাচ্ছি।” গিদিয়োন বললেন, “কিন্তু হে আমার প্রভু, আমি কেমন করে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করব? মনঃশি-গোষ্ঠীর মধ্যে আমাদের বংশটাই সবচেয়ে নীচু, আর আমাদের পরিবারের মধ্যে আমার কোন দাম নেই।” উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “আমি তোমার সংগে থাকব, আর তাতে তুমি সমস্ত মিদিয়নীয়দের একটা লোকের মত করে হারিয়ে দেবে।” গিদিয়োন বললেন, “যদি আমি আপনার দয়া পেয়ে থাকি, তবে আমি যাতে বুঝতে পারি যে, সত্যিই আপনি আমার সংগে কথা বলছেন তার একটা চিহ্ন আপনি আমাকে দেখান। আমি ফিরে এসে আপনার সামনে আমার দান না রাখা পর্যন্ত আপনি চলে যাবেন না।” তিনি বললেন, “তুমি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করব।” গিদিয়োন ভিতরে গিয়ে একটা ছাগলের বাচ্চা কেটে রান্না করলেন এবং আঠারো কেজি পরিমাণ ময়দা দিয়ে কিছু খামিহীন রুটি তৈরী করলেন। তিনি মাংস একটা ডালাতে রেখে ঝোল একটা পাত্রে রাখলেন। তারপর সেগুলো বাইরে এনে এলোন গাছের তলায় সদাপ্রভুর দূতের সামনে রাখলেন। তখন ঈশ্বরের দূত তাঁকে বললেন, “মাংস আর খামিহীন রুটি নিয়ে তুমি এই পাথরটার উপরে রাখ, আর ঝোল ঢেলে দাও।” গিদিয়োন তা-ই করলেন। তখন সদাপ্রভুর দূতের হাতে যে লাঠিটা ছিল সেটার আগা দিয়ে তিনি ঐ মাংস আর খামিহীন রুটি ছুঁলেন। তাতে পাথরটা থেকে আগুন উঠে সেই মাংস ও রুটি পুড়িয়ে দিল, আর সদাপ্রভুর দূত অদৃশ্য হয়ে গেলেন। গিদিয়োন যখন বুঝতে পারলেন যে, উনি ছিলেন সদাপ্রভুর দূত তখন তিনি বললেন, “হায় হায়, হে প্রভু সদাপ্রভু, আমি যে সদাপ্রভুর দূতকে মুখোমুখি দেখলাম!” কিন্তু সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তোমার শান্তি হোক, তুমি ভয় কোরো না। তুমি মারা যাবে না।” তখন গিদিয়োন সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করে তার নাম দিলেন যিহোবা-শালোম (যার মানে “সদাপ্রভুই শান্তি”)। বেদীটা এখনও অবীয়েষ্রীয়দের অফ্রাতে আছে। সেই রাতেই সদাপ্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “তোমার বাবার গরুর পাল থেকে তুমি দ্বিতীয় ষাঁড়টা নাও যেটার বয়স সাত বছর। তারপর বাল দেবতার উদ্দেশে যে বেদীটা তোমার বাবা দুর্গের মত জায়গাটার উপরে তৈরী করেছেন সেটা ভেংগে ফেল এবং তার পাশে যে আশেরা-খুঁটি আছে তা কেটে ফেল। তারপর সেই জায়গার উপরে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে ভাল করে একটা বেদী তৈরী কর। তারপর সেই দ্বিতীয় ষাঁড়টা দিয়ে তোমার কেটে ফেলা ঐ আশেরা-খুঁটির কাঠ জ্বালিয়ে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর।” সেইজন্য গিদিয়োন তাঁর চাকরদের মধ্য থেকে দশজনকে সংগে নিয়ে সদাপ্রভুর কথামত কাজ করলেন। কিন্তু নিজের পরিবার ও গ্রামের লোকদের ভয়ে তিনি কাজটা দিনে না করে রাতের বেলায় করলেন। সকালবেলা গ্রামের লোকেরা ঘুম থেকে উঠে দেখল বাল দেবতার বেদীটা ভেংগে ফেলা হয়েছে আর তার পাশের আশেরা-খুঁটিটাও কেটে ফেলা হয়েছে এবং একটা নতুন করে তৈরী করা বেদীর উপরে দ্বিতীয় ষাঁড়টা উৎসর্গ করা হয়েছে। তখন তারা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করল, “এই কাজ কে করেছে?” তারা ভাল করে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারল যে, যোয়াশের ছেলে গিদিয়োন এই সব করেছে। তখন তারা যোয়াশের কাছে গিয়ে বলল, “তোমার ছেলেকে বের করে নিয়ে এস। তাকে মরতে হবে, কারণ সে বাল দেবতার বেদী ভেংগে ফেলেছে এবং তার পাশের আশেরা-খুঁটিটা কেটে ফেলেছে।” কিন্তু যে সব লোক তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল যোয়াশ তাদের বললেন, “তোমরা কি বাল দেবতার পক্ষে ওকালতি করতে এসেছ? তাকে রক্ষা করবার চেষ্টা করছ? যে তার পক্ষ নেবে তাকে কাল সকাল হবার আগেই মেরে ফেলা হবে। বাল যদি সত্যিই কোন দেবতা হয়ে থাকে তবে সে নিজের পক্ষে ওকালতি করুক, কারণ তারই বেদী ভেংগে ফেলা হয়েছে।” সেই দিন তিনি গিদিয়োনের নাম দিলেন যিরুব্বাল (যার মানে “বাল দেবতা ওকালতি করুক”)। গিদিয়োন বাল দেবতার বেদী ভেংগে ফেলেছেন বলে যোয়াশ বললেন, “গিদিয়োনের বিরুদ্ধে বাল দেবতাই তার নিজের পক্ষে ওকালতি করুক।” পরে মিদিয়নীয়, অমালেকীয় এবং পূর্ব দেশের সৈন্য-সামন্ত সব এক হয়ে যর্দন নদী পেরিয়ে যিষ্রিয়েল-উপত্যকায় গিয়ে ছাউনি ফেলল। তখন সদাপ্রভুর আত্মা গিদিয়োনকে শক্তিশালী করলেন। গিদিয়োন শিংগা বাজালেন আর অবীয়েষ্রীয়েরা তাঁর পিছনে জড়ো হল। তিনি মনঃশি-গোষ্ঠীর এলাকার লোকদের কাছে খবর পাঠালেন আর তারাও তাঁর পিছনে জড়ো হল। আশের, সবূলূন ও নপ্তালি-গোষ্ঠীর কাছেও তিনি খবর পাঠালেন আর তাতে তারা তাদের সংগে যোগ দেবার জন্য এগিয়ে আসল। আর তা-ই ঘটল; পরের দিন গিদিয়োন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই ভেড়ার লোম নিংড়ে শিশির বের করে ফেললেন। তাতে এক বাটি জল হল। তারপর গিদিয়োন ঈশ্বরকে বললেন, “আমার উপর আপনি রাগ করবেন না। আমি কেবল আর একবার অনুরোধ করব। ভেড়ার লোম দিয়ে আমাকে আর একটা পরীক্ষা করতে দিন। এবার ভেড়ার লোম শুকনা থাকুক আর মাটির উপর শিশির পড়ুক।” সেই রাতে ঈশ্বর তা-ই করলেন। কেবল ভেড়ার লোমই শুকনা রইল কিন্তু বাকী সব জায়গায় শিশির পড়ল। যিরুব্বাল, অর্থাৎ গিদিয়োন এবং তাঁর সমস্ত লোকেরা খুব ভোরে উঠে হারোদ এলাকার ফোয়ারার কাছে ছাউনি ফেলল। তাদের উত্তরে মোরি পাহাড়ের কাছে উপত্যকার মধ্যে মিদিয়নীয়দের ছাউনি ছিল। সদাপ্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “তোমার লোকদের সংখ্যা এত বেশী যে, আমি তাদের হাতে মিদিয়নীয়দের তুলে দিতে পারি না। তা করলে আমাকে বাদ দিয়ে ইস্রায়েলীয়েরা বড়াই করে বলবে যে, তাদের নিজেদের শক্তিতেই তারা উদ্ধার পেয়েছে। সেইজন্য তুমি লোকদের কাছে ঘোষণা কর, যারা ভয়ে কাঁপছে তারা গিলিয়দ পাহাড় ছেড়ে বাড়ী ফিরে যেতে পারে।” তাতে বাইশ হাজার লোক চলে গেল আর দশ হাজার লোক বাকী থাকল। তখন সদাপ্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “এখনও অনেক লোক রয়ে গেছে। তাদের নিয়ে তুমি জলের কাছে যাও। সেখানেই আমি তোমার হয়ে তাদের বাছাই করব। আমি যদি বলি, ‘এই লোক তোমার সংগে যাবে,’ তবে সে যাবে; কিন্তু যদি বলি, ‘এই লোক তোমার সংগে যাবে না,’ তবে সে যাবে না।” কাজেই গিদিয়োন লোকদের নিয়ে জলের কাছে গেলেন। সেখানে সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “যারা কুকুরের মত জিভ দিয়ে জল চেটে খাবে তাদের থেকে যারা জল খাবার জন্য হাঁটু পাতবে তাদের আলাদা কর।” তিনশো লোক হাতে জল নিয়ে চেটে খেল আর বাকী সবাই জল খাবার জন্য হাঁটু পাতল। তখন সদাপ্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “যে তিনশো লোক জল চেটে খেয়েছে তাদের দিয়েই আমি তোমাদের উদ্ধার করব এবং মিদিয়নীয়দের তোমার হাতে তুলে দেব। অন্য সব লোকেরা যে যার বাড়ীতে চলে যাক।” কাজেই গিদিয়োন তিনশো লোক রেখে বাকী ইস্রায়েলীয়দের তাদের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলেন। সমস্ত খাবার জিনিস ও শিংগা ঐ তিনশো লোকের কাছে রইল। মিদিয়নীয়দের ছাউনি ছিল গিদিয়োনের ছাউনির নীচের উপত্যকার মধ্যে। সেই রাতে সদাপ্রভু গিদিয়োনকে বললেন, “ওঠো, তুমি নেমে গিয়ে ওদের ছাউনিটা আক্রমণ কর। আমি ওটা তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। তুমি যদি আক্রমণ করতে ভয় পাও তা হলে তোমার চাকর ফুরাকে সংগে নিয়ে নেমে ওদের ছাউনির কাছে যাও, আর শোন ওরা কি বলে। তাতে তুমি ছাউনিটা আক্রমণ করতে সাহস পাবে।” কাজেই গিদিয়োন তাঁর চাকর ফুরাকে সংগে নিয়ে ছাউনির কিনারার সৈন্যদের কাছে নেমে গেলেন। মিদিয়নীয়, অমালেকীয় এবং পূর্ব দেশের লোকেরা সেই উপত্যকার মধ্যে পংগপালের ঝাঁকের মত ছিল। তাদের উটগুলো সংখ্যায় ছিল সাগর পারের বালুকণার মত যা গোণা যায় না। গিদিয়োন যখন সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন তখন একজন লোক তার এক বন্ধুকে তার স্বপ্নের কথা বলছিল। সে বলছিল, “আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি দেখলাম যবের তৈরী একখানা রুটি যেন গড়াতে গড়াতে গিয়ে মিদিয়নীয়দের ছাউনির মধ্যে পড়ল। সেটা মিদিয়নীয়দের তাম্বুতে এত জোরে গিয়ে আঘাত করল যে, তাম্বুটা উল্টে ধ্বসে পড়ে গেল।” এর উত্তরে তার বন্ধু বলল, “এটা ইস্রায়েলীয় যোয়াশের ছেলে গিদিয়োনের তলোয়ার ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈশ্বর মিদিয়নীয়দের এবং তাদের গোটা ছাউনিটা গিদিয়োনের হাতে তুলে দিয়েছেন।” গিদিয়োন সেই স্বপ্নের কথা ও তার মানে শুনে উবুড় হয়ে পড়ে ঈশ্বরকে তাঁর অন্তরের ভক্তি জানালেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের ছাউনিতে ফিরে এসে জোরে হাঁক দিয়ে বললেন, “তোমরা ওঠ, ঈশ্বর মিদিয়নীয়দের ছাউনিটা তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।” সেই তিনশো লোককে তিনি তিনটা দলে ভাগ করলেন আর প্রত্যেকের হাতে একটা করে শিংগা, একটা করে খালি কলসী ও তার মধ্যে মশাল দিলেন। তারপর তিনি তাদের বললেন, “তোমরা আমার উপর লক্ষ্য রাখবে এবং আমি যা করি তোমরাও তা-ই করবে। ছাউনির কাছে পৌঁছে আমি যা করব তোমরা ঠিক তা-ই করবে। আমি ও আমার সংগের সবাই যখন শিংগা বাজাব তখন ছাউনির চারপাশ থেকে তোমরাও তোমাদের শিংগা বাজাবে এবং চিৎকার করে বলবে, ‘সদাপ্রভু এবং গিদিয়োনের জন্য।’ ” মাঝরাতের পাহারার আরম্ভে যখন মিদিয়নীয়েরা পাহারাদার বদল করছিল ঠিক তার পরেই গিদিয়োন ও তাঁর সংগের একশো লোক ছাউনির কাছে গিয়ে পৌঁছাল। তারা তাদের শিংগা বাজিয়ে হাতের কলসীগুলো ভেংগে ফেলল। তিনটা দলই একসংগে তা করল। বাঁ হাতে মশাল আর ডান হাতে বাজাবার জন্য শিংগা নিয়ে তারা চিৎকার করে বলে উঠল, “সদাপ্রভু ও গিদিয়োনের তলোয়ার।” ছাউনির চারদিকে গিদিয়োনের লোকেরা যখন তাদের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়াল তখন সমস্ত মিদিয়নীয়েরা দৌড়াদৌড়ি করে চিৎকার করে পালাতে লাগল। তিনশো শিংগা বেজে উঠবার সময় সদাপ্রভু এমন করলেন যার ফলে ছাউনির ভিতরকার সমস্ত লোকেরা একজন অন্যজনকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করল। তাতে মিদিয়নীয় সৈন্যেরা টব্বতের কাছে আবেল-মহোলার সীমারেখা পর্যন্ত এবং সরোরার দিকে বৈৎ-শিট্টা পর্যন্ত ছুটে পালিয়ে গেল। তখন ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেকার নপ্তালি, আশের ও মনঃশি-গোষ্ঠীর সমস্ত লোকদের ডাকা হল আর তারা মিদিয়নীয়দের তাড়া করল। পরে গিদিয়োন ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার সমস্ত জায়গায় লোক পাঠিয়ে বললেন, “তোমরা মিদিয়নীয়দের বিরুদ্ধে নেমে এস এবং তাদের পৌঁছাবার আগে বৈৎ-বারা পর্যন্ত সমস্ত ছোট নদীর ও যর্দন নদীর হেঁটে পার হওয়ার জায়গাগুলো অধিকার করে নাও।” তাতে ইফ্রয়িমের সমস্ত লোকেরা একত্র হয়ে বৈৎ-বারা পর্যন্ত সমস্ত ছোট নদীর ও যর্দন নদীর হেঁটে পার হওয়ার জায়গাগুলো দখল করে নিল। তারা ওরেব ও সেব নামে দু’জন মিদিয়নীয় নেতাকে ধরল এবং ওরেবকে ওরেবের পাথরের কাছে এবং সেবকে সেবের আংগুর মাড়াই করবার জায়গাতে মেরে ফেলল। তারা মিদিয়নীয়দের তাড়া করে নিয়ে গেল এবং ওরেব ও সেবের মাথা যর্দনের ওপারে গিদিয়োনের কাছে নিয়ে গেল। ইফ্রয়িমের লোকেরা গিদিয়োনকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি আমাদের সংগে এই রকম ব্যবহার করলেন কেন? মিদিয়নীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়ার সময় আপনি কেন আমাদের ডাকেন নি?” এইভাবে তারা গিদিয়োনকে খুব কড়া কড়া কথা বলল। উত্তরে তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের তুলনায় আমি আর তেমন কি করেছি? ইফ্রয়িম যে পড়ে থাকা আংগুর কুড়িয়ে এনেছে তা কি অবিয়েষরের তোলা সমস্ত আংগুরের চেয়ে অনেক ভাল নয়? ঈশ্বর তোমাদের হাতে মিদিয়নীয়দের নেতা ওরেব ও সেবকে তুলে দিয়েছেন। তোমাদের তুলনায় আমি আর কি বেশী করতে পেরেছি?” এতে গিদিয়োনের বিরুদ্ধে তাদের রাগ পড়ে গেল। গিদিয়োন ও তাঁর তিনশো লোক মিদিয়নীয়দের তাড়া করতে করতে যর্দনের কাছে এসে নদীটা পার হয়ে গেল। তখন তারা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, তাই গিদিয়োন সুক্কোতের লোকদের বললেন, “আমার সৈন্যদের কিছু রুটি খেতে দাও; তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমি এখনও মিদিয়নীয়দের রাজা সেবহ ও সল্‌মুন্নের পিছনে তাড়া করছি।” কিন্তু সুক্কোতের নেতারা বলল, “কেন আমরা তোমার সৈন্যদের রুটি খেতে দেব? সেবহ ও সল্‌মুন্নের কেটে ফেলা হাত কি তোমার হাতের মুঠোয় এসে গেছে?” উত্তরে গিদিয়োন বললেন, “যখন সদাপ্রভু সেবহ ও সল্‌মুন্নকে আমার হাতে তুলে দেবেন তখন তোমাদের এই কথার জন্য আমি মরু-এলাকার কাঁটা ও কাঁটাগাছের আঘাতে তোমাদের গায়ের মাংস ছিঁড়ে ফেলব।” গিদিয়োন সেখান থেকে পনূয়েলে উঠে গেলেন এবং সেখানকার লোকদের কাছেও রুটি চাইলেন। কিন্তু সুক্কোতের লোকেরা যা বলেছিল তারাও উত্তরে তা-ই বলল। তখন গিদিয়োন পনূয়েলের লোকদের বললেন, “আমি যখন জয় করে ফিরে আসব তখন এই দুর্গটা চুরমার করে দেব।” সেবহ ও সল্‌মুন্ন প্রায় পনেরো হাজার সৈন্যের একটা দল নিয়ে কর্কোরে ছিলেন। পূর্ব দেশের সৈন্যদের মধ্যে কেবল এরাই তখন বাকী ছিল এবং এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্য মারা পড়েছিল। নোবহ ও যগ্‌বিহের পূর্ব দিকে তাম্বুবাসী লোকদের পথ ধরে গিদিয়োন হঠাৎ গিয়ে সেই সৈন্যদলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তখন তারা নিশ্চিন্ত মনে ছিল। সেবহ ও সল্‌মুন্ন নামে মিদিয়নীয়দের সেই দু’জন রাজা পালিয়ে গেলেন। কিন্তু গিদিয়োন তাড়া করে গিয়ে তাঁদের ধরে ফেললেন, আর তাঁদের গোটা সৈন্যদল গিদিয়োনের দরুন ভীষণ ভয় পেল। এর পর যোয়াশের ছেলে গিদিয়োন হেরস নামে উঠে যাবার পথ দিয়ে যুদ্ধ থেকে ফিরলেন। তিনি পথে সুক্কোতের একজন যুবককে ধরে প্রশ্ন করতে লাগলেন। যুবকটি সুক্কোতের সাতাত্তরজন প্রধান লোক ও বৃদ্ধ নেতার নাম লিখে দিল। পরে গিদিয়োন সুক্কোতে গিয়ে সেখানকার লোকদের বললেন, “এই দেখ সেবহ ও সল্‌মুন্ন। এদের জন্যই তোমরা আমাকে ঠাট্টা করে বলেছিলে, ‘কেন আমরা তোমার ক্লান্ত সৈন্যদের রুটি খেতে দেব? সেবহ ও সল্‌মুন্নের কেটে ফেলা হাত কি তোমার হাতের মুঠোয় এসে গেছে?’ গিদিয়োন সুক্কোতের বৃদ্ধ নেতাদের ধরলেন এবং মরু-এলাকার কাঁটা ও কাঁটাগাছের ঘা মেরে তাদের শাস্তি দিলেন। তিনি পনূয়েলের দুর্গটা ভেংগে দিলেন এবং সেখানকার লোকদের মেরে ফেললেন। তারপর তিনি সেবহ ও সল্‌মুন্নকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাবোরে কি রকমের লোক আপনাদের হাতে মারা পড়েছে?” তাঁরা উত্তর দিলেন, “আপনার মত লোক, প্রত্যেকেই রাজপুত্রের মত।” গিদিয়োন বললেন, “ওরা ছিল আমার ভাই, আমার মায়ের পেটের ভাই। জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আপনারা যদি তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতেন তবে আমি আপনাদের মেরে ফেলতাম না।” এর পর তিনি তাঁর বড় ছেলে যেথরকে বললেন, “ওদের মেরে ফেল।” কিন্তু যেথরের বয়স অল্প ছিল বলে সে ভয় পেয়ে তলোয়ারই বের করল না। তখন সেবহ ও সল্‌মুন্ন বললেন, “আপনি নিজেই এসে আমাদের মেরে ফেলুন, কারণ যেমন মানুষ তেমনি তার কাজ।” কাজেই গিদিয়োন নিজে এগিয়ে গিয়ে তাঁদের মেরে ফেললেন এবং তাঁদের উটের গলা থেকে চন্দ্রহারগুলো খুলে নিলেন। পরে ইস্রায়েলীয়েরা গিদিয়োনকে বলল, “আপনি মিদিয়নীয়দের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করেছেন, সেইজন্য আপনি ও আপনার বংশধরেরাই আমাদের শাসনকর্তা হন।” গিদিয়োন তাদের বললেন, “আমরা কেউ তোমাদের শাসনকর্তা হব না- আমিও না, আমার ছেলেও না; সদাপ্রভুই হবেন তোমাদের শাসনকর্তা।” তিনি আরও বললেন, “তবে আমার একটা অনুরোধ আছে। তোমাদের লুটের ভাগ থেকে তোমরা প্রত্যেকে আমাকে একটা করে কানের গহনা দাও।” তিনি এই কথা বললেন, কারণ মিদিয়নীয়েরা ছিল ইশ্মায়েলের বংশের লোক এবং তখনকার দিনে ইশ্মায়েলীয়দের কানে সোনার গহনা পরবার চল ছিল। উত্তরে তারা বলল, “আমরা খুশী হয়েই তা দেব।” কাজেই তারা একটা কাপড় পাতল এবং প্রত্যেকে তার লুটের জিনিস থেকে তার উপর একটা করে কানের গহনা ফেলল। তাতে যে পরিমাণ সোনা তিনি পেলেন তার ওজন গিয়ে দাঁড়াল প্রায় বিশ কেজি পাঁচশো গ্রাম। এছাড়া তাঁর পাওয়া চন্দ্রহার, পদক, মিদিয়নীয় রাজাদের পরনের বেগুনে পোশাক কিম্বা উটের গলার হার এর মধ্যে ধরা হয় নি। গিদিয়োন সেই সব সোনা দিয়ে একটা এফোদ তৈরী করে তাঁর নিজের গ্রাম অফ্রাতে রাখলেন। ইস্রায়েলীয়েরা সকলে সেখানে সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে এফোদের পূজায় নিজেদের বিকিয়ে দিল। সেটাই হয়ে দাঁড়াল গিদিয়োন ও তাঁর পরিবারের জন্য একটা ফাঁদ। এইভাবেই ইস্রায়েলীয়েরা মিদিয়নীয়দের দমন করে রাখল; তারা আর মাথা তুলতে পারল না। গিদিয়োনের জীবনের বাকী চল্লিশ বছর দেশে শান্তি ছিল। সেই যুদ্ধের পরে যোয়াশের ছেলে যিরুব্বাল বাড়ী ফিরে গেলেন। তাঁর অনেকগুলো স্ত্রী ছিল বলে তাঁর নিজেরই সত্তরজন ছেলে ছিল। শিখিমে তাঁর একজন উপস্ত্রী ছিল। তার ঘরেও তাঁর একটি ছেলে হয়েছিল। গিদিয়োন তাঁর নাম দিয়েছিলেন অবীমেলক। যোয়াশের ছেলে গিদিয়োন বুড়ো বয়সে মারা গেলেন। অবীয়েষ্রীয়দের অফ্রাতে তাঁর বাবা যোয়াশের কবরে তাঁকে কবর দেওয়া হল। গিদিয়োনের মৃত্যুর পর পরই ইস্রায়েলীয়েরা আবার সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে বাল দেবতাদের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিল। তারা বাল্‌বরীৎকে নিজেদের দেবতা করে নিল। যিনি তাদের চারপাশের সমস্ত শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তাদের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তারা ভুলে গেল। যিরুব্বাল, অর্থাৎ গিদিয়োন তাদের যে সব মংগল করেছিলেন সেই অনুসারে তাঁর পরিবারের প্রতি তারা বিশ্বস্ততা দেখায় নি। যিরুব্বালের ছেলে অবীমেলক শিখিমে তাঁর মামাদের কাছে গিয়ে তাদের এবং তাঁর মায়ের বংশের অন্য সবাইকে বললেন, “শিখিমের সমস্ত বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসা করুন কোন্‌টা তাদের পক্ষে ভাল- যিরুব্বালের সত্তরজন ছেলে তাদের শাসনকর্তা হবে, নাকি একজন লোক হবে? ভুলে যাবেন না আমি আপনাদেরই রক্ত-মাংস।” অবীমেলকের মামারা শিখিমের লোকদের এই সব কথা বলবার পরে তাদের মধ্যে অবীমেলকের পক্ষে থাকবার একটা ঝোঁক দেখা গেল। তারা বলল যে, অবীমেলক তাদের আত্মীয়। তারা বাল্‌বরীতের মন্দির থেকে তাঁকে সত্তর টুকরা রূপা দিল। অবীমেলক তা দিয়ে কতগুলো বাজে দুঃসাহসী লোক ভাড়া করলেন। এরা তাঁর সংগী হল। অফ্রাতে তিনি তাঁর বাবার বাড়ীতে গিয়ে তাঁর সত্তরজন ভাইদের প্রত্যেককে, অর্থাৎ যিরুব্বালের ছেলেদের প্রত্যেককে একই পাথরের উপরে মেরে ফেললেন। কিন্তু যিরুব্বালের সবচেয়ে ছোট ছেলে যোথম লুকিয়ে থেকে বেঁচে গেল। তারপর শিখিম ও বৈৎ-মিল্লোর সমস্ত লোক একত্র হয়ে শিখিমের থামের কাছে এলোন গাছটার পাশে গিয়ে অবীমেলককে রাজা করল। যোথমকে এই কথা জানানো হল। সে তখন গরিষীম পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চিৎকার করে লোকদের বলল, “শিখিমের লোকেরা, আমার কথা শুনুন, তাতে ঈশ্বরও আপনাদের কথা শুনবেন। গাছেরা সবাই একদিন নিজেদের জন্য একজন রাজাকে অভিষেক করবার উদ্দেশ্যে বের হল। তারা জলপাই গাছকে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজা হও।’ কিন্তু জলপাই গাছ উত্তরে বলল, ‘আমার যে তেলে ঈশ্বর ও মানুষ সম্মানিত হন তা বাদ দিয়ে কি আমি সমস্ত গাছের উপর দুলতে যাব?’ এর পর গাছগুলো ডুমুর গাছকে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজা হও।’ কিন্তু ডুমুর গাছ উত্তরে বলল, ‘আমি আমার এই ভাল ও মিষ্টি ফল দেওয়া বাদ দিয়ে কি সমস্ত গাছের উপর দুলতে যাব?’ এর পর গাছগুলো আংগুর লতাকে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজা হও।’ কিন্তু উত্তরে আংগুর লতা বলল, ‘আমার ফলের যে রসে ঈশ্বর ও মানুষ আনন্দ পান তা বাদ দিয়ে কি আমি সমস্ত গাছের উপর দুলতে যাব?’ শেষে সব গাছগুলো কাঁটাঝোপকে বলল, ‘তুমি আমাদের রাজা হও।’ তখন কাঁটাঝোপ তাদের বলল, ‘যদি সত্যিই তোমরা আমাকে তোমাদের রাজা হিসাবে অভিষেক করতে চাও তবে তোমরা এসে আমার ছায়ায় আশ্রয় নাও। তা যদি না কর তবে যেন কাঁটাঝোপ থেকে আগুন বেরিয়ে এসে লেবাননের এরস গাছগুলো পুড়িয়ে দেয়।’ “তবে শুনুন, অবীমেলককে রাজা করে আপনারা কি বিশ্বস্ততা ও সততার কাজ করেছেন? আপনারা কি যিরুব্বাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি ভাল এবং উপযুক্ত ব্যবহার করেছেন? আমার বাবা তো তাঁর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য যুদ্ধ করে মিদিয়নীয়দের হাত থেকে আপনাদের রক্ষা করেছেন। কিন্তু আজ আপনারা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন। একই পাথরের উপরে তাঁর সত্তরজন ছেলের প্রত্যেককে খুন করেছেন আর তাঁর দাসীর ছেলে অবীমেলককে শিখিমের লোকদের উপরে রাজা করেছেন, কারণ সে আপনাদের আত্মীয়। কিন্তু আজ যদি যিরুব্বাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি আপনারা বিশ্বস্ততা ও সততার কাজ করে থাকেন তবে অবীমেলক যেন আপনাদের আনন্দের কারণ হয় এবং আপনারাও যেন তার আনন্দের কারণ হন! কিন্তু তা যদি আপনারা না করে থাকেন তবে অবীমেলকের মধ্য থেকে যেন আগুন বের হয়ে এসে আপনাদের, অর্থাৎ শিখিমের ও বৈৎ-মিল্লোর লোকদের পুড়িয়ে দেয়; আর আপনাদের, অর্থাৎ শিখিমের ও বৈৎ-মিল্লোর লোকদের মধ্য থেকেও যেন আগুন বের হয়ে এসে অবীমেলককে পুড়িয়ে দেয়।” এর পর যোথম পালিয়ে বের্‌ নামে একটা জায়গায় চলে গেল। সে তার ভাই অবীমেলকের ভয়ে সেখানেই বাস করতে লাগল। অবীমেলক তিন বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসন করলেন। তারপর ঈশ্বর অবীমেলক ও শিখিমের লোকদের মধ্যে একটা মন্দ আত্মা পাঠিয়ে দিলেন। তাতে শিখিমের লোকেরা অবীমেলকের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ঈশ্বরই এটা করলেন যাতে যিরুব্বালের সত্তরজন ছেলের উপর রক্তপাতের যে অন্যায় করা হয়েছে তার দরুন তাদের ভাই অবীমেলকের উপর এবং তাদের মেরে ফেলবার কাজে তাঁর ও তাঁর সাহায্যকারী শিখিমের লোকদের উপর প্রতিশোধ নেওয়া হয়। শিখিমের লোকেরা অবীমেলকের বিরুদ্ধে পাহাড়ের উপরে কিছু লোক রাখল, আর তারা লুকিয়ে থেকে সেই পথে যারা যেত তাদের লুটপাট করত। কথাটা অবীমেলককে জানানো হল। সেই সময় এবদের ছেলে গাল তার ভাইদের সংগে নিয়ে শিখিমে আসল আর শিখিমের লোকেরা তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করল। তারা নিজেদের ক্ষেতে গিয়ে আংগুর তুলে মাড়াই করল এবং উৎসব করল। তারা তাদের দেবতার মন্দিরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে অবীমেলককে অভিশাপ দিল। এবদের ছেলে গাল বলল, “অবীমেলক কে যে, আমরা শিখিমের লোকেরা তার অধীন হয়ে থাকব? সে কি যিরুব্বালের ছেলে নয়? সবূল কি তার সেনাপতি নয়? তোমরা বরং শিখিমের বাবা হমোরের বংশধরদের অধীনে থাক। কেন আমরা অবীমেলকের অধীনে থাকব? যদি কেবল লোকেরা আমার হুকুম মেনে চলত তবে আমি অবীমেলককে দূর করে দিতাম। তাকে বলা যেত, ‘তোমার সৈন্য-সামন্ত সব ডেকে নিয়ে বের হয়ে এস।’ ” এবদের ছেলে গালের সেই কথা শিখিমের শাসনকর্তা সবূলের কানে গেল এবং তিনি খুব রেগে গেলেন। তিনি গোপনে অবীমেলককে এই কথা বলে পাঠালেন, “এবদের ছেলে গাল ও তার ভাইয়েরা শিখিমে এসে আপনার বিরুদ্ধে সেখানকার লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে। কাজেই আপনি ও আপনার লোকেরা রাতের বেলায় এসে মাঠের মধ্যে ওৎ পেতে বসে থাকুন। সকালে সূর্য উঠবার সময় আপনি শহরের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাবেন। গাল ও তার লোকেরা যখন আপনার বিরুদ্ধে বের হয়ে আসবে তখন আপনি যা করবার তা করবেন।” কাজেই অবীমেলক ও তাঁর সমস্ত সৈন্যদল রাতের বেলায় বের হয়ে চার দলে ভাগ হয়ে শিখিমের কাছে লুকিয়ে রইল। শহর থেকে বেরিয়ে এবদের ছেলে গাল ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। এমন সময় অবীমেলক ও তাঁর সৈন্যেরা তাদের লুকানো জায়গা থেকে বের হয়ে আসল। গাল তাদের দেখে সবূলকে বলল, “দেখুন, পাহাড়ের উপর থেকে কত লোক নেমে আসছে।” সবূল উত্তরে বললেন, “তুমি পাহাড়ের ছায়াগুলোকে মানুষ বলে ভাবছ।” কিন্তু গাল আবার বলল, “দেখুন, লোকগুলো আসছে সবচেয়ে উঁচু পাহাড় থেকে, আর গণকদের গাছের দিক থেকে আরও একদল লোক আসছে।” তখন সবূল তাকে বললেন, “এখন কোথায় তোমার সেই বড় বড় কথা? তুমি বলেছিলে, ‘অবীমেলক কে যে, আমরা তার অধীনে থাকব?’ এই সব লোকদেরই তো তুমি তুচ্ছ করেছিলে। এখন বের হয়ে তাদের সংগে যুদ্ধ কর।” তখন গাল শিখিমের লোকদের পরিচালনা করে নিয়ে গিয়ে অবীমেলকের সংগে যুদ্ধ করল। অবীমেলক গালকে তাড়া করলেন, তাতে সে পালিয়ে গেল। পালাবার পথে তার দলের অনেকেই আঘাত পেয়ে শহরের ফটক পর্যন্ত সারা পথে পড়ে রইল। অবীমেলক অরূমাতে রয়ে গেলেন আর সবূল শিখিম থেকে গাল ও তার ভাইদের তাড়িয়ে বের করে দিলেন। পরের দিন শিখিমের লোকেরা বের হয়ে মাঠে যাচ্ছিল, আর সেই খবর অবীমেলককে জানানো হল। তখন অবীমেলক তাঁর লোকদের তিন দলে ভাগ করলেন এবং তারা মাঠে ওৎ পেতে রইল। শহর থেকে লোকদের বের হয়ে আসতে দেখে তিনি তাদের আক্রমণ করলেন। অবীমেলক ও তাঁর দলের লোকেরা সামনের দিকে ছুটে গিয়ে শহরে ঢুকবার পথে দাঁড়াল। মাঠের মধ্যে যারা ছিল অন্য দুই দল সৈন্য তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের মেরে ফেলল। সারাদিন ধরে আক্রমণ চালিয়ে অবীমেলক শহরটা অধিকার করে নিয়ে সেখানকার লোকদের মেরে ফেললেন। তারপর শহরটা ধ্বংস করে তার উপর তিনি লবণ ছিটিয়ে দিলেন। এই খবর শুনে শিখিমের দুর্গের লোকেরা এল-বরীৎ দেবতার মন্দিরের ভিতরের ঘরে গিয়ে ঢুকল। কাজেই সকলে গাছ থেকে ডাল কেটে নিয়ে অবীমেলকের পিছনে পিছনে চলল। তারপর তারা সেই ভিতরের ঘরের উপরে সেগুলো জড়ো করে তাতে আগুন লাগিয়ে দিল। এতে শিখিমের দুর্গের সমস্ত লোক পুড়ে মারা গেল। সেখানে প্রায় এক হাজার পুরুষ এবং স্ত্রীলোক ছিল। এর পর অবীমেলক তেবেসে গিয়ে তা ঘেরাও করে দখল করে নিলেন। শহরের মধ্যে ছিল একটা শক্ত দুর্গ; শহরের সমস্ত পুরুষ ও স্ত্রীলোক সেখানে পালিয়ে গেল। তারা দুর্গে ঢুকে সেখানকার দরজা বন্ধ করে ছাদে গিয়ে উঠল। অবীমেলক সেই দুর্গের কাছে গিয়ে সেটা আক্রমণ করলেন; কিন্তু দুর্গটাতে আগুন লাগাবার জন্য যখন তিনি দুর্গের দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন একজন স্ত্রীলোক যাঁতার উপরের পাথরটা অবীমেলকের মাথার উপর ফেলে তাঁর মাথাটা ফাটিয়ে দিল। অবীমেলক তাড়াতাড়ি করে তাঁর অস্ত্রবহনকারী যুবককে বললেন, “তোমার তলোয়ার বের করে আমাকে মেরে ফেল যাতে ওরা বলতে না পারে, ‘একজন স্ত্রীলোকের হাতে সে মারা পড়েছে।’ ” কাজেই সেই যুবক তাঁকে তলোয়ার দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল আর তিনি মারা গেলেন। অবীমেলক মারা গেছেন দেখে ইস্রায়েলীয়েরা বাড়ী ফিরে গেল। সত্তরজন ভাইকে মেরে ফেলে অবীমেলক তাঁর বাবার প্রতি যে অন্যায় করেছিলেন ঈশ্বর এইভাবেই তার পাওনা শাস্তি দিলেন। শিখিমের লোকেরা যে সব অন্যায় করেছিল তার পাওনা শাস্তি ঈশ্বর তাদেরও দিলেন। এইভাবে যিরুব্বালের ছেলে যোথমের অভিশাপ তাদের উপর পড়েছিল। অবীমেলকের পরে তোলয় নামে ইষাখর-গোষ্ঠীর একজন লোক ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করতে আসলেন। তোলয় ছিলেন পূয়ার ছেলে আর দোদয়ের নাতি। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার শামীরে তিনি বাস করতেন। তিনি তেইশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। পরে তিনি মারা গেলেন এবং শামীরেই তাঁকে কবর দেওয়া হল। তোলয়ের পরে গিলিয়দ এলাকার যায়ীর বাইশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। যায়ীরের ত্রিশজন ছেলে ছিল; তারা ত্রিশটা গাধায় চড়ে বেড়াত। গিলিয়দের ত্রিশটা গ্রাম তাদের অধীনে ছিল। আজও সেই গ্রামগুলোকে হবোৎ-যায়ীর বলা হয়। যায়ীর মারা গেলে পর তাঁকে কামোনে কবর দেওয়া হল। পরে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ আবার তা-ই করতে লাগল। তারা বাল দেবতাদের এবং অষ্টারোৎ দেবীদের এবং অরামীয়, সীদোনীয়, মোয়াবীয়, অম্মোনীয় ও পলেষ্টীয়দের দেব-দেবতাদের পূজা করতে লাগল। এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করল এবং তাঁর সেবা করল না। সেইজন্য তিনি তাদের উপর ক্রোধে জ্বলে উঠলেন এবং পলেষ্টীয় ও অম্মোনীয়দের হাতে তাদের তুলে দিলেন। সেই বছরে তারা ইস্রায়েলীয়দের যেন দলে-পিষে মারল। তারা যর্দনের পূর্ব দিকে ইমোরীয়দের দেশ গিলিয়দে বাসকারী ইস্রায়েলীয়দের আঠারো বছর ধরে কষ্ট দিয়েছিল। যিহূদা, বিন্যামীন ও ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য অম্মোনীয়েরা যর্দন পার হয়ে আসল। তখন ইস্রায়েলীয়েরা মহা কষ্টে পড়ল। তারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করে বলল, “আমাদের ঈশ্বরকে ত্যাগ করে বাল দেবতাদের পূজা করে সত্যি আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি।” উত্তরে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “মিসরীয়, ইমোরীয়, অম্মোনীয় ও পলেষ্টীয়দের হাত থেকে আমি কি তোমাদের উদ্ধার করি নি? যখন সীদোনীয়, অমালেকীয় এবং মায়োনীয়দের অত্যাচারে তোমরা সাহায্যের জন্য আমার কাছে কান্নাকাটি করেছিলে তখন তাদের হাত থেকেও আমি তোমাদের উদ্ধার করেছি। কিন্তু তোমরা আমাকে ত্যাগ করে দেবতাদের পূজা করেছ, সেইজন্য আর আমি তোমাদের উদ্ধার করব না। যে দেব-দেবতাদের তোমরা বেছে নিয়েছিলে তাদের কাছে গিয়ে কাঁদ। বিপদের সময়ে তারাই তোমাদের উদ্ধার করুক।” কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুকে বলল, “আমরা পাপ করেছি। তোমার যা ভাল মনে হয় আমাদের প্রতি তা-ই কোরো, কিন্তু দয়া করে এবার তুমি আমাদের রক্ষা কর।” এর পর তাদের মধ্যে অন্য জাতিদের যে সব দেব-দেবতা ছিল তাদের দূর করে দিয়ে তারা সদাপ্রভুর সেবা করতে লাগল। ইস্রায়েলীয়দের কষ্ট দেখে সদাপ্রভুর মনে দুঃখ হল। এর পর যুদ্ধে যাবার জন্য অম্মোনীয়দের ডাক পড়ল আর তাতে তারা গিয়ে গিলিয়দে ছাউনি ফেলল। এতে ইস্রায়েলীয়েরাও জড়ো হয়ে মিসপাতে গিয়ে তাদের ছাউনি ফেলল। গিলিয়দের নেতারা একে অন্যকে বলল, “যে লোক অম্মোনীয়দের প্রথমে আক্রমণ করবে সে-ই গিলিয়দের বাসিন্দাদের কর্তা হবে।” সেই সময় গিলিয়দীয় যিপ্তহ খুব শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মা ছিল একজন বেশ্যা আর তাঁর বাবার নাম ছিল গিলিয়দ। গিলিয়দের নিজের স্ত্রীর গর্ভের কতগুলো ছেলে ছিল। তারা বড় হয়ে যিপ্তহকে এই বলে তাড়িয়ে দিল, “তুমি আমাদের পরিবারের সম্পত্তির অধিকার পাবে না, কারণ তুমি অন্য এক স্ত্রীলোকের সন্তান।” কাজেই যিপ্তহ তাঁর ভাইদের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়ে টোব দেশে বাস করতে লাগলেন। সেখানে কতগুলো বাজে লোক তাঁর চারপাশে এসে জড়ো হল এবং তাঁর সংগে চলাফেরা করতে লাগল। তাঁরা বললেন, “আমরা অম্মোনীয়দের সংগে যুদ্ধ করব, তাই তুমি এসে আমাদের সেনাপতি হও।” যিপ্তহ তাঁদের বললেন, “তোমরা কি ঘৃণা করে আমাকে আমার বাবার বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দাও নি? এখন বিপদে পড়ে কেন আমার কাছে এসেছ?” গিলিয়দের বৃদ্ধ নেতারা তাঁকে বললেন, “কিন্তু এখন আমরা তোমার কাছে ফিরে এসেছি যেন তুমি আমাদের সংগে গিয়ে অম্মোনীয়দের সংগে যুদ্ধ কর। এতে তুমি গিলিয়দে বাসকারী আমাদের সকলের কর্তা হবে।” উত্তরে যিপ্তহ বললেন, “ধর, অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য তোমরা আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে আর সদাপ্রভুও আমার হাতে তাদের তুলে দিলেন; তাহলে তখন সত্যিই কি আমি তোমাদের কর্তা হব?” গিলিয়দের বৃদ্ধ নেতারা উত্তরে বললেন, “সদাপ্রভুই আমাদের সাক্ষী রইলেন যে, তুমি যা বললে আমরা তা-ই করব।” এতে যিপ্তহ গিলিয়দের বৃদ্ধ নেতাদের সংগে গেলেন আর লোকেরা তাঁকে তাদের কর্তা ও সেনাপতি করল। তিনি মিসপাতে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে সেই সব কথা বললেন। এর পর যিপ্তহ লোক পাঠিয়ে অম্মোনীয় রাজাকে এই কথা জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার ও আপনার মধ্যে এমন কি হয়েছে যার জন্য আপনি আমার দেশ আক্রমণ করতে এসেছেন?” অম্মোনীয় রাজা যিপ্তহের পাঠানো লোকদের বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসে যর্দন নদীর কিনারা ধরে অর্ণোন নদী থেকে যব্বোক নদী পর্যন্ত আমার সমস্ত জায়গাটা দখল করে নিয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় তা ফিরিয়ে দাও।” মিসর থেকে বেরিয়ে আসবার পর ইস্রায়েলীয়েরা মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে লোহিত সাগর পর্যন্ত গিয়েছিল এবং তারপর গিয়েছিল কাদেশে। তারপর ইস্রায়েলীয়েরা ইদোমের রাজার কাছে লোক পাঠিয়ে বলেছিল, ‘আপনার দেশের মধ্য দিয়ে আমাদের যাবার অনুমতি দিন।’ কিন্তু ইদোমের রাজা সেই কথায় কান দেন নি। তারা মোয়াবের রাজার কাছেও লোক পাঠিয়েছিল কিন্তু তিনিও রাজী হন নি। কাজেই ইস্রায়েলীয়েরা কাদেশেই রয়ে গেল। তারপর তারা মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়ে ইদোম ও মোয়াব দেশ ঘুরে মোয়াব দেশের পূর্ব দিক দিয়ে গিয়ে অর্ণোন নদীর অন্য পাশে ছাউনি ফেলেছিল। তারা মোয়াব দেশে ঢোকে নি, কারণ অর্ণোন নদীই ছিল মোয়াবের সীমানা। তারপর ইস্রায়েলীয়েরা ইমোরীয়দের রাজা সীহোন, যিনি হিষ্‌বোনে থেকে রাজত্ব করতেন, তাঁর কাছে লোক দিয়ে বলে পাঠাল, ‘আমাদের দেশে যাবার জন্য আপনার দেশের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে দিন।’ কিন্তু সীহোন ইস্রায়েলীয়দের বিশ্বাস না করে তাঁর দেশের মধ্য দিয়ে তাদের যাবার অনুমতি দিলেন না। তিনি তাঁর সমস্ত লোকজন জড়ো করে যহসে ছাউনি ফেললেন এবং ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করলেন। তখন ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের হাতে সীহোন ও তাঁর সমস্ত লোকদের তুলে দিলেন আর তারা তাদের হারিয়ে দিল। সেই দেশে বাসকারী সমস্ত ইমোরীয়দের জায়গা ইস্রায়েলীয়েরা দখল করে নিল। তারা অর্ণোন থেকে যব্বোক পর্যন্ত এবং মরু-এলাকা থেকে যর্দন পর্যন্ত ইমোরীয়দের সমস্ত জায়গাটা অধিকার করে নিল। ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে ইমোরীয়দের তাড়িয়ে দিয়েছেন তখন সেটা ফিরিয়ে নেবার কি অধিকার আপনার আছে? আপনার কমোশ-দেবতা আপনাকে যা অধিকার করতে দিয়েছেন তা কি আপনার অধিকারে নেই? ঠিক সেইভাবে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের সামনে থেকে যাদের তাড়িয়ে দিয়েছেন আমরা তাদেরই জায়গা অধিকার করে আছি। আপনি কি মোয়াবের রাজা সিপ্পোরের ছেলে বালাকের চেয়েও ভাল? তিনি কখনও ইস্রায়েলের সংগে ঝগড়া কিম্বা যুদ্ধ করেন নি। আজ তিনশো বছর ইস্রায়েলীয়েরা হিষ্‌বোন ও অরোয়ের শহর এবং তাদের আশেপাশের গ্রাম এবং অর্ণোন নদীর কিনারা ধরে সমস্ত গ্রামে বাস করে আসছে। সেই সময়ের মধ্যে আপনি সেগুলো কেন আবার দখল করে নেন নি? এই ব্যাপারে আমি আপনার প্রতি কোন অন্যায় করি নি, বরং আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আপনিই আমার প্রতি অন্যায় করছেন। বিচারকর্তা সদাপ্রভুই এখন ইস্রায়েলীয় ও অম্মোনীয়দের মধ্যে বিচার করুন।” কিন্তু যিপ্তহের পাঠানো এই খবরে অম্মোনের রাজা কান দিলেন না। তখন সদাপ্রভুর আত্মা যিপ্তহের উপরে আসলেন। তাতে যিপ্তহ গিলিয়দ ও মনঃশি এলাকার মধ্য দিয়ে গিয়ে গিলিয়দের মিসপীতে আসলেন এবং সেখান থেকে অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেলেন। এর পর যিপ্তহ অম্মোনীয়দের সংগে যুদ্ধ করতে গেলেন আর সদাপ্রভু তাঁর হাতে অম্মোনীয়দের তুলে দিলেন। তিনি অরোয়ের থেকে মিন্নীতের কাছাকাছি আবেল-করামীম পর্যন্ত বিশটা শহর ও গ্রামের লোকদের ভীষণভাবে আঘাত করে মেরে ফেললেন। এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা অম্মোনীয়দের দমন করল। যিপ্তহ যখন মিসপাতে নিজের বাড়ীতে ফিরে আসলেন তখন যে তাঁকে এগিয়ে নিতে আসল সে ছিল তাঁরই মেয়ে। সে খঞ্জনীর তালে তালে নেচে নেচে আসছিল। সে ছিল যিপ্তহের একমাত্র সন্তান, আর এই মেয়েটি ছাড়া তাঁর অন্য কোন ছেলে বা মেয়ে ছিল না। যিপ্তহ মেয়েকে দেখে তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “হায় হায়, মা আমার, তুমি এ কি সর্বনাশ করলে! তুমি আমাকে ভীষণ বিপদের মধ্যে ফেলে দিলে, কারণ আমি সদাপ্রভুর কাছে এমন একটা মানত করেছি যা আমার পক্ষে ভাংগা সম্ভব নয়।” উত্তরে মেয়েটি বলল, “বাবা, তুমি সদাপ্রভুকে কথা দিয়েছ। কাজেই তোমার কথা অনুসারে আমার প্রতি যা করবার তা কর, কারণ সদাপ্রভু তোমাকে তোমার শত্রু অম্মোনীয়দের উপর প্রতিশোধ নিতে দিয়েছেন।” তারপর সে বলল, “তবে আমার একটা অনুরোধ রাখ। আমি তো সন্তানের মা হতে পারব না; তাই পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে সখীদের সংগে বিলাপ করে বেড়াবার জন্য আমাকে দু’মাস সময় দাও।” যিপ্তহ বললেন, “যাও, মা।” এই বলে তিনি তাকে দু’মাসের জন্য বিদায় দিলেন। তখন সে আর অন্য মেয়েরা পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বিলাপ করতে লাগল, কারণ সে কখনও সন্তানের মা হতে পারবে না। দু’মাস পার হয়ে গেলে পর সে তার বাবার কাছে ফিরে আসল। যিপ্তহ সদাপ্রভুর কাছে যা মানত করেছিলেন তিনি তাঁর মেয়ের প্রতি তা-ই করলেন। মেয়েটি কুমারী অবস্থায় মারা গেল। এই ঘটনা থেকে ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে একটা রীতি চালু হয়ে গেল। গিলিয়দীয় যিপ্তহের মেয়ের কথা স্মরণ করে বিলাপ করবার জন্য ইস্রায়েলীয় যুবতী মেয়েরা প্রত্যেক বছর চার দিনের জন্য বাড়ী থেকে বের হয়ে যেত। পরে ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের সৈন্যদের ডেকে নিয়ে নদী পার হয়ে সাফোনে গেল। সেখানে তারা যিপ্তহকে বলল, “অম্মোনীয়দের সংগে যুদ্ধ করতে তোমার সংগে যাবার জন্য কেন তুমি আমাদের ডাক নি? আমরা তোমাকে সুদ্ধ তোমার বাড়ী পুড়িয়ে দেব।” উত্তরে যিপ্তহ বললেন, “আমি আমার লোকদের নিয়ে অম্মোনীয়দের সংগে ভীষণ যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলাম। আমি তোমাদের ডেকেছিলাম কিন্তু তোমরা তাদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর নি। আমি যখন দেখলাম তোমরা আমাকে সাহায্য করবে না তখন আমি আমার প্রাণ হাতে করে অম্মোনীয়দের সংগে যুদ্ধ করতে গেলাম আর সদাপ্রভুও আমাকে তাদের উপর জয়ী করলেন। এখন কেন তোমরা আমার সংগে যুদ্ধ করবার জন্য উপস্থিত হয়েছ?” যিপ্তহ তখন গিলিয়দের সব লোকদের ডেকে জড়ো করে নিয়ে ইফ্রয়িমের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন, কারণ ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকেরা বলেছিল, “ওহে গিলিয়দীয়েরা, তোমরা তো ইফ্রয়িম ও মনঃশি-গোষ্ঠীর দল ত্যাগ করে আসা লোক।” সেই যুদ্ধে গিলিয়দীয়েরা তাদের হারিয়ে দিল। যর্দন নদীর যে জায়গাগুলো হেঁটে পার হয়ে ইফ্রয়িম এলাকার দিকে যাওয়া যায় সেই জায়গাগুলো গিলিয়দীয়েরা দখল করে নিল। ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর বেঁচে থাকা কোন লোক যখন বলত, “আমাকে পার হতে দাও,” তখন গিলিয়দের লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করত, “তুমি কি ইফ্রয়িমীয়?” উত্তরে সে যদি বলত, “না,” তবে তারা বলত, “বেশ, তাহলে বল দেখি, ‘শিব্বোলেৎ।’ ” কথাটা ঠিক করে উচ্চারণ করতে না পেরে যদি সে বলত, “ছিব্বোলেৎ,” তবে তারা তাকে ধরে যর্দন নদীর ঐ হেঁটে পার হওয়ার জায়গাতেই মেরে ফেলত। এইভাবে সেই সময় বিয়াল্লিশ হাজার ইফ্রয়িমীয়কে মেরে ফেলা হয়েছিল। গিলিয়দীয় যিপ্তহ ছয় বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি মারা গেলে পর তাঁকে গিলিয়দের একটা গ্রামে কবর দেওয়া হল। যিপ্তহের পরে ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা হলেন বৈৎলেহম গ্রামের ইব্‌সন। তাঁর ত্রিশজন ছেলে ও ত্রিশজন মেয়ে ছিল। তিনি নিজের বংশের বাইরে তাঁর মেয়েদের বিয়ে দিলেন এবং বংশের বাইরে থেকে তাঁর ছেলেদের বৌ হিসাবে ত্রিশজন যুবতী মেয়ে আনলেন। ইব্‌সন সাত বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। পরে ইব্‌সন মারা গেলে পর তাঁকে বৈৎলেহমে কবর দেওয়া হল। ইব্‌সনের পর সবূলূন-গোষ্ঠীর এলোন দশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি মারা গেলে পর সবূলূন এলাকার অয়ালোনে তাঁকে কবর দেওয়া হল। এলোনের পর পিরিয়াথোনের হিল্লেলের ছেলে অব্‌দোন ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা হয়েছিলেন। তাঁর চল্লিশজন ছেলে ও ত্রিশজন নাতি ছিল। তারা সত্তরটা গাধায় চড়ে বেড়াত। অব্‌দোন আট বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ছিলেন। তিনি মারা গেলে পর অমালেকীয়দের পাহাড়ী এলাকার মধ্যে ইফ্রয়িম এলাকার পিরিয়াথোনে তাঁকে কবর দেওয়া হল। পরে ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ আবার তা-ই করতে লাগল। কাজেই সদাপ্রভু তাদের চল্লিশ বছর পলেষ্টীয়দের অধীন করে রাখলেন। সেই সময় সরা গ্রামে মানোহ নামে দান-গোষ্ঠীর একজন লোক ছিলেন। তাঁর স্ত্রী বন্ধ্যা ছিলেন বলে তাঁর কোন ছেলেমেয়ে হয় নি। সদাপ্রভুর দূত তাঁর স্ত্রীকে দেখা দিয়ে বললেন, “তুমি বন্ধ্যা বলে তোমার কোন সন্তান হয় নি, কিন্তু তুমি গর্ভবতী হবে এবং তোমার একটি ছেলে হবে। আংগুর-রস কিম্বা কোন মদ কিম্বা অশুচি কিছু যাতে তুমি না খাও সেইজন্য তোমাকে সাবধান থাকতে হবে। তোমার যে ছেলে হবে তুমি তার মাথায় কখনও ক্ষুর লাগাবে না, কারণ জন্ম থেকেই ছেলেটি ঈশ্বরের উদ্দেশে নাসরীয় হবে। পলেষ্টীয়দের হাত থেকে সে-ই ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করবার কাজ শুরু করবে।” স্ত্রীলোকটি তখন তাঁর স্বামীর কাছে গিয়ে বললেন, “ঈশ্বরের একজন লোক আমার কাছে এসেছিলেন। ঈশ্বরের দূতের মতই তাঁর চেহারা, তাঁকে দেখলে খুব ভয় লাগে। তিনি কোথা থেকে এসেছেন তা আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করি নি আর তিনিও তাঁর নাম আমাকে বলেন নি। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি গর্ভবতী হবে এবং তোমার একটি ছেলে হবে। সেইজন্য এখন থেকে তুমি আংগুর-রস কিম্বা কোন মদ কিম্বা অশুচি কিছু খাবে না, কারণ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ছেলেটি ঈশ্বরের উদ্দেশে নাসরীয় হবে।’ ” এই কথা শুনে মানোহ সদাপ্র্রভুর কাছে এই বলে প্রার্থনা করলেন, “হে প্রভু, ঈশ্বরের যে লোকটিকে তুমি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলে, আমি মিনতি করি আবার যেন তিনি আসেন এবং যে ছেলেটির জন্ম হবে তার প্রতি আমাদের কি করতে হবে তা আমাদের শিখিয়ে দেন।” ঈশ্বর মানোহের প্রার্থনা শুনলেন এবং ঈশ্বরের দূত আবার সেই স্ত্রীলোকটির কাছে আসলেন। তিনি তখন ক্ষেতের মধ্যে বসে ছিলেন, কিন্তু তাঁর স্বামী মানোহ তখন তঁাঁর কাছে ছিলেন না। স্ত্রীলোকটি তাড়াতাড়ি গিয়ে তাঁর স্বামীকে বললেন, “সেই দিন যে লোকটি আমাকে দেখা দিয়েছিলেন তিনি এসেছেন।” এই কথা শুনে মানোহ উঠে তাঁর স্ত্রীর সংগে গেলেন এবং লোকটির কাছে গিয়ে বললেন, “আমার স্ত্রীর সংগে যিনি কথা বলেছিলেন আপনিই কি সেই লোক?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমিই সেই লোক।” মানোহ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার কথা যখন সফল হবে তখন কিভাবে ছেলেটি জীবন কাটাবে আর তার কাজই বা কি হবে?” উত্তরে সদাপ্রভুর দূত বললেন, “আমি তোমার স্ত্রীকে যা বলেছি তার সবই যেন সে যত্নের সংগে পালন করে। আংগুর গাছ থেকে যা হয় তার কোন কিছুই তার খাওয়া চলবে না। আংগুর-রস কিম্বা কোন মদ কিম্বা অশুচি কিছু তার খাওয়া চলবে না। আমি তাকে যে সব আদেশ দিয়েছি তার প্রত্যেকটি তাকে পালন করতে হবে।” তখন মানোহ সদাপ্রভুর দূতকে বললেন, “আপনি কিছুক্ষণ থাকুন; আমরা ততক্ষণ আপনার জন্য একটা ছাগলের বাচ্চার মাংস রান্না করি।” উত্তরে সদাপ্রভুর দূত বললেন, “আমাকে ধরে রাখলেও আমি তোমাদের কোন খাবার খাব না। কিন্তু যদি তোমরা পোড়ানো-উৎসর্গ করতে চাও তবে তা সদাপ্রভুর উদ্দেশেই কোরো।” তিনি যে সদাপ্রভুর দূত মানোহ তা বুঝতে পারেন নি। এর পর মানোহ সদাপ্রভুর দূতকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার নাম কি? আপনার কথা যখন সফল হবে তখন আমরা আপনাকে সম্মান দেখাতে চাই।” তিনি বললেন, “তুমি কেন আমার নাম জিজ্ঞাসা করছ? আমার নাম কেউ বুঝতে পারে না।” মানোহ তখন একটা ছাগলের বাচ্চা ও তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গের জিনিস নিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা পাথরের উপরে তা উৎসর্গ করলেন। সেই দূত তখন একটা আশ্চর্য কাজ করলেন, আর মানোহ ও তাঁর স্ত্রী তা দেখছিলেন। আগুনের শিখা যখন বেদী থেকে উপরে আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছিল তখন সদাপ্রভুর দূত সেই আগুনের শিখায় উঠে চলে গেলেন। এই ব্যাপার দেখে মানোহ ও তাঁর স্ত্রী মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন, আর মানোহ বুঝতে পারলেন যে, তিনি ছিলেন সদাপ্রভুর দূত। সদাপ্রভুর দূত তাঁদের আর দেখা দিলেন না। তখন মানোহ তাঁর স্ত্রীকে বললেন, “আমরা ঈশ্বরকে দেখেছি, নিশ্চয়ই আমাদের মরতে হবে।” কিন্তু তাঁর স্ত্রী বললেন, “আমাদের মেরে ফেলবারই ইচ্ছা যদি সদাপ্রভুর থাকত তবে আমাদের হাত থেকে তিনি পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ গ্রহণ করতেন না, কিম্বা এই সবও আমাদের দেখাতেন না, কিম্বা এই সব কথাও এই সময়ে আমাদের বলতেন না।” পরে স্ত্রীলোকটির একটি ছেলে হল আর তিনি তাঁর নাম রাখলেন শিম্‌শোন। শিম্‌শোন বড় হতে লাগলেন এবং ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করলেন। শিম্‌শোন যখন সরা আর ইষ্টায়োলের মাঝখানে মহনে-দান বলে একটা জায়গায় ছিলেন তখন থেকে সদাপ্রভুর আত্মা তাঁকে উত্তেজিত করতে লাগলেন। পরে শিম্‌শোন তিম্নায় গেলেন, আর সেখানে একটি পলেষ্টীয় যুবতী তাঁর নজরে পড়ল। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি তাঁর মা-বাবাকে বললেন, “আমি তিম্নাতে একটি পলেষ্টীয় মেয়ে দেখে এসেছি; তোমরা তার সংগে আমার বিয়ে দাও।” উত্তরে তাঁর মা-বাবা বললেন, “তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কিম্বা আমাদের সমস্ত জাতির মধ্যে কি কোন মেয়ে নেই যে, বিয়ের জন্য তোমাকে সুন্নত-না-করানো পলেষ্টীয়দের কাছে যেতে হবে?” কিন্তু শিম্‌শোন তাঁর বাবাকে বললেন, “না, আমার জন্য তাকেই তোমরা নিয়ে এস। তাকেই আমার পছন্দ।” তাঁর মা-বাবা বুঝতে পারেন নি যে, এটা সদাপ্রভু থেকেই হয়েছে, কারণ তিনি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার একটা সুযোগ খুঁজছিলেন। সেই সময় পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের শাসন করছিল। পরে শিম্‌শোন তাঁর মা-বাবার সংগে তিম্নায় গেলেন। তিম্নার আংগুর ক্ষেতগুলোর কাছে যেতেই হঠাৎ একটা যুব সিংহ গর্জন করতে করতে শিম্‌শোনের দিকে এগিয়ে আসল। তখন সদাপ্রভুর আত্মা তাঁর উপর পূর্ণ শক্তিতে আসলেন, যার ফলে তিনি সেই সিংহটাকে খালি হাতেই ছাগলের বাচ্চার মত করে ছিঁড়ে ফেললেন। কিন্তু তিনি কি করেছেন তা তাঁর মা-বাবাকে জানালেন না। পরে তিনি সেই মেয়েটির কাছে গিয়ে তার সংগে কথা বললেন এবং মেয়েটিকে তাঁর ভাল লাগল। এর কিছুদিন পরে তিনি ঐ মেয়েটিকে বিয়ে করবার জন্য তিম্নায় গেলেন। যাওয়ার পথে তিনি সেই সিংহের মৃতদেহটা দেখবার জন্য একটু ঘুরে গেলেন। তিনি সিংহের দেহের মধ্যে এক ঝাঁক মৌমাছি আর কিছু মধু দেখতে পেলেন। তিনি দু’হাতে সেই মধু তুলে নিয়ে খেতে খেতে চললেন। তারপর তিনি মা-বাবার কাছে গিয়ে তাঁদেরও সেই মধু দিলেন এবং তাঁরাও তা খেলেন। কিন্তু সেই মধু যে তিনি সিংহের মৃতদেহের মধ্য থেকে নিয়েছিলেন তা তাঁদের বললেন না। পরে শিম্‌শোনের বাবা মেয়েটিকে দেখতে গেলেন। তখন শিম্‌শোন সেখানে একটা ভোজের ব্যবস্থা করলেন যা বরেরা সাধারণতঃ করত। শিম্‌শোন সেখানে পৌঁছালে পর পলেষ্টীয়েরা তাঁকে ত্রিশজন সংগী দিল। শিম্‌শোন সেই সংগীদের বললেন, “আমি তোমাদের একটা ধাঁধা বলি। তোমরা ভোজের এই সাত দিনের মধ্যে যদি এর উত্তর দিতে পার তবে আমি তোমাদের ত্রিশটা মসীনার চাদর ও ত্রিশ সেট পোশাক দেব। কিন্তু তোমরা যদি তা না পার তবে তোমরা আমাকে ত্রিশটা মসীনার চাদর আর ত্রিশ সেট পোশাক দেবে।” তারা বলল, “আপনার ধাঁধাটা বলুন, আমরা তা শুনি।” শিম্‌শোন বললেন, “খাদক থেকে আসল খাদ্য, বলবান থেকে আসল মিষ্টি।” তিন দিন পর্যন্ত তাঁর এই ধাঁধার উত্তর তারা দিতে পারল না। সপ্তম দিনে তারা গিয়ে শিম্‌শোনের স্ত্রীকে বলল, “তোমার স্বামীকে ফুসলিয়ে বল যেন তিনি এই ধাঁধাটার উত্তর আমাদের বলে দেন। তা না হলে আমরা তোমাকে ও তোমার বাবার পরিবারের লোকদের পুড়িয়ে মারব। আমাদের গরীব করে দেওয়ার জন্যই তুমি আমাদের এখানে নিমন্ত্রণ করেছ, তাই না?” শিম্‌শোনের স্ত্রী তখন শিম্‌শোনের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুমি আমাকে কেবল ঘৃণাই কর, ভালবাস না। তুমি আমার লোকদের একটা ধাঁধা বলেছ অথচ তার উত্তর আমাকে বলে দাও নি।” উত্তরে শিম্‌শোন বললেন, “আমার মা-বাবাকে পর্যন্ত আমি তার উত্তর বলি নি, তবে তোমাকে কেন আমি তা বলতে যাব?” ভোজের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী তাঁর কাছে কান্নাকাটি করল। শেষে সাত দিনের দিন শিম্‌শোন তাঁর স্ত্রীকে তা বললেন, কারণ এর জন্য সে তাঁকে খুব বিরক্ত করছিল। তাঁর স্ত্রী তখন সেই ধাঁধার উত্তর তার লোকদের বলে দিল। সাত দিনের দিন সূর্য ডুবে যাবার আগে গ্রামের সেই লোকগুলো শিম্‌শোনকে বলল, “মধুর চেয়ে মিষ্টি কি? আর সিংহের চেয়ে বলবান কে?” শিম্‌শোন তাদের বললেন, “আমার গাভী দিয়ে যদি তোমরা চাষ না করতে তবে তোমরা এই ধাঁধার উত্তর দিতে পারতে না।” এর পর সদাপ্রভুর আত্মা পূর্ণ শক্তিতে শিম্‌শোনের উপর আসলেন। তিনি অস্কিলোনে গিয়ে সেখানকার ত্রিশজন লোককে মেরে ফেলে তাদের সব কিছু লুটে নিলেন এবং তাদের কাপড়-চোপড় নিয়ে যারা তাঁর ধাঁধার উত্তর দিয়েছিল তাদের দিলেন। তারপর তিনি রাগে জ্বলতে জ্বলতে তাঁর বাবার বাড়ীতে চলে গেলেন। তখন তাঁর সংগীদের মধ্যেকার তাঁর বন্ধুর হাতে তাঁর স্ত্রীকে তুলে দেওয়া হল। পরে গম কাটবার সময়ে শিম্‌শোন একটা ছাগলের বাচ্চা নিয়ে তাঁর স্ত্রীর সংগে দেখা করতে গেলেন। তিনি বললেন, “আমি ভিতরে আমার স্ত্রীর ঘরে যাচ্ছি।” কিন্তু মেয়েটির বাবা তাঁকে ভিতরে যেতে দিল না। তার বাবা বলল, “আমি সত্যিই ভেবেছিলাম যে, তার প্রতি তোমার খুব ঘৃণা জন্মেছে, সেইজন্য আমি তাকে তোমার বন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছি। তার ছোট বোন তার চেয়েও সুন্দরী; তার বদলে তুমি তার ছোট বোনকে নাও।” তখন শিম্‌শোন তাদের বললেন, “এবার আমি পলেষ্টীয়দের ক্ষতি করতে পারব, আর তাতে আমার কোন দোষ হবে না।” এই বলে তিনি বেরিয়ে গিয়ে তিনশো শিয়াল ধরলেন এবং তাদের প্রতি জোড়ার লেজে লেজে জুড়ে তার মাঝখানে একটা করে মশাল বেঁধে দিলেন। তারপর মশালে আগুন ধরিয়ে পলেষ্টীয়দের ক্ষেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ফসলের মধ্যে তাদের ছেড়ে দিলেন। এইভাবে তিনি তাদের বাঁধা আঁটি ও দাঁড়িয়ে থাকা ফসল এবং তাদের জলপাইয়ের বাগান পুড়িয়ে দিলেন। পলেষ্টীয়েরা যখন জিজ্ঞাসা করল, “কে এই কাজ করেছে?” তখন তাদের বলা হল, “তিম্নায়ীয়ের জামাই শিম্‌শোন এই কাজ করেছে, কারণ তার শ্বশুর তার স্ত্রীকে তার বন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছে।” এতে পলেষ্টীয়েরা গিয়ে তাঁর স্ত্রী আর তাঁর শ্বশুরকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলল। শিম্‌শোন তখন তাদের বললেন, “তোমাদের এই রকম কাজের দরুন আমি তোমাদের উপর প্রতিশোধ না নিয়ে থামব না।” এই বলে তিনি ভীষণভাবে তাদের আক্রমণ করলেন এবং অনেককে মেরে ফেললেন। তারপর তিনি গিয়ে ঐটম পাহাড়ের ফাটলে থাকতে লাগলেন। পলেষ্টীয়েরা তখন গিয়ে যিহূদা এলাকায় ছাউনি ফেলল এবং লিহী ঘেরাও করল। যিহূদার লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, “কেন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে এসেছ?” উত্তরে তারা বলল, “আমরা শিম্‌শোনকে বন্দী করে নিয়ে যেতে এসেছি। সে আমাদের উপর যা করেছে আমরাও তার উপর তা-ই করব।” তখন যিহূদার তিন হাজার লোক ঐটম পাহাড়ের সেই ফাটলের কাছে গিয়ে শিম্‌শোনকে বলল, “তুমি কি জান না যে, পলেষ্টীয়েরা আমাদের শাসন করছে? তুমি আমাদের প্রতি এ কি করলে?” উত্তরে শিম্‌শোন বললেন, “তারা আমার উপর যা করেছে আমি তাদের উপর কেবল তা-ই করেছি।” তারা তাঁকে বলল, “আমরা তোমাকে বেঁধে পলেষ্টীয়দের হাতে তুলে দেবার জন্য এসেছি।” শিম্‌শোন বললেন, “তাহলে তোমরা আমার কাছে শপথ করে বল যে, তোমরা নিজেরা আমাকে মেরে ফেলবে না।” উত্তরে তারা বলল, “আমরা তা করব না। আমরা কেবল তোমাকে বেঁধে তাদের হাতে তুলে দেব; সত্যিই আমরা তোমাকে মেরে ফেলব না।” এই বলে তারা তাঁকে দু’টা নতুন দড়ি দিয়ে বেঁধে পাহাড়ের কাছ থেকে নিয়ে চলল। তিনি যখন লিহীর কাছে পৌঁছালেন তখন পলেষ্টীয়েরা জয়ধ্বনি করতে করতে তাঁর দিকে আসতে লাগল। তখন সদাপ্রভুর আত্মা পূর্ণ শক্তিতে তাঁর উপর আসলেন। তাতে তাঁর হাতের দড়িগুলো পুড়ে যাওয়া শনের মত হল এবং তাঁর হাতের বাঁধন খুলে পড়ে গেল। তখন তিনি সদ্য মরা গাধার একটা চোয়াল পেয়ে সেটা হাতে নিলেন এবং তা দিয়ে এক হাজার লোককে মেরে ফেললেন। শিম্‌শোন বললেন, “একটা গাধার চোয়াল দিয়ে তাদের করলাম গাদা, একটা গাধার চোয়ালে হাজার পড়ল মারা।” এই কথা বলা শেষ করে তিনি সেই চোয়ালটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। তিনি ঐ জায়গাটার নাম দিলেন রামৎ-লিহী (যার মানে “চোয়াল-পাহাড়”)। এর পর শিম্‌শোনের খুব পিপাসা পেল। তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, “তুমি তোমার দাসকে মহাজয় দান করেছ। এখন কি আমাকে পিপাসায় মরে এই সুন্নত-না-করানো লোকদের হাতে পড়তে হবে?” তখন ঈশ্বর লিহীতে একটা গর্ত খুলে দিলেন এবং তার মধ্য থেকে জল বের হয়ে আসল। সেই জল খাবার পর শিম্‌শোনের শক্তি ফিরে আসল আর তিনি যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। সেইজন্য ঐ ফোয়ারাটার নাম হল ঐন্‌-হক্কোরী (যার মানে “প্রার্থনাকারীর ফোয়ারা”)। ফোয়ারাটা এখনও লিহীতে আছে। পলেষ্টীয়দের সময় শিম্‌শোন বিশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিলেন। শিম্‌শোন একদিন গাজাতে গিয়ে একটা বেশ্যাকে দেখলেন এবং তার কাছে গেলেন। শিম্‌শোন সেখানে গেছেন শুনে ঘসার লোকেরা জায়গাটা ঘেরাও করে রাখল এবং সারা রাত শহরের ফটকের কাছে তাঁর জন্য ওৎ পেতে বসে রইল। রাতের বেলা তারা চুপচাপ রইল আর বলল, “সকাল হলে পর আমরা তাকে মেরে ফেলব।” কিন্তু শিম্‌শোন সেখানে কেবল মাঝরাত পর্যন্ত শুয়ে ছিলেন। তারপর উঠে তিনি হুড়কা সুদ্ধ শহরের ফটকের দু’টা খুঁটি ও দরজা উপ্‌ড়ে ফেললেন। সেগুলো তিনি তাঁর কাঁধের উপর তুলে নিয়ে হিব্রোণের সামনের পাহাড়ের উপরে গেলেন। পরে সোরেক উপত্যকার একটি স্ত্রীলোকের উপর শিম্‌শোনের মন পড়ল। তার নাম ছিল দলীলা। পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তারা সেই স্ত্রীলোকের কাছে গিয়ে বললেন, “তুমি শিম্‌শোনের এই মহাশক্তির গোপন কথাটা আর কিভাবে আমরা তাকে ধরে এনে বেঁধে কষ্ট দিতে পারি তা তার কাছ থেকে ফুসলিয়ে জেনে নাও। তাতে আমরা প্রত্যেকে তোমাকে তেরো কেজি দু’শো গ্রাম করে রূপা দেব। এই কথা শুনে দলীলা শিম্‌শোনকে বলল, “তোমার এই মহাশক্তির গোপন কথাটা কি, আর কি দিয়ে তোমাকে বেঁধে কষ্ট দেওয়া যায় তা আমাকে বল।” উত্তরে শিম্‌শোন তাকে বললেন, “ধনুকের না-শুকানো সাতটা নতুন ছিলা দিয়ে যদি কেউ আমাকে বাঁধে তবে আমি অন্য যে কোন লোকের মতই দুর্বল হয়ে পড়ব।” পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তারা তখন দলীলাকে সেই রকম সাতটা নতুন ছিলা দিলেন। সে তা দিয়ে শিম্‌শোনকে বাঁধল। তখন কতগুলো লোক ওৎ পেতে তার ভিতরের ঘরে ছিল। দলীলা শিম্‌শোনকে ডেকে বলল, “শিম্‌শোন, পলেষ্টীয়েরা তোমাকে ধরতে এসেছে।” আগুনের ছোঁওয়ায় শনের দড়ি যেমন করে ছিঁড়ে যায় তেমনি করেই শিম্‌শোন ঐ ছিলাগুলো ছিঁড়ে ফেললেন। এইভাবে তাঁর শক্তির গোপন কথাটা গোপনই রয়ে গেল। তখন দলীলা শিম্‌শোনকে বলল, “তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ, আমার কাছে মিথ্যা কথা বলেছ। এবার তুমি আমাকে ঠিক করে বল কি দিয়ে তোমাকে বাঁধা যায়।” শিম্‌শোন বললেন, “কখনও ব্যবহার করা হয় নি এমন কয়েকটা নতুন দড়ি দিয়ে যদি আমাকে বাঁধা হয় তবে আমি অন্য যে কোন লোকের মতই দুর্বল হয়ে পড়ব।” দলীলা তখন কয়েকটা নতুন দড়ি দিয়ে শিম্‌শোনকে বাঁধল। তার ভিতরের ঘরে কতগুলো লোক ওৎ পেতে ছিল। দলীলা বলল, “শিম্‌শোন, পলেষ্টীয়েরা তোমাকে ধরতে এসেছে।” কিন্তু শিম্‌শোন সুতার মত করে তাঁর হাত থেকে দড়িগুলো ছিঁড়ে ফেললেন। দলীলা তখন শিম্‌শোনকে বলল, “তুমি এই পর্যন্ত আমার কাছে মিথ্যা কথা বলে আমাকে বোকা বানিয়েছ। কি দিয়ে তোমাকে বাঁধা যায় তা আমাকে ঠিক করে বল।” উত্তরে শিম্‌শোন বললেন, “আমার মাথার সাত গোছা চুল যদি তুমি তাঁতে বোনো তবে তা সম্ভব হবে।” তখন দলীলা তাঁর চুল তাঁতে বুনে গোঁজের সংগে আঁটকে রেখে তাঁকে বলল, “শিম্‌শোন, পলেষ্টীয়েরা তোমাকে ধরতে এসেছে।” তখন শিম্‌শোন ঘুম থেকে জেগে উঠে গোঁজ আর তাঁতটা উপ্‌ড়ে ফেললেন। এতে দলীলা তাঁকে বলল, “কেমন করে তুমি আমাকে বলতে পার যে, তুমি আমাকে ভালবাস? তোমার মন তো আমার উপরে নেই। এই নিয়ে তৃতীয়বার তুমি আমাকে বোকা বানালে। তোমার এই মহাশক্তির গোপন কথাটা আমাকে জানালে না।” এইভাবে দিনের পর দিন সে তার কথা দিয়ে তাঁকে এমনভাবে জ্বালাতে লাগল যে, তাঁর জীবনের উপর একটা বিরক্তি এসে গেল। কাজেই তিনি তাকে সব কথা খুলে বললেন। তিনি বললেন, “আমার মাথায় কখনও ক্ষুর দেওয়া হয় নি। জন্ম থেকেই আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে একজন নাসরীয়। আমার মাথা কামানো হলে আমার শক্তি আমাকে ছেড়ে যাবে। তাতে আমি অন্য যে কোন লোকের মতই দুর্বল হয়ে পড়ব।” দলীলা যখন বুঝল যে, তিনি তাকে সব কথা খুলে বলেছেন তখন সে পলেষ্টীয় শাসনকর্তাদের কাছে এই বলে খবর পাঠাল, “আপনারা আর একবার আসুন। সে আমাকে সব কথা খুলে বলেছে।” কাজেই পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তারা রূপা সংগে নিয়ে আসলেন। দলীলা শিম্‌শোনকে তার কোলে ঘুম পাড়াল এবং তাঁর সাত গোছা চুল কামিয়ে ফেলবার জন্য একজন লোককে ডাকল। এইভাবে সে তাঁকে কষ্টের মধ্যে ফেলল এবং তাঁর শক্তিও তাঁকে ছেড়ে গেল। তারপর দলীলা তাঁকে বলল, “শিম্‌শোন, পলেষ্টীয়েরা তোমাকে ধরতে এসেছে।” শিম্‌শোন ঘুম থেকে জেগে উঠে ভাবলেন যে, তিনি আগের মতই বাইরে যাবেন এবং ঝাড়া দিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নেবেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, সদাপ্রভু তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন। তখন পলেষ্টীয়েরা তাঁকে ধরে তাঁর চোখ দু’টা তুলে ফেলল এবং তাঁকে গাজাতে নিয়ে গেল। তারা তাঁকে ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বাঁধল এবং জেলখানার মধ্যে তাঁকে দিয়ে যাঁতা ঘুরাবার কাজ করাতে লাগল। কিন্তু তাঁর মাথার চুল কামিয়ে ফেলবার পর আবার তা গজাতে লাগল। এর পর পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তারা তাঁদের দেবতা দাগোনের কাছে একটা মস্ত বড় উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে আনন্দ করবার জন্য এক জায়গায় জড়ো হলেন। তাঁরা বললেন, “আমাদের দেবতা আমাদের শত্রু শিম্‌শোনকে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।” লোকেরা শিম্‌শোনকে দেখে এই কথা বলে তাদের দেবতার প্রশংসা করতে লাগল, “আমাদের দেবতা আমাদের হাতে আমাদের শত্রুকে তুলে দিয়েছেন; সে আমাদের জমি নষ্ট করেছে আর আমাদের অনেক লোককে মেরে ফেলেছে।” তারপর তারা আনন্দে মেতে উঠে এই বলে চিৎকার করল, “শিম্‌শোনকে বের করে আনা হোক; আমরা তামাশা দেখব।” কাজেই তারা জেলখানা থেকে শিম্‌শোনকে বের করে আনল আর শিম্‌শোন তাদের তামাশা দেখাতে লাগলেন। তারা শিম্‌শোনকে থামগুলোর মাঝখানে দাঁড় করাল। যে ছেলেটি তাঁর হাত ধরে ছিল শিম্‌শোন তাকে বললেন, “যে থামগুলোর উপর মন্দিরটা দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো আমাকে ছুঁতে দাও যাতে আমি সেখানে হেলান দিতে পারি।” সেই মন্দিরে অনেক পুরুষ ও স্ত্রীলোক জমা হয়েছিল, আর পলেষ্টীয়দের সমস্ত শাসনকর্তারাও সেখানে ছিলেন। ছাদের উপর থেকে প্রায় তিন হাজার পুরুষ ও স্ত্রীলোক শিম্‌শোনের তামাশা দেখছিল। তখন শিম্‌শোন সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, “হে প্রভু সদাপ্রভু, আমার কথা একবার মনে কর। হে ঈশ্বর, দয়া করে আর একটিবার মাত্র আমাকে শক্তি দাও যাতে আমার দু’টা চোখের জন্য একবারেই আমি পলেষ্টীয়দের উপর প্রতিশোধ নিতে পারি।” মাঝখানে যে দু’টা থামের উপর মন্দিরটা দাঁড়িয়ে ছিল শিম্‌শোন সেই দু’টা আঁকড়ে ধরলেন। তিনি ডান হাতটা একটা থামের উপর এবং বাঁ হাতটা অন্য থামের উপরে রেখে নিজের ভার থামগুলোর উপর দিলেন। তারপর তিনি চিৎকার করে বললেন, “পলেষ্টীয়দের সংগে আমারও মৃত্যু হোক!” এই বলে তিনি নীচু হয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে থাম দু’টা টান দিলেন। তাতে সব শাসনকর্তা ও ভিতরকার লোকদের উপর মন্দিরটা ভেংগে পড়ল। এইভাবে তিনি জীবিত থাকতে যত না লোক মেরে ফেলেছিলেন তার চেয়েও বেশী মারলেন তাঁর মৃত্যুর সময়ে। শিম্‌শোনের ভাইয়েরা এবং তাঁর বাবার পরিবারের সবাই তাঁর দেহটা নিয়ে যাবার জন্য আসল। তারা তাঁকে নিয়ে গিয়ে সরা ও ইষ্টায়োলের মাঝখানে তাঁর বাবা মানোহের কবরের মধ্যে কবর দিল। শিম্‌শোন বিশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিলেন। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় মীখা নামে একজন লোক ছিল। সে তার মাকে বলল, “তোমার যে তেরো কেজি দু’শো গ্রাম রূপা চুরি হয়ে গিয়েছিল এবং যার জন্য তোমাকে আমি অভিশাপ দিতে শুনেছি তা আমার কাছে আছে, আমিই তা নিয়েছিলাম।” তখন তার মা বলল, “বাবা, সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্বাদ করুন!” সেই তেরো কেজি দু’শো গ্রাম রূপা সে তার মাকে ফিরিয়ে দিল। তখন তার মা বলল, “এই রূপা আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করছি যাতে আমার ছেলে তা দিয়ে খোদাই করে একটা প্রতিমা এবং ছাঁচে ঢেলে আর একটা প্রতিমা তৈরী করে। কাজেই আমি এই রূপা তোমাকেই ফিরিয়ে দেব।” মীখা সেই রূপা তার মায়ের হাতে ফিরিয়ে দিলে পর তার মা প্রায় আড়াই কেজি রূপা নিয়ে স্বর্ণকারকে দিল। সে তা দিয়ে একটা মূর্তি ও একটা প্রতিমা তৈরী করে দিল, আর সেগুলো মীখার বাড়ীতেই রাখা হল। মীখার একটা মন্দির ছিল। সে একটা এফোদ ও কতগুলো দেবমূর্তি তৈরী করে তার একজন ছেলেকে পুরোহিত-পদে বহাল করল। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে তখনও কোন রাজা ছিল না। যে যা ভাল মনে করত তা-ই করত। সেই সময় যিহূদা এলাকার বৈৎলেহমের একজন লেবীয় যুবক যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকদের সংগে বাস করছিল। সে অন্য কোথাও থাকবার জায়গার খোঁজ করবার জন্য বৈৎলেহম ছেড়ে বের হল। যাত্রাপথে সে ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় মীখার বাড়ীতে গেল। মীখা তাকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি কোথা থেকে এসেছেন?” সে বলল, “আমি যিহূদা এলাকার বৈৎলেহমের একজন লেবীয়। আমি যেখানে থাকবার জায়গা পাব সেখানেই থাকব।” মীখা সেই লেবীয়কে তার কাজে বহাল করলে পর সে তার পুরোহিত হয়ে তার বাড়ীতেই থাকল। মীখা বলল, “একজন লেবীয় যখন আমার পুরোহিত হয়েছে তখন আমি জানি যে, সদাপ্রভু আমার মংগল করবেন।” সেই সময় ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে কোন রাজা ছিল না। ইস্রায়েলীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দান-গোষ্ঠীর লোকেরা তখনও কোন সম্পত্তি দখল করে নিতে পারে নি। কাজেই তারা বসবাস করবার উদ্দেশ্যে নিজেদের জন্য একটা জায়গার খোঁজ করছিল। সেইজন্য দানীয়েরা সরা ও ইষ্টায়োল থেকে তাদের পাঁচজন শক্তিশালী যোদ্ধাকে খোঁজ-খবর নেবার জন্য পাঠিয়ে দিল যাতে তারা দেশটা ভাল করে দেখে আসতে পারে। এই পাঁচজনকে তারা বলে দিল, “তোমরা দেশটার খোঁজ-খবর নিয়ে দেখে এস।” তাতে সেই লোকেরা ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় গিয়ে ঢুকল এবং রাতে মীখার বাড়ীর কাছে রইল। সেই সময় তারা সেই লেবীয় যুবকের গলার স্বর চিনতে পারল। সেইজন্য তারা ভিতরে ঢুকে তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তোমাকে এখানে কে এনেছে? এখানে তুমি কি করছ আর কেনই বা এখানে এসেছ?” সে বলল, “মীখা আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি আমাকে বেতন দিয়ে রেখেছেন এবং আমি তাঁর পুরোহিত।” তারা তাকে বলল, “দয়া করে তুমি ঈশ্বরের কাছ থেকে জেনে নাও আমাদের যাত্রা সফল হবে কি না।” উত্তরে পুরোহিত তাদের বলল, “তোমরা শান্তিতে যাও; সদাপ্রভুর ইচ্ছা অনুসারে তোমরা যাচ্ছ।” সেই পাঁচজন লোক তখন সেখান থেকে লয়ীশে গেল। তারা দেখল সেখানকার লোকেরা সীদোনীয়দের মত নির্ভয়ে, শান্তিতে এবং নিরাপদে বাস করছে। সেই জায়গায় এমন কেউ নেই যে, তাদের উপরে অত্যাচার করতে পারে। এছাড়া তারা সীদোনীয়দের থেকে অনেক দূরে বাস করছে এবং অন্য কারও সংগে তাদের কোন সম্বন্ধ নেই। সেই পাঁচজন যখন সরা ও ইষ্টায়োলে ফিরে আসল তখন তাদের লোকেরা তাদের জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা কি দেখলে?” উত্তরে তারা বলল, “আমরা যে জায়গা দেখে এসেছি তা চমৎকার। চল, আমরা তাদের আক্রমণ করি। তোমরা কি চুপ করে বসে থাকবে? সেখানে গিয়ে জায়গাটা দখল করে নিতে দেরি কোরো না। তোমরা সেখানে গেলে দেখতে পাবে যে, সেখানকার লোকেরা একটা মস্ত বড় জায়গায় নিরাপদে বাস করছে। ঈশ্বর তোমাদের হাতে জায়গাটা দিয়ে রেখেছেন। পৃথিবীর কোন জিনিসের অভাব সেখানে নেই।” এই কথা শুনে দান-গোষ্ঠীর ছ’শো লোক যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সরা আর ইষ্টায়োল থেকে যাত্রা করল। পথে তারা যিহূদা দেশের কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের কাছে ছাউনি ফেলল। সেইজন্য কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের পশ্চিম দিকটাকে আজও বলা হয় মহনে-দান (যার মানে “দানের ছাউনি”)। সেখান থেকে তারা ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় ঢুকে মীখার বাড়ীতে গেল। যে পাঁচজন লোক লয়ীশে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে এসেছিল তারা তাদের লোকদের বলল, “তোমরা কি জান যে, এই ঘরগুলোর একটাতে একখানা এফোদ, কতগুলো দেবমূর্তি, একটা খোদাই করা মূর্তি ও একটা ছাঁচে ঢালা প্রতিমা আছে? এখন তোমাদের কি করতে হবে তা তোমরা ভেবে দেখ।” এই কথা শুনে তারা মীখার বাড়ীর সেই লেবীয় যুবকের ঘরে গেল এবং তার ভাল-মন্দের খবরাখবর নিল। দান-গোষ্ঠীর সেই ছ’শো লোক যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়ীতে ঢুকবার পথে গিয়ে দাঁড়াল। সেই পুরোহিতও সেই ছ’শো লোকের সংগে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন দেশটার খোঁজ-খবর যারা নিয়ে এসেছিল সেই পাঁচজন লোক ভিতরে ঢুকে খোদাই করা মূর্তিটা, এফোদটা, দেবমূর্তিগুলো এবং ছাঁচে ঢালা প্রতিমাটা নিয়ে নিল। এই লোকেরা যখন মীখার ঘর থেকে সেগুলো নিয়ে আসছিল তখন সেই পুরোহিত তাদের বলল, “তোমরা এ কি করছ?” উত্তরে তারা তাকে বলল, “চুপ, মুখে হাত চাপা দিয়ে তুমি আমাদের সংগে এস; আমাদের পুরোহিত হয়ে পিতার মত হও। একজন লোকের পরিবারের পুরোহিত হওয়ার চেয়ে কি ইস্রায়েলীয়দের একটা গোষ্ঠীর পুরোহিত হওয়া ভাল নয়?” এই কথা শুনে সেই পুরোহিত খুব খুশী হল। সে নিজেই সেই এফোদ, দেবমূর্তিগুলো এবং খোদাই করা মূর্তিটা নিয়ে সেই লোকদের সংগে গেল। লোকেরা তাদের ছোট ছেলেমেয়ে, পশুপাল এবং তাদের অন্যান্য জিনিসপত্র দলের সামনের দিকে রেখে সেখান থেকে চলে গেল। মীখার বাড়ী থেকে তারা বেশ কিছু দূরে গেলে পর মীখার প্রতিবেশীরা একসংগে জড়ো হল। তারপর তারা গিয়ে দান-গোষ্ঠীর লোকদের নাগাল পেল। তারা দান-গোষ্ঠীর লোকদের পিছনে পিছনে চেঁচাতে লাগল। তখন দান-গোষ্ঠীর লোকেরা পিছন ফিরে মীখাকে বলল, “তোমার কি অসুবিধা হচ্ছে যে, তুমি যুদ্ধ করবার জন্য তোমার লোকদের জড়ো করেছ?” উত্তরে মীখা বলল, “তোমরা তো আমার তৈরী করা প্রতিমাগুলো এবং আমার পুরোহিতকে নিয়ে চলে এসেছ। এর পর আমার আর কি রইল? তোমরা কেমন করে বলতে পারছ যে, আমার কি অসুবিধা হচ্ছে?” উত্তরে দান-গোষ্ঠীর লোকেরা বলল, “তুমি আর কথা বোলো না। এখানে কতগুলো বদমেজাজী লোক আছে যারা তোমার কথা শুনে তোমাদের আক্রমণ করে বসবে আর তাতে তুমি ও তোমার পরিবারের লোকেরা মারা পড়বে।” এই বলে দান-গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের নিজেদের পথ ধরে চলল। মীখা দেখল যে, তার চেয়ে তাদের জোর বেশী। সেইজন্য সে ঘুরে নিজের বাড়ীতে ফিরে গেল। মীখার তৈরী সব মূর্তি এবং তার পুরোহিতকে নিয়ে তারা লয়ীশে গেল। সেখানকার শান্তিতে ও নিরাপদে থাকা লোকদের তারা আক্রমণ করে মেরে ফেলল এবং তাদের শহরটা পুড়িয়ে দিল। লয়ীশের লোকদের রক্ষা করবার মত কেউ ছিল না, কারণ তাদের শহরটা সীদোন থেকে অনেক দূরে ছিল এবং অন্য কোন লোকদের সংগে তাদের সম্বন্ধ ছিল না। তাদের শহরটা ছিল বৈৎ-রহোব শহরের কাছে একটা উপত্যকায়। দান-গোষ্ঠীর লোকেরা শহরটা আবার তৈরী করে নিয়ে সেখানে বাস করতে লাগল। শহরটার আগের নাম লয়ীশ হলেও তারা তাদের পূর্বপুরুষের নাম অনুসারে তার নাম রাখল দান। দান ছিলেন ইস্রায়েলের ছেলে। দান-গোষ্ঠীর লোকেরা সেখানে নিজেদের জন্য সেই খোদাই করা প্রতিমাটা স্থাপন করল। দেশের লোকেরা বন্দীদশায় না যাওয়া পর্যন্ত দান-গোষ্ঠীর লোকদের জন্য যোনাথন ও তার বংশধরেরা পুরোহিতের কাজ করত। যোনাথন ছিল গের্শোম বংশের আর গের্শোম ছিল মোশির ছেলে। শীলোতে যতকাল ঈশ্বরের ঘরটা রইল ততকাল পর্যন্ত দান-গোষ্ঠীর লোকেরা মীখার তৈরী সেই খোদাই করা প্রতিমাটা নিজেদের জন্য রেখে দিল। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যখন কোন রাজা ছিল না তখন ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার ভিতরে একজন লেবীয় বাস করত। সে যিহূদা এলাকার বৈৎলেহম গ্রামের একজন মেয়েকে উপস্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিল। মেয়েটির বাবা তাকে সেখানে থাকবার জন্য অনুরোধ করল। তাতে সে তার শ্বশুর বাড়ীতে তিন দিন থাকল এবং খাওয়া-দাওয়া করল। চতুর্থ দিনে তারা খুব সকালে উঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল কিন্তু তার শ্বশুর তাকে বলল, “আগে খাওয়া-দাওয়া কর, তারপর যেয়ো।” কাজেই তারা দু’জনে খাওয়া-দাওয়া করবার জন্য বসল। মেয়েটির বাবা বলল, “আজ রাতটা থাক এবং একটু আমোদ-প্রমোদ কর।” সে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেও তার শ্বশুর যখন তাকে অনুরোধ করল তখন সে সেই রাতটাও সেখানে থাকল। পঞ্চম দিনের ভোরবেলা সে যখন যাবার জন্য ঘুম থেকে উঠল তখন মেয়েটির বাবা তাকে বলল, “খাওয়া-দাওয়া কর, আর বিকাল পর্যন্ত থেকে যাও।” কাজেই তারা দু’জনে খাওয়া-দাওয়া করল। তারপর যখন সেই লোকটি তার উপস্ত্রী এবং চাকরকে নিয়ে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হল তখন তার শ্বশুর বলল, “দেখ, এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, রাতটা এখানেই কাটাও; বেলা তো প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখানেই থাক এবং আমোদ-প্রমোদ কর। কাল খুব ভোরে উঠে তোমার বাড়ীর পথে রওনা হয়ে যেয়ো।” উত্তরে তার মনিব তাকে বলল, “না, যারা ইস্রায়েলীয় নয় তাদের শহরে আমরা যাব না। আমরা বরং এগিয়ে গিয়ে গিবিয়াতে যাব।” সে আরও বলল, “চল, আমরা গিবিয়াতে কিম্বা রামাতে পৌঁছাবার চেষ্টা করি এবং রাতটা ঐ শহর দু’টার একটাতে কাটাই।” কাজেই তারা চলতেই থাকল। বিন্যামীন এলাকার গিবিয়ার কাছে পৌঁছাতেই সূর্য ডুবে গেল। রাতটা কাটাবার জন্য তখন তারা পথ ছেড়ে গিবিয়াতে গেল আর শহর-চকে গিয়ে বসল, কিন্তু রাত কাটাবার জন্য কেউ নিজের বাড়ীতে তাদের ডেকে নিল না। সেই দিন সন্ধ্যাবেলা ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার একজন বুড়ো লোক তার ক্ষেতের কাজের পর গিবিয়া শহরে ঢুকল। সে গিবিয়াতে বাস করত, কিন্তু সেখানকার লোকেরা ছিল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোক। শহর-চকে সেই পথিককে দেখে বুড়ো লোকটি জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কোথায় যাবে আর কোথা থেকেই বা এসেছ?” উত্তরে সে বলল, “আমরা যিহূদার বৈৎলেহম থেকে এসেছি আর ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার ভিতরে যাব। আমার বাড়ী সেখানেই। আমি যিহূদার বৈৎলেহমে গিয়েছিলাম আর এখন আমি সদাপ্রভুর ঘরে যাচ্ছি, কিন্তু কেউ আমাকে তার বাড়ীতে ডেকে নিচ্ছে না। আমাদের গাধার জন্য খড় ও ভূষি আমাদের কাছে আছে এবং আমার জন্য ও আপনার এই দাসীর জন্য এবং আমাদের সংগেকার এই যুবকটির জন্য রুটি এবং আংগুর-রসও আছে। আপনার দাসদের আর কিছুরই দরকার নেই।” তখন সেই বুড়ো লোকটি বলল, “তোমার শান্তি হোক। তোমার যা কিছু দরকার তার ভার আমার উপর রইল। কিন্তু রাতটা তোমরা কিছুতেই এই চকে কাটায়ো না।” এই বলে বুড়ো লোকটি তার বাড়ীতে তাদের নিয়ে গেল এবং তাদের গাধাগুলোকে খেতে দিল। তারা পা ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করল। এইভাবে যখন তারা আরামে সময় কাটাচ্ছিল তখন শহরের কয়েকজন দুষ্ট লোক এসে বাড়ীটা ঘেরাও করল। তারা দরজায় ঘা মারতে মারতে বাড়ীর কর্তা সেই বুড়ো লোকটিকে বলল, “যে লোকটি তোমার বাড়ীতে এসেছে তাকে বের করে দাও। আমরা তার সংগে ব্যভিচার করব।” তখন বাড়ীর কর্তা বাইরে বের হয়ে তাদের বলল, “না না, আমার ভাইয়েরা; মিনতি করি, এমন জঘন্য কাজ তোমরা কোরো না। ঐ লোকটি আমার অতিথি; এই খারাপ কাজ তোমরা কোরো না। আমার কুমারী মেয়ে এবং লোকটির উপস্ত্রী এখানে রয়েছে। আমি এখনই তাদের তোমাদের কাছে বের করে আনছি। তোমরা তাদের ইজ্জত নষ্ট কর এবং তোমাদের যা ইচ্ছা তা-ই তাদের প্রতি কর, কিন্তু এই লোকের উপর তোমরা এই খারাপ কাজ কোরো না।” তবুও তারা তার কথা শুনতে রাজী হল না। তখন সেই লোকটি তার উপস্ত্রীকে ধরে বাইরে তাদের কাছে বের করে দিল। তারা সারারাত ধরে জোর করে তার সংগে ব্যভিচার করল এবং তার দেহের উপর অত্যাচার করল। তারপর তারা ভোরের দিকে তাকে ছেড়ে দিল। অন্ধকার যখন কেটে যাচ্ছিল তখন সেই স্ত্রীলোকটি ফিরে গিয়ে তার স্বামী যেখানে ছিল সেই বুড়ো লোকের বাড়ীর দরজার সামনে পড়ে গেল। সূর্য না ওঠা পর্যন্ত সে সেখানেই পড়ে রইল। সকালবেলায় তার স্বামী উঠে যাত্রা করবার জন্য যখন ঘরের দরজা খুলে বের হল তখন দেখতে পেল যে, তার উপস্ত্রী ঘরের দরজার চৌকাঠের উপর হাত রেখে পড়ে আছে। সে তাকে বলল, “ওঠো, চল আমরা যাই,” কিন্তু কোন উত্তর সে পেল না। তখন লোকটি তাকে তার গাধার উপর তুলে নিয়ে বাড়ীর পথে রওনা হল। বাড়ী পৌঁছে সে একটা ছুরি নিয়ে তার হাড় দেখে দেখে তাকে কেটে বারোটা টুকরা করল এবং ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত এলাকায় সেগুলো পাঠিয়ে দিল। যারা তা দেখল তারা প্রত্যেকেই বলল, “ইস্রায়েলীয়েরা মিসর থেকে বের হয়ে আসবার দিন থেকে আজ পর্যন্ত এমন কাজ কখনও হয় নি আর দেখাও যায় নি। তোমরা এই বিষয় নিয়ে চিন্তা কর, পরামর্শ কর এবং কি করা উচিত তা বল।” এর পর গিলিয়দের ইস্রায়েলীয়েরা এবং দান থেকে বের্‌-শেবা পর্যন্ত সমস্ত জায়গার ইস্রায়েলীয়েরা সবাই বের হয়ে আসল এবং মিসপাতে সদাপ্রভুর কাছে জড়ো হল। তখন লেবি-গোষ্ঠীর ঐ লোকটি, অর্থাৎ মেরে ফেলা স্ত্রীলোকটির স্বামী বলল, “আমি ও আমার উপস্ত্রী রাত কাটাবার জন্য বিন্যামীন এলাকার গিবিয়াতে গিয়েছিলাম। রাতের বেলা গিবিয়ার লোকেরা আমার খোঁজে এসে বাড়ীটা ঘেরাও করল। তারা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু তার বদলে তারা আমার উপস্ত্রীকে নিয়ে জোর করে তার সংগে ব্যভিচার করল, আর তাতে সে মারা গেল। ইস্রায়েলের মধ্যে তারা এমন লমপটতা এবং খারাপ কাজ করেছে বলে আমি আমার উপস্ত্রীকে কেটে টুকরা টুকরা করে ইস্রায়েলীয়দের ভাগে পড়া প্রত্যেকটি জায়গায় একটা করে টুকরা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এখন হে ইস্রায়েলীয়েরা, আপনারা সকলে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে আপনাদের রায় দিন।” এতে সমস্ত লোক একসংগে দাঁড়িয়ে উঠে বলল, “আমরা কেউ বাড়ী যাব না; আমাদের মধ্যে একজনও ফিরে যাবে না। আমরা গুলিবাঁট করে গিবিয়ার লোকদের বিরুদ্ধে যাব। ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর প্রত্যেক একশো জন থেকে দশ, হাজার থেকে একশো এবং দশ হাজার থেকে এক হাজার জন লোক বেছে নেব। তারা গিয়ে সৈন্যদের জন্য খাবার-দাবার নিয়ে আসবে; আর আমরা বিন্যামীন এলাকার গিবিয়াতে গিয়ে ইস্রায়েল জাতির মধ্যে তারা যে সব জঘন্য কাজ করেছে তার উচিত শাস্তি দেব।” কাজেই ইস্রায়েলীয়দের বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকেরা সবাই একসংগে জড়ো হয়ে গিবিয়ার বিরুদ্ধে এক হয়ে দাঁড়াল। তারা বিন্যামীন এলাকার সব জায়গায় লোক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে পাঠাল, “তোমাদের মধ্যে এ কি জঘন্য কাজ করা হয়েছে? গিবিয়ার ঐ সব দুষ্ট লোকদের তোমরা আমাদের হাতে তুলে দাও যাতে আমরা তাদের মেরে ফেলে ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে এই জঘন্যতা দূর করে দিতে পারি।” কিন্তু বিন্যামীনীয়েরা তাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের কথায় কান দিল না। তারা ঐ সব ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য তাদের শহর ও গ্রামগুলো থেকে বের হয়ে গিবিয়াতে গিয়ে জড়ো হল। সেই দিনই তারা তাদের শহর ও গ্রামগুলো থেকে ছাব্বিশ হাজার সৈন্য জড়ো করল। এছাড়া তাদের সংগে ছিল গিবিয়ার সাতশো বাছাই করা সৈন্য। সমস্ত সৈন্যদের মধ্যে সাতশো বাঁহাতি দক্ষ লোক ছিল যারা চুল লক্ষ্য করে ফিংগা দিয়ে ঠিক চুলটির উপরেই পাথর মারতে পারত। বাকী ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের সংখ্যা ছিল চার লক্ষ। তারা সকলেই ছিল যুদ্ধে পাকা। তারা বৈথেলে গিয়ে ঈশ্বরের কাছ থেকে জানতে চাইল বিন্যামীনীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য তাদের মধ্যে কে আগে যাবে। উত্তরে সদাপ্রভু জানালেন যে, যিহূদা-গোষ্ঠী আগে যাবে। পরের দিন সকালে উঠে ইস্রায়েলীয়েরা গিবিয়ার কাছে ছাউনি ফেলল। তারপর তারা বিন্যামীনীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য বের হয়ে সেখানে তাদের বিরুদ্ধে সৈন্য সাজাল। বিন্যামীনীয়েরা গিবিয়া থেকে বের হয়ে আসল এবং সেই দিন বাইশ হাজার ইস্রায়েলীয়কে মেরে ফেলল। দ্বিতীয় দিনে তারা বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকদের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেল। এইবার বিন্যামীনীয়েরা তাদের বাধা দেবার জন্য গিবিয়া থেকে বের হয়ে এসে আরও আঠারো হাজার ইস্রায়েলীয়কে মেরে ফেলল। তারা সবাই ছিল তলোয়ারধারী সৈন্য। তখন ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত লোক বৈথেলে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে বসে কাঁদতে লাগল। তারা সেই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করল এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। তখন ইস্রায়েলীয়েরা গিবিয়ার চারপাশে সৈন্যদের লুকিয়ে রাখল। তৃতীয় দিনে বাকী সৈন্যেরা বিন্যামীনীয়দের সংগে যুদ্ধের জন্য আগের মত করেই গিবিয়ার কাছে সৈন্য সাজাল। ইস্রায়েলীয়দের বাধা দেবার জন্য বিন্যামীনীয়েরা বেরিয়ে এসে শহর থেকে দূরে গেল। তারা আগের মতই ইস্রায়েলীয়দের মেরে ফেলতে লাগল। তাতে মাঠের উপর এবং যে রাস্তা দু’টার একটা বৈথেলের দিকে এবং অন্যটা গিবিয়ার দিকে চলে গেছে তার উপর প্রায় ত্রিশজন লোক মারা পড়ল। এতে বিন্যামীনীয়েরা বলতে লাগল, “আমরা ওদের আগের মতই হারিয়ে দিচ্ছি,” আর ইস্রায়েলীয়েরা বলল, “এস, আমরা পিছু হটে গিয়ে শহরের কাছ থেকে ওদের সরিয়ে রাস্তার উপর নিয়ে যাই।” তারপর ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা তাদের জায়গা থেকে সরে গিয়ে বাল্‌-তামরে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। এদিকে ইস্রায়েলীয়দের লুকিয়ে থাকা সৈন্যেরা তাদের জায়গা, অর্থাৎ মারে-গেবা ছেড়ে বেরিয়ে আসল। তখন ইস্রায়েলীয়দের দশ হাজার বাছাই করা লোক গিবিয়ার সামনের দিকে আক্রমণ চালাল, আর তাতে ভীষণভাবে যুদ্ধ চলতে লাগল; কিন্তু বিন্যামীনীয়েরা বুঝতে পারল না যে, তারা প্রায় সর্বনাশের মুখে এসে পড়েছে। সদাপ্রভু সেই দিন ইস্রায়েলীয়দের কাছে বিন্যামীন-গোষ্ঠীকে হার মানালেন এবং তারা পঁচিশ হাজার একশো বিন্যামীনীয় লোককে মেরে ফেলল। তারা সবাই ছিল তলোয়ারধারী সৈন্য। এর পরে বিন্যামীনীয়েরা বুঝতে পারল যে, তারা হেরে গেছে। গিবিয়ার কাছে যে সৈন্যদের লুকিয়ে রাখা হয়েছিল তাদের উপর নির্ভর করেই ইস্রায়েলীয়েরা বিন্যামীনীয়দের সামনে হটে গিয়েছিল। সেই লুকিয়ে থাকা সৈন্যেরা গিবিয়ার উপর হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং শহরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার সমস্ত লোকদের মেরে ফেলল। কিন্তু তাদের শহর থেকে যখন থামের মত হয়ে ধূমা উঠতে লাগল তখন তারা ঘুরে দেখল যে, গোটা শহর থেকে ধূমা আকাশে উঠে যাচ্ছে। সেই সময়েই ইস্রায়েলীয়েরা ঘুরে দাঁড়াল আর তাতে বিন্যামীনীয়েরা খুব ভয় পেল। তারা বুঝতে পারল যে, তাদের উপর সর্বনাশ এসে পড়েছে। কাজেই তারা ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে মরু-এলাকার দিকে পালাতে লাগল, কিন্তু যুদ্ধ থেকে রেহাই পেল না। অন্যান্য ইস্রায়েলীয়েরা শহর ও গ্রাম থেকে বের হয়ে এসে সেখানেই তাদের মেরে ফেলল। তারা বিন্যামীনীয়দের তাড়া করে ঘিরে ফেলল এবং গিবিয়ার পূর্ব দিকে তাদের বিশ্রামের জায়গায় তাদের শেষ করে দিল। এতে আঠারো হাজার বিন্যামীনীয় মারা পড়ল; তারা সবাই ছিল শক্তিশালী যোদ্ধা। যখন বাকী বিন্যামীনীয়েরা ঘুরে মরু-এলাকার রিম্মোণ পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল তখন ইস্রায়েলীয়েরা পথের মধ্যেই তাদের পাঁচ হাজার লোককে মেরে ফেলল। তার পরেও তারা গিদোম পর্যন্ত বিন্যামীনীয়দের তাড়া করে নিয়ে গেল এবং আরও দু’হাজার লোককে মেরে ফেলল। সেই দিন মোট পঁচিশ হাজার বিন্যামীনীয় সৈন্য মারা পড়ল। তারা সবাই ছিল ভাল যোদ্ধা। কিন্তু বিন্যামীনীয়দের ছ’শো লোক ঘুরে মরু-এলাকার রিম্মোণ পাহাড়ে পালিয়ে গিয়ে চার মাস সেখানে রইল। এর মধ্যে ইস্রায়েলীয়েরা ফিরে বিন্যামীনীয়দের বাকী লোকদের সবাইকে মেরে ফেলল এবং শহর ও গ্রামের মধ্যে পশু আর অন্যান্য যাদের পেল সবাইকে শেষ করে দিল। তারা যে সব শহর ও গ্রামে গেল তার সবগুলোতেই আগুন লাগিয়ে দিল। ইস্রায়েলীয়েরা আগে মিসপাতে শপথ করে বলেছিল যে, তাদের মধ্যে কেউ বিন্যামীন-গোষ্ঠীর কোন লোকের সংগে মেয়ের বিয়ে দেবে না। পরের দিন ভোরবেলা লোকেরা একটা বেদী তৈরী করে পোড়ানো আর যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। মিসপাতে তারা এই বলে একটা কঠিন শপথ করেছিল যে, কেউ যদি মিসপাতে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত না হয় তবে তাকে নিশ্চয়ই মেরে ফেলা হবে। কাজেই তারা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, “ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত গোষ্ঠী থেকে কারা মিসপাতে সদাপ্রভুর সামনে যায় নি?” তারা তাদের ভাই বিন্যামীনীয়দের জন্য দুঃখ করে বলল, “ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে আজ একটা গোষ্ঠীকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু যারা রয়ে গেছে কিভাবে আমরা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করব? আমরা তো সদাপ্রভুর নামে শপথ করেছি যে, আমাদের কোন মেয়েকে তাদের সংগে বিয়ে দেব না।” তারা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করল, “ইস্রায়েলীয় গোষ্ঠীর মধ্যে কি এমন কোন লোক আছে, যে মিসপাতে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হয় নি?” তখন তারা জানতে পারল, যাবেশ-গিলিয়দ থেকে কেউই সেখানে যায় নি, কারণ লোক গণনা করবার সময় তারা দেখেছিল যে, যাবেশ-গিলিয়দের কোন লোকই সেখানে ছিল না। কাজেই তারা তাদের শক্তিশালী যোদ্ধাদের মধ্য থেকে বারো হাজার লোককে পাঠিয়ে দিল যেন তারা যাবেশ-গিলিয়দে গিয়ে ছোট ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীলোক সুদ্ধ সেখানকার সব লোকদের মেরে ফেলে। তারা বলল, “তোমরা প্রত্যেকটি পুরুষ এবং কুমারী নয় এমন প্রত্যেকটি স্ত্রীলোককে মেরে ফেলবে।” সেই যোদ্ধারা যাবেশ-গিলিয়দের বাসিন্দাদের মধ্যে চারশো যুবতী কুমারী মেয়ে পেল; তারা সেই মেয়েদের কনান দেশের শীলোর ছাউনিতে নিয়ে গেল। এর পর সেই জড়ো হওয়া ইস্রায়েলীয়েরা রিম্মোণ পাহাড়ে লোক পাঠিয়ে বিন্যামীনীয়দের সংগে কথা বলল এবং শান্তি ঘোষণা করল। এতে বিন্যামীনীয়েরা ফিরে আসল। যাবেশ-গিলিয়দের বাঁচিয়ে রাখা মেয়েদের সংগে তাদের বিয়ে দেওয়া হল, কিন্তু মেয়েরা সংখ্যায় কম পড়ে গেল। লোকেরা বিন্যামীন-গোষ্ঠীর জন্য দুঃখ করতে লাগল, কারণ সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটা ফাটল ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের বৃদ্ধ নেতারা বললেন, “বিন্যামীনীয় স্ত্রীলোকদের ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এখন যে পুরুষেরা বেঁচে রয়েছে তাদের বিয়ের জন্য আমরা কোথায় মেয়ে পাব? ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে যাতে একটা গোষ্ঠী মুছে না যায় সেইজন্য বেঁচে থাকা বিন্যামীনীয়দের বংশ রক্ষা করতে হবে। আমাদের মেয়েদের তো তাদের সংগে বিয়ে দিতে পারি না, কারণ আমরা শপথ করে বলেছি যে, কেউ যদি কোন বিন্যামীনীয়কে মেয়ে দেয় তবে সে অভিশপ্ত হবে।” তারপর তারা বলল, “প্রতি বছর শীলোতে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা উৎসব হয়।” শীলো শহরটা রয়েছে বৈথেলের উত্তর দিকের যে রাস্তাটা বৈথেল থেকে শিখিমের দিকে গেছে তার পূর্ব দিকে এবং লবোনার দক্ষিণে। তারা বিন্যামীনীয়দের এই পরামর্শ দিল, “তোমরা গিয়ে শীলোর আংগুর ক্ষেতে লুকিয়ে থাক এবং নজর রাখ। যখন সেখানকার মেয়েরা নাচে যোগ দেবার জন্য বেরিয়ে আসবে তখন তোমরা প্রত্যেকে আংগুর ক্ষেত থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়ে তাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নিয়ে বিন্যামীন এলাকায় চলে যাবে। যখন তাদের বাবা কিম্বা ভাইয়েরা আমাদের কাছে নালিশ করতে আসবে তখন আমরা তাদের বলব, ‘তোমরা এই সব মেয়েদের দান করে আমাদের পক্ষে তাদের প্রতি দয়া দেখাও। যুদ্ধের সময়ে আমরা তাদের জন্য যথেষ্ট মেয়ে পাই নি। এই ব্যাপারে তোমাদের কোন দোষ নেই, কারণ তোমরা নিজেরা তো তোমাদের মেয়েদের তাদের দাও নি।’ ” কাজেই বিন্যামীনীয়েরা তা-ই করল। মেয়েরা যখন নাচছিল তখন তারা প্রত্যেকে বিয়ে করবার জন্য একজন করে মেয়ে ধরে নিয়ে গেল। তারপর তারা তাদের নিজেদের জায়গায় ফিরে গিয়ে শহর ও গ্রামগুলোর ঘর-বাড়ী আবার তৈরী করে নিয়ে সেখানে বাস করতে লাগল। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা সেই জায়গা ছেড়ে যে যার গোষ্ঠী এবং বংশের জায়গায় নিজের সম্পত্তিতে চলে গেল। তখনও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে কোন রাজা ছিল না। যে যা ভাল মনে করত সে তা-ই করত। ॥ভব শাসনকর্তাদের শাসনকালে ইস্রায়েলীয়দের দেশে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। তখন যিহূদা দেশের বৈৎলেহম গ্রামের একজন লোক তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে কিছুকালের জন্য মোয়াব দেশে বাস করতে গিয়েছিল। লোকটির নাম ছিল ইলীমেলক। তার স্ত্রীর নাম নয়মী আর দুই ছেলের নাম মহলোন ও কিলিয়োন। তারা ছিল যিহূদা দেশের বৈৎলেহমের ইফ্রাথীয় লোক। তারা মোয়াব দেশে গিয়ে সেখানেই রয়ে গেল। পরে নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মারা গেল, আর তাতে বাকী রইল কেবল নয়মী ও তার দুই ছেলে। মোয়াব দেশে থাকতেই নয়মী শুনতে পেয়েছিল যে, সদাপ্রভু তাঁর লোকদের খাবারের ব্যবস্থা করে তাদের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। তাই সে তার দুই ছেলের বৌদের নিয়ে মোয়াব দেশ থেকে বাড়ী ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুত হল। তারা যেখানে থাকত সেখান থেকে দুই ছেলের বৌকে নিয়ে সে বের হল এবং যিহূদা দেশে ফিরে যাবার পথ ধরে চলতে লাগল। পরে নয়মী তার দুই ছেলের বৌকে বলল, “তোমরা নিজের নিজের মায়ের ঘরে ফিরে যাও। তোমরা যেমন তোমাদের মৃত স্বামী এবং আমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলে তেমনি সদাপ্রভুও যেন তোমাদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন। সদাপ্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করুন যেন তোমরা দু’জনেই আবার শান্তিতে স্বামীর ঘর করতে পার।” এই কথা বলে সে তাদের চুম্বন করল আর তারা জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। তারা বলল, “না, আমরা আপনার সংগে আপনার লোকদের কাছেই ফিরে যাব।” নয়মী বলল, “না, মা, তোমরা বাড়ী ফিরে যাও। তোমরা কেন আমার সংগে যাবে? আমার গর্ভে কি আর ছেলে হওয়ার আশা আছে যারা তোমাদের স্বামী হতে পারবে? মা, তোমরা বাড়ী ফিরে যাও। বিয়ে করবার বয়স আর আমার নেই। ধর, ছেলে হওয়ার আশা আছে মনে করে যদি আজ রাতেই আমি আমার স্বামীর কাছে যাই এবং আমার ছেলে হয়ও, তবে তারা বড় হওয়া পর্যন্ত কি তোমরা অপেক্ষা করবে? তাদের জন্য কি তোমরা বিয়ে না করে থাকবে? না, মা, না। তোমাদের চেয়ে আমার জীবন আরও অনেক তেতো, কারণ সদাপ্রভু আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।” এই কথা শুনে তারা আবার জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। তারপর অর্পা তার শাশুড়ীকে চুম্বন করে বিদায় নিল কিন্তু রূত তাকে ছেড়ে গেল না। তখন নয়মী বলল, “দেখ, তোমার জা তার নিজের লোকদের ও তার দেবতার কাছে ফিরে যাচ্ছে। তুমিও তার সাথে যাও।” কিন্তু রূত বলল, “আপনাকে ছেড়ে চলে যাবার জন্য আপনি আমাকে জোর করবেন না, কিম্বা আপনার সংগে যেতে আমাকে বারণ করবেন না। আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানে যাব আর আপনি যেখানে থাকবেন আমিও সেখানে থাকব। আপনার লোকেরাই হবে আমার লোক আর আপনার ঈশ্বরই হবেন আমার ঈশ্বর। আপনি যেখানে মরবেন আমিও সেখানে মরব আর সেখানেই যেন আমার কবর হয়। এক মৃত্যু ছাড়া আর অন্য কিছু যদি আমাদের আলাদা করে তবে সদাপ্রভু যেন আমাকে শাস্তি দেন এবং তা ভীষণভাবেই দেন।” নয়মী যখন বুঝতে পারল যে, রূত তার সংগে যাবার জন্য মন স্থির করে ফেলেছে তখন সে তাকে আর কিছু বলল না। এর পর সেই দু’জন চলতে লাগল এবং শেষে বৈৎলেহমে গিয়ে উপস্থিত হল। তারা বৈৎলেহমে উপস্থিত হলে পর সমস্ত গ্রামে একটা সাড়া পড়ে গেল। গ্রামের স্ত্রীলোকেরা বলল, “এ-ই কি সেই নয়মী?” নয়মী বলল, “আমাকে নয়মী (যার মানে ‘হাসি-খুশী’) বলে আর ডেকো না, বরং মারা (যার মানে ‘তেতো’) বলে ডাক, কারণ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার জীবনকে তেতো করে দিয়েছেন। আমি ভরা হাতে গিয়েছিলাম কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে এনেছেন। সদাপ্রভু যখন আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যখন আমাকে কষ্টে ফেলেছেন তখন তোমরা আমাকে কেন আর নয়মী বলে ডাকছ?” এইভাবে নয়মী তার ছেলের বৌ মোয়াবীয় রূতকে সংগে নিয়ে মোয়াব দেশ থেকে ফিরে আসল। যব কাটবার সময় শুরু হতেই তারা বৈৎলেহমে এসে পৌঁছেছিল। স্বামীর দিক থেকে নয়মীর একজন সম্মানিত ধনী আত্মীয় ছিলেন। তিনি ইলীমেলকের বংশের লোক। তাঁর নাম ছিল বোয়স। একদিন মোয়াবীয় রূত নয়মীকে বলল, “আমি ক্ষেতে গিয়ে পড়ে-থাকা শস্যের শীষ কুড়িয়ে আনব কি? যে আমাকে দয়া করে তা কুড়িয়ে নিতে দেবে আমি তারই পিছনে পিছনে থাকব।” নয়মী তাকে বলল, “হ্যাঁ মা, যাও।” তখন রূত বের হয়ে গেল এবং ক্ষেতে গিয়ে যারা ফসল কাটছিল তাদের পিছনে পিছনে শীষ কুড়াতে লাগল; আর এমন হল যে, সে যেখানে শীষ কুড়াচ্ছিল সেটা ছিল ইলীমেলকের বংশের বোয়সের ক্ষেত। এমন সময় বোয়স বৈৎলেহম থেকে আসলেন এবং যারা ফসল কাটছিল তাদের বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের সংগে থাকুন।” তারাও ফিরে তাঁকে বলল, “সদাপ্রভু আপনাকে আশীর্বাদ করুন।” বোয়সের যে চাকর ফসল কাটবার কাজ তদারক করছিল বোয়স তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই যুবতী মেয়েটি কার?” যে লোকটি কাজের তদারক করছিল উত্তরে সে বলল, “মোয়াব দেশ থেকে নয়মীর সংগে যে মোয়াবীয় স্ত্রীলোকটি এসেছে এ সে-ই। স্ত্রীলোকটি বলেছিল, যারা ফসল কাটছে তাদের পিছনে পিছনে আঁটির মধ্যে মধ্যে পড়ে-থাকা শীষ যেন তাকে দয়া করে কুড়িয়ে নিতে দেওয়া হয়। এইভাবে সে সকাল থেকে এই পর্যন্ত এখানে আছে; মাত্র অল্পক্ষণ সে চালার নীচে বিশ্রাম করেছে।” তখন বোয়স রূতকে বললেন, “এই যে বাছা, শোন। তুমি এই ক্ষেত ছেড়ে অন্য কোন ক্ষেতে শীষ কুড়াতে না গিয়ে আমার কাজের মেয়েদের সংগে এখানেই থেকো। জমির কোন্‌খানে লোকেরা ফসল কাটছে তা খেয়াল রেখে তুমি কাজের মেয়েদের পিছনে পিছনে সেখানে যেয়ো। আমি লোকদের বলে দিয়েছি যেন তারা তোমাকে জ্বালাতন না করে। আমার লোকেরা যে জল তুলেছে, পিপাসা পেলে তুমি সেখান থেকে জল খেয়ো।” এই কথা শুনে রূত মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “আপনি দয়া করে আমার প্রতি এত মনোযোগ দিচ্ছেন, এটা কেমন করে হল? আমি তো একজন বিদেশিনী।” উত্তরে বোয়স বললেন, “তোমার স্বামীর মৃত্যুর পর তুমি তোমার শাশুড়ীর জন্য যা করেছ তা সবই আমি শুনেছি, আর এ-ও শুনেছি যে, তোমার মা-বাবা এবং জন্মস্থান ছেড়ে তোমার অজানা একটা জাতির মধ্যে তুমি বাস করতে এসেছ। এইজন্য সদাপ্রভু যেন তোমাকে আশীর্বাদ করেন। ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু, যাঁর ডানার নীচে তুমি আশ্রয় নিতে এসেছ, তিনি যেন তোমাকে তোমার পাওনা পুরোপুরিই দেন।” তখন রূত বলল, “হে আমার প্রভু, আপনি যেন আমাকে দয়ার চোখে দেখেন। আপনার এই দাসীর কাছে উৎসাহের কথা বলে আপনি আমাকে সান্ত্বনা দিলেন, যদিও আপনার এই সব কাজের মেয়েদের কারও সংগে দাঁড়াবার যোগ্যতাও আমার নেই।” খাবার সময় হলে বোয়স তাকে বললেন, “তুমি এখানে এসে এখান থেকে রুটি নিয়ে সিরকায় ডুবিয়ে খাও।” যারা ফসল কাটছিল রূত তাদের কাছে গিয়ে বসলে পর বোয়স হাত বাড়িয়ে তাকে কিছু ভাজা শস্য দিলেন। সে পেট ভরে খাবার পরেও কিছু বাকী রইল। তারপর সে যখন শীষ কুড়াতে উঠল তখন বোয়স তাঁর লোকদের বলে দিলেন, “যদি সে আঁটিগুলোর মাঝখান থেকেও কুড়িয়ে নেয় তবুও তাকে তোমরা গালাগালি দেবে না। তোমরা বরং ফসল কাটবার সময় কিছু কিছু শীষ টেনে বের করে রেখে যেয়ো আর তাকে তা কুড়াতে দিয়ো, ধমক দিয়ো না।” রূত সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই ক্ষেতে শীষ কুড়াল। যে যব সে কুড়িয়েছিল তা ঝেড়ে মাপলে পর তার ওজন হল প্রায় আঠারো কেজি। সে সেই যব নিয়ে গ্রামে ফিরে গেল। সে যে পরিমাণ শীষ কুড়িয়েছিল তার শাশুড়ী তা দেখলেন। পেট ভরে খাবার পর বাকী যে খাবার সে রেখে দিয়েছিল তা বের করে তার শাশুড়ীকে দিল। তার শাশুড়ী তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি আজ কোথায় কুড়িয়েছ, কোথায় কাজ করেছ? যিনি তোমার প্রতি নজর রেখেছেন ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করুন।” তখন রূত কার জমিতে কাজ করেছে তা তার শাশুড়ীকে জানাল। সে বলল, “আমি যাঁর ক্ষেতে কাজ করেছি তাঁর নাম বোয়স।” এই কথা শুনে নয়মী তার ছেলের বৌকে বলল, “সদাপ্রভু, যিনি জীবিত বা মৃত কারও প্রতি অবিশ্বস্ত হন না তিনি তাঁকে আশীর্বাদ করুন।” সে আরও বলল, “ঐ লোকটি আমাদের নিকট আত্মীয়। যে জ্ঞাতিদের উপর আমার স্বামীর সমস্ত কিছু ছাড়িয়ে নেবার ও রক্ষা করবার দায়িত্ব রয়েছে উনি তাঁদের মধ্যে একজন।” মোয়াবীয় রূত বলল, “তিনি আমাকে আরও বলেছেন যে, তাঁর সমস্ত ফসল কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি যেন তাঁর লোকদের সংগে সংগেই থাকি।” তখন নয়মী তার ছেলের বৌকে বলল, “মা, অন্য কোন ক্ষেতে যেন তোমাকে কেউ জ্বালাতন করতে না পারে সেইজন্য তাঁর কাজের মেয়েদের সংগে সংগে থাকাই তোমার পক্ষে ভাল।” কাজেই যতদিন না যব আর গম কাটা শেষ হল ততদিন রূত বোয়সের কাজের মেয়েদের সংগে সংগে থেকে শীষ কুড়াবার কাজ করল। সে তার শাশুড়ীর সংগেই বাস করত। কিছুদিন পরে নয়মী রূতকে বলল, “মা, তোমার মংগলের জন্য আমাকে একটা ব্যবস্থা করতে হবে যেন তুমি সংসারী হতে পার। যাঁর কাজের মেয়েদের সংগে তুমি এতদিন কাজ করেছ সেই বোয়স আমাদের আত্মীয়। আজ রাতে তিনি তাঁর খামারে যব ঝাড়বেন। তুমি স্নান করে সুগন্ধি তেল মাখ ও ভাল কাপড়-চোপড় পরে সেই খামারে যাও। তবে তাঁর খাওয়া-দাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি যেন তোমাকে দেখতে না পান। তিনি যখন শুতে যাবেন তখন তুমি তাঁর শোবার জায়গাটা দেখে রাখবে। পরে সেখানে গিয়ে তুমি তাঁর পায়ের উপর থেকে চাদরটা সরিয়ে সেখানে শুয়ে পড়বে। কি করতে হবে তখন তিনি তা তোমাকে বলে দেবেন।” উত্তরে রূত বলল, “আপনি যা বললেন, তা সবই আমি করব।” পরে সে খামারে গিয়ে তার শাশুড়ী তাকে যা করতে বলেছিল তা সবই করল। খাওয়া-দাওয়ার পরে বোয়সের মনটা যখন খুশী হয়ে উঠল তখন তিনি গাদা-করা শস্যের এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। রূত চুপি চুপি গিয়ে তাঁর পায়ের উপর থেকে চাদরটা সরিয়ে সেখানে শুয়ে পড়ল। মাঝ রাতে বোয়স হঠাৎ চম্‌কে উঠে পাশ ফিরলেন। তিনি দেখলেন একজন স্ত্রীলোক তাঁর পায়ের কাছে শুয়ে আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কে তুমি?” রূত বলল, “আমি আপনার দাসী রূত। আপনি আপনার চাদরের নীচে আপনার এই দাসীকে আশ্রয় দিন, কারণ আপনি আমার দায়িত্ব বহনকারী আত্মীয়দের মধ্যে একজন।” উত্তরে বোয়স বললেন, “সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্বাদ করুন। এই পর্যন্ত তুমি যে বিশ্বস্ততা দেখিয়েছ তার চেয়ে এইবার আরও বেশী বিশ্বস্ততা দেখালে, কারণ ধনী-গরীব কোন যুবকের পিছনেই তুমি যাও নি। তুমি ভয় পেয়ো না, তুমি যা চাইবে আমি তোমার জন্য তা-ই করব। আমার গ্রামের সকলেই জানে যে, তুমি একজন ভাল মেয়ে। আমি তোমার দায়িত্ব বহনকারী আত্মীয়দের একজন বটে, কিন্তু আমার চেয়েও নিকট আত্মীয় আর একজন আছেন। তুমি আজ রাতটা এখানেই থাক। কাল সকালে যদি তিনি তোমার দায়িত্ব বহন করতে রাজী হন তবে ভালই; তিনিই তা করুন। কিন্তু যদি তিনি রাজী না হন তবে আমি জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমি তোমার দায়িত্ব বহন করব। সকাল না হওয়া পর্যন্ত তুমি এখানেই শুয়ে থাক।” কাজেই রূত ভোর রাত পর্যন্ত তাঁর পায়ের কাছে শুয়ে রইল। বোয়স বলেছিলেন, একজন স্ত্রীলোক যে খামারে এসেছিল তা যেন কেউ জানতে না পারে। সেইজন্য একে অন্যকে চিনবার মত আলো হওয়ার আগেই রূত উঠে পড়ল। সে আরও বলল, “তিনি আমাকে এই ছয় খুঁচি যব দিলেন আর বললেন, ‘খালি হাতে তোমার শাশুড়ীর কাছে ফিরে যেয়ো না।’ ” এই কথা শুনে নয়মী বলল, “মা, ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখ। আজই এর একটা ব্যবস্থা না করে তিনি থামবেন না।” বোয়স গ্রামের ফটকে গিয়ে বসলেন। দায়িত্ব বহনকারী যে জ্ঞাতির কথা বোয়স বলেছিলেন তিনি তখন সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। বোয়স তাঁকে ডেকে বললেন, “ভাই, এখানে এসে বসুন।” লোকটি তখন সেখানে গিয়ে বসলেন। বোয়স তারপর গ্রামের দশজন বৃদ্ধ নেতাকে ডেকে বললেন, “আপনারা এখানে বসুন।” তখন তাঁরাও বসলেন। বোয়স সেই জ্ঞাতিকে বললেন, “নয়মী মোয়াব দেশ থেকে ফিরে এসে আমাদের ভাই ইলীমেলকের জমিটুকু বিক্রি করতে চাইছেন। তাই আমি ভাবলাম ব্যাপারটা আপনাকে জানানো দরকার। এখানে উপস্থিত লোকদের সামনে এবং আমার জাতির বৃদ্ধ নেতাদের সামনে আপনিই সেটা কিনুন। আপনি যদি জমিটা ছাড়িয়ে নিতে চান তবে নিন। কিন্তু আপনি যদি তা না চান তবে আমাকে বলুন, কারণ তা ছাড়িয়ে নেবার অধিকার প্রথমে আপনার, আর আপনার পরে আমার।” তখন সেই জ্ঞাতি বললেন, “ঠিক আছে, আমিই ওটা ছাড়িয়ে নেব।” এতে বোয়স বললেন, “আপনি যেদিন সেই জমিটা নয়মীর কাছ থেকে কিনবেন সেই দিন মৃত লোকটির সম্পত্তির সংগে তাঁর নাম রক্ষা করবার জন্য মোয়াবীয় বিধবা রূতকেও আপনাকে গ্রহণ করতে হবে।” এই কথা শুনে সেই জ্ঞাতি বললেন, “আমি তা করতে পারব না, কারণ আমার নিজের সম্পত্তি নিয়ে তখন আমি বিপদে পড়ে যাব। আমি যখন তা ছাড়িয়ে নিতে পারছি না তখন আপনিই নিন।” ছাড়িয়ে নেওয়া এবং সম্পত্তি বেচা-কেনার সমস্ত ব্যাপারটা আইনগত করবার জন্য আগেকার দিনে ইস্রায়েলীয়দের দেশের নিয়ম ছিল এই: একজন তার জুতা খুলে অন্যকে দিত, আর এইভাবে তাদের কাজ-কারবার আইনের আওতায় আনা হত। কাজেই সেই জ্ঞাতি বোয়সকে বললেন, “আপনিই ওটা কিনে নিন।” এই বলে তিনি তাঁর জুতা খুললেন। তখন বোয়স বৃদ্ধ নেতাদের এবং সেখানকার সবাইকে বললেন, “আমি যে নয়মীর কাছ থেকে ইলীমেলক, কিলিয়োন ও মহলোনের সমস্ত সম্পত্তি কিনে নিলাম আজ আপনারা তার সাক্ষী হলেন। মৃত লোকের সম্পত্তি ও নাম যাতে রক্ষা পায় সেইজন্য আমি মহলোনের বিধবা স্ত্রী মোয়াবীয় রূতকেও স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করলাম। এতে বংশের মধ্য থেকে এবং গ্রামের মধ্য থেকে মৃত লোকটির নাম মুছে যাবে না। আপনারা আজ এই সমস্ত বিষয়ের সাক্ষী হলেন।” তখন যাঁরা ফটকে বসে ছিলেন তাঁরা আর সেই বৃদ্ধ নেতারা সবাই বললেন, “হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী হলাম। যে স্ত্রীলোকটি আপনার ঘরে যাচ্ছে সদাপ্রভু করুন যেন সে রাহেল ও লেয়ার মত হয়, যাঁরা ইস্রায়েল জাতি গড়ে তুলেছিলেন। ইফ্রাথায় আপনি ধন লাভ করুন এবং বৈৎলেহমে সবাই আপনার সুনাম করুক। এই স্ত্রীলোকের গর্ভে সদাপ্রভু আপনাকে যে সন্তান দেবেন তার মধ্য দিয়ে আপনার বংশ যেন তামরের গর্ভের যিহূদার ছেলে পেরসের বংশের মত হয়।” এর পর বোয়স রূতকে বিয়ে করলেন এবং রূত তাঁর স্ত্রী হল। বোয়স তার কাছে গেলে পর সদাপ্রভু রূতের গর্ভে সন্তান দিলেন এবং তার একটি ছেলে হল। এতে অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা নয়মীকে বলল, “ধন্য সদাপ্রভু, কারণ তিনি তোমাকে আজ একজন দায়িত্ব বহনকারী আত্মীয় দিলেন। ইস্রায়েলীয়দের দেশের মধ্যে সবাই তার সুনাম করুক। ছেলেটি যেন তোমাকে সতেজ করে তোলে এবং তোমার বুড়ো বয়সে তোমার দেখাশোনা করে, কারণ তোমার ছেলের বৌ, যে তোমাকে ভালবাসে এবং যে তোমার কাছে সাত ছেলের চেয়েও বেশী, তারই গর্ভে ছেলেটির জন্ম হয়েছে।” তখন নয়মী ছেলেটিকে কোলে নিল এবং তার দেখাশোনা করতে লাগল। প্রতিবেশী স্ত্রীলোকেরা বলল, “নয়মীর একটা ছেলে হয়েছে।” তারা ছেলেটির নাম রাখল ওবেদ। ওবেদ ছিলেন যিশয়ের বাবা আর যিশয় ছিলেন দায়ূদের বাবা। এই হল পেরসের বংশের তালিকা: পেরসের ছেলে হিষ্রোণ; হিষ্রোণের ছেলে রাম; রামের ছেলে অম্মীনাদব; অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন; নহশোনের ছেলে সল্‌মোন; সল্‌মোনের ছেলে বোয়স; বোয়সের ছেলে ওবেদ; ওবেদের ছেলে যিশয় এবং যিশয়ের ছেলে দায়ূদ। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় রামাথয়িম-সোফীম শহরে ইল্‌কানা নামে একজন লোক ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকদের সংগে বাস করতেন। তাঁর বাবার নাম ছিল যিরোহম। যিরোহম ছিলেন ইলীহূর ছেলে, ইলীহূ ছিলেন তোহের ছেলে এবং তোহ ছিলেন সুফের ছেলে। ইল্‌কানার দুইজন স্ত্রী ছিল; একজনের নাম হান্না আর অন্যজনের নাম পনিন্না। পনিন্নার ছেলেমেয়ে হয়েছিল কিন্তু হান্নার কোন ছেলেমেয়ে হয় নি। ইল্‌কানা প্রত্যেক বছর তাঁর শহর থেকে শীলোতে যেতেন। তিনি সেখানে গিয়ে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উপাসনা ও তাঁর উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ করতেন। তখন সেখানে পুরোহিত এলির দুই ছেলে সদাপ্রভুর পুরোহিত ছিল। তাদের নাম ছিল হফ্‌নি ও পীনহস। পশু-উৎসর্গের দিনে ইল্‌কানা তাঁর স্ত্রী পনিন্না ও তাঁর সব ছেলেমেয়েদের তাঁর উৎসর্গ করা মাংসের একটা করে ভাগ দিতেন। কিন্তু হান্নাকে দিতেন দুই ভাগ, কারণ তিনি হান্নাকে ভালবাসতেন। সদাপ্রভু কিন্তু হান্নাকে বন্ধ্যা করে রেখেছিলেন। সদাপ্রভু তা করেছিলেন বলে তাঁর সতীন তাঁকে খোঁচা মেরে কথা বলে তাঁর মন অস্থির করে তুলত। বছরের পর বছর এইভাবেই চলছিল। হান্না যখনই সদাপ্রভুর ঘরে যেতেন পনিন্না তাঁকে ঐভাবে খোঁচা মেরে কথা বলত। তাই তিনি কান্নাকাটি করতেন আর কিছুই খেতেন না। এ দেখে তাঁর স্বামী ইল্‌কানা তাঁকে বলতেন, “হান্না, তুমি কেন কাঁদছ? কেন কিছু খাচ্ছ না? কেন তোমার এত দুঃখ? আমি কি তোমার কাছে দশটা ছেলের চেয়েও বেশী নই?” এক সময় শীলোতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে হান্না উঠে উপাসনা-ঘরে গেলেন। পুরোহিত এলি তখন সদাপ্রভুর সেই ঘরের দরজার কাছে একটা আসনে বসে ছিলেন। মনের কষ্টে হান্না সদাপ্রভুর কাছে খুব কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করতে লাগলেন। তিনি সদাপ্রভুর কাছে মানত করে বললেন, “হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তুমি যদি তোমার এই দাসীর মনের কষ্টের দিকে চেয়ে দেখ এবং আমার প্রতি মনোযোগ দাও আর আমাকে ভুলে না গিয়ে যদি তোমার এই দাসীকে একটা ছেলে দাও তবে সারা জীবনের জন্য আমি তাকে তোমার উদ্দেশে দান করব। তার মাথায় কখনো ক্ষুর লাগানো হবে না।” হান্না অনেকক্ষণ ধরে সদাপ্রভুর কাছে যখন প্রার্থনা করছিলেন তখন এলি তাঁর মুখের দিকে লক্ষ্য করছিলেন। হান্না মনে মনে প্রার্থনা করছিলেন বলে তাঁর ঠোঁট নড়ছিল কিন্তু গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল না। সেইজন্য এলি ভাবলেন স্ত্রীলোকটি মাতাল হয়েছে। তিনি তাঁকে বললেন, “তুমি মদ খেয়ে আর কতক্ষণ নিজেকে মাতাল করে রাখবে? মদ আর খেয়ো না।” উত্তরে হান্না তাঁকে বললেন, “হে আমার প্রভু, তা নয়। আমি বড় দুঃখিনী; আমি আংগুর-রসও খাই নি, মদও খাই নি। আমি সদাপ্রভুর সামনে আমার অন্তর ঢেলে দিচ্ছিলাম। আপনার এই দাসীকে আপনি একজন বাজে স্ত্রীলোক মনে করবেন না। গভীর দুশ্চিন্তা ও মনের কষ্টে আমি এতক্ষণ প্রার্থনা করছিলাম।” তখন এলি বললেন, “তোমার মন শান্ত হোক। ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের কাছে তুমি যা চেয়েছ তা যেন তিনি তোমাকে দেন।” হান্না বললেন, “এই দাসীর উপর আপনার দয়া থাকুক।” এই বলে তিনি চলে গেলেন এবং খাওয়া-দাওয়া করলেন। তাঁর মুখে আর দুঃখের ছায়া রইল না। পরের দিন ভোরে তাঁরা ঘুম থেকে উঠে উপাসনা-ঘরে গিয়ে সদাপ্রভুর উপাসনা করলেন। তারপর তাঁরা রামায় তাঁদের নিজেদের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। পরে ইল্‌কানা তাঁর স্ত্রী হান্নার সংগে মিলিত হলেন আর সদাপ্রভুও হান্নার দিকে মনোযোগ দিলেন। তাতে হান্না গর্ভবতী হলেন এবং সময় হলে তাঁর একটি ছেলে হল। “আমি সদাপ্রভুর কাছ থেকে তাকে চেয়ে নিয়েছি,” এই বলে হান্না ছেলেটির নাম রাখলেন শমূয়েল। পরে ইল্‌কানা প্রতি বছরের মত আবার তাঁর পরিবারের সবাইকে নিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ ও মানত পূরণ করতে গেলেন, কিন্তু হান্না গেলেন না। তিনি তাঁর স্বামীকে বললেন, “ছেলেটিকে বুকের দুধ ছাড়ানোর পর আমি তাকে নিয়ে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হব যাতে সে সারা জীবন সেখানেই থাকতে পারে।” তাঁর স্বামী ইল্‌কানা তাঁকে বললেন, “তোমার যা ভাল মনে হয় তা-ই কর। ছেলেটিকে দুধ না ছাড়ানো পর্যন্ত তুমি এখানে থাক। সদাপ্রভু যেন তাঁর প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন।” কাজেই হান্না বাড়ীতেই রয়ে গেলেন এবং ছেলেটিকে দুধ না ছাড়ানো পর্যন্ত তার দেখাশোনা করতে থাকলেন। ছেলেটিকে দুধ ছাড়ানোর পর হান্না তিনটা ষাঁড়, আঠারো কেজি ময়দা, চামড়ার থলিতে করে এক থলি আংগুর-রস এবং ছেলেটিকে সংগে নিয়ে শীলোতে সদাপ্রভুর ঘরে গেলেন। ছেলেটি তখনও ছোট ছিল। তাঁরা সেখানে একটা ষাঁড় কেটে উৎসর্গ করলেন এবং ছেলেটিকে এলির কাছে নিয়ে গেলেন। হান্না বললেন, “হে আমার প্রভু, আপনাকে সাক্ষী রেখে আমি শপথ করে বলছি, আমিই সেই স্ত্রীলোক, যে এখানে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছিল। আমি এই ছেলেটিকে চেয়েই প্রার্থনা করেছিলাম, আর সদাপ্রভুর কাছে যা চেয়েছিলাম তা তিনি আমাকে দিয়েছেন। সেইজন্য ছেলেটিকে আমিও সদাপ্রভুকে দিলাম। সে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন সদাপ্রভুরই থাকবে।” পরে তাঁরা সেখানে মাথা নীচু করে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাঁদের ভক্তি জানালেন। তারপর হান্না প্রার্থনা করে বললেন, “সদাপ্রভুকে নিয়েই আমি আনন্দ করি; সদাপ্রভুই আমাকে জয় দান করেছেন। আমার শত্রুদের সামনেই আমি মুখ খুলে আনন্দ-গান করছি; তুমি আমাকে শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করেছ বলে আমি আনন্দিতা। সদাপ্রভুর মত পবিত্র আর কেউ নেই, কারণ তুমি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই; আমাদের ঈশ্বরের মত আশ্রয়-পাহাড় আর নেই। তোমরা আর গর্বের কথা বোলো না, অহংকারের কথা তোমাদের মুখ থেকে বের না হোক; কারণ সদাপ্রভু এমন ঈশ্বর যিনি সব কিছু জানেন, আর তিনিই কাজের ওজন করেন। শক্তিমানদের ধনুক ভেংগে গেছে, কিন্তু যারা পড়ে গিয়েছিল তারা শক্তিশালী হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। যাদের পেট ভরা ছিল তারা খাবারের জন্য এখন অন্যের কাজ করছে; কিন্তু যাদের পেটে খিদে ছিল তাদের খিদে মিটে গেছে। যে বন্ধ্যা ছিল সে সাত সন্তানের মা হয়েছে, কিন্তু যার অনেক সন্তান সে এখন দুর্বল, সন্তানের জন্ম দিতে পারে না। সদাপ্রভুই মারেন আর সদাপ্রভুই বাঁচান; তিনিই মৃতস্থানে নামান আর তিনিই সেখান থেকে তোলেন। সদাপ্রভুই মানুষকে ধনী বা গরীব করেন; হ্যাঁ, তিনিই নীচু করেন আর তিনিই উঁচু করেন। তিনি গরীবকে ধুলার মধ্য থেকে তোলেন, আর অভাবীকে তোলেন ছাইয়ের গাদা থেকে। উঁচু পদের লোকদের সংগে তিনি তাদের বসতে দেন, আর দেন সম্মানের সিংহাসন; কারণ পৃথিবীর থামগুলো সদাপ্রভুরই, তিনি সেগুলোর উপরে জগতকে স্থাপন করেছেন। তিনি তাঁর ভক্তদের উছোট খাওয়া থেকে রক্ষা করেন, কিন্তু দুষ্ট লোকেরা অন্ধকারে ধ্বংস হয়ে যায়; কারণ নিজের শক্তিতে কোন মানুষ জয়ী হয় না। সদাপ্রভুর শত্রুরা চুরমার হয়ে যাবে, তিনি আকাশে তাদের বিরুদ্ধে গর্জন করবেন; পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত তিনি লোকদের বিচার করবেন। তিনি তাঁর রাজাকে শক্তি দেবেন আর তাঁর অভিষেক করা লোককে জয়ী করবেন।” এর পর ইল্‌কানা রামায় তাঁর নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন, কিন্তু শমূয়েল পুরোহিত এলির অধীনে থেকে সদাপ্রভুর সেবা করতে লাগলেন। এলির ছেলেরা ছিল ভীষণ দুষ্ট। সদাপ্রভুর প্রতি তাদের কোন মনোযোগ ছিল না। পুরোহিত হিসাবে লোকদের সংগে তাদের ব্যবহার ছিল এই রকম: কোন লোকের পশু-উৎসর্গের মাংস যখন সিদ্ধ হতে থাকত তখন পুরোহিতের চাকর তিন কাঁটাযুক্ত একটা বড় চামচ নিয়ে আসত। সেটা দিয়ে সে হাঁড়িতে কিম্বা গামলাতে কিম্বা কড়াইতে কিম্বা পাত্রে খোঁচা মারত এবং সেই কাঁটাতে যে মাংস উঠে আসত তা সবই পুরোহিত নিজের জন্য নিয়ে যেত। ইস্রায়েলীয়দের যত লোক শীলোতে আসত তাদের প্রতি তারা এই রকম ব্যবহারই করত। তা ছাড়া, চর্বি আগুনে দেবার আগেই পুরোহিতের চাকর এসে যে লোকটি পশু-উৎসর্গ করছে তাকে বলত, “আগুনে ঝল্‌সাবার জন্য পুরোহিতকে মাংস দাও। তিনি তোমার কাছ থেকে সিদ্ধ করা মাংস নেবেন না, কাঁচা মাংসই নেবেন।” সেই লোকটি যদি বলত, “প্রথমে চর্বি পোড়াতে হবে, তারপর তুমি তোমার ইচ্ছামত মাংস নিয়ে যেয়ো,” তবে সে বলত, “না, এখনই তা দিতে হবে; না দিলে আমি জোর করে নিয়ে যাব।” সদাপ্রভুর চোখে সেই যুবক পুরোহিতদের পাপ ভীষণ হয়ে দেখা দিল, কারণ তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই সব উৎসর্গের জিনিসগুলো তুচ্ছ করত। ছোট ছেলে শমূয়েল কিন্তু মসীনা সুতার এফোদ পরে সদাপ্রভুর সেবার কাজ করতে থাকলেন। প্রত্যেকবার স্বামীর সংগে বাৎসরিক পশু-উৎসর্গ করতে যাওয়ার সময় শমূয়েলের মা একটা ছোট জামা তৈরী করে তাঁর জন্য নিয়ে যেতেন। তখন ইল্‌কানা ও তাঁর স্ত্রীকে আশীর্বাদ করে এলি বলতেন, “এই স্ত্রীলোকটি সদাপ্রভুর কাছে যে সন্তানকে দিয়েছে তার বদলে সদাপ্রভু এই স্ত্রীর গর্ভে তোমাকে আরও সন্তান দিন।” এর পরে তাঁরা তাঁদের বাড়ী চলে যেতেন। সদাপ্রভু সত্যিই হান্নাকে দয়া করলেন। তাতে হান্না গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর মোট তিন ছেলে ও দুই মেয়ে হল। এদিকে ছোট শমূয়েল সদাপ্রভুর কাছে কাছে থেকে বড় হয়ে উঠতে লাগলেন। এলি তখন খুব বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। ইস্রায়েলীয়দের প্রতি তাঁর ছেলেদের সমস্ত ব্যবহারের কথা এবং যে সব স্ত্রীলোকেরা সেবা-কাজের জন্য মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে আসত তাদের সংগে তাদের ব্যভিচারের কথা তাঁর কানে গেল। তিনি তাদের বললেন, “তোমরা এ কি করছ? তোমাদের খারাপ কাজের কথা আমি এই সব লোকদের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি। না, না, আমার ছেলেরা, সদাপ্রভুর লোকদের যে সব কথা বলাবলি করতে শুনছি তা ভাল নয়। মানুষ যদি মানুষের বিরুদ্ধে পাপ করে তবে ঈশ্বর তার মীমাংসা করতে পারেন; কিন্তু মানুষ যদি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করে তবে তার জন্য কে মিনতি করতে পারবে?” কিন্তু তারা তাদের বাবার কথায় কান দিল না, কারণ সদাপ্রভু তাদের মেরে ফেলবেন বলে ঠিক করেছিলেন। ছোট ছেলে শমূয়েল বড় হয়ে উঠতে লাগলেন এবং সদাপ্রভু ও মানুষের কাছে ভালবাসা পেতে থাকলেন। একদিন ঈশ্বরের একজন লোক এলির কাছে এসে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমার পূর্বপুরুষেরা যখন মিসরে ফরৌণের অধীন ছিল তখন তাদের কাছে কি আমি নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করি নি? ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্য থেকে কি আমি লেবীয়দের বেছে নিই নি, যাতে তারা আমার পুরোহিত হয়ে আমার বেদীর কাছে গিয়ে ধূপ জ্বালাতে পারে এবং এফোদ পরে আমার সামনে আসতে পারে? ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত পোড়ানো-উৎসর্গের ভাগ কি আমি তাদের ও তাদের বংশকে দিই নি? তাহলে আমার ঘরে যে সব উৎসর্গ করতে আমি আদেশ দিয়েছি তোমরা কেন সেই সব পশু-উৎসর্গ এবং অন্যান্য উৎসর্গগুলোর অসম্মান করছ? আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের উৎসর্গগুলোর সবচেয়ে ভাল অংশটুকু দিয়ে নিজেদের মোটাসোটা করে কেন তুমি আমার চেয়ে তোমার ছেলেদের বড় করে দেখছ?’ “সেইজন্য ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি অবশ্য বলেছিলাম যে, তোমার ও তোমার পূর্বপুরুষদের বংশের লোকেরা চিরকাল আমার সেবার কাজ করবে’; কিন্তু এখন সদাপ্রভু বলছেন, ‘তা আর চলবে না। যারা আমাকে সম্মান করবে আমি তাদের সম্মান করব এবং যারা আমাকে তুচ্ছ করবে তাদের তুচ্ছ করা হবে। দেখ, সময় আসছে যখন আমি তোমার বংশের ও তোমার পূর্বপুরুষদের বংশের লোকদের শক্তি এমনভাবে শেষ করে দেব যে, তোমার বংশে একটি লোকও বুড়ো বয়স পর্যন্ত বাঁচবে না। তুমি আমার ঘরের দুর্দশা দেখতে পাবে। ইস্রায়েলীয়দের যত মংগলই আমি করি না কেন তোমার বংশের কেউ কখনও বুড়ো বয়স পর্যন্ত বাঁচবে না। তবুও তোমার বংশের সবাইকে আমি আমার বেদী থেকে ছেঁটে ফেলব না যাতে তাদের দরুন চোখের জলে তোমার দেখবার শক্তি নষ্ট হয় এবং তুমি অন্তরে যন্ত্রণা পাও; আর তোমার বংশের সমস্ত লোক যুবা বয়সেই মারা যাবে। “ ॥ঃযং ‘তোমার দুই ছেলে হফ্‌নি ও পীনহস একই দিনে মারা যাবে, আর সেটাই হবে তোমার জন্য একটা চিহ্ন। কিন্তু আমি আমার জন্য একজন বিশ্বস্ত পুরোহিত দাঁড় করাব, যে আমার মন বুঝে আমার ইচ্ছামত কাজ করবে। আমি তার বংশকে স্থায়ী করব এবং সে সব সময় আমার অভিষেক-করা লোকের সেবা করবে। তোমার বংশের যারা বেঁচে থাকবে তারা এক টুকরা রূপা ও একটা রুটির জন্য তার কাছে এসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করবে এবং একটি পুরোহিত-পদ পাবার জন্য অনুরোধ করবে যাতে সে কিছু খেতে পায়।’ ” ছোট ছেলে শমূয়েল এলির অধীনে থেকে সদাপ্রভুর সেবা-কাজ করতে লাগলেন। সেই সময় সদাপ্রভুর বাণী খুব কমই শোনা যেত এবং তাঁর দর্শনও যখন-তখন পাওয়া যেত না। সেই সময় এলির চোখ এত খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি প্রায় দেখতেই পেতেন না। একদিন রাতের বেলা এলি তাঁর নিজের জায়গায় শুয়ে ছিলেন। ঈশ্বরের উদ্দেশে যে বাতি জ্বালানো থাকত তা তখনও নিভে যায় নি। শমূয়েল সদাপ্রভুর ঘরের মধ্যে শুয়ে ছিলেন। সেই ঘরে ঈশ্বরের সাক্ষ্য-সিন্দুকটি ছিল। এমন সময় সদাপ্রভু শমূয়েলকে ডাকলেন। শমূয়েল উত্তর দিলেন, “এই যে আমি।” এই বলে তিনি দৌড়ে এলির কাছে গিয়ে বললেন, “এই যে আমি, আপনি আমাকে ডেকেছেন?” এলি বললেন, “না, আমি তো তোমাকে ডাকি নি। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়।” শমূয়েল তখন গিয়ে শুয়ে পড়লেন। সদাপ্রভু আবার শমূয়েলকে ডাকলেন আর শমূয়েল উঠে এলির কাছে গিয়ে বললেন, “এই তো আমি; আপনি কি আমাকে ডেকেছেন?” এলি বললেন, “না বাবা, আমি তোমাকে ডাকি নি। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়।” তখনও শমূয়েল সদাপ্রভুকে চিনতেন না; সদাপ্রভু তখনও তাঁর কাছে কথা বলেন নি। সদাপ্রভু তৃতীয়বার শমূয়েলকে ডাকলেন আর শমূয়েল উঠে এলির কাছে গিয়ে বললেন, “এই যে আমি, আপনি তো আমাকে ডেকেছেন।” তখন এলি বুঝতে পারলেন সদাপ্রভুই ছেলেটিকে ডাকছিলেন। সেইজন্য এলি শমূয়েলকে বললেন, “তুমি গিয়ে শুয়ে পড়। এবার যদি তিনি তোমাকে ডাকেন তবে বলবে, ‘বলুন সদাপ্রভু, আপনার দাস শুনছে।’ ” তখন শমূয়েল গিয়ে তাঁর নিজের জায়গায় শুয়ে পড়লেন। তারপর সদাপ্রভু এসে সেখানে দাঁড়ালেন এবং অন্য বারের মত ডাকলেন, “শমূয়েল, শমূয়েল।” তখন শমূয়েল বললেন, “বলুন, আপনার দাস শুনছে।” সদাপ্রভু শমূয়েলকে বললেন, “দেখ, আমি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে এমন কিছু করতে যাচ্ছি যার কথা শুনে সবাই শিউরে উঠবে। আমি এলির বংশের বিষয়ে যা কিছু বলেছি তার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবই এলির বিরুদ্ধে পূর্ণ করব। আমি তাকে বলেছি, অন্যায়ের দরুন তার বংশকে আমি চিরকালের জন্য শাস্তি দিতে যাচ্ছি। সে জানত যে, তার ছেলেরা নিজেদের মাথায় অভিশাপ ডেকে আনছে, অথচ সে তাদের সংশোধনের চেষ্টা করে নি। সেইজন্য এলির বংশের বিষয় আমি শপথ করে বলছি যে, পশু-উৎসর্গ কিম্বা অন্য কোন উৎসর্গের দ্বারা তার বংশের অন্যায় কখনই ঢাকা দেওয়া যাবে না।” এর পর শমূয়েল সকাল পর্যন্ত শুয়ে রইলেন, তারপর উঠে সদাপ্রভুর ঘরের দরজাগুলো খুললেন; কিন্তু এই দর্শনের কথা এলির কাছে বলতে তাঁর সাহস হল না। তখন এলি তাঁকে বললেন, “বাবা শমূয়েল।” শমূয়েল উত্তর দিলেন, “এই যে আমি।” এলি জিজ্ঞাসা করলেন, “ঈশ্বর তোমাকে কি বলেছেন? আমার কাছ থেকে তুমি তা লুকায়ো না। তিনি যা বলেছেন তার কিছু যদি তুমি আমার কাছ থেকে লুকাও তবে তিনি যেন তোমাকে ভীষণ শাস্তি দেন।” তখন শমূয়েল এলিকে সব কথা খুলে বললেন, কিছুই লুকালেন না। তা শুনে এলি বললেন, “তিনি সদাপ্রভু; তাঁর কাছে যা ভাল মনে হয় তিনি তা-ই করুন।” এইভাবে শমূয়েল বেড়ে উঠতে লাগলেন আর সদাপ্রভু তাঁর সংগে রইলেন এবং নবী হিসাবে বলা তাঁর কোন কথাই সদাপ্রভু বিফল হতে দিতেন না। তাতে দান এলাকা থেকে বের্‌-শেবা পর্যন্ত সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা জানতে পারল যে, শমূয়েল সদাপ্রভুর নবী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছেন। তখন থেকে সদাপ্রভু শীলোতে আবার দর্শন দিতে লাগলেন, কারণ শীলোতে তিনি তাঁর বাক্যের মধ্য দিয়ে শমূয়েলের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতেন; আর শমূয়েল যা বলতেন তা সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে পৌঁছে যেত। একবার ইস্রায়েলীয়েরা পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বের হল। তারা এবন্‌-এষরে ছাউনি ফেলল আর পলেষ্টীয়েরা ছাউনি ফেলল অফেকে। পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য সৈন্য সাজাল। যুদ্ধটা যখন বেশ ছড়িয়ে পড়ল তখন ইস্রায়েলীয়েরা পলেষ্টীয়দের কাছে হেরে গেল। যুদ্ধের মাঠে পলেষ্টীয়েরা প্রায় চার হাজার ইস্রায়েলীয় সৈন্য মেরে ফেলল। ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা তাদের ছাউনিতে ফিরে গেলে পর তাদের বৃদ্ধ নেতারা বললেন, “পলেষ্টীয়দের কাছে কেন সদাপ্রভু আজ আমাদের পরাজিত করলেন? চল, আমরা সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুকটি শীলো থেকে নিয়ে আসি যাতে সদাপ্রভু আমাদের সংগে থেকে শত্রুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেন।” কাজেই তারা শীলোতে লোক পাঠিয়ে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, যিনি দুই করূবের মাঝখানে থাকেন, তাঁর সাক্ষ্য-সিন্দুকটি আনিয়ে নিল। ঈশ্বরের সেই সাক্ষ্য-সিন্দুকের সংগে ছিল এলির দুই ছেলে, হফ্‌নি ও পীনহস। সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুকটি ছাউনিতে আনা হলে পর ইস্রায়েলীয়েরা সবাই এমন জোরে চিৎকার করে উঠল যে, দেশের সব জায়গায় সাড়া পড়ে গেল। পলেষ্টীয়েরা এই আওয়াজ শুনে জিজ্ঞাসা করল, “ইব্রীয়দের ছাউনিতে এ কিসের চিৎকার হচ্ছে?” তারা জানতে পারল যে, সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুকটি ইস্রায়েলীয়দের ছাউনিতে এসেছে। এই কথা জানতে পেরে তারা ভয় পেয়ে বলল, “ঈশ্বর ওদের ছাউনিতে এসেছেন।” তারা আরও বলল, “সর্বনাশ! এর আগে তো কখনও এমন হয় নি। হায়, হায়, এই শক্তিশালী দেবতাদের হাত থেকে কে আমাদের রক্ষা করবে? মরু-এলাকায় নানা রকমের মড়ক দিয়ে এই সব দেবতারাই তো মিসরীয়দের মেরে ফেলেছিলেন। হে পলেষ্টীয়েরা, তোমরা সাহসে বুক বাঁধো। তোমরা যে পুরুষ তা দেখিয়ে দাও। তা না হলে ঐ ইব্রীয়েরা যেমন তোমাদের দাস হয়েছিল তেমনি তোমরাও তাদের দাস হয়ে থাকবে। তোমরা যে পুরুষ তা দেখিয়ে দাও এবং যুদ্ধ কর।” তখন পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করল আর ইস্রায়েলীয়েরা হেরে গিয়ে নিজের নিজের বাড়ীতে পালিয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়দের অনেককে মেরে ফেলা হল; তাদের ত্রিশ হাজার পদাতিক সৈন্য মারা পড়ল। ঈশ্বরের সাক্ষ্য-সিন্দুকটি শত্রুরা নিয়ে গেল। এলির দুই ছেলে হফ্‌নি আর পীনহস মারা পড়ল। সেই দিন বিন্যামীন-গোষ্ঠীর একজন লোক সৈন্যদলের মধ্য থেকে বের হয়ে দৌড়ে শীলোতে গিয়ে উপস্থিত হল। তার কাপড়-চোপড় ছেঁড়া ছিল এবং সে মাথায় মাটি দিয়েছিল। সে যখন শীলোতে পৌঁছাল তখন এলি পথের পাশে তাঁর আসনে বসে ছিলেন। তিনি ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছিলেন, কারণ ঈশ্বরের সিন্দুকের জন্য তাঁর বুক কাঁপছিল। লোকটি শহরে ঢুকে যখন সব কথা লোকদের জানাল তখন তাদের মধ্যে কান্নাকাটি পড়ে গেল। এলি সেই কান্নাকাটি শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই গোলমাল কিসের?” তখন লোকটি তাড়াতাড়ি গিয়ে এলিকে খবর দিল। এলির বয়স তখন আটানব্বই বছর। তিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বলে দেখতে পেতেন না। লোকটি এলিকে বলল, “আমি সৈন্যদল থেকে এসেছি, আজই পালিয়ে এসেছি।” এলি জিজ্ঞাসা করলেন, “বাবা, খবর কি?” যে লোকটি সংবাদ এনেছিল সে তখন বলল, “পলেষ্টীয়দের সামনে থেকে ইস্রায়েলীয়েরা পালিয়ে গেছে আর অনেক লোক মারা পড়েছে। আপনার দুই ছেলে হফ্‌নি আর পীনহসও মারা গেছে এবং ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুরা নিয়ে গেছে।” ঈশ্বরের সাক্ষ্য-সিন্দুকের কথা শোনামাত্র এলি ফটকের পাশে তাঁর আসন থেকে পিছন দিকে পড়ে গেলেন। তাতে তাঁর ঘাড় ভেংগে গিয়ে তিনি মারা গেলেন, কারণ তিনি বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর শরীর ভারী ছিল। তিনি চল্লিশ বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিলেন। এলির ছেলের বৌ, অর্থাৎ পীনহসের স্ত্রী তখন গর্ভবতী ছিল এবং তার প্রসবের সময়ও ঘনিয়ে এসেছিল। ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের হাতে গেছে এবং তার শ্বশুর ও স্বামী মারা গেছেন শুনে হঠাৎ তার প্রসব-বেদনা শুরু হল। হাঁটুর উপর বসে সে প্রসব করল। সে তখন মারা যাচ্ছিল বলে যে স্ত্রীলোকেরা তার কাছে ছিল তারা তাকে বলল, “ভয় নেই, তোমার ছেলে হয়েছে।” কিন্তু সে এর কোন উত্তরও দিল না এবং কোন কথায় মনোযোগও দিল না। ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের হাতে যাবার দরুন এবং তার স্বামী ও শ্বশুর মারা যাবার দরুন সে বলল, “ইস্রায়েলীয়দের গৌরব চলে গেল।” সেইজন্য সে ছেলেটির নাম রাখল ঈখাবোদ। সে বলল, “ইস্রায়েলীয়দের গৌরব চলে গেছে, কারণ ঈশ্বরের সিন্দুক শত্রুদের হাতে গেছে।” পলেষ্টীয়েরা ঈশ্বরের সিন্দুকটি এবন্‌-এষর থেকে অস্‌দোদ শহরে নিয়ে গেল। ঈশ্বরের সিন্দুকটি তারা দাগোন দেবতার মন্দিরে নিয়ে গিয়ে দাগোনের মূর্তির পাশেই রাখল। পরদিন অস্‌দোদের লোকেরা খুব ভোরে উঠে দেখল দাগোন সদাপ্রভুর সিন্দুকের সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে আছে। তারা তখন দাগোনের মূর্তিটা তুলে নিয়ে তার জায়গায় রাখল। তার পরের দিনও তারা খুব ভোরে উঠে দেখল দাগোন সদাপ্রভুর সিন্দুকের সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে আছে। তার মাথা ও হাত ভেংগে দরজার চৌকাঠের উপর পড়ে আছে, কেবল দেহের বাকী অংশটুকু আস্ত আছে। এইজন্য দাগোনের পুরোহিত এবং অন্য যে সব লোক অস্‌দোদের দাগোনের মন্দিরে ঢোকে তারা আজ পর্যন্ত কেউই সেই মন্দিরের দরজার চৌকাঠের উপর পা দেয় না। সদাপ্রভু অস্‌দোদ ও তার আশেপাশের জায়গার লোকদের মলদ্বারের মধ্যে টিউমার রোগ দিয়ে ভীষণভাবে আঘাত করে তাদের মেরে ফেললেন। এই অবস্থা দেখে অস্‌দোদের লোকেরা বলল, “আমরা ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের সিন্দুক আমাদের কাছে আর রাখব না, কারণ তিনি আমাদের ও আমাদের দেবতা দাগোনকে ভীষণভাবে আঘাত করছেন।” কাজেই তারা লোক পাঠিয়ে পলেষ্টীয়দের সব শাসনকর্তাদের এক জায়গায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করল, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের সিন্দুকটা নিয়ে আমরা কি করব?” তাঁরা বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের সিন্দুকটা গাত শহরে নিয়ে যাওয়া হোক।” তাতে অস্‌দোদের লোকেরা ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের সিন্দুকটি গাতে নিয়ে গেল। তারা সিন্দুকটি সেখানে নিয়ে গেলে পর সদাপ্রভু সেই শহরের বিরুদ্ধে হাত উঠালেন। তাতে সেখানকার লোকেরা ভীষণ ভয় পেল। তিনি শহরের ছোট-বড় সব লোককে আঘাত করলেন, আর তাতে সকলের সেই টিউমার রোগ হল। তখন তারা ঈশ্বরের সিন্দুকটি ইক্রোণ শহরে পাঠিয়ে দিল। ঈশ্বরের সিন্দুকটি ইক্রোণে নেওয়া হলে পর ইক্রোণের লোকেরা চিৎকার করে বলল, “আমাদের ও আমাদের লোকদের মেরে ফেলবার জন্যই এরা ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের সিন্দুক আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে।” তারা লোক পাঠিয়ে পলেষ্টীয়দের সব শাসনকর্তাদের এক জায়গায় ডেকে এনে বলল, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের সিন্দুকটি এখান থেকে পাঠিয়ে দিন। ওটা তার নিজের জায়গাতেই ফিরে যাক। তা না হলে ওটা আমাদের ও আমাদের লোকদের মেরে ফেলবে।” ঈশ্বর সেই শহরকে ভীষণভাবে আঘাত করাতে লোকদের মনে মৃত্যুর দারুণ ভয় ঢুকেছিল। যে সব লোক মারা যায় নি তাদেরও সেই টিউমার রোগ হয়েছিল। তাতে শহরের লোকদের কান্নাকাটির শব্দ যেন আকাশ পর্যন্ত পৌঁছাল। সদাপ্রভুর সিন্দুকটি সাত মাস পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের দেশে রইল। পরে পলেষ্টীয় শাসনকর্তারা পুরোহিত ও গণকদের ডেকে বললেন, “আমরা সদাপ্রভুর সিন্দুকটি নিয়ে কি করব? আমাদের বল, কিভাবে আমরা এটাকে তার নিজের জায়গায় পাঠিয়ে দেব?” তারা বলল, “আপনারা যদি ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিন্দুকটি পাঠিয়েই দেন তবে তা খালি পাঠাবেন না। আপনারা অবশ্যই তাঁর কাছে একটা দোষ-উৎসর্গ পাঠিয়ে দেবেন। তাহলে আপনারা সুস্থ হবেন আর জানতে পারবেন যে, কেন তাঁর কঠোর হাত আপনাদের উপর থেকে সরে যাচ্ছে না।” তখন শাসনকর্তারা জিজ্ঞাসা করলেন, “দোষ-উৎসর্গ হিসাবে আমরা তাঁর কাছে কি পাঠিয়ে দেব?” তারা বলল, “পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তাদের সংখ্যা অনুসারে আপনারা পাঁচটা সোনার টিউমার ও পাঁচটা সোনার ইঁদুর পাঠিয়ে দিন, কারণ লোকদের উপরে এবং তাদের শাসনকর্তাদের উপরে একই আঘাত এসেছে। যে টিউমার রোগ আপনাদের শরীরে দেখা দিয়েছে এবং যে ইঁদুর আপনাদের দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে আপনারা সেগুলোর মূর্তি তৈরী করুন আর ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের গৌরব করুন। তাহলে হয়তো তিনি আপনাদের উপর থেকে এবং আপনাদের দেবতাদের ও দেশের উপর থেকে তাঁর কঠোর হাত সরিয়ে নেবেন। আপনারা কেন ফরৌণ ও মিসরীয়দের মত করে নিজেদের মনকে কঠিন করছেন? ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর যখন মিসরীয়দের বোকা বানিয়েছিলেন তখন তারা ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিয়েছিল, আর তারা চলে গিয়েছিল। “এখন আপনারা একটা নতুন গাড়ী তৈরী করুন এবং দুধ দেয় এমন দু’টা গাভী নিন যাদের উপর কখনও জোয়াল চাপানো হয় নি। সেগুলো আপনারা সেই গাড়ীতে জুড়ে দেবেন, কিন্তু তাদের বাছুরগুলো তাদের কাছ থেকে সরিয়ে ঘরে নিয়ে যাবেন। তারপর সদাপ্রভুর সিন্দুকটি আপনারা সেই গাড়ীর উপর বসাবেন এবং দোষ-উৎসর্গের জন্য যে সব সোনার জিনিস আপনারা সদাপ্রভুকে পাঠাবেন সেগুলো একটা বাক্সের মধ্যে করে সিন্দুকের পাশে রাখবেন। এইভাবে সিন্দুকটি পাঠিয়ে দেবেন যাতে সেটি চলে যায়। তবে নজর রাখবেন, সিন্দুকটি যদি নিজের দেশের পথ ধরে বৈৎ-শেমশে যায় তবে বুঝবেন যে, আমাদের উপর এই ভীষণ অমংগল সদাপ্রভুই এনেছেন। কিন্তু যদি সেই পথে না যায় তবে আমরা বুঝতে পারব যে, আমাদের উপর এই আঘাত তাঁর হাত থেকে আসে নি, এমনিই তা আমাদের উপর এসেছে।” তাঁরা তখন তা-ই করলেন। লোকেরা দুধ দেওয়া দু’টা গাভী নিয়ে গাড়ীতে জুড়ে দিল আর তাদের বাছুরগুলোকে ঘরে আট্‌কে রাখল। তারপর তারা সেই গাড়ীর উপরে সদাপ্রভুর সিন্দুকটি রাখল এবং তার পাশে রাখল সেই বাক্সটা যার মধ্যে ছিল সোনার ইঁদুর ও সোনার টিউমারগুলো। তখন গাভী দু’টা ডানে-বাঁয়ে না ঘুরে ডাকতে ডাকতে রাজপথ দিয়ে সোজা বৈৎ-শেমশের দিকে চলল। পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তারা গাড়ীটার পিছনে পিছনে বৈৎ-শেমশের সীমা পর্যন্ত গেলেন। বৈৎ-শেমশের লোকেরা তখন উপত্যকার মধ্যে গম কাটছিল। তারা চোখ তুলে চাইতেই সিন্দুকটি তাদের চোখে পড়ল এবং তারা খুশী হল। বৈৎ-শেমশে এসে গাড়ীটা যিহোশূয়ের ক্ষেতের মধ্যে একটা বড় পাথরের পাশে গিয়ে থামল। ইস্রায়েলীয়েরা সেই গাড়ীটার কাঠ কেটে নিয়ে ঐ দু’টা গাভী দিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। এর আগে লেবীয়েরা সদাপ্রভুর সিন্দুকটি এবং সোনার জিনিস সুদ্ধ বাক্সটা নামিয়ে সেই বড় পাথরটার উপর রেখেছিল। সেই দিন বৈৎ-শেমশের লোকেরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো এবং অন্যান্য উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। পলেষ্টীয়দের সেই পাঁচজন শাসনকর্তা সব কিছু দেখে সেই দিনই আবার ইক্রোণে ফিরে গেলেন। সদাপ্রভুর উদ্দেশে দোষ-উৎসর্গ হিসাবে পলেষ্টীয়েরা যে সব শহরগুলোর পক্ষ থেকে একটা করে সোনার টিউমার পাঠিয়েছিল সেগুলো হল অস্‌দোদ, গাজা, অস্কিলোন, গাত ও ইক্রোণ। সেই পাঁচজন শাসনকর্তার অধীনে পলেষ্টীয়দের পাঁচটা দেয়াল-ঘেরা শহর ও সেগুলোর সংগেকার দেয়াল-ছাড়া গ্রামগুলোর পক্ষ থেকে পলেষ্টীয়েরা সোনার ইঁদুর পাঠিয়েছিল। পলেষ্টীয়দের এলাকা ছিল বৈৎ-শেমশে যিহোশূয়ের ক্ষেতের মধ্যেকার বড় পাথরটা পর্যন্ত, যার উপর তারা সদাপ্রভুর সিন্দুকটি নামিয়ে রেখেছিল। সেটা আজও সেখানে রয়েছে। বৈৎ-শেমশের কিছু লোক সদাপ্রভুর সিন্দুকের ভিতরে চেয়ে দেখেছিল বলে সদাপ্রভু তাদের মেরে ফেললেন। তিনি তখন সেখানকার পঞ্চাশ হাজার সত্তর জনকে মেরে ফেলেছিলেন। তিনি এই ভীষণ আঘাত করেছিলেন বলে লোকেরা বিলাপ করতে লাগল। তারা বলল, “এই পবিত্র ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে কে টিকে থাকতে পারবে? এখান থেকে এখন তাঁকে কার কাছে পাঠানো যায়?” তারপর তারা কয়েকজন লোককে দিয়ে কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের লোকদের কাছে বলে পাঠাল, “পলেষ্টীয়েরা সদাপ্রভুর সিন্দুক ফিরিয়ে দিয়েছে। তোমরা নেমে এসে সিন্দুকটি তোমাদের কাছে নিয়ে যাও।” কাজেই কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের লোকেরা এসে সদাপ্রভুর সিন্দুকটি নিয়ে গেল। তারা সিন্দুকটি নিয়ে পাহাড়ের উপরকার তাদের শহরে অবীনাদবের বাড়ীতে রাখল এবং তা দেখাশোনা করবার জন্য অবীনাদবের ছেলে ইলিয়াসরকে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে নিল। সদাপ্রভুর সিন্দুকটি কিরিয়ৎ-যিয়ারীমে রাখবার পর অনেক দিন পার হয়ে গেল, অর্থাৎ বিশ বছর কেটে গেল। সেই সময় সদাপ্রভুর কাছে ফিরে আসবার জন্য ইস্রায়েলীয়দের প্রাণ কাঁদছিল। তাতে শমূয়েল সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “যদি তোমরা তোমাদের সমস্ত অন্তরের সংগে আবার সদাপ্রভুর কাছে ফিরে আসতে চাও, তবে তোমাদের মধ্য থেকে অন্য জাতিদের দেব-দেবতা এবং অষ্টারোৎ দেবীর মূর্তিগুলো দূর করে দাও এবং সদাপ্রভুর দিকে নিজেদের অন্তর স্থির করে কেবল তাঁরই সেবা কর। তাহলে তিনি পলেষ্টীয়দের হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করবেন।” এই কথা শুনে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের বাল দেবতা ও অষ্টারোৎ দেবীর মূর্তিগুলো দূর করে দিয়ে কেবল সদাপ্রভুর সেবা করতে লাগল। তখন শমূয়েল বললেন, “মিসপাতে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জড়ো কর। আমি তোমাদের জন্য সদাপ্রভুর কাছে মিনতি করব।” এতে তারা সবাই মিসপাতে জড়ো হল। তারা জল তুলে সদাপ্রভুর সামনে ঢেলে দিয়ে সেই দিন সেখানে উপবাস করল এবং বলল, “আমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছি।” শমূয়েল মিসপাতে থেকে ইস্রায়েলীয়দের শাসন করতেন। ইস্রায়েলীয়েরা মিসপাতে জড়ো হয়েছে শুনে পলেষ্টীয়দের শাসনকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য গেলেন। সেই কথা শুনে ইস্রায়েলীয়েরা পলেষ্টীয়দের দরুন ভয় পেল। তারা শমূয়েলকে বলল, “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যেন পলেষ্টীয়দের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করেন সেইজন্য সদাপ্রভুর কাছে আপনি কান্নাকাটি করতে থাকুন।” তখন শমূয়েল এমন একটা ভেড়ার বাচ্চা নিলেন যেটা দুধ ছাড়ে নি আর গোটা বাচ্চাটা দিয়ে তিনি সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তিনি ইস্রায়েলীয়দের হয়ে সদাপ্রভুকে ডাকলেন এবং সদাপ্রভুও তাঁকে উত্তর দিলেন। শমূয়েল যখন পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করছিলেন সেই সময় ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য পলেষ্টীয়েরা এগিয়ে আসল। কিন্তু সেই দিন সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে বাজ পড়বার মত ভীষণ শব্দে গর্জন করে উঠলেন। তাতে ভয়ে তাদের দল ভেংগে গেল এবং তারা ইস্রায়েলীয়দের কাছে হেরে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা তখন মিসপা থেকে বের হয়ে পলেষ্টীয়দের তাড়া করল এবং তাদের মারতে মারতে বৈৎ-কর গ্রামের নীচু জায়গা পর্যন্ত নিয়ে গেল। শমূয়েল তখন একটা পাথর নিয়ে মিসপা ও শেন নামে একটা জায়গার মাঝখানে খাড়া করে রাখলেন এবং বললেন, “এই পর্যন্ত সদাপ্রভু আমাদের সাহায্য করেছেন।” এই বলে তিনি সেটার নাম দিলেন এবন্‌-এষর (যার মানে “সাহায্যের পাথর”)। এইভাবে পলেষ্টীয়দের দমন করা হল। এর পরে তারা আর ইস্রায়েলীয়দের সীমানায় ঢোকে নি। শমূয়েল যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন পর্যন্ত সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে ছিলেন। ইক্রোণ থেকে গাত পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়দের যে শহর ও গ্রামগুলো পলেষ্টীয়েরা অধিকার করে নিয়েছিল তা আবার ইস্রায়েলীয়েরা ফিরে পেল। ইস্রায়েলীয়েরা সেগুলোর চারপাশের সমস্ত জায়গাও পলেষ্টীয়দের হাত থেকে উদ্ধার করে নিল। এতে ইস্রায়েলীয় ও ইমোরীয়দের মধ্যে শান্তি স্থাপিত হল। এর পর শমূয়েল যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিলেন। তিনি প্রত্যেক বছর বৈথেল, গিল্‌গল ও মিসপাতে গিয়ে ইস্রায়েলীয়দের শাসন করতেন। তারপর তিনি রামায় তাঁর বাড়ীতে ফিরে যেতেন। তিনি সেখানেও ইস্রায়েলীয়দের শাসন করতেন। সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে তিনি একটা বেদী তৈরী করেছিলেন। শমূয়েল বুড়ো বয়সে ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা হিসাবে তাঁর ছেলেদের নিযুক্ত করলেন। তাঁর বড় ছেলের নাম ছিল যোয়েল এবং দ্বিতীয় ছেলের নাম ছিল অবিয়। তারা বের্‌-শেবাতে শাসনকর্তার কাজ করত, কিন্তু তারা তাদের বাবার মত চলত না। তারা অন্যায়ভাবে ধন লাভের আশায় ন্যায়ের পথ ছেড়ে দিয়েছিল। তারা ঘুষ নিয়ে ন্যায়কে অন্যায় এবং অন্যায়কে ন্যায় বলে রায় দিত। “আমাদের শাসন করবার জন্য একজন রাজা নিযুক্ত করুন,” লোকদের এই কথাটা শমূয়েলের কাছে ভাল মনে হল না। সেইজন্য তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন। তখন সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “লোকেরা তোমাকে যা বলছে তুমি তা-ই কর। তারা তোমাকে অগ্রাহ্য করে নি, আসলে আমাকেই অগ্রাহ্য করেছে যেন আমি তাদের উপর রাজত্ব না করি। মিসর দেশ থেকে তাদের বের করে আনবার পর থেকে আজ পর্যন্ত তারা আমার প্রতি যা করেছে তোমার প্রতিও তা-ই করেছে; আমাকে বাদ দিয়ে তারা দেব-দেবতার পূজা করেছে। এখন তুমি তাদের কথা মেনে নাও; তবে তুমি তাদের সাবধান করে বলে দাও যে, তাদের উপর যে রাজা রাজত্ব করবে সে তাদের উপর কি রকম ব্যবহার করবে।” যারা শমূয়েলের কাছে একজন রাজা চেয়েছিল তাদের কাছে শমূয়েল সদাপ্রভুর সমস্ত কথা জানালেন। তিনি বললেন, “যিনি রাজা হয়ে তোমাদের উপরে রাজত্ব করবেন তাঁর ব্যবহার এই রকম হবে: তিনি তোমাদের ছেলেদের নিয়ে সৈন্য হিসাবে কাজে লাগাবেন; তাদের কেউ কেউ হবে রথ-চালক, কেউ কেউ হবে ঘোড়সওয়ার এবং কেউ কেউ তাঁর সমস্ত রথের আগে আগে দৌড়াবে। তিনি নিজের জন্য কাউকে কাউকে হাজার সৈন্যের উপরে, কাউকে কাউকে পঞ্চাশজন সৈন্যের উপরে সেনাপতি নিযুক্ত করবেন। অন্যদের তিনি তাঁর জমি চাষের ও ফসল কাটবার কাজে এবং যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র ও রথের সাজসরঞ্জাম তৈরী করবার কাজে লাগাবেন। তোমাদের মেয়েদের দিয়ে তিনি সুগন্ধি তৈরী, রান্নাবান্না ও রুটি সেঁকবার কাজ করাবেন। তিনি তোমাদের সবচেয়ে ভাল জমি, আংগুর ক্ষেত ও জলপাই বাগান নিয়ে তাঁর কর্মচারীদের দেবেন। তোমাদের শস্য ও আংগুরের দশ ভাগের এক ভাগ নিয়ে তিনি তাঁর রাজকর্মচারী ও অন্যান্য কর্মচারীদের দেবেন। তিনি তোমাদের দাসদাসী এবং তোমাদের সেরা যুবকদের ও গাধাগুলো নিয়ে নিজের কাজে লাগাবেন। তোমাদের ভেড়ার পালের দশ ভাগের এক ভাগ তিনি নিয়ে নেবেন আর তোমরা তাঁর দাস হবে। সেই দিন তোমরা তোমাদের চেয়ে নেওয়া রাজার দরুন কাঁদবে, কিন্তু তখন সদাপ্রভু তোমাদের ডাকে সাড়া দেবেন না।” লোকেরা কিন্তু শমূয়েলের এই সব কথা শুনতে রাজী হল না। তারা বলল, “না, আমরা একজন রাজা চাই। তাহলে আমরা অন্য সব জাতির মত হতে পারব। আমাদের রাজা আমাদের শাসন করবেন এবং আমাদের আগে আগে থেকে যুদ্ধ করবেন।” শমূয়েল লোকদের সব কথা শুনলেন এবং সদাপ্রভুর কাছে তা বললেন। তাতে সদাপ্রভু শমূয়েলকে বললেন, “তুমি তাদের কথা শোন এবং তাদের জন্য তুমি একজন রাজা নিযুক্ত কর।” তখন শমূয়েল ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “তোমরা নিজের নিজের বাড়ীতে ফিরে যাও।” কীশ নামে বিন্যামীন-গোষ্ঠীর একজন সম্মানিত ধনী লোক ছিলেন। কীশ অবীয়েলের ছেলে, অবীয়েল সরোরের ছেলে, সরোর বখোরতের ছেলে আর বখোরত অফীহের ছেলে। শৌল নামে কীশের একটি ছেলে ছিল। তিনি ছিলেন বয়সে যুুবক এবং দেখতে সুন্দর। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে তাঁর মত সুন্দর আর কেউ ছিল না। তিনি অন্য সকলের চেয়ে প্রায় এক ফুট লম্বা ছিলেন। শৌলের বাবা কীশের যে সব গাধী ছিল সেগুলো একদিন হারিয়ে গেল। তাতে কীশ তাঁর ছেলে শৌলকে বললেন, “তুমি একজন চাকরকে সংগে নিয়ে গাধীগুলো খুঁজতে যাও।” শৌল তখন সেগুলো খুঁজতে খুঁজতে ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকা এবং শালিশা এলাকার মধ্য দিয়ে গেলেন, কিন্তু সেগুলোকে পেলেন না। তারপর তাঁরা শালীম এলাকায় গেলেন, কিন্তু গাধীগুলো সেখানেও পাওয়া গেল না। তারপর তাঁরা বিন্যামীনীয়দের এলাকায় গেলেন, আর সেখানেও সেগুলোকে পেলেন না। তাঁরা যখন সূফ এলাকায় গেলেন তখন শৌল তাঁর সংগের চাকরকে বললেন, “চল, আমরা ফিরে যাই। তা না হলে বাবা হয়তো গাধীগুলোর চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের জন্য দুশ্চিন্তা করবেন।” কিন্তু সেই চাকর তাঁকে বলল, “দেখুন, এই শহরে ঈশ্বরের একজন লোক থাকেন। তাঁকে সবাই সম্মান করে এবং তিনি যা বলেন তা সত্যিসত্যিই ঘটে। চলুন, আমরা এখন সেখানে যাই। তিনি হয়তো বলে দিতে পারবেন কোন্‌ পথে আমাদের যেতে হবে।” শৌল তাঁর চাকরকে বললেন, “কিন্তু যদি আমরা সেখানে যাই তবে লোকটির জন্য কি নিয়ে যাব? আমাদের থলির মধ্যে যে খাবার ছিল তা তো শেষ হয়ে গেছে। ঈশ্বরের লোককে দেবার জন্য কোন উপহারও আমাদের কাছে নেই। কি আছে আমাদের?” উত্তরে সেই চাকর তাঁকে বলল, “দেখুন, আমার কাছে তিন গ্রাম রূপা আছে। ঈশ্বরের লোককে আমি তা-ই দেব, আর তিনি আমাদের বলে দেবেন কোন্‌ পথে আমাদের যেতে হবে।” (আগেকার দিনে ইস্রায়েল দেশের কোন লোক যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে কোন বিষয় জানতে চাইত তবে সে যাবার আগে বলত, “চল, আমরা দর্শকের কাছে যাই।” এখন যাঁকে নবী বলা হয় আগেকার দিনে তাঁকে বলা হত দর্শক।) শৌল তাঁর চাকরকে বললেন, “বেশ বলেছ; চল, আমরা যাই।” এই বলে তাঁরা ঈশ্বরের লোকটি যে শহরে ছিলেন সেখানে গেলেন। যে পথটা শহরের দিকে উঠে গেছে তাঁরা যখন সেই পথ ধরে উঠে যাচ্ছিলেন তখন কয়েকজন মেয়ের সংগে তাঁদের দেখা হল। সেই মেয়েরা জল নেবার জন্য বেরিয়ে এসেছিল। তাঁরা সেই মেয়েদের জিজ্ঞাসা করলেন, “দর্শক কি এখানে আছেন?” উত্তরে তারা বলল, “হ্যাঁ, আছেন; আর একটু সামনে এগিয়ে যান। আপনারা তাড়াতাড়ি যান। তিনি আজই আমাদের শহরে এসেছেন, কারণ উপাসনার উঁচু স্থানে আজ লোকেরা পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। আপনারা শহরে ঢুকলেই তাঁর সংগে আপনাদের দেখা হবে। আপনারা দেখবেন তিনি পাহাড়ের উপরে খেতে যাচ্ছেন। তিনি না যাওয়া পর্যন্ত লোকেরা খাওয়া-দাওয়া করবে না, কারণ তাঁকে উৎসর্গের জিনিস আশীর্বাদ করতে হবে; তারপর যাদের ডাকা হয়েছে তারা খাবে। আপনারা এখনই উঠে যান, এখনই তাঁর দেখা পাবেন।” এই কথা শুনে তাঁরা শহরে উঠে গেলেন। তাঁরা শহরের মধ্যে গিয়ে দেখলেন শমূয়েল উপাসনার উঁচু স্থানে যাবার জন্য তাঁদের দিকেই আসছেন। পথে শমূয়েলের সংগে তাঁদের দেখা হল। শৌল আসবার আগের দিন সদাপ্রভু শমূয়েলের কাছে এই কথা প্রকাশ করেছিলেন, “আগামী কাল এই সময়ে আমি বিন্যামীন-গোষ্ঠীর এলাকার একজন লোককে তোমার কাছে পাঠাব। আমার লোকদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের নেতা হবার জন্য তুমি তাকে অভিষেক করবে। পলেষ্টীয়দের হাত থেকে সে-ই আমার লোকদের উদ্ধার করবে। আমার লোকদের দিকে আমি মনোযোগ দিয়েছি, কারণ তাদের কান্না আমার কানে এসে পৌঁছেছে।” শৌলকে দেখবার সংগে সংগেই সদাপ্রভু শমূয়েলকে বললেন, “দেখ, এ-ই সেই লোক, যার কথা আমি তোমাকে বলেছিলাম। এ-ই আমার লোকদের শাসন করবে।” শৌল ফটকের মধ্যে শমূয়েলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “দর্শকের বাড়ীটা কোথায় দয়া করে আমাকে বলে দিন।” উত্তরে শমূয়েল শৌলকে বললেন, “আমিই দর্শক। তুমি আমার আগে আগে উপাসনার উঁচু স্থানে যাও, কারণ আজ তোমরা আমার সংগে খাবে। কাল সকালে আমি তোমাকে বিদায় দেব আর তোমার মনে যা আছে তা তোমাকে বলব। তিন দিন আগে তোমার যে গাধীগুলো হারিয়ে গেছে তা নিয়ে তুমি আর চিন্তা কোরো না; সেগুলো পাওয়া গেছে। ইস্রায়েল দেশের মধ্যে সমস্ত ভাল ভাল জিনিস কার জন্য? তা কি তোমার আর তোমার বাবার বংশের লোকদের জন্য নয়?” উত্তরে শৌল বললেন, “আপনি কেন আমাকে এই সব কথা বলছেন? ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে বিন্যামীনই হল সবচেয়ে ছোট, আর আমি সেই গোষ্ঠীর লোক। আবার বিন্যামীন-গোষ্ঠীতে যতগুলো বংশ আছে তার মধ্যে আমাদের বংশটা একেবারেই ধরবার মধ্যে নয়।” শমূয়েল তখন শৌল ও তাঁর চাকরকে নিয়ে খাবার ঘরে গেলেন এবং নিমন্ত্রিতদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত জায়গায় তাঁদের বসালেন। নিমন্ত্রিতেরা সংখ্যায় প্রায় ত্রিশজন ছিল। যে লোকটি রান্না করেছে শমূয়েল তাকে বললেন, “যে মাংস আলাদা করে রাখবার জন্য তোমাকে দিয়েছিলাম সেটা নিয়ে এস।” তাতে সে গিয়ে ঊরু আর তার সংগেকার মাংস এনে শৌলের সামনে রাখল। শমূয়েল শৌলকে বললেন, “এটা তোমারই জন্য রাখা হয়েছিল; তুমি খাও। আজকে তুমি এখানে খাবে বলে লোকদের নিমন্ত্রণ করবার সময়েই আমি এটা তোমার জন্য আলাদা করে রাখতে বলেছিলাম।” শৌল সেই দিন শমূয়েলের সংগে খাওয়া-দাওয়া করলেন। এর পর তাঁরা সেই উঁচু স্থান থেকে শহরে ফিরে আসলেন। তারপর শমূয়েল তাঁর বাড়ীর ছাদে শৌলের সংগে কথাবার্তা বললেন। পরের দিন খুব ভোরে তাঁরা সবাই ঘুম থেকে উঠলেন। আলো হলে পর শৌল ছাদে থাকতেই শমূয়েল তাঁকে ডেকে বললেন, “প্রস্তুত হও, আমি তোমাকে এখন বিদায় দেব।” শৌল ও শমূয়েল প্রস্তুত হয়ে দু’জনে বেরিয়ে পড়লেন। শহরের সীমানার কাছাকাছি এসে শমূয়েল শৌলকে বললেন, “তোমার চাকরকে এগিয়ে যেতে বল, কিন্তু তুমি কিছুক্ষণের জন্য এখানে দাঁড়াও। ঈশ্বর যা বলেছেন তা আমি তোমাকে শোনাব।” তাতে তাঁর চাকর এগিয়ে গেল। তারপর শমূয়েল একটা তেলের শিশি নিয়ে শৌলের মাথার উপর তেল ঢেলে দিলেন। তিনি তাঁকে চুম্বন করে বললেন, “সদাপ্রভু তাঁর লোকদের উপরে তোমাকে নেতা হিসাবে অভিষেক করলেন। তুমি আমার কাছ থেকে চলে যাবার পর আজ বিন্যামীন এলাকার সীমানায় সেল্‌সহ নামে জায়গাটায় রাহেলের কবরের কাছে দু’জন লোকের দেখা পাবে। তারা তোমাকে বলবে, ‘আপনি যে গাধীগুলোর খোঁজে বেরিয়েছিলেন সেগুলো পাওয়া গেছে। কিন্তু এখন আপনার বাবা গাধীগুলোর চিন্তা ছেড়ে আপনার চিন্তায় পড়েছেন। তিনি বলছেন যে, তাঁর ছেলে সম্বন্ধে এখন তিনি কি করবেন? ’ “তারপর তুমি সেখান থেকে এগিয়ে গিয়ে তাবোর এলাকার এলোন গাছের কাছে গেলে দেখতে পাবে তিনজন লোক ঈশ্বরের উপাসনার জন্য বৈথেলে উঠে যাচ্ছে। তুমি দেখবে, তাদের একজন তিনটা ছাগলের বাচ্চা, আর একজন তিনটা রুটি ও আর একজন এক পাত্র আংগুর-রস বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা তোমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দু’টা রুটি দেবে এবং তুমি তা তাদের হাত থেকে নেবে। “তারপর তুমি গিবিয়োৎ-হা-এলোহিম শহরে যাবে। সেখানে পলেষ্টীয় সৈন্যদের একটা ছাউনি আছে। শহরে পৌঁছালে পর এমন এক দল নবীর সংগে তোমার দেখা হবে যারা ঈশ্বরের দেওয়া কথা বলতে বলতে উপাসনার উঁচু স্থান থেকে নেমে আসছে। তাদের দলের সামনের লোকেরা বীণা, খঞ্জনি, বাঁশী ও সুরবাহার বাজাতে বাজাতে চলতে থাকবে। তখন সদাপ্রভুর আত্মা সম্পূর্ণভাবে তোমাকে নিজের বশে আনবেন, আর তাতে তুমিও তাদের সংগে ঈশ্বরের দেওয়া কথা বলবে। তখন তুমি অন্য ধরনের মানুষ হয়ে যাবে। এই সব চিহ্ন ঘটলে পর তোমার তখন যা করা উচিত তুমি তা-ই কোরো; ঈশ্বর তোমার সংগে থাকবেন। “তুমি আমার আগে নেমে গিল্‌গলে যাও। আমি পোড়ানো ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার জন্য তোমার কাছে আসছি। আমি না আসা পর্যন্ত তুমি সাত দিন আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি এসে বলব তোমাকে কি করতে হবে।” শমূয়েলের কাছ থেকে চলে যাবার উদ্দেশ্যে শৌল ঘুরে দাঁড়াতেই ঈশ্বর তাঁর মন বদলে দিলেন। সেই দিনই চিহ্ন হিসাবে বলা ঘটনাগুলো ঘটল। শৌল ও তাঁর চাকর গিবিয়াতে পৌঁছালে এক দল নবীর সংগে তাঁদের দেখা হল। তখন ঈশ্বরের আত্মা শৌলকে সম্পূর্ণভাবে নিজের বশে আনলেন, আর তাতে তিনি ঐ নবীদের মাঝখানে গিয়ে ঈশ্বরের দেওয়া কথা বলতে লাগলেন। যারা শৌলকে আগে থেকেই চিনত তারা তাঁকে নবীদের সংগে ঈশ্বরের দেওয়া কথা বলতে দেখে একে অন্যকে বলতে লাগল, “কীশের ছেলের এ কি হল? শৌলও কি তবে নবীদের মধ্যে একজন?” তাতে সেখানকার একজন লোক বলল, “কিন্তু এরা কাদের ছেলে?” সেইজন্য “শৌলও কি নবীদের মধ্যে একজন?” এই কথাটা চল্‌তি কথা হয়ে উঠল। ঈশ্বরের দেওয়া কথা বলা শেষ করে শৌল উপাসনার উঁচু স্থানে উঠে গেলেন। শৌলের কাকা শৌল ও তাঁর চাকরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কোথায় গিয়েছিলে?” শৌল বললেন, “গাধীগুলো খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো কোথাও না পেয়ে আমরা শমূয়েলের কাছে গিয়েছিলাম।” শৌলের কাকা বললেন, “আমাকে বল, শমূয়েল তোমাদের কি বলেছেন?” শৌল তাঁর কাকাকে বললেন, “তিনি আমাদের স্পষ্টই বলে দিলেন যে, গাধীগুলো পাওয়া গেছে।” কিন্তু তাঁর রাজত্ব করা সম্বন্ধে শমূয়েল তাঁকে যে কথা বলেছিলেন তা তিনি তাঁর কাকাকে বললেন না। পরে শমূয়েল মিসপাতে সদাপ্রভুর সামনে ইস্রায়েলীয়দের ডেকে জড়ো করলেন। তিনি তাদের বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘মিসর দেশ থেকে আমিই তোমাদের বের করে এনেছি, আর মিসরীয়দের হাত থেকে এবং যে রাজ্যগুলো তোমাদের উপর অত্যাচার করত তাদের হাত থেকে আমিই তোমাদের উদ্ধার করেছি।’ ” শমূয়েল আরও বললেন, “কিন্তু তোমাদের ঈশ্বর, যিনি সমস্ত বিপদ ও দুর্দশা থেকে তোমাদের উদ্ধার করেছেন, আজকাল তাঁকেই তোমরা অগ্রাহ্য করছ আর বলছ, ‘আমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত করুন।’ কাজেই এখন তোমরা যে যার গোষ্ঠী ও বংশ অনুসারে সদাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হও।” শমূয়েল ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত গোষ্ঠীকে কাছে ডাকলেন। তাদের মধ্য থেকে বিন্যামীন-গোষ্ঠীকে বেছে নেওয়া হল। তারপর বিন্যামীন-গোষ্ঠীর সমস্ত বংশকে সামনে আনা হল। তাদের মধ্য থেকে মট্রীয়ের বংশকে বেছে নেওয়া হল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত কীশের ছেলে শৌলকে বেছে নেওয়া হল। কিন্তু তাঁর খোঁজ করা হলে তাঁকে পাওয়া গেল না। তখন লোকেরা সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করল, “আর কেউ কি এখানে আছে?” সদাপ্রভু বললেন, “দেখ, সে মালপত্রের মধ্যে লুকিয়ে আছে।” তখন লোকেরা দৌড়ে গিয়ে সেখান থেকে শৌলকে নিয়ে আসল। তিনি এসে লোকদের মধ্যে দাঁড়ালে পর দেখা গেল তিনি সকলের চেয়ে প্রায় এক ফুট লম্বা। শমূয়েল তখন সবাইকে বললেন, “তোমরা কি সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া লোকটিকে দেখতে পাচ্ছ? সমস্ত লোকের মধ্যে তাঁর মত আর কেউ নেই।” তখন লোকেরা বলল, “রাজা চিরজীবী হোন।” শমূয়েল তখন রাজ্য শাসনের নিয়ম-কানুনগুলো লোকদের কাছে ঘোষণা করলেন। তিনি সেগুলো একটা বইয়ে লিখে সদাপ্রভুর সামনে রাখলেন। তারপর তিনি সমস্ত লোককে যার যার বাড়ীতে বিদায় করে দিলেন। শৌলও গিবিয়াতে তাঁর নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। যে সব বীর পুরুষদের অন্তরে ঈশ্বর সাড়া জাগিয়েছিলেন তারাও তাঁর সংগে গেল। কিন্তু কতগুলো বাজে লোক বলল, “এই লোকটা কি করে আমাদের রক্ষা করবে?” তারা তাঁকে তুচ্ছ করল এবং কোন উপহার দিল না। শৌল কিন্তু মুখ বন্ধ করে রইলেন। পরে অম্মোনীয় নাহশ গিয়ে যাবেশ-গিলিয়দ ঘেরাও করল। তখন যাবেশের লোকেরা নাহশকে বলল, “আপনি আমাদের সংগে একটা চুক্তি করুন, তাহলে আমরা আপনার অধীন হয়ে থাকব।” অম্মোনীয় নাহশ উত্তরে তাদের বলল, “আমি একটা শর্তে তোমাদের সংগে চুক্তি করতে পারি। সেটা হল, তোমাদের প্রত্যেকের ডান চোখ তুলে ফেলা হবে। তা করে আমি সমস্ত ইস্রায়েল জাতিকে অসম্মানিত করব।” এই কথা শুনে যাবেশের বৃদ্ধ নেতারা নাহশকে বলল, “আপনি আমাদের সাত দিন সময় দিন। এর মধ্যে আমরা ইস্রায়েল দেশের সব জায়গায় লোক পাঠিয়ে খবর দেব। যদি কেউ আমাদের রক্ষা করতে না আসে তবে আমরা আপনার অধীন হব।” লোকেরা যখন খবর দেবার জন্য শৌলের নিজের শহর গিবিয়াতে গিয়ে সেখানকার লোকদের ঐ সব কথা বলল তখন লোকেরা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। সেই সময় শৌল মাঠ থেকে তাঁর গরুর পাল নিয়ে ফিরে আসছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে? লোকেরা কান্নাকাটি করছে কেন?” তারা তখন যাবেশের লোকেরা যা বলেছিল তা তাঁকে জানাল। লোকদের কথা শুনবার পর ঈশ্বরের আত্মা শৌলের উপর আসলেন, আর তিনি রাগে জ্বলে উঠলেন। তিনি দু’টা গরু নিয়ে টুকরা টুকরা করে কাটলেন। তারপর সেই টুকরাগুলো লোক দিয়ে ইস্রায়েল দেশের সব জায়গায় পাঠিয়ে দিলেন এবং তাদের এই কথা ঘোষণা করতে বললেন, “যে কেউ শৌল ও শমূয়েলের সংগে যোগ না দেবে তার গরুর অবস্থা এই রকম হবে।” সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের মনে একটা ভয় জাগিয়ে দিলেন, আর তারা সবাই এক হয়ে বের হয়ে আসল। শৌল বেষকে তাদের গণনা করলেন। তাতে ইস্রায়েলের সৈন্যদের সংখ্যা হল তিন লক্ষ আর যিহূদার হল ত্রিশ হাজার। যাবেশ থেকে যে লোকেরা খবর নিয়ে এসেছিল গিবিয়ার লোকেরা তাদের বলল, “যাবেশ-গিলিয়দের লোকদের গিয়ে জানাবে যে, আগামী কাল দুপুরের মধ্যে তাদের উদ্ধার করা হবে।” এই কথা যাবেশের লোকদের জানানো হলে পর তারা খুব খুশী হল। তারা অম্মোনীয়দের বলল, “কাল আমরা তোমাদের অধীন হব। তোমাদের যা খুশী তা-ই তোমরা আমাদের প্রতি কোরো।” পরের দিন শৌল তাঁর লোকদের তিন দলে ভাগ করলেন। তারপর শেষ রাতে তারা অম্মোনীয়দের ছাউনিতে ঢুকে দুপুর পর্যন্ত তাদের মেরে ফেলতে লাগল। যারা প্রাণে বাঁচল তারা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ল যে, তাদের দু’জন আর একসংগে রইল না। লোকেরা এসে শমূয়েলকে বলল, “কে বলেছিল শৌল আমাদের উপর রাজা হতে পারে না? আপনি তাদের আমাদের হাতে তুলে দিন; আমরা তাদের মেরে ফেলব।” কিন্তু শৌল বললেন, “আজ কাউকেই মেরে ফেলা চলবে না, কারণ আজকের দিনে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করেছেন।” তখন শমূয়েল লোকদের বললেন, “চল, আমরা গিল্‌গলে গিয়ে শৌলের রাজপদের কথা আবার ঘোষণা করি।” এতে লোকেরা সবাই গিল্‌গলে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে শৌলকে রাজপদে বহাল করল। সেখানে তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল এবং শৌল ও ইস্রায়েলের লোকেরা খুব আনন্দ-উৎসব করল। এর পর শমূয়েল ইস্রায়েলের সমস্ত লোককে বললেন, “তোমরা আমাকে যা যা বলেছ আমি তা সবই শুনেছি এবং তোমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত করেছি। দেখ, এখন তোমাদের পরিচালনা করবার জন্য তোমাদের একজন রাজা আছেন। আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি, আমার চুল পেকে গেছে, আর আমার ছেলেরা তোমাদের সংগেই রয়েছে। সেই যুবা বয়স থেকে আজ পর্যন্ত আমি তোমাদের পরিচালনা করে আসছি। আমি এখানেই আছি; আমার বিরুদ্ধে যদি তোমাদের কিছু বলবার থাকে তবে সদাপ্রভু ও তাঁর অভিষেক-করা লোকের সামনেই তা বল। তোমরা সাক্ষ্য দাও, আমি কার বলদ বা কার গাধা অন্যায়ভাবে নিয়েছি? আমি কার উপর অত্যাচার করেছি? কার উপর খারাপ ব্যবহার করেছি? কার কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছি? এর কোনটা যদি আমি করে থাকি তবে তার ক্ষতিপূরণ দেব।” লোকেরা বলল, “না, আপনি আমাদের কারও উপর অত্যাচার করেন নি, কারও উপর খারাপ ব্যবহার করেন নি এবং কারও কাছ থেকে কিছু নেন নি।” শমূয়েল তাদের বললেন, “আজ সদাপ্রভু সাক্ষী এবং তাঁর অভিষেক করা লোকও সাক্ষী যে, তোমরা আমার কাছে তোমাদের কোন জিনিস পাও নি।” তখন লোকেরা বলল, “তিনি সাক্ষী।” শমূয়েল লোকদের আরও বললেন, “হ্যাঁ, সদাপ্রভুই সাক্ষী, যিনি মোশি ও হারোণকে নিযুক্ত করেছিলেন এবং তোমাদের পূর্বপুুরুষদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন। তাহলে এবার তোমরা প্রস্তুত হও। সদাপ্রভু তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপূরুষদের জন্য যে সব ন্যায় কাজ করেছেন আমি সেই সব বিষয় নিয়ে সদাপ্রভুর সামনেই তোমাদের দোষ দেখিয়ে দেব। “যাকোব মিসর দেশে গেলেন, আর পরে যখন তোমাদের পূর্বপুরুষেরা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করল তখন সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা মিসর দেশ থেকে তোমাদের পূর্বপুরুষদের বের করে আনলেন এবং এই দেশে তাদের বাস করবার ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলে গেল। কাজেই তিনি দাস হবার জন্য হাৎসোরের সেনাপতি সীষরার হাতে, পলেষ্টীয়দের হাতে এবং মোয়াব দেশের রাজার হাতে তাদের তুলে দিলেন। তোমাদের পূর্বপুরুষদের সংগে তারা যুদ্ধ করল। তখন তোমাদের পূর্বপুরুষেরা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করে বলল, ‘আমরা পাপ করেছি; আমরা সদাপ্রভুকে ছেড়ে বাল দেবতাদের ও অষ্টারোৎ দেবীদের পূজা করেছি; এখন তুমি শত্রুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা কর, আমরা তোমারই সেবা করব।’ তখন সদাপ্রভু যিরুব্বাল, বদান, যিপ্তহ ও শমূয়েলকে পাঠিয়ে তোমাদের চারপাশের শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করলেন। তারপর তোমরা নিরাপদে বাস করতে লাগলে। “কিন্তু অম্মোনীয়দের রাজা নাহশকে যখন তোমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসতে দেখলে তখন যদিও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই ছিলেন তোমাদের রাজা তবুও তোমরা আমাকে বললে, ‘না, আমরা চাই আমাদের উপরে একজন রাজা রাজত্ব করুক।’ এখন দেখ, ইনিই তোমাদের রাজা, যাঁকে তোমরা চেয়েছ আর বেছে নিয়েছ। সদাপ্রভু তোমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত করেছেন। তোমরা যদি সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় কর, তাঁর সেবা কর ও তাঁর বাধ্য হয়ে তাঁর আদেশের বিরুদ্ধে না চল, আর যিনি তোমাদের শাসন করবেন সেই রাজা ও তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চল, তবে ভালই। কিন্তু যদি তোমরা সদাপ্রভুর বাধ্য না হও এবং তাঁর আদেশের বিরুদ্ধে চল, তবে তিনি যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের শাস্তি দিয়েছিলেন তেমনি তোমাদেরও দেবেন। “এবার তোমরা তৈরী হও; সদাপ্রভু তোমাদের চোখের সামনে যে মহৎ কাজ করবেন তা দেখ। এখন তো গম কাটবার সময়, তাই না? আমি সদাপ্রভুকে বলব যেন তিনি মেঘের গর্জন এবং বৃষ্টি পাঠিয়ে দেন। তখন তোমরা জানবে এবং দেখতে পাবে যে, রাজা চেয়ে তোমরা সদাপ্রভুর কাছে কত বড় অন্যায় করেছ।” এর পর শমূয়েল সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন এবং তিনি সেই দিনই মেঘের গর্জন ও বৃষ্টি পাঠিয়ে দিলেন। তখন সবাই সদাপ্রভু ও শমূয়েলকে ভয় করতে লাগল। সবাই তখন শমূয়েলকে বলল, “আপনি আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে আপনার এই দাসদের জন্য প্রার্থনা করুন যাতে আমরা মারা না পড়ি, কারণ রাজা চেয়ে আমরা আমাদের অন্য সব পাপের সংগে এই পাপও যুক্ত করেছি।” উত্তরে শমূয়েল বললেন, “তোমরা ভয় কোরো না। তোমরা যদিও এই সব অন্যায় করেছ তবুও সদাপ্রভুর কাছ থেকে সরে না গিয়ে সমস্ত অন্তর দিয়ে তাঁর সেবা কর। তোমরা তাঁর কাছ থেকে সরে যেয়ো না, কারণ তা করলে তোমরা অসার দেব-দেবতার পিছনে যাবে। সেগুলো অসার বলে তোমাদের কোন উপকারও করতে পারবে না এবং তোমাদের রক্ষাও করতে পারবে না। সদাপ্রভু তাঁর মহানামের দরুন তাঁর লোকদের কখনও ত্যাগ করবেন না, কারণ তিনি নিজের ইচ্ছাতেই তোমাদের তাঁর নিজের লোক করে নিয়েছেন। আমি যেন কখনও তোমাদের জন্য প্রার্থনা করা বন্ধ করে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ না করি। আমি তোমাদের সৎ ও ন্যায়পথে চলতে শিক্ষা দেব। তোমরা কেবল সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে এবং তোমাদের সমস্ত অন্তর দিয়ে বিশ্বস্তভাবে তাঁর সেবা করবে। ভেবে দেখ, তিনি তোমাদের জন্য কত বড় বড় কাজ করেছেন। কিন্তু যদি তোমরা অন্যায় কাজ করতেই থাক তবে তোমরা ও তোমাদের রাজা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।” গেবাতে পলেষ্টীয় সৈন্যদের যে ছাউনি ছিল যোনাথন তা আক্রমণ করলেন আর পলেষ্টীয়েরা সেই কথা শুনতে পেল। তখন শৌল দেশের সব জায়গায় শিঙা বাজিয়ে বললেন, “ইব্রীয়েরা শুনুক।” এতে সমস্ত ইস্রায়েলীয় শুনল যে, শৌল পলেষ্টীয়দের সৈন্য-ছাউনি আক্রমণ করেছেন এবং পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের ঘৃণার চোখে দেখছে। তখন ইস্রায়েলীয়দের ডাকা হল যাতে তারা গিল্‌গলে গিয়ে শৌলের সংগে যোগ দেয়। পলেষ্টীয়েরা তখন ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য একসংগে জড়ো হল। তাদের সংগে ছিল ত্রিশ হাজার রথ, ছয় হাজার ঘোড়সওয়ার সৈন্য ও সমুদ্র-পারের বালুকণার মত অসংখ্য পদাতিক সৈন্য। তারা সবাই বৈৎ-আবনের পূর্ব দিকে মিক্‌মসে ছাউনি ফেলল। ইস্রায়েলের সৈন্যেরা যখন দেখল যে, তারা ভীষণ চাপের মুখে পড়ে বিপদে পড়ে গেছে তখন তারা গিয়ে গুহায়, ঝোপ-ঝাড়ে, পাহাড়ের ফাটলে, খাদে ও গর্তে লুকিয়ে রইল। অনেক ইব্রীয় যর্দন নদী পার হয়ে গাদ ও গিলিয়দ এলাকায় চলে গেল। শৌল গিল্‌গলেই রয়ে গেলেন, আর তাঁর সংগের সৈন্যেরা ভয়ে কাঁপতে লাগল। শমূয়েল তাঁকে যে সময়ের কথা বলেছিলেন সেই অনুসারে শৌল তাঁর জন্য সাত দিন অপেক্ষা করলেন, কিন্তু শমূয়েল গ্‌িলগলে আসলেন না। এদিকে তাঁর সৈন্যেরাও তাঁকে ছেড়ে এদিক-সেদিক চলে যেতে লাগল। কাজেই শৌল পোড়ানো ও যোগাযোগ-উৎসর্গের জিনিস তাঁর কাছে নিয়ে আসতে বললেন। তারপর তিনি নিজেই পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তিনি উৎসর্গ শেষ করবার সংগে সংগে শমূয়েল এসে পৌঁছালেন। তখন শৌল তাঁকে শুভেচ্ছা জানাবার জন্য তাঁর সংগে দেখা করতে গেলেন। শমূয়েল তাঁকে বললেন, “তুমি এটা কি করেছ?” উত্তরে শৌল বললেন, “আমি দেখলাম যে, লোকেরা আমার কাছ থেকে চলে যাচ্ছে এবং ঠিক সময়ে আপনিও আসলেন না, আবার পলেষ্টীয়েরাও এদিকে মিক্‌মসে এসে জড়ো হয়েছে। সেইজন্য আমি ভাবলাম, পলেষ্টীয়েরা গিল্‌গলে আমাকে আক্রমণ করতে আসছে অথচ আমি সদাপ্রভুর দয়া পাবার চেষ্টা করি নি। কাজেই আমার ইচ্ছা না থাকলেও আমি পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলাম।” শমূয়েল বললেন, “তুমি বোকার মত কাজ করেছ। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যে আদেশ তোমাকে দিয়েছিলেন তা তুমি পালন কর নি। যদি তুমি তা করতে তবে ইস্রায়েলের উপর তোমার রাজত্ব তিনি চিরকাল স্থায়ী করতেন। কিন্তু এখন তোমার রাজত্ব আর বেশী দিন টিকবে না। সদাপ্রভু তাঁর মনের মত একজন লোককে খুঁজে নিয়েছেন এবং তাঁকেই তাঁর লোকদের নেতা নিযুক্ত করেছেন, কারণ তাঁর আদেশ তুমি পালন কর নি।” এর পর শমূয়েল গিল্‌গল ছেড়ে বিন্যামীন এলাকার গিবিয়াতে চলে গেলেন। শৌল তাঁর সংগের লোকদের গুণে দেখলেন যে, তারা সংখ্যায় প্রায় ছ’শো। পরে শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথন এবং তাঁদের সংগের লোকেরা বিন্যামীন এলাকার গেবাতে গিয়ে থাকতে লাগলেন আর এদিকে পলেষ্টীয়েরা মিক্‌মসে ছাউনি ফেলে রইল। পলেষ্টীয়দের ছাউনি থেকে তিন দল হানাদার সৈন্য বের হল। তাদের এক দল অফ্রা গ্রামের পথে শূয়াল এলাকায় গেল। আর এক দল গেল বৈৎ-হোরোণের দিকে এবং অন্য দলটি গেল সেই পাহাড়ী এলাকায় যেখান থেকে মরু-এলাকার সিবোয়িম উপত্যকা দেখা যায়। সেই সময় ইস্রায়েল দেশের মধ্যে কোন কামার পাওয়া যেত না, কারণ পলেষ্টীয়েরা মনে করত কামার থাকলে ইব্রীয়েরা তলোয়ার কিম্বা বর্শা তৈরী করিয়ে নেবে। তাই লাংগলের ফাল, হাত-কোদাল, কুড়াল ও কাস্তে শাণ দেবার জন্য তাদের সবাইকে পলেষ্টীয়দের কাছে যেতে হত। লাংগলের ফাল, হাত-কোদাল, ত্রিশূল, কুড়াল ও কাঁটা বসানো লাঠিতে শান দেবার দাম হিসাবে আট গ্রাম রূপা লাগত। তাই যুদ্ধের সময় দেখা গেল যে, শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথন ছাড়া তাঁদের সংগেকার কোন সৈন্যের হাতে তলোয়ার বা বর্শা নেই। পলেষ্টীয়দের ছাউনির সৈন্যেরা বের হয়ে মিক্‌মসের গিরিপথে গিয়ে রইল। এদিকে শৌলের ছেলে যোনাথন একদিন তাঁর অস্ত্র বহনকারী যুবকটিকে বললেন, “চল, আমরা ওপাশে পলেষ্টীয়দের ছাউনিতে যাই।” কথাটা কিন্তু তিনি তাঁর বাবাকে জানালেন না। শৌল তখন গিবিয়ার সীমানায় মিগ্রোণ বলে একটা জায়গার একটা ডালিম গাছের তলায় বসে ছিলেন। তাঁর সংগে ছিল ছ’শো লোক, আর তাদের মধ্যে ছিলেন অহিয়, যাঁর পরনে ছিল এফোদ। অহিয় ছিলেন অহীটুবের ছেলে, অহীটুব ছিলেন ঈখাবোদের ভাই, ঈখাবোদ ছিলেন পীনহসের ছেলে আর পীনহস ছিলেন এলির ছেলে; এলি শীলোতে সদাপ্রভুর পুরোহিত ছিলেন। যোনাথন যে বের হয়ে গেছেন তা কেউ জানত না। যে গিরিপথ পার হয়ে যোনাথন পলেষ্টীয়দের সৈন্য-ছাউনির কাছে যাওয়ার কথা বলেছিলেন সেই গিরিপথের দু’পাশটা ছিল খাড়া উঁচু পাথরের দেয়ালের মত। তার এক পাশের নাম বোৎসেস ও অন্য পাশের নাম সেনি। তার এক পাশ ছিল উত্তরে মিক্‌মসের দিকে আর অন্য পাশ ছিল দক্ষিণে গেবার দিকে। যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারী যুবকটিকে বললেন, “চল, আমরা ওপাশে ঐ সুন্নত-না-করানো লোকদের ছাউনিতে যাই। হয়তো সদাপ্রভু আমাদের জন্য কিছু করবেন, কারণ তিনি তাঁর নিজের ইচ্ছামতই কম লোক দিয়ে হোক বা বেশী লোক দিয়ে হোক জয়ী হতে পারেন।” অস্ত্র বহনকারী লোকটি তখন বলল, “আপনার মন যা বলে তা-ই করুন। চলুন, আপনার ইচ্ছামতই আমি চলব।” যোনাথন বললেন, “তাহলে চল, আমরা ওপাশে ওদের দিকে গিয়ে ওদের দেখা দেব। ওরা যদি আমাদের বলে, ‘দাঁড়াও, আমরা তোমাদের কাছে আসছি,’ তাহলে আমরা যেখানে থাকব সেখান থেকে আর ওদের কাছে উঠে যাব না। কিন্তু যদি ওরা বলে, ‘আমাদের কাছে উঠে এস,’ তাহলে আমরা উঠে যাব। সদাপ্রভু যে আমাদের হাতে ওদের তুলে দিয়েছেন ওটাই হবে আমাদের কাছে তার চিহ্ন।” এই বলে পলেষ্টীয় সৈন্যদের সামনে গিয়ে তাঁরা দু’জন দেখা দিলেন। তখন পলেষ্টীয়েরা বলল, “ঐ দেখ, গর্তে লুকানো ইব্রীয়েরা বের হয়ে আসছে।” তাদের সৈন্য-ছাউনির লোকেরা যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিকে বলল, “আমাদের কাছে উঠে আয়, তোদের দেখিয়ে দিচ্ছি।” তখন যোনাথন তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিকে বললেন, “আমার পিছনে পিছনে উঠে এস। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের হাতে ওদের দিয়ে রেখেছেন।” যোনাথন চার হাত-পায়ে উপরে উঠে গেলেন আর তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিও তাঁর পিছনে পিছনে উঠে গেল। পলেষ্টীয়েরা যোনাথনের হাতে মারা পড়তে লাগল আর তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিও তাঁর পিছনে পিছনে পলেষ্টীয়দের মারতে লাগল। যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটির আক্রমণের শুরুতেই কমবেশী আধা একর জমির মধ্যে প্রায় বিশজন লোক মারা পড়ল। এর ফলে পলেষ্টীয়দের যুদ্ধের মাঠের ছাউনিতে এবং সমস্ত সৈন্যদের মধ্যে একটা ভীষণ ভয় দেখা দিল; এমন কি, তাদের মিক্‌মসের ছাউনির ও হানাদার দলের সৈন্যেরা ভয়ে কাঁপতে লাগল, আর সেই সংগে ভূমিকম্পও হল। সেই ভীষণ ভয় ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছিল। বিন্যামীন এলাকার গিবিয়াতে শৌলের পাহারাদার সৈন্যেরা দেখতে পেল যে, পলেষ্টীয় সৈন্যেরা দলছাড়া হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। শৌল তখন তাঁর সংগের লোকদের বললেন, “সৈন্যদের জড়ো করে সাজিয়ে দেখ, কে আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছে।” তাতে তারা দেখতে পেল যোনাথন ও তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটি সেখানে নেই। শৌল তখন অহিয়কে বললেন, “আপনি ঈশ্বরের সিন্দুকটি নিয়ে আসুন।” (সেই সময় সিন্দুকটি ইস্রায়েলীয়দের কাছেই ছিল।) শৌল যখন পুরোহিতের সংগে কথা বলছিলেন তখন পলেষ্টীয়দের ছাউনিতে গোলমাল চলছিল এবং তা বেড়ে যাচ্ছিল। কাজেই শৌল পুরোহিতকে বললেন, “থাক্‌, লাগবে না।” তারপর শৌল ও তাঁর সব সৈন্যেরা যুদ্ধের ডাকে সাড়া দিয়ে একত্র হয়ে যুদ্ধ করতে গেলেন। তাঁরা দেখলেন যে, পলেষ্টীয়েরা একজন আর একজনের উপর তলোয়ার চালাচ্ছে এবং তাদের মধ্যে ভীষণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এর আগে যে সব ইব্রীয়েরা পলেষ্টীয়দের মধ্যে থাকত এবং তাদের সংগে ছাউনিতে গিয়েছিল তারাও তখন ফিরে গিয়ে শৌল ও যোনাথনের সংগেকার ইস্রায়েলীয়দের সংগে যোগ দিল। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় লুকিয়ে থাকা ইস্রায়েলীয়েরাও যখন শুনল পলেষ্টীয়েরা পালিয়ে যাচ্ছে তখন তারাও বেরিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দিল এবং পলেষ্টীয়দের পিছনে তাড়া করল। এইভাবে সদাপ্রভু সেই দিন ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করলেন, আর বৈৎ-আবন পার হয়েও যুদ্ধ চলতে লাগল। সেই দিনটা ইস্রায়েলীয়দের খুব কষ্টে কাটল, কারণ শৌল তাদের দিয়ে একটা দিব্য করিয়ে নিয়েছিলেন যে, তিনি সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত, শত্রুদের উপর প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত যদি কেউ কিছু খায় তবে তার উপর যেন অভিশাপ পড়ে। কাজেই সেই দিন লোকেরা কেউ কিছু খায় নি। তারা সবাই গিয়ে এমন এক জায়গায় ঢুকল যেখানে গাছপালা আছে। সেখানে মাটির উপর কিছু মধু তাদের চোখে পড়ল। তারা দেখল, একটা চাক থেকে মধু ঝরে পড়ছে কিন্তু শপথ ভাংবার ভয়ে তা মুখে দিল না। যোনাথন শোনেন নি যে, তাঁর বাবা লোকদের দিয়ে এই রকম একটা দিব্য করিয়ে নিয়েছেন। তাই তিনি তাঁর হাতের লাঠির আগাটা বাড়িয়ে মৌচাকে ঢুকালেন এবং মধু হাতে নিয়ে খেতে লাগলেন। তাতে তাঁর দেহে শক্তি ফিরে আসল। তখন সৈন্যদের একজন তাঁকে বলল, “আপনার বাবা সৈন্যদের দিয়ে একটা কঠিন শপথ করিয়ে নিয়েছেন আর বলেছেন, ‘আজ যদি কেউ কিছু খায় তবে তার উপর অভিশাপ পড়বে।’ তাই লোকেরা এত দুর্বল হয়ে পড়েছে।” তখন যোনাথন বললেন, “আমার বাবা তো লোকদের কষ্ট দিচ্ছেন। দেখ, এই মধু একটুখানি মুখে দেওয়াতে আমার দেহে কেমন শক্তি ফিরে এসেছে। শত্রুদের কাছ থেকে লুটে নেওয়া খাবার থেকে যদি আজ লোকেরা খেতে পারত তাহলে কত ভাল হত, আর পলেষ্টীয়েরাও আরও অনেক বেশী মারা পড়ত।” ইস্রায়েলীয়েরা সেই দিন মিক্‌মস থেকে অয়ালোন পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই তারা লুটের জিনিসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ভেড়া, গরু, বাছুর ধরে মাটিতে ফেলে কেটে রক্ত সুদ্ধই মাংস খেতে লাগল। তখন লোকেরা গিয়ে শৌলকে বলল, “দেখুন, ওরা সবাই রক্ত সুদ্ধ মাংস খেয়ে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করছে।” তিনি বললেন, “তোমরা অবিশ্বস্ত হয়েছ। এখন আর দেরি না করে একটা বড় পাথর গড়িয়ে এখানে নিয়ে এস।” তারপর তিনি বললেন, “তোমরা লোকদের মধ্যে গিয়ে বল যেন তারা তাদের বলদ বা ভেড়া এখানে আমার কাছে নিয়ে এসে কাটে আর তার পরে খায়। রক্ত সুদ্ধ মাংস খেয়ে কেউ যেন সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ না করে।” সেই রাতে লোকেরা যে যার বলদ নিয়ে এসে সেখানে কাটল। সদাপ্রভুর উদ্দেশে শৌল সেখানে একটা বেদী তৈরী করলেন। এটাই হল সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাঁর তৈরী প্রথম বেদী। পরে শৌল বললেন, “চল, আজ রাতে আমরা পলেষ্টীয়দের তাড়া করি এবং সকাল পর্যন্ত তাদের জিনিসপত্র লুট করি। তাদের একজনকেও আমরা বাঁচিয়ে রাখব না।” উত্তরে লোকেরা বলল, “আপনি যা ভাল মনে করেন তা-ই করুন।” কিন্তু পুরোহিত বললেন, “চলুন, এখানে আমরা প্রথমে ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করি।” তখন শৌল ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি পলেষ্টীয়দের তাড়া করব? ইস্রায়েলীয়দের হাতে কি তুমি তাদের তুলে দেবে?” কিন্তু ঈশ্বর সেই দিন শৌলকে কোন উত্তর দিলেন না। সেইজন্য শৌল বললেন, “সৈন্যদলের নেতারা, আপনারা এখানে আসুন। আজকের এই পাপ কি করে হল আসুন, আমরা তাঁর খোঁজ করি। ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধারকর্তা জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, আমার ছেলে যোনাথনও যদি তা করে থাকে নিশ্চয়ই তাকেও মরতে হবে।” কিন্তু লোকেরা সবাই চুপ করে রইল। শৌল তখন সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “আপনারা এক দিকে দাঁড়ান, আর আমি ও আমার ছেলে যোনাথন অন্য দিকে দাঁড়াই।” লোকেরা বলল, “আপনি যা ভাল মনে করেন তা-ই করুন।” শৌল তখন ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে বললেন, “এর সঠিক উত্তর আমাদের দাও।” তাতে দোষ পড়ল শৌল ও যোনাথনের উপর আর বাকী লোকেরা ছাড়া পেল। শৌল বললেন, “আমার ও আমার ছেলে যোনাথনের মধ্যে গুলিবাঁট করা হোক।” তাতে যোনাথনের উপর দোষ পড়ল। শৌল তখন যোনাথনকে বললেন, “আমাকে বল, তুমি কি করেছ?” যোনাথন তাঁকে বললেন, “আমার লাঠির আগা দিয়ে আমি একটুখানি মধু খেয়েছি, তাই আমাকে মরতে হবে।” শৌল বললেন, “হ্যাঁ যোনাথন, তোমাকে মরতেই হবে। ঈশ্বর যেন তোমাকে শাস্তি দেন, অবশ্যই শাস্তি দেন।” কিন্তু লোকেরা শৌলকে বলল, “কি? যাঁর জন্য ইস্রায়েলীয়েরা এই মহা উদ্ধার পেয়েছে সেই যোনাথনকে মরতে হবে? কখনও না; জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, তাঁর একটা চুলও মাটিতে পড়বে না, কারণ তিনি আজ যা করেছেন তা ঈশ্বরের সংগে থেকেই করেছেন।” লোকেরা এইভাবে যোনাথনকে রক্ষা করল, তাঁকে মেরে ফেলা হল না। এর পর শৌল আর পলেষ্টীয়দের তাড়া করলেন না, আর পলেষ্টীয়েরাও নিজেদের দেশে চলে গেল। শৌল ইস্রায়েলীয়দের রাজা হবার পর দেশের চারপাশের সমস্ত শত্রুদের সংগে, অর্থাৎ মোয়াবীয়, অম্মোনীয়, ইদোমীয়, সোবার রাজাদের ও পলেষ্টীয়দের সংগে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যেদিকে যেতেন সেদিকেই ভীষণ ক্ষতি করতেন। তিনি বীরের মত যুদ্ধ করে অমালেকীয়দের হারিয়ে দিয়ে লুটেরাদের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করেছিলেন। যোনাথন, যিশ্‌বি ও মল্কীশূয় নামে শৌলের তিনজন ছেলে ছিল। তাঁর বড় মেয়ের নাম ছিল মেরব ও ছোট মেয়ের নাম ছিল মীখল। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল অহীনোয়ম। তিনি ছিলেন অহীমাসের মেয়ে। শৌলের প্রধান সেনাপতির নাম ছিল অব্‌নের। তিনি শৌলের কাকা নেরের ছেলে। শৌলের বাবা কীশ ও অব্‌নেরের বাবা নের ছিলেন অবীয়েলের ছেলে। শৌলের রাজত্বকালে পলেষ্টীয়দের সংগে ভীষণ যুদ্ধ হয়েছিল। কোন শক্তিশালী লোক বা বীর পুরুষ দেখলেই তিনি তাকে তাঁর সৈন্যদলে নিয়ে নিতেন। শমূয়েল শৌলকে বললেন, “সদাপ্রভু তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের উপরে তোমাকে রাজপদে অভিষেক করবার জন্য আমাকে পাঠিয়েছিলেন। এখন তুমি সদাপ্রভুর কথায় কান দাও। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘ইস্রায়েলীয়েরা মিসর থেকে চলে আসবার পথে অমালেকীয়েরা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বলে আমি তাদের শাস্তি দেব। এখন তুমি গিয়ে অমালেকীয়দের আক্রমণ করবে এবং তাদের যা কিছু আছে সব ধ্বংস করে ফেলবে; তাদের প্রতি কোন দয়া করবে না। তাদের স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, দুধ-খাওয়া শিশু, গরু-ভেড়া, উট, গাধা সব মেরে ফেলবে।’ ” শৌল তখন লোকদের টলায়ীম শহরে ডেকে জড়ো করলেন। তাতে ইস্রায়েলের পদাতিক সৈন্যের সংখ্যা হল দুই লক্ষ এবং যিহূদা-গোষ্ঠীর সৈন্যের সংখ্যা হল দশ হাজার। শৌল অমালেকীয়দের শহরের কাছে গিয়ে সেখানকার শুকিয়ে যাওয়া নদীর খাদের মধ্যে ওৎ পেতে রইলেন। তিনি কেনীয়দের বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা যখন মিসর থেকে বের হয়ে এসেছিল তখন তোমরা তাদের প্রতি দয়া দেখিয়েছিলে। তোমরা অমালেকীয়দের মধ্য থেকে অন্য কোথাও চলে যাও, যাতে অমালেকীয়দের সংগে আমি তোমাদেরও ধ্বংস করে না ফেলি।” তখন কেনীয়েরা অমালেকীয়দের মধ্য থেকে চলে গেল। শৌল তখন হবীলা এলাকা থেকে মিসরের পূর্ব দিকে শূর মরু-এলাকা পর্যন্ত সমস্ত অমালেকীয়দের হারিয়ে দিলেন। তিনি অমালেকীয়দের রাজা অগাগকে জীবিত অবস্থায় ধরলেন এবং অন্য সব লোকদের মেরে ফেললেন। কিন্তু শৌল ও তাঁর সৈন্যেরা অগাগকে বাঁচিয়ে রাখলেন এবং অমালেকীয়দের ভাল ভাল গরু, ভেড়া, মোটাসোটা বাছুর এবং ভেড়ার বাচ্চা, এক কথায় তাদের যা কিছু ভাল ছিল সেগুলো তাঁরা বাঁচিয়ে রাখলেন। সেগুলোকে ধ্বংস করে দিতে তাঁরা রাজী হলেন না, কিন্তু অকেজো এবং রোগাগুলোকে তাঁরা একেবারে শেষ করে দিলেন। তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য শমূয়েলের কাছে প্রকাশিত হল, “শৌলকে রাজা করাটা আমার দুঃখের কারণ হয়েছে, কারণ সে আমার কাছ থেকে সরে গেছে এবং আমার আদেশ অমান্য করেছে।” এই কথা শুনে শমুয়েল উত্তেজিত হলেন এবং গোটা রাতটা তিনি সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করে কাটালেন। পরদিন ভোরে উঠে শমূয়েল শৌলের সংগে দেখা করতে গেলেন। সেখানে তাঁকে বলা হল যে, শৌল কর্মিল পাহাড়ে গিয়ে নিজের সম্মানের জন্য সেখানে একটা স্তম্ভ তৈরী করবার পর গিল্‌গলে চলে গেছেন। শমূয়েল তখন শৌলের কাছে গেলেন। শৌল তাঁকে বললেন, “সদাপ্রভু আপনার মংগল করুন। সদাপ্রভুর আদেশ আমি পালন করেছি।” শমূয়েল বললেন, “তবে ভেড়ার ডাক আমার কানে আসছে কেন? গরুর ডাকই বা আমি শুনতে পাচ্ছি কেন?” উত্তরে শৌল বললেন, “অমালেকীয়দের কাছ থেকে ওগুলো আনা হয়েছে। আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করবার জন্য সৈন্যেরা ভাল ভাল গরু ও ভেড়া রেখে দিয়েছে; তবে বাকী সব কিছু আমরা একেবারে শেষ করে দিয়েছি।” শমূয়েল তখন শৌলকে বললেন, “চুপ কর। গত রাতে সদাপ্রভু আমাকে যা বলেছেন তা আমি তোমাকে বলি।” শৌল বললেন, “বলুন।” শমূয়েল বললেন, “একদিন তুমি নিজের চোখে খুবই সামান্য ছিলে, কিন্তু তবুও কি তুমি ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত গোষ্ঠীর মাথা হও নি? সদাপ্রভুই তোমাকে ইস্রায়েল দেশের উপরে রাজা হিসাবে অভিষেক করেছেন। তিনি তোমাকে একটা কাজে পাঠিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তুমি গিয়ে সেই পাপীদের, অর্থাৎ অমালেকীয়দের একেবারে শেষ করে ফেলবে। তারা একেবারে শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সংগে যুদ্ধ করবে।’ তুমি সদাপ্রভুর আদেশ পালন কর নি কেন? কেন তুমি লুটের জিনিসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে এবং সদাপ্রভুর চোখে যা খারাপ তা-ই করলে?” শৌল বললেন, “কিন্তু আমি তো সদাপ্রভুর আদেশ পালন করেছি। যে কাজে সদাপ্রভু আমাকে পাঠিয়েছিলেন আমি সেই কাজ করেছি। আমি অমালেকীয়দের একেবারে শেষ করে দিয়েছি এবং তাদের রাজা অগাগকে ধরে নিয়ে এসেছি। তবে ধ্বংসের জন্য ঠিক করে রাখা জিনিস থেকে সৈন্যেরা কতগুলো ভাল ভাল গরু ও ভেড়া এনেছে, যাতে গিল্‌গলে আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সেগুলো তারা উৎসর্গ করতে পারে।” তখন শমূয়েল বললেন, “সদাপ্রভুর আদেশ পালন করলে তিনি যত খুশী হন, পোড়ানো-উৎসর্গ ও পশু-উৎসর্গে কি তিনি তত খুশী হন? পশু-উৎসর্গের চেয়ে তাঁর আদেশ পালন করা আর ভেড়ার চর্বির চেয়ে তাঁর কথার বাধ্য হওয়া অনেক ভাল। বিদ্রোহ করা আর গোণাপড়ার কাজ করা একই পাপ; অবাধ্যতা আর প্রতিমাপূজা একই অন্যায়। তুমি সদাপ্রভুর আদেশ অগ্রাহ্য করেছ তাই তিনিও তোমাকে রাজা হিসাবে অগ্রাহ্য করেছেন।” শৌল তখন শমূয়েলকে বললেন, “আমি পাপ করেছি। সদাপ্রভুর আদেশ আর আপনার নির্দেশ আমি সত্যিই অমান্য করেছি। লোকদের ভয়ে আমি তাদের কথামতই কাজ করেছি। এখন আমার প্রতি দয়া করে আমার পাপ আপনি ক্ষমা করে দিন, আর আমার সংগে চলুন যাতে আমি সদাপ্রভুর উপাসনা করতে পারি।” কিন্তু শমূয়েল তাঁকে বললেন, “আমি তোমার সংগে যাব না। তুমি সদাপ্রভুর আদেশ অগ্রাহ্য করেছ তাই সদাপ্রভুও তোমাকে ইস্রায়েলীয়দের রাজা হিসাবে অগ্রাহ্য করেছেন।” এই বলে শমূয়েল চলে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই শৌল তাঁর কাপড়ের একটা অংশ টেনে ধরলেন; তাতে তাঁর কাপড় ছিঁড়ে গেল। তখন শমূয়েল তাঁকে বললেন, “সদাপ্রভু আজ তোমার কাছ থেকে ইস্রায়েলীয়দের রাজ্যটাও এইভাবে ছিনিয়ে নিলেন আর তোমার চেয়ে ভাল তোমার এক দেশবাসীকে তা দিলেন। যিনি ইস্রায়েলের গৌরব তিনি মিথ্যা কথা বলেন না কিম্বা মনও বদলান না। তিনি মানুষ নন যে, মন বদলাবেন।” শৌল বললেন, “আমি পাপ করেছি; তবুও আমার অনুরোধ এই যে, আমার জাতির বৃদ্ধ নেতাদের ও ইস্রায়েলীয়দের সামনে আমার সম্মান রাখুন। আমি যাতে আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপাসনা করতে পারি সেইজন্য আপনি আমার সংগে চলুন।” কাজেই শমূয়েল শৌলের সংগে গেলেন আর শৌল সদাপ্রভুর উপাসনা করলেন। পরে শমূয়েল বললেন, “অমালেকীয়দের রাজা অগাগকে আমার কাছে নিয়ে এস।” এই কথা শুনে অগাগ তাঁর মোটা শরীর নিয়ে হেলে-দুলে শমূয়েলের কাছে আসলেন। তিনি ভাবলেন মৃত্যুর যন্ত্রণা এখন আর নেই। কিন্তু শমূয়েল বললেন, “তোমার তলোয়ারে অনেক স্ত্রীলোক যেমন সন্তানহারা হয়েছে, তেমনি স্ত্রীলোকদের মধ্যে তোমার মা-ও সন্তানহারা হবে।” এই কথা বলে শমূয়েল গিল্‌গলে সদাপ্রভুর সামনে অগাগকে টুকরা টুকরা করে কেটে ফেললেন। তারপর তিনি রামায় চলে গেলেন আর শৌল গিবিয়াৎ-শৌল শহরে তাঁর নিজের বাড়ীতে গেলেন। শমূয়েল যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তিনি শৌলের সংগে আর দেখা করেন নি। ইস্রায়েলীয়দের উপর শৌলকে রাজা করাটা সদাপ্রভুর দুঃখের কারণ হয়েছিল বলে শমূয়েল তাঁর জন্য দুঃখ করতেন। পরে সদাপ্রভু শমূয়েলকে বললেন, “আমি শৌলকে ইস্রায়েলীয়দের রাজা হিসাবে অগ্রাহ্য করেছি, কাজেই তুমি আর কতকাল তার জন্য দুঃখ করবে? এখন তুমি তোমার শিঙায় তেল ভরে নিয়ে বেরিয়ে পড়। আমি তোমাকে বৈৎলেহম গ্রামের যিশয়ের কাছে পাঠাচ্ছি। আমি তার ছেলেদের মধ্য থেকে আমার নিজের উদ্দেশ্যে একজনকে রাজা হবার জন্য বেছে রেখেছি।” শমূয়েল বললেন, “আমি কি করে যাব? শৌল এই কথা শুনলে তো আমাকে মেরে ফেলবে।” সদাপ্রভু বললেন, “তুমি একটা বক্‌না বাছুর তোমার সংগে নিয়ে যাবে এবং বলবে যে, তুমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করতে এসেছ। সেই উৎসর্গের অনুষ্ঠানে তুমি যিশয়কে নিমন্ত্রণ করবে। তারপরে তোমাকে যা করতে হবে তা আমি বলে দেব। আমি যার কথা তোমাকে বলব তুমি তাকেই আমার উদ্দেশে অভিষেক করবে।” শমূয়েল সদাপ্রভুর কথামতই কাজ করলেন। তিনি যখন বৈৎলেহমে উপস্থিত হলেন তখন গ্রামের বৃদ্ধ নেতারা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাঁর সংগে দেখা করতে আসলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি শান্তির মনোভাব নিয়ে এসেছেন?” উত্তরে শমূয়েল বললেন, “হ্যাঁ, আমি শান্তির মনোভাব নিয়েই এসেছি। সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমি একটা পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে এসেছি। তোমরা নিজেদের শুচি করে আমার সংগে এই অনুষ্ঠানে যোগ দাও।” এই বলে তিনি যিশয় ও তাঁর ছেলেদের শুচি করলেন এবং সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য তাঁদের নিমন্ত্রণ করলেন। তাঁরা আসলে পর শমূয়েল ইলীয়াবকে দেখে মনে মনে ভাবলেন নিশ্চয়ই সদাপ্রভুর অভিষিক্ত লোকটি তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সদাপ্রভু শমূয়েলকে বললেন, “তার চেহারা কি রকম কিম্বা সে কতটা লম্বা তা তুমি দেখতে যেয়ো না, কারণ আমি তাকে অগ্রাহ্য করেছি। মানুষ যা দেখে তাতে কিছু যায়-আসে না, কারণ মানুষ দেখে বাইরের চেহারা কিন্তু সদাপ্রভু দেখেন অন্তর।” তারপর যিশয় অবীনাদবকে ডেকে শমূয়েলের সামনে দিয়ে যেতে বললেন। শমূয়েল বললেন, “সদাপ্রভু একেও বেছে নেন নি।” যিশয় তারপর শম্মকে তাঁর সামনে দিয়ে যেতে বললেন; কিন্তু শমূয়েল বললেন, “সদাপ্রভু একেও বেছে নেন নি।” এইভাবে যিশয় তাঁর সাতজন ছেলেকে শমূয়েলের সামনে দিয়ে যেতে বললেন, কিন্তু শমূয়েল যিশয়কে বললেন, “সদাপ্রভু এদের কাউকেই বেছে নেন নি।” তারপর তিনি যিশয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “এরা ছাড়া কি তোমার আর ছেলে নেই?” যিশয় বললেন, “সবচেয়ে ছোটটি বাকী আছে; সে ভেড়া চরাচ্ছে।” শমূয়েল বললেন, “তাকে ডাকতে পাঠাও। সে এখানে না আসা পর্যন্ত আমরা খেতে বসব না।” কাজেই যিশয় লোক পাঠিয়ে ছেলেটিকে আনালেন। তাঁর গায়ের রং ছিল লাল্‌চে, চোখ দু’টা সুন্দর এবং চেহারা ভাল। তখন সদাপ্রভু বললেন, “এ-ই সেই লোক, তুমি গিয়ে তাকে অভিষেক কর।” শমূয়েল তখন তেলের শিঙা নিয়ে তাঁর ভাইদের মাঝখানে তাঁকে অভিষেক করলেন। সেই দিন থেকে সদাপ্রভুর আত্মা দায়ূদের উপর আসলেন। এর পর শমূয়েল রামায় ফিরে গেলেন। তখন সদাপ্রভুর আত্মা শৌলকে ছেড়ে চলে গেলেন আর সদাপ্রভুর কাছ থেকে এক মন্দ আত্মা এসে তাঁকে ভীষণ ভয় দেখাতে লাগল। তা দেখে শৌলের কর্মচারীরা তাঁকে বলল, “ঈশ্বরের কাছ থেকে এক মন্দ আত্মা এসে আপনাকে ভীষণ ভয় দেখাচ্ছে। হে আমাদের প্রভু, আপনার সামনে উপস্থিত এই দাসদের আদেশ দিন যেন তারা গিয়ে এমন একজন লোকের খোঁজ করে যে ভাল বীণা বাজাতে পারে। যখন সেই মন্দ আত্মা ঈশ্বরের কাছ থেকে আপনার উপর আসবে তখন সে আপনাকে বীণা বাজিয়ে শোনাবে আর তাতে আপনার ভাল লাগবে।” এতে শৌল তাঁর কর্মচারীদের বললেন, “তাহলে তোমরা এমন একজন লোকের খোঁজ কর যে ভাল বীণা বাজাতে পারে এবং তাকে আমার কাছে নিয়ে এস।” তাঁর কর্মচারীদের মধ্যে একজন বলল, “আমি বৈৎলেহমে যিশয়ের এক ছেলেকে দেখেছি। সে ভাল বীণা বাজায়। সে একজন সাহসী বীর এবং যোদ্ধা। সে সুন্দর করে কথা বলতে পারে এবং সে দেখতেও সুন্দর, আর সদাপ্রভু তার সংগে আছেন।” এই কথা শুনে শৌল যিশয়ের কাছে লোক পাঠিয়ে বললেন যেন তিনি তাঁর রাখাল ছেলে দায়ুদকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। যিশয় তখন কিছু রুটি, চামড়ার থলিতে করে এক থলি আংগুর-রস ও একটা ছাগলের বাচ্চা একটা গাধার পিঠে চাপালেন এবং সেটা তার ছেলে দায়ূদকে দিয়ে শৌলের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। দায়ূদ শৌলের কাছে এসে তাঁর কাজে বহাল হলেন। শৌল তাঁকে খুব ভালবাসতে লাগলেন এবং তিনি শৌলের একজন অস্ত্র বহনকারী হলেন। পরে শৌল যিশয়কে বলে পাঠালেন, “দায়ূদকে আমার কাজে বহাল থাকতে দাও, কারণ তাকে আমার ভাল লেগেছে।” ঈশ্বরের কাছ থেকে যখন সেই মন্দ আত্মা শৌলের উপর আসত তখন দায়ূদ তাঁর বীণা বাজাতেন। এতে শৌলের ভাল লাগত এবং তিনি শান্তি পেতেন, আর সেই মন্দ আত্মাও তাঁকে ছেড়ে চলে যেত। পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধের জন্য সৈন্য জড়ো করে নিয়ে যিহূদা-গোষ্ঠীর এলাকার সোখোতে গেল। তারা গিয়ে সোখো ও অসেখা গ্রামের মাঝামাঝি এফস্‌দম্মীম গ্রামে ছাউনি ফেলল। শৌল ও ইস্রায়েলীয়েরা জড়ো হয়ে এলা উপত্যকায় ছাউনি ফেলল এবং পলেষ্টীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য সৈন্য সাজাল। এক দিকের পাহাড়ে দাঁড়াল পলেষ্টীয়েরা এবং অন্য দিকের পাহাড়ে দাঁড়াল ইস্রায়েলীয়েরা। তাদের মাঝখানে রইল এলা উপত্যকা। পলেষ্টীয়দের পক্ষ থেকে গলিয়াৎ নামে এক বীর যোদ্ধা তাদের সৈন্যদল থেকে বের হয়ে আসল। সে ছিল গাৎ শহরের লোক। লম্বায় সে ছিল সাড়ে ছয় হাত। তার মাথায় ছিল একটা ব্রোঞ্জের টুপী আর গায়ে ছিল মাছের আঁশের মত তৈরী ব্রোঞ্জের জামা, যার ওজন ছিল ষাট কেজি। তাঁর হাঁটু থেকে গোড়ালী পর্যন্ত ব্রোঞ্জ দিয়ে ঢাকা ছিল, আর তার কাঁধে ঝুলানো ছিল ব্রোঞ্জের তলোয়ার। তার বর্শার ডাঁটিটা ছিল তাঁতীদের বীমের মত আর সেটার লোহার ফলাটার ওজন ছিল সাত কেজি দু’শো গ্রাম। তার ঢাল বহনকারী তার আগে আগে চলত। গলিয়াৎ দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ইস্রায়েলের সৈন্যদলকে বলল, “কেন তোমরা যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজাতে এসেছ? আমি একজন পলেষ্টীয় আর তোমরা তো মাত্র শৌলের চাকর। তোমাদের পক্ষ থেকে তোমরা একজনকে বেছে নাও; সে আমার কাছে নেমে আসুক। যদি সে আমার সংগে যুদ্ধ করে আমাকে মেরে ফেলতে পারে তাহলে আমরা তোমাদের চাকর হব; কিন্তু যদি আমি তাকে মেরে ফেলতে পারি তবে তোমরা আমাদের চাকর হয়ে চাকরের কাজ করবে।” সেই পলেষ্টীয় আরও বলল, “আমি আজ ইস্রায়েলের সৈন্যদলকে টিটকারি দিয়ে বলছি, আমার সংগে যুদ্ধ করবার জন্য তোমরা একজন লোক দাও।” তার এই সব কথা শুনে শৌল ও অন্যান্য ইস্রায়েলীয়েরা ভীষণ ভয় পেলেন। দায়ূদের বাবা যিশয় যিহূদা এলাকার ইফ্রাথ, অর্থাৎ বৈৎলেহম গ্রামে বাস করতেন। তাঁর আটটি ছেলে ছিল। শৌলের রাজত্বের সময়ে তিনি বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। যিশয়ের ছেলেদের মধ্যে প্রথম তিনজন শৌলের সংগে যুদ্ধে গিয়েছিল। যে তিনজন যুদ্ধে গিয়েছিল তাদের মধ্যে বড়টির নাম ইলীয়াব, দ্বিতীয়টির নাম অবীনাদব এবং তৃতীয়টির নাম শম্ম। তাঁর ছেলেদের মধ্যে দায়ূদই ছিলেন সবার ছোট। প্রথম তিনজন শৌলের সংগে গিয়েছিল, কিন্তু দায়ূদ শৌলের কাছেও থাকতেন, আবার তাঁর বাবার ভেড়া চরাবার জন্য বৈৎলেহমেও যেতেন। সেই পলেষ্টীয় চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন সূর্য উঠবার ও ডুববার সময় এগিয়ে এসে নিজেকে দেখাত। একদিন যিশয় তাঁর ছেলে দায়ূদকে বললেন, “তুমি তোমার ভাইদের জন্য এই আঠারো কেজি ভাজা শস্য আর এই দশটা রুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি সৈন্য-ছাউনিতে তাদের কাছে যাও, আর এই দশ তাল পনীর তাদের হাজারপতির জন্য নিয়ে যাও। তোমার ভাইয়েরা কেমন আছে তা দেখে এস আর তাদের কাছ থেকে কোন একটা চিহ্ন নিয়ে এস। শৌল ও তোমার ভাইয়েরা আর সমস্ত ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা এলা উপত্যকায় আছে এবং পলেষ্টীয়দের সংগে যুদ্ধ করছে।” দায়ূদ ভোরে উঠেই অন্য একজন রাখালের হাতে তাঁর ভেড়ার পালের ভার দিলেন। তারপর যিশয়ের আদেশ মত তিনি সব জিনিস নিয়ে রওনা হয়ে গেলেন। তিনি যখন ছাউনির কাছে পৌঁছালেন তখন ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা সারি বেঁধে যুদ্ধের হাঁক দিতে দিতে বেরিয়ে যাচ্ছিল। ইস্রায়েলীয়েরা ও পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করবার জন্য মুখোমুখি তাদের সৈন্য সাজাল। তখন দায়ূদ তাঁর জিনিসগুলো মাল-রক্ষকের কাছে রেখে দৌড়ে সৈন্যদলের মধ্যে ঢুকে ভাইদের জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা কেমন আছে। তিনি যখন ভাইদের সংগে কথা বলছিলেন তখন গাৎ শহরের সেই পলেষ্টীয় বীর গলিয়াৎ তার সৈন্যদল থেকে বের হয়ে আগের মতই কথা বলতে লাগল, আর দায়ূদ তা শুনলেন। এদিকে ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা সবাই ঐ লোকটিকে দেখে ভীষণ ভয়ে তার সামনে থেকে পালিয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা বলাবলি করছিল, “ঐ যে লোকটা বার বার বের হয়ে আসে, ওকে তোমরা দেখেছ তো? সে ইস্রায়েলীয়দের টিটকারি দিতে আসে। ঐ লোকটিকে যে মেরে ফেলতে পারবে রাজা তাকে প্রচুর ধন-সম্পত্তি দেবেন। তাঁর মেয়েকেও তিনি তার সংগে বিয়ে দেবেন আর ইস্রায়েল দেশে তার পরিবারকে খাজনা ও রাজার অন্যান্য দাবি-দাওয়া থেকে রেহাই দেবেন।” যে লোকেরা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল দায়ূদ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “যে এই পলেষ্টীয়কে মেরে ফেলে ইস্রায়েলীয়দের উপর থেকে এই অসম্মান দূর করবে তার প্রতি কি করা হবে? এই সুন্নত-না-করানো পলেষ্টীয়টা কে, যে জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যদলকে টিটকারি দেয়?” তাতে লোকেরা যা বলাবলি করছিল সেইমতই তাঁকে জানানো হল যে, সেই পলেষ্টীয়কে যে মেরে ফেলবে তার জন্য কি কি করা হবে। দায়ূদের বড় ভাই ইলীয়াব লোকদের সংগে তাঁর কথাবার্তা শুনে রাগে জ্বলে উঠলেন। তিনি বললেন, “তুই কেন এখানে এসেছিস? মরু-এলাকায় ভেড়াগুলো কার কাছে রেখে এসেছিস? তোর দেমাক আর মনের দুষ্টামির কথা আমার জানা আছে। তুই যুদ্ধ দেখতে এসেছিস, তাই না?” দায়ূদ বললেন, “বাঃ, আমি কি করলাম? আমি তো কেবল একটা কথা জিজ্ঞাসা করেছি।” এই বলে তিনি অন্য লোকের কাছে গিয়ে তাকে সেই একই কথা জিজ্ঞাসা করলেন আর লোকেরা তাঁকে আগের মতই উত্তর দিল। দায়ূদ যা বলছিলেন তা অন্যেরা শুনে শৌলকে জানাল। তখন শৌল তাঁকে ডেকে পাঠালেন। দায়ূদ শৌলকে বললেন, “ঐ পলেষ্টীয়টাকে দেখে কারও ঘাবড়াবার দরকার নেই। আপনার এই দাস গিয়ে তার সংগে যুদ্ধ করবে।” শৌল বললেন, “তুমি ঐ পলেষ্টীয়টার সংগে কি করে যুদ্ধ করবে? তুমি তো মাত্র সেদিনকার ছেলে, আর ঐ পলেষ্টীয়টা অল্প বয়স থেকেই যোদ্ধা।” সিংহ, ভাল্লুক দুই-ই আপনার এই দাসের হাতে মারা পড়েছে, আর এই সুন্নত-না-করানো পলেষ্টীয়টার দশাও ঐগুলোর মত হবে, কারণ সে জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যদলকে টিটকারি দিয়েছে।” দায়ূদ আরও বললেন, “সদাপ্রভু, যিনি আমাকে সিংহ আর ভাল্লুকের থাবা থেকে রক্ষা করেছেন, তিনিই আমাকে ঐ পলেষ্টীয়টার হাত থেকেও রক্ষা করবেন।” তখন শৌল দায়ূদকে বললেন, “তবে যাও, সদাপ্রভু তোমার সংগে থাকুন।” এই বলে শৌল তাঁর নিজের পোশাক দায়ূদকে পরিয়ে দিলেন। তিনি তাঁর মাথায় দিলেন ব্রোঞ্জের টুপী আর গায়ে দিলেন যুদ্ধের সাজ। দায়ূদ তাঁর পোশাকের উপরে শৌলের তলোয়ারটা বেঁধে হাঁটতে চেষ্টা করলেন, কারণ আগে তিনি তা কখনও করেন নি। তিনি শৌলকে বললেন, “এই সব পরে আমি যেতে পারব না, কারণ এর আগে আমি কখনও তা করি নি।” এই বলে তিনি সেগুলো খুলে ফেললেন। তারপর তাঁর লাঠিখানা তিনি হাতে নিলেন এবং ছোট্ট পাহাড়ী নদীর মধ্য থেকে পাঁচটা মসৃণ পাথর বেছে নিয়ে তাঁর চামড়ার থলির মধ্যে রাখলেন। এই রকম থলি রাখালেরা ব্যবহার করত। তারপর তাঁর ফিংগাটা নিয়ে তিনি সেই পলেষ্টীয়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন, আর সেই পলেষ্টীয়ও দায়ূদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। তার ঢাল বহনকারী ঢাল নিয়ে তার সামনে সামনে আসছিল। সেই পলেষ্টীয় দায়ূদের দিকে ভাল করে তাকিয়ে দেখে তাকে তুচ্ছ করল, কারণ দায়ূদের বয়স অল্প ছিল। তাঁর গায়ের রং লাল্‌চে এবং চেহারা সুন্দর ছিল। গলিয়াৎ দায়ূদকে বলল, “আমি কি কুকুর যে, তুই লাঠি নিয়ে আমার কাছে আসছিস্‌?” সে তার দেব-দেবতার নাম করে দায়ূদকে অভিশাপ দিতে লাগল। সে দায়ূদকে আরও বলল, “এগিয়ে আয়; আমি তোর গায়ের মাংস আকাশের পাখী আর বুনো পশুদের খেতে দিই।” তখন দায়ূদ সেই পলেষ্টীয়কে বললেন, “তুমি আমার কাছে আসছ তলোয়ার, বর্শা আর ছোরা নিয়ে, কিন্তু আমি তোমার কাছে যাচ্ছি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, ইস্রায়েলীয় সৈন্যদলের ঈশ্বরের নাম নিয়ে, যাঁকে তুমি টিটকারি দিয়েছ। সদাপ্রভু আজকের দিনেই তোমাকে আমার হাতে তুলে দেবেন। আমি তোমাকে আঘাত করব আর তোমার মাথা কেটে নেব। আজকেই আমি পলেষ্টীয় সৈন্যদের মৃতদেহ আকাশের পাখী ও পৃথিবীর পশুদের খেতে দেব। তা দেখে পৃথিবীর সবাই জানতে পারবে যে, ইস্রায়েলীয়দের পক্ষে ঈশ্বর বলতে একজন আছেন। যে সমস্ত লোক আজ এখানে রয়েছে তারাও জানতে পারবে যে, সদাপ্রভু কোন তলোয়ার বা বর্শা দিয়ে উদ্ধার করেন না, কারণ এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর; আর তিনি আমাদের হাতে তোমাদের তুলে দেবেন।” ঐ পলেষ্টীয় যখন দায়ূদকে আক্রমণ করবার জন্য এগিয়ে আসতে লাগল তখন দায়ূদও তার কাছে যাবার জন্য বিপক্ষের সৈন্যদলের দিকে দৌড়ে গেলেন, আর তাঁর থলি থেকে একটা পাথর নিয়ে ফিংগাতে বসিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে সেই পলেষ্টীয়ের কপালে সেটা ছুঁড়ে মারলেন। পাথরটা তার কপালে বসে গেলে সে মুখ থুব্‌ড়ে মাটিতে পড়ে গেল। তখন ইস্রায়েল আর যিহূদার লোকেরা চিৎকার করে উঠল এবং গয় ও ইক্রোণের ফটক পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের তাড়া করে নিয়ে গেল। পলেষ্টীয়দের আহত লোকেরা গাৎ ও ইক্রোণ পর্যন্ত শারয়িমের পথে পথে পড়ে রইল। পরে ইস্রায়েলীয়েরা পলেষ্টীয়দের পিছনে তাড়া করা বন্ধ করে ফিরে এসে তাদের ছাউনি লুট করতে লাগল। দায়ূদ সেই পলেষ্টীয় গলিয়াতের মাথাটা যিরূশালেমে নিয়ে গেলেন, আর তার অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধের পোশাক তিনি নিজের তাম্বুতে রাখলেন। দায়ূদকে সেই পলেষ্টীয়ের সংগে যুদ্ধ করতে যেতে দেখে শৌল তাঁর সেনাপতি অব্‌নেরকে বলেছিলেন, “আচ্ছা অব্‌নের, এই যুবকটি কার ছেলে?” উত্তরে অবনের বলেছিলেন, “মহারাজ, আপনার প্রাণের দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমি জানি না।” তখন রাজা বলেছিলেন, “তুমি খোঁজ নাও যুবকটি কার ছেলে।” তারপর দায়ূদ সেই পলেষ্টীয়কে মেরে ফিরে আসতেই অব্‌নের তাঁকে নিয়ে শৌলের কাছে গেলেন। তাঁর হাতে তখন গলিয়াতের মুণ্ডটা ছিল। শৌল তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যুবক, তুমি কার ছেলে?” দায়ুদ বললেন, “আমি বৈৎলেহম গ্রামের আপনার দাস যিশয়ের ছেলে।” শৌলের সংগে দায়ূদের কথাবার্তা শেষ হয়ে গেলে পর যোনাথনের প্রাণ আর দায়ূদের প্রাণ যেন একসংগে বাঁধা পড়ে গেল। তিনি দায়ূদকে নিজের মতই ভালবাসতে লাগলেন। শৌল সেই দিন থেকে দায়ূদকে নিজের কাছে রাখলেন; তাঁর বাবার কাছে আর তাঁকে ফিরে যেতে দিলেন না। দায়ূদকে নিজের মত ভালবাসতেন বলে যোনাথন তাঁর সংগে একটা চুক্তি করলেন। তিনি তাঁর গায়ের উপরকার লম্বা জামা খুলে দায়ূদকে দিলেন, আর তাঁর যুদ্ধের পোশাক, এমন কি, তাঁর তলোয়ার, ধনুক ও কোমর-বাঁধনিও তাঁকে দিলেন। শৌল দায়ুদকে যেখানে পাঠাতেন দায়ূদ সেখানে যেতেন এবং বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সফলতা লাভ করতেন। সেইজন্য শৌল তাঁকে সৈন্যদলের একজন সেনাপতি করলেন। এতে সমস্ত লোক খুশী হল এবং শৌলের কর্মচারীরাও খুশী হল। দায়ূদ সেই পলেষ্টীয় গলিয়াত্‌কে মেরে ফেলবার পর লোকেরা যখন বাড়ী ফিরে আসছিল তখন ইস্রায়েলের সমস্ত গ্রাম ও শহর থেকে মেয়েরা নেচে নেচে আনন্দের গান গেয়ে এবং খঞ্জনী ও তিনতারা বাজাতে বাজাতে রাজা শৌলকে শুভেচ্ছা জানাতে বের হয়ে আসল। তারা নাচতে নাচতে এই গান গাইছিল, “শৌল মারলেন হাজার হাজার, আর দায়ূদ মারলেন অযুত অযুত।” এই গান শুনে শৌলের খুব রাগ হল। তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, “ওরা দায়ূদের বিষয়ে অযুত অযুতের কথা বলল অথচ আমার বিষয়ে বলল হাজার হাজার। এর পর রাজ্য ছাড়া দায়ূদের আর কি পাওয়ার বাকী রইল?” সেই সময় থেকে শৌল দায়ূদকে হিংসার চোখে দেখতে লাগলেন। পর দিন ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা মন্দ আত্মা শৌলের উপর আসল। তিনি নিজের বাড়ীর মধ্যে আবোল-তাবোল কথাবার্তা বলতে লাগলেন। তখন দায়ূদ অন্যান্য দিনের মত তাঁর সামনে বীণা বাজাতে লাগলেন। শৌলের হাতে ছিল একটা বর্শা। তিনি মনে মনে বললেন, “আমি দায়ূদকে দেয়ালের সংগে গেঁথে ফেলব।” এই ভেবে তিনি বর্শাটা ছুঁড়ে মারলেন, কিন্তু দায়ূদ দু’বার তা এড়িয়ে গেলেন। শৌল দায়ূদকে ভয় করতে লাগলেন, কারণ সদাপ্রভু দায়ূদের সংগে ছিলেন কিন্তু শৌলকে তিনি ছেড়ে গিয়েছিলেন। সেইজন্য শৌল দায়ূদকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলেন এবং তাঁকে সৈন্যদলে হাজারপতির পদে নিযুক্ত করলেন। তাতে দায়ূদ সৈন্যদলের নেতা হয়ে তাদের পরিচালনা করতে লাগলেন। সদাপ্রভু তাঁর সংগে ছিলেন বলে তিনি সব কিছুতেই বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সফলতা লাভ করতে লাগলেন। দায়ূদ বেশ সফলতা লাভ করেছেন দেখে শৌল তাঁকে ভয়ের চোখে দেখতে লাগলেন। কিন্তু ইস্রায়েল ও যিহূদার সমস্ত লোক দায়ূদকে ভালবাসত, কারণ সৈন্যদের নেতা হয়ে তিনি তাদের পরিচালনা করতেন। শৌল একদিন দায়ূদকে বললেন, “আমার বড় মেয়ে মেরবকে আমি তোমার সংগে বিয়ে দেব। তুমি কেবল আমার পক্ষে থেকে বীরের মত সদাপ্রভুর জন্য যুদ্ধ করবে।” কিন্তু শৌলের মনের কথাটা ছিল এই যে, তিনি দায়ূদের উপর হাত না উঠালেও দায়ূদ যেন পলেষ্টীয়দের হাতে মারা পড়ে। দায়ূদ শৌলকে বললেন, “আমিই বা কে আর আমার পরিবার ও ইস্রায়েলের মধ্যে আমার বাবার বংশই বা এমন কি যে, আমি রাজার জামাই হতে পারি?” কিন্তু দায়ূদের সংগে শৌলের মেয়ে মেরবের বিয়ের সময় উপস্থিত হলে দেখা গেল দায়ূদকে বাদ দিয়ে মহোলাৎ গ্রামের অদ্রীয়েলের সংগে মেরবের বিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে। তবে শৌলের আর এক মেয়ে মীখল দায়ূদকে ভালবাসতেন। লোকেরা যখন সেই কথা শৌলকে জানাল তখন শৌল খুশীই হলেন। তিনি মনে মনে বললেন, “আমি দায়ূদকে আমার মেয়ে দেব যাতে মেয়েটি তার কাছে একটা ফাঁদ হয় আর পলেষ্টীয়েরা তার বিরুদ্ধে ওঠে।” এই ভেবে শৌল দায়ূদকে বললেন, “আমার জামাই হবার জন্য এই তোমার দ্বিতীয় সুযোগ।” শৌল তাঁর কর্মচারীদের এই আদেশ দিলেন, “তোমরা গোপনে দায়ূদের সংগে আলাপ করে তাকে এই কথা বল, ‘রাজা আপনার উপর খুশী হয়েছেন, আর তাঁর কর্মচারীরা সবাই আপনাকে পছন্দ করে। কাজেই আপনি এবার রাজার জামাই হন।’ ” তারা এই সব কথা দায়ূদকে জানালে পর তিনি বললেন, “রাজার জামাই হওয়াটা কি তোমরা একটা সামান্য ব্যাপার বলে মনে কর? আমি তো গরীব, একজন সামান্য লোক।” দায়ূদ যা বলেছিলেন শৌলের কর্মচারীরা তা শৌলকে বলল। তখন শৌল বললেন, “তোমরা দায়ূদকে বল যে, রাজা কেবল তাঁর শত্রুদের উপর প্রতিশোধ হিসাবে একশো জন পলেষ্টীয়ের পুরুষাংগের সামনের চামড়া চান, অন্য কোন পণ চান না।” এইভাবে পলেষ্টীয়দের হাতে যেন দায়ূদ শেষ হয়ে যায়, এটাই ছিল শৌলের মতলব। শৌল যখন বুঝতে পারলেন যে, সদাপ্রভু দায়ূদের সংগে আছেন এবং তাঁর মেয়ে মীখলও দায়ূদকে ভালবাসে, তখন দায়ূদের প্রতি তাঁর ভয় আরও বেড়ে গেল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দায়ূদের শত্রু হয়ে রইলেন। এর পর পলেষ্টীয়দের সেনাপতিরা যুদ্ধ করবার জন্য বেরিয়ে আসতে লাগল। যতবার তারা বেরিয়ে আসল ততবারই শৌলের অন্যান্য কর্মচারীদের চেয়ে দায়ূদ বেশী বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সফলতা লাভ করলেন। এতে তাঁর খুব সুনাম হল। শৌল তাঁর ছেলে যোনাথনকে ও সমস্ত কর্মচারীদের বললেন যেন তারা দায়ূদকে মেরে ফেলে। কিন্তু দায়ূদের প্রতি শৌলের ছেলে যোনাথনের খুব টান ছিল। তিনি দায়ূদকে বললেন, “আমার বাবা শৌল তোমাকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করছেন। শোন, তুমি কাল সকালে সাবধানে থেকো। একটা গোপন জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে থেকো। তুমি যে মাঠে লুকিয়ে থাকবে আমি আমার বাবাকে নিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়াব। আমি তাঁর কাছে তোমার কথা বলব আর যা জানতে পারব তা তোমাকে জানাব।” যোনাথন তাঁর বাবা শৌলের কাছে দায়ূদের সুনাম করে বললেন, “মহারাজ, আপনার দাস দায়ূদের বিরুদ্ধে আপনি কোন পাপ করবেন না। সে তো আপনার বিরুদ্ধে কোন পাপ করে নি, বরং সে যা করেছে তাতে আপনার অনেক উপকার হয়েছে। সে তার প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেই পলেষ্টীয়কে মেরে ফেলেছে, আর সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলকে মহাজয় দান করেছেন; আপনি তো তা দেখে খুশী হয়েছিলেন। তবে এখন আপনি অকারণে দায়ূদকে মেরে ফেলে কেন একজন নির্দোষ লোকের রক্তপাত করে তার বিরুদ্ধে পাপ করবেন?” তখন শৌল যোনাথনের কথা শুনে শপথ করে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য তাকে মেরে ফেলা হবে না।” পরে যোনাথন দায়ূদকে ডেকে তাঁকে সমস্ত কথা জানালেন। তিনি তাঁকে শৌলের কাছে নিয়ে গেলেন এবং দায়ূদ আগের মতই শৌলের কাছে রইলেন। তারপর আবার যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল তখন দায়ূদ বের হয়ে পলেষ্টীয়দের সংগে যুদ্ধ করতে লাগলেন। তিনি তাদের এত লোককে মেরে ফেললেন যে, তারা তাঁর সামনে থেকে পালিয়ে গেল। পরে সদাপ্রভুর কাছ থেকে একটা মন্দ আত্মা শৌলের উপর আসল। শৌল তখন তাঁর ঘরে বসে ছিলেন এবং তাঁর হাতে একটা বর্শা ছিল, আর দায়ূদ বীণা বাজাচ্ছিলেন। তিনি বর্শা দিয়ে দায়ূদকে দেয়ালে গেঁথে ফেলবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু দায়ূদ তাঁর সামনে থেকে সরে গেলেন বলে বর্শাটা দেয়ালে ঢুকে গেল। সেই রাতে দায়ূদ পালিয়ে রক্ষা পেলেন। দায়ূদের উপর নজর রাখবার জন্য শৌল তাঁর বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে দিলেন যাতে পরের দিন সকালে তাঁকে মেরে ফেলা যায়। কিন্তু তাঁর স্ত্রী মীখল তাঁকে সব কিছু জানিয়ে বললেন, “আজ রাতে তুমি যদি প্রাণ নিয়ে না পালাও তবে কালই তুমি মারা পড়বে।” কাজেই মীখল দায়ূদকে জানলা দিয়ে নীচে নামিয়ে দিলেন আর তিনি পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পেলেন। মীখল তখন পারিবারিক দেবমূর্তিগুলো নিয়ে বিছানায় রাখলেন এবং বিছানার মাথার দিকে দিলেন ছাগলের লোমের একটা বালিশ; তারপর সেগুলো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। দায়ূদকে ধরবার জন্য শৌল লোক পাঠালে মীখল বললেন, “উনি অসুস্থ।” এই খবর শুনে শৌল দায়ূদকে দেখবার জন্য সেই লোকদেরই আবার পাঠালেন এবং বলে দিলেন, “দায়ূদকে খাট সুদ্ধই নিয়ে এস; আমি তাকে মেরে ফেলব।” লোকগুলো ঘরে ঢুকে বিছানার উপর সেই দেবমূর্তিগুলো এবং বিছানার মাথার দিকে ছাগলের লোমের বালিশটা দেখতে পেল। পরে শৌল মীখলকে বললেন, “তুমি কেন এইভাবে আমাকে ঠকালে? তুমি আমার শত্রুকে ছেড়ে দেওয়াতে সে পালিয়ে গেছে।” মীখল তাঁকে বললেন, “তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে যেতে দাও, নইলে আমি তোমাকে খুন করব।’ ” এদিকে দায়ূদ পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচালেন। তিনি রামায় শমূয়েলের কাছে গেলেন এবং শৌল তাঁর উপর যা যা করেছেন তা সবই তাঁকে জানালেন। এর পর দায়ূদ আর শমূয়েল গিয়ে নায়োৎ পাড়ায় বাস করতে লাগলেন। শৌল খবর পেলেন যে, দায়ূদ রামার নায়োৎ পাড়ায় আছেন। এই কথা শুনে তিনি দায়ূদকে ধরে আনবার জন্য লোক পাঠিয়ে দিলেন। সেই লোকেরা গিয়ে দেখল একদল নবী শমূয়েলের অধীনে ঈশ্বরের কথা বলছেন। ঈশ্বরের আত্মা তখন শৌলের লোকদের উপরেও আসলেন আর তারাও নবী হিসাবে ঈশ্বরের কথা বলতে লাগল। শৌলকে সেই খবর জানানো হলে তিনি আরও লোক পাঠালেন কিন্তু তারাও গিয়ে নবী হিসাবে ঈশ্বরের কথা বলতে লাগল। শৌল তৃতীয়বার লোক পাঠালেন আর তারাও গিয়ে নবী হিসাবে ঈশ্বরের কথা বলতে লাগলেন। শেষে শৌল নিজেই রামায় গেলেন এবং সেখূতে জল জমা করে রাখবার যে বড় জায়গা ছিল সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “শমূয়েল আর দায়ূদ কোথায়?” একজন বলল, “রামার নায়োৎ পাড়ায়।” কাজেই শৌল রামার নায়োৎ পাড়ার দিকে রওনা হলেন। কিন্তু ঈশ্বরের আত্মা তাঁর উপরেও আসলেন; তাতে তিনি সারাটা পথ নবী হিসাবে ঈশ্বরের কথা বলতে বলতে নায়োতে পৌঁছালেন। তিনি তাঁর পোশাক খুলে ফেলে শমূয়েলের সামনে নবী হিসাবে ঈশ্বরের কথা বলতে লাগলেন। তিনি সারা দিন ও সারা রাত কাপড়-চোপড় ছাড়াই পড়ে রইলেন। সেইজন্যই লোকে বলে, “শৌলও কি তবে নবীদের মধ্যে একজন?” এর পর দায়ূদ রামার নায়োৎ পাড়া থেকে পালিয়ে যোনাথনের কাছে গেলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি করেছি? আমার দোষ কি? তোমার বাবার বিরুদ্ধে আমি কি পাপ করেছি যে, তিনি আমাকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করেছেন?” যোনাথন বললেন, “কখনও না, তোমাকে মেরে ফেলা হবে না। দেখ, আমার বাবা আমাকে না জানিয়ে ছোট-বড় কোন কাজই করেন না। তবে এই কথা তিনি আমার কাছ থেকে কেন লুকাবেন? এ হতেই পারে না।” কিন্তু দায়ূদ আবার দিব্য করে বললেন, “তোমার বাবা খুব ভাল করেই জানেন যে, তুমি আমাকে ভালবাস। তাই হয়তো তিনি মনে মনে ভেবেছেন, যোনাথনকে এই বিষয়ে না জানানোই ভাল, সে দুঃখ পাবে। কিন্তু জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য এবং তোমার প্রাণের দিব্য দিয়ে আমি বলছি যে, মৃত্যু আমার কাছ থেকে মাত্র এক পা দূরে।” তখন যোনাথন দায়ূদকে বললেন, “তুমি আমাকে যা করতে বলবে আমি তোমার জন্য তা-ই করব।” দায়ূদ বললেন, “দেখ, কাল অমাবস্যার উৎসব। রাজার সংগে আমার খেতে বসবার কথা আছে। কিন্তু তুমি আমাকে যেতে দাও। আমি পরশু রাত পর্যন্ত মাঠের মধ্যে লুকিয়ে থাকব। যদি তোমার বাবা আমার খোঁজ করেন তবে তুমি তাঁকে বলবে, ‘দায়ূদ বৈৎলেহমে তার বাড়ীতে তাড়াতাড়ি যাবে বলে আমার কাছে মিনতি করে অনুমতি চেয়েছিল, কারণ সেখানে তাদের বংশের বাৎসরিক পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান হচ্ছে।’ তিনি যদি বলেন, ‘ভাল,’ তবে তোমার দাস আমি নিরাপদ; কিন্তু যদি খুব রেগে ওঠেন তবে তুমি জেনো যে, তিনি আমার অমংগল করবেন বলে মন স্থির করেছেন। কাজেই তুমি এখন আমার প্রতি বিশ্বস্ত হও, কারণ সদাপ্রভুকে সাক্ষী রেখে তুমি আমার সংগে একটা চুক্তি করেছ। আমি যদি দোষ করে থাকি তবে তুমি নিজেই আমাকে মেরে ফেল, তোমার বাবার হাতে আমাকে তুলে দেবার দরকার কি?” যোনাথন বললেন, “তুমি কখনও এমন চিন্তা কোরো না। যদি আমি জানতে পারি যে, আমার বাবা তোমার অমংগল করাই স্থির করেছেন, তবে নিশ্চয়ই আমি তা তোমাকে জানাব।” তখন দায়ূদ বললেন, “এই ব্যাপারে তোমার বাবা যদি তোমার সংগে খারাপ ব্যবহার করেন, তবে কে তা আমাকে জানাবে?” যোনাথন বললেন, “চল, আমরা মাঠে যাই।” এই বলে তাঁরা দু’জন বের হয়ে একসংগে মাঠে গেলেন। তারপর যোনাথন দায়ূদকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু সাক্ষী, কাল কিম্বা পরশু এই সময়ে আমি আমার বাবার সংগে কথা বলে দেখব। যদি তোমার পক্ষে ভাল বুঝি তবে আমি তখনই লোক পাঠিয়ে তোমাকে জানাব। যদি আমার বাবা তোমার অমংগলই করতে চান আর আমি তোমাকে না জানাই এবং নিরাপদে তোমাকে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা না করি তবে সদাপ্রভু যেন আমাকে শাস্তি দেন এবং তা ভীষণভাবেই দেন। সদাপ্রভু যেমন আমার বাবার সংগে ছিলেন তেমনি তোমার সংগেও থাকুন। যোনাথন তখন দায়ূদ ও তাঁর বংশধরদের সংগে এই বলে চুক্তি করলেন, “সদাপ্রভু যেন দায়ূদের শত্রুদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেন।” যোনাথন দায়ূদকে নিজের মতই ভালবাসতেন বলে তিনি দায়ূদকে দিয়ে তাঁর প্রতি দায়ূদের ভালবাসার শপথ আবার করিয়ে নিলেন। পরে যোনাথন দায়ূদকে বললেন, “আগামীকাল অমাবস্যার উৎসব। সেখানে তোমার আসন খালি থাকলে তুমি যে নেই তা চোখে পড়বে। তুমি আগে যেখানে লুকিয়ে ছিলে পরশু দিন তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে এষল নামে বড় পাথরটার কাছে অপেক্ষা কোরো। আমি যেন কোন কিছু লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়ছি এইভাবে সেই পাথরের পাশে তিনটা তীর ছুঁড়ব। তারপর একটা ছেলেকে এই বলে পাঠিয়ে দেব, ‘যাও, তীরগুলো খুঁজে নিয়ে এসো।’ যদি আমি তাকে বলি, ‘তীরগুলো তোমার এদিকে আছে, নিয়ে এস,’ তাহলে তুমি চলে এসো, কারণ জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য তুমি নিরাপদ, তোমার কোন ভয় নেই। কিন্তু যদি ছেলেটিকে বলি, ‘তোমার ঐদিকে তীরগুলো রয়েছে,’ তাহলে তুমি চলে যেয়ো, বুঝবে সদাপ্রভুই তোমাকে চলে যেতে বলছেন। মনে রেখো, তোমার ও আমার মধ্যে এই যে চুক্তি হল সদাপ্রভুই তার চিরকালের সাক্ষী হয়ে রইলেন।” শৌল সেই দিন কিছুই বললেন না, কারণ তিনি ভাবলেন, হয়তো এমন কিছু হয়ে গেছে যাতে দায়ূদ অশুচি হয়েছে; নিশ্চয়ই সে শুচি অবস্থায় নেই। পরের দিন, অর্থাৎ অমাবস্যা-উৎসবের দ্বিতীয় দিনেও দায়ূদের আসনটা খালি পড়ে রইল। তখন শৌল তাঁর ছেলে যোনাথনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যিশয়ের ছেলে খেতে আসে নি কেন? কালও আসে নি, আজও আসে নি।” যোনাথন উত্তরে বললেন, “দায়ূদ বৈৎলেহমে যাবার অনুমতি চেয়ে আমাকে খুব মিনতি করেছিল। সে আমাকে বলেছিল, ‘দয়া করে আমাকে যেতে দাও; আমাদের বংশের লোকেরা গ্রামে একটা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করছে এবং আমার ভাই আমাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে আদেশ করেছেন। যদি আমার প্রতি তোমার মনে একটু দয়া থাকে তবে আমাকে গিয়ে আমার ভাইদের দেখে আসবার অনুমতি দাও।’ সেইজন্যই সে মহারাজার ভোজে আসে নি।” এই কথা শুনে শৌল যোনাথনের উপর রেগে আগুন হয়ে গেলেন। তিনি তাঁকে বললেন, “ওরে বিদ্রোহিনী স্ত্রীলোকের জারজ সন্তান! আমি কি জানি না যে, তুই যিশয়ের ছেলের পক্ষ নিয়েছিস্‌ আর তাতে তুই নিজের উপর এবং তোর মায়ের উপর লজ্জা ডেকে এনেছিস? যতদিন যিশয়ের ছেলে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে ততদিন তুই স্থির থাকবি না, তোর রাজ্যও স্থির থাকবে না। কাজেই এখনই লোক পাঠিয়ে তাকে আমার কাছে নিয়ে আয়, তাকে মরতেই হবে।” যোনাথন তাঁর বাবাকে বললেন, “কেন তাকে মরতে হবে? সে কি করেছে?” তখন শৌল যোনাথনকে মেরে ফেলার জন্য বর্শা ছুঁড়লেন। এতে যোনাথন বুঝতে পারলেন, তাঁর বাবা দায়ূদকে মেরে ফেলবেন বলে ঠিক করেছেন। তখন যোনাথন ভীষণ রেগে গিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন এবং সেই দিনের ভোজে কিছুই খেলেন না। তাঁর বাবা দায়ূদকে অপমান করেছিলেন বলে তাঁর মনে খুব দুঃখ হল। দায়ূদের সংগে যোনাথনের যে ব্যবস্থা হয়েছিল সেই অনুসারে পরদিন সকালে যোনাথন বের হয়ে মাঠে গেলেন। তাঁর সংগে একটি ছোট ছেলে ছিল। তিনি ছেলেটিকে বললেন, “আমি যে তীর ছুঁড়ব তুমি দৌড়ে গিয়ে তা খুঁজে আন।” ছেলেটি যখন দৌড়াচ্ছিল তখন তিনি ছেলেটিকে ছাড়িয়ে সামনের দিকে তীর ছুঁড়লেন। যোনাথনের তীরটা যেখানে পড়েছিল ছেলেটি সেখানে গেলে পর তিনি তাকে ডেকে বললেন, “তীরটা তোমার ঐদিকে।” তারপর তিনি চেঁচিয়ে বললেন, “শিগ্‌গির দৌড়ে যাও, থেমো না।” ছেলেটি তীর কুড়িয়ে নিয়ে তার মনিবের কাছে ফিরে আসল। ছেলেটি এই সব বিষয়ের কিছুই বুঝল না, বুঝলেন কেবল যোনাথন আর দায়ূদ। এর পর যোনাথন তাঁর তীর-ধনুক ছেলেটির হাতে দিয়ে বললেন, “তুমি এগুলো নিয়ে শহরে ফিরে যাও।” ছেলেটি চলে গেলে পর দায়ূদ সেই পাথরটার দক্ষিণ দিক থেকে উঠে আসলেন। তিনি যোনাথনের সামনে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে তিনবার তাঁকে প্রণাম করলেন। তারপর তাঁরা একে অন্যকে চুম্বন করে কাঁদতে লাগলেন, তবে দায়ূদই বেশী কাঁদলেন। যোনাথন দায়ূদকে বললেন, “তুমি নির্ভয়ে চলে যাও, কারণ আমরা সদাপ্রভুর নাম করে একে অন্যের কাছে শপথ করে বলেছি, ‘সদাপ্রভু তোমার ও আমার মধ্যে এবং তোমার ও আমার বংশধরদের মধ্যে চিরকাল সাক্ষী থাকবেন।’ ” এর পর দায়ূদ বিদায় নিলেন আর যোনাথন শহরে ফিরে গেলেন। এর পর দায়ূদ নোব গ্রামে পুরোহিত অহীমেলকের কাছে গেলেন। অহীমেলক তখন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বের হয়ে দায়ূদের সামনে আসলেন। তিনি দায়ূদকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি একা কেন? কেন আপনার সংগে আর কেউ নেই?” উত্তরে দায়ূদ পুরোহিত অহীমেলককে বললেন, “রাজা আমাকে একটা কাজের ভার দিয়ে বলেছেন, তিনি যে কাজের হুকুম দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন তার কিছুই যেন আর কেউ জানতে না পারে। সেইজন্য আমার লোকদের আমি একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আমার জন্য অপেক্ষা করতে বলেছি। আপনার কাছে কি আছে? পাঁচখানা রুটি আমাকে দিন, কিম্বা যা আছে তা-ই দিন।” পুরোহিত উত্তরে দায়ূদকে বললেন, “আমার কাছে কোন সাধারণ রুটি নেই, তবে পবিত্র সম্মুখ-রুটি আছে। যদি আপনার লোকেরা কোন স্ত্রীলোকের কাছে না গিয়ে থাকে তবে তা খেতে পারবে।” দায়ূদ বললেন, “আমাদের নিয়ম মত আমরা সত্যিই কোন স্ত্রীলোকের কাছে যাই নি। সৈন্যদের নিয়ে আমি যখন কোন সাধারণ কাজে বের হই তখনও আমার সৈন্যেরা শুচি থাকে। তবে আজ তারা কত না বেশী শুচি আছে।” কাজেই পুরোহিত দায়ূদকে সেই পবিত্র রুটি দিলেন, কারণ সেই রুটি ছাড়া আর অন্য কোন রুটি তাঁর কাছে ছিল না। ঐ দিনই সেই রুটি সদাপ্রভুর সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে তার জায়গায় গরম রুটি রাখা হয়েছিল। দোয়েগ নামে শৌলের একজন ইদোমীয় কর্মচারী সেই দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে কোন কাজে সেখানে আট্‌কে গিয়েছিল। সে ছিল শৌলের প্রধান রাখাল। দায়ূদ অহীমেলককে জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে আপনার কাছে কোন বর্শা বা তলোয়ার নেই? রাজার কাজ জরুরী ছিল বলে আমি নিজের তলোয়ার বা অন্য কোন অস্ত্র সংগে আনতে পারি নি।” পুরোহিত বললেন, “এলা উপত্যকায় আপনি যে পলেষ্টীয় গলিয়াত্‌কে মেরে ফেলেছিলেন তার তলোয়ারখানা এখানে আছে। ওটা এফোদের পিছনে কাপড়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। ইচ্ছা করলে আপনি ওটা নিতে পারেন। ওটা ছাড়া আর কোন তলোয়ার এখানে নেই।” দায়ূদ বললেন, “ওটার মত তলোয়ার আর কোথায় আছে? ওটাই আমাকে দিন।” দায়ূদ সেই দিনই শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়ে গাৎ শহরের রাজা আখীশের কাছে উপস্থিত হলেন; কিন্তু আখীশের লোকেরা আখীশকে বলল, “ইনি কি তাঁর দেশের রাজা নন? এর সম্বন্ধেই কি লোকেরা নেচে নেচে গান গেয়ে বলে নি, ‘শৌল মারলেন হাজার হাজার আর দায়ূদ মারলেন অযুত অযুত? ’ ” এই কথা শুনে দায়ূদ চিন্তিত হলেন এবং গাতের রাজা আখীশকে খুব ভয় করতে লাগলেন। সেইজন্যই যতদিন তিনি তাদের কাছে ছিলেন ততদিন তাদের সামনে পাগলের ভান করতে লাগলেন। যখন তারা তাঁকে ধরল তখন তিনি পাগলের মত দরজার উপর হাবিজাবি আঁকতে এবং নিজের দাড়ির উপর মুখের লালা ফেলতে লাগলেন। তখন আখীশ তাঁর লোকদের বললেন, “তোমরা তো দেখতেই পাচ্ছ লোকটা পাগল, তবে কেন ওকে আমার কাছে এনেছ? পাগলের কি আমার এতই অভাব হয়েছে যে, তোমরা আমার সামনে পাগলামী করবার জন্য এই লোকটাকে ধরে এনেছ? এই রকমের একটা লোককে আমার বাড়ীতে এনেছ কেন?” দায়ূদ গাৎ থেকে পালিয়ে অদুল্লমের কাছে একটা গুহাতে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। সেই কথা শুনে তাঁর ভাইয়েরা এবং তাঁর বাবার বংশের লোকেরা তাঁর কাছে গেলেন। যারা বিপদে এবং ঋণের ভারে কষ্ট পাচ্ছিল এবং যাদের মনে অসন্তোষের ভাব ছিল তারা সবাই দায়ূদের কাছে গিয়ে জড়ো হল। দায়ূদ তাদের সেনাপতি হলেন। এইভাবে প্রায় চারশো পুুরুষ লোক তাঁর সংগী হল। পরে তিনি সেখান থেকে মোয়াব দেশের মিসপী গ্রামে গেলেন। তিনি মোয়াবের রাজাকে বললেন, “আমার সম্বন্ধে ঈশ্বরের ইচ্ছা কি যতদিন আমি তা জানতে না পারি ততদিন দয়া করে আমার মা-বাবাকে আপনার কাছে রাখুন।” তারপর তিনি তাঁর মা-বাবাকে এনে মোয়াবের রাজার কাছে রাখলেন। যতদিন দায়ূদ দুর্গ নামে পাহাড়টায় রইলেন ততদিন তাঁরা মোয়াবের রাজার কাছে থাকলেন। পরে গাদ নামে একজন নবী দায়ূদকে বললেন, “তুমি দুর্গ পাহাড়ে আর থেকো না, যিহূদা এলাকায় চলে যাও।” তখন দায়ূদ সেই জায়গা ছেড়ে হেরেৎ এলাকায় যে বন ছিল সেখানে চলে গেলেন। শৌল শুনতে পেলেন যে, দায়ূদ ও তাঁর সংগীদের খোঁজ পাওয়া গেছে। শৌল তখন গিবিয়া শহরে পাহাড়ের উপরে একটা ঝাউ গাছের নীচে বসে ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল বর্শা আর তাঁর সমস্ত কর্মচারীরা তাঁর চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি তাদের বললেন, “বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকেরা শোন, যিশয়ের ছেলে কি তোমাদের সবাইকে জায়গা-জমি ও আংগুর ক্ষেত দেবে? সে কি তোমাদের সবাইকে হাজার সৈন্য বা শত সৈন্যের উপরে সেনাপতি নিযুক্ত করবে? তোমরা সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছ আর সেইজন্যই যিশয়ের ছেলের সংগে যে আমার ছেলে চুক্তি করেছে তা আমাকে তোমরা কেউ জানাও নি। আমার ছেলে যে আজ আমার চাকরকে আমারই বিরুদ্ধে ওৎ পেতে বসে থাকবার উস্‌কানি দিচ্ছে সেই কথা আমাকে তোমরা কেউ জানাও নি কিম্বা আমার জন্য কারও দুঃখ নেই।” ইদোমীয় দোয়েগ সেই সময় শৌলের কর্মচারীদের পাশেই ছিল। সে বলল, “আমি যিশয়ের ছেলেকে নোব গ্রামে অহীটূবের ছেলে অহীমেলকের কাছে যেতে দেখেছি। তার সম্বন্ধে সদাপ্রভুর ইচ্ছা কি অহীমেলক তা সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি তাকে খাবার-দাবার দিয়েছেন আর পলেষ্টীয় গলিয়াতের তলোয়ারটাও দিয়েছেন।” এই কথা শুনে রাজা শৌল অহীটূবের ছেলে পুরোহিত অহীমেলককে ও তাঁর বাবার বংশের লোকদের, অর্থাৎ নোবের সমস্ত পুরোহিতদের ডেকে আনবার জন্য লোক পাঠালেন। তাঁরা সবাই রাজার কাছে আসলেন। তখন শৌল বললেন, “শোন, অহীটূবের ছেলে।” তিনি বললেন, “বলুন, মহারাজ।” শৌল তাঁকে বললেন, “তুমি ও যিশয়ের ছেলে কেন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছ? সে যাতে আজ আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে এবং ওৎ পেতে বসে থাকতে পারে সেইজন্য তুমি তাকে রুটি দিয়েছ, তলোয়ার দিয়েছ আর তার জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা কি তা জিজ্ঞাসা করেছ।” এর উত্তরে অহীমেলক রাজাকে বললেন, “মহারাজ, আপনার সমস্ত কর্মচারীদের মধ্যে আপনার জামাই দায়ূদের মত বিশ্বস্ত কে? তিনি আপনার দেহরক্ষী সৈন্যদের নেতা এবং আপনার পরিবারের মধ্যে একজন সম্মানিত লোক। আমি কি সেই দিনই প্রথম বার তাঁর সম্বন্ধে ঈশ্বরের ইচ্ছা কি তা জিজ্ঞাসা করেছি? কখনও না। মহারাজ, আপনার এই দাসকে কিম্বা তার বাবার বংশের লোকদের কাউকে দোষ দেবেন না। এই সব ব্যাপার সম্বন্ধে আপনার এই দাস কিছুই জানে না।” কিন্তু রাজা বললেন, “অহীমেলক, তুমি ও তোমার বাবার বংশের সমস্ত লোকদের অবশ্যই মরতে হবে।” তারপর রাজা তাঁর পাশে দাঁড়ানো সৈন্যদের বললেন, “তোমরা গিয়ে সদাপ্রভুর এই সব পুরোহিতদের মেরে ফেল। এরা দায়ূদের পক্ষে গেছে। এরা জানত যে, দায়ূদ পালাচ্ছে, তবুও এরা আমাকে সেই কথা জানায় নি।” কিন্তু রাজার কর্মচারীরা সদাপ্রভুর পুরোহিতদের গায়ে হাত তুলতে রাজী হল না। তখন রাজা দোয়েগকে বললেন, “তবে তুমিই গিয়ে পুরোহিতদের মেরে ফেল।” ইদোমীয় দোয়েগ সেই দিন পঁচাশিজন পুরোহিতকে মেরে ফেলল। পুরোহিতদের সকলের গায়ে ছিল মসীনার এফোদ। তারপর সে পুরোহিতদের গ্রাম নোবের উপর আক্রমণ চালিয়ে সেখানকার স্ত্রী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে-শিশু, গরু-গাধা-ভেড়া সব শেষ করে দিল। অহীটূবের নাতি, অর্থাৎ অহীমেলকের একটি ছেলে কোন রকমে রক্ষা পেয়ে দায়ূদের কাছে পালিয়ে গেলেন। তাঁর নাম ছিল অবিয়াথর। অবিয়াথর দায়ূদকে খবর দিলেন যে, শৌল সদাপ্রভুর পুরোহিতদের মেরে ফেলেছেন। এই কথা শুনে দায়ূদ অবিয়াথরকে বললেন, “ইদোমীয় দোয়েগকে সেই দিন সেখানে দেখে আমি বুঝেছিলাম যে, সে নিশ্চয়ই গিয়ে শৌলকে সব জানাবে। আপনার বাবার বংশের লোকদের সকলের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। আপনি আমার কাছে থাকুন, ভয় করবেন না। যে আপনার প্রাণ নেবার চেষ্টা করছে সে আমারও প্রাণ নেবার চেষ্টা করছে। আপনি আমার কাছে নিরাপদে থাকতে পারবেন।” লোকেরা দায়ূদকে গিয়ে বলল, “দেখুন, পলেষ্টীয়েরা কিয়ীলা শহরটা আক্রমণ করেছে এবং সেখানকার খামারগুলোর শস্য লুট করছে।” দায়ূদ তখন সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি গিয়ে ঐ পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করব?” উত্তরে সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, যাও। পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করে কিয়ীলা রক্ষা কর।” কিন্তু দায়ূদের লোকেরা বলল, “এই যিহূদা এলাকাতেই আমরা ভয়ে ভয়ে আছি; তার উপর কিয়ীলাতে পলেষ্টীয় সৈন্যদের আক্রমণ করতে যাওয়া কি আরও ভয়ের ব্যাপার নয়?” তখন দায়ূদ আবার সদাপ্রভুকে জিজাসা করলেন আর সদাপ্রভু উত্তরে তাঁকে বললেন, “তুমি কিয়ীলাতে যাও, আমি তোমার হাতে পলেষ্টীয়দের তুলে দেব।” দায়ূদ তখন তাঁর লোকদের নিয়ে কিয়ীলাতে গেলেন এবং পলেষ্টীয়দের সংগে যুদ্ধ করে তাদের গরু-ভেড়া সব নিয়ে আসলেন। তিনি পলেষ্টীয়দের অনেক লোককে মেরে ফেলে কিয়ীলার লোকদের রক্ষা করলেন। অহীমেলকের ছেলে অবিয়াথর কিয়ীলাতে দায়ূদের কাছে পালিয়ে আসবার সময় সংগে করে মহাপুরোহিতের এফোদখানা নিয়ে এসেছিলেন। দায়ূদ কিয়ীলাতে আছেন শুনে শৌল বললেন, “ঈশ্বর দায়ূদকে এবার আমার হাতে তুলে দিয়েছেন, কারণ শহরের ফটকগুলো হুড়কা দিয়ে বন্ধ করা যায় এমন একটা জায়গায় ঢুকে সে নিজেই নিজেকে আটক করে ফেলেছে।” কিয়ীলাতে গিয়ে দায়ূদ ও তাঁর লোকদের ঘেরাও করবার জন্য শৌল তাঁর সমস্ত সৈন্যদের যুদ্ধ করবার ডাক দিলেন। দায়ূদ যখন জানতে পারলেন যে, শৌল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন তখন তিনি পুরোহিত অবিয়াথরকে বললেন, “আপনার এফোদটা এখানে নিয়ে আসুন।” পরে তিনি বললেন, “হে ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার দাস আমি নিশ্চয় করে জেনেছি যে, শৌল আমারই দরুন কিয়ীলা ধ্বংস করবার জন্য এখানে আসবার পরিকল্পনা করছেন। কিয়ীলার লোকেরা কি আমাকে তাঁর হাতে তুলে দেবে? আমি যেমন শুনেছি সেইভাবে শৌল কি সত্যিই এখানে আসবেন? হে ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার এই দাসকে তুমি তা বলে দাও।” সদাপ্রভু বললেন, “হ্যাঁ, সে আসবে।” তখন দায়ূদ আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “কিয়ীলার লোকেরা কি আমাকে ও আমার লোকদের শৌলের হাতে তুলে দেবে?” সদাপ্রভু বললেন, “হ্যাঁ, দেবে।” এই কথা শুনে দায়ূদ তাঁর সংগের প্রায় ছ’শো লোক নিয়ে কিয়ীলা ছেড়ে চলে গেলেন এবং এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। দায়ূদ কিয়ীলা থেকে পালিয়ে গেছেন শুনে শৌল আর সেখানে গেলেন না। দায়ূদ মরু-এলাকার দুর্গের মত জায়গাগুলোতে এবং সীফ মরু-এলাকার পাহাড়ী জায়গায় থাকতে লাগলেন। দিনের পর দিন শৌল তাঁর খোঁজ করে চললেন কিন্তু ঈশ্বর তাঁর হাতে দায়ূদকে পড়তে দিলেন না। সীফ মরু-এলাকার হরেশে থাকবার সময় দায়ূদ শুনলেন যে, শৌল তাঁকে মেরে ফেলবার জন্য বের হয়েছেন। এদিকে শৌলের ছেলে যোনাথন হরেশে দায়ূদের কাছে গিয়ে তাঁকে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করতে উৎসাহ দিলেন। যোনাথন বললেন, “তুমি ভয় কোরো না; আমার বাবা শৌলের হাতে তুমি ধরা পড়বে না। তুমিই ইস্রায়েল দেশের উপরে রাজত্ব করবে, আর আমার স্থান হবে তোমার পরেই। আমার বাবাও সেই কথা জানেন।” তাঁরা দু’জনেই সদাপ্রভুকে সাক্ষী রেখে একটা চুক্তি করলেন। পরে যোনাথন বাড়ী চলে গেলেন কিন্তু দায়ূদ হরেশেই রয়ে গেলেন। এদিকে সীফ গ্রামের লোকেরা গিবিয়াতে শৌলের কাছে গিয়ে বলল, “দায়ূদ আমাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। সে হরেশের কাছে যিশীমোনের দক্ষিণে হখীলা পাহাড়ের দুর্গের মত জায়গাগুলোতে থাকে। মহারাজ, আপনার ইচ্ছামতই আপনি আসুন। তাকে রাজার হাতে তুলে দেওয়াই আমাদের কাজ।” উত্তরে শৌল বললেন, “সদাপ্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করুন, কারণ আমার জন্য তোমাদের মমতা আছে। তোমরা গিয়ে আরও ভাল করে তার খোঁজ-খবর নাও; সে কোথায় থাকে আর কোথায় যায় এবং সেখানে কে তাকে দেখেছে তা জেনে নাও। আমি শুনেছি সে নাকি খুব চালাক। তার লুকাবার সমস্ত জায়গাগুলো খুঁজে বের করবে। তারপর সঠিক সংবাদ নিয়ে ফিরে আসলে পর আমি তোমাদের সংগে যাব। সে যদি দেশের মধ্যে থাকে তবে আমি যিহূদার সমস্ত বংশগুলোর মধ্য থেকে তাকে খুঁজে বের করবই।” সেই লোকেরা তখন শৌলের আগেই রওনা হয়ে সীফে ফিরে গেল। দায়ূদ তাঁর লোকদের নিয়ে তখন যিশীমোনের দক্ষিণে অরাবায় মায়োন মরু-এলাকায় ছিলেন। শৌল ও তাঁর লোকেরা দায়ূদের খোঁজ করতে গেলেন। দায়ূদ সেই খবর পেয়ে সেখান থেকে মায়োন মরু-এলাকার পাথুরে-পাহাড়ে গিয়ে রইলেন। শৌল সেই খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দায়ূদের পিছনে তাড়া করলেন। শৌল গেলেন পাহাড়ের এই পাশ দিয়ে আর দায়ূদ তাঁর লোকজন নিয়ে পাহাড়ের ওপাশে গেলেন। তাঁরা শৌলের কাছ থেকে পালাবার জন্য তাড়াহুড়া করছিলেন। এদিকে শৌল ও তাঁর সৈন্যেরা দায়ূদ ও তাঁর লোকদের ধরে ফেলবার জন্য তাঁদের ঘেরাও করছিলেন। এমন সময় একজন লোক এসে শৌলকে খবর দিল, “পলেষ্টীয়েরা দেশ আক্রমণ করেছে, আপনি শিগ্‌গির চলে আসুন।” এই কথা শুনে শৌল দায়ূদের পিছনে তাড়া করা বন্ধ করে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেলেন। এইজন্য লোকে ঐ জায়গাটাকে বলে সেলা-হম্মলকোৎ (যার মানে “আলাদা হওয়ার পাহাড়”)। দায়ূদ সেখান থেকে ঐন-গদীর দুর্গের মত জায়গাগুলোতে গিয়ে বাস করতে লাগলেন। শৌল পলেষ্টীয়দের তাড়া করা শেষ করে ফিরে আসলে পর লোকেরা তাঁকে খবর দিল যে, দায়ূদ ঐন-গদীর মরু-এলাকায় আছেন। শৌল তখন ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে তিন হাজার লোক বেছে নিলেন এবং দায়ূদ ও তাঁর লোকদের খোঁজে বুনো ছাগলের পাহাড় নামে জায়গাটার কাছে গেলেন। পথে যেতে যেতে তিনি এমন একটা জায়গায় আসলেন যেখানে ভেড়া রাখবার কয়েকটা খোঁয়াড় ছিল। সেই জায়গার কাছে ছিল একটা গুহা। শৌল মলত্যাগের জন্য সেই গুহায় ঢুকলেন। সেই গুহার একেবারে ভিতরের দিকে ছিলেন দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা। দায়ূদের লোকেরা বলল, “সদাপ্রভু যে দিনের কথা আপনাকে বলেছিলেন আজ সেই দিন এসে গেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তোমার শত্রুকে তোমার হাতে তুলে দেব আর তার প্রতি তোমার যা ভাল মনে হয় তুমি তা-ই করবে।’ ” তখন দায়ূদ উঠে চুপি চুপি শৌলের পোশাক থেকে একটা টুকরা কেটে নিলেন। শৌলের পোশাক থেকে একটা টুকরা কেটে নেওয়ার দরুন দায়ূদের বিবেক তাঁকে দোষী করতে লাগল। তিনি তাঁর লোকদের বললেন, “আমার মনিবের বিরুদ্ধে, সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোকের বিরুদ্ধে হাত তুলতে সদাপ্রভু কখনও আমাকে অনুমতি দেবেন না, কারণ তিনি তো সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোক।” এই কথা বলে দায়ূদ তাঁর লোকদের থামিয়ে দিলেন এবং শৌলকে তাদের আক্রমণ করতে দিলেন না। পরে শৌল গুহা থেকে বের হয়ে চলতে শুরু করলেন। তারপর দায়ূদও গুহা থেকে বের হলেন এবং জোরে শৌলকে ডেকে বললেন, “প্রভু, মহারাজ!” শৌল যখন পিছন ফিরে তাকালেন তখন দায়ূদ মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে প্রণাম জানালেন। তিনি শৌলকে বললেন, “যে সব লোক আপনাকে বলে দায়ূদ আপনার ক্ষতি করবার চেষ্টা করছে, আপনি কেন তাদের কথা শোনেন? আজকে তো আপনি নিজের চোখেই দেখলেন যে, সদাপ্রভু কিভাবে এই গুহার মধ্যে আপনাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমাকে কেউ কেউ আপনাকে মেরে ফেলতে বলেছিল, কিন্তু আপনার উপর আমার মমতা হল। আমি বললাম, আমার প্রভুর উপরে আমি হাত তুলব না, কারণ তিনি সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোক। হে আমার পিতা, এই দেখুন, আমার হাতে আপনার পোশাকের একটা টুকরা। আমিই আপনার পোশাক থেকে টুকরাটা কেটে নিয়েছি কিন্তু আপনাকে মেরে ফেলি নি। তাহলে আপনি এবার বুঝতে এবং জানতে পারলেন যে, আপনার প্রতি কোন অন্যায় বা বিদ্রোহের ভাব আমার মধ্যে নেই। আমি আপনার বিরুদ্ধে কোন পাপ করি নি, কিন্তু আপনি আমাকে মেরে ফেলবার জন্য ওৎ পেতে আছেন। সদাপ্রভুই যেন আমার ও আপনার বিচার করেন এবং আমার প্রতি আপনি যে অন্যায় করেছেন তার প্রতিফল দেন; তবুও আমি আপনার বিরুদ্ধে হাত তুলব না। আগেকার লোকদের চল্‌তি কথায় আছে, ‘দুষ্টের মধ্য থেকেই আসে দুষ্টতা,’ তাই আমি আপনার বিরুদ্ধে হাত তুলতে যাব না। “ইস্রায়েলের রাজা কার পিছনে বের হয়ে এসেছেন? কার পিছনে আপনি তাড়া করে ফিরছেন? কেন আপনি একটা মরা কুকুরের পিছনে, একটা পোকার পিছনে তাড়া করছেন? সদাপ্রভুই যেন বিচার করে আমার ও আপনার ব্যাপারে রায় দেন। তিনিই যেন আমার কাজ দেখে আমার পক্ষে দাঁড়ান এবং আপনার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেন।” দায়ূদের কথা শেষ হলে পর শৌল বললেন, “বাবা দায়ূদ, এ কি তুমিই কথা বলছ?” এই বলে তিনি জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন। তিনি দায়ূদকে বললেন, “তুমি আমার চেয়ে ন্যায়বান, কারণ আমি তোমার সংগে খারাপ ব্যবহার করলেও তুমি আমার সংগে ভাল ব্যবহার করেছ। তুমি যে আমার প্রতি ভাল ব্যবহার করে আসছ তা তুমি আজ আমাকে জানালে। সদাপ্রভু তোমার হাতে আমাকে তুলে দিয়েছিলেন কিন্তু তুমি আমাকে মেরে ফেল নি। কেউ যদি শত্রুকে হাতে পায় তবে সে কি তার কোন ক্ষতি না করেই তাকে ছেড়ে দেয়? আজ তুমি আমার প্রতি যে ব্যবহার করেছ তার জন্য সদাপ্রভু যেন তোমার মংগল করেন। আমি এখন জানি যে, তুমি নিশ্চয় রাজা হবে আর তোমার দ্বারাই ইস্রায়েল রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই এখন তুমি সদাপ্রভুর নামে আমার কাছে এই শপথ কর যে, তুমি আমার পরে আমার বংশধরদের ধ্বংস করবে না আর আমার বাবার বংশ থেকে আমার নামও মুছে ফেলবে না।” দায়ূদ শৌলের কাছে সেই শপথই করলেন। এর পর শৌল ঘরে ফিরে গেলেন, আর দায়ূদ তাঁর লোকজন নিয়ে তাঁর সেই দুর্গ নামে পাহাড়টায় উঠে গেলেন। পরে শমূয়েল মারা গেলেন। সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা এক জায়গায় জড়ো হয়ে তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করল। তারা রামায় তাঁর নিজের বাড়ীতেই তাঁকে কবর দিল। এর পর দায়ূদ পারণ মরু-এলাকায় গেলেন। তখন মায়োন গ্রামে একজন খুব ধনী লোক ছিল। তার কাজ-কারবার ছিল কর্মিল গ্রামে। তার তিন হাজার ভেড়া ও এক হাজার ছাগল ছিল। সেই সময় কর্মিলে সে তার ভেড়ার লোম ছাঁটাই করছিল। লোকটির নাম ছিল নাবল ও তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল অবীগল। স্ত্রীলোকটি বুদ্ধিমতী ও সুন্দরী ছিলেন, কিন্তু তাঁর স্বামীর ব্যবহার ছিল কর্কশ ও খারাপ। সে ছিল কালেব বংশের লোক। দায়ূদ সেই মরু-এলাকায় থাকতেই খবর পেলেন যে, নাবল তার ভেড়ার লোম ছাটাই করছে। তারপর তাঁকে বলবে যে, আমি এখন শুনতে পেলাম তাঁর ওখানে লোম ছাঁটাইয়ের কাজ চলছে। তাঁর রাখালেরা যতদিন আমাদের সংগে ছিল আমরা তাদের সংগে খারাপ ব্যবহার করি নি এবং যতদিন তারা কর্মিলে ছিল তাদের কিছুই চুরি যায় নি। তাঁর কর্মচারীদের জিজ্ঞাসা করলেই তিনি সেই কথা জানতে পারবেন। কাজেই তিনি যেন আমার এই যুবকদের সুনজরে দেখেন, কারণ তাঁরা তাঁর আনন্দের দিনেই তাঁর কাছে এসেছে। সেইজন্য তিনি যা পারেন তা-ই যেন তাঁর এই দাসদের ও তাঁর সন্তান দায়ূদকে দান করেন।” দায়ূদের লোকেরা গিয়ে দায়ূদের নাম করে নাবলকে ঐ সব কথা বলে অপেক্ষা করতে লাগল। উত্তরে নাবল দায়ূদের লোকদের বলল, “কে এই দায়ূদ? আর যিশয়ের ছেলেই বা কে? আজকাল অনেক দাস তাদের মনিবকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। যারা আমার ভেড়ার লোম ছাঁটাই করছে তাদের জন্য আমি যে খাবার ও জল রেখেছি এবং পশু জবাই করেছি তা নিয়ে কি আমি এমন লোকদের দেব যাদের সম্বন্ধে আমার কিছুই জানা নেই?” এই কথা শুনে দায়ূদের লোকেরা ফিরে গিয়ে সমস্ত কথা দায়ূদকে জানাল। দায়ূদ তাঁর লোকদের বললেন, “তোমরা প্রত্যেকে কোমরে তলোয়ার বেঁধে নাও।” এতে তারা প্রত্যেকেই কোমরে তলোয়ার বেঁধে নিল আর দায়ূদও তা-ই করলেন। তারপর প্রায় চারশো লোক দায়ূদের সংগে গেল আর দু’শো লোক রইল মালপত্র পাহারা দেবার জন্য। তখন একজন চাকর নাবলের স্ত্রী অবীগলকে বলল, “মরু-এলাকা থেকে দায়ূদ আমাদের মনিবের কাছে তাঁর শুভেচ্ছা জানাবার জন্য কয়েকজন লোক পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু আমাদের মনিব তাদের ভীষণ গালাগালি করেছেন। ঐ লোকগুলো কিন্তু আমাদের সংগে খুব ভাল ব্যবহারই করেছিল। আমরা যতদিন মাঠের মধ্যে তাদের কাছে ছিলাম তারা আমাদের সংগে খারাপ ব্যবহারও করে নি এবং আমাদের কোন জিনিসও চুরি হয় নি। আমরা যতদিন তাদের কাছে থেকে ভেড়া চরিয়েছি ততদিন দিনরাত তারা আমাদের চারপাশে রক্ষা-দেয়ালের মত ছিল। এখন আপনি কি করবেন তা ভেবে দেখুন, কারণ আমাদের মনিব ও তাঁর সমস্ত লোকজনদের ভীষণ ক্ষতি করবার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনিব এমন একজন বদ্‌মেজাজী লোক যে, তিনি কারও কথা শোনেন না।” এই কথা শুনে অবীগল আর দেরি করলেন না। তিনি দু’শো রুটি, চামড়ার দু’থলি আংগুর-রস, পাঁচটা ভেড়ার মাংস, পাঁচ বস্তা ভাজা শস্য, একশো তাল কিশমিশ এবং দু’শো তাল ডুমুর নিয়ে গাধার পিঠে চাপালেন। তারপর তিনি তার চাকরদের বললেন, “তোমরা আমার আগে আগে যাও, আমি তোমাদের পিছনে পিছনে আসছি।” এই সব কথা কিন্তু তিনি তাঁর স্বামী নাবলকে জানালেন না। অবীগল যখন তাঁর গাধায় চড়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে যাচ্ছিলেন তখন দায়ূদও তাঁর লোকদের নিয়ে আর একটা ঢাল বেয়ে তাঁর দিকেই নেমে আসছিলেন। তাতে অবীগল তাঁদের সামনে গিয়ে পড়লেন। এর কিছু আগে দায়ূদ বলছিলেন, “মিথ্যাই আমি এই লোকটার সব কিছু সেই মরু-এলাকায় পাহারা দিয়ে মরেছি যাতে তার কোন কিছু চুরি না হয়। আমি তার উপকার করেছি কিন্তু সে তার বদলে আমার অপকার করেছে। ঈশ্বর যেমন দায়ূদের শত্রুদের নিশ্চয়ই ভীষণভাবে শাস্তি দেবেন তেমনি আমিও নিশ্চয়ই কাল সকাল পর্যন্ত নাবলের বাড়ীর একটি পুরুষ লোককেও বাঁচিয়ে রাখব না।” অবীগল দায়ূদকে দেখে তাড়াতাড়ি করে তাঁর গাধার পিঠ থেকে নামলেন এবং দায়ূদের সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন। তারপর তিনি দায়ূদের পায়ের উপর পড়ে তাঁকে বললেন, “হে আমার প্রভু, সব দোষই আমার। দয়া করে আপনার দাসীকে দু’টা কথা বলতে দিন এবং তার কথা আপনি শুনুন। আমার প্রভু যেন সেই জঘন্য লোকের, অর্থাৎ নাবলের কথা না ধরেন। তার নামও যেমন সেও তেমন। তার নামের অর্থ একগুঁয়ে, আর তার মধ্যে রয়েছে শুধু একগুঁয়েমী। আমার প্রভু যে সব লোক পাঠিয়েছিলেন তাদের সংগে আপনার এই দাসীর দেখা হয় নি। “হে আমার প্রভু, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য ও আপনার প্রাণের দিব্য যে, আপনার শত্রুদের এবং যারা আপনার ক্ষতি করতে চায় তাদের দশা নাবলের মত হবে, কারণ সদাপ্রভু আপনাকে রক্তপাত করতে দেন নি এবং নিজের হাতে প্রতিশোধ নিতে দেন নি। এই দাসী তার প্রভুর জন্য যে উপহার এনেছে তা যেন তাঁর সংগের লোকদের দেওয়া হয়। আপনার দাসীর অন্যায় আপনি দয়া করে ক্ষমা করে দিন। সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আমার প্রভুর বংশকে স্থায়ী করবেন, কারণ তিনি সদাপ্রভুর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করছেন। এই পর্যন্ত আপনার মধ্যে কোন মন্দতা দেখা যায় নি আর যাবেও না। আমার প্রভুকে মেরে ফেলবার জন্য লোকে তাড়া করলেও আমি জানি তাঁর প্রাণ তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর ধনভাণ্ডারে যত্নের সংগে রাখা আছে। কিন্তু আপনার শত্রুদের প্রাণ তিনি ফিংগা দিয়ে পাথর ছুঁড়বার মত করেই ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। সদাপ্রভু আমার প্রভুর মংগল করবার প্রতিজ্ঞাগুলো পূর্ণ করবেন এবং তাঁকে ইস্রায়েলীয়দের নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই সময় আমার প্রভু অকারণে রক্তপাত করেছেন কিম্বা নিজের হাতে প্রতিশোধ নিয়েছেন ভেবে তাঁর বিবেক তাঁকে দোষী করবে না কিম্বা তিনি অন্তরে কোন দুঃখবোধ করবেন না। তবে সদাপ্রভু যখন আমার প্রভুর মংগল করবেন তখন তিনি যেন তাঁর এই দাসীর কথা ভুলে না যান।” দায়ূদ তখন অবীগলকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক, কারণ তিনি আজ আমার সংগে দেখা করবার জন্য তোমাকে পাঠিয়ে দিলেন। ধন্য তোমার বিচারবুদ্ধি, ধন্য তুমি, কারণ তুমি আজ আমাকে রক্তপাত করতে আর নিজের হাতে প্রতিশোধ নিতে বাধা দিলে। তোমার ক্ষতি করা থেকে যিনি আমাকে দূরে রেখেছেন সেই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, তুমি যদি তাড়াতাড়ি এসে আমার সংগে দেখা না করতে তাহলে সকাল পর্যন্ত নাবলের বাড়ীর কোন পুরুষলোক বেঁচে থাকত না।” এর পর দায়ূদ তাঁর জন্য আনা সমস্ত জিনিস অবীগলের হাত থেকে গ্রহণ করলেন আর বললেন, “তুমি এবার শান্তিতে বাড়ী ফিরে যাও। আমি তোমার সব কথা শুনেছি এবং তোমার অনুরোধ মেনে নিয়েছি।” অবীগল যখন নাবলের কাছে ফিরে গেলেন তখন রাজবাড়ীতে যেমন চলে সেই রকম একটা ভোজ তার বাড়ীতে চলছিল। নাবল মদ খেয়ে খুশী হয়ে উঠল এবং পরে ভীষণ মাতাল হয়ে পড়ল। সেইজন্য অবীগল সকাল হওয়ার আগে তাকে কিছুই বললেন না। সকালবেলা যখন নাবলের নেশা কেটে গেল তখন তার স্ত্রী তাকে সব কথা জানালেন। এতে নাবলের অন্তর যেন মরে গেল আর সে পাথরের মত হয়ে গেল। এর প্রায় দশ দিন পরে সদাপ্রভুর শাস্তি নাবলের উপর নেমে আসলে পর সে মারা গেল। নাবলের মৃত্যুর খবর পেয়ে দায়ূদ বললেন, “সদাপ্রভুর গৌরব হোক। তিনি নাবলের বিরুদ্ধে আমার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, কারণ নাবল আমাকে অপমান করেছিল। অন্যায় করা থেকে তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন, আর নাবলের অন্যায়কে নাবলের উপরেই ফিরিয়ে দিয়েছেন।” পরে দায়ূদ অবীগলকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে দিলেন। দায়ূদের লোকেরা কর্মিলে অবীগলের কাছে গিয়ে বলল, “দায়ূদ আপনাকে বিয়ে করতে চান, সেইজন্য তিনি আপনার কাছে আমাদের পাঠিয়েছেন।” এই কথা শুনে অবীগল মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে দায়ূদের উদ্দেশে বললেন, “আমি আপনার দাসী; আপনার দাসদের সেবা করবার ও পা ধোওয়াবার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।” এই কথা বলে অবীগল তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হলেন এবং গাধায় চড়ে পাঁচজন দাসী নিয়ে দায়ূদের পাঠানো লোকদের সংগে গেলেন। সেখানে গেলে পর দায়ূদের সংগে তাঁর বিয়ে হল। এর আগে দায়ূদ যিষ্রিয়েল গ্রামের অহীনোয়মকে বিয়ে করেছিলেন। অহীনোয়ম ও অবীগল দু’জনেই তাঁর স্ত্রী হলেন। এদিকে শৌল তাঁর মেয়ে, দায়ূদের স্ত্রী মীখলকে পল্‌টির সংগে বিয়ে দিয়েছিলেন। পল্‌টি ছিল গল্লীম গ্রামের লয়িশের ছেলে। পরে সীফের লোকেরা গিবিয়াতে শৌলের কাছে গিয়ে বলল, “যিশীমোনের কাছে হখীলা পাহাড়ে দায়ূদ লুকিয়ে আছে।” শৌল তখন তিন হাজার বাছাই করা ইস্রায়েলীয় সৈন্য নিয়ে সীফের মরু-এলাকায় দায়ূদকে খুঁজতে গেলেন। যিশীমোনের কাছে রাস্তার পাশে হখীলা পাহাড়ের উপরে শৌল ছাউনি ফেললেন আর দায়ূদ ছিলেন মরু-এলাকায়। দায়ূদ বুঝতে পারলেন হয়তো শৌল তাঁর খোঁজে মরু-এলাকায় এসেছেন। সেইজন্য তিনি লোক পাঠিয়ে জানতে পারলেন যে, শৌল সত্যিই এসেছেন। শৌল যেখানে ছাউনি ফেলেছিলেন দায়ূদ সেখানে গেলেন এবং শৌল ও তাঁর সৈন্যদলের সেনাপতি নেরের ছেলে অব্‌নের যেখানে শুয়ে ছিলেন তা দেখে নিলেন। শৌল ছাউনির মধ্যে মালপত্রের মাঝখানে শুয়ে ছিলেন, আর তাঁর চারদিকে শুয়ে ছিল তাঁর সৈন্যেরা। দায়ূদ তখন হিত্তীয় অহীমেলক ও সরূয়ার ছেলে যোয়াবের ভাই অবীশয়কে বললেন, “ঐ ছাউনির মধ্যে শৌলের কাছে তোমরা কে আমার সংগে যাবে?” অবীশয় বলল, “আমি যাব।” রাতের বেলা দায়ূদ ও অবীশয় শৌলের সৈন্যদের মধ্যে গেলেন। শৌল ছাউনিতে মালপত্রের মাঝখানে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাঁর বর্শাটা তাঁর মাথার কাছে মাটিতে পোঁতা ছিল। অব্‌নের ও সৈন্যেরা তাঁর চারপাশে শুয়ে ছিল। এই অবস্থা দেখে অবীশয় দায়ূদকে বলল, “ঈশ্বর আজ আপনার শত্রুকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন। অনুমতি দিন, আমার বর্শার এক ঘায়ে ওঁকে মাটিতে গেঁথে ফেলি। আমাকে দু’বার আঘাত করতে হবে না।” দায়ূদ তাকে বললেন, “না, ওঁকে মেরে ফেলো না। সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোকের উপর হাত তুলে কে নির্দোষ থাকতে পারে? জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, সদাপ্রভু নিজেই ওকে শাস্তি দেবেন। হয় তিনি এমনিই মারা যাবেন, না হয় যুদ্ধে গিয়ে শেষ হয়ে যাবেন। কিন্তু সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোকের উপর হাত তুলতে সদাপ্রভু কখনও আমাকে অনুমতি দেবেন না। চল, এখন আমরা তাঁর মাথার কাছ থেকে বর্শাটা এবং জলের পাত্রটা তুলে নিয়ে ফিরে যাই।” দায়ূদ তারপর শৌলের মাথার কাছ থেকে তাঁর বর্শা ও জলের পাত্রটা নিয়ে চলে গেলেন। কেউ তা দেখল না, জানল না, কেউ জেগেও উঠল না। তারা সবাই ঘুমাচ্ছিল, কারণ সদাপ্রভু তাদের একটা গভীর ঘুমের মধ্যে ফেলে রেখেছিলেন। এর পর দায়ূদ ছাউনি থেকে বেশ কিছুটা দূরের একটা পাহাড়ের উপরে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর দায়ূদ সৈন্যদের এবং নেরের ছেলে অব্‌নেরকে ডাক দিয়ে বললেন, “অব্‌নের, আপনি কি কিছু বলবেন না?” উত্তরে অব্‌নের বলল, “কে তুমি, রাজাকে ডাকাডাকি করছ?” দায়ূদ বললেন, “আপনি তো একজন বীর, তাই না? ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে আপনার সমান আর কে আছে? কেন আপনি শত্রুর বিপক্ষে আপনার মনিব মহারাজকে পাহারা দিয়ে রাখলেন না? আপনার মনিব মহারাজকে মেরে ফেলবার জন্য একজন লোক গিয়েছিল। আপনি যা করেছেন তা মোটেই ঠিক হয় নি। জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, আপনি ও আপনার লোকদের মরা উচিত, কারণ আপনাদের মনিব, যিনি সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোক, তাঁকে শত্রুর বিপক্ষে আপনারা পাহারা দিয়ে রাখেন নি। রাজার মাথার কাছে তাঁর যে বর্শা ও জলের পাত্র ছিল সেগুলো কোথায়?” শৌল দায়ূদের গলার স্বর চিনে বললেন, “বাবা দায়ূদ, এ কি সত্যিই তোমার গলার স্বর?” দায়ূদ বললেন, “হ্যাঁ মহারাজ, এ আপনার দাসেরই গলার স্বর।” তারপর তিনি আরও বললেন, “কেন আমার মনিব তাঁর দাসের পিছনে তাড়া করে বেড়াচ্ছেন? আমি কি করেছি? কি অন্যায় করেছি? আমার মহারাজ, আমার প্রভু, এখন দয়া করে আপনার দাসের কথা শুনুন। যদি সদাপ্রভুই আপনাকে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে থাকেন তবে আমার করা উৎসর্গ তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য হোক। কিন্তু যদি মানুষ তা করে থাকে তবে তাদের উপর যেন সদাপ্রভুর অভিশাপ নেমে আসে, কারণ তারা আজ সদাপ্রভুর দেওয়া সম্পত্তিতে আমার যে ভাগ আছে তা থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছে। তারা বলছে, ‘চলে যাও, দেব-দেবতার পূজা কর গিয়ে।’ কিন্তু আপনার কাছে আমার এই মিনতি যে, সদাপ্রভু নেই এমন দূরের কোন জায়গায় যেন আমার রক্তপাত না হয়। লোকে পাহাড়ে যেমন করে তিতির পাখী ধরতে যায় ইস্রায়েলীয়দের রাজা তেমনি করে একটা পোকার খোঁজে বের হয়ে এসেছেন।” তখন শৌল বললেন, “আমি পাপ করেছি। বাবা দায়ূদ, তুমি ফিরে এস। আজ তুমি আমার জীবনের কত দাম দিলে; আমি আর তোমার ক্ষতি করতে চেষ্টা করব না। সত্যিই এই মহা অন্যায় করে আমি বোকামি করেছি।” উত্তরে দায়ূদ বললেন, “মহারাজ, এই যে সেই বর্শা, আপনার কোন লোক এসে ওটা নিয়ে যাক। সদাপ্রভু প্রত্যেক লোককে তার বিশ্বস্ততা ও সততার পুরস্কার দেন। সদাপ্রভু আজ আপনাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোকের উপর হাত তুলতে চাই নি। আজ আমার কাছে আপনার জীবন যেমন মহামূল্যবান হল তেমনি সদাপ্রভুর কাছেও যেন আমার জীবন মহামূল্যবান হয়। তিনি যেন সমস্ত বিপদ থেকে আমাকে উদ্ধার করেন।” তখন শৌল দায়ূদকে বললেন, “বাবা দায়ূদ, ধন্য তুমি! তুমি অবশ্যই অনেক বড় বড় কাজ করবে আর জয়ী হবে।” এর পর দায়ূদ তাঁর পথে চলে গেলেন আর শৌলও নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। দায়ূদ মনে মনে ভাবলেন, “এই শৌলের হাতেই আমাকে একদিন মারা পড়তে হবে, তাই পলেষ্টীয়দের দেশে পালিয়ে যাওয়াই আমার পক্ষে সবচেয়ে ভাল হবে। তাহলে ইস্রায়েল দেশের মধ্যে তিনি আর আমাকে খুঁজে বেড়াবেন না, আর আমিও তাঁর হাত থেকে রক্ষা পাব।” এই ভেবে দায়ূদ তাঁর সংগের ছ’শো লোক নিয়ে সেই জায়গা ছেড়ে মায়োকের ছেলে আখীশের কাছে গেলেন। আখীশ ছিলেন গাতের রাজা। দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা গাতে আখীশের কাছে বাস করতে লাগলেন। তাঁর লোকদের প্রত্যেকের সংগে ছিল তাদের পরিবার, আর দায়ূদের সংগে ছিলেন তাঁর দুই স্ত্রী, যিষ্রীয়েল গ্রামের অহীনোয়ম এবং কর্মিল গ্রামের অবীগল। অবীগল ছিলেন নাবলের বিধবা স্ত্রী। শৌল যখন জানতে পারলেন যে, দায়ূদ গাতে পালিয়ে গেছেন তখন তিনি তাঁর খোঁজ করা বন্ধ করে দিলেন। একদিন দায়ূদ আখীশকে বললেন, “আপনি যদি আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন তবে এই দেশের কোন একটা গ্রামে আমাকে কিছু জায়গা দিন যাতে আমি সেখানে গিয়ে বাস করতে পারি। আপনার এই দাস কেন আপনার সংগে রাজধানীতে বাস করবে?” তখন আখীশ সিক্লগ শহরটা দায়ূদকে দান করলেন। সেই থেকে আজও সিক্লগ যিহূদার রাজাদের অধিকারে আছে। দায়ূদ পলেষ্টীয়দের দেশে এক বছর চার মাস ছিলেন। সেই সময়ের মধ্যে তিনি তাঁর লোকদের নিয়ে গশূরীয়, গির্ষীয় ও অমালেকীয়দের দেশে লুটপাট করতে গিয়েছিলেন। এই সব জাতির লোকেরা অনেক কাল আগে শূর থেকে মিসর পর্যন্ত সমস্ত এলাকাটায় বাস করত। দায়ূদ কোন স্ত্রীলোক কিম্বা পুরুষকে গাতে নিয়ে আসবার জন্য বাঁচিয়ে রাখতেন না, কারণ তিনি মনে করতেন, তারা তাদের বিষয় সব কথা জানিয়ে দিয়ে বলবে যে, দায়ূদ এই কাজ করেছে। পলেষ্টীয়দের দেশে আসবার পর থেকে দায়ূদ বরাবরই এই রকম করতেন, কিন্তু আখীশ দায়ূদকে বিশ্বাস করতেন আর ভাবতেন দায়ূদ এই সব কাজ করে তাঁর নিজের জাতি ইস্রায়েলীয়দের কাছে নিজেকে খুব ঘৃণার পাত্র করে তুলেছে আর তাতে সে চিরকাল তাঁর দাস হয়ে থাকবে। দায়ূদ সিক্লগে থাকবার সময় পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য সৈন্য জড়ো করল। তখন আখীশ দায়ূদকে বললেন, “তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছ যে, তোমাকে ও তোমার লোকদের সৈন্যদলে যোগ দিয়ে আমার সংগে যেতে হবে।” দায়ূদ বললেন, “ভাল, আপনি নিজেই দেখতে পাবেন আপনার দাস কি করতে পারে।” আখীশ বললেন, “বেশ ভাল। আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য আমার দেহরক্ষীর পদে নিযুক্ত করব।” এর আগেই শমূয়েল মারা গিয়েছিলেন, আর ইস্রায়েলীয়েরা সবাই তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করে তাঁকে তাঁর নিজের শহর রামাতে কবর দিয়েছিল। যারা মৃত লোকের আত্মার সংগে কথাবার্তা বলে এবং যারা মন্দ আত্মার সংগে সম্বন্ধ রাখে শৌল দেশ থেকে এমন সব লোকদের বের করে দিয়েছিলেন। পলেষ্টীয়েরা একসংগে জড়ো হয়ে শূনেমে গিয়ে ছাউনি ফেলল। এদিকে শৌলও সমস্ত ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের জড়ো করে নিয়ে গিল্‌বোয় পাহাড়ে গিয়ে ছাউনি ফেললেন। পলেষ্টীয়দের সৈন্যসংখ্যা দেখে শৌল ভয় পেলেন আর তাঁর বুক ভীষণভাবে কেঁপে উঠল। তিনি কি করবেন তা সদাপ্রভুর কাছে জানতে চাইলেন, কিন্তু সদাপ্রভু তাঁকে কোনভাবেই উত্তর দিলেন না-স্বপ্ন দিয়েও না, ঊরীম দিয়েও না কিম্বা নবীদের দিয়েও না। শৌল তখন তাঁর কর্মচারীদের বললেন, “তোমরা এমন একজন স্ত্রীলোকের খোঁজ কর, যে মৃত লোকের আত্মার সংগে কথাবার্তা বলতে পারে, যেন তার কাছে গিয়ে আমি জিজ্ঞাসা করতে পারি আমি কি করব।” তারা বলল, “ঐন্‌দোরে ঐরকম একজন স্ত্রীলোক আছে।” এই কথা শুনে শৌল অন্যরকম কাপড়-চোপড় পরে নিজের পরিচয় গোপন করে রাতের বেলা দু’জন লোককে সংগে নিয়ে সেই স্ত্রীলোকের কাছে গেলেন। তিনি সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তুমি মন্ত্র পড়ে মৃত লোকের আত্মার সংগে যোগাযোগ করে আমি যাঁর নাম করব তাঁকে এখানে তুলে আন।” তখন স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “শৌল এই সব ব্যাপারে যা করেছেন তা আপনার নিশ্চয়ই অজানা নেই। যারা মৃত লোকের আত্মার সংগে কথা বলে বা মন্দ আত্মার সংগে সম্বন্ধ রাখে এমন সব লোকদের তিনি দেশ থেকে দূর করে দিয়েছেন। তাহলে কেন আপনি আমার জন্য এমন একটা ফাঁদ পাতছেন যা আমার মুত্যু ঘটাবে?” শৌল তখন সদাপ্রভুর নামে শপথ করে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, এর জন্য তোমার উপর কোন শাস্তি আসবে না।” তখন স্ত্রীলোকটি তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “আমি তাহলে আপনার জন্য কাকে তুলে আনব?” শৌল বললেন, “শমূয়েলকে আন।” পরে শমূয়েলকে দেখতে পেয়ে স্ত্রীলোকটি চিৎকার করে শৌলকে বলল, “আপনি আমাকে কেন ঠকালেন? আপনিই তো শৌল।” রাজা তাকে বললেন, “তোমার কোন ভয় নেই; তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” স্ত্রীলোকটি বলল, “আমি দেখতে পাচ্ছি, একজন দেবতা মাটির তলা থেকে উঠে আসছেন।” শৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “তিনি দেখতে কেমন?” সে বলল, “একজন বুড়ো লোক উঠে আসছেন; তাঁর গায়ে রয়েছে লম্বা পোশাক।” এতে শৌল বুঝতে পারলেন যে, তিনি শমূয়েল। তিনি মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে প্রণাম করলেন। শমূয়েল শৌলকে বললেন, “কেন তুমি আমাকে তুলে নিয়ে এসে বিরক্ত করলে?” শৌল বললেন, “আমি খুব বিপদে পড়েছি। এদিকে পলেষ্টীয়েরা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে আর ওদিকে ঈশ্বর আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আর আমার ডাকে সাড়া দেন না-নবীদের মধ্য দিয়েও দেন না, স্বপ্নের মধ্য দিয়েও দেন না। সেইজন্য এখন আমার কি করা উচিত তা জানবার জন্য আপনাকে ডাকিয়ে এনেছি।” শমূয়েল বললেন, “সদাপ্রভুই যখন তোমাকে ছেড়ে তোমার বিপক্ষে গেছেন তখন আমাকে আর জিজ্ঞাসা করছ কেন? তিনি আমাকে দিয়ে যা বলিয়েছিলেন তা-ই করেছেন। তোমার রাজ্য তিনি তোমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তোমার জাতি-ভাই দায়ূদকে দিয়েছেন। তুমি সদাপ্রভুর কথা শোন নি এবং অমালেকীয়দের বিরুদ্ধে তাঁর যে ভীষণ ক্রোধ তা তোমার কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ কর নি, সেইজন্য তিনি আজ তোমার প্রতি এই রকম করেছেন। সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের হাতে তোমাকে এবং তোমার সংগে ইস্রায়েলীয়দের তুলে দেবেন। কাল তুমি ও তোমার ছেলেরা আমার সংগে থাকবে। তিনি ইস্রায়েলের সৈন্যদলকেও পলেষ্টীয়দের হাতে তুলে দেবেন।” শমূয়েলের কথা শুনে শৌল খুব ভয় পেয়ে তখনই মাটিতে লম্বা হয়ে পড়ে গেলেন। সারা দিন ও সারা রাত কিছু না খাওয়ার দরুন তাঁর শরীরে কোন শক্তি রইল না। সেই স্ত্রীলোকটি শৌলের কাছে গিয়ে দেখল যে, তিনি ভীষণ ভয় পেয়েছেন। তাই সে বলল, “দেখুন, আপনার দাসী আপনার আদেশ পালন করেছেন। আপনি আমাকে যা করতে বলেছিলেন প্রাণ হাতে করে আমি তা করেছি। এখন আপনিও দয়া করে আপনার দাসীর একটা কথা শুনুন। আমি আপনার সামনে কিছু খাবার রাখব। আপনি তা খেলে পর পথ চলবার শক্তি পাবেন।” কিন্তু শৌল রাজী না হয়ে বললেন, “না, আমি খাব না।” কিন্তু তাঁর লোকেরা সেই স্ত্রীলোকটির সংগে তাঁকে খুব সাধাসাধি করতে লাগল। শেষে তিনি তাদের কথা শুনলেন এবং মাটি থেকে উঠে খাটে বসলেন। সেই স্ত্রীলোকটির ঘরে মোটা-সোটা একটা বাছুর ছিল। সে তাড়াতাড়ি করে সেটা জবাই করল আর কিছু ময়দা নিয়ে মেখে খামিহীন রুটি তৈরী করল। তারপর শৌল ও তাঁর লোকদের সামনে সে তা আনল এবং তাঁরা তা খেলেন। পরে রাত থাকতেই তাঁরা উঠে সেখান থেকে চলে গেলেন। পলেষ্টীয়েরা অফেকে তাদের সমস্ত সৈন্য জড়ো করল। এদিকে ইস্রায়েলীয়েরা যিষ্রিয়েলের ফোয়ারার কাছে তাদের ছাউনি ফেলল। পলেষ্টীয় শাসনকর্তারা শত-সৈন্য এবং হাজার-সৈন্যের দল নিয়ে এগিয়ে চলল, আর তাদের পিছনে আখীশের সংগে দায়ূদ তাঁর লোকজন নিয়ে চললেন। তা দেখে পলেষ্টীয় সেনাপতিরা জিজ্ঞাসা করল, “এই সব ইব্রীয়েরা এখানে কেন?” আখীশ বললেন, “এ তো ইস্রায়েলীয়দের রাজা শৌলের দাস দায়ূদ। সে দু’এক বছর ধরে আমার কাছে আছে। শৌলকে ছেড়ে চলে আসবার দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি তার মধ্যে কোন দোষ পাই নি।” এই কথা শুনে পলেষ্টীয় সেনাপতিরা আখীশের উপর রেগে গিয়ে বলল, “লোকটাকে আপনি ফেরৎ পাঠিয়ে দিন। আপনি তাকে যে জায়গাটা দিয়েছেন সে সেখানেই ফিরে যাক। সে আমাদের সংগে যুদ্ধে যেতে পারবে না। তাহলে যুদ্ধে গিয়ে সে আমাদের বিপক্ষে দাঁড়াবে। তার মনিবকে খুশী করতে হলে তাকে তো আমাদের লোকদের মুণ্ড দিয়েই তা করতে হবে। এ কি সেই দায়ূদ নয়, যার বিষয়ে তারা নেচে নেচে গেয়েছিল, ‘শৌল মারলেন হাজার হাজার আর দায়ূদ মারলেন অযুত অযুত’?” আখীশ তখন দায়ূদকে ডেকে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, আমি জানি তুমি সৎ লোক। এই সৈন্যদলের মধ্যে তুমি যা কিছু করেছ তা আমাকে খুশী করেছে। তোমার আসবার দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি তোমার মধ্যে অন্যায় কিছু দেখতে পাই নি, কিন্তু অন্যান্য শাসনকর্তারা তোমার উপর সন্তুষ্ট নন। তাই তুমি শান্তভাবে ফিরে যাও; তুমি এমন কিছু কোরো না যাতে পলেষ্টীয় শাসনকর্তারা অসন্তুষ্ট হন।” তখন দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু আমি কি করেছি? আমার আসবার দিন থেকে আজ পর্যন্ত আপনার এই দাসের মধ্যে আপনি কি দোষ পেয়েছেন যার জন্য আমি আমার প্রভু মহারাজের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতে পারব না?” উত্তরে আখীশ বললেন, “আমি জানি তুমি আমার কাছে ঈশ্বরের একজন দূতের মতই ভাল; তবুও পলেষ্টীয় সেনাপতিরা বলছেন তুমি যেন আমার সংগে যুদ্ধে না যাও। কাজেই তুমি ও তোমার মনিবের যে সব লোক তোমার সংগে এসেছে তোমরা কাল ভোরে উঠো এবং আলো হওয়ার সংগে সংগে চলে যেয়ো।” তাই দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা পলেষ্টীয়দের দেশে ফিরে যাবার জন্য খুব ভোরে উঠলেন, আর পলেষ্টীয়েরা যিষ্রিয়েলে চলে গেল। দায়ূদ তাঁর লোকদের নিয়ে সিক্লগে ফিরে এসে দেখলেন শহরটা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই অবস্থা দেখে দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন। শেষে এমন হল যে, তাদের কাঁদবার শক্তিও আর রইল না। দায়ূদের দুই স্ত্রী, যিষ্রীয়েলের অহিনোয়ম আর কর্মিলের বাসিন্দা নাবলের বিধবা অবীগল বন্দী হয়েছিলেন। তখন দায়ূদ মহা বিপদে পড়লেন, কারণ ছেলেমেয়েদের জন্য তাঁর লোকদের মন দায়ূদের প্রতি এমন তেতো হয়ে উঠেছিল যে, তারা দায়ূদকে পাথর মারবার কথা বলাবলি করছিল। কিন্তু দায়ূদ তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে অন্তরে শক্তি পেলেন। তখন দায়ূদ তাঁর ছ’শো লোক সংগে নিলেন। তাঁরা বিষোর নামে একটা পাহাড়ী খাদের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে কিছু লোককে রেখে যেতে হল। প্রায় দু’শো লোক ক্লান্ত হয়ে পড়াতে সেই খাদ পার হতে পারল না। দায়ূদ চারশো লোক নিয়ে শত্রুদের পিছনে তাড়া করে গেলেন। পরে একটা মাঠের মধ্যে তাঁর লোকেরা একজন মিসরীয় লোককে দেখতে পেল। তারা তাকে দায়ূদের কাছে নিয়ে গেল এবং খাবার ও জল খেতে দিলে সে তা খেল। তারপর তারা তাকে ডুমুরের তালের এক টুকরা ও দুই তাল কিশমিশ খেতে দিল। তিন দিন তিন রাত সে খাবার কিম্বা জল কিছুই খায় নি, তাই এই সব খেয়ে সে যেন প্রাণ ফিরে পেল। দায়ূদ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কার লোক? কোথা থেকে এসেছ?” লোকটি বলল, “আমি একজন মিসরীয় যুবক, একজন অমালেকীয়ের দাস। আজ তিন দিন হল আমার অসুখ হয়েছে, তাই আমার মনিব আমাকে ফেলে চলে গেছেন। আমরা নেগেভে করেথীয়দের এলাকা, যিহূদা এলাকা ও কালেব এলাকায় লুটপাট করতে গিয়েছিলাম আর সিক্লগ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছি।” দায়ূদ বললেন, “ঐ লুটেরাদের কাছে কি তুমি আমাকে নিয়ে যেতে পারবে?” উত্তরে সে বলল, “আপনি ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলুন যে, আপনি আমাকে মেরেও ফেলবেন না কিম্বা আমার মনিবের হাতে তুলেও দেবেন না। তাহলে আমি আপনাকে তাদের কাছে নিয়ে যাব।” পরে সে দায়ূদকে ঐ দলের কাছে নিয়ে গেল। তারা তখন একটা মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং খাওয়া-দাওয়া করছিল ও মদ খেয়ে আমোদ-প্রমোদ করছিল, কারণ পলেষ্টীয়দের দেশ ও যিহূদা এলাকা থেকে তারা অনেক জিনিসপত্র লুটপাট করে এনেছিল। দায়ূদ সেই দিনের বিকালবেলা থেকে শুরু করে পর দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের সংগে যুদ্ধ করলেন। তাদের মধ্যে কেউই রক্ষা পেল না, কেবল চারশো যুবক উটের পিঠে করে পালিয়ে গেল। অমালেকীয়েরা যা কিছু লুট করে নিয়ে এসেছিল তা সবই তিনি উদ্ধার করলেন। তাঁর দুই স্ত্রীকেও তিনি উদ্ধার করলেন। তাদের কম বা বেশী বয়সের লোক, তাদের ছেলে বা মেয়ে আর যে সব জিনিস অমালেকীয়েরা লুট করেছিল বা নিয়ে এসেছিল তার কিছুই বাদ পড়ল না; দায়ূদ সবই ফিরিয়ে আনলেন। তিনি অমালেকীয়দের সমস্ত গরু-ভেড়াও নিয়ে নিলেন। তাঁর লোকেরা সেগুলোকে অন্যান্য পশুপালের আগে আগে তাড়িয়ে নিয়ে চলল। তারা বলল, “এগুলো দায়ূদের লুটের জিনিস।” যে দু’শো লোক ক্লান্ত হয়ে দায়ূদের সংগে যেতে পারে নি, যাদের বিষোর খাদের কাছে রেখে যাওয়া হয়েছিল, দায়ূদ তাদের কাছে ফিরে আসলেন। সেই লোকেরা দায়ূদ ও তাঁর সংগের লোকদের এগিয়ে নেবার জন্য এসেছিল। দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা তাদের কাছে গেলে পর দায়ূদ তাদের খবরাখবর নিলেন। কিন্তু দায়ূদের সংগে যারা গিয়েছিল তাদের মধ্যে যারা দুষ্ট ও গোলমেলে লোক ছিল তারা বলল, “ওরা আমাদের সংগে যায় নি বলে আমরা যা উদ্ধার করে ফিরিয়ে এনেছি তা ওদের দেব না। ওরা কেবল যে যার বউ ও ছেলেমেয়ে নিয়ে চলে যাক।” উত্তরে দায়ূদ বললেন, “না, না, আমার ভাইয়েরা, সদাপ্রভু আমাদের যা দিয়েছেন তা নিয়ে তোমরা এই রকম কোরো না। তিনি আমাদের রক্ষা করেছেন এবং আমাদের লুটকারীদের আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তোমাদের এই সব কথায় কেউ রাজী হবে না। যারা যুদ্ধে গিয়েছিল আর যারা জিনিসপত্র পাহারা দিয়েছিল তারা সবাই একই রকম ভাগ পাবে।” সেই দিন থেকে দায়ূদ ইস্রায়েলীয়দের জন্য সেই অনুসারে নিয়ম ঠিক করে দিলেন আর তা আজও চালু আছে। সিক্লগে ফিরে এসে দায়ুদ যিহূদা-গোষ্ঠীর বৃদ্ধ নেতাদের কাছে লুটের মালের কিছু কিছু অংশ পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা ছিলেন তাঁর বন্ধু। তিনি তাঁদের কাছে এই কথা বলে পাঠালেন, “সদাপ্রভুর শত্রুদের কাছ থেকে লুটে আনা জিনিসের মধ্য থেকে আমি আপনাদের কাছে কিছু উপহার পাঠালাম।” যে সব বৃদ্ধ নেতাদের কাছে সেগুলো পাঠানো হল তাঁরা ছিলেন বৈথেলের, রামোৎ-নেগেভের, যত্তীরের, এর মধ্যে পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল আর ইস্রায়েলীয়েরা তাদের সামনে থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে অনেকে গিলবোয় পাহাড়ে পলেষ্টীয়দের হাতে মারা পড়তে লাগল। পলেষ্টীয়েরা শৌল ও তাঁর ছেলেদের পিছনে তাড়া করে গিয়ে তাঁর ছেলে যোনাথন, অবীনাদব ও মল্কীশূয়কে মেরে ফেলল। তারপর শৌলের বিরুদ্ধে আরও ভীষণভাবে যুদ্ধ চলতে লাগল। ধনুকধারী সৈন্যেরা তাঁকে দেখতে পেয়ে আঘাত করল। শৌল তখন তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিকে বললেন, “তোমার তলোয়ার বের করে আমার দেহটা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দাও। তা না হলে ঐ সুন্নত-না-করানো লোকেরা এসে আমার দেহটা এফোঁড়-ওফোঁড় করবে এবং আমাকে অপমান করবে।” কিন্তু তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটি তা করতে রাজী হল না, কারণ সে খুব ভয় পেয়েছিল। তখন শৌল তাঁর তলোয়ার নিয়ে নিজেই তার উপরে পড়লেন। শৌল মারা গেছেন দেখে তাঁর অস্ত্রবহনকারীও নিজের তলোয়ারের উপর পড়ে শৌলের সংগে মারা গেল। এইভাবে সেই দিন শৌল, তাঁর তিন ছেলে, তাঁর অস্ত্র বহনকারী এবং তাঁর সংগের লোকেরা একসংগে মারা গেলেন। যে সব ইস্রায়েলীয় উপত্যকার অন্য দিকে ছিল আর যারা যর্দন নদীর ওপারে ছিল তারা যখন দেখল যে, ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা পালিয়ে গেছে এবং শৌল ও তাঁর ছেলেরা মারা পড়েছেন তখন তারাও তাদের শহর ও গ্রামগুলো ছেড়ে পালিয়ে গেল, আর পলেষ্টীয়েরা এসে সেগুলো দখল করে নিল। পরের দিন পলেষ্টীয়েরা মৃত লোকদের সব কিছু লুট করতে এসে দেখল গিল্‌বোয় পাহাড়ের উপরে শৌল ও তাঁর তিন ছেলের মৃতদেহ পড়ে আছে। তারা শৌলের মাথা কেটে ফেলল এবং তাঁর সাজ-পোশাক ও অস্ত্রশস্ত্র খুলে নিল। এই খবর তাদের সমস্ত দেব-মন্দিরে এবং লোকদের কাছে ঘোষণা করবার জন্য তারা পলেষ্টীয়দের দেশের সব জায়গায় সেগুলো পাঠিয়ে দিল। তারপর তারা শৌলের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অষ্টারোৎ দেবীর মন্দিরে রাখল আর তাঁর দেহটা বৈৎ-শান শহরের দেয়ালে টাংগিয়ে দিল। পলেষ্টীয়েরা শৌলের প্রতি যা করেছে যাবেশ-গিলিয়দের লোকেরা তা শুনতে পেল। তখন সেখানকার বীর সৈন্যেরা সারারাত হেঁটে বৈৎ-শানে গিয়ে শৌল ও তাঁর ছেলেদের মৃতদেহগুলো দেয়াল থেকে নামিয়ে নিল এবং যাবেশে নিয়ে গিয়ে তা পুড়িয়ে দিল। তারপর তারা তাঁদের হাড়গুলো নিয়ে সেখানকার একটা ঝাউ গাছের তলায় কবর দিল এবং সাত দিন উপবাস করে কাটাল। ॥ভব শৌলের মৃত্যুর পর দায়ূদ অমালেকীয়দের হারিয়ে দিয়ে সিক্লগে ফিরে আসলেন এবং সেখানে দু’দিন রইলেন। তৃতীয় দিনে শৌলের সৈন্য-ছাউনি থেকে একজন লোক দায়ূদের কাছে আসল। শোকের চিহ্ন হিসাবে তার গায়ের কাপড়-চোপড় ছেঁড়া ছিল এবং মাথায় ধুলা ছিল। সে দায়ূদের কাছে গিয়ে মাটিতে পড়ে তাঁকে প্রণাম করল। দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোথা থেকে এসেছ?” সে বলল, “আমি ইস্রায়েলীয়দের ছাউনি থেকে পালিয়ে এসেছি।” দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে? আমাকে বল।” সে বলল, “লোকেরা যুদ্ধের জায়গা থেকে পালিয়ে গেছে। অনেকে মারা গেছে আর শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনও মারা গেছেন।” যে যুবকটি এই খবর এনেছিল দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি করে জানলে যে, শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথন মারা গেছেন?” যুবকটি তাঁকে বলল, “আমি সেই সময় গিল্‌বোয় পাহাড়ে ছিলাম আর শৌল তখন তাঁর বর্শার উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় রথ এবং ঘোড়সওয়ারেরা প্রায় তাঁর উপর এসে পড়েছিল। তিনি পিছন ফিরে আমাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলেন। আমি বললাম, ‘এই তো আমি।’ তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কে?’ উত্তরে আমি বললাম, ‘আমি একজন অমালেকীয়।’ তিনি আমাকে বললেন, ‘দয়া করে আমার কাছে এসে আমাকে মেরে ফেল, কারণ আমার ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে কিন্তু আমি এখনও বেঁচে আছি।’ কাজেই আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে মেরে ফেললাম। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর যে অবস্থা তাতে তিনি আর বাঁচবেন না। আমি তাঁর মাথার মুকুট ও তাঁর হাতের বাজু খুলে এখানে আমার প্রভু আপনার কাছে নিয়ে আসলাম।” এই কথা শুনে দায়ূদ ও তাঁর সংগের লোকেরা নিজেদের কাপড় ছিঁড়লেন। শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথন এবং সদাপ্রভুর সৈন্যদলের যে সমস্ত ইস্রায়েলীয় যুদ্ধে মারা গেছেন তাঁদের জন্য তাঁরা সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁদতে ও শোক করতে লাগলেন এবং কিছুই খেলেন না। যে যুবকটি এই খবর এনেছিল দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোথাকার লোক?” উত্তরে সে বলল, “আমি এই দেশে বাসকারী একজন বিদেশী লোকের ছেলে, একজন অমালেকীয়।” দায়ূদ তাকে বললেন, “সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোককে মেরে ফেলবার জন্য হাত তুলতে তোমার কি একটুও ভয় হল না?” দায়ূদ তাঁর একজন লোককে ডেকে বললেন, “তুমি কাছে গিয়ে ওকে মেরে ফেল।” এতে সে তাকে মেরে ফেলল। দায়ূদ সেই যুবকটিকে বলেছিলেন, “তোমার মৃত্যুর জন্য তুমি নিজেই দায়ী, কারণ তোমার মুখের কথাই তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে যে, সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোককে তুমি মেরে ফেলেছ।” শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনের জন্য দায়ূদ তখন এই বিলাপের গানটা গাইতে লাগলেন। তিনি আদেশ দিলেন যেন ধনুক নামে এই বিলাপের গানটা যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকদের শিখানো হয়। এই গান যাশের নামে একটা বইতে লেখা রয়েছে। “হে ইস্রায়েল, যাঁরা তোমার গৌরব তাঁরা তোমার ঐ উঁচু জায়গায় মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। হায়, কিভাবে বীরেরা ধ্বংস হয়ে গেলেন! তোমরা গাতে এই খবর দিয়ো না, আর অস্কিলোনের পথে পথে ঘোষণা কোরো না; তা করলে পলেষ্টীয়দের মেয়েরা আনন্দ করবে, ঐ সুন্নত-না-করানো লোকদের মেয়েরা আমোদ করবে। ওহে গিল্‌বোয়ের পাহাড়শ্রেণী, তোমাদের উপর শিশির বা বৃষ্টি না পড়ুক, তোমাদের মধ্যে উর্বর শস্যক্ষেতও না থাকুক; কারণ ওখানেই তো বীরদের ঢাল অসম্মানিত হয়েছে, শৌলের ঢালে আর তেল মাখানো হচ্ছে না। নিহত লোকদের রক্ত আর বীরদের মাংস না পেলে যোনাথনের ধনুক ফিরে আসত না; তৃপ্ত না হয়ে শৌলের তলোয়ার ফিরে আসত না। বেঁচে থাকাকালে শৌল আর যোনাথন প্রিয় ও ভাল ছিলেন; তাঁরা মরণেও আলাদা হলেন না। তাঁদের গতি ছিল ঈগল পাখীর চেয়েও বেশী, আর শক্তিও ছিল সিংহের চেয়ে অনেক। হে ইস্রায়েলের মেয়েরা, শৌলের জন্য কাঁদ। তিনি তোমাদের দামী লাল কাপড় পরিয়েছেন, তোমাদের কাপড়ের উপর সোনার কারুকাজ করেছেন। হায়, সেই বীরেরা যুদ্ধের মধ্যে কিভাবে ধ্বংস হয়ে গেলেন! ঐ উঁচু জায়গায় যোনাথন মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। হায় যোনাথন, আমার ভাই! তোমার জন্য আমার বড় দুঃখ। আমার কাছে তুমি কত প্রিয়; আমার জন্য তোমার ভালবাসা ছিল মেয়েদের প্রতি ভালবাসার চেয়েও চমৎকার। হায়, কিভাবে বীরেরা ধ্বংস হয়ে গেলেন, আর নষ্ট হয়ে গেল তাঁদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র!” পরে দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি যিহূদা এলাকার কোন একটা শহরে চলে যাব?” সদাপ্রভু বললেন, “হ্যাঁ, যাও।” দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কোথায় যাব?” উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “হিব্রোণে যাও।” তখন দায়ূদ তাঁর দুই স্ত্রীকে, অর্থাৎ যিষ্রিয়েলের অহীনোয়ম ও কর্মিলের নাবলের বিধবা অবীগলকে নিয়ে হিব্রোণে গেলেন। যে সব লোক তাঁর সংগে সংগে থাকত তিনি পরিবার সুদ্ধ তাদেরও নিয়ে গেলেন। তারা হিব্রোণের গ্রামগুলোতে বাস করতে লাগল। তখন যিহূদার লোকেরা হিব্রোণে এসে দায়ূদকে যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকদের রাজা হিসাবে অভিষেক করল। লোকেরা দায়ূদকে এই খবর দিল যে, যাবেশ-গিলিয়দের লোকেরাই শৌলকে কবর দিয়েছে। তখন তিনি লোক পাঠিয়ে যাবেশ-গিলিয়দের লোকদের এই কথা বললেন, “আপনারা যে আপনাদের মনিব শৌলকে কবর দিয়ে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ততা দেখিয়েছেন সেইজন্য সদাপ্রভু যেন আপনাদের আশীর্বাদ করেন। তিনি যেন এখন তাঁর অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততা আপনাদের দেখান, আর আপনাদের সেই কাজের জন্য আমিও আপনাদের সংগে ভাল ব্যবহার করব। কাজেই এখন আপনারা শক্ত হন ও বুকে সাহস রাখুন। আপনাদের মনিব শৌল মারা গেছেন এবং যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা আমাকে তাদের উপর রাজা হিসাবে অভিষেক করেছে।” এই সময়ের মধ্যে শৌলের সৈন্যদলের সেনাপতি নেরের ছেলে অব্‌নের শৌলের ছেলে ঈশ্‌বোশত্‌কে যর্দন নদীর ওপারে মহনয়িমে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ঈশ্‌বোশত্‌কে গিলিয়দ, অশূর, যিষ্রিয়েল, ইফ্রয়িম, বিন্যামীন, এমন কি, সমস্ত ইস্রায়েল দেশের উপর রাজা করেছিলেন। শৌলের ছেলে ঈশ্‌বোশৎ চল্লিশ বছর বয়সে ইস্রায়েল দেশের রাজা হয়েছিলেন এবং দু’বছর রাজত্ব করেছিলেন। কিন্তু যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা দায়ূদের অধীনে ছিল। দায়ূদ হিব্রোণে থেকে যিহূদা-গোষ্ঠীর উপর সাড়ে সাত বছর রাজত্ব করেছিলেন। এক দিন নেরের ছেলে অব্‌নের শৌলের ছেলে ঈশ্‌বোশতের লোকদের নিয়ে মহনয়িম থেকে গিবিয়োনে গেলেন। তখন সরূয়ার ছেলে যোয়াব ও দায়ূদের লোকেরা বের হয়ে আসলেন। গিবিয়োনের পুকুরের কাছে এই দুই দল সামনাসামনি হল। এক দল বসল পুকুরের এপারে আর অন্য দল বসল পুকুরের ওপারে। তখন অব্‌নের যোয়াবকে বললেন, “দু’দলের কয়েকজন যুবক উঠে আমাদের সামনে যুদ্ধ করুক।” যোয়াব বললেন, “বেশ, তা-ই হোক।” বিন্যামীন-গোষ্ঠীর ও শৌলের ছেলে ঈশ্‌বোশতের পক্ষ থেকে বারোজনকে আর দায়ূদের পক্ষ থেকে বারোজনকে যুদ্ধ করবার জন্য বেছে নেওয়া হল। তখন দুই দলের লোকেরা প্রত্যেকেই একে অন্যের মাথা ধরে পাঁজরে ছোরা ঢুকিয়ে দিল এবং একসংগে মাটিতে পড়ে মারা গেল। সেইজন্য গিবিয়োনের সেই জায়গাটার নাম দেওয়া হল হিল্‌কৎ-হৎসূরীম (যার মানে “ছোরার মাঠ”)। সেই দিন এক ভীষণ যুদ্ধ হল আর তাতে অব্‌নের ও ইস্রায়েলের লোকেরা দায়ূদের লোকদের কাছে হেরে গেল। যোয়াব, অবীশয় ও অসাহেল নামে সরূয়ার তিন ছেলে সেখানে ছিল। অসাহেল বুনো হরিণের মত জোরে দৌড়াতে পারত। সে অব্‌নেরের পিছনে তাড়া করল এবং ডানে-বাঁয়ে না গিয়ে সোজা তাঁর পিছনে পিছনে ছুটল। অব্‌নের পিছন ফিরে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি অসাহেল?” অসাহেল বলল, “হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন।” তখন অব্‌নের তাকে বললেন, “তুমি ডানে বা বাঁয়ে ফিরে কোন যুবককে হারিয়ে দিয়ে তার যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে নাও।” কিন্তু অসাহেল তাঁর পিছনে তাড়া করেই চলল। অব্‌নের অসাহেলকে আবার বললেন, “থাম, আমাকে তাড়া কোরো না। আমি তোমাকে মেরে ফেলতে চাই না। তা করলে আমি কেমন করে তোমার ভাই যোয়াবকে মুখ দেখাব?” অসাহেল তবুও ফিরতে রাজী হল না। তখন অব্‌নের তাঁর বর্শার পিছন দিকটা অসাহেলের পেটের ভিতরে এমনভাবে ঢুকিয়ে দিলেন যে, বর্শাটা তার পিঠ ফুঁড়ে বের হল। অসাহেল সেখানেই পড়ে মারা গেল। অসাহেল যে জায়গায় পড়ে মারা গিয়েছিল যত লোক সেই জায়গায় আসল তারা প্রত্যেকে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল, কিন্তু যোয়াব ও অবীশয় অব্‌নেরের পিছনে তাড়া করে গেলেন। এইভাবে তাঁরা গিবিয়োনের মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে যাবার পথে গীহের সামনে অম্মা পাহাড়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। অব্‌নেরের পিছনে তখন বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকেরা জড়ো হয়েছিল। তারা এক দল হয়ে একটা পাহাড়ের উপরে গিয়ে দাঁড়াল। তখন অব্‌নের যোয়াবকে ডেকে বললেন, “তলোয়ার কি চিরকাল গিল্‌তেই থাকবে? শেষে যে সব কিছু তেতো হয়ে উঠবে তা কি তুমি বুঝতে পারছ না? কখন তুমি তোমার লোকদের তাদের ভাইদের পিছনে তাড়া করা বন্ধ করতে হুকুম দেবে?” উত্তরে যোয়াব বললেন, “জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য, তুমি কথা না বললেও সকালে লোকেরা তাদের ভাইদের তাড়া করা বন্ধ করত।” এই বলে তিনি তূরী বাজালেন। তখন সমস্ত লোক থেমে গেল। তারা আর ইস্রায়েলীয়দের পিছনে তাড়া করল না এবং যুদ্ধও করল না। অব্‌নের ও তাঁর লোকেরা সারা রাত অরাবা সমভূমির মধ্য দিয়ে হেঁটে গিয়ে যর্দন নদী পার হল। তারপর বিথ্রোণের মধ্য দিয়ে হেঁটে তারা মহনয়িমে গিয়ে উপস্থিত হল। যোয়াব অব্‌নেরের পিছনে তাড়া করা বাদ দিয়ে ফিরে গেলেন। তিনি তাঁর লোকদের জড়ো করলে পর দেখা গেল অসাহেল নেই আর দায়ূদের ঊনিশজন লোক নেই। তবে যে বিন্যামীনীয়েরা অব্‌নেরের সংগে ছিল দায়ূদের লোকেরা তাদের তিনশো ষাটজনকে মেরে ফেলেছিল। তারা অসাহেলকে তুলে নিয়ে বৈৎলেহমে গেল এবং তার বাবার কবরের মধ্যে তাকে কবর দিল। তারপর যোয়াব ও তাঁর লোকেরা সারা রাত হেঁটে ভোর বেলায় হিব্রোণে গিয়ে পৌঁছাল। শৌল ও দায়ূদের সৈন্যদলের মধ্যে অনেকদিন পর্যন্ত যুদ্ধ চলল। দায়ূদ শক্তিশালী হয়ে উঠতে লাগলেন আর শৌলের সৈন্যদল দুর্বল হয়ে পড়তে লাগল। হিব্রোণে থাকবার সময়ে দায়ূদের কয়েকটি ছেলের জন্ম হয়েছিল। দায়ূদের বড় ছেলের নাম অম্নোন; সে ছিল যিষ্রিয়েলের অহীনোয়মের ছেলে। তাঁর দ্বিতীয় ছেলের নাম কিলাব; সে ছিল কর্মিলের নাবলের বিধবা অবীগলের ছেলে। তৃতীয় ছেলের নাম অবশালোম; সে ছিল গশূরের রাজা তল্‌ময়ের মেয়ে মাখার ছেলে। চতুর্থ ছেলের নাম আদোনিয়; সে ছিল হগীতের ছেলে। পঞ্চম ছেলের নাম শফটিয়; সে ছিল অবীটলের ছেলে। ষষ্ঠ ছেলের নাম যিত্রিয়ম; সে ছিল দায়ূদের স্ত্রী ইগ্‌লার ছেলে। দায়ূদের এই সব ছেলের জন্ম হয়েছিল হিব্রোণে। শৌল ও দায়ূদের সৈন্যদলের মধ্যে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন শৌলের লোকদের মধ্যে অব্‌নের নিজেকে শক্তিশালী করে তুলেছিলেন। রিস্‌পা নামে শৌলের একজন উপস্ত্রী ছিল। সে ছিল অয়ার মেয়ে। একদিন ঈশ্‌বোশৎ অব্‌নেরকে বললেন, “আপনি আমার বাবার উপস্ত্রীর সংগে কেন শুয়েছিলেন?” ঈশ্‌বোশতের কথা শুনে অব্‌নের ভীষণ রেগে গিয়ে বললেন, “আমি কি যিহূদা পক্ষের কুকুরের মাথা? আজ পর্যন্ত আমি তোমার বাবা শৌলের পরিবারের প্রতি এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের প্রতি বিশ্বস্ত রয়েছি। আমি তোমাকে দায়ূদের হাতে তুলে দিই নি। এর পরেও তুমি ঐ স্ত্রীলোকটি সম্বন্ধে আমাকে দোষী করছ! ঈশ্‌বোশৎ অব্‌নেরকে আর একটা কথাও বলতে সাহস করলেন না, কারণ তিনি তাঁকে ভয় করলেন। এর পর অব্‌নের নিজের পক্ষ থেকে দায়ূদের কাছে লোক পাঠিয়ে তাঁকে এই কথা বললেন, “এই দেশটা কার? আপনি আমার সংগে একটি চুক্তি করুন। আমি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের আপনার পক্ষে নিয়ে আসতে আপনাকে সাহায্য করব।” দায়ূদ বললেন, “বেশ ভাল, আমি আপনার সংগে একটা চুক্তি করব, কিন্তু আপনার কাছে আমার একটা শর্ত আছে। আপনি যখন আবার আমার কাছে আসবেন তখন শৌলের মেয়ে মীখলকে না নিয়ে আমার সামনে আসবেন না।” তারপর দায়ূদ শৌলের ছেলে ঈশ্‌বোশতের কাছে লোক পাঠিয়ে এই দাবি জানালেন, “আমার স্ত্রী মীখলকে দাও। আমি পলেষ্টীয়দের একশো পুরুষাংগের সামনের চামড়া পণ দিয়ে তাকে বিয়ে করেছিলাম।” তখন ঈশ্‌বোশতের আদেশে মীখলের স্বামী লয়িশের ছেলে পল্‌টিয়েলের কাছ থেকে মীখলকে নিয়ে আসা হল। তাঁর স্বামী সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে তাঁর পিছন পিছন বহুরীম পর্যন্ত গেল। তখন অব্‌নের তাকে বললেন, “তুমি বাড়ী ফিরে যাও।” সে তখন বাড়ী ফিরে গেল। এর আগে অব্‌নের ইস্রায়েলের বৃদ্ধ নেতাদের কাছে বলেছিলেন, “আগে আপনারা দায়ূদকে আপনাদের রাজা করতে চেয়েছিলেন। এখন তা-ই করুন। সদাপ্রভু দায়ূদের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি তাঁর দাস দায়ূদকে দিয়ে পলেষ্টীয়দের হাত থেকে এবং তাদের আর সব শত্রুর হাত থেকে তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করবেন।” অব্‌নের বিন্যামীনীয়দের সংগেও কথা বললেন। এছাড়া তিনি ইস্রায়েল ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর সমস্ত লোক যা করতে চায় তা সব দায়ূদকে জানাবার জন্য হিব্রোণে গেলেন। অব্‌নের তাঁর সংগের বিশজন লোক নিয়ে যখন হিব্রোণে দায়ূদের কাছে উপস্থিত হলেন তখন তাঁর ও তাঁর লোকদের জন্য দায়ূদ একটা ভোজের ব্যবস্থা করলেন। পরে অব্‌নের দায়ূদকে বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা সকলে যাতে আপনার সংগে একটা চুক্তিতে আসে আর আপনি আপনার ইচ্ছামত তাদের সকলের উপর রাজত্ব করতে পারেন তাই আমার প্রভু মহারাজের কাছে তাদের জড়ো করবার জন্য আমাকে এখনই যেতে দিন।” এই কথা শুনে দায়ূদ অব্‌নেরকে যেতে দিলেন আর অব্‌নের শান্তিতে চলে গেলেন। ঠিক সেই সময়ে দায়ূদের লোকেরা ও যোয়াব শত্রুদের আক্রমণ করা শেষ করে অনেক লুটের মাল নিয়ে ফিরে আসলেন। তখন অব্‌নের হিব্রোণে দায়ূদের কাছে ছিলেন না, কারণ দায়ূদ তাঁকে বিদায় করে দিয়েছিলেন আর তিনি শান্তিতে চলে গিয়েছিলেন। যোয়াব ও তাঁর সংগের সৈন্যেরা ফিরে আসলে পর লোকেরা যোয়াবকে বলল যে, নেরের ছেলে অব্‌নের রাজার কাছে এসেছিলেন এবং রাজা তাঁকে বিদায় করে দিয়েছেন এবং তিনি শান্তিতে চলে গেছেন। যোয়াব তখন রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “এ আপনি কি করলেন? অব্‌নের তো আপনার কাছে এসেছিল, আপনি কেন তাকে চলে যেতে দিলেন? সে এখন চলে গেছে। আপনি তো নেরের ছেলে অব্‌নেরকে জানেন; সে আপনার সংগে ছলনা করে আপনার খোঁজ খবর নিতে এবং আপনি কি করছেন না করছেন তা জানতে এসেছিল।” এই বলে যোয়াব দায়ূদের কাছ থেকে বের হয়ে গিয়ে অব্‌নেরের খোঁজে লোক পাঠালেন। তারা সিরা নামে একটা কূয়ার কাছ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনল। দায়ূদ কিন্তু এই সব জানতেন না। অব্‌নের হিব্রোণে ফিরে আসলে পর যোয়াব তাঁর সংগে গোপনে আলাপ করবার ছল করে শহরের ফটকের মধ্যে নিয়ে গেলেন। তারপর তাঁর পেটে আঘাত করে তাঁকে মেরে ফেললেন। এইভাবে তিনি তাঁর ভাই অসাহেলের রক্তের শোধ নিলেন। এর পর দায়ূদ যোয়াব ও তাঁর সংগের সব লোকদের বললেন, “তোমরা নিজের নিজের কাপড় ছিঁড়ে চট পর এবং শোক প্রকাশ করতে করতে অব্‌নেরের মৃতদেহের আগে আগে চল।” মৃতদেহ বহনকারী খাটের পিছনে পিছনে রাজা দায়ূদ নিজেও চললেন। অব্‌নেরকে হিব্রোণে কবর দেওয়া হল। অব্‌নেরের কবরের কাছে রাজা জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন, আর লোকেরাও সবাই কাঁদতে লাগল। রাজা তখন অব্‌নেরের বিষয়ে বিলাপের এই গানটা গাইলেন: “বোকা লোকের মতই কি মরলেন অব্‌নের? তোমার তো হাত বাঁধা ছিল না, তোমার পায়ে শিকলও ছিল না। দুষ্ট লোকের হাতে যেমন করে মানুষ মরে, তেমনি করেই তো তুমি মরে গেলে।” এই কথা শুনে লোকেরা আবার অব্‌নেরের জন্য কাঁদতে লাগল। বেলা থাকতে থাকতে যাতে দায়ূদ কিছু খান সেইজন্য লোকেরা তাঁকে সাধাসাধি করতে লাগল; কিন্তু দায়ূদ শপথ করে বললেন, “সূর্য ডুববার আগে যদি আমি রুটি বা অন্য কিছু খাই তবে যেন ঈশ্বর আমাকে শাস্তি দেন আর তা ভীষণভাবেই দেন।” সমস্ত লোক এই সব লক্ষ্য করে খুশী হল। সত্যি, রাজা যা যা করলেন তাতে তারা খুশীই হল। সেই দিন দায়ূদের সংগের লোকেরা এবং ইস্রায়েলীয়েরা সবাই জানতে পারল যে, নেরের ছেলে অব্‌নেরকে মেরে ফেলবার ব্যাপারে রাজার কোন হাত ছিল না। রাজা তাঁর লোকদের বললেন, “তোমরা কি জান না যে, আজকে ইস্রায়েল দেশের একজন মহান নেতা মারা গেলেন? রাজা হিসাবে আমাকে অভিষেক করা হলেও আজ আমি দুর্বল আর সরূয়ার ছেলেদের আমি দমন করতে পারি না। সদাপ্রভু যেন অন্যায়কারীদের অন্যায় কাজ অনুসারে ফল দেন।” অব্‌নের হিব্রোণে মারা গেছেন শুনে শৌলের ছেলে ঈশ্‌বোশৎ সাহস হারিয়ে ফেললেন এবং ইস্রায়েলীয়েরাও সবাই ভয় পেল। শৌলের ছেলের পক্ষে ছিল হানাদার বাহিনীর দুইজন সরদার। তাদের একজনের নাম ছিল বানা আর অন্যজনের নাম রেখব। তারা ছিল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর বেরোতীয় রিম্মোণের ছেলে। বেরোত্‌কে বিন্যামীন এলাকার অংশ বলে ধরা হত, কারণ বেরোতের লোকেরা গিত্তয়িমে পালিয়ে গিয়ে আজও সেখানে বিদেশী হিসাবে বাস করছে। শৌলের ছেলে যোনাথনের একটি ছেলে ছিল। তার দু’টি পা-ই ছিল খোঁড়া। যিষ্রিয়েল থেকে যখন শৌল ও যোনাথনের মৃত্যুর খবর এসেছিল তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। খবর শুনে ছেলেটির ধাইমা তাকে কোলে তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে পালিয়ে যাবার সময় ছেলেটি পড়ে গিয়ে তার পা খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল। ছেলেটির নাম ছিল মফীবোশৎ। বেরোতীয় রিম্মোণের ছেলে রেখব আর বানা একদিন দুপুর বেলা ঈশ্‌বোশতের বিশ্রামের সময় তাঁর বাড়ীতে গিয়ে উপস্থিত হল। উত্তরে দায়ূদ বেরোতীয় রিম্মোণের ছেলে রেখব ও তার ভাই বানাকে বললেন, “যিনি সমস্ত বিপদ থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি, যে লোকটি শুভ সংবাদ এনেছে ভেবে আমাকে শৌলের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল আমি তাকে ধরে সিক্লগে মেরে ফেলেছিলাম। তার খবরের জন্য সেটাই ছিল তাকে দেওয়া আমার পুরস্কার। তাহলে যারা একজন নির্দোষ লোককে তাঁর নিজের বাড়ীতে তাঁর নিজের বিছানার উপর খুন করেছে, আমি সেই দুষ্ট লোকদের আরও কত বেশী করেই না শাস্তি দেব। সেইজন্য আমি তোমাদের হাত থেকে তাঁর রক্তের শোধ দাবি করব আর পৃথিবীর উপর থেকে তোমাদের মুছে ফেলব।” এই বলে দায়ূদ তাঁর লোকদের আদেশ দিলে পর তারা গিয়ে তাদের মেরে ফেলল। তারা তাদের হাত ও পা কেটে ফেলে দেহগুলো হিব্রোণের পুকুরের ধারে টাংগিয়ে দিল। কিন্তু তারা ঈশ্‌বোশতের মাথাটা নিয়ে হিব্রোণে অব্‌নেরের কবরের মধ্যে কবর দিল। ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠী হিব্রোণে দায়ূদের কাছে এসে বলল, “আপনার ও আমাদের গায়ে একই রক্ত বইছে। এর আগে যখন শৌল আমাদের রাজা ছিলেন তখন যুদ্ধের সময় আপনিই ইস্রায়েলীয়দের সৈন্য পরিচালনা করতেন; আর সদাপ্রভু আপনাকে বলেছেন যেন আপনিই তাঁর লোকদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের দেখাশোনা করেন ও তাদের নেতা হন।” ইস্রায়েল দেশের সমস্ত বৃদ্ধ নেতারা হিব্রোণে রাজা দায়ূদের কাছে উপস্থিত হলেন। তখন রাজা সদাপ্রভুকে সাক্ষী রেখে তাঁদের সংগে একটা চুক্তি করলেন। তাঁরা দায়ূদকে ইস্রায়েলের উপর রাজা হিসাবে অভিষেক করলেন। দায়ূদ যখন রাজা হলেন তখন তাঁর বয়স ছিল ত্রিশ বছর; তিনি চল্লিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তিনি হিব্রোণে থেকে যিহূদা দেশের উপরে সাড়ে সাত বছর আর যিরূশালেমে থেকে সমস্ত ইস্রায়েল ও যিহূদার উপরে তেত্রিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। রাজা ও তাঁর সৈন্যেরা যিবূষীয়দের আক্রমণ করবার জন্য যিরূশালেমের দিকে যাত্রা করলেন। যিবূষীয়েরা যিরূশালেমে বাস করত। যিবূষীয়েরা দায়ূদকে বলল, “তুমি এখানে ঢুকতে পারবে না; অন্ধ আর খোঁড়ারাই তোমাকে তাড়িয়ে দিতে পারবে।” তারা ভেবেছিল দায়ূদ সেখানে ঢুকতে পারবেন না। কিন্তু দায়ূদ সিয়োনের দুর্গটা অধিকার করে নিলেন; সেইজন্য ওটাকে দায়ূদ-শহর বলা হয়। সেই দিন দায়ূদ বলেছিলেন, “যদি কেউ যিবূষীয়দের, অর্থাৎ সেই অন্ধ ও খোঁড়াদের আক্রমণ করতে চায় তবে তাকে জলের সুড়ংগ দিয়ে যেতে হবে। আমি তাদের ঘৃণা করি।” সেইজন্যই লোকে বলে, “অন্ধ আর খোঁড়ারা সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকবে না।” এর পর দায়ূদ সেই দুর্গে বাস করতে লাগলেন এবং তার নাম দিলেন দায়ূদ-শহর। মিল্লো থেকে শুরু করে সেই দুর্গের চারপাশে তিনি শহর গড়ে তুললেন। তিনি দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলেন, কারণ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাঁর সংগে ছিলেন। সোরের রাজা হীরম দায়ূদের কাছে কয়েকজন লোক পাঠালেন এবং তাদের সংগে এরস কাঠ, ছুতার মিস্ত্রি ও রাজমিস্ত্রি পাঠিয়ে দিলেন। তারা দায়ূদের জন্য একটা রাজবাড়ী তৈরী করে দিল। দায়ূদ তখন বুঝলেন যে, সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপরে তাঁর রাজপদ স্থির করেছেন এবং তাঁর লোকদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের জন্য তাঁর রাজ্যের উন্নতি করেছেন। দায়ূদ হিব্রোণ ছেড়ে যিরূশালেমে গিয়ে আরও স্ত্রী ও উপস্ত্রী গ্রহণ করলেন এবং তাঁর আরও ছেলেমেয়ের জন্ম হল। যিরূশালেমে তাঁর যে সব ছেলেমেয়ের জন্ম হয়েছিল তাদের নাম হল সম্মূয়, শোবব, নাথন, শলোমন, যিভর, ইলীশূয়, নেফগ, যাফিয়, ইলীশামা, ইলিয়াদা ও ইলীফেলট। পলেষ্টীয়েরা যখন শুনতে পেল যে, ইস্রায়েলের উপরে দায়ূদকে রাজপদে অভিষেক করা হয়েছে তখন তারা সমস্ত সৈন্য নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করবার জন্য খুঁজতে লাগল। দায়ূদ সেই কথা শুনে দুর্গ নামে পাহাড়টায় গেলেন। পলেষ্টীয়েরা এসে রফায়ীম উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ল। দায়ূদ তখন সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করব? তুমি কি তাদের আমার হাতে তুলে দেবে?” উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “হ্যাঁ, যাও। আমি নিশ্চয়ই তোমার হাতে পলেষ্টীয়দের তুলে দেব।” দায়ূদ তখন বাল্‌-পরাসীমে গেলেন এবং সেখানে তাদের হারিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, “সদাপ্রভু আমার সামনে জলের বাঁধ ভাংগার মত করে আমার শত্রুদের ভেংগে ফেললেন।” এইজন্য সেই জায়গার নাম হল বাল্‌-পরাসীম। পলেষ্টীয়েরা তাদের দেবমূর্তিগুলো সেখানে ফেলে গিয়েছিল, আর দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা সেগুলো নিয়ে গেলেন। পরে পলেষ্টীয়েরা আবার এসে রফায়ীম উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ল। তখন দায়ূদ সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করলে পর তিনি বললেন, “সোজাসুজি তাদের দিকে যেয়ো না; তাদের পিছন দিকটা ঘিরে ফেলে বাকা গাছগুলোর সামনের দিক দিয়ে তাদের আক্রমণ কর। বাকা গাছগুলোর মাথায় যখনই তুমি সৈন্যদলের চলবার মত শব্দ শুনবে তখনই বেরিয়ে পড়বে। এর মানে হল, পলেষ্টীয় সৈন্যদের আঘাত করবার জন্য সদাপ্রভু তোমার আগে আগে গেছেন।” দায়ূদ সদাপ্রভুর আদেশ মতই কাজ করলেন। তিনি গেবা থেকে গেষর পর্যন্ত সারা পথ পলেষ্টীয়দের মারতে মারতে গেলেন। দায়ূদ আবার ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে ত্রিশ হাজার বাছাই-করা লোককে একত্র করলেন। দায়ূদ ও তাঁর সমস্ত লোক ঈশ্বরের সিন্দুকটি বালি-যিহূদা থেকে যিরূশালেমে নিয়ে যাবার জন্য বালি-যিহূদা থেকে রওনা হলেন। এই সিন্দুকটি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর নামে পরিচিত, কারণ সদাপ্রভু সেই সিন্দুকের উপরে দুই করূবের মাঝখানে থাকেন। ঈশ্বরের সেই সিন্দুকটি তারা পাহাড়ের উপরে অবীনাদবের ঘর থেকে বের করে একটা নতুন গাড়ির উপরে বসাল। উষ ও অহিয়ো নামে অবীনাদবের দুই ছেলে হেঁটে হেঁটে সেই নতুন গাড়িটাকে নিয়ে যাচ্ছিল। গাড়িটার উপরে ছিল ঈশ্বরের সেই সিন্দুক আর অহিয়ো তার আগে আগে হাঁটছিল। দায়ূদ ও ইস্রায়েল জাতির সমস্ত লোক সদাপ্রভুর সামনে দেবদারু কাঠের তৈরী সব বাজনা আর সুরবাহার, বীণা, খঞ্জনী, ঝুম্‌ঝুমি ও করতাল বাজিয়ে আনন্দ করছিল। নাখোনের খামারের কাছে আসলে পর গরু দু’টা উছোট খেল; তখন উষ হাত বাড়িয়ে ঈশ্বরের সিন্দুকটা ধরল। উষের এই ভক্তিহীন কাজের জন্য তার উপর সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। সেইজন্য সদাপ্রভু তাকে আঘাত করলেন, আর তাতে সে সদাপ্রভুর সিন্দুকের পাশে মরে গেল। উষের উপর সদাপ্রভুর এই ক্রোধ দেখে দায়ূদ অসন্তুষ্ট হলেন। আজও সেই জায়গাটাকে বলা হয় পেরস-উষ। দায়ূদ সেই দিন সদাপ্রভুকে খুব ভয় করলেন। তিনি বললেন, “সদাপ্রভুর সিন্দুকটি তবে কি করে আমার কাছে আনা যাবে?” সদাপ্রভুর সিন্দুকটি তিনি দায়ূদ-শহরে নিজের কাছে নিয়ে আসতে রাজী হলেন না। তিনি সেটি নিয়ে গাতীয় ওবেদ-ইদোমের বাড়ীতে রাখলেন। গাতীয় ওবেদ-ইদোমের বাড়ীতে সদাপ্রভুর সিন্দুকটি তিন মাস রইল। এতে সদাপ্রভু তাকে ও তার বাড়ীর সবাইকে আশীর্বাদ করলেন। রাজা দায়ূদ শুনতে পেলেন ঈশ্বরের সিন্দুকটি ওবেদ-ইদোমের বাড়ীতে থাকবার দরুন সদাপ্রভু তার বাড়ীর সবাইকে এবং তার সব কিছুকে আশীর্বাদ করেছেন। তখন দায়ূদ গিয়ে ওবেদ-ইদোমের বাড়ী থেকে আনন্দ করতে করতে ঈশ্বরের সিন্দুকটি দায়ূদ-শহরে নিয়ে আসলেন। যারা সদাপ্রভুর সিন্দুকটি বয়ে নিয়ে আসছিল তারা ছয় পা এগিয়ে যেতেই দায়ূদ একটা বলদ ও একটা মোটাসোটা বাছুর উৎসর্গ করলেন। দায়ূদ মসীনার এফোদ পরে সদাপ্রভুর সামনে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে নাচতে লাগলেন। এইভাবে দায়ূদ ও ইস্রায়েলীয়েরা সকলে আনন্দে চিৎকার করতে করতে এবং তূরী বাজাতে বাজাতে সদাপ্রভুর সিন্দুকটি নিয়ে আসলেন। সদাপ্রভুর সিন্দুকটি যখন দায়ূদ-শহরে এসে পৌঁছাল তখন শৌলের মেয়ে মীখল জানলা দিয়ে তা দেখছিলেন। সদাপ্রভুর সামনে রাজা দায়ূদকে লাফাতে আর নাচতে দেখে তিনি মনে মনে তাঁকে তুচ্ছ করলেন। সদাপ্রভুর সিন্দুকটি এনে লোকেরা সেটি দায়ূদের খাটিয়ে-রাখা তাম্বুর ভিতরে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখল। দায়ূদ তখন সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। পোড়ানো ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান শেষ করে দায়ূদ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর নামে লোকদের আশীর্বাদ করলেন। তারপর তিনি সমস্ত লোককে, অর্থাৎ উপস্থিত ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের প্রত্যেককে একটা করে রুটি, এক খণ্ড মাংস ও এক তাল কিশমিশ দিলেন। তারপর সবাই তাদের নিজের নিজের বাড়ীতে ফিরে গেল। এর পর দায়ূদ তাঁর নিজের বাড়ীর লোকদের আশীর্বাদ করবার জন্য যখন ফিরে আসলেন তখন শৌলের মেয়ে মীখল তাঁকে এগিয়ে নেবার জন্য বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, “ইস্রায়েল দেশের রাজা আজ নিজেকে কেমন সম্মানিত করে তুললেন! তিনি খারাপ লোকের মত সাধারণ লোকদের দাসীদের সামনে গায়ের কাপড়-চোপড় খুলে ফেললেন।” দায়ূদ মীখলকে বললেন, “সদাপ্রভুর সামনেই আমি তা করেছি। তিনি তাঁর লোকদের উপরে, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের উপরে শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত করবার জন্য তোমার বাবা কিম্বা তাঁর বাড়ীর কাউকে বেছে না নিয়ে আমাকেই বেছে নিয়েছেন। সেইজন্য সদাপ্রভুর সামনেই আমি আনন্দ করব। আমি নিজেকে এর চেয়ে আরও নীচু করব আর নিজের কাছে নিজে আরও ছোট হব। কিন্তু তুমি যে দাসীদের কথা বললে তারা আমাকে সম্মানের চোখে দেখবে।” শৌলের মেয়ে মীখলের মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কোন ছেলেমেয়ে হয় নি। তারপর রাজা রাজবাড়ীতে থাকতে লাগলেন আর সদাপ্রভু তাঁর চারপাশের শত্রুদের হাত থেকে তাঁকে রেহাই দিলেন। রাজা তখন একদিন নবী নাথনকে বললেন, “দেখুন, আমি বাস করছি এরস কাঠের ঘরে আর ঈশ্বরের সিন্দুকটি রয়েছে তাম্বুতে।” উত্তরে নাথন রাজাকে বললেন, “আপনার মনে যা আছে আপনি তা-ই করুন। সদাপ্রভু আপনার সংগে আছেন।” কিন্তু সেই রাতেই সদাপ্রভুর বাক্য নাথনের কাছে উপস্থিত হলেন; তিনি বললেন, “তুমি গিয়ে আমার দাস দায়ূদকে বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি কি আমার থাকবার জন্য একটি ঘর তৈরী করবে? মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে আনবার দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি তো কোন ঘরে বাস করি নি। আমি তাম্বুতে থেকেই এক বাসস্থান থেকে অন্য বাসস্থানে গিয়েছি। যে সব নেতাদের উপর আমি আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের পালন করবার ভার দিয়েছিলাম, বিভিন্ন জায়গায় ইস্রায়েলীয়দের সংগে ঘুরে বেড়াবার সময় আমি সেই নেতাদের কাউকে বলি নি যে, কেন তারা এরস কাঠ দিয়ে আমার জন্য ঘর তৈরী করছে না।’ “এখন তুমি আমার দাস দায়ূদকে বল যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা হবার জন্য আমিই তোমাকে পশু চরাবার মাঠ থেকে, ভেড়ার পালের পিছন থেকে নিয়ে এসেছি। তুমি যে সব জায়গায় গিয়েছ আমিও সেখানে তোমার সংগে গিয়েছি এবং তোমার সামনে থেকে তোমার সমস্ত শত্রুদের শেষ করে দিয়েছি। আমি তোমার নাম পৃথিবীর মহান লোকদের নামের মত বিখ্যাত করব। তোমার আয়ু শেষ হলে পর যখন তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবে তখন আমি তোমার জায়গায় তোমার বংশের একজনকে, তোমার নিজের সন্তানকে বসাব এবং তার রাজ্য স্থির রাখব। তোমার সেই সন্তানই আমার সুনামের জন্য একটা ঘর তৈরী করবে। তার রাজ-সিংহাসন আমি চিরকাল স্থায়ী করব। আমি হব তার পিতা আর সে হবে আমার পুত্র। যখন সে অন্যায় করবে তখন অন্য মানুষ যেমন শাস্তি পায় তেমনিভাবেই আমি তাকে শাস্তি দেব। কিন্তু আমার ভালবাসা আমি কখনও তার উপর থেকে তুলে নেব না, যেমন করে আমি শৌলের উপর থেকে তুলে নিয়েছিলাম আর তোমার পথ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। তোমার বংশ ও রাজ্য তোমার সামনে চিরকাল স্থির থাকবে। তোমার সিংহাসন হবে চিরস্থায়ী।’ ” এই দর্শনের সমস্ত কথাগুলো নাথন দায়ূদকে বললেন। এই সব কথা শুনে রাজা দায়ূদ তাম্বুর ভিতরে গেলেন এবং সদাপ্রভুর সামনে বসে বললেন, “হে প্রভু সদাপ্রভু, আমিই বা কি আর আমার বংশই বা কি যে, তুমি আমাকে এত দূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছ। আর হে প্রভু সদাপ্রভু, এও তোমার চোখে যথেষ্ট হয় নি; এর সংগে তোমার দাসের বংশের ভবিষ্যতের কথাও তুমি বলেছ। হে প্রভু সদাপ্রভু, এটাই যেন মানুষের জন্য তোমার ব্যবস্থা হয়। “দায়ূদ তোমার কাছে আর বেশী কি বলতে পারে? হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি তো তোমার দাসকে জান। তোমার কথার জন্য ও তোমার ইচ্ছা অনুসারে এই মহৎ কাজ তুমি করেছ আর তোমার দাসকে তা জানিয়েছ। হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তুমি কত মহান! তোমার মত আর কেউ নেই এবং তুমি ছাড়া অন্য কোন ঈশ্বর নেই; সেই কথা আমরা নিজেদের কানেই শুনেছি। তোমার ইস্রায়েল জাতির মত পৃথিবীতে আর কোন্‌ জাতি আছে যাকে তুমি তোমার নিজের লোক করবার জন্য এবং নিজের গৌরব প্রকাশের জন্য মুক্ত করতে গিয়েছিলে? আর কোন্‌ জাতির সামনে তুমি নিজের উদ্দেশ্যে তোমার দেশের জন্য মহৎ ও ভয় জাগানো কাজ করেছ, যেমন তোমার লোকদের জন্য করেছ যাদের তুমি মিসর দেশ থেকে বিভিন্ন জাতি ও দেব-দেবতাদের হাত থেকে মুক্ত করেছ? তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের তুমি নিজের উদ্দেশ্যে চিরকাল তোমার নিজের লোক হবার জন্য স্থাপন করেছ, আর তুমি, হে সদাপ্রভু, তুমি তাদের ঈশ্বর হয়েছ। “এখন হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তোমার দাস ও তার বংশের বিষয়ে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছ তা চিরকাল রক্ষা কর। তোমার প্রতিজ্ঞা অনুসারেই তা কর। এতে তোমার দাস দায়ূদের বংশ তোমার সামনে স্থির থাকবে এবং চিরকাল তোমার গৌরব হবে। তখন লোকে বলবে, ‘সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর।’ “হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর, তুমি তোমার দাসের কাছে এই বিষয় প্রকাশ করে বলেছ, ‘আমি তোমার জন্য একটা বংশ গড়ে তুলব।’ তাই তোমার কাছে এই প্রার্থনা করতে তোমার এই দাসের মনে সাহস হয়েছে। হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর। তোমার কথা সত্য, আর এই মংগলের প্রতিজ্ঞা তুমিই তোমার দাসের কাছে করেছ। এখন তুমি খুশী হয়ে তোমার দাসের বংশকে আশীর্বাদ কর যাতে সেই বংশ চিরকাল তোমার সামনে থাকে। হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি নিজেই সেই কথা বলেছ আর তোমার আশীর্বাদে তোমার এই দাসের বংশ চিরকাল আশীর্বাদযুক্ত থাকবে।” পরে দায়ূদ পলেষ্টীয়দের হারিয়ে দিয়ে তাদের নিজের অধীনে আনলেন। তিনি পলেষ্টীয়দের হাত থেকে মেথেগ-আম্মা দখল করে নিলেন। দায়ূদ মোয়াবীয়দেরও হারিয়ে দিলেন। তিনি মোয়াবীয়দের মাটিতে পাশাপাশি শুইয়ে একপাশ থেকে আরম্ভ করে তাদের শেষ পর্যন্ত দড়ি দিয়ে মাপলেন। প্রথম দুই দড়ির মাপের লোকদের মেরে ফেলা হল এবং তারপরের এক দড়ির মাপের লোকদের বাঁচিয়ে রাখা হল। এর পর মোয়াবীয়েরা দায়ূদের অধীন হয়ে তাঁকে কর্‌ দিতে লাগল। পরে সোবার রাজা রহোবের ছেলে হদদেষর যখন ইউফ্রেটিস নদী বরাবর তাঁর জায়গাগুলোতে আবার তাঁর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে গেলেন তখন দায়ূদ তাঁর সংগে যুদ্ধ করলেন। দায়ূদ তাঁর এক হাজার সাতশো ঘোড়সওয়ার এবং বিশ হাজার পদাতিক সৈন্য আটক করলেন। তাদের একশোটা রথের ঘোড়া রেখে তিনি বাকী সব ঘোড়ার পায়ের শিরা কেটে দিলেন। দম্মেশকের অরামীয়েরা যখন সোবার রাজা হদদেষরকে সাহায্য করতে আসল তখন দায়ূদ তাদের বাইশ হাজার লোককে মেরে ফেললেন। দায়ূদ অরাম রাজ্যের দম্মেশকে তাঁর সৈন্যদল রাখলেন। তাতে অরামীয়েরা তাঁর অধীন হয়ে তাঁকে কর্‌ দিতে লাগল। এইভাবে দায়ূদ যে কোন জায়গায় যেতেন সদাপ্রভু সেখানেই তাঁকে জয়ী করতেন। হদদেষরের লোকদের সোনার ঢালগুলো দায়ূদ যিরূশালেমে নিয়ে আসলেন। বেটহ ও বেরোথা নামে হদদেষরের দু’টা শহর থেকে রাজা দায়ূদ প্রচুর পরিমাণে ব্রোঞ্জও নিয়ে আসলেন। হমাতের রাজা তয়ি শুনতে পেলেন যে, দায়ূদ হদদেষরের গোটা সৈন্যদলকে হারিয়ে দিয়েছেন। দায়ূদ হদদেষরের সংগে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন বলে তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাবার জন্য তয়ি তাঁর ছেলে যোরামকে রাজা দায়ূদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এই হদদেষরের সংগে তয়ির অনেকবার যুদ্ধ হয়েছিল। যোরাম দায়ূদের জন্য সংগে করে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জের জিনিস নিয়ে এসেছিলেন। দায়ূদ লবণ-উপত্যকার আঠারো হাজার অরামীয়কে মেরে ফেলে ফিরে আসলে পর চারদিকে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। ইদোম দেশের সব জায়গায় তিনি নিজের সৈন্যদল রাখলেন আর তাতে ইদোমীয়েরা তাঁর অধীন হল। দায়ূদ যে কোন জায়গায় যেতেন সদাপ্রভু সেখানেই তাঁকে জয়ী করতেন। দায়ূদ সমস্ত ইস্রায়েল দেশের উপর রাজত্ব করতে লাগলেন। তাঁর লোকদের তিনি ন্যায়ভাবে বিচার ও শাসন করতেন। সরূয়ার ছেলে যোয়াব ছিলেন তাঁর প্রধান সেনাপতি আর অহীলূদের ছেলে যিহোশাফট তাঁর রাজত্বের সব ইতিহাস লিখে রাখতেন। অহীটূবের ছেলে সাদোক ও অবিয়াথরের ছেলে অহীমেলক ছিলেন পুরোহিত আর সরায় ছিলেন রাজার লেখক। যিহোয়াদার ছেলে বনায় ছিলেন দায়ূদের দেহরক্ষী করেথীয় ও পলেথীয়দের প্রধান, আর দায়ূদের ছেলেরা ছিলেন রাজার পরামর্শদাতা পুরোহিত। একদিন দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “শৌলের পরিবারের কেউ কি বেঁচে আছে, যাকে আমি ভালবাসা দেখিয়ে যোনাথনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি?” সীবঃ নামে শৌলের বাড়ীর একজন চাকর ছিল। লোকেরা তাকে ডেকে দায়ূদের কাছে নিয়ে গেল। রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি সীবঃ?” উত্তরে সে বলল, “হ্যাঁ, আপনার দাস আমিই সেই সীবঃ।” রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “শৌলের পরিবারের এমন কেউ কি বেঁচে নেই যাকে আমি ভালবাসা দেখিয়ে ঈশ্বরের মত বিশ্বস্ত হতে পারি?” উত্তরে সীবঃ রাজাকে বলল, “যোনাথনের একটি ছেলে এখনও বেঁচে আছেন, তাঁর দু’টা পা-ই খোঁড়া।” রাজা বললেন, “কোথায় সে?” সীবঃ বলল, “তিনি লো-দবারে অম্মীয়েলের ছেলে মাখীরের বাড়ীতে আছেন।” তখন রাজা দায়ূদ লো-দবারে লোক পাঠিয়ে অম্মীয়েলের ছেলে মাখীরের বাড়ী থেকে তাঁকে আনালেন। শৌলের নাতি, অর্থাৎ যোনাথনের ছেলে মফীবোশৎ দায়ূদের কাছে গিয়ে তাঁর সামনে মাটির উপর উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে সম্মান দেখালেন। দায়ূদ বললেন, “মফীবোশৎ।” তিনি বললেন, “বলুন, আমি আপনার দাস।” দায়ূদ তাঁকে বললেন, “তুমি ভয় কোরো না। আমি তোমাকে ভালবাসা দেখিয়ে তোমার বাবা যোনাথনের প্রতি অবশ্যই বিশ্বস্ত থাকব। তোমার দাদু শৌলের সমস্ত জমি-জায়গা আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেব, আর তুমি সব সময় আমার টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করবে।” এই কথা শুনে মফীবোশৎ তাঁকে প্রণাম করে বললেন, “আপনার এই দাস এমন কি যে, আপনি আমার মত একটা মরা কুকুরের দিকে খেয়াল করবেন?” রাজা তখন শৌলের চাকর সীবঃকে ডেকে বললেন, “শৌল ও তাঁর পরিবারের যা কিছু ছিল তা সব আমি তোমার মনিবের নাতিকে দিলাম। তুমি, তোমার ছেলেরা এবং তোমার চাকরেরা তার জমি চাষ করে ফসল তুলবে যাতে তোমার মনিবের নাতির খাবারের যোগান থাকে; কিন্তু তোমার মনিবের নাতি মফীবোশৎ সব সময় আমার টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করবে।” সীবের পনেরটি ছেলে এবং বিশজন চাকর ছিল। এই কথা শুনে সীবঃ রাজাকে বলল, “আমার মনিব মহারাজ তাঁর দাসকে যা করতে বলবেন সে তা-ই করবে।” মফীবোশৎ এর পর থেকে রাজার একজন ছেলের মতই রাজার টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করতে লাগলেন। মীখা নামে মফীবোশতের একটি ছোট ছেলে ছিল; সীবের ঘরের সবাই ছিল মফীবোশতের চাকর। রাজার টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করতেন বলে মফীবোশৎ যিরূশালেমে থাকতেন। তাঁর দু’টা পা-ই ছিল খোঁড়া। পরে অম্মোনীয় রাজা মারা গেলে পর তাঁর ছেলে হানূন তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। দায়ূদ বললেন, “হানূনের বাবা নাহশ আমার প্রতি যেমন বিশ্বস্ত ছিলেন তেমনি আমিও হানূনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকব।” সেইজন্য তাঁর বাবার মৃত্যুতে তাঁকে সান্ত্বনা দেবার জন্য তিনি কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দিলেন। তাতে দায়ূদের লোকেরা অম্মোনীয়দের দেশে গেল। কিন্তু অম্মোনীয় নেতারা তাঁদের মনিব হানূনকে বললেন, “আপনি কি মনে করেন যে, দায়ূদ আপনার বাবার প্রতি সম্মান দেখাবার জন্য আপনাকে সান্ত্বনা দিতে লোক পাঠিয়েছে? সে আসলে তাদের আপনার কাছে পাঠিয়েছে যাতে তারা গুপ্তচর হিসাবে শহরটার খোঁজ-খবর নিয়ে পরে সেটা ধ্বংস করে দিতে পারে।” হানূন তখন দায়ূদের লোকদের ধরে তাদের দাড়ির একপাশ কামিয়ে দিলেন এবং তাদের লম্বা জামার অর্ধেকটা, অর্থাৎ কোমর পর্যন্ত কেটে দিয়ে তাদের বিদায় করে দিলেন। দায়ূদকে এই কথা জানানো হলে পর তাঁর পাঠানো সেই লোকদের সংগে দেখা করবার জন্য তিনি কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দিলেন, কারণ সেই লোকেরা খুব লজ্জায় পড়েছিল। রাজা তাদের বলে পাঠালেন, “তোমাদের দাড়ি বেড়ে না ওঠা পর্যন্ত তোমরা যিরীহোতেই থাক; তারপর তোমরা ফিরে এসো।” অম্মোনীয়েরা বুঝতে পারল যে, তারা দায়ূদের ঘৃণার পাত্র হয়েছে। তাই তারা বৈৎ-রহোব ও সোবা থেকে বিশ হাজার অরামীয় পদাতিক সৈন্য, এক হাজার সৈন্যসহ মাখার রাজাকে এবং টোব থেকে বারো হাজার লোককে ভাড়া করল। এই সব শুনে দায়ূদ যোয়াবকে এবং তাঁর সমস্ত সৈন্যদলকে পাঠিয়ে দিলেন। তখন অম্মোনীয়েরা বের হয়ে তাদের শহরের ফটকে ঢুকবার পথে যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজাল। এদিকে সোবা আর রহোবের অরামীয়েরা এবং টোব আর মাখার সৈন্যেরা খোলা মাঠে রইল। যোয়াব দেখলেন তাঁর সামনে এবং পিছনে অরামীয় সৈন্যদের সাজানো হয়েছে। সেইজন্য তিনি তাঁর সৈন্যদের মধ্য থেকে কতগুলো বাছাই-করা সৈন্য নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাজালেন। বাকী সৈন্যদের তিনি তাঁর ভাই অবীশয়ের অধীনে অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে সাজালেন। যোয়াব তাঁর ভাইকে বললেন, “যদি অরামীয়েরা আমার চেয়ে শক্তিশালী হয় তবে তুমি আমাকে সাহায্য করতে আসবে, আর যদি অম্মোনীয়েরা তোমার চেয়ে শক্তিশালী হয় তবে আমি তোমাকে সাহায্য করতে যাব। সাহস কর; আমাদের লোকদের জন্য এবং আমাদের ঈশ্বরের শহরগুলোর জন্য এস, আমরা সাহসের সংগে যুদ্ধ করি। সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তিনি তা-ই করুন।” এই বলে যোয়াব তাঁর সৈন্যদল নিয়ে অরামীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য এগিয়ে গেলে পর অরামীয়েরা তাঁর সামনে থেকে পালিয়ে গেল। অরামীয়দের পালিয়ে যেতে দেখে অম্মোনীয়েরাও অবীশয়ের সামনে থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরের ভিতরে গিয়ে ঢুকল। কাজেই যোয়াব অম্মোনীয়দের সংগে আর যুদ্ধ না করে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। অরামীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের কাছে হেরে গেছে দেখে আবার একসংগে জড়ো হল। রাজা হদদেষর লোক পাঠিয়ে ইউফ্রেটিস নদীর ওপারে বাস করা অরামীয়দের আনালেন। তারা হেলমে আসল। হদদেষরের সৈন্যদলের সেনাপতি শোবক তাদের পরিচালনা করে নিয়ে আসলেন। দায়ূদকে সেই কথা জানালে পর তিনি সমস্ত ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের জড়ো করলেন এবং যর্দন নদী পার হয়ে হেলমে গেলেন। তাতে অরামীয়েরা তাদের সৈন্য সাজিয়ে নিয়ে দায়ূদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল, কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে তারা পালিয়ে গেল। তখন দায়ূদ তাদের সাতশো রথচালক ও চল্লিশ হাজার ঘোড়সওয়ারকে মেরে ফেললেন। তিনি তাদের সেনাপতি শোবককেও আঘাত করলেন; তাতে শোবক সেখানে মারা গেলেন। হদদেষরের অধীন সমস্ত রাজারা যখন দেখলেন যে, তাঁরা ইস্রায়েলীয়দের কাছে হেরে গেছেন তখন ইস্রায়েলীয়দের সংগে তাঁরা শান্তি-চুক্তি করে তাদের অধীন হলেন। সেই থেকে অরামীয়েরা ভয়ে অম্মোনীয়দের আর সাহায্য করে নি। বসন্তকালে যখন রাজারা সাধারণতঃ যুদ্ধ করতে বের হন তখন দায়ূদও যুদ্ধ করবার জন্য যোয়াবকে ও তাঁর অন্যান্য সেনাপতিদের এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের পাঠিয়ে দিলেন। তারা অম্মোনীয়দের ধ্বংস করে রব্বা শহরটা ঘেরাও করল। দায়ূদ কিন্তু যিরূশালেমেই রয়ে গেলেন। তখন একদিন বিকাল বেলায় দায়ূদ তাঁর বিছানা থেকে উঠে রাজবাড়ীর ছাদে বেড়াচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি ছাদের উপর থেকে একজন স্ত্রীলোককে স্নান করতে দেখলেন। স্ত্রীলোকটি দেখতে ছিল খুব সুন্দরী। দায়ূদ স্ত্রীলোকটির খোঁজ নেবার জন্য লোক পাঠিয়ে দিলেন। একজন লোক বলল, “সে তো ইলিয়ামের মেয়ে হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবা।” দায়ূদ তাকে নিয়ে আসবার জন্য লোক পাঠালেন। সে তাঁর কাছে আসলে পর দায়ূদ তার সংগে ব্যভিচার করলেন। স্ত্রীলোকটি তখন তার মাসিকের অশুচিতা থেকে শুচি হয়েছিল। এর পর স্ত্রীলোকটি তার বাড়িতে ফিরে গেল। সে যখন বুঝতে পারল যে, সে গর্ভবতী হয়েছে তখন সেই খবর সে দায়ূদকে পাঠাল। তখন দায়ূদ যোয়াবকে এই কথা বলে পাঠালেন, “হিত্তীয় ঊরিয়কে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।” এতে যোয়াব তাকে দায়ূদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। ঊরিয় আসলে পর দায়ূদ তাকে যোয়াব ও সৈন্যদের ভাল-মন্দের খবর এবং যুদ্ধ কেমন চলছে তা জিজ্ঞাসা করলেন। তারপর তিনি ঊরিয়কে বললেন, “তুমি নিজের বাড়ীতে গিয়ে হাত-পা ধুয়ে বিশ্রাম কর।” ঊরিয় রাজবাড়ী থেকে বের হয়ে গেল আর রাজা তার জন্য কিছু উপহার পাঠিয়ে দিলেন। ঊরিয় কিন্তু নিজের বাড়ীতে গেল না। সে রাজার সমস্ত কর্মচারীদের সংগে রাজবাড়ীর ফটকে শুয়ে রইল। দায়ূদকে সেই কথা জানানো হলে পর দায়ূদ ঊরিয়কে বললেন, “তুমি তো যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছ, তবে কেন তোমার বাড়ীতে গেলে না?” ঊরিয় দায়ূদকে বলল, “সাক্ষ্য-সিন্দুক নিয়ে ইস্রায়েল ও যিহূদার সৈন্যেরা তাম্বুতে রয়েছে, আর আমার সেনাপতি যোয়াব ও আপনার লোকেরা খোলা মাঠে ছাউনি ফেলে রয়েছেন। এই অবস্থায় আমি কি করে বাড়ী গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আমার স্ত্রীর সংগে বিছানায় যাব? আপনার প্রাণের দিব্য যে, আমি এমন কাজ কখনও করব না।” তখন দায়ূদ তাকে বললেন, “আজকের দিনটাও তুমি এখানে থাক; কালকে আমি তোমাকে ফেরৎ পাঠিয়ে দেব।” কাজেই ঊরিয় সেই দিনটা এবং তার পরের দিনও যিরূশালেমে রয়ে গেল। দায়ূদ তাকে নিমন্ত্রণ করলে পর সে দায়ূদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করল আর দায়ূদ তাকে মদ খাইয়ে মাতাল করে তুললেন। কিন্তু রাত হলে ঊরিয় রাজার কর্মচারীদের মধ্যে নিজের বিছানায় শুয়ে রইল, বাড়ী গেল না। পরদিন সকালে দায়ূদ যোয়াবকে একটা চিঠি লিখে ঊরিয়ের হাতে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। তার মধ্যে তিনি এই কথা লিখেছিলেন, “যেখানে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হচ্ছে সেখানে সৈন্যদের সামনের সারিতে ঊরিয়কে পাঠাবে, তারপর তার পিছন থেকে তোমরা সরে যাবে যাতে সে আঘাত পেয়ে মারা যায়।” কাজেই শহর ঘেরাও করবার সময় যোয়াব ঊরিয়কে এমন একটা জায়গায় পাঠালেন যেখানে বিপক্ষের শক্তিশালী যোদ্ধারা ছিল বলে তিনি জানতেন। পরে শহরের লোকেরা বের হয়ে এসে যখন যোয়াবের সংগে যুদ্ধ করতে লাগল তখন দায়ূদের সৈন্যদলের কিছু লোক মারা পড়ল আর সেই সংগে হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা গেল। কে যিরূব্বেশতের ছেলে অবীমেলককে মেরে ফেলেছিল? একজন স্ত্রীলোক দেয়ালের উপর থেকে যাঁতার উপরের পাথরটা তার উপর ফেলেছিল আর তাতেই তিনি তেবেষে মারা গিয়েছিলেন। কেন তোমরা দেয়ালের এত কাছে গিয়েছিলে?’ যদি তিনি সেই কথা তোমাকে বলেন তবে তুমি তাঁকে বলবে যে, তাঁর দাস হিত্তীয় ঊরিয় মারা গেছে।” সেই লোকটি তখন রওনা হয়ে গেল এবং দায়ূদের কাছে পৌঁছে যোয়াব তাকে যা বলতে পাঠিয়েছিলেন তা বলল। দায়ূদকে সে বলল, “লোকগুলো প্রথমে আমাদের চেয়ে বেশী শক্তিশালী হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে খোলা মাঠে বের হয়ে এসেছিল, কিন্তু আমরা তাদের তাড়া করতে করতে শহরের ফটক পর্যন্ত গিয়েছিলাম। এতে ধনুকধারীরা দেয়ালের উপর থেকে আপনার দাসদের উপর তীর ছুঁড়তে লাগল। তাতে রাজার কিছু লোক মারা পড়েছে। আপনার দাস হিত্তীয় ঊরিয়ও মারা পড়েছে।” দায়ূদ তাকে বললেন, “তুমি যোয়াবকে বলবে সে যেন এতে মন খারাপ না করে, কারণ যুদ্ধের সময় তলোয়ার কাউকেই বাদ দেয় না। শহরটার বিরুদ্ধে আরও ভীষণভাবে যুদ্ধ করে সে যেন সেটা একেবারে ধ্বংস করে ফেলে। এই কথা তুমি যোয়াবকে বলে তাকে উৎসাহ দেবে।” এদিকে ঊরিয়ের স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে শোক করতে লাগল। শোক করবার সময় পার হয়ে যাওয়ার পর দায়ূদ তাকে তাঁর বাড়ীতে আনালেন। সে তাঁর স্ত্রী হল এবং তার একটা ছেলে হল। কিন্তু দায়ূদ যা করেছিলেন তাতে সদাপ্রভু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। সদাপ্রভু তখন নাথনকে দায়ূদের কাছে পাঠালেন। তিনি দায়ূদের কাছে গিয়ে বললেন, “কোন এক শহরে দু’জন লোক ছিল। তাদের একজন ছিল ধনী আর অন্যজন গরীব। ধনী লোকটির অনেক গরু ও ভেড়া ছিল। কিন্তু সেই গরীব লোকটির আর কিছুই ছিল না, ছিল কেবল একটা বাচ্চা-ভেড়ী। সে সেটা কিনে পালন করছিল। সেটা তার ও তার ছেলেমেয়েদের সংগে থেকে বড় হয়ে উঠতে লাগল। গরীব লোকটি যা খেত বাচ্চা ভেড়ীটাও তা-ই খেত আর তার পাত্র থেকেই সে জল খেত। তার কোলের কাছে সে শুয়ে থাকত। সে তার কাছে তার মেয়ের মতই ছিল। একদিন একজন অতিথি সেই ধনী লোকটির কাছে আসল। কিন্তু ধনী লোকটি সেই অতিথির জন্য খাবার প্রস্তুত করতে নিজের গরু বা ভেড়া নিতে চাইল না। তার বদলে সে সেই গরীব লোকটির বাচ্চা ভেড়ীটা নিয়ে তার অতিথির জন্য খাবার তৈরী করল।” এই কথা শুনে দায়ূদ সেই ধনী লোকটির উপর রাগে জ্বলে উঠলেন। তিনি নাথনকে বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, যে লোকটি এই কাজ করেছে তাকে মেরে ফেলাই উচিত। সে একটুও দয়া না করে এই কাজ করেছে বলে তাকে ঐ ভেড়ার বাচ্চাটার চারগুণ দাম দিতে হবে।” তখন নাথন দায়ূদকে বললেন, “আপনিই সেই লোক। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমিই ইস্রায়েলের উপরে তোমাকে রাজপদে অভিষেক করেছি এবং শৌলের হাত থেকে তোমাকে রক্ষা করেছি। তোমার মনিবের সব কিছু আমি তোমাকে দিয়েছি আর তার স্ত্রীদেরও আমি তোমার কাছে দিয়েছি। ইস্রায়েল ও যিহূদার সমস্ত গোষ্ঠীর লোকদের ভার আমি তোমাকে দিয়েছি। এই সব যদি তোমার পক্ষে যথেষ্ট না হত তবে আমি তোমাকে আরও অনেক কিছু দিতাম। তবে সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা করে কেন তুমি তাঁর কথা তুচ্ছ করলে? তুমি হিত্তীয় ঊরিয়কে মেরে ফেলেছ এবং তার স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী করে নিয়েছ, আর অম্মোনীয়দের দিয়ে তুমি ঊরিয়কে মেরে ফেলেছ। তুমি আমাকে তুচ্ছ করেছ এবং হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রীকে নিয়ে নিজের স্ত্রী করেছ, সেইজন্য তোমার পরিবার কখনও খুনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।’ “সদাপ্রভু আরও বলছেন, ‘আমি তোমার পরিবার থেকেই তোমার জন্য বিপদ নিয়ে আসব। তোমার চোখের সামনেই আমি তোমার স্ত্রীদের নিয়ে তোমার নিজের লোককে দেব। সে সকলের চোখের সামনে তাদের নিয়ে শোবে। তুমি সেই কাজ করেছ গোপনে কিন্তু আমি এই কাজ করব সকলের সামনে, সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের চোখের সামনে।’ ” তখন দায়ূদ নাথনকে বললেন, “আমি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছি।” উত্তরে নাথন বললেন, “সদাপ্রভু আপনার পাপ ক্ষমা করলেন; আপনি মারা যাবেন না। কিন্তু এই কাজ করে আপনি সদাপ্রভুর শত্রুদের তাঁকে নিন্দা করবার একটা বড় সুযোগ করে দিয়েছেন। সেইজন্য আপনার যে ছেলেটি জন্মেছে সে অবশ্যই মারা যাবে।” নাথন নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। পরে ঊরিয়ের স্ত্রীর গর্ভে দায়ূদের যে ছেলেটির জন্ম হয়েছিল সদাপ্রভুর আঘাতে সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল। তখন দায়ূদ ছেলেটির জন্য ঈশ্বরের কাছে মিনতি করতে লাগলেন। তিনি উপবাস করলেন এবং তাঁর ঘরে গিয়ে মাটিতে শুয়ে রাত কাটাতে লাগলেন। রাজবাড়ীর উঁচু পদের কর্মচারীরা তাঁকে মাটি থেকে উঠাবার জন্য তাঁর কাছে গেলেন, কিন্তু তিনি রাজী হলেন না এবং তাঁদের সংগে খাওয়া-দাওয়াও করলেন না। অসুখের সাত দিনের দিন ছেলেটি মারা গেল। ছেলেটি যে মারা গেছে সেই কথা দায়ূদকে জানাতে তাঁর সেই কর্মচারীদের সাহস হল না। তাঁরা বললেন, “ছেলেটি যখন বেঁচে ছিল তখন আমরা তাঁকে বললেও তিনি আমাদের কথা কানে তোলেন নি। এখন আমরা কেমন করে বলব যে, ছেলেটি মারা গেছে? বললে হয়তো তিনি নিজের কোন ক্ষতি করে বসবেন।” কর্মচারীদের মধ্যে এই কানাকানি দেখে দায়ূদ বুঝতে পারলেন যে, ছেলেটি মারা গেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “ছেলেটি কি মারা গেছে?” উত্তরে তাঁরা বললেন, “হ্যাঁ, মারা গেছে।” দায়ূদ তখন মাটি থেকে উঠে স্নান করে তেল মাখলেন এবং কাপড়-চোপড় বদলে তিনি সদাপ্রভুর ঘরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে ভক্তি জানালেন। তারপর নিজের ঘরে ফিরে এসে খাবার আনবার হুকুম দিলেন। পরে তাঁর সামনে খাবার রাখা হলে তিনি খেলেন। এতে তাঁর সেই কর্মচারীরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি এই রকম করলেন কেন? ছেলেটি বেঁচে থাকতে আপনি উপবাস করলেন ও কাঁদলেন, কিন্তু সে যখন মারা গেল তখন আপনি উঠে খাওয়া-দাওয়া করলেন।” দায়ূদ বললেন, “ছেলেটি বেঁচে থাকতে আমি উপবাস করেছি আর কেঁদেছি, কারণ আমি ভেবেছিলাম, কি জানি সদাপ্রভু আমাকে দয়া করবেন আর তাতে সে বেঁচে যাবে। কিন্তু এখন যখন সে মারাই গেল তখন আমি আর কি জন্য উপবাস করব? আমি কি তাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারব? আমাকেই তার কাছে যেতে হবে। সে আর আমার কাছে ফিরে আসবে না।” এদিকে যোয়াব অম্মোনীয়দের রাজধানী রব্বা শহরটা আক্রমণ করে দখল করে নিলেন। যোয়াব দায়ূদের কাছে লোক পাঠিয়ে এই কথা বললেন, “আমি রব্বা শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যেখানে খাবার জল জমা করে রাখা হয় সেই এলাকাটা দখল করে নিয়েছি। আপনি বাকী সৈন্যদের জড়ো করে নিয়ে শহরটা আক্রমণ করে দখল করুন। তা না হলে আমাকেই শহরটা দখল করতে হবে আর তাতে আমার নামেই শহরটার নাম হবে।” তখন দায়ূদ সমস্ত সৈন্যদের জড়ো করে নিয়ে রব্বা শহরে গেলেন এবং শহরটা আক্রমণ করে দখল করে নিলেন। তিনি সেখানকার রাজার মাথা থেকে মুকুটটা খুলে নিলেন। সেটা ঊনচল্লিশ কেজি সোনা দিয়ে তৈরী ছিল আর তাতে দামী পাথর বসানো ছিল। মুকুটটা দায়ূদের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হল। দায়ূদ সেই শহর থেকে অনেক লুটের মাল নিয়ে গেলেন। তিনি শহরের লোকদের বের করে আনলেন এবং করাত, লোহার খন্তা ও কুড়াল দিয়ে তাদের কাজ করালেন। তিনি তাদের ইট তৈরীর কাজে লাগালেন। অম্মোনীয়দের সমস্ত শহরে তিনি তা-ই করলেন। এর পর দায়ূদ তাঁর সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। পরে এই ঘটনা হল। দায়ূদের ছেলে অবশালোমের তামর নামে একটি সুন্দরী বোন ছিল। দায়ূদের ছেলে অম্নোন তাকে ভালবাসল। অম্নোন তার বোন তামরের জন্য এমন আকুল হল যে, সে অসুখে পড়বার মত হল। মেয়েটি কুমারী ছিল, তাই তাকে কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব মনে হল না। দায়ূদের ভাই শিমিয়ের ছেলে যোনাদব ছিল অম্নোনের বন্ধু। সে ছিল খুব চালাক। সে অম্নোনকে বলল, “রাজপুত্র, তুমি দিন দিন এত রোগা হয়ে যাচ্ছ কেন? তুমি কি আমাকে তা বলবে না?” অম্নোন তাকে বলল, “আমার ভাই অবশালোমের বোন তামরকে আমি ভালবাসি।” যোনাদব বললেন, “তুমি অসুখের ভান করে বিছানায় পড়ে থাক। তোমার বাবা যখন তোমাকে দেখতে আসবেন তখন তুমি তাঁকে বলবে, ‘দয়া করে আমার বোন তামরকে পাঠাবেন যেন সে এসে আমাকে কিছু খেতে দেয়। সেই খাবার সে আমার সামনেই তৈরী করুক যাতে আমি তা দেখে তার হাত থেকে তা খেতে পারি।’ ” অম্নোন অসুখের ভান করে শুয়ে রইল। রাজা তাকে দেখতে আসলে পর সে বলল, “দয়া করে আমার বোন তামরকে পাঠাবেন যেন সে এসে আমার সামনে কয়েকটা পিঠা তৈরী করে। আমি তার হাত থেকে তা খেতে চাই।” তখন দায়ূদ এই বলে তামরের কাছে লোক পাঠিয়ে দিলেন, “তোমার ভাই অম্নোনের ঘরে গিয়ে তুমি তাকে কিছু খাবার তৈরী করে দাও।” এই কথা শুনে তামর তার ভাই অম্নোনের ঘরে গেল। সে তখন শুয়ে ছিল। তামর তার সামনেই ময়দা নিয়ে মেখে পিঠা তৈরী করে সেঁকে নিল। তারপর তাওয়াতে করেই সে পিঠা নিয়ে গিয়ে তার সামনে দিল, কিন্তু অম্নোন তা খেতে চাইল না। অম্নোন সবাইকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলল, তাতে সবাই বের হয়ে গেল। তখন অম্নোন তামরকে বলল, “খাবার নিয়ে তুমি আমার শোবার কামরায় এস। আমি তোমার হাতেই খাব।” কাজেই তামর তার তৈরী করা পিঠাগুলো নিয়ে তার ভাই অম্নোনের শোবার কামরায় গেল। কিন্তু খাওয়ার জন্য যখন সে তা তার কাছে নিয়ে গেল তখন সে তাকে ধরে বলল, “বোন, তুমি আমার সংগে শোও।” তামর তাকে বলল, “না ভাই, না; তুমি আমার ইজ্জত নষ্ট কোরো না। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে এমন কাজ করা উচিত নয়। এই রকম জঘন্য কাজ তুমি কোরো না। আমার কি হবে? কেমন করে আমি এই কলঙ্কের মুখ লোকদের দেখাব? আর তোমাকেও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে একজন খারাপ লোক বলে সবাই জানবে। মিনতি করি, তুমি বরং রাজার কাছে গিয়ে বল; তাহলে তিনি তোমার হাতে আমাকে দিতে অমত করবেন না।” কিন্তু অম্নোন তামরের কথা শুনল না। তামরের চেয়ে শক্তিশালী হওয়াতে সে তার ইজ্জত নষ্ট করল। এর পরে অম্নোন তাকে ভীষণ ঘৃণা করতে লাগল। আসলে সে তাকে যতখানি ভালবেসেছিল এখন তার চেয়েও বেশী ঘৃণা করতে লাগল। অম্নোন তাকে বলল, “তুমি উঠে চলে যাও।” তামর তাকে বলল, “না, তুমি আমার প্রতি যে অন্যায় করেছ এখন আমাকে বের করে দিলে তার চেয়েও বেশী অন্যায় করা হবে।” কিন্তু অম্নোন তার কথা শুনতে চাইল না। সে তার নিজের চাকরকে ডেকে বলল, “এই মেয়েছেলেটিকে বাইরে বের করে দিয়ে দরজায় খিল লাগিয়ে দাও।” চাকরটি তখন তামরকে বের করে দিয়ে দরজায় খিল লাগিয়ে দিল। মেয়েটির গায়ে লম্বা জামা ছিল, কারণ রাজার কুমারী মেয়েরা এই রকম পোশাকই পরত। তখন তামর নিজের মাথায় ছাই দিল এবং তার পরনের লম্বা জামা ছিঁড়ে ফেলল। তারপর সে মাথায় হাত দিয়ে জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। তামরের ভাই অবশালোম তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার ভাই অম্নোন কি তোমার ইজ্জত নষ্ট করেছে? বোন আমার, তুমি এই ব্যাপার সম্বন্ধে কাউকে কিছু বোলো না, কারণ সে তোমার ভাই। তুমি এই বিষয় নিয়ে মন খারাপ কোরো না।” সেই থেকে তামর তার ভাই অবশালোমের বাড়ীতে মন মরা হয়ে থাকতে লাগল। রাজা দায়ূদ এই কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলেন। অবশালোম অম্নোনকে ভাল-মন্দ কিছুই বলল না। তার বোন তামরের ইজ্জত নষ্ট করেছে বলে সে অম্নোনকে ঘৃণা করতে লাগল। এর দু’বছর পর ইফ্রয়িমের সীমানার কাছে বাল-হাৎসোরে অবশালোমের ভেড়ার লোম কাটা হচ্ছিল। তখন অবশালোম রাজার সব ছেলেদের সেখানে যাবার নিমন্ত্রণ করল। সে রাজার কাছে গিয়ে বলল, “আপনার দাসের ভেড়ার লোম কাটা হচ্ছে। রাজা কি তাঁর কর্মচারীদের নিয়ে আমার কাছে আসবেন?” উত্তরে রাজা বললেন, “না বাবা, আমরা সবাই যাব না; গেলে কেবল তোমার বোঝাই বাড়বে।” অবশালোম তাঁকে পীড়াপীড়ি করলেও তিনি যেতে রাজী হলেন না, কিন্তু তাকে আশীর্বাদ করলেন। অবশালোম তখন রাজাকে বলল, “যদি আপনি না-ই যান তবে আমার ভাই অম্নোনকে আমাদের সংগে যেতে দিন।” রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন সে তোমাদের সংগে যাবে?” কিন্তু অবশালোম পীড়াপীড়ি করলে তিনি অম্নোনকে এবং তার সংগে সব রাজপুত্রদের পাঠিয়ে দিলেন। অবশালোম তার লোকদের এই আদেশ দিল, “দেখ, আংগুর-রস খেয়ে যখন অম্নোনের মন বেশ খুশী হয়ে উঠবে তখন আমি তোমাদের বলব, ‘অম্নোনকে মার,’ আর তোমরা তাকে মেরে ফেলবে। তোমরা ভয় কোরো না। আমিই তো তোমাদের সেই আদেশ দিচ্ছি। তোমরা সাহস কর ও শক্তিশালী হও।” কাজেই অবশালোমের আদেশ অনুসারেই তার লোকেরা অম্নোনকে মেরে ফেলল। এই ঘটনা দেখে রাজার আর সব ছেলেরা যে যার খচ্চরে চড়ে পালিয়ে গেল। তারা পথে থাকতেই দায়ূদের কানে এই খবর আসল যে, অবশালোম রাজার সব ছেলেদের মেরে ফেলেছে, তাদের একজনও বেঁচে নেই। এই কথা শুনে রাজা উঠে দাঁড়িয়ে নিজের কাপড় ছিঁড়ে মাটিতে শুয়ে পড়লেন। তাঁর কর্মচারীরা সবাই নিজের নিজের কাপড় ছিঁড়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু দায়ূদের ভাই শিমিয়ের ছেলে যোনাদব বলল, “আমার প্রভু মনে করবেন না যে, সব রাজপুত্রদেরই মেরে ফেলা হয়েছে; কেবল অম্নোনকে মারা হয়েছে। এর কারণ হল, যেদিন সে অবশালোমের বোন তামরের ইজ্জত নষ্ট করেছে সেই দিন থেকে অবশালোম এটাই ঠিক করে রেখেছিল। রাজপুত্রেরা সবাই মারা গেছে ভেবে আমার প্রভু মহারাজ যেন দুঃখ না করেন, কারণ কেবল অম্নোনই মারা পড়েছে।” এর মধ্যে অবশালোম পালিয়ে গিয়েছিল। যে লোকটি রাজার পাহারাদার ছিল সে চেয়ে দেখল যে, পাহাড়ের পাশ থেকে তার পিছনের রাস্তা দিয়ে অনেক লোক আসছে। তখন যোনাদব রাজাকে বলল, “ঐ দেখুন, রাজপুত্রেরা এসে গেছেন। আপনার দাস আমি যা বলেছিলাম তা-ই হয়েছে।” তার কথা শেষ হওয়ার সংগে সংগেই রাজার ছেলেরা এসে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। রাজা ও তাঁর সব কর্মচারীরাও খুব কাঁদতে লাগলেন। অবশালোম পালিয়ে গশূরের রাজা অম্মীহূদের ছেলে তল্‌ময়ের কাছে গেল। দায়ূদ কিন্তু তাঁর ছেলে অম্নোনের জন্য প্রতিদিন শোক করতে লাগলেন। অবশালোম পালিয়ে গশূরে গিয়ে সেখানে তিন বছর রইল। তার কাছে যাবার জন্য রাজা দায়ূদের খুব ইচ্ছা হল, কারণ অম্নোনের মৃত্যুর বিষয়ে রাজা সান্ত্বনা পেয়েছিলেন। সরূয়ার ছেলে যোয়াব জানতে পারলেন যে, অবশালোমের জন্য রাজার প্রাণ কাঁদছে। যোয়াব তখন তকোয়ে লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে একজন চালাক স্ত্রীলোককে আনালেন। তিনি তাকে বললেন, “তোমাকে শোক করবার ভান করতে হবে। তুমি শোকের পোশাক পরবে এবং গায়ে তেল মাখবে না। তুমি যেন মৃতের জন্য অনেক দিন শোক করছ নিজেকে সেই রকম স্ত্রীলোকের মত দেখাবে। তারপর রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে এই সব কথা বলবে।” এই বলে যোয়াব তাকে শিখিয়ে দিলেন কি বলতে হবে। তকোয়ের সেই স্ত্রীলোকটি তখন রাজার কাছে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “মহারাজ, আমাকে বাঁচান!” রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার কি হয়েছে?” সে বলল, “আমি সত্যি কথা বলছি যে, আমার স্বামী মারা গেছেন, আমি বিধবা। আপনার এই দাসীর দু’টি ছেলে ছিল। তারা একদিন মাঠে মারামারি করছিল আর সেখানে এমন কেউ ছিল না যে তাদের ছাড়িয়ে দেয়। তাই তাদের একজন অন্যজনকে মেরে ফেলল। এখন আমার স্বামীর বংশের সবাই আপনার এই দাসীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে আর বলছে, ‘ভাইকে যে ভাই মেরে ফেলেছে তাকে আমাদের হাতে তুলে দাও। তার ভাইয়ের প্রাণের বদলে আমরা তার প্রাণ নেব। তাহলে সম্পত্তির অধিকারী বলতে আর কেউ থাকবে না।’ তারা আমার একমাত্র জ্বলন্ত কয়লাটাকে নিভিয়ে ফেলতে চাইছে। তাহলে পৃথিবীতে আমার স্বামীর নামও থাকবে না এবং তাঁর বংশও থাকবে না।” রাজা স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তুমি বাড়ী যাও। আমি তোমার বিষয়ে একটা ব্যবস্থা করব।” তখন তকোয়ের স্ত্রীলোকটি রাজাকে বলল, “আমার প্রভু মহারাজ, রাজা ও তাঁর সিংহাসন নির্দোষ থাকুক; সব দোষ গিয়ে পড়ুক আমার ও আমার বাবার পরিবারের উপর।” রাজা বললেন, “যদি কেউ তোমাকে কিছু বলে থাকে তুমি তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে; তাহলে সে তোমাকে আর কষ্ট দেবে না।” স্ত্রীলোকটি বলল, “মহারাজ তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে দিব্য করুন যেন রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণকারী আর সর্বনাশ না করে। তা না হলে সে আমার ছেলেকে মেরে ফেলবে।” রাজা বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, তোমার ছেলের একটা চুলও মাটিতে পড়বে না।” তখন স্ত্রীলোকটি বলল, “আমাকে আমার প্রভু মহারাজের কাছে একটা কথা বলতে দিন।” তিনি বললেন, “বল।” স্ত্রীলোকটি বলল, “তাহলে আপনি ঈশ্বরের লোকদের বিরুদ্ধে সেই রকম একটা কাজ করবার মতলব করেছেন কেন? মহারাজ যখন এই রকম কথা বলেন তখন কি তিনি নিজেকেই দোষী করছেন না? তিনি তো দেশ থেকে বের করে দেওয়া তাঁর ছেলেটিকে ফিরিয়ে আনছেন না। মাটিতে জল ঢাললে যেমন তা আর তুলে নেওয়া যায় না সেইভাবেই তো আমরা মরব। ঈশ্বর কিন্তু প্রাণ কেড়ে নেন না বরং তিনি এমন ব্যবস্থা করেন যাতে দূর করে দেওয়া লোক তাঁর কাছ থেকে দূরে না থাকে। “লোকেরা আমাকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বলে আমার প্রভু মহারাজকে আমি এই কথা বলতে এসেছি। আমি ভেবেছিলাম যে, আমি রাজার সংগে কথা বলে দেখব; হয়তো তিনি আমার কথা শুনবেন। আমাকে ও আমার ছেলেকে ঈশ্বরের সম্পত্তি থেকে, অর্থাৎ তাঁর নিজের লোকদের মধ্য থেকে সরিয়ে ফেলবার জন্য যে লোকটি চেষ্টা করছে তার হাত থেকে মহারাজ হয়তো আমাকে উদ্ধার করতে রাজী হবেন। “এখন আপনার দাসী আমি বলছি যে, আমার মহারাজের কথা যেন আমাকে শান্তি দেয়, কারণ ভাল-মন্দ বিচার করতে আমার প্রভু মহারাজ ঈশ্বরের একজন দূতের মতই। আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনার সংগে থাকুন।” তখন রাজা সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “আমি তোমাকে যা জিজ্ঞাসা করব তার উত্তর তুমি আমার কাছ থেকে গোপন কোরো না।” স্ত্রীলোকটি বলল, “আমার প্রভু মহারাজ বলুন।” রাজা বললেন, “এই সব ব্যাপারে তোমার সংগে কি যোয়াবের হাত আছে?” উত্তরে স্ত্রীলোকটি বলল, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনার প্রাণের দিব্য যে, আপনি যা বলেছেন তা থেকে কারও ডানে বা বাঁয়ে সরে যাবার ক্ষমতা নেই। হ্যাঁ, আপনার দাস যোয়াবই এই কাজ করতে বলেছেন আর আমাকে এই সব কথা বলতে শিখিয়ে দিয়েছেন। এই অবস্থার মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্যই আপনার দাস যোয়াব এই কাজ করেছেন। দেশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা আমার প্রভু জানেন। তাঁর জ্ঞান ঈশ্বরের দূতের মতই।” পরে রাজা যোয়াবকে বললেন, “বেশ ভাল, আমি তোমার অনুরোধ রাখলাম। তুমি গিয়ে যুবক অবশালোমকে নিয়ে এস।” যোয়াব মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে রাজাকে প্রণাম করলেন এবং তাঁকে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর যোয়াব বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আজকে আপনার দাস আমি জানতে পারলাম যে, আমি আপনার কাছে দয়া পেয়েছি, কারণ মহারাজ আমার অনুরোধ রক্ষা করেছেন।” এর পর যোয়াব গশূরে গিয়ে অবশালোমকে যিরূশালেমে ফিরিয়ে আনলেন। রাজা বললেন, “সে তার নিজের বাড়ীতেই যাক। সে যেন আমার মুখ না দেখে।” কাজেই অবশালোম নিজের বাড়ীতে গেল; রাজার মুখ সে দেখতে পেল না। সারা ইস্রায়েল দেশে অবশালোমের মত এত সুন্দর আর কেউ ছিল না। সুন্দর চেহারার জন্য সে সকলের চেয়ে বেশী প্রশংসা পেত। তার মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত কোথাও কোন খুঁত ছিল না। বছরের শেষে সে তার চুল কেটে ফেলত, কারণ তার চুলের ওজন বেশী হয়ে যেত। তারপর সে তা মাপলে তার ওজন হত আড়াই কেজি। অবশালোমের তিন ছেলে ও এক মেয়ে জন্মেছিল। মেয়েটির নাম ছিল তামর। সে দেখতে সুন্দরী ছিল। অবশালোম দু’বছর যিরূশালেমে ছিল; এর মধ্যে সে রাজার মুখ দেখতে পায় নি। তারপর সে রাজার কাছে যাবার জন্য যোয়াবকে ডেকে পাঠাল, কিন্তু যোয়াব তার কাছে যেতে রাজী হলেন না। পরে সে দ্বিতীয় বার যোয়াবকে ডেকে পাঠাল, কিন্তু এবারও যোয়াব তার কাছে যেতে রাজী হলেন না। তখন অবশালোম তার চাকরদের বলল, “দেখ, আমার ক্ষেতের পাশেই রয়েছে যোয়াবের ক্ষেত। সে তাতে যব বুনেছে। তোমরা গিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে দাও।” এতে অবশালোমের চাকরেরা গিয়ে সেই ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিল। তখন যোয়াব অবশালোমের বাড়ীতে গিয়ে তাকে বললেন, “তোমার চাকরেরা কেন আমার ক্ষেতে আগুন লাগিয়েছে?” উত্তরে অবশালোম যোয়াবকে বলল, “এখানে আসবার জন্য আমি আপনার কাছে লোক পাঠিয়ে দিয়েছিলাম যাতে আপনি গিয়ে রাজাকে এই কথা জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘কেন আমি গশূর থেকে আসলাম? সেখানে থাকাই তো আমার পক্ষে ভাল ছিল।’ এখন যাতে আমি রাজার মুখ দেখতে পাই আপনি সেই ব্যবস্থা করুন। যদি আমার কোন দোষ হয়ে থাকে তবে তিনি যেন আমাকে মেরে ফেলেন।” তখন যোয়াব গিয়ে রাজাকে সেই সব কথা বললেন। রাজা অবশালোমকে ডেকে পাঠালে পর সে রাজার সামনে এসে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ল। তখন রাজা অবশালোমকে চুম্বন করলেন। পরে অবশালোম নিজের জন্য রথ ও ঘোড়া যোগাড় করল এবং তার আগে আগে যাবার জন্য পঞ্চাশজন লোক নিযুক্ত করল। অবশালোম খুব সকালে উঠে শহরের ফটকের দিকে যাবার রাস্তার একপাশে দাঁড়াত। কেউ যখন কোন নালিশ নিয়ে রাজার কাছে বিচারের জন্য আসত অবশালোম তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করত, “তুমি কোন্‌ গ্রামের লোক?” উত্তরে লোকটি বলত, “আপনার দাস আমি ইস্রায়েলের অমুক গোষ্ঠীর লোক।” তখন অবশালোম তাকে বলত, “দেখ, তোমার নালিশ ন্যায্য ও ঠিক, কিন্তু তোমার কথা শুনবার জন্য রাজার কোন লোক নেই।” তারপর সে আরও বলত, “হায়, আমাকে যদি দেশের বিচারক করে নিযুক্ত করা হত! তাহলে যারা আমার কাছে নালিশ নিয়ে আসত আমি তাদের প্রত্যেকের পক্ষে ন্যায়বিচার করতাম।” এছাড়া যদি কেউ তাকে প্রণাম করবার জন্য তার সামনে যেত তবে সে হাত বাড়িয়ে তাকে ধরে চুম্বন করত। ইস্রায়েলীয়দের যত লোক রাজার কাছে বিচারের জন্য আসত অবশালোম তাদের সংগে এই রকম ব্যবহার করত। এইভাবে সে ইস্রায়েলীয়দের মন জয় করে নিল। চার বছর পরে অবশালোম রাজাকে বলল, “আমি সদাপ্রভুর কাছে যে মানত করেছি তা পূরণ করবার জন্য আমাকে হিব্রোণে যেতে দিন। আপনার দাস আমি অরামের গশূরে থাকবার সময় মানত করে বলেছিলাম, ‘সদাপ্রভু যদি আমাকে যিরূশালেমে ফিরিয়ে নিয়ে যান তবে আমি হিব্রোণে গিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করব।’ ” রাজা তাকে বললেন, “শান্তিতে যাও।” তখন অবশালোম হিব্রোণে গেল। অবশালোম ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর কাছে এই কথা বলে গোপনে লোক পাঠাল, “তোমরা যেই তূরীর আওয়াজ শুনবে অমনি বলবে, ‘অবশালোম হিব্রোণে রাজা হলেন।’ ” যিরূশালেম থেকে দু’শো লোক অবশালোমের সংগে গিয়েছিল। অতিথি হিসাবে তাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর তারা কোন কিছু না জেনেই সরল মনে তার সংগে গিয়েছিল। উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার সময় অবশালোম দায়ূদের গীলোনীয় মন্ত্রী অহীথোফলকে তার গ্রাম গীলো থেকে ডেকে আনাল। ষড়যন্ত্রটা বেশ জোরালো হয়ে উঠল, কারণ অবশালোমের পক্ষের লোক একের পর এক বেড়ে যেতে লাগল। পরে একজন লোক দায়ূদের কাছে এসে বলল, “ইস্রায়েলীয়দের মন অবশালোমের দিকে গেছে।” যিরূশালেমে দায়ূদের যে সব কর্মচারীরা তাঁর সংগে ছিল তিনি তাদের বললেন, “চল, আমরা পালিয়ে যাই। তা না হলে আমরা কেউই অবশালোমের হাত থেকে রক্ষা পাব না। আমাদের এক্ষুনি বেরিয়ে পড়তে হবে, নইলে সে তাড়াতাড়ি এসে আমাদের ভীষণ বিপদে ফেলবে আর শহরের সবাইকে শেষ করে দেবে।” রাজার কর্মচারীরা তাঁকে বলল, “আমাদের প্রভু মহারাজের যা ইচ্ছা আমরা তা-ই করতে প্রস্তুত আছি।” তখন রাজা রওনা হলেন আর তাঁর বাড়ীর সবাই তাঁর পিছনে পিছনে চলল। রাজবাড়ীটা দেখাশোনা করবার জন্য তিনি দশজন উপস্ত্রীকে রেখে গেলেন। রাজা ও তাঁর সংগের সমস্ত লোক যেতে যেতে শহরের শেষ সীমানায় গিয়ে থামলেন। দায়ূদের সমস্ত লোক তাঁর সামনে দিয়ে এগিয়ে গেল। তাদের মধ্যে ছিল করেথীয়, পলেথীয় আর ছ’শো গাতীয় লোক যারা আগে গাৎ থেকে রাজার সংগে চলে এসেছিল। রাজা তখন গাতীয় ইত্তয়কে বললেন, “আমাদের সংগে কেন তুমি যাচ্ছ? তুমি ফিরে গিয়ে রাজা অবশালোমের সংগে থাক। তুমি তো বিদেশী; তোমার নিজের দেশ থেকে তুমি বের হয়ে এসেছ। তুমি তো মাত্র সেদিন এসেছ। আর আজকেই কি তোমাকে আমাদের সংগে ঘুরে বেড়াবার জন্য আমার নেওয়া উচিৎ? আমি নিজেই জানি না আমি কোথায় যাচ্ছি। তুমি ফিরে যাও আর তোমার দেশের লোকদেরও সংগে নিয়ে যাও। অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততা তোমাদের সংগী হোক।” কিন্তু উত্তরে ইত্তয় রাজাকে বলল, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য এবং আমার প্রভু মহারাজের প্রাণের দিব্য, আমার প্রভু মহারাজ যেখানে থাকবেন সেখানে আপনার দাস আমিও থাকব, তাতে আমি বেঁচেই থাকি বা মারাই পড়ি।” এই কথা শুনে দায়ূদ ইত্তয়কে বললেন, “তবে এগিয়ে যাও।” তখন গাতীয় ইত্তয় তার সমস্ত লোক ও তার সংগের সমস্ত পরিবার নিয়ে এগিয়ে চলল। দায়ূদের সমস্ত লোক যখন চলে যাচ্ছিল তখন দেশের সব লোক জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। রাজা ও তাঁর সমস্ত লোক কিদ্রোণ উপত্যকা পার হয়ে মরু-এলাকার দিকে এগিয়ে গেলেন। রাজা যখন শহর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন পুরোহিত সাদোক ও সমস্ত লেবীয়েরাও তাঁর সংগে ছিল। লেবীয়েরা ঈশ্বরের সাক্ষ্য-সিন্দুকটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। শহর থেকে সমস্ত লোক বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত লেবীয়েরা ঈশ্বরের সিন্দুকটা নামিয়ে রাখল আর পুরোহিত অবিয়াথরও তাদের সংগে ছিলেন। সমস্ত লোক বেরিয়ে যাবার পর রাজা সাদোককে বললেন, “ঈশ্বরের সিন্দুকটা শহরে ফিরিয়ে নিয়ে যান। সদাপ্রভু যদি আমাকে দয়ার চোখে দেখেন তবে তিনি আমাকে ফিরিয়ে আনবেন আর এই সিন্দুক ও তাঁর থাকবার জায়গা আবার আমাকে দেখতে দেবেন। কিন্তু যদি তিনি বলেন, ‘আমি তোমার উপর সন্তুষ্ট নই,’ তবে তিনি যা ভাল মনে করেন তা-ই আমার প্রতি করুন।” তারপর রাজা পুরোহিত সাদোককে বললেন, “আপনি তো সবই দেখতে পাচ্ছেন। আপনার ছেলে অহীমাস ও অবিয়াথরের ছেলে যোনাথনকে সংগে করে আপনি শান্তিতে শহরে ফিরে যান। যে পর্যন্ত না আমাকে জানাবার জন্য আপনাদের কাছ থেকে খবর আসে সেই পর্যন্ত আমি মরু-এলাকার মধ্যে নদীর যে জায়গাটা হেঁটে পার হওয়া যায় সেখানে অপেক্ষা করতে থাকব।” কাজেই সাদোক ও অবিয়াথর ঈশ্বরের সিন্দুকটি নিয়ে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন এবং সেখানেই থাকলেন। এদিকে দায়ূদ কাঁদতে কাঁদতে জৈতুন পাহাড়ের উপর উঠতে লাগলেন। তিনি মাথা ঢেকে খালি পায়ে হাঁটছিলেন। লোকেরাও সকলে তাঁর সংগে মাথা ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে উপরে উঠতে লাগল। তখন দায়ূদকে কেউ বলল, “অবশালোমের সংগে ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে অহীথোফলও আছে।” এই কথা শুনে দায়ূদ এই বলে প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, তুমি অহীথোফলের পরামর্শকে বিফল করে দাও।” লোকেরা পাহাড়ের উপরে যে জায়গায় ঈশ্বরের উপাসনা করত দায়ূদ সেখানে উপস্থিত হলে পর অর্কীয় হূশয় তাঁর সংগে দেখা করতে আসলেন। তাঁর পোশাক ছেঁড়া এবং মাথায় ধুলা ছিল। দায়ূদ তাঁকে বললেন, “তুমি আমার সংগে গেলে আমার বোঝা বাড়বে। কিন্তু তুমি শহরে ফিরে গিয়ে যদি অবশালোমকে বল, ‘হে মহারাজ, আমি আপনার দাস হয়ে থাকব; আমি যেমন আগে আপনার বাবার দাস ছিলাম তেমনি এখন আপনার দাস হব,’ তাহলে তুমি অহীথোফলের দেওয়া পরামর্শকে অকেজো করে দিয়ে আমাকে সাহায্য করতে পারবে। পুরোহিত সাদোক ও অবিয়াথর সেখানে তোমার সংগে থাকবেন। রাজবাড়ীতে তুমি যা শুনবে তা তাঁদের জানাবে। সাদোকের ছেলে অহীমাস ও অবিয়াথরের ছেলে যোনাথনও সেখানে তাঁদের সংগে আছেন। কিছু শুনলে পর তাঁদের দিয়েই তা আমাকে জানিয়ে দেবে।” দায়ূদের বন্ধু হূশয় যখন যিরূশালেমে ঢুকলেন তখন অবশালোমও সেখানে পৌঁছাল। দায়ূদ পাহাড়ের উপর থেকে একটু এগিয়ে যেতেই মফীবোশতের দাস সীবের সংগে তাঁর দেখা হল। তার সংগে ছিল পিঠে গদি লাগানো দু’টা গাধা। সেই গদির উপরে ছিল দু’শো রুটি, একশো তাল কিশমিশ, একশো তাল ডুমুর এবং চামড়ার থলির এক থলি আংগুর-রস। রাজা সীবঃকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি এগুলো এনেছ কেন?” উত্তরে সীবঃ বলল, “গাধা দু’টা রাজার পরিবারের লোকদের চড়বার জন্য, রুটি আর ফল লোকদের খাওয়ার জন্য আর আংগুর-রস হল তাদেরই জন্য যারা মরু-এলাকায় ক্লান্ত হয়ে পড়বে।” রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার মনিবের নাতি কোথায়?” সীবঃ তাঁকে বললেন, “তিনি যিরূশালেমেই রয়েছেন, কারণ তিনি বললেন, ‘আজ ইস্রায়েলীয়েরা আমার দাদুর রাজ্য আমাকে ফিরিয়ে দেবে।’ ” এই কথা শুনে রাজা সীবঃকে বললেন, “এখন মফীবোশতের সমস্ত সম্পত্তি আমি তোমাকে দিলাম।” সীবঃ বলল, “আমি তো আপনার পায়ের ধুলারও যোগ্য নই; আমার প্রভু মহারাজ যেন আমাকে দয়ার চোখে দেখেন।” রাজা দায়ূদ যখন বহুরীমে উপস্থিত হলেন তখন শৌলের বংশের একজন লোক সেখান থেকে বের হয়ে আসল। সে ছিল গেরার ছেলে শিমিয়ি। সে অভিশাপ দিতে দিতে আসছিল। যদিও দায়ূদের ডানে-বাঁয়ে সমস্ত সৈন্যদল এবং রক্ষীদল ছিল তবুও সে দায়ূদ ও তাঁর সব কর্মচারীদের পাথর ছুঁড়ে মারতে লাগল। শিমিয়ি অভিশাপ দিতে দিতে বলল, “দূর হ, দূর হ, খুনী, বদমাইশ কোথাকার! তুই যাঁর জায়গায় রাজত্ব করছিস সেই শৌলের বংশের সমস্ত লোকের রক্তপাতের প্রতিফল সদাপ্রভু তোকে দিয়েছেন। সেই রাজ্যই সদাপ্রভু তোর ছেলে অবশালোমকে দিয়েছেন। তুই খুনী বলেই তোর দশা এমন হয়েছে!” এই সব কথা শুনে সরূয়ার ছেলে অবীশয় রাজাকে বললেন, “এই মরা কুকুরটা কেন আমার প্রভু মহারাজকে অভিশাপ দিচ্ছে? আমাকে ওর মাথা কেটে ফেলতে অনুমতি দিন।” রাজা বললেন, “হে সরূয়ার ছেলেরা, এই বিষয়ে তোমাদের সংগে আমার সম্বন্ধ কি? সদাপ্রভুই যদি তাকে বলে থাকেন ‘দায়ূদকে অভিশাপ দাও’ আর তাই সে অভিশাপ দেয়, তবে কে তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে, ‘কেন তুমি এই কাজ করছ?’ ” দায়ূদ তখন অবীশয় ও তাঁর সমস্ত কর্মচারীদের বললেন, “আমার নিজের ছেলেই যখন আমার প্রাণ নেবার চেষ্টা করছে তখন বিন্যামীন-গোষ্ঠীর এই লোকটি তো আরও বেশী করে তা করবে। সে যা করছে তাকে তা করতে দাও; অভিশাপ দিতে দাও, কারণ সদাপ্রভুই তাকে তা করতে বলেছেন। হতে পারে সদাপ্রভু আমার এই কষ্ট দেখবেন, আর আজকে আমি যে অভিশাপ পাচ্ছি তার বদলে আমার মংগল করবেন।” এর পর দায়ূদ তাঁর লোকজন নিয়ে পথ দিয়ে যেতে লাগলেন আর শিমিয়ি অভিশাপ দিতে দিতে এবং রাজার দিকে পাথর ও ধুলা ছুঁড়তে ছুঁড়তে পাহাড়ের গা দিয়ে চলতে লাগল। রাজা ও তাঁর সংগের লোকেরা যেখানে যাচ্ছিলেন তাঁরা ক্লান্ত অবস্থায় সেখানে গিয়ে পৌঁছালেন। তারপর সেই জায়গায় দায়ূদ বিশ্রাম করলেন। এদিকে অবশালোম ও ইস্রায়েলের সমস্ত লোক যিরূশালেমে গেল। অহীথোফলও তাদের সংগে ছিল। তখন দায়ূদের বন্ধু অর্কীয় হূশয় অবশালোমের কাছে গিয়ে তাকে বললেন, “মহারাজ চিরজীবী হোন! মহারাজ চিরকাল বেঁচে থাকুন।” অবশালোম হূশয়কে জিজ্ঞাসা করল, “আপনার বন্ধুর প্রতি কি আপনি এইভাবে বিশ্বস্ততা দেখাচ্ছেন? কেন আপনি আপনার বন্ধুর সংগে যান নি?” হূশয় অবশালোমকে বললেন, “সদাপ্রভু এবং এই লোকেরা, অর্থাৎ ইস্রায়েলের সমস্ত লোক যাঁকে বেছে নিয়েছেন, আমি তাঁরই হব। আমি তাঁর সংগেই থাকব। তা ছাড়া আমি কার সেবা করব? তাঁর ছেলের নয় কি? আমি যেমন আপনার বাবার সেবা করেছি তেমনি আপনারও সেবা করব।” পরে অবশালোম অহীথোফলকে বলল, “এবার আমরা কি করব? আপনি কি পরামর্শ দেন?” উত্তরে অহীথোফল বলল, “রাজবাড়ীর দেখাশোনা করবার জন্য আপনার বাবা তাঁর যে সব উপস্ত্রীদের রেখে গেছেন আপনি তাদের সংগে দেহে মিলিত হন। তাহলে ইস্রায়েলের সবাই জানতে পারবে যে, আপনি নিজেকে আপনার বাবার কাছে ঘৃণার পাত্র করে তুলেছেন। তাতে আপনার সংগের সমস্ত লোক সম্পূর্ণভাবে আপনার পক্ষে থাকবে।” লোকেরা তখন ছাদের উপর অবশালোমের জন্য একটা তাম্বু খাটিয়ে দিল আর সে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের চোখের সামনে তাঁর বাবার উপস্ত্রীদের সংগে দেহে মিলিত হবার জন্য সেখানে ঢুকল। তখনকার দিনে অহীথোফলের দেওয়া পরামর্শকে মনে করা হত যেন তা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। অহীথোফলের পরামর্শকে দায়ূদ ও অবশালোম দু’জনে তা-ই মনে করতেন। অহীথোফল অবশালোমকে আরও বলল, “আমাকে আজ রাতে বারো হাজার লোক নিয়ে দায়ূদের পিছনে তাড়া করতে যেতে দিন। যখন তিনি ক্লান্ত ও দুর্বল থাকবেন তখনই আমি তাঁকে আক্রমণ করব। আমি তাঁকে এমন ভয় ধরিয়ে দেব যে, তাঁর সংগের লোকেরা পালিয়ে যাবে। তখন আমি কেবলমাত্র রাজাকেই মেরে ফেলব, আর সমস্ত লোককে আপনার কাছে ফিরিয়ে আনব। আপনি যাঁর মৃত্যু চাইছেন তিনি ছাড়া আর সব লোক যখন ফিরে আসবে তখন শান্তি হবে।” অবশালোম ও ইস্রায়েলের সমস্ত বৃদ্ধ নেতাদের কাছে এই পরামর্শটা ভাল বলে মনে হল। কিন্তু অবশালোম বলল, “অর্কীয় হূশয়কে ডাক, তাঁর কি বলবার আছে তা আমরা শুনি।” হূশয় আসলে পর অবশালোম তাকে বলল, “অহীথোফল আমাদের এই পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি যা বলেছেন তা কি আমরা করব? যদি তা না হয়, আপনার মতামত কি?” হূশয় অবশালোমকে বললেন, “এইবার অহীথোফল যে পরামর্শ দিয়েছেন তা ভাল নয়। আপনি তো জানেন যে, আপনার বাবা ও তাঁর লোকেরা যোদ্ধা। তাঁরা বাচ্চা কেড়ে নেওয়া বুনো ভাল্লুকের মতই ভয়ংকর। তা ছাড়া আপনার বাবা একজন পাকা যোদ্ধা; তিনি তাঁর সৈন্যদলের মধ্যে রাত কাটাবেন না। তিনি এখন কোন গর্তে বা অন্য কোন জায়গায় লুকিয়ে আছেন। যুদ্ধের আরম্ভে যদি আপনার সৈন্যের কয়েকজন মারা পড়ে তবে যারা সেই কথা শুনবে তারা বলবে, ‘অবশালোমের পক্ষের সৈন্যদলের অনেককে মেরে ফেলা হয়েছে।’ তখন সবচেয়ে শক্তিশালী ও সিংহের মত সাহসী যে সৈন্য সে-ও ভয়ে দিশেহারা হবে, কারণ ইস্রায়েলের সবাই জানে যে, আপনার বাবা একজন যোদ্ধা এবং তাঁর সংগে যারা আছে তারাও শক্তিশালী। “তাই আমি আপনাকে এই পরামর্শ দিই: দান থেকে বের্‌-শেবা পর্যন্ত সাগর পারের অসংখ্য বালুকণার মত সমস্ত ইস্রায়েলীয় আপনার কাছে জড়ো হোক আর তাদের নিয়ে আপনি নিজেই যুদ্ধে যান। তাতে যেখানেই তিনি থাকুন না কেন সেখানেই আমরা তাঁকে আক্রমণ করব আর মাটিতে শিশির পড়বার মত করে আমরা তাঁর উপর পড়ব। তিনি কিম্বা তাঁর লোকদের কাউকেই আমরা বাঁচিয়ে রাখব না। তিনি যদি কোন শহরে গিয়ে ঢোকেন তবে আমরা সব ইস্রায়েলীয়েরা সেখানে দড়ি নিয়ে যাব আর শহরটাকে টেনে এমনভাবে উপত্যকার মধ্যে ফেলব যে, শহরের পাথরের একটা টুকরাও সেখানে পড়ে থাকবে না।” অবশালোম ও ইস্রায়েলের সব লোকেরা বলল, “অহীথোফলের পরামর্শের চেয়ে অর্কীয় হূশয়ের পরামর্শ ভাল।” আসলে অবশালোমের উপর ধ্বংস নিয়ে আসবার জন্য সদাপ্রভুই অহীথোফলের ভাল পরামর্শকে বিফল করে দেবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। হূশয় পুরোহিত সাদোক আর অবিয়াথরকে বললেন, “অবশালোম ও ইস্রায়েলের বৃদ্ধ নেতাদের অহীথোফল এই পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমি তাঁদের এই এই পরামর্শ দিয়েছি। আপনারা এখনই দায়ূদের কাছে খবর পাঠিয়ে এই কথা বলুন, ‘মরু-এলাকার যে জায়গায় হেঁটে নদী পার হওয়া যায় সেখানে আজকে রাত কাটাবেন না; নদী পার হয়ে যেতেই হবে। তা নইলে রাজা ও তাঁর সংগের সমস্ত লোক মারা পড়বেন।’ ” সেই সময় যোনাথন ও অহীমাস ঐন্‌-রোগেলে ছিল। একজন চাকরানী তাদের খবর জানাত আর তারা গিয়ে রাজা দায়ূদকে সেই খবর দিত, কারণ শহরে যাওয়া-আসার ঝুঁকি তারা নিতে পারত না। কিন্তু একজন যুবক তাদের দেখে ফেলল এবং অবশালোমকে গিয়ে খবর দিল। কাজেই তারা তাড়াতাড়ি চলে গেল এবং বহুরীমে একজন লোকের বাড়ীতে গেল। তার উঠানে একটা কূয়া ছিল। তারা সেই কূয়াতে নেমে গেল। সেই লোকটির স্ত্রী একটা ঢাকনা নিয়ে কূয়ার মুখটা ঢেকে দিল এবং তার উপরে শস্য ছড়িয়ে রাখল। কেউ এই সব ঘটনার কিছু জানতে পারল না। অবশালোমের লোকেরা সেই বাড়ীতে এসে স্ত্রীলোকটিকে জিজ্ঞাসা করল, “অহীমাস ও যোনাথন কোথায়?” উত্তরে স্ত্রীলোকটি বলল, “তারা জলের স্রোত পার হয়ে চলে গেছে।” সেই লোকেরা খোঁজ করে কাউকেই পেল না, কাজেই তারা যিরূশালেমে ফিরে গেল। লোকেরা চলে গেলে পর সেই দু’জন কূয়া থেকে উঠে এসে রাজা দায়ূদকে খবর দেবার জন্য চলে গেল। তারা তাঁকে বলল, “আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ুন এবং নদী পার হয়ে যান; অহীথোফল আপনার বিরুদ্ধে এই এই পরামর্শ দিয়েছে।” কাজেই দায়ূদ ও তাঁর সংগের সব লোকেরা বেরিয়ে পড়লেন এবং যর্দন নদী পার হয়ে গেলেন। ভোর হবার আগেই তারা সবাই যর্দন নদী পার হয়ে গেল, একজনও বাকী রইল না। অহীথোফল যখন দেখল যে, তার পরামর্শ মত কাজ করা হল না তখন সে তার গাধার উপরে গদি চাপিয়ে তার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেল। তার বাড়ীর সব কিছুর ব্যবস্থা করে সে গলায় দড়ি দিয়ে মরল। তার বাবার কবরে তাকে কবর দেওয়া হল। দায়ূদ মহনয়িমে গেলেন আর এদিকে অবশালোম ইস্রায়েলের সব লোক নিয়ে যর্দন নদী পার হয়ে গেল। অবশালোম তার সৈন্যদলের উপরে যোয়াবের বদলে অমাসাকে নিযুক্ত করেছিল। অমাসা ছিল যিথ্র নামে একজন ইস্রায়েলীয়ের ছেলে। যিথ্র নাহশের মেয়ে অবীগলকে বিয়ে করেছিল। অবীগল ছিল যোয়াবের মা সরূয়ার বোন। অবশালোম এবং ইস্রায়েলীয়েরা গিলিয়দ এলাকায় গিয়ে ছাউনি ফেলল। মধু, দই, গরুর দুধের পনীর এবং ভেড়া নিয়ে আসল। তারা ভেবেছিল যে, মরু-এলাকায় ঐ সব লোকদের খিদে ও পিপাসা পেয়েছে এবং তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। দায়ূদ তাঁর সংগের লোকদের জড়ো করলেন এবং তাদের হাজারের উপরে এবং শ’য়ের উপরে সেনাপতিদের নিযুক্ত করলেন। দায়ূদ তাঁর সৈন্যদলকে তিন ভাগ করে এইভাবে পাঠিয়ে দিলেন- যোয়াবের অধীনে একভাগ, যোয়াবের ভাই, অর্থাৎ সরূয়ার ছেলে অবীশয়ের অধীনে একভাগ এবং গাতীয় ইত্তয়ের অধীনে একভাগ। রাজা সৈন্যদের বললেন, “আমিও নিশ্চয়ই তোমাদের সংগে যাব।” কিন্তু লোকেরা বলল, “আপনি যাবেন না। যদি আমাদের পালিয়ে যেতেই হয় তবে তাদের কিছু যাবে-আসবে না। যদি আমাদের অর্ধেক লোকও মারা যায় তাতেও তাদের কিছু হবে না, কিন্তু আপনি তো আমাদের দশ হাজারের সমান। আপনি এখন শহরে থেকে আমাদের সাহায্য করলে ভাল হবে।” উত্তরে রাজা বললেন, “তোমাদের কাছে যা ভাল মনে হয় আমি তা-ই করব।” কাজেই রাজা শহরের ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন, আর লোকেরা হাজারে হাজারে, শ’য়ে শ’য়ে ভাগ হয়ে বের হয়ে গেল। যোয়াব, অবীশয় ও ইত্তয়কে রাজা আদেশ দিয়ে বললেন, “আমার মুখ চেয়ে তোমরা সেই যুবক অবশালোমের সংগে নরম ব্যবহার কোরো।” অবশালোম সম্বন্ধে রাজা যখন সেনাপতিদের আদেশ দিচ্ছিলেন তখন সৈন্যেরা সবাই তা শুনেছিল। ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য সৈন্যদল বের হয়ে গেল। ইফ্রয়িমের বনে যুদ্ধ হল। সেখানে দায়ূদের লোকদের কাছে ইস্রায়েলের সৈন্যদল হেরে গেল। সেই দিন ভীষণ যুদ্ধ হল এবং বিশ হাজার লোক মারা পড়ল। যুদ্ধটা সমস্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল এবং যুদ্ধে যত না লোক মরল তার চেয়ে বেশী মরল বনের জন্য। অবশালোম হঠাৎ দায়ূদের লোকদের সামনে পড়ল। সে তখন তার খচ্চরে চড়ে যাচ্ছিল। খচ্চরটা বড় একটা এলোন গাছের ঘন ডালপালার তলা দিয়ে যাবার সময় অবশালোমের মাথাটা গাছে আটকে গেল। যে খচ্চরের উপর সে চড়ে যাচ্ছিল সেটা চলে গেল আর সে শূন্যে ঝুলে রইল। একজন লোক তা দেখে যোয়াবকে গিয়ে বলল, “আমি এক্ষুনি দেখলাম অবশালোম একটা এলোন গাছে ঝুলে রয়েছেন।” যোয়াব সেই লোকটিকে বললেন, “কি বললে? তুমি তাকে দেখেছ? তুমি সেখানেই তাকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দিলে না কেন? তা করলে আমি তো তোমাকে দশ শেখেল রূপা আর যোদ্ধার একটা কোমর-বাঁধনি দিতাম।” লোকটি উত্তরে বলল, “আমার হাতে এক হাজার শেখেল রূপা মেপে দিলেও আমি রাজার ছেলের গায়ে হাত তুলতাম না। আমরা শুনেছি রাজা আপনাকে, অবীশয়কে ও ইত্তয়কে এই আদেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা সেই যুবক অবশালোমকে রক্ষা কোরো।’ আমি যদি তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতাম তাহলে রাজা নিশ্চয়ই জানতে পারতেন, কারণ রাজার কাছে তো কিছুই লুকানো থাকে না, আর তখন আপনিও আমার পক্ষে থাকতেন না।” যোয়াব বললেন, “আমি তোমার সংগে এইভাবে সময় নষ্ট করতে পারি না।” এই বলে তিনি তিনটা ধারালো খোঁচা হাতে নিয়ে অবশালোমের বুকে বিঁধিয়ে দিলেন। তখনও অবশালোম এলোন গাছের মধ্যে জীবিত ছিল। যোয়াবের দশজন অস্ত্র বহনকারী অবশালোমকে ঘিরে ফেলল এবং তাকে আঘাত করে মেরে ফেলল। তারপর যোয়াব তূরী বাজালেন। তখন সৈন্যেরা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করা বন্ধ করল, কারণ যোয়াব তাদের থামিয়ে দিয়েছিলেন। তারা অবশালোমকে নিয়ে বনের মধ্যে একটা বড় গর্তে ছুঁড়ে ফেলে দিল এবং তাঁর উপর পাথর জড়ো করে একটা বড় ঢিবি বানিয়ে রাখল। এর মধ্যে ইস্রায়েলীয়েরা সবাই নিজের নিজের বাড়ীতে পালিয়ে গেল। অবশালোম যখন জীবিত ছিল তখন সে তার নিজের জন্য একটা থাম এনে রাজার উপত্যকায় স্থাপন করেছিল। সে বলেছিল, “আমার নাম রক্ষার জন্য আমার কোন ছেলে নেই।” তাই সে তার নিজের নামেই থামটার নাম দিয়েছিল। আজও সেই থামটাকে অবশালোমের থাম বলা হয়। পরে সাদোকের ছেলে অহীমাস বলল, “আমি দৌড়ে গিয়ে রাজাকে এই সংবাদ দিই যে, সদাপ্রভু তাঁকে শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করেছেন।” যোয়াব তাকে বললেন, “আজকে তুমি খবর নিয়ে যাবে না, অন্য দিন তা কোরো। রাজার ছেলে মারা গেছে, কাজেই আজকে তুমি সেই কাজ করতে পারবে না।” এর পর যোয়াব একজন কূশীয়কে বললেন, “তুমি যা দেখেছ তা গিয়ে রাজাকে বল।” এই কথা শুনে সেই কূশীয় যোয়াবকে প্রণাম করে দৌড়ে চলে গেল। সাদোকের ছেলে অহীমাস আবার যোয়াবকে বলল, “যা হয় হোক, আমাকে এই কূশীয়ের পিছনে পিছনে ছুটে যেতে দিন।” উত্তরে যোয়াব বললেন, “কেন তুমি যেতে চাইছ বাবা? পুরস্কার পাবার মত কোন খবরই তো তোমার নেই।” অহীমাস বলল, “যা হয় হোক, আমি দৌড়ে যেতে চাই।” কাজেই যোয়াব বললেন, “আচ্ছা, যাও।” তখন অহীমাস সমভূমির উপর দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে সেই কূশীয়কে পিছনে ফেলে গেল। সেই সময় দায়ূদ শহরের ভিতরের ও বাইরের ফটকের মাঝামাঝি জায়গায় বসে ছিলেন। তাঁর পাহারাদার দেয়াল বেয়ে ফটকের ছাদের উপর উঠল। সে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল একজন লোক একা দৌড়ে আসছে। পাহারাদার রাজাকে জোরে ডেকে সেই কথা জানাল। রাজা বললেন, “যদি সে একাই হয় তবে সে ভাল খবরই নিয়ে আসছে।” লোকটা কাছাকাছি এসে পড়ল। পরে পাহারাদার দেখল আরও একজন লোক দৌড়ে আসছে। সে দারোয়ানকে জোরে ডেকে বলল, “দেখ, আর একজন লোক একা দৌড়ে আসছে।” রাজা বললেন, “সে-ও ভাল খবরই আনছে।” তখন পাহারাদার বলল, “প্রথম লোকটি সাদোকের ছেলে অহীমাসের মত দৌড়াচ্ছে বলে মনে হয়।” রাজা বললেন, “লোকটি ভাল মানুষ, সে ভাল খবরই আনছে।” অহীমাস রাজাকে জোরে ডেকে বলল, “সব ভাল।” তারপর সে রাজার সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বলল, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক। আমার প্রভু মহারাজের বিরুদ্ধে যারা হাত তুলেছিল তাদের তিনি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।” রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “যুবক অবশালোম নিরাপদে আছে তো?” উত্তরে অহীমাস বলল, “যোয়াব যখন মহারাজের দাসকে ও আমাকে পাঠাতে যাচ্ছিলেন তখন আমি ভীষণ গোলমাল হতে দেখেছি। কিন্তু সেটা যে কিসের জন্য তা আপনার দাস আমি জানি না।” রাজা বললেন, “এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা কর।” কাজেই সে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সেই কূশীয় সেখানে পৌঁছে বলল, “আমার প্রভু মহারাজ, ভাল খবরই এনেছি। যারা আপনার বিরুদ্ধে উঠেছিল তাদের সকলের উপরে সদাপ্রভু আজ আপনাকে জয় দান করেছেন।” রাজা সেই কূশীয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “যুবক অবশালোম নিরাপদে আছে তো?” উত্তরে সেই কূশীয় বলল, “আমার প্রভু মহারাজের শত্রুরা এবং যারা আপনার ক্ষতি করবার জন্য উঠবে তাদের সকলের অবস্থা যেন সেই যুবকের মত হয়।” এই কথা শুনে রাজার মন দুঃখে ভরে গেল। তিনি ফটকের উপরকার ঘরে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন। তিনি এই কথা বলতে বলতে গেলেন, “হায়, আমার ছেলে অবশালোম, আমার ছেলে, আমার ছেলে অবশালোম! তোমার বদলে যদি আমি মরতে পারতাম! হায়, অবশালোম, আমার ছেলে, আমার ছেলে!” পরে যোয়াবকে জানানো হল যে, অবশালোমের জন্য রাজা কাঁদছেন আর শোক করছেন। এই কথা শুনে সেই জয়ের দিনটা সৈন্যদলের কাছে একটা শোকের দিন হয়ে উঠল, কারণ সেই দিনই সৈন্যেরা শুনতে পেল যে, রাজা তাঁর ছেলের জন্য দুঃখ করছেন। যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যাওয়া লোকেরা যেমন লজ্জায় চুপি চুপি ফিরে আসে তেমনি করেই দায়ূদের সৈন্যেরা সেই দিন চুপি চুপি শহরে গিয়ে ঢুকল। রাজা তাঁর মুখ ঢেকে এই বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন, “হায়, আমার ছেলে অবশালোম! হায়, অবশালোম, আমার ছেলে, আমার ছেলে!” তখন যোয়াব ঘরের ভিতরে গিয়ে রাজাকে বললেন, “যারা আপনার জীবন, আপনার ছেলেমেয়েদের জীবন এবং আপনার স্ত্রী ও উপস্ত্রীদের জীবন রক্ষা করেছে আপনি আজ আপনার সেই সব লোকদের অপমান করলেন। যারা আপনাকে ঘৃণা করে তাদেরই আপনি ভালবাসছেন, আর যারা আপনাকে ভালবাসে তাদের আপনি ঘৃণা করছেন। আজকে আপনি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সেনাপতিরা ও তাদের লোকেরা আপনার কাছে কিছুই নয়। আমি দেখতে পাচ্ছি, আমরা সবাই মরে গিয়ে যদি অবশালোম বেঁচে থাকত তাহলে আপনি খুশী হতেন। এখন আপনি বাইরে গিয়ে আপনার লোকদের উৎসাহ দিন। আমি সদাপ্রভুকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আপনি যদি সৈন্যদের কাছে না যান তবে আজ রাতে একজন লোকও আপনার সংগে থাকবে না। আপনার অল্প বয়স থেকে আজ পর্যন্ত আপনার উপর যত অমংগল ঘটেছে সেগুলোর চেয়ে এটাই হবে বড় অমংগল।” তখন রাজা উঠে শহরের ফটকের কাছে গিয়ে বসলেন। লোকেরা যখন জানতে পারল যে, রাজা ফটকের কাছে বসেছেন তখন সবাই তাঁর কাছে আসল। এদিকে অবশালোমের পক্ষের ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা যে যার বাড়ীতে পালিয়ে গিয়েছিল। ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে লোকেরা তর্কাতর্কি করে বলতে লাগল, “রাজা শত্রুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন; পলেষ্টীয়দের হাত থেকে তিনিই আমাদের উদ্ধার করেছেন। কিন্তু এখন তিনি অবশালোমের জন্যই দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। যাঁকে আমরা আমাদের উপরে রাজত্ব করবার জন্য অভিষেক করেছিলাম সেই অবশালোম যুদ্ধে মারা গেছেন। তাহলে রাজাকে ফিরিয়ে আনবার জন্য তোমরা কোন কিছু বলছ না কেন?” গোটা ইস্রায়েল দেশে যা বলাবলি হচ্ছে তা রাজার কানে গিয়ে পৌঁছাল। সেইজন্য রাজা দায়ূদ পুরোহিত সাদোক ও অবিয়াথরের কাছে এই কথা বলে পাঠালেন, “আপনারা যিহূদার বৃদ্ধ নেতাদের এই কথা জিজ্ঞাসা করুন, ‘কেন আপনারা রাজাকে তাঁর রাজবাড়ীতে ফিরিয়ে আনতে পিছিয়ে রয়েছেন? আপনারা তো তাঁরই ভাই, তাঁর নিজেরই রক্ত-মাংস। তাহলে রাজাকে ফিরিয়ে আনতে কেন আপনারা পিছিয়ে রয়েছেন?’ আপনারা আমার হয়ে অমাসাকে এই কথা বলুন, ‘তুমিও কি আমার রক্ত-মাংস নও? এখন থেকে যোয়াবের জায়গায় তুমি যদি আমার সৈন্যদলের সেনাপতি না হও তবে ঈশ্বরই যেন আমাকে শাস্তি দেন, আর তা ভীষণভাবেই দেন।’ ” এইভাবে দায়ূদ যিহূদার সমস্ত লোকের মন মাত্র একটি লোকের মনের মত করে জয় করে নিলেন। তারা রাজাকে এই কথা বলে পাঠাল, “আপনি ও আপনার সমস্ত লোক ফিরে আসুন।” তখন রাজা ফিরবার পথে যর্দন নদী পর্যন্ত আসলেন। যিহূদার লোকেরা রাজার সংগে দেখা করে তাঁকে যর্দন নদী পার করে নিয়ে আসবার জন্য গিল্‌গলে এসেছিল। বহুরীম গ্রামের বিন্যামীন-গোষ্ঠীর গেরার ছেলে শিমিয়ি দেরি না করে যিহূদার লোকদের সাথে রাজা দায়ূদের সংগে দেখা করতে আসল। তার সংগে ছিল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর এক হাজার লোক এবং শৌলের পরিবারের চাকর সীবঃ ও তার পনেরজন ছেলে আর বিশজন চাকর। রাজা যর্দন নদী পার হওয়ার আগেই তারা তাড়াতাড়ি করে যর্দন নদীর কাছে গিয়ে উপস্থিত হল। রাজার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসবার জন্য এবং রাজার ইচ্ছামত কাজ করবার জন্য তারা হেঁটে পার হওয়ার জায়গা দিয়ে নদী পার হল। রাজা যখন যর্দন পার হবেন ঠিক সেই সময় গেরার ছেলে শিমিয়ি এসে রাজার সামনে উবুড় হয়ে পড়ে বলল, “আমার প্রভু যেন আমার দোষ না ধরেন। আমার প্রভু মহারাজ যেদিন যিরূশালেম ছেড়ে যান সেই দিন আপনার দাস আমি যে অন্যায় করেছিলাম তা যেন আপনি মনে না রাখেন। মহারাজ যেন তাঁর মন থেকে তা দূর করে দেন। আমি জানি যে, আমি পাপ করেছি। সেইজন্য আজ যোষেফের বংশের মধ্যে আমিই সকলের আগে আমার প্রভু মহারাজের সংগে দেখা করবার জন্য এখানে এসেছি।” তখন সরূয়ার ছেলে অবীশয় বললেন, “সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোককে শিমিয়ি অভিশাপ দিয়েছিল বলে কি তাকে মেরে ফেলা উচিত নয়?” উত্তরে দায়ূদ বললেন, “হে সরূয়ার ছেলেরা, এই বিষয়ে তোমাদের সংগে আমার সম্বন্ধ কি? আজ কেন তোমরা আমার বিরুদ্ধে যাচ্ছ? আজ কি ইস্রায়েলে কাউকে মেরে ফেলা উচিত? আমি কি এই কথা জানি না যে, আজও আমি ইস্রায়েলীয়দের রাজা?” তারপর রাজা প্রতিজ্ঞা করে শিমিয়িকে বললেন, “তোমাকে মেরে ফেলা হবে না।” এর পর শৌলের নাতি মফীবোশৎ রাজার সংগে দেখা করবার জন্য আসল। রাজা চলে যাবার পর থেকে তাঁর নিরাপদে ফিরে আসবার দিন পর্যন্ত সে নিজের পায়ের যত্ন করে নি, দাড়ি ছাঁটে নি এবং কাপড়-চোপড়ও ধোয় নি। রাজা যিরূশালেমে ফিরে আসলে পর মফীবোশৎ তাঁর সংগে দেখা করবার জন্য আসল। তখন রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মফীবোশৎ, তুমি আমার সংগে কেন গেলে না?” সে বলল, “আমার প্রভু মহারাজ, আপনার দাস আমি খোঁড়া, তাই বলেছিলাম, ‘আমার গাধার উপর গদি চাপিয়ে আমি তার উপরে চড়ে রাজার সংগে যাব।’ কিন্তু আমার চাকর সীবঃ আমার সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। আমার প্রভু মহারাজের কাছে সে আমার দুর্নাম করেছে। আমার প্রভু মহারাজ ঈশ্বরের একজন দূতের মত; তাই আমার উপর আপনার যা খুশী তা-ই করুন। আমার দাদুর বংশধরেরা আমার প্রভু মহারাজের কাছে মৃত্যুর উপযুক্ত, কিন্তু তবুও আপনার যে লোকেরা আপনার টেবিলে খেতে বসে আপনি আপনার এই দাসকেও তাদের মধ্যে একটা জায়গা দিয়েছিলেন। তাহলে মহারাজের কাছে আর অনুরোধ করবার আমার কি অধিকার আছে?” রাজা তাকে বললেন, “তোমার আর কিছু বলবার দরকার নেই। তুমি আর সীবঃ জমাজমি ভাগ করে নাও।” মফীবোশৎ রাজাকে বলল, “সে-ই সব কিছু নিক। আমার প্রভু মহারাজ নিরাপদে বাড়ী ফিরে এসেছেন সেটাই আমার পক্ষে যথেষ্ট।” রাজা যিরূশালেমে ফিরে আসবার আগে গিলিয়দীয় বর্সিল্লয় রোগলীম থেকে এসে রাজাকে বিদায় দেবার জন্য তাঁর সংগে যর্দনের পারে এসেছিলেন। বর্সিল্লয় খুব বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন; তাঁর বয়স ছিল আশি বছর। রাজা যখন মহনয়িমে ছিলেন তখন তিনিই তাঁর জন্য খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন, কারণ তিনি খুব ধনী লোক ছিলেন। রাজা বর্সিল্লয়কে বললেন, “আমার সংগে পার হয়ে এসে যিরূশালেমে আমার কাছে থাকুন। আমিই আপনাকে পালন করব।” কিন্তু উত্তরে বর্সিল্লয় রাজাকে বললেন, “আমি আর কয় বছরই বা বাঁচব যে, আমি রাজার সংগে যিরূশালেমে যাব? আমার বয়স এখন আশি বছর। কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ তা কি এখন আর আমি বলতে পারি? আপনার দাস আমি এখন যা খাই তার স্বাদ কি আমি বুঝতে পারি? গায়ক-গায়িকাদের গান কি আমি এখনও শুনতে পাই? আপনার এই দাস কেন আমার প্রভু মহারাজের একটা বাড়তি বোঝা হবে? মহারাজ কেন আমাকে এইভাবে পুরস্কার দেবেন? না, না, আমি মাত্র আপনার সংগে যর্দন পার হয়ে যাব, তারপর আমাকে ফিরে যেতে দিন যাতে আমি নিজের বাড়ীতে আমার মা-বাবার কবরের কাছে মরতে পারি। এই দেখুন, আপনার দাস কিম্‌হম; সে-ই আপনার সংগে যর্দন পার হয়ে যাক। আপনার যা ভাল বলে মনে হয় তার প্রতি আপনি তা-ই করবেন।” রাজা বললেন, “ঠিক আছে, কিম্‌হম আমার সংগে নদী পার হয়ে যাবে, আর আপনি যা চান আমি তার প্রতি তা-ই করব। এছাড়া আপনি আমার কাছ থেকে যা চান আপনার জন্য আমি তা-ই করব।” এর পর সমস্ত লোক নদী পার হয়ে গেল, তারপর রাজা নদী পার হলেন। রাজা বর্সিল্লয়কে চুম্বন করে আশীর্বাদ করলেন আর বর্সিল্লয় আবার নদী পার হয়ে নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। এইভাবে যিহূদার সমস্ত লোক এবং ইস্রায়েলের কিছু লোক রাজাকে নদী পার করে নিয়ে আসল। তারপর রাজা গিল্‌গলে গেলেন আর কিম্‌হমও তাঁর সংগে গেল। ইস্রায়েলের বাকী লোকেরা রাজার কাছে এসে বলল, “কেন আমাদের ভাই যিহূদার লোকেরা আপনাকে চুরি করে নিয়ে আসল? তারা আপনাকে, আপনার পরিবার ও আপনার সংগের সব লোকদের নদী পার করে নিয়ে আসল কেন?” উত্তরে যিহূদার সব লোকেরা ইস্রায়েলের লোকদের বলল, “রাজার সংগে আমাদের নিকট সম্বন্ধ রয়েছে বলে আমরা তা করেছি। তোমরা কেন এতে রাগ করছ? আমরা কি রাজার কোন খাবার থেকে কিছু খেয়েছি? নাকি তিনি আমাদের কিছু উপহার দিয়েছেন?” উত্তরে ইস্রায়েলের লোকেরা যিহূদার লোকদের বলল, “আমরা দশ গোষ্ঠী বলে রাজা দায়ূদের উপরে তোমাদের চেয়ে আমাদের অধিকার বেশী। কাজেই তোমরা কেন আমাদের এইভাবে তুচ্ছ করছ? আমাদের রাজাকে ফিরিয়ে আনবার কথা কি আমরাই প্রথমে বলি নি?” কিন্তু ইস্রায়েলের লোকদের চেয়ে যিহূদার লোকদের কথা বেশী কড়া বলে মনে হল। বিন্যামীন-গোষ্ঠীর বিখ্রির ছেলে শেবঃ নামে একজন দুষ্ট লোক তখন সেখানে ছিল। সে শিংগা বাজিয়ে বলল, “দায়ূদের উপর আমাদের কোন দাবি নেই, যিশয়ের ছেলের উপর কোন অধিকার নেই। হে ইস্রায়েল, তোমরা যে যার বাড়ীতে ফিরে যাও।” তখন ইস্রায়েলের সমস্ত লোক দায়ূদকে ছেড়ে বিখ্রির ছেলে শেবের পিছনে গেল। কিন্তু যর্দন থেকে যিরূশালেম পর্যন্ত সমস্ত পথটাই যিহূদার লোকেরা রাজার সংগে সংগে গেল। দায়ূদ যিরূশালেমে তাঁর নিজের বাড়ীতে ফিরে আসলে পর যে দশজন উপস্ত্রীকে তিনি রাজবাড়ী দেখাশোনা করবার জন্য রেখে গিয়েছিলেন তাদের তিনি একটা বাড়ীতে রাখলেন এবং বাড়ীটা পাহারা দেবার ব্যবস্থা করলেন। তিনি তাদের খাওয়া-পরা দিলেন কিন্তু আর তাদের সংগে থাকলেন না। সেখানে তারা বিধবা হিসাবে মৃত্যু পর্যন্ত আটক রইল। এর পর রাজা অমাসাকে বললেন, “তিন দিনের মধ্যে তুমি যিহূদার লোকদের আমার কাছে ডেকে আনবে আর তুমিও এখানে থাকবে।” অমাসা যিহূদার লোকদের ডাকতে গেলেন বটে কিন্তু রাজা এইজন্য যে সময় ঠিক করে দিয়েছিলেন তার চেয়ে তিনি বেশী সময় নিলেন। তখন দায়ূদ অবীশয়কে বললেন, “অবশালোম আমাদের যত না ক্ষতি করেছে তার চেয়ে এখন বেশী ক্ষতি করবে এই বিখ্রির ছেলে শেবঃ। এখন তুমি আমার লোকদের নিয়ে তার পিছনে তাড়া করে যাও। নইলে সে কোন দেয়াল-ঘেরা শহর খুঁজে নিয়ে আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে।” তখন যোয়াব ও তাঁর লোকেরা, করেথীয় ও পলেথীয়েরা এবং বাকী যোদ্ধারা অবীশয়ের অধীনে বিখ্রির ছেলে শেবঃকে তাড়া করবার জন্য যিরূশালেম থেকে বের হয়ে গেল। তারা গিবিয়োনের বড় পাথরটার কাছে উপস্থিত হলে পর অমাসার সংগে তাদের দেখা হল। যোয়াবের পরনে ছিল তখন সৈনিকের পোশাক এবং তাঁর কোমরে কোমর-বাঁধনির সংগে বাঁধা খাপের মধ্যে ছিল ছোরা। তিনি এগিয়ে গেলে খাপ থেকে ছোরাটা মাটিতে পড়ে গেল। যোয়াব অমাসাকে বললেন, “ভাই, কেমন আছ?” এই বলে তাঁকে চুম্বন করবার জন্য তিনি ডান হাত দিয়ে তাঁর দাড়ি ধরলেন। যোয়াবের হাতে যে সেই ছোরাটা ছিল সেই দিকে অমাসা খেয়াল করে নি। যোয়াব সেই ছোরা তাঁর পেটে ঢুকিয়ে দিলেন। তাতে তাঁর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে মাটিতে পড়ল। অমাসাকে আর আঘাত করবার দরকার হল না। তিনি মারা গেলেন। এর পর যোয়াব ও তাঁর ভাই অবীশয় বিখ্রির ছেলে শেবের পিছনে তাড়া করে গেলেন। যোয়াবের একজন লোক অমাসার মৃতদেহের কাছে দাঁড়িয়ে বলল, “যে যোয়াবকে ভালবাসে এবং যে দায়ূদের পক্ষের লোক সে যেন যোয়াবের পিছনে পিছনে যায়।” অমাসার দেহটা তখন রাস্তার মাঝখানে রক্তের মধ্যে পড়ে ছিল। যোয়াবের সেই লোকটি দেখল যে, সৈন্যেরা সবাই অমাসার কাছে এসে থেমে যাচ্ছে, তাই সে অমাসাকে রাস্তা থেকে টেনে একটা মাঠে নামিয়ে নিয়ে গেল এবং একখানা কাপড় দিয়ে তাকে ঢেকে দিল। অমাসাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিলে পর সব লোকেরা যোয়াবের পিছনে পিছনে বিখ্রির ছেলে শেবঃকে তাড়া করতে গেল। শেবঃ ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর এলাকার মধ্য দিয়ে এবং বেরীয়দের সমস্ত এলাকা দিয়ে আবেল-বৈৎমাখা পর্যন্ত গেল। সেখানে লোকেরা জড়ো হয়ে শেবের পিছনে পিছনে শহরে ঢুকল। যোয়াব তার দিকে এগিয়ে গেলে পর সে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি কি যোয়াব?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমি যোয়াব।” স্ত্রীলোকটি বলল, “আপনার দাসীর কথা শুনুন।” তিনি বললেন, “শুনছি।” স্ত্রীলোকটি বলল, “আগেকার দিনে লোকে বলত, ‘আবেলে গিয়ে তোমার প্রশ্নের উত্তর জেনে নাও।’ আর এইভাবে তারা সব ব্যাপারের মীমাংসা করত। আমরা ইস্রায়েলের মধ্যে শান্তিপ্রিয় ও বিশ্বস্ত। আপনি ইস্রায়েলের মধ্যে মায়ের মত এই শহরটাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছেন। সদাপ্রভুর সম্পত্তি এই ইস্রায়েলীয়দের কেন আপনি গিলে ফেলবার চেষ্টা করছেন?” উত্তরে যোয়াব বললেন, “গিলে ফেলা বা ধ্বংস করবার কাজ আমার থেকে দূরে থাকুক, দূরে থাকুক। ব্যাপারটা ঐরকম নয়। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার বিখ্রির ছেলে শেবঃ নামে একজন লোক রাজা দায়ূদের বিরুদ্ধে হাত তুলেছে। সেই লোকটাকে কেবল আমার হাতে তুলে দাও, তাহলে আমি এই শহর থেকে চলে যাব।” স্ত্রীলোকটি যোয়াবকে বলল, “দেয়ালের উপর দিয়ে তার মাথাটা আপনার কাছে ছুঁড়ে দেওয়া হবে।” তারপর সেই স্ত্রীলোকটি সমস্ত লোকের কাছে গিয়ে জ্ঞানপূর্ণ উপদেশ দিল। লোকেরা বিখ্রির ছেলে শেবের মাথাটা কেটে নিয়ে যোয়াবের কাছে ছুঁড়ে ফেলে দিল। যোয়াব তখন শিংগা বাজিয়ে দিলেন আর তাঁর লোকেরা শহরের কাছ থেকে চলে গিয়ে প্রত্যেকে যে যার বাড়ীতে চলে গেল। যোয়াব যিরূশালেমে রাজার কাছে ফিরে গেলেন। যোয়াব ছিলেন ইস্রায়েলের গোটা সৈন্যদলের প্রধান সেনাপতি আর যিহোয়াদার ছেলে বনায় ছিলেন দায়ূদের দেহরক্ষী করেথীয় ও পলেথীয়দের প্রধান; যাদের কাজ করতে বাধ্য করা হত তাদের দেখাশোনার ভার ছিল অদোরামের উপর; অহীলূদের ছেলে যিহোশাফট ছিলেন ইতিহাস লেখক; শবা ছিলেন রাজার লেখক; সাদোক ও অবিয়াথর ছিলেন পুরোহিত এবং যায়ীরীয় ঈরা ছিলেন দায়ূদের পরামর্শদাতা পুরোহিত। দায়ূদের রাজত্বের সময় পর পর তিন বছর দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সেইজন্য দায়ূদ সদাপ্রভুর কাছে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “এটা হয়েছে শৌল ও তার বংশের জন্য। তারা রক্তপাতের দোষে দোষী; শৌল গিবিয়োনীয়দের মেরে ফেলেছিল।” রাজা তখন গিবিয়োনীয়দের ডেকে তাদের সংগে কথা বললেন। গিবিয়োনীয়েরা ইস্রায়েলীয় ছিল না। আসলে তারা ছিল ইমোরীয়দের বেঁচে থাকা লোক। তাদের ধ্বংস করবে না বলে ইস্রায়েলীয়েরা শপথ করেছিল, কিন্তু ইস্রায়েল ও যিহূদার প্রতি বিশেষ আগ্রহের জন্য শৌল তাদের সবাইকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করেছিল। দায়ূদ গিবিয়োনীয়দের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি তোমাদের জন্য কি করব? কিভাবে আমি ক্ষতিপূরণ করতে পারি যাতে তোমরা সদাপ্রভুর সম্পত্তি ইস্রায়েলীয়দের আশীর্বাদ কর?” উত্তরে গিবিয়োনীয়েরা তাঁকে বলল, “শৌল বা তার বংশের কাছে আমাদের যে দাবি তা সোনা বা রূপার ব্যাপার নয় কিম্বা ইস্রায়েলীয়দের মেরে ফেলবার ব্যাপারও নয়।” দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “তবে তোমরা আমাকে তোমাদের জন্য কি করতে বল?” উত্তরে তারা রাজাকে বলল, “যে লোকটি আমাদের ধ্বংস করেছে এবং ইস্রায়েলের সীমার মধ্য থেকে আমাদের মুছে ফেলবার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে কুমতলব করেছে, তার বংশের সাতজন পুরুষ লোককে আমাদের হাতে তুলে দিন। আমরা সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া সেই লোকের, অর্থাৎ শৌলের শহর গিবিয়াতে সদাপ্রভুকে সাক্ষী রেখে তাদের মেরে ফেলব এবং সকলের সামনে তাদের দেহগুলো ফেলে রাখব।” এতে রাজা বললেন, “আমি তোমাদের হাতে তাদের তুলে দেব।” শৌলের নাতিকে, অর্থাৎ যোনাথনের ছেলে মফীবোশতকে রাজা বাঁচিয়ে রাখলেন, কারণ শৌলের ছেলে যোনাথনের কাছে দায়ূদ সদাপ্রভুকে সাক্ষী রেখে একটা শপথ করেছিলেন। অয়ার মেয়ে রিসপা চট নিয়ে একটা পাথরের উপরে তার নিজের জন্য বিছিয়ে রাখল। প্রথম ফসল কাটবার সময় থেকে শুরু করে যতদিন না সেই দেহগুলোর উপর আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ল ততদিন পর্যন্ত সে দিনের বেলায় পাখীদের এবং রাতের বেলায় বুনো জন্তুদের সেই দেহগুলো ছুঁতে দিল না। শৌলের উপস্ত্রী অয়ার মেয়ে রিসপা যা করেছে তা দায়ূদকে বলা হল। দায়ূদ তখন যাবেশ-গিলিয়দের লোকদের কাছ থেকে শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনের হাড়গুলো তুলে আনলেন। পলেষ্টীয়েরা গিল্‌বোয়ে শৌলকে মেরে ফেলবার পর তাঁদের দু’জনের দেহ বৈৎশানের শহর-চকে টাংগিয়ে দিয়েছিল। যাবেশ-গিলিয়দের লোকেরা সেখান থেকে দেহগুলো চুরি করে এনেছিল। দায়ূদ সেখান থেকে শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনের হাড়গুলো নিয়ে আসলেন। যাদের সকলের সামনে মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের হাড়গুলোও জড়ো করা হল। দায়ূদের লোকেরা শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনের হাড় বিন্যামীন এলাকার সেলাতে তাঁর বাবা কীশের কবরে রাখল। রাজার আদেশ মতই তারা সব কিছু করল। তার পরে দেশের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হলে পর তিনি উত্তর দিলেন। পলেষ্টীয় এবং ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে আবার যুদ্ধ শুরু হল। দায়ূদ তাঁর লোকদের নিয়ে পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। যুদ্ধ করতে করতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। তখন যিশ্‌বী-বনোব নামে একজন রফায়ীয় নতুন সাজে সেজে দায়ূদকে মেরে ফেলতে আসল। তার বর্শার ব্রোঞ্জের মাথাটার ওজন ছিল প্রায় চার কেজি। কিন্তু সরূয়ার ছেলে অবীশয় দায়ূদকে রক্ষা করলেন। তিনি সেই পলেষ্টীয়কে আঘাত করে মেরে ফেললেন। তখন দায়ূদের লোকেরা শপথ করে দায়ূদকে বলল, “আপনি আর কখনও আমাদের সংগে যুদ্ধে যাবেন না, ইস্রায়েলের প্রদীপটা আপনি নিভিয়ে দেবেন না।” এর পরে গোবে পলেষ্টীয়দের সংগে আবার একটা যুদ্ধ হল। সেই সময় হূশাতীয় সিব্বখয় সফ নামে একজন রফায়ীয়কে মেরে ফেলল। গোবে পলেষ্টীয়দের সংগে আর একটা যুদ্ধে বৈৎলেহমীয় যারে-ওরগীমের ছেলে ইল্‌হানন গাতীয় গলিয়াত্‌কে মেরে ফেলল। এই গলিয়াতের বর্শা ছিল তাঁতীদের বীমের মত। আর একটা যুদ্ধ গাতে হয়েছিল। সেই যুদ্ধে একজন লম্বা-চওড়া লোক ছিল যার দু’হাতে ও দু’পায়ে ছয়টা করে মোট চব্বিশটা আংগুল ছিল। সে-ও ছিল একজন রফায়ীয়। সে যখন ইস্রায়েল জাতিকে টিট্‌কারি দিল তখন দায়ূদের ভাই শিমিয়ের ছেলে যোনাথন তাকে মেরে ফেলল। এই চারজন ছিল গাতে বাসকারী রফায়ীয়। দায়ূদ ও তাঁর লোকদের হাতে এরা মারা পড়েছিল। সদাপ্রভু যখন দায়ূদকে শৌল ও তাঁর অন্যান্য শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করলেন তখন তিনি সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই গান গেয়েছিলেন: সদাপ্রভুই আমার উঁচু পাহাড়, আমার দুর্গ ও আমার মুক্তিদাতা; আমার ঈশ্বরই আমার উঁচু পাহাড়, তাঁরই মধ্যে আমি আশ্রয় নিই। তিনিই আমার ঢাল, আমার রক্ষাকারী শিং, আমার উঁচু দুর্গ, আমার আশ্রয়-স্থান। অত্যাচারী লোকদের হাত থেকে তুমি আমাকে রক্ষা কর। সদাপ্রভু প্রশংসার যোগ্য, আমি তাঁকে ডাকি; তাতে আমার শত্রুদের হাত থেকে আমি রক্ষা পাই। মৃত্যুর ঢেউ আমাকে ঘিরে ধরেছিল, ধ্বংসের স্রোতে আমি তলিয়ে গিয়েছিলাম। মৃতস্থানের দড়িতে আমি বাঁধা পড়েছিলাম, আমার জন্য পাতা হয়েছিল মৃত্যুর ফাঁদ। আমি এই বিপদে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডাকলাম এবং সাহায্যের জন্য তাঁর কাছে কান্নাকাটি করলাম। তাঁর বাসস্থান থেকে তিনি আমার গলার স্বর শুনলেন; আমার কান্না তাঁর কানে পৌঁছাল। তখন পৃথিবী কেঁপে উঠল আর টলতে লাগল, কেঁপে উঠল আকাশের ভিত্তি; তাঁর ক্রোধে সেগুলো কাঁপতে থাকল। তাঁর নাক থেকে ধূমা উপরে উঠল, তাঁর মুখ থেকে ধ্বংসকারী আগুন বেরিয়ে আসল, তাঁর মুখের আগুনে কয়লা জ্বলে উঠল। তিনি আকাশ নুইয়ে নেমে আসলেন; তাঁর পায়ের নীচে ছিল ঘন কালো মেঘ। তিনি করূবে চড়ে উড়ে আসলেন, দেখা দিলেন বাতাসের ডানায় ভর করে। তিনি অন্ধকার দিয়ে নিজেকে ঘিরে ফেললেন; তাঁর চারপাশে রইল আকাশের ঘন কালো বৃষ্টির মেঘ। তাঁর আলোময় উপস্থিতির সামনে বিদ্যুৎ চম্‌কে চম্‌কে উঠতে লাগল। সদাপ্রভু আকাশ থেকে গর্জন করলেন; মহান ঈশ্বরের স্বর শোনা গেল। তিনি তীর ছুঁড়ে শত্রুদের ছড়িয়ে ফেললেন আর বিদ্যুৎ চম্‌কিয়ে তাদের বিশৃঙ্খল করলেন। সদাপ্রভুর ধমকে আর নিঃশ্বাসের ঝাপ্‌টায় সাগরের তলা দেখা গেল, পৃথিবীর ভিতরটা বেরিয়ে পড়ল। তিনি উপর থেকে হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরলেন, গভীর জলের মধ্য থেকে আমাকে টেনে তুললেন। আমার শক্তিমান শত্রুর হাত থেকে তিনি আমাকে বাঁচালেন; বাঁচালেন বিপক্ষদের হাত থেকে যাদের শক্তি আমার চেয়েও বেশী। বিপদের দিনে তারা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, কিন্তু সদাপ্রভুই আমাকে ধরে রাখলেন। তিনি আমাকে একটা খোলা জায়গায় বের করে আনলেন; আমার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন বলেই তিনি আমাকে উদ্ধার করলেন। আমার ন্যায় কাজ অনুসারেই সদাপ্রভু আমাকে দান করলেন, আমার কাজের শুচিতা অনুসারে পুরস্কার দিলেন; কারণ সদাপ্রভুর পথেই আমি চলাফেরা করেছি; মন্দ কাজ করে আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে সরে যাই নি। তাঁর সমস্ত আইন-কানুন আমার সামনে রয়েছে; তাঁর নিয়ম থেকে আমি সরে যাই নি। তাঁর সামনে আমি নির্দোষ ছিলাম, আমি পাপ থেকে দূরে থেকেছি। তাই সদাপ্রভু আমাকে পুরস্কার দিয়েছেন তাঁর চোখে আমার ন্যায় কাজ অনুসারে, আমার শুচিতা অনুসারে। তুমি বিশ্বস্তদের সংগে বিশ্বস্ত ব্যবহার কর, নির্দোষদের সংগে কর নির্দোষ ব্যবহার, খাঁটিদের সংগে খাঁটি ব্যবহার কর, আর কুটিলদের দেখাও তোমার বুদ্ধির কৌশল। তুমি দুঃখীদের রক্ষা করে থাক, আর অহংকারীদের নীচে নামাবার জন্য তোমার চোখ তাদের দিকে আছে। হে সদাপ্রভু, তুমিই আমার বাতি; তুমিই আমার অন্ধকারকে আলো করে থাক। তোমার সাহায্যেই আমি সৈন্যদলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি, আর আমার ঈশ্বরের সাহায্যে লাফ দিয়ে দেয়াল পার হতে পারি। ঈশ্বরের পথে কোন খুঁত নেই; সদাপ্রভুর বাক্য খাঁটি বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনিই তাঁর মধ্যে আশ্রয় গ্রহণকারী সকলের ঢাল। একমাত্র সদাপ্রভু ছাড়া ঈশ্বর আর কে? আমাদের ঈশ্বর ছাড়া আর কি কোন আশ্রয়-পাহাড় আছে? ঈশ্বরই আমার শক্ত আশ্রয়; তিনি আমার চলার পথ নিখুঁত করেছেন। তিনি আমাকে হরিণীর মত করে লাফিয়ে চলার শক্তি দিয়েছেন; সব উঁচু জায়গায় তিনিই আমাকে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকেই আমার হাত যুদ্ধ করতে শিখেছে, তাই আমার হাত ব্রোঞ্জের ধনুক বাঁকাতে পারে। হে সদাপ্রভু, তোমার রক্ষাকারী ঢাল তুমি আমাকে দিয়েছ; তোমার যত্ন দিয়ে তুমি আমাকে মহান করেছ। তুমি আমার চলার পথ চওড়া করেছ, তাই আমার পায়ে উছোট লাগে নি। আমার শত্রুদের তাড়া করে আমি তাদের ধ্বংস করেছি; তারা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আমি পিছন ফিরি নি। আমি তাদের ধ্বংস করেছি, তাদের চুরমার করে দিয়েছি, যাতে তারা আর উঠতে না পারে; তারা আমার পায়ের তলায় পড়েছে। তুমিই আমার কোমরে যুদ্ধ করার শক্তি দিয়েছ, আমার বিপক্ষদের আমার পায়ে নত করেছ। আমার শত্রুদের তুমি আমার কাছ থেকে পালাতে বাধ্য করেছ; যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের আমি ধ্বংস করেছি। তারা সাহায্যের জন্য তাকিয়ে রয়েছে, কিন্তু কেউ তাদের রক্ষা করতে আসে নি। তারা সদাপ্রভুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, কিন্তু তিনিও তাদের উত্তর দেন নি। পৃথিবীর ধুলার মত আমি তাদের গুঁড়া করেছি; রাস্তার কাদা-মাটির মত পায়ে মাড়িয়ে আমি তাদের চুরমার করেছি। হে সদাপ্রভু, আমার লোকদের বিদ্রোহ থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার করেছ, অন্য জাতিদের উপর আমাকে কর্তা হিসাবে রেখেছ; আমি যাদের চিনতাম না তারাও আমার অধীন হয়েছে। বিরুদ্ধ মনোভাব নিয়ে বিদেশীরা আমার বাধ্য হয়; আমার কথা শুনলেই তারা আমার অধীনতা স্বীকার করে। তারা নিরাশ হয়ে পড়ে; তারা কাঁপতে কাঁপতে দুর্গ থেকে বের হয়। সদাপ্রভু জীবন্ত। আমার আশ্রয়-পাহাড়ের গৌরব হোক। আমার ঈশ্বর, যিনি আমার রক্ষাকারী পাহাড়, তাঁর সম্মান বৃদ্ধি হোক। তিনিই অন্য জাতিদের আমার অধীনে আনেন আর আমার হয়ে তাদের পাওনা শাস্তি দেন। তিনি শত্রুদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেন। হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে শত্রুদের উপরে তুলেছ, অত্যাচারী লোকদের হাত থেকে তুমিই আমাকে রক্ষা করেছ। হে সদাপ্রভু, এইজন্য অন্য জাতিদের মধ্যে আমি তোমার গৌরব প্রকাশ করব আর তোমার সুনাম গাইব। সদাপ্রভু তাঁর রাজাকে অনেকবার মহাজয় দান করেন; হ্যাঁ, তাঁর অভিষেক করা লোকের প্রতি, দায়ূদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি, তিনি চিরকাল তাঁর অটল ভালবাসা দেখান। যিশয়ের ছেলে দায়ূদের শেষ কথা এই: “যাঁকে তুলে ধরা হয়েছে, যাকোবের ঈশ্বর যাঁকে অভিষেক করেছেন, যিনি ইস্রায়েলের মধ্যে মধুর গায়ক, তিনি বলছেন, সদাপ্রভুর আত্মা আমার মধ্য দিয়ে কথা বলেছেন, আমার মুখে আছে তাঁর বাক্য। ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ইস্রায়েলের আশ্রয়-পাহাড় আমাকে বলেছেন, ‘যে লোক সৎভাবে লোকদের শাসন করে আর ঈশ্বরকে ভয় করে, সে মেঘশূন্য ভোরে ওঠা সূর্যের আলোর মত; বৃষ্টির পরে সূর্যের যে আলোতে মাটি থেকে ঘাস গজায় সে তারই মত।’ ঈশ্বরের কাছে আমার বংশ কি তেমন নয়? আমার জন্য তিনি তো একটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করেছেন। সেই ব্যবস্থার সব কথা ঠিকভাবে সাজানো এবং সুরক্ষিত। আমার উদ্ধার তিনি সফল করবেন, আমার ইচ্ছা তিনি পূরণ করবেন। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা সবাই উপ্‌ড়ে ফেলা কাঁটার মত, যাদের হাত দিয়ে ধরা যায় না। যে লোক তাদের ধরতে যায় তাকে ব্যবহার করতে হয় লোহার অস্ত্রশস্ত্র কিম্বা বর্শা; তাই তারা যেখানে আছে সেখানেই তাদের পুড়িয়ে ফেলা হবে।” দায়ূদের শক্তিশালী লোকদের নাম এই: তখমোনীয় যোশেব-বশেবৎ নাম-করা তিনজন বীরের মধ্যে প্রধান ছিলেন; একটা যুদ্ধে তিনি আটশো লোককে মেরে ফেলেছিলেন বলে তাঁকে ইস্‌নীয় আদীনো বলা হত। তাঁর পরের জন ছিলেন ইলিয়াসর। ইনি ছিলেন অহোহীয়ের বংশের দোদার ছেলে। যখন পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধের জন্য জড়ো হয়েছিল তখন তাদের টিট্‌কারি দেবার জন্য যে তিনজন শক্তিশালী লোক দায়ূদের সংগে ছিলেন ইলিয়াসর ছিলেন তাঁদের একজন। ইস্রায়েলীয়েরা পিছু হটে গেল, কিন্তু ইলিয়াসর যুদ্ধের জায়গায় দাঁড়িয়েই পলেষ্টীয়দের আঘাত করতে থাকলেন। শেষে তাঁর হাত ক্লান্ত হয়ে তলোয়ারের সংগে লেগে রইল। সেই দিন সদাপ্রভু মহাজয় দান করলেন। সৈন্যেরা ইলিয়াসরের কাছে যখন ফিরে আসল তখন মৃতদেহগুলোর কাছ থেকে লুট করা ছাড়া তাদের আর কিছু করবার ছিল না। তাঁর পরের জন হলেন হরারীয় আগির ছেলে শম্ম। একবার পলেষ্টীয়েরা মসুর ডালের ক্ষেতে এসে জড়ো হল, আর ইস্রায়েলের সৈন্যেরা তাদের কাছ থেকে পালিয়ে গেল। কিন্তু শম্ম সেই ক্ষেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেই ক্ষেতটা রক্ষা করলেন এবং পলেষ্টীয়দের শেষ করে দিলেন। সদাপ্রভু সেই দিন তাদের মহাজয় দান করলেন। একবার ফসল কাটবার সময় ত্রিশ জন বীরের মধ্যে সেই তিনজন নাম-করা বীর অদুল্লম গুহাতে দায়ূদের কাছে আসলেন। তখন এক দল পলেষ্টীয় সৈন্য রফায়ীম উপত্যকায় ছাউনি ফেলে ছিল। সেই সময় দায়ূদ মরু-এলাকার দুর্গের মত একটা জায়গায় ছিলেন আর পলেষ্টীয় সৈন্যদল ছিল বৈৎলেহমে। এমন সময় দায়ূদের খুব পিপাসা পেল, তাই তিনি বললেন, “আহা, যদি কেউ বৈৎলেহমের ফটকের কাছের কূয়াটা থেকে আমাকে একটু খাবার জল এনে দিত!” এই কথা শুনে সেই তিনজন শক্তিশালী লোক পলেষ্টীয় সৈন্যদলের ভিতর দিয়ে গিয়ে বৈৎলেহমের ফটকের কাছের কূয়াটা থেকে জল তুলে দায়ূদের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু দায়ূদ তা খেলেন না; তার বদলে তিনি সেই জল সদাপ্রভুর উদ্দেশে মাটিতে ঢেলে দিলেন। তিনি বললেন, “হে সদাপ্রভু, আমি যে এই জল খাব তা দূরে থাক্‌। এ কি সেই লোকদের রক্ত নয় যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তা আনতে গিয়েছিল?” দায়ূদ তা খেতে রাজী হলেন না। সেই তিনজন নাম-করা বীরের কাজই ছিল এই রকম। সরূয়ার ছেলে যোয়াবের ভাই অবীশয় ছিলেন সেই তিনজনের উপরে প্রধান। তিনি বর্শা চালিয়ে তিনশো লোককে মেরে ফেলেছিলেন এবং তিনিও ঐ তিনজনের মত নাম-করা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি সেই তিনজনের চেয়ে বেশী সম্মান পেয়েছিলেন। সেইজন্য সেই তিনজনের মধ্যে তাঁকে ধরা না হলেও তিনি তাঁদের সেনাপতি হয়েছিলেন। কব্‌সেলীয় যিহোয়াদার ছেলে বনায় ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। তিনিও বড় বড় কাজ করেছিলেন। মোয়াবীয় অরীয়েলের দুই ছেলেকে তিনি মেরে ফেলেছিলেন। এক তুষার-পড়া দিনে তিনি একটা গর্তের মধ্যে নেমে গিয়ে একটা সিংহকে মেরে ফেলেছিলেন। আবার একজন লম্বা-চওড়া মিসরীয়কেও তিনি মেরে ফেলেছিলেন। সেই মিসরীয়ের হাতে ছিল একটা বর্শা, কিন্তু তবুও তিনি গদা হাতে তার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সেই মিসরীয়ের হাত থেকে বর্শাটা কেড়ে নিয়ে সেই বর্শা দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছিলেন। যিহোয়াদার ছেলে বনায়ের কাজই ছিল এই রকম। তিনিও সেই তিনজন বীরের মত নাম-করা হয়ে উঠেছিলেন। সেই তিনজনের মধ্যে তাঁকে ধরা না হলেও তিনি “ত্রিশ” নামে দলটার লোকদের চেয়ে বেশী সম্মান পেয়েছিলেন। দায়ূদ তাঁর দেহরক্ষীদের ভার বনায়ের উপরেই দিয়েছিলেন। “ত্রিশ” নামে দলটির মধ্যে ছিলেন যোয়াবের ভাই অসাহেল, বৈৎলেহমের দোদয়ের ছেলে ইল্‌হানন, হরোদীয় শম্ম, হরোদীয় ইলীকা, পল্টীয় হেলস, তকোয়ীয় ইক্কেশের ছেলে ঈরা, অনাথোতীয় অবীয়েষর, হূশাতীয় মবুন্নয়, অহোহীয় সল্‌মোন, নটোফাতীয় মহরয়, নটোফাতীয় বানার ছেলে হেলব, বিন্যামীন-গোষ্ঠীর গিবিয়ার রীবয়ের ছেলে ইত্তয়, পিরিয়াথোনীয় বনায়, গাশ উপত্যকার হিদ্দয়, অর্বতীয় অবি-অলবোন, বরহূমীয় অস্‌মাবৎ, শাল্‌বোনীয় ইলিয়হবা, যাশেনের ছেলেরা, যোনাথন, হরারীয় শম্ম, হরারীয় সাররের ছেলে অহীয়াম, মাখাথীয় অহস্‌বয়ের ছেলে ইলীফেলট, গীলোনীয় অহীথোফলের ছেলে ইলীয়াম, কর্মিলীয় হিষ্রয়, অর্বীয় পারয়, সোবা গ্রামের নাথনের ছেলে যিগাল, গাদীয় বানী, অম্মোনীয় সেলক, সরূয়ার ছেলে যোয়াবের অস্ত্র বহনকারী বেরোতীয় নহরয়, সদাপ্রভু আবার ইস্রায়েলীয়দের উপর ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। তিনি দায়ূদকে তাদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুলে বললেন, “তুমি গিয়ে ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের গণনা কর।” তখন রাজা তাঁর সংগের সেনাপতি যোয়াবকে বললেন, “তোমরা দান থেকে বের্‌-শেবা পর্যন্ত ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে গিয়ে লোকদের গণনা করে এস যাতে আমি তাদের মোট সংখ্যা জানতে পারি।” উত্তরে যোয়াব রাজাকে বললেন, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু যেন লোকদের সংখ্যা শতগুণ বাড়িয়ে দেন, আর আমার প্রভু মহারাজ যেন তা নিজের চোখেই দেখতে পান। কিন্তু আমার প্রভু মহারাজ এই রকম কাজ কেন করতে চাইছেন?” কিন্তু যোয়াব ও সেনাপতিদের কাছে রাজার আদেশ বহাল রইল; কাজেই ইস্রায়েলের লোকদের গণনা করবার জন্য তাঁরা রাজার সামনে থেকে চলে গেলেন। তাঁরা যর্দন পার হয়ে গিয়ে গাদ এলাকার উপত্যকার মধ্যেকার শহরের দক্ষিণে অরোয়েরে গিয়ে তাম্বু ফেললেন, তারপর যাসেরে গেলেন। তারপর তাঁরা গিলিয়দ এবং তহতীম-হদ্‌শি এলাকায় গেলেন। তারপর তাঁরা দান-যানে গিয়ে ঘুরে সীদোনের দিকে গেলেন। তারপর তাঁরা সোরের দুর্গে এবং হিব্বীয় ও কনানীয়দের সমস্ত শহরে গেলেন। শেষে তাঁরা যিহূদার দক্ষিণ দিকের বের্‌-শেবাতে গেলেন। এইভাবে তাঁরা গোটা দেশটা ঘুরে নয় মাস বিশ দিন পরে যিরূশালেমে ফিরে আসলেন। যোয়াব রাজার কাছে লোকদের সংখ্যার হিসাব দিলেন। তাতে দেখা গেল, তলোয়ার চালাতে পারে এমন বলবান লোক ইস্রায়েলে রয়েছে আট লক্ষ আর যিহূদাতে রয়েছে পাঁচ লক্ষ। লোকদের গণনা করবার পরে দায়ূদের বিবেকে ঘা লাগল। তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, “আমি এই কাজ করে ভীষণ পাপ করেছি। হে সদাপ্রভু, মিনতি করি, তুমি তোমার দাসের এই অন্যায় দূর করে দাও। আমি খুবই বোকামির কাজ করেছি।” পরের দিন সকালে দায়ূদ ঘুম থেকে উঠলে পর তাঁর দর্শক নবী গাদের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য প্রকাশিত হল, “তুমি গিয়ে দায়ূদকে এই কথা বল, ‘আমি সদাপ্রভু বলছি যে, আমি তোমার জন্য তিনটি শাস্তি ঠিক করেছি। তুমি তার মধ্য থেকে যেটা বেছে নেবে আমি তোমার প্রতি তা-ই করব।’ ” গাদ তখন দায়ূদের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার দেশে কি সাত বছর ধরে দুর্ভিক্ষ হবে? নাকি আপনি শত্রুদের তাড়া খেয়ে তিন মাস পালিয়ে বেড়াবেন? নাকি তিন দিন ধরে আপনার দেশে মড়ক চলবে? যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকে আমি কি উত্তর দেব আপনি এখন চিন্তা করে আমাকে বলুন।” তখন দায়ূদ গাদকে বললেন, “আমি খুব বিপদে পড়েছি। আমি যেন মানুষের হাতে না পড়ি; তার চেয়ে বরং আসুন, আমরা সদাপ্রভুর হাতে পড়ি, কারণ তাঁর করুণা অসীম।” সদাপ্রভু তখন সকাল থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট করা সময় পর্যন্ত ইস্রায়েলের উপর এক মড়ক পাঠিয়ে দিলেন। তাতে দান থেকে বের্‌-শেবা পর্যন্ত গোটা দেশের লোকদের মধ্য থেকে সত্তর হাজার লোক মারা গেল। যিরূশালেম ধ্বংস করবার জন্য স্বর্গদূত যখন হাত বাড়ালেন তখন সদাপ্রভু সেই ভীষণ শাস্তি দেওয়া থেকে মন ফিরালেন। যে স্বর্গদূত লোকদের ধ্বংস করছিলেন তিনি তাঁকে বললেন, “থাক্‌, যথেষ্ট হয়েছে। তোমার হাত গুটিয়ে নাও।” সেই সময় সদাপ্রভুর দূত যিবূষীয় অরৌণার খামারের কাছে ছিলেন। যে স্বর্গদূত লোকদের আঘাত করছিলেন দায়ূদ তাঁকে দেখে সদাপ্রভুকে বললেন, “পাপ এবং অন্যায় করেছি আমি। ওরা তো ভেড়ার মত। ওরা কি করেছে? কাজেই আমাকে ও আমার বাবার বংশকে তুমি শাস্তি দাও।” দায়ূদ একটা বেদী তৈরী করলেন সেই দিন গাদ দায়ূদের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনি যিবূষীয় অরৌণার খামারে গিয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশে সেখানে একটা বেদী তৈরী করুন।” তখন দায়ূদ সদাপ্রভুর আদেশ মতই গাদের কথা অনুসারে সেখানে গেলেন। অরৌণা যখন রাজা ও তাঁর লোকদের তার দিকে আসতে দেখল তখন সে গিয়ে রাজার সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে প্রণাম করল। অরৌণা বলল, “আমার প্রভু মহারাজ তাঁর দাসের কাছে কি জন্য এসেছেন?” উত্তরে দায়ূদ বললেন, “সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করবার জন্য আমি তোমার খামারটা কিনে নিতে চাই, যাতে লোকদের উপরে আসা এই মড়কটা থেমে যায়।” অরৌণা দায়ূদকে বলল, “আমার প্রভু মহারাজের যা ভাল মনে হয় তা-ই আমার এখান থেকে নিয়ে উৎসর্গ করুন। পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য এখানে ষাঁড় রয়েছে আর কাঠের জন্য রয়েছে ফসল মাড়াইয়ের যন্ত্র ও ষাঁড়গুলোর জোয়াল। হে মহারাজ, অরৌণা রাজাকে এই সবই দিচ্ছে।” অরৌণা তাঁকে আরও বলল, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু যেন আপনার উৎসর্গ গ্রহণ করেন।” উত্তরে রাজা অরৌণাকে বললেন, “না, তা হবে না। আমি নিশ্চয়ই দাম দিয়ে এগুলো কিনে নেব। বিনামূল্যে পাওয়া এমন কোন কিছু আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ হিসাবে দেব না।” এই বলে দায়ূদ পঞ্চাশ শেখেল রূপা দিয়ে সেই খামারটা এবং ষাঁড়গুলো কিনে নিলেন। তারপর তিনি সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করলেন এবং পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। এইভাবে দেশের জন্য প্রার্থনা করা হলে পর সদাপ্রভু তা শুনলেন আর ইস্রায়েল দেশের মড়ক থেমে গেল। ॥ভব রাজা দায়ূদ বুড়ো হয়ে গেলেন এবং তাঁর বয়সও অনেক হয়ে গেল। তাঁর শরীর অনেক কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেও তা আর গরম হত না। সেইজন্য তাঁর কর্মচারীরা তাঁকে বলল, “আমাদের প্রভু মহারাজের জন্য আমরা একজন যুবতী কুমারী মেয়ের খোঁজ করি। সে রাজার কাছে থেকে তাঁর সেবা-যত্ন করুক। আমাদের প্রভু মহারাজের শরীর যাতে গরম হয় সেইজন্য সে তাঁর বুকের কাছে শুয়ে থাকুক।” তাতে তারা গোটা ইস্রায়েল দেশে একটা সুন্দরী মেয়ের খোঁজ করতে লাগল। পরে তারা শূনেমীয়া অবীশগকে পেল এবং তাকে রাজার কাছে নিয়ে গেল। মেয়েটি খুব সুন্দরী ছিল। সে রাজার কাছে থেকে তাঁর সেবা-যত্ন করতে লাগল, কিন্তু রাজা তার সংগে দেহে মিলিত হলেন না। দায়ূদের স্ত্রী হগীতের ছেলে আদোনিয় বড়াই করে বলতে লাগল, “আমিই রাজা হব।” এই বলে সে কতগুলো রথ ও ঘোড়সওয়ার যোগাড় করে নিল এবং তার আগে আগে যাবার জন্য পঞ্চাশজন লোকও নিযুক্ত করল। তার বাবা কোন কাজে তাকে কখনও বাধা দেন নি, বলেন নি, “কেন তুমি এই কাজ করেছ?” সে অবশালোমের মত দেখতে সুন্দর ছিল; তার জন্ম হয়েছিল অবশালোমের পরে। সরূয়ার ছেলে যোয়াব ও পুরোহিত অবিয়াথরের সংগে আদোনিয় পরামর্শ করল, আর তাঁরাও তার পক্ষ হয়ে তাকে সাহায্য করলেন। কিন্তু পুরোহিত সাদোক যিহোয়াদার ছেলে বনায়, নবী নাথন, শিমিয়ি, রেয়ি এবং দায়ূদের বীর যোদ্ধারা আদোনিয়ের পক্ষে যোগ দিলেন না। ঐন্‌-রোগেলের পাশে সোহেলৎ পাথরের কাছে আদোনিয় কতগুলো ভেড়া, ষাঁড় এবং মোটাসোটা বাছুর উৎসর্গ করে তার সব ভাইদের, অর্থাৎ রাজার ছেলেদের ও যিহূদার সমস্ত রাজকর্মচারীদের নিমন্ত্রণ করল। কিন্তু সে নবী নাথন, বনায়, দায়ূদের বীর যোদ্ধাদের আর তার ভাই শলোমনকে নিমন্ত্রণ করল না। তখন নাথন শলোমনের মা বৎশেবাকে বললেন, “আমাদের মনিব দায়ূদের অজান্তে হগীতের ছেলে আদোনিয় যে রাজা হয়েছে তা কি আপনি শোনেন নি? আপনি কেমন করে আপনার নিজের ও আপনার ছেলে শলোমনের প্রাণ রক্ষা করতে পারবেন আমি এখন আপনাকে সেই পরামর্শ দিচ্ছি। আপনি এখনই রাজা দায়ূদের কাছে গিয়ে বলুন, ‘আমার মনিব মহারাজ, আপনার দাসীর কাছে কি আপনি এই বলে প্রতিজ্ঞা করেন নি যে, আপনার পরে নিশ্চয়ই আপনার ছেলে শলোমনই রাজা হবে এবং সে-ই আপনার সিংহাসনে বসবে? তাহলে কেন আদোনিয় রাজা হয়েছে?’ আপনি যখন রাজার সংগে কথা বলতে থাকবেন তখন আমিও সেখানে গিয়ে আপনার কথায় সায় দেব।” তখন বৎশেবা রাজার সংগে দেখা করবার জন্য তাঁর ঘরে গেলেন। সেই সময় রাজা খুব বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন এবং শূনেমীয়া অবীশগ তাঁর দেখাশোনা করছিল। বৎশেবা রাজাকে প্রণাম করলেন। রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি চাও?” বৎশেবা তাঁকে বললেন, “হে আমার প্রভু, আপনি নিজেই আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে শপথ করে আপনার এই দাসীকে বলেছিলেন যে, আপনার ছেলে শলোমনই আপনার পরে রাজা হবে এবং সে-ই আপনার সিংহাসনে বসবে। কিন্তু এখন আদোনিয় রাজা হয়েছে আর আপনি, আমার প্রভু মহারাজ, এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। সে অনেক গরু, মোটাসোটা বাছুর ও ভেড়া উৎসর্গ করেছে এবং রাজার সব ছেলেদের, পুরোহিত অবিয়াথরকে ও সেনাপতি যোয়াবকে নিমন্ত্রণ করেছে, কিন্তু আপনার দাস শলোমনকে সে নিমন্ত্রণ করে নি। হে আমার প্রভু মহারাজ, সমস্ত ইস্রায়েলের চোখ আপনার উপর রয়েছে। তারা আপনার কাছ থেকে জানতে চায় আপনার পরে কে আমার প্রভু মহারাজের সিংহাসনে বসবে। তা না হলে যখনই আমার প্রভু মহারাজ তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবেন তখনই আমাকে ও আমার ছেলে শলোমনকে দোষী বলে ধরা হবে।” রাজার সংগে বৎশেবার কথা শেষ হতে না হতেই নবী নাথন সেখানে উপস্থিত হলেন। কেউ একজন রাজাকে বলল, “নবী নাথন এখানে এসেছেন।” তখন নাথন রাজার সামনে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে তাঁকে প্রণাম জানালেন। তারপর তিনি রাজাকে বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আপনি কি ঘোষণা করেছেন যে, আপনার পরে আদোনিয় রাজা হবে, আর সে-ই আপনার সিংহাসনে বসবে? সে তো আজ গিয়ে অনেক ষাঁড়, মোটাসোটা বাছুর এবং ভেড়া উৎসর্গ করে রাজার সব ছেলেদের, সেনাপতিদের এবং পুরোহিত অবিয়াথরকে নিমন্ত্রণ করেছে। এখন তারা তার সংগে খাওয়া-দাওয়া করছে আর বলছে, ‘রাজা আদোনিয় চিরজীবী হোন।’ আপনার দাস আমাকে, পুরোহিত সাদোককে, যিহোয়াদার ছেলে বনায়কে এবং আপনার দাস শলোমনকে সে নিমন্ত্রণ করে নি। আমার প্রভু মহারাজের পরে কে সিংহাসনে বসবে তা কি আমার প্রভু মহারাজ তাঁর দাসদের না জানিয়েই ঠিক করেছেন?” তখন রাজা দায়ূদ বললেন, “বৎশেবাকে ডাক।” তাতে বৎশেবা রাজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। রাজা তখন শপথ করে বললেন, “যিনি আমাকে সমস্ত বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন, সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে যে শপথ আমি তোমার কাছে করেছিলাম আজ আমি নিশ্চয়ই তা পালন করব। তোমার ছেলে শলোমন আমার পরে রাজা হবে আর সে-ই আমার জায়গায় সিংহাসনে বসবে।” তখন বৎশেবা মাটিতে উবুড় হয়ে প্রণাম করে রাজাকে বললেন, “আমার প্রভু মহারাজ দায়ূদ চিরজীবী হোন।” রাজা দায়ূদ বললেন, “পুরোহিত সাদোক, নবী নাথন এবং যিহোয়াদার ছেলে বনায়কে আমার কাছে ডেকে আন।” তাঁরা রাজার কাছে আসলেন। রাজা তাঁদের বললেন, “আপনারা আমার রক্ষীদলকে সংগে নিন এবং আমার ছেলে শলোমনকে আমার নিজের খচ্চরে বসিয়ে তাকে নিয়ে গীহোন উপত্যকায় যান। পুরোহিত সাদোক ও নবী নাথন সেখানে তাকে ইস্রায়েলের রাজা হিসাবে অভিষেক করুন। তারপর আপনারা তূরী বাজিয়ে চিৎকার করে বলুন, ‘রাজা শলোমন চিরজীবী হোন।’ এর পর আপনারা তার পিছনে পিছনে ফিরে আসবেন। সে এসে আমার সিংহাসনে বসবে এবং আমার জায়গায় রাজত্ব করবে। আমি তাকে ইস্রায়েল ও যিহূদার শাসনকর্তা নিযুক্ত করলাম।” তখন যিহোয়াদার ছেলে বনায় রাজাকে বললেন, “আমেন। আমাদের প্রভু মহারাজের ঈশ্বর সদাপ্রভু তা-ই করুন। সদাপ্রভু যেমন আমার প্রভু মহারাজের সংগে থেকেছেন তেমনি শলোমনের সংগেও থাকুন এবং আমার প্রভু রাজা দায়ূদের রাজ্যের চেয়েও তাঁর রাজ্য আরও গৌরবযুক্ত করুন!” তখন পুরোহিত সাদোক, নবী নাথন, যিহোয়াদার ছেলে বনায়, করেথীয় ও পলেথীয়েরা গিয়ে শলোমনকে রাজা দায়ূদের খচ্চরে বসিয়ে গীহোনে নিয়ে গেলেন। পুরোহিত সাদোক পবিত্র তাম্বু থেকে তেলের শিংগাটা নিয়ে এসে শলোমনকে অভিষেক করলেন। তারপর তাঁরা তূরী বাজালেন এবং সমস্ত লোকেরা চিৎকার করে বলল, “রাজা শলোমন চিরজীবী হোন।” তারপর সমস্ত লোক বাঁশী বাজাতে বাজাতে এবং খুব আনন্দ করতে করতে শলোমনের পিছনে পিছনে ফিরে আসল। তারা এমনভাবে আনন্দ করল যে, তার শব্দে মাটি কেঁপে উঠল। সেই সময় আদোনিয় ও সমস্ত নিমন্ত্রিত লোকেরা খাওয়ার শেষের দিকে সেই শব্দ শুনল। তূরীর আওয়াজ শুনে যোয়াব জিজ্ঞাসা করলেন, “শহরে এই সব গোলমাল হচ্ছে কেন?” তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই পুরোহিত অবিয়াথরের ছেলে যোনাথন সেখানে উপস্থিত হল। আদোনিয় তাকে বলল, “আসুন, আসুন। আপনি তো ভাল লোক, নিশ্চয়ই ভাল সংবাদ এনেছেন।” উত্তরে যোনাথন বলল, “মোটেই না। আমাদের প্রভু মহারাজ দায়ূদ শলোমনকে রাজা করেছেন। রাজা তাঁর সংগে পুরোহিত সাদোক, নবী নাথন, যিহোয়াদার ছেলে বনায়, করেথীয় ও পলেথীয়দের পাঠিয়েছেন। তাঁরা তাঁকে রাজার খচ্চরের উপর বসিয়েছেন, আর পুরোহিত সাদোক ও নবী নাথন গীহোনে তাঁকে রাজপদে অভিষেক করেছেন। সেখান থেকে লোকেরা আনন্দ করতে করতে ফিরে গিয়েছে আর শহরে সেই গোলমালই হচ্ছে। সেই আওয়াজই আপনারা শুনতে পাচ্ছেন। এই কথা শুনে আদোনিয়ের নিমন্ত্রিত সব লোকেরা খুব ভয় পেল এবং উঠে যে যার পথে চলে গেল। কিন্তু আদোনিয় শলোমনের ভয়ে গিয়ে বেদীর শিং ধরে রইল। তখন শলোমনকে কেউ একজন বলল যে, আদোনিয় তাঁর ভয়ে বেদীর শিং আঁকড়ে ধরেছে। সে বলেছে, “রাজা শলোমন আজ আমার কাছে শপথ করুন যে, তিনি তাঁর দাসকে মেরে ফেলবেন না।” উত্তরে শলোমন বললেন, “সে যদি নিজেকে ভাল লোক হিসাবে দেখাতে পারে তবে তার মাথার একটা চুলও মাটিতে পড়বে না; কিন্তু যদি তার মধ্যে মন্দ কিছু পাওয়া যায় তবে সে মরবে।” এই বলে রাজা শলোমন লোক পাঠিয়ে দিলেন আর তারা গিয়ে আদোনিয়কে বেদী থেকে নিয়ে আসল। আদোনিয় এসে রাজা শলোমনের সামনে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ল। শলোমন বললেন, “তুমি নিজের ঘরে চলে যাও।” মৃত্যুর সময় কাছে আসলে পর দায়ূদ তাঁর ছেলে শলোমনকে এই সব নির্দেশ দিয়ে বললেন, “পৃথিবীর সকলেই যে পথে যায় আমিও এখন সেই পথে যাচ্ছি। কাজেই তুমি শক্ত হও, নিজেকে উপযুক্ত পুরুষ হিসাবে দেখাও। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছামত তুমি তাঁর পথে চলবে এবং মোশির আইন-কানুনে লেখা সদাপ্রভুর সব নিয়ম, আদেশ, নির্দেশ ও দাবি মেনে চলবে। এতে তুমি যা কিছু কর না কেন এবং যেখানেই যাও না কেন সফল হতে পারবে। তাহলে সদাপ্রভু যে প্রতিজ্ঞা আমার কাছে করেছেন তা পূরণ করবেন। সেই প্রতিজ্ঞা হল, ‘যদি তোমার বংশধরেরা সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে বিশ্বস্তভাবে আমার সামনে চলাফেরা করবার জন্য সাবধানে জীবন কাটায় তবে ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসবার জন্য তোমার বংশে লোকের অভাব হবে না।’ “সরূয়ার ছেলে যোয়াব আমার প্রতি যা করেছে এবং ইস্রায়েলীয় সৈন্যদলের দুই সেনাপতির প্রতি, অর্থাৎ নেরের ছেলে অব্‌নের ও যেথরের ছেলে অমাসার প্রতি যা করেছে তা তো তুমি জানই। সে তাদের খুন করেছে, শান্তির সময়েও যুদ্ধের সময়ের মত করে সে তাদের রক্তপাত করেছে আর সেই রক্ত তাঁর কোমর-বাঁধনিতে ও পায়ের জুতাতে লেগেছে। তুমি তার সংগে বুদ্ধি করে চলবে, তবে বুড়ো বয়সে তুমি তাকে শান্তিতে মৃতস্থানে যেতে দেবে না। কিন্তু গিলিয়দের বর্সিল্লয়ের ছেলেদের প্রতি বিশ্বস্ত থেকো। তোমার টেবিলে যারা তোমার সংগে খাওয়া-দাওয়া করে তাদের মধ্যে তুমি তাদেরও স্থান দিয়ো। তোমার ভাই অবশালোমের কাছ থেকে পালিয়ে যাবার সময় তারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। মনে রেখো, বহুরীমের বিন্যামীন-গোষ্ঠীর গেরার ছেলে শিমিয়ি তোমার সংগে আছে। আমি যেদিন মহনয়িমে যাই সেই দিন সে আমাকে ভীষণ অভিশাপ দিয়েছিল। যর্দনে সে আমার সংগে দেখা করতে আসলে পর আমি সদাপ্রভুর নামে তার কাছে শপথ করেছিলাম যে, আমি তাকে মেরে ফেলব না। কিন্তু এখন তুমি তাকে নির্দোষ বলে মনে কোরো না। তুমি বুদ্ধিমান; তার প্রতি তুমি কি করবে তা তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। তার বুড়ো বয়সে রক্তপাতের মধ্য দিয়েই তাকে মৃতস্থানে পাঠিয়ে দেবে।” এর পর দায়ূদ তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে দায়ূদ-শহরে কবর দেওয়া হল। তিনি ইস্রায়েলের উপরে চল্লিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন- সাত বছর হিব্রোণে আর তেত্রিশ বছর যিরূশালেমে। পরে শলোমন তাঁর বাবা দায়ূদের সিংহাসনে বসলেন এবং তাঁর রাজত্ব শক্তভাবে স্থাপিত হল। তখন সে বলল, “আপনি তো জানেন রাজ্যটা আমারই ছিল। সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা ভেবেছিল আমি রাজা হব। কিন্তু অবস্থাটা বদলে গিয়ে রাজ্যটা আমার ভাইয়ের হাতে গেছে, কারণ এটা সদাপ্রভুর কাছ থেকেই সে পেয়েছে। এখন আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে। আপনি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।” তিনি বললেন, “বল।” সে তখন বলতে লাগল, “আপনি রাজা শলোমনকে বলুন যেন তিনি শূনেমীয়া অবীশগকে আমার সংগে বিয়ে দেন। তিনি আপনার কথা ফেলবেন না।” উত্তরে বৎশেবা বললেন, “বেশ ভাল, আমি তোমার কথা রাজাকে বলব।” বৎশেবা যখন আদোনিয়ের কথা বলবার জন্য রাজা শলোমনের কাছে গেলেন তখন রাজা উঠে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন এবং তারপর তাঁর সিংহাসনে বসলেন। রাজা তাঁর মায়ের জন্য একটা আসন আনিয়ে তাঁর ডান পাশে রাখলেন এবং তাঁর মা সেখানে বসলেন। বৎশেবা বললেন, “আমি তোমাকে একটা ছোট্ট অনুরোধ করব; তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।” উত্তরে রাজা বললেন, “বল মা, আমি তোমাকে ফিরিয়ে দেব না।” বৎশেবা তখন বললেন, “তোমার ভাই আদোনিয়ের সংগে শূনেমীয়া অবীশগের বিয়ে দেওয়া হোক।” উত্তরে রাজা শলোমন তাঁর মাকে বললেন, “আদোনিয়ের জন্য কেন তুমি শূনেমীয়া অবীশগকে চাইছ? তুমি তার জন্য রাজ্যটাও তো চাইতে পারতে, কারণ সে আমার বড় ভাই; হ্যাঁ, তার জন্য, পুরোহিত অবিয়াথরের জন্য আর সরূয়ার ছেলে যোয়াবের জন্যও তা চাইতে পারতে।” এর পর রাজা শলোমন সদাপ্রভুর নামে শপথ করে বললেন, “এই অনুরোধের জন্য যদি আদোনিয়ের প্রাণ নেওয়া না হয় তবে সদাপ্রভু যেন আমাকে শাস্তি দেন, আর তা ভীষণভাবেই দেন। যিনি আমার বাবা দায়ূদের সিংহাসনে আমাকে শক্তভাবে স্থাপিত করেছেন এবং তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমার জন্য একটা রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেছেন সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি, আজই আদোনিয়কে মেরে ফেলা হবে।” তারপর রাজা শলোমন যিহোয়াদার ছেলে বনায়কে হুকুম দিলেন, আর বনায় আদোনিয়কে মেরে ফেললেন। পরে রাজা পুরোহিত অবিয়াথরকে বললেন, “আপনি অনাথোতে নিজের জায়গায় ফিরে যান। আপনি মৃত্যুর যোগ্য, কিন্তু এখন আমি আপনাকে মেরে ফেলব না, কারণ আপনি আমার বাবা দায়ূদের সময়ে প্রভু সদাপ্রভুর সিন্দুকটা বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং আমার বাবার সমস্ত দুঃখ-কষ্টের ভাগী হয়েছিলেন।” এইভাবে শলোমন অবিয়াথরকে সদাপ্রভুর পুরোহিত পদ থেকে সরিয়ে দিলেন। সদাপ্রভু শীলোতে এলির বংশ সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তাঁর সেই কথা এইভাবে পূর্ণ হল। এই সব খবর যোয়াবের কানে গেল। তিনি অবশালোমের পক্ষে না গেলেও আদোনিয়ের পক্ষে গিয়েছিলেন, তাই তিনি পালিয়ে সদাপ্রভুর তাম্বুতে গিয়ে বেদীর শিং ধরে রইলেন। রাজা শলোমনকে বলা হল যে, যোয়াব পালিয়ে সদাপ্রভুর তাম্বুতে গেছেন এবং বেদীর কাছে আছেন। তখন শলোমন যিহোয়াদার ছেলে বনায়কে এই আদেশ দিলেন, “আপনি গিয়ে তাঁকে মেরে ফেলুন।” কাজেই বনায় সদাপ্রভুর তাম্বুতে ঢুকে যোয়াবকে বললেন, “রাজা আপনাকে বের হয়ে আসতে বলেছেন।” কিন্তু যোয়াব বললেন, “না, আমি এখানেই মরব।” বনায় রাজাকে সেই খবর জানিয়ে বললেন, “যোয়াব আমাকে এই উত্তর দিয়েছেন।” তখন রাজা বনায়কে এই হুকুম দিলেন, “তিনি যা বলেছেন তা-ই করুন। তাঁকে মেরে ফেলে কবর দিয়ে দিন। যোয়াব যে নির্দোষ লোকদের রক্তপাত করেছেন তার দোষ আপনি আমার ও আমার বাবার বংশ থেকে এইভাবে দূর করে দিন। যে রক্তপাত তিনি করেছেন তার শোধ সদাপ্রভু নেবেন, কারণ আমার বাবা দায়ূদের অজান্তে তিনি দু’জন লোককে আক্রমণ করে মেরে ফেলেছিলেন। তাঁরা হলেন ইস্রায়েলের সৈন্যদলের সেনাপতি নেরের ছেলে অব্‌নের আর যিহূদার সৈন্যদলের সেনাপতি যেথরের ছেলে অমাসা। এই দু’জনই ছিলেন তাঁর চেয়ে আরও খাঁটি এবং আরও ভাল লোক। তাঁদের রক্তপাতের দোষ যোয়াবের ও তাঁর বংশের লোকদের মাথার উপরে চিরকাল থাকুক। কিন্তু দায়ূদ ও তাঁর বংশের লোকদের উপর এবং তাঁর পরিবার ও তাঁর সিংহাসনের উপর সদাপ্রভুর শান্তি চিরকাল থাকুক।” তখন যিহোয়াদার ছেলে বনায় গিয়ে যোয়াবকে মেরে ফেললেন। তাঁকে মরু-এলাকায় তাঁর নিজের বাড়ীতে কবর দেওয়া হল। রাজা তখন যোয়াবের জায়গায় যিহোয়াদার ছেলে বনায়কে সেনাপতি হিসাবে নিযুক্ত করলেন এবং অবিয়াথরের জায়গায় বসালেন পুরোহিত সাদোককে। তারপর রাজা লোক পাঠিয়ে শিমিয়িকে ডেকে এনে বললেন, “তুমি যিরূশালেমে একটা বাড়ী তৈরী করে সেখানেই থাকবে, অন্য কোথাও তোমার যাওয়া চলবে না। যেদিন তুমি সেখান থেকে বের হয়ে কিদ্রোণ উপত্যকা পার হবে সেই দিন তুমি নিশ্চয় করে জেনে রেখো যে, তোমাকে মরতেই হবে; তোমার রক্তপাতের দোষ তোমার নিজের মাথার উপরেই পড়বে।” উত্তরে শিমিয়ি রাজাকে বললেন, “আপনি ভালই বলেছেন। আমার মনিব মহারাজ যা বললেন আপনার দাস তা-ই করবে।” এর পর শিমিয়ি অনেক দিন যিরূশালেমে রইল। কিন্তু তিন বছর পরে শিমিয়ির দু’জন দাস মাখার ছেলে গাতের রাজা আখীশের কাছে পালিয়ে গেল। শিমিয়িকে বলা হল যে, তার দাসেরা গাতে আছে। তখন শিমিয়ি তার গাধার উপর গদি চাপিয়ে তার দাসদের খোঁজে গাতে আখীশের কাছে গেল এবং সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনল। পরে শলোমনকে জানানো হল যে, শিমিয়ি যিরূশালেম থেকে গাতে গিয়ে আবার ফিরে এসেছে। রাজা তখন শিমিয়িকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “আমি কি সদাপ্রভুর নামে তোমাকে শপথ করিয়ে সাবধান করে দিই নি যে, যেদিন তুমি বেরিয়ে আর কোথাও যাবে সেই দিন তোমাকে নিশ্চয়ই মরতে হবে? সেই সময় তুমি আমাকে বলেছিলে যে, আমি ভালই বলেছি আর তুমি সেই মতই চলবে। তাহলে কেন তুমি সদাপ্রভুর কাছে করা দিব্য ও আমার আদেশ পালন কর নি?” শলোমন শিমিয়িকে আরও বললেন, “আমার বাবা দায়ূদের প্রতি তুমি যে সব অন্যায় করেছ তা তো তোমার অন্তর জানে। এখন সদাপ্রভুই তোমাকে তোমার অন্যায় কাজের প্রতিফল দেবেন। কিন্তু রাজা শলোমনের উপরে আশীর্বাদ থাকবে, আর দায়ূদের সিংহাসন সদাপ্রভুর সামনে চিরকাল অটল থাকবে।” রাজা এর পর যিহোয়াদার ছেলে বনায়কে হুুকুম দিলেন আর বনায় গিয়ে শিমিয়িকে মেরে ফেললেন। এইভাবে শলোমনের হাতে রাজ্যটা শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হল। শলোমন মিসরের রাজা ফরৌণের মেয়েকে বিয়ে করে তাঁর সংগে বন্ধুত্ব স্থাপন করলেন। শলোমনের রাজবাড়ী, সদাপ্রভুর ঘর এবং যিরূশালেমের চারপাশের দেয়াল গাঁথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাঁর স্ত্রীকে দায়ূদ-শহরেই রাখলেন। লোকেরা তখনও উপাসনার উঁচু স্থানগুলোতে তাদের পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করত, কারণ তখনও সদাপ্রভুর উপাসনার জন্য কোন ঘর তৈরী করা হয় নি। শলোমন সদাপ্রভুকে ভালবাসতেন, সেইজন্য তাঁর বাবা দায়ূদের আদেশ অনুসারে চলাফেরা করতেন; কিন্তু তিনি উপাসনার উঁচু স্থানগুলোতে পশু উৎসর্গ করতেন এবং ধূপ জ্বালাতেন। রাজা একদিন পশু-উৎসর্গের জন্য গিবিয়োনে গিয়েছিলেন, কারণ উৎসর্গের জন্য সেখানকার উপাসনার উঁচু স্থানটা ছিল প্রধান। শলোমন সেখানে এক হাজার পশু দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। গিবিয়োনে রাতের বেলা সদাপ্রভু স্বপ্নের মধ্যে শলোমনের কাছে উপস্থিত হলেন। ঈশ্বর তাঁকে বললেন, “তুমি আমার কাছে যা চাইবে আমি তা-ই তোমাকে দেব।” উত্তরে শলোমন বললেন, “তোমার দাস আমার বাবাকে তুমি অনেক বিশ্বস্ততা দেখিয়েছ, কারণ তিনি তোমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন এবং খাঁটি ও সৎ ছিলেন। আজ তাঁর সিংহাসনে বসবার জন্য তুমি তাঁকে একটি ছেলে দিয়েছ এবং এইভাবে তোমার সেই সীমাহীন বিশ্বস্ততা তাঁকে দেখিয়ে যাচ্ছ। “হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমার বাবা দায়ূদের জায়গায় তুমি এখন তোমার দাসকে রাজা করেছ। কিন্তু বয়স আমার খুবই কম, তাই জানি না কি করে আমার কর্তব্য পালন করতে হবে। এখানে তোমার দাস তোমার বেছে নেওয়া লোকদের মধ্যে রয়েছে। তারা এমন একটা মহাজাতি যে, তাদের সংখ্যা গণনা করা যায় না। সেইজন্য তোমার লোকদের শাসন করবার জন্য এবং কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল তা জানবার জন্য তুমি তোমার দাসের অন্তরে বুঝবার ক্ষমতা দাও; কারণ কার সাধ্য আছে তোমার এই মহাজাতিকে শাসন করে?” শলোমন এটাই চেয়েছেন দেখে সদাপ্রভু খুশী হলেন। ঈশ্বর তাঁকে বললেন, “তুমি অনেক আয়ু, কিম্বা নিজের জন্য ধন-সম্পদ, কিম্বা তোমার শত্রুদের মৃত্যু না চেয়ে যখন সুবিচার করবার জন্য বুঝবার ক্ষমতা চেয়েছ, তখন তুমি যা চেয়েছ তা-ই আমি তোমাকে দেব। আমি তোমার অন্তরে এমন জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধি দিলাম যার জন্য দেখা যাবে যে, এর আগে তোমার মত আর কেউ ছিল না আর পরেও হবে না। এছাড়া যা তুমি চাও নি তাও আমি তোমাকে দিলাম। আমি তোমাকে এমন ধন-দৌলত ও সম্মান দিলাম যার ফলে তোমার জীবনকালে রাজাদের মধ্যে আর কেউ তোমার সমান হবে না। তোমার বাবা দায়ূদের মত করে যদি তুমি আমার সব নিয়ম ও আদেশ পালন কর এবং আমার পথে চল তবে আমি তোমাকে অনেক আয়ু দেব।” এর পর শলোমন জেগে উঠলেন আর বুঝতে পারলেন যে, ওটা একটা স্বপ্ন ছিল। পরে শলোমন যিরূশালেমে ফিরে গিয়ে সদাপ্রভুর সাক্ষ্য-সিন্দুকের সামনে দাঁড়ালেন এবং অনেক পশু দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তারপর তাঁর সমস্ত কর্মচারীদের জন্য একটা ভোজ দিলেন। এক সময়ে দু’জন বেশ্যা স্ত্রীলোক এসে রাজার সামনে দাঁড়াল। তাদের মধ্যে একজন বলল, “হে আমার প্রভু, এই স্ত্রীলোকটি এবং আমি একই ঘরে থাকি। সে সেখানে থাকবার সময় আমার একটি ছেলে হল। আমার ছেলের জন্মের তিন দিন পরে এই স্ত্রীলোকটিরও একটি ছেলে হল। ঘরে আর কেউ ছিল না, কেবল আমরা দু’জনই ছিলাম। “রাতের বেলা এই স্ত্রীলোকটির চাপে তার ছেলেটি মারা গেল। মাঝ রাতে আপনার দাসী আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন সে উঠে আমার পাশ থেকে আমার ছেলেটিকে নিয়ে নিজের বুকের কাছে রাখল আর তার মরা ছেলেটিকে নিয়ে আমার বুকের কাছে রাখল। ভোররাতে আমার ছেলেকে দুধ খাওয়াতে উঠে দেখলাম ছেলেটি মরা। সকালের আলোতে আমি যখন তাকে ভাল করে দেখলাম তখন বুঝলাম সে আমার নিজের ছেলে নয়।” তখন অন্য স্ত্রীলোকটি বলল, “না, না, জীবিত ছেলেটি আমার আর মরাটা তোমার।” কিন্তু প্রথমজন জোর দিয়ে বলল, “না, মরাটা তোমার আর জীবিতটা আমার।” এইভাবে রাজার সামনেই তারা কথা কাটাকাটি করতে লাগল। রাজা বললেন, “এ বলছে, ‘আমার ছেলে বেঁচে আছে আর তোমারটা মারা গেছে।’ আবার ও বলছে, ‘না, না, তোমার ছেলে মারা গেছে আমারটা বেঁচে আছে।’ ” তখন রাজা বললেন, “আমাকে একটা তলোয়ার দাও।” তখন রাজার কাছে একটা তলোয়ার আনা হল। তিনি হুকুম দিলেন, “জীবিত ছেলেটিকে কেটে দু’ভাগ কর এবং একে অর্ধেক আর ওকে অর্ধেক দাও।” যার ছেলেটি বেঁেচ ছিল ছেলের জন্য সেই স্ত্রীলোকের মন ব্যাকুল হওয়াতে সে রাজাকে বলল, “হে আমার প্রভু, মিনতি করি, ওকেই আপনি জীবিত ছেলেটি দিয়ে দিন; ছেলেটিকে মেরে ফেলবেন না।” কিন্তু অন্য স্ত্রীলোকটি বলল, “ও তোমারও না হোক আর আমারও না হোক। ওকে কেটে দু’টুকরা কর।” রাজা তখন তাঁর রায় দিয়ে বললেন, “জীবিত ছেলেটি ঐ প্রথম স্ত্রীলোকটিকে দাও। ওকে কেটো না; ও-ই ওর মা।” রাজার দেওয়া রায় শুনে ইস্রায়েলের সকলের মনে রাজার প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় জেগে উঠল, কারণ তারা দেখতে পেল যে, সুবিচার করবার জন্য তাঁর মনে ঈশ্বরের দেওয়া জ্ঞান রয়েছে। রাজা শলোমন গোটা ইস্রায়েলের উপর রাজত্ব করতেন। এরাই ছিলেন তাঁর প্রধান কর্মচারী: সাদোকের ছেলে অসরিয় ছিলেন রাজার পরামর্শদাতা পুরোহিত; শীশার দুই ছেলে ইলীহোরফ ও অহিয় ছিলেন রাজার লেখক; অহীলুদের ছেলে যিহোশাফট ছিলেন ইতিহাস লেখক; যিহোয়াদার ছেলে বনায় ছিলেন প্রধান সেনাপতি; সাদোক ও অবিয়াথর ছিলেন পুরোহিত; নাথনের ছেলে অসরিয়ের উপর ছিল বিভিন্ন শাসনকর্তাদের ভার; নাথনের ছেলে সাবূদ ছিলেন রাজার ব্যক্তিগত পরামর্শদাতা; অহীশারের উপর ছিল রাজবাড়ীর দেখাশোনার ভার; অব্দের ছেলে অদোনীরামের উপর ছিল সেই সব লোকদের ভার যাদের কাজ করবার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল। সমস্ত ইস্রায়েলের উপর শলোমন বারোজন শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁরা রাজা ও রাজপরিবারের জন্য খাবার-দাবারের যোগান দিতেন। তাঁদের প্রত্যেককেই বছরে এক মাস করে খাবারের যোগান দিতে হত। তাঁদের নাম এই: ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকায় বিন্‌-হূর। মাকসে, শালবীমে, বৈৎ-শেমশে ও এলোন-বৈৎ-হাননে বিন্‌-দেকর। অরুব্বোতে, সোখোতে ও হেফরের সমস্ত এলাকায় বিন্‌-হেষদ। নাফৎ-দোরের সমস্ত এলাকায় বিন্‌-অবীনাদব। ইনি শলোমনের মেয়ে টাফৎকে বিয়ে করেছিলেন। তানকে, মগিদ্দোতে এবং সর্তনের কাছে ও যিষ্রিয়েলের দক্ষিণে বৈৎ-শান শহর থেকে আবেল-মহোলা ও যক্‌মিয়াম পর্যন্ত বৈৎ-শানের সমস্ত এলাকায় অহীলূদের ছেলে বানা। রামোৎ গিলিয়দে বিন্‌-গেবর। তিনি ছিলেন গিলিয়দের মনঃশির ছেলে যায়ীরের সমস্ত গ্রামের এবং বাশনের অর্গোব এলাকার শাসনকর্তা। অর্গোব এলাকায় ছিল দেয়াল-ঘেরা এবং ব্রোঞ্জের হুড়কা দেওয়া ফটক সুদ্ধ ষাটটা বড় বড় গ্রাম। মহনয়িমে ইদ্দোর ছেলে অহীনাদব। নপ্তালিতে অহীমাস। তিনি শলোমনের মেয়ে বাসমৎকে বিয়ে করেছিলেন। আশেরে ও বালোতে হূশয়ের ছেলে বানা। ইষাখরে পারূহের ছেলে যিহোশাফট। বিন্যামীনে এলার ছেলে শিমিয়ি। গিলিয়দে, অর্থাৎ ইমোরীয়দের রাজা সীহোনের ও বাশনের রাজা ওগের দেশে ঊরির ছেলে গেবর। এই এলাকায় তিনিই ছিলেন একমাত্র শাসনকর্তা। যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকসংখ্যা ছিল সাগরের কিনারার বালুকণার মত অসংখ্য। তারা খাওয়া-দাওয়া করে সুখেই ছিল। ইউফ্রেটিস নদী থেকে শুরু করে মিসর ও পলেষ্টীয়দের দেশের সীমা পর্যন্ত সমস্ত রাজ্যগুলো শলোমনের শাসনের অধীনে ছিল। শলোমন যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন এই দেশগুলো তাঁকে কর্‌ দিত এবং তাঁর অধীনে ছিল। শলোমনের জন্য প্রতিদিন যে সব খাবার লাগত তা এই: প্রায় সাড়ে পাঁচ টন মিহি ময়দা, প্রায় এগারো টন সুজি, ঘরে খাওয়ানো দশটা গরু, চরে খাওয়ানো বিশটা গরু এবং একশোটা ভেড়া; তাছাড়া হরিণ, কৃষ্ণসার, চিতা হরিণ এবং মোটা-তাজা হাঁস-মুরগী। শলোমন ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম দিকের সমস্ত রাজ্যগুলো, অর্থাৎ তিপ্‌সহ থেকে গাজা পর্যন্ত রাজত্ব করতেন এবং তার রাজ্যের সব জায়গায় শান্তি ছিল। শলোমনের জীবনকালে যিহূদা ও ইস্রায়েল, অর্থাৎ দান থেকে বের্‌-শেবা পর্যন্ত সকলেরই নিজের নিজের আংগুর গাছ ও ডুমুর গাছ ছিল আর তারা নিরাপদে বাস করত। শলোমনের রথের ঘোড়াগুলোর জন্য ছিল চল্লিশ হাজার ঘর আর বারো হাজার ঘোড়সওয়ার। শাসনকর্তাদের প্রত্যেকে তাঁর পালার মাসে রাজা শলোমন ও তাঁর টেবিলে যারা খেতেন তাঁদের সকলের জন্য খাবারের যোগান দিতেন। তাঁরা খেয়াল রাখতেন যেন কোন কিছুরই অভাব না হয়। রথের ঘোড়া ও অন্যান্য ঘোড়াগুলোর জন্য তাঁদের প্রত্যেকের কাজের ভার অনুসারে তাঁরা যব ও খড় নির্দিষ্ট জায়গায় আনতেন। ঈশ্বর শলোমনকে সাগর পারের বালুকণার মত প্রচুর পরিমাণে জ্ঞান, বিচারবুদ্ধি ও বুঝবার ক্ষমতা দান করলেন। পূর্বদেশের এবং মিসরের সমস্ত জ্ঞানী লোকদের চেয়ে শলোমনের জ্ঞান ছিল বেশী। সমস্ত লোকের চেয়ে, এমন কি, ইষ্রাহীয় এথন এবং মাহোলের ছেলে হেমন, কল্‌কোল ও দর্দার চেয়েও তিনি বেশী জ্ঞানবান ছিলেন। তাঁর সুনাম আশেপাশের সমস্ত জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি তিন হাজার সৎ উপদেশের কথা বলেছিলেন এবং এক হাজার পাঁচটা গান রচনা করেছিলেন। তিনি লেবাননের এরস গাছ থেকে শুরু করে দেয়ালের গায়ে গজানো হিস্যোপ গাছ পর্যন্ত সমস্ত গাছের বর্ণনা করেছেন। তিনি জীব-জন্তু, পাখী, বুকে-হাঁটা প্রাণী ও মাছেরও বর্ণনা করেছেন। পৃথিবীর যে সব রাজারা শলোমনের জ্ঞানের বিষয় শুনেছিলেন তাঁরা তাঁর জ্ঞানপূর্ণ কথা শুনবার জন্য লোকদের পাঠিয়ে দিতেন। এইভাবে সমস্ত জাতির লোক তাঁর কাছে আসত। সোরের রাজা হীরম যখন শুনলেন যে, শলোমনকে তাঁর বাবার জায়গায় রাজপদে অভিষেক করা হয়েছে তখন তাঁর লোকদের তিনি শলোমনের কাছে পাঠালেন, কারণ দায়ূদের সংগে তাঁর সব সময়ই বন্ধুত্বের সমপর্ক ছিল। শলোমন হীরমকে বলে পাঠালেন, “আমার বাবা দায়ূদের বিরুদ্ধে চারদিক থেকে যুদ্ধ হয়েছিল, তাই যতদিন সদাপ্রভু তাঁর শত্রুদের তাঁর পায়ের তলায় না আনলেন ততদিন তিনি তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে কোন উপাসনা-ঘর তৈরী করতে পারেন নি। আপনি তো এই সব কথা জানেন। কিন্তু এখন আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু সব দিক থেকেই আমাকে শান্তি দিয়েছেন। এখন আমার কোন শত্রু নেই এবং কোন দুর্ঘটনাও ঘটে নি। সেইজন্য আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা উপাসনা-ঘর তৈরী করতে চাই। সদাপ্রভু আমার বাবা দায়ূদকে বলেছিলেন, ‘তোমার যে ছেলেকে আমি সিংহাসনে তোমার জায়গায় বসাব সে-ই আমার উদ্দেশে উপাসনা-ঘর তৈরী করবে।’ “কাজেই আপনি হুকুম করুন যাতে আমার জন্য লেবানন দেশের এরস গাছ কাটা হয়। অবশ্য আমার লোকেরা আপনার লোকদের সংগে থাকবে এবং আপনি যে মজুরি ঠিক করে দেবেন আমি সেই মজুরিই আপনার লোকদের দেব। আপনার তো জানা আছে যে, গাছ কাটবার কাজে সীদোনীয়দের মত পাকা লোক আমাদের মধ্যে কেউ নেই।” শলোমনের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে হীরম খুব খুশী হয়ে বললেন, “আজ সদাপ্রভুর গৌরব হোক, কারণ এই মহান জাতির উপরে রাজত্ব করবার জন্য দায়ূদকে তিনি এমন একটি জ্ঞানী ছেলে দান করেছেন।” হীরম শলোমনকে এই খবর পাঠালেন, “আপনার পাঠানো খবর আমি পেয়েছি। এরস ও বেরস কাঠের ব্যাপারে আপনার সব ইচ্ছাই আমি পূর্ণ করব। আমার লোকেরা সেগুলো লেবানন থেকে নামিয়ে সমুদ্রে আনবে। তারপর তারা সেগুলো দিয়ে ভেলা তৈরী করে সমুদ্রে ভাসিয়ে আপনার নির্দিষ্ট করা জায়গায় নিয়ে যাবে। সেখানে তারা সেগুলো খুলে ফেলবে আর তখন আপনি সেগুলো নিয়ে যেতে পারবেন। আমি চাই যেন আপনি আমার রাজবাড়ীর লোকদের জন্য খাবারের যোগান দেন।” এইভাবে হীরম শলোমনের চাহিদামত সমস্ত এরস ও বেরস কাঠ দিতে লাগলেন, আর শলোমন হীরমকে তাঁর রাজবাড়ীর লোকদের খাবারের জন্য তিন হাজার ছ’শো টন গম ও চার হাজার আটশো লিটার জলপাইয়ের খাঁটি তেল দিলেন। শলোমন এইভাবে বছরের পর বছর তা দিতে থাকলেন। সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে শলোমনকে জ্ঞান দিলেন। হীরম ও শলোমনের মধ্যে শান্তির সম্বন্ধ ছিল এবং তাঁরা দু’জনে একটা চুক্তি করলেন। রাজা শলোমন সমস্ত ইস্রায়েল থেকে ত্রিশ হাজার লোককে কাজ করতে বাধ্য করলেন। প্রতি মাসে পালা পালা করে তাদের মধ্য থেকে তিনি দশ হাজার লোককে লেবাননে পাঠাতেন। তারা একমাস লেবাননে থাকত আর দু’মাস থাকত নিজের বাড়ীতে। তাদের এই কাজের দেখাশোনার ভার ছিল অদোনীরামের উপর। শলোমনের অধীনে ছিল সত্তর হাজার ভারবহনকারী লোক ও পাহাড়ে পাথর কাটবার জন্য আশি হাজার লোক। তাদের কাজের দেখাশোনা করবার জন্য তিন হাজার তিনশো কর্মচারী ছিল। উপাসনা-ঘরের ভিত্তি গাঁথবার জন্য তারা রাজার আদেশে খাদ থেকে বড় বড় দামী পাথর কেটে তুলে আনত। শলোমন ও হীরমের মিস্ত্রিরা ও গিব্লীয়েরা সেই পাথরগুলো সুন্দর করে কেটে উপাসনা-ঘরটি তৈরী করবার জন্য কাঠ ও পাথর প্রস্তুত করত। মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বেরিয়ে আসবার পর চারশো আশি বছরের সময় ইস্রায়েলীয়দের উপর শলোমনের রাজত্বের চতুর্থ বৎসরের সিব মাসে, অর্থাৎ দ্বিতীয় মাসে শলোমন সদাপ্রভুর ঘরটি তৈরী করতে শুরু করলেন। রাজা শলোমন সদাপ্রভুর জন্য যে ঘরটি তৈরী করেছিলেন তা লম্বায় ছিল ষাট হাত, চওড়ায় বিশ হাত ও উচ্চতায় ত্রিশ হাত। উপাসনা-ঘরের প্রধান কামরাটির সামনে যে বারান্দা ছিল সেটি ঘরের চওড়ার মাপ অনুসারে বিশ হাত চওড়া আর ঘরের সামনে থেকে তার লম্বার দিকটা ছিল দশ হাত। ঘরটার দেয়ালের মধ্যে তিনি জানলার মত করে সরু জালি-দেওয়া জায়গা তৈরী করলেন। প্রধান কামরা ও মহাপবিত্র স্থানের তিন পাশের দেয়ালের গা ঘেঁষে তিনি একটা তিন তলা ঘর তৈরী করলেন। তার মধ্যে অনেকগুলো কামরা ছিল। নীচের তলার কামরাগুলো ছিল পাঁচ হাত চওড়া, দ্বিতীয় তলার কামরাগুলো ছিল ছয় হাত চওড়া এবং তৃতীয় তলার কামরাগুলো ছিল সাত হাত চওড়া, কারণ উপাসনা-ঘরের দেয়ালের বাইরের দিকের গায়ে কয়েকটা থাক তৈরী করা হয়েছিল। তার ফলে ঐ তিন তলা ঘর তৈরী করবার জন্য উপাসনা-ঘরের দেয়ালের গায়ে কোন বীম লাগাবার দরকার হল না। খাদের যে সব পাথর কেটে ঠিক করা হয়েছিল কেবল সেগুলোই এনে উপাসনা-ঘরটা তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হল। উপাসনা-ঘরটি তৈরী করবার সময় সেখানে কোন হাতুড়ি, কুড়াল কিম্বা অন্য কোন লোহার যন্ত্রপাতির আওয়াজ শোনা গেল না। নীচের তলায় ঢুকবার পথ ছিল উপাসনা-ঘরের দক্ষিণ দিকে; সেখান থেকে একটা সিঁড়ি দোতালা এবং তার পরে তিন তলায় উঠে গেছে। এইভাবে তিনি উপাসনা-ঘরটা তৈরী করেছিলেন এবং তা শেষও করেছিলেন। তিনি এরস কাঠের তক্তা ও বীম দিয়ে তার ছাদও দিয়েছিলেন। উপাসনা-ঘরের তিন পাশের সেই ঘরে তিনি কতগুলো কামরা তৈরী করেছিলেন। সেই কামরাগুলোর প্রত্যেকটার উচ্চতা ছিল পাঁচ হাত এবং এরস কাঠের বীম দিয়ে ঘরের সিলিং তৈরী করা হয়েছিল। সেই বীমগুলোর এক মাথা উপাসনা-ঘরের দেয়ালের থাকের উপর রাখা হয়েছিল। শলোমনের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য বলা হল, “তুমি যদি আমার নির্দেশ মত চল, আমার সব নিয়ম পালন কর এবং আমার সমস্ত আদেশের বাধ্য হও তাহলে যে উপাসনা-ঘরটি তুমি তৈরী করছ তার বিষয়ে আমি তোমার বাবা দায়ূদের কাছে যা প্রতিজ্ঞা করেছি তা আমি তোমার মধ্য দিয়ে পূর্ণ করব। আমি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে বাস করব এবং আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের আমি ত্যাগ করব না।” শলোমন উপাসনা-ঘরটি তৈরী করে এইভাবে শেষ করলেন। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত এরস কাঠের তক্তা দিয়ে তিনি দেয়ালের ভিতরের দিকটা ঢেকে দিলেন এবং মেঝেটা ঢেকে দিলেন বেরস কাঠের তক্তা দিয়ে। উপাসনা-ঘরের মধ্যে মহাপবিত্র স্থান নামে একটা ভিতরের কামরা তৈরী করবার জন্য তিনি উপাসনা-ঘরের পিছনের অংশের বিশ হাত জায়গা মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত এরস কাঠের তক্তা দিয়ে আলাদা করে নিলেন। মহাপবিত্র স্থানের সামনে প্রধান বড় কামরাটি ছিল চল্লিশ হাত লম্বা। উপাসনা-ঘরের মধ্যেকার এরস কাঠের উপরে লতানো গাছের ফল ও ফোটা ফুল খোদাই করা হল। সব কিছু এরস কাঠের ছিল, কোন পাথর দেখা যাচ্ছিল না। উপাসনা-ঘরের মধ্যে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি বসাবার জন্য শলোমন এইভাবে মহাপবিত্র স্থানটা প্রস্তুত করলেন। সেই স্থানটা ছিল বিশ হাত লম্বা, বিশ হাত চওড়া ও বিশ হাত উঁচু। খাঁটি সোনা দিয়ে তিনি তার ভিতরটা মুড়িয়ে দিলেন এবং বেদীটাও তিনি এরস কাঠ দিয়ে ঢেকে দিলেন। উপাসনা-ঘরের প্রধান কামরার দেয়াল তিনি খাঁটি সোনা দিয়ে ঢেকে দিলেন এবং মহাপবিত্র স্থানের সামনে সোনার শিকল লাগিয়ে দিলেন। সেই মহাপবিত্র স্থানের দেয়ালও তিনি সোনা দিয়ে ঢেকে দিলেন। উপাসনা-ঘরের ভিতরের সমস্ত জায়গাটা তিনি এইভাবে সোনা দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন। মহাপবিত্র স্থানের বেদীও তিনি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন। মহাপবিত্র স্থানে তিনি সেই করূব দু’টি ডানা মেলে দেওয়া অবস্থায় রাখলেন। একটি করূবের ডানা এক দেয়াল ও অন্য করূবটির ডানা অন্য দেয়াল ছুঁয়ে রইল আর ঘরের মাঝখানে তাদের অন্য ডানা দু’টি একটি অন্যটির আগা ছুঁয়ে রইল। তিনি করূব দু’টিকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন। উপাসনা-ঘরের দু’টি কামরার সমস্ত দেয়ালে করূব, খেজুর গাছ এবং ফোটা ফুল খোদাই করা ছিল। কামরা দু’টির মেঝেও তিনি সোনা দিয়ে ঢেকে দিলেন। মহাপবিত্র স্থানের দরজাটা তিনি জলপাই কাঠ দিয়ে তৈরী করলেন। সেই দরজার ফ্রেমের পাঁচটা কোণা ছিল। দরজার দুই পাল্লাতে তিনি করূব, খেজুর গাছ ও ফোটা ফুল খোদাই করে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন এবং সেই করূব ও খেজুর গাছের উপরকার সোনা পিটিয়ে সেগুলোর আকার দিলেন। সেই পাল্লাগুলোর উপর তিনি করূব, খেজুর গাছ ও ফোটা ফুল খোদাই করে সোনার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন। সুন্দর করে কাটা তিন সারি পাথর ও এরস গাছের এক সারি মোটা কাঠ দিয়ে তিনি ভিতরের উঠানের চারপাশের দেয়াল তৈরী করলেন। চতুর্থ বছরের সিব মাসে সদাপ্রভুর ঘরের ভিত্তি গাঁথা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুসারে উপাসনা-ঘরটির সমস্ত কাজ এগারো বছরের বূল মাসে, অর্থাৎ অষ্টম মাসে শেষ হয়েছিল। এই উপাসনা-ঘরটি তৈরী করতে শলোমনের সাত বছর সময় লেগেছিল। রাজবাড়ীটা তৈরী করতে শলোমনের তেরো বছর লেগেছিল। রাজবাড়ীতে তিনি লেবানন-বন-কুটির নামে একটা ঘর তৈরী করেছিলেন। এই ঘরটা একশো হাত লম্বা, পঞ্চাশ হাত চওড়া ও ত্রিশ হাত উঁচু ছিল। এরস কাঠের চার সারি থামের উপর এরস কাঠের ছেঁটে নেওয়া বীমগুলো বসানো ছিল। থামের উপর বসানো বীমগুলোর উপরে এরস কাঠ দিয়ে ছাদ দেওয়া হল; এক এক সারিতে পনেরোটা করে পঁয়তাল্লিশটা বীম ছিল। ঘরের চারপাশের দেয়ালে মুখোমুখি তিন সারি জানলা দেওয়া হল। সমস্ত দরজার ফ্রেমগুলো ছিল চৌকোণা; জানলাগুলো তিন সারিতে মুখোমুখি করে তৈরী করা হয়েছিল। তারপর তিনি থাম-কুটির নামে একটা ঘর তৈরী করলেন। সেটা লম্বায় ছিল পঞ্চাশ হাত আর চওড়ায় ত্রিশ হাত। তার সামনে ছিল একটা ছাদ-দেওয়া বারান্দা, আর সেই ছাদ কতগুলো থামের উপর বসানো ছিল। সেই থামগুলোর সামনে ছাদের নীচে একটা বীম ছিল। বিচার-কুটির নামে তিনি একটা ঘর তৈরী করলেন; সেখানে তাঁর সিংহাসন ছিল। বিচার করবার জন্য এই ঘরটা তৈরী করা হল। ঘরের দেয়াল নীচ থেকে উপর পর্যন্ত তিনি এরস কাঠ দিয়ে ঢেকে দিলেন। যে ঘরে তিনি বাস করবেন সেটা বিচার-কুটিরের পিছনে একই নমুনায় তৈরী করা হল। ফরৌণের যে মেয়েকে তিনি বিয়ে করেছিলেন তাঁর জন্য সেই রকম করেই আর একটা ঘর তৈরী করলেন। রাজবাড়ীর বড় উঠান এবং সমস্ত দালানগুলোর ভিত্তি থেকে ছাদের কার্ণিশ পর্যন্ত সবই ঠিক মাপে কাটা দামী পাথর দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। সেই পাথরগুলো করাত দিয়ে সমান করে কেটে নেওয়া হয়েছিল। দালানগুলোর ভিত্তি গাঁথা হয়েছিল বড় বড় দামী পাথর দিয়ে। সেগুলোর কোন কোনটা ছিল দশ হাত আবার কোন কোনটা আট হাত। ভিত্তির পাথরগুলোর উপর ছিল ঠিক মাপে কাটা দামী পাথর ও এরস কাঠ। বারান্দা সুদ্ধ সদাপ্রভুর ঘরের ভিতরের উঠানের মতই রাজবাড়ীর বড় উঠানের চারপাশের দেয়াল সুন্দর করে কাটা তিন সারি পাথর ও এরস গাছের এক সারি মোটা কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল। রাজা শলোমন সোরে লোক পাঠিয়ে হীরামকে আনালেন। তাঁর মা ছিলেন বিধবা এবং নপ্তালি-গোষ্ঠীর মেয়ে। তাঁর বাবা ছিলেন সোরের লোক। হীরম ব্রোঞ্জের কারিগর ছিলেন। হীরাম ব্রোঞ্জের সমস্ত রকম কাজ জানতেন এবং সেই কাজে তিনি খুব পাকা ছিলেন। তিনি রাজা শলোমনের কাছে আসলেন এবং তাঁকে যে সব কাজ দেওয়া হল তা করলেন। হীরাম ব্রোঞ্জের দু’টা থাম তৈরী করলেন। তার প্রত্যেকটা লম্বায় ছিল আঠারো হাত আর বেড়ে বারো হাত। সেই দু’টা থামের উপরে দেবার জন্য তিনি ব্রোঞ্জ ছাঁচে ফেলে দু’টা মাথা তৈরী করলেন। মাথা দু’টার প্রত্যেকটা পাঁচ হাত করে উঁচু ছিল। থামের উপরকার মাথা দু’টার উপরের চার হাত ছিল লিলি ফুলের আকারের। মাথার নীচের অংশটা গোলাকার ছিল। সেই গোলাকার অংশের চারপাশে শিকলগুলো লাগানো ছিল। প্রত্যেকটি মাথার চারপাশে শিকলের সংগে সারি সারি করে ব্রোঞ্জের দু’শো ডালিম ফল লাগানো ছিল। হীরাম সেই দু’টা ব্রোঞ্জের থাম উপাসনা-ঘরের বারান্দায় স্থাপন করলেন। দক্ষিণ দিকে যেটা রাখলেন তার নাম দেওয়া হল যাখীন (যার মানে “যিনি স্থাপন করেন”) এবং উত্তর দিকে যেটা রাখলেন তার নাম দেওয়া হল বোয়স (যার মানে “তাঁর মধ্যেই শক্তি”)। লিলি ফুলের আকারের ব্রোঞ্জের মাথা দু’টা সেই থাম দু’টার উপরে বসানো ছিল। এইভাবে সেই থাম তৈরীর কাজ শেষ করা হল। তারপর হীরাম ব্রোঞ্জ ছাঁচে ঢেলে জল রাখবার জন্য একটা গোল বিরাট পাত্র তৈরী করলেন। পাত্রটার এক দিক থেকে সোজাসুজি অন্য দিকের মাপ ছিল দশ হাত, গভীরতা পাঁচ হাত এবং বেড়ের চারপাশের মাপ ত্রিশ হাত। পাত্রটার মুখের বাইরের কিনারার নীচে প্রতি হাত জায়গায় দশটা করে দুই সারি ব্রোঞ্জের লতানো গাছের ফল ছিল। যে ছাঁচের মধ্যে পাত্রটা তৈরী করা হয়েছিল সেই ছাঁচের মধ্যেই ফলগুলোর আকার ছিল বলে সবটা মিলে একটা জিনিসই হল। পাত্রটা বারোটা ব্রোঞ্জের গরুর পিঠের উপর বসানো ছিল। সেগুলোর তিনটা উত্তরমুখী, তিনটা পশ্চিমমুখী, তিনটা দক্ষিণমুখী ও তিনটা পূর্বমূখী ছিল এবং তাদের পিছনগুলো ছিল ভিতরের দিকে। পাত্রটা ছিল চার আংগুল পুরু। তার মুখটা একটা বাটির মুখের মত ছিল এবং লিলি ফুলের পাপড়ির মত বাইরের দিকে উল্টানো ছিল। তাতে চুয়াল্লিশ হাজার লিটার জল ধরত। হীরাম ব্রোঞ্জের দশটা বাক্সের মত জিনিস তৈরী করলেন। সেগুলোর প্রত্যেকটা চার হাত লম্বা, চার হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু ছিল। বাক্সের চারপাশের ব্রোঞ্জের পাত ফ্রেমের মধ্যে বসানো ছিল। সেই পাতগুলোর উপরে সিংহ, গরু ও করূবের মূর্তি ছিল এবং সিংহ ও গরুর নীচে ফুলের মত নক্‌শা করা ছিল। বাক্সের উপরের ফ্রেমের সংগে লাগানো একটা গামলা বসাবার আসন ছিল। প্রত্যেকটা বাক্সে ব্রোঞ্জের ধুরা সুদ্ধ ব্রোঞ্জের চারটা চাকা ছিল। গামলা বসাবার জন্য চার কোণায় ব্রোঞ্জের চারটা ঠেক্‌না ছিল। সেগুলোতেও ফুলের মত নক্‌শা করা ছিল। গামলা বসাবার আসনের মধ্যে একটা গোলাকার ফাঁকা জায়গা ছিল। সেই ফাঁকা জায়গাটার এক দিক থেকে সোজাসুজি অন্য দিকের মাপ হল দেড় হাত। সেই ফাঁকা জায়গার চারদিকে খোদাই করা কারুকাজ ছিল। গামলাটা সেই ফাঁকা জায়গার মধ্যে বসানো হলে পর আসন থেকে গামলাটার উচ্চতা হল এক হাত। বাক্সের পাতগুলো গোল ছিল না, চৌকো ছিল। পাতগুলোর নীচে চারটা চাকা ছিল আর চাকার ধুরাগুলো বাক্সের সংগে লাগানো ছিল। প্রত্যেকটা চাকা দেড় হাত উঁচু ছিল। চাকাগুলো রথের চাকার মত ছিল; ধুরা, চাকার বেড়, শিক ও মধ্যের নাভি সবই ছাঁচে ঢালাই করা ছিল। প্রত্যেকটা বাক্সের চার কোণায় চারটা ঠেক্‌না লাগানো ছিল। বাক্সের উপরে ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী আধ হাত উঁচু একটা গোলাকার জিনিস ছিল। সেই গোলাকার জিনিসের বাইরের দিকে ভাগে ভাগে করূব, সিংহ ও খেজুর গাছ খোদাই করা হয়েছিল। প্রতিটি ভাগের ফাঁকে ঠেক্‌না ছিল, আর সেই ঠেক্‌নার উপরে তৈরী করা ছিল ফুলের মত নক্‌শা। এই গোলাকার জিনিসটা বাক্সের সংগেই তৈরী করা হয়েছিল। এইভাবেই তিনি দশটা বাক্স তৈরী করলেন। সেগুলো একই ছাঁচে ঢালা হয়েছিল এবং আয়তন ও আকারে একই রকম ছিল। তিনি প্রত্যেকটা বাক্সের জন্য একটা করে ব্রোঞ্জের দশটা গামলা তৈরী করলেন। প্রত্যেকটা গামলার বেড় ছিল চার হাত এবং তাতে আটশো আশি লিটার জল ধরত। তিনি উপাসনা-ঘরের দক্ষিণ দিকে পাঁচটা এবং উত্তর দিকে পাঁচটা বাক্স রাখলেন; আর দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় রাখলেন সেই বিরাট পাত্রটা। এছাড়া তিনি অন্যান্য পাত্র, হাতা ও বাটি তৈরী করলেন। এইভাবে রাজা শলোমনের জন্য হীরাম সদাপ্রভুর ঘরের যে যে কাজ আরম্ভ করেছিলেন তা শেষ করলেন। সেগুলো হল: দু’টা থাম, থামের উপরকার গোলাকার দু’টা মাথা, সেই মাথার উপরটা সাজাবার জন্য দুই সারি কারুকাজ করা পাকানো শিকল; সেই শিকলগুলোর জন্য চারশো ডালিম- থামের উপরকার মাথার গোলাকার অংশটা সাজাবার জন্য প্রত্যেক সারি শিকলের জন্য দুই সারি ডালিম; দশটা বাক্স ও দশটা গামলা; বিরাট পাত্র ও তার নীচের বারোটা গরু; পাত্র, হাতা ও বাটি। হীরাম যে সব জিনিস রাজা শলোমনের নির্দেশে সদাপ্রভুর ঘরের জন্য তৈরী করেছিলেন সেগুলো ছিল চক্‌চকে ব্রোঞ্জের। যর্দনের সমভূমিতে সুক্কোৎ ও সর্তনের মাঝামাঝি এক জায়গায় রাজা এই সব জিনিস মাটির ছাঁচে ফেলে তৈরী করিয়েছিলেন। জিনিসগুলোর সংখ্যা এত বেশী ছিল যে, শলোমন সেগুলো ওজন করেন নি; সেইজন্য ব্রোঞ্জের পরিমাণ জানা যায় নি। সদাপ্রভুর ঘরের যে সব জিনিসপত্র শলোমন তৈরী করিয়েছিলেন সেগুলো হল: সোনার বেদী, সম্মুখ-রুটি রাখবার সোনার টেবিল; খাঁটি সোনার বাতিদান- সেগুলো ছিল মহাপবিত্র স্থানের সামনে, ডানে পাঁচটা ও বাঁয়ে পাঁচটা; সোনার ফুল, বাতি এবং চিম্‌টা; খাঁটি সোনার পেয়ালা, সল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা, বাটি, হাতা ও আগুন রাখবার পাত্র; ভিতরের কামরার, অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানের দরজার জন্য এবং উপাসনা-ঘরের প্রধান কামরার দরজার জন্য সোনার কব্‌জা। এইভাবে রাজা শলোমন সদাপ্রভুর ঘরের সমস্ত কাজ শেষ করলেন। তারপর তিনি তাঁর বাবা দায়ূদ যে সব জিনিস সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন সেগুলো নিয়ে আসলেন। সেগুলো ছিল সোনা, রূপা এবং বিভিন্ন পাত্র। সেগুলো তিনি সদাপ্রভুর ঘরের ধনভাণ্ডারে রেখে দিলেন। এর পর রাজা শলোমন দায়ূদ-শহর, অর্থাৎ সিয়োন থেকে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি নিয়ে আসবার জন্য ইস্রায়েলের বৃদ্ধ নেতাদের, গোষ্ঠী-সর্দারদের ও ইস্রায়েলীয় বংশের প্রধান লোকদের যিরূশালেমে তাঁর কাছে উপস্থিত করলেন। তাতে এথানীম মাসে, অর্থাৎ সপ্তম মাসে পর্বের সময়ে ইস্রায়েলের ঐ সমস্ত লোক রাজা শলোমনের কাছে উপস্থিত হলেন। ইস্রায়েলের সব বৃদ্ধ নেতারা উপস্থিত হলে পর পুরোহিতেরা সিন্দুকটি তুলে নিলেন। তাঁরা এবং লেবীয়েরা সদাপ্রভুর সিন্দুক, মিলন-তাম্বু এবং সমস্ত পবিত্র পাত্র বয়ে নিলেন। রাজা শলোমন ও তাঁর কাছে জড়ো হওয়া সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সিন্দুকটির সামনে সামনে থেকে এত ভেড়া ও গরু উৎসর্গ করলেন যে, সেগুলোর সংখ্যা গোণা গেল না। তারপর পুরোহিতেরা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি নির্দিষ্ট জায়গায়, উপাসনা-ঘরের ভিতরের কামরায়, অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানে করূবদের ডানার নীচে নিয়ে রাখলেন। তাতে করূবদের মেলে দেওয়া ডানায় সিন্দুক ও তা বহন করবার ডাণ্ডাগুলো ঢাকা পড়ল। এই ডাণ্ডাগুলো এত লম্বা ছিল যে, সেগুলোর মাথা ভিতরের কামরার সামনের প্রধান কামরা, অর্থাৎ পবিত্র স্থান থেকে দেখা যেত, কিন্তু পবিত্র স্থানের বাইরে থেকে দেখা যেত না। সেগুলো আজও সেখানে রয়েছে। ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পর সদাপ্রভু হোরেব পাহাড়ে তাদের জন্য যখন ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন তখন মোশি সিন্দুকের মধ্যে যে পাথরের ফলক দু’টি রেখেছিলেন সেই দু’টি ছাড়া আর কিছুই তার মধ্যে ছিল না। পবিত্র স্থান থেকে পুরোহিতেরা বের হয়ে আসবার পরেই সদাপ্রভুর ঘরের ভিতরটা মেঘে ভরে গেল। সেই মেঘের জন্য পুরোহিতেরা সেবা-কাজ করতে পারলেন না, কারণ সদাপ্রভুর মহিমায় তাঁর ঘরটা পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তখন শলোমন বললেন, “সদাপ্রভু, তুমি বলেছিলে তুমি ঘন মেঘে বাস করবে। আমি এখন তোমার জন্য একটা চমৎকার ঘর তৈরী করেছি; এটা হবে তোমার চিরকালের বাসস্থান।” এই বলে রাজা জড়ো হওয়া সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের দিকে ঘুরে তাদের আশীর্বাদ করলেন। তখন লোকেরা দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর তিনি বললেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক। তিনি আমার বাবা দায়ূদের কাছে নিজের মুখে যা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা নিজেই পূর্ণ করলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের মিসর থেকে বের করে আনবার পর আমি ইস্রায়েলীয়দের কোন গোষ্ঠীর শহর বেছে নিই নি যেখানে নিজেকে প্রকাশ করবার জন্য বাসস্থান হিসাবে একটা ঘর তৈরী করা যায়। কিন্তু আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের শাসন করবার জন্য আমি দায়ূদকে বেছে নিয়েছি।’ “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য একটা ঘর তৈরী করবার ইচ্ছা আমার বাবা দায়ূদের অন্তরে ছিল। কিন্তু সদাপ্রভু আমার বাবা দায়ূদকে বলেছিলেন, ‘আমার জন্য একটা ঘর তৈরী করবার ইচ্ছা যে তোমার অন্তরে আছে তা ভাল। তবে ঘরটি তুমি তৈরী করবে না, করবে তোমার ছেলে, যে তোমার নিজের সন্তান। সে-ই আমার জন্য সেই ঘর তৈরী করবে।’ “সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছেন। আমার বাবা যে পদে ছিলেন আমি সেই পদ পেয়েছি। সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমি ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসেছি এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য আমি এই ঘরটি তৈরী করেছি। আমি সেখানে সেই সাক্ষ্য-সিন্দুকটি রাখবার জায়গা ঠিক করেছি যার মধ্যে রয়েছে সদাপ্রভুর দেওয়া ব্যবস্থা, যা তিনি মিসর থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের বের করে আনবার পর তাঁদের জন্য স্থাপন করেছিলেন।” তারপর শলোমন সেখানে জড়ো হওয়া ইস্রায়েলীয়দের সামনে সদাপ্রভুর বেদীর কাছে দাঁড়িয়ে স্বর্গের দিকে হাত তুললেন। তিনি বললেন, “হে সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, উপরে স্বর্গে কিম্বা নীচে পৃথিবীতে তোমার মত ঈশ্বর আর কেউ নেই। তোমার যে দাসেরা মনে-প্রাণে তোমার পথে চলে তুমি তাদের পক্ষে তোমার অটল ভালবাসার ব্যবস্থা রক্ষা করে থাক। তোমার দাস আমার বাবা দায়ূদের কাছে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তা তুমি রক্ষা করেছ। তুমি মুখে যা বলেছ কাজেও তা করেছ, আর আজকে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। “এখন হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার দাস আমার বাবা দায়ূদের কাছে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তা রক্ষা কর। তুমি বলেছিলে যদি তাঁর ছেলেরা তাঁর মত করে তাদের সব কাজে তোমার ইচ্ছামত চলে তবে ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসবার জন্য তাঁর বংশে লোকের অভাব হবে না। হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর, যে প্রতিজ্ঞা তুমি তোমার দাস আমার বাবা দায়ূদের কাছে করেছিলে তা সফল হোক। “কিন্তু সত্যিই কি ঈশ্বর পৃথিবীতে বাস করবেন? মহাকাশে, এমন কি, মহাকাশের সমস্ত জায়গা জুড়েও যখন তোমার স্থান অকুলান হয় তখন আমার তৈরী এই ঘরে কি তোমার জায়গা হবে? তবুও হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার দাসের প্রার্থনা ও অনুরোধে তুমি কান দাও। তোমার দাস আজ তোমার কাছে কাকুতি-মিনতি করে যে প্রার্থনা করছে তা তুমি শোন। যে জায়গার বিষয় তুমি বলেছ, ‘এই জায়গায় আমার বাসস্থান হবে,’ সেই জায়গার দিকে, অর্থাৎ এই উপাসনা-ঘরের দিকে তোমার চোখ দিনরাত খোলা থাকুক; আর এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার দাস যখন প্রার্থনা করবে তখন তুমি তা শুনো। এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার দাস ও তোমার লোক ইস্রায়েলীয়েরা যখন অনুরোধ করবে তখন তাতে তুমি কান দিয়ো। তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তা তুমি শুনো এবং তাদের ক্ষমা কোরো। “কোন লোককে অন্যের বিরুদ্ধে অন্যায় করবার দোষে দোষী করা হলে তার নিজের উপর অভিশাপ ডেকে আনবার জন্য যদি তাকে দিব্য করতে বাধ্য করা হয় এবং সে গিয়ে তোমার এই ঘরের বেদীর সামনে সেই দিব্য করে, তবে তুমি স্বর্গ থেকে সেই কথা শুনো এবং সেইমত কাজ কোরো। তখন তোমার দাসদের তুমি বিচার করে দোষীর কাজের ফল তার মাথায় চাপিয়ে দিয়ে তাকে দোষী বলে প্রমাণ কোরো আর নির্দোষকে তার কাজ অনুসারে ফল দিয়ে তাকে নির্দোষ বলে প্রমাণ কোরো। “তোমার বিরুদ্ধে পাপ করবার দরুন যখন তোমার লোক ইস্রায়েলীয়েরা শত্রুর কাছে হেরে গিয়ে আবার তোমার কাছে ফিরে আসবে এবং এই উপাসনা-ঘরে তোমার গৌরব করে তোমার কাছে প্রার্থনা ও অনুরোধ করবে, তখন স্বর্গ থেকে তুমি তা শুনো এবং তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের পাপ ক্ষমা করে যে দেশ তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছ সেখানে আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসো। “তোমার বিরুদ্ধে তোমার লোকদের পাপ করবার দরুন যখন আকাশ বন্ধ হয়ে বৃষ্টি পড়বে না, তখন তারা যদি এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার গৌরব করে ও তোমার কাছে প্রার্থনা করে এবং তোমার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে পাপ থেকে ফেরে, তবে তুমি স্বর্গ থেকে তা শুনো এবং তোমার দাসদের, অর্থাৎ তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের পাপ ক্ষমা করে দিয়ো। জীবনে ঠিক ভাবে সৎ পথে চলতে তাদের শিক্ষা দিয়ো এবং সম্পত্তি হিসাবে যে দেশ তুমি তাদের দিয়েছ সেই দেশের উপর বৃষ্টি দিয়ো। “যদি দেশে দুর্ভিক্ষ কিম্বা মড়ক দেখা দেয়, যদি ফসল শুকিয়ে-যাওয়া রোগ কিম্বা ছাৎলা-পড়া রোগ হয়, যদি ফসলে ফড়িং বা পংগপাল লাগে, যদি শত্রু তাদের কোন শহর ঘেরাও করে- যে কোন রকম বিপদ কিম্বা রোগ দেখা দিক না কেন, তখন যদি তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের কেউ অনুতপ্ত হয়ে মনের কষ্টে এই উপাসনা-ঘরের দিকে হাত বাড়িয়ে কোন প্রার্থনা বা অনুরোধ করে, তবে তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তুমি তা শুনো। তুমি তাকে ক্ষমা কোরো ও সেইমত কাজ কোরো; তার সব কাজ অনুসারে বিচার কোরো, কারণ তুমি তো তার অন্তরের অবস্থা জান- কেবল তুমিই সমস্ত মানুষের অন্তরের খবর জান। তুমি তা কোরো যাতে আমাদের পূর্বপুরুষদের তুমি যে দেশ দিয়েছ সেখানে সারা জীবন তোমার লোকেরা তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে চলে। তখন তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তুমি তা শুনো। সে যা চায় তার জন্য তা কোরো যেন পৃথিবীর সমস্ত লোক তোমাকে জানতে পারে এবং তোমার নিজের লোক ইস্রায়েলীয়দের মত তারাও তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করতে পারে আর জানতে পারে যে, আমার তৈরী এই ঘর তোমারই ঘর। “তুমি যখন তোমার লোকদের তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠাবে তখন তারা যেখানেই থাকুক না কেন সেখান থেকে যদি তোমার বেছে নেওয়া এই শহরের দিকে ও তোমার জন্য আমার তৈরী এই ঘরের দিকে ফিরে প্রার্থনা করে, তবে স্বর্গ থেকে তুমি তাদের প্রার্থনা ও অনুরোধ শুনো এবং তাদের পক্ষ নিয়ো। “তারা যখন তোমার বিরুদ্ধে পাপ করবে- অবশ্য পাপ করে না এমন লোক নেই- আর তুমি তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে শত্রুর হাতে তাদের তুলে দেবে ও শত্রুরা তাদের বন্দী করে কাছে বা দূরে তাদের নিজেদের দেশে নিয়ে যাবে, তখন বন্দী হয়ে থাকা সেই দেশে যদি তারা মন ফিরায় এবং অনুতপ্ত হয়ে তোমাকে অনুরোধ করে বলে, ‘আমরা পাপ করেছি, অন্যায় করেছি এবং মন্দভাবে চলেছি,’ তবে তুমি তাদের প্রার্থনা শুনো। ঐ দেশে যদি তারা মনে-প্রাণে তোমার দিকে ফেরে এবং তাদের পূর্বপুরুষদের যে দেশ তুমি দিয়েছ সেই দেশের দিকে, তোমার বেছে নেওয়া শহরের দিকে, তোমার জন্য আমার তৈরী এই ঘরের দিকে ফিরে তোমার কাছে প্রার্থনা করে, তবে তুমি তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তাদের প্রার্থনা ও অনুরোধ শুনো এবং তাদের পক্ষ নিয়ো। তোমার যে লোকেরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছে সেই লোকদের তুমি ক্ষমা কোরো এবং তোমার বিরুদ্ধে করা তাদের সমস্ত দোষও ক্ষমা কোরো। তাদের যারা বন্দী করে নিয়ে গেছে সেই লোকদের মন এমন কোরো যাতে তারা তাদের প্রতি দয়া করে; কারণ ইস্রায়েলীয়েরা তো তোমারই লোক, তোমারই সম্পত্তি যাদের তুমি মিসর থেকে বের করে এনেছ, বের করে এনেছ লোহা গলানো চুল্লীর ভিতর থেকে। “তোমার দাসের ও তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের অনুরোধের প্রতি তুমি মনোযোগ দিয়ো, আর যখন তারা তোমাকে ডাকবে তখন তুমি তাদের কথা শুনো। হে প্রভু সদাপ্রভু, আমাদের পূর্বপুরুষদের মিসর থেকে বের করে আনবার সময় তোমার দাস মোশির মধ্য দিয়ে তোমার ঘোষণা অনুসারে তোমার নিজের সম্পত্তি হবার জন্য জগতের সমস্ত জাতির মধ্য থেকে তুমি ইস্রায়েলীয়দের আলাদা করে নিয়েছ।” সদাপ্রভুর কাছে এই সব প্রার্থনা ও মিনতি শেষ করবার পর শলোমন সদাপ্রভুর বেদীর সামনে থেকে উঠলেন; এতক্ষণ তিনি হাঁটু পেতে স্বর্গের দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে জড়ো হওয়া সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জোর গলায় এই বলে আশীর্বাদ করলেন, “ধন্য সদাপ্রভু, যিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের বিশ্রাম দিয়েছেন। তাঁর দাস মোশির মধ্য দিয়ে তিনি যে সব মংগল করবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তার একটা কথাও তিনি খেলাপ করেন নি। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যেমন আমাদের পূর্বপুরুষদের সংগে ছিলেন তেমনি তিনি আমাদের সংগেও থাকুন। তিনি যেন কখনও আমাদের ছেড়ে না যান কিম্বা ছেড়ে না দেন। আমরা তাঁর সব পথে চলবার জন্য এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে তিনি যে সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ দিয়েছিলেন তা মেনে চলবার জন্য তিনি আমাদের অন্তর তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত রাখুন। আমি যে সব কথা বলে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছি তা দিনরাত আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর মনে থাকুক যাতে তিনি তাঁর দাসের ও তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা করেন। এতে পৃথিবীর সমস্ত জাতিই জানতে পারবে যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর এবং তিনি ছাড়া ঈশ্বর আর কেউ নেই। আজকে যেমন সদাপ্রভুর নিয়ম ও আদেশ মেনে চলবার জন্য তোমাদের অন্তর সম্পূর্ণভাবে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিকে আছে তেমনি সব সময় থাকুক।” তারপর রাজা ও তাঁর সংগে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর সামনে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। শলোমন বাইশ হাজার গরু ও এক লক্ষ বিশ হাজার ভেড়া দিয়ে যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। এইভাবে রাজা ও সমস্ত ইস্রায়েলীয় সদাপ্রভুর ঘর প্রতিষ্ঠা করলেন। সেই একই দিনে রাজা সদাপ্রভুর ঘরের সামনের উঠানের মাঝখানের অংশ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করলেন। সেখানে তিনি পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন এবং যোগাযোগ-উৎসর্গের চর্বি উৎসর্গ করলেন, কারণ সদাপ্রভুর সামনে থাকা ব্রোঞ্জের বেদীটা এই সব উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার পক্ষে ছোট ছিল। এইভাবে শলোমন ও তাঁর সংগে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সেই সময় আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে সাত দিন ও আরও সাত দিন, মোট চৌদ্দ দিন ধরে একটা উৎসব করলেন। তারা ছিল এক বিরাট জনসংখ্যা; তারা হমাৎ এলাকা থেকে মিসরের শুকনা নদী পর্যন্ত সমস্ত এলাকা থেকে এসে যোগ দিয়েছিল। তার পরের দিন রাজা লোকদের বিদায় দিলেন। সদাপ্রভু তাঁর দাস দায়ূদ ও তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের প্রতি যে সব মংগল করেছেন তার জন্য আনন্দিত ও খুশী হয়ে লোকেরা রাজাকে ধন্যবাদ দিয়ে বাড়ী চলে গেল। এইভাবে শলোমন সদাপ্রভুর ঘর, রাজবাড়ী আর নিজের ইচ্ছামত যে সব কাজ করতে চেয়েছিলেন তা শেষ করলেন। তারপর সদাপ্রভু দ্বিতীয়বার তাঁকে দেখা দিলেন যেমন গিবিয়োনে একবার তাঁকে দেখা দিয়েছিলেন। সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তুমি যে প্রার্থনা ও অনুরোধ আমার কাছে করেছ তা আমি শুনেছি। তোমার তৈরী এই উপাসনা-ঘরটি চিরকাল আমার বাসস্থান হিসাবে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করেছি। এর উপর সব সময় আমার চোখ ও মন থাকবে। “আর তুমি, তুমি যদি তোমার বাবা দায়ূদের মত খাঁটি অন্তরে, সৎভাবে আমার সামনে চল এবং আমার সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ পালন কর, তবে আমি চিরকালের জন্য ইস্রায়েলের উপর তোমার রাজসিংহাসন স্থায়ী করব। এই কথা আমি তোমার বাবা দায়ূদকে প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলাম, ‘ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসবার জন্য তোমার বংশে লোকের অভাব হবে না।’ “কিন্তু যদি তোমরা কিম্বা তোমাদের সন্তানেরা আমার কাছ থেকে ফিরে যাও এবং তোমাদের কাছে দেওয়া আমার আদেশ ও নিয়ম পালন না করে দেব-দেবতার সেবা ও পূজা কর, তবে ইস্রায়েলীয়দের যে দেশ আমি দিয়েছি তা থেকে আমি তাদের দূর করে দেব। এই যে উপাসনা-ঘরটি আমি আমার বাসস্থান হিসাবে আলাদা করেছি সেটাও আমার চোখের সামনে থেকে দূর করে দেব। তখন ইস্রায়েল অন্যান্য সব জাতির কাছে টিট্‌কারির ও তামাশার পাত্র হবে। এই উপাসনা-ঘরটি এখন মহান হলেও তখন যারা তার পাশ দিয়ে যাবে তারা চম্‌কে উঠবে এবং ঠাট্টা করে বলবে, ‘কেন সদাপ্রভু এই দেশ ও এই উপাসনা-ঘরটির প্রতি এই রকম করলেন?’ এর উত্তরে লোকে বলবে, ‘এর কারণ হল, যিনি তাদের পূর্বপুরুষদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন সেই পূর্বপূরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তারা ত্যাগ করেছে। তারা দেব-দেবতার পিছনে গিয়ে তাদের পূজা ও সেবা করেছে। সেইজন্যই সদাপ্রভু এই সব অমংগল তাদের উপর এনেছেন।’ ” সদাপ্রভুর ঘর ও রাজবাড়ী তৈরী করতে শলোমনের বিশ বছর লেগেছিল। সোরের রাজা হীরম শলোমনের ইচ্ছামত এরস ও বেরস কাঠ ও সোনা যুগিয়েছিলেন বলে রাজা শলোমন গালীল দেশের বিশটা গ্রাম তাঁকে দান করলেন। হীরম সেই গ্রামগুলো দেখবার জন্য সোর থেকে আসলেন, কিন্তু সেগুলো দেখে তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি শলোমনকে বললেন, “ভাই, এগুলো কি রকম গ্রাম আপনি আমাকে দিলেন?” তিনি সেগুলোর নাম দিলেন কাবূল দেশ (যার মানে “কোন কাজের নয়”)। আজও সেগুলোর সেই নামই রয়ে গেছে। হীরম মোট সাড়ে চার টনেরও বেশী সোনা রাজাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। রাজা শলোমন সদাপ্রভুর ঘর, নিজের রাজবাড়ী, মিল্লো, যিরূশালেমের দেয়াল, হাৎসোর, মগিদ্দো ও গেষর তৈরী করবার জন্য অনেক লোকদের কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন। এর আগে মিসরের রাজা ফরৌণ গেষর অধিকার করে সেটা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন আর সেখানকার বাসিন্দা কনানীয়দের মেরে ফেলেছিলেন। পরে তিনি জায়গাটা তাঁর মেয়েকে, অর্থাৎ শলোমনের স্ত্রীকে বিয়ের যৌতুক হিসাবে দিয়েছিলেন। সেইজন্য শলোমন গেষর আবার তৈরী করে নিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি নীচের বৈৎ-হোরোণ, বালৎ, যিহূদার মরু-এলাকার তামর, তাঁর সমস্ত ভাণ্ডার-শহর এবং রথ ও ঘোড়সওয়ারদের জন্য শহর তৈরী করলেন, অর্থাৎ যিরূশালেম, লেবানন ও তাঁর শাসনের অধীনে যে সব রাজ্য ছিল সেগুলোর মধ্যে যা যা তিনি তৈরী করতে চেয়েছিলেন তা সবই করলেন। কিন্তু তিনি কোন ইস্রায়েলীয়কে দাস করেন নি; তারা ছিল তাঁর যোদ্ধা, তাঁর কর্মচারী, তাঁর অধীন শাসনকর্তা, তাঁর সেনাপতি এবং তাঁর রথচালক ও ঘোড়সওয়ারদের সেনাপতি। এছাড়া শলোমনের সব কাজের দেখাশোনার ভার-পাওয়া পাঁচশো পঞ্চাশ জন প্রধান কর্মচারী ছিল। যে লোকেরা কাজ করত এরা তাদের কাজ তদারক করত। ফরৌণের মেয়ে দায়ূদ-শহর ছেড়ে তাঁর জন্য শলোমনের তৈরী করা রাজবাড়ীতে চলে আসলে পর শলোমন মিল্লো তৈরী করলেন। সদাপ্রভুর উদ্দেশে শলোমন যে বেদীটা তৈরী করেছিলেন সেখানে বছরে তিনবার তিনি পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতেন। সেই সংগে তিনি সদাপ্রভুর সামনে ধূপও জ্বালাতেন। তাহলে দেখা যায়, শলোমন উপাসনা-ঘরের সব কাজ শেষ করেছিলেন। রাজা শলোমন আকাবা উপসাগরের তীরে ইদোমের এলৎ শহরের কাছে ইৎসিয়োন-গেবরে কতগুলো জাহাজ তৈরী করলেন। শলোমনের লোকদের সংগে নৌবহরে কাজ করবার জন্য হীরম তাঁর কয়েকজন দক্ষ নাবিক পাঠিয়ে দিলেন। তারা ওফীরে গিয়ে প্রায় সাড়ে ষোল টন সোনা নিয়ে এসে রাজা শলোমনকে দিল। শলোমনের সুনাম ও তাঁর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত সদাপ্রভুর গৌরবের কথা শুনে শিবা দেশের রাণী কঠিন কঠিন প্রশ্ন করে তাঁকে পরীক্ষা করবার জন্য আসলেন। তিনি অনেক লোক ও উট নিয়ে যিরূশালেমে এসে পৌঁছালেন। উটের পিঠে ছিল সুগন্ধি মশলা, প্রচুর পরিমাণে সোনা ও মণি-মুক্তা। তিনি শলোমনের কাছে এসে তাঁর মনে যা যা ছিল তা সবই তাঁকে বললেন। শলোমন তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন। রাজার কাছে কোন কিছুই এমন কঠিন ছিল না যা তিনি তাঁকে বুঝিয়ে বলতে পারেন নি। শিবার রাণী শলোমনের সমস্ত জ্ঞান ও তাঁর তৈরী রাজবাড়ী দেখলেন। তিনি আরও দেখলেন তাঁর টেবিলের খাবার, তাঁর কর্মচারীদের থাকবার জায়গা, সুন্দর পোশাক পরা তাঁর সেবাকারীদের, তাঁর পানীয় পরিবেশকদের এবং সদাপ্রভুর ঘরে তাঁর পোড়ানো-উৎসর্গের পশুর সংখ্যা। এই সব দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। তিনি রাজাকে বললেন, “আমার নিজের দেশে থাকতে আপনার কাজ ও জ্ঞানের বিষয় যে খবর শুনেছি তা সত্যি। কিন্তু এখানে এসে নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত আমি সেই সব কথা বিশ্বাস করি নি। সত্যি, এর অর্ধেকও আমাকে বলা হয় নি। যে খবর আমি পেয়েছি আপনার জ্ঞান ও ধন তার চেয়ে অনেক বেশী। আপনার লোকেরা কত সুখী! যারা সব সময় আপনার সামনে থাকে ও আপনার জ্ঞানের কথা শোনে আপনার সেই কর্মচারীরা কত ভাগ্যবান! আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক, যিনি আপনার উপর খুশী হয়ে আপনাকে ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসিয়েছেন। ইস্রায়েলীয়দের তিনি চিরকাল ভালবাসেন বলে তিনি সুবিচার ও ন্যায় রক্ষার জন্য আপনাকে রাজা করেছেন।” তিনি রাজাকে সাড়ে চার টনেরও বেশী সোনা, অনেক সুগন্ধি মশলা ও মণি-মুক্তা দিলেন। শিবার রাণী রাজা শলোমনকে যত মশলা দিয়েছিলেন তত মশলা আর কখনও দেশে আনা হয় নি। এছাড়া হীরমের যে জাহাজগুলো ওফীর থেকে সোনা নিয়ে আসত সেগুলো প্রচুর বেরস কাঠ আর মণি-মুক্তাও নিয়ে আসত। রাজা সেই সব বেরস কাঠ দিয়ে সদাপ্রভুর ঘরের ও রাজবাড়ীর রেলিং এবং গায়কদের জন্য বীণা ও সুরবাহার তৈরী করালেন। আজ পর্যন্ত এত বেরস কাঠ কখনও দেশে আনা হয় নি আর দেখাও যায় নি। রাজা শলোমন দান হিসাবে শিবার রাণীকে অনেক কিছু দিয়েছিলেন। তা ছাড়াও রাণী যা কিছু চেয়েছিলেন তা সবই দিয়েছিলেন। এর পর রাণী তাঁর লোকজন নিয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেন। প্রতি বছর শলোমনের কাছে যে সোনা আসত তার ওজন ছিল প্রায় ছাব্বিশ টন। এছাড়া বণিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে, আরবীয় রাজাদের কাছ থেকে ও দেশের শাসনকর্তাদের কাছ থেকেও সোনা আসত। রাজা শলোমন পিটানো সোনা দিয়ে দু’শো বড় ঢাল তৈরী করালেন। প্রত্যেকটা ঢালে সাত কেজি আটশো গ্রাম সোনা লেগেছিল। পিটানো সোনা দিয়ে তিনি তিনশো ছোট ঢালও তৈরী করিয়েছিলেন। তার প্রত্যেকটাতে সোনা লেগেছিল প্রায় দুই কেজি করে। তিনি সেগুলো লেবানন-বন-কুটিরে রাখলেন। এর পরে রাজা হাতির দাঁতের একটা বড় সিংহাসন তৈরী করিয়ে খাঁটি সোনা দিয়ে তা মুড়িয়ে নিলেন। সেই সিংহাসনের সিঁড়ির ছয়টা ধাপ ছিল এবং সিংহাসনের পিছন দিকের উপর দিকটা ছিল গোল। বসবার জায়গার দু’দিকে ছিল হাতল এবং হাতলের পাশে ছিল দাঁড়ানো সিংহমূর্তি। সেই ছয়টা ধাপের প্রত্যেকটার দু’পাশে একটা করে মোট বারোটা সিংহমূর্তি ছিল। অন্য কোন রাজ্যে এই রকম সিংহাসন কখনও তৈরী হয় নি। শলোমনের পানীয়ের সমস্ত পাত্রগুলো ছিল সোনার আর লেবানন-বন-কুটিরের সমস্ত পাত্রগুলোও ছিল খাঁটি সোনার তৈরী। রূপার তৈরী কিছুই ছিল না, কারণ শলোমনের সময়ে রূপার তেমন কোন দাম ছিল না। সাগরে হীরমের জাহাজের সংগে রাজারও বড় বড় তর্শীশ-জাহাজ ছিল। প্রতি তিন বছর পর পর সেই জাহাজগুলো সোনা, রূপা, হাতির দাঁত, বানর ও বেবুন নিয়ে ফিরে আসত। রাজা শলোমন পৃথিবীর অন্য সব রাজাদের চেয়ে ধনী ও জ্ঞানী হয়ে উঠেছিলেন। ঈশ্বর শলোমনের অন্তরে যে জ্ঞান দিয়েছিলেন সেই জ্ঞানপূর্ণ কথাবার্তা শুনবার জন্য পৃথিবীর সব দেশের লোক তাঁর সংগে দেখা করতে চেষ্টা করত। যারা আসত তারা প্রত্যেকে কিছু না কিছু উপহার আনত। সেগুলোর মধ্যে ছিল সোনা-রূপার পাত্র, কাপড়-চোপড়, অস্ত্রশস্ত্র, সুগন্ধি মশলা, ঘোড়া আর খচ্চর। বছরের পর বছর এই রকম চলত। শলোমন অনেক রথ ও ঘোড়া জোগাড় করলেন। তাঁর রথের সংখ্যা ছিল এক হাজার চার শো আর ঘোড়ার সংখ্যা ছিল বারো হাজার। তিনি সেগুলো রথ রাখবার শহরে এবং যিরূশালেমে নিজের কাছে রাখতেন। রাজা যিরূশালেমে রূপাকে করলেন পাথরের মত প্রচুর, আর এরস কাঠকে করলেন নীচু পাহাড়ী এলাকায় গজানো ডুমুর গাছের মত প্রচুর। মিসর ও কিলিকিয়া থেকে শলোমনের ঘোড়াগুলো আনা হত। রাজার বণিকেরা কিলিকিয়া থেকে সেগুলো কিনে আনত। মিসর থেকে আনা প্রত্যেকটা রথের দাম পড়ত সাত কেজি আটশো গ্রাম রূপা এবং প্রত্যেকটা ঘোড়ার দাম পড়ত সাত কেজি আটশো গ্রাম রূপা। সেই বণিকেরা হিত্তীয় ও অরামীয় সব রাজাদের কাছে সেগুলো বিক্রি করত। রাজা শলোমন ফরৌণের মেয়েকে ছাড়া আরও অনেক বিদেশী স্ত্রীলোকদের ভালবাসতেন। তারা জাতিতে ছিল মোয়াবীয়, অম্মোনীয়, ইদোমীয়, সীদোনীয় ও হিত্তীয়। তারা সেই সব জাতি থেকে এসেছিল যাদের সম্বন্ধে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন, “তোমরা তাদের বিয়ে করবে না, কারণ তারা নিশ্চয়ই তোমাদের মন তাদের দেব-দেবতাদের দিকে টেনে নেবে।” কিন্তু শলোমন তাদেরই ভালবেসে আঁকড়ে ধরে রইলেন। তাঁর সাতশো স্ত্রী ছিল, যারা ছিল রাজপরিবারের মেয়ে; এছাড়া তাঁর তিনশো উপস্ত্রী ছিল। তাঁর স্ত্রীরা তাঁকে বিপথে নিয়ে গিয়েছিল। শলোমনের বুড়ো বয়সে তাঁর স্ত্রীরা তাঁর মন দেব-দেবতাদের দিকে টেনে নিয়েছিল। তার ফলে তাঁর বাবা দায়ূদের মত তাঁর অন্তর তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিতে পূর্ণ ছিল না। তিনি সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরতের ও অম্মোনীয়দের জঘন্য দেবতা মিল্‌কমের সেবা করতে লাগলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ শলোমন তা-ই করলেন। তাঁর বাবা দায়ূদ যেমন সদাপ্রভুকে সম্পূর্ণভাবে ভক্তি করতেন তিনি তেমন করতেন না। যিরূশালেমের পূর্ব দিকের পাহাড়ের উপরে তিনি মোয়াবের জঘন্য দেবতা কমোশ ও অম্মোনীয়দের জঘন্য দেবতা মোলকের উদ্দেশে পূজার উঁচু স্থান তৈরী করলেন। তাঁর সমস্ত বিদেশী স্ত্রী যারা নিজের নিজের দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাত ও পশু বলি দিত তাদের সকলের জন্য তিনি তা-ই করলেন। এতে সদাপ্রভু শলোমনের উপরে ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন, কারণ যিনি তাঁকে দু’বার দেখা দিয়েছিলেন সেই ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিক থেকে তাঁর মন ফিরে গিয়েছিল। তিনি দেব-দেবতাদের পিছনে যেতে তাঁকে মানা করেছিলেন কিন্তু শলোমন সদাপ্রভুর আদেশ পালন করেন নি। কাজেই সদাপ্রভু শলোমনকে বললেন, “তোমার এই ব্যবহারের জন্য এবং আমার দেওয়া ব্যবস্থা ও নিয়ম অমান্য করবার জন্য আমি অবশ্যই তোমার কাছ থেকে রাজ্য ছিঁড়ে নিয়ে তোমার একজন কর্মচারীকে দেব। তবে তোমার বাবা দায়ূদের কথা মনে করে তোমার জীবনকালে আমি তা করব না, কিন্তু তোমার ছেলের হাত থেকে আমি তা ছিঁড়ে নেব। অবশ্য রাজ্যের সবটা আমি তার কাছ থেকে ছিঁড়ে নেব না, কিন্তু আমার দাস দায়ূদের কথা এবং আমার বেছে নেওয়া যিরূশালেমের কথা মনে করে একটা গোষ্ঠী আমি তোমার ছেলেকে দেব।” এর পর সদাপ্রভু শলোমনের বিরুদ্ধে ইদোমীয় হদদকে শত্রু হিসাবে দাঁড় করালেন। ইদোমের রাজবংশে তার জন্ম হয়েছিল। দায়ূদ যখন ইদোম দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন তখন তাঁর সেনাপতি যোয়াব মৃত লোকদের কবর দেবার জন্য ইদোমে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকবার সময় তিনি ইদোমীয় সব পুরুষ লোককে মেরে ফেলেছিলেন। যোয়াব ও ইস্রায়েলের সব সৈন্যেরা ছয় মাস ইদোমে ছিলেন এবং সেখানকার সব পুরুষ লোককে মেরে ফেলেছিলেন। কিন্তু হদদ তার বাবার কয়েকজন ইদোমীয় কর্মচারীর সংগে মিসরে পালিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় সে ছোট ছিল। তারা মিদিয়ন থেকে রওনা হয়ে পারণে গিয়েছিল এবং পরে সেখান থেকে কিছু লোক নিয়ে তারা মিসরের রাজা ফরৌণের কাছে গিয়েছিল। ফরৌণ হদদকে বাড়ী, জায়গা-জমি ও খাবার দিয়েছিলেন। ফরৌণ হদদের উপর এত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে, ফরৌণের স্ত্রী রাণী তহ্‌পনেষের বোনের সংগে তার বিয়ে দিয়েছিলেন। তহ্‌পনেষের বোনের গর্ভে হদদের একটি ছেলের জন্ম হয়েছিল; সেই ছেলের নাম ছিল গনুবৎ। তহ্‌পনেষ ছেলেটিকে রাজবাড়ীতে রাখলেন এবং সেখানেই সে মায়ের দুধ খাওয়া ছাড়ল। গনুবৎ সেখানে ফরৌণের ছেলেমেয়েদের সংগেই থাকত। মিসরে থাকতেই হদদ শুনল যে, দায়ূদকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে কবর দেওয়া হয়েছে এবং সেনাপতি যোয়াবও মারা গেছেন। তখন হদদ ফরৌণকে বলল, “এবার আমাকে যেতে দিন যাতে আমি আমার নিজের দেশে ফিরে যেতে পারি।” ফরৌণ জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে তোমার কিসের অভাব হয়েছে যে, তুমি নিজের দেশে ফিরে যেতে চাইছ?” উত্তরে হদদ বলল, “কিছুরই অভাব হয় নি, কিন্তু তবুও আমাকে যেতে দিন।” শলোমনের বিরুদ্ধে ঈশ্বর আর একজন শত্রু দাঁড় করালেন। সে হল ইলিয়াদার ছেলে রষোণ। সে তার মনিব সোবার রাজা হদদেষরের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। দায়ূদ যখন সোবার সৈন্যদের মেরে ফেলেছিলেন তখন রষোণ কিছু লোক জোগাড় করে নিয়ে একটা লুটেরা দল তৈরী করে তার নেতা হয়ে বসল। এই লোকেরা দামেস্ক দখল করে সেখানে রাজত্ব করতে লাগল। শলোমন যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন রষোণ ইস্রায়েলের সংগে শত্রুতা করেছিল আর সেই সময় হদদও ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে কাজ করছিল। ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে একটা শত্রুভাব নিয়ে রষোণ অরাম দেশে রাজত্ব করত। নবাটের ছেলে যারবিয়ামও রাজা শলোমনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। তিনি ছিলেন শলোমনের একজন কর্মচারী, সরেদা গ্রামের একজন ইফ্রয়িমীয় লোক। তাঁর মায়ের নাম ছিল সরূয়া; তিনি বিধবা ছিলেন। রাজার বিরুদ্ধে যারবিয়ামের বিদ্রোহের একটা কারণ ছিল। যে সময় শলোমন মিল্লো তৈরী করছিলেন এবং তাঁর বাবা দায়ূদের শহরের দেয়ালের ভাংগা অংশ মেরামত করছিলেন, সেই সময় যারবিয়াম সেখানে কাজ করছিলেন এবং তাঁর কাজের বেশ সুনাম ছিল। শলোমন যখন দেখলেন যে, যুবকটি বেশ কাজের লোক তখন তিনি তাঁকে যোষেফের বংশের সমস্ত মজুরদের দেখাশোনার ভার দিলেন। সেই সময় যারবিয়াম এক দিন যিরূশালেমের বাইরে গেলেন। পথে তাঁর সংগে শীলোর নবী অহিয়ের দেখা হল। অহিয়ের গায়ে ছিল একটা নতুন চাদর। পথে তাঁরা দু’জন ছাড়া আর কেউ ছিল না। তখন অহিয় তাঁর গায়ের চাদরটা নিয়ে ছিঁড়ে বারোটা টুকরা করলেন। তারপর তিনি যারবিয়ামকে বললেন, “দশটা টুকরা তুমি তুলে নাও, কারণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে বলছেন, ‘দেখ, আমি শলোমনের হাত থেকে রাজ্যটা ছিঁড়ে নেব এবং তোমাকে দশটা গোষ্ঠীর ভার দেব। কিন্তু আমার দাস দায়ূদের জন্য ও ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর এলাকা থেকে আমার বেছে নেওয়া যিরূশালেমের জন্য কেবল একটা গোষ্ঠী শলোমনের হাতে থাকবে। আমি এটা করব, কারণ সেই দশ গোষ্ঠী আমাকে ত্যাগ করে সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরতের, মোয়াবের দেবতা কমোশের ও অম্মোনীয়দের দেবতা মিল্‌কমের পূজা করেছে। শলোমনের বাবা দায়ূদ যেমন করতেন তারা তেমন করে নি। তারা আমার পথে চলে নি, আমার চোখে যা ঠিক তা করে নি এবং আমার নিয়ম ও নির্দেশ পালন করে নি। তবুও আমি শলোমনের হাত থেকে গোটা রাজ্যটা নিয়ে নেব না। আমার দাস দায়ূদ, যাকে আমি বেছে নিয়েছিলাম এবং যে আমার আদেশ ও নিয়ম পালন করত তার জন্যই আমি শলোমনকে সারা জীবনের জন্য রাজপদে রাখব। আমি তার ছেলের হাত থেকে রাজ্যটা নিয়ে তোমার হাতে দশটা গোষ্ঠীর ভার দেব। আমার বাসস্থান হিসাবে বেছে নেওয়া যিরূশালেম শহরে যেন আমার সামনে আমার দাস দায়ূদের একটা প্রদীপ থাকে সেইজন্য আমি তার ছেলেকে একটা গোষ্ঠীর ভার দেব। কিন্তু আমি তোমাকেই ইস্রায়েলের উপর রাজা করব আর তুমি তোমার প্রাণের সমস্ত ইচ্ছা অনুসারে রাজত্ব করবে। যদি তুমি আমার আদেশ অনুসারে কাজ কর এবং আমার পথে চল আর আমার দাস দায়ূদের মত আমার নিয়ম ও আদেশ পালন করে আমার চোখে যা ঠিক তা-ই কর তবে আমি তোমার সংগে থাকব। আমি দায়ূদের মতই তোমার বংশে রাজপদ স্থায়ী করব এবং তোমার হাতে ইস্রায়েলকে দেব। তাদের অবাধ্যতার জন্য আমি দায়ূদের বংশধরদের নীচু করব, কিন্তু চিরদিনের জন্য নয়।’ ” সেইজন্য শলোমন যারবিয়ামকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তিনি মিসরের রাজা শীশকের কাছে পালিয়ে গেলেন এবং শলোমনের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সেখানে রইলেন। শলোমনের রাজত্বের অন্যান্য ঘটনার কথা, অর্থাৎ তাঁর কাজ ও জ্ঞানের কথা তাঁর রাজত্বের ইতিহাসের বইয়ে লেখা আছে। শলোমন যিরূশালেমে চল্লিশ বছর ধরে গোটা ইস্রায়েল জাতির উপর রাজত্ব করেছিলেন। তারপর তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন। তাঁকে তাঁর বাবা দায়ূদের শহরে কবর দেওয়া হল। তারপর তাঁর ছেলে রহবিয়াম তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। রহবিয়াম শিখিমে গেলেন, কারণ ইস্রায়েলীয়েরা সকলে তাঁকে রাজা করবার জন্য সেখানে গিয়েছিল। তখন নবাটের ছেলে যারবিয়াম মিসর দেশে ছিলেন, কারণ তিনি রাজা শলোমনের কাছ থেকে পালিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকাকালে তিনি রহবিয়ামের রাজা হওয়ার খবর শুনলেন। লোকেরা যারবিয়ামকে ডেকে পাঠালে পর তিনি এবং ইস্রায়েলীয়েরা সবাই রহবিয়ামের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার বাবা আমাদের উপর একটা ভারী জোয়াল চাপিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু এখন আপনি আমাদের উপর চাপানো সেই কঠিন পরিশ্রম কমিয়ে ভারী জোয়ালটা হালকা করে দিন; তাহলে আমরা আপনার সেবা করব।” উত্তরে রহবিয়াম বললেন, “তোমরা এখন চলে যাও, তিন দিনের দিন এসো।” তাতে লোকেরা চলে গেল। যে সব বৃদ্ধ নেতারা তাঁর বাবা শলোমনের জীবনকালে তাঁর সেবা করতেন রহবিয়াম তাঁদের সংগে পরামর্শ করবার জন্য বললেন, “এই লোকদের উত্তর দেবার জন্য আপনারা আমাকে কি পরামর্শ দেন?” উত্তরে তাঁরা বললেন, “আজকে যদি আপনি এই সব লোকদের সেবাকারী হয়ে তাদের সেবা করেন এবং তাদের অনুরোধ রক্ষা করেন তবে তারা সব সময় আপনার দাস হয়ে থাকবে।” কিন্তু রহবিয়াম বৃদ্ধ নেতাদের উপদেশ অগ্রাহ্য করে সেই সব যুবকদের সংগে পরামর্শ করলেন যারা তাঁর সংগে বড় হয়েছিল এবং তাঁর সেবা করত। তিনি তাদের বললেন, “লোকেরা বলছে, ‘আপনার বাবা যে ভারী জোয়াল আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন তা হালকা করুন।’ এই ব্যাপারে তোমাদের পরামর্শ কি? আমরা তাদের কি উত্তর দেব?” উত্তরে সেই যুবকেরা বলল, “যে সব লোকেরা আপনার বাবার চাপিয়ে দেওয়া ভারী জোয়াল হালকা করে দেবার কথা বলেছে তাদের আপনি বলুন যে, আপনার বাবার কোমরের চেয়েও আপনার কড়ে আংগুলটা মোটা। আপনার বাবা তাদের উপর যে ভারী জোয়াল চাপিয়ে দিয়েছিলেন তা আপনি আরও ভারী করবেন। আপনার বাবা তাদের মেরেছিলেন চাবুক দিয়ে কিন্তু আপনি তাদের মারবেন কাঁকড়া-বিছা দিয়ে।” রাজার কথামত তিন দিনের দিন যারবিয়াম ও সমস্ত লোকেরা রহবিয়ামের কাছে ফিরে আসল। রাজা বৃদ্ধ নেতাদের উপদেশ অগ্রাহ্য করে লোকদের খুব কড়া উত্তর দিলেন। তিনি সেই যুবকদের পরামর্শ মত বললেন, “আমার বাবা তোমাদের জোয়াল ভারী করেছিলেন, আমি তা আরও ভারী করব। আমার বাবা চাবুক দিয়ে তোমাদের মেরেছিলেন, আমি তোমাদের মারব কাঁকড়া-বিছা দিয়ে।” এইভাবে রাজা লোকদের কথায় কান দিলেন না। শীলোনীয় অহিয়ের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু নবাটের ছেলে যারবিয়ামকে যে কথা বলেছিলেন তা পূর্ণ করবার জন্য সদাপ্রভু থেকেই ঘটনাটা এইভাবে ঘটল। ইস্রায়েলীয়েরা যখন বুঝল যে, রাজা তাদের কথা শুনবেন না তখন তারা রাজাকে বলল, “দায়ূদের উপর আমাদের কোন দাবি নেই। যিশয়ের ছেলের উপর আমাদের কোন অধিকার নেই। হে ইস্রায়েল, তোমরা যে যার বাড়ীতে ফিরে যাও। হে দায়ূদ, এখন তোমার নিজের গোষ্ঠী তুমি নিজেই দেখ।” কাজেই ইস্রায়েলীয়েরা যে যার বাড়ীতে ফিরে গেল। তবে যিহূদা-গোষ্ঠীর গ্রাম ও শহরগুলোতে যে সব ইস্রায়েলীয় বাস করত রহবিয়াম তাদের উপরে রাজত্ব করতে থাকলেন। যাদের কাজ করতে বাধ্য করা হত তাদের ভার যার উপরে ছিল সেই অদোরামকে রাজা রহবিয়াম ইস্রায়েলীয়দের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু তারা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলল। তখন রাজা রহবিয়াম তাড়াতাড়ি তাঁর রথে উঠে যিরূশালেমে পালিয়ে গেলেন। এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা দায়ূদের বংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল; অবস্থাটা আজও তা-ই আছে। যারবিয়ামের ফিরে আসবার খবর শুনে ইস্রায়েলীয়েরা লোক পাঠিয়ে তাঁকে তাদের সভায় ডেকে আনল এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের উপর তারা তাঁকেই রাজা করল। কেবল যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরাই দায়ূদের বংশের প্রতি বিশ্বস্ত রইল। যিরূশালেমে পৌঁছে রহবিয়াম যিহূদা ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর সমস্ত লোককে যুদ্ধের জন্য জড়ো করলেন। তাতে এক লক্ষ আশি হাজার সৈন্য হল। এটা করা হল যাতে ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করে রাজ্যটা আবার শলোমনের ছেলে রহবিয়ামের হাতে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু ঈশ্বরের লোক শময়িয়ের কাছে ঈশ্বরের এই বাক্য প্রকাশিত হল, “তুমি যিহূদার রাজা শলোমনের ছেলে রহবিয়ামকে, যিহূদা ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর সমস্ত লোককে এবং বাকী সব লোকদের বল যে, সদাপ্রভু বলছেন তারা যেন নিজের ভাই ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না যায়। তারা প্রত্যেকেই যেন বাড়ী ফিরে যায়, কারণ এটা সদাপ্রভুরই কাজ।” কাজেই তারা সদাপ্রভুর কথা মেনে নিয়ে সদাপ্রভুর আদেশ মত বাড়ী ফিরে গেল। পরে যারবিয়াম ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার শিখিম দুর্গের মত করে গড়ে নিয়ে সেখানে বাস করতে লাগলেন। তিনি সেখান থেকে গিয়ে পনূয়েলও দুর্গের মত করে গড়ে নিলেন। যারবিয়াম ভাবলেন, “এবার হয়তো রাজ্যটা আবার দায়ূদের বংশের হাতে ফিরে যাবে। লোকেরা যদি যিরূশালেমে সদাপ্রভুর উপাসনা-ঘরে উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য যায় তবে আবার তারা তাদের মনিব যিহূদার রাজা রহবিয়ামের অধীনতা মেনে নেবে। তারা আমাকে মেরে ফেলে রাজা রহবিয়ামের কাছে ফিরে যাবে।” রাজা যারবিয়াম তখন পরামর্শ করে দু’টা সোনার বাছুর তৈরী করালেন। তারপর তিনি লোকদের বললেন, “যিরূশালেমে যাওয়া তোমাদের জন্য খুব কষ্টের ব্যাপার। হে ইস্রায়েল, এঁরাই তোমাদের দেবতা, এঁরাই মিসর থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন।” বাছুর দু’টার একটাকে তিনি রাখলেন বৈথেলে এবং অন্যটাকে রাখলেন দানে, তাই লোকেরা পূজা করবার জন্য দান পর্যন্তও যেতে লাগল। এই ব্যাপারটা তাদের পাপের কারণ হয়ে দাঁড়াল। যারবিয়াম পূজার উঁচু স্থানগুলোতে মন্দির তৈরী করলেন এবং এমন সব লোকদের মধ্য থেকে পুরোহিত নিযুক্ত করলেন যারা লেবির বংশের লোক ছিল না। যিহূদা এলাকার মধ্যে যে পর্ব হত সেই পর্বের মত অষ্টম মাসের পনের দিনের দিন তিনি বৈথেলেও একটা পর্বের ব্যবস্থা করলেন এবং নিজের তৈরী বাছুরের উদ্দেশে বেদীর উপর পশু উৎসর্গ করলেন। তিনি বৈথেলে পূজার উঁচু স্থানগুলোতে তাঁর তৈরী মন্দিরে পুরোহিতও নিযুক্ত করলেন। অষ্টম মাসের পনের দিনের দিন বৈথেলে তাঁর তৈরী বেদীতে তিনি পশু উৎসর্গ করলেন। সময়টা তাঁর নিজেরই বেছে নেওয়া। এইভাবে তিনি ইস্রায়েলীয়দের জন্য পর্বের ব্যবস্থা করলেন এবং পশু উৎসর্গ করবার জন্য বেদীতে উঠলেন। পশু উৎসর্গের জন্য যারবিয়াম যখন বেদীর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন সদাপ্রভুর কথামত ঈশ্বরের একজন লোক যিহূদা থেকে বৈথেলে উপস্থিত হলেন। তিনি সদাপ্রভুর কথামত বেদীর বিরুদ্ধে ঘোষণা করলেন, “ওহে বেদী, ওহে বেদী, সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘দায়ূদের বংশে যোশিয় নামে একটি ছেলের জন্ম হবে। পূজার উঁচু স্থানগুলোর যে পুরোহিতেরা এখন তোমার উপর পশু উৎসর্গ করছে সেই পুরোহিতদের সে তোমার উপরেই উৎসর্গ করবে এবং মানুষের হাড়ও পোড়াবে।’ ” ঐ একই দিনে ঈশ্বরের লোকটি একটা চিহ্নের কথা বললেন। তিনি বললেন, “সদাপ্রভু এই চিহ্নের কথা ঘোষণা করেছেন যে, এই বেদীটা ফেটে যাবে এবং তার উপরকার ছাই সব পড়ে যাবে।” বৈথেলে বেদীর বিরুদ্ধে ঈশ্বরের লোকটির কথা শুনে রাজা যারবিয়াম বেদীর উপরে হাত বাড়িয়ে বললেন, “ওকে ধর।” কিন্তু যে হাতখানা তিনি লোকটির দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেটা শুকিয়ে গেল। তিনি আর সেটা কাছে টেনে নিতে পারলেন না। তাছাড়া সদাপ্রভুর কথামত ঈশ্বরের লোকটির বলা চিহ্ন অনুসারে বেদীটা ফেটে গেল এবং তার ছাই পড়ে গেল। তখন রাজা ঈশ্বরের লোকটিকে বললেন, “আপনি আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অনুরোধ করুন এবং আমার জন্য প্রার্থনা করুন যাতে আমার হাত আবার ভাল হয়ে যায়।” তাতে ঈশ্বরের লোকটি সদাপ্রভুকে অনুরোধ করলেন আর রাজার হাতটা আবার ভাল হয়ে আগের মত হয়ে গেল। রাজা ঈশ্বরের লোকটিকে বললেন, “আপনি আমার বাড়ীতে এসে কিছু খাওয়া-দাওয়া করুন আর আমি আপনাকে একটা উপহার দেব।” কিন্তু ঈশ্বরের লোকটি উত্তরে রাজাকে বললেন, “আপনার সম্পত্তির অর্ধেকটা দিলেও আমি আপনার সংগে যাব না কিম্বা কোন খাবার বা জলও এখানে খাব না। এর কারণ হল, সদাপ্রভুর কথামত আমি এই আদেশ পেয়েছি যে, আমি যেন কোন খাবার বা জল না খাই এবং যে পথে এসেছি সেই পথে ফিরে না যাই।” কাজেই তিনি যে পথে বৈথেলে এসেছিলেন সেই পথে ফিরে না গিয়ে অন্য পথ ধরলেন। বৈথেলে একজন বুড়ো নবী বাস করতেন। ঈশ্বরের লোকটি সেই দিন সেখানে যা করেছিলেন তাঁর ছেলেরা গিয়ে তাঁকে তা সবই জানাল। রাজাকে তিনি যা বলেছিলেন তা-ও তারা তাদের বাবাকে বলল। তাদের বাবা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তিনি কোন্‌ পথে গেছেন?” যিহূদার সেই ঈশ্বরের লোকটি যে পথ ধরে চলে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলেরা তা দেখেছিল। তখন তিনি তাঁর ছেলেদের বললেন, “আমার জন্য গাধার উপরে গদি চাপাও।” তারা তা করলে পর তিনি তাতে চড়লেন। তারপর তিনি ঈশ্বরের লোকটির খোঁজে গেলেন। তিনি তাঁকে একটা এলোন গাছের তলায় বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনিই কি ঈশ্বরের সেই লোক যিনি যিহূদা দেশ থেকে এসেছেন?” উত্তরে তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমিই সেই লোক।” তখন নবী তাঁকে বললেন, “আমার সংগে বাড়ী চলুন, খাওয়া-দাওয়া করুন।” ঈশ্বরের লোকটি বললেন, “আমি আপনার সংগে ফিরেও যেতে পারি না কিম্বা আপনার সংগে এই জায়গায় খাবার বা জল খেতেও পারি না। ঈশ্বর আমাকে আদেশ দিয়ে বলেছেন যে, আমি যেন সেখানে খাবার বা জল না খাই কিম্বা যে পথে এসেছি সেই পথে ফিরে না যাই।” উত্তরে সেই নবী বললেন, “আমি আপনার মতই একজন নবী। সদাপ্রভুর কথামত একজন স্বর্গদূত আমাকে বলেছেন যেন আমি আপনাকে আমার বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাই যাতে আপনি খাবার ও জল খেতে পারেন।” কিন্তু তিনি তাঁকে মিথ্যা কথা বললেন। ঈশ্বরের লোকটি তখন তাঁর সংগে ফিরে গেলেন এবং তাঁর বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া করলেন। তাঁরা তখনও টেবিলের কাছে বসে আছেন, এমন সময় যিনি ঈশ্বরের লোকটিকে ফিরিয়ে এনেছিলেন সেই নবীর কাছে সদাপ্রভুর বাক্য প্রকাশিত হল। যিহূদা থেকে আসা ঈশ্বরের লোকটিকে সেই নবী চিৎকার করে বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন যে, আপনি সদাপ্রভুর কথা অমান্য করেছেন এবং আপনাকে দেওয়া আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ আপনি পালন করেন নি। যে জায়গায় তিনি আপনাকে খাওয়া-দাওয়া করতে নিষেধ করেছিলেন আপনি সেখানে ফিরে গিয়ে খাবার ও জল খেয়েছেন। কাজেই আপনার পূর্বপুরুষদের কবরে আপনার দেহ রাখা হবে না।” ঈশ্বরের লোকটি খাওয়া-দাওয়া শেষ করলে পর তাঁর জন্য সেই নবী তাঁর একটা গাধার উপর গদি চাপালেন। ঈশ্বরের লোকটি রওনা হলে পর পথে একটা সিংহ তাঁকে রাস্তার উপরে পেয়ে মেরে ফেলল। তাঁর দেহটা রাস্তার উপরে পড়ে রইল আর সেই দেহের পাশে দাঁড়িয়ে রইল সেই গাধা আর সিংহ। কিছু লোক সেই পথ দিয়ে যাবার সময় সেই পড়ে থাকা দেহটা দেখল আর দেখল তার পাশে একটা সিংহ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা গিয়ে সেই বুড়ো নবীর গ্রামে খবর দিল। সেই কথা শুনে যে নবী তাঁকে তাঁর পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন তিনি বললেন, “তিনি ঈশ্বরের সেই লোক যিনি সদাপ্রভুর আদেশ অমান্য করেছিলেন। সদাপ্রভু তাঁকে যে কথা বলেছিলেন সেই অনুসারেই তিনি তাঁকে সিংহের হাতে তুলে দিয়েছেন এবং সিংহ তাঁকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে মেরে ফেলেছে।” তারপর সেই নবী তাঁর ছেলেদের বললেন, “আমার জন্য গাধার উপর গদি চাপাও।” ছেলেরা তা-ই করল। তারপর তিনি গিয়ে দেখলেন রাস্তার উপরে দেহটা পড়ে রয়েছে আর তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাধা আর সিংহটা। সিংহটা সেই মৃতদেহ খায় নি আর গাধাটাকেও আঘাত করে নি। ঈশ্বরের লোকটিকে কবর দিতে ও তাঁর জন্য শোক প্রকাশ করতে সেই নবী তাঁর দেহটা তুলে নিয়ে গাধার উপর চাপিয়ে নিজের গ্রামে ফিরে গেলেন। তিনি নিজের জন্য তৈরী করা কবরেই তাঁকে কবর দিলেন। তিনি ও তাঁর ছেলেরা এই বলে তাঁর জন্য শোক করতে লাগলেন, “হায়, ভাই আমার!” তাঁকে কবর দেবার পর সেই নবী তাঁর ছেলেদের বললেন, “ঈশ্বরের লোকটিকে যেখানে কবর দেওয়া হয়েছে আমি মারা গেলে পর আমাকে সেই কবরেই কবর দিয়ো, আমার হাড় তাঁর হাড়ের পাশেই রেখো; কারণ বৈথেলের বেদী ও শমরিয়ার সব গ্রামের পূজার উঁচু স্থানগুলোর মন্দিরের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর কথামত তিনি যে বিষয় ঘোষণা করেছেন তা নিশ্চয়ই সফল হবে।” এর পরেও যারবিয়াম তাঁর কুপথ থেকে ফিরলেন না বরং পূজার উঁচু স্থানগুলোর জন্য সব লোকদের মধ্য থেকে পুরোহিত নিযুক্ত করলেন। যে কেউ পুরোহিত হতে চাইত তাকেই তিনি পূজার উঁচু স্থানের পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত করতেন। এই সব কাজ যারবিয়ামের বংশের পক্ষে পাপ হয়ে দাঁড়াল যেন তারা ধ্বংস হয়ে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে যেতে পারে। সেই সময় যারবিয়ামের ছেলে অবিয় অসুস্থ হয়ে পড়ল। তখন যারবিয়াম তাঁর স্ত্রীকে বললেন, “তুমি এমন কাপড়-চোপড় পর যাতে তোমাকে যারবিয়ামের স্ত্রী বলে চেনা না যায়। তারপর তুমি শীলোতে যাও। নবী অহিয় সেখানে আছেন। তিনিই আমাকে বলেছিলেন যে, আমি এই লোকদের রাজা হব। তুমি সংগে করে দশটা রুটি, কিছু পিঠা ও এক ভাঁড় মধু নিয়ে তাঁর কাছে যাও। ছেলেটির কি হবে তা তিনি তোমাকে বলে দেবেন।” যারবিয়ামের স্ত্রী তাঁর কথামতই কাজ করলেন এবং শীলোতে অহিয়ের বাড়ীতে গেলেন। তখন অহিয় চোখে দেখতে পেতেন না; বুড়ো হয়ে গিয়েছিলেন বলে তাঁর দেখবার শক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সদাপ্রভু অহিয়কে বলেছিলেন, “যারবিয়ামের স্ত্রী তোমার কাছে তার ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে আসছে। ছেলেটির অসুখ হয়েছে। তুমি তার কথার এই এই উত্তর দেবে। এখানে এসে সে অন্য আর একজন স্ত্রীলোক বলে ভান করবে।” সেইজন্য দরজার কাছে তাঁর পায়ের শব্দ শুনে অহিয় বললেন, “এস, যারবিয়ামের স্ত্রী। তুমি কেন এই ভান করছ? তোমাকে খারাপ খবর দেবার জন্য আমাকে বলা হয়েছে। তুমি গিয়ে যারবিয়ামকে এই কথা বল যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি লোকদের মধ্য থেকে তোমাকে উঁচুতে তুলেছি এবং আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের উপরে নেতা করেছি। আমি দায়ূদের বংশ থেকে রাজ্য ছিঁড়ে নিয়ে তোমাকে দিয়েছি, কিন্তু তুমি আমার দাস দায়ূদের মত হও নি। দায়ূদ আমার আদেশ মেনে চলত এবং মনে-প্রাণে আমার বাধ্য ছিল। আমার চোখে যা ঠিক সে কেবল তা-ই করত। তোমার আগে যারা ছিল তুমি তাদের চেয়েও বেশী খারাপ কাজ করেছ। তুমি নিজের জন্য দেব-দেবতা বানিয়ে নিয়েছ আর ছাঁচে ঢেলে মূর্তি তৈরী করেছ। তুমি আমাকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছ এবং আমাকে তোমার পিছনে ফেলে রেখেছ। এইজন্য আমি যারবিয়ামের বংশের উপর শীঘ্রই বিপদ নিয়ে আসব। তার বংশ থেকে প্রত্যেকটি পুরুষকে আমি শেষ করে দেব- সে দাস হোক বা স্বাধীন হোক। লোকে যেমন করে ঘুঁটে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে তেমনি করে আমি যারবিয়ামের বংশকে একেবারে শেষ করে দেব। তার বংশের যে সব লোক শহরে মরবে তাদের খাবে কুকুরে আর যারা মাঠের মধ্যে মরবে তাদের খাবে পাখীতে। আমি সদাপ্রভুই এই কথা বলেছি।’ “তুমি এখন বাড়ী ফিরে যাও। তুমি শহরে পা দেওয়া মাত্রই ছেলেটি মারা যাবে। ইস্রায়েলের সবাই তার জন্য শোক করতে করতে তাকে কবর দেবে। যারবিয়ামের নিজের লোকদের মধ্যে কেবল সে-ই কবর পাবে, কারণ যারবিয়ামের বংশে কেবলমাত্র সেই ছেলেটির মধ্যেই ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর প্রতি ভক্তি দেখতে পেয়েছেন। “সদাপ্রভু নিজের উদ্দেশ্যে ইস্রায়েলের লোকদের উপরে এমন একজনকে রাজা করবেন যে যারবিয়ামের বংশকে একেবারে ধ্বংস করে দেবে। আজকেই সেই দিন, হ্যাঁ, এখনই। সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে আঘাত করবেন, আর তাতে তা জলের মধ্যে দুলতে থাকা নল-খাগড়ার মত হবে। যে দেশ তিনি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলেন সেই সুন্দর দেশ থেকে তিনি তাদের উপ্‌ড়ে তুলে ইউফ্রেটিস নদীর ওপারে ছড়িয়ে দেবেন, কারণ আশেরা-খুঁটি স্থাপন করে তারা সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছে। যারবিয়াম নিজে যে সব পাপ করেছে এবং ইস্রায়েলীয়েলের লোকদের দিয়ে করিয়েছে তার জন্য সদাপ্রভু তাদের ত্যাগ করবেন।” এর পর যারবিয়ামের স্ত্রী চলে গেলেন এবং তির্সা শহরে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তিনি বাড়ীর দরজার চৌকাঠে পা দেওয়া মাত্রই ছেলেটি মারা গেল। সদাপ্রভু তাঁর দাস নবী অহিয়ের মধ্য দিয়ে যেমন বলেছিলেন তেমনই ইস্রায়েলের সমস্ত লোক ছেলেটির জন্য শোক করতে করতে তাকে কবর দিল। যারবিয়ামের অন্যান্য কাজ, তাঁর সব যুদ্ধ এবং রাজত্ব করবার কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। বাইশ বছর রাজত্ব করবার পর তিনি তাঁর পূর্বপরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে নাদব রাজা হলেন। এদিকে যিহূদা দেশে শলোমনের ছেলে রহবিয়াম রাজত্ব করছিলেন। তিনি যখন রাজা হয়েছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল একচল্লিশ। ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর সমস্ত জায়গার মধ্য থেকে যে শহরটা সদাপ্রভু নিজের বাসস্থান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সেই যিরূশালেম শহরে রহবিয়াম সতেরো বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল নয়মা; তিনি জাতিতে ছিলেন একজন অম্মোনীয়। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ যিহূদার লোকেরা তা-ই করতে লাগল। তাদের পূর্বপুরুষদের চেয়ে তাদের পাপের মধ্য দিয়ে তারা সদাপ্রভুর অন্তরের জ্বালা আরও বেশী করে জাগিয়ে তুলেছিল। এছাড়া তারা নিজেদের জন্য প্রত্যেকটা উঁচু পাহাড়ের উপরে ও প্রত্যেকটা ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছের নীচে পূজার উঁচু স্থান ঠিক করেছিল এবং পবিত্র পাথর ও আশেরা-খুঁটি স্থাপন করেছিল। এমন কি, তাদের দেশে পুরুষ মন্দির-বেশ্যাও ছিল। যে জাতিগুলোকে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে দূর করে দিয়েছিলেন তাদের সমস্ত ঘৃণার কাজ যিহূদার লোকেরা করতে লাগল। রাজা রহবিয়ামের রাজত্বের পঞ্চম বছরে মিসরের রাজা শীশক যিরূশালেম আক্রমণ করলেন। তিনি সদাপ্রভুর ঘরের ও রাজবাড়ীর ধন-দৌলত নিয়ে গেলেন। তিনি সব কিছুই নিয়ে গেলেন, এমন কি, শলোমনের তৈরী সোনার সব ঢালগুলোও নিয়ে গেলেন। কাজেই রাজা রহবিয়াম সেগুলোর বদলে ব্রোঞ্জের ঢাল তৈরী করালেন। রাজবাড়ীর দরজায় যে সব সৈন্যেরা পাহারা দিত তাদের সেনাপতিদের কাছে তিনি সেগুলো রক্ষা করবার ভার দিলেন। রাজা যখন সদাপ্রভুর ঘরে যেতেন তখন পাহারাদার সৈন্যেরা সেই ঢালগুলো ধরে নিয়ে তাঁর সংগে যেত এবং পরে সেগুলো তারা পাহারা-ঘরে জমা দিত। রহবিয়ামের অন্যান্য কাজ, অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেছিলেন তা সব “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। রহবিয়াম ও যারবিয়ামের মধ্যে অনবরত যুদ্ধ চলত। পরে রহবিয়াম তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে দায়ূদ-শহরে কবর দেওয়া হয়েছিল। তাঁর মায়ের নাম ছিল নয়মা; তিনি জাতিতে ছিলেন একজন অম্মোনীয়। রহবিয়ামের পরে তাঁর ছেলে অবিয়াম তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। নবাটের ছেলে যারবিয়ামের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় অবিয়াম যিহূদার রাজা হলেন। তিনি তিন বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল মাখা; তিনি অবীশালোমের মেয়ে। অবিয়ামের বাবা যে সব পাপ করেছিলেন তিনিও সেই সব করতে থাকলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মত তাঁর অন্তর তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিতে পূর্ণ ছিল না। তবুও দায়ূদের কথা মনে করে তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁকে যিরূশালেমে একটা প্রদীপ দিলেন, অর্থাৎ তাঁর সিংহাসনে বসবার জন্য তাঁকে একটা ছেলে দিলেন এবং যিরূশালেমকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করলেন, কারণ সদাপ্রভুর চোখে যা ঠিক দায়ূদ তা-ই করতেন। কেবল হিত্তীয় ঊরিয়ের ব্যাপারটা ছাড়া তাঁর সারা জীবনে তিনি সদাপ্রভুর কোন আদেশই অমান্য করেন নি। রহবিয়াম ও যারবিয়ামের মধ্যে যে যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল তা অবিয়ামের সারা জীবন ধরে চলেছিল। অবিয়ামের অন্যান্য কাজ, অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেছিলেন তা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। অবিয়াম ও যারবিয়ামের মধ্যে যুদ্ধ হত। পরে অবিয়াম তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন, আর দায়ূদ-শহরে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে আসা রাজা হলেন। ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের রাজত্বের বিশ বছরের সময়ে আসা যিহূদার রাজা হলেন। তিনি একচল্লিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর বাবার মায়ের নাম ছিল মাখা। তিনি ছিলেন অবীশালোমের মেয়ে। তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মত আসা সদাপ্রভুর চোখে যা ঠিক তা-ই করতেন। তিনি দেশ থেকে পুরুষ মন্দির-বেশ্যাদের তাড়িয়ে দিলেন এবং পূর্বপুরুষদের তৈরী সব মূর্তিগুলোও দূর করলেন। এমন কি, তিনি তাঁর বাবার মা মাখাকেও রাজমাতার পদ থেকে সরিয়ে দিলেন, কারণ তিনি একটা জঘন্য আশেরা-মূর্তি তৈরী করিয়েছিলেন। আসা সেই মূর্তিটা কেটে ফেলে কিদ্রোণ উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে সেটা পুড়িয়ে দিলেন। পূজার উঁচু স্থানগুলো যদিও তিনি ধ্বংস করেন নি তবুও সারা জীবন তাঁর অন্তর সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিতে পূর্ণ ছিল। তিনি ও তাঁর বাবা যে সব সোনা, রূপা ও অন্যান্য জিনিস সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন সেগুলো তিনি সদাপ্রভুর ঘরে নিয়ে গেলেন। আসা ও ইস্রায়েলের রাজা বাশার গোটা রাজত্বকাল ধরে তাঁদের মধ্যে যুদ্ধ চলেছিল। ইস্রায়েলের রাজা বাশা যিহূদার লোকদের বিরুদ্ধে গিয়ে রামা শহরটা দুর্গের মত করে গড়ে তুলতে লাগলেন যাতে কেউ যিহূদার রাজা আসার কাছে যাওয়া-আসা করতে না পারে। সদাপ্রভুর ঘরে এবং নিজের রাজবাড়ীর ভাণ্ডারে যে সব সোনা ও রূপা ছিল আসা সেগুলো সব বের করে নিলেন। সেগুলো তাঁর কর্মচারীদের হাতে দিয়ে অরামের রাজা বিন্‌হদদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। বিন্‌হদদ ছিলেন টব্রিম্মোণের ছেলে হিষিয়োণের নাতি। তিনি তখন দামেস্কে রাজত্ব করছিলেন। আসা তাঁকে বলে পাঠালেন, “আমার ও আপনার বাবার মত আসুন, আমরাও আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি করি। আমি আপনাকে এই সব সোনা ও রূপা উপহার পাঠালাম। ইস্রায়েলের রাজা বাশার সংগে আপনি এখন চুক্তি ভেংগে ফেলুন, তাতে সে আমার কাছ থেকে চলে যাবে।” রাজা আসার কথায় বিন্‌হদদ রাজী হয়ে তাঁর সেনাপতিদের ইস্রায়েলের গ্রামগুলোর বিরুদ্ধে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি ইয়োন, দান, আবেল-বৈৎ-মাখা ও সমস্ত কিন্নেরৎ এবং তার সংগে নপ্তালি-এলাকাটা দখল করে নিলেন। বাশা এই কথা শুনে রামা শহর শক্তিশালী করে গড়ে তুলবার কাজ বন্ধ করে তির্সাতে ফিরে গেলেন। তারপর রাজা আসা যিহূদার সকলের উপর একটা হুকুম জারি করলেন, কাউকে বাদ দিলেন না। তাতে লোকেরা রামায় বাশার ব্যবহার করা পাথর ও কাঠ সব নিয়ে গেল। রাজা আসা সেই সব দিয়ে বিন্যামীনের গেবা ও মিসপা গ্রাম দুর্গের মত করে গড়ে তুললেন। আসার অন্যান্য সব কাজ, যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা, তিনি যা কিছু করেছিলেন এবং যে সব গ্রাম তিনি নতুনভাবে গড়ে তুলেছিলেন তা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। বুড়ো বয়সে আসার পায়ে একটা রোগ হল। পরে আসা তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর ছেলে যিহোশাফট তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে যারবিয়ামের ছেলে নাদব ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি ইস্রায়েলে দু’বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। তিনি তাঁর বাবার মত চলতেন, অর্থাৎ তাঁর বাবা ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে যেমন পাপ করিয়েছিলেন তিনিও তা-ই করেছিলেন। ইষাখর-গোষ্ঠীর অহিয়ের ছেলে বাশা নাদবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলেন। নাদব ও সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা যখন পলেষ্টীয়দের গিব্বথোন ঘেরাও করেছিল তখন বাশা গিব্বথোনে নাদবকে মেরে ফেললেন। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের তৃতীয় বছরে বাশা নাদবকে মেরে ফেলে তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। তিনি রাজা হয়েই যারবিয়ামের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেললেন। সদাপ্রভু তাঁর দাস শীলোনীয় নবী অহিয়ের মধ্য দিয়ে যে কথা বলেছিলেন সেই অনুসারে বাশা যারবিয়ামের পরিবারের সবাইকে ধ্বংস করে ফেললেন। এর কারণ হল, যারবিয়াম নিজে পাপ করেছিলেন এবং ইস্রায়েলকে দিয়েও পাপ করিয়েছিলেন আর তা করে তিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন। নাদবের অন্যান্য কাজ, অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেছিলেন তা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। আসা ও ইস্রায়েলের রাজা বাশার গোটা রাজত্বকাল ধরে তাঁদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের তৃতীয় বছরে গোটা ইস্রায়েল দেশের উপরে অহিয়ের ছেলে বাশা তির্সায় রাজত্ব করতে শুরু করেছিলেন। তিনি চব্বিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তিনি সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। তিনি যারবিয়ামের মত চলতেন, অর্থাৎ যারবিয়াম যেমন ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন তিনিও তা-ই করেছিলেন। তখন বাশার বিরুদ্ধে হনানির ছেলে যেহূর কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য প্রকাশিত হল, “হে বাশা, আমি তোমাকে ধুলা থেকে তুলে এনে আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের নেতা করেছি। কিন্তু তুমি যারবিয়ামের পথে চলেছ ও আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে পাপ করিয়েছ আর তাদের সেই পাপের দরুন আমাকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছ। কাজেই তুমি ও তোমার বংশকে আমি ধ্বংস করতে যাচ্ছি। আমি তোমার বংশকে নবাটের ছেলে যারবিয়ামের বংশের মত করব। তোমার যে লোকেরা শহরে মরবে তাদের খাবে কুকুরে আর মাঠের মধ্যে যারা মরবে তাদের খাবে পাখীতে।” বাশার অন্যান্য কাজ, যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা এবং তিনি যা কিছু করেছিলেন তা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে বাশা তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তির্সায় তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে এলা রাজা হলেন। হনানির ছেলে নবী যেহূর মধ্য দিয়ে বাশা ও তাঁর বংশের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর বাক্য প্রকাশিত হয়েছিল, কারণ যারবিয়ামের বংশের মত তিনি সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা করে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন এবং যারবিয়ামের বংশকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের ছাব্বিশ বছরের সময় বাশার ছেলে এলা ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি তির্সায় দু’বছর রাজত্ব করেছিলেন। সিম্রি নামে তাঁর একজন সেনাপতি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এলার যত রথ ছিল তার অর্ধেকের ভার ছিল সিম্রির উপর। এলা এই সময় অর্সার ঘরে মাতাল হবার জন্য মদ খাচ্ছিলেন। এই অর্সার উপর তির্সার রাজবাড়ীর তদারকের ভার ছিল। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের সাতাশ বছরের সময় সিম্রি সেই ঘরে ঢুকে এলাকে মেরে ফেললেন। তারপর তিনি এলার জায়গায় রাজা হলেন। সিংহাসনে বসে রাজত্বের শুরুতেই সিম্রি বাশার বংশের সবাইকে মেরে ফেললেন। আত্মীয়-বন্ধু কোন পুরুষকেই তিনি বাঁচিয়ে রাখলেন না। নবী যেহূর মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু বাশার বিরুদ্ধে যে কথা বলেছিলেন সেই অনুসারে সিম্রি বাশার বংশের সবাইকে ধ্বংস করে দিলেন। এর কারণ হল, বাশা ও তাঁর ছেলে এলা নিজেরা অনেক পাপ করেছিলেন এবং ইস্রায়েলকে দিয়েও পাপ করিয়েছিলেন। তাঁরা অসার প্রতিমা দিয়ে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন। এলার অন্যান্য কাজ, অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেছিলেন তা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের সাতাশ বছরের সময় সিম্রি তির্সায় সাত দিন রাজত্ব করেছিলেন। সেই সময় ইস্রায়েলীয় সৈন্যদল পলেষ্টীয়দের গিব্বথোন ঘেরাও করে ছিল। ইস্রায়েলীয়েরা ছাউনির মধ্যে যখন শুনতে পেল যে, সিম্রি রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে মেরে ফেলেছেন তখন সেই দিনই তারা ছাউনির মধ্যে প্রধান সেনাপতি অম্রিকে ইস্রায়েলের রাজা বলে ঘোষণা করল। তখন অম্রি ও তাঁর সংগে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা গিব্বথোন থেকে সরে এসে তির্সা ঘেরাও করল। শহরটা অধিকার করা হয়ে গেছে দেখে সিম্রি রাজবাড়ীর দুর্গে গেলেন এবং আগুন লাগিয়ে গোটা রাজবাড়ী পুড়িয়ে দিলেন। সেই সময় তিনি নিজেও পুড়ে মরলেন। তাঁর পাপের জন্যই তাঁকে মরতে হল, কারণ সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। তিনি যারবিয়ামের মত চলতেন, অর্থাৎ যারবিয়াম ইস্রায়লীয়দের দিয়ে যেমন পাপ করিয়েছিলেন তিনিও তা-ই করেছিলেন। সিম্রির অন্যান্য কাজ এবং তাঁর বিদ্রোহের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। এর পর ইস্রায়েলীয়েরা দুই দলে ভাগ হয়ে গেল। তাদের অর্ধেক লোক চাইল গীনতের ছেলে তিব্‌নিকে রাজা করতে আর বাকী অর্ধেক চাইল অম্রিকে রাজা করতে। কিন্তু অম্রির পক্ষের লোকেরা গীনতের ছেলে তিব্‌নির পক্ষের লোকদের হারিয়ে দিল। এতে তিব্‌নি মারা গেল আর অম্রি রাজা হলেন। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের একত্রিশ বছরের সময় অম্রি ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি বারো বছর রাজত্ব করেছিলেন, তার মধ্যে ছয় বছর রাজত্ব করেছিলেন তির্সায়। তিনি আটাত্তর কেজি রূপা দিয়ে শেমরের কাছ থেকে শমরিয়া পাহাড়টা কিনলেন এবং পাহাড়ের উপরে একটা শহর তৈরী করলেন এবং পাহাড়টার আগেকার মালিক শেমরের নাম অনুসারে শহরটার নাম রাখলেন শমরিয়া। অম্রি সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন এবং তাঁর আগে যাঁরা রাজা ছিলেন তাঁদের সকলের চেয়ে তিনি বেশী পাপ করতেন। তিনি সম্পূর্ণভাবে নবাটের ছেলে যারবিয়ামের মত চলতেন, অর্থাৎ যারবিয়াম যেমন ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন অম্রিও তা-ই করেছিলেন। তাতে ইস্রায়েলীয়েরা অসার প্রতিমা দিয়ে তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল। অম্রির অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে অম্রি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে শমরিয়ায় কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে আহাব রাজা হলেন। যিহূদার রাজা আসার রাজত্বের আটত্রিশ বছরের সময় অম্রির ছেলে আহাব ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি বাইশ বছর শমরিয়ায় থেকে ইস্রায়েলের উপর রাজত্ব করেছিলেন। অম্রির ছেলে আহাব সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন, এমন কি, তাঁর আগে যাঁরা রাজা ছিলেন তাঁদের সকলের চেয়ে আরও বেশী করে তা করতেন। নবাটের ছেলে যারবিয়াম যে সব পাপ করেছিলেন সেগুলোকে তিনি সামান্য ব্যাপার বলে মনে করতেন। কেবল তা-ই নয়, তিনি সীদোনীয়দের রাজা ইৎবালের মেয়ে ঈষেবলকে বিয়ে করলেন এবং বাল দেবতার সেবা ও পূজা করতে লাগলেন। তিনি শমরিয়াতে বাল দেবতার জন্য যে মন্দির তৈরী করেছিলেন সেখানে তার জন্য একটা বেদী তৈরী করলেন। তিনি একটা আশেরা-খুঁটিও তৈরী করলেন এবং তাঁর আগে ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত রাজারা ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে যতটা অসন্তুষ্ট করেছিলেন তিনি তাঁর কাজের দ্বারা তাঁকে আরও বেশী অসন্তুষ্ট করলেন। আহাবের সময়ে বৈথেলীয় হীয়েল যিরীহো শহরটা আবার তৈরী করলেন। নূনের ছেলে যিহোশূয়ের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুর বাক্য অনুসারে সেই শহরের ভিত্তি গাঁথার জন্য হীয়েলের বড় ছেলে অবীরামকে প্রাণ দিতে হল এবং তার ফটকের দরজা লাগাবার জন্য তার ছোট ছেলে সগূবকে প্রাণ দিতে হল। গিলিয়দের তিশ্‌বী গ্রামের এলিয় আহাবকে বললেন, “আমি যাঁর সেবা করি ইস্রায়েলীয়দের সেই জীবন্ত ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমি না বলা পর্যন্ত আগামী কয়েক বছরে শিশিরও পড়বে না, বৃষ্টিও পড়বে না।” পরে সদাপ্রভু এলিয়কে বললেন, “তুমি এই জায়গা ছেড়ে পূর্ব দিকে যাও এবং যর্দনের পূর্ব দিকে করীৎ স্রোতের ধারে লুকিয়ে থাক। তুমি সেই স্রোতের জল খাবে আর সেখানে তোমাকে খাবার দেবার জন্য আমি দাঁড়কাকদের ঠিক করে রেখেছি।” কাজেই সদাপ্রভু এলিয়কে যা বললেন তিনি তা-ই করলেন। তিনি যর্দনের পূর্ব দিকে করীৎ স্রোতের ধারে গিয়ে থাকতে লাগলেন। দাঁড়কাকেরা সকালে ও বিকালে তাঁর জন্য রুটি ও মাংস আনত এবং তিনি সেই স্রোতের জল খেতেন। দেশে বৃষ্টি না হওয়াতে কিছুকাল পরে সেই স্রোতের জল শুকিয়ে গেল। তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য এলিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “তুমি এখন সীদোনের সারিফতে গিয়ে থাক। তোমাকে খাবার যোগাবার জন্য আমি সেখানকার এক বিধবাকে ঠিক করে রেখেছি।” সেইজন্য তিনি সারিফতে গেলেন। গ্রামে ঢুকবার পথে পৌঁছে তিনি একজন বিধবাকে কাঠ কুড়াতে দেখলেন। তিনি তাকে ডেকে বললেন, “আমার খাবার জন্য পাত্রে করে একটু জল আনতে পারবে?” সে যখন যাচ্ছিল তখন তিনি তাকে আবার ডেকে বললেন, “দয়া করে আমার জন্য এক টুকরা রুটিও এনো।” উত্তরে সেই বিধবা বলল, “আপনার ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমার কাছে একটাও রুটি নেই। পাত্রে কেবল এক মুঠো ময়দা আর ভাঁড়ে একটুখানি তেল রয়েছে। বাড়ী নিয়ে যাবার জন্য আমি কতগুলো কাঠ কুড়াচ্ছি; তা দিয়ে আমার ও আমার ছেলের জন্য কিছু খাবার তৈরী করব। তারপর তা খেয়ে আমরা মরব।” এলিয় তাকে বললেন, “ভয় কোরো না। যা বললে বাড়ী গিয়ে তা-ই কর। কিন্তু তোমার যা আছে তা থেকে আগে আমার জন্য একটা ছোট রুটি তৈরী করে নিয়ে এস। তারপর তোমার ও তোমার ছেলের জন্য রুটি তৈরী কোরো। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন যে, তিনি বৃষ্টি না দেওয়া পর্যন্ত ঐ ময়দার পাত্রটাও খালি হবে না আর তেলের ভাঁড়ও খালি হবে না।” তখন সে গিয়ে এলিয় তাকে যা করতে বলেছিলেন তা-ই করল। তাতে এলিয় আর সেই স্ত্রীলোক ও তার ছেলেটি অনেক দিন পর্যন্ত খাবার খেতে থাকল। এলিয়ের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু যে কথা বলেছিলেন সেই অনুসারে ঐ ময়দার পাত্রটাও খালি হল না, তেলের ভাঁড়ও খালি হল না। কিছুদিন পরে সেই ঘরের মালিক ঐ স্ত্রীলোকটির ছেলের অসুখ হল। তার অবস্থা এত খারাপ হয়ে গেল যে, শেষে সে মারা গেল। স্ত্রীলোকটি তখন এলিয়কে বলল, “হে ঈশ্বরের লোক, আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আপনি কি আমাকে আমার পাপের কথা মনে করিয়ে দিতে আর আমার ছেলেকে মেরে ফেলতে এসেছেন?” উত্তরে এলিয় বললেন, “তোমার ছেলেটিকে আমার কাছে দাও।” তিনি ছেলেটিকে সেই স্ত্রীলোকের কোল থেকে নিয়ে উপরের যে ঘরে তিনি থাকতেন সেখানে গেলেন এবং তাকে নিজের বিছানার উপর শুইয়ে দিলেন। তারপর তিনি সদাপ্রভুকে ডেকে বললেন, “হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি যে বিধবার বাড়ীতে থাকি তার ছেলের মৃত্যু ঘটিয়ে কেন তুমি তার উপর এই দুঃখ নিয়ে আসলে?” তারপর তিনি তিন বার ছেলেটির উপরে লম্বা হয়ে শুয়ে সদাপ্রভুকে ডেকে বললেন, “হে সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর, ছেলেটির প্রাণ তার মধ্যে ফিরে আসুক।” সদাপ্রভু এলিয়ের কথা শুনলেন এবং ছেলেটির প্রাণ তার মধ্যে ফিরে আসল আর সে বেঁচে উঠল। এলিয় তখন ছেলেটিকে তুলে নিয়ে ঐ ঘর থেকে নীচে নেমে বাড়ীর ভিতরে গেলেন। তারপর তাকে তার মায়ের কাছে দিয়ে বললেন, “এই দেখ, তোমার ছেলে বেঁচে আছে।” তখন সেই স্ত্রীলোকটি এলিয়কে বলল, “আমি এখন বুঝতে পারলাম আপনি ঈশ্বরের লোক, আর সদাপ্রভু আপনার মধ্য দিয়ে যা বলেন তা সত্য।” এর অনেক দিন পরে, বৃষ্টি না হওয়ার তৃতীয় বছরের সময় সদাপ্রভু এলিয়কে বললেন, “তুমি গিয়ে আহাবকে দেখা দাও। আমি দেশে বৃষ্টি পাঠিয়ে দিচ্ছি।” কাজেই এলিয় আহাবকে দেখা দিতে গেলেন। তখন শমরিয়াতে ভীষণ দুর্ভিক্ষ চলছিল। আহাব ওবদিয়কে ডেকে পাঠালেন। রাজবাড়ীর দেখাশোনার ভার ওবদিয়ের উপরে ছিল। সদাপ্রভুর উপর ওবদিয়ের ভক্তিপূর্ণ বিশ্বাস খুব বেশী ছিল। ঈষেবল যখন সদাপ্রভুর নবীদের মেরে ফেলছিলেন তখন ওবদিয় একশোজন নবীকে নিয়ে পঞ্চাশ পঞ্চাশ করে দু’টা গুহায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তাঁদের খাবার ও জলের যোগান দিতেন। ওবদিয় আসলে পর আহাব তাঁকে বললেন, “তুমি দেশের সব ফোয়ারা ও উপত্যকার কাছে যাও। ঘোড়া আর খচ্চরগুলোর প্রাণ রক্ষার জন্য হয়তো কিছু ঘাস পাওয়া যাবে। তাতে আমাদের কোন পশুকে মেরে ফেলতে হবে না।” তাঁরা দু’জন ঘুরে দেখবার জন্য দেশটা ভাগ করে নিলেন। আহাব নিজে গেলেন এক দিকে আর ওবদিয় গেলেন অন্য দিকে। ওবদিয় পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় এলিয়ের সংগে তাঁর দেখা হল। ওবদিয় তাঁকে চিনতে পেরে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, “আমার প্রভু এলিয়, এ কি সত্যিই আপনি?” উত্তরে তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমিই। তুমি তোমার মনিবকে গিয়ে জানাও যে, এলিয় এখানে আছেন।” ওবদিয় বললেন, “আমি কি অন্যায় করেছি যে, আপনি আপনার দাস আমাকে মেরে ফেলবার জন্য আহাবের হাতে তুলে দিচ্ছেন? আপনার ঈশ্বর জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি যে, এমন কোন জাতি বা রাজ্য নেই যেখানে আমার মনিব আপনার খোঁজে লোক পাঠান নি। সেই সব জাতি বা রাজ্য যখনই ঘোষণা করেছে যে, আপনি সেখানে নেই তখনই তিনি তাদের দিয়ে এই শপথ করিয়ে নিয়েছেন যে, তারা সত্যিই আপনাকে খুঁজে পায় নি। আর এখন আপনি আমাকে আমার মনিবের কাছে গিয়ে বলতে বলছেন যে, এলিয় এখানে আছেন। আমি আপনাকে ছেড়ে চলে গেলে সদাপ্রভুর আত্মা আপনাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাবেন যা আমি জানব না। আমি গিয়ে আহাবকে বললে পর যদি তিনি আপনাকে খুঁজে না পান তবে তিনি আমাকে মেরে ফেলবেন। কিন্তু অল্প বয়স থেকেই আপনার দাস আমি সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে আসছি। ঈষেবল যখন সদাপ্রভুর নবীদের মেরে ফেলছিলেন তখন আমি কি করেছি তা কি আমার প্রভু শোনেন নি? সদাপ্রভুর নবীদের একশোজনকে পঞ্চাশ পঞ্চাশ করে দু’টা গুহায় লুকিয়ে রেখেছি এবং তাদের খাবার ও জলের যোগান দিয়েছি। আর আপনি এখন আমাকে আমার মনিবের কাছে গিয়ে বলতে বলছেন যে, এলিয় এখানে আছেন। তিনি তো আমাকে মেরে ফেলবেন।” এলিয় বললেন, “আমি যাঁর সেবা করি, অর্থাৎ সর্বক্ষমতার অধিকারী জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমি আজই আহাবের সামনে নিশ্চয় উপস্থিত হব।” তখন ওবদিয় আহাবের সংগে দেখা করে কথাটা তাঁকে বললেন আর আহাব এলিয়ের সংগে দেখা করতে গেলেন। এলিয়কে দেখে আহাব বললেন, “হে ইস্রায়েলের কাঁটা, এ কি তুমি?” উত্তরে এলিয় বললেন, “আমি কাঁটা নই, কিন্তু আপনি ও আপনার বাবার বংশের লোকেরাই ইস্রায়েলের কাঁটা। আপনারা সদাপ্রভুর আদেশ ত্যাগ করে বাল দেবতাদের পিছনে গিয়েছেন। এখন লোক পাঠিয়ে ইস্রায়েলের সবাইকে কর্মিল পাহাড়ে আমার কাছে জড়ো করুন। ঈষেবলের টেবিলে বাল দেবতার যে চারশো পঞ্চাশজন নবী এবং আশেরার চারশোজন নবী খাওয়া-দাওয়া করে তাদের নিয়ে আসুন।” তখন আহাব ইস্রায়েলের সব জায়গায় খবর পাঠিয়ে দিলেন এবং কর্মিল পাহাড়ে ঐ নবীদের জড়ো করলেন। এলিয় লোকদের সামনে গিয়ে বললেন, “আর কতদিন তোমরা দুই নৌকায় পা দিয়ে চলবে? যদি সদাপ্রভুই ঈশ্বর হন তবে তাঁর সেবা কর, আর যদি বাল দেবতাই ঈশ্বর হন তবে তাঁর সেবা কর।” কিন্তু লোকেরা কোন উত্তর দিল না। তখন এলিয় তাদের বললেন, “সদাপ্রভুর নবীদের মধ্যে কেবল আমিই বাকী আছি, কিন্তু বাল দেবতার নবী রয়েছে সাড়ে চারশো জন। এখন আমাদের জন্য দু’টা ষাঁড় নিয়ে আসা হোক। ওরা নিজেদের জন্য একটা ষাঁড় বেছে নিয়ে কেটে টুকরা টুকরা করে কাঠের উপর রাখুক, কিন্তু তাতে আগুন না দিক। আমি অন্য ষাঁড়টা নিয়ে কেটে প্রস্তুত করে কাঠের উপরে রাখব কিন্তু তাতে আগুন দেব না। তারপর ওরা ওদের দেবতাকে ডাকবে আর আমি ডাকব সদাপ্রভুকে। যিনি আগুন পাঠিয়ে এর উত্তর দেবেন তিনিই ঈশ্বর।” এই কথা শুনে সবাই বলল, “আপনি ভালই বলেছেন।” এলিয় বাল-দেবতার নবীদের বললেন, “তোমরা একটা ষাঁড় বেছে নিয়ে প্রথমে সেটা কেটে প্রস্তুত করে নাও, কারণ তোমরা সংখ্যায় অনেক। তারপর তোমরা তোমাদের দেবতাকে ডাক, কিন্তু আগুন দেবে না।” যে ষাঁড়টা তাদের দেওয়া হল তারা সেটা কেটে প্রস্তুত করে নিল। তারপর তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাল দেবতাকে ডাকতে লাগল। তারা জোরে জোরে বলতে লাগল, “হে বালদেব, আমাদের উত্তর দাও।” কিন্তু কোন সাড়া মিলল না, কেউ উত্তর দিল না। যে বেদী তারা তৈরী করেছিল তার চারপাশে তারা নাচতে লাগল। দুপুর বেলা এলিয় তাদের ঠাট্টা করে বললেন, “জোরে চিৎকার কর, সে তো দেবতা। হয়তো সে গভীর চিন্তা করছে, না হয় পায়খানায় গেছে, না হয় পথে চলেছে। হয়তো সে ঘুমাচ্ছে, তাকে জাগাতে হবে।” কাজেই তারা আরও জোরে চিৎকার করতে লাগল এবং তাদের নিয়ম অনুসারে দেহে রক্তের ধারা বয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ছোরা ও কাঁটা দিয়ে নিজেদের আঘাত করতে থাকল। দুপুর গড়িয়ে গেল আর বিকাল বেলার পশু-উৎসর্গের সময় পর্যন্ত ভাবে-ধরা লোকের মত তারা আবোল-তাবোল বলতেই থাকল। কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া গেল না, কেউ উত্তর দিল না, কেউ মনোযোগও দিল না। তখন এলিয় সমস্ত লোকদের বললেন, “তোমরা আমার কাছে এস।” তারা তাঁর কাছে গেল। এলিয় সদাপ্রভুর ভেংগে-পড়া বেদী মেরামত করে নিলেন। তিনি যাকোবের ছেলেদের প্রত্যেক গোষ্ঠীর জন্য একটা করে বারোটা পাথর নিলেন। এই যাকোবকেই সদাপ্রভু বলেছিলেন, “তোমার নাম হবে ইস্রায়েল।” সেই পাথরগুলো দিয়ে এলিয় সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করলেন এবং তার চারপাশে এমন নালা কাটলেন যার মধ্যে বারো কেজি বীজে ভরা একটা থলি বসানো যায়। তারপর তিনি বেদীর উপরে কাঠ সাজিয়ে ষাঁড়টা টুকরা টুকরা করে সেই কাঠের উপর রাখলেন এবং তাদের বললেন, “তোমরা চারটা কলসী জলে ভরে এই পোড়ানো-উৎসর্গের মাংস ও কাঠের উপরে ঢেলে দাও।” তারপর তিনি বললেন, “আবার কর।” লোকেরা তা-ই করল। তিনি আদেশ দিলেন, “তৃতীয়বার কর।” তারা তৃতীয়বার তা-ই করল। তখন বেদীর উপর থেকে জল গড়িয়ে নালা ভরতি হয়ে গেল। বিকালের উৎসর্গের সময় হলে পর নবী এলিয় সামনে এগিয়ে এসে প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও ইস্রায়েলের ঈশ্বর, আজকে তুমি জানিয়ে দাও যে, ইস্রায়েলের মধ্যে তুমিই ঈশ্বর এবং আমি তোমার দাস, আর তোমার আদেশেই আমি এই সব করেছি। হে সদাপ্রভু, আমাকে উত্তর দাও, উত্তর দাও, যাতে এই সব লোকেরা জানতে পারে যে, হে সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর আর তুমিই তাদের মন ফিরিয়ে এনেছ।” তখন উপর থেকে সদাপ্রভুর আগুন পড়ে উৎসর্গের মাংস, কাঠ, পাথর ও মাটি পুড়িয়ে ফেলল এবং নালার জলও শুষে নিল। এ দেখে লোকেরা সবাই মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে চিৎকার করে বলল, “সদাপ্রভুই ঈশ্বর, সদাপ্রভুই ঈশ্বর।” তখন এলিয় তাদের এই আদেশ দিলেন, “বাল দেবতার নবীদের ধর। তাদের একজনকেও পালিয়ে যেতে দিয়ো না।” তখন লোকেরা তাদের ধরে ফেলল। এলিয় তাদের কীশোন উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে সেখানে তাদের মেরে ফেললেন। তারপর এলিয় আহাবকে বললেন, “আপনি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করুন, কারণ ভীষণ বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে।” এতে আহাব খাওয়া-দাওয়া করতে গেলেন, কিন্তু এলিয় গিয়ে কর্মিল পাহাড়ের উপরে উঠলেন। তিনি মাটিতে হাঁটু পেতে দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ রাখলেন। পরে তিনি তাঁর চাকরকে বললেন, “তুমি গিয়ে সাগরের দিকে চেয়ে দেখ।” সে গিয়ে দেখে বলল, “ওখানে কিছু নেই।” সাতবার এলিয় তাকে ফিরে গিয়ে দেখতে বললেন। সপ্তম বারে চাকরটি এসে বলল, “মানুষের হাতের মত ছোট একটা মেঘ সমুদ্র থেকে উঠছে।” তখন এলিয় তাকে বললেন, “তুমি গিয়ে আহাবকে বল যেন তিনি তাঁর রথ ঠিক করে নিয়ে চলে যান, নাহলে বৃষ্টি তাঁকে যেতে বাধা দেবে।” এর মধ্যে আকাশ মেঘে কালো হয়ে গেল, বাতাস উঠল এবং ভীষণ বৃষ্টি এসে গেল। আহাব রথে করে যিষ্রিয়েলে রওনা হলেন। তখন সদাপ্রভুর শক্তি এলিয়ের উপর আসল। তিনি তাঁর কাপড়খানা কোমর-বাঁধনিতে গুঁজে নিয়ে আহাবের আগে আগে দৌড়ে যিষ্রিয়েলে গেলেন। এলিয় যা যা করেছেন এবং কেমন করে সমস্ত নবীদের মেরে ফেলেছেন তা সবই আহাব ঈষেবলকে বললেন। সব কথা শুনে ঈষেবল লোক দিয়ে এলিয়কে বলে পাঠালেন, “কাল এই সময়ের মধ্যে তোমার প্রাণের দশা যদি তাদের একজনের মত না করি তবে দেবতারা যেন আমাকে শাস্তি দেন আর তা ভীষণভাবেই দেন।” এলিয় এতে ভয় পেয়ে তাঁর প্রাণ বাঁচাবার জন্য পালিয়ে গেলেন। তিনি যিহূদা-এলাকার বের্‌-শেবাতে পৌঁছে তাঁর চাকরকে সেখানে রাখলেন, কিন্তু তিনি নিজে মরু-এলাকার মধ্যে একদিনের পথ এগিয়ে গেলেন। সেখানে একটা রোতম গাছের নীচে বসে মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করলেন। তিনি বললেন, “হে সদাপ্রভু, যথেষ্ট হয়েছে। এবার তুমি আমার প্রাণ নাও; আমি তো আমার পূর্বপুরুষদের চেয়ে ভাল নই।” তারপর তিনি সেই গাছের তলায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। সেই সময় একজন স্বর্গদূত তাঁকে ছুঁয়ে বললেন, “ওঠ, খাও।” তিনি চেয়ে দেখতে পেলেন তাঁর মাথার কাছে গরম পাথরে সেঁকা একখানা রুটি ও এক পাত্র জল রয়েছে। তা খেয়ে তিনি আবার শুয়ে পড়লেন। সদাপ্রভুর দূত দ্বিতীয়বার এসে তাঁকে ছুঁয়ে বললেন, “ওঠ, খাও, কারণ এতটা পথ চলবার শক্তি তোমার নেই।” কাজেই তিনি উঠে খেলেন। সেই খাবার খেয়ে শক্তিলাভ করে তিনি চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত হেঁটে ঈশ্বরের পাহাড় হোরেবে গিয়ে উপস্থিত হলেন। সেখানে একটা গুহার মধ্যে ঢুকে তিনি রাতটা কাটালেন। সেখানে এলিয়ের কাছে সদাপ্রভু উপস্থিত হয়ে বললেন, “এলিয়, তুমি এখানে কি করছ?” উত্তরে তিনি বললেন, “সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু যেন তাঁর পাওনা ভক্তি পান সেইজন্য আমি খুবই আগ্রহী হয়েছি, কারণ ইস্রায়েলীয়েরা তোমার স্থাপন করা ব্যবস্থা ত্যাগ করেছে, তোমার সব বেদী ভেংগে ফেলেছে এবং তোমার নবীদের মেরে ফেলেছে। কেবল আমিই বাকী আছি আর আমাকেও এখন তারা মেরে ফেলবার চেষ্টা করছে।” তখন সদাপ্রভু বললেন, “তুমি বাইরে গিয়ে পাহাড়ের উপরে আমার সামনে দাঁড়াও।” সেই সময় সদাপ্রভু ওখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, আর তাঁর সামনে একটা ভীষণ শক্তিশালী বাতাস পাহাড়গুলোকে চিরে দু’ভাগ করল এবং সব পাথর ভেংগে টুকরা টুকরা করল, কিন্তু সেই বাতাসের মধ্যে সদাপ্রভু ছিলেন না। সেই বাতাসের পরে একটা ভূমিকম্প হল, কিন্তু সেই ভূমিকমেপর মধ্যেও সদাপ্রভু ছিলেন না। ভূমিকমেপর পরে দেখা দিল আগুন, কিন্তু সেই আগুনের মধ্যেও সদাপ্রভু ছিলেন না। সেই আগুনের পরে ফিস্‌ ফিস্‌ শব্দের মত সামান্য শব্দ শোনা গেল। এলিয় তা শুনে তাঁর গায়ের চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন এবং বাইরে গিয়ে গুহার মুখের কাছে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি এই কথা শুনলেন, “এলিয়, তুমি এখানে কি করছ?” উত্তরে তিনি বললেন, “সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু যেন তাঁর পাওনা ভক্তি পান সেইজন্য আমি খুবই আগ্রহী হয়েছি, কারণ ইস্রায়েলীয়েরা তোমার স্থাপন করা ব্যবস্থা ত্যাগ করেছে, তোমার সব বেদী ভেংগে ফেলেছে এবং তোমার নবীদের মেরে ফেলেছে। কেবল আমিই বাকী আছি আর আমাকেও এখন তারা মেরে ফেলবার চেষ্টা করছে।” তখন সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তুমি যে পথে এসেছ সেই পথে ফিরে গিয়ে দামেস্কের মরু-এলাকায় যাও। সেখানে পৌঁছে তুমি হসায়েলকে অরামের রাজার পদে অভিষেক কর। এছাড়া নিম্‌শির নাতি যেহূকে ইস্রায়েলের রাজার পদে অভিষেক কর, আর তোমার পদে নবী হওয়ার জন্য আবেল-মহোলার শাফটের ছেলে ইলীশায়কে অভিষেক কর। হসায়েলের তলোয়ার যারা এড়িয়ে যাবে যেহূ তাদের মেরে ফেলবে আর যেহূর তলোয়ার যারা এড়িয়ে যাবে ইলীশায় তাদের মেরে ফেলবে। তবে ইস্রায়েলে আমি সাত হাজার লোককে রেখে দিয়েছি যারা বাল দেবতার সামনে হাঁটু পাতে নি এবং তাকে চুম্বনও করে নি।” পরে এলিয় সেখান থেকে চলে গিয়ে শাফটের ছেলে ইলীশায়ের দেখা পেলেন। তিনি বারো জোড়া বলদ দিয়ে জমি চাষ করছিলেন এবং তিনি নিজে শেষ জোড়াটি চালাচ্ছিলেন। এলিয় তাঁর কাছে গিয়ে নিজের গায়ের চাদরখানা তাঁর গায়ে ফেলে দিলেন। ইলীশায় তখন তাঁর বলদ ফেলে এলিয়ের পিছনে পিছনে দৌড়ে গেলেন। ইলীশায় বললেন, “মিনতি করি, আমাকে আমার মা-বাবাকে চুম্বন করে আসতে দিন। তারপর আমি আপনার সংগে যাব।” উত্তরে এলিয় বললেন, “আচ্ছা যাও, কিন্তু মনে রেখো, এটা ঈশ্বরের কাজ।” কাজেই ইলীশায় তাঁকে ছেড়ে ফিরে গেলেন। তিনি তাঁর বলদ জোড়াটা নিয়ে জবাই করলেন এবং লাংগলের কাঠ দিয়ে মাংস রান্না করে লোকদের দিলেন আর লোকেরা তা খেল। তারপর তিনি এলিয়ের সংগে যাবার জন্য বের হলেন এবং তাঁর সেবাকারী হলেন। অরাম দেশের রাজা বিন্‌হদদ তাঁর সমস্ত সৈন্য জড়ো করলেন। তিনি বত্রিশজন রাজা ও অনেক ঘোড়া আর রথ সংগে নিয়ে শমরিয়া আক্রমণ করবার জন্য ঘেরাও করলেন। তিনি কয়েকজন লোককে শহরে পাঠিয়ে ইস্রায়েলের রাজা আহাবকে এই কথা জানালেন, “বিন্‌হদদ বলছেন, ‘আপনার সোনা ও রূপা আমার, আর আপনার সুন্দরী সুন্দরী স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরাও আমার।’ ” উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “আমি বলছি, আমার প্রভু মহারাজ, আপনি যা বলেছেন তা ঠিক। আমি এবং আমার সব কিছুই আপনার।” পরে সেই লোকেরা আহাবের কাছে আবার ফিরে এসে বলল, “বিন্‌হদদ বলছেন, ‘আপনার সোনা-রূপা, স্ত্রীদের ও ছেলেমেয়েদের যে আমাকে দিতে হবে সেই দাবি জানাতে আমি লোক পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আগামী কাল এই সময়ে আমার কর্মচারীদের আমি পাঠিয়ে দেব। তারা আপনার রাজবাড়ী ও আপনার কর্মচারীদের বাড়ীতে তল্লাশী চালাবে এবং যে সমস্ত জিনিস আপনার চোখে মূল্যবান তা সবই নিয়ে আসবে।’ ” তখন ইস্রায়েলের রাজা দেশের সমস্ত বৃদ্ধ নেতাদের ডেকে বললেন, “দেখুন, এই লোকটি অনিষ্ট করবার চেষ্টা করছে, কারণ সে যখন আমার স্ত্রীদের ও ছেলেমেয়েদের এবং সোনা-রূপা দিয়ে দেবার দাবি জানিয়েছে তখন আমি তা দিতে অস্বীকার করি নি।” উত্তরে বৃদ্ধ নেতারা এবং সমস্ত লোকেরা বলল, “ওর কথা শুনবেন না কিম্বা ওর দাবিও মেনে নেবেন না।” কাজেই আহাব বিন্‌হদদের লোকদের বললেন, “আমার মনিব মহারাজকে বলবে যে, তাঁর প্রথম দাবি অনুসারে আমি সবই করব, কিন্তু দ্বিতীয় দাবি আমি পূরণ করতে পারব না।” লোকেরা তখন সেই উত্তর নিয়ে বিন্‌হদদের কাছে চলে গেল। বিন্‌হদদ তখন আহাবের কাছে এই সংবাদ পাঠালেন, “আমার সব লোকদের এক এক মুঠো করে দেবার মত ধুলাও যদি শমরিয়াতে থেকে যায় তাহলে দেবতারা যেন আমাকে শাস্তি দেন আর তা ভীষণভাবেই দেন।” উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “তাঁকে বলবে, ‘যে লোক তলোয়ার নিয়ে এখনও যুদ্ধে নামে নি সে যেন যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফিরে আসা লোকের মত বড়াই না করে।’ ” বিন্‌হদদের কাছে এই খবর গিয়ে যখন পৌঁছাল তখন তিনি ও অন্যান্য রাজারা তাঁদের তাম্বুতে মদ খাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর লোকদের হুকুম দিলেন, “আক্রমণের জন্য তোমরা তৈরী হও।” কাজেই তারা শহরটা আক্রমণ করবার জন্য তৈরী হল। এর মধ্যে ইস্রায়েলের রাজা আহাবের কাছে একজন নবী এসে এই কথা ঘোষণা করলেন, “সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি মস্ত বড় ঐ সৈন্যদলটা দেখতে পাচ্ছ কি? আজই আমি ওদের তোমার হাতে তুলে দেব আর তখন তুমি জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’ ” আহাব জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু কাকে দিয়ে তিনি তা করাবেন?” নবী উত্তরে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন যে, বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্তাদের অধীনে যে যুবক সৈন্যেরা আছে তারাই তা করবে।” আহাব জিজ্ঞাসা করলেন, “যুদ্ধটা শুরু করবে কে?” উত্তরে নবী বললেন, “আপনিই করবেন।” আহাব এই কথা শুনে বিভিন্ন এলাকার শাসনকর্তাদের অধীন যুবক সৈন্যদের জড়ো করলেন। তাতে তারা মোট দু’শো বত্রিশজন হল। তারপর তিনি সব ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের একত্র করলে পর সাত হাজার সৈন্য হল। তিনি বললেন, “তারা সন্ধির জন্য এসে থাকলে তাদের জীবন্ত ধরবে, আবার যুদ্ধের জন্য এসে থাকলেও তাদের জীবন্ত ধরবে।” এর মধ্যে সেই যুবক সৈন্যেরা তাদের পিছনে থাকা সৈন্যদল নিয়ে আক্রমণ করতে শুরু করল। তারা প্রত্যেকে তাদের বাধাদানকারীকে মেরে ফেলল। তা দেখে অরামীয়েরা পালিয়ে গেল আর ইস্রায়েলীয়েরা তাদের পিছনে তাড়া করল। কিন্তু অরামের রাজা বিন্‌হদদ তাঁর কয়েকজন ঘোড়সওয়ারকে সংগে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে করে পালিয়ে গেলেন। ইস্রায়েলের রাজা এগিয়ে গিয়ে বাকী ঘোড়া ও রথ সব ধ্বংস করে দিলেন এবং অরামীয়দের খুব ক্ষতি করলেন। পরে ঐ নবী ইস্রায়েলের রাজার কাছে এসে বললেন, “আপনার শক্তি বাড়ান এবং কি করতে হবে তা ভেবে দেখুন, কারণ আগামী বসন্তকালে অরামের রাজা আপনাকে আবার আক্রমণ করবেন।” এর মধ্যে অরামের রাজার কর্মচারীরা তাঁকে এই পরামর্শ দিল, “ওদের দেবতাগুলো পাহাড়ের দেবতা, তাই আমাদের চেয়ে ওরা বেশী শক্তিশালী। কিন্তু আমরা যদি সমভূমিতে ওদের সংগে যুদ্ধ করি তবে নিশ্চয়ই আমরা ওদের চেয়ে শক্তিশালী হব। আপনি এক কাজ করুন। রাজাদের সরিয়ে দিয়ে তাদের জায়গায় সেনাপতিদের নিযুক্ত করুন। তাছাড়া যে সৈন্যদল আপনি হারিয়েছেন ঠিক সেই রকম আর একটা সৈন্যদল আপনাকে গড়ে তুলতে হবে, ঘোড়ার বদলে ঘোড়া এবং রথের বদলে রথ। তাহলে আমরা সমভূমিতে ইস্রায়েলের সংগে যুদ্ধ করতে পারব। তখন নিশ্চয়ই আমরা তাদের চেয়ে শক্তিশালী হব।” তিনি তাদের কথায় রাজী হয়ে সেইমতই কাজ করলেন। পরের বছর বসন্তকালে বিন্‌হদদ অরামীয়দের জড়ো করে নিয়ে ইস্রায়েলের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য অফেকে গেলেন। এদিকে ইস্রায়েলীয়দের জড়ো করা হল। তাদের খাবার-দাবার যোগান দেবার ব্যবস্থা করা হলে পর তারাও অরামীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য বেরিয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা অরামীয়দের সামনের দিকে তাদের ছাউনি ফেলল। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল ছোট দু’টা ছাগলের পাল, আর এদিকে অরামীয়েরা গোটা দেশটা জুড়ে রইল। তখন ঈশ্বরের একজন লোক এসে ইস্রায়েলের রাজাকে বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘অরামীয়েরা মনে করছে সদাপ্রভু পাহাড়ের ঈশ্বর, উপত্যকার ঈশ্বর নন; সেইজন্য আমি এই বিরাট সৈন্যদলকে তোমার হাতে তুলে দেব, আর এতে তোমরা জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’ ” সাত দিন পর্যন্ত তারা একে অন্যের সামনাসামনি ছাউনি ফেলে রইল। তারপর সপ্তম দিনে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা এক দিনেই এক লক্ষ অরামীয় পদাতিক সৈন্য মেরে ফেলল। বাদবাকী সৈন্যেরা অফেকে পালিয়ে গেল আর সেখানে তাদের সাতাশ হাজার সৈন্যের উপরে দেয়াল ধ্বসে পড়ল। বিন্‌হদদ সেখানে পালিয়ে গিয়ে বাড়ীর ভিতরের একটা কামরায় লুকিয়ে রইলেন। বিন্‌হদদের কর্মচারীরা তাঁকে বলল, “দেখুন, আমরা শুনেছি যে, ইস্রায়েলের রাজারা দয়ালু। চলুন, আমরা কোমরে চট পরে আর মাথায় দড়ির বিড়া বেঁধে ইস্রায়েলের রাজার কাছে যাই। হয়তো তিনি আপনার প্রাণ রক্ষা করবেন।” তাঁরা কোমরে চট পরে ও মাথায় দড়ির বিড়া বেঁধে ইস্রায়েলের রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার দাস বিন্‌হদদ বলছেন যে, আপনি যেন দয়া করে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখেন।” উত্তরে রাজা বললেন, “তিনি কি এখনও জীবিত আছেন? তিনি আমার ভাই।” সেই লোকেরা এটাকে ভাল লক্ষণ মনে করে তাড়াতাড়ি করে তাঁর কথা ধরে বলল, “হ্যাঁ, বিন্‌হদদ নিশ্চয়ই আপনার ভাই।” রাজা বললেন, “আপনারা গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসুন।” বিন্‌হদদ বের হয়ে আসলে পর আহাব তাঁকে তাঁর রথে তুলে নিলেন। বিন্‌হদদ বললেন, “আপনার বাবার কাছ থেকে আমার বাবা যে সব গ্রাম নিয়ে নিয়েছেন আমি সেগুলো আপনাকে ফিরিয়ে দেব। আমার বাবা যেমন শমরিয়াতে বাজার বসিয়েছিলেন তেমনি আপনিও দামেস্কের বিভিন্ন জায়গায় বাজার বসাতে পারবেন।” আহাব বললেন, “একটা সন্ধি করে আপনাকে আমি ছেড়ে দেব।” এই বলে তিনি বিন্‌হদদের সংগে একটা সন্ধি করে তাঁকে ছেড়ে দিলেন। সদাপ্রভুর আদেশে শিষ্য-নবীদের মধ্যে একজন তাঁর সংগীকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত কর।” লোকটি তাতে রাজী হল না। তখন সেই নবী বললেন, “তুমি সদাপ্রভুর কথার বাধ্য হলে না বলে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সংগে সংগেই একটা সিংহ তোমাকে মেরে ফেলবে।” লোকটি চলে যাওয়ার পরেই একটা সিংহ তাকে দেখতে পেয়ে মেরে ফেলল। সেই নবী আর একজন লোককে দেখতে পেয়ে তাকে বললেন, “দয়া করে আমাকে আঘাত কর।” লোকটি তাঁকে আঘাত করে ক্ষত করল। তারপর সেই নবী রাস্তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাজার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। তিনি তাঁর মাথায় কাপড় বেঁধে তা চোখের উপরে নামিয়ে এনে নিজের পরিচয় গোপন করলেন। রাজা ঐ পথে যাওয়ার সময় সেই নবী তাঁকে ডেকে বললেন, “আপনার দাস আমি যুদ্ধের মাঝখানে গিয়েছিলাম। তখন একজন লোক একজন বন্দীকে আমার কাছে এনে বলল, ‘এই লোকটাকে পাহারা দিয়ে রাখ। যদি সে হারিয়ে যায় তবে তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ নেওয়া হবে, আর তা না হলে ঊনচল্লিশ কেজি রূপা জরিমানা দিতে হবে।’ কিন্তু আপনার দাস যখন কাজে ব্যস্ত ছিল তখন সে কোথায় চলে গেছে।” তখন ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “ঐ শাস্তিই তোমার হবে। তুমি নিজের মুখেই তা বলেছ।” তখন সেই নবী তাড়াতাড়ি চোখের উপর থেকে মাথার কাপড়টা সরিয়ে ফেললেন আর ইস্রায়েলের রাজা তাঁকে নবীদের একজন বলে চিনতে পারলেন। সেই নবী রাজাকে বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমি যাকে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন করেছিলাম তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছ। কাজেই তার প্রাণের বদলে তোমার প্রাণ আর তার লোকদের বদলে তোমার লোকদের প্রাণ যাবে।’ ” এতে ইস্রায়েলের রাজা মুখ কালো করে ও বিরক্ত হয়ে শমরিয়ায় তাঁর রাজবাড়ীতে চলে গেলেন। এর পরে যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের আংগুর ক্ষেত নিয়ে একটা ঘটনা ঘটে গেল। এই আংগুর ক্ষেতটা ছিল যিষ্রিয়েলে শমরিয়ার রাজা আহাবের রাজবাড়ীর কাছেই। আহাব নাবোৎকে বললেন, “সব্‌জীর বাগান করবার জন্য তোমার আংগুর ক্ষেতটা আমাকে দিয়ে দাও, কারণ ওটা আমার রাজবাড়ীর কাছেই। এর বদলে আমি তোমাকে আরও ভাল একটা আংগুর ক্ষেত দেব কিম্বা যদি চাও তবে তার উচিৎ মূল্যও তোমাকে দেব।” কিন্তু উত্তরে নাবোৎ বলল, “আমার বাপ-দাদার কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তি যে আমি আপনাকে দিয়ে দিই সদাপ্রভু যেন তা হতে না দেন।” “আমার বাপ-দাদাদের সম্পত্তি আমি আপনাকে দেব না,” যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের এই কথার জন্য আহাব মুখ কালো করে ও বিরক্ত হয়ে বাড়ী চলে গেলেন। তিনি বিছানায় শুয়ে মুখ ফিরিয়ে রইলেন, খেতে চাইলেন না। এ দেখে তাঁর স্ত্রী ঈষেবল তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন তুমি মন খারাপ করে আছ? কেন খেতে চাইছ না?” উত্তরে রাজা তাঁকে বললেন, “আমি যিষ্রিয়েলীয় নাবোৎকে বলেছিলাম তার আংগুর ক্ষেতটা আমার কাছে বিক্রি করে দিতে কিম্বা সে চাইলে তার বদলে আমি তাকে আর একটা আংগুর ক্ষেতও দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে বলল যে, সে তার আংগুর ক্ষেতটা আমাকে দেবে না।” তখন তাঁর স্ত্রী ঈষেবল তাঁকে বললেন, “তুমি না ইস্রায়েলের রাজা? ওঠো, খাওয়া-দাওয়া কর, আনন্দিত হও। যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের আংগুর ক্ষেত আমি তোমাকে দেব।” ঈষেবল তখন আহাবের নাম করে কতগুলো চিঠি লিখে সেগুলোর উপর আহাবের সীলমোহর দিলেন এবং নাবোতের শহরে বাসকারী বৃদ্ধ নেতা ও গণ্যমান্য লোকদের কাছে চিঠিগুলো পাঠিয়ে দিলেন। সেই চিঠিগুলোতে তিনি লিখেছিলেন, “আপনারা উপবাস ঘোষণা করুন এবং লোকদের মধ্যে নাবোৎকে একটা বিশেষ স্থান দিন। তার সামনে দু’টা আসনে দু’জন খারাপ লোককে বসান। তারা এই বলে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিক যে, সে ঈশ্বর ও রাজার বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলেছে। তারপর তাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলুন।” কাজেই নাবোতের শহরে বাসকারী বৃদ্ধ নেতারা ও গণ্যমান্য লোকেরা ঈষেবলের চিঠিতে লেখা নির্দেশমত কাজ করলেন। তাঁরা উপবাস ঘোষণা করে নাবোৎকে লোকদের মধ্যে একটা বিশেষ স্থান দিলেন। তারপর দু’জন খারাপ লোক এসে নাবোতের সামনে বসে লোকদের কাছে তার বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিল যে, সে ঈশ্বর ও রাজার বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলেছে। তারপর লোকেরা তাকে শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলল। এর পর সেই নেতারা ইষেবলের কাছে খবর পাঠালেন যে, নাবোৎকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হয়েছে। নাবোৎকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হয়েছে শুনেই ঈষেবল আহাবকে বললেন, “যাও, যিষ্রিয়েলীয় নাবোৎ যে আংগুর ক্ষেতটা তোমার কাছে বিক্রি করতে চায় নি তার দখল নাও। সে আর বেঁচে নেই, মরে গেছে।” নাবোৎ মারা গেছে শুনে আহাব নাবোতের আংগুর ক্ষেতের দখল নিতে গেলেন। তখন তিশ্‌বীয় এলিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য প্রকাশিত হল, “শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা আহাবের সংগে দেখা করতে যাও। সে এখন নাবোতের আংগুর ক্ষেতে আছে। সে ওটার দখল নেবার জন্য সেখানে গেছে। তুমি তাকে বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি কি একজন লোককে মেরে ফেলে তার সম্পত্তি দখল কর নি?’ তারপর তাকে বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘কুকুরেরা যেখানে নাবোতের রক্ত চেটে খেয়েছে সেখানে তারা তোমার রক্ত, হ্যাঁ, তোমারই রক্ত চেটে খাবে।’ ” আহাব সেই কথা শুনে এলিয়কে বললেন, “হে আমার শত্রু, এবার তুমি আমাকে পেয়েছ।” উত্তরে এলিয় বললেন, “হ্যাঁ, পেয়েছি, কারণ সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করবার জন্য আপনি নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছেন। সেইজন্য সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তোমার উপর বিপদ নিয়ে আসব। তোমাকে আমি একেবারে ধ্বংস করব। দাস হোক বা স্বাধীন হোক তোমার বংশের প্রত্যেকটি পুরুষ লোককে আমি শেষ করে দেব। আমি তোমার বংশকে নবাটের ছেলে যারবিয়াম এবং অহিয়ের ছেলে বাশার বংশের মত করব, কারণ তুমি আমার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছ এবং ইস্রায়েলকে দিয়ে পাপ করিয়েছ। এছাড়া ঈষেবলের সম্বন্ধেও আমি বলছি যে, যিষ্রিয়েলের দেয়ালের কাছে কুকুরেরা তাকে খেয়ে ফেলবে। তোমার যে সব লোক শহরে মরবে তাদের খাবে কুকুরে আর যারা মাঠের মধ্যে মরবে তাদের খাবে পাখীতে।’ ” স্ত্রীর উস্কানিতে সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ আহাব তা-ই করবার জন্য নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মত আর কেউ এই রকম কাজ করে নি। ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে সদাপ্রভু যে ইমোরীয়দের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের মত প্রতিমা পূজা করে তিনি জঘন্য কাজ করতেন। আহাব সদাপ্রভুর কথা শুনে নিজের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে চট পরলেন এবং উপবাস করলেন। তিনি চট পরেই শুয়ে থাকতেন এবং নম্রভাবে চলাফেরা করতে লাগলেন। তখন সদাপ্রভু তিশ্‌বীয় এলিয়কে বললেন, “তুমি কি লক্ষ্য করেছ আহাব আমার সামনে নিজেকে কেমন নত করেছে? সে নিজেকে নত করেছে বলে এই বিপদ আমি তার জীবনকালে আনব না, কিন্তু তার ছেলের জীবনকালে তার বংশের উপরে আনব।” অরাম ও ইস্রায়েলের মধ্যে তিন বছর পর্যন্ত কোন যুদ্ধ হয় নি। তৃতীয় বছরে যিহূদার রাজা যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজার সংগে দেখা করতে গেলেন। ইস্রায়েলের রাজা তাঁর কর্মচারীদের বললেন, “আপনারা কি জানেন যে, রামোৎ-গিলিয়দ আমাদের? অথচ আমরা অরামের রাজার কাছ থেকে সেটা ফিরিয়ে নেবার জন্য কিছুই করছি না।” তখন তিনি যিহোশাফটকে বললেন, “আপনি কি যুদ্ধ করবার জন্য আমার সংগে রামোৎ-গিলিয়দে যাবেন?” উত্তরে যিহোশাফট তাঁকে বললেন, “আমি ও আপনি আমার লোক ও আপনার লোক সবাই এক, আর আমার ঘোড়া আপনারই ঘোড়া।” তবে যিহোশাফট তাঁকে এই কথাও বললেন, “আপনি প্রথমে সদাপ্রভুর পরামর্শ নিন।” কাজেই ইস্রায়েলের রাজা নবীদের ডেকে একত্র করলেন। তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় চার’শো। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে কি আমি যুদ্ধ করতে যাব, না যাব না?” তারা বলল, “যান, কারণ প্রভু ওটা রাজার হাতেই তুলে দেবেন।” কিন্তু যিহোশাফট বললেন, “এখানে কি সদাপ্রভুর কোন নবী নেই যার কাছে আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি?” উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা যিহূদার রাজা যিহোশাফটকে বললেন, “এখনও এমন একজন লোক আছে যার মধ্য দিয়ে আমরা সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারি, কিন্তু আমি তাকে ঘৃণা করি, কারণ সে আমার সম্বন্ধে মংগলের কথা বলে না, অমংগলের কথাই বলে। সে হল য্নিের ছেলে মীখায়।” উত্তরে যিহোশাফট বললেন, “রাজা যেন ঐ রকম কথা না বলেন।” তখন ইস্রায়েলের রাজা তাঁর একজন কর্মচারীকে ডেকে বললেন, “তুমি এখনই য্নিের ছেলে মীখায়কে ডেকে নিয়ে এস।” ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদার রাজা যিহোশাফট রাজপোশাক পরে শমরিয়া শহরের ফটকের কাছে গম ঝাড়বার জায়গায় তাঁদের সিংহাসনের উপরে বসে ছিলেন আর নবীরা সবাই তাঁদের সামনে ভবিষ্যতের কথা বলছিল। তখন কনানার ছেলে সিদিকিয় লোহার শিং তৈরী করে নিয়ে এই কথা ঘোষণা করল, “সদাপ্রভু বলছেন যে, অরামীয়েরা শেষ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আপনি এগুলো দিয়েই তাদের গুঁতাতে থাকবেন।” অন্যান্য নবীরাও একই রকম কথা বলল। তারা বলল, “রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করে তা জয় করে নিন, কারণ সদাপ্রভু সেটা রাজার হাতে তুলে দেবেন।” যে লোকটি মীখায়কে ডেকে আনতে গিয়েছিল সে তাঁকে বলল, “দেখুন, অন্যান্য নবীরা সবাই একবাক্যে রাজার সফলতার কথা বলছেন। আপনার কথাও যেন তাঁদের কথার মতই হয়। আপনি মংগলের কথাই বলবেন।” কিন্তু মীখায় বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, সদাপ্রভু আমাকে যা বলবেন আমি কেবল সেই কথাই বলব।” মীখায় আসলে পর রাজা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মীখায়, আমরা কি রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাব, না যাব না?” উত্তরে মীখায় বললেন, “হ্যাঁ, যান যান, আক্রমণ করে জয়লাভ করুন, কারণ সদাপ্রভু ওটা আপনার হাতেই দিয়ে রেখেছেন।” রাজা তাঁকে বললেন, “কতবার আমি তোমাকে এই শপথ করতে বলব যে, সদাপ্রভুর নামে তুমি সত্যি কথা ছাড়া আর কিছু বলবে না?” উত্তরে মীখায় বললেন, “আমি দেখলাম, ইস্রায়েলীয়েরা সবাই রাখালহীন ভেড়ার মত পাহাড়ের উপরে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সদাপ্রভু বললেন, ‘এদের কোন মনিব নেই, কাজেই তারা শান্তিতে যে যার বাড়ীতে চলে যাক।’ ” তখন ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে বললেন, “আমি কি আপনাকে আগেই বলি নি যে, সে আমার সম্বন্ধে অমংগল ছাড়া মংগলের কথা বলবে না?” মীখায় বলতে লাগলেন, “তাহলে আপনি সদাপ্রভুর কথা শুনুন। আমি দেখলাম, সদাপ্রভু তাঁর সিংহাসনে বসে আছেন এবং তাঁর ডান ও বাঁ দিকে সমস্ত স্বর্গদূতেরা রয়েছেন। তখন সদাপ্রভু বললেন, ‘রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করবার জন্য কে আহাবকে ভুলিয়ে সেখানে নিয়ে যাবে যাতে সে মারা যায়?’ তখন এক একজন এক এক কথা বললেন। শেষে একটি আত্মা এগিয়ে এসে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যাব।’ সদাপ্রভু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেমন করে করবে?’ সে বলল, ‘আমি গিয়ে তার সব নবীদের মুখে মিথ্যা বলবার আত্মা হব।’ সদাপ্রভু বললেন, ‘তুমিই তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তুমি গিয়ে তা-ই কর।’ এইজন্যই সদাপ্রভু এখন আপনার এই সব নবীদের মুখে মিথ্যা বলবার আত্মা দিয়েছেন। আপনার সর্বনাশ হবার জন্য সদাপ্রভু রায় দিয়েছেন।” তখন কনানার ছেলে সিদিকিয় গিয়ে মীখায়ের গালে চড় মেরে বলল, “সদাপ্রভুর আত্মা তোর সংগে কথা বলবার জন্য আমার কাছ থেকে বেরিয়ে কোন পথে গিয়েছিলেন?” উত্তরে মীখায় বললেন, “তুমি সেই দিন তা জানতে পারবে যেদিন তুমি নিজেকে লুকাবার জন্য ভিতরের ঘরে গিয়ে ঢুকবে।” ইস্রায়েলের রাজা তখন এই হুকুম দিলেন, “মীখায়কে শহরের শাসনকর্তা আমোন ও রাজপুত্র যোয়াশের কাছে আবার পাঠিয়ে দাও। তাদের বল রাজা বলেছেন এই লোকটিকে যেন জেলে রাখা হয় এবং রাজা নিরাপদে ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে অল্প জল আর অল্প রুটি ছাড়া যেন আর কিছু দেওয়া না হয়।” তখন মীখায় বললেন, “যদি আপনি সত্যিই নিরাপদে ফিরে আসেন তবে জানবেন সদাপ্রভু আমার মধ্য দিয়ে কথা বলেন নি।” তারপর তিনি আবার বললেন, “আপনারা সবাই আমার কথাটা শুনে রাখুন।” এর পরে ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদার রাজা যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করতে গেলেন। আহাব যিহোশাফটকে বললেন, “আমাকে যাতে লোকেরা চিনতে না পারে সেইজন্য আমি অন্য পোশাক পরে যুদ্ধে যোগ দেব, কিন্তু আপনি আপনার রাজপোশাকই পরুন।” এই বলে ইস্রায়েলের রাজা অন্য পোশাক পরে যুদ্ধ করতে গেলেন। অরামের রাজা তাঁর রথগুলোর বত্রিশজন সেনাপতিকে এই আদেশ দিয়ে রেখেছিলেন, “একমাত্র ইস্রায়েলের রাজা ছাড়া আপনারা ছোট কি বড় আর কারও সংগে যুদ্ধ করবেন না।” রথের সেনাপতিরা যিহোশাফটকে দেখে ভেবেছিলেন যে, তিনি নিশ্চয়ই ইস্রায়েলের রাজা। কাজেই তাঁরা ফিরে তাঁকে আক্রমণ করতে গেলেন কিন্তু যিহোশাফট চেঁচিয়ে উঠলেন। এতে সেনাপতিরা বুঝলেন যে, তিনি ইস্রায়েলের রাজা নন সেইজন্য তাঁরা আর তাঁর পিছনে তাড়া করলেন না। কিন্তু একজন লোক লক্ষ্য স্থির না করেই তার ধনুকে টান দিয়ে ইস্রায়েলের রাজার বুক ও পেটের বর্মের মাঝামাঝি ফাঁকে আঘাত করে বসল। তখন রাজা তাঁর রথ চালককে বললেন, “রথ ঘুরিয়ে তুমি যুদ্ধের জায়গা থেকে আমাকে বাইরে নিয়ে যাও। আমি আঘাত পেয়েছি।” সারা দিন ধরে ভীষণ যুদ্ধ চলল আর রাজাকে অরামীয়দের মুখোমুখি করে রথের মধ্যে বসিয়ে রাখা হল। তাঁর ক্ষত থেকে রক্ত ঝরে রথের মেঝের উপর পড়তে লাগল আর বিকালের দিকে তিনি মারা গেলেন। সূর্য ডুবে যাবার সময় সৈন্যদলের মধ্যে এই কথা ঘোষণা করা হল, “তোমরা প্রত্যেকেই যে যার গ্রামে ও বাড়ীতে ফিরে যাও।” এইভাবে ইস্রায়েলের রাজা মারা গেলেন এবং তাঁকে শমরিয়াতে আনা হল। লোকেরা তাঁকে সেখানেই কবর দিল। শমরিয়ার পুকুরে তাঁর রথটা ধোওয়া হল এবং সদাপ্রভুর ঘোষণা অনুসারে কুকুরেরা সেখানে তাঁর রক্ত চেটে খেল আর বেশ্যারা সেই পুকুরে স্নান করল। আহাবের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা, অর্থাৎ তিনি যা কিছু করেছিলেন সেই সব কথা, হাতীর দাঁতের কাজ করা যে রাজবাড়ী তিনি তৈরী করেছিলেন তার কথা এবং যে শহরগুলো তিনি শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছিলেন সেগুলোর কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। আহাব তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবার পর তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে অহসিয় রাজা হলেন। ইস্রায়েলের রাজা আহাবের রাজত্বের চার বছরের সময় আসার ছেলে যিহোশাফট যিহূদা দেশের রাজা হয়েছিলেন। যিহোশাফট পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং পঁচিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন শিল্‌হির মেয়ে অসূবা। যিহোশাফট সব ব্যাপারেই তাঁর বাবা আসার পথ ধরেই চলতেন, কখনও সেই পথ ছেড়ে যান নি। সদাপ্রভুর চোখে যা ঠিক তিনি তা-ই করতেন। কিন্তু পূজার উঁচু স্থানগুলো ধ্বংস করা হয় নি এবং লোকেরা সেখানে পশু উৎসর্গ করতে ও ধূপ জ্বালাতে থাকল। ইস্রায়েলের রাজার সংগে তিনি সন্ধি স্থাপন করেছিলেন। যিহোশাফটের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। তাঁর বাবা আসার রাজত্বের পরেও যে সব পুরুষ মন্দির-বেশ্যারা বাকী রয়ে গিয়েছিল তিনি দেশ থেকে তাদের দূর করে দিয়েছিলেন। সেই সময় ইদোম দেশে কোন রাজা ছিল না। একজন রাজ-প্রতিনিধি সেখানে রাজত্ব করতেন। ওফীরে গিয়ে সোনা আনবার জন্য যিহোশাফট কতগুলো বড় বড় তর্শীশ-জাহাজ তৈরী করলেন, কিন্তু সেগুলোর আর যাওয়া হল না, কারণ ইৎসিয়োন-গেবরে সেগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তখন আহাবের ছেলে অহসিয় যিহোশাফটকে বললেন, “আমার লোকেরা আপনার লোকদের সংগে জাহাজে যাক।” কিন্তু যিহোশাফট তাতে রাজী হলেন না। পরে যিহোশাফট তাঁর পূর্বপুুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে যিহোরাম রাজা হলেন। যিহূদার রাজা যিহোশাফটের রাজত্বের সতের বছরের সময় আহাবের ছেলে অহসিয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি ইস্রায়েলের উপরে দুই বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। তিনি তাঁর বাবা ও মায়ের মত এবং নবাটের ছেলে যারবিয়ামের মত চলতেন। এই যারবিয়াম যেমন ইস্রায়েলের লোকদের দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন অহসিয়ও তা-ই করেছিলেন। তিনি বাল দেবতার সেবা ও পূজা করতেন এবং তাঁর বাবা যেমন করেছিলেন তিনিও তেমনি করে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন। ॥ভব আহাবের মৃত্যুর পর মোয়াব দেশ ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। অহসিয় শমরিয়াতে তাঁর বাড়ীর উপরের তলার কামরার জানলা দিয়ে নীচে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিলেন। তখন তিনি কয়েকজন লোককে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা গিয়ে ইক্রোণের দেবতা বাল্‌-সবূবের কাছে জিজ্ঞাসা কর যে, এই আঘাত থেকে আমি সুস্থ হয়ে উঠব কি না।” কিন্তু সদাপ্রভুর দূত তিশ্‌বীয় এলিয়কে বললেন, “তুমি গিয়ে শমরিয়ার রাজার পাঠানো লোকদের সংগে দেখা করে তাদের বল, ‘ইস্রায়েলে কি ঈশ্বর নেই যে, তোমরা ইক্রোণের দেবতা বাল্‌-সবূবের কাছে জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছ? এইজন্য সদাপ্রভু বলছেন, যে বিছানায় তুমি শুয়ে আছ তা থেকে তুমি আর উঠবে না। তুমি নিশ্চয়ই মারা যাবে।’ ” এই বলে এলিয় চলে গেলেন। সেই লোকেরা রাজার কাছে ফিরে আসলে পর তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কেন ফিরে আসলে?” উত্তরে তারা বলল, “একজন লোক আমাদের সংগে দেখা করে বলল, যিনি আমাদের পাঠিয়েছেন আমরা যেন সেই রাজার কাছে ফিরে গিয়ে বলি যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘ইস্রায়েলে কি ঈশ্বর নেই যে, তুমি ইক্রোণের দেবতা বাল্‌-সবূবের কাছে জিজ্ঞাসা করবার জন্য লোক পাঠাচ্ছ? কাজেই তুমি যে বিছানায় শুয়ে আছ সেখান থেকে আর উঠবে না। তুমি নিশ্চয়ই মারা যাবে।’ ” রাজা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “যে লোকটা তোমাদের সংগে দেখা করে এই কথা বলেছে সে দেখতে কেমন?” উত্তরে তারা বলল, “তার গা লোমে ভরা ছিল আর কোমরে ছিল চামড়ার কোমর-বাঁধনি।” রাজা বললেন, “উনি হলেন তিশ্‌বীয় এলিয়।” এর পর রাজা একজন সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে এলিয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এলিয় তখন একটা পাহাড়ের উপরে বসে ছিলেন। সেই সেনাপতি এলিয়ের কাছে উঠে গিয়ে বললেন, “হে ঈশ্বরের লোক, রাজা আপনাকে নেমে আসতে বলছেন।” উত্তরে এলিয় সেই সেনাপতিকে বললেন, “আমি যদি ঈশ্বরেরই লোক হই তবে আকাশ থেকে আগুন নেমে এসে যেন তোমাকে ও তোমার পঞ্চাশজন সৈন্যকে পুড়িয়ে ফেলে।” তখন আকাশ থেকে আগুন পড়ে সেই সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে পুড়িয়ে ফেলল। এই কথা শুনে রাজা আর একজন সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে এলিয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই সেনাপতি এলিয়কে বললেন, “হে ঈশ্বরের লোক, রাজা আপনাকে এখনই নেমে আসতে বলেছেন।” উত্তরে এলিয় বললেন, “আমি যদি ঈশ্বরেরই লোক হই তবে আকাশ থেকে আগুন নেমে এসে যেন তোমাকে ও তোমার পঞ্চাশজন সৈন্যকে পুড়িয়ে ফেলে।” তখন আকাশ থেকে ঈশ্বরের আগুন পড়ে তাঁকে ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে পুড়িয়ে ফেলল। এর পরে রাজা আর একজন সেনাপতি ও তাঁর পঞ্চাশজন সৈন্যকে পাঠিয়ে দিলেন। এই তৃতীয় সেনাপতি উপরে উঠে গিয়ে এলিয়ের সামনে হাঁটু পেতে মিনতি করে বললেন, “হে ঈশ্বরের লোক, আপনি দয়া করে আমার ও আপনার এই পঞ্চাশজন দাসের প্রাণ রক্ষা করুন। দেখুন, আকাশ থেকে আগুন পড়ে প্রথম দু’জন সেনাপতি ও তাঁদের সব সৈন্যদের পুড়িয়ে ফেলেছে। কিন্তু এবার আপনি আমার প্রাণ রক্ষা করুন।” তখন সদাপ্রভুর দূত এলিয়কে বললেন, “তুমি ওর সংগে নেমে যাও, ওকে ভয় কোরো না।” কাজেই এলিয় তাঁর সংগে নেমে রাজার কাছে গেলেন। তিনি রাজাকে বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘জিজ্ঞাসা করবার জন্য ইস্রায়েলে কি ঈশ্বর নেই যে, তুমি ইক্রোণের দেবতা বাল্‌-সবূবের কাছে লোক পাঠিয়েছিলে? তুমি এই কাজ করেছ বলে তুমি যে বিছানায় শুয়ে আছ তা থেকে আর উঠবে না। তুমি নিশ্চয়ই মারা যাবে।’ ” এলিয়কে দিয়ে সদাপ্রভু যে কথা বলিয়েছিলেন সেই অনুসারে অহসিয় মারা গেলেন। অহসিয়ের কোন ছেলে ছিল না বলে তাঁর জায়গায় যোরাম রাজা হলেন। যিহূদার রাজা যিহোশাফটের ছেলে যিহোরামের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে তিনি রাজা হয়েছিলেন। অহসিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। সদাপ্রভু যখন একটা ঘূর্ণিবাতাসে করে এলিয়কে স্বর্গে তুলে নিতে চাইলেন তখন এলিয় ও ইলীশায় গিল্‌গল থেকে বের হলেন। এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “তুমি এখানে থাক; সদাপ্রভু আমাকে বৈথেলে যেতে বলেছেন।” ইলীশায় বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য ও আপনার প্রাণের দিব্য যে, আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না।” কাজেই তাঁরা বৈথেলে গেলেন। বৈথেলের শিষ্য-নবীরা ইলীশায়ের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনি কি জানেন যে, সদাপ্রভু আপনার গুরুকে আজ আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “হ্যাঁ, আমি জানি। আপনারা এই বিষয় নিয়ে আর কিছু বলবেন না।” এর পর এলিয় তাঁকে বললেন, “ইলীশায়, তুমি এখানে থাক; সদাপ্রভু আমাকে যিরীহোতে যেতে বলেছেন।” ইলীশায় বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য ও আপনার প্রাণের দিব্য যে, আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না।” কাজেই তাঁরা যিরীহোতে গেলেন। যিরীহোর শিষ্য-নবীরা ইলীশায়ের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনি কি জানেন যে, সদাপ্রভু আপনার গুরুকে আজ আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “হ্যাঁ, আমি জানি। আপনারা এই বিষয় নিয়ে আর কিছু বলবেন না।” এর পর এলিয় তাঁকে বললেন, “তুমি এখানে থাক; সদাপ্রভু আমাকে যর্দন নদীর পারে যেতে বলেছেন।” উত্তরে তিনি বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য ও আপনার প্রাণের দিব্য যে, আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না।” কাজেই তাঁরা দু’জন চলতে লাগলেন। এলিয় ও ইলীশায় যর্দন নদীর ধারে গিয়ে থামলেন আর তাঁদের কাছ থেকে কিছু দূরে পঞ্চাশজন শিষ্য-নবী এসে দাঁড়ালেন। এলিয় তাঁর গায়ের চাদরটা গুটিয়ে নিয়ে তা দিয়ে জলের উপর আঘাত করলেন। তাতে জল ডানে ও বাঁয়ে দু’ভাগ হয়ে গেল আর তাঁরা দু’জনে শুকনা মাটির উপর দিয়ে পার হয়ে গেলেন। পার হয়ে এসে এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “আমাকে বল, তোমার কাছ থেকে আমাকে তুলে নেবার আগে আমি তোমার জন্য কি করব?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “আপনার আত্মার দ্বিগুন আত্মা যেন আমি পাই।” এলিয় বললেন, “তুমি একটা কঠিন জিনিস চেয়েছ। তবুও তোমার কাছ থেকে আমাকে নিয়ে যাবার সময় যদি তুমি আমাকে দেখতে পাও তবে তুমি তা পাবে; যদি দেখতে না পাও তবে পাবে না।” তাঁরা কথা বলতে বলতে চলেছেন এমন সময় হঠাৎ একটা আগুনের রথ ও আগুনের কতগুলো ঘোড়া এসে তাঁদের দু’জনকে আলাদা করে দিল এবং এলিয় একটা ঘূর্ণিবাতাসে করে স্বর্গে চলে গেলেন। ইলীশায় তা দেখে চিৎকার করে বললেন, “হে আমার পিতা, আমার পিতা, দেখুন, ইস্রায়েলের রথ ও ঘোড়সওয়ার।” এর পর ইলীশায় আর তাঁকে দেখতে পেলেন না। তখন তিনি নিজের কাপড় ধরে ছিঁড়ে দু’ভাগ করলেন। তারপর এলিয়ের গা থেকে পড়ে যাওয়া চাদরখানা কুড়িয়ে নিয়ে তিনি ফিরে যর্দনের ধারে গিয়ে দাঁড়ালেন। সেই চাদরখানা দিয়ে তিনি জলে আঘাত করে বললেন, “এখন এলিয়ের ঈশ্বর সদাপ্রভু কোথায়?” তিনি জলে আঘাত করলে পর জল ডানে ও বাঁয়ে দু’ভাগ হয়ে গেল, আর তিনি পার হয়ে গেলেন। যিরীহোর যে শিষ্য-নবীরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা ইলীশায়কে দেখে বললেন, “এলিয়ের আত্মা ইলীশায়ের উপর ভর করেছেন।” তাঁরা ইলীশায়ের সংগে দেখা করতে গেলেন এবং তাঁর সামনে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে বললেন, “দেখুন, আমরা এখানে আপনার পঞ্চাশজন শক্তিশালী দাস রয়েছি; আমরা গিয়ে আপনার গুরুকে খুঁজে দেখি। সদাপ্রভুর আত্মা হয়তো তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোন পাহাড়ে কিম্বা কোন উপত্যকায় নামিয়ে রেখেছেন।” ইলীশায় বললেন, “না, যেয়ো না।” কিন্তু তাঁরা পীড়াপীড়ি করতে থাকলে তিনি লজ্জায় পড়ে বললেন, “আচ্ছা, যাও।” তখন সেই পঞ্চাশজন লোক এলিয়কে খুঁজতে গেলেন। সেই লোকেরা তিন দিন ধরে খোঁজ করেও তাঁকে পেলেন না। ইলীশায় তখন যিরীহোতে ছিলেন। তাঁরা ইলীশায়ের কাছে ফিরে আসলে পর তিনি তাঁদের বললেন, “আমি কি তোমাদের যেতে বারণ করি নি?” একদিন সেই শহরের লোকেরা ইলীশায়কে বলল, “হে আমাদের প্রভু, আপনি তো দেখতে পাচ্ছেন এই শহরের জায়গাটা চমৎকার, কিন্তু এর জল ভাল নয় আর জমির দরুন গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়।” ইলীশায় বললেন, “তোমরা আমার কাছে একটা নতুন পাত্র এনে তাতে কিছু লবণ রাখ।” তখন তারা তাঁর কাছে তা আনল। ইলীশায় তখন জলের ফোয়ারার কাছে গিয়ে তার মধ্যে সেই লবণ ফেলে দিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি এই জল ভাল করে দিয়েছি। এই জল আর কারও মৃত্যু ঘটাবে না এবং সন্তানও নষ্ট হবে না।’ ” ইলীশায়ের কথামত আজ পর্যন্ত সেই জল ভালই আছে। ইলীশায়কে ঠাট্টা করবার ফল ইলীশায় সেখান থেকে বৈথেলে গেলেন। পথে যাওয়ার সময় শহর থেকে অনেকগুলো ছেলে বের হয়ে এসে তাঁকে ঠাট্টা করে বলতে লাগল, “ও টাকপড়া, টাকপড়া, উপরে উঠে যা।” ইলীশায় ঘুরে তাদের দিকে চেয়ে দেখলেন এবং সদাপ্রভুর নামে তাদের অভিশাপ দিলেন। তখন বন থেকে দু’টা ভাল্লুকী বেরিয়ে এসে তাদের মধ্য থেকে বিয়াল্লিশজন ছেলেকে ছিঁড়ে ফেলল। এর পর তিনি কর্মিল পাহাড়ে গেলেন এবং সেখান থেকে শমরিয়াতে ফিরে গেলেন। যিহূদার রাজা যিহোশাফটের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় ইস্রায়েলের রাজা আহাবের ছেলে যোরাম রাজা হলেন। তিনি শমরিয়াতে থেকে বারো বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন, তবে তিনি তাঁর বাবা-মায়ের মত ছিলেন না। তাঁর বাবা বাল দেবতার পূজার জন্য যে পাথর দাঁড় করিয়েছিলেন তা তিনি দূর করে দিয়েছিলেন। কিন্তু নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন যোরামও তা করতে থাকলেন। তিনি তা থেকে ফিরলেন না। মোয়াবের রাজা মেশার অনেক ভেড়া ছিল। তিনি ইস্রায়েলের রাজাকে কর্‌ হিসাবে এক লক্ষ ভেড়ার বাচ্চা ও এক লক্ষ ভেড়ার লোম দিতেন। কিন্তু আহাবের মৃত্যুর পর মোয়াবের রাজা ইস্রায়েলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। কাজেই রাজা যোরাম তখন শমরিয়া থেকে বের হয়ে সমস্ত ইস্রায়েলীয় সৈন্য জড়ো করলেন। এছাড়া যিহূদার রাজা যিহোশাফটকেও তিনি এই খবর পাঠালেন, “মোয়াবের রাজা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আপনি কি আমার সংগে মোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাবেন?” উত্তরে তিনি বললেন, “আমি আপনার সংগে যাব। আমিও যা আপনিও তা, আমার লোক আপনারই লোক, আমার ঘোড়া আপনারই ঘোড়া।” যিহোশাফট এও জিজ্ঞাসা করলেন, “আমরা কোন্‌ পথে আক্রমণ করব?” উত্তরে যোরাম বললেন, “ইদোমের মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে।” তখন যিহূদার রাজা ও ইদোমের রাজার সংগে ইস্রায়েলের রাজা বের হয়ে পড়লেন। তাঁরা সাত দিন ধরে ঘুরপথে চললেন। তখন সৈন্যদলের জন্য কিম্বা তাদের সংগেকার পশুগুলোর জন্য কোন জল ছিল না। তা দেখে ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “হায়, হায়! সদাপ্রভু মোয়াবের হাতে তুলে দেবার জন্যই কি আমাদের এই তিন রাজাকে একসংগে ডেকেছেন?” যিহোশাফট বললেন, “এখানে কি সদাপ্রভুর কোন নবী নেই যাঁর মধ্য দিয়ে আমরা সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারি?” ইস্রায়েলের রাজার একজন কর্মচারী উত্তরে বলল, “শাফটের ছেলে ইলীশায় এখানে আছেন। তিনি এলিয়ের সেবাকারী ছিলেন।” যিহোশাফট বললেন, “সদাপ্রভুর বাক্য তাঁর কাছে আছে।” কাজেই ইস্রায়েলের রাজা, ইদোমের রাজা ও যিহোশাফট ইলীশায়ের কাছে গেলেন। ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে বললেন, “আপনার সংগে আমার সম্বন্ধ কি? আপনি আপনার বাবা অথবা মায়ের নবীদের কাছে যান।” উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “না, যাব না, কারণ মোয়াবের হাতে তুলে দেবার জন্য ঈশ্বরই আমাদের তিন রাজাকে ডেকে একত্র করেছেন।” ইলীশায় বললেন, “আমি যাঁর সেবা করি সেই সর্বশক্তিমান জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, যিহূদার রাজা যিহোশাফট যদি এখানে না থাকতেন তবে আমি আপনার দিকে চেয়েও দেখতাম না, খেয়ালও করতাম না। এখন বীণা বাজায় এমন একজন লোককে আমার কাছে নিয়ে আসুন।” লোকটি যখন বীণা বাজাচ্ছিল তখন সদাপ্রভুর শক্তি ইলীশায়ের উপর আসল। এটা সদাপ্রভুর কাছে সহজ কাজ। তা ছাড়া তিনি মোয়াব দেশটাও আপনাদের হাতে তুলে দেবেন। দেয়াল-ঘেরা প্রত্যেকটা শহর এবং প্রত্যেকটা বড় গ্রাম আপনারা ধ্বংস করে দেবেন। প্রত্যেকটা ভাল গাছ আপনারা কেটে ফেলবেন, জলের সমস্ত ফোয়ারাগুলো বন্ধ করে দেবেন এবং সব ভাল ভাল ক্ষেত পাথর দিয়ে নষ্ট করে দেবেন।” পরের দিন সকালবেলার উৎসর্গের সময় ইদোম দেশের দিক থেকে জল বয়ে এসে দেশটা জলে ভরে গেল। এর মধ্যে মোয়াবীয়েরা শুনেছিল যে, সেই তিনজন রাজা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন। কাজেই অস্ত্র ধরতে পারে এমন সব ছেলে-বুড়ো সবাইকে ডেকে এনে দেশের সীমানায় দাঁড় করানো হল। খুব সকালে যখন তারা ঘুম থেকে উঠল তখন সূর্য জলের উপর চক্‌মক্‌ করছিল। মোয়াবীয়দের কাছে সেই জল রক্তের মত লাল মনে হল। তারা বলল, “ঐ যে রক্ত! রাজারা যুদ্ধ করে নিশ্চয়ই একে অন্যকে মেরে ফেলেছেন। মোয়াবীয়েরা, চল, আমরা গিয়ে লুট করি।” কিন্তু যখন মোয়াবীয়েরা ইস্রায়েলের ছাউনির কাছে গেল তখন ইস্রায়েলীয়েরা বের হয়ে তাদের আক্রমণ করল আর মোয়াবীয়েরা তাদের সামনে থেকে পালিয়ে গেল। ইস্রায়েলীয়েরা মোয়াবীয়দের মারতে মারতে তাদের দেশে ঢুকে পড়ল। তারা শহরগুলো ধ্বংস করে ফেলল আর প্রত্যেকে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে সমস্ত ভাল ক্ষেতগুলো ঢেকে ফেলল। তারা জলের সমস্ত ফোয়ারাগুলো বন্ধ করে দিল এবং ভাল ভাল গাছপালা সব কেটে ফেলল। কেবল মাত্র কীর্‌-হরাসত শহরটা তারা ধ্বংস করতে পারে নি, সেইজন্য ফিংগা হাতে সৈন্যেরা সেটা ঘেরাও করে আক্রমণ করল। মোয়াবের রাজা যখন দেখলেন তিনি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন তখন সৈন্যদলের মধ্য দিয়ে ইদোমের রাজার কাছে যাবার জন্য তাঁর সংগে সাতশো তলোয়ারধারীকে নিলেন, কিন্তু যেতে পারলেন না। তখন তিনি তাঁর প্রথম ছেলে, যে তাঁর পরে রাজা হবে তাকে নিয়ে শহরের দেয়ালের উপরে বলি দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করলেন। ইস্রায়েলের উপর ভয়ংকর রাগ হল, তাই ইস্রায়েলীয়েরা সেখান থেকে চলে গিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে গেল। শিষ্য-নবীদের দলের একজনের স্ত্রী চিৎকার করে ইলীশায়কে বলল, “আপনার দাস আমার স্বামী মারা গেছেন আর আপনি জানেন যে, তিনি সদাপ্রভুকে ভক্তি করতেন। কিন্তু এখন আমার স্বামীর একজন পাওনাদার আমার দুই ছেলেকে তার দাস বানাবার জন্য নিয়ে যেতে এসেছে।” উত্তরে ইলীশায় তাকে বললেন, “কিভাবে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি? আমাকে বল তো তোমার ঘরে কি আছে?” স্ত্রীলোকটি বলল, “একটুখানি তেল ছাড়া আপনার দাসীর ঘরে আর কিছুই নেই।” ইলীশায় বললেন, “তুমি ঘুরে ঘুরে তোমার সমস্ত প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনেকগুলো খালি পাত্র চেয়ে আনবে, মাত্র অল্প কয়েকটা আনবে না। তারপর তুমি ও তোমার ছেলেরা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেবে। পরে তুমি ঐ সব পাত্রগুলোতে তেল ঢালবে আর একটা করে পাত্র ভর্তি হলে পর সেটা সরিয়ে রাখবে।” স্ত্রীলোকটি তখন তাঁর কাছ থেকে চলে গিয়ে ছেলেদের নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ছেলেরা তার কাছে পাত্র আনতে লাগল আর সে তেল ঢালতেই থাকল। সব পাত্র ভরে গেলে পর সে তার একজন ছেলেকে বলল, “আর একটা পাত্র নিয়ে এস।” উত্তরে ছেলেটি বলল, “আর একটাও পাত্র বাকী নেই।” তখন তেল পড়া বন্ধ হয়ে গেল। স্ত্রীলোকটি তখন ঈশ্বরের লোকের কাছে গিয়ে সব কথা বলল। তিনি বললেন, “তুমি গিয়ে তেল বিক্রি করে তোমার দেনা শোধ করে দাও। যা বাকী থাকবে তা দিয়ে তোমার ও তোমার ছেলেদের খাওয়া-পরা চলবে।” একদিন ইলীশায় শূনেমে গেলেন। সেখানকার একজন ধনী স্ত্রীলোক তাঁকে খাওয়া-দাওয়া করবার জন্য সাধাসাধি করেছিলেন। পরে যতবার তিনি সেই পথ দিয়ে যেতেন ততবারই সেই বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া করবার জন্য থামতেন। স্ত্রীলোকটি তাঁর স্বামীকে বললেন, “এই যে লোকটি প্রায়ই আমাদের এখানে আসেন আমি বুঝতে পেরেছি যে, তিনি ঈশ্বরের একজন পবিত্র লোক। চল, আমরা ছাদের উপরে একটা ছোট কামরা তৈরী করে তার মধ্যে তাঁর জন্য একটা খাট ও বিছানা, একটা টেবিল, একটা চেয়ার ও একটা বাতিদান রাখি। তাহলে তিনি আমাদের কাছে আসলে ওখানে থাকতে পারবেন।” একদিন ইলীশায় এসে সেই উপরের কামরায় গিয়ে শুয়ে রইলেন। তিনি তাঁর চাকর গেহসিকে বললেন, “তুমি ঐ শূনেমীয় স্ত্রীলোকটিকে ডাক।” সে তাঁকে ডাকলে পর তিনি এসে গেহসির সামনে দাঁড়ালেন। ইলীশায় তাঁর চাকরকে বললেন, “ওঁকে বল যে, তিনি আমাদের জন্য এত কষ্ট করেছেন, এখন আমরা তাঁর জন্য কি করতে পারি? আমরা কি তাঁর জন্য রাজা বা সেনাপতির কাছে কোন অনুরোধ করব?” উত্তরে স্ত্রীলোকটি বললেন, “আমি তো আমার নিজের লোকদের মধ্যে ভালই আছি।” ইলীশায় বললেন, “তবে তাঁর জন্য কি করা যাবে?” গেহসি বলল, “তাঁর কোন ছেলে নেই আর তাঁর স্বামীও বুড়ো হয়ে গেছেন।” পরে ইলীশায় বললেন, “তাঁকে ডাক।” সে তাঁকে ডাকলে পর তিনি এসে দরজার কাছে দাঁড়ালেন। ইলীশায় বললেন, “আগামী বছরের এই সময়ে আপনার কোলে একটা ছেলে থাকবে।” স্ত্রীলোকটি বললেন, “না, হে আমার প্রভু, হে ঈশ্বরের লোক, আপনার দাসীকে মিথ্যা আশা দেবেন না।” পরে স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী হলেন এবং ইলীশায় যেমন বলেছিলেন ঠিক সেইমতই পরের বছর একই সময়ে তিনি ছেলের মা হলেন। সেই চাকর তাকে তুলে নিয়ে তার মায়ের কাছে দিলে পর সে দুপুর পর্যন্ত মায়ের কোলে বসে রইল, তারপর মারা গেল। স্ত্রীলোকটি উপরে গিয়ে ছেলেটাকে ঈশ্বরের লোকের বিছানায় শুইয়ে দিলেন। তারপর তিনি দরজা বন্ধ করে বের হয়ে গেলেন। তিনি গিয়ে তাঁর স্বামীকে ডেকে বললেন, “তুমি এখনই একজন চাকর ও একটা গাধা আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। আমি তাড়াতাড়ি করে ঈশ্বরের লোকের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসব।” তাঁর স্বামী বললেন, “তাঁর কাছে আজকে যাবে কেন? আজকে তো অমাবস্যাও নয়, বিশ্রামবারও নয়।” তিনি বললেন, “তাতে ভাল হবে।” তারপর তিনি গাধার উপর গদি চাপিয়ে তাঁর চাকরকে বললেন, “গাধাটা জোরে চালাও, আমি না বললে আস্তে চালাবে না।” এইভাবে তিনি বের হয়ে পড়লেন এবং কর্মিল পাহাড়ে ঈশ্বরের লোকের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন। স্ত্রীলোকটি দূরে থাকতেই ঈশ্বরের লোক তাঁকে দেখে তাঁর চাকর গেহসিকে বললেন, “ঐ দেখ, সেই শূনেমীয় স্ত্রীলোকটি। তুমি দৌড়ে তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা কর যে, তিনি, তাঁর স্বামী ও তাঁর ছেলেটি ভাল আছে কি না।” স্ত্রীলোকটি বললেন, “সবাই ভাল আছে।” কিন্তু কর্মিল পাহাড়ে ঈশ্বরের লোকের কাছে পৌঁছে তিনি তাঁর পা জড়িয়ে ধরলেন। গেহসি তাঁকে সরিয়ে দেবার জন্য আসলে ঈশ্বরের লোক বললেন, “ওঁকে বাধা দিয়ো না। ওঁর মনে খুব কষ্ট, কিন্তু সদাপ্রভু আমার কাছ থেকে তা লুকিয়ে রেখেছেন, আমাকে বলেন নি।” স্ত্রীলোকটি বললেন, “হে আমার প্রভু, আমি কি আপনার কাছে একটা ছেলে চেয়েছিলাম? আমি কি আপনাকে বলি নি যে, আমাকে আপনি মিথ্যা আশা দেবেন না?” তখন ইলীশায় গেহসিকে বললেন, “তোমার কাপড় তোমার কোমর-বাঁধনিতে গুঁজে নাও আর আমার লাঠিটা হাতে নিয়ে ছুটে যাও। কারও সংগে দেখা হলে তাকে শুভেচ্ছা জানাবে না এবং কেউ তোমাকে শুভেচ্ছা জানালে তার উত্তরও দেবে না। আমার লাঠিটা ছেলেটির মুখের উপর রেখে দিয়ো।” কিন্তু ছেলেটির মা বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর ও আপনার প্রাণের দিব্য যে, আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না।” কাজেই ইলীশায় উঠে স্ত্রীলোকটির পিছনে পিছনে চললেন। গেহসি আগে আগে গিয়ে ছেলেটির মুখের উপর লাঠিটা রাখল কিন্তু কোন শব্দ বা কোন সাড়া পাওয়া গেল না। কাজেই গেহসি ইলীশায়ের সংগে দেখা করবার জন্য ফিরে গেল এবং তাঁকে বলল, “ছেলেটি জাগে নি।” ইলীশায় ঘরে গিয়ে দেখলেন তাঁরই বিছানার উপর মরা ছেলেটি শোয়ানো রয়েছে। তখন তিনি একা সেই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। তারপর তিনি বিছানার উপর উঠে ছেলেটির মুখের উপরে মুখ, চোখের উপরে চোখ এবং হাতের উপরে হাত রেখে শুলেন। তিনি যখন ছেলেটির উপর নিজে লম্বা হয়ে শুলেন তখন ছেলেটির গা গরম হয়ে উঠল। তারপর তিনি সরে এসে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে লাগলেন। তারপর আবার তিনি বিছানায় উঠে আর একবার ছেলেটির উপর লম্বা হয়ে শুলেন। এবার ছেলেটি সাতবার হাঁচি দিয়ে চোখ খুলল। তখন ইলীশায় গেহসিকে ডেকে বললেন, “শূনেমীয় স্ত্রীলোকটিকে ডাক।” গেহসি তা-ই করল। স্ত্রীলোকটি আসলে পর ইলীশায় বললেন, “আপনার ছেলেকে নিয়ে যান।” স্ত্রীলোকটি ঘরে ঢুকে তাঁর পায়ে পড়লেন এবং মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন। তারপর তাঁর ছেলেকে নিয়ে তিনি বের হয়ে গেলেন। ইলীশায় গিল্‌গলে ফিরে গেলেন। তখন সেই এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছিল। একদিন একদল শিষ্য-নবী তাঁর সংগে বসে ছিলেন। তখন তিনি তাঁর চাকরকে বললেন, “বড় হাঁড়িটা চড়িয়ে এদের জন্য কিছু তরকারি রান্না কর।” তখন শিষ্য-নবীদের মধ্যে একজন শাক তুলে আনবার জন্য ক্ষেতে গিয়ে বুনো শসার লতা দেখতে পেলেন। তিনি তা থেকে কিছু ফল তুলে কোঁচড় ভরলেন। তারপর ফিরে এসে সেগুলো কেটে তিনি তরকারির হাঁড়িতে দিলেন, কিন্তু সেগুলো কি তা কারও জানা ছিল না। সেই তরকারি লোকদের খেতে দেওয়ার জন্য ঢালা হল, কিন্তু তা খেতে আরম্ভ করে তাঁরা চিৎকার করে বলে উঠলেন, “হে ঈশ্বরের লোক, হাঁড়ির মধ্যে মৃত্যু!” তাঁরা তা খেতে পারলেন না। তখন ইলীশায় বললেন, “কিছু ময়দা নিয়ে এস।” তিনি সেই ময়দা হাঁড়ির মধ্যে দিয়ে বললেন, “এবার ওটা লোকদের খেতে দাও।” এতে ক্ষতি করবার মত কিছু হাঁড়ির মধ্যে রইল না। বাল্‌-শালিশা থেকে একজন লোক ঈশ্বরের লোকের জন্য প্রথমে কাটা ফসল থেকে কুড়িটা যবের রুটি সেঁকে নিয়ে আসল, আর তার সংগে নিয়ে আসল কিছু নতুন ফসল। ইলীশায় বললেন, “এগুলো লোকদের খেতে দাও।” তাঁর চাকর বলল, “একশো জন লোকের সামনে আমি কি করে এটা রাখব?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “তুমি লোকদের ওটাই খেতে দাও, কারণ সদাপ্রভু বলছেন, ‘ওরা খাবে আবার কিছু বাকীও থাকবে।’ ” সেই চাকর তখন তা নিয়ে লোকদের সামনে রাখল। সদাপ্রভু যা বলেছিলেন সেইমতই তারা খেল আবার কিছু বাকীও রইল। নামান ছিলেন অরামের রাজার সৈন্যদলের সেনাপতি। তাঁর মনিবের চোখে তিনি ছিলেন একজন মহান ও সম্মানিত লোক, কারণ তাঁরই মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু অরামকে জয়ী করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা, কিন্তু তাঁর গায়ে ছিল খারাপ চর্মরোগ। অরামীয় হানাদারেরা দলে দলে ইস্রায়েল দেশে যেত। একবার তারা একটা ছোট মেয়েকে বন্দী করে নিয়ে এসেছিল। সে নামানের স্ত্রীর দাসী হয়েছিল। একদিন মেয়েটি তার মনিবের স্ত্রীকে বলল, “আমার মনিব যদি কেবল একবার শমরিয়ার নবীর সংগে দেখা করতে পারতেন, তাহলে তিনি তাঁর চর্মরোগ ভাল করে দিতেন।” ইস্রায়েল থেকে আনা সেই মেয়েটি যা বলেছিল তা নামান গিয়ে তাঁর মনিবের কাছে বললেন। উত্তরে অরামের রাজা বললেন, “ঠিক আছে, তুমি যাও। ইস্রায়েলের রাজার কাছে আমি একটা চিঠি দেব।” কাজেই নামান তিনশো নব্বই কেজি রূপা, আটাত্তর কেজি সোনা আর দশ সেট কাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। যে চিঠিটা তিনি ইস্রায়েলের রাজার কাছে নিয়ে গেলেন তাতে লেখা ছিল, “আমি আমার সেনাপতি নামানকে এই চিঠি দিয়ে আপনার কাছে পাঠালাম যাতে আপনি তাঁকে তাঁর চর্মরোগ থেকে সুস্থ করেন।” ইস্রায়েলের রাজা সেই চিঠি পড়েই তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “আমি কি ঈশ্বর? আমি কি মেরে ফেলে আবার জীবন দিতে পারি? চর্মরোগ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য কেন এই লোকটি আমার কাছে একজনকে পাঠিয়েছে? দেখ, কিভাবে সে আমার সংগে ঝগড়া বাধাবার চেষ্টা করছে।” ঈশ্বরের লোক ইলীশায় যখন শুনলেন যে, ইস্রায়েলের রাজা কাপড় ছিঁড়েছেন তখন তিনি তাঁকে এই সংবাদ পাঠালেন, “কেন আপনি আপনার কাপড় ছিঁড়েছেন? লোকটিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। তাতে সে জানতে পারবে যে, ইস্রায়েলে একজন নবী আছে।” কাজেই নামান তাঁর সব রথ ও ঘোড়া নিয়ে ইলীশায়ের বাড়ীর দরজার কাছে গিয়ে থামলেন। ইলীশায় একজন লোক দিয়ে তাঁকে বলে পাঠালেন, “আপনি গিয়ে সাতবার যর্দন নদীতে স্নান করুন। তাতে আপনি সুস্থ ও শুচি হবেন।” কিন্তু নামান ভীষণ রাগ করে সেখান থেকে চলে গেলেন এবং বললেন, “আমি ভেবেছিলাম তিনি নিশ্চয়ই বের হয়ে আমার কাছে আসবেন এবং দাঁড়িয়ে তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডাকবেন আর চর্মরোগের জায়গার উপরে তাঁর হাত দুলিয়ে আমার চর্মরোগ ভাল করে দেবেন। দামেস্কের অবানা ও পর্পর নদী কি ইস্রায়েলের সমস্ত নদীর জলের চেয়ে ভাল নয়? সেখানে স্নান করে কি আমি শুচি হতে পারতাম না?” এই বলে তিনি রাগ করে ফিরে চললেন। নামানের দাসেরা তখন তাঁর কাছে গিয়ে বলল, “হুজুর, ঐ নবী যদি আপনাকে কোন মহৎ কাজ করতে বলতেন তাহলে কি আপনি তা করতেন না? তবে তিনি যখন আপনাকে স্নান করে শুচি হতে বলেছেন তা কি আপনার বেশী করে করা উচিৎ নয়?” তখন নামান ঈশ্বরের লোকের কথামত গিয়ে যর্দনে সাতবার ডুব দিলেন। তাতে তাঁর দেহ সুস্থ হল এবং ছোট ছেলের গায়ের চামড়ার মত তাঁর চামড়া সুন্দর হয়ে গেল। তখন নামান ও তাঁর সংগের সমস্ত লোকেরা ঈশ্বরের লোকের কাছে ফিরে গেলেন। নামান তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি এখন জানতে পারলাম যে, একমাত্র ইস্রায়েলের ঈশ্বর ছাড়া সারা দুনিয়ায় আর কোন ঈশ্বর নেই। এখন আপনি আপনার দাসের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করুন।” উত্তরে নবী বললেন, “আমি যাঁর সেবা করি সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, আমি একটা জিনিসও গ্রহণ করব না।” নামান জোর করলেও তিনি রাজী হলেন না। নামান বললেন, “আপনি যদি কিছু না-ই নেন তবে দয়া করে দু’টা গাধা বয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন মাটি আপনার দাসকে দিন, কারণ আপনার এই দাস সদাপ্রভু ছাড়া আর কখনও কোন দেবতার কাছে পোড়ানো ও অন্যান্য উৎসর্গ করবে না। কিন্তু এই একটা ব্যাপারে যেন সদাপ্রভু তাঁর দাস আমাকে ক্ষমা করেন। আমার মনিব যখন রিম্মোণ দেবতার মন্দিরে ঢুকে আমার সাহায্যে রিম্মোণের উদ্দেশে মাটিতে মাথা ঠেকান তখন আমাকেও সেখানে মাটিতে মাথা ঠেকাতে হয়। এই ব্যাপারে যেন সদাপ্রভু আমাকে ক্ষমা করেন।” এই বলে গেহসি নামানের পিছনে পিছনে দৌড়ে গেল। তাকে তাঁর দিকে দৌড়ে আসতে দেখে নামান তাঁর সংগে দেখা করবার জন্য রথ থেকে নামলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সব কিছু ঠিক আছে তো?” উত্তরে গেহসি বলল, “সবই ঠিক আছে। তবে আমার মনিব আপনাকে এই কথা বলবার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন যে, ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকা থেকে শিষ্য-নবীদের দু’জন যুবক এখনই তাঁর কাছে এসেছেন। তাই আপনি যেন দয়া করে তাদের জন্য ঊনচল্লিশ কেজি রূপা আর দুই সেট পোশাক দেন।” নামান বললেন, “ঊনচল্লিশ কেজি কেন? তুমি আটাত্তর কেজি নাও।” তিনি সেগুলো নেবার জন্য গেহসিকে সাধাসাধি করতে লাগলেন এবং আটাত্তর কেজি রূপা দু’টা থলিতে বেঁধে দিলেন ও দুই সেট কাপড় দিলেন। সেগুলো তিনি তাঁর দুই দাসের হাতে দিলেন আর তারা গেহসির আগে আগে সেগুলো বয়ে নিয়ে যেতে লাগল। দুর্গের পাহাড়ের কাছে এসে গেহসি সেই দাসদের কাছ থেকে সেগুলো নিয়ে ঘরের মধ্যে রাখল। তারপর সে তাদের বিদায় করে দিলে তারা চলে গেল। এর পরে সে ভিতরে গিয়ে তার মনিব ইলীশায়ের সামনে দাঁড়াল। ইলীশায় জিজ্ঞাসা করলেন, “গেহসি, তুমি কোথায় গিয়েছিলে?” গেহসি বলল, “আপনার দাস কোথাও যায় নি।” কিন্তু ইলীশায় তাকে বললেন, “ঐ লোকটি যখন তোমার সংগে দেখা করবার জন্য রথ থেকে নেমেছিল তখন আমার মন কি তোমার সংগে যায় নি? টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড়, জলপাইয়ের বাগান, আংগুর ক্ষেত, গরু-ছাগল-ভেড়া ও দাস-দাসী নেবার এটাই কি সময়? কাজেই নামানের চর্মরোগ তোমার ও তোমার বংশধরদের মধ্যে চিরকাল লেগে থাকবে।” তখন গেহসি ইলীশায়ের সামনে থেকে চলে গেল আর তার গা চর্মরোগে তুষারের মত হয়ে গেল। এক দিন শিষ্য-নবীরা ইলীশায়কে বললেন, “দেখুন, যে জায়গায় আমরা আপনার সংগে বসে আলোচনা করি সেই জায়গাটা আমাদের জন্য খুবই ছোট। আপনি অনুমতি দিলে আমরা যর্দন নদীর কাছে গিয়ে প্রত্যেকে একটা করে খুঁটি যোগাড় করে নিয়ে সেখানে আমাদের জন্য একটা থাকবার জায়গা তৈরী করব।” তিনি বললেন, “আচ্ছা, যাও।” তখন তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, “আপনিও আপনার দাসদের সংগে চলুন।” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “আচ্ছা, চল।” এই বলে তিনি তাঁদের সংগে গেলেন। তাঁরা যর্দনের কাছে গিয়ে গাছ কাটতে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে একজন যখন গাছ কাটছিলেন তখন তাঁর কুড়ালের লোহার ফলাটা জলের মধ্যে পড়ে গেল। তিনি চিৎকার করে বললেন, “হায়, হায়! হে আমার প্রভু, ওটা যে আমি ধার করে এনেছিলাম।” তখন ঈশ্বরের লোক জিজ্ঞাসা করলেন, “ওটা কোথায় পড়েছে?” তিনি জায়গাটা দেখিয়ে দিলে পর ইলীশায় একটা কাঠ কেটে নিয়ে সেখানে ছুঁড়ে ফেললেন এবং তাতে লোহার ফলাটা ভেসে উঠল। তখন তিনি বললেন, “ওটা তুলে নাও।” তাই লোকটি হাত বাড়িয়ে সেটা তুলে নিলেন। সেই সময় অরামের রাজা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। তিনি তাঁর সেনাপতিদের সংগে পরামর্শ করে বললেন, “অমুক অমুক জায়গায় আমি ছাউনি ফেলব।” তখন ঈশ্বরের লোক ইস্রায়েলের রাজাকে বলে পাঠালেন, “সাবধান, অমুক জায়গায় যাবেন না, কারণ অরামীয়েরা সেখানে যাচ্ছে।” এতে ইস্রায়েলের রাজা ঈশ্বরের লোকের নির্দেশ-করা জায়গাটায় লোক পাঠিয়ে লোকদের সাবধান করে দিলেন। এইভাবে রাজা বারবার নিজেকে রক্ষা করতেন। এতে অরামের রাজা ভীষণ রেগে গেলেন। তাঁর সেনাপতিদের ডেকে তিনি বললেন, “বল, আমাদের মধ্যে কে ইস্রায়েলের রাজার পক্ষে রয়েছে?” তাঁর সেনাপতিদের মধ্যে একজন বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাদের মধ্যে কেউই না; কিন্তু আপনি শোবার ঘরে যে কথা বলেন সেই কথা পর্যন্ত ইস্রায়েলের নবী ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজাকে বলে দেন।” তখন রাজা এই আদেশ দিলেন, “সে কোথায় আছে তোমরা গিয়ে তা খুঁজে বের কর যাতে লোক পাঠিয়ে আমি তাকে ধরে আনতে পারি।” পরে খবর আসল যে, তিনি দোথনে আছেন। রাজা তখন ঘোড়া, রথ ও একটা বড় সৈন্যদল সেখানে পাঠিয়ে দিলেন। তারা রাতের বেলায় গিয়ে শহরটা ঘেরাও করল। পরের দিন ভোরে ঈশ্বরের লোকের চাকর উঠে যখন বাইরে গেল তখন সে দেখতে পেল ঘোড়া ও রথ নিয়ে একদল সৈন্য শহর ঘেরাও করে ফেলেছে। সেই চাকর তখন বলল, “হায়, হায়! হে আমার প্রভু, আমরা কি করব?” উত্তরে নবী বললেন, “ভয় কোরো না। যারা আমাদের সংগে আছে তারা ওদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী।” তারপর ইলীশায় এই প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, তার চোখ খুলে দাও যেন সে দেখতে পায়।” তখন সদাপ্রভু সেই চাকরের চোখ খুলে দিলেন। সে চেয়ে দেখতে পেল ইলীশায়ের চারপাশে পাহাড়গুলো আগুনের রথ ও ঘোড়ায় ভরা। শত্রুরা যখন ইলীশায়ের দিকে নেমে আসছিল তখন তিনি সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলেন, “এই লোকগুলোকে তুমি আলোর ঝলকে অন্ধ করে দাও।” ইলীশায়ের প্রার্থনা অনুসারে সদাপ্রভু তাদের অন্ধ করে দিলেন। ইলীশায় তাদের বললেন, “এটা সেই রাস্তাও নয় এবং সেই শহরও নয়। তোমরা আমার পিছনে পিছনে এস; যে লোকের খোঁজ তোমরা করছ আমি তার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব।” এই বলে তিনি শমরিয়াতে তাদের নিয়ে গেলেন। শহরে ঢুকবার পর ইলীশায় বললেন, “হে সদাপ্রভু, এবার ওদের চোখ খুলে দাও যেন ওরা দেখতে পায়।” তখন সদাপ্রভু তাদের চোখ খুলে দিলেন আর তারা দেখতে পেল যে, তারা শমরিয়ার মধ্যে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। ইস্রায়েলের রাজা তাদের দেখে ইলীশায়কে বললেন, “পিতা, আমি কি ওদের মেরে ফেলব?” উত্তরে তিনি বললেন, “না, ওদের মারবেন না। আপনার নিজের তলোয়ার ও ধনুক দিয়ে আপনি যাদের বন্দী করেছেন তাদের কি মেরে ফেলবেন? ওদের আপনি খাবার ও জল দিন, যাতে তারা খেয়েদেয়ে তাদের মনিবের কাছে ফিরে যেতে পারে।” কাজেই রাজা তাদের জন্য একটা বড় ভোজের আয়োজন করলেন। তারা খাওয়া-দাওয়া শেষ করলে পর তিনি তাদের বিদায় করে দিলেন আর তারা তাদের মনিবের কাছে ফিরে গেল। এতে অরামের সৈন্যদল ইস্রায়েলের রাজ্যের মধ্যে লুটপাট করা বন্ধ করে দিল। এর কিছুকাল পরে অরামের রাজা বিন্‌হদদ তাঁর সমস্ত সৈন্যদল জড়ো করলেন এবং তাদের নিয়ে গিয়ে শমরিয়া ঘেরাও করলেন। তখন শহরে ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। এই ঘেরাও এতদিন ধরে চলল যে, একটা গাধার মাথা পর্যন্ত প্রায় এক কেজি রূপাতে এবং এক কেজির চার ভাগের এক ভাগ কবুতরের পায়খানা সাত গ্রাম রূপায় বিক্রি হতে লাগল। ইস্রায়েলের রাজা একদিন যখন শহরের দেয়ালের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে তাঁকে বলল, “হে আমার প্রভু মহারাজ, আমাকে সাহায্য করুন।” উত্তরে রাজা বললেন, “সদাপ্রভু যদি সাহায্য না করেন তবে আমি কোথা থেকে তোমাকে সাহায্য করব? খামার থেকে, না আংগুর মাড়াইয়ের যন্ত্র থেকে?” তারপর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে?” স্ত্রীলোকটি বলল, “এই স্ত্রীলোকটি আমাকে বলেছিল, ‘আজ তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও, কাল আমরা আমার ছেলেকে খাব।’ কাজেই আমরা আমার ছেলেকে রান্না করে খেয়েছি। পরের দিন আমি তাকে বললাম, ‘এবার তোমার ছেলেকে আমাদের খেতে দাও।’ কিন্তু সে তাকে লুকিয়ে রেখেছে।” স্ত্রীলোকটির কথা শুনে রাজা তাঁর পোশাক ছিঁড়লেন। তিনি তখনও দেয়ালের উপর দিয়ে হাঁটছিলেন। তাতে লোকেরা দেখতে পেল যে, তাঁর পোশাকের তলায় তিনি ছালার চট পরে আছেন। তিনি বললেন, “আজ যদি শাফটের ছেলে ইলীশায়ের মাথা তাঁর কাঁধের উপর থাকে তবে ঈশ্বর যেন আমাকে শাস্তি দেন, আর তা ভীষণভাবেই দেন!” ইলীশায় তখন তাঁর ঘরে বসে ছিলেন আর তাঁর সংগে ছিলেন বৃদ্ধ নেতারা। রাজা একজন লোককে ইলীশায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু লোকটা সেখানে পৌঁছাবার আগেই ইলীশায় বৃদ্ধ নেতাদের বললেন, “আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না সেই খুনী আমার মাথা কেটে ফেলবার জন্য কিভাবে একজন লোককে পাঠাচ্ছে? দেখুন, লোকটা আসলে পর আপনারা দরজাটা বন্ধ করে দেবেন এবং তার সামনে দরজাটা বন্ধই রাখবেন। তার পিছন পিছন কি তার মনিবের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে না?” ইলীশায় তখনও কথা বলছেন এমন সময় সেই লোকটি তাঁর কাছে আসল। তারপর রাজা এসে বললেন, “এই বিপদ সদাপ্রভুর কাছ থেকেই এসেছে। তবে সদাপ্রভুর জন্য আর আমি দেরি করব কেন?” ইলীশায় বললেন, “সদাপ্রভু কি বলছেন তা শুনুন। তিনি বলছেন, আগামী কাল শমরিয়ার ফটকে বারো গ্রাম রূপায় ছয় কেজি ময়দা ও বারো গ্রাম রূপায় বারো কেজি যব বিক্রি হবে।” রাজাকে যে কর্মচারী সাহায্য করছিল সে ঈশ্বরের লোককে বলল, “দেখুন, সদাপ্রভু যদি আকাশের দরজাও খুলে দেন তবুও কি এটা হতে পারে?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “তুমি নিজের চোখেই তা দেখতে পাবে, কিন্তু তার কিছুই তুমি খেতে পারবে না।” তখন শহর-ফটকে ঢুকবার পথে চারজন চর্মরোগী ছিল। তারা একে অন্যকে বলল, “আমরা এখানে থেকে কেন মরব? যদি বলি আমরা শহরে যাব তবে সেখানেও দুর্ভিক্ষ আর আমরা মারা যাব। যদি এখানে থাকি তবুও মরব। তার চেয়ে বরং চল, আমরা অরামীয়দের ছাউনিতে গিয়ে তাদের হাতে নিজেদের তুলে দিই। যদি তারা আমাদের বাঁচায় তবে তো আমরা বাঁচলাম, নইলে মরব আর কি।” এই বলে সন্ধ্যার আগে তারা অরামীয়দের ছাউনিতে গেল। ছাউনির ধারে গিয়ে দেখল সেখানে একজন লোকও নেই। সদাপ্রভু রথ, ঘোড়া, ও মস্ত বড় একদল সৈন্যের আওয়াজ অরামীয়দের শুনিয়েছিলেন। এতে অরামীয় সৈন্যেরা একে অন্যকে বলেছিল, “দেখ, আমাদের আক্রমণ করবার জন্য ইস্রায়েলের রাজা হিত্তীয় ও মিসরীয় রাজাদের টাকা দিয়েছে।” এই বলে তারা সন্ধ্যার আগেই তাদের তাম্বু, ঘোড়া, গাধা সব ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল। ছাউনি যেমন ছিল তেমনি রেখে তারা প্রাণের ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সেই চর্মরোগীরা ছাউনির ধারে পৌঁছে একটা তাম্বুর ভিতরে গেল। তারা খাওয়া-দাওয়া করে সোনা, রূপা আর কাপড়-চোপড় নিয়ে চলে গেল এবং সেগুলো লুকিয়ে রাখল। তারপর তারা ফিরে এসে আর একটা তাম্বুতে ঢুকে কতগুলো জিনিস নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখল। পরে তারা একে অন্যকে বলল, “আমাদের কাজটা কিন্তু ভাল হচ্ছে না। আজ একটা সুখবরের দিন আর আমরা কাউকে কিছু না বলে চুপ করে আছি। আমরা যদি সকাল পর্যন্ত দেরি করি তবে শাস্তি আমাদের উপর নেমে আসবে। চল, আমরা এখনই গিয়ে রাজবাড়ীতে খবরটা জানাই।” কাজেই তারা গিয়ে শহর-ফটকের পাহারাদারদের ডেকে বলল, “আমরা অরামীয়দের ছাউনিতে গিয়েছিলাম। সেখানে একটা লোকও নেই, কারও শব্দও নেই; কেবল ঘোড়া আর গাধাগুলো বাঁধা রয়েছে আর তাম্বুগুলো যেমন ছিল তেমনি রেখেই তারা চলে গেছে।” ফটকের পাহারাদারেরা খবরটা জানিয়ে দিল আর তা রাজবাড়ীর ভিতরেও জানানো হল। রাজা রাতের বেলা উঠে তাঁর কর্মচারীদের বললেন, “অরামীয়েরা কি করেছে তা আমি তোমাদের বলছি। আমরা যে না খেয়ে আছি তা তারা জানে; তাই তারা ছাউনি ছেড়ে মাঠের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে রয়েছে। তারা ভাবছে আমরা এতে নিশ্চয়ই বের হয়ে আসব আর তখন তারা আমাদের জীবিত অবস্থায় ধরবে এবং শহরে ঢুকবে।” তাঁর একজন কর্মচারী বলল, “শহরে যে কয়টা ঘোড়া বাকী আছে তার মধ্য থেকে পাঁচটা ঘোড়া নিয়ে কয়েকজন লোক বের হয়ে যাক। এখানকার সব ইস্রায়েলীয়দের মত তারা তো নিশ্চয়ই মারা যাবে, কাজেই কি হয়েছে তা জানবার জন্য আমরা তাদের পাঠিয়ে দিই।” তখন তারা ঘোড়া সুদ্ধ দু’টা রথ বেছে নিল, আর রাজা অরামীয় সৈন্যদের খোঁজে তাদের পাঠিয়ে দিলেন। রথ-চালকদের তিনি এই আদেশ দিলেন, “তোমরা গিয়ে জেনে এস কি হয়েছে।” তারা যর্দন নদী পর্যন্ত তাদের খোঁজ করল আর দেখল অরামীয়েরা তাড়াহুড়া করে পালিয়ে যাবার সময় সমস্ত রাস্তায় তাদের কাপড়-চোপড় ও সমস্ত জিনিসপত্র ফেলে দিয়ে গেছে। যাদের পাঠানো হয়েছিল তারা ফিরে গিয়ে রাজাকে সব খবর জানাল। তখন লোকেরা বের হয়ে গিয়ে অরামীয়দের ছাউনি লুট করল। তাতে সদাপ্রভুর কথামতই ছয় কেজি ময়দা বারো গ্রাম রূপায় এবং বারো কেজি যব বারো গ্রাম রূপায় বিক্রি হল। যে কর্মচারী রাজাকে সাহায্য করেছিল তার উপর তিনি ফটক দেখাশোনা করবার ভার দিলেন, কিন্তু লোকেরা এমনভাবে বেরিয়ে গেল যে, সে ফটকের পথে লোকদের পায়ের তলায় চাপা পড়ে মারা গেল। ঈশ্বরের লোক ইলীশায় তাঁর ঘরে রাজাকে যে কথা বলেছিলেন সেইভাবেই সে মারা গেল। তিনি রাজাকে যা বলেছিলেন সেইভাবেই ঘটনাটা ঘটল। তিনি বলেছিলেন, “আগামী কাল এই সময়ে শমরিয়ার ফটকে ছয় কেজি ময়দা বারো গ্রাম রূপায় এবং বারো কেজি যব বারো গ্রাম রূপায় বিক্রি হবে।” উত্তরে সেই কর্মচারী ঈশ্বরের লোককে বলেছিল, “দেখুন, সদাপ্রভু যদি আকাশের দরজাও খুলে দেন তবুও কি এটা হতে পারে?” ঈশ্বরের লোক উত্তরে বলেছিলেন, “তুমি নিজের চোখেই তা দেখতে পাবে, কিন্তু তার কিছুই তুমি খেতে পারবে না।” আর ঠিক তা-ই তার প্রতি ঘটল, কারণ ফটকের পথে সে লোকদের পায়ের তলায় চাপা পড়ে মারা গেল। ইলীশায় যে স্ত্রীলোকটির ছেলেকে জীবিত করে তুলেছিলেন তাঁকে তিনি বললেন, “আপনি আপনার পরিবার নিয়ে যেখানে পারেন সেখানে গিয়ে কিছুকাল থাকুন, কারণ সদাপ্রভু এই দেশে দুর্ভিক্ষ পাঠিয়ে দেবেন, আর তা সাত বছর ধরে চলবে।” স্ত্রীলোকটি ঈশ্বরের লোকের কথামতই কাজ করলেন। তিনি ও তাঁর পরিবার সেখান থেকে চলে গিয়ে সাত বছর পলেষ্টীয়দের দেশে বাস করলেন। সাত বছরের শেষে তিনি পলেষ্টীয়দের দেশ থেকে ফিরে এসে তাঁর বাড়ী ও জমি ফিরে পাওয়ার জন্য রাজার কাছে গেলেন। রাজা তখন ঈশ্বরের লোকের চাকর গেহসির সংগে কথা বলছিলেন। তিনি তাকে বলছিলেন, “ইলীশায় যে সব বড় বড় কাজ করেছেন তা আমাকে বল।” গেহসি যখন রাজাকে বলছিল কেমন করে ইলীশায় মৃতকে জীবিত করেছিলেন ঠিক সেই সময়ে যে স্ত্রীলোকটির ছেলেকে ইলীশায় মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন সেই স্ত্রীলোকটি রাজার কাছে তাঁর বাড়ী ও জমি ফিরে পাওয়ার জন্য মিনতি করতে আসলেন। গেহসি তখন বলল, “হে আমার প্রভু মহারাজ, ইনিই সেই স্ত্রীলোক এবং এ-ই তাঁর ছেলে যাঁকে ইলীশায় বাঁচিয়ে তুলেছিলেন।” রাজা তখন স্ত্রীলোকটিকে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে পর তিনি তাঁকে সব কথা বললেন। এতে রাজা সেই স্ত্রীলোকটির ব্যাপারে একজন কর্মচারীকে নিযুক্ত করে তাকে বললেন, “তার সব কিছু তাকে ফিরিয়ে দাও আর সে দেশ ছেড়ে যাবার পর থেকে আজ পর্যন্ত তার জমি থেকে যা আয় হয়েছে তাও ফিরিয়ে দাও।” এরপর ইলীশায় দামেস্কে চলে গেলেন। সেই সময় অরামের রাজা বিন্‌হদদ অসুস্থ ছিলেন। রাজাকে বলা হল, “ঈশ্বরের লোকটি এখানে এসেছেন।” রাজা তখন হসায়েলকে বললেন, “তুমি একটা উপহার নিয়ে ঈশ্বরের লোকের সংগে দেখা করতে যাও। তাঁর মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুর কাছ থেকে জেনে নাও যে, আমি এই অসুখ থেকে ভাল হয়ে উঠব কি না।” হসায়েল তখন উপহার হিসাবে দামেস্কের সবচেয়ে ভাল ভাল জিনিস চল্লিশটা উটের পিঠে বোঝাই করে নিয়ে ইলীশায়ের সংগে দেখা করতে গেলেন। তিনি ইলীশায়ের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে বললেন, “আপনার পুত্র অরামের রাজা বিন্‌হদদ এই কথা জিজ্ঞাসা করতে আমাকে পাঠিয়েছেন যে, তিনি এই অসুখ থেকে ভাল হবেন কি না।” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “তুমি গিয়ে তাঁকে বল যে, তিনি নিশ্চয়ই ভাল হয়ে উঠবেন, কিন্তু সদাপ্রভু আমার কাছে প্রকাশ করেছেন যে, আসলে তিনি মারা যাবেন।” এই বলে হসায়েল লজ্জা না পাওয়া পর্যন্ত ইলীশায় তার দিকে তাকিয়েই রইলেন। তারপর ঈশ্বরের লোক কাঁদতে শুরু করলেন। হসায়েল জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার প্রভু কেন কাঁদছেন?” উত্তরে ইলীশায় বললেন, “কারণ তুমি ইস্রায়েলীয়দের কি ক্ষতি করবে তা আমি জানি। তুমি তাদের দুর্গগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেবে, তলোয়ারের ঘায়ে তাদের যুবকদের মেরে ফেলবে, তাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মাটিতে আছাড় মারবে এবং তাদের গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের পেট চিরে দেবে।” তখন হসায়েল বললেন, “মাত্র একটা কুকুরের মত আপনার এই দাস কেমন করে এই সাহসের কাজ করবে?” ইলীশায় বললেন, “তুমি যে অরামের রাজা হবে তা সদাপ্রভুই আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন।” এর পর হসায়েল ইলীশায়ের কাছ থেকে তাঁর মনিবের কাছে ফিরে গেলেন। বিন্‌হদদ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ইলীশায় তোমাকে কি বলেছেন?” হসায়েল উত্তরে বললেন, “তিনি আমাকে বলেছেন আপনি নিশ্চয়ই ভাল হবেন।” কিন্তু তার পরের দিন হসায়েল একটা কম্বল জলে ভিজিয়ে নিয়ে রাজার মুখের উপর চাপা দিলেন, আর তাতে রাজা মারা গেলেন। তারপর হসায়েল বিন্‌হদদের জায়গায় রাজা হলেন। ইস্রায়েলের রাজা আহাবের ছেলে যোরামের রাজত্বের পঞ্চম বছরে যখন যিহোশাফট যিহূদার রাজা ছিলেন তখন যিহোশাফটের ছেলে যিহোরাম যিহূদায় রাজত্ব করতে শুরু করলেন। যিহোরাম বত্রিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং আট বছর ধরে যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। আহাবের বংশের লোকদের মতই তিনি ইস্রায়েলের রাজাদের পথে চলতেন, কারণ তিনি আহাবের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। তবুও সদাপ্রভু নিজের দাস দায়ূদের কথা মনে করে যিহূদাকে ধ্বংস করতে চাইলেন না, কারণ তিনি দায়ূদ ও তাঁর বংশধরদের চিরকাল একটা প্রদীপ দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যিহোরামের সময়ে ইদোম দেশের লোকেরা যিহূদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিজেদের জন্য একজন রাজা ঠিক করে নিয়েছিল। কাজেই যিহোরাম তাঁর সব রথ নিয়ে সায়ীরে গেলেন। ইদোমীয়েরা তাঁকে ও তাঁর রথের সেনাপতিদের ঘেরাও করল, কিন্তু তিনি রাতের বেলায় উঠে ঘেরাও ভেংগে বেরিয়ে গেলেন আর তাঁর সৈন্যেরা পালিয়ে বাড়ী চলে আসল। ইদোম আজও যিহূদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে আছে। একই সময়ে লিব্‌নাও বিদ্রোহ করেছিল। যিহোরামের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে যিহোরাম তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে দায়ূদ-শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে কবর দেওয়া হল। তাঁর ছেলে অহসিয় তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। ইস্রায়েলের রাজা আহাবের ছেলে যোরামের রাজত্বের বারো বছরের সময় যিহূদার রাজা যিহোরামের ছেলে অহসিয় রাজত্ব করতে শুরু করলেন। তিনি যখন রাজা হলেন তখন তাঁর বয়স ছিল বাইশ বছর এবং তিনি এক বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মা অথলিয়া ছিলেন ইস্রায়েলের রাজা অম্রির নাত্‌নী। অহসিয় আহাবের বংশের লোকদের মতই চলতেন এবং তাদের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন, কারণ বিয়ের মধ্য দিয়ে আহাবের পরিবারের সংগে তাঁর সম্বন্ধ হয়েছিল। ইলীশায় শিষ্য-নবীদের মধ্য থেকে একজনকে ডেকে বললেন, “তোমার কাপড় তোমার কোমর-বাঁধনিতে গুঁজে নাও এবং এই তেলের শিশিটা নিয়ে তুমি রামোৎ-গিলিয়দে যাও। সেখানে গিয়ে নিম্‌শির নাতি, অর্থাৎ যিহোশাফটের ছেলে যেহূর খোঁজ কর। তার কাছে গিয়ে তাকে তার সংগীদের কাছ থেকে সরিয়ে একটা ভিতরের কামরায় নিয়ে যাবে। তারপর সেই শিশিটা থেকে তার মাথায় তেল ঢেলে দিয়ে বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘ইস্রায়েলের রাজা হিসাবে আমি তোমাকে অভিষেক করলাম।’ তারপর দরজা খুলে দৌড় দেবে, দেরি করবে না।” এতে সেই যুবক নবী রামোৎ-গিলিয়দে গেলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি দেখলেন সেনাপতিরা এক জায়গায় বসে আছেন। তিনি বললেন, “হে সেনাপতি, আপনার জন্য একটা খবর নিয়ে এসেছি।” যেহূ জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাদের মধ্যে সেই খবর কার জন্য?” তিনি বললেন, “সেনাপতি, আপনারই জন্য।” এতে যেহূ উঠে ঘরের মধ্যে গেলেন। তখন সেই নবী যেহূর মাথায় সেই তেল ঢেলে দিয়ে বললেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘সদাপ্রভুর লোকদের উপরে, অর্থাৎ ইস্রায়েলের উপরে রাজা হিসাবে আমি তোমাকে অভিষেক করলাম। তোমার মনিব আহাবের বংশকে তুমি ধ্বংস করবে। ঈষেবল আমার দাসদের, অর্থাৎ নবীদের এবং সদাপ্রভুর অন্য সব দাসদের যে রক্তপাত করেছে তার প্রতিশোধ আমি নেব। আহাবের বংশের সবাই ধ্বংস হবে। দাস হোক বা স্বাধীন হোক, আহাবের বংশের প্রত্যেকটি পুরুষকে আমি মেরে ফেলব। আমি তার বংশকে করব নবাটের ছেলে যারবিয়ামের বংশের মত ও অহিয়ের ছেলে বাশার বংশের মত। কুকুরেরা ঈষেবলকে যিষ্রিয়েল এলাকায় খেয়ে ফেলবে, তাকে কেউ কবর দেবে না।’ ” এই কথা বলে সেই নবী দরজা খুলে দৌড়ে পালালেন। যেহূ বেরিয়ে যখন তাঁর সংগী সেনাপতিদের কাছে গেলেন তখন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সব কিছু ভাল তো? ঐ পাগলটা তোমার কাছে কেন এসেছিল?” উত্তরে যেহূ বললেন, “তোমরা তো লোকটিকে চেন এবং সে কি ধরনের কথা বলে তা-ও তোমাদের জানা আছে।” তাঁরা বললেন, “এই কথা ঠিক নয়, আমাদের খুলে বল।” তখন যেহূ বললেন, “সে আমাকে বলল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘ইস্রায়েলের রাজা হিসাবে আমি তোমাকে অভিষেক করছি।’ ” তখন সেই সেনাপতিরা তাড়াতাড়ি করে তাঁদের গায়ের কাপড় নিয়ে সিঁড়ির উপর যেহূর পায়ের নীচে পেতে দিলেন। তারপর শিংগা বাজিয়ে তাঁরা চিৎকার করে বললেন, “যেহূই রাজা।” তারপর যিহোশাফটের ছেলে, অর্থাৎ নিম্‌শির নাতি যেহূ যোরামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলেন। সেই সময় যোরাম ও সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা রামোৎ-গিলিয়দ রক্ষা করবার জন্য অরামের রাজা হসায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। কিন্তু অরামের রাজা হসায়েলের সংগে যুদ্ধ করবার সময় অরামীয়েরা যোরামের গায়ে যে আঘাত করেছিল তা থেকে সুস্থ হয়ে উঠবার জন্য তিনি যিষ্রিয়েলে ফিরে গিয়েছিলেন। যেহূ তাঁর সংগী সেনাপতিদের বললেন, “আপনারা যদি আমার পক্ষে থাকেন তবে দেখবেন খবরটা যিষ্রিয়েলে দেবার জন্য যেন কোন লোক শহর থেকে চুপি চুপি বেরিয়ে না যায়।” তারপর যেহূ তাঁর রথে চড়ে যিষ্রিয়েলে গেলেন, কারণ যোরাম সেখানে বিছানায় শুয়ে ছিলেন এবং যিহূদার রাজা অহসিয় সেখানে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। যেহূর সৈন্যদলকে আসতে দেখে যিষ্রিয়েলের দুর্গের উপর দাঁড়ানো পাহারাদার চিৎকার করে বলল, “আমি একদল সৈন্য আসতে দেখছি।” তখন যোরাম হুকুম দিলেন, “একজন ঘোড়সওয়ারকে তাদের কাছে পাঠিয়ে দাও। সে তাদের জিজ্ঞাসা করুক, ‘আপনাদের আসবার উদ্দেশ্য ভাল তো?’ ” সেই ঘোড়সওয়ারটি যেহূর সংগে দেখা করতে চলে গেল এবং তাঁকে বলল, “রাজা বলছেন, ‘আপনাদের আসবার উদ্দেশ্য ভাল তো?’ ” উত্তরে যেহূ বললেন, “আমার আসবার উদ্দেশ্য দিয়ে তোমার দরকার কি? তুমি আমার পিছনে পিছনে এস।” সেই পাহারাদার তখন খবর দিল, “সংবাদ নিয়ে লোকটি তাদের কাছে পৌঁছেছে, কিন্তু সে তো ফিরে আসছে না।” তখন রাজা দ্বিতীয় আর একজন ঘোড়সওয়ারকে পাঠালেন। সে সেই সৈন্যদলের কাছে গিয়ে বলল, “রাজা বলছেন, ‘আপনাদের আসবার উদ্দেশ্য ভাল তো?’ ” উত্তরে যেহূ বললেন, “আমার আসবার উদ্দেশ্য দিয়ে তোমার দরকার কি? তুমি আমার পিছনে পিছনে এস।” সেই পাহারদারটি খবর দিল, “সে তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছে, কিন্তু সে-ও তো ফিরে আসছে না। রথ চালানো দেখে মনে হচ্ছে নিম্‌শির নাতি যেহূ রথ চালাচ্ছে। সে পাগলের মতই রথ চালাচ্ছে।” তখন যোরাম হুকুম দিলেন, “আমার রথে ঘোড়া লাগাও।” ঘোড়া লাগানো হলে পর ইস্রায়েলের রাজা যোরাম ও যিহূদার রাজা অহসিয় নিজের নিজের রথে চড়ে যেহূর সংগে দেখা করবার জন্য বের হলেন। যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের জমিতে যেহূর সংগে তাঁদের দেখা হল। যোরাম যেহূকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “যেহূ, তোমার আসবার উদ্দেশ্য ভাল তো?” উত্তরে যেহূ বললেন, “আপনার মা ঈষেবলের প্রতিমাপূজা ও যাদুবিদ্যার কাজ যখন এত বেশী করে চলছে তখন আমার আসবার উদ্দেশ্য কেমন করে ভাল হতে পারে?” এই কথা শুনে যোরাম ঘুরে পালাবার সময় অহসিয়কে ডেকে বললেন, “অহসিয়, এ বিশ্বাসঘাতকতা।” তখন যেহূ সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের ধনুকে টান দিয়ে যোরামের দুই কাঁধের মাঝখানে তীর ছুঁড়লেন। তীর গিয়ে তাঁর হৃদপিণ্ডে বিঁধল এবং তিনি রথের মধ্যে পড়ে গেলেন। তখন যেহূ তাঁর সংগের সেনাপতি বিদ্‌করকে বললেন, “ওকে তুলে নিয়ে যিষ্রিয়েলীয় নাবোতের জমিতে ফেলে দাও। মনে করে দেখ, আমি আর তুমি তাঁর বাবা আহাবের পিছনে রথে করে যখন যাচ্ছিলাম তখন সদাপ্রভু আহাবের বিরুদ্ধে এই কথা বলেছিলেন, ‘আমি সদাপ্রভু বলছি, গতকাল আমি নাবোত ও তার ছেলেদের রক্ত দেখেছি, আর এই জমির উপরেই তোমার কাছ থেকে নিশ্চয়ই আমি তার প্রতিশোধ নেব।’ তাহলে তুমি এখন সদাপ্রভুর কথা অনুসারে ওকে তুলে নিয়ে ঐ জমিতে ফেলে দাও।” যা ঘটেছে তা দেখে যিহূদার রাজা অহসিয় বৈৎ-হাগ্‌গানের পথ ধরে পালিয়ে গেলেন। যেহূ তাঁর পিছনে তাড়া করে যেতে যেতে চিৎকার করে বললেন, “ওকেও মেরে ফেল।” তখন লোকেরা যিব্‌লিয়মের কাছে গূর নামে উঠবার পথে অহসিয়কে তাঁর রথের মধ্যে আঘাত করল, কিন্তু তিনি মগিদ্দোতে পালিয়ে গেলেন আর সেখানেই মারা গেলেন। তাঁর কর্মচারীরা তাঁকে রথে করে যিরূশালেমে নিয়ে গেল এবং দায়ূদ-শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে তাঁর জন্য ঠিক করা কবরে তাঁকে কবর দিল। আহাবের ছেলে যোরামের রাজত্বের এগারো বছরের সময় অহসিয় যিহূদার রাজা হয়েছিলেন। এর পর যেহূ যিষ্রিয়েলে গেলেন। ঈষেবল সেই কথা শুনে চোখে কাজল দিয়ে ও সুন্দর করে চুল বেঁধে জানলা দিয়ে চেয়ে দেখলেন। যেহূ যখন ফটক দিয়ে ঢুকছিলেন তখন ঈষেবল তাঁকে বললেন, “ওহে সিম্রির মত খুনী, নিজের মনিবের হত্যাকারী! তোমার আসবার উদ্দেশ্য কি ভাল?” যেহূ তখন উপরে জানলার দিকে চেয়ে বললেন, “আমার পক্ষে কে আছে? কে আছে?” তখন দুই-তিনজন খোজা উপর থেকে তাঁর দিকে চেয়ে দেখল। যেহূ বললেন, “ওকে নীচে ফেলে দাও।” তখন তারা ঈষেবলকে নীচে ফেলে দিল আর যেহূর রথের ঘোড়াগুলো তাঁকে পায়ে মাড়িয়ে গেল। তাতে তাঁর রক্ত ছিট্‌কে গিয়ে দেয়ালে আর ঘোড়ার গায়ে লাগল। তারপর যেহূ ভিতরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলেন। পরে তিনি বললেন, “তোমরা ঐ অভিশপ্ত স্ত্রীলোকটিকে কবর দেবার ব্যবস্থা কর, কারণ সে একজন রাজকন্যা ছিল।” কিন্তু লোকেরা যখন তাঁকে কবর দেবার জন্য বাইরে গেল তখন তাঁর মাথার খুলি, হাত ও পা ছাড়া আর কিছুই পেল না। এই কথা তারা ফিরে গিয়ে যেহূকে জানালে পর তিনি বললেন, “সদাপ্রভু নিজের দাস তিশ্‌বীয় এলিয়ের মধ্য দিয়ে ঠিক এই কথাই বলেছিলেন, ‘যিষ্রিয়েলের জমিতে কুকুরেরা ঈষেবলের মাংস খাবে। সেই জমির মাটিতে ঈষেবলের দেহ এমন গোবর-সারের মত পড়ে থাকবে যে, কেউ চিনতে পারবে না ওটা ঈষেবলের দেহ।’ ” শমরিয়াতে আহাবের সত্তরজন বংশধর ছিল। যেহূ চিঠি লিখে শমরিয়াতে যিষ্রিয়েলের শাসনকর্তাদের কাছে, বৃদ্ধ নেতাদের কাছে এবং আহাবের বংশধরদের রক্ষকদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি লিখেছিলেন, কিন্তু তাঁরা ভীষণ ভয় পেয়ে বললেন, “দু’জন রাজা যখন যেহূর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারলেন না তখন আমরা কি করে পারব?” কাজেই রাজবাড়ীর পরিচালক, শহরের শাসনকর্তা, বৃদ্ধ নেতারা এবং আহাবের বংশধরদের রক্ষকেরা যেহূকে এই কথা বলে পাঠালেন, “আমরা আপনার দাস। আপনি যা বলবেন আমরা তা-ই করব। আমরা কাউকেই রাজা করব না; আপনি যা ভাল মনে করেন তা-ই করুন।” তখন যেহূ তাদের কাছে এই বলে দ্বিতীয় চিঠি লিখলেন, “আপনারা যদি আমার পক্ষে থাকেন এবং আমার আদেশ পালন করতে চান তবে আপনাদের মনিবের বংশধরদের মাথাগুলো কেটে নিয়ে আগামী কাল এই সময়ে যিষ্রিয়েলে আমার কাছে চলে আসুন।” আহাবের সেই সত্তরজন বংশধর তখন শহরের প্রধান লোকদের কাছে ছিল। তাঁরা তাদের দেখাশোনা করতেন। যেহূর চিঠিটা পৌঁছাবার পর সেই লোকেরা সেই সত্তরজনের সবাইকে ধরে মেরে ফেললেন। তারপর টুকরিতে করে মাথাগুলো যিষ্রিয়েলে যেহূর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তখন একজন লোক এসে যেহূকে বলল, “ওরা তাদের মাথা নিয়ে এসেছে।” তখন যেহূ হুকুম দিলেন, “ওগুলো দু’টা গাদা করে শহর-ফটকে ঢুকবার পথে সকাল পর্যন্ত রেখে দাও।” পরের দিন সকালে যেহূ বাইরে গেলেন। তিনি সমস্ত লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “আপনাদের কোন দোষ নেই। আমিই আমার মনিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে মেরে ফেলেছি, কিন্তু এদের সবাইকে মারল কে? আপনারা জেনে রাখুন, আহাবের বংশের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর বলা একটা কথাও মিথ্যা হবে না। সদাপ্রভু তাঁর দাস এলিয়ের মধ্য দিয়ে যা করবার কথা বলেছিলেন তা করেছেন।” পরে যেহূ যিষ্রিয়েলে আহাবের বংশের বাকী লোকদের, তাঁর সমস্ত গণ্যমান্য লোকদের, তাঁর বিশেষ বন্ধুদের এবং তাঁর পুরোহিতদের মেরে ফেললেন। তাঁদের আর কেউ বেঁচে রইলেন না। তখন যেহূ হুকুম দিলেন, “ওদের জীবন্ত ধর।” লোকেরা তাদের জীবন্তই ধরল এবং সেখানকার কূয়ার কাছে তাদের মেরে ফেলল। তারা সংখ্যায় ছিল বিয়াল্লিশজন। তাদের মধ্যে একজনকেও তিনি বাঁচিয়ে রাখলেন না। সেখান থেকে চলে যাবার পর রেখবের ছেলে যিহোনাদবের সংগে যেহূর দেখা হল। তিনি যেহূর সংগে দেখা করতে আসছিলেন। যেহূ তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, “আমি যেমন আপনার পক্ষে আছি তেমনি আপনিও কি আমার পক্ষে আছেন?” উত্তরে যিহোনাদব বললেন, “হ্যাঁ, আছি।” যেহূ বললেন, “যদি তা-ই হয় তবে আপনার হাত বাড়িয়ে দিন।” যিহোনাদব তা-ই করলেন আর যেহূ তাঁকে রথে তুলে নিলেন। তারপর যেহূ বললেন, “আমার সংগে আসুন এবং সদাপ্রভুর জন্য আমার আগ্রহ কতখানি তা দেখুন।” এই বলে তিনি তাঁকে তাঁর রথে করে নিয়ে চললেন। যেহূ শমরিয়াতে এসে আহাবের বংশের বাদবাকী সব লোকদের মেরে ফেললেন। সদাপ্রভু এলিয়কে যেমন বলেছিলেন সেই অনুসারেই যেহূ তাদের ধ্বংস করলেন। তারপর যেহূ সমস্ত লোকদের জড়ো করে তাদের বললেন, “আহাব বাল দেবতার পূজা সামান্যই করেছেন, কিন্তু যেহূ তাঁর পূজা করবে অনেক বেশী। এখন বাল দেবতার সব নবী, পূজাকারী ও পুরোহিতদের আপনারা ডেকে আনুন। দেখবেন যেন কেউ বাদ না পড়ে, কারণ বাল দেবতার উদ্দেশে আমি একটা মস্ত বড় পশুবলির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি। এতে কেউ যদি না আসে তবে তাকে মেরে ফেলা হবে।” কিন্তু আসলে যেহূ বাল দেবতার পূজাকারীদের ধ্বংস করবার জন্যই এই ছলনা করছিলেন। যেহূ বললেন, “বাল দেবতার উদ্দেশে একটা সভা ডাকা হোক।” কাজেই সেই কথা লোকেরা ঘোষণা করে দিল। যেহূ তখন ইস্রায়েলের সব জায়গায় খবর পাঠালেন। তাতে বাল দেবতার সমস্ত পূজাকারীরা এসে হাজির হল, কেউই অনুপস্থিত রইল না। তারা বাল দেবতার মন্দিরে ঢুকলে পর এমন ভিড় হল যে, মন্দিরের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত লোকে ভরে গেল। তখন যেহূ পোশাক-রক্ষককে বললেন, “বাল দেবতার পূজাকারী সকলের জন্য পোশাক নিয়ে আসুন।” তাতে সে তাদের জন্য পোশাক বের করে আনল। তারপর যেহূ ও রেখবের ছেলে যিহোনাদব বাল দেবতার মন্দিরে ঢুকলেন। যেহূ বাল দেবতার পূজাকারীদের বললেন, “আপনারা ভাল করে খুঁজে দেখুন যাতে সদাপ্রভুর দাসদের মধ্যে কেউ এখানে আপনাদের মধ্যে না থাকে, শুধু বাল দেবতার পূজাকারীরাই থাকবে।” তখন তাঁরা পশুবলি ও পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে গেলেন। যেহূ আশিজন লোককে এই বলে সাবধান করে দিয়ে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন, “আমি তোমাদের হাতে যাদের ভার দিচ্ছি তাদের একজনকেও যদি কেউ পালিয়ে যেতে দেয় তবে পালিয়ে যাওয়া লোকের প্রাণের বদলে তার প্রাণ যাবে।” যেহূ পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান শেষ করবার সংগে সংগে পাহারাদার ও সেনাপতিদের হুকুম দিলেন, “তোমরা ভিতরে ঢুকে ওদের মেরে ফেল; একজনও যেন পালিয়ে যেতে না পারে।” তখন তারা তলোয়ার দিয়ে তাদের কেটে ফেলল। পাহারাদার ও সেনাপতিরা মৃতদেহগুলো মন্দিরের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ভিতরের ঘরে গেল। বাল দেবতার মন্দির থেকে পূজার পাথরগুলো তারা বের করে এনে পুড়িয়ে দিল। তারপর তারা বাল দেবতার পূজার পাথরটা চুরমার করে দিল এবং মন্দিরটা ভেংগে ফেলল। লোকেরা তখন থেকে আজ পর্যন্ত সেটাকে পায়খানা-ঘর হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। এইভাবে যেহূ ইস্রায়েলের মধ্যে বাল দেবতার পূজা বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন তা থেকে তিনি সরে আসেন নি। সেটা হল বৈথেল ও দানে সোনার বাছুরের পূজা করা। সদাপ্রভু যেহূকে বললেন, “আমার চোখে যা ন্যায্য তা করে তুমি ভাল করেছ এবং আহাবের বংশের প্রতি আমি যা করতে চেয়েছি তা-ও তুমি করেছ, সেইজন্য চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত তোমার বংশধরেরা ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসতে পারবে।” তবুও যেহূ সমস্ত অন্তর দিয়ে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আইন-কানুন মেনে চলবার দিকে সতর্ক হলেন না। যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন তা থেকে তিনি সরে আসলেন না। যেহূর অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে যেহূ তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে শমরিয়াতে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে যিহোয়াহস রাজা হলেন। যেহূ শমরিয়াতে আটাশ বছর ইস্রায়েলের উপর রাজত্ব করেছিলেন। যিহূদার রাজা অহসিয়ের মা অথলিয়া যখন দেখলেন যে, তাঁর ছেলে মারা গেছে তখন তিনি গোটা রাজবংশকে ধ্বংস করলেন। কিন্তু সব রাজপুত্রদের মেরে ফেলবার আগে রাজা যিহোরামের মেয়ে অহসিয়ের বোন যিহোশেবা অহসিয়ের ছেলে যোয়াশকে রাজপুত্রদের মধ্য থেকে চুরি করে নিয়ে আসলেন। অথলিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখবার জন্য যিহোশেবা যোয়াশ ও তাঁর ধাইমাকে একটা শোবার ঘরে রাখলেন। কাজেই যোয়াশ মারা পড়লেন না। তিনি তাঁর ধাইমার সংগে ছয় বছর সদাপ্রভুর ঘরে লুকানো অবস্থায় ছিলেন; তখন দেশে অথলিয়া রাজত্ব করছিলেন। সপ্তম বছরে পুরোহিত যিহোয়াদা রক্ষীদলের শত-সেনাপতিদের ও পাহারাদারদের শত-সেনাপতিদের ডেকে পাঠালেন এবং সদাপ্রভুর ঘরে তাঁদের নিজের কাছে আনালেন। তিনি তাঁদের সংগে একটা চুক্তি করলেন এবং সদাপ্রভুর ঘরে তাঁদের দিয়ে একটা শপথ করিয়ে নিয়ে তারপর রাজার ছেলেকে তাঁদের দেখালেন। তারপর তিনি তাঁদের আদেশ দিয়ে বললেন, “আপনাদের যা করতে হবে তা এই: আপনারা যাঁরা বিশ্রামবারে কাজ করতে যাবেন, আপনাদের তিন ভাগের এক ভাগ রাজবাড়ী পাহারা দেবেন, এক ভাগ সূর-ফটকে থাকবেন আর এক ভাগ পাহারাদারদের পিছনের ফটকে থাকবেন। এইভাবে আপনারা উপাসনা-ঘরটি পাহারা দেবেন। আপনাদের অন্য দু’টা দল যাঁরা বিশ্রামবারে ছুটি পাবেন তাঁরা সবাই উপাসনা-ঘরে রাজাকে পাহারা দেবেন। আপনাদের প্রত্যেককে নিজের নিজের অস্ত্র হাতে নিয়ে রাজার চারপাশ ঘিরে থাকতে হবে। যে কেউ আপনাদের কাছে আসবে তাকে মেরে ফেলতে হবে। রাজা যেখানেই যান না কেন আপনারা তাঁর কাছে কাছে থাকবেন।” পুরোহিত যিহোয়াদা শত-সেনাপতিদের যা আদেশ করলেন তাঁরা তা-ই করলেন। সেনাপতিরা প্রত্যেকে নিজের নিজের লোকদের নিয়ে, অর্থাৎ যারা বিশ্রামবারে কাজের পালা বদল করতে আসছিল এবং যারা কাজ থেকে ফিরছিল তাদের নিয়ে পুরোহিত যিহোয়াদার কাছে আসলেন। যিহোয়াদা তখন রাজা দায়ূদের যে সব বর্শা ও ঢাল সদাপ্রভুর ঘরে ছিল সেগুলো নিয়ে সেনাপতিদের হাতে দিলেন। রাজাকে রক্ষা করবার জন্য পাহারাদারেরা প্রত্যেকে অস্ত্র হাতে উপাসনা-ঘরের সামনে বেদীর কাছে দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিক পর্যন্ত দাঁড়াল। তখন যিহোয়াদা রাজার ছেলেকে বের করে এনে তাঁর মাথায় মুকুট পরিয়ে দিয়ে তাঁর হাতে ব্যবস্থার বইখানা দিলেন। তাঁরা তাঁকে রাজা হিসাবে অভিষেক করলেন এবং লোকেরা হাততালি দিয়ে চিৎকার করে বলল, “রাজা চিরজীবী হোন।” পাহারাদার ও লোকদের এই চিৎকার শুনে অথলিয়া সদাপ্রভুর ঘরে লোকদের কাছে গেলেন। তিনি চেয়ে দেখলেন নিয়ম অনুসারে রাজা থামের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। সেনাপতিরা ও তূরী বাদকেরা রাজার পাশে রয়েছে এবং দেশের সব লোক আনন্দ করছে ও তূরী বাজাচ্ছে। এ দেখে অথলিয়া তাঁর পোশাক ছিঁড়ে চিৎকার করে বললেন, “এ তো বিশ্বাসঘাতকতা! বিশ্বাসঘাতকতা!” তখন পুরোহিত যিহোয়াদা যাদের উপর সৈন্যদলের ভার ছিল সেই শত-সেনাপতিদের এই আদেশ দিলেন, “ওঁকে সৈন্যদের সারির মাঝখানে রেখে এখান থেকে বের করে নিয়ে যান। যে ওঁর পিছনে পিছনে আসবে তাকে মেরে ফেলবেন।” এর আগে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন যে, সদাপ্রভুর ঘরের মধ্যে অথলিয়াকে মেরে ফেলা উচিত হবে না। কাজেই অথলিয়াকে ধরা হল এবং ঘোড়া যেখান দিয়ে রাজবাড়ীর মাঠে ঢোকে তাঁকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর মেরে ফেলা হল। যিহোয়াদা তারপর সদাপ্রভু এবং রাজা ও লোকদের মধ্যে এই চুক্তি করলেন যে, তারা সদাপ্রভুর লোক হিসাবে চলবে। তিনি রাজা ও লোকদের মধ্যেও একটা চুক্তি করলেন। তারপর দেশের সব লোক বাল দেবতার মন্দিরে গিয়ে সেটা ভেংগে ফেলল। তারা সেখানকার বেদী ও মূর্তিগুলো ভেংগে টুকরা টুকরা করে ফেলল আর বাল দেবতার পুরোহিত মত্তনকে বেদীগুলোর সামনে মেরে ফেলল। পরে পুরোহিত যিহোয়াদা সদাপ্রভুর ঘরে পাহারাদার নিযুক্ত করলেন। তারপর তিনি শত-সেনাপতিদের, রক্ষীদের, বাকী পাহারাদারদের এবং দেশের সব লোকদের সংগে নিয়ে সদাপ্রভুর ঘর থেকে রাজাকে বের করে আনলেন। তাঁরা পাহারদারদের ফটকের মধ্য দিয়ে ঢুকে রাজবাড়ীতে গেলেন এবং রাজাকে রাজ-সিংহাসনে বসালেন। এতে দেশের সব লোক আনন্দ করল এবং শহরটা শান্ত হল। অথলিয়াকে রাজবাড়ীতে মেরে ফেলা হয়েছিল। যোয়াশ যখন রাজত্ব করতে শুরু করলেন তখন তাঁর বয়স ছিল সাত বছর। যেহূর রাজত্বের সপ্তম বছরে যোয়াশ রাজা হয়েছিলেন এবং তিনি যিরূশালেমে চল্লিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল সিবিয়া; তিনি ছিলেন বের্‌-শেবা শহরের মেয়ে। পুরোহিত যিহোয়াদা যতদিন যোয়াশের পরামর্শদাতা ছিলেন ততদিন যোয়াশ সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করেছিলেন। কিন্তু উপাসনার উঁচু স্থানগুলো ধ্বংস করা হয় নি; লোকেরা তখনও সেখানে পশু উৎসর্গ করত ও ধূপ জ্বালাত। যোয়াশ পুরোহিতদের বললেন, “সদাপ্রভুর ঘরে পবিত্র দান হিসাবে যত টাকা আনা হয় আপনারা সেগুলো নিয়ে জমা করুন। তা হল- লোক গণনা করবার সময় আনা টাকা, মানত-পূরণের জন্য আনা টাকা এবং উপাসনা-ঘরে নিজের ইচ্ছায় আনা টাকা। প্রত্যেক পুরোহিত যেন তাঁর লোকদের কাছ থেকে টাকা নেন এবং উপাসনা-ঘরের ভাংগা জায়গার মেরামতের কাজে তা ব্যবহার করেন।” কিন্তু যোয়াশের রাজত্বের তেইশ বছরের সময় দেখা গেল পুরোহিতেরা তখনও উপাসনা-ঘরের মেরামতের কাজ করেন নি। সেইজন্য রাজা যোয়াশ পুরোহিত যিহোয়াদা ও অন্যান্য পুরোহিতদের ডেকে পাঠালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা উপাসনা-ঘরের ভাংগা জায়গার মেরামত করছেন না কেন? আপনারা আপনাদের লোকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর নিজেদের কাছে রাখবেন না বরং উপাসনা-ঘরের মেরামতের কাজে তা দিয়ে দেবেন।” পুরোহিতেরা রাজী হলেন যে, তাঁরা লোকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর নিজেদের কাছে রাখবেন না এবং নিজেরা উপাসনা-ঘরের মেরামতের কাজও করবেন না। পুরোহিত যিহোয়াদা তখন একটা বাক্স নিয়ে তার ঢাকনিতে একটা ফুটা করলেন। তিনি সেটা বেদীর পাশে সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকবার জায়গার ডান দিকে রাখলেন। যে পুরোহিতেরা উপাসনা-ঘরে ঢুকবার দরজা পাহারা দিতেন তাঁরা সদাপ্রভুর ঘরে আনা সব টাকা সেই বাক্সে রাখতেন। এইভাবে যখন তাঁরা দেখতেন সেই বাক্সে অনেক টাকা জমা হয়েছে তখন রাজার লোক ও মহাপুরোহিত এসে সদাপ্রভুর ঘরে আনা টাকাগুলো গুণে থলিতে রাখতেন। কত টাকা হয়েছে তা ওজন করে দেখবার পর তাঁরা সেই টাকা সদাপ্রভুর ঘরের কাজ তদারকের জন্য নিযুক্ত করা লোকদের হাতে দিতেন। সেই টাকা দিয়ে তাঁরা সদাপ্রভুর ঘরের মেরামতকারী লোকদের, অর্থাৎ ছুতার মিস্ত্রি, ঘর তৈরী করবার মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি ও পাথর কাটবার মিস্ত্রিদের মজুরি দিতেন। এছাড়া সদাপ্রভুর ঘরের মেরামতের কাজের জন্য তাঁরা কাঠ ও সমান করে কাটা পাথর কিনতেন এবং সেই কাজের জন্য আর যা যা লাগত তার জন্য খরচ করতেন। উপাসনা-ঘরে যে টাকা আনা হত তা দিয়ে রূপার পেয়ালা, সল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা, বাটি, তূরী কিম্বা সদাপ্রভুর ঘরের সোনা-রূপার অন্য কোন পাত্র তৈরী করা হয় নি। তদারককারীরা সেই টাকা মিস্ত্রিদের দিতেন যাতে তারা উপাসনা-ঘর মেরামতের কাজে ব্যবহার করতে পারে। সেই তদারককারীদের কাছ থেকে হিসাব নেবার দরকার হত না, কারণ তাঁরা সম্পূর্ণ বিশ্বস্তভাবে কাজ করতেন। দোষ-উৎসর্গের ও পাপ-উৎসর্গের টাকা সদাপ্রভুর ঘরের বাক্সে রাখা হত না; সেগুলো হত পুরোহিতদের পাওনা। এই সময় অরামের রাজা হসায়েল গিয়ে গাৎ আক্রমণ করে তা অধিকার করে নিলেন। তারপর তিনি যিরূশালেম আক্রমণ করবার জন্য এগিয়ে গেলেন। তখন যিহূদার রাজা যোয়াশ তাঁর নিজের ও তাঁর পূর্বপুরুষদের, অর্থাৎ যিহূদার রাজা যিহোশাফট, যিহোরাম ও অহসিয়ের দেওয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা সমস্ত জিনিস অরামের রাজা হসায়েলের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এছাড়া সেই সংগে তিনি সদাপ্রভুর ঘরের ধনভাণ্ডারের ও রাজবাড়ীর সমস্ত সোনাও তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তাতে হসায়েল যিরূশালেম ছেড়ে চলে গেলেন। যোয়াশের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। তাঁর কর্মচারীরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সিল্লা যাবার পথে বৈৎ-মিল্লোতে তাঁকে মেরে ফেলল। যে কর্মচারীরা তাঁকে মেরে ফেলেছিল তারা হল শিমিয়তের ছেলে যোষাখর ও শোমরের ছেলে যিহোষাবদ। যোয়াশ মারা গেলে পর দায়ূদ-শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে অমৎসিয় রাজা হলেন। যিহূদার রাজা অহসিয়ের ছেলে যোয়াশের রাজত্বের তেইশ বছরের সময় যেহূর ছেলে যিহোয়াহস শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হয়ে সতেরো বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন এবং নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন তিনিও তা-ই করতেন; তা থেকে তিনি ফিরলেন না। সেইজন্য ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর ক্রোধ জ্বলে উঠল; আর তিনি অরামের রাজা হসায়েল ও তাঁর ছেলে বিন্‌হদদের হাতে বার বার তাদের তুলে দিলেন। এর পর যিহোয়াহস সদাপ্রভুর কাছে মিনতি করলেন এবং সদাপ্রভু তাঁর কথা শুনলেন, কারণ অরামের রাজা ভীষণভাবে ইস্রায়েলের উপর যে অত্যাচার করছিলেন তা তিনি দেখেছিলেন। তখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে একজন উদ্ধারকারী দিলেন। তাতে ইস্রায়েলীয়েরা অরামের হাত থেকে রেহাই পেল। তার ফলে তারা আগের মতই আবার শান্তিতে বাস করতে লাগল। কিন্তু যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন তারা তাঁর বংশের সেই সব পাপ থেকে সরে আসল না, তা করতেই থাকল। এছাড়া আশেরা-খুঁটিটা তখনও শমরিয়াতে রয়েই গেল। পঞ্চাশজন ঘোড়সওয়ার, দশটা রথ ও দশ হাজার পদাতিক সৈন্য ছাড়া যিহোয়াহসের সৈন্যদলে আর কেউ ছিল না, কারণ অরামের রাজা বাকী সবাইকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তিনি তাদের মাটির মতই পায়ে মাড়িয়েছিলেন। যিহোয়াহসের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে যিহোয়াহস তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে শমরিয়াতে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে যিহোয়াশ রাজা হলেন। যিহূদার রাজা যোয়াশের রাজত্বের সাঁইত্রিশ বছরের সময় যিহোয়াহসের ছেলে যিহোয়াশ শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি ষোল বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন এবং নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন যিহোয়াশ তা-ই করতে থাকলেন, তা থেকে ফিরলেন না। যিহোয়াশের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং যে শক্তি দিয়ে তিনি যিহূদার রাজা অমৎসিয়ের সংগে যুদ্ধ করেছিলেন সেই কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে যিহোয়াশ তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁর ছেলে যারবিয়াম তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজাদের সংগে যিহোয়াশকে কবর দেওয়া হয়েছিল। এর আগে ইলীশায় অসুখে পড়েছিলেন এবং সেই অসুখেই তিনি মারা গিয়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার আগে ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াশ তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন এবং কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, “হে আমার পিতা, আমার পিতা, রথ আর ঘোড়সওয়ারদের মত আপনি ইস্রায়েলের রক্ষাকারী।” “পূর্ব দিকের জানলাটা খুলে দিন।” তিনি খুললেন। তারপর ইলিশায় বললেন, “তীর ছুঁড়ুন।” যিহোয়াশ জানলা খুলে তীর ছুঁড়লেন। তখন ইলীশায় ঘোষণা করলেন, “এটা হল সদাপ্রভুর জয়লাভের তীর, অরামের উপরে জয়লাভের তীর। আপনি অফেকে অরামীয়দের হারিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেবেন।” তারপর ইলীশায় বললেন, “আপনি তীরগুলো হাতে নিন।” রাজা সেগুলো হাতে নিলে পর ইলীশায় বললেন, “মাটিতে আঘাত করুন।” রাজা তিনবার আঘাত করে থামলেন। তখন ঈশ্বরের লোক রাগ করে বললেন, “পাঁচ বা ছয়বার মাটিতে আঘাত করা আপনার উচিত ছিল; তাহলে আপনি অরামীয়দের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে পারতেন। কিন্তু এখন আপনি মাত্র তিনবার তাদের হারিয়ে দিতে পারবেন।” পরে ইলীশায় মারা গেলেন এবং তাঁকে কবর দেওয়া হল। প্রত্যেকবার বসন্তকালে মোয়াবীয় হানাদারেরা ইস্রায়েল দেশে ঢুকত। একবার ইস্রায়েলীয়েরা যখন একজনকে কবর দিচ্ছিল তখন হঠাৎ একদল হানাদারকে দেখে তারা মৃতদেহটা ইলীশায়ের কবরে ফেলে দিল। লোকটার মৃতদেহ ইলীশায়ের হাড়গুলোতে ছোঁওয়া লাগা মাত্রই বেঁচে উঠে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল। যিহোয়াহসের সমস্ত রাজত্বকাল ধরেই অরামের রাজা হসায়েল ইস্রায়েলের উপর অত্যাচার করেছিলেন। কিন্তু সদাপ্রভু অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন সেইজন্য তিনি ইস্রায়েলীয়দের উপর দয়া ও করুণা করলেন এবং তাদের দিকে মনোযোগ দিলেন। আজ পর্যন্তও তাদের ধ্বংস করে ফেলতে কিম্বা নিজের সামনে থেকে দূর করে দিতে তিনি চান নি। অরামের রাজা হসায়েল মারা গেলে পর তাঁর ছেলে বিন্‌হদদ তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। তখন যিহোয়াহসের ছেলে যিহোয়াশ সেই সব শহরগুলো আবার দখল করে নিলেন যেগুলো হসায়েলের ছেলে বিন্‌হদদ তাঁর বাবা যিহোয়াহসের কাছ থেকে যুদ্ধে জয় করে নিয়েছিলেন। যিহোয়াশ তিনবার বিন্‌হদদকে যুদ্ধে হারিয়ে দিয়ে ইস্রায়েলীয় শহরগুলো উদ্ধার করে নিয়েছিলেন। ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াহসের ছেলে যিহোয়াশের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে যিহূদার রাজা যোয়াশের ছেলে অমৎসিয় রাজত্ব করতে শুরু করলেন। রাজা হবার সময় তাঁর বয়স ছিল পঁচিশ বছর। তিনি যিরূশালেমে ঊনত্রিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল যিহোয়দ্দিন; তিনি ছিলেন যিরূশালেম শহরের মেয়ে। সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল অমৎসিয় তা-ই করতেন, তবে তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মত নয়। তিনি তাঁর বাবা যোয়াশের মতই সমস্ত কাজ করতেন। কিন্তু উপাসনার উঁচু স্থানগুলো তিনি ধ্বংস করেন নি; লোকেরা সেখানে পশু উৎসর্গ করতে ও ধূপ জ্বালাতে থাকল। রাজ্যটা তাঁর হাতের মুঠোয় আসলে পর যে কর্মচারীরা রাজাকে, অর্থাৎ তাঁর বাবাকে মেরে ফেলেছিল তাদের তিনি মেরে ফেললেন। কিন্তু মোশির আইন-কানুনের বইয়ে যা লেখা আছে সেইমত তিনি তাদের ছেলেদের মেরে ফেললেন না। সেই বইয়ে সদাপ্রভুর এই আদেশ লেখা ছিল, “ছেলেমেয়েদের পাপের জন্য বাবাকে কিম্বা বাবার পাপের জন্য ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলা চলবে না, কিন্তু প্রত্যেককেই তার নিজের পাপের জন্য মরতে হবে।” অমৎসিয় লবণ-উপত্যকায় দশ হাজার ইদোমীয়কে মেরে ফেললেন এবং যুদ্ধ করে সেলা দখল করে তার নাম রাখলেন যক্তেল; সেই নাম আজও আছে। তারপর তিনি যেহূর নাতি, অর্থাৎ যিহোয়াহসের ছেলে ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াশকে বলে পাঠালেন, “আসুন, আমরা যুদ্ধের জন্য মুখোমুখি হই।” কিন্তু ইস্রায়েলের রাজা উত্তরে যিহূদার রাজাকে বলে পাঠালেন, “লেবাননের এক শিয়ালকাঁটা লেবাননেরই এরস গাছের কাছে বলে পাঠাল, ‘আমার ছেলের সংগে আপনার মেয়ের বিয়ে দিন।’ তারপর লেবাননের একটা বুনো জন্তু এসে সেই শিয়ালকাঁটাকে পায়ে মাড়িয়ে দিল। ইদোমকে হারিয়ে দিয়ে সত্যিই আপনার অহংকার হয়েছে। জয়ের বড়াই করুন, তবে নিজের ঘরে থাকুন। কেন বিপদ ডেকে আনবেন আর তার সংগে ডেকে আনবেন নিজের ও যিহূদার ধ্বংস?” কিন্তু অমৎসিয় সেই কথায় কান দিলেন না। কাজেই ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াশ তাঁকে আক্রমণ করলেন। তিনি ও যিহূদার রাজা অমৎসিয় যিহূদার বৈৎ-শেমশে একে অন্যের মুখোমুখি হলেন। ইস্রায়েলের হাতে যিহূদা সম্পূর্ণভাবে হেরে গেল এবং প্রত্যেকে নিজের নিজের বাড়ীতে পালিয়ে গেল। ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াশ বৈৎ-শেমশে অহসিয়ের নাতি, অর্থাৎ যোয়াশের ছেলে যিহূদার রাজা অমৎসিয়কে বন্দী করলেন। তারপর যিহোয়াশ যিরূশালেমে গিয়ে সেখানকার দেয়ালের ইফ্রয়িম-ফটক থেকে কোণের ফটক পর্যন্ত প্রায় চারশো হাত লম্বা একটা অংশ ভেংগে দিলেন। সদাপ্রভুর ঘরে এবং রাজবাড়ীর ধনভাণ্ডারে যত সোনা, রূপা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিল তিনি তা সবই নিয়ে গেলেন। এছাড়া তিনি জামিন হিসাবে কতগুলো লোককে নিয়ে শমরিয়াতে ফিরে গেলেন। যিহোয়াশের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা, যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা এবং যিহূদার রাজা অমৎসিয়ের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে যিহোয়াশ তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজাদের সংগে কবর দেওয়া হল। তাঁর ছেলে যারবিয়াম তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াহসের ছেলে যিহোয়াশের মৃত্যুর পর যিহূদার রাজা যোয়াশের ছেলে অমৎসিয় আরও পনেরো বছর বেঁচে ছিলেন। অমৎসিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। যিরূশালেমে অমৎসিয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে পর তিনি লাখীশে পালিয়ে গেলেন, কিন্তু লোকেরা লাখীশে লোক পাঠিয়ে তাঁকে সেখানে মেরে ফেলল। তাঁর দেহটা ঘোড়ার পিঠে করে যিরূশালেমে ফিরিয়ে আনা হল এবং দায়ূদ-শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তারপর যিহূদার সমস্ত লোক অসরিয়কে তাঁর বাবা অমৎসিয়ের জায়গায় রাজা করল। তখন তাঁর বয়স ছিল ষোল বছর। অমৎসিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবার পরে অসরিয় এলৎ শহরটা আবার তৈরী করলেন এবং যিহূদার অধীনে আনলেন। যিহূদার রাজা যোয়াশের ছেলে অমৎসিয়ের রাজত্বের পনেরো বছরের সময় ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াশের ছেলে যারবিয়াম শমরিয়াতে রাজা হলেন এবং তিনি একচল্লিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন এবং নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন তিনি সেই সব পাপ করতেই থাকলেন। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর দাস গাৎ-হেফরের অমিত্তয়ের ছেলে নবী যোনার মধ্য দিয়ে যে কথা বলেছিলেন সেই কথা অনুসারে যারবিয়াম হমাৎ এলাকা থেকে অরাবার সমুদ্র পর্যন্ত আগে ইস্রায়েলের রাজ্যের যে সীমা ছিল তা আবার নিজের অধিকারে ফিরিয়ে এনেছিলেন। এর কারণ হল, সদাপ্রভু দেখেছিলেন ইস্রায়েলের স্বাধীন কিম্বা দাস সবাই ভীষণভাবে কষ্ট পাচ্ছে; কেউ তাদের সাহায্য করবার মত ছিল না। সদাপ্রভুর ইচ্ছা ছিল না যে, আকাশের নীচ থেকে ইস্রায়েলের নাম তিনি মুছে ফেলেন। সেইজন্য তিনি যিহোয়াশের ছেলে যারবিয়ামের মধ্য দিয়ে তাদের উদ্ধার করলেন। যারবিয়ামের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা, যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা এবং এক সময় যিহূদার অধিকারে থাকা দামেস্ক ও হমাৎ কিভাবে তিনি ইস্রায়েলের জন্য আবার অধিকার করে নিয়েছিলেন সেই কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে, অর্থাৎ ইস্রায়েলের রাজাদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে সখরিয় রাজা হলেন। ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের রাজত্বের সাতাশ বছরের সময় যিহূদার রাজা অমৎসিয়ের ছেলে অসরিয় রাজত্ব করতে শুরু করলেন। তিনি ষোল বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং যিরূশালেমে বাহান্ন বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল যিখলিয়া; তিনি ছিলেন যিরূশালেম শহরের মেয়ে। অসরিয় তাঁর বাবা অমৎসিয়ের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করতেন। কিন্তু উপাসনার উঁচু স্থানগুলো তিনি ধ্বংস করেন নি; লোকেরা সেখানে পশু উৎসর্গ করতে এবং ধূপ জ্বালাতে থাকল। পরে সদাপ্রভু রাজাকে আঘাত করলে পর তিনি মৃত্যু পর্যন্ত একটা খারাপ চর্মরোগে ভুগেছিলেন। তিনি আলাদা ঘরে বাস করতেন। রাজার ছেলে যোথম রাজবাড়ীর কর্তা হলেন এবং দেশের লোকদের শাসন করতে লাগলেন। অসরিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে অসরিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে দায়ূদ-শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে যোথম রাজা হলেন। যিহূদার রাজা অসরিয়ের রাজত্বের আটত্রিশ বছরের সময় যারবিয়ামের ছেলে সখরিয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হয়ে ছয় মাস রাজত্ব করেছিলেন। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন সখরিয় সেই সব পাপ করতে থাকলেন। সখরিয়ের বিরুদ্ধে যাবেশের ছেলে শল্লুম ষড়যন্ত্র করলেন ও লোকদের সামনেই তাঁকে আক্রমণ করে মেরে ফেললেন এবং তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। সখরিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। সদাপ্রভু যেহূকে যা বলেছিলেন, “তোমার বংশের চার পুরুষ পর্যন্ত ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসবে,” তা পূর্ণ হল। যিহূদার রাজা উষিয়ের, অর্থাৎ অসরিয়ের রাজত্বের ঊনচল্লিশ বছরের সময় যাবেশের ছেলে শল্লুম রাজা হলেন এবং শমরিয়াতে এক মাস রাজত্ব করেছিলেন। তারপর গাদির ছেলে মনহেম তির্সা থেকে শমরিয়াতে গিয়ে যাবেশের ছেলে শল্লুমকে আক্রমণ করে তাঁকে মেরে ফেললেন এবং তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। শল্লুমের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং তাঁর ষড়যন্ত্রের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে মনহেম তির্সা থেকে বের হয়ে তিপ্‌সহ শহর এবং সেখানকার সব বাসিন্দা ও তার আশেপাশের এলাকার সবাইকে আক্রমণ করলেন, কারণ তারা তাদের শহর-ফটক খুলে দিতে রাজী হয় নি। সেইজন্য তিনি তিপ্‌সহ ধ্বংস করলেন এবং সমস্ত গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের পেট চিরে দিলেন। যিহূদার রাজা অসরিয়ের রাজত্বের ঊনচল্লিশ বছরের সময় গাদির ছেলে মনহেম ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি শমরিয়াতে দশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। তাঁর গোটা রাজত্বকালে তিনি সেই সব পাপ করতে থাকলেন যা নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে করিয়েছিলেন। এর পর আসিরিয়ার রাজা পূল ইস্রায়েল আক্রমণ করলেন। তখন মনহেম পূলের সাহায্যে দেশে তাঁর রাজত্ব স্থির রাখবার জন্য তাঁকে ঊনচল্লিশ টন রূপা দিলেন। মনহেম এই টাকা ইস্রায়েলের লোকদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করলেন। আসিরিয়ার রাজাকে দেবার জন্য প্রত্যেক ধনী লোককে সাড়ে ছ’শো গ্রাম করে রূপা দিতে হল। ফলে আসিরিয়ার রাজা দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। মনহেমের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে মনহেম তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে পকহিয় রাজা হলেন। যিহূদার রাজা অসরিয়ের রাজত্বের পঞ্চাশ বছরের সময় মনহেমের ছেলে পকহিয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হয়ে দু’বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ পকহিয় তা-ই করতেন। নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন পকহিয় সেই সব পাপ করতে থাকলেন। রমলিয়ের ছেলে পেকহ নামে তাঁর একজন সেনাপতি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলেন। পেকহ গিলিয়দের পঞ্চাশজন লোককে সংগে নিয়ে শমরিয়ার রাজবাড়ীর দুর্গে পকহিয়, অর্গোব ও অরিয়িকে মেরে ফেললেন। পকহিয়কে মেরে ফেলে পেকহ তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। পকহিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। যিহূদার রাজা অসরিয়ের রাজত্বের বাহান্ন বছরের সময় রমলিয়ের ছেলে পেকহ শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি বিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। নবাটের ছেলে যারবিয়াম ইস্রায়েলকে দিয়ে যে সব পাপ করিয়েছিলেন পেকহ সেই সব পাপ করতে থাকলেন। ইস্রায়েলের রাজা পেকহের সময়ে আসিরিয়ার রাজা তিগ্লৎ-পিলেষর এসে ইয়োন, আবেল-বৈৎ-মাখা, যানোহ, কেদশ, হাৎসোর, গিলিয়দ, গালীল ও নপ্তালির সমস্ত এলাকা অধিকার করলেন আর লোকদের বন্দী করে আসিরিয়াতে নিয়ে গেলেন। পরে উষিয়ের ছেলে যোথমের রাজত্বের বিশ বছরের সময় এলার ছেলে হোশেয় রমলিয়ের ছেলে পেকহের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলেন এবং তাঁকে মেরে ফেলে তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। পেকহের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। রমলিয়ের ছেলে ইস্রায়েলের রাজা পেকহের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে যিহূদার রাজা উষিয়ের ছেলে যোথম রাজত্ব করতে শুরু করলেন। পঁচিশ বছর বয়সে তিনি রাজা হলেন এবং ষোল বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল যিরূশা; তিনি ছিলেন সাদোকের মেয়ে। তাঁর বাবা উষিয়ের মতই যোথম সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করতেন। কিন্তু উপাসনার উচুঁ স্থানগুলো তিনি ধ্বংস করেন নি। লোকেরা সেখানে পশু উৎসর্গ করতে ও ধূপ জ্বালাতে থাকল। যোথম সদাপ্রভুর ঘরের চারদিকের দেয়ালের উঁচু জায়গার ফটক মেরামত করেছিলেন। যোথমের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। সদাপ্রভু সেই সময় থেকেই অরামের রাজা রৎসীন ও রমলিয়ের ছেলে পেকহকে যিহূদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠাতে আরম্ভ করলেন। পরে যোথম তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের শহরে তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে কবর দেওয়া হল। এর পরে তাঁর ছেলে আহস তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। রমলিয়ের ছেলে পেকহের রাজত্বের সতেরো বছরের সময় যিহূদার রাজা যোথমের ছেলে আহস রাজত্ব করতে শুরু করলেন। তিনি বিশ বছর বয়সে রাজা হলেন এবং ষোল বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদ যেমন সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা করতেন আহস তেমন করতেন না। তিনি ইস্রায়েলের রাজাদের মতই চলতেন; এমন কি, সদাপ্রভু যে সব জাতিকে ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে দূর করে দিয়েছিলেন তাদের জঘন্য কাজের মতই তিনিও তাঁর ছেলেকে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করলেন। তিনি পূজার উঁচু স্থানগুলোতে, পাহাড়ের উপরে ও প্রত্যেকটি ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছের নীচে পশু উৎসর্গ করতেন ও ধূপ জ্বালাতেন। অরামের রাজা রৎসীন ও রমলিয়ের ছেলে ইস্রায়েলের রাজা পেকহ যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে আহস সুদ্ধ শহরটা ঘেরাও করলেন, কিন্তু আহসকে হারিয়ে দিতে পারলেন না। এই সময় অরামের রাজা রৎসীন এলৎ শহর থেকে যিহূদার লোকদের তাড়িয়ে দিয়ে সেটা আবার অরামের অধীনে নিয়ে আসলেন। তারপর ইদোমীয়েরা এলতে গিয়ে বাস করতে শুরু করল। এখনও তারা সেখানেই বাস করছে। পরে আহস আসিরিয়ার রাজা তিগ্লৎ-পিলেষরের কাছে এই কথা বলতে লোক পাঠিয়ে দিলেন, “আমি আপনার দাস ও আপনার পুত্র। আপনি এসে অরামের রাজা ও ইস্রায়েলের রাজার হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন। তারা আমাকে আক্রমণ করেছে।” আহস সদাপ্রভুর ঘর ও রাজবাড়ীর ভাণ্ডার থেকে সোনা ও রূপা নিয়ে উপহার হিসাবে আসিরিয়ার রাজার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আসিরিয়ার রাজা রাজী হয়ে দামেস্ক আক্রমণ করে তা দখল করে নিলেন। তিনি সেখানকার লোকদের বন্দী করে কীরে নিয়ে গেলেন এবং রৎসীনকে মেরে ফেললেন। তখন রাজা আহস দামেস্কে আসিরিয়ার রাজা তিগ্লৎ-পিলেষরের সংগে দেখা করতে গেলেন। তিনি সেখানকার বেদীটা দেখে তাঁর নকশা ও সেটা তৈরী করবার পুরো পরিকল্পনা পুরোহিত ঊরিয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। দামেস্ক থেকে রাজা আহসের পাঠানো সমস্ত পরিকল্পনা মতই পুরোহিত ঊরিয় একটা বেদী তৈরী করলেন এবং রাজা আহস ফিরে আসবার আগেই তা শেষ করলেন। দামেস্ক থেকে ফিরে এসে রাজা সেই বেদীটা দেখলেন এবং সেই বেদীর কাছে গিয়ে তার উপর উৎসর্গ করলেন। তিনি সেখানে তাঁর পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন এবং তাঁর যোগাযোগ-উৎসর্গের রক্তও ছিটিয়ে দিলেন। তিনি সদাপ্রভুর সামনে রাখা ব্রোঞ্জের বেদীটা সদাপ্রভুর ঘর ও নতুন বেদীর মাঝখান থেকে সরিয়ে এনে নতুন বেদীর উত্তর দিকে রাখলেন। রাজা আহস তারপর পুরোহিত ঊরিয়কে এই সব আদেশ দিলেন, “ঐ বড় বেদীটার উপর সকালবেলার পোড়ানো-উৎসর্গ ও বিকালবেলার শস্য-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবেন। এছাড়া তার উপর রাজার পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ এবং দেশের সব লোকদের পোড়ানো-উৎসর্গ ও তাদের শস্য-উৎসর্গ আর ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবেন। সমস্ত পোড়ানো-উৎসর্গ ও অন্যান্য পশু-উৎসর্গের রক্ত আপনি সেই বেদীর উপর ছিটিয়ে দেবেন। কিন্তু ঈশ্বরের নির্দেশ পাওয়ার জন্য আমি ঐ ব্রোঞ্জের বেদীটা ব্যবহার করব।” পুরোহিত ঊরিয় রাজা আহসের আদেশ মতই সব কাজ করলেন। রাজা আহস গামলা বসাবার ব্রোঞ্জের আসনগুলোর পাশের সব পাত খুলে ফেললেন এবং সেখান থেকে গামলাগুলো সরিয়ে ফেললেন। ব্রোঞ্জের গরুগুলোর উপর যে বিরাট পাত্রটা বসানো ছিল সেটা তিনি সরিয়ে নিয়ে একটা পাথরের ভিত্তির উপরে বসালেন। সদাপ্রভুর ঘরে বিশ্রামবারের উদ্দেশে যে চাঁদোয়া তৈরী করা হয়েছিল আসিরিয়ার রাজার ভয়ে আহস সেটা খুলে সরিয়ে রাখলেন এবং সদাপ্রভুর ঘরের বাইরের দিকে রাজার ঢুকবার জন্য যে বিশেষ পথ তৈরী করা হয়েছিল তাও সরিয়ে রাখলেন। আহসের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে আহস তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং দায়ূদ-শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে হিষ্কিয় রাজা হলেন। যিহূদার রাজা আহসের রাজত্বের বারো বছরের সময় এলার ছেলে হোশেয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হলেন। তিনি নয় বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন, তবে ইস্রায়েলের আগের রাজাদের মত নয়। আসিরিয়ার রাজা শল্‌মনেষর হোশেয়কে আক্রমণ করতে আসলেন। তার ফলে হোশেয় শল্‌মনেষরের অধীন-রাজা হলেন এবং তাঁকে কর্‌ দিতে লাগলেন। কিন্তু আসিরিয়ার রাজা জানতে পারলেন যে, হোশেয় একজন বিশ্বাসঘাতক, কারণ তিনি মিসরের সো রাজার কাছে দূত পাঠিয়েছিলেন এবং আসিরিয়ার রাজাকে বছরের পর বছর যে কর্‌ দিয়ে আসছিলেন তা আর দিচ্ছেন না। সেইজন্য শল্‌মনেষর হোশেয়কে ধরে জেলে দিলেন। আসিরিয়ার রাজা গোটা দেশটা আক্রমণ করে শমরিয়াতে গেলেন এবং তিন বছর ধরে সেটা ঘেরাও করে রাখলেন। হোশেয়ের রাজত্বের নয় বছরের সময় আসিরিয়ার রাজা শমরিয়া দখল করে ইস্রায়েলীয়দের বন্দী করে আসিরিয়াতে নিয়ে গেলেন। তাদের তিনি হলহে, হাবোর নদীর ধারে গোষণ এলাকায় এবং মাদীয়দের শহরগুলোতে বাস করতে দিলেন। ইস্রায়েলীয়েরা গোপনে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে অনেক খারাপ কাজ করত। তারা যে সব জায়গায় বাস করত- তা ছোট হোক বা বড় হোক- সেই সব জায়গায় নিজেদের জন্য পূজার উঁচু স্থান তৈরী করে নিয়েছিল। তারা প্রত্যেকটা উঁচু পাহাড়ের উপরে এবং ডালপালা ছড়ানো প্রত্যেকটা সবুজ গাছের নীচে পূজার পাথর ও আশেরা-খুঁটি স্থাপন করেছিল। যে সব জাতিকে সদাপ্রভু তাদের সামনে থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের মত করে তারাও প্রত্যেকটা পূজার উঁচু স্থানে ধূপ জ্বালাত। এছাড়া তারা আরও খারাপ কাজ করে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল। তারা মূর্তি পূজা করত, যদিও সদাপ্রভু তাদের তা করতে নিষেধ করেছিলেন। সদাপ্রভু তাঁর সমস্ত নবী ও দর্শকদের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েল ও যিহূদাকে এই বলে সাবধান করেছিলেন, “তোমরা তোমাদের মন্দ পথ থেকে ফেরো এবং সমস্ত আইন-কানুন যা আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের পালনের জন্য দিয়েছিলাম আর আমার দাসদের, অর্থাৎ নবীদের মধ্য দিয়ে তোমাদের জানিয়েছিলাম তোমরা সেই অনুসারে আমার সমস্ত আদেশ ও নিয়ম পালন কর।” কিন্তু তারা সেই কথায় কান দেয় নি। তাদের পূর্বপুরুষেরা যারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করত না, তাদের মতই তারা একগুঁয়েমি করত। তারা তার সব নিয়ম, তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য স্থাপন করা তার ব্যবস্থা এবং তাদের কাছে তাঁর দেওয়া সাবধান বাণী মানতে অস্বীকার করেছিল। তারা অসার মূর্তির পূজা করে নিজেরাও অসার হয়ে পড়েছিল। সদাপ্রভু যাদের মত চলতে ইস্রায়েলীয়দের নিষেধ করেছিলেন তারা তাদের চারপাশের সেই জাতিগুলোর মতই চলত। তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আদেশ ত্যাগ করে নিজেদের জন্য ছাঁচে ফেলে দু’টা বাছুরের মূর্তি এবং একটা আশেরা-খুঁটি তৈরী করে নিয়েছিল। তারা আকাশের তারাগুলোর পূজা করত এবং বাল দেবতার সেবা করত। নিজের ছেলেমেয়েদের তারা আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করত। তারা গোণাপড়ার ও লক্ষণ দেখে ভবিষ্যতের কথা বলবার অভ্যাস করত এবং সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ সেই সব কাজ করবার জন্য নিজেদের বিকিয়ে দিয়ে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল। কাজেই ইস্রায়েলের লোকদের উপর সদাপ্রভু ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর সামনে থেকে তাঁদের দূর করে দিলেন। বাকী ছিল কেবল যিহূদা-গোষ্ঠী, কিন্তু যিহূদা-গোষ্ঠীও তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ মত না চলে ইস্রায়েল যা করত তারাও তা-ই করতে লাগল। সেইজন্য সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলীয়দেরই বাতিল করে দিলেন। তিনি তাদের কষ্টে ফেললেন এবং লুটেরাদের হাতে তুলে দিলেন, আর শেষে নিজের সামনে থেকে তাদের দূর করে দিলেন। সদাপ্রভু দায়ূদের বংশ থেকে যখন ইস্রায়েলকে ছিঁড়ে নিয়ে আলাদা করে ফেলেছিলেন তখন তারা নবাটের ছেলে যারবিয়ামকে তাদের রাজা করেছিল। যারবিয়াম ইস্রায়েলকে সদাপ্রভুর পথে চলা থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের দিয়ে মহা পাপ করিয়েছিলেন। ইস্রায়েলের লোকেরা যারবিয়ামের সমস্ত পাপের পথে চলেছিল, তা থেকে ফিরে আসে নি। শেষে সদাপ্রভু তাঁর সমস্ত দাসদের, অর্থাৎ নবীদের মধ্য দিয়ে দেওয়া সাবধান বাণী অনুসারে তাঁর সামনে থেকে তাদের দূর করে দিলেন। এইজন্যই ইস্রায়েলের লোকদের তাদের নিজেদের দেশ থেকে বন্দী করে আসিরিয়া দেশে নিয়ে যাওয়া হল, আর আজও তারা সেখানে আছে। আসিরিয়ার রাজা ইস্রায়েলের লোকদের জায়গা পূরণ করবার জন্য বাবিল, কূথা, অব্বা, হমাৎ ও সফর্বয়িম থেকে লোক আনিয়ে শমরিয়ার শহর ও গ্রামগুলোতে বসিয়ে দিলেন। তারা সেই সব জায়গায় বাস করতে লাগল। সেখানে বাস করবার প্রথম দিকে তারা সদাপ্রভুর উপাসনা করত না, তাই তিনি তাদের মধ্যে সিংহ পাঠিয়ে দিলেন। সেগুলো তাদের কিছু লোককে মেরে ফেলল। তখন আসিরিয়ার রাজার কাছে এই খবর পাঠানো হল, “যে সমস্ত লোকদের আপনি বন্দী করে শমরিয়ায় বাস করবার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা জানে না সেই দেশের ঈশ্বরকে কিভাবে সন্তুষ্ট করতে হয়। তাই ঈশ্বর তাদের মধ্যে সিংহ পাঠিয়ে দিয়েছেন আর সেগুলো তাদের মেরে ফেলছে।” তখন আসিরিয়ার রাজা তাঁর লোকদের এই আদেশ দিলেন, “যে সব পুরোহিতদের আপনারা শমরিয়া থেকে বন্দী করে এনেছিলেন তাদের মধ্য থেকে একজনকে আপনারা সেখানে পাঠিয়ে দিন যাতে সে সেখানে গিয়ে বাস করে এবং সেই দেশের ঈশ্বরকে কিভাবে সন্তুষ্ট করতে হয় তা তাদের শিক্ষা দেয়।” তখন শমরিয়া থেকে নিয়ে যাওয়া পুরোহিতদের মধ্য থেকে একজন গিয়ে বৈথেলে বাস করতে লাগলেন এবং তিনিই তাদের শিক্ষা দিলেন কিভাবে সদাপ্রভুর উপাসনা করতে হয়। তবুও প্রত্যেক জাতির লোকেরা যে যে গ্রামে ও শহরে বাস করত সেখানে নিজের নিজের দেবতা তৈরী করে নিল এবং শমরিয়ার লোকদের তৈরী করা পূজার উঁচু স্থানগুলোর বিভিন্ন মন্দিরে সেগুলো রাখল। এইভাবে বাবিলের লোকেরা তৈরী করল সুক্কোৎ-বনোতের মূর্তি, কূথের লোকেরা করল নের্গলের মূর্তি, হমাতের লোকেরা করল অশীমার মূর্তি, অব্বীয়েরা করল নিভস ও তর্তকের মূর্তি আর সফর্বীয়েরা অদ্রম্মেলক ও অনম্মেলক নামে সফর্বয়িমের দেবতাদের উদ্দেশে তাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করল। তারা সদাপ্রভুর উপাসনা করত এবং পূজার উঁচু স্থানের মন্দিরগুলোতে পুরোহিতের কাজ করবার জন্য নিজেদের মধ্য থেকে লোক নিযুক্ত করল। তারা সদাপ্রভুর উপাসনা করত, কিন্তু সেই সংগে যে সব দেশ থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল সেই সব দেশের নিয়ম অনুসারে তারা নিজের নিজের দেবতারও পূজা করত। আজ পর্যন্ত তারা ঐ নিয়ম মেনে চলছে। তারা আসলে সদাপ্রভুর উপাসনা করে না, কারণ সদাপ্রভু যে যাকোবের নাম ইস্রায়েল রেখেছিলেন সেই যাকোবের সন্তানদের কাছে সদাপ্রভুর দেওয়া নিয়ম, নির্দেশ, আইন এবং আদেশ তারা মেনে চলে না। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের জন্য ব্যবস্থা স্থাপন করবার সময় তাদের এই আদেশ দিয়েছিলেন, “তোমরা কোন দেব-দেবতার পূজা করবে না কিম্বা তাদের কাছে মাথা নীচু করবে না এবং তাদের সেবা কিম্বা তাদের উদ্দেশে উৎসর্গ করবে না। কিন্তু সদাপ্রভু, যিনি হাত বাড়িয়ে মহাশক্তিতে মিসর থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন তোমরা তাঁরই উপাসনা করবে, তাঁর কাছেই মাথা নীচু করবে ও তাঁর উদ্দেশেই সব উৎসর্গ করবে। তিনি যে সব নিয়ম, নির্দেশ, আইন ও আদেশ তোমাদের জন্য লিখে দিয়েছিলেন তা যত্নের সংগে পালন করবে। তোমরা দেব-দেবতার পূজা করবে না। তোমাদের জন্য যে ব্যবস্থা আমি স্থাপন করেছি তা মনে রেখো; কোন দেব-দেবতার পূজা তোমরা করবে না, বরং তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই উপাসনা করবে। তোমাদের সব শত্রুদের হাত থেকে তিনিই তোমাদের উদ্ধার করবেন।” কিন্তু ঐ সব জাতিরা সেই কথায় কান না দিয়ে তাদের আগের অভ্যাস মতই চলতে লাগল। তারা সদাপ্রভুর উপাসনাও করত আবার তাদের দেব-দেবতার পূজাও করত। আজও তাদের ছেলেমেয়ে ও নাতিপুতিরা তাদের পূর্বপুরুষদের মতই চলছে। এলার ছেলে ইস্রায়েলের রাজা হোশেয়ের রাজত্বের তৃতীয় বছরে যিহূদার রাজা আহসের ছেলে হিষ্কিয় রাজত্ব করতে শুরু করলেন। তিনি পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং ঊনত্রিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল অবী তিনি ছিলেন সখরিয়ের মেয়ে। হিষ্কিয় তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করতেন। তিনি পূজার উঁচু স্থানগুলো ধ্বংস করলেন, পুজার পাথরগুলো চুরমার করলেন এবং আশেরা-খুঁটিগুলো কেটে ফেললেন। মোশির তৈরী ব্রোঞ্জের সাপটা তিনি ভেংগে টুকরা টুকরা করলেন, কারণ ইস্রায়েলীয়েরা সেই সময় পর্যন্ত সেই সাপের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাচ্ছিল। ব্রোঞ্জের সাপটার নাম ছিল নহুষ্টন। হিষ্কিয় ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করতেন। তাঁর আগে বা পরে যিহূদার রাজাদের মধ্যে তাঁর মত আর কেউ ছিলেন না। সদাপ্রভুকে তিনি আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন এবং সব সময় তাঁর পথেই চলতেন। সদাপ্রভু মোশিকে যে সব আদেশ দিয়েছিলেন তা তিনি পালন করতেন। সদাপ্রভু তাঁর সংগে সংগে থাকতেন। তিনি যে কোন কাজ করতেন তাতে সফল হতেন। আসিরিয়ার রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি তাঁর অধীনতা অস্বীকার করলেন। গাজা ও তার সব এলাকার মধ্যে যে সব জায়গায় পলেষ্টীয়েরা বাস করত তিনি তাদের আক্রমণ করে হারিয়ে দিলেন। রাজা হিষ্কিয়ের রাজত্বের চতুর্থ বছরে, অর্থাৎ এলার ছেলে ইস্রায়েলের রাজা হোশেয়ের রাজত্বের সপ্তম বছরে আসিরিয়ার রাজা শল্‌মনেষর শমরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে শহরটা ঘেরাও করে রাখলেন। তিন বছর ঘেরাও করে রাখবার পর হিষ্কিয়ের রাজত্বের ষষ্ঠ বছরে আর ইস্রায়েলের রাজা হোশেয়ের রাজত্বের নবম বছরে আসিরিয়েরা শমরিয়া দখল করে নিল। আসিরিয়ার রাজা ইস্রায়েলের লোকদের বন্দী করে আসিরিয়াতে নিয়ে গেলেন এবং হলহে, হাবোর নদীর ধারে গোষণ এলাকায় এবং মাদীয়দের শহরগুলোতে তাদের বাস করতে দিলেন। এই সব ঘটেছিল, কারণ তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাক্য তারা পালন করে নি, বরং তাঁর ব্যবস্থা, অর্থাৎ সদাপ্রভুর দাস মোশির সমস্ত আদেশ তারা অমান্য করেছিল। সেই সব আদেশের কথায় তারা কান দেয় নি এবং তা পালনও করে নি। রাজা হিষ্কিয়ের রাজত্বের চৌদ্দ বছরের সময় আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব যিহূদার সমস্ত দেয়াল-ঘেরা শহরগুলো আক্রমণ করে সেগুলো দখল করে নিলেন। তখন যিহূদার রাজা হিষ্কিয় লাখীশে আসিরিয়ার রাজাকে এই কথা বলে পাঠালেন, “আমি অন্যায় করেছি। আপনি ফিরে যান। আপনি আমার কাছে যা দাবি করবেন আমি তা-ই দেব।” এতে আসিরিয়ার রাজা যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের কাছ থেকে প্রায় বারো টন রূপা ও এক টনের কিছু বেশী সোনা দাবি করলেন। কাজেই হিষ্কিয় সদাপ্রভুর ঘরে ও রাজবাড়ীর ভাণ্ডারগুলোতে যত রূপা ছিল সবই তাঁকে দিলেন। যিহূদার রাজা হিষ্কিয় সদাপ্রভুর ঘরের দরজা ও দরজার চৌকাঠ যে সোনা দিয়ে মুড়িয়েছিলেন এই সময় তিনি তা খুলে নিয়ে আসিরিয়ার রাজাকে দিলেন। আসিরিয়ার রাজা লাখীশ থেকে তর্তনকে, রব্‌সারীসকে ও রব্‌শাকিকে মস্ত বড় এক দল সৈন্য দিয়ে যিরূশালেমে রাজা হিষ্কিয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা যিরূশালেমে এসে ধোপার মাঠের রাস্তার ধারে উঁচু জায়গার পুকুরের সংগে লাগানো জলের নালার কাছে থামলেন। তাঁরা রাজাকে ডাকলে পর রাজবাড়ীর পরিচালক হিল্কিয়ের ছেলে ইলিয়াকীম, রাজার লেখক শিব্‌ন এবং ইতিহাস লেখক আসফের ছেলে যোয়াহ বের হয়ে তাঁদের কাছে গেলেন। তখন রব্‌শাকি তাঁদের বললেন, “আপনারা হিষ্কিয়কে এই কথা বলুন যে, সেই মহান রাজা, অর্থাৎ আসিরিয়ার রাজা বলছেন, ‘তুমি কিসের উপর নির্ভর করছ? তুমি বলছ তোমার যুদ্ধ করবার বুদ্ধি ও শক্তি আছে, কিন্তু ওগুলো তোমার ফাঁকা বুলি। বল দেখি, তুমি কার উপর নির্ভর করে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছ? তুমি তো নির্ভর করছ সেই থেঁৎলে যাওয়া নল, অর্থাৎ মিসরের উপর। যে সেই নলের উপর নির্ভর করবে তা তার হাত ফুটা করে দেবে। মিসরের রাজা ফরৌণের উপর যারা নির্ভর করে তাদের প্রতি সে তা-ই করে।’ কিন্তু আপনারা যদি আমাকে বলেন যে, আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর করছেন, তাহলে তিনি কি সেই ঈশ্বর নন যাঁর পূজার উঁচু স্থান ও বেদীগুলো হিষ্কিয় ধ্বংস করেছে এবং যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের বলেছে যিরূশালেমের এই বেদীর সামনে তাদের উপাসনা করতে হবে? “আপনারা আমার হয়ে আপনাদের রাজাকে আরও বলুন, ‘আপনি যদি পারেন তবে আমার মনিব আসিরিয়ার রাজার সংগে এই বাজি ধরুন যে, আমি আপনাকে দুই হাজার ঘোড়া দেব যদি আপনি তাতে চড়বার জন্য লোক দিতে পারেন। যদি তা-ই না পারেন তবে আমার মনিবের কর্মচারীদের মধ্যে সব চেয়ে যে ছোট তাকেই বা আপনি কেমন করে বাধা দেবেন, যদিও আপনি মিসরের রথ আর ঘোড়সওয়ারের উপর নির্ভর করছেন? তা ছাড়া আমি কি সদাপ্রভুর কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই এই জায়গা আক্রমণ ও ধ্বংস করতে এসেছি? এই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তা ধ্বংস করে ফেলতে সদাপ্রভু নিজেই আমাকে বলেছেন।’ ” তখন হিল্কিয়ের ছেলে ইলীয়াকীম, শিব্‌ন ও যোয়াহ রব্‌শাকিকে বললেন, “আপনার দাসদের কাছে আপনি দয়া করে অরামীয় ভাষায় কথা বলুন, কারণ আমরা তা বুঝতে পারি। দেয়ালের উপরকার লোকদের সামনে আপনি আমাদের সংগে ইব্রীয় ভাষায় কথা বলবেন না।” কিন্তু রব্‌শাকি উত্তরে বললেন, “আমার মনিব কি কেবল আপনাদের মনিব ও আপনাদের কাছে এই সব কথা বলতে আমাকে পাঠিয়েছেন? দেয়ালের উপরে বসা ঐ সব লোকেরা, যাদের আপনাদেরই মত নিজের নিজের পায়খানা ও প্রস্রাব খেতে হবে তাদের কাছেও কি বলে পাঠান নি?” তারপর রব্‌শাকি দাঁড়িয়ে জোরে জোরে ইব্রীয় ভাষায় বললেন, “তোমরা মহান রাজার, অর্থাৎ আসিরিয়ার রাজার কথা শোন। রাজা বলছেন যে, হিষ্কিয় যেন তোমাদের না ঠকায়। সে তাঁর হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না। হিষ্কিয় যেন এই কথা বলে সদাপ্রভুর উপর তোমাদের বিশ্বাস না জন্মায় যে, ‘সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আমাদের উদ্ধার করবেন; এই শহর আসিরিয়ার রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে না।’ “তোমরা হিষ্কিয়ের কথা শুনো না। আসিরিয়ার রাজা বলছেন, ‘তোমরা আমার সংগে সন্ধি কর এবং বের হয়ে আমার কাছে এস। তাহলে তোমরা প্রত্যেকে তার নিজের আংগুর ও ডুমুর গাছ থেকে ফল আর নিজের কূয়া থেকে জল খেতে পারবে। তারপর আমি এসে তোমাদের নিজের দেশের মত আর এক দেশে তোমাদের নিয়ে যাব। সেই দেশ হল শস্য ও নতুন আংগুর-রসের দেশ, রুটি ও আংগুর ক্ষেতের দেশ, জলপাই ও মধুর দেশ। তোমরা যদি আমার কথামত কাজ কর তাহলে তোমরা মরবে না বরং বাঁচবে। “ ॥ঃযং ‘হিষ্কিয় যখন বলে যে, সদাপ্রভু তোমাদের রক্ষা করবেন, তখন তাঁর কথা তোমরা শুনো না, কারণ সেই কথা বলে সে তোমাদের বিপথে চালাচ্ছে। অন্যান্য জাতির কোন দেবতা কি আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে তার দেশ রক্ষা করতে পেরেছে? হমাৎ ও অর্পদের দেবতারা কোথায়? সফর্বয়িম, হেনা ও ইব্বার দেবতারা কোথায়? তারা কি আমার হাত থেকে শমরিয়াকে রক্ষা করতে পেরেছে? এই সব দেশের সমস্ত দেব-দেবতাদের মধ্যে কে আমার হাত থেকে নিজের দেশকে রক্ষা করেছে? তাহলে সদাপ্রভু কি করে আমার হাত থেকে যিরূশালেমকে রক্ষা করবেন?’ ” কিন্তু লোকেরা চুপ করে রইল, কোন উত্তর দিল না, কারণ রাজা হিষ্কিয় কোন উত্তর দিতে তাদের নিষেধ করেছিলেন। এর পর রাজবাড়ীর পরিচালক হিল্কিয়ের ছেলে ইলীয়াকীম, রাজার লেখক শিব্‌ন এবং ইতিহাস লেখক আসফের ছেলে যোয়াহ তাঁদের কাপড় ছিঁড়ে হিষ্কিয়ের কাছে গেলেন এবং রব্‌শাকির সমস্ত কথা তাঁকে জানালেন। রাজা হিষ্কিয় এই কথা শুনে নিজের কাপড় ছিঁড়লেন এবং ছালার চট পরে সদাপ্রভুর ঘরে গেলেন। তিনি রাজবাড়ীর পরিচালক ইলিয়াকীম, রাজার লেখক শিব্‌ন ও পুরোহিত-নেতাদের চট পরা অবস্থায় আমোসের ছেলে নবী যিশাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা যিশাইয়কে বললেন, “হিষ্কিয় বলছেন যে, আজকের দিনটা হল কষ্টের, শাস্তি পাওয়ার ও অসম্মানের দিন। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যেন সন্তানেরা জন্ম হবার মুখে এসেছে কিন্তু জন্ম দেবার শক্তি নেই। আসিরিয়ার রাজা জীবন্ত ঈশ্বরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে রব্‌শাকিকে পাঠিয়েছেন কিন্তু আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু হয়তো সেই সব কথা শুনে তাকে শাস্তি দেবেন। তাই যারা এখনও বেঁচে আছে তাদের জন্য আপনি প্রার্থনা করুন।” শোন, আমি তার মধ্যে এমন একটা মনোভাবের সৃষ্টি করব যার ফলে সে একটা সংবাদ শুনে নিজের দেশে ফিরে যাবে এবং সেখানে আমি তাকে তলোয়ারের ঘায়ে শেষ করে দেব।’ ” পরে রব্‌শাকি শুনলেন যে, আসিরিয়ার রাজা লাখীশ ছেড়ে চলে গিয়ে লিব্‌নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। সেইজন্য রব্‌শাকি সেখানে গেলেন। আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব খবর পেলেন যে, কূশ দেশের রাজা তির্হকঃ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য বের হয়েছেন। কাজেই তিনি দূতদের দিয়ে হিষ্কিয়ের কাছে বলে পাঠালেন, “তোমরা যিহূদার রাজা হিষ্কিয়কে বলবে, ‘তুমি যাঁর উপর নির্ভর করে আছ সেই ঈশ্বর বলেছেন যে, আসিরিয়ার রাজার হাতে যিরূশালেমকে তুলে দেওয়া হবে না। তাঁর সেই ছলনার কথায় তুমি ভুল কোরো না। আসিরিয়ার রাজারা কিভাবে অন্য সব দেশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই তুমি তা শুনেছ; তাহলে তুমি কেমন করে মনে করছ তুমি রক্ষা পাবে? আমার পূর্বপুরুষেরা যে সব জাতিকে ধ্বংস করেছেন তাদের দেবতারা, অর্থাৎ গোষণ, হারণ, রেৎসফ এবং তলঃসরে বাসকারী এদনের লোকদের দেবতারা কি তাদের রক্ষা করেছেন? হমাতের রাজা, অর্পদের রাজা, সফর্বয়িম শহরের রাজা কিম্বা হেনা ও ইব্বার রাজা কোথায়?’ ” হিষ্কিয় দূতদের হাত থেকে চিঠিখানা নিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি সদাপ্রভুর ঘরে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে চিঠিটা মেলে ধরলেন। হিষ্কিয় সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলেন, “দুই করূবের মাঝখানে থাকা হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি, একমাত্র তুমিই পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের ঈশ্বর। তুমি মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছ। হে সদাপ্রভু, কান দাও, শোন; হে সদাপ্রভু, তোমার চোখ খোল, দেখ; জীবন্ত ঈশ্বরকে অপমান করবার জন্য সন্‌হেরীব যে কথা বলে পাঠিয়েছে তা শোন। হে সদাপ্রভু, এই কথা সত্যি যে, আসিরিয়ার রাজারা এই সব জাতি ও তাদের দেশ ধ্বংস করেছে। তাদের দেবতাদের তারা আগুনে ফেলে নষ্ট করে দিয়েছে। সেগুলো তো ঈশ্বর নয়, মানুষের হাতে তৈরী কেবল কাঠ আর পাথর মাত্র; সেইজন্য তারা তাদের ধ্বংস করতে পেরেছে। এখন হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে তুমি আমাদের রক্ষা কর যাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানতে পারে যে, তুমিই, হে সদাপ্রভু, কেবল তুমিই ঈশ্বর।” তখন আমোসের ছেলে যিশাইয় হিষ্কিয়ের কাছে এই খবর পাঠালেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন যে, আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব সম্বন্ধে আপনার প্রার্থনা তিনি শুনেছেন। তার বিরুদ্ধে সদাপ্রভু বলছেন, ‘কুমারী মেয়ে সিয়োন তোমাকে তুচ্ছ করবে ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে। যিরূশালেমের লোকেরা তোমার পিছন থেকে মাথা নাড়বে। তুমি কাকে অসম্মান করেছ? কার বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলেছ? তুমি কার বিরুদ্ধে চিৎকার করেছ এবং গর্বের সংগে চোখ তুলে তাকিয়েছ? ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের বিরুদ্ধেই তুমি এই সব করেছ। তোমার লোকদের দিয়ে তুমি প্রভুকে টিট্‌কারি দিয়ে বলেছ যে, তোমার সব রথ দিয়ে তুমি পাহাড়গুলোর চূড়ায়, লেবাননের সবচেয়ে উঁচু উঁচু চূড়ায় উঠেছ। তুমি তার সবচেয়ে লম্বা লম্বা এরস গাছ আর ভাল ভাল বেরস গাছ কেটে ফেলেছ। তুমি তার গভীর বনের সুন্দর জায়গায় ঢুকেছ। বিদেশের মাটিতে মাটিতে তুমি কূয়া খুঁড়েছ এবং সেখানকার জল খেয়েছ। তোমার পা দিয়ে তুমি মিসরের সব নদীগুলো শুকিয়ে ফেলেছ। “ ॥ঃযং ‘তুমি কি শোন নি যে, অনেক আগেই আমি তা ঠিক করে রেখেছিলাম? অনেক কাল আগেই আমি তার পরিকল্পনা করেছিলাম? আর এখন আমি তা ঘটালাম। সেইজন্যই তো তুমি দেয়াল-ঘেরা শহরগুলো পাথরের ঢিবি করতে পেরেছ। সেখানকার লোকেরা শক্তিহীন হয়েছে এবং ভীষণ ভয় ও লজ্জা পেয়েছে। তারা ক্ষেতের ঘাসের মত, গজিয়ে ওঠা সবুজ চারার মত, ছাদের উপরে গজানো ঘাসের মত যা বেড়ে উঠবার আগেই শুকিয়ে যায়। কিন্তু তুমি কোথায় থাক আর কখন আস বা যাও আর কেমন করে আমার বিরুদ্ধে রেগে ওঠ, তা সবই আমি জানি। তুমি আমার বিরুদ্ধে রেগে উঠেছ বলে এবং তোমার দেমাকের কথা আমার কানে এসেছে বলে আমি তোমার নাকে আমার কড়া লাগাব আর তোমার মুখে আমার বল্‌গা লাগাব; আর যে পথ দিয়ে তুমি এসেছ সেই পথেই ফিরে যেতে আমি তোমাকে বাধ্য করব।’ “হে হিষ্কিয়, তোমার জন্য চিহ্ন হবে এই: এই বছর নিজে নিজে যা জন্মাবে তোমরা তা-ই খাবে, আর দ্বিতীয় বছরে তা থেকে যা জন্মাবে তা খাবে। কিন্তু তৃতীয় বছরে তোমরা বীজ বুনবে ও ফসল কাটবে আর আংগুর ক্ষেত করে তার ফল খাবে। যিহূদা-গোষ্ঠীর যে লোকেরা তখনও বেঁচে থাকবে তারা আর একবার সফল হবে। তারা গাছের মত নীচে শিকড় বসাবে আর উপরে ফল ফলাবে। বেঁচে থাকা লোকেরা যিরূশালেম থেকে আসবে, আর সিয়োন পাহাড় থেকে আসবে রক্ষা পাওয়া এক দল লোক। সদাপ্রভুর আগ্রহই এই সমস্ত করবে। “সেইজন্য আসিরিয়ার রাজার বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘সে এই শহরে ঢুকবে না কিম্বা এখানে একটা তীরও মারবে না। সে ঢাল নিয়ে এর সামনে আসবে না কিম্বা ঘেরাও করে ওঠা-নামা করবার জন্য কিছু তৈরী করবে না। সে যে পথ দিয়ে এসেছে সেই পথেই ফিরে যাবে; এই শহরে সে ঢুকবে না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। আমি আমার ও আমার দাস দায়ূদের জন্য এই শহরটা ঘিরে রেখে তা রক্ষা করব।’ ” সেই রাতে সদাপ্রভুর দূত বের হয়ে আসিরিয়দের ছাউনির এক লক্ষ পঁচাশি হাজার লোককে মেরে ফেললেন। পরদিন সকালবেলা লোকেরা যখন উঠল তখন দেখা গেল সব জায়গায় কেবল মৃতদেহ। কাজেই আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব তাঁর সৈন্যদল নিয়ে চলে গেলেন এবং নীনবী শহরে ফিরে গিয়ে সেখানে থাকতে লাগলেন। একদিন যখন সন্‌হেরীব তাঁর দেবতা নিষ্রোকের মন্দিরে পূজা করছিলেন তখন অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর নামে তাঁর দুই ছেলে তাঁকে তলোয়ারের ঘায়ে মেরে ফেলে অরারট দেশে পালিয়ে গেল। সন্‌হেরীবের জায়গায় তাঁর ছেলে এসর-হদ্দোন রাজা হলেন। সেই সময়ে হিষ্কিয় অসুস্থ হয়ে মরবার মত হয়েছিলেন। তখন আমোসের ছেলে নবী যিশাইয় তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন যে, আপনি যেন আপনার ঘরের ব্যবস্থা করে রাখেন, কারণ আপনি মারা যাবেন, ভাল হবেন না।” এই কথা শুনে হিষ্কিয় দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, “হে সদাপ্রভু, তুমি মনে করে দেখ আমি তোমার সামনে কেমন বিশ্বস্তভাবে ও সমস্ত অন্তরের ভক্তি দিয়ে চলাফেরা করেছি এবং তোমার চোখে যা ঠিক তা করেছি।” এই বলে হিষ্কিয় খুব কাঁদতে লাগলেন। যিশাইয় রাজবাড়ীর মাঝখানের উঠান পার হয়ে যেতে না যেতেই সদাপ্রভুর এই বাক্য তাঁর কাছে প্রকাশিত হল, “তুমি ফিরে গিয়ে আমার লোকদের নেতা হিষ্কিয়কে বল যে, তার পূর্বপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি ও তোমার চোখের জল দেখেছি। আমি তোমাকে সুস্থ করব। এখন থেকে তিন দিনের দিন তুমি সদাপ্রভুর ঘরে যাবে। তোমার আয়ু আমি আরও পনেরো বছর বাড়িয়ে দিলাম। আর আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে আমি তোমাকে ও এই শহরকে উদ্ধার করব। আমার জন্য ও আমার দাস দায়ূদের জন্য আমি এই শহরকে রক্ষা করব।’ ” যিশাইয় বললেন, “ডুমুরের একটা চাক নিয়ে এস।” লোকেরা তা এনে হিষ্কিয়ের ফোড়ার উপরে দিলে তিনি সুস্থ হলেন। এর আগে হিষ্কিয় যিশাইয়কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “সদাপ্রভু যে আমাকে সুস্থ করবেন এবং এখন থেকে তিন দিনের দিন আমি সদাপ্রভুর ঘরে যেতে পারব তার চিহ্ন কি?” উত্তরে যিশাইয় বলেছিলেন, “সদাপ্রভু যে তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন সেইজন্য তিনি একটি চিহ্ন দেবেন। আপনি বলুন, ছায়া কি দশ ধাপ এগিয়ে যাবে, না দশ ধাপ পিছিয়ে যাবে?” হিষ্কিয় বলেছিলেন, “ছায়া দশ ধাপ এগিয়ে যাওয়া সহজ ব্যাপার, বরং তা দশ ধাপ পিছিয়ে যাক।” তখন নবী যিশাইয় সদাপ্রভুকে ডেকেছিলেন। তাতে আহসের সিঁড়ি থেকে ছায়াটা যত ধাপ নেমে গিয়েছিল সদাপ্রভু তা থেকে দশ ধাপ পিছিয়ে দিয়েছিলেন। এই সময় বলদনের ছেলে বাবিলের রাজা বরোদক্‌বলদন্‌ হিষ্কিয়ের অসুখের খবর শুনে তাঁর কাছে চিঠি ও উপহার পাঠিয়ে দিলেন। হিষ্কিয় সেই দূতদের গ্রহণ করলেন এবং তাঁর সব ভাণ্ডারগুলোতে যা কিছু ছিল, অর্থাৎ সোনা, রূপা, সুগন্ধি মশলা, দামী তেল এবং তাঁর অস্ত্রশস্ত্র ও ধনভাণ্ডারের সব কিছু তাদের দেখালেন। হিষ্কিয়ের রাজবাড়ীতে কিম্বা তাঁর সারা রাজ্যে এমন কিছু ছিল না যা তিনি তাদের দেখান নি। তখন নবী যিশাইয় রাজা হিষ্কিয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “ঐ লোকেরা কি বলল, আর কোথা থেকেই বা তারা এসেছিল?” হিষ্কিয় বললেন, “ওরা দূর দেশ থেকে, বাবিল দেশ থেকে এসেছিল।” নবী জিজ্ঞাসা করলেন, “ওরা আপনার রাজবাড়ীর মধ্যে কি কি দেখেছে?” হিষ্কিয় বললেন, “আমার রাজবাড়ীর সব কিছুই ওরা দেখেছে। আমার ধনভাণ্ডারের এমন কিছু নেই যা আমি তাদের দেখাই নি।” তখন যিশাইয় হিষ্কিয়কে বললেন, “সদাপ্রভু যা বলছেন তা আপনি শুনুন। সদাপ্রভু বলছেন, এমন দিন আসবে যখন আপনার রাজবাড়ীর সব কিছু এবং আপনার পূর্বপুরুষদের জমানো যা কিছু আজ পর্যন্ত রয়েছে সবই বাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে, কিছুই পড়ে থাকবে না। আপনার কয়েকজন বংশধর, আপনার নিজের সন্তান, যাদের আপনি জন্ম দিয়েছেন তারা বাবিলের রাজার বাড়ীতে খোজা হয়ে থাকবে।” উত্তরে হিষ্কিয় বললেন, “সদাপ্রভুর যে কথা আপনি বললেন তা ভাল।” তিনি এই কথা বললেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন তাঁর জীবনকালে তিনি শান্তিতে ও নিরাপদে থাকতে পারবেন। হিষ্কিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা ও যুদ্ধে তাঁর জয়ের কথা এবং কেমন করে তিনি পুকুর ও সুড়ংগ কেটে শহরে জল নিয়ে এসেছিলেন তা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে হিষ্কিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে মনঃশি রাজা হলেন। মনঃশি বারো বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং পঞ্চান্ন বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল হিফ্‌সীবা। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে যে সব জাতিকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের মত জঘন্য কাজ করে মনঃশি সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। তাঁর বাবা হিষ্কিয় পূজার যে সব উঁচু স্থান ধ্বংস করেছিলেন সেগুলো তিনি আবার তৈরী করলেন। ইস্রায়েলের রাজা আহাব যেমন করেছিলেন তেমনি তিনিও বাল দেবতার উদ্দেশে কতগুলো বেদী ও একটা আশেরা-খুঁটি তৈরী করলেন। তিনি আকাশের সব তারাগুলোর পূজা এবং সেবা করতেন। সদাপ্রভু যে ঘরের বিষয় বলেছিলেন, “আমি যিরূশালেমে বাস করব,” সদাপ্রভুর সেই ঘরের মধ্যে তিনি কতগুলো বেদী তৈরী করলেন। সদাপ্রভুর ঘরের দু’টা উঠানেই তিনি আকাশের সমস্ত তারাগুলোর উদ্দেশে কতগুলো বেদী তৈরী করলেন। তিনি নিজের ছেলেকে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করলেন। তিনি মায়াবিদ্যা ব্যবহার করতেন ও লক্ষণ দেখে ভবিষ্যতের কথা বলতেন এবং যারা ভূতের মাধ্যম হয় এবং মন্দ আত্মাদের সংগে সম্বন্ধ রাখে তিনি তাদের সংগে পরামর্শ করতেন। তিনি সদাপ্রভুর চোখে অনেক মন্দ কাজ করে তাঁকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন। তিনি যে আশেরা-খুঁটি খোদাই করে তৈরী করেছিলেন সেটা নিয়ে উপাসনা-ঘরে রাখলেন। এই উপাসনা-ঘর সম্বন্ধে সদাপ্রভু দায়ূদ ও তাঁর ছেলে শলোমনকে বলেছিলেন, “এই ঘর ও ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্য থেকে আমার বেছে নেওয়া এই যিরূশালেমকে আমি চিরকালের জন্য আমার বাসস্থান করব। ইস্রায়েলীয়েরা যদি কেবল আমার সব আদেশ যত্নের সংগে পালন করে এবং আমার দাস মোশি তাদের যে আইন-কানুন দিয়েছে সেই মত চলে তবে আমি তাদের পূর্বপুরুষদের যে দেশ দিয়েছি সেই দেশ তাদের আর ছেড়ে যেতে হবে না।” কিন্তু লোকেরা সেই কথা শুনল না। মনঃশি তাদের বিপথে নিয়ে গেলেন; তার ফলে যে সব জাতিকে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তাদের চেয়েও তারা আরও খারাপ কাজ করতে লাগল। তখন সদাপ্রভু তাঁর দাসদের, অর্থাৎ নবীদের মধ্য দিয়ে এই কথা বললেন, “যিহূদার রাজা মনঃশি এই সব জঘন্য পাপ করেছে। তার আগে যে ইমোরীয়েরা ছিল তাদের চেয়েও সে আরও খারাপ কাজ করেছে এবং নিজের প্রতিমাগুলো দিয়ে যিহূদাকে পাপের পথে পরিচালিত করেছে। কাজেই আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছি যে, আমি শীঘ্রই যিরূশালেম ও যিহূদার উপর এমন বিপদ আনব যে, সেই কথা যারা শুনবে তারা সবাই শিউরে উঠবে। শমরিয়ার বিরুদ্ধে যে মাপের দড়ি এবং আহাবের বংশের বিরুদ্ধে যে ওলন দড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল তা আমি যিরূশালেমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করব। যেমন করে একজন থালা মুছে নিয়ে উল্টে উবুড় করে তেমনি করে আমি যিরূশালেমকে মুছে ফেলব। আমার লোকদের বাকী অংশকে আমি ত্যাগ করব এবং শত্রুদের হাতে তাদের তুলে দেব। তাদের সমস্ত শত্রুরা তাদের লুট করবে এবং সব কিছু জোর করে নিয়ে যাবে, কারণ আমার চোখে যা মন্দ তারা তা-ই করেছে এবং যেদিন তাদের পূর্বপুরুষেরা মিসর থেকে বের হয়ে এসেছিল সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত তারা আমাকে অসন্তুষ্ট করে চলেছে।” এছাড়া মনঃশি এত নির্দোষ লোকদের রক্তপাত করেছিলেন যে, সেই রক্তে যিরূশালেমের এক সীমা থেকে অন্য সীমা পর্যন্ত পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তিনি যিহূদার লোকদের দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন যার ফলে তারা সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করেছিল। মনঃশির অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং তাঁর পাপের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে মনঃশি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে রাজবাড়ীর বাগানে, অর্থাৎ উষের বাগানে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে আমোন রাজা হলেন। আমোন বাইশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং দুই বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল মশুল্লেমৎ; তিনি ছিলেন যট্‌বা গ্রামের হারুষের মেয়ে। আমোন তাঁর বাবা মনঃশির মতই সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। তাঁর বাবা যে সব পথে চলেছিলেন তিনিও সেই সব পথে চলতেন; তাঁর বাবা যে সব প্রতিমার সেবা করেছিলেন তিনিও সেগুলোর সেবা ও পূজা করতেন। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছিলেন এবং তাঁর পথে চলতেন না। আমোনের কর্মচারীরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাঁর রাজবাড়ীতেই তাঁকে খুন করল। কিন্তু যারা রাজা আমোনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল দেশের লোকেরা তাদের সবাইকে মেরে ফেলল এবং তারা তাঁর ছেলে যোশিয়কে তাঁর জায়গায় রাজা করল। আমোনের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। উষের বাগানে তাঁর জন্য ঠিক করা কবরে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে যোশিয় রাজা হলেন। যোশিয় আট বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং একত্রিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল যিদীদা; তিনি ছিলেন বস্কৎ গ্রামের আদায়ার মেয়ে। সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল যোশিয় তা-ই করতেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের পথে চলতেন সেই পথ থেকে ডানে কি বাঁয়ে যেতেন না। রাজা যোশিয়ের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় তিনি মশুল্লমের নাতি, অর্থাৎ অৎসলিয়ের ছেলে রাজার লেখক শাফনকে এই কথা বলে সদাপ্রভুর ঘরে পাঠালেন, “আপনি মহাপুরোহিত হিল্কিয়ের কাছে যান এবং তাঁকে বলুন যেন তিনি সদাপ্রভুর ঘরে আনা সমস্ত টাকা-পয়সা যা দারোয়ানেরা লোকদের কাছ থেকে তুলেছে তার হিসাব ঠিক করে রাখেন। তাদের হাতে যে টাকা দেওয়া হবে তার হিসাব তাদের দিতে হবে না, কারণ তারা বিশ্বস্তভাবেই কাজ করে থাকে।” তখন রাজার লেখক শাফনকে মহাপুরোহিত হিল্কিয় বললেন, “সদাপ্রভুর ঘরে আমি আইন-কানুনের বইটি পেয়েছি।” হিল্কিয় সেই বইটি শাফনকে দিলে পর তিনি তা পড়লেন। তারপর শাফন সেই বইটি রাজার কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, “সদাপ্রভুর ঘরে যে টাকা ছিল তা আপনার দাসেরা বের করে সদাপ্রভুর ঘরের কাজের তদারককারীদের হাতে দিয়েছে।” তখন লেখক শাফন এই কথা রাজাকে জানালেন, “পুরোহিত হিল্কিয় আমাকে একটি বই দিয়েছেন।” এই বলে শাফন তা রাজাকে পড়ে শোনালেন। আইন-কানুনের বইতে যা লেখা ছিল তা শুনে রাজা নিজের পোশাক ছিঁড়লেন। তিনি পুরোহিত হিল্কিয়, শাফনের ছেলে অহীকাম, মীখায়ের ছেলে অক্‌বোর, শাফন ও রাজার সাহায্যকারী অসায়কে এই আদেশ দিলেন, “এই যে বইটি পাওয়া গেছে তার মধ্যে যে সমস্ত কথা লেখা আছে সেই সব কথা সম্বন্ধে আপনারা গিয়ে আমার জন্য এবং এখানকার ও সমস্ত যিহূদার লোকদের জন্য সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করুন। সদাপ্রভু আমাদের বিরুদ্ধে ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠেছেন, কারণ আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই বইয়ের কথামত চলেন নি এবং পালন করবার জন্য যে সব কথা সেখানে লেখা আছে সেই অনুসারে তাঁরা কাজ করেন নি।” এই কথা শুনে পুরোহিত হিল্কিয়, অহীকাম, অক্‌বোর, শাফন ও অসায় মহিলা-নবী হুল্‌দার কাছে গিয়ে তাঁর সংগে কথাবার্তা বললেন। হুল্‌দা ছিলেন কাপড়-চোপড় রক্ষাকারী শল্লুমের স্ত্রী। শল্লূম ছিলেন হর্হসের নাতি, অর্থাৎ তিক্‌বের ছেলে। হুল্‌দা যিরূশালেমের দ্বিতীয় অংশে বাস করতেন। তারা আমাকে ত্যাগ করে দেব-দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালিয়েছে এবং তাদের হাতের তৈরী সমস্ত প্রতিমার দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে; সেইজন্য এই জায়গার বিরুদ্ধে আমার ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠবে এবং তা নিভানো যাবে না।’ সেইজন্য আমি শীঘ্রই তোমাকে তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে নিয়ে যাব এবং তুমি শান্তিতে কবর পাবে। এই জায়গার উপর আমি যে সব বিপদ নিয়ে আসব তোমার চোখ তা দেখবে না।’ ” তখন তাঁরা হুল্‌দার উত্তর নিয়ে রাজার কাছে ফিরে গেলেন। পরে রাজা যোশিয় লোক পাঠিয়ে যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত বৃদ্ধ নেতাদের ডেকে একত্র করলেন। তিনি যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের, পুরোহিতদের, নবীদের এবং সাধারণ ও গণ্যমান্য সমস্ত লোকদের নিয়ে সদাপ্রভুর ঘরে গেলেন। সদাপ্রভুর ঘরে ব্যবস্থার যে বইটি পাওয়া গিয়েছিল তার সমস্ত কথা তিনি তাদের কাছে পড়ে শোনালেন। রাজা থামের পাশে দাঁড়িয়ে সদাপ্রভুর পথে চলবার জন্য এবং সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে তাঁর সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ মেনে চলবার জন্য, অর্থাৎ এই বইয়ের মধ্যে লেখা ব্যবস্থার সমস্ত কথা পালন করবার জন্য সদাপ্রভুর সামনে প্রতিজ্ঞা করলেন। তখন সমস্ত লোক রাজার সংগে একই প্রতিজ্ঞা করল। রাজা তখন বাল দেবতা ও আশেরা এবং আকাশের সমস্ত তারাগুলোর পূজার জন্য তৈরী সব জিনিসপত্র সদাপ্রভুর ঘর থেকে বের করে ফেলবার জন্য মহাপুরোহিত হিল্কিয়কে, দ্বিতীয় শ্রেণীর পুরোহিতদের এবং দারোয়ানদের আদেশ দিলেন। তিনি সেগুলো যিরূশালেমের বাইরে কিদ্রোণ উপত্যকার মাঠে পুড়িয়ে দিলেন এবং ছাইগুলো বৈথেলে নিয়ে গেলেন। যিহূদার শহরগুলোর এবং যিরূশালেমের চারপাশের পূজার উঁচু স্থানগুলোতে ধূপ জ্বালাবার জন্য যিহূদার রাজারা যে সব প্রতিমাপূজাকারী পুরোহিতদের নিযুক্ত করেছিলেন, অর্থাৎ যারা বাল দেবতা, চাঁদ, সূর্য, তারাপুঞ্জ এবং আকাশের অন্যান্য সমস্ত তারাগুলোর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাত তাদের তিনি দূর করে দিলেন। তিনি সদাপ্রভুর ঘর থেকে আশেরা-খুঁটিটা নিয়ে যিরূশালেমের বাইরে কিদ্রোণ উপত্যকাতে সেটা পুড়িয়ে দিলেন। তারপর সেটা গুঁড়া করে তার ধুলা সাধারণ লোকদের কবরের উপরে ছিটিয়ে দিলেন। পুরুষ মন্দির-বেশ্যাদের যে কামরাগুলো সদাপ্রভুর ঘরে ছিল তিনি সেগুলো ভেংগে দিলেন। সেখানে স্ত্রীলোকেরা আশেরার জন্য কাপড় বুনত। যোশিয় যিহূদার শহর ও গ্রামগুলো থেকে সমস্ত পুরোহিতদের আনালেন এবং গেবা থেকে বের্‌-শেবা পর্যন্ত যে সব পূজার উঁচু স্থানগুলোতে সেই পুরোহিতেরা ধূপ জ্বালাত সেগুলো অশুচি করে দিলেন। তিনি শাসনকর্তা যিহোশূয়ের ফটকে ঢুকবার পথে যে সব পূজার উঁচু স্থান ছিল সেগুলো ভেংগে ফেললেন। এই ফটকটা ছিল শহরের প্রধান ফটকের বাঁদিকে। পুজার উঁচুস্থানগুলোর পুরোহিতেরা যিরূশালেমে সদাপ্রভুর বেদীর সেবা-কাজ করতে পারত না, কিন্তু তারা অন্যান্য পুরোহিতদের সংগে খামিহীন রুটি খেতে পারত। অন্য কেউ যাতে মোলক দেবতার উদ্দেশে নিজের ছেলে বা মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করতে না পারে সেইজন্য যোশিয় বেন্‌-হিন্নোম উপত্যকার তোফৎ নামে পূজার জায়গাটা অশুচি করে দিলেন। যিহূদার রাজারা যে সব রথ ও ঘোড়াগুলো সূর্যের পূজার উদ্দেশে দিয়েছিলেন যোশিয় সেই ঘোড়াগুলো দূর করে দিয়ে রথগুলো পুড়িয়ে ফেললেন। সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকবার পথের পাশে, উঠানের মধ্যে, নথন-মেলক নামে একজন কর্মচারীর কামরার কাছে ঘোড়াগুলো রাখা হত। রাজবাড়ীর ছাদের উপরে রাজা আহসের উপরের কামরার কাছে যিহূদার রাজারা যে সব বেদী তৈরী করেছিলেন এবং সদাপ্রভুর ঘরের দু’টা উঠানে মনঃশি যে সব বেদী তৈরী করেছিলেন যোশিয় সেগুলো ভেংগে টুকরা টুকরা করে কিদ্রোণ উপত্যকায় ফেলে দিলেন। যিরূশালেমের পূর্ব দিকে ধ্বংসের পাহাড়ের দক্ষিণে যে সব পূজার উঁচু স্থান ছিল সেগুলো তিনি অশুচি করলেন। ইস্রায়েলের রাজা শলোমন সীদোনীয়দের জঘন্য দেবী অষ্টোরতের জন্য, মোয়াবের জঘন্য দেবতা কমোশের জন্য এবং অম্মোনের লোকদের জঘন্য দেবতা মোলকের জন্য এই সব উঁচু স্থান তৈরী করেছিলেন। যোশিয় পূজার পাথরগুলো ভেংগে ফেললেন এবং আশেরা-খুঁটিগুলোও কেটে ফেললেন আর সেই জায়গাগুলো মানুষের হাড়গোড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। নবাটের ছেলে যারবিয়াম যিনি ইস্রায়েলকে দিয়ে পাপ করিয়েছিলেন তিনি বৈথেলে যে বেদী ও পূজার উঁচু স্থান তৈরী করেছিলেন তা যোশিয় ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। যোশিয় সেই পূজার উঁচু স্থানটা পুড়িয়ে দিয়ে গুঁড়া করে ফেললেন এবং আশেরা-খুঁটিটাও পুড়িয়ে দিলেন। তারপর তিনি চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন এবং পাহাড়ের কাছে যে সব কবর ছিল সেখান থেকে হাড়গোড় আনিয়ে সেগুলো বেদীর উপর পুড়িয়ে সেটা অশুচি করলেন। ঈশ্বরের লোক যে সব ঘটনার কথা আগে ঘোষণা করেছিলেন সদাপ্রভুর সেই কথা অনুসারেই এই সব হয়েছিল। রাজা বললেন, “আমি যে স্তম্ভটা দেখতে পাচ্ছি সেটা কি?” শহরের লোকেরা বলল, “ওটা ঈশ্বরের লোকের কবরের চিহ্ন। তিনি যিহূদা থেকে এসে বৈথেলের বেদীর বিরুদ্ধে যা ঘোষণা করেছিলেন আপনি ঠিক তা-ই করেছেন।” তিনি বললেন, “ওটা থাকুক; কেউ যেন তাঁর হাড়গুলো নষ্ট না করে।” সেইজন্য লোকেরা তাঁর হাড়গোড় এবং যে নবী শমরিয়া থেকে এসেছিলেন তাঁর হাড়গোড় যেমন ছিল তেমনই থাকতে দিল। শমরিয়ার শহর ও গ্রামগুলোর পূজার উঁচু স্থানে ইস্রায়েলের রাজারা যে সব মন্দির তৈরী করে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন যোশিয় সেগুলো ধ্বংস করে দিলেন এবং সেগুলোর অবস্থা বৈথেলের উঁচু স্থানের মত করলেন। যোশিয় ঐ সব বেদীর উপরে সেখানকার পুরোহিতদের জবাই করলেন এবং সেগুলোর উপর মানুষের হাড় পোড়ালেন। তারপর তিনি যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। এর পর রাজা সব লোকদের এই আদেশ দিলেন, “ব্যবস্থার বইয়ে যেমন লেখা আছে তেমনি করে আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্ব পালন করুন।” ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তাদের আমলে কিম্বা ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের আমলে এই রকম উদ্ধার-পর্ব পালন করা হয় নি। কিন্তু রাজা যোশিয়ের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় যিরূশালেমে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই উদ্ধার-পর্ব পালন করা হল। এছাড়া যারা ভূতের মাধ্যম হয় এবং যারা মন্দ আত্মার সংগে সম্বন্ধ রাখে যোশিয় তাদের দূর করে দিলেন। তিনি পারিবারিক দেবমূর্তি, প্রতিমা এবং যিহূদা ও যিরূশালেমে যে সব জঘন্য জিনিস দেখতে পেলেন সেগুলোও সব দূর করে দিলেন। পুরোহিত হিল্কিয় সদাপ্রভুর ঘরে আইন-কানুন লেখা যে বই খুঁজে পেয়েছিলেন তার সব কথা যেন ঠিকভাবে পালন করা হয় সেইজন্য যোশিয় এই কাজ করেছিলেন। তিনি তাঁর সমস্ত মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে মোশির সমস্ত আইন-কানুন অনুসারে সদাপ্রভুর পথে চলতেন। তাঁর আগে বা পরে আর কোন রাজাই তাঁর মত ছিলেন না। তবুও মনঃশি যে সব কাজ করে সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন তার জন্য যিহূদার বিরুদ্ধে যে ভয়ংকর ক্রোধে সদাপ্রভু জ্বলে উঠেছিলেন তা থেকে তিনি ফিরলেন না। সেইজন্য সদাপ্রভু বললেন, “আমার সামনে থেকে যেমন করে আমি ইস্রায়েলকে দূর করেছি তেমনি করে যিহূদাকেও দূর করব, আর যে শহরকে আমি বেছে নিয়েছিলাম সেই যিরূশালেমকে এবং যার সম্বন্ধে আমি বলেছিলাম, ‘এটা আমার বাসস্থান হবে’ সেই উপাসনা-ঘরকে আমি অগ্রাহ্য করব।” যোশিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। যোশিয়ের রাজত্বের সময়ে মিসরের রাজা ফরৌণ-নখো আসিরিয়ার রাজাকে সাহায্য করবার জন্য ইউফ্রেটিস নদীর দিকে গেলেন। তখন রাজা যোশিয় তাঁর সংগে যুদ্ধ করবার জন্য বের হলেন, কিন্তু ফরৌণ-নখো তাঁর সংগে যুদ্ধ করে তাঁকে মগিদ্দোতে মেরে ফেললেন। যোশিয়ের সৈন্যেরা তাঁর দেহটা রথে করে মগিদ্দো থেকে যিরূশালেমে নিয়ে এসে তাঁর নিজের জন্য ঠিক করা কবরে তাঁকে কবর দিল। পরে দেশের লোকেরা তাঁর ছেলে যিহোয়াহসকে অভিষেক করে তাঁর বাবার জায়গায় তাঁকে রাজা করল। তেইশ বছর বয়সে যিহোয়াহস রাজা হলেন। তিনি তিন মাস যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল হমূটল; তিনি ছিলেন লিব্‌না শহরের যিরমিয়ের মেয়ে। যিহোয়াহস তাঁর পূর্বপুরুষদের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। ফরৌণ-নখো তাঁকে হমাৎ দেশের রিব্‌লাতে আটক করে রাখলেন যাতে তিনি যিরূশালেমে রাজত্ব করতে না পারেন। ফরৌণ-নখো প্রায় চার টন রূপা ও ঊনচল্লিশ কেজি সোনা কর্‌ হিসাবে যিহূদা দেশের উপর চাপিয়ে দিলেন। তিনি যোশিয়ের আর এক ছেলে ইলিয়াকীমকে তাঁর বাবা যোশিয়ের জায়গায় রাজা করলেন এবং ইলিয়াকীমের নাম বদলে যিহোয়াকীম রাখলেন। ফরৌণ-নখো যিহোয়াহসকে মিসরে নিয়ে গেলেন, আর সেখানে যিহোয়াহস মারা গেলেন। ফরৌণ-নখোর দাবি অনুসারে যিহোয়াকীম তাঁকে সেই সোনা ও রূপা দিলেন। তা দেওয়ার জন্য তিনি দেশের লোকদের উপর কর্‌ চাপালেন এবং দেশের প্রত্যেকের কর্‌ ঠিক করে দিয়ে সেই সোনা ও রূপা তিনি দেশের লোকদের কাছ থেকে আদায় করলেন। পঁচিশ বছর বয়সে যিহোয়াকীম রাজা হলেন। তিনি এগারো বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল সবীদা; তিনি ছিলেন রূমা গ্রামের পদায়ের মেয়ে। যিহোয়াকীম তাঁর পূর্বপুরুষদের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। যিহোয়াকীমের রাজত্বের সময় বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যিহূদা দেশ আক্রমণ করলেন। যিহোয়াকীম তিন বছর তাঁর অধীনে ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি নবূখদ্‌নিৎসরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। সদাপ্রভু যিহোয়াকীমের বিরুদ্ধে বাবিলোনীয়, অরামীয়, মোয়াবীয় ও অম্মোনীয় লুটেরাদের পাঠিয়ে দিলেন। সদাপ্রভু তাঁর দাসদের, অর্থাৎ নবীদের মধ্য দিয়ে যে কথা ঘোষণা করেছিলেন সেই অনুসারে যিহূদা দেশকে ধ্বংস করবার জন্য তিনি তাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যিহোয়াকীমের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা “যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে যিহোয়াখীন রাজা হলেন। মিসরের রাজা যুদ্ধ করবার জন্য তাঁর রাজ্য থেকে আর বের হন নি, কারণ বাবিলের রাজা মিসরের শুকনা নদী থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত সমস্ত রাজ্যটা দখল করে নিয়েছিলেন। আঠারো বছর বয়সের সময় যিহোয়াখীন রাজা হয়েছিলেন এবং তিন মাস যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল নহুষ্টা; তিনি ছিলেন যিরূশালেম শহরের ইল্‌নাথনের মেয়ে। যিহোয়াখীন তাঁর বাবার মতই সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। সেই সময় বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের সৈন্যেরা যিরূশালেমে এসে তা ঘেরাও করল। তাঁর সৈন্যেরা যখন শহর ঘেরাও করছিল তখন নবূখদ্‌নিৎসর নিজে শহরের কাছে গেলেন। যিহূদার রাজা যিহোয়াখীন, তাঁর মা, তাঁর সাহায্যকারীরা, তাঁর সেনাপতিরা ও তাঁর কর্মচারীরা সবাই নবূখদ্‌নিৎসরের হাতে নিজেদের তুলে দিলেন। নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের আট বছরের সময় তিনি যিহোয়াখীনকে বন্দী করে নিয়ে গেলেন। সদাপ্রভু যেমন বলেছিলেন তেমনি করে নবূখদ্‌নিৎসর সদাপ্রভুর ঘর ও রাজবাড়ী থেকে সব ধন-রত্ন নিয়ে গেলেন এবং ইস্রায়েলের রাজা শলোমন সদাপ্রভুর ঘরের জন্য সোনা দিয়ে যে সব জিনিস তৈরী করেছিলেন তা তিনি কেটে টুকরা টুকরা করলেন। এছাড়া যিরূশালেমের সবাইকে, অর্থাৎ সমস্ত কর্মচারী ও যোদ্ধাদের, সমস্ত কারিগর ও কর্মকারদের- মোট দশ হাজার লোককে তিনি বন্দী করে নিয়ে গেলেন। দেশে গরীব লোক ছাড়া আর কেউ রইল না। নবূখদ্‌নিৎসর যিহোয়াখীনকে বন্দী হিসাবে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যিরূশালেম থেকে রাজার মাকে, তাঁর স্ত্রীদের, তাঁর কর্মচারীদের এবং দেশের গণ্যমান্য লোকদেরও নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত ও শক্তিশালী সাত হাজার যোদ্ধার গোটা সৈন্যদল এবং এক হাজার কারিগর ও কর্মকারদের বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যিহোয়াখীনের জায়গায় তাঁর কাকা মত্তনিয়কে রাজা করলেন এবং তাঁর নাম বদ্‌লে সিদিকিয় রাখলেন। একুশ বছর বয়সে সিদিকিয় রাজা হলেন। তিনি যিরূশালেমে এগারো বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল হমূটল; তিনি ছিলেন লিব্‌না শহরের যিরমিয়ের মেয়ে। যিহোয়াকীমের মত সিদিকিয় সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। যিরূশালেম ও যিহূদার লোকদের দরুন সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠেছিলেন এবং শেষে তিনি তাঁর সামনে থেকে তাদের দূর করে দিয়েছিলেন। পরে সিদিকিয় বাবিলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। সিদিকিয়ের রাজত্বের নবম বছরের দশম মাসের দশ দিনের দিন বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর তাঁর সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলেন। তিনি শহরের বাইরে ছাউনি ফেললেন এবং শহরের চারপাশে ঢিবি তৈরী করলেন। রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের এগারো বছর পর্যন্ত শহরটা ঘেরাও করে রাখা হল। চতুর্থ মাসের নয় দিনের দিন শহরে দুর্ভিক্ষের অবস্থা এত ভীষণ হল যে, লোকদের খাওয়ার জন্য কিছুই ছিল না। পরে শহরের দেয়ালের একটা জায়গা ভেংগে গেল। যদিও বাবিলীয়েরা তখনও শহরটা ঘেরাও করে ছিল তবুও রাতের বেলা যিহূদার সমস্ত সৈন্য রাজার বাগানের কাছে দুই দেয়ালের ফটক দিয়ে পালিয়ে গেল আর রাজা অরাবার দিকে পালিয়ে গেলেন। তাঁর সমস্ত সৈন্য তাঁর কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ল এবং সেই সময় বাবিলীয় সৈন্যদলও রাজার পিছনে তাড়া করে যিরীহোর সমভূমিতে তাঁকে ধরে ফেলল। তাঁরা তাঁকে বন্দী করে রিব্‌লাতে বাবিলের রাজার কাছে নিয়ে গেল। সেখানে তাঁর উপর শাস্তির আদেশ দেওয়া হল। সৈন্যেরা সিদিকিয়ের চোখের সামনেই তাঁর ছেলেদের মেরে ফেলল। তারপর তারা তাঁর চোখ দু’টা তুলে ফেলে তাঁকে ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বেঁধে বাবিলে নিয়ে গেল। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের ঊনিশ বছরের পঞ্চম মাসের সপ্তম দিনে রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন যিরূশালেমে আসলেন। তিনি সদাপ্রভুর ঘরে, রাজবাড়ীতে এবং যিরূশালেমের সমস্ত বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিলেন। সমস্ত প্রধান প্রধান বাড়ী তিনি পুড়িয়ে ফেললেন। রাজার রক্ষীদলের সেনাপতির অধীনে সমস্ত বাবিলীয় সৈন্যদল যিরূশালেমের দেয়াল ভেংগে ফেলল। শহরের বাকী লোকদের এবং যারা বাবিলের রাজার পক্ষে গিয়েছিল তাদের সবাইকে রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন বন্দী করে নিয়ে গেলেন, কিন্তু আংগুর ক্ষেত দেখাশোনা ও জমি চাষ করবার জন্য কিছু গরীব লোককে তিনি দেশে রেখে গেলেন। বাবিলীয়েরা সদাপ্রভুর ঘরের ব্রোঞ্জের দু’টা থাম, গামলা বসাবার ব্রোঞ্জের আসনগুলো এবং ব্রোঞ্জের বিরাট পাত্রটি ভেংগে টুকরা টুকরা করে বাবিলে নিয়ে গেল। এছাড়া তারা সব পাত্র, বেল্‌চা, সল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা, হাতা এবং উপাসনা-ঘরের সেবা-কাজের জন্য অন্যান্য সমস্ত ব্রোঞ্জের জিনিস নিয়ে গেল। সব আগুন রাখবার পাত্র, বাটি এবং সোনা-রূপার অন্যান্য সমস্ত জিনিসও রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি নিয়ে গেলেন। সদাপ্রভুর ঘরের জন্য শলোমন যে দু’টা থাম, বিরাট পাত্র এবং আসনগুলো তৈরী করিয়েছিলেন সেগুলোর ব্রোঞ্জ ওজন করা সম্ভব ছিল না। প্রত্যেকটা থাম ছিল আঠারো হাত উঁচু ও তার মাথাটা ছিল তিন হাত উঁচু। মাথাটার চারপাশ ব্রোঞ্জের শিকল ও ব্রোঞ্জের ডালিম দিয়ে সাজানো ছিল। যিহূদীদের প্রধান পুরোহিত সরায়, দ্বিতীয় পুরোহিত সফনিয় ও তিনজন দারোয়ানকে রক্ষীদলের সেনাপতি বন্দী করে নিয়ে গেলেন। যারা তখনও শহরে ছিল তাদের মধ্য থেকে তিনি যোদ্ধাদের উপরে নিযুক্ত একজন কর্মচারী ও রাজার পাঁচজন পরামর্শদাতাকে ধরলেন। এছাড়া সেনাপতির লেখক, যিনি সৈন্যদলে লোক ভর্তি করতেন তাঁকে এবং শহরের মধ্যে পাওয়া আরও ষাটজন লোককেও ধরলেন। সেনাপতি নবূষরদন তাদের সবাইকে বন্দী করে রিব্‌লাতে বাবিলের রাজার কাছে নিয়ে গেলেন। রাজা হমাৎ দেশের রিব্‌লাতে এই সব লোকদের মেরে ফেললেন। এইভাবে যিহূদার লোকদের বন্দী করে নিজের দেশ থেকে দূরে নিয়ে যাওয়া হল। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যে সব লোকদের যিহূদা দেশে রেখে গিয়েছিলেন তাদের উপরে তিনি শাফনের নাতি, অর্থাৎ অহীকামের ছেলে গদলিয়কে নিযুক্ত করলেন। বাবিলের রাজা গদলিয়কে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছেন শুনে যিহূদার বাকী সেনাপতিরা ও তাঁদের লোকেরা, অর্থাৎ নথনিয়ের ছেলে ইশ্মায়েল, কারেয়ের ছেলে যোহানন, নটোফাতীয় তন্‌হূমতের ছেলে সরায় ও মাখাথীয়ের ছেলে যাসনিয় এবং তাদের লোকেরা মিসপাতে গদলিয়ের কাছে আসলেন। গদলিয় তাদের ও তাদের লোকদের কাছে শপথ করে বললেন, “আপনারা বাবিলীয় শাসনকর্তাদের ভয় করবেন না। আপনারা দেশে বাস করে বাবিলের রাজার অধীনতা স্বীকার করুন, তাতে আপনাদের মংগল হবে।” কিন্তু সপ্তম মাসে ইলীশামার নাতি, অর্থাৎ নথনিয়ের ছেলে ইশ্মায়েল দশজন লোক সংগে করে নিয়ে গদলিয়কে এবং যিহূদার যে সব লোকেরা ও বাবিলীয়েরা মিসপাতে তাঁর সংগে ছিল তাদের সবাইকে মেরে ফেললেন। এই ইশ্মায়েল ছিল রাজবংশের লোক। এতে বাবিলীয়দের ভয়ে যিহূদার ছোট-বড় সব লোকেরা ও সেনাপতিরা মিসরে পালিয়ে গেল। যিহূদার রাজা যিহোয়াখীনের বন্দীত্বের সাঁইত্রিশ বছরের সময় ইবিল-মরোদক বাবিলের রাজা হলেন। তিনি সেই বছরের বারো মাসের সাতাশ দিনের দিন যিহোয়াখীনকে জেলখানা থেকে ছেড়ে দিলেন। তিনি যিহোয়াখীনের সংগে ভালভাবে কথা বললেন এবং বাবিলে তাঁর সংগে আর যে সব রাজারা ছিলেন তাঁদের চেয়েও তাঁকে আরও সম্মানের আসন দিলেন। যিহোয়াখীন জেলখানার কাপড়-চোপড় খুলে ফেললেন এবং জীবনের বাকী দিনগুলো নিয়মিতভাবে রাজার সংগে খাওয়া-দাওয়া করে কাটিয়ে দিলেন। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন রাজা নিয়মিতভাবে তাঁকে প্রতিদিনের জন্য একটা ভাতা দিতেন। ॥ভব আদমের ছেলে শেথ, শেথের ছেলে ইনোশ, ইনোশের ছেলে কৈনন, কৈননের ছেলে মহললেল, মহললেলের ছেলে যেরদ, যেরদের ছেলে হনোক, হনোকের ছেলে মথূশেলহ, মথূশেলহের ছেলে লেমক ও লেমকের ছেলে নোহ। নোহের ছেলেরা হল শেম, হাম ও যেফৎ। যেফতের ছেলেরা হল গোমর, মাগোগ, মাদয়, যবন, তুবল, মেশক ও তীরস। গোমরের ছেলেরা হল অস্কিনস, দীফৎ ও তোগর্ম। যবনের ছেলেরা হল ইলীশা, তর্শীশ, কিত্তীম ও রোদানীম। হামের ছেলেরা হল কূশ, মিসর, পূট ও কনান। কূশের ছেলেরা হল সবা, হবীলা, সপ্তা, রয়মা ও সকা। রয়মার ছেলেরা হল শিবা ও দদান। কূশের একটি ছেলে হয়েছিল যাঁর নাম ছিল নিম্রোদ। তিনি পৃথিবীতে একজন ক্ষমতাশালী পুরুষ হয়ে উঠেছিলেন। শেমের ছেলেরা হল এলম, অশূর, অর্ফক্‌ষদ, লূদ ও অরাম। অরামের ছেলেরা হল ঊষ, হূল, গেথর ও মেশেক। অর্ফক্‌ষদের ছেলে শেলহ এবং শেলহের ছেলে এবর। এবরের দু’টি ছেলে হয়েছিল। তাদের একজনের নাম ছিল পেলগ; তার সময়ে পৃথিবী ভাগ হয়েছিল বলেই তার এই নাম দেওয়া হয়েছিল। পেলগের ভাইয়ের নাম ছিল যক্তন। এই হল শেমের বংশ-তালিকা: শেমের ছেলে অর্ফক্‌ষদ, অর্ফক্‌ষদের ছেলে শেলহ, অব্রাহামের উপস্ত্রী কটূরার ছেলেরা হল সিম্রণ, যক্‌ষণ, মদান, মিদিয়ন, যিশ্‌বক ও শূহ। যক্‌ষণের ছেলেরা হল শিবা ও দদান। মিদিয়নের ছেলেরা হল ঐফা, এফর, হনোক, অবীদ ও ইল্‌দায়া। এরা সবাই ছিল কটূরার ছেলে ও নাতি। অব্রাহামের ছেলে ইস্‌হাকের ছেলেরা হল এষৌ আর ইস্রায়েল। এষৌর ছেলেরা হল ইলীফস, রূয়েল, যিয়ূশ, যালম ও কোরহ। ইলীফসের ছেলেরা হল তৈমন, ওমার, সফী, গয়িতম, কনস এবং তিম্নার গর্ভে অমালেক। রূয়েলের ছেলেরা হল নহৎ, সেরহ, শম্ম ও মিসা। সেয়ীরের ছেলেরা হল লোটন, শোবল, শিবিয়োন, অনা, দিশোন, এৎসর ও দীশন। লোটনের ছেলেরা হল হোরি ও হোমম। তিম্না ছিল লোটনের বোন। শোবলের ছেলেরা হল অলিয়ন, মানহৎ, এবল, শফী ও ওনম। সিবিয়োনের ছেলেরা হল অয়া ও অনা। অনার ছেলে হল দিশোন। দিশোনের ছেলেরা হল হম্রণ, ইশ্‌বন, যিত্রণ ও করাণ। এৎসরের ছেলেরা হল বিল্‌হন, সাবন ও যাকন। দীশনের ছেলেরা হল ঊষ ও অরাণ। ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে রাজশাসন আরম্ভ হবার আগে ইদোম দেশে যে সব রাজারা রাজত্ব করেছিলেন তাঁদের নাম এই: বিয়োরের ছেলে বেলা। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল দিন্‌হাবা। বেলার মৃত্যুর পরে তাঁর জায়গায় বস্রা শহরের সেরহের ছেলে যোবব রাজা হয়েছিলেন। যোববের মৃত্যুর পরে তাঁর জায়গায় তৈমনীয়দের দেশের হূশম রাজা হয়েছিলেন। হূশমের মৃত্যুর পরে তাঁর জায়গায় বদদের ছেলে হদদ্‌ রাজা হয়েছিলেন। তিনি মোয়াব দেশে মিদিয়নীয়দের হারিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল অবীৎ। হদদের মৃত্যুর পরে তাঁর জায়গায় মস্রেকা শহরের স্ন রাজা হয়েছিলেন। স্নের মৃত্যুর পরে তাঁর জায়গায় সেই এলাকার নদীর পারের রহোবোৎ শহরের শৌল রাজা হয়েছিলেন। শৌলের মৃত্যুর পরে তাঁর জায়গায় অক্‌বোরের ছেলে বাল্‌-হানন রাজা হয়েছিলেন। বাল্‌-হাননের মৃত্যুর পরে তাঁর জায়গায় হদদ্‌ রাজা হয়েছিলেন। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল পায় এবং তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল মহেটবেল। তিনি মট্রেদের মেয়ে এবং মেষাহবের নাত্‌নী। ইস্রায়েলের ছেলেরা হল রূবেণ, শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর, সবূলূন, দান, যোষেফ, বিন্যামীন, নপ্তালি, গাদ ও আশের। যিহূদার বংশ-তালিকা যিহূদার ছেলেরা হল এর, ওনন ও শেলা। এই তিনজন ছিল বৎ-শূয়ার গর্ভের সন্তান। বৎ-শূয়া ছিল একজন কনানীয় স্ত্রীলোক। এর নামে যিহূদার বড় ছেলে সদাপ্রভুর চোখে মন্দ হওয়াতে তিনি তাকে মেরে ফেললেন। যিহূদার ছেলের স্ত্রী তামরের গর্ভে যিহূদার ছেলে পেরস ও সেরহের জন্ম হয়েছিল। যিহূদার মোট পাঁচটি ছেলে ছিল। পেরসের ছেলেরা হল হিষ্রোণ ও হামূল। সেরহের ছেলেরা হল শিম্রি, এথন, হেমন, কল্‌কোল ও দারা। এরা ছিল মোট পাঁচজন। শিম্রির নাতি, অর্থাৎ কর্মির ছেলে ছিল আখন, যার আর এক নাম ছিল আখর, সে ধ্বংসের জন্য ঠিক করে রাখা জিনিস নিয়ে ইস্রায়েলের উপর বিপদ ডেকে এনেছিল। এথনের একজন ছেলের নাম ছিল অসরিয়। হিষ্রোণের ছেলেরা হল যিরহমেল, রাম ও কালুবায়। রামের ছেলে হল অম্মীনাদব। অম্মীনাদবের ছেলে হল নহশোন; তিনি যিহূদা-গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন। নহশোনের ছেলে সল্‌মোন ও সল্‌মোনের ছেলে বোয়স; বোয়সের ছেলে ওবেদ আর ওবেদের ছেলে যিশয়। যিশয়ের বড় ছেলে হল ইলীয়াব, দ্বিতীয় অবীনাদব, তৃতীয় শম্ম, চতুর্থ নথনেল, পঞ্চম রদ্দয়, ষষ্ঠ ওৎসম ও সপ্তম দায়ূদ। তাদের বোনেরা হল সরূয়া ও অবীগল। অবীশয়, যোয়াব ও অসাহেল ছিলেন সরূয়ার তিনজন ছেলে। অবীগল ছিলেন অমাসার মা, আর ইশ্মায়েলীয় যেথর ছিলেন অমাসার বাবা। হিষ্রোণের ছেলে কালুবায়ের স্ত্রী অসূবার গর্ভে ও যিরিয়োতের গর্ভে ছেলেমেয়ে হয়েছিল। অসূবার ছেলেরা হল যেশর, শোবব ও অর্দোন। অসূবা মারা গেলে কালুবায় ইফ্রাথাকে বিয়ে করলেন। ইফ্রাথার গর্ভে হূরের জন্ম হয়েছিল। হূরের ছেলে ঊরি ও ঊরির ছেলে বৎসলেল। পরে হিষ্রোণ ষাট বছর বয়সে মাখীরের মেয়েকে, অর্থাৎ গিলিয়দের বোনকে বিয়ে করে তার সংগে দেহে মিলিত হয়েছিল। সেই স্ত্রীর গর্ভে সগূবের জন্ম হল। হিষ্রোণ কালেব-ইফ্রাথায় মারা গেলে পর তাঁর স্ত্রী অবিয়ার গর্ভে তাঁর ছেলে অসহূরের জন্ম হয়েছিল। অসহূর তকোয় নামে একটা গ্রাম গড়ে তুলেছিল। হিষ্রোণের বড় ছেলে ছিল যিরহমেল আর যিরহমেলের বড় ছেলে ছিল রাম; তারপর বূনা, ওরণ, ওৎসম ও অহিয়ের জন্ম হয়েছিল। অটারা নামে যিরহমেলের আর একজন স্ত্রী ছিল। তার ছেলের নাম ওনম। যিরহমেলের বড় ছেলে রামের ছেলেরা হল মাষ, যামীন ও একর। ওনমের ছেলেরা হল শম্ময় ও যাদা। শম্ময়ের ছেলেরা হল নাদব ও অবীশূর। অবীশূরের স্ত্রীর নাম ছিল অবীহয়িল। তার গর্ভে অহবান ও মোলীদের জন্ম হয়েছিল। নাদবের ছেলেরা হল সেলদ ও অপ্পয়িম। সেলদ কোন ছেলেপেলে না রেখে মারা গেল। অপ্পয়িমের ছেলে যিশী, যিশীর ছেলে শেশন ও শেশনের ছেলে অহলয়। শম্ময়ের ভাই যাদার ছেলেরা হল যেথর ও যোনাথন। যেথর কোন ছেলেপেলে না রেখে মারা গেল। যোনাথনের ছেলেরা হল পেলৎ ও সাসা। এরা ছিল যিরহমেলের বংশ। শেশনের কেবল মেয়ে ছিল, কোন ছেলে ছিল না। যার্হা নামে শেশনের একজন মিসরীয় দাস ছিল। শেশন তার দাস যার্হার সংগে তার একজন মেয়ের বিয়ে দিল এবং সেই মেয়ের গর্ভে অত্তয়ের জন্ম হয়েছিল। অত্তয়ের ছেলে নাথন, নাথনের ছেলে সাবদ, সাবদের ছেলে ইফ্‌লল, ইফ্‌ললের ছেলে ওবেদ, ওবেদের ছেলে যেহূ, যেহূর ছেলে অসরিয়, অসরিয়ের ছেলে হেলস, হেলসের ছেলে ইলীয়াসা, ইলীয়াসার ছেলে সিস্‌ময়, সিস্‌ময়ের ছেলে শল্লুম, শল্লুমের ছেলে যিকমিয় আর যিকমিয়ের ছেলে ইলীশামা। যিরহমেলের ভাই কালুবায়ের ছেলেদের মধ্যে মেশা ছিল বড়। মেশার ছেলে সীফ, সীফের ছেলে মারেশা আর মারেশার ছেলে হিব্রোণ। হিব্রোণের ছেলেরা হল কোরহ, তপূহ, রেকম ও শেমা। কালুবায়ের উপস্ত্রী ঐফার গর্ভে হারণ, মোৎসা ও গাসেসের জন্ম হয়েছিল। হারণের ছেলের নামও গাসেস রাখা হয়েছিল। যেহদয়ের ছেলেরা হল রেগম, যোথম, গেসন, পেলট, ঐফা ও শাফ। এই হল কালেবের বংশের কথা: ইফ্রাথার বড় ছেলে হূরের ছেলেরা হল শোবল, শল্‌ম আর হারেফ। শোবল কিরিয়ৎ-যিয়ারীম নামে একটা গ্রাম গড়ে তুলেছিল; শল্‌ম গড়ে তুলেছিল বৈৎলেহম গ্রাম আর হারেফ গড়ে তুলেছিল বৈৎ-গাদের গ্রাম। দায়ূদের যে সব ছেলেদের হিব্রোণে জন্ম হয়েছিল তারা হল তাঁর বড় ছেলে অম্নোন, যার মা ছিলেন যিষ্রিয়েলের অহীনোয়ম; দ্বিতীয় ছেলে দানিয়েল, যার মা ছিলেন কর্মিলের অবীগল; তৃতীয় ছেলে অবশালোম, যার মা ছিলেন গশূরের রাজা তল্‌ময়ের মেয়ে মাখা; চতুর্থ ছেলে আদোনিয়, যার মা ছিলেন হগীত; পঞ্চম ছেলে শফটিয়, যার মা ছিলেন অবীটল; ষষ্ঠ ছেলে যিত্রিয়ম, যার মা ছিলেন দায়ূদের আর একজন স্ত্রী ইগ্লা। দায়ূদ হিব্রোণে সাড়ে সাত বছর রাজত্ব করেছিলেন, আর সেই সময় হিব্রোণে তাঁর এই ছয় ছেলের জন্ম হয়েছিল। দায়ূদ তেত্রিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন, আর সেখানে অম্মীয়েলের মেয়ে বৎশেবার গর্ভে তাঁর চারজন ছেলের জন্ম হয়েছিল। তারা হল শিমিয়, শোবব, নাথন ও শলোমন। এরা ছিল দায়ূদের ছেলে, আর তাদের বোনের নাম ছিল তামর। এছাড়াও দায়ূদের উপস্ত্রীদের গর্ভে আরও ছেলের জন্ম হয়েছিল। শলোমনের ছেলে রহবিয়াম, রহবিয়ামের ছেলে অবিয়, অবিয়ের ছেলে আসা, আসার ছেলে যিহোশাফট, যিহোশাফটের ছেলে যিহোরাম, যিহোরামের ছেলে অহসিয়, অহসিয়ের ছেলে যোয়াশ, যোয়াশের ছেলে অমৎসিয়, অমৎসিয়ের ছেলে অসরিয়, অসরিয়ের ছেলে যোথম, যোথমের ছেলে আহস, আহসের ছেলে হিষ্কিয়, হিষ্কিয়ের ছেলে মনঃশি, মনঃশির ছেলে আমোন ও আমোনের ছেলে যোশিয়। যোশিয়ের প্রথম ছেলে যোহানন, দ্বিতীয় যিহোয়াকীম, তৃতীয় সিদিকিয়, চতুর্থ শল্লুম। যিহোয়াকীমের ছেলেরা হল যিকনিয় ও সিদিকিয়। বন্দী যিকনিয়ের ছেলেরা হল শল্টীয়েল, মল্‌কীরাম, পদায়, শিনৎসর, যিকমিয়, হোশামা ও নদবিয়। পদায়ের ছেলেরা হল সরুব্বাবিল ও শিমিয়ি। সরুব্বাবিলের ছেলেরা হল মশল্লুম ও হনানিয়। তাদের বোনের নাম ছিল শলোমীৎ। এছাড়া সরুব্বাবিলের আরও পাঁচটি ছেলে ছিল; তারা হল হশুবা, ওহেল, বেরিখিয়, হসদিয় ও যুশব-হেষদ। হনানিয়ের বংশের লোকেরা হল পলটিয় ও যিশায়াহ; এছাড়া সেই বংশে ছিল রফায়ের, অর্ণনের, ওবদিয়ের ও শখনিয়ের ছেলেরা। শখনিয়ের বংশের লোকেরা হল শময়িয় ও তার ছেলেরা; সেই ছেলেদের নাম ছিল হটুশ, যিগাল, বারীহ, নিয়রিয় ও শাফট। এরা ছিল মোট ছয়জন। নিয়রিয়ের তিনজন ছেলে হল ইলীয়ৈনয়, হিষ্কিয় ও অস্রীকাম। ইলীয়ৈনয়ের সাতজন ছেলে হল হোদবিয়, ইলীয়াশীব, পলায়ঃ, অক্কুব, যোহানন, দলায় ও অনানি। যিহূদার বংশের লোকেরা হল পেরস, হিষ্রোণ, কর্মী, হূর ও শোবল। শোবলের ছেলে রায়া, রায়ার ছেলে যহৎ এবং যহতের ছেলে অহূময় ও লহদ। এরা ছিল সরাথীয় বংশের লোক। যে লোক ঐটম গ্রাম গড়ে তুলেছিল তার ছেলেরা হল যিষ্রিয়েল, যিশ্মা ও যিদ্‌বশ। তাদের বোনের নাম ছিল হৎসলিল-পোনী। পনূয়েলের ছেলে গাদোর ও এশরের ছেলে হূশ। এরা সবাই ইফ্রাথার বড় ছেলে হূরের বংশের লোক। হূর বৈৎলেহম গ্রাম গড়ে তুলেছিল। তকোয় গ্রামটা যে গড়ে তুলেছিল সেই অস্‌হূরের দু’জন স্ত্রীর নাম ছিল হিলা ও নারা। নারার গর্ভে অহুষম, হেফর, তৈমিনি ও অহষ্টরির জন্ম হয়েছিল। এরা ছিল নারার ছেলে। হিলার ছেলেরা হল সেরৎ, যিৎসোহর ও ইৎনন। কোষের ছেলেরা হল আনূব ও সোবেবা। কোষ ছিল হারুমের ছেলে অহর্হলের বংশের পূর্বপুরুষ। যাবেষ তাঁর ভাইদের চেয়ে আরও সম্মানিত লোক ছিলেন। তাঁর মা তাঁর এই নাম রেখে বলেছিলেন, “আমি খুব কষ্টে তাকে জন্ম দিয়েছি।” যাবেষ ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ডেকে বলেছিলেন, “তুমি আমাকে আশীর্বাদ কর আর আমার সম্পত্তি বাড়িয়ে দাও। তোমার শক্তি আমার সংগে সংগে থাকুক এবং সমস্ত বিপদ থেকে তুমি আমাকে রক্ষা কর যাতে আমি কষ্ট না পাই।” আর ঈশ্বর তাঁর অনুরোধ রক্ষা করলেন। কনসের ছেলেরা হল অৎনীয়েল ও সরায় এবং অৎনীয়েলের ছেলে হথৎ। মিয়োনোথয়ের ছেলে হল অফ্রা আর সরায়ের ছেলে যোয়াব। যোয়াব গী-হরসীম গ্রাম গড়ে তুলেছিল। সেই গ্রামটাকে গী-হরসীম বলা হত, কারণ তার সব লোকেরা ছিল কারিগর। যিফুন্নির ছেলে কালেবের ছেলেরা হল ঈরূ, এলা ও নয়ম। এলার ছেলের নাম ছিল কনস। যিহলিলেলের ছেলেরা হল সীফ, সীফা, তীরিয় ও অসারেল। নহমের বোনকে হোদিয় বিয়ে করেছিল। তার ছেলেরা হল গর্মীয় কিয়ীলার বাবা ও মাখাথীয় ইষ্টিমোয়ের বাবা শীমোনের ছেলেরা হল অম্নোন, রিন্ন, বিন্‌-হানন ও তীলোন। যিশীর ছেলেরা হল সোহেৎ ও বিন্‌-সোহেৎ। শেলার বংশের লোকদের মধ্যে যারা নতায়ীম ও গদেরাতে বাস করত তারা ছিল কুমার। রাজার কাজকর্ম করবার জন্যই তারা সেখানে থাকত। শিমিয়োনের ছেলেরা হল নমূয়েল, যামীন, যারীব, সেরহ ও শৌল। শৌলের ছেলে হল শল্লুম, শল্লুমের ছেলে মিব্‌সম ও মিব্‌সমের ছেলে মিশ্‌ম। মিশ্‌মের একজন ছেলে হল হম্মুয়েল, হম্মুয়েলের ছেলে শক্কুর ও শক্কুরের ছেলে শিময়ি। শিময়ির ষোলজন ছেলে ও ছয়জন মেয়ে ছিল, কিন্তু তার ভাইদের বেশী ছেলেপেলে ছিল না। সেইজন্য তাদের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে যিহূদা-গোষ্ঠীর মত এত লোক ছিল না। শিমিয়োন-গোষ্ঠীর এই সব লোকেরা যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের সময়ে সেখানে গিয়েছিল। তারা হামীয়দের বাসস্থানে গিয়ে তাদের আক্রমণ করল। এছাড়া তারা সেখানকার মিয়ূনীয়দেরও আক্রমণ করে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করল। তাদের আর কোন চিহ্নই রইল না। তারপর তারা ঐ লোকদের জায়গায় বাস করতে লাগল, কারণ তাদের পশুপালের জন্য সেখানে প্রচুর ঘাস ছিল। শিমিয়োনীয়দের মধ্যে পাঁচশো লোক যিশীর ছেলে পলটিয়, নিয়রিয়, রফায়িয় ও উষীয়েলকে তাদের নেতা করে নিয়ে সেয়ীর নামে পাহাড়ী এলাকাটা আক্রমণ করল। আগে অমালেকীয়দের কিছু লোক সেয়ীরে পালিয়ে এসে সেখানে বাস করছিল। শিমিয়োনীয়েরা সেই সব লোকদের মেরে ফেলে সেখানে বাস করতে লাগল। আজও তারা সেখানে বাস করছে। ইস্রায়েলের বড় ছেলে রূবেণ তার বাবার বিছানা অপবিত্র করেছিল বলে বড় ছেলের অধিকার হারিয়েছিল। সেই অধিকার ইস্রায়েলের অন্য ছেলে যোষেফের ছেলেদের দেওয়া হয়েছিল। তাই বংশ-তালিকায় তার স্থান বড় ছেলে হিসাবে লেখা হয় নি। আবার যদিও ভাইদের গোষ্ঠীর মধ্যে যিহূদা-গোষ্ঠী সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল এবং তাঁর গোষ্ঠী থেকেই নেতা বেছে নেওয়া হয়েছিল তবুও বড় ছেলের অধিকার যোষেফই পেয়েছিলেন। ইস্রায়েলের বড় ছেলে রূবেণের ছেলেরা হল হনোক, পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্মী। যোয়েলের বংশের লোকেরা হল যোয়েলের ছেলে শিময়িয়, শিময়িয়ের ছেলে গোগ, গোগের ছেলে শিমিয়ি, গিলিয়দে তাদের পশুপালের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল বলে পূর্ব দিকে মরু-এলাকা যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেই পর্যন্ত তারা দখল করে নিল। এই মরু-এলাকা ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম দিকে ছিল। শৌলের রাজত্বের সময় রূবেণীয়েরা হাগরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের মেরে ফেলেছিল। তারা গিলিয়দের পূর্ব দিকে, অর্থাৎ হাগরীয়দের সমস্ত জায়গা দখল করে নিয়ে সেখানে বাস করতে লাগল। গাদ-গোষ্ঠীর লোকেরা রূবেণীয়দের পাশে বাশন দেশের সলখা পর্যন্ত জায়গাটায় বাস করত। তাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন যোয়েল, দ্বিতীয় শাফম, তারপর যানয় ও শাফট। এঁরা বাশনে থাকতেন। গাদ-গোষ্ঠীর বাকী লোকেরা ছিল এই সাতজনের, অর্থাৎ মীখায়েল মশুল্লম, শেবা, যোরায়, যাকন, সীয় ও এবরের বংশের লোক। এরা ছিল হূরির ছেলে অবীহয়িলের বংশের লোক। হূরির বাবা ছিল যারোহ, যারোহের বাবা গিলিয়দ, গিলিয়দের বাবা মীখায়েল, মীখায়েলের বাবা যিশীশয়, যিশীশয়ের বাবা যহদো এবং যহদোর বাবা বূষ। অব্দিয়েলের ছেলে অহি ছিলেন তাদের বংশের নেতা আর অব্দিয়েল ছিল গূনির ছেলে। গাদ-গোষ্ঠীর লোকেরা বাশন দেশে, গিলিয়দে এবং সেখানকার গ্রামগুলোতে আর শারোণ এলাকার সমস্ত পশু চরাবার জায়গায় বাস করত। যিহূদার রাজা যোথম ও ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের রাজত্বের সময়ে এই সব লোকদের নাম বংশ-তালিকায় লেখা হয়েছিল। রূবেণ-গোষ্ঠীর, গাদ-গোষ্ঠীর, ও মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোক থেকে চুয়াল্লিশ হাজার সাতশো ষাটজন শক্তিশালী লোক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা ঢাল, তলোয়ার ও ধনুকের ব্যবহার জানত এবং যুদ্ধে বেশ দক্ষ ছিল। তারা হাগরীয়দের, অর্থাৎ যিটূরের, নাফীশের ও নোদবের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। এদের সংগে যুদ্ধ করবার সময় ঈশ্বর তাদের সাহায্য করেছিলেন। তিনি হাগরীয় ও তাদের পক্ষের সমস্ত লোকদের তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, কারণ যুদ্ধের সময় তারা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিল। তারা তাঁর উপর নির্ভর করেছিল বলে তিনি তাদের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। তারা হাগরীয়দের পঞ্চাশ হাজার উট, আড়াই লক্ষ ভেড়া ও দু’হাজার গাধা দখল করে নিল এবং এক লক্ষ লোককে বন্দী করে নিয়ে গেল। এছাড়া শত্রুদের অনেকে মারা পড়ল, কারণ ঈশ্বরের পরিচালনায় এই যুদ্ধ হয়েছিল। ইস্রায়েলীয়েরা বন্দী হবার আগ পর্যন্ত সেখানে বাস করত। মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোক বাশন থেকে বাল-হর্মোণ, সনীর ও হর্মোণ পাহাড় পর্যন্ত যে জায়গাগুলো ছিল সেখানে বাস করতে লাগল। তারা সংখ্যায় অনেক ছিল। তাদের বংশের নেতাদের নাম ছিল এফর, যিশী, ইলীয়েল, অস্রীয়েল, যিরমিয়, হোদবিয় ও যহদীয়েল। এই সব শক্তিশালী যোদ্ধারা বিখ্যাত লোক ছিলেন। কিন্তু তাঁদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের প্রতি তাঁরা বিশ্বস্ত রইলেন না। দেশের যে জাতিগুলোকে ঈশ্বর তাঁদের সামনে থেকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তাদের দেব-দেবতাদের কাছে তাঁরা নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছিলেন। তখন ইস্রায়েলের ঈশ্বর আসিরিয়ার রাজা পূলের, অর্থাৎ তিগ্লৎ-পিলেষরের মন উত্তেজিত করে তুললেন। তিনি রূবেণীয়, গাদীয় ও মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোককে বন্দী করে হেলহ, হাবোর ও হারা এলাকায় এবং গোষণ নদীর ধারে নিয়ে গেলেন; আর আজও তারা সেখানেই আছে। লেবির ছেলেরা হল গের্শোন, কহাৎ ও মরারি। কহাতের ছেলেরা হল অম্রাম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল। অম্রামের সন্তানেরা হল হারোণ, মোশি ও মরিয়ম। হারোণের ছেলেরা হল নাদব, অবীহূ, ইলিয়াসর ও ঈথামর। ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস, পীনহসের ছেলে অবিশূয়, অবিশূয়ের ছেলে বুক্কি, বুক্কির ছেলে উষি, উষির ছেলে সরহিয়, সরহিয়ের ছেলে মরায়োৎ, মরায়োতের ছেলে অমরিয়, অমরিয়ের ছেলে অহীটূব, অহীটূবের ছেলে সাদোক, সাদোকের ছেলে অহীমাস, অহীমাসের ছেলে অসরিয়, অসরিয়ের ছেলে যোহানন, যোহাননের ছেলে অসরিয়। ইনি যিরূশালেমে শলোমনের তৈরী উপাসনা-ঘরে পুরোহিতের কাজ করতেন। অসরিয়ের ছেলে অমরিয়, অমরিয়ের ছেলে অহীটূব, অহীটূবের ছেলে সাদোক, সাদোকের ছেলে শল্লুম, শল্লুমের ছেলে হিল্কিয়, হিল্কিয়ের ছেলে অসরিয়, অসরিয়ের ছেলে সরায় এবং সরায়ের ছেলে যিহোষাদক। সদাপ্রভু যে সময় নবূখদ্‌নিৎসরকে দিয়ে যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের বন্দীদশায় পাঠিয়েছিলেন সেই সময় যিহোষাদককেও সেখানে পাঠিয়েছিলেন। লেবির ছেলেরা হল গের্শোন, কহাৎ ও মরারি। গের্শোনের ছেলেদের নাম হল লিব্‌নি আর শিমিয়ি। কহাতের ছেলেরা হল অম্রাম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল। মরারির ছেলেরা হল মহলি ও মূশি। পূর্বপুরুষদের বংশ অনুসারে এদের নাম লেবীয়দের বংশ-তালিকায় লেখা হয়েছিল। গের্শোনের ছেলে লিব্‌নি, লিব্‌নির ছেলে যহৎ, যহতের ছেলে সিম্ম, সিম্মের ছেলে যোয়াহ, যোয়াহের ছেলে ইদ্দো, ইদ্দোর ছেলে সেরহ, সেরহের ছেলে যিয়ত্রয়। কহাতের একজন ছেলের নাম হল অম্মীনাদব, অম্মীনাদবের ছেলে কোরহ, কোরহের ছেলে অসীর, অসীরের ছেলে ইল্‌কানা, ইল্‌কানার ছেলে ইবীয়াসফ, ইবীয়াসফের ছেলে অসীর, অসীরের ছেলে তহৎ, তহতের ছেলে ঊরীয়েল, ঊরীয়েলের ছেলে ঊষিয়, ঊষিয়ের ছেলে শৌল। ইল্‌কানার ছেলেরা হল অমাসয় ও অহীমোৎ, অহীমোতের ছেলে ইল্‌কানা, ইল্‌কানার ছেলে সোফী, সোফীর ছেলে নহৎ, নহতের ছেলে ইলীয়াব, ইলীয়াবের ছেলে যিরোহম, যিরোহমের ছেলে ইল্‌কানা এবং ইল্‌কানার ছেলে শমূয়েল। শমূয়েলের প্রথম ছেলের নাম যোয়েল ও দ্বিতীয় ছেলের নাম অবিয়। মরারির একজন ছেলের নাম হল মহলি, মহলির ছেলে লিব্‌নি, লিব্‌নির ছেলে শিমিয়ি, শিমিয়ির ছেলে উষঃ, উষের ছেলে শিমিয়, শিমিয়ের ছেলে হগিয় এবং হগিয়ের ছেলে অসায়। সাক্ষ্য-সিন্দুকটি সদাপ্রভুর ঘরে এনে রাখবার পরে দায়ূদ কিছু লোকের উপর গান-বাজনার ভার দিলেন। শলোমন যিরূশালেমে সদাপ্রভুর ঘর তৈরী না করা পর্যন্ত সেই লোকেরা আবাস-তাম্বুর সামনে, অর্থাৎ মিলন-তাম্বুর সামনে গান-বাজনা করে সদাপ্রভুর সেবা-কাজ করত। তাদের জন্য যে নিয়ম ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল সেই অনুসারে তারা নিজেদের কাজ করত। এই সেবা-কাজে যে সব লোকেরা এবং তাদের বংশধরেরা নিযুক্ত হয়েছিল তারা হল: কহাতীয়দের মধ্যে ছিলেন গায়ক হেমন। হেমন ছিলেন যোয়েলের ছেলে, যোয়েল শমূয়েলের ছেলে, শমূয়েল ইল্‌কানার ছেলে, ইল্‌কানা যিরোহমের ছেলে, যিরোহম ইলীয়েলের ছেলে, ইলীয়েল তোহের ছেলে, তোহ সূফের ছেলে, সূফ ইল্‌কানার ছেলে, ইল্‌কানা মাহতের ছেলে, মাহৎ অমাসয়ের ছেলে, অমাসয় ইল্‌কানার ছেলে, ইল্‌কানা যোয়েলের ছেলে, যোয়েল অসরিয়ের ছেলে, অসরিয় সফনিয়ের ছেলে, সফনিয় তহতের ছেলে, তহৎ অসীরের ছেলে, অসীর ইবীয়াসফের ছেলে, ইবীয়াসফ কোরহের ছেলে, কোরহ যিষ্‌হরের ছেলে, যিষ্‌হর কহাতের ছেলে, কহাৎ লেবির ছেলে এবং লেবি ইস্রায়েলের ছেলে। হেমনের আত্মীয় আসফ ও তার গায়কের দল হেমনের ডান দিকে দাঁড়াত। আসফ ছিলেন বেরিখিয়ের ছেলে, বেরিখিয় শিমিয়ের ছেলে, শিমিয় মীখায়েলের ছেলে, মীখায়েল বাসেয়ের ছেলে, বাসেয় মল্কিয়ের ছেলে, মল্কিয় ইৎনির ছেলে, ইৎনি সেরহের ছেলে, সেরহ অদায়ার ছেলে, অদায়া এথনের ছেলে, এথন সিম্মের ছেলে, সিম্ম শিমিয়ির ছেলে, শিমিয়ি যহতের ছেলে, যহৎ গের্শোনের ছেলে এবং গের্শোন লেবির ছেলে। তাদের আত্মীয়েরা, অর্থাৎ মরারীয় গায়ক দল হেমনের বাঁ দিকে দাঁড়াত। এথন ছিলেন কীশির ছেলে, কীশি অব্দির ছেলে, অব্দি মল্লুকের ছেলে, মল্লুক হশবিয়ের ছেলে, হশবিয় অমৎসিয়ের ছেলে, অমৎসিয় হিল্কিয়ের ছেলে, হিল্কিয় অম্‌সির ছেলে, অম্‌সি বানির ছেলে, বানি শেমরের ছেলে, শেমর মহলির ছেলে, মহলি মূশির ছেলে, মূশি মরারির ছেলে এবং মরারি লেবির ছেলে। তাদের আত্মীয় অন্যান্য লেবীয়েরা আবাস-তাম্বুর, অর্থাৎ ঈশ্বরের ঘরের অন্যান্য সমস্ত কাজে নিযুক্ত হয়েছিল। কিন্তু হারোণ ও তাঁর বংশের লোকেরা ঈশ্বরের দাস মোশির সমস্ত আদেশ অনুসারে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদী ও ধূপ-বেদীর উপরে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতেন এবং মহাপবিত্র স্থানে যা কিছু করবার দরকার তা করতেন আর ইস্রায়েল জাতির পাপ ঢাকা দেবার ব্যবস্থা করতেন। হারোণের একজন ছেলের নাম ছিল ইলিয়াসর, ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস, পীনহসের ছেলে অবীশূয়, অবীশূয়ের ছেলে বুক্কি, বুক্কির ছেলে উষি, উষির ছেলে সরাহিয়, সরাহিয়ের ছেলে মরায়োৎ, মরায়োতের ছেলে অমরিয়, অমরিয়ের ছেলে অহীটূব, অহীটূবের ছেলে সাদোক এবং সাদোকের ছেলে অহীমাস। বিন্যামীন-গোষ্ঠীর জায়গা থেকে তাঁদের দেওয়া হল গেবা, আলেমৎ, অনাথোৎ ও এগুলোর চারপাশের পশু চরাবার মাঠ। মোট তেরোটা শহর ও গ্রাম কহাতীয় বংশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হল। মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের এলাকা থেকে দশটা শহর ও গ্রাম গুলিবাঁট অনুসারে কহাতের বাকী বংশের লোকদের দেওয়া হল। বংশ অনুসারে গের্শোনের বংশের লোকদের দেওয়া হল ইষাখর, আশের, নপ্তালি এবং বাশনের মনঃশি-গোষ্ঠীর এলাকা থেকে তেরোটা শহর ও গ্রাম। রূবেণ, গাদ ও সবূলূন-গোষ্ঠীর এলাকা থেকে গুলিবাঁট করে বারোটা শহর ও গ্রাম বংশ অনুসারে মরারির বংশের লোকদের দেওয়া হল। এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা এই সব শহর ও গ্রাম এবং সেগুলোর পশু চরাবার মাঠ লেবীয়দের দিল। যিহূদা, শিমিয়োন ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর এলাকা থেকে যে সব শহর ও গ্রামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোও গুলিবাঁট অনুসারে দেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি কহাতীয় বংশকে ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর এলাকা থেকে কতগুলো শহর ও গ্রাম দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের এলাকা থেকে আনের ও বিল্‌য়ম এবং সেগুলোর চারপাশের পশু চরাবার মাঠ কহাতের বাকী বংশগুলোকে দেওয়া হল। গের্শোনীয়েরা মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের এলাকা থেকে পশু চরাবার মাঠ সুদ্ধ বাশনের গোলন ও অষ্টারোৎ পেল। নপ্তালি-গোষ্ঠীর এলাকা থেকে পেল পশু চরাবার মাঠ সুদ্ধ গালীলের কেদশ, হম্মোন ও কিরিয়াথয়িম। বাকী লেবীয়েরা, অর্থাৎ মরারীয়েরা সবূলূন-গোষ্ঠীর এলাকা থেকে পশু চরাবার মাঠ সুদ্ধ রিম্মোণ ও তাবোর পেল। ইষাখরের চারজন ছেলে হল তোলয়, পূয়, যাশূব ও শিম্রোণ। তোলয়ের ছেলেরা হল উষি, রফায়, যিরীয়েল, যহময়, যিব্‌সম, ও শমূয়েল। এঁরা ছিলেন নিজের নিজের বংশের নেতা। দায়ূদের রাজত্বের সময়ে তোলয়ের বংশের যে সব লোকদের যোদ্ধা হিসাবে বংশ-তালিকায় নাম লেখা হয়েছিল তারা সংখ্যায় ছিল বাইশ হাজার ছ’শো। উষির একজন ছেলের নাম যিষ্রাহিয়। যিষ্রাহিয়ের ছেলেরা হল মীখায়েল, ওবদিয়, যোয়েল ও যিশিয়। যিষ্রাহিয় সুদ্ধ এঁরা পাঁচজন ছিলেন বংশের নেতা। তাঁদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে ছিল অনেক; কাজেই তাঁদের বংশ-তালিকার হিসাব মত যুদ্ধ করবার জন্য প্রস্তুত লোকদের সংখ্যা ছিল ছত্রিশ হাজার। ইষাখর-গোষ্ঠীর সমস্ত বংশের মধ্যে মোট সাতাশি হাজার যোদ্ধার নাম বংশ-তালিকায় লেখা হয়েছিল। বিন্যামীনের তিনজন ছেলে হল বেলা, বেখর, ও যিদীয়েল। বেলার পাঁচজন ছেলে হল ইষ্‌বোণ, উষি, উষীয়েল, যিরেমোৎ ও ঈরী। এঁরা ছিলেন নিজের নিজের বংশের নেতা। তাঁদের বংশ-তালিকায় বাইশ হাজার চৌত্রিশ জন লোকের নাম যোদ্ধা হিসাবে লেখা হয়েছিল। বেখরের ছেলেরা হল সমীরাঃ, যোয়াশ, ইলীয়েষর, ইলিয়ো-ঐনয়, অম্রি, যিরেমোৎ, অবিয়, অনাথোৎ ও আলেমৎ। তাদের বংশ-তালিকায় নেতাদের নাম ও বিশ হাজার দু’শোজন যোদ্ধার নাম লেখা হয়েছিল। যিদীয়েলের একজন ছেলের নাম বিল্‌হন। বিল্‌হনের ছেলেরা হল যিয়ূশ, বিন্যামীন, এহূদ, কনানা, সেথন, তর্শীশ ও অহীশহর। যিদীয়েলের বংশের এই সব লোকেরা ছিলেন বংশের নেতা ও বীর যোদ্ধা। তাঁদের সতেরো হাজার দু’শো লোক যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিল। শুপ্পীম ও হুপ্পীম ছিল ঈরের ছেলে এবং হূশীম ছিল অহেরের ছেলে। নপ্তালির ছেলেরা হল যহসিয়েল, গূনি, যেৎসর ও শল্লুম। এদের বাবার মায়ের নাম ছিল বিল্‌হা। মনঃশির ছেলেরা হল অস্রীয়েল ও গিলিয়দের বাবা মাখীর। মনঃশির অরামীয় উপস্ত্রীর গর্ভে এদের জন্ম হয়েছিল। মাখীর হুপ্পীম ও শুপ্পীমের জন্য বৌ এনেছিল। মাখীরের বোনের নাম ছিল মাখা। মনঃশির বংশের আর একজন লোক ছিল সলফাদ। তার ছিল সব মেয়ে। মাখীরের স্ত্রী মাখার গর্ভে পেরশ নামে একটি ছেলের জন্ম হয়েছিল। তার ভাইয়ের নাম ছিল শেরশ এবং তার ছেলেদের নাম ছিল ঊলম ও রেকম। ঊলমের একজন ছেলের নাম বদান। এরা ছিল গিলিয়দের বংশের লোক। গিলিয়দ মাখীরের ছেলে আর মাখীর মনঃশির ছেলে। গিলিয়দের বোন হম্মোলেকতের ছেলেরা হল ঈশ্‌হোদ, অবীয়েষর ও মহলা। শমীদার ছেলেরা হল অহিয়ন, শেখম, লিক্‌হি ও অনীয়াম। ইফ্রয়িমের একজন ছেলের নাম শূথেলহ, শূথেলহের ছেলে বেরদ, বেরদের ছেলে তহৎ, তহতের ছেলে ইলিয়াদা, ইলিয়াদার ছেলে তহৎ, তহতের ছেলে সাবদ এবং সাবদের ছেলে শূথেলহ। ইফ্রয়িমের আরও দুই ছেলের নাম ছিল এৎসর ও ইলিয়দ। দেশে জন্মগ্রহণকারী গাতের লোকদের হাতে তারা মারা পড়েছিল, কারণ তারা গাতীয়দের পশু চুরি করবার জন্য গাতে গিয়েছিল। তাদের বাবা ইফ্রয়িম অনেক দিন পর্যন্ত তাদের জন্য শোক করেছিলেন। তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিল। এর পর তিনি স্ত্রীর সংগে মিলিত হলে পর তাঁর স্ত্রী গর্ভবতী হলেন এবং একটি ছেলের জন্ম হল। ইফ্রয়িম তার নাম রাখলেন বরীয়, কারণ তাঁর পরিবারে তখন অমংগল নেমে এসেছিল। তাঁর মেয়ের নাম ছিল শীরা। শীরা উপরের ও নীচের বৈৎ-হোরোণ ও উষেণ-শীরা গ্রাম গড়ে তুলেছিল। বরীয়ের ছেলে রেফহ, রেফহের ছেলে রেশফ, রেশফের ছেলে তেলহ, তেলহের ছেলে তহন, তহনের ছেলে লাদন, লাদনের ছেলে অম্মীহূদ, অম্মীহূদের ছেলে ইলীশামা, ইলীশামার ছেলে নূন ও নূনের ছেলে যিহোশূয়। বৈথেল ও তার চারপাশের গ্রামগুলো, পূর্ব দিকে নারণ, পশ্চিম দিকে গেষর ও তার চারপাশের গ্রামগুলো ছিল ইফ্রয়িমের জমিজমা ও বাসস্থান। এছাড়া শিখিম ও তার গ্রামগুলো থেকে অয়া ও তার গ্রামগুলো পর্যন্ত ছিল তাদের এলাকা। মনঃশির সীমানা বরাবর বৈৎশান, তানক, মগিদ্দো, দোর ও এগুলোর চারপাশের সব গ্রামও ছিল তাদের। ইস্রায়েলের ছেলে যোষেফের বংশধরেরা এই সব শহরে ও গ্রামে বাস করত। আশেরের ছেলেরা হল যিম্ন, যিশ্‌বাঃ, যিশ্‌বী ও বরীয়। সেরহ ছিল তাদের বোন। বরীয়ের ছেলেরা হল হেবর ও মল্কীয়েল। মল্কীয়েল ছিল বির্ষোতের বাবা। হেবরের ছেলেরা হল যফ্‌লেট, শোমের ও হোথম। শূয়া ছিল তাদের বোন। যফ্‌লেটের ছেলেরা হল পাসক, বিম্‌হল ও অশ্বৎ। শেমরের ছেলেরা হল অহি, রোগহ, যিহুব্ব ও অরাম। শেমরের ভাই হেলমের ছেলেরা হল শোফহ, যিম্ন, শেলশ ও আমল। শোফহের ছেলেরা হল সূহ, হর্ণেফর, শূয়াল, বেরী, যিম্র, বেৎসর, হোদ, শম্ম, শিল্‌শ, যিত্রণ ও বেরা। যেথরের ছেলেরা হল যিফুন্নি, পিসপ ও অরা। উল্লের ছেলেরা হল আরহ, হন্নীয়েল ও রিৎসিয়। আশের-গোষ্ঠীর এই সব লোকেরা ছিলেন নিজের নিজের বংশের নেতা। এঁরা প্রত্যেকে ছিলেন বাছাই-করা শক্তিশালী যোদ্ধা ও প্রধান নেতা। আশেরের বংশ-তালিকায় লেখা লোকদের মধ্যে যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত লোকের সংখ্যা ছিল ছাব্বিশ হাজার। বিন্যামীনের প্রথম ছেলে হল বেলা, দ্বিতীয় অস্‌বেল, তৃতীয় অহর্হ, চতুর্থ নোহা ও পঞ্চম রাফা। বেলার ছেলেরা হল অদ্দর, গেরা, অবীহূদ, অবীশূয়, নামান, আহোহ, গেরা, শফূফন ও হূরম। যিয়ূশ, শখিয় ও মির্ম। এঁরা ছিলেন নিজের নিজের বংশের নেতা। হূশীমের গর্ভে তার আরও দুই ছেলে অহীটূব ও ইল্পালের জন্ম হয়েছিল। এঁরা সবাই ছিলেন নিজের নিজের বংশের নেতা এবং বংশ-তালিকা অনুসারে এঁরা প্রত্যেকে ছিলেন প্রধান লোক। এঁরা যিরূশালেমে বাস করতেন। যে লোক গিবিয়োন গ্রাম গড়ে তুলেছিল সে সেখানে বাস করত। তার স্ত্রীর নাম ছিল মাখা; তার প্রথম ছেলে হল অব্দোন, তারপর সূর, কীশ, বাল, নাদব, নেরের ছেলে কীশ আর কীশের ছেলে শৌল। শৌলের ছেলেরা হল যোনাথন, মল্কীশূয়, অবীনাদব ও ইশ্‌বাল। যোনাথনের ছেলে মরীব্‌-বাল ও মরীব্‌-বালের ছেলে মীখা। মীখার ছেলেরা হল পিথোন, মেলক, তরেয় ও আহস। আহসের ছেলে যিহোয়াদা, যিহোয়াদার ছেলেরা হল আলেমৎ, অস্‌মাবৎ ও সিম্রি। সিম্রির ছেলে মোৎসা, মোৎসার ছেলে বিনিয়া, বিনিয়ার ছেলে রফায়, রফায়ের ছেলে ইলীয়াসা ও ইলীয়াসার ছেলে আৎসেল। আৎসেলের ছয়জন ছেলের নাম হল অস্রীকাম, বোখরূ, ইশ্মায়েল, শিয়রিয়, ওবদিয় ও হানান। আৎসেলের ভাই এশকের ছেলেদের মধ্যে প্রথম হল ঊলম, দ্বিতীয় যিয়ূশ ও তৃতীয় এলীফেলট। ঊলমের ছেলেরা শক্তিশালী যোদ্ধা ছিল। এরা ধনুকের ব্যবহার জানত। তাদের অনেক ছেলে ও নাতি ছিল। তাদের সংখ্যা ছিল একশো পঞ্চাশ জন। “ইস্রায়েলীয় রাজাদের বই”-তে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বংশ-তালিকা লেখা রয়েছে। যিহূদার লোকদের অবিশ্বস্ততার জন্য তাদের বাবিলে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যারা প্রথমে ফিরে এসে নিজেদের শহর ও গ্রামে নিজেদের জায়গা-জমির উপর আবার বাস করতে শুরু করল তারা ছিল পুরোহিত, লেবীয়, উপাসনা-ঘরের সেবাকারী এবং অন্যান্য ইস্রায়েলীয়েরা। যিহূদা, বিন্যামীন, ইফ্রয়িম ও মনঃশি-গোষ্ঠীর যারা যিরূশালেমে বাস করতে লাগল তারা হল: যিহূদা-গোষ্ঠী থেকে: যিহূদার ছেলে পেরসের বংশের উথয়। উথয় ছিল অম্মীহূদের ছেলে, অম্মীহূদ অম্রির ছেলে, অম্রি ইম্রির ছেলে, ইম্রি বানির ছেলে ও বানি পেরসের ছেলে। যিহূদার ছেলে শেলার বংশের অসায় ও তার ছেলেরা। অসায় ছিল তার বাবার বড় ছেলে। যিহূদার ছেলে শেরহের বংশের যুয়েল। যিহূদা-গোষ্ঠীর যে লোকেরা যিরূশালেমে বাস করল তাদের সংখ্যা হল ছ’শো নব্বই জন। বিন্যামীন-গোষ্ঠী থেকে: মশুল্লমের ছেলে সল্লু। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল হোদবিয় এবং হস্‌নূয়। যিরোহমের ছেলে যিব্‌নিয়। মিখ্রির নাতি, অর্থাৎ উষির ছেলে এলা। শফটিয়ের ছেলে মশুল্লম। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল রূয়েল ও যিব্‌নিয়। এঁরা ছিলেন নিজের নিজের বংশের নেতা। বিন্যামীনের বংশ-তালিকা অনুসারে যে সব লোক যিরূশালেমে বাস করল তাদের সংখ্যা ছিল ন’শো ছাপান্ন জন। যিরোহমের ছেলে অদায়া। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল পশ্‌হূর ও মল্কিয়। অদীয়েলের ছেলে মাসয়। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল যহসেরা, মশুল্লম, মশিল্লমীত ও ইম্মের। এঁরা ছিলেন নিজের নিজের বংশের নেতা। যে পুরোহিতেরা যিরূশালেমে বাস করলেন তাঁদের সংখ্যা ছিল এক হাজার সাতশো ষাট জন। এঁরা ঈশ্বরের ঘরের সেবা-কাজের ভার-পাওয়া যোগ্য লোক। লেবীয়দের থেকে: হশূবের ছেলে শময়িয়। তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল অস্রীকাম, হশবিয় ও মরারি। বকবকর, হেরশ, গালল ও মীখার ছেলে মত্তনিয়। মত্তনিয়ের পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল সিখ্রি ও আসফ। শময়িয়ের ছেলে ওবদিয়। তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল গালল ও যিদূথূন। ইল্‌কানার নাতি, অর্থাৎ আসার ছেলে বেরিখিয়। সে নটোফাতীয়দের গ্রামে বাস করত। সেই সময় ইলীয়াসরের ছেলে পীনহসের উপর রক্ষীদের দেখাশোনার ভার ছিল এবং সদাপ্রভু তাঁর সংগে ছিলেন। মশেলেমিয়ের ছেলে সখরিয় মিলন-তাম্বুর দরজার পাহারাদার ছিল। দরজাগুলো পাহারা দেবার জন্য যাদের বেছে নেওয়া হয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল মোট দু’শো বারো। তাদের গ্রামগুলোতে যে সব বংশ-তালিকা ছিল সেখানে তাদের নাম লেখা হয়েছিল। দায়ূদ ও দর্শক শমূয়েল এই লোকদের দায়িত্বপূর্ণ দারোয়ানের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের ও তাদের বংশের লোকেরা সদাপ্রভুর ঘরের, অর্থাৎ আবাস-তাম্বুর দরজাগুলো পাহারা দিত। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ- এই চারদিকেই রক্ষীরা পাহারা দিত। গ্রাম থেকে তাদের ভাইদেরও পালা অনুসারে এসে সাত দিন করে তাদের কাজে সাহায্য করতে হত। যে চারজন লেবীয় প্রধান রক্ষী ছিল তাদের উপর ছিল ঈশ্বরের ঘরের ধনভাণ্ডারের কামরাগুলোর ভার। তারা ঈশ্বরের ঘরের কাছে বাস করত, কারণ সেই ঘর রক্ষা করবার ভার তাদের উপর ছিল, আর রোজ সকালে ঘরের দরজাও তাদের খুলে দিতে হত। লেবীয়দের মধ্যে কয়েকজনের উপর উপাসনা-ঘরের সেবা-কাজে ব্যবহার করা জিনিসপত্র রক্ষা করবার ভার ছিল। সেগুলো বের করবার ও ভিতরে আনবার সময় তারা গুণে দেখত। অন্যদের উপর ছিল উপাসনা-ঘরের আসবাবপত্র এবং সমস্ত পাত্র, ময়দা ও আংগুর-রস, তেল, লোবান ও সব সুগন্ধি মশলা রক্ষা করবার ভার। কিন্তু সুগন্ধি মশলাগুলো মেশাবার ভার ছিল পুরোহিতদের মধ্যে কয়েকজনের উপর। লেবীয়দের মধ্যে কোরহীয় শল্লুমের বড় ছেলে মত্তথিয়ের উপর শস্য-উৎসর্গের জিনিস সেঁকে আনবার ভার দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেক বিশ্রামবারে টেবিলের উপর যে সম্মুখ-রুটি সাজিয়ে রাখা হত তা তৈরী করবার ভার ছিল লেবীয়দের মধ্যে কয়েকজন কহাতীয়ের উপর। লেবি-গোষ্ঠীর বংশ-নেতারা যাঁরা গান-বাজনা করতেন তাঁরা উপাসনা-ঘরের কামরাগুলোতে থাকতেন। গান-বাজনার কাজে তাঁরা দিনরাত ব্যস্ত থাকতেন বলে তাঁদের উপর অন্য কোন কাজের ভার দেওয়া হয় নি। বংশ-তালিকা অনুসারে এঁরা সবাই ছিলেন লেবি-গোষ্ঠীর নিজের নিজের বংশের নেতা। এঁরা যিরূশালেমে বাস করতেন। যিয়ীয়েল গিবিয়োন গ্রামটা গড়ে তুলে সেখানে বাস করত। তার স্ত্রীর নাম ছিল মাখা। তার বড় ছেলের নাম অব্দোন, তার পরে সূর, কীশ, বাল, নের, নাদব, গাদোর, অহিয়ো, সখরিয় ও মিক্লোৎ। মিক্লোতের ছেলে শিমিয়াম। এরা যিরূশালেমে তাদের বংশের লোকদের কাছে বাস করত। নেরের ছেলে কীশ, কীশের ছেলে শৌল এবং শৌলের ছেলেরা হল যোনাথন, মল্কীশূয়, অবীনাদব ও ইশ্‌বাল। আহসের ছেলে যারঃ এবং যারের ছেলেরা হল আলেমৎ, অস্‌মাবৎ ও সিম্রি। সিম্রির ছেলে মোৎসা, মোৎসার ছেলে বিনিয়া, বিনিয়ার ছেলে রফায়, রফায়ের ছেলে ইলীয়াসা এবং ইলীয়াসার ছেলে আৎসেল। আৎসেলের ছয়জন ছেলের নাম হল অস্রীকাম, বোখরূ, ইশ্মায়েল, শিয়রিয়, ওবদিয় ও হানান। একবার পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল আর ইস্রায়েলীয়েরা তাদের সামনে থেকে পালিয়ে গেল। তাদের মধ্যে অনেকে গিল্‌বোয় পাহাড়ে পলেষ্টীয়দের হাতে মারা পড়ল। পলেষ্টীয়েরা শৌল ও তাঁর ছেলেদের পিছনে তাড়া করে গিয়ে তাঁর ছেলে যোনাথন, অবীনাদব ও মল্কী-শূয়কে মেরে ফেলল। তারপর শৌলের বিরুদ্ধে আরও ভীষণভাবে যুদ্ধ চলতে লাগল। ধনুকধারী সৈন্যেরা তাঁকে দেখতে পেয়ে আঘাত করল। শৌল তখন তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটিকে বললেন, “তোমার তলোয়ার বের করে আমার দেহটা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দাও। তা না হলে ঐ সুন্নত-না-করানো লোকেরা এসে আমাকে অপমান করবে।” কিন্তু তাঁর অস্ত্র বহনকারী লোকটি তা করতে রাজী হল না, কারণ সে খুব ভয় পেয়েছিল। তখন শৌল তাঁর নিজের তলোয়ার নিয়ে নিজেই তার উপরে পড়লেন। শৌল মারা গেছেন দেখে তাঁর অস্ত্র বহনকারীও নিজের তলোয়ারের উপর পড়ে মারা গেল। এইভাবে সেই দিন শৌল, তাঁর তিন ছেলে এবং তাঁর সংগের লোকেরা এক সংগে মারা গেলেন। যে সব ইস্রায়েলীয় সেই সময় উপত্যকায় ছিল তারা যখন দেখল যে, ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা পালিয়ে গেছে এবং শৌল ও তাঁর ছেলেরা মারা পড়েছেন তখন তারাও তাদের গ্রামগুলো ছেড়ে পালিয়ে গেল, আর পলেষ্টীয়েরা এসে সেই সব গ্রাম দখল করে নিল। পরের দিন পলেষ্টীয়েরা মৃত লোকদের সব কিছু লুট করতে এসে দেখল গিলবোয় পাহাড়ের উপরে শৌল ও তাঁর ছেলেদের মৃতদেহ পড়ে আছে। তারা শৌলের মাথা কেটে ফেলল এবং তাঁর সাজ-পোশাক ও অস্ত্রশস্ত্র খুলে নিল। এই খবর তাদের সমস্ত দেব-দেবতা ও লোকদের কাছে ঘোষণা করবার জন্য তারা পলেষ্টীয় দেশের সব জায়গায় সেগুলো পাঠিয়ে দিল। তারপর তারা শৌলের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের দেবতাদের মন্দিরে রাখল আর তার মাথাটা দাগোন-দেবতার মন্দিরে টাংগিয়ে দিল। পলেষ্টীয়েরা শৌলের প্রতি যা করেছে যাবেশ-গিলিয়দের সমস্ত লোক তা শুনতে পেল। তখন সেখানকার বীর সৈন্যেরা গিয়ে শৌল ও তাঁর ছেলেদের মৃতদেহগুলো যাবেশে নিয়ে আসল। যাবেশের এলোন গাছটার তলায় তারা তাঁদের হাড়গুলো কবর দিল এবং সাত দিন উপবাস করল। ইস্রায়েলীয়েরা সবাই হিব্রোণে দায়ূদের কাছে এসে বলল, “আপনার ও আমাদের গায়ে একই রক্ত বইছে। এর আগে যখন শৌল রাজা ছিলেন তখন যুদ্ধের সময় আপনিই ইস্রায়েলীয়দের সৈন্য পরিচালনা করতেন; আর আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আপনাকে বলেছেন যেন আপনিই তাঁর লোকদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের দেখাশোনা করেন ও তাদের নেতা হন।” ইস্রায়েল দেশের সমস্ত বৃদ্ধ নেতারা হিব্রোণে দায়ূদের কাছে উপস্থিত হলেন। তখন দায়ূদ সদাপ্রভুকে সাক্ষী রেখে তাঁদের সংগে একটা চুক্তি করলেন, আর শমূয়েলের মধ্য দিয়ে বলা সদাপ্রভুর কথা অনুসারে তাঁরা দায়ূদকে ইস্রায়েল দেশের উপর রাজা হিসাবে অভিষেক করলেন। পরে দায়ূদ ও সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা যিরূশালেমে, অর্থাৎ যিবূষে গেলেন। যিবূষীয়েরা সেখানে বাস করত। তারা দায়ূদকে বলল, “তুমি এখানে ঢুকতে পারবে না।” তবুও দায়ূদ সিয়োনের দুর্গটা অধিকার করলেন। এখন ওটাকে দায়ূদ-শহর বলা হয়। দায়ূদ বলেছিলেন, “যে লোক প্রথমে যিবূষীয়দের আক্রমণ করবে সে-ই হবে প্রধান সেনাপতি।” এতে সরূয়ার ছেলে যোয়াব প্রথমে আক্রমণ করতে গেলেন, আর সেইজন্য তাঁকে প্রধান সেনাপতি করা হল। এর পর দায়ূদ সেই দুর্গে বাস করতে লাগলেন; সেইজন্য সেটিকে দায়ূদ-শহর বলা হত। তিনি মিল্লোর কাছে শহর গড়ে তুললেন এবং যোয়াব শহরের বাদবাকী অংশ মেরামত করলেন। দায়ূদ দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলেন, কারণ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাঁর সংগে ছিলেন। তাঁর পরের জন ছিলেন ইলিয়াসর। ইনি ছিলেন অহোহীয়ের বংশের দোদোর ছেলে। নাম-করা তিনজন বীরের মধ্যে ইনি ছিলেন একজন। পলেষ্টীয়েরা যখন যুদ্ধের জন্য পস্‌-দম্মীমে জড়ো হয়েছিল তখন ইলিয়াসর দায়ূদের সংগে ছিলেন। একটা জায়গায় যবে ভরা একটা ক্ষেতে ইস্রায়েলীয় সৈন্যেরা পলেষ্টীয়দের সামনে থেকে পালিয়ে গেল। কিন্তু সেই তিনজন বীর ক্ষেতের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁরা সেই ক্ষেতটা রক্ষা করলেন এবং পলেষ্টীয়দের শেষ করে দিলেন। সেই দিন সদাপ্রভু তাঁদের রক্ষা করলেন ও মহাজয় দান করলেন। একবার ত্রিশজন বীরের মধ্যে তিনজন অদুল্লম গুহার কাছে যে বিরাট পাথরটা ছিল সেখানে দায়ূদের কাছে আসলেন। তখন একদল পলেষ্টীয় সৈন্য রফায়ীম উপত্যকায় ছাউনি ফেলে ছিল। সেই সময় দায়ূদ মরু-এলাকার দুর্গের মত একটা জায়গায় ছিলেন আর পলেষ্টীয় সৈন্যদল ছিল বৈৎলেহমে। এমন সময় দায়ূদের খুব পিপাসা পেল, তাই তিনি বললেন, “আহা, যদি কেউ বৈৎলেহমের ফটকের কাছের কূয়াটা থেকে আমাকে একটু খাবার জল এনে দিত!” এই কথা শুনে সেই তিনজন বীর পলেষ্টীয় সৈন্যদলের ভিতর দিয়ে গিয়ে বৈৎলেহমের ফটকের কাছের কূয়াটা থেকে জল তুলে দায়ূদের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু দায়ূদ তা খেলেন না; তার বদলে তিনি সেই জল সদাপ্রভুর উদ্দেশে মাটিতে ঢেলে দিলেন। তিনি বললেন, “হে ঈশ্বর, আমি যে এই জল খাব তা দূরে থাক্‌। এই লোকেরা, যারা তাদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছিল তাদের রক্ত কি আমি খাব?” তাঁরা তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেই জল এনেছিল বলে দায়ূদ তা খেতে রাজী হলেন না। সেই তিনজন নাম-করা বীরের কাজই ছিল এই রকম। যোয়াবের ভাই অবীশয় ছিলেন সেই তিনজনের উপরে প্রধান। তিনি বর্শা চালিয়ে তিনশো লোককে মেরে ফেলেছিলেন এবং তিনিও ঐ তিনজনের মত নাম-করা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি সেই তিনজনের চেয়ে আরও বেশী সম্মান পেয়েছিলেন। সেইজন্য সেই তিনজনের মধ্যে তাঁকে ধরা না হলেও তিনি তাঁদের সেনাপতি হয়েছিলেন। কব্‌সেলীয় যিহোয়াদার ছেলে বনায় ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। তিনিও বড় বড় কাজ করেছিলেন। মোয়াবীয় অরিয়েলের দুই ছেলেকে তিনি মেরে ফেলেছিলেন। এক তুষার পড়া দিনে তিনি একটা গর্তের মধ্যে নেমে গিয়ে একটা সিংহকে মেরে ফেলেছিলেন। আবার একজন সাড়ে সাত ফুট লম্বা মিসরীয়কে তিনি মেরে ফেলেছিলেন। সেই মিসরীয়ের হাতে ছিল তাঁতীর বীমের মত একটা বর্শা, কিন্তু তবুও তিনি গদা হাতে তার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মিসরীয়ের হাত থেকে বর্শাটা কেড়ে নিয়ে তিনি সেই বর্শা দিয়ে তাকে মেরে ফেলেছিলেন। যিহোয়াদার ছেলে বনায়ের কাজই ছিল এই রকম। তিনিও সেই তিনজন বীরের মত নাম-করা হয়ে উঠেছিলেন। সেই তিনজনের মধ্যে তাঁকে ধরা না হলেও তিনি “ত্রিশ” নামে দলটার লোকদের চেয়ে বেশী সম্মান পেয়েছিলেন। দায়ূদ তাঁর দেহরক্ষীদের ভার বনায়ের উপরেই দিয়েছিলেন। সেই শক্তিশালী লোকেরা হলেন- যোয়াবের ভাই অসাহেল, বৈৎলেহমের দোদোর ছেলে ইল্‌হানন, হরোরীয় শম্মোৎ, পলোনীয় হেলস, তকোয়ের ইক্কেশের ছেলে ঈরা, অনাথোতের অবীয়েষর, হূশাতীয় সিব্বখয়, অহোহীয় ঈলয়, নটোফাতীয় মহরয়, নটোফাতীয় বানার ছেলে হেলদ, বিন্যামীন-গোষ্ঠীর গিবিয়ার রীবয়ের ছেলে ইথয়, পিরিয়াথোনীয় বনায়, গাশের উপত্যকা থেকে হূরয়, অর্বতীয় অবীয়েল, বাহরূমীয় অস্‌মাবৎ, শাল্‌বোনীয় ইলীয়হবঃ, গিষোণীয় হাষেমের ছেলেরা, হরারীয় শাগির ছেলে যোনাথন, হরারীয় সাখরের ছেলে অহীয়াম, ঊরের ছেলে ইলীফাল, মখেরাতীয় হেফর, পলোনীয় অহিয়, কর্মিলীয় হিষ্রো, ইষ্‌বয়ের ছেলে নারয়, নাথনের ভাই যোয়েল, হগ্রির ছেলে মিভর, অম্মোনীয় সেলক, সরূয়ার ছেলে যোয়াবের অস্ত্র বহনকারী বেরোতীয় নহরয়, মাখার ছেলে হানান, মিত্নীয় যোশাফট, অষ্টরোতীয় উষিয়, অরোয়েরীয় হোথমের দুই ছেলে শাম ও যিয়ীয়েল, শিম্রির ছেলে যিদিয়েল ও তাঁর ভাই তীষীয় যোহা, মহবীয় ইলীয়েল, ইল্‌নামের দুই ছেলে যিরীবয় ও যোশবিয়, মোয়াবীয় যিৎমা, ইলীয়েল, ওবেদ ও মসোবায়ীয় যাসীয়েল। কীশের ছেলে শৌলের সামনে থেকে দায়ূদকে দূর করা হলে পর অনেক লোক সিক্লগে দায়ূদের কাছে এসেছিল। যুদ্ধের সময় যে যোদ্ধারা দায়ূদকে সাহায্য করেছিল এরা তাদের মধ্যে ছিল। এরা ধনুকধারী ছিল এবং বাঁ হাতে ও ডান হাতে তীর মারতে ও ফিংগা দিয়ে পাথর ছুঁড়তে পারত। এরা ছিল বিন্যামীন-গোষ্ঠীর শৌলের বংশের লোক। এদের মধ্যে ছিল: গিবিয়াতীয় শমায়ের ছেলে অহীয়েষর ও যোয়াশ- এঁরা নেতা ছিলেন; অস্‌মাবতের ছেলে যিষীয়েল ও পেলট, বরাখা, অনাথোতীয় যেহূ; গিবিয়োনীয় যিশ্ময়িয়- ইনি সেই “ত্রিশ” নামে বীরদের দলের মধ্যে একজন নেতা; যিরমিয়, যহসীয়েল, যোহানন, গদেরাথীয় যোষাবদ; ইলিয়ূষয়, যিরীমোৎ, বালিয়, শমরিয়, হরূফীয় শফটিয়; কোরহীয়দের মধ্যে ইল্কানা, যিশিয়, অসরেল, যোয়েষর, যাশবিয়াম; গদোরীয় যিরোহমের ছেলে যোয়েলা ও সবদিয়। গাদীয়দের কিছু লোক নিজেদের দল ছেড়ে মরু-এলাকার দুর্গের মত জায়গায় দায়ূদের কাছে এসেছিলেন। তাঁরা ছিলেন যুদ্ধের শিক্ষা-পাওয়া শক্তিশালী যোদ্ধা। তাঁরা ঢাল ও বর্শার ব্যবহার জানতেন। তাঁদের মুখ সিংহের মত ভয়ংকর ছিল এবং পাহাড়ী হরিণের মত তাঁরা জোরে দৌড়াতে পারতেন। পদ অনুসারে তাঁরা ছিলেন- প্রথম এষর, দ্বিতীয় ওবদিয়, তৃতীয় ইলীয়াব, চতুর্থ মিশ্মন্না, পঞ্চম যিরমিয়, এই গাদীয়েরা ছিলেন সৈন্যদলের সেনাপতি। তাঁদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে ছোট তিনি ছিলেন একাই একশো জনের সমান এবং যিনি সবচেয়ে বড় তিনি ছিলেন একাই হাজার জনের সমান। সেই বছরের প্রথম মাসে যখন যর্দন নদীর জল কিনারা ছাপিয়ে গিয়েছিল তখন এঁরাই পার হয়ে গিয়ে নদীর পূর্ব ও পশ্চিম দিকের উপত্যকায় বাসকারী প্রত্যেককে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া বিন্যামীন-গোষ্ঠীর অন্য লোকেরা এবং যিহূদার কিছু লোক দায়ূদের সেই দুর্গের মত জায়গায় তাঁর কাছে এসেছিল। দায়ূদ তাদের সংগে দেখা করতে বের হয়ে এসে বললেন, “আপনারা যদি শান্তির মনোভাব নিয়ে আমাকে সাহায্য করতে এসে থাকেন তবে আমি আপনাদের সংগে এক হতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু আমি কোন অন্যায় না করলেও যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে শত্রুর হাতে আমাকে তুলে দেবার জন্য এসে থাকেন তবে আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর যেন তা দেখেন এবং আপনাদের বিচার করেন।” যিনি পরে “ত্রিশ” নামে দলের নেতা হয়েছিলেন সেই অমাসয়ের উপর সদাপ্রভুর আত্মা আসলেন। তখন তিনি বললেন, “হে দায়ূদ, আমরা আপনারই। হে যিশয়ের ছেলে, আমরা আপনারই পক্ষে। মংগল হোক, আপনার মংগল হোক, মংগল হোক তাদের, যারা আপনাকে সাহায্য করে, কারণ আপনার ঈশ্বরই আপনাকে সাহায্য করেন।” তখন দায়ূদ তাঁদের গ্রহণ করে তাঁর আক্রমণকারী দলের নেতা করলেন। দায়ূদ যখন পলেষ্টীয়দের সংগে শৌলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিলেন তখন মনঃশি-গোষ্ঠীর কিছু লোক নিজেদের দল ছেড়ে দায়ূদের কাছে গিয়েছিলেন। অবশ্য দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা পলেষ্টীয়দের সাহায্য করেন নি, কারণ পলেষ্টীয় শাসনকর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবার পর দায়ূদকে বিদায় করে দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, “তিনি যদি আমাদের ত্যাগ করে তাঁর মনিব শৌলের সংগে গিয়ে যোগ দেন তবে আমাদের মাথা হারাতে হবে।” দায়ূদ সিক্লগে ফিরে যাবার সময় মনঃশি-গোষ্ঠীর যে লোকেরা দল ছেড়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন তাঁরা হলেন অদ্‌ন, যোষাবদ, যিদীয়েল, মীখায়েল, যোষাবদ, ইলীহূ ও সিল্লথয়। এঁরা ছিলেন মনঃশি-গোষ্ঠীর এক এক হাজার সৈন্যের সেনাপতি। অন্যান্য আক্রমণকারী দলগুলোর বিরুদ্ধে এঁরা দায়ূদকে সাহায্য করেছিলেন। এঁরা সবাই ছিলেন শক্তিশালী যোদ্ধা এবং দায়ূদের সৈন্যদলের সেনাপতি। এইভাবে দিনের পর দিন লোকেরা দায়ূদকে সাহায্য করতে আসতে লাগল। শেষে ঈশ্বরের সৈন্যদলের মত তাঁর একটা মস্ত বড় সৈন্যদল গড়ে উঠল। সদাপ্রভুর কথা অনুসারে যুদ্ধ করে শৌলের রাজ্য দায়ূদের হাতে তুলে দেবার জন্য যারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হিব্রোণে দায়ূদের কাছে এসেছিল তাদের সংখ্যা এই: যুদ্ধের সাজে সজ্জিত ঢাল ও বর্শাধারী যিহূদা-গোষ্ঠীর ছয় হাজার আটশো জন। শিমিয়োন-গোষ্ঠীর সাত হাজার একশো শক্তিশালী যোদ্ধা। লেবি-গোষ্ঠীর চার হাজার ছ’শো জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হারোণের বংশের নেতা যিহোয়াদা, যাঁর সংগে ছিল তিন হাজার সাতশো জন লোক। এছাড়া ছিলেন সাদোক নামে একজন শক্তিশালী যুবক যোদ্ধা ও তাঁর বংশের বাইশজন সেনাপতি। শৌলের নিজের গোষ্ঠীর, অর্থাৎ বিন্যামীন-গোষ্ঠীর তিন হাজার জন। কিন্তু এই গোষ্ঠীর বেশীর ভাগ লোক তখনও শৌলের পরিবারের পক্ষে ছিল। ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর বিশ হাজার আটশো শক্তিশালী যোদ্ধা। এরা নিজের নিজের বংশে বিখ্যাত ছিল। মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক বংশের আঠারো হাজার লোক। এই লোকদের নাম করে বলা হয়েছিল যেন তারা এসে দায়ূদকে রাজা করে। ইষাখর-গোষ্ঠীর দু’শো জন নেতা। তাঁরা ছিলেন বুদ্ধিমান এবং বুঝতে পারতেন ইস্রায়েলীয়দের কখন কি করা উচিত। তাঁদের সংগে ছিল তাঁদের অধীন নিজেদের গোষ্ঠীর লোকেরা। সবূলূন-গোষ্ঠীর পঞ্চাশ হাজার দক্ষ সৈন্য। তারা সব রকম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করতে পারত। তারা সম্পূর্ণ বিশ্বস্তভাবে দায়ূদকে সাহায্য করেছিল। নপ্তালি-গোষ্ঠীর এক হাজার সেনাপতি। তাঁদের সংগে ছিল ঢাল ও বর্শাধারী সাঁইত্রিশ হাজার লোক। দান-গোষ্ঠীর আটাশ হাজার ছ’শো দক্ষ সৈন্য। আশের-গোষ্ঠীর চল্লিশ হাজার দক্ষ সৈন্য। সব রকম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যর্দনের পূর্ব দিক থেকে এসেছিল এক লক্ষ বিশ হাজার লোক। এরা এসেছিল রূবেণ, গাদ ও মনশিঃ-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের মধ্য থেকে। এরা সকলেই ছিল দক্ষ যোদ্ধা। সমস্ত ইস্রায়েলের উপর দায়ূদকে রাজা করবার জন্য তারা পুরোপুরি মন স্থির করে হিব্রোণে এসেছিল। দায়ূদকে রাজা করবার ব্যাপারে বাদবাকী ইস্রায়েলীয়েরাও একমত হয়েছিল। এই লোকেরা তিন দিন দায়ূদের সংগে থেকে খাওয়া-দাওয়া করল। সেখানকার লোকেরাই তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। এছাড়া ইষাখর, সবূলূন ও নপ্তালি এলাকা থেকেও লোকেরা গাধা, উট, খচ্চর ও বলদের পিঠে করে তাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল। ইস্রায়েল দেশের লোকদের মনে আনন্দ ছিল বলে তারা প্রচুর পরিমাণে ময়দা, ডুমুর ও কিশ্‌মিশের তাল, আংগুর-রস, তেল এবং গরু, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে এসেছিল। দায়ূদ তাঁর প্রত্যেক নেতা, অর্থাৎ হাজার সৈন্যের সেনাপতি ও শত সৈন্যের সেনাপতিদের সংগে পরামর্শ করলেন। তারপর তিনি ইস্রায়েলীয়দের গোটা দলটাকে বললেন, “আপনারা যদি ভাল মনে করেন আর এটাই যদি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছা হয় তবে আসুন, আমরা ইস্রায়েলের সমস্ত এলাকায় আমাদের বাদবাকী ভাইদের কাছে ও তাদের সংগে যে সব পুরোহিত ও লেবীয়েরা তাদের গ্রামে আর পশু চরাবার মাঠে আছে তাদের কাছে খবর পাঠিয়ে দিই যেন তারা এসে আমাদের সংগে যোগ দেয়। আসুন, আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষ্য-সিন্দুকটা আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনি; শৌলের রাজত্বকালে আমরা তো সিন্দুকটির দিকে কোন মনোযোগ দিই নি।” তখন গোটা দলটাই তা করতে রাজী হল, কারণ সব লোকের কাছে সেটাই উচিত বলে মনে হল। কাজেই কিরিয়ৎ-যিয়ারীম থেকে ঈশ্বরের সিন্দুক নিয়ে আসবার জন্য দায়ূদ মিসরের সীহোর নদী থেকে হমাতের সীমা পর্যন্ত সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের একত্র করলেন। যিহূদা দেশের বালা, অর্থাৎ কিরিয়ৎ-যিয়ারীম থেকে ঈশ্বর সদাপ্রভুর সিন্দুকটি নিয়ে আসবার জন্য দায়ূদ ও তাঁর সংগে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সেখানে গেলেন। এই সিন্দুকটি সদাপ্রভুর নামে পরিচিত, কারণ তিনি সেখানে করূবদের মাঝখানে থাকেন। লোকেরা অবীনাদবের বাড়ী থেকে ঈশ্বরের সিন্দুকটি বের করে একটা নতুন গাড়ির উপরে বসিয়ে নিয়ে চলল। উষঃ ও অহিয়ো সেই গাড়িটা চালাচ্ছিল, আর দায়ূদ ও সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর সামনে তাঁদের সমস্ত শক্তি দিয়ে নেচে নেচে গান গাইছিলেন এবং সুরবাহার, বীণা, খঞ্জনী, করতাল ও তূরী বাজাচ্ছিলেন। তাঁরা কীদোনের খামারের কাছে আসলে পর বলদ দু’টা উছোট খেল আর উষঃ সিন্দুকটা ধরবার জন্য হাত বাড়াল। এতে উষের উপর সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। সিন্দুকে হাত দেওয়ার দরুন তিনি তাকে আঘাত করলেন। এতে সে ঈশ্বরের সামনেই সেখানে মারা গেল। উষের উপর সদাপ্রভুর এই ক্রোধ দেখে দায়ূদ অসন্তুষ্ট হলেন। আজও সেই জায়গাটাকে বলা হয় পেরষ-উষঃ। দায়ূদ সেই দিন ঈশ্বরকে খুব ভয় করলেন। তিনি বললেন, “ঈশ্বরের সিন্দুকটি তবে কি করে আমার কাছে আনা যাবে?” সিন্দুকটি তিনি দায়ূদ-শহরে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন না। তিনি সেটি নিয়ে গাতীয় ওবেদ-ইদোমের বাড়ীতে রাখলেন। ঈশ্বরের সিন্দুকটি তিন মাস ওবেদ-ইদোমের বাড়ীতে তার পরিবারের কাছে রইল। এতে সদাপ্রভু তার পরিবারকে ও তার সব কিছুকে আশীর্বাদ করলেন। পরে সোরের রাজা হীরম দায়ূদের কাছে কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দিলেন। তাদের সংগে পাঠালেন দায়ূদের জন্য রাজবাড়ী তৈরী করবার উদ্দেশ্যে এরস কাঠ, রাজমিস্ত্রি ও ছুতার মিস্ত্রি। তখন দায়ূদ বুঝতে পারলেন যে, সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপর তাঁর রাজপদ স্থির করেছেন এবং তাঁর লোকদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের জন্য তাঁর রাজ্যের অনেক উন্নতি করেছেন। দায়ূদ যিরূশালেমে আরও বিয়ে করলেন এবং তাঁর আরও ছেলেমেয়ের জন্ম হল। যিরূশালেমে তাঁর যে সব সন্তানের জন্ম হয়েছিল তাদের নাম হল শম্মূয়, শোবব, নাথন, শলোমন, যিভর, ইলীশূয়, ইল্পেলট, নোগহ, নেফগ, যাফিয়, ইলীশামা, বীলিয়াদা ও ইলীফেলট। পলেষ্টীয়েরা যখন শুনতে পেল যে, গোটা ইস্রায়েলের উপরে দায়ূদকে রাজপদে অভিষেক করা হয়েছে তখন তারা সমস্ত সৈন্য নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করতে গেল। তা শুনে দায়ূদ তাদের বিরুদ্ধে বের হলেন। পলেষ্টীয়েরা এসে রফায়ীম উপত্যকায় হানা দিল। তখন দায়ূদ ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি পলেষ্টীয়দের আক্রমণ করব? তুমি কি আমার হাতে তাদের তুলে দেবে?” উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “যাও, তাদের আমি তোমার হাতে তুলে দেব।” তখন দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা বাল্‌-পরাসীমে গিয়ে তাদের হারিয়ে দিলেন। দায়ূদ বললেন, “ঈশ্বর জলের বাঁধ ভাংগার মত করে আমার হাত দিয়ে আমার শত্রুদের ভেংগে ফেললেন।” এইজন্যই সেই জায়গার নাম হল বাল্‌-পরাসীম। পলেষ্টীয়েরা তাদের দেবমূর্তিগুলো সেখানে ফেলে গিয়েছিল। দায়ূদের হুকুমে লোকেরা সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিল। পলেষ্টীয়েরা আবার সেই উপত্যকায় হানা দিল। তখন দায়ূদ আবার ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, আর উত্তরে ঈশ্বর তাঁকে বললেন, “তোমরা সোজাসুজি তাদের দিকে যেয়ো না, বরং তাদের পিছন দিক থেকে বাখা গাছগুলোর সামনে তাদের আক্রমণ কর। বাখা গাছগুলোর মাথায় যখন তুমি সৈন্যদলের চলবার মত শব্দ শুনবে তখনই তুমি যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে পড়বে। এর মানে হল, পলেষ্টীয় সৈন্যদের আঘাত করবার জন্য ঈশ্বর তোমার আগে আগে গেছেন।” ঈশ্বরের আদেশ মতই দায়ূদ কাজ করলেন। তারা গিবিয়োন থেকে গেষর পর্যন্ত সারা পথ পলেষ্টীয় সৈন্যদের মারতে মারতে গেল। এইভাবে দায়ূদের সুনাম সব দেশে ছড়িয়ে পড়ল, আর সদাপ্রভু সব জাতির মধ্যে তাঁর সম্বন্ধে একটা ভয়ের ভাব জাগিয়ে দিলেন। দায়ূদ-শহরে নিজের জন্য ঘর-বাড়ী তৈরী করবার পর দায়ূদ ঈশ্বরের সিন্দুকের জন্য একটা জায়গা প্রস্তুত করে সেখানে একটা তাম্বু খাটালেন। তারপর তিনি বললেন, “ঈশ্বরের সিন্দুক লেবীয়েরা ছাড়া আর কেউ বহন করবে না, কারণ সদাপ্রভুর সিন্দুক বহন করবার জন্য এবং চিরকাল তাঁর সেবা করবার জন্য সদাপ্রভু তাদেরই বেছে নিয়েছেন।” সদাপ্রভুর সিন্দুকের জন্য দায়ূদ যে জায়গা প্রস্তুত করেছিলেন সেখানে সিন্দুকটি আনবার জন্য তিনি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের এক জায়গায় জড়ো করলেন। তিনি হারোণের বংশের যে লোকদের ও যে লেবীয়দের ডেকে জড়ো করলেন তাঁরা হলেন: কহাতের বংশের লোকদের মধ্য থেকে নেতা ঊরীয়েল এবং আরও একশো বিশজন লোক; মরারির বংশের লোকদের মধ্য থেকে নেতা অসায় এবং আরও দু’শো বিশজন লোক; গের্শোনের বংশের লোকদের মধ্য থেকে নেতা যোয়েল এবং আরও একশো ত্রিশজন লোক; ইলীষাফণের বংশের লোকদের মধ্য থেকে নেতা শময়িয় এবং আরও দু’শো জন লোক; হিব্রোণের বংশের লোকদের মধ্য থেকে নেতা ইলীয়েল এবং আরও আশিজন লোক; উষীয়েলের বংশের লোকদের মধ্য থেকে নেতা অম্মীনাদব এবং আরও একশো বারোজন লোক। তারপর দায়ূদ পুরোহিত সাদোক ও অবিয়াথরকে এবং লেবীয় ঊরীয়েল, অসায়, যোয়েল, শময়িয়, ইলীয়েল ও অম্মীনাদবকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁদের বললেন, “আপনারা হলেন লেবি-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের নেতা; আপনারা ও আপনাদের সংগী লেবীয়েরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করে নেবেন, যাতে যে জায়গা আমি প্রস্তুত করে রেখেছি সেই জায়গায় আপনারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সিন্দুকটি এনে রাখতে পারেন। প্রথমবার আপনারা সেটি আনেন নি বলে আমাদের উপর আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠেছিলেন। তাঁর আদেশ অনুসারে কিভাবে সেটি আনতে হবে আমরা তাঁর কাছে তা জানতে চাই নি।” এতে পুরোহিতেরা ও লেবীয়েরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করে নিলেন যাতে তাঁরা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সিন্দুকটি নিয়ে আসতে পারেন। সদাপ্রভুর নির্দেশ মত মোশির আদেশ অনুসারে লেবীয়েরা ঈশ্বরের সিন্দুকটি বহন করবার ডাণ্ডা কাঁধের উপর নিয়ে সেটি নিয়ে আসলেন। দায়ূদ লেবীয়দের নেতাদের বললেন যে, তারা যেন বাদ্যযন্ত্র, অর্থাৎ বীণা, সুরবাহার ও করতাল বাজিয়ে আনন্দের গান গাইবার জন্য তাঁদের গায়ক ভাইদের নিযুক্ত করেন। কাজেই লেবীয়েরা যোয়েলের ছেলে হেমনকে ও তাঁর বংশের লোকদের মধ্য থেকে বেরিখিয়ের ছেলে আসফকে এবং তাঁদের গোষ্ঠী-ভাই মরারীয়দের মধ্য থেকে কূশায়ার ছেলে এথনকে নিযুক্ত করলেন। তাঁদের সংগে নিযুক্ত করা হল তাঁদের বংশের দ্বিতীয় শ্রেণীর পুরোহিতদের। তারা হল সখরিয়, বেন, যাসীয়েল, শমীরামোৎ, যিহীয়েল, উন্নি, ইলীয়াব, বনায়, মাসেয়, মত্তিথিয়, ইলীফলেহূ, মিক্‌নেয় এবং ওবেদ-ইদোম ও যিয়ীয়েল নামে দরজার দু’জন পাহারাদার। ব্রোঞ্জের করতাল বাজাবার ভার পড়ল গায়ক হেমন, আসফ ও এথনের উপর। উঁচু সুরে বীণা বাজাবার ভার পড়ল সখরিয়, অসীয়েল, শমীরামোৎ, যিহীয়েল, উন্নি, ইলীয়াব, মাসেয় ও বনায়ের উপর। নীচু সুরে সুরবাহার বাজাবার ভার পড়ল মত্তিথিয়, ইলীফলেহূ, মিক্‌নেয়, ওবেদ-ইদোম, যিয়ীয়েল ও অসসিয়ের উপর। গান পরিচালনার ভার পড়ল লেবীয় নেতা কননিয়ের উপর। তিনি গানের ওস্তাদ ছিলেন বলে তাঁর উপর সেই দায়িত্ব পড়েছিল। এর পরে দায়ূদ, ইস্রায়েলের বৃদ্ধ নেতারা আর সৈন্যদলের হাজার সৈন্যের সেনাপতিরা আনন্দ করতে করতে ওবেদ-ইদোমের বাড়ী থেকে সদাপ্রভুর সেই ব্যবস্থা-সিন্দুকটি আনবার জন্য গেলেন। যে লেবীয়েরা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি বয়ে আনছিল ঈশ্বর তাদের পরিচালনা করেছিলেন বলে সাতটা বলদ ও সাতটা ভেড়া উৎসর্গ করা হল। সিন্দুক বহনকারী লেবীয়েরা, গায়কেরা এবং গানের দলের পরিচালক কননিয় মসীনার পাতলা কাপড়ের পোশাক পরেছিল। দায়ূদও মসীনার পাতলা কাপড়ের পোশাক এবং মসীনার এফোদ পরেছিলেন। এইভাবে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা চিৎকার করতে করতে এবং শিংগা, তূরী, করতাল, বীণা ও সুরবাহার বাজাতে বাজাতে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি যিরূশালেমে নিয়ে আসল। সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি দায়ূদ-শহরে ঢুকবার সময় শৌলের মেয়ে মীখল জানলা দিয়ে তা দেখলেন। রাজা দায়ূদকে নাচতে ও আনন্দ করতে দেখে তিনি মনে মনে দায়ূদকে তুচ্ছ করলেন। ঈশ্বরের সিন্দুকের জন্য দায়ূদ যে তাম্বু খাটিয়েছিলেন লোকেরা সিন্দুকটি এনে তার ভিতরে রাখল। এর পর ঈশ্বরের সামনে পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা হল। সেই সব উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা শেষ হয়ে গেলে পর দায়ূদ সদাপ্রভুর নামে লোকদের আশীর্বাদ করলেন। তারপর তিনি ইস্রায়েলীয় প্রত্যেক স্ত্রীলোক ও পুরুষকে একটা করে রুটি, এক খণ্ড মাংস ও এক তাল কিশমিশ দিলেন। সদাপ্রভুর সিন্দুকের সামনে সেবা-কাজের জন্য দায়ূদ কয়েকজন লেবীয়কে নিযুক্ত করলেন যাতে তারা প্রার্থনা করতে, ধন্যবাদ দিতে এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করতে পারে। এই লোকদের নেতা ছিলেন আসফ, দ্বিতীয় ছিলেন সখরিয়, তারপরে ছিলেন যিয়ীয়েল, শমীরামোৎ, যিহীয়েল, মত্তিথিয়, ইলীয়াব, বনায়, ওবেদ-ইদোম ও যিয়ীয়েল। এঁরা বাজাতেন বীণা ও সুরবাহার আর আসফ বাজাতেন করতাল; পুরোহিত বনায় আর যহসীয়েল ঈশ্বরের সেই ব্যবস্থা-সিন্দুকের সামনে নিয়মিত ভাবে তূরী বাজাতেন। সেই দিন দায়ূদ প্রথমে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ধন্যবাদের এই গান গাইবার ভার আসফ ও তাঁর লোকদের উপর দিলেন: সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দাও, তাঁর গুণের কথা ঘোষণা কর; তাঁর কাজের কথা অন্যান্য জাতিদের জানাও। তাঁর উদ্দেশে গান গাও, তাঁর প্রশংসা-গান কর; তাঁর সব আশ্চর্য কাজের কথা বল। তাঁর পবিত্রতার গৌরব কর; যারা সদাপ্রভুকে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী তাদের অন্তর আনন্দিত হোক। সদাপ্রভু ও তাঁর শক্তিকে বুঝতে চেষ্টা কর; সব সময় তাঁর সংগে যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী হও। তিনিই আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু; গোটা দুনিয়া তাঁরই শাসনে চলছে। যে বাক্যের নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন হাজার হাজার বংশের জন্য, তাঁর সেই ব্যবস্থার কথা চিরকাল মনে রেখো। সেই ব্যবস্থা তিনি অব্রাহামের জন্য স্থাপন করেছিলেন আর ইস্‌হাকের কাছে শপথ করেছিলেন। তিনি তাঁর ব্যবস্থা যাকোবের কাছে নিয়ম হিসাবে আর ইস্রায়েলের কাছে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাকে কনান দেশটা দেব, সেটাই হবে তোমার পাওনা সম্পত্তি।” তাদের সংখ্যা যখন কম ছিল, খুবই কম ছিল, আর তারা সেখানে বিদেশী ছিল, তারা যখন সেখানে বিভিন্ন জাতির মধ্যে আর বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ঘুরে বেড়াত, তখন তিনি কাউকে তাদের অত্যাচার করতে দিতেন না। তাদের জন্য তিনি রাজাদের ধম্‌কে দিতেন, বলতেন, “আমার অভিষিক্ত লোকদের ছোঁবে না; আমার নবীদের কোন ক্ষতি করবে না।” পৃথিবীর সব লোক, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান কর; তাঁর দেওয়া উদ্ধারের কথা দিনের পর দিন ঘোষণা কর। বিভিন্ন জাতির মধ্যে তাঁর মহিমা ঘোষণা কর; সমস্ত লোকের মধ্যে তাঁর সব আশ্চর্য কাজের কথা ঘোষণা কর। সদাপ্রভুই মহান এবং সবার উপরে প্রশংসার যোগ্য; সব দেব-দেবতার চেয়ে তিনি বেশী ভয় জাগান। বিভিন্ন জাতির দেব-দেবতারা অসার মাত্র, কিন্তু সদাপ্রভু মহাকাশের সৃষ্টিকর্তা। তাঁকেই ঘিরে রয়েছে গৌরব ও মহিমা; তাঁর বাসস্থানে রয়েছে শক্তি ও আনন্দ। হে বিভিন্ন জাতির সমস্ত গোষ্ঠী, স্বীকার কর সমস্ত গৌরব ও শক্তি সদাপ্রভুরই। তোমরা স্বীকার কর সমস্ত গৌরব সদাপ্রভুর; উৎসর্গের জিনিস নিয়ে তাঁর সামনে এস। সদাপ্রভুর মহিমাপূর্ণ পবিত্রতার কথা ভেবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাও। পৃথিবীর সমস্ত লোক, তোমরা তাঁর সামনে কেঁপে ওঠো। পৃথিবী অটলভাবে স্থাপিত হল, তা কখনও নড়বে না। আকাশ আনন্দ করুক, পৃথিবী খুশী হোক; বিভিন্ন জাতির মধ্যে তারা ঘোষণা করুক, “সদাপ্রভুই রাজত্ব করেন।” সাগর ও তার মধ্যেকার সব কিছু গর্জন করুক; মাঠ ও তার মধ্যেকার সব কিছু আনন্দিত হোক। তাহলে বনের গাছপালাও সদাপ্রভুর সামনে আনন্দে গান করবে, কারণ তিনি পৃথিবীর বিচার করতে আসছেন। তোমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, কারণ তিনি মংগলময়; তাঁর অটল ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। তোমরা বল, “হে আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর, আমাদের উদ্ধার কর; অন্যান্য জাতিদের মধ্য থেকে তুমি আমাদের এক জায়গায় নিয়ে এসে আমাদের রক্ষা কর, যাতে আমরা তোমার পবিত্রতার উদ্দেশে ধন্যবাদ দিতে পারি আর তোমার গুণগান করতে পারছি বলে গর্ববোধ করতে পারি। সৃষ্টির আগে থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক।” এর পর সব লোকেরা বলল, “আমেন, সদাপ্রভুর গৌরব হোক।” প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেবা-কাজের জন্য দায়ূদ সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকের কাছে আসফ ও তাঁর লোকদের রেখে গেলেন। তাদের সাহায্য করবার জন্য তিনি ওবেদ-ইদোম ও তাঁর আটষট্টিজন লোককেও রেখে গেলেন। যিদূথূনের ছেলে ওবেদ-ইদোম ও হোষা ছিলেন রক্ষী। দায়ূদ গিবিয়োনের উপাসনার উঁচু স্থানে সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বুর সামনে পুরোহিত সাদোক ও তাঁর সংগের পুরোহিতদের রেখে গেলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের যে আইন-কানুন দিয়েছিলেন তাতে যা যা লেখা ছিল সেই অনুসারে যেন তাঁরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীর উপর প্রতিদিন সকালে ও বিকালে নিয়মিতভাবে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পারেন। তাঁদের সংগে ছিলেন হেমন ও যিদূথূন আর বাদবাকী লোক, যাদের নাম উল্লেখ করে বেছে নেওয়া হয়েছিল যাতে তারা সদাপ্রভুর চিরকাল স্থায়ী অটল ভালবাসার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিতে পারে। ঈশ্বরের উদ্দেশে গান করবার সময়ে তূরী, করতাল ও অন্যান্য বাজনা বাজাবার জন্য হেমন ও যিদূথূনের উপর ভার দেওয়া হল। যিদূথূনের বংশের লোকদের রক্ষী হিসাবে নিযুক্ত করা হল। এর পর সব লোক যে যার বাড়ীর দিকে রওনা হল এবং দায়ূদ তাঁর পরিবারের লোকদের আশীর্বাদ করবার জন্য বাড়ীতে ফিরে গেলেন। রাজবাড়ীতে বাস করবার সময় একদিন দায়ূদ নবী নাথনকে বললেন, “আমি এখন এরস কাঠের ঘরে বাস করছি কিন্তু সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি রয়েছে একটা তাম্বুর মধ্যে।” উত্তরে নাথন দায়ূদকে বললেন, “আপনার মনে যা আছে আপনি তা-ই করুন; ঈশ্বর আপনার সংগে আছেন।” সেই রাতে ঈশ্বরের বাক্য নাথনের কাছে উপস্থিত হলেন; তিনি বললেন, “তুমি গিয়ে আমার দাস দায়ূদকে বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার থাকবার ঘর তুমি তৈরী করবে না। মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে আনবার দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি কোন ঘরে বাস করি নি। এক তাম্বু থেকে অন্য তাম্বুতে, এক বাসস্থান থেকে অন্য বাসস্থানে গিয়েছি। যে সব নেতাদের উপর আমি আমার লোকদের পালন করবার ভার দিয়েছিলাম, বিভিন্ন জায়গায় ইস্রায়েলীয়দের সংগে ঘুরে বেড়াবার সময় আমি সেই নেতাদের কি কোন সময় বলেছি যে, তারা কেন আমার জন্য এরস কাঠের ঘর তৈরী করে নি?’ “এখন তুমি আমার দাস দায়ূদকে বল যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা হবার জন্য আমিই তোমাকে পশু চরাবার মাঠ থেকে, ভেড়ার পালের পিছন থেকে নিয়ে এসেছি। তুমি যে সব জায়গায় গিয়েছ আমিও সেখানে তোমার সংগে গিয়েছি এবং তোমার সামনে থেকে তোমার সমস্ত শত্রুদের শেষ করে দিয়েছি। আমি তোমার নাম পৃথিবীর মহান লোকদের নামের মত বিখ্যাত করব। তোমার আয়ু শেষ হলে পর যখন তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবে তখন আমি তোমার জায়গায় তোমার বংশের একজনকে, তোমার নিজের সন্তানকে বসাব এবং তার রাজ্য স্থির রাখব। তোমার সেই সন্তানই আমার জন্য একটা ঘর তৈরী করবে, আর তার সিংহাসন আমি চিরকাল স্থায়ী করব। আমি হব তার পিতা আর সে হবে আমার পুত্র। আমার ভালবাসা আমি কখনও তার উপর থেকে তুলে নেব না, যেমন করে আমি তুলে নিয়েছিলাম তোমার আগে যে ছিল তার উপর থেকে। আমার ঘরে ও আমার রাজ্যে আমি তাকে চিরকাল স্থির রাখব এবং তার সিংহাসন চিরস্থায়ী হবে।’ ” এই দর্শনের সমস্ত কথাগুলো নাথন দায়ূদকে বললেন। এই সব কথা শুনে রাজা দায়ূদ তাম্বুর ভিতরে গেলেন এবং সদাপ্রভুর সামনে বসে বললেন, “হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমিই বা কি, আর আমার বংশই বা কি যে, তুমি আমাকে এত দূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছ? আর হে ঈশ্বর, এ-ও তোমার চোখে যথেষ্ট হয় নি; এর সংগে তোমার দাসের বংশের ভবিষ্যতের কথাও তুমি বলেছ। হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমি যেন একজন মহান লোক সেই চোখেই তুমি আমাকে দেখেছ। “তোমার দাস আমাকে যে সম্মান দেখালে তাতে আমি তোমার কাছে আর বেশী কি বলতে পারি? তুমি তো তোমার দাসকে জান। হে সদাপ্রভু, তোমার দাসের জন্য তোমার ইচ্ছা অনুসারে এই মহৎ কাজ তুমি করেছ আর তোমার দাসকে তা জানিয়েছ। “হে সদাপ্রভু, তোমার মত আর কেউ নেই এবং তুমি ছাড়া কোন ঈশ্বর নেই; আমরা নিজের কানেই এই কথা শুনেছি। তোমার ইস্রায়েল জাতির মত পৃথিবীতে আর কোন জাতি নেই, যাকে তুমি তোমার নিজের লোক করবার জন্য মুক্ত করেছ। তুমি তাদের মিসর দেশ থেকে মুক্ত করে তাদের সামনে থেকে অন্যান্য জাতিদের দুর করে দিয়েছ। তোমার নিজের গৌরব প্রকাশের জন্য মহৎ ও ভয় জাগানো কাজের মধ্য দিয়ে তুমি তা করেছ। তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের তুমি নিজের উদ্দেশ্যে চিরকাল তোমার নিজের লোক করেছ, আর তুমি, হে সদাপ্রভু, তুমি তাদের ঈশ্বর হয়েছ। “এখন হে সদাপ্রভু, আমার ও আমার বংশের বিষয়ে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছ তা চিরকাল রক্ষা কর। তোমার প্রতিজ্ঞা অনুসারেই তা কর। এতে আমার বংশ স্থায়ী হবে এবং চিরকাল তোমার গৌরব হবে। তখন লোকে বলবে, ‘সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর, সত্যিই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর’! আর তোমার দাস দায়ূদের বংশ তোমার সামনে স্থির থাকবে। হে আমার ঈশ্বর, তুমিই আমার কাছে এই বিষয় প্রকাশ করে বলেছ যে, তুমি আমার মধ্য দিয়ে একটা বংশ গড়ে তুলবে। তাই তোমার কাছে এই প্রার্থনা করতে আমার মনে সাহস হয়েছে। হে সদাপ্রভু, তুমিই ঈশ্বর। এই মংগলের প্রতিজ্ঞা তুমিই আমার কাছে করেছ। আমার বংশকে তুমি খুশী হয়ে আশীর্বাদ করেছ যাতে এই বংশ চিরকাল তোমার সামনে থাকে। সদাপ্রভু, তুমিই যখন এই বংশকে আশীর্বাদ করেছ তখন তা চিরকাল আশীর্বাদযুক্ত থাকবে।” পরে দায়ূদ পলেষ্টীয়দের হারিয়ে দিয়ে তাদের নিজের অধীনে আনলেন। তিনি পলেষ্টীয়দের হাত থেকে গাৎ ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো দখল করে নিলেন। দায়ূদ মোয়াবীয়দেরও হারিয়ে দিলেন। তারা দায়ূদের অধীন হয়ে তাঁকে কর্‌ দিতে লাগল। পরে সোবার রাজা হদদেষর যখন ইউফ্রেটিস নদী বরাবর তাঁর জায়গাগুলোতে আবার তাঁর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে গেলেন তখন দায়ূদ তাঁর সংগে যুদ্ধ করতে হমাৎ পর্যন্ত গেলেন। দায়ূদ তাঁর এক হাজার রথ, সাত হাজার ঘোড়সওয়ার এবং বিশ হাজার পদাতিক সৈন্য আটক করলেন। তাদের একশোটা রথের ঘোড়া রেখে তিনি বাকী সব ঘোড়ার পায়ের শিরা কেটে দিলেন। দামেস্কের অরামীয়েরা যখন সোবার রাজা হদদেষরকে সাহায্য করতে আসল তখন দায়ূদ তাদের বাইশ হাজার লোককে মেরে ফেললেন। দায়ূদ অরাম রাজ্যের দামেস্কে সৈন্যদল রাখলেন। তাতে অরামীয়েরা তাঁর অধীন হয়ে তাঁকে কর্‌ দিতে লাগল। এইভাবে দায়ূদ যে কোন জায়গায় যেতেন সদাপ্রভু সেখানে তাঁকে জয়ী করতেন। হদদেষরের লোকদের সোনার ঢালগুলো দায়ূদ যিরূশালেমে নিয়ে আসলেন। টিভৎ ও কূন নামে হদদেষরের দু’টা শহর থেকে দায়ূদ প্রচুর পরিমাণে ব্রোঞ্জও নিয়ে আসলেন। এই ব্রোঞ্জ দিয়ে শলোমন সেই বিরাট পাত্র, থাম ও ব্রোঞ্জের অন্যান্য জিনিস তৈরী করিয়েছিলেন। হমাতের রাজা তয়ি শুনতে পেলেন যে, দায়ূদ সোবার রাজা হদদেষরের গোটা সৈন্যদলকে হারিয়ে দিয়েছেন। দায়ূদ হদদেষরের সংগে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন বলে তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাবার জন্য তয়ি তাঁর ছেলে হদোরামকে রাজা দায়ূদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এই হদদেষরের সংগে তয়ির অনেকবার যুদ্ধ হয়েছিল। হদোরাম দায়ূদের জন্য সংগে করে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জের নানা রকম জিনিস নিয়ে এসেছিলেন। এর আগে রাজা দায়ূদ ইদোমীয়, মোয়াবীয়, অম্মোনীয়, পলেষ্টীয় এবং অমালেকীয়দের কাছ থেকে সোনা ও রূপা নিয়ে এসে যেমন সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন তেমনি এগুলো নিয়েও তিনি তা-ই করলেন। সরূয়ার ছেলে অবীশয় লবণ-উপত্যকায় আঠারো হাজার ইদোমীয়কে মেরে ফেললেন। তিনি ইদোমের কয়েক জায়গায় সৈন্যদল রাখলেন আর তাতে সমস্ত ইদোমীয়েরা দায়ূদের অধীন হল। দায়ূদ যে কোন জায়গায় যেতেন সদাপ্রভু সেখানেই তাঁকে জয়ী করতেন। দায়ূদ সমস্ত ইস্রায়েল দেশের উপর রাজত্ব করতে লাগলেন। তাঁর লোকদের তিনি ন্যায়ভাবে বিচার ও শাসন করতেন। সরূয়ার ছেলে যোয়াব ছিলেন তাঁর প্রধান সেনাপতি আর অহীলূদের ছেলে যিহোশাফট তাঁর রাজত্বের সব ইতিহাস লিখে রাখতেন। অহীটূবের ছেলে সাদোক ও অবিয়াথরের ছেলে অবীমেলক ছিলেন পুরোহিত আর শব্‌শ ছিলেন রাজার লেখক। যিহোয়াদার ছেলে বনায় ছিলেন দায়ূদের দেহরক্ষী করেথীয় ও পলেথীয়দের প্রধান, আর দায়ূদের ছেলেরা রাজার প্রধান প্রধান পদে নিযুক্ত ছিলেন। পরে অম্মোনীয় রাজা নাহশ মারা গেলে পর তাঁর ছেলে হানূন তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। দায়ূদ বললেন, “হানূনের বাবা নাহশ আমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন বলে আমিও হানূনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকব।” সেইজন্য তাঁর বাবার মৃত্যুতে তাঁকে সান্ত্বনা দেবার জন্য তিনি কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দিলেন। দায়ূদের লোকেরা হানূনকে সান্ত্বনা দেবার জন্য অম্মোনীয়দের দেশে গেল। কিন্তু অম্মোনীয় নেতারা হানূনকে বললেন, “আপনি কি মনে করেন যে, দায়ূদ আপনার বাবার প্রতি সম্মান দেখাবার জন্য আপনাকে সান্ত্বনা দিতে লোক পাঠিয়েছে? সে তাদের আপনার কাছে পাঠিয়েছে যাতে তারা গুপ্তচর হিসাবে দেশের খোঁজ-খবর নিয়ে পরে সেটা ধ্বংস করে দিতে পারে।” হানূন তখন দায়ূদের লোকদের ধরে তাদের দাড়ি কামিয়ে দিলেন এবং লম্বা জামার অর্ধেকটা, অর্থাৎ কোমর পর্যন্ত কেটে দিয়ে তাদের বিদায় করে দিলেন। কেউ এসে দায়ূদকে সেই লোকদের প্রতি কি করা হয়েছে তা জানালে পর তাঁর পাঠানো সেই লোকদের সংগে দেখা করবার জন্য তিনি কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দিলেন, কারণ সেই লোকেরা খুব লজ্জায় পড়েছিল। রাজা তাদের বলে পাঠালেন, “তোমাদের দাড়ি বেড়ে না ওঠা পর্যন্ত তোমরা যিরীহোতেই থাক; তারপর তোমরা ফিরে এসো।” অম্মোনীয়েরা যখন বুঝতে পারল যে, তারা দায়ূদের কাছে নিজেদের ঘৃণার পাত্র করে তুলেছে, তখন হানূন ও অম্মোনীয়েরা অরাম-নহরয়িম, অরাম-মাখা ও সোবা থেকে রথ ও রথ-চালকদের ভাড়া করে আনবার জন্য ঊনচল্লিশ হাজার কেজি রূপা পাঠিয়ে দিল। তারা বত্রিশ হাজার রথ এবং সৈন্যদল সুদ্ধ মাখার রাজাকে ভাড়া করল। তিনি ও তাঁর সৈন্যেরা এসে মেদবার কাছে ছাউনি ফেললেন আর ওদিকে অম্মোনীয়েরা নিজের নিজের শহর থেকে একত্র হয়ে যুদ্ধের জন্য বের হল। এই সব শুনে দায়ূদ যোয়াবকে এবং তাঁর সমস্ত সৈন্যদলকে পাঠিয়ে দিলেন। তখন অম্মোনীয়েরা বের হয়ে তাদের শহরের ফটকে ঢুকবার পথে যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজাল। এদিকে যে রাজারা এসেছিলেন তাঁরা খোলা মাঠে রইলেন। যোয়াব দেখলেন তাঁর সামনে এবং পিছনে অরামীয় সৈন্যদের সাজানো হয়েছে। সেইজন্য তিনি তাঁর সৈন্যদের মধ্য থেকে কতগুলো বাছাই করা সৈন্য নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাজালেন। বাকী সৈন্যদের তিনি তাঁর ভাই অবীশয়ের অধীনে রাখলেন; তাতে তারা অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য নিজেদের সাজাল। যোয়াব তাঁর ভাইকে বললেন, “যদি অরামীয়েরা আমার চেয়ে শক্তিশালী হয় তবে তুমি আমাকে সাহায্য করতে আসবে, আর যদি অম্মোনীয়েরা তোমার চেয়ে শক্তিশালী হয় তবে আমি তোমাকে সাহায্য করতে যাব। সাহস কর; আমাদের লোকদের জন্য এবং আমাদের ঈশ্বরের শহরগুলোর জন্য এস, আমরা সাহসের সংগে যুদ্ধ করি। সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তিনি তা-ই করুন।” এই বলে যোয়াব তাঁর সৈন্যদল নিয়ে অরামীয়দের সংগে যুদ্ধ করবার জন্য এগিয়ে গেলে পর অরামীয়েরা তাঁর সামনে থেকে পালিয়ে গেল। অরামীয়দের পালিয়ে যেতে দেখে অম্মোনীয়েরাও যোয়াবের ভাই অবীশয়ের সামনে থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরের ভিতরে ঢুকল। কাজেই যোয়াব যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। অরামীয়েরা যখন দেখল যে, তারা ইস্রায়েলীয়দের কাছে সম্পূর্ণভাবে হেরে গেছে তখন তারা লোক পাঠিয়ে ইউফ্রেটিস নদীর ওপারে বাস করা অরামীয়দের নিয়ে আসল। হদদেষরের সৈন্যদলের সেনাপতি শোবক তাদের পরিচালনা করে নিয়ে আসলেন। দায়ূদকে সেই কথা জানালে পর তিনি সমস্ত ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের জড়ো করলেন এবং যর্দন নদী পার হয়ে তাদের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেলেন এবং তাদের সামনের দিকে যুদ্ধের জন্য সৈন্য সাজালেন। তখন অরামীয়েরা দায়ূদের সংগে যুদ্ধ করল। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে তারা পালিয়ে গেল। তখন দায়ূদ তাদের সাত হাজার রথচালক ও চল্লিশ হাজার পদাতিক সৈন্য মেরে ফেললেন। তিনি তাদের সেনাপতি শোবককেও মেরে ফেললেন। হদদেষরের অধীন রাজারা যখন দেখলেন যে, তাঁরা ইস্রায়েলীয়দের কাছে হেরে গেছেন তখন দায়ূদের সংগে শান্তি-চুক্তি করে তাঁরা তাঁর অধীন হলেন। কাজেই অম্মোনীয়দের সাহায্য করতে অরামীয়েরা আর রাজী হল না। বসন্তকালে যখন রাজারা সাধারণত: যুদ্ধ করতে বের হন তখন যোয়াব সৈন্যদল নিয়ে বের হলেন। তিনি অম্মোনীয়দের দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়ে রব্বাতে গিয়ে সেটা ঘেরাও করলেন। দায়ূদ কিন্তু যিরূশালেমেই রয়ে গেলেন। যোয়াব রব্বা আক্রমণ করে সেটা ধ্বংস করে দিলেন। দায়ূদ সেখানকার রাজার মাথা থেকে মুকুটটা খুলে নিলেন। সেটা প্রায় চৌত্রিশ কেজি সোনা দিয়ে তৈরী ছিল, আর তাতে দামী পাথর বসানো ছিল। মুকুটটা দায়ূদের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হল। দায়ূদ সেই শহর থেকে অনেক লুটের মাল নিয়ে গেলেন। তিনি শহরের লোকদের বের করে আনলেন এবং করাত, লোহার খন্তা ও কুড়াল দিয়ে তাদের কেটে ফেললেন। অম্মোনীয়দের সমস্ত শহরেও তিনি তা-ই করলেন। এর পর দায়ূদ তাঁর সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। পরে গেষরে পলেষ্টীয়দের সংগে যুদ্ধ আরম্ভ হল। সেই সময় হূশাতীয় সিব্বখয় রফায়ীয়দের বংশের সিপ্পয় নামে একজনকে মেরে ফেলল, আর এতে পলেষ্টীয়েরা হেরে গেল। পলেষ্টীয়দের সংগে আর একটা যুদ্ধে যায়ীরের ছেলে ইল্‌হানন গাতীয় গলিয়াতের ভাই লহমিকে মেরে ফেলল। তার বর্শাটা ছিল তাঁতীদের বীমের মত। গাতে আর একটা যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে একজন লম্বা-চওড়া লোক ছিল যার দু’হাতে ও দু’পায়ে ছয়টা করে মোট চব্বিশটা আংগুল ছিল। সে-ও ছিল একজন রফায়ীয়। সে যখন ইস্রায়েল জাতিকে টিট্‌কারি দিল তখন দায়ূদের ভাই শিমিয়ের ছেলে যোনাথন তাকে মেরে ফেলল। গাতের এই লোকেরা ছিল রফার বংশের লোক। দায়ূদ ও তাঁর লোকদের হাতে এরা মারা পড়েছিল। শয়তান এবার ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগল। ইস্রায়েল জাতির লোক গণনা করবার জন্য সে দায়ূদের মনে ইচ্ছা জাগাল। দায়ূদ তখন যোয়াব ও সৈন্যদলের সেনাপতিদের বললেন, “বের্‌-শেবা থেকে দান পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়দের গণনা কর। তারপর ফিরে এসে আমাকে হিসাব দিয়ো যাতে এদের সংখ্যা কত তা আমি জানতে পারি।” কিন্তু যোয়াব উত্তরে বললেন, “সদাপ্রভু যেন তাঁর নিজের লোকদের সংখ্যা একশো গুণ বাড়িয়ে দেন। আমার প্রভু মহারাজ, এরা সবাই কি আপনার দাস নয়? তবে কেন আমার প্রভু এটা করতে চাইছেন? কেন আপনার জন্য গোটা ইস্রায়েল জাতি দোষী হবে?” কিন্তু যোয়াবের কাছে রাজার আদেশ বহাল রইল; কাজেই যোয়াব গিয়ে গোটা ইস্রায়েল দেশটা ঘুরে যিরূশালেমে ফিরে আসলেন। যারা তলোয়ার চালাতে পারে তাদের সংখ্যা তিনি দায়ূদকে জানালেন- তা হল গোটা ইস্রায়েলে এগারো লক্ষ এবং যিহূদায় চার লক্ষ সত্তর হাজার। যোয়াব কিন্তু সেই গণনার মধ্যে লেবি ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকদের ধরেন নি, কারণ রাজার এই আদেশ তাঁর কাছে খারাপ মনে হয়েছিল। এই আদেশ ঈশ্বরের চোখেও ছিল মন্দ; তাই তিনি ইস্রায়েল জাতিকে শাস্তি দিলেন। তখন দায়ূদ ঈশ্বরকে বললেন, “আমি এই কাজ করে ভীষণ পাপ করেছি। এখন আমি তোমার কাছে মিনতি করি, তুমি তোমার দাসের এই অন্যায় ক্ষমা কর। আমি খুবই বোকামির কাজ করেছি।” সদাপ্রভু তখন দায়ূদের দর্শক নবী গাদকে বললেন, “তুমি গিয়ে দায়ূদকে এই কথা বল, ‘আমি সদাপ্রভু তোমাকে তিনটা শাস্তির মধ্য থেকে একটা বেছে নিতে বলছি। তুমি তার মধ্য থেকে যেটা বেছে নেবে আমি তোমার প্রতি তা-ই করব।’ ” তখন গাদ দায়ূদের কাছে গিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু আপনাকে এগুলোর মধ্য থেকে একটা বেছে নিতে বলছেন- তিন বছর ধরে দুর্ভিক্ষ, কিম্বা আপনার শত্রুদের কাছে হেরে গিয়ে তাদের সামনে থেকে তিন মাস ধরে পালিয়ে বেড়ানো, কিম্বা তিন দিন পর্যন্ত সদাপ্রভুর তলোয়ার, অর্থাৎ দেশের মধ্যে মড়ক। সেই তিন দিন সদাপ্রভুর দূত ইস্রায়েলের সব জায়গায় ধ্বংসের কাজ করে বেড়াবেন। এখন আপনি বলুন, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকে আমি কি উত্তর দেব?” দায়ূদ গাদকে বললেন, “আমি খুব বিপদে পড়েছি। আমি যেন মানুষের হাতে না পড়ি, তার চেয়ে বরং সদাপ্রভুর হাতেই পড়ি, কারণ তাঁর করুণা অসীম।” তখন সদাপ্রভু ইস্রায়েলের উপর একটা মড়ক পাঠিয়ে দিলেন আর তাতে ইস্রায়েলের সত্তর হাজার লোক মারা পড়ল। যিরূশালেম শহর ধ্বংস করবার জন্য ঈশ্বর একজন দূতকে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু সেই দূত যখন সেই কাজ করতে যাচ্ছিলেন তখন সদাপ্রভু সেই ভীষণ শাস্তি দেওয়া থেকে মন ফিরালেন। সেই ধ্বংসকারী স্বর্গদূতকে তিনি বললেন, “থাক্‌, যথেষ্ট হয়েছে, এবার তোমার হাত গুটাও।” সদাপ্রভুর দূত তখন যিবূষীয় অরৌণার খামারের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর মধ্যে দায়ূদ উপর দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে, সদাপ্রভুর দূত আকাশের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন আর তাঁর হাতে রয়েছে যিরূশালেমের উপর মেলে-ধরা খোলা তলোয়ার। এ দেখে দায়ূদ ও বৃদ্ধ নেতারা চট্‌ পরা অবস্থায় মাটির উপর উবুড় হয়ে পড়লেন। তখন দায়ূদ ঈশ্বরকে বললেন, “লোকদের গণনা করবার হুকুম কি আমিই দিই নি? পাপ আমিই করেছি, অন্যায়ও করেছি আমি। এরা তো ভেড়ার মত, এরা কি করেছে? হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার ও আমার পরিবারের উপর তোমার হাত পড়ুক, কিন্তু এই মড়ক যেন আর তোমার লোকদের উপর না থাকে।” তখন সদাপ্রভুর দূত গাদকে আদেশ দিলেন যেন তিনি দায়ূদকে যিবূষীয় অরৌণার খামারে গিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করতে বলেন। সদাপ্রভুর নাম করে গাদ তাঁকে যে কথা বলেছিলেন সেই কথার বাধ্য হয়ে দায়ূদ সেখানে গেলেন। অরৌণা গম ঝাড়তে ঝাড়তে ঘুরে সেই স্বর্গদূতকে দেখতে পেল, আর তার সংগে তার যে চারটি ছেলে ছিল তারা গিয়ে লুকাল। দায়ূদ এগিয়ে গেলেন আর তাঁকে দেখে অরৌণা খামার ছেড়ে তাঁর সামনে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে প্রণাম করল। দায়ূদ তাকে বললেন, “তোমার ঐ খামার-বাড়ীর জায়গাটা আমাকে দাও। আমি সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করব যাতে লোকদের মধ্যে এই মড়ক থেমে যায়। পুরো দাম নিয়েই ওটা আমার কাছে বিক্রি কর।” অরৌণা দায়ূদকে বলল, “আপনি ওটা নিন। আমার প্রভু মহারাজের যা ভাল মনে হয় তা-ই করুন। দেখুন, পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য আমি আমার ষাঁড়গুলো দিচ্ছি, জ্বালানি কাঠের জন্য দিচ্ছি শস্য মাড়াইয়ের কাঠের যন্ত্র আর শস্য-উৎসর্গের জন্য গম। আমি এই সবই আপনাকে দিচ্ছি।” কিন্তু উত্তরে রাজা দায়ূদ অরৌণাকে বললেন, “না, তা হবে না। আমি এর পুরো দামই দেব। যা তোমার তা আমি সদাপ্রভুর জন্য নেব না, কিম্বা বিনামূল্যে পাওয়া এমন কোন জিনিস দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গও করব না।” এই বলে সেই জমির জন্য দায়ূদ অরৌণাকে সাত কেজি আটশো গ্রাম সোনা দিলেন। দায়ূদ সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী তৈরী করলেন এবং পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তিনি সদাপ্রভুর কাছে মিনতি করলেন আর সদাপ্রভু পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীর উপর স্বর্গ থেকে আগুন পাঠিয়ে উত্তর দিলেন। এর পর সদাপ্রভু ঐ স্বর্গদূতকে আদেশ দিলেন আর তিনি তাঁর তলোয়ার খাপে ঢুকিয়ে রাখলেন। সেই সময় দায়ূদ যখন দেখলেন যে, যিবূষীয় অরৌণার খামারে সদাপ্রভু তাঁকে উত্তর দিলেন তখন তিনি সেখানে আরও উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। মরু-এলাকায় মোশি সদাপ্রভুর জন্য যে আবাস-তাম্বু তৈরী করেছিলেন সেটা এবং পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীটা সেই সময় গিবিয়োনের উপাসনার উঁচু স্থানে ছিল। কিন্তু সদাপ্রভুর দূতের তলোয়ারের ভয়ে দায়ূদ ঈশ্বরের ইচ্ছা জানবার জন্য সেই বেদীর সামনে যেতে পারলেন না। এর পর দায়ূদ বললেন, “ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘর এবং ইস্রায়েলের পোড়ানো-উৎসর্গের বেদীর স্থান এখানেই হবে।” বিভিন্ন জাতির যে সব লোকেরা ইস্রায়েল দেশে বাস করত দায়ূদ আদেশ দিলেন যেন তাদের একত্র করা হয়। তাদের মধ্য থেকে তিনি পাথর কাটবার লোকদের বেছে নিলেন যাতে ঈশ্বরের ঘর তৈরীর জন্য তারা পাথর কেটে-ছেঁটে প্রস্তুত করতে পারে। ফটকগুলোর দরজার পেরেক ও কব্‌জার জন্য তিনি প্রচুর পরিমাণে লোহা দিলেন, আর এত ব্রোঞ্জ দিলেন যে, তা ওজন করা গেল না। এছাড়া তিনি অসংখ্য এরস কাঠও দিলেন, কারণ সীদোনীয় ও সোরীয়েরা দায়ূদকে প্রচুর এরস কাঠ এনে দিয়েছিল। দায়ূদ বললেন, “আমার ছেলে শলোমনের বয়স কম এবং তার অভিজ্ঞতাও কম, কিন্তু সদাপ্রভুর জন্য যে ঘর তৈরী করতে হবে তা যেন সমস্ত জাতির চোখে খুব বিখ্যাত এবং জাঁকজমকে ও গৌরবে পূর্ণ হয়। কাজেই তার জন্য আমি সব কিছু প্রস্তুত করে রাখব।” এই বলে দায়ূদ তাঁর মৃত্যুর আগে অনেক কিছুর আয়োজন করে রাখলেন। তারপর তিনি তাঁর ছেলে শলোমনকে ডেকে তাঁর উপর ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য একটা ঘর তৈরীর ভার দিলেন। দায়ূদ শলোমনকে বললেন, “বাবা, আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য একটা ঘর তৈরীর ইচ্ছা আমার অন্তরে ছিল। কিন্তু সদাপ্রভুর এই কথা আমাকে জানানো হল, ‘তুমি অনেক রক্তপাত করেছ এবং অনেক যুদ্ধও করেছ। তুমি আমার জন্য ঘর তৈরী করবে না, কারণ আমার চোখের সামনে তুমি পৃথিবীতে অনেক রক্তপাত করেছ। কিন্তু তোমার একটি ছেলে হবে যে শান্তি ভালবাসবে। তার চারপাশের শত্রুদের হাত থেকে আমি তাকে শান্তিতে রাখব। তার নাম হবে শলোমন (যার মানে শান্তি), কারণ আমি তার রাজত্বের সময়ে ইস্রায়েলকে শান্তিতে ও নিরাপদে রাখব। সে-ই আমার জন্য একটা ঘর তৈরী করবে। সে হবে আমার পুত্র আর আমি হব তার পিতা। ইস্রায়েলের উপরে তার রাজত্ব আমি চিরকাল স্থায়ী করব।’ “এখন বাবা আমার, সদাপ্রভু তোমার সংগে থাকুন; তুমি সফলতা লাভ কর আর সদাপ্রভুর কথামত তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘর তৈরী কর। সদাপ্রভু তোমার উপরে যখন ইস্রায়েলের শাসনভার দেবেন তখন যেন তিনি তোমাকে বুদ্ধি-বিবেচনা ও বুঝবার শক্তি দেন যাতে তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর আইন-কানুন মেনে চলতে পার। মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে যে নিয়ম ও নির্দেশ দিয়েছেন তা যদি তুমি যত্নের সংগে পালন কর তাহলেই তুমি সফলতা লাভ করতে পারবে। তুমি শক্তিশালী হও আর মনে সাহস রাখ। ভয় কোরো না কিম্বা নিরাশ হোয়ো না। “আমি অনেক কষ্ট করে সদাপ্রভুর ঘরের জন্য তিন হাজার ন’শো টন সোনা ও ঊনচল্লিশ হাজার টন রূপা রেখেছি। এছাড়া এত বেশী ব্রোঞ্জ ও লোহা রেখেছি যা মাপা সম্ভব নয়, আর কাঠ এবং পাথরও ঠিক করে রেখেছি। অবশ্য এর সংগে তুমিও কিছু দিতে পারবে। দায়ূদ তারপর তাঁর ছেলে শলোমনকে সাহায্য করবার জন্য ইস্রায়েলের সমস্ত নেতাদের হুকুম দিয়ে বললেন, “আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কি আপনাদের সংগে নেই? তিনি কি সব দিকেই আপনাদের শান্তি দেন নি? তিনি তো এই দেশের লোকদের আমার হাতে তুলে দিয়েছেন আর দেশটা সদাপ্রভু ও তাঁর লোকদের অধীন হয়েছে। এখন আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছা জানবার জন্য আপনাদের সমস্ত মন-প্রাণ স্থির করুন এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাঁর পবিত্র ঘরটি তৈরী করতে শুরু করে দিন, যাতে তার মধ্যে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুক ও ঈশ্বরের পবিত্র জিনিসগুলো এনে রাখা যায়।” দায়ূদ যখন খুব বেশী বুড়ো হয়ে গেলেন তখন তাঁর ছেলে শলোমনকে তিনি ইস্রায়েলের উপরে রাজা করলেন। দায়ূদ ইস্রায়েলের সমস্ত নেতা, পুরোহিত এবং লেবীয়দের একত্র করলেন। যে সব লেবীয় পুরুষেরা ত্রিশ কিম্বা তার বেশী বয়সের ছিল তাদের গণনা করলে দেখা গেল তাদের সংখ্যা আটত্রিশ হাজার। লেবির ছেলে গের্শোন, কহাৎ ও মরারির বংশ অনুসারে দায়ূদ লেবীয়দের তিনটি দলে ভাগ করলেন। গের্শোনের বংশের মধ্যে ছিলেন লাদন ও শিমিয়ি। লাদনের তিনজন ছেলের মধ্যে প্রধান ছিলেন যিহীয়েল, তারপর সেথম ও যোয়েল। শিমিয়ির তিনজন ছেলে হল শলোমৎ, হসীয়েল ও হারণ। এঁরা ছিলেন লাদনের বিভিন্ন বংশের নেতা। শিমিয়ির চারজন ছেলে হল যহৎ, সীন, যিয়ূশ ও বরীয়। এঁদের মধ্যে প্রথম ছিলেন যহৎ আর দ্বিতীয় ছিলেন সীন; কিন্তু যিয়ূশ ও বরীয়ের ছেলের সংখ্যা কম ছিল বলে তাঁদের সবাইকে একটা বংশের মধ্যে ধরা হল। কহাতের চারজন ছেলে হল অম্রাম, যিষ্‌হর, হিব্রোণ ও উষীয়েল। অম্রামের ছেলেরা হল হারোণ ও মোশি। হারোণ ও তাঁর বংশধরদের চিরকালের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করা হল যেন তাঁরা মহাপবিত্র জিনিসগুলোর ভার নিতে পারেন, সদাপ্রভুর সামনে আগুনে করা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পারেন, তাঁর সামনে সেবা-কাজ করতে পারেন এবং তাঁর নামে আশীর্বাদ উচ্চারণ করতে পারেন। কিন্তু ঈশ্বরের লোক মোশির ছেলেদের বাকী লেবীয়দের মধ্যে ধরা হত। মোশির ছেলেরা হল গের্শোম ও ইলীয়েষর। গের্শোমের বংশধরদের মধ্যে শবূয়েল ছিলেন নেতা। ইলীয়েষরের বংশধরদের মধ্যে রহবিয় ছিলেন নেতা। ইলীয়েষরের আর কোন ছেলে ছিল না, কিন্তু রহবিয়ের ছেলের সংখ্যা ছিল অনেক। যিষ্‌হরের বংশধরদের মধ্যে শলোমীৎ ছিলেন নেতা। হিব্রোণের ছেলেদের মধ্যে প্রথম ছিলেন যিরিয়, দ্বিতীয় অমরিয়, তৃতীয় যহসীয়েল ও চতুর্থ যিকমিয়াম। উষীয়েলের ছেলেদের মধ্যে মীখা ছিলেন প্রথম ও যিশিয় ছিলেন দ্বিতীয়। মরারির ছেলেরা হল মহলি ও মূশি। মহলির ছেলেরা হল ইলিয়াসর ও কীশ। ইলিয়াসর কোন ছেলে না রেখেই মারা গেলেন, তাঁর কেবল মেয়েই ছিল। কীশের ছেলেরা, অর্থাৎ তাদের কাকার ছেলেরা সেই মেয়েদের বিয়ে করল। মূশির তিনজন ছেলে হল মহলি, এদর ও যিরেমোৎ। এঁরাই ছিলেন বংশ অনুসারে লেবি-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বংশের নেতা। এঁদের বংশের লোকদের মধ্যে যাদের বয়স ছিল বিশ কিম্বা তার চেয়েও বেশী তাদের গণনা করে নাম লেখা হয়েছিল, আর তারাই ছিল সদাপ্রভুর ঘরের সেবাকারী। দায়ূদ বলেছিলেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর লোকদের শান্তি দিয়েছেন এবং তিনি চিরকালের জন্য যিরূশালেমে বাস করবেন। কাজেই সেবা-কাজে ব্যবহার করবার জন্য আবাস-তাম্বু কিম্বা অন্য কোন জিনিস লেবীয়দের আর বহন করে নিয়ে যেতে হবে না।” দায়ূদের শেষ নির্দেশ অনুসারে বিশ বছর থেকে শুরু করে তার বেশী বয়সের লেবীয়দের গণনা করা হয়েছিল। এই লেবীয়দের কাজ ছিল সদাপ্রভুর ঘরের সেবা-কাজে হারোণের বংশধরদের সাহায্য করা। এর মধ্যে ছিল উপাসনা-ঘরের উঠান ও পাশের কামরাগুলোর দেখাশোনা করা, সমস্ত পবিত্র জিনিসগুলো শুচি করে নেওয়া এবং ঈশ্বরের ঘরের অন্যান্য কাজ করা। তাদের উপরে এই সব জিনিসের ভার ছিল- সম্মুখ-রুটি, শস্য-উৎসর্গের ময়দা, খামিহীন রুটি, সেঁকা রুটি এবং তেল মেশানো ময়দা। এছাড়া তাদের উপর ভার ছিল সব কিছুর ওজন ও পরিমাণ দেখা, এইভাবে লেবীয়েরা মিলন-তাম্বুর ও পবিত্র স্থানের দেখাশোনা করত এবং সদাপ্রভুর ঘরের সেবা-কাজের জন্য তাদের ভাই হারোণের বংশধরদের অধীনে কাজ করত। হারোণের বংশের লোকদের বিভিন্ন দলে ভাগ করা হয়েছিল। হারোণের ছেলেরা হল নাদব, অবীহূ, ইলিয়াসর ও ঈথামর। হারোণ মারা যাবার আগেই নাদব ও অবীহূ কোন ছেলে না রেখেই মারা গিয়েছিলেন; কাজেই ইলিয়াসর ও ঈথামর পুরোহিতের কাজ করতেন। সাদোক নামে ইলিয়াসরের একজন বংশধর এবং অহীমেলক নামে ঈথামরের একজন বংশধরের সাহায্যে দায়ূদ পুরোহিতদের কাজ অনুসারে তাঁদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে দিলেন। এতে ঈথামরের বংশের লোকদের চেয়ে ইলিয়াসরের বংশের লোকদের মধ্যে অনেক বেশী নেতা পাওয়া গেল। সেইজন্য ইলিয়াসরের বংশের ষোলজন নেতার জন্য তাঁদের ষোল দলে এবং ইথামরের বংশের আটজন নেতার জন্য তাঁদের আট দলে ভাগ করা হল। ইলিয়াসর ও ঈথামর, এই দুই বংশের নেতারা উপাসনা-ঘরের ও ঈশ্বরের কর্মচারী ছিলেন বলে কারো পক্ষ না টেনে গুলিবাঁট করে পুরোহিতদের কাজ ভাগ করা হল। রাজা ও তাঁর উঁচু পদের কর্মচারীদের সামনে এবং পুরোহিত সাদোক, অবিয়াথরের ছেলে অহীমেলক, পুরোহিত বংশের নেতাদের ও লেবীয়দের সামনে নথনেলের ছেলে শময়িয় নামে একজন লেবীয় লেখক গুলিবাঁট অনুসারে সেই নেতাদের নাম তালিকায় লিখলেন। পালা পালা করে ইলিয়াসরের বিভিন্ন বংশের মধ্য থেকে একজন ও তারপর ঈথামরের বিভিন্ন বংশের মধ্য থেকে একজনের জন্য গুলিবাঁট করা হল। তখন প্রথম বারে গুলি উঠল যিহোয়ারীবের নামে, দ্বিতীয় বারে যিদয়িয়ের, তৃতীয় বারে হারীমের, চতুর্থ বারে সিয়োরীমের, পঞ্চম বারে মল্কিয়ের, ষষ্ঠ বারে মিয়ামীনের, সপ্তম বারে হক্কোষের, অষ্টম বারে অবিয়ের, নবম বারে যেশূয়ের, দশম বারে শখনিয়ের, এগারো বারে ইলীয়াশীবের, বারো বারে যাকীমের, তেরো বারে হুপ্পের, চৌদ্দ বারে যেশবাবের, পনেরো বারে বিল্‌গার, ষোল বারে ইম্মেরের, সতেরো বারে হেষীরের, আঠারো বারে হপ্পিসেসের, ঊনিশ বারে পথাহিয়ের, বিশ বারে যিহিষ্কেলের, একুশ বারে যাখীনের, বাইশ বারে গামূলের, তেইশ বারে দলায়ের ও চব্বিশ বারে মাসিয়ের নামে। তাঁদের পূর্বপুরুষ হারোণকে দেওয়া ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে হারোণ তাঁদের জন্য যে নিয়ম ঠিক করে দিয়েছিলেন সেইমত সদাপ্রভুর ঘরে গিয়ে সেবা-কাজ করবার জন্য এইভাবে তাঁদের পালা ঠিক করা হল। যিষ্‌হরের বংশের পিতা শলোমীৎ ও শলোমীতের বংশ-নেতা যহৎ। হিব্রোণের বংশের মধ্যে প্রথম যিরিয়, দ্বিতীয় অমরিয়, তৃতীয় যহসীয়েল এবং চতুর্থ যিকমিয়াম ছিলেন বংশের পিতা। মরারির ছেলে মহলি, মূশি ও যাসিয়; যাসিয়ের বংশের বিনো শোহম, শক্কুর ও ইব্রি ছিলেন বংশের পিতা। মহলির বংশের ইলিয়াসর ও কীশ; ইলিয়াসরের কোন ছেলে ছিল না। কীশের বংশ-নেতা ছিলেন যিরহমেল। মূশির বংশের মহলি, এদর ও যিরেমোৎ ছিলেন বংশের পিতা। বিভিন্ন বংশ অনুসারে এঁরা ছিলেন লেবীয়। এঁরাও রাজা দায়ূদ, সাদোক, অহীমেলক এবং পুরোহিত ও লেবীয়দের বংশ-নেতাদের সামনে এঁদের ভাইদের, অর্থাৎ হারোণের বংশের লোকদের মত করে গুলিবাঁট করেছিলেন। বড় ভাই হোক বা ছোট ভাই হোক তাদের সকলের জন্য একইভাবে গুলিবাঁট করা হয়েছিল। উপাসনা-ঘরের সেবা-কাজ করবার জন্য দায়ূদ এবং সৈন্যদলের সেনাপতিরা আসফ, হেমন ও যিদূথূনের ছেলেদের আলাদা করে নিলেন যাতে তাঁরা সুরবাহার, বীণা ও করতালের সংগে গানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশ করতে পারেন। যাঁরা এই কাজ করতেন তাঁদের তালিকা এই: আসফের ছেলে সক্কুর, যোষেফ, নথনিয় ও অসারেল। তাঁরা রাজার আদেশে আসফের পরিচালনায় গানের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশ করতেন। যিদূথূনের ছয়জন ছেলে গদলিয়, সরী, যিশায়াহ, শিমিয়ি, হশবিয় ও মত্তিথিয়। তাঁরা তাঁদের বাবা যিদূথূনের পরিচালনায় সুরবাহার বাজিয়ে সদাপ্রভুর প্রশংসা ও ধন্যবাদের মধ্য দিয়ে তাঁর বাক্য প্রকাশ করতেন। হেমনের ছেলে বুক্কিয়, মত্তনিয়, উষীয়েল, শবূয়েল, যিরীমোৎ, হনানিয়, হনানি, ইলীয়াথা, গিদ্দল্‌তি, রোমাম্‌তী-এষর, যশ্‌বকাশা, মল্লোথি, হোথীর ও মহসীয়োৎ। এঁরা সবাই ছিলেন রাজার দর্শক হেমনের ছেলে। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা অনুসারে হেমনকে শক্তিশালী করবার জন্য ঈশ্বর তাঁকে চৌদ্দটি ছেলে ও তিনটি মেয়ে দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের ঘরের সেবা-কাজের জন্য এঁরা সবাই তাঁদের বাবা আসফ, যিদূথূন আর হেমনের পরিচালনার অধীন ছিলেন। তাঁরা রাজার আদেশে করতাল, বীণা ও সুরবাহার নিয়ে সদাপ্রভুর ঘরে গান-বাজনা করতেন। সদাপ্রভুর উদ্দেশে তাঁদের বংশের গান-বাজনায় শিক্ষিত ও দক্ষ লোকদের নিয়ে তাঁদের সংখ্যা ছিল দু’শো অষ্টাশি জন। ছেলে-বুড়ো, শিক্ষক-ছাত্র সকলের কাজের পালা গুলিবাঁট করে ঠিক করা হয়েছিল। আসফের পক্ষে প্রথম বারের গুলিবাঁটে যোষেফের নাম উঠল। দ্বিতীয় বারের গুলিবাঁটে উঠল গদলিয়ের নাম; তিনি, তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও ছেলেরা ছিলেন বারোজন। তৃতীয় বারের গুলিবাঁটে উঠল সক্কুরের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। চতুর্থ বারের গুলিবাঁটে উঠল যিষ্রির নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। পঞ্চম বারে গুলিবাঁটে উঠল নথনিয়ের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। ষষ্ঠ বারের গুলিবাঁটে উঠল বুক্কিয়ের নাম; তিনি, তার ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। সপ্তম বারের গুলিবাঁটে উঠল যিমারেলার নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। অষ্টম বারের গুলিবাঁটে উঠল যিশয়াহের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। নবম বারের গুলিবাঁটে উঠল মত্তনিয়ের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। দশম বারের গুলিবাঁটে উঠল শিমিয়ির নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। এগারো বারের গুলিবাঁটে উঠল অসারেলের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। বারো বারের গুলিবাঁটে উঠল হশবিয়ের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারো জন। তেরো বারের গুলিবাঁটে উঠল শবূয়েলের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। চৌদ্দ বারের গুলিবাঁটে উঠল মত্তিথিয়ের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। পনেরো বারের গুলিবাঁটে উঠল যিরেমোতের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। ষোল বারের গুলিবাঁটে উঠল হনানিয়ের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। সতের বারের গুলিবাঁটে উঠল যশ্‌বকাশার নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। আঠারো বারের গুলিবাঁটে উঠল হনানির নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। ঊনিশ বারের গুলিবাঁটে উঠল মল্লোথির নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। কুড়ি বারের গুলিবাঁটে উঠল ইলীয়াথার নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। একুশ বারের গুলিবাঁটে উঠল হোথীর নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। বাইশ বারের গুলিবাঁটে উঠল গিদ্দল্‌তির নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। তেইশ বারের গুলিবাঁটে উঠল মহসীয়োতের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। চব্বিশ বারের গুলিবাঁটে উঠল রোমাম্‌তী-এষরের নাম; তিনি, তাঁর ছেলেরা ও আত্মীয়-স্বজনেরা ছিলেন বারোজন। রক্ষীদের বিভিন্ন দলে ভাগ করা হয়েছিল। কোরহীয়দের মধ্য থেকে আসফের বংশের কোরির ছেলে মশেলিমিয় ছিলেন বংশ-পিতা। মশেলিমিয়ের ছেলেরা হল, প্রথম সখরিয়, দ্বিতীয় যিদীয়েল, তৃতীয় সবদিয়, চতুর্থ যৎনীয়েল, পঞ্চম এলম, ষষ্ঠ যিহোহানন, সপ্তম ইলিহৈনয়। ওবেদ-ইদোমের ছেলে শময়িয়েরও কয়েকজন ছেলে ছিল; তাঁরা প্রত্যেকে তাঁদের বংশের নেতা ছিলেন, কারণ তাঁরা ছিলেন বীর যোদ্ধা। শময়িয়ের ছেলেরা হল অৎনি, রফায়েল, ওবেদ, ইল্‌সাবদ। শময়িয়ের বংশের ইলীহূ আর সমথিয়ও ছিলেন শক্তিশালী লোক। এঁরা সবাই ছিলেন ওবেদ-ইদোমের বংশের লোক। তাঁরা, তাঁদের ছেলেরা ও বংশের লোকেরা ছিলেন উপযুক্ত ও শক্তিশালী। ওবেদ-ইদোমের বংশের লোকেরা ছিলেন মোট বাষট্টিজন। মশেলিমিয়ের ছেলেরা ও তাঁর বংশের লোকেরা ছিলেন শক্তিশালী লোক। তাঁরা ছিলেন মোট আঠারোজন। ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ করা এই সব রক্ষীরা তাঁদের নেতাদের অধীনে থেকে তাঁদের গোষ্ঠী-ভাইদের মতই সদাপ্রভুর ঘরে সেবা-কাজের ভার পেয়েছিলেন। বংশ অনুসারে ছেলে-বুড়ো সকলের জন্যই গুলিবাঁট করা হয়েছিল যাতে ঠিক করা যায় কোন্‌ দল কোন্‌ ফটকে পাহারা দেবে। পূর্ব দিকের ফটকের জন্য গুলি উঠল শেলিমিয়ের নামে। তারপর তাঁর ছেলে সখরিয়ের জন্য গুলিবাঁট করা হলে তাঁর নামে উত্তর দিকের ফটকের জন্য গুলি উঠল। তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী পরামর্শদাতা। দক্ষিণ দিকের ফটকের জন্য গুলি উঠল ওবেদ-ইদোমের নামে। ভাণ্ডার-ঘরের জন্য গুলি উঠল তাঁর ছেলেদের নামে। পশ্চিমের উঠানের জন্য রাস্তার দিকে চারজন এবং উঠানে দু’জন থাকতেন। এই ছিল কোরহ আর মরারির বংশের রক্ষীদের দলভাগ। ঈশ্বরের ঘরের ধনভাণ্ডার এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করা জিনিসের ভাণ্ডারের দেখাশোনার ভার ছিল বাকী লেবীয়দের মধ্য থেকে অহিয়ের উপর। অম্রামীয়, যিষ্‌হরীয়, হিব্রোণীয় ও উষীয়েলীয়দেরও কাজের ভার দেওয়া হয়েছিল। শবূয়েল নামে মোশির ছেলে গের্শোমের একজন বংশধর প্রধান ধনরক্ষক ছিলেন। গের্শোমের ভাই ইলীয়ষেরের মধ্য দিয়ে শলোমোৎ ছিলেন শবূয়েলের বংশের লোক। ইলীয়ষেরের ছেলে রহবিয়, রহবিয়ের ছেলে যিশায়াহ, যিশায়াহের ছেলে যোরাম, যোরামের ছেলে সিখ্রি, সিখ্রির ছেলে শলোমোৎ। রাজা দায়ূদ, ইস্রায়েলের বিভিন্ন বংশের নেতারা, হাজার ও শত সৈন্যের সেনাপতিরা এবং প্রধান সেনাপতিরা যে সব জিনিস ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন শলোমোৎ ও তাঁর বংশের লোকেরা সেই সব জিনিসের ভাণ্ডারের দেখাশোনাকারী ছিলেন। যুদ্ধে লুট করা কতগুলো জিনিস তাঁরা সদাপ্রভুর ঘর মেরামতের জন্য তাঁর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন। এছাড়া দর্শক শমূয়েল, কীশের ছেলে শৌল, নেরের ছেলে অব্‌নের ও সরূয়ার ছেলে যোয়াব যে সব জিনিস ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন, মোট কথা, সমস্ত আলাদা করা জিনিসের দেখাশোনার ভার ছিল শলোমোৎ ও তাঁর বংশের লোকদের উপর। যিষ্‌হরীয়দের মধ্য থেকে কননিয় ও তাঁর ছেলেরা উপাসনা-ঘরের কাজে নয়, কিন্তু ইস্রায়েল দেশের উপরে কর্মকর্তা ও বিচারকের কাজে নিযুক্ত হলেন। হিব্রোণীয়দের মধ্য থেকে হশবিয় ও তাঁর বংশের এক হাজার সাতশো শক্তিশালী লোক সদাপ্রভুর ও রাজার সমস্ত কাজ করবার জন্য যর্দন নদীর পশ্চিম দিকের ইস্রায়েলীয়দের উপরে নিযুক্ত হলেন। হিব্রোণীয়দের মধ্যে যিরিয় ছিলেন নেতা। দায়ূদের রাজত্বের চল্লিশ বছরের সময় তাদের বংশ-তালিকাগুলোর মধ্যে খোঁজ করা হল এবং গিলিয়দের যাসেরে হিব্রোণীয়দের মধ্যে অনেক বীর যোদ্ধা পাওয়া গেল। যিরিয়ের বংশের দু’হাজার সাতশো জন লোক ছিলেন শক্তিশালী। তাঁরা ছিলেন নিজের নিজের পরিবারের কর্তা। রাজা দায়ূদ ঈশ্বরের ও রাজার সমস্ত কাজ করবার জন্য রূবেণীয়, গাদীয় ও মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের উপরে এই হিব্রোণীয়দের নিযুক্ত করলেন। এই হল ইস্রায়েলীয় বংশের নেতা, হাজার ও শত সৈন্যের সেনাপতি ও তাঁদের অধীন কর্মচারীদের তালিকা। এঁরা বিভিন্ন সৈন্যদলের সমস্ত বিষয়ে রাজাকে সাহায্য করতেন। বারোটি দলের প্রত্যেকটিতে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। সারা বছর ধরে এক একটি দল এক এক মাস করে কাজ করত। প্রথম মাসের জন্য প্রথম সৈন্যদলের ভার ছিল সব্দীয়েলের ছেলে যাশবিয়ামের উপর। তিনি ছিলেন পেরসের বংশধর। তিনি প্রথম মাসের জন্য সমস্ত সেনাপতিদের নেতা ছিলেন। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। দ্বিতীয় মাসের জন্য সৈন্যদলের ভার ছিল অহোহীয় দোদাইয়ের উপর। তাঁর অধীনে দলনেতা ছিলেন মিক্লোৎ। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। তৃতীয় মাসের জন্য সেনাপতি ছিলেন পুরোহিত যিহোয়াদার ছেলে বনায়। তিনি ছিলেন তৃতীয় দলের নেতা। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। ইনি সেই বনায় যিনি “ত্রিশ” নামে বীর যোদ্ধাদের দলের একজন ছিলেন এবং সেই দলের নেতা ছিলেন। তাঁর ছেলে অম্মীষাবাদ তাঁর দলে ছিলেন। চতুর্থ মাসের জন্য চতুর্থ দলের সেনাপতি ছিলেন যোয়াবের ভাই অসাহেল। তাঁর মৃত্যুর পরে সেনাপতি হয়েছিলেন তাঁর ছেলে সবদিয়। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। পঞ্চম মাসের জন্য পঞ্চম দলের সেনাপতি ছিলেন যিষ্রাহীয় শমহূৎ। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। ষষ্ঠ মাসের জন্য ষষ্ঠ দলের সেনাপতি ছিলেন তকোয়ীয় ইক্কেশের ছেলে ঈরা। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। সপ্তম মাসের জন্য সপ্তম দলের সেনাপতি ছিলেন পলোনীয় হেলস; তিনি ছিলেন ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর একজন লোক। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। অষ্টম মাসের জন্য অষ্টম দলের সেনাপতি ছিলেন হূশাতীয় সিব্বখয়; তিনি ছিলেন সেরহের বংশের একজন লোক। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। নবম মাসের জন্য নবম দলের সেনাপতি ছিলেন অনাথোতীয় অবীয়েষর; তিনি ছিলেন বিন্যামীন-গোষ্ঠীর একজন লোক। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। দশম মাসের জন্য দশম দলের সেনাপতি ছিলেন নটোফাতীয় মহরয়। তিনি ছিলেন সেরহের বংশের একজন লোক। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। একাদশ মাসের জন্য একাদশ দলের সেনাপতি ছিলেন পিরিয়াথোনীয় বনায়। তিনি ছিলেন ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর একজন লোক। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। দ্বাদশ মাসের জন্য দ্বাদশ দলের সেনাপতি ছিলেন নটোফাতীয় হিল্‌দয়। তিনি ছিলেন অৎনীয়েলের বংশের একজন লোক। তাঁর দলে চব্বিশ হাজার সৈন্য ছিল। ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর প্রধান নেতাদের তালিকা এই: রূবেণীয়দের নেতা সিখ্রির ছেলে ইলীয়েষর, শিমিয়োনীয়দের নেতা মাখার ছেলে শফটিয়, লেবি-গোষ্ঠীর নেতা কমূয়েলের ছেলে হশবিয়, হারোণের বংশের নেতা সাদোক, যিহূদা-গোষ্ঠীর নেতা দায়ূদের ভাই ইলীহূ, ইষাখর-গোষ্ঠীর নেতা মীখায়েলের ছেলে অম্রি, সবূলূন-গোষ্ঠীর নেতা ওবদিয়ের ছেলে যিশ্মায়য়, নপ্তালি-গোষ্ঠীর নেতা অস্রীয়েলের ছেলে যিরেমোৎ, ইফ্রয়িমের বংশের নেতা অসসিয়ের ছেলে হোশেয়, মনঃশি-গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকদের নেতা পদায়ের ছেলে যোয়েল, গিলিয়দে বাসকারী মনঃশি-গোষ্ঠীর বাকী অর্ধেক লোকদের নেতা সখরিয়ের ছেলে যিদ্দো, বিন্যামীন-গোষ্ঠীর নেতা অব্‌নেরের ছেলে যাসীয়েল, দান-গোষ্ঠীর নেতা যিরোহমের ছেলে অসরেল। এঁরাই ছিলেন ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর প্রধান নেতা। দায়ূদ বিশ কিম্বা তার চেয়ে কম বয়সী লোকদের সংখ্যা গণনা করলেন না, কারণ সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যা আকাশের তারার মত অসংখ্য করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। সরূয়ার ছেলে যোয়াব লোকগণনা করতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু তা শেষ করেন নি। লোকগণনার জন্য ইস্রায়েলের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধ নেমে এসেছিল। সেইজন্য রাজা দায়ূদের ইতিহাস বইয়ে লোকদের কোন সংখ্যা লেখা হয় নি। রাজার ভাণ্ডারের দেখাশোনার ভার ছিল অদীয়েলের ছেলে অস্‌মাবতের উপর। ক্ষেত-খামারে, শহরে, গ্রামে ও পাহারা দেওয়ার উঁচু ঘরগুলোতে যে সব গুদাম ছিল তার দেখাশোনা করবার ভার ছিল উষিয়ের ছেলে যোনাথনের উপর। চাষীদের দেখাশোনার ভার ছিল কলূবের ছেলে ইষ্রির উপর। আংগুর ক্ষেতের ভার ছিল রামাথীয় শিমিয়ির উপর। আংগুর ক্ষেত থেকে যে আংগুর-রস পাওয়া যেত তার ভাণ্ডারের ভার ছিল শিফমীয় সব্দির উপর। পশ্চিম দিকের নীচু পাহাড়ী এলাকার জলপাই ও ডুমুর গাছের ভার ছিল গদেরীয় বাল-হাননের উপর। জলপাইয়ের তেলের ভাণ্ডারের ভার ছিল যোয়াশের উপর। শারোণে যে সব গরুর পাল চরত তাদের ভার ছিল শারোণীয় সিট্রয়ের উপর। উপত্যকার গরুর পালের ভার ছিল অদ্‌লয়ের ছেলে শাফটের উপর। ইশ্মায়েলীয় ওবীলের উপর ভার ছিল উটের পালের। মেরোণোথীয় যেহদিয়ের উপর ছিল গাধার পালের ভার। ছাগল ও ভেড়ার পালের ভার ছিল হাগরীয় যাসীষের উপর। রাজা দায়ূদের সম্পত্তির দেখাশোনার ভার ছিল এই সব তদারককারীদের উপর। দায়ূদের কাকা যোনাথন ছিলেন পরামর্শদাতা, বুদ্ধিমান লোক ও রাজার লেখক। রাজার ছেলেদের শিক্ষার ব্যবস্থার ভার ছিল হক্‌মোনির ছেলে যিহীয়েলের উপর। অহীথোফল ছিলেন রাজার পরামর্শদাতা, অর্কীয় হূশয় ছিলেন রাজার বন্ধু। অহীথোফলের মৃত্যুর পরে অবীয়াথর ও বনায়ের ছেলে যিহোয়াদা রাজার পরামর্শদাতা হয়েছিলেন। রাজার সৈন্যদলের সেনাপতি ছিলেন যোয়াব। দায়ূদ ইস্রায়েলের সমস্ত কর্মকর্তাদের যিরূশালেমে এসে একত্র হবার জন্য আদেশ দিলেন। এতে সমস্ত বীর যোদ্ধারা এসেছিলেন। তাঁরা ছিলেন বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা, রাজার বারোটি সৈন্যদলের প্রধান সেনাপতিরা, হাজার ও শত সৈন্যের সেনাপতিরা, রাজা ও রাজার ছেলেদের সমস্ত সম্পত্তি তদারককারীরা, রাজবাড়ীর কর্মকর্তারা ও বীর যোদ্ধারা। পরে রাজা দায়ূদ উঠে দাঁড়িয়ে তাঁদের বললেন, “আমার ভাইয়েরা ও আমার লোকেরা, আমার কথায় মনোযোগ দিন। সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকের জন্য, অর্থাৎ আমাদের ঈশ্বরের পা রাখবার জায়গার জন্য একটা স্থায়ী ঘর তৈরী করবার ইচ্ছা আমার মনে ছিল, আর আমি তা তৈরী করবার আয়োজনও করেছিলোম। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে বললেন, ‘আমার জন্য তুমি ঘর তৈরী করবে না, কারণ তুমি একজন যোদ্ধা এবং তুমি রক্তপাত করেছ।’ “তবুও ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু চিরকাল ইস্রায়েলের উপর রাজা হওয়ার জন্য আমার গোটা পরিবারের মধ্য থেকে আমাকেই বেছে নিয়েছিলেন। তিনি নেতা হিসাবে যিহূদাকে বেছে নিয়েছিলেন, তারপর যিহূদা-গোষ্ঠী থেকে আমার বাবার বংশকে বেছে নিয়েছিলেন এবং ইস্রায়েলের উপরে রাজা হওয়ার জন্য তিনি খুশী হয়ে আমার ভাইদের মধ্য থেকে আমাকেই বেছে নিয়েছিলেন। সদাপ্রভু আমাকে অনেক ছেলে দিয়েছেন, আর সেই সব ছেলেদের মধ্যে সদাপ্রভুর রাজ্য ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসবার জন্য তিনি আমার ছেলে শলোমনকে বেছে নিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তোমার ছেলে শলোমনই সেই লোক, যে আমার ঘর ও উঠান তৈরী করবে, কারণ আমি তাকেই আমার পুত্র হবার জন্য বেছে নিয়েছি আর আমি তার পিতা হব। যেমন এখন করা হচ্ছে সেইভাবে যদি সে আমার আদেশ ও নির্দেশ পালন করবার ব্যাপারে স্থির থাকে তবে আমি তার রাজ্য চিরকাল স্থায়ী করব।’ “কাজেই সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের, অর্থাৎ সদাপ্রভুর সমাজের লোকদের এবং আমাদের ঈশ্বরের সামনে আমি আপনাদের এখন এই আদেশ দিচ্ছি যে, আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সমস্ত আদেশ পালন করতে মনোযোগী হন যাতে আপনারা এই চমৎকার দেশে থাকতে পারেন এবং চিরকালের সম্পত্তি হিসাবে আপনাদের বংশধরদের হাতে তা দিয়ে যেতে পারেন। “আর তুমি, আমার ছেলে শলোমন, তুমি তোমার বাবার ঈশ্বরকে সামনে রেখে চলবে এবং তোমার অন্তর স্থির রেখে ও মনের ইচ্ছা দিয়ে তাঁর সেবা করবে, কারণ সদাপ্রভু প্রত্যেকটি অন্তর খুঁজে দেখেন এবং চিন্তার প্রত্যেকটি উদ্দেশ্য বোঝেন। তাঁর ইচ্ছা জানতে চাইলে তুমি তা জানতে পারবে, কিন্তু যদি তুমি তাঁকে ত্যাগ কর তবে তিনিও তোমাকে চিরকালের জন্য অগ্রাহ্য করবেন। এখন মনোযোগী হও, কারণ উপাসনা করবার জন্য একটা ঘর তৈরী করতে সদাপ্রভু তোমাকেই বেছে নিয়েছেন। তুমি শক্তিশালী হও এবং কাজ কর।” তারপর দায়ূদ তাঁর ছেলে শলোমনকে উপাসনা-ঘরের বারান্দা, তাঁর দালানগুলো, ভাণ্ডার-ঘরগুলো, উপরের ও ভিতরের কামরাগুলো এবং পাপ ঢাকা দেবার জায়গার নক্‌শা দিলেন। সদাপ্রভুর ঘরের উঠান, তার চারপাশের কামরা, ঈশ্বরের ঘরের ধনভাণ্ডার এবং উৎসর্গের জিনিস রাখবার ভাণ্ডারের যে নমুনা পবিত্র আত্মা দায়ূদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন তা সবই তিনি শলোমনকে জানালেন। পুরোহিত ও লেবীয়দের বিভিন্ন দলের কাজ, সদাপ্রভুর ঘরের সমস্ত সেবা-কাজ এবং সেই কাজে ব্যবহারের সমস্ত জিনিসপত্র সম্বন্ধে তিনি তাঁকে নির্দেশ দিলেন। বিভিন্ন সেবা-কাজের জন্য যে সব সোনা ও রূপার জিনিস ব্যবহার করা হবে তিনি তার জন্য কতটা সোনা ও রূপা লাগবে তার নির্দেশ দিলেন। প্রত্যেকটি সোনার বাতিদান ও বাতির জন্য কতটা সোনা এবং ব্যবহার অনুসারে প্রত্যেকটা রূপার বাতিদান ও বাতির জন্য কতটা রূপা লাগবে তার নির্দেশ দিলেন। সম্মুখ-রুটি রাখবার সোনার টেবিলের জন্য কতটা সোনা এবং রূপার টেবিলগুলোর জন্য কতটা রূপা লাগবে তার নির্দেশ দিলেন। দায়ূদ বললেন, “সদাপ্রভু যে নমুনা আমার কাছে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর পরিচালনায় আমি তা এঁকেছিলাম, আর সেই নমুনার খুঁটিনাটি বুঝবার জ্ঞান তিনি আমাকে দিয়েছিলেন।” দায়ূদ তাঁর ছেলে শলোমনকে এই কথাও বললেন, “তুমি শক্তিশালী হও, মনে সাহস আন এবং কাজ কর। তুমি ভয় কোরো না, নিরাশ হোয়ো না, কারণ সদাপ্রভু ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর তোমার সংগে আছেন। সদাপ্রভুর সেবা-কাজের জন্য উপাসনা-ঘর তৈরীর সব কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তোমাকে ছেড়ে যাবেন না বা ত্যাগ করবেন না। ঈশ্বরের ঘরের সমস্ত সেবা-কাজের জন্য বিভিন্ন দলের পুরোহিত ও লেবীয়েরা প্রস্তুত আছে। সমস্ত কাজে তোমাকে সাহায্য করবার জন্য দক্ষ ও ইচ্ছুক লোকেরাও আছে। নেতারা ও সমস্ত লোকেরা তোমার আদেশ মানবে।” রাজা দায়ূদ তারপর সমস্ত লোকদের বললেন, “আমার ছেলে শলোমনকেই ঈশ্বর বেছে নিয়েছেন; তার বয়সও বেশী নয় এবং অভিজ্ঞতাও কম। এই কাজ খুব মহৎ, কারণ এই বড় দালানটি ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য, কোন মানুষের জন্য নয়। আমার ক্ষমতা অনুসারে আমি আমার ঈশ্বরের ঘরের জন্য এই সব যোগাড় করে রেখেছি- সোনার জিনিসের জন্য সোনা, রূপার জিনিসের জন্য রূপা, ব্রোঞ্জের জিনিসের জন্য ব্রোঞ্জ, লোহার জিনিসের জন্য লোহা এবং কাঠের জিনিসের জন্য কাঠ। এছাড়া বৈদুর্যমণি, বসাবার জন্য বিভিন্ন মণি, চক্‌চকে পাথর, নানা রংয়ের পাথর ও সমস্ত রকমের দামী পাথর রেখেছি আর অনেক মার্বেল পাথরও রেখেছি। এই পবিত্র উপাসনা-ঘরের জন্য আমি যা যা যোগাড় করেছি তা ছাড়াও আমার ঈশ্বরের ঘরের প্রতি আমার ভালবাসার জন্য এখন আমি আমার নিজের সোনা ও রূপা দিচ্ছি। তখন বংশের নেতারা, ইস্রায়েলীয়দের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা, হাজার সৈন্যের ও শত সৈন্যের সেনাপতিরা ও রাজার কাজের তদারককারীরা খুশী হয়ে দান করলেন। ঈশ্বরের ঘরের কাজের জন্য তাঁরা একশো পঁচানব্বই টন সোনা, দশ হাজার সোনার অদর্কোন, তিনশো নব্বই টন রূপা, সাতশো দুই টন ব্রোঞ্জ ও তিন হাজার ন’শো টন লোহা দিলেন। যাঁদের কাছে দামী পাথর ছিল তাঁরা সেগুলো সদাপ্রভুর ঘরের ভাণ্ডারে রাখবার জন্য গের্শোনীয় যিহীয়েলের হাতে দিলেন। তাঁরা খুশী মনে এবং খোলা হাতে সমস্ত অন্তর দিয়ে সদাপ্রভুকে দিতে পেরে আনন্দিত হলেন। রাজা দায়ূদও খুব আনন্দিত হয়েছিলেন। দায়ূদ সমস্ত লোকের সামনে এই বলে সদাপ্রভুর গৌরব করলেন, “হে সদাপ্রভু, আমাদের পূর্বপুরুষ ইস্রায়েলের ঈশ্বর, অনাদিকাল থেকে অনন্ত কাল পর্যন্ত তোমার গৌরব হোক। হে সদাপ্রভু, মহিমা, শক্তি, জাঁকজমক, জয় আর গৌরব তোমার, কারণ স্বর্গের ও পৃথিবীর সব কিছু তোমারই। হে সদাপ্রভু, তুমিই সব কিছুর উপরে রাজত্ব করছ; তোমার স্থান সকলের উপরে। ধন ও সম্মান আসে তোমারই কাছ থেকে; তুমিই সব কিছু শাসন করে থাক। তোমার হাতেই রয়েছে শক্তি আর ক্ষমতা; মানুষকে উন্নত করবার ও শক্তি দেবার অধিকার তোমারই। এখন, হে আমাদের ঈশ্বর, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দিই, তোমার গৌরবময় নামের প্রশংসা করি। “কিন্তু হে সদাপ্রভু, আমি কে আর আমার লোকেরাই বা কারা যে, আমরা এইভাবে খুশী হয়ে দান করতে পারি? সব কিছুই তো তোমার কাছ থেকে আসে। তোমার হাত থেকে যা পেয়েছি আমরা কেবল তোমাকে তা-ই দিয়েছি। আমরা তোমার চোখে আমাদের সমস্ত পূর্বপুরুষদের মতই পরদেশী বাসিন্দা। পৃথিবীতে আমাদের দিনগুলো ছায়ার মত, আমাদের কোন আশা নেই। হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার পবিত্র নামের উদ্দেশে একটা ঘর তৈরীর জন্য এই যে প্রচুর জিনিসের আয়োজন আমরা করেছি তা তোমার কাছ থেকেই এসেছে এবং এর সব কিছুই তোমার। হে আমার ঈশ্বর, আমি জানি যে, তুমি অন্তরের পরীক্ষা করে থাক এবং সততায় খুশী হও। এই সব জিনিস আমি খুশী হয়ে এবং অন্তরের সততায় দিয়েছি। আর এখন আমি দেখে আনন্দিত হলাম যে, তোমার লোকেরা যারা এখানে আছে তারাও কেমন খুশী হয়ে তোমাকে দিয়েছে। হে সদাপ্রভু, আমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইসহাক ও ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তোমার লোকদের অন্তরে এই রকম ইচ্ছা তুমি চিরকাল রাখ এবং তোমার প্রতি তাদের অন্তর বিশ্বস্ত রাখ। আমার ছেলে শলোমনকে এমন স্থির অন্তর দান কর যাতে সে তোমার আদেশ, তোমার বাক্য ও তোমার নিয়ম পালন করতে পারে এবং আমি যে দালান তৈরীর আয়োজন করেছি তা তৈরী করতে পারে।” পরে দায়ূদ সমস্ত লোকদের বললেন, “আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করুন।” তখন তারা সবাই তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করল এবং সদাপ্রভু ও রাজার উদ্দেশে উবুড় হয়ে প্রণাম জানাল। পরের দিন তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ এবং পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জন্য তারা এক হাজার ষাঁড়, এক হাজার ভেড়া ও এক হাজার ভেড়ার বাচ্চা উৎসর্গ করল এবং প্রত্যেকটির সংগে নিয়মিত ঢালন-উৎসর্গ এবং প্রচুর পশু দিয়ে অন্যান্য উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। সেই দিন তারা সদাপ্রভুর সামনে খুব আনন্দের সংগে খাওয়া-দাওয়া করল। তারা দায়ূদের ছেলে শলোমনকে এই দ্বিতীয় বার রাজা বলে স্বীকার করল এবং তাঁকে রাজা ও সাদোককে পুরোহিত হিসাবে সদাপ্রভুর উদ্দেশে অভিষেক করল। তখন শলোমন তাঁর বাবা দায়ূদের জায়গায় রাজা হিসাবে সদাপ্রভুর সিংহাসনে বসলেন। তিনি সব বিষয়ে সফলতা লাভ করলেন এবং সমস্ত ইস্রায়েল তাঁর কথামত চলত। সমস্ত নেতারা ও সৈন্যেরা এবং রাজা দায়ূদের অন্য সব ছেলেরা রাজা শলোমনের অধীনতা স্বীকার করলেন। সদাপ্রভু সমস্ত ইস্রায়েলের চোখে শলোমনকে খুব মহান করলেন এবং তাঁকে এমন রাজকীয় গৌরব দান করলেন যা এর আগে ইস্রায়েলের কোন রাজাই পান নি। তিনি অনেক বছর বেঁচে থেকে ধন ও সম্মান লাভ করে খুব বুড়ো বয়সে মারা গেলেন। তাঁর ছেলে শলোমন তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। দর্শক শমূয়েলের, নবী নাথনের ও দর্শক গাদের ইতিহাস বইয়ে রাজা দায়ূদের রাজত্বের সমস্ত কথা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখা রয়েছে। তাঁর রাজত্বের খুঁটিনাটি ও ক্ষমতার কথা এবং তাঁকে নিয়ে, ইস্রায়েলকে নিয়ে আর অন্যান্য দেশের সব রাজ্যগুলোকে নিয়ে যে সব ঘটনা ঘটেছিল সেই সব কথাও সেখানে লেখা রয়েছে। ॥ভব দায়ূদের ছেলে শলোমন তাঁর রাজ্যটি বেশ শক্তভাবে নিজের অধীনে রাখলেন, কারণ তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর সংগে ছিলেন এবং তাঁকে খুব মহান করেছিলেন।ক্ষমতা শলোমন সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের, অর্থাৎ হাজার সৈন্যের ও শত সৈন্যের সেনাপতিদের, বিচারকদের এবং ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের নেতাদের একত্র হবার জন্য আদেশ দিলেন। তারপর তিনি ও সমস্ত লোকেরা গিবিয়োনের উপাসনার উঁচু স্থানে গেলেন, কারণ সেখানেই ঈশ্বরের মিলন-তাম্বু ছিল যেটি সদাপ্রভুর দাস মোশি মরু-এলাকায় থাকতে তৈরী করেছিলেন। অবশ্য ঈশ্বরের সিন্দুকটি যিরূশালেমে ছিল, কারণ দায়ূদ কিরিয়ৎ-যিয়ারীম থেকে সেটি নিয়ে এসে এর জন্য যিরূশালেমে যে তাম্বু খাটিয়েছিলেন সেখানে রেখেছিলেন। কিন্তু হূরের নাতি ঊরির ছেলে বৎসলেল ব্রোঞ্জের যে বেদী তৈরী করেছিলেন সেটি গিবিয়োনে সদাপ্রভুর আবাস-তাম্বুর সামনে ছিল। সেইজন্য শলোমন ও সব লোকেরা সেখানে গেলেন। তখন শলোমন সেই ব্রোঞ্জের বেদীর কাছে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে তার উপরে এক হাজার পশু দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। সেই রাতে ঈশ্বর শলোমনের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বললেন, “তুমি আমার কাছে যা চাইবে আমি তা-ই তোমাকে দেব।” উত্তরে শলোমন ঈশ্বরকে বললেন, “তুমি আমার বাবা দায়ূদের প্রতি অটল ভালবাসা দেখিয়েছ এবং তাঁর জায়গায় আমাকে রাজা করেছ। হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমার বাবা দায়ূদের কাছে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছ এখন তা পূর্ণ কর, কারণ তুমি এমন এক জাতির উপরে আমাকে রাজা করেছ যারা পৃথিবীর ধুলার মত অসংখ্য। আমাকে জ্ঞান ও বুদ্ধি দাও যাতে আমি আমার কর্তব্য পালন করতে পারি, কারণ কার সাধ্য আছে তোমার এই মহাজাতিকে শাসন করে?” তখন ঈশ্বর শলোমনকে বললেন, “তোমার মনের ইচ্ছা ভাল। তুমি ধন, সম্পদ, সম্মান কিম্বা শত্রুদের মৃত্যু চাও নি, এমন কি, অনেক আয়ুও চাও নি। তার চেয়ে বরং আমার যে লোকদের উপরে আমি তোমাকে রাজা করেছি তাদের শাসন করবার জন্য তুমি জ্ঞান ও বুদ্ধি চেয়েছ। সেইজন্য তোমাকে জ্ঞান ও বুদ্ধি দেওয়া হল। এছাড়া আমি তোমাকে এমন ধন, সম্পদ ও সম্মান দেব যা তোমার আগে কোন রাজার ছিল না এবং তোমার পরেও থাকবে না।” এর পর শলোমন গিবিয়োনের উপাসনার উঁচু স্থান, যেখানে মিলন-তাম্বু ছিল, সেখান থেকে যিরূশালেমে চলে গেলেন আর ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করতে লাগলেন। শলোমন অনেক রথ ও ঘোড়া যোগাড় করলেন। তাতে তাঁর এক হাজার চারশো রথ ও বারো হাজার ঘোড়া হল। এই সব তিনি রথ রাখবার শহরগুলোতে এবং যিরূশালেমে নিজের কাছে রাখলেন। রাজা যিরূশালেমে সোনা ও রূপাকে করলেন পাথরের মত প্রচুর এবং এরস কাঠকে করলেন নীচু পাহাড়ী এলাকায় গজানো ডুমুর গাছের মত অনেক। শলোমনের ঘোড়াগুলো মিসর ও কিলিকিয়া থেকে আনা হত। রাজার বণিকেরা কিলিকিয়া থেকে সেগুলো কিনে আনত। মিসর থেকে আনা প্রত্যেকটা রথের দাম পড়ত সাত কেজি আটশো গ্রাম রূপা এবং প্রত্যেকটা ঘোড়ার দাম পড়ত প্রায় দুই কেজি রূপা। সেই বণিকেরা হিত্তীয় ও অরামীয় সব রাজাদের কাছে সেগুলো বিক্রি করত। শলোমন সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা উপাসনা-ঘর এবং নিজের জন্য একটা রাজবাড়ী তৈরী করবার আদেশ দিলেন। তিনি সত্তর হাজার লোককে বোঝা বইবার জন্য, আশি হাজার লোককে পাহাড়ে পাথর কাটবার জন্য এবং তিন হাজার ছ’শো লোককে তাদের তদারক করবার জন্য কাজে লাগালেন। শলোমন সোরের রাজা হীরমকে এই খবর পাঠালেন, “আমার বাবা দায়ূদের থাকবার জন্য একটা রাজবাড়ী তৈরী করতে আপনি যেমন তাঁকে এরস কাঠ পাঠিয়েছিলেন তেমনি আমার জন্যও এরস কাঠ পাঠিয়ে দিন। এখন আমি আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য একটা ঘর তৈরী করতে ও তাঁর নামে সেটি উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়েছি, যাতে তাঁর সামনে সুগন্ধি-ধূপ জ্বালানো যায়, নিয়মিত ভাবে সম্মুখ-রুটি সাজিয়ে রাখা যায় এবং প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায়, বিশ্রামবারে, অমাবস্যায় ও আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর স্থির-করা বিভিন্ন পর্বের সময়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা যায়। এই সব পালন করা ইস্রায়েলীয়দের জন্য একটা চিরকালের নিয়ম। “যে ঘরটি আমি তৈরী করতে যাচ্ছি সেটি হবে মহৎ, কারণ আমাদের ঈশ্বর সমস্ত দেবতার চেয়ে মহান। কিন্তু তাঁর জন্য ঘর তৈরী করতে কে পারে? কারণ আকাশে, এমন কি স্বর্গেও তাঁর স্থান অকুলান হয়। কেবল তাঁর সামনে বিভিন্ন উৎসর্গের জিনিসগুলো পোড়াবার স্থান ছাড়া আমি আর কি করে তাঁর জন্য একটা ঘর তৈরী করতে পারি? “আমার বাবা দায়ূদ দক্ষ কারিগরদের ঠিক করে রেখেছেন যারা এখন যিহূদা ও যিরূশালেমে আমার কাছে আছে। তাদের সংগে কাজ করবার জন্য আপনি আমাকে এমন একজন দক্ষ কারিগর পাঠিয়ে দিন যে সোনা-রূপা, ব্রোঞ্জ ও লোহার কাজ, বেগুনী, লাল ও নীল রংয়ের সুতার কাজ এবং খোদাই করবার কাজ করতে জানে। আমি আপনার লোকদের, অর্থাৎ যে কাঠুরেরা গাছ কাটবে তাদের তিন হাজার ছ’শো টন পেষা গম, তিন হাজার ছ’শো টন যব, চার লক্ষ চারশো লিটার আংগুর-রস এবং চার লক্ষ চারশো লিটার জলপাইয়ের তেল দেব।” সোরের রাজা হীরম উত্তরে শলোমনকে এই চিঠি লিখে পাঠালেন, “সদাপ্রভু তাঁর লোকদের ভালবাসেন বলেই আপনাকে তাদের রাজা করেছেন।” হীরম আরও লিখলেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাজা দায়ূদকে এমন একজন জ্ঞানী ছেলে দিয়েছেন যাঁর বুদ্ধি এবং বুঝবার ক্ষমতা আছে এবং যিনি সদাপ্রভুর জন্য একটা ঘর ও নিজের জন্য একটা রাজবাড়ী তৈরী করবেন। “আমি আপনার কাছে হীরাম নামে একজন খুব দক্ষ ও বুদ্ধিমান কারিগরকে পাঠালাম। তার মা দান-গোষ্ঠীর মেয়ে এবং তার বাবা সোরের লোক। সে সোনা-রূপা, ব্রোঞ্জ, লোহা, পাথর ও কাঠ এবং বেগুনী, নীল ও লাল সুতা আর মসীনা সুতার কাজ করতে জানে। সব রকম খোদাই করবার কাজে সে পাকা এবং যে কোন নক্‌শা দিলে সে তা করতে পারে। সে আপনাদের কারিগরদের সংগে ও আমার মনিব, আপনার বাবা দায়ূদের কারিগরদের সংগে কাজ করবে। “কাজেই আমার প্রভু আপনি যেমন বলেছেন সেই মত গম, যব, জলপাইয়ের তেল ও আংগুর-রস আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। আমরা লেবানন থেকে আপনার প্রয়োজন মত সমস্ত কাঠ কেটে একসংগে বেঁধে সমুদ্রে ভাসিয়ে যাফো পর্যন্ত নিয়ে যাব। তারপর আপনি সেগুলো যিরূশালেমে তুলে নিয়ে যাবেন।” শলোমন তাঁর বাবা দায়ূদের লোকগণনার মতই ইস্রায়েলে বাসকারী সমস্ত বিদেশীদের সংখ্যা গণনা করালেন। তাতে তাদের সংখ্যা হল এক লক্ষ তিপ্পান্ন হাজার ছ’শো। তাদের মধ্য থেকে তিনি সত্তর হাজার লোককে বোঝা বইবার জন্য, আশি হাজার লোককে পাহাড়ে পাথর কাটবার জন্য এবং সেই লোকদের কাজের তদারক করবার জন্য তিন হাজার ছ’শো লোককে নিযুক্ত করলেন। শলোমন যিরূশালেমে মোরিয়া পাহাড়ে সদাপ্রভুর ঘর তৈরী করতে শুরু করলেন। এই মোরিয়া পাহাড়েই যিবূষীয় অরৌণার খামারে সদাপ্রভু তাঁর বাবা দায়ূদকে দেখা দিয়েছিলেন। দায়ূদ এই জায়গাটা উপাসনা-ঘরের জন্য ঠিক করে রেখে গিয়েছিলেন। শলোমনের রাজত্বের চতুর্থ বছরের দ্বিতীয় মাসের দ্বিতীয় দিনে শলোমন কাজ শুরু করলেন। ঈশ্বরের ঘর তৈরীর জন্য তিনি পুরানো মাপ অনুসারে ষাট হাত লম্বা ও বিশ হাত চওড়া ভিত্তি দিলেন। ঘরের সামনের বারান্দা ঘরের চওড়ার মাপ অনুসারে বিশ হাত চওড়া ও তার ছাদ একশো বিশ হাত উঁচু করে দেওয়া হল এবং তার ভিতরটা খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হল। প্রধান বড় কামরাটা শলোমন প্রথমে বেরস কাঠের তক্তা দিয়ে ঢেকে দিলেন এবং তারপর তা খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন, আর সেটা খেজুর ও শিকলের নক্‌শা দিয়ে সাজানো হল। এছাড়া দামী দামী পাথর দিয়ে তিনি ঘরটা সাজালেন। যে সোনা তিনি ব্যবহার করলেন তা ছিল পর্বয়িম দেশের। দেয়ালগুলোতে তিনি করূবদের আকার খোদাই করালেন এবং ছাদের কড়িকাঠ, দরজার ফ্রেম, দেয়াল ও দরজা সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন। তারপর তিনি মহাপবিত্র স্থানটি তৈরী করলেন। সেটি ঘরের চওড়া অনুসারে বিশ হাত চওড়া ও বিশ হাত লম্বা করা হল। তেইশ টন চারশো কেজি খাঁটি সোনা দিয়ে তিনি ভিতরটা মুড়িয়ে দিলেন। সোনার পেরেকগুলোর ওজন ছিল ছ’শো পঞ্চাশ গ্রাম। তিনি উপরের কামরাগুলোও সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন। মহাপবিত্র স্থানে তিনি এক জোড়া করূবের মূর্তি খোদাই করে তৈরী করালেন এবং সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন। শলোমন নীল, বেগুনী ও লাল সুতা এবং মসীনা সুতা দিয়ে পর্দা তৈরী করালেন আর তার মধ্যে করূবের আকার সেলাই করালেন। উপাসনা-ঘরের সামনে তিনি দু’টা থাম তৈরী করালেন। সেগুলো ছিল পঁয়ত্রিশ হাত উঁচু। প্রত্যেকটার মাথার মাপ ছিল পাঁচ হাত। তিনি পাকানো শিকল তৈরী করে থাম দু’টার মাথার উপরে দিলেন, আর একশোটা ডালিম তৈরী করে সেই শিকলে জুড়ে দিলেন। সেই থাম দু’টা উপাসনা-ঘরের সামনে দক্ষিণে একটা ও উত্তরে অন্যটা দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল। যেটা দক্ষিণে ছিল তার নাম তিনি দিলেন যাখীন (যার মানে “তিনি স্থাপন করেন”) এবং যেটা উত্তরে ছিল তার নাম দিলেন বোয়স (যার মানে “তাঁর মধ্যেই শক্তি”)। শলোমন বিশ হাত লম্বা, বিশ হাত চওড়া ও দশ হাত উঁচু একটা ব্রোঞ্জের বেদী তৈরী করালেন। তারপর তিনি ব্রোঞ্জ ছাঁচে ঢেলে জল রাখবার জন্য একটা গোল বিরাট পাত্র তৈরী করালেন। পাত্রটার এক দিক থেকে সোজাসুজি অন্য দিকের মাপ ছিল দশ হাত, গভীরতা পাঁচ হাত এবং বেড়ের চারপাশের মাপ ত্রিশ হাত। পাত্রটার বাইরের দিকের কিনারার নীচে প্রতি হাত জায়গায় দশটা করে দুই সারি গরুর আকার ছিল। যে ছাঁচের মধ্যে পাত্রটা তৈরী করা হয়েছিল সেই ছাঁচের মধ্যেই গরুগুলোর আকার ছিল বলে সবটা মিলে একটা জিনিসই হল। পাত্রটা বারোটা ব্রোঞ্জের গরুর পিঠের উপর বসানো ছিল। সেগুলোর তিনটা উত্তরমুখী, তিনটা পশ্চিমমুখী, তিনটা দক্ষিণমুখী ও তিনটা পূর্বমুখী ছিল এবং তাদের পিছনগুলো ছিল ভিতরের দিকে। পাত্রটা ছিল চার আংগুল পুরু। তার মুখটা একটা বাটির মুখের মত ছিল এবং লিলি ফুলের পাপড়ির মত বাইরের দিকে উল্টানো ছিল। তাতে ছেষট্টি হাজার লিটার জল ধরত। তিনি দশটা গামলা তৈরী করালেন এবং পাঁচটা রাখলেন দক্ষিণ দিকে আর পাঁচটা রাখলেন উত্তর দিকে। সেগুলোর মধ্যে পোড়ানো-উৎসর্গের জিনিস ধোওয়া হত, কিন্তু পুরোহিতেরা নিজেদের হাত-পা ধোওয়ার কাজে ব্যবহার করতেন বিরাট পাত্রটা। যেমন বলা হয়েছিল সেই মতই তিনি দশটা সোনার বাতিদান তৈরী করিয়ে উপাসনা-ঘরের মধ্যে দক্ষিণে পাঁচটা আর উত্তরে পাঁচটা রাখলেন। এছাড়া তিনি দশটা টেবিল তৈরী করিয়ে উপাসনা-ঘরের মধ্যে দক্ষিণে পাঁচটা আর উত্তরে পাঁচটা রাখলেন। তিনি একশোটা সোনার বাটিও তৈরী করালেন। তিনি পুরোহিতদের জন্য একটা উঠান প্রস্তুত করালেন; তারপর আর একটা বড় উঠান প্রস্তুত করিয়ে তার জন্য দরজা তৈরী করালেন এবং দরজাগুলো ব্রোঞ্জ দিয়ে মুড়িয়ে দিলেন। তিনি বিরাট পাত্রটা উঠানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণায় রাখলেন। এছাড়া হীরাম সব পাত্র, হাতা ও বাটি তৈরী করলেন। এইভাবে তিনি ঈশ্বরের ঘরের যে যে কাজ রাজা শলোমনের জন্য হাতে নিয়েছিলেন তা শেষ করলেন। সেগুলো হল: দু’টা থাম; থামের উপরকার গোলাকার দু’টা মাথা; সেই মাথার উপরটা সাজাবার জন্য দুই সারি কারুকাজ করা পাকানো শিকল; সেই শিকলগুলোর জন্য চারশো ডালিম- থামের উপরকার মাথার গোলাকার অংশটা সাজাবার জন্য প্রত্যেক সারি শিকলের জন্য দুই সারি ডালিম; গামলা এবং সেগুলো বসাবার বাক্স; বিরাট পাত্র ও তার নীচের বারোটা গরু; পাত্র, হাতা ও মাংস তুলবার কাঁটা। সদাপ্রভুর ঘরের জন্য হীরাম যে সব জিনিস রাজা শলোমনের নির্দেশে তৈরী করেছিলেন সেগুলো ছিল চক্‌চকে ব্রোঞ্জের। রাজা সেগুলো যর্দনের সমভূমিতে সুক্কোৎ ও সর্তনের মাঝামাঝি এক জায়গায় মাটির ছাঁচে ফেলে তৈরী করিয়েছিলেন। এই সব জিনিস শলোমন এত বেশী পরিমাণে তৈরী করিয়েছিলেন যে, ব্রোঞ্জের পরিমাণ জানা যায় নি। ঈশ্বরের ঘরের যে সব জিনিসপত্র শলোমন তৈরী করিয়েছিলেন সেগুলো হল: সোনার বেদী; সম্মুখ-রুটি রাখবার টেবিলগুলো; যেমন বলা হয়েছিল সেইমত মহাপবিত্র স্থানের সামনে জ্বালাবার জন্য খাঁটি সোনার বাতিদান ও সেগুলোর বাতি; খাঁটি সোনার ফুল, বাতি ও চিম্‌টা; শল্‌তে পরিষ্কার করবার খাঁটি সোনার চিম্‌টা, খাঁটি সোনার বাটি, হাতা ও আগুন রাখবার পাত্র; আর ভিতরের কামরার, অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানের দরজার জন্য এবং উপাসনা-ঘরের প্রধান কামরার দরজার জন্য সোনার কব্‌জা। এই দরজাগুলো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এইভাবে শলোমন সদাপ্রভুর ঘরের সমস্ত কাজ শেষ করলেন। তারপর তিনি তাঁর বাবা দায়ূদ যে সব জিনিস সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন সেগুলো নিয়ে আসলেন। সেগুলো ছিল সোনা, রূপা ও বিভিন্ন পাত্র। সেগুলো তিনি ঈশ্বরের ঘরের ধনভাণ্ডারে রেখে দিলেন। এর পর শলোমন দায়ূদ-শহর, অর্থাৎ সিয়োন থেকে সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি নিয়ে আসবার জন্য ইস্রায়েলের বৃদ্ধ নেতাদের, গোষ্ঠী-সর্দারদের ও ইস্রায়েলীয় বংশের প্রধান লোকদের যিরূশালেমে ডেকে পাঠালেন। তাতে সপ্তম মাসে পর্বের সময়ে ইস্রায়েলের ঐ সমস্ত লোক রাজার কাছে উপস্থিত হলেন। ইস্রায়েলের সব বৃদ্ধ নেতারা উপস্থিত হলে পর লেবীয়েরা সিন্দুকটি তুলে নিল। তারা এবং পুরোহিতেরা সিন্দুকটি, মিলন-তাম্বু এবং সমস্ত পবিত্র পাত্র বয়ে নিলেন। রাজা শলোমন ও তাঁর কাছে জড়ো হওয়া সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সিন্দুকটির সামনে সামনে থেকে এত ভেড়া ও গরু উৎসর্গ করলেন যে, সেগুলোর সংখ্যা গোণা গেল না। তারপর পুরোহিতেরা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুকটি নির্দিষ্ট জায়গায়, উপাসনা-ঘরের ভিতরের কামরায়, অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানে করূবদের ডানার নীচে নিয়ে রাখলেন। তাতে করূবদের মেলে দেওয়া ডানায় সিন্দুক ও তা বহন করবার ডাণ্ডাগুলো ঢাকা পড়ল। সিন্দুকের এই ডাণ্ডাগুলো এত লম্বা ছিল যে, সেগুলোর মাথা ভিতরের কামরার সামনের প্রধান কামরা, অর্থাৎ পবিত্র স্থান থেকে দেখা যেত, কিন্তু পবিত্র স্থানের বাইরে থেকে দেখা যেত না। সেগুলো আজও সেখানে রয়েছে। ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পরে সদাপ্রভু হোরেব পাহাড়ে তাদের জন্য যখন ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন তখন মোশি যে পাথরের ফলক দু’টি সিন্দুকের মধ্যে রেখেছিলেন সেই দু’টি ছাড়া আর কিছুই তার মধ্যে ছিল না। তারপর সব পুরোহিতেরা পবিত্র স্থান থেকে বাইরে আসলেন। সেই পুরোহিতেরা যে কোন দলেরই হন না কেন, সবাই নিজেদের শুচি করেছিলেন। যে সব লেবীয়েরা গান-বাজনা করতেন, অর্থাৎ আসফ, হেমন, যিদূথূন এবং তাঁদের ছেলেরা ও তাঁদের বংশের লোকেরা মসীনার কাপড় পরে বেদীর পূর্ব দিকে দাঁড়িয়ে করতাল, বীণা ও সুরবাহার বাজাচ্ছিলেন। তাঁদের সংগে ছিলেন একশো বিশ জন পুরোহিত যাঁরা তূরী বাজাচ্ছিলেন। পুরোহিতেরা যখন বাইরে আসলেন তখন তূরী বাদকেরা ও গায়কেরা একসংগে এক সুরে সদাপ্রভুর গৌরব করলেন ও তাঁকে ধন্যবাদ দিলেন। তূরী, করতাল ও অন্যান্য বাজনার সংগে তাঁরা জোরে জোরে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই গান করলেন, “তিনি মংগলময়, তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।” সেই সময় সদাপ্রভুর ঘর মেঘে ভরে গেল। সেই মেঘের জন্য পুরোহিতেরা তাঁদের সেবা-কাজ করতে পারলেন না, কারণ সদাপ্রভুর মহিমায় ঈশ্বরের ঘরটা পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এই বলে রাজা একত্র হওয়া সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের দিকে ঘুরে তাদের আশীর্বাদ করলেন। তখন লোকেরা দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর তিনি বললেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক। তিনি আমার বাবা দায়ূদের কাছে নিজের মুখে যা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা নিজেই পূর্ণ করলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার লোকদের মিসর থেকে বের করে আনবার পর নিজেকে প্রকাশ করবার স্থান হিসাবে একটি ঘর তৈরী করবার জন্য আমি ইস্রায়েলীয়দের কোন গোষ্ঠীর শহর বেছে নিই নি, কিম্বা আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের উপরে নেতা হবার জন্য কোন লোককেও আমি বেছে নিই নি, কিন্তু এখন আমার বাসস্থান হিসাবে আমি যিরূশালেমকে বেছে নিয়েছি এবং আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের শাসন করবার জন্য দায়ূদকে বেছে নিয়েছি।’ “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য একটা ঘর তৈরী করবার ইচ্ছা আমার বাবা দায়ূদের অন্তরে ছিল। কিন্তু সদাপ্রভু আমার বাবা দায়ূদকে বলেছিলেন, ‘আমার জন্য একটা ঘর তৈরী করবার ইচ্ছা যে তোমার অন্তরে আছে তা ভাল। তবে ঘরটি তুমি তৈরী করবে না, করবে তোমার ছেলে, যে তোমার নিজের সন্তান। সে-ই আমার জন্য সেই ঘর তৈরী করবে।’ “সদাপ্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছেন। আমার বাবা দায়ূদ যে পদে ছিলেন আমি সেই পদ পেয়েছি। সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমি ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসেছি এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর জন্য এই ঘরটি তৈরী করেছি। সেখানে আমি সাক্ষ্য-সিন্দুকটি রেখেছি যার মধ্যে রয়েছে ইস্রায়েলীয়দের জন্য সদাপ্রভুর স্থাপন করা ব্যবস্থা।” তারপর শলোমন সেখানে একত্র হওয়া ইস্রায়েলীয়দের সামনে সদাপ্রভুর বেদীর কাছে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুললেন। তিনি পাঁচ হাত লম্বা, পাঁচ হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু একটা ব্রোঞ্জের মাচা তৈরী করিয়ে উঠানের মাঝখানে রেখেছিলেন। তিনি সেই মাচার উপর উঠে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সামনে হাঁটু পাতলেন এবং দু’হাত স্বর্গের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, স্বর্গে কিম্বা পৃথিবীতে তোমার মত ঈশ্বর আর কেউ নেই। তোমার যে দাসেরা মনে-প্রাণে তোমার পথে চলে তুমি তাদের পক্ষে তোমার অটল ভালবাসার ব্যবস্থা রক্ষা করে থাক। তোমার দাস আমার বাবা দায়ূদের কাছে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তা তুমি রক্ষা করেছ। তুমি মুখে যা বলেছ কাজেও তা করেছ, আর আজকে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। “এখন হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার দাস আমার বাবা দায়ূদের কাছে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তা রক্ষা কর। তুমি বলেছিলে, যদি তাঁর ছেলেরা তাঁর মত করে তোমার আইন-কানুন অনুসারে চলবার দিকে মনোযোগ দেয় তবে ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসবার জন্য তাঁর বংশে লোকের অভাব হবে না। হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, যে প্রতিজ্ঞা তুমি তোমার দাস দায়ূদের কাছে করেছিলে তা সফল হোক। “কিন্তু সত্যিই কি ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষের সংগে বাস করবেন? মহাকাশ, এমন কি, মহাকাশের সমস্ত জায়গা জুড়েও যখন তোমার স্থান অকুলান হয় তখন আমার তৈরী এই ঘরে কি তোমার জায়গা হবে? তবুও হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার দাসের প্রার্থনা ও অনুরোধে তুমি কান দাও। তোমার কাছে তোমার দাস কাকুতি-মিনতি করে যে প্রার্থনা করছে তা তুমি শোন। যে জায়গার কথা তুমি বলেছ যে, এখানে তোমার বাসস্থান হবে সেই জায়গার দিকে, অর্থাৎ এই উপাসনা-ঘরের দিকে তোমার চোখ দিনরাত খোলা থাকুক। এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার দাস যখন প্রার্থনা করবে তখন তুমি তা শুনো। এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার দাস ও তোমার লোক ইস্রায়েলীয়েরা যখন অনুরোধ করবে তখন তাতে তুমি কান দিয়ো। তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তুমি তা শুনো এবং তাদের ক্ষমা কোরো। “কোন লোককে অন্যের বিরুদ্ধে অন্যায় করবার দোষে দোষী করা হলে তার নিজের উপর অভিশাপ ডেকে আনবার জন্য যদি তাকে দিব্য করতে বাধ্য করা হয় এবং সে গিয়ে তোমার এই ঘরের বেদীর সামনে সেই দিব্য করে, তবে তুমি স্বর্গ থেকে সেই কথা শুনো এবং সেই মত কাজ কোরো। তখন তোমার দাসদের তুমি বিচার করে দোষীর কাজের ফল তার মাথায় চাপিয়ে দিয়ে তাকে দোষী বলে প্রমাণ কোরো আর নির্দোষকে তার কাজ অনুসারে ফল দিয়ে তাকে নির্দোষ বলে প্রমাণ কোরো। “তোমার বিরুদ্ধে পাপ করবার দরুন যখন তোমার লোক ইস্রায়েলীয়েরা শত্রুর কাছে হেরে গিয়ে আবার তোমার কাছে ফিরে আসবে এবং এই উপাসনা-ঘরে তোমার গৌরব করে তোমার কাছে প্রার্থনা ও অনুরোধ করবে, তখন স্বর্গ থেকে তুমি তা শুনো এবং তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের পাপ ক্ষমা করে যে দেশ তুমি তাদের ও তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছ সেখানে আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসো। “তোমার বিরুদ্ধে তোমার লোকদের পাপ করবার দরুন যখন আকাশ বন্ধ হয়ে বৃষ্টি পড়বে না তখন তারা যদি এই জায়গার দিকে ফিরে তোমার গৌরব করে ও তোমার কাছে প্রার্থনা করে এবং তোমার কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে পাপ থেকে ফেরে, তবে তুমি স্বর্গ থেকে তা শুনো এবং তোমার দাসদের, অর্থাৎ তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের পাপ ক্ষমা করে দিয়ো। জীবনে ঠিকভাবে চলতে তাদের শিক্ষা দিয়ো এবং সম্পত্তি হিসাবে যে দেশ তুমি তাদের দিয়েছ সেই দেশের উপর বৃষ্টি দিয়ো। “যদি দেশে দুর্ভিক্ষ কিম্বা মড়ক দেখা দেয়, যদি ফসল শুকিয়ে-যাওয়া রোগ কিম্বা ছাৎলা-পড়া রোগ হয়, যদি ফসলে ফড়িং বা পংগপাল লাগে, যদি শত্রু তাদের কোন শহর ঘেরাও করে- যে কোন রকম বিপদ কিম্বা রোগ দেখা দিক না কেন, তখন যদি তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের কেউ নিজের যন্ত্রণা ও কষ্ট বুঝে এই উপাসনা-ঘরের দিকে হাত বাড়িয়ে প্রার্থনা ও মিনতি করে, তবে তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তুমি তা শুনো এবং তাকে ক্ষমা কোরো। তার সব কাজ অনুসারে বিচার কোরো, কারণ তুমি তো তার অন্তরের অবস্থা জান- কেবল তুমিই সমস্ত মানুষের অন্তরের খবর জান। তুমি তা কোরো যাতে আমাদের পূর্বপুরুষদের তুমি যে দেশ দিয়েছ সেখানে বংশের পর বংশ ধরে তোমার লোকেরা সারা জীবন তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে তোমার পথে চলে। “এছাড়া তোমার লোক ইস্রায়েলীয় নয় এমন কোন বিদেশী তোমার মহান নাম এবং তোমার শক্তিশালী ও বাড়িয়ে দেওয়া হাতের কথা শুনে যখন দূর দেশ থেকে এসে এই উপাসনা-ঘরের দিকে ফিরে প্রার্থনা করবে, তখন তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তুমি তা শুনো। সে যা চায় তার জন্য তা কোরো যেন পৃথিবীর সমস্ত লোক তোমাকে জানতে পারে এবং তোমার নিজের লোক ইস্রায়েলীয়দের মত তারাও তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করতে পারে আর জানতে পারে যে, আমার তৈরী এই ঘর তোমারই ঘর। “তুমি যখন তোমার লোকদের তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠাবে তখন তারা যেখানেই থাকুক না কেন সেখান থেকে যদি তোমার বেছে নেওয়া এই শহরের দিকে ও তোমার জন্য আমার তৈরী এই ঘরের দিকে ফিরে তোমার কাছে প্রার্থনা করে, তবে স্বর্গ থেকে তুমি তাদের প্রার্থনা ও অনুরোধ শুনো এবং তাদের পক্ষ নিয়ো। “তারা যখন তোমার বিরুদ্ধে পাপ করবে- অবশ্য পাপ করে না এমন লোক নেই- আর তুমি তাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে শত্রুর হাতে তাদের তুলে দেবে ও শত্রুরা তাদের বন্দী করে কাছের বা দূর দেশে নিয়ে যাবে, তখন বন্দী হয়ে থাকা সেই দেশে যদি তারা মন ফিরায় এবং অনুতপ্ত হয়ে তোমাকে অনুরোধ করে বলে, ‘আমরা পাপ করেছি, অন্যায় করেছি এবং মন্দভাবে চলেছি,’ তবে তুমি তাদের প্রার্থনা শুনো। ঐ দেশে যদি তারা মনে-প্রাণে তোমার দিকে ফেরে এবং যে দেশ তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছ সেই দেশের দিকে, তোমার বেছে নেওয়া শহরের দিকে, তোমার জন্য আমার তৈরী এই ঘরের দিকে ফিরে প্রার্থনা করে, তবে তুমি তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তাদের প্রার্থনা ও অনুরোধ শুনো এবং তাদের পক্ষ নিয়ো। তোমার যে লোকেরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছে সেই লোকদের তুমি ক্ষমা কোরো। “হে আমার ঈশ্বর, এই জায়গায় যে সব প্রার্থনা করা হবে তার দিকে যেন এখন তোমার চোখ ও কান খোলা থাকে। “হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, এখন তোমার বিশ্রাম-স্থানে এস; তুমি এস, আর তোমার শক্তির সিন্দুক আসুক। হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার পুরোহিতেরা উদ্ধারের পোশাক পরুক। তুমি যে সব মংগল করেছ তার জন্য তোমার ভক্তেরা আনন্দ করুক। হে ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার অভিষিক্ত লোকের প্রার্থনা তুমি ফিরিয়ে দিয়ো না; তোমার দাস দায়ূদের প্রতি তুমি যে অটল ভালবাসা দেখিয়েছ তা মনে করে দেখ।” শলোমনের প্রার্থনা শেষ হলেই স্বর্গ থেকে আগুন নেমে এসে পোড়ানো ও অন্যান্য উৎসর্গের জিনিস পুড়িয়ে ফেলল এবং উপাসনা-ঘরটি সদাপ্রভুর মহিমায় পরিপূর্ণ হল। সেইজন্য পুরোহিতেরা সেখানে ঢুকতে পারলেন না। আগুন নেমে আসতে দেখে ও উপাসনা-ঘরের উপরে সদাপ্রভুর মহিমা দেখতে পেয়ে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা পাথরে বাঁধানো উঠানে উবুড় হয়ে পড়ে সদাপ্রভুকে তাদের অন্তরের ভক্তি জানাল ও এই বলে তাঁর প্রশংসা করল, “তিনি মংগলময়; তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।” তারপর রাজা ও সমস্ত লোক সদাপ্রভুর সামনে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। রাজা শলোমন বাইশ হাজার গরু এবং এক লক্ষ বিশ হাজার ভেড়া উৎসর্গ করলেন। এইভাবে রাজা ও সমস্ত লোক ঈশ্বরের ঘরটি প্রতিষ্ঠা করলেন। পুরোহিতেরা তাঁদের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন এবং লেবীয়েরাও সদাপ্রভুর উদ্দেশে বাজাবার জন্য বাজনাগুলো নিয়ে তাঁদের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। লেবীয়দের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পুরোহিতেরা তাঁদের তূরী বাজালেন এবং ইস্রায়েলীয়েরা সকলেই দাঁড়িয়ে রইল। লেবীয়দের এই বাজনাগুলো রাজা দায়ূদ সদাপ্রভুর গৌরব করবার জন্য তৈরী করিয়েছিলেন এবং সেগুলো বাজানো হত যখন তিনি সদাপ্রভুর প্রশংসা করে বলতেন, “তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।” শলোমন সদাপ্রভুর ঘরের সামনের উঠানের মাঝখানের অংশ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করলেন এবং সেখানে তিনি পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন ও যোগাযোগ-উৎসর্গের চর্বি উৎসর্গ করলেন, কারণ ব্রোঞ্জের যে বেদী তিনি তৈরী করিয়েছিলেন তা পোড়ানো-উৎসর্গের ও শস্য-উৎসর্গের জিনিস এবং চর্বির জন্য ছোট ছিল। সপ্তম মাসের তেইশ দিনের দিন রাজা লোকদের নিজের নিজের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলেন। দায়ূদ, শলোমন ও তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের প্রতি সদাপ্রভু যে সব মংগল করেছেন তার জন্য তারা আনন্দিত ও খুশী হয়ে ফিরে গেল। সদাপ্রভুর ঘর ও রাজবাড়ী তৈরী করবার জন্য শলোমনের মনে যা যা করবার ইচ্ছা ছিল সেই সমস্ত তিনি সফলতার সংগে শেষ করলেন। পরে এক রাতে সদাপ্রভু শলোমনকে দেখা দিয়ে বললেন, “আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি এবং উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার ঘর হিসাবে আমার জন্য আমি এই জায়গা বেছে নিয়েছি। “যখন আমি আকাশ বন্ধ করে দেব আর বৃষ্টি পড়বে না, কিম্বা দেশ ধ্বংস করবার জন্য পংগপালকে আদেশ দেব, কিম্বা আমার লোকদের মধ্যে মড়ক পাঠিয়ে দেব, তখন আমার লোকেরা, যাদের আমার লোক বলে ডাকা হয় তারা যদি নম্র হয়ে প্রার্থনা করে ও আমার দয়া চায় এবং মন্দ পথ থেকে ফেরে, তবে স্বর্গ থেকে তা শুনে আমি তাদের পাপ ক্ষমা করব এবং তাদের দেশের অবস্থা ফিরিয়ে দেব। এই জায়গায় যে প্রার্থনা করা হবে তার প্রতি আমার চোখ ও কান খোলা থাকবে। এই উপাসনা-ঘরটি আমি বেছে নিয়ে চিরকাল আমার বাসস্থান হিসাবে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করেছি। এর উপর সব সময় আমার চোখ ও মন থাকবে। “তোমার বাবা দায়ূদ যেভাবে চলত তুমি যদি সেইভাবে আমার সামনে চল এবং আমার সমস্ত আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ পালন কর, তাহলে আমি তোমার রাজসিংহাসন স্থায়ী করব, কারণ আমি তোমার বাবা দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলাম, ‘ইস্রায়েলের উপর শাসন করবার জন্য তোমার বংশে লোকের অভাব হবে না।’ “কিন্তু তোমরা যদি আমার পথ থেকে সরে যাও এবং যে সব নিয়ম ও আদেশ আমি তোমাদের দিয়েছি তা ত্যাগ কর আর দেব-দেবতাদের সেবা ও পূজা কর, তবে আমি আমার যে দেশ তোমাদের দিয়েছি তা থেকে তোমাদের শিকড় সুদ্ধ উপ্‌ড়ে ফেলব আর আমার উদ্দেশ্যে যে উপাসনা-ঘরটি আলাদা করেছি তা আমার চোখের সামনে থেকে দূর করে দেব। তখন সমস্ত জাতির কাছে আমি সেই ঘরটিকে টিট্‌কারির ও তামাশার পাত্র করে তুলব। এই উপাসনা-ঘরটি এখন এত মহান হলেও তখন যারা তার পাশ দিয়ে যাবে তারা আঁত্‌কে উঠে জিজ্ঞাসা করবে, ‘কেন সদাপ্রভু এই দেশ ও এই উপাসনা-ঘরটির প্রতি এই রকম করলেন?’ এর উত্তরে লোকে বলবে, ‘এর কারণ হল, যিনি তাদের পূর্বপুরুষদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন সেই পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তারা ত্যাগ করেছে। তারা দেব-দেবতাদের পিছনে গিয়ে তাদের পূজা ও সেবা করেছে; সেইজন্যই তিনি তাদের উপর এই সব অমংগল এনেছেন।’ ” সদাপ্রভুর ঘর ও তাঁর নিজের বাড়ী তৈরী করতে শলোমনের বিশ বছর লেগেছিল। হীরম যে সব গ্রাম তাঁকে দিয়েছিলেন শলোমন সেই বিশ বছরের শেষে সেগুলো আবার গড়ে তুললেন এবং ইস্রায়েলীয়দের সেখানে বাস করতে দিলেন। তারপর শলোমন হমাৎ-সোবাতে গিয়ে সেটা দখল করে নিলেন। তিনি মরু-এলাকায় তদ্‌মোর শহর এবং হমাৎ এলাকার সমস্ত ভাণ্ডার-শহর আবার তৈরী করালেন। তিনি উপরের বৈৎ-হোরোণ ও নীচের বৈৎ-হোরোণে ফটক ও আগল সুদ্ধ দেয়াল তৈরী করে তা শক্তিশালী করলেন। তিনি বালৎ শহর ও তাঁর সব ভাণ্ডার-শহর তৈরী করলেন এবং রথ ও ঘোড়সওয়ারদের জন্য কতগুলো শহর তৈরী করলেন। যিরূশালেমে, লেবাননে এবং তাঁর শাসনের অধীনে যে সব রাজ্য ছিল সেগুলোর মধ্যে তিনি যা যা তৈরী করতে চেয়েছিলেন তা সবই করলেন। যারা ইস্রায়েলীয় ছিল না, অর্থাৎ যে সব হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের বংশধরেরা তখনও দেশে বেঁচে ছিল, যাদের ইস্রায়েলীয়েরা ধ্বংস করে দেয় নি শলোমন তাদের দাস হিসাবে কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন। তারা আজও সেই কাজ করছে। কিন্তু তাঁর কাজ করবার জন্য ইস্রায়েলীয়দের তিনি দাস বানান নি; তারা ছিল তাঁর যোদ্ধা, তাঁর সেনাপতি এবং তাঁর রথচালক ও ঘোড়সওয়ারদের সেনাপতি। এছাড়া রাজা শলোমনের দু’শো পঞ্চাশ জন প্রধান কর্মচারী ছিল যারা দাসদের কাজের তদারক করত। শলোমন ফরৌণের মেয়ের জন্য যে বাড়ী তৈরী করেছিলেন তিনি দায়ূদ-শহর থেকে তাঁকে সেখানে নিয়ে আসলেন। তিনি বললেন, “আমার স্ত্রী ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের রাজবাড়ীতে থাকবেন না, কারণ যে সব জায়গায় সদাপ্রভুর সিন্দুক আনা হয়েছিল সেগুলো পবিত্র।” উপাসনা-ঘরের বারান্দার সামনে শলোমন সদাপ্রভুর যে বেদী তৈরী করেছিলেন তার উপর তিনি সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতেন। মোশির আদেশ মত তিনি বিশ্রামবারে, অমাবস্যায় ও বৎসরের তিনটি পর্বে, অর্থাৎ খামিহীন রুটির পর্বে, সাত-সপ্তাহের পর্বে ও কুঁড়ে-ঘরের পর্বে- সেই সব দিনগুলোর নিয়ম অনুসারে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতেন। তাঁর বাবা দায়ূদের নির্দেশ অনুসারে তিনি পুরোহিতদের কর্তব্য করবার জন্য তাঁদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে কাজে নিযুক্ত করলেন এবং প্রতিদিনের কাজ অনুসারে প্রশংসা-গান করবার ও পুরোহিতদের সাহায্য করবার জন্য তিনি লেবীয়দের নিযুক্ত করলেন। প্রত্যেকটি ফটকের জন্য তিনি রক্ষীদের দল অনুসারে কাজে বহাল করলেন, কারণ এইভাবেই ঈশ্বরের লোক দায়ূদ আদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। রাজা দায়ূদ ভাণ্ডারের কোন ব্যাপারে ও অন্য যে কোন বিষয়ে পুরোহিতদের ও লেবীয়দের যে আদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন তা তাঁরা অমান্য করলেন না। সদাপ্রভুর ঘরের ভিত্তি গাঁথা থেকে শুরু করে তা শেষ করবার দিন পর্যন্ত শলোমনের সমস্ত কাজ ঠিকভাবেই করা হয়েছিল। এইভাবে সদাপ্রভুর ঘর তৈরীর কাজ শেষ হল। তারপর শলোমন ইদোম দেশের সমুদ্র-পারের ইৎসিয়োন-গেবরে ও এলতে গেলেন। হীরম তাঁর নিজের লোকদের দিয়ে শলোমনকে কয়েকটা জাহাজ ও কয়েকজন দক্ষ নাবিক পাঠিয়ে দিলেন। এরা শলোমনের লোকদের সংগে ওফীরে গিয়ে সাড়ে সতেরো টন সোনা নিয়ে এসে রাজা শলোমনকে দিল। শিবা দেশের রাণী শলোমনের সুনাম শুনে তাঁকে কঠিন কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে পরীক্ষা করবার জন্য যিরূশালেমে আসলেন। তিনি অনেক লোক ও উট নিয়ে শলোমনের কাছে পৌঁছালেন। উটের পিঠে ছিল সুগন্ধি মশলা, প্রচুর পরিমাণে সোনা ও মণি-মুক্তা। তিনি শলোমনের কাছে এসে তাঁর মনে যা যা ছিল তা সবই তাঁকে বললেন। শলোমন তাঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন; শলোমনের কাছে কোন কিছুই এমন কঠিন ছিল না যা তিনি তাঁকে বুঝিয়ে বলতে পারেন নি। শিবার রাণী শলোমনের জ্ঞান ও তাঁর তৈরী রাজবাড়ী দেখলেন। তিনি আরও দেখলেন তাঁর টেবিলের খাবার, তাঁর কর্মচারীদের থাকবার জায়গা, সুন্দর পোশাক পরা তাঁর সেবাকারীদের, তাঁর পানীয় পরিবেশকদের এবং সেই সিঁড়ি, যে সিঁিড় দিয়ে তিনি সদাপ্রভুর ঘরে উঠে যেতেন। এই সব দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। তিনি রাজাকে বললেন, “আমার নিজের দেশে থাকতে আপনার কাজ ও জ্ঞানের বিষয় যে খবর আমি শুনেছি তা সত্যি। কিন্তু এখানে এসে নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত আমি সেই সব কথা বিশ্বাস করি নি। সত্যি আপনার জ্ঞানের অর্ধেকও আমাকে বলা হয় নি। যে খবর আমি পেয়েছি আপনার গুণ তার চেয়ে অনেক বেশী। আপনার লোকেরা কত সুখী! যারা সব সময় আপনার সামনে থাকে ও আপনার জ্ঞানের কথা শোনে আপনার সেই কর্মচারীরা কত ভাগ্যবান! আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক, যিনি আপনার উপর খুশী হয়ে আপনাকে তাঁর সিংহাসনে বসিয়েছেন যেন আপনি আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর হয়ে রাজত্ব করতে পারেন। ইস্রায়েলীয়দের তিনি ভালবাসেন এবং তাদের চিরস্থায়ী করতে চান বলে তিনি সুবিচার ও ন্যায় রক্ষার জন্য আপনাকে রাজা করেছেন।” তিনি রাজাকে সাড়ে চার টনেরও বেশী সোনা, অনেক সুগন্ধি মশলা ও মণি-মুক্তা দিলেন। শিবার রাণী রাজা শলোমনকে যে রকম মশলা দিয়েছিলেন সেই রকম মশলা আর কখনও দেশে দেখা যায় নি। এছাড়া হীরম ও শলোমনের যে লোকেরা ওফীর থেকে সোনা নিয়ে আসত তারা চন্দন কাঠ আর মণি-মুক্তাও নিয়ে আসত। রাজা সেই সব চন্দন কাঠ দিয়ে সদাপ্রভুর ঘরের ও রাজবাড়ীর সিঁড়ি এবং গায়কদের জন্য বীণা ও সুরবাহার তৈরী করালেন। এর আগে এত চন্দন কাঠ যিহূদা দেশে কখনও দেখা যায় নি। শিবার রাণী যা ইচ্ছা করলেন ও চাইলেন রাজা শলোমন তা সবই তাঁকে দিলেন। রাণী তাঁর জন্য যা এনেছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশী তিনি তাঁকে দিলেন। এর পর রাণী তাঁর লোকজন নিয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেন। প্রতি বছর শলোমনের কাছে যে সোনা আসত তার ওজন ছিল প্রায় ছাব্বিশ টন। এছাড়া বণিক ও ব্যবসায়ীরা সোনা নিয়ে আসত এবং আরবের সমস্ত রাজারা ও দেশের শাসনকর্তারা শলোমনের কাছে সোনা ও রূপা নিয়ে আসত। রাজা শলোমন পিটানো সোনা দিয়ে দু’শো বড় ঢাল তৈরী করালেন। প্রত্যেকটা ঢালে সাত কেজি আটশো গ্রাম সোনা লেগেছিল। পিটানো সোনা দিয়ে তিনি তিনশো ছোট ঢালও তৈরী করিয়েছিলেন। তার প্রত্যেকটাতে সোনা লেগেছিল তিন কেজি ন’শো গ্রাম করে। তিনি সেগুলো লেবানন-বন-কুটিরে রাখলেন। এর পরে রাজা হাতির দাঁতের একটা বড় সিংহাসন তৈরী করিয়ে খাঁটি সোনা দিয়ে তা মুড়িয়ে নিলেন। সেই সিংহাসনের সিঁড়ির ছয়টা ধাপ ছিল এবং তার সংগে লাগানো ছিল পা রাখবার একটা সোনার আসন। বসবার জায়গার দু’দিকে হাতল ছিল এবং হাতলের পাশে ছিল দাঁড়ানো সিংহমূর্তি। সেই ছয়টা ধাপের প্রত্যেকটার দু’পাশে একটা করে মোট বারোটা সিংহমূর্তি ছিল। অন্য কোন রাজ্যে এই রকম সিংহাসন কখনও তৈরী হয় নি। শলোমনের পানীয়ের সমস্ত পাত্রগুলো ছিল সোনার আর লেবানন-বন-কুটিরের সমস্ত পাত্রগুলোও ছিল খাঁটি সোনার তৈরী। শলোমনের সময়ে রূপার তেমন কোন দাম ছিল না। রাজার কতগুলো বড় বড় জাহাজ হীরমের লোকদের সংগে নিয়ে তর্শীশে যেত। প্রতি তিন বছর পর পর সেই তর্শীশ-জাহাজগুলো সোনা, রূপা, হাতির দাঁত, বানর ও বেবুন নিয়ে ফিরে আসত। রাজা শলোমন পৃথিবীর অন্য সব রাজাদের চেয়ে ধনী ও জ্ঞানী হয়ে উঠেছিলেন। ঈশ্বর শলোমনের অন্তরে যে জ্ঞান দিয়েছিলেন সেই জ্ঞানপূর্ণ কথাবার্তা শুনবার জন্য পৃথিবীর সব দেশের রাজারা তাঁর সংগে দেখা করতে চেষ্টা করতেন। যাঁরা আসতেন তাঁরা প্রত্যেকে কিছু না কিছু উপহার আনতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল সোনা-রূপার পাত্র, কাপড়-চোপড়, অস্ত্রশস্ত্র, সুগন্ধি মশলা, ঘোড়া আর খচ্চর। বছরের পর বছর এই রকম চলত। ঘোড়া ও রথের জন্য শলোমনের চার হাজার ঘর ছিল। তাঁর বারো হাজার ঘোড়সওয়ার ছিল; তাদের তিনি রথ রাখবার শহরগুলোতে এবং যিরূশালেমে নিজের কাছে রাখতেন। তিনি ইউফ্রেটিস নদী থেকে পলেষ্টীয়দের দেশ ও মিসরের সীমানা পর্যন্ত সমস্ত রাজাদের উপরে রাজত্ব করতেন। রাজা যিরূশালেমে রূপাকে করলেন পাথরের মত প্রচুর এবং এরস কাঠকে করলেন নীচু পাহাড়ী এলাকায় গজানো ডুমুর গাছের মত অনেক। শলোমনের ঘোড়াগুলো মিসর ও অন্যান্য সব দেশ থেকে আনা হত। শলোমনের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নবী নাথনের লেখায়, শীলোনীয় অহিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে এবং নবাটের ছেলে যারবিয়ামের বিষয়ে “ইদ্দো দর্শকের দর্শন” নামে বইটিতে লেখা আছে। শলোমন যিরূশালেমে চল্লিশ বছর ধরে গোটা ইস্রায়েল জাতির উপরে রাজত্ব করেছিলেন। তারপর তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন; তাঁকে তাঁর বাবা দায়ূদের শহরে কবর দেওয়া হল। তারপর তাঁর ছেলে রহবিয়াম তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। রহবিয়াম শিখিমে গেলেন, কারণ ইস্রায়েলীয়েরা সকলে তাঁকে রাজা করবার জন্য সেখানে গিয়েছিল। তখন নবাটের ছেলে যারবিয়াম মিসর থেকে ফিরে আসলেন। তিনি রাজা শলোমনের কাছ থেকে পালিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকবার সময় তিনি রহবিয়ামের রাজা হবার খবর শুনেছিলেন। লোকেরা যারবিয়ামকে ডেকে পাঠালে পর তিনি এবং ইস্রায়লীয়েরা সবাই রহবিয়ামের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনার বাবা আমাদের উপর একটা ভারী জোয়াল চাপিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু এখন আপনি আমাদের উপর চাপানো সেই কঠিন পরিশ্রম কমিয়ে ভারী জোয়ালটা হালকা করে দিন; তাহলে আমরা আপনার সেবা করব।” উত্তরে রহবিয়াম বললেন, “তোমরা তিন দিনের দিন আবার এসো।” তাতে লোকেরা চলে গেল। যে সব বৃদ্ধ নেতারা তাঁর বাবা শলোমনের জীবনকালে তাঁর সেবা করতেন রহবিয়াম তাঁদের সংগে পরামর্শ করবার জন্য বললেন, “এই লোকদের উত্তর দেবার জন্য আপনারা আমাকে কি পরামর্শ দেন?” উত্তরে তাঁরা বললেন, “আজকে যদি আপনি এই সব লোকদের সংগে ভাল ব্যবহার করে তাদের সন্তুষ্ট করেন এবং তাদের অনুরোধ রক্ষা করেন তবে তারা সব সময় আপনার দাস হয়ে থাকবে।” কিন্তু রহবিয়াম বৃদ্ধ নেতাদের উপদেশ অগ্রাহ্য করে সেই সব যুবকদের সংগে পরামর্শ করলেন যারা তাঁর সংগে বড় হয়েছিল এবং তাঁর সেবা করত। তিনি তাদের বললেন, “লোকেরা বলছে, ‘আপনার বাবা যে ভারী জোয়াল আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন তা হালকা করুন।’ এই ব্যাপারে তোমাদের পরামর্শ কি? আমরা তাদের কি উত্তর দেব?” উত্তরে সেই যুবকেরা বলল, “যে লোকেরা আপনার বাবার চাপিয়ে দেওয়া ভারী জোয়াল হালকা করে দেবার কথা বলেছে তাদের আপনি বলুন যে, আপনার বাবার কোমরের চেয়েও আপনার কড়ে আংগুলটা মোটা। আপনার বাবা তাদের উপর যে ভারী জোয়াল চাপিয়ে দিয়েছিলেন তা আপনি আরও ভারী করবেন। আপনার বাবা তাদের মেরেছিলেন চাবুক দিয়ে কিন্তু আপনি তাদের মারবেন কাঁকড়া-বিছা দিয়ে।” রাজার কথামত তিন দিনের দিন যারবিয়াম ও সমস্ত লোকেরা রহবিয়ামের কাছে ফিরে আসল। রাজা বৃদ্ধ নেতাদের উপদেশ অগ্রাহ্য করে তাদের খুব কড়া উত্তর দিলেন। তিনি সেই যুবকদের পরামর্শ মত বললেন, “আমার বাবা তোমাদের জোয়াল ভারী করেছিলেন, আমি তা আরও ভারী করব। আমার বাবা চাবুক দিয়ে তোমাদের মেরেছিলেন, আমি তোমাদের মারব কাঁকড়া-বিছা দিয়ে।” এইভাবে রাজা লোকদের কথায় কান দিলেন না। শীলোনীয় অহিয়ের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু নবাটের ছেলে যারবিয়ামকে যে কথা বলেছিলেন তা পূর্ণ করবার জন্য ঈশ্বর থেকেই ঘটনাটা এইভাবে ঘটল। ইস্রায়েলীয়েরা যখন বুঝল যে, রাজা তাদের কথা শুনবেন না তখন তারা রাজাকে বলল, “দায়ূদের উপর আমাদের কোন দাবি নেই। যিশয়ের ছেলের উপর আমাদের কোন অধিকার নেই। হে ইস্রায়েল, তোমরা যে যার বাড়ীতে ফিরে যাও। হে দায়ূদ, এখন তোমার নিজের গোষ্ঠী তুমি নিজেই দেখ।” কাজেই ইস্রায়েলীয়েরা যে যার বাড়ীতে ফিরে গেল। তবে যিহূদা-গোষ্ঠীর গ্রাম ও শহরগুলোতে যে সব ইস্রায়েলীয় বাস করত রহবিয়াম তাদের উপরে রাজত্ব করতে থাকলেন। যাদের কাজ করতে বাধ্য করা হত তাদের ভার যার উপরে ছিল সেই অদোরামকে রাজা রহবিয়াম ইস্রায়েলীয়দের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু তারা তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলল। তখন রাজা রহবিয়াম তাড়াতাড়ি তাঁর রথে উঠে যিরূশালেমে পালিয়ে গেলেন। এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা দায়ূদের বংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল; অবস্থাটা আজও তা-ই আছে। যিরূশালেমে পৌঁছে রহবিয়াম যিহূদা ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর সমস্ত লোককে যুদ্ধের জন্য জড়ো করলেন। তাতে এক লক্ষ আশি হাজার সৈন্য হল। এটা করা হল যাতে ইস্রায়েলীয়দের সংগে যুদ্ধ করে রাজ্যটা আবার রহবিয়ামের হাতে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু ঈশ্বরের লোক শময়িয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য প্রকাশিত হল, “তুমি যিহূদার রাজা শলোমনের ছেলে রহবিয়ামকে এবং যিহূদা ও বিন্যামীন এলাকার সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের বল যে, সদাপ্রভু বলছেন তারা যেন তাদের ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না যায়। তারা প্রত্যেকেই যেন বাড়ী ফিরে যায়, কারণ এটা সদাপ্রভুরই কাজ।” কাজেই তারা সদাপ্রভুর কথা মেনে নিয়ে যারবিয়ামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল না। বৈৎ-সূর, সোখো, অদুল্লম, গাৎ, মারেশা, সীফ, অদোরয়িম, লাখীশ, অসেকা, সরা, অয়ালোন ও হিব্রোণ নামে যিহূদা ও বিন্যামীন এলাকার কয়েকটা গ্রাম ও শহর দেয়াল দিয়ে ঘিরে শক্তিশালী করলেন। তিনি সেগুলোর রক্ষার ব্যবস্থা মজবুত করলেন ও সেখানে সেনাপতিদের রাখলেন। তিনি সেখানে তাদের জন্য খাবার-দাবার, জলপাই-তেল ও আংগুর-রস মজুত করলেন। তিনি সেই সমস্ত গ্রাম ও শহরের মধ্যে ঢাল ও বর্শা রেখে সেগুলো খুব শক্তিশালী করলেন। এইভাবে যিহূদা ও বিন্যামীন এলাকা তাঁর অধীনে রইল। ইস্রায়েলের সমস্ত এলাকার পুরোহিত ও লেবীয়েরা তাঁর পক্ষে ছিলেন। লেবীয়েরা তাদের পশু চরাবার মাঠ ও সম্পত্তি ত্যাগ করে যিহূদা ও যিরূশালেমে চলে আসল, কারণ যারবিয়াম আর তাঁর ছেলেরা সদাপ্রভুর পুরোহিতের পদ থেকে তাদের বাতিল করে দিয়েছিলেন। যারবিয়াম উপাসনার উঁচু স্থানগুলোর জন্য এবং মন্দ আত্মাদের জন্য ও তাঁর তৈরী বাছুরের মূর্তিগুলোর জন্য তাঁর নিজের পুরোহিতদের নিযুক্ত করেছিলেন। ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে যারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছা জানবার জন্য আগ্রহী হয়েছিল তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করবার জন্য লেবীয়দের সংগে যিরূশালেমে আসল। তারা তিন বৎসর পর্যন্ত যিহূদা রাজ্য ও শলোমনের ছেলে রহবিয়ামের হাতকে শক্তিশালী করে তুলল, কারণ এই তিন বছর তারা দায়ূদ ও শলোমনের পথে চলেছিল। রহবিয়াম দায়ূদের ছেলে যিরীমোতের মেয়ে মহলৎকে বিয়ে করেছিলেন। মহলতের মা অবীহয়িল ছিলেন যিশয়ের ছেলে ইলীয়াবের মেয়ে। মহলতের গর্ভে যিয়ূশ, শমরিয় ও সহম নামে তিনটি ছেলের জন্ম হয়েছিল। তারপর রহবিয়াম অবশালোমের মেয়ে মাখাকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁর গর্ভে অবিয়, অত্তয়, সীষ ও শলোমীতের জন্ম হয়েছিল। রহবিয়াম তাঁর অন্যান্য স্ত্রী ও উপস্ত্রীদের চেয়ে অবশালোমের মেয়ে মাখাকে বেশী ভালবাসতেন। তাঁর মোট আঠারোজন স্ত্রী ও ষাটজন উপস্ত্রী, আটাশজন ছেলে ও ষাটজন মেয়ে ছিল। রহবিয়াম মাখার ছেলে অবিয়কে রাজা করবার ইচ্ছা নিয়ে তাঁকে তাঁর ভাইদের মধ্যে প্রধান করলেন। তাঁর কয়েকজন ছেলেকে তিনি যিহূদা ও বিন্যামীনের সমস্ত এলাকার দেয়াল-ঘেরা শহরে পাঠিয়ে দিয়ে বুদ্ধিমানের কাজ করলেন। তিনি তাঁদের প্রচুর খাবার-দাবার দিলেন এবং তাঁদের জন্য অনেক স্ত্রীর ব্যবস্থা করলেন। রহবিয়ামের রাজপদ যখন শক্ত হল এবং তিনি শক্তিশালী হয়ে উঠলেন তখন তিনি ও তাঁর সংগে সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সদাপ্রভুর আইন-কানুন পালন করা ত্যাগ করলেন। সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হওয়াতে রাজা রহবিয়ামের রাজত্বের পঞ্চম বছরে মিসরের রাজা শীশক যিরূশালেম আক্রমণ করলেন। শীশকের সংগে বারোশো রথ, ষাট হাজার ঘোড়সওয়ার এবং অসংখ্য লূবীয়, সুক্কীয় ও কূশীয় সৈন্য মিসর থেকে এসেছিল। তিনি যিহূদার দেয়াল-ঘেরা শহরগুলো অধিকার করে নিয়ে যিরূশালেম পর্যন্ত চলে আসলেন। নবী শময়িয় তখন রহবিয়াম ও যিহূদার নেতাদের কাছে আসলেন। সেই নেতারা শীশকের ভয়ে যিরূশালেমে এসে জড়ো হয়েছিলেন। শময়িয় তাঁদের বললেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘তোমরা আমাকে ত্যাগ করেছ, সেইজন্য আমিও এখন শীশকের হাতে তোমাদের তুলে দিয়েছি।’ ” এতে রাজা ও ইস্রায়েলীয় নেতারা নিজেদের নত করলেন ও বললেন, “সদাপ্রভু ন্যায় বিচারক।” সদাপ্রভু যখন দেখলেন যে, তাঁরা নিজেদের নত করেছেন তখন তিনি শময়িয়কে বললেন, “তারা নিজেদের নত করেছে বলে আমি তাদের ধ্বংস না করে শাস্তির হাত থেকে কিছুটা রেহাই দেব। আমার ক্রোধ শীশকের মধ্য দিয়ে যিরূশালেমের উপর ঢেলে দেওয়া হবে না, কিন্তু তারা তার অধীন হবে। এতে তারা আমার সেবা করবার ও অন্যান্য দেশের রাজাদের সেবা করবার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা বুঝতে পারবে।” মিসরের রাজা শীশক যিরূশালেম আক্রমণ করে সদাপ্রভুর ঘরের ও রাজবাড়ীর সমস্ত ধন-দৌলত নিয়ে চলে গেলেন। তিনি সব কিছুই নিয়ে গেলেন, এমন কি, শলোমনের তৈরী সোনার ঢালগুলোও নিয়ে গেলেন। কাজেই রাজা রহবিয়াম সেগুলোর বদলে ব্রোঞ্জের ঢাল তৈরী করালেন। রাজবাড়ীর দরজায় যে সব সৈন্যেরা পাহারা দিত তাদের সেনাপতিদের কাছে তিনি সেগুলো রক্ষা করবার ভার দিলেন। রাজা যখন সদাপ্রভুর ঘরে যেতেন তখন পাহারাদার সৈন্যেরা সেই ঢালগুলো নিয়ে তাঁর সংগে যেত এবং পরে তারা সেগুলো পাহারা-ঘরে জমা দিত। রহবিয়াম নিজেকে নত করেছিলেন বলে তাঁর উপর সদাপ্রভুর যে ক্রোধ ছিল তা থেমে গেল এবং তাঁর সর্বনাশ হল না। তখনও যিহূদার মধ্যে কিছু ভাল ছিল। রাজা রহবিয়াম যিরূশালেমে নিজেকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করে রাজত্ব করেছিলেন। তিনি যখন রাজা হয়েছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল একচল্লিশ। ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর সমস্ত জায়গার মধ্য থেকে যে শহরটা সদাপ্রভু নিজের বাসস্থান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সেই যিরূশালেম শহরে রহবিয়াম সতেরো বছর রাজত্ব করেছিলেন। রহবিয়ামের মায়ের নাম ছিল নয়মা; তিনি ছিলেন অম্মোনীয়া। সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলবার জন্য মন স্থির করেন নি বলে রহবিয়াম যা মন্দ তা-ই করতেন। রহবিয়ামের অন্যান্য কাজের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নবী শময়িয়ের লেখা এবং দর্শক ইদ্দোর লেখা বংশ-তালিকায় লেখা আছে। রহবিয়াম ও যারবিয়ামের মধ্যে অনবরত যুদ্ধ চলত। পরে রহবিয়াম তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং দায়ূদ-শহরে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে অবিয় রাজা হলেন। যারবিয়ামের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় অবিয় যিহূদার রাজা হলেন। তিনি যিরূশালেমে তিন বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল মাখা; তিনি ছিলেন গিবিয়ার ঊরীয়েলের মেয়ে। অবিয় আর যারবিয়ামের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। অবিয় চার লক্ষ বাছাই-করা বীর যোদ্ধার একটা দল নিয়ে যুদ্ধ করতে গেলেন আর যারবিয়াম আট লক্ষ বাছাই-করা বীর যোদ্ধা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সারি বাঁধলেন। অবিয় ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার মধ্যে সমারয়িম পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে বললেন, “যারবিয়াম ও ইস্রায়েলের সমস্ত লোকেরা, আমার কথা শুনুন। আপনারা কি জানেন না যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু চিরকালের অটল ব্যবস্থার দ্বারা দায়ূদ ও তাঁর বংশের লোকদের কাছে চিরদিনের জন্য ইস্রায়েলের রাজপদ দিয়েছেন? তবুও দায়ূদের ছেলে শলোমনের কর্মচারী নবাটের ছেলে যারবিয়াম তাঁর মনিবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। কয়েকজন অপদার্থ ও দুষ্ট লোক যারবিয়ামের চারপাশে জড়ো হয়ে শলোমনের ছেলে রহবিয়ামের বিরুদ্ধে দাঁড়াল। সেই সময় রহবিয়াম ছিলেন যুবক এবং তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল কম; তাদের বাধা দেবার মত যথেষ্ট শক্তি তাঁর ছিল না। “এখন দায়ূদের বংশধরদের হাতে সদাপ্রভুর যে রাজ্য রয়েছে আপনারা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইছেন। সত্যিই আপনারা বিরাট একদল সৈন্য এবং আপনাদের মধ্যে রয়েছে সেই সোনার বাছুরের মূর্তিগুলো যা আপনাদের দেবতা হবার জন্য যারবিয়াম তৈরী করেছেন। আপনারা তো সদাপ্রভুর পুরোহিতদের, অর্থাৎ হারোণের ছেলেদের এবং লেবীয়দের তাড়িয়ে দিয়েছেন এবং অন্যান্য দেশের জাতিদের মত নিজেদের জন্য পুরোহিতদের নিযুক্ত করেছেন। পুরোহিত হিসাবে নিজেকে আলাদা করবার জন্য যে কেউ একটা এঁেড় বাছুর ও সাতটা ভেড়া নিয়ে আসে সে-ই ঐ সব দেবতার পুরোহিত হতে পারে যারা ঈশ্বর নয়। “কিন্তু আমরা সেই রকম নই, সদাপ্রভুই আমাদের ঈশ্বর। আমরা তাঁকে ত্যাগ করি নি। যে পুরোহিতেরা সদাপ্রভুর সেবা করেন তাঁরা হারোণের বংশের লোক, আর লেবীয়েরাও তাদের নির্দিষ্ট কাজ করে। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় পুরোহিতেরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করেন ও সুগন্ধি ধূপ জ্বালান। তাঁরা শুচি করা টেবিলের উপর সম্মুখ-রূটি সাজিয়ে রাখেন এবং প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় সোনার বাতিদানের উপর বাতিগুলো জ্বালিয়ে দেন। আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে কাজ করি, কিন্তু আপনারা তাঁকে ত্যাগ করেছেন। ঈশ্বর আমাদের সংগে আছেন; তিনিই আমাদের নেতা। তাঁর পুরোহিতেরা তাঁদের তূরী বাজিয়ে আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দেবার জন্য আমাদের সংগে আছেন। হে ইস্রায়েলের লোকেরা, আপনাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে আপনারা যুদ্ধ করবেন না, কারণ তাতে আপনারা সফল হবেন না।” যারবিয়াম গোপনে যিহূদার সৈন্যদের পিছনের দিকে একদল সৈন্য পাঠিয়ে দিলেন; তাতে তাঁর একদল সৈন্য যিহূদার সামনের দিকে আর একদল সৈন্য যিহূদার পিছন দিকে রইল। যিহূদার সামনে থেকে ইস্রায়েলীয়েরা পালিয়ে যেতে লাগল আর ঈশ্বর তাদের যিহূদার লোকদের হাতে তুলে দিলেন। অবিয় ও তাঁর লোকেরা অনেক লোককে মেরে ফেললেন। এতে ইস্রায়েলীয়দের বাছাই-করা লোকদের মধ্য থেকে পাঁচ লক্ষ লোক মারা পড়ল। এইভাবে ইস্রায়েলের লোকেরা হেরে গেল, আর যিহূদার লোকেরা জয়ী হল, কারণ তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করেছিল। অবিয় যারবিয়ামের পিছনে তাড়া করে গিয়ে তাঁর হাত থেকে বৈথেল, যিশানা ও ইফ্রোণ এবং সেগুলোর আশেপাশের জায়গাগুলো দখল করে নিলেন। অবিয়ের সময়ে যারবিয়াম আর শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন নি। পরে সদাপ্রভু তাঁকে আঘাত করলে পর তিনি মারা গেলেন। এদিকে অবিয় শক্তিশালী হয়ে উঠতে লাগলেন। তাঁর চৌদ্দজন স্ত্রী এবং বাইশজন ছেলে ও ষোলজন মেয়ে ছিল। অবিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং তিনি যা কিছু বলেছিলেন তা নবী ইদ্দোর ইতিহাসের বইয়ে লেখা আছে। পরে অবিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং তাঁকে দায়ূদ-শহরে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে আসা রাজা হলেন। আসার সময়ে দশ বছর দেশে শান্তি ছিল। আসা তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল ও ঠিক তা-ই করতেন। তিনি দেব-দেবতাদের বেদীগুলো ও পূজার উঁচু স্থানগুলো ধ্বংস করলেন আর পূজার পাথরগুলো চুরমার করলেন এবং আশেরা-খুঁটিগুলো কেটে ফেললেন। তিনি যিহূদার লোকদের তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলতে এবং তাঁর আইন-কানুন ও আদেশ পালন করতে বললেন। তিনি যিহূদা দেশের প্রত্যেকটি গ্রাম ও শহরের পূজার উঁচু স্থানগুলো ও ধূপ-বেদীগুলো ধ্বংস করলেন। তাঁর অধীনে রাজ্যে শান্তি ছিল। দেশে শান্তি ছিল বলে তিনি কয়েকটা গ্রাম দেয়াল দিয়ে ঘিরে শক্তিশালী করলেন। ঐ সব বছরে কেউ আসার সংগে যুদ্ধ করে নি, কারণ ঈশ্বর তাঁকে শান্তিতে থাকতে দিয়েছিলেন। তিনি যিহূদার লোকদের বলেছিলেন, “আসুন, আমরা এই গ্রামগুলোর চারপাশে দেয়াল তৈরী করে তাতে উঁচু পাহারা-ঘর, ফটক ও আগল দিয়ে সেগুলো শক্তিশালী করি। দেশ এখনও আমাদের হাতে আছে, কারণ আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলেছি; সেইজন্য তিনি সব দিক থেকেই আমাদের শান্তি দিয়েছেন।” এইভাবে তারা সব কাজ সফলতার সংগে শেষ করল। যিহূদা-গোষ্ঠীর এলাকায় রাজা আসার বড় ঢাল ও বর্শাধারী তিন লক্ষ সৈন্য ছিল, আর বিন্যামীন-গোষ্ঠীর এলাকায় ছিল ঢাল ও ধনুকধারী দুই লক্ষ আশি হাজার সৈন্য। এরা সবাই ছিল শক্তিশালী যোদ্ধা। পরে কূশ দেশের সেরহ দশ লক্ষ সৈন্য ও তিনশো রথ নিয়ে যিহূদার লোকদের বিরুদ্ধে বের হয়ে মারেশা পর্যন্ত এগিয়ে আসলেন। তখন আসা তাঁর বিরুদ্ধে বের হলেন এবং দুই দলই মারেশার কাছে সফাথা উপত্যকায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। তখন আসা তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডেকে বললেন, “হে সদাপ্রভু, তুমি যেমন শক্তিশালীকে সাহায্য করতে পার তেমনি তো শক্তিহীনকেও সাহায্য করতে পার। সেইজন্য হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি আমাদের সাহায্য কর, কারণ আমরা তোমার উপরেই নির্ভর করি আর তোমার নামেই আমরা এই বিরাট সৈন্যদলের বিরুদ্ধে এসেছি। হে সদাপ্রভু, তুমিই আমাদের ঈশ্বর; মানুষকে তোমার বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে দিয়ো না।” তখন আসা ও যিহূদার লোকদের সামনে থেকে সদাপ্রভু কূশীয়দের হটিয়ে দিলেন। তাতে কূশীয়েরা পালিয়ে গেল। আসা ও তাঁর সৈন্যদল গরার পর্যন্ত তাদের তাড়া করে নিয়ে গেলেন। এত বেশী কূশীয় মারা পড়ল যে, তারা আর শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারল না। তারা সদাপ্রভু ও তাঁর সৈন্যদলের সামনে শেষ হয়ে গেল। যিহূদার লোকেরা প্রচুর লুটের জিনিস নিয়ে আসল। তারা গরারের চারপাশের সমস্ত গ্রামগুলো ধ্বংস করে দিতে পেরেছিল, কারণ সেখানকার লোকেরা সদাপ্রভুকে ভীষণ ভয় করেছিল। সেখানে লুট করবার মত অনেক জিনিস ছিল বলে তারা এই সব গ্রাম লুট করেছিল। তারা পশুপালকদের তাম্বুগুলোও আক্রমণ করে পালে পালে ভেড়া, ছাগল ও উট নিয়ে এসেছিল। তারপর তারা যিরূশালেমে ফিরে গেল। ঈশ্বরের আত্মা ওদেদের ছেলে অসরিয়ের উপরে আসলেন। তখন অসরিয় আসার সংগে দেখা করতে গিয়ে বললেন, “হে আসা, হে যিহূদা ও বিন্যামীনের সমস্ত লোকেরা, আমার কথা শুনুন। আপনারা যতদিন সদাপ্রভুর সংগে থাকবেন ততদিন তিনিও আপনাদের সংগে থাকবেন। তাঁর ইচ্ছা জানতে চাইলে আপনারা তা জানতে পারবেন, কিন্তু তাঁকে যদি ত্যাগ করেন তবে তিনিও আপনাদের ত্যাগ করবেন। ইস্রায়েলীয়েরা অনেক দিন ধরে সত্য ঈশ্বর ছাড়া, শিক্ষা দেবার জন্য পুরোহিত ছাড়া এবং আইন-কানুন ছাড়াই চলছিল। কিন্তু তাদের দুঃখের দিনে তারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিকে ফিরে তাঁর ইচ্ছা জানতে চেয়েছিল এবং তা জানতেও পেরেছিল। সেই দিনগুলোতে কোথাও যাওয়া-আসা করা নিরাপদ ছিল না, কারণ সমস্ত জায়গার লোকেরা তখন খুব অশান্ত অবস্থায় ছিল। এক জাতি অন্য জাতির, এক শহর অন্য শহরের সর্বনাশ করবার চেষ্টা করত, কারণ নানা রকম অমংগল দিয়ে ঈশ্বর তাদের কষ্ট দিচ্ছিলেন। কিন্তু আপনারা শক্তিশালী হন, নিরাশ হবেন না, কারণ আপনাদের কাজের পুরস্কার আপনারা পাবেন।” আসা এই সব কথা শুনে, অর্থাৎ ওদেদের ছেলে নবী অসরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী শুনে সাহস পেলেন। তিনি যিহূদা ও বিন্যামীনের সমস্ত এলাকা থেকে এবং তাঁর অধিকার করা ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার গ্রাম ও শহরগুলো থেকে জঘন্য প্রতিমাগুলো ধ্বংস করে দিলেন। তিনি সদাপ্রভুর ঘরের বারান্দার সামনে রাখা সদাপ্রভুর বেদীটা মেরামত করলেন। তারপর তিনি যিহূদা ও বিন্যামীনের সমস্ত লোকদের এবং ইফ্রয়িম, মনঃশি ও শিমিয়োন এলাকার যে সব লোকেরা তাদের মধ্যে বাস করছিল তাদের এক সংগে জড়ো করলেন। আসার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর সংগে আছেন দেখে ইস্রায়েলের অনেক লোক তাঁর পক্ষ নিয়ে তাঁর কাছে এসেছিল। আসার রাজত্বের পনেরো বছরের তৃতীয় মাসে এই লোকেরা যিরূশালেমে এসে জড়ো হয়েছিল। তারা যা লুট করে এনেছিল তার মধ্য থেকে সেই সময় তারা সাতশো গরু ও সাত হাজার ভেড়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করল। তারা এই প্রতিজ্ঞা করল যে, তারা সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলবে; ছোট-বড়, স্ত্রী-পুরুষ যে-ই হোক না কেন যারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলবে না তাদের মেরে ফেলা হবে। তারা আনন্দে চিৎকার করে এবং তূরী ও শিংগা বাজিয়ে সদাপ্রভুর কাছে জোরে জোরে শপথ করল। এই শপথে যিহূদা দেশের সমস্ত লোক আনন্দ করল, কারণ সমস্ত অন্তর দিয়ে তারা সেই শপথ করেছিল। তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে চেয়েছিল বলে তা জানতে পেরেছিল। তাই সদাপ্রভু সব দিক থেকেই তাদের শান্তি দিয়েছিলেন। রাজা আসা তাঁর বাবার মা মাখাকে রাজমাতার পদ থেকে সরিয়ে দিলেন, কারণ তিনি একটা জঘন্য আশেরা-মূর্তি তৈরী করিয়েছিলেন। আসা সেটা কেটে ফেলে, ভেংগে কিদ্রোণ উপত্যকায় নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দিলেন। যদিও পূজার উঁচু স্থানগুলো তিনি ইস্রায়েল থেকে ধ্বংস করেন নি তবুও সারা জীবন তাঁর অন্তর সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিতে পূর্ণ ছিল। তিনি ও তাঁর বাবা যে সব সোনা-রূপা ও অন্যান্য জিনিস ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছিলেন সেগুলো তিনি ঈশ্বরের ঘরে নিয়ে গেলেন। আসার রাজত্বের পঁয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত আর কোন যুদ্ধ হয় নি। আসার রাজত্বের ছত্রিশ বছরের সময়ে ইস্রায়েলের রাজা বাশা যিহূদার লোকদের বিরুদ্ধে গিয়ে রামা শহরটা দুর্গের মত করে গড়ে তুলতে লাগলেন যাতে কেউ যিহূদার রাজা আসার কাছে যাওয়া-আসা করতে না পারে। তখন আসা সদাপ্রভুর ঘর ও তাঁর নিজের রাজবাড়ীর ভাণ্ডার থেকে সোনা ও রূপা বের করে নিয়ে অরাম দেশের রাজা বিন্‌হদদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। বিন্‌হদদ দামেস্ক শহরে বাস করতেন। আসা তাঁকে বলে পাঠালেন, “আমার বাবা ও আপনার বাবার মত আসুন, আমরাও আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি করি। আমি আপনাকে এই সব সোনা ও রূপা উপহার পাঠালাম। আপনি ইস্রায়েলের রাজা বাশার সংগে এখন চুক্তি ভেংগে ফেলুন, তাতে সে আমার কাছ থেকে চলে যাবে।” রাজা আসার কথায় রাজী হয়ে বিন্‌হদদ ইস্রায়েলের গ্রাম ও শহরগুলোর বিরুদ্ধে তাঁর সেনাপতিদের পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা ইয়োন, দান, আবেল-ময়িম ও নপ্তালির সমস্ত ভাণ্ডার-শহরগুলো দখল করে নিলেন। বাশা এই কথা শুনে রামা শহর শক্তিশালী করে গড়ে তুলবার কাজ বন্ধ করে দিলেন। তখন রাজা আসা যিহূদার সমস্ত লোকদের নিয়ে এসে বাশা যে সব পাথর ও কাঠ ব্যবহার করছিলেন সেগুলো রামা থেকে নিয়ে গেলেন। সেগুলো দিয়ে তিনি গেবা ও মিসপা গ্রাম দুর্গের মত করে গড়ে তুললেন। সেই সময় দর্শক হনানি এসে যিহূদার রাজা আসাকে বললেন, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর না করে আপনি অরামের রাজার উপর নির্ভর করেছিলেন বলে অরামের রাজার সৈন্যদল আপনার হাতছাড়া হয়ে গেছে। কূশীয় ও লূবীয়দের কি অনেক রথ ও ঘোড়সওয়ার সুদ্ধ একটা বিরাট সৈন্যদল ছিল না? কিন্তু আপনি সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করেছিলেন বলে তিনি আপনার হাতে তাদের তুলে দিয়েছিলেন। যাদের অন্তর সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিতে পূর্ণ থাকে তাদের রক্ষা করবার জন্য তাঁর চোখ পৃথিবীর সব জায়গায় থাকে। আপনি বোকামির কাজ করেছেন। এখন থেকে আপনি বারবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বেন।” এই কথা শুনে আসা সেই দর্শকের উপর ভীষণ রাগ করে তাঁকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন। একই সময়ে আসা কতগুলো লোকের উপর অত্যাচার করলেন। আসার অন্যান্য কাজের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত “যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। আসার রাজত্বের ঊনচল্লিশ বছরের সময় তাঁর পায়ে একটা রোগ হল। তাঁর এই রোগ ভীষণ হলেও তিনি সদাপ্রভুর সাহায্য না চেয়ে কেবল ডাক্তারদের সাহায্য নিলেন। পরে তাঁর রাজত্বের একচল্লিশ বছরের সময় তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন। নানা রকম মশলা ও মিশানো সুগন্ধি জিনিষে পরিপূর্ণ খাটে লোকেরা তাঁকে শোওয়াল এবং দায়ূদ-শহরে তিনি নিজের জন্য যে কবর ঠিক করে রেখেছিলেন তারা সেখানে তাঁকে কবর দিল। লোকেরা তাঁর সম্মানে বিরাট একটা আগুন জ্বালাল। আসার জায়গায় তাঁর ছেলে যিহোশাফট রাজা হলেন। তিনি ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে নিজেকে শক্তিশালী করে তুললেন। যিহূদার সমস্ত দেয়াল-ঘেরা শহর ও গ্রামগুলোতে তিনি সৈন্যদল রাখলেন এবং যিহূদা দেশ ও তাঁর বাবার দখল করা ইফ্রয়িম এলাকার গ্রাম ও শহরগুলোতেও সৈন্য রাখলেন। সেইজন্য সদাপ্রভু তাঁর অধীনে রাজ্য স্থির রাখলেন। যিহূদার সমস্ত লোক যিহোশাফটকে উপহার দিল; এতে তাঁর অনেক ধন-সম্পদ ও সম্মান বেড়ে গেল। সদাপ্রভুর পথে চলতে তাঁর খুব আগ্রহ ছিল। তা ছাড়া তিনি যিহূদা দেশ থেকে পূজার উঁচু স্থানগুলো ও আশেরা-খুঁটিগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তাঁর রাজত্বের তৃতীয় বছরের সময় তিনি যিহূদার সমস্ত গ্রাম ও শহরের লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য তাঁর কর্মচারী বিন্‌-হয়িল, ওবদিয়, সখরিয়, নথনেল ও মীখায়কে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁদের সংগে ছিলেন শময়িয়, নথনিয়, সবদিয়, অসাহেল, শমীরামোৎ, যিহোনাথন, অদোনিয়, টোবিয় ও টোব্‌-অদোনীয় নামে কয়েকজন লেবীয় এবং ইলীশামা ও যিহোরাম নামে দু’জন পুরোহিত। সদাপ্রভুর আইন-কানুনের বই সংগে নিয়ে তাঁরা যিহূদা দেশের সব জায়গায় তা থেকে শিক্ষা দিলেন। যিহূদা দেশের আশেপাশের সব রাজ্যের উপর সদাপ্রভুর কাছ থেকে এমন ভয় নেমে আসল যে, তারা যিহোশাফটের সংগে যুদ্ধ করল না। কয়েকজন পলেষ্টীয় কর্‌ হিসাবে যিহোশাফটের কাছে উপহার ও রূপা নিয়ে আসল এবং আরবীয়েরা নিয়ে আসল সাত হাজার সাতশো ভেড়া আর সাত হাজার সাতশো ছাগল। এইভাবে যিহোশাফট আরও ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে লাগলেন। তিনি যিহূদা দেশে কতগুলো দুর্গ ও ভাণ্ডার-শহর তৈরী করলেন। তিনি যিহূদার শহরগুলোতে অনেক জিনিসপত্র মজুদ করলেন এবং যিরূশালেমে দক্ষ যোদ্ধাদের রাখলেন। বংশ অনুসারে তাদের সংখ্যা ও সেনাপতিদের নাম এই: যিহূদা-গোষ্ঠী থেকে- প্রধান সেনাপতি অদ্‌ন ও তাঁর তিন লক্ষ যোদ্ধা; দ্বিতীয় সেনাপতি যিহোহানন ও তাঁর দুই লক্ষ আশি হাজার যোদ্ধা; তৃতীয় সেনাপতি সিখ্রির ছেলে অমসিয় ও তাঁর দুই লক্ষ যোদ্ধা। অমসিয় সদাপ্রভুর কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। বিন্যামীন-গোষ্ঠী থেকে- নাম-করা বীর প্রধান সেনাপতি ইলিয়াদা ও তাঁর ধনুক ও ঢালধারী দুই লক্ষ যোদ্ধা; দ্বিতীয় সেনাপতি যিহোষাবদ ও তাঁর এক লক্ষ আশি হাজার দক্ষ যোদ্ধা। এই সব যোদ্ধারা রাজার কাজে নিযুক্ত ছিল। এরা ছাড়াও যিহূদার দেয়াল-ঘেরা গ্রাম ও শহরগুলোতে আরও সৈন্য রাখা হয়েছিল। যিহোশাফটের অনেক ধন-সম্পদ ও সম্মান ছিল। তিনি বিয়ের মধ্য দিয়ে আহাবের সংগে বন্ধুত্ব করলেন। তবে যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজাকে এই কথাও বললেন, “আপনি প্রথমে সদাপ্রভুর পরামর্শ নিন।” কাজেই ইস্রায়েলের রাজা নবীদের ডেকে একত্র করলেন। তাদের সংখ্যা ছিল চারশো। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে কি আমরা যুদ্ধ করতে যাব, না যাব না?” তারা বলল, “যান, কারণ ঈশ্বর ওটা রাজার হাতেই তুলে দেবেন।” কিন্তু যিহোশাফট বললেন, “এখানে কি সদাপ্রভুর কোন নবী নেই যার কাছে আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি?” উত্তরে ইস্রায়েলের রাজা যিহূদার রাজা যিহোশাফটকে বললেন, “এখনও এমন একজন লোক আছে যার মধ্য দিয়ে আমরা সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারি, কিন্তু আমি তাকে ঘৃণা করি, কারণ সে আমার সম্বন্ধে কখনও মংগলের কথা বলে না, সব সময় অমংগলের কথাই বলে। সে হল যিম্লের ছেলে মীখায়।” উত্তরে যিহোশাফট বললেন, “রাজা যেন ঐরকম কথা না বলেন।” তখন ইস্রায়েলের রাজা তাঁর একজন কর্মচারীকে ডেকে বললেন, “তুমি এখনই য্নিের ছেলে মীখায়কে ডেকে নিয়ে এস।” ইস্রায়েলের রাজা ও যিহূদার রাজা যিহোশাফট রাজপোশাক পরে শমরিয়া শহরের ফটকের কাছে গম ঝাড়বার জায়গায় তাঁদের সিংহাসনের উপরে বসে ছিলেন আর নবীরা সবাই তাঁদের সামনে ভবিষ্যতের কথা বলছিল। তখন কনানার ছেলে সিদিকিয় লোহার শিং তৈরী করে নিয়ে এই কথা ঘোষণা করল, “সদাপ্রভু বলছেন যে, অরামীয়েরা শেষ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আপনি এগুলো দিয়েই তাদের গুঁতাতে থাকবেন।” অন্যান্য নবীরাও একই রকম কথা বলল। তারা বলল, “রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করে তা জয় করে নিন, কারণ সদাপ্রভু সেটা মহারাজের হাতে তুলে দেবেন।” যে লোকটি মীখায়কে ডেকে আনতে গিয়েছিল সে তাঁকে বলল, “দেখুন, অন্যান্য নবীরা সবাই একবাক্যে রাজার সফলতার কথা বলছেন। আপনার কথাও যেন তাঁদের কথার মতই হয়। আপনি মংগলের কথাই বলবেন।” কিন্তু মীখায় বললেন, “জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, আমার ঈশ্বর যা বলবেন আমি কেবল সেই কথাই বলব।” মীখায় আসলে পর রাজা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মীখায়, আমরা কি রামোৎ-গিলিয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাব, না যাব না?” উত্তরে মীখায় বললেন, “হ্যাঁ, যান যান, আক্রমণ করে জয়লাভ করুন, কারণ সেখানকার লোকদের আপনাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” রাজা তাঁকে বললেন, “কতবার আমি তোমাকে এই শপথ করতে বলব যে, সদাপ্রভুর নামে তুমি সত্যি কথা ছাড়া আর কিছু বলবে না?” উত্তরে মীখায় বললেন, “আমি দেখলাম, ইস্রায়েলীয়েরা সবাই রাখালহীন ভেড়ার মত পাহাড়ের উপরে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সদাপ্রভু বললেন, ‘এদের কোন মনিব নেই, কাজেই তারা শান্তিতে যে যার বাড়ীতে চলে যাক।’ ” তখন ইস্রায়েলের রাজা যিহোশাফটকে বললেন, “আমি কি আপনাকে আগেই বলি নি যে, সে আমার সম্বন্ধে অমংগল ছাড়া মংগলের কথা বলবে না?” মীখায় বলতে লাগলেন, “তাহলে আপনারা সদাপ্রভুর কথা শুনুন। আমি দেখলাম, সদাপ্রভু তাঁর সিংহাসনে বসে আছেন এবং তাঁর ডান ও বাঁ দিকে সমস্ত স্বর্গদূতেরা রয়েছেন। তখন সদাপ্রভু বললেন, ‘রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করবার জন্য কে ইস্রায়েলের রাজা আহাবকে ভুলিয়ে সেখানে নিয়ে যাবে যাতে সে মারা যায়?’ তখন এক একজন এক এক কথা বললেন। শেষে একটি আত্মা এগিয়ে এসে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যাব।’ সদাপ্রভু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেমন করে করবে?’ সে বলল, ‘আমি গিয়ে তার সব নবীদের মুখে মিথ্যা বলবার আত্মা হব।’ সদাপ্রভু বললেন, ‘তুমিই তাকে ভুলিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তুমি গিয়ে তা-ই কর।’ এইজন্যই সদাপ্রভু এখন আপনার এই নবীদের মুখে মিথ্যা বলবার আত্মা দিয়েছেন। আপনার সর্বনাশ হবার জন্য সদাপ্রভু রায় দিয়েছেন।” তখন কনানার ছেলে সিদিকিয় গিয়ে মীখায়ের গালে চড় মেরে বলল, “সদাপ্রভুর আত্মা তোর সংগে কথা বলবার জন্য আমার কাছ থেকে বেরিয়ে কোন্‌ পথে গিয়েছিলেন?” উত্তরে মীখায় বললেন, “তুমি সেই দিন তা জানতে পারবে যেদিন তুমি নিজেকে লুকাবার জন্য ভিতরের ঘরে গিয়ে ঢুকবে।” ইস্রায়েলের রাজা তখন এই হুকুম দিলেন, “মীখায়কে শহরের শাসনকর্তা আমোন ও রাজপুত্র যোয়াশের কাছে আবার পাঠিয়ে দাও। তাদের বল রাজা বলেছেন এই লোকটিকে যেন জেলে রাখা হয় এবং রাজা নিরাপদে ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে অল্প জল ও অল্প রুটি ছাড়া আর কিছু না দেওয়া হয়।” তখন মীখায় বললেন, “যদি আপনি সত্যিই নিরাপদে ফিরে আসেন তবে জানবেন সদাপ্রভু আমার মধ্য দিয়ে কথা বলেন নি।” তারপর তিনি আবার বললেন, “আপনারা সবাই আমার কথাটা শুনে রাখুন।” এর পরে ইস্রায়েলের রাজা আহাব ও যিহূদার রাজা যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দ আক্রমণ করতে গেলেন। আহাব যিহোশাফটকে বললেন, “আমাকে যাতে লোকেরা চিনতে না পারে সেইজন্য আমি অন্য পোশাক পরে যুদ্ধে যোগ দেব, কিন্তু আপনি আপনার রাজপোশাকই পরুন।” এই বলে ইস্রায়েলের রাজা অন্য পোশাক পরে যুদ্ধ করতে গেলেন। অরামের রাজা তাঁর রথগুলোর সেনাপতিদের এই আদেশ দিয়ে রেখেছিলেন, “একমাত্র ইস্রায়েলের রাজা ছাড়া আপনারা ছোট কি বড় আর কারও সংগে যুদ্ধ করবেন না।” রথের সেনাপতিরা যিহোশাফটকে দেখে ভেবেছিলেন যে, তিনি নিশ্চয়ই ইস্রায়েলের রাজা। কাজেই তাঁরা ফিরে তাঁকে আক্রমণ করতে গেলেন কিন্তু যিহোশাফট চেঁচিয়ে উঠলেন, তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর তাঁকে সাহায্য করলেন আর তাতে তাঁরা তাঁর কাছ থেকে চলে গেলেন। এতে সেনাপতিরা বুঝলেন যে, তিনি ইস্রায়েলের রাজা নন, সেইজন্য তাঁরা আর তাঁর পিছনে তাড়া করলেন না। কিন্তু একজন লোক লক্ষ্য স্থির না করেই তার ধনুকে টান দিয়ে ইস্রায়েলের রাজার বুক ও পেটের বর্মের মাঝামাঝি ফাঁকে আঘাত করে বসল। তখন রাজা তাঁর রথচালককে বললেন, “রথ ঘুরিয়ে তুমি যুদ্ধের জায়গা থেকে আমাকে বাইরে নিয়ে যাও। আমি আঘাত পেয়েছি।” সারা দিন ধরে ভীষণ যুদ্ধ চলল আর ইস্রায়েলের রাজাকে রথের মধ্যে অরামীয়দের মুখোমুখি করে বসিয়ে রাখা হল, আর সূর্য ডুবে যাবার সময় তিনি মারা গেলেন। যিহূদার রাজা যিহোশাফট যিরূশালেমে তাঁর রাজবাড়ীতে নিরাপদে ফিরে আসলেন। তখন হনানির ছেলে দর্শক যেহূ বের হয়ে তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “দুষ্টদের সাহায্য করা এবং যারা সদাপ্রভুকে ঘৃণা করে তাদের ভালবাসা কি আপনার উচিত হয়েছে? এইজন্য সদাপ্রভুর ক্রোধ আপনার উপর নেমে এসেছে। তবে আপনার মধ্যে কিছু ভালও আছে, কারণ আপনি দেশের আশেরা-খুঁটিগুলো ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলবার জন্য আপনার মন স্থির করেছেন।” যিহোশাফট যিরূশালেমে বাস করতেন। তিনি বের্‌-শেবা থেকে শুরু করে ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকা পর্যন্ত লোকদের কাছে গিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিকে আবার তাদের মন ফিরিয়ে আনলেন। তিনি দেশের মধ্যে, অর্থাৎ যিহূদার প্রত্যেকটি দেয়াল-ঘেরা গ্রাম ও শহরে বিচারকদের নিযুক্ত করলেন। তিনি বিচারকদের বললেন, “আপনারা সাবধান হয়ে সব কাজ করবেন, কারণ আপনারা কোন মানুষের জন্য নয় বরং সদাপ্রভুর জন্যই বিচার করবেন। বিচারের রায় দেবার সময় তিনি আপনাদের সংগে থাকবেন। সদাপ্রভুর প্রতি ভয় আপনাদের মধ্যে থাকুক। সাবধানে বিচার করবেন, কারণ অবিচার, একচোখামী কিম্বা ঘুষ খাওয়ার সংগে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কোন সম্বন্ধ নেই।” বিভিন্ন গ্রামে ও শহরে বাসকারী আপনাদের লোকদের কাছ থেকে যে কোন মামলা আসুক না কেন- সেটা রক্তপাত হোক বা আইন-কানুন, আদেশ, নিয়ম কিম্বা নির্দেশের ব্যাপারেই হোক- আপনারা তাদের সতর্ক করে দেবেন যেন তারা সদাপ্রভুর চোখে দোষী না হয়। তা না হলে আপনাদের ও আপনাদের লোকদের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধ নেমে আসবে। আপনারা এইভাবে কাজ করুন, তাহলে আপনারা দোষী হবেন না। “সদাপ্রভুর সব ব্যাপারে প্রধান পুরোহিত অমরিয় এবং রাজার সব ব্যাপারে যিহূদা-গোষ্ঠীর নেতা ইশ্মায়েলের ছেলে সবদিয় আপনাদের উপরে নিযুক্ত থাকবেন, আর লেবীয়েরা আপনাদের সাহায্য করবেন। আপনারা সাহসের সংগে কাজ করুন। যাঁরা ন্যায়ভাবে কাজ করবেন সদাপ্রভু তাঁদের সংগে থাকবেন।” এর পরে মোয়াবীয়েরা, অম্মোনীয়েরা ও মায়োনীয়দের কিছু লোক যিহোশাফটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসল। তখন কয়েকজন লোক এসে যিহোশাফটকে বলল, “সাগরের ওপারের অরাম দেশ থেকে এক বিরাট সৈন্যদল আপনার বিরুদ্ধে আসছে। তারা হৎসসোন-তামরে, অর্থাৎ ঐন্‌-গদীতে এসে গেছে।” এতে যিহোশাফট ভয় পেয়ে স্থির করলেন যে, তিনি সদাপ্রভুর কাছে সাহায্য চাইবেন। তিনি যিহূদা দেশের সব জায়গায় উপবাস ঘোষণা করলেন। যিহূদার লোকেরা সদাপ্রভুর সাহায্য চাইবার জন্য এসে একত্র হল; এমন কি, যিহূদার সমস্ত গ্রাম থেকেও লোকেরা এসেছিল। তখন যিহোশাফট সদাপ্রভুর ঘরের নতুন উঠানে যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “হে সদাপ্রভু, আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, তুমি তো স্বর্গের ঈশ্বর। তুমি সমস্ত জাতির রাজ্যগুলো শাসন করে থাক। ক্ষমতা ও শক্তি তোমারই হাতে এবং কেউ তোমাকে বাধা দিতে পারে না। হে আমাদের ঈশ্বর, তোমার লোক ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে এই দেশের বাসিন্দাদের তাড়িয়ে দিয়ে তুমি তা তোমার বন্ধু অব্রাহামের বংশের লোকদের চিরকালের জন্য দিয়েছ। তারা সেখানে বাস করেছে এবং তোমারই জন্য একটা পবিত্র ঘর তৈরী করে বলেছে, ‘যদি কোন বিপদ আমাদের উপরে আসে- তা যুদ্ধ বা শাস্তি কিম্বা মড়ক অথবা দুর্ভিক্ষ হোক- তবে আমরা তখন এই ঘরের সামনে, অর্থাৎ তোমার সামনে দাঁড়াব, কারণ তুমি এই ঘরে বাস কর। আমাদের কষ্টের সময় আমরা তোমার কাছে কাঁদব, আর তুমি আমাদের কথা শুনে আমাদের উদ্ধার করবে।’ “এখন অম্মোন ও মোয়াব এবং সেয়ীর পাহাড়ের লোকেরা এখানে এসেছে। যখন ইস্রায়েলীয়েরা মিসর থেকে বের হয়ে আসছিল তখন তুমি এদের দেশে তাদের ঢুকতে দাও নি। কাজেই তারা তাদের ধ্বংস না করে তাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছিল। অধিকার হিসাবে যে সম্পত্তি তুমি আমাদের দিয়েছ এখন দেখ, তার বদলে তারা কেমন করে সেখান থেকে আমাদের তাড়িয়ে দিতে আসছে। হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি কি তাদের বিচার করবে না? এই যে বিরাট সৈন্যদল আমাদের আক্রমণ করতে আসছে তাদের মুখোমুখি হওয়ার শক্তি আমাদের নেই। কি করতে হবে তা আমরা জানি না, কিন্তু আমরা কেবল তোমার দিকে চেয়ে আছি।” সেই সময় যিহূদার সমস্ত লোক তাদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও শিশুদের নিয়ে সেখানে সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন সেই দলের মধ্যে যহসীয়েল নামে আসফের বংশের একজন লেবীয়ের উপর সদাপ্রভুর আত্মা আসলেন। যহসীয়েল ছিলেন সখরিয়ের ছেলে, সখরিয় বনায়ের ছেলে, বনায় যিয়েলের ছেলে, যিয়েল মত্তনিয়ের ছেলে। যহসীয়েল বললেন, “হে রাজা যিহোশাফট ও আপনারা যারা যিহূদা আর যিরূশালেমে বাস করেন, সবাই শুনুন। সদাপ্রভু আপনাদের কাছে এই কথা বলছেন, ‘এই বিরাট সৈন্যদল দেখে তোমরা ভয় পেয়ো না বা নিরাশ হোয়ো না। এই যুুদ্ধ ঈশ্বরের, তোমাদের নয়। আগামী কাল তোমরা তাদের বিরুদ্ধে বের হবে। তখন তারা সীস নামে পাহাড়ের পথ দিয়ে উঠে আসবে। তোমরা যিরূয়েল নামে মরু-এলাকার কাছে উপত্যকার শেষের দিকে তাদের পাবে। এই যুদ্ধ তোমাদের করতে হবে না। হে যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকেরা, তোমরা সারি বেঁধে দাঁড়ায়ো এবং সদাপ্রভু তোমাদের কিভাবে উদ্ধার করেন তা দেখো। তোমরা ভয় কোরো না, নিরাশ হয়ো না। তোমরা কালকে গিয়ে তাদের মুখোমুখি হবে আর সদাপ্রভু তোমাদের সংগে থাকবেন।’ ” তখন যিহোশাফট মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত লোক ভক্তি জানাবার জন্য সদাপ্রভুর সামনে মাটিতে উবুড় হল। তারপর কহাতীয় ও কোরহীয় বংশের অনেক লেবীয় উঠে দাঁড়িয়ে খুব জোরে জোরে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করতে লাগল। পরের দিন খুব সকালে তারা তকোয় মরু-এলাকার দিকে রওনা হল। তারা রওনা হবার আগে যিহোশাফট দাঁড়িয়ে বললেন, “হে যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকেরা, আমার কথা শুনুন। আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করুন, তাহলে আপনারা স্থির থাকতে পারবেন। তাঁর নবীদের উপর বিশ্বাস রাখুন, তাতে আপনারা সফল হবেন।” যিহোশাফট লোকদের সংগে পরামর্শ করে সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান ও তাঁর মহিমাপূর্ণ পবিত্রতার গৌরব করবার জন্য লোকদের নিযুক্ত করলেন যেন তারা সৈন্যদলের আগে আগে এই কথা বলতে বলতে যায়, “সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, কারণ তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।” যিহূদার লোকেরা মরু-এলাকার উঁচু পাহারা-ঘরে এসে সেই বিরাট সৈন্যদলের দিকে তাকিয়ে দেখল যে, মাটিতে কেবল মৃত দেহগুলো পড়ে রয়েছে; কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারে নি। তখন যিহোশাফট ও তাঁর লোকেরা লুটের জিনিস আনতে গিয়ে সেই মৃত দেহগুলোর সংগে এত বেশী পরিমাণে জিনিসপত্র, কাপড়-চোপড় ও ধন-রত্ন দেখতে পেল যে, তারা সেগুলো বয়ে নিয়ে যেতে পারল না। লুটের জিনিস বেশী হওয়াতে তা নিয়ে যেতে তাদের তিন দিন লাগল। চতুর্থ দিনে তারা বরাখা উপত্যকায় জড়ো হয়ে সদাপ্রভুর প্রশংসা করল। এইজন্য আজও সেই জায়গাকে বলা হয় বরাখা উপত্যকা (যার মানে “প্রশংসা”)। তারপর যিহোশাফটের পিছনে পিছনে যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত লোক আনন্দ করতে করতে যিরূশালেমে ফিরে আসল, কারণ তাদের শত্রুদের উপরে সদাপ্রভু তাদের জয় দান করেছিলেন। তারা বীণা, সুরবাহার ও তূরী বাজাতে বাজাতে যিরূশালেমে ফিরে এসে সদাপ্রভুর ঘরে গেল। ইস্রায়েলের শত্রুদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু কেমন করে যুদ্ধ করেছেন সেই কথা শুনে অন্যান্য দেশের সমস্ত লোকদের উপর সদাপ্রভু সম্বন্ধে একটা ভয় নেমে আসল। এতে যিহোশাফটের রাজ্য শান্তিতে রইল, কারণ তাঁর ঈশ্বর সব দিকেই তাঁকে শান্তি দিয়েছিলেন। যিহোশাফট পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়েছিলেন এবং পঁচিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল অসূবা; তিনি ছিলেন শিল্‌হির মেয়ে। যিহোশাফট তাঁর বাবা আসার পথে চলতেন এবং কখনও সেই পথ ছেড়ে যান নি। সদাপ্রভুর চোখে যা ঠিক তিনি তা-ই করতেন। কিন্তু পূজার উঁচু স্থানগুলো ধ্বংস করা হয় নি, কারণ তখনও লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের প্রতি মন স্থির করে নি। যিহোশাফটের অন্যান্য কাজের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হনানির ছেলে যেহূ লিখেছিলেন; তা “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে পাওয়া যায়। পরে যিহূদার রাজা যিহোশাফট ইস্রায়েলের রাজা অহসিয়ের সংগে যোগ দিলেন। অহসিয় অন্যায় কাজ করতেন। যিহোশাফট তাঁর সংগে মিলে তর্শীশে যাবার জন্য কতগুলো বড় বড় জাহাজ তৈরী করতে রাজী হলেন। সেগুলো ইৎসিয়োন-গেবরে তৈরী করা হল। তখন মারেশার দোদাবাহূর ছেলে ইলীয়েষর যিহোশাফটের বিরুদ্ধে এই ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, “আপনি অহসিয়ের সংগে যোগ দিয়েছেন বলে আপনি যা তৈরী করেছেন তা সদাপ্রভু ধ্বংস করবেন।” পরে সেই জাহাজগুলো ভেংগে গেল, তর্শীশে যেতে পারল না। পরে যিহোশাফট তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং দায়ূদ-শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে যিহোরাম রাজা হলেন। তাঁর ভাইদের, অর্থাৎ যিহোশাফটের ছেলেদের নাম ছিল অসরিয়, যিহীয়েল, সখরিয়, অসরিয়, মীখায়েল ও শফটিয়। এরা সবাই ছিল ইস্রায়েলীয়দের রাজা যিহোশাফটের ছেলে। তাদের বাবা তাদের সোনা, রূপা ও দামী দামী জিনিস এবং যিহূদা দেশে দেয়াল-ঘেরা গ্রাম ও শহর দিয়েছিলেন, কিন্তু যিহোরাম বড় ছেলে বলে তাঁকে রাজ্য দিয়েছিলেন। যিহোরাম তাঁর বাবার রাজ্য নিজের অধীনে এনে নিজেকে শক্তিশালী করলেন। তিনি নিজের সমস্ত ভাইদের ও ইস্রায়েলের কয়েকজন উঁচু পদের কর্মচারীকে মেরে ফেললেন। যিহোরাম বত্রিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং যিরূশালেমে আট বছর রাজত্ব করেছিলেন। আহাবের বংশের লোকদের মতই তিনি ইস্রায়েলের রাজাদের পথে চলতেন, কারণ তিনি আহাবের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। তবুও সদাপ্রভু দায়ূদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন সেইজন্য তাঁর বংশকে তিনি ধ্বংস করতে চাইলেন না। তিনি দায়ূদ ও তাঁর বংশধরদের চিরকাল একটা প্রদীপ দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যিহোরামের সময়ে ইদোম দেশের লোকেরা যিহূদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিজেদের জন্য একজন রাজা ঠিক করে নিয়েছিল। কাজেই যিহোরাম তাঁর সেনাপতিদের ও সব রথ নিয়ে সেখানে গেলেন। ইদোমীয়েরা তাঁকে ও তাঁর রথের সেনাপতিদের ঘেরাও করল, কিন্তু তিনি রাতের বেলায় উঠে ঘেরাও ভেংগে বেরিয়ে গেলেন। ইদোম আজও যিহূদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে আছে। যিহোরাম তাঁর পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছিলেন বলে একই সময়ে লিব্‌নাও বিদ্রোহ করল। তিনি যিহূদার পাহাড়গুলোর উপরে পূজার উঁচু স্থান তৈরী করালেন এবং তাঁর জন্য যিরূশালেমের লোকেরা প্রতিমা পূজায় নিজেদের বিকিয়ে দিল আর যিহূদার লোকেরা বিপথে চলে গেল। কাজেই সদাপ্রভু এখন তোমার লোকদের, তোমার ছেলেদের ও তোমার স্ত্রীদের উপর ভয়ংকর আঘাত করবেন এবং তোমার সমস্ত সম্পত্তি ধ্বংস করবেন। তুমি নিজেও পেটের অসুখে ভুগতে থাকবে আর সেই অসুখে তোমার নাড়িভূঁড়ি বের হয়ে আসবে।’ ” সদাপ্রভু যিহোরামের বিরুদ্ধে পলেষ্টীয়দের এবং কূশীয়দের কাছে বাস করা আরবীয়দের মনে শত্রুতার ভাব জাগিয়ে তুললেন। তারা যিহূদা আক্রমণ করে সেখানে ঢুকে রাজবাড়ীর সব জিনিসপত্র এবং যিহোরামের ছেলেদের ও স্ত্রীদের নিয়ে গেল। তাঁর ছোট ছেলে অহসিয় (যিহোয়াহস) ছাড়া আর কোন ছেলে তাঁর কাছে রইল না। এই সমস্ত ঘটনার পরে সদাপ্রভু যিহোরামকে এমন পেটের অসুখ দিলেন যা ভাল করা যায় না। পরে দ্বিতীয় বছরের শেষে সেই রোগের দরুন তাঁর নাড়িভূঁড়ি বের হয়ে আসল এবং তিনি খুব যন্ত্রণা পেয়ে মারা গেলেন। লোকেরা তাঁর পূর্বপুরুষদের সম্মান দেখাবার জন্য যেমন আগুন জ্বালাত তাঁর বেলায় তা করল না। যিহোরাম বত্রিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং আট বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে কেউ দুঃখ প্রকাশ করে নি। দায়ূদ-শহরে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল কিন্তু রাজাদের কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়া হয় নি। যিরূশালেমের লোকেরা যিহোরামের ছোট ছেলে অহসিয়কে যিহোরামের জায়গায় রাজা করল, কারণ লুটকারীরা আরবীয়দের সংগে লুট করতে এসে যিহোরামের সব বড় ছেলেদের মেরে ফেলেছিল। কাজেই যিহূদার রাজা যিহোরামের ছেলে অহসিয় রাজত্ব করতে শুরু করলেন। অহসিয় বাইশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং এক বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মা অথলিয়া ছিলেন অম্রির নাতনী। অহসিয়ও আহাবের বংশের লোকদের পথে চলতেন, কারণ তাঁর মা তাঁকে খারাপ কাজ করবার জন্য পরামর্শ দিতেন। অহসিয় আহাবের বংশের লোকদের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন, কারণ তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে সেই বংশের লোকেরাই তাঁকে পরামর্শ দিত। তার ফলে তাঁর পতন হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর অহসিয়ের পতন ঘটালেন। অহসিয় সেখানে পৌঁছে যোরামের সংগে নিম্‌শির ছেলে যেহূর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। এই যেহূকেই সদাপ্রভু আহাবের বংশকে ধ্বংস করবার জন্য অভিষেক করেছিলেন। যেহূ যখন আহাবের বংশের লোকদের শাস্তি দিচ্ছিলেন সেই সময় তিনি অহসিয়ের সাহায্যকারী যিহূদার নেতাদের ও তাঁর সব ভাইয়ের ছেলেদের দেখতে পেয়ে তাদের মেরে ফেললেন। তারপর তিনি অহসিয়ের খোঁজে বের হলেন। অহসিয় শমরিয়াতে লুকিয়ে ছিলেন আর যেহূর লোকেরা তাঁকে ধরে যেহূর কাছে নিয়ে গিয়ে তাঁকে মেরে ফেলল। তারা তাঁকে কবর দিল, কারণ তারা বলেছিল, “ইনি সেই যিহোশাফটের নাতি যিনি সমস্ত অন্তর দিয়ে সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলতেন।” অহসিয়ের বংশে রাজা হওয়ার মত ক্ষমতা কারও ছিল না। অহসিয়ের মা অথলিয়া যখন দেখলেন যে, তাঁর ছেলে মারা গেছে তখন তিনি যিহূদার রাজার সমস্ত ছেলেদের ধ্বংস করলেন। সপ্তম বছরে যিহোয়াদা নিজেকে শক্তিশালী করে যিহোরামের ছেলে অসরিয়, যিহোহাননের ছেলে ইশ্মায়েল, ওবেদের ছেলে অসরিয়, অদায়ার ছেলে মাসেয় ও সিখ্রির ছেলে ইলীশাফটের সংগে একটা চুক্তি করলেন। এঁরা সবাই ছিলেন শত-সেনাপতি। এখন আপনাদের যে কাজ করতে হবে তা এই: যে সব পুরোহিত ও লেবীয় বিশ্রামবারে উপাসনা-ঘরে কাজ করবেন তাঁদের তিন ভাগের এক ভাগ ফটকে পাহারা দেবেন, এক ভাগ পাহারা দেবেন রাজবাড়ীতে আর এক ভাগ পাহারা দেবেন ভিত্তি-ফটকে এবং বাকী সবাই থাকবেন সদাপ্রভুর ঘরের উঠানে। পুরোহিতেরা এবং সেবা-কাজে থাকা লেবীয়েরা ছাড়া আর কেউ সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকবে না। এঁরা ঢুকবেন, কারণ এঁরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করা, কিন্তু অন্য সব লোক সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে বাইরে থাকবে। লেবীয়েরা প্রত্যেকে নিজের নিজের অস্ত্র হাতে নিয়ে রাজার চারপাশ ঘিরে থাকবেন। কেউ উপাসনা-ঘরে ঢুকলেই তাকে মেরে ফেলবেন। রাজা যেখানেই যান না কেন আপনারা তাঁর কাছে কাছে থাকবেন।” পুরোহিত যিহোয়াদা যে আদেশ দিলেন লেবীয়েরা ও যিহূদার শত-সেনাপতিরা সবাই তা-ই করলেন। সেনাপতিরা প্রত্যেকে নিজের নিজের লোকদের, অর্থাৎ বিশ্রামবারে যারা কাজে পালা বদল করতে আসছিল এবং যারা কাজ থেকে ফিরছিল তাদের নিয়ে আসলেন। এদের কোন দলকেই পুরোহিত যিহোয়াদা ছুটি দেন নি। রাজা দায়ূদের যে সব বর্শা এবং ছোট ও বড় ঢাল ঈশ্বরের ঘরে ছিল সেগুলো নিয়ে তিনি সেই সেনাপতিদের হাতে দিলেন। রাজাকে রক্ষা করবার জন্য যিহোয়াদা এই সব লোকদের প্রত্যেককে অস্ত্র হাতে উপাসনা-ঘরের সামনে বেদীর কাছে দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিক পর্যন্ত দাঁড় করালেন। তারপর যিহোয়াদা ও তাঁর ছেলেরা রাজার ছেলেকে বের করে এনে তাঁর মাথায় মুকুট পরিয়ে দিলেন। তাঁরা তাঁর হাতে ব্যবস্থার বইখানা দিলেন এবং তাঁকে রাজা হিসাবে অভিষেক করলেন। তখন লোকেরা চিৎকার করে বলল, “রাজা চিরজীবী হোন।” লোকদের দৌড়াদৌড়ি ও রাজার প্রশংসা করবার আওয়াজ শুনে অথলিয়া সদাপ্রভুর ঘরে তাদের কাছে গেলেন। তিনি দেখলেন, সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকবার পথে রাজা তাঁর থামের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এবং সেনাপতিরা ও তূরী বাদকেরা রাজার পাশে রয়েছে। দেশের সব লোক আনন্দ করছে ও তূরী বাজাচ্ছে আর গায়কেরা বাজনা বাজিয়ে প্রশংসা-গান করছে। এ দেখে অথলিয়া তাঁর পোশাক ছিঁড়ে চিৎকার করে বললেন, “এ তো বিশ্বাসঘাতকতা! বিশ্বাসঘাতকতা!” তখন পুরোহিত যিহোয়াদা সৈন্যদলের উপরে নিযুক্ত শত-সেনাপতিদের বাইরে এনে বললেন, “ওঁকে সৈন্যদের সারির মাঝখানে রেখে এখান থেকে বের করে নিয়ে যান। যে তাঁর পিছনে পিছনে আসবে তাকে মেরে ফেলবেন।” এর আগে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন যে, সদাপ্রভুর ঘরের মধ্যে অথলিয়াকে মেরে ফেলা উচিত হবে না। কাজেই তাঁরা অথলিয়াকে ধরলেন এবং রাজবাড়ীর ঘোড়া-ফটকে ঢুকবার পথে নিয়ে গিয়ে তাঁকে মেরে ফেললেন। তারপর যিহোয়াদা, রাজা ও লোকেরা মিলে এই চুক্তি করলেন যে, তাঁরা সদাপ্রভুর লোক হিসাবে চলবেন। তারপর সব লোক বাল দেবতার মন্দিরে গিয়ে সেটা ভেংগে ফেলল। তারা বেদী ও মূর্তিগুলো চুরমার করে দিল এবং বেদীগুলোর সামনে বাল দেবতার পুরোহিত মত্তনকে মেরে ফেলল। তারপর যিহোয়াদা সদাপ্রভুর ঘরের দেখাশোনার ভার পুরোহিতদের হাতে দিলেন। এঁরা ছিলেন লেবীয়। এঁদের উপরে দায়ূদ সদাপ্রভুর ঘরের ভার দিয়েছিলেন যেন তাঁরা দায়ূদের আদেশ মত আনন্দের সংগে গান করে মোশির আইন-কানুন অনুসারে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পারেন। কোন রকম অশুচি লোক যাতে ঢুকতে না পারে সেইজন্য তিনি সদাপ্রভুর ঘরের ফটকগুলোতে রক্ষীদের রাখলেন। যিহোয়াদা শত-সেনাপতিদের, গণ্যমান্য লোকদের, লোকদের নেতাদের ও দেশের সব লোকদের নিয়ে সদাপ্রভুর ঘর থেকে রাজাকে বের করে আনলেন। তাঁরা উঁচু জায়গার ফটক দিয়ে রাজবাড়ীতে গেলেন এবং রাজাকে রাজ-সিংহাসনে বসালেন। অথলিয়াকে মেরে ফেলা হলে পর শহরটা শান্ত হল এবং দেশের সব লোক আনন্দ করল। সাত বছর বয়সে যোয়াশ রাজা হয়েছিলেন এবং যিরূশালেমে চল্লিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল সিবিয়া; তিনি বের্‌-শেবা শহরের মেয়ে। পুরোহিত যিহোয়াদার সমস্ত জীবনকালে যোয়াশ সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করতেন। যিহোয়াদা তাঁকে দু’টি বিয়ে করিয়েছিলেন এবং তাঁর ছেলেমেয়ে হয়েছিল। পরে যোয়াশ সদাপ্রভুর ঘর মেরামত করবার জন্য স্থির করলেন। তিনি পুরোহিত ও লেবীয়দের ডেকে একত্র করে বললেন, “আপনারা প্রতি বছর আপনাদের ঈশ্বরের ঘর মেরামত করবার জন্য সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে যিহূদার সমস্ত গ্রাম ও শহরে যান। এই কাজটা আপনারা তাড়াতাড়ি করুন।” কিন্তু লেবীয়েরা সেই কাজ তাড়াতাড়ি করল না। কাজেই রাজা প্রধান পুরোহিত যিহোয়াদাকে ডাকিয়ে এনে বললেন, “সাক্ষ্য-তাম্বুর জন্য সদাপ্রভুর দাস মোশি ইস্রায়েলের সব লোকদের উপর যে কর্‌ বসিয়েছিলেন তা যিহূদা ও যিরূশালেম থেকে আদায় করবার জন্য আপনি লেবীয়দের পাঠিয়ে দেন নি কেন?” সেই দুষ্টা স্ত্রীলোক অথলিয়ার ছেলেরা সদাপ্রভুর ঘর ভেংগে ঢুকেছিল এবং পবিত্র জিনিসগুলো পর্যন্ত বাল দেবতার পূজায় ব্যবহার করেছিল। রাজার আদেশে একটা বাক্স তৈরী করে সদাপ্রভুর ঘরের ফটকের ঠিক বাইরে রাখা হল। তারপর যিহূদা ও যিরূশালেমে একটা ঘোষণা দেওয়া হল যে, ঈশ্বরের দাস মোশি মরু-এলাকায় ইস্রায়েলীয়দের উপর যে কর্‌ বসিয়েছিলেন তা যেন লোকেরা সদাপ্রভুর কাছে নিয়ে আসে। এর ফলে নেতারা ও লোকেরা খুশী হয়ে তাদের কর্‌ এনে সেই বাক্সে ফেলতে লাগল; এতে বাক্সটা ভরে উঠত। লেবীয়েরা প্রত্যেক দিন সেই বাক্সটা রাজার কর্মচারীদের কাছে নিয়ে আসত। যখন তার মধ্যে অনেক টাকা দেখা যেত তখন রাজার লেখক ও প্রধান পুরোহিতের কর্মচারী এসে বাক্সটা খালি করে আবার সেটা তার জায়গায় রেখে আসতেন। এইভাবে অনেক টাকা জমা হল। যাদের উপর সদাপ্রভুর ঘর মেরামতের দায়িত্ব ছিল রাজা ও যিহোয়াদা সেই টাকা তাদের হাতে দিলেন। তারা সদাপ্রভুর ঘর আবার ঠিক করবার জন্য রাজমিস্ত্রি ও কাঠের মিস্ত্রি লাগিয়েছিল এবং লোহা ও ব্রোঞ্জের কারিগরও লাগিয়েছিল। যারা মেরামতের কাজ করছিল তারা খুব পরিশ্রম করত, আর তাদের কাজ এগিয়ে চলল। ঈশ্বরের ঘরটি তারা আগের অবস্থায় নিয়ে আসল এবং সেটি খুব মজবুত করল। কাজ শেষ করে তারা বাকী টাকা রাজা ও যিহোয়াদার কাছে নিয়ে আসল এবং সেই টাকা দিয়ে সদাপ্রভুর ঘরের এই সব জিনিস তৈরী করা হল- সেবা-কাজের ও পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য জিনিসপত্র, হাতা ও অন্যান্য সোনা-রূপার জিনিস। যতদিন যিহোয়াদা বেঁচে ছিলেন ততদিন সদাপ্রভুর ঘরে নিয়মিত ভাবে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা হত। যিহোয়াদা বুড়ো হয়ে পুরো বয়স পেলেন এবং একশো ত্রিশ বছর বয়সে মারা গেলেন। ইস্রায়েলের মধ্যে ঈশ্বর ও তাঁর ঘরের জন্য তিনি যে সব ভাল কাজ করেছিলেন সেইজন্য তাঁকে দায়ূদ-শহরে রাজাদের সংগে কবর দেওয়া হল। যিহোয়াদার মৃত্যুর পরে যিহূদার নেতারা এসে রাজাকে প্রণাম জানালেন আর রাজা তাঁদের কথাই শুনলেন। তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘর ত্যাগ করে আশেরা-খুঁটির ও প্রতিমার পূজা করতে লাগলেন। তাঁদের এই পাপের জন্য ঈশ্বরের ক্রোধ যিহূদা ও যিরূশালেমের উপর নেমে আসল। যদিও সদাপ্রভু লোকদের তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনবার জন্য নবীদের পাঠালেন এবং তাঁরা লোকদের সাবধান করলেন তবুও তারা শুনল না। তখন ঈশ্বরের আত্মা পুরোহিত যিহোয়াদার ছেলে সখরিয়ের উপর আসলেন। তিনি লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “ঈশ্বর এই কথা বলছেন, ‘সদাপ্রভুর আদেশ তোমরা অমান্য করছ কেন? তোমরা এতে সফল হবে না। তোমরা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছ বলে তিনিও তোমাদের ত্যাগ করেছেন।’ ” কিন্তু লোকেরা সখরিয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল এবং রাজার আদেশে সদাপ্রভুর ঘরের উঠানে তাঁকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলল। সখরিয়ের বাবা যিহোয়াদা রাজা যোয়াশের প্রতি যে বিশ্বস্ততা দেখিয়েছিলেন তা যোয়াশ মনে না রেখে তাঁর ছেলেকে মেরে ফেললেন। সখরিয় মারা যাবার সময় বলেছিলেন, “সদাপ্রভু এই কাজ দেখে আপনাকে শাস্তি দেবেন।” পরের বছর অরামের সৈন্যেরা যোয়াশের বিরুদ্ধে আসল। তারা যিহূদা ও যিরূশালেম আক্রমণ করে সব নেতাদের মেরে ফেলল এবং দামেস্কে তাদের রাজার কাছে সমস্ত লুটের জিনিস পাঠিয়ে দিল। যিহূদার লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছিল বলে অরামীয় সৈন্যদলে কম লোক থাকলেও সদাপ্রভু অনেক বড় সৈন্যদলকে তাদের হাতে তুলে দিলেন। এইভাবে অরামীয়দের দ্বারা যোয়াশকে শাস্তি দেওয়া হল। আহত অবস্থায় যোয়াশকে ফেলে রেখে অরামীয়েরা চলে গেল। পুরোহিত যিহোয়াদার ছেলেকে মেরে ফেলবার দরুন যোয়াশের কর্মচারীরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বিছানার উপরেই তাঁকে মেরে ফেলল। তিনি মারা গেলে পর তাঁকে দায়ূদ-শহরে কবর দেওয়া হল, কিন্তু রাজাদের কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়া হল না। যে কর্মচারীরা রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল তারা হল শিমিয়ৎ নামে একজন অম্মোনীয় স্ত্রীলোকের ছেলে সাবদ ও শিম্রীৎ নামে একজন মোয়াবীয় স্ত্রীলোকের ছেলে যিহোষাবদ। যোয়াশের ছেলেদের কথা, তাঁর বিষয়ে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী এবং ঈশ্বরের ঘরের মেরামতের কথা “রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে অমৎসিয় রাজা হলেন। অমৎসিয় পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং ঊনত্রিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল যিহোয়দ্দন; তিনি ছিলেন যিরূশালেম শহরের মেয়ে। সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল অমৎসিয় তা-ই করতেন তবে সমস্ত মন দিয়ে করতেন না। রাজ্যটা শক্তভাবে তাঁর অধীনে আনবার পর যে কর্মচারীরা রাজাকে, অর্থাৎ তাঁর বাবাকে মেরে ফেলেছিল তাদের তিনি মেরে ফেললেন। কিন্তু তিনি তাদের ছেলেদের মেরে ফেললেন না বরং মোশির বইয়ে যে আইন-কানুন লেখা ছিল সেইমতই কাজ করলেন। সেই বইয়ে সদাপ্রভুর এই আদেশ লেখা ছিল, “ছেলেমেয়েদের পাপের জন্য বাবাকে কিম্বা বাবার পাপের জন্য ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলা চলবে না, কিন্তু প্রত্যেককেই তার নিজের পাপের জন্য মরতে হবে।” অমৎসিয় যিহূদার সমস্ত লোককে ডেকে একত্র করে বংশ অনুসারে সমস্ত যিহূদা ও বিন্যামীনের লোকদের মধ্য থেকে হাজার সৈন্যের সেনাপতিদের ও শত সৈন্যের সেনাপতিদের অধীনে রাখলেন। তিনি বিশ বছর কিম্বা তারও বেশী বয়সের লোকদের গণনা করে দেখলেন যে, যুদ্ধে যাবার জন্য তিন লক্ষ উপযুক্ত লোক রয়েছে যারা বর্শা ও ঢাল ব্যবহার করতে জানে। তিনি তিন হাজার ন’শো কেজি রূপা দিয়ে ইস্রায়েল থেকে এক লক্ষ যোদ্ধা ভাড়া করলেন। কিন্তু ঈশ্বরের একজন লোক এসে তাঁকে বললেন, “হে মহারাজ, ইস্রায়েলের এই সৈন্যদল আপনার সংগে যেন না যায়, কারণ সদাপ্রভু ইস্রায়েলের সংগে, অর্থাৎ ইফ্রয়িমের কারও সংগে নেই। যদি আপনি তাদের নিয়ে যান তবে সাহসের সংগে যুদ্ধ করলেও শত্রুর কাছে ঈশ্বর আপনাকে পরাজিত করবেন, কারণ সাহায্য করবার অথবা পরাজিত করবার ক্ষমতা ঈশ্বরের আছে।” তখন অমৎসিয় ঈশ্বরের লোককে বললেন, “এই ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের জন্য আমি যে তিন হাজার ন’শো কেজি রূপা দিয়েছি তার কি হবে?” উত্তরে ঈশ্বরের লোক বললেন, “ঈশ্বর আপনাকে তাঁর চেয়েও বেশী দিতে পারেন।” তখন অমৎসিয় ইফ্রয়িম থেকে তাঁর কাছে আসা সৈন্যদলকে বিদায় করে তাদের বাড়ী পাঠিয়ে দিলেন। সেই সৈন্যেরা যিহূদার লোকদের উপর ভয়ংকর রেগে আগুন হয়ে নিজের দেশে ফিরে গেল। অমৎসিয় মনে সাহস নিয়ে লবণ উপত্যকায় তাঁর সৈন্যদলকে পরিচালনা করলেন। সেখানে তিনি সেয়ীরের দশ হাজার লোককে মেরে ফেললেন। যিহূদার সৈন্যেরা আরও দশ হাজার লোককে জীবিত ধরে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে নীচে ফেলে দিল। এতে তারা সবাই একেবারে থেঁৎলে গেল। এদিকে যে সৈন্যদের অমৎসিয় যুদ্ধ করতে না দিয়ে ফেরৎ পাঠিয়েছিলেন তারা শমরিয়া থেকে বৈৎ-হোরণ পর্যন্ত যিহূদার সব গ্রাম ও শহর আক্রমণ করল। তারা তিন হাজার লোককে মেরে ফেলল এবং অনেক জিনিস লুট করে নিয়ে গেল। অমৎসিয় ইদোমীয়দের মেরে ফেলে ফিরে আসবার সময় সেয়ীরের লোকদের প্রতিমাগুলো সংগে করে নিয়ে আসলেন। সেগুলোকে তিনি নিজের দেব-দেবতা হিসাবে স্থাপন করে তাদের পূজা করতে ও তাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাতে লাগলেন। এতে অমৎসিয়ের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধ জ্বলে উঠল। তিনি একজন নবীকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই নবী বললেন, “ঐ লোকদের যে দেবতারা আপনার হাত থেকে তাদের লোকদের উদ্ধার করতে পারে নি আপনি কেন তাদের সাহায্য চাইলেন?” নবীর কথা শেষ না হতেই রাজা তাঁকে বললেন, “আমরা কি রাজার পরামর্শদাতা হিসাবে তোমাকে নিযুক্ত করেছি? তুমি থাম, নইলে তোমাকে মেরে ফেলা হবে।” এতে সেই নবী থামলেন, তবুও বললেন, “আমি জানি, আপনি এই কাজ করেছেন এবং আমার পরামর্শে কান দেন নি বলে ঈশ্বর আপনাকে ধ্বংস করাই ঠিক করেছেন।” পরে যিহূদার রাজা অমৎসিয় তাঁর মন্ত্রীদের সংগে পরামর্শ করে যেহূর নাতি, অর্থাৎ যিহোয়াহসের ছেলে ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াশের কাছে বলে পাঠালেন, “আসুন, আমরা যুদ্ধের জন্য মুখোমুখি হই।” কিন্তু ইস্রায়েলের রাজা উত্তরে যিহূদার রাজাকে বলে পাঠালেন, “লেবাননের এক শিয়ালকাঁটা লেবাননেরই এরস গাছের কাছে বলে পাঠাল, ‘আমার ছেলের সংগে আপনার মেয়ের বিয়ে দিন।’ তারপর লেবাননের একটা বুনো জন্তু এসে সেই শিয়ালকাঁটাকে পায়ে মাড়িয়ে দিল। ‘ইদোমকে হারিয়ে দিয়েছি,’ মনে মনে এই কথা ভেবে আপনি অহংকারে ফুলে উঠেছেন। এখন আপনি নিজের ঘরে থাকুন। কেন বিপদ ডেকে আনবেন এবং তার সংগে ডেকে আনবেন নিজের ও যিহূদার ধ্বংস?” কিন্তু অমৎসিয় সেই কথায় কান দিলেন না। এটা ঈশ্বর থেকে হল, কারণ লোকেরা ইদোমের দেব-দেবতাদের সাহায্য চেয়েছিল বলে ঈশ্বর যিহোয়াশের হাতে তাদের তুলে দিতে চেয়েছিলেন। সেইজন্য ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াশ তাদের আক্রমণ করলেন। তিনি এবং যিহূদার রাজা অমৎসিয় যিহূদার বৈৎ-শেমশে একে অন্যের মুখোমুখি হলেন। ইস্রায়েলের কাছে যিহূদা সম্পূর্ণভাবে হেরে গেল এবং প্রত্যেকে নিজের নিজের বাড়ীতে পালিয়ে গেল। ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াশ বৈৎ-শেমসে অহসিয়ের নাতি, অর্থাৎ যোয়াশের ছেলে যিহূদার রাজা অমৎসিয়কে বন্দী করলেন। তারপর যিহোয়াশ যিরূশালেমে গিয়ে সেখানকার দেয়ালটার ইফ্রয়িম-ফটক থেকে কোণার ফটক পর্যন্ত প্রায় চারশো হাত লম্বা একটা অংশ ভেংগে দিলেন। ঈশ্বরের ঘরের যত সোনা-রূপা ও জিনিসপত্রের ভার ওবেদ-ইদোমের উপর ছিল তা সমস্তই তিনি নিয়ে নিলেন। এছাড়া তিনি রাজবাড়ীর ধন-সম্পদ ও জামিন হিসাবে কতগুলো লোককে নিয়ে শমরিয়াতে ফিরে গেলেন। ইস্রায়েলের রাজা যিহোয়াহসের ছেলে যিহোয়াশের মৃত্যুর পরে যিহূদার রাজা যোয়াশের ছেলে অমৎসিয় আরও পনেরো বছর বেঁচে ছিলেন। অমৎসিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত “যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। অমৎসিয় সদাপ্রভুর পথে চলা থেকে সরে গেলে পর লোকেরা যিরূশালেমে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল। এতে তিনি লাখীশে পালিয়ে গেলেন, কিন্তু লোকেরা লাখীশে লোক পাঠিয়ে সেখানে তাঁকে মেরে ফেলল। তাঁর মৃতদেহ ঘোড়ার পিঠে করে এনে যিহূদার শহরে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে কবর দেওয়া হল। তারপর যিহূদার সমস্ত লোক উষিয়কে তাঁর বাবা অমৎসিয়ের জায়গায় রাজা করল। তখন তাঁর বয়স ছিল ষোল বছর। অমৎসিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবার পর উষিয় এলৎ শহরটা আবার তৈরী করলেন এবং যিহূদার অধীনে আনলেন। উষিয় ষোল বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং যিরূশালেমে বাহান্ন বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল যিখলিয়া; তিনি ছিলেন যিরূশালেম শহরের মেয়ে। উষিয় তাঁর বাবা অমৎসিয়ের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করতেন। সখরিয়ের সময়কালে তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলতেন। ঈশ্বরকে ভয় করতে সখরিয় তাঁকে উপদেশ দিতেন। যতদিন তিনি সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলেছিলেন ততদিন ঈশ্বরও তাঁকে সফলতা দান করেছিলেন। তিনি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন এবং গাৎ, যব্‌নির ও অস্‌দোদের দেয়াল ভেংগে ফেললেন। তারপর তিনি অস্‌দোদ এলাকায় এবং পলেষ্টীয়দের অন্যান্য জায়গায় কতগুলো দেয়াল-ঘেরা গ্রাম আবার গড়ে তুললেন। ঈশ্বর পলেষ্টীয়দের, গূরবালে বাসকারী আরবীয়দের এবং মিয়ূনীয়দের বিরুদ্ধে তাঁকে সাহায্য করলেন। অম্মোনীয়েরা উষিয়কে কর্‌ দিত। তিনি খুব শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন বলে মিসরের সীমানা পর্যন্ত তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল। উষিয় যিরূশালেমের কোণার ফটকে, উপত্যকা-ফটকে এবং দেয়ালের কোণে উঁচু পাহারা-ঘর তৈরী করে সেগুলো শক্তিশালী করলেন। নীচু পাহাড়ী এলাকায় এবং সমভূমিতে তাঁর অনেক পশুপাল ছিল; সেইজন্য তিনি মরু-এলাকায় উঁচু উঁচু পাহারা-ঘর তৈরী করলেন এবং অনেক কূয়া খুঁড়লেন। তাঁর লোকেরা উর্বর জমিতে চাষ করত এবং পাহাড়ে আংগুর ক্ষেত করত, কারণ তিনি কৃষিকাজ ভালবাসতেন। উষিয়ের একটা দক্ষ সৈন্যদল ছিল। তারা হনানীয় নামে একজন সেনাপতির পরিচালনার অধীনে ছিল এবং লেখক যিয়ূয়েল ও কর্মকর্তা মাসেয়ের ঠিক করা সংখ্যা অনুসারে তারা দলে দলে যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত থাকত। উষিয় সমস্ত সৈন্যদলের জন্য ঢাল, বর্শা, মাথা রক্ষার টুপি, বর্ম, ধনুক ও ফিংগার পাথর যোগান দিতেন। তিনি যিরূশালেমে দক্ষ লোকদের তৈরী যন্ত্রপাতি উঁচু পাহারা-ঘরগুলোতে এবং দেয়ালের কোণায় কোণায় রাখলেন যাতে সেখান থেকে তীর ও বড় বড় পাথর ছুঁড়ে মারা যায়। তাঁর সুনাম দূর দেশে ছড়িয়ে গেল। তিনি ঈশ্বরের অনেক সাহায্য পেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। উষিয় শক্তিশালী হয়ে উঠলে পর তাঁর মনে অহংকার আসল এবং তাতে তাঁর পতন হল। তিনি ধূপ-বেদীতে ধূপ জ্বালাবার জন্য সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকে তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করলেন। তাতে মহাপুরোহিত অসরিয় এবং সদাপ্রভুর আশিজন সাহসী পুরোহিত রাজার পিছনে পিছনে ভিতরে গেলেন। তাঁরা তাঁকে বাধা দেবার জন্য বললেন, “উষিয়, সদাপ্রভুর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাবার অধিকার আপনার নেই। হারোণের বংশধরদের, যাদের ধূপ জ্বালাবার জন্য আলাদা করা হয়েছে, সেই পুরোহিতদেরই অধিকার আছে। এই পবিত্র জায়গা থেকে আপনি বের হয়ে যান, কারণ আপনি পাপ করেছেন। এর ফলে ঈশ্বর সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আপনাকে শাস্তি দেবেন।” তখন উষিয় রেগে আগুন হয়ে গেলেন; তাঁর হাতে ধূপ জ্বালাবার জন্য একটা ধূপদানি ছিল। সদাপ্রভুর ঘরে ধূপ-বেদীর সামনে পুরোহিতদের উপর যখন তিনি রাগ করছিলেন তখন তাঁর কপালে একটা খারাপ চর্মরোগ দেখা দিল। প্রধান পুরোহিত অসরিয় ও অন্যান্য সব পুরোহিতেরা তাঁর দিকে তাকিয়ে তাঁর কপালে সেই চর্মরোগ দেখতে পেলেন। কাজেই তাঁরা তাড়াতাড়ি তাঁকে বের করে দিলেন। তিনি নিজেও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যেতে চাইলেন, কারণ সদাপ্রভু তাঁকে আঘাত করেছিলেন। মৃত্যু পর্যন্ত রাজা উষিয় চর্মরোগী ছিলেন। তিনি একটা আলাদা ঘরে বাস করতেন, কারণ সদাপ্রভুর ঘরে যাওয়া থেকে তিনি বাদ পড়েছিলেন। তাতে রাজার দায়িত্ব তাঁর ছেলে যোথমের উপর পড়ল এবং তিনি দেশের লোকদের শাসন করতে লাগলেন। উষিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমোসের ছেলে নবী যিশাইয় লিখে রেখেছেন। পরে উষিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন। তাঁকে রাজাদের কবরস্থানের পাশে একটা মাঠে তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে কবর দেওয়া হল, কারণ লোকেরা বলল, “তাঁর চর্মরোগ হয়েছিল।” তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে যোথম রাজা হলেন। যোথম পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং যিরূশালেমে ষোল বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল যিরূশা; তিনি ছিলেন সাদোকের মেয়ে। যোথম তাঁর বাবার মত সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করতেন। এছাড়া তিনি তাঁর বাবার মত ভুল করেন নি; ধূপ জ্বালাবার জন্য তিনি সদাপ্রভুর ঘরে যান নি। তবুও লোকেরা খারাপ কাজ করত। যোথম সদাপ্রভুর ঘরের উঁচু জায়গার ফটকটা মেরামত করেছিলেন এবং ওফল পাহাড়ের দেয়ালের অনেক জায়গা মজবুত করলেন। তিনি যিহূদার পাহাড়গুলোতে দেয়াল-ঘেরা গ্রাম তৈরী করলেন এবং বন এলাকায় দুর্গ এবং উঁচু পাহারা-ঘর তৈরী করলেন। অম্মোনীয়দের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তিনি তাদের হারিয়ে দিলেন। তাতে সেই বছর অম্মোনীয়েরা তাঁকে তিন হাজার ন’শো কেজি রূপা, এক হাজার আটশো টন গম ও এক হাজার আটশো টন যব দিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরেও তারা একই পরিমাণে দিল। এইভাবে যোথম শক্তিশালী হয়ে উঠলেন, কারণ তিনি বিশ্বস্তভাবে তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর পথে চলতেন। যোথমের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা, তাঁর সব যুদ্ধের কথা এবং তাঁর চালচলনের কথা সবই “ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। তিনি পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং যিরূশালেমে ষোল বছর রাজত্ব করেছিলেন। পরে যোথম তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে গেলেন এবং তাঁকে দায়ূদ-শহরে কবর দেওয়া হল। এর পরে তাঁর ছেলে আহস তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। আহস বিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং যিরূশালেমে ষোল বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদ যেমন সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা করতেন তিনি তেমন করতেন না। তিনি ইস্রায়েলের রাজাদের মতই চলতেন এবং বাল দেবতার পূজা করবার জন্য তিনি ছাঁচে ঢেলে প্রতিমা তৈরী করিয়েছিলেন। তিনি বিন্‌-হিন্নোম উপত্যকাতে ধূপ জ্বালাতেন এবং সদাপ্রভু যে সব জাতিকে ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে দূর করে দিয়েছিলেন তাদের জঘন্য কাজের মতই তিনিও তাঁর ছেলেদের আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করলেন। তিনি পূজার উঁচু স্থানগুলোতে, পাহাড়ের উপরে ও প্রত্যেকটি ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছের নীচে পশু উৎসর্গ করতেন ও ধূপ জ্বালাতেন। সেইজন্যই তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁকে অরামের রাজার হাতে তুলে দিলেন। অরামীয়েরা তাঁকে হারিয়ে দিল এবং তাঁর অনেক লোককে বন্দী করে দামেস্কে নিয়ে গেল। তাঁকেও ইস্রায়েলের রাজা পেকহের হাতে তুলে দেওয়া হল। ইস্রায়েলের রাজা তাঁর অনেক লোককে মেরে ফেললেন। রমলিয়ের ছেলে পেকহ একদিনের মধ্যে যিহূদায় এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্যকে মেরে ফেললেন, কারণ যিহূদার লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছিল। সিখ্রি নামে একজন ইফ্রয়িমীয় যোদ্ধা রাজার ছেলে মাসেয়কে ও রাজবাড়ীর ভার-পাওয়া কর্মচারী অস্রীকামকে এবং রাজার পরে দ্বিতীয় স্থানে যিনি ছিলেন সেই ইল্কানাকে মেরে ফেলল। ইস্রায়েলীয়েরা তাদের জাতি-ভাইদের মধ্য থেকে স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়েদের বন্দী করে নিয়ে গেল। তাদের সংখ্যা ছিল দুই লক্ষ। তারা অনেক জিনিসও লুট করে শমরিয়াতে নিয়ে গেল। ওদেদ নামে সদাপ্রভুর একজন নবী শমরিয়াতে ছিলেন। সৈন্যদল যখন শমরিয়াতে ফিরে আসছিল তখন তিনি তাদের সংগে দেখা করে বললেন, “আপনাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যিহূদার উপর ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে তিনি তাদের আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু রাগের চোটে আপনারা তাদের যেভাবে মেরে ফেলেছেন সেই কথা স্বর্গ পর্যন্ত পৌঁছেছে। আর এখন আপনারা যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের আপনাদের দাস-দাসী করতে চাইছেন। কিন্তু আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে কি আপনারাও দোষী নন? এখন আপনারা আমার কথা শুনুন। আপনাদের জাতি-ভাইদের মধ্য থেকে যাদের আপনারা বন্দী করে নিয়ে এসেছেন তাদের আপনারা ফেরত পাঠিয়ে দিন, কারণ সদাপ্রভুর ভয়ংকর ক্রোধ আপনাদের উপরে রয়েছে।” তখন যুদ্ধ থেকে যারা ফিরে আসছিল ইফ্রয়িমের কয়েকজন নেতা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। সেই নেতারা হলেন যিহোহাননের ছেলে অসরিয়, মশিল্লেমোতের ছেলে বেরিখিয়, শল্লুমের ছেলে যিহিষ্কিয় ও হদ্‌লয়ের ছেলে অমাসা। তাঁরা বললেন, “ঐ বন্দীদের তোমরা এখানে আনবে না; আনলে আমরা সদাপ্রভুর কাছে দোষী হব। আমাদের পাপ ও দোষের সংগে কি তোমরা আরও কিছু যোগ দিতে চাও? আমরা তো ভীষণভাবে দোষী হয়েই রয়েছি আর সদাপ্রভুর ভয়ংকর ক্রোধ ইস্রায়েলের উপর রয়েছে।” তখন সৈন্যেরা সেই নেতাদের ও সমস্ত লোকদের সামনে সেই বন্দীদের ও লুটের জিনিসগুলো রাখল। সেই নেতারা তখন লুটের জিনিস থেকে কাপড়-চোপড় নিয়ে বন্দীদের মধ্যে যারা উলংগ ছিল তাদের সবাইকে কাপড় পরালেন। তাঁরা তাদের কাপড়-চোপড়, জুতা ও খাবার-দাবার দিলেন এবং তাদের আঘাতের উপর তেল ঢেলে দিলেন। দুর্বলদের তাঁরা গাধার উপর চড়িয়ে যিরীহোতে, অর্থাৎ খেজুর-শহরে তাদের নিজের লোকদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। পরে তাঁরা শমরিয়াতে ফিরে আসলেন। সেই সময় রাজা আহস সাহায্য চাইবার জন্য আসিরিয়ার রাজার কাছে লোক পাঠালেন। এর কারণ হল, ইদোমীয়েরা আবার এসে যিহূদা আক্রমণ করে লোকদের বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিল। এদিকে আবার পলেষ্টীয়েরা তখন নীচু পাহাড়ী এলাকার গ্রামগুলোতে এবং যিহূদার নেগেভে হানা দিয়েছিল। তারা বৈৎ-শেমশ, অয়ালোন, গদেরোৎ এবং আশেপাশের জায়গা সুদ্ধ সোখো, তিম্না ও গিম্‌সো অধিকার করে নিয়ে সেখানে বাস করছিল। রাজা আহসের জন্য সদাপ্রভু যিহূদাকে নীচু করেছিলেন, কারণ আহস যিহূদায় মন্দতা বৃদ্ধি পেতে দিয়েছিলেন এবং নিজে সদাপ্রভুর প্রতি খুব বেশী অবিশ্বস্ত হয়েছিলেন। আসিরিয়ার রাজা তিগ্লৎ-পিলেষর তাঁর কাছে এসেছিলেন কিন্তু তিনি সাহায্যের বদলে আহসকে কষ্টই দিলেন। তখন আহস সদাপ্রভুর ঘর ও রাজবাড়ী থেকে এবং নেতাদের কাছ থেকে কিছু দামী জিনিসপত্র নিয়ে আসিরিয়ার রাজাকে উপহার দিলেন, কিন্তু তাতে কিছুই হল না। তাঁর এই কষ্টের সময়ে রাজা আহস সদাপ্রভুর প্রতি আরও অবিশ্বস্ত হলেন। দামেস্কের দেবতারা তাঁকে হারিয়ে দিয়েছে ভেবে তিনি সেই দেবতাদের কাছে পশু উৎসর্গ করলেন। তিনি ভাবলেন, “অরামের রাজাদের দেবতারা তাঁদের সাহায্য করে, কাজেই সাহায্য পাবার জন্য আমি সেই দেবতাদের কাছে পশু উৎসর্গ করব।” কিন্তু সেই দেবতারাই হল তাঁর ও সমস্ত ইস্রায়েলের সর্বনাশের কারণ। আহস ঈশ্বরের ঘরের জিনিসপত্র একসংগে জড়ো করে কেটে টুকরা টুকরা করলেন। সদাপ্রভুর ঘরের দরজাগুলো তিনি বন্ধ করে দিলেন এবং যিরূশালেমের সমস্ত জায়গায় বেদী স্থাপন করলেন। দেব-দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাবার জন্য তিনি যিহূদার প্রত্যেকটি শহর ও গ্রামে পূজার উঁচু স্থান তৈরী করে তাঁর পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুললেন। আহসের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং তাঁর সমস্ত চালচলনের কথা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত “যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে আহস তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং যিরূশালেম শহরে তাঁকে কবর দেওয়া হল, কিন্তু ইস্রায়েলের রাজাদের কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়া হয় নি। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে হিষ্কিয় রাজা হলেন। হিষ্কিয় পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়ে যিরূশালেমে ঊনত্রিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল অবিয়া; তিনি ছিলেন সখরিয়ের মেয়ে। হিষ্কিয় তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতই সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তা-ই করতেন। তাঁর রাজত্বের প্রথম বছরের প্রথম মাসেই তিনি সদাপ্রভুর ঘরের দরজাগুলো খুলে দিলেন এবং মেরামত করলেন। তিনি পূর্ব দিকের উঠানে পুরোহিত ও লেবীয়দের একত্র করে বললেন, “লেবীয়েরা, আমার কথা শুনুন; আপনারা নিজেদের এবং আপনাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘরটি শুচি করুন। এই পবিত্র জায়গা থেকে সমস্ত অশুচি জিনিস দূর করুন। আমাদের পূর্বপুরুষেরা অবিশ্বস্ত হয়েছেন; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তাঁরা তা-ই করেছেন এবং তাঁকে ত্যাগ করেছেন। সদাপ্রভুর বাসস্থান থেকে তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং তাঁর দিকে পিছন ফিরিয়েছেন। তাঁরা বারান্দার দরজাগুলোও বন্ধ করে দিয়েছেন এবং বাতিগুলো নিভিয়ে ফেলেছেন। এই পবিত্র জায়গায় তাঁরা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের উদ্দেশে ধূপ জ্বালান নি কিম্বা কোন পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করেন নি। কাজেই যিহূদা ও যিরূশালেমের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধ নেমে এসেছে। আপনারা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন যে, তিনি তাদের ভীষণ ভয়ের ও ঘৃণার পাত্র করে তুলেছেন; তাদের দেখে লোকেরা হতভম্ব হচ্ছে। এইজন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা যুদ্ধে মারা পড়েছেন এবং আমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা বন্দী হয়েছে। আমি এখন ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সংগে একটা চুক্তি করতে চাই যাতে তাঁর ভয়ংকর ক্রোধ আমাদের উপর থেকে চলে যায়। হে আমার সন্তানেরা, আপনারা এখন আর বসে থাকবেন না, কারণ সদাপ্রভুর সামনে দাঁড়াতে এবং তাঁর সেবাকারী হিসাবে তাঁর কাজ করতে ও ধূপ জ্বালাতে তিনি আপনাদেরই বেছে নিয়েছেন।” তখন এই সব লেবীয়েরা কাজে লেগে গেলেন- কহাতীয়দের মধ্য থেকে অমাসয়ের ছেলে মাহৎ ও অসরিয়ের ছেলে যোয়েল; মরারীয়দের মধ্য থেকে অব্দির ছেলে কীশ ও যিহলিলেলের ছেলে অসরিয়; গের্শোনীয়দের মধ্য থেকে সিম্মের ছেলে যোয়াহ ও যোয়াহের ছেলে এদন; ইলীষাফণের বংশধরদের মধ্য থেকে শিম্রি ও যিয়ূয়েল; আসফের বংশধরদের মধ্য থেকে সখরিয় ও মত্তনিয়; হেমনের বংশধরদের মধ্য থেকে যিহূয়েল ও শিমিয়ি এবং যিদূথূনের বংশধরদের মধ্য থেকে শময়িয় ও উষীয়েল। তাঁরা তাঁদের লেবীয় ভাইদের একত্র করে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করলেন। তারপর সদাপ্রভুর কথামত রাজার আদেশ অনুসারে তাঁরা সদাপ্রভুর ঘর শুচি করবার জন্য ভিতরে গেলেন। পুরোহিতেরা সেখানে যে সব অশুচি জিনিস পেলেন সেগুলো সবই সদাপ্রভুর ঘরের উঠানে বের করে আনলেন। লেবীয়েরা সেগুলো বহন করে কিদ্রোণ উপত্যকায় নিয়ে গেল। তাঁরা সকলে প্রথম মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর ঘর শুচি করতে শুরু করে মাসের আট দিনের দিন ঘরের বারান্দা পর্যন্ত আসলেন। আরও আটদিন ধরে তাঁরা সদাপ্রভুর ঘরটি শুচি করলেন এবং প্রথম মাসের ষোল দিনের দিন তা শেষ করলেন। তারপর তাঁরা রাজা হিষ্কিয়ের কাছে গিয়ে বললেন, “আমরা পোড়ানো-উৎসর্গের বেদী ও তার বাসন-কোসন এবং সম্মুখ-রুটি রাখবার টেবিল ও তার সব জিনিসপত্র সুদ্ধ সদাপ্রভুর ঘরটি শুচি করেছি। সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে রাজা আহস তাঁর রাজত্বের সময় যে সব জিনিস বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন সেগুলো আমরা আবার ঠিক-ঠাক করে শুচি করে নিয়েছি। সেগুলো এখন সদাপ্রভুর বেদীর সামনে রয়েছে।” পরের দিন ভোরবেলায় রাজা হিষ্কিয় শহরের উঁচু পদের কর্মচারীদের একত্র করে সদাপ্রভুর ঘরে গেলেন। তাঁরা রাজ্যের জন্য, উপাসনা-ঘরের জন্য ও যিহূদার লোকদের জন্য পাপ-উৎসর্গ হিসাবে সাতটা ষাঁড়, সাতটা ভেড়া, সাতটা ভেড়ার বাচ্চা ও সাতটা ছাগল নিয়ে আসলেন। তারপর রাজা পুরোহিতদের, অর্থাৎ হারোণের বংশধরদের সেগুলো সদাপ্রভুর বেদীর উপর উৎসর্গ করবার জন্য আদেশ দিলেন। পুরোহিতেরা প্রথমে সেই ষাঁড়গুলো কেটে প্রত্যেকটার রক্ত নিয়ে বেদীর গায়ে ছিটিয়ে দিলেন; তারপর ভেড়াগুলো ও শেষে ভেড়ার বাচ্চাগুলো কেটে সেগুলোর প্রত্যেকটার রক্তও ছিটিয়ে দিলেন। তারপর পুরোহিতেরা পাপ-উৎসর্গের জন্য ছাগলগুলো রাজা ও সব লোকদের সামনে আনলেন যাতে তাঁরা সেগুলোর মাথার উপর হাত রাখতে পারেন। এর পরে পুরোহিত সেই ছাগলগুলো কাটলেন এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের পাপ ঢাকা দেবার উদ্দেশে বেদীর উপরে সেই রক্ত দিয়ে পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জন্য পোড়ানো-উৎসর্গ ও পাপ-উৎসর্গ করবার আদেশ রাজাই দিয়েছিলেন। রাজা দায়ূদ, তাঁর দর্শক গাদ এবং নবী নাথনের আদেশ অনুসারে রাজা হিষ্কিয় লেবীয়দের বললেন যেন তারা করতাল, বীণা ও সুরবাহার নিয়ে সদাপ্রভুর ঘরে যায়। সদাপ্রভু তাঁর নবীদের মধ্য দিয়ে এই আদেশই দিয়েছিলেন। সেইজন্য লেবীয়েরা দায়ূদের বাজনাগুলো নিয়ে আর পুরোহিতেরা তাঁদের তূরী নিয়ে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর হিষ্কিয় বেদীর উপরে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের আদেশ দিলেন। এই উৎসর্গের অনুষ্ঠান আরম্ভ হলে সদাপ্রভুর উদ্দেশে গানও আরম্ভ হল আর তার সংগে ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের বাজনা ও তূরী বাজানো হল। গায়কেরা গান করতে ও তূরী বাদকেরা তূরী বাজাতে থাকলে সমস্ত লোক মাটিতে উবুড় হয়ে সদাপ্রভুকে ভক্তি জানাল। পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই সব চলতে থাকল। উৎসর্গের অনুষ্ঠান শেষ হলে পর রাজা ও তাঁর সংগের সকলে হাঁটু পেতে সদাপ্রভুকে ভক্তি জানালেন। রাজা হিষ্কিয় ও তাঁর কর্মচারীরা দায়ূদের এবং দর্শক আসফের রচনা-করা গান দিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রশংসা করবার জন্য লেবীয়দের আদেশ দিলেন। তখন তারা খুশী হয়ে প্রশংসা-গান করল এবং মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে সদাপ্রভুকে ভক্তি জানাল। এর পর হিষ্কিয় বললেন, “আপনারা এখন সদাপ্রভুর কাছে নিজেদের দিয়ে দিয়েছেন। এবার আপনারা এসে সদাপ্রভুর ঘরে পশু-উৎসর্গ ও কৃতজ্ঞতা-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জিনিস আনুন।” তখন সবাই তা আনল এবং যাদের অন্তর চাইল তারা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জিনিসও আনল। তারা পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য সত্তরটা ষাঁড়, একশোটা ভেড়া ও দু’শোটা ভেড়ার বাচ্চা নিয়ে আসল। এই সব ছিল সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য। উৎসর্গের জন্য যে সব পশু আলাদা করে রাখা হয়েছিল সেগুলোর সংখ্যা হল ছ’শো ষাঁড় ও তিন হাজার ছাগল-ভেড়া। পুরোহিতদের সংখ্যা কম হওয়াতে তাঁরা সমস্ত পোড়ানো-উৎসর্গের পশুর চামড়া ছাড়াতে পারলেন না; কাজেই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং অন্য পুরোহিতেরা শুচি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের লেবীয় ভাইয়েরা তাঁদের কাজে সাহায্য করল, কারণ নিজেদের শুচি করবার ব্যাপারে পুরোহিতদের চেয়ে লেবীয়েরা আরও বেশী মনোযোগী ছিল। যোগাযোগ-উৎসর্গের চর্বি পোড়ানো অনুষ্ঠান ও পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান এবং তার সংগেকার ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান নিয়ে অনেকগুলো উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা হল। এইভাবে সদাপ্রভুর ঘরের সেবার কাজ আবার শুরু করা হল। ঈশ্বর তাঁর লোকদের জন্য এই সব কাজ খুব তাড়াতাড়ি করেছিলেন বলে হিষ্কিয় ও সমস্ত লোকেরা আনন্দ করল। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্ব পালন করবার জন্য লোকেরা যাতে যিরূশালেমে সদাপ্রভুর ঘরে আসে সেইজন্য হিষ্কিয় সমস্ত ইস্রায়েলে ও যিহূদায় খবর পাঠালেন এবং ইফ্রয়িম ও মনঃশি-গোষ্ঠীর লোকদের চিঠি লিখলেন। রাজা ও তাঁর কর্মচারীরা এবং যিরূশালেমের সমস্ত লোক ঠিক করল যে, দ্বিতীয় মাসে উদ্ধার-পর্ব পালন করা হবে। এর কারণ হল, অনেক পুরোহিত নিজেদের শুচি করেন নি আর লোকেরাও এসে যিরূশালেমে জড়ো হয় নি বলে নিয়মিত সময়ে তারা এটা পালন করতে পারে নি। এই পরিকল্পনা রাজা ও সমস্ত লোকের কাছে উপযুক্ত বলে মনে হল। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্ব পালন করবার জন্য যাতে সবাই যিরূশালেমে আসে সেইজন্য তারা বের্‌-শেবা থেকে দান পর্যন্ত ইস্রায়েলের সমস্ত জায়গায় লোক পাঠিয়ে ঘোষণা করাল। অনেক বছর ধরে তারা নিয়ম অনুসারে অনেক লোক একত্র হয়ে এই পর্ব পালন করে নি। রাজার আদেশে রাজা ও তাঁর কর্মচারীদের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে লোকেরা ইস্রায়েল ও যিহূদার সব জায়গায় গিয়ে এই কথা ঘোষণা করল, “হে ইস্রায়েলীয়েরা, আপনারা অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরে আসুন, তাতে যাঁরা আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তাঁদের কাছে, অর্থাৎ আপনাদের কাছে তিনিও ফিরে আসবেন। আপনারা আপনাদের পূর্বপুরুষ ও ইস্রায়েলীয় ভাইদের মত হবেন না। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছিল বলে তিনি তাদের ভীষণ শাস্তি দিয়েছিলেন। আপনারা তো তা দেখতেই পাচ্ছেন। “আপনারা আপনাদের পূর্বপুরুষদের মত ঘাড় শক্ত করবেন না বরং সদাপ্রভুর হাতে নিজেদের দিয়ে দিন। যে পবিত্র ঘরকে তিনি চিরকালের জন্য নিজের উদ্দেশ্যে আলাদা করেছেন আপনারা সেই ঘরে আসুন এবং আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা করুন যাতে আপনাদের উপর থেকে তাঁর ভয়ংকর ক্রোধ চলে যায়। যদি আপনারা সদাপ্রভুর কাছে ফিরে আসেন তবে আপনাদের ভাই ও ছেলেমেয়েদের যারা বন্দী করে রেখেছে তারা তাদের প্রতি দয়া দেখাবে। তখন তারা এই দেশে ফিরে আসতে পারবে, কারণ আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু দয়াময় ও করুণায় পূর্ণ। আপনারা তাঁর কাছে ফিরে আসলে তিনি তাঁর মুখ ফিরিয়ে রাখবেন না।” সংবাদ বহনকারীরা ইফ্রয়িম ও মনঃশির সমস্ত গ্রাম ও শহরে এবং সবূলূন পর্যন্ত গেল, কিন্তু সেখানকার লোকেরা তাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগল। তবুও আশের, মনঃশি ও সবূলূন-গোষ্ঠীর কিছু লোক নিজেদের নত করে যিরূশালেমে গেল। ঈশ্বরের হাত যিহূদার লোকদের উপরেও ছিল, তাই সদাপ্রভুর বাক্য অনুসারে রাজা ও তাঁর কর্মচারীদের আদেশ পালন করবার জন্য তিনি তাদের মন এক করলেন। দ্বিতীয় মাসে খামিহীন রুটির পর্ব পালন করবার জন্য অনেক অনেক লোক যিরূশালেমে জড়ো হল। পূজা করবার জন্য পশু-উৎসর্গের যে সব বেদী ও যে সব ধূপদানী যিরূশালেমে ছিল তারা সেগুলো সরিয়ে নিয়ে কিদ্রোণ উপত্যকায় ফেলে দিল। তারা দ্বিতীয় মাসের চৌদ্দ দিনের দিন উদ্ধার-পর্বের ভেড়ার বাচ্চা কাটল। এতে পুরোহিত ও লেবীয়েরা লজ্জা পেয়ে নিজেদের শুচি করলেন এবং সদাপ্রভুর ঘরে পোড়ানো-উৎসর্গের জিনিস নিয়ে আসলেন। তারপর ঈশ্বরের লোক মোশির আইন-কানুন অনুসারে তাঁরা তাঁদের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে দাঁড়ালেন। পুরোহিতেরা লেবীয়দের হাত থেকে রক্ত নিয়ে ছিটিয়ে দিলেন। লোকদের মধ্যে অনেকে নিজেদের শুচি করে নি। সেইজন্য এদের হয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করবার জন্য উদ্ধার-পর্বের ভেড়ার বাচ্চা লেবীয়দেরই কাটতে হয়েছিল। সদাপ্রভু হিষ্কিয়ের প্রার্থনা শুনে লোকদের ক্ষমা করলেন। যে সব ইস্রায়েলীয় যিরূশালেমে উপস্থিত হয়েছিল তারা খুব আনন্দের সংগে সাত দিন ধরে খামিহীন রুটির পর্ব পালন করল; আর এদিকে লেবীয় ও পুরোহিতেরা প্রতিদিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে বাজনা বাজিয়ে প্রশংসা-গান করতে লাগলেন। সদাপ্রভুর সেবা-কাজে যে সব লেবীয়েরা দক্ষ ছিল হিষ্কিয় তাদের উৎসাহ দিয়ে কথা বললেন। তারা যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে সাত দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া করল এবং তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করল। তারপর সমস্ত লোক আরও সাত দিন সেই পর্ব পালন করবে বলে ঠিক করল; কাজেই আরও সাত দিন তারা আনন্দের সংগে সেই পর্ব পালন করল। যিহূদার রাজা হিষ্কিয় সমস্ত লোকের জন্য এক হাজার ষাঁড় ও সাত হাজার ভেড়া দিলেন আর উঁচু পদের কর্মচারীরা দিলেন এক হাজার ষাঁড় ও দশ হাজার ভেড়া। পুরোহিতদের মধ্যে অনেকে নিজেদের শুচি করলেন। যিহূদার সব লোকেরা, পুরোহিতেরা, লেবীয়েরা, ইস্রায়েল থেকে আসা লোকেরা এবং ইস্রায়েল ও যিহূদায় বাসকারী যে বিদেশীরা এসেছিল তারা সবাই আনন্দ করল। যিরূশালেমে খুব আনন্দ হল; ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের ছেলে শলোমনের পরে যিরূশালেমে আর এমনভাবে পর্ব পালন করা হয় নি। পরে যে লেবীয়েরা পুরোহিত ছিলেন তাঁরা দাঁড়িয়ে লোকদের আশীর্বাদ করলেন, আর ঈশ্বর তাঁদের প্রার্থনা শুনলেন, কারণ তাঁদের প্রার্থনা স্বর্গে তাঁর পবিত্র বাসস্থানে পৌঁছেছিল। পর্বের সব কিছু শেষ হবার পরে সেখানে উপস্থিত ইস্রায়েলীয়েরা বের হয়ে যিহূদার শহরগুলোতে গিয়ে পূজার পাথরগুলো, আশেরা-খুঁটিগুলো, পূজার উঁচু স্থান ও বেদীগুলো একেবারে ধ্বংস করে দিল। তারা যিহূদা, বিন্যামীন, ইফ্রয়িম ও মনঃশি-গোষ্ঠীর সমস্ত এলাকায় একই কাজ করল। এই সব ধ্বংস করবার পর ইস্রায়েলীয়েরা গ্রামে ও শহরে নিজের নিজের জায়গায় ফিরে গেল। পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার জন্য, সেবা-কাজের জন্য এবং ঈশ্বরের ঘরে ধন্যবাদ ও প্রশংসা-গান করবার জন্য হিষ্কিয় পুরোহিত ও লেবীয়দের প্রত্যেকের কাজ অনুসারে তাদের বিভিন্ন দলকে নিযুক্ত করলেন। সদাপ্রভুর আইন-কানুনে যেমন লেখা আছে সেইমত সকাল ও সন্ধ্যার পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য এবং বিশ্রামবার, অমাবস্যা এবং নির্দিষ্ট পর্বের সময়কার পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য রাজা তাঁর নিজের সম্পত্তি থেকে দান করলেন। পুরোহিত ও লেবীয়েরা যাতে সদাপ্রভুর আইন-কানুন পালন করবার ব্যাপারে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে ব্যস্ত রাখতে পারেন সেইজন্য তাঁদের পাওনা অংশ দিতে তিনি যিরূশালেমে বাসকারী লোকদের আদেশ দিলেন। এই আদেশ বের হবার সংগে সংগে ইস্রায়েলীয়েরা তাদের ফসল, নতুন আংগুর-রস, তেল ও মধুর প্রথম অংশ এবং ক্ষেতে আর যা কিছু জন্মায় তারও প্রথম অংশ প্রচুর পরিমাণে দান করল। এছাড়া তারা সব কিছুর দশ ভাগের একভাগ আনল এবং তা পরিমাণে অনেক হল। ইস্রায়েল ও যিহূদার যে সব লোক যিহূদার গ্রাম ও শহরগুলোতে বাস করত তারাও তাদের গরু, ভেড়া ও ছাগলের পালের দশ ভাগের এক ভাগ আনল এবং তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা জিনিসের দশ ভাগের একভাগ এনে কতগুলো স্তূপ করল। তৃতীয় মাসে এই কাজ শুরু করে তারা সপ্তম মাসে শেষ করল। হিষ্কিয় ও তাঁর কর্মচারীরা এসে সেই স্তূপগুলো দেখে সদাপ্রভুর গৌরব করলেন এবং তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের প্রশংসা করলেন। হিষ্কিয় সেই স্তূপগুলোর কথা পুরোহিত ও লেবীয়দের জিজ্ঞাসা করলেন। এতে সাদোকের বংশের অসরিয় নামে প্রধান পুরোহিত উত্তরে বললেন, “সদাপ্রভুর ঘরে লোকেরা যখন তাদের দান আনতে শুরু করল তখন থেকে আমাদের খাবারও যেমন যথেষ্ট হয়েছে তেমনি বাড়তিও রয়েছে প্রচুর, কারণ সদাপ্রভু তাঁর লোকদের আশীর্বাদ করেছেন, আর এই সমস্ত জিনিস অনেক বেঁচে গেছে।” তখন হিষ্কিয় সদাপ্রভুর ঘরে কতগুলো ভাণ্ডার-ঘর তৈরী করবার আদেশ দিলেন আর সেগুলো তৈরী করা হল। তারপর লোকেরা উপহার, সব জিনিসের দশ ভাগের এক ভাগ ও সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা জিনিস বিশ্বস্তভাবে ভাণ্ডার-ঘরে আনতে লাগল। কনানিয় নামে একজন লেবীয়ের উপর ছিল এই সব জিনিসের দেখাশোনার ভার আর তাঁর ভাই শিমিয়ি তাঁর সাহায্যকারী ছিল। এই দু’জনের অধীনে রাজা হিষ্কিয় ও সদাপ্রভুর ঘরের প্রধান কর্মচারী অসরিয়ের আদেশে যিহীয়েল, অসসিয়, নহৎ, অসাহেল, যিরীমোৎ, যোষাবদ, ইলীয়েল, যিসমখিয়, মাহৎ ও বনায় তদারক করবার ভার পেল। লোকদের নিজেদের ইচ্ছায় করা উৎসর্গের জিনিসের ভার ছিল পূর্ব দিকের ফটকের রক্ষী-লেবীয় যিম্নার ছেলে কোরির উপরে। সদাপ্রভুকে দেওয়া সব উপহার ও মহাপবিত্র জিনিস ভাগ করে দেবার ভারও ছিল তাঁর উপর। পুরোহিতদের শহর ও গ্রামগুলোতে তাঁদের বিভিন্ন দল অনুসারে বয়সে ছোট বা বড় তাঁদের সংগী পুরোহিতদের ঠিকভাবে ভাগ করে দেবার জন্য কোরির অধীনে এদন, বিন্যামীন, যেশূয়, শময়িয়, অমরিয় ও শখনিয় বিশ্বস্তভাবে কাজ করতেন। এছাড়া বিভিন্ন দল অনুসারে যে সব পুরোহিতেরা প্রতিদিনের কর্তব্য পালন করবার জন্য সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকতেন তাদেরও খাবারের ভাগ তাঁরা দিতেন। এঁরা ছিলেন তিন বছর ও তার বেশী বয়সের পুরুষ যাঁদের নাম পুরোহিতদের বংশ-তালিকায় লেখা ছিল। বংশ-তালিকায় পুরোহিতদের নাম পিতার বংশ অনুসারে লেখা হয়েছিল এবং বিশ বছর ও তার বেশী বয়সের লেবীয়দের নাম দায়িত্ব ও বিভিন্ন দল অনুসারে লেখা হয়েছিল। এছাড়া তাঁদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের, অর্থাৎ গোটা সমাজের নাম বংশ-তালিকায় লেখা হয়েছিল, কারণ পুরোহিত ও লেবীয়েরা বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করেছিলেন। যে পুরোহিতেরা, অর্থাৎ হারোণের যে বংশধরেরা নিজের নিজের শহর ও গ্রামের চারপাশের ক্ষেতের জমিতে বাস করতেন তাঁদের খাবারের ভাগ দেবার জন্য প্রত্যেক শহর ও গ্রামে কয়েকজন লোকের নাম উল্লেখ করে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁরা প্রত্যেক পুরোহিতকে এবং বংশ তালিকায় লেখা প্রত্যেক লেবীয়কে খাবারের ভাগ দিতেন। হিষ্কিয় যিহূদার সব জায়গায় এইভাবে কাজ করলেন। তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল, ন্যায্য এবং সত্য তিনি তা-ই করলেন। ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলবার জন্য ঈশ্বরের ঘরের কাজে এবং আইন-কানুন পালন করবার ব্যাপারে তিনি যে কাজই করলেন না কেন তা সমস্ত অন্তর দিয়ে করলেন, আর সেইজন্য তিনি সফল হলেন। হিষ্কিয় বিশ্বস্তভাবে সব কিছু করবার পরে আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব এসে যিহূদা আক্রমণ করলেন। তিনি দেয়াল-ঘেরা শহর ও গ্রামগুলো ঘেরাও করলেন, ভাবলেন সেগুলো নিজের জন্য জয় করে নেবেন। হিষ্কিয় দেখলেন সন্‌হেরীব এসে গেছেন এবং যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য মন স্থির করেছেন। এ দেখে তিনি তাঁর সেনাপতিদের ও যোদ্ধাদের সংগে পরামর্শ করে শহরের বাইরের ফোয়ারাগুলোর জল বন্ধ করে দেবেন বলে ঠিক করলেন। এই কাজে তাঁরা তাঁকে সাহায্য করলেন। অনেক লোক জড়ো হয়ে সমস্ত ফোয়ারা ও দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া জলের স্রোত বন্ধ করে দিল। তারা বলেছিল, “আসিরিয়ার রাজারা এসে কেন এত জল পাবে?” হিষ্কিয় দেয়ালের সব ভাংগা অংশগুলো এবং উঁচু পাহারা-ঘরগুলো মেরামত করে নিজেকে শক্তিশালী করলেন। এছাড়া সেই দেয়ালের বাইরে তিনি আর একটা দেয়াল তৈরী করলেন এবং দায়ূদ-শহরের মিল্লো আরও মজবুত করলেন। তিনি অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও ঢাল তৈরী করালেন। তিনি লোকদের উপরে সেনাপতিদের নিযুক্ত করলেন এবং শহরের ফটকের চকে তাদের একত্র করে এই কথা বলে উৎসাহ দিলেন, “আপনারা শক্তিশালী ও সাহসী হন। আসিরিয়ার রাজা ও তাঁর বিরাট সৈন্যদল দেখে আপনারা ভয় পাবেন না বা হতাশ হবেন না, কারণ তাঁর সংগে যারা আছে তাদের চেয়েও যিনি আমাদের সংগে আছেন তিনি আরও মহান। তাঁর সংগে রয়েছে কেবল মানুষের শক্তি, কিন্তু আমাদের সাহায্য করতে ও আমাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে আমাদের সংগে রয়েছেন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু।” লোকেরা যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের কথা শুনে তাঁর কথার উপর নির্ভর করল। পরে আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব ও তাঁর সমস্ত সৈন্যদল লাখীশ ঘেরাও করলেন এবং তাঁর কয়েকজন লোককে তিনি যিরূশালেমে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের কাছে এবং সেখানে উপস্থিত যিহূদার সমস্ত লোকদের কাছে এই কথা বলে পাঠালেন, “আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব বলছেন, ‘তোমরা কিসের উপর নির্ভর করে আছ যার দরুন তোমরা ঘেরাও হলেও যিরূশালেমেই থাকবে? খিদে ও পিপাসায় যাতে তোমরা মর তাই হিষ্কিয় এই কথা বলে তোমাদের ভুলাচ্ছে যে, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করবে। হিষ্কিয় নিজেই কি পূজার উঁচু স্থান আর বেদীগুলো ধ্বংস করে দেয় নি? যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের কি সে বলে নি যে, মাত্র একটি বেদীর সামনেই তাদের উপাসনা করতে হবে এবং তার উপর ধূপ জ্বালাতে হবে? “ ‘অন্যান্য দেশের সব জাতিদের প্রতি আমি ও আমার পূর্বপুরুষেরা যা করেছি তা কি তোমরা জান না? সেই সব জাতির দেবতারা কি আমার হাত থেকে তাদের দেশ উদ্ধার করতে পেরেছে? এই যে জাতিগুলোকে আমার পূর্বপুরুষেরা ধ্বংস করে ফেলেছেন তাদের সব দেবতাগুলোর মধ্যে কে আমার হাত থেকে তার লোকদের উদ্ধার করতে পেরেছে? তাহলে কেমন করে তোমাদের ঈশ্বর আমার হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করবে? এখন তোমরা হিষ্কিয়কে এইভাবে তোমাদের ছলনা করতে ও ভুলিয়ে রাখতে দিয়ো না। তোমরা তাকে বিশ্বাস কোরো না, কারণ কোন জাতির বা কোন রাজ্যের দেবতা আমার কিম্বা আমার পূর্বপুরুষদের হাত থেকে তার লোকদের উদ্ধার করতে পারে নি। তাহলে এটা কত না নিশ্চয় যে, তোমাদের দেবতারা আমার হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করতে পারবে না।’ ” সন্‌হেরীবের লোকেরা ঈশ্বর সদাপ্রভু ও তাঁর দাস হিষ্কিয়ের বিরুদ্ধে আরও অনেক কথা বলল। এছাড়া সন্‌হেরীব ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে অপমান করবার জন্য চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে এই কথা লিখলেন, “অন্যান্য দেশের জাতিদের দেবতারা যেমন আমার হাত থেকে তাদের লোকদের উদ্ধার করে নি, ঠিক সেইভাবে হিষ্কিয়ের ঈশ্বরও আমার হাত থেকে তার লোকদের উদ্ধার করবে না।” সন্‌হেরীবের লোকেরা ইব্রীয় ভাষায় চিৎকার করে ঐ কথা বলতে লাগল, যাতে যিরূশালেমের যে লোকেরা দেয়ালের উপরে ছিল তারা ভীষণ ভয় পায় আর আসিরিয়ার লোকেরা শহরটা দখল করে নিতে পারে। তারা মানুষের হাতে তৈরী পৃথিবীর সব জাতির দেবতাদের সম্বন্ধে যা বলেছিল যিরূশালেমের ঈশ্বরের বিষয়েও তা-ই বলল। সেইজন্য রাজা হিষ্কিয় ও আমোসের ছেলে নবী যিশাইয় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে কান্নাকাটি করতে লাগলেন। এতে সদাপ্রভু একজন স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে দিলেন যিনি আসিরিয়ার রাজার ছাউনির মধ্য থেকে সমস্ত যোদ্ধা, নেতা ও সেনাপতিদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেললেন। এতে সন্‌হেরীব লজ্জা পেয়ে নিজের দেশে ফিরে গেলেন। তিনি তাঁর দেবতার মন্দিরে গেলে পর তাঁর কয়েকজন ছেলে তাঁকে মেরে ফেলল। এইভাবে সদাপ্রভু আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীবের এবং অন্যান্য সকলের হাত থেকে হিষ্কিয়কে ও যিরূশালেমের লোকদের রক্ষা করলেন। তিনি সব দিক দিয়েই তাদের নিরাপদে রাখলেন। অনেকেই যিরূশালেমে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উপহার নিয়ে আসল এবং যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের জন্য দামী উপহার আনল। তাতে সেই সময় থেকে সমস্ত জাতির লোক তাঁকে খুব সম্মান করতে লাগল। সেই সময় হিষ্কিয় অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হলেন। হিষ্কিয় সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলে পর তিনি উত্তর দিলেন এবং তাঁকে একটা আশ্চর্য চিহ্ন দিলেন। কিন্তু হিষ্কিয়ের অন্তরে গর্ব দেখা দিল। তাঁর প্রতি যে রকম আশীর্বাদ করা হয়েছিল সেই অনুসারে তিনি কাজ করলেন না; এতে তাঁর উপর এবং যিহূদা ও যিরূশালেমের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধ হল। তখন হিষ্কিয় তাঁর অন্তরের গর্বের কথা বুঝতে পেরে নিজেকে নত করলেন এবং যিরূশালেমের লোকেরাও তা-ই করল। সেইজন্য হিষ্কিয়ের সময়ে সদাপ্রভুর ক্রোধ তাদের উপর নেমে আসল না। হিষ্কিয়ের অনেক ধন-সম্পদ ও সম্মান ছিল। তাঁর সোনা-রূপা, মণি-মুক্তা, সুগন্ধি মশলা, ঢাল ও সমস্ত রকম দামী জিনিসপত্র রাখবার জন্য তিনি ধনভাণ্ডার তৈরী করালেন। এছাড়া তিনি শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেল রাখবার জন্য ভাণ্ডার-ঘর তৈরী করালেন এবং বিভিন্ন রকম পশুর ও ছাগল-ভেড়ার থাকবার ঘরও তৈরী করালেন। তিনি নিজের জন্য অনেক গ্রাম ও শহর গড়ে তুললেন। তাঁর গরু-ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা অনেক হল, কারণ ঈশ্বর তাঁকে অনেক ধন দিয়েছিলেন। হিষ্কিয় গীহোন ফোয়ারার উপরের মুখ বন্ধ করে দায়ূদ-শহরের পশ্চিম দিক দিয়ে জল নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সব কাজেই সফল হয়েছিলেন। দেশে যে আশ্চর্য চিহ্ন দেখানো হয়েছিল সেই বিষয় জিজ্ঞাসা করবার জন্য যখন বাবিলের নেতারা দূত পাঠিয়েছিলেন তখন ঈশ্বর তাঁকে পরীক্ষা করবার জন্য তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, যাতে তাঁর মনে কি আছে তা প্রকাশ পায়। হিষ্কিয়ের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং তাঁর ঈশ্বরভক্তির কাজ সম্বন্ধে আমোসের ছেলে নবী যিশাইয়ের দর্শনের বইতে এবং “যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। পরে হিষ্কিয় তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং দায়ূদের বংশধরদের কবরস্থানের উপরের অংশে তাঁকে কবর দেওয়া হল। তিনি মারা যাবার সময় যিহূদার সকলে এবং যিরূশালেমের লোকেরা তাঁকে সম্মান দেখাল। তাঁর ছেলে মনঃশি তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। মনঃশি বারো বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং যিরূশালেমে পঞ্চান্ন বছর রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে যে সব জাতিকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের মত জঘন্য কাজ করে তিনি সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। তাঁর বাবা হিষ্কিয় পূজার যে সব উঁচু স্থান ধ্বংস করেছিলেন তিনি সেগুলো আবার তৈরী করালেন। এছাড়া তিনি বাল দেবতার উদ্দেশে কতগুলো বেদী ও আশেরা-খুঁটি তৈরী করলেন। তিনি আকাশের সব তারাগুলোর পূজা ও সেবা করতেন। যে ঘরের বিষয় সদাপ্রভু বলেছিলেন, “আমি চিরকাল যিরূশালেমে বাস করব,” সদাপ্রভুর সেই ঘরের মধ্যে তিনি কতগুলো বেদী তৈরী করলেন। সদাপ্রভুর ঘরের দু’টা উঠানেই তিনি আকাশের সমস্ত তারাগুলোর উদ্দেশে কতগুলো বেদী তৈরী করলেন। বিন্‌-হিন্নোম উপত্যকায় তাঁর ছেলেদের তিনি আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করলেন। যারা কুলক্ষণ দেখে ভবিষ্যতের কথা বলে, মায়াবিদ্যা ও যাদুবিদ্যা ব্যবহার করে এবং ভূতের মাধ্যম হয় আর মন্দ আত্মাদের সংগে সম্বন্ধ রাখে তিনি তাদের সংগে পরামর্শ করতেন। সদাপ্রভুর চোখে অনেক মন্দ কাজ করে তিনি তাঁকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন। তিনি যে মূর্তি খোদাই করে তৈরী করেছিলেন সেটা নিয়ে ঈশ্বরের ঘরে রাখলেন। ঈশ্বর এই ঘর সম্বন্ধে দায়ূদ ও তাঁর ছেলে শলোমনকে বলেছিলেন, “এই ঘর ও ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্য থেকে আমার বেছে নেওয়া এই যিরূশালেমকে আমি চিরকালের জন্য আমার বাসস্থান করব। আমি ইস্রায়েলীয়দের যে সব আদেশ দিয়েছি, অর্থাৎ মোশির মধ্য দিয়ে যে সব আইন-কানুন, নিয়ম ও নির্দেশ দিয়েছি যদি কেবল তারা যত্নের সংগে তা পালন করে তবে যে দেশ আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছি সেখান থেকে তাদের আর দূর করে দেব না।” যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের মনঃশি বিপথে নিয়ে গেলেন; তার ফলে সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের সামনে থেকে যে সব জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তাদের চেয়েও তারা আরও খারাপ কাজ করতে লাগল। সদাপ্রভু মনঃশি ও তাঁর লোকদের কাছে কথা বলতেন কিন্তু তারা তাতে কান দিত না। কাজেই সদাপ্রভু তাদের বিরুদ্ধে আসিরিয়ার রাজার সেনাপতিদের নিয়ে আসলেন। তারা মনঃশিকে বন্দী করে তাঁর গায়ে আঁকড়া লাগিয়ে ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বেঁধে বাবিলে নিয়ে গেল। বিপদে পড়ে তিনি তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর দয়া ভিক্ষা করলেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের সামনে নিজেকে খুবই নত করলেন। এইভাবে প্রার্থনা করলে পর সদাপ্রভুর মন নরম হল এবং তাঁর মিনতি শুনে তিনি তাঁকে যিরূশালেমে ও তাঁর রাজ্যে ফিরিয়ে আনলেন। তখন মনঃশি বুঝতে পারলেন যে, সদাপ্রভুই ঈশ্বর। পরে তিনি দায়ূদ-শহরের বাইরের দেয়ালটা উপত্যকার মধ্যেকার গীহোন ফোয়ারা থেকে ওফল পাহাড় ঘিরে পশ্চিম দিকে মাছ-ফটকে ঢুকবার পথ পর্যন্ত আরও উঁচু করে তৈরী করিয়ে শক্তিশালী করলেন। যিহূদার দেয়াল-ঘেরা সমস্ত গ্রাম ও শহরগুলোতে তিনি সেনাপতিদের নিযুক্ত করলেন। তিনি সদাপ্রভুর ঘর থেকে দেব-দেবতাদের মূর্তিগুলোকে দূর করে দিলেন। তিনি যিরূশালেমে এবং সদাপ্রভুর ঘরের পাহাড়ের উপরে যে সব বেদী তৈরী করেছিলেন সেগুলোও দূর করে দিলেন। সেগুলো নিয়ে তিনি শহরের বাইরে ফেলে দিলেন। তারপর তিনি সদাপ্রভুর বেদী আবার ঠিক করলেন এবং তার উপরে যোগাযোগ ও কৃতজ্ঞতা-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তিনি যিহূদার লোকদের আদেশ দিলেন যেন তারা ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা করে। অবশ্য লোকেরা তখনও পূজার উঁচু স্থানগুলোতে পশু উৎসর্গ করত, তবে তারা তা করত কেবল তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই উদ্দেশে। মনঃশির অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা, তাঁর ঈশ্বরের কাছে তাঁর প্রার্থনা এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে দর্শকেরা তাঁকে যে কথা বলেছিলেন তা সবই “ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। তাঁর প্রার্থনার কথা, তাঁর মিনতিতে ঈশ্বরের মন নরম হওয়ার কথা, তাঁর সব পাপ ও অবিশ্বস্ততার কথা এবং তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সামনে নত করবার আগে পূজার যে সব উঁচু স্থান তৈরী করেছিলেন আর আশেরা-খুঁটি ও খোদাই-করা প্রতিমা স্থাপন করেছিলেন সেই সব কথা দর্শকদের বইয়ে লেখা রয়েছে। পরে মনঃশি তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে চলে গেলেন এবং রাজবাড়ীতেই তাঁকে কবর দেওয়া হল। তাঁর জায়গায় তাঁর ছেলে আমোন রাজা হলেন। আমোন বাইশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং য়িরূশালেমে দু’বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর বাবা মনঃশির মতই তিনি সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। মনঃশি যে সব প্রতিমা খোদাই করে তৈরী করেছিলেন আমোন তাদের পূজা করতেন ও তাদের কাছে পশু উৎসর্গ করতেন। কিন্তু তাঁর বাবা মনঃশির মত তিনি সদাপ্রভুর সামনে নিজেকে নত করেন নি; তিনি পাপ করতেই থাকলেন। আমোনের কর্মচারীরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে রাজবাড়ীতেই তাঁকে খুন করল। কিন্তু যারা রাজা আমোনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল দেশের লোকেরা তাদের সবাইকে মেরে ফেলল এবং তারা তাঁর ছেলে যোশিয়কে তাঁর জায়গায় রাজা করল। যোশিয় আট বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং একত্রিশ বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা ভাল তিনি তা-ই করতেন এবং তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের পথে চলতেন; সেই পথ থেকে ডানে কি বাঁয়ে যেতেন না। তাঁর রাজত্বের অষ্টম বছরে তাঁর বয়স কম থাকলেও তিনি তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলবার জন্য মন স্থির করলেন। রাজত্বের বারো বছরের সময় তিনি পূজার সব উঁচু স্থান, আশেরা-খুঁটি, খোদাই করা প্রতিমা ও ছাঁচে ঢালা মূর্তি যিহূদা ও যিরূশালেম থেকে দূর করে দিতে লাগলেন। তাঁর সামনে বাল দেবতার বেদীগুলো ভেংগে ফেলা হল; সেগুলোর উপরে যে সব ধূপদানী ছিল সেগুলো কেটে টুকরা টুকরা করা হল এবং আশেরা-খুঁটি, খোদাই করা প্রতিমা ও ছাঁচে ঢালা মূর্তিগুলো ভেংগে ধুলার মত করা হল। যারা সেগুলোর কাছে পশু বলি দিত তাদের কবরের উপরে সেই ধুলা ছড়িয়ে দেওয়া হল। বেদীগুলোর উপরে পুরোহিতদের হাড় পোড়ানো হল। এইভাবে তিনি যিহূদা ও যিরূশালেমকে শুচি করলেন। যোশিয়ের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় তিনি দেশ ও উপাসনা-ঘরটা শুচি করবার পর তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘরটি মেরামত করবার জন্য অৎসলিয়ের ছেলে শাফনকে, শহরের শাসনকর্তা মাসেয়কে ও যোয়াহসের ছেলে ইতিহাস লেখক যোয়াহকে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা মহাপুরোহিত হিল্কিয়ের কাছে গেলেন এবং ঈশ্বরের ঘরে যে সব টাকা-পয়সা আনা হয়েছিল, অর্থাৎ যে সব টাকা-পয়সা রক্ষী-লেবীয়েরা মনঃশি ও ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর লোকদের এবং ইস্রায়েলের বাকী সমস্ত লোকদের কাছ থেকে এবং যিহূদা ও বিন্যামীন-গোষ্ঠীর সমস্ত লোকদের ও যিরূশালেমের বাসিন্দাদের কাছ থেকে জোগাড় করেছিল তা মহাপুরোহিতের কাছে রাখলেন। তারপর সেই টাকা-পয়সা সদাপ্রভুর ঘরের কাজের তদারক করবার জন্য যে লোকদের নিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের হাতে দেওয়া হল। তদারককারীরা উপাসনা-ঘরটি মেরামত ও আবার ঠিকঠাক করবার জন্য মিস্ত্রিদের হাতে টাকা দিল, অর্থাৎ যিহূদার রাজারা যে ঘরগুলো ধ্বংস হতে দিয়েছিলেন সেগুলোর জন্য তারা ছুতার মিস্ত্রি ও রাজমিস্ত্রিদের টাকা দিল যাতে তারা সুন্দর করে কাটা পাথর এবং ঘরের জোড়ার জন্য ও কড়িকাঠের জন্য কাঠ কিনতে পারে। সেই মিস্ত্রিরা বিশ্বস্তভাবে কাজ করেছিল। তাদের তদারক করবার জন্য তাদের উপরে ছিল যহৎ ও ওবদিয় নামে মরারি-বংশের দু’জন লেবীয় এবং কহাৎ-বংশের সখরিয় ও মশুল্লম আর যে লেবীয়েরা ভাল বাজনা বাজাতে পারত তারা। এরা বোঝা বহনকারী লোকদের উপর নিযুক্ত ছিল এবং বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত কাজের লোকদের সকলের তদারক করত। লেবীয়দের মধ্যে কেউ কেউ ছিল লেখক, কর্মকর্তা ও রক্ষী। তাঁরা যখন সদাপ্রভুর ঘরে আনা টাকা-পয়সা বের করে আনছিলেন তখন পুরোহিত হিল্কিয় মোশির মধ্য দিয়ে দেওয়া সদাপ্রভুর আইন-কানুনের বইটি পেলেন। হিল্কিয় তখন রাজার লেখক শাফনকে বললেন, “সদাপ্রভুর ঘরে আমি আইন-কানুনের বইটি পেয়েছি।” এই বলে তিনি শাফনকে সেই বই দিলেন। শাফন সেই বইটি রাজার কাছে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বললেন, “আপনার কর্মচারীদের উপর যে কাজের ভার দেওয়া হয়েছিল তাঁরা তা সবই করছেন। সদাপ্রভুর ঘরে যে টাকা-পয়সা ছিল তাঁরা তা বের করে তদারককারী ও কাজের লোকদের দিয়েছেন।” তখন লেখক শাফন এই কথা রাজাকে জানালেন, “পুরোহিত হিল্কিয় আমাকে একটি বই দিয়েছেন।” এই বলে শাফন তা রাজাকে পড়ে শোনালেন। রাজা আইন-কানুনের কথাগুলো শুনে নিজের পোশাক ছিঁড়লেন। তিনি হিল্কিয়, শাফনের ছেলে অহীকাম, মীখায়ের ছেলে অব্দোন, শাফন ও রাজার সাহায্যকারী অসায়কে এই আদেশ দিলেন, “যে বইটি পাওয়া গেছে তার মধ্যে কি লেখা রয়েছে তা আপনারা গিয়ে আমার এবং ইস্রায়েল ও যিহূদার বাকী লোকদের জন্য সদাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করুন। আমাদের পূর্বপুরুষেরা সদাপ্রভুর বাক্য পালন করেন নি এবং এই বইয়ে যা লেখা আছে সেই অনুসারে কাজ করেন নি বলে তাঁর ভীষণ ক্রোধ আমাদের উপরে পড়েছে।” তখন হিল্কিয় এবং রাজা যাদের হিল্কিয়ের সংগে পাঠিয়েছিলেন তাঁরা এই বিষয়ে কথা বলবার জন্য মহিলা-নবী হুল্‌দার কাছে গেলেন। হুল্‌দা ছিলেন কাপড়-চোপড় রক্ষাকারী শল্লুমের স্ত্রী। শল্লুম ছিলেন হস্রহের নাতি, অর্থাৎ তোখতের ছেলে। তিনি যিরূশালেমের দ্বিতীয় অংশে বাস করতেন। তারা আমাকে ত্যাগ করে দেব-দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালিয়েছে এবং তাদের হাতের তৈরী সমস্ত প্রতিমার দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে। সেইজন্য এই জায়গার উপর আমার ক্রোধ আমি ঢেলে দেব এবং সেই ক্রোধের আগুন নিভানো যাবে না।’ সদাপ্রভুর কাছে জিজ্ঞাসা করবার জন্য যিনি আপনাদের পাঠিয়েছেন সেই যিহূদার রাজাকে বলবেন যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘এই জায়গা ও তার লোকদের বিরুদ্ধে আমি যা বলেছি তা শুনে তোমার অন্তর তাতে সাড়া দিয়েছে এবং আমার সামনে তুমি নিজেকে নত করেছ ও তোমার পোশাক ছিঁড়ে আমার কাছে কান্নাকাটি করেছ। তুমি এই সব করেছ বলে আমি সদাপ্রভু তোমার প্রার্থনা শুনেছি। সেইজন্য আমি শীঘ্রই তোমাকে তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে নিয়ে যাব এবং তুমি শান্তিতে কবর পাবে। এই জায়গার উপরে এবং যারা এখানে বাস করে তাদের উপরে আমি যে সব বিপদ নিয়ে আসব তোমার চোখ তা দেখবে না।’ ” তাঁরা হুল্‌দার উত্তর নিয়ে রাজার কাছে ফিরে গেলেন। তখন রাজা লোক পাঠিয়ে যিহূদা ও যিরূশালেমের সমস্ত বৃদ্ধ নেতাদের ডেকে একত্র করলেন। তিনি যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের, পুরোহিত ও লেবীয়দের এবং সাধারণ ও গণ্যমান্য সমস্ত লোকদের নিয়ে সদাপ্রভুর ঘরে গেলেন। সদাপ্রভুর ঘরে ব্যবস্থার যে বইটি পাওয়া গিয়েছিল তার সমস্ত কথা তিনি তাদের কাছে পড়ে শোনালেন। রাজা তাঁর নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে সদাপ্রভুর পথে চলবার জন্য এবং সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে তাঁর সব আদেশ, নিয়ম ও নির্দেশ মেনে চলবার জন্য, অর্থাৎ এই বইয়ের মধ্যে লেখা ব্যবস্থার সমস্ত কথা পালন করবার জন্য সদাপ্রভুর সামনে প্রতিজ্ঞা করলেন। তারপর তিনি যিরূশালেম ও বিন্যামীনের উপস্থিত সমস্ত লোককে সেই একই প্রতিজ্ঞা করালেন। যিরূশালেমের লোকেরা ঈশ্বরের, তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করতে শুরু করল। যোশিয় ইস্রায়েলীয়দের অধিকারে থাকা সমস্ত দেশ থেকে সব জঘন্য প্রতিমা দূর করে দিলেন এবং ইস্রায়েলে উপস্থিত সকলকে দিয়ে তিনি তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেবা করালেন। যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন ততদিন লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর পথে চলেছিল। যোশিয় যিরূশালেমে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উদ্ধার-পর্ব পালন করলেন। প্রথম মাসের চৌদ্দ দিনের দিন লোকেরা উদ্ধার-পর্বের ভেড়া কাটল। তিনি পুরোহিতদের তাঁদের কাজে নিযুক্ত করলেন এবং সদাপ্রভুর ঘরের সেবা-কাজে তাঁদের উৎসাহ দিলেন। লেবীয়েরা, যাঁরা সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের শিক্ষা দিতেন এবং সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে যাঁদের আলাদা করা হয়েছিল তাঁদের তিনি বললেন, “ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের ছেলে শলোমন যে উপাসনা-ঘর তৈরী করিয়েছিলেন সেখানে আপনারা পবিত্র সিন্দুকটি রাখুন। এটা আর আপনাদের কাঁধে করে বহন করতে হবে না। এখন আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ও তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের সেবা করুন। ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ ও তাঁর ছেলে শলোমনের লেখা নির্দেশ মত, আপনাদের নিজের নিজের বংশ অনুসারে নির্দিষ্ট দলে সেবা-কাজের জন্য আপনারা নিজেদের প্রস্তুত করুন। “আপনাদের জাতির লোকদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের বংশগুলোর প্রত্যেকটি ভাগের জন্য কয়েকজন লেবীয়কে তাঁদের বংশ অনুসারে সেই ভাগের লোকদের সংগে নিয়ে পবিত্র ঘরের উঠানে গিয়ে দাঁড়ান। আপনারা উদ্ধার-পর্বের ভেড়াগুলো কাটবেন বলে নিজেদের শুচি করুন এবং মোশির মধ্য দিয়ে দেওয়া সদাপ্রভুর আদেশ অনুসারে আপনাদের জাতির লোকেরা যাতে উদ্ধার-পর্ব পালন করতে পারে তার ব্যবস্থা করুন।” তারপর যোশিয় সেখানে উপস্থিত সমস্ত লোকদের জন্য উদ্ধার-পর্বের উৎসর্গের উদ্দেশ্যে ত্রিশ হাজার ছাগল ও ভেড়ার বাচ্চা এবং তিন হাজার ষাঁড় দিলেন। এগুলো রাজার নিজের সম্পত্তি থেকে দেওয়া হল। রাজার কর্মচারীরাও নিজের ইচ্ছায় লোকদের, পুরোহিতদের ও লেবীয়দের দান করলেন। হিল্কিয়, সখরিয় ও যিহীয়েল নামে ঈশ্বরের ঘরের নেতারা উদ্ধার-পর্বের উৎসর্গের জন্য দু’হাজার ছ’শো ছাগল ও ভেড়া এবং তিনশো ষাঁড় পুরোহিতদের দিলেন। কনানিয় এবং তার দুই ভাই শময়িয় ও নথনেল, হশবিয়, যীয়ীয়েল ও যোষাবদ- লেবীয়দের এই নেতারা উদ্ধার-পর্বের উৎসর্গের জন্য পাঁচ হাজার ছাগল ও ভেড়া এবং পাঁচশো ষাঁড় লেবীয়দের দিলেন। এইভাবে সেবা-কাজের ব্যবস্থা করা হল এবং রাজার আদেশ মত পুরোহিতেরা নিজের নিজের জায়গায় আর লেবীয়েরা তাদের বিভিন্ন দল অনুসারে দাঁড়ালেন। লেবীয়েরা উদ্ধার-পর্বের ছাগল ও ভেড়া জবাই করল এবং পুরোহিতেরা তাদের হাত থেকে রক্ত নিয়ে তা ছিটিয়ে দিলেন, আর লেবীয়েরা পশুগুলোর চামড়া ছাড়াল। মোশির বইয়ে লেখা আদেশ অনুসারে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করবার জন্য তারা প্রত্যেক বংশের বিভিন্ন ভাগের লোকদের দেবার জন্য পোড়ানো-উৎসর্গের জিনিস সরিয়ে রাখল। ষাঁড়ের বেলায়ও তারা তা-ই করল। নিয়ম অনুসারে তারা উদ্ধার-পর্বের পশু আগুনে ঝল্‌সে নিল এবং উৎসর্গের মাংস ডেক্‌চি, কড়াই ও হাঁড়িতে সিদ্ধ করল আর তাড়াতাড়ি করে লোকদের খেতে দিল। তারপর তারা নিজেদের ও পুরোহিতদের জন্য ব্যবস্থা করল, কারণ পুরোহিতেরা, অর্থাৎ হারোণের বংশধরেরা পোড়ানো-উৎসর্গের জিনিস ও চর্বির অংশ রাত পর্যন্ত উৎসর্গ করছিলেন। সেইজন্য লেবীয়েরা নিজেদের ও হারোণ-বংশের পুরোহিতদের জন্য ব্যবস্থা করল। দায়ূদ, আসফ, হেমন ও রাজার দর্শক যিদূথূনের নির্দেশ অনুসারে আসফের বংশের গায়ক ও বাদকেরা নিজের নিজের জায়গায় ছিলেন। প্রত্যেকটি ফটকে রক্ষী ছিল। তাদের কাজ ছেড়ে আসবার দরকার হয় নি, কারণ তাদের লেবীয় ভাইয়েরা তাদের জন্য ব্যবস্থা করেছিল। এইভাবে রাজা যোশিয়ের আদেশ মত উদ্ধার-পর্ব পালনের জন্য এবং সদাপ্রভুর বেদীর উপরে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার জন্য সেই দিন সদাপ্রভুর সমস্ত সেবা-কাজের ব্যবস্থা করা হল। যে সব ইস্রায়েলীয় উপস্থিত ছিল তারা সেই সময় উদ্ধার-পর্ব এবং সাত দিন ধরে খামিহীন রুটির পর্ব পালন করল। নবী শমূয়েলের পর থেকে আর কখনও ইস্রায়েলে এইভাবে উদ্ধার-পর্ব পালন করা হয় নি। পুরোহিত, লেবীয় এবং যিরূশালেমের লোকদের সংগে উপস্থিত যিহূদা ও ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের নিয়ে যোশিয় যেভাবে উদ্ধার-পর্ব পালন করেছিলেন ইস্রায়েলের রাজাদের মধ্যে আর কেউ তেমনভাবে পালন করেন নি। যোশিয়ের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় এই উদ্ধার-পর্ব পালন করা হয়েছিল। যোশিয় উপাসনা-ঘরের সব কাজ শেষ করবার পরে মিসরের রাজা নখো ইউফ্রেটিস নদীর কাছে কর্কমীশে যুদ্ধ করতে গেলেন। তখন তাঁকে বাধা দেবার জন্য যোশিয় বের হয়ে আসলেন। কিন্তু নখো লোক পাঠিয়ে তাঁকে বললেন, “হে যিহূদার রাজা, আপনার ও আমার মধ্যে কিসের ঝগড়া? এইবার আমি যে আপনাকে আক্রমণ করতে আসছি তা নয়, কিন্তু আক্রমণ করছি সেই লোকদের যাদের সংগে আমার যুদ্ধ বেধেছে। ঈশ্বর আমাকে তাড়াতাড়ি করতে বলেছেন, কাজেই ঈশ্বর যিনি আমার সংগে আছেন আপনি তাঁকে বাধা দেবেন না, দিলে তিনি আপনাকে ধ্বংস করবেন।” যোশিয় কিন্তু ফিরলেন না, বরং তাঁর সংগে যুদ্ধ করবার জন্য ভিন্ন পোশাকে নিজেকে সাজালেন। ঈশ্বরের আদেশে নখো তাঁকে যা বললেন তাতে তিনি কান না দিয়ে মগিদ্দোর সমভূমিতে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। তখন ধনুকধারীরা রাজা যোশিয়কে তীর মারলে পর তিনি তাঁর লোকদের বললেন, “আমাকে নিয়ে যাও, আমি খুব বেশী আঘাত পেয়েছি।” কাজেই তারা তাঁর রথ থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে তাঁর অন্য রথটিতে রাখল এবং তাঁকে যিরূশালেমে নিয়ে আসল, আর সেখানেই তিনি মারা গেলেন। তাঁর পূর্বপুরুষদের কবরে তাঁকে কবর দেওয়া হল, আর যিহূদা ও যিরূশালেমের সব লোক তাঁর জন্য শোক করল। যোশিয়ের জন্য যিরমিয় বিলাপের গান রচনা করলেন এবং আজও সমস্ত গায়ক-গায়িকারা যোশিয়ের বিষয়ে বিলাপ-গান করে। ইস্রায়েলে এটা একটা চল্‌তি নিয়ম হয়ে গেল এবং বিলাপ-গানের বইয়ে তা লেখা হল। পরে দেশের লোকেরা যোশিয়ের ছেলে যিহোয়াহসকে নিয়ে যিরূশালেমে তাঁর বাবার জায়গায় রাজা করল। যিহোয়াহস তেইশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং তিন মাস যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। মিসরের রাজা নখো যিরূশালেমে তাঁকে সিংহাসন থেকে সরিয়ে দিয়ে যিহূদার উপরে প্রায় চার টন রূপা ও ঊনচল্লিশ কেজি সোনা কর্‌ বসালেন। মিসরের রাজা যিহোয়াহসের এক ভাই ইলীয়াকীমকে যিহূদা ও যিরূশালেমের উপরে রাজা করলেন এবং ইলীয়াকীমের নাম বদলে যিহোয়াকীম রাখলেন। নখো যিহোয়াহসকে ধরে মিসরে নিয়ে গেলেন। যিহোয়াকীম পঁচিশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং এগারো বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। বাবিলের রাজা নবুখদ্‌নিৎসর তাঁকে আক্রমণ করে বাবিলে নিয়ে যাবার জন্য তাঁকে ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বাঁধলেন। নবুখদ্‌নিৎসর সদাপ্রভুর ঘর থেকে জিনিসপত্রও বাবিলে নিয়ে গিয়ে তাঁর মন্দিরে রাখলেন। যিহোয়াকীমের অন্যান্য সমস্ত কাজের কথা এবং তিনি যে সব জঘন্য কাজ করেছিলেন ও তাঁর বিরুদ্ধে যা কিছু পাওয়া গিয়েছিল তা সবই “ইস্রায়েল ও যিহূদার রাজাদের ইতিহাস” নামে বইটিতে লেখা আছে। তাঁর পরে তাঁর ছেলে যিহোয়াখীন তাঁর জায়গায় রাজা হলেন। যিহোয়াখীন আঠারো বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং তিন মাস দশ দিন যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। বছরের শেষে রাজা নবূখদ্‌নিৎসর লোক পাঠিয়ে তাঁকে ও তাঁর সংগে সদাপ্রভুর ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র বাবিলে নিয়ে গেলেন, আর যিহোয়াখীনের কাকা সিদিকিয়কে যিহূদা ও যিরূশালেমের রাজা করলেন। সিদিকিয় একুশ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন এবং এগারো বছর যিরূশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তিনি তা-ই করতেন। তিনি নবী যিরমিয়, যিনি সদাপ্রভুর বাক্য বলতেন, তাঁর সামনে নিজেকে নীচু করলেন না। এছাড়া রাজা নবূখদ্‌নিৎসর, যিনি ঈশ্বরের নামে তাঁকে শপথ করিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে তিনি বিদ্রোহ করলেন। তিনি একগুঁয়েমি করে এবং নিজের অন্তর কঠিন করে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিকে ফিরলেন না। এছাড়া পুরোহিতদের সব নেতারা ও লোকেরা অন্যান্য জাতির জঘন্য অভ্যাস মত চলে ভীষণ পাপ করল এবং সদাপ্রভু যিরূশলেমে তাঁর যে ঘরকে নিজের উদ্দেশ্যে আলাদা করেছিলেন তা অশুচি করল। ইস্রায়েলীয়দের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু বার বার লোক পাঠিয়ে তাদের সাবধান করতেন, কারণ তাঁর লোকদের ও তাঁর বাসস্থানের প্রতি তাঁর মমতা ছিল। কিন্তু ঈশ্বরের পাঠানো লোকদের তারা টিট্‌কারি দিত, তাঁর কথা তুচ্ছ করত এবং তাঁর নবীদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। শেষে সদাপ্রভুর ক্রোধ তাঁর লোকদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল; তাদের রক্ষা পাওয়ার আর কোন পথ রইল না। তাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু বাবিলের রাজাকে নিয়ে আসলেন। সেই রাজা উপাসনা-ঘরে তাদের যুবকদের মেরে ফেললেন এবং যুবক-যুবতী, বুড়ো বা বয়স্ক কাউকেই দয়া দেখালেন না। ঈশ্বর তাদের সবাইকে সেই রাজার হাতে তুলে দিলেন। বাবিলের রাজা ঈশ্বরের ঘরের ছোট-বড় সব জিনিস ও ধন-দৌলত এবং রাজা ও তাঁর কর্মচারীদের ধন-দৌলত বাবিলে নিয়ে গেলেন। তাঁর লোকেরা ঈশ্বরের ঘর পুড়িয়ে দিল এবং যিরূশালেমের দেয়াল ভেংগে ফেলল। তারা সেখানকার সব বড় বড় বাড়ী পুড়িয়ে দিল ও সমস্ত দামী জিনিস নষ্ট করে ফেলল। যারা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল তাদের তিনি বাবিলে নিয়ে গেলেন, আর পারস্য-রাজ্য ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত তারা নবূখদ্‌নিৎসর ও তাঁর বংশধরদের দাস হয়ে রইল। এই সময় ইস্রায়েল দেশ তার বিশ্রাম-বছরের বিশ্রাম ভোগ করল। যিরমিয়ের মধ্য দিয়ে বলা সদাপ্রভুর বাক্যের সত্তর বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের দেশের সমস্ত জমি এমনি পড়ে থেকে বিশ্রাম ভোগ করল। যিরমিয়ের মধ্য দিয়ে বলা সদাপ্রভুর বাক্য পূর্ণ হবার জন্য পারস্যের রাজা কোরসের রাজত্বের প্রথম বছরে সদাপ্রভু কোরসের অন্তরে এমন ইচ্ছা দিলেন যার জন্য তিনি তাঁর সমস্ত রাজ্যে মৌখিকভাবে ও লিখিতভাবে এই ঘোষণা দিলেন: “পারস্যের রাজা কোরস এই কথা বলছেন, ‘স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভু পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য আমাকে দিয়েছেন এবং যিহূদা দেশের যিরূশালেমে তাঁর জন্য একটা ঘর তৈরী করবার জন্য আমাকে নিযুক্ত করেছেন। তাঁর লোকদের মধ্যে, অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে চায় সে সেখানে যাক এবং তার ঈশ্বর সদাপ্রভু তার সংগে থাকুন।’ ” যিরমিয়ের মধ্য দিয়ে বলা সদাপ্রভুর বাক্য পূর্ণ হবার জন্য পারস্যের রাজা কোরসের রাজত্বের প্রথম বছরে সদাপ্রভু কোরসের অন্তরে এমন ইচ্ছা দিলেন যার জন্য তিনি তাঁর সমস্ত রাজ্যে মৌখিকভাবে ও লিখিতভাবে এই ঘোষণা দিলেন: “পারস্যের রাজা কোরস এই কথা বলছেন, ‘স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভু পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য আমাকে দিয়েছেন এবং যিহূদা দেশের যিরূশালেমে তাঁর জন্য একটা ঘর তৈরী করবার জন্য আমাকে নিযুক্ত করেছেন। তাঁর লোকদের মধ্যে, অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে চায় সে যিহূদা দেশের যিরূশালেমে গিয়ে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘর তৈরী করুক, কারণ তিনি যিরূশালেমে আছেন। যারা সেখানে যাবে তাদের ঈশ্বর তাদের সংগে থাকুন। ঈশ্বরের যে সমস্ত লোকেরা এখনও বেঁচে আছে তারা যেখানেই বাস করুক না কেন তাদের মধ্যে যারা যিরূশালেমে যেতে চায় তাদের প্রতিবেশীরা যেন তাদের সোনা-রূপা, জিনিসপত্র ও পশুপাল দিয়ে সাহায্য করে ও যিরূশালেমের ঈশ্বরের ঘরের জন্য নিজের ইচ্ছায় উপহারও দেয়।’ ” এতে যিহূদা ও বিন্যামীনের বংশ-নেতাদের, পুরোহিতদের ও লেবীয়দের মধ্যে যাঁদের অন্তরে ঈশ্বর ইচ্ছা দিলেন তাঁরা প্রত্যেকে যিরূশালেমে সদাপ্রভুর ঘর তৈরী করতে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন। তাঁদের সব প্রতিবেশীরা রূপার পাত্র, সোনা, অন্যান্য জিনিস, পশুপাল ও দামী দামী জিনিস দিয়ে তাদের সাহায্য করল এবং ঈশ্বরের ঘরের জন্য নিজের ইচ্ছায় উপহারও দিল। সেই সব জিনিসের তালিকা এই: ত্রিশটা সোনার গামলা, এক হাজার রূপার গামলা, ঊনত্রিশটা ছুরি, ত্রিশটা সোনার বাটি, ভিন্ন আকারের চারশো দশটা রূপার বাটি এবং এক হাজার অন্যান্য জিনিসপত্র। সেখানে মোট পাঁচ হাজার চারশোটা সোনা ও রূপার জিনিস ছিল। বন্দী অবস্থায় বিদেশে বাসকারী লোকেরা যখন বাবিল থেকে যিরূশালেমে আসল তখন শেশ্‌বসর এই সব জিনিস সংগে করে নিয়ে আসলেন। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যে সব লোকদের বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই বন্দী অবস্থা থেকে যিরূশালেম ও যিহূদায় নিজের নিজের শহর ও গ্রামে ফিরে এসেছিল। এই লোকেরা সরুব্বাবিল, যেশূয়, নহিমিয়, সরায়, রিয়েলায়, মর্দখয়, বিল্‌শন, মিসপর, বিগ্‌বয়, রহূম ও বানার সংগে ফিরে এসেছিল। যে সমস্ত ইস্রায়েলীয় পুরুষ লোকেরা ফিরে এসেছিল তাদের সংখ্যা এই: পরোশের বংশের লোকেরা দু’হাজার একশো বাহাত্তর জন; শফটিয়ের তিনশো বাহাত্তর জন; আরহের সাতশো পঁচাত্তর জন; পহৎ-মোয়াবের বংশের যেশূয় ও যোয়াবের বংশের লোকেরা দু’হাজার আটশো বারো জন; এলমের এক হাজার দু’শো চুয়ান্ন জন; সত্তূর ন’শো পঁয়তাল্লিশ জন; সক্কয়ের সাতশো ষাট জন; অদোনীকামের ছ’শো ছেষট্টি জন; বিগ্‌বয়ের দু’হাজার ছাপান্ন জন; আদীনের চারশো চুয়ান্ন জন; যিহিষ্কিয়ের বংশধর আটেরের বংশের আটানব্বইজন; বেৎসয়ের তিনশো তেইশ জন; যোরাহের একশো বারো জন; নটোফার লোক ছাপান্নজন; অনাথোতের লোক একশো আটাশ জন; অস্‌মাবতের লোক বিয়াল্লিশজন; কিরিয়ৎ-আরীম, কফীরা ও বেরোতের লোক সাতশো তেতাল্লিশ জন; রামা ও গেবার লোক ছ’শো একুশ জন; মিক্‌মসের লোক একশো বাইশ জন; বৈথেল এবং অয়ের লোক দ’ুশো তেইশ জন; হারীমের লোক তিনশো বিশ জন; লোদ, হাদীদ এবং ওনোর লোক সাতশো পঁচিশ জন; যিরীহোর লোক তিনশো পঁয়তাল্লিশ জন; সনায়ার লোক তিন হাজার ছ’শো ত্রিশ জন। পুরোহিতদের সংখ্যা এই: যিদয়িয়ের বংশের যেশূয়ের বংশের লোকেরা ন’শো তিয়াত্তর জন; ইম্মেরের এক হাজার বাহান্ন জন; পশ্‌হূরের এক হাজার দু’শো সাতচল্লিশ জন; হারীমের এক হাজার সতেরো জন। লেবীয়দের সংখ্যা এই: যেশূয় ও কদ্‌মীয়েলের বংশের হোদবিয়ের বংশের লোকেরা চুয়াত্তরজন। গায়কদের সংখ্যা এই: আসফের বংশের একশো আটাশ জন। উপাসনা-ঘরের রক্ষীদের সংখ্যা মোট একশো ঊনচল্লিশ জন। এরা হল শল্লুম, আটের, টল্‌মোন, অক্কূব, হটীটা ও শোবয়ের বংশের লোক। উপাসনা-ঘরের সেবাকারীরা: এরা হল সীহ, হসূফা ও টব্বায়োতের বংশধরেরা; কেরোস, সীয় ও পাদোনের বংশধরেরা; লবানা, হগাব ও অক্কূবের বংশধরেরা; উষ, পাসেহ ও বেষয়ের বংশধরেরা; অস্না, মিয়ূনীম ও নফূষীমের বংশধরেরা; বক্‌বূক, হকূফা ও হর্হূরের বংশধরেরা; বসলূত, মহীদা ও হর্শার বংশধরেরা; বর্কোস, সীষরা ও তেমহের বংশধরেরা; নৎসীহ ও হটীফার বংশধরেরা। শলোমনের চাকরদের বংশধরেরা: এরা হল সোটয়, হস্‌সোফেরত, পরূদা, যালা, দর্কোন, গিদ্দেল, শফটিয়, হটীল, পোখেরৎ-হৎসবায়ীম ও আমীরের বংশধরেরা। উপাসনা-ঘরের সেবাকারীরা ও শলোমনের চাকরদের বংশধরেরা মোট তিনশো বিরানব্বই জন। তেল্‌-মেলহ, তেল্‌-হর্শা, করূব, অদ্দন ও ইম্মেরের এলাকা থেকে যারা এসেছিল তারা ইস্রায়েলীয় বলে নিজেদের প্রমাণ করতে পারল না। তারা হল দলায়, টোবিয় ও নকোদের বংশের ছ’শো বাহান্ন জন। শাসনকর্তা তাদের আদেশ দিলেন যতদিন ঊরীম ও তুম্মীম ব্যবহার করবার অধিকারী কোন পুরোহিত পাওয়া না যায় ততদিন পর্যন্ত তারা যেন মহাপবিত্র খাবারের কিছু না খায়। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা গোটা দলটার লোকসংখ্যা ছিল বিয়াল্লিশ হাজার তিনশো ষাট জন। এছাড়া সাত হাজার তিনশো সাঁইত্রিশ জন চাকর-চাকরাণী এবং দু’শো জন গায়ক-গায়িকা ছিল। তাদের সাতশো ছত্রিশটা ঘোড়া, দু’শো পঁয়তাল্লিশটা খচ্চর, চারশো পঁয়ত্রিশটা উট ও ছয় হাজার সাতশো বিশটা গাধা ছিল। তারা যিরূশালেমে সদাপ্রভুর ঘরে পৌঁছালে পর তাদের কয়েকজন বংশ-নেতা ঈশ্বরের ঘরটা আগের জায়গায় আবার তৈরী করবার জন্য নিজের ইচ্ছায় দান করলেন। তাঁদের ক্ষমতা অনুসারে এই কাজের জন্য তাঁরা চারশো পাঁচ কেজি সোনা, তিন হাজার দু’শো পঞ্চাশ কেজি রূপা ও পুরোহিতদের জন্য একশোটা পোশাক ধনভাণ্ডারে দিলেন। পুরোহিতেরা, লেবীয়েরা, গায়কেরা, উপাসনা-ঘরের রক্ষীরা ও সেবাকারীরা এবং অন্যান্য লোকেরা, অর্থাৎ সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা যে যার গ্রাম ও শহরে বাস করতে লাগল। ইস্রায়েলীয়েরা নিজের নিজের গ্রাম ও শহরে বাস করতে শুরু করবার পর সপ্তম মাসে সমস্ত লোকেরা একসংগে মিলে যিরূশালেমে জড়ো হল। তারপর যোষাদকের ছেলে যেশূয় ও তাঁর সংগী পুরোহিতেরা এবং শল্টীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল ও তাঁর সংগীরা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য ঈশ্বরের লোক মোশির আইন-কানুনের লেখা অনুসারে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের বেদীটি তৈরী করলেন। তাঁদের চারপাশের লোকদের তাঁরা ভয় করলেও আগের ভিত্তির উপরেই তাঁরা বেদী তৈরী করলেন এবং তার উপর সকাল ও বিকালের উৎসর্গের সময়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে লাগলেন। তারপর তাঁরা শাস্ত্রের কথামত কুঁড়ে-ঘরের পর্ব পালন করলেন এবং প্রত্যেক দিনের নির্দিষ্ট সংখ্যা অনুসারে নিয়ম মত পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেন। তারপর থেকে তাঁরা প্রতি দিনকার পোড়ানো-উৎসর্গ, অমাবস্যার পোড়ানো-উৎসর্গ, সদাপ্রভুর উদ্দেশে নির্দিষ্ট করা পর্বের পোড়ানো-উৎসর্গ এবং নিজের ইচ্ছায় আনা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে লাগলেন। যদিও তখনও সদাপ্রভুর ঘরের ভিত্তি গাঁথা হয় নি তবুও তাঁরা সপ্তম মাসের প্রথম দিন থেকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে লাগলেন। তাঁরা রাজমিস্ত্রি ও ছুতার মিস্ত্রিকে টাকা দিলেন এবং সীদোন ও সোরের লোকদের খাবার, আংগুর-রস ও তেল দিলেন যাতে তারা পারস্যের রাজা কোরসের অনুমতি অনুসারে লেবানন থেকে যাফো পর্যন্ত সমুদ্র পথে এরস কাঠ নিয়ে আসতে পারে। যিরূশালেমে ঈশ্বরের ঘরে পৌঁছাবার পরে দ্বিতীয় বছরের দ্বিতীয় মাসে শল্টীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল, যোষাদকের ছেলে যেশূয় এবং তাঁদের বাদবাকী ভাইয়েরা কাজ করতে শুরু করলেন। এই ভাইয়েরা হল পুরোহিত, লেবীয় ও অন্যান্য সমস্ত লোক যারা বন্দীদশা থেকে যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল। বিশ বছর ও তার বেশী বয়সের লেবীয়দের সদাপ্রভুর ঘর তৈরীর কাজ দেখাশোনা করবার জন্য নিযুক্ত করা হল। যেশূয় ও তাঁর ছেলেরা ও ভাইয়েরা, হোদবিয়ের বংশের কদ্‌মীয়েল ও তার ছেলেরা, হেনাদদের ছেলেরা এবং তাদের ছেলেরা ও ভাইয়েরা একত্র হয়ে যারা ঈশ্বরের ঘরে কাজ করছিল তাদের দেখাশোনা করতে লাগল। এরা সবাই লেবীয় ছিল। রাজমিস্ত্রিরা যখন সদাপ্রভুর ঘরের ভিত্তি স্থাপন করল তখন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের নির্দেশ মত সদাপ্রভুর গৌরব করবার জন্য পুরোহিতেরা তাঁদের নির্দিষ্ট পোশাক পরে তূরী নিয়ে ও লেবীয়দের মধ্য থেকে আসফের ছেলেরা করতাল নিয়ে যে যার জায়গায় দাঁড়ালেন। সদাপ্রভুর গৌরব ও ধন্যবাদের গান গাইতে গাইতে তাঁরা গাইলেন, “তিনি মংগলময়, ইস্রায়েলের প্রতি তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।” সদাপ্রভুর ঘরের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে বলে সব লোকেরা খুব জোরে চিৎকার করে সদাপ্রভুর গৌরব করল। কিন্তু অনেকে যখন আনন্দে চিৎকার করে উঠল তখন যাঁরা আগের উপাসনা-ঘরটি দেখেছিলেন তেমন অনেক বুড়ো পুরোহিত, লেবীয় ও বংশের নেতা এই উপাসনা-ঘরের ভিত্তি স্থাপন করতে দেখে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন। লোকেরা এত চিৎকার করছিল যে, কোন্‌টা আনন্দের আর কোন্‌টা কান্নার শব্দ কেউ তা বুঝতে পারল না। অনেক দূর থেকে সেই শব্দ শোনা গিয়েছিল। যিহূদা আর বিন্যামীনের লোকদের শত্রুরা শুনতে পেল যে, বন্দীরা ফিরে এসে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা উপাসনা-ঘর তৈরী করছে। সেই শত্রুরা তখন সরুব্বাবিল ও বংশের নেতাদের কাছে এসে বলল, “উপাসনা-ঘর তৈরীর কাজে আমরাও তোমাদের সংগে যোগ দেব, কারণ তোমাদের মত আমরাও তোমাদের ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলতে চেষ্টা করছি। আসিরিয়ার রাজা এসর-হদ্দোন আমাদের এখানে আনবার পর থেকে ঈশ্বরের উদ্দেশে আমরা পশু-উৎসর্গ করে আসছি।” কিন্তু সরুব্বাবিল, যেশূয় এবং ইস্রায়েলের অন্যান্য নেতারা বললেন, “আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে ঘর তৈরী করবার কাজে আমাদের সংগে তোমাদের কোন সম্বন্ধ নেই। পারস্যের রাজা কোরসের আদেশ অনুসারে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে আমরা নিজেরাই তা করব।” তখন তাদের দেশে বাসকারী অন্যান্য জাতিরা যিহূদার লোকদের উৎসাহ দমিয়ে দিতে এবং ভয় দেখাতে লাগল যেন তারা সেই ঘর তৈরী না করে। তাদের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদের উদ্দেশ্য বানচাল করে দেবার জন্য তারা পারস্যের রাজার কর্মচারীদের টাকা দিল। তারা রাজা কোরসের গোটা রাজত্বকালে ও তার পরের রাজা দারিয়াবসের রাজত্বকালে সেই একই কাজ করতে লাগল। অহশ্বেরশের রাজত্বের শুরুতে সেই শত্রুরা যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের বিরুদ্ধে একটা নালিশ লিখে জানাল। পারস্যের রাজা অর্তক্ষস্তের সময়েও বিশ্লম, মিত্রদাৎ, টাবেল ও তাঁর অন্যান্য সংগীরা অর্তক্ষস্তের কাছে একটা চিঠি লিখলেন। সেই চিঠি অরামীয় ভাষায় অনুবাদ করে লেখা হল। যিরূশালেমের বিরুদ্ধে রাজা অর্তক্ষস্তের কাছে শাসনকর্তা রহূম ও লেখক শিম্‌শয়ের চিঠি। তাঁরা রাজা অর্তক্ষস্তের কাছে যে চিঠি লিখেছিলেন তা এই: “আপনার দাসেরা, অর্থাৎ ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের লোকেরা রাজা অর্তক্ষস্তের কাছে লিখছে। মহারাজের জানা দরকার যে, আপনার কাছ থেকে যে যিহূদীরা আমাদের কাছে এসেছে তারা যিরূশালেমে গেছে এবং বিদ্রোহী ও মন্দ শহরটা আবার গড়ে তুলছে; তারা এর দেয়াল ও ভিত্তি মেরামত করছে। মহারাজের আরও জানা দরকার যে, যদি ঐ শহর ও দেয়াল আবার গড়ে তোলা হয় তবে ঐ লোকেরা খাজনা, কর্‌ কিম্বা শুল্ক দেবে না। তাতে রাজার আয়ের ক্ষতি হবে। আমরা রাজবাড়ীর নুন খাই তাই রাজাকে অসম্মানিত হতে দেখা আমাদের উচিত নয়। কাজেই আমরা এই সংবাদ রাজার কাছে পাঠাচ্ছি। এতে রাজা যেন তাঁর পূর্বপুরুষদের ইতিহাস বইয়ে খুঁজে দেখেন। সেই বইয়ের মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন যে, যিরূশালেম একটা বিদ্রোহী শহর; এই শহর রাজাদের এবং প্রদেশগুলোর শাসনকর্তাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে আর অনেক কাল আগে থেকেই সেই শহরে বিদ্রোহ হয়ে আসছে। সেইজন্যই সেই শহরকে ধ্বংস করা হয়েছিল। আমরা রাজাকে জানাচ্ছি যে, এই শহরটা যদি আবার তৈরী করা হয় আর তার দেয়ালগুলো তোলা হয়, তাহলে ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের এলাকাগুলোতে আপনার অধীন বলে আর কিছুই থাকবে না।” রাজা তখন সেই চিঠির এই উত্তর পাঠিয়ে দিলেন: “শাসনকর্তা রহূম, লেখক শিম্‌শয় এবং শমরিয়া ও ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের বিভিন্ন এলাকায় বাসকারী অন্যান্য উঁচু পদের কর্মচারীদের কাছে আমি লিখছি। আপনাদের মংগল হোক। যে চিঠি আপনারা আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন তা আমার কাছে অনুবাদ করে পড়া হয়েছে। আমি আদেশ দিলে পর খোঁজ করা হয়েছে এবং জানা গেছে যে, অনেক কাল আগে থেকে সেই শহর রাজাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আসছে; আসলে ওটা এমন একটা জায়গা যেখানকার লোকেরা শাসন মানে না। শক্তিশালী রাজারা যিরূশালেমে থেকে ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের সমস্ত এলাকাগুলোতে রাজত্ব করেছেন এবং সেখানকার লোকেরা তাঁদের খাজনা, কর্‌ এবং শুল্ক দিয়েছে। এখন আপনারা ঐ সব লোকদের কাজ বন্ধ করবার আদেশ দিন যাতে আমার আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত ঐ শহরটা আবার গড়ে তোলা না হয়। সাবধান, এই কাজে যেন অবহেলা করা না হয়। রাজ-সরকারের ক্ষতি বাড়তে দেওয়া হবে কেন?” রাজা অর্তক্ষস্তের চিঠিটা রহূম, লেখক শিম্‌শয় ও অন্যান্য উঁচু পদের কর্মচারীদের পড়ে শোনাবার সংগে সংগে তাঁরা যিরূশালেমের যিহূদীদের কাছে গেলেন এবং জোর করে কাজ বন্ধ করতে তাদের বাধ্য করলেন। এইভাবে যিরূশালেমে ঈশ্বরের ঘরের কাজ বন্ধ হয়ে গেল; পারস্যের রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছর পর্যন্ত তা বন্ধই রইল। রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে নবী হগয় এবং ইদ্দোর বংশধর নবী সখরিয় ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নামে যিহূদা ও যিরূশালেমের যিহূদীদের কাছে ঈশ্বরের দেওয়া কথা বলতে লাগলেন। তখন শল্টীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল এবং যোষাদকের ছেলে যেশূয় যিরূশালেমে ঈশ্বরের ঘরটি আবার তৈরী করবার কাজে হাত দিলেন। ঈশ্বরের নবীরাও তাঁদের সংগে থেকে তাঁদের সাহায্য করতে লাগলেন। তখন ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের এলাকাগুলোর শাসনকর্তা তত্তনয়, শথরবোষণয় ও সেখানকার উঁচু পদের কর্মচারীরা যিহূদীদের কাছে গিয়ে তাদের বললেন, “উপাসনা-ঘরটা আবার তৈরী করবার জন্য কে তোমাদের আদেশ দিয়েছে?” তাঁরা আরও বললেন, “যারা এই দালানটা তৈরী করছে তাদের নাম কি?” কিন্তু যিহূদীদের বৃদ্ধ নেতাদের দিকে ঈশ্বর মনোযোগ দিয়েছিলেন। যতদিন না দারিয়াবসের কাছে খবর পাঠানো হল এবং তাঁর কাছ থেকে লিখিত উত্তর পাওয়া গেল ততদিন পর্যন্ত নেতারা কাজ থামিয়ে দিলেন না। মহারাজ যেন জানতে পারেন যে, আমরা যিহূদা প্রদেশে মহান ঈশ্বরের ঘরে গিয়েছিলাম। লোকেরা বড় বড় পাথর দিয়ে ঘরটি তৈরী করছে এবং দেয়ালের উপরে বীম বসাচ্ছে। খুব যত্নের সংগে কাজটা করা হচ্ছে এবং তা সফলতার সংগে এগিয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধ নেতাদের আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, “উপাসনা-ঘরটি আবার তৈরী করবার জন্য কে তোমাদের আদেশ দিয়েছে?” আমরা তাদের নামও জিজ্ঞাসা করেছি যেন তাদের নেতাদের নাম আপনাকে জানাবার জন্য লিখে রাখতে পারি। উত্তরে তারা আমাদের বলল, “আমরা স্বর্গ ও পৃথিবীর ঈশ্বরের দাস। আমরা সেই উপাসনা-ঘরটি আবার তৈরী করছি যেটি ইস্রায়েলের একজন মহান রাজা অনেক দিন আগে তৈরী করে শেষ করেছিলেন। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষেরা স্বর্গের ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করেছিলেন বলে তিনি বাবিলের রাজা কল্‌দীয় নবূখদ্‌নিৎসরের হাতে তাঁদের তুলে দিয়েছিলেন। নবূখদ্‌নিৎসর এই উপাসনা-ঘরটি ধ্বংস করেছিলেন এবং লোকদের বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাবিলের রাজা কোরসের রাজত্বের প্রথম বছরে তিনি ঈশ্বরের এই ঘরটি আবার তৈরী করবার আদেশ দিয়েছিলেন। এমন কি, তিনি বাবিলের মন্দির থেকে ঈশ্বরের ঘরের সেই সব সোনা ও রূপার পাত্রগুলো বের করে দিয়েছিলেন যা নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেমের উপাসনা-ঘর থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজা কোরস সেগুলো তাঁর নিযুক্ত শাসনকর্তা শেশ্‌বসরের হাতে দিয়েছিলেন। রাজা তাঁকে বলেছিলেন যে, তিনি যেন যিরূশালেমে আগের জায়গাতেই ঈশ্বরের ঘরটি আবার তৈরী করেন এবং সেই জিনিসগুলো নিয়ে গিয়ে সেখানে জমা রাখেন। কাজেই শেশ্‌বসর এসে যিরূশালেমে ঈশ্বরের ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত সেটি তৈরীর কাজ চলছে, এখনও শেষ হয় নি।” এখন মহারাজ যদি চান তবে বাবিলের রাজ-সরকারের নথিপত্র রাখবার জায়গায় খোঁজ করে দেখতে পারেন যে, যিরূশালেমে ঈশ্বরের এই ঘরটি তৈরী করবার আদেশ রাজা কোরস সত্যিই দিয়েছিলেন কি না। তারপর এই ব্যাপারে মহারাজ যা ঠিক করবেন তা যেন আমাদের জানিয়ে দেন। রাজা দারিয়াবস আদেশ দিলে পর লোকেরা বাবিলের রাজ-সরকারের নথিপত্র রাখবার জায়গায় গিয়ে সেগুলো খুঁজে দেখলেন। এতে মাদীয় প্রদেশের অক্‌মথা নামে রাজধানীতে একটা গুঁটিয়ে-রাখা বই পাওয়া গেল। তাতে এই কথা লেখা ছিল: স্মারক লিপি রাজা কোরসের রাজত্বের প্রথম বছরে যিরূশালেমের ঈশ্বরের ঘর সম্বন্ধে তিনি এই আদেশ দিলেন: “পশু-উৎসর্গের জায়গা হিসাবে উপাসনা-ঘরটি আবার তৈরী করা হোক এবং তার ভিত্তি শক্তভাবে স্থাপন করা হোক। সেটি হবে ষাট হাত উঁচু এবং ষাট হাত চওড়া। তাতে থাকবে তিন সারি বড় বড় পাথরের উপর এক সারি কাঠ। রাজার ধনভাণ্ডার থেকে সমস্ত খরচ দেওয়া হোক। এছাড়া নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেমের উপাসনা-ঘর থেকে যে সব সোনা-রূপার পাত্র বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন সেগুলোও আবার ঈশ্বরের ঘরে ঠিক জায়গায় রাখা হোক।” তখন রাজা দারিয়াবস এই উত্তর দিলেন: “ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের এলাকাগুলোর শাসনকর্তা তত্তনয় এবং শথরবোষণয় ও সেখানকার উঁচু পদের কর্মচারীরা, আপনারা এখন সেই জায়গা থেকে দূরে থাকবেন। ঈশ্বরের এই ঘরের কাজে আপনারা বাধা দেবেন না। যিহূদীদের শাসনকর্তা ও তাদের বৃদ্ধ নেতারা ঈশ্বরের সেই ঘরটি আগের জায়গাতেই আবার তৈরী করুক। এছাড়া ঈশ্বরের সেই ঘরটি তৈরী করবার কাজে যিহূদীদের বৃদ্ধ নেতাদের জন্য আপনাদের যা করতে হবে সেই বিষয়ে আমি আদেশ দিচ্ছি। সেই কাজ যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সেইজন্য এই সব লোকদের পুরো খরচপত্র দিতে হবে রাজভাণ্ডার থেকে, অর্থাৎ ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের এলাকাগুলোর রাজকর্‌ থেকে। স্বর্গের ঈশ্বরের উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য যিরূশালেমের পুরোহিতদের এঁড়ে বাছুর, ভেড়া ও ভেড়ার বাচ্চা এবং গম, নুন, আংগুর-রস ও তেল, অর্থাৎ যা কিছু দরকার তা দিতে হবে। তাদের চাহিদামত প্রতিদিন এই সব অবশ্যই দিতে হবে, যাতে তারা স্বর্গের ঈশ্বরের উদ্দেশে গ্রহণযোগ্য উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পারে এবং রাজা ও রাজপুত্রদের মংগলের জন্য প্রার্থনা করতে পারে। আমি আরও আদেশ দিচ্ছি, যদি কেউ এই আদেশ অমান্য করে তবে তার ঘর থেকে একটা কড়িকাঠ বের করে এনে তা চোখা করে তাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করা হবে। তার এই অন্যায়ের জন্য তার ঘরটা একটা আবর্জনার স্তূপ করে ফেলা হবে। কোন রাজা বা কোন জাতি যদি এই আদেশ অমান্য করে যিরূশালেমের সেই উপাসনা-ঘরটি ধ্বংস করতে যায় তবে ঈশ্বর, যিনি সেখানে বাস করেন তিনি যেন তাকে ধ্বংস করেন। আমি দারিয়াবস এই আদেশ দিলাম। এটা যেন যত্নের সংগে পালন করা হয়।” রাজা দারিয়াবস সেই আদেশ পাঠিয়েছিলেন বলে ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের এলাকাগুলোর শাসনকর্তা তত্তনয়, শথরবোষণয় এবং সেখানকার উঁচু পদের কর্মচারীরা তা যত্নের সংগে পালন করলেন। নবী হগয় ও ইদ্দোর বংশধর সখরিয় ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে উৎসাহ দিচ্ছিলেন আর তার সংগে সংগে যিহূদীদের বৃদ্ধ নেতারা গাঁথনির কাজ সফলতার সংগে চালিয়ে যেতে থাকলেন। ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নির্দেশ অনুসারে এবং পারস্যের রাজা কোরস, দারিয়াবস ও অর্তক্ষস্তের আদেশে তাঁরা উপাসনা-ঘর তৈরীর কাজ শেষ করলেন। রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের ছয় বছরের সময় অদর মাসের তৃতীয় দিনে উপাসনা-ঘরের কাজ শেষ হল। তারপর ইস্রায়েলীয়েরা, অর্থাৎ পুরোহিতেরা, লেবীয়েরা আর বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা বাকী লোকেরা আনন্দের সংগে ঈশ্বরের ঘর প্রতিষ্ঠা করল। ঈশ্বরের ঘর প্রতিষ্ঠার জন্য তারা একশোটা ষাঁড়, দু’শো ভেড়া ও চারশো ভেড়ার বাচ্চা উৎসর্গ করল। এছাড়া সমস্ত ইস্রায়েলের পাপ-উৎসর্গের জন্য ইস্রায়েলের গোষ্ঠীর সংখ্যা অনুসারে তারা বারোটা ছাগল উৎসর্গ করল। মোশির বইয়ে যেমন লেখা ছিল সেই অনুসারে যিরূশালেমে ঈশ্বরের সেবা-কাজের জন্য পুরোহিতদের ও লেবীয়দের বিভিন্ন দলে নিযুক্ত করা হল। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা লোকেরা প্রথম মাসের চৌদ্দ দিনের দিন উদ্ধার-পর্ব পালন করল। পুরোহিত ও লেবীয়েরা নিজেদের শুচি করল, তাতে তারা সবাই শুচি হল। লেবীয়েরা নিজেদের জন্য, বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা সমস্ত লোকদের জন্য এবং তাদের পুরোহিত ভাইদের জন্য উদ্ধার-পর্বের ভেড়া জবাই করল। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা ইস্রায়েলীয়েরা এবং দেশে বাসকারী ইস্রায়েলীয়েরা যারা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলবার জন্য তাদের অযিহূদী প্রতিবেশীদের অশুচি অভ্যাস থেকে নিজেদের আলাদা করেছিল তারা সবাই একসংগে সেই মাংস খেল। সাত দিন পর্যন্ত তারা আনন্দের সংগে খামিহীন রুটির পর্ব পালন করল। তারা আনন্দে পূর্ণ হয়েছিল, কারণ আসিরিয়ার রাজা যাতে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের ঘরের কাজে তাদের সাহায্য করেন সেইজন্য সদাপ্রভু তাঁর মন পরিবর্তন করেছিলেন। এই সব ঘটনার পরে পারস্যের রাজা অর্তক্ষস্তের রাজত্বের সময়ে ইষ্রা বাবিল থেকে আসলেন। ইষ্রা সরায়ের ছেলে, সরায় অসরিয়ের ছেলে, অসরিয় হিল্কিয়ের ছেলে, হিল্কিয় শল্লুমের ছেলে, শল্লুম সাদোকের ছেলে, সাদোক অহীটূবের ছেলে, অহীটূব অমরিয়ের ছেলে, অমরিয় অসরিয়ের ছেলে, অসরিয় মরায়োতের ছেলে, মরায়োৎ সরহিয়ের ছেলে, সরহিয় উষির ছেলে, উষি বুক্কির ছেলে, বুক্কি অবীশূয়ের ছেলে, অবীশূয় পীনহসের ছেলে, পীনহস ইলিয়াসরের ছেলে এবং ইলিয়াসর ছিলেন প্রধান পুরোহিত হারোণের ছেলে। ইষ্রা সদাপ্রভুর আইন-কানুন পড়বার, তা পালন করবার এবং তার নিয়ম ও নির্দেশ ইস্রায়েল দেশে শিক্ষা দেবার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। যিনি ইস্রায়েলকে দেওয়া সদাপ্রভুর সব আদেশ ও নিয়ম সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করেছিলেন সেই পুরোহিত ও ধর্ম-শিক্ষক ইষ্রার কাছে রাজা অর্তক্ষস্ত এই চিঠি লিখেছিলেন: স্বর্গের ঈশ্বরের আইন-কানুনের শিক্ষক পুরোহিত ইষ্রার কাছে আমি রাজাদের রাজা অর্তক্ষস্ত লিখছি। আপনার মংগল হোক। আমি এখন এই আদেশ দিচ্ছি যে, আমার রাজ্যের যে সব ইস্রায়েলীয় এবং তাদের পুরোহিতেরা ও লেবীয়েরা আপনার সংগে যিরূশালেমে যেতে চায় তারা যেতে পারে। আপনার হাতে আপনাদের ঈশ্বরের যে আইন-কানুন আছে সেই অনুসারে যিহূদা ও যিরূশালেমের অবস্থা কেমন তার খোঁজ নেবার জন্য রাজা ও তাঁর সাতজন পরামর্শদাতা আপনাকে সেখানে পাঠাচ্ছেন। ইস্রায়েলের ঈশ্বর, যিনি যিরূশালেমে বাস করেন তাঁকে রাজা ও তাঁর পরামর্শদাতারা যে সব সোনা-রূপা নিজেদের ইচ্ছায় দিচ্ছেন তা আপনি নিয়ে যাবেন। এছাড়া যে সব সোনা-রূপা আপনি বাবিল প্রদেশ থেকে পাবেন এবং ইস্রায়েলীয়েরা ও তাদের পুরোহিতেরা যিরূশালেমে তাদের ঈশ্বরের ঘরের জন্য যা নিজের ইচ্ছায় দেবে আপনি তা সবই নিয়ে যাবেন। সেই সোনা-রূপা দিয়ে ষাঁড়, ভেড়া ও ভেড়ার বাচ্চা আর তার সংগেকার শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের জিনিস ভাল করে দেখে-শুনে কিনবেন এবং যিরূশালেমে আপনাদের ঈশ্বরের ঘরের বেদীর উপরে সেগুলো উৎসর্গ করবেন। তারপর আপনি ও আপনার যিহূদী ভাইয়েরা বাকী সোনা-রূপা নিয়ে আপনাদের ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে যা ভাল মনে করেন তা-ই করবেন। আপনাদের ঈশ্বরের ঘরে উপাসনার জন্য যে সব পাত্র আপনার হাতে দেওয়া হল তা আপনি যিরূশালেমের ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত করবেন। এছাড়া আপনাদের ঈশ্বরের ঘরের জন্য আর যা কিছু দরকার তার খরচ আপনি রাজভাণ্ডার থেকে নিয়ে দেবেন। এখন আমি রাজা অর্তক্ষস্ত ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের সমস্ত ধনভাণ্ডারের রক্ষকদের এই আদেশ দিচ্ছি যে, স্বর্গের ঈশ্বরের আইন-কানুনের শিক্ষক পুরোহিত ইষ্রা আপনাদের কাছে যা কিছু চাইবেন তা আপনারা ঠিকভাবে তাঁকে দেবেন। আপনারা তাঁকে তিন হাজার ন’শো কেজি পর্যন্ত রূপা, আঠারো হাজার কেজি পর্যন্ত গম, দু’হাজার দু’শো লিটার পর্যন্ত আংগুর-রস, দু’হাজার দু’শো লিটার পর্যন্ত তেল এবং যত পরিমাণে লবণ দরকার তা দিতে পারবেন। স্বর্গের ঈশ্বর যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন সেইমতই স্বর্গের ঈশ্বরের ঘরের জন্য যেন সব কিছু যত্নের সংগে করা হয়। রাজা ও তাঁর ছেলেদের রাজ্যের বিরুদ্ধে যেন তাঁর ক্রোধ প্রকাশিত না হয়। আমরা আপনাদের আরও বলছি যে, ঈশ্বরের সেই ঘরের কোন পুরোহিত, লেবীয়, গায়ক, রক্ষী, সেবাকারী কিম্বা অন্য কোন কর্মচারীর উপর কোন খাজনা, কর্‌ বা শুল্ক বসাবার ক্ষমতা আপনাদের নেই। হে ইষ্রা, ঈশ্বরের বিষয়ে আপনার যে জ্ঞান আছে সেই অনুসারে আপনি ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের সমস্ত লোকদের বিচারের জন্য এমন সব কর্মচারী ও বিচারক নিযুক্ত করবেন যারা আপনার ঈশ্বরের দেওয়া আইন-কানুন জানে। যারা তা জানে না আপনারা তাদের তা শিক্ষা দেবেন। যারা আপনার ঈশ্বরের আইন-কানুন অথবা রাজার আইন মানবে না তাদের ঠিকমত শাস্তি দিতে হবে। সেই শাস্তি হতে পারে মৃত্যু কিম্বা দেশ থেকে দূর করে দেওয়া কিম্বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা কিম্বা জেলে বন্দী করা। আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক। যিরূশালেমে সদাপ্রভুর ঘরের প্রতি এইভাবে সম্মান দেখাবার মনোভাব তিনিই রাজার অন্তরে জাগিয়েছেন। রাজা ও তাঁর পরামর্শদাতাদের এবং তাঁর সব ক্ষমতাশালী কর্মচারীদের সামনে তিনিই আমাকে তাঁর অটল ভালবাসা দেখিয়েছেন। আমার উপর আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর হাত ছিল বলেই আমি সাহস পেলাম এবং আমার সংগে যিরূশালেমে ফিরে যাবার জন্য ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে নেতাদের একত্র করলাম। রাজা অর্তক্ষস্তের রাজত্বের সময়ে যে সব বংশ-নেতারা আমার সংগে বাবিল থেকে ফিরে এসেছিলেন তাঁদের তালিকা: পীনহসের বংশের মধ্যে গের্শোম; ঈথামরের বংশের মধ্যে দানিয়েল; দায়ূদের বংশের মধ্যে শখনিয়ের বংশধর হটূশ; পরোশের বংশের মধ্যে সখরিয় এবং তাঁর সংগে তালিকায় নাম লেখা একশো পঞ্চাশ জন; পহৎ-মোয়াবের বংশের মধ্যে সরহিয়ের ছেলে ইলীহৈনয় ও তাঁর সংগেকার দু’শো জন; সত্তূর বংশের মধ্যে যহসীয়েলের ছেলে শখনিয় ও তাঁর সংগেকার তিনশো জন; আদীনের বংশের মধ্যে যোনাথনের ছেলে এবদ ও তাঁর সংগেকার পঞ্চাশজন; এলমের বংশের মধ্যে অথলিয়ের ছেলে যিশায়াহ ও তাঁর সংগেকার সত্তরজন; শফটিয়ের বংশের মধ্যে মীখায়েলের ছেলে সবদিয় ও তাঁর সংগেকার আশিজন; যোয়াবের বংশের মধ্যে যিহিয়েলের ছেলে ওবদিয় ও তাঁর সংগেকার দু’শো আঠারো জন; বানির বংশের মধ্যে যোষিফিয়ের ছেলে শলোমীত ও তাঁর সংগেকার একশো ষাট জন; বেবয়ের বংশের মধ্যে বেবয়ের ছেলে সখরিয় ও তাঁর সংগেকার আটাশজন; অস্‌গদের বংশের মধ্যে হকাটনের ছেলে যোহানন ও তাঁর সংগেকার একশো দশ জন; অদোনীকামের বংশের মধ্যে যাঁরা শেষে ফিরে এসেছিলেন তাঁদের নাম হল ইলীফেলট, যিয়ূয়েল ও শময়িয় আর তাঁদের সংগেকার ষাটজন; বিগ্‌বয়ের বংশের মধ্যে ঊথয় ও সব্বূদ আর তাঁদের সংগেকার সত্তরজন। অহবার দিকে বয়ে যাওয়া খালের কাছে আমি এই সব লোকদের একত্র করলাম এবং সেই জায়গায় আমরা তাম্বু ফেলে তিন দিন রইলাম। লোকদের ও পুরোহিতদের মধ্যে খোঁজ করে আমি কোন লেবীয়কে দেখতে পেলাম না। তখন আমি ইলীয়েষর, অরীয়েল, শময়িয়, ইল্‌নাথন, যারিব, ইল্‌নাথন, নাথন, সখরিয় ও মশুল্লম নামে নেতাদের ও যোয়ারীব ও ইল্‌নাথন নামে দু’জন শিক্ষককে ডেকে পাঠালাম। এই সব লোকদের আমি কাসিফিয়ায় বাসকারী নেতা ইদ্দো ও তাঁর বংশের উপাসনা-ঘরের সেবাকারীদের কাছে এই কথা বলতে পাঠিয়ে দিলাম, “আপনারা আমাদের ঈশ্বরের ঘরের সেবা-কাজের জন্য আমাদের কাছে লোক নিয়ে আসুন।” আমাদের ঈশ্বরের মংগলের হাত আমাদের উপরে ছিল বলে তাঁরা ইস্রায়েলের ছেলে লেবি-গোষ্ঠীর মহলির বংশের মধ্য থেকে শেরেবিয় নামে একজন দক্ষ লোককে এবং তাঁর ছেলেদের ও ভাইদের মোট আঠারোজনকে আমাদের কাছে নিয়ে আসলেন। পরে আমি অহবার খালের কাছে আমাদের জন্য উপবাস ঘোষণা করলাম যাতে আমরা আমাদের ঈশ্বরের সামনে নিজেদের নত করতে পারি এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের ও সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে নিরাপদে যাত্রা করতে পারি। পথে আমাদের শত্রুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবার জন্য রাজার কাছে সৈন্য ও ঘোড়সওয়ার চাইতে আমি লজ্জা পেলাম, কারণ আমরা রাজাকে বলেছিলাম, “যারা ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলে তাদের প্রত্যেকের উপরে তাঁর মংগলের হাত আছে, কিন্তু যারা তাঁকে ত্যাগ করে তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি তাদের সকলের উপর নেমে আসে।” কাজেই আমরা উপবাস করলাম এবং এই বিষয় নিয়ে আমাদের ঈশ্বরের কাছে অনুরোধ জানালাম, আর তিনি আমাদের প্রার্থনার উত্তর দিলেন। তারপর আমি বারোজন প্রধান পুরোহিতকে এবং তাঁদের সংগে শেরেবিয়, হশবিয় ও তাঁদের দশজন লেবীয় ভাইকে আলাদা করলাম। আমি তাঁদের কাছে সেই সব সোনা, রূপা ও পাত্রগুলো ওজন করে বের করে দিলাম যা রাজা ও তাঁর পরামর্শদাতারা, কর্মচারীরা এবং সেখানে উপস্থিত সব ইস্রায়েলীয়েরা আমাদের ঈশ্বরের ঘরের জন্য দান করেছিলেন। আমি তাঁদের কাছে ঊনিশ হাজার পাঁচশো কেজি রূপা, তিন হাজার কেজি রূপার পাত্র ও তিন হাজার কেজি সোনা দিলাম। এছাড়া সাড়ে ছয় কেজি ওজনের বিশটা সোনার পাত্র এবং সোনার মত দামী খুব সুন্দর দু’টা পালিশ করা ব্রোঞ্জের পাত্র দিলাম। আমি তাঁদের বললাম, “আপনাদের এবং এই সব পাত্রগুলো সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা হয়েছে। এছাড়া এই সব সোনা ও রূপা আপনাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিজের ইচ্ছায় করা দান। আপনারা যে পর্যন্ত না এগুলো যিরূশালেমে সদাপ্রভুর ঘরের ভাণ্ডার-ঘরে প্রধান পুরোহিতদের, লেবীয়দের এবং ইস্রায়েলের বংশ-নেতাদের সামনে ওজন করে দেন সেই পর্যন্ত তা সাবধানে রক্ষা করবেন।” এর পর পুরোহিতেরা ও লেবীয়েরা যিরূশালেমে আমাদের ঈশ্বরের ঘরে নিয়ে যাবার জন্য ওজন করা সোনা, রূপা এবং পাত্র গ্রহণ করলেন। প্রথম মাসের বারো দিনের দিন আমরা যিরূশালেমে যাবার জন্য অহবা খালের কাছ থেকে যাত্রা করলাম। আমাদের ঈশ্বরের হাত আমাদের উপরে ছিল এবং তিনি পথের মধ্যে শত্রু ও ডাকাতের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করলেন। এইভাবে আমরা যিরূশালেমে পৌঁছে তিন দিন সেখানে বিশ্রাম নিলাম। তারপর চতুর্থ দিনের দিন আমরা আমাদের ঈশ্বরের ঘরের মধ্যে সেই সোনা, রূপা ও পাত্রগুলো ওজন করে পুরোহিত ঊরিয়ের ছেলে মরেমোতের হাতে দিলাম। মরেমোতের সংগে ছিলেন পীনহসের বংশধর ইলীয়াসর এবং তাঁদের সংগে ছিলেন যেশূয়ের ছেলে যোষাবদ ও বিন্নুয়ির ছেলে নোয়দিয়। এঁরা দু’জনেই ছিলেন লেবীয়। সমস্ত জিনিসই গুণে আর ওজন করে দেওয়া হল এবং সেই সময় সেগুলোর সংখ্যা আর ওজন লিখে রাখা হল। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা লোকেরা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। তারা গোটা ইস্রায়েল জাতির জন্য বারোটা ষাঁড়, ছিয়ানব্বইটা ভেড়া, সাতাত্তরটা ভেড়ার বাচ্চা এবং পাপ-উৎসর্গের জন্য বারোটা ছাগল দিল। এই সবই সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ হিসাবে দেওয়া হল। তারা ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম পারের প্রদেশগুলোর ও জেলার শাসনকর্তাদের কাছে রাজার আদেশ পৌঁছে দিল। সেই আদেশ পেয়ে তাঁরা লোকদের সহযোগিতা করলেন এবং ঈশ্বরের ঘরের কাজেও সহযোগিতা করলেন। এই সব কাজ শেষ হয়ে গেলে পর নেতারা আমার কাছে এসে বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা এবং তাদের পুরোহিতেরা ও লেবীয়েরা তাদের দেশে বাসকারী অন্যান্য জাতিদের কাছ থেকে নিজেদের আলাদা করে রাখে নি। তারা কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, যিবূষীয়, অম্মোনীয়, মোয়াবীয়, মিসরীয় ও ইমোরীয়দের মত জঘন্য কাজ করছে। তারা নিজেদের ও তাদের ছেলেদের জন্য স্ত্রী হিসাবে ঐ সব জাতির মেয়েদের গ্রহণ করেছে, আর এইভাবে তাদের পবিত্র জাতিকে সেই জাতিদের সংগে মিশিয়ে ফেলেছে। এমন কি, নেতারা এবং উঁচু পদের কর্মচারীরাই প্রথমে এই অবিশ্বস্ততার পথ দেখিয়েছেন।” এই কথা শুনে আমি মনের কষ্টে আমার পরনের কাপড় ছিঁড়লাম এবং আমার মাথার চুল ও দাড়ি ছিঁড়ে হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা এই লোকদের অবিশ্বস্ততার ব্যাপারে যারা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের বাক্য মনে করে কেঁপে উঠল তারা প্রত্যেকে আমার কাছে এসে জড়ো হল। সন্ধ্যাবেলার উৎসর্গের সময় পর্যন্ত আমি সেখানে হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। তারপর সন্ধ্যাবেলার উৎসর্গের সময়ে আমি ভাংগা অন্তরের কষ্ট পাওয়া থেকে ফিরলাম এবং সেই ছেঁড়া কাপড় সুদ্ধই হাঁটু পেতে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সামনে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে এই প্রার্থনা করলাম, “হে আমার ঈশ্বর, তোমার দিকে আমার মুখ তুলতে আমি খুব লজ্জা বোধ করছি, কারণ আমাদের পাপ আমাদের মাথা ছাড়িয়ে উঠেছে এবং আমাদের দোষ আকাশ ছুঁয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমরা অনেক বেশী পাপ করেছি। আমাদের পাপের জন্যই আমাদের ও আমাদের রাজাদের এবং আমাদের পুরোহিতদের অন্যান্য রাজাদের হাতে মৃত্যু, বন্দীদশা, লুটপাট এবং অসম্মান হয়েছে, আর আজও সেই অবস্থা রয়েছে। “কিন্তু এখন অল্প সময়ের জন্য আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু দয়া করে আমাদের কিছু লোককে জীবিত রেখেছেন এবং তাঁর পবিত্র দেশে আমাদের একটা স্থায়ী জায়গা দিয়েছেন। এইভাবে আমাদের ঈশ্বর আমাদের আনন্দ ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদের দাসত্বের অবস্থায় আমাদের একটু প্রাণ জুড়িয়েছেন। আমরা দাস হলেও আমাদের দাসত্বের সময় আমাদের ঈশ্বর আমাদের ত্যাগ করেন নি। পারস্যের রাজাদের সামনে তিনি আমাদের প্রতি বিশ্বস্ত ব্যবহার করেছেন। তিনি আমাদের জাগিয়ে তুলেছেন যাতে আবার আমরা আমাদের ঈশ্বরের ঘর তৈরী ও তার ভাংগা জায়গা মেরামত করতে পারি। তিনি যিহূদা ও যিরূশালেমে আমাদের নিরাপদে থাকবার ব্যবস্থা করেছেন। কাজেই তোমাদের মেয়েদের তাদের ছেলেদের সংগে বিয়ে দিয়ো না কিম্বা তোমাদের ছেলেদের জন্য তাদের মেয়েদের নিয়ো না এবং কখনও তাদের মংগল কিম্বা উন্নতির চেষ্টা কোরো না। এতে তোমরা শক্তিশালী হবে এবং জমির ভাল ভাল জিনিস খেতে পারবে আর চিরস্থায়ী অধিকার হিসাবে দেশটা তোমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য রেখে যেতে পারবে।’ “আমাদের মন্দ কাজ ও আমাদের মহাপাপের ফলেই আমাদের উপর এই সব ঘটেছে, কিন্তু তবুও হে আমাদের ঈশ্বর, আমাদের পাপের পাওনা অনুসারে তুমি আমাদের কম শাস্তি দিয়েছ এবং আমাদের কিছু লোককে বেঁচে থাকতে দিয়েছ। আমরা কি আবার তোমার আদেশ অমান্য করে সেই সব জঘন্য কাজ করা লোকদের সংগে বিয়ের সম্বন্ধ করব? তা করলে তো তুমি আমাদের উপর এমন ক্রোধ করবে যার জন্য তুমি আমাদের ধ্বংস করে ফেলবে এবং আমাদের কাউকে বেঁচে থাকতে দেবে না। হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি ন্যায়বান। আমরা আজ পর্যন্ত কিছু লোক বেঁচে আছি। তোমার সামনে আমরা সকলে পাপী, আর সেইজন্য আমাদের মধ্যে কেউই তোমার সামনে দাঁড়াবার উপযুক্ত নই।” ইষ্রা যখন ঈশ্বরের ঘরের সামনে উবুড় হয়ে প্রার্থনা ও পাপ স্বীকার করছিলেন ও কাঁদছিলেন তখন ইস্রায়েলীয়দের পুরুষ, স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়ের একটা মস্ত বড় দল তাঁর কাছে জড়ো হয়েছিল। তারাও খুব কাঁদছিল। তখন এলমের এক বংশধর যিহীয়েলের ছেলে শখনিয় ইষ্রাকে বললেন, “আমাদের দেশে বাসকারী অন্যান্য জাতির মেয়েদের বিয়ে করে আমরা আমাদের ঈশ্বরের কাছে অবিশ্বস্ত হয়েছি; কিন্তু তা হলেও ইস্রায়েলীয়দের এখনও আশা আছে। এখন আসুন, আমাদের ঈশ্বরের সামনে আমরা এই প্রতিজ্ঞা করি যে, আমার কর্তা আপনার পরামর্শ অনুসারে ও আমাদের ঈশ্বরের আদেশকে যাঁরা ভয় করেন তাঁদের পরামর্শ অনুসারে আমরা এই সমস্ত স্ত্রীদের ও তাদের ছেলেমেয়েদের ত্যাগ করব। আইন-কানুন অনুসারেই তা করা হোক। আপনি উঠুন; এই বিষয় নিয়ে কাজ করা তো আপনারই দায়িত্ব। আমরা আপনাকে সাহায্য করব, কাজেই আপনি সাহসী হয়ে কাজ করুন।” তখন ইষ্রা উঠলেন এবং সেই কথা অনুসারে কাজ করবার জন্য প্রধান পুরোহিতদের, লেবীয়দের ও সেখানে একত্র হওয়া ইস্রায়েলীয়দের শপথ করালেন। তারা সবাই শপথ করল। তারপর ইষ্রা ঈশ্বরের ঘরের সামনে থেকে ইলীয়াশীবের ছেলে যিহোহাননের কামরায় গেলেন। তিনি সেখানে খাবার বা জল কিছুই খেলেন না, কারণ বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা লোকদের অবিশ্বস্ততার জন্য তিনি শোক করছিলেন। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা সমস্ত লোকেরা যাতে যিরূশালেমে এসে জড়ো হয় সেইজন্য যিহূদা ও যিরূশালেমের সব জায়গায় একটা ঘোষণা দেওয়া হল। যে কেউ তিন দিনের মধ্যে উপস্থিত হবে না, উঁচু পদের কর্মচারী ও বৃদ্ধ নেতাদের পরামর্শ অনুসারে তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা লোকদের সমাজ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হবে। তিন দিনের মধ্যে যিহূদা ও বিন্যামীন এলাকার সমস্ত লোক যিরূশালেমে জড়ো হল। নবম মাসের বিশ দিনের দিন সমস্ত লোক ঈশ্বরের ঘরের সামনের চকে বসে সেই ব্যাপারের জন্য ও ভীষণ বৃষ্টির জন্য কাঁপছিল। তখন পুরোহিত ইষ্রা উঠে দাঁড়িয়ে তাঁদের বললেন, “আপনারা অবিশ্বস্ত হয়েছেন, অন্যান্য জাতির মেয়েদের বিয়ে করে আপনারা ইস্রায়েলীয়দের পাপের সংগে আরও পাপ যোগ করেছেন। এখন আপনারা আপনাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে পাপ স্বীকার করে তাঁর ইচ্ছামত কাজ করুন। আপনাদের দেশে বাসকারী লোকদের ও অন্যান্য জাতির স্ত্রীদের থেকে নিজেদের আলাদা করুন।” তখন সমস্ত লোক খুব জোরে বলল, “আপনি ঠিক কথা বলেছেন; আপনি যেমন বলেছেন তেমনই আমাদের করতে হবে। কিন্তু লোক অনেক আর এখন খুব বৃষ্টি পড়ছে, কাজেই আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। তা ছাড়া এই বিষয়ের মীমাংসা এক বা দুই দিনের মধ্যে হতে পারে না, কারণ আমরা অনেকেই এই পাপ করেছি। আমাদের উঁচু পদের কর্মচারীরাই যেন গোটা সমাজের প্রতিনিধি হন। তারপর আমাদের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের মধ্যে যারা অন্যান্য জাতির মেয়েদের বিয়ে করেছে তারা প্রত্যেকে তাদের বৃদ্ধ নেতাদের ও বিচারকদের নিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে যিরূশালেমে আসুক। তাতে এই পাপের জন্য আমাদের ঈশ্বরের ভয়ংকর ক্রোধ আমাদের কাছ থেকে চলে যাবে।” এই কথার বিরুদ্ধে দাঁড়াল কেবল অসাহেলের ছেলে যোনাথন ও তিক্‌বের ছেলে যহসিয়; তাদের পক্ষে ছিল মশুল্লম ও লেবীয় শব্বথয়। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা লোকেরা সেই কথামত কাজ করল। পুরোহিত ইষ্রা প্রত্যেক বংশ থেকে নেতা বেছে নিলেন। দশম মাসের প্রথম দিনে তাঁরা সেই বিষয়ের তদন্ত করবার জন্য বসলেন। যারা অন্যান্য জাতির মেয়েদের বিয়ে করেছিল তাদের সকলের তদন্তের কাজ তাঁরা পরের বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে শেষ করলেন। যারা অন্যান্য জাতির মেয়েদের বিয়ে করেছিল তাদের তালিকা এই: পুরোহিতদের মধ্যে যোষাদকের ছেলে যেশূয়ের ও তার ভাইদের বংশধরদের মধ্যে মাসেয়, ইলীয়েষর, যারিব ও গদলিয়। এরা সবাই নিজের নিজের স্ত্রী ত্যাগ করবে বলে প্রতিজ্ঞা করল এবং তাদের দোষের জন্য তারা প্রত্যেকে পাল থেকে একটা করে ভেড়া নিয়ে দোষ উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। ইম্মেরের বংশধরদের মধ্যে হনানি ও সবদিয়। হারীমের বংশধরদের মধ্যে মাসেয়, এলিয়, শময়িয়, যিহীয়েল ও উষিয়। পশহূরের বংশধরদের মধ্যে ইলীয়ৈনয়, মাসেয়, ইশ্মায়েল, নথনেল, যোষাবদ ও ইলিয়াসা। লেবীয়দের মধ্যে যোষাবদ, শিমিয়ি, কলায়, অর্থাৎ কলীট, পথাহিয়, যিহূদা ও ইলিয়েষর। গায়কদের মধ্যে ইলীয়াশীব। রক্ষীদের মধ্যে শল্লুম, টেলম ও ঊরি। অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে- পরিয়োশের বংশধরদের মধ্যে রমিয়, যিষিয়, মল্কিয়, মিয়ামীন, ইলিয়াসর, মল্কিয় ও বনায়। এলমের বংশধরদের মধ্যে মত্তনিয়, সখরিয়, যিহীয়েল, অব্দি, যিরেমোৎ ও এলিয়। সত্তূর বংশধরদের মধ্যে ইলিয়ৈনয়, ইলিয়াশীব, মত্তনিয়, যিরেমোৎ, সাবদ ও অসীসা। বেবয়ের বংশধরদের মধ্যে যিহোহানন, হনানিয়, সব্বয় ও অৎলয়। বানির বংশধরদের মধ্যে মশুল্লম, মল্লূক, অদায়া, যাশূব, শাল ও যিরমোৎ। পহৎ-মোয়াবের বংশধরদের মধ্যে অদ্‌ন, কলাল, বনায়, মাসেয়, মত্তনিয়, বৎসলেল, বিন্নূয়ী ও মনঃশি। হারীমের বংশধরদের মধ্যে ইলিয়েষর, যিশিয়, মল্কিয়, শময়িয়, শিমিয়োন, বিন্যামীন, মল্লূক ও শমরিয়। হশূমের বংশধরদের মধ্যে মত্তনয়, মত্তত্ত, সাবদ, ইলীফেলট, যিরেময়, মনঃশি ও শিমিয়ি। বানির বংশধরদের মধ্যে মাদয়, অম্রাম, ঊয়েল, এরা সবাই অন্যান্য জাতির মেয়েদের বিয়ে করেছিল এবং কোন কোন স্ত্রীর গর্ভের ছেলেমেয়েও ছিল। হখলিয়ের ছেলে নহিমিয়ের কথা। রাজা অর্তক্ষস্তের রাজত্বের বিশ বছরের কিশ্‌লেব মাসে আমি শূশন রাজধানীতে ছিলাম। হনানি নামে আমার ভাইদের মধ্যে একজন এবং যিহূদার অন্য কয়েকজন লোক শূশনে আসল। বাবিলে বন্দীদশা থেকে যারা ফিরে গিয়েছিল সেই লোকদের বিষয় ও যিরূশালেমের বিষয় আমি তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম। তারা আমাকে বলল, “বন্দীদশা থেকে যারা দেশে ফিরে গিয়েছে তারা খুব দুরবস্থার ও অসম্মানের মধ্যে আছে। যিরূশালেমের দেয়াল ভেংগে গেছে এবং তার ফটকগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” এই সব কথা শুনে আমি বসে কাঁদতে লাগলাম। কিছুদিন ধরে আমি শোক ও উপবাস করলাম এবং স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। তারপর আমি বললাম, “হে স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভু, ভয় জাগানো মহান ঈশ্বর, যারা তোমাকে ভালবাসে ও তোমার আদেশ পালন করে তুমি তাদের জন্য অটল ভালবাসার ব্যবস্থা রক্ষা করে থাক। হে সদাপ্রভু, মিনতি করি, তোমার দাসদের জন্য, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়দের জন্য আমি তোমার দাস তোমার সামনে দিনরাত যে প্রার্থনা করছি তা তুমি শোন ও তাতে মনোযোগ দাও। আমরা ইস্রায়েলীয়েরা তোমার বিরুদ্ধে যে সব পাপ করেছি তা আমি স্বীকার করছি। সত্যিই আমি ও আমার বাবার বংশের লোকেরা পাপ করেছি। আমরা তোমার বিরুদ্ধে খুবই অন্যায় কাজ করেছি। তোমার দাস মোশিকে তুমি যে সব আদেশ, নিয়ম ও আইন-কানুন দিয়েছ তা আমরা পালন করি নি। “মিনতি করি, তোমার দাস মোশিকে তুমি যে নির্দেশ দিয়েছিলে তা মনে করে দেখ। তুমি বলেছিলে, ‘তোমরা যদি অবিশ্বস্ত হও তবে আমি অন্য জাতিদের মধ্যে তোমাদের ছড়িয়ে দেব; কিন্তু তোমরা আমার কাছে ফিরে আসলে এবং আমার আদেশ পালন করে সেইমত কাজ করলে, তোমাদের বন্দীদশায় থাকা লোকেরা যদি আকাশের শেষ সীমায়ও থাকে তবে আমি তাদের সেখান থেকে জোগাড় করে আমার বাসস্থান হিসাবে যে জায়গা বেছে নিয়েছি সেখানে তাদের নিয়ে আসব।’ “এরা তোমারই দাস এবং তোমারই লোক, যাদের তুমি তোমার মহাশক্তিতে ও শক্তিশালী হাতে মুক্ত করেছ। হে প্রভু, মিনতি করি, তোমার এই দাসের প্রার্থনাতে এবং যারা তোমার নাম ভক্তির সংগে স্মরণ করে তোমার সেই দাসদের প্রার্থনাতে তুমি কান দাও। তোমার দাসকে আজ সফলতা দান কর এবং এই রাজার কাছে করুণার পাত্র কর।” আমি রাজার আংগুর-রস পরিবেশনকারী ছিলাম। রাজা অর্তক্ষস্তের রাজত্বের বিশ বছরের নীষণ মাসের একদিন খাবার সময় রাজার সামনে আংগুর-রস ছিল, আর আমি তা নিয়ে রাজাকে দিলাম। এর আগে আমি রাজার সামনে কখনও মলিন মুখে থাকি নি। সেইজন্য রাজা আমাকে বললেন, “তোমার তো অসুখ হয় নি, তবে তোমার মুখ এত মলিন দেখাচ্ছে কেন? এ তো অন্তরের কষ্ট ছাড়া আর কিছু নয়।” এই কথা শুনে আমি খুব ভয় পেলাম, তবুও রাজাকে বললাম, “মহারাজ চিরজীবী হোন। আমার পূর্বপুরুষেরা যে শহরে কবর পেয়েছেন সেই শহর যখন ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তার ফটকগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে তখন আমার মুখ কেন মলিন দেখাবে না?” রাজা আমাকে বললেন,“তুমি কি চাও?” তখন আমি স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। তারপর উত্তরে রাজাকে বললাম, “মহারাজ যদি খুশী হয়ে থাকেন এবং আপনার দাস যদি আপনার চোখে দয়া পেয়ে থাকে তবে আমার পূর্বপুরুষদের কবর যেখানে আছে যিহূদার সেই শহরে আপনি আমাকে যাবার অনুমতি দিন যাতে আমি তা আবার তৈরী করতে পারি।” রাজার পাশে রাণীও বসে ছিলেন। রাজা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার যেতে কতদিন লাগবে, আর কবেই বা তুমি ফিরে আসবে?” আমি একটা সময়ের কথা বললে পর রাজা সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে যাবার অনুমতি দিলেন। আমি রাজাকে আরও বললাম, “যদি মহারাজ খুশী হয়ে থাকেন তবে ইউফ্রেটিস নদীর ওপারের শাসনকর্তাদের কাছে তিনি যেন চিঠি দেন যাতে তাঁরা আমাকে তাঁদের দেশের মধ্য দিয়ে যিহূদায় যেতে দেন। এছাড়া তিনি যেন তাঁর বন-রক্ষক আসফের কাছে একটা চিঠি দেন যাতে তিনি উপাসনা-ঘরের পাশের দুর্গের ফটকের কড়িকাঠের জন্য এবং শহরের দেয়াল ও আমার থাকবার ঘরের জন্য আমাকে কাঠ দেন।” আমার ঈশ্বরের মংগলের হাত আমার উপরে ছিল বলে রাজা আমার সব অনুরোধ রক্ষা করলেন। তিনি আমার সংগে কয়েকজন সেনাপতি ও একদল ঘোড়সওয়ার সৈন্যদের পাঠিয়ে দিলেন। পরে আমি ইউফ্রেটিস নদীর ওপারের শাসনকর্তাদের কাছে গিয়ে রাজার চিঠি দিলাম। ইস্রায়েলীয়দের মংগল করবার জন্য একজন লোক এসেছে শুনে হোরোণীয় সন্‌বল্লট ও অম্মোনীয় কর্মকর্তা টোবিয় খুব অসন্তুষ্ট হল। সেই রাতে বের হয়ে আমি উপত্যকা-ফটকের মধ্য দিয়ে সাপ-কূয়া ও তার পরে সার-ফটকের দিকে গেলাম এবং যিরূশালেমের ভাংগা দেয়াল ও আগুন দিয়ে ধ্বংস করা ফটকগুলোর অবস্থা ভাল করে দেখলাম। তারপর আমি ফোয়ারা-ফটক ও রাজার পুকুরের দিকে এগিয়ে গেলাম; কিন্তু আমি যে পশুর উপর চড়ে ছিলাম তার সেই জায়গা দিয়ে যাবার জন্য কোন পথ ছিল না। এইজন্য আমি সেই রাতে দেয়ালের অবস্থা দেখতে দেখতে উপত্যকার মধ্য দিয়ে গেলাম এবং উপত্যকা-ফটক দিয়ে আবার শহরে ফিরে আসলাম। আমি কোথায় গেছি বা কি করেছি তা উঁচু পদের কর্মচারীরা জানতে পারেন নি, কারণ আমি তখনও সাধারণ যিহূদীদের বা পুরোহিতদের বা গণ্যমান্য লোকদের বা উঁচু পদের কর্মচারীদের কিম্বা যারা কাজ করবে তাদের কিছুই বলি নি। পরে আমি সেই উঁচু পদের কর্মচারীদের বললাম, “আমরা যে কি রকম দুরবস্থার মধ্যে আছি তা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। যিরূশালেম ধ্বংস হয়ে রয়েছে এবং তার ফটকগুলো আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। আসুন, আমরা যিরূশালেমের দেয়াল আবার গেঁথে তুলি। এতে আর আমরা টিট্‌কারির পাত্র থাকব না।” আমার ঈশ্বর কিভাবে আমার মংগল করেছেন ও রাজা আমাকে কি বলেছেন তাও আমি তাঁদের জানালাম। উত্তরে তাঁরা বললেন, “আসুন, আমরা গাঁথতে শুরু করি।” এই বলে তাঁরা সেই ভাল কাজ শুরু করতে প্রস্তুত হলেন। কিন্তু হোরণীয় সন্‌বল্লট, অম্মোনীয় কর্মকর্তা টোবিয় ও আরবীয় গেশম্‌ এই কথা শুনে আমাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগল। তারা বলল, “তোমরা এ কি করছ? তোমরা কি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে?” আমি উত্তরে তাদের বললাম, “স্বর্গের ঈশ্বর আমাদের সফলতা দান করবেন। আমরা, তাঁর দাসেরা, আবার দেয়াল গাঁথব, কিন্তু যিরূশালেমে আপনাদের কোন সম্পত্তি, কোন দাবি কিম্বা কোন অধিকার নেই।” মহাপুরোহিত ইলীয়াশীব ও তাঁর সংগের পুরোহিতেরা কাজে লেগে গিয়ে মেষ-ফটকটা আবার গাঁথলেন। তাঁরা সেটা ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করে তার দরজা লাগালেন। তারপর তাঁরা হম্মেয়া-দুর্গ ও হননেল-দুর্গ পর্যন্ত গেঁথে দেয়ালের সেই দু’টা অংশ উৎসর্গ করলেন। এর পরের অংশটা যিরীহোর লোকেরা গাঁথল এবং তার পরের অংশটা গাঁথল ইম্রির ছেলে সক্কুর। হস্‌সনায়ার ছেলেরা গাঁথল মাছ-ফটকটা। তারা তার কড়িকাঠগুলো এবং তার দরজা, খিল আর হুড়কাগুলো লাগাল। তার পরের অংশটা মেরামত করল ঊরিয়ের ছেলে মরেমোৎ। ঊরিয় ছিল হক্কোসের ছেলে। তার পরের অংশটা বেরিখিয়ের ছেলে মশুল্লম মেরামত করল। বেরিখিয় ছিল মশেষবেলের ছেলে। তার পরের অংশটা বানার ছেলে সাদোক মেরামত করল। তার পরের অংশটা মেরামত করল তকোয়ার লোকেরা, কিন্তু তাদের ধনী লোকেরা তাদের তদারককারীদের অধীনে কাজ করতে রাজী হল না। পাসেহের ছেলে যিহোয়াদা আর বসোদিয়ার ছেলে মশুল্লম যিশানা-ফটকটা মেরামত করল। তারা তার কড়িকাঠগুলো এবং তার দরজা, খিল আর হুড়কাগুলো লাগাল। তার পরের অংশ মেরামত করল গিবিয়োনীয় মলাটিয় ও মেরোণোথীয় যাদোন। এরা ছিল গিবিয়োন ও মিসপার লোক। এই অংশটা ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম দিকের শাসনকর্তার বাড়ীর উল্টাদিকে ছিল। এর পরের অংশটা মেরামত করল হর্হয়ের ছেলে উষীয়েল। উষীয়েল ছিল একজন স্বর্ণকার। তার পরের অংশ মেরামত করল হনানিয়। সে সুগন্ধি তৈরী করত। এইভাবে তারা চওড়া-দেয়াল পর্যন্ত যিরূশালেমের দেয়াল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনল। যিরূশালেম জেলার অর্ধেক অংশের শাসনকর্তা হূরের ছেলে রফায় তার পরের অংশটা মেরামত করলেন। তার পরের অংশটা মেরামত করল হরূমফের ছেলে যিদায়। এই অংশটা ছিল তার বাড়ীর কাছে। তার পরের অংশটা হশব্‌নিয়ের ছেলে হটুশ মেরামত করল। হারীমের ছেলে মল্কিয় ও পহৎ-মোয়াবের ছেলে হশূব তার পরের অংশ ও তুন্দুর-দুর্গটা মেরামত করল। যিরূশালেম জেলার অর্ধেক অংশের শাসনকর্তা হলোহেশের ছেলে শল্লুম ও তাঁর মেয়েরা তার পরের অংশটা মেরামত করলেন। উপত্যকা-ফটকটা মেরামত করল হানূন ও সানোহের বাসিন্দারা। তারা তার দরজা, খিল, ও হুড়কাগুলো লাগাল। তারা সার-ফটক পর্যন্ত দেয়ালের এক হাজার হাত জায়গাও মেরামত করল। বৈৎ-হক্কেরম জেলার শাসনকর্তা রেখবের ছেলে মল্কিয় সার-ফটকটা মেরামত করলেন। তিনি তার দরজা, খিল ও হুড়কাগুলো লাগালেন। মিসপা জেলার শাসনকর্তা কল্‌হোষির ছেলে শল্লুম ফোয়ারা-ফটকটা মেরামত করলেন। তিনি তার উপরে ছাদ দিলেন এবং তার দরজা, খিল ও হুড়কাগুলো লাগালেন। রাজার বাগানের পাশে শীলোহের পুকুরের দেয়াল থেকে আরম্ভ করে দায়ূদের শহর থেকে যে সিঁড়ি নীচে নেমে গেছে সেই পর্যন্ত তিনি মেরামত করলেন। বৈৎসূর জেলার অর্ধেক অংশের শাসনকর্তা অস্‌বূকের ছেলে নহিমিয় দেয়ালের পরের অংশটা দায়ূদ-বংশের কবরের কাছ থেকে কাটা পুকুর ও বীরদের বাড়ী পর্যন্ত মেরামত করলেন। তার পরের অংশটা বানির ছেলে রহূমের অধীনে লেবীয়েরা মেরামত করল। তার পরের অংশটা কিয়ীলা জেলার অর্ধেক অংশের শাসনকর্তা হশবিয় তাঁর এলাকার হয়ে মেরামত করলেন। তার পরের অংশটা তাদের ভাইয়েরা, অর্থাৎ কিয়ীলা জেলার বাকী অর্ধেক অংশের লোকেরা মেরামত করল। তারা তাদের শাসনকর্তা হেনাদদের ছেলে ববয়ের অধীনে থেকে মেরামতের কাজ করল। তার পরের অংশটা, অর্থাৎ মিসপার শাসনকর্তা যেশূয়ের ছেলে এসর অস্ত্রশস্ত্র রাখবার ঘরে উঠবার পথের সামনের জায়গা থেকে দেয়ালের বাঁক পর্যন্ত মেরামত করলেন। তার পরে সব্বয়ের ছেলে বারূক দেয়ালের বাঁক থেকে মহাপুরোহিত ইলিয়াশীবের ঘরের দরজা পর্যন্ত আগ্রহের সংগে মেরামত করল। তার পরের অংশটা ঊরিয়ের ছেলে মরেমোৎ ইলিয়াশীবের ঘরের দরজা থেকে শুরু করে বাড়ীর শেষ পর্যন্ত মেরামত করল। ঊরিয় ছিল হক্কোসের ছেলে। তার পরের অংশটা মেরামত করলেন যর্দন নদীর সমভূমিতে বাসকারী পুরোহিতেরা। তার পরের অংশ মেরামত করল বিন্যামীন ও হশূব। এটা ছিল তাদের ঘরের সামনের অংশ। তার পরের অংশটা মাসেয়ের ছেলে অসরিয় মেরামত করল। এই অংশটা ছিল তার ঘরের পাশের অংশ। মাসেয় ছিল অননিয়ের ছেলে। তার পাশে হেনাদদের ছেলে বিন্নূয়ী অসরিয়ের ঘর থেকে শুরু করে বাঁক ও কোণা পর্যন্ত আর একটা অংশ মেরামত করল। তাদের পাশে তকোয়ের লোকেরা সেই বেরিয়ে আসা বিরাট দুর্গ থেকে ওফলের দেয়াল পর্যন্ত আর একটা অংশ মেরামত করল। ঘোড়া-ফটকের সামনের অংশটা পুরোহিতেরা মেরামত করলেন। তাঁরা প্রত্যেকে নিজের নিজের ঘরের কাছে দেয়ালের অংশ মেরামত করলেন। তার পরের অংশটা ইম্মেরের ছেলে সাদোক মেরামত করল। এটা ছিল তার ঘরের সামনের দিকে। তার পরের অংশটা পূর্ব-ফটকের পাহারাদার শখনিয়ের ছেলে শময়িয় মেরামত করল। তার পাশে শেলিমিয়ের ছেলে হনানিয় ও সালফের ষষ্ঠ ছেলে হানূন আর একটা অংশ মেরামত করল। তার পাশের অংশটা বেরিখিয়ের ছেলে মশুল্লম মেরামত করল। এটা ছিল তার ঘরের সামনের দিকে। তার পরের অংশটা মল্কিয় নামে একজন স্বর্ণকার মেরামত করল। এটা ছিল সমাবেশ-ফটকের সামনে উপাসনা-ঘরের সেবাকারীদের এবং ব্যবসায়ীদের ঘর পর্যন্ত এবং দেয়ালের কোণের উপরকার কামরা পর্যন্ত। স্বর্ণকার ও ব্যবসায়ীরা দেয়ালের কোণের উপরকার ঘর আর মেষ-ফটকের মাঝখানের জায়গাটা মেরামত করল। আমরা আবার দেয়াল গাঁথছি শুনে সন্‌বল্লট রেগে আগুন হয়ে গেল এবং ভীষণ অসন্তুষ্ট হল। সে যিহূদীদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগল। তার সংগের লোকদের সামনে ও শমরিয়ার সৈন্যদলের সামনে সে বলল, “এই দুর্বল যিহূদীরা করছে কি? তারা কি নিজেরাই এই কাজ করবে? ঈশ্বরের সাহায্য পাবার জন্য তারা কি পশু উৎসর্গ করবে? এক দিনেই কি দেয়াল গাঁথা শেষ করবে? টুকরা টুকরা হয়ে পড়ে থাকা পাথরের ঢিবি থেকে কি তারা পাথরগুলোকে শক্ত করে তুলতে পারবে? ওগুলো তো পুড়ে গেছে।” অম্মোনীয় টোবিয় তখন তার পাশে ছিল; সে বলল, “ওরা যা গাঁথছে তার উপরে যদি একটা শিয়াল ওঠে তবে তাদের ঐ পাথরের দেয়াল ভেংগে পড়বে।” তখন নহিমিয় প্রার্থনা করলেন, “হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি শোন কিভাবে আমাদের তুচ্ছ করা হচ্ছে। তাদের করা অপমান তুমি তাদেরই মাথার উপরে ফেল। তুমি এমন কর যাতে তারা বন্দী হয়ে লুটের মাল হিসাবে অন্য দেশে থাকে। তাদের অন্যায় তুমি ক্ষমা কোরো না কিম্বা তোমার চোখের সামনে থেকে তাদের পাপ তুমি মুছে ফেলো না, কারণ যারা দেয়াল গাঁথছে তাদের সামনেই তারা তোমাকে অপমান করেছে।” দেয়ালটা যত উঁচু হবে তার অর্ধেকটা পর্যন্ত এইভাবে আমরা গাঁথলাম, কারণ লোকেরা তাদের সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু সন্‌বল্লট, টোবিয়, আরবীয়েরা, অম্মোনীয়েরা ও অস্‌দোদের লোকেরা যখন শুনল যে, যিরূশালেমের দেয়াল মেরামতের কাজ এগিয়ে গেছে এবং ফাঁকগুলো বন্ধ করা হচ্ছে তখন তারা খুব রেগে গেল। তারা সবাই মিলে এই ষড়যন্ত্র করল যে, তারা গিয়ে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং গোলমাল শুরু করে দেবে। কিন্তু আমরা আমাদের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম এবং তাদের ভয়ে দিনরাত পাহারা দেবার জন্য ব্যবস্থা করলাম। এর মধ্যে যিহূদার লোকেরা বলল, “মজুরেরা দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং পড়ে থাকা পাথরের টুকরা এত বেশী যে, আমরা দেয়াল আর গাঁথতে পারব না।” এদিকে আমাদের শত্রুরা বলল, “তারা জানবার আগে কিম্বা দেখবার আগেই আমরা সেখানে তাদের মধ্যে গিয়ে উপস্থিত হব এবং তাদের মেরে ফেলে কাজ বন্ধ করে দেব।” সেইজন্য যে যিহূদীরা তাদের কাছাকাছি বাস করত তারা এসে বারবার আমাদের বলতে লাগল, “তোমরা আমাদের কাছে ফিরে এস।” এই সব শুনে আমি দেয়ালের ভিতরের দিকের নীচু জায়গাগুলোতে দেয়ালের ফাঁকগুলোর কাছে বংশ অনুসারে লোকদের নিযুক্ত করলাম ও তাদের হাতে তলোয়ার, বর্শা ও ধনুক দিলাম। তারপর আমি সব কিছু দেখে-শুনে গণ্যমান্য লোকদের, উঁচু পদের কর্মচারীদের ও বাকী লোকদের বললাম, “ওদের আপনারা ভয় করবেন না। যিনি মহান এবং ভয় জাগানো প্রভু, তাঁর কথা মনে করুন আর আপনাদের ভাই, ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও বাড়ীর জন্য যুদ্ধ করুন।” আমাদের শত্রুরা যখন জানতে পারল যে, আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের কথা জানি এবং ঈশ্বর তা বিফল করে দিয়েছেন, তখন আমরা সবাই দেয়ালের কাছে ফিরে গিয়ে যে যার কাজে লেগে গেলাম। যারা গাঁথত তারা প্রত্যেকে কোমরে তলোয়ার বেঁধে নিয়ে কাজ করত, আর যে তূরী বাজাত সে আমার কাছে থাকত। পরে আমি গণ্যমান্য লোকদের, উঁচু পদের কর্মচারীদের ও বাকী লোকদের বললাম, “কাজের এলাকাটা বড় এবং তা অনেকখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে; সেইজন্য আমরা দেয়াল বরাবর একজনের কাছ থেকে অন্যজন আলাদা হয়ে দূরে দূরে আছি। আপনারা যেখানে তূরীর শব্দ শুনবেন সেখানে আমাদের কাছে জড়ো হবেন। আমাদের ঈশ্বর আমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন।” ভোর থেকে শুরু করে অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত অর্ধেক লোক বর্শা ধরে থাকত আর আমরা এইভাবেই কাজ করতাম। সেই সময় আমি লোকদের আরও বললাম, “প্রত্যেকে তার চাকরকে নিয়ে রাতের বেলা যেন যিরূশালেমে থাকে যাতে রাতে পাহারা দিতে পারে এবং দিনের বেলা কাজ করতে পারে।” আমি কিম্বা আমার ভাইয়েরা বা আমার চাকরেরা বা আমার দেহরক্ষীরা কেউই আমরা কাপড়-চোপড় খুলতাম না; এমন কি, জলের কাছে গেলেও আমরা প্রত্যেকে নিজের অস্ত্রশস্ত্র সংগে নিতাম। পরে লোকেরা ও তাদের স্ত্রীরা তাদের ধনী যিহূদী ভাইদের বিরুদ্ধে খুব হৈ চৈ করতে লাগল। কেউ কেউ বলছিল, “আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে সংখ্যায় অনেক; খেয়ে বেঁচে থাকবার জন্য আমাদের শস্যের প্রয়োজন খুব বেশী।” অন্যেরা বলছিল, “খাবারের অভাবের ফলে শস্য পাবার জন্য আমাদের জমাজমি, আংগুর ক্ষেত এবং বাড়ী-ঘর বন্ধক রাখতে হচ্ছে।” আবার অন্যেরা বলছিল, “রাজার খাজনা দেবার জন্য জমাজমি এবং আংগুর ক্ষেত বন্ধক রেখে আমাদের টাকা নিতে হয়েছে। যদিও আমরা একই জাতির লোক এবং আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের মতই তবুও আমাদের ছেলেমেয়েদের দাস বানাতে হয়েছে, আর আমাদের মেয়েদের মধ্যে কয়েকজন আগেই দাসী হয়ে গেছে। এখন আমাদের কোন ক্ষমতাই নেই, কারণ আমাদের জমাজমি আর আংগুর ক্ষেতগুলো অন্যদের হয়ে গেছে।” তাদের হৈ চৈ ও এই সব নালিশ শুনে আমি ভীষণ রেগে গেলাম। আমি তাদের কথাগুলো মনে ভেবে দেখলাম আর তার পরে গণ্যমান্য লোকদের ও নেতাদের দোষী করে বললাম, “আপনারা আপনাদের নিজের দেশের লোকদের কাছ থেকে সুদ আদায় করছেন।” কাজেই আমি তাঁদের বিচার করবার জন্য বড় একটা সভা ডাকলাম। আমি বললাম, “অযিহূদীদের কাছে আমাদের যে সব ভাইয়েরা বিক্রি হয়েছিল যতদূর সম্ভব তাদের আমরা ছাড়িয়ে এনেছি। আর এখন আপনারা আপনাদের ভাইদের বিক্রি হতে বাধ্য করছেন, যার ফলে আমাদের আবার তাদের কিনে নিতে হবে।” এই কথা শুনে তাঁরা চুপ করে রইলেন, কারণ উত্তর দেবার মত তাঁরা কিছুই খুঁজে পেলেন না। আমি আরও বললাম, “আপনারা যা করছেন তা ঠিক নয়। অযিহূদী শত্রুরা যাতে আমাদের টিট্‌কারি দিতে না পারে সেইজন্য আমাদের ঈশ্বরের প্রতি ভয় রেখে চলা কি আপনাদের উচিত নয়? লোকদের কাছে আমার, আমার ভাইদের ও আমার কর্মচারীদেরও টাকা ও শস্য পাওনা আছে। কিন্তু আসুন, আমরা এই সব মাফ করে দিই। এখনই আপনারা তাদের জমাজমি, আংগুর ক্ষেত, জলপাইয়ের বাগান ও ঘর-বাড়ী তাদের ফিরিয়ে দিন, আর টাকা, শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেলের দরুন শতকরা যে সুদ আপনারা নিয়েছেন তাও তাদের ফিরিয়ে দিন।” এই কথা শুনে তাঁরা বললেন, “আমরা সব ফিরিয়ে দেব। আমরা তাদের কাছ থেকে আর কিছুই দাবি করব না। আপনি যা বললেন আমরা তা-ই করব।” তারপর আমি পুরোহিতদের ডেকে পাঠালাম এবং গণ্যমান্য লোকদের ও নেতাদের দিয়ে শপথ করালাম যাতে তাঁরা তাঁদের প্রতিজ্ঞামত কাজ করেন। আমার পোশাকের সামনের দিকটা আমি ঝাড়া দিয়ে বললাম, “যাঁরা এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবেন না ঈশ্বর তাঁদের প্রত্যেককে তাঁদের ঘর-বাড়ী ও সম্পত্তি থেকে এইভাবে ঝেড়ে ফেলবেন। এই রকম লোকদের এইভাবেই ঝেড়ে ফেলা হবে ও তাদের সব কিছু শেষ করা হবে।” এই কথা শুনে সমস্ত লোক বলল, “আমেন,” আর তারা সদাপ্রভুর গৌরব করল। গণ্যমান্য লোকেরা তাঁদের প্রতিজ্ঞা অনুসারেই কাজ করলেন। অর্তক্ষস্ত রাজার রাজত্বের বিশ বছরের সময় যখন আমি যিহূদা দেশে লোকদের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলাম, তখন থেকে তাঁর রাজত্বের বত্রিশ বছর পর্যন্ত, অর্থাৎ সেই বারো বছর ধরে আমি বা আমার ভাইয়েরা শাসনকর্তার পাওনা খাবার জিনিস গ্রহণ করি নি। কিন্তু আমার আগে যে সব শাসনকর্তা ছিলেন তাঁরা লোকদের উপর ভারী বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন এবং খাবার-দাবার ও আংগুর-রস ছাড়াও তাদের কাছ থেকে পাঁচশো বিশ গ্রাম রূপা নিতেন। তাদের চাকর-বাকরেরা পর্যন্ত লোকদের উপর কর্তৃত্ব করত। কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় থাকাতে আমি সেই রকম কাজ করি নি, বরং আমি এই দেয়ালের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতাম। আমার সব চাকরেরাও কাজ করবার জন্য সেখানে জড়ো হত। আমরা কেউ কোন জমি কিনি নি। এছাড়াও যিহূদী ও উঁচু পদের কর্মচারীদের মধ্য থেকে দেড়শো জন এবং আশেপাশের জাতিদের মধ্য থেকে যারা আমাদের কাছে আসত তারা আমার সংগে খাওয়া-দাওয়া করত। প্রত্যেক দিন একটা ষাঁড়, ছয়টা বাছাই-করা ভেড়া ও কতগুলো পাখী আমার জন্য রান্না করা হত, আর প্রতি দশ দিন পর প্রচুর পরিমাণে সব রকমের আংগুর-রস আমাকে দেওয়া হত। কিন্তু আমি কখনও শাসনকর্তার পাওনা খাবার জিনিস দাবি করি নি, কারণ এই সব দাবি লোকদের উপরে ভারী বোঝার মত ছিল। হে আমার ঈশ্বর, এই লোকদের জন্য আমি যে সব কাজ করেছি তার জন্য তুমি আমার মংগল করতে ভুলে যেয়ো না। পরে সন্‌বল্লট, টোবিয়, আরবীয় গেশম ও আমাদের বাকী শত্রুরা শুনতে পেল যে, আমি দেয়াল আবার গেঁথে ফেলেছি এবং সেই দেয়ালের মধ্যে আর কোন ফাঁক নেই। অবশ্য তখনও আমি ফটকগুলোতে দরজা লাগাই নি। তখন সন্‌বল্লট আর গেশম আমাকে এই কথা বলে পাঠাল, “আসুন, আমরা ওনো সমভূমির একটা গ্রামে মিলিত হই।” আসলে তারা আমার ক্ষতি করবার ষড়যন্ত্র করছিল। সেইজন্য আমি লোক পাঠিয়ে তাদের এই উত্তর দিলাম, “আমি একটা বিশেষ দরকারী কাজ করছি বলে যেতে পারছি না। আমি কাজ ছেড়ে আপনাদের কাছে যাবার ফলে কেন কাজ বন্ধ থাকবে?” তারা চার বার একই খবর আমার কাছে পাঠাল আর প্রত্যেকবার আমি তাদের একই উত্তর দিলাম। তারপর পঞ্চম বারে সন্‌বল্লট একই খবর দিয়ে তার চাকরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিল। তার হাতে একটা খোলা চিঠি ছিল। সেখানে লেখা ছিল, “বিভিন্ন জাতিদের মধ্যে এই কথা শোনা যাচ্ছে আর গেশমও বলছে যে, আপনি ও যিহূদীরা বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করছেন বলেই দেয়াল গাঁথছেন। এছাড়া এই সব খবর অনুসারে বোঝা যাচ্ছে যে, আপনি তাদের রাজা হতে যাচ্ছেন। আপনার বিষয় এই কথা যাতে যিরূশালেমে ঘোষণা করা হয় যে, যিহূদা দেশে একজন রাজা আছেন, সেইজন্য আপনি নবীদের পর্যন্ত নিযুক্ত করেছেন। এখন এই খবর তো রাজার কাছে পৌঁছাবে। কাজেই আসুন, আমরা একত্র হয়ে পরামর্শ করি।” আমি তাকে এই উত্তর পাঠিয়ে দিলাম, “আপনি যা বলছেন সেই রকম কিছুই হচ্ছে না; এটা আপনার মনগড়া কথা।” তারা আমাদের কাজ থামিয়ে দেবার জন্য এই সব কথা বলে আমাদের ভয় দেখাবার চেষ্টা করতে লাগল। হে ঈশ্বর, এখন তুমি আমার হাতে শক্তি দাও। এক দিন আমি দলায়ের ছেলে শময়িয়ের ঘরে গেলাম। দলায় মহেটবেলের ছেলে। শময়িয় তার ঘরে লুকিয়ে ছিল। সে বলল, “আসুন, আমরা ঈশ্বরের ঘরে, পবিত্র স্থানের মধ্যে মিলিত হই এবং ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে দিই, কারণ লোকেরা আপনাকে মারতে আসছে; তারা রাতের বেলায় আপনাকে মারতে আসবে।” কিন্তু আমি বললাম, “আমার মত লোকের কি পালিয়ে যাওয়া উচিত? কিম্বা আমার মত কারও কি তার নিজের প্রাণ রক্ষা করবার জন্য উপাসনা-ঘরের মধ্যে যাওয়া উচিত? আমি যাব না।” আমি নিঃসন্দেহে বুঝতে পারলাম যে, ঈশ্বর তাকে পাঠান নি; টোবিয় আর সন্‌বল্লট তাকে টাকা দিয়েছিল বলে সে আমার বিরুদ্ধে এই সব কথা বলেছে। তাকে টাকা দেওয়া হয়েছিল যাতে আমি ভয় পাই এবং তারই কথামত কাজ করে পাপ করি, আর তাতে যেন তারা আমার দুর্নাম করে আমাকে লজ্জায় ফেলতে পারে। হে আমার ঈশ্বর, টোবিয় আর সন্‌বল্লট যা করেছে তা তুমি মনে রেখো। মহিলা-নবী নোয়দিয়া আর বাকী যে সব নবীরা আমাকে ভয় দেখাবার চেষ্টা করছিল তাদের কথাও মনে রেখো। ইলূল মাসের পঁচিশ তারিখে, বাহান্ন দিনের দিন দেয়াল গাঁথা শেষ হল। আমাদের সব শত্রুরা যখন এই কথা শুনল আর আশেপাশের সব জাতিরা তা দেখল তখন আমাদের শত্রুরা সাহস হারাল, কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে, এই কাজ আমাদের ঈশ্বরের সাহায্যেই করা হয়েছে। সেই সময়ে যিহূদার গণ্যমান্য লোকেরা টোবিয়ের কাছে অনেক চিঠিপত্র পাঠাতেন এবং টোবিয়ের কাছ থেকে তাঁরা উত্তরও পেতেন। যিহূদার অনেকে টোবিয়ের কাছে শপথে বাঁধা ছিল, কারণ সে ছিল আরহের ছেলে শখনিয়ের জামাই। টোবিয়ের ছেলে যিহোহানন বেরিখিয়ের ছেলে মশুল্লমের মেয়েকে বিয়ে করেছিল। এছাড়া সেই গণ্যমান্য লোকেরা টোবিয়ের ভাল কাজের কথা আমাকে জানাত আর আমার কথাও তাকে জানাত। টোবিয় আমাকে ভয় দেখাবার জন্য আমার কাছে চিঠি লিখত। দেয়াল গাঁথা শেষ হলে পর আমি ফটকগুলোর দরজা লাগালাম। তার পরে ফটক-রক্ষী, গায়ক ও লেবীয়দের নিযুক্ত করা হল। আমার ভাই হনানি ও দুর্গের সেনাপতি হনানিয়কে আমি যিরূশালেমের ভার দিলাম, কারণ হনানিয় সৎ লোক ছিলেন এবং ঈশ্বরকে অনেকের চেয়ে বেশী ভক্তিপূর্ণ ভয় করতেন। আমি তাঁদের বললাম, “রোদ বেশী না হওয়া পর্যন্ত যিরূশালেমের ফটকগুলো যেন খোলা না হয়। রক্ষীদের চলে যাওয়ার আগে যেন দরজাগুলো বন্ধ করা ও হুড়কা দেওয়া হয়। যিরূশালেমের বাসিন্দাদের মধ্য থেকে যেন পাহারাদার নিযুক্ত করা হয়। তাদের কেউ কেউ থাকুক পাহারা দেবার জায়গায় আর কেউ কেউ থাকুক তাদের নিজের নিজের বাড়ীর কাছে।” এই রকম ব্যবস্থা করা হল, কারণ যিরূশালেম শহরটা ছিল বড় এবং অনেক জায়গা জুড়ে, কিন্তু লোক ছিল খুব কম আর ঘর-বাড়ীও তখন তৈরী করা হয় নি। পরে ঈশ্বর আমার মনে ইচ্ছা দিলেন যাতে আমি গণ্যমান্য লোকদের, নেতাদের ও সাধারণ লোকদের একত্র করে তাদের বংশ-তালিকা করতে পারি। যারা প্রথমে ফিরে এসেছিল সেই লোকদের বংশ-তালিকা পেলাম। সেখানে যা লেখা ছিল তা এই: বাবিলের রাজা নবুখদ্‌নিৎসর যে সব ইস্রায়েলীয়দের বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই বন্দী অবস্থা থেকে যিরূশালেম ও যিহূদায় নিজের নিজের শহর ও গ্রামে ফিরে এসেছিল। এই লোকেরা সরুব্বাবিল, যেশূয়, নহিমিয়, অসরিয়, রয়মিয়া, নহমানি, মর্দখয়, বিল্‌শন, মিসপরৎ, বিগ্‌বয়, নহূম ও বানার সংগে ফিরে এসেছিল। যে সমস্ত ইস্রায়েলীয় পুরুষ লোকেরা ফিরে এসেছিল তাদের সংখ্যা: পরোশের বংশের লোকেরা দু’হাজার একশো বাহাত্তর জন; শফটিয়ের তিনশো বাহাত্তর জন; আরহের ছ’শো বাহান্ন জন; পহৎ-মোয়াবের বংশের যেশূয় ও যোয়াবের বংশের লোকেরা দু’হাজার আটশো আঠারো জন; এলমের এক হাজার দু’শো চুয়ান্ন জন; বেবয়ের ছ’শো আটাশ জন; আস্‌গদের দু’হাজার তিনশো বাইশ জন; অদোনীকামের ছ’শো সাতষট্টি জন; বিগ্‌বয়ের দু’হাজার সাতষট্টি জন; আদীনের ছ’শো পঞ্চান্ন জন; যিহিষ্কিয়ের বংশধর আটেরের বংশের আটানব্বইজন। হশুমের তিনশো আটাশ জন; বেৎসয়ের তিনশো চব্বিশ জন; হারীফের একশো বারো জন; গিবিয়োনের পঁচানব্বইজন। বৈৎলেহম ও নটোফা গ্রামের লোক একশো অষ্টাশি জন; অনাথোতের লোক একশো আটাশ জন; বৈৎ-অস্মাবতের লোক বিয়াল্লিশ জন; কিরিয়ৎ-যিয়ারীম, কফীরা ও বেরোতের লোক সাতশো তেতাল্লিশ জন; রামা ও গেবার লোক ছ’শো একুশ জন; মিক্‌মসের লোক একশো বাইশ জন; বৈথেল ও অয়ের লোক একশো তেইশ জন; অন্য নবোর লোক বাহান্নজন; অন্য এলমের লোক এক হাজার দু’শো চুয়ান্ন জন; হারীমের লোক তিনশো বিশ জন; যিরীহোর লোক তিনশো পয়ঁতাল্লিশ জন; লোদ, হাদীদ এবং ওনোর লোক সাতশো একুশ জন; সনায়ার লোক তিন হাজার ন’শো ত্রিশ জন। পুরোহিতদের সংখ্যা এই: যেশূয়ের বংশের মধ্যে যিদয়িয়ের বংশের ন’শো তেয়াত্তর জন; ইম্মেরের এক হাজার বাহান্ন জন; পশ্‌হূরের এক হাজার দু’শো সাতচল্লিশ জন; হারীমের এক হাজার সতেরো জন। লেবীয়দের সংখ্যা এই: যেশূয়ের বংশের কদ্‌মীয়েল ও হোদবিয়ের বংশের লোকেরা চুয়াত্তরজন। গায়কদের সংখ্যা এই: আসফের বংশের একশো আটচল্লিশ জন। উপাসনা-ঘরের রক্ষীদের সংখ্যা একশো আটত্রিশ জন। এরা হল শল্লুম, আটের, টল্‌মোন, অক্কূব, হটীটা ও শোবয়ের বংশের লোক। উপাসনা-ঘরের সেবাকারীরা: এরা হল সীহ, হসূফা ও টব্বায়োতের বংশধরেরা; কেরোস, সীয় ও পাদোনের বংশধরেরা; লবানা, হগাব ও শল্‌ময়ের বংশধরেরা; হানন, গিদ্দেল ও গহরের বংশধরেরা; রায়া, রৎসীন ও নকোদের বংশধরেরা; গসম, ঊষ ও পাসেহের বংশধরেরা; বেষয়, মিয়ূনীম ও নফুষযীমের বংশধরেরা; বকবুক, হকূফা ও হর্হূরের বংশধরেরা; বসলীত, মহীদা ও হর্শার বংশধরেরা; বর্কোস, সীষরা ও তেমহের বংশধরেরা; নৎসীহ ও হটীফার বংশধরেরা। শলোমনের চাকরদের বংশধরেরা: এরা হল সোটয়, সোফেরত, পরীদা, যালা, দর্কোন, গিদ্দেল, শফটিয়, হটীল, পোখেরৎ-হৎসবায়ীম ও আমোনের বংশধরেরা। উপাসনা-ঘরের সেবাকারীরা ও শলোমনের চাকরদের বংশধরেরা মোট তিনশো বিরানব্বই জন। তেল্‌-মেলহ, তেল্‌হর্শা, করূব, অদ্দন ও ইম্মেরের এলাকা থেকে যারা এসেছিল তারা ইস্রায়েলীয় বলে নিজেদের প্রমাণ করতে পারল না। তারা হল: দলায়, টোবিয়, ও নকোদের বংশের ছ’শো বিয়াল্লিশ জন। শাসনকর্তা তাদের আদেশ দিলেন যতদিন ঊরীম ও তুম্মীম ব্যবহার করবার অধিকারী কোন পুরোহিত পাওয়া না যায় ততদিন পর্যন্ত তারা যেন মহাপবিত্র খাবারের কিছু না খায়। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা গোটা দলটার লোকসংখ্যা ছিল বিয়াল্লিশ হাজার তিনশো ষাট জন। এছাড়া সাত হাজার তিনশো সাঁইত্রিশ জন চাকর-চাকরানী এবং দু’শো পঁয়তাল্লিশ জন গায়ক-গায়িকাও ছিল। বংশের প্রধান লোকদের মধ্যে কেউ কেউ উপাসনা-ঘরের কাজের জন্য দান করলেন। শাসনকর্তা ধনভাণ্ডারে দিলেন সাড়ে ছয় কেজি সোনা, পঞ্চাশটা পাত্র ও পুরোহিতদের জন্য পাঁচশো ত্রিশটা পোশাক। বংশের প্রধান লোকদের মধ্যে কেউ কেউ এই কাজের জন্য একশো ত্রিশ কেজি সোনা ও এক হাজার চারশো ত্রিশ কেজি রূপা ধনভাণ্ডারে দিলেন। বাকী লোকেরা দিল মোট একশো ত্রিশ কেজি সোনা, এক হাজার তিনশো কেজি রূপা ও পুরোহিতদের জন্য সাতষট্টিটা পোশাক। পুরোহিতেরা, লেবীয়েরা, রক্ষীরা, গায়কেরা, উপাসনা-ঘরের সেবাকারীরা এবং অন্যান্য লোকেরা, অর্থাৎ সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা সপ্তম মাসের আগে যে যার গ্রাম ও শহরে বাস করতে লাগল। সপ্তম মাসের আগে সমস্ত লোক একসংগে মিলে জল-ফটকের সামনের চকে জড়ো হল। তারা ধর্ম-শিক্ষক ইষ্রাকে ইস্রায়েলীয়দের জন্য সদাপ্রভুর দেওয়া আদেশ, অর্থাৎ মোশির আইন-কানুনের বইখানা নিয়ে আসতে বলল। সপ্তম মাসের প্রথম দিনে পুরোহিত ইষ্রা স্ত্রী-পুরুষ এবং যারা শুনে বুঝতে পারে এমন সব লোকদের দলের সামনে আইন-কানুনের বইখানা নিয়ে আসলেন। জল-ফটকের সামনের চকের দিকে মুখ করে স্ত্রী-পুরুষ ও অন্যান্য যারা বুঝতে পারে তাদের কাছে তিনি ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত তা পড়ে শোনালেন, আর সমস্ত লোক মন দিয়ে আইন-কানুনের বইয়ের কথা শুনল। বইখানা পড়বার জন্য কাঠের যে মঞ্চ তৈরী করা হয়েছিল তার উপর ধর্ম-শিক্ষক ইষ্রা গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মত্তিথিয়, শেমা, অনায়, ঊরিয়, হিল্কিয় ও মাসেয়; আর তাঁর বাঁ পাশে ছিলেন পদায়, মীশায়েল, মল্কিয়, হশুম, হশবদ্দানা, সখরিয় ও মশুল্লম। তারপর ইষ্রা বইখানা খুললেন। সব লোক তাঁকে দেখতে পাচ্ছিল, কারণ তিনি তাদের থেকে উঁচুতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বইখানা খুললে পর সব লোক উঠে দাঁড়াল। তখন ইষ্রা মহান ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করলেন, আর সমস্ত লোক তাদের হাত তুলে বলল, “আমেন, আমেন।” তারপর তারা মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে সদাপ্রভুকে তাদের অন্তরের ভক্তি জানাল। যেশূয়, বানি, শেরেবিয়, যামীন, অক্কুব, শব্বথয়, হোদিয়, মাসেয়, কলীট, অসরীয়, যোষাবদ, হানন ও পলায়- এই সব লেবীয়েরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের কাছে আইন-কানুনের বিষয় বুঝিয়ে দিলেন। যা পড়া হচ্ছে তা যাতে লোকেরা বুঝতে পারে সেইজন্য তাঁরা ঈশ্বরের আইন-কানুনের বই থেকে পড়ে অনুবাদ করে মানে বুঝিয়ে দিলেন। তারপর শাসনকর্তা নহিমিয়, পুরোহিত ও ধর্ম-শিক্ষক ইষ্রা এবং যে লেবীয়েরা লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন তাঁরা সমস্ত লোকদের বললেন, “আজকের এই দিনটা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। আপনারা শোক বা কান্নাকাটি করবেন না।” তিনি এই কথা বললেন, কারণ লোকেরা সবাই আইন-কানুনের কথা শুনে কাঁদছিল। নহিমিয় বললেন, “আপনারা গিয়ে ভাল ভাল খাবার ও মিষ্টি রস খান আর যাদের কোন খাবার নেই তাদের কিছু কিছু পাঠিয়ে দিন। আজকের দিনটা হল আমাদের সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। আপনারা দুঃখ করবেন না, কারণ সদাপ্রভুর দেওয়া আনন্দই হল আপনাদের শক্তি।” লেবীয়েরা সমস্ত লোকদের শান্ত করে বললেন, “আপনারা নীরব হন, কারণ আজকের দিনটা পবিত্র। আপনারা দুঃখ করবেন না।” তখন সমস্ত লোক খুব আনন্দের সংগে খাওয়া-দাওয়া করবার জন্য ও খাবারের অংশ পাঠাবার জন্য চলে গেল, কারণ যে সব কথা তাদের জানানো হয়েছিল তা তারা বুঝতে পেরেছিল। সেই মাসের দ্বিতীয় দিনে সমস্ত বংশের প্রধান লোকেরা, পুরোহিতেরা ও লেবীয়েরা আইন-কানুন ভাল করে বুঝবার জন্য ধর্ম-শিক্ষক ইষ্রার কাছে একত্র হলেন। তাঁরা আইন-কানুনের মধ্যে দেখতে পেলেন মোশির মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু এই আদেশ দিয়েছেন যে, সপ্তম মাসের পর্বের সময় ইস্রায়েলীয়েরা কুঁড়ে-ঘরে বাস করবে, আর তাদের গ্রামগুলোতে ও যিরূশালেমে তারা এই কথা ঘোষণা ও প্রচার করবে, “যেমন লেখা আছে সেইমত তোমরা পাহাড়ী এলাকায় গিয়ে কুঁড়ে-ঘর বানাবার জন্য জলপাই ও বুনো জলপাই গাছের ডাল আর গুলমেঁদি, খেজুর ও পাতা-ভরা গাছের ডাল নিয়ে আসবে।” সেইজন্য লোকেরা গিয়ে ডাল নিয়ে এসে কেউ কেউ তাদের ঘরের ছাদের উপরে কিম্বা উঠানে কিম্বা ঈশ্বরের ঘরের উঠানে কিম্বা জল-ফটকের কাছের চকে কিম্বা ইফ্রয়িম-ফটকের কাছের চকে নিজেদের জন্য কুঁড়ে-ঘর তৈরী করল। বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা গোটা দলটাই কুঁড়ে-ঘর তৈরী করে সেগুলোর মধ্যে বাস করল। নূনের ছেলে যিহোশূয়ের সময় থেকে সেই দিন পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়েরা এই রকম আর করে নি। তারা খুব বেশী আনন্দ করল। প্রথম দিন থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত ইষ্রা প্রতিদিনই ঈশ্বরের আইন-কানুনের বই থেকে পড়তে থাকলেন। লোকেরা সাত দিন ধরে পর্ব পালন করল আর অষ্টম দিনে নিয়ম অনুসারে শেষ দিনের বিশেষ সভা হল। সেই একই মাসের চব্বিশ দিনের দিন ইস্রায়েলীয়েরা একত্র হয়ে উপবাস করল, চট পরল এবং মাথায় ধুলা দিল। ইস্রায়েল জাতির লোকেরা অন্যান্য জাতির সমস্ত লোকদের কাছ থেকে নিজেদের আলাদা করে নিল। তারা দাঁড়িয়ে নিজেদের পাপ ও তাদের পূর্বপুরুষদের অন্যায় স্বীকার করল। তারপর তারা দাঁড়িয়ে থেকেই দিনের চার ভাগের এক ভাগ সময় তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর আইন-কানুনের বই থেকে পড়তে থাকল আর চার ভাগের এক ভাগ সময় পাপ স্বীকার করে ও তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপাসনা করে কাটাল। যেশূয়, বানি, কদ্‌মীয়েল, শবনিয়, বুন্নি, শেরেবিয়, বানি ও কনানী নামে লেবীয়েরা তাঁদের মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে জোরে জোরে তাঁদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডাকলেন। পরে লেবীয়দের মধ্য থেকে যেশূয়, কদ্‌মীয়েল, বানি, হশব্‌নিয়, শেরেবিয়, হোদিয়, শবনিয় ও পথাহিয় বললেন, “আপনারা উঠে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করুন, যিনি অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত আছেন।” তারপর তারা এই বলে প্রার্থনা করলেন, “হে সদাপ্রভু, তোমার মহিমাপূর্ণ নামের প্রশংসা হোক; আমাদের দেওয়া সমস্ত ধন্যবাদ ও প্রশংসার চেয়েও তুমি মহান। কেবল তুমিই সদাপ্রভু। তুমিই আকাশ, মহাকাশ ও তার মধ্যেকার সব কিছু, পৃথিবী ও তার উপরকার সব কিছু এবং সাগর ও তার মধ্যেকার সব কিছু তৈরী করেছ। তুমিই সকলের প্রাণ দিয়েছ এবং স্বর্গের সকলেই তোমার উপাসনা করে। “তুমিই সদাপ্রভু ঈশ্বর। তুমি অব্রামকে বেছে নিয়ে কল্‌দীয়দের দেশ ঊর থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলে আর তাঁর নাম রেখেছিলে অব্রাহাম। তুমি তাঁর অন্তর বিশ্বস্ত দেখে কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, যিবূষীয় ও গির্গাশীয়দের দেশ তাঁর বংশকে দেবার জন্য তাঁর জন্য একটা ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলে। তুমি ন্যায়বান বলে তোমার প্রতিজ্ঞা তুমি রক্ষা করেছিলে। “মিসর দেশে আমাদের পূর্বপুরুষদের কষ্টভোগ তুমি দেখেছিলে; লোহিত সাগরের পারে তাদের কান্না তুমি শুনেছিলে। ফরৌণ, তাঁর সমস্ত কর্মচারী ও তাঁর দেশের সমস্ত লোকদের তুমি অনেক চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ দেখিয়েছিলে, কারণ তুমি জানতে আমাদের পূর্বপুরুষদের সংগে মিসরীয়দের ব্যবহার ছিল অহংকারে পূর্ণ। এই সমস্ত কাজ করে তুমি তোমার সুনাম রক্ষা করেছিলে, যা এখনও রয়েছে। তুমি তাদের সামনে সাগরকে দু’ভাগ করেছিলে, তাই তারা শুকনা জমির উপর দিয়ে পার হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু যারা তাদের তাড়া করে আসছিল তুমি তাদের জলের স্রোতে পাথর ফেলবার মত করে গভীর জলে ফেলে দিয়েছিলে। তুমি দিনের বেলায় মেঘের থাম দিয়ে তাদের চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলে আর রাতে আগুনের থাম দিয়ে তাদের যাওয়ার পথে আলো দিয়েছিলে। “তুমি সিনাই পাহাড়ের উপরে নেমে এসেছিলে এবং স্বর্গ থেকে তাদের সংগে কথা বলেছিলে। সেই সময় তুমি ন্যায্য নির্দেশ, সঠিক আইন-কানুন এবং ভাল নিয়ম ও আদেশ তাদের দিয়েছিলে। তোমার পবিত্র বিশ্রামবার সম্বন্ধে তুমি তাদের জানিয়েছিলে এবং তোমার দাস মোশির মধ্য দিয়ে তুমি তাদের আদেশ, নিয়ম ও আইন দিয়েছিলে। খিদে মিটাবার জন্য তুমি স্বর্গ থেকে তাদের খাবার দিয়েছিলে আর পিপাসা মিটাবার জন্য পাথর থেকে জল বের করে দিয়েছিলে। যে দেশ তাদের দেবার জন্য তুমি শপথ করেছিলে সেখানে গিয়ে তা অধিকার করবার জন্য তুমি তাদের আদেশ দিয়েছিলে। “তবুও আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যবহার ছিল অহংকারে পূর্ণ; তারা একগুঁয়ে হয়েছিল আর তোমার আদেশ পালন করে নি। তারা বাধ্য থাকতে অস্বীকার করেছিল, আর যে সব আশ্চর্য কাজ তুমি তাদের মধ্যে করেছিলে তাও তারা মনে রাখে নি। তারা একগুঁয়েমি করে আবার দাসত্ব করতে মিসরে ফিরে যাবার জন্য একজন নেতাকে নিযুক্ত করেছিল। কিন্তু তুমি ক্ষমাশীল ঈশ্বর, দয়াময় ও করুণায় পূর্ণ; তুমি সহজে অসন্তুষ্ট হও না এবং তোমার ভালবাসার সীমা নেই। তাই তুমি তাদের ত্যাগ কর নি। তুমি তাদের শিক্ষা দেবার জন্য তোমার মংগলময় আত্মাকে দান করেছিলে। তাদের খাওয়ার জন্য তুমি যে মান্না দিয়েছিলে তা বন্ধ করে দাও নি; তুমি তাদের পিপাসা মিটাবার জন্য জল দিয়েছিলে। মরু-এলাকায় চল্লিশ বছর ধরে তুমি তাদের পালন করেছিলে। তাদের কিছুরই অভাব হয় নি; তাদের কাপড়-চোপড়ও পুরানো হয় নি এবং তাদের পা-ও ফোলে নি। “পরে তুমি অনেক রাজ্য ও জাতি তাদের হাতে দিয়েছিলে, এমন কি, তাদের সমস্ত জায়গাও তাদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলে। তারা হিষ্‌বোণের রাজা সীহোনের দেশ ও বাশনের রাজা ওগের দেশ অধিকার করেছিল। আকাশের তারার মত তুমি তাদের অসংখ্য সন্তান দিয়েছিলে এবং তুমি তাদের সেই দেশে নিয়ে গিয়েছিলে যে দেশে ঢুকে তা অধিকার করবার কথা তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের বলেছিলে। তাদের সন্তানেরা সেই দেশে গিয়ে তা দখল করে নিয়েছিল। সেই দেশে বাসকারী কনানীয়দের তুমি তাদের সামনে নত করেছিলে। কনানীয়দের, তাদের রাজাদের ও দেশের অন্যান্য জাতিদের তুমি তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলে যাতে তারা তাদের উপর যা খুশী তা-ই করতে পারে। তারা দেয়াল-ঘেরা অনেক শহর ও উর্বর জমি অধিকার করেছিল; তারা সব রকম ভাল ভাল জিনিষে ভরা বাড়ী-ঘর ও আগেই খোঁড়া হয়েছে এমন অনেক কূয়া, আংগুর ক্ষেত, জলপাইয়ের বাগান এবং অনেক ফলের গাছ অধিকার করেছিল। তারা খেয়ে তৃপ্ত হয়ে মোটা-সোটা হয়েছিল এবং তোমার দেওয়া প্রচুর মংগল ভোগ করেছিল। “কিন্তু তবুও তারা অবাধ্য হয়ে তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল; তোমার আইন-কানুন তারা ত্যাগ করেছিল। তোমার যে নবীরা তাদের সতর্ক করতেন যাতে তারা তোমার দিকে ফিরে আসে সেই নবীদের তারা মেরে ফেলেছিল; তারা তোমাকে ভীষণ অপমান করেছিল। কাজেই তুমি শত্রুদের হাতে তাদের তুলে দিয়েছিলে আর শত্রুরা তাদের উপর অত্যাচার করত। তাদের কষ্টের সময় তারা তোমার কাছে কান্নাকাটি করেছিল আর তুমি স্বর্গ থেকে তা শুনেছিলে। তুমি প্রচুর করুণায় তাদের কাছে উদ্ধারকারীদের পাঠিয়ে দিয়েছিলে। তারা শত্রুদের হাত থেকে তাদের উদ্ধার করেছিল। “কিন্তু যেই তারা বিশ্রাম পেত অমনি আবার তারা তোমার চোখে যা মন্দ তা-ই করত। এর পর তুমি শত্রুদের হাতে তাদের ছেড়ে দিয়েছিলে যাতে শত্রুরা তাদের কর্তা হতে পারে। কিন্তু আবার যখন তারা তোমার কাছে কাঁদত তখন স্বর্গ থেকে তা শুনে তোমার করুণায় তুমি বারে বারে তাদের উদ্ধার করতে। “তোমার আইন-কানুনের দিকে ফিরে আসবার জন্য তুমি তাদের সতর্ক করেছিলে কিন্তু তাদের ব্যবহার ছিল অহংকারে পূর্ণ; তারা তোমার সব আদেশ অমান্য করেছিল। তোমার যে সব নির্দেশ পালন করলে মানুষ বাঁচে তার বিরুদ্ধে তারা পাপ করেছিল। তারা একগুঁয়েমি করে এবং ঘাড় শক্ত করে তোমার কথা শুনতে চায় নি। কিন্তু তবুও অনেক বছর ধরে তুমি তাদের উপর ধৈর্য ধরেছিলে। তোমার নবীদের মধ্য দিয়ে তোমার আত্মার দ্বারা তুমি তাদের সতর্ক করেছিলে, কিন্তু তাতে তারা কান দেয় নি। কাজেই বিভিন্ন জাতির হাতে তুমি তাদের তুলে দিয়েছিলে। কিন্তু তোমার প্রচুর করুণার জন্য তুমি তাদের শেষ করে দাও নি কিম্বা ত্যাগ কর নি, কারণ তুমি দয়াময় ও করুণায় পূর্ণ ঈশ্বর। “হে আমাদের ঈশ্বর, তুমি মহান, শক্তিশালী ও ভয় জাগানো ঈশ্বর। তোমার অটল ভালবাসার ব্যবস্থা তুমি রক্ষা করে থাক। আসিরিয়ার রাজাদের সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই যে সব কষ্ট আমাদের উপরে এবং আমাদের রাজাদের, নেতাদের, পুরোহিতদের, নবীদের, আমাদের পূর্বপুরুষদের ও তোমার সমস্ত লোকদের উপরে চলছে তা তোমার চোখে যেন সামান্য মনে না হয়। তুমি আমাদের উপর যা কিছু ঘটতে দিয়েছ তাতে তুমি অন্যায় কর নি; তুমি বিশ্বস্ত ভাবে কাজ করেছ আর আমরা অন্যায় করেছি। আমাদের রাজারা, নেতারা, পুরোহিতেরা ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা তোমার আইন-কানুন মেনে চলেন নি; তোমার আদেশ কিম্বা সতর্কবাণী তাঁরা শোনেন নি। তাঁদের রাজত্বকালে তাঁরা তোমার দেওয়া বড় ও উর্বর দেশে প্রচুর মংগল ভোগ করছিলেন, তবুও তাঁরা তোমার সেবা করেন নি কিম্বা তাঁদের মন্দ পথ থেকে ফেরেন নি। “দেখ, আজ আমরা দাস; যে দেশটা তুমি আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলে যাতে তারা তার ফল আর সব রকমের ভাল জিনিস খেতে পারে আমরা সেখানেই দাস হয়ে রয়েছি। আমাদের পাপের দরুন যে রাজাদের তুমি আমাদের উপরে রাজত্ব করতে দিয়েছ দেশের প্রচুর ফসল তাঁদের কাছেই যায়। তাঁরা তাঁদের খুশী মতই আমাদের শরীরের উপরে ও আমাদের পশুপালের উপরে কর্তৃত্ব করেন। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছি।” তারপর লোকেরা লিখল: “এই সব কারণে আমরা এখন নিজেদের মধ্যে লিখিত ভাবে চুক্তি করছি, আর তার উপর আমাদের নেতারা, লেবীয়েরা ও পুরোহিতেরা তাঁদের সীলমোহর দিচ্ছেন।” যাঁরা তার উপর সীলমোহর দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন হখলিয়ের ছেলে শাসনকর্তা নহিমিয় ও সিদিকিয়, সরায়, অসরিয়, যিরমিয়, পশহূর, অমরিয়, মল্কিয়, মশুল্লম, অবিয়, মিয়ামীন, মাসিয়, বিল্‌গয় ও শময়িয়। এঁরা সবাই পুরোহিত ছিলেন। মীখা, রহোব, হশবিয়, সক্কূর, শেরেবিয়, শবনিয়, হোদীয়, বানি ও বনীনু। লোকদের নেতাদের মধ্য থেকে যাঁরা সীলমোহর দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন পরোশ, পহৎ-মোয়াব, এলম, সত্তূ, বানি, বুন্নি, অস্‌গদ, বেবয়, অদোনিয়, বিগ্‌বয়, আদীন, অহিয়, হানন, অনান, মল্লূক, হারীম ও বানা। আমরা আমাদের আশেপাশের জাতিদের সংগে আমাদের মেয়েদের বিয়ে দেব না কিম্বা আমাদের ছেলেদের জন্য তাদের মেয়েদের নেব না। বিশ্রামবারে কিম্বা অন্য কোন পবিত্র দিনে যদি আশেপাশের জাতির লোকেরা কোন জিনিসপত্র কিম্বা শস্য বিক্রি করবার জন্য নিয়ে আসে তবে তাদের কাছ থেকে আমরা তা কিনব না। প্রত্যেক সপ্তম বছরে আমরা জমি চাষ করব না এবং সমস্ত ঋণ ক্ষমা করে দেব। আমাদের ঈশ্বরের ঘরের সেবা-কাজের জন্য প্রতি বছর এক শেখেলের তিন ভাগের এক ভাগ দেবার দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করলাম। এই সব শেখেল দিয়ে যেন টেবিলের উপরকার সম্মুখ-রুটি দেওয়া যায় এবং নিয়মিত শস্য ও পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান, বিশ্রামবারের উৎসর্গের অনুষ্ঠান, অমাবস্যা ও অন্যান্য নির্দিষ্ট পর্ব পালনের অনুষ্ঠান, পবিত্র জিনিস উৎসর্গের অনুষ্ঠান এবং ইস্রায়েলীয়দের পাপ ঢাকা দেবার জন্য পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা যায় আর আমাদের ঈশ্বরের ঘরের সমস্ত কাজ করা যায়। আমাদের আইন-কানুনে যেমন লেখা আছে সেইমত আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বেদীর উপরে পোড়াবার জন্য প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের ঈশ্বরের ঘরে আমাদের প্রত্যেক বংশকে কখন কাঠ আনতে হবে তা স্থির করবার জন্য আমরা, অর্থাৎ পুরোহিতেরা, লেবীয়েরা ও লোকেরা গুলিবাঁট করলাম। আমরা প্রতি বছর প্রথমে কাটা ফসল ও প্রত্যেকটি গাছের প্রথম ফল সদাপ্রভুর ঘরে আনব। আইন-কানুনে যেমন লেখা আছে সেইমত আমরা আমাদের প্রথম পুরুষ সন্তান ও পশুর প্রথম বাচ্চা আর পালের গরু, ছাগল ও ভেড়ার প্রথম বাচ্চা আমাদের ঈশ্বরের ঘরের সেবাকারী পুরোহিতদের কাছে নিয়ে যাব। এছাড়া আমাদের ময়দার ও শস্য-উৎসর্গের প্রথম অংশ, সমস্ত গাছের প্রথম ফল ও নতুন আংগুর-রস ও তেলের প্রথম অংশ আমরা আমাদের ঈশ্বরের ঘরের ভাণ্ডার-ঘরে পুরোহিতদের কাছে নিয়ে আসব। আর আমাদের ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ লেবীয়দের কাছে নিয়ে আসব, কারণ আমাদের সব গ্রামে লেবীয়েরাই দশমাংশ গ্রহণ করে থাকেন। লেবীয়েরা যখন দশমাংশ নেবেন তখন তাঁদের সংগে থাকবেন হারোণের বংশের একজন পুরোহিত। লেবীয়েরা সেই সব দশমাংশের দশ ভাগের এক ভাগ আমাদের ঈশ্বরের ঘরের ধনভাণ্ডারের কামরাগুলোতে নিয়ে যাবেন। ধনভাণ্ডারের যে সব কামরায় পবিত্র স্থানের জিনিসপত্র রাখা হয় এবং সেবাকারী পুরোহিতেরা, রক্ষীরা ও গায়কেরা থাকেন সেখানে ইস্রায়েলীয়েরা ও লেবীয়েরা তাদের শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেল নিয়ে আসবে। আমাদের ঈশ্বরের ঘরের কাজের জন্য যা কিছু দরকার আমরা তা দিতে থাকব। লোকদের নেতারা যিরূশালেমে বাস করতেন। বাকী লোকেরা গুলিবাঁট করল যাতে তাদের মধ্যে প্রতি দশজনের একজন পবিত্র শহর যিরূশালেমে বাস করতে পারে, আর বাকী নয়জন তাদের নিজের নিজের গ্রামেই থাকবে। যে সব লোক ইচ্ছা করে যিরূশালেমে বাস করতে চাইল লোকেরা তাদের প্রশংসা করল। পেরসের বংশের মোট চারশো আটষট্টিজন শক্তিশালী লোক যিরূশালেমে বাস করত। শিখ্রির ছেলে যোয়েল ছিলেন তাদের প্রধান কর্মচারী আর হস্‌সনূয়ার ছেলে যিহূদা ছিলেন শহরের দ্বিতীয় কর্তা। লেবীয়দের মধ্য থেকে হশূবের ছেলে শিময়িয়; হশূবের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন অস্রীকাম, হশবিয় ও বুন্নি। এছাড়া ছিলেন শব্বথয় আর যোষাবাদ নামে লেবীয়দের মধ্যে দু’জন প্রধান লোক, যাঁদের হাতে ঈশ্বরের ঘরের বাইরের কাজকর্ম দেখাশোনা করবার ভার ছিল। এঁরা ছাড়া ছিলেন মীখার ছেলে মত্তনিয়, যিনি ধন্যবাদ ও প্রার্থনা পরিচালনার কাজে প্রধান ছিলেন। মীখার পূর্বপুরুষেরা ছিলেন সব্দি ও আসফ। এঁদের সংগে ছিলেন বক্‌বুকিয়, যিনি তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে দ্বিতীয়। আরও ছিলেন শম্মুয়ের ছেলে অব্দ; শম্মুয়ের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন গালল ও যিদূথূন। পবিত্র শহরের লেবীয়দের মোট সংখ্যা ছিল দু’শো চুরাশী। ফটক-রক্ষীরা হল অক্কুব, টল্‌মোন ও তাদের সংগীরা। এরা একশো বাহাত্তর জন লোক ফটকগুলো পাহারা দিত। ইস্রায়েলীয়দের বাকী লোকেরা, পুরোহিতেরা ও লেবীয়েরা যিহূদার সমস্ত শহর ও গ্রামের মধ্যে প্রত্যেকে যে যার পূর্বপুরুষের জায়গা-জমিতে বাস করত। উপাসনা-ঘরের সেবাকারীরা ওফল পাহাড়ে বাস করত। তাদের দেখাশোনার ভার ছিল সীহ ও গীষ্পের উপর। যিরূশালেমে লেবীয়দের প্রধান কর্মচারী ছিলেন বানির ছেলে উষি। বানির পূর্বপুরুষেরা ছিলেন হশবিয়, মত্তনীয়, মীখা ও আসফ। আসফের বংশের লোকেরা গায়ক হিসাবে ঈশ্বরের ঘরে সেবা-কাজ করতেন। রাজার আদেশের অধীনে ছিলেন এই গায়কেরা। সেই আদেশ দ্বারাই তাঁদের প্রতিদিনকার কাজ ঠিক করা হত। লোকদের সমস্ত বিষয়ে রাজার পরামর্শদাতা ছিলেন মশেষবেলের ছেলে পথাহিয়। মশেষবেলের পূর্বপুরুষ ছিলেন সেরহ ও যিহূদা। যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকেরা যে সব গ্রাম ও সেগুলোর ক্ষেত-খামারগুলোতে বাস করত তা হল কিরিয়ৎ-অর্ব ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো, দীবোন ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো, যিকব্‌-সেল ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো, যেশূয়, মোলাদা, বৈৎ-পেলট, হৎসর-শুয়াল, বের্‌-শেবা ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো, সিক্লগ, মকোনা ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো, ঐন্‌-রিম্মোন, সরা, যর্মূত, সানোহ, অদুল্লম ও সেগুলোর আশেপাশের গ্রামগুলো, লাখীশ ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো এবং অসেকা ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো। তারা বের্‌-শেবা থেকে শুরু করে হিন্নোম উপত্যকা পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় বাস করত। বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোকেরা যে সব গ্রামে বাস করত সেগুলো হল গেবা, মিক্‌মস, অয়া, বৈথেল ও তার আশেপাশের গ্রামগুলো, অনাথোৎ, নোব, অননিয়া, এছাড়া কিছু লেবীয়, যারা আগে যিহূদা-এলাকায় বাস করত, তারা বিন্যামীন-এলাকায় গিয়ে বাস করতে লাগল। যে সব পুরোহিত ও লেবীয়েরা শল্টীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল ও যেশূয়ের সংগে বন্দীদশা থেকে ফিরে এসেছিলেন তাঁরা হলেন: পুরোহিতদের মধ্যে সরায়, যিরমিয়, ইষ্রা, অমরিয়, মল্লুক, হটুশ, শখনিয়, রহূম, মরেমোৎ, সল্লূ, আমোক, হিল্কিয় ও যিদয়িয়। যেশূয়ের সময়ে এঁরা ছিলেন পুরোহিতদের ও তাঁদের বংশের লোকদের মধ্যে প্রধান। লেবীয়দের মধ্যে যেশূয়, বিন্নূয়ী, কদ্‌মীয়েল, শেরেবিয়, যিহূদা, ও মত্তনিয়। ধন্যবাদের গানের তদারকির ভার ছিল এই মত্তনিয় ও তাঁর বংশের লোকদের উপর। সেবা-কাজের সময় তাদের মুখোমুখি দাঁড়াতেন তাদেরই বংশের বক্‌বুকিয় ও উন্নো। যেশূয়ের ছেলের নাম যোয়াকীম, যোয়াকীমের ছেলের নাম ইলিয়াশীব, ইলিয়াশীবের ছেলের নাম যোয়াদা; যোয়াদার ছেলের নাম যোনাথন আর যোনাথনের ছেলের নাম যদ্দূয়। যোয়াকীমের সময়ে পুরোহিত-বংশগুলোর মধ্যে যাঁরা প্রধান ছিলেন তাঁরা হলেন সরায়ের বংশের মরায়, যিরমিয়ের বংশের হনানিয়, ইষ্রার বংশের মশুল্লম, অমরিয়ের বংশের যিহোহানন, মল্লূকীর বংশের যোনাথন, শবনিয়ের বংশের যোষেফ, হারীমের বংশের অদ্‌ন, মরায়োতের বংশের হিল্কয় ইদ্দোর বংশের সখরিয়, গিন্নথোনের বংশের মশুল্লম, অবিয়ের বংশের সিখ্রি, মিনিয়ামীনের বংশের একজন, মোয়দিয়ের বংশের পিল্টয়, বিল্‌গার বংশের সম্মুয়, শময়িয়ের বংশের যিহোনাথন, যোয়ারীবের বংশের মত্তনয়, যিদয়িয়ের বংশের উষি, সল্লয়ের বংশের কল্লয়, আমোকের বংশের এবর, হিল্কিয়ের বংশের হশবিয়, যিদয়িয়ের বংশের নথনেল। ইলিয়াশীব, যোয়াদা, যোহানন, ও যদ্দূয়ের জীবনকালে লেবীয়দের এবং পুরোহিতদের বংশের প্রধানদের নাম তালিকায় লেখা হচ্ছিল, আর তা শেষ হয়েছিল পারস্যের রাজা দারিয়াবসের রাজত্বকালে। লেবির বংশের প্রধানদের নাম ইলিয়াশীবের ছেলে যোহাননের সময় পর্যন্ত বংশাবলি নামে বইয়ের মধ্যে লেখা হয়েছিল। লেবীয়দের নেতা হশবিয়, শেরেবিয়, কদ্‌মীয়েলের ছেলে যেশূয় ও তাঁদের বংশের লোকেরা ঈশ্বরের লোক দায়ূদের কথামতই অন্য দলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দলের পর দল ঈশ্বরের প্রশংসা করতেন ও ধন্যবাদ দিতেন। মত্তনিয়, বক্‌বুকিয়, ওবদিয়, মশূল্লম, টল্‌মোন ও অক্কুব ছিল রক্ষী। এরা ফটকের কাছের ভাণ্ডার-ঘরগুলো পাহারা দিত। যেশূয়ের ছেলে, অর্থাৎ যোষাদকের নাতি যোয়াকীম ও শাসনকর্তা নহিমিয় এবং পুরোহিত ও ধর্ম-শিক্ষক ইষ্রার সময়ে এরা পাহারা দিত। যিরূশালেমের দেয়াল ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গের অনুষ্ঠানের সময়ে লেবীয়েরা যেখানে বাস করত সেখান থেকে তাদের যিরূশালেমে আনা হল যাতে তারা করতাল, বীণা, ও সুরবাহার বাজিয়ে ও ধন্যবাদের গান গেয়ে আনন্দের সংগে সেই অনুষ্ঠান পালন করতে পারে। পুরোহিত ও লেবীয়েরা নিজেদের শুচি করলেন এবং লোকদেরও শুচি করলেন; পরে ফটকগুলো ও দেয়াল শুচি করলেন। তারপর আমি যিহূদার নেতাদের সেই দেয়ালের উপরে নিয়ে গেলাম এবং ধন্যবাদ দেবার জন্য দু’টা বড় গানের দল নিযুক্ত করলাম। একটা দল দেয়ালের উপর দিয়ে ডান দিকে সার-ফটকের দিকে গেল। তাদের পিছনে গেল হোশয়িয় ও যিহূদার নেতাদের অর্ধেক লোক। তাঁদের সংগে গেলেন অসরিয়, ইষ্রা, মশুল্লম, ফোয়ারা-ফটকের কাছে যেখানে দেয়াল উপরের দিকে উঠে গেছে সেখানে তাঁরা সোজা দায়ূদ-শহরে উঠবার সিঁড়ি দিয়ে উঠে দায়ূদের বাড়ীর পাশ দিয়ে পূর্ব দিকে জল-ফটকে গেলেন। দ্বিতীয় গানের দলটা উল্টা দিকে এগিয়ে গেল। আমি বাকী অর্ধেক লোক নিয়ে দেয়ালের উপর দিয়ে তাদের পিছনে পিছনে গেলাম। তারা তুন্দুর-দুর্গ পার হয়ে চওড়া দেয়াল পর্যন্ত গেল। তারপর ইফ্রয়িম-ফটক, যিশানা-ফটক, মাছ-ফটক, হননেলের দুর্গ ও হম্মেয়ার দুর্গের পাশ দিয়ে মেষ-ফটক পর্যন্ত গেল। তারপর পাহারাদার-ফটকের কাছে গিয়ে তারা থামল। যে দু’টি গানের দল ধন্যবাদ দিয়েছিল তারা তারপর ঈশ্বরের ঘরের মধ্যে তাদের জায়গায় গিয়ে দাঁড়াল। আমিও তা-ই করলাম আর আমার সংগে রইলেন উঁচু পদের কর্মচারীদের মধ্য থেকে অর্ধেক লোক। ইলীয়াকীম, মাসেয়, মিনিয়ামীন, মীখায়, ইলিয়ৈনয়, সখরিয় ও হনানিয় নামে পুরোহিতেরা তাঁদের তূরী নিয়ে আমার সংগে রইলেন। এছাড়া রইলেন মাসেয়, শময়িয়, ইলিয়াসর, উষি, যিহোহানন, মল্কিয়, এলম ও এষর। গানের দলের লোকেরা যিষ্রহিয়ের নির্দেশ মত গান করল। ঈশ্বর তাদের প্রচুর আনন্দ দান করেছেন বলে সেই দিন লোকেরা বড় একটা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল ও খুব আনন্দ করল। তাদের স্ত্রীলোকেরা ও ছেলেমেয়েরাও আনন্দ করল। যিরূশালেমের লোকদের এই আনন্দের আওয়াজ অনেক দূর পর্যন্ত শোনা গেল। ভাণ্ডার-ঘরে যে সব দান, প্রথমে তোলা ফসল ও দশমাংশ আনা হত তার তদারকির জন্য সেই সময় লোকদের নিযুক্ত করা হল। তারা গ্রামগুলোর আশেপাশের ক্ষেত থেকে আইন-কানুন অনুসারে পুরোহিত ও লেবীয়দের জন্য লোকদের কাছ থেকে ফসলের অংশ নিয়ে আসত। যিহূদার লোকেরা খুশী মনে দিত, কারণ সেবাকারী পুরোহিত ও লেবীয়দের কাজে তারা সন্তুষ্ট ছিল। দায়ূদ ও তাঁর ছেলে শলোমনের আদেশ অনুসারে পুরোহিত ও লেবীয়েরা তাঁদের ঈশ্বরের সেবা-কাজ ও শুচি করবার কাজ করতেন আর গায়ক ও রক্ষীরাও তাদের নির্দিষ্ট কাজ করত। অনেক কাল আগে দায়ূদ ও আসফের সময়ে ঈশ্বরের উদ্দেশে গৌরব ও ধন্যবাদের গান গাইবার জন্য গায়কদের ও পরিচালকদের নিযুক্ত করা হয়েছিল। সরুব্বাবিল ও নহিমিয়ের সময়েও ইস্রায়েলীয়েরা সকলেই গায়ক ও রক্ষীদের প্রতিদিনের পাওনা অংশ দিত। এছাড়া তারা অন্যান্য লেবীয়দের পাওনা অংশও আলাদা করে রাখত আর লেবীয়েরা আলাদা করে রাখত হারোণের বংশধরদের পাওনা অংশ। পরে যখন লোকদের কাছে মোশির বইখানা পড়া হল তখন সেখানে দেখা গেল লেখা আছে, কোন অম্মোনীয় বা মোয়াবীয় ঈশ্বরের লোকদের সমাজে কখনও যোগ দিতে পারবে না। এর কারণ হল, মোশির সময়ে তারা খাবার ও জল নিয়ে ইস্রায়েলীয়দের কাছে যায় নি, বরং তারা তাদের অভিশাপ দেবার জন্য বিলিয়মকে ভাড়া করেছিল। কিন্তু আমাদের ঈশ্বর সেই অভিশাপের বদলে আশীর্বাদ করেছিলেন। লোকেরা আইন-কানুনের এই কথা শুনে বিদেশীদের বংশধরদের সবাইকে ইস্রায়েলীয়দের সমাজ থেকে বাদ দিয়ে দিল। কিন্তু এই সব যখন হচ্ছিল তখন আমি যিরূশালেমে ছিলাম না, কারণ বাবিলের রাজা অর্তক্ষস্তের বত্রিশ বছর রাজত্বের সময়ে আমি রাজার কাছে ফিরে গিয়েছিলাম। এর কিছুদিন পরে আমি রাজার অনুমতি নিয়ে যিরূশালেমে ফিরে আসলাম। ঈশ্বরের ঘরে টোবিয়কে একটা কামরা দিয়ে ইলিয়াশীব যে মন্দ কাজ করেছেন আমি যিরূশালেমে ফিরে এসে সেই বিষয় শুনলাম। এতে আমি ভীষণ বিরক্ত হয়ে টোবিয়ের সব জিনিসপত্র সেই কামরা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। তারপর আমার আদেশে সেই ঘরগুলো শুচি করা হল আর আমি ঈশ্বরের ঘরের জিনিসপত্র, শস্য-উৎসর্গের জিনিস আর ধূপ আবার সেখানে এনে রাখলাম। আমি এও জানতে পারলাম যে, গায়কদের ও অন্যান্য লেবীয়দের পাওনা অংশ দেওয়া হয় নি বলে তারা তাদের সেবা-কাজ ছেড়ে নিজের নিজের ক্ষেত-খামারে ফিরে গেছে। এতে আমি উঁচু পদের কর্মচারীদের বকুনি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “ঈশ্বরের ঘরের কাজের জন্য যা দরকার তা দিতে কেন অবহেলা করা হয়েছে?” তারপর আমি সেই সব লেবীয়দের ডেকে একত্র করে তাদের নিজের নিজের পদে বহাল করলাম। তারপর যিহূদার সব লোক তাদের শস্যের, নতুন আংগুর-রসের ও তেলের দশমাংশ ভাণ্ডার-ঘরে নিয়ে আসল। পুরোহিত শেলিমিয়, ধর্ম-শিক্ষক সাদোক ও পদায় নামে একজন লেবীয়কে আমি ভাণ্ডার-ঘরের ভার দিলাম এবং সক্কুরের ছেলে, অর্থাৎ মত্তনিয়ের নাতি হাননকে তাঁদের সাহায্যকারী হিসাবে নিযুক্ত করলাম। সবাই এই লোকদের বিশ্বাসযোগ্য মনে করত। তাঁদের উপর তাঁদের গোষ্ঠী-ভাইদের অংশ ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হল। হে আমার ঈশ্বর, এই সব কাজের জন্য আমাকে মনে রেখো। আমার ঈশ্বরের ঘর ও সেই ঘরের সেবা-কাজের জন্য আমি বিশ্বস্তভাবে যা করেছি তা মুছে ফেলে দিয়ো না। ঐ সময় আমি দেখলাম যিহূদার লোকেরা বিশ্রামবারে আংগুর-মাড়াইয়ের কাজ করছে ও ফসল আনছে এবং সেই ফসল, আংগুর-রস, আংগুর, ডুমুর এবং অন্য সব রকমের বোঝা তারা গাধার উপর চাপাচ্ছে। এছাড়া তারা বিশ্রামবারে ঐ সব যিরূশালেমে নিয়ে আসছে। কাজেই বিশ্রামবারে খাবার জিনিস বিক্রি করবার বিষয়ে আমি তাদের সাবধান করলাম। যিরূশালেমে বাসকারী সোরের লোকেরা মাছ আর বিক্রি করবার অন্যান্য সব জিনিস এনে বিশ্রামবারে যিরূশালেমে যিহূদার লোকদের কাছে বিক্রি করছিল। আমি তখন যিহূদার গণ্যমান্য লোকদের বকুনি দিয়ে বললাম, “আপনারা এ কি করছেন? আপনারা তো এই অন্যায় কাজ করে বিশ্রামবারের পবিত্রতা নষ্ট করছেন। আপনাদের পূর্বপুরুষেরা কি সেই একই কাজ করেন নি, যার দরুন আমাদের ঈশ্বর আমাদের উপর ও এই শহরের উপর এই সব সর্বনাশ ঘটিয়েছেন? আর এখন আপনারা বিশ্রামবারের পবিত্রতা নষ্ট করে ইস্রায়েলীয়দের উপর ঈশ্বরের আরও অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলছেন।” আমি এই আদেশ দিলাম যে, বিশ্রামবারের আরম্ভে যখন যিরূশালেমের ফটকগুলোর উপর সন্ধ্যার ছায়া নেমে আসবে তখন যেন ফটকগুলো বন্ধ করা হয় এবং বিশ্রামবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ রাখা হয়। বিশ্রামবারে যাতে কোন বোঝা ভিতরে আনা না হয় তা দেখবার জন্য আমি আমার নিজের কয়েকজন কর্মচারীকে ফটকগুলোতে নিযুক্ত করলাম। এতে ব্যবসায়ীরা ও যারা সব রকম জিনিস বিক্রি করে তারা দু’-এক বার যিরূশালেমের বাইরে রাত কাটাল। কিন্তু আমি তাদের সাবধান করে দিয়ে বললাম, “তোমরা দেয়ালের কাছে কেন রাত কাটাচ্ছ? তোমরা যদি আবার এই কাজ কর তবে আমি তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।” সেই থেকে তারা আর বিশ্রামবারে আসত না। তারপর আমি লেবীয়দের আদেশ দিলাম যেন তারা নিজেদের শুচি করে এবং বিশ্রামবার পবিত্র রাখবার জন্য গিয়ে ফটকগুলো পাহারা দেয়। হে আমার ঈশ্বর, এর জন্যও তুমি আমাকে মনে রেখো এবং তোমার অটল ভালবাসা অনুসারে আমাকে দয়া কর। সেই সময় আমি এও দেখলাম যে, যিহূদার কোন কোন লোক অস্‌দোদ, অম্মোন ও মোয়াবের মেয়েদের বিয়ে করেছে। তাদের মধ্যে অনেক ছেলেমেয়ে অস্‌দোদের কিম্বা অন্যান্য জাতির ভাষায় কথা বলে। তারা যিহূদার ভাষায় কথা বলতে জানে না। আমি তাদের বকুনি দিলাম আর বললাম তাদের উপর যেন অভিশাপ নেমে আসে। তাদের কয়েকজন লোককে আমি মারলাম এবং চুল উপড়ে ফেললাম। ঈশ্বরের নামে আমি তাদের দিয়ে এই শপথ করালাম যে, তারা বিদেশী ছেলেদের সংগে তাদের মেয়েদের বিয়ে দেবে না এবং নিজেরা বা তাদের ছেলেরা বিদেশী মেয়েদের বিয়ে করবে না। তারপর আমি তাদের বললাম, “ইস্রায়েলের রাজা শলোমন এই রকম বিয়ে করবার দরুন পাপ করেছিলেন। অন্য কোন জাতির মধ্যে তাঁর মত রাজা কেউ-ই ছিলেন না এবং ঈশ্বর তাঁকে ভালবাসতেন আর তাঁকে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের উপর রাজা করেছিলেন, কিন্তু তবুও তিনি বিদেশী স্ত্রীলোকদের দরুন পাপ করেছিলেন। এখন আমাদের কি এই কথাই শুনতে হবে যে, তোমরাও এই সব ভীষণ দুষ্টতার কাজ করেছ, অর্থাৎ বিদেশী স্ত্রীলোকদের বিয়ে করে আমাদের ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছ?” প্রধান পুরোহিত ইলিয়াশীবের ছেলে যিহোয়াদার এক ছেলে হোরোণীয় সন্‌বল্লটের মেয়েকে বিয়ে করেছিল। সেইজন্য আমি সেই ছেলেকে আমার কাছ থেকে তাড়িয়ে দিলাম। হে আমার ঈশ্বর, এদের কথা মনে রেখো, কারণ এরা পুরোহিতের পদ অপবিত্র করেছে এবং পুরোহিত ও লেবীয়দের কাজের চুক্তি ভেংগেছে। এইভাবে আমি সকলের মধ্য থেকে বিদেশীয় সব কিছু দূর করে দিলাম। পরে পুরোহিত ও লেবীয়দের কাজ অনুসারে তাদের প্রত্যেকের কাজ ভাগ করে দিলাম। এছাড়া সময় মত কাঠ ও প্রথমে তোলা ফসল আনবার জন্যও আমি ব্যবস্থা করলাম। হে আমার ঈশ্বর, আমার মংগল করবার জন্য আমাকে স্মরণ কোরো। ॥ভব তাঁর রাজত্বের তৃতীয় বছরে তিনি তাঁর সব উঁচু পদের লোকদের ও কর্মকর্তাদের জন্য একটা ভোজ দিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পারস্য ও মাদিয়া দেশের সেনাপতিরা, গণ্যমান্য লোকেরা ও বিভাগগুলোর উঁচু পদের কর্মচারীরা। তিনি দীর্ঘ ছয় মাস ধরে তাঁর রাজ্যের প্রচুর ধন-সম্পদ ও রাজা হিসাবে তাঁর জাঁকজমক তাঁদের দেখালেন। এই দিনগুলো শেষ হয়ে যাবার পর তিনি শূশনের দুর্গে উপস্থিত উঁচু-নীচু পদের সকলের জন্য সাত দিন ধরে রাজবাড়ীর বাগানের উঠানে একটা ভোজ দিলেন। সেই বাগান সাজাবার জন্য সাদা ও নীল কাপড়ের পর্দা ব্যবহার করা হয়েছিল। সেগুলো সাদা ও বেগুনে মসীনা সুতার দড়ি দিয়ে রূপার কড়াতে মার্বেল পাথরের থামে আটকানো ছিল। মার্বেল পাথর, ঝিনুক এবং নানা রংয়ের অন্যান্য দামী পাথরের কাজ করা মেঝের উপরে সোনা ও রূপার আসন ছিল। সমস্ত পানীয় নানা রকমের সোনার পাত্রে দেওয়া হচ্ছিল। রাজার মন বড় ছিল বলে রাজবাড়ীতে আংগুর-রস ছিল পরিমাণে প্রচুর। রাজার আদেশে নিমন্ত্রিত প্রত্যেকজনকে নিজের ইচ্ছামত তা খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কারণ প্রত্যেকে যেমন চায় রাজা সেইভাবে পরিবেশন করবার জন্য রাজবাড়ীর সব চাকরদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজা অহশ্বেরশের রাজবাড়ীতে রাণী বষ্টীও মহিলাদের জন্য একটা ভোজ দিলেন। রাজার সেবাকারীরা রাজার আদেশ রাণীকে জানালে পর রাণী বষ্টী আসতে রাজী হলেন না। এতে রাজা ভীষণ রেগে আগুন হয়ে গেলেন। আইন ও বিচার সম্বন্ধে দক্ষ লোকদের সংগে রাজার পরামর্শ করবার নিয়ম ছিল বলে তিনি সেই পরামর্শদাতাদের সংগে এই বিষয় নিয়ে কথা বললেন। সেই সব পরামর্শদাতাদের মধ্যে কর্শনা, শেথর, অদ্‌মাথা, তর্শীশ, মেরস, মর্সনা ও মমূখনের উপরে রাজা বেশী নির্ভর করতেন। রাজার সামনে পারস্য ও মাদিয়া দেশের এই সাতজন উঁচু পদের কর্মচারীদের উপস্থিত হবার অধিকার ছিল এবং রাজ্যের মধ্যে সব চেয়ে বড় স্থান ছিল তাঁদের। রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “আইন অনুসারে রাণী বষ্টীর প্রতি কি করা উচিত? তাঁর সেবাকারীদের দ্বারা রাজা অহশ্বেরশ যে আদেশ রাণীকে পাঠিয়েছিলেন তা তিনি পালন করেন নি।” রাজা ও উঁচু পদের কর্মচারীদের সামনে মমূখন উত্তরে বললেন, “রাণী বষ্টী যে কেবল রাজার বিরুদ্ধে অন্যায় করেছেন তা নয়, কিন্তু রাজা অহশ্বেরশের সমস্ত উঁচু পদের কর্মচারী ও সমস্ত বিভাগের সমস্ত লোকদের বিরুদ্ধে অন্যায় করেছেন। রাণীর এই রকম ব্যবহারের কথা সমস্ত স্ত্রীলোকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যাবে এবং তারা তাদের স্বামীদের তুচ্ছ করে বলবে, ‘রাজা অহশ্বেরশের সামনে যাবার জন্য আদেশ পেয়েও রাণী বষ্টী তাঁর সামনে যান নি।’ পারস্য ও মাদিয়ার সম্মানিতা স্ত্রীলোকেরা রাণীর এই ব্যবহারের কথা শুনে আজই তাঁদের স্বামীদের সংগে একই রকম ব্যবহার করবেন। এতে অসম্মান ও ঝগড়া-বিবাদ বেড়ে যাবে। কাজেই যদি রাজার অমত না থাকে তবে তিনি যেন একটা রাজ-আদেশ দেন যে, বষ্টী আর কখনও রাজা অহশ্বেরশের সামনে আসতে পারবেন না। এই আদেশ পারস্য ও মাদিয়ার আইনে লেখা থাকুক যেন তা বাতিল করা না যায়। এছাড়া রাজা যেন বষ্টীর চেয়েও উপযুক্ত অন্য আর একজনকে রাণীর পদ দেন। রাজার এই আদেশ যখন তাঁর বিরাট রাজ্যের সব জায়গায় ঘোষণা করা হবে তখন সাধারণ থেকে সম্মানিতা সমস্ত স্ত্রীলোকেরা তাদের স্বামীদের সম্মান করবে।” এই পরামর্শ রাজা ও তাঁর উঁচু পদের কর্মচারীদের ভাল লাগল। রাজা সেইজন্য মমূখনের কথামত কাজ করলেন। তিনি তাঁর রাজ্যের সব জায়গায় প্রত্যেকটি বিভাগের অক্ষর ও প্রত্যেকটি জাতির ভাষা অনুসারে চিঠি পাঠিয়ে দিলেন যে, প্রত্যেকটি পুরুষ তার নিজের বাড়ীর কর্তা হোক এবং তার পরিবারে তার নিজের ভাষা ব্যবহার করুক। পরে রাজা অহশ্বেরশের রাগ পড়ে গেলে পর তিনি বষ্টীর কথা, অর্থাৎ বষ্টী যা করেছিলেন এবং তাঁর বিষয়ে যে আদেশ দেওয়া হয়েছিল তা চিন্তা করলেন। তখন রাজার নিজের কর্মচারীরা বলল, “মহারাজের জন্য সুন্দরী কুমারী মেয়েদের খোঁজ করা হোক। মহারাজ তাঁর রাজ্যের সমস্ত বিভাগে কর্মচারী নিযুক্ত করুন যাতে তারা সেই সব সুন্দরী মেয়েদের শূশনের দুর্গে রাজবাড়ীর হারেমে পাঠিয়ে দিতে পারে। মহারাজ হেগয় নামে যে খোজার হাতে স্ত্রীলোকদের ভার দিয়েছেন সে এই সব মেয়েদের তদারক করুক। তাদের সৌন্দর্য বাড়াবার জন্য যা লাগে তা দেওয়া হোক। তারপর মহারাজের যাঁকে ভাল লাগবে তিনিই বষ্টীর জায়গায় রাণী হবেন।” এই পরামর্শ রাজার কাছে ভাল লাগল। তিনি সেইমতই কাজ করলেন। সেই সময় মর্দখয় নামে বিন্যামীন-গোষ্ঠীর একজন যিহূদী শূশনের দুর্গে ছিলেন। তিনি ছিলেন যায়ীরের ছেলে, যায়ীর শিমিয়ির ছেলে এবং শিমিয়ি কীশের ছেলে। যিহূদার রাজা যিকনিয়ের, অর্থাৎ যিহোয়াখীনের সংগে যে সব লোককে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেম থেকে বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিলেন মর্দখয়ের পূর্বপুরুষ তাঁদের মধ্যে ছিলেন। মর্দখয়ের কাকার হদসা নামে একজন মেয়ে ছিল। মেয়েটির মা-বাপ ছিল না বলে মর্দখয় তাকে লালন-পালন করেছিলেন। এই মেয়েটি, যাঁকে ইষ্টেরও বলা হত, তিনি দেহের গড়নে ও চেহারায় সুন্দরী ছিলেন। মেয়েটির মা-বাবা মারা গেলে পর মর্দখয় তাঁকে নিজের মেয়ে হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। রাজার আদেশ ও নির্দেশ ঘোষণা করা হলে পর অনেক মেয়েকে শূশনের দুর্গে নিয়ে এসে হেগয়ের তদারকির অধীনে রাখা হল। ইষ্টেরকেও রাজবাড়ীতে নিয়ে গিয়ে হেগয়ের কাছে রাখা হল। মেয়েটিকে হেগয়ের খুব ভাল লাগল এবং হেগয়ের কাছ থেকে মেয়েটি ভাল ব্যবহার পেলেন। হেগয় প্রথম থেকেই তাঁকে সৌন্দর্য বাড়াবার জিনিসপত্র দিল এবং বিশেষ খাবার দিল। সে রাজবাড়ী থেকে বেছে সাতজন দাসী তাঁর জন্য নিযুক্ত করল এবং হারেমের সবচেয়ে ভাল জায়গায় তাঁকে ও তাঁর দাসীদের রাখল। ইষ্টের তাঁর জাতি ও বংশের পরিচয় দিলেন না, কারণ মর্দখয় তাঁকে বারণ করেছিলেন। ইষ্টের কেমন আছেন ও তাঁর কি হচ্ছে না হচ্ছে তা জানবার জন্য মর্দখয় প্রতিদিন হারেমের উঠানের সামনে ঘোরাফেরা করতেন। রাজা অহশ্বেরশের কাছে কোন মেয়ের যাবার পালা আসবার আগে এক বছর ধরে তাকে মেয়েদের জন্য সৌন্দর্য বাড়াবার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হত। তাকে ছয় মাস গন্ধরসের তেল ও ছয় মাস সুগন্ধি ও সাজবার জিনিস ব্যবহার করতে হত। কোন মেয়ের রাজার কাছে যাবার সময় হলে হারেম থেকে রাজার সামনে নিয়ে যাবার জন্য সে যা চাইত তাকে তা-ই দেওয়া হত। সন্ধ্যাবেলা সে সেখানে যেত এবং সকালবেলায় উপস্ত্রীদের ভার-পাওয়া রাজার নিযুক্ত খোজা শাশ্‌গসের তদারকির অধীনে হারেমের অন্য অংশে ফিরে আসত। রাজা তার উপর খুশী হয়ে নাম ধরে ডেকে না পাঠালে সে আর রাজার কাছে যেতে পারত না। মর্দখয় তাঁর কাকা অবীহয়িলের যে মেয়েটিকে নিজের মেয়ে হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন সেই মেয়েটির, অর্থাৎ ইষ্টেরের যখন রাজার কাছে যাবার পালা আসল তখন হারেমের তদারককারী রাজার নিযুক্ত খোজা হেগয় তাঁকে যা নিতে বলল তা ছাড়া তিনি আর কিছুই চাইলেন না। যে কেউ ইষ্টেরকে দেখত তার চোখে তাঁকে ভাল লাগত। রাজা অহশ্বেরশের রাজত্বের সাত বছরের দশম মাসে, অর্থাৎ টেবেৎ মাসে ইষ্টেরকে রাজবাড়ীতে রাজার কাছে নিয়ে যাওয়া হল। অন্যান্য স্ত্রীলোকদের চেয়ে ইষ্টেরকে রাজা বেশী ভালবাসলেন এবং তিনি অন্যান্য কুমারী মেয়েদের চেয়ে রাজার কাছে বেশী দয়া ও ভালবাসা পেলেন। কাজেই রাজা তাঁর মাথায় মুকুট পরিয়ে দিলেন এবং বষ্টীর জায়গায় ইষ্টেরকে রাণী করলেন। তারপর রাজা তাঁর উঁচু পদের লোকদের ও তাঁর কর্মকর্তাদের জন্য ইষ্টেরের ভোজ নামে একটা বড় ভোজ দিলেন। তিনি সব বিভাগের জন্য ছুটি ঘোষণা করে দিলেন এবং খোলা হাতে অনেক দান করলেন। দ্বিতীয়বার কুমারী মেয়েদের যোগাড় করবার সময় মর্দখয় রাজবাড়ীর ফটকে বসবার জন্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। ইষ্টের মর্দখয়ের কথামত তাঁর বংশের পরিচয় এবং জাতির কথা গোপন রেখেছিলেন। ইষ্টের মর্দখয়ের কাছে লালিত-পালিত হবার সময় যেমন মর্দখয়ের কথামত চলতেন তখনও তিনি তেমনই চলছিলেন। মর্দখয় রাজবাড়ীর ফটকে নিযুক্ত থাকবার সময় একদিন রাজবাড়ীর দারোয়ানদের মধ্যে বিগ্‌থন ও তেরশ নামে রাজার দু’জন কর্মচারী রাগ করে রাজা অহশ্বেরশকে মেরে ফেলবার ষড়যন্ত্র করল। মর্দখয় ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে রাণী ইষ্টেরকে সেই কথা জানালেন। রাণী মর্দখয়ের নাম করে তা রাজাকে জানালেন। সেই বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে যখন জানা গেল কথাটা সত্যি তখন সেই দু’জন কর্মচারীকে ফাঁসি দেওয়া হল। এই সব কথা রাজার সামনেই ইতিহাস বইতে লেখা হল। এই সব ঘটনার পরে রাজা অহশ্বেরশ অগাগীয় হম্মদাথার ছেলে হামনকে রাজ্যের অন্যান্য কর্মকর্তাদের চেয়ে উঁচু পদ দিয়ে সম্মানিত করলেন। রাজবাড়ীর ফটকে থাকা কর্মচারীরা হাঁটু পেতে হামনকে সম্মান দেখাত, কারণ রাজা তার সম্বন্ধে সেই রকমই আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু মর্দখয় হাঁটুও পাততেন না কিম্বা তাকে সম্মানও দেখাতেন না। এতে রাজবাড়ীর ফটকের কর্মচারীরা মর্দখয়কে বলল, “রাজার আদেশ তুমি অমান্য কর কেন?” দিনের পর দিন তারা তাঁকে বললেও তিনি তা মানতে রাজী হলেন না। কাজেই তারা হামনকে সেই কথা জানাল। তারা দেখতে চাইল মর্দখয়ের এই ব্যবহার গ্রাহ্য করা হবে কি না, কারণ তিনি যে একজন যিহূদী সেই কথা তিনি তাদের বলেছিলেন। মর্দখয় হাঁটুও পাতেন না এবং তাকে সম্মানও দেখান না জানতে পেরে হামন খুব রেগে গেল। কিন্তু মর্দখয়ের জাতি সম্বন্ধে জানতে পেরে কেবল মর্দখয়কে মেরে ফেলা একটা সামান্য বিষয় বলে সে মনে করল। এর বদলে সে একটা উপায় খুঁজতে লাগল যাতে অহশ্বেরশের গোটা রাজ্যের মধ্য থেকে মর্দখয়ের লোকদের, অর্থাৎ যিহূদীদের ধ্বংস করে ফেলতে পারে। রাজা অহশ্বেরশের রাজত্বের বারো বছরের প্রথম মাসে, অর্থাৎ নীষণ মাসে একটা দিন ও মাস বেছে নেবার জন্য লোকেরা হামনের সামনে পূর, অর্থাৎ গুলিবাঁট করতে লাগল। তাতে বারো মাসের, অর্থাৎ অদর মাসের বেলায় গুলি উঠল। হামন তখন রাজা অহশ্বেরশকে বলল, “আপনার রাজ্যের সমস্ত বিভাগের বিভিন্ন জাতির মধ্যে একটা জাতি ছড়িয়ে রয়েছে। অন্য সব জাতি থেকে তাদের নিয়ম-কানুন আলাদা এবং তারা রাজার আইন মানে না। কাজেই তাদের বাঁচতে দেওয়া রাজার পক্ষে ভাল হবে না। রাজার যদি ভাল মনে হয় তবে তাদের ধ্বংস করে ফেলবার জন্য একটা হুকুম জারি করা হোক। তাতে রাজ-ভাণ্ডারে রাখবার জন্য রাজার কাজ পরিচালনাকারীদের হাতে আমি তিনশো নব্বই টন রূপা দেব।” রাজা তখন নিজের আংগুল থেকে স্বাক্ষর দেবার আংটি খুলে নিয়ে যিহূদীদের শত্রু অগাগীয় হম্মদাথার ছেলে হামনকে দিলেন। রাজা হামনকে বললেন, “টাকাও তোমার আর লোকেরাও তোমার; কাজেই সেই টাকা ও লোকদের নিয়ে তোমার যা ভাল মনে হয় তা-ই কর।” তারপর প্রথম মাসের তেরো দিনের দিন রাজার লেখকদের ডাকা হল। তারা প্রত্যেকটি বিভাগের অক্ষর ও প্রত্যেকটি জাতির ভাষা অনুসারে হামনের সমস্ত আদেশ বিভিন্ন প্রদেশের ও বিভাগের শাসনকর্তাদের এবং বিভিন্ন জাতির নেতাদের কাছে লিখে জানাল। সেগুলো রাজা অহশ্বেরশের নামে লেখা হল এবং রাজার নিজের আংটি দিয়ে সীলমোহর করা হল। রাজার সমস্ত বিভাগগুলোতে সংবাদ বাহকদের দিয়ে চিঠি পাঠানো হল। সেই চিঠিতে হুকুম দেওয়া হল যেন অদর নামে বারো মাসের তেরো দিনের দিন যিহূদীদের সমস্ত ছেলে-বুড়ো-শিশু-স্ত্রীলোককে, অর্থাৎ সবাইকে ধ্বংস করা হয়, অর্থাৎ মেরে ফেলা হয়, অর্থাৎ একেবারে শেষ করে দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের জিনিসপত্র যেন লুট করা হয়। আইন হিসাবে সেই আদেশের নকল প্রত্যেকটি বিভাগে পাঠিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের জানানো হল যাতে সেই দিনের জন্য তারা প্রস্তুত হয়। রাজার আদেশ পেয়ে সংবাদ বাহকেরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল এবং শূশনের দুর্গেও সেই আদেশ প্রচার করা হল। তারপর রাজা ও হামন আংগুর-রস খেতে বসলেন আর এদিকে শূশন শহরের মধ্যে হৈ চৈ পড়ে গেল। সমস্ত খবরাখবর জানতে পেরে মর্দখয় পরনের কাপড় ছিঁড়ে চট পরলেন ও ছাই মেখে শহরের মধ্যে গিয়ে জোরে জোরে খুব কাঁদতে লাগলেন। এইভাবে তিনি রাজবাড়ীর ফটক পর্যন্ত গেলেন কিন্তু ভিতরে ঢুকতে পারলেন না, কারণ চট পরে কারও ভিতরে ঢুকবার হুকুম ছিল না। প্রত্যেকটি বিভাগে যেখানে রাজার ডিক্রি ও আদেশ পৌঁছাল সেখানে যিহূদীদের মধ্যে মহাশোক, উপবাস, কান্নাকাটি ও বিলাপ হতে লাগল। অনেকে চট পরে ছাইয়ের মধ্যে শুয়ে পড়ল। ইষ্টেরের দাসীরা ও খোজারা এসে যখন তাঁকে মর্দখয়ের খবর দিল তখন তাঁর মনে খুব বেশী দুঃখ হল। চটের বদলে পরবার জন্য তিনি মর্দখয়কে কাপড় পাঠিয়ে দিলেন কিন্তু তিনি তা নিলেন না। তখন ইষ্টের রাজার নিযুক্ত তাঁর সেবাকারী খোজা হথককে ডেকে পাঠালেন ও মর্দখয়ের কি হয়েছে এবং কেন হয়েছে তা তাঁর কাছ থেকে জেনে আসবার জন্য হুকুম দিলেন। তখন হথক রাজবাড়ীর ফটকের সামনে শহর-চকে মর্দখয়ের কাছে গেল। এতে মর্দখয় তাঁর প্রতি যা ঘটেছে এবং যিহূদীদের ধ্বংস করবার জন্য হামন যে পরিমাণ টাকা রাজ-ভাণ্ডারে দেবার প্রতিজ্ঞা করেছে তা সব হথককে বললেন। শূশনে দেওয়া যিহূদীদের ধ্বংস করবার যে রাজ-আদেশ বের হয়েছে মর্দখয় তার একটা নকল হথককে দিলেন, যাতে সে সেটা ইষ্টেরকে দেখাতে ও ব্যাপারটা বুঝাতে পারে। ইষ্টের যেন রাজার সামনে গিয়ে তাঁর লোকদের জন্য মিনতি করেন সেই কথা ইষ্টেরকে বলবার জন্য মর্দখয় হথককে বললেন। হথক ফিরে গিয়ে মর্দখয় যা বলেছিলেন তা ইষ্টেরকে জানাল। তখন ইষ্টের মর্দখয়কে এই কথা বলবার জন্য হথককে নির্দেশ দিলেন, “রাজার সব কর্মচারীরা এবং রাজার অধীন সব বিভাগের লোকেরা জানে যে, কোন পুরুষ বা স্ত্রীলোক রাজার ডাক না পেয়ে যদি ভিতরের দরবারে তাঁর কাছে যায় তবে তার জন্য মাত্র একটা আইনই আছে- সেটা হল তার মৃত্যু। তবে যে লোকের প্রতি রাজা সোনার রাজদণ্ড বাড়িয়ে দেন কেবল তার প্রাণই বাঁচে। কিন্তু গত ত্রিশ দিনের মধ্যে রাজার কাছে যাবার জন্য আমাকে ডাকা হয় নি।” ইষ্টেরের সব কথা মর্দখয়কে জানানো হল। মর্দখয় ইষ্টেরকে এই কথা বলে পাঠালেন, “এই কথা মনে কোরো না যে, রাজার ঘরে আছ বলে সমস্ত যিহূদীদের মধ্যে কেবল একা তুমিই রক্ষা পাবে। কিন্তু এই সময় যদি তুমি চুপ করে থাক তবে অন্য দিক থেকে যিহূদীরা সাহায্য ও উদ্ধার পাবে, কিন্তু তুমি তো মরবেই আর তোমার বাবার বংশও শেষ হয়ে যাবে। কে জানে হয়তো এই রকম সময়ের জন্যই তুমি রাণীর পদ পেয়েছ।” তখন ইষ্টের মর্দখয়কে এই উত্তর পাঠিয়ে দিলেন, “আপনি গিয়ে শূশনে থাকা সমস্ত যিহূদীদের একত্র করুন এবং আমার জন্য সকলে উপবাস করুন। আপনারা তিন দিন ধরে রাতে কি দিনে কোন কিছু খাওয়া-দাওয়া করবেন না। আপনারা যেমন উপবাস করবেন তেমনি আমি ও আমার দাসীরা উপবাস করব। তারপর যদিও তা আইনের বিরুদ্ধে হয় তবুও আমি রাজার কাছে যাব। তাতে যদি আমাকে মরতে হয় আমি মরব।” এতে মর্দখয় গিয়ে ইষ্টেরের সব নির্দেশ মত কাজ করলেন। ইষ্টের তিন দিনের দিন রাণীর পোশাক পরে রাজার ঘরের সামনে রাজবাড়ীর ভিতরের দরবারে গিয়ে দাঁড়ালেন। রাজা দরজার দিকে মুখ করে সেই ঘরের মধ্যে সিংহাসনে বসে ছিলেন। তিনি রাণী ইষ্টেরকে দরবারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁর উপর খুশী হয়ে তাঁর হাতের সোনার রাজদণ্ডটা তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিলেন। তখন ইষ্টের এগিয়ে গিয়ে সেই রাজদণ্ডের আগাটা ছুঁলেন। রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “রাণী ইষ্টের, কি ব্যাপার? তুমি কি চাও? যদি রাজ্যের অর্ধেকটাও হয় তাও তোমাকে দেওয়া হবে।” উত্তরে ইষ্টের বললেন, “মহারাজ যদি ভাল মনে করেন তবে আপনার জন্য আজ আমি যে ভোজ প্রস্তুত করেছি তাতে মহারাজ ও হামন যেন উপস্থিত হন।” তখন রাজা এই হুকুম দিলেন, “ইষ্টেরের কথামত যেন কাজ হয় সেইজন্য এখনই হামনকে নিয়ে এস।” কাজেই ইষ্টের যে ভোজ প্রস্তুত করেছিলেন রাজা ও হামন তাতে যোগ দিলেন। আংগুর-রস খেতে খেতে রাজা ইষ্টেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি চাও? তোমাকে তা দেওয়া হবে। তোমার অনুরোধ কি? যদি রাজ্যের অর্দ্ধেকও হয় তাও তোমাকে দেওয়া হবে।” উত্তরে ইষ্টের বললেন, “আমার অনুরোধ ও ইচ্ছা এই- মহারাজ যদি আমাকে দয়ার চোখে দেখেন ও আমার অনুরোধ রাখতে চান এবং আমার ইচ্ছা পূরণ করতে চান তবে আগামী কাল আমি যে ভোজ প্রস্তুত করব তাতে যেন মহারাজ ও হামন আসেন। তখন আমি মহারাজের প্রশ্নের উত্তর দেব।” সেই দিন হামন খুশী হয়ে আনন্দিত মনে বাইরে গেল। কিন্তু সে যখন রাজবাড়ীর ফটকে মর্দখয়কে দেখতে পেল, আর দেখল যে, মর্দখয় তাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন না কিম্বা আর কোন সম্মানও দেখালেন না তখন মর্দখয়ের উপর তার খুব রাগ হল। কিন্তু তবুও হামন নিজেকে দমন করে বাড়ী চলে গেল। বাড়ী গিয়ে সে তার বন্ধু-বান্ধব ও স্ত্রী সেরশকে ডেকে আনাল। তারপর সে তাদের কাছে তার ধন-সম্পদের কথা, তার ছেলেদের সংখ্যার কথা, যে সব উপায়ে রাজা তাকে সম্মান দেখিয়েছেন তার কথা এবং কেমন করে তাকে অন্যান্য উঁচু পদের লোকদের ও কর্মকর্তাদের চেয়ে উপরে উঠিয়েছেন সেই সব কথা গর্ব করে বলতে লাগল। হামন বলল, “কেবল তা-ই নয় রাণী ইষ্টের যে ভোজ দিয়েছিলেন তাতে আমি ছাড়া আর কাউকেই রাজার সংগে নিমন্ত্রণ করা হয় নি। আবার তিনি কালকেও রাজার সংগে আমাকে নিমন্ত্রণ করেছেন। কিন্তু যখনই ঐ যিহূদী মর্দখয়কে আমি রাজবাড়ীর ফটকে বসে থাকতে দেখি তখন এই সবেতেও আমার শান্তি লাগে না।” তখন তার স্ত্রী সেরশ ও তার সব বন্ধু-বান্ধব তাকে বলল, “তুমি পঞ্চাশ হাত উঁচু একটা ফাঁসিকাঠ তৈরী করাও এবং সকালে রাজার অনুমতি নিয়ে মর্দখয়কে তার উপর ফাঁসি দেবার ব্যবস্থা কর। তারপর খুশী মনে রাজার সংগে ভোজে যাও।” এই কথা হামনের ভাল লাগল এবং সে সেই ফাঁসিকাঠ তৈরী করাল। সেই রাতে রাজা ঘুমাতে পারছিলেন না। তিনি আদেশ দিলেন যেন তাঁর রাজ্যের ইতিহাস বইখানা তাঁর কাছে আনা হয়। তারপর সেই বইটি তাঁকে পড়ে শোনানো হল। সেখানে দেখা গেল বিগ্‌থন ও তেরশ নামে রাজার দু’জন দারোয়ান যখন রাজা অহশ্বেরশকে মেরে ফেলবার ষড়যন্ত্র করেছিল তখন মর্দখয় সেই খবর রাজাকে দিয়েছিলেন। রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “এর জন্য মর্দখয়কে কি রকম সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়েছে?” তাঁর কর্মচারীরা উত্তরে বলল, “কিছুই করা হয় নি।” রাজা বললেন, “দরবারে কে আছে?” মর্দখয়ের জন্য হামন যে ফাঁসিকাঠ তৈরী করেছিল তাতে মর্দখয়কে ফাঁসি দেবার কথা রাজাকে বলবার জন্য ঠিক সেই সময়েই সে রাজবাড়ীর বাইরের দরবারে এসেছিল। রাজার কর্মচারীরা বলল, “হামন দরবারে দাঁড়িয়ে আছেন।” রাজা বললেন, “হামন ভিতরে আসুক।” হামন ভিতরে আসলে পর রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “রাজা যাকে সম্মান দেখাতে চান তার প্রতি কি করা উচিত?” তখন হামন মনে মনে ভাবল, তাকে ছাড়া আর কাকেই বা রাজা সম্মান দেখাবেন? তারপর সেই পোশাক ও ঘোড়া রাজার উঁচু পদের কর্মচারীদের মধ্যে একজনের হাতে দেওয়া হোক। রাজা যাঁকে সম্মান দেখাতে চান তাঁকে সেই পোশাক পরানো হোক এবং তাঁকে সেই ঘোড়ায় চড়িয়ে নিয়ে শহর-চকে তাঁর আগে আগে এই কথা ঘোষণা করা হোক, ‘রাজা যাঁকে সম্মান দেখাতে চান তাঁর প্রতি এই রকমই করা হবে।’ ” তখন রাজা হামনকে আদেশ দিলেন, “তুমি এখনই গিয়ে রাজপোশাক এবং ঘোড়া নিয়ে যেমন বললে রাজবাড়ীর ফটকে বসা সেই যিহূদী মর্দখয়ের প্রতি তেমনই কর। তুমি যা যা বললে তার কোনটাই করতে যেন অবহেলা করা না হয়।” কাজেই হামন রাজপোশাক ও ঘোড়া নিল এবং মর্দখয়কে রাজপোশাক পরিয়ে ঘোড়ায় চড়িয়ে নিয়ে শহর-চকে তাঁর আগে আগে এই কথা ঘোষণা করে বেড়াতে লাগল, “রাজা যাঁকে সম্মান দেখাতে চান তাঁর প্রতি এই রকমই করা হবে।” এর পর মর্দখয় আবার রাজবাড়ীর ফটকে গেলেন। কিন্তু হামন দুঃখে মাথা ঢেকে তাড়াতাড়ি করে ঘরে গেল। তার প্রতি যা ঘটেছে তা সব তার স্ত্রী সেরশকে ও তার সব বন্ধুদের বলল। হামনের সেই পরামর্শদাতারা ও তার স্ত্রী সেরশ তাকে বলল, “যার সামনে তোমার এই পতন আরম্ভ হয়েছে সেই মর্দখয় যদি যিহূদী বংশের লোক হয় তবে তার বিরুদ্ধে তুমি দাঁড়াতে পারবে না, নিশ্চয়ই তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।” তারা তখনও হামনের সংগে কথা বলছে এমন সময় রাজার সেবাকারীরা এসে তাড়াতাড়ি করে হামনকে ইষ্টেরের তৈরী ভোজে যোগ দেবার জন্য নিয়ে গেল। তারপর রাজা ও হামন এই দ্বিতীয় বার রাণী ইষ্টেরের সংগে খাওয়া-দাওয়া করবার জন্য গেলেন। তাঁরা যখন আংগুর-রস খাচ্ছিলেন তখন রাজা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “রাণী ইষ্টের, তুমি কি চাও? তা-ই তোমাকে দেওয়া হবে। তোমার অনুরোধ কি? যদি রাজ্যের অর্ধেকও হয় তা-ও তোমাকে দেওয়া হবে।” উত্তরে রাণী ইষ্টের বললেন, “মহারাজ, আমি যদি আপনার দয়া পেয়ে থাকি এবং মহারাজ যদি খুশী হয়ে থাকেন তবে আমার অনুরোধ হল আমার ও আমার জাতির লোকদের প্রাণ রক্ষা করুন, কারণ ধ্বংস করবার, অর্থাৎ মেরে ফেলবার, অর্থাৎ একেবারে শেষ করে দেবার জন্যই আমাকে ও আমার জাতির লোকদের বিক্রি করা হয়েছে। যদি আমাদের কেবল দাস ও দাসী হবার জন্য বিক্রি করা হত তবে আমি চুপ করেই থাকতাম, কারণ ঐ রকম কষ্টের কথা মহারাজকে জানানো উচিত হত না।” তখন রাজা অহশ্বেরশ রাণী ইষ্টেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কে সে? সেই লোকটি কোথায়? এমন কাজ করতে কার সাহস হয়েছে?” ইষ্টের বললেন, “সেই বিপক্ষ ও শত্রু হল এই দুষ্ট হামন।” তখন হামন রাজা ও রাণীর সামনে ভীষণ ভয় পেল। রাজা রেগে গিয়ে আংগুর-রস রেখে উঠলেন এবং বের হয়ে রাজবাড়ীর বাগানে গেলেন। রাজা হামনের ভাগ্য ঠিক করে ফেলেছেন বুঝে সে রাণী ইষ্টেরের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবার জন্য সেখানে রইল। রাজবাড়ীর বাগান থেকে রাজা ভোজের ঘরে ফিরে আসলেন আর তখন ইষ্টের যে আসনে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন তার উপর হামন পড়ে ছিল। তখন রাজা চিৎকার করে বললেন, “এই লোকটা কি আমার সামনে রাণীর ইজ্জত নষ্ট করবে?” রাজার মুখ থেকে এই কথা বের হওয়া মাত্র লোকেরা হামনের মুখ ঢেকে ফেলল। তখন হর্বোণা নামে রাজার একজন সেবাকারী বলল, “হামনের বাড়ীতে পঞ্চাশ হাত উঁচু একটা ফাঁসিকাঠ ঠিক করা আছে। মর্দখয়, যিনি রাজার প্রাণ রক্ষার জন্য খবর দিয়েছিলেন তাঁর জন্যই হামন ওটা তৈরী করেছিল।” রাজা বললেন, “ওটার উপরে ওকেই ফাঁসি দাও।” কাজেই হামন যে ফাঁসিকাঠ মর্দখয়ের জন্য তৈরী করেছিল লোকেরা তার উপরে তাকেই ফাঁসি দিল। এর পর রাজার রাগ পড়ল। সেই দিনই রাজা অহশ্বেরশ যিহূদীদের শত্রু হামনের সম্পত্তি রাণী ইষ্টেরকে দিলেন। এর পর মর্দখয় রাজার সামনে উপস্থিত হলেন, কারণ ইষ্টেরের সংগে তাঁর সম্বন্ধের কথা ইষ্টের রাজাকে জানিয়েছিলেন। রাজা তাঁর স্বাক্ষর দেওয়ার যে আংটিটা হামনের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন সেটা নিজের হাত থেকে খুলে নিয়ে মর্দখয়কে দিলেন। ইষ্টের হামনের সম্পত্তির উপরে মর্দখয়কে নিযুক্ত করলেন। ইষ্টের রাজার পায়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে আবার তাঁর কাছে মিনতি জানালেন। যিহূদীদের বিরুদ্ধে অগাগীয় হামন যে দুষ্ট পরিকল্পনা করেছিল তা বন্ধ করে দেবার জন্য তিনি রাজাকে অনুরোধ করলেন। তখন রাজা তাঁর সোনার রাজদণ্ডটা ইষ্টেরের দিকে বাড়িয়ে দিলেন আর ইষ্টের উঠে রাজার সামনে দাঁড়ালেন। ইষ্টের বললেন, “মহারাজের যদি ভাল মনে হয়, তিনি যদি আমাকে দয়ার চোখে দেখেন এবং যদি ভাবেন যে, কাজটা করা ন্যায্য আর যদি তিনি আমার উপর খুশী হয়ে থাকেন, তবে মহারাজের সমস্ত বিভাগের যিহূদীদের ধ্বংস করবার জন্য ফন্দী এঁটে অগাগীয় হম্মাদাথার ছেলে হামন যে চিঠি লিখেছিল তা বাতিল করবার জন্য একটা আদেশ লেখা হোক। আমার জাতি ও আমার আপন লোকদের উপর সর্বনাশ নেমে আসবে তা দেখে আমি কেমন করে সহ্য করব?” এতে রাজা অহশ্বেরশ রাণী ইষ্টের ও যিহূদী মর্দখয়কে বললেন, “হামন যিহূদীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল বলে আমি তার সম্পত্তি ইষ্টেরকে দিয়েছি আর লোকেরা তাকে ফাঁসি দিয়েছে। কিন্তু রাজার নাম করে লেখা এবং রাজার আংটি দিয়ে সীলমোহর করা কোন আদেশ বাতিল করা যায় না। কাজেই এখন যেভাবে তোমাদের ভাল মনে হয় সেই যিহূদীদের পক্ষে রাজার নাম করে আর একটা আদেশ লিখে রাজার স্বাক্ষরের আংটি দিয়ে সীলমোহর কর।” সেই সময় তৃতীয় মাসে, অর্থাৎ সীবন মাসের তেইশ দিনের দিন রাজার লেখকদের ডাকা হল। মর্দখয়ের সমস্ত আদেশ অনুসারে হিন্দুস্থান থেকে কূশ পর্যন্ত একশো সাতাশটা বিভাগের যিহূদীদের, প্রদেশের ও বিভাগের শাসনকর্তাদের এবং উঁচু পদের কর্মচারীদের কাছে চিঠি লেখা হল। এই চিঠিগুলো প্রত্যেকটি বিভাগের অক্ষর ও প্রত্যেকটি জাতির ভাষা অনুসারে এবং যিহূদীদের অক্ষর ও ভাষা অনুসারে লেখা হল। মর্দখয় তখন রাজা অহশ্বেরশের নামে চিঠিগুলো লিখে রাজার স্বাক্ষরের আংটি দিয়ে সীলমোহর করলেন। তারপর তিনি রাজার জোরে দৌড়ানো বিশেষ ঘোড়ায় করে সংবাদ বাহকদের দিয়ে চিঠিগুলো পাঠিয়ে দিলেন। রাজার আদেশ প্রত্যেকটি বিভাগে আইন হিসাবে প্রকাশ করা হল এবং প্রত্যেক জাতিকে তা জানানো হল যাতে যিহূদীরা সেই দিনে তাদের শত্রুদের উপর শোধ নেবার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। রাজার বিশেষ ঘোড়ায় চড়ে সংবাদ বাহকেরা রাজার আদেশে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল। শূশনের দুর্গেও সেই আদেশ জানানো হল। মর্দখয় মসীনা সুতার বেগুনে পোশাকের উপরে নীল ও সাদা রংয়ের রাজপোশাক পরে এবং সোনার একটা বড় মুকুট মাথায় দিয়ে রাজার সামনে থেকে বের হয়ে গেলেন। শূশন শহরের লোকেরা চিৎকার করে আনন্দ করল। যিহূদীদের জন্য সময়টা হল খুব আনন্দের, আমোদের ও সম্মানের। প্রত্যেকটি বিভাগে ও শহরে যেখানে যেখানে রাজার আদেশ গেল সেখানকার যিহূদীদের মধ্যে আনন্দপূর্ণ উৎসব হল। অন্যান্য জাতির অনেক লোক যিহূদী হয়ে গেল, কারণ তারা যিহূদীদের ভয় করেছিল। অদর মাসের, অর্থাৎ বারো মাসের তেরো দিনের দিন রাজার আদেশ কাজে লাগাবার সময় আসল। এই দিনে যিহূদীদের শত্রুরা তাদের দমন করবার আশা করেছিল, কিন্তু ঘটনা হল উল্টা। যিহূদীদের যারা ঘৃণা করত যিহূদীরাই তাদের দমন করল। যারা তাদের ধ্বংস করতে চেয়েছিল তাদের আক্রমণ করবার জন্য যিহূদীরা রাজা অহশ্বেরশের সমস্ত বিভাগে তাদের নিজের নিজের শহরগুলোতে জড়ো হল। তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে পারল না, কারণ অন্য সব জাতির লোকেরা তাদের ভয় করতে লাগল। বিভাগগুলোর সমস্ত উঁচু পদের কর্মচারীরা, প্রদেশের ও বিভাগের শাসনকর্তারা এবং রাজার অন্যান্য কর্মচারীরা যিহূদীদের সাহায্য করতে লাগলেন, কারণ তাঁরা মর্দখয়কে ভয় করেছিলেন। মর্দখয় রাজবাড়ীর মধ্যে প্রধান হয়ে উঠলেন; তাঁর সুনাম বিভাগগুলোর সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল এবং তিনি দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। যিহূদীরা তাদের সব শত্রুদের ধ্বংস করতে, মেরে ফেলতে ও একেবারে শেষ করে দিতে লাগল এবং যারা তাদের ঘৃণা করত তাদের উপর যা খুশী তা-ই করতে লাগল। শূশনের দুর্গে যাদের মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের সংখ্যা সেই দিনই রাজাকে জানানো হল। রাজা তখন রাণী ইষ্টেরকে বললেন, “শূশনের দুর্গে যিহূদীরা পাঁচশো লোক ও হামনের দশজন ছেলেকে মেরে ফেলেছে। রাজার বাকী বিভাগগুলোতে তারা না জানি কি করেছে। এখন তোমার অনুরোধ কি? তা তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি কি চাও? তাও করা হবে।” উত্তরে ইষ্টের বললেন, “মহারাজের যদি ভাল মনে হয় তবে আজকের মত কালকেও একই কাজ করবার জন্য শূশনের যিহূদীদের অনুমতি দেওয়া হোক; আর হামনের দশটি ছেলেকে ফাঁসিকাঠে ঝুলানো হোক।” রাজা তা-ই করবার জন্য আদেশ দিলেন। শূশনে রাজার সেই আদেশ ঘোষণা করা হল আর লোকেরা হামনের দশটি ছেলেকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিল। শূশনের যিহূদীরা অদর মাসের চৌদ্দ দিনের দিন একসংগে জড়ো হয়ে সেখানে তিনশো লোককে মেরে ফেলল, কিন্তু তারা কোন লুটের জিনিষে হাত দিল না। এর মধ্যে রাজার বিভাগগুলোর বাকী যিহূদীরাও নিজেদের জীবন রক্ষা করবার জন্য ও তাদের শত্রুদের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য একসংগে জড়ো হল। তারা তাদের পঁচাত্তর হাজার শত্রুকে মেরে ফেলল কিন্তু কোন লুটের জিনিষে হাত দিল না। অদর মাসের তেরো দিনের দিন এই ঘটনা ঘটল এবং চৌদ্দ দিনের দিন তারা বিশ্রাম নিল। দিনটা তারা ভোজের ও আনন্দের দিন হিসাবে পালন করল। কিন্তু শূশনের যিহূদীরা তেরো ও চৌদ্দ দিনের দিন একসংগে জড়ো হয়েছিল। তারপর পনেরো দিনের দিন তারা বিশ্রাম নিল এবং দিনটা ভোজের ও আনন্দের দিন হিসাবে পালন করল। এইজন্যই গ্রামের যিহূদীরা, অর্থাৎ যারা দেয়াল-ছাড়া জায়গায় বাস করে তারা অদর মাসের চৌদ্দ দিনের দিনটাকে আনন্দ ও ভোজের দিন এবং একে অন্যকে খাবার পাঠাবার দিন হিসাবে পালন করে। মর্দখয় এই সব ঘটনা লিখে রাখলেন এবং রাজা অহশ্বেরশের রাজ্যের দূরের কি কাছের সমস্ত বিভাগের যিহূদীদের কাছে চিঠি লিখে পাঠালেন। তিনি তাদের আদেশ দিলেন যেন তারা প্রতি বছর অদর মাসের চৌদ্দ ও পনেরো দিন দু’টি পালন করে। এর কারণ হল, এই দুই দিনে যিহূদীরা তাদের শত্রুদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছিল এবং সেই মাসে তাদের দুঃখ ও শোক বদলে গিয়েছিল সুখে ও উৎসব পালনে। তিনি তাদের লিখলেন যেন তারা সেই দিনগুলো ভোজ ও আনন্দের দিন এবং একে অন্যের কাছে খাবার পাঠাবার ও গরীবদের কাছে উপহার দেবার দিন বলে পালন করে। কাজেই যিহূদীরা যেমন আরম্ভ করেছিল এবং মর্দখয় তাদের যেমন লিখেছিলেন সেইভাবে দিন দু’টি পালন করতে তারা রাজী হল। এর কারণ হল, সমস্ত যিহূদীদের শত্রু অগাগীয় হম্মাদাথার ছেলে হামন যিহূদীদের ধ্বংস ও চুরমার করবার এবং একেবারে শেষ করে দেবার ষড়যন্ত্র করেছিল আর সেইজন্য সে পূর, অর্থাৎ গুলিবাঁট করেছিল। কিন্তু হামনের ষড়যন্ত্র যখন রাজার কানে গিয়েছিল তখন তিনি লিখিত আদেশ দিয়েছিলেন যেন যিহূদীদের বিরুদ্ধে হামন যে মন্দ ফন্দি এঁটেছে তা তার নিজের মাথাতেই পড়ে এবং তাকে এবং তার ছেলেদের ফাঁসিকাঠে ঝুলানো হয়। প্রত্যেক বিভাগের প্রত্যেকটি শহরের প্রত্যেকটি পরিবার বংশের পর বংশ ধরে এই দু’টা দিন স্মরণ করবে এবং পালন করবে। এতে যিহূদীদের মধ্য থেকে পূরীমের সেই দু’টা দিন পালন করা কখনও বন্ধ হবে না এবং তাদের বংশধরদের মন থেকে সেই কথা মুছে যাবে না। সেইজন্য অবীহয়িলের মেয়ে রাণী ইষ্টের ও যিহূদী মর্দখয় পূরীমের এই নিয়ম স্থায়ী করবার জন্য এই দ্বিতীয় চিঠিটা সম্পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে লিখলেন। অহশ্বেরশের রাজ্যের একশো সাতাশটা বিভাগের সমস্ত যিহূদীদের কাছে মর্দখয় শান্তি ও নিরাপত্তার কথা লেখা চিঠি পাঠিয়ে দিলেন। সেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল যাতে তারা নির্দিষ্ট সময়ে যিহূদী মর্দখয় ও রাণী ইষ্টেরের নির্দেশমত পূরীমের এই দিন দু’টা পালন করবার জন্য স্থির করতে পারে, যেমন ভাবে তারা নিজেদের ও তাদের বংশধরদের জন্য অন্যান্য উপবাস ও বিলাপের সময় স্থির করেছিল। ইষ্টেরের আদেশে পূরীমের এই নিয়মগুলো স্থির করা হল এবং তা লিখে রাখা হল। রাজা অহশ্বেরশ তাঁর গোটা রাজ্যে, এমন কি, দূরের দেশগুলোতেও কর্‌ বসালেন। তাঁর ক্ষমতা ও শক্তির সব কথা এবং মর্দখয়কে রাজা যেভাবে উঁচু পদ দিয়ে মহান করেছিলেন সেই সব কথা মাদিয়া ও পারস্যের রাজাদের ইতিহাস বইতে লেখা আছে। রাজা অহশ্বেরশের পরে যিহূদী মর্দখয়ের স্থান ছিল দ্বিতীয়। তাঁর সমস্ত জাতি-ভাইয়েরা তাঁকে সম্মান ও ভালবাসার চোখে দেখত, কারণ তিনি তাঁর লোকদের মংগলের জন্য কাজ করেছিলেন এবং সমস্ত যিহূদীদের নিরাপত্তার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। ঊষ দেশে ইয়োব নামে একজন লোক বাস করতেন। তিনি একজন নির্দোষ ও সৎ লোক ছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করতেন এবং মন্দতা থেকে দূরে থাকতেন। তাঁর সাত ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল। তাঁর সাত হাজার ভেড়া, তিন হাজার উট, পাঁচশো জোড়া ষাঁড় ও পাঁচশো গাধী ছিল এবং তাঁর দাস-দাসীও ছিল অনেক। পূর্বদেশের সমস্ত লোকদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ধনী। তাঁর ছেলেরা পালা পালা করে তাদের নিজের নিজের বাড়ীতে ভোজ প্রস্তুত করত এবং তাদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করবার জন্য লোক পাঠিয়ে তাদের তিন বোনকে নিমন্ত্রণ করত। তাদের ভোজের দিনগুলো শেষ হয়ে গেলে পর ইয়োব তাদের ডেকে এনে শুচি করতেন। ভোরবেলা তিনি তাদের প্রত্যেকের জন্য একটা করে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতেন। তিনি ভাবতেন, “আমার ছেলেমেয়েরা হয়তো পাপ করেছে এবং মনে মনে ঈশ্বরকে অসম্মান করেছে।” ইয়োব সব সময় এই রকম করতেন। একদিন স্বর্গদূতেরা সদাপ্রভুর সামনে গিয়ে উপস্থিত হলেন আর শয়তানও তাঁদের সংগে উপস্থিত হল। তখন সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে আসলে?” উত্তরে শয়তান সদাপ্রভুকে বলল, “পৃথিবীর মধ্য দিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করে আসলাম।” সদাপ্রভু তখন শয়তানকে বললেন, “আমার দাস ইয়োবের দিকে কি তুমি লক্ষ্য করেছ? পৃথিবীতে তার মত আর কেউ নেই। সে নির্দোষ ও সৎ। সে আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে এবং মন্দতা থেকে দূরে থাকে।” তখন শয়তান বলল, “ইয়োব কি এমনি এমনি আপনাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে? আপনি কি তার চারপাশে এবং তার বাড়ী ও তার যা কিছু আছে তার চারপাশে ঘেরা দিয়ে রাখেন নি? আপনি তো তার কাজে আশীর্বাদ করেছেন, সেইজন্য তার পশুপালে দেশ ছেয়ে গেছে। কিন্তু আপনি হাত বাড়িয়ে তার সব কিছুকে আঘাত করুন, সে নিশ্চয়ই আপনার সামনেই আপনার বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলবে।” তখন সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “বেশ ভাল; তার যা কিছু আছে তা তোমার হাতে দিলাম, কিন্তু তার দেহের উপরে তুমি একটা আংগুলও ছোঁয়াবে না।” তখন শয়তান সদাপ্রভুর সামনে থেকে বের হয়ে চলে গেল। একদিন ইয়োবের ছেলেমেয়েরা তাদের বড় ভাইয়ের বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া করছিল ও আংগুর-রস খাচ্ছিল। এমন সময় ইয়োবকে খবর দেবার জন্য একজন লোক এসে বলল, “আপনার ষাঁড়গুলো জমি চাষ করছিল এবং গাধীগুলোও কাছাকাছি চরছিল। এর মধ্যে শিবায়ীয়েরা লুট করতে এসে সেগুলো নিয়ে গেছে। তারা আপনার দাসদের মেরে ফেলেছে। আপনাকে খবর দেবার জন্য কেবল আমিই রক্ষা পেয়েছি।” লোকটি তখনও কথা বলছিল এমন সময় আর একজন এসে খবর দিল, “আকাশ থেকে ঈশ্বরের আগুন পড়ে আপনার ভেড়ার পাল আর দাসদের পুড়িয়ে দিয়েছে। আপনাকে খবর দেবার জন্য কেবল আমিই রক্ষা পেয়েছি।” দ্বিতীয় লোকটি তখনও কথা বলছিল এমন সময় আর একজন এসে খবর দিল, “কল্‌দীয়েরা তিনটা দলে ভাগ হয়ে হানা দিয়ে আপনার উটগুলো নিয়ে গেছে। তারা আপনার দাসদের মেরে ফেলেছে। আপনাকে খবর দেবার জন্য কেবল আমিই রক্ষা পেয়েছি।” তৃতীয় লোকটি তখনও কথা বলছিল এমন সময় খবর দেবার জন্য আর একজন এসে বলল, “আপনার ছেলেমেয়েরা তাঁদের বড় ভাইয়ের বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন ও আংগুর-রস খাচ্ছিলেন। তখন মরু-এলাকা থেকে হঠাৎ একটা জোর বাতাস এসে ঘরটাকে আঘাত করল। তাতে ঘরটা ভেংগে তাঁদের উপর পড়াতে তাঁরা মারা গেছেন। আপনাকে খবর দেবার জন্য কেবল আমিই রক্ষা পেয়েছি।” এই কথা শুনে ইয়োব উঠে মনের দুঃখে তাঁর কাপড় ছিঁড়লেন এবং মাথা কামিয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে পড়ে ঈশ্বরকে তাঁর অন্তরের ভক্তি জানিয়ে বললেন, “মায়ের পেট থেকে আমি উলংগ এসেছি আর উলংগই চলে যাব। সদাপ্রভুই দিয়েছিলেন আর সদাপ্রভুই নিয়ে গেছেন; সদাপ্রভুর গৌরব হোক।” এই সব হলেও ইয়োব পাপ করলেন না কিম্বা ঈশ্বরকে দোষী করলেন না। আর একদিন স্বর্গদূতেরা সদাপ্রভুর সামনে গিয়ে উপস্থিত হলেন, আর শয়তানও তাঁর সামনে উপস্থিত হবার জন্য স্বর্গদূতদের সংগে আসল। সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “তুমি কোথা থেকে আসলে?” উত্তরে শয়তান সদাপ্রভুকে বলল, “পৃথিবীর মধ্যে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করে আসলাম।” তখন সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “আমার দাস ইয়োবের দিকে কি তুমি লক্ষ্য করেছ? পৃথিবীতে তাঁর মত আর কেউ নেই। সে নির্দোষ ও সৎ। সে আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে ও মন্দতা থেকে দূরে থাকে। যদিও তুমি বিনা কারণে তার সর্বনাশ করবার জন্য আমাকে খুঁচিয়ে তুলেছ তবুও সে এখনও কোন দোষ করে নি।” শয়তান বলল, তার জীবনই তার কাছে প্রাণের প্রাণ; মানুষ নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য তার যা কিছু আছে সবই দেবে। আপনি হাত বাড়িয়ে তার দেহে আঘাত করুন, সে নিশ্চয়ই আপনার সামনেই আপনার বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলবে।” তখন সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “বেশ ভাল; তাকে তোমার হাতে দিলাম, কিন্তু তুমি তাকে প্রাণে মারবে না।” এর পর শয়তান সদাপ্রভুর সামনে থেকে বের হয়ে গেল এবং ইয়োবের মাথার তালু থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত যন্ত্রণাপূর্ণ ঘা দিয়ে তাঁকে কষ্ট দিতে লাগল। তখন ইয়োব ছাইয়ের মধ্যে বসে মাটির পাত্রের একটা টুকরা দিয়ে নিজের গা ঘষতে লাগলেন। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, “তুমি এখনও দাবি করছ যে, তুমি নির্দোষ? ঈশ্বরকে দোষ দিয়ে মরে যাও।” কিন্তু ইয়োব তাঁকে বললেন, “তুমি একজন বোকা স্ত্রীলোকের মত কথা বলছ। আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে কি কেবল মংগলই গ্রহণ করব, অমংগল গ্রহণ করব না?” এই সব হলেও ইয়োব তাঁর কথার মধ্য দিয়ে পাপ করলেন না। তৈমনীয় ইলীফস, শূহীয় বিল্‌দদ ও নামাথীয় সোফর নামে ইয়োবের তিনজন বন্ধু যখন ইয়োবের সব বিপদের কথা শুনলেন তখন তাঁরা তাঁদের বাড়ী থেকে রওনা হলেন। তাঁরা একত্র হয়ে পরামর্শ করলেন যে, তাঁরা গিয়ে তাঁর সংগে শোক করবেন ও তাঁকে সান্ত্বনা দেবেন। তাঁরা দূর থেকে তাঁকে দেখে চিনতেই পারলেন না। তাঁরা জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন এবং নিজেদের কাপড় ছিঁড়ে মাথার উপরে আকাশের দিকে ধুলা ছড়ালেন। তারপর তাঁরা সাত দিন ও সাত রাত তাঁর সংগে মাটিতে বসে রইলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ তাঁকে কিছুই বললেন না, কারণ তাঁর কষ্ট যে কি ভীষণ তা তাঁরা দেখতেই পাচ্ছিলেন। “আমার জন্মের দিনটা ধ্বংস হয়ে যাক, সেই রাতটা ধ্বংস হয়ে যাক যখন বলা হয়েছিল, ‘ছেলে হয়েছে।’ সেই দিনটা অন্ধকার হয়ে যাক; উপর থেকে ঈশ্বর যেন সেই দিনটার খবর না নেন; তার উপর কোন আলো না পড়ুক। অন্ধকার আর ঘন ছায়া সেই দিনটাকে অধিকার করে নিক; মেঘ তাকে ঢেকে ফেলুক, আর গাঢ় অন্ধকার তাকে ভীষণ ভয় দেখাক। ঘন অন্ধকার সেই রাতটাকে ধরে ফেলুক; বছরের দিনগুলোর মধ্যে ওটাকে গোণা না হোক, কিম্বা কোন মাসের মধ্যেও ওটা না থাকুক। সেই রাতটা বন্ধ্যা হোক, কোন আনন্দের গান তার মধ্যে শোনা না যাক। যারা দিনগুলো খারাপ হওয়ার জন্য মন্ত্র পড়ে আর লিবিয়াথনকে জাগাতে পারে তারা ঐ দিনটাকে অভিশাপ দিক। তার ভোর রাতের সব তারা অন্ধকার হয়ে যাক; সে আলোর জন্য মিথ্যাই বসে থাকুক; সে যেন ভোরের প্রথম আলো দেখতে না পায়, কারণ সে আমার মায়ের গর্ভের দরজা বন্ধ করে নি, আমাকে কষ্ট থেকে দূরে রাখে নি। “আমি কেন গর্ভে থাকতে মরি নি? কেনই বা পেট থেকে পড়েই মরলাম না? মায়ের কোল কেন আমাকে গ্রহণ করেছিল? কেনই বা তাঁর বুকের দুধ তিনি আমাকে দিয়েছিলেন? তা না হলে তো আমি এখন শান্তিতে শুয়ে থাকতে পারতাম, আমি ঘুমাতাম আর বিশ্রাম পেতাম। আমি সেই রাজাদের আর সেই মন্ত্রীদের সংগে থাকতাম যাঁরা একদিন নিজেদের জন্য দালান গড়েছিলেন যেগুলো আজ ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে। আমি সেই শাসনকর্তাদের সংগে থাকতাম যাঁদের প্রচুর সোনা ছিল, যাঁরা রূপা দিয়ে ঘর-বাড়ী ভরে রাখতেন। যে শিশু দিনের আলো দেখতে পায় নি, কেন পেটে মরে-যাওয়া সেই শিশুর মত আমাকে মাটির মধ্যে লুকিয়ে রাখা হল না? সেখানে তো দুষ্ট লোকেরা হাংগামা করে না, আর ক্লান্ত লোকেরা বিশ্রাম পায়। বন্দীরা সবাই সেখানে আরাম ভোগ করে; অত্যাচারীদের চিৎকার আর সেখানে শোনা যায় না। ছোট ও বড় সবাই সেখানে আছে, আর দাসেরা সেখানে মনিবের হাত থেকে মুক্ত। “যারা দুঃখে আছে, কেন তাদের আলো দেখতে দেওয়া হয় আর তেতো প্রাণকে দেওয়া হয় জীবন? তারা মৃত্যু চায় কিন্তু তা পায় না, যদিও তারা গুপ্তধনের চেয়েও বেশী করে তার খোঁজ করে। তারা কবরে পৌঁছাতে পারলে আনন্দিত হয়, আর তার জন্য তারা খুব আনন্দ করে। যে মানুষের পথ তার কাছে গুপ্ত, যাকে ঈশ্বর আট্‌কে রেখেছেন, কেন সেই মানুষকে জীবন দেওয়া হয়? আমার দীর্ঘনিঃশ্বাসই আমার খাবার হয়েছে, আর আমার কাত্‌রানি জলের মত ঢেলে পড়ছে। আমি যা ভয় করেছিলাম তা-ই আমার উপর এসে পড়েছে; যা হবে বলে আমার ভীষণ ভয় হয়েছিল তা-ই আমার উপর ঘটেছে। আমার শান্তি নেই, স্থিরতা নেই, কোন বিশ্রাম নেই, আছে কেবল কষ্ট।” এই কথা শুনে তৈমনীয় ইলীফস উত্তরে বললেন, “কেউ যদি তোমার সংগে কথা বলে তবে কি তুমি বিরক্ত হবে? কিন্তু কে কথা না বলে চুপ করে থাকতে পারে? ভেবে দেখ, কত জনকে তুমি কত উপদেশ দিয়েছ এবং দুর্বল হাতকে সবল করেছ। যারা জীবন-পথে উছোট খেয়েছে তোমার কথা তাদের সাহায্য করেছে; তাদের দুর্বল হাঁটু তুমি সবল করেছ। কিন্তু এখন তোমার নিজের উপর কষ্ট এসেছে আর তুমি হতাশ হয়েছ; কষ্ট তোমাকে আঘাত করেছে আর তুমি নিরাশ হয়েছ। তুমি যে ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় কর তাতে কি তুমি আশ্বাস পাও না? তুমি যে নির্দোষ সেটা কি তোমার আশা নয়? “এখন ভেবে দেখ, নির্দোষ হয়ে কে কবে ধ্বংস হয়েছে? সৎ লোকেরা কে কোথায় শেষ হয়েছে? আমি দেখেছি যারা মন্দের চাষ করে আর অশান্তির বীজ বোনে তারা তা-ই কাটে। ঈশ্বরের নিঃশ্বাসে তারা ধ্বংস হয়ে যায় আর শেষ হয়ে যায় তাঁর ক্রোধের ঝাপ্‌টায়। সিংহেরা গর্জন ও গোঁ গোঁ শব্দ করে, তবুও সেই ভয়ংকর সিংহদের দাঁত ভেংগে যায়। শিকার না পেলে সিংহ মরে যায়, আর সিংহীর বাচ্চাগুলো এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে। “একটা বাক্য আমার কাছে চুপি চুপি আসল, তার ফিস্‌ ফিস্‌ শব্দ আমার কানে গেল। রাতে মানুষ যখন অঘোরে ঘুমায় তখন স্বপ্ন দেখে আমি অস্থির হলাম; ভয় আর কাঁপুনি আমাকে ধরল, আমার সব হাড়গুলো কেঁপে উঠল। একটা আত্মা আমার সামনে দিয়ে চলে গেল, আর আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল। সেই আত্মা থামল, কিন্তু সেটা যে কেমন তা আমি বুঝতে পারলাম না। আমার চোখের সামনে একটা কিছু দাঁড়াল, খুব আস্তে আমি এই স্বর শুনলাম, ‘কোন মানুষ কি ঈশ্বরের চোখে নির্দোষ হতে পারে? তার সৃষ্টিকর্তার চোখে কি সে খাঁটি হতে পারে? ঈশ্বর যদি তাঁর দাসদেরও বিশ্বাস না করেন আর ভুলের জন্য তাঁর স্বর্গদূতদের দোষী করেন, তবে যারা মাটির ঘরে বাস করে, যাদের ভিত্তি হল ধুলা, যাদের পোকার মত সহজে পিষে ফেলা যায়, তারা ঈশ্বরের চোখে আরও কত না বেশী দোষী হবে! সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই তারা চুরমার হয়, চোখের আড়ালেই তারা চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের সব কিছু তাম্বুর মত তুলে ফেলা হয়, আর তারা জ্ঞানহীন অবস্থায় মারা যায়।’ “তুমি ডাক দেখি, কে তোমাকে উত্তর দেবে? তুমি কোন্‌ স্বর্গদূতের কাছে সাহায্য চাইবে? বিরক্তিবোধ অসাড় বিবেক লোকদের শেষ করে দেয় আর হিংসা বোকাদের মেরে ফেলে। অসাড় বিবেক লোককে আমি উন্নতি করতে দেখলাম আর তখনই তার ঘরকে অভিশপ্ত বলে ঘোষণা করলাম। তার সন্তানেরা নিরাপদে থাকে না; বিচারের জায়গাতেই তারা সব কিছু হারায়, তাদের রক্ষাকারী কেউ থাকে না। ক্ষুধিত লোকেরা তার শস্য খেয়ে ফেলে, এমন কি, কাঁটার বেড়ার মধ্য থেকেও তারা তা তুলে নেয়; অভাবীরা তার ধন-সম্পদের জন্য খুব আগ্রহী হয়। মাটি থেকে কষ্ট উঠে আসে না, কিম্বা জমি থেকে দুঃখ গজায় না। যেমন সত্যি যে আগুনের ফুল্‌কি উপরের দিকে ওঠে, তেমনি সত্যি যে, মানুষ কষ্ট পাবার জন্যই জন্মে। “কিন্তু আমি হলে ঈশ্বরের সাহায্য চাইতাম, তাঁর কাছে আমার মামলাটা তুলে ধরতাম। তিনি এমন সব মহৎ কাজ করেন যার গভীরতা মাপা যায় না; তিনি এমন সব আশ্চর্য কাজ করেন যা গুণে শেষ করা যায় না। তিনি পৃথিবীতে বৃষ্টি দান করেন আর জমির উপর জল পাঠিয়ে দেন। নীচু অবস্থার লোকদের তিনি উঁচুতে তোলেন; যারা শোক করে তাদের তিনি নিরাপদে রাখেন। ধূর্ত লোকদের পরিকল্পনা তিনি নিষ্ফল করে দেন, তাই তারা কোন সফলতা লাভ করতে পারে না। তিনি জ্ঞানীদের তাদের চালাকীর মধ্যে ধরেন, আর ছলনাকারীদের ফন্দি নিষ্ফল হয়ে যায়। দিনের বেলাতেই তাদের উপর অন্ধকার নেমে আসে; দুপুরে তারা রাতের বেলার মত হাত্‌ড়ে বেড়ায়। তিনি ধারালো জিভের হাত থেকে অভাবীদের বাঁচান; শক্তিশালীদের মুঠো থেকে তাদের রক্ষা করেন। সেইজন্য অসহায় লোকেরা আশায় বুক বাঁধে, আর অবিচার বন্ধ হয়ে যায়। “ধন্য সেই লোক, যাকে ঈশ্বর সংশোধন করেন। কাজেই সর্বশক্তিমানের শাসনকে তুচ্ছ কোরো না, কারণ তিনি ক্ষত করেন, আবার তা বেঁধেও দেন; তিনি আঘাত করেন, আবার তাঁর হাতই তা সুস্থ করে। ছয়টা বিপদ থেকে তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন, সাতটা বিপদের সময় তোমার কোন ক্ষতি হবে না। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি তোমাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করবেন, আর যুদ্ধের সময় রক্ষা করবেন তলোয়ারের আঘাত থেকে। জিভের আঘাত থেকে তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন; বিপদ আসলে তুমি ভয় পাবে না। ধ্বংস ও দুর্ভিক্ষের সময় তুমি হাসবে; বুনো পশুদের তুমি ভয় করবে না। তোমার জমিতে কোন পাথর থাকবে না; বুনো পশুরা তোমাকে আক্রমণ করবে না। তুমি জানবে যে, তোমার তাম্বু নিরাপদ; তোমার সম্পত্তির হিসাব নিলে পর দেখবে তোমার কিছুই হারায় নি। তুমি জানবে যে, তোমার অনেক ছেলেমেয়ে হবে আর তোমার বংশধরেরা মাঠের ঘাসের মত প্রচুর হবে। যেমন করে সময় মত ফসল তোলা হয় তেমনি করে পূর্ণ আয়ু পেয়ে তুমি কবর পাবে। “আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি যে, এ সব সত্যি; কাজেই তুমি শোন আর নিজের জীবনে তা কাজে লাগাও।” তখন উত্তরে ইয়োব বললেন, “আমার দারুণ যন্ত্রণা যদি ওজন করা যেত, আমার সমস্ত দুর্দশা যদি দাঁড়িপাল্লায় তোলা হত, তবে তা নিশ্চয়ই সাগর পারের বালুকণার চেয়েও ওজনে বেশী হত; সেজন্যই আমার কথাবার্তায় কোন লাগাম নেই। সর্বশক্তিমানের তীর আমাকে বিঁধেছে, আমার প্রাণ সেগুলোর বিষ খাচ্ছে; ঈশ্বরের ভয়ংকর কাজগুলো আমার বিরুদ্ধে সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছে। ঘাস পেলে কি বুনো গাধা চিৎকার করে, কিম্বা খড় পেলে কি গরু ডাকে? স্বাদহীন খাবার কি নুন ছাড়া খাওয়া যায়, কিম্বা ডিমের লালায় কি কোন স্বাদ আছে? আমি তা খেতে চাই না; তা খেলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। “আহা, আমার অনুরোধ যেন রক্ষা হয়, ঈশ্বর যেন আমার আশা পূর্ণ করেন, আমাকে যেন তিনি চুরমার করে ফেলেন এবং হাত বাড়িয়ে আমাকে মেরে ফেলেন! তাহলে আমার এই সান্ত্বনা থাকবে, ভীষণ যন্ত্রণার মধ্যেও আমার এই আনন্দ থাকবে যে, সেই পবিত্রজনের কথা আমি অস্বীকার করি নি। “অপেক্ষা করবার জন্য আমার কোন শক্তি নেই, আশা করবার মত আমার এমন কিছু নেই যে, আমি ধৈর্য ধরে থাকব। আমার শক্তি কি পাথরের মত? আমার দেহ কি ব্রোঞ্জের তৈরী? নিজেকে সাহায্য করবার শক্তি আমার নেই; আমার কাছ থেকে তো আমার সব কিছু দূর করা হয়েছে। “হতাশ লোক যদিও বা সর্বশক্তিমানকে ভক্তি করা ছেড়ে দেয়, তবুও তার বন্ধুদের উচিত তার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা। কিন্তু আমার বন্ধুদের উপর তো নির্ভর করা যায় না; তারা এমন স্রোতের মত যা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়, আবার মাঝে মাঝে কিনারা ছাপিয়ে ওঠে। বরফ ও তুষার গলে সেই স্রোত ঘোলা হয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে, আবার গরম কালে সেই স্রোত শুকিয়ে যায় আর তার পথ থেকে অদৃশ্য হয়। সেই পথে চলা মরুযাত্রীর দল জল খুঁজতে খুঁজতে ফিরে যায়, আর তারা মরুভূমিতে শেষ হয়ে যায়। টেমার মরুযাত্রীরা জলের খোঁজ করে, শিবার ব্যবসায়ীরা আশা নিয়ে তাকায়। তারা নিশ্চিত ছিল বলেই কষ্ট পায়; সেখানে এসে তারা নিরাশ হয়। তোমরাও তেমনি আমাকে কোন সাহায্য করতে পার না; আমার ভয়ংকর অবস্থা দেখে তোমরা ভয় পেয়েছ। আমি কি কখনও বলেছি, ‘আমাকে কিছু দাও, তোমাদের ধন থেকে আমাকে উপহার দাও, শত্রুর হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর, মূল্য দিয়ে নিষ্ঠুরদের থাবা থেকে আমাকে মুক্ত কর?’ “আমাকে শিক্ষা দাও, আমি চুপ করে থাকব; কোথায় আমার ভুল তা আমাকে দেখিয়ে দাও। ন্যায্য কথা কেমন শক্তিশালী, কিন্তু তোমাদের তর্কে কোন লাভ নেই। আমার কথায় কি তোমরা দোষ ধরতে চাইছ? তোমরা তো নিরাশ লোকের কথা বাতাসের মত মনে করছ। তোমরা অনাথদের জন্য গুলিবাঁট করে থাক আর বন্ধুকে বিক্রি করতে চাও। কিন্তু এখন দয়া করে তোমরা আমার দিকে তাকাও, আমি তোমাদের সামনে মিথ্যা কথা বলব না। তোমরা নরম হও, অন্যায় কোরো না; আবার ভেবে দেখ, কারণ আমি এখনও সৎ আছি। আমার মুখে কি কোন অন্যায় আছে? আমি কি সত্য-মিথ্যা বুঝি না? “এই পৃথিবীতে মানুষকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়, সে মজুরের মত দিন কাটায়। দাস যেমন সন্ধ্যাবেলার জন্য অপেক্ষা করে, মজুর যেমন তার মজুরির জন্য আশা করে থাকে, তেমনি করেই মাসের পর মাস নিষ্ফলতা আমার ভাগে পড়েছে; আমি রাতের পর রাত কেবল দুঃখ পেয়েছি। শোবার সময় আমি ভাবি, আমি কখন উঠব? কিন্তু রাত বড় হয়, আর আমি সকাল পর্যন্ত এপাশ-ওপাশ করি। পোকা আর ঘায়ের মাম্‌ড়িতে আমার দেহ ঢাকা পড়েছে; আমার চামড়া ফেটে গেছে এবং পুজঁ পড়ছে। আমার দিনগুলো তাঁতীর মাকুর চেয়েও তাড়াতাড়ি চলছে; কোন আশা ছাড়াই সেগুলো শেষ হয়ে যাচেছ। “হে ঈশ্বর, মনে রেখ, আমার জীবন একটা নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়; আমি তো আর সুখের মুখ দেখব না। তোমার চোখ আর আমাকে দেখবে না; তুমি আমার খোঁজ করবে, কিন্তু আমি আর থাকব না। মেঘ যেমন অদৃশ্য হয়ে চলে যায়, তেমনি যে মৃতস্থানে যায় সে আর ফিরে আসে না। সে তার বাড়ীতে আর ফিরে আসবে না; তার জায়গাও তাকে আর মনে রাখবে না। “কাজেই আমি আর চুপ করে থাকব না। আমার মনের দারুণ ব্যথায় আমি কথা বলব; আমার তেতো প্রাণে আমি তোমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করব। আমি কি সমুদ্র নাকি সাগরের জল-দানব যে, তুমি আমাকে পাহারা দিয়ে রেখেছ? যখন ভাবি আমার বিছানা আমাকে সান্ত্বনা দেবে আর আমার ঘুম আমার দুঃখ কমাবে, তখন তুমি নানা স্বপ্ন দেখিয়ে আমাকে ভয় দেখাও, নানা দর্শন দিয়ে আমাকে ভীষণ ভয় ধরিয়ে দাও। তাতে এই কংকাল শরীরে বেঁচে থাকার চেয়ে কেউ আমাকে শ্বাস বন্ধ করে মেরে ফেলুক তা-ই আমি চাই। আমার প্রাণকে আমি ঘৃণা করি; আমি তো চিরকাল বেঁচে থাকতে চাই না। আমাকে ছেড়ে দাও; আমার আয়ু তো ক্ষণস্থায়ী। “মানুষ কি যে, তাকে তুমি এত দাম দাও, আর তার প্রতি তুমি এত মনোযোগ দাও, প্রতিদিন সকালে তুমি তার খোঁজ নাও, আর প্রতি মুহূর্তে তাকে তুমি পরীক্ষা কর? আমার দিক থেকে কি তোমার চোখ ফিরাবে না, কিম্বা ঢোক গিলতেও কি আমাকে সময় দেবে না? হে মানুষের পাহারাদার, আমি যদি পাপ করেই থাকি তবে তাতে তোমার কি? তুমি কেন আমাকে তোমার তীরের লক্ষ্যস্থান করেছ? আমি কি তোমার বোঝা হয়েছি? কেন তুমি আমার দোষ ও আমার পাপ ক্ষমা কর না? কারণ আমাকে তো শীঘ্রই মাটিতে শুতে হবে; তুমি আমার খোঁজ করবে, কিন্তু আমি থাকব না।” তখন শূহীয় বিল্‌দদ উত্তরে বললেন, “তুমি আর কতক্ষণ এই সব কথা বলতে থাকবে? তোমার কথাগুলো ঝোড়ো বাতাসের মত। ঈশ্বর কি ন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেন? সর্বশক্তিমান কি ঠিক্‌কে বেঠিক করেন? তোমার ছেলেমেয়েরা নিশ্চয়ই তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করেছে, সেইজন্য তিনি পাপের শাস্তির হাতে তাদের তুলে দিয়েছেন। কিন্তু তুমি যদি আগ্রহী হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর আর সর্বশক্তিমানের কাছে অনুরোধ জানাও, যদি তুমি খাঁটি ও সৎ হয়ে থাক, তবে এখনও তিনি তোমার পক্ষে কাজ করতে আগ্রহী হবেন আর তোমার সততাপূর্ণ জায়গায় আবার তোমাকে বসাবেন। তোমার ভবিষ্যৎ হবে এত সফলতায় পূর্ণ যে, মনে হবে তোমার প্রথম অবস্থা এর চেয়ে অনেক খারাপ ছিল। “আগেকার দিনের লোকদের জিজ্ঞাসা কর; তাঁদের পূর্বপুরুষেরা যা শিখেছিলেন তার খোঁজ নাও। আমরা তো গতকাল জন্মেছি, কিছুই জানি না; পৃথিবীর উপর আমাদের দিনগুলো ছায়ার মত চলে যায়। তাঁদের কাছ থেকে তুমি শিক্ষা ও উপদেশ পাবে; তাঁরা যা জানেন তা তোমাকে বলবেন। “জলা জায়গা না হলে নল বড় হতে পারে না; জল না পেলে খাগ্‌ড়া বেড়ে উঠতে পারে না। বেড়ে উঠবার সময় যখন সেগুলো কাটা হয় না, তখন জল না পেলে তা ঘাসের চেয়েও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। যারা ঈশ্বরকে ভুলে যায় তাদের দশা তা-ই হয়; ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনদের আশা ঐভাবে ধ্বংস হয়। যার উপর সে নির্ভর করে তা শক্ত নয়, তা মাকড়সার জাল মাত্র। সে যদি তার উপর ভর দেয় তবে তা ভেংগে পড়বে, যদি সে তা আঁকড়ে ধরে তবে তা তাকে ধরে রাখতে পারবে না। সে যেন সূর্যের আলোতে সতেজ একটা চারা, বাগানের সব জায়গায় তার ডালপালা ছড়িয়ে গেছে। জড়ো হওয়া পাথরের চারপাশে তার শিকড়গুলো জড়িয়ে গেছে; পাথরের মধ্যে সে একটা নিরাপদ জায়গা খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু তার জায়গা থেকে যখন তাকে তুলে ফেলা হবে তখন সেই জায়গা তাকে অস্বীকার করে বলবে, ‘আমি তোমাকে কখনও দেখি নি।’ দেখ, এছাড়া তার আর কোন আনন্দ নেই; সেই মাটিতে অন্যান্য চারা গজাবে। “নির্দোষ মানুষকে ঈশ্বর কখনও ত্যাগ করেন না কিম্বা যারা মন্দ কাজ করে তাদের হাত শক্তিশালী করেন না। এখনও তোমার মুখ তিনি হাসিতে ভরে দেবেন আর তোমাকে আনন্দে পূর্ণ করবেন। যারা তোমাকে ঘৃণা করে তারা লজ্জিত হবে; দুষ্টদের বাসস্থান আর থাকবে না।” উত্তরে ইয়োব বললেন, “ঠিক কথা, আমি জানি এ সবই সত্যি। কিন্তু ঈশ্বরের চোখে কেমন করে মানুষ নির্দোষ হতে পারে? কেউ যদি তাঁর সংগে তর্কাতর্কি করতে চায়, তবে তিনি হাজারটা প্রশ্ন করলেও সে একটারও উত্তর দিতে পারবে না। তাঁর জ্ঞান গভীর, তাঁর শক্তি অসীম; কে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রক্ষা পেয়েছে? তিনি হঠাৎ পাহাড়-পর্বতকে সরিয়ে দেন, ক্রোধে সেগুলোকে ধ্বংস করেন; তিনি পৃথিবীকে তার জায়গা থেকে নাড়া দেন, তার থামগুলোকে কাঁপিয়ে তোলেন। তিনি নিষেধ করলে সূর্য আলো দেয় না আর তারাগুলো আলো দেওয়া বন্ধ করে। তিনিই মহাকাশকে বিছিয়ে দেন আর সাগরের ঢেউয়ের উপর দিয়ে হাঁটেন। তিনি সপ্তর্ষি, কালপুরুষ, কৃত্তিকা আর দক্ষিণ দিকের তারাগুলোর সৃষ্টিকর্তা। তিনি এমন সব মহৎ কাজ করেন যা বোঝা যায় না আর এমন আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করেন যার সংখ্যা গোণা যায় না। “তিনি আমার সামনে দিয়ে যান, আমি তাঁকে দেখতে পাই না; তিনি কাছ দিয়ে যান, আমি তাঁকে চিনতে পারি না। যদি তিনি কেড়ে নেন কে তাঁকে বাধা দিতে পারে? কে তাঁকে বলতে পারে, ‘তুমি কি করছ?’ ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ দমন করেন না; এমন কি, জল-দানব রহবের সাহায্যকারীরাও তাঁর পায়ের কাছে ভয়ে জড়সড় হয়েছিল। “তাহলে কেমন করে আমি তাঁর কথার উত্তর দেব? তাঁকে বলবার জন্য কোথায় কথা খুঁজে পাব? আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করলেও তাঁকে উত্তর দিতে পারি না; আমার বিচারকের কাছে আমি কেবল দয়াই ভিক্ষা করব। আমি ডাকলে যদিও বা তিনি সাড়া দেন তবুও আমি বিশ্বাস করি না যে, তিনি আমার কথা শুনবেন। তিনি ঝড় দিয়ে আমাকে গুঁড়িয়ে ফেলেন এবং বিনা কারণেই বারে বারে আমাকে আঘাত করেন। তিনি আমাকে নিঃশ্বাস নিতে দেন না বরং তিক্ততা দিয়েই আমার জীবন ভরে দেন। এটা যদি শক্তির ব্যাপার হয় তবে তিনি তো শক্তিশালী; যদি বিচারের ব্যাপার হয় তবে কে তাঁর বিরুদ্ধে সমন জারি করবে? যদিও আমি নির্দোষ তবুও আমার মুখ আমাকে দোষী করবে; যদিও আমি সৎ তবুও আমার মুখ আমাকে অসৎ বলবে। আমি নির্দোষ, কিন্তু তাতে আমার কি আসে যায়? আমার নিজের জীবনকে আমি ঘৃণা করি। সবই সমান, সেজন্যই আমি বলছি, ‘নির্দোষ ও দুষ্ট- এই দু’জনকেই তিনি ধ্বংস করেন।’ দুর্দশার আঘাতে হঠাৎ নির্দোষীর মৃত্যু হলে তিনি হাসেন। দুষ্টদের হাতে পৃথিবীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং ঈশ্বর বিচারকদের চোখ বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনিই যদি তা না করে থাকেন তবে কে তা করেছে? “যে দৌড়ায় তার চেয়েও তাড়াতাড়ি চলে আমার দিনগুলো; তা উড়ে চলে যায়, মংগল দেখতে পায় না। হালকা নৌকার মতই তা তাড়াতাড়ি চলে যায়; তা ঈগল পাখীর ছোঁ মারার মত করে চলে যায়। যদি বলি, ‘আমার দুঃখ আমি ভুলে যাব, মুখের ভাব বদলে আমি হাসব,’ তবুও আমার সব যন্ত্রণাকে আমি ভয় করি, কারণ আমি জানি তুমি আমাকে নির্দোষ বলে ধরবে না। আমাকে যখন দোষী বলেই ধরা হবে, তখন কেন আমি মিথ্যাই কষ্ট করব? আমি যদি সাবান দিয়ে নিজেকে ধুয়ে ফেলি আর ক্ষার দিয়েও হাত পরিষ্কার করি, তবুও তুমি কাদার গর্তে আমাকে ডুবিয়ে দেবে; তাতে আমার কাপড়-চোপড়ও আমাকে ঘৃণা করবে। “তিনি তো আমার মত একজন মানুষ নন যে, তাঁর কথার উত্তর দেব বা আদালতে তাঁর মুখোমুখি হব। আহা, যদি এমন কেউ থাকতেন যিনি আমাদের মধ্যে সালিশ করে দিতে পারেন এবং যাঁর কথা আমরা দু’জনেই মেনে নিতে পারি; যদি এমন কেউ থাকতেন যিনি ঈশ্বরের শাস্তি আমার উপর থেকে সরিয়ে দিতে পারেন, যাতে তার ভয়ংকরতা আমাকে আর ভয় দেখাতে না পারে। যদি তা হত তাহলে আমি ঈশ্বরকে ভয় না করে কথা বলতাম, কিন্তু এখন আমার যে অবস্থা হয়েছে তাতে আমি তা পারি না। “আমার বেঁচে থাকাকেই আমি ঘৃণা করি, তাই আমার দুঃখের কথা আমি খোলাখুলিভাবেই বলব আর আমার প্রাণের তেতো অবস্থা থেকে কথা বলব। হে ঈশ্বর, আমাকে দোষী কোরো না, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে তোমার যে নালিশ আছে তা আমাকে জানাও। আমাকে কষ্ট দিয়ে তোমার কি লাভ? তোমার হাতের কাজ কি তুমি পায়ে ঠেলছ আর দুষ্টদের মতলবে খুশী হচছ? তোমার চোখ কি মানুষের চোখের মত? মানুষ যেমন দেখে তুমিও কি তেমনি দেখ? মানুষের মতই কি তোমার দিনগুলো কাটে? তাদের মতই কি তোমার বছরগুলো কাটে? তুমি কি সেজন্যই আমার দোষ খুঁজে বেড়াচছ আর আমার পাপের তদন্ত করছ? তুমি তো জান আমি দোষী নই আর তোমার হাত থেকে উদ্ধারকারী কেউ নেই। “তোমারই হাত আমাকে গড়েছে, তৈরী করেছে; এখন তুমি কি ফিরে আমাকে ধ্বংস করবে? মনে করে দেখ, মাটির পাত্রের মত করে তুমি আমাকে গড়েছ; এখন তুমিই কি আবার আমাকে ধুলার মত করবে? দুধের মত করে তুমি আমাকে ঢেলেছ আর ছানার মত করে আমাকে জমাট করেছ। আমাকে চামড়া আর মাংস দিয়ে ঢেকেছ, হাড় আর মাংসপেশী একসংগে করে আমাকে গড়েছ। তুমি আমাকে জীবন দিয়েছ, অটল ভালবাসা দেখিয়েছ; তোমার যত্নে আমার প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু এটাই তোমার অন্তরে তুমি লুকিয়ে রেখেছ, আর আমি জানি এটাই তোমার মনে রয়েছে যে, যদি আমি পাপ করি, তুমি তা লক্ষ্য রাখবে আর আমার দোষের শাস্তি না দিয়ে তুমি ছাড়বে না। যদি আমি দোষী হই তবে আমার উপর বিপদ আসবে। যদি আমি নির্দোষও হই তবুও আমি মাথা তুলতে পারব না, কারণ আমি লজ্জায় পূর্ণ হয়েছি আর কষ্টের মধ্যে ডুবে গেছি। যদি আমি মাথা উঁচু করি তবে তুমি সিংহের মত আমার জন্য ওৎ পেতে থাকবে আর আমাকে আবার তোমার ভয়ংকর শক্তি দেখাবে। আমার বিরুদ্ধে তুমি নতুন নতুন সাক্ষী দাঁড় করাচছ আর আমার প্রতি তোমার বিরক্তি বাড়িয়ে তুলছ; তোমার আক্রমণ একটার পর একটা আমার বিরুদ্ধে আসছে। “কেন তুমি মায়ের পেট থেকে আমাকে বের করে এনেছিলে? কোন চোখ আমাকে দেখবার আগে কেন আমি মরলাম না? হায়, আমাকে যদি কখনও গড়া না হত, কিম্বা পেট থেকে সোজা কবরে নিয়ে যাওয়া হত! আমার অল্প দিনের আয়ু প্রায় শেষ; এবার তুমি আমাকে ছেড়ে দাও যাতে আমি একটুক্ষণ আনন্দ করতে পারি। আমি শীঘ্রই অন্ধকার ও ঘন ছায়ার দেশে যাব; আমি আর কখনও ফিরে আসব না। সেটা ঘোর অন্ধকারের দেশ, ঘন ছায়া ও বিশৃঙ্খলার দেশ; সেখানে আলোও অন্ধকারের মত।” তখন নামাথীয় সোফর উত্তরে বললেন, “এই সব কথার কি উত্তর দেওয়া হবে না? বাচালের কথা কি ঠিক বলে প্রমাণিত হবে? তোমার এই বাজে কথা শুনে কি লোকে চুপ করে থাকবে? তুমি ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলে কি কেউ তোমাকে লজ্জা দেবে না? তুমি ঈশ্বরকে বলছ, তোমার ধর্ম-বিশ্বাসে কোন খুঁত নেই এবং তাঁর চোখে তুমি খাঁটি। আহা, ঈশ্বর যেন কথা বলেন, তোমার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন আর জ্ঞানের গোপন বিষয়গুলো তোমাকে জানান, কারণ জ্ঞানের অনেক দিক আছে। এটা জেনে রেখো, তোমার পাপ অনুসারে ঈশ্বর তোমাকে শাস্তি দেন না। ঈশ্বরের গুপ্ত বিষয়ের গভীরতা কতখানি তা কি তুমি বুঝতে পার? সর্বশক্তিমানের সীমা কতখানি তা কি তুমি তদন্ত করে দেখতে পার? সেগুলো যে আকাশের চেয়েও উঁচু তা কি তুমি বুঝতে পার? সেগুলো মৃতস্থানের গভীরতার চেয়েও গভীর, তুমি কি তা জানতে পার? মাপলে দেখা যাবে তা পৃথিবীর এক দিক থেকে অন্য দিকের চেয়েও লম্বা আর সাগরের চেয়েও চওড়া। তিনি এসে যদি তোমাকে জেলে বন্দী করেন আর বিচার-সভা বসান, তবে কে তাঁকে বাধা দিতে পারে? তিনি ভণ্ড লোকদের নিশ্চয়ই চেনেন; মন্দ কিছু দেখলে তিনি কি তা লক্ষ্য করবেন না? বুনো গাধার বাচ্চা যেমন মানুষ হয়ে জন্মাতে পারে না, তেমনি বুদ্ধিহীন মানুষ জ্ঞানী হতে পারে না। “কিন্তু যদি তুমি তোমার অন্তরটা সম্পূর্ণভাবে তাঁকে দিয়ে দাও, তাঁর দিকে তোমার হাত বাড়িয়ে দাও, তোমার হাতে যে পাপ আছে তা দূর করে দাও, আর অন্যায়কে তোমার বাড়ীতে থাকতে না দাও, তাহলে তুমি নিষ্কলংক হয়ে মাথা তুলবে আর ভয় না করে শক্ত হয়ে দাঁড়াবে। তখন তোমার কষ্ট নিশ্চয়ই তুমি ভুলে যাবে, মনে হবে ওটা যেন কেবল বয়ে যাওয়া জল। তোমার জীবন হবে দুপুরের চেয়েও উজ্জ্বল আর অন্ধকার হবে সকালবেলার মত। তোমার সাহস থাকবে, কারণ আশা আছে; চারদিকে তাকিয়ে তুমি নিরাপদে বিশ্রাম করবে; তুমি শুয়ে পড়লে কেউ তোমাকে ভয় দেখাবে না। অনেক লোক তোমার কাছে দয়া চাইবে। দুষ্টেরা কিন্তু উদ্ধারের আশায় মিথ্যাই তাকাবে, তারা কোন আশ্রয় পাবে না; শেষ নিঃশ্বাসই হবে তাদের আশা।” তখন ইয়োব উত্তরে বললেন, “তোমরা ভাব তোমরাই কেবল জ্ঞানী মানুষ আর তোমাদের মৃত্যুর সংগে সংগে জ্ঞানও মরে যাবে। কিন্তু তোমাদের মত আমারও বুদ্ধি আছে; আমি তোমাদের চেয়ে নীচু নই; তোমরা যা বলেছ তা কে না জানে? আমি ঈশ্বরকে ডাকতাম আর তিনি আমাকে উত্তর দিতেন, তবুও আমার বন্ধুদের কাছে আমি একটা হাসির পাত্র হয়েছি; সৎ এবং নির্দোষ হলেও আমি এখন হাসির পাত্র ছাড়া আর কিছু নই। সুখী লোকেরা দুঃখ-কষ্টকে তুচছ করে; তারা মনে করে যাদের পা পিছ্‌লে যায় দুঃখ-কষ্ট তাদেরই জন্য। লুটেরাদের তাম্বুতে কোন গোলমাল নেই; যারা ঈশ্বরকে বিরক্ত করে তারা নিরাপদেই থাকে; ঈশ্বরই যেন তাদের সব কিছু দিয়েছেন। “পশুদের জিজ্ঞাসা কর, তারা তোমাকে শিখাবে; আকাশের পাখীদের বল, তারাও তোমাকে বলে দেবে; পৃথিবীকে বল, সে-ও তোমাকে শিখাবে; সাগরের মাছেরাও তোমাকে বলে দেবে। এরা সবাই জানে সদাপ্রভুর শক্তিই এ সব করেছে। তাঁরই হাতে সব প্রাণীদের জীবন রয়েছে; সব মানুষের নিঃশ্বাসও তাঁর হাতে আছে। জিভ্‌ যেমন খাবারের স্বাদ নেয় তেমনি কানও কথার পরীক্ষা করে। তোমরা বলে থাক, বুড়ো লোকদের কাছে জ্ঞান পাওয়া যায় আর দীর্ঘ জীবন বুদ্ধির যোগান দেয়। “কিন্তু জ্ঞান ও শক্তি ঈশ্বরের; পরামর্শ ও বুদ্ধি তাঁরই। তিনি ভাঙ্গলে আর তা গড়া যায় না; তিনি কাউকে জেলে আটক করলে খালাস করা যায় না। তিনি জল বন্ধ করে রাখলে খরা হয়; তিনি তা খুলে দিলে দেশ ধ্বংস হয়। শক্তি ও জ্ঞান তাঁরই; যাকে ছলনা করা হয়েছে আর যে ছলনা করে তারা দু’জনেই তাঁর হাতের নীচে। তিনি মন্ত্রীদের পোশাক খুলে ফেলে তাদের বন্দী করেন আর বিচারকদের বোকা বানান। তিনি রাজার পোশাক কেড়ে নেন আর তাঁকে বন্দী করেন। তিনি পুরোহিতদের পোশাক খুলে ফেলে তাদের বন্দী করেন আর যারা শিকড় গেড়ে বসে আছে তাদের উপ্‌ড়ে ফেলেন। বিশ্বস্ত লোকদের মুখ তিনি বন্ধ করেন আর বুড়ো লোকদের বিবেচনা-শক্তি নষ্ট করেন। তিনি উঁচু পদের লোকদের উপর ঘৃণা ঢেলে দেন আর শক্তিমানদের অস্ত্রহীন করেন। অন্ধকারে লুকানো বিষয়গুলো তিনি প্রকাশ করেন আর ঘন ছায়াকে আলোতে আনেন। তিনি জাতিদের মহান করেন আবার ধ্বংসও করেন, তাদের বাড়িয়ে তোলেন আবার বন্দীদশায়ও নিয়ে যান। পৃথিবীর নেতাদের বিচারবুদ্ধি তিনি দূর করেন, পথহীন নির্জন জায়গায় তাদের ঘুরে বেড়াতে দেন। তারা আলো ছাড়াই অন্ধকারে হাঁত্‌ড়ে বেড়ায়; তিনি তাদের মাতালের মত হাঁটান। “আমি এই সব নিজের চোখে দেখেছি আর নিজের কানে শুনে তা বুঝেছি। তোমরা যা জান আমিও তা জানি; আমি তোমাদের চেয়ে নীচু নই। কিন্তু আমি সর্বশক্তিমানের সংগে কথা বলতে চাই, ঈশ্বরের সংগে আমার ব্যাপার নিয়ে তর্ক করতে চাই। তোমরা তো সব কিছু মিথ্যা দিয়ে লেপে দিচ্ছ; তোমরা সবাই অপদার্থ ডাক্তার। আহা, তোমরা সবাই যদি চুপ করে থাকতে! তোমাদের জন্য সেটাই হত বুদ্ধিমানের কাজ। “এখন তোমরা আমার যুক্তি শোন; আমার তর্কের কথায় কান দাও। ঈশ্বরের পক্ষ হয়ে কি তোমরা অন্যায় কথা বলবে? তাঁর হয়ে কি ছলনার কথা বলবে? তাঁর পক্ষ হয়ে কি একচোখামি করবে? ঈশ্বরের হয়ে কি তর্ক করবে? তিনি যদি তোমাদের পরীক্ষা করেন তবে কি তোমাদের ভাল হবে? মানুষকে যেমন ঠকানো যায় তেমনি করে কি তোমরা তাঁকেও ঠকাতে পারবে? তোমরা যদি গোপনে একচোখামি কর তাহলে নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের বকুনি দেবেন। তাঁর মহিমা কি তোমাদের ভয় জাগায় না? তাঁর ভয়ংকরতা দেখে কি তোমরা ভয় পাও না? তোমাদের নীতি কথাগুলো যেন চলতি কথার ছাইয়ের গাদা; তোমাদের তর্কের কথাগুলো কাদার মত নরম। “তোমরা চুপ করে থাক, আমাকে কথা বলতে দাও; তারপর আমার যা হবার তা-ই হোক। কেন আমি নিজেকে বিপদে ফেলব আর আমার প্রাণকে হাতে রাখব? তিনি যদি আমাকে মেরেও ফেলেন তবুও তাঁর উপর আমি আশা রাখব; আমি নিশ্চয়ই তাঁর সামনে আমার পক্ষে কথা বলব। সেটাই হবে আমার রক্ষার উপায়, কারণ কোন দুষ্ট লোক তাঁর সামনে আসতে পারবে না। আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন; আমি যা বলছি তা তোমাদের কানে যাক। আমার পক্ষে যা বলবার তা আমি এখন ঠিক করেছি, তাই আমি জানি যে, আমি নির্দোষ বলে প্রমাণিত হব। কেউ কি আমার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে পারে? পারলে আমি নীরবে মারা যাব। তারপর তুমি আমাকে ডেকো, আমি উত্তর দেব, কিম্বা আমাকে কথা বলতে দাও আর তুমি তার উত্তর দিয়ো। বল, আমার অন্যায় আর পাপ কি? আমার দোষ ও পাপ আমাকে দেখিয়ে দাও। কেন তুমি মুখ লুকিয়ে রাখছ আর আমাকে শত্রু বলে ভাবছ? যে পাতা বাতাসে ওড়ে তাকে কি তুমি ভয় দেখাবে? শুকনা তুষের পিছনে কি তুমি তাড়া করবে? তুমি তো আমার বিরুদ্ধে তেতো কথা লিখছ, আমার যৌবনের পাপের ফল আমাকে ভোগ করাচ্ছ। তুমি আমার পায়ে বেড়ী দিয়েছ; আমার সমস্ত পথের উপর তুমি কড়া নজর রেখেছ আর আমার পায়ের ধাপের সীমা বেঁধে দিয়েছ। “মানুষ তো পচা জিনিষের মত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর পোকায় কাটা কাপড়ের মত হচ্ছে। স্ত্রীলোকের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী মানুষের জীবন অল্পদিনের, আর তা কষ্টে পরিপূর্ণ। সে ফুলের মত ফুটে ওঠে তারপর শুকিয়ে যায়; সে ছায়ার মত চলে যায়, আর থাকে না। এই রকম একজনের উপর কি তোমার চোখ পড়েছে? বিচারের জন্য কি তুমি আমাকে তোমার সামনে আনবে? অশুচি থেকে কেউ কি শুচি কিছু তৈরী করতে পারে? কেউ পারে না। মানুষের আয়ু স্থির করা আছে; তুমি তার মাসের সংখ্যা ঠিক করে রেখেছ; তার সীমা তুমি ঠিক করেছ, সে তা পার হতে পারে না। কাজেই তার দিক থেকে তুমি তোমার চোখ ফিরাও, তাকে বিশ্রাম দাও; দিন-মজুরের মতই তাকে তার সময় কাটাতে দাও। “গাছেরও আশা আছে; সেটা কেটে ফেললেও আবার গজাবে, তা থেকে আবার নতুন ডাল বের হবে। মাটির মধ্যে তার শিকড় পুরানো হয়ে যায়, তার গোড়া মাটিতে মরে যায়। তবুও জলের গন্ধ পেলে তা আবার গজায়; নতুন চারার মতই আবার তার ডালপালা বের হয়। কিন্তু মানুষ মরলে সে শেষ হয়ে যায়; সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে কোথায় যায়? হ্রদের জল যেমন শুকিয়ে যায় আর নদী যেমন মরে যায়, তেমনি মানুষ মরলে আর ওঠে না; আকাশ শেষ হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সে আর জাগবে না, সে মরণ-ঘুম থেকে জেগে উঠবে না। “আহা, তুমি যদি আমাকে মৃতস্থানে লুকিয়ে রাখতে, তোমার ক্রোধ চলে না যাওয়া পর্যন্ত গুপ্ত রাখতে, তারপর আমার জন্য একটা সময় ঠিক করে আবার আমাকে মনে করতে! মানুষ মরে কি আবার জীবিত হবে? যদি হয়, তবে আমার কঠিন পরিশ্রমের সব দিনগুলোতে আমি নতুন হয়ে উঠবার জন্য অপেক্ষা করব। তখন তুমি ডাকবে আর আমি সাড়া দেব; তোমার হাতে গড়া প্রাণীর জন্য তোমার প্রাণ কাঁদবে। তখন তুমি আমার পায়ের ধাপ গুণবে কিন্তু আমার পাপের দিকে লক্ষ্য রাখবে না। তখন তুমি একটা থলির মধ্যে আমার দোষগুলো সীলমোহর করে রাখবে আর আমার পাপ সব ঢেকে দেবে। “কিন্তু পাহাড় যেমন আস্তে আস্তে ক্ষয়ে গিয়ে ভেংগে পড়ে, পাথর যেমন তার নিজের জায়গা থেকে সরে যায়, জল যেমন পাথরকে ক্ষয় করে আর জলের স্রোত মাটি ধুয়ে নিয়ে যায়, তেমনি করে তুমি মানুষের আশাকে ধ্বংস কর। তুমি চিরকালের জন্য তাকে দমন কর, আর সে চলে যায়; তার চেহারা বদলে দিয়ে তুমি তাকে দূর করে দাও। তার ছেলেরা সম্মানিত হলে সে জানতে পারে না; তারা অসম্মানিত হলেও সে তা দেখতে পায় না। সে কেবল তার দেহের যনণা বুঝতে পারে আর নিজের জন্যই শোক করে।” তখন তৈমনীয় ইলীফস উত্তরে বললেন, “কোন জ্ঞানী লোক কি এইভাবে অনর্থক কথা বলবে কিম্বা পূবের গরম বাতাস দিয়ে পেট ভরাবে? সে কি বাজে কথা দিয়ে তর্ক করবে না কি মূল্যহীন কথা বলবে? কিন্তু তুমি তো ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করা ছেড়ে দিয়েছ আর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করাও কমিয়ে দিয়েছ। তোমার পাপের জন্যই তুমি এইভাবে কথা বলছ আর কথা বলছ চালাক লোকদের মত। আমি নই, কিন্তু তোমার নিজের মুখই তোমাকে দোষী করছে; তুমি তোমার নিজের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দিচছ। “মানুষের মধ্যে কি তুমিই প্রথমে জন্মেছ? পাহাড়ের জন্মের আগে কি তোমার জন্ম হয়েছিল? ঈশ্বরের পরিকল্পনার কথা কি তুমি শুনেছ? তুমি কি একাই সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী? তুমি এমন কি জান যা আমরা জানি না, আর এমন কি বোঝ যা আমরা বুঝি না? আমাদের মধ্যে এমন একজন আছেন যাঁর চুল পেকেছে, যিনি বৃদ্ধ; তাঁর বয়স তোমার বাবার বয়সের চেয়েও বেশী। ঈশ্বরের দেওয়া সান্ত্বনা কি তোমার পক্ষে যথেষ্ট নয়? সেই কথা তো নরমভাবে তোমাকে বলা হয়েছে। তোমার অন্তর কেন তোমাকে দূরে সরায়? তোমার চোখ কেন রাগে জ্বলে ওঠে? এতে তো তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে রাগ করছ আর ঐ সব কথা তোমার মুখ থেকে বের করছ। মানুষ কি যে, সে খাঁটি হতে পারে? স্ত্রীলোকের গর্ভ থেকে যে জন্মেছে সে কি যে, নির্দোষ হতে পারে? ঈশ্বর যদি তাঁর দূতদের উপর বিশ্বাস রাখতে না পারেন, তাঁর চোখে যদি আকাশও খাঁটি না হয়, তাহলে মানুষ, যে জঘন্য ও খারাপ এবং জলের মত মন্দতা খায়, সে মোটেই খাঁটি হতে পারে না। “আমার কথা শোন, আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলি; আমি যা দেখেছি তা আমি তোমাকে বলব। জ্ঞানী লোকেরা তা তাঁদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন আর তা সবই প্রকাশ করেছিলেন। কেবল তাঁদের হাতেই দেশটা দেওয়া হয়েছিল, কোন বিদেশী তাঁদের জ্ঞানে ভেজাল দেয় নি। দুষ্ট লোক সারা জীবন যন্ত্রণা ভোগ করে; নিষ্ঠুরেরা যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিনই যন্ত্রণা ভোগ করবে। তার কানে ভয় জাগানো শব্দ ঢুকবে; যখন সব কিছুই ভাল চলছে বলে মনে হবে তখন লুটেরারা তাকে আক্রমণ করবে। তার কোন আশা নেই যে, সে অন্ধকার থেকে পালিয়ে আসতে পারবে; তার জন্য ঠিক হয়ে আছে ভয়ংকর মৃত্যু। সে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায় আর জিজ্ঞাসা করে তা কোথায়। সে জানে যে, অন্ধকারের দিনটা কাছে এসে গেছে। দুর্দশা ও মনের কষ্ট তাকে ভয় দেখায় আর শক্তিশালী রাজার মতই তাকে আক্রমণ করবার জন্য প্রস্তুত হয়, কারণ সে ঈশ্বরকে ঘুষি দেখায় আর সর্বশক্তিমানের বিরুদ্ধে বড়াই করে। মোটা ও শক্ত ঢাল নিয়ে ঘাড় শক্ত করে সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এগিয়ে যায়। “তার মুখ চর্বিতে মোটা হয়ে গেছে আর কোমর মোটা হয়েছে মাংসে। সে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরে বাস করে; যে ঘরে কেউ থাকে না, যে ঘর ধ্বংসস্তূপ হবার জন্য তৈরী হয়ে আছে, সেখানে সে বাস করে। সে আর ধনী থাকবে না, তার ধন-সম্পত্তি স্থায়ী হবে না, আর তার হাজার হাজার পশুও থাকবে না। সে অন্ধকার এড়াতে পারবে না; সে এমন গাছের মত হবে যার ডালপালা আগুনের শিখায় পুড়ে যাবে; ঈশ্বরের মুখের শ্বাসে সে উড়ে যাবে। বাজে জিনিষের উপর বিশ্বাস করে সে যেন নিজেকে না ঠকায়, কারণ সে তার বদলে কিছুই পাবে না। সময়ের আগেই তার পাওনা শাস্তি সে পুরোপুরি পাবে; তার ডালপালা বেড়ে উঠবে না। সে এমন আংগুর লতার মত হবে যা থেকে সব কাঁচা আংগুর ঝরে পড়ে গেছে; সে এমন জলপাই গাছের মত হবে যার ফুল ঝরে গেছে। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনদের কোন ছেলেমেয়ে থাকবে না; তাদের ঘুষের বাড়ী-ঘর আগুনে গ্রাস করবে। তাদের গর্ভে থাকবে দুষ্টতা আর তারা জন্ম দেবে মন্দকে; তাদের গর্ভে সৃষ্টি হবে ছলনা।” তখন উত্তরে ইয়োব বললেন, “আমি এই রকম কথা অনেক শুনেছি; কি রকম কষ্ট-দেওয়া সান্ত্বনাকারী তোমরা সবাই! তোমাদের এই একটানা বাতাসের মত কথাবার্তা কখনও কি শেষ হবে না? তোমাদের কিসে পেয়েছে যে, তোমরা তর্ক করেই চলেছ? তোমাদের অবস্থা যদি আমার মত হত তবে আমিও তোমাদের মত কথা বলতে পারতাম, তোমাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলতে পারতাম আর তোমাদের দেখে মাথাও নাড়াতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করতাম না, বরং আমার মুখ তোমাদের উৎসাহ দিত; আমার মুখের সান্ত্বনার কথা তোমাদের আরাম দিত। “কথা বললেও আমার যন্ত্রণা কমে না; চুপ করে থাকলেও তা দূর হয় না। হে ঈশ্বর, তুমি তো আমাকে ক্ষয় হতে দিয়েছ; আমার গোটা সংসারটাকে তুমি ধ্বংস করে ফেলেছ। তুমি আমার শরীর শুকিয়ে ফেলেছ, আর সেটাই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়েছে; আমার শুকনা চেহারাই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে। ঈশ্বর আমাকে ভীষণভাবে আক্রমণ করেছেন এবং ক্রোধে আমাকে ছিঁড়ে ফেলেছেন; তিনি আমাকে দেখে দাঁতে দাঁত ঘষেছেন; আমার বিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে চোখ রাংগিয়েছেন। আমাকে ঠাট্টা করবার জন্যই লোকে মুখ খোলে; ধিক্কার দিয়ে তারা আমার গালে চড় মারে আর আমার বিরুদ্ধে একসংগে জড়ো হয়। মন্দ লোকদের কাছে ঈশ্বর আমাকে তুলে দিয়েছেন; দুষ্ট লোকদের হাতে তিনি আমাকে ছুঁড়ে ফেলেছেন। আমি শান্তিতে ছিলাম কিন্তু তিনি আমাকে চুরমার করেছেন; আমার ঘাড় ধরে তিনি আমাকে আছাড় মেরেছেন। তিনি আমাকে করেছেন তাঁর তীরের লক্ষ্যস্থান। তাঁর ধনুকধারীরা আমাকে ঘিরে ফেলেছে; নিষ্ঠুরের মত তিনি আমার বৃক্ক চিরে দিয়েছেন আর আমার পিত্ত মাটিতে ঢেলে ফেলেছেন। বারে বারে তিনি আমার রক্ষা-দেয়াল ভেংগে ফেলেছেন, যোদ্ধার মত করে তিনি আমার দিকে দৌড়ে এসেছেন। আমার চামড়ার উপরে আমি চট পরেছি; আমার অহংকার আমি ধুলায় লুটিয়েছি। কাঁদতে কাঁদতে আমার মুখ লাল হয়েছে, আমার চোখের নীচে কালি পড়েছে; তবুও আমি কাউকে অত্যাচার করি নি এবং আমার প্রার্থনা খাঁটি রয়েছে। “হে পৃথিবী, আমার রক্ত ঢেকে দিয়ো না; আমার কান্না যেন সব সময় শোনা যায়। এখনও আমার সাক্ষী স্বর্গে রয়েছেন; আমার পক্ষে যিনি কথা বলবেন তিনি উপরে রয়েছেন। যিনি আমার পক্ষে আছেন তিনি আমার বন্ধু, আর আমি ঈশ্বরের কাছে চোখের জল ফেলি। মানুষ যেমন বন্ধুর পক্ষ হয়ে কথা বলে তেমনি যদি কেবল একজন আমার পক্ষ হয়ে ঈশ্বরের কাছে কথা বলতে পারত! আমাকে তো আর কয়েকটা বছর পরে সেই পথে চলে যেতে হবে যে পথে গেলে আর আমি ফিরব না। “আমার মন ভেংগে গেছে, আমার আয়ু শেষ হয়ে আসছে, আমার জন্য কবর অপেক্ষা করছে। ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীরা সত্যিই আমার চারপাশে আছে; তাদের বিরুদ্ধভাব আমি দেখতে পাচ্ছি। “হে ঈশ্বর, যে জামিন তুমি চাও আমার পক্ষে সেই জামিন তুমিই হও; কে আর আমার হয়ে জামিন হবে? তুমি তাদের বুঝবার মন বন্ধ করে দিয়েছ, কাজেই তুমি তাদের জয়ী হতে দেবে না। লাভের আশায় যদি কেউ তার বন্ধুদের দোষী করে তবে তার সন্তানেরা কষ্ট ভোগ করবে। “ঈশ্বর আমাকে সকলের টিট্‌কারির পাত্র করেছেন, যার মুখে সবাই থুথু দেয় তার মতই করেছেন। আমার চোখ দুঃখে নিস্তেজ হয়ে এসেছে; আমার গোটা দেহটা ছায়ার মত হয়েছে। এতে সৎ লোকেরা খুব অবাক হবে, আর নির্দোষেরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনদের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে; কিন্তু খাঁটি লোকেরা তাদের পথে এগিয়ে যাবে, আর যাদের হাত শুচি তারা দিনে দিনে শক্তিশালী হবে। “বেশ, তোমরা সবাই এসে আবার চেষ্টা কর। আমি তোমাদের মধ্যে কাউকেই জ্ঞানী দেখি না। আমার আয়ু প্রায় শেষ হয়েছে, আমার সব পরিকল্পনা বিফল হয়েছে, আমার অন্তরের ইচ্ছাগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। এই লোকেরা রাতকে দিন বানায় আর অন্ধকারের মধ্যে বলে, ‘আলো আসছে’। যদি আমার ঘর হিসাবে আমি মৃতস্থানকে আশা করি, অন্ধকারের মধ্যে যদি আমার বিছানা পাতি, মৃতস্থানকে যদি বলি, ‘তুমি আমার বাবা,’ আর পোকাকে বলি, ‘আমার মা’ কিম্বা ‘আমার বোন,’ তাহলে আমার আশা কোথায়? আর আমার আশার পূর্ণতা কে দেখতে পাবে? সেই আশা মৃতস্থানের দুয়ার পর্যন্ত নেমে যাবে না; আমার সংগে তা ধুলায় মিশে যাবে না।” তখন শূহীয় বিল্‌দদ উত্তরে বললেন, “তোমার এই সব কথা বলা কখন শেষ হবে? তুমি ঠিকভাবে চিন্তা কর, তাহলে আমরা কথা বলতে পারব। আমাদের কেন পশুর মত মনে করছ? তোমার চোখে কেন আমরা বুদ্ধিহীন হয়েছি? তুমি তো রাগে নিজেকে টুকরা টুকরা করছ; তোমার জন্য কি পৃথিবী ত্যাগ করতে হবে? নাকি পাহাড়কে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে হবে? “দুষ্টের বাতি নিভিয়ে ফেলা হবে; তার আগুনের শিখা জ্বলবে না। তার তাম্বুর মধ্যে আলো অন্ধকার হবে; তার কাছে রাখা বাতি নিভে যাবে। তার চলবার শক্তি দুর্বল হবে; তার দেওয়া পরামর্শই তাকে নীচে ফেলে দেবে। তার পা-ই তাকে জালের মধ্যে ঠেলে ফেলবে; সে সেই জালের মধ্যে পা দেবে। তার পায়ের গোড়ালী ফাঁদে পড়বে, আর ফাঁদ তাকে আটকে রাখবে। তার জন্য মাটিতে ফাঁস লুকানো থাকবে; তার পথে ফাঁদ পাতা থাকবে। ভয় তার চারপাশে থাকবে; তার প্রতিটি ধাপে তা তার পিছু নেবে। বিপদ তার জন্য হা করে আছে; সে পড়ে গেলেই ধ্বংস তার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তা তার দেহের চামড়া খেয়ে ফেলবে; মৃত্যুর প্রথম সন্তান তার গোটা দেহটাই গিলে ফেলবে। তার তাম্বুর নিরাপদ অবস্থা থেকে তাকে উপ্‌ড়ে ফেলা হবে; তাকে নিয়ে যাওয়া হবে ভয়-রাজার কাছে। তার তাম্বুতে তার নিজের কিছুই থাকবে না; তার বাসস্থানের উপরে জ্বলন্ত গন্ধক ছড়ানো হবে। নীচে তার শিকড় শুকিয়ে যাবে আর উপরে তার ডালপালা মরে যাবে। পৃথিবী থেকে তার স্মৃতি মুছে যাবে; দেশে তার নাম থাকবে না। তাকে আলো থেকে অন্ধকারে দূর করা হবে; জগৎ থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। নিজের জাতির মধ্যে তার কোন বংশধর থাকবে না; সে যেখানে থাকত সেখানে আর কেউ থাকবে না। পশ্চিম দেশের লোকেরা তার দুর্ভাগ্য দেখে অবাক হবে, আর পূর্বদেশের লোকদের ভীষণ ভয় ধরে যাবে। দুষ্ট লোকের বাসস্থান সত্যিই এই রকম হবে; যে ঈশ্বরকে জানে না তার দশা এই রকমই হবে।” তখন উত্তরে ইয়োব বললেন, “তোমরা আর কতক্ষণ আমার মনে কষ্ট দেবে আর কথার ঘায়ে আমাকে চুরমার করবে? তোমরা অনেকবার আমাকে অপমান করেছ; লজ্জাহীনভাবে তোমরা আমার সংগে নিষ্ঠুর ব্যবহার করেছ। যদি সত্যিই আমি বিপথে গিয়ে থাকি, তবে তার ফল তো আমার একারই পাওনা। যদি সত্যিই তোমরা আমার উপরে নিজেদের উঁচু করতে চাও, আমার এই নীচু অবস্থা নিয়ে আমার দোষ প্রমাণ করতে চাও, তাহলে জেনো যে, ঈশ্বরই আমার প্রতি অন্যায় করেছেন; নিজের জালে তিনিই আমাকে ঘিরেছেন। “আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে বলে চিৎকার করলেও আমি কোন উত্তর পাই না; কান্নাকাটি করলেও কোন বিচার পাই না। তিনি আমার পথে বেড়া দিয়েছেন বলে আমি পার হতে পারছি না; আমার সব পথ তিনি অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছেন। তিনি আমার সম্মান তুলে নিয়েছেন, মাথার উপর থেকে মুকুট সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি সব দিক থেকে আমাকে আঘাত করেছেন যে পর্যন্ত না আমি শেষ হয়ে যাই; গাছের মত করে তিনি আমার আশা উপ্‌ড়ে ফেলেছেন। আমার বিরুদ্ধে তাঁর ক্রোধ জ্বলছে; তাঁর শত্রুদের একজন বলে তিনি আমাকে মনে করেন। তাঁর সৈন্যেরা দল বেঁধে এগিয়ে আসছে; আক্রমণের জন্য তারা আমার বিরুদ্ধে দেয়াল পার হবার রাস্তা তৈরী করেছে, আমার তাম্বুর চারপাশে ঘেরাও করেছে। “তিনি আমার কাছ থেকে আমার ভাইদের আলাদা করে দিয়েছেন; আমার চেনা লোকেরা অচেনার মত ব্যবহার করে। আমার আত্মীয়েরা চলে গেছে; আমার বন্ধুরা আমাকে ভুলে গেছে। আমার অতিথি ও দাসীরা আমাকে যেন চেনেই না; তারা আমাকে বিদেশী হিসাবে দেখে। আমার দাসকে ডাকলে সে সাড়া দেয় না, নিজের মুখে মিনতি করলেও উত্তর দেয় না। আমার স্ত্রী আমার নিঃশ্বাস ঘৃণা করে; আমার নিজের ভাইয়েরাও আমাকে জঘন্য মনে করে। এমন কি, ছোট ছেলেমেয়েরাও আমাকে ঘৃণা করে; আমি উঠে দাঁড়ালেই তারা আমাকে ঠাট্টা-তামাশা করে। আমার সব ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা আমাকে ঘৃণা করে; আমি যাদের ভালবাসি তারা আমার বির€দ্ধে উঠেছে। আমি এখন হাড়-চামড়া ছাড়া আর কিছু নই, কেবল প্রাণে বেঁচে আছি। হে আমার বন্ধুরা, আমার ব্যথার ব্যথী হও, কারণ ঈশ্বরের হাত আমাকে আঘাত করেছে। ঈশ্বরের মত করে কেন তোমরা আমার পিছনে তাড়া করছ? তোমরা কি আমাকে কষ্ট দেওয়া থামাবে না? “হায়, আমার সব কথা যদি লেখা হত! সেগুলো যদি বইয়ের পাতায় থাকত! যদি পাথরের ফলকে লোহার যন্ত্র ও সীসা দিয়ে চিরকালের জন্য তা খোদাই করা থাকত! আমি জানি আমার মুক্তিদাতা জীবিত আছেন; শেষে তিনি পৃথিবীর উপরে এসে দাঁড়াবেন। আমার চামড়া ধ্বংস হয়ে যাবার পরেও আমি জীবিত অবস্থায় ঈশ্বরকে দেখতে পাব। আমি নিজেই তাঁকে দেখব; অন্যে নয়, কিন্তু আমি আমার নিজের চোখেই তাঁকে দেখব। আমার অন্তর আকুলভাবে তা চাইছে। যদি তোমরা বল, ‘কষ্টের গোড়া তার মধ্যে রয়েছে বলে আমরা তাকে কষ্ট দিচিছ,’ তবে তলোয়ারের ভয় তোমাদের থাকা উচিত, কারণ ঈশ্বরের ক্রোধ তলোয়ারের মধ্য দিয়ে শাস্তি নিয়ে আসে; আর এইভাবেই তোমরা জানতে পারবে যে, বিচার আছে।” তখন নামাথীয় সোফর উত্তরে বললেন, “আমার চিন্তা আমাকে উত্তর দিতে বাধ্য করছে, কারণ আমি খুবই উত্তেজিত হয়েছি। আমি এমন বকুনি শুনলাম যা আমাকে অসম্মানিত করছে; আমার বুদ্ধি উত্তর দিতে আমাকে জোর করছে। তুমি নিশ্চয়ই জান সেই পুরানো দিন থেকে, পৃথিবীর উপরে মানুষকে স্থাপন করার পর থেকে, দুষ্টদের আমোদ-প্রমোদ অল্পক্ষণ স্থায়ী। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনের আনন্দ কেবল এক মুহূর্তের জন্য থাকে; তার সম্মান যদিও আকাশ পর্যন্ত পৌঁছায় আর মাথা আকাশ ছোঁয়, তবুও সে নিজের পায়খানার মত চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা তাকে দেখেছে তারা বলবে, ‘কোথায় গেল সে?’ স্বপ্নের মত সে মিলিয়ে যাবে, তাকে আর পাওয়া যাবে না; রাতের দর্শনের মত সে অদৃশ্য হয়ে যাবে। যারা তাকে দেখত তারা আর তাকে দেখবে না; তার বাসস্থানও আর তাকে দেখবে না। গরীবদের ক্ষতিপূরণ তার ছেলেমেয়েদেরই করতে হবে; তাকে নিজের হাতে তার ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। যৌবনের শক্তিতে পরিপূর্ণ তার হাড়গুলো তার সংগে ধুলায় শুয়ে থাকবে। “মন্দ যদিও তার মুখে মিষ্টি লাগে আর সে জিভের নীচে তা লুকিয়ে রাখে, যদিও সে তা ত্যাগ করতে না চেয়ে মুখের মধ্যে রেখে দেয়, তবুও সেই খাবার তার পেটে গিয়ে টক হয়ে যাবে; তার মধ্যে তা সাপের বিষের মত হবে। যে ধন-সম্পদ সে গিলেছিল তা সে বমি করে ফেলে দেবে; ঈশ্বর তার পেট থেকে তা বের করে ফেলবেন। সে সাপের বিষ চুষবে; সাপ তাঁর বিষাক্ত কামড়ে তাকে মেরে ফেলবে। দই আর মধুর স্রোত সে আর দেখতে পাবে না। যার জন্য সে পরিশ্রম করেছে তা ভোগ না করেই ফিরিয়ে দিতে হবে; ব্যবসার লাভও সে আর ভোগ করবে না; কারণ সে গরীবদের অত্যাচার ও অবহেলা করেছে, আর যে বাড়ী-ঘর সে নিজে তৈরী করে নি তা দখল করে নিয়েছে। “সে সব সময় লোভ করে, সেইজন্য সে কিছুই রক্ষা করতে পারবে না। গ্রাস করবার মত তার আর কিছুই বাকী থাকবে না; তার সৌভাগ্য স্থায়ী হবে না। তার প্রচুর থাকার সময়েও সে কষ্টে পড়বে; দুঃখ তার পুরো শক্তি নিয়ে তার উপর আসবে। তার পেট ভরবার সময়ে ঈশ্বর তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধ তার উপরে ঢেলে দেবেন, তা ঢেলে দেবেন বৃষ্টির মত করে। যদি সে লোহার অস্ত্রের হাত থেকে পালায়, তবে ব্রোঞ্জের ধনুক থেকে তীর তাকে বিঁধবে। সেই চক্‌চকে তীরের ফলা তার পিত্ত থেকে বের হবে, সে তার দেহ থেকে তা টেনে বের করবে। নানা রকম ভয় তার উপর আসবে। তার ধনের জন্য পরিপূর্ণ অন্ধকার অপেক্ষা করে আছে। যে আগুন মানুষ লাগায় নি সেই আগুন তাকে পুড়িয়ে ফেলবে আর তার তাম্বুর বাকী সবাইকে গ্রাস করবে। আকাশ তার অন্যায় প্রকাশ করে দেবে; পৃথিবী তার বিরুদ্ধে উঠবে। বন্যায় তার ঘরের সব কিছু নিয়ে যাবে, ঈশ্বরের ক্রোধের দিনে তা সম্পূর্ণভাবে ধুয়ে নিয়ে যাবে। ঈশ্বর দুষ্টদের জন্য ঐ রকম অবস্থাই ঠিক করে রাখেন; ওটাই হল তাদের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া অধিকার।” তখন ইয়োব উত্তরে বললেন, “তোমরা আমার কথা মন দিয়ে শোন; সেটাই হবে আমাকে দেওয়া তোমাদের সান্ত্বনা। আমার কথা বলবার সময় তোমরা আমাকে সহ্য কোরো; বলা শেষ হলে তারপর বিদ্রূপ কোরো। “আমার নালিশ কি মানুষের কাছে? কেন আমি অধৈর্য হব না? আমার দিকে তাকিয়ে তোমরা অবাক হও; তোমাদের মুখে হাত চাপা দাও। এই সব কথা ভাবলে আমি ভয় পাই; আমার শরীরে কাঁপুনি ধরে যায়। দুষ্টেরা কেন বেঁচে থাকে আর কেনই বা বুড়ো হয়? কেন তাদের শক্তি বেড়ে যায়? তাদের চারপাশে থাকে তাদের সন্তানেরা, আর তাদের চোখের সামনে থাকে তাদের নাতি-নাতনীরা। তাদের বাড়ী নিরাপদ ও ভয়শূন্য থাকে; ঈশ্বরের শাস্তি তাদের উপর থাকে না। তাদের ষাঁড়গুলো মিলিত হলে তা কখনও বিফল হয় না; তাদের গাভীগুলো বাচ্চা দেয়, তাদের গর্ভ নষ্ট হয় না। ভেড়ার পালের মত তাদের ছেলেমেয়েদের তারা বাইরে পাঠায়; তারা ভেড়ার বাচ্চার মত নেচে নেচে বেড়ায়। তারা খঞ্জনি ও সুরবাহার বাজিয়ে গান করে; বাঁশীর সুর শুনে আনন্দ করে। তারা সফলতার সংগে তাদের দিন কাটায় আর শান্তিতেই মৃতস্থানে নেমে যায়। তবুও তারা ঈশ্বরকে বলে, ‘আমাদের কাছ থেকে তুমি দূর হও; তোমার পথ জানবার ইচ্ছা আমাদের মোটেই নেই। সেই সর্বশক্তিমান কে যে, আমরা তার সেবা করব? তার কাছে প্রার্থনা করলে আমাদের কি লাভ হবে?’ কিন্তু তাদের সফলতা তো তাদের নিজেদের হাতে নয়, তাই আমি দুষ্টদের পরামর্শ থেকে দূরে থাকি। “আসলে কি দুষ্টদের বাতি নিভে যায়? কতবারই বা তাদের উপর বিপদ আসে? কতবার ঈশ্বর ক্রোধে তাদের শাস্তি দেন? কতবার তারা বাতাসের মুখে খড়ের মত হয় আর ঝড়ের মুখে উড়ে যাওয়া তুষের মত হয়? লোকে বলে, ‘একজন লোকের শাস্তি ঈশ্বর তার সন্তানদের জন্য জমা করে রাখেন।’ কিন্তু ঈশ্বর যেন সেই লোককেই শাস্তি দেন যাতে সে তার দোষ বুঝতে পারে। সে নিজের চোখেই নিজের ধ্বংস দেখুক; সে সর্বশক্তিমানের ক্রোধ পান করুক। তার আয়ু যখন শেষ হয়ে যাবে তখন কি সে তার ফেলে যাওয়া পরিবারের জন্য ভাববে? “কেউ কি ঈশ্বরকে জ্ঞান শিক্ষা দিতে পারে? তিনি তো স্বর্গদূতদেরও বিচার করেন। কেউ পরিপূর্ণ শক্তি, শান্তি ও আরামে থেকে মারা যায়; তার দেহ পুষ্ট হয় ও হাড়ে যথেষ্ট মজ্জা থাকে। আবার কেউ কখনও ভাল কিছু ভোগ না করে তেতো প্রাণ নিয়ে মারা যায়। তারা একই ভাবে মাটিতে শুয়ে থাকে; পোকা তাদের দু’জনকেই ঢেকে ফেলে। “তোমরা যা ভাবছ তা আমি ভাল করেই জানি; আমার বিরুদ্ধে তোমাদের সব মতলব আমার জানা আছে। তোমরা বলছ, ‘এখন কোথায় গেল সেই বড় লোকের বাড়ী? কোথায় গেল সেই দুষ্ট লোকের তাম্বু?’ তোমরা কি কখনও যাত্রীদের এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছ? তোমরা কি তাদের এই কথার কোন দামই দেবে না যে, দুষ্ট লোক বিপদের দিনে রেহাই পায় আর ক্রোধের দিনে রক্ষা পায়? তার স্বভাবের কথা কে তার মুখের উপর বলবে? সে যা করেছে তার ফল কে তাকে দেবে? কাজেই তোমাদের এই অর্থহীন কথা দিয়ে কেমন করে তোমরা আমাকে সান্ত্বনা দিতে পারবে? তোমাদের উত্তরে মিথ্যা ছাড়া তো আর কিছুই নেই।” তখন তৈমনীয় ইলীফস উত্তরে বললেন, “মানুষ কি ঈশ্বরের উপকার করতে পারে? এমন কি, জ্ঞানী লোক তা করতে পারে? তুমি সৎ হলে কি সর্বশক্তিমান সুখী হবেন? তুমি নির্দোষ হলে কি তাঁর লাভ হবে? ঈশ্বরভক্তির জন্য কি তিনি তোমাকে বকুনি দিচ্ছেন? সেইজন্য কি তিনি তোমার বিরুদ্ধে বিচার বসিয়েছেন? তোমার মন্দতা কি অনেক নয়? তোমার পাপেরও তো সীমা নেই। তুমি অকারণে তোমার ভাইদের কাছ থেকে বন্ধক নিতে; তুমি লোকদের কাপড় খুলে নিয়ে তাদের উলংগ রাখতে। তুমি ক্লান্তদের জল খেতে দিতে না; যাদের খিদে আছে তাদের খাবার দিতে না। কেবল শক্তিশালী লোকদেরই জমাজমি আছে, কেবল সম্মানিত লোকেরাই সেখানে বাস করে; তবুও তুমি বিধবাদের খালি হাতে বিদায় করতে আর অনাথদের অধিকার কেড়ে নিতে। সেজন্যই তোমার চারপাশে ফাঁদ পাতা রয়েছে, হঠাৎ বিপদ এসে তোমাকে ভয় দেখাচ্ছে, এত অন্ধকার হয়েছে যে, তুমি দেখতে পাচ্ছ না, আর বন্যার জল তোমাকে ঢেকে ফেলেছে। “স্বর্গের উঁচু জায়গায় কি ঈশ্বর থাকেন না? দেখ, তারাগুলো কত উঁচুতে আছে! তবুও তুমি বলছ, ‘ঈশ্বর কি জানেন? এই অন্ধকারের মধ্যে ঈশ্বর কি করে বিচার করবেন? ঘন মেঘ তাঁকে আড়াল করে রেখেছে, সেইজন্য তিনি দেখতে পান না; আকাশের উপরে তিনি ঘুরে বেড়ান।’ অন্যায়কারীরা যে পথে চলেছে তুমি কি সেই পুরানো পথেই চলবে? অসময়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে; বন্যায় তাদের ভিত্তি ধুয়ে নিয়ে গেছে। তাদের ধ্বংস দেখে সৎ লোকেরা আনন্দ করে; নির্দোষেরা তাদের ঠাট্টা করে বলে, ‘আমাদের শত্র€রা সত্যিই ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের ধন-সম্পদ আগুনে গ্রাস করেছে।’ “তুমি ঈশ্বরের কথায় রাজী হও, তাঁর বিরুদ্ধে শত্র€ভাব রেখো না; তাহলে তোমার মংগল হবে। তাঁর মুখ থেকে উপদেশ গ্রহণ কর, আর তাঁর বাক্য তোমার অন্তরে রাখ। যদি তুমি সর্বশক্তিমানের কাছে ফিরে যাও, তবে তোমাকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে। যদি তোমার তাম্বু থেকে দুষ্টতা দূর কর, তোমার সোনার টুকরাগুলো ধুলায় ফেলে দাও, আর তোমার ওফীরের সোনা খাদের পাথরগুলোর মধ্যে ফেলে দাও, তাহলে সর্বশক্তিমানই তোমার সোনা হবেন, তিনিই হবেন তোমার সবচেয়ে ভাল রূপা। তখন সত্যিই তুমি সর্বশক্তিমানকে নিয়ে আনন্দ করবে আর তোমার মুখ ঈশ্বরের দিকে তুলবে। তুমি তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে তিনি তা শুনবেন, আর তুমি তোমার সব মানত পূরণ করবে। তুমি যা মনে স্থির করবে তা তোমার জন্য করা হবে, আর তোমার পথের উপর আলো পড়বে। যখন তোমাকে নত করা হবে তখন তুমি বলবে, ‘আমার অহংকারের জন্যই তা হয়েছে’ তোমার নম্রতার জন্যই ঈশ্বর তোমাকে উদ্ধার করবেন। এছাড়া তিনি অন্যান্য দোষী লোককেও উদ্ধার করবেন; তোমার হাত শুচি বলে তারা উদ্ধার পাবে।” তখন ইয়োব উত্তরে বললেন, “আজও আমার কান্না তিক্ততায় ভরা; আমি কাতরাচ্ছি, তবুও ঈশ্বরের ভারী হাত আমার উপরে রয়েছে। যদি কেবল জানতাম কোথায় তাঁকে পাওয়া যায়, যদি তাঁর বাসস্থানে আমি যেতে পারতাম, তবে আমি তাঁর কাছে আমার নালিশ জানাতাম আর আমার নিজের পক্ষে অনেক কথা বলতাম। তখন তিনি আমাকে কি উত্তর দিতেন তা জানতে পারতাম, আর যা বলতেন তা বুঝতে পারতাম। তিনি কি মহাশক্তিতে আমার সংগে তর্ক করতেন? না, তিনি আমার প্রতি মনোযোগ দিতেন। তখন একজন সৎ লোক তাঁর কাছে নালিশ জানাতে পারত; আমার বিচারকের হাত থেকে চিরকালের জন্য আমি উদ্ধার পেতে পারতাম। “কিন্তু আমি যদি পূর্ব দিকে যাই সেখানে তিনি নেই; যদি পশ্চিমে যাই সেখানেও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় না। উত্তর দিকে তিনি যখন কাজ করেন তখন তাঁকে দেখা যায় না; তিনি দক্ষিণে ফিরলে আমি তাঁকে দেখতে পাই না। কিন্তু আমি কোন্‌ পথে যাই তা তিনি জানেন; তিনি আমাকে যাচাই করলে আমি খাঁটি সোনার মতই হব। আমি বিশ্বসভাবে তাঁর পিছনে চলেছি; বিপথে না গিয়ে আমি তাঁর পথেই গিয়েছি। তাঁর আদেশ থেকে আমি সরে আসি নি; আমার প্রয়োজনীয় খাবারের চেয়েও তাঁর মুখের কথার আমি বেশী মূল্য দিয়েছি। কিন্তু তিনি সব কিছুতে স্থির থাকেন, কেউ তাঁকে বাধা দিতে পারে না; তাঁর যা খুশী তিনি তা-ই করেন। তিনি আমার জন্য যা ঠিক করে রেখেছেন তা-ই করেন; ঐ রকম অনেক পরিকল্পনা তাঁর এখনও জমা রয়েছে। কাজেই আমি তাঁর সামনে ভীষণ ভয় পাই; এই সব ভাবলে তাঁকে আমার ভয় লাগে। ঈশ্বর আমার অন্তর দুর্বল করেছেন; সর্বশক্তিমান আমাকে ভীষণ ভয় দেখিয়েছেন। যদিও অন্ধকার আমার মুখ ঢেকে রেখেছে তবুও তা আমাকে চুপ রাখতে পারে নি, ঘন অন্ধকারও তা পারে নি। “সর্বশক্তিমান কেন বিচারের জন্য সময় ঠিক করেন না? যারা তাঁকে জানে তারা কেন সেই দিন দেখতে পায় না? লোকে সীমার পাথর সরিয়ে দেয়; তারা ভেড়ার পাল চুরি করে এবং তা চরায়। তারা অনাথদের গাধা নিয়ে যায় আর বিধবার গর€ বন্ধক রাখে। তারা পথ থেকে অভাবীদের তাড়িয়ে দেয়; তাদের দর€ন দেশের সব গরীবেরা লুকিয়ে থাকে। গরীবেরা মর€ভূমির বুনো গাধার মত খাবারের খোঁজ করে; মর€-এলাকা তাদের ছেলেমেয়েদের খাবার যোগায়। তারা মাঠে গিয়ে পশুদের খাবার নিজেদের জন্য যোগাড় করে আর দুষ্টদের আংগুর ক্ষেত থেকে পড়ে থাকা আংগুর কুড়ায়। কাপড়ের অভাবে তারা উলংগ হয়ে রাত কাটায়; শীতকালে গায়ে দেবার জন্য তাদের কিছুই থাকে না। তারা পাহাড়ী বৃষ্টিতে ভেজে আর আশ্রয়ের অভাবে পাথরের কাছে জড়সড় হয়। অনাথ শিশুকে সেই দুষ্টেরা মায়ের বুক থেকে কেড়ে নেয় আর ঋণের জন্য গরীবের সন্তানকে বন্ধক রাখে। কাপড়ের অভাবে গরীবেরা উলংগ হয়ে ঘুরে বেড়ায়; তারা খিদে নিয়েই শস্যের আঁটি বহন করে। তারা বাগানে জাঁতা দিয়ে জলপাইয়ের তেল বের করে; তারা পিপাসা নিয়ে আংগুর মাড়াই করে। শহরের মধ্যে মানুষের কোঁকানি শোনা যায়, আহত লোকেরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করে; কিন্তু ঈশ্বর তাদের কান্নায় মনোযোগ দেন না। “অনেকে আলোর বির€দ্ধে বিদ্রোহ করে; তারা আলো সম্বন্ধে জানে না কিম্বা তার পথেও থাকে না। খুনী খুব ভোরে উঠে গরীব আর অভাবীদের মেরে ফেলে, আর রাতের বেলায় সে চোর হয়ে চুরি করে। ব্যভিচারীর চোখ সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করে; সে তার মুখ ঢেকে রেখে ভাবে কারও চোখ তার উপর পড়বে না। অন্ধকার হলে লোকে ঘরে সিঁধ কাটে, কিন্তু দিনের বেলায় তারা লুকিয়ে থাকে; আলোর সংগে তাদের কোন সমপর্ক থাকে না। তাদের জন্য সকালবেলা গাঢ় অন্ধকারের মত; অন্ধকারের ভয়ংকরতার সংগে তাদের বন্ধুত্ব আছে। “তারা জলের উপরকার ফেনার মত; তাদের ভাগের জমি অভিশপ্ত, কাজেই তারা কেউ আংগুর ক্ষেতে যায় না। গরম আর খরা যেমন বরফ-গলা জল গ্রাস করে, মৃতস্থানও তেমনি করে পাপীদের গ্রাস করে। মা তাদের ভুলে যায়, পোকারা তাদের দেহ খেয়ে ফেলে; মন্দ লোকদের কেউ মনে রাখে না, তারা গাছের মত ভেংগে পড়ে। তারা বন্ধ্যা স্ত্রীলোককে গ্রাস করে আর বিধবাদের দয়া করে না। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর শক্তিতে সেই বলবানদের টেনে নামান; তারা প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের জীবনের নিশ্চয়তা নেই। তিনি দুষ্টদের নিরাপদে বিশ্রাম দিতে পারেন, কিন্তু তাঁর চোখ থাকে তাদের পথের দিকে। কিছু সময়ের জন্য তাদের উন্নতি হয়, তারপর তারা আর থাকে না। তাদের নীচু করা হয়, ঘাসের মত তারা ্নান হয়ে যায়, আর শস্যের শীষের মতই তারা শুকিয়ে যায়। যদি তা না-ই হয় তবে কে আমার কথা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবে? আমার কথা যে সত্যি নয় তা কে বলতে পারবে?” তখন শূহীয় বিল্‌দদ উত্তরে বললেন, “রাজ্য ঈশ্বরেরই, ভক্তিপর্ণ ভয় তাঁরই পাওনা; স্বর্গের উঁচু জায়গায় তিনি শান্তি স্থাপন করেন। তাঁর সৈন্যদল কি গোণা যায়? তাঁর আলো কার উপরে না ওঠে? তাহলে ঈশ্বরের কাছে মানুষ কি নির্দোষ হতে পারে? স্ত্রীলোকের গর্ভ থেকে যে জন্মেছে সে কি খাঁটি হতে পারে? ঈশ্বরের চোখে যদি চাঁদ উজ্জ্বল না হয় আর তারাগুলো খাঁটি না হয়, তাহলে মানুষ কি করে খাঁটি হতে পারে? সে তো একটা পোকার মত; মানুষের সন্তান তো একটা কেঁচো ছাড়া আর কিছু নয়।” তখন উত্তরে ইয়োব বললেন, “তুমি শক্তিহীনকে এ কেমন সাহায্য করলে আর দুর্বলকে এ কেমন রক্ষা করলে? জ্ঞানহীনকে এ কেমন পরামর্শ দিলে আর মহাজ্ঞান প্রকাশ করলে? তুমি কার সাহায্যে এই সব কথা বলছ? কার কথা তোমার মুখ থেকে বের হয়ে এসেছে? “মৃত লোকেরা ভয়ে ভীষণ কাঁপছে; তারা কাঁপছে জলের নীচে আর জলে বাসকারীদের নীচে। ঈশ্বরের সামনে মৃতস্থান ঢাকা নেই; ধ্বংসের স্থান খোলাই রয়েছে। তিনি শূন্যে উত্তরের আকাশ বিছিয়ে দিয়েছেন; শূন্যের মধ্যে পৃথিবীকে ঝুলিয়ে রেখেছেন। তাঁর মেঘের মধ্যে তিনি জল আট্‌কে রাখেন, কিন্তু তার ভারে মেঘ ফেটে যায় না। তিনি পূর্ণিমার চাঁদের মুখ ঢেকে দেন, তার উপরে তাঁর মেঘ বিছিয়ে দেন। আলো ও অন্ধকার যেখানে গিয়ে মিলিত হয় সেখানে তিনি আকাশ ও সাগরের মধ্যে সীমানা টেনেছেন। আকাশের থামগুলো কেঁপে ওঠে, তাঁর বকুনিতে সেগুলো চম্‌কে ওঠে। তিনি নিজের শক্তিতে সমুদ্রকে তোলপাড় করেন; তাঁর দক্ষতা দিয়ে তিনি রহবকে টুকরা টুকরা করেন। তাঁর নিঃশ্বাসে আকাশ পরিষ্কার হয়; তাঁর হাত পালিয়ে যাওয়া সাপকে বিদ্ধ করে। এই সবই তাঁর কাজের মাত্র একটুখানি প্রকাশ, আমরা তাঁর বিষয়ে কেবল একটুখানি ফিস্‌ফিসানি শুনতে পাই; তাঁর শক্তির গর্জন কে বুঝতে পারে?” ইয়োব তাঁর কথা বলতেই থাকলেন। তিনি বললেন, “যিনি আমার বিচার করতে অস্বীকার করছেন সেই জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য, যিনি আমার প্রাণকে তেতো করে তুলেছেন সেই সর্বশক্তিমানের দিব্য যে, যতদিন আমার মধ্যে জীবন আছে, যতদিন ঈশ্বরের নিঃশ্বাস আমার নাকের মধ্যে আছে, ততদিন আমার মুখ অন্যায় কথা বলবে না, আমার জিভ্‌ ছলনার কথা বলবে না। তোমাদের কথা যে ঠিক তা কখনও আমি মেনে নেব না; আমার মরণ দিন পর্যন্ত আমি বলব যে, আমি সত্যি কথা বলেছি। আমি যে নির্দোষ সেই দাবি আমি ছাড়ব না, বলতেই থাকব। আমি যতদিন বাঁচব ততদিন আমার বিবেক আমাকে দোষী করবে না। “আমার শত্র€রা দুষ্টদের মত হোক; আমার বিপক্ষেরা অন্যায়কারীর মত হোক। ঈশ্বর যখন তাঁর প্রতি ভক্তিহীনদের শেষ করে দেন, তখন তাদের আর কোন আশাই থাকে না। তাদের উপর কষ্ট আসলে কি ঈশ্বর তাদের কান্না শোনেন? তারা কি সর্বশক্তিমানকে নিয়ে আনন্দ পায়? তারা কি সব সময় ঈশ্বরকে ডাকে? ঈশ্বরের ক্ষমতার বিষয় আমি তোমাদের শিক্ষা দেব; সর্বশক্তিমানের বিষয় আমি গোপন করে রাখব না। তোমরা তো সবাই এই সব দেখেছ, তাহলে এই অসার কথাবার্তা বলছ কেন? “ঈশ্বর দুষ্টদের ভাগ্যে যা রেখেছেন, সর্বশক্তিমানের কাছ থেকে নিষ্ঠুর লোকেরা যে অধিকার পায় তা এই: তাদের ছেলেমেয়ে অনেক হলেও তাদের জন্য ঠিক হয়ে আছে ভয়ংকর মৃত্যু; তাদের সন্তানেরা কখনও যথেষ্ট খাবার পাবে না। তাদের পরে যারা বেঁচে থাকবে তাদের মৃত্যু হবে মড়কে; তাদের বিধবারা তাদের জন্য কাঁদবে না। ধুলার মত তারা রূপা জমা করলেও আর কাদার ঢিবির মত কাপড়-চোপড় জমা করলেও তাদের সেই কাপড়-চোপড় সৎ লোকেরা পরবে, আর নির্দোষ লোকেরা সেই রূপা ভাগ করে নেবে। তাদের তৈরী ঘর যেন পোকার বাসা, তা যেন পাহারাদারদের মাচা-ঘর। তারা শেষ বারের মতই ধনী অবস্থায় ঘুমাতে যায়, কিন্তু চোখ খুললে পর তারা দেখে সবই শেষ হয়ে গেছে। বন্যার মতই ভয় তাদের ধরে ফেলবে, রাতে ঝড় তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে। পূবের বাতাস তাদের তুলে নিয়ে যাবে, তারা চলে যাবে; তাদের জায়গা থেকে সেই বাতাস তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে। সেই জোর বাতাস থেকে যখন তারা তাড়াতাড়ি পালাতে চাইবে তখন নিষ্ঠুরভাবে তা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। সেই বাতাস যেন বিদ্রূপ ে হাততালি দেয় আর তাদের জায়গা থেকে হিস্‌হিস্‌ শব্দ করে তাদের বের করে দেয়। “রূপার খনি আছে আর সোনা পরিষ্কার করবার জায়গাও আছে। মাটি থেকে লোহা তোলা হয়, আর ধাতু-পাথর গলিয়ে বের করা হয় তামা। পৃথিবীর গভীরে ঘন কালো অন্ধকারে যা রয়েছে মানুষ অন্ধকার দর করে সেই দামী পাথরের খোঁজ করে। মানুষের বাসস্থান থেকে দরে যেখানে মানুষ যায় না সেখানে সে গর্ত খোঁড়ে, আর সেই গর্তের মধ্যে সে ঝুলতে ও দুলতে থাকে। যে পৃথিবীর উপরে ফসল জন্মে, মানুষ সেই পৃথিবীর গভীরে আগুন দিয়ে ভেংগে চুরমার করে। পৃথিবীর পাথরের মধ্যে নীলকান্তমণি থাকে, আর মাটির মধ্যে থাকে সোনা। খনির গুপ্ত পথ শকুন জানে না, কোন বাজপাখীর চোখ তা দেখে নি; কোন হিংস্র পশু সেখানে পা রাখে নি, কোন সিংহও সেখানে যায় নি। সেই কঠিন পাথরে মানুষই হাত দেয় আর পাহাড়ের গোড়ায় গভীরভাবে খোঁড়ে। সে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সুড়ংগ কাটে; সেখানকার সব মল্যবান জিনিষ তার চোখে পড়ে। সে ঝরণার জল পড়া বন্ধ করে আর লুকানো জিনিষগুলো আলোতে আনে। “কিন্তু জ্ঞান কোথায় পাওয়া যায়? আর বুদ্ধিই বা কোথায় থাকে? লোকে তার মল্য জানে না; জীবিতদের দেশে তা পাওয়া যায় না। গভীর জল বলে, ‘তা আমার মধ্যে নেই,’ সাগর বলে, ‘তা আমার কাছে নেই।’ খাঁটি সোনা দিয়েও তা কেনা যায় না, অনেক রূপা দিয়েও তার দাম দেওয়া যায় না। ওফীরের সোনা দিয়ে তা কেনা যায় না, বৈদুর্যমণি বা নীলকান্তমণি দিয়েও তা কেনা যায় না। সোনা কিম্বা দামী কাঁচের সংগেও তার তুলনা হয় না, সোনার পাত্রের বদলেও তা পাওয়া যায় না। তার কাছে প্রবাল ও স্ফটিকেরও দাম নেই; পদ্মরাগমণির চেয়েও জ্ঞানের মল্য বেশী। তার সংগে কূশ দেশের পোখরাজমণিরও তুলনা হয় না; খাঁটি সোনা দিয়ে তা কেনা যায় না। “তাহলে জ্ঞান কোথা থেকে আসে? আর বুদ্ধিই বা কোথায় থাকে? সমস প্রাণীর চোখের কাছ থেকে তা লুকানো আছে, এমন কি, আকাশের পাখীদের কাছ থেকেও তা গুপ্ত আছে। নরক ও মৃত্যু বলে, ‘তার একটুখানি উড়ো খবর আমাদের কানে এসে পৌঁছেছে।’ “ঈশ্বরই তার পথ বুঝতে পারেন; তিনিই কেবল জানেন তা কোথায় থাকে, কারণ তিনি পৃথিবীর শেষ সীমাও দেখেন; আকাশের নীচের সব কিছুই তাঁর চোখে পড়ে। তিনি যখন বাতাসে শক্তি যোগালেন আর জলের পরিমাণ ঠিক করলেন, যখন তিনি বৃষ্টির জন্য নিয়মের ব্যবস্থা করলেন আর বাজ পড়া ও বিদ্যুৎ চম্‌কাবার পথ ঠিক করলেন, তখন তিনি জ্ঞানকে দেখলেন এবং তা মাপলেন; তিনি তা ভাল করে দেখলেন এবং তাঁর খোঁজ-খবর নিলেন। তারপর তিনি মানুষকে বললেন, ‘প্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ই হল জ্ঞান, আর মন্দ থেকে সরে যাওয়াই হল বুদ্ধি।’ ” তারপর ইয়োব আরও বললেন, “আহা, ঈশ্বর যখন আমার দেখাশোনা করতেন তখনকার মাস ও দিনগুলো যদি আমি ফিরে পেতাম! আমার মাথার উপর তখন তাঁর বাতি জ্বলত, আর তাঁর আলোতে আমি অন্ধকারের মধ্যে চলাফেরা করতাম। আমার সেই সফলতার দিনগুলোতে ঈশ্বর তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুভাব দিয়ে আমার তাম্বুকে আশীর্বাদ করতেন। সর্বশক্তিমান তখন আমার সংগে ছিলেন আর আমার চারপাশে আমার ছেলেমেয়েরা ছিল; আমার জীবন-পথ আরামে ভরা ছিল, আর আমার জন্য পাথর থেকে জলপাই-তেলের স্রোত বইত। “যখন আমি শহরের ফটকে গিয়ে সেখানকার চকে আমার আসন গ্রহণ করতাম, তখন যুবকেরা আমাকে দেখে সরে দাঁড়াত আর বুড়ো লোকেরা উঠে দাঁড়াতেন; উঁচু পদের লোকেরা কথা বলা বন্ধ করতেন আর হাত দিয়ে মুখ ঢাকতেন; নেতাদের গলার স্বর থেমে যেত, আর তাদের জিভ্‌ তালুতে আট্‌কে যেত। যারা আমার কথা শুনত তারা আমাকে ধন্য বলত, আর যারা আমাকে দেখত তারা আমার প্রশংসা করত, কারণ সাহায্যের জন্য যে গরীবেরা কাঁদত আর যে অনাথদের সাহায্যকারী কেউ ছিল না, তাদের আমি রক্ষা করতাম। মরে যাŽেছ এমন লোকও আমাকে আশীর্বাদ করত; বিধবার অন্তরে আমি আনন্দের গান জাগাতাম। সততা আমি কাপড়ের মত পরতাম, আর সততা আমাকে তার বশে রাখত; আমি ছিলাম অন্ধদের চোখ আর খোঁড়াদের পা। আমি অভাবীদের বাবার মত ছিলাম, আর অচেনাদের পক্ষে আমি তাদের বিচারের ভার নিতাম। আমি দুষ্টদের চোয়াল ভেংগে দিতাম আর তাদের মুখ থেকে শিকার কেড়ে নিতাম। “আমি ভাবতাম আমার আপন লোকদের মধ্যে আমি মারা যাব, বালুকণার মতই আমার দিনগুলো অসংখ্য হবে; ভাবতাম আমার শিকড় জলে গিয়ে পৌঁছাবে, আমার ডালপালার উপরে সারা রাত ধরে শিশির পড়বে; ভাবতাম লোকদের কাছে আমার সম্মান ্নান হবে না, আমার যৌবন-শক্তি সব সময় নতুন থাকবে। “লোকে আমার কথা শুনবার জন্য অপেক্ষা করত, আমার পরামর্শের জন্য নীরব থাকত। আমার কথার পরে তারা আর কথা বলত না; আমি তাদের কাছে নরমভাবে কথা বলতাম। বৃষ্টির জন্য যেমন লোকে অপেক্ষা করে তেমনি তারা আমার কথার জন্য অপেক্ষা করত; বসন্তকালের বৃষ্টির মতই তারা আমার কথা গ্রহণ করত। আমি সাধারণ লোকদের দিকে তাকিয়ে হাসলে তারা আশ্চর্য হত; আমার হাসি তারা মনে গেঁথে রেখে আশায় বুক বাঁধত। আমি তাদের পথ ঠিক করে দিতাম আর তাদের নেতার মত বসতাম; সৈন্যদলের মধ্যে রাজা যেমন, আমি তেমনই ছিলাম; যারা শোক করত তাদের আমি সান্ত্বনা দিতাম। “কিন্তু এখন যারা আমার চেয়ে বয়সে ছোট তারা আমাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে; তাদের পিতাদের আমি আমার ভেড়ার পাল রক্ষাকারী কুকুরদের সংগে রাখতেও ঘৃণা বোধ করতাম। তাদের শক্তি আমার কি কাজে লাগত? তাদের কোন শক্তিই ছিল না। অভাব ও খিদের দর€ন তাদের চেহারা শুকনা ছিল; তারা রাতের বেলা নির্জন পোড়ো জায়গায় যা পেত তা-ই চিবাত। তারা ঝোপের মধ্য থেকে স্বাদহীন শাক তুলত; রেতম গাছের শিকড় তাদের খাবার ছিল। লোকসমাজ থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল; তারা যেন চোর সেইভাবে লোকেরা তাদের পিছনে চিৎকার করত। শুকনা নদীর বুকে তাদের বাস করতে হত; তারা মাটির গর্তে ও পাহাড়ের ফাটলে থাকত। ঝোপের মধ্য থেকে তারা গাধার মত ডাকত, আগাছার মধ্যে ঠাসাঠাসি করে বাস করত। তারা ছিল অপদার্থ ও দুর্নামের পাত্র; দেশ থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। “আর এখন তাদের ছেলেরা গান গেয়ে গেয়ে আমাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে; তাদের কাছে আমি হয়েছি একটা টিট্‌কারির পাত্র। তারা আমাকে ঘৃণা করে আমার কাছ থেকে দরে থাকে; আমার মুখে থুথু ফেলতেও তারা ভয় পায় না। ঈশ্বর আমাকে শক্তিহীন করেছেন আর আমাকে কষ্টে ফেলেছেন; কাজেই তারা কোন বাধা না মেনেই আমার বির€দ্ধে উঠেছে। উগ্র যুবকেরা যেন ডান দিক থেকে আমাকে আক্রমণ করে আর আমাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে; আমাকে আক্রমণ করতে তারা দেয়াল পার হবার জন্য ঢিবি তৈরী করে। তারা আমার পথ আট্‌কায়; কারও সাহায্য ছাড়াই তারা আমার সর্বনাশ করে। তারা যেন দেয়ালের বড় ফাঁকের মধ্য দিয়ে এগিয়ে আসে; ধ্বংসসূপের মধ্য দিয়েও তারা তাড়াতাড়ি এসে পড়ে। নানারকম ভয় আমাকে ঢেকে ফেলে; সেই ভয় আমার সম্মানকে বাতাসের মত উড়িয়ে দেয়; আমার সফলতা মেঘের মত মিলিয়ে যায়। “এখন আমার জীবনে ভাটা পড়েছে; কষ্টের দিনগুলো আমাকে আক্রমণ করেছে। রাতে আমার হাড়ের মধ্যে ভীষণ ব্যথা করে; সেই চিবানো ব্যথা কখনও থামে না। ঈশ্বর কুসিগীরের মত তাঁর মহাশক্তিতে আমার কাপড় ধরেন, আমার জামার গলার মত করে তিনি আমাকে জাপ্‌টে ধরেন; তারপর তিনি আমাকে কাদায় ছুঁড়ে ফেলে দেন। আমি তো ধুলা আর ছাইয়ের মত হয়ে গেছি। “হে ঈশ্বর, আমি তোমার কাছে কাঁদি, কিন্তু তুমি উত্তর দাও না; আমি দাঁড়িয়ে থাকি, কিন্তু তুমি কেবল আমার দিকে চেয়ে দেখ। তুমি আমার প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার করছ; তোমার শক্তিশালী হাতে তুমি আমাকে আক্রমণ করেছ। তুমি আমাকে তুলে নিয়ে বাতাসে ছেড়ে দিয়েছ; ঝড়ের মধ্যে ফেলে তুমি আমাকে নাচাচ্ছ। আমি জানি তুমি আমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছ, সমস জীবিত লোকদের জন্য ঠিক করা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছ। “যে পড়ে গেছে আর কষ্টের মধ্যে সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি করছে তাকে কি কেউ আঘাত করে? যারা কষ্টে পড়েছে তাদের জন্য কি আমি কাঁদি নি? গরীবদের জন্য কি আমি প্রাণে ব্যথা পাই নি? কিন্তু যখন আমি মংগলের আশা করলাম তখন অমংগল ঘটল; যখন আলোর অপেক্ষা করলাম তখন অন্ধকার হল। আমার ভিতরটা তোলপাড় করছে, থামছে না; যন্ত্রণার দিন আমার সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমি রোদহীন দিনের মত কালো মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছি; আমি সভার মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে সাহায্য চাই। আমি শিয়ালের ভাই ও উটপাখীর বন্ধু হয়েছি। আমার চামড়া কালো হয়ে উঠে যাচ্ছে; জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে। আমার বীণা থেকে এখন দুঃখের সুর বের হয়, আর বাঁশী থেকে বের হয় বিলাপের সুর। “কামনা নিয়ে কোন যুবতী মেয়ের দিকে তাকাব না বলে আমার চোখের সংগে আমি একটা চুক্তি করেছি। স্বর্গবাসী ঈশ্বরের কাছ থেকে মানুষ কি পায়? স্বর্গের সর্বশক্তিমানের কাছে তার পাওনাই বা কি? তা কি দুষ্টদের জন্য ধ্বংস নয়? যারা মন্দ কাজ করে তাদের জন্য বিপদ নয়? তিনি কি আমার চলাফেরা দেখেন না? আমার প্রতিটি ধাপ কি তিনি গোণেন না? “আমি সত্যিই বলছি যে, আমি মিথ্যার মধ্যে চলাফেরা করি নি, আমার পা ছলনার পিছনে দৌড়ায় নি। সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ঈশ্বর যেন আমাকে ওজন করেন, তাহলে তিনি জানতে পারবেন যে, আমি নির্দোষ। যদি আমি বিপথে পা দিয়ে থাকি, আমার চোখ যদি আমার অন্তরকে পাপ করিয়ে থাকে, কিম্বা আমার হাতে যদি কোন পাপের দাগ লেগে থাকে, তবে আমি যা বুনেছি তা যেন অন্যেরা খায়, আমার শস্য যেন উপ্‌ড়ে ফেলা হয়। “আমার অন্তর যদি কোন স্ত্রীলোকের দিকে গিয়ে থাকে, কিম্বা যদি প্রতিবেশীর দরজার কাছে আমি ওৎ পেতে থাকি, তবে আমার স্ত্রী যেন অন্য লোকের যাঁতা ঘুরায়, আর অন্য লোক যেন তার সংগে শোয়। আমার পক্ষে তা হবে একটা জঘন্য কাজ, বিচারকদের দ্বারা শাস্তি পাওয়ার মত পাপ। সেই পাপ এমন আগুনের মত যা মৃতস্থান পর্যন্ত জ্বলছে, তা আমার সব কিছু পুড়িয়ে ফেলতে পারে। “আমার দাসদাসীরা আমার বিরুদ্ধে কোন নালিশ জানালে যদি আমি তার বিচার করতে রাজী না হয়ে থাকি, তবে ঈশ্বর যখন আমার মুখোমুখি হবেন তখন আমি কি করব? আমি তাঁকে কি কৈফিয়ৎ দেব? যিনি আমাকে গর্ভের মধ্যে তৈরী করেছেন, তিনি কি তাদেরও তৈরী করেন নি? একই জন কি মায়ের গর্ভে আমাদের গড়েন নি? “আমি যদি গরীবদের অভাব না মিটিয়ে থাকি, কিম্বা বিধবাদের নিরাশ করে থাকি, যদি আমার খাবার আমি অনাথদের না দিয়ে একা খেয়ে থাকি- অবশ্য আমার অল্প বয়স থেকেই তাদের আমি বাবার মত পালন করেছি আর আমার জন্মের পর থেকেই বিধবাদের দেখাশোনা করেছি- যদি আমি কাউকে কাপড়-চোপড়ের অভাবে মরতে দেখে থাকি কিম্বা অভাবী লোককে উলংগ দেখে থাকি, ভেড়ার লোমের কাপড় দিয়ে তাকে গরমে রেখেছি বলে যদি তার অন্তর আমাকে আশীর্বাদ না করে থাকে, বিচার-সভায় আমার ক্ষমতা আছে বলে আমি যদি অনাথদের গায়ে হাত তুলে থাকি, তাহলে কাঁধ থেকে আমার হাত যেন খসে পড়ে, হাড়ের জোড়া থেকে যেন তা ভেংগে পড়ে, কারণ আমি ঈশ্বরের দেওয়া শাস্তির ভয় করি; তাঁর মহিমা এত বেশী যে, তাঁর ভয়ে আমি ঐ সব করতে পারি না। “সোনার উপর যদি আমি নির্ভর করে থাকি, কিম্বা খাঁটি সোনাকে বলে থাকি, ‘তোমার উপরেই আমার নির্ভরতা,’ আমার নিজ হাত দিয়ে যে সম্পদ আমি লাভ করেছি সেই মহাধন নিয়ে যদি আমি আনন্দ করে থাকি, যদি উজ্জ্বল সূর্যের এবং জ্যোৎস্না-ভরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি, আর তাতে যদি আমার অন্তর গোপনে তাদের দিকে গিয়ে থাকে, তাদের চুম্বন করবার উদ্দেশ্যে যদি আমার হাতে চুম্বন করে থাকি, তাহলে এগুলোও হল শাস্তি পাবার মত পাপ, কারণ তাতে আমি স্বর্গের ঈশ্বরকে অস্বীকার করেছি। “আমার শত্র€র দুর্ভাগ্যে আমি আনন্দ করি নি কিম্বা তার কষ্টের সময়ে খুশী হই নি। তার প্রাণের বিরুদ্ধে অভিশাপের কথা বলে আমার মুখকে আমি পাপ করতে দিই নি। আমার ঘরের লোকেরা তো এই কথাই বলত, ‘ইয়োবের দেওয়া মাংসে কে না পেট ভরেছে?’ কোন বিদেশীকে রাস্তায় রাত কাটাতে হয় নি, কারণ যাত্রীদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকত। অন্যান্য মানুষের মত আমি পাপ গোপন করে রাখি নি আর আমার অন্তরে দোষ লুকিয়ে রাখি নি; কাজেই আমি লোকদের ভয় করতাম না, আর আমার বংশের লোকদের ঘৃণার ভয়ে আমি ঘরে চুপ করে বসে থাকতাম না। “হায়, আমার কথা যদি কেউ শুনত! আমি সই দিয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমার কথা সত্যি; সর্বশক্তিমান যেন আমাকে উত্তর দেন, আমার বিবাদী যেন আমার দোষ লিখে দেখান। আমি নিশ্চয়ই তা আমার কাঁধে লাগিয়ে রাখব আর মুকুটের মত করে মাথায় পরব। আমার প্রতিটি ধাপের হিসাব আমি তাঁকে দেব; রাজপুত্রের মত আমি তাঁর কাছে এগিয়ে যাব। “আমার জমি যদি আমার বিরুদ্ধে চিৎকার করে ওঠে আর চাষ করা জমি চোখের জলে ভিজে ওঠে, যদি আমি দাম না দিয়ে তার ফসল খেয়ে থাকি কিম্বা সেখানকার মালিকদের নিষ্ঠুরভাবে যন্ত্রণা দিয়ে থাকি, তবে যেন সেখানে গমের বদলে কাঁটাগাছ গজায় আর যবের বদলে জন্মায় আগাছা।” এখানে ইয়োবের কথা শেষ হয়েছে। ইয়োব নিজের চোখে নিজেকে ন্যায়বান মনে করছিলেন বলে ঐ তিনজন ইয়োবের কথার উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। এতে রামের বংশের বূষীয় বারখেলের ছেলে ইলীহূ ইয়োবের উপর ভীষণ রেগে গেলেন, কারণ ইয়োব ঈশ্বরের চেয়ে নিজেকে ন্যায়বান মনে করছিলেন। তিনি ঐ তিনজন বন্ধুর উপরেও খুব রেগে গেলেন, কারণ তাঁরা ইয়োবের কথার উত্তর দিতে না পেরেও তাঁকে দোষী করছিলেন। তাঁদের সকলের চেয়ে ইলীহূ বয়সে ছোট ছিলেন বলে ইয়োবকে উত্তর দেবার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। পরে ঐ তিনজন লোকের উত্তর দেবার আর কিছু নেই দেখে তিনি রাগে জ্বলে উঠলেন। সেইজন্য বারখেলের ছেলে ইলীহূ বললেন, “আমার বয়স কম, কিন্তু আপনারা বুড়ো হয়েছেন, কাজেই আমার মতামত প্রকাশ করতে আমি সাহস করি নি, ভয় করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, যাঁদের বয়স বেশী তাঁরাই কথা বলুন, তাঁরাই জ্ঞান শিক্ষা দিন যাঁদের অনেক বছর পার হয়ে গেছে। সত্যিই মানুষের মধ্যে আত্মা আছে, আর সর্বশক্তিমানের নিঃশ্বাস তাকে বুঝবার শক্তি দেয়। কেবল বুড়ো লোকেরাই যে জ্ঞানবান তা নয়, যাঁদের বয়স বেশী কেবল তাঁরাই যে সঠিক বিষয় বোঝেন তা নয়। “সেইজন্য আমি বলছি, আমার কথা শুনুন; আমিও আমার মতামত প্রকাশ করব। আপনাদের কথা বলবার সময় আমি অপেক্ষা করে ছিলাম। যখন আপনারা কি বলবেন তাঁর খোঁজ করছিলেন তখন আমি আপনাদের যুক্তি শুনছিলাম। আমি আপনাদের কথায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনাদের মধ্যে একজনও ইয়োবের কথার ভুল প্রমাণ করেন নি; তাঁর কথার উত্তরও আপনারা দেন নি। এই কথা বলবেন না, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি যে, মানুষ নয় কিন্তু ঈশ্বরই তাঁকে হারিয়ে দিতে পারেন।’ ইয়োব আমার বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন নি; আপনাদের যুক্তি দিয়ে আমি তাঁকে উত্তর দেব না। “ইয়োব, এঁরা হতভম্ব হয়েছেন, এঁদের আর কিছু বলবার নেই; এঁদের কথা হারিয়ে গেছে। এঁরা তো এখন চুপ করেছেন, উত্তর না দিয়ে এঁরা থেমে গেছেন; আর কি আমার অপেক্ষা করা উচিত? এখন আমিও আমার কথা বলব, আমার মতামত আমি প্রকাশ করব; কারণ আমার বলবার মত অনেক কথা আছে, আমার আত্মা আমাকে কথা বলতে বাধ্য করছে। আমার ভিতরটা থলিতে ভরা আংগুর-রসে ফেটে যাবার মত হয়েছে, নতুন চামড়ার থলির মতই ফেটে যাবার মত হয়েছে। শান্ত হবার জন্য আমাকে কথা বলতে হবে; মুখ খুলে আমাকে উত্তর দিতে হবে। আমি কারও প্রতি একচোখামি করব না, কিম্বা কোন মানুষকে তোষামোদ করব না; আমি তোষামোদ করতে জানি না; যদি তা করি তবে আমার সৃষ্টিকর্তা আমাকে শীঘ্রই তুলে নিয়ে যাবেন। “যাহোক, ইয়োব, এবার আমার কথা শুনুন; আমি যা বলব তাতে মন দিন। আমি মুখ খুলতে যাŽিছ; আমার কথা আমার জিভের আগায় এসেছে। আমার কথা খাঁটি অন্তর থেকে আসছে; আমি যা জানি তা আমার মুখ সরলভাবে বলবে। ঈশ্বরের আত্মা আমাকে তৈরী করেছেন; সর্বশক্তিমানের নিঃশ্বাসে আমি জীবন পাŽিছ। আপনি যদি পারেন তবে আমাকে উত্তর দিন; নিজের কথা গুছিয়ে নিয়ে আমার মুখোমুখি হন। ঈশ্বরের সামনে আমি ও আপনি সমান; আমাকেও মাটি দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। আমাকে যেন আপনি ভয় না পান, কিম্বা আমার কথার চাপ যেন আপনার উপর ভারী না হয়। “তবে আপনি আমার সামনেই কথা বলেছেন; আপনি যা বলেছেন ঠিক তা-ই আমি শুনেছি; আপনি বলেছেন, ‘আমি শুচি, আমার কোন পাপ নেই; আমি খাঁটি, আমার কোন দোষ নেই। তবুও ঈশ্বর আমার দোষ খুঁজে বেড়াŽেছন; তিনি আমাকে তাঁর শত্র€ মনে করছেন। তিনি শিকল দিয়ে আমার পা বেঁধেছেন; আমার সমস পথের উপর তিনি কড়া নজর রেখেছেন।’ “কিন্তু আমি আপনাকে বলি, এই বিষয়ে আপনার কথা ঠিক নয়, কারণ মানুষের চেয়ে ঈশ্বর মহান। কেন আপনি তাঁকে এই নালিশ জানাŽেছন যে, মানুষের কোন কথার উত্তর তিনি দেন না? আসলে ঈশ্বর নানাভাবে কথা বলেন যদিও মানুষ তা বুঝতে পারে না। স্বপ্নের মধ্যে, রাতের দর্শনের মধ্যে, বিছানায় শুয়ে যখন মানুষের ঘুম গাঢ় হয়, তখন তিনি তাদের কানে কানে কথা বলেন আর সাবধানবাণী দিয়ে তাদের ভয় দেখান, যেন মানুষ তার অন্যায় কাজ থেকে ফেরে আর অহংকার থেকে দূরে থাকে। তিনি এইভাবে ধ্বংসস্থান থেকে তার প্রাণ, মৃত্যুর আঘাত থেকে তার জীবন রক্ষা করেন। মানুষ রোগের দরুন যনণা পেয়ে শাসি পায়; তার হাড়ের মধ্যে সব সময় কষ্ট হয়। এতে খাবার-দাবারে তার বিরক্তি জাগে, সে সবচেয়ে ভাল খাবারও ঘৃণা করে। তার দেহের মাংস একেবারে ক্ষয় হয়ে যায়; তখন মাংসে ঢাকা হাড়গুলো বেরিয়ে পড়ে। তার প্রাণ ধ্বংসস্থানের কাছে উপস্থিত হয়, তার জীবন মৃত্যু-দূতদের কাছাকাছি হয়। “যদি একজন স্বর্গদূত তার পক্ষে থাকেন, হাজার দূতের মধ্যে একজন মধ্যস্থ থাকেন যিনি মানুষকে বলেন কোন্‌টা তার জন্য ঠিক, তবে তিনি তার প্রতি দয়ালু হয়ে বলুন, ‘মৃতস্থানে নেমে যাওয়া থেকে তাকে রেহাই দাও; আমি তাঁর জন্য মুক্তির মূল্য পেয়েছি।’ তাহলে তার দেহ আবার যুবকের মত হবে; সে আবার যৌবন ফিরে পাবে। সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবে আর তিনি তাকে দয়া করবেন; সে ঈশ্বরের মুখ দেখে আনন্দে চেঁচিয়ে উঠবে; ঈশ্বর তাকে তার নির্দোষ অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। সে তখন মানুষের কাছে এসে বলবে, ‘আমি পাপ করেছিলাম এবং যা ঠিক তার উল্টা করেছিলাম, কিন্তু আমার পাওনা শাসি আমি পাই নি। মৃতস্থানে নেমে যাওয়ার হাত থেকে তিনি আমার প্রাণ মুক্ত করেছেন; আমি আলো দেখতে পাŽিছ।’ “ঈশ্বর মানুষের জন্য বার বার ঐ সব করেন, যেন তার প্রাণ মৃতস্থানে যাওয়া থেকে ফেরে আর তার উপরে জীবনের আলো পড়ে। “ইয়োব, আপনি মন দিয়ে আমার কথা শুনুন; আপনি নীরব থাকুন, আমি কথা বলি। যদি আপনার কিছু বলবার থাকে তবে আমাকে বলুন; আপনি বলুন, কারণ আমি আপনাকে নির্দোষ দেখাতে চাই। যদি কিছু বলবার না থাকে, তবে আমার কথা শুনুন; আপনি নীরব থাকুন, আমি আপনাকে জ্ঞান শিক্ষা দেব।” তারপর ইলীহূ বললেন, “হে জ্ঞানী লোকেরা, আমার কথা শুনুন; হে বুদ্ধিমানেরা, আমার কথায় কান দিন। জিভ্‌ যেমন করে খাবারের স্বাদ নেয় তেমনি করে কান লোকের কথা পরীক্ষা করে দেখে। কোন্‌টা ঠিক, আসুন, আমরা তা বিচার করে দেখি; কোন্‌টা ভাল আমরা তা খুঁজে দেখি। “ইয়োব বলছেন, ‘আমি নির্দোষ, কিন্তু ঈশ্বর ন্যায়ভাবে আমার বিচার করেন নি। আমি ঠিক কথা বললেও আমাকে মিথ্যাবাদী মনে করা হয়েছে; বিনা দোষে আমি এমন আঘাত পেয়েছি যা ভাল হয় না।’ ইয়োবের মত কেউ আছে কি যিনি জলের মত করে ঠাট্টা-বিদ্রূপ খেয়েছেন? যারা মন্দ কাজ করে তিনি তাদের সংগে চলেন; তিনি দুষ্ট লোকদের সংগী হন। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে মানুষের কোন লাভই হয় না।’ “কাজেই হে বুদ্ধিমান লোকেরা, আমার কথা শুনুন। ঈশ্বর যে মন্দ কাজ করেন, সর্বশক্তিমান যে অন্যায় করেন তা দূরে থাকুক। তিনি মানুষকে তার কাজের ফল দেন; তার আচার-ব্যবহার অনুসারে তিনি তার পাওনা দেন। ঈশ্বর কখনও মন্দ কাজ করেন না, সর্বশক্তিমান কখনও উল্টা বিচার করেন না। পৃথিবীর ভার কি কেউ তাঁকে দিয়েছে? গোটা দুনিয়ার দেখাশোনার কাজে কেউ কি তাঁকে লাগিয়েছে? যদি তিনি তাঁর নিজের কথাই ভাবতেন আর তাঁর আত্মা ও নিঃশ্বাস নিজের কাছে ফিরিয়ে নিতেন, তবে সব মানুষ একসংগে ধ্বংস হয়ে যেত, তারা আবার ধুলা হয়ে যেত। “যদি আপনাদের বুদ্ধি থাকে তবে এই কথা শুনুন; আমার কথায় কান দিন। যিনি ন্যায়বিচার ঘৃণা করেন তিনি কি শাসন করতে পারেন? আপনারা কি ন্যায়বান ও ক্ষমতাশালীকে দোষ দেবেন? তিনি তো রাজাদের বলেন, ‘তোমরা অপদার্থ,’ আর প্রধান লোকদের বলেন, ‘তোমরা দুষ্ট।’ তিনি শাসনকর্তাদের পক্ষ নেন না, গরীবদের ফেলে ধনীদের বড় মনে করেন না, কারণ তারা সবাই তাঁরই হাতের কাজ। তারা হঠাৎ মারা যায়, মারা যায় মাঝরাতে; তাদের নাড়ানো হলে তারা ধ্বংস হয়; কেউ কিছু না করলেও শক্তিমানেরা মারা যায়। “মানুষের চলাফেরার উপর ঈশ্বরের চোখ আছে; তাদের প্রতিটি ধাপ তিনি দেখেন। এমন কোন অন্ধকার জায়গা বা ঘন ছায়া নেই যেখানে মন্দ কাজ করা লোকেরা লুকাতে পারে। মানুষের বিচারের জন্য ঈশ্বরের কোন খোঁজ নেবার দরকার নেই; তদন্ত না করেই তিনি শক্তিমানদের চুরমার করেন আর তাদের জায়গায় অন্যদের বসিয়ে দেন। তিনি তাদের কাজের হিসাব রাখেন বলে রাতের বেলা তিনি তাদের ধ্বংস করে ফেলেন আর তারা চুরমার হয়ে যায়। তাদের দুষ্টতার জন্য তিনি সকলের সামনে তাদের শাস্তি দেন, কারণ তারা তাঁর পথে চলা বাদ দিয়েছে; তাঁর কোন আদেশের প্রতি তাদের খেয়াল নেই। তাদের অত্যাচারের দরুন গরীবের কান্না তাঁর সামনে উপস্থিত হয়; তিনি অভাবীদের কান্না শোনেন। অবশ্য তিনি চুপ করে থাকলেও কেউ তাঁকে দোষী করতে পারে না; তিনি মুখ লুকালে কেউ তাঁকে দেখতে পায় না। তবুও তিনি মানুষ ও জাতির উপরে আছেন, যাতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন লোক রাজত্ব করতে না পারে আর লোকদের ধরবার জন্য ফাঁদ পাততে না পারে। “কোন লোক তো ঈশ্বরকে বলে নি, ‘আমি শাস্তি পেয়েছি, আর অন্যায় করব না; আমি যা দেখতে পাই না তা আমাকে শিখাও; যদি আমি অন্যায় করে থাকি, তবে আর তা করব না।’ আপনি যখন ঈশ্বরকে অগ্রাহ্য করছেন তখন ঈশ্বর কি করে আপনার ইচ্ছামত পুরস্কার দেবেন? মন স্থির করা আপনার কাজ, আমার নয়; কাজেই আপনার মতামত আপনি প্রকাশ করুন। “বুদ্ধিমান লোকেরা আমাকে বলেন, জ্ঞানী লোকেরা আমার কথা শুনে আমাকে বলেন, ‘ইয়োব জ্ঞানশূন্য হয়ে কথা বলছেন, তাঁর কথায় কোন বুদ্ধির পরিচয় নেই।’ ইয়োবের পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে হলেই ভাল, কারণ তিনি দুষ্ট লোকের মত কথা বলছেন। তাঁর পাপের সংগে তিনি বিদ্রোহ যোগ করছেন; তিনি আমাদের সামনে ঈশ্বরকে অপমান করছেন আর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলছেন।” তারপর ইলীহূ বললেন, “আপনি যে বলছেন আপনি ঈশ্বরের সামনে নির্দোষ, কথাটা কি আপনি ঠিক বলে মনে করেন? আপনি তাঁকে বলছেন, ‘এতে আমার কি লাভ? পাপ না করলে আমি কি পাব?’ “আমি আপনাকে ও আপনার সংগীদের এর উত্তর দিতে চাই। আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন; দেখুন, মেঘ আপনার কত উপরে আছে। আপনি যদি পাপ করেন তাতে ঈশ্বরের কি হয়? আপনার অন্যায় যদি অনেক হয় তাতেই বা তাঁর কি আসে যায়? আপনি যদি নির্দোষ হন তবে তাঁর কি উপকার হবে? আপনার হাত থেকে তিনি কিছুই চান না। আপনার দুষ্টতা কেবল মানুষেরই ক্ষতি করে, আর আপনার সততা কেবল তাদেরই সাহায্য করে। “অত্যাচারের ভারে লোকে চিৎকার করে; তারা শক্তিমানদের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য মিনতি করে। কিন্তু কেউ বলে না, ‘আমার সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর কোথায়, যিনি রাতের বেলায় আনন্দের গান দান করেন? তিনি তো পৃথিবীর পশুদের চেয়ে আমাদের বেশী শিক্ষা দেন আর আকাশের পাখীদের চেয়ে বেশী জ্ঞান দান করেন।’ লোকেরা যখন কাঁদে তখন তিনি উত্তর দেন না, কারণ তারা অহংকারী ও দুষ্ট। তাদের প্রার্থনায় কোন লাভ হয় না, কারণ ঈশ্বর তা শোনেন না; সর্বশক্তিমান তাতে কোন মনোযোগই দেন না। আপনি বলছেন যে, আপনি তাঁকে দেখতে পান না, আপনার মামলা তাঁর সামনে রয়েছে, আর আপনি তাঁর বিচারের জন্য অপেক্ষা করছেন। আপনি আরও বলছেন যে, তিনি ক্রোধে শাস্তি দেন না আর দুষ্টতার দিকে বিশেষ খেয়াল করেন না। কাজেই ইয়োব বাজে কথা বলছেন; তিনি না জেনে অনেক কথা বলছেন।” ইলীহূ আরও বললেন, “ঈশ্বরের পক্ষে আমার আরও কিছু বলবার আছে; আমার প্রতি আর একটু ধৈর্য ধরুন, আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আমি অনেক দূর থেকে জ্ঞান লাভ করেছি; আমার সৃষ্টিকর্তা যে ন্যায়বান তা আমি প্রকাশ করব। আমি সত্যিই বলছি যে, আমার কথা মিথ্যা নয়; জ্ঞানে পরিপূর্ণ একজন আপনার সংগে আছে। “ঈশ্বর ক্ষমতাশালী, কিন্তু মানুষকে তুচ্ছ করেন না; তিনি শক্তিমান এবং তাঁর উদ্দেশ্য স্থির। তিনি দুষ্টদের বাঁচিয়ে রাখেন না কিন্তু যারা অত্যাচার ভোগ করে তাদের ন্যায়ভাবে বিচার করেন। তিনি নির্দোষ লোকদের থেকে তাঁর চোখ ফিরিয়ে নেন না; তিনি রাজাদের সংগে তাদের বসিয়ে দেন আর চিরদিনের জন্য তাদের সম্মানিত করেন। কিন্তু লোকেরা যদি পাপের জন্য শিকলে বাঁধা থাকে, বাঁধা থাকে যনণার দড়িতে, তবে তারা যা করেছে তা তিনি তাদের দেখিয়ে দেন, দেখিয়ে দেন যে, তারা গর্বের সংগে পাপ করেছে। তিনি তাদের সংশোধনের জন্য উপদেশ দেন আর মন্দ থেকে মন ফিরাতে আদেশ দেন। যদি তারা তাঁর বাধ্য হয়ে তাঁর সেবা করে, তবে তাদের বাকী জীবন তারা সফলতায় কাটায় আর বছরগুলো কাটায় সুখে। কিন্তু যদি তারা না শোনে, তবে মৃত্যুর আঘাতে তারা ধ্বংস হবে আর বুদ্ধিহীন অবস্থায় মারা যাবে। “ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন লোকেরা রাগ পুষে রাখে; তিনি বাঁধলেও তারা সাহায্যের জন্য ডাকে না। যৌবনেই তারা মারা যায়, মারা যায় মন্দিরের পুরুষ বেশ্যাদের মধ্যে। কিন্তু যারা কষ্ট ভোগ করে তাদের উদ্ধার করবার জন্য তিনি সেই কষ্ট ব্যবহার করেন, আর অত্যাচারের মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষা দেন। “কষ্টের হাত থেকে তিনি আপনাকে বের করে নিয়ে আসতে চান; তিনি আপনাকে এমন বড় জায়গায় নিয়ে যেতে চান যেখানে কোন বাধা নেই। সেখানে আপনার টেবিল ভাল ভাল খাবারে পূর্ণ থাকবে। কিন্তু এখন আপনি দুষ্টদের পাওনা শাস্তি পাচ্ছেন; আপনি শাস্তি ও ন্যায়বিচার ভোগ করছেন। সতর্ক থাকুন যেন আপনার রাগের দরুন আপনার ধন-সম্পদ আপনাকে ভুল পথে নিয়ে না যায়; যে বড় মাসুল আপনি দিয়েছেন তা যেন আপনাকে বিপথে না নেয়। আপনার ধন-সম্পদ কিম্বা আপনার সমস্ত ক্ষমতা কি আপনাকে দুঃখ-কষ্ট থেকে রক্ষা করতে পারে? আপনি সেই রাতের আশা করবেন না যে সময় লোকে মারা যায়। সাবধান হন, মন্দের দিকে ফিরবেন না, কারণ কষ্ট পাওয়ার চেয়ে মন্দই আপনার কাছে প্রিয়। “ঈশ্বর ক্ষমতায় মহান। তাঁর মত শিক্ষক আর কে আছে? কে তাঁকে সংশোধন করতে পারে কিম্বা তাঁকে বলতে পারে, ‘তুমি অন্যায় করেছ’? তাঁর কাজের প্রশংসা করতে ভুলবেন না; গানের মধ্য দিয়েই তো মানুষ তাঁর কাজের প্রশংসা করেছে। সমস্ত মানুষ তাঁর কাজ দেখেছে, কিন্তু তারা তা দর থেকেই দেখেছে। ঈশ্বর যে কত মহান তা আমরা বুঝতেও পারি না। তাঁর বয়স কত তা জানতে পারা সম্ভব নয়। “তিনি জলের ফোঁটা টেনে নেন, সেগুলো বাষ্প হয় এবং বৃষ্টি হয়ে পড়ে। মেঘ তা ঢেলে দেয়, আর মানুষের উপর প্রচুর বৃষ্টি পড়ে। কে বুঝতে পারে তিনি কেমন করে মেঘ বিছিয়ে দেন? কিম্বা তাঁর বাসস্থান থেকে মেঘের গর্জন করেন? তিনি তাঁর চারপাশে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেন আর সমুদ্রের তলা ঢেকে দেন। এই সব দ্বারা তিনি সমস্ত জাতিকে শাসন করেন আর প্রচুর পরিমাণে খাবার যোগান। তিনি তাঁর হাত দিয়ে বিদ্যুৎ ধরেন আর তাঁর লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে আদেশ দেন। তাঁর মেঘের গর্জন ঝড় আসবার খবর ঘোষণা করে; পশুর পালগুলোও ঝড় আসবার খবর জানায়। “এতে আমি ভয়ে কাঁপছি আর আমার অন্তর ধুক্‌ ধুক্‌ করছে। শুনুন, শুনুন তাঁর গর্জনের শব্দ; তাঁর মুখ থেকে যে আওয়াজ বের হচ্ছে তা শুনুন। গোটা আকাশের নীচে আর পৃথিবীর শেষ সীমানায় তাঁর বিদ্যুৎকে তিনি পাঠিয়ে দেন। তারপর তাঁর গর্জনের শব্দ আসে; তাঁর মহান স্বরে তিনি গর্জন করেন। যখন তাঁর স্বর শোনা যায় তখন বিদ্যুৎকে তিনি থামিয়ে রাখেন না। ঈশ্বর আশ্চর্যভাবে গর্জন করেন; তিনি এমন মহৎ মহৎ কাজ করেন যা আমরা বুঝতে পারি না। তিনি তুষারকে বলেন, ‘পৃথিবীতে পড়,’ আর বৃষ্টিকে বলেন, ‘মুষলধারে পড়।’ প্রত্যেক মানুষকে তাঁর কাজ থেকে তিনি থামিয়ে দেন, যেন সব মানুষ তাঁর কাজের বিষয় জানতে পারে। তখন পশুরা আশ্রয় নেয়; তারা তাদের গর্তে ঢোকে। ঝড় তার ঘর থেকে বের হয়ে আসে, বাতাস ঠাণ্ডা বয়ে আনে। ঈশ্বরের নিঃশ্বাস থেকে বরফ জন্মায় আর জল জমে যায়। তিনি ঘন মেঘে জল ভরেন; তাঁর বিদ্যুৎকে তিনি মেঘের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে দেন। তাঁর নির্দেশে মেঘগুলো ঘুরে বেড়ায়, তাঁর আদেশ পালনের জন্য তারা গোটা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ায়। মানুষকে শাস্তি দেবার জন্য, কিম্বা তাঁর পৃথিবীকে জল দেবার জন্য, কিম্বা তাঁর ভালবাসা দেখাবার জন্য তিনি বৃষ্টি আনেন। “ইয়োব, আপনি এই কথা শুনুন; স্থির হয়ে ঈশ্বরের আশ্চর্য কাজের কথা ভাবুন। আপনি কি জানেন কেমন করে ঈশ্বর মেঘকে দমনে রাখেন আর তাঁর বিদ্যুৎকে চম্‌কাতে দেন? আপনি কি জানেন কেমন করে মেঘ ঝুলে থাকে? যিনি জ্ঞানে পরিপূর্ণ তাঁর আশ্চর্য কাজ কি আপনি জানেন? দখিনা বাতাসে যখন দেশ নীরব হয়ে যায় তখন আপনি তো আপনার কাপড়-চোপড়ে গরম বোধ করেন। ছাঁচে ঢালা আয়নার মত শক্ত যে আকাশ তা কি আপনি ঈশ্বরের সংগে বিছিয়েছেন? “তাঁকে কি বলা উচিৎ তা আপনি আমাদের বলুন; আমরা জ্ঞানহীন বলে তাঁকে আমাদের কথা জানাতে পারি না। তাঁকে কি বলতে হবে যে, আমি কথা বলতে চাই? কোন মানুষ কি চাইবে যে, তাকে গিলে ফেলা হোক? বাতাসে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যখন সূর্য উজ্জ্বল হয় তখন তার দিকে কেউ তাকাতে পারে না। উত্তর দিক থেকে সোনালী উজ্জ্বলতা আসে; তাঁর চারদিকে ভয় জাগানো মহিমা দেখা যায়। সর্বশক্তিমান আমাদের নাগালের বাইরে এবং ক্ষমতায় অনেক মহান; তাঁর ন্যায়বিচার ও সততার দরুন তিনি অত্যাচার করেন না। এইজন্যই মানুষ তাঁকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে; যারা নিজেদের জ্ঞানী মনে করে তাদের দিকে তিনি কোন নজর দেন না।” তখন সদাপ্রভু ঝড়ের মধ্য থেকে ইয়োবকে উত্তর দিলেন। তিনি বললেন, “এ কে, যে জ্ঞানহীন কথা দিয়ে আমার পরিকল্পনাকে সন্দেহ করে? তুমি বীরের মত কোমর বাঁধ; আমি তোমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব আর তুমি আমাকে উত্তর দেবে। আমি পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করবার সময় তুমি কোথায় ছিলে? যদি তোমার বুদ্ধি থাকে তবে বল। তুমি কি জান কে তার পরিমাণ ঠিক করেছে? কে তার উপর মাপের দড়ি ধরেছে? কিসের উপর পৃথিবীর থামগুলো স্থাপন করা হয়েছিল? আর তার কোণের পাথরটাই বা কে স্থাপন করেছিল? তখন তো ভোরের তারাগুলো একসাথে গান গেয়েছিল আর স্বর্গদূতেরা সবাই আনন্দে চেঁচিয়ে উঠেছিল। “যখন পৃথিবীর গর্ভ থেকে সমুদ্র বের হয়ে এসেছিল তখন কে তাকে দরজা দিয়ে বন্ধ করেছিল? তখন আমি মেঘকে তার পোশাক করেছিলাম, আর তাকে ঘন অন্ধকারে জড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমি তার সীমা ঠিক করে দিয়েছিলাম; তার দরজা ও আগল আমি স্থাপন করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, ‘এই পর্যন্ত, আর নয়; এখানে তোমার গর্বিত ঢেউগুলোকে থামতে হবে।’ “তুমি কি কখনও সকালকে আদেশ দিয়েছ কিম্বা ভোরকে তার পথ দেখিয়ে দিয়েছ, যাতে সে পৃথিবীর কিনারা ধরে দুষ্টদের সেখান থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে? মাটিতে সীলমোহর করলে যেমন তা আকার পেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তেমনি দিনের আলো পাহাড়-পর্বতকে পোশাকের ভাঁজের মত স্পষ্ট করে তোলে। দুষ্টদের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়, আর তাদের উঠানো হাত ভাংগা হয়। “সমুদ্রের জন্মস্থানে কি তুমি গিয়েছ কিম্বা সাগরের তলায় হেঁটেছ? মৃতস্থানের ফটক কি তোমাকে দেখানো হয়েছে? সেই অন্ধকার জায়গার দরজা কি তুমি দেখেছ? পৃথিবীটা কত বড় তা কি তুমি ধারণা করতে পেরেছ? যদি তুমি এই সব জান তবে বল। “আলোর বাসস্থানে যাওয়ার পথ কোথায়? আর অন্ধকারই বা কোথায় বাস করে? তুমি কি তাদের বাসস্থানে তাদের নিয়ে যেতে পার? তাদের বাড়ী যাবার পথ কি তুমি জান? নিশ্চয়ই জান, তখন তো তোমার জন্ম হয়েছিল। তোমার তো অনেক, অনেক বয়স হয়েছে। “তুমি কি তুষারের ভাণ্ডারে ঢুকেছ কিম্বা শিলার ভাণ্ডার দেখেছ? সেগুলো আমি কষ্টের দিনের জন্য জমা করে রেখেছি, জমা করে রেখেছি যুদ্ধ আর লড়াইয়ের দিনের জন্য। যে জায়গা থেকে আলো ছড়িয়ে যায়, কিম্বা যেখান থেকে পৃথিবীতে পূবের বাতাস ছড়িয়ে পড়ে সেই জায়গা কোথায়? ভারী বৃষ্টি আসবার জন্য এবং বাজ পড়া ও ঝড়-বৃষ্টির জন্য কে পথ করেছে, যাতে জনশূন্য জায়গা জল পায়, জল পায় মরু-এলাকা যেখানে কেউ বাস করে না; যাতে নির্জন পোড়ো জায়গা তৃপ্ত হয়, আর সেখানে ঘাস গজাতে পারে? বৃষ্টির কি বাবা আছে? কে শিশিরের ফোঁটার জন্ম দিয়েছে? কার গর্ভ থেকে বরফ আসে? আকাশ থেকে যে হিম পড়ে তার জন্মই বা কে দিয়েছে? জল জমে পাথরের মত হয়ে যায়, আর সাগরের উপরটা জমে যায়। “তুমি কি কৃত্তিকা নামে তারাগুলো বাঁধতে পার? কালপুরুষ নামে তারাগুলোর বাঁধন খুলে দিতে পার? তুমি কি তারাপুঞ্জকে তাদের ঋতু অনুসারে বের করে আনতে পার, কিম্বা সপ্তর্ষি ও তার ছেলেমেয়েদের পথ দেখাতে পার? আকাশের আইন-কানুন কি তুমি জান? পৃথিবীতে কি সেই আইন-কানুন স্থাপন করতে পার? “তুমি কি মেঘ পর্যন্ত তোমার গলার স্বর তুলতে পার যাতে অনেক জল তোমাকে ঢেকে দিতে পারে? তুমি কি বিদ্যুৎকে তার পথে পাঠাতে পার? সে কি তোমাকে বলবে, ‘এই যে আমি’? কে অন্তরকে জ্ঞান দিয়ে সাজিয়েছে, কিম্বা মনকে বুঝবার শক্তি দিয়েছে? মেঘ গুণে দেখবার বুদ্ধি কার আছে? আকাশের জলের কলসী কে উল্টাতে পারে, যাতে ধূলিকণা গলে একসংগে মিশে যায় আর মাটির ঢেলাগুলো কাদা হয়ে যায়? দাঁড়কাকের বাচ্চারা যখন ঈশ্বরের কাছে কাঁদে আর খাবারের অভাবে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়, তখন কে তাদের খাবার যোগায়? “পাহাড়ী ছাগল কখন বাচ্চা দেয় তা কি তুমি জান? হরিণীর বাচ্চা দেওয়া কি কখনও তুমি দেখেছ? তাদের বাচ্চা গর্ভে কতদিন থাকে তা কি তুমি গুণেছ? তাদের জন্ম দেবার সময় কি তুমি জান? তারা নীচু হয়ে বাচ্চা দেয় আর তাদের প্রসবের যন্ত্রণা শেষ হয়ে যায়। তাদের বাচ্চারা বড় হয় আর মাঠে শক্তিশালী হয়ে ওঠে; তারা মায়ের কাছ থেকে চলে যায়, আর ফিরে আসে না। “বুনো গাধাকে কে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিয়েছে? কে তার দড়ির বাঁধন খুলে দিয়েছে? তার ঘরের জন্য আমি মরু-এলাকা দিয়েছি, তার বাসস্থানের জন্য দিয়েছি নোনা জায়গা। সে শহরের গোলমাল ঘৃণা করে, চালকের চিৎকার তার কানে আসে না। তার চরবার জায়গা হল পাহাড়ী এলাকা; সে সেখানে সব রকম সবুজ গাছপালার খোঁজ করে। “বুনো ষাঁড় কি তোমার কাজ করতে রাজী হবে? রাতে সে কি তোমার যাবপাত্রের কাছে থাকবে? চাষের জমিতে কি তুমি তাকে জোয়ালের দড়ি দিয়ে বাঁধতে পারবে? সে কি তোমার জন্য উপত্যকায় চাষ করবে? তার ভীষণ শক্তির জন্য কি তার উপর তুমি নির্ভর করবে? তোমার ভারী কাজ কি তুমি তাকে করতে দেবে? সে যে তোমার ফসল ঘরে এনে খামারে জমা করবে সেই বিশ্বাস কি তুমি তার উপর করতে পারবে? “উটপাখী জোরে জোরে ডানা ঝাপ্‌টায়, কিন্তু সারস পাখীর ডানা ও পালখের সংগে তার তুলনা হয় না। উটপাখী মাটিতে ডিম পাড়ে আর বালিতে তা গরম হতে দেয়; তার মনেও থাকে না যে, তা পায়ে গুঁড়িয়ে যেতে পারে কিম্বা কোন বুনো পশু তা পায়ে মাড়াতে পারে। তার বাচ্চাদের সংগে সে নিষ্ঠুর ব্যবহার করে, যেন সেগুলো তার নয়; সে চিন্তাও করে না যে, তার সমস পরিশ্রম বিফল হতে পারে, কারণ ঈশ্বর তাকে জ্ঞান দেন নি কিম্বা বুঝবার শক্তিও দেন নি। তবুও সে যখন পাখা ঝাপ্‌টায় তখন ঘোড়া ও তার সওয়ারকে সে হেসে উড়িয়ে দেয়। “ঘোড়াকে কি তুমি শক্তি দিয়েছ? তার ঘাড়ে কি সুন্দর কেশর দিয়েছ? পংগপালের মত করে তুমি কি তাকে লাফ দেওয়াতে পেরেছ? তার নাকের গর্ব-ভরা শব্দ ভীষণ ভয় জাগায়। সে জোরে জোরে পা ঘষে নিজের শক্তিতে আমোদ করে আর যুদ্ধের সময় আক্রমণ করতে যায়। সে ভয়কে দেখে হাসে, কিছুতেই ভয় পায় না; তলোয়ারের সামনে থেকে সে সরে যায় না। তার দেহের পাশে তীর রাখবার তূণ শব্দ করে ওঠে, আর ঝক্‌মক্‌ করে ওঠে বর্শা ও বল্লম। সে উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে দৌড়ে যায়; তূরী বাজলে সে আর স্থির থাকতে পারে না। তূরীর আওয়াজের সংগে সংগে সে নাক দিয়ে শব্দ করে; সে দূর থেকে যুদ্ধের গন্ধ পায় আর সেনাপতিদের চিৎকার ও যুদ্ধের হাঁক শোনে। “তোমার বুদ্ধিতেই কি বাজপাখী ওড়ে আর দক্ষিণ দিকে যাওয়ার জন্য ডানা মেলে দেয়? তোমার আদেশেই কি ঈগল পাখী উঁচুতে ওড়ে আর উঁচু জায়গায় নিজের বাসা বাঁধে? সে খাড়া পাহাড়ের উপরে বাস করে, আর রাতে তার চূড়ায় থাকে; সেই চূড়াই তার দুর্গ। সেখানে থেকে সে খাবারের খোঁজ করে; তার চোখ দূর থেকে তার শিকার দেখতে পায়। তার বাচ্চারা পেট ভরে রক্ত খায়; যেখানে মরা থাকে সেখানে তাকে দেখা যায়।” সদাপ্রভু ইয়োবকে আরও বললেন, “সর্বশক্তিমানের সংগে যে ঝগড়া করছে সে কি তাঁকে সংশোধন করবে? ঈশ্বরের সংগে যে তর্ক করে সে তাঁকে উত্তর দিক।” তখন ইয়োব উত্তরে সদাপ্রভুকে বললেন, “আমি তো অযোগ্য, আমি কেমন করে তোমাকে উত্তর দেব? আমার মুখে আমি হাত চাপা দিয়েছি। আমি একবার কথা বলেছি, কিন্তু উত্তর দেবার আমার কিছু নেই; দু’বার বলেছি, কিন্তু আর বলব না।” তখন সদাপ্রভু ঝড়ের মধ্য থেকে ইয়োবকে বললেন, “তুমি বীরের মত কোমর বাঁধ; আমি তোমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব আর তুমি আমাকে উত্তর দেবে। তুমি আমার ন্যায়বিচারকে কি অগ্রাহ্য করবে? তুমি যে নির্দোষ তা প্রমাণের জন্য কি তুমি আমাকে দোষী করবে? তোমার কি ঈশ্বরের মত শক্তি আছে? তোমার স্বর কি তাঁর গর্জনের মত? তাহলে নিজেকে সাজাও দেখি গৌরব ও মহিমায়, আর পরাও নিজেকে সম্মান ও মর্যাদার পোশাক। তোমার ভয়ংকর ক্রোধ ঢেলে দাও; প্রত্যেক অহংকারী লোককে তোমার চাহনি দিয়ে নীচু কর। সব অহংকারী লোকদের তোমার চাহনি দিয়ে নীচুতে নামাও; দুষ্টেরা যেখানে আছে সেখানেই তাদের গুঁড়া কর। তাদের সবাইকে একসংগে ধুলায় ঢেকে ফেল; মৃতস্থানে তাদের বেঁধে রাখ। তাহলে আমি নিজেই স্বীকার করে নেব যে, তোমার নিজের শক্তি তোমাকে রক্ষা করতে পারে। “বহেমোৎকে দেখ, তোমার সংগে আমি তাকেও তৈরী করেছি; সে গরুর মতই ঘাস খায়। তার কোমরে কি শক্তি! তার পেটের মাংসপেশীতে কত ক্ষমতা! তার লেজ এরস গাছের মত নড়ে; তার ঊরুর মাংসপেশী শক্ত করে জোড়া লাগানো। তার হাড়গুলো যেন ব্রোঞ্জের নল, সেগুলো লোহার ডাণ্ডার মত। ঈশ্বরের সৃষ্টির মধ্যে তার স্থান প্রধান; কেবল তার সৃষ্টিকর্তাই তাকে মেরে ফেলতে পারেন। পাহাড়ে যা জন্মায় তা-ই সে খায়, সেখানকার সব বুনো পশুরা তার কাছেই খেলা করে। বাব্‌লা গাছের নীচে সে শুয়ে থাকে; জলাভূমির নলবনের মধ্যে সে লুকিয়ে থাকে। বাব্‌লা গাছ তার ছায়ায় তাকে ঢেকে রাখে; তাকে ঘিরে রাখে নদীর ধারের উইলো গাছ। নদীতে বেগে বান আসলেও সে ভয় পায় না; যর্দনের জল বেগে এসে তার মুখে পড়লেও সে স্থির থাকে। তার চোখ আক্রমণ করে কেউ কি তাকে ধরতে পারে? কেউ কি ফাঁদে ফেলে তার নাক ছেঁদা করতে পারে? “তুমি কি বড়শীতে গেঁথে লিবিয়াথনকে টেনে আনতে পার, কিম্বা দড়ি দিয়ে তার জিভ্‌ বাঁধতে পার? তুমি কি তার নাকের মধ্য দিয়ে নলের দড়ি পরাতে পার, কিম্বা বড়শী দিয়ে তার চোয়াল ছেঁদা করতে পার? সে কি তোমার দয়া চাইবে? সে কি তোমার সংগে নরম কথা বলবে? চিরজীবন তাকে তোমার দাস করে রাখার জন্য সে কি তোমার সংগে কোন চুক্তি করবে? পাখীর সংগে যেমন খেলা করে তেমনি কি তুমি তার সংগে খেলা করবে কিম্বা তোমার মেয়েদের খেলার জন্য তাঁকে বেঁধে রাখতে পারবে? জেলেরা কি তার জন্য দর কষাকষি করবে? ব্যবসায়ীদের মধ্যে কি তাকে ভাগ করে দেবে? তুমি কি তার চামড়া কোঁচ দিয়ে কিম্বা তার মাথা টেটা দিয়ে বিঁধতে পার? তুমি যদি তাকে ধরতে যাও তবে যে যুদ্ধ হবে তা তুমি কখনও ভুলবে না; তুমি আর কখনও তা করতে যাবে না। তাকে দমন করবার সব আশাই মিথ্যা; তাকে দেখামাত্রই লোকে সাহস হারায়। তাকে জাগাতে পারে এমন সাহসী কেউ নেই; তাহলে আমার সামনে কে দাঁড়াতে পারে? আমার বিরুদ্ধে কার দাবি আছে যে, তার দাবি আমাকে মানতে হবে? আকাশের নীচে যা কিছু আছে সবই তো আমার। “লিবিয়াথনের দেহের অংশগুলোর কথা আমি বলব, তার শক্তি ও তার দেহের গঠনের কথা বলব। তার গায়ের চামড়া কে খুলতে পারে? কে তার বর্ম বিঁধতে পারে? তার ভয় জাগানো দাঁতে ঘেরা মুখের দরজা কে খুলতে সাহস করবে? তার পিঠের আঁশগুলো ঢালের সারির মত; সেগুলো শক্তভাবে একসংগে আট্‌কানো আর এমনভাবে কাছাকাছি রয়েছে যে, তার মধ্য দিয়ে বাতাসও যেতে পারে না। সেগুলো একটার সংগে অন্যটা যুক্ত হয়ে আছে; সেগুলো একসংগে লেগে আছে, আলাদা করা যায় না। তার হাঁচিতে আলো ছুটে বের হয়; তার চোখ দু’টা ভোরের চক্‌চকে আলোর মত। তার মুখ থেকে আগুনের শিখা বের হয়ে আসে; তা থেকে আগুনের ফুল্‌কি ছুটে বের হয়। নল-খাগড়ার আগুনে গরম পাত্র থেকে যেমন ধমা বের হয় তেমনি ধূমা বের হয় তার নাক থেকে। তার নিঃশ্বাসে কয়লা জ্বলে ওঠে আর মুখ থেকে আগুনের শিখা বের হয়। তার ঘাড়ে শক্তি থাকে; ভীষণ ভয় তার আগে আগে চলে। তার মাংসপেশীগুলো শক্তভাবে যুক্ত; সেগুলো শক্তভাবে থাকে, নড়ে না। তার বুক পাথরের মত শক্ত, তা যাঁতার নীচের অংশের মত শক্ত। সে উঠলে শক্তিশালীরা ভয় পায়; তারা ভয়ে পিছিয়ে যায়। তলোয়ার দিয়ে তাকে আঘাত করলেও তার কিছু হয় না; বর্শা, বল্লম বা ছোট তীর ছুঁড়লেও কিছু হয় না। সে লোহাকে খড় মনে করে আর ব্রোঞ্জকে মনে করে পচা কাঠের মত। কোন তীর তাকে তাড়িয়ে দিতে পারে না; ফিংগার পাথর তার কাছে যেন তুষ। গদা তার কাছে এক টুকরা খড়ের মত; বল্লমের শব্দে সে হাসে। তার নীচের দিকটা ভাংগা মাটির পাত্রের ধারালো টুকরার মত; সেইজন্য শস্য মাড়াবার যন্ত্রের মত তা কাদার উপর দাগ রেখে যায়। পাত্রের ফুটন্ত জলের মত সে সাগরকে তোলপাড় করে আর সমুদ্রকে ঘেঁটে মলমের মত করে। একটা চক্‌চকে দাগ সে তার পিছনে রেখে যায়; তা দেখতে পাকা চুলের মত মনে হয়। পৃথিবীর কোন কিছুই তার সমান নয়; তাকে ভয়শূন্য করে সৃষ্টি করা হয়েছে। গর্বিত সবাইকে সে নীচু চোখে দেখে; সে সমস্ত অহংকারীদের রাজা।” ইয়োব তখন উত্তরে সদাপ্রভুকে বললেন, “আমি জানি তুমি সব কিছুই করতে পার; তোমার কোন পরিকল্পনাই নিষ্ফল হয় না। তুমি জিজ্ঞাসা করেছিলে, ‘এ কে, যে না বুঝে আমার উদ্দেশ্যকে গোপন করে রাখে?’ এই কথা ঠিক যে, আমি যা বুঝি নি সেই বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম; তা এত আশ্চর্য যে, আমার বুঝবার নাগালের বাইরে। তুমি বলেছ, ‘এখন শোন, আমি কথা বলি; আমি তোমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব আর তুমি আমাকে উত্তর দেবে।’ আগে আমার কান তোমার বিষয় শুনেছে, কিন্তু এখন আমার চোখ তোমাকে দেখল। কাজেই আমি যা বলেছি তা এখন ফিরিয়ে নিচ্ছি, আর ধুলা ও ছাইয়ের মধ্যে বসে অনুতাপ করছি।” ইয়োবকে এই সব কথা বলবার পরে সদাপ্রভু তৈমনীয় ইলীফসকে বললেন, “আমার দাস ইয়োব যেমন বলেছে তুমি ও তোমার বন্ধুরা সেইভাবে আমার বিষয় ঠিক কথা বল নি; সেইজন্য তোমাদের উপর আমার ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠেছে। কাজেই এখন সাতটা ষাঁড় ও সাতটা ভেড়া নিয়ে আমার দাস ইয়োবের কাছে যাও এবং নিজেদের জন্য পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর। আমার দাস ইয়োব তোমাদের জন্য প্রার্থনা করবে আর আমি তা গ্রহণ করব, তোমাদের বোকামি অনুসারে ফল দেব না। আমার দাস ইয়োব যেমন আমার বিষয়ে ঠিক কথা বলেছে তোমরা তেমন বল নি।” তখন তৈমনীয় ইলীফস, শূহীয় বিল্‌দদ ও নামাথীয় সোফর সদাপ্রভুর কথামতই কাজ করলেন, আর সদাপ্রভু ইয়োবের প্রার্থনা গ্রহণ করলেন। ইয়োব তাঁর বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করবার পর সদাপ্রভু আবার তাঁর অবস্থা ফিরালেন এবং তাঁকে সব কিছু আগের চেয়ে দুই গুণ দিলেন। তাঁর ভাই ও বোনেরা এবং যারা তাঁকে আগে চিনত তারা সকলে এসে তাঁর বাড়ীতে তাঁর সংগে খাওয়া-দাওয়া করল। সদাপ্রভু তাঁর উপর যে সব কষ্ট এনেছিলেন তার জন্য তারা তাঁকে সান্ত্বনা দিল। তারা প্রত্যেকে তাঁকে এক টুকরা রূপা ও সোনার একটা কানের গহনা দিল। সদাপ্রভু ইয়োবের জীবনের প্রথম অবস্থা থেকে পরের অবস্থা আরও আশীর্বাদযুক্ত করলেন। তাঁর চৌদ্দ হাজার ভেড়া, ছয় হাজার উট, এক হাজার জোড়া ষাঁড় ও এক হাজার গাধা হল। তাঁর ঘরে সাত ছেলেও তিন মেয়ের জন্ম হল। তাঁর বড় মেয়ের নাম ছিল যিমীমা, মেজ মেয়ের নাম কৎসীয়া ও ছোট মেয়ের নাম কেরণ-হপ্পুক। ইয়োবের মেয়েদের মত সুন্দরী দেশের মধ্যে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। তাদের বাবা তাদের ভাইদের সংগে তাদেরও সম্পত্তির ভাগ দিলেন। এর পর ইয়োব আরও একশো চল্লিশ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি তাঁর ছেলেমেয়েদের ও তাদের ছেলেমেয়েদের চার পুরুষ পর্যন্ত দেখেছিলেন। এইভাবে ইয়োব বুড়ো হয়ে এবং পূর্ণ আয়ু পাবার পরে মারা গেলেন। ধন্য সেই লোক, যে দুষ্টদের পরামর্শমত চলে না, পাপীদের পথে থাকে না, ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীদের আড্ডায় বসে না; বরং সদাপ্রভুর আইন-কানুনেই তার আনন্দ, আর সেটিই তার দিনরাতের ধ্যান। সে যেন জলস্রোতের ধারে লাগানো গাছ, যা সময়মত ফল দেয়, আর যার পাতা শুকিয়ে ঝরে যায় না; সে সব কাজেই সফলতা লাভ করে। কিন্তু দুষ্টেরা সেরকম নয়; তারা যেন বাতাসে উড়ে যাওয়া তুষ। এইজন্য বিচারের দিনে দুষ্টেরা টিকবে না, পাপীরা ঈশ্বরভক্তদের দলে টিকে থাকতে পারবে না; কারণ ঈশ্বরভক্তদের চলার পথের উপর সদাপ্রভুর খেয়াল আছে, কিন্তু দুষ্ট লোকদের চলার পথে রয়েছে ধ্বংস। কেন অস্থির হয়ে চেঁচামেচি করছে সমস্ত জাতির লোক? কেন লোকেরা মিছামিছি ষড়যন্ত্র করছে? সদাপ্রভু ও তাঁর মশীহের বিরুদ্ধে পৃথিবীর রাজারা একসংগে দাঁড়াচ্ছে আর শাসনকর্তারা করছে গোপন বৈঠক। তারা বলছে, “এস, আমরা ভেংগে ফেলি ওদের শিকল, ছিঁড়ে ফেলি ওদের বাঁধন আমাদের উপর থেকে।” সদাপ্রভু স্বর্গের সিংহাসন থেকে হাসছেন; তিনি তাদের বিদ্রূপ করছেন। তিনি ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের ধমক দেবেন, তাঁর ক্রোধের আগুন তাদের মনে ভয় জাগাবে। সদাপ্রভু বলবেন, “আমি যাঁকে রাজা করেছি তাঁকে আমার পবিত্র সিয়োন পাহাড়ে বসিয়েছি।” রাজা বলবেন, “সদাপ্রভু যা স্থির করেছেন আমি তা ঘোষণা করব; তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুমি আমার পুত্র, আজই আমি তোমার পিতা হলাম। তুমি আমার কাছে চাও, তাতে সম্পত্তি হিসাবে আমি তোমার হাতে অযিহূদী জাতিদের দেব; গোটা পৃথিবীটা তোমার অধিকারে আসবে। লোহার দণ্ড দিয়ে তুমি তাদের ভেংগে ফেলবে, চুরমার করে ফেলবে মাটির পাত্রের মত।’ ” তাই হে রাজারা, তোমরা এখন বুঝে-শুনে চল; পৃথিবীর শাসনকর্তারা, সাবধান হও। ভক্তির সংগে তোমরা সদাপ্রভুর সেবা কর, ভয়-ভরা অন্তরে আনন্দ কর। তোমরা সেই পুত্রকে সম্মান দেখিয়ে চুম্বন কর, যাতে তিনি তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট না হন আর চলার পথেই তোমরা ধ্বংস হয়ে না যাও; কারণ চোখের নিমেষেই তাঁর ক্রোধ জ্বলে উঠতে পারে। ধন্য তারা, যারা তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয়। হে সদাপ্রভু, দেখ, আমার শত্রুর সংখ্যা কত। দেখ, আমার বিরুদ্ধে কত লোক দাঁড়িয়েছে। অনেকে আমার সম্বন্ধে বলছে, “ঈশ্বর তাকে উদ্ধার করবেন না।” [সেলা] কিন্তু হে সদাপ্রভু, তুমি আমার চারপাশে ঢাল হয়ে আছ। তুমিই আমার গৌরব; আমার নীচু মাথা তুমিই উঁচু করেছ। আমি চিৎকার করে সদাপ্রভুকে ডাকি, আর তিনি আমাকে তাঁর পবিত্র পাহাড় থেকে উত্তর দেন। [সেলা] আমি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম, আবার জেগে উঠলাম, কারণ সদাপ্রভুই আমাকে ধরে রাখেন। আমার বিরুদ্ধে আমার চারপাশে হাজার হাজার লোক উঠে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু আমি তাদের ভয় করি না। হে সদাপ্রভু, এস; হে আমার ঈশ্বর, আমাকে উদ্ধার কর। তুমি আমার শত্রুদের চোয়ালে ঘা মেরে সেই দুষ্ট লোকদের দাঁত ভেংগে দিয়েছ। উদ্ধার করা সদাপ্রভুরই কাজ। তোমার নিজের লোকদের উপর তোমার আশীর্বাদ নেমে আসুক। [সেলা] হে আমার ঈশ্বর, আমি যে তোমার ইচ্ছামত চলছি তা তুমি দেখিয়ে দিচ্ছ; আমি যখন তোমাকে ডাকব তখন তুমি আমার ডাকে সাড়া দিয়ো। বিপদ আমাকে চেপে ধরেছে, কিন্তু তুমি আমাকে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছ। আমার প্রতি দয়া কর, আমার প্রার্থনা শোন। হে মানুষ, আর কতকাল তোমরা আমার সম্মানকে অসম্মান করবে? আর কতকাল তোমরা মিথ্যাকে ভালবাসবে আর অসত্যের পিছনে দৌড়াবে? [সেলা] তোমরা জেনে রেখো, সদাপ্রভু তাঁর ভক্তদের তাঁর নিজের জন্য আলাদা করেছেন; আমি ডাকলে তিনি শুনবেন। তোমরা উত্তেজিত হয়ে পাপ কোরো না। বিছানায় শুয়ে তোমাদের অন্তর খুঁজে দেখো আর চুপ করে থেকো। [সেলা] যোগ্য মনোভাব নিয়ে তোমরা উৎসর্গের অনুষ্ঠান কোরো, আর সদাপ্রভুর উপর নির্ভর কোরো। অনেকে বলে, “কে আমাদের মংগল করতে পারে?” হে সদাপ্রভু, তোমার দয়ার দৃষ্টি আলোর মত করে আমাদের উপর পড়ুক। প্রচুর ফসল ও নতুন আংগুর-রস উঠলে লোকদের যেমন আনন্দ হয়, তার চেয়েও বেশী আনন্দ দিয়ে তুমি আমার অন্তর ভরে রেখেছ। হে সদাপ্রভু, তুমিই আমাকে নির্ভয়ে রাখছ, তাই আমি শুয়ে শান্তিতে ঘুমাব। হে সদাপ্রভু, আমার কথায় কান দাও, আমার অন্তরের আকুলতা দেখ। হে আমার রাজা, হে আমার ঈশ্বর, তোমার সাহায্যের জন্য আমার কান্না তুমি শোন, কারণ আমি তোমারই কাছে প্রার্থনা করছি। হে সদাপ্রভু, প্রতিদিন সকাল বেলায় তুমি আমার কথা শুনতে পাও। সকাল বেলায় আমি তোমার সামনে আমার প্রার্থনার ডালি সাজিয়ে রাখি আর আশা নিয়ে চেয়ে থাকি। হে ঈশ্বর, তুমি অন্যায়ে আনন্দিত হওয়ার ঈশ্বর নও; মন্দ লোকেরা তোমার সামনে থাকতে পারে না। যারা গর্বিত তারা তোমার সামনে দাঁড়াতে পারে না; যারা মন্দ কাজ করে বেড়ায় তাদের তুমি অগ্রাহ্য কর। যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের তুমি ধ্বংস কর; যাদের মধ্যে খুনীর এবং ছলনাকারীর মনোভাব রয়েছে সদাপ্রভু তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। কিন্তু আমি তোমার অসীম করুণার দরুন তোমার ঘরে ঢুকব, তোমার পবিত্র বাসস্থানের দিকে চেয়ে ভক্তির সংগে আমার মাথা নীচু করব। হে সদাপ্রভু, আমার অনেক শত্রু রয়েছে বলে তোমার ন্যায়ের পথে তুমি আমাকে পরিচালনা কর; তোমার পথ আমার সামনে সোজা করে দাও। আমার শত্রুদের কোন কথা বিশ্বাস করা যায় না, ওদের অন্তরে আছে ধ্বংসের মনোভাব, ওদের মুখ যেন খোলা কবর, জিভ্‌ দিয়ে ওরা খোশামোদের কথা বলে। হে ঈশ্বর, তুমি ওদের দোষী বলে ঘোষণা কর; ওদের কুমতলবে ওদেরই সর্বনাশ হোক। ওদের অসংখ্য অপরাধের জন্য তুমি ওদের তাড়িয়ে দাও, কারণ ওরা তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। কিন্তু যারা তোমার মধ্যে আশ্রয় নেয় তারা আনন্দিত হোক, তারা আনন্দে চিরকাল গান করুক; তাদের তুমি রক্ষা কর, যেন তোমাকে যারা ভালবাসে তারা তোমাকে নিয়েই আনন্দ লাভ করে। হে সদাপ্রভু, যারা তোমার ভক্ত তাদের উপর সত্যিই তোমার আশীর্বাদ রয়েছে; তোমার দয়া দিয়ে তুমি তাদের ঢালের মত করে ঘিরে রেখেছ। হে সদাপ্রভু, ক্রোধের বশে তুমি আমাকে বকুনি দিয়ো না; অসন্তুষ্ট হয়ে আমাকে শাসন কোরো না। হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রতি দয়া কর, কারণ আমি দুর্বল। হে সদাপ্রভু, আমাকে সুস্থ কর, কারণ ভয়ে আমার হাড়ে কাঁপুনি ধরেছে, আর প্রাণেও লেগেছে ভীষণ ভয়। হে সদাপ্রভু, আর কতকাল তা চলবে? হে সদাপ্রভু, আমার দিকে ফেরো, আমাকে উদ্ধার কর; তোমার অটল ভালবাসার দোহাই, আমাকে রক্ষা কর। মরে গেলে তোমাকে স্মরণ করা যায় না; মৃতস্থানে কে তোমার গৌরব করবে? আমি কোঁকাতে কোঁকাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি; সারা রাত কেঁদে কেঁদে আমি বিছানা ভিজাই, চোখের জলে আমার খাট ভাসাই। দুঃখে আমার দেখবার শক্তিও কমে গেছে; শত্রুদের কারণে আমার চোখ দুর্বল হয়ে পড়েছে। হে মন্দ কাজ করে বেড়ানো লোকেরা, তোমরা সবাই আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও, কারণ সদাপ্রভু আমার কান্না শুনেছেন। আমার দয়া-ভিক্ষায় সদাপ্রভু সাড়া দিয়েছেন, আমার প্রার্থনা তিনি গ্রাহ্য করেছেন। আমার শত্রুরা সব লজ্জিত হবে এবং ভয় পাবে; তারা ফিরে যাবে, হঠাৎ লজ্জায় পড়বে। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি তোমারই মধ্যে আশ্রয় নিয়েছি। যারা আমার পিছনে তাড়া করে আসছে তাদের হাত থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার কর, আমাকে রক্ষা কর। তা না হলে সিংহের মত করে তারা আমাকে ছিঁড়ে ফেলবে; ওরা আমাকে টুকরা টুকরা করে ফেলবে, আমাকে বাঁচাবার কেউ থাকবে না। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, যদি আমি এমন কিছু করে থাকি, যদি অন্যায়ের কোন কলংক আমার হাতে লেগে থাকে, যদি আমার বন্ধুর প্রতি অন্যায় করে থাকি, - যে বিনা কারণে আমার শত্রু হয়ে উঠেছিল আমি বরং তাকেও উদ্ধার করেছি- তবে শত্রুরা তাড়া করে আমাকে ধরে ফেলুক; তারা আমাকে মাটিতে ফেলুক আর পায়ে মাড়াক, আমার সম্মান ধুলাতে মিশিয়ে দিক। [সেলা] হে সদাপ্রভু, ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে তুমি উঠে দাঁড়াও, আমার শত্রুদের রাগের বিরুদ্ধে হাত উঠাও। আমার জন্য তুমি ওঠো, কারণ তোমার ন্যায়বিচারের কথা তুমি ঘোষণা করেছ। সমস্ত জাতির লোক তোমার চারপাশে জড়ো হোক; তুমি স্বর্গে ফিরে গিয়ে আবার তাদের উপর রাজত্ব কর। সদাপ্রভুই যেন তাদের বিচার করেন। হে সদাপ্রভু, আমার ন্যায় কাজ ও সততা অনুসারে তুমি আমার বিচার কর। হে ন্যায়ের ঈশ্বর, তুমি অন্তর ও মনের যাচাই করে থাক; তুমি দুষ্টদের দুষ্টতা শেষ কর কিন্তু তোমার ভক্তকে ভাল অবস্থায় স্থির রাখ। ঈশ্বরই আমার ঢাল; যারা অন্তরে খাঁটি তাদের তিনি রক্ষা করেন। ঈশ্বর ন্যায়বিচারক, দুষ্টদের বিচার তিনি সব সময়ই করে থাকেন। অন্যায়কারী যদি না ফেরে তবে তিনি তাঁর তলোয়ারে শান দেবেন আর তাঁর ধনুক বাঁকিয়ে ঠিক করে নেবেন। তিনি তাঁর মারণ-অস্ত্র ঠিক করে রেখেছেন, আর তাঁর জ্বলন্ত তীর তৈরী করছেন। অন্যায়কারী মন্দকে গর্ভে ধরে, অন্যায়কে গর্ভে নিয়ে প্রসব বেদনায় ভোগে আর মিথ্যাকে প্রসব করে। গর্ত খুঁড়ে সে তার মধ্য থেকে মাটি তুলে ফেলে আর নিজের গর্তে নিজেই পড়ে। তার অন্যায়ের বোঝা তার নিজের মাথাতেই ফিরে আসে; সে যে অত্যাচার করে তা তারই মাথার উপরে নেমে আসে। সদাপ্রভু ন্যায়বিচার করেন, সেজন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ দেব; আমি মহান সদাপ্রভুর প্রশংসা-গান করব। হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রভু, সারা দুনিয়ায় রয়েছে তোমার মহিমার প্রকাশ; স্বর্গে তোমার মহিমা তুমি স্থাপন করেছ। ছোট ছেলেমেয়ে ও শিশুদের কথাকে তুমি শক্তির দুর্গ করেছ; তোমার শত্রুদের কথা ভেবেই তুমি তা করেছ, যাতে তোমার শত্রু ও প্রতিশোধ গ্রহণকারীদের তুমি থামিয়ে দিতে পার। আমি যখন তোমার হাতে গড়া আকাশের দিকে তাকাই আর সেখানে তোমার স্থাপিত চাঁদ আর তারাগুলো দেখি, তখন ভাবি, মানুষ এমন কি যে, তুমি তার বিষয় চিন্তা কর? মানুষের সন্তানই বা কি যে, তুমি তার দিকে মনোযোগ দাও? তুমি মানুষকে স্বর্গদূতের চেয়ে সামান্য নীচু করেছ; রাজমুকুট হিসাবে তুমি তাকে দান করেছ গৌরব ও সম্মান। তোমার হাতের সৃষ্টির শাসনভার তুমি তারই হাতে দিয়েছ আর তার পায়ের তলায় রেখেছ এই সব- গরু ও ভেড়ার পাল আর পৃথিবীর অন্য সব পশু, আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখী, সাগরের মাছ আর সাগর-পথে ঘুরে বেড়ানো অন্য সব প্রাণী। হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রভু, সারা দুনিয়ায় রয়েছে তোমার মহিমার প্রকাশ। হে সদাপ্রভু, আমার সমস্ত অন্তর দিয়ে আমি তোমার গৌরব করব আর তোমার সব আশ্চর্য কাজের কথা বলব। তোমাকে নিয়েই আমি খুশী থাকব ও আনন্দ করব। হে মহান ঈশ্বর, আমি তোমার প্রশংসা-গান করব। আমার শত্রুরা ফিরে গেছে; তোমার সামনে তারা পড়ে গেছে আর ধ্বংস হয়ে গেছে; কারণ তুমি আমার বিচার করে আমার পক্ষে রায় দিয়েছ; তোমার সিংহাসনে বসে তুমি ন্যায়বিচার করেছ। তুমি অন্য জাতিদের ধম্‌কে দিয়েছ এবং দুষ্টদের ধ্বংস করেছ; তাদের নাম তুমি চিরকালের জন্য মুছে ফেলেছ। শত্রুরা চিরদিনের জন্য ধ্বংসের মুখে পড়েছে; তাদের শহরগুলো তুমি উপ্‌ড়ে ফেলে দিয়েছ; তাদের নাম পর্যন্ত মুছে গেছে। সদাপ্রভু চিরকাল রাজত্ব করেন; তিনি বিচারের সিংহাসন স্থাপন করেছেন। তিনি ন্যায়ভাবে জগতের বিচার করবেন, সৎ ভাবেই সব জাতিদের শাসন করবেন। যারা অত্যাচারের মধ্যে পড়ে আছে সদাপ্রভুই যেন তাদের আশ্রয় হন আর দুর্দিনের দুর্গ হন। যারা তোমাকে জানে তারা যেন তোমার উপর নির্ভর করে, কারণ হে সদাপ্রভু, যারা তোমাকে গভীরভাবে জানতে চায় তাদের তুমি কখনও ত্যাগ কর নি। সদাপ্রভু সিয়োনে আছেন; তোমরা তাঁর প্রশংসা-গান কর। তিনি যা করেছেন তা অন্য জাতিদের কাছে ঘোষণা কর; কারণ যিনি রক্তের প্রতিশোধ নেন তিনি মেরে ফেলা লোকদের ভুলে যান না, দুঃখীর কান্না তিনি অবহেলা করেন না। হে সদাপ্রভু, আমার প্রতি দয়া কর; দেখ, আমার শত্রুরা কিভাবে আমাকে অত্যাচার করছে। মৃত্যুর দুয়ার থেকে তুমি আমাকে তুলে আন, যাতে সিয়োন শহরের ফটকগুলোতে আমি তোমার গৌরব প্রচার করতে পারি, তোমার দেওয়া উদ্ধার পেয়ে আনন্দ করতে পারি। অন্য জাতিরা নিজেদের খোঁড়া গর্তে তলিয়ে যাচ্ছে; তাদের লুকানো জালে তাদেরই পা জড়িয়ে গেছে। ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু নিজেকে জানতে দেন; তিনি দুষ্টদের তাঁর কাজের ফাঁদে ফেলেন। [ধ্যান, সেলা] যে সব জাতি ঈশ্বরকে ভুলে যায় সেই দুষ্টেরা মরে মৃতস্থানে যাবে। অভাবীদের চিরকাল ভুলে থাকা হবে না; অসহায়দের আশা কখনও অপূর্ণ থাকবে না। হে সদাপ্রভু, তুমি ওঠো, মানুষকে তোমার উপর জয়ী হতে দিয়ো না; তোমার সামনে অন্য জাতিদের বিচার হোক। হে সদাপ্রভু, তাদের অন্তরে ভয় জাগাও; অন্য জাতিরা জানুক যে, তারা কেবলমাত্র মানুষ। [সেলা] হে সদাপ্রভু, কেন তুমি দূরে দাঁড়িয়ে আছ? দুর্দিনে কেন তুমি নিজেকে লুকিয়ে রাখ? দুষ্ট লোক অহংকারের দরুন দুঃখীদের তাড়া করে, কিন্তু নিজের কুমতলবে সে নিজেই ধরা পড়ে। দুষ্ট লোক তার অন্তরের মন্দ ইচ্ছার গর্ব করে; লোভী সদাপ্রভুকে অভিশাপ দেয় আর তাঁকে তুচ্ছ করে। দুষ্ট লোক অহংকারের দরুন সদাপ্রভুকে অগ্রাহ্য করে; তার কুমতলবের পিছনে এই চিন্তা রয়েছে- ঈশ্বর বলে কেউ নেই। সব সময় সে সফলতার পথে এগিয়ে যায়; তার চোখ তোমার শাসন-ব্যবস্থার নাগাল পায় না, কারণ তা অনেক উপরে; তার সব শত্রুদের সে তুচ্ছ করে। সে মনে মনে বলে, “এমন কিছু নেই যা আমাকে নাড়াতে পারে; আমার বিপদ কোন কালেই হবে না।” তার মুখ অভিশাপ, ঠকামি আর অত্যাচারের কথায় ভরা; তার জিভে রয়েছে অন্যায় আর মন্দতার কথা। গ্রামের কাছে গোপনে সে ওৎ পেতে বসে থাকে; গোপন জায়গাতে সে নির্দোষীকে খুন করে আর অসহায়ের উপর গোপনে লক্ষ্য রাখে। সে আড়ালে থেকে সিংহের মত করে ওৎ পাতে; দুঃখীকে ধরবার জন্যই সে তা করে, জালে ফেলে সে তাকে ধরে। তারপর সে তাদের পিষে ফেলে; সেই হতভাগারা পড়ে তার থাবার নীচে। সে মনে মনে বলে, “এদিকে ঈশ্বরের খেয়াল নেই; তিনি মুখ ফিরিয়ে আছেন, কখনও দেখবেন না।” হে সদাপ্রভু, ওঠো; হে ঈশ্বর, তোমার হাত বাড়িয়ে দাও, দুঃখীদের ভুলে যেয়ো না। দুষ্ট লোক কেন ঈশ্বরকে তুচ্ছ বলে মনে করে? সে কেন মনে মনে বলে, “তিনি আমার কাছে কোন হিসাব চাইবেন না”? কিন্তু হে ঈশ্বর, দুঃখ-কষ্ট তোমার চোখ এড়িয়ে যায় না; তুমি নিজের হাতেই এর ব্যবস্থা কর। অসহায় তো তোমারই হাতে নিজেকে তুলে দেয়; অনাথকে তুমিই সাহায্য করে থাক। দুষ্ট এবং মন্দ লোকের ক্ষমতা তুমি শেষ করে দিয়ো; তার সমস্ত অন্যায়ের হিসাব তুমি চেয়ে নিয়ো। সদাপ্রভুই চিরকালের রাজা; তাঁর দেশ থেকে অন্য জাতিরা ধ্বংস হয়ে যাবে। হে সদাপ্রভু, নম্রদের অন্তরের ইচ্ছার কথা তুমি শুনছ; তুমি তাদের সাহস দিচ্ছ, তাদের কান্না তুমি শুনছ। তুমিই তা করছ, যাতে অনাথ ও অত্যাচারিত লোকদের পক্ষে তুমি দাঁড়াতে পার, যেন এ দুনিয়ার মানুষ তাদের আর ভয় দেখাতে না পারে। আমি তো সদাপ্রভুর মধ্যেই আশ্রয় নিয়েছি। তোমরা কেন বলছ, “পাখীর মত উড়ে তোমাদের পাহাড়ে পালিয়ে যাও”? কেন বলছ, “অন্তরে যারা খাঁটি অন্ধকার থেকে তাদের তীর মারবার জন্য দুষ্ট লোকেরা তাদের ধনুক বাঁকিয়েছে আর তাতে তীর লাগিয়েছে”? কেন বলছ, “যদি জগৎ-সংসারের সব ভিত্তিই ভেংগে ফেলা হয় তবে ঈশ্বরভক্তদের করবার আর কিছুই নেই”? কিন্তু সদাপ্রভু স্বর্গে তাঁর পবিত্র বাসস্থানে আছেন; তাঁর সিংহাসন সেখানেই রয়েছে। তিনি মানুষকে লক্ষ্য করেন; তাঁর চোখ তাদের যাচাই করে। সদাপ্রভু তাঁর ভক্তদের যাচাই করে দেখান, কিন্তু যারা দুষ্ট এবং অত্যাচার ভালবাসে তাদের তিনি অগ্রাহ্য করেন। তিনি দুষ্টদের উপরে বিপদ পাঠাবেন; তাদের ভাগ্যে রয়েছে আগুন, জ্বলন্ত গন্ধক আর আগুনের মত বাতাস। সদাপ্রভু ন্যায়বান বলেই ন্যায়ের কাজ তিনি ভালবাসেন; যারা খাঁটি তারা তাঁর মুখ দেখতে পাবে। হে সদাপ্রভু, রক্ষা কর, তোমার ভক্তেরা আর নেই; বিশ্বস্ত লোক মানুষের মধ্য থেকে উধাও হয়ে গেছে। মানুষ মানুষের কাছে মিথ্যা কথা বলে; তারা কথা বলে খোসামুদে ঠোঁটে আর ছলনা-ভরা অন্তরে। সদাপ্রভু বলেন, “দুঃখীদের সর্বনাশ ও অভাবীদের কান্নার দরুন এবার আমি জেগে উঠব, আর নিরাপদে থাকাই যাদের অন্তরের কামনা তাদের নিরাপদে রাখব।” সদাপ্রভুর কথায় খাদ নেই; তা যেন আগুনে পুড়িয়ে নেওয়া রূপা, সাতবার করে শুদ্ধ করা রূপা। হে সদাপ্রভু, তুমিই তাদের নিরাপদে রাখবে; একালের লোকদের হাত থেকে চিরকাল তাদের প্রত্যেককে তুমি রক্ষা করবে। লোকেরা যখন মন্দকে সম্মান করে দুষ্টেরা তখন বিনা বাধায় ঘোরাফেরা করে। হে সদাপ্রভু, আর কতকাল? চিরকালই কি তুমি আমাকে ভুলে থাকবে? আমার কাছ থেকে আর কতকাল তুমি তোমার মুখ ফিরিয়ে রাখবে? আর কতকাল আমি মনের মধ্যে চিন্তার পর চিন্তা করে যাব, আর প্রতিদিন আমার অন্তর বেদনায় ভরে উঠবে? আর কতকাল শত্রু আমার উপর জয়ী থাকবে? হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমার দিকে চেয়ে দেখ, আমাকে উত্তর দাও; আমার শক্তি ফিরিয়ে দাও, নইলে আমার উপর আসবে মরণের ঘুম। আমার শত্রু তখন বলবে, “আমি তাকে হারিয়ে দিয়েছি।” আমি স্থির না থাকলে আমার শত্রুরা আনন্দ করবে। কিন্তু আমি তোমার অটল ভালবাসার উপর নির্ভর করেছি; তুমি আমাকে রক্ষা করবে বলে আমার অন্তর আনন্দিত। সদাপ্রভু আমার মংগল করেছেন, তাই আমি তাঁর উদ্দেশে গান গাইব। যাদের মন অসাড় তারা ভাবে ঈশ্বর বলে কেউ নেই। তাদের স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের কাজ জঘন্য; ভাল কাজ করে এমন কেউ নেই। সদাপ্রভু স্বর্গ থেকে নীচে মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, দেখতে চাইলেন কেউ সত্যিকারের জ্ঞান নিয়ে চলে কিনা, দেখতে চাইলেন কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছামত কাজ করে কিনা। তিনি দেখলেন, সবাই ঠিক পথ থেকে সরে গেছে, সবাই একসংগে খারাপ হয়ে গেছে; ভাল কাজ করে এমন কেউ নেই, একজনও নেই। যারা মন্দ কাজ করে বেড়ায় তারা কি এতই অবুঝ? লোকে যেমন করে খাবার খায় তেমনি করেই তারা আমার লোকদের খেয়ে ফেলে; তারা সদাপ্রভুকে ডাকে না। ঈশ্বর তাঁর ভক্তদের সংগে আছেন, তাই ঐ সব লোকেরা ভীষণ ভয়ের মধ্যে থাকবে। তোমরা যারা মন্দ কাজ করছ, তোমরা দুঃখীদের কাজ নষ্ট করে তাদের লজ্জায় ফেলছ, কিন্তু সদাপ্রভুই তাদের আশ্রয়। ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার সিয়োনের মধ্য থেকে আসুক; সদাপ্রভু যখন তাঁর লোকদের অবস্থা ফিরাবেন তখন যাকোবের বংশ আনন্দ করবে- ইস্রায়েলীয়েরা খুশী হবে। হে সদাপ্রভু, তোমার আবাস-তাম্বুতে কে দাঁড়াবার যোগ্য? তোমার পবিত্র পাহাড়ে কে বাস করার যোগ্য? সে-ই যোগ্য, যে নিখুঁত জীবন কাটায়, ন্যায় কাজ করে, সত্যে ভরা অন্তর থেকে কথা বলে, পরের নিন্দা করে না, সংগীর ক্ষতি করে না, প্রতিবেশীর সম্মান নষ্ট করে না, ঘৃণার যোগ্য লোককে ত্যাগ করে চলে আর সদাপ্রভুর ভক্তদের সম্মান করে, ক্ষতি হলেও প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে, সুদ ছাড়াই টাকা ধার দেয়, আর ঘুষ খেয়ে নির্দোষীর ক্ষতি করে না। যে এইভাবে চলে সে সব সময় স্থির থাকবে। হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে রক্ষা কর, কারণ আমি তোমারই মধ্যে আশ্রয় নিয়েছি। আমি সদাপ্রভুকে বলেছি, “তুমিই আমার প্রভু; তুমি ছাড়া আর কিছুতে আমার মংগল নেই।” পৃথিবীর যে সব লোক ঈশ্বরের, তাঁরা মহান; তাঁদের নিয়েই আমার সব আনন্দ। যারা দেব-দেবতাকে উপহার দিয়ে নিজের করে নেয় তাদের দুঃখ বেড়ে যাবে। তারা রক্তের যে ঢালন-উৎসর্গ করে আমি তা করব না; দেব-দেবতার নামও আমি মুখে আনব না। সদাপ্রভু, তুমিই আমার সম্পত্তি; তুমিই আমার পিপাসার জল। আমার ভাগ্য তোমার হাতেই আছে। আমার সীমার মধ্যে যে জায়গা পড়েছে তা চমৎকার; আমার সম্পত্তি দেখলে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়। আমি সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দেব যিনি আমাকে সুবুদ্ধি দেন; রাতে আমার অন্তর আমাকে নির্দেশ দেয়। আমার চোখ সব সময় সদাপ্রভুর দিকে আছে; তিনি আমার ডান পাশে আছেন বলে আমি স্থির থাকব। এইজন্য আমার মন খুশীতে ভরা, আমার অন্তর আনন্দ করছে আর আমার দেহ নিরাপদে থাকবে; কারণ তুমি আমাকে মৃতস্থানে ফেলে রাখবে না, তোমার ভক্তের দেহকে তুমি নষ্ট হতে দেবে না। জীবনের পথ তুমি আমাকে জানিয়েছ; তোমার কাছে থাকায় আছে পরিপূর্ণ আনন্দ আর তোমার ডান পাশে রয়েছে চিরকালের সুখ। হে সদাপ্রভু, তুমি ন্যায় কথা শোন, আমার কান্নায় কান দাও; আমার ছলনাহীন মুখের প্রার্থনা শোন। আমার উপর তোমার বিচার যেন ন্যায্য হয়; যা সত্যি তা তোমার চোখে ধরা পড়ুক। তুমি তো আমার অন্তরে ঢুকে দেখেছ আর রাতে আমাকে পরীক্ষা করেছ; আমাকে যাচাই করেও দেখেছ কিন্তু কিছুই খুঁজে পাও নি। আমি ঠিক করেছি কোন পাপের কথায় আমার মুখ আমি ব্যবহার করব না। মানুষ যে সব কাজ করে তা না করে তোমার মুখের বাক্যের সাহায্যে জুলুমের পথ থেকে আমি নিজেকে সরিয়ে রেখেছি। তোমার পথেই আমি আমার পা স্থির রেখেছি; সেখান থেকে আমার পা একটুও নড়ে নি। হে ঈশ্বর, তুমি আমার ডাকে সাড়া দেবে, সেজন্য আমি তোমাকে ডাকছি; আমার কথায় কান দাও, আমার প্রার্থনা শোন। তোমার অটল ভালবাসা আশ্চর্যভাবে প্রকাশ কর; শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য যারা তোমার আশ্রয় নেয়, তুমি ডান হাত দিয়ে তাদের রক্ষা করে থাক। তাদের অসাড় অন্তরের দুয়ার তারা বন্ধ করে রেখেছে; তাদের মুখ দিয়ে অহংকারের কথাই বের হয়। তারা এখন আমাদের ঘিরে ফেলেছে, আমাদের কোথাও যাবার পথ নেই। তারা আমাদের উপর কড়া নজর রেখেছে যাতে মাটিতে আমাদের ফেলে দিতে পারে। তারা সিংহের মত শিকারের নেশায় পাগল, যেন আড়ালে ওৎ পেতে থাকা যুব সিংহ। হে সদাপ্রভু, তুমি ওঠো, ওদের রুখে দাঁড়াও, ওদের মাটিতে ফেলে দাও। তোমার তলোয়ার দিয়ে দুষ্টের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার কর। হে সদাপ্রভু, ঐ লোকদের হাত থেকে, দুনিয়ার মানুষের হাত থেকে, তুমি নিজের হাতে আমার প্রাণ বাঁচাও। তাদের এই সব পুরস্কার এই জগতেই রয়েছে- তোমার ধন-সম্পদে তাদের পেট ভরে, তাদের সন্তানের সংখ্যা অনেক হয়, সন্তানদের জন্য তারা তাদের ধন-সম্পদ রেখে যায়। কিন্তু আমি যেন নির্দোষ হয়ে তোমার সামনে থাকতে পারি, যাতে মৃত্যু থেকে জেগে উঠে তোমাকে দেখে আমি আনন্দ পাই। হে সদাপ্রভু, তুমিই আমার শক্তি, আমি তোমাকে ভালবাসি। সদাপ্রভুই আমার উঁচু পাহাড়, আমার দুর্গ ও আমার মুক্তিদাতা; আমার ঈশ্বরই আমার উঁচু পাহাড়, তাঁরই মধ্যে আমি আশ্রয় নিই। তিনিই আমার ঢাল, আমার রক্ষাকারী শিং, আমার উঁচু আশ্রয়-স্থান। সদাপ্রভু প্রশংসার যোগ্য, আমি তাঁকে ডাকি; তাতে আমার শত্রুদের হাত থেকে আমি রক্ষা পাই। মৃত্যুর দড়িতে আমি বাঁধা পড়েছিলাম, ধ্বংসের স্রোতে আমি তলিয়ে গিয়েছিলাম। মৃতস্থানের দড়িতে আমি বাঁধা পড়েছিলাম, আমার জন্য পাতা হয়েছিল মৃত্যুর ফাঁদ। আমি এই বিপদে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ডাকলাম এবং সাহায্যের জন্য তাঁর কাছে কান্নাকাটি করলাম। তাঁর বাসস্থান থেকে তিনি আমার গলার স্বর শুনলেন; আমার কান্না তাঁর কাছে পৌঁছাল আর তাঁর কানে গেল। তখন পৃথিবী কেঁপে উঠল আর টলতে লাগল, কেঁপে উঠল সব পাহাড়ের ভিত্তি; তাঁর ক্রোধে সেগুলো কাঁপতে থাকল। তাঁর নাক থেকে ধূমা উপরে উঠল, তাঁর মুখ থেকে ধ্বংসকারী আগুন বেরিয়ে আসল, তাঁর মুখের আগুনে কয়লা জ্বলে উঠল। তিনি আকাশে নুইয়ে নেমে আসলেন; তাঁর পায়ের নীচে ছিল ঘন কালো মেঘ। তিনি করূবে চড়ে উড়ে আসলেন, উড়ে আসলেন বাতাসের ডানায় ভর করে। তিনি অন্ধকার দিয়ে নিজেকে ঘিরে ফেললেন; তাঁর চারপাশে রইল আকাশের ঘন কালো বৃষ্টির মেঘ। তাঁর আলোময় উপস্থিতির সামনে কালো মেঘ সরে গেল; শিলাবৃষ্টি আর বাজ বের হয়ে আসল। সদাপ্রভু আকাশে গর্জন করলেন; বাজ ও শিলাবৃষ্টির মধ্যে মহান ঈশ্বরের স্বর শোনা গেল। তিনি তীর ছুঁড়ে শত্রুদের ছড়িয়ে ফেললেন, আর বিদ্যুৎ চম্‌কিয়ে তাদের বিশৃঙ্খল করলেন। হে সদাপ্রভু, তোমার ধমকে আর নিঃশ্বাসের ঝাপ্‌টায় মাটির তলার জল দেখা দিল, পৃথিবীর ভিতরটা বেরিয়ে পড়ল। তিনি উপর থেকে হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরলেন, গভীর জলের মধ্য থেকে আমাকে টেনে তুললেন। আমার শক্তিমান শত্রুর হাত থেকে তিনি আমাকে বাঁচালেন; বাঁচালেন বিপক্ষদের হাত থেকে যাদের শক্তি আমার চেয়েও বেশী। বিপদের দিনে তারা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, কিন্তু সদাপ্রভুই আমাকে ধরে রাখলেন। তিনি আমাকে একটা খোলা জায়গায় বের করে আনলেন; আমার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন বলেই তিনি আমাকে উদ্ধার করলেন। আমার ন্যায় কাজ অনুসারেই সদাপ্রভু আমাকে দান করলেন, আমার কাজের শুচিতা অনুসারে পুরস্কার দিলেন; কারণ সদাপ্রভুর পথেই আমি চলফেরা করেছি; মন্দ কাজ করে আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে সরে যাই নি। তাঁর সমস্ত আইন-কানুন আমার সামনে রয়েছে; তাঁর নিয়ম থেকে আমি সরে যাই নি। তাঁর সামনে আমি নির্দোষ ছিলাম; আমি পাপ থেকে দূরে থেকেছি। তাই সদাপ্রভু আমাকে পুরস্কার দিয়েছেন তাঁর চোখে আমার ন্যায় কাজ অনুসারে, আমার কাজের শুচিতা অনুসারে। হে সদাপ্রভু, তুমি বিশ্বস্তদের সংগে বিশ্বস্ত ব্যবহার কর, নির্দোষদের সংগে কর নির্দোষ ব্যবহার, খাঁটিদের সংগে কর খাঁটি ব্যবহার, আর কুটিলদের দেখাও তোমার বুদ্ধির কৌশল। তুমি দুঃখীদের রক্ষা করে থাক আর অহংকারীদের নীচে নামাও। তুমিই আমার জীবন-বাতি জ্বালিয়ে রাখ; আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমার অন্ধকারকে আলো করেন। তোমার সাহায্যেই আমি সৈন্যদলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি, আর আমার ঈশ্বরের সাহায্যে লাফ দিয়ে দেয়াল পার হতে পারি। ঈশ্বরের পথে কোন খুঁত নেই; সদাপ্রভুর বাক্য খাঁটি বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনিই তাঁর মধ্যে আশ্রয় গ্রহণকারী সকলের ঢাল। একমাত্র সদাপ্রভু ছাড়া ঈশ্বর আর কে? আমাদের ঈশ্বর ছাড়া আর কি কেউ আশ্রয়-পাহাড় আছে? ঈশ্বরই আমার কোমরে শক্তি দিয়েছেন আর নিখুঁত করেছেন আমার চলার পথ। তিনি আমাকে হরিণীর মত করে লাফিয়ে চলার শক্তি দিয়েছেন; উঁচু উঁচু জায়গায় তিনিই আমাকে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকেই আমার হাত যুদ্ধ করতে শিখেছে, তাই আমার হাত ব্রোঞ্জের ধনুক বাঁকাতে পারে। হে সদাপ্রভু, তোমার রক্ষাকারী ঢাল তুমি আমাকে দিয়েছ, তোমার ডান হাত আমাকে ধরে আছে; তোমার যত্ন দিয়ে তুমি আমাকে মহান করেছ। তুমি আমার চলার পথ চওড়া করেছ, তাই আমার পায়ে উছোট লাগে নি। আমার শত্রুদের তাড়া করে আমি ধরে ফেলেছি; তারা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আমি পিছন ফিরি নি। আমি তাদের চুরমার করে দিয়েছি, যাতে তারা আর উঠতে না পারে; তারা আমার পায়ের তলায় পড়েছে। তুমিই আমার কোমরে যুদ্ধ করার শক্তি দিয়েছ, আমার বিপক্ষদের আমার পায়ে নত করেছ। আমার শত্রুদের তুমি আমার কাছ থেকে পালাতে বাধ্য করেছ; যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের আমি ধ্বংস করেছি। তারা সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছে, কিন্তু কেউ তাদের রক্ষা করতে আসে নি। তারা সদাপ্রভুর কাছে চিৎকার করেছে, কিন্তু তিনিও তাদের উত্তর দেন নি। বাতাসে বয়ে নিয়ে যাওয়া ধুলার মত আমি তাদের গুঁড়া করেছি, রাস্তার কাদা-মাটির মত করে তাদের ফেলে দিয়েছি। হে সদাপ্রভু, লোকদের বিদ্রোহ থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার করেছ, অন্য জাতিদের উপরে আমাকে কর্তা করেছ; আমি যাদের চিনতাম না তারাও আমার অধীন হয়েছে। আমার কথা শুনলেই তারা আমার অধীনতা স্বীকার করে; বিরুদ্ধ মনোভাব নিয়ে বিদেশীরা আমার বাধ্য হয়। তারা নিরাশ হয়ে পড়ে; তারা কাঁপতে কাঁপতে দুর্গ থেকে বের হয়। সদাপ্রভু জীবন্ত। আমার আশ্রয়-পাহাড়ের গৌরব হোক। আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের সম্মান বৃদ্ধি হোক। তিনিই অন্য জাতিদের আমার অধীনে আনেন আর আমার হয়ে তাদের পাওনা শাস্তি দেন। তিনি শত্রুদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেন। হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে শত্রুদের উপরে তুলেছ, অত্যাচারী লোকদের হাত থেকে তুমিই আমাকে রক্ষা করেছ। হে সদাপ্রভু, এইজন্য অন্য জাতিদের মধ্যে আমি তোমার গৌরব প্রকাশ করব আর তোমার সুনাম গাইব। সদাপ্রভু তাঁর রাজাকে অনেকবার মহাজয় দান করেন; হ্যাঁ, তাঁর অভিষেক করা লোকের প্রতি, দায়ুদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি, তিনি চিরকাল তাঁর অটল ভালবাসা দেখান। মহাকাশ ঈশ্বরের মহিমা ঘোষণা করছে, আর আকাশ তুলে ধরছে তাঁর হাতের কাজ। দিনের পর দিন তাদের ভিতর থেকে বাণী বেরিয়ে আসে, আর রাতের পর রাত তারা ঘোষণা করে জ্ঞান। কিন্তু তাতে কোন শব্দ নেই, কোন ভাষা নেই, তাদের স্বরও কানে শোনা যায় না; তবুও তাদের ডাক সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে; তাদের কথা ছড়িয়ে পড়ছে জগতের শেষ সীমা পর্যন্ত। মহাকাশে সূর্যের জন্য তিনি একটা তাম্বু খাটিয়েছেন; সে বরের মত করে বাসর-ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, নির্দিষ্ট পথে দৌড়াবে বলে খেলোয়াড়-বীরের মত খুশী হয়ে ওঠে; সে আকাশের এক দিক থেকে ওঠে আর ঘুরে অন্য দিকে যায়; তার তাপ থেকে কিছুই রেহাই পায় না। সদাপ্রভুর নির্দেশে কোন খুঁত নেই, তা মানুষকে জাগিয়ে তোলে। সদাপ্রভুর বাক্য নির্ভরযোগ্য, তা সরলমনা লোককে জ্ঞান দেয়। সদাপ্রভুর সমস্ত নিয়ম সোজা পথে চালায় আর অন্তরে দেয় আনন্দ। সদাপ্রভুর আদেশ খাঁটি, তা অন্তরকে সতেজ করে। সদাপ্রভুর প্রতি যে ভক্তিপূর্ণ ভয়, তা শুচিতায় ভরা আর চিরকাল স্থায়ী। সদাপ্রভুর আইন-কানুন সত্য, তাতে অন্যায় কিছু নেই। তা সোনার চেয়ে, প্রচুর খাঁটি সোনার চেয়েও বেশী কামনা করার মত জিনিস। তা মধুর চেয়ে মিষ্টি, মৌচাকের ঝরা মধুর চেয়েও মিষ্টি। তা তোমার দাসকে সাবধান করে, আর তা পালন করলে মহালাভ হয়। নিজের ভুল কে বোঝে? আমার অজানা দোষ তুমি ক্ষমা কর। জেনে-শুনে অহংকারের বশে করা পাপ থেকে তোমার দাসকে তুমি দূরে রাখ; তা যেন আমার উপর রাজত্ব না করে। তাহলেই আমি নিখুঁত হতে পারব, মুক্ত থাকব ঈশ্বরের প্রতি ভীষণ বিদ্রোহের দায় থেকে। হে সদাপ্রভু, আমার আশ্রয়-পাহাড়, আমার মুক্তিদাতা, আমার মুখের কথা ও আমার অন্তরের চিন্তা তোমাকে যেন খুশী করে। তোমার দুঃখের দিনে সদাপ্রভু তোমার ডাকে সাড়া দিন; যাকোবের ঈশ্বর তোমাকে নিরাপদে রাখুন। তাঁর পবিত্র জায়গা থেকে তিনি তোমাকে সাহায্য করুন আর সিয়োন পাহাড় থেকে তোমাকে শক্তি দিন। তোমার সমস্ত উৎসর্গের কথা তাঁর মনে থাকুক, তোমার পোড়ানো-উৎসর্গগুলো তিনি গ্রহণ করুন। [সেলা] তোমার মনের ইচ্ছা তিনি পূরণ করুন, তোমার সমস্ত পরিকল্পনা সফল করুন। তোমার জয়ে আমরা যেন আনন্দ করি আর আমাদের ঈশ্বরের নামে পতাকা উড়াই। সদাপ্রভু তোমার সমস্ত প্রার্থনা গ্রাহ্য করুন। এখন আমি জানি, সদাপ্রভু তাঁর অভিষেক করা লোককে রক্ষা করেন; তাঁর ডান হাতের রক্ষা করার মহাশক্তিতে তিনি পবিত্র স্বর্গ থেকে তাঁর অভিষেক করা লোকের ডাকে সাড়া দেন। অনেকে তাদের রথের বড়াই করে, অনেকে করে তাদের ঘোড়ার, কিন্তু আমরা করি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর। তারা নীচু হয়েছে, তারা পড়ে গেছে, কিন্তু আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছি। হে সদাপ্রভু, রক্ষা কর; হে রাজা, আমাদের ডাকে সাড়া দাও। হে সদাপ্রভু, তোমার শক্তি দেখে রাজা আনন্দিত হন; তুমি তাঁকে জয় দান করলে তিনি কত খুশী হন। তুমি তাঁর মনের ইচ্ছা পূরণ করেছ, তাঁর মুখের কথা অগ্রাহ্য কর নি। [সেলা] মংগলের অনেক আশীর্বাদ নিয়ে তুমি তাঁকে এগিয়ে আনতে গেছ, তাঁর মাথায় দিয়েছ খাঁটি সোনার মুকুট। তিনি তোমার কাছে জীবন চেয়েছিলেন, আর তুমি তাঁকে তা দিয়েছ; তুমি তাঁকে দিয়েছ অশেষ আয়ু। তোমার দেওয়া জয় তাঁর সম্মান বাড়িয়েছে; তুমি তাঁকে দিয়েছ গৌরব ও মহিমা। তুমি তাঁকে চিরস্থায়ী আশীর্বাদ করেছ; তোমার উপস্থিতির আনন্দে তাঁকে আনন্দিত করেছ। সদাপ্রভুর উপরেই রাজা নির্ভর করেন; মহান ঈশ্বরের অটল ভালবাসা তাঁকে স্থির রাখবে। তোমার হাতই তোমার সব শত্রুদের ধরবে; যারা তোমাকে ঘৃণা করে তোমার ডান হাত তাদের ধরবে। তোমার প্রকাশকালে তুমি তাদের করে তুলবে চুলার জ্বলন্ত কয়লার মত। সদাপ্রভু ক্রোধে তাদের গিলে ফেলবেন, তাঁর আগুন তাদের পুড়িয়ে ফেলবে। পৃথিবীর বুক থেকে তাদের বংশধরদের তুমি ধ্বংস করে ফেলবে; ধ্বংস করে দেবে তাদের বংশ মানুষের মধ্য থেকে। যদিও তারা তোমার বিরুদ্ধে দুষ্ট ষড়যন্ত্র আর কুমতলব করেছে, তবুও তারা তাতে সফল হতে পারবে না; কারণ তুমি তাদের মুখ লক্ষ্য করে যখন তোমার ধনুকে টান দেবে, তখন তাদের পালিয়ে যেতে তুমি বাধ্য করবে। হে সদাপ্রভু, তোমার শক্তিতে তুমি প্রকাশিত হও; আমরা তোমার শক্তির প্রশংসা ও গান করব। ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ? আমাকে রক্ষা না করে, আমার কান্না-ভরা প্রার্থনা না শুনে, কেন তুমি দূরে সরে রয়েছ? হে আমার ঈশ্বর, দিনের বেলা আমি তোমাকে ডাকি, কিন্তু তুমি উত্তর দাও না; রাতেও আমি চুপ করে থাকি না। কিন্তু তুমি পবিত্র; ইস্রায়েলীয়দের প্রশংসার সিংহাসনে তুমি বসে আছ। তোমার উপরেই নির্ভর করতেন আমার পূর্বপুরুষেরা; তাঁরা নির্ভর করতেন, আর তুমি তাঁদের রক্ষা করতে। তাঁরা তোমার কাছে কাঁদতেন আর রক্ষা পেতেন; তোমার উপর নির্ভর করে তাঁরা লজ্জায় পড়তেন না। কিন্তু আমি তো কেবল একটা পোকা, মানুষ নই; লোকে আমাকে টিট্‌কারি দেয় আর মানুষ আমাকে তুচ্ছ করে। যারা আমাকে দেখে তারা সবাই আমাকে ঠাট্টা করে। তারা আমাকে মুখ ভেংগায়, আর মাথা নেড়ে বলে, “ও তো সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে, তাহলেই তিনিই ওকে রক্ষা করুন; তিনিই ওকে উদ্ধার করুন, কারণ ওর উপর তিনি সন্তুষ্ট।” মায়ের গর্ভ থেকে তুমিই আমাকে বের করে এনেছ; যখন আমি মায়ের দুধ খেতাম তখন তোমার উপর আমার নির্ভরতা তুমিই জাগিয়েছ। জন্মের পরেই আমাকে তোমার হাতে দেওয়া হয়েছে; জন্ম থেকে তুমিই আমার ঈশ্বর হয়েছ। তুমি আমার কাছ থেকে দূরে থেকো না, কারণ আমার বিপদ কাছে এসে পড়েছে, আমার সাহায্যকারী কেউ নেই। আমার চারপাশে রয়েছে যেন ষাঁড়ের দল; যেন বাশন দেশের শক্তিশালী ষাঁড়গুলো আমাকে ঘিরে ধরেছে। শিকারের খোঁজে সিংহ যেমন গর্জন করে, তেমনি করে তারা আমার বিরুদ্ধে মুখ হাঁ করেছে। আমাকে জলের মত করে ঢেলে ফেলা হয়েছে, আমার সমস্ত হাড়ের জোড়া খুলে গেছে, আমার অন্তর মোমের মত হয়ে আমার ভিতরে গলে গলে পড়ছে। মাটির পাত্রের শুকনা টুকরার মত আমার শক্তি শুকিয়ে এসেছে, আর আমার জিভ্‌ তালুতে লেগে যাচ্ছে; তুমি আমাকে কবরে শুইয়ে রেখেছ। আমার চারপাশে একদল দুষ্ট লোক কুকুরের মত করে আমাকে ঘিরে ধরেছে; তারা আমার হাত ও পা বিঁধেছে। আমার হাড়গুলো আমি গুণতে পারি; সেই লোকেরা আমাকে হাঁ করে দেখছে আর আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেদের মধ্যে তারা আমার কাপড়-চোপড় ভাগ করছে আর আমার জামার জন্য গুলিবাঁট করছে। কিন্তু তুমি, হে সদাপ্রভু, দূরে থেকো না; হে আমার শক্তি, আমাকে সাহায্য করার জন্য তাড়াতাড়ি এগিয়ে এস। তলোয়ারের মুখ থেকে আমার প্রাণ, ঐ সব কুকুরদের থাবা থেকে আমার বহুমূল্য জীবন তুমি রক্ষা কর। ঐ সব সিংহের মুখ থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার কর। তুমি ঐ সব বুনো ষাঁড়ের শিংয়ের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করলে। ভাইদের কাছে আমি তোমার বিষয় প্রচার করব আর সমাজের মধ্যে তোমার গুণগান করব। তোমরা যারা সদাপ্রভুকে ভক্তি কর, তোমরা তাঁর গৌরব কর। যাকোবের সমস্ত বংশধরেরা, তোমরা তাঁকে সম্মান দেখাও। ইস্রায়েলের সমস্ত বংশধরেরা, তোমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাও। দুঃখীর দুঃখ দেখে তাকে তিনি তুচ্ছ কিম্বা অগ্রাহ্য করেন নি; তিনি তার কাছ থেকে নিজের মুখ ফিরান নি, বরং সাহায্যের জন্য তিনি তার অনুরোধ শুনেছেন। বড় সভার মধ্যে আমার যে প্রশংসা তা তোমার কাছ থেকেই আসে; তোমার উপর যাদের ভক্তিপূর্ণ ভয় আছে তাদের সামনেই আমার সব মানত আমি পূরণ করব। নম্র লোকেরা খেয়ে তৃপ্ত হবে; যারা সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলে তারা তাঁর গৌরব করবে। তারা চিরকাল জীবিত থাকুক। পৃথিবীর শেষ সীমার লোকেরাও মন ফিরিয়ে সদাপ্রভুর কাছে আসবে; অন্য জাতিদের সমস্ত গোষ্ঠী তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে। হ্যাঁ, রাজ্য সদাপ্রভুরই; সব জাতির উপরে তিনিই রাজা। পৃথিবীর ধনী লোকেরাও তখন তাঁর সামনে খাওয়া-দাওয়া করবে আর তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে; নিজের প্রাণ বাঁচাবার ক্ষমতা নেই বলে যাদের এক পা কবরে, তারাও তাঁর সামনে হাঁটু পাতবে। ভবিষ্যৎ বংশধরেরা তাঁর সেবা করবে, আর সেই যুগের লোকদের কাছে প্রভুর বিষয় বলা হবে। যাদের এখনও জন্ম হয় নি, তাদের কাছে গিয়ে লোকে তাঁর ন্যায্যতার কথা ঘোষণা করবে; বলবে, তিনিই এ কাজ করেছেন। সদাপ্রভু আমার পালক, আমার অভাব নেই। তিনি আমাকে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর শোওয়ান, শান্ত জলের ধারেও আমাকে নিয়ে যান। তিনি আমাকে নতুন শক্তি দেন; তাঁর নিজের সুনাম রক্ষার জন্যই আমাকে ন্যায় পথে চালান। ঘন অন্ধকারে ঢাকা উপত্যকা পার হতে হলেও আমি বিপদের ভয় করব না, কারণ তুমিই আমার সংগে আছ; তোমার মুগুর আর লাঠি দূর করে দেয় বিপদের ভয়। শত্রুদের মধ্যে তুমি আমার সামনে খাবারে সাজানো টেবিল রেখে থাক; আমার মাথায় দাও তেল; আমার পেয়ালা উপ্‌চে পড়ে। আমি জানি সারা জীবন ধরে তোমার মংগল ও অটল ভালবাসা আমার পিছনে পিছনে ছুটে আসবে; আর আমি চিরকাল সদাপ্রভুর ঘরে বাস করব। পৃথিবী ও তার মধ্যেকার সব কিছু সদাপ্রভুর; জগৎ ও তার মধ্যে যারা বাস করে তারাও তাঁর; কারণ তিনিই গভীর জলের উপরে ভূমির ভিত্তি গাঁথলেন, আর সেই ভূমি মাটির নীচের জলের উপরে ধরে রাখলেন। কে সদাপ্রভুর পাহাড়ে ওঠার যোগ্য? তাঁর পবিত্র জায়গায় দাঁড়াবার যোগ্য কে? কেবল সে-ই যোগ্য, যার হাত নির্দোষ, অন্তর খাঁটি, মন মিথ্যার দিকে নয়, আর মুখে নেই মিথ্যা শপথ। সে সদাপ্রভুর কাছ থেকে আশীর্বাদ পাবে; সে যে তাঁরই ইচ্ছামত চলছে তার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর তা দেখিয়ে দেবেন। এই রকম লোকেরা সদাপ্রভুর উপাসনা করে, তারা তাঁর মুখের দিকে তাকায়; এরাই যাকোবের বংশ। [সেলা] হে শহরের ফটক, তোমাদের মাথা আরও উপরে তোল; হে পুরানো দিনের দরজা, তোমাদের পাল্লা সম্পূর্ণভাবে খুলে যাক; গৌরবের রাজা ভিতরে ঢুকবেন। এই গৌরবের রাজা কে? তিনি সদাপ্রভু, যিনি শক্তিশালী ও মহান; সেই সদাপ্রভু, যিনি যুদ্ধে মহান। হে শহরের ফটক, তোমাদের মাথা আরও উপরে তোল; হে পুরানো দিনের দরজা, তোমাদের পাল্লা সম্পূর্ণভাবে খুলে যাক; গৌরবের রাজা ভিতরে ঢুকবেন। কে এই গৌরবের রাজা? সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই গৌরবের রাজা। [সেলা] হে সদাপ্রভু, আমার অন্তর আমি তোমার দিকেই তুলে ধরছি। হে আমার ঈশ্বর, তোমার উপরেই আমি নির্ভর করি, তুমি আমাকে লজ্জায় পড়তে দিয়ো না; আমার শত্রুরা যেন আমার বিষয় নিয়ে আনন্দ করার সুযোগ না পায়। যে তোমার উপর আশা রাখে সে লজ্জায় পড়বে না, কিন্তু যারা অকারণে বিশ্বাসঘাতকতা করে তারাই লজ্জায় পড়বে। হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে জানাও, আমাকে তোমার পথে চলতে শিখাও। তোমার সত্যে আমাকে পরিচালনা কর আর আমাকে শিক্ষা দাও, কারণ তুমিই আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর; সব সময় তোমার উপরেই আমি আশা রাখি। হে সদাপ্রভু, তোমার মমতা ও অটল ভালবাসার কথা তুমি ভুলে যেয়ো না; সে সব তো তোমার চিরকালের কাজ। আমার যৌবনকালের পাপ ও তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা তুমি মনে রেখো না; তোমার অটল ভালবাসার দরুন তুমি আমাকে মনে রেখো, কারণ হে সদাপ্রভু, তুমি মংগলময়। সদাপ্রভু মংগলময় ও সৎ, সেজন্যই তাঁর পথের বিষয় তিনি পাপীদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তিনি নম্রদের ন্যায়পথে চালিয়ে নিয়ে যান আর তাঁর পথের বিষয় শিক্ষা দেন। সদাপ্রভুর ব্যবস্থা ও আইন-কানুন অনুসারে যারা চলে, তাদের কাছে তাঁর সমস্ত পথই অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততায় পরিপূর্ণ। আমার অন্যায়ের বোঝা খুব বেশী, তাই হে সদাপ্রভু, তোমার সুনাম রক্ষার জন্যই আমার সেই অন্যায় তুমি ক্ষমা কর। কে সেই লোক, যে সদাপ্রভুকে ভক্তি করে? কোন্‌ পথ তাকে বেছে নিতে হবে তা তিনি তাকে দেখিয়ে দেবেন। সে মংগলের মধ্যে তার জীবন কাটাবে, আর তার বংশধরেরা দেশের অধিকার পাবে। সদাপ্রভুকে যারা ভক্তি করে তাদের কাছেই তিনি তাঁর গুপ্ত উদ্দেশ্য প্রকাশ করেন, আর তাঁর স্থাপন করা ব্যবস্থা তিনি তাদেরই জানান। আমার চোখ সব সময় সদাপ্রভুর দিকে আছে, কারণ শিকারীর জাল থেকে তিনিই আমার পা মুক্ত করবেন। আমার দিকে ফেরো আর আমার প্রতি দয়া কর, কারণ আমি একা আর দুঃখী। আমার অন্তরের যাতনা বেড়ে গেছে; আমার সব কষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা কর। চেয়ে দেখ আমার দুঃখ ও কষ্টের দিকে; আমার সমস্ত পাপ তুমি ক্ষমা কর। দেখ, আমার শত্রুর সংখ্যা কত; তারা আমাকে কি ভীষণ ঘৃণা করে। আমার প্রাণ বাঁচাও ও আমাকে রক্ষা কর; আমাকে লজ্জায় পড়তে দিয়ো না, কারণ আমি তোমার মধ্যেই আশ্রয় নিয়েছি। আমার সততা ও ন্যায় কাজ আমাকে রক্ষা করুক, কারণ আমি তোমার উপরেই আমার আশা রেখেছি। হে ঈশ্বর, ইস্রায়েলকে তার সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্ত কর। হে সদাপ্রভু, আমি যে ন্যায়পথে আছি তা তুমি দেখিয়ে দাও, কারণ আমি সৎ ভাবে চলি; আমি স্থিরভাবে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করি। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে খাঁটি বলে প্রমাণ কর; আমাকে পরীক্ষা করে দেখ, আর আমার অন্তর ও মনের খাদ বের করে ফেল; কারণ সব সময় তোমার অটল ভালবাসা আমার চোখের সামনে রয়েছে; তোমার বিশ্বস্ততার কথা মনে রেখে আমি চলাফেরা করি। আমি ঠগদের সংগে থাকি না, আর ভণ্ডদের সংগে ওঠা-বসা করি না। যারা মন্দ কাজ করে তাদের দলকে আমি ঘৃণা করি; আমি দুষ্টদের সংগে বসতে রাজী নই। হে সদাপ্রভু, আমি নির্দোষ অবস্থায় হাত ধুয়ে ফেলব আর তোমার বেদীর চারপাশে ঘুরে আসব, যাতে চিৎকার করে আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতে পারি, আর তোমার সমস্ত আশ্চর্য কাজের কথা বলতে পারি। হে সদাপ্রভু, যে ঘরে তুমি বাস কর, তোমার মহিমা যেখানে থাকে, সেই জায়গা আমি ভালবাসি। পাপীদের দলে তুমি আমাকে ফেলো না; যারা রক্তপাত করতে ভালবাসে তাদের সংগে আমাকে মেরে ফেলো না। তাদের হাতে রয়েছে মন্দের পরিকল্পনা, তাদের ডান হাত ঘুষে ভরা। কিন্তু আমি সৎ ভাবে চলাফেরা করি; আমাকে তাদের হাত থেকে মুক্ত কর, আর আমার প্রতি দয়া কর। আমি সমান জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি; আমি সকলের সামনেই সদাপ্রভুর গৌরব করব। সদাপ্রভুই আমার আলো ও আমার উদ্ধারকর্তা, আমি কাকে ভয় করব? সদাপ্রভুই আমার জীবনের দুর্গ, আমি কাকে দেখে ভয়ে কাঁপব? দুষ্ট লোকেরা আমাকে গিলে খাবার জন্য যখন এগিয়ে আসে তখন আমার সেই শত্রু ও বিপক্ষেরা উছোট খেয়ে পড়ে যায়। সৈন্যের দলও যদি আমাকে ঘিরে ধরে, তবুও আমার মনে ভয় হবে না; যদি আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধও আরম্ভ হয় তবুও তখন আমি নিশ্চিন্ত থাকব। সদাপ্রভুর কাছে আমি একটা অনুরোধ জানাচ্ছি; আমি যা চাইছি তা এই- আমার সারা জীবন আমি যেন সদাপ্রভুর ঘরে বাস করতে পারি, যাতে আমি তাঁর সৌন্দর্য দেখতে পারি আর সেই বাসস্থানে তাঁর বিষয় নিয়ে ধ্যান করতে পারি; কারণ বিপদের দিনে তাঁর সেই আশ্রয়ে তিনি আমাকে নিরাপদে রাখবেন, তাঁর সেই তাম্বুতে আমাকে লুকিয়ে রাখবেন, আর পাহাড়ের উপরে আমাকে তুলে রাখবেন। যে সব শত্রুরা আমাকে ঘিরে ধরেছে তাদের চেয়ে তখন আমার সম্মান বাড়বে; আমি তাঁর ঘরে আনন্দে চিৎকার করতে করতে বিভিন্ন উৎসর্গের অনুষ্ঠান করব; আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান করব আর তাঁর প্রশংসা-গান গাইব। হে সদাপ্রভু, আমি ডাকলে তুমি শুনো, আমার প্রতি দয়া কোরো, আমার ডাকে সাড়া দিয়ো। আমার অন্তর তোমার এই কথাই বলছে, “তোমরা আমাকে ডাক।” হে সদাপ্রভু, তাই আমি তোমাকে ডাকব। তোমার মুখ তুমি আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে রেখো না, রাগ করে তোমার দাসকে তুমি ফিরিয়ে দিয়ো না; তুমিই তো আমার সাহায্যকারী হয়ে আসছ। হে ঈশ্বর, আমার উদ্ধারকর্তা, আমাকে ছেড়ে যেয়ো না, আমাকে ত্যাগ কোরো না। আমার মা-বাবা আমাকে ত্যাগ করলেও সদাপ্রভু আমার ভার নেবেন। হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে দেখিয়ে দাও; আমার শত্রুদের দরুন সমান পথে আমাকে চালিয়ে নিয়ে যাও। আমার শত্রুদের ইচ্ছার কাছে আমাকে ছেড়ে দিয়ো না, কারণ মিথ্যা সাক্ষীরা আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে; তাদের নিঃশ্বাসের সংগে বের হচ্ছে অত্যাচার। সদাপ্রভুর দেওয়া মংগল আমি জীবিতদের মধ্যেই দেখতে পাব- এ কথা যদি আমি বিশ্বাস না করতাম তবে আমার কি হত? তোমরা সদাপ্রভুর উপর আশা রাখ; মনে শক্তি আন ও সাহসে বুক বাঁধ আর সদাপ্রভুর উপর আশা রাখ। হে সদাপ্রভু, আমার আশ্রয়-পাহাড়, আমি তোমাকেই ডাকছি। তুমি আমার কথায় কান বন্ধ করে থেকো না, কারণ তুমি যদি চুপ করে থাক তবে যারা মৃতস্থানে নেমে গেছে তাদের মতই আমার দশা হবে। সাহায্যের জন্য আমি যখন তোমাকে ডাকি আর তোমার মহাপবিত্র স্থানের দিকে হাত উঠাই, তখন তুমি আমার মিনতি শুনো। যারা দুষ্ট, যারা মন্দ কাজ করে বেড়ায়, যারা সকলের সংগে ভাল মুখে কথা বলে অথচ অন্তরে পুষে রাখে মন্দ ইচ্ছা, তাদের সংগে শাস্তি দেবার জন্য তুমি আমাকে টেনে নিয়ো না। তাদের কাজের ফল, তাদের মন্দ কাজের ফল, তুমি তাদের দাও; তাদের হাত যে কাজ করেছে তার ফল তাদের দাও; তাদের যা পাওনা তা-ই তাদের দাও। সদাপ্রভুর হাত যে কাজ করেছে তার প্রতি তারা মনোযোগ দেয় নি, কাজেই তিনি তাদের ধ্বংস করবেন, আবার গড়বেন না। ধন্য সদাপ্রভু, তিনি আমার মিনতি শুনেছেন। সদাপ্রভুই আমার শক্তি ও আমার ঢাল; আমার অন্তর তাঁর উপরে নির্ভর করে, তাই আমি সাহায্য পেয়েছি; সেইজন্য আমার অন্তর আনন্দে ভরে উঠেছে, আর আমি গানের মধ্য দিয়ে তাঁকে ধন্যবাদ দেব। সদাপ্রভুই তাঁর লোকদের শক্তি; তিনিই তাঁর অভিষেক করা লোকের রক্ষাকারী দুর্গ। হে সদাপ্রভু, তোমার লোকদের তুমি রক্ষা কর, তোমার সম্পত্তিকে তুমি আশীর্বাদ কর; তুমি তাদের পালক হও আর চিরকাল তাদের বয়ে নাও। হে স্বর্গদূতেরা, তোমরা সদাপ্রভুর গৌরব ঘোষণা কর, ঘোষণা কর সদাপ্রভুর গৌরব ও শক্তি। তোমরা সদাপ্রভুর গৌরব ঘোষণা কর; তাঁর মহিমাপূর্ণ পবিত্রতার কথা ভেবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাও। জলের উপরে সদাপ্রভুর স্বর শোনা যায়; বাজ পড়ার শব্দে গৌরবময় ঈশ্বর গর্জন করেন; সমস্ত জলের উপরে বাজের শব্দে রয়েছে সদাপ্রভুর গর্জন। সদাপ্রভুর স্বর শক্তিতে পূর্ণ, মহিমায় পূর্ণ সেই স্বর। সেই স্বর এরস গাছও ভেংগে ফেলে; সদাপ্রভু লেবাননের এরস গাছ টুকরা টুকরা করেন। তিনি লেবানন পাহাড়শ্রেণীকে বাছুরের মত নাচান, আর সিরিয়োণ পাহাড়কে নাচান বুনো ষাঁড়ের বাচ্চার মত। সদাপ্রভুর স্বরে আকাশে বিদ্যুতের ঝলক সৃষ্টি হয়। সেই স্বরে মরুভূমি কেঁপে ওঠে; সদাপ্রভু কাদেশের মরু-এলাকা কাঁপিয়ে তোলেন। তাঁর স্বরে হরিণীরা বাচ্চা দেয় আর বনের ডাল ও পাতা পড়ে যায়; তাঁর বাসস্থানে সবার মুখে রয়েছে, “তিনি গৌরবময়।” মহাবন্যার জল সদাপ্রভুর অধীনে ছিল; তিনি চিরকালের রাজা, তিনি সিংহাসনে আছেন। সদাপ্রভু তাঁর লোকদের শক্তির যোগান দেবেন; শান্তি দান করে তিনি তাদের আশীর্বাদ করবেন। হে সদাপ্রভু, আমি তোমার গৌরব করব, কারণ তুমিই আমাকে উঠিয়ে এনেছ; আমার শত্রুদের তুমি আমার বিরুদ্ধে আনন্দ করতে দাও নি। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, সাহায্যের জন্য আমি তোমাকে ডেকেছিলাম আর তুমি আমাকে সুস্থ করে তুলেছ। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে মৃতস্থান থেকে তুলে এনেছ; তুমিই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছ যেন সেই গর্তে আমাকে নেমে যেতে না হয়। হে সদাপ্রভুর ভক্তেরা, তোমরা তাঁর উদ্দেশে গান গাও, তাঁর পবিত্রতার গৌরব কর; কারণ তাঁর ক্রোধ বেশীক্ষণ থাকে না; তাঁর দয়ায় জীবন পাওয়া যায়। কেবল রাতটুকু কাটে কান্নায়, কিন্তু ভোর বেলাতেই আসে আনন্দ। সুখের দিনে আমি বলেছিলাম, কেউ আমাকে নাড়াতে পারবে না। হে সদাপ্রভু, তুমি দয়া দিয়ে আমার রাজ্য অটল রেখেছ, কিন্তু যখন তুমি মুখ ফিরালে তখন আমি ভীষণ ভয় পেলাম। হে সদাপ্রভু, তোমাকেই আমি ডেকেছিলাম; আমার প্রভুর কাছে আমি মিনতি করে বলেছিলাম, “আমার মরণে কিম্বা মৃতস্থানে যাওয়াতে কি লাভ? ধুলা কি তোমার গৌরব করবে কিম্বা তোমার বিশ্বস্ততা প্রচার করবে? হে সদাপ্রভু, শোন, আমার প্রতি দয়া কর; হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে সাহায্য কর।” শোক প্রকাশের অনুষ্ঠান থেকে তুমি আমাকে নাচের উৎসবে এনেছ; শোকের চট খুলে নিয়ে তুমি আমাকে আনন্দের সাজ পরিয়েছ, যাতে আমার অন্তর নীরব না থাকে বরং তোমার উদ্দেশে গান করে। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি চিরকাল তোমাকে ধন্যবাদ দেব। হে সদাপ্রভু, আমি তোমারই মধ্যে আশ্রয় নিয়েছি; আমাকে কখনো লজ্জায় পড়তে দিয়ো না; তোমার ন্যায়বিচারের জোরে আমাকে তুমি রক্ষা কর। আমার কথায় কান দাও; আমাকে উদ্ধার করতে তুমি তাড়াতাড়ি এস। আমাকে রক্ষা করার জন্য তুমি আমার আশ্রয়-পাহাড় হও আর আমার দুর্গ হও। তুমিই আমার আশ্রয়-পাহাড় ও আমার দুর্গ; তোমার সুনাম রক্ষার জন্য আমাকে তুমি পথ দেখাবে আর চালিয়ে নিয়ে যাবে। আমার জন্য গোপনে পেতে রাখা জাল থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার করবে, কারণ তুমিই তো আমার আশ্রয়। আমি তোমার হাতেই আমার আত্মা তুলে দিলাম, কারণ হে সদাপ্রভু, বিশ্বস্ত ঈশ্বর, তুমিই আমাকে মুক্ত করেছ। যারা অসার প্রতিমাকে ভক্তি করে আমি তাদের ঘৃণা করি; কিন্তু আমি সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করি। তোমার অটল ভালবাসা পেয়েছি বলে আমি আনন্দ করব, খুশী হব; কারণ তুমি তো আমার দুঃখ দেখেছ, আর আমার কষ্টের কথা জান। তুমি শত্রুদের হাতে আমাকে আট্‌কে রাখ নি, বরং একটা খোলা জায়গায় আমাকে দাঁড় করিয়েছ। হে সদাপ্রভু, আমাকে দয়া কর, কারণ আমি কষ্টের মধ্যে আছি; দুঃখে আমার চোখ ও আমার দেহ-মন দুর্বল হয়ে পড়ছে। যন্ত্রণায় আমার জীবন গেল, আর কোঁকাতে কোঁকাতে বয়স গেল; অন্যায় করার দরুন আমার শক্তি কমে যাচ্ছে, আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। শত্রুরা আমাকে ঘৃণার পাত্র করে তুলেছে, বিশেষ করে আমার সংগীদের কাছে তা করেছে। পরিচিত লোকদের কাছে আমি ভয়ের পাত্র; লোকে আমাকে রাস্তায় দেখে পালিয়ে যায়। মরা মানুষকে লোকে যেমন ভুলে যায় তেমনি করেই তারা আমাকে ভুলে গেছে; আমি যেন একটা ভাংগা পাত্র। আমার সম্বন্ধে অনেকের নিন্দার কথা আমার কানে এসেছে, আমার চারদিকে ভীষণ ভয়। ওরা আমার বিরুদ্ধে একসংগে পরামর্শ করছে, আমাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু হে সদাপ্রভু, তোমার উপরে আমি নির্ভর করে আছি; আমি বলি, “তুমিই আমার ঈশ্বর।” তোমার হাতেই তো আমার জীবনের সব কিছু; যারা আমাকে তাড়া করে আসছে সেই শত্রুদের হাত থেকে তুমি আমাকে বাঁচাও। তোমার দাসের উপর তোমার দয়া আলোর মত করে পড়ুক; তোমার অটল ভালবাসায় তুমি আমাকে রক্ষা কর। হে সদাপ্রভু, আমি তো তোমাকে ডেকেছি, তুমি আমাকে লজ্জায় পড়তে দিয়ো না; দুষ্ট লোকেরা বরং লজ্জায় পড়ুক, তারা নীরব হয়ে মৃতস্থানে পড়ে থাকুক। অহংকার ও ঘৃণার ভাব নিয়ে যারা ঈশ্বরভক্তদের বিরুদ্ধে অসম্মানের কথা বলে, তাদের মিথ্যাবাদী মুখ বন্ধ হয়ে যাক। তুমি যে মংগল করেছ তা কত মহান! যারা তোমাকে ভক্তি করে তাদের জন্য তুমি তা তুলে রেখেছ; তোমার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণকারীদের তুমি সেই মংগল করে থাক, আর তা কর সকলের সামনে। তুমি তাদের তোমার আড়ালে রেখে মানুষের ষড়যন্ত্র থেকে লুকিয়ে রাখ; ঝগড়া-বিবাদের ঝাপ্‌টা থেকে তোমার আশ্রয়ে তাদের সরিয়ে রাখ। ধন্য সদাপ্রভু। ঘেরাও করা শহরের মধ্যে তাঁর অটল ভালবাসা আশ্চর্যভাবে তিনি আমাকে দেখিয়েছিলেন। আমি ভয় পেয়ে বলেছিলাম, “তোমার কাছ থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি”; কিন্তু সাহায্যের জন্য যখন আমি তোমাকে ডেকেছিলাম তখন তুমি আমার মিনতি শুনেছিলে। হে সমস্ত ঈশ্বরভক্ত লোক, তোমরা সদাপ্রভুকে ভালবেসো। সদাপ্রভুই বিশ্বস্তদের রক্ষা করেন কিন্তু অহংকারীদের তিনি পুরোপুরি শাস্তি দেন। তোমরা যারা সদাপ্রভুর উপর ভরসা করে আছ তোমরা মনে শক্তি আন ও সাহসে বুক বাঁধো। ধন্য সেই লোক, যার ঈশ্বরের প্রতি বিদ্রোহ ক্ষমা করা হয়েছে, যার পাপ ঢাকা দেওয়া হয়েছে। ধন্য সেই লোক, যার অন্যায় সদাপ্রভু ক্ষমা করেছেন আর যার অন্তরে কোন ছলনা নেই। আমি যখন পাপ স্বীকার করি নি তখন সারা দিন কোঁকাতে কোঁকাতে আমার হাড় ক্ষয় হয়ে যাচ্ছিল; কারণ তখন দিনরাত আমার উপরে তোমার হাতের চাপ ভারী ছিল; গরমকালের গরমে যেমন হয় তেমনি করে আমার দেহের শক্তি কমে যাচ্ছিল। [সেলা] তখন আমার পাপ আমি তোমার কাছে স্বীকার করলাম, আমার অন্যায় আমি আর ঢেকে রাখলাম না। আমি বলেছিলাম, “আমার বিদ্রোহের কথা আমি সদাপ্রভুর কাছে স্বীকার করব।” তাই পাপের দরুন আমার দোষ তুমি ক্ষমা করে দিলে। [সেলা] কাজেই যতদিন সুযোগ আছে ততদিন তোমার ভক্তেরা তোমার কাছে প্রার্থনা করুক; সত্যিই, বিপদ যখন বন্যার জলের মত হয়ে দেখা দেবে তখন তা তাদের কাছে আসবে না। তুমিই আমার লুকিয়ে থাকার জায়গা। তুমি আমাকে কষ্টের হাত থেকে রক্ষা করছ। মুক্তির আনন্দ-গানে তুমিই আমাকে ঘিরে রাখছ। [সেলা] আমি সদাপ্রভু তোমাকে জ্ঞান দেব আর যে পথে যেতে হবে তা দেখিয়ে দেব; তোমাকে চোখে চোখে রেখে আমি নির্দেশ দেব। তোমরা ঘোড়া বা গাধার মত হোয়ো না যাদের বুঝবার শক্তি নেই; মুখে লাগাম ও দড়ি দিয়ে তাদের বশে রাখতে হয়, তা না দিলে তারা তোমাদের কাছে আসবে না। দুষ্টকে অনেক যন্ত্রণা পেতে হয়, কিন্তু যে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে সদাপ্রভুর অটল ভালবাসা তাকে ঘিরে রাখে। হে ঈশ্বরভক্ত লোকেরা, সদাপ্রভুই যেন তোমাদের আনন্দের বিষয় হন, তাঁকে নিয়েই তোমরা খুশী হও; তোমরা যারা অন্তরে খাঁটি, তোমরা সকলে আনন্দ-গান কর। হে ঈশ্বরভক্ত লোকেরা, সদাপ্রভুর বিষয় নিয়ে তোমরা আনন্দ-গান কর; তাঁর গুণগান করা খাঁটি লোকদেরই কাজ। বীণা বাজিয়ে সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দাও; তাঁর উদ্দেশে দশ তারের বীণা বাজাও। তাঁর উদ্দেশে নতুন গান গাও, পাকা হাতে বাজনা বাজাও আর আনন্দে চিৎকার কর। সদাপ্রভুর বাক্য সত্য, তাঁর সব কাজে তিনি বিশ্বস্ত। সদাপ্রভু ন্যায় কাজ ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন; সারা পৃথিবী জুড়ে আছে তাঁর অটল ভালবাসা। সদাপ্রভুর কথায় মহাকাশ তৈরী হয়েছে; তার মধ্যেকার সব কিছু তৈরী হয়েছে তাঁর মুখের শ্বাসে। তিনি সমুদ্রের জল জড়ো করে ঢিবি করেন, আর বিভিন্ন ভাণ্ডারে সেই গভীর জল রাখেন। পৃথিবীর সব লোক সদাপ্রভুকে ভক্তি করুক, জগতের সবাই তাঁর ভয়ে কাঁপুক; কারণ তিনি বললেন আর সব কিছুর সৃষ্টি হল; তিনি আদেশ দিলেন আর সব কিছু প্রতিষ্ঠিত হল। সব জাতির পরিকল্পনা সদাপ্রভুই অকেজো করেন; তাদের চিন্তাগুলো তিনিই বিফল করেন। কিন্তু সদাপ্রভুর পরিকল্পনা চিরকাল টিকে থাকে; তাঁর মন যুগ যুগ ধরেই স্থির থাকে। ধন্য সেই জাতি, যার ঈশ্বর সদাপ্রভু; সেই লোকেরা ধন্য, যাদের তিনি নিজের সম্পত্তি হিসাবে বেছে নিয়েছেন। সদাপ্রভু স্বর্গ থেকে নীচে তাকিয়ে দেখেন আর সমস্ত মানুষকে লক্ষ্য করেন। যারা পৃথিবীতে বাস করে তাঁর বাসস্থান থেকে তিনি তাদের খেয়াল করেন। সকলের অন্তর তিনিই গড়েন; তারা যা কিছু করে তা তিনি বুঝতে পারেন। বড় সৈন্যদল থাকলেও কোন রাজা তা দিয়ে রক্ষা পেতে পারে না; মহাশক্তি দ্বারাও কোন বীর যোদ্ধা রক্ষা পেতে পারে না। রক্ষা পাবার জন্য ঘোড়ার উপর নির্ভর করা মিথ্যা আশা; মহাশক্তি থাকলেও ঘোড়া রক্ষা করতে পারে না। কিন্তু সদাপ্রভুর প্রতি যাদের ভক্তিপূর্ণ ভয় আছে, যারা তাঁর অটল ভালবাসার উপর আশা রাখে, তাদের উপর তাঁর নজর রয়েছে; যাতে মৃত্যু থেকে তিনি তাদের রক্ষা করতে পারেন আর দুর্ভিক্ষের সময়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন। আমরা সদাপ্রভুর জন্য অপেক্ষা করছি; তিনিই আমাদের সাহায্যকারী ও আমাদের ঢাল। হ্যাঁ, তাঁকেই ঘিরে রয়েছে আমাদের অন্তরের আনন্দ, কারণ আমরা তাঁর পবিত্রতার উপর নির্ভর করি। হে সদাপ্রভু, আমাদের উপরে তোমার ভালবাসা থাকুক, কারণ আমরা তোমার উপরেই আমাদের আশা রেখেছি। আমি সব সময় সদাপ্রভুর গৌরব করব; আমার মুখে তাঁর গুণগান লেগেই থাকবে। আমি সদাপ্রভুকে নিয়ে গর্ব করব; তা শুনে দুঃখীরা আনন্দ পাবে। তোমরা আমার সংগে সদাপ্রভুর মহিমার কথা বল; এস, আমরা একসংগে তাঁর গৌরব করি। আমি সদাপ্রভুকে ডাকলাম, তিনি আমার ডাকে সাড়া দিলেন; আমার সমস্ত ভয় থেকে তিনি আমাকে উদ্ধার করলেন। লোকে তাঁর দিকে যখন বিশ্বাসের চোখে চায় তখন তাদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে; তাদের মুখে লজ্জার ভাব দেখা দেয় না। এই হতভাগা সদাপ্রভুকে ডাকল; তিনি তার ডাকে সাড়া দিলেন আর সমস্ত কষ্ট থেকে তাকে উদ্ধার করলেন। যারা সদাপ্রভুকে ভক্তি করে সদাপ্রভুর দূত তাদের চারপাশে ছাউনি ফেলেন আর তাদের রক্ষা করেন। স্বাদ নিয়ে দেখ সদাপ্রভু মংগলময়; ধন্য সেই লোক, যে তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয়। হে সদাপ্রভুর লোকেরা, তোমরা তাঁকে ভক্তিপূর্ণ ভয় কর, কারণ যারা তাঁকে ভক্তি করে তাদের কোন কিছুরই অভাব হয় না। যুব সিংহদের খাবারের অভাব হয়, তারা খিদেয় কষ্ট পায়; কিন্তু যারা সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলে তাদের মংগলের অভাব হয় না। ছেলেমেয়েরা, এস, আমার কথা শোন; আমি তোমাদের শিখাব কি করে সদাপ্রভুকে ভক্তি করতে হয়। তোমাদের মধ্যে কে এই জীবন ভোগ করতে চায়? সুখভোগ করার জন্য কে অনেক দিন বেঁচে থাকতে চায়? তাহলে সে জিভ্‌ দিয়ে মন্দ কথা না বলুক, আর ঠোঁট দিয়ে ছলনার কথা বের না করুক। মন্দ কাজ থেকে দূরে থাক, ভাল কাজ কর; শান্তির জন্য আগ্রহী হও আর তার পিছু ছেড়ো না। যারা ন্যায়ের পথে চলে তাদের উপরে সদাপ্রভুর চোখ আছে; তাদের ডাক শোনার জন্য তাঁর কান খোলাই রয়েছে। যারা মন্দ কাজ করে সদাপ্রভু তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, যাতে পৃথিবীর বুক থেকে তাদের নাম মুছে যায়। যারা ন্যায় কাজ করে সদাপ্রভু তাদের কান্না শোনেন; সমস্ত কষ্ট থেকে তিনি তাদের উদ্ধার করেন। যাদের মন ভেংগে গেছে সদাপ্রভু তাদের কাছে থাকেন; যাদের অন্তর চুরমার হয়ে গেছে তিনি তাদের উদ্ধার করেন। যে ন্যায় পথে চলে তার বিপদ অনেক হলেও সেই সব থেকে সদাপ্রভুই তাকে উদ্ধার করেন। তার সব হাড় তিনিই রক্ষা করেন, সেগুলোর একটাও ভাংগা হবে না। অন্যায়কারীর মৃত্যু হবে মন্দতার হাতে; যারা ন্যায় কাজ করে তাদের ঘৃণাকারীদের শাস্তি হবে। সদাপ্রভুই তাঁর দাসদের মুক্ত করেন; যারা তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয় তারা কেউই শাস্তি পাবে না। হে সদাপ্রভু, যারা আমার বিপক্ষে তুমিও তাদের বিপক্ষে থাক; যারা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তুমিও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। ছোট-বড় দু’খানা ঢালই তুমি তুলে নাও আর আমার সাহায্যের জন্য এসে দাঁড়াও। আমার পিছনে যারা তাড়া করে আসছে, বর্শা নিয়ে তাদের আসার পথ তুমি বন্ধ করে দাও। আমাকে বল, “আমিই তোমার উদ্ধার।” যারা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছে তারা লজ্জা ও অসম্মানে পড়ুক; যারা আমার সর্বনাশের ষড়যন্ত্র করছে তারা অপমানিত হয়ে ফিরে যাক। তারা বাতাসের মুখে তুষের মত উড়ে যাক; হ্যাঁ, সদাপ্রভুর দূত তাদের তাড়িয়ে দিন। তাদের পথ অন্ধকার ও পিছল হোক; হ্যাঁ, সদাপ্রভুর দূত তাদের তাড়া করুন। তারা অকারণে আমার জন্য গর্তের উপর গোপনে জাল পেতেছে, বিনা কারণে আমার জন্য গর্ত খুঁড়েছে। তাই হঠাৎ তাদের উপর সর্বনাশ নেমে আসুক; তাদের গোপন জালে তারাই ধরা পড়ুক, সেই সর্বনাশে তারাই পড়ুক। তখন সদাপ্রভুকে নিয়ে আমি আনন্দিত হব; তাঁর দেওয়া উদ্ধারে আমি আনন্দ করব। আমার সমস্ত শরীর তখন বলবে, “হে সদাপ্রভু, আর কে আছে তোমার মত? তুমিই তো দুঃখীদের উদ্ধার করে থাক তাদের শত্রুদের হাত থেকে যারা তাদের চেয়ে শক্তিশালী; যারা লুটপাট করে তাদের হাত থেকে তুমি দুঃখী ও অভাবীদের উদ্ধার করে থাক।” অত্যাচারীরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসছে, আর আমি যা জানি না সেই বিষয়ে আমাকে জেরা করছে। মংগলের বদলে তারা আমার অমংগল করছে; হায়, কি দুর্ভাগা আমি! তবুও তাদের অসুস্থতার সময় আমি চট পরেছি, উপবাস করে নিজেকে ভেংগে চুরমার করেছি; কিন্তু আমার প্রার্থনা আমার কাছেই ফিরে এসেছে। ভাই ও বন্ধু-হারার মত আমি তাদের জন্য শোক প্রকাশ করেছি; শোক প্রকাশের সময় মা-হারার মত মাথা নীচু করেছি। কিন্তু আমি যখন উছোট খেলাম তখন তারা খুশী হয়ে একজোট হল। সেই সব আক্রমণকারীরা আমার অজান্তে আমার বিরুদ্ধে একজোট হল। তারা আমাকে অনবরত গাল-মন্দ করতে লাগল। উৎসবের সময়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন ঠাট্টাকারীদের মত আমার বিরুদ্ধে তারা দাঁতে দাঁত ঘষতে লাগল। হে প্রভু, আর কতকাল তুমি এ সব দেখবে? তাদের অত্যাচার থেকে আমাকে রক্ষা কর; এই সব সিংহদের হাত থেকে আমার বহুমূল্য জীবন বাঁচাও। মহাসভার মধ্যে আমি তোমাকে ধন্যবাদ দেব আর অসংখ্য লোকের মধ্যে তোমার গুণগান করব। মিথ্যা কারণে যারা আমার শত্রু হয়েছে তুমি আমাকে তাদের তামাশার পাত্র হতে দিয়ো না; অকারণে যারা আমাকে ঘৃণা করে আমার বিরুদ্ধে তাদের চোখ টেপাটিপি করতে দিয়ো না। তাদের কথাগুলো শান্তির দিকে নয়; দেশে যারা শান্তিতে বাস করছে তাদের বিরুদ্ধে তারা ছলনা-ভরা মতলব করে। আমার বিরুদ্ধে তারা মুখ ভেংগিয়ে বলেছে, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরা নিজের চোখেই দেখেছি।” হে সদাপ্রভু, তুমি এ সব দেখেছ, তুমি চুপ করে থেকো না; হে প্রভু, তুমি আমার কাছে কাছে থাক। ঈশ্বর আমার, প্রভু আমার, তুমি জেগে ওঠো, আমার পক্ষ নাও, আমার পক্ষ হয়ে কথা বল। হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তোমার ন্যায়ে আমার বিচার কর; আমাকে তাদের তামাশার পাত্র হতে দিয়ো না। মনে মনে তাদের বলতে দিয়ো না, “বেশ! বেশ! যা আমরা চেয়েছিলাম তা-ই হয়েছে।” তাদের বলতে দিয়ো না, “আমরা ওকে শেষ করে দিয়েছি।” আমার বিপদ দেখে যারা আনন্দ করে তারা সবাই লজ্জিত ও অপমানিত হোক; যারা আমার উপরে নিজেদের তুলে ধরে তারা লজ্জা আর অপমানে ঢাকা পড়ুক। আমি ন্যায়পথে চলেছি, এ কথা যারা শুনতে ভালবাসে তারা খুশী হয়ে চিৎকার করুক আর আনন্দ করুক। তারা সব সময় বলুক, “সদাপ্রভুর গৌরব হোক; তাঁর দাসের মংগল হলে তিনি খুশী হন।” আমি জিভ্‌ দিয়ে তোমার ন্যায়বিচারের কথা বলব, আর সারা দিন তোমার গুণগান করতে থাকব। দুষ্টদের অপরাধ সম্বন্ধে আমার অন্তর ঈশ্বরের এই বাণী পেয়েছে, “দুষ্টেরা ঈশ্বরকে ভয় করে না।” তারা নিজেদের বিষয়ে বড়াই করে বলে যে, ঈশ্বর তাদের পাপ ধরবেন না, ঘৃণার চোখেও দেখবেন না। তাদের মুখের কথা মন্দ ও ছলনায় পূর্ণ; বুদ্ধিমানের মত চলা তারা বাদ দিয়েছে, আর বাদ দিয়েছে ভাল কাজ করা। বিছানায় শুয়েও তারা মন্দ বুদ্ধি আঁটে; তারা অন্যায় পথে নিজেদের ছেড়ে দেয় আর মন্দকে ঘৃণা করে না। হে সদাপ্রভু, তোমার অটল ভালবাসা মহাশূন্যে পৌঁছায়; তোমার বিশ্বস্ততা যেন আকাশ ছুঁয়েছে। তোমার সততা অটল পাহাড়ের মত; তোমার ন্যায়বিচার যেন গভীর সাগর। হে সদাপ্রভু, মানুষ ও পশু সবাইকে তুমিই বাঁচিয়ে রাখ। হে ঈশ্বর, তোমার অটল ভালবাসার দাম দেওয়া যায় না; তোমার পাখার ছায়ায় মানুষ আশ্রয় পায়। তোমার ঘরের প্রচুর খাবার খেয়ে তারা তৃপ্ত হয়; তোমার আনন্দ-নদীর জল তুমি তাদের খেতে দাও। তোমার মধ্যে জীবনের ফোয়ারা রয়েছে; তোমার আলোতেই আমরা আলো দেখি। যারা তোমাকে জানে তাদের প্রতি যেন তোমার অটল ভালবাসা সব সময় থাকে; যাদের অন্তর খাঁটি তারা যেন সব সময় তোমার ন্যায়বিচার পায়। আমাকে অহংকারীদের পায়ের তলায় ফেলো না; দুষ্টেরা যেন আমাকে তাড়িয়ে দিতে না পারে। যারা মন্দ কাজ করে বেড়ায় দেখ তারা পড়ে গেছে; তাদের ফেলে দেওয়া হয়েছে, তারা আর উঠতে পারবে না। তুমি দুষ্ট লোকদের বিষয় নিয়ে উতলা হোয়ো না, কিম্বা অন্যায়কারীদের দেখে হিংসা কোরো না; কারণ ঘাসের মতই তারা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে আর সবুজ লতা-গুল্মের মতই বেশী দিন টিকবে না। সদাপ্রভুর উপর বিশ্বাস রাখ আর ভাল কাজ কর; নিজের দেশে বাস কর, বিশ্বস্তভাবে চল। সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দে মেতে থাক; তোমার মনের ইচ্ছা তিনিই পূরণ করবেন। তোমার জীবন-পথের ভার সদাপ্রভুর উপর ফেলে দাও; তাঁর উপর নির্ভর কর, তিনিই সব করবেন। তিনিই তোমার সততাকে আলোর মত উজ্জ্বল করে তুলবেন; তোমার ন্যায় কাজকে দুপুরের রোদের মত স্পষ্ট করবেন। সদাপ্রভুর সামনে শান্ত হও; ধৈর্য ধরে তাঁর জন্য অপেক্ষা কর। নিজের কাজ সফল করতে যে লোক তার দুষ্ট পরিকল্পনা কাজে লাগায়, তার দরুন তুমি উতলা হোয়ো না। রাগ করা বন্ধ কর, মেজাজ দেখানো ত্যাগ কর; উতলা হোয়ো না, কারণ তা তোমাকে কেবলই মন্দের দিকে নিয়ে যাবে। দুষ্ট লোকদের ধ্বংস করা হবে, কিন্তু সদাপ্রভুর উপর যারা আশা রাখে তারা দেশের দখল পাবে। আর কিছুকাল পরেই দুষ্টেরা শেষ হয়ে যাবে; খুঁজলেও তাদের জায়গায় তাদের পাওয়া যাবে না। কিন্তু নম্র লোকেরা দেশের দখল পাবে; প্রচুর আশীর্বাদ পেয়ে তারা আনন্দে মাতবে। ঈশ্বরভক্তদের বিরুদ্ধে দুষ্টেরা মতলব আঁটে আর তাদের বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত ঘষে। প্রভু জানেন দুষ্টদের শেষ দিন ঘনিয়ে এসেছে, সেজন্যই তাদের দেখে তিনি হাসেন। দুঃখী ও অভাবীদের সর্বনাশ করার জন্য, সৎ পথে চলা লোকদের মেরে ফেলবার জন্য, দুষ্টেরা তলোয়ার বের করে আর ধনুকে টান দেয়। কিন্তু তাদের তলোয়ার তাদের বুকেই ঢুকবে আর তাদের ধনুক ভেংগে যাবে। অনেক দুষ্ট লোকের প্রচুর ধন আছে, কিন্তু ঈশ্বরভক্তদের যেটুকু আছে সেটুকুই ভাল। দুষ্টদের হাত ভেংগে যাবে, কিন্তু সদাপ্রভু ঈশ্বরভক্তদের ধরে রাখবেন। নির্দোষ লোকের প্রতিদিনকার জীবন সদাপ্রভু জানেন; তাদের পাওনা সম্পত্তি চিরকাল থাকবে। দুঃখের দিনে তারা লজ্জায় পড়বে না; দুর্ভিক্ষের দিনে তারা যথেষ্ট খাবার পাবে। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাবে; সদাপ্রভুর শত্রুরা ক্ষেতের সৌন্দর্যের মত মিলিয়ে যাবে, মিলিয়ে যাবে ধূমার মত করে। দুষ্টেরা ধার করে শোধ দেয় না, কিন্তু ঈশ্বরভক্তেরা দয়ালু ও দানশীল। সদাপ্রভু যাদের আশীর্বাদ করেন তারা দেশের দখল পাবে, কিন্তু যাদের তিনি অভিশাপ দেন তাদের ধ্বংস করা হবে। সদাপ্রভুই শক্তিশালী লোকদের চলার পথ ঠিক করে দেন; তাদের জীবন দেখে তিনি খুশী হন। পড়ে গেলেও তারা পড়ে থাকবে না, কারণ সদাপ্রভুর হাতই তাদের ধরে রাখছে। আমি যুবক ছিলাম, এখন বুড়ো হয়েছি, কিন্তু ঈশ্বরভক্তদের ত্যাগ করা হয়েছে কিম্বা তাদের বংশধরদের ভিক্ষা করতে হচ্ছে এমন আমি দেখি নি। ঈশ্বরভক্তেরা সব সময় দয়ালু হয় আর ধার দেয়; তাদের বংশধরেরা আশীর্বাদ পাবে। মন্দতা ত্যাগ কর আর ভাল কাজ কর, তাতে চিরকাল বেঁচে থাকবে। সদাপ্রভু ন্যায়বিচার ভালবাসেন; তাঁর ভক্তদের তিনি ত্যাগ করেন না। চিরকাল তাদের রক্ষা করা হবে, কিন্তু দুষ্টদের বংশধরদের ধ্বংস করা হবে। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা দেশের দখল পাবে আর সেখানে চিরকাল বাস করবে। ঈশ্বরভক্তদের মুখ জ্ঞানের কথা প্রচার করে; তাদের জিভ্‌ ন্যায়বিচারের কথা উচ্চারণ করে। তাদের ঈশ্বরের নির্দেশ তাদের অন্তরে রয়েছে; তাদের পা পিছ্‌লে যাবে না। দুষ্ট লোকেরা ঈশ্বরভক্তদের জন্য ওৎ পেতে থাকে, তাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু সদাপ্রভু দুষ্টদের হাতে তাদের ছেড়ে দেবেন না; বিচারে তাদের দোষী সাব্যস্ত হতে দেবেন না। সদাপ্রভুর উপর আশা রাখ, তাঁর পথে চল; তিনি তোমাকে মহান করবেন যাতে তুমি দেশের দখল পাও। দুষ্টেরা ধ্বংস হলে তুমি তা দেখতে পাবে। নিষ্ঠুর দুষ্ট লোককে আমি বেড়ে উঠতে দেখেছি, দেখেছি নিজের জায়গায় থাকা ডালপালা ছড়ানো পাতা-ভরা গাছের মত। তার পরে সে শেষ হয়ে গেল, আর রইল না; আমি তার খোঁজ করলাম, তাকে পাওয়া গেল না। নির্দোষ লোকদের জীবনের দিকে তাকাও; ঐ সৎ লোকদের দেখ। যারা শান্তি ভালবাসে তাদের বংশ থাকবে। কিন্তু পাপীরা শেষ হয়ে যাবে; ঐ সব দুষ্ট লোকদের বংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। ঈশ্বরভক্তদের উদ্ধার সদাপ্রভুর কাছ থেকেই আসে; বিপদের সময় তিনিই তাদের আশ্রয়। সদাপ্রভুই তাদের সাহায্য ও রক্ষা করেন; দুষ্টদের হাত থেকে তিনিই তাদের উদ্ধার করেন, আর তিনিই তাদের বাঁচান, কারণ তারা তাঁরই মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। হে সদাপ্রভু, ক্রোধের বশে তুমি আমাকে বকুনি দিয়ো না, কিম্বা অসন্তুষ্ট হয়ে আমাকে শাসন কোরো না; কারণ তোমার তীরগুলো আমাকে বিঁধেছে, তোমার হাত আমাকে চেপে রেখেছে। তোমার ক্রোধের ফলে আমার দেহ স্বাস্থ্যহীন, পাপের জন্য আমার হাড়ও সুস্থ নয়। আমার অন্যায়ের মধ্যে আমি ডুবে গেছি; তা এমন বোঝার মত হয়েছে যা আমি বইতে পারি না। আমার বোকামির দরুন আমার ঘা থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, তাতে পচন ধরেছে। আমি কুঁজো হয়ে গেছি, একেবারে নূয়ে পড়েছি; সারা দিন আমি মনে দুঃখ নিয়ে বেড়াই। আমার কোমরে জ্বালাময় ব্যথা হয়েছে, আমার দেহ স্বাস্থ্যহীন। আমি দুর্বল হয়ে গেছি, একেবারে ভেংগে পড়েছি, অন্তরের যন্ত্রণায় আমি কাতরাচ্ছি। হে প্রভু, আমার সমস্ত কামনা-বাসনা তোমার জানা আছে; আমার দীর্ঘনিঃশ্বাস তোমার কাছ থেকে লুকানো নেই। আমার বুক ধুক্‌ধুক্‌ করছে, আমার শক্তি চলে গেছে, এমন কি, আমার চোখও আঁধার হয়ে গেছে। আমার এই অবস্থা দেখে বন্ধু-বান্ধব ও সংগীরা আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে, এমন কি, আমার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীরা দূরে সরে থাকে। আমাকে যারা মেরে ফেলতে চায় তারা আমার জন্য ফাঁদ পেতেছে; যারা আমার ক্ষতি করতে চায় তারা আমাকে ধ্বংসের ভয় দেখায়; সারা দিন তারা কেবল আমাকে ঠকাবার ফন্দি আঁটে। আমি যেন বয়রা হয়ে গেছি, কিছুই শুনি না; যেন বোবা হয়ে গেছি, কিছুই বলি না। যে শোনে না আর যার মুখে কোন আপত্তি নেই, আমি তার মতই হয়েছি। হে সদাপ্রভু, আমি তোমার দিকে চেয়ে আছি; হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার উত্তর তুমিই দেবে; কারণ আমি বলেছিলাম, “যখন আমার পা পিছ্‌লে যাবে তখন তা নিয়ে তুমি ওদের আনন্দ করতে দিয়ো না, আমার বিরুদ্ধে বড়াই করতে দিয়ো না।” আমি তো প্রায় পড়েই যাচ্ছি; আমার কষ্টের কথা সব সময় আমার মনে জাগছে। আমার দোষ আমি স্বীকার করছি; আমার পাপের জন্য আমার মন দুশ্চিন্তায় ভরা। আমার শত্রুরা সতেজ ও শক্তিশালী; যারা অকারণে আমাকে ঘৃণা করে তারা অনেক। আমি তাদের যে মংগল করি তার বদলে তারা আমার অমংগল করে; আমি যখন ভালোর খোঁজ করি তখন তারা আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। হে সদাপ্রভু, আমাকে ত্যাগ কোরো না; হে আমার ঈশ্বর, আমার কাছ থেকে দূরে থেকো না। হে প্রভু, আমার উদ্ধারকর্তা, আমাকে সাহায্য করতে তুমি শীঘ্র এস। আমি বললাম, “আমার চলার পথ সম্বন্ধে আমি সাবধান থাকব, যেন জিভ্‌ দিয়ে আমি পাপ না করি; যতক্ষণ দুষ্টেরা আমার সামনে থাকবে ততক্ষণ আমার মুখে আমি জাল্‌তি বেঁধে রাখব।” কিন্তু যেই আমি মুখ বন্ধ করে চুপ করে রইলাম, যা ভাল তা-ও বললাম না, অমনি আমার মনের কষ্ট বেড়ে গেল। আমার অন্তরে যেন জ্বালা ধরে গেল; আমি যখন মনে মনে কথা বলতে লাগলাম তখন যেন আগুন জ্বলতে লাগল। তারপর আমি বললাম, “হে সদাপ্রভু, কখন আমার জীবন শেষ হবে? আমি আর কতকাল বেঁচে থাকব তা আমাকে জানাও; আমার জীবন যে কত অল্প দিনের তা আমাকে বুঝতে দাও। তুমি আমার আয়ু মাত্র চার আংগুলের সমান করেছ; তোমার চোখে আমার জীবনকাল কিছুই না। মানুষ তার পরিপূর্ণ অবস্থাতেও মাত্র একটা নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়। [সেলা] মানুষ আসে ছায়ার মত, যায়ও ছায়ার মত; সে মিথ্যাই চেঁচামেচি করে; সে ধন-সম্পদ জমা করে কিন্তু কে তা ভোগ করবে জানে না। “হে প্রভু, তবে আমি আর কিসের আশায় থাকব? আমার সব আশা তো তোমারই মধ্যে। আমার সমস্ত অন্যায় থেকে তুমি আমাকে সরিয়ে নাও; যাদের বিবেক অসাড় তাদের কাছে তুমি আমাকে হাসির পাত্র করে তুলো না। আমি চুপ করেই আছি, মুখ খুলব না, কারণ তুমিই এ সব কষ্ট হতে দিয়েছ। আমার উপর থেকে তোমার শাস্তি তুমি সরিয়ে নাও; তোমার হাতের ঘা খেয়ে আমি প্রায় শেষ হয়ে গেছি। পাপের জন্য তুমি যখন মানুষকে কঠিন কথায় শাসন কর, তখন পোকা-মাকড়ের মত করে তাদের সৌন্দর্য তুমিই নষ্ট করে দাও; মানুষ তো একটা নিঃশ্বাস মাত্র। [সেলা] “হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রার্থনা শোন; সাহায্যের জন্য আমার এই কান্নায় তুমি কান দাও; আমার চোখের জল দেখে তুমি চুপ করে থেকো না; কারণ আমার সমস্ত পূর্বপুরুষেরা যেমন ছিলেন তেমনি আমিও পৃথিবীতে তোমার সামনে পরদেশে বাসকারীর মত আছি। আমার উপর থেকে তোমার কড়া নজর সরিয়ে নাও, যেন চলে যাওয়ার আগে, শেষ হয়ে যাওয়ার আগে, আবার আমি খুশী হতে পারি।” আমি ধৈর্য ধরে সদাপ্রভুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তিনি আমার কথায় কান দিলেন, আমার কান্না শুনলেন। তিনি আমাকে তুলে আনলেন কাত্‌রানিতে ভরা গর্ত থেকে, সেই পাঁকে ভরা গর্ত থেকে। তিনি আমাকে পাথরের উপরে দাঁড় করালেন আর শক্ত মাটির উপর হাঁটতে দিলেন। তিনি আমার মুখে দিলেন নতুন গান, আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা-গান। অনেকের চোখেই তা পড়বে আর তাদের মনে ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগবে; তারা সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করবে। ধন্য সেই লোক, যে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে, যে তাদের দিকে ফেরে না যারা অহংকারী আর মিথ্যার মধ্যে থাকে। হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, অসংখ্য তোমার আশ্চর্য কাজ! কেমন পরিকল্পনা করেছ আমাদের জন্য! আমি তা ঘোষণা করতে গেলে, বলতে গেলে, কখনও শেষ হবে না। কে আছে তোমার মত? পশু ও অন্যান্য উৎসর্গ তুমি চাও না, পোড়ানো ও পাপ-উৎসর্গেও তোমার দরকার নেই; কিন্তু তোমার কথা শোনার কান তুমি আমাকে দিয়েছ। সেজন্য আমি বলেছিলাম, “এই যে আমি এসেছি; শাস্ত্রে আমার আসার বিষয় লেখা আছে। হে আমার ঈশ্বর, তোমার ইচ্ছামত চলাই আমার আনন্দ; তোমার সব নির্দেশ আমার অন্তরে আছে।” হে সদাপ্রভু, মহাসভার মধ্যে তোমার ন্যায় কাজের বিষয় আমি প্রচার করি; তুমি তো জান, আমি মুখ বন্ধ করে থাকি না। তোমার ন্যায় কাজের কথা আমার অন্তরে আমি লুকিয়ে রাখি না; আমি তোমার বিশ্বস্ততা ও উদ্ধার-কাজের কথা বলে থাকি; তোমার অটল ভালবাসা ও তোমার বিশ্বস্ততার কথা মহাসভার কাছে আমি গোপন করি না। হে সদাপ্রভু, আমার প্রতি তোমার মমতা দেখাতে তুমি অস্বীকার কোরো না; তোমার অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততা যেন সব সময় আমাকে রক্ষা করে; কারণ অসংখ্য বিপদ আমাকে ঘিরে ধরেছে; পাপ আমার পিছনে তাড়া করে আমার উপরে এসে পড়েছে। আমি দেখতে পাচ্ছি না; সংখ্যায় সেগুলো আমার মাথার চুলের চেয়েও বেশী; সাহস বলতে আমার আর কিছু নেই। হে সদাপ্রভু, দয়া করে আমাকে বাঁচাও; হে সদাপ্রভু, আমাকে সাহায্য করতে শীঘ্র এস। যারা আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টায় আছে তারা সবাই লজ্জিত ও অপমানিত হোক; যারা আমার সর্বনাশ দেখতে চায় তারা মাথা নীচু করে ফিরে যাক। যারা আমাকে দেখে বলে, “বেশ হয়েছে!” তারা লজ্জা পেয়ে ফিরে যাক। কিন্তু যারা তোমার ইচ্ছামত চলে তারা তোমাকে নিয়েই আনন্দিত ও খুশী হোক; যারা তোমার করা উদ্ধারের কাজ ভালবাসে তারা সব সময়েই বলুক, “সদাপ্রভুর গৌরব হোক!” আমি দুঃখী ও অভাবী, কিন্তু আমার বিষয়ে প্রভুই চিন্তা করেন। আমার ঈশ্বর, তুমি দেরি কোরো না; তুমিই তো আমার সাহায্যকারী ও উদ্ধারকর্তা। ধন্য সেই লোক, যার মনে অসহায়দের জন্য চিন্তা রয়েছে; দুর্দিনে সদাপ্রভু তাকে উদ্ধার করবেন। সদাপ্রভু তাকে রক্ষা করবেন ও বাঁচিয়ে রাখবেন; দেশে সে সুখী হবে। তার শত্রুদের হাতে তিনি তাকে তুলে দেবেন না। সে অসুস্থ হয়ে যখন বিছানায় পড়বে তখন সদাপ্রভু তাকে সান্ত্বনা দেবেন; রোগীর বিছানা থেকে তিনি তাকে তুলে আনবেন। আমি বললাম, “হে সদাপ্রভু, আমি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি; আমাকে দয়া কর, আমাকে সুস্থ কর।” আমার শত্রুরা আমার অমংগল চেয়ে বলে, “ও কখন মরবে? কখন ওর নাম মুছে যাবে?” তাদের কেউ আমাকে দেখতে আসলে আমার সংগে ভণ্ডামির কথা বলে; আমার বিরুদ্ধে তারা নিন্দার কথা জোগাড় করে আর বাইরে গিয়ে তা বলে বেড়ায়। যারা আমাকে ঘৃণা করে তারা আমার বিরুদ্ধে কানাকানি করে আর আমার অনিষ্টের চিন্তা করে। তারা বলে, “ওর উপর ভয়ানক খারাপ কিছু চেপে বসেছে, যেখানে ও শুয়ে আছে সেখান থেকে আর উঠবে না।” এমন কি, যে আমার প্রাণের বন্ধু, যার উপর আমার এত বিশ্বাস, যে আমার সংগেই খাওয়া-দাওয়া করে, সে-ও আমার বিরুদ্ধে পা উঠিয়েছে। কিন্তু তুমি, হে সদাপ্রভু, আমার উপর দয়া কর; আমাকে তোলো, যাতে আমি তাদের উপর শোধ নিতে পারি। আমি জানি তুমি আমার উপর সন্তুষ্ট, কারণ শত্রু আমার বিরুদ্ধে জয়ের হাঁক আর দেয় না। আমার সততার জন্য তুমি আমাকে ধরে রেখেছ; তুমি চিরকালের জন্য আমাকে তোমার সামনে স্থাপন করেছ। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক। আমেন, আমেন। হরিণ যেমন আকুলভাবে জলের ধারা কামনা করে, তেমনি করে হে ঈশ্বর, আমার প্রাণ তোমার জন্য আকুল হয়ে আছে। ঈশ্বরের জন্য, জীবন্ত ঈশ্বরের জন্য আমার প্রাণে পিপাসা জেগেছে; কখন আমি গিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারব? আমার চোখের জলই আমার দিনরাতের খোরাক হয়েছে; আর এদিকে লোকে আমাকে কেবলই বলছে, “কোথায় গেল তোমার ঈশ্বর?” কান্নায় আমি যখন নিজেকে উজাড় করি, তখন আমার মনে পড়ে কেমন করে অসংখ্য পর্ব পালনকারীদের নিয়ে আমি আনন্দ ও ধন্যবাদের চিৎকার দিতে দিতে মিছিল করে ঈশ্বরের ঘরে যেতাম। হে আমার প্রাণ, কেন তুমি নিরাশ হয়ে পড়েছ? কেন এত চঞ্চল হয়ে উঠেছ? ঈশ্বরের উপরে আশা রাখ, কারণ তিনিই আমাকে উদ্ধার করেন; সেজন্য আমি আবার তাঁর গৌরব করব। হে আমার ঈশ্বর, আমার প্রাণ নিরাশ হয়ে পড়েছে; তাই তো আমি যর্দন নদীর উৎসমুখে দাঁড়িয়ে, হর্মোণ পাহাড়ের চূড়ায় আর মিৎসিয়র পাহাড়ের গায়ে দাঁড়িয়ে তোমার কথা ভাবছি। সেখানে তোমার ঝরণার আওয়াজ জলের গর্জনকে ডাক দিচ্ছে; আর তোমার ভেংগে-পড়া ধেয়ে-আসা ঢেউয়ের ধারা আমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। দিনে সদাপ্রভু তাঁর অটল ভালবাসা আমার উপর ঢেলে দেন; আর রাতে আমার জীবনের ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা ও তাঁর গৌরব-গান আমার সাথী হয়। আমার ঈশ্বরের কাছে, আমার আশ্রয়-পাহাড়ের কাছে, আমি এই কথা বলব, “কেন তুমি আমাকে ভুলে গেছ? কেন আমাকে শত্রুর অত্যাচারে মনে দুঃখ নিয়ে বেড়াতে হবে?” আমার শত্রুরা যখন আমাকে ঠাট্টা করে কেবলই বলতে থাকে, “কোথায় গেল তোমার ঈশ্বর?” তখন আমার অবস্থা এমন হয় যেন হাড়গুলো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। হে আমার প্রাণ, কেন তুমি নিরাশ হয়ে পড়েছ? কেন এত চঞ্চল হয়ে উঠেছ? ঈশ্বরের উপরে আশা রাখ, কারণ আমি আবার তাঁর গৌরব করব; তিনি আমার উদ্ধারকর্তা ও আমার ঈশ্বর। হে ঈশ্বর, তুমি উচিত বিচার কর, আর এই ভক্তিহীন জাতির বিরুদ্ধে আমার পক্ষ হয়ে কথা বল; ঠগ ও দুষ্ট লোকের হাত থেকে তুমি আমাকে বাঁচাও। তুমিই আমার আশ্রয়-দুর্গ ঈশ্বর; কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ? কেন আমাকে শত্রুর অত্যাচারে মনে দুঃখ নিয়ে বেড়াতে হবে? তোমার আলো ও তোমার সত্য আমাকে দাও; তারাই আমাকে পথ দেখাক। তারাই আমাকে নিয়ে যাক তোমার সেই পবিত্র পাহাড়ে যেখানে তুমি বাস কর, যেন আমি ঈশ্বরের বেদীর কাছে যেতে পারি। তিনিই আমার সুখ ও আনন্দ। হে ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, আমি বীণা বাজিয়ে তোমার গৌরব করব। হে আমার প্রাণ, কেন তুমি নিরাশ হয়ে পড়ছ? কেন এত চঞ্চল হয়ে উঠেছ? ঈশ্বরের উপরে আশা রাখ, কারণ আমি আবার তাঁর গৌরব করব; তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা ও আমার ঈশ্বর। হে ঈশ্বর, অনেক অনেক দিন আগে আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে তুমি যা করেছ সেই সম্বন্ধে তাঁদের কথা আমরা নিজের কানে শুনেছি। তুমি নিজের হাতে অন্যান্য জাতিদের তাড়িয়ে দিয়ে সেই জায়গায় আমাদের পূর্বপুরুষদের বসিয়েছিলে; তুমি সেই সব লোকদের উপর সর্বনাশ এনেছিলে আর আমাদের পূর্বপুরুষদের বেড়ে উঠতে দিয়েছিলে। তাঁরা নিজেদের তলোয়ার দিয়ে এই দেশ দখল করেন নি, নিজেদের শক্তিতে জয়লাভও করেন নি; তোমার শক্তি, হ্যাঁ, তোমার মহাশক্তি, আর তোমার উপস্থিতির মহিমাই তা করেছিল, কারণ তাঁদের উপর তোমার দয়া ছিল। হে ঈশ্বর, তুমিই আমার রাজা; যাকোবের জয়ের ব্যবস্থা তুমিই কর। আমাদের শত্রুদের আমরা তোমারই শক্তিতে পিছু হটাব; যারা আমাদের বিরুদ্ধে উঠবে তোমার জোরেই তাদের পায়ে মাড়াব। আমার ধনুকের উপর আমি নির্ভর করি না, আমার তলোয়ার আমাকে জয় দান করতে পারে না; কিন্তু তুমিই শত্রুদের উপর আমাদের জয়ী করেছ, আমাদের বিপক্ষদের লজ্জায় ফেলেছ। ঈশ্বরকে নিয়েই আমরা সব সময় গর্ব করে এসেছি; চিরকাল আমরা তোমার গৌরব করব। [সেলা] কিন্তু এখন তুমি আমাদের ত্যাগ করেছ আর লজ্জায় ফেলেছ; যুদ্ধের সময় আমাদের সৈন্যদলের সংগে তুমি আর থাক না। শত্রুদের সামনে থেকে তুমি আমাদের পিছিয়ে আসতে বাধ্য করেছ; আমাদের বিপক্ষেরা আমাদের লুট করেছে। জবাই করার ভেড়ার মত করে তাদের হাতে তুমি আমাদের তুলে দিয়েছ আর বিভিন্ন জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছ। প্রায় বিনামূল্যেই তোমার লোকদের তুমি বিক্রি করে দিয়েছ; এতে তোমার কি লাভ হয়েছে? প্রতিবেশী জাতিদের কাছে তুমি আমাদের নিন্দার পাত্র করে তুলেছ; চারপাশের লোকদের কাছে হাসি-তামাশার খোরাক করেছ। অন্যান্য জাতির কাছে তুমি আমাদের নামকে টিট্‌কারির ভাষা করেছ; লোকেরা আমাদের দেখে মাথা নাড়ে। এ সবই আমাদের উপর ঘটেছে, তবুও যে আমরা তোমাকে ভুলে গেছি তা নয়; তোমার ব্যবস্থার প্রতি যে একেবারে অবিশ্বস্ত হয়েছি তা-ও নয়। তোমার দিক থেকে আমাদের অন্তর ফিরে যায় নি; তোমার পথ থেকে আমাদের পা সরে যায় নি। কিন্তু তবুও তুমি এমন এক জায়গায় আমাদের চুরমার করেছ যেখানে শিয়ালের আনাগোনা; ঘন অন্ধকারে আমাদের ঢেকে রেখেছ। আমাদের ঈশ্বরকে যদি আমরা ভুলে গিয়ে থাকি, যদি হাত বাড়িয়ে থাকি কোন দেবতার কাছে, তবে ঈশ্বর কি তা জানতেন না? তিনি তো আমাদের অন্তরের গোপন সব কিছুই জানেন। কিন্তু তবুও তোমার জন্যই সব সময় আমাদের কাউকে না কাউকে মেরে ফেলা হচ্ছে, জবাই করার ভেড়ার মতই লোকে আমাদের মনে করে। হে প্রভু, জাগো, কেন তুমি ঘুমাচ্ছ? ওঠো, চিরকালের জন্য আমাদের ত্যাগ কোরো না। কেন তোমার মুখ তুমি ফিরিয়ে রেখেছ? আমাদের দুঃখ ও অত্যাচারের কথা কেন ভুলে গেছ? আমরা ধুলায় লুটিয়ে পড়েছি; আমাদের দেহ মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছে। তুমি এস, আমাদের সাহায্য কর; তোমার অটল ভালবাসা অনুসারে তুমি আমাদের মুক্ত কর। আমার অন্তর সুন্দর ভাবধারায় ভরে উঠছে; রাজার উদ্দেশে আমার কবিতা বেরিয়ে আসছে; আমার জিভ্‌ পাকা লেখকের লেখনী হয়ে উঠছে। মানুষের মধ্যে তুমি পরম সুন্দর; তোমার দু’টি ঠোঁট কথার মধুতে ভেজা; ঈশ্বরের চিরকালের আশীর্বাদ তোমার উপর ঝরে পড়ছে। হে বীর, তোমার কোমরে তলোয়ার বেঁধে নাও; গৌরব ও মহিমার সাজে তুমি সেজে নাও। সত্য, নম্রতা আর ন্যায়ের পক্ষে তুমি নিজের মহিমায় বিজয়ীর মত যাত্রা কর; তোমার ডান হাত ভয়-জাগানো মহান কাজ করুক। রাজার শত্রুদের বুকে তোমার ধারালো তীর বিঁধে যায়; তোমার শত্রুজাতি তোমার পায়ের তলায় পড়ে। হে ঈশ্বর, তোমার সিংহাসন চিরস্থায়ী; তোমার শাসন ন্যায়ের শাসন। তুমি ন্যায় ভালবাস আর অন্যায়কে ঘৃণা কর; সেজন্য ঈশ্বর, তোমার ঈশ্বর, তোমার সংগীদের চেয়ে অনেক বেশী আনন্দ তেলের মত করে তোমার উপর ঢেলে দিয়েছেন। গন্ধরস, অগুরু আর দারচিনির গন্ধে তোমার রাজপোশাক সুগন্ধময় হয়েছে; হাতীর দাঁত বসানো রাজবাড়ীতে তারযন্ত্রের যে বাজনা বাজে তা তোমাকে আনন্দ দেয়। তোমার সম্মানিত মহিলাদের মধ্যে রাজকন্যারা আছেন, আর রাজ-কনে ওফীর দেশের সোনা দিয়ে সেজে তোমার ডান দিকে রয়েছেন। হে কন্যা, শোন, মন দাও, কান খাড়া কর। তোমার লোকদের তুমি ভুলে যাও, ভুলে যাও তোমার বাবার বাড়ীর কথা। তাহলে রাজা তোমার সৌন্দর্যে ধরা দেবেন; তিনিই তোমার মনিব, তাঁকে নত হয়ে প্রণাম কর। সোর শহরের লোকেরা উপহার নিয়ে আসবে; খুব ধনী লোকেরা তোমার দয়া চাইবে। রাজবাড়ীতে রাজ-কনেকে চমৎকার দেখাবে; তাঁর পোশাকে সোনার সুতা বোনা রয়েছে। নক্‌শা তোলা পোশাকে তাঁকে রাজার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে; তাঁর পিছে থাকা কুমারী সংগিনীদেরও তোমার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। আনন্দ ও উৎসব করতে করতে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে; তাঁরা রাজবাড়ীতে গিয়ে ঢুকবেন। তোমার পূর্বপুরুষদের জায়গা তোমার ছেলেরা নেবে; মানুষের মধ্যে তুমি তাদের শাসনকর্তা করবে। বংশের পর বংশে আমি তোমার নাম বাঁচিয়ে রাখব; সেইজন্য বিভিন্ন জাতি যুগের পর যুগ তোমার গৌরব করবে। ঈশ্বরই আমাদের আশ্রয়স্থান ও শক্তি; বিপদের সময় সাহায্য করতে তিনি প্রস্তুত থাকেন। একটা নদী আছে যার নানা স্রোতের ধারা ঈশ্বরের শহরকে আনন্দময় করে তোলে, আনন্দময় করে তোলে সেই পবিত্র জায়গা যেখানে মহান ঈশ্বর থাকেন। ঈশ্বর সেই শহরের মধ্যে থাকেন, সেজন্য তা স্থির থাকবে; দিনের শুরুতেই ঈশ্বর তাকে সাহায্য করবেন। জাতিরা সব হৈচৈ করে, রাজ্যগুলো ভেংগে পড়ে; তিনি গর্জন করে ওঠেন, পৃথিবী গলে যায়। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আমাদের সংগে আছেন; যাকোবের ঈশ্বরই আমাদের দুর্গ। [সেলা] এস, সদাপ্রভুর বিভিন্ন কাজ দেখ- তিনি পৃথিবীতে ধ্বংস এনেছেন, তিনি পৃথিবীর সব যুদ্ধ বন্ধ করেন, তিনি ধনুক ভাংগেন, তিনি বর্শা টুকরা টুকরা করেন, তিনি রথ আগুনে পোড়ান। সদাপ্রভু বলেন, “তোমরা থাম; তোমরা এ কথা জেনো যে, আমিই ঈশ্বর; সব জাতি আমাকেই গৌরব দান করবে, গৌরব দান করবে পৃথিবী।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আমাদের সংগে আছেন; যাকোবের ঈশ্বরই আমাদের দুর্গ। [সেলা] হে সমস্ত জাতি, তোমরা হাততালি দাও; ঈশ্বরের উদ্দেশে আনন্দধ্বনি কর। মহান সদাপ্রভু ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগান; গোটা পৃথিবীর উপরে তিনিই মহান রাজা। অন্যান্য জাতিকে তিনি আমাদের অধীন করেন, আমাদের পায়ের তলায় তাদের রাখেন। তিনিই আমাদের সম্পত্তি বাছাই করে রেখেছেন; তা তাঁর ভালবাসার পাত্র যাকোবের গর্বের বিষয়। [সেলা] ঈশ্বর আনন্দধ্বনির মধ্যে উপরে উঠে গেছেন, সদাপ্রভু তূরীর ধ্বনির মধ্যে উঠে গেছেন। ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসার গান গাও, প্রশংসার গান গাও; আমাদের রাজার উদ্দেশে প্রশংসার গান গাও, প্রশংসার গান গাও। ঈশ্বরই সারা দুনিয়ার রাজা; তাঁর উদ্দেশে এক বিশেষ রকমের প্রশংসা-গান কর। সব জাতির উপরে ঈশ্বরই রাজত্ব করেন; তাঁর পবিত্র সিংহাসনে তিনি বসে আছেন। জাতিগুলোর মধ্যে যারা উঁচু পদের লোক, তারা এক জায়গায় জড়ো হয়, অব্রাহামের ঈশ্বরের লোক হিসাবেই জড়ো হয়। পৃথিবীর সব শাসনকর্তারা ঈশ্বরের অধীন, তিনিই সবচেয়ে মহান। আমাদের ঈশ্বরের শহরে, তাঁর পবিত্র পাহাড়ে, সদাপ্রভু মহান ও সবচেয়ে বেশী প্রশংসার যোগ্য। ঈশ্বরের বাসস্থান ঐ সিয়োন পাহাড়, উঁচুতে স্থাপিত মহান রাজার ঐ শহর দেখতে সুন্দর; সারা দুনিয়াকে তা আনন্দ দেয়। সেই শহরের রাজবাড়ীর দালান-কোঠায় ঈশ্বর নিজেকে দুর্গ হিসাবে প্রকাশ করেছেন। রাজারা তাদের সৈন্যদল জড়ো করে একসংগে এগিয়ে গেল; তারা সেই শহরটাকে দেখে আঁত্‌কে উঠল আর ভীষণ ভয়ে পালিয়ে গেল। ভয়ে সেখানে তাদের কাঁপুনি ধরে গিয়েছিল আর প্রসবকারিণী স্ত্রীলোকের মত যন্ত্রণা হয়েছিল। যেমন করে জোরালো পূবের বাতাস দিয়ে তিনি বড় বড় তর্শীশ-জাহাজ ভেংগে ফেললেন, তেমনি করেই তিনি তাদের ধ্বংস করলেন। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর শহরের মধ্যে থেকে, আমাদের ঈশ্বরের শহরের মধ্যে থেকে আমরা যা শুনেছি চোখেও তা-ই দেখলাম; দেখলাম তিনি শহরটা চিরকালের জন্য স্থাপন করবেন। হে ঈশ্বর, তোমার ঘরের মধ্যে তোমার অটল ভালবাসার কথা আমরা ধ্যান করেছি। হে ঈশ্বর, তোমার বিষয় যেমন সব মানুষ জানে তেমনি তোমার প্রশংসা পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত আছে; তোমার ডান হাত ন্যায় কাজ করার শক্তিতে পরিপূর্ণ। তোমার ন্যায়বিচার দেখে সিয়োন পাহাড় খুশী হোক আর যিহূদার গ্রামগুলো আনন্দ করুক। হে যিহূদার লোকেরা, তোমরা সিয়োনের চারপাশ দিয়ে ঘুরে এস, তার দুর্গগুলো গুণে দেখ; তার চারপাশের দেয়ালগুলো লক্ষ্য কর, তার রাজবাড়ীর দালান-কোঠা ঘুরে দেখ, যেন সেই সব কথা তোমাদের সন্তানদের কাছে বলে যেতে পার। এই ঈশ্বরই আমাদের চিরকালের ঈশ্বর; তিনি আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত পথ দেখিয়ে যাবেন। হে সমস্ত জাতি, তোমরা এই কথা শোন; যারা এই জগতে বাস করছ তোমরা সবাই কান দাও; উঁচু-নীচু, ধনী-গরীব, তোমরা সবাই শোন। আমার মুখ থেকে জ্ঞানের কথা বেরিয়ে আসবে; আমার অন্তরের গভীর চিন্তা বুঝবার ক্ষমতা দেবে। আমি শিক্ষা-ভরা উদাহরণে মন দেব; বীণার সংগে গান গেয়ে তার গভীর বিষয় ব্যাখ্যা করব। জ্ঞানী লোকও যে মারা যায় তা কারও অজানা নেই; যাদের বিবেচনা নেই আর যাদের অন্তর অসাড় তারা একইভাবে ধ্বংস হয়; তাদের ধন তারা অন্যদের জন্য রেখে যায়। তারা ভাবে তাদের ঘর-বাড়ী চিরস্থায়ী, তাদের বাসস্থান বংশের পর বংশ ধরেই থাকবে, তাই নিজেদের নামেই তারা সম্পত্তির নাম দেয়। কিন্তু মানুষ ধনী-মানী হয়েও চিরস্থায়ী নয়; সে পশুদের মতই ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা নিজের উপর নির্ভর করে, আর তাদের পরে যারা তাদের কথায় সায় দিয়ে চলে, তাদের দশাও তা-ই হবে। [সেলা] ভেড়ার পাল্‌কে যেমন নির্দিষ্ট করা খোঁয়াড়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তেমনি নির্দিষ্ট করা মৃতস্থানে সেই লোকদেরও নিয়ে যাওয়া হবে; সেখানে মৃত্যুই তাদের রাখাল হবে। নতুন দিনের শুরুতে ঈশ্বরভক্ত লোকেরা তাদের উপর জয়ী হবে; মৃতস্থান তাদের দেহ খেয়ে ফেলবে; তাদের বাসস্থান বলতে আর কিছু থাকবে না। কিন্তু মৃতস্থানের হাত থেকে ঈশ্বরই মুক্তির মূল্য দিয়ে আমাকে মুক্ত করে নেবেন; তিনি আমাকে তাঁর নিজের কাছে নিশ্চয়ই নেবেন। [সেলা] অন্যে ধনী হয়েছে দেখে ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না তার পরিবারের ধন-সম্পদ বেড়ে গেলে; কারণ সে মরণকালে কিছুই সংগে নিয়ে যাবে না, তার ধন-সম্পদ তার সংগে মৃতস্থানে যাবে না। যদিও জীবনকালে সে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করত - অবশ্য কারও উন্নতি হলে লোকেও তাকে ভাগ্যবান বলে- তবুও তার পূর্বপুরুষদের কাছে তাকে যেতেই হবে যারা আর কখনও দিনের আলো দেখতে পাবে না। মানুষ ধনী-মানী হয়েও ঈশ্বরকে বুঝতে পারে না; সে পশুদের মতই ধ্বংস হয়ে যাবে। শক্তিশালী ঈশ্বর, সদাপ্রভু ঈশ্বর, কথা বলেছেন; পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত পৃথিবীর সবাইকে তিনি ডাক দিয়েছেন। সিয়োন থেকে, পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের জায়গা থেকে, ঈশ্বরের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের ঈশ্বর আসছেন, তিনি মুখ খুলবেন; আগুন তাঁর আগে আগে সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে চলবে; আর তাঁর চারপাশে ভীষণ ঝড় বইবে। তাঁর নিজের লোকদের বিচারে অংশ নেবার জন্য উপরের আকাশকে তিনি ডাক দিচ্ছেন, আর ডাক দিচ্ছেন পৃথিবীকে; তিনি বলছেন, “আমার সেই ভক্তদের আমার কাছে একত্র কর, যারা পশু-উৎসর্গের মধ্য দিয়ে আমার স্থাপন করা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।” আকাশ তাঁর ন্যায়বিচারের কথা ঘোষণা করছে, কারণ ঈশ্বর নিজেই বিচারক। “হে আমার লোকেরা, শোন, আমি কথা বলছি; হে ইস্রায়েল, আমি তোমার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছি; আমি ঈশ্বর, তোমারই ঈশ্বর। তোমার পশু-উৎসর্গ নিয়ে আমি তোমাকে দোষী করছি না; তোমার পোড়ানো-উৎসর্গ সব সময়ই তো আমার সামনে রয়েছে। তোমার গোয়ালের কোন ষাঁড়ের আমার দরকার নেই, তোমার খোঁয়াড়ের ছাগলও নয়; কারণ বনের সব প্রাণীই আমার, অসংখ্য পাহাড়ের উপরে ঘুরে বেড়ানো পশুও আমার। এমন কি, পাহাড়ের সব পাখীও আমার জানা আছে, মাঠের সব প্রাণীও আমার। আমার খিদে পেলেও আমি তোমাকে বলতাম না, কারণ পৃথিবী আমার আর তার মধ্যে যা কিছু আছে সবই আমার। তুমি কি মনে কর ষাঁড়ের মাংস আমার খাবার? ছাগলের রক্ত কি আমি খাই? ঈশ্বরের কাছে তোমার ধন্যবাদই তোমার উৎসর্গ হোক; সেই মহানের কাছেই তোমার সব মানত পূরণ করতে থাক। তোমার বিপদের দিনে তুমি আমাকে ডেকো; আমি তোমাকে উদ্ধার করব আর তুমি আমাকে সম্মান করবে।” কিন্তু ঈশ্বর দুষ্ট লোকদের এই কথা বলেন, “আমার আইন-কানুনের কথা বলার কিম্বা আমার ব্যবস্থার কথা মুখে আনার তোমার কি অধিকার আছে? তুমি তো আমার শাসন ঘৃণা কর আর আমার কথার ধার ধারো না। চোরকে দেখলে তুমি তাকে সায় দাও, ব্যভিচারীদের সংগে মেলামেশা কর। মন্দ কথায় তোমার মুখ খোলা, তোমার জিভ্‌ ছলনার বশে থেকে কথা বলে। তুমি বসে বসে তোমার নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে থাক আর তার নিন্দা কর। এ সবই তুমি করেছ, কিন্তু আমি মুখ খুলি নি; তুমি ভেবেছ আমি তোমারই মত একজন, কিন্তু আমি তোমার দোষ দেখিয়ে দেব আর তোমার সব কিছু তোমার চোখের সামনে পর পর তুলে ধরব। “তোমরা যারা ঈশ্বরকে ভুলে গেছ কথাটা একবার ভেবে দেখো; তা না হলে আমি তোমাদের ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলব, তোমাদের বাঁচাবার কেউ থাকবে না। যার জীবনে ধন্যবাদই হল তার উৎসর্গ সে-ই আমাকে সম্মান করে; যে আমার পথে চলে তাকে আমি উদ্ধার করব।” হে ঈশ্বর, তোমার অটল ভালবাসার জন্য আমার প্রতি দয়া কর; তোমার অসীম করুণার জন্য তোমার প্রতি আমার সব বিদ্রোহ ক্ষমা কর। আমার সব অন্যায় তুমি ধুয়ে ফেল; আমার পাপ থেকে আমাকে শুচি কর। আমার সব বিদ্রোহের কথা আমার চেতনায় রয়েছে; আমার পাপ সব সময় আমার মনে রয়েছে। তোমার বিরুদ্ধে, কেবল তোমারই বিরুদ্ধে আমি পাপ করেছি আর তোমার চোখে যা খারাপ তা-ই করেছি। কাজেই তোমার রায় ঠিক, তোমার বিচার নিখুঁত। হ্যাঁ, জন্ম থেকেই আমি অন্যায়ের মধ্যে আছি; পাপের অবস্থাতেই আমি মায়ের গর্ভে ছিলাম। তুমি অন্তরের মধ্যে সত্য দেখতে চাও; তুমিই আমার অন্তরের গভীরে জ্ঞান দাও। এসোব গাছের ডাল দিয়ে তুমি আমাকে শুচি কর, তাতে আমি শুচি হব; আমাকে ধূয়ে নাও, তাতে আমি ধব্‌ধবে সাদা হব। আমাকে খুশীর আওয়াজ ও আনন্দধ্বনি শুনতে দাও; তোমার চুরমার করা আমার এই হাড়গুলো আনন্দ করুক। তুমি আমার পাপের দিকে চেয়ে দেখো না; আমার সমস্ত অন্যায় তুমি ক্ষমা কর। হে ঈশ্বর, তুমি আমার মধ্যে খাঁটি অন্তর সৃষ্টি কর; আমার মন আবার স্থির কর। তোমার সামনে থেকে আমাকে দূর করে দিয়ো না; আমার মধ্য থেকে তোমার পবিত্র আত্মাকে নিয়ে যেয়ো না। তোমার দেওয়া উদ্ধারের আনন্দ আমাকে আবার দাও; তোমার বাধ্য হওয়ার ইচ্ছুক মন দিয়ে তুমি আমাকে সবল কর। তাহলে আমি তোমার পথ সম্বন্ধে বিদ্রোহীদের শিক্ষা দিতে পারব, আর পাপীরা ঘুরে তোমার দিকে ফিরবে। হে ঈশ্বর, আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর, খুনের দায় থেকে তুমি আমাকে বাঁচাও; তাতে আমার মুখ থেকে তোমার ন্যায্যতার গান বেরিয়ে আসবে। হে প্রভু, আমার মুখ খুলে দাও, আমি তোমার প্রশংসা প্রচার করব। পশু-উৎসর্গে তো তুমি খুশী হও না, হলে আমি তা করতাম; পোড়ানো-উৎসর্গেও তুমি সন্তুষ্ট হও না। ভাংগাচোরা অন্তরই ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য উৎসর্গ; হে ঈশ্বর, নত এবং নম্র মনকে তুমি তুচ্ছ করবে না। তোমার মংগল ইচ্ছায় তুমি সিয়োনের মংগল কর; তুমি যিরূশালেমের দেয়াল তোলার কাজ চালিয়ে যাও। তাহলে যোগ্য মনোভাব নিয়ে করা উৎসর্গের অনুষ্ঠানে, পোড়ানো-উৎসর্গে আর নিঃশেষে পোড়ানো-উৎসর্গে তুমি আনন্দ পাবে, আর তোমার বেদীর উপরে লোকে ষাঁড় উৎসর্গ করবে। ওহে শক্তিশালী যোদ্ধা, কেন তুমি মন্দ বিষয় নিয়ে গর্ব করছ? ঈশ্বরের অটল ভালবাসার তো শেষ নেই। তোমার জিভ্‌ দিয়ে ধ্বংসের পরিকল্পনার কথা বেরিয়ে আসছে; হে ছলনাকারী, তোমার জিভ্‌ যেন শান দেওয়া ক্ষুর। তুমি ভালোর চেয়ে মন্দ ভালবাস, আর ভালবাস সত্যের চেয়ে মিথ্যা কথা বলা। [সেলা] ওহে ছলনাকারী জিভ্‌, যে কথা ধ্বংস আনে তুমি তা-ই পছন্দ কর। কিন্তু ঈশ্বর তোমাকে চিরদিনের জন্য ধ্বংস করবেন; তিনি তোমাকে টেনে আনবেন, তোমার তাম্বু থেকে ছিনিয়ে আনবেন, জীবিতদের দেশ থেকে তোমাকে উপ্‌ড়ে ফেলবেন। [সেলা] এ সব দেখে ঈশ্বরভক্তদের প্রাণে ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগবে; তারা তোমাকে ঠাট্টা করে বলবে, “ঐ দেখ, ঐ লোকটি ঈশ্বরকে তার আশ্রয়-দুর্গ করে নি; তার প্রচুর ধন-সম্পদের উপর সে নির্ভর করেছে আর মন্দ কামনা-বাসনার শক্তি দিয়ে নিজেকে শক্তিশালী করেছে।” কিন্তু আমি ঈশ্বরের ঘরে বাড়তে থাকা জলপাই গাছের মত; আমি সব সময় ঈশ্বরের অটল ভালবাসার উপর নির্ভর করে থাকি। তুমি যা করেছ তার জন্য চিরকাল আমি তোমার গৌরব করব; তুমি মংগলময় বলে তোমার ভক্তদের সামনে আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব। যাদের বিবেক অসাড় তারা ভাবে ঈশ্বর বলে কেউ নেই। তাদের স্বভাব নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের কাজ জঘন্য; ভাল কাজ করে এমন কেউ নেই। ঈশ্বর স্বর্গ থেকে নীচে মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখলেন; দেখতে চাইলেন কেউ সত্যিকারের জ্ঞান নিয়ে চলে কিনা, কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলে কিনা। তিনি দেখলেন সবাই ঠিক পথ থেকে সরে গেছে, সবাই একসংগে খারাপ হয়ে গেছে; ভাল কাজ করে এমন কেউ নেই, একজনও নেই। যারা মন্দ কাজ করে বেড়ায় তারা কি এতই অবুঝ? লোকে যেমন করে খাবার খায় তেমনি করেই তারা আমার লোকদের খেয়ে ফেলে; তারা ঈশ্বরকে ডাকে না। তোমার আক্রমণকারীদের হাড়গোড় তিনি ছড়িয়ে রেখেছেন; আগে তাদের ভয় ছিল না, তবুও তারা এখন ভীষণ ভয় পেল; ঈশ্বর তাদের বাতিল করেছেন, তাই তুমি তাদের লজ্জায় ফেলেছ। ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার সিয়োনের মধ্য থেকে আসুক। ঈশ্বর যখন তাঁর লোকদের অবস্থা ফিরাবেন তখন যাকোবের বংশ আনন্দ করবে- ইস্রায়েলীয়েরা খুশী হবে। হে ঈশ্বর, তোমার ক্ষমতা দ্বারা তুমি আমাকে উদ্ধার কর; আমি যে ন্যায়পথে আছি তা তোমার শক্তির দ্বারা তুমি দেখিয়ে দাও। হে ঈশ্বর, তুমি আমার প্রার্থনা শোন, আমার মুখের কথায় কান দাও। অন্য জাতির লোকেরা আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে; অত্যাচারীরা আমার প্রাণ নেবার চেষ্টা করছে; ঈশ্বরের প্রতি এই লোকদের কোন ভক্তি নেই। [সেলা] ঈশ্বরই আমাকে সাহায্য করেন; প্রভুই আমাকে ধরে রাখেন। শত্রুরা আমার যে অমংগল করেছে তা তিনি তাদের ঘাড়েই ফিরিয়ে দেবেন; হে প্রভু, তোমার বিশ্বস্ততায় তুমি তাদের ধ্বংস করে দাও। আমি নিজের ইচ্ছায় তোমার উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করব; হে সদাপ্রভু, আমি তোমার গৌরব করব, কারণ তুমি মংগলময়। আমার সমস্ত বিপদ থেকে তিনিই আমাকে উদ্ধার করেছেন; আমি নিজের চোখেই আমার শত্রুদের পরাজয় দেখেছি। হে ঈশ্বর, আমার প্রার্থনায় কান দাও; আমার মিনতির সামনে তুমি নিজেকে লুকিয়ে রেখো না। এতে আমার অন্তর মোচড় দিয়ে উঠছে; মৃত্যুর ভয় আমাকে পেয়ে বসেছে। আমাকে ভয় আর কাঁপুনিতে ধরেছে; ভীষণ ভয়ে আমি ডুবে আছি। আমি বলেছি, “হায়, যদি পাখীর মত আমার ডানা থাকত! তবে আমি উড়ে গিয়ে বিশ্রাম পেতাম। হ্যাঁ, তাহলে আমি অনেক দূরে চলে যেতাম, আর এক নিরালা জায়গায় গিয়ে থাকতাম। [সেলা] আমার আশ্রয়-স্থানে আমি ছুটে যেতাম, ঝোড়ো বাতাস থেকে দূরে চলে যেতাম।” হে প্রভু, তুমি তাদের উপর ধ্বংস নিয়ে এস, তাদের ভাষায় গোলমাল লাগিয়ে দাও; আমি শহরে মারামারি আর ঝগড়া-বিবাদ দেখতে পাচ্ছি। তারা যেন কিসের খোঁজে দিনরাত শহরের দেয়ালের উপর ঘুরে বেড়ায়। দুষ্টতা আর অন্যায় কাজ শহরের মধ্যে চলছে। তার মধ্যে চলছে ধ্বংসের কাজ; অত্যাচার আর ছলনার কাজ শহরের চকে লেগেই আছে। যে আমাকে অপমান করছে সে যে আমার শত্রু তা নয়, তাহলে আমি সহ্য করতে পারতাম; যে আমার চেয়ে নিজেকে বড় করছে সে যে আমার বিপক্ষের লোক তা নয়, তাহলে আমি তার কাছ থেকে লুকাতাম। কিন্তু তা করেছ তুমি, আমারই সমান একজন মানুষ, আমার অন্তরের সাথী, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমাদের মধ্যে গভীর যোগাযোগ-সম্বন্ধ ছিল; ঈশ্বরের ঘরে উপাসনাকারী দলের মধ্যে আমরা একসংগে হাঁটা-চলা করতাম। আমার শত্রুদের উপর হঠাৎ মৃত্যু আসুক; তারা জীবিত অবস্থায় মৃতস্থানে নেমে যাক, কারণ তাদের ঘর-বাড়ীতে ও তাদের অন্তরে মন্দতা রয়েছে। কিন্তু আমি ঈশ্বরকে ডাকব, আর সদাপ্রভু আমাকে উদ্ধার করবেন। সন্ধ্যায়, সকালে আর দুপুরে আমি কাতর স্বরে আমার নালিশ জানাতে থাকব, আর তিনি আমার স্বর শুনবেন। যে যুদ্ধ আমার বিরুদ্ধে চলছিল তাতে আমার বিপক্ষের দল বড় ছিল, তাই তিনি আমাকে ছাড়িয়ে এনে নিরাপদে রেখেছেন। ঈশ্বর, যিনি প্রথম থেকেই সিংহাসনে আছেন তিনি শুনবেন এবং তাদের শাস্তি দেবেন। [সেলা] তাদের মনে কোন পরিবর্তন নেই, ঈশ্বরের প্রতি ভয়ও নেই। আমার সেই বন্ধুর সংগে যারা শান্তিতে ছিল তাদের উপরেও সেই বন্ধু হাত উঠিয়েছে আর তার চুক্তি ভেংগেছে। তার মুখের কথা মাখনের চেয়ে মোলায়েম, কিন্তু তার অন্তরে রয়েছে যুদ্ধ; তার কথাগুলো দেহে মাখানো তেলের চেয়েও আরামের, কিন্তু সেগুলো যেন খাপ থেকে টেনে বের করা তলোয়ার। তোমার সব ভার তুমি সদাপ্রভুর উপর ফেলে দাও, তিনিই তোমার ব্যবস্থা করবেন; তাঁর ভক্তদের তিনি কখনও টলতে দেবেন না। কিন্তু হে ঈশ্বর, তুমি খুনী ও ছলনাকারীদের মৃতস্থানে ফেলে দেবে, আর তা করবে তাদের আয়ুর অর্ধেক শেষ হবার আগেই; কিন্তু আমি তোমার উপর নির্ভর করব। হে ঈশ্বর, আমার প্রতি দয়া কর, কারণ লোকে আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে; সব সময় যুদ্ধ করে তারা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমার শত্রুরা সব সময় আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে; অনেকে অহংকারের বশে আমার সংগে যুদ্ধ করছে। অন্তরে ভয় জাগলে আমি তোমার উপর নির্ভর করব। যাঁর বাক্যের গুণ আমি গাই, সেই ঈশ্বরের উপরে, হ্যাঁ, সেই ঈশ্বরের উপরেই আমি নির্ভর করি; আমি ভয় করব না, মানুষ আমার কি করতে পারে? তারা সব সময় আমার কথার খারাপ অর্থ করে আর আমার ক্ষতি করার মতলবে থাকে। তারা একসংগে জড়ো হয়, আমার জন্য ওৎ পেতে থাকে; আমাকে মেরে ফেলার সুযোগের জন্য তারা আমার চলাফেরা লক্ষ্য করে। অন্যায়ের জন্য কি তারা শাস্তি পাবে না? হে ঈশ্বর, তুমি ক্রোধে জাতিদের ধ্বংস কর। আমি যে কতবার পালিয়ে বেড়িয়েছি সেই কথা তো তুমি জান; আমার চোখের জল দিয়ে তোমার পাত্র তুমি ভরে নাও। এ সবই তো তোমার বইয়ে লেখা আছে। যেদিন আমি তোমাকে ডাকব, সেদিন আমার শত্রুরা পালিয়ে যাবে; আমি জানি ঈশ্বর আমার পক্ষে আছেন। ঈশ্বর, যাঁর বাক্যের গুণ আমি গাই, সদাপ্রভু, যাঁর বাক্যের আমি গুণগান করি, আমি তাঁর উপরেই নির্ভর করি; আমি ভয় করব না, মানুষ আমার কি করতে পারে? হে ঈশ্বর, তোমার কাছে যে মানত করেছি আমি তা পূরণ করতে বাধ্য; আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করব; কারণ মৃত্যু থেকে তুমি আমার প্রাণ রক্ষা করেছ আর পড়ে যাওয়া থেকে আমাকে বাঁচিয়েছ, যাতে জীবনের আলোতে আমি ঈশ্বরের সামনে চলাফেরা করতে পারি। আমার প্রতি দয়া কর; হে ঈশ্বর, আমার প্রতি তুমি দয়া কর, কারণ তোমার মধ্যেই আমি আশ্রয় নিয়েছি। তোমার ডানার ছায়ার আশ্রয়ে আমি থাকব যতদিন না আমার উপর থেকে এই বিপদের ঝড় সরে যায়। আমি মহান ঈশ্বরকে ডাকব; যিনি আমাকে দেওয়া তাঁর সব কথাই রক্ষা করেন আমি তাঁকেই ডাকব। স্বর্গ থেকে তাঁর সাহায্য নেমে আসবে; যারা আমাকে তাড়া করে বেড়ায় তাদের দোষের কথা বলতে তিনি ছাড়বেন না। [সেলা] ঈশ্বরের কাছ থেকে তাঁর অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততা নেমে আসবে। খিদেয় পাগল সিংহের মত লোকদের মাঝখানে আমি শুয়ে আছি; তাদের দাঁত যেন বর্শা আর তীর, আর জিভ্‌ ধারালো তলোয়ার। হে ঈশ্বর, তোমার মহিমা আকাশ ছাপিয়ে উঠুক; তোমার গৌরব সমস্ত পৃথিবীর উপরে দেখা দিক। তারা আমার চলার পথে জাল পেতেছে; অত্যাচারে আমি ভেংগে পড়েছিলাম; তারা আমার পথে গর্ত খুঁড়েছে, কিন্তু তারা নিজেরাই তাতে পড়েছে। [সেলা] হে ঈশ্বর, আমার মন স্থির আছে, টলে নি; আমি গান গাইব, গানের সুর তুলব। হে আমার অন্তর, জেগে ওঠো; বীণা ও সুরবাহার, জেগে ওঠো; আমি ভোরকে জাগিয়ে তুলব। হে প্রভু, বিভিন্ন জাতির সামনে আমি তোমার ধন্যবাদ করব, তাদের মধ্যে তোমার উদ্দেশে গান গাইব; কারণ তোমার অটল ভালবাসা যেন আকাশ ছুঁয়েছে, তোমার বিশ্বস্ততা মেঘেরও উপরে পৌঁছায়। হে ঈশ্বর, তোমার মহিমা আকাশ ছাপিয়ে উঠুক; তোমার গৌরব সমস্ত পৃথিবীর উপরে দেখা দিক। হে বিচারকেরা, আপনারা যে চুপ করে আছেন এটা কি ন্যায়বিচার হচ্ছে? ন্যায়ভাবে কি আপনারা লোকদের বিচার করছেন? না, আপনাদের মনে রয়েছে অন্যায় করার চিন্তা; বিচারের দাঁড়িপাল্লা দিয়ে পৃথিবীতে আপনারা অত্যাচার মেপে দিচ্ছেন। জন্ম থেকেই দুষ্টেরা বিপথে যায়; যারা মিথ্যা কথা বলে, জন্ম থেকেই তারা কুপথে থাকে। সাপের বিষের মতই তাদের বিষ; তারা যেন বয়রা গোখরো সাপ যে নিজেই কান বন্ধ করে রেখেছে। সেই সাপ মন্ত্র-পড়া সাপুড়েদের স্বর শোনে না, তা সে যত ওস্তাদ সাপুড়েই হোক না কেন। হে ঈশ্বর, তুমি দুষ্টদের দাঁত তাদের মুখের মধ্যেই ভেংগে ফেল; হে সদাপ্রভু, ঐ সব যুব সিংহদের ধারালো দাঁত তুমি ভেংগে ফেল। ব’য়ে যাওয়া জলের মতই তারা অদৃশ্য হয়ে যাক; তাদের ধনুকে টান দেওয়া তীরের ফলাগুলো ভেংগে পড়ুক। শামুক যেমন চলতে চলতে অদৃশ্য হয়ে যায় তেমনি তারাও অদৃশ্য হয়ে যাক; তারা যেন মায়ের গর্ভে মৃত শিশুদের মত হয় যারা আলো দেখতে পায় না। তোমাদের পাত্রে আগুনের আঁচ লাগবার আগেই শুকনা ও কাঁচা কাঁটার জ্বালানিগুলো তিনি ঝড়ে উড়িয়ে দেবেন। তাদের উপরে প্রতিশোধ নেওয়া হলে ঈশ্বরভক্তেরা খুশী হবে; তারা দুষ্টদের রক্তে পা ধোবে। তা দেখে লোকে বলবে, “ঈশ্বরভক্তের জীবনে সত্যিই পুরস্কার আছে; সত্যিই একজন ঈশ্বর আছেন যিনি দুষ্টদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সময়েই বিচার করেন।” হে ঈশ্বর, আমার শত্রুদের হাত থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার কর; আমার বিপক্ষদের কাছ থেকে তুমি আমাকে উঁচুতে তাদের নাগালের বাইরে তুলে রাখ। যারা মন্দ কাজ করে বেড়ায় তাদের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার কর; খুনীদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। তারা আমার জন্য ওৎ পেতে আছে, ভয়ংকর লোকেরা আমার উপর আক্রমণ শুরু করেছে; হে সদাপ্রভু, তা আমার কোন অন্যায় বা পাপের জন্য নয়। আমি কোন দোষ করি নি, তবুও তারা ছুটে এসে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আমার সাহায্যের জন্য তুমি উঠে এস, আমার বিপদ দেখ। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু ঈশ্বর, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি সমস্ত জাতিকে শাস্তি দেবার জন্য ওঠো; দুষ্ট বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি তুমি কোন দয়া দেখিয়ো না। [সেলা] তারা সন্ধ্যাবেলায় ফিরে আসে, কুকুরের মত চিৎকার করে, আর শহরের সব জায়গায় ঘুর ঘুর করে বেড়ায়। দেখ, তারা মুখ দিয়ে কি সব কথা বের করছে, তাদের ঠোঁট থেকে যেন তলোয়ার বের হচ্ছে; তারা বলছে, “আমাদের কথা কেউ শুনতে পাবে না।” কিন্তু হে সদাপ্রভু, তাদের দেখে তুমি হাসছ আর সেই সব জাতিকে বিদ্রূপ করছ। তারা শক্তিশালী বলে আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব, কারণ হে ঈশ্বর, তুমিই আমার দুর্গ। ঈশ্বর তাঁর অটল ভালবাসার জন্য আমার কাছে আসবেন, আমার শত্রুদের পরাজয় আমাকে দেখতে দেবেন। হে প্রভু, আমাদের ঢাল, আমার শত্রুদের তুমি মেরে ফেলো না, তাহলে আমার লোকদের এ সব মনে থাকবে না। তুমি বরং তোমার শক্তিতে তাদের এমন কর যাতে তারা এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ায়; তুমি তাদের পরাজিত কর। তাদের মুখের পাপে আর ঠোঁটের কথায় যে অভিশাপ ও মিথ্যা রয়েছে, তার দরুন তাদের অহংকারে তারা ধরা পড়ুক। তুমি ক্রোধে তাদের ধ্বংস কর, ধ্বংস কর যাতে তারা আর না থাকে; এতে পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত সবাই জানবে, ঈশ্বরই যাকোবের বংশের উপরে রাজত্ব করেন। [সেলা] তারা সন্ধ্যাবেলায় ফিরে আসে, কুকুরের মত চিৎকার করে, আর শহরের সব জায়গায় ঘুর ঘুর করে বেড়ায়। তারা খাবারের খোঁজে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়; পেট না ভরলে তারা সারা রাতই জেগে কাটায়। কিন্তু আমি তোমার শক্তির বিষয়ে গান করব, আর সকালে আনন্দে তোমার অটল ভালবাসার গান গাইব; কারণ তুমিই আমার দুর্গ, বিপদ কালের আশ্রয়-স্থান। হে ঈশ্বর, আমার শক্তি, আমি তোমার উদ্দেশে প্রশংসার গান গাইব। তুমিই আমার দুর্গ; তুমিই সেই ঈশ্বর, আমার জন্য যাঁর অটল ভালবাসা আছে। হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের অগ্রাহ্য করেছ, আমাদের চুরমার করেছ; তুমি ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছ, কিন্তু এবার তুমি আমাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আন। তুমি দেশের উপর ভূমিকম্প এনেছ, ফাটল ধরিয়েছ; তুমি তার ফাটল বন্ধ কর, কারণ দেশ টলছে। তোমার লোকদের তুমি দুর্দিন দেখিয়েছ; তুমি আমাদের এমন আংগুর-রস খাইয়েছ যার দরুন আমরা মাতালের মত হাঁটছি। যারা তোমাকে ভক্তি করে তাদের তুমি একটা পতাকা দিয়েছ, যাতে তা তুলে ধরা যায় সত্যের পক্ষে। [সেলা] তোমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে আমাদের তুমি উদ্ধার কর; আমার ডাকে সাড়া দাও যেন তুমি যাদের ভালবাস তারা উদ্ধার পায়। ঈশ্বর তাঁর পবিত্রতার নাম করে বলেছেন, “আমি আনন্দের সংগে শিখিম ভাগ করে দেব, সুক্কোতের উপত্যকার জায়গা জরীপ করে ভাগ করে দেব। গিলিয়দ আমার, মনঃশিও আমার; ইফ্রয়িম যেন আমার মাথার লোহার টুপী, আর যিহূদা আমার রাজদণ্ড। মোয়াব আমার পা ধোওয়ার পাত্র; আমি ইদোমের উপরে আমার পায়ের জুতা ফেলব; আর পলেষ্টিয়া, আমার জন্য তুমি চিৎকার করে ওঠো।” কে আমাকে ঐ শহরে নিয়ে যাবে যেখানে ঢোকা শক্ত? কে আমাকে পথ দেখিয়ে ইদোমে নিয়ে যাবে? হে ঈশ্বর, তুমি কি আমাদের বাতিল কর নি? আমাদের সৈন্যদলের সংগে তুমি তো আর যাও না। হে ঈশ্বর, শত্রুর বিরুদ্ধে তুমি আমাদের সাহায্য কর, কারণ মানুষের সাহায্যের তো কোন দাম নেই। ঈশ্বরের সাহায্যে আমরা জয়লাভ করব; আমাদের শত্রুদের তিনিই পায়ে মাড়াবেন। হে ঈশ্বর, আমার কান্না শোন; আমার প্রার্থনায় কান দাও। আমি যখনই হতাশায় ভেংগে পড়ব তখন পৃথিবীর শেষ সীমায় থাকলেও সেখান থেকে আমি তোমাকে ডাকব। আমাকে তুমি এমন কোন উঁচু আশ্রয়-পাহাড়ে নিয়ে রাখ যা আমার নাগালের বাইরে। তুমিই তো আমার আশ্রয় হয়ে আছ; শত্রুর বিরুদ্ধে তুমিই আমার শক্তিশালী দুর্গ। তোমার তাম্বুতে যেন আমি চিরকাল বাস করতে পারি; তোমার ডানার তলায় যেন আশ্রয় পাই। [সেলা] হে ঈশ্বর, আমি যে সব মানত করেছি তা তো তুমি শুনেছ; তোমাকে যারা ভক্তি করে তাদের জন্য যে অধিকার তুমি স্থির করেছ তা তুমি আমাকেও দিয়েছ। তুমি রাজার আয়ু বাড়িয়ে দেবে; তিনি কয়েক পুরুষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন। তিনি চিরকাল ঈশ্বরের সামনে বাস করবেন; তাঁকে রক্ষা করবার জন্য তোমার অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততাকে তুমি কাজে লাগাও। আমি চিরকাল তোমার প্রশংসা-গান করব, আর দিনের পর দিন আমার মানত পূরণ করব। আমার অন্তর নীরবে কেবল ঈশ্বরের অপেক্ষা করছে, কারণ তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা। কেবল তিনিই আমার উঁচু পাহাড় আর আমার উদ্ধার; তিনিই আমার দুর্গ, আমি সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হব না। আর কতদিন একজন মানুষের উপর তোমাদের এই সব আক্রমণ চলবে, যাতে হেলে-পড়া দেয়াল আর পড়ে যাচ্ছে এমন বেড়ার মত করে তোমরা সবাই তাকে শেষ করে দিতে পার? তার উঁচু পদ থেকে তাকে নীচে নামিয়ে দেওয়াই তাদের একমাত্র মতলব; মিথ্যা কথাতেই তাদের আনন্দ। মুখেই তারা আশীর্বাদ করে কিন্তু অন্তরে অভিশাপ দেয়। [সেলা] হে আমার অন্তর, তুমি নীরবে কেবল ঈশ্বরের অপেক্ষা কর, কারণ তিনিই তোমাকে আশা দান করেন। কেবল তিনিই আমার উঁচু পাহাড় আর আমার উদ্ধার; তিনিই আমার দুর্গ, আমি স্থির থাকব। আমার উদ্ধার ও মান-সম্মান ঈশ্বরের উপরেই নির্ভর করছে; ঈশ্বরই আমার শক্তি, আমার উঁচু পাহাড়, তিনিই আমার আশ্রয়স্থান। হে আমার লোকেরা, ঈশ্বরই আমাদের আশ্রয়; তোমরা সব সময় তাঁর উপরে নির্ভর কর, তাঁরই কাছে তোমাদের অন্তর ঢেলে দাও। [সেলা] সমাজের নীচের লোকেরা বাষ্পমাত্র, আর উপরের লোকেরা অসার; দাঁড়িপাল্লার ওজনে তারা সবাই মিলে বাতাসের চাইতেও হালকা। তোমরা অন্যায় সুবিধা নেওয়ার উপর নির্ভর কোরো না; জুলুম করা আয়ের উপর মিথ্যা আশা রেখো না; বেড়ে ওঠা ধন-সম্পত্তি নিয়ে মেতে থেকো না। সব শক্তি ঈশ্বরেরই হাতে- এ কথা তিনি অনেকবার বলেছেন, আর আমিও তা অনেকবার শুনেছি। হে প্রভু, তোমারই মধ্যে অটল ভালবাসা রয়েছে; তুমিই প্রত্যেককে তার কাজ অনুসারে ফল দিয়ে থাক। হে ঈশ্বর, তুমি আমারই ঈশ্বর, আমি আগ্রহের সংগে তোমাকে ডাকছি; এই শুকনা জলহীন দেশে, যার ফসল দেওয়ার শক্তি পর্যন্ত ফুরিয়ে গেছে, সেখানে তোমার জন্য আমার প্রাণ পিপাসিত, তোমার জন্য আমার দেহ ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। এই ভাব নিয়েই সেই পবিত্রস্থানে আমি তোমাকে দেখেছি, দেখেছি তোমার শক্তি ও গৌরব। তোমার অটল ভালবাসা পাওয়া বেঁচে থাকার চাইতেও ভাল; আমার মুখ তোমার গৌরব করবে। আমি সারা জীবন তোমার প্রশংসা করব; তোমার উদ্দেশে আমি হাত তুলে প্রার্থনা করব। মাংস ও মজ্জায় তৃপ্ত হওয়া লোকের মতই আমার প্রাণ তৃপ্ত; আমার মুখ মহা আনন্দে তোমার প্রশংসা-গান করবে। বিছানায় শুয়ে আমি তোমার কথা ভাবি, রাতের প্রহরে প্রহরে তোমার বিষয় ধ্যান করি; কারণ তুমিই আমার সাহায্যকারী; তোমার ডানার ছায়ায় আমি গান করি। আমার প্রাণ তোমাকে আঁকড়ে ধরেছে; তোমার ডান হাত আমাকে ধরে রেখেছে। যারা আমার জীবন শেষ করার খোঁজে থাকে তারা পৃথিবীর তলায় সবচেয়ে নীচু জায়গায় নেমে যাবে। তলোয়ারের মুখে তাদের তুলে দেওয়া হবে; তারা হবে শিয়ালের খাবার। রাজা কিন্তু ঈশ্বরকে নিয়ে আনন্দ করবেন; যারা ঈশ্বরের নামে শপথ করে তারা সবাই তাঁকে নিয়েই গর্ব করবে; কিন্তু মিথ্যাবাদীদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। হে ঈশ্বর, তুমি আমার নালিশের কথা শোন; তুমি শত্রুর ভয় থেকে আমার প্রাণ বাঁচাও। দুষ্টদের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে তুমি আমাকে বাঁচাও; যারা মন্দ কাজ করে বেড়ায় সেই লোকদের চেঁচামেচি থেকে আমাকে বাঁচাও। তারা যেন তলোয়ারের মত করে জিভে শান দিয়ে রেখেছে, তাদের তেতো কথার তীর ধনুকে লাগিয়ে রেখেছে; যাতে গোপন জায়গা থেকে নির্দোষ লোকের দিকে সেই তীর তারা ছুঁড়তে পারে; তারা হঠাৎ তা ছোঁড়ে, ভয় করে না। তাদের মন্দ পরিকল্পনা তারা পাকাপোক্ত করে নেয়, আর গোপনে ফাঁদ পাতার পরামর্শ করে; তারা বলে, “কেউ ওদিকে নজর দেবে না।” তারা অন্যায় করার মতলব এঁটে বলে, “আমরা চারদিক ভেবে-চিন্তে একটা পরিকল্পনা করেছি।” সত্যিই মানুষের মন ও অন্তরের গভীরতার নাগাল পাওয়া যায় না। কিন্তু ঈশ্বর তাদের উপর তীর ছুঁড়বেন; হঠাৎ তীর বিঁধে তারা পড়ে যাবে। তাদের জিভ্‌ দিয়ে তারা নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনবে; তাদের লক্ষ্য করে সবাই বিদ্রূপে মাথা নাড়বে। তখন সকলের মনে ভয় জাগবে; ঈশ্বর যা করেছেন তারা তা ঘোষণা করবে আর সেই কথা ভাববে। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দ করবে এবং তাঁরই মধ্যে আশ্রয় নেবে; অন্তরে যারা সৎ তারা তাঁর গৌরব করবে। হে ঈশ্বর, সিয়োনে নীরবে তোমার প্রশংসা করা হয়; আমাদের সব মানত তোমার উদ্দেশে পূরণ করা হবে। হে প্রার্থনা গ্রাহ্যকারী, তোমার কাছেই সব মানুষ আসে। আমার অন্যায় কাজে আমি তলিয়ে আছি, কিন্তু তুমিই আমাদের সব পাপ ক্ষমা করে থাক। ধন্য সেই লোক, যাকে তুমি বেছে নাও আর নিয়ে আস নিজের কাছে, যেন সে তোমারই উঠানে বাস করতে পারে। তোমার ঘরের, তোমার পবিত্র বাসস্থানের আশীর্বাদে আমরা তৃপ্ত হব। হে আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর, তোমার ন্যায্যতায় ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগানো কাজ দিয়ে তুমি আমাদের ডাকে সাড়া দেবে। পৃথিবীর সব মানুষ, এমন কি, সবচেয়ে দূরের জায়গার আর দূরের সমুদ্র পারের মানুষও তোমার উপর নির্ভর করে। তোমার শক্তিতেই সব পাহাড়-পর্বত দাঁড়িয়ে আছে; এতে প্রকাশ পায় তুমি শক্তিশালী। তুমিই সমুদ্রের গর্জন নীরব করে দাও, নীরব করে দাও তার ঢেউয়ের গর্জন আর জাতিদের গোলমাল। সব লোক, এমন কি, অনেক দূরের লোকেরাও তোমার আশ্চর্য চিহ্ন-কাজ দেখে ভয় পায়; সূর্য ওঠার দিক থেকে সূর্য ডোবার দিক পর্যন্ত তুমিই আনন্দ-গানে সব জায়গা পূর্ণ করে থাক। তুমিই পৃথিবীর মাটির উপর নজর রাখ আর তাতে জল দিয়ে থাক; তুমিই তার উর্বরতা অনেক বাড়িয়ে দাও; তোমার কাছ থেকে বৃষ্টির ধারা নেমে আসে; তুমি মানুষকে ফসল দিয়ে থাক। এইভাবে তুমি মাটি তৈরী করে থাক- চাষ-করা জমির খাঁজগুলো তুমি জল ভরে দাও আর তার দু’ধার সমান কর; ভারী বৃষ্টি দিয়ে মাটি নরম কর আর তাতে নতুন গজানো চারাকে আশীর্বাদ কর। তুমি বছরকে অনেক আশীর্বাদ দিয়ে মংগল করেছ; তোমার চলার পথে প্রচুর আশীর্বাদ ঝরে পড়ে। তা ঝরে পড়ে পশু চরাবার মাঠে মাঠে; পাহাড়গুলোর গায়ে যেন আনন্দের পোশাক রয়েছে। প্রত্যেকটা মাঠ ভেড়ার পালে ভরে আছে, আর শস্যের পোশাকে যেন উপত্যকা ঢাকা পড়েছে; সেগুলো আনন্দধ্বনি তুলছে আর গান গাইছে। পৃথিবীর মানুষেরা, তোমরা সবাই ঈশ্বরের উদ্দেশে আনন্দধ্বনি কর। তাঁর গৌরব-গান গাও; তাঁকে যোগ্য প্রশংসা দান কর। ঈশ্বরকে বল, “তোমার কাজ দেখে মনে কত ভয় ও ভক্তি জাগে। তোমার মহাশক্তির সামনে তোমার শত্রুরা নত হওয়ার ভান করবে। দুনিয়ার সব মানুষ তোমাকে তোমার যোগ্য সম্মান দেবে; তোমার উদ্দেশে তারা প্রশংসা-গান করবে; তারা তোমার প্রশংসার গান গাইবে।” [সেলা] তোমরা এসে ঈশ্বরের কাজ দেখে যাও; মানুষের জন্য তিনি যে কাজ করেছেন তা মনে ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগায়। তিনি সমুদ্রকে করেছিলেন শুকনা ভূমি; তারা পায়ে হেঁটে নদী পার হয়েছিল। এস, আমরা দেশের মধ্যে তাঁকে নিয়ে আনন্দ করি। তাঁর শক্তিতেই তিনি চিরকাল রাজত্ব করেন; তাঁর চোখ সব জাতির উপর রয়েছে। যারা ঈশ্বরের প্রতি বিদ্রোহী তারা নিজেদের বড় মনে না করুক। [সেলা] সমস্ত জাতির লোকেরা, আমাদের ঈশ্বরের গৌরব কর; তাঁর প্রশংসার ধ্বনি যেন শোনা যায়। তিনিই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন আর আমাদের পা স্থির রেখেছেন। হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের যাচাই করেছ; রূপার খাদ বের করার মত করে তুমি আমাদের পরিষ্কার করেছ। তুমিই আমাদের জালে ফেলেছ আর আমাদের পিঠে ভীষণ বোঝা চাপিয়েছ। তুমি আমাদের মাথার উপর দিয়ে যেন লোকদের ঘোড়ায় চড়ে যেতে দিয়েছ। আগুন আর জলের মধ্য দিয়ে আমাদের আসতে হয়েছে, কিন্তু তুমি আমাদের পরিপূর্ণ আশীর্বাদের মধ্যে নিয়ে এসেছ। আমি তোমার ঘরে পোড়ানো-উৎসর্গ নিয়ে আসব আর তোমার কাছে আমার সব মানত পূরণ করব। সেই সব মানতের কথা আমি মুখে বলেছি, আর বিপদের দিনে আমার মুখ তা উচ্চারণ করেছে। আমি তোমার উদ্দেশে মোটা-তাজা পশু দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করব আর তার সংগে পোড়ানো ভেড়ার সুগন্ধ উৎসর্গ করব; আমি ষাঁড় ও ছাগল উৎসর্গ করব। [সেলা] তোমরা যারা ঈশ্বরকে ভক্তি কর তোমরা সবাই এসে শোন; তিনি আমার জন্য যা করেছেন তা আমি তোমাদের বলছি। আমি নিজের মুখে তাঁকে ডেকেছিলাম; আমার মুখে তাঁর গৌরব ছিল। আমার অন্তরে যদি আমি অন্যায় পুষে রাখতাম তাহলে আমার কথা প্রভু শুনতেন না। কিন্তু ঈশ্বর যে শুনেছেন তাতে কোন ভুল নেই; তিনি আমার প্রার্থনায় কান দিয়েছেন। ঈশ্বরের গৌরব হোক! তিনি আমার প্রার্থনা অগ্রাহ্য করেন নি কিম্বা আমার প্রতি তাঁর অটল ভালবাসা বন্ধ করেন নি। হে ঈশ্বর, তুমি আমাদের দয়া কর ও আশীর্বাদ কর; তোমার দয়া আলোর মত আমাদের উপর পড়ুক; [সেলা] যেন পৃথিবীর সবাই তোমার পথ জানতে পারে এবং সমস্ত জাতি তোমার দেওয়া উদ্ধার পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারে। হে ঈশ্বর, জাতিরা তোমার গৌরব করুক; সমস্ত জাতিই তা করুক। জাতিরা খুশী হোক ও আনন্দ-গান করুক, কারণ তুমি ন্যায়ভাবে জাতিদের বিচার করবে আর এই পৃথিবীতে সব জাতিকে পরিচালনা করবে। [সেলা] হে ঈশ্বর, জাতিরা তোমার গৌরব করুক; সমস্ত জাতিই তা করুক। জমি তার ফসল দিয়েছে; ঈশ্বর, আমাদের ঈশ্বর, আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। ঈশ্বর আমাদের আশীর্বাদ করেছেন; তা দেখে পৃথিবীর সবচেয়ে দূরের দেশের লোকেরাও তাঁর ভক্ত হবে। ঈশ্বর উঠুন, তাঁর শত্রুরা ছড়িয়ে পড়ুক আর তাঁর বিপক্ষেরা তাঁর সামনে থেকে পালিয়ে যাক। ধূমার মত করে তুমি তাদের উড়িয়ে দাও; আগুনের সামনে গলে যাওয়া মোমের মত দুষ্টেরা ঈশ্বরের সামনে ধ্বংস হয়ে যাক। কিন্তু ঈশ্বরভক্তেরা খুশী হোক আর ঈশ্বরের সামনে আনন্দ করুক; তারা খুশীতে আনন্দ করুক। ঈশ্বরের উদ্দেশে গান কর, তাঁর প্রশংসা-গান গাও; মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে যিনি রথে চড়ে আসছেন তাঁর জন্য উঁচু পথ তৈরী কর; তাঁর নাম সদাপ্রভু, তাঁর সামনে আনন্দ কর। ঈশ্বর তাঁর পবিত্র বাসস্থানে অনাথদের পিতা আর বিধবাদের পক্ষ গ্রহণকারী। নিজের বলতে যার কেউ নেই তাকে তিনি নিজের পরিবারের লোক করে তোলেন; বন্দীদের তিনি মুক্ত করে মংগলের মধ্যে নিয়ে যান, কিন্তু বিদ্রোহীরা রোদে পোড়া জমিতে বাস করে। হে ঈশ্বর, তুমি যখন মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে তোমার লোকদের আগে আগে গিয়েছিলে, [সেলা] তখন পৃথিবী কেঁপে উঠেছিল আর আকাশ বৃষ্টি ঢেলেছিল। এ সব হয়েছিল ঈশ্বরের সামনে, সিনাইয়ের সেই ঈশ্বরের সামনে, ঈশ্বরেরই সামনে, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সামনে। হে ঈশ্বর, তুমি প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি দিয়েছিলে; শুকিয়ে ওঠা তোমার দেশকে তুমি সতেজ করে তুলেছিলে। তোমার নিজের লোকেরা তার মধ্যে বাসস্থান করেছিল; তোমার মংগল ইচ্ছায়, হে ঈশ্বর, তুমি তাদের অভাব মিটিয়েছিলে। প্রভু লোকদের আদেশ দেন; মংগলের খবর ঘোষণাকারী স্ত্রীলোকেরা সংখ্যায় অনেক। ঐ স্ত্রীলোকেরা বলে, “সৈন্যদলের রাজারা পালিয়ে যাচ্ছে, পালিয়ে যাচ্ছে, আর ঘরে থাকা স্ত্রীলোকেরা লুটের মাল ভাগ করে নিচ্ছে। চারপাশে ভেড়ার খোয়াড়ের মাঝখানে তোমরা যখন শুয়ে থাক, তখন তোমাদের এমন ঘুঘুর মত দেখতে লাগে যার ডানা রূপায় ঢাকা আর পালক সোনায় মোড়ানো। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যখন দেশের মধ্যে রাজাদের ছড়িয়ে দিলেন তখন সল্‌মোন পাহাড়ের উপর বরফ পড়ছিল।” বাশনের পাহাড়ের সারি অনেকখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে; তার অনেকগুলো চূড়া। ওহে অনেক চূড়ার পাহাড়, ঈশ্বর যে পাহাড়কে নিজে থাকার জন্য বেছে নিয়েছেন তুমি হিংসার চোখ নিয়ে কেন তার দিকে চেয়ে আছ? সেটাই তো সদাপ্রভুর চিরকালের বাসস্থান। ঈশ্বরের রথ হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ; প্রভু সেগুলোর মধ্যে পবিত্র জায়গায় আছেন, যেমন তিনি সিনাই পাহাড়ে ছিলেন। যখন তুমি স্বর্গে উঠলে তখন পরাজিত বন্দীদের চালিয়ে নিয়ে গেলে। লোকদের মধ্যে, এমন কি, বিদ্রোহীদের মধ্যে থাকার সময় তোমার কাছে অনেক দান এসেছিল, যাতে তুমি, হে সদাপ্রভু ঈশ্বর, তাদের মধ্যে থাকতে পার। ধন্য প্রভু, তিনি প্রতিদিনই আমাদের বোঝা বইছেন; তিনিই আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর। [সেলা] আমাদের ঈশ্বর এমন ঈশ্বর যিনি উদ্ধার করেন; প্রভু সদাপ্রভু মৃত্যু থেকে রক্ষা করেন। ঈশ্বর নিঃসন্দেহে তাঁর শত্রুদের মাথা চুরমার করে দেবেন; যারা পাপে পড়ে থাকে সেই সব লোকদের চুলে ভরা মাথা তিনি চুরমার করে দেবেন। প্রভু বললেন, “আমি বাশন দেশ থেকে তাদের নিয়ে আসব; সমুদ্রের তলা থেকে তাদের তুলে আনব, যাতে তোমার পা তোমার শত্রুদের রক্ত দলে যায় আর তোমার কুকুরগুলো যেন তা ইচ্ছামত চেটে খেতে পারে।” হে ঈশ্বর, লোকে তোমার উৎসব-যাত্রা দেখেছে, দেখেছে পবিত্র জায়গার দিকে আমার ঈশ্বরের যাত্রা, যিনি আমার রাজা। প্রথমে যাচ্ছে গায়কেরা, তাদের পিছনে যাচ্ছে বাজনা বাদকেরা; খঞ্জনি-বাজানো মেয়েদের মাঝখানে তারা চলেছে। তোমাদের সব সভার মধ্যে ঈশ্বরের গৌরব কর; তোমরা যারা ইস্র্রায়েল-বংশের লোক, তোমরা সদাপ্রভুর গৌরব কর। সবার ছোট যে বিন্যামীন, ঐ যাচ্ছে তার বংশ, যাদের হাতে আছে রাজদণ্ড; ঐ যে যিহূদার নেতারা, যারা দলে ভারী; ঐ যে সবূলূনের নেতারা আর ঐ যায় নপ্তালির নেতারা। তোমার ঈশ্বরের কাছ থেকে তোমার শক্তি এসেছে। হে ঈশ্বর, তোমার শক্তি দেখাও, আগে যেমন তুমি আমাদের পক্ষে কাজ করে দেখিয়েছিলে। যিরূশালেমে তোমার ঘর আছে; সেখানেই রাজারা তোমার কাছে উপহার নিয়ে যাবে। তাদের এবং তাদের আনা রূপার টুকরাগুলো পায়ে দলে ফেলে নলবনের বুনো জন্তু ঐ মিসরকে তুমি ধম্‌কে দাও; ধম্‌কে দাও বাছুর ও বলদের দলের মত ঐ সব জাতিদের। যে সব জাতি যুদ্ধ ভালবাসে ঈশ্বর তাদের দল ভেংগে দিয়েছেন। মিসর থেকে রাজদূতেরা আসবেন; কূশ তাড়াতাড়ি করে ঈশ্বরের কাছে হাত বাড়িয়ে দেবে। হে পৃথিবীর সব রাজ্য, ঈশ্বরের উদ্দেশে গান কর, প্রভুর উদ্দেশে প্রশংসার গান গাও। [সেলা] তিনি সেই পুরানো দিনের আকাশের মধ্য দিয়ে রথে চড়ে চলাচল করেন। শোন, তিনি জোর গলায় কথা বলছেন। ঘোষণা কর, ঈশ্বর শক্তিমান; তাঁর মহিমা ইস্রায়েলের উপর রয়েছে আর আকাশ জুড়ে রয়েছে তাঁর শক্তি। হে ঈশ্বর, তোমার পবিত্র জায়গায় তোমার উপস্থিতি ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগিয়ে তোলে। ইস্রায়েলের ঈশ্বর তাঁর লোকদের শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে থাকেন। ঈশ্বরের গৌরব হোক! হে ঈশ্বর, আমাকে উদ্ধার কর, আমি যেন জলে ডুবে যাচ্ছি। আমি গভীর পাঁকের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি, সেখানে আমার দাঁড়াবার জায়গা নেই। আমি গভীর জলে এসে পড়েছি; বন্যা আমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ডাকতে ডাকতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আমার গলা শুকিয়ে গেছে; আমার ঈশ্বরের জন্য চেয়ে থাকতে থাকতে আমার চোখও ঝাপ্‌সা হয়ে গেছে। যারা অকারণে আমাকে ঘৃণা করে, তাদের সংখ্যা আমার চুলের চাইতেও বেশী। যারা আমাকে ধ্বংস করে ফেলতে চায় তারা বেশ শক্তিশালী; তারা মিথ্যা কারণে আমার শত্রু হয়েছে। আমি যা চুরি করি নি তা-ও আমাকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। হে ঈশ্বর, তুমি তো আমার বোকামির কথা জান; আমার দোষ তোমার কাছে লুকানো নেই। হে প্রভু, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, যারা তোমার অপেক্ষায় থাকে আমার দরুন তারা যেন লজ্জা না পায়। হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর, যারা তোমাকে জানবার জন্য আগ্রহী তারা যেন আমার দরুন অসম্মানিত না হয়। আমি তোমার জন্যই অপমান সহ্য করেছি, অসম্মানে আমার মুখ ঢেকে গেছে। আমার ভাইদের কাছে আমি যেন অচেনা হয়ে গেছি, মায়ের পেটের ভাইদের কাছে বিদেশী হয়েছি। তোমার ঘরের জন্য আমার যে গভীর ভালবাসা, সেই ভালবাসাই আমার অন্তরকে জ্বালিয়ে তুলেছে। যারা তোমাকে অপমান করে তাদের করা সব অপমান আমার উপরেই পড়েছে। আমার কান্না আর আমার উপবাসের কষ্ট আমার দুর্নামের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি যখন চট পরেছি তখন লোকে আমাকে টিট্‌কারি দিয়েছে। যারা শহরের ফটকে বসে তাদের মধ্যে আমাকে নিয়ে কথা ওঠে; মাতালেরা আমাকে নিয়ে গান বাঁধে। কিন্তু হে সদাপ্রভু, যে সময়ে তোমার দয়া পাওয়া যায় আমি সেই সময়ে তোমার কাছে প্রার্থনা করছি; হে ঈশ্বর, তোমার অটল ভালবাসায় তোমার উদ্ধার করার বিশ্বস্ততা দেখিয়ে আমাকে উত্তর দাও। পাঁক থেকে আমাকে উদ্ধার কর, আমাকে ডুবে যেতে দিয়ো না; আমার শত্রুদের হাত থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার কর, উদ্ধার কর অথৈ জলের মধ্য থেকে। বন্যা যেন আমার উপর দিয়ে বয়ে না যায়, গভীর জল যেন আমাকে তলিয়ে না ফেলে; মৃতস্থানের মুখ যেন আমার উপর বন্ধ না হয়। হে সদাপ্রভু, তোমার মংগলময় অটল ভালবাসায় আমাকে তুমি উত্তর দাও; তোমার অসীম করুণায় তুমি আমার দিকে ফেরো। তোমার দাসের দিক থেকে তোমার মুখ তুমি ফিরিয়ে রেখো না; আমি বিপদে পড়েছি, আমাকে শীঘ্র উত্তর দাও। তুমি আমার কাছে এসে আমাকে ছাড়িয়ে নাও; তুমি আমাকে মুক্ত কর, কারণ আমার শত্রু রয়েছে। আমি যে কত ঘৃণা, লজ্জা ও অসম্মানের পাত্র হয়েছি তা তো তুমি জান; আমার শত্রুরা সবাই তোমার সামনে রয়েছে। ঘৃণা আমার মন ভেংগে দিয়েছে, তাতে আমি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার দুঃখে যেন অন্যে দুঃখ বোধ করে সেটাই আমি চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি তা পাই নি। সান্ত্বনা দেবে এমন লোক আমি চেয়েছিলাম, কিন্তু তেমন কাউকে পেলাম না। আমার খাবারে তারা বিষ দিয়েছিল আর পিপাসার সময় দিয়েছিল সিরকা। তাদের ভোজের উৎসবগুলো ফাঁদ হোক, আর নিরাপদে থাকার ভাবটাই হোক তাদের জালের ফাঁদ। তাদের চোখ অন্ধ হোক যেন তারা দেখতে না পায়, আর সব সময় তাদের কোমরে খিঁচুনি ধরে যাক। তোমার ভীষণ অসন্তোষে তুমি তাদের বকুনি দাও; তোমার জ্বলন্ত ক্রোধ তাদের ধরে ফেলুক। তাদের থাকার জায়গা খালি হয়ে পড়ে থাকুক; তাদের তাম্বুতে বাস করার কেউ না থাকুক। তুমি যাকে শাস্তি দিয়েছ তারা তাকেই অত্যাচার করেছে; যাদের তুমি আঘাত করেছ তাদের যন্ত্রণাই হল তাদের আলোচনার বিষয়। অন্যায়ের উপর তাদের অন্যায় করে যেতে দাও; তারা যেন তোমার দেওয়া উদ্ধারের ভাগ না পায়। জীবিতদের তালিকা থেকে তাদের নাম যেন মুছে যায়, ঈশ্বরভক্তদের তালিকায় যেন তাদের নাম না থাকে। আমি দুঃখ ও যন্ত্রণার মধ্যে আছি; হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে উদ্ধার করে তাদের নাগালের বাইরে রাখ। আমি গান গেয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করব; কৃতজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তাঁর গৌরব করব। বলদ এবং শিং ও খুরযুক্ত ষাঁড় উৎসর্গের চেয়ে তা সদাপ্রভুকে বেশী সন্তুষ্ট করবে। তা দেখে নম্র লোকেরা খুশী হবে; তোমরা যারা ঈশ্বরকে জানবার জন্য আগ্রহী, তোমরা বেঁচে থাক। সদাপ্রভু অভাবীদের কথা শোনেন; তাঁর লোকেরা, যারা বন্দীদশায় আছে, তাদের তিনি নীচু চোখে দেখেন না। আকাশ ও পৃথিবী তাঁর প্রশংসা করুক; সমুদ্র ও তার মধ্যে ঘুরে বেড়ানো সব প্রাণী তাঁর প্রশংসা করুক; কারণ ঈশ্বর সিয়োনকে উদ্ধার করবেন, যিহূদার শহরগুলো আবার গড়বেন; তখন তাঁর লোকেরা সেখানে বাস করবে আর তার অধিকারী হবে। তাঁর দাসদের বংশের লোকেরাই তা অধিকার হিসাবে পাবে, আর যারা তাঁকে ভালবাসে তারাই সেখানে বাস করবে। হে ঈশ্বর, আমাকে বাঁচাও; হে সদাপ্রভু, আমাকে সাহায্য করতে শীঘ্র এস। যারা আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টায় আছে তারা লজ্জিত ও অপমানিত হোক; যারা আমার সর্বনাশ দেখতে চায় তারা মাথা নীচু করে ফিরে যাক। যারা আমাকে দেখে বলে, “বেশ হয়েছে!” তারা লজ্জা পেয়ে ফিরে যাক। কিন্তু যারা তোমার ইচ্ছামত চলে তারা তোমাকে নিয়েই আনন্দিত ও খুশী হোক; যারা তোমার করা উদ্ধারের কাজ ভালবাসে তারা সব সময়েই বলুক, “ঈশ্বরের গৌরব হোক!” আমি দুঃখী ও অভাবী; হে ঈশ্বর, তুমি শীঘ্র আমার কাছে এস। তুমি তো আমার সাহায্যকারী ও উদ্ধারকর্তা; হে সদাপ্র্রভু, দেরি কোরো না। হে সদাপ্রভু, আমি তোমারই মধ্যে আশ্রয় নিয়েছি, আমাকে কখনও লজ্জা পেতে দিয়ো না। তুমি ন্যায়বান বলে আমাকে বাঁচাও, উদ্ধার কর; আমার কথায় কান দাও এবং আমাকে রক্ষা কর। তুমিই আমার আশ্রয়-পাহাড় হও যাঁর কাছে আমি সব সময় যেতে পারি। তুমি আমার উঁচু পাহাড় ও দুর্গ, তাই আমাকে রক্ষা করার জন্য আদেশ দিয়েছ। হে আমার ঈশ্বর, দুষ্টদের হাত থেকে, মন্দ ও নিষ্ঠুর লোকদের হাতের মুঠো থেকে, তুমি আমাকে উদ্ধার কর। হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমিই আমার আশা, যুবা বয়স থেকে তুমিই আমার ভরসা। জন্ম থেকেই আমি তোমার উপর নির্ভরশীল; তুমিই আমাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে এনেছ। তুমিই সব সময় আমার গৌরবের বিষয়। আমাকে দেখে অনেকে হাঁ করে চেয়ে থাকে, কিন্তু তুমিই আমার অটল আশ্রয়। আমার মুখে তোমার গুণগান লেগেই আছে, তা সারা দিনই তোমার গৌরবের কথা বলে। আমার এই শেষ বয়সে আমাকে ফেলে দিয়ো না; আমার শক্তি ফুরিয়ে গেছে, আমাকে ত্যাগ কোরো না। আমার শত্রুরা আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে; যারা আমাকে মেরে ফেলতে চায় তারা সবাই মিলে শলা-পরামর্শ করছে। তারা বলছে, “ঈশ্বর ওকে ত্যাগ করেছেন; ওকে তাড়া করে ধরে ফেল, ওকে বাঁচাবার কেউ নেই।” হে ঈশ্বর, তুমি আমার কাছ থেকে দূরে থেকো না; হে আমার ঈশ্বর, আমাকে সাহায্য করতে তুমি শীঘ্র এস। আমার বিপক্ষেরা লজ্জিত ও ধ্বংস হোক; যারা আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টায় আছে তারা ঘৃণা আর অপমানে ঢাকা পড়ুক। কিন্তু আমি সব সময়েই তোমার উপর ভরসা করব, তোমার গৌরবের উপর গৌরব করতে থাকব। তোমার ন্যায় কাজ আর তোমার করা উদ্ধার-কাজের কথা সারা দিন আমার মুখে থাকবে, কারণ সেগুলো বলে শেষ করা যায় না। হে প্রভু সদাপ্রভু, তোমার মহৎ কাজের কথা বলার জন্য আমি তোমার ঘরে ঢুকব; আমি তোমার, কেবল তোমারই ন্যায় কাজের কথা বলব। হে ঈশ্বর, যৌবন কাল থেকে তুমিই আমাকে শিক্ষা দিয়েছ; আজও আমি তোমার আশ্চর্য কাজের কথা প্রচার করছি। হে ঈশ্বর, আজ বুড়ো হয়ে চুল পেকে গেলেও তুমি আমাকে ত্যাগ কোরো না; পরের বংশধরদের কাছে তোমার ক্ষমতার কথা, ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে তোমার শক্তির কথা আমাকে ঘোষণা করতে দাও। হে ঈশ্বর, তোমার ন্যায় কাজ যেন আকাশ ছুঁয়েছে; সব মহান কাজ তুমিই করেছ; হে ঈশ্বর, তোমার সমান আর কে আছে? যদিও তুমি আমার উপর অনেক কষ্ট আর বিপদ এনেছ, তবুও তুমিই আবার আমার প্রাণ জীবিত করে তুলবে; মাটির তলা থেকে তুলে আনার মত করে আবার তুমি আমাকে তুলে আনবে। আমি চাই তুমি যেন আমার সম্মান বাড়িয়ে দাও, আবার আমাকে সান্ত্বনা দাও। হে আমার ঈশ্বর, তোমার বিশ্বস্ততার বিষয় নিয়ে আমি বীণা বাজিয়ে তোমার গৌরব করব; হে ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন, আমি সুরবাহারে তোমার প্রশংসা-গান করব। আমি যখন তোমার প্রশংসা-গান গাইব আমার মুখ তখন চিৎকার করে আনন্দধ্বনি করবে; আমার অন্তর তোমার প্রশংসা-গান গাইবে, কারণ তুমিই আমাকে মুক্ত করেছ। আমার মুখ সারা দিন তোমার ন্যায় কাজের কথাই বলবে, কারণ যারা আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টায় আছে তারা লজ্জিত ও অপমানিত হয়েছে। হে ঈশ্বর, বিচার করার যে অধিকার তোমার আছে তা তুমি এই রাজাকে দান কর; এই রাজপুত্রকে তোমার ন্যায়ের জ্ঞান দান কর; যাতে তিনি ন্যায়ভাবে তোমার লোকদের বিচার করতে পারেন আর অত্যাচারিতদের সুবিচার করতে পারেন। তাঁর ন্যায় কাজের মধ্য দিয়ে লোকদের জন্য পাহাড়-পর্বতে ভরা দেশটা মংগলে ভরে উঠুক। তাঁর রাজ্যের অত্যাচারিত লোকদের উপর তিনি ন্যায়বিচার করুন; তাঁর গরীবদের বাঁচান আর অত্যাচারীদের চুরমার করুন। যতদিন চাঁদ-সূর্য থাকবে ততদিন বংশের পর বংশ ধরে লোকে তাঁকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করুক। ঘাস কেটে নেওয়া জমির উপর বৃষ্টি পড়লে যেমন হয় তিনি যেন তেমনি হন; তিনি যেন মাটি ভিজানো বৃষ্টিধারার মত হন। তাঁর আমলে ঈশ্বরভক্তেরা যেন প্রচুর আশীর্বাদ পায়; যতদিন চাঁদ থাকবে ততদিন তাদের জীবন মংগলে মংগলে ভরে উঠুক। তাঁর রাজ্যের সীমা সাগর থেকে সাগর পর্যন্ত, ইউফ্রেটিস্‌ নদী থেকে পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত হোক। মরু-এলাকার লোকেরা তাঁর কাছে নত হোক আর তাঁর শত্রুরা তাঁকে প্রণাম করুক। তর্শীশ আর দ্বীপগুলোর রাজারা তাঁকে কর দিক; শিবা ও সবা দেশের রাজারাও তাঁর পাওনা উপহার তাঁকে দিক। সমস্ত রাজারা তাঁর কাছে মাথা নীচু করুক আর সমস্ত জাতি তাঁর সেবা করুক। যে সব অভাবী, অত্যাচারিত ও অসহায় লোকেরা সাহায্যের জন্য কাঁদছে তাদের তিনি উদ্ধার করবেন। অসহায় ও অভাবীদের তিনি দয়া করবেন আর অভাবীদের বাঁচাবেন। অত্যাচার ও আক্রমণের হাত থেকে তিনি তাদের প্রাণ রক্ষা করবেন; তাঁর চোখে তাদের রক্তের দাম অনেক। তিনি অনেক দিন বেঁচে থাকুন; শিবা দেশের সোনা তাঁর কাছে আসুক। সব সময় তাঁর জন্য প্রার্থনা হতে থাকুক; সারা দিন ধরে তাঁর উপর আশীর্বাদ ঝরে পড়ুক। দেশে প্রচুর শস্যের ফলন হোক, তা পাহাড়গুলোর চূড়ার উপরেও হোক। ক্ষেতের ফসলে লেবাননের বনের শন্‌শন্‌ শব্দ উঠুক; শহর থেকে বেরিয়ে আসা লোকেরা যেন মাঠের ঘাসের মত প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। তাঁর সুনাম চিরকাল স্থায়ী হোক; সূর্য যতদিন আলো দেবে ততদিন তাঁর সুনাম বহাল থাকুক। তাঁর মধ্য দিয়ে সমস্ত জাতি যেন আশীর্বাদ পায়; তারা তাঁকে ধন্য বলুক। সদাপ্রভু ঈশ্বর, যিনি ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তাঁর গৌরব হোক; কেবল তিনিই আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করেন। চিরকাল তাঁর মহিমাপূর্ণ নামের প্রশংসা হোক; সারা দুনিয়া তাঁর মহিমায় পূর্ণ হোক। আমেন, আমেন। যিশয়ের ছেলে দায়ূদের সব প্রার্থনার শেষ এখানেই। যাদের অন্তর খাঁটি সেই ইস্রায়েলীয়দের পক্ষে ঈশ্বর সত্যিই মংগলময়। কিন্তু আমি প্রায় পড়ে গিয়েছিলাম; আমার পা প্রায় পিছলে গিয়েছিল। আমি দেখলাম, দুষ্টেরা বেশ সুখে আছে, সেজন্য ঐ সব অহংকারীদের দেখে আমার হিংসা হয়েছিল; কারণ মরণকালে তারা যন্ত্রণা পায় না আর তাদের দেহও বেশ মোটাসোটা থাকে। অন্য লোকেরা যেমন বিপদে পড়ে তেমনি তারা বিপদে পড়ে না; অন্যেরা যেমন কষ্ট ভোগ করে তেমনি তারা কষ্ট ভোগ করে না। সেজন্য অহংকার হয় তাদের গলার হার, আর অত্যাচার হয় তাদের গায়ের কাপড়। চর্বির ঠেলায় তাদের চোখ বেরিয়ে এসেছে; তাদের মনের কুমতলব উপ্‌চে পড়ছে। তাদের কথায় বিদ্রূপ আর হিংসা রয়েছে; অহংকারের বশে তারা অত্যাচারের ভয় দেখায়। তারা স্বর্গের বিরুদ্ধে কথা বলে আর সারা দুনিয়ায় তাদের বড় বড় কথা ছড়িয়ে পড়ে। সেজন্য ঈশ্বরের লোকেরা মন্দ পথে ফিরে যায় আর সেই সব কথা প্রচুর পরিমাণে গিলতে থাকে। তারা বলে, “ঈশ্বর কি করে জানবেন? মহান ঈশ্বরের মধ্যে জ্ঞান বলতে কি কিছু আছে?” এরাই হল সেই দুষ্ট লোকেরা যারা আরামে থেকে ধন-সম্পত্তি বাড়িয়েছে। আমার অন্তরকে আমি মিছামিছি খাঁটি রেখেছি, আমার হাত মিথ্যাই আমি নির্দোষ রেখেছি। সারা দিন ধরে আমি কষ্ট ভোগ করেছি; প্রতিদিন সকাল বেলায় শাস্তি পেয়েছি। যদি এই সব কথা আমি লোকদের কাছে বলতাম, তবে এই কালের তোমার লোকদের কাছে আমি অবিশ্বস্ত হতাম। আমি যখন এ সব ব্যাপারে বুঝবার চেষ্টা করলাম তখন আমার মনকে তা কষ্ট দিতে লাগল; কিন্তু যখন আমি ঈশ্বরের পবিত্র জায়গায় গেলাম তখন তাদের শেষ দশার কথা বুঝতে পারলাম। তুমি সত্যিই তাদের পিছল জায়গায় রেখেছ আর ধ্বংসের মধ্যে ফেলেছ। কেমন হঠাৎ তারা ধ্বংস হয়ে যায় আর ভয় জাগানো বিপদের মধ্যে একেবারে শেষ হয়ে যায়। ঘুম ভাঙ্গলে মানুষের কাছে স্বপ যেমন তুচ্ছ হয়ে যায়, তেমনি হে প্রভু, তুমি জাগলে তারাও তোমার কাছে তুচ্ছ হয়ে যাবে। যখন আমার মন তেতো হয়ে উঠেছিল আর অন্তরে আঘাত লেগেছিল, তখন আমি অসাড় ও অবুঝ হয়ে পড়েছিলাম আর তোমার কাছে বুদ্ধিহীন পশুর সমান হয়েছিলাম। তবুও আমি সব সময় তোমার সংগেই আছি; তুমিই আমার ডান হাত ধরে রেখেছ। তোমার নির্দেশের মধ্য দিয়ে তুমি আমাকে চালাবে, আর শেষে তোমার মহিমার মধ্যে আমাকে গ্রহণ করবে। স্বর্গে তুমিই আমার সব; তোমাকে পেয়ে পৃথিবীতেও আমার চাওয়ার আর কিছু নেই। আমার দেহ ও মন ক্ষয় হয়ে যেতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরই আমার অন্তরের শক্তি আর আমার চিরকালের সম্পত্তির ভাগ। যারা তোমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে, তারা শেষ হয়ে যাবে; যারা তোমার প্রতি অবিশ্বস্ত তুমি তাদের ধ্বংস করে ফেলবে। কিন্তু ঈশ্বরের সংগে থাকা আমার জন্য মংগল; প্রভু সদাপ্রভুকে আমি আমার আশ্রয়স্থান করেছি, যেন তাঁর সব কাজের কথা আমি প্রচার করতে পারি। হে ঈশ্বর, তুমি চিরদিনের জন্য কেন আমাদের ত্যাগ করেছ? তোমার চারণভূমির ভেড়াদের বিরুদ্ধে কেন তোমার ক্রোধের আগুন ধূমিয়ে উঠছে? মনে করে দেখ তোমার সেই লোকদের কথা যাদের তুমি অনেক কাল আগেই তোমার করে নিয়েছিলে, যে বংশকে তুমি তোমার অধিকার হিসাবে মুক্ত করে এনেছিলে। মনে করে দেখ সেই সিয়োন পাহাড়ের কথা যাকে তুমি তোমার বাসস্থান করেছ। চিরকালের এই ধ্বংসস্তূপের দিকে তুমি পা চালিয়ে এগিয়ে এস; পবিত্র স্থানে সব কিছুই শত্রুরা ছারখার করে দিয়েছে। যেখানে তোমার সংগে আমাদের মিলন হত সেই জায়গায় শত্রুরা গর্জন করে বেড়িয়েছে, সেখানে তারা নিজেদের নিশান তুলেছে। অবস্থা দেখে মনে হয় যেন কেউ বনের গাছ কাটার জন্য কুড়াল চালিয়েছিল। কুড়াল ও হাতুড়ি দিয়ে সমস্ত খোদাই করা কাজগুলো তারা চুরমার করে দিয়েছে। তোমার পবিত্র স্থানে তারা আগুন লাগিয়েছে, তোমার থাকবার জায়গা মাটির সংগে মিশিয়ে দিয়ে অশুচি করেছে। তারা মনে মনে বলেছে, “আমরা ওদের সম্পূর্ণভাবে দাবিয়ে রাখব।” ঈশ্বরের সংগে মিলিত হওয়ার সব জায়গাগুলো তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের জন্য কোন আশ্চর্য কাজ করা হচ্ছে এমন তো আর আমরা দেখি না; কোন নবীও আর নেই; এরকম যে আর কতদিন চলবে তা আমাদের কেউ জানে না। হে ঈশ্বর, শত্রুরা আর কতদিন ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে? চিরদিনই কি শত্রুরা তোমার নামের অপমান করবে? কেন তুমি তোমার হাতখানা, ঐ ডান হাতখানা লুকিয়ে রেখেছ? তা বুকের মধ্য থেকে বের করে এনে তাদের শেষ করে দাও। তবুও হে ঈশ্বর, অনেক কাল আগে থেকে তুমিই আমার রাজা; তুমিই এই দুনিয়ার বুকে উদ্ধারের কাজ করছ। নিজের শক্তিতে তুমিই সাগরকে ভাগ করেছিলে; তুমিই সাগরের মধ্যে ভেংগে দিয়েছিলে জল-দানবদের মাথা। লিবিয়াথনের মাথাগুলো তুমিই চুরমার করে দিয়েছিলে আর তার দেহটা মরুভূমির প্রাণীদের খেতে দিয়েছিলে। তুমি ফোয়ারা ও ছোট নদীর পথ খুলে দিয়েছ; অনেক কালের বয়ে যাওয়া নদী তুমিই শুকিয়ে ফেলেছ। দিন তোমার, রাতও তোমার; চাঁদ-তারা ও সূর্য তুমিই স্থাপন করেছ। পৃথিবীর সব কিছুর সীমা তুমিই ঠিক করে দিয়েছ; তুমিই শীত ও গ্রীষমকাল তৈরী করেছ। হে সদাপ্রভু, ভুলে যেয়ো না শত্রুরা তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে, অসাড়-বিবেক লোকেরা তোমার নামের অপমান করেছে। তোমার এই প্রিয় ঘুঘুকে তুমি বুনো পশুর হাতে তুলে দিয়ো না; তোমার অত্যাচারিত লোকদের জীবনের কথা তুমি চিরদিন ভুলে থেকো না। তোমার ব্যবস্থার কথা তুমি ভেবে দেখ; দেশের সব লুকাবার স্থানের অনেক বাসস্থান অত্যাচারে ভরে উঠেছে। তুমি অত্যাচারিত লোকদের অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে দিয়ো না; দুঃখী এবং অভাবী লোকেরা তোমার নামের গৌরব করুক। হে ঈশ্বর, তুমি উঠে বিচার করবার জন্য তোমার মামলা উপস্থিত কর; ভুলে যেয়ো না অসাড়-বিবেক লোকেরা সারা দিন তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তোমার শত্রুদের চেঁচামেচি, তোমার বিরুদ্ধে তাদের যে হৈচৈ সব সময় চলছে, তা ভুলে যেয়ো না। হে ঈশ্বর, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দিই, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দিই, কারণ তুমি কাছেই আছ; লোকে তোমার আশ্চর্য কাজের কথা ঘোষণা করে। তুমি বলে থাক, “ঠিক সময় আমিই বেছে নিই, আমিই ন্যায়বিচার করি। পৃথিবী ও তার মানব-সমাজের নিয়ম-শৃঙ্খলা যখন ভেংগে যায়, তখন আমিই তার থামগুলো টিকিয়ে রাখি। [সেলা] “আমি অহংকারীদের বলি, ‘গর্ব কোরো না,’ আর দুষ্টদের বলি, ‘শিং উঁচু কোরো না। তোমাদের শিং উঁচুতে তুলো না আর ঘাড় বাঁকিয়ে কথা বোলো না।’ ” পূর্ব কি পশ্চিম কিম্বা মরু-এলাকা থেকে কেউ রক্ষা করতে আসে না; কিন্তু ঈশ্বরই বিচার করেন; তিনি একজনকে নীচে নামান ও আর একজনকে উপরে তোলেন। সদাপ্রভুর হাতে একটা পেয়ালা আছে, তাতে ফেনিয়ে ওঠা মশলা মিশানো আংগুর-রস রয়েছে। তিনি সেই পেয়ালা থেকে ঢেলে দেন; পৃথিবীর সব দুষ্ট লোককে তার তলানি পর্যন্ত খেতেই হবে। কিন্তু আমি চিরদিন ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রচার করব আর যাকোবের ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসা-গান করব। আমি দুষ্টদের সমস্ত শিং কেটে ফেলে দেব, কিন্তু ঈশ্বরভক্তদের শিং উঁচুতে তোলা হবে। যিহূদা-রাজ্যে সকলেই ঈশ্বরের কথা জানে; ইস্রায়েল-রাজ্যে তাঁর নাম মহান। শালেমে তাঁর আবাস-তাম্বু আর সিয়োনে তাঁর বাসস্থান আছে। তিনি সেখানে সব জ্বলন্ত তীর ভেংগে ফেলেছেন, ভেংগে ফেলেছেন ঢাল, তলোয়ার আর যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র। [সেলা] তুমি আলোতে কেমন উজ্জ্বল! শিকারে ভরা পাহাড় থেকে তোমার ফিরে আসা কেমন মহিমাপূর্ণ! সাহসী যোদ্ধাদের লুটপাট করা হয়েছে, তারা শেষ ঘুমে ঢলে পড়েছে; কোন যোদ্ধার হাতে আর শক্তি ছিল না। হে যাকোবের ঈশ্বর, ঘোড়া আর রথচালকেরা তোমার ধমক খেয়ে গভীর ঘুমে ঢলে পড়েছে। তুমি, তুমিই খুব ভয়ানক; তোমার ক্রোধ জেগে উঠলে কে তোমার সামনে দাঁড়াতে পারে? অবশ্যই মানুষের রাগের ফলে তোমার প্রশংসা হয়; সেই রাগের বাকী অংশ দিয়ে তুমি নিজেকে সাজাও। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে মানত কর আর তা পূরণ কর। যিনি ভয়ের পাত্র তাঁর উদ্দেশে চারদিকের দেশ থেকে লোকে উপহার আনুক। শাসনকর্তাদের সাহস তিনিই দমিয়ে দেন; পৃথিবীর রাজারা তাঁকে ভয় করে। আমি চিৎকার করে ঈশ্বরের কাছে কাঁদছি; আমি ঈশ্বরের কাছে চিৎকার করছি যেন তিনি তা শুনে উত্তর দেন। বিপদের দিনে আমি প্রভুকে ডাকলাম; রাতের বেলা আমার হাত দু’টা ঈশ্বরের দিকে বাড়ানোই থাকত, আমি ক্লান্ত হতাম না; আমার অন্তর সান্ত্বনা পেত না। আমি যখন ঈশ্বরের কথা ভাবতাম তখন দুঃখে কোঁকাতাম; ভাবতে ভাবতে আমি নিরাশ হয়ে পড়তাম। [সেলা] তুমিই আমার চোখের পাতা খোলা রাখতে; আমি খুব অস্থির হয়ে পড়তাম, তাই কথাও বলতে পারতাম না। অনেক পুরানো দিনের কথা আমি ভাবতাম, ভাবতাম অনেক অনেক বছর আগেকার কথা। রাতের বেলায় আমার সব গানের কথা আমার মনে পড়ত; আমি অন্তরে গভীরভাবে চিন্তা করতাম আর মনে মনে প্রশ্ন করতাম- প্রভু কি চিরদিনের জন্য আমাদের ত্যাগ করেছেন? তিনি কি আমাদের আর কখনও দয়া করবেন না? তাঁর অটল ভালবাসা কি চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে গেল? তাঁর প্রতিজ্ঞাও কি চিরকালের জন্য বিফল হয়ে গেল? ঈশ্বর কি দয়া করতে ভুলে গেলেন? তিনি কি ক্রোধে তাঁর করুণা বন্ধ করে দিলেন? [সেলা] আমি বললাম, “এটাই আমার দুঃখ যে, মহান ঈশ্বরের ডান হাতখানা বদলে গেছে।” সদাপ্রভুর সব কাজের কথা আমি মনে করব; হ্যাঁ, মনে করব পুরানো দিনে তোমার করা আশ্চর্য কাজগুলোর কথা। তোমার সমস্ত কাজের বিষয়ে আমি ধ্যান করব; তোমার সব কাজের কথা ভেবে দেখব। হে ঈশ্বর, তোমার চলার পথ পবিত্র; আমাদের ঈশ্বরের মত মহান কি কোন দেবতা আছে? তুমিই সেই ঈশ্বর যিনি আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করে থাকেন; সব জাতির মধ্যে তোমার শক্তির পরিচয় তুমি দিয়েছ। তুমি তোমার লোক যাকোব ও যোষেফের বংশধরদের তোমার শক্ত হাতে মুক্ত করেছ। [সেলা] হে ঈশ্বর, সাগরের জল তোমাকে দেখেছিল; তোমাকে দেখে জল অস্থির হয়ে উঠল, তার গভীর তলা পর্যন্ত কেঁপে উঠল। মেঘ জল ঢেলে দিল, আকাশে বাজের গর্জন হল; তোমার বিদ্যুতের তীর এখানে ওখানে চম্‌কাতে লাগল। ঘূর্ণিঝড়ে তোমার বাজের শব্দ শোনা গেল, তোমার বিদ্যুতের ঝলক্‌ জগৎ আলোময় করল; পৃথিবী কাঁপল ও টলমল করে উঠল। সাগরের মধ্য দিয়ে তুমি পথ করে দিলে, গভীর জলের মধ্য দিয়ে তুমি পথ করে দিলে, কিন্তু তোমার পায়ের চিহ্ন সেখানে দেখা যায় নি। মোশি ও হারোণকে দিয়ে ভেড়ার পালের মত করে তুমি তোমার লোকদের চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলে। হে আমার জাতির লোকেরা, আমার উপদেশ শোন; আমার মুখের কথায় কান দাও। শিক্ষা-ভরা উদাহরণের মধ্য দিয়ে আমি মুখ খুলব; আমি পুরানো দিনের গভীর বিষয় নিয়ে কথা বলব। এই সব কথা আমরা শুনেছি আর জেনেছি, আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদের কাছে বলে গেছেন। তাঁদের বংশধরদের কাছে আমরা তা গোপন রাখব না; আমরা পরের বংশধরদের কাছে সদাপ্রভুর গৌরবপূর্ণ কাজের কথা বলব; তাঁর শক্তির কথা আর তিনি যে সব আশ্চর্য কাজ করেছেন সেই সব কথা বলব। তিনি যাকোবের বংশের উপর তাঁর আজ্ঞা জারি করেছেন, ইস্রায়েল জাতির জন্য তাঁর আইন-কানুন স্থাপন করেছেন; সেই আইন-কানুন তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিতে তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের আদেশ করেছেন, যাতে পরের বংশধরেরা, যারা এখনও জন্মগ্রহণ করে নি তারা সেগুলো জানতে পারে আর তাদের সন্তানদের কাছে তা বলতে পারে। তাহলে তারা ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করবে; তাঁর কাজগুলো তারা ভুলে যাবে না বরং তাঁর আদেশগুলো পালন করবে। এতে তাদের পূর্বপুরুষদের মত তারা একগুঁয়ে ও বিদ্রোহী হবে না; সেই পূর্বপুরুষদের অন্তর ঈশ্বরের প্রতি অটল ছিল না আর মনও বিশ্বস্ত ছিল না। ইফ্রয়িমের লোকেরা ধনুকধারী হলেও যুদ্ধের দিনে পিছু হটে গিয়েছিল। তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থা পালন করে নি, তাঁর আইন-কানুন মতে চলতে তারা অস্বীকার করেছিল। তিনি যে কি করেছিলেন তা তারা ভুলে গিয়েছিল, ভুলে গিয়েছিল তাঁর আশ্চর্য কাজের কথা যা তিনি তাদের দেখিয়েছিলেন। ইস্রায়েলীয়দের পূর্বপুরুষদের চোখের সামনে তিনি আশ্চর্য কাজ করেছিলেন; মিসরে ও সোয়ন এলাকায় তিনি তা করেছিলেন। তিনি সাগর দু’ভাগ করে তার মধ্য দিয়ে তাদের নিয়ে গিয়েছিলেন; তিনি জলকে ঢিবির মত করে দাঁড় করিয়েছিলেন। দিনে মেঘ দিয়ে আর সারা রাত আগুনের আলো দিয়ে তিনি তাদের পথ দেখিয়েছিলেন। মরু-এলাকায় পাথর ফাটিয়ে মাটির নীচের জল থেকে তিনি তাদের অনেক খাবার জল দিলেন। পাহাড়ের মত পাথর থেকে তিনি জলের স্রোত বের করে আনলেন; সেই জল তিনি নদীর মত করে বইয়ে দিলেন। কিন্তু তারা তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করতেই থাকল; মহান ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মরু-এলাকায় বিদ্রোহ করল। তাদের ইচ্ছামত খাবার দাবি করে মনে মনে তারা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করল। তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে এই কথা বলল, “ঈশ্বর কি মরু-এলাকায় খাবার দিয়ে টেবিল সাজাতে পারেন? তিনি পাথরে আঘাত করলেন আর তা থেকে উপ্‌চে পড়া জলের স্রোত বেরিয়ে আসল; তাই বলে কি তিনি আমাদের রুটিও দিতে পারেন? তিনি কি তাঁর লোকদের জন্য মাংস যোগাতে পারেন?” এ কথা শুনে সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। যাকোবের বিরুদ্ধে তাঁর অন্তরে আগুন জ্বলে উঠল, ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে তাঁর ক্রোধ জেগে উঠল; কারণ ঈশ্বরের উপরে তারা বিশ্বাস করে নি; তিনি যে তাদের উদ্ধার করবেন সেই কথায় তারা নির্ভর করে নি। তবুও তিনি উপরে আকাশকে আদেশ দিলেন আর আকাশের দরজা খুলে দিলেন। লোকদের খাবার জন্য তিনি বৃষ্টির মত করে মান্না দিলেন, স্বর্গের শস্য তাদের দিলেন। স্বর্গদূতের খাবার মানুষ খেল; তারা যত খেতে পারে তত খাবার জিনিসই তিনি তাদের পাঠিয়ে দিলেন। তিনি আকাশ থেকে পূবের বাতাস বহালেন; তিনি নিজের শক্তিতে দক্ষিণের বাতাসকে চালালেন। তিনি ধূলিকণার মত মাংসের বৃষ্টি দিলেন, সাগর পারের বালুকণার মত পাখীর বৃষ্টি দিলেন। তাদের ছাউনি-এলাকায়, তাদের তাম্বুর চারপাশে তিনি সেগুলোকে পড়তে দিলেন। তারা পেট ভরে তা খেল; তারা যা চেয়েছিল তাদের তিনি তা-ই দিলেন। যে খাবার তারা খেতে চেয়েছিল তা খাওয়া শেষ না হতেই, এমন কি, তা তাদের মুখে থাকতেই ঈশ্বরের ক্রোধ তাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠল। তাদের কিছু শক্তিশালী যুবকদের তিনি মেরে ফেললেন; ইস্রায়েলের সেরা লোকদের তিনি তাঁর অধীনে আনলেন। তবুও তারা পাপ করতেই থাকল, তাঁর আশ্চর্য কাজ দেখেও তাঁকে বিশ্বাস করল না। তাই তিনি তাদের দিনগুলো বিফলতায় শেষ করে দিলেন আর বছরগুলো শেষ করে দিলেন ভয়ের মধ্য দিয়ে। তিনি তাদের মেরে ফেলার পর বাকী লোকেরা তাঁর কথা মনে করল; তারা আবার তাঁর দিকে ফিরে আগ্রহের সংগে তাঁকে ডাকল। তাদের মনে পড়ল ঈশ্বরই তাদের আশ্রয়-পাহাড়, মহান ঈশ্বরই তাদের মুক্তিদাতা। কিন্তু তারা তখন মুখ দিয়ে ছলনা করল, জিভ্‌ দিয়ে তাঁর কাছে মিথ্যা কথা বলল। তাদের অন্তর তাঁর প্রতি স্থির ছিল না; তাঁর ব্যবস্থার প্রতি তারা বিশ্বস্ত ছিল না। তবুও তিনি মমতায় পূর্ণ বলে তাদের অন্যায় ক্ষমা করলেন, তাদের ধ্বংস করলেন না; তাঁর ক্রোধ তিনি বার বার দমন করলেন, তাঁর সম্পূর্ণ ক্রোধ জ্বলে উঠল না। তিনি ভেবে দেখলেন তারা মানুষ মাত্র, তারা বয়ে যাওয়া বাতাসের মত যা ফিরে আসে না। মরু-এলাকায় কতবার তাঁর বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করেছে, সেই মরুভূমিতে কতবার তাঁকে দুঃখ দিয়েছে। বার বার তারা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করেছে, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনকে কষ্ট দিয়েছে। তারা তাঁর শক্তির কথা মনে রাখে নি; মনে রাখে নি সেই দিনের কথা- যেদিন তিনি শত্রুর হাত থেকে তাদের মুক্ত করেছিলেন, যেদিন মিসরে তিনি চিহ্ন দেখিয়েছিলেন আর আশ্চর্য কাজ করেছিলেন সোয়ন এলাকায়। সেদিন তাদের সমস্ত নদীর জল তিনি রক্ত করে দিয়েছিলেন আর সেই জল তারা খেতে পারে নি। তাদের মধ্যে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পোকা পাঠালেন, সেগুলো তাদের যেন খেয়ে শেষ করে দিল। তিনি ব্যাংয়ের দল পাঠিয়ে দিলেন, সেগুলো তাদের সর্বনাশ করল। তাদের শস্য তিনি ফড়িংকে দিলেন আর তাদের ফসল দিলেন পংগপালকে। শিলাবৃষ্টি দিয়ে তাদের আংগুর লতা তিনি নষ্ট করে দিলেন; জমে যাওয়া শিশির দিয়ে ডুমুর গাছ নষ্ট করে দিলেন। তিনি শিলাবৃষ্টির হাতে তাদের গরুর পাল তুলে দিলেন আর বাজ পড়ার হাতে তুলে দিলেন তাদের পশুর পাল। তিনি তাদের বিরুদ্ধে তাঁর জ্বলন্ত উপ্‌চে পড়া ভীষণ ক্রোধ আর দুঃখ-কষ্ট পাঠিয়ে দিলেন; সেগুলো হল ধ্বংসের কাজে নিযুক্ত একদল দূত। তাঁর ক্রোধ প্রকাশের পথের বাধা তিনি দূর করে দিলেন; তিনি মৃত্যু থেকে তাদের রেহাই দেন নি বরং মড়কের হাতে তাদের তুলে দিলেন। তিনি মিসর দেশের প্রত্যেকটি প্রথম পুরুষ সন্তানকে আঘাত করলেন, আঘাত করলেন হাম-বংশের তাম্বুতে যৌবন-শক্তির প্রত্যেকটি প্রথম ফলকে। এর পর তাঁর লোকদের তিনি ভেড়ার মত করে বের করে আনলেন, আর মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে ভেড়ার পালের মত করে তাদের পরিচালনা করলেন। তিনি তাদের নিরাপদে নিয়ে আসলেন, তাদের কোন ভয় হল না; কিন্তু সাগর তাদের শত্রুদের গিলে ফেলল। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর পবিত্র দেশে তাদের নিয়ে আসলেন, নিয়ে আসলেন সেই পাহাড়ী দেশে যে দেশ তাঁর শক্তিপূর্ণ হাতে তিনি দখল করেছিলেন। তাদের সামনে থেকে অন্যান্য জাতিদের তিনি তাড়িয়ে দিলেন, আর সেই জাতিদের জায়গা-জমি তিনি জরীপ করে সম্পত্তি হিসাবে তাদের ভাগ করে দিলেন; তাদের ঘর-দুয়ারে ইস্রায়েলের গোষ্ঠীদের বাস করালেন। কিন্তু তবুও তারা মহান ঈশ্বরকে পরীক্ষা করল আর তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল; তাঁর আজ্ঞা তারা পালন করল না। তাদের পূর্বপুরুষদের মতই তারা ঠিক পথ থেকে সরে গিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করল; বেয়াড়া ধনুকের মতই তারা বেঁকে রইল। তারা পাহাড়ের উপরকার বেদীগুলো ব্যবহার করে তাঁকে অসন্তুষ্ট করে তুলল; খোদাই করা প্রতিমা পূজা করে তাঁর পাওনা ভক্তির আগ্রহ বাড়িয়ে তুলল। এ সব দেখে-শুনে ঈশ্বর ভীষণ অসন্তুষ্ট হলেন; তিনি ইস্রায়েলকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করলেন। শীলোতে তাঁর যে আবাস-তাম্বু ছিল তা তিনি ছেড়ে গেলেন; এটা সেই তাম্বু যা তিনি মানুষের মধ্যে স্থাপন করেছিলেন। তাঁর শক্তির চিহ্ন তিনি বন্দীদশায় পাঠালেন; তাঁর মহিমার চিহ্নটি তাঁর শত্রুদের হাতে দিলেন। তাঁর লোকদের তিনি শত্রুর তলোয়ারের হাতে তুলে দিলেন; তাঁর নিজের লোকদের উপর তাঁর ক্রোধ উপ্‌চে পড়ল। আগুন তাদের যুবকদের পুড়িয়ে ফেলল; তাদের কুমারী মেয়েদের জন্য বিয়ের গান হল না। তলোয়ারের ঘায়ে তাদের পুরোহিতেরা মারা পড়ল; তাদের বিধবারা শোক প্রকাশ করতে পারল না। তারপর প্রভু যেন ঘুম থেকে জাগলেন; তিনি আংগুর-রসের নেশা কাটিয়ে ওঠা বীরের মত করে জাগলেন। তাঁর শত্রুদের তিনি পিছু হটিয়ে দিলেন; তাদের তিনি স্থায়ী অপমানের মধ্যে ফেললেন। পরে তিনি যোষেফ-বংশের এলাকা অগ্রাহ্য করলেন, ইফ্রয়িম-গোষ্ঠীর এলাকা বেছে নিলেন না; কিন্তু বেছে নিলেন যিহূদা-গোষ্ঠীর এলাকা- সেই সিয়োন পাহাড় যাকে তিনি ভালবাসতেন। সেখানে তাঁর পবিত্র ঘরটি তিনি উঁচু করে তৈরী করলেন, তা ছিল যেন আকাশ ছোঁয়া; তিনি তা পৃথিবীর মত স্থায়ীভাবে স্থাপন করলেন। তিনি তাঁর দাস দায়ূদকে বেছে নিলেন, নিলেন তাঁকে ভেড়ার খোঁয়াড় থেকে; তাঁকে দুধ দেওয়া ভেড়ীদের দেখাশোনা করার কাজ থেকে নিয়ে আসলেন, যেন তিনি প্রভুর লোকদের, অর্থাৎ যাকোবের বংশকে, যারা তাঁর সম্পত্তি সেই ইস্রায়েল জাতিকে চরাতে পারেন। দায়ূদ তাঁর অন্তরের সততা অনুসারে তাদের পালন করলেন; তিনি তাদের বুদ্ধি-বিবেচনার সংগে চালিয়ে নিলেন। হে ঈশ্বর, অন্য জাতিরা তোমার সম্পত্তি আক্রমণ করেছে, তারা সেখানে ঢুকে পড়েছে; তোমার পবিত্র ঘরটা তারা অশুচি করেছে; যিরূশালেমকে তারা ধ্বংসের স্তূপ করেছে। তোমার দাসদের মৃতদেহগুলো তারা আকাশের পাখীদের খেতে দিয়েছে; তোমার ভক্তদের দেহের মাংস পৃথিবীর পশুদের দিয়েছে। যিরূশালেমের চারদিকে তারা জলের মত করে তাদের রক্ত ঢেলে দিয়েছে; তাদের কবর দেবার কেউ নেই। প্রতিবেশী জাতিদের কাছে আমরা নিন্দার পাত্র হয়েছি, আমাদের চারপাশের লোকদের কাছে হাসি-তামাশার খোরাক হয়েছি। হে সদাপ্রভু, আর কতকাল? তুমি কি চিরকালই অসন্তুষ্ট হয়ে থাকবে? আর কতদিন তোমার পাওনা ভক্তি না পাওয়ার জ্বালা আগুনের মত জ্বলতে থাকবে? যারা তোমাকে মেনে নেয় না সেই সব জাতির উপর তোমার ক্রোধ ঢেলে দাও, ঢেলে দাও সেই সব রাজ্যগুলোর উপর যারা তোমাকে তোমার যোগ্য সম্মান দেয় না; কারণ তারাই যাকোবের বংশকে যেন শেষ করে ফেলেছে, তার বাসস্থান ধ্বংস করেছে। পূর্বপুরুষদের অন্যায় তুমি আমাদের বিরুদ্ধে ধোরো না; তুমি শীঘ্র তোমার মমতা আমাদের দেখাও, কারণ আমরা সব দিক থেকে কাতর হয়ে পড়েছি। হে আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর, তোমার গৌরবের জন্য তুমি আমাদের সাহায্য কর; তোমার সুনাম রক্ষার জন্য আমাদের উদ্ধার কর আর আমাদের পাপ ক্ষমা কর। অন্য জাতিরা কেন বলবে, “কোথায় গেল ওদের ঈশ্বর?” তুমি আমাদের সামনেই তাদের জানিয়ে দাও যে, তোমার দাসদের রক্তপাতের শোধ তুমি নেবেই। বন্দীদের কাত্‌রানি তোমার কানে পৌঁছাক; যাদের উপর মৃত্যুর রায় দেওয়া হয়েছে তোমার মহাশক্তিতে তুমি তাদের বাঁচাও। হে প্রভু, আমাদের প্রতিবেশী জাতিরা যেভাবে তোমাকে গাল-মন্দ করেছে, তার সাতগুণ শাস্তি তুমি তাদের ফিরিয়ে দাও। তাহলে আমরা, তোমার লোকেরা, যারা তোমার চারণ ভূমির ভেড়া, চিরকাল তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাব আর বংশের পর বংশ ধরে তোমার গৌরব করব। হে ইস্রায়েলের পালক, তুমি আমাদের কথায় কান দাও; তুমি যোষেফের বংশকে ভেড়ার পালের মত করে চালিয়ে নিচ্ছ। তুমি করূবদের উপরে আছ, তোমার আলো তুমি ছড়িয়ে দাও। তুমি ইফ্রয়িম, বিন্যামীন ও মনঃশি-গোষ্ঠীর সামনে তোমার শক্তিকে জাগিয়ে তোল আর আমাদের উদ্ধার করতে এস। হে ঈশ্বর, তুমি আগের অবস্থায় আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাও; তোমার দয়া আলোর মত করে আমাদের উপর পড়ুক, আমরা তাতে উদ্ধার পাব। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু ঈশ্বর, তোমার লোকদের প্রার্থনাতে আর কতকাল তুমি অসন্তুষ্ট থাকবে? খাবার জিনিস হিসাবে তুমি চোখের জল তাদের খেতে দিয়েছ আর প্রচুর চোখের জল পান করিয়েছ। তুমি এমন করেছ যাতে প্রতিবেশী জাতিরা আমাদের নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করে। আমাদের শত্রুরা আমাদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসি-তামাশা করে। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর, আমাদের তুমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাও; তোমার দয়া আলোর মত করে আমাদের উপর পড়ুক, আমরা তাতে উদ্ধার পাব। তুমি একটা আংগুর লতার মত মিসর দেশ থেকে আমাদের আনলে; অন্যান্য জাতিদের তাড়িয়ে দিয়ে তুমি সেটা লাগালে। তুমি তার জন্য জমি পরিষ্কার করলে; তার শিকড় মাটিতে বসে সারা দেশ ছেয়ে গেল। তার ছায়ায় পাহাড়-পর্বত ঢেকে গেল; তার ডালপালা বড় বড় এরস গাছগুলো ঢেকে ফেলল। সাগর পর্যন্ত সে তার ডালপালা আর ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত তার নতুন নতুন ডাল ছড়িয়ে দিল। কেন তার রক্ষা-দেয়াল তুমি ভেংগে দিলে, যার জন্য যারা তার পাশ দিয়ে যায় তারাই তার ফল ছেঁড়ে? বনের শুয়োর এসে তা খেয়ে ফেলে; মাঠের প্রাণীরাও তা খায়। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর, তুমি ফিরে এস; স্বর্গ থেকে তুমি চেয়ে দেখ আর এই আংগুর লতার দেখাশোনা কর, যে চারাগাছকে তুমি নিজের হাতে লাগিয়েছ, যার ডাল তোমার নিজের জন্য তুমি শক্তিশালী করেছ; সেই গাছ আগুনে পুড়ে গেছে, তা কেটে ফেলা হয়েছে; তোমার লোকেরা তোমার বকুনি খেয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তোমার বেছে নেওয়া লোকের উপর তুমি হাত রাখ; হাত রাখ সেই মানুষের উপর যাকে তুমি নিজের জন্য শক্তিশালী করেছ। তাহলে আমরা আর তোমার কাছ থেকে ফিরে যাব না; তুমি আবার আমাদের জীবিত করে তোল, আমরা তোমাকে তোমার যোগ্য সম্মান দেব। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু ঈশ্বর, তুমি আগের অবস্থায় আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাও; তোমার দয়া আলোর মত করে আমাদের উপর পড়ুক, আমরা তাতে উদ্ধার পাব। ঈশ্বর, যিনি আমাদের শক্তি, তোমরা তাঁর উদ্দেশে আনন্দের ধ্বনি কর; যাকোবের ঈশ্বরের উদ্দেশে জয়ের ধ্বনি কর। গান শুরু কর, খঞ্জনি বাজাও; বাজাও মধুর বীণা আর সুরবাহার। আমাদের পর্বের দিন অমাবস্যায় আর পূর্ণিমায় শিংগা বাজাও; ওটাই ইস্রায়েলের নিয়ম, যাকোবের ঈশ্বরের আইন। যখন তিনি শাস্তি দেবার জন্য মিসর দেশের বিরুদ্ধে বের হলেন তখন যোষেফ-বংশের জন্য তিনি এই পর্ব সাক্ষ্য হিসাবে স্থাপন করলেন। আমি এমন একটা বাণী শুনলাম যা আগে বুঝি নি। সদাপ্রভু বললেন, “আমি তার কাঁধ থেকে বোঝা সরিয়ে দিলাম; ঝুড়ি বওয়া থেকে সে রেহাই পেল। বিপদে পড়ে তুমি আমাকে ডাকলে আর আমি তোমাকে উদ্ধার করলাম; বাজ পড়ার শব্দের আড়াল থেকে আমি তোমাকে উত্তর দিলাম; মরীবার জলের কাছে আমি তোমাকে পরীক্ষায় ফেললাম। [সেলা] হে আমার লোকেরা, তোমরা আমার সাবধান বাণী শোন; হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমার একান্ত ইচ্ছা যে, তোমরা আমার কথায় কান দাও। কোন দেব-দেবতা তোমাদের না থাকুক; অন্য কোন জাতির দেবতার কাছেও তোমরা মাথা নীচু কোরো না। আমিই সদাপ্রভু, তোমাদের ঈশ্বর; আমিই মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছি। তোমরা বড় করে মুখ খোল, আমি তা ভরে দেব। কিন্তু আমার লোকেরা আমার কথায় কান দিল না; ইস্রায়েল আমার বাধ্য হতে রাজী হল না। সেইজন্য আমি তাদের একগুঁয়ে অন্তরের হাতেই ফেলে রাখলাম, যাতে তারা নিজেদের ইচ্ছামত চলে। হায়, যদি আমার লোকেরা কেবল আমার বাধ্য থাকত, যদি ইস্রায়েল আমার পথে চলত, তবে শীঘ্রই আমি তাদের শত্রুদের দমন করতাম, তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে আমার হাত তুলতাম। “শত্রুরা আমার সামনে নত হতে বাধ্য হবে, তাদের শাস্তি হবে চিরকাল স্থায়ী। কিন্তু ইস্রায়েলকে আমি সবচেয়ে ভাল গম খেতে দেব; সত্যিই আমি তাদের তৃপ্ত করব সেই মধু দিয়ে যা পাহাড়ের ফাটলে পাওয়া যায়।” ঈশ্বর তাঁর বিচার-সভার মধ্যে দাঁড়িয়েছেন; তিনি শাসনকর্তাদের মাঝখানে থেকে তাদের বিচার করে আদেশ দিচ্ছেন: “আর কতকাল তোমরা অন্যায়ের শাসন চালাবে? কতকাল দুষ্টদের পক্ষে থাকবে? [সেলা] তোমরা গরীব ও অনাথদের প্রতি ন্যায়বিচার কর, দুঃখী ও অভাবীদের ন্যায্য অধিকার রক্ষা কর, গরীব ও কাংগালদের বাঁচাও; দুষ্টদের হাত থেকে তাদের রক্ষা কর।” শাসনকর্তাদের জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধি বলে কিছু নেই, তারা অন্ধকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে; জগৎ-সংসারের সব ভিত্তি টলমল করছে। আমি বলেছিলাম, “তোমরা যেন ঈশ্বর, তোমরা সবাই মহান ঈশ্বরের সন্তান। কিন্তু তবুও তোমরা মানুষের মতই মরবে; অন্যান্য শাসনকর্তাদের মতই তোমাদের পতন হবে।” হে ঈশ্বর, তুমি ওঠো, পৃথিবীর বিচার কর, কারণ সমস্ত জাতিই তোমার অধিকারে আছে। হে ঈশ্বর, তুমি চুপ করে বসে থেকো না; হে ঈশ্বর, তুমি মুখ বন্ধ করে রেখো না, সাড়া দাও। দেখ, কেমন করে তোমার শত্রুরা গর্জন করছে আর যারা তোমাকে ঘৃণা করে তারা গর্বের সংগে মাথা উঁচু করেছে। তোমার লোকদের বিরুদ্ধে তারা পরামর্শ করছে, তুমি যাদের রক্ষা করছ তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা বলছে, “চল, আমরা জাতি হিসাবে ওদের শেষ করে দিই, যেন ইস্রায়েলের নাম আর কারও মনে না থাকে।” তারা এক হয়ে ষড়যন্ত্র করছে; যারা তোমার বিরুদ্ধে চুক্তি করেছে তারা হল- তাম্বুবাসী ইদোমীয়েরা, ইশ্মায়েলীয়েরা, মোয়াবীয়েরা ও হাগারীয়েরা, গবালীয়েরা, অম্মোনীয়েরা, অমালেকীয়েরা আর সোর-বাসীদের সংগে পলেষ্টীয়েরা; এমন কি, আসিরিয়েরাও তাদের সংগে যোগ দিয়েছে আর লোটের বংশধরদের ডান হাত হয়েছে। [সেলা] তুমি মিদিয়নীয়দের প্রতি যা করেছিলে, কীশোন নদীর ধারে সীষরা আর যাবীনের প্রতি যা করেছিলে, এদের প্রতি তা-ই কর। সীষরা আর যাবীন ঐন্‌দোরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল; তারা জমির উপরে গোবরের মত পড়ে ছিল। তাদের উঁচু পদের লোকদের দশা তুমি ওরেব ও সেবের মত কর; তাদের সব শাসনকর্তাদের দশা সেবহ ও সল্‌মুন্নের মত কর। ঐ সব শত্রুরা বলেছিল, “এস, আমরা ঈশ্বরের দেওয়া দেশটা দখল করে নিই।” হে আমার ঈশ্বর, তুমি তাদের বাতাসে উড়ে যাওয়া শুকনা গাছের মত কর, বাতাসের মুখে তুষের মত কর। বনে আগুন লাগলে যেমন গাছের পর গাছ পুড়িয়ে দেয় আর আগুনের শিখা পাহাড়ের পর পাহাড় জ্বালিয়ে দেয়, তেমনি করে তোমার ঝড় দিয়ে তুমি তাদের তাড়া কর; তোমার ভয়ংকর ঝড় দিয়ে ভীষণ ভয় ধরিয়ে দাও। তুমি লজ্জা দিয়ে তাদের মুখ ঢেকে দাও, যাতে হে সদাপ্রভু, তারা তোমাকে ডাকে। তারা চিরকালের জন্য লজ্জিত হোক ও ভীষণ ভয় পাক; তারা অসম্মানের সংগে ধ্বংস হয়ে যাক। তারা যেন জানতে পারে যে, তোমার নাম সদাপ্রভু, হ্যাঁ, কেবল তুমিই সারা পৃথিবীর মহান ঈশ্বর। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, কি সুন্দর তোমার বাসস্থান! আমার প্রাণ সদাপ্রভুর ঘরের উঠানগুলো দেখবার জন্য আকুল হয়ে উঠেছে, আর সেজন্য আমার প্রাণ যেন বেরিয়ে যাচ্ছে; জীবন্ত ঈশ্বরের জন্য আমার দেহ ও মন আনন্দে চিৎকার করছে। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, আমার রাজা, আমার ঈশ্বর, তোমার বেদীর কাছে চড়াই পাখী ঘর পেয়েছে, খঞ্জন পাখীও বাচ্চা রাখবার বাসা পেয়েছে। ধন্য তারা, যারা তোমার ঘরে থাকে; তারা সব সময় তোমার গৌরব করে। [সেলা] তোমার কাছ থেকে যারা শক্তি পায় তারা ধন্য। ধন্য তারা, যাদের অন্তরে সিয়োনে যাবার পথের চিন্তা রয়েছে। বাকা-উপত্যকার মধ্য দিয়ে যাবার সময় তারা জায়গাটাকে ফোয়ারার স্থান করে তোলে; প্রথম বর্ষার বৃষ্টি সেই জায়গাটাকে আশীর্বাদে ভরে দেয়। যাওয়ার পথে তারা শক্তির উপরে শক্তি পায়; তারা প্রত্যেকে সিয়োনে ঈশ্বরের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়। হে সদাপ্রভু, সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর, আমার প্রার্থনা শোন; হে যাকোবের ঈশ্বর, আমার কথায় কান দাও। [সেলা] হে ঈশ্বর, আমাদের ঢালকে দেখ; তোমার এই অভিষিক্ত লোকের উপর তোমার দয়ার চোখ রাখ। অন্য জায়গায় হাজার দিন কাটানোর চেয়ে তোমার ঘরের উঠানগুলোতে একটা দিন কাটানো অনেক ভাল; দুষ্ট লোকদের তাম্বুর মধ্যে বাস করার চেয়ে বরং আমার ঈশ্বরের ঘরের দরজার চৌকাঠের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ভাল। সত্যি ঈশ্বর সদাপ্রভুই সূর্য ও ঢালের মত; তিনি দয়া ও গৌরব দান করেন। যারা সৎ ভাবে চলে তাদের কোন ভাল জিনিস দিতে তিনি অস্বীকার করেন না। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, যে তোমার উপর নির্ভর করে সে ধন্য। হে সদাপ্রভু, তোমার দেশের প্রতি তুমি দয়া দেখিয়েছ; তুমি যাকোবকে তার বন্দীদশা থেকে ফিরিয়ে এনেছ। তোমার লোকদের অন্যায় তুমি ক্ষমা করেছ; তুমি তাদের সব পাপ ঢেকে দিয়েছ। [সেলা] তোমার সমস্ত উপ্‌চে পড়া ক্রোধ তুমি দূর করে দিয়েছ আর তোমার জ্বলন্ত ক্রোধ থেকে ফিরেছ। হে আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর, তুমি আমাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আন; আমাদের প্রতি তোমার অসন্তোষ তুমি থামাও। চিরকাল কি তুমি আমাদের উপর তোমার ক্রোধ বজায় রাখবে? বংশের পর বংশ ধরে কি তুমি ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েই থাকবে? তোমার লোকেরা যাতে তোমাকে নিয়েই আনন্দিত হতে পারে সেজন্য কি তুমি তাদের আবার জীবিত করে তুলবে না? হে সদাপ্রভু, তোমার অটল ভালবাসা তুমি আমাদের দেখাও আর আমাদের উদ্ধার কর। সদাপ্রভু ঈশ্বর যা বলবেন আমি তা শুনব; তাঁর লোকদের কাছে, তাঁর ভক্তদের কাছে তিনি শান্তির কথা বলবেন; কিন্তু তারা যেন আর বোকামির দিকে না ফেরে। যারা তাঁকে ভক্তি করে সত্যিই তাঁর উদ্ধার করার সময় তাদের কাছে এসে গেছে; এতে তাঁর মহিমা আমাদের দেশে বাস করবে। অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার মিলন ঘটবে; ন্যায় এবং মংগল একে অন্যকে চুম্বন করবে। দেশের মাটি থেকে বিশ্বস্ততা গজিয়ে উঠবে; স্বর্গ থেকে ন্যায় নীচে তাকিয়ে দেখবে। যা ভাল সদাপ্রভু সত্যিই তা দেবেন, আর আমাদের দেশ ফসল দান করবে। ন্যায় তাঁর আগে আগে চলবে; সে তাঁরই পায়ের চিহ্নে চলার পথ গড়ে দেবে। হে সদাপ্রভু, আমার কথায় কান দাও আর আমাকে উত্তর দাও, কারণ আমি দুঃখী আর অভাবী। আমার প্রাণ বাঁচাও, কারণ আমি তোমার ভক্ত; হে আমার ঈশ্বর, যে দাস তোমার উপর নির্ভর করছে তাকে তুমি রক্ষা কর। হে প্রভু, আমার প্রতি দয়া কর, কারণ আমি সারা দিন তোমাকেই ডাকি। তোমার দাসের মনে আনন্দ দাও, কারণ হে প্রভু, আমার অন্তর আমি তোমার দিকেই তুলে ধরছি। হে প্রভু, তুমি মংগলময় ও ক্ষমাশীল; যারা তোমাকে ডাকে তাদের প্রতি তুমি ভালবাসায় ভরপুর। হে সদাপ্রভু, আমার প্রার্থনায় কান দাও; আমার মিনতির কান্না তুমি শোন। বিপদের দিনে আমি তোমাকে ডাকব, কারণ তুমি আমাকে উত্তর দেবে। হে প্রভু, দেবতাদের মধ্যে তোমার মত কেউ নেই; তোমার কাজের সংগে অন্য কোন কাজের তুলনা হয় না। হে প্রভু, তোমার সৃষ্ট সমস্ত জাতি এসে তোমার সামনে শ্রদ্ধায় মাথা নত করবে; তারা তোমার গুণগান করবে। তুমি মহান আর আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করে থাক; একমাত্র তুমিই ঈশ্বর। হে সদাপ্রভু, তোমার পথ সম্বন্ধে আমাকে শিক্ষা দাও, যাতে আমি তোমার সত্যে চলতে পারি; তোমাকে ভক্তি করার জন্য আমার দোটানা অন্তরকে তুমি এক কর। হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি সমস্ত অন্তর দিয়ে তোমার গৌরব করব; চিরকাল তোমার গুণগান করব। আমার প্রতি তোমার অটল ভালবাসার সীমা নেই; মৃতস্থানের সবচেয়ে নীচু জায়গা থেকে তুমি আমার প্রাণ রক্ষা করেছ। হে ঈশ্বর, অহংকারীরা আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে; অত্যাচারীর দল আমার প্রাণ নেবার চেষ্টা করছে। তোমার প্রতি সেই লোকদের কোন ভক্তি নেই। কিন্তু হে প্রভু, তুমি মমতায় পূর্ণ দয়াময় ঈশ্বর; তুমি সহজে অসন্তুষ্ট হও না, তোমার অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার সীমা নেই। তুমি আমার দিকে ফেরো এবং আমাকে দয়া কর; তোমার দাসকে তোমার শক্তি দান কর; তোমার দাসীর ছেলেকে রক্ষা কর। তোমার মংগল ইচ্ছার প্রমাণ আমাকে দেখাও, যাতে আমাকে যারা ঘৃণা করে তারা তা দেখে লজ্জা পায়; কারণ হে সদাপ্রভু, তুমিই আমাকে সাহায্য করেছ আর সান্ত্বনা দিয়েছ। সদাপ্রভু পবিত্র পাহাড়শ্রেণীর উপরে তাঁর শহর স্থাপন করেছেন। যাকোব-বংশের অন্য সব বাসস্থানের চেয়ে তিনি সিয়োনের ফটকগুলো ভালবাসেন। হে ঈশ্বরের শহর, তোমার সম্বন্ধে অনেক গৌরবের কথা বলা হয়েছে। [সেলা] সদাপ্রভু বলছেন, “যারা আমাকে সত্যিই জানে তাদের বিষয় বলার সময় আমি রহব ও বাবিলের কথা বলব, আর ঐ যে পলেষ্টীয়া, সোর ও কূশ, তাদের কথাও বলব, ‘এরা প্রত্যেকেই যেন সিয়োনে জন্মেছে।’ ” আর সিয়োনের ব্যাপারে বলা হবে, “বিভিন্ন জাতির লোক তার মধ্যে জন্মেছে; মহান ঈশ্বর নিজেই সিয়োনকে তুলে ধরবেন।” সদাপ্রভু জাতির তালিকা করার সময় এই কথা বলবেন, “এ সিয়োনে জন্মেছে।” [সেলা] যারা গাইবে ও যারা নাচবে তারা বলবে, “আমার সব আনন্দের ফোয়ারা তোমারই মধ্যে রয়েছে।” হে সদাপ্রভু, আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর, আমি দিনরাত তোমার কাছে কাঁদছি। তোমার সামনে আমার প্রার্থনা উপস্থিত হোক; তুমি আমার কান্না শোন; কারণ আমার অন্তর দুঃখে ভরা; আমার প্রাণ প্রায় মৃতস্থানের কাছে চলে গেছে। যারা মৃতস্থানে যাবে তাদের মধ্যেই আমাকে ধরা হয়েছে; শক্তিশালী হয়েও যে শক্তিহীন হয়ে পড়েছে আমি তারই মত হয়েছি। আমাকে যেন মৃতদের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে; আমি মেরে ফেলা, কবরে শুয়ে থাকা লোকদের মতই হয়েছি, যাদের কথা তুমি আর মনেও কর না, যারা তোমার সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তুমি আমাকে মৃতস্থানের সবচেয়ে নীচু জায়গায় রেখেছ, রেখেছ অন্ধকারময় গভীর জায়গায়। তোমার ক্রোধ আমার উপরে চেপে বসে আছে; তোমার সমস্ত ক্রোধের ঢেউ দিয়ে তুমি আমাকে তলিয়ে দিচ্ছ। [সেলা] আমার নিজের লোকদের আমার কাছ থেকে তুমি সরিয়ে নিয়েছ; তাদের কাছে তুমি আমাকে ঘৃণার জিনিস করে তুলেছ। আমি আট্‌কা পড়ে গেছি, বেরিয়ে আসতে পারছি না; দুঃখ-কষ্টে চোখ আমার ঝাপ্‌সা হয়ে গেছে। হে সদাপ্রভু, প্রতিদিন আমি তোমাকে ডাকি; আমি তোমার দিকে আমার হাত বাড়িয়ে রেখেছি। যারা মারা গেছে, তাদের জন্য কি তুমি আশ্চর্য কাজ কর? মৃতেরা উঠে কি তোমার প্রশংসা করবে? [সেলা] কবরের মধ্যে কি তোমার অটল ভালবাসা আর নরকে কি তোমার বিশ্বস্ততার কথা প্রচার করা হবে? অন্ধকার স্থানে কি তোমার আশ্চর্য কাজ বুঝা যাবে? যে দেশের লোকদের লোকে ভুলে যায় সেখানে কি তোমার ন্যায় কাজ বুঝা যাবে? হে সদাপ্রভু, আমি, আমি তোমার কাছে সাহায্যের জন্য কাঁদি; সকাল বেলায় তোমার কাছে আমার প্রার্থনা পৌঁছায়। হে সদাপ্রভু, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করছ? তোমার মুখ আমার কাছ থেকে কেন লুকিয়ে রাখছ? ছেলেবেলা থেকেই আমি দুঃখের মধ্যে পড়ে আছি আর মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আছি। তোমার ভয়ানক শাস্তি আমার উপর নেমে আসছে; আমি বড়ই অসহায়। তোমার ভয়ংকর ক্রোধ আমার উপর দিয়ে বয়ে গেছে; তোমার ভয়-জাগানো আঘাত আমাকে শেষ করে দিয়েছে। সেগুলো জলের মত করে সারা দিন আমাকে ঘিরে রেখেছে, আমাকে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দিয়েছে। আমার সংগী যারা, প্রিয় যারা, তাদের তুমি আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছ; এখন অন্ধকারই আমার বন্ধু। আমি চিরকাল সদাপ্রভুর অটল ভালবাসার গান গাইব; বংশের পর বংশ ধরে সকলের সামনে তোমার বিশ্বস্ততার কথা জানাব। আমি ঘোষণা করব যে, তোমার ভালবাসার কাজ চিরকাল ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে; তোমার বিশ্বস্ততা স্বর্গেই তুমি স্থাপন করছ। তুমি বলেছ, “আমার বাছাই করা লোকের জন্য আমি একটা ব্যবস্থা স্থাপন করেছি; আমার দাস দায়ূদের কাছে আমি এই শপথ করেছি, ‘তোমার বংশকে আমি চিরকালের জন্য স্থাপন করব; বংশের পর বংশ ধরে তোমার সিংহাসন স্থির রাখব।’ ” [সেলা] হে সদাপ্রভু, স্বর্গের সব কিছু তোমার সুন্দর মহান কাজের গুণগান করে, পবিত্র দূতদের মধ্যে তোমার বিশ্বস্ততার গৌরব করে। স্বর্গের মধ্যে এমন কে আছে যাকে সদাপ্রভুর সংগে তুলনা করা যায়? স্বর্গদূতদের মধ্যে কে সদাপ্রভুর সমান? পবিত্র দূতদের সভায় সকলে ঈশ্বরকে ভয় ও ভক্তি করে; তাঁর চারপাশের সকলের চেয়ে তিনিই বেশী ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগান। হে সদাপ্রভু, সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর, কে আছে তোমার মত শক্তিমান, হে সদাপ্রভু? তোমার বিশ্বস্ততা তোমাকে ঘিরে রয়েছে। ফুলে ওঠা সাগরের ঢেউ তোমার শাসনে থাকে; তার ঢেউ উঠলে তাকে তুমিই শান্ত কর। তুমি রহবকে চুরমার করে মেরে ফেলা লোকের মত করেছ; তোমার শক্তিশালী হাতে তোমার শত্রুদের তুমি ছড়িয়ে দিয়েছ। মহাকাশ তোমার, জগৎও তোমার; এই পৃথিবী ও তার মধ্যেকার সব কিছু তুমিই স্থাপন করেছ। উত্তর ও দক্ষিণ তোমারই সৃষ্টি; তাবোর ও হর্মোণ পাহাড় তোমাকে নিয়ে আনন্দের গান করে। তোমার হাত ক্ষমতায় ভরা; তোমার হাতে রয়েছে শক্তি, তোমার ডান হাতের শক্তির তুলনা নেই। সততা ও ন্যায়বিচারের উপর তোমার সিংহাসন দাঁড়িয়ে আছে; ভালবাসা ও বিশ্বস্ততা তোমার আগে আগে চলে। ধন্য সেই লোকেরা, যারা সেই আনন্দের ধ্বনি চেনে; হে সদাপ্রভু, তারা তোমার দয়ার দৃষ্টির আলোতে চলাফেরা করে। সারা দিন ধরে তোমাকে ঘিরেই তাদের আনন্দ; তোমার সততা তাদের উঁচুতে তোলে। তুমিই তো তাদের শক্তির সৌন্দর্য; তোমার দয়াই আমাদের শক্তির শিং উঁচুতে তোলে। আমাদের রাজাকে ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন নিযুক্ত করেছেন; আমাদের সেই ঢাল সদাপ্রভুরই নিযুক্ত। একবার তুমি দর্শনে তোমার ভক্তদের বলেছিলে, “আমি এক বীরকে সাহায্য করেছি; লোকদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিয়ে উঁচুতে তুলেছি। আমার দাস দায়ূদকে আমি খুঁজে পেয়েছি; আমার পবিত্র তেল দিয়ে তাকে অভিষেক করেছি। আমার শক্তির হাত তার সংগে থাকবে; আমার হাতই তাকে শক্তি দান করবে। কোন শত্রু তার উপরে উঠতে পারবে না; কোন দুষ্ট লোক তাকে অত্যাচার করতে পারবে না। তার সামনেই আমি তার বিপক্ষদের চুরমার করে ফেলব আর যারা তাকে ঘৃণা করে তাদের আঘাত করব। আমার বিশ্বস্ততা ও অটল ভালবাসা তার সংগে থাকবে; আমার নামেই তার শক্তির শিং উঁচুতে উঠবে। আমি সাগরের উপরে আর নদীর উপরে তাকে ক্ষমতা দেব। সে আমাকে ডেকে বলবে, ‘তুমিই আমার পিতা, আমার ঈশ্বর, আমার রক্ষাকারী পাহাড়।’ আমিও তাকে আমার প্রথম সন্তান করব; পৃথিবীর রাজাদের মধ্যে তাকে প্রধান করব। চিরকাল তার প্রতি আমার ভালবাসা থাকবে; তারই জন্য আমার স্থাপন করা ব্যবস্থা অটল থাকবে। আমি তার বংশকে চিরকাল স্থায়ী করব; যতদিন আকাশ থাকবে তার সিংহাসনও ততদিন থাকবে। তার ছেলেরা যদি আমার নির্দেশ থেকে দূরে সরে যায় আর আমার আইন-কানুন মেনে না চলে, যদি তারা আমার নিয়ম অমান্য করে আর আমার আদেশ পালন না করে, তবে বেত মেরে আমি তাদের পাপের শাস্তি দেব, তাদের অন্যায়ের শাস্তি দেব। কিন্তু আমার অটল ভালবাসা আমি তার উপর থেকে তুলে নেব না; আমার বিশ্বস্ততা মিথ্যা হতে দেব না। আমার স্থাপন করা ব্যবস্থা আমি খেলাপ করব না; আমার মুখ যা বলেছে তা বদলাব না। আমার পবিত্রতার শপথ করে আমি একবারই বলে রেখেছি- আমি দায়ূদের কাছে কখনও মিথ্যা বলব না; তার বংশ চিরকাল থাকবে; তার সিংহাসন আমার সামনে সূর্যের মত টিকে থাকবে। আকাশের বিশ্বস্ত সাক্ষী চাঁদের মত তা চিরকালের জন্য স্থাপন করা হবে।” [সেলা] কিন্তু তুমিই ত্যাগ করেছ, পায়ে ঠেলেছ; তোমার অভিষিক্ত লোকের প্রতি তুমি ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছ। তোমার দাসের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছ তা তুমি পায়ে মাড়িয়েছ; তাঁর মুকুট তুমি মাটিতে ফেলে অশুচি করেছ। তাঁর রক্ষা-দেয়াল তুমি ভেংগে দিয়েছ; তাঁর সব দুর্গ ধ্বংস করেছ। যারা তাঁর দেশের পাশ দিয়ে যায় তারা তাঁর সব কিছু লুট করে; তাঁর প্রতিবেশী জাতিদের কাছে তিনি নিন্দার পাত্র হয়েছেন। তুমি তাঁর বিপক্ষদের শক্তিশালী করেছ; তাঁর শত্রুদের আনন্দিত করেছ। তুমি তাঁর তলোয়ার অকেজো করে দিয়েছ; তুমি যুদ্ধে তাঁকে টিকতে দাও নি। তাঁর জাঁকজমক তুমি শেষ করে দিয়েছ; তাঁর সিংহাসন মাটিতে ফেলেছ। তাঁর যৌবনের দিনগুলো তুমি কমিয়ে দিয়েছ, লজ্জা দিয়ে তাঁকে ঢেকে দিয়েছ। [সেলা] হে সদাপ্রভু, আর কতকাল? চিরকালই কি তুমি নিজেকে লুকিয়ে রাখবে? আর কতকাল তোমার ক্রোধ আগুনের মত জ্বলবে? ভেবে দেখ আমার জীবনকাল কত ছোট; কি অসারতার জন্যই না তুমি মানুষকে সৃষ্টি করেছ! কে সেই শক্তিশালী মানুষ, যে বেঁচেই থাকবে, মরবে না? এমন কে আছে, যে মৃতস্থানের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে? [সেলা] হে প্রভু, কোথায় তোমার সেই আগেকার অটল ভালবাসা? তোমার বিশ্বস্ততার দরুন সেই ভালবাসার শপথ তুমি দায়ূদের কাছে করেছিলে। হে প্রভু, তোমার দাসদের যে অপমান করা হয়েছে তা তুমি মনে করে দেখ; মনে করে দেখ, অন্যান্য জাতির করা সেই অপমান কেমন করে আমি বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি। হে সদাপ্রভু, তোমার শত্রুরা সেই অপমান করেছে; অপমান করেছে তোমার অভিষিক্ত লোককে তাঁর প্রতিটি ব্যাপারে। চিরকাল সদাপ্রভুর গৌরব হোক! আমেন, আমেন। চতুর্থ খণ্ড ৎ (90-106) হে প্রভু, বংশের পর বংশ ধরে তুমিই আমাদের বাসস্থান। যখন পাহাড়-পর্বতের সৃষ্টি হয় নি, জগৎ ও পৃথিবীর সৃষ্টি হয় নি, তার আগে থেকেই অনন্তকাল পর্যন্ত তুমিই ঈশ্বর। মানুষকে তুমি ধূলিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাও; তুমি বলে থাক, “হে মানুষের সন্তানেরা, তোমরা আবার ধূলিতে ফিরে যাও।” তোমার চোখে হাজার বছর যেন চলে যাওয়া গতকাল, যেন রাতের একটা প্রহর মাত্র। তুমি মানুষকে যেন বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছ, তারা স্বপের মত; তারা যেন সকাল বেলার ঘাস, নতুন করে বেড়ে ওঠা ঘাস। সকালে তা গজিয়ে উঠে বেড়ে উঠতে থাকে; সন্ধ্যায় তা শুকিয়ে শেষ হয়ে যায়। তোমার ক্রোধে আমরা শেষ হয়ে যাই; তোমার জ্বলন্ত ক্রোধে ভীষণ ভয় পাই। আমাদের অন্যায় তুমি তোমার সামনে রেখে থাক; তোমার উপস্থিতির আলোতে আমাদের গুপ্ত পাপ প্রকাশ পায়। তোমার ভীষণ ক্রোধের নীচে আমাদের দিন কেটে যায়; নিঃশ্বাসের মতই আমাদের বছরগুলো শেষ হয়ে যায়। আমাদের আয়ু মাত্র সত্তর বছর, শক্তি থাকলে আশি বছরও হয়; আমাদের আয়ু যতই হোক না কেন তাতে থাকে কেবল দুঃখ আর কষ্ট; বছর চলে যায় চোখের পলকে আর আমরাও শেষ হয়ে যাই। তোমার ক্রোধের শক্তি কে বুঝতে পারে? কতজনের অন্তরে তোমার পাওনা ভক্তি আছে, যাতে তারা তোমার ক্রোধ বুঝতে পারে? তাহলে তুমি আমাদের বুঝতে দাও যে, আমাদের আয়ু কত অল্প, যাতে আমাদের অন্তর জ্ঞানে ভরে ওঠে। হে সদাপ্রভু, আর কতকাল? এবার তুমি ফেরো, তোমার দাসদের প্রতি মমতা দেখাও। নতুন করে তোমার অটল ভালবাসা দিয়ে আমাদের তৃপ্ত কর, যেন আমরা আনন্দে গান গাইতে পারি আর খুশীতে জীবন কাটাতে পারি। যতকাল ধরে তুমি আমাদের অহংকার ভেংগে দেবার কাজ করেছ, যত বছর আমরা কষ্টের মধ্যে ছিলাম, ততকাল তুমি আমাদের সুখে রাখ। তোমার দাসদের কাছে তোমার কাজ আর তাদের সন্তানদের কাছে তোমার গৌরব তুমি প্রকাশ কর। আমাদের প্রভু ঈশ্বরের দয়া আমাদের উপরে থাকুক; আমাদের সব কাজ তুমি সফল কর, হ্যাঁ, আমাদের সব কাজে তুমি সফলতা দান কর। মহান ঈশ্বরের আশ্রয়ে যে বাস করে সে সর্বশক্তিমানের ছায়ায় থাকে। সদাপ্রভুর সম্বন্ধে আমি এই কথা বলব, “তিনিই আমার আশ্রয় ও আমার দুর্গ; তিনিই আমার ঈশ্বর যাঁর উপরে আমি নির্ভর করি।” তিনি তোমাকে শিকারীদের ফাঁদ থেকে আর সর্বনাশা মড়কের হাত থেকে রক্ষা করবেন। তাঁর পালখে তিনি তোমাকে ঢেকে রাখবেন, তাঁর ডানার নীচে তুমি আশ্রয় পাবে; তাঁর বিশ্বস্ততা তোমার ঢাল ও দেহ-রক্ষাকারী বর্ম হবে। রাতের বিপদ আর দিনের আক্রমণকে তুমি ভয় করবে না; ভয় করবে না অন্ধকারের চলমান মড়ককে কিম্বা দুপুরের ধ্বংসকারী আঘাতকে। হয়তো তোমার একদিকে পড়বে হাজার খানেক, আর হাজার দশেক পড়বে অন্য দিকে, কিন্তু এ সব তোমার কাছেই আসবে না। দুষ্ট লোকেরা কেমন পাওনা পায় তুমি কেবল তা চোখে দেখবে। “হে সদাপ্রভু, তুমিই আমার আশ্রয়স্থান।” তুমি স্থির করেছ মহান ঈশ্বরই তোমার বাসস্থান; সেজন্য তোমার কোন সর্বনাশ হবে না, তোমার বাড়ীর উপর কোন আঘাত পড়বে না; কারণ তিনি তাঁর দূতদের তোমার বিষয়ে আদেশ দেবেন যেন সব অবস্থায় তাঁরা তোমাকে রক্ষা করেন। তাঁরা হাত দিয়ে তোমাকে ধরে ফেলবেন যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে। তুমি সিংহ আর কেউটে সাপের উপর দিয়ে হেঁটে যাবে, যুব সিংহ ও সাপকে পায়ে দলে যাবে। সদাপ্রভু বলছেন, “ভালবাসা দিয়ে যে আমাকে আঁকড়ে ধরেছে, তাকে আমি রক্ষা করব; আমি তাকে বিপদের নাগালের বাইরে রাখব, কারণ সে আমাকে সত্যিই চিনেছে। সে আমাকে ডাকলে আমি তাকে সাড়া দেব; বিপদের সময় আমি তার সংগে থাকব; তাকে আমি রক্ষা করব আর সম্মানের স্থান দেব। অনেক আয়ু দিয়ে আমি তাকে খুশী করব; আমার উদ্ধারের কাজ আমি তাকে দেখাব।” হে সদাপ্রভু, তোমার কাজ আমাকে আনন্দিত করেছে; তোমার সব কাজের জন্য আমি আনন্দে গান গাইব। হে সদাপ্রভু, তোমার সব কাজ কেমন মহৎ আর তোমার চিন্তা কত গভীর! যার অন্তর অসাড় সে তা জানে না; যার মধ্যে বিবেচনা নেই সে তা বুঝতে পারে না। দুষ্ট লোকেরা যদিও ঘাসের মত বেড়ে ওঠে আর অন্যায়কারীরা ফেঁপে ওঠে তাড়াতাড়ি, তবুও তারা চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু হে সদাপ্রভু, তুমি চিরকাল সবার উপরে থাকবে। হে সদাপ্রভু, তোমার শত্রুরা ধ্বংস হয়ে যাবে, হ্যাঁ, তারাই ধ্বংস হয়ে যাবে; অন্যায়কারীরা সবাই ছড়িয়ে পড়বে। বুনো ষাঁড়ের উঁচু শিংয়ের মত তুমি আমার মাথা উঁচুতে তুলে ধরেছ; আনন্দে আমার উপর নতুন তেল ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আমার শত্রুদের পরাজয় আমি নিজের চোখেই দেখেছি; যারা আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে সেই দুষ্ট লোকদের কান্না আমি নিজের কানে শুনেছি। ঈশ্বরভক্ত লোক খেজুর গাছের মত ফুলে-ফলে ভরে উঠবে; সে লেবাননের এরস গাছের মত বেড়ে উঠবে। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাড়ীতে যাদের লাগানো হয়েছে তারা তাঁরই উঠানে বেড়ে উঠবে। শেষ বয়সেও তারা ফল দেবে; তারা সরস ও তাজা হবে। তাতে প্রচারিত হবে, সদাপ্রভু ন্যায়বান; তিনিই আমার শক্তি, তাঁর মধ্যে কোন অন্যায় নেই। সদাপ্রভুই রাজা; তিনি মহিমার রাজপোশাক পরেছেন, তিনি শক্তিতে কোমর বেঁধেছেন; পৃথিবী অটলভাবে স্থাপিত হয়েছে, তা কখনও নড়বে না। প্রথম থেকেই তোমার সিংহাসন অটল; তুমি চিরকাল আছ। হে সদাপ্রভু, বন্যার জলে গর্জন উঠেছে, সেই জল গর্জন করছে; ফুলে ওঠা ঢেউগুলো ভেংগে পড়ছে। বন্যার জলের গর্জনের চেয়ে, সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউয়ের চেয়ে সদাপ্রভু শক্তিমান, যিনি উপরে আছেন। তোমার সব বাক্য নির্ভরযোগ্য; হে সদাপ্রভু, তোমার ঘর পবিত্রতার সাজে চিরকাল সাজানো। হে সদাপ্রভু, অন্যায়ের শাস্তি দেবার অধিকারী ঈশ্বর, হে অন্যায়ের শাস্তি দেবার অধিকারী ঈশ্বর, তোমার আলো প্রকাশিত হোক। হে জগতের বিচারকর্তা, তুমি ওঠো; অহংকারীদের যা পাওনা তা তুমি তাদের দাও। আর কতকাল, হে সদাপ্রভু, আর কতকাল দুষ্ট লোকেরা আনন্দে মেতে থাকার সুযোগ পাবে? তাদের মুখ থেকে কেবল দেমাক-ভরা কথার স্রোত বের হয়ে আসে; সেই অন্যায়কারীর দল বড়াই করে বেড়ায়। হে সদাপ্রভু, তারা তোমার লোকদের দলে-পিষে মারছে; যারা তোমার নিজের সম্পত্তি তাদের উপর তারা জুলুম করছে। বিধবা আর বিদেশীদের তারা মেরে ফেলছে আর অনাথদের খুন করছে। তারা বলছে, “এদিকে সদাপ্রভুর চোখ নেই; যাকোবের ঈশ্বর খেয়াল করেন না।” অসাড় অন্তরের লোকেরা, তোমরা কান দাও; ওহে বিবেচনাহীন লোকেরা, কবে তোমাদের সুবুদ্ধি হবে? যিনি কান সৃষ্টি করেছেন তিনি কি শুনতে পান না? যিনি চোখ গড়েছেন তাঁর কি দেখার শক্তি নেই? যিনি সব জাতিকে শাসন করেন ও মানুষকে শিক্ষা দেন তিনি কি শাস্তি না দিয়ে থাকবেন? সদাপ্রভু মানুষের সব চিন্তা জানেন; তিনি জানেন যে, সে সবই নিষ্ফল। হে সদাপ্রভু, সেই লোক ধন্য যাকে তুমি শাসনে রাখ আর তোমার আইন-কানুুন শিক্ষা দাও, যাতে বিপদের দিনে সে সাহস পায়, যে পর্যন্ত না দুষ্ট লোকদের জন্য গর্ত তৈরী শেষ হয়। সদাপ্রভু কখনও তাঁর লোকদের ত্যাগ করবেন না; যারা তাঁর নিজের সম্পত্তি তাদের তিনি ফেলে দেবেন না। বিচারের রায় আবার ন্যায়পূর্ণ হয়ে উঠবে; যাদের অন্তর খাঁটি তারা সবাই তা মেনে চলবে। কে আমার পক্ষ হয়ে দুষ্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে? আমার পক্ষ হয়ে অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবে? যদি সদাপ্রভু আমাকে সাহায্য না করতেন, তবে মৃত্যুর নীরবতায় চলে যেতে আমার দেরি হত না। যখনই আমি ভাবি আমার পা পিছ্‌লে যাচ্ছে, তখনই হে সদাপ্রভু, তোমার অটল ভালবাসা আমাকে ধরে রাখে। আমার মনে যখন দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়, তখন তোমার দেওয়া সান্ত্বনা আমার অন্তরকে আনন্দিত করে। মন্দ শাসনকর্তারা মন্দ কাজের জন্য আইন তৈরী করে; তোমার সংগে তাদের কি কোন সম্বন্ধ থাকতে পারে? তারা সৎ লোকের বিরুদ্ধে দল পাকায় আর নির্দোষকে মৃত্যুর শাস্তি দেবার জন্য দোষী বানায়। কিন্তু সদাপ্রভুই আমার দুর্গ; আমার ঈশ্বরই আমার আশ্রয়-পাহাড়। তাদের অন্যায় তিনি তাদেরই মাথার উপর নিয়ে আসবেন, তাদের দুষ্টতাতেই তিনি তাদের শেষ করে দেবেন; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তা করবেন। এস, আমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আনন্দের গান গাই; আমাদের রক্ষাকারী পাহাড়ের উদ্দেশে আনন্দধ্বনি করি। চল, আমরা ধন্যবাদ দিতে দিতে তাঁর সামনে যাই, গানের মধ্য দিয়ে তাঁর উদ্দেশে আনন্দধ্বনি করি। সদাপ্রভুই মহান ঈশ্বর; সমস্ত দেব-দেবতার উপরে তিনিই মহান রাজা। পৃথিবীর সব গভীর স্থান তাঁরই হাতে রয়েছে; পাহাড়ের চূড়াগুলোও তাঁর। সমুদ্র তাঁর, কারণ তিনিই তা তৈরী করেছেন; ভূমিও তাঁর হাতে গড়া। এস, আমরা মাথা নীচু করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই; আমাদের সৃষ্টিকর্তা সদাপ্রভুর সামনে হাঁটু পাতি। তিনিই আমাদের ঈশ্বর, আমরা তাঁরই লোক; তাঁর চারণ ভূমির ভেড়ার মত তিনি আমাদের দেখাশোনা করেন। আহা, আজ যদি তোমরা তাঁর কথায় কান দাও! চল্লিশ বছর ধরে সেই সময়কার লোকদের উপর আমি বিরক্ত ছিলাম; আমি বলেছিলাম, ‘এই লোকদের অন্তর বিপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে; তারা আমার পথ জানল না।’ সেইজন্য আমি ক্রোধে শপথ করে বলেছিলাম, ‘আমার দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় তারা যেতে পারবে না।’ ” তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নতুন গান গাও; পৃথিবীর সব লোক, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান কর। সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান গাও, তাঁর গৌরব কর; তাঁর দেওয়া উদ্ধারের কথা দিনের পর দিন প্রচার কর। বিভিন্ন জাতির মধ্যে তাঁর মহিমার কথা ঘোষণা কর; সমস্ত লোকের মধ্যে তাঁর সব আশ্চর্য কাজের কথা ঘোষণা কর। সদাপ্রভুই মহান এবং সবার উপরে প্রশংসার যোগ্য; সব দেব-দেবতার চেয়ে তিনি বেশী ভয় জাগান। বিভিন্ন জাতির দেব-দেবতারা অসার মাত্র, কিন্তু সদাপ্রভু মহাকাশের সৃষ্টিকর্তা। তাঁকেই ঘিরে রয়েছে গৌরব ও মহিমা; তাঁর পবিত্র ঘরে রয়েছে শক্তি ও সৌন্দর্য। হে বিভিন্ন জাতির সমস্ত গোষ্ঠী, স্বীকার কর সমস্ত গৌরব ও শক্তি সদাপ্রভুরই। তোমরা স্বীকার কর সমস্ত গৌরব সদাপ্রভুর; উৎসর্গের জিনিস নিয়ে তাঁর উঠানে এস। সদাপ্রভুর মহিমাপূর্ণ পবিত্রতার কথা ভেবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাও; পৃথিবীর সমস্ত লোক, তোমরা তাঁর সামনে কেঁপে ওঠো। বিভিন্ন জাতির মধ্যে ঘোষণা কর, “সদাপ্রভুই রাজা। পৃথিবী অটলভাবে স্থাপিত হল, তা কখনও নড়বে না; তিনি ন্যায়ভাবে সব জাতিকে শাসন করবেন।” আকাশ আনন্দ করুক, পৃথিবী খুশী হোক; সাগর ও তার মধ্যেকার সব কিছু গর্জন করুক; মাঠ ও তার মধ্যেকার সব কিছু আনন্দিত হোক। তাহলে বনের সব গাছপালাও আনন্দে গান করবে; তারা সদাপ্রভুর সামনে গান করবে, কারণ তিনি আসছেন। তিনি জগতের বিচার করতে আসছেন। তিনি ন্যায়ভাবে পৃথিবীর বিচার করবেন, আর জাতিদের বিচার করবেন বিশ্বস্তভাবে। সদাপ্রভুই রাজা; পৃথিবী আনন্দ করুক, দূর-দূরান্তের অসংখ্য দ্বীপ খুশী হোক। তাঁর চারপাশে মেঘ ও অন্ধকার দিয়ে ঘেরা; সততা ও ন্যায়বিচারের উপর তাঁর সিংহাসন দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর আগে আগে চলছে আগুন; সেই আগুন তাঁর চারদিকের সব শত্রুদের পুড়িয়ে ফেলছে। তাঁর বিদ্যুতের ঝলকে জগৎ আলোময় হয়েছিল; তা দেখে পৃথিবী কেঁপেছিল। সদাপ্রভুর সামনে, সমস্ত দুনিয়ার প্রভুর সামনে পাহাড়-পর্বত মোমের মত গলে গিয়েছিল। মহাকাশ তাঁর ন্যায়ের কথা ঘোষণা করছে, আর সমস্ত জাতি তাঁর গৌরব দেখছে। যারা মূর্তিপূজা করে আর দেব-দেবতা নিয়ে বড়াই করে তারা সবাই লজ্জায় পড়ুক; সদাপ্রভুর সামনে দেব-দেবীরা মাথা নীচু করুক। হে সদাপ্রভু, তোমার ন্যায়বিচারের কথা শুনে সিয়োন আনন্দিত হয়েছে, যিহূদার গ্রামগুলো খুশী হয়েছে। হে সদাপ্রভু, তুমি সমস্ত পৃথিবীর মহান ঈশ্বর; সমস্ত দেবতার অনেক উপরে তোমার স্থান। যারা সদাপ্রভুকে ভালবাসে তারা অন্যায়কে ঘৃণা করুক; তিনিই তো তাঁর ভক্তদের প্রাণ রক্ষা করেন আর দুষ্টদের হাত থেকে তাদের উদ্ধার করেন। ঈশ্বরভক্তদের জীবনে আলো দেওয়া হয়, আর যাদের অন্তর খাঁটি তাদের জীবনে আনন্দ দেওয়া হয়। হে ঈশ্বরভক্ত লোকেরা, সদাপ্রভুই যেন তোমাদের আনন্দের বিষয় হন। তোমরা তাঁর পবিত্রতার গৌরব কর। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নতুন গান গাও, কারণ তিনি অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন; তাঁর শক্তি, হ্যাঁ, তাঁর পবিত্র মহাশক্তি দিয়ে তিনি উদ্ধার করেছেন। সদাপ্রভু তাঁর উদ্ধারের কাজ দেখিয়ে দিয়েছেন; সমস্ত জাতির সামনে তাঁর ন্যায়ের কাজ প্রকাশ করেছেন। ইস্রায়েল জাতির জন্য তাঁর অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার কথা তিনি মনে রেখেছেন; আমাদের ঈশ্বরের উদ্ধারের কাজ সমস্ত পৃথিবীর লোকেরা দেখেছে। পৃথিবীর সব লোক, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আনন্দধ্বনি কর; আনন্দ-গানে ফেটে পড় ও প্রশংসার গান কর। বীণা বাজিয়ে আর সুন্দর সুরে সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রশংসার গান কর। তূরী বাজিয়ে আর শিংগার আওয়াজে রাজা সদাপ্রভুর সামনে আনন্দধ্বনি কর। সাগর ও তার মধ্যেকার সব কিছু আনন্দে চিৎকার করুক; পৃথিবী ও পৃথিবীতে বাসকারীরা আনন্দে চিৎকার করুক। সমস্ত নদী হাততালি দিয়ে আনন্দ করুক; পাহাড়-পর্বত একসংগে মিলে আনন্দে গান করুক। সদাপ্রভুর সামনেই তারা তা করুক, কারণ তিনি জগতের বিচার করতে আসছেন। তিনি ন্যায়ভাবে পৃথিবীর বিচার করবেন, আর জাতিদের বিচার করবেন সৎ ভাবে। সদাপ্রভুই রাজা; সমস্ত জাতি কেঁপে উঠুক। তিনি করূবদের উপরে সিংহাসনে বসে আছেন; পৃথিবী টলমল করুক। সিয়োনে বাসকারী সদাপ্রভু মহান; সমস্ত জাতি তাঁর অধীন। সেই জাতিরা তাঁর গৌরব করুক; তিনি মহান ও ভক্তিপূর্ণ ভয়-জাগানো ঈশ্বর; তিনি পবিত্র। যে রাজা ন্যায়বিচার ভালবাসেন তাঁর শক্তিকে তুমিই অটল করেছ, যাতে তিনি সৎ ভাবে বিচার করতে পারেন। তুমিই যাকোবের বংশের মধ্যে ন্যায়বিচার ও সততা বহাল করেছ। আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব কর; তাঁর পা-দানির সামনে উবুড় হয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাও; তিনি পবিত্র। তাঁর পুরোহিতদের মধ্যে ছিলেন মোশি ও হারোণ; যাঁরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করতেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন শমূয়েল। মোশি, হারোণ ও শমূয়েল সদাপ্রভুকে ডাকতেন আর তিনি তাঁদের উত্তর দিতেন। তিনি মেঘের থামের মধ্য থেকে তাঁদের কাছে কথা বলতেন; তাঁরা তাঁর বাক্য ও তাঁর দেওয়া আদেশ পালন করতেন। হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি তাঁদের ডাকে সাড়া দিতে; তুমি তাঁদের ক্ষমাময় ঈশ্বর ছিলে, যদিও তাঁদের অন্যায়ের শাস্তি দিতে তুমি ছাড় নি। সেইজন্য আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব কর; তাঁর পবিত্র পাহাড়ের সামনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাও, কারণ আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু পবিত্র। হে পৃথিবীর সমস্ত লোক, তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে জয়ধ্বনি কর। খুশী মনে সদাপ্রভুর সেবা কর; আনন্দের গান গাইতে গাইতে তাঁর সামনে উপস্থিত হও। তোমরা জেনো সদাপ্রভুই ঈশ্বর। তিনিই আমাদের তৈরী করেছেন, আমরা তাঁরই; আমরা তাঁরই লোক, তাঁরই চারণ ভূমির ভেড়া। তাঁকে ধন্যবাদ দিতে দিতে তাঁর ফটক দিয়ে ঢোকো, তাঁর গৌরব করতে করতে তাঁর উঠানে ঢোকো; তাঁকে ধন্যবাদ দাও, তাঁর গৌরব কর। সদাপ্রভু মংগলময়, তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী; তাঁর বিশ্বস্ততা বংশের পর বংশ ধরে চলে। আমি তোমার অটল ভালবাসা ও ন্যায়বিচারের গান গাইব; হে সদাপ্রভু, আমি তোমার উদ্দেশে প্রশংসার গান গাইব। নিখুঁত জীবন কাটাবার দিকে আমি মনোযোগ দেব; কবে তুমি আমার কাছে আসবে? আমার নিজের ঘরে আমি খাঁটি অন্তরে থাকব। আমি খারাপ কোন কিছু আমার চোখের সামনে রাখব না। বিপথে যাওয়া লোকদের কাজ আমি ঘৃণার চোখে দেখি; সেগুলো আমাকে আঁকড়ে ধরতে পারবে না। আমার অন্তরে আমি কুটিলতাকে স্থান দেব না; মন্দতার সংগে আমার কোন যোগ থাকবে না। যারা গোপনে অন্যদের নিন্দা করে তাদের আমি শেষ করব; যাদের চোখে গর্ব আর বুকে অহংকার রয়েছে তাদের আমি সহ্য করব না। দেশের বিশ্বস্ত লোকদের দিকে আমার নজর থাকবে যাতে তারা আমার সংগে বাস করতে পারে; যাদের জীবন নিখুঁত তারাই আমার কাজ করবে। ছলনাকারীরা আমার বাড়ীতে বাস করতে পারবে না; মিথ্যাবাদীরা আমার কাজে বহাল থাকতে পারবে না। রোজ সকালে দেশের দুষ্ট লোকদের আমি শেষ করব, যাতে সদাপ্রভুর শহর থেকে প্রত্যেকটি অন্যায়কারীকে উপ্‌ড়ে ফেলা যায়। হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রার্থনা শোন; সাহায্য চেয়ে আমার এই কান্না তোমার কাছে গিয়ে পৌঁছাক। আমার বিপদের সময় তুমি মুখ ফিরিয়ে রেখো না। আমার কথায় কান দাও; আমার ডাকে সাড়া দিতে তুমি দেরি কোরো না। আমার দিনগুলো ধূমার মত মিলিয়ে গেছে; আমার হাড়গুলো যেন চুলার আগুনে পুড়ছে। রোদের তেজে শুকিয়ে যাওয়া ঘাসের মত আমার অন্তর শুকিয়ে গেছে; আমি খেতেও ভুলে যাই। জোরে কোঁকাতে কোঁকাতে আমার দেহে হাড়-চামড়া ছাড়া আর কিছু নেই। আমি মরু-পেঁচার মত হয়েছি, হয়েছি পোড়ো বাড়ীর পেঁচা। আমি ঘুমাতে পারি না; আমি যেন ছাদের উপরে সংগীহীন পাখী। শত্রুরা দিনরাত আমাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে; আমার উপর যারা ক্ষেপে আছে তারা আমার নাম অভিশাপ হিসাবে ব্যবহার করে। আমার দিনগুলো বিকালের ছায়ার মত হয়ে গেছে; ঘাসের মতই আমি শুকিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু হে সদাপ্রভু, তুমি চিরকাল তোমার সিংহাসনে আছ; তোমার নাম বংশের পর বংশ ধরে থাকবে। তুমি সিয়োনের প্রতি মমতা করবে, কারণ তাকে দয়া দেখাবার সময় হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় এসে গেছে। তার পাথরগুলো পর্যন্ত তোমার দাসদের কাছে প্রিয়; তার ধূলিকণার প্রতিও তাদের মমতা রয়েছে। তখন সদাপ্র্রভুর নাম শুনে অন্য সব জাতি ভয় পাবে; তোমার গৌরব দেখে পৃথিবীর সব রাজাদের মনে ভয় জাগবে। সদাপ্রভু আবার সিয়োনকে গড়বেন, আর তিনি নিজের মহিমায় দেখা দেবেন। তিনি সর্বহারাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন; তাদের মিনতি তিনি তুচ্ছ করবেন না। আগামী বংশধরদের জন্য এ সব কথা লেখা থাকবে, যাতে এখনও যারা জন্ম গ্রহণ করে নি তারাও সদাপ্রভুর গৌরব করতে পারে। আমার জীবনকালের মাঝখানে তিনি আমার শক্তি কমিয়ে দিয়েছেন, আমার আয়ু খাটো করে দিয়েছেন। তাই আমি বলেছি, “হে আমার ঈশ্বর, তোমার দেওয়া আয়ুর মাঝখানে আমাকে তুমি নিয়ে যেয়ো না; চিরকাল ধরেই তো তুমি আছ। অনেক কাল আগে তুমি পৃথিবীর ভিত্তি গেঁথেছিলে; মহাকাশও তোমার হাতে গড়া। সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু তুমি চিরকাল থাকবে। কাপড়ের মতই সেগুলো পুরানো হয়ে যাবে; সেগুলো তুমি কাপড়ের মতই বদলে দেবে, আর তা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি একই রকম থাকবে; তোমার জীবনকাল কখনও শেষ হবে না। তোমার দাসদের সন্তানেরা বেঁচে থাকবে; তাদের বংশধরেরা তোমার সামনে স্থির থাকবে।” হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর; হে আমার অন্তর, তাঁর পবিত্রতার গৌরব কর। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর; তাঁর কোন উপকারের কথা ভুলে যেয়ো না। তোমার সমস্ত পাপ তিনি ক্ষমা করেন; তিনি তোমার সমস্ত রোগ ভাল করেন। তিনি মৃতস্থান থেকে তোমার জীবন মুক্ত করেন; তিনি তোমাকে অটল ভালবাসা ও মমতায় ঘিরে রাখেন। যা মংগল আনে তেমন সব জিনিস দিয়ে তিনি তোমাকে তৃপ্ত করেন; তিনি ঈগল পাখীর মত তোমাকে নতুন যৌবন দেন। সদাপ্রভু উচিত কাজ করেন; তিনি ন্যায়ভাবে অত্যাচারিতদের বিচার করেন। কি উদ্দেশ্যে কি করেন তা তিনি মোশিকে জানিয়েছেন; তাঁর কাজ তিনি ইস্রায়েলীয়দের দেখতে দিয়েছেন। সদাপ্রভু মমতায় পূর্ণ ও দয়াময়; তিনি সহজে অসন্তুষ্ট হন না, তাঁর অটল ভালবাসার সীমা নেই। তিনি দোষীর বিরুদ্ধে দিনের পর দিন অভিযোগ করেন না, চিরকাল ক্রোধ পুষে রাখেন না। আমাদের পাপের শাস্তি যতটা আমাদের পাওনা ততটা তিনি আমাদের দেন না; আমাদের অন্যায় অনুসারেও শাস্তি দেন না। পৃথিবী থেকে আকাশের দূরত্বের যেমন সীমা নেই, তেমনি তাঁর ভক্তদের উপরে তাঁর অটল ভালবাসারও সীমা নেই। পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিক যত দূরে, আমাদের সব পাপ তিনি তত দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। সন্তানদের প্রতি বাবার যেমন মমতা আছে তেমনি তাঁর ভক্তদের উপর তাঁর মমতা আছে। কিভাবে আমরা গড়া তা তো তাঁর অজানা নেই; আমরা যে ধূলি ছাড়া আর কিছু নই তা তাঁর মনে আছে। ঘাসের আয়ুর মতই মানুষের আয়ু, মাঠের ফুলের মতই সে ফুটে ওঠে। ফুলের উপর দিয়ে বাতাস বয়ে গেলে ফুল আর থাকে না; যে জায়গায় সেই ফুল ফুটেছিল সেই জায়গায়ও আর তাকে মনে রাখে না। সদাপ্রভু স্বর্গে তাঁর সিংহাসন স্থাপন করেছেন; সব কিছুর উপরেই তাঁর রাজত্ব। হে সদাপ্রভুর শক্তিশালী দূতেরা, যারা তাঁর কথার বাধ্য থেকে তাঁর আদেশ পালন করছ, তোমরা তাঁর গৌরব কর। হে সদাপ্রভুর সেবাকারী শক্তিদলগুলো যারা তাঁর ইচ্ছা পালন করছ, তোমরা তাঁর গৌরব কর। হে সদাপ্রভুর রাজ্যের সব স্থানে তাঁর সৃষ্ট সব কিছু, তোমরা তাঁর গৌরব কর; হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর; হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমি কত মহান! তুমি গৌরব ও মহিমার সাজে সেজে আছ। কাপড়ের মত করে তুমি নিজেকে আলো দিয়ে ঢেকেছ; আকাশটাকে তুমি ছাউনির মত করে বিছিয়ে দিয়েছ। তোমার স্বর্গের বাসস্থানের ভিত্তি তুমি আকাশের জলের উপরে স্থাপন করেছ; তুমি মেঘকে করেছ তোমার রথ; তুমি বাতাসের পাখায় ভর করে চলাচল কর। তুমি বাতাসকে তোমার দূত করেছ; জ্বলন্ত আগুনকে করেছ তোমার দাস। তুমি পৃথিবীকে তার নিজের ভিত্তির উপর স্থাপন করেছ; তা কখনও নড়বে না। তুমি পৃথিবীকে কাপড় দিয়ে ঢাকার মত করে সাগরের জল দিয়ে ঢেকেছিলে; পাহাড়-পর্বতও সেই জলে ঢাকা ছিল। কিন্তু সেই জল তোমার হুকুমে চলে গেল; তা ছুটে চলে গেল তোমার গর্জনে। পাহাড়-পর্বত আরও উঁচু হয়ে উঠল, সব উপত্যকা আরও নীচু হয়ে গেল; তুমি যে জায়গা ঠিক করে রেখেছিলে সেগুলো সেই পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাল। এইভাবে তুমি জলের সীমানা ঠিক করে দিয়েছ, যাতে জল আর কখনও সীমানা ডিংগিয়ে পৃথিবীকে ঢেকে না ফেলে। উপত্যকার মধ্যে তুমিই জলের ফোয়ারা পাঠাও; সেই জল পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে যায়। তা জীবজন্তুদের জলের যোগান দেয়; তাতে বুনো গাধার পিপাসা মেটে। জলের কাছেই আকাশের পাখীরা বাসা বাঁধে, আর গাছের ডালে ডালে গান গায়। তোমার স্বর্গের বাসস্থান থেকে তুমি পাহাড়-পর্বতের উপরে জল ফেল; তোমার সেই কাজের ফলে পৃথিবী তৃপ্ত হয়। তুমি পশুপালের জন্য ঘাস আর মানুষের চাষের জন্য ফসলের গাছ জন্মাতে দাও, যেন জমি থেকেই সে তার খোরাক পেতে পারে- আংগুর-রস যা মানুষের মনকে খুশী করে, তেল যা তার মুখকে উজ্জ্বল করে, আর রুটি যা তার অন্তরে আনে বল। সদাপ্রভুর তৈরী সব গাছপালা প্রচুর বৃষ্টি পায়; তাঁর লাগানো লেবাননের এরস গাছও বৃষ্টি পায়। সেই সব গাছে পাখীরা বাসা বাঁধে; সারসও বেরস গাছে ঘর বানায়। উুঁচ উঁচু পাহাড়গুলোতে বুনো ছাগল বাস করে; পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে শাফনের দল আশ্রয় নেয়। ঋতু ভাগ করার জন্য তুমি চাঁদ তৈরী করেছ; তোমার সময়মত সূর্য অস্ত যায়। তুমি অন্ধকার আনলে রাত হয়, বনের সব পশুরা তখন ঘুরে বেড়ায়। যুবসিংহেরা শিকার খুঁজতে গিয়ে চিৎকার করে, ঈশ্বরের কাছে তাদের খাবার চায়। সূর্য উঠলে তারা চলে যায় আর তাদের গর্তে শুয়ে পড়ে। তখন মানুষ তার কাজে বের হয়, সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করে। হে সদাপ্রভু, তুমি অনেক কিছু সৃষ্টি করেছ; তোমার জ্ঞান দিয়ে সেই সব তৈরী করেছ; তোমার সৃষ্ট জিনিষে দুনিয়া ভরা। ঐ যে বিরাট, বিশাল সমুদ্র- তা চলে বেড়ানো ছোট-বড় অসংখ্য জীবন্ত প্রাণীতে ভরা আছে। তার মধ্যে ঐ চলছে জাহাজ, সেখানে লিবিয়াথনও আছে; তাকে তুমি সাগরে খেলা করার জন্য সৃষ্টি করেছ। তারা সব তোমার মুখের দিকে চেয়ে আছে, যাতে ঠিক সময়ে তুমি তাদের খাবার দাও। তুমি তাদের দিলে তারা তুলে নেয়; তুমি হাত খুললে তারা ভাল ভাল জিনিস পেয়ে তৃপ্ত হয়। তুমি মুখ লুকালে তারা ভয় পায়; তুমি তাদের জীবন-বায়ু নিয়ে গেলে তারা মরে যায়, আবার তারা ধুলা হয়ে যায়। তোমার আত্মা পাঠালে তাদের সৃৃষ্টি হয়; তুমি নতুন নতুন প্রাণ দিয়ে পৃথিবীকে সাজাও। সদাপ্রভুর গৌরব অনন্তকাল থাকুক; তিনি যেন নিজের কাজে আনন্দিত হন। তিনি পৃথিবীর দিকে তাকালে তা কাঁপে; তাঁর ছোঁওয়াতে পাহাড়-পর্বত থেকে ধূমা বের হয়। আমার সারা জীবন ধরে আমি সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান গাইব; আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আমার ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসার গান গাইব। আমার সব ধ্যান তাঁর কাছে মধুর হোক; আমি সদাপ্রভুর সংগে যুক্ত হয়ে আনন্দ করব। পৃথিবীর বুক থেকে পাপীরা মুছে যাক; দুষ্ট লোকেরা সব শেষ হয়ে যাক। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর; সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দাও, তাঁর গুণের কথা ঘোষণা কর; তাঁর কাজের কথা অন্যান্য জাতিদের জানাও। তাঁর উদ্দেশে গান গাও, তাঁর প্রশংসা-গান কর; তাঁর সব আশ্চর্য কাজের কথা বল। তাঁর পবিত্রতার গৌরব কর; যারা সদাপ্রভুকে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী তাদের অন্তর আনন্দিত হোক। সদাপ্রভু ও তাঁর শক্তিকে বুঝতে চেষ্টা কর; সব সময় তাঁর সংগে যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী হও। তিনিই আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু; গোটা দুনিয়া তাঁরই শাসনে চলছে। যে বাক্যের নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন হাজার হাজার বংশের জন্য, তাঁর সেই ব্যবস্থার কথা তিনি চিরকাল মনে রাখবেন। সেই ব্যবস্থা তিনি অব্রাহামের জন্য স্থাপন করেছিলেন আর ইস্‌হাকের কাছে শপথ করেছিলেন। তিনি তাঁর ব্যবস্থা যাকোবের কাছে নিয়ম হিসাবে আর ইস্রায়েলের কাছে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাকে কনান দেশটা দেব, সেটাই হবে তোমার পাওনা সম্পত্তি।” তাদের সংখ্যা যখন কম ছিল, খুবই কম ছিল, আর তারা সেখানে বিদেশী ছিল, তারা যখন সেখানে বিভিন্ন জাতির মধ্যে আর বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে ঘুরে বেড়াত, তখন তিনি কাউকে তাদের অত্যাচার করতে দিতেন না। তাদের জন্য তিনি রাজাদের ধম্‌কে দিতেন, বলতেন, “আমার অভিষিক্ত লোকদের ছোঁবে না; আমার নবীদের কোন ক্ষতি করবে না।” তারপর তিনি তাদের দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনলেন আর তাদের খাবারের অভাব ঘটালেন; তখন তিনি একজন লোককে তাদের আগে পাঠিয়ে দিলেন- যোষেফকে পাঠিয়ে দিলেন; দাস হিসাবে তাঁকে বিক্রি করা হল। বেড়ীর শিকলে তাঁর পা কষ্ট পেল, লোহার শিকলে তিনি বাঁধা পড়লেন। তিনি যা বলেছিলেন যতদিন না তা সত্যি হয়ে দেখা দিল, ততদিন তাঁর সম্বন্ধে সদাপ্রভুর প্রতিজ্ঞা পুরণের ব্যাপারে তাঁর পরীক্ষা চলছিল। রাজার আদেশে তাঁর শিকল খুলে দেওয়া হল; সেই শাসনকর্তা তাঁকে ছেড়ে দিলেন। তিনি তাঁকে তাঁর রাজবাড়ীর ও তাঁর সমস্ত সম্পত্তির কর্তা করলেন, যাতে তাঁর ইচ্ছা অনুসারে তিনি রাজকর্মচারীদের শাসনে রাখেন আর বৃদ্ধ নেতাদের পরামর্শ দেন। তারপর ইস্রায়েল মিসরে গেলেন; হাম-বংশীয়দের দেশে যাকোব কিছুকাল বাস করলেন। সদাপ্রভু তাঁর নিজের লোকদের বংশ অনেক বাড়িয়ে দিলেন; শত্রুদের চেয়ে তিনি তাদের শক্তিশালী করলেন। তাঁর লোকদের বিরুদ্ধে তিনি শত্রুদের অন্তরে ঘৃণা জাগিয়ে দিলেন, তাতে তারা তাঁর দাসদের সংগে চালাকি খাটিয়ে চলতে লাগল। তিনি তাঁর দাস মোশিকে আর তাঁর বেছে নেওয়া হারোণকে পাঠিয়ে দিলেন; তাঁদের দিয়ে সদাপ্রভু হাম-বংশীয়দের দেশে সকলের সামনে নানা রকম চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ করলেন। তিনি অন্ধকার পাঠালেন, তাতে অন্ধকার হল; তাঁর বাক্যের বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করল না। তাদের জল তিনি রক্ত করে দিলেন, তাতে সব মাছ মরে গেল। দেশ ব্যাঙে কিল্‌বিল্‌ করতে লাগল; এমন কি, তাদের রাজার ঘরে গিয়েও সেগুলো ঢুকল। তাঁর কথায় ঝাঁকে ঝাঁকে পোকা আসল, তাদের দেশ মশাতে ছেয়ে গেল। তিনি বৃষ্টির মত করে তাদের উপর শিলা ফেললেন, সারা দেশে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। তাদের আংগুর লতা আর ডুমুর গাছে তিনি আঘাত করলেন আর দেশের সব গাছপালা ভেংগে দিলেন। তাঁর কথায় পংগপাল আর অসংখ্য ফড়িং আসল; সেগুলো দেশের গাছ-গাছড়া আর জমির ফসল খেয়ে ফেলল। তারপর তিনি মিসরীয়দের যৌবনের শক্তির প্রথম ফল, অর্থাৎ দেশের সব প্রথম সন্তানকে আঘাত করলেন। তিনি সোনা-রূপা সহ ইস্রায়েলীয়দের বের করে আনলেন; তাদের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়ে নি। তাদের চলে যাওয়া দেখে মিসরীয়েরা খুশী হয়েছিল, কারণ তারা ইস্রায়েলীয়দের ভীষণ ভয় করত। তাদের আড়াল করার জন্য তিনি তাঁর সেই মেঘটি মেলে দিলেন, আর রাতে আলো দেবার জন্য দিলেন আগুন। তারা খাবার চেয়েছিল বলে তিনি তাদের ভারুই পাখী এনে দিলেন; স্বর্গ থেকে রুটি দিয়ে তাদের তৃপ্ত করলেন। তিনি পাথর খুলে দিলেন, তাতে জল বেরিয়ে আসল; শুকনা জায়গার মধ্য দিয়ে তা নদীর মত বয়ে গেল। তাঁর দাস অব্রাহামের কাছে তিনি যে পবিত্র প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা তিনি মনে করলেন। আনন্দ ও আনন্দ-গানের সংগে তাঁর বাছাই করা লোকদের তিনি বের করে আনলেন। তিনি অন্যান্য জাতির দেশ ইস্রায়েলীয়দের দিলেন আর সেই সব জাতির পরিশ্রমের ফল তাঁর লোকদের নিতে দিলেন, যাতে তারা তাঁর নিয়ম পালন করে আর তাঁর আইন-কানুন মেনে চলে। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। তোমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, কারণ তিনি মংগলময়; তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। সদাপ্রভুর মহৎ কাজের বর্ণনা কে করতে পারে? তাঁর গৌরবের পূর্ণ প্রকাশ করে এমন সাধ্য কার? ধন্য তারা, যারা চালচলনে ন্যায়ের মান রাখে আর সব সময় ন্যায় কাজ করে। হে সদাপ্রভু, তোমার লোকদের প্রতি দয়া দেখাবার সময় আমাকে ভুলে যেয়ো না; তাদের উদ্ধার করার সময় আমার দিকেও হাত বাড়িয়ে দিয়ো। এতে যেন আমি তোমার বাছাই করা লোকদের মংগল দেখতে পাই, তোমার জাতির আনন্দে আনন্দিত হতে পারি, আর যারা তোমার সম্পত্তি তার অংশ হিসাবে গর্ব করতে পারি। আমাদের পূর্বপুরুষদের মত আমরাও পাপ করেছি; আমরা অন্যায় করেছি, মন্দভাবে চলেছি। মিসরে থাকার সময়ে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তোমার আশ্চর্য কাজ দেখে কিছুই বোঝে নি; তারা তোমার সীমাহীন অটল ভালবাসার কথাও মনে রাখে নি; তারা সাগরের ধারে, লোহিত সাগরের ধারে বিদ্রোহ করেছিল। তবুও তিনি তাঁর সুনাম রক্ষার জন্য, তাঁর মহাশক্তি প্রকাশের জন্য তাদের উদ্ধার করেছিলেন। তাঁর হুকুমে লোহিত সাগর শুকিয়ে গেল; তিনি মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়ার মত করে গভীর সাগরের মধ্য দিয়ে তাদের নিয়ে গেলেন। তিনি ঘৃণাকারীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করলেন; শত্রুদের হাত থেকে তাদের মুক্ত করলেন। তাদের শত্রুরা জলে ঢাকা পড়ল, একজনও বেঁচে রইল না। তখন সদাপ্রভুর কথায় তারা বিশ্বাস করল আর তাঁর প্রশংসা-গান গাইল। কিন্তু তাঁর কাজের কথা ভুলে যেতে তাদের দেরি হল না; তারা তাঁর পরামর্শের অপেক্ষায় রইল না। মরু-এলাকায় তারা লোভ করে ঈশ্বরকে পরীক্ষা করল। তারা যা চেয়েছিল তিনি তা-ই তাদের দিলেন, কিন্তু তাদের উপর পাঠিয়ে দিলেন এক ক্ষয় করা রোগ। তাম্বুতে জীবন কাটাবার সময় মোশিকে দেখে, আর সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা সেই হারোণকে দেখে তাদের হিংসা হল। পৃথিবী মুখ খুলে দাথনকে গিলে ফেলল আর অবীরামের দলকে ঢেকে ফেলল। তাদের দলের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠল; আগুনের শিখা দুষ্ট লোকদের পুড়িয়ে ফেলল। হোরেব পাহাড়ের সামনে তারা একটা বাছুর তৈরী করল আর ছাঁচে ঢালা মূর্তির উপাসনা করল। তাদের গৌরবময় ঈশ্বরকে ফেলে তারা ঘাস খাওয়া গরুর মূর্তিকে গ্রহণ করল। তাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরকে তারা ভুলে গেল যিনি মিসরে অনেক বড় বড় কাজ করেছিলেন। হাম-বংশীয়দের দেশে করা আশ্চর্য আশ্চর্য কাজের বিষয় তারা ভুলে গেল, লোহিত সাগরের কাছে করা ভয় জাগানো সব কাজ ভুলে গেল। তাই তিনি বললেন তাদের ধ্বংস করবেন; তিনি তা-ই করতেন কিন্তু তাঁর বাছাই করা লোক মোশি তাঁর আসবার পথে গিয়ে দাঁড়ালেন, যেন তিনি তাদের ধ্বংস করে ফেলার ক্রোধ ফিরাতে পারেন। পরে তারা সেই সুন্দর দেশটাকে তুচ্ছ করল; তারা সদাপ্রভুর কথায় বিশ্বাস করল না। তাদের তাম্বুর মধ্যে তারা বকবক করতে লাগল; সদাপ্রভুর কথায় তারা কান দিল না। তাই তিনি তাদের সম্বন্ধে এই শপথ করলেন- তিনি মরু-এলাকাতেই তাদের শেষ করে দেবেন, তাদের বংশধরদের বিভিন্ন জাতির মধ্যে মৃত্যু ঘটাবেন, আর বিভিন্ন দেশে তাদের ছড়িয়ে দেবেন। তারা পিয়োর পাহাড়ের বাল দেবতার পূজায় যোগ দিল আর মৃত লোকদের উদ্দেশে উৎসর্গের মাংস খেল। এই সব মন্দ কাজ দিয়ে তারা সদাপ্রভুর অসন্তোষ জাগিয়ে তুলল, তাই তাদের মধ্যে মড়ক লাগল। তখন পুরোহিত পীনহস্‌ উঠে এর উপযুক্ত শাস্তি দিলেন, আর মড়ক থেমে গেল। পীনহসের এই কাজের ফলে তাঁকে চিরকালের জন্য নির্দোষ বলে ধরা হল। মরীবার জলের ধারে তারা সদাপ্রভুকে অসন্তুষ্ট করে তুলল; তাদের জন্যই মোশি বিপদে পড়লেন। তারা ঈশ্বরের আত্মার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, তাতে মোশির মুখ থেকে এমন সব কথা বেরিয়ে এসেছিল যা বলা তাঁর উচিত ছিল না। ঈশ্বরের আদেশের অবাধ্য হয়ে তারা অন্যান্য জাতিদের ধ্বংস করল না, বরং সেই সব জাতির সংগে তারা নিজেদের মিশিয়ে দিল আর তাদের আচার-ব্যবহার গ্রহণ করল। তাদের প্রতিমাগুলোকে তারা পূজা করল আর সেগুলোই তাদের ফাঁদ হল। এমন কি, মন্দ আত্মাদের উদ্দেশে তাদের ছেলে ও মেয়েদের তারা বলি দিল। তারা নির্দোষদের, অর্থাৎ তাদের ছেলেমেয়েদের রক্তপাত করল। তারা কনানের প্রতিমাগুলোর উদ্দেশে তাদের বলি দিল, তাতে গোটা দেশটা সেই রক্তে অশুচি হল। এ সব করে তারা নিজেদের অশুচি করল; তাদের কাজ দিয়ে তারা সদাপ্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত হল। সেজন্যই সদাপ্রভুর ক্রোধ তাঁর লোকদের উপর জ্বলে উঠল; যারা তাঁরই সম্পত্তি তাদের প্রতি তাঁর ঘৃণা জাগল। তিনি অন্যান্য জাতিদের হাতে তাদের তুলে দিলেন; তাদের ঘৃণাকারীরা তাদের শাসন করতে লাগল। তাদের শত্রুরা তাদের উপর অত্যাচার চালাল; তারা তাদের অধীনে রইল। অনেকবারই তিনি তাদের উদ্ধার করলেন, কিন্তু তারা নিজেদের ইচ্ছায় বিদ্রোহী হল; পাপের দরুন তাদের পতন হল। তবুও তিনি তাদের কান্না শুনে তাদের কষ্টের দিকে তাকালেন। তাদের জন্য তাঁর স্থাপন করা ব্যবস্থার কথা তিনি মনে করলেন; তাঁর অসীম, অটল ভালবাসা অনুসারে তাদের প্রতি মমতা করলেন। যারা তাদের বন্দী করেছিল তাদের কাছে তিনি তাদের দয়ার পাত্র করে তুললেন। হে সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর, আমাদের উদ্ধার কর; অন্যান্য জাতিদের মধ্য থেকে তুমি আমাদের এক জায়গায় নিয়ে এস, যাতে আমরা তোমার পবিত্রতার উদ্দেশে ধন্যবাদ দিতে পারি আর তোমার গুণগান করতে পারছি বলে গর্ববোধ করতে পারি। সৃষ্টির আগে থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব হোক। সমস্ত লোক বলুক, “আমেন।” সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। “তোমরা সদাপ্রভুর ধন্যবাদ কর, কারণ তিনি মংগলময়; তাঁর অটল ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।”- সদাপ্রভুর মুক্ত করা লোকেরা এই কথা বলুক, কারণ তিনি বিপক্ষের হাত থেকে তাদের ছাড়িয়ে এনেছেন; তিনি অন্যান্য দেশ থেকে তাদের এক জায়গায় নিয়ে এসেছেন, নিয়ে এসেছেন পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ থেকে। তারা মরু-এলাকার নির্জন জায়গায় ঘুরে বেড়ালো; বাস করার মত কোন শহর তারা খুঁজে পেল না। তারা খিদে ও তেষ্টায় কষ্ট পেল, তাদের প্রাণ শ্রান্ত-ক্লান্ত হল। বিপদে পড়ে তারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করল, এতে কষ্ট থেকে তিনি তাদের উদ্ধার করলেন। তিনি সোজা পথ দিয়ে তাদের নিয়ে গেলেন যেন তারা কোন শহরে গিয়ে বাস করতে পারে। মানুষের প্রতি সদাপ্রভুর আশ্চর্য আশ্চর্য কাজের জন্য আর তাঁর অটল ভালবাসার জন্য তারা তাঁকে ধন্যবাদ দিক। যাদের অন্তরে পিপাসা আছে তিনি তাদের পিপাসা মেটান, আর যাদের অন্তরে খিদে আছে ভাল ভাল জিনিস দিয়ে তিনি তাদের তৃপ্ত করেন। তারা অন্ধকারে, ঘন অন্ধকারের মধ্যে বসে ছিল, সেই বন্দীরা দুঃখে ও লোহার শিকলে কষ্ট পাচ্ছিল; কারণ তারা ঈশ্বরের বাক্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত, মহান ঈশ্বরের পরামর্শ তারা তুচ্ছ করত। তাই তিনি কঠিন পরিশ্রম দিয়ে তাদের অহংকার ভেংগে দিলেন; তারা উছোট খেল, সাহায্যকারী কেউ ছিল না। বিপদে পড়ে তারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করল, এতে কষ্ট থেকে তিনি তাদের রক্ষা করলেন। অন্ধকার, ঘন অন্ধকার থেকে তিনি তাদের বের করে আনলেন; তিনি তাদের শিকল ভেংগে দিলেন। মানুষের প্রতি সদাপ্রভুর আশ্চর্য আশ্চর্য কাজের জন্য আর তাঁর অটল ভালবাসার জন্য তারা তাকে ধন্যবাদ দিক। তিনি ব্রোঞ্জের ফটক ভেংগে ফেলেছেন আর লোহার আগল কেটে ফেলেছেন। যাদের মন অসাড় তারা তাদের বিদ্রোহের জন্য আর অন্যায়ের জন্য কষ্ট পেল। তারা সমস্ত খাবার ঘৃণা করল আর মৃত্যুর দুয়ারের কাছে উপস্থিত হল। বিপদে পড়ে তারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করল, এতে কষ্ট থেকে তিনি তাদের রক্ষা করলেন। তাঁর বাক্য পাঠিয়ে তিনি তাদের সুস্থ করলেন; তিনি কবর থেকে তাদের উদ্ধার করলেন। মানুষের প্রতি সদাপ্রভুর আশ্চর্য আশ্চর্য কাজের জন্য আর তাঁর অটল ভালবাসার জন্য তারা তাঁকে ধন্যবাদ দিক। তারা কৃতজ্ঞতা-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করুক, আনন্দ-গানের মধ্য দিয়ে তাঁর সব কাজের কথা বলুক। যারা জাহাজে করে সাগরে যায় আর মহাসমুদ্রের মধ্যে ব্যবসা করে, তারাই সদাপ্রভুর কাজ দেখেছে, গভীর জলে দেখেছে তাঁর আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ। একবার তাঁর কথায় ভীষণ ঝড় হল, তাতে বড় বড় ঢেউ উঠল। ফলে নাবিকেরা উঠল আকাশ পর্যন্ত আর নামল জলের তলায়; বিপদে পড়ে ভয়ে তাদের প্রাণ উড়ে গেল। মাতালের মত তারা হেলেদুলে ঢলে পড়ল; তারা বুদ্ধিহারা হয়ে গেল। বিপদে পড়ে তারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করল, এতে কষ্ট থেকে তিনি তাদের বের করে আনলেন। তিনি ঝড় থামিয়ে দিলেন, তাতে সমুদ্রের ঢেউ শান্ত হয়ে গেল। সমুদ্র শান্ত হয়ে গেলে তারা খুশী হল; যে বন্দরে তারা যেতে চেয়েছিল সেখানেই তিনি তাদের নিয়ে গেলেন। মানুষের প্রতি সদাপ্রভুর আশ্চর্য আশ্চর্য কাজের জন্য আর তাঁর অটল ভালবাসার জন্য তারা তাঁকে ধন্যবাদ দিক। সমাজের মধ্যে তারা তাঁর গৌরব করুক, বৃদ্ধ নেতাদের সভায় তাঁর গুণগান করুক। তিনি নদীগুলোকে মরু-এলাকা করে ফেলেন, ফোয়ারাকে করে ফেলেন শুকনা জমি, আর ফসল জন্মানো জমিকে করে ফেলেন লবণের মাঠ। যারা সেখানে বাস করে তাদের দুষ্টতার জন্যই তিনি এই সব করেন। তিনি মরু-এলাকাকে পুকুর করে ফেলেন আর শুকনা জায়গাকে করে ফেলেন ফোয়ারা। খিদেয় কষ্ট পাওয়া লোকদের তিনি সেখানে বাস করান; তারা সেখানে শহর গড়ে তোলে। তারা ক্ষেতে বীজ বোনে, আংগুর গাছ লাগায়, আর প্রচুর ফসল ফলায়। তিনি তাদের আশীর্বাদ করেন আর তাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়; তিনি তাদের পশুপাল কমে যেতে দেন না। অত্যাচার, বিপদ ও দুঃখে আবার তাদের সংখ্যা কমে যায় আর তাদের অবস্থা খারাপ হয়। তিনি উঁচু পদের লোকদের উপরে অপমান ঢেলে দেন, পথহীন নির্জন জায়গায় তাদের ঘুরে বেড়াতে দেন; কিন্তু তিনি দুর্দশার নাগালের বাইরে অভাবীদের রাখেন, ভেড়ার পালের মত তাদের সন্তানের সংখ্যা বাড়ান। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা তা দেখে আনন্দিত হয়, কিন্তু অন্যায়কারীরা মুখ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। যে জ্ঞানী সে এই সব বিষয়ে মনোযোগ দিক আর সদাপ্রভুর অটল ভালবাসার বিষয় ভাল করে লক্ষ্য করুক। হে ঈশ্বর, আমার মন স্থির আছে; আমি গান গাইব আর আমার সমস্ত অন্তর দিয়ে গানের সুর তুলব। ওহে বীণা ও সুরবাহার, জেগে ওঠো; আমি ভোরকে জাগিয়ে তুলব। হে সদাপ্রভু, বিভিন্ন জাতির সামনে আমি তোমার ধন্যবাদ করব, তাদের মধ্যে তোমার উদ্দেশে গান গাইব; কারণ তোমার অটল ভালবাসা আকাশ থেকেও উঁচু, তোমার বিশ্বস্ততা মেঘেরও উপরে পৌঁছায়। হে ঈশ্বর, তোমার মহিমা আকাশ ছাপিয়ে উঠুক; তোমার গৌরব সমস্ত পৃথিবীর উপরে দেখা দিক। তোমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে আমাদের তুমি উদ্ধার কর; আমার ডাকে সাড়া দাও, যেন তুমি যাদের ভালবাস তারা উদ্ধার পায়। ঈশ্বর তাঁর পবিত্রতার নাম করে বলেছেন, “আমি আনন্দের সংগে শিখিম ভাগ করে দেব, সুক্কোতের উপত্যকার জায়গা জরীপ করে ভাগ করে দেব। গিলিয়দ আমার, মনঃশিও আমার; ইফ্রয়িম যেন আমার মাথার লোহার টুপী, আর যিহূদা আমার রাজদণ্ড। মোয়াব আমার পা ধোওয়ার পাত্র; আমি ইদোমের উপরে আমার পায়ের জুতা ফেলব, আর পলেষ্টীয়ার উপরে জয়ের হাঁক দেব।” কে আমাকে ঐ শহরে নিয়ে যাবে যেখানে ঢোকা শক্ত? কে আমাকে পথ দেখিয়ে ইদোমে নিয়ে যাবে? হে ঈশ্বর, তুমি কি আমাদের বাতিল কর নি? আমাদের সৈন্যদলের সংগে তুমি তো আর যাও না। হে ঈশ্বর, শত্রুর বিরুদ্ধে তুমি আমাদের সাহায্য কর, কারণ মানুষের সাহায্যের তো কোন দাম নেই। ঈশ্বরের সাহায্যে আমরা জয়লাভ করব; আমাদের শত্রুদের তিনিই পায়ে মাড়াবেন। হে ঈশ্বর আমি তোমার গৌরব করি; তুমি চুপ করে থেকো না। দুষ্ট ছলনাকারী লোকেরা আমার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে; তাদের মিথ্যাবাদী জিভ্‌ দিয়ে তারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। তারা আমাকে ঘৃণার কথা দিয়ে ঘিরে ফেলেছে, বিনা কারণে আমাকে আক্রমণ করেছে। আমার ভালবাসার বদলে তারা আমার বিরুদ্ধে শত্রুতা করে, কিন্তু আমি প্রার্থনায় ব্যস্ত থাকি। তারা মংগলের বদলে আমার প্রতি অমংগল করে, ভালবাসার বদলে আমাকে ঘৃণা করে। তুমি তাদের উপরে দুষ্ট বিচারক নিযুক্ত কর; যারা তাদের দোষী করবে তারা তাদের ডান পাশে দাঁড়াক। বিচারে তাদের দোষী বলে রায় দেওয়া হোক; তাদের প্রার্থনা পাপ বলে ধরা হোক। তাদের আয়ু অল্প হোক; তাদের উঁচু পদ অন্য লোকেরা নিয়ে যাক। তাদের ছেলেমেয়েরা বাবাকে হারাক; তাদের স্ত্রীরা বিধবা হোক। তাদের ছেলেমেয়েরা পথে পথে ভিক্ষা করুক আর তাদের ভাংগাচোরা ঘর থেকে দূরে গিয়ে খাবার খুঁজে বেড়াক। মহাজন তাদের সব কিছু নিয়ে যাক; অন্য লোকে তাদের পরিশ্রমের ফল লুটে নিক। তাদের প্রতি দয়া করতে পারে এমন কেউ না থাকুক; তাদের অনাথ ছেলেমেয়েদের প্রতি কেউ মমতা না করুক। তাদের বংশধরদের মেরে ফেলা হোক; তাদের সন্তানদের নাম মুছে ফেলা হোক। তাদের পূর্বপুরুষদের অন্যায়ের কথা সদাপ্রভুর মনে থাকুক; তাদের মায়েদের পাপ মুছে ফেলা না হোক। সব সময় সেগুলো সদাপ্রভুর সামনে থাকুক, যাতে তিনি পৃথিবী থেকে তাদের স্মৃতি মুছে ফেলতে পারেন। তারা দয়া করার কথা কখনও মনে করত না, বরং দুঃখী, গরীব ও হতাশ লোকদের মেরে ফেলার জন্য অত্যাচার করত। তারা অভিশাপ দিতে ভালবাসত, তাই সেই অভিশাপ তাদেরই উপরে পড়ল; আশীর্বাদ করতে তাদের ভাল লাগত না, তাই আশীর্বাদ তাদের কাছ থেকে দূরে গেল। কাপড় পরার মত করে অভিশাপ দেওয়া তাদের অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল; তা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল তাদের জল খাওয়ার মত আর দেহে তেল মাখাবার মত। সেই অভিশাপ চাদরের মত তাদের জড়িয়ে রাখুক আর কোমর-বাঁধনির মত সব সময় বেঁধে রাখুক। আমার বিপক্ষেরা, যারা আমার বিষয়ে মন্দ কথা বলে, তারা সদাপ্রভুর কাছ থেকে যেন এই ফলই পায়। কিন্তু তুমি, হে প্রভু সদাপ্রভু, তোমার সুনাম রক্ষার জন্য তুমি আমার প্রতি দয়া কর; তোমার ভালবাসা মংগলময় বলে তুমি আমাকে উদ্ধার কর। আমি দুঃখী ও অভাবী; আমি অন্তরে আঘাত পেয়েছি। বিকালের ছায়ার মতই আমি মিলিয়ে যাচ্ছি; পংগপালের মত আমাকে ঝেড়ে ফেলা হয়েছে। না খেয়ে খেয়ে আমার হাঁটু দুর্বল হয়েছে; আমার দেহ রোগা হয়ে গেছে, একেবারে শুকিয়ে গেছে। আমার বিপক্ষদের কাছে আমি ঠাট্টার পাত্র হয়েছি; তারা আমাকে দেখে মাথা নাড়ে। হে সদাপ্রভু আমার ঈশ্বর, আমাকে সাহায্য কর; তোমার অটল ভালবাসার দরুন আমাকে রক্ষা কর। তারা জানুক এ তোমারই কাজ; তুমিই, হে সদাপ্রভু, এই কাজ করেছ। তারা অভিশাপ দিক, কিন্তু তুমি আশীর্বাদ কোরো; তারা আমার বিরুদ্ধে উঠলে লজ্জায় পড়বে, কিন্তু তোমার দাস আনন্দিত হবে। আমার বিপক্ষেরা অপমানে ঢাকা পড়ুক, আর লজ্জা চাদরের মত তাদের দেহে জড়িয়ে থাকুক। আমি সকলের সামনে সদাপ্রভুর অনেক ধন্যবাদ করব, আর অনেক লোকের মধ্যে তাঁর প্রশংসা করব; কারণ তিনি অভাবীর পাশে থাকেন, যেন অন্যায় বিচারের রায় থেকে তার প্রাণ রক্ষা করতে পারেন। সদাপ্রভু আমার প্রভুকে বললেন, “যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় রাখি, ততক্ষণ তুমি আমার ডান দিকে বস।” তোমার রাজপদের অধিকার সদাপ্রভু সিয়োন থেকে প্রকাশ করবেন; তিনি বলবেন, “তোমার শত্রুদের মাঝখানে থেকে তুমি রাজত্ব কোরো।” যুদ্ধের দিনে তোমার লোকেরা নিজেরাই যুদ্ধ করতে আসবে; পবিত্রতার সাজে সেজে ভোরের গর্ভ থেকে যেমন শিশির, তেমনি তোমার কাছে তোমার যুবকেরা। সদাপ্রভু শপথ করেছেন, “তুমি চিরকালের জন্য মল্কীষেদকের মত পুরোহিত।” এই বিষয়ে তিনি তাঁর মন বদলাবেন না। প্রভু তোমার ডান পাশে আছেন; তাঁর ক্রোধের দিনে তিনি রাজাদের শেষ করে দেবেন। তিনি বিভিন্ন জাতির বিচার করে রায় দেবেন; তিনি পৃথিবী মৃতদেহে পরিপূর্ণ করবেন; তিনি পৃথিবীর সব জায়গায় শত্রুদের মাথা চুরমার করবেন। তাদের তাড়া করে যেতে যেতে তিনি স্রোতের জল খাবেন, তাতে সতেজ হয়ে শেষে তিনি জয়ী হবেন। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। আমি সমস্ত অন্তর দিয়ে সদাপ্রভুর গৌরব করব, গৌরব করব ঈশ্বরভক্তদের দলের মধ্যে, গৌরব করব সভার লোকদের মধ্যে। সদাপ্রভুর সব কাজ মহৎ; যারা তাতে আনন্দিত হয় তারা সেই সব নিয়ে ধ্যান করে। তাঁর কাজ গৌরব ও মহিমায় পূর্ণ, তাঁর সততা চিরকাল স্থায়ী। তিনি তাঁর আশ্চর্য কাজগুলো স্মরণীয় করে রাখলেন; তিনি দয়াময় এবং মমতায় পূর্ণ। তাঁর ভক্তদের তিনি খাবার যুগিয়ে দেন; তাঁর স্থাপন করা ব্যবস্থা তিনি কখনও ভুলবেন না। অন্যান্য জাতির দেশ অধিকার হিসাবে তাঁর লোকদের দিয়ে তিনি তাঁর কাজের শক্তি তাদের দেখিয়েছেন। তাঁর সব কাজে তিনি বিশ্বস্ত ও ন্যায়ে পূর্ণ; তাঁর সমস্ত নিয়ম বিশ্বাসযোগ্য। সেই নিয়মগুলো চিরকাল স্থায়ী; তা বিশ্বস্ততা ও সততার সংগে স্থাপন করা হয়েছে। তাঁর লোকদের জন্য তিনি মুক্তির বন্দোবস্ত করেছেন; তিনি আদেশ দিয়ে চিরকালের জন্য তাঁর ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন। তিনি পবিত্র; তিনি ভয় ও ভক্তি জাগান। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় হল জ্ঞানের ভিত্তি; যারা সেই অনুসারে কাজ করে তারা সুবুদ্ধি পায়। সদাপ্রভুর প্রশংসা চিরকাল স্থায়ী। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। যে সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে এবং তাঁর আদেশে খুব আনন্দিত হয় সে ধন্য। তার বংশধরেরা পৃথিবীতে শক্তিশালী হবে; অন্তরে যে খাঁটি তার বংশ আশীর্বাদ পাবে। তার ঘরে ধন ও সম্পদ থাকবে; তার সততা চিরকাল স্থায়ী। যে অন্তরে খাঁটি তার জন্য অন্ধকারেও আলো দেখা দেয়, কারণ সে দয়ালু, মমতায় পূর্ণ ও সৎ। যে দয়া করে ও ধার দেয় আর ন্যায়ভাবে সব কাজ করে তার মংগল হয়। সে সব সময় স্থির থাকবে; ঈশ্বরভক্ত লোককে মানুষ চিরকাল মনে রাখবে। অমংগলের সংবাদেও সে ভয় পাবে না; তার অন্তর স্থির আর সে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে। তার অন্তর সুস্থির বলে সে ভয় করে না; শেষে সে তার শত্রুদের পরাজয় দেখবে। সে খোলা হাতে গরীবদের দান করেছে; তার সততা চিরকাল স্থায়ী, তার শক্তি ও সম্মান বৃদ্ধি পাবে। দুষ্ট লোক তা দেখে বিরক্ত হবে; সে দাঁতে দাঁত ঘষবে ও শেষ হয়ে যাবে। দুষ্টদের আশা-ভরসা নিষ্ফল হবে। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। হে সদাপ্রভুর দাসেরা, গৌরব কর; সদাপ্রভুর গৌরব কর। সদাপ্রভুর নাম ধন্য হোক, এখন ও চিরকাল হোক। সূর্য ওঠার স্থান থেকে শুরু করে তার অস্ত যাবার স্থান পর্যন্ত সদাপ্রভুর গৌরব হোক। সমস্ত জাতি সদাপ্রভুর অধীন; আকাশেরও উপরে রয়েছে তাঁর মহিমা। আর কে আছে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর মত? তিনি আকাশেরও অনেক উপরে বাস করেন আর নীচু হয়ে মহাকাশ ও পৃথিবীর দিকে তাকান। তিনি ধুলা থেকে দুঃখীকে উঠান, আর অভাবীকে উঠান ময়লার স্তূপ থেকে; যাতে তিনি উঁচু পদের লোকদের সংগে তাদের বসিয়ে দিতে পারেন, এমন কি, যারা তাঁর লোকদের মধ্যে উঁচু পদে আছে তাদের সংগে বসিয়ে দিতে পারেন। তিনি বন্ধ্যাকে ছেলেমেয়েদের আনন্দময়ী মা করে সংসারের পূর্ণ অধিকার দেন। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। ইস্রায়েল জাতি যখন মিসর থেকে বের হয়ে আসল, ভিন্ন ভাষায় কথা বলা লোকদের মধ্য থেকে যাকোবের বংশ যখন বের হয়ে আসল, তখন যিহূদা হল ঈশ্বরের পবিত্র স্থান, ইস্রায়েল হল তাঁর রাজ্য। তা দেখে লোহিত সাগর পালিয়ে গেল, যর্দন নদী উজানে বইল, আর বড় বড় পাহাড় ভেড়ার মত, ছোট ছোট পাহাড় ভেড়ার বাচ্চার মত লাফাতে লাগল। ওহে সাগর, কি হল তোমার? কেন তুমি পালিয়ে গেলে? ওহে যর্দন, কেন তুমি উজানে বইলে? ওহে বড় বড় পাহাড়, কেন তোমরা ভেড়ার মত লাফাতে লাগলে? ওহে ছোট ছোট পাহাড়, কেন লাফাতে লাগলে ভেড়ার বাচ্চার মত? হে পৃথিবী, প্রভুর সামনে, যাকোবের ঈশ্বরের সামনে কেঁপে ওঠো। তিনি পাথুরে পাহাড়কে করলেন পুকুর আর শক্ত পাথরকে করলেন জলের ফোয়ারা। আমাদের নয়, হে সদাপ্রভু, আমাদের নয়, কিন্তু তোমার গৌরব হোক; তোমার অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার জন্যই হোক। অন্য জাতিরা কেন বলবে, “কোথায় ওদের ঈশ্বর?” আমাদের ঈশ্বর স্বর্গে আছেন; তাঁর ইচ্ছামত তিনি কাজ করেন। ওদের প্রতিমাগুলো সোনা আর রূপা দিয়ে মানুষের হাতে গড়া। তাদের মুখ আছে কিন্তু কথা বলতে পারে না, চোখ আছে কিন্তু দেখতে পায় না; তাদের কান আছে কিন্তু শুনতে পায় না, নাক আছে কিন্তু গন্ধ নিতে পারে না। তাদের হাত আছে কিন্তু ছুঁতে পারে না, পা আছে কিন্তু হাঁটতে পারে না, গলা দিয়ে কোন শব্দও বের করতে পারে না। যারা এগুলোকে তৈরী করে আর তাদের উপর বিশ্বাস ও নির্ভর করে তারাও ঐ সব প্রতিমার মত হবে। হে ইস্রায়েলীয়েরা, সদাপ্রভুর উপর নির্ভর কর - তিনিই তাদের সাহায্যকারী ও ঢাল। হে হারোণের বংশ, সদাপ্রভুর উপর নির্ভর কর - তিনিই তাদের সাহায্যকারী ও ঢাল। হে সদাপ্রভুর ভক্তেরা, সদাপ্রভুর উপর নির্ভর কর - তিনিই তাদের সাহায্যকারী ও ঢাল। সদাপ্রভু আমাদের কথা মনে করেছেন, সেজন্য তিনি আমাদের আশীর্বাদ করবেন; হ্যাঁ, তিনি ইস্রায়েলের বংশকে আশীর্বাদ করবেন, তিনি হারোণের বংশকে আশীর্বাদ করবেন, তিনি তাঁর ছোট-বড় সব ভক্তকে আশীর্বাদ করবেন। সদাপ্রভু তোমাদের ও তোমাদের সন্তানদের বংশ বাড়িয়ে তুলুন। সদাপ্রভু, যিনি স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তিনি তোমাদের আশীর্বাদ করুন। স্বর্গ হল সদাপ্রভুরই স্বর্গ, কিন্তু পৃথিবীটা তিনি মানুষকে দিয়েছেন। মৃতেরা তো সদাপ্রভুর গৌরব করে না; যারা মৃত্যুর নীরবতার মধ্যে নেমে যায় তারা গৌরব করে না; কিন্তু আমরা সদাপ্রভুর গৌরব করব, গৌরব করব এখন থেকে চিরকাল। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। আমি সদাপ্রভুকে ভালবাসি, কারণ তিনি আমার মিনতি শুনেছেন। তিনি আমার কথায় কান দিয়েছেন, তাই যতদিন আমি বেঁচে থাকব ততদিন তাঁকে ডাকব। মৃত্যুর দড়িতে আমি বাঁধা পড়েছিলাম, মৃতস্থানের যন্ত্রণা আমাকে পেয়ে বসেছিল; আমি দুঃখ ও কষ্ট পাচ্ছিলাম। তখন আমি সদাপ্রভুকে ডেকে বললাম, “হে সদাপ্রভু, আমি তোমার কাছে মিনতি করি, তুমি আমার প্রাণ বাঁচাও।” সদাপ্রভু দয়াময় ও ন্যায়বান; আমাদের ঈশ্বর মমতায় পূর্ণ। সদাপ্রভু সরলমনা লোকদের রক্ষা করেন; আমি অসহায় হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু তিনিই আমাকে উদ্ধার করেছিলেন। হে আমার প্রাণ, আবার শান্ত হও, কারণ সদাপ্রভু তোমার অনেক মংগল করেছেন। হে সদাপ্রভু, তুমিই মৃত্যু থেকে আমার প্রাণ, চোখের জল থেকে আমার চোখ, আর পড়ে যাওয়ার হাত থেকে আমার পা রক্ষা করেছ। আমি জীবিতদের মধ্যে সদাপ্রভুর সামনে চলাফেরা করব। যখন আমি বলেছিলাম, “আমি খুব দুর্দশায় পড়েছি,” তখনও আমার বিশ্বাস ছিল। আমি ভয় পেয়ে বলেছিলাম, “সব মানুষই মিথ্যাবাদী।” সদাপ্রভু আমার যে সব মংগল করেছেন তার বদলে আমি তাঁকে কি দেব? তিনি বিপদ থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন, সেজন্য ঢালন-উৎসর্গের পেয়ালা আমি তুলে ধরব আর তাঁর গৌরব ঘোষণা করব। সদাপ্রভুর কাছে আমি যে সব মানত করেছি তাঁর সব লোকদের সামনেই আমি তা পূর্ণ করব। সদাপ্রভুর কাছে তাঁর ভক্তদের মৃত্যুর মূল্য অনেক বেশী। হে সদাপ্রভু, সত্যিই আমি তোমার দাস, তোমারই দাস, তোমার দাসীর ছেলে; তুমিই আমার বাঁধন খুলে দিয়েছ। আমি তোমার উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করব আর তোমার গৌরব ঘোষণা করব। সদাপ্রভুর কাছে আমি যে সব মানত করেছি তাঁর সব লোকদের সামনেই আমি তা পূর্ণ করব; হে যিরূশালেম, তোমারই মধ্যে, সদাপ্রভুর ঘরের উঠানে আমি তা পূর্ণ করব। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। হে সমস্ত জাতি, সদাপ্রভুর গৌরব কর; হে সমস্ত লোক, তাঁর প্রশংসা কর; কারণ আমাদের প্রতি সদাপ্রভুর ভালবাসা প্রচুর আর তাঁর বিশ্বস্ততা চিরকাল স্থায়ী। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দাও, কারণ তিনি মংগলময়; তাঁর অটল ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। ইস্রায়েলীয়েরা বলুক, “তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।” হারোণের বংশ বলুক, “তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।” সদাপ্রভুর ভক্তেরা বলুক, “তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী।” আমি বিপদে পড়ে সদাপ্রভুকে ডাকলাম; তিনি আমার ডাকে সাড়া দিয়ে একটা খোলা জায়গায় আমাকে বের করে আনলেন। সদাপ্রভু আমার পক্ষে আছেন, আমি ভয় করব না; মানুষ আমার কি করতে পারে? আমার সাহায্যকারী হিসাবে সদাপ্রভু আমার পক্ষে আছেন, তাই আমার শত্রুদের পরাজয় আমি দেখতে পাব। মানুষের উপরে নির্ভর করার চেয়ে সদাপ্রভুর মধ্যে আশ্রয় নেওয়া ভাল। উঁচু পদের লোকদের উপরে নির্ভর করার চেয়ে সদাপ্রভুর মধ্যে আশ্রয় নেওয়া ভাল। সমস্ত জাতি আমাকে ঘিরে ধরেছে, কিন্তু সদাপ্রভুর নামে আমি তাদের শেষ করে দেব। তারা আমাকে ঘিরে ধরেছে, সত্যিই তারা আমাকে ঘিরে ধরেছে, কিন্তু সদাপ্রভুর নামে আমি তাদের শেষ করে দেব। মৌমাছির মত তারা আমাকে ঘিরে ধরেছে; কাঁটা-ঝোপের আগুনের মতই তাড়াতাড়ি তারা নিভে গেছে। সদাপ্রভুর নামে আমি তাদের নিশ্চয়ই শেষ করে দেব। আমি যাতে পড়ে যাই সেজন্য তারা আমাকে ধাক্কা মেরেছিল, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে সাহায্য করলেন। সদাপ্রভুই আমার শক্তি, তিনিই আমার গান; তাঁরই মধ্যে রয়েছে আমার উদ্ধার। সৎ লোকদের বাড়ীতে উদ্ধারের আনন্দধ্বনি শোনা যায়; সদাপ্রভুর শক্তিশালী হাত মহৎ কাজ করেছে। সদাপ্রভুর শক্তিশালী হাত জয় দান করেছে; সদাপ্রভুর শক্তিশালী হাত মহৎ কাজ করেছে। আমি মরব না, বেঁচে থাকব, আর সদাপ্রভু যা করেছেন তা ঘোষণা করব। সদাপ্রভু আমাকে কড়া শাসন করেছেন, কিন্তু মৃত্যুর হাতে তিনি আমাকে তুলে দেন নি। আমাকে ন্যায়বান সদাপ্রভুর ঘরের দরজা খুলে দাও, যেন আমি সেখানে ঢুকে তাঁর ধন্যবাদ করতে পারি। এই তো সদাপ্রভুর ঘরের দরজা; এর মধ্য দিয়েই সৎ লোকেরা ঢোকে। আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাব, কারণ তুমি আমার কথা শুনেছ; আমার উদ্ধার তোমারই মধ্যে রয়েছে। রাজমিস্ত্রিরা যে পাথরটা বাতিল করে দিয়েছিল সেটাই সবচেয়ে দরকারী পাথর হয়ে উঠল; সদাপ্রভুই এটা করলেন, আর তা আমাদের চোখে খুব আশ্চর্য লাগে। এই সেই দিন যা সদাপ্রভু ঠিক করেছেন; এস, আমরা এই দিনে আনন্দ করি ও খুশী হই। হে সদাপ্রভু, মিনতি করি তুমি আমাদের উদ্ধার কর; হে সদাপ্রভু, মিনতি করি সফলতা দান কর। যিনি সদাপ্রভুর নামে আসছেন তাঁর গৌরব হোক। সদাপ্রভুর ঘর থেকে আমরা তোমাদের আশীর্বাদ করছি। সদাপ্রভুই ঈশ্বর, তিনিই আমাদের আলো দিয়েছেন। পর্বের উৎসর্গের পশু তোমরা দড়ি দিয়ে বেদীর শিংয়ে বেঁধে দাও। তুমিই আমার ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাব; তুমিই আমার ঈশ্বর, আমি তোমার গৌরব করব। সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দাও, কারণ তিনি মংগলময়; তাঁর অটল ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। ধন্য তারা, যারা নিখুঁত জীবন কাটায় আর সদাপ্রভুর নির্দেশ অনুসারে চলে। ধন্য তারা, যারা তাঁর কথা মেনে চলে আর সমস্ত অন্তর দিয়ে তাঁর ইচ্ছামত চলে। তারা কোন অন্যায় করে না; তারা সদাপ্রভুর পথেই চলে। তুমি নিয়ম-কানুন ঠিক করে দিয়েছ যেন আমরা তা যত্নের সংগে পালন করি। আহা! তোমার নিয়ম মত চলার জন্য যেন আমার মনের স্থিরতা থাকে। তাহলে তোমার সব আদেশ পালন করবার দরুন আমি লজ্জিত হব না। তোমার ন্যায়পূর্ণ আইন-কানুন শিক্ষা করতে করতে আমি খাঁটি অন্তরে তোমাকে ধন্যবাদ জানাব। আমি তোমার নিয়ম মত চলব; আমাকে একেবারে ত্যাগ কোরো না। যুবক কেমন করে তার জীবন খাঁটি রাখতে পারবে? তোমার বাক্য পালন করেই সে তা পারবে। আমার সারা অন্তর দিয়ে আমি তোমাকে জানতে আগ্রহী হয়েছি; তোমার আদেশ-পথের বাইরে আমাকে ঘুরে বেড়াতে দিয়ো না। তোমার বাক্য আমার অন্তরে আমি জমা করে রেখেছি, যাতে তোমার বিরুদ্ধে পাপ না করি। হে সদাপ্রভু, তুমি ধন্য। তোমার নিয়ম আমাকে শিক্ষা দাও। তোমার মুখ থেকে যে সব আইন-কানুন বের হয়েছে আমার মুখ তা প্রকাশ করবে। মহাধন লাভ করলে মানুষ যেমন আনন্দ পায়, তোমার কথা মেনে চলে আমি তেমনই আনন্দ পাই। আমি তোমার নিয়ম-কানুনের বিষয় ধ্যান করি, আর তোমার পথের দিকে মনোযোগ দিই। তোমার নিয়মের মধ্যে আমি আনন্দ পাই; তোমার বাক্য আমি ভুলে যাব না। তোমার এই দাসের মংগল কর যেন আমি বেঁচে থাকি আর তোমার বাক্য পালন করতে পারি। আমার চোখ খুলে দাও যাতে তোমার শিক্ষার মধ্যে আমি আশ্চর্য আশ্চর্য বিষয় দেখতে পাই। আমি তো পৃথিবীতে বাসকারী একজন বিদেশী; তোমার আদেশ আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখো না। তোমার আইন-কানুন জানার জন্য সব সময় আমার প্রাণের আকুলতা খুব বেশী। তুমি অহংকারীদের ধমক দিয়ে থাক; তারা তো অভিশপ্ত, তারা তোমার আদেশের পথ ছেড়ে ঘুরে বেড়ায়। অপমান ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ তুমি আমার কাছ থেকে দূর কর, কারণ আমি তোমার কথা মেনে চলি। যদিও শাসনকর্তারা বসে আমার বিপক্ষে কথা বলেন তবুও তোমার এই দাস তোমার নিয়ম ধ্যান করে। তোমার কথাই আমার আনন্দ; সেগুলো আমাকে পরামর্শ দেয়। আমি ধুলায় লুটিয়ে পড়েছি; তোমার বাক্য অনুসারে আমাকে নতুন শক্তি দান কর। আমার জীবনের সব কথা আমি তোমাকে জানিয়েছি, আর তুমি আমাকে উত্তর দিয়েছ; তোমার নিয়ম আমাকে শিক্ষা দাও; তোমার নিয়ম-কানুনের নির্দেশ আমাকে বুঝবার শক্তি দাও; তাহলে আমি তোমার আশ্চর্য আশ্চর্য কাজের বিষয় ধ্যান করতে পারব। দুঃখে আমার প্রাণ কাতর হয়ে পড়েছে; তোমার বাক্য অনুসারে আমাকে শক্তি দান কর। আমার মধ্য থেকে ছলনা দূর কর; তুমি দয়া করে তোমার শিক্ষা আমাকে দান কর। আমি বিশ্বস্ততার পথ বেছে নিয়েছি; তোমার আইন-কানুন আমার সামনে রেখেছি। হে সদাপ্রভু, আমি তোমার কথা আঁকড়ে ধরে রেখেছি; তুমি আমাকে লজ্জা পেতে দিয়ো না। তোমার আদেশের পথে আমি দৌড়ে যাব, কারণ তুমি আমার অন্তর খুলে দিয়েছ। হে সদাপ্রভু, তোমার নিয়ম সম্বন্ধে আমাকে শিক্ষা দাও; জীবনের শেষ পর্যন্ত আমি তা পালন করব। আমাকে বুঝবার শক্তি দাও, যাতে আমি তোমার নির্দেশ অনুসারে চলতে পারি আর আমার সমস্ত অন্তর দিয়ে তা পালন করতে পারি। তোমার আদেশের পথে আমাকে চালাও, কারণ তাতেই আমি আনন্দ পাই। অন্যায় লাভের দিকে আমার অন্তর যেন না ফেরে, বরং তোমার কথার দিকে তুমি আমার অন্তর ফিরাও। অসার জিনিসের দিক থেকে তুমি আমার চোখ ফিরাও; তোমার পথে চলতে আমাকে নতুন শক্তি দাও। তোমার এই দাসের কাছে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছ তা তুমি পূর্ণ কর, যাতে আমি তোমাকে ভক্তি করতে পারি। আমার অপমান তুমি দূর কর যার বিষয়ে আমি ভয় পাই; সত্যিই তোমার আইন-কানুন মংগল বয়ে আনে। তোমার নিয়ম-কানুনের প্রতি আমার আগ্রহ রয়েছে; তুমি ন্যায়বান বলে আমাকে নতুন শক্তি দাও। হে সদাপ্রভু, তোমার অটল ভালবাসা আমাকে দেখাও; তোমার প্রতিজ্ঞা অনুসারে তুমি আমাকে উদ্ধার কর। তাহলে যারা আমাকে ঠাট্টা করে তাদের আমি উত্তর দিতে পারব, কারণ আমি তোমার বাক্যের উপর নির্ভর করি। তোমার সত্যের বাক্য তুমি আমার মুখ থেকে একেবারে কেড়ে নিয়ো না, কারণ তোমার আইন-কানুনের উপরেই আমি আশা করে রয়েছি। আমি সব সময় তোমার নির্দেশ পালন করব, চিরকাল তা করব। আমি বিনা বাধায় জীবন কাটাব, কারণ তোমার নিয়ম-কানুনের দিকে আমি মনোযোগ দিয়েছি। তুমি যে সব কথা বলেছ তা আমি রাজাদের সামনে বলব; আমি লজ্জিত হব না। তোমার সব আদেশ পালন করার মধ্যে আমি আনন্দ পাই, কারণ আমি সেগুলো ভালবাসি। তোমার সব আদেশের প্রতি আমার গভীর আগ্রহ আছে, কারণ আমি সেগুলো ভালবাসি; তোমার নিয়ম আমি ধ্যান করি। তোমার এই দাসের কাছে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছ তা মনে করে দেখ; তার দ্বারাই তো তুমি আমাকে আশা দিয়েছিলে। তোমার বাক্য যে আমাকে নতুন শক্তি দেয়, কষ্টভোগের সময় এটাই আমার সান্ত্বনা। অহংকারীরা আমাকে খুব ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, কিন্তু আমি তোমার নির্দেশ থেকে একটুও সরে যাই নি। হে সদাপ্রভু, অনেক কাল আগে দেওয়া তোমার আইন-কানুনের কথা আমি মনে করি আর নিজেকে সান্ত্বনা দিই। দুষ্ট লোকদের দুষ্টতা দেখে ভীষণ রাগ আমাকে পেয়ে বসেছে; তারা তো তোমার নির্দেশ ত্যাগ করেছে। আমি যতদিন এই পৃথিবীর বাসিন্দা হয়ে আছি ততদিন তোমার নিয়মগুলোই হবে আমার গানের বিষয়। হে সদাপ্রভু, আমি তোমার নির্দেশ মেনে চলি, আর রাতে তোমার কথা মনে করি। এটাই আমার অভ্যাস যে, আমি তোমার নিয়ম-কানুন মেনে চলি। হে সদাপ্রভু, তুমি আমার সম্পত্তি; আমি তোমার কথা মেনে চলার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছি। আমি মনে-প্রাণে তোমার দয়া চেয়েছি; তোমার বাক্য অনুসারে তুমি আমার প্রতি দয়া কর। আমার চলাফেরার বিষয় আমি চিন্তা করে দেখেছি, সেজন্য তোমার বাক্যের দিকে আমার পা ফিরিয়েছি। তুমি যে সব আদেশ দিয়েছ তা আমি তাড়াতাড়ি পালন করেছি, দেরি করি নি। দুষ্ট লোকদের দড়িতে আমি বাঁধা পড়েছি, কিন্তু আমি তোমার নির্দেশ ভুলে যাই নি। তোমার ন্যায়পূর্ণ আইন-কানুনের জন্য ধন্যবাদ দিতে আমি দুপুর রাতে উঠি। যারা তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে ও তোমার নিয়ম-কানুন পালন করে আমি তাদের সকলের সংগী। হে সদাপ্রভু, পৃথিবী তোমার অটল ভালবাসায় পূর্ণ; তোমার নিয়ম আমাকে শিক্ষা দাও। হে সদাপ্রভু, তোমার বাক্য অনুসারে তোমার এই দাসের তুমি মংগল করেছ। আমার যাতে ভাল বিচারবুদ্ধি ও জ্ঞান হয় সেজন্য তুমি আমাকে শিক্ষা দাও; তোমার সব আদেশের উপর আমি নির্ভর করি। কষ্ট পাবার আগে আমি বিপথে ছিলাম, কিন্তু এখন আমি তোমার বাক্যের বাধ্য হয়েছি। তুমি মংগলময় আর মংগলই করে থাক; তোমার নিয়ম আমাকে শিক্ষা দাও। অহংকারীরা মিথ্যা দিয়ে আমাকে ঢেকে দিয়েছে কিন্তু আমি মন-প্রাণ দিয়ে তোমার নিয়ম-কানুন পালন করি। তাদের অন্তর চর্বির মত অসাড়, কিন্তু আমি তোমার সমস্ত নির্দেশে আনন্দ পাই। আমি যে কষ্ট পেয়েছি তা আমার পক্ষে ভালই হয়েছে; তাতে আমি তোমার নিয়ম শিখতে পারছি। তোমার মুখের নির্দেশ আমার কাছে হাজার হাজার সোনা-রূপার টুকরার চেয়েও দামী। তোমার হাতই আমাকে তৈরী করেছে, আমাকে গড়েছে; আমাকে বুঝবার শক্তি দাও যাতে তোমার সব আদেশ আমি জানতে পারি। যারা তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে তারা আমাকে দেখে আনন্দ পাবে, কারণ আমি তোমার প্রতিজ্ঞার উপর নির্ভর করে আছি। হে সদাপ্রভু, আমি জানি তোমার আইন-কানুন ন্যায়ে পূর্ণ; তুমি বিশ্বস্ত বলে আমাকে কষ্ট দিয়েছ। তোমার এই দাসের কাছে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছ সেই অনুসারে তোমার অটল ভালবাসাই হোক আমার সান্ত্বনা। আমার প্রতি তোমার করুণা নেমে আসুক যেন আমি বেঁচে থাকি, কারণ তোমার নির্দেশ আমাকে আনন্দ দেয়। মিথ্যা কথা বলে আমার সর্বনাশ করার জন্য অহংকারীরা লজ্জিত হোক; কিন্তু আমি তোমার নিয়ম-কানুনের বিষয় ধ্যান করব। যারা তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে ও তোমার বাক্য বুঝতে পারে তারা আমার কাছে ফিরে আসুক। তোমার নিয়ম পালন করার সময় আমার অন্তর যেন নিখুঁত থাকে, যাতে আমি লজ্জায় না পড়ি। তুমি আমাকে রক্ষা করবে সেই অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমার শক্তি কমে যাচ্ছে; আমি তোমার বাক্যে আশা রেখেছি। তোমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবার অপেক্ষায় আমার চোখ দুর্বল হয়ে পড়েছে; আমি বলি, “কখন তুমি আমাকে সান্ত্বনা দেবে?” আংগুর-রস রাখা চামড়ার থলি ধূমায় যেমন নষ্ট হয়ে যায় আমি তেমনই হয়েছি; তবুও তোমার নিয়ম আমি ভুলে যাই না। তোমার এই দাসের আয়ু আর কতকাল? আমাকে যারা অত্যাচার করে কবে তুমি তাদের বিচার করবে? অহংকারীরা আমার জন্য গর্ত খুঁড়েছে; তারা তোমার নির্দেশ মানে না। তোমার সমস্ত আদেশই বিশ্বাসযোগ্য। লোকে মিথ্যা কথা বলে আমাকে অত্যাচার করে; তুমি আমাকে সাহায্য কর। পৃথিবী থেকে তারা আমাকে প্রায় মুছে ফেলেছিল, কিন্তু তোমার নিয়ম-কানুন আমি ত্যাগ করি নি। তোমার অটল ভালবাসায় তুমি আমাকে নতুন শক্তি দাও, যাতে তোমার মুখের বাক্য আমি পালন করতে পারি। হে সদাপ্রভু, তোমার বাক্য স্বর্গে চিরকাল স্থির আছে। বংশের পর বংশ ধরে তোমার বিশ্বস্ততা বয়ে চলেছে; তুমি পৃথিবী স্থাপন করেছ, আর তা স্থির রয়েছে। তোমার আইন-কানুন অনুসারে আজও সব কিছু স্থির আছে, কারণ সেগুলো তোমার অধীনে রয়েছে। তোমার সব নির্দেশে যদি আমি আনন্দ না পেতাম, তবে আমার কষ্টে আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম। তোমার নিয়ম-কানুন আমি কখনও ভুলে যাব না, কারণ তার দ্বারাই তো তুমি আমাকে নতুন শক্তি দান করেছ। আমাকে রক্ষা কর, কারণ আমি তোমারই; তোমার নিয়ম-কানুনের দিকে আমি মনোযোগ দিয়েছি। দুষ্টেরা আমাকে ধ্বংস করার জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু তোমার বাক্য নিয়ে আমি গভীরভাবে চিন্তা করব। আমি দেখেছি কোন কিছুরই পরিপূর্ণতা নেই, কিন্তু তোমার আদেশগুলো সব দিক থেকেই পরিপূর্ণ। আমি তোমার নির্দেশ কত ভালবাসি! সারা দিন আমি তা ধ্যান করি। তোমার সব আদেশ আমার শত্রুদের চেয়ে আমাকে বুদ্ধিমান করে তোলে, কারণ সেগুলো সব সময়েই আমার সংগে সংগে থাকে। আমার সব শিক্ষকদের চেয়ে আমি জ্ঞানবান, কারণ তোমার সমস্ত কথা আমি ধ্যান করি। বৃদ্ধ লোকদের চেয়েও আমি বেশী বুঝি, কারণ আমি তোমার নিয়ম-কানুন পালন করি। সমস্ত কুপথ থেকে আমার পা আমি সরিয়ে রেখেছি, যাতে আমি তোমার বাক্য পালন করতে পারি। তোমার আইন-কানুনের পথ থেকে আমি সরে যাই নি, কারণ তুমি নিজেই আমাকে শিক্ষা দিয়েছ। তোমার সব প্রতিজ্ঞা আমার জিভে কেমন মিষ্টি লাগে! তা আমার মুখে মধুর চেয়েও মিষ্টি মনে হয়। তোমার নিয়ম-কানুন থেকে আমি বিচারবুদ্ধি লাভ করি, তাই আমি সমস্ত মিথ্যা পথ ঘৃণা করি। তোমার বাক্য আমার পথ দেখাবার বাতি, আমার চলার পথের আলো। আমি তোমার ন্যায়পূর্ণ আইন-কানুন মেনে চলার শপথ করেছি, আর সেই শপথ পাকাপোক্ত করেছি। আমি অনেক কষ্ট সহ্য করছি; হে সদাপ্রভু, তোমার বাক্য অনুসারে আমাকে নতুন শক্তি দাও। হে সদাপ্রভু, আমি নিজের ইচ্ছায় যে প্রশংসা উৎসর্গ করি তা তুমি গ্রহণ কর, আর তোমার আইন-কানুন আমাকে শিক্ষা দাও। যদিও সব সময় আমি জীবনটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চলি, তবুও তোমার নির্দেশ আমি ভুলে যাই না। দুষ্টেরা আমার জন্য ফাঁদ পেতেছে, কিন্তু আমি তোমার নিয়ম-কানুন থেকে সরে যাই নি। তোমার বাক্য আমার চিরকালের সম্পত্তি; তা আমার অন্তরের আনন্দ। সব সময়, এমন কি, শেষ পর্যন্ত তোমার নিয়ম পালন করার জন্য আমার অন্তরকে আমি স্থির করেছি। দু’মনা লোকদের আমি পছন্দ করি না, কিন্তু তোমার নির্দেশ আমি ভালবাসি। তুমিই আমার আশ্রয় ও আমার ঢাল; তোমার বাক্যের উপরেই আমি আশা রেখেছি। তোমরা যারা মন্দ কাজ কর, তোমরা আমার কাছ থেকে দূর হও, যাতে আমার ঈশ্বরের আদেশ আমি পালন করতে পারি। তোমার প্রতিজ্ঞা অনুসারে তুমি আমাকে ধরে রাখ, তাতে আমি বেঁচে থাকব; তোমার উপর আমার যে আশা আছে সেই বিষয়ে তুমি আমাকে লজ্জিত হতে দিয়ো না। আমাকে ধর, তাহলে আমি রক্ষা পাব, আর তোমার নিয়ম আমি সব সময় মেনে চলব। তোমার নিয়ম থেকে যারা দূরে চলে যায় তাদের তুমি অগ্রাহ্য করেছ, কারণ তাদের ভান করা নিষ্ফল। পৃথিবীর সব দুষ্টদের তুমি ময়লার মত দূর করে দিয়ে থাক, সেইজন্যই তো তোমার সব কথা আমি ভালবাসি। তোমার ভয়ে আমার গায়ে কাঁটা দেয়; তোমার আইন-কানুনের দরুন আমি ভয়-ভক্তিতে পূর্ণ হই। আমি ন্যায়বিচার ও ন্যায় কাজ করেছি; যারা আমাকে অত্যাচার করে তাদের হাতে তুমি আমাকে ছেড়ে দিয়ো না। তোমার এই দাসের মংগলের ভার তুমি নাও; অহংকারীদের আমাকে অত্যাচার করতে দিয়ো না। তোমার সততা অনুসারে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছ তা পূর্ণ হবার এবং তোমার দেওয়া উদ্ধার পাবার অপেক্ষায় থেকে আমার চোখ দুর্বল হয়ে পড়েছে। তোমার এই দাসের সংগে তোমার অটল ভালবাসা অনুসারে ব্যবহার কর, আর তোমার নিয়ম আমাকে শিক্ষা দাও। আমি তোমার দাস; আমাকে বুঝবার শক্তি দাও যাতে আমি তোমার কথা বুঝতে পারি। হে সদাপ্রভু, এখন তোমার কাজে নামার সময় হয়েছে; লোকে তো তোমার নির্দেশ অমান্য করেছে। সেইজন্য আমি তোমার সমস্ত আদেশ সোনার চেয়ে, খাঁটি সোনার চেয়েও ভালবাসি। তোমার সমস্ত নিয়ম-কানুন আমি ঠিক বলে মনে করি, আর সমস্ত মিথ্যা পথ ঘৃণা করি। তোমার সমস্ত কথা চমৎকার, সেইজন্যই আমি তা পালন করে থাকি। তোমার বাক্য প্রকাশিত হলে তা আলো দান করে; তা সরলমনা লোকদের বুঝবার শক্তি দেয়। তোমার আদেশ পাবার জন্য আমি আকুল হয়ে ছিলাম, যেন আমি মুখ খুলে হাঁপাচ্ছিলাম। যারা তোমাকে ভালবাসে তাদের প্রতি তুমি যেমন করে থাক, তেমনি করে তুমি আমার দিকে ফেরো ও আমার প্রতি দয়া কর। তোমার বাক্য অনুসারে ঠিক পথে চলবার জন্য তুমি আমার পা স্থির কর; কোন অন্যায় যেন আমার উপরে কর্তৃত্ব না করে। লোকদের অত্যাচারের হাত থেকে তুমি আমাকে মুক্ত কর যেন আমি তোমার নিয়ম-কানুন পালন করতে পারি। তোমার দয়া আলোর মত করে তোমার এই দাসের উপর পড়ুক; তোমার সব নিয়ম আমাকে শিক্ষা দাও। আমার চোখের জল স্রোতের মত বইছে, কারণ লোকে তোমার নির্দেশ মানে না। হে সদাপ্রভু, তুমি ন্যায়বান; তোমার বিচার ন্যায্য। তোমার ন্যায্যতায় ও মহা বিশ্বস্ততায় তুমি তোমার আইন-কানুন দিয়েছ। আমার শত্রুরা তোমার বাক্য ভুলে গেছে বলে তোমার সম্মান রক্ষার জন্য গভীর আগ্রহ আমাকে পেয়ে বসেছে। তোমার বাক্য একেবারে খাঁটি বলে প্রমাণিত হয়েছে, তাই তোমার এই দাস তা ভালবাসে। যদিও আমি সামান্য ও তুচ্ছ, তবুও আমি তোমার নিয়ম-কানুন ভুলে যাই না। তোমার ন্যায্যতা চিরকাল স্থায়ী, আর তোমার সমস্ত নির্দেশ সত্য। কষ্ট ও যন্ত্রণা আমার উপর এসে পড়েছে, কিন্তু তোমার সব আদেশেই আমি আনন্দ পাই। তোমার সব কথা চিরকাল ন্যায়ে পূর্ণ; আমাকে তা বুঝবার শক্তি দাও যেন আমি বেঁচে থাকতে পারি। আমার সমস্ত অন্তর দিয়ে আমি তোমাকে ডাকছি; হে সদাপ্রভু, আমাকে উত্তর দাও। আমি তোমার সব নিয়ম পালন করব। আমি তোমাকেই ডাকছি, আমাকে উদ্ধার কর; আমি তোমার সব কথা পালন করব। ভোর হওয়ার আগেই আমি উঠে সাহায্যের জন্য কাঁদি; তোমার প্রতিজ্ঞার উপর আমি নির্ভর করে আছি। রাত শেষ হবার আগেই আমার চোখ খুলে যায়, যেন তোমার সব প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমি ধ্যান করতে পারি। তোমার অটল ভালবাসা অনুসারে তুমি আমার কথা শোন; হে সদাপ্রভু, তোমার আইন-কানুন অনুসারে তুমি আমাকে নতুন শক্তি দাও। যারা খারাপ কাজ করে তারা কাছে এসে পড়েছে; তারা তোমার নির্দেশ থেকে অনেক দূরে থাকে। কিন্তু হে সদাপ্রভু, তুমি তো কাছেই আছ, আর তোমার সমস্ত আদেশ সত্য। তোমার বাক্য থেকে অনেক আগেই আমি জেনেছি যে, তুমি চিরকালের জন্য তা স্থির করেছ। আমার দুর্দশার দিকে তাকাও, আমাকে রক্ষা কর, কারণ আমি তোমার নির্দেশ ভুলে যাই নি। আমার পক্ষ হয়ে কথা বল, আর আমি যে নির্দোষ তা প্রমাণ কর; তোমার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমাকে নতুন শক্তি দাও। দুষ্ট লোকদের কাছ থেকে উদ্ধার অনেক দূরে রয়েছে, কারণ তারা তোমার নিয়মের দিকে মনোযোগ দেয় না। হে সদাপ্রভু, তোমার মমতা অনেক বেশী; তোমার আইন-কানুন অনুসারে আমাকে নতুন শক্তি দাও। আমার শত্রুরা ও অত্যাচারী লোকেরা সংখ্যায় অনেক, কিন্তু আমি তোমার বাক্য থেকে সরে যাই নি। বিশ্বাসঘাতকদের দেখে আমার ঘৃণা লাগে, কারণ তারা তোমার বাক্য অনুসারে চলে না। দেখ, আমি তোমার নিয়ম-কানুন কেমন ভালবাসি! হে সদাপ্রভু, তোমার অটল ভালবাসা অনুসারে আমাকে নতুন শক্তি দাও। তোমার সমস্ত বাক্য সত্য; তোমার প্রত্যেকটি ন্যায়পূর্ণ আইন চিরকাল স্থায়ী। শাসনকর্তারা বিনা কারণেই আমার উপর অত্যাচার করেন, কিন্তু আমার অন্তরে তোমার বাক্যের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় রয়েছে। যুদ্ধে পাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে লোকে যেমন আনন্দ পায়, ঠিক তেমনি তোমার প্রতিজ্ঞার জন্য আমি আনন্দ পাই। মিথ্যাকে আমি ঘৃণা করি, জঘন্য মনে করি, কিন্তু তোমার নির্দেশ আমি ভালবাসি। তোমার ন্যায়পূর্ণ আইন-কানুনের জন্য দিনে সাত বার আমি তোমার গৌরব করি। যারা তোমার নির্দেশ ভালবাসে তারা খুব শান্তি পায়; কোন কিছুতেই তারা উছোট খায় না। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে উদ্ধার করবে আমি সেই আশায় আছি, আর তোমার আদেশ পালন করছি। আমি তোমার সব কথা মেনে চলি আর তা খুব ভালবাসি। আমি তোমার নিয়ম-কানুন ও সব কথা মেনে চলি, কারণ আমার জীবনের আগাগোড়াই তোমার জানা আছে। হে সদাপ্রভু, আমার কান্না তোমার সামনে উপস্থিত হোক; তোমার বাক্য অনুসারে আমাকে বুঝবার শক্তি দাও। আমার মিনতি তোমার সামনে উপস্থিত হোক; তোমার প্রতিজ্ঞা অনুসারে তুমি আমাকে উদ্ধার কর। আমার ঠোঁট থেকে তোমার প্রশংসা উপ্‌চে পড়ুক, কারণ তুমিই আমাকে তোমার নিয়ম শিক্ষা দিচ্ছ। আমার জিভ্‌ তোমার বাক্য নিয়ে গান করুক, কারণ তোমার সমস্ত আদেশ ন্যায়পূর্ণ। তোমার হাত আমাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকুক, কারণ তোমার নিয়ম-কানুন আমি পালন করব বলে ঠিক করেছি। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে উদ্ধার করবে সেজন্য আমি আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করে আছি; তোমার সব নির্দেশই আমার আনন্দের বিষয়। আমাকে বাঁচতে দাও যেন আমি তোমার গৌরব করতে পারি; তোমার আইন-কানুন আমাকে সাহায্য করুক। হারানো ভেড়ার মত আমি বিপথে গিয়েছি; তোমার দাসকে তুমি খুঁজে নাও, কারণ তোমার আদেশ আমি ভুলে যাই নি। আমার বিপদের সময় আমি সদাপ্রভুকে ডাকলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন। হে সদাপ্রভু, মিথ্যাবাদী মুখ আর ছলনাকারী জিভ্‌ থেকে তুমি আমাকে রক্ষা কর। ওহে ছলনাকারী জিভ্‌, তিনি তোমাকে কি দেবেন? তিনি কি তোমাকে আরও শাস্তি দেবেন না? তিনি তোমাকে দেবেন যোদ্ধার ধারালো তীর আর রোতম কাঠের জ্বলন্ত কয়লা। হায়, কি দুর্ভাগ্য আমার! আমি মেশকীয়দের মত লোকদের কাছে বাস করছি, কেদরীয়দের মত লোকদের তাম্বুর মধ্যে রয়েছি। যারা শান্তি ঘৃণা করে তেমন লোকদের সংগে আমি আর বাস করতে চাই না। আমি শান্তি ভালবাসি, কিন্তু যখন আমি শান্তির কথা বলি তখন ওরা যুদ্ধ করতে চায়। আমি সেই পাহাড়ের সারির দিকে চোখ তুলে তাকাব; কোথা থেকে আমার সাহায্য আসবে? আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা সদাপ্রভুর কাছ থেকেই আমার সাহায্য আসবে। তিনি তোমার পা পিছ্‌লে যেতে দেবেন না; যিনি তোমাকে পাহারা দেন তিনি ঘুমে ঢুলে পড়বেন না। যিনি ইস্রায়েলীয়দের পাহারা দেন তিনি তো ঘুমে ঢুলে পড়েন না, ঘুমানও না। সদাপ্রভুই তোমার রক্ষাকারী; সদাপ্রভুই তোমার ছায়া, তিনি তোমার ডান পাশে রয়েছেন। দিনের বেলা সূর্য আর রাতের বেলা চাঁদ তোমার ক্ষতি করবে না। সমস্ত অমংগল থেকে সদাপ্রভুই তোমাকে রক্ষা করবেন; তিনি তোমার প্রাণ রক্ষা করবেন। তোমার প্রতিদিনের জীবনে সদাপ্রভুই তোমাকে পাহারা দেবেন, এখন থেকে চিরকাল দেবেন। আমি আনন্দিত হলাম যখন লোকে আমাকে বলল, “চল, আমরা সদাপ্রভুর ঘরে যাই।” হে যিরূশালেম, আমরা তোমার ফটকের ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেই যিরূশালেমকে একটা সুন্দর শহর হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যার মধ্যে কোন ধ্বংসস্থান নেই। সেখানেই উঠে যায় সমস্ত গোষ্ঠী, সদাপ্রভুর লোকদের সমস্ত গোষ্ঠী; ইস্রায়েলকে দেওয়া আদেশ অনুসারে তারা উঠে যায় সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দেবার জন্য। সেখানেই আছে বিচারের সব সিংহাসন, দায়ূদের বংশের লোকদের বিচারের সিংহাসন। তোমরা যিরূশালেমের শান্তির জন্য এই প্রার্থনা কর, “যারা যিরূশালেমকে ভালবাসে তাদের মংগল হোক। তার চারপাশের দেয়ালের ভিতরে শান্তি থাকুক, আর তার রাজবাড়ীর দালান-কোঠার মধ্যে থাকুক মংগল।” আমার ভাই-বন্ধুদের মংগলের জন্যই আমি বলব, “যিরূশালেমের মধ্যে শান্তি থাকুক।” আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘর সেখানে আছে বলে আমি যিরূশালেমের মংগলের চেষ্টা করব। তুমি স্বর্গের সিংহাসনে আছ; আমি তোমার দিকেই চোখ তুলে তাকিয়ে থাকি। মনিবের হাতের দিকে যেমন দাসদের চোখ থাকে আর দাসীদের চোখ থাকে মনিবের স্ত্রীর হাতের দিকে, তেমনি আমাদের চোখ থাকবে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দিকে, যতদিন না তিনি আমাদের দয়া করেন। আমাদের উপর দয়া কর, হে সদাপ্রভু, আমাদের উপর দয়া কর, কারণ লোকদের ঘৃণা আমাদের মাথার তালু পর্যন্ত গিয়ে উঠেছে। আরামে থাকা লোকদের বিদ্রূপ আর অহংকারীদের ঘৃণা আমাদের তালু পর্যন্ত গিয়ে উঠেছে। ইস্রায়েল বলুক, “যদি সদাপ্রভু আমাদের পক্ষে না থাকতেন, লোকে যখন আমাদের আক্রমণ করেছিল, তখন যদি সদাপ্রভু আমাদের পক্ষে না থাকতেন, তাহলে ওরা আমাদের বিরুদ্ধে রাগে জ্বলে উঠে আমাদের জ্যান্তই গিলে ফেলত, বন্যা আমাদের ডুবিয়ে দিত, ভীষণ স্রোত আমাদের উপর দিয়ে বয়ে যেত, ফুলে-ফেঁপে ওঠা জল বয়ে যেত আমাদের উপর দিয়ে।” ধন্য সদাপ্রভু! শত্রুদের দাঁত দিয়ে তিনি আমাদের ছিঁড়ে ফেলতে দেন নি। শিকারীর ফাঁদ থেকে পাখী যেমন করে রক্ষা পায় তেমনি করে আমরা রক্ষা পেয়েছি; ফাঁদ ছিঁড়ে গেছে আর আমরা রক্ষা পেয়েছি। সদাপ্রভু, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তাঁর কাছ থেকেই আমাদের সাহায্য আসে। যারা সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে তারা সিয়োন পাহাড়ের মত অটল ও চিরকাল স্থায়ী। যিরূশালেমের চারপাশ যেমন পাহাড়ে ঘেরা তেমনি করে সদাপ্রভু তাঁর লোকদের ঘিরে রাখেন, এখন রাখছেন এবং চিরকাল রাখবেন। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা যাতে অন্যায় কাজে হাত না দেয় সেজন্য ঈশ্বরের দেওয়া তাদের দেশের উপর দুষ্টদের রাজত্ব করতে দেওয়া হবে না। হে সদাপ্রভু, যারা ভাল এবং অন্তরে খাঁটি তাদের তুমি মংগল কর; কিন্তু যারা নিজের তৈরী বাঁকা পথে উছোট খেতে খেতে চলে সদাপ্রভু অন্যায়কারীদের সংগে তাদের দূর করে দেবেন। ইস্রায়েলীয়দের উপর শান্তি আসুক! সদাপ্রভু যখন সিয়োনকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনলেন, তখন মনে হল আমরা যেন স্বপ দেখছি। তখন আমাদের মুখ ছিল হাসিতে ভরা, আর জিভ্‌ ছিল আনন্দের গানে পূর্ণ। অন্যান্য জাতির লোকেরা তখন বলাবলি করেছিল, “সদাপ্রভু ওদের জন্য অনেক মহৎ কাজ করেছেন।” সদাপ্রভু আমাদের জন্য অনেক মহৎ কাজ করেছেন, তাই আমরা আনন্দ করতে লাগলাম। হে সদাপ্রভু, নেগেভ মরু-এলাকার জলস্রোতের মত করে তুমি আগের অবস্থায় আমাদের ফিরিয়ে আন। যারা চোখের জলের সংগে বীজ বোনে তারা আনন্দে চিৎকার করতে করতে ফসল কাটবে। যে লোক কাঁদতে কাঁদতে বীজ বুনতে যায় সে শস্যের বোঝা নিয়ে আনন্দে চিৎকার করতে করতে নিশ্চয়ই ফিরে আসবে। সদাপ্রভু যদি ঘর তৈরী না করেন তবে মিস্ত্রীরা মিথ্যাই পরিশ্রম করে; যদি সদাপ্রভু শহর রক্ষা না করেন তবে পাহারাদার মিথ্যাই পাহারা দেয়। তোমরা মিথ্যাই খাবার জোগাড়ের জন্য পরিশ্রম করতে ভোরে ওঠ আর দেরি করে ঘুমাতে যাও; কিন্তু সদাপ্রভু যাদের ভালবাসেন তারা যখন ঘুমায় তখনও তিনি তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। ছেলেরা সদাপ্রভুর দেওয়া সম্পত্তি, গর্ভের সন্তানেরা তাঁরই দেওয়া পুরস্কার। যৌবনের ছেলেরা যোদ্ধার হাতের তীরের মত। ধন্য সেই লোক, যার তীর রাখার খাপ এই রকম তীরে পূর্ণ; শহরের ফটকের কাছে বিপক্ষদের সংগে কথা বলার সময় তারা লজ্জা পাবে না। ধন্য তারা, যারা সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে আর তাঁর পথে চলে। তোমার নিজের হাতের পরিশ্রমের ফল তুমি ভোগ করবে; তুমি সুখী হবে আর তোমার মংগল হবে। তোমার বাড়ীর ভিতরের ঘরে তোমার স্ত্রী ফলে ভরা আংগুর গাছের মত হবে; তোমার খাবার টেবিলের চারপাশে তোমার সন্তানেরা হবে জলপাই গাছের চারার মত। সত্যিই, সদাপ্রভুকে যে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে সে এইভাবে আশীর্বাদ পাবে। সিয়োন থেকে সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্বাদ করুন; তোমার সারা জীবন ধরে তুমি যেন যিরূশালেমের মংগল দেখতে পাও। তুমি যেন তোমার নাতিপুতি দেখতে পাও। ইস্রায়েলীয়দের উপর শান্তি আসুক। ইস্রায়েল বলুক, “আমার ছেলেবেলা থেকে লোকে আমাকে অনেক অত্যাচার করেছে। যদিও আমার ছেলেবেলা থেকে তারা আমাকে অনেক অত্যাচার করেছে, তবুও তারা আমার উপর জয়ী হতে পারে নি। চাষীদের মত করে তারা আমার পিঠ চষে ফেলেছে, তারা লম্বা করে খাঁজ কেটেছে; কিন্তু সদাপ্রভু ন্যায়বিচারক, তিনি দুষ্টদের বাঁধন কেটে ফেলেছেন।” যারা সিয়োনকে ঘৃণা করে তারা লজ্জা পেয়ে পিছু হটে যাক। তারা ঘরের ছাদে গজানো ঘাসের মত হোক যা বেড়ে উঠবার আগেই শুকিয়ে যায়; যে তা কাটে তাতে তার মুঠি ভরে না, আর যে তা দিয়ে আঁটি বাঁধে তাতে কোঁচড়ও ভরে না। যারা সেই লোকদের পাশ দিয়ে যায় তারা বলে না, “তোমাদের উপর সদাপ্রভুর আশীর্বাদ হোক; সদাপ্রভু তোমাদের মংগল করুন।” হে সদাপ্রভু, ভীষণ কষ্টে তলিয়ে গিয়ে আমি তোমাকে ডাকছি; হে প্রভু, তুমি আমার ডাক শোন; আমার এই মিনতির কান্নায় তুমি কান দাও। হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অন্যায়ের হিসাব রাখ, তবে হে প্রভু, কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে? কিন্তু তোমার কাছে ক্ষমা আছে, যেন লোকে তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে। আমি সদাপ্রভুর অপেক্ষায় আছি, আমার অন্তর তাঁর অপেক্ষায় আছে। আমি তাঁর বাক্যে আশা রেখেছি। পাহারাদারেরা যেমন ভোর হওয়ার অপেক্ষা করে, হ্যাঁ, তারা যেমন ভোর হওয়ার অপেক্ষায় থাকে, প্রভুর জন্য আমার অন্তর তার চেয়েও বেশী অপেক্ষা করে আছে। হে ইস্রায়েল, সদাপ্রভুর উপর আশা রাখ, কারণ সদাপ্রভুর কাছে অটল ভালবাসা আছে, আর তাঁর মুক্ত করার প্রচুর ক্ষমতাও আছে। তিনিই ইস্রায়েলকে তার সব অন্যায় থেকে মুক্ত করবেন। হে সদাপ্রভু, আমার অন্তর গর্বিত নয়, আমার চোখে অহংকারের ভাব নেই; যে সমস্ত বড় ও কঠিন কাজ করা আমার পক্ষে অসম্ভব তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি আমার অন্তরকে শান্ত ও নীরব করে রেখেছি; দুধ ছাড়ানো শিশু যেমন মায়ের কাছে শান্ত হয়ে থাকে, তেমনিভাবে আমার মধ্যে আমার অন্তরও শান্ত হয়ে রয়েছে। হে ইস্রায়েল, সদাপ্রভুর উপর তোমার আশা রাখ, এখন থেকে চিরকাল। হে সদাপ্রভু, তুমি দায়ূদের সমস্ত কষ্টের কথা মনে করে দেখ। তিনি তো সদাপ্রভুর কাছে শপথ করেছিলেন, যাকোবের সেই শক্তিশালী ঈশ্বরের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “আমার ঘরে আমি ঢুকব না, কিম্বা বিছানাতেও শোব না; আমার চোখে ঘুম আসতে দেব না, চোখের পাতায় তন্দ্রা নামতে দেব না; যতক্ষণ না সদাপ্রভুর জন্য একটা জায়গা খুঁজে পাই, যাকোবের সেই শক্তিশালী ঈশ্বরের জন্য একটা বাসস্থান খুঁজে পাই।” আমরা ইফ্রাথা থেকে সাক্ষ্য-সিন্দুকের খবর শুনেছিলাম, যায়ারের মাঠে সেটা পেয়েছিলাম; চল, আমরা তাঁর বাসস্থানে যাই, তাঁর পা-দানিতে উবুড় হয়ে তাঁর উপাসনা করি। হে সদাপ্রভু, ওঠো, তোমার বিশ্রামের জায়গায় এস; তুমি এস, আর তোমার শক্তির সিন্দুক আসুক। তোমার পুরোহিতেরা ন্যায়ের পোশাক পরুক, আর তোমার ভক্তেরা আনন্দে গান করুক। তোমার দাস দায়ূদের দরুন তোমার অভিষিক্ত লোকের প্রার্থনা তুমি ফিরিয়ে দিয়ো না। সদাপ্রভু দায়ূদের কাছে এই নিশ্চিত শপথ করেছেন যা তিনি কখনও ভাঙ্গবেন না, “তোমার একজন সন্তানকে আমি তোমার সিংহাসনে বসাব। তোমার ছেলেরা যদি আমার স্থাপন করা ব্যবস্থা পালন করে আর আমার বাক্য মেনে চলে যা আমি তাদের শিখাব, তাহলে তাদের ছেলেদের চিরকাল ধরে তোমার সিংহাসনে বসতে দেওয়া হবে।” সদাপ্রভু সিয়োনকে বেছে নিয়েছেন; তাঁর বাসস্থানের জন্য এটাই তিনি চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এটাই আমার চিরকালের বিশ্রামের স্থান; আমি এখানেই বাস করব, কারণ আমি তা-ই চেয়েছি। আমি সিয়োনকে প্রচুর খাবার দিয়ে আশীর্বাদ করব; খাবার দিয়ে সেখানকার গরীব লোকদের তৃপ্ত করব। আমি সিয়োনের পুরোহিতদের উদ্ধারের পোশাক পরাব; সেখানকার ভক্তেরা আনন্দে জোরে জোরে গান করবে। আমি সেখানে দায়ূদের জন্য একটা শক্তিশালী বংশ গড়ে তুলব; আমার অভিষিক্ত লোকের জন্য আমি একটা বাতি জ্বালাবার ব্যবস্থা করেছি। আমি তার শত্রুদের লজ্জার পোশাক পরাব, কিন্তু তার মাথায় থাকবে উজ্জ্বল মুকুট।” আমার জাতি ভাইয়েরা যখন এক মন নিয়ে একসংগে বাস করে তখন তা কত ভাল ও কত সুন্দর লাগে! তা যেন মাথায় ঢেলে দেওয়া দামী তেল যা ঝরে পড়ে হারোণের দাড়ি বেয়ে, বেয়ে পড়ে তার পোশাকের গলার উপর। মনে হয় তা যেন হর্মোণ পাহাড়ে পড়া শিশির যা ঝরে পড়ে সিয়োন পাহাড়ে; কারণ সদাপ্রভু সেখানে আশীর্বাদ করেছেন, আর সেই আশীর্বাদ হল চিরকালের জীবন। হে সদাপ্রভুর সেবাকারীরা, যারা সদাপ্রভুর ঘরে রাতের বেলা সেবা-কাজ করে থাক, তোমরা সবাই সদাপ্রভুর গৌরব কর। পবিত্র স্থানের দিকে হাত তুলে তোমরা সদাপ্রভুর গৌরব কর। আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা সদাপ্রভু সিয়োন থেকে তোমাদের আশীর্বাদ করুন। সদাপ্রভুর গৌরব কর, কারণ তিনি মংগলময়; তাঁর প্রশংসা-গান কর, কারণ তা করা খুব ভাল। সদাপ্রভু যাকোবকে তাঁর নিজের জন্য, ইস্রায়েলকে তাঁর নিজের সম্পত্তি হবার জন্য বেছে নিয়েছেন। আমি জানি সদাপ্রভু মহান; আমাদের প্রভু সব দেব-দেবতার চেয়েও মহান। আকাশে, পৃথিবীতে, সাগরে ও পৃথিবীর গভীর স্থানে সদাপ্রভু তাঁর ইচ্ছামত কাজ করেন। তিনিই পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে মেঘ উঠিয়ে আনেন; তিনিই বৃষ্টির জন্য বিদ্যুৎ তৈরী করেন, আর তাঁর ভাণ্ডার থেকে বাতাস বের করে আনেন। মিসরের প্রথম সন্তানগুলোকে তিনিই আঘাত করেছিলেন, আঘাত করেছিলেন মানুষ ও পশুর প্রথম সন্তানদের। হে মিসর, তিনি তোমার মধ্যে ফরৌণ ও তাঁর সব কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তাঁর চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজ করেছিলেন। তিনি অনেক জাতিকে আঘাত করেছিলেন আর শক্তিশালী রাজাদের মেরে ফেলেছিলেন। তিনি ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে, বাশনের রাজা ওগকে, আর কনানের সব রাজাদের মেরে ফেলেছিলেন। তিনি তাদের দেশ তাঁর লোক ইস্রায়েলীয়দের অধিকার হিসাবে দান করলেন। হে সদাপ্রভু, তোমার সুনাম চিরকাল স্থায়ী। হে সদাপ্রভু, বংশের পর বংশ ধরে তোমার নাম স্মরণে থাকবে; কারণ সদাপ্রভু তাঁর লোকদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন, আর তাঁর দাসদের প্রতি করুণা করবেন। অন্যান্য জাতিদের প্রতিমাগুলো সোনা আর রূপা দিয়ে তৈরী; সেগুলো মানুষের হাতে গড়া। তাদের মুখ আছে কিন্তু কথা বলতে পারে না, চোখ আছে, দেখতে পায় না; তাদের কান আছে কিন্তু শুনতে পায় না, তাদের মুখের মধ্যে শ্বাস বলতে কিছু নেই। যারা এগুলোকে তৈরী করে আর তাদের উপর বিশ্বাস ও নির্ভর করে তারাও ঐ সব প্রতিমার মত হবে। হে ইস্রায়েলের বংশ, সদাপ্রভুর গৌরব কর; হে হারোণের বংশ, সদাপ্রভুর গৌরব কর; হে লেবির বংশ, সদাপ্রভুর গৌরব কর; হে সদাপ্রভুর ভক্ত লোকেরা, তোমরা তাঁর গৌরব কর। সদাপ্রভু, যিনি যিরূশালেমে বাস করেন, তাঁর গৌরব সিয়োন থেকে হোক। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দাও, কারণ তিনি মংগলময়; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- ঈশ্বর, যিনি সব দেবতার চেয়েও মহান তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- প্রভু, যিনি সব প্রভুদের চেয়েও মহান তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। যিনি একাই সব বড় বড় আশ্চর্য কাজ করেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- যিনি তাঁর বুদ্ধি দিয়ে আকাশ তৈরী করেছেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- যিনি জলের উপরে ভূমি স্থাপন করেছেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- যিনি বড় বড় আলোর সৃষ্টি করেছেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি দিনের উপর রাজত্ব করার জন্য সূর্য সৃষ্টি করেছেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি রাতের উপর রাজত্ব করার জন্য চাঁদ ও তারা সৃষ্টি করেছেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। যিনি মিসরীয়দের প্রথম সন্তানদের আঘাত করেছিলেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- যিনি তাদের মধ্য থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে এনেছিলেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি কঠোর ও শক্তিশালী হাত দিয়ে তাদের বের করে এনেছিলেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। যিনি লোহিত সাগরকে দু’ভাগ করেছিলেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি ইস্রায়েলীয়দের সাগরের মধ্য দিয়ে পার করে এনেছিলেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- কিন্তু ফরৌণ ও তাঁর সৈন্যদলকে তিনি লোহিত সাগরে ফেলে দিয়েছিলেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। যিনি তাঁর লোকদের মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- যিনি বড় বড় রাজাদের আঘাত করেছিলেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি শক্তিশালী রাজাদের মেরে ফেলেছিলেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি ইমোরীয়দের রাজা সীহোনকে মেরে ফেলেছিলেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি বাশনের রাজা ওগকে মেরে ফেলেছিলেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি তাদের দেশ অধিকার হিসাবে দিয়ে দিয়েছিলেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- তিনি তাদের দেশ অধিকার হিসাবে তাঁর সেবাকারী ইস্রায়েলীয়দের দিয়েছিলেন; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। যিনি আমাদের নীচু অবস্থায় আমাদের কথা মনে করলেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- যিনি শত্রুদের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করলেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী- যিনি সমস্ত প্রাণীকে খাবার দেন তাঁকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। তোমরা স্বর্গের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দাও; - তাঁর ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী। বাবিলের নদীগুলোর ধারে বসে আমরা যখন সিয়োনের কথা মনে করতাম তখন আমাদের চোখ দিয়ে জল পড়ত। সেখানকার উইলো গাছে আমাদের বীণাগুলো আমরা টাংগিয়ে রাখতাম। যারা আমাদের বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে তারা আমাদের গান গাইতে বলত; সেই অত্যাচারীরা আমাদের কাছ থেকে আনন্দের গান শুনতে চাইত; তারা বলত, “তোমরা সিয়োনের একটা গান আমাদের শোনাও।” কিন্তু বিদেশের মাটিতে আমরা কেমন করে সদাপ্রভুর গান গাইতে পারতাম? হে যিরূশালেম, যদি আমি তোমাকে ভুলে যাই তবে আমার ডান হাত যেন অকেজো হয়ে যায়। যদি আমি তোমাকে মনে না রাখি, যদি যিরূশালেমকে আমার সবচেয়ে বেশী আনন্দের জিনিস বলে মনে না করি, তবে আমার জিভ্‌ যেন আমার তালুতে লেগে যায়। হে সদাপ্রভু, যিরূশালেমের ধ্বংসের দিনে ইদোমীয়েরা যা করেছিল তা মনে করে দেখ; তারা বলেছিল, “ধ্বংস কর, একেবারে এর ভিত্তি পর্যন্ত ধ্বংস করে ফেল।” ওহে বাবিল কন্যা, তোমাকে ধ্বংস করা হবে; তুমি যেমন আমাদের প্রতি করেছ, যে লোক তোমার প্রতি তা করবে সে ধন্য! যে লোক তোমার শিশুদের ধরে পাথরের উপরে আছড়াবে সে ধন্য! হে সদাপ্রভু, আমার সমস্ত অন্তর দিয়ে আমি তোমার গৌরব করব; এমন কি, দেব-দেবতাদের সামনেও আমি তোমার প্রশংসা-গান করব। তোমার পবিত্র ঘরের দিকে আমি মাথা নীচু করব, আর তোমার অটল ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার জন্য তোমার গৌরব করব; কারণ তোমার প্রতিজ্ঞার পূর্ণতার মধ্য দিয়ে তুমি নিজেকে যেভাবে প্রকাশ করেছ তা তোমার সুনামের চেয়েও মহান। আমি যখন তোমাকে ডাকলাম তুমি আমাকে উত্তর দিলে; আমার অন্তরে শক্তি দিয়ে তুমি আমাকে সাহসী করলে। হে সদাপ্রভু, তোমার মুখের কথা শুনে পৃথিবীর সমস্ত রাজা তোমার গৌরব করবে। তারা সদাপ্রভুর কাজ নিয়ে গান করবে, কারণ সদাপ্রভুর মহিমা মহৎ। যদিও সদাপ্রভু সব কিছুর উপরে আছেন তবুও তিনি নীচু অবস্থার লোকদের দিকে নজর রাখেন, কিন্তু অহংকারীদের তিনি দূর থেকেই জানেন। যখন আমি বিপদের মধ্য দিয়ে চলি তখন তুমি আমার প্রাণ রক্ষা কর; তোমার হাত বাড়িয়ে তুমি আমার শত্রুদের রাগ বিফল কর, আর তোমার ডান হাত আমাকে উদ্ধার করে। সদাপ্রভু আমার জন্য যা ঠিক করে রেখেছেন তা পূর্ণ করবেন। হে সদাপ্রভু, তোমার অটল ভালবাসা চিরকাল স্থায়ী; তুমি নিজের হাতে যে সব কাজ করছ তা শেষ কোরো। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছ আর আমাকে জেনেছ। আমি যা কিছু করি তার সবই তো তুমি জান; তুমি দূর থেকেই আমার মনের চিন্তা বুঝতে পার। তুমি আমার কাজকর্ম ও বিশ্রামের বিষয় খুব ভাল করে খোঁজ নিয়ে থাক; তুমি আমার জীবন-পথ ভাল করেই জান। হে সদাপ্রভু, কোন কথা আমার মুখে আনার আগেই তুমি তার সবই জান। তুমি সব দিক থেকেই আমাকে ঘিরে ধরেছ, আর আমাকে তোমার অধীনে রেখেছ। তোমার এই জ্ঞান আমার পক্ষে বুঝতে পারা অসম্ভব; তা খুব উঁচু, আমার নাগালের বাইরে। তোমার পবিত্র আত্মার কাছ থেকে আমি কোথায় যেতে পারি? তোমার সামনে থেকে আমি কোথায় পালাতে পারি? যদি আকাশে গিয়ে উঠি, সেখানে তুমি; যদি পাতালে আমার বিছানা পাতি, সেখানেও তুমি; যদি ভোরের পাখায় ভর করে উঠে আসি, যদি ভূমধ্য সাগরের ওপারে গিয়ে বাস করি, সেখানেও তোমার হাত আমাকে পরিচালনা করবে, তোমার ডান হাত আমাকে শক্ত করে ধরে রাখবে। যদি আমি বলি, “অন্ধকার আমাকে ঢেকে ফেলবে, আর আমার চারপাশে যে আলো আছে তা অন্ধকার হয়ে যাবে,” তবুও তাতে কোন লাভ হবে না; কারণ সেই অন্ধকার তো তোমার কাছে অন্ধকার নয়। রাত দিনের মতই আলোময়; তোমার কাছে অন্ধকার আর আলো দুই-ই সমান। তুমিই আমার অন্তর সৃষ্টি করেছ; মায়ের গর্ভে তুমিই আমার দেহের অংশগুলো একসংগে বুনেছ। আমি তোমার গৌরব করি, কারণ আমি ভীষণ আশ্চর্যভাবে গড়া; আশ্চর্য তোমার সব কাজ, আমি তা ভাল করেই জানি। যখন আমাকে গোপন স্থানে গড়ে তোলা হচ্ছিল, মায়ের গর্ভে যখন আমার দেহ নিপুণ ভাবে গেঁথে তোলা হচ্ছিল, তখন আমার গড়ন তোমার কাছে লুকানো ছিল না। তোমার চোখ আমার গড়ে-না-ওঠা দেহ দেখেছে। আমার জন্য ঠিক করে রাখা দিনগুলো যখন আরম্ভ হয় নি, তখন তোমার বইয়ে সেগুলোর বিষয় সবই লেখা ছিল। হে ঈশ্বর, তোমার এই সব পরিকল্পনা আমার কাছে কত দামী! সেগুলো অসংখ্য। যদি সেগুলো আমি গুণি তবে তার সংখ্যা বালুকণার চেয়েও বেশী। আমি যখন জেগে উঠি তখনও আমি তোমার কাছেই থাকি। হে ঈশ্বর, আমি চাই তুমি দুষ্টদের মেরে ফেল। ওহে রক্ত-পিপাসু লোকেরা, আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও। মন্দ চিন্তা নিয়ে তারা তোমার বিষয়ে নানা কথা বলে; তোমার শত্রুরা বাজে উদ্দেশ্যে তোমার নাম নেয়। হে সদাপ্রভু, যারা তোমাকে অগ্রাহ্য করে আমি কি তাদের অগ্রাহ্য করি না? যারা তোমার বিরুদ্ধে ওঠে আমি কি তাদের ঘৃণার চোখে দেখি না? তাদের আমি সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করি; আমার শত্রু বলেই আমি তাদের মনে করি। হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখ, আর আমার অন্তরের অবস্থা জেনে নাও; আমাকে যাচাই করে দেখ, আর আমার দুশ্চিন্তার কথা জেনে নাও। তুমি দেখ আমার মধ্যে এমন কিছু আছে কি না যা দুঃখ দেয়; তুমি আমাকে অনন্ত জীবনের পথে চালাও। হে সদাপ্রভু, দুষ্ট লোকদের হাত থেকে আমাকে উদ্ধার কর; অত্যাচারী লোকদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর। তারা মনে মনে দুষ্ট ফন্দি আঁটে আর প্রতিদিন যুদ্ধ বাধায়। তারা সাপের মত তাদের জিভ্‌ ধারালো করেছে; তাদের ঠোঁটের নীচে যেন সাপের বিষ আছে। [সেলা] হে সদাপ্রভু, দুষ্টদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর। অত্যাচারী লোকদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর; আমার পা যেন পিছ্‌লে যায় সেজন্য তারা ফন্দি এঁটেছে। অহংকারী লোকেরা আমার জন্য ফাঁদ ও দড়ি ঠিক করে রেখেছে; তারা পথের পাশে তাদের জাল বিছিয়ে রেখেছে আর আমার জন্য ফাঁদ পেতেছে। [সেলা] হে সদাপ্রভু, আমি তোমাকে বলেছি, “তুমিই আমার ঈশ্বর।” হে সদাপ্রভু, আমার মিনতির কান্নায় তুমি কান দাও। হে প্রভু সদাপ্রভু, আমার শক্তিশালী উদ্ধারকর্তা, যুদ্ধের দিনে তুমিই আমার মাথা ঢেকে রাখ। হে সদাপ্রভু, দুষ্টদের মনের ইচ্ছা তুমি পূর্ণ হতে দিয়ো না; তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দিয়ো না, যেন তারা অহংকারী হয়ে না ওঠে। [সেলা] যারা আমাকে ঘিরে ধরেছে তাদের মুখ যে সব অন্যায় করেছে তা তাদেরই মাথার উপর এসে পড়ুক। তাদের উপর জ্বলন্ত কয়লা পড়ুক; আগুনের মধ্যে, গভীর গর্তের মধ্যে তাদের ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হোক; যেন তারা আর কখনও উঠে আসতে না পারে। নিন্দুকেরা যেন দেশের মধ্যে অধিকার না পায়; অত্যাচারী লোকদের পিছনে বিপদ অনবরত তাড়া করুক। আমি জানি সদাপ্রভু দুঃখীদের পক্ষে রায় দেবেন আর অভাবীদের জন্য ন্যায়বিচার করবেন। সৎ লোকেরা অবশ্যই তোমার গৌরব করবে, আর যারা অন্তরে খাঁটি তারা তোমার সামনে বাস করবে। হে সদাপ্রভু, আমি তোমাকে ডাকছি, তুমি তাড়াতাড়ি আমার কাছে এস; আমি ডাকলে তুমি আমার ডাকে কান দিয়ো। আমার প্রার্থনা যেন সুগন্ধি ধূপের মত, আমার হাত উঠানো যেন সন্ধ্যাবেলার উৎসর্গের মত তোমার সামনে উপস্থিত হয়। হে সদাপ্রভু, আমার মুখের উপর তুমি পাহারা বসাও, আমার ঠোঁটের দরজা তুমি চৌকি দাও। আমার মনকে কোন মন্দ জিনিসের দিকে ঝুঁকতে দিয়ো না, যাতে অন্যায়কারীদের সংগে মন্দ কাজে আমি অংশ না নিই; তাদের ভাল ভাল খাবার যেন আমি না খাই। একজন ঈশ্বরভক্ত লোক আমাকে আঘাত করুন, সেটা হবে বিশ্বস্ততা। তিনি আমাকে বকুনি দিন, সেটা হবে আমার মাথায় তেল দেওয়ার মত; আমার মাথা তা অগ্রাহ্য না করুক। কিন্তু আমার প্রার্থনা সব সময় অন্যায়কারীদের কাজের বিরুদ্ধে থাকবে। তাদের শাসনকর্তাদের খাড়া পাহাড়ের উপর থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হবে; তখন তারা আমার কথায় কান দেবে, কারণ তা মধুর। মানুষ চাষ করে যেমন মাটি ভেংগে ফেলে তেমনি করেই আমাদের হাড়গুলো মৃতস্থানের মুখে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হে প্রভু সদাপ্রভু, আমার চোখ তোমার দিকে রয়েছে; আমি তোমার মধ্যেই আশ্রয় নিয়েছি, আমাকে মৃত্যুর হাতে তুলে দিয়ো না। তারা আমার জন্য যে জাল পেতেছে তা থেকে আমাকে রক্ষা কর; অন্যায়কারীদের পাতা ফাঁদ থেকে আমাকে রক্ষা কর। দুষ্টেরা তাদের নিজেদের জালে নিজেরাই ধরা পড়ুক, আর আমি সেই সময় নিরাপদেই তা পার হয়ে যাব। আমি চিৎকার করে সদাপ্রভুর কাছে কাঁদছি; আমি জোরে জোরে সদাপ্রভুর কাছে মিনতি করছি। আমার দুঃখের কথা আমি তাঁর সামনে ঢেলে দিচ্ছি, আমার কষ্টের কথা তাঁর সামনে বলছি। যখন আমি নিরাশ হয়ে পড়ি তখন তুমিই আমার জীবনের পথ সম্বন্ধে জান; আমার চলার পথে লোকে আমার জন্য গোপনে ফাঁদ পেতে রেখেছে। আমার ডান পাশে তাকিয়ে দেখ, আমাকে চেনে এমন কেউ নেই। আমার পালাবার স্থান নেই; কেউ আমার প্রাণের জন্য চিন্তা করে না। হে সদাপ্রভু, আমি তোমার কাছেই কেঁদেছি; আমি বলেছি, “তুমিই আমার আশ্রয়, এই পৃথিবীতে তুমিই আমার সম্পত্তি।” আমার কান্নায় তুমি কান দাও, কারণ আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছি; আমাকে যারা তাড়া করছে তাদের হাত থেকে তুমি আমাকে বাঁচাও, কারণ তারা আমার চেয়ে শক্তিশালী। জেলখানায় থাকবার মত এই অবস্থা থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার কর, যাতে আমি তোমার গৌরব করতে পারি। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা আনন্দে আমাকে ঘিরে থাকবে, কারণ তুমি আমার মংগল করবে। হে সদাপ্রভু, আমার প্রার্থনা শোন, আমার মিনতির কান্নায় তুমি কান দাও; তোমার বিশ্বস্ততা ও তোমার ন্যায়ে আমাকে উত্তর দাও। তোমার এই সেবাকারীর বিচার কোরো না, কারণ তোমার চোখে কোন প্রাণীই নির্দোষ নয়। শত্রু আমার পিছনে তাড়া করেছে, সে আমাকে চুরমার করে মাটিতে ফেলেছে; অনেক দিন আগেকার মৃত লোকদের মতই সে আমাকে অন্ধকারে বাস করাচ্ছে। সেজন্য আমি নিরাশ হয়ে পড়েছি; আমার ভিতরে আমার অন্তর অসাড় হয়ে পড়েছে। আমি পুরানো দিনের কথা মনে করি, তোমার সমস্ত কাজের বিষয় ধ্যান করি; তোমার হাত যা করেছে তা চিন্তা করি। আমি তোমার দিকে আমার হাত বাড়িয়ে দিই; শুকনা জমির মত আমার প্রাণ তোমার জন্য পিপাসিত। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে শীঘ্র উত্তর দাও, কারণ আমার প্রাণ যেন বেরিয়ে যাচ্ছে; আমার কাছ থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে রেখো না, যেন মৃতস্থানে যারা নেমে যাচ্ছে আমি তাদের মত হয়ে না পড়ি। সকালে তুমি আমাকে তোমার অটল ভালবাসার কথা শোনাও, কারণ আমি তোমার উপরেই নির্ভর করে আছি; কোন্‌ পথে যেতে হবে তা আমাকে দেখাও, কারণ আমার অন্তর আমি তোমার দিকেই তুলে ধরছি। হে সদাপ্রভু, আমার শত্রুদের হাত থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার কর, কারণ আমি তোমার মধ্যেই আশ্রয় নিয়েছি। তোমার ইচ্ছামত কাজ করতে তুমি আমাকে শিখাও, কারণ তুমিই আমার ঈশ্বর; তোমার মংগলময় আত্মা দ্বারা আমাকে সমান পথে চালাও। হে সদাপ্রভু, তোমার সুনাম রক্ষার জন্য আমাকে নতুন শক্তি দাও; তোমার ন্যায়ে বিপদ থেকে তুমি আমাকে উদ্ধার কর। তোমার অটল ভালবাসার জন্য তুমি আমার শত্রুদের ছেঁটে ফেলে দাও; আমার সমস্ত বিপক্ষদের তুমি ধ্বংস কর, কারণ আমি তোমার দাস। সদাপ্রভুর গৌরব হোক, তিনি আমার আশ্রয়-পাহাড়; তিনি আমার হাতকে যুদ্ধ করতে শিখিয়েছেন, আমার আংগুলগুলোকে শিখিয়েছেন লড়াই করতে। তিনিই আমার বিশ্বস্ত সাহায্যকারী, আমার দুর্গ, আমার উঁচু আশ্রয়স্থান ও উদ্ধারকর্তা; তিনিই আমার ঢাল, আমি তাঁর মধ্যে আশ্রয় নিই; তিনিই আমার লোকদের আমার অধীনে আনেন। হে সদাপ্রভু, মানুষ এমন কি যে, তার দিকে তুমি খেয়াল কর? মানুষের সন্তানই বা কি যে, তার দিকে তুমি মনোযোগ দাও? মানুষ তো নিঃশ্বাস মাত্র; তার দিনগুলো সরে যাওয়া ছায়ার মত। হে সদাপ্রভু, তোমার আকাশ নুইয়ে তুমি নেমে এস; তুমি পাহাড়-পর্বত ছোঁও যাতে সেগুলো থেকে ধূমা বের হয়। তুমি বিদ্যুৎ পাঠিয়ে শত্রুদের ছড়িয়ে দাও; তোমার তীর ছুঁড়ে তাদের বিশৃঙ্খল করে দাও। তুমি উপর থেকে তোমার হাত বাড়িয়ে দাও; তুমি আমাকে রক্ষা কর, বন্যার হাত থেকে, হ্যাঁ, অন্য জাতিদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। তাদের মুখ ছলনার কথায় ভরা; তারা ডান হাত তুলে মিথ্যা শপথ করে। হে ঈশ্বর, আমি তোমার উদ্দেশে নতুন গান গাইব; দশতারা বাজিয়ে আমি তোমার উদ্দেশে প্রশংসার গান গাইব। তুমি তো রাজাদের জয় দান করে থাক; তোমার দাস দায়ূদকে সর্বনাশা তলোয়ারের হাত থেকে রক্ষা করে থাক। আমাকে রক্ষা কর, অন্য জাতিদের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও; তাদের মুখ ছলনার কথায় ভরা; তারা ডান হাত তুলে মিথ্যা শপথ করে। আমাদের ছেলেরা কিশোর বয়সে যেন গাছের চারার মত বেড়ে ওঠে, আর আমাদের মেয়েরা যেন রাজবাড়ীর খোদাই করা থামের মত হয়। আমাদের গোলাঘরগুলো যেন সব রকম খাবারে ভরা থাকে; আমাদের ভেড়াগুলো যেন মাঠের মধ্যে হাজারে হাজারে, লাখে লাখে বাচ্চা দেয়। আমাদের বলদগুলো যেন ভারী ভারী বোঝা টানতে পারে; আমাদের দেয়ালে যেন ফাটল না ধরে, কেউ যেন বন্দী না হয়, রাস্তায় রাস্তায় যেন দুঃখের কান্নার শব্দ না ওঠে। ধন্য সেই জাতি, যার অবস্থা এরকম হয়। ধন্য সেই জাতি, সদাপ্রভু যার ঈশ্বর। হে আমার ঈশ্বর, হে রাজা, আমি তোমার গুণগান করব; আমি চিরকাল তোমার প্রশংসা করব। প্রতিদিন আমি তোমার প্রশংসা করব; চিরকাল তোমার গৌরব করব। সদাপ্রভু মহান আর সব চেয়ে বেশী প্রশংসার যোগ্য; কেউ তাঁর মহত্ব বুঝে উঠতে পারে না। এক বংশের লোকেরা তার পরের বংশের লোকদের কাছে তোমার কাজের গুণগান করবে; তারা তোমার শক্তিশালী কাজের কথা ঘোষণা করবে। আমি তোমার মহিমার গৌরবময় জাঁকজমক আর তোমার আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ সম্বন্ধে ধ্যান করব। লোকে তোমার ভয়-জাগানো আশ্চর্য কাজের শক্তির কথা বলবে, আর আমি তোমার মহত্বের কথা ঘোষণা করব। তুমি যে তাদের প্রচুর মংগল করেছ তা তারা বলে বেড়াবে, তোমার ন্যায্যতার কথা নিয়ে আনন্দে গান গাইবে। সদাপ্রভু দয়াময় ও মমতায় পূর্ণ; তিনি সহজে অসন্তুষ্ট হন না এবং তাঁর অটল ভালবাসার সীমা নেই। সদাপ্রভু সকলের জন্যই মংগলময়; তাঁর সৃষ্ট সব কিছুর উপরে তাঁর মমতা রয়েছে। হে সদাপ্রভু, তুমি যা কিছু সৃষ্টি করেছ সে সবই তোমাকে ধন্যবাদ দেবে; তোমার ভক্তেরা তোমার গৌরব করবে। তারা তোমার রাজ্যের গৌরবের কথা আর তোমার শক্তির কথা বলবে; যাতে সব মানুষ তোমার শক্তিপূর্ণ কাজের কথা জানতে পারে, আর জানতে পারে তোমার রাজ্যের গৌরবপূর্ণ জাঁকজমকের কথা। তোমার রাজ্য চিরস্থায়ী রাজ্য; তোমার শাসন বংশের পর বংশ ধরে চলে। যারা পড়ে যাচ্ছে সদাপ্রভু তাদের ধরে রাখেন; যারা নুয়ে পড়েছে তাদের তিনি তুলে ধরেন। আশা নিয়ে সকলেই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে; ঠিক সময়ে তুমি তাদের খাবার দিয়ে থাক। সমস্ত প্রাণীর মনের ইচ্ছা তুমি হাত খুলে পূরণ করে থাক। সদাপ্রভু তাঁর সমস্ত পথে ন্যায়বান আর সমস্ত কাজে বিশ্বস্ত। যারা সদাপ্রভুকে ডাকে, অন্তর দিয়ে ডাকে, তিনি তাদের কাছেই থাকেন। যারা তাঁকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে তাদের মনের ইচ্ছা তিনি পূরণ করেন; সাহায্যের জন্য তাদের কান্না শুনে তিনি তাদের রক্ষা করেন। যারা সদাপ্রভুকে ভালবাসে তাদের সকলকে তিনি রক্ষা করেন, কিন্তু সব দুষ্টদের তিনি ধ্বংস করে ফেলবেন। আমার মুখ সদাপ্রভুর গুণগান করবে; সমস্ত প্রাণী যুগ যুগ ধরে তাঁর পবিত্রতার প্রশংসা করবে। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর। আমি সারা জীবন সদাপ্রভুর গৌরব করব; যতদিন আমি বেঁচে থাকব আমার ঈশ্বরের প্রশংসা-গান গাইব। কোন উঁচু পদের লোক, কোন মানুষের উপর তোমরা নির্ভর কোরো না; তারা উদ্ধার করতে পারে না। তাদের প্রাণ বের হয়ে গেলে তারা মাটিতে ফিরে যায়, আর সেদিনই তাদের সব পরিকল্পনা শেষ হয়ে যায়। ধন্য সেই লোক, যাকোবের ঈশ্বর যার সাহায্যকারী, যার আশা তার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপর। সদাপ্রভু আকাশ ও পৃথিবী, সাগর ও তার মধ্যেকার সব কিছু তৈরী করেছেন; তিনি চিরকাল বিশ্বস্ত থাকেন। তিনি অত্যাচারিতদের পক্ষে ন্যায়বিচার করেন আর যাদের খিদে আছে তাদের খাবার দেন; সদাপ্রভুই বন্দীদের মুক্ত করেন। সদাপ্রভু অন্ধদের দেখবার শক্তি দেন; যারা নুয়ে পড়েছে সদাপ্রভু তাদের তুলে ধরেন; সদাপ্রভু সৎ লোকদের ভালবাসেন। সদাপ্রভু বিদেশীদের উপর চোখ রাখেন আর অনাথ ও বিধবাদের দেখাশোনা করেন, কিন্তু দুষ্টদের পথ তিনি বাঁকা করেন। সদাপ্রভু চিরকাল রাজত্ব করবেন; হে সিয়োন, বংশের পর বংশ ধরে তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করবেন। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। আমাদের ঈশ্বরের প্রশংসা-গান করা কত ভাল! তা কি সুন্দর! তাঁর গৌরব করা কত উপযুক্ত! সদাপ্রভুই যিরূশালেমকে গড়ে তোলেন; দূর করে দেওয়া ইস্রায়েলীয়দের তিনিই জড়ো করেন। যাদের মন ভেংগে গেছে তিনি তাদের সুস্থ করেন; তাদের সব ঘা তিনিই বেঁধে দেন। তিনি তারাগুলোর সংখ্যা গণনা করেন, তাদের প্রত্যেকটির নাম ধরে ডাকেন। আমাদের প্রভু মহান, তাঁর শক্তি প্রচুর; তাঁর জ্ঞান-বুদ্ধির সীমা নেই। সদাপ্রভু নম্র লোকদের ধরে রাখেন, কিন্তু দুষ্ট লোকদের মাটিতে ফেলে দেন। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে ধন্যবাদের গান গাও; বীণা বাজিয়ে আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসার গান গাও। তিনি আকাশ মেঘে ঢাকেন; তিনি পৃথিবীর জন্য বৃষ্টির ব্যবস্থা করেন আর পাহাড়ের উপরে ঘাস জন্মাতে দেন। পশুদের খাবার তিনিই যুগিয়ে দেন; দাঁড়কাকের বাচ্চারা যখন ডাকে তখন তিনিই তাদের খাবার দেন। ঘোড়ার শক্তিতে তিনি সন্তুষ্ট হন না, যোদ্ধার পায়ের শক্তিতেও তাঁর আনন্দ নেই; কিন্তু যারা তাঁকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে আর তাঁর অটল ভালবাসার উপর আশা রাখে, তাদের নিয়েই সদাপ্রভুর যত আনন্দ। হে যিরূশালেম, সদাপ্রভুর গুণগান কর; হে সিয়োন, তোমার ঈশ্বরের গৌরব কর। তিনিই তো তোমার ফটকগুলোর আগল শক্ত করেছেন, তোমার মধ্যে বাসকারী লোকদের আশীর্বাদ করেছেন। তোমার সীমানাগুলোতে তিনিই শান্তি রাখেন, আর সবচেয়ে ভাল গম দিয়ে তোমাকে তৃপ্ত করেন। তিনি পৃথিবীতে তাঁর আদেশ পাঠান; খুব তাড়াতাড়ি তা পালন করা হয়। তিনি ভেড়ার লোমের মত তুষার পাঠান আর ছাইয়ের মত শিশির ছড়ান। তিনি রুটির টুকরার মত করে শিলা ফেলেন; তাঁর দেওয়া শীত কে সহ্য করতে পারে? তাঁর বাক্য পাঠিয়ে তিনি শিলা গলিয়ে ফেলেন; তাঁর বাতাস বহালে জল বয়ে যায়। যাকোবের কাছে তিনি তাঁর বাক্য প্রকাশ করেছেন, ইস্রায়েলের কাছে প্রকাশ করেছেন তাঁর নিয়ম ও আইন-কানুন। অন্য কোন জাতির জন্য তিনি তা করেন নি; তাঁর আইন-কানুন তারা জানে না। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। স্বর্গ থেকে তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর; আকাশে ও মহাকাশে তাঁর প্রশংসা কর। হে তাঁর সমস্ত স্বর্গদূত, তাঁর প্রশংসা কর; হে তাঁর সমস্ত শক্তিদল, তাঁর প্রশংসা কর। হে সূর্য ও চাঁদ, তাঁর প্রশংসা কর; হে উজ্জ্বল সব তারা, তাঁর প্রশংসা কর। হে স্বর্গ, তাঁর প্রশংসা কর; হে আকাশের উপরের জল, তাঁর প্রশংসা কর। এরা সব সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক, কারণ তিনি আদেশ দিলেন আর এদের সৃষ্টি হল। এদের তিনি চিরকালের জন্য ঠিক জায়গায় স্থাপন করেছেন; তিনি একটা নিয়ম দিয়েছেন, কেউ তা ভাঙ্গতে পারবে না। পৃথিবী থেকে তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। হে সাগরের বড় বড় প্রাণী ও সাগরের গভীর তলদেশ, তাঁর প্রশংসা কর। হে বিদ্যুৎ ও শিলা, তুষার ও কুয়াশা আর তাঁর আদেশ পালন-করা ঝোড়ো বাতাস, তাঁর প্রশংসা কর। হে সমস্ত পাহাড়-পর্বত আর ফলের গাছ ও সমস্ত এরস গাছ, তাঁর প্রশংসা কর। হে বুনো জানোয়ার ও সমস্ত পোষ-মানা পশু আর বুকে-হাঁটা প্রাণী ও ডানাযুক্ত প্রাণী, তাঁর প্রশংসা কর। হে পৃথিবীর রাজারা এবং সমস্ত জাতি আর রাজপুরুষেরা ও পৃথিবীর শাসনকর্তারা, তাঁর প্রশংসা কর। হে যুবক ও যুবতীরা আর বৃদ্ধ ও ছেলেমেয়েরা, তাঁর প্রশংসা কর। এরা সবাই সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক, কারণ একমাত্র তিনিই মহান; পৃথিবী ও আকাশের উপরেও তাঁর গৌরব রয়েছে। তাঁর লোকদের তিনি শক্তিশালী করেছেন; তা তাঁর সমস্ত ভক্তদের গৌরব, তাঁর প্রিয় জাতি ইস্রায়েলের গৌরব। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে নতুন গান গাও, ঈশ্বরভক্তদের সভায় তাঁর প্রশংসা-গান কর। ইস্রায়েল তার সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে আনন্দ করুক, সিয়োনের লোকেরা তাদের রাজাকে নিয়ে খুশী হোক। তারা নাচতে নাচতে তাঁর গৌরব করুক, খঞ্জনি আর বীণা বাজিয়ে তাঁর উদ্দেশে প্রশংসার গান করুক; কারণ সদাপ্রভু তাঁর লোকদের নিয়ে আনন্দ পান; তিনি নম্র লোকদের উদ্ধার করে সম্মানিত করেন। এই সম্মান লাভ করে ঈশ্বরভক্তেরা আনন্দ করুক; তারা নিজের নিজের বিছানায় আনন্দে গান করুক। তাদের মুখে ঈশ্বরের গৌরব থাকুক আর হাতে থাকুক দু’দিকে ধার দেওয়া তলোয়ার, যাতে তারা জাতিদের উপরে প্রতিশোধ নিতে পারে আর সেই সব লোকদের শাস্তি দিতে পারে, যাতে শিকল দিয়ে তাদের রাজাদের বাঁধতে পারে, তাদের উঁচু পদের লোকদের লোহার বেড়ী দিয়ে বাঁধতে পারে, আর তাদের বিরুদ্ধে যে রায় লেখা হয়েছে তা কাজে লাগাতে পারে। এ সমস্তই তাঁর সব ভক্তদের গৌরব। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। তোমরা ঈশ্বরের পবিত্র স্থানে তাঁর প্রশংসা কর, তাঁর শক্তিতে গড়া মহাকাশে তাঁর প্রশংসা কর। তাঁর শক্তিপূর্ণ কাজের জন্য তাঁর প্রশংসা কর, তাঁর সীমাহীন মহত্বের জন্য তাঁর প্রশংসা কর। তূরী বাজিয়ে তাঁর প্রশংসা কর, বীণা আর সুরবাহার বাজিয়ে তাঁর প্রশংসা কর। খঞ্জনি বাজিয়ে নেচে নেচে তাঁর প্রশংসা কর, তারের বাজনা আর বাঁশী বাজিয়ে তাঁর প্রশংসা কর। জোর আওয়াজের করতাল বাজিয়ে তাঁর প্রশংসা কর, ঝন্‌ঝন্‌ করা করতাল বাজিয়ে তাঁর প্রশংসা কর। শ্বাসযুক্ত সমস্ত প্রাণী সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক। সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। দায়ূদের ছেলে ইস্রায়েলের রাজা শলোমনের সৎ উপদেশ। এগুলো লেখা হয়েছে যেন লোকে সুবুদ্ধি এবং শিক্ষা পায়, যেন তাদের বিচারবুদ্ধি বাড়ে, যেন লোকে অন্যের সংগে বিবেচনা করে চলে, যেন সকলের সংগে তারা উপযুক্ত, ন্যায় ও সৎ ব্যবহার করে, যেন বোকা লোকেরা চালাক হয় আর যুবকেরা জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধি পায়, - জ্ঞানীরা এই সব উপদেশ শুনুক ও আরও শিক্ষা লাভ করুক, আর বুদ্ধিমানেরা শুনে পথ চলায় পাকা হোক- যেন লোকে চলতি কথা ও গভীর অর্থপূর্ণ কথা এবং জ্ঞানীদের বলা কথা ও ধাঁধা বুঝতে পারে। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় হল জ্ঞানের ভিত্তি, কিন্তু যাদের বিবেক অসাড় তারা সুবুদ্ধি ও শিক্ষা তুচ্ছ করে। ছেলে আমার, তুমি তোমার বাবার উপদেশে কান দাও; তোমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা ত্যাগ কোরো না। সেগুলো হবে তোমার মাথায় জড়াবার সুন্দর মালা আর গলার হারের মত। ছেলে আমার, পাপীরা যদি তোমাকে বিপথে নিয়ে যেতে চায় তুমি রাজী হোয়ো না। ধর, কেউ বলল, “আমাদের সংগে এস, খুন করবার জন্য চল আমরা ওৎ পেতে থাকি, কোন নির্দোষ লোককে ধরবার জন্য লুকিয়ে থাকি। তারা যেমন সম্পূর্ণ শরীর নিয়ে জীবিত অবস্থায় মৃতস্থানে, অর্থাৎ সেই গর্তে নেমে যায়, তেমনি করেই এস, আমরা ওদের জীবিত অবস্থায় গোটাই গিলে ফেলি; তাহলে আমরা নানা রকমের দামী জিনিস পাব, আর লুটের জিনিস দিয়ে আমাদের বাড়ী-ঘর ভরব। আমাদের সংগেই তোমার ভাগ্য তুমি জুড়ে নাও, আমাদের টাকার থলি একটাই হবে।” ছেলে আমার, তুমি ওদের সংগে যেয়ো না, ওদের পথে তোমার পা ফেলো না; কারণ ওদের পা পাপের দিকে দৌড়ায়, খুন করবার জন্য ওরা ছুটে চলে। লোকে বলে, “পাখীর চোখের সামনে জাল পাতলে কোন লাভ হয় না।” এই লোকেরা নিজেরাই খুন হবার জন্য ওৎ পেতে থাকে, নিজেরাই শেষ হওয়ার জন্য লুকিয়ে থাকে। মন্দ উপায়ে কোন কিছু লাভ করবার জন্য যারা ছোটে তাদের সকলের দশাই এই রকম হয়; তারা যা লাভ করে তা তাদের জীবন শেষ করে দেয়। সুবুদ্ধি রাস্তায় রাস্তায় চিৎকার করে ডাকে, বাজারে বাজারে আওয়াজ তোলে। গোলমাল-ভরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে সে চিৎকার করে, শহরের ফটকে ঢুকবার পথে সে এই কথা বলে, “বোকা লোকেরা, আর কতদিন তোমরা তোমাদের বোকামি ভালবাসবে? যারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তারা আর কতকাল তার মধ্যে আনন্দ পাবে? যারা বিবেচনাহীন তারা আর কতকাল জ্ঞানকে ঘৃণা করবে? আমার শাসনের কথায় যদি তোমরা কান দিতে, তাহলে আমার আত্মা আমি তোমাদের উপরে ঢেলে দিতাম, আমার মনের কথা তোমাদের জানাতাম। আমি যখন ডাকলাম তখন তোমরা আমাকে অগ্রাহ্য করলে, হাত বাড়িয়ে দিলেও কেউ তাতে সাড়া দিলে না। তোমরা যখন আমার সব উপদেশই অগ্রাহ্য করলে, দোষ দেখিয়ে দিলেও তা গ্রহণ করতে চাইলে না, তখন তোমাদের ধ্বংস দেখে আমি হাসব, তোমাদের উপর বিপদ নেমে আসলে তামাশা করব। বিপদ ঝড়ের মত তোমাদের উপর নেমে আসলে, ধ্বংস ঘূর্ণিবাতাসের মত তোমাদের ঝেঁটিয়ে নিয়ে গেলে, দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে তোমরা ডুবে গেলে, আমি তামাশা করব। “বুদ্ধিহীনেরা তখন আমাকে ডাকবে কিন্তু আমি সাড়া দেব না; তারা আমার খোঁজ করবে কিন্তু আমাকে খুঁজে পাবে না। তারা জ্ঞানকে ঘৃণা করেছে আর সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করতে চায় নি। সেইজন্য আমার উপদেশ তারা গ্রহণ করে নি, আর সংশোধনের জন্য আমি যা বলেছি তা পায়ে দলেছে; কাজেই তাদের নিজেদের কাজের ফল তাদেরই ভোগ করতে হবে, বিদ্রূপ নিজেদের পরামর্শের ফল দিয়েই পেট ভরাতে হবে। বোকা লোকদের বিপথে যাওয়াই তাদের মৃত্যুর কারণ হবে, বিবেচনাহীনদের নিশ্চিন্ত মনোভাব তাদের ধ্বংস করবে; কিন্তু যারা আমার কথা শোনে তারা নিরাপদে বাস করবে; তারা শান্তিতে থাকবে, অমংগলের ভয় করবে না।” ছেলে আমার, তুমি যদি আমার কথা শোন আর তোমার অন্তরের মধ্যে আমার সব আদেশ জমা করে রাখ, যদি সুবুদ্ধির কথায় কান দাও আর বিচারবুদ্ধির দিকে মনোযোগ দাও, যদি বিবেচনা-শক্তিকে ডাক আর চিৎকার করে ডাক বিচারবুদ্ধিকে, যদি রূপা খুঁজবার মত করে সুবুদ্ধির খোঁজ কর আর গুপ্তধনের মত তা খুঁজে দেখ, তাহলে সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় কি, তা তুমি বুঝতে পারবে আর ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান পাবে; কারণ সদাপ্রভুই সুবুদ্ধি দান করেন, তাঁর মুখ থেকেই জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধি বের হয়ে আসে। খাঁটি অন্তরের লোকদের জন্য তিনি উপস্থিত বুদ্ধি জমা করে রাখেন; যারা সততায় চলাফেরা করে তিনি তাদের ঢাল হন, যেন তিনি ন্যায়বিচার বজায় রাখতে পারেন, আর তাঁর ভক্তদের পথ রক্ষা করতে পারেন। যদি তুমি আমার কথা শোন, তাহলে বুঝতে পারবে কোনটা উপযুক্ত, ন্যায্য ও সৎ আর বুঝতে পারবে মংগলের সমস্ত পথ; কারণ সুবুদ্ধি তোমার অন্তরে ঢুকবে, আর জ্ঞান তোমার প্রাণে আনন্দ দেবে। তোমার ভাল-মন্দ বুঝবার শক্তি তোমাকে রক্ষা করবে, আর বিচারবুদ্ধি তোমাকে পাহারা দেবে। এতে দুষ্ট লোকদের পথ থেকে জ্ঞানই তোমাকে রক্ষা করবে; রক্ষা করবে তাদের থেকে- যারা মিথ্যা কথা বলে, যারা অন্ধকার পথে চলবার জন্য সোজা পথ ত্যাগ করে, যারা মন্দ কাজে আনন্দ পায়, মন্দতার কুটিল পথেই যাদের আনন্দ, আর যারা বাঁকা পথে ও বিপথে চলে। জ্ঞানই তোমাকে রক্ষা করবে ব্যভিচারিণীর হাত থেকে, মিষ্টি কথায় ভরা বিপথে যাওয়া স্ত্রীলোকের হাত থেকে। সে তার যৌবনকালের স্বামীকে ছেড়ে দিয়েছে আর তার ঈশ্বরের স্থাপন করা ব্যবস্থা অমান্য করেছে। তুমি তার ঘরে ঢুকলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে, তার সংগে যোগ দিলে মৃতদের কাছে পৌঁছাবে। যারা তার কাছে যায় তাদের কেউ আর ফিরে আসে না, তারা বাঁচবার পথ পায় না। জ্ঞানই তোমাকে ঐ সব থেকে রক্ষা করবে যাতে তুমি ভাল লোকদের পথে, ঈশ্বরভক্তদের পথে চলতে পার। সৎ লোকেরাই দেশে বাস করতে পারবে, নির্দোষ লোকেরাই তার মধ্যে টিকে থাকবে; কিন্তু দেশ থেকে দুষ্টদের ছেঁটে ফেলা হবে আর অবিশ্বস্তদের উপ্‌ড়ে ফেলা হবে। ছেলে আমার, তুমি আমার শিক্ষা ভুলে যেয়ো না, সমস্ত অন্তর দিয়ে তুমি আমার আদেশ পালন কর; কারণ তাতে তুমি অনেক আয়ু পাবে আর তোমার অনেক মংগল হবে। বিশ্বস্ততা আর সততা যেন কখনও তোমাকে ছেড়ে না যায়; তোমার গলায় সেগুলো বেঁধে রাখ, তোমার অন্তরের পাতায় সেগুলো লিখে রাখ। তা করলে ঈশ্বর ও মানুষের সামনে তুমি দয়া ও সুনাম লাভ করবে। তোমার সমস্ত অন্তর দিয়ে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর কর; তোমার নিজের বিচারবুুদ্ধির উপর ভরসা কোরো না। তোমার সমস্ত চলবার পথে তাঁকে সামনে রাখ; তিনিই তোমার সব পথ সোজা করে দেবেন। তোমার নিজের চোখে জ্ঞানী হোয়ো না; সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় কর, মন্দ থেকে দূরে যাও। তাতে তুমি স্বাস্থ্যবান হবে আর তোমার হাড় পুষ্ট হবে। তোমার ধন-সম্পদ দিয়ে আর তোমার প্রথমে কাটা ফসলের অংশ উৎসর্গ করে তুমি সদাপ্রভুকে সম্মান দেখাও; তাতে তোমার গোলাঘরগুলো প্রচুর শস্যে ভরে যাবে আর তোমার জালাগুলো থেকে নতুন আংগুর-রস উপ্‌চে পড়বে। ছেলে আমার, সদাপ্রভুর শাসন অগ্রাহ্য কোরো না, তিনি বকুনি দিলে তা তুচ্ছ কোরো না; কারণ বাবা যেমন তাঁর প্রিয় ছেলেকে ভীষণ বকুনি দেন, ঠিক তেমনি সদাপ্রভু যাকে ভালবাসেন তাকেই বকুনি দেন। ধন্য সেই লোক যে সুবুদ্ধির খোঁজ পায় আর বিচারবুদ্ধি লাভ করে, কারণ তাতে রূপার ব্যবসার চেয়েও বেশী লাভ পাওয়া যায়, সোনার চেয়েও তাতে বেশী লাভ হয়; প্রবাল পাথরের চেয়েও সুবুদ্ধি বেশী দামী, তোমার চাওয়ার মত কোন জিনিসের সংগে তার তুলনা হয় না। তার ডান হাতে আছে অনেক আয়ু, বাঁ হাতে আছে ধন আর সম্মান। তার পথে পাওয়া যায় আনন্দ, আর তার সমস্ত পথেই আছে মংগল। যারা তাকে ধরে তাদের কাছে তা জীবন গাছের মত; যারা তাকে আঁকড়ে ধরে তারা আশীর্বাদ পায়। সদাপ্রভু সুবুদ্ধি দিয়ে পৃথিবীর ভিত্তি গেঁথেছেন, বিচারবুদ্ধি দিয়ে মহাকাশকে তার জায়গায় রেখেছেন। তিনি জ্ঞান দিয়ে মাটির নীচের জল বের করে এনেছেন, আর আকাশ থেকে ফোঁটা ফোঁটা শিশির পড়ে। ছেলে আমার, তুমি উপস্থিত বুদ্ধি ও বিচারবুদ্ধি রক্ষা কোরো, তাতে মনোযোগ দিয়ো। তোমার জন্য তা হবে জীবন, তোমার গলার জন্য তা হবে সুন্দর হারের মত। তখন তুমি নিরাপদে তোমার পথে চলতে পারবে, তোমার পায়ে উছোট লাগবে না। শোবার সময় তুমি ভয় পাবে না, আর তোমার ঘুম হবে সুখের। হঠাৎ বিপদ আসলে তুমি ভয় কোরো না, দুষ্ট লোকের ধ্বংস দেখে ভয় পেয়ো না; কারণ তুমি সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর করবে, আর তিনি ফাঁদে পড়া থেকে তোমার পা রক্ষা করবেন। যারা উপকার পাবার উপযুক্ত তাদের উপকার করবার ক্ষমতা যখন তোমার হাতে থাকবে তখন তা করতে তুমি অস্বীকার কোরো না। সাহায্য করবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকলে কাউকে বোলো না, “যাও, পরে এসো, কালকে করব।” তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে কোন কুমতলব কোরো না, সে তো তোমার পাশে নিশ্চিন্তে বাস করে। যে লোক তোমার কোন ক্ষতি করে নি, বিনা কারণে তাকে দোষী কোরো না। কোন অত্যাচারী লোককে দেখে হিংসায় জ্বলতে থেকো না, কিম্বা তার কোন পথও তুমি বেছে নিয়ো না; কারণ বাঁকা পথে যাওয়া মানুষকে সদাপ্রভু ঘৃণা করেন, কিন্তু খাঁটি অন্তরের লোকের সংগে তিনি যোগাযোগ রাখেন। দুষ্ট লোকের ঘরের উপর সদাপ্রভুর অভিশাপ থাকে, কিন্তু ঈশ্বরভক্তদের বাড়ীকে তিনি আশীর্বাদ করেন। যারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তাদেরও তিনি ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেন, কিন্তু নম্রদের দয়া করেন। জ্ঞানীরা সম্মান পাবে, কিন্তু বিবেচনাহীনদের পাওনা হল লজ্জা। সন্তানেরা, বাবার উপদেশে কান দাও, বিচারবুদ্ধি লাভ করবার দিকে মনোযোগ দাও। আমি তোমাদের ভাল শিক্ষা দিচ্ছি, সেইজন্য আমার নির্দেশের অবাধ্য হোয়ো না। আমিও তো আমার বাবার ছেলে ছিলাম, মায়ের চোখে কচি ও একমাত্র সন্তানের মত ছিলাম। তখন বাবা আমাকে শিক্ষা দিয়ে বলতেন, “তোমার সমস্ত অন্তর দিয়ে আমার কথা ধরে রেখো; আমার আদেশ মেনে চোলো, তাতে বাঁচবে। জ্ঞান লাভ কর, বিচারবুদ্ধি লাভ কর; আমার কথা ভুলে যেয়ো না, তা থেকে সরে যেয়ো না। জ্ঞানকে ত্যাগ কোরো না, সে-ই তোমাকে রক্ষা করবে; তাকে ভালবেসো, সে-ই তোমার উপর নজর রাখবে। জ্ঞানী হওয়ার প্রথম ধাপ হল জ্ঞান লাভ করা; তোমার যা কিছু আছে সব দিয়ে বিচারবুদ্ধি লাভ কর। জ্ঞানকে প্রধান স্থান দাও, সে-ই তোমাকে উঁচুতে তুলবে; তাকে জড়িয়ে ধর, সে তোমাকে সম্মান দেবে। সে তোমার মাথার উপর দেবে সুন্দর মালা আর উপহার দেবে সৌন্দর্যের মুকুট।” ছেলে আমার, শোন, আমার কথা তোমার অন্তরে রাখ, তাতে তুমি অনেক বছর বেঁচে থাকবে। আমি তোমাকে জ্ঞানের পথ দেখিয়ে দিয়েছি, সোজা পথে তোমাকে চালিয়ে নিয়েছি। তাই হাঁটবার সময় পা ফেলতে তুমি বাধা পাবে না, দৌড়াবার সময় উছোট খাবে না। উপদেশ ধরে রাখ, ছেড়ে দিয়ো না; তা রক্ষা কর, কারণ ওটাই তোমার জীবন। দুষ্টদের পথে তুমি পা দিয়ো না, মন্দ লোকদের পথে হেঁটো না। সেই পথ তুমি এড়িয়ে যাও, তার উপর দিয়ে তুমি হেঁটো না; সেই পথে না গিয়ে বরং এগিয়ে যাও; কারণ মন্দ কাজ না করলে দুষ্টদের ঘুম হয় না; কাউকে উছোট খাওয়াতে না পারলে তাদের ঘুম আসে না। দুষ্টতা হল তাদের খাবার আর অত্যাচার হল তাদের মদ। ঈশ্বরভক্তদের পথ ভোরের প্রথম আলোর মত, যা দুপুর না হওয়া পর্যন্ত উজ্জ্বল থেকে আরও উজ্জ্বল হতে থাকে। কিন্তু দুষ্টদের পথ গভীর অন্ধকারের মত; তারা জানে না কিসে তারা উছোট খায়। ছেলে আমার, আমি যা বলছি তাতে মন দাও, আমার কথায় কান দাও। কথাগুলো তোমার চোখের আড়াল হতে দিয়ো না, তোমার অন্তরের মধ্যে তা রেখে দিয়ো। যারা এই রকম করে তাদের জন্য তা হয় জীবন, তা তাদের স্বাস্থ্যবান করে। সব কিছুর চেয়ে তোমার অন্তরকে বেশী করে পাহারা দিয়ে রাখ, কারণ অন্তর থেকেই তোমার জীবনের সব কিছু বের হয়ে আসে। তোমার মুখ থেকে বাঁকা কথা দূর করে দাও, ঠোঁট থেকে খারাপ কথা দূরে সরিয়ে দাও। তোমার চোখ যেন সোজা সামনে তাকায়, তোমার চোখের দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির রাখ। তোমার চলবার পথ সমান কর, তাতে তোমার পথ তুমি স্থির করতে পারবে। ডানে কিম্বা বাঁয়ে ফিরো না; মন্দ থেকে তোমার পা দূরে রেখো। ছেলে আমার, আমি যে জ্ঞানের কথা বলছি তা ভাল করে শোন; আমার বিচারবুদ্ধির কথায় কান দাও। তাতে তুমি ভাল-মন্দ বুঝবার শক্তি রক্ষা করতে পারবে, আর তোমার মুখ থেকে জ্ঞানের কথা বের হবে। ব্যভিচারিণীর ঠোঁট থেকে যেন মধু ঝরে পড়ে, তার কথাবার্তা তেলের চেয়েও মোলায়েম; কিন্তু তার শেষ ফল হয় বিষের মত তেতো, দু’দিকে ধার দেওয়া ছোরার মত ধারালো। তার পথ মৃত্যুর কাছে নেমে গেছে, তা সোজা চলে গেছে মৃতস্থানের দিকে। জীবনের দিকে যাবার পথের কথা সে চিন্তাও করে না; তার চলবার পথ বাঁকা, কিন্তু সে তা জানে না। ছেলেরা আমার, এবার আমার কথা শোন, আমি যা বলি তা থেকে সরে যেয়ো না। সেই স্ত্রীলোকের কাছ থেকে তোমার পা দূরে রাখ, তার ঘরের দরজার কাছেও যেয়ো না; যদি যাও তাহলে তোমার যৌবনের শক্তি অন্যদের দিয়ে দেবে আর তোমার আয়ু দিয়ে দেবে নিষ্ঠুরদের। তাতে অজানা লোকেরা তোমার ধন-সম্পদ ভোগ করবে, আর তোমার পরিশ্রমের ফল চলে যাবে অন্য লোকের বাড়ীতে। জীবনের শেষ সময়ে যখন তোমার দেহ ও মাংস ধ্বংস হবে তখন তুমি কাত্‌রাতে থাকবে। তুমি বলবে, “হায়! আমি শাসন ঘৃণা করেছি, আমার অন্তর সংশোধনের কথা তুচ্ছ করেছে। আমার শিক্ষকদের কথা আমি শুনি নি, যাঁরা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তাঁদের কথায় কান দিই নি। সমাজের লোকদের হাতে পড়ে আমি প্রায় মরেই যাচ্ছিলাম।” তোমার নিজের জমা করা জল থেকেই তুমি জল খাও; তোমার নিজের কূয়ার টাটকা জল খাও। তোমার নিজের ফোয়ারার জল কেন বাইরে উপ্‌চে পড়বে? তোমার স্রোতের জল কেন গিয়ে পড়বে রাস্তায় রাস্তায়? তোমার সন্তানেরা তোমার একারই থাকুক, ব্যভিচারিণীদের তাতে ভাগ না থাকুক, তোমার ফোয়ারায় আশীর্বাদ থাকুক, তোমার যৌবনের স্ত্রীকে নিয়েই তুমি আনন্দ কর। সে ভালবাসাপূর্ণ হরিণী, সৌন্দর্য-ভরা হরিণী; তারই বুক তোমাকে সব সময় সন্তুষ্ট রাখুক, তুমি সব সময় তার ভালবাসায় মেতে থেকো। ছেলে আমার, কেন তুমি ব্যভিচারিণীকে নিয়ে মজে থাকবে? তার বুক কেন তুমি জড়িয়ে ধরবে? মানুষের চলাফেরার উপর সদাপ্রভুই চোখ রেখেছেন; তাদের সমস্ত পথ তিনিই যাচাই করে দেখেন। দুষ্ট লোক তার মন্দ কাজের ফাঁদে পড়ে, সে নিজের পাপের দড়িতে কষে বাঁধা পড়ে। শাসনের অভাবে সে মারা পড়ে; নিজের ভীষণ বোকামির দরুন সে তার পথে স্থির থাকে না। ছেলে আমার, তুমি যদি কারও জামিন হয়ে থাক, অন্যের জামিন হবার জন্য হাতে হাত রেখে থাক, যা বলেছ যদি তার ফাঁদে পড়ে থাক, যদি তোমার মুখের কথায় বাঁধা পড়ে থাক, তবে ছেলে আমার, তুমি যখন অন্যের হাতে ধরা পড়ে গেছ, তখন নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য এই সব কাজ কর- তার কাছে গিয়ে নিজেকে নীচু কর, তাকে সাধাসাধি কর, তোমার চোখকে ঘুমাতে দিয়ো না, চোখের পাতাকে বন্ধ হতে দিয়ো না। শিকারীর হাত থেকে হরিণের মত করে, পাখী শিকারীর হাত থেকে পাখীর মত করে তুমি নিজেকে ছাড়িয়ে নাও। হে অলস, তুমি পিঁপড়ার কাছে যাও, তার চলাফেরা দেখে জ্ঞান লাভ কর। তাকে আদেশ দেবার কেউ নেই, তার উপরে কোন পরিচালক বা শাসনকর্তা নেই; তবুও সে গরমকালে তার খাবার জমা করে রাখে আর ফসল কাটবার সময় খাবার যোগাড় করে। হে অলস, আর কতকাল তুমি শুয়ে থাকবে? কখন ঘুম থেকে উঠবে? তুমি বলে থাক, “আর একটু ঘুম, আর একটু ঘুমের ভাব, বিশ্রামের জন্য আর একটুক্ষণ হাত গুটিয়ে রাখি।” কিন্তু বারে বারে অতিথি আসলে কিম্বা অস্ত্রশস্ত্রে সাজা দস্যুর হাতে পড়লে যেমন অভাব আসে, ঠিক তেমনি করে তোমারও অভাব আসবে। যে লোক জঘন্য ও দুষ্ট সে খারাপ কথা মুখে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়; সে চোখ টিপে ইশারা করে, পা দিয়ে ইংগিত দেয়, আংগুল দিয়ে সংকেত করে, মনে কুটিল চিন্তা নিয়ে সব সময় কুমতলব করে আর গোলমাল বাধায়। সেইজন্য হঠাৎ তার উপরে বিপদ আসবে; মুহূর্তের মধ্যে সে ধ্বংস হয়ে যাবে, সে আর উঠতে পারবে না। সদাপ্রভু কমপক্ষে সাতটা জিনিস ঘৃণা করেন যেগুলো তাঁর কাছে জঘন্য: গর্বে ভরা চোখের চাহনি, মিথ্যাবাদী জিভ্‌, নির্দোষ লোকের রক্তপাত করে যে হাত, কুমতলব আঁটা অন্তর, অন্যায় কাজ করবার জন্য দৌড়ে যাওয়া পা, মিথ্যা কথা বলা মিথ্যা সাক্ষী, আর ভাইদের মধ্যে গোলমাল বাধানো লোক। ছেলে আমার, তুমি তোমার বাবার আদেশ পালন কর, আর মায়ের দেওয়া শিক্ষা ত্যাগ কোরো না। চিরদিনের জন্য তোমার অন্তরে তা গেঁথে রাখ, তোমার গলায় তা বেঁধে রাখ। চলবার সময় তা তোমাকে পথ দেখাবে, ঘুমাবার সময় তোমাকে পাহারা দেবে আর জেগে উঠলে তোমার সংগে কথা বলবে; কারণ এই সব আদেশ বাতির মত, এই শিক্ষা আলোর মত, আর কঠোর বকুনি দিয়ে শাসন করাই হল জীবনের পথ। এই সব তোমাকে খারাপ স্ত্রীলোকের হাত থেকে রক্ষা করবে, রক্ষা করবে বিপথে যাওয়া স্ত্রীলোকের মিষ্টি কথার হাত থেকে। তার সৌন্দর্য দেখে তুমি অন্তরে লোভ কোরো না, তার চোখের পাতায় তুমি নিজেকে বন্দী হতে দিয়ো না; কারণ বেশ্যা শেষ পর্যন্ত তোমাকে খাবার অভাবের মধ্যে নিয়ে যাবে, আর ব্যভিচারিণী তোমার মূল্যবান প্রাণ শিকার করবে। যদি কেউ আগুন তুলে নিয়ে নিজের কোলে রাখে তবে কি তার কাপড় পুড়ে যাবে না? যদি কেউ জ্বলন্ত কয়লার উপরে হাঁটে তবে তার পা কি পুড়ে যাবে না? যে লোক অন্যের স্ত্রীর কাছে যায় তার দশা এই রকমই হয়; যে সেই স্ত্রীলোককে ছোঁয় তাকে শাস্তি পেতেই হবে। খেতে না পেয়ে খিদে মিটাবার জন্য যে চুরি করে, সেই চোরকে লোকে ঘৃণার চোখে দেখে না। তবুও যখন সে ধরা পড়বে তখন হয়তো তাকে সাত গুণ ফিরিয়ে দিতে হবে, হয়তো তার ঘরের সমস্ত ধনও তাকে দিয়ে দিতে হবে। যে ব্যভিচার করে তার বুদ্ধির অভাব আছে; সে তা করে নিজেকেই ধ্বংস করে। তার ভাগ্যে আছে আঘাত আর অপমান, তার দুর্নাম কখনও মুছে যাবে না; কারণ অন্তরের জ্বালা স্বামীর ভয়ংকর রাগকে জাগিয়ে তোলে; প্রতিশোধ নেবার সময় সে কোন দয়াই দেখাবে না। কোন ক্ষতিপূরণই সে গ্রহণ করবে না, অনেক বেশী ঘুষ দিলেও সে সন্তুষ্ট হবে না। ছেলে আমার, আমার কথা শোন আর আমার সব আদেশ তোমার অন্তরের মধ্যে জমা করে রাখ। আমার আদেশ পালন কর, তাতে তুমি বাঁচবে। আমার দেওয়া শিক্ষা তোমার চোখের মণির মত করে পাহারা দিয়ে রাখ; তোমার আংগুলগুলোতে তা বেঁধে রাখ, তোমার অন্তরের পাতায় তা লিখে রাখ। জ্ঞানকে বল, “তুমি আমার বোন,” আর বুদ্ধিকে সাথী বল; যাতে তারা তোমাকে ব্যভিচারিণীর হাত থেকে রক্ষা করে, রক্ষা করে সেই মিষ্টি কথায় ভরা বিপথে যাওয়া স্ত্রীলোকের হাত থেকে। আমার ঘরের জানলার জালির মধ্য দিয়ে আমি বাইরে তাকালাম। বোকা লোকদের মধ্যে আমি চেয়ে দেখলাম, যুবকদের মধ্যে আমি এমন একজন যুবককে লক্ষ্য করলাম যার বুদ্ধির অভাব ছিল। সে সেই স্ত্রীলোকের বাড়ীর কাছের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, তারপর সে তার বাড়ীর দিকের গলিতে গিয়ে ঢুকল; তখন দিনের আলো মিলিয়ে যাবার পর সন্ধ্যা হয়ে রাতের গভীর অন্ধকার নেমে এসেছিল। সেই সময় একজন স্ত্রীলোক তার সংগে দেখা করতে বের হয়ে আসল; তার পরনে বেশ্যার পোশাক, আর তার অন্তর ছিল ছলনায় ভরা। সে বিপথে যাওয়া স্ত্রীলোক, জোরে জোরে কথা বলে, তার পা কখনও ঘরে থাকে না; কখনও রাস্তায়, কখনও বাজারে, প্রত্যেকটি মোড়ে সে ওৎ পেতে থাকে। সে সেই যুবককে ধরে চুমু দিল আর বেহায়া মুখে বলল, “আমার ঘরে যোগাযোগ-উৎসর্গের মাংস আছে, আজকেই আমি মানত পূরণ করেছি। তাই আমি তোমার সংগে দেখা করবার জন্য বের হয়ে এসেছি; আমি তোমার খোঁজ করে তোমাকে পেয়েছি। মিসর দেশের বিভিন্ন রংয়ের কাপড়ের তৈরী চাদর দিয়ে আমি বিছানা ঢেকেছি; গন্ধরস, অগুরু আর দারচিনি দিয়ে আমার বিছানা সুগন্ধযুক্ত করেছি। এস, আমরা সকাল পর্যন্ত দেহ-ভোগে মেতে থাকি, গভীর ভালবাসার মধ্যে আনন্দ ভোগ করি। আমার স্বামী বাড়ীতে নেই, তিনি দূরে যাত্রা করেছেন; তিনি থলি ভরে টাকা নিয়েছেন, পূর্ণিমার আগে ঘরে ফিরবেন না।” মন ভুলানো কথাবার্তার দ্বারা সে তাকে বিপথে নিয়ে গেল, মিষ্টি কথায় তাকে ভুলিয়ে নিল, আর সে তখনই সেই স্ত্রীলোকের পিছনে গেল। গরু যেমন করে জবাই হতে যায়, শিকলে বাঁধা অসাড়-বিবেক লোক যেমন তার শাস্তি পেতে যায়, পাখী যেমন তাড়াতাড়ি ফাঁদে পড়তে যায় আর শেষে তার কলিজায় তীর বিঁধে যায়, তেমনি করে সেই লোক জানেও না যে, এতে তার প্রাণ যাবে। ছেলেরা আমার, এখন তোমরা আমার কথা শোন, আমি যা বলি তাতে কান দাও। তোমাদের মনকে সেই স্ত্রীলোকের পথে যেতে দিয়ো না, তোমরা তার পথে ঘুরে বেড়ায়ো না; কারণ সে অনেকের সর্বনাশ করেছে, আর যাদের সে শেষ করে দিয়েছে তারা সংখ্যায় অনেক। তার ঘরটা হল মৃতস্থানে যাবার পথ, যে পথ মৃত্যুর ঘরে নেমে গেছে। সুবুদ্ধি কি ডাক দেয় না? বিচারবুদ্ধি কি চিৎকার করে কথা বলে না? পথের পাশে উঁচু জায়গায় যেখানে পথ গিয়ে পথের সংগে মিলেছে সেখানে সুবুদ্ধি দাঁড়িয়ে থাকে। শহরে যাবার পথে ফটকের কাছে সে জোরে চেঁচিয়ে বলে, “ওহে লোকেরা, আমি তোমাদের ডাকছি, সমস্ত মানুষের কাছে জোর গলায় বলছি। বোকা লোকেরা, চালাক হবার বুদ্ধি লাভ কর; বিবেচনাহীন লোকেরা, বিচারবুদ্ধি লাভ কর। শোন, আমি উপযুক্ত কথা বলব, সঠিক কথা বলবার জন্য আমার মুখ খুলব। আমি সত্যি কথা বলব; খারাপ কথা আমার কাছে জঘন্য লাগে, তাই আমি তা বলব না। আমার মুখের সমস্ত কথাই ঠিক, তার মধ্যে বাঁকা কথা বা কুটিলতা নেই। যাদের বিচারবুদ্ধি আছে তাদের কাছে আমার কথা ভণ্ডামিশূন্য; যাদের জ্ঞান আছে তাদের কাছে সেগুলো খাঁটি। রূপার চেয়ে আমার উপদেশ লাভ করতে আগ্রহী হও, বাছাই করা সোনার চেয়ে জ্ঞান লাভ করতে আগ্রহী হও; কারণ প্র্রবাল পাথরের চেয়েও সুবুদ্ধি বেশী দামী; তোমার চাওয়ার মত কোন জিনিসের সংগে তার তুলনা হয় না। “আমি সুবুদ্ধি, আমি চালাক হবার বুদ্ধির সংগে বাস করি; জ্ঞান ও ভাল-মন্দ বুঝবার শক্তি আমার আছে। সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করা মানেই দুষ্টতাকে ঘৃণা করা; অহংকার, বড়াই করা, মন্দ ব্যবহার আর বাঁকা কথাকে আমি ঘৃণা করি। পরামর্শ ও উপস্থিত বুদ্ধি আমার কাছ থেকে আসে; আমি বিচারবুদ্ধি, আমি ক্ষমতা দিই। রাজারা রাজত্ব করে আমার দ্বারা, আর শাসনকর্তারা তৈরী করে ন্যায়পূর্ণ আইন-কানুন; আমার দ্বারা রাজপুরুষেরা আর উঁচু পদের লোকেরা শাসন-কাজ চালায়; তারা সবাই বিচারকের কাজ করে। যারা আমাকে ভালবাসে আমিও তাদের ভালবাসি; যারা মনে-প্রাণে আমার খোঁজ করে তারা আমাকে পায়। ধন ও সম্মান আমার কাছ থেকে আসে, আসে স্থায়ী সম্পদ ও মংগল। সোনার চেয়েও, এমন কি, খাঁটি সোনার চেয়েও আমার দেওয়া ফল ভাল; আমি যা দিই তা বাছাই করা রূপার চেয়েও খাঁটি। আমি ন্যায়ের পথে হাঁটি, ন্যায়বিচারের পথ ধরে চলি। যারা আমাকে ভালবাসে তারা ধন-সম্পদ পায়; আমিই তাদের ধনভাণ্ডার পরিপূর্ণ করে তুলি। “সদাপ্রভুর কাজের শুরুতে, তাঁর সৃষ্টির কাজের আগে আমি তাঁরই ছিলাম; সেই প্রথম থেকে, পৃথিবী সৃষ্টির আগে থেকে, সমস্ত যুগের আগে আমাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। যখন কোন সাগর ছিল না, ছিল না কোন ফোয়ারা যেখান থেকে প্রচুর জল বের হয়ে আসে, তখন আমি জন্মেছিলাম। পাহাড়-পর্বত স্থাপন করবার আগে আমি ছিলাম। যখন পৃথিবী ও মাঠ-ময়দান কিম্বা পৃথিবীর একটা ধূলিকণা পর্যন্ত তিনি তৈরী করেন নি, তখন আমি ছিলাম। তিনি যখন মহাকাশ স্থাপন করছিলেন তখন আমি সেখানে ছিলাম; তিনি যখন সাগরের উপরে চারদিকের সীমানা ঠিক করছিলেন, তখন আমি সেখানে ছিলাম। তিনি যখন উপর দিকে আকাশ স্থাপন করছিলেন আর মাটির নীচের বড় বড় ফোয়ারা শক্তভাবে স্থাপন করছিলেন, তিনি যখন সাগরের সীমানা স্থির করছিলেন যেন জল তাঁর নিয়মের বাইরে পার হয়ে না আসে, যখন তিনি পৃথিবীর ভিত্তি ঠিক করছিলেন, তখন আমিই কারিগর হিসাবে তাঁর পাশে ছিলাম। দিনের পর দিন আমি খুশীতে পূর্ণ হয়ে তাঁর সামনে সব সময় আনন্দ করতাম; তাঁর পৃথিবী নিয়ে আনন্দ করতাম, আর মানুষকে নিয়ে খুশীতে পূর্ণ ছিলাম। “ছেলেরা আমার, এখন আমার কথা শোন; যারা আমার পথে চলে তারা সুখী। আমার নির্দেশে কান দাও, জ্ঞানবান হও, অবহেলা কোরো না। যে লোক আমার কথা শোনে আর প্রতিদিন আমার দরজার কাছে জেগে থাকে ও আমার দরজার চৌকাঠে অপেক্ষা করে সে সুখী; কারণ যে আমাকে পায় সে জীবন পায় আর সদাপ্রভুর কাছ থেকে দয়া পায়। কিন্তু যে আমাকে পায় না সে নিজের ক্ষতি করে; যারা আমাকে ঘৃণা করে তারা সবাই মৃত্যুকে ভালবাসে।” সুবুদ্ধি তার ঘর তৈরী করেছে; পাথর কেটে সে সাতটা থাম তৈরী করেছে। সে পশু কেটে মাংস রান্না করেছে এবং আংগুর-রসের সংগে মশলা মিশিয়েছে; সে খাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়েছে। সে তার চাকরাণীদের সব জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে, আর শহরের সবচেয়ে উঁচু জায়গা থেকে সে ডাক দিয়ে বলছে, “বোকা লোকেরা এখানে আসুক।” যাদের বুদ্ধি নেই তাদের সে বলে, “এস, আমার খাবার খাও, আমার মশলা মেশানো আংগুর-রস খাও; তুমি বোকা লোকদের সংগ ছেড়ে দাও, তাতে তুমি বাঁচবে; তুমি বিচারবুদ্ধির পথে চলাফেরা কর।” ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীকে যে সংশোধন করতে যায় সে অপমানিত হয়; দুষ্ট লোকের দোষ যে দেখিয়ে দেয় তাকেই সেই দুষ্ট লোক দোষী করে। ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীর দোষ দেখিয়ে দিয়ো না, দিলে সে তোমাকে ঘৃণা করবে; বরং জ্ঞানী লোককে তার দোষ দেখিয়ে দাও, সে তোমাকে ভালবাসবে। জ্ঞানী লোককে উপদেশ দাও, তাতে সে আরও জ্ঞানী হবে; ঈশ্বরভক্ত লোককে শিক্ষা দাও, সে আরও শিক্ষা লাভ করবে। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় হল সুবুদ্ধির ভিত্তি; সেই পবিত্রজনকে জানতে পারলে বিচারবুদ্ধি লাভ হয়। সুবুদ্ধি বলে, “আমার মধ্য দিয়ে তুমি অনেক দিন বেঁচে থাকবে, তোমার আয়ু আরও অনেক বছর বেড়ে যাবে। তুমি যদি জ্ঞানী হও তবে তোমার নিজের লাভ হবে, কিন্তু যদি ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারী হও তবে তুমি একাই কষ্ট পাবে।” নির্বুদ্ধি স্ত্রীলোকের মত যে গলাবাজি করে সে কোন বাধা মানে না, তার জ্ঞান নেই। সে তার ঘরের দরজার পাশে শহরের সবচেয়ে উঁচু জায়গার আসনে বসে। যারা সেই পথ দিয়ে সোজা নিজের নিজের পথে যায় তাদের সে ডেকে বলে, “বোকা লোকেরা এখানে আসুক।” যাদের বুদ্ধি নেই তাদের সে বলে, “চুরি করা জল মিষ্টি; যে খাবার লুকিয়ে খাওয়া হয় তা খুব স্বাদ লাগে।” কিন্তু তারা জানেই না যে, মৃতেরা সেখানে থাকে; সেই স্ত্রীলোকের নিমন্ত্রিত লোকেরা মৃতস্থানের গভীরে থাকে। শলোমনের সৎ উপদেশ। জ্ঞানী ছেলে বাবার জীবনে আনন্দ আনে, কিন্তু বিবেচনাহীন ছেলে মায়ের জীবনে দুঃখ আনে। অন্যায়ভাবে পাওয়া ধনে কোন লাভ হয় না, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি মৃত্যু থেকে উদ্ধার করে। সদাপ্রভু তাঁর ভক্তদের খিদেয় কষ্ট পেতে দেন না, কিন্তু তিনি দুষ্টদের কামনা-বাসনা পূর্ণ হতে দেন না। অলসতা মানুষকে গরীব করে, কিন্তু পরিশ্রম ধন নিয়ে আসে। জ্ঞানী ছেলে গরমকালে ফসল জমা করে, কিন্তু লজ্জাদায়ী ছেলে ফসল কাটবার সময় ঘুমিয়ে থাকে। ঈশ্বরভক্তদের মাথায় অনেক আশীর্বাদ নেমে আসে, কিন্তু দুষ্টদের অত্যাচারী মনোভাব তাদের মুখের কথায় ঢাকা পড়ে। ঈশ্বরভক্ত লোকদের স্মৃতি আশীর্বাদ আনে, কিন্তু দুষ্টদের নাম পচে যায়। যার অন্তরে জ্ঞান আছে সে আদেশ মানে, কিন্তু বকবক করা অসাড়-বিবেক লোক ধ্বংস হয়ে যাবে। যে সততায় চলে সে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করে, কিন্তু যে বাঁকা পথে চলে সে ধরা পড়বে। যে লোক চোখ টিপে ইশারা করে সে দুঃখ দেয়; বকবক করা অসাড়-বিবেক লোক ধ্বংস হয়ে যাবে। ঈশ্বরভক্তের মুখ জীবনের ফোয়ারার মত, কিন্তু দুষ্টদের অত্যাচারী মনোভাব তাদের মুখের কথায় ঢাকা পড়ে। ঘৃণা ঝগড়া-বিবাদ জাগিয়ে তোলে, কিন্তু ভালবাসা সমস্ত অন্যায় ঢেকে রাখে। যাদের বিচারবুদ্ধি আছে তাদের মুখে জ্ঞান পাওয়া যায়, কিন্তু যাদের বুদ্ধি নেই তাদের পিঠের জন্য আছে লাঠি। জ্ঞানী লোক জ্ঞান জমা করে, কিন্তু অসাড়-বিবেকের মুখ সর্বনাশ ডেকে আনে। ধনীর ধনই তাদের দেয়াল-ঘেরা শহর; গরীবদের অভাবই হল তাদের সর্বনাশ। ঈশ্বরভক্তদের মজুরি হল পরিপূর্ণ জীবন, কিন্তু দুষ্টদের আয়ে পাপের বৃদ্ধি হয়। যে শাসন মানে সে জীবনের পথে চলে, কিন্তু যে সংশোধনের কথা অগ্রাহ্য করে সে বিপথে যায়। যে লোক তার মনের মধ্যে ঘৃণা গোপন করে রাখে সে মিথ্যা কথা বলে; যে লোক নিন্দা রটায় সে বিবেচনাহীন। বেশী কথার মধ্যে অন্যায় উপস্থিত থাকে, কিন্তু যে তার মুখ দমনে রাখে সে বুদ্ধিমান। ঈশ্বরভক্তদের জিভ্‌ খাঁটি রূপার মত, কিন্তু দুষ্টদের অন্তরের দাম কম। ঈশ্বরভক্তদের মুখ অনেককে লালন-পালন করে, কিন্তু বুদ্ধির অভাবে অসাড়-বিবেক লোকেরা মারা পড়ে। সদাপ্রভু যাকে আশীর্বাদ করেন সে-ই ধনী; সেই আশীর্বাদে কোন দুঃখ-কষ্ট থাকে না। মন্দ কাজ করা বিবেচনাহীনের আনন্দ, কিন্তু বুদ্ধিমানের আনন্দের বিষয় হল জ্ঞান। দুষ্ট লোকেরা যা ভয় করে তা-ই তাদের উপর ঘটবে, কিন্তু ঈশ্বরভক্তদের ইচ্ছা পূরণ করা হবে। ঘুর্ণিঝড় বয়ে গেলে দুষ্ট আর থাকে না, কিন্তু যে ঈশ্বরভক্ত সে চিরকাল অটল থাকে। দাঁতে সির্‌কা আর চোখে ধূমা লাগলে যেমন কষ্ট হয়, তেমনি যারা অলসকে কোথাও পাঠায় তারা কষ্ট পায়। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় আয়ু বাড়ায়, কিন্তু দুষ্টদের আয়ু কমিয়ে দেওয়া হবে। ঈশ্বরভক্তদের আশায় আনন্দ আছে, কিন্তু দুষ্টদের আশায় ছাই পড়বে। সদাপ্রভুর পথ সৎ লোকদের জন্য দুর্গের মত, কিন্তু যারা মন্দ কাজ করে তাদের জন্য তা সর্বনাশ। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা সব সময় অটল থাকবে, কিন্তু দুষ্ট লোকেরা দেশে বাস করতে পারবে না। ঈশ্বরভক্তদের মুখ থেকে জ্ঞানের কথা বের হয়, কিন্তু যে জিভ্‌ বাঁকা কথা বলে তা কেটে ফেলা হবে। ঈশ্বরভক্তদের মুখ উপযুক্ত কথা বলতে জানে, কিন্তু দুষ্টদের মুখ কেবল বাঁকা কথাই বলে। ঠকামির দাঁড়িপাল্লা সদাপ্রভু ঘৃণা করেন, কিন্তু ন্যায্য বাট্‌খারাতে তিনি খুশী হন। অহংকারের সংগে সংগে অপমানও আসে, কিন্তু নম্রতার সংগে আসে জ্ঞান। সৎ লোকেরা পরিচালিত হয় তাদের সততার দ্বারা, কিন্তু অবিশ্বস্ত লোকেরা ধ্বংস হয় নিজেদের ছলনার দ্বারা। যেদিন ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে আসবে সেই দিন ধন কোন উপকারে আসবে না, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি মৃত্যু থেকে রক্ষা করবে। সৎ লোকদের ঈশ্বরভক্তি তাদের জন্য সোজা পথ তৈরী করে, কিন্তু দুষ্টদের পতন হয় তাদের দুষ্টতার দ্বারা। সৎ লোকদের ঈশ্বরভক্তি তাদের রক্ষা করে, কিন্তু অবিশ্বস্ত লোকেরা নিজেদের লোভের ফাঁদে পড়ে। দুষ্ট লোক মরলে তার আশাও নষ্ট হয়ে যায়; তার শক্তির দরুন সে যে সব আশা করেছিল তা নষ্ট হয়ে যায়। ঈশ্বরভক্ত লোক কষ্ট থেকে উদ্ধার পায়, কিন্তু সেই কষ্ট দুষ্ট লোকের উপরে এসে পড়ে। ঈশ্বরের প্রতি যার ভক্তি নেই সে মুখ দিয়ে প্রতিবেশীর সর্বনাশ করে, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোক জ্ঞান দ্বারা রক্ষা পায়। ঈশ্বরভক্তদের মংগল হলে শহরে আনন্দ হয়, আর দুষ্টেরা ধ্বংস হলে লোকে আনন্দে চিৎকার করে। সৎ লোকেরা ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেলে শহরের উন্নতি হয়, কিন্তু দুষ্টদের মুখের দ্বারা শহরের সর্বনাশ হয়। যে তার প্রতিবেশীকে তুচ্ছ করে তার বুদ্ধির অভাব আছে, কিন্তু যার বিচারবুদ্ধি আছে সে তার জিভ্‌ সামলায়। যে পরের বিষয় নিয়ে অলোচনা করে সে গুপ্ত কথা বলে দেয়, কিন্তু বিশ্বস্ত লোক কথা গোপন রাখে। উপযুক্ত পরিচালনার অভাবে জাতি হেরে যায়, কিন্তু অনেক পরামর্শদাতা হলে জাতি উদ্ধার পায়। যে অন্যের জামিন হয় সে নিশ্চয়ই কষ্ট পাবে, কিন্তু যে জামিন হতে অস্বীকার করে সে নিরাপদে থাকে। সুন্দর স্বভাবের স্ত্রীলোক সম্মান লাভ করে, আর অত্যাচারী লোকেরা ধন লাভ করে। দয়ালু লোক নিজের উপকার করে, কিন্তু নিষ্ঠুর লোক নিজের ক্ষতি করে। দুষ্ট লোক যা আয় করে তা মিথ্যা, কিন্তু যে ঈশ্বরভক্তির বীজ বোনে সে সত্যিই তার ফসল কাটবে। যে ঈশ্বরভক্তিতে অটল সে পরিপূর্ণ জীবন পায়, কিন্তু যে মন্দতার পিছনে দৌড়ায় সে নিজের মৃত্যু ডেকে আনে। যাদের অন্তর কুটিল সদাপ্রভু তাদের ঘৃণা করেন, কিন্তু যারা নিখুঁত জীবন কাটায় তাদের উপর তিনি সন্তুষ্ট হন। তোমরা নিশ্চয় জেনো দুষ্টেরা শাস্তি পাবেই পাবে, কিন্তু ঈশ্বরভক্তেরা কোন শাস্তি পাবে না। শূকরের নাকে সোনার নথ দিলে যেমন হয়, তেমনি হয় সেই সুন্দরী স্ত্রীলোক যার ভাল-মন্দের বোধ নেই। ঈশ্বরভক্তের মনের ইচ্ছা মংগল বয়ে আনে, কিন্তু দুষ্ট লোকের আশার বদলে কেবল ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে আসে। যে কেউ খোলা হাতে দান করে সে আরও বেশী লাভ করে; আবার যে কেউ ন্যায্য খরচ করতে অস্বীকার করে সে অভাবে পড়ে। যে খোলা হাতে দান করে তার উন্নতি হয়; যে অন্যকে তৃপ্ত করে সে নিজেও তৃপ্ত হয়। যে লোক শস্য আটক করে রাখে লোকে তাকে অভিশাপ দেয়, কিন্তু যে তা বিক্রি করে সে আশীর্বাদের পাত্র হয়। যে মংগলের খোঁজ করে সে দয়া পায়, কিন্তু যে মন্দের খোঁজ করে তার উপর তা-ই ঘটবে। যে তার ধনের উপর নির্ভর করে তার পতন হবে, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোক সবুজ পাতার মত সতেজ থাকবে। যে তার পরিবারে কষ্ট নিয়ে আসে তার ভাগে বাতাস ছাড়া আর কিছুই থাকবে না; আর যাদের বিবেক অসাড় তারা জ্ঞানীদের দাস হবে। ঈশ্বরভক্ত লোক অন্যদের কাছে জীবন-গাছের মত; যে অন্যদের মন জয় করে সে জ্ঞানী। এই জগতেই যদি ঈশ্বরভক্ত লোকদের পাওনা পেতে হয়, তবে দুষ্ট এবং পাপীরা নিশ্চয়ই তাদের পাওনা পাবে। যে লোক শাসন ভালবাসে সে জ্ঞান ভালবাসে, কিন্তু যে লোক সংশোধনের কথা ঘৃণা করে সে পশুর সমান। ভাল লোক সদাপ্র্রভুর কাছ থেকে দয়া পায়, কিন্তু যে কুমতলব করে সদাপ্রভু তাকে দোষী বলে স্থির করেন। মন্দতা দিয়ে কোন লোকের জীবনে স্থিরতা আসে না, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোকের জীবনের ভিত্তি অটল থাকে। ভাল ও গুণবতী স্ত্রী স্বামীর মাথার মুকুটের মত, কিন্তু যে স্ত্রী লজ্জার কাজ করে সে তার স্বামীর পচা হাড়ের মত। ঈশ্বরভক্ত লোকদের চিন্তা ন্যায়ে পূর্ণ, কিন্তু দুষ্টদের পরামর্শে আছে ছলনা। দুষ্ট লোকেরা রক্তপাত করবার জন্য ওৎ পেতে থাকবার কথা বলে, কিন্তু ন্যায়বানেরা রক্ষা করবার কথা বলে। দুষ্ট লোকেরা ধ্বংস হয়ে যায়, তাদের বংশ থাকে না, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোকদের বংশ অটল থাকে। মানুষ যেভাবে বুদ্ধি খাটায় সেই অনুসারে প্রশংসা পায়, কিন্তু কুটিলমনা লোকদের তুচ্ছ করা হয়। যে লোক বড়লোকের ভান করে কিন্তু ঘরে খাবার নেই, তার চেয়ে যে বড়লোক নয় অথচ চাকর রাখে সে বরং ভাল। ঈশ্বরভক্ত লোক তার পশুদের যত্ন করে, কিন্তু দুষ্টদের মমতাও নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ। যে লোক নিজের জমিতে পরিশ্রম করে তার প্রচুর খাবার থাকে, কিন্তু যে অসারতার পিছনে দৌড়ায় তার বুদ্ধির অভাব আছে। দুষ্টেরা মন্দ লোকদের লুট করা জিনিস পেতে চায়, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোকদের জীবন ফল দান করে। মন্দ লোক তার পাপে পূর্ণ কথাবার্তার দ্বারা ফাঁদে পড়ে, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোক কষ্ট থেকে রেহাই পায়। মানুষ তার কথার দ্বারা মংগলে পরিপূর্ণ হতে পারে, আর তার কাজ অনুসারে সে ফল পায়। অসাড়-বিবেক লোকের পথ তার নিজের কাছে ঠিক মনে হয়, কিন্তু জ্ঞানী লোক পরামর্শ শোনে। যার বিবেক অসাড় সে তার বিরক্তি প্রকাশ করে ফেলে, কিন্তু সতর্ক লোক নিজের অপমান ঢাকা দেয়। সত্যবাদীর সাক্ষ্যের ফলে উচিত বিচার হয়, কিন্তু মিথ্যবাদীর সাক্ষ্যের ফলে ভুল বিচার হয়। বেপরোয়া কথা তলোয়ারের মত আঘাত করে, কিন্তু জ্ঞানীর কথা সুস্থ করে। সত্যবাদীর কথা চিরকাল স্থায়ী, কিন্তু মিথ্যাবাদীর কথা অল্পকাল স্থায়ী। যারা কুমতলব করে তাদের অন্তরে ছলনা থাকে, কিন্তু যারা মংগলের পরামর্শ দেয় তাদের অন্তরে থাকে আনন্দ। ঈশ্বরভক্ত লোকদের জীবনে অমংগল হয় না, কিন্তু দুষ্টদের জীবন অমংগলে পূর্ণ থাকে। মিথ্যাবাদী মুখকে সদাপ্রভু ঘৃণা করেন, কিন্তু যে লোকেরা বিশ্বস্ততায় চলে তাদের উপর তিনি সন্তুষ্ট হন। সতর্ক লোক যা জানে তা বলে বেড়ায় না, কিন্তু বিবেচনাহীন লোকেরা তাদের কথায় নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ করে। পরিশ্রমী লোকেরা কর্তৃত্ব করে, কিন্তু অলস লোকেরা পরের অধীন হয়। দুশ্চিন্তার ভারে মানুষের অন্তর ভেংগে পড়ে, কিন্তু একটুখানি উৎসাহের কথা তাকে আনন্দ দান করে। ঈশ্বরভক্ত লোক তার প্রতিবেশীকে পথ দেখায়, কিন্তু দুষ্টেরা এমন পথে চলে যা তাদেরই বিপথে নিয়ে যায়। অলস লোক নিজের খাবারের জন্য শিকার করতেও যায় না, কিন্তু মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল পরিশ্রমী হওয়া। ন্যায়ের পথে জীবন থাকে, সেই পথে মৃত্যু নেই। জ্ঞানী ছেলে বাবার শাসন মানে, কিন্তু ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারী সংশোধনে কান দেয় না। মানুষ নিজের কথার দ্বারা মংগল লাভ করতে পারে; অবিশ্বস্ত লোক অত্যাচার করতে চায়। যে তার মুখ সাবধানে রাখে সে তার প্রাণ রক্ষা করে, কিন্তু যে অসাবধানে কথা বলে তার সর্বনাশ হয়। অলস পেতে চায় কিন্তু কিছুই পায় না, কিন্তু পরিশ্রমী লোকেরা তাদের চাওয়ার অতিরিক্ত পায়। ঈশ্বরভক্ত লোক মিথ্যাকে ঘৃণা করে, কিন্তু দুষ্ট লোক লজ্জা ও দুর্নামের কারণ হয়। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি সৎ লোককে রক্ষা করে, কিন্তু দুষ্টতা পাপীদের সর্বনাশ ঘটায়। কেউ নিজেকে ধনী দেখায় কিন্তু তার কিছুই নেই; আবার কেউ নিজেকে গরীব দেখায় কিন্তু তার অনেক ধন আছে। ধনীকে তার ধন দিয়েই নিজের প্রাণ রক্ষা করতে হয়, কিন্তু গরীব লোককে কেউ ভয় দেখায় না। ঈশ্বরভক্তদের আলো উজ্জ্বলভাবে জ্বলে, কিন্তু দুষ্টদের বাতি নিভে যায়। অহংকার কেবল ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি করে, কিন্তু যারা উপদেশ শোনে তাদের কাছে জ্ঞান পাওয়া যায়। পরিশ্রম না করে যে টাকা পাওয়া যায় তা কমে যায়, কিন্তু যে লোক পরিশ্রম করে টাকা জমায় তার টাকা বেড়ে যায়। আশা পূর্ণ হতে দেরি হলে অন্তর ভেংগে পড়ে, কিন্তু ইচ্ছার পরিপূর্ণতা জীবন-গাছের মত। যে লোক ঈশ্বরের বাক্য তুচ্ছ করে সে নিজের সর্বনাশ করে, কিন্তু যে লোক ভক্তিপূর্ণ ভয়ে ঈশ্বরের আদেশ মানে সে তার পাওনা পায়। জ্ঞানী লোকের দেওয়া শিক্ষা জীবনের ফোয়ারার মত; তা মানুষকে মৃত্যুর ফাঁদ থেকে দূরে রাখে। যার বুদ্ধি ভাল সে সম্মান পায়, কিন্তু অবিশ্বস্ত লোকেরা শেষ হয়ে যাবে। সতর্ক লোক জ্ঞানের সংগে কাজ করে, কিন্তু বিবেচনাহীন লোক তার নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ করে। দুষ্ট সংবাদদাতা বিপদে পড়ে, কিন্তু বিশ্বস্ত সংবাদদাতা মংগল আনে। যে লোক শাসন অগ্রাহ্য করে সে অভাবে পড়ে ও লজ্জা পায়, কিন্তু যে লোক সংশোধনের কথায় কান দেয় সে সম্মানিত হয়। মনের ইচ্ছা পূরণ হলে অন্তর তৃপ্ত হয়, কিন্তু বিবেচনাহীনেরা মন্দ থেকে দূরে সরে যেতে ঘৃণা বোধ করে। জ্ঞানীদের সংগে যে চলাফেরা করে সে জ্ঞানী হয়, কিন্তু যে লোক বিবেচনাহীনদের সংগী তার ক্ষতি হয়। অমংগল পাপীদের পিছনে পিছনে ছুটে আসে, কিন্তু মংগল হল ঈশ্বরভক্তদের পাওনা। ভাল লোক তার নাতিপুতিদের জন্য অধিকার রেখে যায়, কিন্তু পাপীর ধন ঈশ্বরভক্তদের জন্যই জমা করা হয়। গরীবের জমিতে প্রচুর শস্য জন্মায়, কিন্তু অবিচারের ফলে তা কেড়ে নেওয়া হয়। যে তার ছেলেকে শাস্তি দেয় না সে তাকে ভালবাসে না, কিন্তু যে তাকে ভালবাসে সে তার শাসনের দিকে মনোযাগ দেয়। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা পেট ভরে খায়, কিন্তু দুষ্টেরা পেট ভরে খেতে পায় না। বুদ্ধিমতী স্ত্রীলোক তার সংসারের উন্নতি করে, কিন্তু যে স্ত্রীলোকের বিবেক অসাড় সে নিজেই তার সংসারের ভাংগন ধরায়। যে সততায় চলে সে সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে, কিন্তু যে বাঁকা পথে চলে সে তাঁকে তুচ্ছ করে। যার বিবেক অসাড় তার কথাবার্তায় অহংকার প্রকাশ পায়, কিন্তু জ্ঞানীরা তাদের কথার দ্বারা রক্ষা পায়। গরু না থাকলে যাবপাত্র খালি থাকে, কিন্তু বলদের শক্তি দ্বারা প্রচুর ফসল পাওয়া যায়। বিশ্বস্ত সাক্ষী মিথ্যা কথা বলে না, কিন্তু অবিশ্বস্ত সাক্ষী মিথ্যা কথা বলে। যে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে সে জ্ঞানের খোঁজ করেও পায় না, কিন্তু যার বিচারবুদ্ধি আছে সে সহজেই জ্ঞান লাভ করে। বিবেচনাহীন লোকের কাছ থেকে তুমি চলে যাও, কারণ তার মুখে তুমি জ্ঞানের কথা পাবে না। বিচারবুদ্ধি অনুসারে চলা হল সতর্ক লোকের জ্ঞান, কিন্তু ছলনা হল বিবেচনাহীন লোকের নির্বুদ্ধিতা। অসাড়-বিবেক লোকেরা তাদের দোষ দিয়ে একে অন্যের সংগে বাঁধা থাকে, কিন্তু সৎ লোকেরা বাঁধা থাকে মংগল করবার ইচ্ছা দিয়ে। যার অন্তর তেতো সে তা নিজেই বোঝে; একজনের অন্তরের আনন্দের ভাগী অন্যে হতে পারে না। দুষ্টদের বাড়ী ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু সৎ লোকদের তাম্বু বড় থেকে আরও বড় হবে। একটা পথ আছে যেটা মানুষের চোখে ঠিক মনে হয়, কিন্তু সেই পথের শেষে থাকে মৃত্যু। হাসবার সময়েও মনে ব্যথা থাকতে পারে, আর আনন্দের শেষে দুঃখ থাকতে পারে। অবিশ্বস্ত লোকেরা নিজেদের আচার-ব্যবহারে তৃপ্ত হয়, কিন্তু ভাল লোকেরা নিজেদের আচার-ব্যবহারে আরও বেশী তৃপ্ত হয়। বোকা লোক সব কথাই বিশ্বাস করে, কিন্তু সতর্ক লোক বিচারবুদ্ধি খাটিয়ে চলে। জ্ঞানী লোক মন্দকে ভয় করে তা থেকে সরে যায়, কিন্তু বিবেচনাহীন লোক নিজের উপর বেশী বিশ্বাস করে দুঃসাহসী হয়। বদমেজাজী লোক বোকার মত কাজ করে, আর কুমতলবকারীকে সবাই ঘৃণা করে। বোকা লোকেরা পাওনা হিসাবে পায় নির্বুদ্ধিতা, আর সতর্ক লোকেরা পুরস্কার হিসাবে পায় জ্ঞান। মন্দ লোকেরা ভাল লোকদের সামনে নত হয়, আর দুষ্টেরা ঈশ্বরভক্ত লোকদের দরজার কাছে নত হয়। গরীবকে তার প্রতিবেশীরা পর্যন্ত অপছন্দ করে, কিন্তু ধনীর অনেক বন্ধু থাকে। যে তার প্রতিবেশীকে তুচ্ছ করে সে পাপ করে, কিন্তু যে অভাবীদের প্রতি দয়া করে সে ধন্য। যারা মন্দ কাজ করবার ফন্দি আঁটে তারা কি বিপথে যায় না? কিন্তু যারা মংগল করবার পরিকল্পনা করে তাদের জন্য আছে বিশ্বস্ততা ও সততা। সমস্ত পরিশ্রম লাভ নিয়ে আসে, কিন্তু শুধু কথাবার্তা কেবল অভাবের দিকে নিয়ে যায়। জ্ঞানীদের পুরস্কার হল তাদের ধন, কিন্তু বিবেচনাহীনদের বোকামি আরও বোকামির জন্ম দেয়। যে সাক্ষী সত্যি কথা বলে সে অন্যের জীবন রক্ষা করে, কিন্তু মিথ্যা সাক্ষী ছলনা করে। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপুর্ণ ভয় থেকে দৃঢ় নিশ্চয়তা আসে আর তার ছেলেমেয়েদের জন্য আশ্রয়স্থান থাকে। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় জীবনের ফোয়ারার মত; তা লোককে মৃত্যুর ফাঁদ থেকে দূরে রাখে। লোকসংখ্যা বেশী হলে রাজার গৌরব হয়, কিন্তু প্রজা কম থাকলে রাজার সর্বনাশ হয়। যে লোক সহজে রাগ করে না সে খুব বুদ্ধিমান, কিন্তু যে লোক হঠাৎ রেগে যায় সে বোকামি তুলে ধরে। শান্ত মন দেহকে সুস্থ রাখে, কিন্তু হিংসা দেহকে অসুস্থ করে তোলে। যে লোক গরীবের উপর অত্যাচার করে সে তার সৃষ্টিকর্তাকে অপমান করে, কিন্তু যে লোক অভাবীকে দয়া করে সে তার সৃষ্টিকর্তাকে সম্মান করে। দুষ্টদের অন্যায় কাজ তাদের পতন ঘটায়, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোকদের মৃত্যুর সময়েও আশা থাকে। যাদের বিচারবুদ্ধি আছে তাদের অন্তরে জ্ঞান শান্তভাবে থাকে, কিন্তু বিবেচনাহীনেরা তাদের জ্ঞান জাহির করবার জন্য ব্যস্ত হয়। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি জাতিকে সম্মানিত করে কিন্তু পাপ জাতিকে অসম্মানে ফেলে। যে কর্মচারী বুদ্ধি করে কাজ করে রাজা তাকে সুনজরে দেখেন, কিন্তু যে কর্মচারী লজ্জাপূর্ণ কাজ করে সে তাঁর রাগের পাত্র হয়। নরম উত্তর রাগ দূর করে, কিন্তু কড়া কথা রাগ জাগিয়ে তোলে। জ্ঞানী লোকদের মুখ জ্ঞান ভালভাবে ব্যবহার করে, কিন্তু বিবেচনাহীনদের মুখ থেকে বোকামি স্রোতের মত বের হয়ে আসে। সদাপ্রভুর চোখ সবখানেই আছে; তা ভাল ও মন্দ লোকদের উপর নজর রাখে। যে কথা মানুষের জীবনে সুস্থতা আনে তা জীবন-গাছের মত, কিন্তু ছলনার কথা মানুষের মন ভেংগে দেয়। অসাড়-বিবেক লোক তার বাবার শাসনকে তুচ্ছ করে, কিন্তু সতর্ক লোক সংশোধনের কথায় কান দেয়। ঈশ্বরভক্তদের ঘর হল মহাধনের ভাণ্ডার, কিন্তু দুষ্টদের আয় বিপদ ডেকে আনে। জ্ঞানীদের মুখ জ্ঞান ছড়ায়, কিন্তু বিবেচনাহীনদের অন্তর তা করে না। দুষ্টদের উৎসর্গ সদাপ্রভু ঘৃণা করেন, কিন্তু খাঁটি লোকদের প্রার্থনায় তিনি খুশী হন। সদাপ্রভু দুষ্টদের পথ ঘৃণা করেন, কিন্তু যারা ন্যায় কাজ করবার জন্য এগিয়ে যায় তাদের তিনি ভালবাসেন। যারা ঠিক পথ ত্যাগ করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে; যে লোক সংশোধনের কথা ঘৃণা করে সে মরবে। সদাপ্রভু তো ধ্বংসস্থান, অর্থাৎ মৃতস্থান দেখতে পান; তাহলে মানুষের অন্তর তিনি আরও কত বেশী করেই না দেখতে পাচ্ছেন! ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারী সংশোধনের কথা পছন্দ করে না; সে জ্ঞানীদের কাছে যায় না। অন্তরে আনন্দ থাকলে মুখও খুশী দেখায়, কিন্তু অন্তরের ব্যথায় মন ভেংগে যায়। যার মনে বিচারবুদ্ধি আছে সে জ্ঞানের খোঁজ করে, কিন্তু বিবেচনাহীনের খাবার হল বোকামি। দুঃখীর সব দিনগুলোই কষ্টে ভরা, কিন্তু যার মন খুশী থাকে তার সব দিনই যেন ভোজের দিন। অশান্তির সংগে প্রচুর ধন লাভের চেয়ে সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ের সংগে অল্পও ভাল। ধনীর ভালবাসাহীন বাড়ীতে মোটাসোটা বাছুর থাকবার চেয়ে গরীবের ভালবাসাপূর্ণ বাড়ীতে শাক-ভাতও ভাল। রাগী লোক ঝগড়া খুঁচিয়ে তোলে, কিন্তু যে লোক সহজে রাগ করে না সে ঝগড়া থামিয়ে দেয়। অলসের পথ দু’পাশে কাঁটার বেড়া দেওয়া পথের মত, কিন্তু সৎ লোকের পথ যেন রাজপথ। জ্ঞানী ছেলে বাবার জীবনে আনন্দ আনে, কিন্তু বিবেচনাহীন লোক মাকে তুচ্ছ করে। যার বুদ্ধির অভাব আছে সে বোকামিতে আনন্দ পায়, কিন্তু যার বিচারবুদ্ধি আছে সে সোজা পথে হাঁটে। পরামর্শের অভাবে পরিকল্পনা মিথ্যা হয়ে যায়, কিন্তু পরামর্শদাতা অনেক হলে পরিকল্পনা সফল হয়। যে লোক উপযুক্ত উত্তর দিতে পারে সে খুশী হয়; ঠিক সময়ে বলা কথা কেমন ভাল! বুদ্ধিমান লোকের জীবনের পথ তাকে উপরের দিকে নিয়ে যায়, আর তাতে সে নীচে মৃতস্থানে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। সদাপ্রভু অহংকারীদের বাড়ী ভেংগে ফেলেন, কিন্তু তিনি বিধবার সীমানা ঠিক রাখেন। সদাপ্রভু সব কুমতলব ঘৃণা করেন, কিন্তু মংগলের কথাবার্তা তাঁর চোখে খাঁটি। লোভী লোক তার পরিবারে কষ্ট নিয়ে আসে, কিন্তু যে লোক ঘুষ ঘৃণা করে সে পরিপূর্ণ জীবন পাবে। ঈশ্বরভক্ত লোকের অন্তর চিন্তা করে উত্তর দেয়, কিন্তু দুষ্টদের মুখ থেকে মন্দ কথার স্রোত বের হয়ে আসে। সদাপ্রভু দুষ্টদের থেকে দূরে থাকেন, কিন্তু তিনি ঈশ্বরভক্তদের প্রার্থনা শোনেন। আনন্দে ভরা চোখ অন্যকে আনন্দ দেয়, আর মংগলের খবর হাড়-মাংসকে পুষ্ট করে। যে লোক জীবনদানকারী সংশোধনের কথায় কান দেয় সে জ্ঞানীদের মধ্যে বাস করবে। যে লোক শাসন অগ্রাহ্য করে সে নিজেকেই তুচ্ছ করে, কিন্তু যে লোক সংশোধনের কথায় কান দেয় সে বুদ্ধি লাভ করে। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় মানুষকে জ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর নম্রতা সম্মান আনে। মানুষ মনে মনে পরিকল্পনা করে, কিন্তু মুখ দিয়ে তা প্রকাশ করবার ক্ষমতা সদাপ্রভুর কাছ থেকে আসে। মানুষের সব পথই তার নিজের কাছে নির্দোষ, কিন্তু সদাপ্রভু তার উদ্দেশ্যগুলো ওজন করে দেখেন। তুমি যা-ই কর না কেন তার ভার সদাপ্রভুর উপর ফেলে দাও; তাতে তোমার পরিকল্পনা সফল হবে। সদাপ্রভু সব কিছু তৈরী করেছেন তাদের নিজের নিজের উদ্দেশ্য অনুসারে; দুষ্টকেও তিনি দুর্দশা-দিনের জন্যই ঠিক করে রেখেছেন। যাদের অন্তর গর্বিত তাদের সবাইকে সদাপ্রভু ঘৃণার চোখে দেখেন; তোমরা নিশ্চয়ই জেনো তারা শাস্তি পাবেই পাবে। বিশ্বস্ততা ও সততার মধ্য দিয়ে অন্যায় দূর করা যায়; সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ে মানুষ মন্দতা থেকে সরে যায়। মানুষের জীবন দেখে যখন সদাপ্রভু সন্তুষ্ট হন তখন তিনি তার শত্রুদেরও তার সংগে শান্তিতে বাস করান। অন্যায় বিচারের সংগে প্রচুর লাভের চেয়ে ন্যায়বিচারের সংগে অল্পও ভাল। মানুষ মনে মনে তার পথ সম্বন্ধে পরিকল্পনা করে, কিন্তু তার পায়ের ধাপ সদাপ্রভুই পরিচালনা করেন। রাজার মুখে বিচারের ন্যায্য রায় থাকে; তাঁর কথা ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে যায় না। সঠিক দাঁড়িপাল্লা ও নিক্তি সদাপ্রভুর; থলির সঠিক বাটখারাগুলো তাঁর চোখে ভাল। রাজার পক্ষে অন্যায় কাজ করা একটা জঘন্য ব্যাপার, কারণ ন্যায় কাজের মধ্য দিয়ে সিংহাসন স্থির থাকে। সত্যবাদী মুখ রাজাদের আনন্দ দেয়; যে লোক সত্যি কথা বলে রাজারা তাকে ভালবাসেন। রাজার রাগ মৃত্যুর দূতের মত, কিন্তু জ্ঞানী লোক সেই রাগ শান্ত করে। রাজা সন্তুষ্ট হলে জীবন বাঁচে; তাঁর দয়া বসন্তকালের বৃষ্টির মেঘের মত। সোনার চেয়ে জ্ঞান লাভ করা কত ভাল! আর রূপার চেয়ে বিচারবুদ্ধি লাভ করা কত পছন্দনীয়! মন্দ থেকে সরে যাওয়াই হল সৎ লোকদের জীবনের পথ; যে লোক তার জীবন-পথের দিকে খেয়াল রাখে সে তার প্রাণ রক্ষা করে। অহংকার ধ্বংস আনে আর গর্বে ভরা মন পতন আনে। অহংকারীদের সংগে লুটের জিনিস ভাগ করে নেওয়ার চেয়ে নম্র মনোভাব নিয়ে অত্যাচারিতদের সংগে থাকা অনেক ভাল। যে লোক ঈশ্বরের বাক্যে কান দেয় তার মংগল হয়, আর যে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে সে ধন্য। যার অন্তরে জ্ঞান আছে তাকে বুদ্ধিমান বলা হয়, আর মিষ্টি কথায় কাউকে শিক্ষা দিলে তার জ্ঞান বাড়ে। যার বুদ্ধি আছে সেই বুদ্ধি তার কাছে জীবনের ফোয়ারার মত; অসাড়-বিবেক লোকদের বোকামিই তাদের শাস্তি। জ্ঞানী লোকের অন্তর তার মুখকে পরিচালনা করে, তাতে তার শিক্ষায় অন্যদের জ্ঞান বাড়ে। মিষ্টি কথা মৌচাকের মত; অন্তরের জন্য তা মধুর আর তা দেহকে সুস্থ রাখে। একটা পথ আছে যেটা মানুষের চোখে ঠিক মনে হয়, কিন্তু সেই পথের শেষে থাকে মৃত্যু। খিদে মানুষকে পরিশ্রম করায়; তার পেটের খিদে তাকে কাজ করতে বাধ্য করে। নীচমনা লোক মন্দ কাজ করবার জন্য ষড়যন্ত্র করে; তার কথাবার্তা ঝল্‌সে দেওয়া আগুনের মত। যে লোক কুটিল সে ঝগড়া খুঁচিয়ে তোলে, আর যে লোক নিন্দা রটায় সে বন্ধুত্বে ভাংগন ধরায়। অত্যাচারী লোকের জীবন দেখে অন্যেরা লোভে পড়ে আর কুপথে যায়। যে লোক চোখ টেপে সে কুমতলব করে; যে লোক ঠোঁট বাঁকায় সে মন্দ কাজ করবে বলে ঠিক করেছে। পাকা চুল হল সৌন্দর্যের মুকুট; ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ জীবন কাটিয়ে তা পাওয়া যায়। যে সহজে রাগ করে না সে যোদ্ধার চেয়ে ভাল; যে শহর জয় করে তার চেয়ে যে নিজেকে দমনে রাখে সে ভাল। লোকে গুলিবাঁট করে, কিন্তু তার ফলাফল সদাপ্রভুই ঠিক করেন। ঝগড়া-বিবাদে ভরা ভোজের ঘরের চেয়ে শান্তির সংগে এক টুকরা শুকনা রুটিও ভাল। পরিবারে অসম্মান আনা ছেলের উপরে বুদ্ধিমান চাকর কর্তা হয়, আর ভাইদের মধ্যে সে-ও সম্পত্তির অধিকার পায়। রূপা যাচাই করবার জন্য আছে গলাবার পাত্র আর সোনার জন্য আছে চুলা, কিন্তু সদাপ্রভুই অন্তর যাচাই করেন। দুষ্ট লোক মন্দ কথা শোনে; মিথ্যাবাদী সর্বনাশের কথায় কান দেয়। যে লোক গরীবকে ঠাট্টা করে সে তাদের সৃষ্টিকর্তাকে অপমান করে; যে অন্যদের বিপদে আনন্দ করে সে শাস্তি পাবেই পাবে। নাতি-নাতনী বুড়ো লোকের মুকুটের মত, আর বাবা তার ছেলেমেয়েদের গর্বের বিষয়। নীচমনা লোকের পক্ষে বড় বড় কথা বলা মানায় না, আবার উঁচু পদের লোকের পক্ষেও মিথ্যা কথা বলা মানায় না। যে লোক ঘুষ দেয় তার কাছে ওটা সৌভাগ্যের পাথরের মত; সে যে দিকে ফেরে সেই দিকেই সফল হয়। যে লোক অন্যায় ঢাকা দেয় সে ভালবাসা বাড়িয়ে তোলে, কিন্তু যে তা বলে বেড়ায় সে বন্ধুত্বে ভাংগন ধরায়। বিবেচনাহীনের কাছে চাবুকের একশোটা ঘা যত না লাগে, একবার বকুনি খেলে বুদ্ধিমানের তার চেয়ে বেশী লাগে। বিদ্রোহী কেবলই মন্দের দিকে ঝোঁকে; তার বিরুদ্ধে একজন নিষ্ঠুর দূতকে পাঠানো হবে। যে বিবেচনাহীন লোক বোকামির মধ্যে পড়ে আছে তার সংগে দেখা হওয়ার চেয়ে বাচ্চা চুরি হওয়া ভাল্লুকের সংগে দেখা হওয়া বরং ভাল। যে লোক উপকারের বদলে অপকার করে, অপকার কখনও তার বাড়ী ছাড়বে না। ঝগড়া শুরু করা বাঁধ-ভাংগা জলের মত, তাই তর্কাতর্কির শুরুতেই তা বাদ দিয়ো। যারা দোষীকে নির্দোষ বলে ধরে আর যারা নির্দোষীকে দোষী করে, তাদের উভয়কেই সদাপ্রভু ঘৃণা করেন। জ্ঞান লাভের জন্য বিবেচনাহীন বোকা লোকের হাতে টাকা থাকলে কি লাভ? তার তো বুদ্ধি নেই। বন্ধু সব সময়েই ভালবাসে, আর ভাই থাকে দুর্দশার সময়ে সাহায্য করবার জন্য। যে লোকের বিচারবুদ্ধির অভাব আছে সে হাতে হাত মিলিয়ে চুক্তি করে আর বন্ধুর জামিন হয়। যে লোক বিরুদ্ধ মনোভাব নিয়ে থাকতে ভালবাসে সে ঝগড়া করতে ভালবাসে; যে লোক বড়াই করে সে ধ্বংস ডেকে আনে। যে লোকের অন্তর কুটিল তার মংগল হয় না; যে লোক ছলনার কথা বলে সে বিপদে পড়ে। বিবেচনাহীন সন্তান মা-বাবার জন্য দুঃখ নিয়ে আসে; ভক্তিহীন সন্তানের বাবার আনন্দ বলতে কিছু নেই। আনন্দিত অন্তর স্বাস্থ্য ভাল রাখে, কিন্তু ভাংগা মন স্বাস্থ্য নষ্ট করে। বিচারের রায় ঘুরিয়ে দেবার জন্য দুষ্ট লোক লুকিয়ে রাখা ঘুষ নেয়। যার বিচারবুদ্ধি আছে সে জ্ঞানের দিকে মনোযোগ দেয়, কিন্তু বিবেচনাহীন লোকের মন দুনিয়ার সব দিকেই ঘুরে বেড়ায়। বিবেচনাহীন ছেলে বাবাকে বিরক্ত করে তোলে, আর যে তাকে গর্ভে ধরেছে তার মন সে তেতো করে দেয়। নির্দোষ লোককে জরিমানা করা কিম্বা উঁচু পদের লোকের সততার জন্য তাকে মারধর করা ঠিক নয়। বুদ্ধিমান লোক নিজেকে দমনে রেখে কথা বলে; যে লোকের বিচারবুদ্ধি আছে তার মেজাজ ঠাণ্ডা। চুপ করে থাকলে অসাড়-বিবেক লোককেও জ্ঞানী মনে হয়, আর মুখ বন্ধ রাখলে মনে হয় তার বিচারবুদ্ধি আছে। যে লোক নিজেকে সমাজ থেকে আলাদা করে রাখে সে নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে চেষ্টা করে, আর সে সমস্ত বুদ্ধিপূর্ণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। বিবেচনাহীন লোক ভাল-মন্দ বুঝবার ব্যাপারে কোন আনন্দ পায় না, কিন্তু নিজের মতামত প্রকাশেই আনন্দ পায়। দুষ্টতা ডেকে আনে ঘৃণা আর অসম্মান ডেকে আনে নিন্দা। মানুষের মুখের কথা যেন মাটির গভীরে থাকা জল, কিন্তু জ্ঞানী লোকের মুখের কথা যেন ফোয়ারা থেকে বেরিয়ে আসা স্রোতের জল। দোষী লোকের পক্ষ নেওয়া ঠিক নয়, তাতে নির্দোষীর প্রতি অবিচার করা হয়। বিবেচনাহীনের কথার দরুন মকদ্দমা হয়, আর তার কথার জন্য তাকে মার খেতে হয়। বিবেচনাহীনের মুখই তার সর্বনাশের কারণ; তার কথার দরুন তার জীবন ফাঁদে পড়ে। নিন্দার কথা স্বাদযুক্ত খাবারের মত, মানুষের অন্তরের গভীরে তা নেমে যায়। যে নিজের কাজে অলসতা করে সে ধ্বংসকারীর ভাই। সদাপ্রভুই শক্ত দুর্গের মত; ঈশ্বরভক্ত লোক সেখানে দৌড়ে গিয়ে রক্ষা পায়। ধনীদের ধনই তাদের দেয়াল-ঘেরা শহর; তাদের ধনকেই তারা মনে করে রক্ষাকারী দেয়াল। মানুষের অন্তরের গর্ব ধ্বংস আনে, কিন্তু নম্রতা সম্মান আনে। শুনবার আগেই যে লোক উত্তর দেয় তার পক্ষে তা বোকামি ও লজ্জার বিষয়। দুর্বলতার সময় মনের বলই মানুষকে ধরে রাখে, কিন্তু ভাংগা মন কে সহ্য করতে পারে? যার মনে বিচারবুদ্ধি আছে সে জ্ঞান লাভ করে, আর জ্ঞানীদের কান জ্ঞানের খোঁজ করে। উপহার মানুষের জন্য পথ করে দেয় আর বড়লোকদের সামনে তাকে উপস্থিত করে। মকদ্দমার সময়ে যে প্রথমে নিজের পক্ষে কথা বলে তার কথা সত্যি মনে হয়, যতক্ষণ না আর একজন এসে তাকে জেরা করে। গুলিবাঁট করে ঝগড়া বন্ধ করা হয় আর দুই বলবান পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করা হয়। ভাইয়ের দ্বারা অপমানিত হওয়া ভাই শক্তিশালী শহরের চেয়েও শক্ত; আর ঝগড়া-বিবাদ রাজবাড়ীর ফটকের শক্ত হুড়কার মত। মানুষ তার কথার দ্বারা যে ফল লাভ করে তাতে তার অন্তর ভরে যায়; তার কথার ফলে সে যা পায় তা তাকে তৃপ্ত রাখে। মুখের কথার উপর নির্ভর করে জীবন ও মৃত্যু; যারা উপযুক্ত কথা বলতে ভালবাসে তারা তার ফল লাভ করবে। যে লোক স্ত্রী পায় সে আশীর্বাদ পায় আর সদাপ্রভুর কাছ থেকে দয়া পায়। গরীব লোক দয়া পাবার জন্য কাকুতি-মিনতি করে, কিন্তু ধনী অপমানে ভরা কড়া জবাব দেয়। যার অনেক বন্ধু তার বেশী সর্বনাশ হতে পারে, কিন্তু এমন বন্ধু আছে যে ভাইয়ের চেয়েও বেশী বিশ্বস্ত। যে বিবেচনাহীন লোক বাঁকা কথা বলে তার চেয়ে সেই গরীব লোকটি ভাল যে সততায় চলাফেরা করে। আবার জ্ঞানহীন হওয়াও ভাল নয়; যে লোক তাড়াহুড়া করে সব কাজ করতে যায় সে ভুল করে। মানুষের নিজের বোকামিই তাকে বিপথে নিয়ে যায়, কিন্তু তবুও তার অন্তর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠে। ধন অনেক বন্ধু নিয়ে আসে, কিন্তু তবুও গরীব লোক তার বন্ধু হারায়। মিথ্যা সাক্ষী শাস্তি পাবেই পাবে; যে সাক্ষী মিথ্যা কথা বলে সে রেহাই পাবে না। উঁচু পদের লোকের দয়া পাবার জন্য অনেকেই তার খোসামোদ করে, আর যে দান করে সবাই তার বন্ধু হয়। গরীবকে তার আত্মীয়-স্বজনেরা সবাই যখন এড়িয়ে চলে তখন এটা নিশ্চিত যে, তার বন্ধু-বান্ধবেরা তার কাছ থেকে দূরে থাকবে; তার কাকুতি-মিনতিতে তারা কান দেবে না। যে নিজেকে ভালবাসে সে বুদ্ধি লাভ করে; যে বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে চলে সে আশীর্বাদ পায়। মিথ্যা সাক্ষী শাস্তি পাবেই পাবে; যে সাক্ষী মিথ্যা কথা বলে সে ধ্বংস হবে। বিবেচনাহীনের পক্ষে সুখভোগ করা যখন উপযুক্ত নয়, তখন দাসের পক্ষে রাজপুরুষদের উপর কর্তা হওয়া আরও অনুপযুক্ত। যে মানুষের বুদ্ধি আছে সেই বুদ্ধি তাকে সহজে রাগ করতে দেয় না; তার বিরুদ্ধে কেউ দোষ করলে তা না ধরা তার পক্ষে গৌরব। রাজার রাগ সিংহের গর্জনের মত, কিন্তু তার দয়া যেন ঘাসের উপরে পড়া শিশির। বিবেচনাহীন ছেলে তার বাবার সর্বনাশের কারণ হয়, আর ঝগড়াটে স্ত্রী টপ্‌ টপ্‌ করে ফোঁটা পড়বার মত। ঘর-বাড়ী ও ধন বাবার কাছ থেকে পাওয়া যায়, কিন্তু বুদ্ধিমতী স্ত্রী পাওয়া যায় সদাপ্রভুর কাছ থেকে। অলসতা গাঢ় ঘুম নিয়ে আসে; অলস লোক খিদেয় কষ্ট পায়। যে লোক ঈশ্বরের আইন-কানুন পালন করে সে তার জীবন রক্ষা করে; কিন্তু যে তার জীবন-পথের দিকে মনোযোগ দেয় না সে মরবে। যে লোক গরীবকে দয়া করে সে সদাপ্রভুকে ধার দেয়; সদাপ্রভুই তার সেই উপকারের প্রতিদান দেবেন। তোমার ছেলেকে শাসন কর, কারণ তাতে আশা আছে; তার মৃত্যু ঘটাতে চেয়ো না। অতিরিক্ত রাগী লোককে শাস্তি পেতে হবে; তাকে একবার রক্ষা করলে বার বার তা করতে হবে। উপদেশে কান দাও, শাসন মেনে চল; পরে তুমি জ্ঞানী হতে পারবে। মানুষের মনে অনেক পরিকল্পনা থাকে, কিন্তু সদাপ্রভু যা ঠিক করেছেন তা-ই হবে। মানুষ মানুষের কাছ থেকে অটল ভালবাসা পেতে চায়; মিথ্যাবাদীর চেয়ে গরীব লোক ভাল। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় পরিপূর্ণ জীবনের দিকে নিয়ে যায়; যার সেই জীবন আছে সে পরিতৃপ্ত থাকে, কোন বিপদ তার কাছে আসতে পারে না। অলস থালায় হাত ডুবায়; সে হাতটা মুখে তুলতেও চায় না। ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীকে মার দিলে বোকা লোক সতর্ক হবে; বুদ্ধিমানকে সংশোধন করলে সে জ্ঞান লাভ করবে। যে ছেলে বাবার উপর অত্যাচার করে আর মাকে তাড়িয়ে দেয়, সে তাদের উপর লজ্জা ও অপমান ডেকে নিয়ে আসে। ছেলে আমার, যদি তুমি শাসন না মান তবে তুমি জ্ঞানের শিক্ষা থেকে অন্যদিকে সরে যাবে। দুষ্ট সাক্ষী ন্যায়বিচার নিয়ে ঠাট্টা করে; দুষ্টেরা অন্যায়ের মধ্যে ডুবে থাকে। ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে শাস্তি, আর বিবেচনাহীনদের পিঠের জন্য রয়েছে চাবুক। যে লোক আংগুর-রস খেয়ে মাতাল হয় সে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, আর যে মদ খায় সে তুমুল ঝগড়া-বিবাদ করে; এগুলো খেয়ে যে মাতাল হয় সে জ্ঞানী নয়। রাজার রাগ সিংহের গর্জনের মত; তাঁকে যে রাগায় সে নিজের প্রাণকে বিপদে ফেলে। ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে যাওয়ার ফলে মানুষ সম্মান পায়; যাদের বিবেক অসাড় তারা প্রত্যেকেই ঝগড়া করতে প্রস্তুত থাকে। অলস শীতকালে চাষ করে না, সেইজন্য ফসল কাটবার সময় সে চাইলেও কিছু পাবে না। মানুষের অন্তরের উদ্দেশ্য যেন মাটির নীচে থাকা জল, কিন্তু বুদ্ধিমান লোক তা তুলে আনে। অনেক লোক নিজেদের বিশ্বস্ত বলে দাবি করে, কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য লোক কে খুঁজে পায়? ঈশ্বরভক্ত লোক সততায় চলাফেরা করেন; ধন্য তাঁর বংশধরেরা! রাজা যখন বিচার করতে সিংহাসনে বসেন তখন চোখের চাহনি দিয়ে তিনি সমস্ত দুষ্টতাকে দূর করে দেন। কে বলতে পারে, “আমার অন্তর আমি খাঁটি করেছি, আমার পাপ থেকে আমি পরিষ্কার হয়েছি”? বেঠিক বাটখারা ও মাপ- এ দু’টাই সদাপ্রভু ঘৃণা করেন। কিশোর-কিশোরীদের কাজকর্ম খাঁটি ও ঠিক হোক বা না হোক, সেই কাজের দ্বারাই তারা নিজেদের পরিচয় দেয়। শুনবার জন্য কান ও দেখবার জন্য চোখ- সদাপ্রভু এ দু’টাই সৃষ্টি করেছেন। ঘুম ভালবেসো না, তাতে তুমি গরীব হবে; জেগে থাক, তাতে তোমার যথেষ্ট খাবার থাকবে। খদ্দের বলে, “ওটা ভাল নয়, ভাল নয়।” তারপর সে কিনে নিয়ে চলে যায় আর তার কেনা জিনিস নিয়ে গর্ব করে। সোনা আছে, প্রবাল পাথরও প্রচুর আছে, কিন্তু যে মুখ জ্ঞানের কথা বলে তার মূল্য অনেক বেশী। যে লোক বিদেশী লোকের জামিন হয় তার পোশাক নিয়ে যাও; যে লোক অন্য কোন দেশের লোকের জামিন হয় তাকেই জামানতের জিনিস হিসাবে রেখো। ঠকিয়ে পাওয়া খাবার মানুষের কাছে মিষ্টি লাগে, কিন্তু শেষে তার মুখ কাঁকরে ভরে যায়। পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পনা কোরো; উপযুক্ত পরামর্শ না নিয়ে তুমি যুদ্ধ ঘোষণা কোরো না। যে নিন্দা করে বেড়ায় সে গুপ্ত কথা প্রকাশ করে দেয়; কাজেই যে বেশী কথা বলে তার সংগে মেলামেশা কোরো না। যার কথায় বাবা কিম্বা মায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে, ভীষণ অন্ধকারে তার জীবন-বাতি নিভে যাবে। বাবার সম্পত্তির অধিকার যদি তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় তবে শেষে তাতে আশীর্বাদ পাওয়া যাবে না। তুমি বোলো না, “এই অন্যায়ের প্রতিশোধ নেব।” সদাপ্রভুর জন্য অপেক্ষা কর, তিনি সেই বিপদ থেকে তোমাকে রক্ষা করবেন। সদাপ্রভু বেঠিক বাটখারা ঘৃণা করেন; ঠকামির দাঁড়িপাল্লা ভাল নয়। বীরপুরুষের চলবার পথ যদি সদাপ্রভুই ঠিক করে দেন, তাহলে সাধারণ মানুষ তার নিজের পথ কেমন করে বুঝতে পারবে? ভেবে না দেখে তাড়াতাড়ি করে সদাপ্রভুর উদ্দেশে কোন কিছু মানত করা মানুষের জন্য ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়। চাপ দিয়ে যেমন শস্য মাড়াই করা হয়, তেমনি জ্ঞানী রাজা তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করে দুষ্টদের দূর করে দেন। মানুষের আত্মা হল সদাপ্রভুর বাতি; তা মানুষের অন্তরের গভীর জায়গাগুলো খুঁজে দেখে। বিশ্বস্ততা আর সততা রাজাকে নিরাপদে রাখে; বিশ্বস্ততার মধ্য দিয়ে তাঁর সিংহাসন স্থির থাকে। যুবকদের শক্তিই হল তাদের সৌন্দর্য, আর বুড়োদের গৌরব হল পাকা চুল। ভীষণভাবে মার খেলে মন্দতা পরিষ্কার হয়ে যায়, আর মনে আঘাত পেলে অন্তরের গভীর জায়গাগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়। সদাপ্রভুর হাতে রাজার অন্তর জলের স্রোতের মত; সদাপ্রভু যেখানে চান সেখানে তাকে চালান। মানুষের সব পথই তার নিজের কাছে ঠিক মনে হয়, কিন্তু সদাপ্রভু তার অন্তর ওজন করে দেখেন। সদাপ্রভুর কাছে পশু-উৎসর্গের চেয়ে ঠিক ও ন্যায় কাজ করা আরও গ্রহণযোগ্য। দুষ্টদের চোখের চাহনি গর্বে ভরা এবং অন্তর অহংকারে পূর্ণ; তাদের জীবন-বাতি পাপে ভরা। পরিশ্রমীর পরিকল্পনার ফলে নিশ্চয়ই প্রচুর ধনলাভ হয়, কিন্তু যে লোক পরিকল্পনা না করে তাড়াহুড়া করে কাজ করতে যায় তার নিশ্চয়ই অভাব হয়। মিথ্যাবাদী মুখ দিয়ে যারা ধন লাভ করে তারা মৃত্যুর খোঁজ করে; তাদের জন্য সেই ধনলাভ যেন মৃত্যুর আগে একটুখানি সুখের নিঃশ্বাস। দুষ্টদের ভীষণ অত্যাচার তাদেরই ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যায়, কারণ তারা ন্যায়ভাবে চলতে অস্বীকার করে। দোষী লোকের জীবন-পথ আঁকাবাকা, কিন্তু খাঁটি লোক সৎভাবে কাজ করে। ঝগড়াটে স্ত্রীর সংগে বাস করবার চেয়ে বরং ছাদের এক কোণায় একা বাস করা ভাল। দুষ্ট লোক ক্ষতি করতে চায়; তার প্রতিবেশী তার কাছ থেকে কোন দয়া পায় না। ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীকে শাস্তি দিলে বোকা লোক জ্ঞান লাভ করে; জ্ঞানীকে উপদেশ দিলে সে বুদ্ধি লাভ করে। ন্যায়বান ঈশ্বর দুষ্টদের পরিবারের লোকদের চোখে চোখে রাখেন আর সেই দুষ্টদের ধ্বংস করেন। যে লোক গরীবদের কান্নায় কান বন্ধ করে রাখে, সে যখন নিজে কাঁদবে তখন কেউ তাতে কান দেবে না। গোপনে দেওয়া দান রাগ শান্ত করে, আর লুকিয়ে রাখা ঘুষ বের করে দিলে ভয়ংকর রাগ শান্ত হয়। ন্যায়বিচার ঈশ্বরভক্ত লোকদের কাছে আনন্দ, কিন্তু অন্যায়কারীদের কাছে তা সর্বনাশ। যে লোক বুদ্ধির পথ ছেড়ে অন্য দিকে যায় সে মৃতদের সংগে থাকবে। যে লোক আমোদ-প্রমোদ ভালবাসে সে গরীব হবে; যে লোক আংগুর-রস ও সুগন্ধি তেল ভালবাসে সে কখনও ধনী হতে পারবে না। শেষে নির্দোষ লোকদের বদলে দুষ্টেরা আর সৎ লোকদের বদলে অবিশ্বস্তেরা কষ্ট পাবে। ঝগড়াটে আর খুঁতখুঁতে স্বভাবের স্ত্রীর সংগে বাস করবার চেয়ে মরুভূমিতে গিয়ে বাস করা ভাল। বুদ্ধিমানের ঘরে মূল্যবান ধন ও সুগন্ধি তেল জমা থাকে, কিন্তু তা যদি বিবেচনাহীন লোকের ঘরে থাকে তবে সে সবই শেষ করে ফেলে। যে লোক আগ্রহের সংগে সততা ও বিশ্বস্ততার পথে চলে সে জীবন, আশীর্বাদ ও সম্মান লাভ করে। জ্ঞানী লোক শক্তিশালীদের শহর আক্রমণ করে আর যে দুর্গের উপর তারা নির্ভর করত তা ধ্বংস করে ফেলে। যে তার মুখ ও জিভ্‌ সাবধানে রাখে সে বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করে। গর্বিত ও অহংকারী লোকের নাম হল “ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারী”; সে অতিরিক্ত গর্বের সংগে কাজ করে। অলসের কামনা তার মৃত্যু ঘটায়, কারণ তার হাত কাজ করতে অস্বীকার করে। এমন লোক আছে যে সব সময় লোভ করে, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোক খোলা হাতে দান করে। দুষ্টদের উৎসর্গ সদাপ্রভু ঘৃণা করেন, আর তা যদি মন্দ উদ্দেশ্যে আনা হয় তবে তা আরও ঘৃণার যোগ্য হয়। মিথ্যা সাক্ষী ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু যে লোক মনোযোগ দিয়ে শোনে তার কথা চিরকাল স্থায়ী। দুষ্ট লোকের মুখে কোন লজ্জার ভাব দেখা যায় না, কিন্তু সৎ লোক তার জীবন-পথে চলা সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকে। কোন জ্ঞান, কোন বুদ্ধি বা কোন পরিকল্পনাই সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে না। যুদ্ধের দিনের জন্য ঘোড়া প্রস্তুত রাখা হয়, কিন্তু জয় সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে। প্রচুর ধনের চেয়ে সুনাম বেছে নেওয়া ভাল; রূপা ও সোনার চেয়ে অন্যের ভালবাসা পাওয়া ভাল। ধনী-গরীব একটা ব্যাপারে সমান- সদাপ্রভু তাদের সকলকেই তৈরী করেছেন। সতর্ক লোক বিপদ দেখে আশ্রয় নেয়, কিন্তু বোকা লোকেরা বিপদ দেখেও চলতে থাকে আর তার দরুন শাস্তি পায়। নম্রতা ও সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় ধন, সম্মান ও জীবন আনে। কুটিল লোকের পথে থাকে কাঁটা ও ফাঁদ, কিন্তু যে নিজেকে সাবধানে রাখে সে সেগুলো থেকে দূরে থাকে। ছেলে বা মেয়ের প্রয়োজন অনুসারে তাকে শিক্ষা দাও, সে বুড়ো হয়ে গেলেও তা থেকে সরে যাবে না। গরীবের উপর ধনী কর্তা হয়, আর ঋণী ঋণদাতার চাকর হয়। যে লোক দুষ্টতার বীজ বোনে সে বিপদের ফসল কাটবে; সে রাগের বশে যে অত্যাচার করে তা বন্ধ হয়ে যাবে। যে দানশীল লোক তার খাবারের ভাগ থেকে গরীবদের দেয় সে আশীর্বাদ পাবে। বিদ্রূপ কারীকে তাড়িয়ে দাও, গোলমালও দূর হবে; ঝগড়া-বিবাদ ও অপমান শেষ হয়ে যাবে। যে লোক খাঁটি অন্তর ভালবাসে আর দয়াপূর্ণ কথাবার্তা বলে সে রাজার বন্ধুত্ব লাভ করে। সদাপ্রভু জ্ঞান রক্ষা করেন, কিন্তু তিনি অবিশ্বস্তদের কথাবার্তা বিফল করে দেন। অলস বলে, “বাইরে সিংহ আছে, রাস্তায় গেলে আমি মারা পড়ব।” ব্যভিচারিণীর কথাবার্তা যেন গভীর গর্ত; যে লোক সদাপ্রভুর ক্রোধের পাত্র সে তার মধ্যে পড়বে। ছেলে বা মেয়ের অন্তরে বোকামি যেন বাঁধা থাকে, কিন্তু শাসনের লাঠি তা তার কাছে থেকে দূর করে দেয়। ধন লাভের জন্য যে লোক গরীবের উপর অত্যাচার করে কিম্বা যে লোক ধনীদের দান করে তাদের দু’জনেরই অভাব হয়। জ্ঞানীদের কথায় কান দাও, তাঁরা যা বলেছেন তা শোন; আমি তোমাকে যে শিক্ষা দিই তাতে তুমি মনোযোগ দাও। সেই শিক্ষা তোমার অন্তরে রাখলে তুমি সুখী হবে; তা সব সময় তোমার ঠোঁটের আগায় থাকুক। তুমি যাতে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করতে পার সেইজন্য আমি আজ তোমাকে, তোমাকেই এই সব জানালাম। পরামর্শ ও জ্ঞান সম্বন্ধে আমি কি তোমার জন্য ত্রিশটা উপদেশের কথা লিখি নি? আমি কি তোমাকে সত্য ও নির্ভরযোগ্য বাক্য শিক্ষা দিই নি, যাতে তুমি তা দিতে পার তাদের কাছে যারা তোমাকে পাঠিয়েছে? একজন লোক অসহায় বলে জোর করে তার জিনিস নিয়ো না, আর বিচার-স্থানে অভাবীর সর্বনাশ কোরো না; কারণ সদাপ্রভু মামলায় তাদের পক্ষ নেবেন, আর যারা তাদের জিনিস কেড়ে নেয় তিনি তাদের প্রাণ কেড়ে নেবেন। বদমেজাজী লোকের সংগে বন্ধুত্ব কোরো না; যে সহজে রেগে যায় তার সংগে মেলামেশা কোরো না। তা করলে তুমি তার মত চলাফেরা করতে শিখবে আর নিজেকে ফাঁদে ফেলবে। হাতে হাত রেখে কারও ঋণের জামিন হোয়ো না; তুমি যদি তা শোধ দিতে না পার তবে তোমার গায়ের নীচ থেকে তোমার বিছানাটা পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হবে। তোমার পূর্বপুরুষেরা সীমানার যে চিহ্ন-পাথর স্থাপন করে গেছেন, সেই চিহ্ন তুমি সরিয়ে দিয়ো না। তুমি কি এমন কোন লোককে দেখেছ যে পাকা হাতে কাজ করে? সে রাজাদের জন্য কাজ করবে, সাধারণ লোকদের অধীনে কাজ করবে না। তুমি যখন শাসনকর্তার সংগে খেতে বসবে, তখন তোমার সামনে কি আছে তা ভাল করে খেয়াল করবে। যদি তুমি পেটুক হও তবে সাবধান! তুমি নিজেকে দমনে রেখে খেয়ো। তাঁর দামী দামী খাবারে লোভ কোরো না, কারণ সেই খাবার দেবার পিছনে থাকে শাসনকর্তার কোন উদ্দেশ্য। ধন লাভের জন্য ব্যস্ত হোয়ো না; এই ব্যাপারে তোমার বুদ্ধির উপর নির্ভর কোরো না। ধনের দিকে একটি বার তাকালে দেখবে সেগুলো আর নেই, কারণ সেগুলোতে পাখা গজাবেই আর ঈগলের মত আকাশে উড়ে যাবে। লোভী লোকের খাবার খেয়ো না; তার দামী দামী খাবার খেতে চেয়ো না; কারণ সে এমন লোক যে সব সময় তার খাবারের দামের কথা ভাবে। সে তোমাকে বলে, “খাওয়া-দাওয়া কর,” কিন্তু সে মনে-মুখে এক নয়। যেটুকু তুমি খেয়েছ তা তুমি বমি করে ফেলবে, আর তোমার করা প্রশংসা মিথ্যা হয়ে যাবে। বিবেচনাহীন লোকের কাছে কথা বোলো না; তোমার কথার মধ্যে যে জ্ঞান রয়েছে তা সে তুচ্ছ করবে। সীমানার পুরানো চিহ্ন-পাথর তুমি সরিয়ে দিয়ো না কিম্বা অনাথদের জমি দখল কোরো না, কারণ তাদের মুক্তিদাতা শক্তিশালী; তিনি তোমার বিরুদ্ধে মামলায় আত্মীয় হিসাবে তাদের পক্ষ নেবেন। তুমি শিক্ষার দিকে মন দাও, আর জ্ঞানের কথায় কান দাও। ছেলে বা মেয়েকে শাসন করতে অবহেলা কোরো না; তাকে লাঠি দিয়ে মারলে সে মরবে না। তাকে অবশ্যই তুমি লাঠি দিয়ে মেরে শাস্তি দেবে, তাতে মৃতস্থান থেকে তাকে রক্ষা করবে। ছেলে আমার, তোমার অন্তর যদি জ্ঞানপূর্ণ হয় তবে আমার অন্তর সুখী হবে, হ্যাঁ, আমি সুখী হব। যখন তোমার মুখ ঠিক কথা বলবে তখন আমার অন্তর আনন্দিত হবে। তোমার অন্তর পাপীদের হিংসা না করুক, বরং সব সময় সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ে তুমি চলাফেরা কর। তাহলে তোমার ভবিষ্যতের আশা আছে, আর তোমার আশা ছেঁটে ফেলা হবে না। ছেলে আমার, কথা শোন, জ্ঞানী হও, তোমার অন্তর ঠিক পথে চালাও। যারা বেশী পরিমাণে আংগুর-রস খায় কিম্বা যারা পেটুক ও বেশী মাংস খায়, তুমি তাদের সংগে যোগ দিয়ো না; কারণ মাতাল ও পেটুকেরা গরীব হয়ে যায়, আর ঘুম ঘুম ভাব মানুষকে ছেঁড়া কাপড় পরায়। তোমার বাবার কথা শোন যিনি তোমাকে জন্ম দিয়েছেন; তোমার মা বুড়ী হয়ে গেলে তাকে তুচ্ছ কোরো না। যে কোন মূল্যেই হোক না কেন সত্য, জ্ঞান, শিক্ষা এবং বিচারবুদ্ধি লাভ কর; কোন কিছুর বদলে তা অন্যকে দিয়ো না। ঈশ্বরভক্ত লোকের বাবা মহা আনন্দ লাভ করেন; জ্ঞানী ছেলের বাবা তাঁর ছেলের দ্বারা সুখী হন। তোমার মা-বাবা যেন সুখী হন; যিনি তোমাকে প্রসব করেছেন তিনি যেন আনন্দিতা হন। ছেলে আমার, আমার শিক্ষায় মনোযোগ দাও; আমার জীবন দেখে যেন তুমি খুশী হও। দেখ, বেশ্যা গভীর গর্তের মত, আর বিপথে যাওয়া স্ত্রীলোক যেন সরু গর্ত। ঐ রকম স্ত্রীলোক ডাকাতের মত ওৎ পেতে থাকে, আর মানুষের মধ্যে অবিশ্বস্ত লোকদের সংখ্যা বাড়ায়। কে হায় হায় করে? কে বিলাপ করে? কে ঝগড়া করে? কে বকবক করে? কে অকারণে আঘাত পায়? কার চোখ লাল হয়? যারা অনেকক্ষণ ধরে মদ খায় তাদেরই এই রকম হয়; তারা মিশানো মদ খেয়ে দেখবার জন্য তার খোঁজে যায়। মদের দিকে তাকায়ো না যদিও তা লাল রংয়ের, যদিও তা পেয়ালায় চক্‌মক্‌ করে, যদিও তা সহজে গলায় নেমে যায়; শেষে তা সাপের মত কামড়ায়, আর বিষাক্ত সাপের মত কামড় দেয়। তোমার চোখ তখন অদ্ভুত অদ্ভুত দৃশ্য দেখবে আর মন এলোমেলো কথা চিন্তা করবে। তুমি হবে মহাসমুদ্রে ঘুমিয়ে থাকা লোকের মত, কিম্বা মাস্তুলের উপরে শুয়ে থাকা লোকের মত। তুমি বলবে, “ওরা আমাকে আঘাত করেছে কিন্তু আমি ব্যথা পাই নি, আমাকে ওরা মেরেছে কিন্তু আমি টের পাই নি। কখন আমি জেগে উঠে আবার মদের খোঁজে যাব?” তুমি দুষ্ট লোকদের উপর হিংসা কোরো না, তাদের সংগে থাকতে ইচ্ছাও কোরো না; কারণ তাদের অন্তর অত্যাচার করবার ষড়যন্ত্র করে, আর তাদের মুখ অন্যায় করবার কথা বলে। জ্ঞানের সাহায্যে ঘর তৈরী করা হয়, আর বুদ্ধি দ্বারা তা স্থির রাখা হয়; জ্ঞানের সাহায্যে কামরাগুলো পূর্ণ করা হয় মূল্যবান এবং সুন্দর সুন্দর জিনিস দিয়ে। জ্ঞানী লোকের মহা ক্ষমতা আছে, আর বুদ্ধিমান লোক নিজের শক্তি বাড়ায়। যুদ্ধ করতে গেলে তুমি উপযুক্ত পরামর্শ নেবেই, আর অনেক পরামর্শদাতা থাকলে জয়লাভ করা যায়। জ্ঞান অসাড়-বিবেক লোকের নাগালের বাইরে; শহর-ফটকের সভাতে তার কিছু বলবার যোগ্যতা থাকে না। যে কেউ মন্দের পরিকল্পনা করে লোকে তাকে ষড়যন্ত্রকারী বলে জানে। অসাড়-বিবেক লোকের ষড়যন্ত্র হল পাপ; লোকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীকে ঘৃণা করে। বিপদের দিনে যদি তুমি হতাশ হয়ে পড়, তবে তো তোমার শক্তি বেশী নয়। যাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাদের উদ্ধার কর; যারা টল্‌তে টল্‌তে জবাই হতে যাচ্ছে তাদের রক্ষা করতে অস্বীকার কোরো না। তুমি যদি বল, “কিন্তু আমরা কিছুই জানতাম না,” তবে যিনি অন্তরের উদ্দেশ্য ওজন করেন তিনি কি তোমার কথা বিচার করে দেখবেন না? যিনি তোমার জীবন রক্ষা করেন তিনি কি তা জানবেন না? তিনি কি প্রত্যেক মানুষকে তার কাজ অনুসারে ফল দেবেন না? ছেলে আমার, মধু খাও, কারণ তা ভাল; মৌচাক থেকে মধু খাও, তা তোমার মুখে মিষ্টি লাগবে। এটাও জেনো যে, জ্ঞান তোমার অন্তরের জন্য মধুর মত মিষ্টি; যদি তুমি জ্ঞান পাও তবে তোমার ভবিষ্যতের আশা আছে, আর তোমার আশা ছেঁটে ফেলা হবে না। ওহে দুষ্ট লোক, ঈশ্বরভক্ত লোকের বাড়ীর বিরুদ্ধে তুমি ওৎ পেতে থেকো না, তার বাসস্থানে হানা দিয়ো না; কারণ ঈশ্বরভক্ত লোক সাত বার পড়ে গেলেও আবার ওঠে, কিন্তু দুষ্টদের দুর্দশা আসলে তারা একেবারে ভেংগে পড়ে। তোমার শত্রু পড়ে গেলে আনন্দ বোধ কোরো না; সে উছোট খেলে তোমার অন্তরকে আনন্দিত হতে দিয়ো না। যদি তা কর তাহলে সদাপ্রভু তা দেখে অসন্তুষ্ট হবেন, আর শত্রুর উপর থেকে তাঁর ভীষণ অসন্তোষ সরিয়ে নেবেন। তুমি দুষ্ট লোকদের বিষয় নিয়ে উতলা হোয়ো না, কিম্বা মন্দ লোকদের দেখে হিংসা কোরো না; কারণ দুষ্ট লোকের ভবিষ্যতের কোন আশা নেই, আর মন্দ লোকদের জীবন-বাতি নিভে যাবে। ছেলে আমার, সদাপ্রভু ও রাজাকে ভক্তি কর, আর বিদ্রোহীদের সংগে যোগ দিয়ো না; কারণ তাদের উপর হঠাৎ ধ্বংস আসবে, আর সদাপ্রভু ও রাজার কাছ থেকে কেমন বিপদ আসবে তা কে জানে? এগুলোও জ্ঞানীদের বলা কথা। বিচারে কারও পক্ষ নেওয়া ভাল নয়। যে লোক দোষীকে বলে, “তুমি নির্দোষ,” বিভিন্ন দেশের লোকেরা তার নিন্দা করে, আর বিভিন্ন জাতি তাকে অভিশাপ দেয়। কিন্তু দোষীকে যারা দোষী বলে রায় দেয় তাদের উপর প্রচুর আশীর্বাদ পড়ে, আর তারা সুখী হয়। ভণ্ডামিশূন্য উত্তর পাওয়া চুম্বন পাওয়ার মত। তোমার ক্ষেত-খামার প্রস্তুত করে তুমি বাইরের কাজ শেষ কর, তার পরে তোমার ঘর বাঁধ। কিছু না জেনে তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ো না, কিম্বা মুখ দিয়ে ছলনা কোরো না। এই কথা বোলো না, “সে আমার প্রতি যেমন করেছে আমিও তার প্রতি তেমন করব; সে যা করেছে তার ফল তাকে দেব।” আমি অলসের ক্ষেতের পাশ দিয়ে গেলাম, বুদ্ধিহীন লোকের আংগুর ক্ষেতের পাশ দিয়ে গেলাম; দেখলাম সব জায়গায় কাঁটা গাছ জন্মেছে, আগাছায় মাটি ঢেকে গেছে, আর পাথরের দেয়ালও ভেংগে পড়েছে। আমি যা দেখলাম তাতে মন দিলাম, তা দেখে আমি এই শিক্ষা পেলাম, “‘আর একটু ঘুম, আর একটু ঘুমের ভাব, বিশ্রামের জন্য আর একটুক্ষণ হাত গুটিয়ে রাখি।’ কিন্তু বারে বারে অতিথি আসলে কিম্বা অস্ত্রশস্ত্রে সাজা দস্যুর হাতে পড়লে যেমন অভাব আসে, ঠিক তেমনি করে তোমারও অভাব আসবে।” এগুলো শলোমনের বলা আরও সৎ উপদেশ। যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের লোকেরা এগুলো সংগ্রহ করে আবার লিখে নিয়েছিলেন। ঈশ্বর কোন বিষয় গোপন রাখলে তাতে তাঁর গৌরব হয়; রাজারা কোন বিষয় তদন্ত করে প্রকাশ করলে তাতে তাঁদের গৌরব হয়। আকাশ যেমন উঁচু আর পৃথিবী গভীর, তেমনি রাজাদের অন্তরের খোঁজ করা যায় না। রূপা থেকে খাদ বের করে ফেল, তাহলে স্বর্ণকার তা দিয়ে সুন্দর জিনিস তৈরী করতে পারবে। দুষ্ট কর্মচারীকে রাজার সামনে থেকে সরিয়ে দাও, তাহলে ন্যায় কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর সিংহাসন স্থির থাকবে। রাজার সামনে নিজেকে জাহির কোরো না; মহৎ লোকদের মধ্যে নিজের জন্য স্থান দাবি কোরো না; কারণ তুমি যেমন আগে হতে দেখেছ সেইভাবে উঁচু পদের লোকের সামনে নীচু হওয়ার চেয়ে বরং তোমাকে বলা ভাল, “এখানে উঠে আসুন।” তাড়াতাড়ি আদালতে যেয়ো না, কারণ শেষে তোমার প্রতিবেশী যদি তোমাকে লজ্জায় ফেলে তখন তুমি কি করবে? প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে যদি মামলা কর তবে অন্যের গোপন কথা প্রকাশ করে দিয়ো না; যদি তা কর তাহলে যে শুনবে সে তোমার নিন্দা করবে, আর তোমার বদনাম কখনও ঘুচবে না। সময়মত বলা কথা যেন কারুকাজ করা রূপার উপরে বসানো সোনার ফল। সোনার দুল কিম্বা ভাল সোনার গহনা যেমন, তেমনি বাধ্য লোকের কানে জ্ঞানী লোকের সংশোধনের কথা। বিশ্বস্ত সংবাদদাতা তার মনিবদের কাছে যেন ফসল কাটবার সময়ে ঠাণ্ডা তুষার; কারণ যারা তাকে পাঠিয়েছিল সে সেই মনিবদের প্রাণ জুড়ায়। যে লোক দান করবার বিষয়ে বড় বড় কথা বলে অথচ তা করে না, সে এমন কুয়াশা ও বাতাসের মত যার সাথে কোন বৃষ্টি আসে না। রাগ দমনে রাখলে নেতাকে নিজের পক্ষে আনা যায়; নম্র কথাবার্তা হাড় ভেংগে ফেলতে পারে। তুমি মধু পেলে পরিমাণ মত খেয়ো, বেশী খেলে বমি করবে। প্রতিবেশীর ঘরে কম যেয়ো, বেশী গেলে সে তোমাকে অপছন্দ করবে। যে লোক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় সে গদা, তলোয়ার ও ধারালো তীরের মত। বিপদের সময় অবিশ্বস্ত লোকের উপর নির্ভর করা খারাপ দাঁত ও খোঁড়া পায়ের মত। যার মন খারাপ তার কাছে যে গান করে সে এমন লোকের মত যে শীতের দিনে কাপড় খুলে ফেলে কিম্বা সোডার উপরে সির্কা দেয়। তোমার শত্রুর যদি খিদে পায় তাকে খেতে দাও, যদি তার পিপাসা পায় তাকে জল দাও; তা করলে তুমি তার মাথায় জ্বলন্ত কয়লা গাদা করে রাখবে, আর সদাপ্রভু তোমাকে পুরস্কার দেবেন। উত্তর দিকের বাতাস যেমন বৃষ্টি আনে, তেমনি নিন্দাকারীর কথায় অন্যের মুখে রাগের ভাব দেখা যায়। ঝগড়াটে স্ত্রীর সংগে ঘরের মধ্যে বাস করবার চেয়ে বরং ছাদের এক কোণায় একা বাস করা ভাল। পিপাসিত লোকের জন্য যেমন ঠাণ্ডা জল, তেমনি দূর দেশ থেকে আসা ভাল সংবাদ। ঘোলা করে ফেলা আর দূষিত করা ফোয়ারার জল যেমন, দুষ্ট লোকের দরুন পাপে পড়া ঈশ্বরভক্ত লোক তেমনি। বেশী মধু খাওয়া ভাল নয়; গৌরব পাবার জন্য চেষ্টা করাও ভাল নয়। যে লোক নিজেকে দমন করতে পারে না সে এমন শহরের মত যার দেয়াল ভেংগে ফেলা হয়েছে। গ্রীষমকালে তুষার কিম্বা ফসল কাটবার সময় বৃষ্টি যেমন উপযুক্ত নয়, তেমনি বিবেচনাহীন লোকের পক্ষে সম্মানও উপযুক্ত নয়। চড়াই কিম্বা খঞ্জন পাখী যেমন এদিক ওদিক উড়ে বেড়ায়, তেমনি অকারণে দেওয়া অভিশাপও নেমে আসে না। ঘোড়ার জন্য চাবুক, গাধার গলার জন্য লাগাম, আর বিবেচনাহীনদের পিঠের জন্য লাঠি। প্রয়োজন বোধে বিবেচনাহীনকে তার বোকামি অনুসারে উত্তর দিয়ো না, উত্তর দিলে তুমিও তার মত হয়ে যাবে। প্রয়োজন বোধে বিবেচনাহীনের বোকামি অনুসারে উত্তর দিয়ো, তা না হলে সে তার নিজের চোখে নিজেকে জ্ঞানী মনে করবে। যে লোক বিবেচনাহীনের হাতে খবর পাঠায় সে যেন নিজের পা কেটে ফেলে এবং বিপদ ডেকে আনে। খোঁড়া লোকের ঝুলতে থাকা পা যেমন অকেজো, বিবেচনাহীনের মুখে সৎ উপদেশও তেমনি। যে লোক গুল্‌তিতে পাথর বেঁধে রাখে সে এমন লোকের মত যে বিবেচনাহীনকে সম্মান করে। মাতালের হাতে ফুটে যাওয়া কাঁটা যেমন, তেমনি বিবেচনাহীনের মুখে সৎ উপদেশ। একজন ধনুকধারী যেমন এলোপাতাড়ি তীর ছুঁড়ে সকলকে ক্ষতবিক্ষত করে, তেমনি সেই লোক, যে বিবেচনাহীনকে কিম্বা পথের লোককে কাজে লাগায়। কুকুর যেমন নিজের বমির দিকে ফেরে, তেমনি বিবেচনাহীন লোকও আবার বোকামি করে। তুমি কি এমন লোককে দেখেছ যে তার নিজের চোখে জ্ঞানী? তার চেয়ে বরং বিবেচনাহীনের বিষয়ে আশা আছে। অলস বলে, “পথে সিংহ আছে; ভয়ংকর একটা সিংহ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।” কব্‌জায় যেমন দরজা ঘোরে তেমনি অলস তার বিছানাতে ঘোরে। অলস থালায় হাত ডুবায়, হাতটা মুখে তুলতেও তার আলসেমি লাগে। যারা চিন্তা-ভাবনা করে উত্তর দেয় তেমন সাতজন লোকের চেয়ে অলস নিজেকে জ্ঞানী বলে মনে করে। পথে যেতে যেতে যে লোক অন্যের ঝগড়ার মধ্যে নিজের নাক গলায়, সে এমন লোকের মত যে কুকুরের কান ধরে। যে পাগল জ্বলন্ত কাঠ বা তীর ছোঁড়ে যার ফলে মৃত্যু হতে পারে সেই পাগল যেমন, তেমনি সেই লোক যে প্রতিবেশীর সংগে ছলনা করে আর বলে, “আমি কেবল তামাশা করছিলাম।” আগুনে কাঠ না দিলে আগুন নিভে যায়; নিন্দাকারী না থাকলে ঝগড়াও মিটে যায়। জ্বলন্ত কয়লার মধ্যে আরও কয়লা দিলে আর আগুনের মধ্যে আরও কাঠ দিলে যেমন হয়, তেমনি হয় ঝগড়ার আগুন জ্বালিয়ে তুলবার জন্য ঝগড়াটে লোক। নিন্দার কথা স্বাদযুক্ত খাবারের মত; মানুষের অন্তরের গভীরে তা নেমে যায়। মাটির পাত্রের উপরে যেমন খাদ মিশানো রূপার প্রলেপ, যার অন্তর মন্দ তার ভালবাসার কথাও তেমনি। ঘৃণাকারী মুখ দিয়ে ভান করে, কিন্তু অন্তরে পোষে ছলনা। তার কথা মিষ্টি হলেও বিশ্বাস কোরো না, কারণ তার অন্তরের মধ্যে আছে সাতটা ঘৃণার জিনিস। তার ঘৃণা যদিও ছলনা দিয়ে লুকানো থাকে তবুও তার দুষ্টতা সমাজের মধ্যে প্রকাশ পাবে। যে লোক গর্ত খোঁড়ে সে তার মধ্যে পড়ে; যে লোক পাথর গড়িয়ে দেয় তার উপরেই সেটা ফিরে আসে। মিথ্যাবাদী তার জিভ্‌ দিয়ে যাদের আঘাত করেছে তাদের সে ঘৃণা করে, আর খোসামুদে মুখ অন্যের সর্বনাশ ডেকে আনে। আগামী কালের বিষয় নিয়ে বড়াই কোরো না, কারণ কোন্‌ দিন কি হবে তা তুমি জান না। অন্য লোকে তোমার প্রশংসা করুক, তোমার নিজের মুখ না করুক; হ্যাঁ, অন্য লোকে তা করুক। পাথর ভারী আর বালিও ভারী, কিন্তু অসাড়-বিবেক লোককে রাগিয়ে তুললে সে ঐ দু’টার চেয়েও ভারী হয়। রাগ নিষ্ঠুর আর ভীষণ অসন্তোষ বন্যার মত, কিন্তু হিংসার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কেউ যদি তোমাকে ভালবাসে অথচ তা প্রকাশ না করে, তার চেয়ে বরং কেউ যদি তোমাকে খোলাখুলিভাবে দোষ দেখিয়ে দেয় সে ভাল। শত্রু অনেক চুম্বন করতে পারে, কিন্তু বন্ধুর দেওয়া আঘাতে বিশ্বস্ততা আছে। যার পেট ভরা সে মধুও অগ্রাহ্য করে, কিন্তু যার খিদে আছে তার কাছে তেতোও মিষ্টি লাগে। বাসা ছেড়ে ঘুরে বেড়ানো পাখী যেমন, ঘর ছেড়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষও তেমন। সুগন্ধি তেল আর ধূপ মনকে আনন্দ দেয়; ঠিক সেইভাবে বন্ধুর দেওয়া উপদেশ বন্ধুর কাছে মিষ্টি লাগে। নিজের কিম্বা বাবার বন্ধুকে ত্যাগ কোরো না; বিপদের সময়ে ভাইয়ের ঘরে যেয়ো না; দূরে থাকা ভাইয়ের চেয়ে কাছে থাকা প্রতিবেশী ভাল। ছেলে আমার, তুমি জ্ঞানবান হও আর আমার মনকে আনন্দিত কর; তাতে যারা আমাকে টিট্‌কারি দেয় তাদের আমি উত্তর দিতে পারব। সতর্ক লোক বিপদ দেখে আশ্রয় নেয়, কিন্তু বোকা লোকেরা বিপদ দেখেও চলতে থাকে আর তার দরুন শাস্তি পায়। যে লোক বিদেশী লোকের জামিন হয় তার পোশাক নিয়ে নাও; যে লোক অন্য কোন দেশের লোকের জামিন হয় তাকেই জামানতের জিনিস হিসাবে রেখো। যে লোক ভোরে উঠে চেঁচিয়ে তার প্রতিবেশীকে আশীর্বাদ করে তা অভিশাপ বলেই ধরে নিতে হবে। ঝগড়াটে স্ত্রী আর বৃষ্টির দিনে অনবরত টপ্‌ টপ্‌ করে বৃষ্টি পড়া- দু’টাই সমান। বাতাস যেমন লুকানো যায় না, আর ডান হাত দিয়ে লাগানো সুগন্ধি তেলের গন্ধ যেমন লুকানো যায় না, তেমনি ঝগড়াটে স্ত্রীকেও লুকানো যায় না। লোহা যেমন লোহাকে ধারালো করে, তেমনি একজন আর একজনের জীবনকে কাজের উপযুক্ত করে তোলে। যে লোক ডুমুর গাছের যত্ন নেয় সে তার ফল খাবে; যে তার মনিবের সেবা করে সে সম্মানিত হবে। জলের মধ্যে যেমন মুখের চেহারা দেখা যায়, তেমনি অন্য একজনের স্বভাব দেখে নিজের স্বভাব বোঝা যায়। মৃতস্থান ও নরকের যেমন কখনও তৃপ্তি হয় না, তেমনি মানুষের চোখেরও তৃপ্তি হয় না। রূপা যাচাই করবার জন্য আছে গলাবার পাত্র, আর সোনার জন্য আছে চুলা, কিন্তু মানুষ যে প্রশংসা পায় তা দিয়েই তাকে যাচাই করা হয়। অসাড়-বিবেক লোককে যদিও শস্যের সংগে হামানদিস্তা দিয়ে গুঁড়া করা হয়, তবুও তার বোকামি তাকে ছেড়ে যাবে না। তোমার ছাগল-ভেড়ার পালের অবস্থা তুমি ভাল করে জেনে রেখো, আর তোমার পশুপালের দিকে মনোযোগ দিয়ো; কারণ ধন চিরস্থায়ী নয়, আর মুকুটও বংশের পর বংশের জন্য টিকে থাকে না। ক্ষেত থেকে যখন খড় কেটে ফেলা হবে এবং নতুন ঘাস গজাবে আর পাহাড় থেকে ঘাস কেটে আনা হবে, তখন ভেড়ার বাচ্চারা তোমার কাপড় যোগাবে, আর ছাগল দেবে নতুন জমির দাম; এছাড়া তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য তুমি যথেষ্ট দুধ পাবে; তোমার যুবতী চাকরাণীরাও তা খেয়ে পুষ্ট হবে। কেউ তাড়া না করলেও দুষ্ট লোক পালায়, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোক সিংহের মত নির্ভয়ে বাস করে। দেশের লোকদের অন্যায়ের ফলে অনেক শাসনকর্তা হয়, কিন্তু জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান শাসনকর্তা শৃঙ্খলা বজায় রাখেন। যে গরীব নেতা অসহায়দের উপর অত্যাচার করে সে এমন বৃষ্টির ঢলের মত যার পরে আর কোন ফসল থাকে না। যারা সদাপ্রভুর আইন-কানুন ত্যাগ করে তারা দুষ্টদের প্রশংসা করে, কিন্তু যারা তা মানে তারা দুষ্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। মন্দ লোকেরা ন্যায়বিচার সম্বন্ধে বোঝে না, কিন্তু যারা সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলে তাদের ভাল-মন্দ বুঝবার শক্তি আছে। যে ধনী লোক বাঁকা পথে চলে তার চেয়ে বরং সেই গরীব লোকটি ভাল যে সততায় চলাফেরা করে। যে ছেলে আইন-কানুন মানে সে বুদ্ধিমান, কিন্তু যে ছেলে পেটুকদের সংগী সে তার বাবার জন্য অসম্মান নিয়ে আসে। যে কোন রকম সুদ নিয়ে যে লোক তার ধন বাড়ায়, সে তা এমন একজনের জন্য জমায় যে গরীবদের প্রতি দয়ালু। সদাপ্রভুর আইন-কানুনের কথা যদি কেউ শুনেও না শোনে, তবে তার প্রার্থনা পর্যন্ত ঘৃণার যোগ্য হয়। সৎ লোককে যে কুপথে নিয়ে যায় সে তার নিজের গর্তেই পড়বে, কিন্তু যারা নির্দোষ তাদের মংগল হবে। ধনী লোক তার নিজের চোখে জ্ঞানী, কিন্তু যে গরীব লোকের বিচারবুদ্ধি আছে সে সেই ধনী লোকের আসল অবস্থা বুঝতে পারে। ঈশ্বরভক্ত লোকদের হাতে ক্ষমতা গেলে সকলের মংগল হয়, কিন্তু দুষ্টদের হাতে ক্ষমতা গেলে লোকদের খুঁজে পাওয়া যায় না। যে লোক নিজের পাপ গোপন করে তার উন্নতি হয় না, কিন্তু যে তা স্বীকার করে ত্যাগ করে সে করুণা পায়। যে লোক অন্যায় করতে সব সময় ভয় করে সে ধন্য, কিন্তু যে তার অন্তরকে কঠিন করে এবং অন্যায় করতে ভয় করে না সে বিপদে পড়ে। গর্জনকারী সিংহ আর আক্রমণকারী ভাল্লুক যেমন, তেমনি সেই দুষ্ট লোক যে অসহায় লোকদের শাসনকর্তা হয়। যে শাসনকর্তার বিচারবুদ্ধি নেই সে ভীষণ অত্যাচার করে; যে শাসনকর্তা লোভ ঘৃণা করে সে অনেক দিন বেঁচে থাকে। যে লোক খুন করে দুশ্চিন্তায় কষ্ট পাচ্ছে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সে পালিয়ে বেড়ায়; কেউ তাকে সাহায্য না করুক। যার চলাফেরা নির্দোষ সে নিরাপদে থাকে, কিন্তু যে লোক বাঁকা পথে চলে সে হঠাৎ পড়ে যাবে। যে লোক নিজের জমিতে পরিশ্রম করে তার প্রচুর খাবার থাকে, কিন্তু যে অসারতার পিছনে দৌড়ায় তার খুব অভাব হয়। বিশ্বস্ত লোক অনেক আশীর্বাদ পায়, কিন্তু যে ধনী হবার জন্য আকুল হয় সে শাস্তি পাবেই পাবে। বিচারে কারও পক্ষ নেওয়া ভাল নয়; যে তা করে সে এক টুকরা রুটির জন্যও অন্যায় করতে পারে। যে লোক লোভী সে ধনী হবার জন্য ব্যস্ত হয়, কিন্তু সে জানে না অভাব তার জন্য অপেক্ষা করে আছে। যে লোক খোসামুদে কথা বলে তার চেয়ে যে সংশোধনের কথা বলে সে শেষে বেশী সম্মান পায়। যে কেউ মা-বাবার জিনিস চুরি করে বলে, “এটা অন্যায় নয়,” সে ধ্বংসকারীর সংগী। যে লোক লোভী সে ঝগড়া খুঁচিয়ে তোলে, কিন্তু যে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে তার উন্নতি হয়। যে নিজের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে সে বিবেচনাহীন, কিন্তু যে ঈশ্বরের দেওয়া বুদ্ধির পথে চলে সে নিরাপদে থাকে। যে লোক গরীবকে দান করে তার অভাব হয় না, কিন্তু যে তাদের দেখে চোখ বুঁজে থাকে সে অনেক অভিশাপ কুড়ায়। দুষ্ট লোকদের হাতে ক্ষমতা গেলে লোকেরা লুকায়, কিন্তু সেই দুষ্টেরা ধ্বংস হলে ঈশ্বরভক্ত লোকদের সংখ্যা বাড়ে। অনেক বার সংশোধনের কথা শুনেও যে লোক ঘাড় শক্ত করে রাখে সে মুহূর্তের মধ্যে চুরমার হয়ে যাবে; সে আর উঠতে পারবে না। ঈশ্বরভক্ত লোকদের সংখ্যা বাড়লে লোকে আনন্দ করে, কিন্তু দুষ্ট লোক শাসনকর্তা হলে লোকে কাত্‌রায়। যে লোক জ্ঞান ভালবাসে সে তার বাবাকে আনন্দ দেয়, কিন্তু যে বেশ্যাদের সংগে থাকে সে তার ধন নষ্ট করে। ন্যায়বিচারের দ্বারা রাজা দেশকে স্থির রাখেন, কিন্তু যে ঘুষ খেতে ভালবাসে সে দেশকে ধ্বংস করে ফেলে। যে লোক প্রতিবেশীকে খোসামোদ করে সে নিজের পায়ের নীচে জাল পাতে। দুষ্ট লোক নিজের পাপের দ্বারা ফাঁদে পড়ে, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোক আনন্দিত হয় ও গান করে। গরীবদের প্রতি যেন ন্যায়বিচার করা হয় সেদিকে ঈশ্বরভক্ত লোকদের চোখ আছে, কিন্তু দুষ্টেরা এই সব কিছুই বোঝে না। ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীরা শহরের মধ্যে গোলমাল বাধিয়ে দেয়, কিন্তু জ্ঞানী লোকেরা মানুষের রাগ শান্ত করে। বুদ্ধিমান লোক যদি অসাড়-বিবেক লোকের বিরুদ্ধে মামলা করে তবে সেই লোক হয় রেগে যাবে না হয় হাসবে, আর তাতে কোন মীমাংসা হবে না।  যারা রক্তপাত করে তারা নির্দোষ লোককে ঘৃণা করে এবং সৎ লোককে মেরে ফেলবার চেষ্টা করে। বিবেচনাহীন লোক তার রাগ পুরোপুরি প্রকাশ করে, কিন্তু জ্ঞানী লোক নিজেকে দমন করে রাখে। যে শাসনকর্তা মিথ্যা কথায় কান দেয় তার সব কর্মচারী দুষ্ট। গরীব ও অত্যাচারী একটা ব্যাপারে সমান- সদাপ্রভু তাদের দু’জনকেই জীবন দিয়েছেন। যে রাজা সততার সংগে গরীবদের বিচার করেন তাঁর সিংহাসন সব সময় স্থির থাকে। সংশোধনের কথা ও শাসনের লাঠি জ্ঞান দান করে, কিন্তু যে ছেলেকে শাসন করা হয় না সে তার মাকে লজ্জা দেয়। দুষ্ট লোকদের সংখ্যা বাড়লে পাপের বৃদ্ধি হয়, কিন্তু ঈশ্বরভক্ত লোক তাদের ধ্বংস দেখতে পায়। তোমার ছেলেকে শাসন কর, তাতে সে তোমাকে শান্তিতে রাখবে আর তোমার প্রাণে আনন্দ দেবে। যেখানে নবীদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাঁর সত্য প্রকাশ করেন না সেখানকার লোকেরা উচ্ছঙ্খল হয়; কিন্তু সেই লোক ধন্য যে সদাপ্রভুর আইন-কানুন মেনে চলে। কেবল কথার দ্বারা দাসকে সংশোধন করা যায় না; সে বুঝলেও তা মানবে না। তুমি কি এমন লোককে দেখেছ যে তাড়াতাড়ি করে কথা বলতে যায়? তার চেয়ে বরং বিবেচনাহীনের বিষয়ে আশা আছে। ছেলেবেলা থেকে যদি কোন দাসকে আশ্‌কারা দেওয়া হয়, শেষে তাকে দমন করা যায় না। রাগী লোক ঝগড়া খুঁচিয়ে তোলে, আর বদমেজাজী লোক অনেক পাপ করে। অহংকার মানুষকে নীচে নামায়, কিন্তু নম্র স্বভাবের লোক সম্মান পায়। যে চোরের ভাগীদার সে নিজেই নিজের শত্রু; তাকে শপথনামা শুনানো হলেও সে কোন কিছু স্বীকার করে না। মানুষকে যে ভয় করে সেই ভয় তার পক্ষে ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু যে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে সে নিরাপদে থাকে। বিচারে অনেকে শাসনকর্তাকে নিজের পক্ষে আনতে চায়, কিন্তু সদাপ্রভুর কাছ থেকে মানুষ ন্যায়বিচার পায়। ঈশ্বরভক্ত লোকেরা অন্যায়কারীকে ঘৃণার চোখে দেখে, আর যে লোক সোজা পথে চলে দুষ্টেরা তাকে ঘৃণা করে। ঈশ্বরের দেওয়া কথা যাকির ছেলে আগূর ইথীয়েলের কাছে, হ্যাঁ, ইথীয়েল ও উকলের কাছে বলেছিলেন। সত্যিই আমি মানুষ হলেও আমার বুদ্ধি পশুর মত; মানুষের যে বিচারবুদ্ধি আছে তা-ও আমার নেই। আমি জ্ঞান লাভ করি নি; পবিত্র ঈশ্বর সম্বন্ধে আমার কোন জ্ঞান নেই। কে স্বর্গে উঠেছেন এবং নেমে এসেছেন? হাতের মুঠোয় কে বাতাস ধরেছেন? কে নিজের কাপড়ের মধ্যে সমস্ত জল জমা করে রেখেছেন? পৃথিবীর সব দিকের শেষ সীমা কে স্থাপন করেছেন? তাঁর নাম ও তাঁর পুত্রের নাম কি? যদি তুমি জান তবে তা আমাকে বল। ঈশ্বরের সমস্ত কথা খাঁটি বলে প্রমাণিত হয়েছে; যারা তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয় তিনি তাদের ঢাল হন। তাঁর কথার সংগে অন্য কোন কথা যোগ কোরো না; যোগ করলে তিনি তোমার দোষ দেখিয়ে দেবেন, আর তুমি মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণিত হবে। হে সদাপ্রভু, দু’টি জিনিস আমি তোমার কাছ থেকে চাই; আমি বেঁচে থাকতে থাকতে তুমি তা আমাকে দিতে অস্বীকার কোরো না- ছলনা এবং মিথ্যা কথা আমার কাছ থেকে দূরে রাখ, আমাকে গরীব বা ধনী কোরো না। যে খাবার আমার দরকার কেবল তা-ই আমাকে দিয়ো, তা না হলে হয়তো আমার অতিরিক্ত থাকবে আর আমি তোমাকে অস্বীকার করে বলব, “সদাপ্রভু কে?” কিম্বা আমি গরীব হয়ে চুরি করব আর আমার ঈশ্বরের নামের অসম্মান করব। মনিবের কাছে দাসের দুর্নাম কোরো না, তা করলে সেই দাস তোমাকে অভিশাপ দেবে আর তুমি দোষী হবে। এমন অনেক লোক আছে যারা এই রকম- তারা বাবাকে অভিশাপ দেয় আর মায়ের মংগল চায় না, তারা নিজেদের চোখে খাঁটি অথচ নোংরামি থেকে শুচি হয় নি, তাদের চোখ অহংকারে ভরা, তাদের দৃষ্টি ঘৃণায় পূর্ণ, তাদের দাঁত যেন তলোয়ার আর চোয়াল যেন ছুরি, যাতে তারা পৃথিবী থেকে দুঃখী লোকদের আর মানুষের মধ্য থেকে অভাবীদের গ্রাস করতে পারে। জোঁকের দু’টি মেয়ে আছে, তারা “দাও, দাও” বলে চিৎকার করে। তিনটা জিনিস আছে যা কখনও তৃপ্ত হয় না, আসলে চারটা জিনিস কখনও বলে না, “যথেষ্ট হয়েছে”- মৃতস্থান, বন্ধ্যা স্ত্রীলোক, জমি, যা কখনও জলে তৃপ্ত হয় না, আর আগুন, যা কখনও বলে না, “যথেষ্ট হয়েছে।” যে চোখ বাবাকে ঠাট্টা করে আর মায়ের কথার বাধ্য হতে ঘৃণার সংগে অস্বীকার করে, সেই চোখ উপত্যকার কাকেরা ঠুক্‌রে বের করে নেবে, আর শকুনের বাচ্চারা তা খেয়ে ফেলবে। তিনটা জিনিস আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগে, আসলে চারটা জিনিস আমি বুঝতেই পারি না- কেমন করে ঈগল আকাশে ওড়ে, কেমন করে সাপ পাথরের উপরে চলে, কেমন করে জাহাজ মহাসমুদ্রে চলে, কেমন করে পুরুষ ও যুবতী মেয়ের মিলনের ফলে জীবনের আরম্ভ হয়। ব্যভিচারিণী স্ত্রীলোকের ব্যবহার আমি বুঝতে পারি না; সে ব্যভিচারের পরে স্নান করে বলে, “আমি তো কোন অন্যায় করি নি।” পৃথিবী তিনটার ভারে কাঁপে, আসলে চারটার ভার সে সহ্য করতে পারে না- দাসের ভার যখন সে রাজা হয়, নীচমনা লোকের ভার যখন সে পেট ভরে খায়, ঘৃণিতা স্ত্রীলোকের ভার যখন সে স্ত্রীর অধিকার পায়, আর চাকরাণীর ভার যখন সে কর্ত্রীর স্থান পায়। পৃথিবীতে চারটা জিনিস ছোট, তবুও সেগুলো খুব জ্ঞানে পূর্ণ- পিঁপড়া এমন এক জাতের প্রাণী যাদের শক্তি খুবই কম, তবুও গরমকালে তারা খাবার জমা করে; শাফন এমন এক জাতের প্রাণী যাদের ক্ষমতা খুবই কম, তবুও খাড়া পাথরের গায়ে তারা ঘর বাঁধে; পংগপালদের রাজা নেই, তবুও তারা সারি বেঁধে এগিয়ে যায়; টিক্‌টিকি হাত দিয়ে ধরা যায়, তবুও সে রাজার বাড়ীতে থাকে। তিনটা জিনিস আছে যারা গৌরবের সংগে পা ফেলে, আসলে চারটা জিনিস গৌরবের সংগে চলে- সিংহ, যে জন্তুদের মধ্যে শক্তিশালী এবং কোন জন্তুর সামনে থেকে পালায় না; বুক ফুলিয়ে হাঁটা মোরগ, পাঁঠা ছাগল, আর সৈন্যদলে ঘেরা রাজা। যদি তুমি নিজেকে বড় করে তুলে বোকামি কর কিম্বা অন্যদের বিরুদ্ধে কুমতলব কর, তবে হাত মুখের উপরে চাপা দাও। দুধ ফেটালে যেমন মাখন বের হয়, নাক মোচড়ালে যেমন রক্ত বের হয়, তেমনি রাগকে খুঁচিয়ে তুললে ঝগড়া-বিবাদ বের হয়। রাজা লমূয়েলের বলা কথা, অর্থাৎ ঈশ্বরের দেওয়া যে কথা তাঁর মা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। ছেলে আমার, হে আমার গর্ভের সন্তান, হে আমার মানতের সন্তান, তোমাকে কি বলব? স্ত্রীলোকের উপরে তোমার শক্তি ক্ষয় কোরো না; রাজাদের যা ধ্বংস করে তার কাছে নিজেকে দিয়ে দিয়ো না। হে লমূয়েল, রাজাদের পক্ষে, হ্যাঁ, রাজাদের পক্ষে আংগুর-রস খাওয়া উপযুক্ত নয়; মদ খেতে চাওয়া শাসনকর্তাদের পক্ষে উপযুক্ত নয়। মদ খেয়ে তারা আইন-কানুন ভুলে যেতে পারে, আর অত্যাচারিতদের প্রতি অন্যায় বিচার করতে পারে। যারা মরে যাচ্ছে তাদের মদ দাও। যাদের মনে খুব কষ্ট আছে তাদের আংগুর-রস দাও; তারা তা খেয়ে তাদের অভাবের কথা ভুলে যাক, তাদের দুঃখ-কষ্ট আর তাদের মনে না থাকুক। হে লমূয়েল, যারা নিজেদের পক্ষে কথা বলতে পারে না তুমি তাদের হয়ে কথা বোলো; অসহায়দের অধিকার রক্ষার জন্য তুমি কথা বোলো। চুপ করে থেকো না, ন্যায়বিচার কোরো; দুঃখী আর অভাবীদের অধিকার রক্ষা কোরো। ভাল ও গুণবতী স্ত্রী কে পেতে পারে? প্রবাল পাথরের চেয়েও তার মূল্য অনেক বেশী। তাঁর উপর তাঁর স্বামী পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করেন; তাঁর স্বামীর সব দিক থেকে লাভ হয়। তাঁর জীবনের সমস্ত সময়েই তিনি স্বামীর ভাল করেন, ক্ষতি করেন না। তিনি ভেড়ার লোম ও মসীনা বেছে নিয়ে খুশী মনে নিজের হাতে কাজ করেন। তিনি বাণিজ্যের জাহাজের মত দূর থেকে তাঁর খাবার জিনিস আনিয়ে নেন। অন্ধকার থাকতেই তিনি ওঠেন; তিনি পরিবারের লোকদের খাবারের ব্যবস্থা করেন আর চাকরাণী মেয়েদের খাবার ভাগ করে দেন। কোন জমি কিনবার আগে তিনি সেটা দেখে চিন্তা করেন আর তারপর তা কিনেন; তাঁর নিজের আয় থেকে তিনি আংগুর ক্ষেত করেন। তিনি শক্তির সংগে কোমর বেঁধে কাজে হাত দেন এবং খুব পরিশ্রম করেন। তিনি দেখতে পান যে, তাঁর পরিশ্রম থেকে লাভ ভালই আসছে; রাতেও তাঁর বাতি জ্বলতে থাকে। হাত দিয়ে তিনি সুতা কাটবার টাকু ঘুরান আর আংগুল দিয়ে সুতা কাটেন। দুঃখীদের জন্য তাঁর হাত খোলা; তিনি অভাবীদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। বরফ পড়লেও পরিবারের জন্য তাঁর কোন ভয় নেই, কারণ তারা সকলেই দামী লাল কাপড় পরে। বিছানার জন্য তিনি চাদর তৈরী করেন; তিনি নিজেও মসীনার কাপড় ও দামী বেগুনে কাপড় পরেন। তাঁর স্বামী শহরের ফটকে সম্মান লাভ করেন; তিনি সেখানে দেশের বৃদ্ধ নেতাদের সংগে বসেন। সেই স্ত্রী মসীনার পোশাক তৈরী করে বিক্রি করেন; কোমর বাঁধবার কাপড় তিনি ব্যবসায়ীদের যোগান দেন। ক্ষমতা ও মর্যাদাই হল তাঁর পোশাক; ভবিষ্যতের দিনগুলোর কথা ভেবে তাঁর কোন চিন্তা-ভাবনা হয় না। তিনি বুদ্ধি করে কথা বলেন; ভালবাসার মনোভাব নিয়ে তিনি নির্দেশ দেন। তাঁর পরিবারের সমস্ত ব্যাপারের দিকে তিনি লক্ষ্য রাখেন; তিনি পরিশ্রম করে খান। তাঁর ছেলেমেয়েরা তাঁকে সকলের সামনে ধন্য বলে; তাঁর স্বামীও তাঁর প্রশংসা করে বলেন, “অনেক স্ত্রীলোক তাদের যোগ্যতা দেখিয়েছে, কিন্তু তুমি তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছ।” সুন্দর ব্যবহার ছলনা করতে পারে, সৌন্দর্য স্থায়ী নয়, কিন্তু যে স্ত্রীলোক সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে সে প্রশংসা পায়। তার কাজের পাওনা সম্মান তাকে দাও; শহরের ফটকে তার কাজই তার প্রশংসা করুক। ॥ভব উপদেশকের কথা; তিনি যিরূশালেমের রাজা এবং দায়ূদের ছেলে। তিনি বলছেন, “অসার, অসার! কোন কিছুই স্থায়ী নয়। সব কিছুই অসার!” সূর্যের নীচে মানুষ যে পরিশ্রম করে সেই সব পরিশ্রমে তার কি লাভ? এক পুরুষ চলে যায়, আর এক পুরুষ আসে, কিন্তু পৃথিবী চিরকাল থাকে। সূর্য ওঠে, সূর্য অস্ত যায়, আর তাড়াতাড়ি নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে আবার সেখান থেকে ওঠে। বাতাস দক্ষিণ দিকে বয়, তারপর ঘুরে যায় উত্তরে; এইভাবে তা ঘুরতে থাকে আর নিজের পথে ফিরে আসে। সমস্ত নদী সাগরে গিয়ে পড়ে, তবুও সাগর কখনও পূর্ণ হয় না; যেখান থেকে সব নদী বের হয়ে আসে আবার সেখানেই তার জল ফিরে যায়। সব কিছুই ঘুরে ঘুরে আসে আর ক্লান্তি জন্মায়; সেই সব বিষয়ে বলবার ভাষা কারও নেই। চোখ যতই দেখুক না কেন সে আরও দেখতে চায়, কান যতই শুনুক না কেন সে আরও শুনতে চায়। যা হয়ে গেছে তা আবার হবে, যা করা হয়েছে তা আবার করা হবে; সূর্যের নীচে নতুন বলতে কিছু নেই। এমন কিছু থাকতে পারে যার বিষয় লোকে বলে, “দেখ, এটা নতুন।” কিন্তু ওটা তো অনেক আগে থেকেই ছিল, আমাদের কালের আগেই ছিল। আগেকার কালের লোকদের কথা কারও মনে নেই; যারা ভবিষ্যতে জন্মাবে তাদের কথাও তারা মনে রাখবে না যারা তাদের পরে জন্মাবে। আমি উপদেশক; আমি যিরূশালেমে ইস্রায়েলের উপরে রাজা ছিলাম। আকাশের নীচে যা কিছু করা হয় তা জ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা ও খোঁজ করবার জন্য আমি মন স্থির করলাম। দেখলাম, কি ভারী কষ্টই না ঈশ্বর মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন! সূর্যের নীচে যা কিছু করা হয় তা সবই আমি দেখলাম; দেখলাম সমস্তই অসার, কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। যা বাঁকা তা সোজা করা যায় না; যা অসম্পূর্ণ তা সম্পূর্ণ করা যায় না। আমি মনে মনে বললাম, “আমার আগে যাঁরা যিরূশালেমে রাজত্ব করে গেছেন তাঁদের সকলের চেয়ে আমি জ্ঞানে অনেক বেড়ে উঠেছি; আমার অনেক জ্ঞান ও বুদ্ধি লাভ হয়েছে।” তারপর আমি জ্ঞান ও বুদ্ধি এবং নীতিহীনতা ও নির্বুদ্ধিতা সম্বন্ধে বুঝবার চেষ্টা করলাম। তাতে বুঝতে পারলাম যে, তা-ও বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়; কারণ জ্ঞান বাড়লে তার সংগে অনেক বিরক্তি বাড়ে, আর যত বুদ্ধি বাড়ে তত যন্ত্রণা বাড়ে। আমি নিজেকে বললাম, “সুখ কি, তা বুঝবার জন্য আমি নিজে আমোদ-প্রমোদ করে তা পরীক্ষা করে দেখি।” কিন্তু দেখলাম, তা-ও অসার। আমি বললাম, “হাসিতেও বোকামি আছে, আর আমোদ-প্রমোদেই বা কি লাভ।” আমি স্বজ্ঞানে আংগুর-রস খেয়ে শরীরকে উত্তেজিত করলাম এবং নির্বোধের মত কাজ করে নিজেকে খুশী করবার চেষ্টা করলাম। আমি দেখতে চাইলাম, আকাশের নীচে মানুষের মাত্র কয়েক দিনের জীবনকালে তার জন্য কোনটা ভাল- জ্ঞানের পথে চলা না নির্বুদ্ধিতার পথে চলা। আমি কতগুলো বড় বড় কাজ করলাম। আমি নিজের জন্য অনেক ঘর-বাড়ী তৈরী করলাম আর অনেক আংগুর ক্ষেত করলাম। আমি ছোট ও বড় অনেক বাগান তৈরী করে তাতে সব রকমের ফলের গাছ লাগালাম। আমি নিজের জন্য কতগুলো পুকুর কাটলাম যাতে বনের গাছগুলোতে জল দেওয়া যায়। আমি অনেক দাস ও দাসী কিনলাম, আর অনেক দাস-দাসী আমার ঘরেও জন্মেছিল। আমার আগে যারা যিরূশালেমে ছিলেন তাঁদের চেয়েও আমার অনেক বেশী গরু-ভেড়া ছিল। আমি অনেক সোনা-রূপা এবং অন্যান্য রাজাদের ও বিভিন্ন প্রদেশের ধন-সম্পদ এনে নিজের জন্য জমা করলাম। আমি অনেক গায়ক-গায়িকা ও পুরুষের আনন্দ দানকারিণী অনেক উপস্ত্রী পেলাম। আমার আগে যাঁরা যিরূশালেমে ছিলেন তাঁদের চেয়েও আমি অনেক বেশী ধন লাভ করলাম। তখনও জ্ঞান আমাকে পরিচালনা করছিল। আমার চোখে যা ভাল লাগত আমি তা-ই গ্রহণ করতাম; আমি নিজেকে সব আনন্দই ভোগ করতে দিতাম। আমার সব কাজেই আমার মন খুশী হত, আর এটাই ছিল আমার সব পরিশ্রমের পুরস্কার। তবুও আমি যা কিছু করেছি আর যা পাওয়ার জন্য পরিশ্রম করেছি তার দিকে যখন আমি তাকালাম তখন দেখলাম সবই অসার। এই সব কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। সূর্যের নীচে কোন কিছুতেই লাভ নেই। তারপর আমি জ্ঞান, নীতিহীনতা আর নির্বুদ্ধিতার কথা চিন্তা করলাম। আগের রাজা যেভাবে কাজ করে গেছেন আমরা কি জানতে পারি যে, তাঁর পরের রাজা সেইভাবে কাজ করবেন? আমি দেখলাম, অন্ধকারের চেয়ে যেমন আলো ভাল, তেমনি নির্বুদ্ধিতার চেয়ে জ্ঞান ভাল। জ্ঞানী লোকের চোখ আছে, কিন্তু বোকা অন্ধকারে চলাফেরা করে; তবে আমি এটাই বুঝতে পারলাম যে, ঐ দু’জনের শেষ দশা একই। তারপর আমি নিজের মনে বললাম, “বোকার যে দশা হয় আমারও তো সেই দশাই হবে। তাহলে এত জ্ঞানী হয়ে আমার কি লাভ হল? এটাও তো অসার।” লোকে বোকাকে যেমন মনে রাখে না তেমনি জ্ঞানীকেও বেশী দিন মনে রাখে না; ভবিষ্যতে এই দু’জনকেই লোকে ভুলে যাবে। বোকা যেমন মরে যায় জ্ঞানী লোকও তেমনি মরে যায়। কাজেই আমি আমার জীবনকে ঘৃণা করতে লাগলাম, কারণ সূর্যের নীচে যে কাজ করা হয় তা আমার কাছে কষ্টের ব্যাপার বলে মনে হল- এ সবই অসার, বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। সূর্যের নীচে যে সব জিনিসের জন্য আমি পরিশ্রম করেছি সেগুলোকে এখন আমি ঘৃণা করতে লাগলাম, কারণ আমার পরে যে আসবে তার জন্যই তো সেই সব রেখে যেতে হবে। সেই লোক জ্ঞানী না বুদ্ধিহীন হবে তা কে জানে? তবুও সে-ই আমার সব কাজের ফল ভোগ করবে, যার জন্য আমি সূর্যের নীচে পরিশ্রম করেছি ও যোগ্যতা দেখিয়েছি। এটাও অসার। কাজেই সূর্যের নীচে আমি যে সব পরিশ্রমের কাজ করেছি তার জন্য আমার অন্তর নিরাশ হতে লাগল। এর কারণ হল, জ্ঞান, বুদ্ধি ও যোগ্যতা দিয়ে একজন পরিশ্রম করতে পারে, কিন্তু তার পরে তার সব কিছু অধিকার হিসাবে এমন একজনের জন্য রেখে যেতে হয় যে লোক তার জন্য কোন পরিশ্রমই করে নি। এটাও অসার ও বড় কষ্টের ব্যাপার। সূর্যের নীচে মানুষ যে সব পরিশ্রম ও চিন্তা-ভাবনা করে তার ফলে তার কি লাভ হয়? প্রত্যেক দিন তার কাজে থাকে ব্যথা আর বিরক্তি; রাতেও তার মন বিশ্রাম পায় না। এটাও অসার। তাহলে মানুষের পক্ষে খাওয়া-দাওয়া করা এবং নিজের কাজে সন্তুষ্ট থাকা ছাড়া ভাল আর কিছুই নেই। আমি দেখতে পেলাম এই সব ঈশ্বরের হাত থেকে আসে, কারণ তিনি না দিলে কে খেতে পারে বা আনন্দ ভোগ করতে পারে? ঈশ্বরকে যে সন্তুষ্ট করে তাকে তিনি জ্ঞান, বুদ্ধি ও আনন্দ দান করেন, কিন্তু পাপীকে তিনি ধন-সম্পদ যোগাড় করবার ও তা জমাবার কাজ দেন, যাতে সে তা সেই লোককে দিয়ে যায় যে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে। এটাও অসার, বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। সব কিছুর জন্য একটা সময় আছে; আকাশের নীচে প্রত্যেকটি কাজেরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে- জন্মের সময় ও মরণের সময়, বুনবার সময় ও উপ্‌ড়ে ফেলবার সময়, মেরে ফেলবার সময় ও সুস্থ করবার সময়, ভেংগে ফেলবার সময় ও গড়বার সময়, কাঁদবার সময় ও হাসবার সময়, শোক করবার সময় ও নাচবার সময়, পাথর ছুঁড়বার সময় ও সেগুলো জড়ো করবার সময়, ভালবেসে জড়িয়ে ধরবার সময় ও জড়িয়ে না ধরবার সময়, খুঁজে পাওয়ার সময় ও হারাবার সময়, রাখবার সময় ও ফেলে দেবার সময়, ছিঁড়ে ফেলবার সময় ও সেলাই করবার সময়, চুপ করে থাকবার সময় ও কথা বলবার সময়, ভালবাসবার সময় ও ভাল না বাসবার সময়, যুদ্ধের সময় ও শান্তির সময়। যে কাজ করে সে তার পরিশ্রমের কি ফল পায়? ঈশ্বর মানুষের উপর যে বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন তা আমি দেখেছি। তিনি সব কিছুর জন্য উপযুক্ত সময় ঠিক করে রেখেছেন। তিনি মানুষের অন্তরে অনন্তকাল সম্বন্ধে বুঝবার ইচ্ছা দিয়েছেন, কিন্তু তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কি করেন তা মানুষ বুঝতে পারে না। আমি জানি, মানুষের জীবনকালে আনন্দ ও ভাল কাজ করা ছাড়া তার জন্য আর ভাল কিছু নেই। এটা ঈশ্বরের দান যে, সব মানুষ খাওয়া-দাওয়া করবে ও তার সব কাজে সন্তুষ্ট হবে। আমি জানি ঈশ্বর যা কিছু করেন তা চিরকাল থাকে; কিছুই তার সংগে যোগ করা যায় না এবং কিছুই তা থেকে বাদ দেওয়াও যায় না। ঈশ্বর তা করেন যেন মানুষ তাঁকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে। যা কিছু আছে তা আগে থেকেই ছিল, যা হবে তাও আগে ছিল; যা হয়ে গেছে ঈশ্বর তা আবার ঘটান। আমি সূর্যের নীচে আর একটা ব্যাপার দেখলাম যে, ন্যায়বিচার ও সততার জায়গায় দুষ্টতা রয়েছে। আমি মনে মনে বললাম, “ঈশ্বর সৎ ও দুষ্ট এই দু’জনেরই বিচার করবেন, কারণ ঈশ্বরের কাছে সমস্ত ব্যাপার ও সমস্ত কাজের একটা নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।” আমি এ-ও ভাবলাম যে, মানুষকে ঈশ্বর পরীক্ষা করেন যাতে তারা দেখতে পায় তারা পশুদেরই মত, কারণ মানুষের প্রতি যা ঘটে পশুর প্রতিও তা-ই ঘটে। এ যেমন মরে সেও তেমনি মরে। তাদের সবার প্রাণবায়ু একই রকমের। এই ব্যাপারে পশু আর মানুষের মধ্যে আলাদা কিছু নেই; কোন কিছুই স্থায়ী নয়। সকলেই এক জায়গায় যায়; সবাই মাটি থেকে তৈরী আর মাটিতেই ফিরে যায়। মানুষের প্রাণবায়ু যে উপর দিকে ওঠে আর পশুর প্রাণবায়ু নীচে মাটির তলায় যায় তা কে জানে? কাজেই আমি দেখলাম, নিজের কাজে আনন্দ করা ছাড়া আর ভাল কিছু মানুষের জন্য নেই। ওটাই তার পাওনা, কারণ তার মৃত্যুর পরে কি ঘটবে তা কে তাকে দেখাতে পারে? সূর্যের নীচে যে সব অত্যাচার হয় তার দিকে আমি একবার চেয়ে দেখলাম যে, অত্যাচারিতেরা কাঁদছে, কিন্তু তাদের সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই। যারা অত্যাচার করে তাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু অত্যাচারিতদের সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই। আমি বুঝতে পারলাম, যারা এখনও বেঁচে আছে তাদের চেয়ে যারা আগেই মরে গেছে তারা আরও ভাল অবস্থায় আছে। কিন্তু এই দু’জনের চেয়ে তার অবস্থা আরও ভাল যার এখনও জন্ম হয় নি আর সূর্যের নীচে যে অন্যায় করা হয় তা দেখে নি। আমি দেখলাম, প্রতিবেশীর প্রতি হিংসার দরুনই মানুষ সব পরিশ্রম করে আর সফলতা লাভ করে। এটাও অসার, কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। বোকা লোক হাত গুটিয়ে রেখে নিজেকে ধ্বংস করে। বাতাসের পিছনে দৌড়াবার জন্য পরিশ্রম করে দু’মুঠো পাওয়ার চেয়ে শান্তির সংগে এক মুঠো পাওয়া অনেক ভাল। সূর্যের নীচে আমি আরও কিছু নিষ্ফলতা দেখতে পেলাম। কোন একজন লোক একেবারে একা- তার ছেলেও নেই, ভাইও নেই; তবুও তার পরিশ্রমের শেষ নেই আর ধন-সম্পদে তার চোখ ভরে না। সে জিজ্ঞাসা করল, “কার জন্য আমি পরিশ্রম করছি? কেন আমোদ-প্রমোদ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখছি?” এটা অসার, ভারী কষ্টের ব্যাপার। একজনের চেয়ে দ’ুজন ভাল, কারণ তাদের কাজে অনেক ফল হয়। একজন যদি পড়ে যায় তবে তার সংগী তাকে উঠাতে পারে; কিন্তু হায় সেই লোক, যে পড়ে গেলে তাকে উঠাবার কেউ থাকে না। এছাড়া দু’জন একসংগে শুয়ে থাকলে গা গরম হয়, কিন্তু একজন কেমন করে গরম হবে? মানুষ একা হলে সহজে হেরে যেতে পারে, কিন্তু দু’জন হলে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। তিনটা দড়ি একসংগে পাকানো হলে তাড়াতাড়ি ছেঁড়ে না। একজন বুড়ো বোকা রাজা, যিনি আর পরামর্শ গ্রহণ করতে চান না তাঁর চেয়ে বরং একজন গরীব অথচ বুদ্ধিমান যুবক ভাল। সেই যুবক যদিও সেই রাজ্যের একটা গরীব পরিবারে জন্মেছিল তবুও সে জেলখানা থেকে বের হয়ে পরে রাজা হয়েছিল। আমি দেখলাম, যারা বেঁচে ছিল, অর্থাৎ সূর্যের নীচে চলাফেরা করছিল তারা সেই বুড়ো রাজার পরে যে যুবক রাজা হয়েছিল তার পিছনেই চলল। আগে এই যুবক রাজার অসংখ্য লোক ছিল যাদের উপর সে রাজত্ব করছিল, কিন্তু তার পরের লোকেরা তাঁর উপর সন্তুষ্ট ছিল না। এটাও অসার, কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। ঈশ্বরের ঘরে যাবার সময় তোমার পা সাবধানে ফেলো। যারা নিজেদের অন্যায় বোঝে না সেই বোকা লোকদের মত উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার চেয়ে বরং ঈশ্বরের বাধ্য হওয়া ভাল। তোমার মুখ তাড়াতাড়ি করে কথা না বলুক; ঈশ্বরের কাছে তাড়াতাড়ি করে কোন কথা বোলো না। ঈশ্বর স্বর্গে আছেন আর তুমি আছ পৃথিবীতে, তাই তোমার কথা যেন অল্প হয়। অনেক ভাবনা-চিন্তা থাকলে লোকে যেমন স্বপ্ন দেখে তেমনি অনেক কথা বললে বোকামি বের হয়ে আসে। ঈশ্বরের কাছে কোন মানত করলে তা পূর্ণ করতে দেরি কোরো না। বোকা লোকদের নিয়ে তিনি কোন আনন্দ পান না। তোমার মানত পূর্ণ কোরো। মানত করে তা পূরণ না করবার চেয়ে বরং মানত না করাই ভাল। তোমার মুখ যেন তোমাকে পাপের পথে নিয়ে না যায়। “আমার মানত করা ভুল হয়েছে,” এই কথা উপাসনা-ঘরের সেবাকারীকে বোলো না। তোমার কথার জন্য কেন ঈশ্বর অসন্তুষ্ট হয়ে তোমার হাতের কাজ নষ্ট করে ফেলবেন? অনেক স্বপ্ন দেখা এবং অনেক কথা বলা অসার, কিন্তু তুমি ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় কর। তোমার এলাকায় যদি কোন গরীবকে অত্যাচারিত হতে দেখ কিম্বা কাউকে ন্যায়বিচার ও তার ন্যায্য অধিকার না পেতে দেখ তবে ভয় পেয়ো না, কারণ এক কর্মচারীর উপরে বড় আর এক কর্মচারী আছেন এবং তাদের দ’ুজনের উপরে আরও বড় বড় কর্মকর্তা আছেন। তবুও চাষের জমি রক্ষা করবার জন্য একজন রাজা থাকলে দেশের সুবিধা হয়। যে লোক টাকা-পয়সা ভালবাসে তার কখনও যথেষ্ট হয়েছে বলে মনে হয় না। যে লোক ধন-সম্পদ ভালবাসে সে তার আয়ে কখনও সন্তুষ্ট হয় না। এটাও অসার। সম্পত্তি বাড়লে তা ভোগ করবার লোকও বাড়ে। কেবল দেখবার সুখ ছাড়া সেই সম্পত্তিতে মালিকের কি লাভ? যে পরিশ্রম করে সে কম খাক বা বেশী খাক তার ঘুম ভাল হয়। কিন্তু ধনী লোকের প্রচুর ধন-সম্পদ তাকে ঘুমাতে দেয় না। সূর্যের নীচে আমি একটা ভীষণ দুঃখের ব্যাপার দেখেছি- ধনী অনেক ধন জমা করে কিন্তু শেষে তার ক্ষতি হয়। কোন দুর্ঘটনায় পড়ে তা ধ্বংস হয়ে যায়। কাজেই তার ছেলের জন্য কিছুই থাকে না। মায়ের গর্ভ থেকে মানুষ উলংগ আসে; সে যেমন আসে তেমনই চলে যায়। তার পরিশ্রমের কোন কিছুই সে হাতে করে নিয়ে যেতে পারে না। এটাও একটা ভীষণ দুঃখের ব্যাপার যে, মানুষ যেমন আসে তেমনই চলে যায়; তার লাভ কি? সে তো বাতাসের জন্যই পরিশ্রম করে। বিরক্তি, যন্ত্রণা আর রাগ নিয়ে সারা জীবনই সে অন্ধকারে কাটায়। তারপর আমি বুঝতে পারলাম যে, ঈশ্বর সূর্যের নীচে মানুষকে যে কয়টা দিন বাঁচতে দিয়েছেন তাতে খাওয়া-দাওয়া করা এবং তার কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে তৃপ্ত হওয়াই তার পক্ষে ভাল ও উপযুক্ত, কারণ ওটাই তার পাওনা। এছাড়া ঈশ্বর যখন কোন মানুষকে ধন ও সম্পত্তি দেন তখন তাকে তা ভোগ করতে দেন, তার নিজের জন্য একটা অংশ গ্রহণ করতে দেন ও নিজের কাজে আনন্দ করতে দেন। এ সবই ঈশ্বরের দান। তার আয়ুর দিনগুলোর দিকে সে ফিরে তাকায় না, কারণ ঈশ্বর তার মনে আনন্দ দিয়ে তাকে ব্যস্ত রাখেন। সূর্যের নীচে আমি আর একটা দুঃখের ব্যাপার দেখেছি, আর তা মানুষের জন্য বড় কষ্টের। ঈশ্বর কোন মানুষকে এত ধন, সম্পত্তি ও সম্মান দান করেন যে, তার চাইবার মত আর কিছু থাকে না, কিন্তু ঈশ্বর তাকে তা ভোগ করবার ক্ষমতা দেন না, অন্য একজন তা ভোগ করে। এটা অসার, এটা ভীষণ দুঃখের ব্যাপার। কোন লোকের একশোজন ছেলেমেয়ে থাকতে পারে এবং সে অনেক দিন বেঁচেও থাকতে পারে, কিন্তু সে যদি জীবনে সুখ না পায় এবং উপযুক্তভাবে কবর না পায় তবে যত বছরই সে বেঁচে থাকুক না কেন আমি বলি তার চেয়ে বরং মৃত-সন্তানের জন্ম হওয়া অনেক ভাল। সেই মৃত-সন্তান অনর্থক এসে অন্ধকারেই বিদায় নেয় আর অন্ধকারেই তার নাম ঢাকা পড়ে যায়। যদিও সে কখনও সূর্য দেখে নি কিম্বা কিছুই জানে নি তবুও সেই লোকের চেয়ে সে অনেক বিশ্রাম পায়। সেই লোক যদিও বা দু’হাজার বছর বেঁচে থাকে কিন্তু জীবনে সুখ না পায় তবে তার কি লাভ? সবাই কি একই জায়গায় যায় না? মানুষের সমস্ত পরিশ্রমই তার পেটের জন্য, তবুও তার খিদে কখনও মেটে না। বোকার চেয়ে জ্ঞানী লোকের সুবিধা কি? অন্যদের সামনে কিভাবে চলতে হবে তা জানলে একজন গরীবের কি লাভ হয়? আরও পাবার ইচ্ছার চেয়ে বরং চোখ যা দেখতে পায় তাতে সন্তুষ্ট থাকা ভাল। এও অসার, কেবল বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়। যা রয়েছে তা আগেই ঠিক করা হয়েছে, আর মানুষ যে কি, তা-ও জানা গেছে; নিজের চেয়ে যিনি শক্তিশালী তাঁর সংগে কেউ তর্কাতর্কি করতে পারে না। যত বেশী কথা বলা হয় ততই অসারতা বাড়ে, আর তাতে মানুষের কি লাভ হয়? মানুষের জীবনকালে তার জন্য কি ভাল তা কে জানে? সে তো তার অল্প ও অস্থায়ী দিনগুলো ছায়ার মত কাটায়। সে চলে গেলে পর সূর্যের নীচে কি ঘটবে তা কে তাকে বলতে পারবে? ভাল সুগন্ধির চেয়ে সুনাম ভাল, জন্মের দিনের চেয়ে মৃত্যুর দিন ভাল। ভোজের ঘরে যাওয়ার চেয়ে শোকের ঘরে যাওয়া ভাল, কারণ সকলেই একদিন মারা যাবে; জীবিতদের এই কথা মনে রাখা উচিত। আনন্দ করার চেয়ে কষ্ট ভোগ করা ভাল, কারণ মুখে দুঃখের ভাব থাকলেও অন্তরে সুখ থাকতে পারে। জ্ঞানীর অন্তর শোকের ঘরে থাকে, কিন্তু বোকা লোকদের অন্তর থাকে আমোদের ঘরে। বোকাদের গান শোনার চেয়ে জ্ঞানী লোকের বকুনি শোনা ভাল। পাত্রের তলায় আগুনে কাঁটা পোড়ালে কেবল শব্দই হয়; বোকাদের হাসিও ঠিক তেমনি। এও অসার। জ্ঞানী লোক যদি জুলুম করে তবে সে বোকা হয়ে যায়, আর ঘুষ অন্তর নষ্ট করে। কোন কাজের শুরুর চেয়ে শেষ ভাল, আর অহংকারের চেয়ে ধৈর্য ভাল। তোমার অন্তরকে তাড়াতাড়ি রেগে উঠতে দিয়ো না, কারণ রাগ বোকাদেরই অন্তরে বাস করে। “এখনকার চেয়ে আগেকার কাল কেন ভাল ছিল?” এই কথা জিজ্ঞাসা কোরো না, কারণ এই প্রশ্ন করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। জ্ঞান সম্পত্তি পাওয়ার মত ভাল জিনিস; তা জীবিত লোকদের উপকার করে। টাকা-পয়সার মতই জ্ঞান নিরাপত্তা দান করে, তবে জ্ঞানের সুবিধা হল এই যে, জ্ঞানীর জ্ঞানই তার জীবন রক্ষা করে। ঈশ্বরের কাজ ভেবে দেখ। তিনি যা বাঁকা করেছেন কে তা সোজা করতে পারে? সুখের দিনে সুখী হও; কিন্তু দুঃখের দিনে এই কথা ভেবে দেখো যে, ঈশ্বর যেমন সুখ রেখেছেন তেমনি দুঃখও রেখেছেন, যেন মানুষ তার ভবিষ্যতের কোন কিছুই জানতে না পারে। আমার এই অসার জীবনকালে আমি দেখেছি যে, একজন সৎ লোক তার সততার মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়, আর একজন দুষ্ট লোক তার দুষ্টতার মধ্যে অনেক দিন বেঁচে থাকে। নিজের চোখে অতিরিক্ত সৎ কিম্বা অতিরিক্ত জ্ঞানী হোয়ো না। কেন তুমি নিজেকে ধ্বংস করবে? দুষ্টতার বশে থেকো না, বোকামিও কোরো না। কেন তুমি অসময়ে মারা যাবে? এই দু’টা উপদেশ ধরে রেখো, কোনটাকেই ছেড়ে দিয়ো না; যে লোক ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে সে কোন কিছুই অতিরিক্ত করে না। দশজন শাসনকর্তা শহরকে যত না শক্তিশালী করে জ্ঞান একজন জ্ঞানী লোককে তার চেয়েও শক্তিশালী করে। পৃথিবীতে এমন কোন সৎ লোক নেই যে সব সময় ভাল কাজ করে, কখনও পাপ করে না। লোকে যা বলে তার সব কথায় কান দিয়ো না, হয়তো শুনবে যে, তোমার চাকর তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছে; কারণ তুমি তো তোমার অন্তরে জান যে, অনেকবার তুমি নিজেই অন্যদের অভিশাপ দিয়েছ। এই সব আমার জ্ঞান দিয়ে আমি পরীক্ষা করে দেখে বললাম, “আমি জ্ঞানী হবই হব।” কিন্তু তা আমার নাগালের বাইরে। জীবনের প্রকৃত অর্থ খুবই গভীর, তা নাগালের বাইরে; কে তা খুঁজে পেতে পারে? সেইজন্য আমি মন স্থির করলাম যাতে জ্ঞান ও সব কিছুর পিছনে যে পরিকল্পনা আছে তা জানতে পারি এবং পরীক্ষা ও খোঁজ করে দেখতে পারি, আর বুঝতে পারি যে, দুষ্টতা হল বোকামি আর নির্বুদ্ধিতা হল বিচারবুদ্ধিহীনতা। আমি দেখলাম, মৃত্যুর চেয়েও তেতো হল সেই স্ত্রীলোক, যার অন্তর একটা ফাঁদ ও জাল আর হাত দু’টা শিকল। যে লোক ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে সে তার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, কিন্তু পাপীকে সে ফাঁদে ফেলবে। উপদেশক বলছেন, “দেখ, সব কিছুর পিছনে যে পরিকল্পনা আছে তা খুঁজে দেখবার জন্য আমি ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে কতগুলো বিষয় জানতে পারলাম। আমি যখন জ্ঞানের খোঁজ করছিলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না তখন আমি হাজার জনের মধ্যে একজন খাঁটি পুরুষ লোককে পেলাম, কিন্তু তাদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোককেও খাঁটি দেখতে পাই নি। কেবল এটাই আমি জানতে পারলাম যে, ঈশ্বর মানুষকে খাঁটিই তৈরী করেছিলেন, কিন্তু মানুষ নানা চালাকির পিছনে চলে গেছে।” কে জ্ঞানী লোকের মত? যা ঘটে কে তার অর্থ বুঝতে পারে? জ্ঞান মানুষের মুখ উজ্জ্বল করে এবং তার মুখের কঠিনতা পরিবর্তন করতে পারে। আমার উপদেশ এই যে, তুমি রাজার আদেশ পালন কর, কারণ ঈশ্বরের সামনে তুমি সেই শপথই করেছ। তাড়াতাড়ি রাজাকে ত্যাগ করে চলে যেয়ো না। মন্দ কিছুর সংগে যুক্ত হোয়ো না, কারণ রাজা তাঁর ইচ্ছামত কাজ করেন। রাজার কথাই যখন সবচেয়ে বড় তখন কে তাঁকে বলতে পারে, “আপনি কি করছেন?” যে তাঁর আদেশ পালন করে তার কোন ক্ষতি হবে না। জ্ঞানী লোকদের অন্তর উপযুক্ত সময় ও কাজের নিয়ম জানে। প্রত্যেকটি ব্যাপারের জন্য উপযুক্ত সময় আছে আর কাজেরও নিয়ম আছে, কিন্তু মানুষের জ্ঞান সীমিত বলে সে খুব কষ্ট পায়; কারণ কোন মানুষই যখন জানে না কি ঘটবে তখন কেউ তাকে বলতে পারে না কখন তা ঘটবে। বাতাসকে যেমন ধরে রাখবার ক্ষমতা কারও নেই এবং যুদ্ধের সময় যেমন কেউ ছুটি পায় না, তেমনি মৃত্যুর দিনের উপরেও কারও হাত নেই। দুষ্টদের দুষ্টতাও তা থেকে তাদের রক্ষা করতে পারে না। সূর্যের নীচে যা কিছু করা হয় তার দিকে মনোযোগ দিয়ে আমি দেখতে পেলাম যে, একজন লোক অন্যদের উপর কর্তৃত্ব করে এবং তার ফলে তাদের ক্ষতি হয়। তারপর আমি এও দেখলাম যে, দুষ্ট লোকদের কবর দেওয়া হচ্ছিল। এরা উপাসনা-ঘরে যাওয়া-আসা করত; পরে তাদের শহরের লোকেরা তাদের দুষ্টতার কথা ভুলে গেল। এও অসার। অন্যায় কাজের শাস্তি যদি তাড়াতাড়ি দেওয়া না হয় তাহলে লোকদের অন্তর অন্যায় করবার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়। পাপী লোক যদিও একশোটা অন্যায় কাজ করে অনেক দিন বেঁচে থাকে তবুও আমি জানি ঈশ্বরকে যারা ভক্তিপূর্ণ ভয় করে তাদের মংগল হবে। কিন্তু দুষ্টেরা ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে না বলে তাদের মংগল হবে না এবং তাদের আয়ু হবে ছায়ার মত। পৃথিবীতে আর একটা অসার ব্যাপার হল, দুষ্টদের যা পাওনা তা পায় সৎ লোক, আর সৎ লোকদের যা পাওনা তা পায় দুষ্ট লোকেরা। আমি বলি এটাও অসার। কাজেই আমি জীবনে আমোদ-প্রমোদের প্রশংসাই করছি, কারণ সূর্যের নীচে খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ করা ছাড়া মানুষের জন্য ভাল আর কিছু নেই। তাহলে সূর্যের নীচে ঈশ্বরের দেওয়া মানুষের জীবনের সমস্ত দিনগুলোতে তার কাজে আনন্দই হবে তার সংগী। সেইজন্য আমি এই সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করলাম এবং দেখলাম যে, সৎ ও জ্ঞানী লোকেরা এবং তাদের কাজ সবই ঈশ্বরের হাতে। কেউ জানে না তার জন্য কি অপেক্ষা করে আছে- ভালবাসা না ঘৃণা। সকলের শেষ অবস্থা একই- তা সে সৎ হোক বা দুষ্ট হোক, ভাল ও শুচি হোক বা অশুচি হোক, উৎসর্গের অনুষ্ঠান করুক বা না করুক। ভাল লোকের জন্যও যা, পাপীর জন্যও তা; যারা শপথ করে তাদের জন্যও যা, যারা তা করতে ভয় পায় তাদের জন্যও তা। সূর্যের নীচে যা কিছু ঘটে তার মধ্যে দুঃখের বিষয় হল এই যে, সকলের একই দশা ঘটে। এছাড়া মানুষের অন্তর দুঃখে পরিপূর্ণ এবং যতদিন সে বেঁচে থাকে ততদিন তার অন্তরে থাকে বিচারবুদ্ধিহীনতা, আর তার পরে সে মারা যায়। জীবিত লোকদের আশা আছে; এমন কি, মরা সিংহের চেয়ে জীবিত কুকুরও ভাল। জীবিত লোকেরা জানে যে, তাদের মরতে হবে, কিন্তু মৃতেরা কিছুই জানে না। তাদের আর কোন পুরস্কার নেই, কারণ তাদের কথাও লোকে ভুলে যায়। তাদের ভালবাসা, ঘৃণা ও হিংসা আগেই শেষ হয়ে গেছে; সূর্যের নীচে যা কিছু ঘটবে তাতে তাদের আর কোন অংশ থাকবে না। তাই তুমি গিয়ে আনন্দের সংগে তোমার খাবার খাও আর আনন্দপূর্ণ অন্তরে আংগুর-রস খাও, কারণ তোমার এই সব কাজ ঈশ্বর আগেই গ্রাহ্য করেছেন। সব সময় সাদা কাপড় পরে আর মাথায় তেল দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করবে। সূর্যের নীচে ঈশ্বর তোমাকে এই যে সব অস্থায়ী দিনগুলো দিয়েছেন, তোমার জীবনের সেই সব দিনগুলো তোমার স্ত্রী, যাকে তুমি ভালবাস, তার সংগে আনন্দে কাটাও, কারণ সূর্যের নীচে তোমার জীবন ও তোমার কষ্টপূর্ণ পরিশ্রমের মধ্যে এ-ই তোমার পাওনা। তোমার হাতে যে কোন কাজ আসুক না কেন তা তোমার সমস্ত শক্তি দিয়েই কোরো, কারণ তুমি যে জায়গায় যাচ্ছ সেই মৃতস্থানে কোন কাজ বা পরিকল্পনা বা বুদ্ধি কিম্বা জ্ঞান বলে কিছু নেই। সূর্যের নীচে আমি আরও কিছু দেখেছি, তা হল: যারা তাড়াতাড়ি দৌড়ায় তারাই যে সব সময় জয়ী হয়, তা নয়; শক্তিশালীরা যে সব সময় যুদ্ধে জয়ী হয়, তা নয়; জ্ঞানীরা যে সব সময় পেট ভরে খাবার পায়, তা নয়; বুদ্ধিমানেরা যে সব সময় ধনী হয়, তা নয়; দক্ষ লোকেরা যে সব সময় সুযোগ পায়, তা নয়; কারণ তারা সকলেই সময় ও সুযোগের হাতে বাঁধা। কেউ জানে না তার মৃত্যুর সময় কখন আসবে। যেমন করে মাছ নিষ্ঠুর জালে ধরা পড়ে আর পাখীরা ফাঁদে পড়ে তেমনি করে বিপদ হঠাৎ মানুষের উপর এসে পড়ে এবং তাকে ফাঁদে ফেলে। আমি সূর্র্যের নীচে জ্ঞান সম্বন্ধে আর একটা ব্যাপার দেখলাম যা আমার মনে গভীরভাবে দাগ কাটল। একটা ছোট শহরে অল্প লোক ছিল। একজন শক্তিশালী রাজা তার বিরুদ্ধে এসে সেটা ঘেরাও করে আক্রমণ করবার জন্য প্রস্তুত হল। সেই শহরে একজন জ্ঞানী গরীব লোক ছিল। সে তার জ্ঞান দিয়ে শহরটা রক্ষা করল, কিন্তু কেউই সেই গরীব লোকটিকে মনে রাখল না। তাই আমি বললাম, “শক্তির চেয়ে জ্ঞান ভাল,” কিন্তু গরীব লোকের জ্ঞানকে তুচ্ছ করা হয় এবং তার কথা কেউ শোনে না। বোকাদের শাসনকর্তার চিৎকারের চেয়ে বরং জ্ঞানীদের শান্তিপূর্ণ কথা শোনা ভাল। যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্রের চেয়ে জ্ঞান ভাল, কিন্তু একজন পাপী অনেক ভাল কাজ নষ্ট করে। মরা মাছি যেমন সুগন্ধি তেল দুর্গন্ধ করে তোলে, তেমনি একটুখানি নির্বুদ্ধিতা জ্ঞান ও সম্মানকে মুছে ফেলে। জ্ঞানীদের অন্তর ভাল পথের দিকে ফেরে, কিন্তু বোকাদের অন্তর যায় ভুল পথের দিকে। এমন কি, রাস্তায় চলবার সময়েও দেখা যায় বোকার বুদ্ধির অভাব আছে; সে যে বোকা তা সবাই বুঝতে পারে। শাসনকর্তা যদি তোমার উপর রেগে ওঠেন তবুও তুমি তোমার পদ ত্যাগ কোরো না; শান্তভাব থাকলে বড় বড় অন্যায়ও ক্ষমা করা যায়। সূর্যের নীচে আমি একটা ব্যাপার দেখেছি যা ঠিক নয়: শাসনকর্তারা এই রকমের ভুল করে থাকে- বুদ্ধিহীনেরা নিযুক্ত হয় বড় বড় পদে, আর ধনীরা নিযুক্ত হয় নীচু পদে। আমি দাসদের ঘোড়ার পিঠে আর উঁচু পদের কর্মচারীদের দাসের মত পায়ে হেঁটে চলতে দেখেছি। যে গর্ত খোঁড়ে সে তার মধ্যে পড়তে পারে; যে দেয়াল ভাংগে তাকে সাপে কামড়াতে পারে। যে পাথর কাটে সে তার দ্বারাই আঘাত পেতে পারে; যে কাঠ কাটে সে তার দ্বারাই বিপদে পড়তে পারে। কুড়াল যদি ভোঁতা হয় আর তাতে ধার দেওয়া না হয়, তবে তা ব্যবহার করতে বেশী শক্তি লাগে, কিন্তু জ্ঞান ব্যবহার করে মানুষ সফল হয়। সাপকে মুগ্ধ করার আগেই যদি সে কামড় দেয় তবে সাপুড়ের কোন লাভ হয় না। জ্ঞানী লোকের মুখের কথায় থাকে দয়া, কিন্তু বোকা তার মুখের কথা দিয়ে নিজেকে ধ্বংস করে। তার কথার শুরুতে থাকে নির্বুদ্ধিতা, শেষে থাকে পুরোপুরি বিচারবুদ্ধিহীনতা। বুদ্ধিহীনেরা অনেক কথা বলে, কিন্তু কি হবে তা কেউ জানে না, আর ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা মানুষকে কে বলে দিতে পারে? বোকার পরিশ্রম তাকে ক্লান্ত করে; সে এত বোকা যে, শহরে যাবার রাস্তাও সে জানে না। ধিক্‌ সেই দেশ, যেখানে বালক রাজপদ পায় আর সেখানকার মন্ত্রীরা সকাল বেলাতেই ভোজ খায়। ধন্য সেই দেশ, যার রাজা উঁচু বংশের লোক, আর সেখানকার মন্ত্রীরা মাত্‌লামির জন্য নয় কিন্তু শক্তির জন্য উপযুক্ত সময়ে খাওয়া-দাওয়া করে। অলস লোকের ঘরের ছাদ ধ্বসে যায়; অলসতার জন্য ঘরে জল পড়ে। হাসিখুশীর জন্যই ভোজের ব্যবস্থা করা হয়; আংগুর-রস জীবনে আনন্দ আনে; টাকা-পয়সা সব কিছু যোগায়। রাজাকে মনে মনে অভিশাপ দিয়ো না কিম্বা নিজের শোবার ঘরে ধনীকে অভিশাপ দিয়ো না, কারণ আকাশের পাখীও তোমার কথা বয়ে নিয়ে যেতে পারে; সে উড়ে গিয়ে তোমার কথাগুলো বলে দিতে পারে। তুমি তোমার টাকা খাটাও, কারণ অনেক দিন পরে তা আবার ফিরে পাবে। তোমার ধন নানাভাবে খাটাও, কারণ পৃথিবীতে কি বিপদ আসবে তা তো তুমি জান না। মেঘ যদি জলে ভরা থাকে তবে তা থেকে পৃথিবীতে বৃষ্টি পড়ে। গাছ দক্ষিণে কি উত্তরে পড়ুক, যেখানে পড়বে সেখানেই পড়ে থাকবে। যে লোক উপযুক্ত বাতাসের জন্য অপেক্ষা করে তার বীজ বোনা হয় না; যে লোক উপযুক্ত আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে তার ফসল কাটা হয় না। কেমন করে মায়ের গর্ভের শিশুর মধ্যে আত্মা প্রবেশ করে তা যেমন তুমি জান না, তেমনি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের কাজও তুমি বুঝতে পার না। তোমার বীজ সকালে বোনো, বিকালেও তোমার হাতকে সেই কাজ করতে দিয়ো, কারণ কোন্‌ সময়ের কাজ সফল হবে নাকি দু’টাই সমানভাবে ভাল হবে, তা তো তুমি জান না। আলো সুন্দর, আর সূর্য দেখতে পাওয়া ভাল। একজন লোক যদি অনেক বছর বেঁচে থাকে তবে সে যেন সেই দিনগুলোতে আনন্দ ভোগ করে। কিন্তু অন্ধকারের দিনগুলোর কথাও যেন সে মনে রাখে, কারণ সেগুলো হবে অনেক। যা কিছু ঘটবে তা সবই অস্থায়ী। হে যুবক, তোমার যৌবনকালে তুমি সুখী হও, যুবা বয়সের দিনগুলোতে তোমার অন্তর তোমাকে আনন্দিত করুক। তোমার অন্তরের ইচ্ছামত পথে চল আর তোমার চোখে যা ভাল লাগে তা-ই কর, কিন্তু জেনে রেখো, এই সব কাজের জন্য ঈশ্বর তোমার বিচার করবেন। কাজেই তোমার অন্তর থেকে বিরক্তি দূর করে দাও, আর তোমার শরীরকে কষ্ট পেতে দিয়ো না, কারণ যৌবন ও শক্তি স্থায়ী নয়। তোমার যৌবনকালেই তোমার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ কর, কারণ বৃদ্ধ বয়সের দিনগুলো আসছে, অর্থাৎ দুঃখের দিনগুলো আসছে যখন তুমি বলবে, “আমার এই বৃদ্ধকালে আমার কোন আনন্দ নেই।” সেই সময় সূর্য, আলো, চাঁদ আর তারাগুলো অন্ধকার হয়ে যাবে, আর বৃষ্টির পরে মেঘ আবার ফিরে আসবে। সেই সময় ঘরের রক্ষাকারীরা কাঁপবে, আর শক্তিশালী লোকেরা কুঁজা হয়ে যাবে; যারা গম পেষে তারা লোক অল্প বলে কাজ ছেড়ে দেবে, আর জানলা দিয়ে যারা দেখত তারা আর ভালভাবে দেখতে পাবে না। সেই সময় রাস্তার দিকের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে; এতে গম পেষার আওয়াজ মিলিয়ে যাবে, পাখীর শব্দে বুড়ো লোক জেগে উঠবে, আর গান-বাজনার আওয়াজ কমে যাবে। সেই সময় উঁচু জায়গায় আর রাস্তায় যেতে সে ভয় পাবে। তখন বাদাম গাছে ফুল ধরবে, ফড়িং টেনে টেনে হাঁটবে এবং কামনা-বাসনা আর উত্তেজিত হবে না। তারপর সে চলে যাবে তার অনন্তকালের বাড়ীতে, আর বিলাপকারীরা পথে পথে ঘুরবে। রূপার তার ছিঁড়ে যাওয়ার আগে, কিম্বা সোনার পাত্র ভেংগে যাওয়ার আগে, ফোয়ারার কাছে কলসী চুরমার করার আগে, কিম্বা কূয়ার জল তোলার চাকা ভেংগে যাওয়ার আগে তোমার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ কর। মাটি মাটিতেই ফিরে যাবে, আর যে আত্মা ঈশ্বর দিয়েছেন সেই আত্মা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। উপদেশক বলছেন, “অসার, অসার, সব কিছুই অসার!” উপদেশক নিজে জ্ঞানী ছিলেন এবং তিনি লোকদেরও জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি চিন্তা করে ও পরীক্ষা করে অনেক চলতি কথা সাজিয়েছেন। তিনি উপযুক্ত শব্দের খোঁজ করেছেন, আর তিনি যা লিখেছেন তা খঁাঁটি ও সত্যি কথা। জ্ঞানী লোকদের কথা রাখালের খোঁচানো লাঠির মত। তাঁদের কথাগুলো একত্র করলে মনে হয় যেন সেগুলো সব শক্ত করে গাঁথা পেরেক। সেই সব একজন রাখালের দেওয়া কথা। ছেলে আমার, এই কথার সংগে কিছু যোগ দেওয়া হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে সতর্ক থেকো। বই লেখার শেষ নেই আর অনেক পড়াশোনায় শরীর ক্লান্ত হয়। এখন সব কিছু তো শোনা হল; তবে শেষ কথা এই যে, ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবার ও তাঁর সব আদেশ পালন করবার মধ্য দিয়ে মানুুষের সমস্ত কর্তব্য পালন করা হয়। ঈশ্বর প্রত্যেকটি কাজের, এমন কি, প্রত্যেকটি গোপন ব্যাপারের বিচার করবেন- তা ভাল হোক বা মন্দ হোক। ॥ভব এটা সবচেয়ে সুন্দর গান। এই গান শলোমনের। তুমি চুম্বনে চুম্বনে আমাকে ভরে দাও, কারণ তোমার ভালবাসা আংগুর-রসের চেয়েও ভাল। তোমার তেলের সুগন্ধ আনন্দ দান করে; ঢেলে দেওয়া সুগন্ধির মতই তোমার নাম। তাই তো মেয়েরা তোমাকে ভালবাসে। আমি রাজাকে বললাম, “তুমি আমাকে তোমার সংগে নাও; চল, আমরা তাড়াতাড়ি যাই।” তিনি আমাকে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন। আমরা আপনাকে নিয়ে আনন্দ করব ও খুশী হব; আংগুর-রসের চেয়েও আপনার ভালবাসার বেশী প্রশংসা করব। তারা যে তোমাকে ভালবাসে তা ঠিকই করে। হে যিরূশালেমের মেয়েরা, আমি কেদরের তাম্বুর মত কালো কিন্তু শলোমনের তাম্বুর পর্দার মত সুন্দরী। আমি কালো বলে আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে থেকো না, কারণ সূর্য আমার রং কালো করেছে। আমার ভাইয়েরা আমার উপর রাগ করে আংগুর ক্ষেতের দেখাশোনার ভার আমাকে দিয়েছে, সেইজন্য আমার নিজের আংগুর ক্ষেতের দেখাশোনা আমি করি নি। হে আমার প্রিয়তম, তুমি আমাকে বল, কোথায় তোমার ভেড়ার পাল তুমি চরাও? তোমার ভেড়াগুলোকে দুপুরে কোথায় বিশ্রাম করাও? তোমার সংগী রাখালদের ভেড়ার পালের কাছে কেন আমি ঘোমটা দেওয়া বেশ্যার মত যাব? হে সেরা সুন্দরী, তুমি যদি তা না জান তবে ভেড়ার পালের পায়ের চিহ্ন ধরে এসে রাখালদের তাম্বুগুলোর কাছে তোমার সব ছাগলের বাচ্চা চরাও। হে আমার প্রিয়তমা, ফরৌণের রথের এক স্ত্রী-ঘোড়ার সংগে আমি তোমার তুলনা করেছি। তোমার গালের দু’পাশ দিয়ে কানের দুল ঝুলছে, তাতে তোমার গাল সুন্দর দেখাচ্ছে আর গলার হার তোমার গলায় সুন্দর মানাচ্ছে। আমরা তোমার জন্য সোনার কারুকাজ করা রূপার কানের দুল তৈরী করব। রাজা যখন তাঁর বিছানায় ছিলেন তখন আমার সুগন্ধি সুগন্ধ ছড়াতে লাগল। আমার প্রিয় আমার কাছে যেন গন্ধরস রাখার ছোট থলি যা আমার বুকের মাঝখানে থাকে। আমার প্রিয় আমার কাছে যেন এক গোছা মেহেদী ফুল যা ঐন্‌-গদীর আংগুর ক্ষেতে জন্মায়। প্রিয়া আমার, কি সুন্দরী তুমি! হ্যাঁ, তুমি সুন্দরী। তোমার চোখ দু’টা ঘুঘুর মত। প্রিয় আমার, কি সুন্দর তুমি! হ্যাঁ, তুমি খুবই সুন্দর। আমাদের বিছানা পাতা-ভরা ডাল দিয়ে তৈরী। এরস গাছ আমাদের ঘরের কড়িকাঠ, আর বেরস গাছ আমাদের ঘরের ছাদের বীম। আমি যেন শারোণের একটা গোলাপ, উপত্যকার লিলি ফুল। কাঁটাবনের মধ্যে যেমন লিলি ফুল, মেয়েদের মধ্যে তেমনি আমার প্রিয়া। বনের গাছপালার মধ্যে যেমন আপেল গাছ, তেমনি যুবকদের মধ্যে আমার প্রিয়। আমি তাঁর ছায়াতে বসে আনন্দ পাই, আমার মুখে তাঁর ফল মিষ্টি লাগে। তিনি আমাকে ভোজের ঘরে নিয়ে গেলেন, আর পতাকা টাংগাবার মত করে আমার প্রতি তাঁর ভালবাসা ঘোষণা করলেন। কিশ্‌মিশ খাইয়ে আমাকে শক্তিশালী কর আর আপেল খাইয়ে আমাকে তাজা করে তোলো, কারণ ভালবাসায় আমি দুর্বল হয়ে গেছি। আমার মাথার নীচে আছে তাঁর বাঁ হাত, আর ডান হাত আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। হে যিরূশালেমের মেয়েরা, আমি কৃষ্ণসার ও মাঠের হরিণীদের নামে অনুরোধ করে বলছি, তোমরা ভালবাসাকে জাগায়ো না বা উত্তেজিত কোরো না যতক্ষণ না তার উপযুক্ত সময় হয়। ঐ শোন, আমার প্রিয়ের শব্দ, ঐ দেখ, তিনি আসছেন; তিনি পাহাড়-পর্বতের উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আসছেন। আমার প্রিয় যেন কৃষ্ণসার কিম্বা হরিণের বাচ্চা। ঐ দেখ, তিনি আমাদের দেয়ালের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখছেন, জাফরির মধ্য দিয়ে উঁকি মারছেন। আমার প্রিয় আমাকে বললেন, “প্রিয়া আমার, ওঠো; সুন্দরী আমার, আমার সংগে এস। দেখ, শীতকাল চলে গেছে; বর্ষা শেষ হয়েছে, চলেও গেছে। মাঠে মাঠে ফুল ফুটেছে, এসেছে গানের মৌসুম; আমাদের দেশে ঘুঘুর ডাক শোনা যাচ্ছে। ডুমুর গাছে ফল ধরতে শুরু হয়েছে; আংগুর লতায় ফুল ধরে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। প্রিয়া আমার, ওঠো, এস; সুন্দরী আমার, এস আমার সংগে।” ঘুঘু আমার, তুমি পাহাড়ের ফাটলে, পাহাড়ের গায়ের লুকানো জায়গায় রয়েছ; আমাকে তোমার মুখ দেখাও, তোমার গলার স্বর শুনতে দাও, কারণ তোমার স্বর মিষ্টি আর মুখের চেহারা সুন্দর। তোমরা সেই শিয়ালগুলোকে, সেই ছোট ছোট শিয়ালগুলোকে ধর, কারণ তারা আমাদের আংগুর ক্ষেতগুলো নষ্ট করে; আমাদের আংগুর ক্ষেতে ফুলের কুঁড়ি ধরেছে। আমার প্রিয় আমারই আর আমি তাঁরই; তিনি লিলি ফুলের বনে চরেন। হে আমার প্রিয়, তুমি ফিরে এসো; যতক্ষণ না ভোর হয় আর অন্ধকার চলে যায় ততক্ষণ তুমি থাক। খাড়া পাহাড়ের উপরে তুমি কৃষ্ণসার কিম্বা বাচ্চা হরিণের মত হও। রাতের বেলা আমার বিছানায় আমার প্রাণের প্রিয়তমকে আমি খুঁজছিলাম; আমি তাঁকে খুঁজছিলাম, কিন্তু পেলাম না। আমি ভাবলাম, আমি এখন উঠে শহরের মধ্যে ঘুরে বেড়াব, ঘুরে বেড়াব রাস্তায় রাস্তায়, চকে চকে; সেখানে আমি আমার প্রাণের প্রিয়তমকে খুঁজব; আমি তাঁর খোঁজ করছিলাম কিন্তু তাঁকে পেলাম না। পাহারাদারেরা শহরে ঘুরে ঘুরে পাহারা দেবার সময় আমাকে দেখতে পেল। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমরা কি আমার প্রাণের প্রিয়তমকে দেখেছ?” তাদের পার হয়ে এগিয়ে যেতেই আমি আমার প্রাণের প্রিয়তমের দেখা পেলাম। তাঁকে ধরে আমার মায়ের ঘরে না আনা পর্যন্ত আমি তাঁকে ছাড়লাম না; যিনি আমাকে গর্ভে ধরেছিলেন আমি তাঁরই ঘরে তাঁকে আনলাম। হে যিরূশালেমের মেয়েরা, আমি কৃষ্ণসার ও মাঠের হরিণীদের নামে অনুরোধ করে বলছি, তোমরা ভালবাসাকে জাগায়ো না বা উত্তেজিত কোরো না যতক্ষণ না তার উপযুক্ত সময় হয়। মরু-এলাকা থেকে ধূমার থামের মত যে আসছে সে কে? সেই ধূমার থামে রয়েছে বণিকের সব রকম মশলার, গন্ধরসের ও সুগন্ধি ধূপের সুগন্ধ। দেখ, ওটা শলোমনের পালকী! ষাটজন বীর যোদ্ধা রয়েছেন সেই পালকীর চারপাশে; তাঁরা ইস্রায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী বীর। তাঁদের সবার সংগে আছে তলোয়ার, যুদ্ধে তাঁরা সবাই পাকা; তলোয়ার কোমরে বেঁধে নিয়ে তাঁরা প্রত্যেকে প্রস্তুত রয়েছেন রাতের বিপদের জন্য। রাজা শলোমন এই পাল্‌কী তৈরী করেছেন নিজের জন্য, তৈরী করেছেন লেবাননের কাঠ দিয়ে। সেই পালকীর খুঁটি রূপা দিয়ে তৈরী, তলাটা তৈরী সোনার, আসনটা তার বেগুনে রংয়ের; যিরূশালেমের মেয়েরা ভালবেসে তার ভিতরের অংশে কারুকাজ করে দিয়েছে। হে সিয়োনের মেয়েরা, তোমরা বের হয়ে এস, দেখ, রাজা শলোমন মুকুট পরে আছেন; তাঁর বিয়ের দিনে, তাঁর মনের আনন্দের দিনে, তাঁর মা তাঁকে মুকুট পরিয়ে দিয়েছেন। প্রিয়া আমার, কি সুন্দরী তুমি! হ্যাঁ, তুমি সুন্দরী। ঘোমটার মধ্যে তোমার চোখ দু’টা ঘুঘুর মত। তোমার চুল যেন গিলিয়দ পাহাড় থেকে নেমে আসা ছাগলের পাল। তোমার দাঁতগুলো এমন ভেড়ীর পালের মত যারা এইমাত্র লোম ছাটাই হয়ে স্নান করে এসেছে। তাদের প্রত্যেকটারই জোড়া আছে, কোনটাই হারিয়ে যায় নি! তোমার ঠোঁট দু’টা লাল রংয়ের সুতার মত লাল; কি সুন্দর তোমার মুখ! ঘোমটার মধ্যে তোমার কপালের দু’পাশ যেন আধখানা করা ডালিম। তোমার গলা যেন দায়ূদের উঁচু পাহারা-ঘরের মত লম্বা; তাতে ঝুলানো রয়েছে এক হাজার ঢাল, তার সবগুলোই যোদ্ধাদের। তোমার বুক দু’টা যেন লিলি ফুলের বনে চরে বেড়ানো কৃষ্ণসারের যমজ বাচ্চা। যতক্ষণ না ভোর হয় আর অন্ধকার চলে যায় ততক্ষণ আমি গন্ধরসের পাহাড়ে, হ্যাঁ, ধূপের পাহাড়ে থাকব। প্রিয়া আমার, তোমার দেহের সব কিছুই সুন্দর, তোমার মধ্যে কোন খুঁত নেই। বিয়ের কনে আমার, লেবানন থেকে আমার সংগে এস, আমারই সংগে লেবানন থেকে এস। অমানার চূড়া থেকে, শনীর ও হর্মোণ পাহাড়ের উপর থেকে, সিংহের গর্ত থেকে, চিতাবাঘের পাহাড়ী বাসস্থান থেকে তুমি নেমে এস। প্রিয়া আমার, কনে আমার, তুমি আমার মন চুরি করেছ; তোমার এক পলকের চাহনি দিয়ে, তোমার গলার হারের একটা মণি দিয়ে তুমি আমার মন চুরি করে নিয়েছ। প্রিয়া আমার, কনে আমার, তোমার ভালবাসা কত আনন্দ দেয়! আংগুর-রসের চেয়ে তোমার ভালবাসা, আর সমস্ত মশলার চেয়ে তোমার সুগন্ধির সুন্দর গন্ধ আরও কত না বেশী ভাল! কনে আমার, তোমার ঠোঁট থেকে ফোঁটা ফোঁটা মধু ঝরে। তোমার জিভের তলায় আছে দুধ আর মধু; তোমার কাপড়ের গন্ধ লেবাননের বনের গন্ধের মত। প্রিয়া আমার, কনে আমার, তুমি যেন দেয়াল-ঘেরা একটা বাগান; তুমি যেন আট্‌কে রাখা ফোয়ারা, বন্ধ করে রাখা ঝরণা। তুমি যেন সুন্দর একটা ডালিমের বাগান; সেখানে আছে ভাল ভাল ফল, মেহেদী আর সুগন্ধি লতা। আছে জটামাংসী, জাফরান, বচ, দারচিনি আর সব রকম ধূপের গাছ; সেখানে আছে গন্ধরস, অগুরু আর সব চেয়ে ভাল নানা রকম সুগন্ধি মশলা। তুমি যেন বাগানের ফোয়ারা, যেন উপ্‌চে পড়া জলের কূয়া, যেন লেবানন থেকে নেমে আসা স্রোত। উত্তুরে হাওয়া জাগো, এসো দখিনা বাতাস। আমার বাগানের উপর দিয়ে বয়ে যাও যাতে তার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আমার প্রিয় যেন তাঁর বাগানে এসে তার ভাল ভাল ফল খান। প্রিয়া আমার, কনে আমার, আমি আমারই বাগানে এসেছি; আমার গন্ধরস ও সুগন্ধি মশলা আমি জোগাড় করেছি। আমার মৌচাক ও মধু আমি খেয়েছি, খেয়েছি আংগুর-রস ও দুধ। ভোগ কর, হে বন্ধুরা, ভোগ কর, ভালবাসা পরিপূর্ণভাবে ভোগ কর। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, কিন্তু আমার অন্তর জেগে ছিল। ঐ শোন, আমার প্রিয় দরজায় ঘা দিয়ে বলছেন, “কনে আমার, প্রিয়া আমার, আমার ঘুঘু, আমার নিখুঁত সেই জন, আমাকে দরজা খুলে দাও। শিশিরে আমার মাথা ভিজে গেছে, রাতের কুয়াশায় ভিজেছে আমার চুল।” আমি মনে মনে বললাম, “আমার পোশাক আমি খুলে ফেলেছি, কেমন করে আবার তা পরব? আমি আমার পা ধুয়েছি, কেমন করে তা আবার নোংরা করব?” দরজার ফুটো দিয়ে আমার প্রিয় তাঁর হাত ঢুকালেন, আমার মন তাঁর জন্য ব্যাকুল হল। আমার প্রিয়কে দরজা খুলে দেওয়ার জন্য আমি উঠলাম, আমার হাত গন্ধরসে ভেজা ছিল, আমার আংগুল থেকে গন্ধরসের স্রোতে দরজার হাতল ভিজে গেল। আমার প্রিয়ের জন্য আমি দরজা খুললাম, কিন্তু আমার প্রিয় ছিলেন না, চলে গিয়েছিলেন। তিনি যখন কথা বলেছিলেন তখন দুঃখে আমার মন গলে গিয়েছিল। আমি তাঁর খোঁজ করলাম, কিন্তু পেলাম না; আমি তাঁকে ডাকলাম, কিন্তু তিনি সাড়া দিলেন না। পাহারাদারেরা শহরে ঘুরে ঘুরে পাহারা দেবার সময় আমাকে দেখতে পেল; তারা আমাকে মারল, তাতে কালশিরা পড়ে গেল; শহর-দেয়ালের পাহারাদারেরা আমার গায়ের চাদর কেড়ে নিল। হে যিরূশালেমের মেয়েরা, আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, যদি তোমরা আমার প্রিয়ের দেখা পাও তবে তাঁকে বোলো যে, আমি ভালবাসায় দুর্বল হয়েছি। ওহে সেরা সুন্দরী, অন্যদের চেয়ে তোমার প্রিয় কিসে ভাল? তোমার প্রিয় অন্যদের চেয়ে কিসে ভাল যে, তুমি এইভাবে আমাদের অনুরোধ করছ? আমার প্রিয়ের চেহারা উজ্জ্বল, লাল্‌চে তাঁর গায়ের রং; দশ হাজার জনের মধ্যে তিনি বিশেষ একজন। তাঁর মাথা খাঁটি সোনার মত, তাঁর চুল ঢেউ খেলানো আর দাঁড়কাকের মত কালো; তাঁর চোখ স্রোতের ধারে থাকা এক জোড়া ঘুঘুর মত, যা দুধে ধোওয়া, রত্নের মত বসানো। তাঁর গাল দু’টা যেন সুগন্ধি মশলার বীজতলা, যেখান থেকে সুগন্ধ বের হচ্ছে। তাঁর ঠোঁট দু’টা যেন গন্ধরস ঝরা লিলি ফুল। তাঁর হাত দু’টা যেন বৈদূর্যমণি বসানো সোনার লাঠি, আর দেহখানা নীলকান্তমণিতে সাজানো, পালিশ করা হাতির দাঁতের মত। তাঁর ঊরু দু’টা যেন খাঁটি সোনার ভিত্তির উপর বসানো মার্বেল পাথরের থাম। তাঁর ধরন লেবাননের উঁচু পাহাড়ের মত, লেবাননের বাছাই করা এরস গাছের মত জাঁকালো। তাঁর মুখখানা খুব মিষ্টি, তাঁর সবই সুন্দর। হে যিরূশালেমের মেয়েরা, উনিই আমার প্রিয়, আমার বন্ধু। হে সেরা সুন্দরী, তোমার প্রিয় কোথায় গেছেন? তিনি কোন্‌দিকের পথ ধরেছেন? বল, যাতে আমরা তোমার সংগে তাঁর খোঁজ করতে পারি। আমার প্রিয় গেছেন তাঁর বাগানে সুগন্ধি মশলার বীজতলায়; গেছেন খেয়ে বেড়াবার জন্য আর লিলি ফুল তুলবার জন্য। আমি আমার প্রিয়েরই এবং তিনি আমারই, তিনি লিলি ফুলের বনে চরেন। প্রিয়া আমার, তুমি তির্সা শহরের মত সুন্দরী, যিরূশালেমের মত চমৎকার; নিশান উড়ানো সৈন্যদলের মত তোমার জাঁকজমক। আমার দিক থেকে তোমার চোখ ফিরিয়ে নাও; ও দু’টা আমাকে ব্যাকুল করে তোলে। তোমার চুল যেন গিলিয়দ পাহাড় থেকে নেমে আসা ছাগলের পাল। তোমার দাঁতগুলো যেন স্নান করে আসা ভেড়ীর পাল; তাদের প্রত্যেকটারই জোড়া আছে, কোনটাই হারিয়ে যায় নি। ঘোমটার মধ্যে তোমার কপালের দু’পাশ যেন আধখানা করা ডালিম। ষাটজন রাণী, আশিজন উপস্ত্রী আর অসংখ্য মেয়ে থাকতে পারে, কিন্তু আমার ঘুঘু, আমার নিখুঁত জনের মত আর কেউ নেই। সে তার মায়ের একমাত্র মেয়ে, যিনি তাকে গর্ভে ধরেছিলেন তাঁর আদরের মেয়ে। মেয়েরা তাকে দেখে ধন্যা বলল আর রাণীরা ও উপস্ত্রীরা তার প্রশংসা করলেন। তাঁরা বললেন, “কে সে, যে ভোরের মত দেখা দেয়, চাঁদের মত সুন্দরী, সূর্যের মত উজ্জ্বল, আর নিশান উড়ানো সৈন্যদলের মত যার জাঁকজমক?” উপত্যকার নতুন চারাগুলো দেখতে, আংগুর লতায় কুঁড়ি ধরেছে কি না দেখতে, আর ডালিম গাছে ফুল ফুটেছে কি না দেখতে আমি নেমে বাদাম গাছের বনে গেলাম। আমি কিছু বুঝবার আগেই আমার বাসনা আমাকে আমার জাতির রাজার রথগুলোর একটার মধ্যে বসিয়ে দিল। হে শূলম্মীয়া, ফিরে এস, ফিরে এস; আমরা যেন তোমাকে দেখতে পাই সেইজন্য ফিরে এস, ফিরে এস। তোমরা মহনয়িমের নাচ দেখার মত করে কেন শূলম্মীয়াকে দেখতে চাইছ? হে রাজকন্যা, জুতার মধ্যে তোমার পা দু’খানা দেখতে কেমন সুন্দর! তোমার দুু’টি উরুর গড়ন মণি-মাণিকের মত, তা যেন পাকা কারিগরের হাতের কাজ। তোমার নাভি দেখতে গোল পাত্রের মত যার মধ্যে মেশানো আংগুর-রসের অভাব হয় না। তোমার পেট দেখতে উড়ানো গমের স্তূপের মত যার চারপাশ লিলি ফুল দিয়ে ঘেরা। তোমার বুক দু’টা যেন হরিণের দু’টা বাচ্চা, কৃষ্ণসারের যমজ বাচ্চা। হাতির দাঁতের উঁচু পাহারা-ঘরের মত তোমার গলা, তোমার চোখ দু’টি বৎ-রব্বীমের ফটকের কাছে হিষ্‌বোনের পুকুরগুলোর মত। তোমার নাক যেন দামেস্কের দিকে মুখ করা লেবাননের উঁচু পাহারা-ঘর। তোমার দেহের উপর তোমার মাথা কর্মিল পাহাড়ের মত; চক্‌চকে মোলায়েম কাপড়ের মতই তোমার চুল; সেই চুলের গোছায় রাজা বন্দী হয়ে আছেন। হে আমার প্রিয়া, আমার আনন্দ দানকারিনী, তুমি কি সুন্দর, কি চমৎকার! তোমার গড়ন খেজুর গাছের মত, আর বুক দু’টা যেন আংগুরের দু’টা থোকা। আমি বললাম, “আমি খেজুর গাছে উঠব, আমি তার ফল ধরব।” তোমার বুক দু’টা হোক আংগুরের থোকা, তোমার নিঃশ্বাসের গন্ধ হোক আপেলের মত, আর তোমার মুখ হোক সবচেয়ে ভাল আংগুর-রস। সেই আংগুর-রস সোজা আমার প্রিয়ের গলায় নেমে যাক, যেমন ঘুমিয়ে থাকা লোকদের ঠোঁটের মধ্য দিয়ে আংগুর-রস সহজে চলে যায়। আমি আমার প্রিয়ের, তাঁর কামনা-বাসনা আমারই জন্য। প্রিয় আমার, চল, আমরা মাঠে যাই, মেহেদী ঝোপের মধ্যে গিয়ে রাত কাটাই। চল, আমরা ভোর বেলাতেই আংগুর ক্ষেতে যাই, দেখি, আংগুর লতায় কুঁড়ি ধরেছে কি না, তাতে ফুল ধরেছে কি না আর ডালিমের ফুল ফুটেছে কি না; আমি সেখানেই তোমাকে আমার ভালবাসা দান করব। দূদাফল তার সুগন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে; তাজা ও পাকা সব রকম ভাল ভাল ফল আমাদের দরজার কাছেই আছে। প্রিয় আমার, আমি তোমার জন্যই এই সব রেখেছি। আহা, যদি তুমি আমার ভাইয়ের মত হতে যে আমার মায়ের দুধ খেয়েছে! তাহলে আমি তোমাকে বাইরে পেলেও চুম্বন করতে পারতাম, কেউ আমাকে কিছু বলতে পারত না; তাহলে আমি তোমাকে পথ দেখিয়ে আমার মায়ের ঘরে নিয়ে আসতাম, আর তুমি আমাকে শিক্ষা দিতে। আমি তোমাকে সুগন্ধি মশলা-দেওয়া আংগুর-রস খেতে দিতাম, খেতে দিতাম আমার ডালিমের মিষ্টি রস। আমার মাথার নীচে আছে তাঁর বাঁ হাত, আর ডান হাত আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। হে যিরূশালেমের মেয়েরা, আমি তোমাদের অনুরোধ করে বলছি, তোমরা ভালবাসাকে জাগায়ো না বা উত্তেজিত কোরো না যতক্ষণ না তার উপযুক্ত সময় হয়। তার প্রিয়ের উপর ভর দিয়ে মরু-এলাকা থেকে যে আসছে সে কে? আপেল গাছের নীচে আমি তোমাকে জাগালাম; তোমার মা ওখানেই প্রসব-যন্ত্রণা ভোগ করে তোমাকে জন্ম দিয়েছিলেন। সীলমোহরের মত করে তুমি আমাকে তোমার অন্তরে আর তোমার হাতে রাখ; কারণ ভালবাসা মৃত্যুর মত শক্তিশালী, পাওনা ভালবাসার আগ্রহ মৃতস্থানের মতই হার মানে না। তা জ্বলন্ত আগুনের মতই জ্বলতে থাকে, জ্বলতে থাকে জোরালো শিখার মত। বন্যার জলও ভালবাসাকে নিভাতে পারে না; সব নদীও পারে না তা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে। ভালবাসার জন্য যদি কেউ তার সব কিছু দিয়েও দেয় তবে তা হবে খুবই তুচ্ছ। আমাদের একটা ছোট বোন আছে, তার বুক দু’টা এখনও বড় হয় নি। সেদিন আমরা কি করব যেদিন তার বিয়ের কথাবার্তা হবে? সে যদি দেয়াল হত তবে আমরা তার উপরে রূপা দিয়ে উঁচু পাহারা-ঘর তৈরী করতাম। যদি সে দরজা হত তবে এরস কাঠের পাল্লা দিয়ে আমরা তাকে বন্ধ করে রাখতাম। আমি তো একটা দেয়াল, আর আমার বুক দু’টা উঁচু পাহারা-ঘরের মত। আমি তাঁর চোখে তেমনই হলাম যা তৃপ্তি আনতে পারে। বাল্‌-হামোনে শলোমনের একটা আংগুর ক্ষেত আছে; তিনি সেটা দেখাশোনাকারীদের হাতে দিয়েছেন। তার ফলের দাম হিসাবে প্রত্যেককে বারো কেজি রূপা দিতে হয়। আমার নিজের আংগুর ক্ষেত আছে, যা কেবল আমিই দিতে পারি। হে শলোমন, সেই বারো কেজি রূপা তোমারই থাকুক, কিন্তু আড়াই কেজি থাকুক তাদের জন্য যারা ফলের দেখাশোনা করেছে। তুমি তো বাগানে বাগানে থাক; তোমার বন্ধুরা তোমার গলার স্বর শোনে, আমাকেও তা শুনতে দাও। প্রিয় আমার, চলে এস; সুগন্ধি মশলা-ভরা পাহাড়ের উপরে তুমি হও কৃষ্ণসারের মত কিম্বা হরিণের বাচ্চার মত। যিহূদা দেশের রাজা উষিয়, যোথম, আহস ও হিষ্কিয়ের রাজত্বের সময়ে আমোসের ছেলে যিশাইয় যিহূদা ও যিরূশালেমের বিষয়ে যে দর্শন পেয়েছিলেন সেই সম্বন্ধে এখানে লেখা আছে। হে আকাশ শোন, হে পৃথিবী শোন, সদাপ্রভু বলছেন, “আমি ছেলেমেয়েদের লালন-পালন করেছি ও তাদের বড় করে তুলেছি, কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। গরু তার মনিবকে চেনে, গাধাও তার মালিকের যাবপাত্র চেনে; কিন্তু ইস্রায়েল তার মনিবকে চেনে না, আমার লোকেরা আমাকে বোঝে না।” হায়! তারা একটা পাপে পূর্ণ জাতি, দোষের ভারে বোঝাই লোক, অন্যায়কারীদের বংশ, কুকাজ করা সন্তান। তারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছে এবং ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনকে অগ্রাহ্য করেছে আর তাঁর দিকে পিছন ফিরিয়েছে। তোমরা আর কেন মার খাবে? কেন বিদ্রোহ করতেই থাকবে? তোমাদের গোটা মাথাতেই আঘাত লেগেছে, গোটা অন্তরটাই অসুস্থ হয়েছে। পায়ের তলা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত কোথাও ভাল অবস্থা নেই, আছে কেবল আঘাত, মারের দাগ আর কাঁচা ঘা। তা পরিষ্কার করা বা বেঁধে দেওয়া হয় নি, তেল দিয়ে যন্ত্রণা কমানোও হয় নি। তোমাদের দেশটা ধ্বংস হয়ে পড়ে রয়েছে, শহরগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তোমাদের সব ক্ষেতের ফসল তোমাদের চোখের সামনেই বিদেশীরা লুট করেছে; বিদেশীরা দেশটা ধ্বংসস্থান করে রেখেছে। সিয়োন-কন্যাকে এমনভাবে ফেলে রাখা হয়েছে যেন সে আংগুর ক্ষেতের পাহারা-ঘর, যেন শসা ক্ষেতের কুঁড়ে-ঘর, যেন শত্রু দ্বারা ঘেরাও করা একটা শহর। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আমাদের জন্য যদি কয়েকজনকে জীবিত না রাখতেন তবে আমাদের অবস্থা সদোম ও ঘমোরা শহরের মত হত। হে সদোমের শাসনকর্তারা, সদাপ্রভুর বাক্য শোন। হে ঘমোরার লোকেরা, আমাদের ঈশ্বরের নির্দেশে কান দাও। সদাপ্রভু বলছেন, “তোমাদের কোন পশু-উৎসর্গ আমার দরকার নেই। ভেড়া ও মোটাসোটা পশুর চর্বি দিয়ে পোড়ানো-উৎসর্গ যেন আমার গলা পর্যন্ত উঠেছে; গরু, ভেড়ার বাচ্চা ও ছাগলের রক্তে আমি কোন আনন্দ পাই না। তোমরা যে আমার কাছে উপস্থিত হয়ে আমার সব উঠান পায়ে মাড়াও, এ তোমাদের কাছে কে চেয়েছে? অসার উৎসর্গের জিনিস তোমরা আর এনো না। তোমাদের ধূপ জ্বালানো আমার ঘৃণা লাগে। অমাবস্যা, বিশ্রামবার এবং ধর্মীয় সভা- তোমাদের পাপের দরুন আমি এই সব সভা সহ্য করতে পারি না। আমি তোমাদের সব অমাবস্যার উৎসব ও নির্দিষ্ট ভোজ-সভা ঘৃণা করি। এগুলো আমার কাছে বোঝার মত হয়েছে; এগুলোর ভার বয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। প্রার্থনার জন্য যখন তোমরা হাত তুলবে তখন আমি তোমাদের দিক থেকে আমার চোখ ফিরিয়ে নেব। যদিও বা অনেক প্রার্থনা কর আমি তা শুনব না, কারণ তোমাদের হাত রক্তে পূর্ণ। তোমরা নিজেদের খাঁটি কর, শুচি হও। আমার চোখের সামনে থেকে তোমাদের সব মন্দ কাজ দূর করে দাও; তা আর কোরো না। তোমরা ভাল কাজ করতে শেখো, ন্যায়বিচার কর, অত্যাচারীদের সংশোধন কর, অনাথদের পক্ষে থাক, বিধবাদের মামলার তদারকি কর।” সদাপ্রভু আরও বলছেন, “এখন এস, আমরা বোঝাপড়া করি। যদিও তোমাদের সব পাপ টক্‌টকে লাল হয়েছে তবুও তা বরফের মত সাদা হবে; যদিও সেগুলো গাঢ় লাল রংয়ের হয়েছে তবুও তা ভেড়ার লোমের মত সাদা হবে। যদি তোমরা বাধ্য হতে রাজী হও তবে দেশের সবচেয়ে ভাল ফসল তোমরা খেতে পাবে, কিন্তু যদি তোমরা বাধ্য হতে রাজী না হয়ে বিদ্রোহ কর তবে তলোয়ার তোমাদের ধ্বংস করবে।” সদাপ্রভু নিজেই এই কথা বলেছেন। হায়, সতী শহরটা কেমন বেশ্যার মত হয়ে গেছে! সে এক সময় ন্যায়বিচারে পূর্ণ ছিল; সততা তার মধ্যে বাস করত, কিন্তু এখন বাস করছে খুনীরা। তোমার রূপা খাদ হয়ে গেছে; তোমার ভাল আংগুর-রসে জল মেশানো হয়েছে। তোমার শাসনকর্তারা বিদ্রোহী ও চোরদের সংগী; তারা সবাই ঘুষ খেতে ভালবাসে আর উপহার পেতে চায়। তারা অনাথদের পক্ষে থাকে না আর বিধবাদের মামলা তাদের কাছে স্থান পায় না। সেইজন্য সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের সেই শক্তিশালী ঈশ্বর বলছেন, “আহা, আমার বিপক্ষদের হাত থেকে আমি রেহাই পাব এবং আমার শত্রুদের উপর শোধ নেব। আমি তোমার বিরুদ্ধে আমার হাত তুলব। ধাতুর মত করে আমি ক্ষার দিয়ে তোমার খাদ বের করে ফেলব ও তোমার সব ভেজাল দূর করে দেব। আমি আগের দিনের মত তোমাকে শাসনকর্তা ও পরামর্শদাতাদের দেব; তারপর তোমাকে বলা হবে ন্যায়ের শহর, সতী শহর।” ঈশ্বর তাঁর ন্যায়বিচার দিয়ে সিয়োনকে মুক্ত করবেন, আর যারা পাপ থেকে মন ফিরাবে তাদের মুক্ত করবেন তাঁর সততা দিয়ে। কিন্তু বিদ্রোহী ও পাপীরা সবাই একসংগে ধ্বংস হবে, আর যারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছে তারা শেষ হয়ে যাবে। “হ্যাঁ, তোমরা যে সব এলোন গাছ পূজা করতে তার জন্য তোমরা লজ্জা পাবে, আর যে সব বাগানে তোমরা পূজা করতে তার জন্য অসম্মানিত হবে। তোমরা হবে সেই এলোন গাছের মত যার পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে; তোমরা হবে সেই বাগানের মত যার মধ্যে জল নেই। শক্তিশালী লোক শুকনা খড়কুটার মত হবে, আর তার কাজ হবে আগুনের ফুল্‌কির মত। সেই সব একসংগে পুড়ে যাবে; কেউ সেই আগুন নিভাতে পারবে না।” যিহূদা ও যিরূশালেম সম্বন্ধে আমোসের ছেলে যিশাইয় যা দেখেছিলেন তা এই: শেষকালে সমস্ত পাহাড়ের মধ্যে সেই পাহাড়টাকেই সবচেয়ে উঁচুতে তোলা হবে যেখানে সদাপ্রভুর ঘর আছে। ছোট ছোট পাহাড়গুলোর চেয়ে তাকে উঁচুতে তোলা হবে, আর সব জাতি স্রোতের মত তার দিকে যাবে। অনেক জাতির লোক এসে বলবে, “চল, আমরা সদাপ্রভুর পাহাড়ে উঠে যাই, চল, যাকোবের ঈশ্বরের ঘরে যাই। তিনি আমাদের তাঁর পথ সম্বন্ধে শিক্ষা দেবেন আর আমরা তাঁর পথে চলব।” তারা এই কথা বলবে, কারণ সিয়োন থেকে নির্দেশ দেওয়া হবে আর যিরূশালেম থেকে বের হবে সদাপ্রভুর বাক্য। তিনি জাতিদের মধ্যে বিচার করে দেবেন; অনেক দেশের লোকদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করবেন। তারা তাদের তলোয়ার ভেংগে লাংগলের ফাল গড়বে আর বর্শা ভেংগে গড়বে ডাল ছাঁটবার ছুরি। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে আর তলোয়ার উঠাবে না; তারা আর যুদ্ধ করতে শিখবে না। হে যাকোবের বংশধরেরা, এস; চল, আমরা সদাপ্রভুর আলোতে চলাফেরা করি। তুমি তো তোমার লোকদের, অর্থাৎ যাকোবের বংশধরদের ত্যাগ করেছ। তারা পূর্ব দিকের দেশগুলোর কুসংস্কার দিয়ে পূর্ণ হয়েছে; তারা পলেষ্টীয়দের মত মায়াবিদ্যার অভ্যাস করেছে এবং ভিন্ন জাতিদের সংগে হাতে হাত মিলিয়েছে। তাদের দেশ সোনা ও রূপায় ভরা, তাদের ধন-সম্পদের শেষ নেই। তাদের দেশ ঘোড়ায় পরিপূর্ণ আর তাদের রথও অসংখ্য। এছাড়া তাদের দেশ প্রতিমায় পূর্ণ হয়েছে। তাদের হাতে তৈরী জিনিসের কাছে তারা প্রণাম করে, তারা যা আংগুল দিয়ে তৈরী করেছে তার কাছেই মাথা নোয়ায়। কাজেই লোকদের নত করা হবে এবং তাদের সবাইকে নীচু করা হবে। তাদের তুমি ক্ষমা কোরো না। সদাপ্রভুর ভয়ংকরতা এবং তাঁর মহিমার উজ্জ্বলতার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য তোমরা বড় বড় পাথরের ফাঁকে ঢুকে যাও, মাটির মধ্যে লুকাও। গর্বিত লোকের চাহনি নত করা হবে আর লোকদের অহংকার নীচে নামানো হবে। সেই দিন কেবল সদাপ্রভুকেই সম্মানিত করা হবে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু অহংকারী আর গর্বিত লোকদের এবং যারা উঁচুতে আছে তাদের সকলের জন্য একটা দিন ঠিক করেছেন; সেই দিন তাদের সবাইকে নত করা হবে। লেবাননের সব লম্বা ও উঁচু এরস গাছ আর বাশনের সব এলোন গাছ নীচু করা হবে; এছাড়া সব বড় বড় পাহাড়-পর্বত, প্রত্যেকটা উঁচু পাহারা-ঘর, প্রত্যেকটা শক্ত দেয়াল, সমস্ত তর্শীশ-জাহাজ আর প্রত্যেকটা জাঁকজমকপূর্ণ জাহাজ নীচু করা হবে। মানুষের গর্বকে নীচে নামানো হবে আর লোকের অহংকারকে নীচু করা হবে। সেই দিন কেবল সদাপ্রভুকেই সম্মানিত করা হবে, আর প্রতিমাগুলো একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। সদাপ্রভু যখন পৃথিবীর লোকদের ভয় দেখাবার জন্য আসবেন তখন তাঁর ভয়ংকরতার ও তাঁর মহিমার উজ্জ্বলতার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য লোকে সেই দিন পাহাড়ের গুহায় আর মাটির গর্তে পালাবে। সেই দিন লোকে তাদের পূজার জন্য তৈরী সোনা ও রূপার প্রতিমাগুলো ছুঁচো ও বাদুড়ের কাছে ফেলে দেবে। সদাপ্রভু যখন পৃথিবীর লোকদের ভয় দেখাবার জন্য আসবেন তখন তাঁর ভয়ংকরতার ও তাঁর মহিমার উজ্জ্বলতার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য লোকে বড় বড় পাথরের ফাঁকে ও পাহাড়ের ফাটলে পালিয়ে যাবে। তোমরা মানুষের উপর নির্ভর করা ছেড়ে দাও। তার প্রাণ তো তার নাকের একটা নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়; তার কোনই দাম নেই। এখন দেখ, যে সব জিনিস ও লোকদের উপর লোকে নির্ভর করে সেই সব যিরূশালেম ও যিহূদা থেকে সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু দূর করে দিতে যাচ্ছেন। তিনি তাদের সব খাবার ও জল দূর করে দেবেন। এছাড়া তিনি বীর ও যোদ্ধাদের, শাসনকর্তা ও নবীদের, গণক ও বৃদ্ধ নেতাদের, পঞ্চাশ সৈন্যের সেনাপতি ও সম্মানিত লোকদের, পরামর্শদাতা, চালাক যাদুকরদের ও মন্ত্র-পড়া সাপুড়েদের দূর করে দিতে যাচ্ছেন। তাদের উপরে তিনি অল্প বয়সী ছেলেদের কর্তা বানাবেন; অল্প বুদ্ধির যুবকেরা তাদের শাসনকর্তা হবে। মানুষ মানুষকে, প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে অত্যাচার করবে; ছোটরা বুড়োদের বিরুদ্ধে উঠবে, আর নীচু স্তরের লোকেরা সম্মানিত লোকদের বিরুদ্ধে উঠবে। লোকে নিজের বংশের একজনকে ধরে বলবে, “তোমার চাদর আছে, তুমি আমাদের শাসনকর্তা হও, এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশের ভার নাও।” কিন্তু সেই দিন সে আপত্তি করে বলবে, “দেশের ভাল করবার মত আমার কিছু নেই। আমার বাড়ীতে কোন খাবার বা কাপড় নেই; তোমরা আমাকে লোকদের শাসনকর্তা বানায়ো না।” যিরূশালেম উছোট খেয়েছে আর যিহূদা পড়ে গেছে, কারণ তাদের কথা ও কাজ সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে; তারা তাঁর সামনেই তাঁর মহিমাকে অগ্রাহ্য করে। তাদের মুখের চেহারাই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়; তারা সদোমের মত তাদের পাপ প্রকাশ করে, ঢাকে না। হায়, সেই লোকেরা! তারা নিজেদের উপর ধ্বংস ডেকে এনেছে। তোমরা সৎ লোকদের বল যে, তাদের মংগল হবে, কারণ তারা তাদের কাজের সুফল ভোগ করবে। হায়, দুষ্টেরা! তাদের উপর বিপদ আসবে। তারা যা করেছে তার পাওনা তারা পাবে। যারা আমার লোকদের অত্যাচার করে তারা ছোট ছেলেদের মত, আর যারা তাদের শাসন করে তারা স্ত্রীলোকের মত। হে আমার লোকেরা, তোমাদের পথ দেখাবার লোকেরাই তোমাদের বিপথে নিয়ে যায়; তারা ঠিক পথ থেকে তোমাদের ভুল পথে নিয়ে যায়। সদাপ্রভু আদালতে তাঁর স্থান নিয়েছেন; তিনি বিভিন্ন জাতির বিচার করবার জন্য দাঁড়িয়েছেন। সদাপ্রভু তাঁর লোকদের মধ্যেকার বুড়ো লোকদের ও নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার করে বলছেন, “তোমরা আমার আংগুর ক্ষেত নষ্ট করেছ; গরীবদের মাল লুট করে নিজেদের ঘরে রেখেছ। তোমরা কিসের জন্য আমার লোকদের চুরমার করছ আর গরীবদের পিষে ফেলছ?” এই কথা সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু বলছেন। সদাপ্রভু আরও বলছেন, “সিয়োনের স্ত্রীলোকেরা অহংকারী। তারা মাথা উঁচু করে হেঁটে বেড়ায় আর চোখ দিয়ে ইশারা করে; পায়ের নূপুরের রুম্‌ঝুম শব্দ তুলে তারা হালকা পায়ে কায়দা করে হাঁটে। সেইজন্য সদাপ্রভু সিয়োনের স্ত্রীলোকদের মাথায় ঘা হতে দেবেন আর তাতে টাক পড়াবেন।” সেই দিন প্রভু তাদের সুন্দর সুন্দর গয়নাগাঁটি কেড়ে নেবেন। তিনি তাদের নূপুর, মাথার টায়রা, চন্দ্রহার, কানের দুল, বালা, জালি পর্দা, মাথার ঘোমটা, পায়ের মল, কোমরের রেশমী ফিতা, সুগন্ধির শিশি, তাবিজ, আংটি ও নাকের নোলক, সুন্দর সুন্দর লম্বা জামা, উপরের জামা, শাল, টাকার থলি, আয়না, মসীনার ভিতরের কাপড়, পাগড়ী আর ওড়না কেড়ে নেবেন। সুগন্ধের বদলে পচা গন্ধ, কোমর-বাঁধনির বদলে দড়ি, সুন্দর করে আঁচড়ানো চুলের বদলে টাক, দামী কাপড়ের বদলে ছালার চট, আর সৌন্দর্যের বদলে পোড়ার দাগ থাকবে। তোমাদের লোকেরা তলোয়ারের আঘাতে আর যোদ্ধারা যুদ্ধে মারা পড়বে। সিয়োনের ফটকগুলো বিলাপ ও শোক করবে; সিয়োন সব হারিয়ে মাটিতে বসবে। সেই দিন সাতজন স্ত্রীলোক একজন পুরুষকে ধরে বলবে, “আমাদের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করব; কেবল তোমার স্ত্রী বলে যেন আমাদের ডাকা হয় সেই অধিকার দাও। আমাদের অসম্মান দূর কর।” সেই দিন সদাপ্রভুর চারাগাছ সুন্দর ও গৌরবময় হবে এবং দেশের ফল ইস্রায়েলে বেঁচে থাকা লোকদের গর্ব ও গৌরবের জিনিস হবে। সেই দিন সিয়োনে যারা বাকী থাকবে, অর্থাৎ যিরূশালেমে যারা বেঁচে থাকবে তাদের পবিত্র বলে ডাকা হবে। যিরূশালেমে বেঁচে থাকবার জন্য সেই সব লোকদের নাম তালিকায় লেখা রয়েছে। প্রভু তাঁর আত্মার দ্বারা আগুন দিয়ে ন্যায়বিচার করে সিয়োনের স্ত্রীলোকদের ময়লা পরিষ্কার করবেন এবং যিরূশালেম থেকে রক্তপাতের দাগ দূর করে দেবেন। সদাপ্রভু সেই দিন সিয়োন পাহাড়ের সব জায়গার উপরে এবং যারা সেখানে জড়ো হবে তাদের উপরে দিনে ধূমার মেঘ ও রাতে জ্বলন্ত আগুনের আলো সৃষ্টি করবেন; তা হবে সমস্ত ইস্রায়েলের মহিমার উপরে যেন একটা চাঁদোয়া। এটা দিনের রোদ থেকে ছায়া পাবার জন্য একটা ছাউনি এবং ঝড় ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবার জন্য একটা আশ্রয়ের জায়গা হবে। আমি যাঁকে ভালবাসি তাঁর উদ্দেশে আমি একটা গান গাইব, গান গাইব তাঁর আংগুর ক্ষেতের বিষয়ে। পাহাড়ের গায়ে একটা উর্বর জায়গায় ছিল আমার প্রিয়ের একটা আংগুর ক্ষেত। তিনি জায়গাটা খুঁড়ে সব পাথর তুলে ফেললেন আর তাতে লাগালেন সব চেয়ে ভাল আংগুরের লতা। তার মধ্যে তিনি তৈরী করলেন একটা উঁচু পাহারা-ঘর আর আংগুর মাড়াইয়ের জন্য পাথর কেটে ঠিক করে নিলেন। তারপর তিনি সেখানে ভাল আংগুর ফলের জন্য অপেক্ষা করলেন, কিন্তু তাতে ধরল কেবল বুনো আংগুর। “হে যিরূশালেমের বাসিন্দারা ও যিহূদার লোকেরা, এখন তোমরাই বল, এ কি আমার, না আমার আংগুর ক্ষেতের দোষ? আমার আংগুর ক্ষেতের জন্য আমি যা করেছি তার চেয়ে বেশী আর কি করা যেত? যখন আমি ভাল আংগুরের জন্য অপেক্ষা করলাম তখন কেন তাতে ধরল কেবল বুনো আংগুর? আমার আংগুর ক্ষেতের প্রতি যা করব তা এখন আমি তোমাদের বলব: আমি তার বেড়া তুলে ফেলব আর তাতে জমিটা ধ্বংস হয়ে যাবে; আমি তার দেয়াল ভেংগে ফেলব আর তাতে তা পায়ে মাড়ানো হবে। আমি ওটা একটা ধ্বংসস্থান করব; তার লতা ছাঁটাও হবে না এবং তার জমিও চাষ করা হবে না, আর সেখানে জন্মাবে কেবল কাঁটাঝোপ আর কাঁটাগাছ। আমি মেঘকে হুকুম দেব যেন সে বৃষ্টি না দেয়।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর আংগুর ক্ষেত হল ইস্রায়েল-বংশের লোকেরা; আর যিহূদার লোকেরা হল তাঁর আনন্দের আংগুর-চারা। তিনি ন্যায়বিচারের খোঁজ করলেন কিন্তু দেখলেন রক্তপাত; তিনি সততার খোঁজ করলেন কিন্তু শুনলেন দুঃখের কান্না। ধিক্‌ তোমাদের, যারা ঘরের সংগে ঘর আর ক্ষেতের সংগে ক্ষেত যোগ করছ; শেষে অন্যদের জন্য কোন জায়গা থাকবে না, আর তোমরা একাই দেশে বাস করবে। আমি নিজের কানে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর এই কথা শুনেছি, “সত্যিই বড় বড় বাড়ীগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে, সুন্দর সুন্দর দালানে কোন বাসিন্দা থাকবে না। ত্রিশ বিঘা আংগুর ক্ষেত থেকে মাত্র বাইশ লিটার আংগুর-রস পাওয়া যাবে, আর একশো আশি কেজি বীজে মাত্র আঠারো কেজি শস্য জন্মাবে।” ধিক্‌ সেই লোকদের, যারা মদ খাবার জন্য খুব সকালে ওঠে আর অনেক রাত পর্যন্ত বসে আংগুর-রস খেতে থাকে, যতক্ষণ না তাতে তারা গরম হয়ে ওঠে। তাদের ভোজের সময় থাকে সুরবাহার ও বীণা, আর থাকে খঞ্জনি, বাঁশী আর আংগুর-রস; কিন্তু সদাপ্রভুর কাজের প্রতি তাদের কোন মনোযোগ নেই, তাঁর হাতের কাজের প্রতি কোন খেয়াল নেই। কাজেই বুদ্ধির অভাবে আমার লোকেরা অন্য দেশে বন্দী হয়ে থাকবে। তাদের গণ্যমান্য লোকেরা খিদেয় মারা পড়বে, আর তাদের অন্যান্য লোকদের বুক পিপাসায় শুকাবে। সেইজন্য মৃতস্থান তার গলার নালী চওড়া করছে, তার মুখ খুব বড় করে হা করছে। সম্মানিত ও সাধারণ লোক, ঝগড়াটে আর হৈ-হুল্লোড়কারীরা সবাই সেখানে নেমে যাবে। উঁচু-নীচু সকলকে নত করা হবে, আর গর্বিতদের চোখ নীচু করা হবে। কিন্তু সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু ন্যায়বিচার করে মহান থাকবেন; পবিত্র ঈশ্বর তাঁর সততার জন্য পবিত্র বলে প্রকাশিত হবেন। তখন ভেড়াগুলো নিজেদের ক্ষেতে যেমন চরে তেমনি করেই ধনীদের সব ধ্বংসস্থানগুলোতে চরে বেড়াবে, আর বিদেশীরা সেই সব ধ্বংসস্থানগুলো ভোগ করবে। ধিক্‌ সেই লোকদের, যারা ছলনার দড়ি দিয়ে অন্যায়কে টেনে আনে, আর পাপকে টেনে আনে যেন গরুর গাড়ির দড়ি দিয়ে। তারা বলে, “ঈশ্বর শীঘ্র করুন; তিনি তাড়াতাড়ি করে তাঁর কাজ করুন যেন আমরা তা দেখতে পাই। ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের পরিকল্পনা পূর্ণ হোক যেন আমরা তা জানতে পারি।” ধিক্‌ সেই লোকদের, যারা মন্দকে বলে ভাল আর ভালকে বলে মন্দ, যারা আলোকে অন্ধকার আর অন্ধকারকে আলো বলে ধরে, যারা মিষ্টিকে তেতো আর তেতোকে মিষ্টি বলে ধরে। ধিক্‌ সেই লোকদের, যারা নিজেদের চোখে জ্ঞানবান আর নিজেদের বুদ্ধিমান বলে মনে করে। ধিক্‌ সেই লোকদের, যারা আংগুর-রস খাওয়ার বেলায় ওস্তাদ আর মদ মিশাবার কাজে পাকা, যারা ঘুষ খেয়ে দোষীকে ছেড়ে দেয় আর নির্দোষদের জন্য ন্যায়বিচার করতে অস্বীকার করে। কাজেই আগুনের জিভ্‌ যেমন খড় পুড়িয়ে ফেলে আর আগুনের শিখার মধ্যে শুকনা ঘাস পুড়ে যায়, তেমনি করেই তাদের গোড়া পচে যাবে আর ধুলার মতই তাদের ফুল উড়ে যাবে; কারণ তারা সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর নির্দেশ অগ্রাহ্য করেছে আর ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের বাক্যকে পায়ে ঠেলেছে। সেইজন্য সদাপ্রভুর ক্রোধ তাঁর লোকদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠেছে; তিনি হাত তুলে তাদের আঘাত করেছেন। পাহাড়-পর্বত কাঁপছে আর মৃতদেহগুলো রাস্তায় ময়লার মত পড়ে আছে। এই সবের পরেও তাঁর ক্রোধ থামে নি, তিনি হাত উঠিয়েই রেখেছেন। তিনি দূরের জাতির জন্য একটা নিশান তুলবেন আর পৃথিবীর শেষ সীমার সেই লোকদের ডাক দেবেন। দেখ, তারা তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে দৌড়ে আসবে। তারা কেউই ক্লান্ত হবে না, উছোটও খাবে না; কেউই ঝিমাবে না বা ঘুমাবে না; তাদের কোমর-বাঁধনি খুলে যাবে না, জুতার ফিতাও ছিঁড়বে না; তাদের তীরগুলো ধারালো, তাদের সব ধনুকে চাড়া দেওয়া আছে; তাদের ঘোড়ার খুরগুলো চক্‌মকি পাথরের মত শক্ত, আর তাদের রথের চাকাগুলো ঘূর্ণিবাতাসের মত। সিংহীর মতই তাদের গর্জন; তারা যুব সিংহের মত গর্জন করবে আর শিকার ধরবার সময় গোঁ গোঁ শব্দ করবে। সেই শিকার তারা বয়ে নিয়ে যাবে; তাদের হাত থেকে কেউ তা রক্ষা করতে পারবে না। সেই দিন তারা সমুদ্রের গর্জনের মত করে সদাপ্রভুর লোকদের উপর গর্জন করবে। কেউ যদি তখন দেশের দিকে তাকায় তবে সে দেখতে পাবে অন্ধকার আর কষ্ট; এমন কি, আলোও মেঘে ঢেকে অন্ধকার হয়ে যাবে। যে বছরে রাজা উষিয় মারা গেলেন সেই বছরে আমি দেখলাম প্রভু খুব উঁচু একটা সিংহাসনে বসে আছেন। তাঁর রাজ-পোশাকের নীচের অংশ দিয়ে উপাসনা-ঘরটা পূর্ণ ছিল। তাঁর উপরে ছিলেন কয়েকজন সরাফ; তাঁদের প্রত্যেকের ছয়টা করে ডানা ছিল- দু’টি ডানা দিয়ে তাঁরা মুখ আর দু’টি ডানা দিয়ে পা ঢেকে ছিলেন এবং আর দু’টি ডানা দিয়ে তাঁরা উড়ছিলেন। তাঁরা একে অন্যকে ডেকে বলছিলেন, “সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র; তাঁর মহিমায় গোটা পৃথিবী পরিপূর্ণ। তাদের গলার স্বরের আওয়াজে উপাসনা-ঘরের দরজার কব্‌জাগুলো কেঁপে উঠল এবং ঘরটা ধূমায় পূর্ণ হয়ে গেল। তখন আমি বললাম, “হায়, আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম, কারণ আমার মুখ অশুচি এবং আমি এমন লোকদের মধ্যে বাস করি যাদের মুখ অশুচি। আমি নিজের চোখে রাজাকে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুকে দেখেছি।” তখন একজন সরাফ হাতে একটা জ্বলন্ত কয়লা নিয়ে আমার কাছে উড়ে আসলেন; কয়লাটা তিনি বেদীর উপর থেকে চিম্‌টা দিয়ে নিয়েছিলেন। সেই কয়লাটা তিনি আমার মুখে ছুঁইয়ে বললেন, “দেখ, এটা তোমার মুখ ছুঁয়েছে; তোমার অন্যায় দূর করা হয়েছে এবং তোমার পাপ মুছে ফেলা হয়েছে।” তারপর আমি প্রভুর কথা শুনতে পেলাম। তিনি বললেন, “আমি কাকে পাঠাব? আমাদের পক্ষ হয়ে কে যাবে?” আমি বললাম, “এই যে আমি, আপনি আমাকে পাঠান।” তিনি বললেন, “তুমি গিয়ে এই লোকদের বল, ‘তোমরা শুনতে থেকো কিন্তু বুঝো না, দেখতে থেকো কিন্তু জেনো না।’ ” তারপর তিনি আমাকে আরও বললেন, “তুমি এই লোকদের অন্তর অসাড় কর, তাদের কান বন্ধ কর, আর তাদের চোখও বন্ধ করে দাও। তা না হলে তারা চোখে দেখবে, কানে শুনবে, অন্তরে বুঝবে আর পাপ থেকে মন ফিরিয়ে সুস্থ হবে।” তখন আমি বললাম, “হে প্রভু, আর কত দিন?” উত্তরে তিনি বললেন, “যতদিন না শহরগুলো ধ্বংস হয়ে বাসিন্দাশূন্য হয়, বাড়ী-ঘর খালি হয়ে যায় আর ক্ষেত-খামার ধ্বংস ও ছারখার হয়; যতদিন না সদাপ্রভু সকলকে দূর করে দেন এবং দেশের অনেক জায়গা জনশূন্য হয়। যদি দেশের মধ্যে দশভাগের একভাগ লোকও থাকে, তবুও তাদের পুড়িয়ে ফেলা হবে। কিন্তু এলোন গাছ কেটে ফেললেও যেমন তার গুঁড়ি থেকে যায়, তেমনি গুঁড়ি হিসাবে দেশে পবিত্র বীজের মত কয়েকজন লোক থাকবে।” উষিয়ের নাতি, অর্থাৎ যোথমের ছেলে আহস যখন যিহূদা দেশের রাজা হলেন তখন অরামের রাজা রৎসীন ইস্রায়েলের রাজা রমলিয়ের ছেলে পেকহকে সংগে নিয়ে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন, কিন্তু তাঁরা তা জয় করতে পারলেন না। তখন দায়ূদের বংশের লোকদের বলা হল, “অরামের সৈন্যদল বন্ধু হিসাবে ইফ্রয়িমে ছাউনি ফেলে আছে।” এই কথা শুনে আহস ও তাঁর লোকদের অন্তর ভয়ে বাতাসে দুলে-ওঠা বনের গাছের মতই দুলে উঠল। তখন সদাপ্রভু যিশাইয়কে বললেন, “তুমি ও তোমার ছেলে শার-যাশূব বের হয়ে ধোপার মাঠের রাস্তার ধারে উঁচু পুকুরের সংগে লাগানো জলের সুড়ংগের মুখের কাছে গিয়ে আহসের সংগে দেখা কর। তাকে এই কথা বল, ‘সতর্ক হও, স্থির থাক ও ভয় কোরো না। ধূমা ওঠা ঐ দু’টা কাঠের শেষ অংশ দেখে, অর্থাৎ রৎসীন, অরাম ও রমলিয়ের ছেলের ভয়ংকর রাগ দেখে নিরাশ হোয়ো না। অরাম, ইফ্রয়িম ও রমলিয়ের ছেলে এই বলে তোমার ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে যে, তারা যিহূদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাবে এবং তাদের হারিয়ে দিয়ে টাবেলের ছেলেকে সেখানকার রাজা করবে। কিন্তু আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, এই যুদ্ধ হবেও না, ঘটবেও না, কারণ অরামের মাথা দামেস্কই বা কি আর দামেস্কের মাথা রাজা রৎসীনই বা কে? পঁয়ষট্টি বছরের মধ্যে ইফ্রয়িম এমনভাবে ধ্বংস হবে যে, জাতি হিসাবে সে আর থাকবে না। ইফ্রয়িমের মাথা শমরিয়াই বা কি, আর শমরিয়ার মাথা রমলিয়ের ছেলেই বা কে? তোমাদের বিশ্বাসে যদি তোমরা স্থির হয়ে না থাক তবে তোমরা কোনমতেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।’ ” সদাপ্রভু আবার আহসকে বললেন, “তুমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বল যেন তিনি তোমাকে একটা চিহ্ন দেখান- সেই চিহ্ন মৃতস্থান থেকে স্বর্গ পর্যন্ত যে কোন জায়গায় দেখানো যেতে পারে।” কিন্তু আহস বললেন, “আমি তা বলব না, আর সদাপ্রভুকে পরীক্ষাও করব না।” তখন যিশাইয় বললেন, “দায়ূদের বংশের লোকেরা, তোমরা শোন। মানুষের ধৈর্য পরীক্ষা করা কি যথেষ্ট নয়? তোমরা কি আমার ঈশ্বরের ধৈর্য পরীক্ষা করবে? কাজেই প্রভু নিজেই তোমাদের কাছে একটা চিহ্ন দেখাবেন। তা হল, একজন কুমারী মেয়ে গর্ভবতী হবে, আর তাঁর একটি ছেলে হবে; তাঁর নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল। যিহূদা ও ইফ্রয়িমের আলাদা হবার দিনের পর থেকে যা কখনও হয় নি, সদাপ্রভু আপনার ও আপনার লোকদের এবং আপনার বাবার বংশের লোকদের উপর সেই রকম একটা সময় আনবেন। সেই সময় তিনি আসিরিয়ার রাজাকে নিয়ে আসবেন।” সেই দিন সদাপ্রভু মিসর দেশের দূরের নদীগুলো থেকে মাছি ও আসিরিয়া দেশ থেকে মৌমাছিদের আসবার জন্য ডাক দেবেন। সেগুলো এসে খাড়া উপত্যকার মধ্যে, পাহাড়ের ফাটলে, সমস্ত কাঁটাঝোপের মধ্যে ও মাঠে মাঠে বসবে। সেই দিন প্রভু তোমাদের মাথার চুল, পায়ের লোম ও দাড়ি কামিয়ে দেবার জন্য ইউফ্রেটিস নদীর ওপার থেকে একটা ক্ষুর, অর্থাৎ আসিরিয়ার রাজাকে ভাড়া করে আনবেন। সেই দিন যে সব জায়গায় বারো কেজি রূপার দামের এক হাজারটা আংগুর লতা ছিল সেখানে থাকবে কেবল কাঁটাঝোপ আর কাঁটাগাছ। লোকে সেখানে যাবে তীর-ধনুক নিয়ে, কারণ দেশটা কাঁটাঝোপে আর কাঁটাগাছে ভরে যাবে। যে সব পাহাড়ী জায়গা কোদাল দিয়ে খুঁড়ে চাষ করা হত সেখানে লোকে কাঁটার ভয়ে আর যাবে না; সেগুলো হবে গরু আর ভেড়ার পাল চরে বেড়াবার জায়গা। সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি একটা বড় ফলক নিয়ে তার উপরে সাধারণ লোকের হাতের লেখা অনুসারে এই কথা লেখ, মহের-শালল-হাশ-বস (যার মানে ‘শীঘ্র লুট করা, তাড়াতাড়ি কেড়ে নেওয়া’)। আমি পুরোহিত ঊরিয় ও যিবেরিখিয়ের ছেলে সখরিয়কে আমার বিশ্বস্ত সাক্ষী হিসাবে নিযুক্ত করব।” পরে আমি আমার স্ত্রী, যিনি মহিলা-নবী ছিলেন, তাঁর সংগে মিলিত হলাম আর তিনি গর্ভবতী হয়ে একটি ছেলের জন্ম দিলেন। তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “ওর নাম রাখ মহের-শালল-হাস-বস। ছেলেটি ‘মা’ কিম্বা ‘বাবা’ বলবার আগেই দামেস্কের ধন-সম্পদ ও শমরিয়ার লুটের মাল আসিরিয়ার রাজা নিয়ে যাবে।” সদাপ্রভু আবার আমাকে বললেন, “এই লোকেরা শীলোহের আস্তে আস্তে বয়ে যাওয়া জল ত্যাগ করে রৎসীন আর রমলিয়ের ছেলেকে নিয়ে আনন্দ করছে। সেইজন্য প্রভু ইউফ্রেটিস নদীর ভীষণ বন্যার জলের মত করে সমস্ত জাঁকজমক সুদ্ধ আসিরিয়ার রাজাকে তাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই নিয়ে আসবেন। সেই জল নদীর সব খাল ও কিনারা ছাপিয়ে বয়ে যাবে, আর তা যিহূদা দেশের মধ্যে বেগে এসে পড়বে এবং উথলে উঠে গলা পর্যন্ত বেড়ে যাবে। হে ইম্মানূয়েল, আসিরিয়ার রাজা তার মেলে দেওয়া ডানা দিয়ে তোমার গোটা দেশটা ঢেকে ফেলবে। “হে জাতিরা, তোমরা একত্র হও, কিন্তু তোমরা ধ্বংস হবে; হে দূরের দেশগুলো, শোন, তোমরা যুদ্ধের জন্য তৈরী হও, কিন্তু তোমরা ধ্বংস হবে; হ্যাঁ, যুদ্ধের জন্য তৈরী হও, কিন্তু তোমরা ধ্বংস হবে। তোমরা পরিকল্পনা কর, কিন্তু তা সফল হবে না; সেই পরিকল্পনার কথা তোমরা বলবে, কিন্তু তা টিকবে না, কারণ ‘ঈশ্বর আমাদের সংগে আছেন।’ ” সদাপ্রভু তাঁর শক্তিশালী হাত আমার উপর রেখে আমার সংগে কথা বললেন। তিনি আমাকে সতর্ক করে দিলেন যেন আমি এই লোকদের পথে না চলি। তিনি বললেন, “এই লোকেরা যেগুলোকে ষড়যন্ত্র বলে তোমরা সেগুলোর কোনটাকেই ষড়যন্ত্র বোলো না। তারা যাতে ভয় পায় তোমরা তাতে ভয় পেয়ো না; তা ভয়ানক কিছু বলে মনেও কোরো না। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুকেই পবিত্র বলে মান; তাকেই ভয় কর; তাঁকেই ভয়ানক বলে মনে কর। তাহলে তিনি হবেন একটা পবিত্র আশ্রয়স্থান, কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের দু’টি দেশের জন্য তিনি এমন একটা পাথর হবেন যাতে লোকে উছোট খাবে এবং যা লোকের উছোট খাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যিরূশালেমের লোকদের জন্য তিনি হবেন একটা ফাঁদ ও একটা জাল। তাদের মধ্যে অনেকে উছোট খাবে। তারা পড়ে গিয়ে ধ্বংস হবে; ফাঁদে আট্‌কে গিয়ে তারা ধরা পড়বে।” তুমি এই সাক্ষ্য রক্ষা কর আর আমার শিষ্যদের মধ্যে তা সীলমোহর করে রাখ। আমি সদাপ্রভুর জন্য অপেক্ষা করব, যিনি যাকোব-বংশের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছেন; আমি তাঁর উপরেই নির্ভর করব। এই দেখ, আমি এবং সেই সন্তানেরা যাদের সদাপ্রভু আমাকে দিয়েছেন। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, যিনি সিয়োন পাহাড়ে বাস করেন আমরা তাঁরই ইচ্ছা অনুসারে চিহ্ন ও আশ্চর্য লক্ষণ হয়েছি। লোকে যখন তোমাদের সেই লোকদের কাছে যেতে বলে যারা মৃত লোকদের ও মন্দ আত্মাদের সংগে যোগাযোগ স্থাপন করে আর ফিস্‌ফিস্‌ ও বিড়্‌বিড়্‌ করে, তখন তোমাদের কি ঈশ্বরের কাছে যাওয়া উচিত নয়? যারা জীবিত আছে তাদের হয়ে কেন মৃতদের সংগে পরামর্শ করতে যাবে? তোমাদের যেতে হবে ঈশ্বরের নির্দেশ ও সাক্ষ্যের কাছে। যদি তারা ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে কথা না বলে তবে বুঝতে হবে তাদের মধ্যে কোন আলো নেই। কষ্ট ও খিদে নিয়ে তারা দেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াবে। খিদের কষ্টে তারা রাগ করে উপরের দিকে তাকিয়ে তাদের রাজা ও তাদের ঈশ্বরকে অভিশাপ দেবে। তারপর তারা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাবে কেবল কষ্ট, অন্ধকার আর ভয়ানক যন্ত্রণা। ভীষণ অন্ধকারের মধ্যে তাদের দূর করে দেওয়া হবে। কিন্তু যারা আগে কষ্টের মধ্যে ছিল তাদের জন্য অন্ধকার আর থাকবে না। আগেকার দিনে ঈশ্বর সবূলূন ও নপ্তালি এলাকাকে নীচু করেছিলেন, কিন্তু ভবিষ্যতে সমুদ্রের কিনারার রাস্তা থেকে ধরে যর্দন নদীর পূর্ব পারের এলাকা পর্যন্ত অযিহূদীদের গালীলকে তিনি সম্মানিত করবেন। যে লোকেরা অন্ধকারে চলে তারা মহা আলো দেখতে পাবে; যারা ঘন অন্ধকারের দেশে বাস করে তাদের উপর সেই আলো জ্বলবে। তুমি সেই জাতিকে বড় করবে আর বাড়িয়ে দেবে তাদের আনন্দ; ফসল কাটার সময় লোকে যেমন আমোদ করে, লুটের মাল ভাগের সময় যেমন আনন্দ করে, তেমনি করেই তারা তোমার সামনে আনন্দ করবে। মিদিয়নের হেরে যাওয়ার দিনে যেমন তুমি করেছিলে, তেমনি করেই তুমি চুরমার করে দেবে সেই জোয়াল, যা তাদের উপর ভার হয়ে আছে, সেই লাঠি, যা তাদের আঘাত করে, সেই জাতি, যে তাদের উপর অত্যাচার করে। যুদ্ধ করতে আসা প্রত্যেকজন যোদ্ধার জুতা, রক্তে ভেজা প্রত্যেকটি পোশাক আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এই সমস্ত হবে, কারণ একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন, একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে। শাসন করবার ভার তাঁর কাঁধের উপর থাকবে, আর তাঁর নাম হবে আশ্চর্য পরামর্শদাতা, শক্তিশালী ঈশ্বর, চিরস্থায়ী পিতা, শান্তির রাজা। তাঁর শাসনক্ষমতা বৃদ্ধির ও শান্তির শেষ হবে না। তিনি দায়ূদের সিংহাসন ও তাঁর রাজ্যের উপরে রাজত্ব করবেন; তিনি সেই সময় থেকে চিরকালের জন্য ন্যায়বিচার ও সততা দিয়ে তা স্থাপন করবেন ও স্থির করবেন। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই গভীর আগ্রহে এই সমস্ত করবেন। যাকোবের বিরুদ্ধে প্রভু একটা সংবাদ পাঠিয়েছেন; তা ইস্রায়েলের উপর ঘটবে। ইফ্রয়িম ও শমরিয়ার সব বাসিন্দারা তা জানতে পারবে। তারা অহংকার ও অন্তরের গর্বের সংগে বলে, “ইটগুলো পড়ে গেছে, কিন্তু আমরা তা আবার সুন্দর করে কাটা পাথর দিয়ে গড়ব; সব ডুমুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, কিন্তু আমরা তার বদলে লাগাব এরস গাছ।” কিন্তু সদাপ্রভু তো রৎসীনের বিরুদ্ধে তার শত্রুদের শক্তিশালী করেছেন আর তার বিরুদ্ধে তাদের উত্তেজিত করেছেন। পূর্ব দিক থেকে অরামীয়েরা আর পশ্চিম দিক থেকে পলেষ্টীয়েরা মুখ হা করে ইস্রায়েলকে গিলে ফেলবে। এই সব হলেও তাঁর ক্রোধ থামবে না। এখনও তাঁর হাত উঠানোই রয়েছে। কিন্তু যিনি তাদের আঘাত করেছেন তাঁর কাছে লোকেরা ফিরে আসে নি, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলে নি। কাজেই সদাপ্রভু ইস্রায়েলের খেজুরের ডাল ও নল-খাগড়া, অর্থাৎ মাথা ও লেজ একই দিনে কেটে ফেলবেন। সেই মাথা হল বৃদ্ধ নেতারা ও সম্মানিত লোকেরা, আর লেজ হল মিথ্যা শিক্ষাদানকারী নবীরা। যারা এই জাতির লোকদের পথ দেখায় তারা তাদের ভুল পথে নিয়ে যায়; যারা তাদের পিছনে চলে তারা বুঝতে পারছে না তারা কোথায় যাচ্ছে। কাজেই প্রভু যুবকদের নিয়ে কোন আনন্দ পাবেন না, আর অনাথ ও বিধবাদের প্রতি তিনি কোন মমতা করবেন না; কারণ সবাই ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন ও দুষ্ট, সবাই খারাপ কথা বলে। এই সব হলেও তাঁর ক্রোধ থামবে না; এখনও তাঁর হাত উঠানোই রয়েছে। সত্যিই দুষ্টতা আগুনের মত জ্বলে, তা কাঁটাঝোপ আর কাঁটাগাছ পুড়িয়ে ফেলে। তা বনের সব ঘন ঝোপ জ্বালিয়ে দেয় আর তাতে ধূমার থাম পাক খেয়ে খেয়ে উপরে ওঠে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর ভীষণ ক্রোধে দেশ ঝল্‌সে যাবে, আর লোকেরা হবে আগুনের জন্য জ্বালানী কাঠের মত। কেউ তার ভাইকে পর্যন্ত মমতা করবে না। এপাশে যা আছে তা তারা গিলতে থাকবে, কিন্তু তবুও খিদে মিটবে না; ওপাশে যা আছে তা খেতে থাকবে, কিন্তু তৃপ্ত হবে না। শেষে প্রত্যেকে নিজের লোকদের মাংস খাবে- মনঃশি ইফ্রয়িমের আর ইফ্রয়িম মনঃশির মাংস খাবে, আর তারা একসংগে যিহূদার বিরুদ্ধে উঠবে। এই সব হলেও তাঁর ক্রোধ থামবে না; এখনও তাঁর হাত উঠানোই রয়েছে। শাস্তি পাবার দিনে যখন দূর থেকে বিপদ আসবে তখন তোমরা কি করবে? সাহায্য পাবার জন্য কার কাছে দৌড়ে যাবে? তোমাদের ধন-সম্পদ কোথায় রেখে যাবে? তোমরা তো বন্দীদের মধ্যে থাকবে কিম্বা মৃতদের সংগী হবে; তোমাদের করবার আর কিছুই থাকবে না। এই সব হলেও তাঁর ক্রোধ থামবে না; এখনও তাঁর হাত উঠানোই রয়েছে। ধিক্‌ আসিরিয়া, আমার ক্রোধের লাঠি! তার হাতে রয়েছে আমার ভীষণ ক্রোধের গদা। আমি তাকে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন এক জাতির বিরুদ্ধে পাঠাচ্ছি এবং যারা আমার ক্রোধ জাগিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে পাঠাচ্ছি যেন সে লুট করতে ও কেড়ে নিতে পারে আর রাস্তার কাদার মত করে তাদের পায়ে মাড়াতে পারে। কিন্তু আসিরিয়ার উদ্দেশ্য তা নয়, তার পরিকল্পনা অন্য রকম; তার উদ্দেশ্য ধ্বংস করা আর অনেক জাতিকে শেষ করে দেওয়া। সে বলে, “আমার সেনাপতিরা কি সবাই রাজার মত নয়? কল্‌নোর অবস্থা কি কর্কমীশের মত নয়? হমাৎ কি অর্পদের মত নয়? আর শমরিয়া কি দামেস্কের মত নয়? সেই সব প্রতিমায় ভরা রাজ্যগুলো আমার হাতে পড়েছে; তাদের মূর্তিগুলো যিরূশালেম আর শমরিয়ার মূর্তিগুলোর চেয়ে অনেক ভাল। আমি শমরিয়া ও তার প্রতিমাগুলোর প্রতি যা করেছি যিরূশালেম ও তার মূর্তিগুলোর প্রতি তা-ই করব।” প্রভু সিয়োন পাহাড় ও যিরূশালেমের বিরুদ্ধে তাঁর সব কাজ শেষ করে বলবেন, “আসিরিয়ার রাজার অহংকারী অন্তরের কাজ ও তার গর্বভরা চাহনির জন্য আমি তাকে শাস্তি দেব, কারণ সে বলে, ‘আমার হাতের শক্তিতে আর জ্ঞানের দ্বারা আমি এটা করেছি, কারণ আমার বুদ্ধি আছে। জাতিদের সীমা আমি দূর করে দিয়েছি, তাদের ধন-সম্পদ লুট করেছি; শক্তিশালী বীরের মত আমি তাদের রাজাদের দমন করেছি। যেমন করে কেউ পাখীর বাসায় হাত দেয় তেমনি করে আমি জাতিদের ধন-সম্পদে হাত দিয়েছি। লোকে যেমন করে পড়ে থাকা ডিম জড়ো করে তেমনি করে পৃথিবীর সমস্ত দেশকে আমি জড়ো করেছি। কেউ ডানা নাড়ে নি কিম্বা কেউ কিচির মিচির করবার জন্য মুখ খোলে নি।’ ” কুড়াল কি কাঠুরের উপরে নিজেকে উঠায় কিম্বা করাত কি কাঠ-মিস্ত্রির সামনে বড়াই করে? না, তা হতে পারে না। লাঠি লাঠিয়ালকে চালাতে পারে না ও গদা গদাধারীকে ঘুরাতে পারে না, কারণ গদাধারী তো কাঠের জিনিস নয়। সেইজন্য সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু আসিরিয়ার শক্তিশালী যোদ্ধাদের উপর একটা ক্ষয়-করা রোগ পাঠিয়ে দেবেন; তার জাঁকজমকের নীচে জ্বলন্ত শিখার মত করে আগুন জ্বালানো হবে। ইস্রায়েলের আলো হবেন আগুনের মত; তাদের পবিত্রজন হবেন একটা শিখার মত। সেই আগুন একদিনে তার সব কাঁটাঝোপ আর কাঁটাগাছ পুড়িয়ে ফেলবে। যেমন করে একজন রোগী ক্ষয় হয়ে যায়, তেমনি করে সেই আগুন আসিরিয়ার সব গভীর বন ও উর্বর ক্ষেত-খামার সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলবে। তার বনের বাকী গাছগুলো সংখ্যায় এত কম হবে যে, একজন ছোট ছেলেও তা গুণে লিখতে পারবে। সেই দিন ইস্রায়েলের বেঁচে থাকা লোকেরা, অর্থাৎ যাকোবের বংশের বাকী লোকেরা তাদের আঘাতকারীদের উপর আর নির্ভর করবে না, কিন্তু সদাপ্রভুর উপর, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের উপর সত্যিই নির্ভর করবে। বেঁচে থাকা লোকেরা ফিরে আসবে; যাকোবের বাকী লোকেরা শক্তিশালী ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসবে। হে ইস্রায়েল, যদিও তোমার লোকসংখ্যা সমুদ্র-পারের বালুকণার মত তবুও মাত্র অল্প লোকই ফিরে আসবে। ইস্রায়েলের জন্য ধ্বংস ঠিক করা আছে এবং সেই ন্যায্য শাস্তি তাদের উপর আসবেই আসবে। গোটা দেশের উপর যে ধ্বংস ঠিক করা আছে সেইমত সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু কাজ করবেন। সেইজন্য সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “হে আমার লোকেরা, তোমরা যারা সিয়োনে থাক, যদিও আসিরিয়েরা মিসর দেশের মত করে তোমাদের লাঠি দিয়ে মারে আর তোমাদের বিরুদ্ধে গদা তোলে তবুও তোমরা তাদের ভয় কোরো না। তোমাদের উপরে আমার ক্রোধ খুব শীঘ্রই শেষ হবে, আর তা আসিরিয়দের ধ্বংস করবে।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু ওরেব পাহাড়ে মিদিয়নকে আঘাত করবার সময় যেমন করেছিলেন তেমনি করে তিনি চাবুক দিয়ে আসিরিয়দের মারবেন। মিসরে যেমন করেছিলেন তেমনি করেই তিনি জলের উপরে তাঁর লাঠি উঠাবেন। সেই দিন তোমাদের কাঁধ থেকে তাদের বোঝা, তোমাদের ঘাড় থেকে তাদের জোয়াল তুলে নেওয়া হবে; তোমরা মোটা হয়েছ বলে সেই জোয়াল ভেংগে পড়বে। তারা অয়াতে ঢুকেছে, মিগ্রোণ পার হয়ে গেছে; তারা মিক্‌মসে তাদের জিনিসপত্র রেখে গেছে। তারা গিরিপথ পার হয়ে এসে বলছে, “আমরা গেবাতে ছাউনি ফেলে রাত কাটাব।” এতে রামা কাঁপছে, শৌলের গিবিয়ার লোকেরা পালিয়ে যাচ্ছে। হে গল্লীমের লোকেরা, তোমরা চিৎকার কর। হে লয়িশার লোকেরা, তোমরা কান দাও। হায়, অনাথোৎ! মদ্‌মেনার লোকেরা পালিয়ে যাচ্ছে; গেবীমের লোকেরা লুকাচ্ছে। আজকে আসিরিয়েরা নোবে গিয়ে থামবে; তারা সিয়োন-কন্যার পাহাড়ের দিকে, অর্থাৎ যিরূশালেমের পাহাড়ের দিকে ঘুষি বাগাচ্ছে। দেখ, সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু মহাশক্তিতে ডালগুলো ভেংগে ফেলবেন। উঁচু উঁচু গাছগুলো কেটে ফেলা হবে; সেগুলো মাটিতে পড়ে যাবে। তিনি লোহার অস্ত্র দিয়ে বনের ঘন ঝোপ কেটে ফেলবেন, আর শক্তিশালী একজনের দ্বারা লেবাননের গাছগুলো ধ্বংস করা হবে। যিশয়ের গোড়া থেকে একটা নতুন চারা বের হবেন; তাঁর মূলের সেই চারায় ফল ধরবে। তাঁর উপর থাকবেন সদাপ্রভুর আত্মা, জ্ঞান ও বুঝবার আত্মা, পরামর্শ ও শক্তির আত্মা, বুদ্ধি ও সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ের আত্মা। তিনি সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ে আনন্দিত হবেন। তিনি চোখে যা দেখবেন তা দিয়ে বিচার করবেন না, কিম্বা কানে যা শুনবেন তা দিয়ে মীমাংসা করবেন না; কিন্তু অভাবীদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন, আর পৃথিবীর গরীবদের ব্যাপার সততার সংগে মীমাংসা করবেন। লাঠির মত করে তিনি মুখের কথায় পৃথিবীকে আঘাত করবেন, আর দুষ্টদের মেরে ফেলবেন তাঁর মুখের শ্বাসে। সততা হবে তাঁর কোমর-বাঁধনি আর বিশ্বস্ততা হবে তাঁর কোমরে জড়াবার পটি। নেকড়েবাঘ ভেড়ার বাচ্চার সংগে বাস করবে, চিতাবাঘ শুয়ে থাকবে ছাগলের বাচ্চার সংগে; গরুর বাচ্চা, যুব সিংহ ও মোটাসোটা বাছুর একসংগে থাকবে, আর ছোট ছেলে তাদের চরাবে। গরু ও ভাল্লুক একসংগে চরবে, আর তাদের বাচ্চারা একসংগে শুয়ে থাকবে; সিংহ গরুর মত খড় খাবে। কেউটে সাপের গর্তের কাছে ছোট শিশু খেলা করবে, আর ছোট ছেলেমেয়ে বিষাক্ত সাপের গর্তে হাত দেবে। আমার পবিত্র পাহাড়ের কোন জায়গায় কেউ ক্ষতিও করবে না, ধ্বংসও করবে না, কারণ সমুদ্র যেমন জলে পরিপূর্ণ থাকে তেমনি সদাপ্রভুর বিষয়ে জ্ঞানে পৃথিবী পরিপূর্ণ হবে। সেই দিন যিশয়ের মূল সব জাতির জন্য পতাকার মত হয়ে দাঁড়াবেন; সব জাতি তাঁর কাছে জড়ো হবে এবং তাঁর বিশ্রামের স্থান গৌরবময় হবে। সেই দিন প্রভু তাঁর বেঁচে থাকা লোকদের আসিরিয়া থেকে, মিসর ও পথ্রোষ থেকে, কূশ, এলম, বাবিল, হমাৎ ও দ্বীপগুলো থেকে উদ্ধার করে আনবার জন্য দ্বিতীয়বার তাঁর হাত বাড়িয়ে দেবেন। তিনি জাতিদের জন্য একটা পতাকা তুলবেন আর বিদেশে বন্দী থাকা ইস্রায়েলীয়দের জড়ো করবেন; যিহূদার ছড়িয়ে থাকা লোকদের তিনি পৃথিবীর চারদিক থেকে একত্র করবেন। ইফ্রয়িমের হিংসা দূর হয়ে যাবে এবং যিহূদার শত্রুভাব আর থাকবে না। ইফ্রয়িম যিহূদার উপর হিংসা করবে না, যিহুদাও ইফ্রয়িমের সংগে শত্রুতা করবে না। তারা পশ্চিম দিকে পলেষ্টীয়দের দেশের ঢালু জায়গায় ছোঁ মারবে, তাঁরা একসংগে পূর্ব দিকের দেশ লুট করবে। তারা ইদোম ও মোয়াব দখল করে নেবে আর অম্মোনীয়েরা তাদের অধীন হবে। সদাপ্রভু সুয়েজ উপসাগর শুকিয়ে ফেলবেন; তিনি গরম শুকনা বাতাস দিয়ে ইউফ্রেটিস নদীর উপরে তাঁর শক্তি দেখাবেন। তিনি সেটা ভাগ করে সাতটা নালা বানাবেন, যাতে লোকে জুতা পায়ে পার হতে পারে। মিসর থেকে বের হয়ে আসবার সময় যেমন ইস্রায়েলীয়দের জন্য একটা পথ হয়েছিল তেমনি তাঁর বেঁচে থাকা লোকদের জন্য আসিরিয়া থেকে একটা রাজপথ হবে। সেই দিন তুমি বলবে, “হে সদাপ্রভু, আমি তোমার গৌরব করব, কারণ তুমি আমার উপর ত্রেুাধ প্রকাশ করেছিলে; কিন্তু এখন তোমার ক্রোধ থেমে গেছে আর তুমি আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছ। সত্যি, ঈশ্বরই আমার উদ্ধারকর্তা; আমি তাঁর উপর নির্ভর করব, ভয় করব না। সদাপ্রভু, সদাপ্রভুই আমার শক্তি ও আমার গান; তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা হয়েছেন।” এজন্য তোমরা আনন্দের সংগে উদ্ধারের সব ফোয়ারা থেকে জল তুলবে। সেই দিন তোমরা বলবে, “সদাপ্রভুকে ধন্যবাদ দাও, তাঁর গুণের কথা ঘোষণা কর; তিনি যা করেছেন তা সব জাতিকে জানাও আর ঘোষণা কর যে, তিনি মহান। সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান কর, কারণ তিনি গৌরবময় কাজ করেছেন; সারা জগতে যেন এই কথা জানানো হয়। হে সিয়োনের লোকেরা, তোমরা জোরে চিৎকার কর আর আনন্দে গান গাও, কারণ ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন তোমাদের মধ্যে মহান।” আমোসের ছেলে যিশাইয় বাবিল সম্বন্ধে দর্শন পেয়েছিলেন। সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা গাছপালাহীন পাহাড়ের মাথার উপরে একটা পতাকা তোল; চিৎকার করে যোদ্ধাদের ডাক আর প্রধান লোকদের ফটক দিয়ে ঢুকবার জন্য হাত দিয়ে যোদ্ধাদের ইশারা কর। আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করা লোকদের আমি আদেশ দিয়েছি; আমার ক্রোধ ঢেলে দেবার জন্য আমি আমার যোদ্ধাদের ডেকেছি। আমার গৌরব প্রকাশিত হয়েছে বলে তারা আনন্দে গর্ব করছে।” শোন, পাহাড়-পর্বতের উপরে অনেক লোকের ভিড়ের শব্দ হচ্ছে। শোন, সমস্ত জাতির ও রাজ্যের লোকেরা একসংগে জড়ো হয়ে গোলমাল করছে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু যুদ্ধের জন্য একটা সৈন্যদল সাজাচ্ছেন। তারা দূর দেশ থেকে আসছে, তারা পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে আসছে; সদাপ্রভু তাঁর ক্রোধের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গোটা পৃথিবীটাকে ধ্বংস করবার জন্য আসছেন। তোমরা জোরে জোরে কাঁদ, কারণ সদাপ্রভুর দিন কাছে এসে গেছে; সেই দিন সর্বশক্তিমানের কাছ থেকে ধ্বংস আসবে। সেইজন্য সকলের হাত নিস্তেজ হয়ে পড়বে আর সমস্ত লোক সাহস হারাবে। তারা ভীষণ ভয় পাবে, তাদের ব্যথা ও দারুণ যন্ত্রণা হবে, প্রসবকারিণীর মত তারা ব্যথায় মোচড়াবে, তারা বুদ্ধিহারা হয়ে একে অন্যের দিকে তাকাবে এবং তাদের মুখ আগুনের শিখার মত হবে। দেখ, সদাপ্রভুর দিন আসছে। তা নিষ্ঠুরতা, উপ্‌চে পড়া ক্রোধ ও জ্বলন্ত অসন্তোষ নিয়ে আসছে; পৃথিবীকে ধ্বংসস্থান করবার জন্য আর তার মধ্যেকার পাপীদের বিনষ্ট করবার জন্য আসছে। তখন আকাশের তারা ও নক্ষত্রপুঞ্জ আলো দেবে না; সূর্য উঠবার সময়েও অন্ধকার থাকবে আর চাঁদও আলো দেবে না। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি মন্দতার জন্য জগতকে শাস্তি দেব; দুষ্টদের অন্যায়ের জন্য তাদের শাস্তি দেব। আমি গর্বিতদের বড়াই করা শেষ করে দেব আর নিষ্ঠুরদের অহংকার ভেংগে দেব। তখন আমি মানুষকে পাওয়া খাঁটি সোনা পাওয়ার চেয়েও কঠিন করব, ওফীরের সোনা পাওয়ার চেয়ে আরও বেশী কঠিন করব। সেইজন্য আমি মহাকাশকে কাঁপাব; সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উপ্‌চে পড়া ক্রোধে তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধের দিনে পৃথিবী তার জায়গা থেকে নড়ে যাবে। “শিকারের জন্য তাড়ানো হরিণের মত, রাখাল ছাড়া ভেড়ার মত প্রত্যেকে তার নিজের লোকদের কাছে ফিরে যাবে, প্রত্যেকে তার নিজের দেশে পালিয়ে যাবে। যাদের পাওয়া যাবে তাদের অস্ত্র দিয়ে বিদ্ধ করা হবে; যাদের ধরা হবে তারা তলোয়ারের ঘায়ে মারা পড়বে। তাদের চোখের সামনে শিশুদের আছড়ে মারা হবে; তাদের ঘর-বাড়ী লুট করা হবে ও স্ত্রীদের ধর্ষণ করা হবে। “দেখ, আমি তাদের বিরুদ্ধে মাদীয়দের খুঁচিয়ে তুলব। তারা রূপার দিকেও খেয়াল করবে না আর সোনা নিয়েও আনন্দ করবে না। তারা ধনুক দিয়ে যুবকদের মেরে ফেলবে; তারা শিশুদের প্রতি কোন দয়া করবে না কিম্বা ছেলেমেয়েদের দিকে মমতার চোখে তাকাবে না। সমস্ত রাজ্যের মণি বাবিলকে, কলদীয়দের গৌরবের বাবিলকে ঈশ্বর সদোম ও ঘমোরার মত ধ্বংস করবেন। তার মধ্যে আর কখনও বাসস্থান হবে না কিম্বা বংশের পর বংশ ধরে কেউ সেখানে বাস করবে না। কোন আরবীয় সেখানে তাম্বু খাটাবে না, কোন রাখাল সেখানে তার পশুপালকে বিশ্রাম করাবে না। কিন্তু মরুভূমির প্রাণীরা সেখানে শুয়ে থাকবে, সেখানকার ঘর-বাড়ীগুলো হায়েনায় পরিপূর্ণ হবে, উটপাখীরা সেখানে বাস করবে আর বুনো ছাগলেরা লাফিয়ে বেড়াবে। সেখানকার দুর্গের মধ্যে শিয়াল ডাকবে আর খেঁকশিয়াল সৌখিন ঘর-বাড়ীর মধ্যে থাকবে। বাবিলের সময় এসে গেছে, তার দিনগুলো আর বাড়ানো হবে না।” সদাপ্রভু যাকোবের প্রতি মমতা করবেন; তিনি আবার ইস্রায়েলকে বেছে নেবেন এবং তাদের নিজেদের দেশে বসিয়ে দেবেন। বিদেশীরা তাদের সংগে যোগ দেবে আর তারা যাকোবের বংশের সংগে যুক্ত হবে। অন্যান্য জাতিরা তাদের নিয়ে তাদের নিজেদের দেশে পৌঁছে দেবে। সদাপ্রভুর দেশে অন্যান্য জাতিরা ইস্রায়েলীয়দের দাস-দাসী হবে। যারা তাদের বন্দী করেছিল এখন তাদেরই তারা বন্দী করবে আর তাদের অত্যাচারকারীদের উপরে তারা কর্তা হবে। দুষ্টদের লাঠি আর শাসনকর্তাদের শাসনদণ্ড সদাপ্রভুই ভেংগে দিয়েছেন। অত্যাচারী ভীষণ রাগ করে জাতিদের অনবরত আঘাত করত, রাগে সে বারবার তাদের অত্যাচার করে দমন করত। এখন সমস্ত পৃথিবী রেহাই ও শান্তি পেয়েছে; সেইজন্য তারা আনন্দে গান গাইছে। এমন কি, বেরস আর লেবাননের এরস গাছও আনন্দের সংগে বাবিলের রাজাকে বলছে, ‘এখন তোমাকে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে কোন কাঠুরেই আর আমাদের কাটতে আসে না।’ “তুমি মৃতস্থানে আসছ বলে মৃতস্থানের লোকেরা তোমার সংগে দেখা করবার জন্য ভীষণ অস্থির হয়ে উঠেছে। তাই মৃতদের আত্মা উঠছে যেন তারা তোমার সংগে দেখা করতে পারে। যারা এই জগতের নেতা ছিল তারা সবাই উঠছে; যারা জাতিদের উপরে রাজা ছিল তারা সবাই তাদের সিংহাসন থেকে উঠছে। তারা সবাই তোমাকে ডেকে বলবে, ‘তুমিও আমাদের মত দুর্বল হয়ে পড়েছ; তুমি আমাদের মতই হয়েছ।’ “তোমার সব জাঁকজমক মৃতস্থানে নামিয়ে আনা হয়েছে; তার সংগে তোমার সব বীণার শব্দ নামানো হয়েছে। তোমার নীচে ছড়িয়ে রয়েছে পোকা আর সেগুলো তোমাকে ঢেকে ফেলেছে। হে শুকতারা, ভোরের সন্তান, তুমি তো স্বর্গ থেকে পড়ে গেছ। তুমি একদিন জাতিদের পরাজিত করেছ আর তোমাকেই এখন পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তুমি মনে মনে বলেছ, ‘আমি স্বর্গে উঠব, ঈশ্বরের তারাগুলোর উপরে আমার সিংহাসন উঠাব; যেখানে দেবতারা জড়ো হয় উত্তর দিকের সেই পাহাড়ের উপরে আমি সিংহাসনে বসব। আমি মেঘের মাথার উপরে উঠব; আমি মহান ঈশ্বরের সমান হব।’ কিন্তু তোমাকে মৃতস্থানে নামানো হয়েছে, হ্যাঁ, সেই গর্তের সব চেয়ে নীচু জায়গায় নামানো হয়েছে। যারা তোমাকে দেখে তারা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা তোমার অবস্থা দেখে বলে, ‘যে পৃথিবীকে নাড়াত আর রাজ্যগুলোকে কাঁপাত এ কি সেই লোক? এ কি সে, যে জগতকে মরুভূমির মত করত, শহরগুলোকে উলটে ফেলত, আর বন্দীদের বাড়ী ফিরে যেতে দিত না?’ “জাতিদের সব রাজা সম্মানের সংগে নিজের নিজের কবরে শুয়ে আছেন। কিন্তু তোমাকে গাছের বাদ দেওয়া ডালের মত কবরের বাইরে ফেলে রাখা হয়েছে। তলোয়ার দিয়ে যাদের মেরে ফেলে মৃতস্থানের সবচেয়ে নীচু জায়গায় পাঠানো হয়েছে তাদের দেহ দিয়ে তুমি ঢাকা পড়েছ। তুমি পায়ে মাড়ানো মৃতদেহের মত হয়েছ। তুমি অন্যান্য রাজাদের মত কবর পাবে না, কারণ তোমার দেশকে তুমি ধ্বংস করেছ আর তোমার লোকদের মেরে ফেলেছ। দুষ্টদের বংশধরদের কথা আর কখনও উল্লেখ করা হবে না। তাদের পূর্বপুরুষদের পাপের দরুন তাদের ছেলেদের মেরে ফেলবার জন্য একটা জায়গা ঠিক কর। দেশ অধিকার করবার জন্য তারা আর উঠবে না; তারা পৃথিবীকে আর তাদের শহর দিয়ে পরিপূর্ণ করবে না।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “আমি তাদের বিরুদ্ধে উঠব; বাবিলের নাম ও তার বেঁচে থাকা লোকদের আর তার বংশধরদের আমি একেবারে শেষ করে দেব। আমি তাকে শজারুদের জায়গা ও জলা জায়গা করব। ধ্বংসের ঝাঁটা দিয়ে আমি তাকে ঝাড়ু দেব। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু শপথ করে বলেছেন, “সত্যিই, আমি যেমন ঠিক করেছি তেমনই ঘটবে, আর তা স্থির থাকবে। আমার দেশের মধ্যে আমি আসিরিয়ার রাজাকে চুরমার করব আর আমার পাহাড়-পর্বতের উপরে তাকে পায়ের নীচে মাড়াব। তখন আমার লোকদের কাছ থেকে তার জোয়াল দূর হয়ে যাবে ও তাদের কাঁধ থেকে তার বোঝা সরে যাবে।” গোটা দুনিয়ার জন্য এই ব্যবস্থাই ঠিক করা হয়েছে আর সমস্ত জাতির উপরে এই হাতই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই এই সব ঠিক করেছেন, তাই কে তা বিফল করতে পারে? তাঁর হাত বাড়ানো রয়েছে, কে তা গুটাতে পারে? যে বছরে রাজা আহস মারা গিয়েছিলেন সেই বছরে যিশাইয় এই ভবিষ্যদ্বাণী পেয়েছিলেন। হে পলেষ্টিয়া, যে লাঠি তোমাকে আঘাত করত তা ভেংগে গেছে বলে তোমরা কেউ আনন্দ কোরো না। সাপের গোড়া থেকে বের হয়ে আসবে কেউটে সাপ, আর সেই সাপ থেকে বেরিয়ে আসবে উড়ন্ত বিষাক্ত সাপ। সবচেয়ে গরীব লোকেরা খাবার পাবে আর অভাবীরা নিরাপদে শুয়ে থাকবে। কিন্তু তোমার শিকড়কে আমি দুর্ভিক্ষ দিয়ে ধ্বংস করব, তাতে তোমার বেঁচে থাকা লোকেরা মরে যাবে। হে ফটক, বিলাপ কর। হে শহর, কাঁদ। হে পলেষ্টিয়া, তোমার সব কিছু মিলিয়ে যাক। উত্তর দিক থেকে ধূমার মেঘ আসছে, সেই সৈন্যদল থেকে একজন সৈন্যও পিছিয়ে পড়ছে না। এই জাতির দূতদের কি উত্তর দেওয়া যাবে? তাদের বলা হবে, “সদাপ্রভু সিয়োনকে স্থাপন করেছেন এবং তার মধ্যে অত্যাচারিত হওয়া তাঁর লোকেরা আশ্রয় পাবে।” মোয়াবের সম্বন্ধে সদাপ্রভুর কথা এই: মোয়াবের মধ্যেকার আর্‌ নামে শহরটা এবং মোয়াবের মধ্যেকার কীর শহরটা এক রাতের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেছে। মোয়াবের লোকেরা কাঁদবার জন্য দীবোনের মন্দিরে ও পূজার উঁচু স্থানে উঠে গেছে। তারা নবো ও মেদবার জন্য শোক করছে। তাদের সকলের মাথা কামানো হয়েছে এবং দাড়িও কাটা হয়েছে। তারা রাস্তায় রাস্তায় ছালার চট পরে বেড়াচ্ছে। তারা সবাই ছাদের উপরে ও শহর-চকের মধ্যে শোক করছে। তারা ভীষণ কান্নাকাটি করছে। হিষ্‌বোন ও ইলিয়ালী কাঁদছে; তাদের গলার স্বর যহস পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। সেইজন্য মোয়াবের সৈন্যেরাও কাঁদছে এবং তাদের অন্তর ভয়ে কাঁপছে। মোয়াবের জন্য আমার অন্তর কাঁদছে; তার লোকেরা সোয়রের দিকে ইগ্লৎ-শলিশীয়া পর্যন্ত পালিয়ে যাচ্ছে। তারা কাঁদতে কাঁদতে লূহীতের পাহাড়ী পথে উঠে যাচ্ছে; তাদের জায়গা ধ্বংস হয়েছে বলে তারা বিলাপ করতে করতে হোরণয়িমের রাস্তায় চলছে। নিম্রীমের সব জল নষ্ট করা হয়েছে ও ঘাস শুকিয়ে গেছে; গাছ-গাছড়া নেই, সবুজ বলতে আর কিছুই বাকী নেই। সেইজন্য তাদের জমানো ধন-সম্পদ তারা উইলো গাছের খাদের ওপাশে নিয়ে যাচ্ছে। মোয়াবের সীমার চারপাশে তাদের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে; ইগ্লয়িম ও বের-এলীম পর্যন্ত তাদের বিলাপ শোনা যাচ্ছে। দীমোনের জল রক্তে ভরা, তবুও আমি তার উপরে আরও দুঃখ আনব; মোয়াবের পালিয়ে যাওয়া লোকদের উপরে, আর যারা দেশে বেঁেচ থাকবে তাদের উপরে আমি সিংহ নিয়ে আসব। হে মোয়াবীয়েরা, তোমরা মরু-এলাকার মধ্যেকার সেলা থেকে সিয়োন-পাহাড়ে দেশের শাসনকর্তার কাছে উপহার হিসাবে কতগুলো ভেড়ার বাচ্চা পাঠিয়ে দাও। বাসা থেকে ঠেলে বের করে দিলে পাখী যেমন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায় তেমনি করে মোয়াবের লোকেরা অর্ণোন নদীর হেঁটে পার হওয়ার জায়গায় ঘুরে বেড়াবে। তারা বলবে, “আমাদের পরামর্শ দাও; কি করা উচিত বল। তোমার দুপুর বেলার ছায়াকে রাতের অন্ধকারের মত কর- যারা পালিয়ে যাচ্ছে তাদের লুকিয়ে রাখ, আর যারা রক্ষা পাবার জন্য আশ্রয় চায় তাদের ধরিয়ে দিয়ো না। মোয়াবের পালিয়ে যাওয়া লোকদের তোমাদের সংগে থাকতে দাও; ধ্বংসকারীদের সামনে থেকে তাদের আড়াল করে রাখ।” যিহূদায় অত্যাচারীরা শেষ হয়ে যাবে; ধ্বংসের কাজ থেমে যাবে। দেশে আক্রমণকারীদের আর দেখা যাবে না। অটল ভালবাসা দিয়ে দায়ূদের রাজবাড়ীতে একটা সিংহাসন স্থাপন করা হবে; একজন বিশ্বস্ত লোক তার উপরে বসবেন। তিনি সততার সংগে বিচার করবেন এবং তাড়াতাড়ি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। আমরা মোয়াবের অহংকারের কথা শুনেছি, সে খুব অহংকারী। তার গর্বের কথা, নিজেকে বড় করবার কথা ও সব অহংকারের কথা শুনেছি, কিন্তু তার সব বড়াই মিথ্যা। কাজেই মোয়াবীয়েরা তাদের দেশের জন্য একসংগে জোরে জোরে কাঁদবে, কীর্‌-হরসতের কিশমিশের পিঠার জন্য তোমরা জোরে জোরে কাঁদবে ও দুঃখ করবে। হিষ্‌বোনের ক্ষেতগুলো আর সিব্‌মার আংগুর লতা শুকিয়ে গেছে। জাতিদের শাসনকর্তারা ভাল ভাল আংগুর গাছ মাড়িয়ে গেছে; সেগুলো একদিন যাসের পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাত আর মরু-এলাকার দিকে ছড়িয়ে যেত। সেগুলোর লতা আরও ছড়িয়ে সমুদ্র পার হয়ে গিয়েছিল। সেইজন্য আমি যাসেরের মতই সিব্‌মার আংগুর লতার জন্য কাঁদছি। হে হিষ্‌বোন, হে ইলিয়ালী, আমি চোখের জলে তোমাদের ভিজাব। পাকা ফল ও ফসল কাটবার জন্য তোমাদের আনন্দের চিৎকার থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলের বাগানগুলো থেকে আনন্দ ও খুশীর ভাব দূর করা হয়েছে। আংগুর ক্ষেতে আর কেউ গান বা চিৎকার করে না, আর আংগুর মাড়াইয়ের জায়গায় কেউ মাড়াই করে রস বের করে না, কারণ সেই চিৎকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার অন্তর মোয়াবের জন্য, আমার ভিতরটা কীর্‌-হরসতের জন্য বীণার মত করে কাঁদছে। মোয়াব যখন বুঝতে পারবে যে, তার পূজার উঁচু স্থানে গিয়ে লাভ হচ্ছে না তখন প্রার্থনার জন্য সে তার মন্দিরে যাবে, কিন্তু তাতেও কোন লাভ হবে না। সদাপ্রভু মোয়াব সম্বন্ধে এই কথা আগেই বলেছেন। কিন্তু এখন সদাপ্রভু বলছেন, “চুক্তিতে বাঁধা চাকর যেমন বছর গোণে তেমনি করে ঠিক তিন বছরের মধ্যে মোয়াবের জাঁকজমক ও তার বহু সংখ্যক লোকের সবাইকে তুচ্ছ করা হবে এবং বেঁচে থাকা লোকেরা হবে সংখ্যায় অল্প ও দুর্বল।” দামেস্ক সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী এই: সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, দামেস্ক আর শহর থাকবে না, তা হবে একটা ধ্বংসের স্তূপ। অরোয়েরের গ্রামগুলো ত্যাগ করে লোকেরা চলে যাবে; পশুর পাল সেগুলো অধিকার করবে। তারা সেখানে শুয়ে থাকবে; কেউ তাদের ভয় দেখাবে না। ইফ্রয়িমে আর কোন দুর্গ থাকবে না এবং দামেস্কে রাজশক্তি থাকবে না; অরামের বেঁচে থাকা লোকেরা ইস্রায়েলীয়দের মত গৌরবহীন হবে।” এই হল সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কথা। “সেই দিন যাকোবের গৌরব ্নান হবে; তার দেহের চর্বি গলে যাবে। লোকে যেমন করে ক্ষেতের শস্য কেটে জড়ো করে, ইস্রায়েলীয়দের অবস্থা তেমনই হবে। রফায়ীমের উপত্যকায় লোকে যেমন করে পড়ে থাকা শস্য কুড়ায় তাদের অবস্থা তেমনই হবে। তবুও কিছু শস্য পড়ে থাকবে। যেমন করে জলপাই গাছ ঝাড়া হলে পর উপরের ডালগুলোতে দু’তিনটা জলপাই থেকে যায় আর যে ডালে বেশী ফল ধরে সেখানে চার-পাঁচটা ফল থেকে যায়, তাদের অবস্থা তেমনই হবে।” ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন। সেই দিন লোকে তাদের সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকাবে, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের দিকে চোখ ফিরাবে। তারা নিজেদের হাতের তৈরী বেদীর দিকে চেয়ে দেখবে না, আর তাদের হাতের তৈরী আশেরা-খুঁটি ও ধূপ-বেদীর প্রতি কোন মনোযোগও দেবে না। সেই দিন তাদের শক্তিশালী শহরগুলো বন-জংগলের মত হবে। যেমন করে ইস্রায়েলীয়দের দরুন লোকে তাদের শহর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল তাদের অবস্থা তেমনই হবে। তাদের দেশ ধ্বংসস্থান হবে। তোমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরকে তুমি ভুলে গেছ; সেই আশ্রয়-পাহাড়কে তুমি মনে রাখ নি। সেইজন্য যদিও তুমি সুন্দর সুন্দর চারা আর বিদেশ থেকে আনা আংগুর লতা লাগাচ্ছ, আর সেই দিনই তুমি সেগুলো বাড়িয়ে তুলছ আর সকাল বেলায় তাতে কুঁড়ি ধরাচ্ছ, তবুও রোগ এবং ভীষণ ব্যথার দিনে কাটবার জন্য তেমন কোন ফসল থাকবে না। হায় হায়, অনেক লোকের গর্জন শোনা যাচ্ছে! গর্জনকারী সাগরের মতই জাতিরা গর্জন করছে। জাতিদের ভীষণ চিৎকার শোনা যাচ্ছে। ভয়ংকর বন্যার জলের গর্জনের মতই তারা চিৎকার করছে। ভয়ংকর বন্যার জলের শব্দের মত যদিও লোকেরা গর্জন করছে, তবুও তিনি ধমক দিলে তারা দূরে পালিয়ে যাবে। বাতাসের মুখে পাহাড়ের উপরকার তুষের মত, ঝড়ের মুখে গড়াগড়ি খাওয়া ধুলার মত তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। সন্ধ্যা বেলায় তারা ভীষণ ভয় পাবে আর সকাল হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। আমাদের লুটকারীদের জন্য এ-ই আছে; এটাই আমাদের লুটকারীদের ভাগ্য। হায়! কূশ দেশের নদীগুলোর ওপারে এমন একটা দেশ আছে যেখানে পাখার ঝিঁঝিঁ শব্দ শোনা যায়। সেই দেশ জলের উপর দিয়ে নলের তৈরী নৌকায় দূত পাঠায়। হে দ্রুতগামী দূতেরা, যে জাতি লম্বা ও মোলায়েম চামড়ার, যে জাতিকে কাছের ও দূরের লোকেরা ভয় করে, যে শক্তিশালী জাতি অন্যদের পায়ে মাড়ায় এবং যার দেশ নদ-নদী দিয়ে ভাগ করা, তোমরা তার কাছে ফিরে যাও। হে জগতের লোকেরা, হে পৃথিবীতে বাসকারী সব লোক, তোমরা দেখো, কখন পাহাড়-পর্বতের উপরে পতাকা তোলা হবে, আর শুনো, কখন তূরী বাজানো হবে। সদাপ্রভু আমাকে বলছেন, “পরিষ্কার আকাশে রোদের তেজের মত, গরমকালে ফসল কাটবার সময়ে কুয়াশার মেঘের মত আমি চুপ করে আমার বাসস্থান থেকে দেখতে থাকব।” ফসল কাটবার আগে যখন ফুল আর থাকবে না আর সেই ফুল আংগুর হয়ে পেকে যাবে সেই সময় ছুরি দিয়ে তিনি কচি ডালগুলো কেটে ফেলবেন আর ছড়িয়ে পড়া ডালগুলো দূর করে দেবেন। পাহাড়ের শকুন ও বুনো পশুদের কাছে তাদের সবাইকে ফেলে রাখা হবে; সারা গরমকাল ধরে শকুনেরা তাদের খাবে আর বুনো পশুরা খাবে সারা শীতকাল ধরে। সেই সময় সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কাছে সেই লম্বা ও মোলায়েম চামড়ার জাতির কাছ থেকে উপহার আসবে। এ সেই জাতি যাকে কাছের ও দূরের লোকেরা ভয় করে। এ সেই শক্তিশালী জাতি যে অন্যদের পায়ে মাড়ায় এবং যার দেশ নদ-নদী দিয়ে ভাগ করা। সেই জাতির উপহারগুলো সিয়োন পাহাড়ে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর থাকবার জায়গায় আনা হবে। মিসর দেশ সম্বন্ধে সদাপ্রভুর কথা এই: দেখ, সদাপ্রভু একটা দ্রুতগামী মেঘে করে মিসর দেশে আসছেন। তাঁর সামনে মিসরের প্রতিমাগুলো কাঁপবে, আর মিসরীয়দের অন্তরে সাহস থাকবে না। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি এক মিসরীয়কে অন্য মিসরীয়ের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুলব; তাতে ভাই ভাইয়ের বিরুদ্ধে, প্রতিবেশী প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে, শহর শহরের বিরুদ্ধে, আর রাজ্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মিসরীয়েরা মনের বল হারিয়ে ফেলবে, আর আমি তাদের পরিকল্পনা নিষ্ফল করে দেব। তারা প্রতিমা ও মৃতদের আত্মার কাছে, ভূতের মাধ্যমের কাছে, আর মন্দ আত্মাদের সংগে সম্বন্ধ রক্ষাকারীদের কাছে পরামর্শ চাইবে। একজন কড়া মনিবের হাতে আমি মিসরীয়দের তুলে দেব; একজন ভয়ংকর রাজা তাদের শাসন করবে।” এই হল সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভুর কথা। নীল নদীর জল শুকিয়ে যাবে, আর নদীর বুকে চর পড়ে তা ফেটে যাবে। খালগুলোতে দুর্গন্ধ হবে; মিসরের নদীগুলো ছোট হয়ে শুকিয়ে যাবে; নল ও খাগড়া শুকিয়ে যাবে; নীল নদীর পারের সব গাছ-গাছড়াও শুকিয়ে যাবে। নদীর ধারের বীজ লাগানো ক্ষেত শুকিয়ে ফেটে যাবে; চারাগুলো শুকিয়ে উড়ে যাবে, কিছুই থাকবে না। জেলেরা হায় হায় করবে আর নীল নদীতে যারা বড়শী ফেলে তারা বিলাপ করবে। যারা জলে জাল ফেলে তারা দুর্বল হয়ে পড়বে। যারা মসীনার সুতা প্রস্তুত করে আর যারা পাতলা কাপড় বোনে তারা নিরাশ হবে। জগৎ-সংসারের সব ভিত্তি ভেংগে পড়বে আর দিন-মজুরেরা সবাই প্রাণে দুঃখ পাবে। সোয়নের উঁচু পদের কর্মচারীরা একেবারে বোকা; ফরৌণের জ্ঞানী পরামর্শদাতারা অর্থহীন উপদেশ দেয়। তোমরা ফরৌণকে কেমন করে বলতে পার, “আমি জ্ঞানী লোকদের একজন এবং খুব পুরানো দিনের রাজাদের বংশধর”? তোমার জ্ঞানী লোকেরা এখন কোথায়? মিসরের বিরুদ্ধে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু যা ঠিক করেছেন তা তারা নিজেরা জানুক ও তোমাকে বলুক। সোয়নের উঁচু পদের কর্মচারীরা বোকা হয়েছে, আর নোফের নেতারা ঠকেছে; মিসরের প্রধান লোকেরা মিসরকে বিপথে নিয়ে গেছে। সদাপ্রভু তাদের ভিতরে বিশৃঙ্খলার ভাব সৃষ্টি করেছেন, তাতে মাতাল যেমন তার বমির মধ্যে টলমল করে তেমনি সব কাজে তারা মিসরকে টলমল করায়। মিসরের মধ্যে মাথা বা লেজ, খেজুরের ডাল বা নল-খাগড়া, কেউই কিছু করতে পারবে না। সেই দিন মিসরীয়েরা স্ত্রীলোকদের মত হবে। তাদের বিরুদ্ধে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু হাত উঠাবেন এবং তা দেখে তারা ভয়ে কাঁপবে। মিসরীয়দের কাছে কেউ যিহূদা দেশের নাম করলেই তা তাদের পক্ষে ভীষণ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাদের বিরুদ্ধে যা করবেন বলে ঠিক করেছেন তার জন্য তারা ভয় পাবে। সেই দিন মিসরের পাঁচটি শহর কনানের ভাষা বলবে এবং সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে বলে শপথ করবে। সেই শহরগুলোর মধ্যে একটাকে বলা হবে ধ্বংসের শহর। সেই দিন মিসর দেশের মধ্যে সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা বেদী আর তার সীমানায় একটা স্তম্ভ থাকবে। এই সব হবে মিসর দেশে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা চিহ্ন ও সাক্ষ্য। তাদের অত্যাচারীদের দরুন তারা যখন সদাপ্রভুর কাছে কাঁদবে তখন তিনি তাদের কাছে একজন উদ্ধারকর্তা ও রক্ষাকারীকে পাঠিয়ে দেবেন এবং তিনি তাদের উদ্ধার করবেন। এইভাবে সদাপ্রভু মিসরীয়দের কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন এবং সেই দিন তারা সদাপ্রভুকে স্বীকার করে নেবে। তারা পশু-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করে তাঁর উপাসনা করবে এবং সদাপ্রভুর কাছে মানত করে তা পূরণ করবে। সদাপ্রভু মিসরকে আঘাত করবেন; তিনি তাদের আঘাত করবেন এবং সুস্থও করবেন। তারা সদাপ্রভুর দিকে ফিরবে, আর তিনি তাদের মিনতিতে সাড়া দেবেন ও তাদের সুস্থ করবেন। সেই দিন মিসর থেকে আসিরিয়া পর্যন্ত একটা রাজপথ হবে। আসিরিয়েরা মিসরে এবং মিসরীয়েরা আসিরিয়াতে যাওয়া-আসা করবে। মিসরীয় ও আসিরিয়েরা এক সংগে উপাসনা করবে। সেই দিন মিসর, আসিরিয়া ও ইস্রায়েল মিলে একটা দল হবে এবং তারা হবে পৃথিবীর মধ্যে একটা আশীর্বাদ। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাদের এই বলে আশীর্বাদ করবেন, “আমার লোক মিসর, আমার হাতে গড়া আসিরিয়া ও আমার অধিকার ইস্রায়েল আশীর্বাদযুক্ত হোক।” আসিরিয়া দেশের রাজা সর্গোনের পাঠানো সেনাপতি অস্‌দোদে এসে তা আক্রমণ করে অধিকার করেছিলেন। যে বছর তিনি আক্রমণ করেছিলেন সেই বছরে সদাপ্রভু আমোসের ছেলে যিশাইয়কে বলেছিলেন, “তোমার গা থেকে ছালার চট ও পা থেকে জুতা খুলে ফেল।” এতে যিশাইয় উলংগ হয়ে খালি পায়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। তারপর সদাপ্রভু বললেন, “আমার দাস যিশাইয় যেমন মিসর ও কূশের বিরুদ্ধে একটা চিহ্ন ও ভবিষ্যতের লক্ষণ হিসাবে তিন বছর ধরে উলংগ হয়ে খালি পায়ে ঘুরে বেড়িয়েছে, ঠিক তেমনি করে আসিরিয়ার রাজা মিসরকে লজ্জা দেবার জন্য মিসরীয় ও কূশীয় বন্দীদের ছেলে-বুড়ো সবাইকে উলংগ অবস্থায়, খালি পায়ে ও পেছন-খোলা অবস্থায় নিয়ে যাবে। যারা কূশ দেশের উপর নির্ভর করেছিল এবং মিসরকে নিয়ে বড়াই করেছিল তারা ভয় পাবে ও লজ্জিত হবে। সেই দিন সাগর পারের বাসিন্দারা বলবে, ‘দেখ, যাদের উপর আমরা নির্ভর করেছিলাম এবং সাহায্য পাবার জন্য ও আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য যাদের কাছে গিয়েছিলাম তাদের অবস্থা কি হয়েছে। তাহলে আমরাই বা কি করে বাঁচব?’ ” মরু-সমুদ্র সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী এই: নেগেভে যেমন করে ঘূর্ণিবাতাস বয়ে যায় তেমনি করে মরু-এলাকা থেকে, সেই ভয়ংকর দেশ থেকে একটা বিপদ আসছে। একটা ভীষণ দর্শন আমাকে দেখানো হয়েছে- বিশ্বাসঘাতক বিশ্বাসঘাতকতা করছে, আর লুটকারী লুট করছে। হে এলম, আক্রমণ কর; মাদিয়া, ঘেরাও কর। বাবিল যে সব দুঃখ-কষ্ট ঘটিয়েছে তা আমি বন্ধ করে দেব। আমি পেটের ব্যথায় ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি, স্ত্রীলোকের প্রসব-যন্ত্রণার মত যন্ত্রণা আমাকে ধরেছে। আমি এমন যন্ত্রণা পাচ্ছি যে, শুনতে পাচ্ছি না, এমন ভয় পাচ্ছি যে, দেখতে পাচ্ছি না। আমার অন্তর ধুক্‌ ধুক্‌ করছে; ভীষণ ভয় আমাকে কাঁপিয়ে তুলছে। যে সন্ধ্যাবেলার জন্য আমি অপেক্ষা করে থাকতাম তা এখন আমার কাছে ভয়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা খাবার সাজাচ্ছে, মাদুর বিছাচ্ছে আর খাওয়া-দাওয়া করছে। হে সেনাপতিরা, ওঠো, ঢালে তেল লাগাও। প্রভু আমাকে বলছেন, “তুমি গিয়ে একজন পাহারাদার নিযুক্ত কর। সে যা কিছু দেখবে তার খবর যেন সে দেয়। সে যখন জোড়ায় জোড়ায় ঘোড়সওয়ার দেখবে আর গাধা কিম্বা উটের পিঠে চড়া লোকদের দেখবে, তখন যেন সে সতর্ক হয়, পুরোপুরি সতর্ক হয়।” তখন সেই পাহারাদার চেঁচিয়ে বলবে, “হে আমার প্রভু, দিনের পর দিন উঁচু পাহারা-ঘরে আমি দাঁড়িয়ে থাকি; আমি প্রত্যেক রাতে আমার পাহারা-স্থানেই থাকি। দেখুন, জোড়ায় জোড়ায় ঘোড়সওয়ার আসছে।” তারপর সে বলবে, “বাবিলের পতন হয়েছে, পতন হয়েছে। তার সব দেবতাদের মূর্তিগুলো চুরমার হয়ে মাটিতে পড়ে আছে।” হে আমার লোকেরা, ফসলের মত তোমাদের তো মাড়াই করা হয়েছে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কাছ থেকে, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের কাছ থেকে আমি যা শুনেছি তা তোমাদের জানালাম। দূমা, অর্থাৎ ইদোম সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী এই: সেয়ীর থেকে কেউ আমাকে ডেকে বলল, “পাহারাদার, রাত আর কতক্ষণ আছে? পাহারাদার, রাত আর কতক্ষণ আছে?” পাহারাদার উত্তর দিল, “সকাল হয়ে আসছে, কিন্তু তারপর রাতও আসছে। যদি আবার জিজ্ঞাসা করতে চাও তবে ফিরে এসে আবার জিজ্ঞাসা কোরো।” আরব সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী এই: হে দদানীয় যাত্রীর দল, তোমরা যারা আরবের মরু-এলাকায় তাম্বু খাটাও, তোমরা পিপাসিত লোকদের জন্য জল আন। হে টেমা দেশের বাসিন্দারা, তোমরা পালিয়ে যাওয়া লোকদের জন্য খাবার আন। তারা তলোয়ারের সামনে থেকে, খোলা তলোয়ারের সামনে থেকে, বাঁকানো ধনুকের সামনে থেকে আর ভয়ংকর যুদ্ধের সামনে থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। প্রভু আমাকে বললেন, “চুক্তিতে বাঁধা চাকর যেমন বছর গোণে তেমনি ঠিক এক বছরের মধ্যে কেদরের সমস্ত জাঁকজমক শেষ হয়ে যাবে। কেদরের ধনুকধারী যোদ্ধাদের মধ্যে অল্প লোকই বেঁচে থাকবে। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন।” দর্শন-উপত্যকা সম্বন্ধে সদাপ্রভুর কথা এই: তোমার এখন কি হয়েছে যে, তোমার সব লোকেরা ছাদের উপরে উঠেছে? হে গোলমালে ভরা শহর, হে সোরগোল ও হৈ-হল্লার শহর, তোমার মৃত লোকেরা তো তলোয়ারের আঘাতে মরে নি কিম্বা যুদ্ধেও মরে নি। তোমার নেতারা সব একসংগে পালিয়ে গেছে; ধনুক ব্যবহার না করেই তাদের ধরা হয়েছে। তোমার মধ্যে যাদের ধরা হয়েছিল, যদিও তারা দূরে পালিয়ে গিয়েছিল তবুও তাদের সবাইকে একসংগে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেইজন্য আমি বললাম, “আমার কাছ থেকে চলে যাও; আমাকে খুব করে কাঁদতে দাও। আমার লোকেরা ধ্বংস হয়েছে বলে আমাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা কোরো না।” সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভুর কাছ থেকে দর্শন-উপত্যকায় ভীষণ ভয়ের, পায়ে মাড়াবার এবং বিশৃঙ্খলার একটা দিন এসেছে। সেটা দেয়াল ভেংগে ফেলবার এবং পাহাড়-পর্বতের কাছে কাঁদবার একটা দিন। এলমের লোকেরা তীর রাখবার তূণ তুলে নিয়েছে; তাদের সংগে রথ ও ঘোড়সওয়ারদের দল রয়েছে। কীরের লোকেরা ঢাল নিয়ে প্রস্তুত হয়েছে। তোমার বাছাই করা উপত্যকাগুলো রথে ভরে গেছে, আর শহর-ফটকগুলোতে ঘোড়সওয়ারদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যিহূদার রক্ষার ব্যবস্থা দূর করা হয়েছে। সেই দিন তোমরা বন-কুটিরের অস্ত্রশস্ত্রের উপর নির্ভর করেছিলে। তোমরা দায়ূদ-শহরের দেয়ালগুলোর মধ্যে অনেক ফাটল দেখেছিলে এবং নীচের পুকুরের জল জমা করেছিলে। তোমরা যিরূশালেমের ঘর-বাড়ী গুণেছিলে আর দেয়াল শক্ত করবার জন্য সেগুলো ভেংগেছিলে। পুরানো পুকুরের জল রাখবার জন্য তোমরা দুই দেয়ালের মাঝখানে একটা জায়গা তৈরী করেছিলে। কিন্তু যিনি এই অবস্থা ঘটিয়েছিলেন তোমরা তাঁর দিকে তাকালে না, কিম্বা অনেক দিন আগে যিনি এই সবের পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর প্রতি তোমাদের ভক্তি ছিল না। সেই দিন সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু কাঁদবার ও শোক করবার জন্য, মাথার চুল কামাবার জন্য ও ছালার চট পরবার জন্য তোমাদের ডেকেছিলেন। কিন্তু দেখ, সেখানে আনন্দ ও হৈ-হল্লা চলছে, আর গরু ও ভেড়া জবাই করা এবং মাংস ও আংগুর-রস খাওয়া চলছে। তোমরা বলছ, “এস, আমরা খাওয়া-দাওয়া করি, কারণ কালকে আমরা মরে যাব।” সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু আমার কাছে এই কথা প্রকাশ করেছেন, “তোমাদের মরণকালেও এই পাপ ক্ষমা করা হবে না। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “তুমি রাজার ঐ ভাণ্ডারীর কাছে, রাজবাড়ীর ভার-পাওয়া শিব্‌নের কাছে গিয়ে বল, ‘তুমি এখানে কি করছ? আর এখানে নিজের কবর খুঁড়বার জন্য, উঁচু জায়গায় তোমার কবর ঠিক করবার জন্য, পাহাড় কেটে বিশ্রাম-স্থান বানাবার জন্য কে তোমাকে অধিকার দিয়েছে? “ ॥ঃযং ‘সাবধান, ওহে শক্তিশালী লোক, সদাপ্রভু তোমাকে শক্ত করে ধরে ছুঁড়ে ফেলতে যাচ্ছেন। তিনি তোমাকে শক্ত করে গুটিয়ে বলের মত করে একটা বিরাট দেশে ফেলে দেবেন। সেখানে তুমি মারা যাবে, আর তোমার চমৎকার রথগুলো সেখানে পড়ে থাকবে। তুমি তোমার মনিবের রাজবাড়ীর অসম্মান করেছ। তোমার পদ থেকে আমি তোমাকে সরিয়ে দেব; তোমার স্থান থেকে তোমাকে নীচে নামিয়ে দেওয়া হবে। “ ॥ঃযং ‘সেই দিন আমার দাস হিল্কিয়ের ছেলে ইলীয়াকীমকে আমি ডাকব। তাকে আমি তোমার পোশাক পরাব ও তার কোমরে তোমার কোমর-বাঁধনি বেঁধে দেব এবং তোমার কাজের ভার তার হাতে তুলে দেব। সে যিরূশালেমের বাসিন্দাদের ও যিহূদার বংশের পিতার মত হবে। তার কাঁধে আমি দায়ূদের বংশের চাবি রাখব; সে যা খুলবে তা কেউ বন্ধ করতে পারবে না, আর যা বন্ধ করবে তা কেউ খুলতে পারবে না। একটা শক্ত জায়গায় আমি তাকে গোঁজের মত করে লাগিয়ে দেব, তার বাবার বংশের জন্য সে হবে একটা সম্মানের আসন। তার বংশের সব বোঝা তার কাঁধেই ঝুলবে। সব রকম ছোটখাট পাত্র যেমন গোঁজে ঝোলে তেমনি তার ছেলেমেয়ে ও বংশধরেরা তাঁর কাঁধেই ঝুলতে থাকবে। যে গোঁজটা শক্ত জায়গায় লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই দিন সেটা খুলে আসবে; সেটা পড়ে যাবে এবং তার উপরে যে ভার ঝুলছিল সেটা কেটে ফেলা হবে।’ ” এই হল সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কথা। এই সব ঘটবে, কারণ সদাপ্রভু নিজেই তা বলেছেন। সোর সম্বন্ধে সদাপ্রভুর কথা এই: হে বড় বড় তর্শীশ-জাহাজ, হাহাকার কর, কারণ সোর ধ্বংস হয়ে গেছে; সেখানে ঘরও নেই, বন্দরও নেই। সাইপ্রাস দ্বীপ থেকে তোমরা এই খবর পেয়েছ। হে সাগর পারের লোকেরা, হে সীদোনের বণিকেরা, তোমরা নীরব হও। তোমাদের নাবিকেরা সাগর পার হয়ে যেত। শীহোর নদীর, অর্থাৎ নীল নদীর পারের শস্য বড় সাগরের উপর দিয়ে আসত; সোরের আয় ছিল সেই নদীর পারের ফসল, আর সোর হয়ে উঠেছিল সব জাতির বাজার। হে সীদোন, লজ্জিত হও, কারণ সাগর, সাগরের দুর্গ এই কথা বলছে, “আমার প্রসব-যন্ত্রণাও হয় নি, আমি জন্মও দিই নি। আমি ছেলেদের মানুষ করি নি আর মেয়েদের বড় করি নি।” মিসরে এই খবর গেলে পর মিসরীয়েরা সোরের খবরে দারুণ মনোকষ্ট পাবে। হে সাগর পারের লোকেরা, হাহাকার কর; তোমরা পার হয়ে তর্শীশে যাও। এই কি তোমাদের সেই আনন্দ করবার শহর, সেই পুরানো, খুব পুরানো শহর, যার লোকেরা দূর দেশে বাস করবার জন্য যেত? যে সোর অন্যদের মুকুট পরাত, যার বণিকেরা রাজপুরুষ আর ব্যবসায়ীরা পৃথিবীতে নাম-করা, তার বিরুদ্ধে কে এই পরিকল্পনা করেছে? তার সমস্ত অহংকারকে ধ্বংস করবার জন্য আর পৃথিবীর নাম-করা লোকদের নীচু করবার জন্য সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই এই পরিকল্পনা করেছেন। হে তর্শীশের লোকেরা, নীল নদীর জল যেমন কিনারা ছাপিয়ে যায় তেমনি করে তোমরাও দেশে ছড়িয়ে পড়; তোমাদের আট্‌্‌কে রাখবার মত আর কেউ নেই। সদাপ্রভু সমুদ্রের উপরে তাঁর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আর রাজ্যগুলো কাঁপিয়ে তুলেছেন। তিনি কনান দেশ সম্বন্ধে এক আদেশ জারি করেছেন যেন তার দুর্গগুলো ধ্বংস করা হয়। তিনি বলেছেন, “হে সীদোনের লোকেরা, তোমাদের আনন্দ শেষ হয়েছে, কারণ তোমরা তো অত্যাচারিত হয়েছ। ওঠো, পার হয়ে সাইপ্রাস দ্বীপে যাও; সেখানেও তোমরা বিশ্রাম পাবে না।” বাবিল দেশের দিকে তাকাও; এক সময় তার লোকদের বিশেষ কেউ জানত না। আসিরিয়েরা বাবিলকে মরু-এলাকার প্রাণীদের জায়গা করেছে, কিন্তু বাবিলীয়েরা সোরকে আক্রমণ করবার জন্য পাহারা-ঘরের মত উঁচু উঁচু রথ তৈরী করেছে, তার বড় বড় বাড়ী লুট করেছে আর তাকে একটা ধ্বংসের স্তূপ বানিয়েছে। হে বড় বড় তর্শীশ-জাহাজ, তোমরা হাহাকার কর, কারণ তোমাদের আশ্রয়-বন্দর ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই সময় একজন রাজার জীবনকাল, অর্থাৎ সত্তর বছরের জন্য সোরকে ভুলে থাকা হবে। কিন্তু সেই সত্তর বছরের শেষে বেশ্যার গানের মত সোরের অবস্থা এই রকম হবে: হে ভুলে যাওয়া বেশ্যা, বীণা নিয়ে শহরে হেঁটে বেড়াও। সুন্দর করে বীণা বাজাও; অনেক গান কর যাতে তোমাকে আবার মনে করা যায়। সত্তর বছর পার হয়ে গেলে পর সদাপ্রভু সোরের দিকে মনোযোগ দেবেন। তখন সে তার ব্যবসার কাজে ফিরে গিয়ে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের সংগে ব্যবসা চালাবে। কিন্তু তার লাভ ও আয় সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা হবে; সেগুলো জমিয়ে রাখা বা মজুদ করা হবে না। যারা সদাপ্রভুর সামনে চলাফেরা করে তাদের প্রচুর খাবার ও সুন্দর কাপড়-চোপড়ের জন্য তার সেই লাভ খরচ করা হবে। দেখ, সদাপ্রভু পৃথিবীকে একেবারে খালি করতে ও ধ্বংস করতে যাচ্ছেন। তিনি তার উপরের অংশ উল্টে ফেলে তার বাসিন্দাদের ছড়িয়ে ফেলবেন। সেই দিন পুরোহিত ও সাধারণ লোকদের, মনিব ও চাকরের, কর্ত্রী ও দাসীর, দোকানদার ও খদ্দেরের, যে ধার করে ও যে ধার দেয় তাদের এবং ঋণী ও ঋণদাতার সকলের অবস্থা একই রকম হবে। পৃথিবী একেবারে খালি হয়ে পড়ে থাকবে, তা সম্পূর্ণভাবে লুট করা হবে। সদাপ্রভু এই কথা বলেছেন। পৃথিবী শোকে নিস্তেজ হয়ে যাবে; জগৎ ্নান ও নিস্তেজ হবে এবং পৃথিবীর সম্মানিত লোকেরা ্নান হবে। পৃথিবীকে তার লোকেরা নোংরা করে ফেলেছে। তারা আইন-কানুন অমান্য করেছে; তারা নিয়ম ভেংগেছে আর সদাপ্রভুর চিরস্থায়ী ব্যবস্থামত চলে নি। সেইজন্য একটা অভিশাপ পৃথিবীকে গ্রাস করবে; তার লোকেরা দোষী হবে। সেইজন্য পৃথিবীর বাসিন্দাদের পুড়িয়ে ফেলা হবে আর খুব কম লোকই বেঁচে থাকবে। নতুন আংগুর-রস থাকবে না ও আংগুর লতা নিস্তেজ হবে; যারা আমোদ-আহ্লাদ করে তারা সবাই দুঃখে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলবে। খঞ্জনির ফুর্তি, হৈ-হুল্লোড়কারীদের শব্দ আর বীণার আনন্দ-গান সব থেমে যাবে। তারা আর গান করে করে আংগুর-রস খাবে না; মদখোরদের মুখে মদ তেতো লাগবে। শহর ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকবে। সমস্ত বাড়ী-ঘর বন্ধ হয়ে যাবে; ভিতরে যাওয়া যাবে না। রাস্তায় রাস্তায় আংগুর-রসের জন্য চিৎকার উঠবে। সমস্ত আনন্দের বদলে দুঃখ হবে, আর পৃথিবী থেকে সব আমোদ-আহ্লাদ দূর হয়ে যাবে। শহর ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়ে থাকবে এবং তার ফটক টুকরা টুকরা হয়ে ভেংগে যাবে। জলপাই গাছ ঝাড়া হলে পর আর আংগুর তুলে নেবার পর যেমন অল্পই ফল গাছে থাকে, পৃথিবীর জাতিগুলোর অবস্থা তেমনই হবে। তারা চিৎকার করবে ও আনন্দে গান গাইবে। তারা পশ্চিম দিক থেকে জোরে জোরে সদাপ্রভুর মহিমার গৌরব করবে। সেইজন্য পূর্ব দিকের লোকেরা সদাপ্রভুর গৌরব করুক এবং দূর দেশের লোকেরা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রশংসা করুক। পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে আমরা এই গান শুনতে পাচ্ছি, “ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বরের গৌরব হোক!” কিন্তু আমি বললাম, “হায়! আমি সর্বনাশের মধ্যে পড়ে আছি, কারণ বিশ্বাসঘাতকেরা বিশ্বাসঘাতকতা করছে; হ্যাঁ, তারা খুব বিশ্বাসঘাতকতা করছে।” হে জগতের লোকেরা, তোমাদের জন্য ভয়, গর্ত ও ফাঁদ অপেক্ষা করে আছে। যে লোক ভয়ের শব্দে পালাবে সে গর্তে পড়বে, আর যে গর্ত থেকে উঠে আসবে সে ফাঁদে ধরা পড়বে। আকাশে ফাটল ধরবে আর পৃথিবীর ভিত্তিগুলো কাঁপবে। পৃথিবী টুকরা টুকরা হবে, পৃথিবী ভেংগে পড়বে, পৃথিবী ভীষণভাবে কাঁপবে। পৃথিবী মাতালের মত টলবে, বাতাসে দুলতে থাকা কুঁড়ে-ঘরের মত দুলবে। তার পাপের ভার তার উপর এত বেশী হবে যে, সে পড়ে যাবে; সে আর কখনও উঠতে পারবে না। সেই দিন সদাপ্রভু উপরে মহাকাশের সর্ব ক্ষমতার অধিকারীদের শাস্তি দেবেন, আর পৃথিবীতে শাস্তি দেবেন রাজাদের। জেলখানার গর্তে যেমন বন্দীদের একসংগে রাখা হয় তেমনি করে তাদের একসংগে রাখা হবে। তাদের বন্ধ করা হবে জেলখানায় আর অনেক দিন পরে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। চাঁদ হতভম্ব হবে আর সূর্য লজ্জিত হবে, কারণ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু সিয়োন পাহাড় ও যিরূশালেমে রাজত্ব করবেন, আর তাঁর বৃদ্ধ নেতারা তাঁর মহিমা দেখতে পাবে। হে সদাপ্রভু, তুমিই আমার ঈশ্বর; আমি তোমার গৌরব করব আর তোমার প্রশংসা করব। যে সব আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ অনেক দিন আগেই তুমি পরিকল্পনা করেছিলে তা তুমি সম্পূর্ণ বিশ্বস্তভাবে করেছ। তুমি শহরকে পাথরের ঢিবি করেছ আর দেয়াল-ঘেরা শহরকে করেছ ধ্বংসের স্তূপ। বিদেশী শত্রুদের দুর্গ আর থাকবে না; তা কখনও আর তৈরী করা হবে না। সেইজন্য শক্তিশালী জাতিরা তোমার গৌরব করবে এবং নিষ্ঠুর জাতিদের শহরগুলো তোমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই পাহাড়ের উপরে সব জাতির লোকদের জন্য ভাল ভাল খাবার জিনিসের আর পুরানো আংগুর-রসের এক মহাভোজ দেবেন; তাতে থাকবে সবচেয়ে ভাল মাংস আর সবচেয়ে ভাল আংগুর-রস। যে পর্দায় সব জাতির লোকেরা ঢাকা পড়েছে, যে চাদর সব জাতিকে ঢেকে ফেলেছে, এই পাহাড়েই তিনি তা নষ্ট করে দেবেন। মৃত্যুকে তিনি চিরকালের জন্য ধ্বংস করবেন। প্রভু সদাপ্রভু সকলের চোখের জল মুছিয়ে দেবেন আর সমস্ত পৃথিবী থেকে তাঁর লোকদের অসম্মান দূর করবেন। সদাপ্রভু এই কথা বলেছেন। সেই দিন লোকে বলবে, “দেখ, ইনিই আমাদের ঈশ্বর; আমরা তাঁর অপেক্ষায় ছিলাম যেন তিনি আমাদের উদ্ধার করেন। ইনিই সদাপ্রভু; আমরা তাঁর অপেক্ষায় ছিলাম। এস, আমরা তাঁর উদ্ধার-কাজের জন্য আনন্দ করি ও খুশী হই।” সদাপ্রভুর হাত এই পাহাড়ের উপরে থাকবে। গোবরের সংগে খড় যেমন পায়ে মাড়ানো হয় ঠিক তেমনি করে মোয়াবকেও তিনি পায়ে মাড়াবেন। সাঁতারু যেমন হাত বাড়িয়ে সাঁতার কাটে তেমনি করে তারা গোবরের মধ্যে হাত বাড়াবে। তাদের হাতের চেষ্টা মিথ্যা হবে; ঈশ্বর তাদের অহংকার ভেংগে দেবেন। তিনি মোয়াবের দেয়ালের উঁচু দুর্গগুলো ধ্বংস করবেন; তিনি সেগুলো মাটিতে, এমন কি, ধুলায় মিশিয়ে দেবেন। সেই দিন যিহূদা দেশে এই গানটা গাওয়া হবে: আমাদের একটা শক্ত শহর আছে; ঈশ্বরের দেওয়া উদ্ধার হবে তার দেয়াল ও রক্ষার ব্যবস্থা। তোমরা ফটক খুলে দাও যাতে সৎ ও বিশ্বস্ত সেই জাতি ঢুকতে পারে। যার মন তোমার উপর স্থির আছে তাকে তুমি পূর্ণ শান্তিতে রাখবে, কারণ সে তোমার উপর নির্ভর করে। তোমরা চিরদিনের জন্য সদাপ্রভুর উপর নির্ভর কর, কারণ সদাপ্রভু, সেই সদাপ্রভুই চিরস্থায়ী আশ্রয়-পাহাড়। যারা উঁচুতে বাস করে তাদের তিনি নীচুতে নামান; সেই উঁচু শহরকে তিনি ধ্বংস করে নীচু করেন। তিনি তা মাটিতে, এমন কি, ধুলায় মিশিয়ে দেন। অত্যাচারিত ও গরীবেরা তা পায়ে মাড়ায়। ঈশ্বরভক্ত লোকদের পথ সমান থাকে; হে ন্যায়বান, তুমি ঈশ্বরভক্তদের পথ সমান করে থাক। হ্যাঁ, সদাপ্রভু, আমরা তোমার ন্যায় পথে চলে তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছি; আমরা চাই যেন তুমি তোমার কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হও। রাতে আমার প্রাণ তোমার জন্য কাঁদে; আমার আত্মা তোমার জন্য আকুল হয়। পৃথিবীতে তোমার ন্যায়বিচার আসলে পর জগতের লোক সততা শিক্ষা পাবে। দুষ্টদের দয়া দেখানো হলেও তারা সততা শিক্ষা করে না; এমন কি, ন্যায়ের দেশেও তারা অন্যায় করতে থাকে আর সদাপ্রভুর গৌরব স্বীকার করে না। হে সদাপ্রভু, তোমার হাত তুমি উঁচুতে উঠিয়েছ, কিন্তু তারা তা দেখে না। তোমার লোকদের জন্য তোমার আগ্রহ তারা দেখুক এবং লজ্জিত হোক; আগুন তোমার শত্রুদের পুড়িয়ে ফেলুক। হে সদাপ্রভু, আমাদের জন্য তুমি শান্তি স্থাপন করবে; কারণ আমরা যা করতে পেরেছি তা সবই তুমি আমাদের জন্য করেছ। হে সদাপ্রভু, আমাদের ঈশ্বর, তুমি ছাড়া অন্য প্রভুরাও আমাদের উপর কর্তা হয়েছিল, কিন্তু কেবল তোমাকেই আমরা স্বীকার করি। তারা এখন মরে গেছে, আর বেঁচে নেই; তাদের আত্মাগুলো আর বেঁচে উঠবে না। তুমি তাদের শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছ; তাদের বিষয় তুমি একেবারে মুছে ফেলেছ। হে সদাপ্রভু, তুমি এই জাতিকে বড় করেছ; এই জাতিকে বড় করে তুমি গৌরব লাভ করেছ; তুমি দেশের সমস্ত সীমা বাড়িয়ে দিয়েছ। হে সদাপ্রভু, কষ্টের সময় তারা তোমাকে দেখেছিল; তোমার কাছ থেকে শাস্তি পাবার সময় তারা আকুল হয়ে ফিস্‌ ফিস্‌ করে প্রার্থনা জানিয়েছিল। গর্ভবতী স্ত্রীলোক প্রসবের সময় যেমন ব্যথায় মোচড়ায় ও চিৎকার করে, হে সদাপ্রভু, আমরাও তোমার সামনে তেমনই হয়েছি। আমরা গর্ভবতী হয়েছি, ব্যথায় মোচড় দিয়েছি, কিন্তু আমরা জন্ম দিয়েছি বাতাসের। আমাদের দ্বারা দেশ রক্ষা পায় নি, জগতের লোকও আমাদের দ্বারা জীবন পায় নি। কিন্তু তোমার মৃত লোকেরা বাঁচবে; তাদের দেহ বেঁচে উঠবে। তোমরা যারা ধুলায় বাস কর, তোমরা জাগো এবং আনন্দে চিৎকার কর। সকালের শিশির যেমন পৃথিবীকে সতেজ করে তেমনি তুমি মৃতদের জীবন দেবে। হে আমার লোকেরা, তোমরা যাও, তোমাদের কামরায় ঢুকে দরজা বন্ধ কর; তোমরা নিজেদের লুকিয়ে রাখ, কারণ অল্পক্ষণ পরে তাঁর ক্রোধ থেমে যাবে। দেখ, জগতের লোকদের পাপের শাস্তি দেবার জন্য সদাপ্রভু তাঁর বাসস্থান থেকে বেরিয়ে আসছেন। পৃথিবীর উপরে যে রক্তপাত হয়েছে তা প্রকাশ করা হবে; মেরে ফেলা তার লোকদের আর সে লুকিয়ে রাখবে না। সেই দিন সদাপ্রভু তাঁর ভয়ংকর, মহান ও ক্ষমতাপূর্ণ তলোয়ার দিয়ে সেই এঁকে-বেঁকে পালিয়ে যাওয়া সাপ লিবিয়াথনকে শাস্তি দেবেন। তিনি সমুদ্রের সেই দানবকে কেটে ফেলবেন। সেই দিন এই গান গাওয়া হবে: “তোমরা গান কর সেই আংগুর ক্ষেতের বিষয় নিয়ে যেখান থেকে রস পাওয়া যায়। আমি সদাপ্রভু তার দেখাশোনা করি; আমি সব সময় তাতে জল দিই। যাতে কেউ তার ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য দিনরাত আমি তা পাহারা দিই। তার উপর আমার ক্রোধ নেই। আহা, কাঁটাঝোপ ও কাঁটাবন যেন আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়! তাহলে আমি তাদের পায়ে মাড়াব আর সেগুলো সবই পুুড়িয়ে দেব। সেগুলো বরং আশ্রয়ের জন্য আমার কাছে আসুক; আমার সংগে শান্তি স্থাপন করুক। হ্যাঁ, তারা আমার সংগে শান্তি স্থাপন করুক। আগামী দিনগুলোতে যাকোব শিকড় বসাবে, ইস্রায়েল কুঁড়ি ধরিয়ে ফুল ফোটাবে আর ফল দিয়ে সারা জগৎ ভরিয়ে দেবে।” ইস্রায়েলের আঘাতকারীদের যেমন সদাপ্রভু আঘাত করেছেন তেমনি করে তিনি ইস্রায়েলকে আঘাত করেন নি; যারা তাকে মেরে ফেলেছে তাদের মত করে তিনি তাকে মেরে ফেলেন নি। তিনি বিচার করে তাকে বের করে দিয়েছেন, কিন্তু তাতে পাওনার অতিরিক্ত শাস্তি দেওয়া হয় নি; পূবের বাতাসের মত করে তাঁর ভীষণ ঝাপটায় তিনি তাকে তাড়িয়ে বের করে দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে যাকোবের পাপের দেনা পরিশোধ করা হবে, কিন্তু তার সব পাপ দূর করবার আগে চুনা পাথরের মত করে সে তার বেদীর সব পাথর চুরমার করবে; কোন আশেরা-খুঁটি বা ধূপ-বেদী থাকবে না। দেয়াল-ঘেরা শহরটা নির্জন হয়েছে; তা ছেড়ে যাওয়া বাসস্থান ও মরুভূমির মত ত্যাগ করা হয়েছে। সেখানে বাছুর চরে বেড়াবে ও শুয়ে থাকবে; তারা গাছের সব পাতা খেয়ে ফেলবে। তার ডালপালা শুকালে পর ভেংগে ফেলা হবে আর স্ত্রীলোকেরা এসে সেগুলো দিয়ে আগুন জ্বালাবে। এটা একটা বুদ্ধিহীন জাতি, কাজেই যিনি তাদের তৈরী করেছেন তাদের উপর তাঁর কোন মমতা নেই; তাদের প্রতি তাদের সৃষ্টিকর্তার কোন দয়া নেই। হে ইস্রায়েলীয়েরা, সেই দিন বয়ে যাওয়া ইউফ্রেটিস থেকে মিসরের শুকনা নদী পর্যন্ত শস্য ঝাড়ার মত করে সদাপ্রভু তোমাদের ঝাড়বেন, আর এক এক করে তোমাদের জড়ো করবেন। সেই দিন একটা বিরাট শিংগা বাজবে। এতে যারা আসিরিয়া দেশে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল এবং যাদের মিসর দেশে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তারা আসবে আর যিরূশালেমের পবিত্র পাহাড়ে সদাপ্রভুর উপাসনা করবে। হায়, ইফ্রয়িমের মাতালদের মুকুটের মত শহর, যা নিয়ে তারা অহংকার করে! হায়, ইফ্রয়িমের গৌরবময় সৌন্দর্যের সেই ্নান হওয়া মালা, যা একটা উর্বর উপত্যকার মাথার উপর রয়েছে! আংগুর-রস সেই উপত্যকার লোকদের খেয়ে ফেলেছে। দেখ, প্রভুর একজন ক্ষমতাবান ও শক্তিশালী লোক আছে। শিলাবৃষ্টি ও ধ্বংসকারী একটা বাতাসের মত, মুষলধারে পড়া একটা বন্যার বৃষ্টির মত সে সজোরে সেই শহরকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। ইফ্রয়িমের মাতালদের সেই অহংকারের মুকুট পায়ের তলায় মাড়ানো হবে। ইফ্রয়িমের গৌরবময় সৌন্দর্যের সেই ্নান হওয়া মালা যা একটা উর্বর উপত্যকার মাথার উপর রয়েছে, তা প্রথমে পাকা ডুমুরের মত শেষ হয়ে যাবে; কেউ তা দেখলে হাতে নিয়ে গিলে ফেলবে। সেই দিন সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাঁর বেঁচে থাকা লোকদের জন্য একটা গৌরবময় মুকুট এবং একটা সুন্দর মালা হবেন। তিনি বিচারকের অন্তরে ন্যায়বিচারের মনোভাব দেবেন। যারা ফটকের কাছ থেকে যুদ্ধ সরিয়ে দেয় তাদের তিনি শক্তি দেবেন। কিন্তু ইফ্রয়িমের পুরোহিত ও নবীরা এখন আংগুর-রস খেয়ে টলে ও মাতলামি করে আর মদ খেয়ে গড়াগড়ি দেয়; তারা টলতে টলতে দর্শন পায় আর সেই অবস্থায় রায় দেয়। সব টেবিলগুলো বমিতে ভরা; বমি ছাড়া একটু জায়গাও পরিষ্কার নেই। তারা বলে, “সে কাকে শিক্ষা দিচ্ছে? তার বাণী কার কাছে ব্যাখ্যা করছে? যারা দুধ খাওয়া ছেড়েছে, বুকের দুধ থেকে যাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাদের কাছে কি? তা হল, ‘এটা কর, ওটা কর, এই নিয়ম মান, ঐ নিয়ম মান, এখানে আছে, ওখানে আছে।’ ” বেশ, তাহলে সদাপ্রভু বিদেশীদের মুখের অদ্ভুত ভাষা দিয়ে এই লোকদের কাছে কথা বলবেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, “এটাই সেই বিশ্রামের জায়গা, ক্লান্ত লোকেরা এখানে বিশ্রাম করুক। দেখ, এই সেই আরামের জায়গা।” কিন্তু তারা তা শুনল না। কাজেই তাদের কাছে সদাপ্রভুর কথা হবে, “এটা কর, ওটা কর, এই নিয়ম মান, ঐ নিয়ম মান, এখানে আছে, ওখানে আছে,” যাতে তারা গিয়ে পিছন দিকে পড়ে যায় আর আঘাত পেয়ে ফাঁদে ধরা পড়ে। সেইজন্য হে ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীরা, তোমরা যারা যিরূশালেমে এই লোকদের শাসন করে থাক, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শোন। তোমরা বড়াই করে বল, “আমরা মৃত্যুর সংগে, মৃতস্থানের সংগে একটা চুক্তি করেছি। ধ্বংসের চাবুক যখন জোরে নেমে আসবে তখন তা আমাদের কাছে আসবে না, কারণ আমরা মিথ্যাকে আমাদের আশ্রয়স্থান আর ছলনাকে আমাদের লুকাবার জায়গা করেছি।” কাজেই প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, “দেখ, আমি যাচাই করে নেওয়া খুব দামী একটা পাথর বেছে নিয়েছি; সেটা সিয়োনের ভিত্তির কোণের পাথর হিসাবে স্থাপন করেছি। যে কেউ তাঁর উপর বিশ্বাস করে সে সব সময় স্থির থাকবে। আমি ন্যায়বিচারকে মাপের দড়ি আর সততাকে ওলনদড়ি করব; শিলাবৃষ্টি তোমাদের আশ্রয়স্থানরূপ মিথ্যাকে ধ্বংস করে দেবে, আর বন্যা তোমাদের লুকাবার জায়গা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। মৃত্যুর সংগে তোমরা যে চুক্তি করেছ তা বাতিল করা হবে; মৃতস্থানের সংগে তোমাদের যে চুক্তি হয়েছে তা স্থির থাকবে না। ধ্বংসের চাবুক যখন জোরে নেমে আসবে, তখন তা দিয়ে তোমাদের মারা হবে। তা যতবার নেমে আসবে ততবার তোমাদের মারা হবে; সকালের পর সকাল, দিনে ও রাতে তা জোরে নেমে আসবে। এই কথা বুঝতে পারলে তোমরা ভীষণ ভয় পাবে।” লম্বা হয়ে শোবার জন্য তোমাদের বিছানা খাটো, আর গায়ে জড়াবার জন্য কম্বলও ছোট। সদাপ্রভু যুদ্ধ করবেন, যেমন করে তিনি পরাসীম পাহাড়ে করেছিলেন। তিনি উত্তেজিত হবেন, যেমন গিবিয়োন উপত্যকায় হয়েছিলেন। এইভাবে তিনি তাঁর কাজ, তাঁর অদ্ভুত ও অসাধারণ কাজ শেষ করবেন। কাজেই এখন তোমাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ থামাও, তা না হলে তোমাদের বাঁধন আরও শক্ত হবে; কারণ সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভুর মুখে আমি গোটা দেশের জন্য ঠিক করা ধ্বংসের কথা শুনেছি। শোন, আমার কথায় কান দাও; আমি যা বলি তা মন দিয়ে শোন। চাষী বীজ বুনবার জন্য কি অনবরত চাষ করে? সে কি সব সময় ঢেলা ভাংগে আর জমিতে মই দেয়? মাটির উপরটা সমান করলে পর সে কি কালোজিরা এবং জিরা বোনে না? সে কি সারি সারি করে গম, জায়গামত যব আর ক্ষেতের সীমানায় জনার লাগায় না? তার ঈশ্বরই তাকে নির্দেশ দেন এবং তাকে ঠিক পথ শিক্ষা দেন। কালোজিরা ভারী যন্ত্র দিয়ে মাড়াই করা হয় না, কিম্বা জিরার উপর দিয়ে গাড়ির চাকা গড়ানো হয় না, বরং লাঠি দিয়ে কালোজিরা ও জিরা মাড়াই করা হয়। অনেক দিন ধরে কেউ গম মাড়াই করতে থাকে না, তাতে তা নষ্ট হয়ে যায়; মাড়াই করবার সময় সে তার উপর দিয়ে এমনভাবে গাড়ির চাকা ও ঘোড়া চালায় যাতে তা নষ্ট না হয়। এই সব জ্ঞান সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কাছ থেকে আসে। তাঁর পরামর্শ আশ্চর্য ও তাঁর জ্ঞান চমৎকার। হায়, অরীয়েল, অরীয়েল, দায়ূদের বাসস্থানের শহর! তুমি বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছ আর তোমার উৎসবগুলো ঘুরে ঘুরে আসছে। কিন্তু আমি অরীয়েলের উপর বিপদ আনব। সে শোক ও বিলাপ করবে; সে আমার কাছে একটা অরীয়েলের মত, অর্থাৎ একটা বেদীর মত হবে। আমি তোমার চারপাশে তোমার বিরুদ্ধে ছাউনি ফেলব, দুর্গ গড়ে তোমাকে ঘেরাও করব, আর তোমার বিরুদ্ধে উঁচু করে ঢিবি তৈরী করব। তোমাকে নীচে নামানো হবে এবং তুমি মাটি থেকে কথা বলবে; ধুলার মধ্য থেকে অস্পষ্টভাবে তোমার কথা বের হবে। ভূতের স্বরের মত মাটি থেকে তোমার স্বর আসবে; ধুলার মধ্য থেকে তোমার কথা ফিস্‌ ফিস্‌ করে বের হবে। তখন সমস্ত জাতির যে দলগুলো অরীয়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, অর্থাৎ যারা তাকে ও তার দুর্গকে আক্রমণ করছে আর তাকে বিপদে ফেলছে তারা হবে স্বপ্নের মত আর রাতের বেলার দর্শনের মত। যারা সিয়োন পাহাড়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে সেই সব জাতির দলগুলোর অবস্থা এই রকম হবে- খিদে পাওয়া লোক যেমন খাওয়ার স্বপ্ন দেখে কিন্তু জাগলে পর তার খিদে থেকে যায়; আবার পিপাসা পাওয়া লোক যেমন জল খাওয়ার স্বপ্ন দেখে কিন্তু তার পিপাসা মেটে না আর সে দুর্বল অবস্থায় জেগে ওঠে। তোমরা অবাক ও আশ্চর্য হও; চোখ বন্ধ করে অন্ধ হও; মাতাল হও, কিন্তু আংগুর-রস খেয়ে নয়; টলতে থাক, কিন্তু মদের দরুন নয়; কারণ সদাপ্রভু তোমাদের উপর একটা গাঢ় ঘুম এনেছেন; তোমাদের চোখ যে নবীরা, তোমাদের সেই চোখ তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন আর তোমাদের মাথা যে দর্শকেরা, তোমাদের সেই মাথা তিনি ঢেকে দিয়েছেন। এই গোটা দর্শনটাই তোমাদের কাছে কেবল সীলমোহর করা জড়ানো বইয়ের মত হয়েছে। যে পড়তে জানে তাকে যদি সেই বইটা দিয়ে বলা হয়, “দয়া করে এটা পড়ুন,” তবে উত্তরে সে বলবে, “আমি পারব না, কারণ এটা সীলমোহর করা হয়েছে।” কিম্বা যে পড়তে জানে না তাকে বইটা দিয়ে যদি বলা হয়, “দয়া করে এটা পড়ুন,” তবে উত্তরে সে বলবে, “আমি পড়তে জানি না।” প্রভু বলছেন, “এই লোকেরা মুখেই আমার উপাসনা করে আর মুখেই আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের অন্তর আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। তারা কেবল মানুষের শিখানো নিয়ম দিয়ে আমার উপাসনা করে। কাজেই আমি আবার চমৎকার আশ্চর্য কাজ দিয়ে এই লোকদের হতভম্ব করে দেব; তাতে জ্ঞানীদের জ্ঞান নষ্ট হয়ে যাবে আর বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি অদৃশ্য হবে।” ধিক্‌ সেই লোকদের, যারা সদাপ্রভুর কাছ থেকে তাদের পরিকল্পনা লুকাবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। তারা অন্ধকারে তাদের কাজ করে আর ভাবে, “কে আমাদের দেখছে? কে জানতে পারবে?” তোমাদের কেমন উল্টা বুদ্ধি! তোমরা তো কুমার আর মাটিকে একই সমান ধরছ! যে তৈরী করছে তার তৈরী জিনিস কি তার বিষয় বলতে পারে, “সে আমাকে তৈরী করে নি”? পাত্র কি কুমারের বিষয়ে বলবে, “সে কিছুই জানে না”? অল্পকালের মধ্যে তো লেবাননের বন একটা উর্বর জমি হয়ে উঠবে আর উর্বর জমি বনের মত মনে হবে। সেই দিন বয়রারা সেই জড়ানো বইয়ের কথা শুনতে পাবে, আর গভীর অন্ধকারে থাকা অন্ধেরা দেখতে পাবে। নম্র লোকেরা আবার সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দিত হবে, আর যারা খুব গরীব তারা ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনকে নিয়ে আনন্দ করবে। নিষ্ঠুরেরা আর থাকবে না; ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীরাও শেষ হয়ে যাবে, আর যারা মন্দ কাজ করতে চায় তাদের ধ্বংস করে ফেলা হবে। তারা মিথ্যা কথা দিয়ে মানুষকে দোষী করে, শহর-ফটকে নির্দোষীর পক্ষে থাকা লোককে ফাঁদে ফেলে এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে নির্দোষীকে ন্যায়বিচার পেতে দেয় না। সেইজন্য অব্রাহামের মুক্তিদাতা সদাপ্রভু যাকোবের বংশ সম্বন্ধে বলছেন, “যাকোব আর লজ্জা পাবে না; তাদের মুখ আর ফ্যাকাশে হবে না। যখন তারা তাদের মধ্যে আমার হাতের কাজ, অর্থাৎ তাদের ছেলেমেয়েদের দেখবে তখন তারা আমাকে পবিত্র বলে মানবে। যাকোবের সেই পবিত্রজনকে তারা পবিত্র বলে স্বীকার করবে আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে। যারা ঠিকভাবে বুঝতে পারে না তারা ভালভাবে বুঝতে পারবে, আর যারা অসন্তোষ প্রকাশ করে তারা শিক্ষা গ্রহণ করবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “ধিক্‌ সেই একগুঁয়ে সন্তানেরা, যারা পরিকল্পনামত কাজ করে কিন্তু আমার পরিকল্পনামত নয়। তারা বন্ধুত্ব স্থাপন করে কিন্তু আমার আত্মার ইচ্ছামত নয়। এইভাবে তারা পাপের উপরে পাপ বোঝাই করে। তারা আমার সংগে পরামর্শ না করে মিসরে যায়; তারা সাহায্যের জন্য ফরৌণের আশ্রয় খোঁজে আর মিসরের ছায়ায় খোঁজে রক্ষার স্থান। কিন্তু ফরৌণের আশ্রয়ে তারা লজ্জা পাবে এবং মিসরের ছায়া তাদের অসম্মান আনবে। যদিও সোয়নে তাদের উঁচু পদের কর্মচারী আছে আর তাদের দূতেরা হানেষে পৌঁছেছে, তবুও তাদের প্রত্যেককে লজ্জায় ফেলা হবে, কারণ সেই জাতি তাদের কোন উপকারে আসবে না। তারা সাহায্য বা সুবিধা কিছুই দিতে পারবে না; দেবে কেবল লজ্জা ও অসম্মান।” নেগেভের পশুদের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী এই: সেই দূতেরা কষ্ট ও দুর্দশাপূর্ণ দেশের মধ্য দিয়ে এবং সিংহ ও সিংহী, বিষাক্ত সাপ ও উড়ন্ত বিষাক্ত সাপের দেশের মধ্য দিয়ে যায়। তারা তাদের ধন-সম্পদ গাধার পিঠে করে আর তাদের দামী জিনিস উটের পিঠে করে সেই জাতির কাছে বয়ে নিয়ে যায় যাদের দ্বারা তাদের কোন লাভ হবে না। মিসরের সাহায্য অসার, কোন কাজের নয়; সেইজন্য আমি সেই জাতির নাম রেখেছি রহব-হেম-শবৎ, অর্থাৎ যে গর্বিত জাতি চুপ করে বসে থাকে। তুমি এখন এই কথা একটা ফলকে ও একটা বইয়ে লিখে রাখ, যেন আগামী দিনগুলোতে সেটা ইস্রায়েলীয়দের জন্য একটা চিরস্থায়ী সাক্ষ্য হয়ে থাকে। এই লোকেরা বিদ্রোহী ও মিথ্যাবাদী; তারা সদাপ্রভুর শিক্ষা শুনতে রাজী নয়। তারা দর্শকদের বলে, “তোমরা আর দর্শন দেখো না,” আর নবীদের বলে, “যা সত্যি তা আমাদের আর বোলো না। আমাদের কাছে সুখের কথা বল; যা সত্যি নয় এমন সব বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী বল। পথ ছাড়, রাস্তা থেকে সরে যাও। আমরা আর ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের কথা শুনতে চাই না।” সেইজন্য ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন এই কথা বলছেন, “তোমরা আমার বাক্য অগ্রাহ্য করেছ, আর মিথ্যা ও অত্যাচার করবার উপর নির্ভর করছ। সেইজন্য এই পাপ তোমাদের জন্য একটা উঁচু, ফাটল ধরা ও পড়ো পড়ো দেয়ালের মত হয়ে দাঁড়াবে, যা হঠাৎ এক মুহূর্তের মধ্যে ভেংগে পড়বে। তা মাটির পাত্রের মত টুকরা টুকরা হয়ে ভেংগে যাবে; তা এমনভাবে ভেংগে যাবে যে, সেগুলোর মধ্যে একটা টুকরাও পাওয়া যাবে না যা দিয়ে চুলা থেকে কয়লা বা কূয়া থেকে জল তোলা যায়।” প্রভু সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন এই কথা বলছেন, “পাপ থেকে ফিরে শান্ত হলে তোমরা উদ্ধার পাবে, আর স্থির হয়ে বিশ্বাস করলে শক্তি পাবে।” কিন্তু তোমরা তাতে রাজী হলে না। তোমরা বললে, “না, আমরা ঘোড়ায় চড়ে পালিয়ে যাব।” কাজেই তোমাদের পালাতে হবে। তোমরা বললে, “যে ঘোড়া খুব বেগে যায় তাতে চড়ে আমরা চলে যাব।” কাজেই যারা তোমাদের তাড়া করবে তারা বেগেই আসবে। একজনের ভয়ে তোমাদের হাজার জন পালাবে আর পাঁচজনের ভয়ে তোমরা সবাই পালিয়ে যাবে; তাতে তোমাদের সৈন্যদলে পাহাড়ের উপরকার পতাকার খুঁটি ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। তবুও সদাপ্রভু তোমাদের উপর দয়া করবার জন্য অপেক্ষা করছেন; তোমাদের মমতা করবার জন্য তিনি প্রস্তুত হয়ে আছেন। সদাপ্রভু ন্যায়বিচারের ঈশ্বর; যারা তাঁর জন্য অপেক্ষা করে তারা ধন্য। হে সিয়োনের লোকেরা, তোমরা যারা যিরূশালেমে বাস কর, তোমাদের আর কাঁদতে হবে না। সাহায্যের জন্য কাঁদলে তিনি নিশ্চয়ই তোমাদের দয়া করবেন। তিনি শোনামাত্রই উত্তর দেবেন। যদিও প্রভু তোমাদের অল্প রুটি আর অল্প জল দিয়েছেন, তবুও তোমাদের শিক্ষক প্রভু আর লুকিয়ে থাকবেন না; তোমরা নিজেদের চোখেই তাঁকে দেখতে পাবে। ডানে বা বাঁয়ে কোথাও যাবার সময় তোমরা পিছন থেকে তাঁর এই কথা শুনতে পাবে, “এটাই পথ; তোমরা এই পথেই চল।” তখন তোমরা তোমাদের রূপা ও সোনা দিয়ে মুড়ানো মূর্তিগুলো অশুচি করবে; তোমরা সেগুলো নোংরা কাপড়ের মত ফেলে দিয়ে বলবে, “দূর হ, দূর হ!” তিনি তোমাদের বৃষ্টি দেবেন যাতে তোমরা মাটিতে বীজ বুনতে পার এবং জমি থেকে যে ফসল আসবে তা ভাল ও পুষ্ট হয়। সেই দিন তোমাদের পশুপালগুলো অনেক বড় মাঠে চরবে। তোমাদের চাষের গরু ও গাধা জাব্‌নার সংগে কুলা ও চালুনিতে ঝাড়া কলাই খাবে। সেই ভীষণ দিনে যখন অনেককে মেরে ফেলা হবে ও দুর্গগুলো পড়ে যাবে তখন সমস্ত পাহাড়-পর্বতের গা বেয়ে জলের স্রোত বয়ে যাবে। যেদিন সদাপ্রভু তাঁর লোকদের আঘাত-পাওয়া জায়গা বেঁধে দেবেন ও তাঁর করা ক্ষত ভাল করবেন সেই দিন চাঁদ আলো দেবে সূর্যের মত, আর সূর্যের আলো হবে পুরো সাত দিনের আলোর মত সাতগুণ বেশী। দেখ, সদাপ্রভু জ্বলন্ত ক্রোধ ও গাঢ় ধূমার মেঘের সংগে দূর থেকে আসছেন; তাঁর মুখ ভীষণ ক্রোধে পূর্ণ আর তাঁর জিভ্‌ পুড়িয়ে ফেলা আগুনের মত। তাঁর নিঃশ্বাস যেন বেগে আসা ভীষণ জলের স্রোত যা মানুষের গলা পর্যন্ত ওঠে। তিনি সব জাতিকে ধ্বংসের চালুনিতে চালবেন এবং সব জাতির লোকদের মুখে এমন বল্‌গা দেবেন যা তাদের ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। পবিত্র উৎসব পালনের রাতের মত তোমরা গান করবে। লোকে যখন বাঁশী নিয়ে সদাপ্রভুর পাহাড়ের উপরে উঠে ইস্রায়েলের আশ্রয়-পাহাড়ের কাছে আসে তখন যেমন আনন্দ হয় তেমনি তোমাদের অন্তর আনন্দিত হবে। সদাপ্রভু ভীষণ ক্রোধ, পুড়িয়ে ফেলা আগুন, ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি আর শিল পড়বার মধ্য দিয়ে তাঁর ক্ষমতাপূর্ণ স্বর লোকদের শোনাবেন আর তাঁর শাস্তির হাত দেখাবেন। সদাপ্রভুর স্বরে আসিরিয়া ভেংগে পড়বে; তাঁর লাঠি দিয়ে তিনি আসিরিয়দের আঘাত করবেন। সদাপ্রভু তাদের সংগে যুদ্ধ করবার সময় যখন তাঁর নিযুক্ত লাঠি তাদের উপর আঘাত করবে তখন খঞ্জনি আর বীণা বাজবে। তোফতের মত পোড়াবার জায়গা অনেক আগে থেকেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে; তা রাজার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই জায়গা গভীর ও চওড়া করা হয়েছে, আর তাতে আছে আগুনের জন্য প্রচুর কাঠ। সদাপ্রভুর নিঃশ্বাস জ্বলন্ত গন্ধকের স্রোতের মত হয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেবে। ধিক্‌ যারা সাহায্যের জন্য মিসরে যায়! তারা তো ঘোড়ার উপরে নির্ভর করে আর তাদের অসংখ্য রথের উপর এবং ঘোড়সওয়ারদের মহাশক্তির উপর বিশ্বাস রাখে, কিন্তু তারা ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের দিকে তাকায় না কিম্বা সদাপ্রভুর কাছ থেকে সাহায্য চায় না। কিন্তু তাঁর কি কোন জ্ঞান নেই? তিনি তো বিপদ ঘটাবেন; তাঁর কথা তিনি ফিরিয়ে নেবেন না। তিনি দুষ্টদের বিরুদ্ধে আর তাদের সাহায্যকারীদের বিরুদ্ধে উঠবেন। মিসরীয়েরা তো মানুষ, তারা ঈশ্বর নয়; তাদের ঘোড়াগুলো মাংসের, সেগুলো আত্মা নয়। সদাপ্রভু যখন তাঁর হাত তুলবেন তখন সাহায্যকারীরা উছোট খাবে আর যারা সাহায্য পায় তারা পড়ে যাবে; তারা সবাই একসংগে ধ্বংস হয়ে যাবে। সদাপ্রভু আমাকে এই কথা বলছেন, “সিংহ তার শিকারের পশু নিয়ে গর্জন করবার সময় রাখালদের দল তার বিরুদ্ধে চিৎকার ও গোলমাল করলেও সে ভয় কিম্বা বাধা পায় না। ঠিক তেমনি করে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু যুদ্ধ করবার জন্য সিয়োন পাহাড় ও তার উঁচু জায়গাগুলোতে নেমে আসবেন। পাখীরা যেমন বাসার উপর উড়তে থাকে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তেমনি করে যিরূশালেমকে ঢেকে রাখবেন। তিনি তাকে ঢেকে রাখবেন ও উদ্ধার করবেন, আর তার উপর দিয়ে গিয়ে তাকে রক্ষা করবেন।” হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা যাঁর বিরুদ্ধে এত বিদ্রোহ করেছ তাঁর কাছে ফিরে এস, কারণ সেই দিন তোমরা সবাই যে সব সোনা ও রূপার মূর্তি তৈরী করে পাপ করেছ সেগুলো দূর করে দেবে। সদাপ্রভু বলছেন, “মানুষের নয় এমন একটা তলোয়ারের ঘায়ে আসিরিয়া পড়ে যাবে; সেই তলোয়ার তাকে গ্রাস করবে। তার লোকেরা তলোয়ারের সামনে থেকে পালিয়ে যাবে আর তাদের যুবকদের জোর করে খাটানো হবে। তাদের রাজা ভয়ে পালিয়ে যাবে; তার সেনাপতিরা পতাকা দেখে দারুণ ভয় পাবে।” সিয়োনে যাঁর আগুন আছে, আর যিরূশালেমে আছে চুলা, সেই সদাপ্রভুই এই কথা বলছেন। দেখ, একজন রাজা ন্যায়ভাবে রাজত্ব করবেন আর শাসনকর্তারা ন্যায়বিচার করবেন। তাদের প্রত্যেকজন হবে যেন বাতাস থেকে আড়ালের জায়গা আর ঝড় থেকে আশ্রয়স্থান, যেন মরুভূমিতে জলের স্রোত আর রোদে পোড়া জমিতে বড় পাথরের ছায়া। তখন যাদের চোখ দেখতে পায় তাদের চোখ বন্ধ করা হবে না, আর যাদের কান শুনতে পায় তারা শুনতে থাকবে। যারা চিন্তা-ভাবনা না করে কাজ করে তারা জ্ঞান লাভ করবে, আর তোত্‌লারা স্পষ্ট করে কথা বলবে। নীচমনা লোকদের আর বলা হবে না ভাল লোক, কিম্বা বদ্‌মাইশদেরও আর বলা হবে না সম্মানিত লোক, কারণ নীচমনা লোক খারাপ কথাই বলে আর তার মন মন্দ বিষয়ে ব্যস্ত থাকে। সে জঘন্য জঘন্য কাজ করে আর সদাপ্রভু সম্বন্ধে অপমানের কথা ছড়ায়। সে এমন ব্যবস্থা করে যাতে খিদে পাওয়া লোকেরা খাবার না পায় এবং পিপাসিতেরা জল না পায়। বদ্‌মাইশদের কাজের ধারা মন্দ; এমন কি, অভাবীদের অনুরোধ উপযুক্ত হলেও সে মিথ্যা কথা দিয়ে তাদের ধ্বংস করবার জন্য মন্দ ফন্দি আঁটে। কিন্তু ভাল লোক ভাল পরিকল্পনা করে আর তার ভাল কাজের দ্বারা সে স্থির থাকে। হে আরামে-থাকা স্ত্রীলোকেরা, তোমরা আমার কথার বাধ্য হও। হে নিশ্চিন্তমনা মেয়েরা, তোমরা আমার কথায় কান দাও। হে নিশ্চিন্তমনা মেয়েরা, এক বছরের কিছু বেশী সময় হলে পর তোমরা ভয়ে কাঁপবে, কারণ আংগুর নষ্ট হয়ে যাবে, ফল পাড়বার সময় আসবে না। হে আরামে-থাকা স্ত্রীলোকেরা আর নিশ্চিন্তমনা মেয়েরা, তোমরা ভয়ে কাঁপতে থাক; তোমাদের কাপড়-চোপড় খুলে কোমরে চট জড়াও। চোখ জুড়ানো ক্ষেত ও ফলে ভরা আংগুর লতার জন্য তোমাদের বুক চাপড়াও। কাঁটাগাছে আর কাঁটাঝোপে ভরা আমার লোকদের দেশের জন্য বুক চাপড়াও। হ্যাঁ, আমোদ-ফুর্তিতে ভরা বাড়ী-ঘর আর হৈ-হুল্লোড়ে ভরা শহরের জন্য বুক চাপড়াও। তার পরে মরু-এলাকায় বাস করবে ন্যায়বিচার আর উর্বর জমিতে বাস করবে সততা। সততার ফল হবে শান্তি, আর তার ফলে চিরকালের জন্য স্থিরতা ও নিশ্চয়তা আসবে। আমার লোকেরা শান্তিপূর্ণ বাসস্থানে, নিরাপদ বাড়ী-ঘরে ও গোলমালহীন বিশ্রামের জায়গায় বাস করবে। শিলাবৃষ্টি বনের গাছপালা মাটিতে ফেলে দেবে আর শহর সম্পূর্ণভাবে মাটির সংগে সমান হয়ে যাবে। কিন্তু প্রত্যেকটা স্রোতের ধারে বীজ লাগিয়ে আর তোমাদের গরু ও গাধাগুলো নিরাপদে চরতে দিয়ে তোমরা সুখী হবে। হে ধ্বংসকারী, ধিক্‌ তোমাকে! তুমি ধ্বংস না হয়েও ধ্বংস করছ; তোমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয় নি তবুও তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করছ। ধ্বংসের কাজ শেষ করলেই তোমাকে ধ্বংস করা হবে; বিশ্বাসঘাতকতা করা শেষ করলেই তোমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রতি দয়া কর; আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। প্রতিদিন সকাল বেলায় তুমি আমার লোকদের শক্তি হও, আর কষ্টের সময় আমাদের উদ্ধারকারী হও। তোমার গলার স্বরে লোকেরা পালায়; তুমি উঠলে জাতিরা ছড়িয়ে পড়ে। পংগপাল যেমন করে শস্য নষ্ট করে, তেমনি করে হে ধ্বংসকারী, তোমাদের জিনিসও লুট করা হবে। লোকেরা এক ঝাঁক পংগপালের মত সেগুলোর উপর এসে পড়বে। সদাপ্রভু কত মহান! তিনি স্বর্গে বাস করেন; তিনি সিয়োনকে ন্যায়বিচার ও সততায় পূর্ণ করেছেন। যুগের পর যুগ ধরে তিনিই তাদের নিরাপত্তা, উদ্ধার, জ্ঞান ও বুঝবার শক্তির ভাণ্ডার হয়ে আসছেন। সদাপ্রভুর প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয় হল তাদের ধন। দেখ, তাদের সাহসী লোকেরা রাস্তায় রাস্তায় কাঁদছে; শান্তির জন্য পাঠানো দূতেরা খুব বেশী কান্নাকাটি করছে। রাজপথগুলো খালি, কোন লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে না। চুক্তি ভেংগে গেছে; শহরগুলোকে কোন দাম দেওয়া হচ্ছে না এবং কাউকেই সম্মান করা হচ্ছে না। দেশ শোক করছে আর ্নান হয়ে যাচ্ছে, লেবানন লজ্জা পেয়েছে ও শুকিয়ে যাচ্ছে, শারোণ মরু-এলাকার মত হয়েছে আর বাশন ও কর্মিলের সব গাছের পাতা ঝরে পড়েছে। সদাপ্রভু বলছেন, “এবার আমি উঠব, এবার আমি সম্মানিত হব, এবার আমার গৌরব প্রকাশিত হবে। তোমরা গর্ভে ধরবে তুষ আর জন্ম দেবে খড়ের। তোমাদের নিঃশ্বাস আগুনের মত করে তোমাদের পুড়িয়ে ফেলবে। লোকেরা হবে পুড়িয়ে ফেলা চুনা পাথরের মত এবং কেটে ফেলে আগুনে দেওয়া কাঁটাঝোপের মত।” তোমরা যারা দূরে আছ, আমি যা করেছি তা শোন; তোমরা যারা কাছে আছ আমার শক্তিকে স্বীকার করে নাও। সিয়োনের পাপীরা ভীষণ ভয় পেয়েছে; ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন লোকদের কাঁপুনি ধরেছে। তারা বলছে, “আমাদের মধ্যে কে পুড়িয়ে ফেলা আগুনের সংগে থাকতে পারে? কে চিরকাল জ্বলতে থাকা আগুনের সংগে বাস করতে পারে?” সে-ই বাস করতে পারে, যে লোক সৎভাবে চলাফেরা করে ও যা ঠিক তা বলে, যে লোক জুলুম করে লাভ করা ঘৃণা করে ও ঘুষ নেওয়া থেকে হাত সরিয়ে রাখে, যে লোক খুনের ষড়যন্ত্রের কথা শোনা থেকে কান বন্ধ করে রাখে আর মন্দ কাজ করতে দেখা থেকে চোখ বন্ধ করে রাখে। সেই লোক নিরাপদে বাস করবে এবং তার আশ্রয় হবে পাহাড়ী দুর্গ। তাকে খাবারের যোগান দেওয়া হবে আর সে নিশ্চয়ই জল পাবে। তোমার চোখ রাজাকে তাঁর জাঁকজমকের মধ্যে দেখতে পাবে, আর দেখতে পাবে এমন একটা দেশ যার সীমানা অনেক বড়। তোমার চিন্তার মধ্যে থাকবে আগের সেই ভীষণ ভয়ের কথা। তুমি ভাববে, “কোথায় সেই হিসাব-রক্ষক? কোথায় সেই লোক, যে কর্‌ আদায় করত? কোথায় দুর্গের ভার-পাওয়া সেই কর্মচারী?” সেই দেমাক-ভরা লোকদের তুমি আর দেখবে না; দেখবে না সেই অজানা ভাষা বলা লোকদের, যাদের কথা অদ্ভুত আর বুঝা যায় না। আমাদের সব পর্ব পালনের শহর সিয়োনের দিকে চেয়ে দেখ। তোমার চোখ দেখবে যিরূশালেমকে, একটা শান্তিপূর্ণ বাসস্থানকে, একটা তাম্বুকে যা সরানো হবে না। তার গোঁজগুলো কখনও তোলা হবে না আর তার কোন দড়িও ছিঁড়বে না। সেখানে শক্তিশালী সদাপ্রভু আমাদের মংগলের জন্য থাকবেন। সেখানে বড় বড় নদী ও খাল থাকবে। কোন দাঁড়ের নৌকা সেখানে চলবে না; কোন শক্তিশালী জাহাজও তার উপর দিয়ে যাবে না। সদাপ্রভুই আমাদের ন্যায়বিচারক ও আমাদের আইনদাতা; সদাপ্রভুই আমাদের রাজা, তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন। এখন তোমার পালের দড়াদড়ি ঢিলে হয়ে গেছে; তাতে মাস্তুলটা শক্ত করে আট্‌কানো নেই, পালও খাটানো যায় নি। পরে লুটের প্রচুর জিনিস ভাগ করা হবে; এমন কি, খোঁড়ারাও লুটের মাল নিয়ে যাবে। সিয়োনে বাসকারী কেউ বলবে না, “আমি অসুস্থ।” যারা সেখানে বাস করে তাদের পাপ ক্ষমা করা হবে। ওহে জাতিরা, তোমরা কাছে এস, শোন; হে লোকেরা, তোমরা কান দাও। পৃথিবী ও তার মধ্যেকার সব লোকেরা শুনুক; জগৎ ও তার মাটি থেকে তৈরী মানুষেরা শুনুক। সব জাতির উপরেই সদাপ্রভু ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছেন; তাদের সব সৈন্যদলের উপরে তাঁর ক্রোধ রয়েছে। তিনি তাদের একেবারে শেষ করে ফেলবেন, ধ্বংসের হাতে তাদের তুলে দেবেন। তাদের নিহত লোকদের বাইরে ফেলে দেওয়া হবে। তাদের মৃতদেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে এবং তাদের রক্তে পাহাড়-পর্বত ধুয়ে যাবে। আকাশের সূর্য-চাঁদ-তারাগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে আর আকাশ গুটিয়ে রাখা কাগজের মত গুটিয়ে যাবে। যেমন করে আংগুর লতা আর ডুমুর গাছ থেকে শুকনা পাতা পড়ে যায় তেমনি করে সমস্ত তারাগুলো পড়ে যাবে। আমার তলোয়ার স্বর্গে সম্পূর্ণভাবে তৃপ্ত; দেখ, বিচারের জন্য সেটা ইদোমের উপর, অর্থাৎ যে লোকদের আমি ধ্বংসের অভিশাপের অধীন করে রেখেছি তাদের উপর নেমে আসছে। সদাপ্রভুর তলোয়ার রক্তে স্নান করেছে; তা চর্বিতে ঢাকা পড়ে গেছে। সেই রক্ত ভেড়ার বাচ্চা ও ছাগলের রক্তের মত আর চর্বি ভেড়ার বৃক্কের চর্বির মত, কারণ সদাপ্রভু বস্রাতে একটা উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবেন আর ইদোমে অনেককে কেটে ফেলা হবে। সেগুলোর সংগে বুনো ষাঁড়, এঁড়ে বাছুর ও বড় বড় ষাঁড় কাটা হবে। তাদের দেশ রক্তে ভিজে যাবে, আর চর্বিতে ধুলা ঢেকে যাবে। এই সব হবে, কারণ প্রতিশোধ নেবার সদাপ্রভুর একটা দিন আছে, সিয়োনের পক্ষ হয়ে শাস্তি দেবার একটা সময় আছে। ইদোমের জলের স্রোতগুলো আলকাত্‌রায় ভরে যাবে, তার ধুলা হবে গন্ধকে ভরা, তাই দেশের মাটি হবে জ্বলন্ত আলকাত্‌রা। দিনে রাতে কখনও তা নিভবে না; চিরকাল তার ধূমা উঠতে থাকবে। বংশের পর বংশ ধরে সেটা খালি হয়ে পড়ে থাকবে; কেউ তার মধ্য দিয়ে আর কখনও যাবে না। মরু-পেঁচা, শজারু, হুতুম পেঁচা আর দাঁড়কাক সেই দেশ অধিকার করবে ও সেখানে বাসা করবে। সদাপ্রভু বিশৃঙ্খলার মাপের দড়ি আর শূন্যতার ওলনদড়ি ইদোমের উপর বিছিয়ে দেবেন। রাজ্য চালাবার জন্য কোন উঁচু পদের লোক কিম্বা কোন শাসনকর্তা থাকবে না। কাটাগাছে তার বড় বড় বাড়ীগুলো ঢেকে যাবে, আর দুর্গগুলো ঢেকে যাবে বিছুটি আর কাঁটাঝোপে। সেই দেশ হবে শিয়াল ও উটপাখীর বাসস্থান। মরু-প্রাণীরা শিয়ালদের সংগে থাকবে আর বুনো ছাগলেরা একে অন্যকে ডাকবে। রাতে ঘুরে বেড়ানো পেত্নী সেখানে বাস করবে; সেখানে তার বিশ্রামের স্থান সে খুঁজে পাবে। পেঁচা বাসা বানিয়ে সেখানে ডিম পাড়বে, তারপর ডিম ফুটিয়ে তার ডানার ছায়ায় তার বাচ্চাগুলো এক জায়গায় করবে। সেখানে চিলগুলো নিজের নিজের সংগিনীর সংগে একত্র হবে। তোমরা সদাপ্রভুর বইয়ে খুঁজে দেখ ও পড়। সেখানে লেখা আছে- এদের একটাও হারিয়ে যাবে না, একটারও সংগিনীর অভাব হবে না; কারণ আমার মুখ দিয়ে সদাপ্রভু সেই আদেশ দিয়েছেন, আর তাঁর আত্মা তাদের একসংগে জড়ো করবেন। তিনি গুলিবাঁট করে ও মাপের দড়ি দিয়ে মেপে সেই জায়গা তাদের ভাগ করে দেবেন। তা চিরকাল তাদেরই থাকবে; বংশের পর বংশ ধরে তারা সেখানে বাস করবে। যারা দুর্বল তাদের হাত শক্তিশালী কর; কাঁপতে থাকা হাঁটু স্থির কর। যাদের অন্তর ভয়ে ভরা তাদের বল, “বলবান হও, ভয় কোরো না। তোমাদের ঈশ্বর আসবেন, প্রতিশোধ নেবার ও শাস্তি দেবার জন্য আসবেন; তিনি এসে তোমাদের উদ্ধার করবেন।” তখন অন্ধদের চোখ খুলে যাবে, বয়রাদের কান বন্ধ থাকবে না। তখন খোঁড়ারা হরিণের মত লাফাবে, বোবাদের জিভ্‌ আনন্দে চিৎকার করবে। মরু-এলাকার নীচ থেকে জোরে জল বেরিয়ে আসবে, আর মরুভূমির নানা জায়গায় স্রোত বইবে। শুকনা জমি পুকুর হবে, আর পিপাসিত মাটিতে জলের ফোয়ারা উঠবে; যেখানে শিয়ালেরা শুয়ে থাকত সেই জায়গায় জন্মাবে নল-খাগড়ার জংগল। সেখানে হবে একটা রাজপথ, হ্যাঁ, একটা পথ হবে; সেটাকে বলা হবে পবিত্রতার পথ। অশুচি লোকেরা তার উপর দিয়ে যাবে না; সেটা হবে তাদের জন্য যারা পবিত্রতার পথে চলে। অসাড়-বিবেক লোকেরা সেই পথ দিয়ে যাবে না। সেখানে কোন সিংহ থাকবে না, কোন হিংস্র জন্তু সেই পথে যাবে না; সেখানে তাদের দেখা যাবে না, কিন্তু কেবল মুক্তি পাওয়া লোকেরাই সেই পথে হাঁটবে, আর সদাপ্রভুর মুক্ত করা লোকেরাই ফিরে আসবে। তারা আনন্দে গান গাইতে গাইতে সিয়োনে ঢুকবে; তাদের মাথার মুকুট হবে চিরস্থায়ী আনন্দ। তারা খুশী ও আনন্দে পূর্ণ হবে, আর দুঃখ ও দীর্ঘনিঃশ্বাস দূরে পালিয়ে যাবে। রাজা হিষ্কিয়ের রাজত্বের চৌদ্দ বছরের সময় আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব যিহূদার সমস্ত দেয়াল-ঘেরা শহরগুলো আত্রুমণ করে সেগুলো দখল করে নিলেন। তারপর আসিরিয়ার রাজা রব্‌শাকিকে বড় একদল সৈন্য দিয়ে লাখীশ থেকে যিরূশালেমে রাজা হিষ্কিয়ের কাছে পাঠালেন। রব্‌শাকি গিয়ে ধোপার মাঠের রাস্তার ধারে উঁচু পুকুরের সংগে লাগানো জলের সুড়ংগের কাছে থামলেন। তখন রাজবাড়ীর পরিচালক হিল্কিয়ের ছেলে ইলিয়াকীম, রাজার লেখক শিব্‌ন ও ইতিহাস লেখক আসফের ছেলে যোয়াহ বের হয়ে তাঁর কাছে গেলেন। রব্‌শাকি তাঁদের বললেন, “আপনারা হিষ্কিয়কে এই কথা বলুন যে, সেই মহান রাজা, অর্থাৎ আসিরিয়ার রাজা বলছেন, ‘তুমি কিসের উপর নির্ভর করছ? আমি বলছি তোমার যুদ্ধ করবার বুদ্ধি ও শক্তির কথা কেবল ফাঁকা বুলি। বল দেখি, তুমি কার উপর নির্ভর করে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছ? তুমি তো নির্ভর করছ সেই থেঁৎলে যাওয়া নল, অর্থাৎ মিসরের উপর। যে সেই নলের উপর নির্ভর করবে তা তার হাত ফুটা করে দেবে। মিসরের রাজা ফরৌণের উপর যারা নির্ভর করে তাদের প্রতি সে তা-ই করে।’ কিন্তু আপনারা যদি আমাকে বলেন যে, আপনারা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপরে নির্ভর করছেন, তাহলে তিনি কি সেই ঈশ্বর নন যাঁর পূজার উঁচু স্থান ও বেদীগুলো হিষ্কিয় ধ্বংস করেছে এবং যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের বলেছে যিরূশালেমের এই বেদীর সামনে তাদের উপাসনা করতে হবে? “আপনারা আমার হয়ে আপনাদের রাজাকে আরও বলুন, ‘আপনি যদি পারেন তবে আমার মনিব আসিরিয়ার রাজার সংগে এই বাজি ধরুন যে, আমি আপনাকে দুই হাজার ঘোড়া দেব যদি আপনি তাতে চড়বার জন্য লোক দিতে পারেন। যদি তা-ই না পারেন তবে আমার মনিবের কর্মচারীদের মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট তাকেই বা আপনি কেমন করে বাধা দেবেন, যদিও আপনি মিসরের রথ ও ঘোড়সওয়ারের উপর নির্ভর করছেন? তা ছাড়া আমি কি সদাপ্রভুর কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই এই দেশ আক্রমণ ও ধ্বংস করতে এসেছি? এই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তা ধ্বংস করে ফেলতে সদাপ্রভু নিজেই আমাকে বলেছেন।’ ” তখন ইলিয়াকীম, শিব্‌ন ও যোয়াহ রব্‌শাকিকে বললেন, “আপনার দাসদের কাছে আপনি দয়া করে অরামীয় ভাষায় কথা বলুন, কারণ আমরা তা বুঝতে পারি। দেয়ালের উপরকার লোকদের সামনে আপনি আমাদের কাছে ইব্রীয় ভাষায় কথা বলবেন না।” কিন্তু উত্তরে রব্‌শাকি বললেন, “আমার মনিব কি কেবল আপনাদের মনিব ও আপনাদের কাছে এই সব কথা বলতে আমাকে পাঠিয়েছেন? দেয়ালের উপরে বসা ঐ সব লোকেরা, যাদের আপনাদেরই মত নিজের নিজের পায়খানা ও প্রস্রাব খেতে হবে তাদের কাছেও কি বলে পাঠান নি?” তারপর রব্‌শাকি দাঁড়িয়ে জোরে জোরে ইব্রীয় ভাষায় বললেন, “তোমরা মহান রাজার, অর্থাৎ আসিরিয়ার রাজার কথা শোন। রাজা বলছেন যে, হিষ্কিয় যেন তোমাদের না ঠকায়। সে তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না। হিষ্কিয় যেন এই কথা বলে সদাপ্রভুর উপর তোমাদের বিশ্বাস না জন্মায় যে, ‘সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আমাদের উদ্ধার করবেন; এই শহর আসিরিয়ার রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে না।’ “তোমরা হিষ্কিয়ের কথা শুনো না। আসিরিয়ার রাজা বলছেন, ‘তোমরা আমার সংগে সন্ধি কর এবং বের হয়ে আমার কাছে এস। তাহলে তোমরা প্রত্যেকে তার নিজের আংগুর ও ডুমুর গাছ থেকে ফল আর নিজের কূয়া থেকে জল খেতে পারবে। তারপর আমি এসে তোমাদের নিজের দেশের মত আর এক দেশে তোমাদের নিয়ে যাব। সেই দেশ হল শস্য ও নতুন আংগুর-রসের দেশ, রুটি ও আংগুর ক্ষেতের দেশ। “ ॥ঃযং ‘হিষ্কিয় তোমাদের বিপথে চালাবার জন্য যেন না বলে যে, সদাপ্রভু তোমাদের রক্ষা করবেন। অন্যান্য জাতির কোন দেবতা কি আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে তার দেশ রক্ষা করতে পেরেছে? হমাৎ ও অর্পদের দেবতারা কোথায়? কোথায় সফর্বয়িমের দেবতারা? তারা কি আমার হাত থেকে শমরিয়াকে রক্ষা করতে পেরেছে? এই সব দেশের সমস্ত দেব-দেবতাদের মধ্যে কে আমার হাত থেকে নিজের দেশকে রক্ষা করেছে? তাহলে সদাপ্রভু কি করে আমার হাত থেকে যিরূশালেমকে রক্ষা করবেন?’ ” লোকেরা কিন্তু চুপ করে রইল, কোন উত্তর দিল না, কারণ রাজা হিষ্কিয় কোন উত্তর দিতে তাদের নিষেধ করেছিলেন। এর পর রাজবাড়ীর পরিচালক হিল্কিয়ের ছেলে ইলিয়াকীম, রাজার লেখক শিব্‌ন ও ইতিহাস লেখক আসফের ছেলে যোয়াহ তাঁদের কাপড় ছিঁড়ে হিষ্কিয়ের কাছে গেলেন এবং রব্‌শাকির সমস্ত কথা তাঁকে জানালেন। রাজা হিষ্কিয় এই কথা শুনে নিজের কাপড় ছিঁড়লেন এবং ছালার চট পরে সদাপ্রভুর ঘরে গেলেন। তিনি রাজবাড়ীর পরিচালক ইলিয়াকীম, রাজার লেখক শিব্‌ন ও পুরোহিত-নেতাদের চট পরা অবস্থায় আমোসের ছেলে নবী যিশাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা যিশাইয়কে বললেন, “হিষ্কিয় বলছেন যে, আজকের দিনটা হল কষ্টের, শাস্তি পাওয়ার ও অসম্মানের দিন। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যেন সন্তানেরা জন্ম হবার মুখে এসেছে কিন্তু জন্ম দেবার শক্তি নেই। আসিরিয়ার রাজা জীবন্ত ঈশ্বরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে রব্‌শাকিকে পাঠিয়েছেন, কিন্তু আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু হয়তো সেই সব কথা শুনে তাকে শাস্তি দেবেন। তাই যারা এখনও বেঁচে আছে তাদের জন্য আপনি প্রার্থনা করুন।” রাজা হিষ্কিয়ের কর্মচারীরা যখন যিশাইয়ের কাছে আসলেন, তখন যিশাইয় তাঁদের বললেন, “আপনাদের মনিবকে বলবেন যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি যা শুনেছ, অর্থাৎ আসিরিয়ার রাজার কর্মচারীরা আমার বিরুদ্ধে যে সব অপমানের কথা বলেছে তাতে ভয় পেয়ো না। শোন, আমি তার মধ্যে এমন একটা মনোভাবের সৃষ্টি করব যার ফলে সে একটা সংবাদ শুনে নিজের দেশে ফিরে যাবে, আর সেখানে আমি তাকে তলোয়ারের ঘায়ে শেষ করে দেব।’ ” পরে রব্‌শাকি শুনলেন যে, আসিরিয়ার রাজা লাখীশ ছেড়ে চলে গিয়ে লিব্‌নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। সেইজন্য রব্‌শাকি সেখানে গেলেন। আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব খবর পেলেন যে, কূশ দেশের রাজা তির্হকঃ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য বের হয়েছেন। এই কথা শুনে তিনি হিষ্কিয়ের কাছে দূতদের পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, “তোমরা যিহূদার রাজা হিষ্কিয়কে বলবে, ‘তুমি যাঁর উপর নির্ভর করে আছ সেই ঈশ্বর বলেছেন যে, আসিরিয়ার রাজার হাতে যিরূশালেমকে তুলে দেওয়া হবে না। তাঁর সেই ছলনার কথায় তুমি ভুল কোরো না। আসিরিয়ার রাজারা কিভাবে অন্য সব দেশ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই তুমি তা শুনেছ; তাহলে তুমি কেমন করে মনে করছ তুমি রক্ষা পাবে? আমার পূর্বপুরুষেরা যে সব জাতিকে ধ্বংস করেছেন তাদের দেবতারা, অর্থাৎ গোষণ, হারণ, রেৎসফ ও তলঃসরে বাসকারী এদনের লোকদের দেবতারা কি তাদের রক্ষা করেছেন? হমাতের রাজা, অর্পদের রাজা, সফর্বয়িম শহরের রাজা আর হেনা ও ইব্বার রাজা কোথায়?’ ” হিষ্কিয় দূতদের হাত থেকে চিঠিখানা নিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি সদাপ্রভুর ঘরে গিয়ে সদাপ্রভুর সামনে চিঠিটা মেলে ধরলেন। হিষ্কিয় সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলেন, “হে দুই করূবের মাঝখানে থাকা সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তুমি, একমাত্র তুমিই পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের ঈশ্বর। তুমি মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছ। হে সদাপ্রভু, কান দাও, শোন; হে সদাপ্রভু, তোমার চোখ খোল, দেখ; জীবন্ত ঈশ্বরকে অপমান করবার জন্য সন্‌হেরীব যে সব কথা বলে পাঠিয়েছে তা শোন। এখন হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে তুমি আমাদের রক্ষা কর, যাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানতে পারে যে, তুমি, কেবল তুমিই সদাপ্রভু।” তখন আমোসের ছেলে যিশাইয় হিষ্কিয়ের কাছে এই খবর পাঠালেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন যে, আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব সম্বন্ধে আপনি প্রার্থনা করেছেন; এইজন্য তার বিরুদ্ধে সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘কুমারী মেয়ে সিয়োন তোমাকে তুচ্ছ করবে ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে। যিরূশালেমের লোকেরা তোমার পিছন থেকে মাথা নাড়বে। তুমি কাকে অসম্মান করেছ? কার বিরুদ্ধে তুমি অপমানের কথা বলেছ? তুমি কার বিরুদ্ধে চিৎকার করেছ আর গর্বের সংগে চোখ তুলে তাকিয়েছ? ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের বিরুদ্ধেই তুমি এই সব করেছ। তুমি প্রভুকে টিট্‌কারি দিয়ে ও গর্ব করে তোমার দাসদের দিয়ে বলে পাঠিয়েছ যে, তোমার সব রথ দিয়ে তুমি পাহাড়গুলোর চূড়ায়, লেবাননের সবচেয়ে উঁচু উঁচু চূড়ায় উঠেছ, তার সবচেয়ে লম্বা লম্বা এরস গাছ আর ভাল ভাল বেরস গাছ কেটে ফেলেছ, তার গভীর বনের সুন্দর জায়গায় ঢুকেছ, বিদেশের মাটিতে মাটিতে কূয়া খুঁড়েছ এবং সেখানকার জল খেয়েছ, আর তোমার পা দিয়ে মিসরের সব নদীগুলো শুকিয়ে ফেলেছ। “ ॥ঃযং ‘তুমি কি শোন নি যে, অনেক আগেই আমি তা ঠিক করে রেখেছিলাম, অনেক কাল আগেই আমি তার পরিকল্পনা করেছিলাম? আর এখন আমি তা ঘটালাম। সেইজন্যই তো তুমি দেয়াল-ঘেরা শহরগুলো পাথরের ঢিবি করতে পেরেছ। সেখানকার লোকেরা শক্তিহীন হয়েছে এবং ভীষণ ভয় ও লজ্জা পেয়েছে। তারা ক্ষেতের ঘাসের মত, গজিয়ে ওঠা সবুজ চারার মত, ছাদের উপরে গজানো ঘাসের মত যা বেড়ে উঠবার আগেই শুকিয়ে যায়। কিন্তু তুমি কোথায় থাক আর কখন আস বা যাও আর কেমন করে আমার বিরুদ্ধে রেগে ওঠ তা সবই আমি জানি। তুমি আমার বিরুদ্ধে রেগে উঠেছ বলে এবং তোমার দেমাকের কথা আমার কানে এসেছে বলে আমি তোমার নাকে আমার কড়া লাগাব আর তোমার মুখে আমার বল্‌গা লাগাব, আর যে পথ দিয়ে তুমি এসেছ সেই পথেই ফিরে যেতে আমি তোমাকে বাধ্য করব।’ “হে হিষ্কিয়, তোমার জন্য চিহ্ন হবে এই: এই বছর নিজে নিজে যা জন্মাবে তোমরা তা-ই খাবে, আর দ্বিতীয় বছরে তা থেকে যা জন্মাবে তা খাবে। কিন্তু তৃতীয় বছরে তোমরা বীজ বুনবে ও ফসল কাটবে আর আংগুর ক্ষেত করে তার ফল খাবে। যিহূদা-গোষ্ঠীর যে লোকেরা তখনও বেঁচে থাকবে তারা আর একবার সফল হবে। তারা গাছের মত নীচে শিকড় বসাবে আর উপরে ফল ফলাবে। বেঁচে থাকা লোকেরা যিরূশালেম থেকে আসবে আর সিয়োন পাহাড় থেকে আসবে রক্ষা পাওয়া একদল লোক। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর আগ্রহই এই সমস্ত করবে। “সেইজন্য আসিরিয়ার রাজার বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘সে এই শহরে ঢুকবে না কিম্বা এখানে একটা তীরও মারবে না। সে ঢাল নিয়ে এর সামনে আসবে না কিম্বা ঘেরাও করে ওঠা-নামা করবার জন্য কিছু তৈরী করবে না। সে যে পথ দিয়ে এসেছে সেই পথেই ফিরে যাবে; এই শহরে সে ঢুকবে না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। আমি আমার ও আমার দাস দায়ূদের জন্য এই শহরটা ঘিরে রেখে তা রক্ষা করব।’ ” তারপর সদাপ্রভুর দূত বের হয়ে আসিরিয়দের ছাউনির এক লক্ষ পঁচাশি হাজার লোককে মেরে ফেললেন। পরদিন সকালবেলা লোকেরা যখন উঠল তখন দেখা গেল সব জায়গায় কেবল মৃতদেহ। কাজেই আসিরিয়ার রাজা সন্‌হেরীব তাঁর সৈন্যদল নিয়ে চলে গেলেন এবং নীনবী শহরে ফিরে গিয়ে সেখানে থাকতে লাগলেন। একদিন সন্‌হেরীব যখন তাঁর দেবতা নিষ্রোকের মন্দিরে পূজা করছিলেন তখন অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর নামে তাঁর দুই ছেলে তাঁকে তলোয়ারের ঘায়ে মেরে ফেলে অরারট দেশে পালিয়ে গেল। সন্‌হেরীবের জায়গায় তাঁর ছেলে এসর-হদ্দোন রাজা হলেন। সেই সময় হিষ্কিয় অসুস্থ হয়ে মরবার মত হয়েছিলেন। তখন আমোসের ছেলে নবী যিশাইয় তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন যে, আপনি যেন আপনার ঘরের ব্যবস্থা করে রাখেন, কারণ আপনি মারা যাবেন, ভাল হবেন না।” এই কথা শুনে হিষ্কিয় দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, “হে সদাপ্রভু, তুমি মনে করে দেখ, আমি তোমার সামনে কেমন বিশ্বস্তভাবে ও সমস্ত অন্তরের ভক্তি দিয়ে চলাফেরা করেছি এবং তোমার চোখে যা ঠিক তা করেছি।” এই বলে হিষ্কিয় খুব কাঁদতে লাগলেন। তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য যিশাইয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “তুমি গিয়ে হিষ্কিয়কে বল যে, তার পূর্বপুরুষ দায়ূদের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি ও তোমার চোখের জল দেখেছি; আমি তোমার আয়ু আরও পনেরো বছর বাড়িয়ে দিলাম। আসিরিয়ার রাজার হাত থেকে আমি তোমাকে ও এই শহরকে উদ্ধার করব এবং শহরটার রক্ষার ব্যবস্থা করব। “ ॥ঃযং ‘আমি যে আমার কথামত কাজ করব তার চিহ্ন হল এই: আহসের সিঁড়িতে ছায়া সূর্যের সংগে যত ধাপ এগিয়ে গেছে আমি সেই ছায়া দশ ধাপ পিছনে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’ ” কাজেই সূর্যের সংগে ছায়া আবার দশ ধাপ পিছনে ফিরে গেল। যিহূদার রাজা হিষ্কিয় তাঁর অসুস্থতা থেকে সুস্থ হবার পরে যা লিখেছিলেন তা এই: আমি বলেছিলাম, “আমার জীবনের মাঝখানেই কি আমাকে মৃতস্থানের দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে? আর আমার বাকী বছরগুলো থেকে কি আমাকে বঞ্চিত করা হবে?” আমি বলেছিলাম, “আমি সদাপ্রভুকে জীবিতদের দেশে আর দেখতে পাব না; এই অস্থায়ী জগতে বাসকারী মানুষকেও আর আমি দেখতে পাব না। ভেড়ার রাখালের তাম্বুর মত করে আমার বাসস্থান তুলে ফেলে আমার কাছ থেকে তা নিয়ে নেওয়া হবে। আমার আয়ু আমি তাঁতীদের মত করে তাঁতে জড়িয়েছিলাম আর এখন তা থেকে তুমি আমাকে ছেঁটে ফেলবে। এক দিনের মধ্যেই তুমি আমাকে শেষ করে দেবে। সকাল না হওয়া পর্যন্ত আমি নিজেকে শান্ত রাখলাম। সিংহের মত করে আমার হাড়গুলো তুমি ভেংগে দিলে; এক দিনের মধ্যেই তুমি আমাকে শেষ করে দেবে। চাতক, শালিক ও ঘুঘুর মত আমি কাতর স্বরে ডাকতে লাগলাম। উপর দিকে তাকাতে তাকাতে আমার চোখ দুর্বল হয়ে পড়ল। হে প্রভু, আমি কষ্ট পাচ্ছি, তুমি আমার ভার নাও। “কিন্তু আমি কি বলব? তিনি আমার সংগে কথা বলেছেন আর নিজেই এটা করেছেন। আমার প্রাণের এই যন্ত্রণার জন্য আমি জীবনের বাকী সব বছরগুলো নম্র হয়ে চলব। হে প্রভু, তোমার কথা ও কাজ দিয়েই তো মানুষ বেঁচে থাকে; এই সবের মধ্যেই আমার আত্মা জীবিত থাকবে। তুমি আমার স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিয়ে আমাকে বাঁচতে দেবে। “অবশ্য আমার মংগলের জন্যই আমি এই ভীষণ যন্ত্রণা ভোগ করেছি, কিন্তু ধ্বংসের গর্ত থেকে তোমার ভালবাসায় তুমি আমাকে উদ্ধার করেছ। আমার সব পাপ তুমি পিছনে ফেলে দিয়েছ। মৃতস্থান তো তোমার গৌরব করতে পারে না, আর মৃত্যুও তোমার প্রশংসা-গান করতে পারে না। যারা সেই গর্তে নামে তারা তোমার প্রতিজ্ঞার পূর্ণতার আশা করতে পারে না। কেবল জীবিতেরা, জীবিতেরাই তোমার প্রশংসা করে যেমন আজ আমি করছি; বাবা তার ছেলেদের তোমার প্রতিজ্ঞার কথা বলে থাকেন। সদাপ্রভু আমাকে রক্ষা করেছেন, সেইজন্য আমাদের জীবনের সমস্ত দিনগুলোতে সদাপ্রভুর ঘরে তারের বাজনার সংগে আমরা গান গাইব।” এর আগে যিশাইয় বলেছিলেন, “ডুমুর দিয়ে একটা প্রলেপ তৈরী করে তাঁর ফোড়ার উপর লাগিয়ে দিলে তিনি সুস্থ হবেন।” তখন হিষ্কিয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আমি যে সদাপ্রভুর ঘরে উঠতে পারব তার চিহ্ন কি?” এই সময় বাবিলের রাজা বলদনের ছেলে মরোদক-বলদন হিষ্কিয়ের অসুখ ও সুস্থ হবার খবর শুনে তাঁর কাছে চিঠি ও উপহার পাঠিয়ে দিলেন। হিষ্কিয় খুশী হয়ে সেই দূতদের গ্রহণ করলেন এবং তাঁর সব ভাণ্ডারগুলোতে যা কিছু ছিল, অর্থাৎ সোনা, রূপা, সুগন্ধি মসলা, দামী তেল এবং তাঁর অস্ত্রশস্ত্র ও ধনভাণ্ডারের সব কিছু তাদের দেখালেন। হিষ্কিয়ের রাজবাড়ীতে কিম্বা তাঁর সারা রাজ্যে এমন কিছু ছিল না যা তিনি তাদের দেখান নি। পরে নবী যিশাইয় রাজা হিষ্কিয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “ঐ লোকেরা কি বলল, আর কোথা থেকেই বা তারা এসেছিল?” হিষ্কিয় বললেন, “ওরা দূর দেশ থেকে, বাবিল দেশ থেকে এসেছিল।” নবী জিজ্ঞাসা করলেন, “ওরা আপনার রাজবাড়ীর মধ্যে কি কি দেখেছে?” হিষ্কিয় বললেন, “আমার রাজবাড়ীর সব কিছুই ওরা দেখেছে। আমার ধনভাণ্ডারের এমন কিছু নেই যা আমি তাদের দেখাই নি।” তখন যিশাইয় হিষ্কিয়কে বললেন, “সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু যা বলছেন তা আপনি শুনুন। সদাপ্রভু বলছেন, এমন দিন আসবে যখন আপনার রাজবাড়ীর সব কিছু এবং আপনার পূর্বপুরুষদের জমানো যা কিছু আজ পর্যন্ত রয়েছে সবই বাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে, কিছুই পড়ে থাকবে না। আপনার কয়েকজন বংশধর, আপনার নিজের সন্তান, যাদের আপনি জন্ম দিয়েছেন, তারা বাবিলের রাজার বাড়ীতে খোজা হয়ে সেবা-কাজ করবে।” উত্তরে হিষ্কিয় বললেন, “সদাপ্রভুর যে কথা আপনি বললেন তা ভাল।” তিনি এই কথা বললেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন তাঁর জীবনকালে তিনি শান্তিতে ও নিরাপদে থাকতে পারবেন। তোমাদের ঈশ্বর বলছেন, “আমার লোকদের সান্ত্বনা দাও, সান্ত্বনা দাও। যিরূশালেমের লোকদের সংগে নরমভাবে কথা বল, আর তাদের কাছে এই কথা ঘোষণা কর যে, তাদের দুঃখ-কষ্ট শেষ হয়েছে, তাদের পাপের ক্ষমা হয়েছে, তাদের সব পাপের ফল তারা সদাপ্রভুর হাত থেকে পুরোপুরিই পেয়েছে।” একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে, “তোমরা মরু-এলাকায় সদাপ্রভুর পথ ঠিক কর; মরুভূমিতে আমাদের ঈশ্বরের জন্য একটা রাস্তা সোজা কর। প্রত্যেক উপত্যকা ভরা হবে, পাহাড়-পর্বত সমান করা হবে, পাহাড়ী জায়গা সমতল করা হবে, আর অসমান জমি সমান করা হবে। তখন সদাপ্রভুর গৌরব প্রকাশিত হবে, আর সমস্ত মানুষ তা একসংগে দেখবে; সদাপ্রভুই এই সব কথা বলেছেন।” একজনের কণ্ঠস্বর বলছে, “ঘোষণা কর।” আমি বললাম, “আমি কি ঘোষণা করব?” “সব মানুষই ঘাসের মত, ঘাসের ফুলের মতই তাদের সব সৌন্দর্য। ঘাস শুকিয়ে যায় আর ফুলও ঝরে পড়ে, কারণ সদাপ্রভুর নিঃশ্বাস সেগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যায়। সত্যিই মানুষ ঘাসের মত। ঘাস শুকিয়ে যায় আর ফুলও ঝরে পড়ে, কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থাকে।” হে সিয়োন, সুখবর আনছ যে তুমি, তুমি উঁচু পাহাড়ে গিয়ে ওঠো। হে যিরূশালেম, সুখবর আনছ যে তুমি, তুমি জোরে চিৎকার কর, চিৎকার কর, ভয় কোরো না; যিহূদার শহরগুলোকে বল, “এই তো তোমাদের ঈশ্বর!” দেখ, প্রভু সদাপ্রভু শক্তির সংগে আসছেন, তাঁর শক্তিশালী হাত তাঁর হয়ে রাজত্ব করছে। দেখ, পুরস্কার তাঁর সংগে আছে, তাঁর পাওনা তাঁর কাছেই আছে। তিনি রাখালের মত করে তাঁর ভেড়ার পাল চরাবেন, ভেড়ার বাচ্চাগুলো তিনি হাতে তুলে নেবেন আর কোলে করে তাদের বয়ে নিয়ে যাবেন; বাচ্চা আছে এমন ভেড়ীদের তিনি আস্তে আস্তে চালিয়ে নিয়ে যাবেন। কে তার হাতের তালুতে পৃথিবীর সব জল মেপেছে কিম্বা তার বিঘত দিয়ে আকাশের সীমানা মেপেছে? কে পৃথিবীর ধুলা মাপের ঝুড়িতে ভরেছে কিম্বা দাঁড়িপাল্লায় পাহাড়-পর্বত ওজন করেছে? কে সদাপ্রভুর আত্মাকে মাপতে পেরেছে কিম্বা তাঁর পরামর্শদাতা হিসাবে তাঁকে উপদেশ দিয়েছে? বুদ্ধি পাবার জন্য সদাপ্রভু কার পরামর্শ নিয়েছেন, আর ঠিক পথ কে তাঁকে দেখিয়ে দিয়েছে? কে তাঁকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছে কিম্বা বিচারবুদ্ধির পথ দেখিয়েছে? দেখ, জাতিগুলো যেন কলসীর মধ্যে জলের একটা ফোঁটা; দাঁড়িপাল্লায় ধূলিকণার মতই তাদের মনে করা হয়। দূর দেশের লোকেরা তাঁর কাছে মিহি ধুলার মত ওজনহীন। আগুন জ্বালাবার জন্য লেবাননের কাঠ আর পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য লেবাননের পশু যথেষ্ট নয়। সমস্ত জাতি তাঁর সামনে কিছুই নয়; সেগুলোকে তিনি কিছু বলে মনে করেন না; সেগুলো তাঁর কাছে অসার। তবে কার সংগে তোমরা ঈশ্বরের তুলনা করবে? তুলনা করবে কিসের সংগে? কারিগরেরা ছাঁচে ঢেলে প্রতিমা বানায়; স্বর্ণকার তা সোনা দিয়ে মোড়ে আর তার জন্য রূপার শিকল তৈরী করে। গরীব লোক প্রতিমা তৈরী করবার জন্য যে কাঠ পচবে না সেই কাঠই বেছে নেয়। যা টলবে না এমন প্রতিমা তৈরীর জন্য সে একজন পাকা কারিগরের খোঁজ করে। তোমরা কি জান না? তোমরা কি শোন নি? প্রথম থেকেই কি তোমাদের সে কথা বলা হয় নি? পৃথিবী স্থাপনের সময় থেকে কি তোমরা বোঝ নি? পৃথিবীর গোল আকাশের উপরে তিনিই সিংহাসনে বসে আছেন, পৃথিবীর লোকেরা ফড়িংয়ের মত। চাঁদোয়ার মত করে তিনি আকাশকে বিছিয়ে দিয়েছেন, বাস করবার তাম্বুর মত করে তা খাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি রাজাদের ক্ষমতাশূন্য করেন আর এই জগতের শাসনকর্তাদের অসার জিনিসের মত করেন। যেই তাদের লাগানো হয়, যেই তাদের বোনা হয়, যেই তারা মাটিতে শিকড় বসায়, অমনি তিনি তাদের উপর ফুঁ দেন আর তারা শুকিয়ে যায়; একটা ঘূর্ণিবাতাস নাড়ার মত করে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়। সেই পবিত্রজন বলছেন, “তোমরা কার সংগে আমার তুলনা করবে? কে আমার সমান?” তোমরা চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ; কে ঐ সব সৃষ্টি করেছেন? তিনিই তারাগুলোকে এক এক করে বের করে এনেছেন; তিনিই তাদের প্রত্যেকের নাম ধরে ডাকেন। তাঁর মহাক্ষমতা ও মহাশক্তির জন্য তাদের একটাও হারিয়ে যায় না। হে যাকোব, কেন তুমি বলছ, হে ইস্রায়েল, কেন তুমি এই নালিশ করছ, “আমার পথ সদাপ্রভুর কাছ থেকে লুকানো রয়েছে, আমার ন্যায়বিচার পাবার অধিকার আমার ঈশ্বর অগ্রাহ্য করেছেন”? তোমরা কি জান না? তোমরা কি শোন নি? সদাপ্রভু, যিনি চিরকাল স্থায়ী ঈশ্বর, যিনি পৃথিবীর শেষ সীমার সৃষ্টিকর্তা, তিনি দুর্বল হন না, ক্লান্তও হন না; তাঁর বুদ্ধির গভীরতা কেউ মাপতে পারে না। তিনি দুর্বলদের শক্তি দেন আর শক্তিহীনদের বল বাড়িয়ে দেন। অল্পবয়সীরা পর্যন্ত দুর্বল হয় ও ক্লান্ত হয় আর যুবকেরা উছোট খেয়ে পড়ে যায়, কিন্তু যারা সদাপ্রভুর উপর আশা রাখে তারা নতুন শক্তি পাবে। তারা ঈগল পাখীর মত ডানা মেলে উঁচুতে উড়বে; তারা দৌড়ালে ক্লান্ত হবে না, তারা হাঁটলে দুর্বল হবে না। সদাপ্রভু বলছেন, “হে দূর দেশের লোকেরা, তোমরা আমার সামনে চুপ করে থাক। হে জাতিগুলো, তোমরা নতুন করে শক্তি পাও; তোমরা এগিয়ে এসে কথা বল। চল, আমরা বিচারের জন্য একসংগে জড়ো হই। “কে পূর্ব দিক থেকে আসবার জন্য একজনকে উত্তেজিত করেছেন? ন্যায়বান ঈশ্বর তাঁর কাজের জন্য তাকে ডাক দিয়েছেন। তিনি সেই লোকের হাতে জাতিদের তুলে দেবেন আর তার সামনে রাজাদের নত করবেন। তার তলোয়ার দিয়ে সে তাদের ধুলার মত করবে আর তার ধনুকের সামনে বাতাসে নাড়ার মত তাদের উড়িয়ে দেবে। সে তাদের তাড়া করবে; যে পথে সে আগে কখনও চলে নি সেই পথে সে নিরাপদে চলবে। কে এই কাজ করেছেন? কার দ্বারা এই কাজ হয়েছে? বংশের পর বংশে কি ঘটবে তা কে প্রথম থেকে ঠিক করে রেখেছেন? আমি সদাপ্রভুই প্রথম থেকে আছি আর শেষ সময়ের লোকদের সংগেও থাকব।” সদাপ্রভুর এই কাজ দেখে দূর দেশের লোকেরা ভয় পাবে আর পৃথিবীর শেষ সীমার লোকেরা কাঁপবে। তারা এগিয়ে এসে একত্র হবে; তারা একে অন্যকে সাহায্য করবে আর নিজের নিজের ভাইকে বলবে, “সাহস কর।” কারিগর স্বর্ণকারকে উৎসাহ দেবে; হাতুড়ী দিয়ে যে সমান করে সে নেহাইয়ের উপর আঘাতকারীকে উৎসাহ দেবে। সে জোড়ার কাজ দেখে বলবে, “ভাল হয়েছে।” সে পেরেক দিয়ে প্রতিমাটা শক্ত করবে যেন সেটা পড়ে না যায়। সদাপ্রভু বলছেন, “কিন্তু হে আমার দাস ইস্রায়েল, আমার বেছে নেওয়া যাকোব, আমার বন্ধু অব্রাহামের বংশ, আমি তোমাকে পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে এনেছি, তোমাকে সবচেয়ে দূরের জায়গা থেকে ডেকে এনেছি। আমি বলেছি, ‘তুমি আমার দাস’; আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি, অগ্রাহ্য করি নি। কাজেই তুমি ভয় কোরো না, আমি তো তোমার সংগে সংগে আছি; ব্যাকুল হোয়ো না, কারণ আমি তোমার ঈশ্বর। আমি তোমাকে শক্তি দেব ও নিশ্চয়ই সাহায্য করব আর আমার ন্যায়ের ডান হাত দিয়ে তোমাকে নিশ্চয়ই ধরে রাখব। “যারা তোমার উপর রাগ করে তারা সকলে নিশ্চয়ই লজ্জিত ও অসম্মানিত হবে। যারা তোমার বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাদের কোন চিহ্ন থাকবে না; তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমার শত্রুদের খুঁজলেও তুমি তাদের পাবে না। যারা তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদের আর কোন চিহ্ন থাকবে না, কারণ আমি সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর; আমি তোমার ডান হাত ধরে আছি আর তোমাকে বলছি, ভয় কোরো না; আমি তোমাকে সাহায্য করব। হে যাকোব, হে ইস্রায়েল, তুমি যদিও পোকার মত সামান্য তবুও ভয় কোরো না; আমি নিজেই তোমাকে সাহায্য করব। আমি সদাপ্রভু তোমার মুক্তিদাতা ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন এই কথা বলছি। দেখ, আমি তোমাকে নতুন, ধারালো দাঁতযুক্ত শস্য মাড়াই করবার যন্ত্র বানাব। তুমি পাহাড়-পর্বত মাড়াই করে সেগুলো চুরমার করবে, আর ছোট পাহাড়গুলোকে তুষের মত করবে। তুমি সেগুলো ঝাড়লে বাতাস তাদের তুলে নিয়ে যাবে আর ঘূর্ণিবাতাস তাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেবে। কিন্তু তুমি সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দ করবে আর ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন তোমার গৌরবের জিনিস হবেন। “দুঃখী ও অভাবীরা জলের খোঁজ করে, কিন্তু জল নেই; পিপাসায় তাদের জিভ্‌ শুকিয়ে গেছে। কিন্তু আমি সদাপ্রভুই তাদের উত্তর দেব; আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর তাদের ত্যাগ করব না। আমি গাছপালাহীন পাহাড়গুলোর উপরে নদী বইয়ে দেব আর উপত্যকার নানা জায়গায় ঝরণা বইয়ে দেব। আমি মরু-এলাকায় পুকুর তৈরী করব, আর শুকনা মাটিতে ফোয়ারা খুলে দেব। আমি মরু-এলাকায় এরস, বাব্‌লা, গুলমেঁদি ও বুনো জলপাই গাছ লাগাব আর মরুভূমিতে লাগাব বেরস, ঝাউ ও তাশূর গাছ, যাতে লোকেরা দেখে, জেনে ও বিবেচনা করে বুঝতে পারে যে, সদাপ্রভুর হাতই এই কাজ করেছে, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনই এই সব করেছেন।” সদাপ্রভু, অর্থাৎ যাকোবের রাজা বলছেন, “দেবতারা, তোমরা এবার তোমাদের পক্ষে কথা বল। তোমাদের সব যুক্তি দেখাও। তোমরা সেই সব যুক্তি নিয়ে এসে যা ঘটবে তা আমাদের বল। আগেকার ঘটনাগুলো সম্বন্ধে আমাদের জানাও, যাতে আমরা সেগুলোর বিষয় ভেবে দেখে তাদের শেষ ফল কি তা জানতে পারি; কিম্বা কি কি ঘটবে সেই বিষয় আমাদের কাছে ঘোষণা কর। ভবিষ্যতে কি হবে তা আমাদের বল, তা হলে আমরা জানতে পারব যে, তোমরা দেবতা। ভাল হোক বা মন্দ হোক একটা কিছু কর যা দেখে আমরা হতভম্ব হব। কিন্তু আসলে তোমরা কিছুই না, আর তোমাদের কাজগুলোও কিছু না; যে তোমাদের বেছে নেয় সে ঘৃণার পাত্র। “পূর্ব দিকের একজন লোক আমার নাম ঘোষণা করবে; তাকে আমি উত্তর দিক থেকে আসবার জন্য উত্তেজিত করেছি, আর সে আসছে। যেমন করে চুন-সুরকি ও জল মিশানো হয় আর কুমার মাটি দলাই-মলাই করে তেমনি করে সে শাসনকর্তাদের পায়ে দলবে। এই বিষয় কে শুরু থেকে আমাদের বলেছিল যাতে আমরা জানতে পারি? কিম্বা কে আগে জানিয়েছিল যাতে আমরা বলতে পারি, ‘সে ঠিক কথা বলেছে’? কেউ বলে নি, কেউ জানায় নি, কেউ তোমাদের কথা বলতে শোনে নি। আমিই প্রথমে সিয়োনকে বলেছি, আর দেখ, তারা এসে গেছে। আমি যিরূশালেমকে একজন সুসংবাদদাতা দিয়েছি। আমি চেয়ে দেখলাম কেউ নেই; পরামর্শ দেবার জন্য তাদের মধ্যে কেউ নেই যে, তাদের জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে পারে। দেখ, তারা সবাই অসার, তাদের কাজ কিছুই নয়। তাদের ছাঁচে-ঢালা মূর্তিগুলো বাতাস ছাড়া আর কিছু নয়; তারা কিছুই করতে পারে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, আমার দাস, যাঁকে আমি সাহায্য করি; আমার বাছাই করা লোক, যাঁর উপর আমি সন্তুষ্ট। আমি তাঁর উপরে আমার আত্মা দেব আর তিনি জাতিদের কাছে ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন। তিনি চিৎকার করবেন না বা জোরে কথা বলবেন না; তিনি রাস্তায় রাস্তায় তাঁর গলার স্বর শোনাবেন না। তিনি থেঁৎলে যাওয়া নল ভাংবেন না আর মিটমিট করে জ্বলতে থাকা সল্‌তে নিভাবেন না। তিনি সততার সংগে ন্যায়বিচার করবেন। পৃথিবীতে ন্যায়বিচার স্থাপন না করা পর্যন্ত তিনি দুর্বল হবেন না বা ভেংগে পড়বেন না। দূরের লোকেরা তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে।” সদাপ্রভু ঈশ্বর আকাশ সৃষ্টি করে মেলে দিয়েছেন; তিনি পৃথিবী ও তাতে যা জন্মায় তা সব বিছিয়ে দিয়েছেন; তিনি সেখানকার লোকদের নিঃশ্বাস দেন আর যারা সেখানে চলাফেরা করে তাদের জীবন দেন। তিনি বলছেন, “আমি সদাপ্রভু তোমাকে ন্যায়ভাবে ডেকেছি; আমি তোমার হাত ধরে রাখব। আমি তোমাকে রক্ষা করব এবং আমার লোকদের জন্য তোমাকে একটা ব্যবস্থার মত করব আর অন্যান্য জাতিদের জন্য করব আলোর মত। তুমি অন্ধদের চোখ খুলে দেবে, জেলখানা থেকে বন্দীদের মুক্ত করবে আর সেখানকার অন্ধকার গর্তে রাখা লোকদের বের করে আনবে। “আমি সদাপ্রভু, এ-ই আমার নাম। আমি অন্যকে আমার গৌরব কিম্বা প্রতিমাকে আমার পাওনা প্রশংসা পেতে দেব না। দেখ, আগেকার ঘটনাগুলো ঘটে গেছে আর এখন আমি নতুন ঘটনার কথা ঘোষণা করব; সেগুলো ঘটবার আগেই তোমাদের কাছে তা জানাচ্ছি।” হে সাগরে চলাচলকারীরা, সাগরের মধ্যেকার সব প্রাণী, হে দূরের দেশগুলো আর তার মধ্যেকার বাসিন্দারা, তোমরা সবাই সদাপ্রভুর উদ্দেশে একটা নতুন গান কর, পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে তাঁর প্রশংসার গান গাও। মরু-এলাকা ও তার শহরগুলো জোরে জোরে প্রশংসা করুক; কেদরীয়দের গ্রামগুলোও তা করুক, শেলার লোকেরা আনন্দে গান করুক, পাহাড়ের চূড়াগুলো থেকে আনন্দে চিৎকার করুক। তারা সদাপ্রভুর গৌরব করুক; দূরের দেশগুলোর মধ্যে তাঁর প্রশংসা ঘোষণা করুক। একজন শক্তিশালী লোকের মত করে সদাপ্রভু বের হয়ে আসবেন; তিনি যোদ্ধার মত তাঁর আগ্রহকে উত্তেজিত করবেন; তিনি চিৎকার করে যুুদ্ধের হাঁক দেবেন আর শত্রুদের উপর জয়ী হবেন। “আমি সদাপ্রভু অনেক দিন চুপ করে ছিলাম; আমি শান্ত থেকে নিজেকে দমন করে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন প্রসবকারিণী স্ত্রীলোকের মত আমি চিৎকার করছি, শ্বাস টানছি ও হাঁপাচ্ছি। আমি পাহাড়-পর্বতগুলো গাছপালাহীন করব আর সেখানকার সমস্ত গাছপালা শুকিয়ে ফেলব; আমি নদীগুলোকে দ্বীপ বানাব আর পুকুরগুলো শুকিয়ে ফেলব। আমি অন্ধদের তাদের অজানা রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাব, যে পথ তারা জানে না সেই পথে তাদের চালাব। তাদের আগে আগে আমি অন্ধকারকে আলো করব আর অসমান জায়গাকে সমান করে দেব। এ সবই আমি করব, নিশ্চয়ই করব। কিন্তু যারা খোদাই করা প্রতিমার উপর নির্ভর করে, যারা ছাঁচে ঢালা মূর্তিগুলোকে বলে, ‘তোমরা আমাদের দেবতা,’ আমি তাদের ভীষণ লজ্জায় ফেলে ফিরিয়ে দেব। “ওহে বয়রা লোকেরা, শোন, আর অন্ধেরা, তোমরা তাকিয়ে দেখ। আমার দাস ছাড়া অন্ধ আর কে? আমার পাঠানো দূতের মত বয়রা আর কে? আমার উপর নির্ভরকারীর মত অন্ধ আর কে? সদাপ্রভুর দাসের মত অন্ধ কে? তুমি অনেক কিছু দেখেও মনোযোগ দিচ্ছ না; তোমার কান খোলা থাকলেও কিছু শুনছ না।” উদ্ধারের পরিকল্পনার জন্য সদাপ্রভু খুশী হয়ে তাঁর নির্দেশকে মহৎ ও গৌরবযুক্ত করলেন। কিন্তু এই লোকদের সব কিছু নিয়ে যাওয়া ও লুট করা হয়েছে, তাদের সবাইকে গর্তে ফেলা হয়েছে আর জেলখানায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তারা কেড়ে নেওয়া জিনিসের মত হয়েছে, তাদের উদ্ধার করবার কেউ নেই। তারা লুটের মাল হয়েছে; কেউ বলে না, “তাদের ফিরিয়ে দাও।” তোমাদের মধ্যে কে আমার কথা শুনবে? আর যে সময় আসছে সেই সময়ের জন্য কে আমার কথায় গভীর মনোযোগ দেবে? যাকোবকে কে লুট হতে দিয়েছেন? আর ইস্রায়েলকে কে লুটেরাদের হাতে তুলে দিয়েছেন? তিনি কি সদাপ্রভু নন, যাঁর বিরুদ্ধে আমরা পাপ করেছি? তারা তাঁর পথে চলতে চায় নি, তাঁর নির্দেশ পালন করে নি। তাই তিনি তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধ ও যুদ্ধের ভয়ংকরতা ইস্রায়েলের উপর ঢেলে দিয়েছেন। তাতে সেই আগুন তার চারদিকে জ্বলে উঠল, তবুও সে বুঝতে পারল না; আগুন তার গায়ে লাগল, কিন্তু তাতে সে মনোযোগ দিল না। হে যাকোব, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, হে ইস্রায়েল, যিনি তোমাকে তৈরী করেছেন, সেই সদাপ্রভু এখন এই কথা বলছেন, “তুমি ভয় কোরো না, কারণ আমি তোমাকে মুক্ত করেছি। আমি তোমার নাম ধরে ডেকেছি, তুমি আমার। তুমি যখন জলের মধ্য দিয়ে যাবে তখন আমি তোমার সংগে সংগে থাকব। যখন তুমি নদীর মধ্য দিয়ে যাবে, তখন সেগুলো তোমাকে ডুবিয়ে দেবে না; তুমি যখন আগুনের মধ্য দিয়ে যাবে, তখন তুমি পুড়বে না; আগুনের শিখা তোমার গায়ে লাগবে না; কারণ আমিই তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, তোমার উদ্ধারকর্তা, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন। আমি তোমার মুক্তির মূল্য হিসাবে মিসর দেশ দেব, আর তোমার বদলে কূশ ও সবা দেশ দেব। আমি তোমার বদলে অন্য লোকদের দেব আর তোমার প্রাণের বদলে অন্য জাতিদের দেব, কারণ তুমি আমার চোখে মূল্যবান ও সম্মানিত, আর আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি ভয় কোরো না, কারণ আমি তোমার সংগে সংগে আছি। পূর্ব দিক থেকে আমি তোমার বংশকে নিয়ে আসব আর পশ্চিম দিক থেকে তোমাকে জড়ো করব। আমি উত্তরের দেশগুলোকে বলব, ‘ওদের ছেড়ে দাও,’ আর দক্ষিণের দেশগুলোকে বলব, ‘ওদের আট্‌কে রেখো না।’ আমি তাদের বলব, ‘তোমরা দূর থেকে আমার ছেলেদের আর পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে আমার মেয়েদের নিয়ে এস। আমার নামে যাদের ডাকা হয়, আমি যাদের আমার গৌরবের জন্য সৃষ্টি করেছি, যাদের আমি গড়েছি ও তৈরী করেছি, তোমরা তাদের প্রত্যেককে নিয়ে এস।’ ” যারা চোখ থাকতেও অন্ধ আর কান থাকতেও বয়রা তারা বের হয়ে আসুক। সব জাতি একসংগে জড়ো হোক আর লোকেরা এক জায়গায় মিলিত হোক। তাদের মধ্যে কে আমাদের কাছে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে ও আগেকার বিষয় বলতে পারে? তাদের কথা যে ঠিক তা প্রমাণ করবার জন্য তারা তাদের সাক্ষী আনুক যাতে সেই সাক্ষীরা তা শুনে বলতে পারে, “ঠিক কথা।” সদাপ্রভু ইস্রায়েলীয়দের বলছেন, “তোমরাই আমার সাক্ষী ও আমার বেছে নেওয়া দাস, যাতে তোমরা জানতে পার ও আমার উপর বিশ্বাস করতে পার আর বুঝতে পার যে, আমিই তিনি। আমার আগে কোন ঈশ্বর তৈরী হয় নি আর আমার পরেও অন্য কোন ঈশ্বর থাকবেন না। আমি, আমিই সদাপ্রভু, আমি ছাড়া আর কোন উদ্ধারকর্তা নেই। আমিই প্রকাশ করেছি, উদ্ধার করেছি ও ঘোষণা করেছি; তখন তোমাদের মধ্যে কোন দেবতা ছিল না। এই বিষয়ে তোমরাই আমার সাক্ষী। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলেছি; আমিই ঈশ্বর। হ্যাঁ, প্রথম থেকে আমিই তিনি। কেউ আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। আমি কাজ করলে কেউ তা বাতিল করতে পারে না।” সদাপ্রভু, তোমাদের মুক্তিদাতা, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন এই কথা বলছেন, “আমি তোমাদের জন্য বাবিলে লোক পাঠাব এবং যে জাহাজ নিয়ে বাবিলীয়েরা গর্ব করত তাতে করে পালিয়ে যাওয়া লোকদের মত করে সেই বাবিলীয়দের নিয়ে আসব। আমিই সদাপ্রভু, তোমাদের সেই পবিত্রজন; আমিই ইস্রায়েলের সৃষ্টিকর্তা ও তোমাদের রাজা।” সদাপ্রভু সাগরের মধ্য দিয়ে রাস্তা করেছিলেন, সেই ভীষণ জলের মধ্য দিয়ে পথ করেছিলেন। তিনি রথ, ঘোড়া ও শক্তিশালী সৈন্যদলকে বের করে এনেছিলেন। তারা একসংগে সেখানে পড়ে ছিল, আর উঠতে পারে নি। তারা শল্‌তের মত নিভে গিয়েছিল। তিনি বলছেন, “তোমরা আগেকার সব কিছু মনে এনো না; পুরানো কিছুর মধ্যে পড়ে থেকো না। দেখ, আমি একটা নতুন কাজ করতে যাচ্ছি। তা এখনই শুরু হবে আর তোমরা তা জানতে পারবে। আমি মরু-এলাকার মধ্যে পথ করব আর মরুভুমিতে নদী বইয়ে দেব। বুনো পশু, শিয়াল ও উটপাখীরা আমার গৌরব করবে, কারণ আমার লোকদের, আমার বাছাই করা লোকদের খাবার জন্য আমি মরু-এলাকায় জল যুগিয়ে দেব আর মরুভূমিতে নদী বইয়ে দেব। সেই লোকদের আমি নিজের জন্য তৈরী করেছি যাতে তারা আমার গৌরব ঘোষণা করতে পারে। “কিন্তু হে যাকোব, তুমি আমাকে ডাক নি; হে ইস্রায়েল, তুমি আমাকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছ। পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য তুমি আমার কাছে ভেড়া আন নি আর তোমার কোন উৎসর্গের দ্বারা আমাকে সম্মান দেখাও নি। আমি তোমার উপর শস্য-উৎসর্গের ভার দিই নি; লোবান দেবার জন্য তোমাকে ক্লান্ত করি নি। তুমি কোন সুগন্ধি বচ আমার জন্য কিনে আন নি; তোমার পশু-উৎসর্গের চর্বি দিয়ে তুমি আমাকে খুশী কর নি। তার বদলে তুমি তোমার পাপের বোঝা আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছ আর তোমার সমস্ত অন্যায় দিয়ে আমাকে ক্লান্ত করেছ। “আমি, আমিই আমার নিজের জন্য তোমার অন্যায় মুছে ফেলি; আমি তোমার পাপ আর মনে আনব না। তোমার বিষয় আমাকে মনে করিয়ে দাও; এস, আমরা তা নিয়ে তর্কাতর্কি করি। তুমি নিজের পক্ষে কথা বল যাতে তোমাকে নির্দোষ বলে প্রমাণ করা যায়। তোমার আদিপিতা পাপ করেছিল; তোমার মধ্যস্থ হিসাবে যারা কথা বলেছিল তারা আমার বিরুদ্ধে পাপ করেছিল। তাই আমি তোমাদের উপাসনা-ঘরের পুরোহিতদের অপমান করব আর যাকোবকে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন করব এবং ইস্রায়েলকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র করব।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে আমার দাস যাকোব, আমার বেছে নেওয়া ইস্রায়েল, তুমি এখন শোন। সদাপ্রভু, যিনি তোমাকে তৈরী করেছেন, মায়ের গর্ভে গড়ে তুলেছেন ও তোমাকে সাহায্য করবেন, তিনি এই কথা বলেছেন, ‘হে আমার দাস যাকোব, আমার বেছে নেওয়া যিশুরূণ, তুমি ভয় কোরো না; কারণ আমি পিপাসিত জমির উপরে জল ঢালব আর শুকনা জায়গার উপর দিয়ে স্রোত বইয়ে দেব। আমি তোমার সন্তানদের উপর আমার আত্মা ঢেলে দেব আর তোমার বংশের লোকদের আশীর্বাদ করব। তারা ঘাসের মধ্যে বয়ে যাওয়া স্রোতের ধারের উইলো গাছের মত ঘাসের মধ্যে গজিয়ে উঠবে। একজন বলবে যে, সে সদাপ্রভুর; আর একজন যাকোবের নামে নিজের পরিচয় দেবে; অন্য আর একজন নিজের হাতের উপরে লিখবে যে, সে সদাপ্রভুর, আর সে ইস্রায়েল নাম গ্রহণ করবে।’ ” সদাপ্রভু, যিনি ইস্রায়েলের রাজা ও মুক্তিদাতা, যিনি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তিনি এই কথা বলছেন, “আমিই প্রথম ও আমিই শেষ; আমি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই। তাহলে আমার মত আর কে আছে? সে তা ঘোষণা করুক। সে ঘোষণা করুক ও আমাকে বলুক যে, আমি পুরানো দিনের লোকদের স্থাপন করবার পর কি ঘটেছিল আর কি এখনও ঘটে নি; হ্যাঁ, যা ঘটবে সে তা আগেই বলুক। তোমরা কেঁপো না বা ভয় কোরো না। আমি কি অনেক দিন আগে এই সব ঘোষণা করি নি ও জানাই নি? তোমরাই আমার সাক্ষী; আমি ছাড়া আর কি কোন ঈশ্বর আছে? না, আর কোন আশ্রয়-পাহাড় নেই; আমি আর কাউকে জানি না।” যারা খোদাই করে প্রতিমা তৈরী করে তারা অপদার্থ; তাদের এই মূল্যবান জিনিসগুলো উপকারী নয়। সেই প্রতিমাগুলোর পক্ষ হয়ে যারা কথা বলে তারা অন্ধ, কিছু জানে না; সেইজন্য তারা লজ্জা পাবে। কে দেবতা তৈরী করেছে আর অপদার্থ প্রতিমা ছাঁচে ঢেলেছে? যারা প্রতিমার সংগে যুক্ত তাদের লজ্জায় ফেলা হবে; তাদের কারিগরেরা মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়। তারা সবাই এসে একসংগে দাঁড়াক; তারা ভয়ে কাঁপবে ও একসংগে অসম্মানিত হবে। কামার একটা যন্ত্র নেয় আর তা দিয়ে জ্বলন্ত কয়লার মধ্যে কাজ করে। সে হাতুড়ি দিয়ে প্রতিমার আকার গড়ে, আর হাতের শক্তি দিয়ে তা তৈরী করে। তাতে তার খিদে পায় ও শক্তি কমে যায়; জল না খেয়ে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ছুতার মিস্ত্রি সুতা দিয়ে মাপে আর কলম দিয়ে নকশা আঁকে; সে যন্ত্র দিয়ে খোদাই করে আর কমপাস দিয়ে তার আকার ঠিক করে। সে তাতে একটা সুন্দর মানুষের আকার দেয় যেন তা ঘরের মধ্যে থাকতে পারে। কেউ এরস গাছ কাটে, কিম্বা হয়তো তর্সা বা এলোন গাছ বেছে নেয়। সে বনের গাছপালার মধ্যে সেটাকে বাড়তে দেয়, কিম্বা সে ঝাউ গাছ লাগায় আর বৃষ্টি সেটা বাড়িয়ে তোলে। পরে সেটা মানুষের জ্বালানি কাঠ হয়। সে তার কিছু নিয়ে আগুন পোহায়, আবার আগুন জ্বেলে রুটি সেঁকে, আবার একটা দেবতা তৈরী করে তার পূজাও করে, আবার প্রতিমা তৈরী করে মাটিতে পড়ে তাকে প্রণাম করে। সে কাঠের এক ভাগ দিয়ে আগুন জ্বালায়, তারপর সে তার উপর তার খাবার তৈরী করে আর মাংস ঝল্‌সে নিয়ে পেট ভরে খায়; আবার আগুন পোহায়ে সে বলে, “আহা! আমি আগুন পোহালাম, আগুনের তাপ নিলাম।” বাকী অংশ দিয়ে সে একটা দেবতা, অর্থাৎ একটা প্রতিমা তৈরী করে আর মাটিতে পড়ে তাকে প্রণাম করে ও পূজা করে। সে তার কাছে প্রার্থনা করে বলে, “আমাকে উদ্ধার কর; তুমিই আমার দেবতা।” সেই লোকেরা কিছু জানেও না, বোঝেও না। তাদের চোখ বন্ধ বলে তারা দেখতে পায় না আর মন বন্ধ বলে তারা বুঝতেও পারে না। কেউ একটু চিন্তা করে না; কারও জ্ঞান বা বুদ্ধি নেই যে বলে, “আমি এর এক ভাগ দিয়ে আগুন জ্বালিয়েছি, তার কয়লার উপর রুটি সেঁকেছি আর মাংস ঝল্‌সে নিয়ে খেয়েছি। তাহলে কি এর বাকী অংশ দিয়ে আমি ঘৃণার জিনিস তৈরী করব? কাঠের খণ্ডকে কি আমি মাটিতে পড়ে প্রণাম করব?” সে ছাই খাওয়ার মত কাজ করে এবং তার ঠগ অন্তর তাকে বিপথে নেয়। সে নিজেকে উদ্ধার করতে পারে না বা বলেও না, “আমার ডান হাতের এই জিনিসটা কি মিথ্যা নয়?” “হে যাকোব, হে ইস্রায়েল, তুমি এই সব মনে রেখ, কারণ তুমি আমার দাস। আমি তোমাকে তৈরী করেছি, তুমি আমারই দাস; হে ইস্রায়েল, আমি তোমাকে ভুলে যাব না। মেঘের মত করে তোমার সব অন্যায় আর সকাল বেলার কুয়াশার মত করে তোমার সব পাপ আমি দূর করে দিয়েছি। তুমি আমার কাছে ফিরে এস, কারণ আমিই তোমাকে মুক্ত করেছি।” হে মহাকাশ, আনন্দে গান কর, কারণ সদাপ্রভুই এটা করেছেন। হে পৃথিবীর গভীর স্থানগুলো, জয়ধ্বনি কর। হে পাহাড়-পর্বত, হে বন আর সেখানকার গাছপালা, তোমরা আনন্দ-গানে ফেটে পড়, কারণ সদাপ্রভু যাকোবকে মুক্ত করেছেন আর ইস্রায়েলের মধ্য দিয়ে তাঁর গৌরব প্রকাশ করবেন। সদাপ্রভু, যিনি তোমার মুক্তিদাতা, যিনি তোমাকে গর্ভে গড়েছেন তিনি বলছেন, “আমি সদাপ্রভু; আমিই সব কিছু তৈরী করেছি। আমি একাই আকাশকে বিছিয়েছি আর নিজেই পৃথিবীকে মেলে দিয়েছি। ভণ্ড নবীদের চিহ্ন আমি বিফল করে দিই আর গণকদের বোকা বানাই। আমি জ্ঞানীদের শিক্ষা বিফল করে তা বোকাদের শিক্ষা বানাই। কিন্তু আমি আমার দাসের কথা সফল হতে দিই আর আমার দূতদের বলা কথা পূর্ণ করি। আমি যিরূশালেমের বিষয়ে বলি, ‘ওখানে লোকেরা বাস করবে,’ আর যিহূদার শহরগুলো সম্বন্ধে বলি, ‘সেগুলো আবার তৈরী করা হবে।’ আমি দেশের ধ্বংসস্থানগুলো আবার তৈরী করব। আমি অগাধ জলকে বলি, ‘তুমি শুকিয়ে যাও; আমি তোমার স্রোতগুলো শুকিয়ে ফেলব।’ আমি কোরসের সম্বন্ধে বলি যে, সে আমার রাখাল; আমি যাতে খুশী হই সে তা সবই করবে। সে যিরূশালেম সম্বন্ধে বলবে, ‘ওটা আবার তৈরী হোক,’ আর উপাসনা-ঘর সম্বন্ধে বলবে, ‘ওর ভিত্তি স্থাপন করা হোক।’ ” সদাপ্রভু তাঁর অভিষিক্ত লোক কোরসের সম্বন্ধে বলছেন, “তার সামনে জাতিদের দমন করবার জন্য আর রাজাদের শক্তিহীন করবার জন্য আমি তার ডান হাত ধরেছি। আমি তার সামনে দরজাগুলো খুলে দেব যাতে ফটকগুলো বন্ধ না থাকে।” তিনি কোরসকে বলছেন, “আমি তোমার আগে আগে গিয়ে উঁচু-নীচু জায়গাগুলো সমান করে দেব; আমি ব্রোঞ্জের সব ফটক ভেংগে দেব আর লোহার আগলগুলো কেটে ফেলব। আমি তোমাকে অন্ধকার জায়গায় রাখা ধন-সম্পদ আর লুকানো জায়গায় জমিয়ে রাখা ধন দেব, যাতে তুমি জানতে পার যে, আমিই সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, যিনি তোমার নাম ধরে ডাকেন। আমার দাস যাকোবের জন্য, আমার বেছে রাখা ইস্রায়েলের জন্য আমি তোমার নাম ধরে ডেকেছি। আমাকে তুমি না জানলেও আমি তোমাকে সম্মানের উপাধি দিয়েছি। আমিই সদাপ্রভু, অন্য আর কেউ নেই; আমি ছাড়া অন্য ঈশ্বর নেই। তুমি আমাকে না জানলেও আমি তোমাকে শক্তি দিয়েছি, যেন পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিক পর্যন্ত লোকে জানতে পারে যে, আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমিই সদাপ্রভু, অন্য আর কেউ নেই। আমিই আলো এবং অন্ধকার সৃষ্টি করি; আমিই মংগল নিয়ে আসি ও সর্বনাশের সৃষ্টি করি। আমি সদাপ্রভুই এই সব করে থাকি। “হে আকাশ, তুমি সততার বৃষ্টি ফেল; মেঘ সততা ঢেলে দিক। পৃথিবীর বুক খুলে গিয়ে উদ্ধার গজিয়ে উঠুক আর তার সংগে বেড়ে উঠুক সততা। আমি সদাপ্রভুই এর ব্যবস্থা করেছি। “ধিক্‌ সেই লোককে, যে তার সৃষ্টিকর্তার সংগে ঝগড়া করে। সে তো মাটির পাত্রগুলোর মধ্যে একটা পাত্র ছাড়া আর কিছু নয়। মাটি কি কুমারকে বলবে, ‘তুমি কি তৈরী করছ?’ তোমার তৈরী জিনিস কি বলবে, ‘তোমার হাত পাকা নয়’? ধিক্‌ সেই লোককে, যে তার বাবাকে বলে, ‘তুমি কি জন্ম দিয়েছ?’ কিম্বা তার মাকে বলে ‘তুমি কি প্রসব করেছ?’ “সদাপ্রভু, যিনি ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন, যিনি তার সৃষ্টিকর্তা, তিনি এই কথা বলছেন, ‘তোমরা কি ভবিষ্যতের ঘটনা সম্বন্ধে আমাকে জিজ্ঞাসা করছ? আমার সন্তানদের সম্বন্ধে কিম্বা আমার হাতের কাজের বিষয়ে কি আমাকে আদেশ দিচ্ছ? আমিই পৃথিবী তৈরী করে তার উপর মানুষকে সৃষ্টি করেছি; আমি নিজের হাতে আকাশকে বিছিয়ে দিয়েছি আর আকাশের সূর্য, চাঁদ ও তারাগুলোকে স্থাপন করেছি। আমার ন্যায্যতায় আমি কোরসকে উত্তেজিত করব; আমি তার সমস্ত পথ সোজা করব। সে আমার শহর আবার তৈরী করবে, আমার যে লোকেরা বন্দী ছিল সে তাদের ছেড়ে দেবে কিন্তু সে কোন দাম বা পুরস্কারের জন্য তা করবে না।’ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছেন।” সদাপ্রভু ইস্রায়েল জাতিকে বলছেন, “মিসরের উপার্জন করা সম্পদ ও কূশের ব্যবসার জিনিস তোমার কাছে আসবে। লম্বা লম্বা সবায়ীয়েরা নিজেরাই তোমার কাছে আসবে; তারা তোমার হবে আর তোমার পিছনে পিছনে চলবে। তারা শিকলে বাঁধা অবস্থায় তোমার কাছে আসবে। তারা তোমার সামনে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে মিনতি জানাবে ও বলবে, ‘ঈশ্বর নিশ্চয়ই তোমার সংগে আছেন। একমাত্র তিনিই ঈশ্বর, আর কোন ঈশ্বর নেই।’ ” হে ইস্রায়েলের ঈশ্বর ও উদ্ধারকর্তা, সত্যিই তুমি এমন ঈশ্বর যিনি নিজেকে লুকিয়ে রাখেন। যারা প্রতিমা তৈরী করে তারা সবাই লজ্জিত ও অসম্মানিত হবে; তারা একসংগে অপমানিত হয়ে চলে যাবে। কিন্তু ঈশ্বর ইস্রায়েলকে চিরকালের জন্য উদ্ধার করবেন; তোমরা কোন কালেই লজ্জিত বা অপমানিত হবে না। সদাপ্রভু, যিনি মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই ঈশ্বর; যিনি পৃথিবীর আকার দিয়েছেন ও তৈরী করেছেন, তিনিই তা স্থাপন করেছেন। তিনি বাস করবার অযোগ্য করে পৃথিবী সৃষ্টি করেন নি, বরং লোকেরা যাতে বাস করতে পারে সেইভাবেই তা সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলছেন, “আমিই সদাপ্রভু, আর কেউ নয়। কোন অন্ধকার দেশের কোন জায়গা থেকে আমি গোপনে কথা বলি নি। যাকোবের বংশকে আমি বলি নি, ‘তোমরা মিথ্যাই আমাকে ডাক।’ আমি সদাপ্রভু ন্যায্য কথা বলি; যা ঠিক তা-ই ঘোষণা করি। “ওহে অন্যান্য জাতির বেঁচে থাকা লোকেরা, তোমরা এক সংগে জড়ো হয়ে এস। যারা কাঠের মূর্তি বয়ে নিয়ে বেড়ায় আর এমন দেবতার কাছে প্রার্থনা করে যে উদ্ধার করতে পারে না তারা কিছুই জানে না। এস, তোমাদের পক্ষে যা বলবার আছে তা উপস্থিত কর; তোমরা একসংগে পরামর্শ কর। এই ঘটনা যে ঘটবে তা কে আগে বলেছেন? সেই দূর অতীতে কে তা আগে ঘোষণা করেছেন? আমি সদাপ্রভুই কি তা করি নি? আমি ছাড়া আর ঈশ্বর নেই; আমি ন্যায়বান ঈশ্বর, আমি উদ্ধারকর্তা। আমি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই। “হে পৃথিবীর সব শেষ সীমাগুলো, আমার দিকে ফেরো এবং উদ্ধার পাও, কারণ আমিই ঈশ্বর, আর কেউ ঈশ্বর নয়। আমি নিজের নামেই শপথ করেছি, আমার ন্যায্যতায় আমি এই কথা বলেছি, আর তা বাতিল হবে না। সেই কথা হল, আমার সামনে প্রত্যেকে হাঁটু পাতবে এবং আমার অধীনতা স্বীকার করবে। তারা আমার বিষয় বলবে, ‘কেবল সদাপ্রভুর মধ্যেই সততা ও শক্তি আছে।’ লোকেরা আমার কাছে আসবে এবং যারা আমার উপর রেগে আছে তারা লজ্জিত হবে। আমার মধ্যেই ইস্রায়েলের সমস্ত বংশ নির্দোষ বলে প্রমাণিত হবে এবং তারা আমার গৌরব করবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “বেল দেবতা নীচু হবে আর নবো দেবতা উবুড় হয়ে পড়বে; তাদের মূর্তিগুলো ভার বহনকারী পশুরা বয়ে নেবে। যে প্রতিমাগুলো বাবিলীয়েরা পূজা করত সেগুলো বোঝার মত হবে, ক্লান্ত পশুদের জন্য ভার হবে। সেই দেবতারা একসংগে উবুড় হবে আর নীচু হবে। তারা নিজেদের মূর্তিগুলো রক্ষা করতে পারবে না বরং নিজেরাই বন্দী হয়ে চলে যাবে। “হে যাকোবের বংশ, ইস্রায়েলের বংশের বেঁচে থাকা লোকেরা, তোমরা আমার কথা শোন। গর্ভে আসবার সময় থেকে এবং জন্মের পর থেকে আমি তোমাদের ভার বহন করছি। তোমাদের বুড়ো বয়স পর্যন্ত আমি একই থাকব; তোমাদের চুল পাকবার বয়স পর্যন্ত তোমাদের ভার বহন করব। আমিই তোমাদের তৈরী করেছি, আমিই তোমাদের ভার বইব; আমিই তোমাদের বহন করব এবং রক্ষা করব। “তোমরা কার সংগে আমার তুলনা করবে কিম্বা কার সমান বলে আমাকে ধরবে? কার সংগে তুলনা করলে আমাদের সমান বলা যাবে? কেউ কেউ তাদের থলি থেকে সোনা ঢালে আর দাঁড়িপাল্লায় রূপা ওজন করে। সেগুলো দিয়ে তারা দেবতা তৈরী করবার জন্য স্বর্ণকারকে দেয়; পরে তারা সেই দেবতাকে প্রণাম করে ও পূজা করে। তারা তাকে কাঁধে তুলে বয়ে নেয়; তার জায়গায় তারা তাকে স্থাপন করে আর সে সেখানেই থাকে। সেই জায়গা থেকে সে আর নড়তে পারে না। কেউ তার কাছে কাঁদলেও সে উত্তর দিতে পারে না, তার দুঃখ-কষ্ট থেকে তাকে রক্ষা করতে পারে না। “হে পাপীরা, তোমরা এই কথা মনে রেখে স্থির থেকো আর মনোযোগ দিয়ো। তোমরা অনেক অনেক দিন আগেকার বিষয় স্মরণ কর। আমিই ঈশ্বর, অন্য আর কেউ নয়; আমিই ঈশ্বর, আমার মত আর কেউ নেই। আমি শেষ কালের বিষয় আগেই বলি আর যা এখনও হয় নি তা আগেই জানাই। আমি বলেছি যে, আমার উদ্দেশ্য স্থির থাকবে; আমার সমস্ত ইচ্ছা আমি পূরণ করব। আমার উদ্দেশ্য পূরণ করবার জন্য আমি একজন লোককে দূর দেশ থেকে ডেকে আনব; সে পূর্বদেশ থেকে শিকারী পাখীর মত আসবে। আমি যা বলেছি তা আমি সফল করব এবং যা পরিকল্পনা করেছি তা করব। হে একগুঁয়ে অন্তরের লোকেরা, তোমরা যারা আমার গ্রহণযোগ্য হওয়া থেকে দূরে আছ, আমার কথা শোন। আমার নির্দোষিতা আমি তোমাদের কাছে নিয়ে আসছি; তা বেশী দূরে নয় এবং আমার উদ্ধার কাজেরও আর বেশী দেরি নেই। আমি সিয়োনকে উদ্ধার করে ইস্রায়েলকে গৌরব দান করব।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে কুমারী কন্যা বাবিল, তুমি নীচে নেমে ধুলায় বস; হে বাবিল, তুমি সিংহাসন ছেড়ে মাটিতে বস। তোমাকে আর কোমল ও আহ্লাদী বলা হবে না। তুমি যাঁতা নিয়ে গম পেষো আর তোমার ঘোমটা খুলে ফেল। তোমার কাপড় তুলে ঊরু খোলা রাখ আর নদীর মধ্য দিয়ে হেঁটে যাও। তোমার উলংগতা প্রকাশ পাবে আর তোমার লজ্জা ঢাকা থাকবে না। আমি প্রতিশোধ নেব, কারও অনুরোধ মানব না।” আমাদের মুক্তিদাতা হলেন ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন; তাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু। সদাপ্রভু বলছেন, “হে বাবিল, তুমি চুপ করে বস; তুমি অন্ধকারের মধ্যে যাও। তোমাকে আর রাজ্যগুলোর রাণী বলে ডাকা হবে না। আমার লোকদের উপর আমার ক্রোধ জ্বলে উঠেছিল এবং আমার সম্পত্তিকে আমি অশুচি হতে দিয়েছিলাম। তাদের আমি তোমার হাতে তুলে দিয়েছিলাম আর তুমি তাদের প্রতি কোন দয়া দেখাও নি। এমন কি, বুড়ো লোকদের উপরেও তুমি ভারী বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলে। তুমি বলেছিলে, ‘আমি চিরকাল রাণীই থাকব।’ কিন্তু তুমি এই সব বিষয় চিন্তাও কর নি, কিম্বা এর শেষ ফল কি তা-ও ভেবে দেখ নি। “এখন, হে ভোগবিলাসিনী, শোন; তুমি নিশ্চিন্তে আরামে বসে মনে মনে বলছ, ‘কেবল আমিই আছি, আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি কখনও বিধবা হব না কিম্বা সন্তান হারাবার ব্যথা পাব না।’ কিন্তু সন্তান হারানো বা বিধবা হওয়া এ দু’টাই একই দিনে মুহূর্তের মধ্যে তোমার প্রতি ঘটবে। তোমার অনেক যাদুবিদ্যা ও অনেক মন্ত্রতন্ত্র থাকলেও তা তোমার উপর পুরোপুরিভাবেই ঘটবে। তোমার সেই দুষ্টতার উপর তুমি নির্ভর করেছ আর বলেছ, ‘কেউ আমাকে দেখছে না।’ তোমার জ্ঞান ও বুদ্ধি তোমাকে বিপথে নিয়ে গেছে; তুমি মনে মনে বলেছ, ‘কেবল আমিই আছি, আমি ছাড়া আর কেউ নেই।’ কিন্তু তোমার উপর দুর্দশা নেমে আসবে, আর তুমি জানবে না কিভাবে যাদুর বলে তা দূর করা যাবে। তোমার উপর বিপদ এসে পড়বে, আর তুমি তা ঠেকাতে পারবে না। যে সর্বনাশের বিষয় তুমি আগে জানতে পার নি তা হঠাৎ তোমার উপর এসে পড়বে। “যে সব যাদুবিদ্যা ও মন্ত্রতন্ত্রের জন্য তুমি ছোটকাল থেকে পরিশ্রম করছ সেই সব তুমি চালিয়ে যাও। হয়তো তুমি সফল হবে, হয়তো তুমি ভয় দেখাতে পারবে। তুমি যে সব পরামর্শ পেয়েছ তা কেবল তোমাকে ক্লান্তই করেছে। তোমার জ্যোতিষীরা সামনে আসুক; তারাগুলো দেখে মাসের পর মাস যারা ভবিষ্যদ্বাণী করে তারা তোমার উপর যা আসছে তা থেকে তোমাকে রক্ষা করুক। তারা নাড়ার মত; আগুন সেগুলো পুড়িয়ে ফেলবে। তারা আগুনের শক্তির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে না। এই আগুন এমন কয়লার আগুন নয় যার সামনে বসে কেউ আগুন পোহাতে পারে বা যা থেকে আলো পেতে পারে। যাদের সংগে তুমি পরিশ্রম করেছ আর ছেলেবেলা থেকে ব্যবসা করেছ তারা ঐ রকমই হবে। তারা প্রত্যেকে নিজের নিজের পথে চলছে; একজনও নেই যে তোমাকে রক্ষা করতে পারে।” হে যাকোবের বংশ, তোমরা শোন। তোমাদের তো ইস্রায়েল নামে ডাকা হয়, তোমরা যিহূদার বংশ থেকে এসেছ, তোমরা সদাপ্রভুর নাম নিয়ে শপথ করে থাক আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে থাক, কিন্তু সত্যে বা ন্যায়ে তা কর না। তোমরা তো নিজেদের পবিত্র শহরের বাসিন্দা বলে থাক আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরের উপরে নির্ভর কর, যাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু। সদাপ্রভু বলছেন, “যা হয়ে গেছে তা আমি অনেক কাল আগেই বলেছিলাম; আমি তা জানিয়েছিলাম আর আমার মুখ তা ঘোষণা করেছিল। তারপর আমি হঠাৎ তা করলাম আর তা হল, কারণ তোমরা যে কেমন একগুঁয়ে তা আমি জানতাম; তোমাদের ঘাড়ের মাংস লোহার মত আর কপাল ব্রোঞ্জের মত। সেইজন্য অনেক আগেই আমি তোমাদের এই সব বলেছিলাম আর তা ঘটবার আগেই তোমাদের কাছে ঘোষণা করেছিলাম, যাতে তোমরা বলতে না পার, ‘আমাদের প্রতিমাগুলো এই সব করেছে, আমাদের খোদাই করা মূর্তি আর ছাঁচে ঢালা প্রতিমা এই সব আদেশ দিয়েছে।’ তোমরা এই সব শুনেছ; সেই সমস্তের দিকে তোমরা তাকিয়ে দেখ। তোমরা কি তা মেনে নেবে না? “এখন থেকে আমি তোমাদের নতুন নতুন বিষয়ের কথা বলব যা তোমাদের অজানা ও গুপ্ত বিষয়। সেগুলো অনেক দিন আগে নয়, এখনই সৃষ্ট হয়েছে; আজকের আগে তোমরা সেই সব শোন নি। কাজেই তোমরা বলতে পারবে না, ‘হ্যাঁ, আমরা তা জানতাম।’ তোমরা তা শোন নি এবং বুঝতেও পার নি; আগে থেকে তোমাদের কান খোলা হয় নি। তোমরা যে কেমন বিশ্বাসঘাতক তা আমি জানি, জন্ম থেকেই তোমাদের বিদ্রোহী বলা হয়। আমার নিজের সুনামের জন্যই আমার ক্রোধকে আমি দমন করে রেখেছি; আমার গৌরবের জন্য আমি তা বাধা দিয়ে রেখেছি যাতে তোমাদের শেষ করে ফেলা না হয়। দেখ, আমি তোমাদের আগুনে ফেলেছি, কিন্তু তোমরা রূপার মত খাঁটি হয়ে বের হও নি; দুঃখের চুল্লীতে আমি তোমাদের যাচাই করেছি। আমি যা কিছু করি তা আমার নিজের জন্য, কেবল আমার নিজের জন্যই করি। আমার নিজের অগৌরব আমি কি করে হতে দিতে পারি? আমার গৌরব আমি অন্যকে পেতে দিতে পারি না। “হে যাকোব, হে আমার বেছে নেওয়া ইস্রায়েল, তোমরা আমার কথা শোন। আমিই তিনি; আমিই প্রথম এবং আমিই শেষ। আমি নিজের হাতে পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করেছি আর ডান হাতে আকাশকে বিছিয়ে দিয়েছি; আমি ডাকলে এদের সবাই একসংগে দাঁড়ায়। “তোমরা সকলে একত্র হয়ে শোন। প্রতিমাগুলোর মধ্যে কোন্‌টা এই সব বিষয় আগেই বলেছে? বাবিলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর বেছে নেওয়া লোক তার নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করবে; সদাপ্রভুর হাত বাবিলীয়দের বিরুদ্ধে উঠবে। আমি, আমি সদাপ্রভুই কথা বলেছি; হ্যাঁ, আমিই তাকে ডেকেছি। আমি তাকে নিয়ে আসব আর সে তার কাজে সফল হবে। “তোমরা আমার কাছে এসে এই কথা শোন। আমি প্রথম থেকে কোন কথা গোপন রাখবার জন্য বলি নি; সেই সব কথা পূর্ণ হবার সময় আমি সেখানে থাকি।” এখন প্রভু সদাপ্রভু তাঁর আত্মা দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছেন। সদাপ্রভু, তোমাদের মুক্তিদাতা, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন এই কথা বলছেন, “আমি তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু; তোমাদের উপকারের জন্য আমি তোমাদের শিক্ষা দিই। যে পথে তোমাদের চলতে হবে আমি সেই পথে তোমাদের চালাই। তোমরা যদি কেবল আমার আদেশের প্রতি মনোযোগ দিতে তাহলে তোমাদের শান্তি হত নদীর মত আর তোমাদের সততা হত সাগরের ঢেউয়ের মত। এছাড়া তোমাদের বংশধরেরা বালির মত হত আর তোমাদের ছেলেমেয়েরা হত বালুকণার মত অসংখ্য। তাদের নাম আমার সামনে থেকে কখনও মুছে ফেলা হত না কিম্বা তাদের ধ্বংস করা হত না।” তোমরা বাবিল ছেড়ে চলে যাও, বাবিলীয়দের কাছ থেকে পালাও। তোমরা আনন্দে চিৎকার করে জানাও, ঘোষণা কর। পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত এই কথা বল, “সদাপ্রভু তাঁর দাস যাকোবকে মুক্ত করেছেন।” যখন তিনি মরুভূমির মধ্য দিয়ে তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তারা পিপাসায় কষ্ট পায় নি, কারণ তিনি পাথর থেকে তাদের জন্য জল বইয়ে দিয়েছিলেন; তিনি পাথর ফাটিয়েছিলেন আর তাতে জল বের হয়ে এসেছিল। সদাপ্রভু বলছেন, “দুষ্টদের কোন শান্তি নেই।” ওহে দূর দেশের লোকেরা, আমার কথা শোন; দূরের জাতিরা, কান দাও। আমার জন্মের আগে সদাপ্রভু আমাকে ডেকেছিলেন; তিনি মায়ের গর্ভ থেকে আমার নাম উল্লেখ করে আসছেন। তিনি আমার মুখকে ধারালো তলোয়ারের মত করেছেন। তিনি আমাকে তাঁর হাতের ছায়ায় লুকিয়ে রেখেছেন। তিনি আমাকে একটা বাছাই করা তীর করেছেন আর তাঁর তীর রাখবার খাপের মধ্যে রেখেছেন। তিনি আমাকে বললেন, “হে ইস্রায়েল, তুমি আমার দাস; আমি তোমার মধ্য দিয়েই আমার গৌরব প্রকাশ করব।” কিন্তু আমি বললাম, “আমার পরিশ্রম নিষ্ফল হয়েছে; আমি অসার উদ্দেশ্যে লাভ ছাড়াই আমার শক্তি ক্ষয় করেছি। তবুও আমার যা পাওনা তা সদাপ্রভুরই হাতে রয়েছে, আর আমার পুরস্কার রয়েছে ঈশ্বরের কাছে।” সদাপ্রভু তাঁর দাস হবার জন্য আমাকে গর্ভের মধ্যে গড়েছেন যেন আমি যাকোবকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি আর ইস্রায়েলকে তাঁর কাছে আনতে পারি। আমি সদাপ্রভুর চোখে সম্মানিত আর আমার ঈশ্বরই আমার শক্তি। তিনি বলছেন, “কেবল যাকোবের বংশকে উদ্ধার করবার জন্য আর ইস্রায়েলের বেঁচে থাকা লোকদের ফিরিয়ে আনবার জন্য যে তুমি আমার দাস হবে তা নয়; সেটা খুবই সামান্য ব্যাপার। এছাড়াও আমি অন্য জাতিদের কাছে তোমাকে আলোর মত করব যেন তোমার মধ্য দিয়ে সারা জগতের লোক পাপ থেকে উদ্ধার পায়।” লোকে যাঁকে তুচ্ছ করছে ও ঘৃণার চোখে দেখছে, যিনি শাসনকর্তাদের দাস, তাঁকে ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন ও মুক্তিদাতা সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, “রাজারা তোমাকে দেখে উঠে দাঁড়াবে, আর রাজপুরুষেরা তোমাকে প্রণাম করবে, কারণ সদাপ্রভু তোমাকে বেছে নিয়েছেন; ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজন বিশ্বস্ত।” সদাপ্রভু বলছেন, “দয়া দেখাবার সময়ে আমি তোমার প্রার্থনার উত্তর দেব এবং উদ্ধার পাবার দিনে তোমাকে সাহায্য করব। আমি তোমাকে রক্ষা করব আর তোমার মধ্য দিয়ে লোকদের জন্য একটা ব্যবস্থা স্থাপন করব, যাতে তুমি দেশের অবস্থা ফিরাতে পার আর খালি পড়ে থাকা জায়গাগুলো আবার লোকদের অধিকারে আনতে পার। তুমি বন্দীদের বলবে, ‘তোমরা মুক্ত হও,’ আর যারা অন্ধকারে আছে তাদের বলবে, ‘তোমরা বের হয়ে এস।’ তারা রাস্তার ধারে আর গাছপালাহীন পাহাড়ের উপরে খাবার পাবে। তাদের খিদে পাবে না, পিপাসাও পাবে না কিম্বা মরুভুমির গরম বা সূর্যের তাপ তাদের আঘাত করবে না। তাদের উপর যাঁর মমতা আছে তিনিই তাদের পথ দেখাবেন আর জলের ফোয়ারার কাছে নিয়ে যাবেন। আমার সব পাহাড়গুলোকে আমি রাস্তা বানাব; আমার রাজপথগুলো তৈরী করা হবে। দেখ, তারা দূর থেকে আসবে; কেউ উত্তর থেকে, কেউ পশ্চিম থেকে আর কেউ সীনীম দেশ থেকে আসবে।” হে মহাকাশ, আনন্দে চিৎকার কর; হে পৃথিবী, আনন্দ কর; হে পাহাড়-পর্বত, জোরে জোরে আনন্দ-গান কর; কারণ সদাপ্রভু তাঁর লোকদের সান্ত্বনা দেবেন আর তাঁর অত্যাচারিত লোকদের উপর মমতা করবেন। কিন্তু সিয়োন বলল, “সদাপ্রভু আমাকে ত্যাগ করেছেন, তিনি আমাকে ভুলে গেছেন।” সেইজন্য সদাপ্রভু বলছেন, “মা কি তার দুধের শিশুকে ভুলে যেতে পারে? যে শিশুকে সে জন্ম দিয়েছে তার উপর সে কি মমতা করবে না? এমন কি, মা-ও ভুলে যেতে পারে কিন্তু আমি কখনও তোমাকে ভুলে যাব না। দেখ, আমার হাতের তালুতে আমি তোমার নাম খোদাই করে রেখেছি; তোমার চারদিকের দেয়াল সব সময় আমার সামনে আছে। তোমার ছেলেরা ফিরে আসবার জন্য তাড়াতাড়ি করছে, আর যারা তোমাকে ধ্বংস করে ফেলে রেখেছে তারা তোমার কাছ থেকে চলে যাবে। তুমি চোখ তুলে চারপাশে তাকাও; দেখ, তোমার সব ছেলেরা একত্র হয়ে তোমার কাছে আসছে। আমার জীবনের দিব্য যে, তারা সবাই তোমার গহনার মত হবে, বিয়ের কনের গহনার মত হবে। “যদিও তুমি ধ্বংস হয়েছ এবং খালি পড়ে আছ আর তোমার দেশ পোড়ো জমি হয়ে রয়েছে তবুও সময় আসছে যখন তুমি তোমার লোকদের তোমার মধ্যে জায়গা দিতে পারবে না, আর যারা তোমাকে গিলে ফেলেছিল তারা দূর হয়ে যাবে। তোমার যে সন্তানদের তুমি হারিয়েছিলে তারা তোমার কাছে এসে বলবে, ‘এই জায়গা আমাদের জন্য খুব ছোট; বাস করবার জন্য আমাদের আরও জায়গা দাও।’ তখন তুমি মনে মনে বলবে, ‘এগুলোকে কে আমার জন্য জন্ম দিয়েছে? আমি সন্তানদের হারিয়ে বন্ধ্যার মত হয়ে গিয়েছিলাম; আমাকে যেন দূর করে দেওয়া হয়েছিল, আমি যেন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। তাহলে কে এদের লালন-পালন করেছে? আমাকে তো একাই ফেলে রাখা হয়েছিল, কিন্তু এরা? এরা কোথা থেকে এসেছে?’ ” প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, আমি হাতের ইশারায় অন্যান্য জাতিদের ডাকব আর আমার পতাকা তাদের দেখাব। কাজেই তারা কোলে করে তোমার ছেলেদের নিয়ে আসবে আর কাঁধে করে তোমার মেয়েদের বহন করবে। রাজারা তোমার লালন-পালনকারী হবে আর তাদের রাণীরা তোমার ধাই-মা হবে। তারা মাটিতে উবুড় হয়ে তোমাকে প্রণাম করবে আর তোমার পায়ের ধুলা চাটবে। তখন তুমি জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু; যারা আমার উপর আশা রাখে তারা লজ্জিত হবে না।” যোদ্ধার কাছ থেকে কি লুটের জিনিস নিয়ে নেওয়া যায়? কিম্বা বিজয়ী লোকের হাত থেকে কি বন্দীকে উদ্ধার করা যায়? কিন্তু সদাপ্রভু বলছেন, “হ্যাঁ, যোদ্ধাদের হাত থেকে বন্দীদের নিয়ে নেওয়া হবে আর ভয়ংকর লোকের হাত থেকে লুটের জিনিস উদ্ধার করা হবে। যারা তোমার সংগে ঝগড়া করবে তাদের সংগে আমিই ঝগড়া করব আর তোমার সন্তানদের আমিই রক্ষা করব। তোমার উপর যারা অত্যাচার করে আমি তাদের মাংস তাদেরই খাওয়াব; তারা মদের মত করে নিজেদের রক্ত খেয়ে মাতাল হবে। তখন সমস্ত মানুষ জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই তোমার উদ্ধারকর্তা, তোমার মুক্তিদাতা, যাকোবের সেই শক্তিশালী জন।” সদাপ্রভু বলছেন, “আমি যে ত্যাগপত্র দিয়ে তোমাদের মাকে দূর করে দিয়েছিলাম সেটা কোথায়? আমার ঋণদাতাদের মধ্যে কার কাছে আমি তোমাদের বিক্রি করেছি? তোমাদের পাপের জন্যই তোমরা বিক্রি হয়েছ; তোমাদের অন্যায়ের জন্যই তোমাদের মাকে দূর করা হয়েছে। আমি আসলে পর কেউ সেখানে ছিল না কেন? আমি ডাকলে পর উত্তর দেবার জন্য কেউ ছিল না কেন? তোমাদের মুক্ত করবার জন্য আমার হাত কি বেশী খাটো? তোমাদের উদ্ধার করবার জন্য আমার কি শক্তির অভাব হয়েছে? মাত্র ধমক দিয়েই আমি সাগর শুকিয়ে ফেলি আর নদীগুলো মরুভূমি করে দিই; সেগুলোর মাছ জলের অভাবে পচে যায় আর পিপাসায় মরে যায়। আমি কাপড়ের মত করে আকাশকে অন্ধকার পরাই আর চট দিয়ে ঢেকে দেবার মতই তাকে ঢেকে দিই।” প্রভু সদাপ্রভু আমাকে শিক্ষিতদের জিভ্‌ দিয়েছেন যাতে আমি কথার দ্বারা ক্লান্ত লোকদের সাহায্য করতে পারি। তিনি আমাকে প্রত্যেক দিন সকালে জাগিয়ে দেন আর আমার কানকে সজাগ করেন যাতে আমি একজন শিষ্যের মত শুনি। প্রভু সদাপ্রভু আমার কান খুলে দিয়েছেন এবং আমি অবাধ্য হই নি, পিছিয়েও যাই নি। যারা আমাকে মেরেছে আমি তাদের কাছে আমার পিঠ পেতে দিয়েছি আর যারা আমার দাড়ি উপ্‌ড়িয়েছে তাদের কাছে আমার গাল পেতে দিয়েছি। যখন আমাকে অপমান করা ও আমার উপর থুথু ফেলা হয়েছে তখন আমি আমার মুখ ঢেকে রাখি নি। প্রভু সদাপ্রভু আমাকে সাহায্য করেন বলে আমি অপমানিত হব না। কাজেই আমি চক্‌মকি পাথরের মতই আমার মুখ শক্ত করেছি, আর আমি জানি যে, আমি লজ্জিত হব না। যিনি আমাকে নির্দোষ বলে প্রমাণ করেছেন তিনি কাছেই আছেন; তাহলে কে আমার বিরুদ্ধে নালিশ আনবে? এস, আমরা মুখোমুখি হই। কে আমাকে দোষী করছে? সে আমার সামনে আসুক। প্রভু সদাপ্রভু আমাকে সাহায্য করছেন, কাজেই কে আমাকে দোষী করবে? তারা সবাই কাপড়ের মত পুরানো হয়ে যাবে; পোকা তাদের খেয়ে ফেলবে। তোমাদের মধ্যে যে সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে, যে তাঁর দাসের কথার বাধ্য হয়, কোন আলো নেই বলে যে অন্ধকারে চলে, সে সদাপ্রভুর উপর বিশ্বাস করুক আর তার ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করুক। কিন্তু তোমরা যারা আগুন জ্বেলেছ আর মশাল নিয়ে নিজেদের ব্যবস্থা করেছ, তোমরা সবাই গিয়ে তোমাদের আগুনের আলোতে আর মশালের আলোতে চল। আমার হাত থেকে তোমরা যা পাবে তা হল, যন্ত্রণার মধ্যে তোমরা শুয়ে থাকবে। সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা যারা সৎভাবে চলতে চাও আর আমার ইচ্ছামত চলবার চেষ্টা করছ, তোমরা শোন। যে পাথর থেকে তোমাদের কেটে নেওয়া হয়েছে আর যে খাদ থেকে তোমাদের খুঁড়ে তোলা হয়েছে তার দিকে তাকিয়ে দেখ। তোমাদের পিতা অব্রাহাম এবং তোমাদের যে জন্ম দিয়েছে সেই সারার দিকে তাকিয়ে দেখ। আমি যখন তাকে ডেকেছিলাম তখন সে ছিল একজন, আর আমি তাকে আশীর্বাদ করে সংখ্যায় অনেক করলাম। আমি নিশ্চয়ই সিয়োনকে সান্ত্বনা দেব আর তার সব ধ্বংসস্থানগুলোর প্রতি মমতা করব; তার মরু-এলাকাকে আমি এদন বাগানের মত করব আর মরুভূমিকে সদাপ্রভুর বাগানের মত করব। তার মধ্যে আমোদ, আনন্দ, ধন্যবাদ ও গানের আওয়াজ পাওয়া যাবে। “হে আমার লোকেরা, আমার কথা শোন, আমার কথায় কান দাও। আমার মধ্য থেকেই নির্দেশ বের হবে; আমি আমার ন্যায়বিচার স্থাপন করব যাতে অন্য জাতিরা আলো পায়। আমার সততা কাছে এসে গেছে আর আমার উদ্ধার করবার কাজ শুরু হয়েছে। আমি নিজেই জাতিদের উপর ন্যায়বিচার করব। দূর দেশের লোকেরা আমার দিকে তাকাবে আর আমার শক্তিশালী হাতের অপেক্ষায় থাকবে। তোমরা আকাশের দিকে চোখ তোল আর নীচে পৃথিবীর দিকে তাকাও। আকাশ ধূমার মত অদৃশ্য হয়ে যাবে, পৃথিবী কাপড়ের মত পুরানো হয়ে যাবে আর তার বাসিন্দারাও মারা যাবে। কিন্তু আমার দেওয়া উদ্ধার অনন্তকাল স্থায়ী হবে আর আমার সততা চিরকাল থাকবে। “যা ঠিক তোমরা যারা তা জান আর যাদের অন্তরে আমার শিক্ষা আছে, তোমরা শোন। তোমরা মানুষের টিট্‌কারিকে কিম্বা তাদের করা অপমানকে ভয় কোরো না, কারণ কাপড়ের মত করে আর পশমের মত করে পোকা তাদের খেয়ে ফেলবে। কিন্তু আমার সততা চিরকাল থাকবে; আমার দেওয়া উদ্ধার বংশের পর বংশ ধরে স্থায়ী হবে।” হে সদাপ্রভুর শক্তিশালী হাত, ওঠো, ওঠো, তোমার শক্তি প্রকাশ কর। যেমন তুমি আগেকার দিনে উঠেছিলে, যেমন বংশের পর বংশ ধরে উঠেছিলে তেমনি করে ওঠো। তুমি কি রহবকে টুকরা টুকরা করে কাট নি? সেই বিরাট দানবকে কি তুমি বিদ্ধ কর নি? তুমি কি সাগরের গভীর জল শুকিয়ে ফেল নি? তুমি কি সাগরের ভিতরে রাস্তা তৈরী কর নি যাতে তোমার মুক্ত করা লোকেরা পার হয়ে যেতে পারে? সদাপ্রভুর রক্ষা করা লোকেরা ফিরে আসবে আর গান গাইতে গাইতে সিয়োনে ঢুকবে। চিরকাল স্থায়ী আনন্দই হবে তাদের মাথার মুকুট। তারা খুব আনন্দিত হবে আর দুঃখ ও দীর্ঘনিঃশ্বাস পালিয়ে যাবে। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি, আমিই তোমাদের সান্ত্বনা দিই। তোমরা কেন মানুষকে ভয় করছ? তারা তো মরে যাবে। মানুষের সন্তানেরা ঘাসের মতই অল্পক্ষণ স্থায়ী। তোমাদের যিনি তৈরী করেছেন তাঁকে কেন তোমরা ভুলে গেছ? তিনি তো আকাশকে বিছিয়ে দিয়েছেন আর পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করেছেন। যে অত্যাচারী ধ্বংস করবার জন্য ঝুঁকে আছে তার ভয়ংকর রাগের দরুন কেন তোমরা প্রতিদিন সব সময় ভয়ে ভয়ে বাস করছ? সেই অত্যাচারীর ভয়ংকর রাগ কিছুই নয়। বন্দীদের শীঘ্রই ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা তাদের জেলের গর্তে মারা যাবে না, তাদের খাবারের অভাবও হবে না। আমিই সদাপ্রভু, তোমাদের ঈশ্বর। আমি সমুদ্রকে তোলপাড় করলে তার ঢেউ গর্জন করে। আমার নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু। আমি তোমাদের মুখে আমার বাক্য দিয়েছি আর আমার হাতের ছায়ায় তোমাদের ঢেকে রেখেছি। আমিই আকাশকে তার জায়গায় রেখেছি আর পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করেছি। আমি সিয়োনকে বলেছি, ‘তুমি আমার লোক।’ ” হে যিরূশালেম, জাগো, জাগো; উঠে দাঁড়াও। তুমি তো সদাপ্রভুর হাত থেকে তাঁর ক্রোধের পেয়ালায় খেয়েছ; মানুষ যে পেয়ালা থেকে খেয়ে টলতে থাকে সেই পেয়ালার তলা পর্যন্ত তুমি চেটে খেয়েছ। তুমি যে সব ছেলেদের জন্ম দিয়েছ তাদের মধ্যে পথ দেখাবার মত কেউ নেই; যে সব ছেলেদের তুমি পালন করেছ তাদের মধ্যে তোমার হাত ধরবার মত কেউ নেই। ধ্বংস ও সর্বনাশ এবং দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধ- এই দুই রকম বিপদ তোমার উপর এসে পড়েছে। কে তোমাকে সান্ত্বনা দিতে পারে? আমি কেমন করে তোমাকে সান্ত্বনা দেব? তোমার ছেলেরা অজ্ঞান হয়ে গেছে; তারা জালে পড়া হরিণের মত প্রতিটি রাস্তার মাথায় শুয়ে আছে। তাদের উপর সদাপ্রভুর ক্রোধ, তোমার ঈশ্বরের শাস্তি পরিপূর্ণভাবে নেমে এসেছে। কাজেই হে দুঃখিনী, তুমি এই কথা শোন। তোমাকে মাতাল করা হয়েছে, কিন্তু আংগুর-রসে নয়। তোমার প্রভু সদাপ্রভু, তোমার ঈশ্বর, যিনি তাঁর লোকদের পক্ষে থাকেন তিনি এই কথা বলছেন, “দেখ, যে পেয়ালা থেকে খেয়ে তুমি টলতে তা আমি তোমার হাত থেকে নিয়ে নিয়েছি; আমার ক্রোধের সেই পেয়ালা থেকে তুমি আর কখনও খাবে না। আমি সেই পেয়ালা তোমার অত্যাচারীদের হাতে তুলে দেব, যারা তোমাকে বলত, ‘উবুড় হয়ে পড়, যাতে আমরা তোমার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারি।’ তোমার উপর দিয়ে হেঁটে যাবার জন্য তুমি তোমার পিঠকে জমি আর রাস্তার মত করেছ।” হে সিয়োন, ওঠো, ওঠো, তোমার শক্তি প্রকাশ কর। হে পবিত্র শহর যিরূশালেম, তোমার জাঁকজমকের পোশাক পর। সুন্নত-না-করানো ও অশুচি লোক তোমার মধ্যে আর ঢুকবে না। হে যিরূশালেম, ওঠো, তুমি গায়ের ধুলা ঝেড়ে ফেলে সিংহাসনে বস। হে বন্দী সিয়োন-কন্যা, তোমার গলার শিকল সব খুলে ফেল। প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “তোমাকে বিনামূল্যে বিক্রি করা হয়েছিল আবার বিনামূল্যেই মুক্ত করা হবে। আমার লোকেরা আগে মিসরে বাস করতে গিয়েছিল; পরে আসিরিয়া অকারণে তাদের উপর অত্যাচার করেছিল। আর এখন এখানে আমার কি আছে? আমার লোকদের তো অকারণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আর তাদের শাসনকর্তারা তাদের গালাগালি করে; অনবরত আমার নামের নিন্দা করা হয়। কাজেই আমার লোকেরা জানতে পারবে আমি কে; সেই দিন তারা জানবে যে, আমিই কথা বলেছিলাম; হ্যাঁ, আমিই বলেছিলাম।” যে লোক সুখবর দিতে আসে, শান্তি ঘোষণা করে, মংগলের সংবাদ নিয়ে আসে, উদ্ধার ঘোষণা করে আর সিয়োনকে বলে, ‘তোমার ঈশ্বর রাজত্ব করছেন,’ পাহাড়ের উপর দিয়ে আসবার সময় সেই লোকের পা কেমন সুন্দর দেখায়। শোন, তোমার পাহারাদারেরা চিৎকার করছে, তারা আনন্দে একসংগে চেঁচাচ্ছে, কারণ সদাপ্রভু যখন সিয়োনে ফিরে আসবেন তখন তারা নিজেদের চোখেই তা দেখবে। হে যিরূশালেমের ধ্বংসস্থানগুলো, তোমরা একসংগে জোরে জোরে আনন্দ-গান কর, কারণ সদাপ্রভু তাঁর লোকদের সান্ত্বনা দিয়েছেন আর যিরূশালেমকে মুক্ত করেছেন। সদাপ্রভু সমস্ত জাতির চোখের সামনে তাঁর পবিত্র শক্তিশালী হাত প্রকাশ করবেন, আর পৃথিবীর সব জায়গার লোকেরা আমাদের ঈশ্বরের উদ্ধারের কাজ দেখতে পাবে। তোমরা বের হও, ঐ জায়গা থেকে বের হয়ে এস। তোমরা কোন অশুচি জিনিস ছুঁয়ো না। তোমরা যারা সদাপ্রভুর পাত্র বয়ে নিয়ে যাও তোমরা সেই জায়গা থেকে বের হয়ে এস এবং শুচি হও। কিন্তু তোমরা তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে আসবে না কিম্বা পালিয়েও আসবে না, কারণ সদাপ্রভু তোমাদের আগে আগে যাবেন; ইস্রায়েলের ঈশ্বরই তোমাদের পিছন দিকের রক্ষক হবেন। সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, আমার দাস সফল হবেন। তাঁকে উঁচুতে তোলা হবে এবং তিনি গৌরব ও সম্মান পাবেন। তাঁর চেহারা ও আকার এত বিশ্রী করে দেওয়া হবে যে, তা আর কোন মানুষের মত থাকবে না; সেইজন্য অনেকে তাঁকে দেখে হতভম্ব হবে। কিন্তু পরে তিনি অনেক জাতির লোককে শুচি করবেন, আর তাঁরই দরুন রাজারা মুখ বন্ধ করবে, কারণ যা তাদের বলা হয় নি তা তারা দেখতে পাবে, আর যা তারা শোনে নি তা বুঝতে পারবে।” আমাদের দেওয়া খবরে কে বিশ্বাস করেছে? কার কাছেই বা সদাপ্রভুর শক্তিশালী হাত প্রকাশিত হয়েছেন? তিনি তাঁর সামনে নরম চারার মত, শুকনা মাটিতে লাগানো গাছের মত বড় হলেন। তাঁর এমন সৌন্দর্য বা জাঁকজমক নেই যে, তাঁর দিকে আমরা ফিরে তাকাই; তাঁর চেহারাও এমন নয় যে, আমাদের আকর্ষণ করতে পারে। লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে ও অগ্রাহ্য করেছে; তিনি যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং রোগের সংগে তাঁর পরিচয় ছিল। লোকে যাকে দেখলে মুখ ফিরায় তিনি তার মত হয়েছেন; লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে এবং আমরা তাঁকে সম্মান করি নি। সত্যি, তিনিই আমাদের সব রোগ তুলে নিয়েছেন আর আমাদের যন্ত্রণা বহন করেছেন; কিন্তু আমরা ভেবেছি ঈশ্বর তাঁকে আঘাত করেছেন, তাঁকে মেরেছেন ও কষ্ট দিয়েছেন। আমাদের পাপের জন্যই তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে; আমাদের অন্যায়ের জন্য তাঁকে চুরমার করা হয়েছে। যে শাস্তির ফলে আমাদের শান্তি এসেছে সেই শাস্তি তাঁকেই দেওয়া হয়েছে; তিনি যে আঘাত পেয়েছেন তার দ্বারাই আমরা সুস্থ হয়েছি। আমরা সবাই ভেড়ার মত করে বিপথে গিয়েছি; আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের পথের দিকে ফিরেছি। সদাপ্রভু আমাদের সকলের অন্যায় তাঁর উপর চাপিয়েছেন। তিনি অত্যাচারিত হলেন ও কষ্ট ভোগ করলেন, কিন্তু তবুও তিনি মুখ খুললেন না; জবাই করতে নেওয়া ভেড়ার বাচ্চার মত, লোম ছাঁটাইকারীদের সামনে চুপ করে থাকা ভেড়ীর মত তিনি মুখ খুললেন না। অত্যাচার ও অন্যায় বিচার করে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছিল। সেই সময়কার লোকদের মধ্যে কে খেয়াল করেছিল যে, আমার লোকদের পাপের জন্য তাঁকে জীবিতদের দেশ থেকে শেষ করে ফেলা হয়েছে? সেই শাস্তি তো তাদেরই পাওনা ছিল। যদিও তিনি কোন অনিষ্ট করেন নি কিম্বা তাঁর মুখে কোন ছলনার কথা ছিল না, তবুও দুষ্টদের সংগে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল আর মৃত্যুর দ্বারা তিনি ধনীর সংগী হয়েছিলেন। আসলে সদাপ্রভু তাঁর ইচ্ছা অনুসারে তাঁকে চুরমার করেছিলেন আর তাঁকে কষ্ট ভোগ করিয়েছিলেন। সদাপ্রভুর দাস যখন তাঁর প্রাণকে দোষ-উৎসর্গ হিসাবে দেবেন তখন তিনি তাঁর সন্তানদের দেখতে পাবেন আর তাঁর আয়ু বাড়ানো হবে; তাঁর দ্বারাই সদাপ্রভুর ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তিনি তাঁর কষ্টভোগের ফল দেখে তৃপ্ত হবেন; সদাপ্রভু বলছেন, আমার ন্যায়বান দাসকে গভীরভাবে জানবার মধ্য দিয়ে অনেককে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হবে, কারণ তিনি তাদের সব অন্যায় বহন করবেন। সেইজন্য মহৎ লোকদের মধ্যে আমি তাঁকে একটা অংশ দেব আর তিনি বলবানদের সংগে বিজয়ের ফল ভাগ করবেন, কারণ তিনি নিজের ইচ্ছায় প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁকে পাপীদের সংগে গোণা হয়েছিল; তিনি অনেকের পাপ বহন করেছিলেন আর পাপীদের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। সদাপ্রভু বলছেন, “হে বন্ধ্যা স্ত্রীলোক, যার কখনও সন্তান হয় নি, তুমি আনন্দে গান কর; তুমি, যার কখনও প্রসব-বেদনা হয় নি, তুমি গানে ফেটে পড়, আনন্দে চিৎকার কর; কারণ যার স্বামী আছে তার চেয়ে যার কেউ নেই তার সন্তান অনেক বেশী হবে। তোমার তাম্বুর জায়গা আরও বাড়াও; তোমার তাম্বুর পর্দা আরও চওড়া কর, কৃপণতা কোরো না। তোমার তাম্বুর দড়িগুলো লম্বা কর আর গোঁজগুলো শক্ত কর, কারণ তুমি ডানে ও বাঁয়ে ছড়িয়ে পড়বে। তোমার বংশধরেরা অন্যান্য জাতিদের দেশ দখল করবে আর তাদের লোকজনহীন শহরগুলোতে বাস করবে। তুমি ভয় কোরো না, কারণ তোমাকে লজ্জা দেওয়া হবে না। তুমি লজ্জাবোধ কোরো না, কারণ তোমাকে অসম্মানিত করা হবে না। তোমার যৌবনের লজ্জা তুমি ভুলে যাবে আর তোমার বিধবা থাকবার দুর্নাম তুমি মনে রাখবে না। তোমার সৃষ্টিকর্তাই তোমার স্বামী, তাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু; ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনই তোমার মুক্তিদাতা। তাঁকেই সমস্ত পৃথিবীর ঈশ্বর বলা হয়। তুমি ত্যাগ করা আর অন্তরে কষ্ট পাওয়া স্ত্রীর মত হয়েছ, যৌবনকালে দূর করে দেওয়া স্ত্রীর মত হয়েছ; কিন্তু সদাপ্রভু আবার তোমাকে ডেকেছেন। আমি তোমার ঈশ্বর এই কথা বলছি। “এক মুহূর্তের জন্য আমি তোমাকে ত্যাগ করেছিলাম, কিন্তু গভীর মমতায় আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনব। ক্রোধে মুহূর্তের জন্য তোমার কাছ থেকে আমি মুখ ফিরিয়েছিলাম, কিন্তু চিরকালের অটল ভালবাসা দিয়ে আমি তোমার উপর মমতা করব। আমি তোমার মুক্তিদাতা সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “আমার কাছে এটা নোহের দিনের মত লাগছে। আমি যেমন শপথ করেছিলাম যে, নোহের সময়কার জলের মত জল আর কখনও পৃথিবী ঢেকে ফেলবে না, তেমনি এই শপথও করেছি যে, তোমার উপর রাগ করব না, তোমাকে আর কখনও বকুনি দেব না। যদিও বা পর্বত সরে যায় আর পাহাড় টলতে থাকে, তবুও তোমার জন্য আমার অটল ভালবাসা সরে যাবে না কিম্বা আমার শান্তির ব্যবস্থা টলবে না।” তোমার উপর যাঁর মমতা রয়েছে সেই সদাপ্রভু এই কথা বলছেন। সদাপ্রভু বলছেন, “হে ঝড়ে আঘাত পাওয়া, সান্ত্বনা না পাওয়া অত্যাচারিত শহর, আমি তোমাকে চক্‌চকে পাথর দিয়ে তৈরী করতে যাচ্ছি আর তোমার ভিত্তি নীলকান্তমণি দিয়ে গাঁথব। পদ্মরাগমণি দিয়ে তোমার দেয়াল গাঁথব, ঝক্‌মকে মণি দিয়ে তোমার ফটক তৈরী করব আর তোমার সব দেয়াল দামী দামী পাথর দিয়ে গাঁথব। তোমার সব ছেলেরা সদাপ্রভুর শিষ্য হবে আর তোমার সন্তানদের প্রচুর মংগল হবে। তুমি ন্যায্যতায় স্থাপিত হবে। তোমার কাছ থেকে অত্যাচার দূরে থাকবে; তোমার ভয়ের কিছু থাকবে না। ভীষণ ভয় দূরে সরে যাবে, তা তোমার কাছে আসবে না। যদি কেউ তোমাকে আক্রমণ করে তবে বুঝতে হবে আমি তাকে পাঠাই নি। যে তোমাকে আক্রমণ করবে তোমার দরুন তার পতন হবে। “দেখ, যে কামার কয়লার আগুনে বাতাস দেয় আর কাজের উপযুক্ত অস্ত্র তৈরী করে সেই কামারকে আমিই সৃষ্টি করেছি। ধ্বংস করে দেবার জন্য আমিই ধ্বংসকারীকে সৃষ্টি করেছি। তোমার বিরুদ্ধে তৈরী করা কোন অস্ত্রই টিকবে না; তোমাকে দোষী করা প্রত্যেকটি লোকের যুক্তি খণ্ডন করে তুমি তাদেরই দোষী করবে। এ-ই হল সদাপ্রভুর দাসদের অধিকার আর তাদের উপযুক্ত পাওনা।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে পিপাসিত লোকেরা, তোমরা সবাই জলের কাছে এস; যার পয়সা নেই সেও এসে কিনে খেয়ে যাক। এস, বিনা পয়সায়, বিনামূল্যে আংগুর-রস আর দুধ কেনো। যা কোন খাবার নয় তার জন্য কেন পয়সা খরচ করবে? যা তৃপ্তি দেয় না তার জন্য কেন পরিশ্রম করবে? শোন, আমার কথা শোন, যা ভাল তা-ই খাও; তাতে সবচেয়ে ভাল খাবার পেয়ে তোমাদের প্রাণ আনন্দিত হবে। আমার কথায় কান দাও, আমার কাছে এস; আমার কথা শোন যেন তোমরা জীবিত থাক। আমার বিশ্বস্ততায় ভরা ভালবাসার দরুন আমি দায়ূদের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছি সেই অনুসারে আমি তোমাদের জন্য একটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা স্থাপন করব। দেখ, আমি তাকে জাতিদের কাছে একজন সাক্ষী, একজন নেতা ও তাদের সেনাপতি হিসাবে নিযুক্ত করেছি। সত্যিই, যে জাতিদের তোমরা চিনতে না তাদের ডাকবে আর সেই জাতিরা, যারা তোমাদের চেনে না তারা দৌড়ে তোমাদের কাছে আসবে। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের জন্যই তারা তা করবে, কারণ তিনি তোমাদের গৌরবে পূর্ণ করেছেন।” সদাপ্রভু কাছে থাকতেই তাঁর দিকে ফেরো; তিনি কাছে থাকতে থাকতে তাঁকে ডাক। দুষ্ট লোক তার পথ ত্যাগ করুক আর মন্দ লোক তার সব চিন্তা ত্যাগ করুক। সে সদাপ্রভুর দিকে ফিরুক, তাতে তিনি তার উপর মমতা করবেন; আমাদের ঈশ্বরের দিকে ফিরুক, কারণ তিনি সম্পূর্ণভাবেই ক্ষমা করবেন। সদাপ্রভু বলছেন, “আমার চিন্তা তোমাদের চিন্তার মত নয়, আমার পথও তোমাদের পথের মত নয়। মহাকাশ যেমন পৃথিবীর চেয়ে অনেক উঁচু, তেমনি আমার পথ তোমাদের পথের চেয়ে, আমার চিন্তা তোমাদের চিন্তার চেয়ে অনেক উঁচু। বৃষ্টি ও তুষার আকাশ থেকে নেমে আসে আর পৃথিবীকে জল দান না করে সেখানে ফিরে যায় না, বরং তাতে ফুল ও ফল ধরায় এবং যে বীজ বোনে তার জন্য শস্য আর যে খায় তার জন্য খাবার দান করে। ঠিক তেমনি আমার মুখ থেকে বের হওয়া বাক্য নিষ্ফল হয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে না, বরং তা আমার ইচ্ছামত কাজ করবে আর যে উদ্দেশ্যে আমি পাঠিয়েছি তা সফল করবে। তোমরা আনন্দের সংগে বাইরে যাবে আর শান্তিতে তোমাদের নিয়ে যাওয়া হবে। পাহাড়-পর্বতগুলো তোমার সামনে জোরে জোরে গান গাইবে আর মাঠের সমস্ত গাছপালা হাততালি দেবে। কাঁটাঝোপের বদলে বেরস আর কাঁটাগাছের বদলে গুলমেঁদি জন্মাবে। সদাপ্রভুর সুনামের জন্য একটা চিরস্থায়ী চিহ্ন হিসাবে এই সব হবে। সেই চিহ্ন কখনও ধ্বংস হবে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা ন্যায়বিচার রক্ষা কর এবং ন্যায় কাজ কর, কারণ আমার দেওয়া উদ্ধার কাছে এসে গেছে আর কিভাবে তোমরা আমার গ্রহণযোগ্য হতে পার তার উপায় শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। ধন্য সেই লোক, যে এই সব কাজ করে; ধন্য সেই মানুষ, যে তা করতে মনোযোগী হয়। বিশ্রামবার অপবিত্র না করে যে লোক তা পালন করে আর মন্দ কাজ করা থেকে তার হাত সরিয়ে রাখে, সে ধন্য।” সদাপ্রভুর উপাসনা করে এমন কোন বিদেশী না বলুক, “সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আমাকে তাঁর লোকদের মধ্য থেকে বাদ দেবেন।” কোন খোজা লোক না বলুক, “আমি কেবল একটা শুকনা গাছ,” কারণ সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, “খোজারা যদি আমার বিশ্রামবার পালন করে, আমি যা পছন্দ করি তা-ই বেছে নেয় আর আমার ব্যবস্থা শক্ত করে ধরে রাখে, তবে তাদের ছেলেমেয়ে থাকলে যে নাম থাকত তার চেয়ে আমার ঘর ও দেয়ালের ভিতরে তাদের নাম স্থাপন করে তা আমি আরও স্মরণীয় করে রাখব। আমি তাদের এমন চিরস্থায়ী নাম দেব যা মুছে ফেলা হবে না। এছাড়া যে বিদেশীরা আমার সেবার জন্য আর আমাকে ভালবাসবার ও আমার দাস হবার জন্য আমার কাছে নিজেদের দিয়ে দেয় এবং যারা বিশ্রামবার অপবিত্র না করে তা পালন করে আর আমার ব্যবস্থা শক্ত করে ধরে রাখে, তাদের আমি আমার পবিত্র পাহাড়ে নিয়ে আসব আর আমার ঘরে, অর্থাৎ প্রার্থনার ঘরে তাদের আনন্দ দান করব। আমার বেদীর উপরে তাদের পোড়ানো ও অন্যান্য উৎসর্গ গ্রহণ করা হবে। এইজন্য আমার ঘরকে সমস্ত জাতির প্রার্থনার ঘর বলা হবে।” প্রভু সদাপ্র্রভু, যিনি বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ইস্রায়েলীয়দের জড়ো করেন তিনি এই কথা ঘোষণা করছেন, “যাদের আগেই জড়ো করা হয়েছে তাদের সংগে অন্য জাতির লোকদেরও আমি জড়ো করব।” মাঠের ও বনের সব পশু, তোমরা এসে খেয়ে ফেল। ইস্রায়েলের পাহারাদারেরা অন্ধ, তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা সবাই যেন বোবা কুকুর, তারা ঘেউ ঘেউ করতে পারে না। তারা শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখে ও ঘুমাতে ভালবাসে। তারা এমন কুকুরের মত যাদের খিদে বেশী; তাদের কখনও তৃপ্তি হয় না। তারা বুদ্ধিহীন রাখাল; তারা সবাই নিজের নিজের পথের দিকে ফিরেছে আর নিজের লাভের চেষ্টা করছে। প্রত্যেকে বলে, “চল, আংগুর-রস আনি; চল, আমরা পেট ভরে মদ খাই। আজকের চেয়ে কাল আরও ভাল হবে।” সৎ লোকেরা যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তার দিকে কেউ মনোযোগ দেয় না। ঈশ্বরভক্ত লোকদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কিন্তু কেউ বুঝতে পারছে না যে, মন্দের হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা ঠিক পথে চলে তারা শান্তি পাবে; তারা মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিশ্রাম পাবে। সদাপ্রভু বলছেন, “হে যাদুকারিণীর ছেলেরা, ব্যভিচারী ও বেশ্যার সন্তানেরা, তোমরা এখানে এস। তোমরা কাকে ঠাট্টা করছ? কাকে তোমরা মুখ ভেংগাচ্ছ ও জিভ্‌ দেখাচ্ছ? তোমরা কি অন্যায়কারীদের বংশ ও মিথ্যাবাদীদের সন্তান নও? তোমরা তো এলোন গাছগুলোর মধ্যে, ডালপালা ছড়ানো প্রত্যেকটা সবুজ গাছের নীচে কামনায় জ্বলে ওঠো; তোমরা উপত্যকায় উপত্যকায় আর পাহাড়ের ফাটলে ফাটলে তোমাদের ছেলেমেয়েদের বলি দিয়ে থাক। “হে ইস্রায়েল, তুমি উপত্যকার সমান পাথরগুলোই পূজা করে থাক; ওরা, ওরাই তোমার সম্পত্তি। হ্যাঁ, ওদের কাছেই তুমি ঢালন-উৎসর্গ ঢেলে দিয়েছ আর শস্য-উৎসর্গ করেছ। এই সব ব্যাপার দেখে কি আমি চুপ করে থাকব? তুমি উঁচু পাহাড়ের উপরে তোমার বিছানা পেতেছ, আর তোমার উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য তুমি সেখানে উঠে গিয়েছ। তোমার ঘরের ভিতরে তুমি তোমার পূজার জিনিস রেখেছ। আমাকে ত্যাগ করে অন্যদের পেয়ে তুমি কাপড় খুলে খাটে উঠেছ, আর নিজের বিছানা বড় করে তাদের সংগেই থাকবার চুক্তি করেছ; তুমি তাদের সংগে থাকতে ভালবেসেছ ও তাদের উলংগতা দেখেছ। তুমি জলপাইয়ের তেল মেখে রাজার কাছে গিয়েছ আর প্রচুর পরিমাণে সুগন্ধি ব্যবহার করেছ। তোমার দূতদের তুমি দূর দেশে পাঠিয়েছ, এমন কি, মৃতস্থান পর্যন্তও পাঠিয়েছ। তোমার এই সব যাওয়া-আসার ফলে তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছ, তবুও ‘আশা নেই,’ এই কথা বল নি। কিন্তু তুমি পূজা করে নতুন শক্তি পেয়েছ, কাজেই তুমি দুর্বল হয়ে পড় নি। “কাকে তুমি এত ভয় করেছ যার জন্য তুমি আমার কাছে মিথ্যা কথা বলেছ, আমাকে ভুলে গেছ আর আমার প্রতি অমনোযোগী হয়েছ? আমি অনেক দিন ধরে চুপ করে আছি, সেইজন্যই কি তুমি আমাকে ভয় কর না? তোমার সততা ও তোমার কাজ যে কি তা আমি প্রকাশ করব; সেগুলো তো তোমার কোন উপকারে আসবে না। সাহায্যের জন্য যখন তুমি কাঁদবে তখন তোমার জড়ো করা মূর্তিগুলোই তোমাকে রক্ষা করুক। বাতাস তাদের সকলকে বয়ে নিয়ে যাবে; সামান্য একটা নিঃশ্বাস তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু যে লোক আমার আশ্রয় নেয় সে দেশের এবং আমার পবিত্র পাহাড়ের অধিকার পাবে।” সদাপ্রভু বলবেন, “রাস্তা তৈরী কর, তৈরী কর, তা প্রস্তুত কর। আমার লোকদের সামনে থেকে সমস্ত বাধা সরিয়ে ফেল।” যিনি মহান ও গৌরবে পূর্ণ, যিনি চিরকাল জীবিত, যাঁর নাম পবিত্র, তিনি বলছেন, “আমি উঁচু ও পবিত্র জায়গায় বাস করি, কিন্তু যার মন নম্র, যার মন ভেংগে চুরমার হয়েছে আমি তার সংগেও বাস করি যাতে নম্রদের ও মন ভেংগে চুরমার হওয়া লোকদের অন্তরকে আমি নতুন করে তুলতে পারি। আমি চিরকালের জন্য মানুষকে দোষী করব না কিম্বা আমার ক্রোধ সব সময় তাদের উপর থাকবে না। যদি থাকে তাহলে মানুষ, যে মানুষকে আমি তৈরী করেছি তারা তো আমার সামনে শেষ হয়ে যাবে। তাদের লোভের জন্য আমি ক্রোধে জ্বলে উঠেছিলাম, আর তাদের শাস্তি দিয়ে ভীষণ অসন্তোষে আমার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম; তবুও তারা তাদের ইচ্ছামত পথে চলতে লাগল। আমি মানুষের সব ব্যবহার দেখেছি, তবুও আমি তাদের সুস্থ করব। আমি তাদের পরিচালনা করব এবং যারা শোক করে তাদের সান্ত্বনা দান করব। তাতে তারা বলবে, ‘কাছের ও দূরের সকলের মংগল হোক।’ আমি সদাপ্রভু বলছি যে, আমি তাদের সুস্থ করব।” কিন্তু দুষ্টেরা দুলতে থাকা সমুদ্রের মত যার ঢেউ পাঁক ও কাদা উপরে উঠায়। আমার ঈশ্বর বলছেন, “দুষ্টদের কোন শান্তি নেই।” সদাপ্রভু বলছেন, “জোরে চিৎকার কর, সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার কর; শিংগার আওয়াজের মত জোরে আওয়াজ কর। আমার লোকদের কাছে তাদের অন্যায়ের কথা আর যাকোবের বংশের কাছে তাদের পাপের কথা জানাও। তাদের দেখলে মনে হয় দিনের পর দিন যেন তারা আমার ইচ্ছামত চলছে আর আমার পথ জানবার জন্য তাদের আগ্রহ আছে; তারা যেন এমন একটা জাতি যারা ঠিক কাজ করে আর তাদের ঈশ্বরের আদেশ ত্যাগ করে না; তারা যেন আমার কাছে ন্যায়বিচার সম্বন্ধে জানতে চায় আর যেন ঈশ্বরের কাছে আসতে আগ্রহী। তারা বলে, ‘আমরা উপবাস করেছি আর তুমি তা চেয়ে দেখলে না কেন? আমরা কষ্ট স্বীকার করেছি আর তুমি তা লক্ষ্য করলে না কেন?’ কিন্তু দেখ, তোমাদের উপবাসের দিনে তোমরা তো নিজেদের সন্তুষ্ট করে থাক, আর তোমাদের সব কর্মচারীদের উপর অত্যাচার করে থাক। উপবাস করবার ফলে তোমরা ঝগড়া আর বিবাদ করে থাক এবং ঘুষি মেরে একে অন্যকে আঘাত করে থাক। তোমরা এইভাবে উপবাস করলে আশা করতে পারবে না যে, আমি তোমাদের কথা শুনব। আমি কি এই রকম উপবাস চেয়েছি? তোমাদের উপবাস তো কেবল নিজেদের কষ্ট দেওয়া; তা কেবল নল-খাগড়ার মত মাথা নোয়ানো আর ছালার চটের ও ছাইয়ের উপর শুয়ে থাকা। এটাকেই কি তোমরা উপবাস আর সদাপ্রভুর দয়া দেখাবার দিন বল? “আসলে আমি এই রকম উপবাস চাই: তোমরা অবিচারের শিকল আর জোয়ালের দড়ি খুলে দাও, অত্যাচারিতদের মুক্তি দাও আর প্রত্যেকটি জোয়াল ভেংগে ফেল, খিদে পাওয়া লোকদের তোমাদের খাবার ভাগ করে দাও, ঘুরে বেড়ানো গরীব লোককে নিজের ঘরে আশ্রয় দাও, উলংগকে দেখলে তাকে কাপড় পরাও, আর নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। এই সব কাজ করাই হল আসল উপবাস। তাহলে তোমাদের আলো ভোরের মত প্রকাশ পাবে আর শীঘ্রই তোমরা সুস্থতা লাভ করবে; তোমাদের সততা তোমাদের আগে আগে যাবে আর আমার গৌরব তোমাদের পিছন দিকের রক্ষক হবে। তখন তোমরা প্রার্থনা করলে আমি উত্তর দেব; তোমরা সাহায্যের জন্য ডাকলে আমি বলব, ‘এই যে আমি।’ “যদি তোমরা তোমাদের কাছ থেকে অত্যাচারীর জোয়াল, বিদ্রূপের ইংগিত এবং হিংসাপূর্ণ কথাবার্তা ত্যাগ কর, যদি খিদে পাওয়া লোকদের প্রতি মমতা দেখিয়ে তাদের খাবার দাও, তাহলে অন্ধকারেও তোমাদের আলো জ্বলে উঠবে আর তোমাদের রাত হবে দুপুর বেলার মত। আমি সদাপ্রভুই তোমাদের সব সময় পরিচালনা করব; শুকিয়ে যাওয়া দেশে আমি তোমাদের প্রয়োজন মিটাব আর তোমাদের দেহকে শক্তি দান করব। তোমরা ভালভাবে জল পাওয়া বাগানের মত হবে আর এমন ফোয়ারার মত হবে যার জল কখনও শুকাবে না। তোমাদের লোকেরা আগেকার ধ্বংস হওয়া জায়গাগুলো আবার তৈরী করবে আর অনেক কাল আগেকার ভিত্তিগুলোর উপরে আবার গাঁথবে; তোমাদের বলা হবে ভাংগা দেয়ালের এবং বসতিস্থানের রাস্তাগুলোর মেরামতকারী। “যদি তোমরা বিশ্রামবার পালন কর ও আমার পবিত্র দিনে নিজেদের সন্তুষ্ট না কর, যদি বিশ্রামবারকে আনন্দদায়ক আর সদাপ্রভুর দিনকে সম্মানের যোগ্য মনে কর, যদি নিজেদের খুশীমত না চলে সেই দিনের সম্মান রাখ আর যা খুশী তা না কর বা বাজে কথা না বল, তাহলে আমাকে নিয়েই তোমরা আনন্দে মেতে থাকবে আর আমি পৃথিবীর সব উঁচু জায়গার অধিকার তোমাদের দেব। এছাড়া আমি তোমাদের পিতা যাকোবের অধিকার তোমাদের ভোগ করতে দেব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” দেখ, সদাপ্রভুর হাত এত খাটো নয় যে, তিনি উদ্ধার করতে পারেন না; তাঁর কানও এত ভারী নয় যে, তিনি শুনতে পান না। কিন্তু তোমাদের অন্যায় সদাপ্রভুর কাছ থেকে তোমাদের আলাদা করে দিয়েছে। তোমাদের পাপের দরুন তিনি তাঁর মুখ তোমাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিয়েছেন; সেইজন্য তিনি শোনেন না। তোমাদের হাত রক্তে আর আংগুল পাপে অশুচি হয়েছে। তোমাদের মুখ মিথ্যা কথা বলেছে আর তোমাদের জিভ্‌ দুষ্টতার কথা বলে। কেউ ন্যায়ভাবে মামলা করে না, কেউ সততার সংগে মামলার ওকালতি করে না। তারা বাজে যুক্তির উপর নির্ভর করে আর মিথ্যা কথা বলে; তারা দুষ্টতা গর্ভে ধরে আর মন্দতার জন্ম দেয়। তারা বিষাক্ত সাপের ডিমে তা দেয় আর মাকড়সার জাল বোনে। যে কেউ সেই ডিম খায় সে মরে; সেগুলোর একটা ভাঙ্গলে বিষাক্ত সাপ বের হয়। তাদের মাকড়সার জালে কাপড় হয় না; তারা যা পরে তা দিয়ে নিজেদের ঢাকতে পারে না। তাদের সব কাজ মন্দ, তাদের হাতে আছে অনিষ্টের কাজ। তাদের পা পাপের দিকে দৌড়ে যায়; তারা নির্দোষীর রক্তপাত করবার জন্য তাড়াতাড়ি যায়। তাদের চিন্তা সবই মন্দ এবং তাদের পথে ধ্বংস ও সর্বনাশ থাকে। তারা শান্তির পথ জানে না; তাদের পথে কোন ন্যায়বিচার নেই। তারা নিজেদের পথ আঁকাবাঁকা করেছে; যারা সেই পথে চলে তারা শান্তি কি তা জানে না। সেইজন্য ন্যায়বিচার আমাদের কাছ থেকে দূরে থাকে আর সততা আমাদের কাছ পর্যন্ত পৌঁছায় না। আমরা আলো পেতে চাই, কিন্তু সবই অন্ধকার; উজ্জ্বলতা পেতে চাই, কিন্তু ঘন ছায়ায় চলি। আমরা অন্ধের মত দেয়াল হাতড়ে বেড়াই; যাদের চোখ নেই তাদের মতই পথ হাতড়াই। যেন সন্ধ্যা হয়েছে সেইভাবে আমরা দুপুরেই উছোট খাই; আমরা জীবিতদের মধ্যে মরার মত। আমরা সবাই ভাল্লুকের মত গর্জন করি, ঘুঘুর মত কাতর স্বরে ডাকি। আমরা ন্যায়বিচার পেতে চাই, কিন্তু পাই না; আমরা উদ্ধার পেতে চাই, কিন্তু তা অনেক দূরে থাকে। হে সদাপ্রভু, তোমার চোখে আমাদের অন্যায় অনেক বেশী; আমাদের পাপ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। আমাদের অন্যায় আমাদের সংগে সংগেই রয়েছে আর আমাদের দোষের বিষয় আমরা জানি। সেগুলো হল, বিদ্রোহ আর তোমাকে অস্বীকার করা, আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া, অত্যাচার ও বিদ্রোহের জন্য উস্‌কে দেওয়া আর অন্তর থেকে মিথ্যা কথা বের করে এনে তা বলা। সেইজন্য ন্যায়বিচারকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে আর ন্যায্যতা দূরে দাঁড়িয়ে আছে; সত্য রাস্তায় রাস্তায় উছোট খেয়েছে, সততা ঢুকতে পারছে না। সত্যকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না, আর যে মন্দকে ত্যাগ করে সে অত্যাচারের শিকার হয়। সদাপ্রভু এই সব দেখলেন আর ন্যায়বিচার নেই বলে অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি দেখে অবাক হলেন যে, ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াবার জন্য কেউ নেই; কাজেই তিনি তাঁর শক্তিশালী হাত দিয়েই উদ্ধারের কাজ করলেন আর এই কাজে তাঁর ন্যায্যতা তাঁকে সাহায্য করল। তিনি বুক রক্ষার জন্য ন্যায্যতা পরলেন আর মাথা রক্ষার জন্য উদ্ধার মাথায় দিলেন। তিনি প্রতিশোধের পোশাক পরলেন আর চাদরের মত করে আগ্রহ গায়ে জড়ালেন। লোকেরা যা করেছে তা-ই তিনি তাদের ফিরিয়ে দেবেন; তাঁর বিপক্ষদের উপর ক্রোধ ঢেলে দেবেন আর শত্রুদের কুকাজের শাস্তি দেবেন। দূর দেশের লোকদের যা পাওনা তা-ই তিনি তাদের দেবেন। পশ্চিম দিকের লোকেরা সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে আর পূর্ব দিকের লোকেরা তাঁর মহিমা দেখে ভক্তিপূর্ণ ভয় পাবে, কারণ সদাপ্রভু তাঁর নিঃশ্বাসের ঝাপ্‌টায় তাড়ানো বাঁধ-ভাংগা বন্যার মত আসবেন। সদাপ্রভু বলছেন, “যাকোবের যারা পাপ থেকে মন ফিরিয়েছে তাদের জন্য মুক্তিদাতা সিয়োনে আসবেন। তাদের জন্য আমার ব্যবস্থা এই: আমার যে আত্মা তোমাদের উপরে আছে আর আমার যে কথা আমি তোমাদের মুখে দিয়েছি তা তোমাদের, তোমাদের ছেলেমেয়েদের ও তাদের বংশধরদের মুখ থেকে চলে যাবে না; তা এখন থেকে চিরকাল থাকবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে যিরূশালেম, ওঠো, আলো দাও, কারণ তোমার আলো এসে গেছে; সদাপ্রভুর মহিমা তোমাকে আলো দিচ্ছে। দেখ, পৃথিবী আঁধারে ঢেকে গেছে আর জাতিদের উপরে এসেছে ঘন অন্ধকার, কিন্তু সদাপ্রভু তোমার উপরে আলো দেবেন আর তাঁর মহিমা তোমার উপরে প্রকাশিত হবে। জাতিরা তোমার আলোর কাছে আসবে; রাজারা তোমার ভোরের উজ্জ্বলতার কাছে আসবে। “তুমি চোখ তুলে চারপাশে তাকিয়ে দেখ, তারা সকলে একত্র হয়ে তোমার কাছে আসছে; তোমার ছেলেরা দূর থেকে আসছে আর তোমার মেয়েদের কোলে করে আনা হচ্ছে। তা দেখে তুমি আনন্দে উজ্জ্বল হবে, মহা আনন্দে তোমার বুক ফুলে উঠবে; সাগরের ধন তোমার কাছে আনা হবে, জাতিদের ধন-সম্পদ তোমার কাছে আসবে। মরুযাত্রীদের উটের বহরে তোমার দেশ ছেয়ে যাবে, ছেয়ে যাবে মিদিয়ন ও ঐফার শক্তিশালী উটে। তারা সোনা আর সুগন্ধি ধূপ নিয়ে শিবা দেশ থেকে আসবে আর সদাপ্রভুর গৌরব ঘোষণা করবে। কেদরের ভেড়ার পালগুলো তোমার কাছে জড়ো হবে, নবায়োতের ভেড়া তোমার কাজে লাগবে; আমার বেদীর উপরে উৎসর্গ হিসাবে আমি সেগুলো গ্রহণ করব, আর আমার গৌরবময় ঘর আমি আরও গৌরবময় করব। “নিজের নিজের বাসার দিকে ঘুঘু যেমন উড়ে আসে তেমনি এরা কারা মেঘের মত উড়ে আসছে? সত্যিই দূর দেশের লোকেরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে; তোমার ছেলেদের ও তাদের সোনা-রূপা নিয়ে দূর থেকে বড় বড় তর্শীশ-জাহাজ সবার আগে আগে আসছে। ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব করবার জন্য তোমার ছেলেরা আসছে, কারণ তোমাকে তিনি জাঁকজমকে সাজিয়েছেন। “বিদেশীরা তোমার দেয়াল আবার গাঁথবে আর তাদের রাজারা তোমার সেবা করবে। যদিও ক্রোধে আমি তোমাকে আঘাত করেছি তবুও দয়া করে আমি তোমাকে মমতা করব। তোমার ফটকগুলো সব সময় খোলা থাকবে, দিনে ও রাতে কখনও সেগুলো বন্ধ থাকবে না যাতে জাতিদের ধন-সম্পদ লোকে তোমার কাছে আনতে পারে; তাদের রাজাদেরও নিয়ে আসা হবে। যে জাতি বা রাজ্য তোমার সেবা করবে না তা ধ্বংস হবে, তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। “লেবাননের গৌরব তোমার কাছে আসবে; আমার পবিত্র জায়গা সাজাবার জন্য আসবে বেরস, ঝাউ ও তাশূর গাছ; আমার পা রাখবার জায়গাকে আমি গৌরব দান করব। তোমাকে যারা অত্যাচার করত তাদের ছেলেরা মাথা নীচু করে তোমার সামনে আসবে; যারা তোমাকে তুচ্ছ করত তারা সবাই তোমাকে প্রণাম করবে আর তোমাকে সদাপ্রভুর শহর, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের সিয়োন বলে ডাকবে। “যদিও তোমাকে ত্যাগ ও ঘৃণা করা হয়েছিল, কেউ তোমার মধ্য দিয়ে যেত না, তবুও আমি তোমাকে করব চিরস্থায়ী গর্বের পাত্র আর বংশের পর বংশের সকলের আনন্দের বিষয়। মা যেমন তার সন্তানকে দুধ খাওয়ায় তেমনি জাতিরা ও রাজারা তাদের ভাল ভাল জিনিস তোমাকে দেবে। তখন তুমি জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই তোমার উদ্ধারকর্তা, তোমার মুক্তিদাতা, যাকোবের সেই শক্তিশালী জন। আমি তোমার জন্য আনব ব্রোঞ্জের বদলে সোনা আর লোহার বদলে রূপা। কাঠের বদলে আমি তোমার জন্য আনব ব্রোঞ্জ আর পাথরের বদলে লোহা। আমি মংগলকে করব তোমার শাসনকর্তা আর সততাকে করব তোমার নেতা। কোন অনিষ্টের কথা আর তোমার দেশে শোনা যাবে না, তোমার সীমানার মধ্যে শোনা যাবে না কোন ধ্বংস বা বিনাশের কথা। তোমার দেয়ালগুলোর নাম হবে উদ্ধার আর তোমার ফটকগুলোর নাম হবে প্রশংসা। দিনের বেলা সূর্যের আলো তোমার আর দরকার হবে না, চাঁদের উজ্জ্বলতাও তোমার লাগবে না, কারণ সদাপ্রভুই হবেন তোমার চিরস্থায়ী আলো, আর তোমার ঈশ্বরই হবেন তোমার জাঁকজমক। তোমার সূর্য আর কখনও অস্ত যাবে না, তোমার চাঁদও আর ক্ষীণ হয়ে যাবে না। সদাপ্রভুই হবেন তোমার চিরস্থায়ী আলো; তোমার শোকের দিন শেষ হবে। তখন তোমার সব লোকেরা সৎ হবে; তারা চিরদিনের জন্য দেশ অধিকার করবে। তারা আমার লাগানো চারা, আমার হাতের কাজ; তাদের মধ্য দিয়ে আমার জাঁকজমক প্রকাশিত হবে। তোমাদের মধ্যে যে ছোট সে হাজার জন হবে, আর যে সবচেয়ে ছোট সে একটা শক্তিশালী জাতি হবে। আমি সদাপ্রভু; সময়মত আমি তা তাড়াতাড়িই করব।” প্রভু সদাপ্রভুর আত্মা আমার উপর আছেন, কারণ তিনিই আমাকে নিযুক্ত করেছেন যেন আমি গরীবদের কাছে সুখবর প্রচার করি। তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন যাতে আমি লোকদের ভাংগা মন জোড়া দিতে পারি এবং বন্দীদের কাছে স্বাধীনতা আর কয়েদীদের কাছে মুক্তি ঘোষণা করতে পারি; যাতে আমি সদাপ্রভুর দয়া দেখাবার সময়ের কথা আর আমাদের ঈশ্বরের প্রতিশোধের দিনের কথা ঘোষণা করতে পারি এবং যারা শোক করছে তাদের সান্ত্বনা দিতে পারি; যাতে সিয়োনে যারা শোক করছে তাদের মাথার উপর আমি ছাইয়ের বদলে সৌন্দর্যের মুকুট দিতে পারি; যাতে আমি শোকের বদলে আনন্দের তেল আর হতাশার বদলে প্রশংসার পোশাক দিতে পারি। তাদের বলা হবে সততার এলোন গাছ; সদাপ্রভু তা লাগিয়েছেন যেন তাদের মধ্য দিয়ে তাঁর গৌরব প্রকাশ পায়। তারা পুরানো দিনের ধ্বংস হওয়া স্থানগুলো আবার গাঁথবে ও মেরামত করবে। যে সব শহরগুলো বংশের পর বংশ ধরে ধ্বংস হয়ে ছিল সেগুলো তারা আবার নতুন করে গড়বে। অন্য জাতির লোকেরা এসে তোমাদের ভেড়ার পাল চরাবে; বিদেশীরা তোমাদের শস্য ক্ষেত ও আংগুর ক্ষেতে কাজ করবে। তোমাদের বলা হবে সদাপ্রভুর পুরোহিত; তোমাদের নাম হবে আমাদের ঈশ্বরের সেবাকারী। তোমরা জাতিদের ধন-সম্পদ ভোগ করবে আর তাদের ধন দিয়ে গর্ব করবে। আমার লোকেরা লজ্জার বদলে সম্পত্তির দুই গুণ ভাগ পাবে, আর অসম্মানের বদলে তারা তাদের সম্পত্তিতে আনন্দ করবে। তাদের দেশে তারা দুই গুণ ভাগ পাবে আর তাদের চিরস্থায়ী আনন্দ হবে। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি ন্যায়বিচার ভালবাসি আর ডাকাতি ও অন্যায় ঘৃণা করি। আমার বিশ্বস্ততায় আমি তাদের পুরস্কার দেব আর তাদের জন্য একটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা স্থাপন করব। জাতিদের মধ্যে তাদের বংশধরেরা আর লোকদের মধ্যে তাদের সন্তানেরা নাম-করা হবে। যারা তাদের দেখবে তারা সবাই বুঝতে পারবে যে, এরা সেই জাতি যাদের সদাপ্রভু আশীর্বাদ করেছেন।” আমি সদাপ্রভুকে নিয়ে খুব খুশী হব; আমার প্রাণ আমার ঈশ্বরকে নিয়ে আনন্দ করবে, কারণ বর যেমন নিজের মাথায় পাগড়ী পরে আর কনে নিজেকে অলংকার দিয়ে সাজায় তেমনি করে তিনি আমাকে উদ্ধারের কাপড় পরিয়েছেন আর সততার পোশাকে সাজিয়েছেন। মাটিতে যেমন চারা গজায় আর বাগানে বীজ থেকে গাছ গজায় তেমনি করে প্রভু সদাপ্রভু সমস্ত জাতির সামনে সততা ও প্রশংসার চারা গজাবেন। আমি সিয়োনের পক্ষে আছি তাই চুপ করে থাকব না, যিরূশালেমের পক্ষে আছি তাই বসে থাকব না, যে পর্যন্ত না তার সততা ভোরের উজ্জ্বলতার মত আর তার উদ্ধার জ্বলন্ত মশালের মত হয়ে দেখা দেয়। হে যিরূশালেম, জাতিরা তোমার সততা আর সমস্ত রাজারা তোমার মহিমা দেখবে। তোমাকে একটা নতুন নামে ডাকা হবে; সদাপ্রভুই সেই নাম দেবেন। তুমি সদাপ্রভুর হাতে একটা জাঁকজমকপূর্ণ মুকুট হবে আর তোমার ঈশ্বরের হাতে হবে একটা রাজমুকুট। তারা আর তোমাকে “ত্যাগ করা” বলবে না কিম্বা তোমার দেশের নাম “জনশূন্য” দেবে না, বরং তোমাকে “আমার প্রীতির পাত্রী” বলা হবে, আর তোমার দেশকে “বিবাহিতা” বলা হবে, কারণ সদাপ্রভু তোমাকে নিয়ে খুশী হবেন আর তোমার দেশের বিয়ে হবে। একজন যুবক যেমন একজন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করে তেমনি তোমার লোকেরা তোমাকে বিয়ে করবে; বর যেমন কনেকে নিয়ে আনন্দ করে তেমনি তোমার ঈশ্বরও তোমাকে নিয়ে আনন্দ করবেন। সদাপ্রভু তাঁর ডান হাত, তাঁর শক্তিশালী হাত দিয়ে শপথ করে বলেছেন, “আমি আর কখনও তোমার শস্য খাবার হিসাবে শত্রুদের দেব না এবং যে আংগুর-রসের জন্য তোমরা পরিশ্রম করেছ তা বিদেশীরা আর কখনও খাবে না। যারা ফসল কেটে জড়ো করবে তারাই সেই ফসল খাবে আর সদাপ্রভুর প্রশংসা করবে। যারা আংগুর জড়ো করবে তারা আমার পবিত্র জায়গার উঠানে তার রস খাবে।” তোমরা এগিয়ে যাও, ফটকের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাও, লোকদের জন্য পথ প্রস্তুত কর। তোমরা রাজপথ তৈরী কর, তৈরী কর। সব পাথর সরিয়ে দাও; জাতিদের জন্য একটা পতাকা তোল। সদাপ্রভু পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত ঘোষণা করছেন, “সিয়োন-কন্যাকে বল, ‘দেখ, তোমার উদ্ধারকর্তা আসছেন। দেখ, তিনি যে পুরস্কার পেয়েছেন তা তাঁর সংগেই আছে; তাঁর পাওনা তাঁর কাছেই আছে।’ ” তার লোকদের বলা হবে, “সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা লোক, অর্থাৎ সদাপ্রভুর মুক্ত করা লোক।” হে যিরূশালেম, তোমাকে বলা হবে, “খুঁজে পাওয়া শহর, অর্থাৎ ফিরিয়ে আনা শহর।” যিনি ইদোমের বস্রা থেকে লাল রংয়ে রাংগানো পোশাকে আসছেন, উনি কে? যিনি জাঁকজমকপূর্ণ পোশাকে মহাশক্তিতে এগিয়ে আসছেন, উনি কে? “এ আমি, আমি ন্যায়ভাবে কথা বলি, আমি মহাশক্তিতে উদ্ধার করি।” আংগুর মাড়াই করবার গর্তে যে লোক আংগুর মাড়াই করে তার মত তোমার পোশাক লাল কেন? “আমি একাই আংগুর মাড়াই করেছি; জাতিদের মধ্যে কেউ আমার সংগে ছিল না। আমি ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের পায়ে দলেছি এবং ক্রোধে তাদের পায়ে মাড়িয়েছি; তাদের রক্তের ছিটা আমার পোশাকে লেগেছে আর সমস্ত কাপড়ে দাগ লেগেছে। এখন মুক্ত করবার সময় এসে গেছে; সেইজন্য আমি প্রতিশোধের যে সময় ঠিক করেছিলাম তা-ও এসে গেছে। আমি চেয়ে দেখলাম, কিন্তু সাহায্যকারী কাউকে পেলাম না; আমি আশ্চর্য হলাম যে, কেউ আমাকে সাহায্য করল না। সেইজন্য আমি নিজের শক্তিতেই উদ্ধারের কাজ করলাম, আর আমার ক্রোধ আমাকে উৎসাহ দিল। আমি ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে জাতিদের পায়ে মাড়ালাম; আমার ক্রোধে তাদের মাতালের মত করলাম আর মাটিতে তাদের রক্ত ঢেলে দিলাম।” আমি সদাপ্রভুর অটল ভালবাসার কথা বলব আর তাঁর সব কাজের জন্য তাঁর প্রশংসা করব। তাঁর মমতা ও তাঁর প্রচুর ভালবাসার দরুন তিনি ইস্রায়েল জাতির জন্য প্রচুর পরিমাণে মংগলের কাজ করেছেন বলে আমি তাঁর প্রশংসা করব। তিনি বলেছেন, “অবশ্যই তারা আমার লোক, তারা এমন সন্তান যারা অবিশ্বস্ত হবে না,” আর সেইজন্যই তিনি তাদের উদ্ধারকর্তা হলেন। তাদের সব দুঃখে তিনিও দুঃখিত হলেন আর তাঁর দূত তাদের উদ্ধার করলেন। তাঁর ভালবাসা ও দয়ায় তিনি তাদের মুক্ত করলেন; আগেকার কালের সমস্ত দিনে তিনি তাদের তুলে বহন করেছিলেন। তবুও তারা বিদ্রোহ করে তাঁর পবিত্র আত্মাকে দুঃখ দিত। সেইজন্য তিনি ফিরে তাদের শত্রু হলেন আর তিনি নিজে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে লাগলেন। তখন তাঁর লোকেরা পুরানো দিনের কথা, অর্থাৎ মোশি ও তাঁর লোকদের দিনের কথা মনে করল। তারা বলল, “যিনি তাঁর লোকদের ও তাদের নেতাদের সমুদ্রের মধ্য দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন, যিনি তাদের মধ্যে থাকবার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মাকে দিয়েছিলেন তিনি কোথায়? যিনি মোশিকে সাহায্য করবার জন্য তাঁর গৌরবময় শক্তিশালী জনকে দিয়েছিলেন, যিনি নিজের সুনাম চিরস্থায়ী করবার জন্য তাদের সামনে জলকে দু’ভাগ করেছিলেন, যিনি সমুদ্রের মধ্য দিয়ে তাদের নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি কোথায়? সেইজন্য মরু-এলাকায় চলা ঘোড়ার মত তারা উছোট খায় নি। সদাপ্রভুর আত্মা উপত্যকায় নেমে যাওয়া পশুপালের মত তাদের বিশ্রাম দিয়েছিলেন। তাঁর গৌরবময় নাম স্থাপন করবার জন্য তিনি এমনি করেই তাঁর লোকদের পরিচালনা করেছিলেন।” হে সদাপ্রভু, স্বর্গ থেকে, তোমার পবিত্র ও গৌরবময় বাসস্থান থেকে তুমি তাকিয়ে দেখ। তোমার আগ্রহ ও তোমার শক্তিপূর্ণ কাজ কোথায়? তোমার নরমভাব ও মমতা আমাদের কাছ থেকে তুমি সরিয়ে রেখেছ। হে সদাপ্রভু, তুমি তো আমাদের পিতা। যদিও অব্রাহাম আমাদের জানেন না কিম্বা যাকোব আমাদের স্বীকার করেন না, তবুও তুমিই আমাদের পিতা; তুমি অনন্তকালের মুক্তিদাতা- এ-ই তোমার নাম। হে সদাপ্রভু, তোমার পথ ছেড়ে কেন আমাদের ঘুরে বেড়াতে দিচ্ছ? আমরা যেন তোমাকে ভক্তিপুর্ণ ভয় না করি সেইজন্য কেন তুমি আমাদের অন্তর কঠিন করছ? তোমার দাসদের জন্য, অর্থাৎ যে গোষ্ঠীগুলো তোমার অধিকার, তাদের জন্য তুমি ফিরে এস। তোমার পবিত্র জায়গা অল্প দিনের জন্য তোমার আলাদা করা লোকদের হাতে ছিল, কিন্তু এখন আমাদের শত্রুরা সেটা পায়ে মাড়িয়েছে। তুমি যাদের উপর কখনও কর্তৃত্ব কর নি, যাদের কখনও তোমার নামে ডাকাও হয় নি, এখন আমরা তাদের সমান হয়েছি। আহা, তুমি যদি আকাশ চিরে নেমে আসতে! যদি পাহাড়-পর্বত তোমার সামনে কাঁপত! আগুন যেমন ডালপালা জ্বালায় আর জল ফুটায় তেমনি তুমি নেমে এসে তোমার শত্রুদের কাছে নিজেকে প্রকাশ কর, যেন জাতিগুলো তোমার সামনে ভয়ে কাঁপে। আমরা যা আশা করি নি তেমন ভয় ও ভক্তি জাগানো আশ্চর্য কাজ যখন তুমি করেছিলে তখন তুমি নেমে এসেছিলে আর পাহাড়-পর্বত তোমার সামনে কেঁপেছিল। সেই আগেকার কাল থেকে তুমি ছাড়া আর কোন ঈশ্বরের কথা কেউ কানেও শোনে নি চোখেও দেখে নি, যিনি তাঁর অপেক্ষাকারীর জন্য কাজ করে থাকেন। যারা ঈশ্বরের ইচ্ছামত কাজ করতে আনন্দ পায় আর তোমাকে স্মরণ করে তোমার পথে চলে তাদের সাহায্য করবার জন্য তুমি এসে থাক; কিন্তু আমরা পাপ করেছি ও অনেক দিন ধরে সেই অবস্থায় আছি বলে তুমি আমাদের উপর ভীষণ রাগ করে আছ। তাহলে আমরা কেমন করে উদ্ধার পাব? আমরা প্রত্যেকে অশুচি লোকের মত হয়েছি আর আমাদের সব সৎ কাজ নোংরা কাপড়ের মত। আমরা সবাই পাতার মত শুকিয়ে গেছি, আমাদের পাপ বাতাসের মত করে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কেউ তোমাকে ডাকে না কিম্বা মিনতি করতে কেউ তোমার কাছে আসে না, কারণ আমাদের দিক থেকে তুমি তোমার মুখ ফিরিয়ে রেখেছ আর আমাদের পাপের জন্য আমাদের ধ্বংস হয়ে যেতে দিচ্ছ। তবুও, হে সদাপ্রভু, তুমিই আমাদের পিতা। আমরা মাটি, তুমি কুমার; আমরা সবাই তোমার হাতের কাজ। হে সদাপ্রভু, তুমি এত বেশী রাগ কোরো না; আমাদের পাপ চিরকাল মনে রেখো না। আমরা মিনতি করছি, তুমি আমাদের দিকে তাকাও, কারণ আমরা সবাই তোমারই লোক। তোমার পবিত্র শহরগুলো মরু-এলাকা হয়ে গেছে; এমন কি, সিয়োনেরও সেই অবস্থা হয়েছে, হ্যাঁ, যিরূশালেম জনশূন্য হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেখানে তোমার প্রশংসা করতেন আমাদের সেই পবিত্র ও গৌরবময় উপাসনা-ঘর আগুনে পুড়ে গেছে আর আমাদের পছন্দনীয় যা কিছু ছিল ধ্বংস হয়ে গেছে। হে সদাপ্রভু, এই সবের পরেও কি তুমি বসে থাকবে? তুমি কি চুপ করে থেকে আমাদের ভীষণ শাস্তি দেবে? সদাপ্রভু বলছেন, “আমি এই লোকদের আমার কাছে অনুরোধ জানাবার সুযোগ দিয়েছি, কিন্তু তারা আমার কাছে কোন অনুরোধ জানায় নি; আমি তাদের কাছেই ছিলাম, কিন্তু তারা কোন সাহায্যের জন্য আমার কাছে আসে নি। আমি এই জাতির লোকদের বলেছি, ‘এই যে আমি, এই যে আমি,’ কিন্তু তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে নি। একগুঁয়ে লোকদের দিকে আমি সারা দিন আমার হাত বাড়িয়েই রয়েছি। তারা নিজের নিজের কল্পনার পিছনে গিয়ে মন্দ পথে চলে। সেই লোকেরা আমার মুখোমুখি হয়েই আমাকে অনবরত বিরক্ত করছে; তারা বাগানে বাগানে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করছে আর ইটের উপরে ধূপ জ্বালাচ্ছে। তারা কবরস্থানে বসে আর গোপন জায়গায় রাত কাটায়; তারা শূকরের মাংস খায় আর তাদের পাত্রে অশুচি মাংসের ঝোল থাকে। তারা বলে, ‘দূরে থাক; আমার কাছে এসো না, কারণ আমি তোমার চেয়ে বেশী পবিত্র।’ ঐ লোকেরা আমার নাকের ধূমা আর সারা দিন জ্বলতে থাকা আগুন। সদাপ্রভু বলছেন, “আংগুরের থোকায় রস আছে দেখে লোকে যেমন বলে, ‘নষ্ট কোরো না, এখনও ওর মধ্যে ভাল কিছু আছে,’ তেমনি আমি আমার দাসদের সবাইকে ধ্বংস করব না। আমি যাকোব থেকে এবং যিহূদা থেকে একটা বংশ তুলব; তারা আমার পাহাড়-পর্বতের অধিকারী হবে। আমার বাছাই করা লোকেরা সেগুলো অধিকার করবে আর আমার দাসেরা সেখানে বাস করবে। আমার যে লোকেরা আমার ইচ্ছামত চলেছে তাদের জন্য শারোণ হবে ভেড়ার পাল চরাবার জায়গা আর আখোর উপত্যকা হবে পশুপালের বিশ্রাম-স্থান। কিন্তু তোমরা যারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছ এবং আমার পবিত্র পাহাড়কে ভুলে গেছ, যারা ভাগ্যদেবের উদ্দেশে টেবিল সাজিয়েছ আর ভাগ্যদেবীর উদ্দেশে মেশানো মদে পাত্র ভরেছ, আমি তোমাদের ভাগ্য নির্দিষ্ট করব তলোয়ার দিয়ে, আর তোমরা সকলে জবাই হবার জন্য নীচু হবে। এর কারণ হল, আমি তোমাদের ডেকেছিলাম কিন্তু তোমরা উত্তর দাও নি, আমি কথা বলেছিলাম কিন্তু তোমরা শোন নি। আমার চোখে তোমরা মন্দ কাজ করেছ এবং যাতে আমি অসন্তুষ্ট হই তা-ই বেছে নিয়েছ।” কাজেই প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “আমার দাসেরা খাবে, কিন্তু তোমরা খিদেয় মরবে; আমার দাসেরা জল খাবে, কিন্তু তোমরা পিপাসিত থাকবে; আমার দাসেরা আনন্দ করবে, কিন্তু তোমাদের লজ্জা দেওয়া হবে। অন্তরে আনন্দ আছে বলে আমার দাসেরা গান গাইবে, কিন্তু তোমরা মনের দারুণ কষ্টে কাঁদবে এবং ভাংগা অন্তর নিয়ে হাহাকার করবে। আমার বাছাই করা লোকেরা কাউকে নিন্দা করবার জন্য তোমাদের নাম ব্যবহার করবে। প্রভু সদাপ্রভু তোমাদের মেরে ফেলবেন, কিন্তু তাঁর দাসদের তিনি আর একটা নাম দেবেন। দেশের মধ্যে যে কোন লোক আশীর্বাদ চাইবে সে সত্যময় ঈশ্বরের কাছেই তা চাইবে; দেশের মধ্যে যে কেউ শপথ করবে সে সত্যময় ঈশ্বরের নামেই তা করবে; কারণ লোকে আগেকার কষ্ট ভুলে যাবে আর আমার চোখের সামনে থেকে তা লুকানো হবে। “দেখ, আমি নতুন মহাকাশ ও একটা নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করব। আগের বিষয়গুলো মনে থাকবে না, সেগুলো মনেও পড়বে না। আমি যা সৃষ্টি করব তোমরা তাতে চিরকাল খুশী থেকো আর আনন্দ কোরো, কারণ আমি যিরূশালেমকে একটা আনন্দের জিনিস আর তার লোকদের একটা খুশীর জিনিস হিসাবে সৃষ্টি করব। আমি যিরূশালেমকে নিয়ে আনন্দ করব আর আমার লোকদের নিয়ে খুশী হব; তার মধ্যে আর কোন কান্নাকাটির শব্দ শোনা যাবে না। সেখানে কোন শিশু মারা যাবে না, কিম্বা কোন বুড়ো লোক আয়ু শেষ না হলে মরবে না। কেউ একশো বছর বয়সে মারা গেলেও তাকে যুবক বলা হবে; যে একশো বছর বাঁচবে না তাকে অভিশপ্ত বলা হবে। তারা ঘর-বাড়ী তৈরী করে সেখানে বাস করবে আর আংগুর ক্ষেত করে তার ফল খাবে। তারা ঘর তৈরী করলে অন্যেরা আর সেখানে বাস করবে না, কিম্বা গাছ লাগালে অন্যেরা ফল খাবে না। আমার লোকদের আয়ু একটা গাছের আয়ুর সমান হবে; আমার বাছাই করা লোকেরা অনেক দিন ধরে তাদের হাতের কাজের ফল ভোগ করবে। তাদের পরিশ্রম মিথ্যা হবে না আর তাদের সন্তানেরা বিপদে পড়বে না, কারণ তারা এবং তাদের সন্তানেরা সদাপ্রভুর আশীর্বাদ পাওয়া লোক হবে। তারা ডাকবার আগেই আমি সাড়া দেব, তারা কথা বলতে না বলতেই আমি শুনব। নেকড়ে বাঘ ও ভেড়ার বাচ্চা এক সংগে খাবে, সিংহ গরুর মত বিচালি খাবে আর সাপের খাবার হবে ধুলা। সেগুলো আমার পবিত্র পাহাড়ের কোন জায়গায় কোন ক্ষতি করবে না কিম্বা ধ্বংস করবে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “স্বর্গ আমার সিংহাসন আর পৃথিবী আমার পা রাখবার জায়গা। তোমরা আমার জন্য কোথায় ঘর তৈরী করবে? আমার বিশ্রামের স্থান কোথায় হবে? এই সব জিনিস আমি নিজের হাতে তৈরী করেছি আর তাই এই সব হয়েছে। যে লোক নম্র, যার মন ভেংগে চুরমার হয়েছে এবং যে আমার কথায় কাঁপতে থাকে তাকে আমি ভাল চোখে দেখব। কিন্তু যে একটা গরু উৎসর্গ করছে সে যেন মানুষ খুন করছে, যে একটা ভেড়ার বাচ্চা উৎসর্গ করছে সে যেন কুকুরের ঘাড় ভেংগে দিচ্ছে, যে শস্য উৎসর্গ করছে সে যেন শূকরের রক্ত দিচ্ছে, আর যে আমার উদ্দেশে ধূপ জ্বালাচ্ছে সে যেন প্রতিমা পূজা করছে। তারা তাদের নিজের নিজের পথ বেছে নিয়েছে; তাদের ঘৃণার জিনিসগুলোতে তারা তৃপ্ত হয়। তাই আমিও তাদের উপর শাস্তির ব্যবস্থা বেছে নেব আর তারা যা ভয় করে তা-ই তাদের উপর আনব, কারণ আমি ডাকলে কেউ উত্তর দেয় নি, আমি কথা বললে কেউ শোনে নি। আমার চোখে যা মন্দ তা-ই তারা করেছে, আর আমাকে যা অসন্তুষ্ট করে তা-ই তারা বেছে নিয়েছে।” তোমরা যারা সদাপ্রভুর কথায় কাঁপ তোমরা তাঁর কথা শোন। তিনি বলছেন, “তোমাদের ভাইয়েরা তোমাদের ঘৃণা করে আর আমার জন্য তোমাদের বাতিল করে। তারা ঠাট্টা করে বলে, ‘সদাপ্রভুর গৌরব হোক, আমরা যেন তোমাদের আনন্দ দেখতে পাই।’ কিন্তু তারা নিজেরাই লজ্জায় পড়বে। শোন, শহরে গণ্ডগোল হচ্ছে; শোন, উপাসনা-ঘরে হৈ চৈ হচ্ছে; এ তো সদাপ্রভুর আওয়াজ- তাঁর শত্রুদের যা পাওনা তিনি তা-ই দিচ্ছেন। “প্রসব-বেদনা উঠবার আগেই সিয়োন সন্তানের জন্ম দিয়েছে; তার ব্যথা উঠবার আগেই সে এক ছেলের জন্ম দিয়েছে। কে এই রকম কথা শুনেছে? কে এই রকম ঘটনা দেখেছে? একটা দেশ কি এক দিনে জন্ম নিতে পারে? কিম্বা একটা জাতির কি এক মুহূর্তে জন্ম হয়? কিন্তু সিয়োনের ব্যথা উঠতে না উঠতেই সে তার সন্তানদের জন্ম দিয়েছে। আমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছি, ‘জন্মের মুহূর্ত পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আমি কি জন্ম দিতে দেব না? আমি যখন জন্ম দেবার ব্যবস্থা করেছি তখন কি আমি জন্ম দিতে দেব না?’ ” তোমরা যারা যিরূশালেমকে ভালবাস তোমরা তার সংগে আনন্দ কর, তার জন্য খুশী হও; তোমরা যারা তার জন্য দুঃখ করেছ তোমরা তার সংগে আনন্দিত হও। তোমরা বুকের দুধ খেয়ে সান্ত্বনা পাওয়া শিশুর মত যিরূশালেমের উপ্‌চে পড়া মংগল ভোগ করে তৃপ্ত হবে। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি তার দিকে নদীর মত করে মংগল বইয়ে দেব, আর জাতিদের ধন-সম্পদ তার কাছে বন্যার মত আসবে। তোমরা এমন শিশুর মত হবে যাকে দুধ খাইয়ে কোলে করে নেওয়া হয় আর হাঁটুর উপরে নাচানো হয়। মা যেমন তার সন্তানকে সান্ত্বনা দেয় তেমনি আমি তোমাদের সান্ত্বনা দেব; আর তোমরা যিরূশালেমে সান্ত্বনা পাবে।” এই সব দেখে তোমাদের অন্তর আনন্দিত হবে আর তোমরা ঘাসের মতই বেড়ে উঠবে। সদাপ্রভুর দাসেরা তাঁর শক্তি দেখতে পাবে, আর তাঁর শত্রুরা দেখতে পাবে তাঁর ক্রোধ। দেখ, সদাপ্রভু আগুনের মধ্যে আসবেন আর তাঁর রথগুলো ঘূর্ণিবাতাসের মত আসবে। তাঁর ক্রোধ তিনি ভয়ংকরভাবে প্রকাশ করবেন, আর তাঁর বকুনি আগুনের শিখায় প্রকাশিত হবে। সদাপ্রভু আগুন ও তলোয়ার সংগে নিয়ে সমস্ত মানুষের উপর তাঁর বিচারের কাজ চালাবেন; তিনি যাদের মেরে ফেলবেন তাদের সংখ্যা হবে অনেক। সদাপ্রভু বলছেন, “যারা শূকর ও ইঁদুরের মাংস আর অন্যান্য জঘন্য জিনিস খায় এবং অনুষ্ঠান-পরিচালকের পিছনে পিছনে পূজার বাগানে যাবার জন্য দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিজেদের আলাদা করে রাখে ও শুচি করে, তারা একসংগে শেষ হয়ে যাবে। আমি তাদের সব কাজ ও কল্পনার কথা জানি। সমস্ত জাতি ও ভাষার লোকদের একত্র করবার সময় এসে গেছে। তারা এসে আমার মহিমা দেখতে পাবে।” সদাপ্রভু আরও বলছেন, “আমি তাদের মধ্যে একটা চিহ্ন স্থাপন করব এবং যারা বেঁচে থাকবে তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে আমি জাতিদের কাছে পাঠাব- তর্শীশ, পূল ও নাম-করা ধনুকধারী লূদ, তূবল ও গ্রীসের কাছে এবং যে সব দূরের দেশগুলো আমার সুনাম শোনে নি ও আমার মহিমাও দেখে নি তাদের কাছে পাঠাব। তারা জাতিদের মধ্যে আমার মহিমার কথা ঘোষণা করবে। সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ হিসাবে তারা সমস্ত জাতির মধ্য থেকে তোমাদের ভাইদের রথ ও গাড়িতে করে এবং ঘোড়া, গাধা ও উটে করে নিয়ে আমার পবিত্র পাহাড় যিরূশালেমে আসবে। ইস্রায়েলীয়েরা যেমন শুচি পাত্রের মধ্যে শস্য-উৎসর্গের জিনিস আনে তেমনি করে তারা সদাপ্রভুর ঘরে তাদের নিয়ে আসবে। আমি তাদের মধ্য থেকে কয়েকজন লেবীয়কে পুরোহিত ও সেবাকারী হবার জন্য বেছে নেব।” সদাপ্রভু বলছেন, “যে নতুন মহাকাশ ও নতুন পৃথিবী আমি তৈরী করব তা যেমন আমার সামনে টিকে থাকবে তেমনি তোমাদের নাম ও তোমাদের বংশধরেরাও টিকে থাকবে। প্রত্যেক অমাবস্যায় ও প্রত্যেক বিশ্রামবারে সমস্ত লোক আমার সামনে এসে আমার উপাসনা করবে। তারা বের হয়ে সেই সব লোকদের মৃতদেহ দেখবে যারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। যে সব পোকা তাদের মৃতদেহ খায় সেগুলো মরবে না ও যে আগুন তাদের পোড়ায় তা নিভবে না, আর তারা সমস্ত মানুষের ঘৃণার পাত্র হবে।” ॥ভব এই সব কথা হিল্কিয়ের ছেলে যিরমিয় বলেছিলেন। তিনি ছিলেন বিন্যামীন এলাকার অনাথোৎ গ্রামের পুরোহিতদের মধ্যে একজন। যিহূদার রাজা আমোনের ছেলে যোশিয়ের রাজত্বের তেরো বছরের সময় সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হয়েছিল। যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের সময় থেকে যিহূদার রাজা যোশিয়ের ছেলে সিদিকিয়ের রাজত্বের এগারো বছরের পঞ্চম মাস পর্যন্তও সদাপ্রভুর বাক্য আবার প্রকাশিত হয়েছিল। সেই মাসেই যিরূশালেমের লোকদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তোমাকে মায়ের গর্ভে গঠন করবার আগেই আমি তোমাকে বেছে রেখেছি। তোমার জন্মের আগেই আমি তোমাকে আলাদা করে রেখে জাতিদের কাছে নবী হিসাবে নিযুক্ত করেছি।” তখন আমি বললাম, “হে প্রভু সদাপ্রভু, আমি কথা বলতে জানি না; আমি তো ছেলেমানুষ।” কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি ছেলেমানুষ এই কথা বোলো না। আমি যাদের কাছে তোমাকে পাঠাব তাদের প্রত্যেকের কাছে তুমি যাবে এবং আমি যা বলতে আদেশ করব তা-ই বলবে। তুমি তাদের ভয় কোরো না, কারণ আমি সদাপ্রভু তোমাকে রক্ষা করবার জন্য তোমার সংগে সংগে আছি।” তারপর সদাপ্রভু হাত বাড়িয়ে আমার মুখ ছুঁলেন এবং আমাকে বললেন, “এখন আমি তোমার মুখে আমার বাক্য দিলাম। দেখ, উপ্‌ড়ে ও ভেংগে ফেলবার জন্য, ধ্বংস ও সর্বনাশ করবার জন্য এবং তৈরী করবার ও স্থাপন করবার জন্য আজ আমি তোমাকে জাতি ও রাজ্যগুলোর উপরে নিযুক্ত করলাম।” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “যিরমিয়, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” উত্তরে আমি বললাম, “আমি বাদাম গাছের একটা ডাল দেখতে পাচ্ছি।” সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি ঠিকই দেখেছ, কারণ আমার বাক্য যাতে সফল হয় তার দিকে আমি খেয়াল রাখছি।” আবার সদাপ্রভু বললেন, “তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” আমি বললাম, “আমি উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে কাৎ হয়ে থাকা একটা পাত্র দেখতে পাচ্ছি যার মধ্যে কিছু ফুটছে।” সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “এই দেশে যারা বাস করে তাদের সকলের উপরে উত্তর দিক থেকে বিপদ বন্যার মত বেগে আসবে। আমি উত্তর দিকের রাজ্যগুলোর সমস্ত জাতিদের ডাক দিচ্ছি।” যিরূশালেমের ফটকগুলোতে ঢুকবার পথে রাজারা এসে তাদের সিংহাসন স্থাপন করবে। তারা তার চারপাশের দেয়াল আর যিহূদার সমস্ত শহরগুলো ঘেরাও করবে। আমার লোকেরা আমাকে ত্যাগ করেছে, তারা দেব-দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালিয়েছে আর নিজেদের হাতের তৈরী জিনিসের পূজা করেছে। তাদের এই সব দুষ্টতার জন্য আমি তাদের বিরুদ্ধে আমার বিচারের রায় দেব। “তুমি কোমর বেঁধে দাঁড়াও এবং আমি তোমাকে যা বলতে আদেশ করি তা-ই তুমি তাদের বল। তাদের দেখে তুমি ভেংগে পোড়ো না, যদি পড় তাহলে আমি এমন করব যাতে তাদের সামনে তুমি একেবারে ভেংগে পড়। আজ আমি তোমাকে একটা শক্তিশালী শহরের মত, একটা লোহার থামের মত ও একটা ব্রোঞ্জের দেয়ালের মত করলাম যাতে তুমি গোটা দেশের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ যিহূদার রাজাদের, উঁচু পদের কর্মচারীদের, পুরোহিতদের ও দেশের লোকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পার। তারা তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে কিন্তু তোমাকে হারাতে পারবে না, কারণ তোমাকে রক্ষা করবার জন্য আমি তোমার সংগে সংগে আছি। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” ইস্রায়েল সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করা জাতি; তারা তাঁর ফসল তুলবার সময়কার প্রথমে কাটা ফসল। যারা ইস্রায়েলকে গ্রাস করেছে তারা সবাই দোষী হয়েছে, তাদের উপর বিপদ ঘটেছে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” হে যাকোবের বংশ, ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠী, তোমরা সবাই সদাপ্রভুর কথা শোন। সদাপ্রভু বলছেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষেরা আমার কি দোষ খুঁজে পেয়েছিল যে, তারা আমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল? তারা অপদার্থ প্রতিমার পিছনে গিয়ে নিজেরা অপদার্থ হয়ে গিয়েছিল। তারা জিজ্ঞাসাও করে নি, ‘সেই সদাপ্রভু কোথায় যিনি মিসর থেকে আমাদের বের করে এমন মরু-এলাকার মধ্য দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন যা ছিল জলশূন্য ও ফাটল ধরা এবং শুকনা ও অন্ধকারময়? সেখানে তো কেউ যাওয়া-আসা ও বাস করত না।’ “আমি তোমাদের একটা উর্বর দেশে নিয়ে এসেছিলাম যেন তোমরা সেখানকার ফল ও ভাল ভাল জিনিস খেতে পার; কিন্তু তোমরা এসে আমার দেশটাকে অশুচি করেছ, আমার অধিকারকে ঘৃণার জিনিস করে তুলেছ। পুরোহিতেরা জিজ্ঞাসা করে নি, ‘সদাপ্রভু কোথায়?’ যাদের হাতে আইন-কানুন ছিল তারা আমাকে চেনে নি; নেতারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। নবীরা অপদার্থ প্রতিমাগুলোর পিছনে গিয়ে বাল দেবতার নামে কথা বলেছে। “সেইজন্য আমি তোমাদের ও তোমাদের বংশধরদের আরও দোষী করব। তোমরা পার হয়ে সাইপ্রাস দ্বীপের সমুদ্র পারের দেশগুলোতে গিয়ে দেখ, কেদরে লোক পাঠিয়ে খুব ভাল করে লক্ষ্য কর। তোমরা দেখবে সেখানে এই রকম কোন কিছু কখনও হয় নি। যদিও জাতিদের দেব-দেবতারা ঈশ্বর নয় তবুও কোন জাতি নিজের দেব-দেবতার পরিবর্তন করে নি; কিন্তু আমার লোকেরা তাদের গৌরবময় ঈশ্বরের বদলে অপদার্থ দেবতাদের গ্রহণ করেছে। হে মহাকাশ, এ দেখে হতভম্ব হও এবং ভীষণ ভয়ে কাঁপতে থাক, কারণ আমার লোকেরা দু’টা পাপ করেছে। জীবনদায়ী জলের ফোয়ারা যে আমি, সেই আমাকেই তারা ত্যাগ করেছে, আর নিজেদের জন্য এমন জল রাখবার জায়গা তৈরী করেছে যা ভাংগা, যাতে জল ধরে রাখা যায় না। ইস্রায়েল কি দাস? সে কি জন্ম থেকেই দাস? কেন সে শিকারের বস্তু হয়েছে? সিংহেরা গর্জন করেছে; তাকে দেখে গোঁ গোঁ করেছে। তার দেশ তারা পোড়ো জমি করে রেখেছে; তার শহরগুলো ধ্বংস করা হয়েছে, তাতে লোকজন নেই। এছাড়াও নোফ ও তফনহেষ শহরের লোকেরা তোমার মাথা কামিয়ে দিয়েছে। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যখন তোমাকে ঠিক পথে চালাচ্ছিলেন তখন কি তুমি তাঁকে ত্যাগ করে এই সব নিজের উপর নিয়ে আস নি? এখন নীল নদীর জল খাবার জন্য কেন তুমি মিসরে যাচ্ছ? ইউফ্রেটিস নদীর জল খাবার জন্য কেন তুমি আসিরিয়া দেশে যাচ্ছ? তোমার দুষ্টতাই তোমাকে শাস্তি দেবে; তোমার বিপথে যাওয়া তোমাকে দোষী করবে। তাহলে এবার চিন্তা কর এবং বুঝে দেখ, তুমি যখন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ত্যাগ কর এবং তাঁকে ভয় কর না তখন তা তোমার জন্য কত মন্দ ও তেতো হয়। এই কথা আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু বলছি। “অনেক দিন আগেই তুমি তোমার জোয়াল ভেংগে বাঁধন ছিঁড়ে ফেলেছ; তুমি বলেছ, ‘আমি তোমার সেবা করব না।’ তুমি প্রত্যেকটি উঁচু পাহাড়ে ও ডালপালা ছড়ানো প্রত্যেকটি সবুজ গাছের নীচে বেশ্যার মত শুয়েছ। আমি তো তোমাকে বাছাই করা বীজ থেকে জন্মানো ভাল আংগুরের চারা হিসাবে লাগিয়েছিলাম; তাহলে কেমন করে তুমি একটা মন্দ বুনো আংগুর গাছ হয়েছ? যদিও তুমি সোডা দিয়ে নিজেকে ধোও আর প্রচুর সাবান ব্যবহার কর তবুও তোমার অন্যায়ের দাগ আমার সামনে রয়েছে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। তুমি কেমন করে বলতে পার যে, তুমি অশুচি নও, তুমি বাল দেবতাদের পিছনে দৌড়াও নি? ভেবে দেখ, তুমি উপত্যকাতে কেমন ব্যবহার করেছিলে; তুমি যা করেছ তা চিন্তা কর। তুমি যেন পুরুষ উটের সংগে মিলিত হওয়ার জন্য এখানে-সেখানে দৌড়ানো স্ত্রী-উট। তুমি যেন মরু-এলাকায় থাকা একটা বুনো গাধী, যে খুব বেশী কামনার জন্য বাতাস শুঁকে বেড়ায়। দেহে মিলিত হবার উত্তেজনার সময়ে কে তাকে থামিয়ে রাখতে পারে? যে গাধাগুলো তার খোঁজ করে তারা ক্লান্ত হবে না; মিলনের সময় হলে তারা সহজে তাকে খুঁজে পাবে। তুমি সাবধান হও, না হলে তোমার পায়ের জুতা নষ্ট হয়ে যাবে আর তোমার গলাও শুকিয়ে যাবে। কিন্তু তুমি বলছ, ‘কোন লাভ নেই। আমি দেব-দেবতাদের ভালবাসি, তাদের পিছনেই আমি যাব।’ “চোর ধরা পড়লে যেমন অসম্মানিত হয় তেমনি ইস্রায়েলের বংশ অসম্মানিত হয়েছে। তারা নিজেরা, তাদের রাজারা ও কর্মচারীরা, তাদের পুরোহিতেরা ও নবীরা সবাই অসম্মানিত হয়েছে। তারা কাঠকে বলে, ‘তুমি আমার বাবা,’ আর পাথরকে বলে, ‘তুমি আমার মা।’ তারা আমার দিকে তাদের মুখ ফিরায় নি, ফিরিয়েছে তাদের পিছন দিক; তবুও বিপদের সময় তারা বলে, ‘তুমি এস, আমাদের উদ্ধার কর।’ হে যিহূদা, তুমি নিজের জন্য যে দেব-দেবতা বানিয়েছ তারা তখন কোথায় থাকে? যখন তুমি বিপদে পড় তখন যদি তারা তোমাকে উদ্ধার করতে পারে তবে তারা আসুক, কারণ তোমার যতগুলো শহর আছে ততগুলো দেব-দেবতাও আছে।” সদাপ্রভু বলছেন, “কেন তোমরা আমাকে দোষ দিচ্ছ? তোমরা তো সবাই আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছ। আমি তোমাদের বৃথাই শাস্তি দিয়েছি; তোমরা শাসন অগ্রাহ্য করেছ। খিদে-পাওয়া সিংহের মত তোমাদের তলোয়ার তোমাদের নবীদের গ্রাস করেছে। “এই কালের লোকেরা, তোমরা আমার বাক্য শোন। ইস্রায়েলের কাছে কি আমি মরু-এলাকা হয়েছি? আমি কি ভীষণ অন্ধকারের দেশ হয়েছি? আমার লোকেরা কেন বলে, ‘আমরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারি; আমরা তোমার কাছে আর আসব না’? কোন মেয়ে কি তার অলংকার সম্বন্ধে ভুলে যেতে পারে? কোন বিয়ের কনে কি তার বিয়ের গহনা-গাঁটি সম্বন্ধে ভুলে যেতে পারে? কিন্তু আমার লোকেরা অনেক অনেক দিন ধরে আমাকে ভুলে রয়েছে। “হে যিহূদা, তুমি প্রেমের পিছনে ধাওয়া করতে কেমন পাকা! সবচেয়ে খারাপ স্ত্রীলোকও তোমার পথ দেখে শিখতে পারে। বারবার পথ বদলে কেন তুমি এত ঘুরে বেড়াও? আসিরিয়ার বিষয় তুমি যেমন লজ্জিত হয়েছিলে তেমনি মিসরের বিষয়েও লজ্জিত হবে। তোমার হাত মাথার উপর দিয়ে তুমি সেই জায়গাও ছেড়ে আসবে, কারণ যাদের উপর তুমি নির্ভর কর আমি সদাপ্রভু তাদের অগ্রাহ্য করেছি; তাদের সাহায্যে তুমি সফলতা লাভ করতে পারবে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “যদি কোন লোক তার স্ত্রীকে ত্যাগ করে আর সেই স্ত্রী তাকে ছেড়ে অন্য লোককে বিয়ে করে, তাহলে সেই পুরুষের কি আবার সেই স্ত্রীর কাছে ফিরে যাবার নিয়ম আছে? যদি যায় তবে সেই দেশ সম্পূর্ণভাবে অশুচি হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি তো অনেকের সংগে থেকে বেশ্যার মত জীবন কাটিয়েছ; এখন তুমি কি করে আমার কাছে ফিরে আসবে? “তুমি চোখ তুলে গাছপালাহীন পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখ। এমন কোন জায়গা আছে কি যেখানে তুমি ব্যভিচার কর নি? যাদের সংগে তুমি ব্যভিচার করেছ তাদের অপেক্ষায় তুমি রাস্তার ধারে বসে থাকতে, মরুভূমির আরবীয়দের মত ওৎ পেতে থাকতে। তোমার বেশ্যাগিরি আর দুষ্টতা দিয়ে তুমি দেশকে অশুচি করেছ। এইজন্য বৃষ্টি বন্ধ করে রাখা হয়েছে এবং বসন্তের বৃষ্টিও পড়ে নি। তবুও তোমার চোখে আছে বেশ্যার বেহায়া চাহনি; তোমার কোন লজ্জা নেই। তুমি কি এইমাত্র আমাকে ডেকে বল নি, ‘হে আমার পিতা, আমার ছেলেবেলার বন্ধু, তুমি কি সব সময় রাগ করে থাকবে? তোমার রাগ কি চিরকাল পুষে রাখবে?’ তুমি তো এইভাবে কথা বল, কিন্তু তোমার পক্ষে যতখানি মন্দ কাজ করা সম্ভব তুমি ততখানিই করেছ।” রাজা যোশিয়ের রাজত্বের সময়ে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “বিপথে যাওয়া ইস্রায়েল যা করেছে তা কি তুমি দেখেছ? সে সমস্ত উঁচু পাহাড়ের উপরে ও ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছের নীচে গিয়ে ব্যভিচার করেছে। আমি ভেবেছিলাম এই সব করবার পরে সে আমার কাছে ফিরে আসবে, কিন্তু সে আসে নি আর তার অবিশ্বস্ত বোন যিহূদা তা দেখেছিল। বিপথে যাওয়া ইস্রায়েলকে আমি ত্যাগপত্র দিয়েছিলাম এবং তার সমস্ত ব্যভিচারের জন্য তাকে দূর করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি দেখলাম তার অবিশ্বস্ত বোন যিহূদার কোন ভয় নেই; সে-ও গিয়ে ব্যভিচার করল। তার ব্যভিচারের কাজ তার কাছে কিছুই মনে হয় নি বলে সে পাথর ও কাঠের দেব-দেবতার সংগে ব্যভিচার করে দেশকে অশুচি করল। এই সব হলেও ইস্রায়েলের অবিশ্বস্ত বোন যিহূদা সমস্ত মন দিয়ে নয় কিন্তু কেবল ভান করে আমার কাছে ফিরে এসেছে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “বিপথে যাওয়া ইস্রায়েল বরং অবিশ্বস্ত যিহূদার চেয়ে নিজেকে সৎ দেখিয়েছে। তুমি গিয়ে এই সব সংবাদ উত্তর দিকে মুখ করে ঘোষণা কর: ‘আমি সদাপ্রভু বলছি, হে বিপথে যাওয়া ইস্রায়েল, ফিরে এস। আমি আর তোমার দিকে ভুরু কুঁচকে থাকব না; আমি দয়াবান, তাই চিরকাল রাগ পুষে রাখব না। তুমি কেবল তোমার দোষ মেনে নাও যে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তুমি বিদ্রোহ করেছ, ডালপালা ছড়ানো সমস্ত সবুজ গাছের নীচে দেব-দেবতাকে তোমার ভালবাসা দান করেছ এবং আমার কথার বাধ্য হও নি।’ “আমি সদাপ্রভু আরও বলছি, ‘হে বিপথে যাওয়া লোকেরা, ফিরে এস, কারণ আমিই তোমাদের স্বামী। আমি তোমাদের মধ্যেকার প্রত্যেক শহর থেকে একজন ও প্রত্যেক বংশ থেকে দু’জনকে বেছে নিয়ে সিয়োনে আনব। তারপর আমি তোমাদের আমার মনের মত পালক দেব; তারা জ্ঞান ও বুদ্ধির সংগে তোমাদের চালাবে। সেই সময় আমি যখন দেশে তোমাদের লোকসংখ্যা অনেক বাড়িয়ে দেব তখন লোকে আর সদাপ্রভুর ব্যবস্থা-সিন্দুক সম্বন্ধে বলবে না। তার কথা কখনও তাদের মনে পড়বে না বা মনেও থাকবে না; তার আর দরকার হবে না কিম্বা অন্য আর একটা তৈরীও করা হবে না। সেই সময় লোকে যিরূশালেমকে বলবে সদাপ্রভুর সিংহাসন, আর সদাপ্রভুর উপাসনা করবার জন্য সমস্ত জাতি যিরূশালেমে জড়ো হবে। তাদের মন্দ অন্তরের একগুঁয়েমিতে আর তারা চলবে না। সেই সময় যিহূদার লোকেরা ইস্রায়েলের লোকদের সংগে যুক্ত হবে আর আমি যে দেশ অধিকার হিসাবে তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছি সেই দেশে তারা একসংগে উত্তর দিকের দেশ থেকে ফিরে আসবে।’ “আমি নিজেই বলেছিলাম, ‘আমি ছেলে হিসাবে তোমাদের গ্রহণ করব এবং চাওয়ার মত একটা দেশ, জাতিদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর একটা অধিকার তোমাদের দেব।’ আমি ভেবেছিলাম তোমরা আমাকে পিতা বলে ডাকবে এবং আমার পিছনে চলা থেকে ফিরে যাবে না। কিন্তু হে ইস্রায়েলীয়েরা, স্বামীর প্রতি অবিশ্বস্ত স্ত্রীর মত তোমরা আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছ। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” গাছপালাহীন পাহাড়গুলোর উপরে ইস্রায়েলীয়দের কান্না ও মিনতির শব্দ শোনা যাচ্ছে, কারণ তাদের পথ তারা বাঁকা করেছে এবং তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে তারা ভুলে গেছে। সদাপ্র্রভু বলছেন, “হে বিপথে যাওয়া সন্তানেরা, ফিরে এস; তোমাদের বিপথে যাওয়া রোগ আমি ভাল করে দেব।” তখন ইস্রায়েলীয়েরা বলবে, “হ্যাঁ, আমরা তোমার কাছে আসব, কারণ তুমিই আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। সত্যিই পাহাড়-পর্বতগুলোর উপরকার পূজার হৈ চৈ ছলনা ছাড়া আর কিছু নয়। সত্যিই আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর মধ্যেই আছে ইস্রায়েলের উদ্ধার। আমাদের ছেলেবেলা থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের পরিশ্রমের ফল, অর্থাৎ তাঁদের গরু-ভেড়ার পাল ও তাঁদের ছেলেমেয়েদের এই লজ্জাজনক দেব-দেবতারা গ্রাস করেছে। এস, আমরা আমাদের লজ্জার মধ্যে শুয়ে থাকি, আমাদের অপমান আমাদের ঢেকে ফেলুক। ছেলেবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করে চলেছি, আর আমাদের পূর্বপুরুষেরাও তা-ই করেছিলেন। আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাধ্য থাকি নি।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে ইস্রায়েল, তুমি যদি ফিরে আসতে চাও তবে আমার কাছেই ফিরে এস। যদি তুমি আমার চোখের সামনে থেকে তোমার জঘন্য প্রতিমাগুলো সরিয়ে দাও এবং আর বিপথে না যাও, যদি তুমি সত্যে, ন্যায়ে ও সততায় ‘জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য’ বলে শপথ কর, তাহলে আমি অন্যান্য জাতিদের আশীর্বাদ করব আর তারা আমাকে নিয়েই গৌরব বোধ করবে।” সদাপ্রভু যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের বলছেন, “তোমরা পতিত জমি চাষ কর এবং কাঁটাবনের মধ্যে বীজ বুনো না। হে যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকেরা, সদাপ্রভুর বাধ্য হবার জন্য তোমাদের নিজেদের সুন্নত কর, অর্থাৎ তোমাদের অন্তরের ময়লা দূর কর; তা না হলে তোমাদের মন্দ কাজের জন্য আমার ক্রোধ বের হয়ে আগুনের মত জ্বলে উঠবে, কেউ তা নিভাতে পারবে না। “তোমরা যিহূদা দেশে ও যিরূশালেমে ঘোষণা করে বল, ‘সারা দেশে তূরী বাজাও।’ জোরে চিৎকার করে বল, ‘তোমরা একসংগে জড়ো হও। চল, আমরা দেয়াল-ঘেরা শহরগুলোতে যাই।’ সিয়োনে যাবার পথ দেখাবার জন্য চিহ্ন স্থাপন কর। দেরি না করে নিরাপদ হবার জন্য পালাও, কারণ আমি উত্তর দিক থেকে বিপদ এবং ভয়ংকর ধ্বংস আনতে যাচ্ছি। একটা সিংহ তার ঝোপ ছেড়ে উঠে এসেছে; জাতিদের ধ্বংসকারী একজন রওনা হয়েছে। তোমার দেশ ধ্বংস করবার জন্য সে তার জায়গা ছেড়ে আসছে। তোমার শহরগুলো জনশূন্য ও ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকবে। কাজেই চট পরে বিলাপ ও হাহাকার কর, কারণ সদাপ্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধ আমাদের দিক থেকে ফিরে যায় নি।” সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিন রাজা ও উঁচু পদের কর্মচারীরা সাহস হারাবে, আর পুরোহিতেরা ও নবীরা হতভম্ব হবে।” তখন আমি বললাম, “হায়, হায়! হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি এই লোকদের ও যিরূশালেমকে পুরোপুরি ছলনা করে বলেছ, ‘তোমাদের শান্তি হবে,’ অথচ আমাদের গলার কাছে তলোয়ার ধরা রয়েছে।” সেই সময় সদাপ্রভু এই লোকদের ও যিরূশালেমকে বলবেন, “মরু-এলাকার গাছপালাহীন পাহাড়গুলো থেকে গরম বাতাস আমার লোকদের দিকে আসছে, কিন্তু তা শস্য ঝাড়বার বা পরিষ্কার করবার বাতাস নয়; আমার আদেশে আসা সেই বাতাসের জোর খুব বেশী। এইভাবে আমি এখন তাদের বিরুদ্ধে আমার বিচারের রায় দেব।” দেখ, তিনি মেঘের মত করে এগিয়ে আসছেন। তাঁর রথগুলো ঘূর্ণিবাতাসের মত আসছে আর তাঁর ঘোড়াগুলো ঈগল পাখীর চেয়েও জোরে দৌড়ায়। হায়, হায়, আমরা ধ্বংস হয়ে গেলাম! হে যিরূশালেম, তোমার অন্তর থেকে মন্দতা ধুয়ে ফেল যাতে তুমি উদ্ধার পাও। আর কত দিন তুমি মন্দ চিন্তা মনে পুষে রাখবে? দান শহর থেকে ও ইফ্রয়িমের পাহাড়গুলো থেকে বিপদের কথা ঘোষণা করা হচ্ছে। জাতিগুলোর কাছে এবং যিরূশালেমের কাছে এই কথা ঘোষণা কর, “ঘেরাও করবার জন্য সৈন্যেরা দূর দেশ থেকে আসছে; তারা যিহূদার শহরগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের হাঁক দিচ্ছে। ক্ষেতের পাহারাদারদের মত তারা যিরূশালেমকে ঘেরাও করবে, কারণ সে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। তোমার আচার-ব্যবহার ও তোমার সমস্ত কাজের জন্য এই সব তোমার উপর এসেছে। এ তোমার দুষ্টতার শাস্তি। এ ভীষণ তেতো; এ তোমার অন্তরকে বিঁধেছে।” হায়, আমার অন্তর, আমার অন্তর! আমি যন্ত্রণায় মোচড় খাচ্ছি। হায়, আমার অন্তর! আমার ভিতরে আমার অন্তর ধুক্‌ ধুক্‌ করছে। আমি চুপ করে থাকতে পারছি না, কারণ আমি তূরীর শব্দ শুনেছি, আমি যুদ্ধের হাঁক শুনেছি। বিপদের পর বিপদ আসছে; সমস্ত দেশ যেন ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে। অল্পক্ষণের মধ্যে আমার তাম্বুগুলো, এক মুহূর্তের মধ্যে আমার তাম্বুর পর্দাগুলো যেন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কত দিন আমাকে যুদ্ধের নিশান দেখতে হবে আর শুনতে হবে তূরীর শব্দ? সদাপ্রভু বলছেন, “আমার লোকেরা বোকা; তারা আমাকে জানে না। তারা বুদ্ধিহীন ছেলেমেয়ে; তাদের বুঝবার শক্তি নেই। মন্দ কাজ করতে তারা ওস্তাদ, কিন্তু কেমন করে ভাল কাজ করতে হয় তা তারা জানে না।” আমি পৃথিবীর দিকে তাকালাম; সেটা আকারহীন ও খালি; আকাশের দিকে তাকালাম, সেখানে আলো নেই। বড় বড় পাহাড়ের দিকে তাকালাম, সেগুলো কাঁপছে; সমস্ত ছোট ছোট পাহাড়গুলো দুলছে। আমি তাকিয়ে দেখলাম, সেখানে কোন লোক নেই; আকাশের সব পাখী উড়ে চলে গেছে। আমি তাকিয়ে দেখলাম সদাপ্রভুর সামনে, তাঁর ভয়ংকর ক্রোধের সামনে উর্বর দেশটা মরুভূমি হয়ে গেছে; তার সমস্ত শহরগুলো ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে। সদাপ্রভু বলছেন, “গোটা দেশটা ধ্বংস হয়ে যাবে, যদিও আমি তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হতে দেব না। পৃথিবী শোক করবে আর আকাশ অন্ধকার হয়ে যাবে, কারণ আমি এই কথা বলেছি। আমিই এটা স্থির করেছি; তা থেকে ফিরব না, তা করবই করব।” ঘোড়সওয়ার আর ধনুকধারীদের আওয়াজেই সমস্ত শহরের লোকেরা পালিয়ে যাবে। কিছু লোক যাবে ঘন ঝোপের মধ্যে আর কিছু লোক উঠবে বড় বড় পাথরের উপরে। প্রত্যেকটি শহর খালি হয়ে পড়ে থাকবে; সেখানে কোন লোক বাস করবে না। হে ধ্বংস হওয়া সেই শহর, তুমি কি করবে? কেন লাল রংয়ের কাপড় আর সোনার গহনা পরছ? কেন চোখে কাজলের রেখা টানছ? তুমি অনর্থক নিজেকে সাজাচ্ছ। তোমার প্রেমিকেরা তোমাকে ঘৃণা করে, তারা তোমার প্রাণ নেবার চেষ্টা করে। একজন স্ত্রীলোকের প্রসব-বেদনার কান্নার মত, প্রথম সন্তান প্রসবের যন্ত্রণার কান্নার মত সিয়োন-কন্যার কান্না আমি শুনেছি। সে নিঃশ্বাস নেবার জন্য হাঁপাচ্ছে আর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছে, “হায়! আমি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি, খুনীরা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে।” সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা যিরূশালেমের রাস্তাগুলোর এ মাথা থেকে ও মাথায় যাও আর চারপাশে তাকিয়ে দেখ। সেখানকার শহর-চকগুলোতে গিয়ে খোঁজ নাও। দেখ, যদি এমন কাউকে পাও যে ন্যায়ভাবে এবং সৎভাবে চলে তাহলে আমি এই শহরকে ক্ষমা করে দেব। যদিও তারা বলে, ‘জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য,’ তবুও তারা মিথ্যাভাবে শপথ করে।” হে সদাপ্রভু, তুমি কি সত্য দেখতে চাও না? তুমি তাদের আঘাত করলেও তারা ব্যথা বোধ করে নি; তুমি তাদের চুরমার করলেও তারা সংশোধন অগ্রাহ্য করেছে। তাদের মুখ তারা পাথরের চেয়েও শক্ত করে মন ফিরাতে অস্বীকার করেছে। আমি ভেবেছিলাম, “তারা গরীব ও বোকা, কারণ তারা সদাপ্রভুর পথ এবং তাদের ঈশ্বরের নিয়ম-কানুন জানে না। কাজেই আমি নেতাদের কাছে গিয়ে তাদের সংগে কথা বলব; নিশ্চয়ই তারা সদাপ্রভুর পথ ও তাদের ঈশ্বরের নিয়ম-কানুন জানে।” কিন্তু তারাও একসংগে জোয়াল ভেংগে বাঁধন ছিড়ে ফেলেছে। সেইজন্য বন থেকে একটা সিংহ এসে তাদের মেরে ফেলবে। মরু-এলাকার একটা নেকড়ে বাঘ তাদের ধ্বংস করবে এবং তাদের শহরগুলোর কাছে একটা চিতাবাঘ ওৎ পেতে থাকবে। যদি কেউ সেখান থেকে বের হয়ে আসে তবে সে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে, কারণ তাদের পাপ ভীষণ ও তাদের বিপথে যাওয়ার ঘটনা অনেক। সদাপ্রভু বলছেন, “হে যিরূশালেম, কেন আমি তোমাকে ক্ষমা করব? তোমার ছেলেমেয়েরা আমাকে ত্যাগ করেছে এবং যারা ঈশ্বর নয় তাদের নামে শপথ করেছে। আমি তাদের সব প্রয়োজন মিটিয়েছি, তবুও তারা ব্যভিচার করেছে এবং দলে দলে বেশ্যাদের বাড়ীতে গিয়েছে। তারা পেট ভরে খাওয়া তেজী কামুক ঘোড়ার মত একে অন্যের স্ত্রীর সংগে মিলিত হবার জন্য ডেকে উঠেছে। আমি সদাপ্রভু জিজ্ঞাসা করছি, এর জন্য কি আমি তাদের শাস্তি দেব না? আমি কি এই রকম জাতির উপর শোধ নেব না? “হে জাতিরা, তোমরা যিরূশালেমের আংগুর ক্ষেতগুলোতে গিয়ে সেগুলো ধ্বংস কর কিন্তু সম্পূর্ণভাবে নষ্ট কোরো না। তার ডালপালাগুলো কেটে ফেল, কারণ এই লোকেরা সদাপ্রভুর নয়। ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা আমার প্রতি ভীষণ অবিশ্বস্ত হয়েছে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” তারা সদাপ্রভুর বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। তারা বলেছে, “তিনি কিছুই করবেন না। আমাদের কোন ক্ষতি হবে না; আমরা কখনও যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষ দেখব না। নবীরা বাতাসের মত; তাদের মধ্যে ঈশ্বরের বাক্য নেই। কাজেই তারা যা বলে তা তাদের প্রতিই করা হবে।” কাজেই সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, “লোকেরা এই কথা বলেছে বলে তোমার মুখে আমার কথাগুলো আগুনের মত করব আর এই লোকদের করব কাঠের মত; সেই আগুন তা পুড়িয়ে দেবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে দূর থেকে এক জাতিকে নিয়ে আসব। সে একটা পুরানো ও টিকে থাকা জাতি; সেই লোকদের ভাষা তোমরা জানবে না ও তাদের কথা তোমরা বুঝবে না। তারা সাংঘাতিকভাবে তীর ছোঁড়ে; তারা সবাই শক্তিশালী যোদ্ধা। তারা তোমাদের ফসল ও খাবার গ্রাস করবে, গ্রাস করবে তোমাদের ছেলেমেয়েদের; তারা তোমাদের গরু-ভেড়ার পাল গ্রাস করবে, গ্রাস করবে তোমাদের সব আংগুর ও ডুমুর গাছ। যে দেয়াল-ঘেরা শহরের উপর তোমরা নির্ভর করছ তা তারা যুদ্ধ করে ধ্বংস করে দেবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “তবুও সেই দিনগুলোতে আমি সম্পূর্ণভাবে তোমাকে ধ্বংস করব না। যখন লোকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের প্রতি এই সব কেন করলেন?’ তখন তুমি তাদের বলবে, ‘যেমন তোমরা আমাকে ত্যাগ করে তোমাদের দেশে দেব-দেবতার সেবা করেছ তেমনি যে দেশ তোমাদের নিজেদের নয় সেই দেশে গিয়ে এখন তোমরা বিদেশীদের সেবা করবে।’ ” সদাপ্রভু যাকোবের বংশকে এই কথা বলতে এবং যিহূদার কাছে এই কথা ঘোষণা করতে বললেন, “হে বোকা ও বুদ্ধিহীন লোকেরা, তোমরা যারা চোখ থাকতেও দেখতে পাও না, কান থাকতেও শুনতে পাও না, তোমরা শোন। তোমরা কি আমাকে ভয় করবে না? আমার সামনে কি তোমরা কাঁপবে না? আমিই একটা চিরস্থায়ী বাধা হিসাবে বালু দিয়ে সমুদ্রের সীমা ঠিক করেছি, যাতে সমুদ্র তা পার হতে না পারে। তার ঢেউগুলো গড়িয়ে আসলেও তা সফল হতে পারে না; তা গর্জন করলেও পার হয়ে যেতে পারে না। কিন্তু এই লোকদের অন্তর একগুঁয়ে ও বিদ্রোহী। তারা বিপথে চলে গেছে। তারা মনে মনেও বলে না, ‘এস, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে আমরা ভক্তিপূর্ণ ভয় করে চলি, যিনি সময়মত শরৎ ও বসন্তকালে বৃষ্টি দেন, যিনি আমাদের জন্য ফসল কাটবার নিয়মিত সময় রক্ষা করেন।’ তোমাদের অন্যায় কাজের দরুন এই সব দূরে রাখা হয়েছে; তোমাদের পাপের দরুন তোমাদের মংগল হয় না। “আমার লোকদের মধ্যে এমন দুষ্ট লোক আছে যারা পাখী শিকারীদের মত ওৎ পেতে থাকে; তারা ফাঁদ পেতে মানুষ ধরে। খাঁচা যেমন পাখীতে ভরা তাদের বাড়ীও তেমনি ছলনায় ভরা। তারা ধনী ও শক্তিশালী হয়েছে, তারা মোটা ও তেল্‌তেলে হয়েছে। তাদের মন্দ কাজের সীমা নেই; অনাথেরা যাতে ন্যায়বিচার পায় সেইজন্য তারা তাদের পক্ষে দাঁড়ায় না এবং তারা গরীবদের অধিকারও রক্ষা করে না। এইজন্য আমি কি তাদের শাস্তি দেব না? আমি কি এই রকম জাতির উপর প্রতিশোধ নেব না? আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “দেশের মধ্যে খুব ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। নবীরা মিথ্যা কথা ঘোষণা করে, পুরোহিতেরা নিজের হাতেই ক্ষমতা নিয়ে শাসন করে, আর আমার লোকেরা এই রকমই ভালবাসে। কিন্তু হে আমার লোকেরা, শেষে তোমরা কি করবে?” সদাপ্রভু বলছেন, “হে বিন্যামীনের লোকেরা, রক্ষা পাবার জন্য পালাও। যিরূশালেম থেকে পালাও। তকোয় শহরে তূরী বাজাও। বৈৎ-হক্কেরমে সংকেত দেখাও, কারণ উত্তর দিক থেকে বিপদ ও ভয়ংকর ধ্বংস উঁকি মারছে। সুন্দরী ও আরামে থাকা সিয়োন-কন্যাকে আমি ধ্বংস করব। রাখালেরা যেমন ভেড়ার পাল নিয়ে আসে তেমনি করে রাজারা তাদের সৈন্যদল নিয়ে তার বিরুদ্ধে আসবে; তার চারপাশে তারা তাম্বু খাটাবে এবং যে যার জায়গায় থাকবে। তারা বলবে, ‘তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও। ওঠো, চল, আমরা দুপুর বেলায় আক্রমণ করি। কিন্তু হায়, দিনের আলো কমে যাচ্ছে, আর সন্ধ্যার ছায়া লম্বা হচ্ছে। কাজেই ওঠো, চল, আমরা রাতেই আক্রমণ করি এবং তার দুর্গগুলো ধ্বংস করে দিই।’ ” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাদের এই কথা বলছেন, “তোমরা গাছপালা কেটে তা দিয়ে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে তার দেয়ালের সংগে ঢিবি তৈরী কর। এই শহরকে শাস্তি দিতে হবে; এটা অত্যাচারে ভরে গেছে। কূয়ার জল যেমন সব সময় তাজা থাকে তেমনি করে সে তার দুষ্টতা সব সময় চালু রাখে। তার মধ্যে অত্যাচার ও ধ্বংসের শব্দ শোনা যায়; তার অসুস্থতা ও আঘাত সব সময় আমার সামনে রয়েছে। হে যিরূশালেম, সাবধানবাণী শোন, তা না হলে আমি তোমার কাছ থেকে ফিরে গিয়ে তোমার দেশ ধ্বংস ও জনশূন্য করব।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “আংগুর ক্ষেত থেকে যেমন ভাল করে আংগুর ঝেড়ে ফেলা হয় তেমনি শত্রুরা দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের ঝেড়ে ফেলবে। যে লোক আংগুর তোলে সে যেমন আবার ডালে হাত দেয় তারাও বাকী লোকদের প্রতি তেমনি করবে।” আমি কার সংগে কথা বলব ও কাকে সাবধান করব যাতে তারা আমার কথা শোনে? তাদের কান বন্ধ তাই তারা শুনতে পায় না। সদাপ্রভুর বাক্য তাদের টিট্‌কারির বিষয় হয়েছে; তারা তাতে কোন আনন্দ পায় না। কিন্তু আমি সদাপ্রভুর ক্রোধে পূর্ণ হয়েছি; আমি আর তা আমার ভিতরে ধরে রাখতে পারছি না। সদাপ্রভু উত্তরে বলছেন, “তুমি তা রাস্তায় ছেলেমেয়েদের উপরে ও একসংগে জড়ো হওয়া যুবকদের উপরে ঢেলে দাও। স্বামী ও স্ত্রী তার মধ্যে ধরা পড়বে, আর বুড়োরা ও খুব বুড়োরা রেহাই পাবে না। যারা দেশে বাস করে তাদের বিরুদ্ধে যখন আমি শাস্তির হাত বাড়িয়ে দেব তখন অন্যদের হাতে তাদের বাড়ী-ঘর, জমাজমি ও স্ত্রীদের তুলে দেওয়া হবে। “ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সবাই লাভের জন্য লোভ করে; এমন কি, নবী ও পুরোহিত সবাই ছলনা করে। তারা আমার লোকদের ঘা এমনভাবে বেঁধে দেয় যেন তা বিশেষ কিছু নয়। তারা বলে, ‘শান্তি, শান্তি,’ কিন্তু আসলে শান্তি নেই। তারা কি তাদের সেই জঘন্য কাজের জন্য লজ্জিত? না, তাদের কোন লজ্জা নেই; তারা লজ্জায় লাল হতে জানেই না। সেইজন্য তারা তাদের মধ্যে পড়বে যারা শাস্তি ভোগ করবে। আমি যখন তাদের শাস্তি দেব তখন তাদের নত করা হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু তাঁর লোকদের বলছেন, “তোমরা রাস্তার চৌমাথায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখে পুরানো পথের কথা জিজ্ঞাসা কর; ভাল পথ কোথায় তা জিজ্ঞাসা করে সেই পথে চল। তাতে তোমরা নিজের নিজের অন্তরে বিশ্রাম পাবে। কিন্তু তোমরা বলেছ, ‘আমরা সেই পথে চলব না।’ আমি তোমাদের উপরে পাহারাদার নিযুক্ত করে বলেছি, ‘তোমরা তূরীর শব্দ শোন,’ কিন্তু তোমরা বলেছ, ‘আমরা শুনব না।’ কাজেই হে অন্যান্য জাতিরা, শোন; আমার লোকদের যা হবে তা লক্ষ্য কর। হে পৃথিবী শোন, আমি লোকদের উপর বিপদ ডেকে আনব; তা হবে তাদের পরিকল্পনার ফল, কারণ তারা আমার কথা শোনে নি আর আমার আইন-কানুনকে অগ্রাহ্য করেছে। হে আমার লোকেরা, শিবা দেশ থেকে যে ধূপ আসে কিম্বা দূর দেশ থেকে যে মিষ্টি বচ আসে তাতে আমার কি দরকার? তোমাদের পোড়ানো-উৎসর্গ আমার গ্রহণযোগ্য নয়; তোমাদের পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান আমাকে সন্তুষ্ট করে না।” কাজেই সদাপ্রভু বলছেন, “এই লোকদের সামনে আমি নানা বাধা রাখব। বাবা ও ছেলেরা একসংগে তাতে উছোট খাবে; প্রতিবেশীরা ও বন্ধুরা ধ্বংস হয়ে যাবে।” সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, “দেখ, উত্তর দিকের দেশ থেকে একদল সৈন্য আসছে; পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে একটা বড় জাতি উত্তেজিত হয়ে আসছে। তাদের কাছে ধনুক ও বর্শা আছে; তারা নিষ্ঠুর এবং কোন দয়া দেখায় না। ঘোড়ায় চড়ে আসবার সময় তাদের শব্দ উঠছে সমুদ্রের গর্জনের মত; হে সিয়োন-কন্যা, তোমাকে আক্রমণ করবার জন্য তারা যোদ্ধার মত প্রস্তুত হয়ে আসছে।” আমরা তাদের সম্বন্ধে খবর পেয়েছি আর তাই আমাদের হাত যেন অবশ হয়ে ঝুলে পড়েছে। যন্ত্রণা আমাদের আঁকড়ে ধরেছে; প্রসবকারিণী স্ত্রীলোকদের মত ব্যথা আমাদের ধরেছে। তোমরা মাঠে যেয়ো না কিম্বা রাস্তায় হেঁটো না, কারণ শত্রুর হাতে তলোয়ার আছে আর সব দিকেই রয়েছে ভীষণ ভয়। হে আমার লোকেরা, ছালার চট পর আর ছাইয়ের মধ্যে গড়াগড়ি দাও। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে যেমন লোকে শোক করে তেমনি ভীষণ বিলাপ করে তোমরা শোক কর, কারণ ধ্বংসকারী হঠাৎ আমাদের উপরে এসে পড়বে। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি তোমাকে আমার লোকদের যাচাইকারী করেছি যাতে তুমি তাদের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের পথগুলো যাচাই করতে পার। তারা সবাই দারুণ বিদ্র্রোহী; তারা নিন্দা করে বেড়ায়। তারা ব্রোঞ্জ আর লোহার মত; তারা সবাই খারাপ হয়ে গেছে। আগুন দিয়ে সীসা পুড়িয়ে ফেলবার জন্য হাপর ভীষণভাবে বাতাস দিচ্ছে; কিন্তু অনর্থক খাদ বের করবার চেষ্টা করা হচ্ছে, কারণ দুষ্টদের বের করা যাচ্ছে না। তাদের বলা হয় অগ্রাহ্য করা রূপা, কারণ আমি সদাপ্রভু তাদের অগ্রাহ্য করেছি।” ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা যদি তোমাদের আচার-ব্যবহার ও কাজকর্ম সংশোধন কর তাহলে আমি তোমাদের এই জায়গায় বাস করতে দেব। সদাপ্রভুর ঘরের নাম নিয়ে বার বার যে মিথ্যা কথা বলা হয় তোমরা তা বিশ্বাস কোরো না। যদি সত্যিসত্যিই তোমরা তোমাদের আচার-ব্যবহার ও কাজকর্মের পরিবর্তন কর এবং ন্যায়ভাবে একে অন্যের সংগে ব্যবহার কর, যদি বিদেশী, অনাথ কিম্বা বিধবাদের অত্যাচার না কর এবং এই দেশে নির্দোষের রক্তপাত না কর আর দেব-দেবতাদের পিছনে গিয়ে নিজেদের ক্ষতি না কর, তবে এই যে দেশ আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের যুগ যুগ ধরে বাস করবার জন্য দিয়েছি এখানে আমি তোমাদের বাস করতে দেব। “দেখ, তোমরা মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করছ, কিন্তু তাতে কোন লাভ নেই। তোমরা তো চুরি, খুন, ব্যভিচার ও মিথ্যা শপথ কর আর বাল দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাও। এছাড়া যে দেব-দেবতাদের তোমরা চেন না তোমরা তাদের পিছনে গিয়ে থাক। তারপর এসে তোমরা আমার ঘরে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বল যে, তোমরা নিরাপদ। তোমরা তা কর যাতে তোমরা ঐ সব জঘন্য কাজ করে যেতে পার। আমার ঘর কি তোমাদের কাছে ডাকাতদের আড্ডাখানা হয়েছে? আমি সদাপ্রভু বলছি যে, আমি এই সব দেখছি। “এখন তোমরা শীলোতে যেখানে আমি প্রথমে আমার বাসস্থান করেছিলাম সেখানে যাও আর আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের দুষ্টতার জন্য আমি তার অবস্থা কি করেছি তা দেখ। তোমরা এই সব পাপ করেছ, অর্থাৎ আমি তোমাদের বার বার বললেও তোমরা শোন নি আর তোমাদের ডাকলেও উত্তর দাও নি। এই যে ঘরের উপর তোমরা নির্ভর করছ সেই ঘর আমি আমার বাসস্থান করেছিলাম, আর এই জায়গা আমি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাদের পাপের জন্য এই ঘর ও এই জায়গার অবস্থা আমি সেই রকম করব যা আমি শীলোর প্রতি করেছিলাম। আমি তোমাদের ভাইদের প্রতি, অর্থাৎ ইফ্রয়িমের লোকদের প্রতি যেমন করেছিলাম সেইভাবে আমার সামনে থেকে তোমাদের ঠেলে ফেলে দেব।” সদাপ্রভু বলছেন, “এই লোকদের জন্য তুমি কোন প্রার্র্থনা কোরো না, কিম্বা তাদের জন্য কান্নাকাটি বা কোন বিশেষ অনুরোধ কোরো না; আমার কাছে কোন মিনতিও জানাবে না, কারণ আমি তোমার কথা শুনব না। তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না তারা যিহূদার শহরগুলোতে ও যিরূশালেমের রাস্তায় রাস্তায় কি করছে? ছেলেমেয়েরা কাঠ কুড়ায়, বাবারা আগুন জ্বালে আর স্ত্রীলোকেরা ময়দা মাখে ও আকাশ-রাণীর উদ্দেশে পিঠা বানায়। আমাকে দুঃখ দেবার জন্য তারা দেব-দেবতাদের উদ্দেশে ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে। কিন্তু এই সব করে কি তারা আমাকে দুঃখ দিচ্ছে? আসলে তারা তো নিজেদের উপর লজ্জা ডেকে আনছে আর নিজেদের দুঃখ দিচ্ছে।” সেইজন্য প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “আমার অসন্তোষ ও ক্রোধ এই জায়গার উপরে, মানুষ ও পশুর উপরে, মাঠের গাছপালা ও ভূমির ফলের উপরে ঢালা হবে, আর সেই ক্রোধ জ্বলতেই থাকবে, নিভে যাবে না।” ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “তোমাদের অন্যান্য উৎসর্গের সংগে তোমরা পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে তার মাংসও খেয়ে ফেল না কেন? আমি এই কথা বলছি, কারণ যখন আমি মিসর থেকে তোমাদের পূর্বপুরুষদের বের করে এনেছিলাম তখন আমি পোড়ানো ও অন্যান্য উৎসর্গের অনুষ্ঠানের কথা বলি নি কিম্বা আদেশ দিই নি, কিন্তু আমি তাদের এই আদেশ দিয়েছিলাম, ‘তোমরা আমার কথামত চল, তাতে আমি তোমাদের ঈশ্বর হব আর তোমরা আমার লোক হবে। আমি যে সব পথে চলবার আদেশ দিয়েছি সেই সব পথে চল যাতে তোমাদের মংগল হয়।’ কিন্তু তা তারা শোনে নি এবং তাতে মনোযোগও দেয় নি; তার বদলে তারা তাদের ইচ্ছামত, তাদের মন্দ অন্তরের একগুঁয়েমিতে চলেছে। তারা পিছু হটেছে, এগিয়ে যায় নি। তোমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন মিসর ছেড়ে এসেছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত দিনের পর দিন আমি তোমাদের কাছে আমার সমস্ত দাসদের, অর্থাৎ নবীদের পাঠিয়ে আসছি। কিন্তু তোমরা আমার কথা শোন নি কিম্বা মনোযোগও দাও নি। তোমরা ঘাড় শক্ত করে তোমাদের পূর্বপুরুষদের চেয়েও আরও বেশী মন্দ কাজ করেছ। “তুমি যখন এই সব কথা তাদের বলবে তারা তোমার কথা শুনবে না; তুমি যখন তাদের ডাকবে তারা উত্তর দেবে না। কাজেই তুমি তাদের বলবে, ‘তোমরা সেই জাতি, যে তার ঈশ্বর সদাপ্রভুর ইচ্ছামত চলে নি কিম্বা তাঁর সংশোধনে সাড়া দেয় নি। সত্য ধ্বংস হয়ে গেছে; কেউ সেই বিষয় মুখেও আনে না।’ ” হে যিরূশালেম, তোমার চুল কেটে তুমি দূরে ফেলে দাও; গাছপালাহীন পাহাড়ে পাহাড়ে বিলাপ কর, কারণ সদাপ্রভু তাঁর ক্রোধের নীচে থাকা এই লোকদের তিনি অগ্রাহ্য ও ত্যাগ করেছেন। সদাপ্রভু বলছেন, “আমার চোখে যিহূদার লোকেরা মন্দ কাজ করেছে। আমার ঘরে তারা তাদের জঘন্য প্রতিমাগুলো স্থাপন করে তা অশুচি করেছে। তারা তাদের ছেলেমেয়েদের আগুনে পোড়াবার জন্য বিন-হিন্নোম উপত্যকায় তোফৎ নামে পূজার উঁচু স্থান তৈরী করেছে। কিন্তু এই আদেশ আমি দিই নি, আমার মনেও তা ঢোকে নি। কাজেই দেখ, এমন দিন আসছে যখন লোকেরা ঐ জায়গাকে আর বলবে না তোফৎ কিম্বা বিন-হিন্নোমের উপত্যকা, বরং বলবে জবাইয়ের উপত্যকা, কারণ যতদিন তোফতে জায়গা থাকবে ততদিন সেখানেই তারা মৃতদের কবর দেবে। তারপর এই লোকদের মৃতদেহ আকাশের পাখী ও পৃথিবীর পশুদের খাবার হবে আর সেগুলোকে তাড়িয়ে দেবার জন্য কেউ থাকবে না। আমি যিহূদার শহরগুলোতে ও যিহূদার সমস্ত পথে আনন্দ ও আমোদের শব্দ আর বর ও কনের গলার আওয়াজ বন্ধ করে দেব, কারণ দেশটা ধ্বংসস্থান হয়ে যাবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “সেই সময়ে যিহূদার রাজা ও উঁচু পদের কর্মচারীদের হাড়, পুরোহিত ও নবীদের হাড় এবং যিরূশালেমের লোকদের হাড় তাদের কবর থেকে তুলে ফেলা হবে। সেই হাড়গুলো সূর্য, চাঁদ ও আকাশের সব তারার সামনে পড়ে থাকবে, কারণ তারা আকাশের সেই সবগুলোকে ভালবাসত ও সেবা করত এবং সেগুলোর পিছনে যেত আর তাদের সংগে পরামর্শ করত ও তাদের পূজা করত। সেই হাড়গুলোকে জড়ো করে কবর দেওয়া হবে না, বরং সেগুলো গোবরের মত মাটিতে পড়ে থাকবে। যেখানে আমি তাদের দূর করে দেব সেখানে এই দুষ্ট জাতির বেঁচে থাকা লোকেরা জীবনের চেয়ে মরণকেই পছন্দ করবে। এই কথা আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি।” সদাপ্রভু আমাকে এই কথা বলতে বললেন, “লোকে পড়ে গেলে কি আর ওঠে না? বিপথে গেলে কি ফিরে আসে না? তবে কেন যিরূশালেমের এই লোকেরা বিপথে গিয়ে আর ফিরে আসে না? তারা ছলনাকে আঁকড়ে ধরে রাখে; তারা ফিরে আসতে অস্বীকার করে। আমি মন দিয়ে শুনেছি যে, তারা ঠিক কথা বলে না। দুষ্টতা থেকে মন ফিরিয়ে কেউ বলে না, ‘হায়, আমি কি করলাম!’ ঘোড়া যেমন দৌড়ে যুদ্ধে যায় সেই রকম ভাবে প্রত্যেকে নিজের নিজের পথে চলে। সারস পাখীও নিজের সময় জানে, আর ঘুঘু, চাতক ও শালিক পাখীও তাদের চলে যাবার সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখে, কিন্তু আমার লোকেরা আমার নিয়ম-কানুনের দিকে মনোযোগ দেয় না। “তোমরা কেমন করে বল, ‘আমরা জ্ঞানী এবং সদাপ্রভুর আইন-কানুন আমাদের কাছে আছে।’ আসলে ধর্ম-শিক্ষকেরা আইন-কানুন ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে মিথ্যা কথা লিখেছে। জ্ঞানী লোকেরা লজ্জিত ও হতভম্ব হয় আর ফাঁদে ধরা পড়ে। তারা যখন সদাপ্রভুর বাক্য অগ্রাহ্য করেছে তখন তাদের কি রকমের জ্ঞান আছে? সেইজন্য তাদের স্ত্রীদের আমি অন্য লোকদের এবং তাদের ক্ষেত নতুন মালিকদের দিয়ে দেব। ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সবাই লাভের জন্য লোভ করে; এমন কি, নবী ও পুরোহিত সবাই ছলনা করে। তারা আমার লোকদের ঘা এমনভাবে বেঁধে দেয় যেন তা বিশেষ কিছু নয়। তারা বলে ‘শান্তি, শান্তি,’ কিন্তু আসলে শান্তি নেই। তারা কি তাদের সেই জঘন্য কাজের জন্য লজ্জিত? না, তাদের কোন লজ্জা নেই; তারা লজ্জায় লাল হতে জানেই না। সেইজন্য তারা তাদের মধ্যে পড়বে যারা শাস্তি ভোগ করবে। আমি যখন তাদের শাস্তি দেব তখন তাদের নত করা হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু বলছেন, “তাদের আমি শেষ করে দেব। আংগুর লতায় কোন আংগুর থাকবে না, ডুমুর গাছে ডুমুর থাকবে না এবং সেগুলোর পাতা শুকিয়ে যাবে। আমি তাদের যা দিয়েছি তা আর থাকবে না।” আমরা এখানে বসে আছি কেন? চল, আমরা একসংগে দেয়াল-ঘেরা শহরগুলোতে পালিয়ে গিয়ে সেখানে ধ্বংস হই, কারণ আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের জন্য ধ্বংসই ঠিক করে রেখেছেন এবং বিষাক্ত জল খেতে দিয়েছেন, কারণ আমরা তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করেছি। আমরা শান্তির আশা করেছিলাম কিন্তু কোন মংগল হল না; আমরা সুস্থ হবার আশা করেছিলাম কিন্তু ভীষণ ভয় উপস্থিত হল। দান শহর থেকে শত্রুদের ঘোড়ার নাকের শব্দ শোনা যাচ্ছে; তাদের ঘোড়াগুলোর ডাকে গোটা দেশটা কাঁপছে। দেশ ও তার মধ্যেকার সব কিছু এবং শহর ও শহরবাসীদের তারা গ্রাস করতে আসছে। সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, আমি তোমাদের মধ্যে বিষাক্ত সাপ পাঠিয়ে দেব; সেই কালসাপ কোন মন্ত্রতন্ত্র মানবে না, সেগুলো তোমাদের কামড়াবেই।” আমার দুঃখ এত বেশী যে, তার সান্ত্বনা নেই; আমার মধ্যে আমার অন্তর ভীষণ দুঃখ পাচ্ছে। দূর দেশ থেকে আমার লোকদের এই কান্না শোনা যাচ্ছে, “সদাপ্রভু কি সিয়োনে নেই? তার রাজা কি আর সেখানে নেই?” উত্তরে সদাপ্রভু বলছেন, “তারা তাদের সব মূর্তি ও তাদের অপদার্থ প্রতিমাগুলো দিয়ে কেন আমাকে বিরক্ত করে তুলেছে?” আমার লোকেরা বলছে, “ফসল কাটবার সময় চলে গেল, গরম কালও শেষ হয়ে গেল, কিন্তু আমরা তো উদ্ধার পেলাম না।” আমার লোকেরা ভেংগে পড়েছে বলে আমিও ভেংগে পড়েছি; আমি শোক করছি আর ভীষণ ভয় আমাকে ধরেছে। গিলিয়দে কি কোন মলম নেই? সেখানে কি কোন ডাক্তার নেই? তাহলে আমার লোকদের স্বাস্থ্য কেন ভাল হয় নি? হায়, আমার মাথাটা যদি জলের ঝরণা হত, আর আমার চোখ হত জলের ফোয়ারা! তাহলে আমার জাতির যে লোকদের মেরে ফেলা হয়েছে তাদের জন্য আমি দিনরাত কাঁদতাম। হায়, মরু-এলাকায় যাত্রীদের থাকবার জায়গার মত আমার যদি একটা জায়গা থাকত! তাহলে আমার লোকদের ছেড়ে আমি সেখানে চলে যেতে পারতাম, কারণ তারা সবাই ব্যভিচারী এবং বিশ্বাসঘাতকদের দল। সদাপ্রভু বলছেন, “তারা মিথ্যার তীর ছুঁড়বার জন্য তাদের ধনুকের মত জিভ্‌কে প্রস্তুত রেখেছে; দেশে সত্যের উপরে মিথ্যা জয়লাভ করে। তারা পাপের উপরে পাপ করতে থাকে। তারা আমাকে তাদের ঈশ্বর বলে স্বীকার করে না। তারা প্রত্যেকে বন্ধুদের থেকে সাবধান হোক আর নিজের ভাইদের বিশ্বাস না করুক, কারণ প্রত্যেক ভাই ঠকায় আর প্রত্যেক বন্ধু নিন্দা করে। বন্ধু বন্ধুকে ঠকায় আর কেউ সত্যি কথা বলে না। তারা তাদের জিভ্‌কে মিথ্যা কথা বলতে শিখিয়েছে; পাপ করে করে তারা নিজেদের ক্লান্ত করেছে। তুমি ছলনার মাঝখানে বাস করছ। তোমার লোকেরা ছলনায় পূর্ণ; তারা আমার কাছে নিজেদের সঁপে দেয় না।” কাজেই সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, আমি তাদের খাদ বের করে যাচাই করব, কারণ আমার লোকদের নিয়ে আমি আর কি করতে পারি? তাদের জিভ্‌ ভয়ংকর তীরের মত; তা ছলনার কথা বলে। প্র্রত্যেকে মুখ দিয়ে প্রতিবেশীর সংগে মিষ্টি কথা বলে কিন্তু অন্তরের মধ্যে তার বিরুদ্ধে ফাঁদ পাতে। আমি কি এর জন্য তাদের শাস্তি দেব না? এই রকম জাতির উপর কি আমি নিজেই প্রতিশোধ নেব না?” পাহাড়গুলোর জন্য আমি কাঁদব ও বিলাপ করব আর বিলাপ করব মরু-এলাকার পশু চরাবার জায়গাগুলোর জন্য। সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, সেখানে কেউ আসা-যাওয়া করে না। পশুপালের ডাক আর শোনা যায় না। আকাশের পাখীরা পালিয়ে গেছে আর জীবজন্তুরা চলে গেছে। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি যিরূশালেমকে একটা ধ্বংসের ঢিবি ও শিয়ালদের বাসস্থান করব। আমি যিহূদার শহরগুলোকে এমন ধ্বংসস্থান করব যে, তাতে আর কেউ বাস করতে পারবে না।” কোন্‌ লোক এমন জ্ঞানী যে, এই কথা বুঝতে পারে? কে সদাপ্রভুর কাছে শুনে তা অন্যদের জানাতে পারে? কেন দেশটা ধ্বংস হয়ে মরুভূমির মত এমন পোড়ো জমি হয়ে রয়েছে যে, কেউ তা পার হয়ে যায় না? সদাপ্রভু বলছেন, “তার কারণ হল, আমি যে আইন-কানুন তাদের দিয়েছিলাম তা তারা ত্যাগ করেছে; তারা আমার বাধ্য হয় নি কিম্বা আমার কথাও মেনে চলে নি। তার বদলে তারা তাদের অন্তরের একগুঁয়েমি অনুসারে চলেছে; তাদের পিতাদের শিক্ষামত তারা বাল দেবতার পিছনে চলেছে। সেইজন্য আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি, ‘দেখ, আমি এই লোকদের তেতো খাবার ও বিষাক্ত জল খেতে বাধ্য করব। আমি তাদের এমন সব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেব যাদের তারা জানে না কিম্বা তাদের পূর্বপুরুষেরাও জানত না। তাদের ধ্বংস না করা পর্যন্ত আমি যুদ্ধ পাঠিয়ে তাদের পিছনে তাড়া করব।’ ” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা এখন ভেবে দেখ। বিলাপকারী স্ত্রীলোকদের ডেকে আন; যারা এই কাজে পাকা তাদের ডাকতে লোক পাঠাও।” তারা তাড়াতাড়ি এসে আমাদের জন্য বিলাপ করুক যে পর্যন্ত না আমাদের চোখ জলে ভেসে যায় আর চোখের পাতার কাছ থেকে জলের ধারা বয়ে যায়। সিয়োন থেকে এই বিলাপের কথা শোনা যাচ্ছে, “আমরা কিভাবে ধ্বংস হয়ে গেলাম! কিভাবে এতখানি লজ্জিত হলাম! আমাদের বাড়ীগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, কাজেই আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে হবে।” এখন হে স্ত্রীলোকেরা, সদাপ্রভুর বাক্য শোন; তাঁর মুখের কথা শুনবার জন্য তোমাদের কান খোলা রাখ। কেমন করে বিলাপ করতে হয় তা নিজের নিজের মেয়েদের শিক্ষা দাও, আর বিলাপের গান করতে অন্যদের শিক্ষা দাও। মৃত্যু আমাদের জানালা দিয়ে উঠে আমাদের দুর্গগুলোর মধ্যে ঢুকেছে; তা রাস্তায় রাস্তায় ছেলেমেয়েদের শেষ করে দিয়েছে আর শহর-চক থেকে শেষ করে দিয়েছে যুবকদের। সদাপ্রভু আমাকে এই কথা বলতে বললেন, “লোকদের মৃতদেহ গোবরের মত খোলা মাঠে পড়ে থাকবে; যারা ফসল কাটে তাদের পিছনে কেটে ফেলে রাখা শস্যের মত সেগুলো পড়ে থাকবে, কেউ তাদের জড়ো করবে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “জ্ঞানী লোকেরা তাদের জ্ঞানের গর্ব না করুক, কিম্বা শক্তিশালীরা তাদের শক্তির গর্ব না করুক কিম্বা ধনীরা তাদের ধনের গর্ব না করুক, কিন্তু যে গর্ব করতে চায় সে এই নিয়ে গর্ব করুক যে, সে আমাকে বোঝে ও জানে, অর্থাৎ সে জানে যে, আমিই সদাপ্রভু; আমার ভালবাসা অটল আর পৃথিবীতে আমার কাজ ন্যায়ে ও সততায় পূর্ণ। এই সমস্ত বিষয়েই আমি আনন্দ পাই। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” হে ইস্রায়েল জাতি, সদাপ্রভু তোমাদের যে কথা বলছেন তা শোন। সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা ভিন্ন জাতিদের আচার-ব্যবহার শিখো না, কিম্বা আকাশের নানা চিহ্ন দেখে ভেংগে পোড়ো না, যদিও ভিন্ন জাতিরাই সেগুলো দেখে ভেংগে পড়ে। এর কারণ সেই লোকদের ধর্মীয় আচার-ব্যবহার অসার। তারা বন থেকে একটা গাছ কাটে এবং কারিগর বাটালি দিয়ে তার আকার দেয়। তারা সোনা ও রূপা দিয়ে সেটা সাজায় এবং যাতে সেটা পড়ে না যায় সেইজন্য সেটাকে হাতুড়ি ও পেরেক দিয়ে শক্ত করে। শসার ক্ষেতের কাকতাড়ুয়ার মত তাদের প্রতিমাগুলো কথা বলতে পারে না; তাদের বহন করে নিয়ে যেতে হয়, কারণ তারা হাঁটতে পারে না। তোমরা তাদের ভয় কোরো না; তারা ক্ষতিও করতে পারে না, মংগলও করতে পারে না।” হে সদাপ্রভু, তোমার মত আর কেউ নেই; তুমি মহান, তুমি ক্ষমতায় শক্তিশালী। হে জাতিদের রাজা, তোমাকে কে না ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে? এ তো তোমার পাওনা। জাতিদের সব জ্ঞানী লোকদের মধ্যে এবং তাদের সব রাজ্যের মধ্যে কেউ তোমার মত নয়। তারা সবাই জ্ঞানহীন ও বোকা। তাদের প্রতিমাগুলো তো কাঠের তৈরী, সেগুলো কি করে শিক্ষা দেবে? তর্শীশ থেকে পিটানো রূপা ও ঊফস থেকে সোনা আনা হয়। কারিগর ও স্বর্ণকার তা দিয়ে প্রতিমা মোড়ায়। সেগুলোকে নীল ও বেগুনে কাপড় পরানো হয়; তা পাকা কারিগরের হাতে তৈরী। কিন্তু সদাপ্রভুই সত্যিকারের ঈশ্বর; তিনি জীবন্ত ঈশ্বর ও চিরস্থায়ী রাজা। তাঁর ক্রোধে পৃথিবী কাঁপে; জাতিরা তাঁর ক্রোধ সহ্য করতে পারে না। তোমরা লোকদের বল যে, এই দেব-দেবতারা মহাকাশ ও পৃথিবী তৈরী করে নি; তারা মহাকাশ ও পৃথিবীর সব জায়গা থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে। সদাপ্রভু নিজের শক্তিতে পৃথিবী তৈরী করেছেন, তাঁর জ্ঞান দ্বারা জগৎ স্থাপন করেছেন ও বুদ্ধি দ্বারা আকাশ বিছিয়ে দিয়েছেন। তাঁর আদেশে আকাশের জল গর্জন করে; তিনি পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে মেঘ উঠিয়ে আনেন। তিনি বৃষ্টির জন্য বিদ্যুৎ তৈরী করেন এবং তাঁর ভাণ্ডার থেকে বাতাস বের করে আনেন। সব মানুষই জ্ঞানহীন ও বোকা; প্রত্যেক স্বর্ণকার তার প্রতিমাগুলোর জন্য লজ্জা পায়। তার ছাঁচে ঢালা মূর্তিগুলো মিথ্যা, সেগুলোর মধ্যে নিঃশ্বাস নেই। সেগুলো অপদার্থ, ঠাট্টা-বিদ্রূপের জিনিস; বিচারের সময় আসলে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। যিনি যাকোবের পাওনা অংশ তিনি এগুলোর মত নন, কারণ তিনিই সমস্ত জিনিসের সৃষ্টিকর্তা আর ইস্রায়েল তাঁর বিশেষ সম্পত্তি। তাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু। তোমরা যারা ঘেরাও হয়ে আছ, তোমরা দেশ ছেড়ে যাবার জন্য নিজের নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, কারণ সদাপ্রভু বলছেন, “এই সময় যারা দেশে থাকবে আমি তাদের ছুঁড়ে ফেলে দেব; আমি তাদের উপর এমন কষ্ট আনব যাতে তারা ধরা পড়ে।” হায়, আমার আঘাত! আমার ঘা ভাল হবার নয়! তবু আমি নিজেকে বলেছি, “এটা আমার রোগ, আমাকে তা সহ্য করতেই হবে।” আমার তাম্বু ধ্বংস হয়েছে; তার সমস্ত দড়াদড়ি ছিঁড়ে গেছে। আমার ছেলেরা আমার কাছ থেকে চলে গেছে, তারা আর নেই; আমার তাম্বু আবার খাটাবার কিম্বা তার পর্দা টাংগাবার জন্য এখন আর কেউ নেই। রাখালেরা জ্ঞানহীন, তারা সদাপ্রভুর ইচ্ছা জানতে চায় না; তাই তারা সফল হয় নি এবং তাদের সমস্ত পশুপাল ছড়িয়ে এদিক-সেদিক চলে গেছে। শোন, খবর আসছে! যিহূদার শহরগুলো জনশূন্য ও শিয়ালদের বাসস্থান করবার জন্য উত্তরের দেশ থেকে ভীষণ গোলমালের আওয়াজ আসছে। হে সদাপ্রভু, আমি জানি মানুষের জীবন-পথ তার নিজের নয়; তার পায়ের ধাপ নির্দেশ করাও তার কাজ নয়। হে সদাপ্রভু, কেবল ন্যায়বিচার দিয়ে তুমি আমাকে সংশোধন কর, কিন্তু তোমার ক্রোধে তা কোরো না, করলে তুমি আমাকে একেবারে শূন্য করে দেবে। যে সব জাতি তোমাকে স্বীকার করে না, যারা তোমাকে ডাকে না, তাদের উপর তোমার ক্রোধ ঢেলে দাও। তারা যাকোবকে সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করেছে, তার দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যখন আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের মিসর থেকে, লোহা গলানো চুল্লী থেকে বের করে এনেছিলাম তখন আমি এই বলে তাদের আদেশ করেছিলাম, ‘তোমরা আমার কথা শোন এবং আমি যা করতে আদেশ করেছি তা কর, তাহলে তোমরা আমার লোক হবে ও আমি তোমাদের ঈশ্বর হব। আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে এমন দেশ দেবার শপথ করেছিলাম যেখানে দুধ, মধু ও কোন কিছুর অভাব নেই, আর সেই শপথ আমি পূরণ করব।’ সেই দেশই আজ তোমরা অধিকার করে আছ।” উত্তরে আমি বললাম, “আমেন, সদাপ্রভু।” সদাপ্রভু আমাকে যিহূদার শহরগুলোতে ও যিরূশালেমের রাস্তায় রাস্তায় এই কথা ঘোষণা করতে বললেন, “এই ব্যবস্থার কথাগুলো শুনে তা পালন কর। তোমাদের পূর্বপুরুষদের যখন আমি মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলাম তখন থেকে আজ পর্যন্ত বার বার তাদের সাবধান করে দিয়ে বলেছিলাম, ‘তোমরা আমার কথামত চল।’ কিন্তু তারা তা শোনে নি বা তাতে মনোযোগও দেয় নি; তার বদলে তারা তাদের একগুঁয়ে মন্দ অন্তরের ইচ্ছামত চলেছে। কাজেই যে ব্যবস্থা আমি তাদের পালন করতে বলেছিলাম তারা তা পালন করে নি বলে সেই ব্যবস্থার কথা অনুসারে আমি তাদের শাস্তি দিয়েছি।” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “যিহূদার ও যিরূশালেমের লোকদের মধ্যে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। তারা তাদের সেই পূর্বপুরুষদের পাপের দিকে ফিরে গেছে যারা আমার কথা শুনতে অস্বীকার করেছিল। তারা দেব-দেবতাদের সেবা করবার জন্য তাদের পিছনে গেছে। তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য আমি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম তা ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা পালন করে নি। কাজেই আমি সদাপ্রভু বলছি যে, আমি তাদের উপর এমন বিপদ আনব যা থেকে তারা পালাতে পারবে না। যদিও তারা আমার কাছে কাঁদবে তবুও আমি তাদের কথা শুনব না। যখন বিপদ আসবে তখন যিহূদার শহরগুলোর ও যিরূশালেমের লোকেরা গিয়ে সেই দেব-দেবতার কাছে কান্নাকাটি করবে যাদের সামনে তারা ধূপ জ্বালিয়েছিল, কিন্তু তারা তাদের রক্ষা করবে না। যিহূদার যতগুলো শহর ও গ্রাম আছে ততগুলো দেব-দেবতাও আছে, আর যিরূশালেমের যতগুলো রাস্তা আছে সেই লজ্জাজনক বাল দেবতার উদ্দেশে ধূপ জ্বালাবার জন্য ততগুলো বেদীও তৈরী করা হয়েছে। “এই লোকদের জন্য তুমি কোন প্রার্থনা কোরো না কিম্বা তাদের জন্য কোন মিনতি বা অনুরোধ কোরো না, কারণ তাদের কষ্টের সময় তারা আমাকে ডাকলে আমি শুনব না। “আমার ঘরে আমার প্রিয় লোকদের কি অধিকার আছে? তারা তো অনেক খারাপ কাজ করেছে, এমন কি, তারা আমার উদ্দেশে উৎসর্গ করা মাংস তাদের কাছ থেকে সরিয়ে ফেলে। হে অন্যায়কারীরা, যখন বিপদ তোমাদের উপর আসবে তখনও কি তোমরা আনন্দ করতে থাকবে?” সদাপ্রভু এই জাতিকে ফলে ভরা সুন্দর একটা জলপাই গাছ বলে ডেকেছিলেন। কিন্তু ভীষণ ঝড়ের গর্জনে তিনি তাতে আগুন ধরিয়ে দেবেন আর তাতে তার ডালগুলো ভেংগে পড়বে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, যিনি তাকে লাগিয়েছিলেন তিনিই তার সর্বনাশের রায় দিয়েছেন, কারণ যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকেরা মন্দ কাজ করেছে এবং বাল দেবতার উদ্দেশে ধূপ জ্বালিয়ে তাঁর অসন্তোষকে খুঁচিয়ে তুলেছে। অনাথোতের লোকদের ষড়যন্ত্রের কথা সদাপ্রভু আমার কাছে প্রকাশ করেছিলেন বলে আমি তা জানতে পেরেছিলাম। আমি ছিলাম জবাই করতে নিয়ে যাওয়া শান্ত ভেড়ার বাচ্চার মত; আমি বুঝতে পারি নি যে, তারা এই বলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, “এস, আমরা গাছ ও তার ফল নষ্ট করে ফেলি; এস, আমরা তাকে জীবিতদের দেশ থেকে কেটে ফেলে দিই যাতে তার নাম আর মনে করা না হয়।” হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তুমি ন্যায়ভাবে বিচার করে থাক আর অন্তর ও মনের পরীক্ষা করে থাক, তাই তাদের উপর তোমার প্রতিশোধ নেওয়া আমাকে দেখতে দাও, কারণ আমি আমার নালিশ তোমাকেই জানিয়েছি। সেইজন্য অনাথোতের লোকদের বিষয়ে সদাপ্রভু বলছেন, “যারা তোমার প্রাণ নিতে চাইছে আর বলছে, ‘সদাপ্রভুর নামে নবী হিসাবে কথা বোলো না, বললে তুমি আমাদের হাতে মারা পড়বে,’ আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমি তাদের শাস্তি দেব। তাদের যুবকেরা যুদ্ধে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা দুর্ভিক্ষে মারা যাবে। তাদের বাকী বলতে কেউ থাকবে না, কারণ অনাথোতের লোকদের শাস্তি দেবার সময়ে আমি তাদের উপর সর্বনাশ নিয়ে আসব।” হে সদাপ্রভু, আমি যখন তোমার বিরুদ্ধে কোন নালিশ করি তখন তুমি যে নির্দোষ তা সব সময়ই প্রমাণিত হয়। তবুও আমি তোমার বিচার সম্বন্ধে তোমার সংগে কিছু কথা বলব। দুষ্টদের পথ কেন ভাল হয়? যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে তারা কেন আরামে বাস করে? তুমিই তাদের লাগিয়েছ আর তারা শিকড় বসিয়েছে; তারা বেড়ে ওঠে ও তাদের ফল ধরে। মুখে তারা সব সময় তোমার কথা বলে কিন্তু তাদের অন্তর তোমার কাছ থেকে দূরে থাকে। হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে জান; তুমি আমাকে দেখে থাক এবং তোমার প্রতি আমার ভক্তি কতখানি তা পরীক্ষা করে থাক। ভেড়ার মত কেটে ফেলবার জন্য তুমি তাদের টেনে নিয়ে যাও; জবাইয়ের দিনের জন্য তাদের আলাদা করে রাখ। আর কত দিন দেশ শোক করবে এবং মাঠের ঘাস শুকনা হয়ে থাকবে? যারা সেখানে বাস করে তারা মন্দ বলে জীব-জানোয়ার আর পাখীরা সব ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই লোকেরা বলছে, “আমাদের যা হবে তা সে দেখতে পাবে না।” “মানুষের সংগে দৌড় প্রতিযোগিতায় যদি তুমি ক্লান্ত হয়ে পড় তবে ঘোড়াদের সংগে দৌড়ে তুমি কি করে পারবে? কেবল শান্তিপূর্ণ দেশে যদি তুমি নিজেকে নিরাপদ মনে কর তাহলে যর্দনের ধারের জংগলে তুমি কি করে থাকবে? তোমার ভাইয়েরা, অর্থাৎ তোমার বংশের নিজের লোকেরা তোমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে; তারাও তোমার পিছনে লেগেছে। তোমার বিষয় ভাল কথা বললেও তাদের বিশ্বাস কোরো না। “আমি আমার লোকদের ছেড়ে দিয়েছি এবং আমার সম্পত্তি ইস্রায়েলকে ত্যাগ করেছি; আমি যাকে ভালবাসি তাকে তার শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছি। আমার সম্পত্তি আমার কাছে বনের সিংহের মত হয়েছে। সে আমাকে দেখে গর্জন করেছে, তাই আমি তাকে ঘৃণা করি। আমার সম্পত্তি আমার কাছে অদ্ভূত রংয়ের শিকারী পাখীর মত হয়েছে, যাকে অন্যান্য শিকারী পাখীরা ঘেরাও করে আক্রমণ করছে। তুমি গিয়ে সমস্ত বুনো পশুদের জড়ো করে নিয়ে এস যেন তারা খেতে পারে। অনেক রাখাল আমার আংগুর ক্ষেত নষ্ট করেছে এবং তা পায়ে মাড়িয়েছে; আমার সুন্দর ক্ষেতকে তারা জনশূন্য পোড়ো জমি করে ফেলেছে। তা আমার সামনে জনশূন্য হয়ে শোক করছে। গোটা দেশটাই পোড়ো জমি হয়ে রয়েছে বলে কেউ তার দিকে মনোযোগ দেয় না। মরু-এলাকার গাছপালাহীন পাহাড়ের উপরে ধ্বংসকারীরা এসেছে, কারণ সদাপ্রভুর তলোয়ার দেশের এক কিনারা থেকে অন্য কিনারা পর্যন্ত গ্রাস করছে; কেউ শান্তিতে নেই। তারা বুনেছে গম কিন্তু কেটেছে কাঁটা; তারা কঠিন পরিশ্রম করেছে কিন্তু কিছুই পায় নি। সদাপ্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধের দরুন তোমরা তোমাদের ফসল কাটবার লজ্জা বহন করেছ।” সদাপ্রভু বলছেন, “আমি অধিকার হিসাবে যে জায়গা আমার লোকদের দিয়েছি আমার সমস্ত দুষ্ট প্রতিবেশীরা তাতে হানা দিয়েছে। সেইজন্য আমি তাদের দেশ থেকে তাদের উপ্‌ড়ে ফেলব এবং তাদের মধ্য থেকে যিহূদার লোকদের তুলে আনব। কিন্তু তাদের উপ্‌ড়ে ফেলবার পর আমি আবার মমতা করে তাদের প্রত্যেককে তার নিজের অধিকারে ও নিজের দেশে ফিরিয়ে আনব। যদিও তারা একদিন আমার লোকদের বাল দেবতার নামে শপথ করতে শিখিয়েছিল তবুও যদি তারা আমার লোকদের পথে চলে এবং ‘জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য’ বলে আমার নামে শপথ করে, তবে তারা আমার লোকদের মধ্যে থেকে আশীর্বাদ পাবে। কিন্তু যদি কোন জাতি তা না করে তবে তাকে আমি সম্পূর্ণভাবে উপ্‌ড়ে ফেলে ধ্বংস করে দেব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্র্রভু আমাকে বললেন, “তুমি গিয়ে মসীনা সুতার একটা জাংগিয়া কিনে পর, কিন্তু সেটা জলে ডুবাবে না।” কাজেই সদাপ্রভুর নির্দেশমত আমি একটা জাংগিয়া কিনে পরলাম। তখন সদাপ্রভু দ্বিতীয়বার আমাকে বললেন, “যে জাংগিয়া তুমি কিনে পরেছ সেটা নিয়ে এখনই তুমি ইউফ্রেটিস নদীর কাছে গিয়ে পাথরের কোন ফাটলে লুকিয়ে রাখ।” সেইজন্য সদাপ্রভুর কথামত আমি গিয়ে ইউফ্রেটিস নদীর কাছে সেটা লুকিয়ে রাখলাম। তারপর অনেক দিন পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি এখনই ইউফ্রেটিস নদীর কাছে যাও এবং সেখানে যে জাংগিয়াটা আমি তোমাকে লুকিয়ে রাখতে বলেছিলাম সেটা নিয়ে এস।” সেইজন্য আমি ইউফ্রেটিস নদীর কাছে গিয়ে জাংগিয়াটা যেখানে লুকিয়ে রেখেছিলাম সেখান থেকে সেটা খুঁড়ে বের করলাম, কিন্তু তখন সেটা নষ্ট ও সম্পূর্ণভাবে অকেজো হয়ে গিয়েছিল। তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি যে, এই রকম করে আমি যিহূদার অহংকার এবং যিরূশালেমের ভীষণ অহংকার ধ্বংস করব। এই দুষ্ট জাতির লোকেরা, যারা আমার কথা শুনতে অস্বীকার করেছে এবং তাদের অন্তরের একগুঁয়েমিতে চলেছে আর সেবা ও উপাসনা করবার জন্য দেব-দেবতার পিছনে গেছে তারা এই জাংগিয়ার মত সম্পূর্ণভাবে অকেজো হবে। লোকে কোমরে যেমন করে জাংগিয়া পরে তেমনি করে আমি গোটা ইস্রায়েল ও যিহূদার সমস্ত লোকদের আমার সংগে জড়িয়েছিলাম, যাতে তারা আমার সুনাম, প্রশংসা ও সম্মানের জন্য আমার লোক হয়, কিন্তু তারা আমার কথা শোনে নি। “তুমি তাদের বল যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘আংগুর-রস রাখা প্রত্যেকটি মাটির পাত্র রসে পূর্ণ করতে হবে।’ আর যদি তারা তোমাকে বলে, ‘আমরা কি জানি না যে, আংগুর-রস রাখা প্রত্যেকটি পাত্র রসে পূর্ণ করতে হবে?’ তবে তুমি তাদের বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘যারা এই দেশে বাস করে, অর্থাৎ দায়ূদের সিংহাসনে বসা সমস্ত রাজাদের, পুরোহিতদের, নবীদের এবং যিরূশালেমে বাসকারী সকলকে আমি মাতলামি দিয়ে পূর্ণ করব। আংগুর-রসের পাত্রের মত করে আমি একজনের উপর আর একজনকে আছাড় মেরে চুরমার করব; বাবা হোক বা ছেলে হোক সবাইকে চুরমার করব। আমি কোন করুণা বা দয়া কিম্বা মমতা করব না; তাদের ধ্বংস করবই করব।’ ” তোমরা শোন, মনোযোগ দাও, গর্বিত হোয়ো না, কারণ সদাপ্রভু কথা বলেছেন। তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৌরব কর, তা না হলে তিনি অন্ধকার নিয়ে আসবেন আর অন্ধকার হয়ে আসা সব পাহাড়ের উপরে তোমাদের পায়ে উছোট লাগবে। তোমরা আলোর আশা করলে তিনি তা অন্ধকার করে দেবেন, গভীর অন্ধকার করে দেবেন। তোমরা যদি কথা না শোন তবে তোমাদের অহংকারের জন্য আমি গোপনে কাঁদব, ভীষণভাবে কাঁদব ও আমার চোখ জলে ভেসে যাবে, কারণ সদাপ্রভুর লোকদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে। সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি রাজা ও তার মাকে বল, ‘আপনারা সিংহাসন থেকে নেমে আসুন, কারণ আপনাদের সুন্দর মুকুট আপনাদের মাথা থেকে পড়ে যাবে। নেগেভের শহরগুলোর ঢুকবার পথ বন্ধ করা হবে এবং কেউ সেখানে ঢুকতে পারবে না। যিহূদার সমস্ত লোককে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে, একেবারে সকলকে নিয়ে যাওয়া হবে।’ ” সদাপ্রভু বলছেন, “হে যিরূশালেম, তুমি চোখ তোল, দেখ, উত্তর দিক থেকে শত্রুরা আসছে। যে পাল তোমার হাতে দেওয়া হয়েছিল, যে ভেড়াদের নিয়ে তুমি গর্ব করতে তারা কোথায়? যে সব রাজ্যের সংগে তুমি বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলে সদাপ্রভু যখন তোমার উপরে তাদের বসাবেন তখন তুমি কি বলবে? প্রসবের সময়ে স্ত্রীলোক যেমন যন্ত্রণা পায় তেমনি কি তুমি যন্ত্রণা পাবে না? যদি তুমি নিজেকে জিজ্ঞাসা কর, ‘আমার উপর এটা কেন ঘটল?’ তবে এর উত্তর হল, তোমার অনেক পাপের জন্য তোমার কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে ও দেহের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। কূশ দেশের লোক কি তার দেহের রং কিম্বা চিতাবাঘ কি তার গায়ের ফোঁটা ফোঁটা দাগ বদলে ফেলতে পারে? তুমিও তেমনি ভাল কাজ করতে পার না, কারণ তুমি মন্দ কাজ করা অভ্যাস করে ফেলেছ। “মরু-এলাকার বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া তুষের মত আমি তোমার লোকদের ছড়িয়ে দেব। এটাই তোমার পাওনা; এটাই আমি তোমার জন্য মেপে দিয়েছি, কারণ তুমি আমাকে ভুলে গিয়ে মিথ্যা দেব-দেবতার উপর বিশ্বাস করেছ। আমি তোমার কাপড় তোমার মুখের উপর তুলে দেব যাতে তোমার লজ্জা দেখা যায়। আমি তোমার ব্যভিচার ও কামনাপূর্ণ ডাক এবং লজ্জাহীন বেশ্যার কাজ দেখেছি; দেখেছি পাহাড়ে পাহাড়ে ও মাঠে মাঠে এই সব জঘন্য কাজ। যিরূশালেম, ধিক্‌ তোমাকে! আর কত দিন তুমি অশুচি থাকবে?” খরা সম্বন্ধে সদাপ্রভু যিরমিয়কে বললেন, “যিহূদা শোক করছে, কারণ তার শহরগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে; সেখানকার লোকেরা মাটিতে পড়ে শোক করছে, আর যিরূশালেম থেকে একটা কান্নার শব্দ উপরে উঠছে। গণ্যমান্য লোকেরা জলের জন্য তাদের চাকরদের পাঠায়; তারা জলের জায়গায় এসে জল না পেয়ে খালি কলসী নিয়ে ফিরে যায়; তারা লজ্জিত ও হতাশ হয়ে মাথা ঢাকে। মাটি ফেটে গেছে, কারণ দেশে কোন বৃষ্টি হয় নি; চাষীরা হতাশ হয়ে মাথায় হাত দেয়। এমন কি, মাঠে ঘাস নেই বলে হরিণী প্রসব করে তার বাচ্চাকে ফেলে যায়। বুনো গাধারা গাছপালাশূন্য পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে শিয়ালের মত হাঁপায়; ঘাসের অভাবে তাদের চোখের তেজ কমে যায়।” হে সদাপ্রভু, আমাদের পাপ যদিও আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় তবুও তোমার সুনামের জন্য কিছু কর। আমরা অনেকবার বিপথে গিয়েছি; আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। হে ইস্রায়েলের আশা, কষ্টের সময়কার উদ্ধারকর্তা, কেন তুমি দেশের মধ্যে অচেনার মত, এক রাত থাকা পথিকের মত হয়েছ? কেন তুমি হতভম্ব হয়ে যাওয়া লোকের মত, রক্ষা করতে পারে না এমন যোদ্ধার মত হয়েছ? হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের মধ্যেই আছ আর আমরা তো তোমারই; তুমি আমাদের ত্যাগ কোরো না। এই লোকদের বিষয়ে সদাপ্রভু বলছেন, “তারা ঘুরে বেড়াতে ভালবাসে; তারা তাদের পা থামায় না। তাই আমি তাদের গ্রহণ করি না; আমি এবার তাদের দুষ্টতার বিষয় মনে আনব আর পাপের জন্য শাস্তি দেব।” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি এই লোকদের মংগলের জন্য প্রার্থনা কোরো না। তারা যদিও বা উপবাস করে তবুও তাদের কান্না আমি শুনব না; পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করলেও আমি তা গ্রহণ করব না। তার বদলে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়ক দিয়ে আমি তাদের ধ্বংস করব।” এতে আমি বললাম, “হায়, প্রভু সদাপ্রভু! নবীরা তাদের বলছে, ‘তোমরা যুদ্ধ দেখবে না কিম্বা দুর্ভিক্ষেও কষ্ট পাবে না। সদাপ্রভু সত্যিই এই জায়গায় তোমাদের স্থায়ী শান্তি দান করবেন।’ ” তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “নবীরা আমার নাম করে মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী বলছে। আমি তাদের পাঠাই নি, তাদের আদেশ দিই নি কিম্বা তাদের কাছে কোন কথাও বলি নি। তারা তোমাদের কাছে মিথ্যা দর্শন, মিথ্যা গোণাপড়া ও নিজেদের মনগড়া মিথ্যা কথা বলে। কাজেই যে সব নবীরা আমার নাম করে কথা বলছে তাদের সম্বন্ধে আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি যে, আমি তাদের পাঠাই নি, তবুও তারা বলছে, ‘কোন যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষ এই দেশে আসবে না।’ ঐ সব নবীরাই যুদ্ধ বা দুর্ভিক্ষে ধ্বংস হয়ে যাবে। যে সব লোকদের কাছে তারা নবী হিসাবে কথা বলছে তাদের মৃতদেহ দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধের ফলে যিরূশালেমের রাস্তায় রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে। তাদের কিম্বা তাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কবর দেবার জন্য কেউ থাকবে না। তাদের পাওনা দুর্দশা আমি তাদের উপরেই ঢেলে দেব। “তুমি লোকদের কাছে এই কথা বল, ‘আমার চোখের জল না থেমে দিনরাত আমার চোখ থেকে উপ্‌চে পড়ুক, কারণ আমার জাতির লোকেরা ভীষণ আঘাত, চুরমার-করা আঘাত পেয়েছে। আমি বের হয়ে মাঠে গেলে নিহত লোকদের দেখতে পাই; আর শহরে গেলে দেখি দুর্ভিক্ষের দরুন ধ্বংস। নবী ও পুরোহিতেরা এমন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে যার সম্বন্ধে তারা কিছুই জানে না।’ ” হে সদাপ্রভু, তুমি কি যিহূদাকে একেবারে অগ্রাহ্য করেছ? তুমি কি সিয়োনকে ঘৃণা করেছ? তুমি আমাদের কেন এমন কষ্ট দিয়েছ যে, আমরা সুস্থ হতে পারছি না? আমরা শান্তির আশা করেছিলাম কিন্তু কোন মংগল হল না, আমরা সুস্থ হবার আশা করেছিলাম কিন্তু ভীষণ ভয় উপস্থিত হল। হে সদাপ্রভু, আমরা আমাদের দুষ্টতা ও আমাদের পূর্বপুরুষদের দোষের কথা স্বীকার করছি; আমরা সত্যিই তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। তোমার সুনাম রক্ষার জন্য তুমি আমাদের দিক থেকে মুখে ফিরিয়ে নিয়ো না; তোমার গৌরবময় সিংহাসনের জায়গাকে অসম্মানিত হতে দিয়ো না। আমাদের জন্য তোমার স্থাপন করা ব্যবস্থার কথা মনে কর; তুমি তা বাতিল কোরো না। জাতিদের অসার প্রতিমাগুলো কি বৃষ্টি আনতে পারে? আকাশ নিজে নিজে কি এক পশলা বৃষ্টি দিতে পারে? হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, কেবল তুমিই তা পার। কাজেই তোমার উপরেই আমরা আশা রাখি, কারণ তুমিই এই সব করে থাক। তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “মোশি ও শমূয়েলও যদি আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তবুও আমার অন্তর এই লোকদের জন্য নরম হবে না। আমার সামনে থেকে তুমি এদের বিদায় কর; তারা চলে যাক। আর যদি তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘আমাদের কি হবে?’ তবে তাদের বলবে, ‘সদাপ্রভু এই কথা বলছেন যে, মৃত্যুর জন্য যারা নির্দিষ্ট হয়ে আছে তাদের মৃত্যু হবে; তলোয়ারের জন্য যারা নির্দিষ্ট হয়ে আছে তারা যুদ্ধে মারা যাবে; দুর্ভিক্ষের জন্য যারা নির্দিষ্ট হয়ে আছে তারা দুর্ভিক্ষে মারা যাবে; আর বন্দী হবার জন্য যারা নির্দিষ্ট হয়ে আছে তারা বন্দী হবে।’ ” সদাপ্রভু বলছেন, “আমি তাদের বিরুদ্ধে চার রকম ধ্বংসকারীকে পাঠিয়ে দেব। সেগুলো হল, মেরে ফেলবার জন্য তলোয়ার, টেনে নিয়ে যাবার জন্য কুকুর, খেয়ে ফেলবার ও ধ্বংস করবার জন্য আকাশের পাখী ও বনের পশু। যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের ছেলে মনঃশি যিরূশালেমে যা করেছে তার জন্য আমি যে শাস্তি দেব তা দেখে পৃথিবীর সব রাজ্যের লোকেরা ভয় পাবে। “হে যিরূশালেম, কে তোমার উপর দয়া করবে? কে তোমার জন্য শোক করবে? তুমি কেমন আছ তা জিজ্ঞাসা করবার জন্য কে আসবে? আমি সদাপ্রভু বলছি যে, তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ, তুমি উল্টা পথে গিয়েছ। সেইজন্য আমি তোমার দিকে হাত বাড়িয়ে তোমাকে ধ্বংস করব; আমি আর মমতা করতে পারি না। দেশের শহর-ফটকের কাছে আমি কুলায় করে তোমার লোকদের ঝাড়ব। আমার লোকদের উপর আমি সন্তানের মৃত্যুর শোক আনব ও তাদের ধ্বংস করব, কারণ নিজেদের পথ থেকে তারা ফেরে নি। তাদের বিধবাদের সংখ্যা আমি সমুদ্রের বালির চেয়েও বেশী করব। তুমি তো যোদ্ধাদের মা, তোমার লোকদের বিরুদ্ধে দুপুরবেলা আমি একজন ধ্বংসকারীকে আনব; আমি তাদের উপর হঠাৎ যন্ত্রণা ও ভয় আনব। সাত সন্তানের মা দুর্বল হয়ে লজ্জিত ও অপমানিত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ফেলবে। সময় থাকতেই তার জীবনের সূর্য ডুবে যাবে। যারা বেঁচে থাকবে তাদেরও আমি শত্রুদের তলোয়ারের সামনে দেব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” হায়! হায়! মা আমার, তুমি কেন আমাকে জন্ম দিয়েছ, যার সংগে গোটা দেশটা ঝগড়া ও লড়াই করে? আমি ধার দিই নি কিম্বা কেউ আমাকে ধারও দেয় নি, তবুও প্রত্যেকে আমাকে অভিশাপ দেয়। সদাপ্রভু বললেন, “একটা মংগলের উদ্দেশ্যে আমি নিশ্চয় তোমাকে রেহাই দেব। আমি এমন অবস্থা সৃষ্টি করব যার ফলে বিপদ ও দুর্দশার সময়ে তোমার শত্রুরা অবশ্য তোমার কাছে এসে মিনতি করবে। “কোন লোক কি উত্তর দেশের লোহা বা ব্রোঞ্জ ভেংগে ফেলতে পারে? হে যিহূদা, সারা দেশের মধ্যে তোমার সমস্ত পাপের দরুন আমি তোমার ধন ও ধনভাণ্ডারের জিনিসপত্র বিনামূল্যে লুটের মাল হিসাবে দেব। যে দেশের কথা তুমি জান না সেই দেশে আমি তোমাকে তোমার শত্রুদের দাস করব, কারণ আমার ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠে তোমার উপর জ্বলতে থাকবে।” হে সদাপ্রভু, তুমি তো সবই বুঝতে পার; কাজেই আমার কথা স্মরণ কর ও আমার প্রতি মনোযোগ দাও। আমার অত্যাচারীদের উপর তুমিই প্রতিশোধ নাও। তুমি তো তাদের উপর অনেক ধৈর্য ধরে থাক, কিন্তু তাই বলে তাদের হাতে তুমি আমাকে ধ্বংস হতে দিয়ো না; মনে করে দেখ, আমি তোমার জন্য কেমন টিট্‌কারি সহ্য করছি। তোমার বাক্য প্রকাশিত হলে পর আমি তা অন্তরে গ্রহণ করলাম; সেই বাক্য ছিল আমার আনন্দ ও আমার অন্তরের সুখ, কারণ হে সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু, আমি তো তোমারই। যারা হৈ হুল্লোড় করে মদ খায় আমি কখনও তাদের দলে বসি নি, তাদের সংগে কখনও আনন্দ করি নি; তোমার হাত আমার উপরে ছিল বলে আমি একাই বসে থাকতাম আর তুমি আমাকে রাগে পরিপূর্ণ করেছ। কেন আমার ব্যথার শেষ নেই, কেন আমার ঘা ভাল হয় না, কেন তা সারানো যায় না? তুমি কি আমার কাছে মিথ্যা স্রোত ও অস্থায়ী ফোয়ারার জলের মত হবে? তখন সদাপ্রভু বললেন, “তুমি যদি মন ফিরাও তবে আমি তোমাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনব যাতে তুমি আমার সেবা করতে পার; যদি তুমি বাজে কথা না বলে মূল্যবান কথা বল তবে তুমি আমার মুখ হয়ে কথা বলবে। এই লোকেরা তোমার দিকে ফিরুক, কিন্তু তুমি তাদের দিকে ফিরবে না। এই লোকদের কাছে আমি তোমাকে ব্রোঞ্জের একটা শক্তিশালী দেয়ালের মত করব; তারা তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে কিন্তু তোমাকে হারিয়ে দিতে পারবে না, কারণ আমি সদাপ্রভু বলছি যে, তোমাকে উদ্ধার করতে ও বাঁচাতে আমি তোমার সংগে সংগে থাকব। আমি তোমাকে দুষ্টদের হাত থেকে রক্ষা করব এবং নিষ্ঠুরদের মুঠি থেকে মুক্ত করব।” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি এই জায়গায় বিয়ে কোরো না এবং ছেলেমেয়েরও জন্ম দিয়ো না, “যে বাড়ীতে লোকে শোক করে সেই বাড়ীতে ঢুকো না; বিলাপ করতে বা তাদের দুঃখে দুঃখিত হতে সেখানে যেয়ো না, কারণ এই লোকদের থেকে আমি আমার শান্তি, অটল ভালবাসা ও মমতা তুলে নিয়েছি। এই দেশে ছোট-বড় সবাই মারা যাবে। কেউ তাদের কবরও দেবে না, তাদের জন্য বিলাপও করবে না এবং কেউ তাদের জন্য নিজের দেহে কাটাকাটিও করবে না, নিজের মাথাও কামাবে না। যারা সেই মৃতদের জন্য বিলাপ করে, এমন কি, বাবা বা মায়ের জন্য বিলাপ করে তাদের সান্ত্বনা দেবার জন্য কেউ খাবারও দেবে না বা পানীয়ও দেবে না। “ভোজের বাড়ীতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে বোসো না, কারণ আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমি এই জায়গার লোকদের চোখের সামনে ও তাদের জীবনকালেই আমোদ ও আনন্দের শব্দ এবং বর ও কনের গলার স্বর বন্ধ করে দেব। “এই লোকদের কাছে এই সব কথা বললে পর তারা যখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘সদাপ্রভু আমাদের বিরুদ্ধে এমন বিপদের কথা বলেছেন কেন? আমরা কি করেছি? আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে আমরা কি পাপ করেছি?’ তখন তুমি তাদের বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘এর কারণ হল তোমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাকে ত্যাগ করেছে এবং দেব-দেবতাদের পিছনে গিয়ে তাদের সেবা ও পূজা করেছে। তারা আমাকে ত্যাগ করেছে এবং আমার আইন-কানুন অমান্য করেছে। কিন্তু তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের চেয়েও মন্দভাবে চলেছ। দেখ, তোমরা প্রত্যেকে আমার কথামত না চলে কিভাবে তোমাদের মন্দ অন্তরের একগুঁয়েমিতে চলেছ। কাজেই আমি এই দেশ থেকে তোমাদের এমন একটা দেশে ছুঁড়ে ফেলে দেব যে দেশের কথা তোমরাও জান না, তোমাদের পূর্বপুরুষেরাও জানত না। সেখানে তোমরা দিনরাত দেব-দেবতার সেবা করবে, কারণ আমি তোমাদের কোন দয়া দেখাব না।’ ” সদাপ্রভু বলছেন, “এমন দিন আসছে যখন লোকে আর বলবে না, ‘যিনি ইস্রায়েলীয়দের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য,’ বরং তারা বলবে, ‘যিনি উত্তর দেশে ও অন্যান্য দেশে ইস্রায়েলীয়দের দূর করে দিয়েছিলেন ও সেখান থেকে বের করে এনেছেন সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য।’ তারা এই কথা বলবে, কারণ যে দেশ আমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলাম সেই দেশেই তাদের ফিরিয়ে আনব। “কিন্তু এখন আমি অনেক জেলেকে ডেকে পাঠাব আর তারা তাদের মাছের মত ধরবে। তারপর আমি অনেক শিকারীকে ডেকে পাঠাব আর তারা প্রত্যেক বড় ও ছোট পাহাড় ও পাথরের ফাটল থেকে তাদের শিকার করে আনবে। তাদের সব চলাফেরার উপর আমার চোখ রয়েছে; তারা আমার চোখ থেকে লুকানো নেই এবং তাদের পাপও আমার কাছ থেকে গুপ্ত নয়। তাদের দুষ্টতা ও পাপের জন্য আমি তাদের দুই গুণ ফল দেব, কারণ তারা আমার দেশকে অশুচি করেছে এবং তাদের জঘন্য মূর্তি ও প্রতিমা দিয়ে আমার সেই অধিকারকে পূর্ণ করেছে।” হে সদাপ্রভু, আমার শক্তি, আমার দুর্গ, আমার কষ্টের সময়কার আশ্রয়, পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে অন্য জাতিরা তোমার কাছে এসে বলবে, “আমাদের পূর্বপুরুষেরা এমন সব মিথ্যা দেব-দেবতা ও অপদার্থ প্রতিমার অধিকারী ছিল যা দিয়ে তাদের কোন লাভ হয় নি। লোকে কি নিজেদের জন্য দেব-দেবতা তৈরী করতে পারে? যদিও বা তা করে সেগুলো তো ঈশ্বর নয়।” সদাপ্রভু বলছেন, “সেইজন্য এইবার আমি ইস্রায়েলীয়দের আমার ক্ষমতা ও শক্তি দেখিয়ে শিক্ষা দেব। তখন তারা জানতে পারবে যে, আমার নাম সদাপ্রভু।” সদাপ্রভু বলছেন, “যিহূদার পাপ লোহার যন্ত্র দিয়ে লেখা হয়েছে, হীরার কাঁটা দিয়ে তাদের অন্তরের ফলকে, তাদের বেদীর শিংয়ের উপরে খোদাই করা হয়েছে। ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছের পাশে উঁচু উঁচু পাহাড়ের উপরে তাদের বেদী ও আশেরা-খুঁটি তাদের ছেলেমেয়েদের কাছেও প্রিয়। হে যিহূদা, তোমার পাপের জন্য দেশের মধ্যেকার আমার পাহাড় এবং তোমার ধন ও তোমার ধনভাণ্ডারের জিনিসপত্র আর সারা দেশে তোমার পূজার উঁচু স্থানগুলো আমি লুট হিসাবে দিয়ে দেব। যে অধিকার আমি তোমাকে দিয়েছিলাম, তোমার নিজের দোষেই তুমি তা হারাবে। যে দেশের কথা তুমি জান না সেই দেশে আমি তোমাকে তোমার শত্রুদের দাস করব, কারণ তুমি আমার ক্রোধের আগুন জ্বালিয়েছ আর তা চিরকাল জ্বলতে থাকবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “যে লোক মানুষের উপর নির্ভর করে ও শক্তির জন্য নিজের দেহের উপর বিশ্বাস করে এবং যার অন্তর আমার কাছ থেকে সরে গেছে সে অভিশপ্ত। সে হবে পতিত জমিতে একটা ঝোপের মত; ভাল সময় আসলে সে তা দেখতে পাবে না। মরু-এলাকার গরম শুকনা জায়গায়, অর্থাৎ যেখানে কেউ বাস করে না এমন নোনা জায়গায় সে বাস করবে। “কিন্তু সেই লোক ধন্য, যে সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে ও সদাপ্রভু যার বিশ্বাসের ভিত্তি। সে জলের ধারে লাগানো গাছের মত হবে যা স্রোতের ধারে তার শিকড় মেলে দেয়। গরম আসলে সে ভয় পায় না; তার পাতা সব সময় সবুজ থাকে। খরার বছরে তার কোন ভাবনা হয় না আর সে কখনও ফলহীন থাকে না। “অন্তর সব কিছুর চেয়ে ঠগ, তাকে কোন রকমে ভাল করা যায় না। কেউ মানুষের অন্তর বুঝতে পারে না। আমি সদাপ্রভু অন্তর খুঁজে দেখি ও মনের পরীক্ষা করি; আমি মানুষের চলাফেরা ও তার কাজের পাওনা অনুসারে ফল দিই। “অন্যের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা পাওয়া তিতির পাখীর মতই সেই লোক, যে অসৎ উপায়ে ধন লাভ করে। তার বয়সের মাঝামাঝি সময়ে সেই ধন তাকে ছেড়ে চলে যাবে, আর শেষে সে বোকা বলে প্রমাণিত হবে।” সেই প্রথম থেকে স্থাপন করা গৌরবময় সিংহাসনটা হল আমাদের পবিত্র উপাসনা-ঘরের জায়গা। হে সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের আশা, যারা তোমাকে ত্যাগ করেছে তাদের সবাইকে লজ্জায় ফেলা হবে। তোমার কাছ থেকে যারা ফিরে গেছে তাদের নাম ধুলায় লেখা হবে, কারণ তারা জীবন্ত জলের ফোয়ারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছে। হে সদাপ্রভু, আমাকে সুস্থ কর, তাতে আমি সুস্থ হব; আমাকে উদ্ধার কর, তাতে আমি উদ্ধার পাব, কারণ তুমিই আমার প্রশংসার পাত্র। দেখ, তারা আমাকে বলতে থাকে, “সদাপ্রভুর বাক্য কোথায়? এখন তা পূর্ণ হোক।” তোমার লোকদের পালক হওয়া থেকে আমি তো পালিয়ে যাই নি; তুমি জান আমি বিপদের দিন চাই নি। আমার মুখ থেকে যা বের হয় তা তোমার কাছ থেকে লুকানো নেই। তুমি আমার ভেংগে পড়বার কারণ হোয়ো না; বিপদের দিনে তুমিই আমার আশ্রয়। আমার অত্যাচারীদের লজ্জায় ফেলা হোক, কিন্তু তুমি আমাকে লজ্জা থেকে রক্ষা কর। তারা ভেংগে পড়ুক, কিন্তু তুমি আমাকে ভেংগে পড়া থেকে রক্ষা কর। তুমি তাদের উপর বিপদের দিন নিয়ে এস; দুই গুণ ধ্বংস দিয়ে তাদের ধ্বংস কর। জনসাধারণের যে ফটক দিয়ে যিহূদার রাজারা আসা-যাওয়া করে সদাপ্রভু আমাকে সেই ফটকে এবং যিরূশালেমের অন্যান্য সব ফটকেও গিয়ে দাঁড়াতে বললেন। তিনি আমাকে এই কথা বলতে বললেন, “হে যিহূদার রাজারা ও সমস্ত লোকেরা এবং যিরূশালেমে বাসকারী সকলে, তোমরা যারা এই সব ফটক দিয়ে ভিতরে যাওয়া-আসা করে থাক, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শোন। সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা সাবধান হও; বিশ্রামবারে কোন বোঝা বইবে না কিম্বা যিরূশালেমের ফটক দিয়ে তা ভিতরে আনবে না। আমি যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের আদেশ দিয়েছিলাম সেই মত বিশ্রামবারে তোমরা তোমাদের বাড়ী থেকে কোন বোঝা বের করে আনবে না বা কোন কাজ করবে না, বরং বিশ্রামবার আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে। তোমাদের পূর্বপুরুষেরা সেই কথা শোনেও নি, তাতে মনোযোগও দেয় নি। তারা তাদের ঘাড় শক্ত করেছিল; তারা আমার কথা শুনতে ও আমার শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল। কিন্তু যদি তোমরা সতর্ক হয়ে আমার কথামত চল এবং বিশ্রামবারে শহরের ফটক দিয়ে কোন বোঝা না আন বরং বিশ্রামবারে কোন কাজ না করে দিনটা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখ, তাহলে তোমাদের রাজারা দায়ূদের সিংহাসনে বসে রাজত্ব করবে। তারা, তাদের রাজকর্মচারীরা এবং যিহূদার লোকেরা ও যিরূশালেমের বাসিন্দারা রথে ও ঘোড়ায় চড়ে শহরের ফটক দিয়ে যাওয়া-আসা করবে; এই শহর কখনও জনশূন্য হবে না। যিহূদার শহরগুলো ও যিরূশালেমের আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে বিন্যামীন এলাকা এবং উঁচু ও নীচু পাহাড়ী এলাকা থেকে আর নেগেভ থেকে লোকেরা আসবে এবং সদাপ্রভুর ঘরে পোড়ানো-উৎসর্গ, পশু-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ, ধূপ ও ধন্যবাদ-উৎসর্গের জিনিস আনবে। কিন্তু যদি তোমরা আমার কথা না শোন এবং বিশ্রামবার আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে না রাখ আর সেই দিনে বোঝা নিয়ে যিরূশালেমের ফটকের মধ্য দিয়ে ঢোক, তবে যিরূশালেমের সমস্ত ফটকে আমি আগুন জ্বালাব আর তা তার দুর্গগুলো পুড়িয়ে ফেলবে। সেই আগুন কেউ নিভাতে পারবে না।’ ” সদাপ্রভু যিরমিয়ের কাছে এই কথা প্রকাশ করলেন, “তুমি কুমারের বাড়ীতে যাও, সেখানে আমি তোমার সংগে কথা বলব।” সেইজন্য আমি কুমারের বাড়ীতে গেলাম এবং দেখলাম সে তার চাকে কাজ করছে। আমি আরও দেখলাম সে মাটি দিয়ে যে পাত্রটা তৈরী করছিল তা তার হাতে নষ্ট হয়ে গেল; তখন সে তা নিয়ে তার ইচ্ছামত আর একটা পাত্র তৈরী করল। তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “আমি বলছি, ‘হে ইস্রায়েলের লোকেরা, আমি কি এই কুমারের মত তোমাদের সংগে ব্যবহার করতে পারি না? হে ইস্রায়েলের লোকেরা, কুমারের হাতের কাদার মতই তোমরা আমার হাতে আছ। “সেইজন্য এখন তুমি যিহূদার লোকদের ও যিরূশালেমের বাসিন্দাদের বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘দেখ, আমি তোমাদের জন্য বিপদের ব্যবস্থা করছি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে একটা পরিকল্পনা করছি। কাজেই তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের মন্দ পথ থেকে ফেরো ও তোমাদের চলাফেরা ও কাজ ভাল কর।’ কিন্তু তারা উত্তর দেবে, ‘কোন লাভ নেই। আমাদের পরিকল্পনা মতই আমরা চলব; আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের মন্দ অন্তরের একগুঁয়েমি অনুসারেই চলব।’ ” সেইজন্য সদাপ্রভু বলছেন, “জাতিদের মধ্যে খোঁজ করে দেখ, এর আগে এই রকম কথা কে শুনেছে? কুমারী ইস্রায়েল একটা জঘন্য কাজ করেছে। লেবাননের তুষার কি কখনও তার পাহাড়ের ঢালু জায়গা থেকে সম্পূর্ণ গলে যায়? দূর থেকে আসা তার ঠাণ্ডা জল বয়ে যাওয়া কি কখনও বন্ধ হয়ে যায়? কিন্তু আমার লোকেরা আমাকে ভুলে গিয়ে অসার প্রতিমার কাছে ধূপ জ্বালাচ্ছে। তারা ঠিক পথে উছোট খেয়ে সেই পুরানো পথে আর চলাফেরা করছে না। তারা ভাল রাস্তা ছেড়ে বিপথে চলেছে। সেইজন্য তাদের দেশ পতিত জমি এবং একটা স্থায়ী ঘৃণার জিনিস হয়ে থাকবে; যারা তার পাশ দিয়ে যাবে তারা অবাক হয়ে মাথা নাড়বে। তাদের শত্রুদের সামনে আমি পূবের বাতাসের মত তাদের ছড়িয়ে দেব; বিপদের দিনে আমি তাদের আমার মুখ নয় কিন্তু পিঠ দেখাব।” লোকেরা বলল, “চল, আমরা যিরমিয়ের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটি; কারণ পুরোহিতের কাছে আইন-কানুনের শিক্ষা, জ্ঞানীদের কাছে পরামর্শ ও নবীদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য তো আছেই। কাজেই এস, আমরা আমাদের মুখের কথা দিয়ে তাকে দোষী করি আর তার কথায় মনোযোগ না দিই।” হে সদাপ্রভু, আমার কথা শোন; আমার বিপক্ষেরা আমার বিরুদ্ধে যা বলেছে তাতে মনোযোগ দাও। ভালোর শোধ কি মন্দ দিয়ে করা হবে? কিন্তু তারা তো আমার জন্য গর্র্ত খুঁড়েছে। মনে করে দেখ, তোমার ক্রোধ যাতে তাদের উপর থেকে ফিরে যায় সেইজন্য আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের পক্ষ হয়ে কথা বলেছি। কাজেই তুমি তাদের সন্তানদের দুর্ভিক্ষের হাতে ছেড়ে দাও; তলোয়ারের হাতে তাদের তুলে দাও। তাদের স্ত্রীরা সন্তানহীনা ও বিধবা হোক; তাদের পুরুষ লোকেরা মড়কে মারা যাক, আর যুদ্ধে তলোয়ারের আঘাতে তাদের যুবকেরা কাটা পড়ুক। তুমি তাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ আক্রমণকারী নিয়ে আসলে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে কান্না শোনা যাক, কারণ আমাকে ধরবার জন্য তারা গর্ত খুঁড়েছে এবং আমার পায়ের জন্য ফাঁদ লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু হে সদাপ্রভু, আমাকে মেরে ফেলবার জন্য এই সব ষড়যন্ত্রের কথা তো তুমি জান। তাদের এই অন্যায় তুমি ক্ষমা কোরো না কিম্বা তোমার চোখের সামনে থেকে তাদের পাপ মুছে ফেলো না। তোমার সামনে তারা পড়ে যাক; তোমার ক্রোধের সময়ে তুমি তাদের শাস্তি দাও। সদাপ্রভু বললেন, “তুমি গিয়ে কুমারের কাছ থেকে একটা মাটির পাত্র কিনে আন। তোমার সংগে লোকদের কয়েকজন বৃদ্ধ নেতা ও বয়স্ক পুরোহিতদের নাও। তারপর খাপ্‌রা-ফটকে ঢুকবার পথের কাছে বিন্‌-হিন্নোম উপত্যকায় যাও। আমি তোমাকে যে কথা বলব তা সেখানে ঘোষণা কর। সেই কথা হল, ‘হে যিহূদার রাজারা ও যিরূশালেমের লোকেরা, আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু যে কথা বলছি তা শোন। আমি এই জায়গার উপরে এমন বিপদ আনব যে, যারা তা শুনবে তাদের প্রত্যেকের কান শিউরে উঠবে। এর কারণ হল, তারা আমাকে ত্যাগ করেছে এবং এই জায়গা দেব-দেবতাদের জায়গা বানিয়েছে; তারা এমন সব দেবতাদের কাছে ধূপ জ্বালিয়েছে যাদের কথা তাদের পূর্বপুরুষেরা কিম্বা যিহূদার রাজারা কখনও জানত না। এছাড়া এই জায়গা তারা নির্দোষীদের রক্ত দিয়ে পূর্ণ করেছে। তারা বাল দেবতার কাছে উৎসর্গ হিসাবে তাদের সন্তানদের আগুনে পোড়াবার জন্য বাল দেবতার পূজার উঁচু স্থান তৈরী করেছে, কিন্তু আমি তা করতে আদেশ দিই নি কিম্বা বলি নি এবং তা আমার মনেও আসে নি। কাজেই এমন দিন আসছে যখন লোকে এই জায়গাকে আর তোফৎ কিম্বা বিন্‌-হিন্নোম উপত্যকা বলবে না, বলবে জবাই করবার উপত্যকা। “‘এই জায়গায় আমি যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের পরিকল্পনা নষ্ট করব। যারা তাদের প্রাণ নিতে চায় তাদের সেই শত্রুদের দিয়ে যুদ্ধের মধ্যে আমি তাদের মেরে ফেলব এবং তাদের মৃতদেহ আকাশের পাখী ও বুনো পশুদের খাবার হিসাবে দেব। আমি এই শহরটাকে ধ্বংস করব এবং ঠাট্টার পাত্র করব; যারা তার পাশ দিয়ে যাবে তারা সবাই তার সব আঘাত দেখে ভয় পাবে ও ঠাট্টা করবে। তাদের শত্রুরা, অর্থাৎ যারা তাদের মেরে ফেলতে চায় তারা যখন তাদের ঘেরাও করবে তখনকার সেই কষ্টের সময়ে আমি তাদের ছেলেমেয়েদের মাংস তাদেরই খেতে বাধ্য করব এবং তারা একে অন্যের মাংস খাবে।’ আমি এই জায়গা ও এখানকার বাসিন্দাদের প্রতি যা করব তা এই: আমি এই শহরকে তোফতের মত করব; যিরূশালেমের সব ঘর-বাড়ী ও যিহূদার রাজাদের ঘর-বাড়ী, অর্থাৎ যে সব ঘর-বাড়ীর ছাদের উপরে সূর্য, চাঁদ ও তারাগুলোর উদ্দেশে তারা ধূপ জ্বালাত এবং দেব-দেবতার উদ্দেশে ঢালন-উৎসর্গের জিনিস ঢেলে দিত সেই সব ঘর-বাড়ী তোফতের মত অশুচি হবে।’ ” যিরমিয় তারপর তোফৎ থেকে ফিরে আসলেন। সদাপ্রভু তাঁকে তাঁর বাক্য বলবার জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলেন। তিনি সদাপ্রভুর ঘরের উঠানে দাঁড়িয়ে সমস্ত লোকদের বললেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘শোন, আমি এই শহর ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোর উপর যে সব বিপদ ঘটাবার কথা বলেছি আমি সেই সবই তাদের উপর ঘটাব, কারণ তারা ঘাড় শক্ত করেছে এবং আমার কথা শোনে নি।’ ” যিরমিয় যখন নবী হিসাবে এই সব কথা বলছিলেন তখন সদাপ্রভুর ঘরের প্রধান কর্মচারী ইম্মেরের ছেলে পুরোহিত পশ্‌হূর সেই কথা শুনলেন। তিনি নবী যিরমিয়কে মারধর করে সদাপ্রভুর ঘরের কাছে উঁচু জায়গায় বিন্যামীন-ফটকের ধারে হাড়িকাঠে বন্ধ করে রাখলেন। তার পরের দিন পশ্‌হূর সেই হাড়িকাঠ থেকে যিরমিয়কে খুলে আনলেন। তখন যিরমিয় তাঁকে বললেন, “সদাপ্রভুর দেওয়া আপনার নাম পশ্‌হূর নয় বরং মাগোর-মিষাবীব (যার মানে ‘চারদিকে ভীষণ ভয়’), কারণ সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তোমাকে তোমার নিজের ও তোমার বন্ধুবান্ধবদের কাছে ভীষণ ভয়ের পাত্র করব। তুমি নিজের চোখে যুদ্ধে শত্রুদের হাতে তাদের মরে যেতে দেখবে। সমস্ত যিহূদাকে আমি বাবিলের রাজার হাতে তুলে দেব। সে তাদের অনেককে বাবিলে নিয়ে যাবে আর বাকী লোকদের মেরে ফেলবে। আমি এই শহরের সমস্ত ধন-সম্পদ, অর্থাৎ তাদের ক্ষেতের শস্য ও সব দামী জিনিস এবং যিহূদার রাজাদের সমস্ত ধনভাণ্ডার তাদের শত্রুদের হাতে তুলে দেব। তারা সেগুলো লুট করে বাবিলে নিয়ে যাবে। আর হে পশ্‌হূর, তোমাকে ও তোমার বাড়ীর সকলকে বন্দী করে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তুমি মরবে ও তোমাকে কবর দেওয়া হবে; তোমার যে সব বন্ধুদের কাছে তুমি নবী হিসাবে কথা বলবার সময় মিথ্যা কথা বলেছ তাদের সকলেরই একই দশা হবে।’ ” হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে ভুলিয়েছ বলে আমার এই অবস্থা হয়েছে; তুমি আমার চেয়ে শক্তিশালী বলে তুমি জয়ী হয়েছ। আমি সারা দিন ঠাট্টার পাত্র হয়েছি; প্রত্যেকে আমাকে ঠাট্টা করে। যতবার আমি কথা বলি ততবারই ভীষণ অনিষ্ট ও ধ্বংসের কথা চিৎকার করে প্রচার করি। কাজেই সদাপ্রভুর বাক্যের জন্য সারা দিন আমাকে অপমান ও ভীষণ নিন্দা করা হয়। কিন্তু যদি আমি বলি, “আমি তাঁর কথা উল্লেখ করব না কিম্বা তাঁর নাম করে আর কিছু বলব না,” তবে তাঁর কথা আমার অন্তরে যেন জ্বলন্ত আগুন হয়ে হাড়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে থাকে। আমি তা ভিতরে রাখতে রাখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি; সত্যিই আমি আর তা ভিতরে রাখতে পারি না। আমার চারদিকে ভীষণ ভয়, কারণ আমি এই সব কথা অনেক লোকদের ফিস্‌ ফিস্‌ করে বলতে শুনি, “তার নামে নালিশ কর; চল, আমরা তার নামে নালিশ করি।” আমার সমস্ত বন্ধুরা এই বলে আমার পিছ্‌লে পড়বার অপেক্ষায় আছে, “হয়তো আমরা তাকে ঠকাতে পারব, আর তখন আমরা তার উপর জয়ী হব আর প্রতিশোধ নেব।” কিন্তু সদাপ্রভু শক্তিশালী যোদ্ধার মত আমার সংগে সংগে আছেন, তাই আমার অত্যাচারীরা উছোট খাবে এবং জয়ী হবে না। তারা বিফল হবে এবং খুব লজ্জিত হবে; তাদের অসম্মান কেউ কখনও ভুলে যাবে না। হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তুমি তো সৎ লোকদের পরীক্ষা করে থাক এবং প্রত্যেকের অন্তর ও মনের কথা জান। আমার শত্রুদের উপর তোমার প্রতিশোধ নেওয়া আমাকে দেখতে দাও, কারণ আমি আমার নালিশ তোমাকেই জানিয়েছি। তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে গান কর। সদাপ্রভুর প্রশংসা কর। তিনি দুষ্টদের হাত থেকে অভাবীদের প্রাণ উদ্ধার করেন। আমি যেদিন জন্মেছিলাম সেই দিনটা অভিশপ্ত হোক। যেদিন আমার মা আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন সেই দিনটা আশীর্বাদ বিহীন হোক। “আপনার একটি ছেলে হয়েছে,” এই সংবাদ দিয়ে যে আমার বাবাকে আনন্দিত করেছিল সে অভিশপ্ত হোক। সদাপ্রভু মমতা না করে যে সব শহরের সর্বনাশ করেছিলেন ঐ লোকটি সেগুলোর মত হোক। সে সকালে শুনুক কান্নাকাটির শব্দ আর দুপুরে শুনুক বিপদের চিৎকার; কারণ মায়ের গর্ভে থাকতে সে আমাকে মেরে ফেলে নি। তাতে আমার মা-ই আমার কবর হতেন, আর তাঁর পেট চিরকাল বড় হয়েই থাকত। কষ্ট আর দুঃখ দেখবার জন্য এবং লজ্জায় আমার জীবন কাটাবার জন্য কেন আমি গর্ভ থেকে বের হয়ে আসলাম? পরে সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল। সেই সময় রাজা সিদিকিয় মল্কিয়ের ছেলে পশ্‌হূরকে ও মাসেয়ের ছেলে পুরোহিত সফনিয়কে যিরমিয়ের কাছে এই কথা বলতে পাঠালেন, “বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর আমাদের সংগে যুদ্ধ করছে; কাজেই আপনি আমাদের জন্য সদাপ্রভুর কাছে অনুরোধ করুন যেন সে আমাদের কাছ থেকে ফিরে যায়। হয়তো সদাপ্রভু আমাদের জন্য আগের মত আশ্চর্য কাজ করবেন।” যিরমিয় তাদের বললেন, “আপনারা রাজা সিদিকিয়কে বলুন যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘বাবিলের রাজা ও যে বাবিলীয়েরা দেয়ালের বাইরে থেকে তোমাকে আক্রমণ করছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য তোমার হাতে যে অস্ত্রশস্ত্র আছে সেগুলোর মুখ আমি ঘুরিয়ে দেব এবং শহরের মধ্যে সেগুলো জড়ো করব। আমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমি অসন্তুষ্ট হয়ে, ক্রোধে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে নিজেই তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। এই শহরে যারা বাস করে, তা সে মানুষ হোক বা পশু হোক, আমি তাদের মড়ক দিয়ে আঘাত করব, তাতে তারা মারা যাবে। তারপর আমি মড়ক, যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বেঁচে থাকা যিহূদার রাজা সিদিকিয়কে, তার রাজকর্মচারীদের এবং এই শহরের সমস্ত লোকদের বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের হাতে ও যারা তাদের মেরে ফেলতে চায় সেই শত্রুদের হাতে তুলে দেব। নবূখদ্‌নিৎসর তাদের মেরে ফেলবে; সে তাদের কোন মায়া, মমতা বা দয়া দেখাবে না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” সদাপ্রভু যিরমিয়কে বললেন, “তুমি লোকদের বল যে, সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘দেখ, আমি তোমাদের সামনে জীবনের পথ ও মৃত্যুর পথ রাখছি। যে কেউ এই শহরে থাকবে সে যুদ্ধে কিম্বা দুর্ভিক্ষে কিম্বা মড়কে মারা যাবে; কিন্তু যে কেউ বাইরে বের হয়ে গিয়ে তোমাদের আক্রমণকারী বাবিলীয়দের হাতে নিজেকে তুলে দেবে সে বাঁচবে; সে তার প্রাণ বাঁচাতে পারবে। আমি এই শহরের মংগল নয় কিন্তু ক্ষতি করবার জন্য মন স্থির করেছি। বাবিলের রাজার হাতে এটা দেওয়া হবে, আর সে আগুন দিয়ে এটা পুড়িয়ে দেবে।’ “এছাড়াও যিহূদার রাজবংশকে আমার এই বাক্য শুনতে বল, ‘হে দায়ূদের বংশ, আমি সদাপ্রভু বলছি, তোমরা প্রত্যেক দিন সকালবেলা ন্যায়বিচার করবে। যাকে লুট করা হয়েছে তাকে তার অত্যাচারীর হাত থেকে উদ্ধার করবে; তা না হলে তোমাদের মন্দ কাজের জন্য আমার ক্রোধ বের হয়ে আগুনের মত জ্বলবে, কেউ তা নিভাতে পারবে না। হে যিরূশালেম, যদিও তুমি উপত্যকার উপরে পাথুরে মালভূমিতে আছ তবুও আমি তোমার বিরুদ্ধে। তুমি বলে থাক যে, তোমাদের বিরুদ্ধে কেউ আসতে পারবে না, কেউ তোমাদের আশ্রয়ে ঢুকতে পারবে না; কিন্তু আমি তোমার কাজের পাওনা অনুসারে তোমাকে শাস্তি দেব। আমি তোমার বনগুলোতে আগুন জ্বালাব; সেই আগুন তোমার চারপাশের সব কিছু পুড়িয়ে ফেলবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” সদাপ্রভু আমাকে যিহূদার রাজবাড়ীতে গিয়ে এই সংবাদ ঘোষণা করতে বললেন, “দায়ূদের সিংহাসনে বসা হে যিহূদার রাজা, আপনি, আপনার রাজকর্মচারীরা এবং আপনার যে সব লোকেরা এই ফটকের মধ্য দিয়ে আসেন, আপনারা সকলে সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন। সদাপ্রভু বলছেন, ‘যা ন্যায্য ও ঠিক তোমরা তা-ই কর। যাকে লুট করা হয়েছে তাকে তার অত্যাচারীর হাত থেকে উদ্ধার কর। বিদেশী, অনাথ ও বিধবাদের প্রতি কোন অন্যায় বা অত্যাচার কোরো না এবং এই জায়গায় নির্দোষের রক্তপাত কোরো না। তোমরা যদি এই আদেশ পালন কর তবে তোমাদের রাজারা দায়ূদের সিংহাসনে বসে রাজত্ব করবে এবং তাদের রাজকর্মচারী ও লোকজন নিয়ে রথে ও ঘোড়ায় চড়ে এই রাজবাড়ীর ফটক দিয়ে ভিতরে আসবে। কিন্তু যদি তোমরা এই সব আদেশ পালন না কর তবে আমি সদাপ্রভু আমার নিজের নামেই শপথ করে বলছি যে, এই রাজবাড়ী ধ্বংস হয়ে যাবে।’ ” যিহূদার রাজবাড়ীর সমস্ত জায়গা সম্বন্ধে সদাপ্রভু বলছেন, “যদিও তুমি আমার কাছে গিলিয়দের মত এবং লেবাননের চূড়ার মত তবুও আমি তোমাকে নিশ্চয়ই মরু-এলাকার মত কিম্বা লোকশূন্য শহরগুলোর মত করব। আমি তোমার বিরুদ্ধে ধ্বংসকারীদের পাঠাব; তাদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র থাকবে। তারা তোমার ভাল ভাল এরস গাছগুলো কেটে আগুনে ফেলবে। “বিভিন্ন জাতির লোকেরা এই শহরের পাশ দিয়ে যাবার সময় একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘এই মহা শহরের প্রতি কেন সদাপ্রভু এমন করলেন?’ তার উত্তর হবে, ‘কারণ তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর স্থাপন করা ব্যবস্থা ত্যাগ করে দেব-দেবতার পূজা ও সেবা করছিল।’ ” তোমরা মৃত রাজার জন্য কেঁদো না কিম্বা বিলাপ কোরো না; তার চেয়ে বরং যিনি বন্দী হয়ে দূরে গেছেন তাঁর জন্য খুব বেশী করে কাঁদ, কারণ তিনি আর কখনও ফিরে আসবেন না কিম্বা তাঁর জন্মদেশও আর দেখতে পাবেন না। তিনি হলেন যোশিয়ের ছেলে শল্লুম, যিনি তাঁর বাবার পরে যিহূদার রাজা হয়েছিলেন কিন্তু এই জায়গা ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর সম্বন্ধে সদাপ্রভু বলছেন, “সে কখনও ফিরে আসবে না। যেখানে সে বন্দী হয়ে আছে সেই জায়গাতেই সে মারা যাবে; সে এই দেশ আর দেখতে পাবে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “ধিক্‌ তাকে, যে লোক তার বাড়ী অন্যায় দিয়ে তৈরী করে আর অবিচার দিয়ে তার উপরের তলার কামরাগুলো তৈরী করে। ধিক্‌ তাকে, যে লোক কোন কিছু না দিয়ে তার দেশের লোকদের খাটায় এবং তাদের পরিশ্রমের মজুরি দেয় না। ধিক্‌ তাকে, যে লোক বলে, ‘আমি নিজের জন্য একটা বড় বাড়ী তৈরী করব যার উপরের তলায় থাকবে বড় বড় কামরা। আমি তার মধ্যে বড় বড় জানলা বসাব এবং তার তক্তাগুলো এরস কাঠ দিয়ে তৈরী করব আর তা লাল রং দিয়ে সাজাব।’ অনেক অনেক এরস গাছ থাকলেই কি তা তোমাকে রাজা বানাবে? তোমার বাবা যদিও ভালভাবেই খাওয়া-দাওয়া করত তবুও যা ঠিক ও ন্যায্য সে তা করত বলে তার সময়ে সব কিছু ভাল চলেছিল। সে দুঃখী ও অভাবীদের পক্ষ নিত বলে সব কিছু ভাল চলেছিল। সদাপ্রভুকে জানা মানেই ঐ সব কাজ করা। কিন্তু তোমার চোখ ও মন রয়েছে কেবল অন্যায় লাভ, নির্দোষের রক্তপাত এবং অত্যাচার ও জুলুম করবার উপর।” কাজেই যিহূদার রাজা যোশিয়ের ছেলে যিহোয়াকীমের বিষয়ে সদাপ্রভু বলছেন, “লোকে তার জন্য একে অন্যের কাছে ‘হায় হায়’ বলে বিলাপ করবে না। তারা তার জন্য ‘হায় আমার প্রভু! হায় তাঁর জাঁকজমক! ’ বলেও বিলাপ করবে না। গাধাকে যেমন করে কবর দেওয়া হয় তেমনি করে তাকে কবর দেওয়া হবে; তাকে টেনে যিরূশালেমের ফটকের বাইরে ফেলে দেওয়া হবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে যিরূশালেম, তুমি লেবাননে গিয়ে চিৎকার কর, তোমার গলার স্বর বাশনে শোনা যাক। তুমি অবারীম থেকে চিৎকার কর, কারণ তোমার সব প্রেমিকেরা চুরমার হয়ে গেছে। তুমি যখন ভাল অবস্থায় ছিলে তখন আমি তোমাকে সাবধান করেছিলাম, কিন্তু তুমি বলেছিলে, ‘আমি শুনব না।’ প্রথম থেকেই তোমার ব্যবহার এই রকম; তুমি আমার বাধ্য হও নি। বাতাস তোমার সব রাখালদের তাড়িয়ে নিয়ে যাবে আর তোমার প্রেমিকেরা বন্দী হয়ে দূরে যাবে। তখন তুমি তোমার সব দুষ্টতার জন্য লজ্জিত ও অপমানিত হবে। হে লেবাননের এরস কাঠের তৈরী বাড়ীতে বাসকারিণী, স্ত্রীলোকের প্রসব ব্যথার মত যন্ত্রণা যখন তোমার উপর আসবে তখন তুমি ভীষণ কাত্‌রাবে!” সদাপ্রভু বলছেন, “হে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের ছেলে যিহোয়াখীন, আমার জীবনের দিব্য, তুমি যদি আমার ডান হাতের সীলমোহরের আংটি হতে তবুও আমি তোমাকে খুলে ফেলে দিতাম। যারা তোমার প্রাণ নিতে চায়, যাদের তুমি ভয় পাও সেই বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর ও বাবিলীয়দের হাতে আমি তোমাকে তুলে দেব। আমি তোমাকে ও তোমাকে যে জন্ম দিয়েছে তোমার সেই মাকে অন্য দেশে, যেখানে তোমাদের কারও জন্ম হয় নি সেই দেশে ছুঁড়ে ফেলে দেব, আর তোমরা দু’জনে সেখানে মারা যাবে। তোমরা যে দেশে ফিরে আসতে চাইবে সেখানে কখনও ফিরে আসতে পারবে না।” এই যিহোয়াখীন কি এমন একটা তুচ্ছ ভাংগা পাত্র যাঁকে কেউ চায় না? কেন তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের তাঁদের অজানা একটা দেশে ছুঁড়ে ফেলা হবে? হে দেশ, দেশ, দেশ, সদাপ্রভুর বাক্য শোন। সদাপ্রভু বলছেন, “তুমি লেখ, এই লোকটির যেন কোন ছেলেমেয়ে নেই। সে তার জীবনকালে সফল হতে পারবে না আর তার কোন সন্তানও সফল হবে না। তাদের কেউ দায়ূদের সিংহাসনে বসবে না কিম্বা যিহূদা দেশের উপর রাজত্ব করবে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “ধিক্‌ সেই পালকদের, যারা আমার চারণ ভূমির মেষগুলোকে ধ্বংস করছে ও ছড়িয়ে দিচ্ছে।” সেইজন্য যে পালকেরা আমার লোকদের চরায় সেই পালকদের বিরুদ্ধে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা আমার পালের মেষগুলোকে ছড়িয়ে ফেলেছ এবং তাদের তাড়িয়ে দিয়েছ, তাদের কোন যত্ন কর নি; কাজেই তোমাদের অন্যায়ের জন্য আমি তোমাদের শাস্তি দেব। যে সব দেশে আমি আমার পালের মেষগুলোকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম সেখান থেকে আমি নিজেই তাদের বাদবাকীগুলোকে তাদের চারণ ভূমিতে ফিরিয়ে আনব; সেখানে তাদের বংশ বৃদ্ধি পাবে ও তারা সংখ্যায় বেড়ে উঠবে। আমি তাদের উপর এমন পালকদের নিযুক্ত করব যারা তাদের দেখাশোনা করবে; আমার মেষপাল আর ভয় পাবে না বা ব্যাকুল হবে না কিম্বা কোনটা হারিয়ে যাবে না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিনগুলো আসছে যখন আমি দায়ূদের বংশে একটা ন্যায়বান চারাকে তুলব; তিনি রাজা হয়ে জ্ঞানের সংগে রাজত্ব করবেন এবং দেশে সৎ ও ন্যায় কাজ করবেন। তাঁর সময়ে যিহূদা রক্ষা পাবে এবং ইস্রায়েল নিরাপদে বাস করতে পারবে। তাঁকে ‘সদাপ্রভু আমাদের নির্দোষিতা’ বলে ডাকা হবে। “কাজেই এমন দিন আসছে যখন লোকে আর বলবে না, ‘যিনি ইস্রায়েলীয়দের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য,’ বরং তারা বলবে, ‘যিনি ইস্রায়েলীয়দের উত্তর দেশে ও অন্যান্য দেশে দূর করে দিয়েছিলেন ও সেখান থেকে নিয়ে এসেছেন সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য।’ তারপর তারা নিজেদের দেশে বাস করবে।” পরে নবীদের সম্বন্ধে সদাপ্রভুর কথা শুনে আমার অন্তর যেন আমার মধ্যে ভেংগে পড়ছে আর আমার সমস্ত হাড় কাঁপছে। সদাপ্রভু ও তাঁর পবিত্র বাক্যের জন্য আমি মাতালের মত, আংগুর-রস খেয়ে ভীষণ মাতাল হওয়া লোকের মত হয়েছি। দেশ ব্যভিচারীদের দিয়ে ভরে গেছে; অভিশাপের দরুন দেশ শোক করছে এবং মরু-এলাকার চারণ ভূমি শুকিয়ে গেছে। লোকেরা মন্দ পথ ধরে চলছে আর তাদের ক্ষমতা অন্যায়ভাবে ব্যবহার করছে। সদাপ্রভু বলছেন, “নবী ও পুরোহিতেরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন হয়েছে; আমার ঘরে পর্যন্ত আমি তাদের দুষ্টতা দেখেছি। সেইজন্য তাদের পথ পিছল হবে; অন্ধকারে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে আর সেখানে তারা পড়ে যাবে। তাদের শাস্তি পাবার সময়ে আমি তাদের উপর বিপদ আনব। “শমরিয়ার নবীদের মধ্যে আমি এই জঘন্য ব্যাপার দেখেছি যে, তারা বাল দেবতার নামে নবী হিসাবে কথা বলে আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের বিপথে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া যিরূশালেমের নবীদের মধ্যে এই ভয়ংকর ব্যাপার দেখেছি যে, তারা ব্যভিচার করে এবং মিথ্যার মধ্যে জীবন কাটায়। তারা অন্যায়কারীদের হাত এমন শক্ত করে যার জন্য কেউ তার দুষ্টতা থেকে ফেরে না। তারা সবাই আমার কাছে সদোম ও ঘমোরার লোকদের মত। “সেইজন্য আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু নবীদের সম্বন্ধে বলছি, আমি তাদের তেতো খাবার ও বিষাক্ত জল খাওয়াব, কারণ যিরূশালেমের নবীদের কাছ থেকে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনতা সমস্ত দেশময় ছড়িয়ে গেছে।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “নবীরা যে কথা বলছে তা তোমরা শুনো না; তারা তোমাদের মনে মিথ্যা আশা জাগিয়েছে। তারা সদাপ্রভুর মুখ থেকে শুনে কথা বলে না বরং নিজেদের মনগড়া দর্শনের কথা বলে। যারা আমাকে তুচ্ছ করে তাদের কাছে সেই নবীরা এই কথা বলতে থাকে, ‘সদাপ্রভু বলছেন, তোমাদের শান্তি হবে’; আর যারা নিজেদের অন্তরের একগুঁয়েমিতে চলে তারা তাদের বলে, ‘তোমাদের কোন বিপদ হবে না।’ কিন্তু তাদের মধ্যে কে আমার বাক্য শুনবার ও বুঝবার জন্য আমার সামনে দাঁড়িয়েছে? কে আমার বাক্যে কান দিয়েছে বা তাতে মনোযোগ দিয়েছে? দেখ, আমার ক্রোধ ঝড়ের মত ফেটে পড়বে আর দুষ্টদের মাথার উপরে ঘুরে ঘুরে পড়বে ঘূর্ণিবাতাসের মত। আমার ক্রোধ আমার অন্তরের উদ্দেশ্য পুরোপুরিভাবে পূর্ণ না করা পর্যন্ত ফিরে যাবে না। তোমরা ভবিষ্যতে তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে। এই নবীদের আমি পাঠাই নি, তবুও তারা আগ্রহের সংগে তাদের সংবাদ লোকদের জানিয়েছে; আমি তাদের কোন কথা বলি নি, তবুও তারা কথা বলেছে। কিন্তু তারা যদি আমার সামনে দাঁড়াত, তাহলে আমার লোকদের কাছে তারা আমার বাক্যই ঘোষণা করত আর মন্দ পথ ও মন্দ কাজ থেকে তাদের ফিরাত।” সদাপ্রভু বলছেন, “আমি কি কেবল কাছেরই ঈশ্বর, দূরের ঈশ্বর নই? কেউ কি এমন গোপন জায়গায় লুকাতে পারে যেখানে আমি তাকে দেখতে পাব না? আমি কি স্বর্গ ও পৃথিবীর সব জায়গায় থাকি না?” “যে সব নবীরা আমার নাম নিয়ে মিথ্যা কথা বলে তাদের কথা আমি শুনেছি। তারা বলে, ‘আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি, একটা স্বপ্ন দেখেছি।’ আর কত দিন এই নবীরা তাদের অন্তরের মিথ্যা থেকে মিথ্যা কথা বলবে? তারা মনে করে যেমন করে তাদের পূর্বপুরুষেরা বাল দেবতার পূজা করে আমার নাম ভুলে গিয়েছিল তেমনি করে তাদের যে সব স্বপ্নের কথা তারা সকলের কাছে বলে সেগুলো দিয়ে তারা আমার লোকদের আমার নাম ভুলিয়ে দেবে। যে নবী স্বপ্ন দেখেছে সে তার স্বপ্নের কথা স্বপ্ন হিসাবেই বলুক, কিন্তু যে আমার বাক্য পেয়েছে সে তা বিশ্বস্তভাবে বলুক; কারণ শস্যের কাছে খড়ের কোন দাম নেই। আমার বাক্য কি আগুনের মত নয়? যে হাতুড়ী পাথর টুকরা টুকরা করে আমার বাক্য কি সেই হাতুড়ীর মত নয়? “সেইজন্য যে নবীরা অন্যদের কাছ থেকে আমার বাক্য চুরি করে আমি তাদের বিরুদ্ধে। হ্যাঁ, আমি সেই নবীদেরই বিরুদ্ধে যারা নিজেদের জিভ্‌ নাড়ায় আর ঘোষণা করে, ‘সদাপ্রভু বলছেন।’ সত্যিই আমি সেই নবীদের বিরুদ্ধে যারা মিথ্যা স্বপ্নের কথা বলে। তারা সেগুলো বলে আর তাদের গর্বভরা মিথ্যা কথা দিয়ে আমার লোকদের বিপথে নিয়ে যায়। আমি কিন্তু তাদের পাঠাই নি কিম্বা আদেশও দিই নি। তারা এই লোকদের এক তিলও উপকার করতে পারে না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “এই লোকেরা কিম্বা কোন নবী বা পুরোহিত যখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘সদাপ্রভুর বাক্য কি?’ তখন তুমি তাদের বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা আমার বোঝা এবং আমি তোমাদের ফেলে দেব।’ যদি কোন নবী বা পুরোহিত কিম্বা অন্য কেউ দাবি করে, ‘সদাপ্রভুর বাক্য এই,’ তবে আমি সেই লোক ও তার পরিবারকে শাস্তি দেব। “হে আমার লোকেরা, তোমরা প্রত্যেকে যেন তোমাদের বন্ধু বা আত্মীয়কে জিজ্ঞাসা কর, ‘সদাপ্রভু কি উত্তর দিয়েছেন?’ কিম্বা ‘সদাপ্রভু কি বলেছেন?’ কিন্তু তোমরা যেন আর কখনও না বল, ‘সদাপ্রভুর বাক্য এই,’ কারণ প্রত্যেক লোক নিজের কথাকে ঈশ্বরের বাক্য বানায়। এইভাবে তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের, তোমাদের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর বাক্য বাঁকা কর।” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “যখন তাদের মধ্যে কেউ নবী হিসাবে কথা বলে তখন তাকে জিজ্ঞাসা কর, ‘আপনার কাছে সদাপ্রভু কি উত্তর দিয়েছেন?’ কিম্বা ‘সদাপ্রভু কি বলেছেন?’ “হে আমার লোকেরা, যদি তোমরা আমার কথা অমান্য করে দাবি কর, ‘সদাপ্রভুর বাক্য এই,’ তাহলে আমি নিশ্চয়ই আমার সামনে থেকে তোমাদের তুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেব এবং যে শহর আমি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলাম সেই শহরও আমার সামনে থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেব। আমি তোমাদের উপরে চিরস্থায়ী অপমান ও লজ্জা আনব যা লোকে ভুলে যাবে না।” বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যিহোয়াকীমের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াখীন ও যিহূদার রাজকর্মচারী, কারিগর ও কর্মকারদের যিরূশালেম থেকে বাবিলে বন্দী করে নিয়ে যাবার পরে সদাপ্রভু আমাকে তাঁর ঘরের সামনে রাখা দুই টুকরি ডুমুর ফল দেখালেন। একটা টুকরিতে ছিল প্রথমে পাকা ডুমুরের মত খুব ভাল ডুমুর, আর অন্যটাতে ছিল খুব খারাপ ডুমুর, এত খারাপ যে, খাওয়া যায় না। সদাপ্রভু আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যিরমিয়, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” উত্তরে আমি বললাম, “ডুমুর; ভালগুলো খুবই ভাল, কিন্তু খারাপগুলো এত খারাপ যে, সেগুলো খাওয়া যায় না।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছি, যিহূদা থেকে যে বন্দীদের আমি এখান থেকে বাবিলীয়দের দেশে পাঠিয়েছি তাদের আমি এই ভাল ডুমুরের মতই মনে করব। আমি তাদের মংগলের জন্য তাদের উপর নজর রাখব এবং এই দেশে তাদের ফিরিয়ে আনব। আমি তাদের গড়ে তুলব, ভেংগে ফেলব না; আমি তাদের লাগিয়ে দেব, তুলে ফেলব না। আমিই যে সদাপ্রভু তা জানবার অন্তর আমি তাদের দেব। তারা আমার লোক হবে আর আমি তাদের ঈশ্বর হব, কারণ সমস্ত অন্তর দিয়েই তারা আমার কাছে ফিরে আসবে। “কিন্তু এই খারাপ ডুমুর, যা এত খারাপ যে, খাওয়া যায় না, সেগুলোর মত করে আমি যিহূদার রাজা সিদিকিয়, তার রাজকর্মচারী ও যিরূশালেমের যে লোকেরা দেশে রয়ে গেছে কিম্বা মিসরে বাস করছে তাদের সংগে খারাপ ব্যবহার করব। আমি তাদের যেখানেই দূর করে দিই না কেন সেখানে আমি তাদের করে তুলব ভয়ের পাত্র, পৃথিবীর সমস্ত জাতির বিরক্তির কারণ, একটা টিট্‌কারির পাত্র, একটা চল্‌তি কথা ও একটা ঠাট্টার পাত্র। লোকে তাদের নাম নিয়ে অভিশাপ দেবে। আমি তাদের ও তাদের পূর্বপুরুষদের যে দেশ দিয়েছি সেই দেশে যে পর্যন্ত না তারা একেবারে ধ্বংস হয়ে যায় সেই পর্যন্ত আমি তাদের মধ্যে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়ক পাঠাব।” যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের চতুর্থ বছরে, অর্থাৎ বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের প্রথম বছরে যিহূদার সমস্ত লোকদের সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল। সেইজন্য নবী যিরমিয় সমস্ত যিহূদার লোক ও যিরূশালেমের সমস্ত বাসিন্দাদের বললেন, “যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা আমোনের রাজত্বের তেরো বছর থেকে এই পর্যন্ত, অর্থাৎ এই তেইশ বছর ধরে সদাপ্রভুর বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হয়েছে আর আমি বার বার তোমাদের তা বলেছি, কিন্তু তোমরা তাতে কান দাও নি। “সদাপ্রভু যদিও তাঁর সব দাসদের, অর্থাৎ নবীদের বার বার তোমাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন তবুও তোমরা শোন নি কিম্বা মনোযোগও দাও নি। তাঁরা সদাপ্রভুর এই কথা বলেছিলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে এখন তোমাদের মন্দ পথ ও মন্দ কাজ থেকে ফেরো, তাহলে যে দেশ আমি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলাম সেই দেশে তোমরা চিরকাল থাকতে পারবে। দেব-দেবতাদের সেবা ও পূজা করবার জন্য তাদের পিছনে যেয়ো না; তোমাদের হাতের তৈরী জিনিস দিয়ে আমাকে অসন্তুষ্ট করে তুলো না। তাহলে আমি তোমাদের অমংগল করব না।’ “এখন সদাপ্রভু বলছেন, ‘কিন্তু তোমরা আমার কথা শোন নি। তার বদলে তোমাদের হাতের তৈরী জিনিস দিয়ে আমাকে অসন্তুষ্ট করে নিজেদের উপর অমংগল ডেকে এনেছ।’ “সেইজন্য সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা আমার কথা শোন নি। কাজেই আমি উত্তরের সব জাতিগুলোকে ও আমার দাস বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে ডেকে আনব। এই দেশ ও তার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে এবং চারপাশের সব জাতিদের বিরুদ্ধে আমি তাদের আনব। আমি সেই লোকদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেব এবং ভীষণ ভয়ের ও ঠাট্টার পাত্র করব; তাদের দেশ আমি চিরস্থায়ী ধ্বংসের স্থান করব। আমি তাদের মধ্য থেকে আমোদ ও আনন্দের শব্দ, বর ও কনের গলার স্বর, জাঁতার শব্দ ও বাতির আলো দূর করে দেব। এই দেশটা ধ্বংসস্থান ও পতিত জমি হয়ে যাবে আর এই সব জাতিরা সত্তর বছর ধরে বাবিলের রাজার দাস হয়ে থাকবে। কিন্তু সত্তর বছর পূর্ণ হলে পর আমি বাবিলের রাজা ও তার জাতিকে তাদের অন্যায়ের জন্য শাস্তি দেব এবং বাবিলীয়দের দেশকে চিরদিনের জন্য ধ্বংসস্থান করব। আমি সেই সব দেশের বিরুদ্ধে যে সব কথা বলেছি যা এই বইয়ে লেখা আছে, অর্থাৎ সমস্ত জাতির বিরুদ্ধে যিরমিয় নবী হিসাবে যে কথা বলেছে তা আমি ঐ দেশের উপরে আনব। বাবিলীয়েরা অনেক জাতি ও বড় বড় রাজাদের দাস হবে; তাদের সমস্ত কাজ অনুসারেই আমি তাদের ফল দেব।’ ” ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি আমার হাত থেকে আংগুর রসে, অর্থাৎ আমার ক্রোধে পূর্ণ এই পেয়ালাটা নাও এবং যে সব জাতির কাছে আমি তোমাকে পাঠাব তাদের তা খেতে দাও। তারা তা খেয়ে টলতে থাকবে এবং আমি যে যুদ্ধ তাদের মধ্যে পাঠিয়ে দেব তার দরুন পাগল হয়ে যাবে।” তখন আমি সদাপ্রভুর হাত থেকে পেয়ালাটা নিলাম এবং তিনি যে সব জাতির কাছে আমাকে পাঠালেন তাদের খাওয়ালাম। আমি যিরূশালেম ও যিহূদার শহরগুলোকে এবং তার রাজাদের ও রাজকর্মচারীদের খাওয়ালাম, যেন তারা আজ যেমন আছে সেই রকম ধ্বংসের, ভীষণ ভয়ের, ঠাট্টার ও অভিশাপের পাত্র থাকে। এছাড়া আমি তা খাওয়ালাম মিসরের রাজা ফরৌণ ও তার রাজকর্মচারীদের, তার দেশের নেতাদের ও তার সব লোকদের; সেখানকার সব বিদেশীদের; ঊষ দেশের সব রাজাদের; পলেষ্টীয়দের সব রাজাদের, অর্থাৎ অস্কিলোন, গাজা, ইক্রোণ ও অস্‌দোদের বাকী অংশের রাজাদের; ইদোম, মোয়াব ও অম্মোনের লোকদের; সোর ও সীদোনের সব রাজাদের; সমুদ্রের ওপারের দেশের রাজাদের; দদান, টেমা, বূষ দেশের লোকদের; মাথার দু’পাশের চুল কাটা লোকদের; আরবের সব রাজাদের; মরু-এলাকায় বাসকারী বিদেশী সব রাজাদের; সিম্রী, এলম ও মাদীয়দের সব রাজাদের; কাছের ও দূরের একের পর এক উত্তরের সব রাজাদের। মোট কথা, আমি পৃথিবীর সমস্ত জাতিদের তা খাওয়ালাম। এদের সকলের পরে শেশকের, অর্থাৎ বাবিলের রাজাও তা খাবে। তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তাদের বল যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে যুদ্ধ পাঠাচ্ছি; তোমরা আমার ক্রোধের পেয়ালা থেকে খাও, মাতাল হও, বমি কর, পড়ে যাও এবং আর উঠো না।’ কিন্তু তারা যদি তোমার হাত থেকে পেয়ালা নিয়ে খেতে অস্বীকার করে তবে তাদের বলবে যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমাদের খেতেই হবে। দেখ, আমার নিজের শহরকেই আমি প্রথমে ধ্বংস করতে যাচ্ছি, তাহলে তোমরা কি শাস্তি না পেয়েই থাকবে? তোমরা শাস্তি পাবেই পাবে, কারণ পৃথিবীর সব লোকদের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ডেকে আনছি। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ “এখন তুমি তাদের বিরুদ্ধে নবী হিসাবে এই সব কথা বল, ‘সদাপ্রভু উপর থেকে গর্জন করবেন; তাঁর পবিত্র বাসস্থান থেকে তিনি তাঁর গলার স্বর শোনাবেন এবং তাঁর দেশের বিরুদ্ধে খুব জোরে গর্জন করবেন। যারা আংগুর মাড়াই করে তাদের মতই তিনি পৃৃথিবীতে বাসকারী সকলের বিরুদ্ধে চিৎকার করবেন। পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত সেই শব্দ শোনা যাবে, কারণ সদাপ্রভু জাতিদের বিরুদ্ধে নালিশ আনবেন। তিনি সমস্ত মানুষের বিচার করবেন এবং তলোয়ারের হাতে দুষ্টদের তুলে দেবেন।’ ” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, এক জাতি থেকে আর এক জাতিতে বিপদ ছড়িয়ে পড়ছে; পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে একটা ভীষণ ঝড় উঠছে।” তখন সদাপ্রভু যাদের মেরে ফেলবেন তারা পৃথিবীর এক সীমা থেকে অন্য সীমা পর্যন্ত সব জায়গায় পড়ে থাকবে। তাদের জন্য কেউ শোক করবে না কিম্বা তাদের কেউ জড়োও করবে না বা কবরও দেবে না, কিন্তু তারা হবে মাটিতে পড়ে থাকা গোবরের মত। হে পালকেরা, তোমরা কাঁদ, বিলাপ কর; হে পালের নেতারা, তোমরা ধুলায় গড়াগড়ি দাও, কারণ তোমাদের জবাই করে ফেলবার সময় এসেছে; তোমরা সুন্দর একটা মাটির পাত্রের মত চুরমার হয়ে যাবে। পালকদের পালাবার উপায় থাকবে না; পালের নেতারা কোথাও চলে যেতে পারবে না। পালকদের কান্না আর পালের নেতাদের বিলাপ শোন, কারণ সদাপ্রভু তাদের চারণ ভূমি নষ্ট করে ফেলছেন। সদাপ্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধের দরুন শান্তিপূর্ণ মাঠগুলো পতিত জমি হয়ে থাকবে। তিনি সিংহের মত করেই তাঁর জায়গা ছেড়ে আসবেন; তাতে অত্যাচারীদের রাগের জন্য ও সদাপ্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধের জন্য তাদের দেশ ধ্বংসস্থান হয়ে যাবে। যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের প্রথম দিকে সদাপ্রভু যিরমিয়কে বললেন, “আমি সদাপ্রভু বলছি, তুমি আমার ঘরের উঠানে গিয়ে দাঁড়াও এবং যিহূদার শহরগুলো থেকে যে সব লোক উপাসনার জন্য আমার ঘরে আসে তাদের সবাইকে আমি তোমাকে যে সব কথা বলতে আদেশ দিয়েছি তার প্রত্যেকটি কথা বল, একটা কথাও বাদ দিয়ো না। হয়তো তারা শুনবে এবং প্রত্যেকে তার মন্দ পথ থেকে ফিরে আসবে। তাহলে তাদের অন্যায় কাজের জন্য আমি তাদের উপর যে বিপদ আনবার পরিকল্পনা করেছি তা আর আনব না। তুমি তাদের এই কথা বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা এতদিন আমার কথা শোন নি এবং তোমাদের সামনে আমি যে আইন-কানুন রেখেছি তা পালন কর নি; এছাড়া আমি বারে বারে আমার যে দাসদের, অর্থাৎ নবীদের তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি তাদের কথাও শোন নি। তোমরা যদি এই রকম করতেই থাক তবে আমি এই ঘরটাকে শীলোর মত করব এবং এমন করব যাতে পৃথিবীর সমস্ত জাতি এই শহরের নাম নিয়ে অভিশাপ দেয়।’ ” সদাপ্র্রভুর ঘরে যিরমিয় যখন এই সব কথা বললেন তখন পুরোহিত, নবী ও সব লোকেরা তা শুনল। কিন্তু সদাপ্রভুর আদেশ মত যিরমিয় সব কথা বলা যেই শেষ করলেন তখনই পুরোহিত, নবী ও সমস্ত লোকেরা তাঁকে ধরে বলল, “তোমাকে মরতে হবে। কেন তুমি সদাপ্রভুর নাম নিয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করছ যে, এই ঘর শীলোর মত হবে এবং এই শহরটা ধ্বংস ও জনশূন্য হবে?” এই বলে সব লোক সদাপ্রভুর ঘরে যিরমিয়কে ঘিরে ধরল। যিহূদার রাজকর্মচারীরা এই সব কথা শুনে রাজবাড়ী থেকে সদাপ্রভুর ঘরে আসলেন এবং সদাপ্রভুর ঘরের নতুন ফটকে ঢুকবার পথে বসলেন। তখন পুরোহিত ও নবীরা সেই রাজকর্মচারীদের ও সব লোকদের বললেন, “এই লোকটি মৃত্যুর শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, কারণ সে এই শহরের বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বলেছে; আর তোমরা নিজের কানেই তা শুনেছ।” তখন যিরমিয় সব রাজকর্মচারী ও সব লোকদের বললেন, “আপনারা এই ঘর ও শহরের বিরুদ্ধে যা শুনলেন সেই সব কথা বলতে সদাপ্রভুই আমাকে পাঠিয়েছেন। এখন আপনারা আপনাদের চলাফেরা ও কাজ সংশোধন করুন এবং আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা শুনুন। তাহলে সদাপ্রভু আপনাদের বিরুদ্ধে যে বিপদ পাঠাবার কথা বলেছেন তা আর পাঠাবেন না। দেখুন, আমি তো আপনাদের হাতেই রয়েছি; আপনারা যা ভাল ও ন্যায্য মনে করেন তা-ই আমার প্রতি করুন। তবে এটা নিশ্চয়ই জানবেন যে, আপনারা যদি আমাকে মেরে ফেলেন তবে নির্দোষের রক্তপাতের অন্যায় আপনারা নিজেদের উপরে এবং এই শহরের উপরে ও যারা এখানে বাস করে তাদের উপরে নিয়ে আসবেন; কারণ এই সব কথা আপনাদের শোনাবার জন্য সত্যিই সদাপ্রভু আমাকে পাঠিয়েছেন।” তখন রাজকর্মচারীরা ও সব লোকেরা পুরোহিত ও নবীদের বললেন, “এই লোকটি মৃত্যুর শাস্তির উপযুক্ত নয়। তিনি আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম করে আমাদের কাছে কথা বলেছেন।” এর পর দেশের বৃদ্ধ নেতাদের মধ্যে কয়েকজন এগিয়ে এসে জড়ো হওয়া সমস্ত লোকদের বললেন, “যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের সময়ে মোরেষ্টীয় মীখা নবী হিসাবে কথা বলতেন। তিনি যিহূদার লোকদের বলেছিলেন, ‘সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন যে, সিয়োনকে ক্ষেতের মত করে চাষ করা হবে, যিরূশালেম হবে ধ্বংসের স্তূপ আর উপাসনা-ঘরের পাহাড়টা ঘন ঝোপ-ঝাড়ে ঢাকা পড়বে।’ যিহূদার রাজা হিষ্কিয় কিম্বা যিহূদার অন্য কেউ কি মীখাকে মেরে ফেলেছিলেন? হিষ্কিয় কি সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করেন নি এবং তাঁর দয়া ভিক্ষা করেন নি? এতে সদাপ্রভু লোকদের উপর যে বিপদ পাঠাবার কথা বলেছিলেন তা আর পাঠান নি। কিন্তু আমরা তো নিজেদের উপর একটা ভীষণ বিপদ ডেকে আনছি।” কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের শময়িয়ের ছেলে ঊরিয় ছিলেন আর একজন যিনি সদাপ্রভুর নামে নবী হিসাবে কথা বলতেন। তিনিও যিরমিয়ের মত এই শহর ও এই দেশের বিরুদ্ধে একই রকম কথা বললেন। রাজা যিহোয়াকীম ও তাঁর সব সেনাপতি ও রাজকর্মচারীরা যখন ঊরিয়ের কথা শুনলেন তখন রাজা তাঁকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ঊরিয় সেই কথা শুনে ভয়ে মিসর দেশে পালিয়ে গেলেন। রাজা যিহোয়াকীম তখন অক্‌বোরের ছেলে ইল্‌নাথনকে এবং তাঁর সংগে আরও কয়েকজনকে মিসরে পাঠিয়ে দিলেন। তারা মিসর থেকে ঊরিয়কে নিয়ে এসে রাজা যিহোয়াকীমের কাছে নিয়ে গেল; রাজা তাঁকে তলোয়ার দিয়ে মেরে ফেলে তাঁর দেহ সাধারণ লোকদের কবরস্থানে ফেলে দিলেন। কিন্তু শাফনের ছেলে অহীকাম যিরমিয়ের পক্ষে ছিলেন, তাই যিরমিয়কে মেরে ফেলবার জন্য লোকদের হাতে দেওয়া হয় নি। যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের প্রথম দিকে সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হয়েছিল। সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তুমি কতগুলো চামড়ার ফিতা আর কাঠ দিয়ে একটা জোয়াল তৈরী করে তোমার ঘাড়ের উপর রাখবে। তারপর যে সব দূতেরা ইদোম, মোয়াব, অম্মোন, সোর ও সীদোনের রাজাদের কাছ থেকে যিরূশালেমে যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের কাছে এসেছে তাদের দিয়ে ঐ সব রাজাদের কাছে খবর পাঠাবে। তাদের মনিবদের একটা খবর দেবার জন্য বলবে যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাদের মনিবদের এই কথা বলতে বলছেন, ‘আমার মহাশক্তিতে এবং ক্ষমতাপূর্ণ হাতে আমি এই পৃথিবী ও তার উপরকার যে সব মানুষ ও পশু তৈরী করেছি, আর আমি যাকে উপযুক্ত মনে করি তার হাতে ক্ষমতা দিয়ে থাকি। এখন আমি তোমাদের সব দেশগুলো আমার দাস বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের হাতে তুলে দেব; এমন কি, বুনো পশুদেরও আমি তার অধীন করব। যতদিন না তার দেশের সময় আসে ততদিন পর্যন্ত সমস্ত জাতি তার, তার ছেলের ও তার নাতির দাস হবে; তারপর অনেক জাতি ও বড় বড় রাজারা তাকে তাদের অধীনে আনবে। “ ‘কিন্তু কোন জাতি বা রাজ্য যদি বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের দাস না হয় কিম্বা তার জোয়ালের নীচে কাঁধ না দেয় তবে আমি সেই জাতিকে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়ক দিয়ে শাস্তি দেব যে পর্যন্ত না আমি তার হাত দিয়ে সেই জাতিকে ধ্বংস করি। কাজেই তোমরা তোমাদের নবী, গণক, স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যতের কথা বলা লোক, মায়াবিদ্যাকারী কিম্বা তোমাদের যাদুকরদের কথা শুনো না; তারা তোমাদের বলে যে, তোমরা বাবিলের রাজার দাস হবে না। তারা মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী বলে, আর এর ফলে তোমরা তোমাদের দেশ থেকে দূর হয়ে যাবে; আমি তোমাদের তাড়িয়ে দেব এবং তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কোন জাতি বাবিলের রাজার জোয়ালের নীচে ঘাড় নীচু করে এবং তার দাস হয় তবে আমি সেই জাতিকে তার নিজের দেশে থাকতে দেব যাতে তারা সেখানে চাষ ও বাস করতে পারে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” যিহূদার রাজা সিদিকিয়কে আমি সেই একই সংবাদ দিয়ে বললাম, “বাবিলের রাজার জোয়ালের নীচে আপনারা আপনাদের ঘাড় নীচু করুন; তাঁর ও তাঁর লোকদের দাস হন, তাতে আপনি বাঁচবেন। যে জাতি বাবিলের রাজার দাস হবে না তার বিরুদ্ধে সদাপ্রভু যা বলেছেন সেইমত কেন আপনি ও আপনার লোকেরা যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়কে মারা যাবেন? সেই নবীদের কথা শুনবেন না যারা আপনাদের বলে, ‘আপনারা কখনও বাবিলের রাজার দাস হবেন না’; তারা আপনাদের কাছে মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী বলে। সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তাদের পাঠাই নি। তারা আমার নাম করে মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী বলে। সেইজন্য আমি তোমাদের ও তোমাদের কাছে যারা ভবিষ্যদ্বাণী বলে সেই নবীদের দূর করে দেব আর তোমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।’ ” তখন আমি পুরোহিতদের ও সমস্ত লোকদের বললাম যে, সদাপ্রভু বলছেন, “যে নবীরা তোমাদের বলে, ‘খুব শীঘ্রই সদাপ্রভুর ঘরের জিনিসগুলো বাবিল থেকে ফিরিয়ে আনা হবে,’ তাদের কথা তোমরা শুনো না। তারা তোমাদের কাছে মিথ্যা ভবিষ্যদ্বাণী বলছে। তাদের কথা শুনো না। তোমরা বাবিলের রাজার সেবা কর, তাতে বাঁচবে। এই শহরটা ধ্বংস হবে কেন? যদি তারা নবীই হয়ে থাকে আর সদাপ্রভুর বাক্য তাদের কাছে থাকে তবে সদাপ্রভুর ঘরের, যিহূদার রাজার বাড়ীর ও যিরূশালেমের যে সব জিনিসপত্র এখনও বাকী রয়ে গেছে তা যাতে বাবিলে নিয়ে যাওয়া না হয় সেইজন্য সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর কাছে তারা মিনতি করুক। সেই একই বছরে, যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের প্রথম দিকে, অর্থাৎ চতুর্থ বছরের পঞ্চম মাসে গিবিয়োন শহরের অসূরের ছেলে নবী হনানিয় সদাপ্রভুর ঘরে পুরোহিতদের ও সমস্ত লোকদের সামনে যিরমিয়কে এই কথা বলল, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি বাবিলের রাজার জোয়াল ভেংগে ফেলতে যাচ্ছি। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর সদাপ্রভুর ঘরের যে জিনিসপত্র এখান থেকে বাবিলে সরিয়ে নিয়ে গেছে তা আমি দু’বছরের মধ্যে এখানে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। এছাড়া আমি যিহোয়াকীমের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াখীনকে এবং যিহূদার অন্যান্য যে সব বন্দী বাবিলে গেছে তাদেরও এই জায়গায় ফিরিয়ে আনব, কারণ আমি বাবিলের রাজার জোয়াল ভেংগে ফেলব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” তখন নবী যিরমিয় পুরোহিতদের ও যে সব লোক সদাপ্রভুর ঘরে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের সামনে নবী হনানিয়ের কথার উত্তর দিলেন। তিনি বললেন, “আমেন, সদাপ্রভু যেন তা-ই করেন। সদাপ্রভুর ঘরের জিনিসপত্র এবং বাবিল থেকে সমস্ত বন্দীদের এখানে ফিরিয়ে এনে সদাপ্রভু আপনার বলা ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করুন। কিন্তু আমি আপনার ও সমস্ত লোকদের কাছে যে কথা বলতে চাই তা শুনুন। আপনার ও আমার আগে পুরানো দিনের যে নবীরা ছিলেন, তাঁরা অনেক দেশ ও বড় বড় রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, বিপদ ও মড়কের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু যে নবী শান্তির ভবিষ্যদ্বাণী বলেন তাঁর কথা যখন পূর্ণ হবে কেবল তখনই জানা যাবে যে, তাঁকে সত্যিই সদাপ্রভু পাঠিয়েছিলেন।” এর পর নবী হনানিয় নবী যিরমিয়ের ঘাড় থেকে জোয়ালটা নিয়ে ভেংগে ফেললেন। তারপর তিনি সমস্ত লোকদের সামনে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন, ‘এইভাবে আমি দুই বছরের মধ্যে সমস্ত জাতির ঘাড় থেকে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের জোয়াল ভেংগে ফেলব।’ ” তখন নবী যিরমিয় সেখান থেকে চলে গেলেন। হনানিয় জোয়ালটা ভেংগে ফেলবার কিছুদিন পর সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “তুমি গিয়ে হনানিয়কে বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি কাঠের জোয়াল ভেংগে ফেলেছ কিন্তু তার জায়গায় দেওয়া হবে লোহার জোয়াল। আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, এই সব জাতি যাতে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের দাস হয় সেইজন্য আমি তাদের ঘাড়ে লোহার জোয়াল চাপিয়ে দেব, আর তারা তার সেবা করবেই করবে। এমন কি, আমি তাকে বুনো পশুদের উপরেও কর্তা করব।’ ” তখন নবী যিরমিয় নবী হনানিয়কে বললেন, “হনানিয়, শুনুন। সদাপ্রভু আপনাকে পাঠান নি, কিন্তু আপনি এই জাতিকে মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করাচ্ছেন। কাজেই সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তোমাকে পৃথিবীর উপর থেকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছি। এই বছরেই তুমি মারা যাবে, কারণ তুমি সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা প্রচার করেছ।’ ” সেই বছরের সপ্তম মাসে নবী হনানিয় মারা গেলেন। বন্দীদের মধ্যে বেঁচে থাকা বৃদ্ধ নেতাদের, পুরোহিতদের ও নবীদের এবং অন্য যে সব লোকদের নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেম থেকে বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের কাছে নবী যিরমিয় যিরূশালেম থেকে একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন। রাজা যিহোয়াখীন, তাঁর মা, রাজকর্মচারীরা, যিহূদা ও যিরূশালেমের নেতারা, কারিগর ও কর্মকারেরা বন্দী হয়ে যিরূশালেম থেকে যাবার পরে এই চিঠি লেখা হয়েছিল। শাফনের ছেলে ইলিয়াসা ও হিল্কিয়ের ছেলে গমরিয়কে যিহূদার রাজা সিদিকিয় রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের কাছে পাঠিয়েছিলেন, আর তাদেরই হাতে যিরমিয় চিঠিখানা দিয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল: ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু যাদের বন্দী হিসাবে যিরূশালেম থেকে বাবিলে পাঠিয়েছেন তাদের সকলের কাছে বলছেন, “তোমরা ঘর-বাড়ী তৈরী করে বাস কর; বাগান করে তার ফল খাও। বিয়ে করে ছেলে ও মেয়ের জন্ম দাও; তোমাদের ছেলে ও মেয়েদের বিয়ে দাও যাতে তাদেরও ছেলেমেয়ে হয়। সেখানে তোমাদের সংখ্যা বাড়াবে, কমাবে না। এছাড়া যে শহরে আমি তোমাদের বন্দী হিসাবে নিয়ে গেছি সেখানকার মংগলের চেষ্টা কর। এর জন্য আমার কাছে প্রার্থনা কর, কারণ যদি সেই শহরের মংগল হয় তবে তোমাদেরও মংগল হবে। তোমাদের মধ্যেকার নবী ও গণকেরা যেন তোমাদের না ঠকায়। তারা যে সব স্বপ্ন দেখে তাতে তোমরা মনোযোগ দিয়ো না। তারা আমার নাম করে মিথ্যা কথা বলে। আমি সদাপ্রভু তাদের পাঠাই নি। “বাবিল সম্বন্ধে যে সত্তর বছরের কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হলে পর আমি তোমাদের দিকে মনোযোগ দেব; আমি যে মংগল করবার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তা পূর্ণ করব, অর্থাৎ তোমাদের এই জায়গায় ফিরিয়ে আনব। তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি; তা তোমাদের মংগলের জন্য, ক্ষতির জন্য নয়। সেই পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে। তখন তোমরা আমাকে ডাকবে ও আমার কাছে এসে প্রার্থনা করবে, আর আমি তোমাদের কথা শুনব। যখন তোমরা আমাকে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী হবে তখন আমাকে জানতে পারবে। তোমরা আমাকে জানতে পারবে, আর আমি তোমাদের বন্দীদশা থেকে ফিরিয়ে আনব। যে সব জাতি ও জায়গার মধ্যে আমি তোমাদের দূর করে দিয়েছি সেখান থেকে আমি তোমাদের জড়ো করব। যে জায়গা থেকে আমি তোমাদের বন্দী করে নিয়ে গেছি আমি সেখানেই তোমাদের ফিরিয়ে আনব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” আপনারা হয়তো বলবেন, “সদাপ্রভু বাবিলে আমাদের জন্য আমাদের মধ্য থেকে নবীদের তুলেছেন,” কিন্তু দায়ূদের সিংহাসনে বসা রাজার বিষয়ে এবং এই শহরের বাদবাকী সমস্ত লোকদের বিষয়ে, অর্থাৎ আপনাদের দেশের লোক যারা আপনাদের সংগে বন্দী হয়ে যায় নি তাদের সকলের বিষয়ে সদাপ্রভু বলছেন, “আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়ক পাঠিয়ে দেব এবং আমি তাদের এমন খারাপ ডুমুরের মত করব যা পচা বলে খাওয়া যায় না। আমি যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়ক নিয়ে তাদের পিছনে তাড়া করব এবং পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের কাছে তাদের ভয়ের পাত্র করে তুলব। যে সব জাতির মধ্যে আমি তাদের তাড়িয়ে দেব তাদের কাছে তাদের করে তুলব ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও ঘৃণার পাত্র। তাদের অবস্থা দেখে লোকেরা হতভম্ব হবে ও তাদের নাম অভিশাপ হিসাবে ব্যবহার করবে। এর কারণ হল, যে কথা আমি বারে বারে আমার দাসদের, অর্থাৎ নবীদের দিয়ে তাদের কাছে বলে পাঠিয়েছি তা তারা শোনে নি। “সেইজন্য তোমরা বন্দীরা, যাদের আমি যিরূশালেম থেকে বাবিলে পাঠিয়ে দিয়েছি, তোমরা সবাই আমার কথা শোন। কোলায়ের ছেলে আহাব ও মাসেয়ের ছেলে সিদিকিয়, যারা আমার নাম করে তোমাদের কাছে মিথ্যা কথা বলছে তাদের সম্বন্ধে আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমি বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের হাতে তাদের তুলে দেব, আর সে তোমাদের চোখের সামনেই তাদের মেরে ফেলবে। বাবিলে থাকা যিহূদার সমস্ত বন্দীরা তাদের কথা মনে করে এই অভিশাপ ব্যবহার করবে, ‘সদাপ্রভু তোমাকে সিদিকিয় ও আহাবের মত করুন, যাদের বাবিলের রাজা আগুনে পুড়িয়েছিলেন,’ কারণ তারা ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে জঘন্য কাজ করেছে; তারা প্রতিবেশীদের স্ত্রীদের সংগে ব্যভিচার করেছে এবং আমি তাদের যা বলতে বলি নি তারা আমার নাম করে সেই সব মিথ্যা কথা বলেছে। আমি তা জানি এবং আমি তার সাক্ষী। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু যিরমিয়কে নিহিলামীয় শময়িয়কে বলতে বললেন যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “তুমি নিজের নামে যিরূশালেমের সব লোকদের কাছে, মাসেয়ের ছেলে পুরোহিত সফনিয়ের কাছে এবং অন্য সব পুরোহিতদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছ। তুমি সফনিয়কে লিখেছ, ‘সদাপ্রভু তোমাকে যিহোয়াদার জায়গায় পুরোহিত নিযুক্ত করেছেন যাতে সদাপ্রভুর ঘরের ভার তোমার উপর থাকে। কোন পাগল যদি নবীর মত কাজ করে তবে হাড়িকাঠ ও গলায় লোহার বেড়ী দিয়ে তাকে তোমার বন্ধ করা উচিত। কাজেই অনাথোতের যিরমিয় যখন তোমাদের কাছে নবীর মত কথা বলছে তখন তাকে তুমি শাস্তি দাও নি কেন? সে তো বাবিলে আমাদের কাছে এই খবর পাঠিয়েছে যে, অনেক দিন আমাদের এখানে থাকতে হবে। সেইজন্য আমরা যেন ঘর-বাড়ী তৈরী করে এখানে বাস করি এবং বাগান করে তার ফল ভোগ করি।’ ” পুরোহিত সফনিয় কিন্তু সেই চিঠিটা নবী যিরমিয়ের কাছে পড়লেন। তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “তুমি সমস্ত বন্দীদের কাছে এই খবর পাঠিয়ে দাও যে, নিহিলামীয় শময়িয়ের বিষয়ে সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি শময়িয়কে পাঠাই নি, তবুও সে তোমাদের কাছে নিজেকে নবী হিসাবে দেখিয়ে মিথ্যা কথায় তোমাদের বিশ্বাস করিয়েছে। আমি নিশ্চয়ই নিহিলামীয় শময়িয় ও তার বংশধরদের শাস্তি দেব। এই জাতির মধ্যে তার কেউ থাকবে না এবং আমি আমার লোকদের জন্য যে সব মংগল করব তা-ও সে দেখতে পাবে না, কারণ সে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রচার করেছে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” সদাপ্রভুর কাছ থেকে এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছি, আমি তোমাকে যে সমস্ত কথা বলেছি তা সব তুমি একটা বইয়ে লিখে রাখ, কারণ এমন দিন আসছে যখন আমি আমার লোক ইস্রায়েল ও যিহূদার অবস্থা ফিরাব এবং যে দেশ আমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলাম সেই দেশে তাদের ফিরিয়ে আনব, আর তা তাদের দখলে থাকবে।” ইস্রায়েল ও যিহূদা সম্বন্ধে সদাপ্রভু এই কথা বললেন, “আমি সদাপ্রভু বলছি, শান্তির চিৎকার নয় বরং ভীষণ ভয়ের চিৎকার শোনা গেছে। তোমরা জিজ্ঞাসা করে দেখ, পুরুষ কি গর্ভে সন্তান ধরতে পারে? তাহলে কেন আমি প্রত্যেকটি শক্তিশালী পুরুষকে প্রসব যন্ত্রণা ভোগ করা স্ত্রীলোকের মত পেটের উপর হাত রাখতে ও সকলের মুখ মুত্যুর মত ফ্যাকাশে দেখতে পাচ্ছি? হায়, সেই দিনটা কি ভয়ংকর হবে! সেই রকম আর কোন দিন হবে না। তখন হবে যাকোবের কষ্টের সময়, কিন্তু তা থেকে তাকে উদ্ধার করা হবে। “আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, সেই দিন আমি তাদের ঘাড় থেকে জোয়াল ভেংগে ফেলব এবং তাদের বাঁধন ছিঁড়ে ফেলব; বিদেশীরা আর তাদের দাস করে রাখবে না। তার বদলে তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ও তাদের রাজা দায়ূদের একজন বংশধরের সেবা করবে যাঁকে আমি তাদের রাজা করব। “কাজেই হে আমার দাস যাকোব, ভয় কোরো না; হে ইস্রায়েল, উৎসাহহীন হোয়ো না। আমি দূরের জায়গা থেকে তোমাকে ও বন্দী থাকা দেশ থেকে তোমার সন্তানদের নিশ্চয়ই উদ্ধার করব। যাকোব আবার শান্তি ও নিরাপদ বোধ করবে এবং কেউ তাকে ভয় দেখাবে না। আমি তোমার সংগে সংগে আছি এবং আমি তোমাকে উদ্ধার করব। যে সব জাতির মধ্যে আমি তোমাদের ছড়িয়ে রেখেছিলাম আমি তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করব, কিন্তু তোমাদের আমি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করব না। তবে একেবারে শাস্তি না দিয়েও আমি তোমাদের ছাড়ব না, কিন্তু ন্যায়বিচার দিয়ে আমি তোমাদের শাসন করব।” সদাপ্রভু বলছেন, “তোমার ঘা ভাল করা যায় না, তোমার আঘাত চিকিৎসার বাইরে। তোমার পক্ষে কথা বলবার কেউ নেই, তোমার ঘায়ের ওষুধ নেই, তোমার ভাল হওয়ার কোন আশাও নেই। তোমার সব প্রেমিকেরা তোমাকে ভুলে গেছে; তারা তোমার বিষয় ভাবে না। আমি তোমাকে শত্রুর আঘাতের মত আঘাত করেছি এবং নিষ্ঠুরের মত শাস্তি দিয়েছি, কারণ তোমার অন্যায় খুব বেশী আর তোমার পাপ অনেক। তোমার ঘা যখন ভাল করা যাবে না তখন তোমার ব্যথার জন্য কেন তুমি চিৎকার করছ? তোমার অনেক অন্যায় ও পাপের জন্যই আমি তোমার প্রতি এই সব করেছি। “কিন্তু যারা তোমাকে শেষ করে দিচ্ছে তাদের সবাইকে শেষ করে ফেলা হবে; তোমার সব শত্রুরা বন্দীদশায় যাবে। যারা তোমাকে লুট করছে তাদেরও লুট করা হবে; যারা তোমার জিনিস কেড়ে নিচ্ছে আমি তাদের জিনিসও কেড়ে নিতে দেব। লোকে তোমাকে বলে, ‘এই সেই দূর করে দেওয়া সিয়োন যার খোঁজ কেউ করে না, কিন্তু তবুও আমি তোমার স্বাস্থ্য ফিরাব এবং তোমার ঘা ভাল করে দেব।’ ” সদাপ্রভু বলছেন, “আমি যাকোবের বংশের লোকদের অবস্থা ফিরাব এবং তাদের উপরে মমতা করব। শহরটাকে তার ধ্বংসস্থানের উপরে আবার গড়ে তোলা হবে আর রাজবাড়ীটা দাঁড়িয়ে থাকবে তার আগের জায়গায়। সেগুলো থেকে বের হবে ধন্যবাদের গান আর আনন্দের শব্দ। আমি তাদের লোকসংখ্যা বাড়াব, তারা কমে যাবে না। আমি তাদের সম্মানিত করে তুলব, তাদের কেউ তুচ্ছ করবে না। তাদের ছেলেমেয়েরা আগের দিনের মতই হবে, আর আমার সামনেই তাদের সমাজ স্থাপিত হবে। যারা তাদের অত্যাচার করবে আমি তাদের শাস্তি দেব। তাদের নেতা হবে তাদেরই একজন; তাদের মধ্য থেকেই তাদের শাসনকর্তা উঠবে। আমি তাকে ডাকব আর সে আমার কাছে আসবে, কারণ আমি না ডাকলে কে সাহস করে আমার কাছে আসতে পারে? কাজেই তোমরা আমার লোক হবে আর আমি তোমাদের ঈশ্বর হব।” দেখ, সদাপ্রভুর ক্রোধ ঝড়ের মত ফেটে পড়বে, তাড়িয়ে নেওয়া একটা বাতাস ঘুরে ঘুরে দুষ্টদের মাথার উপরে নেমে আসবে। সদাপ্রভু যে পর্যন্ত না তাঁর অন্তরের উদ্দেশ্য পুরোপুরিভাবে কাজে লাগান সেই পর্যন্ত তাঁর ভয়ংকর ক্রোধ ফিরে যাবে না। ভবিষ্যতে তোমরা এটা বুঝতে পারবে। সদাপ্রভু বলছেন, “সেই সময় আমি ইস্রায়েলের সব গোষ্ঠীরই ঈশ্বর হব, আর তারা আমার লোক হবে।” সদাপ্রভু আরও বলছেন, “ইস্রায়েলীয়েরা যখন বিশ্রাম পাবার জন্য যাচ্ছিল তখন যারা যুদ্ধের হাত থেকে বেঁচেছিল তারা মরু-এলাকায় আমার দয়া পেয়েছিল।” সেই সময় ইস্রায়েলীয়েরা বলেছিল যে, সদাপ্রভু দূর থেকে তাদের দেখা দিয়েছিলেন। তখন সদাপ্রভু তাদের বলেছিলেন, “অশেষ ভালবাসা দিয়ে আমি তোমাদের ভালবেসেছি; অটল ভালবাসা দিয়ে আমি তোমাদের কাছে টেনেছি।” এখন তিনি বলছেন, “হে কুমারী ইস্রায়েল, আমি তোমাকে আবার গড়ে তুলব, তাতে তুমি আবার গড়ে উঠবে। তুমি আবার তোমার খঞ্জনি নেবে এবং আনন্দকারীদের সংগে নাচতে যাবে। শমরিয়ার পাহাড়ে আবার তুমি আংগুর ক্ষেত করবে; যারা ক্ষেত করবে তারা তার ফল খাবে। এমন একদিন আসবে যখন ইফ্রয়িমের পাহাড়ের উপরে পাহারাদারেরা চেঁচিয়ে বলবে, ‘চল, আমরা সিয়োনে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে যাই।’ ” সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা যাকোবের জন্য খুশী মনে গান কর; সবচেয়ে সেরা জাতির জন্য আনন্দধ্বনি কর। তোমরা প্রশংসা করে বল, ‘হে সদাপ্রভু, তোমার লোকদের, ইস্রায়েলের বেঁচে থাকা লোকদের উদ্ধার কর।’ দেখ, আমি উত্তরের দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের নিয়ে আসব আর পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে তাদের জড়ো করব। তাদের মধ্যে থাকবে অন্ধ, খোঁড়া, গর্ভবতী মা এবং প্রসব ব্যথা ওঠা স্ত্রীলোক; মস্ত বড় একটা দল ফিরে আসবে। তারা কাঁদতে কাঁদতে আসবে; আমি যখন তাদের ফিরিয়ে আনব তখন তারা প্রার্থনা করতে করতে আসবে। সমান পথ দিয়ে আমি জলের স্রোতের কাছে তাদের চালিয়ে নিয়ে আসব; সেখানে তারা উছোট খাবে না, কারণ আমি ইস্রায়েলের, অর্থাৎ ইফ্রয়িমের পিতা আর সে আমার প্র্রথম সন্তান। “হে জাতিরা, আমার বাক্য শোন; তোমরা দূরের দেশগুলোতে এই কথা ঘোষণা কর, ‘যিনি ইস্রায়েলকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি তাদের জড়ো করবেন এবং রাখালের মত করে তাঁর পাল রক্ষা করবেন।’ আমি সদাপ্রভুই যাকোবকে ছাড়িয়ে আনব এবং তাদের চেয়েও শক্তিশালীদের হাত থেকে তাদের মুক্ত করব। তারা এসে সিয়োনের উঁচু জায়গায় আনন্দধ্বনি করবে; আমার দেওয়া প্রচুর শস্য, নতুন আংগুর-রস, তেল, ভেড়া ও গরুর পালের বাচ্চা পেয়ে তারা আনন্দ করবে। তারা হবে ভাল করে জল দেওয়া বাগানের মত; তারা আর দুর্বল হবে না। কুমারী মেয়েরা নাচবে ও আনন্দ করবে, যুবক এবং বুড়ো লোকেরাও বাদ যাবে না। আমি তাদের শোক খুশীতে বদলে দেব; দুঃখের বদলে আমি তাদের দেব সান্ত্বনা ও আনন্দ। সব কিছু প্রচুর পরিমাণে দিয়ে আমি পুরোহিতদের পূর্ণ করব, আর আমার লোকেরা আমার আশীর্বাদে তৃপ্ত হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু বলছেন, “রামায় বিলাপ ও ভীষণ কান্নাকাটির শব্দ শোনা যাচ্ছে; রাহেল তার সন্তানদের জন্য কাঁদছে, কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না, কারণ তারা আর নেই। তোমার কান্নাকাটি থামাও ও চোখের জল মোছ, কারণ তোমার কাজের পুরস্কার তুমি পাবে। তারা শত্রুদের দেশ থেকে ফিরে আসবে। কাজেই তোমার ভবিষ্যতের জন্য আশা আছে। তোমার ছেলেমেয়েরা নিজেদের দেশে ফিরে আসবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “আমি অবশ্যই ইফ্রয়িমের এই কাতর স্বর শুনেছি, ‘তুমি আমাকে অবাধ্য বাছুরের মত করে শাসন করেছ, আর তার ফলে আমি শাস্তি পেয়েছি। আমাকে ফিরাও, তাতে আমি ফিরব, কারণ তুমিই আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু। আমি বিপথে যাওয়ার পর দুঃখিত হয়ে ফিরলাম, বুঝতে পেরে বুক চাপড়ালাম। আমি লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করলাম, কারণ আমার যুবা বয়সের পাপের জন্য আমাকে অসম্মানিত হতে হয়েছে।’ ইফ্রয়িম কি আমার প্রিয় পুত্র নয়? সে কি সেই সন্তান নয় যাকে দেখে আমি খুশী হই? যদিও আমি প্রায়ই তার বিরুদ্ধে কথা বলেছি কিন্তু তবুও আমি তাকে সব সময় মনে রাখি। সেইজন্যই আমার প্রাণ তার জন্য কাঁদে; তার জন্য আমার খুব মমতা আছে। “তোমরা রাস্তায় রাস্তায় পথ নির্দেশ-করা চিহ্ন দাও ও খুঁটি স্থাপন কর। যে পথে তুমি গিয়েছিলে সেই রাজপথের কথা মনে রাখ। হে কুমারী ইস্রায়েল, ফিরে এস, তোমার সব শহরে তুমি ফিরে এস। হে বিপথে যাওয়া কন্যা, আর কতকাল তুমি ঘুরে বেড়াবে? আমি সদাপ্রভু পৃথিবীতে একটা নতুন ব্যাপার ঘটিয়েছি, তা হল, স্ত্রীলোক পুরুষকে ঘেরাও করবে।” ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “আমি যখন বন্দীদশা থেকে লোকদের ফিরিয়ে আনব তখন যিহূদা দেশ ও তার শহরগুলোর লোকেরা আবার বলবে, ‘হে সততাপূর্ণ বাসস্থান, হে পবিত্র পাহাড়, সদাপ্রভু তোমাকে আশীর্বাদ করুন।’ সেই লোকেরা যিহূদা ও তার সব শহরগুলোতে বাস করবে এবং চাষীরা ও যারা তাদের পশুপাল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারাও সেখানে থাকবে। আমি ক্লান্তদের সতেজ করে তুলব এবং দুর্বলদের অন্তর শক্তিশালী করব।” তখন আমি জেগে উঠে চারপাশে তাকালাম। আমার ঘুম আমার কাছে আরামের ছিল। সদাপ্রভু বলছেন, “সময় আসছে যখন আমি ইস্রায়েল ও যিহূদা দেশে লোকদের ও পশুদের চারার মত লাগিয়ে দেব। আমি যেমন করে তাদের উপ্‌ড়ে, ভেংগে ও ছুঁড়ে ফেলবার দিকে এবং তাদের উপর ধ্বংস ও বিপদ আনবার দিকে খেয়াল রেখেছিলাম তেমনি করে তাদের গড়ে তুলবার ও চারার মত লাগিয়ে দেবার দিকেও খেয়াল রাখব। সেই সময় লোকেরা আর বলবে না, ‘বাবারা টক আংগুর খেয়েছে, কিন্তু সন্তানদের দাঁত টকে গেছে।’ তার বদলে প্রত্যেকে নিজের পাপের জন্যই মরবে; যে টক আংগুর খাবে তার নিজের দাঁতই টকে যাবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “সময় আসছে যখন আমি ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের জন্য একটা নতুন ব্যবস্থা স্থাপন করব। মিসর দেশ থেকে তাদের পূর্বপুরুষদের আমি হাত ধরে বের করে আনবার সময় তাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম এই নতুন ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থার মত হবে না। আমি যদিও তাদের স্বামীর মত ছিলাম তবুও তারা আমার ব্যবস্থা ভেংগেছিল। পরে আমি ইস্রায়েলীয়দের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করব তা হল, আমার আইন-কানুন আমি তাদের মনের মধ্যে রাখব এবং তাদের অন্তরেও তা লিখে রাখব। আমি তাদের ঈশ্বর হব আর তারা আমারই লোক হবে। নিজের প্রতিবেশীকে এবং নিজের ভাইকে কেউ এই বলে আর কখনও শিক্ষা দেবে না, ‘সদাপ্রভুকে চিনতে শেখ,’ কারণ সবাই আমাকে চিনবে। সেইজন্য আমি তাদের অন্যায় ক্ষমা করব, তাদের পাপ আর কখনও মনে রাখব না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” যিনি দিনের বেলা সূর্যকে আর রাতের বেলা চাঁদ ও তারাকে আলো দেবার জন্য হুকুম দেন, যিনি সমুদ্রকে তোলপাড় করেন যাতে তার ঢেউগুলো গর্জন করে, যাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তিনি বলছেন, “যদি এই নিয়মগুলো আমার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় তবে ইস্রায়েলীয়েরাও জাতি হিসাবে আমার সামনে থেকে শেষ হয়ে যাবে। যদি উপরের মহাকাশকে মাপা যায় এবং নীচে পৃথিবীর ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় তবে ইস্রায়েলীয়েরা যা করেছে তার জন্য আমি তাদের অগ্রাহ্য করতে পারি। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু বলছেন, “সেই সময় আসছে যখন আমার জন্য হননেল-দুর্গ থেকে কোণার ফটক পর্যন্ত এই শহরটা আবার গড়ে তোলা হবে। মাপের দড়ি সেখান থেকে সোজা গারেব পাহাড় পর্যন্ত টানা হবে এবং তারপর ঘুরে গোয়াতে যাবে। গোটা উপত্যকাটা যেখানে মৃতদেহ ও ছাই ফেলা হয় এবং পূর্ব দিকে ঘোড়া-ফটকের কোণা পর্যন্ত কিদ্রোণ উপত্যকার সমস্ত মাঠ সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখা হবে। শহরটাকে আর কখনও উপ্‌ড়ে ফেলা বা ধ্বংস করা হবে না।” যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের দশম বছরে, অর্থাৎ নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হয়েছিল। বাবিলের রাজার সৈন্যদল তখন যিরূশালেম ঘেরাও করছিল এবং যিরমিয় যিহূদার রাজবাড়ীর পাহারাদারদের উঠানে বন্দী ছিলেন। তিনি সেখানে ছিলেন, কারণ যিহূদার রাজা সিদিকিয় এই কথা বলে তাঁকে বন্দী করেছিলেন, “তুমি এই কথা বলে ভবিষ্যদ্বাণী করছ যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি এই শহরকে বাবিলের রাজার হাতে তুলে দিতে যাচ্ছি এবং সে এটা দখল করবে। যিহূদার রাজা সিদিকিয় বাবিলের রাজার হাত থেকে রেহাই পাবে না বরং তাদের রাজার হাতে তাকে অবশ্যই তুলে দেওয়া হবে। বাবিলের রাজার মুখোমুখি হয়ে সে কথা বলবে এবং নিজের চোখে তাকে দেখবে। বাবিলের রাজা সিদিকিয়কে বাবিলে নিয়ে যাবে এবং যে পর্যন্ত না আমি তার দিকে মনোযোগ দেব সেই পর্যন্ত সে সেখানেই থাকবে। সেইজন্য বাবিলীয়দের সংগে যুদ্ধ করলেও তোমরা সফল হবে না।’ ” সেই সময় যিরমিয় বলেছিলেন, “সদাপ্রভু আমাকে বললেন যে, আমার কাকা শল্লুমের ছেলে হনমেল আমার কাছে এসে বলবে, ‘অনাথোতে আমার যে জমিটা আছে তুমি সেটা কেনো, কারণ নিকট আত্মীয় হিসাবে সেটা কেনার অধিকার তোমার।’ তখন সদাপ্রভুর কথামতই আমার কাকার ছেলে হনমেল পাহারাদারদের উঠানে আমার কাছে এসে বলল, ‘বিন্যামীন এলাকার অনাথোতে আমার যে জমি আছে সেটা তুমি কেনো। এটা মুক্ত করবার ও দখল করবার অধিকার যখন তোমার তখন তুমিই সেটা নিজের জন্য কেনো।’ “আমি জানতাম এটা সদাপ্রভুরই বাক্য; কাজেই আমার কাকার ছেলে হনমেলের কাছ থেকে আমি অনাথোতের সেই জমিটা কিনলাম এবং একশো সাতাশি গ্রাম রূপা আমি তাকে ওজন করে দিলাম। আমি দলিলে স্বাক্ষর করলাম, সীলমোহর করলাম ও সাক্ষী রাখলাম এবং দাঁড়িপাল্লায় সেই রূপা ওজন করে দিলাম। আমি দু’টা দলিলই নিলাম- নিয়ম ও শর্ত লেখা সীলমোহর করা একটা ও সীলমোহর না করা আর একটা। তারপর আমি আমার কাকার ছেলে হনমেলের সামনে ও যে সাক্ষীরা দলিলে স্বাক্ষর করেছিল তাদের ও পাহারাদারদের উঠানে বসা সমস্ত যিহূদীদের সামনে সেই দলিলটা নেরিয়ের ছেলে বারূককে দিলাম। এই নেরিয় মহসেয়ের ছেলে। কারণ এই দেশে ঘর-বাড়ী, জায়গা-জমি ও আংগুর ক্ষেত আবার কেনা-বেচা চলবে। আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ “জমি কেনার দলিলটা নেরিয়ের ছেলে বারূককে দেবার পর আমি সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলাম, ‘হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমি তোমার মহাশক্তি ও ক্ষমতাপূর্ণ হাত দিয়ে মহাকাশ ও পৃথিবী তৈরী করেছ। তোমার পক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তুমি হাজার হাজার জনকে তোমার অটল ভালবাসা দেখিয়ে থাক এবং পিতাদের পাপের শাস্তি তুমি তাদের পরে তাদের সন্তানদের দিয়ে থাক। হে মহান ও শক্তিশালী ঈশ্বর, তোমার নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু; তোমার উদ্দেশ্য মহান ও তোমার সব কাজ শক্তিপূর্ণ। মানুষের সব চালচলনের দিকে তোমার চোখ খোলা রয়েছে; তুমি প্রত্যেকজনকে তার চালচলনের ও কাজের ফল দিয়ে থাক। তুমি মিসর দেশে অনেক চিহ্ন দেখিয়েছিলে ও আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করেছিলে এবং আজও পর্যন্ত ইস্রায়েল ও সমস্ত মানুষের মধ্যে সেই সব করে চলেছ, আর তাতে তুমি সুনাম লাভ করেছ। তুমি চিহ্ন ও আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ দেখিয়ে এবং শক্তিশালী ও ক্ষমতাপূর্ণ হাত বাড়িয়ে ভীষণ ভয়ের সংগে তোমার লোক ইস্রায়েলকে সেখান থেকে বের করে এনেছিলে। যে দেশে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই সেই দেশ দেবার কথা তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করেছিলে এবং তা তাদের দিয়েছিলে। তারা এসে তা অধিকার করেছিল, কিন্তু তারা তোমার কথা শোনে নি আর তোমার আইন-কানুন মত চলে নি; তুমি যা করতে তাদের আদেশ দিয়েছিলে তার কিছুই তারা করে নি। কাজেই এই সমস্ত বিপদ তুমি তাদের উপর এনেছ। শহরটা নিয়ে নেবার জন্য কেমন করে দেয়ালের সংগে লাগিয়ে ঢিবি তৈরী করা হচ্ছে তা তুমি দেখ। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ এবং মড়কের মধ্য দিয়ে শহরটা আক্রমণকারী বাবিলীয়দের হাতে যাবে। তুমি তো দেখতে পাচ্ছ যে, তুমি যা বলেছিলে তা-ই হয়েছে, কিন্তু হে প্রভু সদাপ্রভু, যদিও শহরটা বাবিলীয়দের হাতে যাবে তবুও তুমি আমাকে বলেছিলে যে, আমি যেন রূপা দিয়ে জমিটা কিনি এবং সেই কাজের সাক্ষী রাখি।’ ” পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “আমি সদাপ্রভু, সমস্ত মানুষের ঈশ্বর। কোন কিছু করা কি আমার পক্ষে অসম্ভব? কাজেই আমি এই শহরটা বাবিলীয়দের ও তাদের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছি। সে এটা দখল করবে। যে বাবিলীয়েরা শহরটা আক্রমণ করছে তারা শহরে ঢুকে তাতে আগুন লাগিয়ে দেবে। যে সব বাড়ী-ঘরের ছাদের উপরে লোকেরা বাল দেবতার উদ্দেশে ধূপ জ্বালিয়ে এবং অন্যান্য দেব-দেবতার উদ্দেশে ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে তারা সেই সব বাড়ী-ঘর সুদ্ধ শহরটা পুড়িয়ে দেবে। “ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা ছোটকাল থেকে আমার চোখে কেবল মন্দ ছাড়া আর কিছু করে নি; সত্যিই ইস্রায়েলের লোকেরা তাদের হাতের তৈরী জিনিস দিয়ে আমাকে কেবল অসন্তুষ্টই করেছে। যেদিন এই শহরটা তৈরী হয়েছিল সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত সেটা আমার অসন্তোষ ও ক্রোধ এমনভাবে জাগিয়ে তুলেছে যে, আমার চোখের সামনে থেকে আমি ওটা সরিয়ে দেবই, কারণ ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা, তাদের সব রাজা ও রাজকর্মচারীরা, পুরোহিত ও নবীরা এবং যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকেরা তাদের সমস্ত মন্দ কাজের দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে। তারা আমার দিকে পিঠ ফিরিয়েছে, মুখ নয়; যদিও আমি বারে বারে তাদের শিক্ষা দিয়েছি তবুও তারা আমার শাসন মানে নি, গ্রহণও করে নি। আমার ঘরে তারা তাদের জঘন্য প্রতিমাগুলো বসিয়ে তা অশুচি করেছে। তারা মোলক দেবতার উদ্দেশে তাদের ছেলেমেয়েদের উৎসর্গ করবার জন্য বিন্‌-হিন্নোম উপত্যকায় বাল দেবতার উদ্দেশে পূজার উঁচু স্থান তৈরী করেছে। আমি কখনও সেই আদেশ দিই নি কিম্বা আমার মনেও তা ঢোকে নি যে, তারা এই রকম জঘন্য কাজ করে যিহূদাকে পাপ করাবে। “তোমরা এই শহরের বিষয়ে বলছ, ‘যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়কের মধ্য দিয়ে এটা বাবিলের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে’; কিন্তু আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছি যে, আমার ভীষণ অসন্তোষ এবং জ্বলন্ত ও ভয়ংকর ক্রোধে আমি তাদের যে সব দেশে দূর করে দিয়েছিলাম সেখান থেকে আমি নিশ্চয়ই তাদের জড়ো করব। আমি এই জায়গায় তাদের ফিরিয়ে আনব এবং নিরাপদে বাস করতে দেব। তারা আমার লোক হবে ও আমি তাদের ঈশ্বর হব। আমি তাদের এমন মন ও স্বভাব দেব যা কেবল আমারই দিকে আসক্ত থাকবে; তাতে তারা তাদের নিজেদের ও তাদের পরে তাদের ছেলেমেয়েদের মংগলের জন্য সব সময় আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করবে। আমি তাদের জন্য এই চিরস্থায়ী ব্যবস্থা স্থাপন করব যে, আমি তাদের মংগল করা কখনও বন্ধ করব না। আমি তাদের মনে ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগাব যাতে তারা কখনও আমার কাছ থেকে ফিরে না যায়। আমি খুশী মনে তাদের মংগল করব এবং আমার সমস্ত মন-প্রাণ দিয়ে এই দেশে নিশ্চয়ই তাদের চারার মত লাগিয়ে দেব। “আমি এই লোকদের উপর যেমন এই সব মহা বিপদ এনেছি তেমনি তাদের কাছে আমার প্রতিজ্ঞা করা সমস্ত মংগল আমি তাদের দান করব। যে দেশের বিষয়ে তোমরা বলতে, ‘এটা একটা পতিত জমি, এতে মানুষ কিম্বা পশু কিছুই নেই, কারণ এটা বাবিলীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে,’ সেই দেশে আবার জমি কেনা-বেচা হবে। বিন্যামীন এলাকায়, যিরূশালেমের চারপাশের এলাকায়, যিহূদার ও নেগেভের সব গ্রাম ও শহরে এবং উঁচু ও নীচু পাহাড়ী এলাকার সব গ্রাম ও শহরে টাকা দিয়ে ক্ষেত কেনা হবে ও দলিলে স্বাক্ষর ও সীলমোহর দেওয়া হবে এবং সাক্ষী রাখা হবে, কারণ আমি তাদের অবস্থা ফিরাব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” যিরমিয় তখনও পাহারাদারদের উঠানে বন্দী ছিলেন, এমন সময় দ্বিতীয়বার সদাপ্রভুর বাক্য তাঁর কাছে প্রকাশিত হল। সদাপ্রভু বললেন, “আমার নাম সদাপ্রভু, আমি কাজ করি; যে কাজ আমি করি তার পরিকল্পনা করি এবং তা শেষ করি। আমি বলছি, আমাকে ডাক, আমি তোমাকে উত্তর দেব এবং এমন মহৎ ও এমন গোপন বিষয়ের কথা বলব যা তুমি জান না। “তবুও আমি এতে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা আনব; আমার লোকদের আমি সুস্থ করব এবং সত্যিকারের শান্তি প্রচুর পরিমাণে ভোগ করতে দেব। আমি যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকদের বন্দীদশা থেকে ফিরিয়ে আনব এবং তাদের দেশটা আবার আগের মতই গড়ে তুলব। আমার বিরুদ্ধে তারা যে সব পাপ করেছে তা থেকে আমি তাদের শুচি করব এবং আমার বিরুদ্ধে করা তাদের সব অন্যায় ও বিদ্রোহ ক্ষমা করব। তখন এই শহর পৃথিবীর সমস্ত জাতির সামনে আমাকে আনন্দিত ও সম্মানিত করবে এবং গৌরব দান করবে। আমি তার যে সব মংগল করব সেই জাতিরা তা শুনতে পাবে, আর তাকে দেওয়া প্রচুর মংগল ও শান্তি দেখে ভয়ে কাঁপতে থাকবে। এই পতিত জমি, যেখানে মানুষ ও পশু কিছুই নেই, সেখানে এবং সেখানকার সমস্ত শহর ও গ্রামে আবার রাখালদের ভেড়াগুলোর জন্য চারণ ভূমি হবে। উঁচু ও নীচু পাহাড়ী এলাকার সব গ্রাম ও শহরে, বিন্যামীন এলাকায়, যিরূশালেমের চারপাশের এলাকায় এবং যিহূদার ও নেগেভের সব গ্রাম ও শহরে যারা ভেড়ার সংখ্যা গোণে তাদের হাতের নীচ দিয়ে আবার ভেড়ার পাল যাওয়া-আসা করবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু বলছেন, “ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের কাছে আমি যে মংগলের প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সময় আসছে যখন আমি তা পূর্ণ করব। সেই দিনগুলোতে ও সেই সময়ে আমি দায়ূদের বংশ থেকে একটা সততার চারা গজাতে দেব; যা ন্যায় ও সৎ তিনি দেশের মধ্যে তা-ই করবেন। সেই সময়ে যিহূদার লোকেরা উদ্ধার পাবে আর যিরূশালেমের লোকেরা নিরাপদে বাস করবে। তাঁকে এই নামে ডাকা হবে- ‘সদাপ্রভু আমাদের নির্দোষিতা।’ ইস্রায়েলের সিংহাসনে বসবার জন্য দায়ূদের বংশে কোন লোকের অভাব হবে না। আমার সামনে দাঁড়িয়ে সব সময় পোড়ানো-উৎসর্গের, শস্য-উৎসর্গের ও পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে লেবীয় পুরোহিতদের মধ্যেও লোকের অভাব হবে না।” এর পর সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “আমি সদাপ্রভু বলছি যে, দিন ও রাত সম্বন্ধে আমার যে নিয়ম আছে তা যদি ভাংগা যায় যাতে ঠিক সময়ে রাত বা দিন না হয়, তাহলে আমার দাস দায়ূদের জন্য ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে যারা সেবা-কাজ করে সেই লেবীয় পুরোহিতদের জন্য আমি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছি তা-ও ভাংগা যাবে আর দায়ূদের সিংহাসনে বসে রাজত্ব করবার জন্য তার কোন বংশধর থাকবে না। আমার দাস দায়ূদের বংশধরদের এবং যে লেবীয়েরা আমার সামনে দাঁড়িয়ে সেবা-কাজ করে তাদের আমি আকাশের তারার মত অসংখ্য করব এবং সমুদ্র-পারের বালির মত করব, যা গোণা যায় না।” তারপর সদাপ্রভু যিরমিয়কে আরও বললেন, “লোকেরা যে বলছে, ‘সদাপ্রভু ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের বেছে নিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তাদের অগ্রাহ্য করেছেন,’ তা কি তুমি খেয়াল কর নি? তারা আমার লোকদের তুচ্ছ করে ও জাতি হিসাবে তাদের আর দেখে না। কিন্তু আমি সদাপ্রভু বলছি, দিন ও রাত সম্বন্ধে আমার ব্যবস্থা যেমন ভাংগা যায় না, আকাশ ও পৃথিবী সম্বন্ধে আমার নিয়ম যেমন সব সময় ঠিক থাকে, তেমনি যাকোব ও আমার দাস দায়ূদের বংশধরদের জন্য আমার ব্যবস্থা ঠিক থাকবে এবং অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের বংশধরদের উপর রাজত্ব করবার জন্য আমি দায়ূদের বংশধরদের অগ্রাহ্য করব না। আমি নিশ্চয়ই তাদের অবস্থা ফিরাব ও তাদের উপর মমতা করব।” তুমি তার হাত থেকে রেহাই পাবে না; তোমাকে নিশ্চয়ই ধরে তার হাতে দেওয়া হবে। তুমি নিজের চোখে বাবিলের রাজাকে দেখতে পাবে; সে তোমার মুখোমুখি হয়ে তোমার সংগে কথা বলবে, আর তুমি বাবিলে যাবে। “হে যিহূদার রাজা সিদিকিয়, তবুও তুমি আমার কথা শোন। তোমার সম্বন্ধে আমি বলছি, তুমি তলোয়ারের আঘাতে মারা পড়বে না; তুমি শান্তিতে মারা যাবে। তোমার পূর্বপুরুষ, অর্থাৎ তোমার আগে যে সব রাজারা ছিল তাদের সম্মান দেখাবার জন্য যেমন আগুন জ্বালানো হয়েছিল লোকে তোমার সম্মানের জন্যও তেমনি আগুন জ্বালাবে এবং ‘হায় মনিব! ’ বলে দুঃখ প্রকাশ করবে। আমি সদাপ্রভু নিজেই এই কথা বলছি।” তখন নবী যিরমিয় যিরূশালেমে যিহূদার রাজা সিদিকিয়কে সেই সব কথা বললেন। সেই সময় বাবিলের রাজার সৈন্যেরা যিরূশালেম, লাখীশ ও অসেকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, কারণ যিহূদা দেশের মধ্যে কেবল এই দেয়াল-ঘেরা শহরগুলোই অধিকার করে নিতে তাদের বাকী ছিল। পরে সদাপ্রভু আবার যিরমিয়ের সংগে কথা বললেন। এর আগে রাজা সিদিকিয় যিরূশালেমের সমস্ত লোকদের সংগে দাসদের মুক্তি ঘোষণার বিষয় নিয়ে নিয়ম স্থির করেছিলেন। সেই নিয়ম হল, প্রত্যেকে তার ইব্রীয় দাস ও দাসীকে মুক্ত করে দেবে; কোন যিহূদী ভাইকে কেউ দাস করে রাখতে পারবে না। কাজেই সব রাজকর্মচারী ও লোকেরা এই নিয়ম মেনে তাদের দাস ও দাসীদের মুক্ত করে দিতে রাজী হল এবং তাদের আর দাস করে রাখবে না বলে ঠিক করল। তখন তারা তাদের দাসদের মুক্ত করে দিল। কিন্তু পরে তারা মন বদলে ফেলল এবং যে সব দাস ও দাসীদের তারা মুক্ত করেছিল তাদের ফিরিয়ে এনে আবার দাস বানাল। এইজন্য সদাপ্রভু যিরমিয়কে বলেছিলেন, “আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছি যে, আমি যখন তোমাদের পূর্বপুরুষদের মিসর থেকে, দাসত্বের দেশ থেকে বের করে এনেছিলাম তখন তাদের জন্য এই নিয়ম স্থির করে বলেছিলাম, ‘যদি কোন ইব্রীয় ভাই নিজেকে তোমাদের কাছে বিক্রি করে থাকে তবে সপ্তম বছরে তোমরা তাকে মুক্ত করে দেবে। ছয় বছর সে তোমাদের দাসত্ব করলে পর তোমাদের তাকে ছেড়ে দিতে হবে।’ কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষেরা আমার কথা শোনে নি, আমার কথায় মনোযোগও দেয় নি। অল্প কিছুদিন হল তোমরা মন ফিরিয়ে আমার চোখে যা ঠিক তা-ই করেছিলে, অর্থাৎ তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের ইব্রীয় ভাইদের মুক্তি ঘোষণা করেছিলে। এমন কি, আমার ঘরে আমার সামনে তোমরা আমার নিয়ম মানবে বলে রাজী হয়েছিলে। কিন্তু এখন তোমরা ঘুরে গেছ এবং আমাকে অসম্মানিত করেছ; তোমরা যে সব দাস ও দাসীদের তাদের ইচ্ছামত চলে যাবার জন্য মুক্ত করে দিয়েছিলে তোমরা প্রত্যেকে তাদের আবার ফিরিয়ে এনে দাস-দাসী বানিয়েছ। “কাজেই আমি বলছি, তোমরা আমার বাধ্য হও নি, কারণ তোমাদের জাতি ভাইদের জন্য তোমরা মুক্তি ঘোষণা কর নি। সেইজন্য আমি এখন তোমাদের জন্য মুক্তি ঘোষণা করছি; সেই মুক্তি হল যুদ্ধ, মড়ক ও দুর্ভিক্ষের হাতে পড়বার মুক্তি। আমি তোমাদের অবস্থা এমন করব যা দেখে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের লোকেরা ভয়ে আঁত্‌কে উঠবে। সেইজন্য যারা তাদের মেরে ফেলতে চায় সেই শত্রুদের হাতে আমি তাদের তুলে দেব। তাদের মৃতদেহ হবে আকাশের পাখী ও বনের পশুদের খাবার। “যে শত্রুরা যিহূদার রাজা সিদিকিয় ও তার কর্মচারীদের মেরে ফেলতে চায় আমি সেই শত্রুদের হাতেই তাদের তুলে দেব। বাবিলের রাজার যে সৈন্যদল তোমাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছিল আমি তাদেরই হাতে তোমাদের তুলে দেব। আমি তাদের আদেশ দিয়ে এই শহরে ফিরিয়ে আনব। তারা এই শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তা দখল করে পুড়িয়ে দেবে। আমি যিহূদার শহরগুলোকে ধ্বংস করে জনশূন্য করব।” যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের সময়ে সদাপ্রভু যিরমিয়কে বললেন, “তুমি রেখবীয় বংশের লোকদের কাছে গিয়ে তাদের আমার ঘরের একটা কামরায় আসতে বল ও তাদের আংগুর-রস খেতে দাও।” তখন আমি হবৎসিনিয়ের নাতি, অর্থাৎ যিরমিয়ের ছেলে যাসিনিয় ও তার সব ভাই ও ছেলেদের, অর্থাৎ রেখবীয়দের গোটা বংশকে নিয়ে আসলাম। আমি তাদের সদাপ্রভুর ঘরে ঈশ্বরের লোক যিগ্‌দলিয়ের ছেলে হাননের ছেলেদের কামরায় নিয়ে গেলাম। সেটা ছিল শল্লুমের ছেলে দারোয়ান মাসেয়ের কামরার উপরে কর্মচারীদের কামরার পাশে। আমি তারপর সেই রেখবীয়দের সামনে আংগুর-রসে পূর্ণ কতগুলো বাটি আর কতগুলো পেয়ালা রেখে তাদের বললাম, “তোমরা আংগুর-রস খাও।” কিন্তু তারা বলল, “আমরা আংগুর-রস খাই না, কারণ আমাদের পূর্বপুরুষ রেখবের ছেলে যিহোনাদব আমাদের এই আদেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা কিম্বা তোমাদের বংশধরেরা কখনও আংগুর-রস খাবে না। এছাড়া তোমরা কখনও ঘর-বাড়ী তৈরী করবে না, বীজ বুনবে না কিম্বা আংগুর ক্ষেত কিনবে না বা চাষ করবে না; কিন্তু সব সময় তাম্বুতে বাস করবে। তাহলে তোমরা যে দেশে বিদেশীর মত থাকবে সেখানে অনেক দিন থাকতে পারবে।’ আমাদের পূর্বপুরুষ রেখবের ছেলে যিহোনাদব আমাদের যা আদেশ করেছিলেন আমরা তা সবই পালন করে আসছি। আমরা, আমাদের স্ত্রী কিম্বা ছেলেমেয়েরা কেউ কখনও আংগুর-রস খাই নি, বাস করবার জন্য ঘর বাঁধি নি কিম্বা আংগুর ক্ষেত, শস্য কিম্বা ফসলের ক্ষেতও করি নি। আমরা তাম্বুতে তাম্বুতে বাস করে আসছি এবং আমাদের পূর্বপুরুষ যিহোনাদব আমাদের যা আদেশ করেছেন তা সবই আমরা পুরোপুরি পালন করে আসছি। কিন্তু যখন বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর এই দেশ আক্রমণ করলেন তখন আমরা বললাম, ‘বাবিলীয় ও অরামীয় সৈন্যদের কাছ থেকে পালিয়ে চল, আমরা যিরূশালেমে যাই।’ তাই আমরা যিরূশালেমে রয়ে গেছি।” রেখবের ছেলে যিহোনাদব তার ছেলেদের আংগুর-রস খেতে নিষেধ করেছিল আর সেই আদেশ তারা পালন করছে। আজও তারা আংগুর-রস খায় না, কারণ তারা তাদের পূর্বপুরুষের আদেশ মেনে চলে। কিন্তু আমি তোমাদের বারে বারে বলেছি, তবুও তোমরা আমার কথা শোন নি। আমি আমার সমস্ত দাসদের, অর্থাৎ নবীদের বারে বারে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি। তারা বলেছে, ‘তোমরা প্রত্যেকে কুপথ থেকে ফেরো এবং তোমাদের চালচলন ভাল কর; দেব-দেবতাদের সেবা করবার জন্য তাদের পিছনে যেয়ো না। তাহলে যে দেশ আমি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছি সেখানে তোমরা বাস করতে পারবে।’ কিন্তু তোমরা আমার কথায় মনোযোগও দাও নি এবং শোনও নি। রেখবের ছেলে যিহোনাদবের বংশধরেরা তাদের পূর্বপুরুষের দেওয়া আদেশ পালন করে আসছে, কিন্তু তোমরা আমার কথার বাধ্য হও নি। “সেইজন্য আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, ‘শোন, আমি যিহূদা ও যিরূশালেমে বাসকারী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে যে সব বিপদের কথা বলেছি তার প্রত্যেকটাই আমি তাদের উপর ঘটাব। আমি তাদের বলেছিলাম, কিন্তু তারা শোনে নি; আমি তাদের ডেকেছিলাম, কিন্তু তারা সাড়া দেয় নি।’ ” এর পরে যিরমিয় রেখবীয়দের বললেন যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষ যিহোনাদবের আদেশ পালন করেছ এবং তার সব নির্দেশ মত চলেছ ও তার আদেশ মত সব কাজ করেছ। সেইজন্য আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমার সেবা করবার জন্য রেখবের ছেলে যিহোনাদবের বংশে কখনও লোকের অভাব হবে না।” যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের চতুর্থ বছরে সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “তুমি গুটিয়ে রাখা একটা বই নাও এবং যোশিয়ের রাজত্বের সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ইস্রায়েল, যিহূদা ও অন্যান্য জাতির বিষয় আমি তোমাকে যে যে কথা বলেছি তা তাতে লেখ। যিহূদার লোকদের উপর যে সব বিপদ ঘটাবার বিষয় আমি ঠিক করেছি হয়তো তারা সেই সব কথা শুনে প্রত্যেকে তাদের কুপথ থেকে ফিরবে; তাহলে আমি তাদের অন্যায় ও পাপ ক্ষমা করব।” তখন যিরমিয় নেরিয়ের ছেলে বারূককে ডাকলেন এবং সদাপ্রভু যিরমিয়কে যে সব কথা বলেছিলেন তা তাঁর মুখ থেকে শুনে বারূক গুটিয়ে রাখা সেই বইটাতে লিখলেন। তারপর যিরমিয় বারূককে বললেন, “আমাকে সদাপ্রভুর ঘরে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল বলে আমি সেখানে যেতে পারি না। কাজেই তুমি একটা উপবাসের দিনে সদাপ্রভুর ঘরে গিয়ে এই বইতে লেখা সদাপ্রভুর বাক্য লোকদের কাছে পড়ে শোনাও যা তুমি আমার মুখ থেকে শুনে লিখেছিলে। যিহূদার যে লোকেরা তাদের শহর থেকে আসবে তাদের সকলের কাছে তা পড়বে। হয়তো তারা সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করবে এবং প্রত্যেকে তাদের কুপথ থেকে ফিরবে, কারণ এই লোকদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু খুবই অসন্তোষ ও ক্রোধের কথা বলেছেন।” নবী যিরমিয় নেরিয়ের ছেলে বারূককে যা যা করতে বলেছিলেন তা তিনি সবই করলেন; তিনি সদাপ্রভুর ঘরে সেই বই থেকে সদাপ্রভুর বাক্য পড়লেন। যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের পঞ্চম বছরের নবম মাসে যিরূশালেমের সমস্ত লোকদের ও যিহূদার শহরগুলো থেকে আসা লোকদের জন্য সদাপ্রভুর সামনে উপবাস করবার কথা ঘোষণা করা হল। তখন সদাপ্রভুর ঘরের নতুন ফটকের কাছে উপরের উঠানে শাফনের ছেলে গমরিয় লেখকের কামরায় দাঁড়িয়ে বারূক সেই বই থেকে যিরমিয়ের কথাগুলো সমস্ত লোকদের কাছে পড়লেন। শাফনের নাতি, অর্থাৎ গমরিয়ের ছেলে মীখায় যখন সেই বই থেকে সদাপ্রভুর সমস্ত কথা শুনলেন, তখন তিনি রাজবাড়ীর মধ্যেকার লেখকের কামরায় গেলেন; সেখানে সব রাজকর্মচারীরা, অর্থাৎ লেখক ইলীশামা, শময়িয়ের ছেলে দলায়, অক্‌বোরের ছেলে ইল্‌নাথন, শাফনের ছেলে গমরিয়, হনানিয়ের ছেলে সিদিকিয় এবং অন্যান্য সব রাজকর্মচারীরা বসে ছিলেন। বারূক সেই বই থেকে লোকদের কাছে যা যা পড়েছিলেন তা মীখায় সেই রাজকর্মচারীদের কাছে সব বললেন; তখন রাজকর্মচারীরা সকলে নথনিয়ের ছেলে যিহূদীকে দিয়ে বারূককে বলে পাঠালেন, “আপনি যে বই থেকে লোকদের পড়ে শুনিয়েছেন তা নিয়ে আসুন।” নথনিয় ছিল শেলিমিয়ের ছেলে, শেলিমিয় ছিল কূশির ছেলে। তখন নেরিয়ের ছেলে বারূক সেই বই হাতে করে তাঁদের কাছে গেলেন। তাঁরা বারূককে বললেন, “আপনি দয়া করে বসে আমাদের কাছে ওটা পড়ে শোনান।” তখন বারূক তাঁদের কাছে তা পড়ে শোনালেন। তাঁরা সমস্ত কথা শুনে ভয়ে একে অন্যের দিকে তাকালেন এবং বারূককে বললেন, “এই সব কথা রাজাকে গিয়ে আমাদের জানাতেই হবে।” তারপর তাঁরা বারূককে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাদের বলুন আপনি কেমন করে এই সব কথা লিখলেন? যিরমিয়ের মুখ থেকে শুনে কি আপনি লিখেছেন?” উত্তরে বারূক বললেন, “হ্যাঁ, তিনি আমাকে এই সব কথা বলেছেন আর আমি তা এই বইতে কালি দিয়ে লিখেছি।” তখন রাজকর্মচারীরা বারূককে বললেন, “আপনি ও যিরমিয় গিয়ে লুকিয়ে থাকুন। আপনারা কোথায় আছেন তা যেন কেউ জানতে না পারে।” পরে রাজকর্মচারীরা সেই বইটা লেখক ইলীশামার কামরায় রেখে রাজদরবারে রাজার কাছে গেলেন এবং তাঁকে সব কথা জানালেন। তখন রাজা সেই বইটা আনবার জন্য যিহূদীকে পাঠালেন। লেখক ইলীশামার কামরা থেকে যিহূদী বইটা এনে রাজা ও তাঁর পাশে দাঁড়ানো সব রাজকর্মচারীদের সামনে পড়ে শোনালেন। তখন ছিল বছরের নবম মাস। রাজা তাঁর শীতকাল কাটাবার ঘরে বসে ছিলেন এবং তাঁর সামনে আগুনের পাত্রে আগুন জ্বলছিল। যিহূদী সেই বইয়ের কিছুটা পড়লে পর রাজা লেখকের ছুরি দিয়ে সেই অংশটা কেটে নিয়ে আগুনের পাত্রে ফেলে দিলেন; এইভাবে গোটা বইটা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হল। রাজা ও তাঁর যে সব লোকেরা সেই কথা শুনলেন তাঁরা ভয়ও পেলেন না কিম্বা তাঁদের কাপড়ও ছিঁড়লেন না। ইল্‌নাথন, দলায় ও গমরিয় রাজাকে সেই বই না পোড়াতে মিনতি করলেও রাজা তাঁদের কথা শুনলেন না। তার বদলে তিনি লেখক বারূক ও নবী যিরমিয়কে ধরে আনবার জন্য রাজপুত্র যিরহমেল, অস্রীয়েলের ছেলে সরায় ও অব্দিয়েলের ছেলে শেলিমিয়কে হুকুম দিলেন। কিন্তু সদাপ্রভু তাঁদের লুকিয়ে রেখেছিলেন। যিরমিয়ের বলা কথাগুলো বারূক যে বইতে লিখেছিলেন তা রাজা পুড়িয়ে দিলে পর সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “যিহূদার রাজা যিহোয়াকীম যে বইটা পুড়িয়ে দিয়েছে সেই প্রথম বইটাতে যা যা লেখা ছিল তা সবই তুমি আর একটা গুটিয়ে রাখা বই নিয়ে তাতে লেখ। এছাড়া তুমি যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমকে বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি বইটা পুুড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছ কেন যিরমিয় ঐ বইয়ের মধ্যে লিখেছে যে, বাবিলের রাজা নিশ্চয় এসে এই দেশ ধ্বংস করবেন এবং মানুষ ও পশু দুই-ই শেষ করে দেবেন? সেইজন্য তোমার বিষয়ে আমি সদাপ্রভু বলছি যে, দায়ূদের সিংহাসনে বসবার জন্য তোমার কেউ বেঁচে থাকবে না; তোমার দেহ বাইরে ফেলে দেওয়া হবে এবং তা দিনের বেলা গরমে ও রাতের বেলা ঠাণ্ডায় পড়ে থাকবে। আমি তোমার ও তোমার ছেলেদের এবং তোমার কর্মচারীদের অন্যায়ের জন্য তোমাদের শাস্তি দেব; আমি তোমাদের বিরুদ্ধে যে সব বিপদের কথা বলেছি তা সবই তোমাদের উপর ও যিরূশালেম ও যিহূদার লোকদের উপর আনব, কারণ তোমরা কথা শোন নি।’ ” তখন যিরমিয় আর একটা গুটিয়ে রাখা বই নিয়ে নেরিয়ের ছেলে লেখক বারূককে দিলেন; যিহূদার রাজা যিহোয়াকীম যে বইটা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন তাতে যে সব কথা লেখা ছিল সেই সব কথা যিরমিয়ের মুখ থেকে শুনে বারূক আবার লিখলেন। ঐ রকম আরও অনেক কথাও তার সংগে যোগ করা হল। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যোশিয়ের ছেলে সিদিকিয়কে যিহূদার রাজা করলেন, তাই সিদিকিয় যিহোয়াকীমের ছেলে কনিয়ের, অর্থাৎ যিহোয়াখীনের জায়গায় রাজত্ব করতে লাগলেন। সদাপ্রভু নবী যিরমিয়ের মধ্য দিয়ে যে সব কথা বলেছিলেন তাতে সিদিকিয় কিম্বা তাঁর কর্মচারীরা কিম্বা দেশের লোকেরা কেউই কান দিত না। তবুও একদিন রাজা সিদিকিয় শেলিমিয়ের ছেলে যিহূখল ও মাসেয়ের ছেলে পুরোহিত সফনিয়কে এই সংবাদ দিয়ে যিরমিয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, “আপনি দয়া করে আমাদের জন্য আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন।” যিরমিয় সেই সময় লোকদের মধ্যে স্বাধীনভাবে যাওয়া-আসা করছিলেন, কারণ তখনও তাঁকে জেলখানায় দেওয়া হয় নি। তখন বাবিলীয়েরা যিরূশালেম ঘেরাও করে রেখেছিল, কিন্তু তারা যখন শুনল ফরৌণের সৈন্যদল মিসর থেকে বের হয়েছে তখন তারা যিরূশালেম ছেড়ে চলে গেল। তারপর বাবিলীয়েরা ফিরে এসে এই শহর আক্রমণ করবে; তারা এটা দখল করে পুড়িয়ে দেবে। “ ‘তোমরা এই কথা ভেবে নিজেদের ঠকিয়ো না যে, বাবিলীয়েরা অবশ্যই তোমাদের ছেড়ে চলে যাবে। না, তারা যাবে না। যে বাবিলীয় সৈন্যেরা তোমাদের আক্রমণ করছে তোমরা যদি তাদের সবাইকে হারিয়ে দাও আর কেবল তাদের আহত লোকেরা তাম্বুতে পড়ে থাকে, তবে তারাই বের হয়ে এসে এই শহর পুড়িয়ে দেবে।’ ” কিন্তু যখন তিনি বিন্যামীন-ফটকে পৌঁছালেন তখন যিরিয় নামে পাহারাদারদের সেনাপতি তাঁকে ধরে বলল, “তুমি বাবিলীয়দের পক্ষে যাচ্ছ।” এই যিরিয় ছিল শেলিমিয়ের ছেলে, শেলিমিয় হনানিয়ের ছেলে। যিরমিয় বললেন, “এটা মিথ্যা কথা, আমি বাবিলীয়দের পক্ষে যাচ্ছি না।” কিন্তু যিরিয় তাঁর কথা না শুনে তাঁকে ধরে রাজকর্মচারীদের সামনে নিয়ে গেল। সেই রাজকর্মচারীরা যিরমিয়ের উপর রাগ করে তাঁকে মারধর করলেন এবং লেখক যোনাথনের বাড়ীতে তাঁকে বন্দী করে রাখলেন; সেটাকেই তাঁরা জেলখানা বানিয়েছিলেন। সেই জেলখানার মাটির নীচের একটা কামরায় যিরমিয়কে রাখা হল। সেখানে তিনি অনেক দিন রইলেন। তারপর রাজা সিদিকিয় লোক পাঠিয়ে তাঁকে রাজবাড়ীতে ডেকে আনিয়ে গোপনে জিজ্ঞাসা করলেন, “সদাপ্রভুর কোন বাক্য আছে কি?” উত্তরে যিরমিয় বললেন, “হ্যাঁ, আছে। আপনাকে বাবিলের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে।” তারপর যিরমিয় রাজা সিদিকিয়কে বললেন, “আমি আপনার কিম্বা আপনার কর্মচারীদের কিম্বা এই লোকদের বিরুদ্ধে কি দোষ করেছি যে, আপনারা আমাকে জেলখানায় রেখেছেন? যারা আপনাদের কাছে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, বাবিলের রাজা আপনাকে বা এই দেশকে আক্রমণ করবে না, আপনাদের সেই নবীরা কোথায়? কিন্তু এখন হে আমার প্রভু মহারাজ, দয়া করে শুনুন। আপনার সামনে আমি আমার এই অনুরোধ রাখছি, আপনি আমাকে লেখক যোনাথনের বাড়ীতে আর পাঠাবেন না, পাঠালে আমি সেখানে মরে যাব।” তখন রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে পাহারাদারদের উঠানে রাখবার জন্য হুকুম দিলেন এবং শহরের সমস্ত রুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুটিওয়ালাদের রাস্তা থেকে তাঁকে একখানা করে রুটি দেবার আদেশ দিলেন। কাজেই যিরমিয় পাহারাদারদের উঠানে রইলেন। যিরমিয় যখন সমস্ত লোকদের কাছে কথা বলছিলেন তখন মত্তনের ছেলে শফটিয়, পশ্‌হূরের ছেলে গদলিয়, শেলিমিয়ের ছেলে যিহূখল ও মল্কিয়ের ছেলে পশ্‌হূর তা শুনল। যিরমিয় বলছিলেন, “সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘যে কেউ এই শহরে থাকবে সে হয় যুদ্ধে না হয় দুর্ভিক্ষে কিম্বা মড়কে মারা যাবে, কিন্তু যে কেউ বাবিলীয়দের কাছে যাবে সে মরবে না। সে তার প্রাণ কোনমতে বাঁচাতে পারবে। এই শহর নিশ্চয়ই বাবিলের রাজার সৈন্যদলের হাতে দিয়ে দেওয়া হবে; তারা এটা অধিকার করবে।’ ” তখন রাজকর্মচারীরা রাজাকে বললেন, “এই লোকটিকে মেরে ফেলা উচিত। যে সব সৈন্যেরা ও লোকেরা এই শহরে রয়ে গেছে সে এই সব কথা বলে তাদের হতাশ করে দিচ্ছে। সে এই লোকদের মংগল না চেয়ে অমংগল চাইছে।” উত্তরে রাজা সিদিকিয় বললেন, “সে তো আপনাদের হাতেই রয়েছে; রাজা আপনাদের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না।” তখন তাঁরা যিরমিয়কে ধরে রাজার ছেলে মল্কিয়ের কূয়াতে ফেলে দিলেন। এই কূয়াটা ছিল পাহারাদারদের উঠানের মধ্যে। তাঁরা যিরমিয়কে দড়ি দিয়ে সেই কূয়াতে নামিয়ে দিলেন। সেখানে জল ছিল না, কেবল কাদা ছিল; আর যিরমিয় সেই কাদার মধ্যে ডুবে যেতে লাগলেন। কিন্তু রাজবাড়ীর একজন কর্মচারী কূশীয় এবদ-মেলক শুনতে পেলেন যে, যিরমিয়কে কূয়াতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। রাজা তখন বিন্যামীন ফটকে বসে ছিলেন। এবদ-মেলক রাজবাড়ী থেকে বের হয়ে রাজাকে গিয়ে বললেন, “হে আমার প্রভু মহারাজ, এই লোকেরা নবী যিরমিয়ের প্রতি যা করেছে তা অন্যায়। তারা তাঁকে কূয়াতে ফেলে দিয়েছে; তিনি সেখানে খিদেয় মারা যাবেন, কারণ শহরে আর রুটি নেই।” তখন রাজা কূশীয় এবদ-মেলককে এই আদেশ দিলেন, “তুমি এখান থেকে ত্রিশজন লোক সংগে নাও এবং নবী যিরমিয়কে তুলে আন যেন তিনি মারা না যান।” তখন এবদ-মেলক সেই লোকদের সংগে নিয়ে রাজবাড়ীর ধনভাণ্ডারের নীচের একটা ঘরে গেলেন। তিনি সেখান থেকে কতগুলো পুরানো ও ছেঁড়া কাপড় নিয়ে সেগুলো দড়ি দিয়ে সেই কূয়ার মধ্যে যিরমিয়ের কাছে নামিয়ে দিলেন। কূশীয় এবদ-মেলক যিরমিয়কে বললেন, “এই পুরানো ও ছেঁড়া কাপড়গুলো আপনি আপনার বগলে দিন যাতে আপনি দড়িতে ব্যথা না পান।” যিরমিয় তা-ই করলেন। তখন তারা দড়ি দিয়ে তাঁকে টেনে সেই কূয়া থেকে তুলে আনল। এর পর যিরমিয় পাহারাদারদের উঠানেই রইলেন। তারপর রাজা সিদিকিয় লোক পাঠিয়ে নবী যিরমিয়কে সদাপ্রভুর ঘরে ঢুকবার তৃতীয় স্থানে ডেকে আনলেন। রাজা যিরমিয়কে বললেন, “আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করব, আমার কাছ থেকে কিছুই লুকাবেন না।” তখন যিরমিয় সিদিকিয়কে বললেন, “আমি যদি আপনাকে বলি তবে তো আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন। আর আমি যদি আপনাকে পরামর্শ দিই তবে আপনি আমার কথা শুনবেন না।” এতে রাজা সিদিকিয় গোপনে যিরমিয়ের কাছে শপথ করে বললেন, “যিনি আমাদের শ্বাসবায়ু দিয়েছেন সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য যে, আমি আপনাকে মেরে ফেলব না বা যারা আপনাকে মেরে ফেলতে চাইছে তাদের হাতেও আপনাকে তুলে দেব না।” তখন যিরমিয় সিদিকিয়কে বললেন, “ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি যদি বাবিলের রাজার সেনাপতিদের কাছে হার স্বীকার কর তবে তোমার প্রাণ বাঁচবে এবং এই শহরও পুড়িয়ে দেওয়া হবে না; তুমি ও তোমার পরিবার বাঁচবে। কিন্তু যদি বাবিলের রাজার সেনাপতিদের কাছে হার স্বীকার না কর তবে এই শহর বাবিলীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হবে এবং তারা এটা পুড়িয়ে দেবে; আর তুমি নিজেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে না।’ ” রাজা সিদিকিয় তখন যিরমিয়কে বললেন, “যে সব যিহূদী বাবিলীয়দের কাছে গেছে আমি তাদের ভয় করি, কারণ বাবিলীয়েরা হয়তো আমাকে তাদের হাতে তুলে দেবে আর তারা আমার সংগে খারাপ ব্যবহার করবে।” উত্তরে যিরমিয় বললেন, “তারা আপনাকে তুলে দেবে না। আমি আপনাকে যা বলি তা করে সদাপ্রভুর বাধ্য হন। তাহলে আপনার ভাল হবে, আপনার প্রাণ বাঁচবে। কিন্তু যদি হার মানতে অস্বীকার করেন তবে সদাপ্রভু আমার কাছে যা প্রকাশ করেছেন তা এই- যিহূদার রাজার রাজবাড়ীর বাকী স্ত্রীলোকদের বাবিলের রাজার সেনাপতিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই স্ত্রীলোকেরা আপনাকে বলবে, ‘তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তোমাকে বিপথে নিয়ে গেছে, তোমাকে হারিয়ে দিয়েছে। কাদায় তোমার পা ডুবে গেছে; তোমার বন্ধুরা তোমাকে ত্যাগ করেছে।’ আপনার সব স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের বাবিলীয়দের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনি নিজেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন না বরং বাবিলের রাজার হাতে ধরা পড়বেন, আর এই শহর পুড়িয়ে দেওয়া হবে।” তখন সিদিকিয় যিরমিয়কে বললেন, “এই কথাবার্তার বিষয় কেউ যেন না জানে, জানলে আপনি মারা পড়বেন। যদি রাজকর্মচারীরা শোনে যে, আমি আপনার সংগে কথা বলেছি, আর তারা এসে আপনাকে বলে, ‘তুমি রাজাকে যা বলেছ এবং রাজা তোমাকে যা বলেছেন তা আমাদের বল; আমাদের কাছ থেকে লুকায়ো না, লুকালে আমরা তোমাকে মেরে ফেলব,’ তবে আপনি তাদের বলবেন, ‘আমি রাজাকে মিনতি করছিলাম আমাকে যেন যোনাথনের বাড়ীতে ফিরে না পাঠান, কারণ সেখানে পাঠালে আমি মারা যাব।’ ” রাজকর্মচারীরা সকলে যিরমিয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে পর রাজা তাঁকে যে কথা বলতে আদেশ করেছিলেন যিরমিয় তাদের সেই সব কথাই বললেন। তখন তাঁরা তাঁকে আর কিছু বললেন না, কারণ রাজার সংগে তাঁর কথাবার্তা কেউই শোনে নি। যতদিন না বাবিলীয়েরা যিরূশালেম দখল করল ততদিন যিরমিয় পাহারাদারদের সেই উঠানেই রইলেন। যিরূশালেম এইভাবে দখল করা হয়েছিল। যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের নবম বছরের দশম মাসে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর তাঁর সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে এসে শহরটা ঘেরাও করে রাখলেন। সিদিকিয়ের রাজত্বের এগারো বছরের চতুর্থ মাসের নবম দিনে শহরের দেয়ালের এক জায়গা ভেংগে ফেলা হল। তখন বাবিলের রাজার সব রাজকর্মচারীরা, অর্থাৎ নের্গল-শরেৎসর, সমগরনবো, শর্সখীম নামে একজন প্রধান কর্মচারী, নের্গল-শরেৎসর নামে উঁচু পদের একজন রাজকর্মচারী এবং বাবিলের রাজার অন্যান্য সব কর্মচারীরা এসে মাঝ-ফটকে বসলেন। যিহূদার রাজা সিদিকিয় ও তাঁর সমস্ত সৈন্য তাঁদের দেখে পালিয়ে গেলেন; তাঁরা রাতের বেলা রাজার বাগানের পথ ধরে দুই দেয়ালের ফটক দিয়ে শহর ত্যাগ করে অরাবার দিকে গেলেন। কিন্তু বাবিলীয় সৈন্যেরা তাঁদের পিছনে তাড়া করে যিরীহোর সমভূমিতে সিদিকিয়কে ধরে ফেলল। তারা তাঁকে ধরে হমাৎ দেশের রিব্‌লাতে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের কাছে নিয়ে গেল। নবূখদ্‌নিৎসর তাঁর শাস্তির আদেশ দিলেন। বাবিলের রাজা রিব্‌লাতে সিদিকিয়ের চোখের সামনেই তাঁর ছেলেদের মেরে ফেললেন এবং যিহূদার সমস্ত রাজকর্মচারীদেরও মেরে ফেললেন। তারপর তিনি সিদিকিয়ের চোখ তুলে ফেলে তাঁকে বাবিলে নিয়ে যাবার জন্য ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বাঁধলেন। বাবিলীয়েরা রাজবাড়ীতে ও লোকদের বাড়ী-ঘরে আগুন লাগিয়ে দিল এবং যিরূশালেমের দেয়াল ভেংগে ফেলল। সেই সময় যারা শহরে থেকে গিয়েছিল, যারা বাবিলের পক্ষে গিয়েছিল এবং দেশের বাকী লোকদের বাবিলের রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গেলেন। কিন্তু রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন সম্পত্তিহীন কিছু গরীব লোককে যিহূদা দেশে রেখে গেলেন; সেই সময়ে তিনি তাদের আংগুর ক্ষেত ও জমি দিয়ে গেলেন। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যিরমিয়ের বিষয়ে রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদনকে এই আদেশ দিলেন, “তাঁকে নিয়ে তাঁর দেখাশোনা করবে; তাঁর কোন ক্ষতি করবে না বরং তিনি যা বলবেন তা করবে।” যিরমিয় যখন পাহারাদারদের উঠানে বন্দী ছিলেন তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য তাঁর কাছে প্রকাশিত হয়েছিল, “কূশীয় এবদ-মেলকের কাছে গিয়ে বল যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলেছেন, ‘মংগল দিয়ে নয় বরং অমংগলের মধ্য দিয়ে আমি এই শহরের বিরুদ্ধে আমার বাক্য সফল করতে যাচ্ছি। সেই সময় তোমার চোখের সামনেই তা পূর্ণ হবে, কিন্তু আমি তোমাকে উদ্ধার করব। যাদের তুমি ভয় কর তাদের হাতে তোমাকে দেওয়া হবে না। আমি নিশ্চয়ই তোমাকে রক্ষা করব; তোমাকে মেরে ফেলা হবে না, বরং তুমি কোনমতে তোমার প্রাণ রক্ষা করবে, কারণ তুমি আমার উপর নির্ভর করেছ। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” যিরূশালেম ও যিহূদার সব বন্দীদের বাবিলে নিয়ে যাবার সময় বাবিলের রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন তাদের সংগে যিরমিয়কেও শিকলে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে তিনি রামা থেকে যিরমিয়কে ছেড়ে দিলেন। এর পর সদাপ্রভু যিরমিয়ের কাছে কথা বলেছিলেন। যিরমিয়কে ছেড়ে দেবার সময় নবূষরদন তাঁকে বলেছিলেন, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু যিহূদার বিরুদ্ধে এই ধ্বংসের কথাই বলেছিলেন। এখন সদাপ্রভু যা করবেন বলেছিলেন ঠিক তা-ই তিনি করেছেন। এই সব ঘটেছে, কারণ আপনারা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছেন এবং তাঁর কথার অবাধ্য হয়েছেন। কিন্তু আজ আমি আপনার হাতের শিকল থেকে আপনাকে মুক্ত করলাম। আপনি যদি চান তবে আমার সংগে আপনি বাবিলে যেতে পারেন, আমি আপনার দেখাশোনা করব; কিন্তু যদি যেতে না চান তবে যাবেন না। দেখুন, গোটা দেশটা আপনার সামনে পড়ে আছে; আপনি যেখানে খুশী যেতে পারেন।” কিন্তু যিরমিয় সেখান থেকে যাবার আগেই নবূষরদন বললেন, “আপনি শাফনের নাতি, অর্থাৎ অহীকামের ছেলে গদলিয়ের কাছে ফিরে যান। বাবিলের রাজা যিহূদার সব শহরের উপরে গদলিয়কে নিযুক্ত করেছেন। আপনি তাঁর সংগে লোকদের মধ্যেই থাকতে পারেন কিম্বা আপনার খুশীমত অন্য কোথাও যেতে পারেন।” তারপর সেনাপতি তাঁকে খাবার-দাবার ও উপহার দিয়ে বিদায় দিলেন। তখন যিরমিয় মিসপাতে অহীকামের ছেলে গদলিয়ের কাছে গিয়ে তাঁর সংগে দেশে রেখে যাওয়া লোকদের মধ্যেই রইলেন। সেই সময় যিহূদার সৈন্যদলের যে সব সেনাপতি ও তাদের লোকেরা খোলা মাঠে ছিল তারা শুনল যে, অহীকামের ছেলে গদলিয়কে বাবিলের রাজা দেশের শাসনকর্তা হিসাবে নিযুক্ত করেছেন এবং যাদের বন্দী করে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয় নি দেশের সেই সব গরীব পুরুষ, স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়েদের ভার তাঁর হাতে দেওয়া হয়েছে। তখন সেই সৈন্যেরা, অর্থাৎ নথনিয়ের ছেলে ইশ্মায়েল, কারেহের দুই ছেলে যোহানন ও যোনাথন, তন্‌হূমতের ছেলে সরায়, নটোফাতীয় এফয়ের ছেলেরা এবং মাখাথীয়ের ছেলে যাসনিয় ও তাদের লোকেরা মিসপাতে গদলিয়ের কাছে আসল। শাফনের নাতি, অর্থাৎ অহীকামের ছেলে গদলিয় তাদের ও তাদের লোকদের কাছে শপথ করে এই কথা বললেন, “বাবিলীয়দের অধীন হতে তোমরা ভয় কোরো না; দেশে বাস কর ও বাবিলের রাজার অধীন হও, এতে তোমাদের ভাল হবে। আমি নিজে মিসপাতে থাকব এবং যে সব বাবিলীয়েরা আমাদের কাছে আসবে তাদের কাছে আমি তোমাদের পক্ষ হয়ে কথা বলব; কিন্তু তোমরা আংগুর-রস, গরম কালের ফল ও তেল যোগাড় করে তোমাদের পাত্রে জমা করবে এবং তোমরা যে সব গ্রাম ও শহরের দখল নেবে সেখানে বাস করবে।” মোয়াব, অম্মোন, ইদোম ও অন্যান্য দেশের সব যিহূদীরা শুনল যে, বাবিলের রাজা যিহূদা দেশে কিছু লোককে ফেলে রেখে গেছেন এবং গদলিয়কে তাদের উপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছেন। তখন তারা যে সব দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল সেখান থেকে সবাই যিহূদা দেশের মিসপাতে গদলিয়ের কাছে ফিরে আসল। তারা প্রচুর পরিমাণে আংগুর-রস ও গরম কালের ফল জমা করল। পরে কারেহের ছেলে যোহানন ও খোলা মাঠে থাকা সৈন্যদের সব সেনাপতিরা মিসপাতে গদলিয়ের কাছে এসে তাঁকে বলল, “আপনি কি জানেন যে, অম্মোনীয়দের রাজা বালীস আপনাকে মেরে ফেলবার জন্য নথনিয়ের ছেলে ইশ্মায়েলকে পাঠিয়েছেন?” অহীকামের ছেলে গদলিয় কিন্তু তাদের কথা বিশ্বাস করলেন না। তখন কারেহের ছেলে যোহানন মিসপাতে গদলিয়কে গোপনে বলল, “আপনি অনুমতি দিলে আমি গিয়ে নথনিয়ের ছেলে ইশ্মায়েলকে মেরে ফেলব, কেউ জানতে পারবে না। সে কেন আপনাকে মেরে ফেলবে? তাতে তো যে সব যিহূদীরা আপনার চারপাশে জড়ো হয়েছে তারা ছড়িয়ে পড়বে এবং যিহূদার বাকী লোকেরা ধ্বংস হবে।” কিন্তু অহীকামের ছেলে গদলিয় কারেহের ছেলে যোহাননকে বললেন, “ঐ রকম কাজ কোরো না। তুমি ইশ্মায়েলের বিষয়ে যা বলছ তা মিথ্যা।” এছাড়া মিসপাতে গদলিয়ের সংগে যে সব যিহূদীরা ছিল এবং সেখানে যে সব বাবিলীয় সৈন্য ছিল ইশ্মায়েল তাদের সবাইকে মেরে ফেলল। ইশ্মায়েল তাদের সংগে দেখা করবার জন্য কাঁদতে কাঁদতে মিসপা থেকে বের হল। সেই লোকদের সংগে দেখা হলে পর সে বলল, “অহীকামের ছেলে গদলিয়ের কাছে চল।” তারা শহরে ঢোকামাত্র ইশ্মায়েল ও তার সংগের লোকেরা সেই লোকদের মেরে ফেলে একটা কূয়ার মধ্যে ফেলে দিল। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে দশজন ইশ্মায়েলকে বলল, “আমাদের মারবেন না। মাঠের মধ্যে আমাদের গম, যব, তেল ও মধু লুকানো রয়েছে।” সেইজন্য ইশ্মায়েল তাদের ছেড়ে দিল, অন্যদের সংগে মেরে ফেলল না। গদলিয় ও অন্যদের মেরে ফেলে যে কূয়ার মধ্যে সে তাদের সকলের মৃতদেহ ফেলে দিয়েছিল সেটা ইস্রায়েলের রাজা বাশার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য রাজা আসা তৈরী করিয়েছিলেন। ইশ্মায়েল সেটা মৃতদেহ দিয়ে ভরে ফেলল। ইশ্মায়েল মিসপার বাকী সব লোকদের বন্দী করল। তাদের মধ্যে ছিল রাজার মেয়েরা ও সেখানে রেখে যাওয়া অন্য সব লোকেরা। রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন এই সব লোকদের উপরে গদলিয়কে নিযুক্ত করেছিলেন। ইশ্মায়েল তাদের বন্দী করে নিয়ে অম্মোনীয়দের কাছে পার হয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হল। কারেহের ছেলে যোহানন ও তার সংগের সৈন্যদলের সব সেনাপতিরা যখন ইশ্মায়েলের সব অন্যায় কাজের কথা শুনতে পেল, তখন তারা তাদের সব লোকদের নিয়ে তার সংগে যুদ্ধ করতে গেল। গিবিয়োনের বড় পুকুরের কাছে তারা তার নাগাল পেল। কিন্তু ইশ্মায়েল ও তার আটজন লোক যোহাননের কাছ থেকে পালিয়ে অম্মোনীয়দের কাছে গেল। তারপর যোহানন ও তার সংগের সৈন্যদলের সব সেনাপতিরা গিবিয়োন থেকে মিসপার বাদবাকী সব লোকদের ফিরিয়ে আনল। ইশ্মায়েল গদলিয়কে খুন করবার পর যোহানন তার হাত থেকে এই সব সৈন্যদের, স্ত্রীলোক ও ছেলেমেয়েদের এবং রাজকর্মচারীদের উদ্ধার করেছিল। তারা মিসরে যাবার পথে বৈৎলেহমের কাছে গেরুৎ কিম্‌হমে কিছু দিনের জন্য রইল। তারা বাবিলীয়দের ভয়ে যিহূদা থেকে পালাচ্ছিল, কারণ ইশ্মায়েল বাবিলের রাজার নিযুক্ত শাসনকর্তা গদলিয়কে মেরে ফেলেছিল। আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন যাতে তিনি আমাদের বলে দেন আমরা কোথায় যাব আর কি করব।” উত্তরে নবী যিরমিয় বললেন, “আমি আপনাদের কথা শুনেছি। আমি আপনাদের অনুরোধ অনুসারে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে নিশ্চয়ই প্রার্থনা করব। সদাপ্রভু যা বলবেন তা সবই আপনাদের বলব, কিছুই আপনাদের কাছ থেকে গোপন করব না।” তখন তারা যিরমিয়কে বলল, “আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদের যা বলবার জন্য আপনাকে পাঠাবেন সেইমত যদি আমরা সব কিছু না করি তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুই যেন একজন সত্যিকার বিশ্বস্ত সাক্ষী হন। আমরা যাঁর কাছে আপনাকে পাঠাচ্ছি আমরা আমাদের সেই ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথার বাধ্য হব- তা আমাদের পছন্দমত হোক বা না হোক। যদি আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাধ্য হই তবে আমাদের ভাল হবে।” এর দশ দিন পরে যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর বাক্য প্রকাশিত হল। তখন তিনি যোহাননকে ও তার সংগের সৈন্যদলের সব সেনাপতিদের এবং সমস্ত লোকদের ডেকে একত্র করলেন। তিনি তাদের বললেন, “আপনারা আপনাদের মিনতি জানাবার জন্য যাঁর কাছে আমাকে পাঠিয়েছিলেন সেই ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা যদি দেশে থাক তবে আমি তোমাদের গড়ে তুলব, ভেংগে ফেলব না; আমি তোমাদের লাগিয়ে দেব, উপ্‌ড়ে ফেলব না, কারণ তোমাদের উপরে যে বিপদ এনেছি তার জন্য আমি মনে ব্যথা পেয়েছি। যাকে তোমরা ভয় করছ সেই বাবিলের রাজাকে তোমরা ভয় কোরো না, কারণ আমি তোমাদের সংগে সংগে আছি। আমি তোমাদের রক্ষা করব এবং তার হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করব। আমি তোমাদের প্রতি করুণা করব, তাতে সে-ও তোমাদের প্রতি করুণা করবে এবং তোমাদের নিজেদের জায়গায় আবার তোমাদের ফিরিয়ে আনবে।’ “কিন্তু যদি আপনারা বলেন, ‘আমরা দেশে থাকব না’ এবং এইভাবে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথা অমান্য করেন, আর যদি আপনারা বলেন, ‘আমরা গিয়ে মিসরে বাস করব; সেখানে আমরা যুদ্ধও দেখব না, তূরীর আওয়াজও শুনব না, খাবারের অভাবে খিদেও বোধ করব না,’ তাহলে যিহূদার বাদবাকী লোকেরা সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা যদি মিসরে যাওয়াই ঠিক করে থাক আর সেখানে গিয়ে বাস কর, তবে যে যুদ্ধকে তোমরা ভয় করছ তা সেখানেই তোমাদের ধরে ফেলবে এবং যে দুর্ভিক্ষের ভয় করছ তা তোমাদের পিছন পিছন মিসরে যাবে এবং সেখানেই তোমরা মারা পড়বে। এই কথা সত্যি যে, যারা মিসরে গিয়ে বাস করবে বলে ঠিক করেছে তারা সবাই সেখানে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়কে মারা পড়বে; যে বিপদ আমি তাদের উপর আনব তা থেকে তাদের একজনও বেঁচে থাকতে পারবে না কিম্বা তা এড়াতেও পারবে না।’ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘যারা যিরূশালেমে বাস করত তাদের উপরে যেমন করে আমার ভীষণ অসন্তোষ ও ক্রোধ ঢেলে পড়েছে তোমরা মিসরে গেলে তেমনি করে আমার ক্রোধ তোমাদের উপরেও ঢেলে পড়বে। তোমরা হবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও ঘৃণার পাত্র; তোমাদের অবস্থা দেখে লোকে হতভম্ব হবে আর তোমাদের নাম নিয়ে লোকে অভিশাপ দেবে। তোমরা আর কখনও এই জায়গা দেখতে পাবে না।’ “হে যিহূদার বাদবাকী লোকেরা, সদাপ্রভু তো আপনাদের বলেছেন, ‘তোমরা মিসরে যেয়ো না।’ আপনারা জেনে রাখুন আমি আজ আপনাদের সাবধান করছি যে, আপনারা মারাত্মক ভুল করতে যাচ্ছেন। আপনারা আমাকে আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে এই বলে পাঠিয়েছিলেন, ‘আপনি আমাদের জন্য আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন; তিনি যা বলবেন তা সবই আপনি আমাদের বলবেন আর আমরা তা করব।’ আমি আজ তা আপনাদের বললাম কিন্তু যে সব বিষয় বলবার জন্য আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাকে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন তা আপনারা এখনও পালন করেন নি। কাজেই এখন আপনারা জেনে রাখুন যে, আপনারা যে জায়গায় গিয়ে বাস করতে চান সেখানে আপনারা যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়কে মারা পড়বেন।” কিন্তু নেরিয়ের ছেলে বারূক আমাদের বিরুদ্ধে আপনাকে উত্তেজিত করে তুলছে যাতে বাবিলীয়দের হাতে আমাদের তুলে দেওয়া যায় আর তারা আমাদের মেরে ফেলে কিম্বা বন্দী করে বাবিলে নিয়ে যায়।” এইভাবে যোহানন, সৈন্যদলের সমস্ত সেনাপতিরা ও সমস্ত লোকেরা যিহূদা দেশে রয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সদাপ্রভুর আদেশ অমান্য করল। যিহূদার বাদবাকী যে সব লোক সমস্ত জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সেখান থেকে যিহূদা দেশে বাস করবার জন্য ফিরে এসেছিল তাদের নিয়ে যোহানন এবং সমস্ত সেনাপতিরা মিসরে চলল। এরা ছিল সেই সব পুরুষ, স্ত্রীলোক, ছেলেমেয়ে এবং রাজার মেয়েরা, যাদের রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন গদলিয়ের হাতে রেখে গিয়েছিলেন। এদের সংগে নবী যিরমিয় ও বারূককেও নিয়ে যাওয়া হল। এইভাবে তারা সদাপ্রভুর অবাধ্য হয়ে মিসরে ঢুকল এবং তফন্‌হেষ পর্যন্ত গেল। তফন্‌হেষে সদাপ্রভু যিরমিয়কে বললেন, “তুমি কতগুলো বড় বড় পাথর নিয়ে তফন্‌হেষে ফরৌণের রাজবাড়ীতে ঢুকবার পথে ইটের বাঁধানো উঠানের মাটির নীচে যিহূদীদের চোখের সামনে সেগুলো লুকিয়ে রাখ। তারপর তাদের বল যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি আমার দাস বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে ডেকে আনাব এবং যে পাথরগুলো আমি এখানে লুকিয়ে রেখেছি তার উপর তার সিংহাসন বসাব; সে তার উপরে তার রাজ-চাঁদোয়া খাটাবে। সে এসে মিসর আক্রমণ করবে এবং যারা মৃত্যুর জন্য ঠিক হয়ে আছে তাদের মৃত্যু হবে, যারা বন্দী হবার জন্য ঠিক হয়ে আছে তারা বন্দী হবে আর যারা তলোয়ারের জন্য ঠিক হয়ে আছে তারা যুদ্ধে মারা যাবে। মিসরের দেব-দেবতার মন্দিরগুলোতে সে আগুন ধরিয়ে দেবে; সে তাদের মন্দিরগুলো পুড়িয়ে দিয়ে তাদের দেবতাগুলোকে বন্দী করে নিয়ে যাবে। রাখাল যেমন করে তার গায়ে কাপড় জড়ায় তেমনি করে সে মিসরকে দিয়ে নিজেকে জড়াবে এবং সেখান থেকে সে নিরাপদেই চলে যাবে। মিসরের সূর্যদেবতার পূজার থামগুলো সে ভেংগে ফেলবে এবং মিসরের দেব-দেবতার মন্দিরগুলো পুড়িয়ে ফেলবে।’ ” মিসর দেশে যে সব যিহূদীরা মিগ্‌দোল, তফন্‌হেষ, নোফ ও পথ্রোষ এলাকায় বাস করত তাদের বিষয়ে সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমি যিরূশালেম ও যিহূদার সমস্ত গ্রাম ও শহরের উপর যে ভীষণ বিপদ এনেছি তা তোমরা দেখেছ। সেগুলো আজ ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে; সেখানে কেউ বাস করে না। তা হয়েছে তাদের দুষ্টতার জন্য, কারণ তারা দেব-দেবতাদের সামনে ধূপ জ্বালিয়ে ও তাদের পূজা করে আমার ভীষণ অসন্তোষ জাগিয়ে তুলেছে। সেই দেব-দেবতার কথা তারাও জানত না, তোমরাও জানতে না বা তোমাদের পূর্বপুরুষেরাও জানত না। আমি বারে বারে আমার দাসদের, অর্থাৎ নবীদের পাঠিয়েছি; তারা বলেছে যে, তারা যেন সেই জঘন্য কাজ না করে যা আমি ঘৃণা করি। কিন্তু তারা তাতে কানও দেয় নি, মনোযোগও দেয় নি; তারা তাদের দুষ্টতা থেকে ফেরে নি কিম্বা দেব-দেবতাদের কাছে ধূপ জ্বালানোও বন্ধ করে নি। কাজেই আমার জ্বলন্ত ক্রোধ ঢেলে দেওয়া হয়েছিল; তা যিহূদার শহরে শহরে ও যিরূশালেমের রাস্তায় রাস্তায় জ্বলে উঠেছিল আর তাই আজকে সেগুলো জনশূন্য ও ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে। “এখন আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, কেন তোমরা নিজেদের এত বড় সর্বনাশ করছ? তোমরা তো পুরুষ, স্ত্রীলোক, ছেলেমেয়ে ও শিশুদের যিহূদা থেকে বের করে এনে নিজেদের ও তাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিচ্ছ। তোমরা যেখানে বাস করতে এসেছ সেই মিসর দেশের দেব-দেবতাদের মূর্তির সামনে ধূপ জ্বালিয়ে কেন তোমরা আমার অসন্তোষকে খুঁচিয়ে তুলছ? তোমরা তো নিজেদের ধ্বংস করবে এবং পৃথিবীর সমস্ত জাতির লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করবে ও তোমাদের নাম নিয়ে অভিশাপ দেবে। যিহূদা দেশে ও যিরূশালেমের রাস্তায় রাস্তায় তোমাদের পূর্বপুরুষদের, যিহূদার রাজা ও রাণীদের এবং তোমাদের ও তোমাদের স্ত্রীদের দুষ্টতার কথা কি তোমরা ভুলে গেছ? আজও পর্যন্ত তোমরা নিজেদের অন্তর ভেংগে চুরমার কর নি কিম্বা আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয়ও কর নি; তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আমি যে আইন ও নিয়ম-কানুন দিয়েছিলাম তা-ও তোমরা পালন কর নি। “সেইজন্য আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু ঠিক করেছি যে, তোমাদের উপর বিপদ এনে সমস্ত যিহূদাকে আমি ধ্বংস করব। যিহূদার বাকী যে সব লোক মিসরে গিয়ে বাস করবে বলে ঠিক করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি এমন ব্যবস্থা করব যাতে তারা সবাই মিসরে ধ্বংস হয়। তারা সবাই যুদ্ধে না হয় দুর্ভিক্ষে মারা পড়বে। তারা হবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও ঘৃণার পাত্র; তাদের অবস্থা দেখে লোকেরা হতভম্ব হবে, আর তাদের নাম নিয়ে লোকেরা অভিশাপ দেবে। আমি যেভাবে যিরূশালেমকে শাস্তি দিয়েছিলাম, যারা মিসরে বাস করছে তাদের আমি সেইভাবে যুুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়ক দিয়ে শাস্তি দেব। যিহূদার বাকী যে সব লোকেরা মিসরে বাস করতে গেছে তারা যিহূদা দেশে ফিরে আসবার জন্য পালাতে বা বেঁচে থাকতে পারবে না, যদিও তারা সেখানে ফিরে এসে বাস করতে চাইবে; তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া আর কেউই পালিয়ে ফিরে আসতে পারবে না।” তখন যে সব লোকেরা জানত যে, তাদের স্ত্রীরা দেব-দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালায় তারা এবং সেখানে উপস্থিত সমস্ত স্ত্রীলোকেরা, অর্থাৎ মিসরের পথ্রোষ এলাকায় বাসকারী সবাই একটা বড় দল হয়ে যিরমিয়কে বলল, “আপনি সদাপ্রভুর নাম করে যে সব কথা আমাদের কাছে বলেছেন তা আমরা শুনব না। আমরা যা বলেছি তা সবই আমরা নিশ্চয় করব। যেভাবে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষেরা, রাজারা ও রাজকর্মচারীরা যিহূদার শহরে শহরে ও যিরূশালেমের রাস্তায় রাস্তায় আকাশ-রাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাতাম এবং ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতাম সেইভাবে আমরা করবই করব। সেই সময় আমাদের প্রচুর খাবার ছিল আর আমাদের অবস্থাও ভাল ছিল এবং আমরা কোন কষ্ট ভোগও করি নি। কিন্তু যখন থেকে আমরা আকাশ-রাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালানো ও ঢালন-উৎসর্গ করা বন্ধ করলাম, তখন থেকে আমাদের অভাব হচ্ছে এবং আমরা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি।” স্ত্রীলোকেরা আরও বলল, “আমরা যখন আকাশ-রাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাতাম ও ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতাম এবং তাঁর আকারেই পিঠা তৈরী করতাম তখন কি আমাদের স্বামীরা সেই কথা জানতেন না?” যে পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা যিরমিয়ের কথার উত্তর দিয়েছিল তাদের সকলের কাছে যিরমিয় বললেন, “যিহূদার গ্রাম ও শহরগুলোতে আর যিরূশালেমের রাস্তায় রাস্তায় আপনারা ও আপনাদের পূর্বপুরুষেরা, আপনাদের রাজারা ও রাজকর্মচারীরা এবং দেশের অন্যান্য লোকেরা যে ধূপ জ্বালাতেন তা কি সদাপ্রভুর মনে পড়ে নি এবং সেই বিষয় কি তিনি চিন্তা করেন নি? আপনাদের মন্দ ও জঘন্য কাজ সদাপ্রভু যখন আর সহ্য করতে পারলেন না তখন আপনাদের দেশ জনশূন্য, ধ্বংসস্থান ও ঘৃণার পাত্র হয়ে গেল এবং সেই দেশের নাম লোকেরা অভিশাপ হিসাবে ব্যবহার করে। আজও তা-ই রয়েছে। আপনারা ধূপ জ্বালিয়েছেন এবং সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছেন; আপনারা তাঁর কথা অমান্য করেছেন এবং তাঁর আইন-কানুন, নিয়ম ও বাক্য পালন করেন নি; সেইজন্য এই বিপদ আপনাদের উপর এসেছে। আপনারা তো তা দেখতে পাচ্ছেন।” তারপর যিরমিয় সমস্ত পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের বললেন, “মিসরে বাসকারী যিহূদার সমস্ত লোকেরা, আপনারা সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, ‘তোমরা বলেছিলে যে, আকাশ-রাণীর উদ্দেশে ধূপ জ্বালাবার ও ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবার যে শপথ তোমরা করেছ তা তোমরা নিশ্চয়ই পালন করবে। তোমাদের সেই প্রতিজ্ঞা অনুসারে তোমরা ও তোমাদের স্ত্রীরা কাজের দ্বারা তা দেখিয়েছ।’ “কাজেই আপনারা যা প্রতিজ্ঞা করেছেন তা-ই করুন। আপনাদের শপথ রক্ষা করুন। কিন্তু মিসরে বাসকারী সমস্ত যিহূদীরা, আপনারা সদাপ্রভুর বাক্য শুনুন। সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি আমার মহান নামের শপথ করে বলছি, মিসরের যে কোন জায়গায় বাসকারী যিহূদার কোন লোক আমার নাম নিয়ে শপথ করে বলবে না যে, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য। তাদের মংগলের জন্য নয় কিন্তু অমংগলের জন্যই আমি তাদের উপর খেয়াল রাখছি; মিসরে বাসকারী যিহূদীরা যুদ্ধে ও দুর্ভিক্ষে একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই পেয়ে মিসর থেকে যিহূদা দেশে ফিরে আসবে তাদের সংখ্যা হবে খুবই কম। তারপর যিহূদার বাদবাকী যে সব লোক মিসরে বাস করতে এসেছে তারা জানতে পারবে কার কথা ঠিক থাকবে- আমার না তাদের। “ ‘আমি সদাপ্রভু তোমাদের জন্য একটা চিহ্ন দেব যে, এই জায়গায় তোমাদের শাস্তি দেব যাতে তোমরা জানতে পার তোমাদের বিরুদ্ধে আমি যে অমংগলের ভয় দেখিয়েছি তা ঠিক থাকবে। সেই চিহ্ন হল এই- যিহূদার রাজা সিদিকিয়কে যে শত্রু মেরে ফেলবার চেষ্টা করেছিল সেই বাবিলের রাজা নবূখদনিৎসরের হাতে যেমন আমি তাকে তুলে দিয়েছি, ঠিক সেইভাবে মিসরের রাজা ফরৌণ হফ্রাকেও আমি তার সেই শত্রুদের হাতে তুলে দেব যারা তার প্রাণ নেবার চেষ্টা করছে।’ ” যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের চতুর্থ বছরে যিরমিয়ের কাছে শুনে তা নেরিয়ের ছেলে বারূক গুটিয়ে রাখা বইয়ে লিখেছিলেন। সেই সময় নবী যিরমিয় তাঁকে বললেন, “বারূক, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে বলছেন যে, তুমি বলেছ, ‘হায়! সদাপ্রভু আমার ব্যথার উপরে আমাকে দুঃখ দিয়েছেন; আমি কাত্‌রাতে কাত্‌রাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, বিশ্রাম পাচ্ছি না।’ “সদাপ্রভু আমাকে এই কথা তোমাকে বলতে বললেন, ‘আমি সদাপ্রভু সারা দেশের মধ্যে যা তৈরী করেছি তা ভেংগে ফেলব এবং যা লাগিয়েছি তা উপ্‌ড়ে ফেলব। তাহলে তুমি কি করে নিজের জন্য মহৎ মহৎ বিষয়ের আশা করছ? তা কোরো না। মনে রেখো, সমস্ত লোকের উপরে আমি বিপদ আনব, কিন্তু তুমি যেখানেই যাও না কেন আমি তোমাকে প্রাণে বাঁচিয়ে রাখব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” নবী যিরমিয়ের কাছে বিভিন্ন জাতির বিষয়ে সদাপ্রভুর কথা। যোশিয়ের ছেলে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের চতুর্থ বছরে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর ইউফ্রেটিস নদীর কাছে কর্কমীশে মিসরের রাজা ফরৌণ নখোর যে সৈন্যদলকে হারিয়ে দিয়েছিলেন সদাপ্রভু তাদের সম্বন্ধে বলছেন, “তোমাদের ছোট ও বড় ঢাল ঠিকঠাক করে নিয়ে যুদ্ধ করবার জন্য বের হও। ঘোড়াগুলোকে সাজিয়ে তার উপর চড়। মাথা রক্ষার টুপি মাথায় দিয়ে জায়গায় গিয়ে দাঁড়াও। তোমাদের বর্শাগুলো ঝক্‌ঝকে করে নাও। যুদ্ধের সাজ পর। “আমি কিসের জন্য এই সব দেখতে পাচ্ছি? তারা ভয় পেয়েছে, তারা পিছু হটছে, তাদের যোদ্ধারা হেরে গেছে। তারা পিছনে না তাকিয়ে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যাচ্ছে, আর চারদিকে ভীষণ ভয়। যারা তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারে তারাও পালাতে পারছে না; শক্তিশালীরাও পালাতে পারছে না। উত্তর দিকে ইউফ্রেটিস নদীর কাছে তারা উছোট খেয়ে পড়ে গেছে। “ও কে যে, নীল নদীর মত করে, নদীর ফুলে ওঠা জলের মত করে উঠে আসছে? নীল নদীর মত করে, নদীর ফুলে ওঠা জলের মত করে মিসর উঠে আসছে। সে বলছে, ‘আমি ফুলে উঠে পৃথিবী ঢেকে ফেলব; আমি শহরগুলো ও তাদের লোকদের ধ্বংস করব।’ ওহে সমস্ত ঘোড়া, তোমরা আক্রমণ কর। ওহে রথচালকেরা, তোমরা পাগলের মত রথ চালাও। হে যোদ্ধারা, ঢাল-বহনকারী কূশ ও পুটের লোকেরা, ধনুকধারী লূদীয়েরা, তোমরা এগিয়ে যাও। কিন্তু সেই দিনটা হল সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভুর দিন। সেই দিন হল তাঁর শত্রুদের উপর প্রতিশোধ নেবার দিন। তলোয়ার তৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, তার রক্তের পিপাসা না মেটা পর্যন্ত গ্রাস করতে থাকবে; কারণ উত্তর দিকের দেশে, ইউফ্রেটিস নদীর ধারে সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবেন। “হে কুমারী কন্যা মিসর, তুমি গিলিয়দে উঠে গিয়ে ব্যথার মলম আন। কিন্তু মিথ্যাই তুমি ওষুধের সংখ্যা বাড়াচ্ছ; তোমার ভাল হবার কোন আশা নেই। জাতিরা তোমার লজ্জার বিষয় শুনবে; তোমার কান্নায় পৃথিবী পূর্ণ হবে। এক যোদ্ধা অন্য আর একজনের উপর উছোট খেয়ে দু’জনেই একসংগে পড়ে যাবে।” বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যে মিসর আক্রমণ করতে আসবেন সেই খবর সদাপ্রভু নবী যিরমিয়কে বলেছিলেন। সেই খবর হল, “তোমরা মিসরে প্রচার কর, মিগ্‌দোলে ঘোষণা কর, নোফ ও তফন্‌হেষে ঘোষণা করে বল, ‘তোমরা জায়গা নিয়ে দাঁড়াও ও প্রস্তুত হও, কারণ তলোয়ার তোমাদের চারপাশে গ্রাস করবে।’ তোমাদের যোদ্ধারা কেন হেরে যাবে? তারা দাঁড়াতে পারবে না, কারণ সদাপ্রভুই তাদের ঠেলে নীচে ফেলবেন। তারা বার বার উছোট খাবে; তারা একে অন্যের উপর পড়বে। তারা বলবে, ‘ওঠো, চল আমরা অত্যাচারীর তলোয়ার থেকে দূরে গিয়ে আমাদের নিজেদের লোকদের কাছে ও নিজেদের দেশে ফিরে যাই।’ সেখানকার লোকেরা বলে, ‘মিসরের রাজা ফরৌণ একটা জোরে বাজানো ঘণ্টা মাত্র; সে তার সুযোগ হারিয়েছে।’ ” যাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু সেই রাজা ঘোষণা করছেন, “আমার জীবনের দিব্য যে, এমন একজন আসবেন যিনি পাহাড়গুলোর মধ্যে তাবোরের মত, সমুদ্রের কাছের কর্মিলের মত। হে মিসরের লোকেরা, তোমরা বন্দী হয়ে দূরে যাবার জন্য তোমাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, কারণ নোফ জনশূন্য, পতিত জমি ও ধ্বংসস্থান হয়ে পড়ে থাকবে। “মিসর যেন একটা সুন্দর বক্‌না বাছুর, কিন্তু উত্তর দিক থেকে তার বিরুদ্ধে একটা ডাঁশ-মাছি আসছে। মিসরের বেতনভোগী সৈন্যেরা মোটা তাজা বাছুরের মত। তারাও ফিরে একসংগে পালাবে; তারা স্থির থেকে যুদ্ধ করবে না, কারণ তাদের উপর ধ্বংসের দিন আসছে, তাদের শাস্তি পাবার সময় এসে পড়েছে। শত্রু সৈন্যেরা যখন এগিয়ে আসবে তখন মিসরীয়েরা সাপের মত খস্‌ খস্‌ শব্দ করে পালিয়ে যাবে; কাঠুরিয়াদের মত করে শত্রুরা কুড়াল নিয়ে মিসরের বিরুদ্ধে আসবে। মিসরের বন গভীর হলেও তারা তা কেটে ফেলবে। তারা পংগপালের চেয়েও সংখ্যায় বেশী; তাদের গোণা যায় না। মিসরের লোকদের লজ্জা দেওয়া হবে এবং উত্তর দিকের লোকদের হাতে তাদের তুলে দেওয়া হবে।” ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “আমি নো শহরের দেবতা আমোনকে, ফরৌণ ও মিসরকে, তার দেব-দেবতা ও রাজাদের আর যারা ফরৌণের উপর নির্ভর করে তাদের সবাইকে শাস্তি দেব। যারা তাদের মেরে ফেলতে চায় সেই বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর ও তার সৈন্যদলের হাতে আমি তাদের তুলে দেব। কিন্তু পরে মিসরে আবার আগের মত লোকজন বাস করবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” “হে আমার দাস যাকোব, ভয় কোরো না; হে ইস্রায়েল, উৎসাহহীন হোয়ো না। আমি দূর দেশ থেকে, বন্দী থাকা দেশ থেকে তোমাকে ও তোমার বংশধরদের নিশ্চয় উদ্ধার করব। যাকোব আবার শান্তিতে ও নিরাপদে থাকবে, কেউ তাকে ভয় দেখাবে না। হে আমার দাস যাকোব, ভয় কোরো না, কারণ আমি তোমার সংগে সংগে আছি। যে সব জাতির মধ্যে আমি তোমাকে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম সেই সব জাতিকে যদিও আমি একেবারে ধ্বংস করে দেব তবুও তোমাকে আমি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করব না। তবে একেবারে শাস্তি না দিয়েও আমি তোমাকে ছাড়ব না, কিন্তু ন্যায়বিচার দিয়ে আমি তোমাকে শাসন করব।” ফরৌণ গাজা আক্রমণ করবার আগে পলেষ্টীয়দের সম্বন্ধে সদাপ্রভুর এই বাক্য নবী যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “দেখ, উত্তর দিকে কেমন করে জল উথ্‌লে উঠছে; তা হয়ে উঠবে উপ্‌চে পড়া জলের স্রোত। তা দেশ ও তার মধ্যেকার সব কিছু, সব গ্রাম ও শহর এবং তার মধ্যে বাসকারী সবাইকে ডুবিয়ে দেবে। তাতে লোকে চিৎকার করবে; দেশে বাসকারী সবাই বিলাপ করবে। তারা জোরে দৌড়ে যাওয়া ঘোড়ার খুরের শব্দ, শত্রুদের রথের শব্দ এবং রথের চাকার ঘড় ঘড় শব্দ শুনবে। বাবারা তাদের ছেলেমেয়েদের সাহায্য করবার জন্য ফিরবে না; তাদের হাত অবশ হয়ে ঝুলে থাকবে। পলেষ্টীয়দের সবাইকে ধ্বংস করবার দিন এবং সোর ও সীদোনের সাহায্যকারী বাকী সব লোককে মেরে ফেলবার দিন এসে গেছে। আমি সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের, অর্থাৎ ক্রীট দ্বীপ থেকে আসা লোকদের ধ্বংস করব। গাজা শোক প্রকাশ করে তার মাথা কামিয়ে ফেলবে; অস্কিলোনকে ধ্বংস করা হবে। হে সমভূমির বাকী লোকেরা, আর কতকাল তোমরা নিজেদের দেহ কাটাকুটি করবে? তোমরা এই বলে কেঁদে ওঠো, ‘হে সদাপ্রভুর তলোয়ার, আর কত দিন পরে তুমি বিশ্রাম করবে? তোমার খাপে তুমি ফিরে যাও; থাম, শান্ত হও।’ কিন্তু আমি তাকে আদেশ দিয়েছি তাই কেমন করে সে বিশ্রাম করবে? আমিই তো তাকে অস্কিলোন ও সমুদ্রের কিনারা আক্রমণ করতে আদেশ দিয়েছি।” মোয়াব সম্বন্ধে ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “হায় নবো! ওটা তো ধ্বংস হয়ে যাবে। কিরিয়াথয়িম অসম্মানিত হয়ে অন্যদের হাতে চলে যাবে; তার দুর্গ অপমানিত হয়ে চুরমার হয়ে যাবে। মোয়াবকে আর প্রশংসা করা হবে না; তার পতনের জন্য লোকে হিশ্‌বোনে ষড়যন্ত্র করে বলবে, ‘এস, আমরা ঐ জাতিকে শেষ করে দিই।’ হে মদ্‌মেনা, তোমাকেও ধ্বংস করা হবে; তলোয়ার তোমার পিছনে তাড়া করবে। হোরোণয়িম থেকে কান্নার শব্দ শোন, ধ্বংস ও বিনাশের কান্না। মোয়াবকে ভেংগে ফেলা হবে; তার ছোট ছেলেমেয়েরা কেঁদে উঠবে। লূহীতের পথে উঠে যাবার সময় লোকে খুব কাঁদতে কাঁদতে যাবে; যে রাস্তা হোরোণয়িমের দিকে নেমে গেছে সেখানে ধ্বংসের জন্য দারুণ মনোকষ্টের কান্না শোনা যাবে। পালাও, নিজের নিজের প্রাণ নিয়ে দৌড়াও; মরু-এলাকার ঝোপের মত হও। তুমি যখন তোমার কাজ ও ধনের উপর নির্ভর করছ তখন তোমাকেও বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে, আর কমোশ তার পুরোহিত ও রাজকর্মচারীদের সংগে বন্দী হয়ে দূরে যাবে। প্রত্যেকটি শহরের বিরুদ্ধে ধ্বংসকারী আসবে এবং কোন শহরই এড়িয়ে যেতে পারবে না। আমার কথামত উপত্যকা ধ্বংস হবে এবং সমভূমির বিনাশ হবে। মোয়াবকে ডানা দাও যেন সে উড়ে পালিয়ে যেতে পারে; তার শহরগুলো জনশূন্য হবে, সেখানে কেউ বাস করবে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “আমার কাজে যে লোক ঢিলেমি করে তার উপর অভিশাপ পড়ুক। যে তার তলোয়ারকে রক্তপাত করতে দেয় না তার উপরে অভিশাপ পড়ুক। “এক কলসী থেকে অন্য কলসীতে ঢালা না হলে মদ যেমন তার গাদের উপর পড়ে থাকে তেমনি করে মোয়াব তার ছোটবেলা থেকে নিশ্চিন্তে পড়ে আছে; সে বন্দীদশায় যায় নি। তাই তার স্বাদ আগের মতই রয়েছে, তার সুগন্ধের পরিবর্তন হয় নি। কিন্তু দিন আসছে যখন আমি কলসী থেকে ঢালবার লোকদের পাঠিয়ে দেব, আর তারা তাকে ঢেলে বের করবে; তারা তার কলসীগুলো খালি করবে এবং তার পাত্রগুলো চুরমার করে দেবে। ইস্রায়েলের লোকেরা যেমন বৈথেলের উপর বিশ্বাস করে লজ্জিত হয়েছিল তেমনি মোয়াবও কমোশের বিষয়ে লজ্জিত হবে। “তোমরা কেমন করে বলতে পার, ‘আমরা যোদ্ধা, যুদ্ধে সাহসী লোক’? মোয়াব ধ্বংস হবে এবং তার শহরগুলো আক্রমণ করা হবে; তার সেরা সেরা যুবকেরা জবাই করবার জায়গায় নেমে যাবে।” যাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু সেই রাজা এই কথা বলছেন, “মোয়াবের পতন এসে গেছে; তার বিপদ তাড়াতাড়ি আসবে। তোমরা যারা তার চারপাশে বাস কর, যারা তার সুনামের কথা জান, তোমরা সবাই তার জন্য বিলাপ কর। তাকে বল, ‘শক্তিশালী রাজদণ্ড, গৌরবময় লাঠি কেমন ভেংগে গেছে! ’ ” সদাপ্রভু বলছেন, “হে দীবোনের বাসিন্দারা, তোমাদের গৌরবের জায়গা থেকে নেমে এসে শুকনা মাটির উপরে বস, কারণ মোয়াবের ধ্বংসকারী তোমাদের বিরুদ্ধে এসে তোমাদের দুর্গগুলো ধ্বংস করে দেবে। হে অরোয়েরের বাসিন্দারা, তোমরা পথের পাশে দাড়িয়ে দেখ। পালিয়ে যাওয়া পুরুষ ও স্ত্রীলোককে জিজ্ঞাসা কর, ‘কি হয়েছে?’ মোয়াব অপমানিত হয়েছে, কারণ সে চুরমার হয়েছে। তোমরা বিলাপ কর ও কাঁদ। অর্ণোন নদীর ধারে এই কথা প্রচার কর যে, মোয়াব ধ্বংস হয়ে গেছে। সমভূমির এই সব জায়গায় বিচারের সময় উপস্থিত হয়েছে- হোলন, যহস, মেফাৎ, দীবোন, নবো, বৈৎ-দিব্লাথয়িম, কিরিয়াথয়িম, বৈৎ-গামূল, বৈৎ-মিয়োন, করিয়োৎ ও বস্রা, অর্থাৎ মোয়াব দেশের দূরের ও কাছের সমস্ত গ্রাম ও শহরগুলোর উপরে বিচারের সময় উপস্থিত হয়েছে। মোয়াবের শক্তির শিং কেটে ফেলা হয়েছে; তার হাত ভেংগে গেছে। “মোয়াবকে মাতাল কর, কারণ সে আমার বিরুদ্ধে নিজেকে বড় করে দেখিয়েছে। সে তার বমির মধ্যে গড়াগড়ি দেবে; সে হাসি-ঠাট্টার পাত্র হবে। হে মোয়াব, ইস্রায়েল কি তোমার হাসি-ঠাট্টার পাত্র ছিল না? সে কি চোরদের মধ্যে ধরা পড়েছে যে, তুমি যতবার তার কথা বল ততবার ঘৃণায় মাথা নাড়? ওহে মোয়াবের বাসিন্দারা, তোমরা শহর ছেড়ে পাহাড়ে গিয়ে বাস কর। তোমরা এমন কবুতরের মত হও, যে পাহাড়ের খাদের মুখে তার বাসা বাঁধে। “মোয়াব খুব অহংকারী। আমরা তার অহংকারের কথা, তার মিথ্যা গর্ব, তার বড়াই ও বদ্‌রাগ এবং তার অন্তরের গর্বের কথা জানি। আমি তার গর্বে ভরা অহংকারের কথা জানি, কিন্তু তা মিথ্যা এবং তার বড়াই কোন কাজের নয়। তাই আমি মোয়াবের জন্য বিলাপ করব, সমস্ত মোয়াবের জন্য কাঁদব, কীর-হেরেসের লোকদের জন্য কাত্‌রাব। হে সিব্‌মার আংগুর লতা, আমি যাসেরের জন্য যেভাবে কাঁদব তার চেয়েও বেশী কাঁদব তোমার জন্য। তোমার ডালপালাগুলো সমুদ্র পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে; সেগুলো যাসেরের সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছেছে। কিন্তু তোমার গরম কালের ফল ও আংগুরের উপর ধ্বংসকারীরা এসে পড়েছে। মোয়াবের ফলের বাগান, অর্থাৎ মোয়াব দেশ থেকে আনন্দ ও খুশীর ভাব চলে গেছে। আমি আংগুর মাড়াইয়ের জায়গা থেকে আংগুর-রসের স্রোত বন্ধ করেছি; আনন্দের চিৎকারের সংগে আর সেগুলো কেউ মাড়াই করে না। যদিও চেঁচামেচি আছে কিন্তু সেগুলো আনন্দের চিৎকার নয়। “তাদের কান্নার শব্দ হিশ্‌বোন থেকে ইলিয়ালী ও যহস পর্যন্ত, সোয়র থেকে হোরোণয়িম ও ইগ্লৎ-শলিশীয়া পর্যন্ত উঠেছে, কারণ নিম্রীমের জলও শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি সদাপ্রভু বলছি, মোয়াবে যারা পূজার উঁচু স্থানে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে ও তাদের দেব-দেবতার উদ্দেশে ধূপ জ্বালায় আমি তাদের শেষ করে দেব। তাই মোয়াবের ও কীর-হেরেসের লোকদের জন্য আমার অন্তর বাঁশীর সুরের মত করে বিলাপ করছে। তারা যে ধন জমা করেছিল তা শেষ হয়ে গেছে। দুঃখ প্রকাশের জন্য সকলের মাথা কামানো ও দাড়ি কেটে ফেলা হয়েছে; প্রত্যেকের হাতে কাটাকুটি করা ও কোমরে ছালার চট পরানো হয়েছে। মোয়াবের সমস্ত বাড়ীর ছাদের উপরে ও শহর-চকে বিলাপ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না, কারণ যে পাত্র কেউ চায় না তেমন পাত্রের মতই আমি মোয়াবকে ভেংগে ফেলেছি। সে কেমন চুরমার হয়েছে! লোকে কেমন করে তার জন্য বিলাপ করছে! মোয়াব লজ্জায় কেমন করে তার পিঠ ফিরিয়েছে! মোয়াব তার চারপাশের সমস্ত লোকদের কাছে হাসি-ঠাট্টার পাত্র হয়েছে, আর তার অবস্থা দেখে সেই লোকেরা হতভম্ব হয়েছে।” সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, একজন লোক ঈগলের মত শোঁ করে নেমে আসছে এবং মোয়াবের বিরুদ্ধে তার ডানা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার সব শহর অধিকার করে দুর্গগুলো দখল করা হবে। সেই দিন মোয়াবের যোদ্ধাদের অন্তর প্রসব-যন্ত্রণা ভোগকারিণী স্ত্রীলোকের অন্তরের মত হবে। জাতি হিসাবে মোয়াবকে ধ্বংস করা হবে, কারণ সে আমার বিরুদ্ধে নিজেকে বড় করে দেখিয়েছে। হে মোয়াবের লোকেরা, তোমাদের জন্য ভয়, গর্ত ও ফাঁদ অপেক্ষা করে আছে। যে লোক ভয়ে পালাবে সে গর্তে পড়বে, যে লোক গর্ত থেকে উঠে আসবে সে ফাঁদে ধরা পড়বে; কারণ আমি মোয়াবের শাস্তির সময় ঠিক করে রেখেছি। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “হিশ্‌বোনের ছায়াতে পালিয়ে যাওয়া লোকেরা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কারণ হিশ্‌বোন থেকে আগুন ও সীহোনের মধ্য থেকে আগুনের শিখা বের হয়েছে; তা মোয়াবের কপাল ও গোলমাল করা গর্বকারীদের মাথার খুলি পুড়িয়ে দিয়েছে। হে মোয়াব, ধিক্‌ তোমাকে! কমোশের লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে; তোমার ছেলেদের দূর দেশে বন্দী হিসাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর তোমার মেয়েদের বন্দী করা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আমি মোয়াবের অবস্থা ফিরাব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” মোয়াবের বিচারের কথা এখানে শেষ হয়েছে। অম্মোনীয়দের বিষয়ে সদাপ্রভু এই কথা বলছেন, “ইস্রায়েলের কি কোন ছেলে নেই? তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির অধিকারী কি কেউ নেই? তাহলে মিল্‌কম কেন গাদ-গোষ্ঠীর জায়গা অধিকার করেছে? কেন মিল্‌কমের পূজাকারীরা সেখানকার শহরগুলোতে বাস করছে? দেখ, সময় আসছে যখন আমি অম্মোনীয়দের রব্বা শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হাঁক দেব; তখন সেটা ধ্বংসের ঢিবি হবে, আর তার চারপাশের গ্রামগুলোতে আগুন লাগানো হবে। তখন যারা ইস্রায়েলকে তাড়িয়ে বের করে দিয়েছে ইস্রায়েল তাদেরই তাড়িয়ে বের করে দেবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “হে হিশ্‌বোন, বিলাপ কর, কারণ অয় শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। হে রব্বা শহরের বাসিন্দারা, কাঁদ; ছালার চট পরে শোক প্রকাশ কর। দেয়ালগুলোর মধ্যে দৌড়াদৌড়ি কর, কারণ তোমার দেবতা মিল্‌কম বন্দী হয়ে দূর দেশে যাবে, আর তার সংগে যাবে তার পুরোহিত ও উঁচু পদের কর্মচারীরা। কেন তুমি তোমার উর্বর উপত্যকাগুলো নিয়ে গর্ব করছ? হে অবিশ্বস্ত কন্যা, তোমার ধন-সম্পদের উপর নির্ভর করে তুমি বলছ, ‘কে আমাকে আক্রমণ করবে?’ আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, তোমার চারদিকের সকলের কাছ থেকে আমি তোমার উপর ভীষণ ভয় নিয়ে আসব। তোমাদের প্রত্যেককে তাড়িয়ে দেওয়া হবে; পালিয়ে যাওয়া লোকদের একত্র করবার জন্য কেউ থাকবে না। কিন্তু পরে আমি অম্মোনীয়দের অবস্থা ফিরাব।” ইদোমের বিষয়ে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “তৈমনে কি জ্ঞান নেই? বুদ্ধিমানদের কাছ থেকে কি উপদেশ শেষ হয়ে গেছে? তাদের জ্ঞান কি ক্ষয় হয়ে গেছে? হে দদানের বাসিন্দারা, তোমরা পিছন ফিরে পালিয়ে যাও, গোপন জায়গায় গিয়ে লুকাও, কারণ এষৌকে শাস্তি দেবার সময় আমি তার উপর বিপদ আনব। যারা আংগুর তোলে তারা যদি তোমার কাছে আসে তবে কি তারা কিছু আংগুর বাকী রাখবে না? চোরেরা যদি রাতে আসে তবে তাদের যতটা দরকার ততটাই কেবল চুরি করবে। কিন্তু আমি এষৌর জায়গাটা জনশূন্য করে ফেলব। সে যাতে লুকাতে না পারে সেইজন্য আমি তার লুকাবার জায়গাগুলো প্রকাশ করে দেব। তার বংশের লোকেরা, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা ধ্বংস হয়ে যাবে আর সে-ও থাকবে না। তোমার অনাথ ছেলেমেয়েদের রেখে যাও; আমি তাদের জীবন রক্ষা করব। তোমার বিধবারাও আমার উপর নির্ভর করুক।” সদাপ্রভু বলছেন, “যারা শাস্তি পাবার উপযুক্ত নয়, তাদের যদি শাস্তির পেয়ালায় খেতেই হয় তবে তুমি কেন শাস্তি না পেয়ে থাকবে? তোমাকে সেই পেয়ালায় খেয়ে শাস্তি পেতেই হবে। আমি আমার নিজের নামেই শপথ করছি যে, বস্রা ধ্বংস হয়ে ঘৃণার পাত্র হবে। লোকেরা তার অবস্থা দেখে হতভম্ব হবে এবং তার নাম নিয়ে অভিশাপ দেবে। তার সব গ্রাম ও শহরগুলো চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে থাকবে।” আমি সদাপ্রভুর কাছ থেকে এই খবর শুনেছি যে, একজন দূতকে জাতিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সে বলছে, “তোমরা ইদোমকে আক্রমণ করবার জন্য একত্র হও। যুদ্ধ করবার জন্য ওঠো।” সদাপ্রভু বলছেন, “এখন আমি জাতিদের মধ্যে তোমাকে সবচেয়ে ছোট করব এবং লোকদের মধ্যে ঘৃণার পাত্র করব। হে পাথরের ফাটলে বাসকারী পাহাড়ের উঁচু উঁচু জায়গার অধিকারী, তুমি ভয়ংকর বলে তোমার অন্তরের যে গর্ব তা তোমাকে ছলনা করেছে। যদিও তুমি ঈগলের মত উঁচু জায়গায় তোমার বাসা তৈরী কর তবুও সেখান থেকে আমি তোমাকে নীচে নামিয়ে আনব। “ইদোমের অবস্থা দেখে লোকেরা হতভম্ব হবে; যারা তার পাশ দিয়ে যাবে তারা সবাই ভীষণ ভয় পাবে এবং তার সব আঘাতের জন্য তাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে। আমি সদাপ্রভু বলছি, আশেপাশের গ্রাম সুদ্ধ যেমন সদোম ও ঘমোরাকে ধ্বংস করা হয়েছিল তেমনি ইদোমে কেউ বাস করবে না; তার মধ্যে কোন মানুষ থাকবে না। “যর্দনের জংগল থেকে সিংহ যেমন উঠে এসে ভাল চারণ ভূমিতে শিকার করতে যায় তেমনি করে আমি মুহূর্তের মধ্যে ইদোমকে তার দেশ থেকে তাড়া করব। আমি তার উপর আমার বাছাই করা লোককে নিযুক্ত করব। কে আমার সমান? কে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে? কোন্‌ পালক আমার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে?” কাজেই ইদোমের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু কি পরিকল্পনা করেছেন, তৈমনের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে তিনি কি ঠিক করেছেন তা শোন- পালের বাচ্চাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে; তাদের কাজের দরুনই তাদের চারণ ভূমি তিনি একেবারে ধ্বংস করে দেবেন। তাদের পতনের শব্দে পৃথিবী কাঁপবে; তাদের কান্না লোহিত সাগর পর্যন্ত শোনা যাবে। দেখ, তাদের শত্রু ঈগলের মত করে উঁচুতে উড়বে আর বস্রার উপরে ডানা মেলে দিয়ে শোঁ করে নীচে নেমে আসবে। সেই দিন ইদোমের যোদ্ধাদের অন্তর প্রসব-যন্ত্রণা ভোগকারিণী স্ত্রীলোকের অন্তরের মত হবে। দামেস্কের বিষয়ে সদাপ্রভু বলছেন, “হমাৎ আর অর্পদ ভয়ে ব্যাকুল হয়েছে, কারণ তারা খারাপ খবর শুনেছে। তারা হতাশ হয়েছে, অস্থির সাগরের মত অশান্ত হয়েছে। দামেস্ক দুর্বল হয়েছে, সে পালাবার জন্য ফিরেছে এবং ভয় তাকে আঁকড়ে ধরেছে; প্রসব-যন্ত্রণা ভোগকারিণী স্ত্রীলোকের মত যন্ত্রণা ও ব্যথা তাকে ধরেছে। সেই বিখ্যাত শহর, যে শহরকে নিয়ে আমি খুশী হতাম, কেন লোকেরা তা ত্যাগ করে চলে যায় নি? আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, তার যুবকেরা নিশ্চয়ই শহরের খোলা জায়গায় মরে পড়ে থাকবে; সেই দিন তার সব সৈন্যদের শেষ করে দেওয়া হবে। দামেস্কের দেয়ালগুলোতে আমি আগুন লাগিয়ে দেব; তা বিন্‌হদদের দুর্গগুলো পুড়িয়ে ফেলবে।” বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর কেদর ও হাৎসোরের যে রাজ্যগুলোকে হারিয়ে দিয়েছিলেন সেগুলোর বিষয়ে সদাপ্রভু বলছেন, “ওঠো, কেদর আক্রমণ কর এবং পূর্বদেশের লোকদের ধ্বংস কর। লোকে তাদের সব তাম্বু ও পশুপাল নিয়ে যাবে আর তাদের সমস্ত জিনিস, তাম্বুর পর্দা ও উট নিয়ে যাবে। তারা চিৎকার করে তাদের বলবে, ‘চারদিকেই ভীষণ ভয়!’ ” সদাপ্রভু বলছেন, “হে হাৎসোরের বাসিন্দারা, তোমরা তাড়াতাড়ি পালিয়ে যাও। তোমরা গোপন স্থানে গিয়ে থাক। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর তোমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, তোমাদের বিরুদ্ধে একটা পরিকল্পনা করেছে। হে বাবিলীয়েরা, তোমরা ওঠো, সেই আরামে থাকা জাতি যে নিরাপদে বাস করে তাকে আক্রমণ কর। সেই জাতির ফটকও নেই, আগলও নেই; তারা একা বাস করে। তাদের উটগুলো লুটের মাল হবে এবং তাদের মস্ত বড় পশুপাল লুটের জিনিস হবে। যারা মাথার দু’পাশের চুল কাটে তাদের আমি চারদিকে ছড়িয়ে দেব এবং সব দিক থেকেই তাদের উপর বিপদ আনব। হাৎসোর হবে শিয়ালদের বাসস্থান ও চিরস্থায়ী জনশূন্য জায়গা। কেউ সেখানে বাস করবে না, তার মধ্যে কোন মানুষ থাকবে না।” যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের প্রথম দিকে এলম সম্বন্ধে সদাপ্রভুর এই বাক্য নবী যিরমিয়ের কাছে প্রকাশিত হল, “আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমি এলমের ধনুক, তাদের শক্তির প্রধান খুঁটি ভেংগে ফেলব। আমি আকাশের চারদিক থেকে চারটা বাতাস এলমের বিরুদ্ধে আনব। সেই বাতাসে আমি তাদের চারদিকে ছড়িয়ে দেব; এলমের দূর করে দেওয়া বন্দীরা সমস্ত জাতির কাছে যাবে। যারা তাদের মেরে ফেলতে চায় সেই শত্রুদের সামনেই আমি এলমীয়দের চুরমার করে দেব; আমার জ্বলন্ত ক্রোধে আমি তাদের উপর বিপদ নিয়ে আসব। তাদের শেষ করে না ফেলা পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে তলোয়ার পাঠাব। আমি এলমে আমার সিংহাসন স্থাপন করব এবং তার রাজা ও রাজকর্মচারীদের ধ্বংস করব, কিন্তু ভবিষ্যতে আমি এলমের অবস্থা ফিরাব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” বাবিল, অর্থাৎ বাবিলীয়দের দেশ সম্বন্ধে নবী যিরমিয়ের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু এই কথা বলেছিলেন, “তোমরা জাতিদের মধ্যে প্রচার ও ঘোষণা কর, নিশান তুলে ধর এবং ঘোষণা কর। কিছু গোপন রেখো না, বরং বল, ‘অন্যেরা বাবিলকে অধিকার করবে; বেল দেবতাকে লজ্জা দেওয়া হবে, মরোদক দেবতাকে চুরমার করা হবে। বাবিলের মূর্তিগুলোকে লজ্জা দেওয়া হবে এবং তার প্রতিমাগুলোকে চুরমার করা হবে।’ উত্তর থেকে একটা জাতি তাকে আক্রমণ করবে এবং তার দেশকে পতিত জমি করে রাখবে। কেউ তার মধ্যে বাস করবে না; মানুষ ও পশু দুই-ই পালিয়ে যাবে। “সেই সময়ে ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা একত্রে চোখের জলের সংগে তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে গভীরভাবে জানতে আগ্রহী হবে। তারা সিয়োনে যাবার পথের কথা জিজ্ঞাসা করবে এবং সেই দিকে তাদের মুখ ফিরাবে। তারা এসে এমন একটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থায় সদাপ্রভুর সংগে নিজেদের বাঁধবে যা লোকে ভুলে যাবে না। “আমার লোকেরা হারানো ভেড়ার মত হয়েছে; তাদের পালকেরা তাদের বিপথে নিয়ে গেছে। সেই পালকদের দরুন তারা পাহাড়-পর্বতে ঘুরে বেড়িয়েছে এবং নিজেদের বিশ্রামের জায়গার কথা ভুলে গেছে। যারা তাদের পেয়েছে তারা তাদের গ্রাস করেছে; তাদের শত্রুরা বলেছে, ‘আমরা দোষী নই, কারণ সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে, তাদের সত্যিকারের চারণ ভূমির বিরুদ্ধে, তাদের পূর্বপুরুষদের আশা সেই সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তারা পাপ করেছে।’ “হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা বাবিল থেকে পালিয়ে যাও; বাবিলীয়দের দেশ ত্যাগ কর এবং পালের আগে আগে চলা পাঁঠাগুলোর মত হও। আমি উত্তর দিকের দেশ থেকে বড় বড় জাতিদের একত্র করব আর তাদের উত্তেজিত করে বাবিলের বিরুদ্ধে নিয়ে আসব। তারা বাবিলের বিরুদ্ধে সৈন্যদের সাজাবে এবং সেটা অধিকার করবে। দক্ষ যোদ্ধাদের মত তাদের তীরগুলো বিফল হবে না। বাবিলকে লুট করা হবে; যারা তাকে লুট করবে তারা সবাই তৃপ্ত হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “হে বাবিলীয়েরা, তোমরা আমার অধিকারকে লুট করছ এবং তাতে আনন্দ করছ, খুশী হচ্ছ। তোমরা শস্য মাড়াই-করা বক্‌না বাছুরের মত নাচানাচি করছ এবং তেজী ঘোড়ার মত ডাকছ; সেইজন্য তোমাদের মা খুব লজ্জা পাবে; যে তোমাদের জন্ম দান করেছে সে অসম্মানিতা হবে। জাতিদের মধ্যে সে হবে সবচেয়ে ছোট; সে হবে একটা মরু-এলাকা, একটা শুকনা জায়গা, একটা মরুভূমি। সদাপ্রভুর ক্রোধের দরুন তার মধ্যে কেউ বাস করবে না, তা একেবারে ধ্বংসস্থান হবে। যারা বাবিলের পাশ দিয়ে যাবে তারা সবাই হতভম্ব হবে এবং তার সব আঘাত দেখে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে। “হে ধনুকধারীরা, তোমরা সবাই যুদ্ধের জন্য জায়গা নিয়ে বাবিলের চারপাশে দাঁড়াও। তার দিকে তীর ছোঁড়ো। কোন তীর রেখে দিয়ো না, কারণ সে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছে। তার বিরুদ্ধে চারদিক থেকে যুদ্ধের হাঁক দাও। সে হার স্বীকার করেছে, তার রক্ষার ব্যবস্থা ভেংগে গেছে এবং তার দেয়াল ধ্বংস হয়েছে। সদাপ্রভু তার উপরে প্রতিশোধ নিচ্ছেন, তোমরাও প্রতিশোধ নাও। সে অন্যদের প্রতি যা করেছে তোমরাও তার প্রতি তা-ই কর। বাবিলে যারা বীজ বোনে আর সময়মত ফসল কাটে তাদের প্রত্যেককে শেষ করে দাও। অত্যাচারীর তলোয়ারের ভয়ে প্রত্যেকে তার নিজের লোকদের কাছে ফিরে যাবে, প্রত্যেকে তার নিজের দেশে পালিয়ে যাবে। “ইস্রায়েল যেন একটা ছড়িয়ে পড়া ভেড়ার পাল যাকে সিংহেরা তাড়িয়ে দিয়েছে। প্রথমে আসিরিয়ার রাজা তাকে গ্রাস করেছিল; শেষে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর তার হাড়গুলো গুঁড়া করে দিয়েছে। সেইজন্য আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আসিরিয়ার রাজাকে যেমন শাস্তি দিয়েছি তেমনি করে বাবিলের রাজা ও তার দেশকে আমি শাস্তি দেব। কিন্তু ইস্রায়েলকে আমি তার নিজের চারণ ভূমিতে ফিরিয়ে আনব এবং সে কর্মিল ও বাশনের উপরে চরে বেড়াবে; ইফ্রয়িম ও গিলিয়দের পাহাড়গুলোতে তার খিদে মিটবে। সেই সময়ে ইস্রায়েলের অন্যায়ের খোঁজ নেওয়া হবে কিন্তু একটাও থাকবে না, যিহূদার পাপের খোঁজ করা হবে কিন্তু একটাও পাওয়া যাবে না, কারণ আমি যাদের বাঁচিয়ে রাখব তাদের আমি ক্ষমা করব। “হে বাবিলের শত্রুরা, আমি সদাপ্রভু বলছি, তোমরা মরাথয়িম দেশকে ও যারা পকোদে বাস করে তাদের আক্রমণ কর। তাদের তাড়া কর, মেরে ফেল ও সম্পূর্ণভবে ধ্বংস করে দাও; আমি তোমাদের যে যে আদেশ দিয়েছি তার প্রত্যেকটা তোমরা পালন করবে। দেশে যুদ্ধের ও মহা ধ্বংসের শব্দ হচ্ছে। গোটা পৃথিবীর হাতুড়ী কেমন ভেংগে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। বাবিলের অবস্থা দেখে সব জাতির লোকেরা কেমন হতভম্ব হয়ে গেছে। হে বাবিল, আমি তোমার জন্য একটা ফাঁদ পেতেছি আর তুমি না জেনে তাতে ধরা পড়েছ; তোমাকে পাওয়া গেছে এবং ধরাও হয়েছে, কারণ তুমি আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলে। আমি আমার অস্ত্রশস্ত্রের ঘর খুলে আমার ক্রোধের অস্ত্রগুলো বের করে আনলাম, কারণ বাবিলীয়দের দেশে সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভুর কাজ আছে। হে বাবিলের শত্রুরা, তোমরা দূর থেকে তার বিরুদ্ধে এস। তার গোলাঘরগুলো খুলে ফেল; জড়ো করা শস্যের মত তাকে ঢিবি কর। তাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস কর, তার কিছু বাকী রেখো না। তার সব ষাঁড়গুলো মেরে ফেল; সেগুলো জবাই করবার জায়গায় নেমে যাক। হায়! তাদের শাস্তি পাবার সময় এসে পড়েছে।” শোন, বাবিল থেকে পালিয়ে যাওয়া ও রক্ষা পাওয়া লোকেরা সিয়োনে এসে ঘোষণা করছে যে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কেমন করে তাঁর ঘরের জন্য প্রতিশোধ নিয়েছেন। সদাপ্রভু বলছেন, “বাবিলের বিরুদ্ধে সব ধনুকধারীদের ডাক। তার চারপাশে সৈন্য-ছাউনি ফেল; কাউকে পালাতে দিয়ো না। তার কাজের ফল তাকে দাও। সে যা করেছে তার প্রতি তা-ই কর, কারণ সে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে, ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের বিরুদ্ধে নিজেকে বড় করে দেখিয়েছে। সেইজন্য তার যুবকেরা শহরের খোলা জায়গায় মরে পড়ে থাকবে; সেই দিন তার সব সৈন্যদের শেষ করে দেওয়া হবে। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু বলছি, হে অহংকারী, দেখ, আমি তোমার বিরুদ্ধে, কারণ তোমার শাস্তি পাবার সময় এসে গেছে। সেই অহংকারী উছোট খেয়ে পড়ে যাবে এবং কেউ তাকে উঠতে সাহায্য করবে না; তার শহরগুলোতে আমি আগুন ধরিয়ে দেব, তা তার চারপাশের সব কিছু পুড়িয়ে ফেলবে।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা অত্যাচারিত হচ্ছে। যারা তাদের ধরেছে তারা সবাই তাদের শক্ত করে ধরে রেখেছে, তাদের যেতে দিচ্ছে না। কিন্তু তাদের মুক্তিদাতা শক্তিশালী; তাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু। তিনি জোরালোভাবেই তাদের পক্ষে ওকালতি করবেন যাতে তাদের দেশে শান্তি ও বাবিলের বাসিন্দাদের জন্য অশান্তি আনতে পারেন।” সদাপ্রভু বলছেন, “বাবিলীয়দের বিরুদ্ধে, বাবিলের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ও তার উঁচু পদের কর্মচারী ও জ্ঞানী লোকদের বিরুদ্ধে তলোয়ার রয়েছে। তার ভণ্ড নবীদের বিরুদ্ধে রয়েছে তলোয়ার; তারা বোকা হয়ে যাবে। তার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে রয়েছে তলোয়ার; তারা ভয়ে পূর্ণ হবে। তার সব ঘোড়া, রথ ও বিদেশী সৈন্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে তলোয়ার; তারা স্ত্রীলোকদের মত দুর্বল হয়ে যাবে। তার ধন-সম্পদের বিরুদ্ধে রয়েছে তলোয়ার; সেই সব লুট হয়ে যাবে। খরায় তার সমস্ত জল শুকিয়ে যাবে, কারণ সেটা হল প্রতিমার দেশ, আর সেই ভয়ংকর প্রতিমাগুলো সেখানকার লোকদের পাগল করে তুলবে। “সেইজন্য মরুভূমির প্রাণী ও শিয়ালেরা সেখানে বাস করবে, আর সেখানে উটপাখী থাকবে। সেখানে আর কখনও লোক থাকবে না, পুরুষের পর পুরুষ কেউ সেখানে বাস করবে না। আমি যেমন আশেপাশের গ্রাম সুদ্ধ সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস করেছিলাম, তেমনি কেউ সেখানে বাস করবে না; কোন মানুষ তার মধ্যে থাকবে না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “দেখ, একদল সৈন্য উত্তর থেকে আসছে; পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে একটা বড় জাতি ও অনেক রাজারা উত্তেজিত হয়ে আসছে। তারা ধনুক ও তলোয়ারধারী; তারা নিষ্ঠুর ও দয়াহীন। তারা ঘোড়ায় করে আসবার সময় সমুদ্রের গর্জনের মত শব্দ হচ্ছে; হে বাবিল-কন্যা, তোমাকে আক্রমণ করবার জন্য তারা যুদ্ধের সাজে আসছে। বাবিলের রাজা তাদের সম্বন্ধে খবর শুনেছে আর তার হাত অবশ হয়ে ঝুলে পড়েছে। প্রসব-যন্ত্রণা ভোগকারিণী স্ত্রীলোকের ব্যথার মত দারুণ কষ্ট তাকে ধরেছে। যর্দনের জংগল থেকে সিংহ যেমন উঠে এসে ভাল চারণ ভূমিতে শিকার করতে যায় তেমনি করে আমি মুহূর্তের মধ্যে বাবিলীয়দের তাদের দেশ থেকে তাড়া করব। আমি তার উপর আমার বাছাই করা লোককে নিযুক্ত করব। কে আমার সমান? কে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে? কোন্‌ পালক আমার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারে?” কাজেই বাবিলের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু কি পরিকল্পনা করেছেন, বাবিলীয়দের বিরুদ্ধে তিনি কি ঠিক করেছেন তা শোন- পালের বাচ্চাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে; তাদের কাজের দরুনই তাদের চারণ ভুমি তিনি একেবারে ধ্বংস করে দেবেন। “বাবিল দখল করা হয়েছে,” এই চিৎকারের শব্দে পৃথিবী কাঁপবে; জাতিদের মধ্যে তার কান্নার শব্দ শোনা যাবে। সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, লেব্‌-কামাই, অর্থাৎ বাবিল ও তার লোকদের বিরুদ্ধে ধ্বংসকারী বাতাসকে আমি উত্তেজিত করব। বাবিলকে ঝাড়বার জন্য ও তার দেশকে ধ্বংস করবার জন্য আমি তার কাছে বিদেশীদের পাঠাব; তার বিপদের দিনে তারা সব দিক থেকে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। বাবিলের ধনুকধারী তার ধনুকে টান না দিক কিম্বা সে তার বর্ম না পরুক। তার যুবকদের ছেড়ে দিয়ো না; তার সৈন্যদলকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দাও। তারা বাবিলের রাস্তায় রাস্তায় ভীষণ আঘাত পেয়ে মরে পড়ে থাকবে।” ইস্রায়েল ও যিহূদাকে তাদের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু ত্যাগ করেন নি, যদিও ইস্রায়েলের সেই পবিত্রজনের সামনে তাদের দেশ দোষে পূর্ণ হয়েছে। তোমরা বাবিল থেকে পালাও। তোমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের জীবন রক্ষা কর। তার পাপের জন্য তোমরা ধ্বংস হয়ে যেয়ো না। সদাপ্রভুর প্রতিশোধ নেবার সময় হয়েছে; তার যা পাওনা তাকে তিনি তা দেবেন। বাবিল সদাপ্রভুর হাতে একটা সোনার পেয়ালার মত ছিল; সে গোটা পৃথিবীকে মাতাল করেছিল। জাতিরা তার আংগুর-রস খেয়েছিল, তাই এখন তারা পাগল হয়ে গেছে। বাবিল হঠাৎ পড়ে গিয়ে ভেংগে গেছে। তার জন্য বিলাপ কর। তার ব্যথার জন্য মলম আন; হয়তো সে সুস্থ হবে। লোকে বলে, “আমরা বাবিলকে সুস্থ করতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে সুস্থ হয় নি। চল, আমরা তাকে ছেড়ে যে যার দেশে চলে যাই, কারণ তার শাস্তি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তা মেঘ পর্যন্ত উঁচুতে উঠেছে।” আমরা যে সদাপ্রভুর নিজের লোক তিনি তা দেখিয়ে দিয়েছেন; আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু যা করেছেন এস, আমরা তা সিয়োনে বলি। তোমরা তীরগুলো ধারালো কর, ঢাল নাও। সদাপ্রভু মাদীয় রাজাদের উত্তেজিত করেছেন, কারণ তাঁর উদ্দেশ্যই হল বাবিলকে ধ্বংস করা। সদাপ্রভু অবশ্যই তাঁর ঘরের জন্য প্রতিশোধ নেবেন। বাবিলকে আক্রমণ করবার জন্য একটা নিশান তোল। রক্ষীদলকে আরও শক্তিশালী কর, পাহারা বসাও, গোপন স্থানে সৈন্যদের প্রস্তুত রাখ। সদাপ্রভু বাবিলের লোকদের বিরুদ্ধে তাঁর উদ্দেশ্য ও আদেশ অনুসারে কাজ করবেন। হে বাবিল, তুমি তো অনেক জলের ধারে বাস কর এবং অনেক ধন-সম্পদের অধিকারী; তোমার শেষ এসেছে, তোমাকে ছেঁটে ফেলবার সময় উপস্থিত হয়েছে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাঁর নিজের নামেই শপথ করে বলেছেন, “আমি নিশ্চয়ই এক ঝাঁক পংগপালের মত লোকজন দিয়ে তোমাকে পূর্ণ করব, আর তারা তোমার উপরে জয়ের হাঁক দেবে।” সদাপ্রভু নিজের শক্তিতে পৃথিবী তৈরী করেছেন, তাঁর জ্ঞান দ্বারা জগৎ স্থাপন করেছেন ও বুদ্ধি দ্বারা আকাশ বিছিয়ে দিয়েছেন। তাঁর আদেশে আকাশের জল গর্জন করে; তিনি পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে মেঘ উঠিয়ে আনেন। তিনি বৃষ্টির জন্য বিদ্যুৎ তৈরী করেন এবং তাঁর ভাণ্ডার থেকে বাতাস বের করে আনেন। সব মানুষই জ্ঞানহীন ও বোকা; প্রত্যেক স্বর্ণকার তার প্রতিমাগুলোর জন্য লজ্জা পায়। তার ছাঁচে ঢালা মূর্তিগুলো মিথ্যা, সেগুলোর মধ্যে নিঃশ্বাস নেই। সেগুলো অপদার্থ, ঠাট্টা-বিদ্রূপের জিনিস; বিচারের সময় আসলে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। যিনি যাকোবের পাওনা অংশ তিনি এগুলোর মত নন, কারণ তিনিই সমস্ত জিনিসের সৃষ্টিকর্তা আর ইস্রায়েল তাঁর বিশেষ সম্পত্তি। তাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু। সদাপ্রভু বলছেন, “হে বাবিল, তুমি আমার যুদ্ধের গদা, আমার যুদ্ধের অস্ত্র; তোমাকে দিয়ে আমি জাতিদের চুরমার করেছি, তোমাকে দিয়ে রাজ্যগুলোকে ধ্বংস করেছি; তোমাকে দিয়ে আমি ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ারকে চুরমার করেছি, তোমাকে দিয়ে রথ ও রথচালকদের চুরমার করেছি; তোমাকে দিয়ে আমি পুরুষ ও স্ত্রীলোককে চুরমার করেছি, তোমাকে দিয়ে বুড়ো ও শিশুকে চুরমার করেছি, তোমাকে দিয়ে যুবক ও যুবতীকে চুরমার করেছি; তোমাকে দিয়ে আমি রাখাল ও ভেড়ার পাল চুরমার করেছি, তোমাকে দিয়ে চাষী ও বলদদের চুরমার করেছি, তোমাকে দিয়ে শাসনকর্তাদের ও রাজকর্মচারীদের চুরমার করেছি।” সদাপ্রভু বলছেন, “বাবিল ও বাবিলে বাসকারী সকলে সিয়োনে যে সব অন্যায় কাজ করেছে তোমাদের চোখের সামনে আমি তার ফল দেব।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে ধ্বংসকারী পাহাড়, তুমি সমস্ত পৃথিবীর ধ্বংসকারী; আমি তোমার বিরুদ্ধে। আমার হাত আমি তোমার বিরুদ্ধে বাড়িয়ে খাড়া পাহাড় থেকে তোমাকে গড়িয়ে ফেলে দেব ও তোমাকে করব একটা পুড়ে যাওয়া পাহাড়। লোকে কোণার পাথরের জন্য তোমার মধ্য থেকে কোন পাথর নেবে না, ভিত্তির জন্যও নেবে না; তুমি চিরকাল জনশূন্য হয়ে থাকবে। “তোমরা দেশের মধ্যে নিশান তোল। জাতিদের মধ্যে তূরী বাজাও। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য জাতিদের প্রস্তুত কর; তার বিরুদ্ধে অরারট, মিন্নি ও অস্কিনস রাজ্যকে ডাক দাও। তার বিরুদ্ধে একজন সেনাপতিকে নিযুক্ত কর; পংগপালের মত অনেক ঘোড়া পাঠিয়ে দাও। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য জাতিদের, মাদীয় রাজাদের, তাদের শাসনকর্তাদের ও সব রাজকর্মচারীদের এবং তাদের শাসনের অধীন সমস্ত রাজ্যগুলোকে প্রস্তুত কর। দেশ কাঁপছে ও মোচড় খাচ্ছে, কারণ বাবিলকে জনশূন্য ও পতিত জমি করে রাখবার সদাপ্রভুর যে উদ্দেশ্য তা ঠিক রয়েছে। বাবিলের যোদ্ধারা যুদ্ধ করা থামিয়েছে; তারা তাদের দুর্গের মধ্যে রয়েছে। তাদের শক্তি ফুরিয়ে গেছে; তারা স্ত্রীলোকদের মত দুর্বল হয়ে গেছে। তাদের বাসস্থানগুলোতে আগুন লাগানো হয়েছে; বাবিলের সব ফটকের আগলগুলো ভেংগে ফেলা হয়েছে। সংবাদদাতার পর সংবাদদাতা এবং দূতের পর দূত চলেছে বাবিলের রাজার কাছে ঘোষণা করতে যে, তার গোটা শহরটাই অধিকার করা হয়েছে, তার নদীর হেঁটে পার হওয়ার জায়গাগুলো দখল করা হয়েছে, নলবনে আগুন লাগানো হয়েছে ও সৈন্যেরা ভীষণ ভয় পেয়েছে।” আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, “বাবিল-কন্যা শস্য মাড়াই করবার সময়কার খামারের মত হয়েছে; ফসল কাটবার মত তাকে কেটে ফেলবার সময় শীঘ্রই আসবে।” যিরূশালেমের লোকেরা বলছে, “বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর আমাদের গ্রাস করেছেন, আমাদের চুরমার করেছেন, আমাদের খালি কলসীর মত করেছেন। দানবের মত তিনি আমাদের গিলে ফেলেছেন এবং আমাদের ভাল ভাল খাবার দিয়ে তাঁর পেট ভরেছেন, আর তার পরে আমাদের এঁটোকাঁটার মত দূর করে দিয়েছেন।” সিয়োনের বাসিন্দারা বলছে, “আমাদের দেহের উপর যে অত্যাচার করা হয়েছে তা বাবিলের উপর করা হোক। যারা বাবিলে বাস করে আমাদের রক্তের জন্য তারা দায়ী থাকুক।” সেইজন্য সদাপ্রভু বলছেন, “হে যিরূশালেম, আমি তোমার পক্ষ হব এবং তোমার হয়ে প্রতিশোধ নেব; আমি তার সাগর শুকিয়ে ফেলব এবং সব ফোয়ারা শুকনা করব। বাবিল হবে একটা ধ্বংসের ঢিবি, শিয়ালদের বাসস্থান এবং ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র। সেখানে কেউ বাস করবে না; তার অবস্থা দেখে লোকেরা হতভম্ব হবে। তার লোকেরা সবাই সিংহের মত গর্জন করবে, সিংহের বাচ্চাদের মত গোঁ গোঁ করবে। তারা উত্তেজিত হলে পর আমি তাদের জন্য একটা ভোজের ব্যবস্থা করব। আমি তাদের মাতাল করব যেন তারা আনন্দে মেতে ওঠে, তারপর চিরকালের জন্য ঘুমায়, কখনও না জাগে। বাচ্চা-ভেড়াগুলোর মত করে, ভেড়া ও পাঁঠার মত করে আমি তাদের জবাই করবার জায়গায় নিয়ে যাব। “শেশককে, অর্থাৎ বাবিলকে কেমন বেদখল করা হবে! গোটা পৃথিবীর প্রশংসার পাত্রকে কেমন অধিকার করা হবে! বাবিলকে দেখে জাতিরা হতভম্ব হবে। বাবিলের উপরে সমুদ্র উঠে আসবে, তার গর্জন-করা ঢেউ তাকে ঢেকে ফেলবে। তার শহরগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। সেগুলো হবে শুকনা ও মরুভূমির দেশ; সেই দেশে কেউ বাস করবে না, তার মধ্য দিয়ে কেউ যাওয়া-আসা করবে না। আমি বাবিলের বেল দেবতাকে শাস্তি দেব এবং সে যা গিলেছে তা তাকে দিয়ে বমি করাব। জাতিরা আর তার কাছে স্রোতের মত যাবে না। বাবিলের দেয়ালও পড়ে যাবে। “হে আমার লোকেরা, বাবিলের মধ্য থেকে বের হয়ে এস। তোমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের জীবন রক্ষা কর। সদাপ্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধ থেকে দৌড়ে পালাও। যখন নানা গুজব শোনা যাবে তখন হতাশ হোয়ো না বা ভয় পেয়ো না; এক বছরে একটা গুজব উঠবে আর অন্য বছরে আর একটা গুজব উঠবে। সেই গুজব হল, বাবিলে অত্যাচার হচ্ছে এবং এক শাসনকর্তা আর এক শাসনকর্তার বিরুদ্ধে উঠছে। এমন সময় নিশ্চয়ই আসছে যখন আমি বাবিলের প্রতিমাগুলোকে শাস্তি দেব; তার গোটা দেশটাই অসম্মানিত হবে আর তার নিহত লোকেরা সবাই তার মধ্যে পড়ে থাকবে। মহাকাশ, পৃথিবী ও সেগুলোর মধ্যেকার সব কিছু বাবিলের বিষয় নিয়ে আনন্দে চিৎকার করবে, কারণ উত্তর দিক থেকে ধ্বংসকারীরা এসে তাকে আক্রমণ করবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। বাবিলের দরুন যেমন সমস্ত পৃথিবীতে লোকেরা মরে পড়ে ছিল তেমনি ইস্রায়েলীয়দের মেরে ফেলবার দরুন বাবিলীয়দেরও মরে পড়ে থাকতে হবে। তোমরা যারা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছ তোমরা চলে এস, দেরি কোরো না। দূর দেশে থাকবার সময় সদাপ্রভুকে মনে কর এবং যিরূশালেমের বিষয়ে চিন্তা কর। “তোমরা বলেছ, ‘আমাদের বিষয়ে টিট্‌কারির কথা শুনেছি বলে আমরা অসম্মানিত হয়েছি। লজ্জা আমাদের মুখ ঢেকে ফেলেছে, কারণ সদাপ্রভুর ঘরের পবিত্র জায়গাগুলোতে বিদেশীরা ঢুকেছিল।’ কিন্তু আমি বলছি, দিন আসছে যখন আমি বাবিলের প্রতিমাগুলোকে শাস্তি দেব এবং বাবিলের সব জায়গায় ভীষণভাবে আহত লোকেরা কাত্‌রাতে থাকবে। বাবিল যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছায় আর সেখানে শক্ত দুর্গ গড়ে তোলে, তবুও আমি তার বিরুদ্ধে ধ্বংসকারীদের পাঠিয়ে দেব।” বাবিল থেকে কান্নার শব্দ উঠছে, বাবিলীয়দের দেশ থেকে উঠছে মহা ধ্বংসের শব্দ, কারণ সদাপ্রভু বাবিলকে ধ্বংস করবেন; তিনি তার ভীষণ শব্দকে থামিয়ে দেবেন। শত্রুরা বড় বড় ঢেউয়ের মত গর্জন করতে করতে আসবে; তারা জোরে জোরে চিৎকার করবে। বাবিলের বিরুদ্ধে আসবে ধ্বংসকারী; তার যোদ্ধারা ধরা পড়বে এবং তাদের ধনুকগুলো ভেংগে যাবে; কারণ সদাপ্রভু প্রতিশোধ দাতা ঈশ্বর; বাবিলের পাওনা তিনি পুরোপুরিই দেবেন। যাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু সেই রাজা বলছেন, “আমি তার রাজকর্মচারী, জ্ঞানী লোক, শাসনকর্তা, উঁচু পদের কর্মচারী ও যোদ্ধাদের মাতাল করব। তারা চিরকালের জন্য ঘুমাবে; তারা আর জাগবে না। বাবিলের মোটা দেয়াল ভেংগে সমান করে ফেলা হবে এবং তার উঁচু ফটকগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হবে। লোকেরা মিথ্যাই নিজেদের ক্লান্ত করবে, জাতিদের পরিশ্রমের ফল আগুনে পুড়ে যাবে।” যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের চতুর্থ বছরে মহসেয়ের নাতি, অর্থাৎ নেরিয়ের ছেলে সরায় যিনি রাজার একজন ব্যক্তিগত কর্মচারী ছিলেন, তিনি যখন রাজার সংগে বাবিলে গিয়েছিলেন তখন যিরমিয় তাঁকে কিছু আদেশ দিয়েছিলেন। বাবিলের উপর যে সব বিপদ আসবে, অর্থাৎ বাবিল সম্বন্ধে যে সব কথা লেখা হয়েছিল তা যিরমিয় একটা গুটিয়ে রাখা বইয়ে লিখেছিলেন। যিরমিয় সরায়কে বললেন, “আপনি যখন বাবিলে পৌঁছাবেন তখন খেয়াল রাখবেন যেন এই সব কথা আপনি লোকদের পড়ে শোনান। তারপর বলবেন, ‘হে সদাপ্রভু, তুমি এই জায়গা ধ্বংস করবার কথা বলেছ, তাতে মানুষ বা পশু কেউই তার মধ্যে বাস করবে না; এটা চিরদিনের জন্য জনশূন্য হয়ে থাকবে।’ এই বইটা পড়া শেষ করে তাতে একটা পাথর বেঁধে ইউফ্রেটিস নদীতে ফেলে দেবেন। তারপর বলবেন, ‘এইভাবে বাবিল ডুবে যাবে, আর উঠবে না, কারণ সদাপ্রভু তার উপর বিপদ আনবেন। সে একেবারেই শেষ হয়ে যাবে।’ ” যিরমিয়ের কথা এখানেই শেষ। একুশ বছর বয়সে সিদিকিয় রাজা হলেন। তিনি যিরূশালেমে এগারো বছর রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল হমুটল; তিনি ছিলেন লিব্‌না শহরের যিরমিয়ের মেয়ে। যিহোয়াকীমের মত সিদিকিয় সদাপ্রভুর চোখে যা মন্দ তা-ই করতেন। যিরূশালেম ও যিহূদার লোকদের দরুন সদাপ্রভু ক্রোধে জ্বলে উঠেছিলেন এবং শেষে তিনি তাঁর সামনে থেকে তাদের দূর করে দিয়েছিলেন। পরে সিদিকিয় বাবিলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। সেইজন্য তাঁর রাজত্বের নবম বছরের দশম মাসের দশ দিনের দিন বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর তাঁর সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলেন। তারা শহরের বাইরে ছাউনি ফেলল এবং শহরের চারপাশে ঢিবি তৈরী করল। রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের এগারো বছর পর্যন্ত শহরটা ঘেরাও করে রাখা হল। চতুর্থ মাসের নয় দিনের দিন শহরে দুর্ভিক্ষের অবস্থা এত ভীষণ হল যে, লোকদের খাওয়ার জন্য কিছুই ছিল না। পরে শহরের দেয়ালের একটা জায়গা ভেংগে গেল। যদিও বাবিলীয়েরা তখনও শহরটা ঘেরাও করে ছিল তবুও রাতের বেলা যিহূদার সমস্ত সৈন্য রাজার বাগানের কাছে দুই দেয়ালের ফটক দিয়ে পালিয়ে গিয়ে অরাবার দিকে গেল। রাজার সমস্ত সৈন্য তাঁর কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ল এবং সেই সময় বাবিলীয় সৈন্যদলও রাজা সিদিকিয়ের পিছনে তাড়া করে যিরীহোর সমভূমিতে তাঁকে ধরে ফেলল। তারা সিদিকিয়কে বন্দী করে হমাৎ দেশের রিব্‌লাতে বাবিলের রাজার কাছে নিয়ে গেল এবং সেখানে তাঁকে শাস্তির আদেশ দেওয়া হল। বাবিলের রাজা রিব্‌লাতে সিদিকিয়ের চোখের সামনেই তাঁর ছেলেদের মেরে ফেললেন এবং যিহূদার সমস্ত রাজকর্মচারীদেরও মেরে ফেললেন। তারপর তিনি সিদিকিয়ের চোখ দু’টা তুলে ফেলে, তাঁকে ব্রোঞ্জের শিকল দিয়ে বেঁধে বাবিলে নিয়ে গেলেন এবং তিনি না মরা পর্যন্ত তাঁকে জেলখানায় রাখলেন। বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের ঊনিশ বছরের পঞ্চম মাসের দশম দিনে রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি হিসাবে যিনি রাজার সেবা করতেন সেই নবূষরদন যিরূশালেমে আসলেন। তিনি সদাপ্রভুর ঘরে, রাজবাড়ীতে এবং যিরূশালেমের সমস্ত বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিলেন। সমস্ত প্রধান প্র্রধান বাড়ী তিনি পুড়িয়ে ফেললেন। রাজার রক্ষীদলের সেনাপতির অধীনে বাবিলীয় সমস্ত সৈন্যদল যিরূশালেমের দেয়াল ভেংগে ফেলল। যে সব গরীব লোক শহরে পড়ে ছিল তাদের কয়েকজনকে ও বাদবাকী কারিগরদের এবং যারা বাবিলের রাজার পক্ষে গিয়েছিল রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন তাদের বন্দী করে নিয়ে গেলেন। কিন্তু আংগুর ক্ষেত দেখাশোনা ও জমি চাষ করবার জন্য কিছু গরীব লোককে তিনি দেশে রেখে গেলেন। বাবিলীয়েরা সদাপ্রভুর ঘরের ব্রোঞ্জের দু’টা থাম, গামলা বসাবার ব্রোঞ্জের আসনগুলো এবং ব্রোঞ্জের বিরাট পাত্রটি ভেংগে টুকরা টুকরা করে বাবিলে নিয়ে গেল। এছাড়া তারা সব পাত্র, বেল্‌চা, শল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা, বাটি, হাতা এবং উপাসনা-ঘরের সেবা-কাজের জন্য অন্যান্য সমস্ত ব্রোঞ্জের জিনিস নিয়ে গেল। রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি সোনা বা রূপার তৈরী যে সব পেয়ালা, আগুন রাখবার পাত্র, বাটি, বাতিদান, বেল্‌চা, ঢালন-উৎসর্গ অনুষ্ঠানের পাত্র ও অন্যান্য যে সব পাত্র ছিল তা নিয়ে গেলেন। রাজা শলোমন সদাপ্রভুর ঘরের জন্য যে দু’টা থাম, বিরাট পাত্র ও তার নীচেকার বারোটা ব্রোঞ্জের গরু ও যে সব আসন তৈরী করিয়েছিলেন তার সব ব্রোঞ্জ ওজন করা সম্ভব ছিল না। প্রত্যেকটা থাম ছিল আঠারো হাত উঁচু ও তার বেড় ছিল বারো হাত; প্রত্যেকটা থামের ব্রোঞ্জ চার আংগুল পুরু ছিল এবং ভিতরটা ছিল ফাঁপা। একটা থামের মাথা ছিল পাঁচ হাত উঁচু এবং সেই মাথার চারপাশ ব্রোঞ্জের শিকল ও ব্রোঞ্জের ডালিম দিয়ে সাজানো ছিল। অন্য থামটিও একই রকম ছিল। ব্রোঞ্জের শিকলের চারপাশের ডালিমের সংখ্যা ছিল একশো, কিন্তু সামনে থেকে মাত্র ছিয়ানব্বইটা ডালিম দেখা যেত। যিহূদীদের প্রধান পুরোহিত সরায়, দ্বিতীয় পুরোহিত সফনিয় ও তিনজন দারোয়ানকে রক্ষীদলের সেনাপতি বন্দী করে নিয়ে গেলেন। যারা তখনও শহরে ছিল তাদের মধ্য থেকে তিনি যোদ্ধাদের উপরে নিযুক্ত একজন কর্মচারী ও রাজার সাতজন পরামর্শদাতাকে ধরলেন। এছাড়া সেনাপতির লেখক, যিনি সৈন্যদলে লোক ভর্তি করতেন তাঁকে এবং শহরের মধ্যে পাওয়া আরও ষাটজন লোককেও ধরলেন। সেনাপতি নবূষরদন তাদের সবাইকে বন্দী করে রিব্‌লাতে বাবিলের রাজার কাছে নিয়ে গেলেন। রাজা হমাৎ দেশের রিব্‌লাতে এই সব লোকদের মেরে ফেললেন। এইভাবে যিহূদার লোকদের বন্দী করে নিজের দেশ থেকে দূরে নিয়ে যাওয়া হল। নবূখদ্‌নিৎসর যে লোকদের বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের সংখ্যা হল এই: সপ্তম বছরে তিন হাজার তেইশজন যিহূদী, নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের আঠারো বছরের সময় যিরূশালেম থেকে আটশো বত্রিশজন যিহূদী; আর তাঁর রাজত্বের তেইশ বছরের সময় রাজার রক্ষীদলের সেনাপতি নবূষরদন সাতশো পঁয়তাল্লিশজন যিহূদীকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এদের সংখ্যা ছিল মোট চার হাজার ছ’শো। যিহূদার রাজা যিহোয়াখীনের বন্দীত্বের সাঁইত্রিশ বছরের সময় ইবিল-মরোদক বাবিলের রাজা হলেন। তিনি সেই বছরের বারো মাসের পঁচিশ দিনের দিন যিহোয়াখীনকে জেলখানা থেকে ছেড়ে দিলেন। তিনি যিহোয়াখীনের সংগে ভালভাবে কথা বললেন এবং বাবিলে তাঁর সংগে আর যে সব রাজারা ছিলেন তাঁদের চেয়েও তাঁকে আরও সম্মানের আসন দিলেন। যিহোয়াখীন জেলখানার কাপড়-চোপড় খুলে ফেললেন এবং জীবনের বাকী দিনগুলো নিয়মিতভাবে রাজার সংগে খাওয়া-দাওয়া করে কাটিয়ে দিলেন। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন রাজা নিয়মিতভাবে তাঁকে প্রতিদিনের জন্য একটা ভাতা দিতেন। হায়! যে শহর একদিন লোকজনে পরিপূর্ণ ছিল সে কেমন একা পড়ে রয়েছে। যে শহর একদিন জাতিদের মধ্যে প্রধান ছিল, সে এখন বিধবার মত হয়েছে। যে ছিল প্রদেশগুলোর রাণী সে এখন হয়েছে দাসী। সে রাতের বেলা খুব কাঁদতে থাকে, চোখের জলে তার গাল ভেসে যায়। তার প্রেমিকদের মধ্যে তাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য একজনও নেই। তার বন্ধুরা সবাই তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে; তারা সকলেই তার শত্রু হয়েছে। কষ্ট ও কঠিন পরিশ্রমের পর যিহূদা দূরে বন্দীদশায় গেছে। সে বিভিন্ন জাতির মধ্যে বাস করছে; কোথাও সে বিশ্রামস্থান পায় নি। যারা তাকে তাড়া করছিল তারা তার কষ্টের মধ্যেই তাকে ধরে ফেলেছে। সিয়োনের রাস্তাগুলো শোক করছে, কারণ নির্দিষ্ট পর্বে কেউ আর আসে না। তার সব ফটকে ঢুকবার পথ খালি। তার পুরোহিতেরা কাত্‌রাচ্ছে, যুবতী মেয়েরা দুঃখ করছে, তাতে সে মনে খুব ব্যথা পাচ্ছে। তার বিপক্ষেরা তার মনিব হয়েছে; তার শত্রুরা আরামে আছে। তার অনেক পাপের জন্য সদাপ্রভুই তাকে দুঃখ দিয়েছেন। তার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বন্দী হয়ে শত্রুর আগে আগে গেছে। সিয়োন-কন্যার সব জাঁকজমক চলে গেছে। তার নেতারা এমন সব হরিণের মত যারা চরবার জায়গা পায় না; তারা দুর্বল হয়ে তাদেরই আগে আগে পালিয়ে গেছে যারা তাদের তাড়া করছে। যিরূশালেম তার কষ্টের আর ঘুরে বেড়াবার দিনগুলোতে তার পুরানো দিনের ধন-সম্পদের কথা মনে করছে। তার লোকেরা যখন শত্রুর হাতে পড়েছিল তখন তাকে সাহায্য করার কেউ ছিল না। তার শত্রুরা তার দিকে তাকিয়ে তার ধ্বংসের জন্য ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছিল। যিরূশালেম খুব পাপ করেছে, তাই সে অশুচি হয়ে গেছে। যারা তাকে সম্মান করত তারা সবাই তাকে তুচ্ছ করছে, কারণ তারা তার উলংগ অবস্থা দেখেছে; সে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছে ও মুখ লুকাচ্ছে। তার নোংরামি তার কাপড়ে লেগে আছে; তার ভবিষ্যতের কথা সে চিন্তা করে নি। সে ভীষণভাবে পড়ে গেছে; তাকে সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই। সে বলছে, “হে সদাপ্রভু, আমার কষ্ট দেখ, কারণ শত্রু জয়লাভ করেছে।” শত্রু তার সব মূল্যবান জিনিসের উপর হাত দিয়েছে; দেবতা-পূজাকারী জাতিদের সে তার পবিত্র জায়গায় ঢুকতে দেখেছে। এরা সেই লোক যাদের তুমি তোমার সমাজে ঢুকতে নিষেধ করেছিলে। তার সব লোকেরা কাত্‌রাতে কাত্‌রাতে খাবারের খোঁজ করছে; নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবার জন্য তারা খাবারের বদলে তাদের মূল্যবান জিনিস দিয়ে দিয়েছে। যিরূশালেম বলছে, “হে সদাপ্রভু, তাকাও, ভেবে দেখ, আমাকে তুচ্ছ করা হয়েছে। তোমরা যারা আমার পাশ দিয়ে যাও তোমাদের কি কিছুই যায়-আসে না? একটু ঘুরে তাকিয়ে দেখ। আমাকে যে যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে সেই রকম যন্ত্রণা কি আর কাউকে দেওয়া হয়েছে, যা সদাপ্রভু তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধের দিনে আমাকে দিয়েছেন? তিনি উপর থেকে আমার হাড়গোড়ের মধ্যে আগুন পাঠিয়েছেন। আমার পায়ের জন্য তিনি জাল বিছিয়েছেন এবং আমাকে পিছন ফিরতে বাধ্য করেছেন। তিনি আমাকে জনশূন্য করে দিয়েছেন, সারাদিন দুর্বল করে রেখেছেন। আমার সব পাপ তিনি জোয়ালের মত বেঁধেছেন; তিনি হাত দিয়ে সেগুলো একসংগে বুনেছেন। সেগুলো আমার ঘাড়ের উপর দেওয়া হয়েছে; সদাপ্রভুই আমার শক্তিকে দুর্বল করেছেন। যাদের আমি বাধা দিতে পারি না তাদের হাতেই তিনি আমাকে তুলে দিয়েছেন। সদাপ্রভুই আমার মধ্যেকার সব যোদ্ধাদের বাতিল করেছেন; আমার যুবকদের গুঁড়িয়ে দেবার জন্য আমার বিরুদ্ধে একটা সময় ঠিক করেছেন। আংগুর মাড়াইয়ের গর্তে কুমারী কন্যা যিহূদাকে তিনি পায়ে মাড়িয়েছেন। সেইজন্যই আমি কাঁদছি, আমার চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে। আমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য আমার কাছে কেউ নেই, কেউ নেই যে আমার প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। আমার ছেলেমেয়েরা একা হয়ে গেছে, কারণ শত্রু জয়ী হয়েছে।” সিয়োন তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাকে সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই। সদাপ্রভু যাকোবের জন্য এই আদেশ দিয়েছেন যে, তার প্রতিবেশীরা তার শত্রু হবে। তাদের মধ্যে যিরূশালেম হয়েছে একটা অশুচি জিনিস। সে বলছে, “সদাপ্রভু ন্যায়বান, আমি তো তার আদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি। সমস্ত জাতিরা শোন, আমার কষ্ট দেখ; আমার যুবক-যুবতীরা বন্দী হয়ে দূরে চলে গেছে। আমার প্রেমিকদের আমি ডাকলাম কিন্তু তারা আমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করল। আমার পুরোহিতেরা ও বৃদ্ধ নেতারা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবার জন্য খাবার খুঁজতে খুঁজতে শহরের মধ্যেই শেষ হয়ে গেল। হে সদাপ্রভু, দেখ, আমি কেমন কষ্ট পাচ্ছি! আমার ভিতরেও যন্ত্রণা হচ্ছে। আমার অন্তর ব্যাকুল হয়েছে, কারণ আমি ভীষণ বিদ্রোহী হয়েছি। শহরের বাইরে তলোয়ার নিচ্ছে প্রাণ, আর ভিতরে আছে কেবল মৃত্যু। লোকে আমার দীর্ঘনিঃশ্বাস শুনেছে, কিন্তু আমাকে সান্ত্বনা দেবার কেউ নেই। আমার সব শত্রুরা আমার কষ্টের কথা শুনেছে; তুমি যা করেছ তা দেখে তারা আনন্দ করছে। যে দিনের কথা তুমি ঘোষণা করেছ সেই দিন তুমি আন যাতে তারা আমার মত হতে পারে। তাদের সব দুষ্টতা তোমার চোখে পড়ুক। আমার সব পাপের জন্য তুমি আমার প্রতি যেমন করেছ তাদের প্রতিও তা-ই কর। আমার দীর্ঘনিঃশ্বাস বেশী, আমি মন-মরা হয়ে পড়েছি।” হায়, সদাপ্রভু কিভাবে তাঁর ক্রোধে সিয়োন-কন্যাকে অন্ধকারে ঢেকে ফেলেছেন! ইস্রায়েলের জাঁকজমক তিনি আকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেলে দিয়েছেন। তাঁর ক্রোধের দিনে তাঁর পা রাখবার জায়গাকে তিনি মনে রাখেন নি। যাকোবের সব বাসস্থান সদাপ্রভু গ্রাস করেছেন, কোন মমতা করেন নি। যিহূদা-কন্যার দুর্গগুলো তাঁর উপ্‌চে পড়া ক্রোধে তিনি ভেংগে ফেলেছেন, সেগুলো তিনি মাটিতে ফেলে ধ্বংস করেছেন। তাঁর রাজ্য ও নেতাদের তিনি অসম্মানের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। জ্বলন্ত ক্রোধে তিনি ইস্রায়েলের সমস্ত শক্তি নষ্ট করে দিয়েছেন। শত্রু এগিয়ে আসতে থাকলে তাঁর শক্তিশালী হাত তিনি গুটিয়ে নিয়েছেন। চারপাশের সব কিছু পুড়িয়ে ফেলা আগুনের শিখার মত তিনি যাকোবের মধ্যে জ্বলে উঠেছেন। শত্রুর মত করে তিনি তাঁর ধনুকে টান দিয়েছেন, তাঁর শক্তিশালী হাত ঠিক করেছেন। যাদের দেখে তারা আনন্দ পেত তাদের তিনি মেরে ফেলেছেন। সিয়োন-কন্যার তাম্বুর মধ্যে তিনি আগুনের মত করে তাঁর ক্রোধ ঢেলে দিয়েছেন। সদাপ্রভু শত্রুর মত হয়েছেন; তিনি ইস্রায়েলকে গ্রাস করেছেন। তিনি গ্রাস করেছেন তার সব বড় বড় বাড়ীগুলো আর ধ্বংস করে দিয়েছেন তার সব দুর্গ। তিনি যিহূদা-কন্যার শোক ও বিলাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বাগানের গাছের মত করে তাঁর বাসস্থানকে উপ্‌ড়ে ফেলেছেন; ধ্বংস করে দিয়েছেন তাঁর নির্দিষ্ট মিলন স্থানকে। সদাপ্রভু সিয়োনকে তার সব পর্ব ও বিশ্রামবারের কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন; ভয়ংকর ক্রোধে রাজা ও পুরোহিতকে তিনি অগ্রাহ্য করেছেন। সদাপ্রভু তাঁর বেদীকে অগ্রাহ্য করেছেন, ত্যাগ করেছেন তাঁর পবিত্র জায়গা। তাঁর দুর্গগুলোর সমস্ত দেয়াল তিনি শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছেন। পর্বের দিনের মত করে শত্রুরা সদাপ্রভুর ঘরে চিৎকার করছে। সিয়োন-কন্যার চারপাশের দেয়াল ভেংগে ফেলাই সদাপ্রভু স্থির করেছেন। তিনি মাপের দড়ি দিয়ে মেপেছেন আর ধ্বংস করবার কাজে নিজের হাতকে থামিয়ে রাখেন নি। তিনি সিয়োনের দুর্গ ও দেয়ালকে বিলাপ করিয়েছেন; সেগুলো একসংগে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার ফটকগুলো মাটিতে ঢেকে গেছে; আগলগুলো তিনি ভেংগে নষ্ট করে দিয়েছেন। তার রাজা ও নেতারা জাতিদের মধ্যে বন্দী হয়ে আছে; আইন-কানুন বলতে কিছু নেই; তার নবীরা সদাপ্রভুর কাছ থেকে আর দর্শন পায় না। সিয়োন-কন্যার বৃদ্ধ নেতারা চুপ করে মাটিতে বসে আছেন। তাঁরা নিজেদের মাথায় ধুলা ছড়িয়েছেন আর ছালার চট পরেছেন। যিরূশালেমের যুবতী মেয়েরা দুঃখে মাটিতে মাথা ঠেকিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে আমার চোখ দুর্বল হয়ে পড়েছে, আমার ভিতরেও যন্ত্রণা হচ্ছে; আমার লোকেরা ধ্বংস হয়েছে, আর ছেলেমেয়েরা ও শিশুরা শহরের খোলা জায়গাগুলোতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। সেইজন্য আমার অন্তর যেন মাটিতে ঢেলে পড়ছে। তারা তাদের মায়েদের বলে, “রুটি আর আংগুর-রস কোথায়?” এই বলে তারা শহরের খোলা জায়গাগুলোতে আহত লোকের মত অজ্ঞান হয়ে পড়ছে; মায়ের কোলের মধ্যে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। হে যিরূশালেম-কন্যা, আমি কি কথা বলে তোমার পক্ষ নেব? কিসের সংগে আমি তোমার তুলনা করব? হে সিয়োন কুমারী-কন্যা, তোমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য আমি কিসের সংগে তোমাকে সমান করে দেখব? তোমার আঘাত সাগরের মত বড়; কে তোমাকে সুস্থ করতে পারে? তোমার নবীদের দর্শন মিথ্যা ও বাজে; তোমার বন্দীদশা যাতে দূর হয়ে যায় সেজন্য তারা তোমার পাপ দেখিয়ে দেয় নি। ভবিষ্যদ্বাণী হিসাবে তারা যা তোমাদের বলেছে তা মিথ্যা; তা তোমাদের ভুল পথে চালিয়েছে। যারা তোমার পাশ দিয়ে যায় তারা তোমাকে দেখে হাততালি দেয়; তারা যিরূশালেম-কন্যাকে দেখে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে আর মাথা নেড়ে বলে, “এ কি সেই শহর যাকে বলা হত সেরা সুন্দরী, যাকে নিয়ে সারা পৃথিবী আনন্দ করত?” তোমার সব শত্রুরা তোমার বিরুদ্ধে মুখ বড় করে হা করেছে; তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে দাঁতে দাঁত ঘষে বলে, “ওকে আমরা গিলে ফেলেছি। এই দিনের জন্যই আমরা অপেক্ষা করে ছিলাম আর তা দেখতে পেলাম।” সদাপ্রভু তাঁর পরিকল্পনামতই কাজ করেছেন; যে কথা তিনি অনেক আগেই বলেছিলেন সেই কথা পূর্ণ করেছেন। তিনি মমতা না করেই তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন; শত্রুকে তোমার বিরুদ্ধে তিনি আনন্দ করতে দিয়েছেন, তোমার বিপক্ষদের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তোমার লোকদের অন্তর সদাপ্রভুর কাছে কেঁদে কেঁদে বলেছে, “হে সিয়োন-কন্যার দেয়াল, তোমার চোখের জল দিনরাত নদীর মত বয়ে যাক; তোমার নিজেকে শান্তি পেতে দিয়ো না, চোখকেও বিশ্রাম দিয়ো না। ওঠো, রাতের প্রত্যেক প্রহরের শুরুতে কেঁদে ওঠো; সদাপ্রভুর সামনে জলের মত ঢেলে দাও তোমার অন্তর। তোমার ছেলেমেয়েরা যারা খিদের জ্বালায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ছে, তাদের জীবন বাঁচাবার জন্য তাঁর উদ্দেশে তোমার হাত তোল।” হে সদাপ্রভু, তাকাও, ভেবে দেখ, তুমি তো আর কারও প্রতি এই রকম ব্যবহার কর নি? স্ত্রীলোকেরা কি তাদের নিজেদের সন্তানদের খাবে যাদের তারা লালন-পালন করেছে? প্রভুর পবিত্র জায়গায় কি পুরোহিত ও নবীদের মেরে ফেলা হবে? ছেলে ও বুড়োরা ধুলার মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় পড়ে আছে; আমার যুবক ও যুবতীরা তলোয়ারের ঘায়ে পড়ে গেছে। তোমার ক্রোধের দিনে তুমি তাদের মেরে ফেলেছ; তুমি তাদের কেটে ফেলেছ, মমতা কর নি। পর্বের দিনে যেমন তুমি লোকদের জড়ো কর তেমনি আমার চারপাশে তুমি নানা রকম ভীষণ ভয় জড়ো করেছ। সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে কেউ রেহাই পায় নি কিম্বা বেঁচে থাকে নি; যাদের আমি লালন-পালন ও যত্ন করতাম আমার শত্রু তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি সেই লোক, যে সদাপ্রভুর ক্রোধের শাস্তি পেয়েছে। তিনি আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন; তিনি আমাকে আলোতে নয়, কিন্তু অন্ধকারে হাঁটিয়েছেন; সত্যিই সারাদিন ধরে তিনি আমার বিরুদ্ধে বারে বারে তাঁর হাত তুলেছেন। আমার চামড়া ও মাংসকে তিনি শুকিয়ে ফেলেছেন আর হাড়গুলো ভেংগে দিয়েছেন। তিনি মনোদুঃখ ও কষ্ট দিয়ে আমাকে আটক করে ঘিরে রেখেছেন। যারা অনেক দিন আগে মারা গেছে তাদের মত করে তিনি আমাকে অন্ধকারে বাস করিয়েছেন। আমি যাতে পালাতে না পারি সেজন্য তিনি আমার চারদিক ঘিরে রেখেছেন; আমাকে ভারী শিকল দিয়ে বেঁধেছেন। যখন আমি ডাকি বা সাহায্যের জন্য কাঁদি, তখন আমার প্রার্থনা তিনি শোনেন না। ভারী ভারী পাথর দিয়ে তিনি আমার পথ বন্ধ করেছেন; আমার পথ তিনি বাঁকা করে দিয়েছেন। আমার কাছে তিনি ওৎ পেতে থাকা ভাল্লুক আর লুকিয়ে থাকা সিংহের মত; পথ থেকে তিনি আমাকে টেনে এনে টুকরা টুকরা করেছেন এবং আমাকে একা ফেলে রেখে গেছেন। তাঁর ধনুকে টান দিয়ে তিনি আমাকে তাঁর তীরের লক্ষ্যস্থান করেছেন। তাঁর তূণ থেকে তীর নিয়ে তিনি আমার অন্তর ছিদ্র করেছেন। আমার সমস্ত লোকের কাছে আমি হাসির পাত্র হয়েছি; তারা সারাদিন গান গেয়ে গেয়ে আমাকে ঠাট্টা করে। তেতো দিয়ে তিনি আমাকে পূর্ণ করেছেন, বিষ দিয়ে আমার পেট ভরিয়েছেন। তিনি পাথর দিয়ে আমার দাঁত ভেংগেছেন আর ধুলার মধ্যে আমাকে মাড়িয়েছেন। শান্তি আমার কাছ থেকে দূর করা হয়েছে; মংগল কি, তা আমি ভুলে গেছি। তাই আমি বলি, “আমার শক্তি চলে গেছে। সদাপ্রভুর কাছ থেকে আমি যা কিছু আশা করেছিলাম তা-ও আর নেই।” আমার কষ্ট ও ঘুরে বেড়াবার কথা মনে কর; মনে কর আমার তেতো ও বিষে পূর্ণ জীবনের কথা। তা সব সময়ই আমার মনে আছে, আর আমার প্রাণ আমার ভিতরে দুঃখিত হয়ে আছে। তবুও আমার আশা আছে, কারণ আমি এই কথা মনে করি: সদাপ্রভুর অটল ভালবাসার জন্য আমরা ধ্বংস হচ্ছি না, কারণ তাঁর করুণা কখনও শেষ হয় না; প্রতিদিন সকালে তা নতুন হয়ে দেখা দেয়; তাঁর বিশ্বস্ততা মহৎ। আমি মনে মনে বলি, “সদাপ্রভুই আমার সম্পত্তি, তাই আমি তাঁর উপর আশা রাখব।” সদাপ্রভুর উপর যারা আশা রাখে ও তাঁর উপর নির্ভর করে তাদের তিনি মংগল করেন। সদাপ্রভু উদ্ধার না করা পর্যন্ত নীরবে অপেক্ষা করা ভাল। যৌবন কালে জোয়াল বহন করা মানুষের জন্য ভাল। সদাপ্রভুই সেই জোয়াল তার উপর দিয়েছেন, তাই সে একা চুপ করে বসে থাকুক। সে ধুলাতে মুখ ঢাকুক, হয়তো আশা থাকতেও পারে। যে তাকে মারছে তার কাছে সে গাল পেতে দিক, নিজেকে অপমানে পূর্ণ হতে দিক। প্রভু তো চিরদিনের জন্য মানুষকে দূর করে দেন না। যদি বা তিনি দুঃখ দেন, তবুও তাঁর অটল ভালবাসা অনুসারে তিনি করুণা করবেন, কারণ তিনি ইচ্ছা করে মানুষকে কষ্ট কিম্বা মনোদুঃখ দেন না। দেশের সব বন্দীদের পায়ে দলানো, মহান ঈশ্বরের সামনে মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করা, ন্যায়বিচার হতে না দেওয়া- এ সব কি প্রভু দেখবেন না? যদি সদাপ্রভু আদেশ না দেন তবে কে মুখে বলে কিছু ঘটাতে পারে? মহান ঈশ্বরের মুখ থেকেই কি অমংগল ও মংগল বের হয় না? পাপের জন্য শাস্তি পেলে পর মানুষ কেন তা নিয়ে নালিশ করবে? এস, আমরা আমাদের জীবন-পথের পরীক্ষা করি ও যাচাই করি এবং সদাপ্রভুর কাছে ফিরে যাই। এস, আমরা আমাদের অন্তর ও হাত স্বর্গে ঈশ্বরের দিকে উঠাই আর বলি, “আমরা পাপ করেছি, বিদ্রোহ করেছি; তুমি ক্ষমা কর নি। তুমি ক্রোধ দিয়ে নিজেকে ঢেকে আমাদের তাড়া করেছ; মমতা না করে তুমি মেরে ফেলেছ। তুমি মেঘ দিয়ে নিজেকে ঢেকেছ যাতে কোন প্রার্থনা তার মধ্য দিয়ে যেতে না পারে। জাতিদের মধ্যে তুমি আমাদের করেছ ময়লা ও আবর্জনার মত। আমাদের সব শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে মুখ বড় করে হা করেছে। আমরা ভয়, ফাঁদ, সর্বনাশ ও ধ্বংসের মুখে পড়েছি।” আমার লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সেজন্য আমার চোখ থেকে জলের স্রোত বইছে। আমার চোখ থেকে স্রোত বইতেই থাকবে, থামবে না, যে পর্যন্ত না সদাপ্রভু স্বর্গ থেকে নীচে তাকিয়ে দেখেন। আমার শহরের সব স্ত্রীলোকদের বিষয়ে আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তাতে আমার প্রাণ কাঁদছে। বিনা কারণে যারা আমার শত্রু হয়েছিল তারা পাখীর মত করে আমাকে শিকার করেছে। তারা গর্তের মধ্যে আমার প্রাণ শেষ করে দেবার চেষ্টা করেছে এবং আমার উপর পাথর ছুঁড়েছে। আমার মাথার উপর দিয়ে জল বয়ে গেছে, আমি ভেবেছিলাম আমি মরে যাচ্ছি। হে সদাপ্রভু, সেই গভীর গর্তের মধ্য থেকে আমি তোমাকে ডাকলাম। তুমি আমার এই মিনতি শুনেছিলে, “সাহায্যের জন্য আমার কান্নার প্রতি তুমি কান বন্ধ করে রেখো না।” আমি যখন তোমাকে ডেকেছি তখন তুমি কাছে এসে বলেছ, “ভয় কোরো না।” হে প্রভু, তুমি আমার পক্ষ নিয়েছ, তুমি আমার প্রাণ মুক্ত করেছ। হে সদাপ্রভু, আমার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তা তো তুমি দেখেছ। আমার প্রতি ন্যায়বিচার কর। তারা কিভাবে প্রতিশোধ নিয়েছে তা তুমি দেখেছ, দেখেছ আমার বিরুদ্ধে তাদের সব ষড়যন্ত্র। হে সদাপ্রভু, তাদের টিট্‌কারির কথা তুমি শুনেছ, শুনেছ আমার বিরুদ্ধে তাদের সব ষড়যন্ত্রের কথা। আমার শত্রুরা সারাদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে কত ফিস্‌ ফিস্‌ করে ও নানা কথা বলে। দেখ, তাদের সমস্ত কাজের মধ্যে তারা গান গেয়ে গেয়ে আমাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। হে সদাপ্রভু, তাদের কাজ অনুসারে তুমি তাদের ফল দাও। তাদের অন্তর কঠিন কর, আর তোমার অভিশাপ তাদের উপরে পড়ুক। তুমি ক্রোধে তাদের তাড়া কর, তোমার আকাশের নীচ থেকে তাদের ধ্বংস করে ফেল। হায়! সোনা কেমন করে তার উজ্জ্বলতা হারিয়েছে, খাঁটি সোনা ্নান হয়ে গেছে। প্রত্যেকটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছড়িয়ে রয়েছে দামী দামী পাথরগুলো। সিয়োনের ছেলেরা একদিন সোনার মত মূল্যবান ছিল; তাদের এখন মনে করা হয় কুমারের তৈরী মাটির পাত্রের মত। শিয়ালেরা পর্যন্ত নিজের বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ায়, কিন্তু আমার লোকেরা মরু-এলাকার উট পাখীদের মত নিষ্ঠুর হয়ে গেছে। পিপাসায় শিশুদের জিভ্‌ তালুতে লেগে যাচ্ছে; ছেলেমেয়েরা রুটি চাইছে, কিন্তু কেউ তা দিচ্ছে না। যারা একদিন ভাল ভাল খাবার খেত তারা এখন অভাবের মধ্যে পথে পথে রয়েছে। যারা দামী বেগুনে কাপড় পরে মানুষ হয়েছে তারা এখন ছাইয়ের গাদায় শুয়ে আছে। যে সদোমকে মুহূর্তের মধ্যে উল্টে ফেলা হয়েছিল, যার বিরুদ্ধে কোন মানুষের হাত ওঠে নি, সেই সদোমের পাপের চেয়েও আমার লোকদের অন্যায় বেশী। তাদের বাছাই করা নেতারা ছিল তুষারের চেয়েও উজ্জ্বল, ছিল দুধের চেয়েও সাদা; তাদের দেহ প্রবাল পাথরের চেয়ে লাল ছিল আর চেহারা ছিল নীলকান্তমণির মত। কিন্তু তারা এখন কালির চেয়েও কালো হয়েছে; রাস্তায় তাদের চেনা যায় না। তাদের চামড়া হাড়ের উপর কুঁচকে গেছে; তা কাঠের মত শুকিয়ে গেছে। দুর্ভিক্ষে মরার চেয়ে বরং যুদ্ধে মরা ভাল; আমার লোকেরা ক্ষেতের শস্যের অভাবে খিদের যন্ত্রণায় ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। স্নেহময়ী স্ত্রীলোকেরা নিজের হাতে তাদের সন্তানদের রান্না করেছে। আমার লোকদের ধ্বংসের সময় তাদের সন্তানেরাই তাদের খাবার হয়েছিল। সদাপ্রভু তাঁর ভীষণ অসন্তোষকে পুরোপুরিই বের করেছেন; তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধ তিনি ঢেলে দিয়েছেন। তিনি সিয়োনে আগুন জ্বেলেছেন; তা তার ভিত্তিগুলো পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে। রাজারা কিম্বা জগতের কোন লোকই বিশ্বাস করত না যে, যিরূশালেমের ফটক দিয়ে কোন শত্রু বা বিপক্ষ ঢুকতে পারে। এই ঘটনা ঘটেছিল তার নবীদের পাপের জন্য, তার পুরোহিতদের অন্যায়ের জন্য, কারণ সেখানেই তারা সৎ লোকদের রক্তপাত করত। তাই তারা অন্ধদের মত রাস্তায় রাস্তায় হাঁত্‌ড়ে বেড়িয়েছে; তারা এমনভাবে রক্তে অশুচি হয়েছে যে, কেউ তাদের কাপড় ছুঁতে চাইত না। লোকে চিৎকার করে তাদের বলেছে, “সরে যাও, তোমরা অশুচি। সরে যাও, সরে যাও, আমাদের ছুঁয়ো না।” তারা পালিয়ে গিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে; অন্যান্য জাতির লোকেরা বলেছে, “তারা এখানে আর থাকতে পারবে না।” সদাপ্রভু নিজেই তাদের ছড়িয়ে দিয়েছেন; তিনি তাদের প্রতি আর মনোযোগ দেন না। লোকে পুরোহিতদের সম্মান দেখায় না, দয়া করে না বৃদ্ধ নেতাদের। তবুও সাহায্যের জন্য মিথ্যাই তাকিয়ে থেকে থেকে আমাদের চোখ দুর্বল হয়ে পড়েছে; আমরা অনবরত এমন এক জাতির দিকে তাকিয়ে ছিলাম যে জাতি আমাদের রক্ষা করতে পারত না। লোকে আমাদের জন্য ওৎ পেতে থাকত, তাই আমরা আমাদের খোলা জায়গাগুলোতে হাঁটতে পারতাম না। আমাদের শেষ কাল কাছে এসেছিল, আমাদের দিনগুলো ফুরিয়ে গিয়েছিল, কারণ আমাদের শেষ সময় উপস্থিত হয়েছিল। আমাদের যারা তাড়া করত তারা আকাশের ঈগল পাখীর চেয়েও বেগে যেত; তারা পাহাড়ে পাহাড়ে আমাদের তাড়া করত আর মরু-এলাকায় ওৎ পেতে থাকত আমাদের জন্য। যিনি সদাপ্রভুর অভিষিক্ত, যিনি আমাদের জীবন-বায়ু, তিনি তাদের ফাঁদে ধরা পড়েছিলেন; কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম তাঁর ছায়াতে জাতিদের মধ্যে আমরা বাস করব। ঊষ দেশে বাসকারিণী হে ইদোম-কন্যা, তুমি আনন্দ কর, খুশী হও; কিন্তু তোমাকেও সেই পেয়ালা দেওয়া হবে; তুমি মাতাল ও উলংগ হবে। হে সিয়োন-কন্যা, তোমার শাস্তি শেষ হবে; তিনি তোমাকে আর বন্দীদশায় ফেলে রাখবেন না; কিন্তু হে ইদোম-কন্যা, তিনি তোমার অন্যায়ের শাস্তি দেবেন এবং তোমার পাপ প্রকাশ করবেন। হে সদাপ্রভু, আমাদের উপর যা ঘটেছে তা মনে করে দেখ; তুমি তাকাও, আমাদের অপমান দেখ। আমাদের ভাগের সম্পত্তি বিদেশীদের হাতে দেওয়া হয়েছে, আর বাড়ী-ঘর দেওয়া হয়েছে ভিন্ন জাতির লোকদের। আমরা অনাথ হয়েছি, আমাদের বাবা নেই, আমাদের মায়েরা বিধবা হয়েছে। আমাদের খাবার জল কিনে খেতে হয়; কেবল দাম দিয়েই আমরা কাঠ পেতে পারি। যারা আমাদের তাড়া করছে তারা আমাদের কাছে এসে পড়েছে; আমরা ক্লান্ত হয়েছি, বিশ্রাম পাচ্ছি না। যথেষ্ট খাবার পাবার জন্য আমরা মিসর ও আসিরিয়ার অধীন হয়েছি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা পাপ করেছিলেন; তাঁরা এখন আর নেই, কিন্তু আমরা তাঁদের শাস্তি বহন করছি। দাসেরা আমাদের শাসন করছে; তাদের হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করবার কেউ নেই। মরু-এলাকায় ডাকাতদের ভয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আমরা খাবার জোগাড় করি। আমাদের চামড়া তুন্দুরের মত গরম; খিদের জ্বালায় জ্বর জ্বর বোধ করি। সিয়োনে স্ত্রীলোকদের নষ্ট করা হয়েছে; যিহূদার গ্রাম ও শহরে নষ্ট করা হয়েছে কুমারী মেয়েদের। উঁচু পদের কর্মচারীদের হাত বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে; বৃদ্ধ নেতাদের সম্মান দেখানো হয় নি। যুবকদের যাঁতা ঘুরিয়ে পরিশ্রম করতে হচ্ছে; ছোট ছেলেরা কাঠের বোঝার ভারে টলমল করছে। শহর-ফটকের কাছে বৃদ্ধ নেতারা আর বসেন না; যুবকেরা বাজনা বাজানো থামিয়েছে। আমাদের অন্তর থেকে আনন্দ চলে গেছে আমরা নাচের বদলে শোক করছি। আমাদের মাথা থেকে মুকুট পড়ে গেছে। ধিক্‌ আমাদের, কারণ আমরা পাপ করেছি! এইজন্য আমাদের অন্তর দুর্বল হয়ে গেছে, এই সব কারণে আমাদের চোখের তেজ কমে গেছে। সিয়োন পাহাড় জনশূন্য হয়ে পড়ে আছে; শিয়ালেরা তার উপর ঘুরে বেড়ায়। হে সদাপ্রভু, তুমি চিরকাল রাজত্ব কর; তোমার সিংহাসন বংশের পর বংশ ধরে স্থায়ী। তুমি কি চিরকালের জন্য আমাদের ভুলে যাবে? এতদিন ধরে কেন তুমি আমাদের ত্যাগ করে আছ? ত্রিশ বছরের চতুর্থ মাসের পঞ্চম দিনে আমি যখন কবার নদীর ধারে বন্দীদের মধ্যে ছিলাম তখন আকাশ খুলে গেল আর আমি ঈশ্বরের দর্শন পেলাম। সেই সময়টা ছিল রাজা যিহোয়াখীনের বন্দী হবার পঞ্চম বছর। বাবিলীয়দের দেশে কবার নদীর ধারে বুষির ছেলে পুরোহিত যিহিষ্কেলের কাছে, অর্থাৎ আমার কাছে সদাপ্রভুর বাক্য প্রকাশিত হল। সেখানে সদাপ্রভুর হাত আমার উপরে ছিল। আমি তাকিয়ে দেখতে পেলাম উত্তর দিক থেকে একটা ঝোড়ো বাতাস আসছে, একটা বিরাট মেঘের মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে এবং তার চারপাশটা উজ্জ্বল আলোয় ঘেরা। সেই বিদ্যুতের মাঝখানে উজ্জ্বল ধাতুর মত কিছু ঝক্‌মক করছিল। সেখানে চারটি জীবন্ত প্রাণীর মত কিছু দেখা গেল। তাঁদের চেহারা দেখতে ছিল মানুষের মত, কিন্তু প্রত্যেকের চারটি করে মুখ ও চারটি করে ডানা ছিল। তাঁদের পা সোজা ও পায়ের পাতা বাছুরের খুরের মত; সেগুলো পালিশ করা ব্রোঞ্জের মত চক্‌চকে। তাঁদের চারপাশে ডানার নীচে মানুষের মত হাত ছিল। তাঁদের প্রত্যেকের মুখ এবং ডানা ছিল, আর তাঁদের ডানাগুলো একটার সংগে অন্যটা ছুঁয়ে ছিল। তাঁরা প্রত্যেকে সোজা এগিয়ে যেতেন, যাবার সময় ফিরতেন না। তাঁদের মুখগুলো দেখতে ছিল এই রকম- তাঁদের চারজনের প্রত্যেকের একটা করে মানুষের মুখ ছিল এবং প্রত্যেকের ডান দিকের মুখ সিংহের, বাঁদিকের ষাঁড়ের এবং প্রত্যেকের একটা করে ঈগলের মুখও ছিল। তাদের মুখগুলো এই রকম ছিল। তাঁদের ডানাগুলো উপর দিকে মেলে দেওয়া ছিল; প্রত্যেকের দু’টি ডানা তাঁর দু’পাশের প্রাণীর ডানা ছুঁয়ে ছিল, আর দু’টি ডানা দিয়ে দেহ ঢাকা ছিল। তাঁরা প্রত্যেকে তাঁদের মুখ অনুসারে চারদিকে এগিয়ে যেতে পারতেন। সেই জীবন্ত প্রাণীদের আত্মা যেদিকে যেতেন তাঁরা সেই দিকেই যেতেন, যাবার সময় ফিরতেন না। এই জীবন্ত প্রাণীদের মধ্যে জ্বলন্ত কয়লা কিম্বা মশালের মত আগুন জ্বলছিল এবং তা সেই প্রাণীদের মধ্যে আসা-যাওয়া করছিল; সেই আগুন উজ্জ্বল এবং তার মধ্য থেকে বিদ্যুৎ বেরিয়ে আসছিল। প্রাণীগুলো বিদ্যুৎ চমকাবার মত করে আসা-যাওয়া করছিলেন। সেই জীবন্ত প্রাণীগুলোর দিকে তাকিয়ে আমি দেখতে পেলাম চারটি প্রাণীর প্রত্যেকটির পাশে মাটিতে একটা করে চাকা আছে। সেই চাকাগুলোর আকার ও গঠন এই রকম ছিল- সেগুলো বৈদূর্যমণির মত ঝক্‌মক করছিল এবং সেই চারটা চাকা দেখতে একই রকম ছিল। একটা চাকার ভিতরে যেন আর একটা চাকা এইভাবে প্রত্যেকটা চাকা তৈরী ছিল। চাকাগুলো যখন চলত তখন সেই প্রাণীগুলোর চারদিকের যে কোন দিকে সোজা চলত; চলবার সময় চাকাগুলো ফিরত না। সেই চাকাগুলো ছিল খুব বড় ও ভয় জাগানো এবং চারটা চাকার বেড়ের সবদিকই চোখে ভরা ছিল। জীবন্ত প্রাণীগুলো চলবার সময় তাঁদের পাশের চাকাগুলোও চলত; প্রাণীগুলো মাটি থেকে উঠলে পর চাকাগুলোও উঠত। প্রাণীগুলোর আত্মা যখন যেদিকে যেতেন চাকাগুলোও তাঁর সংগে সংগে যেত, কারণ সেই জীবন্ত প্রাণীদের আত্মা সেই চাকার মধ্যে ছিল। প্রাণীরা চললে চাকাগুলোও চলত; প্রাণীগুলো স্থির হয়ে দাঁড়ালে চাকাগুলোও স্থির হয়ে দাঁড়াত; আবার প্রাণীগুলো মাটি থেকে উঠলে চাকাগুলোও তাঁদের সংগে সংগে উঠত, কারণ সেই জীবন্ত প্রাণীদের আত্মা চাকাগুলোর মধ্যে ছিল। সেই জীবন্ত প্রাণীদের মাথার উপরে কিছু একটা বিছানো ছিল; সেটা বরফের মত চক্‌মক করছিল এবং ভয়ংকর ছিল। সেটার নীচে তাঁদের ডানাগুলো মেলে দেওয়া ছিল এবং একজনের ডানা অন্যজনের ডানাকে ছুঁয়ে ছিল। অন্য দু’টি ডানা দিয়ে প্রত্যেকের দেহ ঢাকা ছিল। প্রাণীগুলো চললে পর আমি তাঁদের ডানার শব্দ শুনতে পেলাম; তা ছিল বন্যার জলের স্রোতের শব্দের মত, সর্বশক্তিমানের গলার আওয়াজের মত, একটা সৈন্যদলের গোলমালের মত। প্রাণীগুলো স্থির হয়ে দাঁড়ালে পর তাঁরা তাঁদের ডানাগুলো গুটিয়ে নিতেন। যখন তাঁরা ডানা গুটিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন তাঁদের মাথার উপরকার সেই জায়গার উপর থেকে একটা গলার স্বর শোনা গেল। সেখানে নীলকান্তমণির সিংহাসনের মত কিছু একটা দেখা গেল। সেই উঁচুতে থাকা সিংহাসনের উপরে মানুষের আকারের মত একজনকে দেখা গেল। আমি দেখলাম কোমর থেকে উপর পর্যন্ত তিনি দেখতে ছিলেন উজ্জ্বল ধাতুর মত, যেন সেটি আগুনে পূর্ণ, আর কোমর থেকে নীচ পর্যন্ত তাঁকে আগুনের মত দেখতে লাগছিল; তাঁর চারপাশে ছিল উজ্জ্বল আলো। বৃষ্টির দিনে মেঘের মধ্যে মেঘধনুকের মতই তাঁর চারপাশের সেই আলো দেখা যাচ্ছিল। যা দেখা গেল তা ছিল সদাপ্র্রভুর মহিমার মত। আমি তা দেখে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লাম আর একজনকে কথা বলতে শুনলাম। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াও; আমি তোমার সংগে কথা বলব।” তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন ঈশ্বরের আত্মা আমার মধ্যে এসে আমাকে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড় করালেন আর আমি শুনলাম তিনি আমার সংগে কথা বলছেন। তিনি বললেন, “হে মানুষের সন্তান, আমি তোমাকে ইস্রায়েলীয়দের কাছে, অর্থাৎ যারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে সেই বিদ্রোহী জাতির কাছে পাঠাচ্ছি; তারা এবং তাদের পূর্বপুরুষেরা আজ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আসছে। যে লোকদের কাছে আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি তারা একগুঁয়ে ও জেদী। তুমি তাদের কাছে প্রভু সদাপ্র্রভুর বাক্য বলবে। তারা সেই কথা না-ও শুনতে পারে, কারণ তারা বিদ্রোহী জাতি; তবুও তারা জানতে পারবে যে, একজন নবী তাদের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু হে মানুষের সন্তান, তুমি তাদের ও তাদের কথায় ভয় কোরো না। যদিও তারা শিয়ালকাঁটা ও কাঁটাগাছের মত তোমার চারপাশে থাকবে ও বিছার মধ্যে তুমি বাস করবে তবুও ভয় কোরো না। তাদের দেখে বা তাদের কথা শুনে তুমি ভয় পেয়ো না; তারা তো বিদ্রোহী জাতি। তারা বিদ্রোহী বলে আমার কথা না-ও শুনতে পারে, কিন্তু তারা শুনুক বা না শুনুক তুমি তাদের কাছে আমার কথাগুলো বলবে। হে মানুষের সন্তান, আমি তোমাকে যা বলি তা শোন। ঐ বিদ্রোহী জাতির মত তুমি বিদ্রোহী হোয়ো না। তুমি হা কর, আমি তোমাকে যা দিচ্ছি তা খাও।” তখন আমি তাকিয়ে দেখলাম আমার দিকে একটা হাত বাড়ানো রয়েছে। তাতে রয়েছে একটা গুটিয়ে রাখা বই। আমার সামনে তিনি তা খুলে ধরলেন। তার দু’দিকেই লেখা রয়েছে বিলাপ, শোক ও দুঃখের কথা। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তোমার সামনে যা আছে তা তুমি খাও; এই গুটিয়ে রাখা বইটা খেয়ে ফেল, তারপর ইস্রায়েলীয়দের কাছে গিয়ে কথা বল।” তখন আমি মুখ খুললাম, আর তিনি আমাকে সেই বইটা খাইয়ে দিলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, আমার দেওয়া এই বইটা খেয়ে তোমার পেট ভর।” কাজেই আমি তা খেয়ে ফেললাম, আর তা আমার মুখে মধুর মত মিষ্টি লাগল। তিনি তারপর আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি এখন ইস্রায়েলীয়দের কাছে গিয়ে আমার কথাগুলো বল। তোমাকে তো এমন লোকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে না যাদের ভাষা তোমার অজানা এবং কঠিন, কিন্তু পাঠানো হচ্ছে ইস্রায়েলীয়দের কাছে। যাদের কথা তুমি বোঝ না সেই রকম অজানা ও কঠিন ভাষা বলা অনেক জাতির কাছে তোমাকে পাঠানো হচ্ছে না। যদি তাদের কাছে আমি তোমাকে পাঠাতাম তাহলে নিশ্চয়ই তারা তোমার কথা শুনত। কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা তোমার কথা শুনতে চাইবে না, কারণ তারা আমার কথা শুনতে চায় না; এর কারণ হল, গোটা ইস্রায়েল জাতি কঠিন-মনা ও একগুঁয়ে। কিন্তু আমি তোমাকে তাদেরই মত একরোখা ও কঠিন-মনা করে দেব। আমি তোমার কপাল হীরার মত শক্ত, চক্‌মকি পাথরের চেয়েও শক্ত করে দিলাম। যদিও তারা একটা বিদ্রোহী জাতি তবুও তুমি তাদের ভয় কোরো না বা তাদের দেখে ভয় পেয়ো না।” তিনি আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, আমি তোমাকে যে সব কথা বলব তা তুমি মন দিয়ে শোনো ও অন্তরে জমা রাখ। তুমি এখন বন্দীদশায় থাকা তোমার দেশের লোকদের কাছে গিয়ে কথা বল। তারা শুনুক বা না শুনুক, তুমি তাদের কাছে প্রভু সদাপ্রভুর বাক্য বলবে।” তারপর ঈশ্বরের আত্মা আমাকে তুলে নিলেন, আর আমি আমার পিছনে জোরে বলা এই কথা শুনলাম, “সদাপ্রভুর বাসস্থানে তাঁর মহিমার গৌরব হোক।” আমি সেই জীবন্ত প্রাণীদের একে অন্যের সংগে ডানা ঘষার শব্দ ও তাঁদের পাশের চাকার শব্দ খুব জোরে শুনতে পেলাম। ঈশ্বরের আত্মা আমাকে তুলে নিয়ে যাবার সময় আমি মনে বিরক্তি ও রাগ নিয়ে গেলাম, আর সদাপ্রভুর কঠিন হাত আমার উপরে ছিল। যে বন্দীরা কবার নদীর কাছে তেল-আবীবে ছিল আমি তাদের কাছে গেলাম। তারা যেখানে বাস করছিল আমি সেখানে তাদের মধ্যে সাত দিন হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। সাত দিন কেটে গেলে পর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েলীয়দের জন্য আমি তোমাকে পাহারাদার বানিয়েছি; কাজেই আমি যা বলি তা তুমি শোন এবং আমার হয়ে তাদের সতর্ক কর। আমি যখন একজন দুষ্ট লোককে বলি, ‘তুমি নিশ্চয়ই মরবে,’ তখন তুমি যদি তাকে সাবধান না কর, কিম্বা তার প্রাণ বাঁচাতে মন্দ পথ থেকে ফিরাবার জন্য কিছু না বল, তবে সেই দুষ্ট লোক তার পাপের জন্য মরবে, কিন্তু তার মৃত্যুর জন্য আমি তোমাকে দায়ী করব। কিন্তু সেই দুষ্ট লোককে তুমি সাবধান করবার পরেও যদি সে তার দুষ্টতা থেকে কিম্বা তার মন্দ পথ থেকে না ফেরে, তবে তার পাপের জন্য সে মরবে; কিন্তু তুমি নিজে রক্ষা পাবে। “আবার, যদি কোন সৎ লোক তার ঠিক পথ থেকে ফিরে মন্দ কাজ করে আর আমি তার সামনে একটা বিপদ রাখি, তবে সে মরবে। তুমি তাকে সাবধান কর নি বলে সে তার পাপের জন্য মরবে। যে সব সৎ কাজ সে করেছে তা আর মনে করা হবে না; আমি তোমাকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করব। কিন্তু পাপ না করবার জন্য যদি তুমি সেই সৎ লোককে সাবধান কর আর সে পাপ না করে তবে সাবধান হবার কথা শুনবার ফলে সে নিশ্চয়ই বাঁচবে এবং তুমিও নিজেকে রক্ষা করবে।” সেখানে সদাপ্রভুর শক্তিশালী হাত আমার উপরে ছিল এবং তিনি আমাকে বললেন, “তুমি উঠে সমভূমিতে যাও, সেখানে আমি তোমার সংগে কথা বলব।” কাজেই আমি উঠে সমভূমিতে গেলাম। কবার নদীর ধারে সদাপ্রভুর যে মহিমা দেখেছিলাম সেই রকম মহিমাই সেখানে দেখলাম; আর আমি উবুড় হয়ে পড়লাম। তখন ঈশ্বরের আত্মা আমার মধ্যে এসে আমাকে তুলে পায়ের উপর দাঁড় করালেন। তিনি আমাকে বললেন, “তুমি তোমার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ভিতরে থাক। হে মানুষের সন্তান, তোমাকে দড়ি দিয়ে বাঁধা হবে; তাতে তুমি বাইরে লোকজনের মধ্যে যেতে পারবে না। তুমি যাতে চুপ করে থাক ও তাদের বকাবকি করতে না পার সেইজন্য আমি তোমার জিভ্‌ তোমার মুখের তালুতে আট্‌কে দেব। ইস্রায়েলীয়েরা তো একটা বিদ্রোহী জাতি। কিন্তু আমি তোমার সংগে কথা বলবার সময় তোমার মুখ খুলে দেব এবং তুমি তাদের কাছে প্রভু সদাপ্রভুর বাক্য বলবে। তাদের মধ্যে যে শুনতে চায় সে শুনুক ও যে শুনতে না চায় সে না শুনুক; তারা তো একটা বিদ্রোহী জাতি।” তিনি আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি এখন একটা মাটির ফলক নিয়ে তোমার সামনে রাখ এবং তার উপর যিরূশালেম শহরের ছবি আঁক। তার চারপাশে এইভাবে ঘেরাও দেখাও: তার বিরুদ্ধে একটা উঁচু ঢিবি তৈরী কর, শহরের দেয়ালের সংগে একটা ঢালু ঢিবি বানাও, শহরের বিরুদ্ধে সৈন্যদের ছাউনি খাটাও এবং দেয়ালের চারপাশে দেয়াল ভাংগার যন্ত্র বসাও। তারপর লোহার একটা পাত নিয়ে সেটা তোমার ও শহরের মাঝখানে দেয়ালের মত করে রাখ এবং তোমার মুখ সেই দিকে ফিরিয়ে রাখ। তাতে শহরটা ঘেরাও করা হয়েছে বুঝা যাবে; এইভাবে তুমি দেখাবে যে, শহরটা ঘেরাও করা হয়েছে। এটা হবে ইস্রায়েল জাতির জন্য একটা চিহ্ন। “তারপর তুমি বাঁ পাশ ফিরে শোবে এবং ইস্রায়েলের পাপের শাস্তি তোমার নিজের উপরে নেবে। যে কয়দিন তুমি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে সেই কয় দিন তাদের শাস্তি তুমি বহন করবে। তাদের শাস্তি পাবার বছরের সংখ্যা হিসাব করে ততদিন আমি তোমাকে তা বহন করতে দিলাম। কাজেই তিনশো ন্ববই দিন ইস্রায়েলের শাস্তি তুমি বহন করবে। “এটা শেষ হলে পর তুমি আবার শোবে; এবার ডান পাশ ফিরে শোবে এবং যিহূদার পাপের শাস্তি বহন করবে। শুয়ে থাকবার জন্য আমি তোমাকে চল্লিশ দিন দিলাম, এক এক বছরের জন্য এক এক দিন। তুমি যিরূশালেমের ঘেরাওয়ের দিকে মুখ ফিরাবে এবং হাতের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দিয়ে সেই শহরের বিরুদ্ধে নবী হিসাবে কথা বলবে। তোমার ঘেরাওয়ের দিন শেষ না হওয়া পর্যন্ত যাতে তুমি এপাশ-ওপাশ ফিরতে না পার সেইজন্য আমি তোমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখব। “তুমি গম, যব, শিম, মসুর ডাল, বাজ্‌রা ও জনার নিয়ে একটা পাত্রে রাখবে এবং সেগুলো দিয়ে তোমার জন্য রুটি তৈরী করবে। যে তিনশো ন্ববই দিন তুমি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে তখন তা খাবে। প্রতিদিন ওজন করে দু’শো চল্লিশ গ্রাম খাবার সেই দিনের মধ্যেই বিভিন্ন সময়ে খাবে। এছাড়া আধা লিটারের একটু বেশী জলও বিভিন্ন সময়ে খাবে। যবের পিঠার মত করে সেই খাবার তুমি খাবে; লোকদের চোখের সামনে মানুষের পায়খানা পুড়িয়ে তা সেঁকে নেবে। যে সব জাতির মধ্যে আমি ইস্রায়েলীয়দের তাড়িয়ে দেব তাদের মধ্যে থাকবার সময় তারা এইভাবে অশুচি খাবার খাবে।” এই কথা সদাপ্রভু বললেন। তখন আমি বললাম, “হে প্রভু সদাপ্রভু, এই রকম না হোক। আমি কখনও অশুচি হই নি। ছেলেবেলা থেকে এই পর্যন্ত আমি মরা বা বুনো পশুর মেরে ফেলা কোন কিছু খাই নি। কোন অশুচি মাংস আমার মুখে কখনও ঢোকে নি।” তিনি বললেন, “আচ্ছা, মানুষের পায়খানার বদলে আমি তোমাকে গোবরের ঘুঁটে পুড়িয়ে তোমার রুটি সেঁকবার অনুমতি দিলাম।” তারপর তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, আমি যিরূশালেমে খাবারের যোগান বন্ধ করে দেব। লোকেরা দুশ্চিন্তা নিয়ে মেপে খাবার খাবে ও হতাশা নিয়ে মেপে জল খাবে, কারণ খাবার ও জলের অভাব হবে। তারা একে অন্যকে দেখে হতভম্ব হবে এবং তাদের পাপের জন্য তারা ক্ষয় হয়ে যেতে থাকবে। “হে মানুষের সন্তান, এখন তোমার মাথার চুল ও দাড়ি কামাবার জন্য তুমি একটা ধারালো ছোরা নিয়ে তা নাপিতের ক্ষুরের মত ব্যবহার করবে। তারপর দাঁড়িপাল্লা নিয়ে চুলগুলো তিন ভাগ করবে। যখন শহরের ঘেরাওয়ের দিন শেষ হয়ে যাবে তখন সেই চুলের তিন ভাগের এক ভাগ চুল নিয়ে শহরের মধ্যে পুড়িয়ে দেবে। তিন ভাগের এক ভাগ চুল নিয়ে ছোরা দিয়ে শহরের চারপাশে তা কুচি কুচি করে কাটবে, আর তিন ভাগের এক ভাগ চুল নিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দেবে। পরে খোলা তলোয়ার নিয়ে আমি লোকদের তাড়া করব। তবে কিছু চুল রেখে দিয়ে তা তোমার পোশাকের ভাঁজে গুঁজে রাখবে। তারপর আরও কিছু চুল নিয়ে আগুনে ফেলে পুড়িয়ে দেবে। সেখান থেকে আগুন গোটা ইস্রায়েল জাতির মধ্যে ছড়িয়ে যাবে। “আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, এই হল যিরূশালেম। তাকে আমি জাতিদের মাঝখানে স্থাপন করেছি; তার চারপাশে রয়েছে নানা দেশ। কিন্তু সে তার মন্দতার জন্য আমার আইন-কানুন ও নিয়মের বিরুদ্ধে তার চারপাশের নানা জাতি ও দেশের চেয়েও বেশী বিদ্রোহ করেছে। সে আমার আইন-কানুন অগ্রাহ্য করেছে এবং আমার নিয়ম মেনে চলে নি। “কাজেই আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, হে যিরূশালেম, তোমার চারপাশের দেশগুলোর চেয়ে তুমি আরও বেশী খারাপ হয়েছ। তুমি আমার নিয়ম মেনে চল নি এবং আমার আইন-কানুনও পালন কর নি। এমন কি, তোমার চারপাশের জাতিদের নিয়ম অনুসারেও চল নি। সেইজন্য আমি নিজেই তোমার বিরুদ্ধে, আর জাতিদের চোখের সামনেই আমি তোমাকে শাস্তি দেব। তোমার সব জঘন্য প্রতিমাগুলোর জন্য আমি তোমার প্রতি যা করব তা আমি আগে কখনও করি নি এবং কখনও করব না। তার ফলে তোমার মধ্যে বাবারা তাদের ছেলেমেয়েদের মাংস খাবে আর ছেলেমেয়েরা তাদের বাবাদের মাংস খাবে। আমি তোমাকে শাস্তি দেব এবং তোমার বেঁচে থাকা লোকদের চারদিকে ছড়িয়ে দেব। সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি, তোমার সব বাজে মূর্তি ও জঘন্য কাজকর্মের দ্বারা তুমি আমার ঘর অশুচি করেছ বলে আমি নিজেই আমার দয়া সরিয়ে নেব; আমি তোমার উপর মমতা করে তাকাব না কিম্বা তোমাকে রেহাই দেব না। তোমার তিন ভাগের এক ভাগ লোক তোমার মধ্যে হয় মড়কে না হয় দুর্ভিক্ষে মারা যাবে; তিন ভাগের এক ভাগ দেয়ালের বাইরে যুদ্ধে মারা পড়বে এবং তিন ভাগের এক ভাগকে আমি চারদিকে ছড়িয়ে দেব আর খোলা তলোয়ার নিয়ে তাড়া করব। “এই সব করবার পরে আমার ভীষণ অসন্তোষ শেষ হবে; তাদের উপর আমার ক্রোধ সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেবার পর আমি শান্ত হব। তখন তারা জানতে পারবে যে, আমার অন্তরের জ্বালায় আমি সদাপ্রভু এই কথা বলেছি। “হে যিরূশালেম, তোমার চারপাশের জাতিদের মধ্যে যারা তোমার পাশ দিয়ে যায় আমি তাদের চোখের সামনে তোমাকে একটা ধ্বংসস্থান ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র করব। আমি যখন ভীষণ অসন্তোষ, ক্রোধ ও ভীষণ বকুনি দ্বারা তোমাকে শাস্তি দেব তখন তোমার চারপাশের জাতিরা তোমাকে দেখে হতভম্ব হবে; তুমি তাদের কাছে হবে নিন্দা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র এবং একটা সাবধানবাণীর মত। তোমাকে ধ্বংস করবার জন্যই আমি তোমার প্রতি আমার দুর্ভিক্ষের ভয়ংকর তীর ছুঁড়ব। আমি তোমার উপর সেই দুর্ভিক্ষ আরও বাড়িয়ে তুলব এবং তোমার খাবারের যোগান বন্ধ করে দেব। তোমার বিরুদ্ধে আমি দুর্ভিক্ষ ও হিংস্র জন্তু পাঠিয়ে দেব; তারা তোমাকে সন্তানহারা করবে। মড়ক ও রক্তপাত তোমার মধ্য দিয়ে যাবে এবং আমি তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে আসব। আমি সদাপ্রভুই এই কথা বললাম।” তোমাদের বেদী সব ধ্বংস করা হবে এবং তোমাদের ধূপবেদীগুলো ভেংগে ফেলা হবে। তোমাদের প্রতিমাগুলোর সামনে তোমাদের লোকদের আমি মেরে ফেলব। আমি ইস্রায়েলীয়দের মৃতদেহগুলো তাদের প্রতিমাগুলোর সামনে রাখব এবং তোমাদের বেদীর চারপাশে তোমাদের হাড়গুলো ছড়িয়ে দেব। তোমরা যেখানেই বাস কর না কেন সেখানকার শহরগুলো খালি পড়ে থাকবে এবং পূজার উঁচু স্থানগুলো ধ্বংস হবে; তার ফলে তোমাদের বেদীগুলো পড়ে থাকবে ও নষ্ট হয়ে যাবে, তোমাদের প্রতিমাগুলো চুরমার ও ধ্বংস হবে, তোমাদের ধূপবেদীগুলো ভেংগে পড়ে যাবে এবং তোমাদের তৈরী সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, আর তোমাদের মধ্যেই তোমাদের লোকেরা মরে পড়ে থাকবে। এই সব হলে পর তোমরা জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘তবে আমি কিছু লোককে বাঁচিয়ে রাখব; তোমরা যখন নানা দেশ ও জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে তখন সেই লোকেরা মৃত্যুর হাত এড়াতে পারবে। সেই সব জাতির মধ্যে থেকে তারা আমার বিষয় এই কথা মনে করবে যে, তাদের অবিশ্বস্ত অন্তর ও চোখ দিয়ে তারা আমাকে কিভাবে দুঃখ দিয়েছে; সেই অন্তর আমার কাছ থেকে সরে গেছে এবং সেই চোখ তাদের প্রতিমাগুলোকে আকুলভাবে কামনা করেছে। তাদের সব মন্দ ও জঘন্য কাজের জন্য তারা নিজেরাই নিজেদের ঘৃণা করবে। তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু; তাদের উপর এই বিপদ আনবার কথা আমি অনর্থক বলি নি।’ ” তারপর প্রভু সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি হাতে হাত দিয়ে ও মাটিতে পা দিয়ে জোরে আঘাত কর এবং ইস্রায়েল জাতির সমস্ত মন্দ ও জঘন্য কাজের জন্য জোরে জোরে হাহাকার কর, কারণ তারা যুদ্ধে, দুর্ভিক্ষে ও মড়কে মারা পড়বে। যে দূরে আছে সে মড়কে মরবে এবং যে কাছে আছে সে যুদ্ধে মারা পড়বে, আর যে বেঁচে যাবে সে ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে দুর্ভিক্ষে মরবে। এইভাবে আমার ক্রোধ আমি তাদের উপর সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব। ইস্রায়েলীয়েরা তাদের বেদীর চারপাশের প্রতিমাগুলোর মধ্যে, সমস্ত বড় বড় পাহাড়ের উপরে, ডালপালা ছড়ানো প্রত্যেকটা গাছের নীচে এবং পাতা-ভরা প্রত্যেকটা এলোন গাছের তলায়, অর্থাৎ যে সব জায়গায় তাদের প্রতিমাগুলোর উদ্দেশে তারা সুগন্ধি ধূপ উৎসর্গ করত সেই সব জায়গায় মরে পড়ে থাকবে। তখন বেঁচে থাকা লোকেরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। ইস্রায়েলীয়েরা যেখানেই বাস করুক না কেন আমি তাদের বিরুদ্ধে আমার হাত বাড়াব এবং মরু-এলাকা থেকে দিব্‌লা পর্যন্ত সারা দেশটা জনশূন্য ও ধ্বংসস্থান করব। তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” পরে সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েল দেশের কাছে আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি, ‘দেখ, শেষ সময়! দেশের চারদিকে শেষ সময় উপস্থিত হয়েছে! এখন সেই সময় তোমার উপর এসে পড়েছে এবং তোমার বিরুদ্ধে আমি আমার ক্রোধ ঢেলে দেব। তোমার চালচলন অনুসারে আমি তোমার বিচার করব এবং তোমার সমস্ত জঘন্য কাজের জন্য তোমাকে শাস্তি দেব। আমি তোমার দিকে মমতার চোখে দেখব না বা তোমাকে রেহাইও দেব না; তোমার চালচলন ও তোমার মধ্যেকার জঘন্য কাজের জন্য আমি নিশ্চয়ই তোমাকে শাস্তি দেব। তখন তুমি জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’” প্রভু সদাপ্রভু বললেন, “বিপদ! একটা ভীষণ বিপদ আসছে! শেষ সময় এসে পড়েছে! তোমাদের বিরুদ্ধে তা জেগে উঠেছে, তা এসে পড়েছে! তোমরা যারা দেশে বাস করছ তোমাদের উপর সর্বনাশ আসছে। সময় হয়েছে, দিন কাছিয়েছে; তখন পাহাড়-পর্বতের উপরে আনন্দের বদলে ভয়ের চেঁচামেচি হবে। আমি শীঘ্রই তোমাদের উপর আমার ক্রোধ সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব। তোমাদের চালচলন অনুসারে আমি তোমাদের বিচার করব ও তোমাদের সব জঘন্য কাজের জন্য শাস্তি দেব। আমি মমতার চোখে তোমাদের দিকে তাকাব না বা তোমাদের রেহাইও দেব না; তোমাদের চালচলন ও তোমাদের মধ্যেকার জঘন্য কাজের পাওনা আমি তোমাদের দেব। তখন তোমরা জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই আঘাত করি। “দেখ, দিন এসেছে! তা এসে পড়েছে! সর্বনাশ ফেটে বেরিয়েছে, লাঠিতে কুঁড়ি ধরেছে, অহংকারের ফুল ফুটেছে। অত্যাচারের লাঠি দিয়েই অন্যায়কারীদের শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের সংখ্যা অনেক হলেও কেউ থাকবে না, তাদের ধন-সম্পদ বা গৌরব কিছুই থাকবে না। সময় হয়েছে, দিন এসে গেছে। যারা জমি কেনে তারা আনন্দ না করুক আর যারা তা বিক্রি করে তারাও দুঃখ না করুক, কারণ তাদের সকলের উপরে ক্রোধ উপস্থিত হয়েছে। যে কিনেছে আর যে বিক্রি করেছে তারা দু’জনে বেঁচে থাকলেও যে বিক্রি করেছে সে সেই জমি আর ফিরে পাবে না, কারণ এই দর্শন সমস্ত লোকের জন্য, আর তা হবেই হবে। দুষ্ট লোকদের মধ্যে একজনও তার জীবন রক্ষা করতে পারবে না। লোকেরা তূরী বাজিয়ে সব কিছু প্রস্তুত রেখেছে, কিন্তু কেউ যুদ্ধে যাচ্ছে না, কারণ দেশের সমস্ত লোকের উপরেই আমার ক্রোধ রয়েছে। “শহরের বাইরে রয়েছে যুদ্ধ আর ভিতরে রয়েছে মড়ক আর দুর্ভিক্ষ; যারা বাইরে থাকবে তারা যুদ্ধে মারা যাবে, আর যারা শহরে থাকবে দুর্ভিক্ষ ও মড়ক তাদের গ্রাস করবে। যারা বেঁচে থাকবে ও পালিয়ে যাবে তারা সবাই পাহাড়ে পাহাড়ে থাকবে এবং প্রত্যেকে তার পাপের জন্য উপত্যকার ঘুঘুর মত বিলাপ করবে। প্রত্যেকের হাত অবশ হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকের হাঁটু দুর্বল হয়ে পড়বে। তারা ছালার চট পরবে ও ভীষণ ভয়ে কাঁপবে। তারা লজ্জায় পূর্ণ হবে এবং তাদের মাথার চুল কামানো হবে। তাদের রূপা তারা রাস্তায় রাস্তায় ফেলে দেবে এবং তাদের সোনা হবে একটা অশুচি জিনিস। সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তাদের সোনা-রূপা তাদের রক্ষা করতে পারবে না। তা দিয়ে তাদের খিদে মিটবে না বা পেট ভরবে না। আসলে সেগুলোই তাদের পাপের মধ্যে ফেলেছে। তাদের সুন্দর গহনার জন্য তারা গর্ববোধ করত এবং তা দিয়ে তাদের জঘন্য প্রতিমা ও মূর্তিগুলো তৈরী করত। কাজেই আমি তাদের জন্য সেগুলো অশুচি করে দেব। আমি সেই সব জোর করে নিয়ে যাবার জন্য বিদেশীদের হাতে এবং লুটের মাল হিসাবে দুনিয়ার দুষ্টদের হাতে তুলে দেব; তারা সেগুলো অপবিত্র করবে। ডাকাতেরা আমার পবিত্র জায়গায় ঢুকে তা অপবিত্র করবে, আর আমি তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব। “শিকল ঠিক করা আছে, কারণ দেশ রক্তপাতে ও শহর অত্যাচারে ভরে গেছে। তাদের ঘর-বাড়ী দখল করবার জন্য আমি জাতিদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্ট জাতিকে নিয়ে আসব। আমি শক্তিশালীদের অহংকার ভেংগে দেব, আর তাদের পবিত্র জায়গাগুলো অপবিত্র হবে। ভীষণ ভয় আসলে পর তারা শান্তির খোঁজ করবে কিন্তু তা পাবে না। বিপদের উপর বিপদ আসবে, আর গুজবের উপর গুজব শোনা যাবে। তারা নবীর কাছ থেকে দর্শনের কথা শুনবার চেষ্টা করবে; পুরোহিতের দেওয়া আইন-কানুনের শিক্ষা ও বৃদ্ধ নেতাদের পরামর্শ আর থাকবে না। রাজা বিলাপ করবে, রাজপুরুষ হতভম্ব হবে, আর দেশের লোকদের হাত কাঁপতে থাকবে। আমি তাদের চালচলন অনুসারে তাদের সংগে ব্যবহার করব এবং তাদের পাওনা অনুসারেই শাস্তি দেব। তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” বন্দীদশায় থাকবার ষষ্ঠ বছরের ষষ্ঠ মাসের পঞ্চম দিনে আমি যখন আমার ঘরে বসে ছিলাম আর যিহূদার বৃদ্ধ নেতারা আমার সামনে বসে ছিলেন তখন প্রভু সদাপ্রভুর হাত সেই জায়গায় আমার উপরে আসল। আমি তাকিয়ে মানুষের মত একজনকে দেখতে পেলাম। তাঁর কোমর থেকে নীচ পর্যন্ত আগুনের মত লাগছিল, আর কোমর থেকে উপর পর্যন্ত চক্‌চকে ধাতুর মত উজ্জ্বল ছিল। তিনি হাত বাড়িয়ে আমার মাথার চুল ধরলেন। তখন ঈশ্বরের আত্মা আমাকে আকাশে তুলে নিলেন এবং ঈশ্বরের দেওয়া দর্শনের মধ্যে তিনি আমাকে যিরূশালেমের উপাসনা-ঘরের ভিতরের উঠানের উত্তর দিকের ফটকে ঢুকবার পথে নিয়ে গেলেন। সেখানে এমন একটা প্রতিমা ছিল যেটা ঈশ্বরের ক্রোধ খুঁচিয়ে তুলেছিল, আর সেখানে আমার সামনে ছিল ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমা, যা আমি সমভূমিতে দর্শনের মধ্যে দেখেছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি উত্তর দিকে তাকাও।” কাজেই আমি সেই দিকে তাকালাম এবং বেদীর ফটকে, অর্থাৎ উত্তর দিকের ফটকে ঢুকবার পথে আমি সেই প্রতিমাকে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তারা যা করছে তা কি তুমি দেখতে পাচ্ছ? ইস্রায়েলীয়েরা এখানে কি ভীষণ জঘন্য কাজ করছে যার ফলে আমাকে আমার পবিত্র জায়গা থেকে দূরে সরে যেতে হবে। কিন্তু এর পরেও তুমি আরও জঘন্য কাজ দেখতে পাবে।” তারপর তিনি আমাকে উঠানে ঢুকবার পথে নিয়ে গেলেন। আমি তাকিয়ে দেয়ালে একটা গর্ত দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, দেয়ালের ঐ গর্তটা আরও বড় কর।” সেইজন্য আমি সেই গর্তটা বড় করলাম ও সেখানে একটা দরজা দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে বললেন, “তুমি ভিতরে গিয়ে তারা সেখানে যে সব মন্দ ও জঘন্য কাজ করছে তা দেখ।” তাই আমি ভিতরে গিয়ে তাকালাম আর দেয়ালের সমস্ত জায়গায় সব রকম বুকে-হাঁটা প্রাণী ও অশুচি জীবজন্তুর চেহারা এবং ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত প্রতিমার চেহারা খোদাই করা রয়েছে দেখতে পেলাম। সেগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ইস্রায়েলীয়দের সত্তরজন বৃদ্ধ নেতা এবং তাঁদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন শাফনের ছেলে যাসনিয়। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে ধূপদানি ছিল এবং তা থেকে ধূপের ধূমার মেঘ উপর দিকে উঠছিল। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েলীয়দের বৃদ্ধ নেতারা অন্ধকারে প্রত্যেকে নিজের নিজের ঘরে প্রতিমার কাছে কি করছে তা কি তুমি বুঝতে পেরেছ? তারা বলছে, ‘সদাপ্রভু আমাদের দেখেন না, কারণ তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।’” তিনি আবার বললেন, “এর চেয়েও বেশী জঘন্য কাজ তুমি তাদের করতে দেখবে।” তারপর তিনি আমাকে সদাপ্রভুর ঘরের উত্তর দিকের ফটকে ঢুকবার পথে আনলেন, আর আমি দেখলাম স্ত্রীলোকেরা সেখানে বসে তম্মুষ দেবতার জন্য কাঁদছে। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি কি এটা দেখলে? এর চেয়েও বেশী জঘন্য জিনিস তুমি দেখতে পাবে।” তারপর তিনি আমাকে সদাপ্রভুর ঘরের ভিতরের উঠানে নিয়ে গেলেন আর সেখানে উপাসনা-ঘরে ঢুকবার মুখে বারান্দা ও বেদীর মাঝখানে প্রায় পঁচিশজন লোক ছিল। সদাপ্রভুর ঘরের দিকে পিছন ফিরে পূর্ব দিকে মুখ করে তারা সূর্যের কাছে প্রণাম জানাচ্ছিল। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি এটা দেখলে? যিহূদার লোকেরা যে জঘন্য কাজ এখানে করছে তা করা তাদের পক্ষে কি একটা সামান্য ব্যাপার? তারা অত্যাচারে দেশটা ভরে তুলেছে এবং অনবরত আমার অসন্তোষ খুঁচিয়ে তুলছে। দেখ, তারা আমাকে কি ভীষণ অপমান করছে। কাজেই আমি ক্রোধে জ্বলে উঠে তাদের সংগে ব্যবহার করব; আমি তাদের মমতার চোখে দেখব না বা তাদের রেহাই দেব না। তারা আমার কানের কাছে চিৎকার করলেও আমি তাদের কথা শুনব না।” তারপর আমি ঈশ্বরকে জোর গলায় ডেকে বলতে শুনলাম, “হে শহর-ধ্বংসের কাজে নিযুক্ত লোকেরা, তোমরা প্রত্যেকে ধ্বংসের অস্ত্র হাতে নিয়ে এখানে এস।” উত্তর দিকের উঁচু জায়গার ফটকের দিক থেকে আমি ছয়জন লোককে আসতে দেখলাম; প্রত্যেকের হাতে ধ্বংসকারী অস্ত্র ছিল। তাঁদের সংগে ছিলেন মসীনার কাপড় পরা একজন লোক আর তাঁর কোমরের পাশে ছিল লেখার সরঞ্জাম। তাঁরা ভিতরে ঢুকে ব্রোঞ্জের বেদীর পাশে দাঁড়ালেন। তখন ইস্রায়েলের ঈশ্বরের যে মহিমা করূবদের উপরে ছিল তা সেখান থেকে উঠে উপাসনা-ঘরের চৌকাঠের কাছে গেল। সদাপ্রভু মসীনার কাপড় পরা সেই লোকটিকে ডাকলেন। তিনি তাঁকে বললেন, “তুমি যিরূশালেম শহরের মধ্য দিয়ে যাও এবং তার মধ্যে যে সব জঘন্য কাজ করা হয়েছে সেইজন্য যারা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে কোঁকাচ্ছে তাদের কপালে একটা করে চিহ্ন দাও।” তারপর আমি শুনতে পেলাম তিনি সেই ছয়জনকে বলছেন, “তোমরা শহরের মধ্যে ওর পিছনে পিছনে যাও এবং কোন মায়া-মমতা না দেখিয়ে লোকদের মেরে ফেলতে থাক, কাউকে রেহাই দিয়ো না। বুড়ো, যুবক, যুবতী মেয়ে, স্ত্রীলোক ও ছোট ছেলেমেয়েদের মেরে ফেল, কিন্তু যাদের কপালে চিহ্ন আছে তাদের ছুঁয়ো না। উপাসনা-ঘর থেকে তা করতে শুরু কর।” এতে তাঁরা উপাসনা-ঘরের সামনে যে বৃদ্ধ নেতারা ছিলেন তাঁদের দিয়ে শুরু করলেন। তারপর ঈশ্বর তাঁদের বললেন, “তোমরা নিহত লোকদের দিয়ে উঠানটা ভরে ফেলে উপাসনা-ঘরটা অশুচি কর। যাও, কাজ কর।” কাজেই তাঁরা বের হয়ে শহরে গিয়ে লোকদের মেরে ফেলতে লাগলেন। আমি তখন উপাসনা-ঘরে একা ছিলাম। সেই সময় আমি উবুড় হয়ে পড়ে আবেগের সংগে বললাম, “হায়, প্রভু সদাপ্রভু! যিরূশালেমের উপরে তোমার ক্রোধ ঢেলে দিয়ে তুমি কি ইস্রায়েলের বাকী সবাইকে ধ্বংস করে ফেলবে?” তিনি উত্তরে আমাকে বললেন, “ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের পাপ খুবই বেশী; দেশ রক্তপাতে ভরা আর শহরটা অন্যায় কাজে ডুবে গেছে। তারা বলে, ‘সদাপ্রভু এই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন; তাই তিনি এই সব দেখেন না।’ সেইজন্য আমি তাদের মমতার চোখেও দেখব না, রেহাইও দেব না; তারা যা করেছে তার ফল আমি তাদের উপর ঢেলে দেব।” পরে মসীনার কাপড় পরা সেই লোকটি ফিরে এসে এই খবর দিলেন, “আমি আপনার আদেশ অনুসারে কাজ করেছি।” তারপর আমি চেয়ে দেখলাম, আর করূবদের মাথার উপর দিকে যা বিছানো ছিল তার উপরে নীলকান্তমণির সিংহাসনের মত কিছু একটা দেখতে পেলাম। সদাপ্রভু মসীনার কাপড় পরা লোকটিকে বললেন, “করূবদের নীচে যে চাকাগুলো আছে তুমি সেগুলোর মধ্যে যাও। সেই করূবদের মাঝখান থেকে তুমি দু’হাত ভরে জ্বলন্ত কয়লা নিয়ে শহরের উপর ছড়িয়ে দাও।” আমার চোখের সামনেই লোকটি সেখানে ঢুকলেন। তখন করূবেরা উপাসনা-ঘরের দক্ষিণ দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর ভিতরের উঠানটা মেঘে ভরে গেল। সেই সময় সদাপ্রভুর মহিমা করূবদের উপর থেকে উঠে উপাসনা-ঘরের চৌকাঠের দিকে চলে গেল। উপাসনা-ঘরটা মেঘে ভরে গেল, আর তখন সদাপ্রভুর মহিমার আলোয় উঠানটা ভরা ছিল। করূবদের ডানার আওয়াজ বাইরের উঠান পর্যন্ত শোনা যাচ্ছিল; সেই আওয়াজটা ছিল সর্বশক্তিমান সদাপ্রভুর কথা বলবার আওয়াজের মত। সদাপ্রভু যখন মসীনার কাপড় পরা লোকটিকে এই আদেশ দিয়েছিলেন, “তুমি করূবদের মাঝখানে চাকার মধ্য থেকে আগুন নাও,” তখন লোকটি ভিতরে গিয়ে একটা চাকার পাশে দাঁড়ালেন। পরে আমি তাকিয়ে করূবদের প্রত্যেকের পাশে একটা করে মোট চারটা চাকা দেখতে পেলাম; চাকাগুলো বৈদুর্যমণির মত ঝক্‌মক করছিল। সেই চারটা চাকা দেখতে একই রকম ছিল; একটা চাকার ভিতরে যেন আর একটা চাকা। চলবার সময় সেই চাকাগুলো চারদিকের যে কোন দিকে সোজা চলত; অন্য কোন দিকে ফিরত না। করূবদের মাথা যে দিকে থাকত তাঁরা সেদিকেই চলতেন; চলবার সময় ফিরতেন না। তাঁদের চারটা চাকাতে, গোটা দেহে, পিঠে, হাতে এবং ডানার চারপাশ চোখে ভরা ছিল। আমি শুনলাম চাকাগুলোকে “ঘুরন্ত চাকা” বলে ডাকা হচ্ছে। প্রত্যেকটি করূবের চারটা করে মুখ ছিল- প্রথমটা করূবের, দ্বিতীয়টা মানুষের, তৃতীয়টা সিংহের এবং চতুর্থটা ঈগল পাখীর। তারপর সেই করূবেরা উপরের দিকে উঠলেন। এঁরাই সেই জীবন্ত প্রাণী যাঁদের আমি কবার নদীর ধারে দেখতে পেয়েছিলাম। করূবেরা চললে তাঁদের পাশে চাকাগুলোও চলত; করূবেরা মাটি ছেড়ে উপরে উঠবার জন্য ডানা মেললে চাকাগুলো তাঁদের পাশ ছাড়ত না। করূবেরা থামলে সেগুলোও থামত আর করূবেরা উঠলে তাঁদের সংগে চাকাগুলোও উঠত, কারণ সেই জীবন্ত প্রাণীদের আত্মা সেগুলোর মধ্যেই ছিল। তারপর সদাপ্রভুর মহিমা সদাপ্রভুর ঘরের চৌকাঠের উপর থেকে চলে গিয়ে করূবদের উপরে থামল। আমার চোখের সামনেই করূবেরা ডানা মেলে দিয়ে মাটি ছেড়ে উপরে উঠতে লাগলেন, আর চাকাগুলোও তাঁদের সংগে চলল। তাঁরা সদাপ্রভুর ঘরের পূর্ব দিকের ফটকের ঢুকবার পথে গিয়ে থামলেন; ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমা তাঁদের উপরে রইল। এই জীবন্ত প্রাণীদেরই আমি কবার নদীর ধারে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সিংহাসনের নীচে দেখেছিলাম, আর তাঁরা যে করূব তা আমি বুঝতে পারলাম। প্রত্যেকের চারটা করে মুখ ও চারটা করে ডানা ছিল এবং তাঁদের ডানার নীচে মানুষের হাতের মত কিছু ছিল। কবার নদীর ধারে আমি যেমন দেখেছিলাম তাঁদের মুখের চেহারা তেমনই ছিল। তাঁরা প্রত্যেকেই সোজা সামনের দিকে এগিয়ে যেতেন। তারপর সদাপ্রভুর আত্মা আমাকে তুলে নিয়ে উপাসনা-ঘরের পূর্ব দিকের ফটকের কাছে আনলেন। সেখানে ফটকে ঢুকবার পথে পঁচিশজন পুরুষলোক ছিল, আর আমি তাদের মধ্যে অসূরের ছেলে যাসনিয় ও বনায়ের ছেলে প্লটিয়কে দেখলাম; তারা ছিল লোকদের নেতা। সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, এরাই সেই লোক যারা শহরের মধ্যে কুমতলব করছে আর খারাপ পরামর্শ দিচ্ছে। তারা বলছে, ‘ঘর-বাড়ী তৈরী করবার সময় কি হয় নি? এই শহরটা যেন রান্নার পাত্র আর আমরা হচ্ছি মাংস।’ কাজেই হে মানুষের সন্তান, তুমি এদের বিরুদ্ধে নবী হিসাবে কথা বল, হ্যাঁ, নবী হিসাবে কথা বল।” তারপর সদাপ্রভুর আত্মা আমার উপরে আসলেন, আর তিনি আমাকে এই কথা বলতে বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা ঐ কথা বলছ, কিন্তু তোমাদের মনে কি আছে তা আমি জানি। তোমরা এই শহরের অনেক লোককে মেরে ফেলেছ এবং মরা লোক দিয়ে রাস্তাগুলো ভরে ফেলেছ।’ “সেইজন্য প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘সত্যি এই শহরটা রান্নার পাত্র, কিন্তু যে লোকগুলোকে তোমরা শহরে মেরে ফেলেছ সেগুলোই মাংস; আর আমি সেখান থেকে তোমাদের তাড়িয়ে বের করে দেব। যে যুদ্ধকে তোমরা ভয় কর সেই যুদ্ধই আমি তোমাদের বিরুদ্ধে আনব। আমি শহর থেকে তোমাদের তাড়িয়ে বের করে বিদেশীদের হাতে তুলে দেব এবং তোমাদের শাস্তি দেব। তোমরা যুদ্ধে মারা পড়বে; ইস্রায়েলের সীমানায় আমি তোমাদের সবাইকে শাস্তি দেব। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। এই শহর তোমাদের জন্য পাত্রও হবে না আর তোমরাও তার মধ্যেকার মাংস হবে না; ইস্রায়েলের সীমানায় আমি তোমাদের সবাইকে শাস্তি দেব। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তোমরা আমার নিয়ম মত চল নি কিম্বা আমার আইন-কানুনও পালন কর নি বরং তোমাদের চারপাশের জাতিগুলোর নিয়ম অনুসারে চলেছ।’” আমি যখন নবী হিসাবে কথা বলছিলাম তখন বনায়ের ছেলে প্লটিয় মারা গেল। তখন আমি উবুড় হয়ে পড়ে আবেগের সংগে জোরে জোরে বললাম, “হায়, প্রভু সদাপ্রভু! তুমি কি ইস্রায়েলের বাকী লোকদের সবাইকে শেষ করে দেবে?” তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, তোমার ভাইদের, তোমার নিজের লোকদের, অর্থাৎ বন্দীদশায় থাকা সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের সম্বন্ধে যিরূশালেমের লোকেরা বলছে, ‘তারা সদাপ্রভুর দেশ থেকে দূরে চলে গেছে; এই দেশ তো অধিকার হিসাবে আমাদেরই দেওয়া হয়েছে।’ “সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু যা বলছি তা তুমি তোমার লোকদের বল যে, আমি যদিও অন্যান্য জাতিদের মধ্যে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছি এবং দেশে দেশে ছড়িয়ে দিয়েছি তবুও যে সব দেশে তারা গেছে সেখানেও এই অল্পকালের জন্য আমিই তাদের পবিত্র স্থান হয়েছি। “কাজেই তুমি তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, জাতিদের মধ্য থেকে আমি তাদের জড়ো করব; যে সব দেশে তারা ছড়িয়ে পড়েছে সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনব আর ইস্রায়েল দেশটা আবার আমি তাদের ফিরিয়ে দেব। “তারা সেখানে ফিরে গিয়ে সব বাজে মূর্তি ও জঘন্য প্রতিমাগুলো দূর করে দেবে। আমি তাদের এমন অন্তর দেব যা কেবল আমারই দিকে আসক্ত থাকবে, আর আমি তাদের মধ্যে নতুন আত্মা দেব; আমি তাদের কঠিন অন্তর সরিয়ে দিয়ে নরম অন্তর দেব। তাহলে তারা আমার নিয়ম মত চলবে এবং আমার আইন-কানুন যত্নের সংগে পালন করবে। তারা আমার লোক হবে এবং আমি তাদের ঈশ্বর হব। কিন্তু যাদের অন্তর বাজে মূর্তি ও জঘন্য প্রতিমাগুলোর দিকে, তাদের কাজের ফল আমি তাদের উপর ঢেলে দেব। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” এর পর করূবেরা তাঁদের ডানা মেলে দিলেন; তাঁদের পাশে ছিল সেই চাকাগুলো, আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমা তাঁদের উপরে ছিল। সদাপ্রভুর মহিমা শহরের মধ্য থেকে উঠে শহরের পূর্ব দিকের পাহাড়ের উপরে গিয়ে থামল। তারপর ঈশ্বরের আত্মা আমাকে তুলে নিলেন এবং তাঁর দেওয়া দর্শনের মধ্য দিয়ে আবার বাবিলে বন্দীদের কাছে নিয়ে গেলেন। যে দর্শন আমি দেখছিলাম এর পর তা শেষ হয়ে গেল। সদাপ্রভু আমাকে যা যা দেখিয়েছিলেন তা সবই আমি বন্দীদের কাছে বললাম। পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, তুমি একটা বিদ্রোহী জাতির মধ্যে বাস করছ। তাদের চোখ আছে কিন্তু তারা দেখে না, কান আছে শোনে না, কারণ তারা একটা বিদ্রোহী জাতি। “কাজেই হে মানুষের সন্তান, তুমি যেন দূরে বন্দী হয়ে যাচ্ছ সেইভাবে তোমার জিনিসপত্র বেঁধে নাও এবং তাদের চোখের সামনে দিনের বেলাতেই রওনা হও; তুমি যেখানে আছ সেখান থেকে অন্য জায়গায় যাও। তারা যে বিদ্রোহী জাতি হয়তো তারা তা বুঝতে পারবে। দূরে বন্দী হয়ে যাবার জন্য তোমার গুছিয়ে নেওয়া জিনিসপত্র দিনের বেলাতেই তাদের চোখের সামনে বাইরে বের করবে। তারপর সন্ধ্যা বেলায় দূরে বন্দী হয়ে যাবার মত করে তাদের চোখের সামনে রওনা হবে। তাদের চোখের সামনেই দেয়ালে গর্ত খুঁড়ে তোমার জিনিসপত্র তার মধ্য দিয়ে বের করে নেবে। জিনিসপত্রগুলো তাদের চোখের সামনে কাঁধে তুলে নেবে এবং অন্ধকারের মধ্যে সেগুলো বের করে নিয়ে যাবে। তোমার চোখ ঢেকে রাখবে যাতে তুমি তোমার দেশের মাটি দেখতে না পাও, কারণ ইস্রায়েল জাতির জন্য আমি তোমাকে একটা চিহ্নের মত করেছি।” আমাকে যা আদেশ করা হল সেইমতই আমি কাজ করলাম। দূরে বন্দী হয়ে যাবার মত করে আমি আমার জিনিসপত্র দিনের বেলাতেই বের করে আনলাম। তারপর সন্ধ্যা বেলায় হাত দিয়ে দেয়ালে গর্ত খুঁড়লাম। তাদের চোখের সামনেই অন্ধকারে আমার জিনিসপত্র আমি কাঁধের উপরে নিয়ে রওনা হলাম। সকাল বেলায় সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, বিদ্রোহী ইস্রায়েল জাতি কি তোমাকে জিজ্ঞাসা করে নি, ‘তুমি কি করছ?’ তুমি তাদের বল, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘এই চিহ্ন যিরূশালেমের শাসনকর্তা এবং সেখানকার ইস্রায়েলীয়দের জন্য।’ তুমি তাদের বল যে, তুমি তাদের কাছে একটা চিহ্ন। তুমি যেমন করলে, তাদের প্রতি তেমনই করা হবে। তারা বন্দী হয়ে দূর দেশে যাবে। “তাদের মধ্যেকার শাসনকর্তা অন্ধকারে তার জিনিসপত্র কাঁধে নিয়ে বের হবে এবং দেয়ালে গর্ত খোঁড়া হবে যাতে সে তার মধ্য দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। সে তার চোখ ঢাকবে যাতে সে তার দেশের মাটি দেখতে না পায়। আমি তার জন্য জাল পাতব আর সে আমার ফাঁদে ধরা পড়বে। আমি তাকে বাবিলীয়দের দেশ বাবিলে নিয়ে যাব, কিন্তু সে তা দেখবে না; সেখানেই সে মারা যাবে। আমি তার চারপাশের সবাইকে, অর্থাৎ তার কর্মচারী ও তার সমস্ত সৈন্যদলকে চারদিকে ছড়িয়ে দেব এবং খোলা তলোয়ার নিয়ে আমি তাদের তাড়া করব। “আমি যখন তাদের নানা জাতি ও দেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেব তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু লোককে আমি যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মড়কের হাত থেকে বাঁচাব, যাতে তারা যেখানেই যাক না কেন সেখানকার সমস্ত জাতির মধ্যে তাদের সব জঘন্য অভ্যাসের কথা স্বীকার করে। তাতে তারা জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” তারপর সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তোমার খাবার ও জল খাও। তুমি দেশের লোকদের বল যে, ইস্রায়েল দেশের যিরূশালেমের বাসিন্দাদের বিষয়ে প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘তারা ভয়ে ভয়ে তাদের খাবার খাবে আর হতভম্ব হয়ে জল খাবে, কারণ সেখানকার বাসিন্দাদের অত্যাচারের দরুন তাদের দেশটা খালি হয়ে পড়ে থাকবে। লোকজন ভরা শহরগুলো ধ্বংসস্থান হয়ে থাকবে এবং দেশ জনশূন্য হবে। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’ ” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েল দেশে এ কেমন চলতি কথা রয়েছে, ‘দিন চলে যায় আর প্রত্যেক দর্শনই বিফল হয়’? তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি সেই চল্‌তি কথাটা বাতিল করে দেব; ইস্রায়েলে সেই কথা আর কেউ বলবে না।’ তার বদলে তাদের বল, ‘দিন এসে গেছে, এখন প্রত্যেকটা দর্শন ফলবে। ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে মিথ্যা দর্শন আর খুশী করবার গোণা-পড়া আর থাকবে না। তখন আমি সদাপ্রভু যা বলব তা সফল হবে, দেরি হবে না। হে বিদ্রোহী জাতি, আমি যা বলছি তা তোমাদের সময়েই সফল করব। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েলীয়েরা বলছে যে, তুমি যে দর্শন দেখছ তা এখন থেকে অনেক বছর পরের কথা, আর যে ভবিষ্যদ্বাণী বলছ তা দূর ভবিষ্যতের বিষয়ে। কাজেই তুমি তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার কোন কথা সফল হতে আর দেরি নেই; আমি যা বলব তা সফল হবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েলের যে নবীরা এখন কথা বলছে তুমি তাদের বিরুদ্ধে নবী হিসাবে কথা বল। যারা নিজেদের মনগড়া কথা বলছে তুমি তাদের বল যে, তারা যেন সদাপ্রভুর বাক্য শোনে। প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘ধিক, সেই ভক্তিহীন নবীদের, যারা কোন দর্শন না পেয়ে তাদের মনগড়া কথা বলে। হে ইস্রায়েল, তোমার নবীরা ধ্বংসস্থানের মধ্যে শিয়ালদের মত। তারা ইস্রায়েল জাতির দেয়ালের ফাটল মেরামত করতে সেখানে ওঠে নি যাতে সদাপ্রভুর দিনে যুদ্ধের সময়ে সেটা শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। তাদের দর্শন মিথ্যা এবং তাদের গোণা-পড়া সত্যি নয়। তারা বলে যে, আমি এই কথা বলছি, অথচ আমি তাদের পাঠাই নি; তবুও তারা আশা করে তাদের কথা সফল হবে। তারা কি মিথ্যা দর্শন দেখছে না এবং মিথ্যা গোণা-পড়া করছে না? তারা তো বলছে যে, আমি এই কথা বলছি, অথচ আমি বলি নি। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, তাদের মিথ্যা কথা ও মিথ্যা দর্শনের জন্য আমি তাদের বিরুদ্ধে। আমার হাত সেই সব নবীদের বিরুদ্ধে উঠবে যারা মিথ্যা দর্শন দেখে ও মিথ্যা গোণা-পড়া করে। আমার লোকদের সমাজে তারা থাকবে না এবং ইস্রায়েলের বংশ-তালিকার মধ্যে তাদের নাম থাকবে না, আর ইস্রায়েল দেশেও তারা ফিরে আসতে পারবে না। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু। “‘যখন কোন শান্তি নেই তখন নবীরা বলে যে, শান্তি আছে, আর এইভাবে তারা আমার লোকদের বিপথে নিয়ে গেছে। তারা যেন লোকদের গাঁথা এমন দেয়ালের উপর চুনকাম করেছে যা শক্ত নয়। সেইজন্য যারা এই কাজ করেছে তুমি তাদের বল যে, সেই দেয়াল পড়ে যাবে। মুষলধারে বৃষ্টি ও বড় বড় শিলা পড়বে এবং ঝোড়ো বাতাস সজোরে বইবে। সেই দেয়াল যখন ভেংগে পড়বে তখন লোকে কি তাদের জিজ্ঞাসা করবে না যে, তারা যে চুনকাম করে দেয়ালটা ঢেকেছিল সেই চুন গেল কোথায়? “‘আমার ক্রোধে আমি ঝোড়ো বাতাস খুলে দেব। আমার ভীষণ অসন্তোষে আমি বড় বড় শিলা ও মুষলধারে বৃষ্টি দিয়ে তা ধ্বংস করে দেব। যে দেয়াল নবীরা চুনকাম করে ঢেকে দিয়েছিল তা আমি ভেংগে মাটির সংগে সমান করে দেব যাতে তার ভিত্তি খোলা পড়ে থাকে। সেটা ভেংগে পড়বার সময় তার তলায় তারাও ধ্বংস হয়ে যাবে। তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। সেই দেয়াল ও সেটাকে যারা চুনকাম করে ঢেকে দিয়েছে তাদের উপরে আমি আমার ক্রোধ সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব। আমি লোকদের বলব যে, সেই দেয়ালটাও নেই এবং যারা সেটা চুনকাম করেছিল, অর্থাৎ ইস্রায়েলের সেই নবীরা যারা যিরূশালেমের লোকদের কাছে কথা বলেছিল এবং শান্তি না থাকলেও শান্তির দর্শন দেখেছিল তারাও নেই। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তোমার জাতির যে মেয়েরা নবী হিসাবে নিজেদের মনগড়া কথা বলে এখন তুমি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াও। তুমি তাদের বিরুদ্ধে এই কথা বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘ধিক্‌ স্ত্রীলোকেরা! তোমরা তো লোকদের হাতের জন্য তাবিজ এবং মাথা ঢাকবার জন্য বিভিন্ন মাপের কাপড় তৈরী কর যাতে তোমরা সেই লোকদের বশ করতে পার। তোমরা কি আমার লোকদের প্রাণ শিকার করছ আর নিজেদের প্রাণ রক্ষা করছ? কয়েক মুঠা যব আর কয়েক টুকরা রুটির জন্য তোমরা আমার লোকদের সামনে আমাকে অসম্মানিত করেছ। আমার লোকেরা, যারা মিথ্যা কথা শোনে, তোমরা তাদের কাছে মিথ্যা কথা বলে যারা মরবার উপযুক্ত নয় তাদের মেরে ফেলেছ এবং যারা বাঁচবার উপযুক্ত নয় তাদের বাঁচিয়ে রেখেছ। “‘সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, তোমরা যে তাবিজ দিয়ে পাখীর মত করে লোকদের ধর আমি তার বিপক্ষে। তোমাদের হাত থেকে আমি সেগুলো ছিঁড়ে ফেলে দেব। পাখীর মত করে যে লোকদের তোমরা ধর তাদের আমি ছেড়ে দেব। তোমাদের মাথা ঢাকবার কাপড়গুলো আমি ছিঁড়ে ফেলে তোমাদের হাত থেকে আমার লোকদের উদ্ধার করব; তারা আর তোমাদের হাতে শিকারের মত ধরা পড়বে না। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। যে সৎ লোকদের আমি দুঃখ দিই নি, মিথ্যা কথা বলে তোমরা তাদের হতাশ করেছ এবং দুষ্ট লোকদের তোমরা উৎসাহ দিয়েছ যাতে তারা প্রাণ বাঁচাবার জন্য কুপথ থেকে না ফেরে। সেইজন্য তোমরা আর মিথ্যা দর্শন দেখবে না এবং গোণা-পড়াও করবে না। তোমাদের হাত থেকে আমি আমার লোকদের উদ্ধার করব। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’” পরে ইস্রায়েলের কয়েকজন বৃদ্ধ নেতা আমার কাছে এসে আমার সামনে বসলেন। তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, এই লোকেরা তাদের অন্তরের মধ্যে প্রতিমা স্থাপন করে পাপে পড়বার মত জিনিস তাদের সামনে রেখেছে। সেইজন্য আমার কাছে যদি তারা কোন কিছু জিজ্ঞাসা করে তবে আমি তাদের উত্তর দেব না। কাজেই তুমি তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘কোন ইস্রায়েলীয় যদি তার অন্তরের মধ্যে প্রতিমা স্থাপন করে পাপে পড়বার মত জিনিস নিজের সামনে রাখে আর তারপর নবীর কাছে আসে, তবে আমি সদাপ্রভু নিজেই তার অনেক প্রতিমা অনুসারে তাকে উত্তর দেব। ইস্রায়েলীয়দের অন্তর আবার জয় করবার জন্যই আমি এটা করব, কারণ তারা সবাই তাদের প্রতিমাগুলোর জন্য আমাকে ত্যাগ করেছে।’ “সেইজন্য তুমি তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা মন ফিরাও। তোমাদের প্রতিমাগুলো থেকে ফেরো এবং সব জঘন্য কাজ ত্যাগ কর। কোন ইস্রায়েলীয় কিম্বা ইস্রায়েল দেশে বাসকারী কোন বিদেশী যদি আমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং তার অন্তরে প্রতিমা স্থাপন করে পাপে পড়বার মত জিনিস তার সামনে রাখে আর তার পরে আমার কাছে জিজ্ঞাসা করবার জন্য কোন নবীর কাছে আসে, তবে আমি সদাপ্রভু নিজেই তাকে উত্তর দেব। আমি সেই লোকের বিপক্ষে দাঁড়াব এবং তাকে একটা দৃষ্টান্ত ও একটা চলতি কথার মত করব। আমার লোকদের মধ্য থেকে আমি তাকে ছেঁটে ফেলব। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘যদি সেই নবী তাকে কোন উত্তর দেয় তবে জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই উত্তর দেবার জন্য তাকে ভুলিয়েছি। তারপর সেই নবীর বিরুদ্ধে আমি হাত বাড়াব এবং আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের মধ্য থেকে তাকে ধ্বংস করব। তারা দু’জনেই তাদের অন্যায়ের শাস্তি পাবে; সেই নবীর ও সেই পরামর্শ করতে আসা লোকটির সমান শাস্তি হবে। তখন ইস্রায়েলীয়েরা আর আমার কাছ থেকে বিপথে যাবে না এবং তাদের সব পাপ দিয়ে নিজেদের আর অশুচি করবে না। তারা আমার লোক হবে এবং আমি তাদের ঈশ্বর হব। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ধর, অবিশ্বস্ত হয়ে কোন দেশ আমার বিরুদ্ধে পাপ করল আর আমি তার বিরুদ্ধে হাত বাড়িয়ে তার খাবারের যোগান বন্ধ করলাম এবং দুর্ভিক্ষ পাঠিয়ে তার মানুষ ও পশু মেরে ফেললাম। এই অবস্থায় সেখানে যদি নোহ, দানিয়েল ও ইয়োব- এই তিনজন লোক থাকত তবে তাদের সততার জন্য তারা কেবল নিজেদেরই রক্ষা করতে পারত। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “ধর, আমি সেই দেশে বুনো জন্তু পাঠিয়ে দিলাম এবং তারা দেশটাকে জনশূন্য করল। তাতে সেটা এমন ভয়ংকর হয়ে পড়ল যে, জানোয়ারের ভয়ে তার মধ্য দিয়ে কেউ যাওয়া-আসা করতে পারল না। আমার জীবনের দিব্য যে, সেই তিনজন লোক সেখানে থাকলেও তারা নিজেদের ছেলেমেয়েদের পর্যন্ত রক্ষা করতে পারত না। তারা নিজেরা রক্ষা পেত কিন্তু দেশটা জনশূন্য হয়ে যেত। “ধর, আমি সেই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে এসে বললাম, ‘দেশের সব জায়াগায় যুদ্ধ হোক,’ আর আমি তার লোকজন ও জীবজন্তু মেরে ফেললাম। আমার জীবনের দিব্য যে, তার মধ্যে সেই তিনজন লোক থাকলেও তারা নিজেদের ছেলেমেয়েদের পর্যন্ত রক্ষা করতে পারত না। তারা নিজেরাই কেবল রক্ষা পেত। “আবার ধর, আমি সেই দেশের মধ্যে মড়ক পাঠালাম এবং তার মানুষ ও পশুদের মেরে ফেলবার মধ্য দিয়ে আমার ক্রোধ তার উপর ঢেলে দিলাম। আমার জীবনের দিব্য যে, তার মধ্যে নোহ, দানিয়েল ও ইয়োব থাকলেও তারা তাদের কোন ছেলে বা মেয়েকে রক্ষা করতে পারত না। তাদের সততার জন্য তারা কেবল নিজেদেরই রক্ষা করতে পারত। “এখন আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, আমি যখন যিরূশালেমের মানুষ ও পশু মেরে ফেলবার জন্য তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, বুনো জন্তু ও মড়ক- এই চারটি ভয়ংকর শাস্তি পাঠাব তখন কতই না খারাপ হবে! তবুও সেখানকার কয়েকজন বেঁচে যাবে ও তাদের বের করে আনা হবে। তারা তোমাদের কাছে আসবে, আর যখন তোমরা তাদের খারাপ স্বভাব-চরিত্র ও কাজকর্ম দেখবে তখন যিরূশালেমের উপর আমার আনা বিপদের বিষয়ে তোমরা সান্ত্বনা পাবে। তাদের স্বভাব-চরিত্র ও কাজকর্ম দেখে তোমরা সান্ত্বনা পাবে এবং বুঝতে পারবে যে, অকারণে আমি কিছুই করি নি। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, আংগুর গাছের ডাল কি বনের অন্য যে কোন গাছের ডালের চেয়ে ভাল? দরকারী কোন কিছু তৈরী করবার জন্য কি তা থেকে কাঠ নেওয়া হয়? জিনিসপত্র ঝুলিয়ে রাখবার জন্য লোকে কি তা দিয়ে গোঁজ তৈরী করে? জ্বালানী কাঠ হিসাবে তা আগুনে ফেলবার পরে যখন কাঠের দু’দিক পুড়ে যায় এবং মাঝখানটা কালো হয়ে যায় তখন কি সেটা কোন কাজে লাগে? আগুনে ফেলবার আগে যদি সেটা কোন কিছুর জন্য কাজে না লেগে থাকে তবে আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেলে কি তা দিয়ে কোন দরকারী কিছু তৈরী করা যেতে পারে? “সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, বনের গাছপালার মধ্যে আংগুর গাছের কাঠকে আমি যেমন জ্বালানী কাঠ হিসাবে আগুনে দিয়েছি, তেমনি যিরূশালেমে বাসকারী লোকদেরও আগুনে দেব। আমি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব। আগুন থেকে তারা বের হয়ে আসলেও আগুনই তাদের পুড়িয়ে ফেলবে। আমি যখন তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। দেশটা আমি জনশূন্য করব, কারণ তারা অবিশ্বস্ত হয়েছে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি যিরূশালেমের জঘন্য কাজকর্মের বিষয় তাকে জানাও। তুমি বল যে, প্রভু সদাপ্রভু যিরূশালেমকে বলছেন, ‘তোমার বাড়ী ও তোমার জন্মের স্থান কনানীয়দের দেশে; তোমার বাবা হল ইমোরীয় ও মা হিত্তীয়। যেদিন তুমি জন্মেছিলে সেদিন তোমার নাড়ী কাটা হয় নি, তোমাকে জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয় নি, তোমার গায়ে নুন মাখানো হয় নি কিম্বা তোমাকে কাপড় দিয়ে জড়ানো হয় নি। কেউ তোমাকে মমতার চোখে দেখে নি কিম্বা তোমার প্রতি এই সব করবার জন্য কারও মনে দয়াও জাগে নি। তোমাকে বরং খোলা মাঠে ফেলে রাখা হয়েছিল, কারণ যেদিন তুমি জন্মেছিলে সেই দিন তোমাকে ঘৃণা করা হয়েছিল। “‘আমি তোমার কাছ দিয়ে যাবার সময় তোমাকে তোমার রক্তের মধ্যে শুয়ে ছট্‌ফট করতে দেখলাম। তখন আমি তোমাকে আদেশ দিলাম যেন তুমি তোমার রক্তের মধ্যেই বেঁচে থাক। আমি তোমাকে ক্ষেতের চারার মত বড় করে তুললাম। তুমি বেড়ে উঠে কিশোরী হলে, তোমার বুক গড়ে উঠল, লোম গজাল, কিন্তু তুমি উলংগিনী ও কাপড় ছাড়াই ছিলে। “‘পরে আমি তোমার পাশ দিয়ে যাবার সময় তোমার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, তোমার এখন প্রেম করবার সময় হয়েছে; সেইজন্য আমার পোশাকের অংশ আমি তোমার উপরে বিছিয়ে তোমার উলংগতা ঢেকে দিলাম। আমি তোমার কাছে শপথ করে তোমার সংগে বিয়ের চুক্তি করলাম, আর তাতে তুমি আমার হলে। আমি তোমাকে জলে স্নান করিয়ে তোমার রক্ত ধুয়ে দিলাম এবং গায়ে তেল লাগিয়ে দিলাম। আমি তোমার গায়ে নক্‌শা তোলা কাপড় দিলাম ও পায়ে শুশুকের চামড়ার সুন্দর চটি পরালাম। আমি তোমার মাথায় পাতলা মসীনার কাপড় জড়ালাম এবং রেশমের কাপড় দিয়ে তোমাকে ঢেকে দিলাম। আমি গহনা দিয়ে তোমাকে সাজালাম; তোমার হাতে চুড়ি, গলায় হার, নাকে নোলক, কানে দুল ও মাথায় সুন্দর একটা মুকুট দিলাম। এইভাবে সোনা ও রূপা দিয়ে তোমাকে সাজানো হল; তোমার কাপড়-চোপড় ছিল পাতলা মসীনার, রেশমের ও নক্‌শা তোলা কাপড়ের। তোমার খাবার ছিল মিহি ময়দা, মধু ও জলপাইয়ের তেল। তুমি খুব সুন্দরী হয়ে উঠে রাণীর মত হলে। তোমার সৌন্দর্যের জন্য তোমার সুনাম জাতিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল, কারণ আমার দেওয়া জাঁকজমকে তোমার সৌন্দর্য পরিপূর্ণ হয়েছিল। “‘কিন্তু তুমি তোমার সৌন্দর্যের সুনাম বেশ্যা হবার জন্য ব্যবহার করেছ। যে কেউ তোমার পাশ দিয়ে যেত তার সংগে তুমি ব্যভিচার করতে এবং সে তোমাকে ভোগ করত। তোমার কোন কোন কাপড় নিয়ে তুমি পূজার উঁচু স্থান সাজিয়ে সেখানে তোমার বেশ্যার কাজ চালাতে লাগলে। ঐ রকম কাজ করা তোমার কখনও উচিত ছিল না। আমার সোনা-রূপা দিয়ে তৈরী গহনা, যা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম, সেই সুন্দর গহনা নিয়ে তুমি নিজের জন্য পুরুষ-প্রতিমা তৈরী করে সেগুলোর সংগে ব্যভিচার করতে। তোমার নক্‌শা তোলা কাপড়-চোপড় নিয়ে তুমি সেগুলোকে পরাতে এবং তাদের সামনে তুমি আমার তেল ও ধূপ উৎসর্গ করতে। আমি তোমার খাবার জন্য তোমাকে যে মিহি ময়দা, জলপাই তেল ও মধু দিয়েছিলাম তা তুমি তাদের সামনে সুগন্ধি হিসাবে রাখতে। আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, এই সবই ঘটেছে। “‘তোমার যে সব ছেলেমেয়েদের তুমি আমার জন্য গর্ভে ধরেছিলে তাদের নিয়ে তুমি খাবার হিসাবে প্রতিমাগুলোর উদ্দেশে উৎসর্গ করেছ। তোমার ব্যভিচারের কাজ কি যথেষ্ট ছিল না? আবার আমার ছেলেমেয়েদের কেটে তুমি প্রতিমাগুলোর উদ্দেশে তাদের আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করেছ। তোমার সব জঘন্য কাজকর্ম ও তোমার ব্যভিচারের মধ্যে তুমি তোমার ছোটবেলার কথা মনে কর নি যখন তুমি ছিলে উলংগিনী এবং খালি গায়ে নিজের রক্তের মধ্যে ছট্‌ফট করছিলে। রাস্তার মোড়ে মোড়েও প্রতিমার আসন তৈরী করে তোমার সৌন্দর্যকে তুমি অপমান করেছ। যে কেউ তোমার পাশ দিয়ে গেছে তাকে তোমার দেহ দান করে তুমি তোমার ব্যভিচারের কাজ বাড়িয়েছ। তোমার কামুক প্রতিবেশী মিসরীয়দের সংগে তুমি ব্যভিচার করেছ এবং তোমার ব্যভিচারের কাজ বাড়িয়ে আমার ভীষণ অসন্তোষ খুঁচিয়ে তুলেছ। সেইজন্য আমি তোমার বিরুদ্ধে আমার হাত বাড়িয়ে তোমার সম্পত্তি কমিয়ে দিয়েছি। তোমার শত্রুদের, অর্থাৎ পলেষ্টীয়দের মেয়েরা, যারা তোমার জঘন্য স্বভাবের জন্য লজ্জা পেয়েছে আমি তাদের হাতে তোমাকে তুলে দিয়েছি। আসিরিয়দের সংগেও তুমি ব্যভিচার করেছ, কারণ তুমি অতৃপ্ত ছিলে; কিন্তু তার পরেও তোমার তৃপ্তি হয় নি। তার পরে তুমি তোমার ব্যভিচারের কাজ বাড়িয়ে বণিকদের দেশ বাবিলের সংগেও ব্যভিচার করলে, কিন্তু এতেও তোমার তৃপ্তি হল না। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, তুমি কত দুর্বল-মনা, কারণ তুমি বেহায়া বেশ্যার মত এই সব কাজ করছ। তুমি যখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রতিমার আসন তৈরী করেছ তখন বেশ্যার কাজ করেও তোমার পাওনা টাকা অগ্রাহ্য করেছ। তুমি ব্যভিচারিণী স্ত্রীর মত, তুমি তোমার স্বামীর চেয়ে অচেনাদের পছন্দ করেছ। সব বেশ্যারাই উপহার পায়, কিন্তু তুমি তোমার সব প্রেমিকদের উপহার দিয়ে থাক। তোমার সংগে ব্যভিচার করবার জন্য যাতে তারা সব জায়গা থেকে তোমার কাছে আসে সেইজন্য তুমি তাদের ঘুষ দিয়ে থাক। কাজেই তোমার বেশ্যাগিরিতে তুমি অন্য বেশ্যাদের চেয়ে আলাদা; তোমার সংগে ব্যভিচার করবার জন্য কেউ তোমার পিছনে দৌড়ায় না। তুমি একেবারে আলাদা, কারণ তুমি টাকা নাও না বরং টাকা দিয়ে থাক।’” ওহে বেশ্যা, সদাপ্রভুর বাক্য শোন। প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “ব্যভিচারের কাজে তুমি তোমার লজ্জা-স্থান খুলে দিয়ে তোমার প্রেমিকদের কাছে তোমার উলংগতা প্রকাশ করেছ। তোমার সমস্ত জঘন্য প্রতিমার জন্য ও তাদের উদ্দেশে তোমার ছেলেমেয়েদের যে রক্ত দিয়েছ, তার জন্য আমি তোমার সেই সব প্রেমিকদের জড়ো করব যাদের সংগে তুমি আনন্দ ভোগ করেছ। যাদের তুমি ভালবেসেছ এবং যাদের ঘৃণা করেছ তাদের সবাইকে আমি জড়ো করব। আমি চারদিক থেকে তোমার বিরুদ্ধে তাদের জড়ো করব ও তাদের সামনেই তোমার সব কাপড় খুলে ফেলব যাতে তারা তোমার উলংগতা দেখতে পায়। যে স্ত্রীলোকেরা ব্যভিচার করে এবং যারা রক্তপাত করে তাদের যে শাস্তি দেওয়া হয় সেই শাস্তিই আমি তোমাকে দেব। আমার ক্রোধ ও অন্তরের জ্বালার জন্য আমি তোমাকে মৃত্যুর শাস্তি দেব। তারপর আমি তোমাকে তোমার প্রেমিকদের হাতে তুলে দেব; তারা তোমার প্রতিমার আসনগুলো ধ্বংস করে দেবে। তারা তোমার কাপড়-চোপড় খুলে ফেলবে ও তোমার সুন্দর গহনাগুলো নিয়ে নেবে আর তোমাকে একেবারে উলংগ করে রেখে যাবে। তারা তোমার বিরুদ্ধে একদল লোককে উত্তেজিত করবে; তারা তোমাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে এবং তাদের তলোয়ার দিয়ে তোমাকে টুকরা টুকরা করে কাটবে। তারা তোমার ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে ফেলবে এবং অনেক স্ত্রীলোকের চোখের সামনে তোমাকে শাস্তি দেবে। এইভাবে আমি তোমার বেশ্যাগিরি বন্ধ করে দেব; তোমার প্রেমিকদের তুমি আর টাকা-পয়সা দেবে না। তারপর তোমার উপর আমার ক্রোধ ও অন্তরের জ্বালা থেমে যাবে। আমি শান্ত হব, আর অসন্তুষ্ট হব না। “তুমি তোমার ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে রাখ নি, বরং এই সব কাজ দিয়ে আমাকে বিরক্ত করে তুলেছ; সেইজন্য আমিও তোমার কাজের ফল তোমাকে দেব। তোমার অন্য সমস্ত কুকর্মের সংগে কি তুমি এই জঘন্য কাজও যোগ কর নি? “লোকে তোমার বিষয় নিয়ে এই চলতি কথা বলবে, ‘যেমন মা তেমনি মেয়ে।’ তুমি তোমার মায়ের উপযুক্ত মেয়ে, তোমার মা তার স্বামী ও ছেলেমেয়েদের ঘৃণা করত; তুমি তোমার বোনদের উপযুক্ত বোন, সেই বোনেরা তাদের স্বামী ও ছেলেমেয়েদের ঘৃণা করত। তোমাদের মা হল হিত্তীয়া আর বাবা ইমোরীয়। তোমার বড় বোন শমরিয়া; তার মেয়েদের নিয়ে সে তোমার উত্তর দিকে বাস করে। তোমার ছোট বোন হল সদোম; সে তার মেয়েদের নিয়ে তোমার দক্ষিণে বাস করে। তুমি যে তাদের চালচলন এবং জঘন্য অভ্যাস মত চলেছ কেবল তা-ই নয় বরং তোমার সমস্ত আচার-ব্যবহারে তুমি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের চেয়ে আরও জঘন্য হয়েছ। আমার কথা সত্যি যে, তোমার মেয়েরা ও তুমি যা করেছ তোমার বোন সদোম ও তার মেয়েরা কখনও তা করে নি। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “তোমার বোন সদোমের পাপ ছিল এই- সে ও তার মেয়েরা ছিল অহংকারী, কারণ তাদের প্রচুর খাবার ছিল ও তারা নিশ্চিন্তে বাস করত, কিন্তু তারা গরীব ও অভাবীদের সাহায্য করত না। তারা ছিল গর্বিত এবং আমার সামনে জঘন্য কাজকর্ম করত। কাজেই তুমি যেমন দেখেছ সেইভাবেই আমি তাদের দূর করে দিয়েছি। তুমি যে সব পাপ করেছ তার অর্ধেকও শমরিয়া করে নি। তুমি তাদের চেয়ে আরও জঘন্য জঘন্য কাজ করেছ। তুমি এই যে সব কাজ করেছ তা দেখে তোমার বোনদের বরং ধার্মিক মনে হয়েছে। তোমার অসম্মান তোমাকেই বহন করতে হবে, কারণ তোমার কাজগুলো তোমার বোনদের পক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছে। তোমার পাপ তাদের চেয়েও জঘন্য বলে তোমার চেয়ে তাদের ধার্মিক বলে মনে হয়। কাজেই তুমি লজ্জিত হও ও তোমার অসম্মান বহন কর, কারণ তুমি তোমার বোনদের ধার্মিক প্রমাণ করেছ। “যাহোক, আমি সদোম ও তার মেয়েদের, শমরিয়া ও তার মেয়েদের এবং তাদের সংগে সংগে তোমারও অবস্থা ফিরাব। তাতে তুমি অসম্মান বোধ করবে এবং তোমার যে সব খারাপ কাজের জন্য তারা নিজেদের ভাল বলে মনে করেছে তার জন্য তুমি লজ্জিত হবে। তোমার বোনেরা তাদের মেয়েদের নিয়ে আগে যেমন ছিল তেমনই হবে; আর তুমি ও তোমার মেয়েরা আগে যেমন ছিলে তেমনই হবে। তোমার অহংকারের দিনে তুমি তোমার বোন সদোমকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে; তখন তোমার দুষ্টতা প্রকাশ পায় নি। এখন অরামের মেয়েরা ও তার প্রতিবেশীরা, পলেষ্টীয়দের মেয়েরা, অর্থাৎ তোমার চারপাশের যারা তোমাকে ঘৃণা করে তারা সবাই তোমাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছে। তুমি তোমার কুকর্ম ও জঘন্য কাজকর্মের ফল বহন করবে। “তোমার কাজ অনুসারেই আমি তোমার সংগে ব্যবহার করব, কারণ তুমি আমার স্থাপন করা ব্যবস্থা ভেংগে আমার শপথ তুচ্ছ করেছ। তবুও তোমার অল্প বয়সে তোমার জন্য আমি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম তা আমি মনে করব এবং তোমার জন্য একটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা স্থাপন করব। আমি তোমার মেয়ে হিসাবে তোমার বড় ও ছোট বোনদের তোমাকে দেব আর তুমি তাদের গ্রহণ করবে, যদিও তারা আমার ব্যবস্থার মধ্যে নেই। তখন তুমি তোমার চালচলনের কথা মনে করে লজ্জিত হবে। আমি তোমার জন্য আমার ব্যবস্থা স্থাপন করব, আর তুমি জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আমি যখন তোমার সব অন্যায় ক্ষমা করব তখন তুমি সেই সব অন্যায় কাজের কথা মনে করে লজ্জিত হবে এবং তোমার অসম্মানের জন্য আর কখনও মুখ খুলবে না। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের বল যে, তারপর সে কিছু বীজ উর্বর মাটিতে লাগিয়ে দিল। প্রচুর জলের ধারে উইলো গাছের মত করে সে তা লাগিয়ে দিল। সেটা গজিয়ে উঠে মাটিতে ছড়িয়ে পড়া একটা লতা হল। সেই লতার ডগাগুলো ঐ ঈগলের দিকে ফিরল, আর তার শিকড়গুলো রইল মাটির গভীরে। এইভাবে সেই লতা বড় হল এবং তাতে পাতা সুদ্ধ অনেক ডগা বের হল। “‘কিন্তু সেখানে পালখে ঢাকা বড় ডানাযুক্ত আর একটা বড় ঈগল ছিল। সেই লতা জল পাবার জন্য তার শিকড় ও ডগাগুলো সেখান থেকে সেই ঈগলের দিকে বাড়িয়ে দিল। প্রচুর জলের পাশে ভাল মাটিতে তাকে লাগানো হয়েছিল যাতে সে অনেক ডগা বের করতে পারে, ফল ধরাতে পারে ও সুন্দর লতা হয়ে উঠতে পারে।’ “তুমি তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘সে কি বেড়ে উঠবে? সে যাতে শুকিয়ে যায় সেইজন্য কি তাকে উপ্‌ড়ে ফেলে তার ফলগুলো ফেলে দেওয়া হবে না? তার নতুন গজানো ডগা সব শুকিয়ে যাবে। তার শিকড় ধরে তুলে ফেলবার জন্য কোন শক্তিশালী হাত বা অনেক লোক লাগবে না। যদিও তাকে ভালভাবে লাগানো হয়েছিল তবুও সে বেঁচে থাকবে না। যে জমিতে সে বেড়ে উঠেছিল সেখানে পূবের বাতাসের আঘাতে সে একেবারে শুকিয়ে যাবে।’” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি এই বিদ্রোহী জাতিকে বল, ‘এই সব বিষয়ের মানে কি তা কি তোমরা জান না? বাবিলের রাজা যিরূশালেমে এসে তার রাজা ও রাজপুরুষদের ধরে বাবিলে নিয়ে গেল। কিন্তু সেই শাসনকর্তা ঘোড়া ও একটা বড় সৈন্যদল পাবার জন্য মিসরে দূত পাঠিয়ে বাবিলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। সে কি সফল হবে? যে এই সব কাজ করে সে কি রেহাই পাবে? শপথ ভেংগে ফেললে কি সে রক্ষা পাবে? “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি, তাকে যে রাজা সিংহাসনে বসাল, যার শপথকে সে তুচ্ছ করল, আর যার চুক্তি সে ভেংগে ফেলল সে সেই রাজার দেশ বাবিলে মারা যাবে। যুদ্ধের সময় যখন অনেক জীবন ধ্বংস করবার জন্য উঁচু ঢিবি ও ঢালু ঢিবি তৈরী করা হবে তখন ফরৌণের শক্তিশালী মস্ত বড় সৈন্যদল তাকে সাহায্য করবে না। সে তো চুক্তি ভেংগে ফেলে শপথ তুচ্ছ করেছে। সে অধীনতার চুক্তি করেও এই সব কাজ করেছে বলে রেহাই পাবে না। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি যে, সে আমার নামে শপথ করে তা তুচ্ছ করেছে এবং অধীনতার চুক্তি ভেংগেছে বলে তার ফল আমি তাকে দেব। আমি তার জন্য আমার জাল পাতব এবং সে আমার ফাঁদে ধরা পড়বে। সে আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছে বলে আমি তাকে বাবিলে নিয়ে যাব এবং সেখানে তাকে শাস্তি দেব। তার সেরা সৈন্যেরা যুদ্ধে মারা যাবে আর বাদবাকী সৈন্যেরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। তখন তোমরা জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই এই কথা বলেছি।’” প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “আমি নিজেই এরস গাছের মাথা থেকে একটা কচি আগা নিয়ে পাহাড়ের উঁচু চূড়ার উপর লাগিয়ে দেব। ইস্রায়েলের উঁচু পাহাড়ের উপরে তা থেকে ডালপালা বের হয়ে ফল ধরবে; সেটা একটা চমৎকার এরস গাছ হয়ে উঠবে। সব রকমের পাখী তার ডালপালার মধ্যে বাসা করবে এবং তার ছায়ায় বাস করবে। এতে মাঠের সব গাছপালা জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই উঁচু গাছকে নীচু করি এবং নীচু গাছকে উঁচু করি। আমিই সবুজ গাছকে শুকনা করি এবং শুকনা গাছকে জীবিত করি। “আমি সদাপ্রভুই এই কথা বলেছি এবং আমি তা করব।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “ইস্রায়েল দেশে তোমরা এই যে চলতি কথাটা বল তার মানে কি, ‘বাবারা টক আংগুর খেয়েছে কিন্তু সন্তানদের দাঁত টকে গেছে’? “আমার জীবনের দিব্য যে, ইস্রায়েলে আর এই চলতি কথাটা বলা হবে না। জীবিত সব লোকই আমার, বাবা ও ছেলে দুই-ই আমার। যে পাপ করবে সে-ই মরবে। “ধর, একজন সৎ লোক ন্যায় ও ঠিক কাজ করে। সে পাহাড়ের উপরের কোন পূজার স্থানে খাওয়া-দাওয়া করে না, কিম্বা ইস্রায়েলীয়দের কোন প্রতিমার পূজা করে না। সে প্রতিবেশীর স্ত্রীকে নষ্ট করে না, কিম্বা মাসিক হচ্ছে এমন স্ত্রীলোকের সংগে মিলিত হয় না। সে কাউকে অত্যাচার করে না বরং ঋণীকে বন্ধকী জিনিস ফিরিয়ে দেয়। সে চুরি করে না, কিন্তু যাদের খিদে পেয়েছে তাদের খেতে দেয় এবং উলংগদের কাপড় দেয়। সে সুদে টাকা ধার দেয় না কিম্বা বাড়তি সুদ নেয় না। সে অন্যায় করা থেকে হাত সরিয়ে রাখে ও লোকদের মধ্যে ন্যায়ভাবে বিচার করে। সে আমার নিয়ম-কানুন মত চলে এবং বিশ্বস্তভাবে আমার আইন-কানুন পালন করে। এই লোক সত্যিই সৎ; সে নিশ্চয়ই বাঁচবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। সে গরীব ও অভাবীদের অত্যাচার করে। সে চুরি করে এবং বন্ধকী জিনিস ফিরিয়ে দেয় না। সে প্রতিমাপূজা করে এবং জঘন্য কাজকর্ম করে। সে সুদে টাকা ধার দেয় এবং বাড়তি সুদ নেয়। সেই ছেলে কি বাঁচবে? সে বাঁচবে না। এই সব জঘন্য কাজ করেছে বলে সে মরবেই মরবে। সে তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী হবে। “আবার ধর, সেই ছেলের একটা ছেলে আছে। সে তার বাবাকে এই সব পাপ করতে দেখেও তা করে না। সে গরীবদের অত্যাচার করে না এবং কোন রকম সুদ নেয় না। সে আমার আইন-কানুন রক্ষা করে এবং আমার নিয়ম-কানুন পালন করে। সে তার বাবার পাপের জন্য মরবে না; সে নিশ্চয়ই বাঁচবে। কিন্তু তার বাবা তার নিজের পাপের জন্য মরবে, কারণ সে জোর করে টাকা আদায় করত, ভাইয়ের জিনিস চুরি করত এবং তার লোকদের মধ্যে অন্যায় কাজ করত। “তবুও তোমরা বলছ, ‘বাবার দোষের জন্য কেন ছেলে শাস্তি পাবে না?’ সেই ছেলে তো ন্যায় ও ঠিক কাজ করেছে এবং আমার সমস্ত নিয়ম-কানুন যত্নের সংগে পালন করেছে, তাই সে নিশ্চয়ই বাঁচবে। যে পাপ করবে সে-ই মরবে। ছেলে বাবার দোষের জন্য শাস্তি পাবে না আর বাবাও ছেলের দোষের জন্য শাস্তি পাবে না। সৎ লোক তার সততার ফল পাবে এবং দুষ্ট লোক তার দুষ্টতার ফল পাবে। “কিন্তু যদি একজন দুষ্ট লোক তার সব পাপ থেকে ফিরে আমার সব নিয়ম-কানুন পালন করে আর ন্যায় ও ঠিক কাজ করে তবে সে নিশ্চয়ই বাঁচবে, মরবে না। সে যে সব অন্যায় করেছে তা আমি আর মনে রাখব না। সে যে সব সৎ কাজ করেছে তার জন্যই সে বাঁচবে। দুষ্ট লোকের মরণে কি আমি খুশী হই? বরং সে যখন তার কুপথ থেকে ফিরে এসে বাঁচে তখনই আমি খুশী হই। “কিন্তু যদি একজন সৎ লোক তার সততা থেকে ফিরে পাপ করে এবং দুষ্ট লোকের মত জঘন্য কাজ করে তবে সে কি বাঁচবে? তার কোন সৎ কাজই তখন আমি মনে করব না। তার অবিশ্বস্ততা ও পাপের জন্যই সে মরবে। “তবুও তোমরা বলছ, ‘প্রভুর পথ ঠিক নয়।’ হে ইস্রায়েলীয়েরা, শোন। আমার পথ কি অন্যায়ের পথ? না, বরং তোমাদের পথই অন্যায়ের পথ। যদি একজন সৎ লোক তার সততা থেকে ফিরে পাপ করে আর মরে, তবে সে তার পাপের দরুনই মরবে। কিন্তু যদি একজন দুষ্ট লোক তার দুষ্টতা থেকে ফিরে ন্যায় ও সৎ কাজ করে, তবে সে তার প্রাণ বাঁচাবে। তার অন্যায়ের কথা চিন্তা করে তা থেকে ফিরেছে বলে সে নিশ্চয়ই বাঁচবে, মরবে না। তবুও তোমরা বলছ, ‘প্রভুর পথ ঠিক নয়।’ হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমার পথ কি অন্যায়ের? অন্যায়ের পথ তো তোমাদেরই। “সেইজন্য হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমি তোমাদের প্রত্যেকের আচার-ব্যবহার অনুসারে বিচার করব। তোমরা ফেরো, তোমাদের সমস্ত অন্যায় কাজ থেকে মন ফিরাও; তাহলে পাপের জন্য তোমরা ধ্বংস হবে না। তোমাদের সমস্ত অন্যায় তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে দূর কর এবং তোমাদের অন্তর ও মন নতুন করে গড়ে তোল। কেন তোমরা মরবে? আমি কারও মৃত্যুতে খুশী হই না। তোমরা মন ফিরিয়ে বাঁচ। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলের শাসনকর্তাদের জন্য বিলাপ করে বল, ‘সিংহদের মধ্যে তোমার মা ছিল সেরা সিংহী। সে যুব সিংহদের মধ্যে শুয়ে থাকত; তার বাচ্চাদের সে লালন-পালন করত। তার একটা বাচ্চা বড় হয়ে শক্তিশালী সিংহ হয়ে উঠল। সে পশু শিকার করতে শিখল আর মানুষ খেতে লাগল। জাতিরা তার বিষয় শুনতে পেল; সে তাদের গর্তে ধরা পড়ল। তারা তার নাকে কড়া লাগিয়ে মিসর দেশে নিয়ে গেল। “‘সেই সিংহী দেখল তার আশা পূর্ণ হল না; সে যা চাইছিল তা হল না; তখন সে তার আর একটা বাচ্চা নিয়ে তাকে শক্তিশালী করে তুলল। সেই বাচ্চা সিংহদের মধ্যে ঘোরাঘুরি করে একটা শক্তিশালী সিংহ হয়ে উঠল। সে পশু শিকার করতে শিখল আর মানুষ খেতে লাগল। সে তাদের দুর্গগুলো ভাঙ্গল আর শহর সব ধ্বংস করে ফেলল। তার গর্জনে দেশের সকলেই ভয় পেল। তখন তার চারপাশের জাতিরা তার বিরুদ্ধে আসল। তারা তার জন্য তাদের জাল পাতল, আর সে তাদের গর্তে ধরা পড়ল। নাকে কড়া লাগিয়ে তারা তাকে খাঁচায় রাখল আর বাবিলের রাজার কাছে নিয়ে গেল। তারা তাকে দুর্গে বন্ধ করে রাখল; ইস্রায়েলের পাহাড়ে পাহাড়ে তার গর্জন আর শোনা গেল না। “‘তোমার মা জলের ধারে লাগানো একটা আংগুর গাছের মত; প্রচুর জল পাবার দরুন তা ছিল ফল ও ডালপালায় ভরা। তার ডালগুলো ছিল শক্ত, শাসনকর্তার রাজদণ্ড হওয়ার উপযুক্ত। সেই গাছটা উঁচু হয়ে যেন মেঘ ছুঁলো; সেইজন্য তার পাতা-ভরা ডালপালা সহজে নজরে পড়ল। কিন্তু সদাপ্রভু তাঁর ক্রোধে সেটা উপ্‌ড়ে মাটিতে ফেলে দিলেন। পূবের বাতাসে সেটা কুঁকড়ে গেল, তার ফল ঝরে পড়ল; তার শক্ত ডালগুলো ভেংগে শুকিয়ে গেল, আর আগুন তা পুড়িয়ে ফেলল। এখন সেটাকে মরুভূমিতে, শুকনা, জলহীন দেশে লাগানো হয়েছে। তার গুঁড়ি থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ল; তার ডাল ও ফল পুড়ে গেল। শাসনকর্তার রাজদণ্ড হবার উপযুক্ত কোন শক্ত ডালই তাতে রইল না।’ “এটা একটা বিলাপ; দুঃখের গান হিসাবে এটা ব্যবহার করা হবে।” সপ্তম বছরের পঞ্চম মাসের দশ দিনের দিন ইস্রায়েলের কয়েকজন বৃদ্ধ নেতা সদাপ্রভুর ইচ্ছা জানবার জন্য এসে আমার সামনে বসলেন। তখন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, তুমি ইস্রায়েলের বৃদ্ধ নেতাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা কি আমার ইচ্ছা জানতে এসেছ? আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমাদের আমার ইচ্ছা জানতে দেব না।’ “হে মানুষের সন্তান, তুমি কি তাদের বিচার করবে? তাহলে তাদের পূর্বপুরুষদের জঘন্য আচার-ব্যবহারের কথা তাদের জানাও। তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘যেদিন আমি ইস্রায়েলকে বেছে নিয়েছিলাম সেই দিন যাকোবের বংশের লোকদের কাছে শপথ করেছিলাম ও মিসরে তাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছিলাম। আমি শপথ করে তাদের বলেছিলাম যে, আমিই তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। সেই দিন আমি তাদের কাছে আরও শপথ করেছিলাম যে, মিসর দেশ থেকে তাদের বের করে তাদের জন্য যে দেশ আমি ঠিক করেছি সেই দেশে তাদের নিয়ে যাব। সেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই; সেটা সব দেশের মধ্যে সেরা। আমি তাদের বলেছিলাম, যে সব জঘন্য মূর্তি তাদের কাছে ভাল লেগেছে তা যেন তারা প্রত্যেকে দূর করে দেয় এবং মিসরের প্রতিমাগুলো দিয়ে নিজেদের অশুচি না করে, কারণ আমিই তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। “‘কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল, আমার কথা শুনতে রাজী হল না। যে সব জঘন্য মূর্তি তাদের কাছে ভাল লাগত তা তারা দূর করল না এবং মিসরের প্রতিমাগুলো ত্যাগ করল না। কাজেই আমি বললাম মিসরে আমি তাদের উপর আমার ক্রোধ ও ভীষণ অসন্তোষ সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব। কিন্তু আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি, যাতে তারা যে জাতিদের মধ্যে বাস করছিল তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়। মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে এনে সেই সব জাতির চোখের সামনে আমি ইস্রায়েলীয়দের কাছে নিজেকে প্রকাশ করলাম। আমি মিসর থেকে তাদের বের করে মরু-এলাকায় আনলাম। আমি তাদের আমার নিয়ম দিলাম এবং আমার আইন-কানুন তাদের জানালাম; যে তা পালন করবে সে তার মধ্য দিয়েই জীবন পাবে। আমার ও তাদের মধ্যে চিহ্ন হিসাবে বিশ্রাম দিনগুলোও তাদের দিলাম যাতে তারা জানতে পারে যে, আমি সদাপ্রভুই আমার উদ্দেশ্যে তাদের আলাদা করলাম। “‘কিন্তু ইস্রায়েলের লোকেরা মরু-এলাকায় আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। তারা আমার নিয়মগুলো পালন করল না এবং আমার যে আইন-কানুন পালন করলে মানুষ জীবন পায় তা তারা অগ্রাহ্য করল; তারা আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করল না। কাজেই আমি বললাম, আমি তাদের উপর আমার ক্রোধ ঢেলে দিয়ে মরু-এলাকাতেই তাদের ধ্বংস করে ফেলব। কিন্তু আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি, যাতে যে জাতিদের সামনে আমি তাদের বের করে এনেছিলাম তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়। এছাড়া সেই মরু-এলাকাতেই তাদের কাছে আমি শপথ করলাম যে, আমার দেওয়া দেশ- যে দেশে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই, যে দেশ সব দেশের মধ্যে সেরা- সেই দেশে আমি তাদের নিয়ে যাব না। তারা আমার আইন-কানুন অগ্রাহ্য করেছে ও আমার নিয়মগুলো অমান্য করেছে এবং আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি, কারণ তাদের অন্তরের টান ছিল প্রতিমাপূজার দিকে। তবুও আমি তাদের মমতার চোখে দেখে মরু-এলাকায় তাদের একেবারে ধ্বংস করি নি। সেখানে তাদের ছেলেমেয়েদের আমি বললাম যে, তারা যেন তাদের পূর্বপুরুষদের মত কাজ না করে, তাদের আচার-ব্যবহার অনুসারে না চলে এবং তাদের প্রতিমাগুলো দিয়ে নিজেদের অশুচি না করে। আমি তাদের আরও বললাম যে, আমিই তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তাই আমার নিয়মগুলো যেন তারা পালন করে এবং আমার আইন-কানুন মেনে চলে। তারা যেন আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে; তাতে আমার ও তাদের মধ্যে তা একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, আর তারা জানতে পারবে যে, আমিই তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। “‘কিন্তু সেই ছেলেমেয়েরা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। তারা আমার নিয়মগুলো পালন করল না এবং যে আইন-কানুন পালন করলে মানুষ জীবন পায় তারা আমার সেই আইন-কানুন মেনে চলবার দিকে মনোযোগ দিল না; তারা আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করল না। তাই আমি বললাম মরু-এলাকায় আমি তাদের উপর আমার ক্রোধ ও ভীষণ অসন্তোষ সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব। কিন্তু আমার হাত আমি সরিয়ে রাখলাম এবং আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি যাতে যে সব জাতিদের সামনে আমি তাদের বের করে এনেছিলাম তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়। তা ছাড়া মরু-এলাকায় আমি তাদের কাছে শপথ করেছিলাম যে, নানা জাতি ও দেশের মধ্যে আমি তাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেব, কারণ তারা আমার আইন-কানুন পালন করে নি, আমার নিয়মগুলো অগ্রাহ্য করেছে, আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি, আর তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিমাগুলো তাদের কাছে ভাল লেগেছে। সেইজন্য যে সব নিয়ম ভাল নয় এবং যে আইন-কানুনের মধ্য দিয়ে তারা জীবন পাবে না সেই সবের হাতে আমি তাদের ছেড়ে দিলাম। প্রথমে জন্মেছে এমন প্রত্যেকটি সন্তানকে তারা আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করেছে, আর তার মধ্য দিয়েই আমি তাদের অশুচি হতে দিলাম যেন আমি তাদের ধ্বংস করতে পারি। তখন তারা জানতে পারবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’ “কাজেই হে মানুষের সন্তান, তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমাদের পূর্বপুরুষেরা অবিশ্বস্ততার কাজ করে আমাকে অপমান করেছে। যে দেশ দেবার শপথ আমি তাদের কাছে করেছিলাম সেখানে নিয়ে যাবার পর যখন তারা কোন উঁচু পাহাড় বা ডালপালা ছড়ানো সবুজ গাছ দেখল সেখানে তারা তাদের পশু উৎসর্গ করতে লাগল। সেই উৎসর্গের অনুষ্ঠান করে তারা আমার অসন্তোষ জাগিয়ে তুলল। এছাড়া তারা সেখানে তাদের সুগন্ধি-ধূপ জ্বালাল এবং ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। তখন আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম সেই সব উঁচু স্থানে তারা কেন যায়।’” আজও সেই সব জায়গার নাম রয়েছে “পূজার উঁচু স্থান।” কাজেই সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা কি তোমাদের পূর্বপুরুষদের মত করে নিজেদের অশুচি করবে এবং তাদের জঘন্য মূর্তিগুলোর পূজা করবে? আজও পর্যন্ত যখন তোমরা প্রতিমার সামনে তোমাদের ছেলেমেয়েদের আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ কর তখন সেই সব প্রতিমা দিয়ে তোমরা নিজেদের অশুচি করে থাক। হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমি কি তোমাদের আমার ইচ্ছা জানতে দেব? আমার জীবনের দিব্য যে, আমি কিছুতেই আমার ইচ্ছা তোমাদের জানতে দেব না। “‘তোমরা বলে থাক যে, তোমরা জগতের অন্যান্য জাতির লোকদের মত হতে চাও যারা কাঠ ও পাথরের পূজা করে। কিন্তু তোমাদের মনে যা আছে তা কখনও হবে না। আমি প্রভু সদাপ্রভু আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে ক্রোধ ঢেলে দিয়ে আমি তোমাদের উপরে রাজত্ব করব। আমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে ক্রোধ ঢেলে দিয়ে নানা জাতির মধ্য থেকে আমি তোমাদের নিয়ে আসব এবং যে সব দেশে তোমাদের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেখান থেকে তোমাদের একত্র করব। জাতিদের মরু-এলাকায় তোমাদের মুখোমুখি হয়ে আমি তোমাদের বিচার করব। মিসর দেশের মরু-এলাকায় আমি যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের বিচার করেছিলাম তেমনি তোমাদেরও বিচার করব। আমার লাঠির নীচ দিয়ে তোমাদের যেতে হবে; আমার ব্যবস্থার বাঁধন দিয়ে আমি তোমাদের বাঁধব। তোমাদের মধ্যে যারা আমার বিরুদ্ধে থাকে ও বিদ্রোহ করে আমি তাদের দূর করে দেব। তারা যে দেশে বাস করছে যদিও সেখান থেকে আমি তাদের বের করে আনব তবুও তারা ইস্রায়েল দেশে ঢুকতে পারবে না। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, যাও, তোমরা প্রত্যেকে গিয়ে তোমাদের প্রতিমাগুলোর সেবা কর। কিন্তু পরে আমার কথা তোমরা অবশ্যই শুনবে এবং তখন তোমরা তোমাদের উপহার ও প্রতিমা দিয়ে আর আমার পবিত্র নাম অপবিত্র করবে না। তখন দেশের মধ্যে আমার পবিত্র পাহাড়ের উপরে, ইস্রায়েলের উঁচু পাহাড়ের উপরে ইস্রায়েলের সমস্ত লোক আমার সেবা করবে এবং সেখানে আমি তাদের গ্রহণ করব। সেখানে আমি তোমাদের সব পবিত্র উৎসর্গ, দান ও ভাল ভাল উপহার দাবি করব। আমি যখন জাতিদের মধ্য থেকে তোমাদের বের করে আনব এবং যে সব দেশে তোমরা ছড়িয়ে পড়েছ সেখান থেকে একত্র করব তখন সুগন্ধি ধূপের মত আমি তোমাদের গ্রহণ করব। তখন তোমাদের মধ্য দিয়ে জাতিরা বুঝতে পারবে যে, আমি পবিত্র। তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশ দেবার শপথ আমি করেছিলাম সেই ইস্র্রায়েল দেশে তোমাদের নিয়ে যাবার পর তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। সেখানে তোমাদের আগের আচার-ব্যবহারের কথা ও যে সব কাজের দ্বারা তোমরা নিজেদের অশুচি করেছিলে তা মনে করবে এবং তোমাদের সমস্ত মন্দ কাজের জন্য নিজেরা নিজেদের ঘৃণা করবে। হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমি তোমাদের মন্দ আচার-ব্যবহার এবং মন্দ কাজ অনুসারে তোমাদের সংগে ব্যবহার করব না, কিন্তু নিজের সুনাম রক্ষার জন্য তোমাদের সংগে ভাল ব্যবহার করব। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’ আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” পরে সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তোমার মুখ তুমি দক্ষিণ দিকে রেখে সেই দেশের বিরুদ্ধে কথা বল এবং সেখানকার বনের বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বল। তুমি দক্ষিণের বনকে আমার বাক্য শুনতে বল। তাকে বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তোমার মধ্যে আগুন জ্বালাতে যাচ্ছি এবং তা তোমার সব কাঁচা ও শুকনা গাছপালা পুড়িয়ে ফেলবে। সেই জ্বলন্ত আগুন নিভবে না এবং দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত সমস্ত লোক তাতে ঝল্‌সে যাবে। প্রত্যেকে দেখবে যে, আমি সদাপ্রভুই তা জ্বালিয়েছি; তা নিভবে না।’” তখন আমি বললাম, “হে প্রভু সদাপ্রভু, লোকেরা আমার বিষয়ে বলছে যে, আমি কেবল গল্প কথাই বলছি।” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তোমার মুখ তুমি যিরূশালেমের দিকে রেখে উপাসনা-ঘরের বিরুদ্ধে কথা বল ও ইস্রায়েল দেশের বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বল। তাকে বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তোমার বিরুদ্ধে। আমি খাপ থেকে আমার তলোয়ার বের করে তোমার মধ্য থেকে সৎ ও দুষ্ট সবাইকে মেরে ফেলব। সৎ ও দুষ্ট সবাইকে মেরে ফেলবার জন্য আমার তলোয়ার খাপ থেকে বের হয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত সমস্ত লোককে মেরে ফেলবে। তখন সব লোক জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই খাপ থেকে তলোয়ার বের করেছি; তা আর ফিরবে না।’ “সেইজন্য হে মানুষের সন্তান, তুমি কাত্‌রাও, ভাংগা অন্তর ও গভীর দুঃখে তাদের সামনে কাত্‌রাও। তারা যখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘কেন কাত্‌রাচ্ছ?’ তুমি বলবে, ‘যে সংবাদ আসছে তার জন্য কাত্‌রাচ্ছি। সেই সময় সকলের অন্তর গলে যাবে এবং সকলের হাত নিস্তেজ হবে; সকলের মন মুষ্‌ড়ে পড়বে ও সকলের হাঁটু দুর্বল হয়ে যাবে। প্রভু সদাপ্রভু বলছেন যে, তা আসছে; তা হবেই হবে।’” সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি এই ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘একটা তলোয়ার! ধার দেওয়া ও পালিশ করা একটা তলোয়ার! কেটে ফেলবার জন্য তা ধার দেওয়া হয়েছে, তা পালিশ করা হয়েছে এবং তা বিদ্যুতের মত ঝক্‌মক করছে।’ ” ইস্রায়েলীয়েরা বলছে, “যিহূদার রাজদণ্ড নিয়ে আমরা আনন্দ করব; সেই রাজদণ্ড সমস্ত লাঠিকে তুচ্ছ করছে।” সদাপ্রভু বলছেন, “তলোয়ারটা পালিশ করা হয়েছে যেন তা ব্যবহার করা যায়; যে মেরে ফেলবে তার হাতে দেবার জন্য ওটা ধার দেওয়া ও পালিশ করা হয়েছে। হে মানুষের সন্তান, কাঁদ ও বিলাপ কর, কারণ সেই তলোয়ার আমার লোকদের বিরুদ্ধে এবং ইস্রায়েলের সমস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে। আমার লোকদের সংগে তাদেরও তলোয়ারের হাতে দিয়ে দেওয়া হবে। কাজেই তুমি বুক চাপড়াও। এই পরীক্ষা আসবেই আসবে। যিহূদার রাজা যদি আমার শাস্তিকে তুচ্ছ করে তবে কি সে টিকে থাকতে পারবে? “কাজেই হে মানুষের সন্তান, তুমি ভবিষ্যদ্বাণী বল আর হাতে হাত দিয়ে আঘাত কর। সেই তলোয়ার দু’বার, এমন কি, তিনবার আঘাত করুক। এই তলোয়ার কাটবার জন্য, অনেককে কাটবার জন্যই একটা তলোয়ার; তা চারপাশ থেকে তাদের উপর চেপে আসবে। কেটে ফেলবার জন্য তাদের সব ফটকে ফটকে আমি তলোয়ার বসিয়েছি যাতে তাদের অন্তর সব গলে যায় এবং অনেকে মারা পড়ে। হ্যাঁ, সেই তলোয়ার বিদ্যুতের মত চম্‌কায়; তা কেটে ফেলবার জন্য ধার দেওয়া হয়েছে। ওহে ধারালো তলোয়ার, ডান দিকে আঘাত কর, তারপর বাঁদিকে কর, যেদিকে তোমার ফলা ঘুরানো যায় সেই দিকেই আঘাত কর। আমিও হাতে হাত দিয়ে আঘাত করব আর আমার ক্রোধ শান্ত হবে। আমি সদাপ্রভুই এই কথা বলছি।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, বাবিলের রাজার তলোয়ার যাবার জন্য দু’টা রাস্তায় চিহ্ন দাও, সেই দু’টা রাস্তাই এক দেশ থেকে বের হবে। যেখানে রাস্তা ভাগ হয়ে শহরের দিকে গেছে সেখানে পথ নির্দেশ-করা খুঁটি দাও। তলোয়ারের জন্য অম্মোনীয়দের র্ববা শহরের বিরুদ্ধে যাবার একটা রাস্তায় এবং যিহূদা ও দেয়াল-ঘেরা যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যাবার অন্য একটা রাস্তায় চিহ্ন দাও, কারণ বাবিলের রাজা গোণা-পড়া করবার জন্য সেখানে থামবে যেখানে রাস্তা ভাগ হয়ে গেছে, অর্থাৎ দুই রাস্তা যেখানে মিলেছে। সে তীর ছুঁড়বে, তার দেবতাদের সংগে পরামর্শ করবে এবং কোন পশুর কলিজা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখবে। তার ডান হাতে থাকা গোণা-পড়া করবার জিনিস যিরূশালেমের দিকের পথ দেখিয়ে দেবে; সেখানে সে দেয়াল ও ফটক ভাংবার যন্ত্র বসাবে, মেরে ফেলবার হুকুম দেবে, যুদ্ধের হাঁক দেবে, ঢালু ঢিবি ও উঁচু ঢিবি তৈরী করবে। যিরূশালেমের যে লোকেরা বাবিলের রাজার অধীনে থাকবার শপথ করেছিল তাদের কাছে এই গোণা-পড়া মিথ্যা মনে হবে, কিন্তু তাদের দোষের কথা সে তাদের মনে করিয়ে দেবে এবং তাদের বন্দী করে নিয়ে যাবে। “আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, তোমরা খোলাখুলিভাবে পাপ করে তোমাদের দোষ দেখিয়ে দিয়েছ; তোমাদের সব কাজে তোমাদের অন্যায় প্রকাশ পাচ্ছে। তার ফলে তোমাদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে। “ওহে অপবিত্র ও দুষ্ট ইস্রায়েলের রাজা, তোমার দিন উপস্থিত হয়েছে, তোমার শাস্তির সময় এসে গেছে। আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, তোমার পাগড়ী খোল, মুকুট নামিয়ে ফেল। যেমন ছিল তেমন আর হবে না। ছোটকে বড় আর বড়কে ছোট করা হবে। ধ্বংস! ধ্বংস! আমি এই সব ধ্বংস করে দেব! যাঁর সত্যিকারের অধিকার আছে তিনি না আসা পর্যন্ত এগুলো আর থাকবে না। আমি তাঁকেই এই সব দেব। “হে মানুষের সন্তান, তুমি ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, অম্মোনীয়দের বিষয়ে ও তাদের করা অপমানের বিষয়ে প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘একটা তলোয়ার, একটা তলোয়ার খোলা হয়েছে; তা মেরে ফেলবার জন্য পালিশ করা হয়েছে যেন তা গ্রাস করে ও বিদ্যুতের মত চম্‌কায়। হে তলোয়ার, তোমার বিষয়ে মিথ্যা দর্শন পেলেও এবং মিথ্যা গোণা-পড়া করলেও যাদের মেরে ফেলা হবে সেই দুষ্টদের গলার উপর তোমাকে রাখা হবে; তাদের দিন এসে পড়েছে, তাদের শাস্তির সময় এসে গেছে। হে অম্মোনীয়েরা, তোমাদের তলোয়ার খাপে রাখ। যে জায়গায় তোমাদের সৃষ্টি, তোমাদের সেই পূর্বপুরুষদের দেশে আমি তোমাদের বিচার করব। আমার ক্রোধ আমি তোমাদের উপর ঢেলে দেব এবং তোমাদের বিরুদ্ধে আমার ভীষণ অসন্তোষের আগুনে ফুঁ দেব। আমি তোমাদের এমন নিষ্ঠুর লোকদের হাতে তুলে দেব যারা ধ্বংস করবার কাজে পাকা। তোমরা আগুনের জন্য কাঠের মত হবে। তোমাদের রক্ত তোমাদের দেশের মধ্যেই পড়বে এবং তোমাদের ভুলে যাওয়া হবে। আমি সদাপ্রভুই এই কথা বলেছি।’” পরে সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি কি বিচার করতে প্রস্তুত? তাহলে তুমি রক্তপাতের এই শহরের বিচার কর। তুমি তার সব জঘন্য কাজকর্মের কথা তাকে জানাও। তুমি বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘এ সেই শহর, যে নিজের মধ্যে রক্তপাত করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে এবং প্রতিমা তৈরী করে নিজেকে অশুচি করে। রক্তপাত করে তুমি দোষী হয়েছ এবং প্রতিমা তৈরী করে অশুচি হয়েছ। তুমি তোমার দিন কাছিয়ে এনেছ এবং তোমার শেষ কাল উপস্থিত হয়েছে। সেইজন্য জাতিদের কাছে আমি তোমাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র করে তুলব এবং সমস্ত দেশের কাছে করব হাসির পাত্র। হে অশান্তিপূর্ণ জঘন্য শহর, যারা কাছে আছে আর যারা দূরে আছে তারা তোমাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে। “‘দেখ, তোমার মধ্যেকার ইস্রায়েলের প্রত্যেক শাসনকর্তা রক্তপাত করবার জন্য কেমন করে তার ক্ষমতা ব্যবহার করছে। তোমার মধ্যেই লোকে মা-বাবাকে তুচ্ছ করছে, বিদেশীদের অত্যাচার করছে আর অনাথ ও বিধবাদের সংগে অন্যায় ব্যবহার করছে। তুমি আমার পবিত্র জিনিসগুলো ঘৃণা করেছ ও আমার বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা কর নি। তোমার মধ্যে এমন এমন লোক আছে যারা অন্যের বদনাম রটিয়ে তাদের রক্তপাত করায়, পাহাড়ের উপরকার পূজার জায়গায় খাওয়া-দাওয়া করে ও খারাপ খারাপ কাজ করে। তোমার মধ্যে এমন এমন লোক আছে যারা সৎমায়ের সংগে ব্যভিচার করে, স্ত্রীলোকের মাসিকের সময়ে অশুচি থাকা কালে জোর করে তার সংগে দেহে মিলিত হয়, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সংগে, ছেলের বউয়ের সংগে আর নিজের সৎবোনের সংগে ব্যভিচার করে। তোমার মধ্যে রক্তপাত করবার জন্য লোকে ঘুষ খায়; এছাড়া তারা বাড়তি সুদ নিয়ে থাকে এবং জুলুম করে প্রতিবেশীর কাছ থেকে অন্যায় লাভ করে। তুমি আমাকে ভুলে গেছ। আমি প্র্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “‘তুমি যে অন্যায় লাভ করেছ এবং তোমার মধ্যে যে রক্তপাত করেছ তার জন্য আমি নিশ্চয়ই আমার হাতে হাত দিয়ে আঘাত করব। আমি যেদিন তোমার কাছ থেকে হিসাব নেব সেই দিন কি তোমার সাহস থাকবে? তোমার হাতে কি জোর থাকবে? আমি সদাপ্রভুই এই কথা বললাম এবং আমি তা করবই। আমি তোমার লোকদের বিভিন্ন জাতি ও দেশের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেব এবং তোমার অশুচিতা দূর করব। জাতিদের সামনে তুমি যখন অসম্মানিত হবে তখন তুমি জানবে যে, আমি সদাপ্রভু।’” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েলীয়েরা আমার কাছে খাদের মত হয়েছে; তারা সবাই যেন রূপা খাঁটি করবার সময় চুলার ভিতরে খাদ হিসাবে পড়ে থাকা পিতল, দস্তা, লোহা ও সীসা। কাজেই আমি প্রভু সদাপ্রভু তাদের বলছি, ‘তোমরা সবাই খাদ হয়ে গেছ বলে আমি যিরূশালেমে তোমাদের জড়ো করব। লোকে যেমন করে রূপা, পিতল, লোহা, সীসা ও দস্তা জড়ো করে চুলায় দিয়ে গলাবার জন্য আগুনে ফুঁ দেয় তেমনি করে আমার ভীষণ অসন্তোষ ও ক্রোধে আমি তোমাদের জড়ো করে শহরের মধ্যে রেখে গলাব। আমি তোমাদের জড়ো করে আমার জ্বলন্ত ক্রোধে ফুঁ দেব আর তোমরা শহরের মধ্যে গলে যাবে। চুলার মধ্যে যেমন রূপা গলে যায় তোমরাও তেমনি তার মধ্যে গলে যাবে। তখন তোমরা জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই তোমাদের উপর আমার ক্রোধ ঢেলে দিয়েছি।’” আবার সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি দেশকে বল, ‘তুমি একটা অশুচি দেশ, তাই আমার ক্রোধের দিনে তোমার উপর বৃষ্টি পড়বে না।’ সেই দেশের নবীরা ষড়যন্ত্র করে; তারা গর্জনকারী সিংহের মত শিকার ছেঁড়ে। তারা লোকদের গ্রাস করে, ধন-সম্পদ ও দামী দামী জিনিস নিয়ে নেয় এবং দেশের মধ্যে অনেক স্ত্রীলোককে বিধবা করে। তার পুরোহিতেরা আমার আইন-কানুনের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং আমার পবিত্র জিনিসগুলো অপবিত্র করে। যা পবিত্র ও যা পবিত্র নয় তারা তা এক করে ফেলে; তারা শুচি ও অশুচির মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেই বিষয়ে শিক্ষা দেয় না এবং আমার বিশ্রাম দিনগুলো পালন করবার ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখে। এতে তাদের মধ্যে আমার নামের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। নেকড়ে বাঘ যেমন করে শিকার ছেঁড়ে তেমনি করে সেখানকার রাজকর্মচারীরা রক্তপাত করে এবং অন্যায় লাভের জন্য মানুষ খুন করে। মিথ্যা দর্শন ও মিথ্যা গোণা-পড়া দিয়ে তাদের নবীরা তাদের ঐ সব কাজের উপর চুনকাম করে। সদাপ্রভু না বললেও তারা বলে, ‘প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছেন।’ দেশের লোকেরা অত্যাচার এবং ডাকাতি করে; তারা গরীব ও অভাবীদের উপর অন্যায় করে এবং ন্যায়বিচার না করে বিদেশীদের উপর অত্যাচার করে। “আমি তাদের মধ্যে এমন একজন লোকের খোঁজ করলাম, যে দেয়ালটা গাঁথবে এবং দেশের পক্ষ হয়ে দেয়ালের ফাঁকের মধ্যে আমার সামনে দাঁড়াবে যাতে আমাকে দেশটা ধ্বংস করতে না হয়, কিন্তু কাউকে পেলাম না। কাজেই আমার ক্রোধ আমি তাদের উপর ঢেলে দেব এবং তাদের আচার-ব্যবহারের ফল তাদের মাথার উপর নামিয়ে দিয়ে আমার জ্বলন্ত ক্রোধে আমি তাদের পুড়িয়ে ফেলব। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, দু’টি স্ত্রীলোক ছিল যারা একই মায়ের মেয়ে। অল্প বয়স থেকে মিসর দেশে তারা বেশ্যাগিরি করত। সেই দেশেই লোকে তাদের বুক ধরে সোহাগ করে তাদের কুমারীত্ব নষ্ট করেছে। তাদের মধ্যে বড়টির নাম ছিল অহলা ও তার বোনের নাম ছিল অহলীবা। পরে তারা আমার হল এবং ছেলেমেয়েদের জন্ম দিল। অহলা হল শমরিয়া আর অহলীবা হল যিরূশালেম। সব সেরা সেরা আসিরিয়দের কাছে সে নিজেকে বেশ্যা হিসাবে দান করেছিল; যাদের সে কামনা করত তাদের সমস্ত প্রতিমা দিয়ে সে নিজেকে অশুচি করেছিল। মিসরে যে বেশ্যাগিরি সে শুরু করেছিল তা সে ছেড়ে দেয় নি; সেখানে তার অল্প বয়সেই লোকে তার সংগে শুয়ে তার কুমারীত্ব নষ্ট করেছে ও তাদের কামনা তার উপর ঢেলে দিয়েছে। “সেইজন্য আমি তাকে তার প্রেমিকদের হাতে, অর্থাৎ যাদের সে কামনা করত সেই আসিরিয়দের হাতে ছেড়ে দিলাম। তারা তাকে উলংগ করে তার ছেলেমেয়েদের কেড়ে নিয়ে তলোয়ার দিয়ে তাকে মেরে ফেলল। তার শাস্তির বিষয় নিয়ে স্ত্রীলোকেরা বলাবলি করতে লাগল। “তার বোন অহলীবা এই সব দেখল, তবুও সে তার কামনা ও বেশ্যাগিরিতে তার বোনের চেয়ে আরও বেশী খারাপ হল। তারও আসিরিয়দের প্রতি কামনা হল; তারা ছিল শাসনকর্তা ও সেনাপতি; তারা সুন্দর পোশাক পরা যোদ্ধা ও ঘোড়সওয়ার; তারা সবাই সুন্দর যুবক। আমি দেখলাম সে-ও নিজেকে অশুচি করল; দু’জনে একই পথে গেল। “কিন্তু অহলীবা তার বেশ্যাগিরিতে আরও এগিয়ে গেল। সে দেয়ালের উপর লাল রংয়ে আঁকা বাবিলীয় পুরুষদের ছবি দেখল। কোমরে তাদের কোমর-বাঁধনি, মাথার উপর উড়ন্ত পাগড়ী; তারা সবাই দেখতে বাবিল দেশের সেনাপতিদের মত। তাদের দেখামাত্রই তাদের প্রতি তার কামনা জাগল এবং সে বাবিলে তাদের কাছে লোক পাঠাল। তাতে বাবিলীয়েরা তার কাছে এসে তার সংগে বিছানায় গেল এবং ব্যভিচার করে তাকে অশুচি করল। তাদের দ্বারা অশুচি হবার পর সে তাদের ঘৃণা করতে লাগল। সে খোলাখুলিভাবেই যখন তার বেশ্যাগিরি চালাতে লাগল এবং তার উলংগতা প্রকাশ করল তখন আমি তাকে ঘৃণা করলাম, যেমন আমি তার বোনকে ঘৃণা করেছিলাম। যৌবনে যখন সে মিসরে বেশ্যা ছিল তখনকার দিনগুলো মনে করে সে আরও বেশী ব্যভিচার করতে লাগল। সেখানে সে এমন অস্বাভাবিক যৌনাচারী লোকদের কামনা করত যারা ছিল গাধা ও ঘোড়ার মতই কামুক। “হে অহলীবা, তোমার যৌবন কালে মিসরের লোকেরা তোমার বুক ধরে আদর করে তোমার কুমারীত্ব নষ্ট করেছিল; এখন তুমি আবার সেই লোকদের সংগে ব্যভিচার করতে চাও। সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, তোমার যে সব প্রেমিকদের তুমি ঘৃণা করেছ আমি তাদেরই তোমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করব এবং চারদিক থেকে আমি তাদের তোমার বিরুদ্ধে নিয়ে আসব। তারা হল বাবিলীয়েরা, সমস্ত কল্‌দীয়েরা, পকোদ, শোয়া ও কোয়ার লোকেরা ও তাদের সংগে সমস্ত আসিরিয়েরা। তারা সবাই সুন্দর যুবক; তারা সকলেই শাসনকর্তা, সেনাপতি, রথের কর্মচারী, উঁচু পদের লোক এবং ঘোড়সওয়ার। তারা অস্ত্রশস্ত্র, রথ, গাড়ি এবং লোকজনের মস্ত বড় একটা দল নিয়ে তোমার বিরুদ্ধে আসবে। তারা ছোট ও বড় ঢাল নিয়ে মাথা রক্ষার টুপি পরে তোমাকে ঘেরাও করবে। শাস্তি পাবার জন্য আমি তোমাকে তাদের হাতে তুলে দেব এবং তারা তাদের বিচারের নিয়ম অনুসারে তোমাকে শাস্তি দেবে। আমার অন্তরের জ্বালা আমি তোমার বিরুদ্ধেই কাজে লাগাব বলে তারা জ্বলন্ত ক্রোধে তোমার সংগে ব্যবহার করবে। তারা তোমার নাক-কান কেটে দেবে এবং তোমার বাকী লোকদের মেরে ফেলবে। তারা তোমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে যাবে, আর তোমার বাকী লোকেরা আগুনে পুড়ে মরবে। তারা তোমার কাপড়-চোপড় খুলে ফেলবে ও তোমার সুন্দর গহনা নিয়ে নেবে। যে ব্যভিচার ও বেশ্যাগিরি তুমি মিসরে শুরু করেছিলে তা আমি এইভাবে বন্ধ করে দেব। তাতে তুমি ঐ লোকদের দিকে তাকাবে না এবং মিসরকে আর মনেও করবে না। “তুমি যাদের ঘৃণা কর, যাদের দিক থেকে তুমি ফিরেছ তাদের হাতেই আমি তোমাকে তুলে দেব। তুমি তোমার বোনের পথেই গেছ; কাজেই তার পেয়ালা আমি তোমার হাতে তুলে দেব। “আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, তোমার বোনের পেয়ালাতেই তুমি খাবে; পেয়ালাটা বড় ও গভীর। তাতে অনেকটা ধরে বলে তা থেকে খেয়ে তুমি ঘৃণা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হবে। তুমি ভয় ও ধ্বংসের পেয়ালা থেকে খেয়ে, তোমার বোন শমরিয়ার পেয়ালা থেকে খেয়ে মাতলামিতে ও দুঃখে পূর্ণ হবে। তুমি তাতে খাবে, চেটেপুটে খাবে; তুুমি তা ভেংগে চুরমার করবে এবং নিজের বুক ছিঁড়ে ফেলবে। এই হল আমার বিচারের রায়। তুমি আমাকে ভুলে গেছ এবং তোমার পিছনে আমাকে ঠেলে দিয়েছ বলে তোমাকে তোমার ব্যভিচার ও বেশ্যাগিরির ফল ভোগ করতে হবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” এর পর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি কি অহলা আর অহলীবার বিচার করতে প্রস্তুত? তাহলে তুমি তাদের জঘন্য কাজকর্মের কথা তাদের জানাও। তারা ব্যভিচার করেছে আর তাদের হাতে রয়েছে রক্ত। তাদের প্রতিমাগুলোর পূজা করে তারা ব্যভিচার করেছে; এমন কি, আমার জন্য জন্ম-দেওয়া ছেলেমেয়েদের তারা প্রতিমাগুলোর খাবার হিসাবে আগুনে পুড়িয়ে উৎসর্গ করেছে। এছাড়া সেই একই সময়ে তারা আমার ঘর অশুচি করেছে। তারা আমার বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি। সেই একই দিনে তারা তাদের প্রতিমাগুলোর কাছে তাদের ছেলেমেয়েদের জবাই করেছে ও আমার ঘরে ঢুকে তা অপবিত্র করেছে। তারা আমার ঘরের মধ্যেই এই কাজ করেছে। “এছাড়া অহলা ও অহলীবা দূর দেশ থেকে লোকদের আনবার জন্য লোক পাঠাল। সেই লোকেরা আসলে পর তারা তাদের জন্য স্নান করল, চোখে কাজল দিল এবং গহনা পরে নিজেদের সাজাল। তারপর তারা সুন্দর বিছানায় বসে তার সামনে একটা টেবিল পেতে তার উপর আমারই ধূপ ও তেল রাখল। “তাদের চারপাশে ছিল চিন্তাহীন, হৈ চৈ করা লোকদের গোলমাল। তাদের মধ্যে ছিল নীচমনা লোক আর মরু-এলাকার মদখোরেরা। তারা সেই দুই বোনের হাতে বালা পরাল আর তাদের মাথায় দিল সুন্দর মুকুট। তখন ব্যভিচার করে দুর্বল হয়ে যাওয়া স্ত্রীলোকের বিষয়ে আমি বললাম, ‘এখন সেই লোকেরা বেশ্যা হিসাবেই তাকে ব্যবহার করুক এবং সে-ও তাদের সংগে ব্যভিচার করুক।’ লোকে যেমন বেশ্যার সংগে শোয় তেমনি করে তারা অহলা ও অহলীবার সংগে, সেই কামুক স্ত্রীলোকদের সংগে শুলো। কিন্তু সৎ লোকেরা ব্যভিচার ও রক্তপাতের পাওনা শাস্তি সেই স্ত্রীলোকদের দেবে, কারণ তারা ব্যভিচারিণী আর তাদের হাতে রয়েছে রক্ত। “তুমি তাদের বিরুদ্ধে একদল লোক নিয়ে যাও এবং ভয় ও লুটের হাতে তাদের তুলে দাও। সেই লোকেরা তাদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে এবং তলোয়ার দিয়ে তাদের টুকরা টুকরা করে কাটবে। তারা তাদের ছেলেমেয়েদের মেরে ফেলবে এবং তাদের ঘর-বাড়ী পুড়িয়ে দেবে। “হে অহলা ও অহলীবা, এইভাবে আমি দেশের মধ্যে কুকাজ শেষ করে দেব যাতে সব স্ত্রীলোক সাবধান হতে পারে এবং তোমাদের মত কুকাজ না করে। তোমাদের কুকাজের ফল তোমাদেরই ভোগ করতে হবে এবং প্র্রতিমাপূজার পাপের ফল বহন করতে হবে। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু।” আমাদের বন্দীদশার নবম বছরের দশম মাসের দশম দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, তুমি আজকের, আজকের তারিখের কথাই লিখে রাখ, কারণ আজকে বাবিলের রাজা যিরূশালেম ঘেরাও করছে। এই বিদ্রোহী জাতির কাছে এই দৃষ্টান্তের কথা বল। তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হাঁড়ি চড়াও, হাঁড়ি চড়াও এবং তার মধ্যে জল দাও। তার মধ্যে মাংসের টুকরা দাও, ঊরু ও কাঁধের ভাল ভাল মাংসের টুকরা দাও। ভাল ভাল হাড় দিয়ে তা ভরতি কর। পাল থেকে সেরা ভেড়াটা নাও; হাঁড়ির নীচে কাঠ সাজাও; তা ভালভাবে ফুটিয়ে নিয়ে হাড়গুলো রান্না কর।’ “প্রভু সদাপ্রভু আরও বলছেন, ‘ধিক্‌, সেই রক্তপাতকারী শহরকে! সে যেন একটা হাঁড়ি যাতে ময়লার স্তর পড়ে গেছে, যা পরিষ্কার করা যায় না। মাংসগুলো বেছে বেছে না নিয়ে টুকরার পর টুকরা বের কর। সেই শহরের মধ্যে রক্তপাত করা হয়েছে। সেই রক্ত পাথরের উপর ঢালা হয়েছে; তা মাটিতে ঢালা হয় নি যেখানে ধুলায় তা ঢাকা পড়ত। ক্রোধ খুঁচিয়ে তুলে যাতে প্রতিশোধ নেওয়া হয় সেইজন্য আমি সেই রক্ত পাথরের উপরে রেখেছি যেন সেটা ঢাকা না পড়ে।’ “প্রভু সদাপ্রভু আবার বলছেন, ‘ধিক্‌, সেই রক্তপাতকারী শহরকে! আমিও কাঠ জড়ো করে উঁচু করব। তাই অনেক কাঠ সাজাও, আগুন জ্বালাও, মশলা মিশিয়ে মাংস ভাল করে রান্না কর, হাড়গুলো পুড়ে যেতে দাও। তারপর খালি হাঁড়িটা কয়লার উপরে রাখ যেন তা গরম হয়, তার তামা পুড়ে লাল হয়, তার অশুচিতা সব গলে যায় এবং তার ময়লার স্তর পুড়ে যায়। কিন্তু সমস্ত চেষ্টাই মিথ্যা হয়ে গেছে; তার ময়লার পুরু স্তর পরিষ্কার করা যায় নি, সেইজন্য তা আগুনে ফেলে দাও। “‘হে যিরূশালেম, তোমার কুকাজই হল তোমার সেই অশুচিতা। আমি তোমাকে পরিষ্কার করতে চেষ্টা করলাম কিন্তু তোমার অশুচিতা থেকে তুমি পরিষ্কার হলে না। তোমার বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ সম্পূর্ণভাবে ঢেলে না দেওয়া পর্যন্ত তুমি আর পরিষ্কার হবে না। আমার কাজ করবার সময় এসে গেছে। আমি তা করবই করব, মমতা করব না কিম্বা নরমও হব না। তোমার আচার-ব্যবহার ও তোমার কাজ অনুসারে তোমার বিচার করা হবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, আমি এক আঘাতেই তোমার কাছ থেকে তোমার চোখের মণিকে নিয়ে নিতে যাচ্ছি। তবুও তুমি বিলাপ কোরো না, কেঁদো না কিম্বা চোখের জল ফেলো না। তুমি নীরবে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়বে। তুমি মৃতের জন্য শোক প্রকাশ কোরো না। তুমি পাগড়ী বেঁধো ও পায়ে চটি দিয়ো; তোমার মুখের নীচের অংশ ঢেকো না কিম্বা লোকদের পাঠানো খাবার খেয়ো না।” আমি সকালবেলা লোকদের সংগে কথা বললাম আর সন্ধ্যাবেলা আমার স্ত্রী মারা গেলেন। পরদিন সকালে আমি সদাপ্রভুর আদেশ মত কাজ করলাম। তখন লোকেরা আমাকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনি যা করছেন আমাদের জন্য তার অর্থ কি? তা কি আমাদের বলবেন না?” তখন যিহিষ্কেল যা করেছে তোমরাও তা-ই করবে। মুখের নীচের অংশটা তোমরা ঢাকবে না কিম্বা লোকদের পাঠানো খাবার খাবে না। তোমাদের মাথায় তোমরা পাগড়ী বাঁধবে এবং পায়ে চটি দেবে। তোমরা বিলাপ করবে না বা কাঁদবে না, কিন্তু নিজের নিজের পাপের জন্য দুর্বল হয়ে যাবে এবং একে অন্যের কাছে কোঁকাবে। যিহিষ্কেল তোমাদের কাছে একটা চিহ্নের মত হবে; সে যা করেছে তোমরা ঠিক তা-ই করবে। যখন এটা ঘটবে তখন তোমরা জানবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু।” সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, যেদিন আমি তাদের সেই শক্তির অহংকার, তাদের আনন্দ ও গৌরব, তাদের চোখের সুখ, তাদের অন্তরের চাওয়া এবং তাদের ছেলেমেয়েদেরও নিয়ে নেব, সেই দিন একজন পালিয়ে আসা লোক তোমাকে খবর দিতে আসবে। সেই সময় তোমার মুখ খুলে যাবে; তুমি তার সংগে কথা বলবে, তোমার জিভ্‌ আর আট্‌কানো থাকবে না। এইভাবে তুমি তাদের কাছে একটা চিহ্ন হবে আর তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, অম্মোনীয়দের দিকে তোমার মুখ রেখে তাদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বল। প্রভু সদাপ্রভুর এই বাক্য তাদের শুনতে বল, ‘আমার ঘর অপবিত্র হতে দেখে ও ইস্রায়েল দেশকে পতিত জমি হতে দেখে এবং যিহূদার লোকদের বন্দী হিসাবে নিয়ে যেতে দেখে তোমরা বেশ খুশী হয়েছিলে। সেইজন্য আমি পূর্বদেশের লোকদের হাতে তোমাদের তুলে দেব। তারা তোমাদের দেশে তাদের তাম্বু খাটিয়ে তোমাদের মধ্যে বাস করবে; তারা তোমাদের ফল ও দুধ খাবে। আমি র্ববা শহরকে করব উটের চারণ ভূমি ও অম্মোন দেশকে করব ভেড়ার বিশ্রামস্থান। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তোমরা ইস্রায়েল দেশের অবস্থা দেখে হাততালি দিয়েছ, নেচেছ এবং অন্তরের সংগে তাকে হিংসা করে আনন্দ করেছ। সেইজন্য তোমাদের বিরুদ্ধে আমি আমার হাত বাড়াব এবং লুটের মাল হিসাবে অন্য জাতিদের হাতে তোমাদের তুলে দেব। অন্যান্য জাতি ও দেশের মধ্য থেকে আমি তোমাদের ছেঁটে ফেলে ধ্বংস করে দেব। তাতে তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’” পরে প্রভু সদাপ্রভু বললেন, “মোয়াব ও সেয়ীর বলেছে, ‘দেখ, যিহূদার লোকেরা অন্যান্য সব জাতিদের মত হয়ে গেছে।’ সেইজন্য আমি মোয়াবের এক দিকের সীমানা খুলে দেব। তাতে মোয়াবের গৌরবের শহর বৈৎ-যিশীমোৎ, বাল্‌-মিয়োন ও কিরিয়াথয়িম আক্রমণ করা হবে। পরে প্রভু সদাপ্রভু বললেন, “ইদোম যিহূদার লোকদের উপর বারবার প্রতিশোধ নিয়ে খুব অন্যায় করেছে। সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, ইদোমের বিরুদ্ধে আমি আমার হাত বাড়াব এবং সেখানকার সমস্ত লোকজন ও পশু মেরে ফেলব। আমি সেটা ধ্বংসস্থান করে রাখব এবং তৈমন থেকে দদান পর্যন্ত লোকে যুদ্ধে মারা পড়বে। আমি আমার লোক ইস্রায়েলের হাত দিয়ে ইদোমের উপর প্রতিশোধ নেব আর তারা আমার ভীষণ অসন্তোষ ও ক্রোধ অনুসারে ইদোমের বিরুদ্ধে কাজ করবে। তখন তারা জানতে পারবে যে, আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।” পরে প্রভু সদাপ্রভু বললেন, “পলেষ্টীয়েরা হিংসার মনোভাব নিয়ে যিহূদার উপর প্রতিশোধ নিয়েছে; তারা পুরানো শত্রুতার মনোভাব নিয়ে যিহূদাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, ‘পলেষ্টীয়ার বিরুদ্ধে আমি আমার হাত বাড়াব; আমি করেথীয়দের কেটে ফেলব এবং সাগরের কিনারা বরাবর বাকী লোকদের ধ্বংস করব। আমি তাদের উপর ভীষণ প্রতিশোধ নেবার জন্য আমার ক্রোধে তাদের শাস্তি দেব। আমি যখন তাদের উপর প্রতিশোধ নেব তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’” আমাদের বন্দী থাকবার এগারো বছরের সময় মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, যিরূশালেম সম্বন্ধে সোর খুশী হয়ে বলেছে, ‘বেশ হয়েছে, জাতিগুলোর প্রধান ফটক ভেংগে গেছে আর তার দরজাগুলো আমার কাছে পুরোপুরি খুলে গেছে; শহরটা এখন ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে বলে আমার উন্নতি হবে।’ সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, ‘হে সোর, আমি তোমার বিপক্ষে। সমুদ্র যেমন তার ঢেউ উঠায় তেমনি করে আমি তোমার বিরুদ্ধে অনেক জাতিকে নিয়ে আসব।’ তারা সোরের দেয়াল ধ্বংস করবে এবং উঁচু পাহারা-ঘরগুলো ভেংগে ফেলবে। আমি তার ধুলা-ময়লা চেঁছে ফেলে তাকে পাথরের মত করে রেখে দেব। সে সমুদ্রের বুকে জাল শুকাবার জায়গা হবে, কারণ আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলেছি। সে জাতিদের লুটের জিনিস হবে। তার অধীনের উপকূলের গ্রামগুলো যুদ্ধের দরুন ধ্বংস হবে। তখন সেখানকার লোকেরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “হে সোর, আমি তোমার বিরুদ্ধে উত্তর দিক থেকে ঘোড়া, রথ, ঘোড়সওয়ার ও মস্ত বড় এক সৈন্যদলের সংগে রাজাদের রাজা, অর্থাৎ বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে নিয়ে আসব। সে যুদ্ধ করে তোমার গ্রামগুলো ধ্বংস করবে। সে তোমার বিরুদ্ধে একটা উঁচু ঢিবি তৈরী করবে এবং তোমার দেয়ালের সংগে লাগানো একটা ঢালু ঢিবি বানাবে; তারা নিজেদের রক্ষা করবার জন্য তাদের সব ঢাল উঁচু করে ধরবে। সে দেয়াল ভাংগার যন্ত্র দিয়ে তোমার দেয়ালে আঘাত করবে এবং তার যন্ত্রপাতি দিয়ে তোমার উঁচু পাহারা ঘরগুলো ধ্বংস করে ফেলবে। তার এত বেশী ঘোড়া থাকবে যে, সেগুলো তোমাকে ধুলায় ঢেকে দেবে। ভাংগা দেয়ালের মধ্য দিয়ে লোকে যেমন করে শহরে ঢোকে তেমনি করেই সে যখন যুদ্ধের ঘোড়া, গাড়ি ও রথ নিয়ে তোমার সব ফটকের মধ্য দিয়ে ঢুকবে তখন তার শব্দে তোমার দেয়ালগুলো কাঁপবে। তার ঘোড়াগুলোর খুর তোমার সব রাস্তা মাড়াবে; তোমার লোকদের সে মেরে ফেলবে ও তোমার শক্ত শক্ত থামগুলো মাটিতে পড়ে যাবে। তারা তোমার ধন-সম্পদ ও তোমার বাণিজ্যের জিনিসপত্র লুট করবে; তারা তোমার দেয়াল ভেংগে ফেলবে, সুন্দর সুন্দর বাড়ী-ঘর ধ্বংস করবে এবং তোমার পাথর, কাঠ ও ধুলা সমুদ্রে ফেলে দেবে। আমি তোমার গানের শব্দ থামিয়ে দেব; বীণার বাজনাও আর শোনা যাবে না। আমি তোমাকে পাথরের মত করে রাখব আর তুমি হবে জাল শুকাবার জায়গা। তোমাকে আর তৈরী করা হবে না, কারণ আমি প্রভু সদাপ্রভুই এই কথা বলছি। “হে সোর, তোমার পতনের শব্দে, আহতদের কোঁকানিতে ও তোমার মধ্যে যে লোকদের মেরে ফেলা হবে তাতে কি দূরের দেশগুলো কেঁপে উঠবে না? তখন সমুদ্রের কিনারার দেশগুলোর রাজারা তাদের সিংহাসন থেকে নেমে তাদের রাজপোশাক ও কারুকাজ করা পোশাকগুলো খুলে ফেলবে। ভীষণ ভয়ে তারা মাটিতে বসবে, সব সময় কাঁপতে থাকবে ও তোমাকে দেখে হতভম্ব হবে। তখন তারা তোমার বিষয়ে বিলাপ করে বলবে, ‘হে নাম-করা শহর, তুমি কেমন ধ্বংস হয়ে গেলে! তোমার লোকেরা তো সাগরে চলাচল করত। সমুদ্রে তুমি ও তোমার বাসিন্দারা শক্তিশালী ছিলে; সমুদ্রের কিনারায় যারা বাস করত তারা সকলে তোমাকে ভয় করত। এখন তোমার পতনের দিনে সমুদ্রের কিনারার দেশগুলো কাঁপছে; তোমার ধ্বংস দেখে সমুদ্রের মধ্যেকার দ্বীপগুলো ভীষণ ভয় পেয়েছে।’ “হে সোর, আমি প্র্রভু সদাপ্রভু যখন তোমাকে জনশূন্য শহরগুলোর মত করব যেখানে কেউ বাস করে না, যখন সাগরের জল তোমার উপরে আনব ও তার জলের রাশি তোমাকে ঢেকে দেবে, তখন আমি তোমাকে মৃতস্থানে যাওয়া লোকদের সংগে পুরানো দিনের লোকদের কাছে নীচে নামিয়ে দেব। আমি তোমাকে পৃথিবীর গভীরে পুরানো দিনের ধ্বংসস্থানের মধ্যে মৃতস্থানে যাওয়া লোকদের সংগে বাস করাব। তোমার মধ্যে আর কেউ বাস করবে না এবং জীবিতদের দেশে তোমার স্থান হবে না। আমি তোমাকে ভয়ংকরভাবে শেষ করে দেব; তুমি আর থাকবে না। লোকেরা তোমার খোঁজ করবে কিন্তু তোমাকে আর কখনও পাওয়া যাবে না। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, সোরের বিষয়ে তুমি বিলাপ কর। সমুদ্রে ঢুকবার মুখে যে রয়েছে, সমুদ্র পারের অনেক জাতির যে বণিক সেই সোরকে তুমি বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে সোর, তুমি বলছ তুমি সৌন্দর্যে পরিপূর্ণা। সমুদ্রের মধ্যে তোমার রাজ্য; একটা সুন্দর জাহাজের মত করে মিস্ত্রিরা তোমার সৌন্দর্যে সম্পূর্ণতা এনেছে। সনীর এলাকার বেরস গাছ থেকে তারা তোমার সব তক্তা বানিয়েছে; তোমার মাস্তুল তৈরী করবার জন্য তারা লেবানন থেকে এরস গাছ এনেছে। তারা বাশন দেশের এলোন গাছ থেকে বানিয়েছে তোমার দাঁড়গুলো; সাইপ্রাস থেকে তাশূর কাঠ এনে তারা তোমার পাটাতন বানিয়ে হাতীর দাঁত দিয়ে সাজিয়েছে। মিসরের সুন্দর নক্‌শা তোলা মসীনার কাপড় দিয়ে তোমার পাল তৈরী করা হয়েছিল এবং সেটা দিয়েই লোকে তোমাকে চিনতে পারত। ইলীশা থেকে আনা নীল আর বেগুনে কাপড় ছিল তোমার চাঁদোয়া। সীদোন ও অর্বদের লোকেরা তোমার দাঁড় বাইত। হে সোর, দক্ষ লোকেরা তোমার নাবিক ছিল। গবালের বৃদ্ধ নেতারা দক্ষ লোক হিসাবে তোমার মধ্যে মেরামতের কাজ করত। সাগরের সব জাহাজ ও তাদের নাবিকেরা তোমার জিনিসপত্র দেওয়া-নেওয়া করবার জন্য তোমার পাশে ভিড়ত। “‘পারস্য, লূদ ও পূট দেশের লোকেরা তোমার সৈন্যদলে যোদ্ধার কাজ করত। তারা তাদের ঢাল ও মাথা-রক্ষার টুপী তোমার মধ্যে টাংগিয়ে তোমার জাঁকজমক বাড়িয়ে তুলত। অর্বদ ও হেলেকের লোকেরা তোমার চারপাশের দেয়ালের উপরে পাহারা দিত, আর গাম্মাদের লোকেরা তোমার উঁচু পাহারা-ঘরে চৌকি দিত। তোমার চারপাশের দেয়ালে তারা তাদের ঢাল টাংগিয়ে রাখত; তোমার সৌন্দর্যের সম্পূর্ণতা তারাই এনেছিল। “‘তোমার প্রচুর ধন-সম্পদের জন্য তর্শীশ তোমার সংগে ব্যবসা করত; রূপা, লোহা, দস্তা ও সীসার বদলে তারা তোমার জিনিস নিত। গ্রীস, তূবল ও মেশক তোমার সংগে ব্যবসা করত; তারা তোমার জিনিসপত্রের বদলে দিত দাস-দাসী ও ব্রোঞ্জের পাত্র। তোমার জিনিসপত্রের বদলে বৈৎ-তোগর্মের লোকেরা দিত ঘোড়া, যুদ্ধের ঘোড়া ও খচ্চর। দদানের লোকেরা তোমার সংগে ব্যবসা করত এবং সমুদ্র পারের অনেক দেশই তোমার জিনিসপত্র কিনত; দাম হিসাবে তারা দিত হাতীর দাঁত ও আবলুস কাঠ। তোমার তৈরী অনেক জিনিসের জন্য সিরিয়া তোমার সংগে ব্যবসা করত; তোমার জিনিসপত্রের বদলে তারা দিত চুনী পাথর, বেগুনে কাপড়, নক্‌শা তোলা কাপড়, পাতলা মসীনার কাপড়, প্রবাল ও পদ্মরাগমণি। যিহূদা ও ইস্রায়েল তোমার সংগে ব্যবসা করত; তারা তোমার জিনিসের বদলে মিন্নীতের গম, খাবার জিনিস, মধু, তেল ও সুগন্ধি মলম দিত। তোমার তৈরী অনেক জিনিস ও প্রচুর ধন-সম্পদের জন্য দামেস্ক হিল্‌বোনের আংগুর-রস ও সাদা পশম দিয়ে তোমার সংগে ব্যবসা করত। বদান ও গ্রীসের লোকেরা তোমার জিনিসের বদলে দিত উষল থেকে আনা পিটানো লোহা, দারচিনি ও বচ। দদান তোমার সংগে ঘোড়ার পিঠের গদির কাপড়ের ব্যবসা করত। আরব ও কেদরের সব সর্দারেরা ছিল তোমার খদ্দের; তারা তোমার জিনিসের বদলে ভেড়ার বাচ্চা, ভেড়া ও ছাগল দিত। শিবা ও রয়মার ব্যবসায়ীরাও তোমার সংগে ব্যবসা করত; তোমার জিনিসপত্রের বদলে তারা দিত সব রকমের ভাল ভাল মশলা, দামী পাথর ও সোনা। হারণ, কন্নী, এদন ও শিবার ব্যবসায়ীরা এবং আসিরিয়া ও কিল্‌মদ তোমার সংগে ব্যবসা করত। তারা তোমার বাজারে সুন্দর সুন্দর পোশাক, নীল কাপড়, নক্‌শা তোলা কাপড় এবং রং বেরংয়ের গালিচা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে আনত। “‘তর্শীশের জাহাজগুলো তোমার জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে আসত। সাগরের মাঝখানে অনেক জিনিসপত্র দিয়ে তুমি পূর্ণ ছিলে। যারা দাঁড় বাইত তারা তোমাকে মাঝ দরিয়ায় নিয়ে গিয়েছিল; কিন্তু সাগরের মাঝখানে পূবের বাতাসে তুমি টুকরা টুকরা হয়ে গেলে। তোমার ধ্বংসের দিনে তোমার ধন-সম্পদ, ব্যবসার জিনিস ও অন্যান্য জিনিস, তোমার সব নাবিকেরা, মেরামতকারীরা, তোমার ব্যবসায়ীরা ও তোমার সব সৈন্যেরা এবং তোমার মধ্যে থাকা আর অন্য সকলে সমুদ্রের মাঝখানে ডুবে যাবে। তোমার নাবিকদের চিৎকারের শব্দে সমুদ্রের পারের জায়গাগুলো কেঁপে উঠবে। যারা দাঁড় টানে তারা সবাই তাদের জাহাজ ছেড়ে চলে যাবে; নাবিকেরা সকলে সমুদ্রের পারে দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা তোমার জন্য চিৎকার করে খুব কান্নাকাটি করবে এবং নিজেদের মাথায় ধুলা দেবে ও ছাইয়ের মধ্যে গড়াগড়ি দেবে। তারা তোমার জন্য মাথা কামিয়ে ফেলবে এবং ছালার চট পরবে। তারা মনের দুঃখে তোমার জন্য বিলাপ করে করে খুব কাঁদবে। তারা তোমার জন্য জোরে জোরে কাঁদবে ও শোক করবে; তোমাকে নিয়ে তারা এই বিলাপ করবে: “‘সাগর-ঘেরা সোরের মত করে আর কাউকে কি চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে? তোমার ব্যবসার জিনিসপত্র যখন সাগরে বের হত তখন তুমি অনেক জাতিকে তৃপ্ত করতে; তোমার প্রচুর ধন-সম্পদ ও জিনিসপত্র দিয়ে তুমি পৃথিবীর রাজাদের ধনী করতে। তুমি এখন সাগরের আঘাতে গভীর জলের মধ্যে চুরমার হয়েছ; তোমার জিনিসপত্র ও তোমার সব লোক তোমার সংগে ডুবে গেছে। সাগর পারে বাসকারী লোকেরা সবাই তোমার অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়েছে; তাদের রাজারা ভয়ে কেঁপে উঠেছে এবং তাদের মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেছে। জাতিদের মধ্যেকার ব্যবসায়ীরা তোমাকে দেখে টিট্‌কারি দেয়। তুমি ভয়ংকরভাবে শেষ হয়ে গেছ; তুমি আর থাকবে না।’” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি সোরের শাসনকর্তাকে বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমার অন্তরের অহংকারে তুমি বলেছ যে, তুমি দেবতা; তুমি সাগরের মধ্যে দেবতার সিংহাসনে বসে আছ। কিন্তু তুমি তো একজন মানুষ, দেবতা নও, যদিও তুমি নিজেকে দেবতার মত জ্ঞানী মনে করছ। তুমি তো দানিয়েলের চেয়েও জ্ঞানী; সব গুপ্ত বিষয় তোমার জানা আছে। তোমার জ্ঞান ও বুদ্ধি দিয়ে তুমি নিজের জন্য ধন-সম্পদ লাভ করেছ এবং তোমার ধনভাণ্ডারে সোনা ও রূপা জমা করেছ। পাকা ব্যবসায়ী বুদ্ধি দিয়ে তুমি তোমার ধন বাড়িয়েছ এবং তোমার ধন-সম্পদের জন্য তোমার অন্তর অহংকারে ভরে উঠেছে। তারা তোমাকে মৃতস্থানে নামাবে; তুমি সাগরের গভীরে ভীষণভাবে শেষ হয়ে যাবে। যারা তোমাকে শেষ করে দেবে তাদের সামনে তখন কি তুমি বলবে যে, তুমি দেবতা? যারা তোমাকে মেরে ফেলবে তাদের কাছে তুমি হবে একজন মানুষ মাত্র, দেবতা নও। তুমি বিদেশীদের হাতে সুন্নত-না-করানো লোকদের মত মারা যাবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’” সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, সোরের রাজার বিষয়ে তুমি বিলাপ করে করে তাকে বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘তুমি ছিলে সম্পূর্ণ নিখুঁত, জ্ঞানে পূর্ণ এবং সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। তুমি ঈশ্বরের বাগান এদনে ছিলে। সব রকম দামী দামী পাথর, সার্দীয়মণি, পীতমণি, হীরা, পোখরাজ, বৈদুর্যমণি, সূর্যকান্তমণি, নীলকান্তমণি, চুনী, পান্না ও সোনা দিয়ে তুমি সাজানো ছিলে; তোমার সৃষ্টির দিনে এগুলোকে প্রস্তুত করা হয়েছিল। রক্ষাকারী করূব হিসাবে তোমাকে অভিষেক করা হয়েছিল, কারণ সেইভাবেই আমি তোমাকে নিযুক্ত করেছিলাম। তুমি ঈশ্বরের পবিত্র পাহাড়ে ছিলে; তুমি আগুনের মত ঝক্‌মক করা পাথরের মধ্য দিয়ে হাঁটা-চলা করতে। তোমার সৃষ্টির দিন থেকে তোমার চালচলনে তুমি নির্দোষ ছিলে, কিন্তু শেষে তোমার মধ্যে দুষ্টতা পাওয়া গেল। তোমার অনেক ব্যবসার দরুন তুমি অত্যাচারী হয়ে পাপ করলে। কাজেই ঈশ্বরের পাহাড় থেকে আমি তোমাকে অপবিত্র অবস্থায় তাড়িয়ে দিলাম। হে রক্ষাকারী করূব, আমি তোমাকে আগুনের মত ঝক্‌মক করা পাথরের মধ্য থেকে সরিয়ে দিলাম। তোমার সৌন্দর্যের জন্য তোমার অন্তর অহংকারে ভরে উঠেছে আর তোমার জাঁকজমকের জন্য তুমি তোমার জ্ঞানকে নষ্ট করেছ। তাই আমি তোমাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম; রাজাদের সামনে আমি তোমাকে রাখলাম যাতে তোমাকে দেখে তারা খুশী হয়। তোমার অনেক পাপ ও অসৎ ব্যবসা দিয়ে তুমি নিজের উপাসনার জায়গাগুলো অপবিত্র করেছ। এইজন্য আমি তোমার মধ্যে আগুন লাগিয়ে দিলাম আর তা তোমাকে পুড়িয়ে ফেলল; যারা দেখছিল তাদের সকলের চোখের সামনে আমি তোমাকে মাটির উপরে ছাই করে দিলাম। যে সমস্ত জাতি তোমাকে জানত তারা তোমাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। তুমি ভয়ংকরভাবে শেষ হয়ে গেছ; তুমি আর থাকবে না।’” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি সীদোনের দিকে তোমার মুখ রেখে তার বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘ওহে সীদোন, আমি তোমার বিপক্ষে; আমি তোমার মধ্যে যা করব তাতে আমার মহিমা প্রকাশ পাবে। আমি যখন তোমাকে শাস্তি দেব এবং তোমার মধ্যে আমার পবিত্রতা প্রকাশ করব তখন তোমার লোকেরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তোমার উপর আমি মড়ক পাঠাব এবং তোমার রাস্তায় রাস্তায় রক্তপাত হবে। তোমাকে চারদিক থেকে আক্রমণ করা হবে এবং তাতে লোকে খুন হয়ে তোমার মধ্যে পড়ে থাকবে। তখন তোমার লোকেরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’” প্রভু সদাপ্রভু আরও বললেন, “ইস্রায়েল জাতির জন্য ব্যথা দেওয়া কোন কাঁটাগাছ কিম্বা সূচালো কাঁটার মত ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারী প্রতিবেশী জাতি আর থাকবে না। তখন তারা জানবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু। “নানা জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ইস্রায়েলীয়দের আমি যখন জড়ো করব তখন জাতিদের চোখের সামনে তাদের মধ্যে আমি নিজের পবিত্রতা প্রকাশ করব। তখন তারা নিজেদের সেই দেশে বাস করবে যে দেশ আমি আমার দাস যাকোবকে দিয়েছিলাম। সেখানে তারা ঘর-বাড়ী বানিয়ে নিরাপদে বাস করবে এবং আংগুর ক্ষেত করবে। তাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারী প্রতিবেশী জাতিদের সবাইকে যখন আমি শাস্তি দেব তখন তারা নিরাপদে বাস করবে। তাতে তারা জানবে যে, আমিই তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু।” আমাদের বন্দীদশার দশম বছরের দশম মাসের বারো দিনের দিন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, তুমি তোমার মুখ মিসরের রাজা ফরৌণের দিকে রেখে তার ও সারা মিসর দেশের বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে মিসরের রাজা ফরৌণ, আমি তোমার বিপক্ষে। তুমি নিজের নদীর মধ্যে শুয়ে থাকা সেই বিরাট কুমীর। তুমি বলে থাক যে, নীল নদী তোমার আর তুমি নিজের জন্যই সেটা তৈরী করেছ। কিন্তু আমি তোমার চোয়ালে কড়া লাগাব ও তোমার নদীর মাছগুলোকে তোমার আঁশের সংগে লাগিয়ে দেব। তোমার আঁশে লেগে থাকা সব মাছ সুদ্ধই আমি তোমাকে তোমার নদী থেকে টেনে তুলে আনব। আমি তোমাকে ও তোমার নদীর সব মাছগুলোকে মরু-এলাকায় ফেলে রাখব। তুমি খোলা মাঠে পড়ে থাকবে এবং তোমাকে তুলে কবর দেওয়া হবে না। আমি খাবার হিসাবে তোমাকে বুনো পশু ও আকাশের পাখীদের দেব। তাতে যারা মিসরে বাস করে তারা সবাই জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘তুমি ইস্রায়েলীয়দের জন্য নলের লাঠি হয়েছিলে। তারা তোমাকে হাত দিয়ে ধরলে পর তুমি ফেটে গিয়ে তাদের কাঁধে আঘাত করতে। তারা যখন তোমার উপর ভর দিত তখন তুমি ভেংগে যেতে এবং তাদের পিঠ তাতে মোচড় খেত। “‘সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, আমি তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে এসে তোমার লোকদের ও পশুদের মেরে ফেলব। মিসর হবে একটা জনশূন্য ধ্বংসস্থান। তখন তোমার লোকেরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘তুমি বলেছ যে, নীল নদী তোমার আর তুমিই সেটা তৈরী করেছ। সেইজন্য আমি তোমার ও তোমার নদীর সমস্ত জলের বিরুদ্ধে। আমি মিগ্‌দোল থেকে সিবেনী, অর্থাৎ কূশের সীমানা পর্যন্ত মিসর দেশকে জনশূন্য ও ধ্বংসস্থান করে দেব। তার মধ্য দিয়ে কোন মানুষ বা পশু চলাফেরা করবে না; চল্লিশ বছর ধরে সেখানে কেউ বাস করবে না। ধ্বংস হয়ে যাওয়া সমস্ত দেশগুলোর মধ্যে আমি মিসর দেশের অবস্থা আরও বেশী খারাপ করে দেব; ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলোর মধ্যে তার শহরগুলোর অবস্থা চল্লিশ বছর ধরে আরও খারাপ হয়ে থাকবে। আমি নানা জাতি ও দেশের মধ্যে মিসরীয়দের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেব। “‘চল্লিশ বছরের শেষে আমি নানা দেশে ছড়িয়ে থাকা মিসরীয়দের জড়ো করব। আমি তাদের অবস্থা ফিরিয়ে তাদের পূর্বপুরুষদের দেশ পথ্রোষে নিয়ে যাব। সেখানে তাদের রাজ্য হবে দুর্বল। পথ্রোষ হবে সবচেয়ে দুর্বল রাজ্য; অন্যান্য জাতিদের উপরে সে কখনও নিজেকে উঁচু করবে না। আমি তাকে এত দুর্বল করব যে, সে আর কখনও অন্যান্য জাতিদের উপরে রাজত্ব করবে না। ইস্রায়েলীয়েরা আর কখনও মিসরের উপর নির্ভর করবে না। মিসরের অবস্থা দেখে তারা বুঝতে পারবে যে, সাহায্যের জন্য মিসরের দিকে ফিরে তারা পাপ করেছিল। তাতে তারা জানবে যে, আমিই প্রভু সদাপ্রভু।’” আমাদের বন্দীদশার সাতাশ বছরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর সোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় তার সৈন্যদলকে এত বেশী খাটিয়েছে যে, তাদের সকলের মাথার চুল উঠে গেছে ও কাঁধের ছাল-চামড়া উঠে গেছে। তবুও সোরের বিরুদ্ধে সে যে যুদ্ধ চালিয়েছে তাতে তার বা তার সৈন্যদলের কোন লাভ হয় নি। সেইজন্য আমি বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে মিসর দেশটা দেব আর সে তার ধন-সম্পদ নিয়ে যাবে। তার সৈন্যদলের বেতনের জন্য সে সেই দেশটা লুটপাট করবে। তার কাজের পাওনা হিসাবে আমি তাকে মিসর দেশটা দিয়েছি, কারণ সে আমার জন্য কাজ করেছে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “সেই দিন আমি ইস্রায়েল জাতিকে শক্তিশালী করব এবং তাদের মধ্যে কথা বলবার জন্য তোমার মুখ খুলে দেব। তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” পরে সদাপ্রভু আমাকে আরও বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি এই ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘সেই দিনের জন্য দুঃখ প্রকাশ কর। একটা ভয়ংকর দিন আসছে, কারণ সদাপ্রভুর দিন কাছে এসে গেছে; সেটা মেঘে ঢাকা দিন এবং জাতিদের শেষ সময়। মিসরের উপর আসবে যুদ্ধ আর কূশের উপর আসবে দারুণ যন্ত্রণা। মিসরে লোকেরা মরে পড়ে থাকবে, তার ধন-সম্পদ নিয়ে যাওয়া হবে এবং তার সব জায়গা ধ্বংস হবে। কূশ, পূট, লূদ ও সমস্ত আরব দেশ, কূব ও বন্ধু দেশের লোকেরা যুদ্ধে মিসরের সংগে মারা পড়বে। মিসরের বন্ধু দেশের লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার শক্তির গর্বও শেষ হবে। মিগ্‌দোল থেকে সিবেনী পর্যন্ত লোকেরা যুদ্ধে মারা পড়বে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “‘ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে মিসরের অবস্থা আরও খারাপ হবে এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলোর মধ্যে তার শহরগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হবে। যখন আমি মিসরে আগুন ধরিয়ে দেব এবং তার সব সাহায্যকারীরা চুরমার হয়ে যাবে তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘সেই দিন আরামে থাকা কূশকে ভয় দেখাবার জন্য সংবাদ বহনকারীরা আমার আদেশে জাহাজে করে বের হয়ে যাবে। মিসরের শেষ দিনে কূশেরও যন্ত্রণা হবে, কারণ সেই দিন তার উপরেও আসবে। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের হাত দিয়ে মিসরের মস্ত বড় দলকে আমি শেষ করে দেব। তাকে ও তার সৈন্যদলকে, অর্থাৎ সমস্ত জাতির মধ্যে যারা সবচেয়ে নিষ্ঠুর তাদেরই আনা হবে দেশটাকে ধ্বংস করবার জন্য। তারা মিসরকে আক্রমণ করে তার নিহত লোকদের দিয়ে দেশটাকে ভরে দেবে। আমি নীল নদীর জল শুকিয়ে ফেলব এবং দুষ্ট লোকদের কাছে দেশটা বিক্রি করে দেব; বিদেশীদের হাত দিয়ে দেশ ও তার মধ্যেকার সব কিছুকে আমি ধ্বংস করে দেব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “‘আমি নোফের প্রতিমাগুলো ধ্বংস করে ফেলব, তার মূর্তিগুলো শেষ করে দেব। মিসরে আর কোন শাসনকর্তা থাকবে না এবং দেশের সবখানেই আমি ভয় ছড়িয়ে দেব। আমি পথ্রোষকে পতিত জমি করে ফেলে রাখব, সোয়নে আগুন লাগাব এবং নো শহরকে শাস্তি দেব। আমি মিসরের দুর্গ সীন শহরের উপরে আমার ক্রোধ ঢেলে দেব এবং নো শহরের সমস্ত লোকদের ছেঁটে ফেলে দেব। আমি মিসর দেশে আগুন লাগাব; সীন শহর যন্ত্রণায় মোচড় খাবে। নো শহরের উপর হঠাৎ বিপদ আসবে; নোফ দিনের বেলায় কষ্টের মধ্যে পড়বে। আবেন ও পী-বেশতের যুবকেরা যুদ্ধে মারা পড়বে এবং অন্যান্য লোকেরা বন্দীদশায় যাবে। আমি যখন মিসরের জোয়াল ভেংগে ফেলব তখন তফন্‌হেষে দিনের বেলা অন্ধকার নেমে আসবে; সেখানে তার শক্তির গর্বও শেষ হয়ে যাবে। সে মেঘে ঢেকে যাবে আর তার গ্রামগুলোর লোকেরা বন্দীদশায় যাবে। এইভাবে আমি মিসরকে শাস্তি দেব, আর তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’ ” আমাদের বন্দীদশার এগারো বছরের প্রথম মাসের সাত দিনের দিন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, আমি মিসরের রাজা ফরৌণের হাত ভেংগে দিয়েছি। ভাল হবার জন্য সেই হাত কাপড় দিয়ে বাঁধা হয় নি যাতে সেটা তলোয়ার ধরবার জন্য উপযুক্ত শক্তি পায়। আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, আমি মিসরের রাজা ফরৌণের বিপক্ষে। আমি তার ভাল ও ভাংগা দু’টা হাতই ভেংগে দেব এবং তার হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দেব। আমি নানা জাতির ও দেশের মধ্যে মিসরীয়দের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেব। আমি বাবিলের রাজার হাতে শক্তি দেব এবং আমার তলোয়ার তার হাতে দেব, কিন্তু ফরৌণের হাত আমি ভেংগে ফেলব। তাতে ফরৌণ বাবিলের রাজার সামনে আহত লোকের মত কাত্‌রাবে। আমি বাবিলের রাজার হাতে শক্তি দেব কিন্তু ফরৌণের হাত ঝুলে পড়বে। আমি যখন আমার তলোয়ার বাবিলের রাজার হাতে দেব আর সে মিসরের বিরুদ্ধে তা চালাবে তখন সবাই জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আমি যখন মিসরীয়দের নানা জাতির ও দেশের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেব তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” আমাদের বন্দীদশার এগারো বছরের তৃতীয় মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, মিসরের রাজা ফরৌণ ও তার সমস্ত লোকদের বল, ‘জাঁকজমকের দিক থেকে তুমি কার সমান? আসিরিয়ার কথা চিন্তা করে দেখ, সে একদিন লেবাননের এরস গাছ ছিল। তার সুন্দর সুন্দর ডালপালা বনে ঘন ছায়া ফেলত; সে খুব উঁচু ছিল, তার মাথা যেন আকাশ ছুঁতো। প্রচুর জল তাকে পুষ্ট করে তুলেছিল, গভীর ফোয়ারা তাকে লম্বা করেছিল; ফোয়ারার স্রোত তার জায়গার চারপাশ দিয়ে বয়ে যেত এবং তার নালাগুলো বনের সব গাছগুলোকে জল দিত। এইভাবে বনের সব গাছের চেয়ে সে উঁচু হয়ে উঠল; প্রচুর জল পাওয়ার দরুন তার অনেক বড় বড় ডাল হল এবং ডালপালাগুলো লম্বা হয়ে ছড়িয়ে পড়ল। আকাশের সব পাখীরা তার ডালপালায় বাসা বাঁধল আর বনের সব পশুরা তার ডালপালার নীচে বাচ্চা দিত; তার ছায়ায় বাস করত সমস্ত বড় বড় জাতি। তার ছড়িয়ে পড়া ডালপালার সৌন্দর্যে সে মহান ছিল, কারণ তার শিকড়গুলো নীচে প্রচুর জলের কাছে গিয়েছিল। ঈশ্বরের বাগানের এরস গাছগুলোও তার সংগে পাল্লা দিতে পারত না। বেরস গাছের ডালপালাও তার বড় বড় ডালের সমান ছিল না; তার ডালপালার সংগে আর্মোণ গাছের তুলনা হত না। মোট কথা, ঈশ্বরের বাগানের কোন গাছই সৌন্দর্যে তার সমান ছিল না। প্রচুর ডালপালা দিয়ে আমি তাকে সুন্দর করেছিলাম; সে ছিল এদনে ঈশ্বরের বাগানের সব গাছের হিংসার পাত্র। “‘এখন আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, সে উঁচু হয়েছে, তার মাথা যেন আকাশ ছুঁয়েছে, আর সে লম্বা বলে তার অহংকার হয়েছে। সেইজন্য আমি তাকে জাতিদের শাসনকর্তার হাতে তুলে দিয়েছি; তার মন্দতা অনুসারে সে তার সংগে ব্যবহার করবে। আমি তাকে অগ্রাহ্য করেছি। জাতিদের মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর জাতির লোকেরা তাকে কেটে ফেলে রেখে গেছে। তার বড় বড় ডালগুলো পাহাড়ে পাহাড়ে ও সব উপত্যকাগুলোতে পড়েছে; তার ডালপালাগুলো ভেংগে দেশের সব জলের স্রোতের মধ্যে পড়ে আছে। পৃথিবীর সব জাতিরা তার ছায়া থেকে বের হয়ে তাকে ফেলে চলে গেছে। সেই পড়ে যাওয়া গাছে আকাশের সব পাখীরা এসে রইল এবং বনের সব পশুরাও তার ডালপালার কাছে থাকল। তার ফলে জলের ধারের অন্য কোন গাছ অহংকারে উঁচু হবে না, তার মাথা আকাশ ছোঁবে না এবং সে এত উঁচুতেও পৌঁছাবে না। তারা সবাই মানুষের মত মৃত্যুর অধীন; তারা পৃথিবীর গভীরে, অর্থাৎ মৃতস্থানে নেমে যাবার জন্য ঠিক হয়ে আছে। “‘আমি প্র্রভু সদাপ্রভু আরও বলছি, যেদিন সে মৃতস্থানে নেমে গেল সেই দিন তার জন্য শোকের চিহ্ন হিসাবে সেই গভীর ফোয়ারা আমি ঢেকে দিলাম; আমি তার সব স্রোত থামিয়ে দিলাম, তাতে তার সব জল বন্ধ হয়ে গেল। এর জন্য আমি লেবাননকে শোক করালাম আর তার বনের প্রত্যেকটি গাছ শুকিয়ে গেল। মৃত লোকদের সংগে আমি যখন তাকে মৃতস্থানে নামিয়ে দিলাম তখন তার পড়ে যাবার শব্দে জাতিরা কেঁপে উঠল। তখন এদনের সব গাছ, লেবাননের বাছাই করা ও সেরা গাছ এবং ভালভাবে জল পাওয়া সব গাছ পৃথিবীর গভীরে সান্ত্বনা পেল। যারা তার ছায়ায় বাস করত, অর্থাৎ জাতিদের মধ্যে তার বন্ধুরা তার সংগে মৃতস্থানে যুদ্ধে নিহত লোকদের কাছে নেমে গেল। “‘হে ফরৌণ, জাঁকজমক ও গৌরবের দিক দিয়ে এদনের গাছপালার মধ্যে একটাও তোমার সমান নয়। তবুও এদনের গাছপালার সংগে তোমাকেও পৃথিবীর গভীরে নামিয়ে দেওয়া হবে; যারা যুদ্ধে মারা গেছে সেই সুন্নত-না-করানো লোকদের সংগে তুমি শুয়ে থাকবে।’ “আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, সেই গাছ হল ফরৌণ ও তার সমস্ত দলবল।” আমাদের বন্দীদশার বারো বছরের বারো মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, মিসরের রাজা ফরৌণের বিষয়ে তুমি বিলাপ করে করে তাকে বল, ‘তুমি মনে করতে তুমি জাতিদের মধ্যে একটা সিংহের মত, কিন্তু আসলে তুমি নদীর মধ্যেকার কুমীরের মত। তুমি নিজের নদীর মধ্যে দাপাদাপি করতে, পা দিয়ে জল তোলপাড় করতে এবং নদীর জল ঘোলা করতে। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, লোকদের একটা বড় দল নিয়ে আমি তোমার উপর আমার জাল ফেলব; তারা আমার জালে তোমাকে টেনে তুলবে। ডাংগার উপরে খোলা মাঠে আমি তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেব। আমার আদেশে আকাশের সব পাখীরা তোমার উপর বসবে এবং পৃথিবীর সব পশুরা তোমাকে খেয়ে তৃপ্ত হবে। আমি তোমার মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে পাহাড়ে পাহাড়ে, উপত্যকায় উপত্যকায় ছড়িয়ে দেব। পাহাড়-পর্বত পর্যন্ত আমি তোমার রক্ত দিয়ে দেশটা ভিজাব; তাতে তোমার রক্তে স্রোতের জল লাল হয়ে যাবে। তোমাকে শেষ করে দেবার সময় আমি আকাশ ঢেকে দেব এবং তারাগুলোকে কালো করে দেব; মেঘ দিয়ে আমি সূর্য ঢেকে দেব এবং চাঁদ আলো দেবে না। তোমার উপরকার আকাশের সব আলো আমি কালো করে দেব; তোমার দেশের উপর আমি অন্ধকার আনব। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “‘নানা জাতির মধ্যে, এমন কি, তোমার অজানা বিভিন্ন দেশের মধ্যে যখন আমি তোমার ধ্বংসের খবর দেব তখন তারা অন্তরে কষ্ট পাবে। আমি তোমার উপর যা করব তা দেখে অনেক জাতি হতভম্ব হবে। আমি যখন তাদের সামনে আমার তলোয়ার ঘুরাব তখন তাদের রাজারা ভয়ে কাঁপবে। তোমার পতনের দিনে তাদের প্রত্যেকজন তার নিজের প্রাণের ভয়ে প্রতি মুহূর্তে কাঁপতে থাকবে। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, বাবিলের রাজার তলোয়ার তোমার উপরে আসবে। শক্তিশালী লোকদের তলোয়ার দিয়ে, অর্থাৎ সমস্ত জাতির মধ্যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর জাতির তলোয়ার দিয়ে আমি তোমার সব লোকদের পতন ঘটাব। তারা মিসরের অহংকার চুরমার করবে এবং তার সব লোকদের ধ্বংস করবে। জলের পাশে থাকা তার সব পশুদের আমি ধ্বংস করে দেব; সেই জল মানুষের পায়ে কিম্বা পশুর খুরে আর ঘোলা হবে না। এইভাবে আমি তার জল পরিষ্কার রাখব এবং তার সব নদীকে তেলের মত বয়ে যেতে দেব। আমি যখন মিসরকে ধ্বংসস্থান করব এবং দেশের মধ্যেকার সব কিছু খালি করে ফেলব আর সেখানকার সব বাসিন্দাদের আঘাত করব তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘এই সব কথা তারা মিসরের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে গাইবে। বিভিন্ন জাতির মেয়েরাও তা গাইবে; তারা মিসর ও তার সব লোকদের জন্য তা গাইবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’” আমাদের বন্দীদশার বারো বছরের সময় সেই মাসের পনেরো দিনের দিন সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, মিসরের লোকদের জন্য বিলাপ কর এবং যারা মৃতস্থানে নেমে যাচ্ছে তাদের সংগে তাকে ও অন্যান্য শক্তিশালী জাতিগুলোর লোকদের পৃথিবীর গভীরে পাঠিয়ে দাও। তুমি মিসরকে বল, ‘অন্যদের চেয়ে কি তুমি বেশী সুন্দর? তুমি মৃতস্থানে নেমে গিয়ে সুন্নত-না-করানো লোকদের মধ্যে শুয়ে থাক।’ যুদ্ধে যারা মারা পড়েছে তাদের মধ্যেই তার লোকেরা পড়ে থাকবে। তলোয়ারের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হবে; তার সব লোকদের সংগে তাকেও টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। মৃতস্থানের মধ্য থেকে শক্তিশালী যোদ্ধারা মিসর ও তার বন্ধুদের সম্বন্ধে বলবে, ‘যুদ্ধে নিহত সেই সুন্নত-না-করানো লোকেরা নীচে নেমে এসে শুয়ে আছে।’ “আসিরিয়া তার সমস্ত সৈন্যদলের সংগে সেখানে আছে। তাকে ঘিরে রয়েছে তার সব নিহত লোকদের কবর; এরা সবাই যুদ্ধে মারা পড়েছিল। তাদের কবর মৃতস্থানের গভীরে রয়েছে এবং তার সৈন্যদল তার কবরের চারপাশে শুয়ে আছে। জীবিতদের দেশে যারা ভয় ছড়িয়ে দিয়েছিল তাদের সবাইকে যুদ্ধে মেরে ফেলা হয়েছে। “এলম সেখানে আছে; তার কবরের চারপাশে রয়েছে তার সমস্ত লোক। তাদের সবাইকে যুদ্ধে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা জীবিতদের দেশে ভয় ছড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু শেষে তারা সবাই সুন্নত-না-করানো অবস্থায় পৃথিবীর গভীরে নেমে গেছে। যারা মৃতস্থানে নেমে গেছে তাদের সংগেই এই লোকেরা অসম্মান বহন করছে। নিহত লোকদের মধ্যে এলমের বিছানা পাতা হয়েছে; তার কবরের চারপাশে তার সংগে রয়েছে তার সমস্ত লোক। এই সব সুন্নত-না-করানো লোকদের যুদ্ধে মেরে ফেলা হয়েছে। জীবিতদের দেশে তারা ভয় ছড়িয়ে দিয়েছিল, কিন্তু যারা মৃতস্থানে নেমে গেছে তাদের সংগেই এই লোকেরা অসম্মান বহন করছে; নিহত লোকদের মধ্যে তাদের শোয়ানো হয়েছে। “মেশক ও তূবল সেখানে রয়েছে; তাদের চারপাশে রয়েছে তাদের সব লোকদের কবর। এই সব সুন্নত-না-করানো লোকদের যুদ্ধে মেরে ফেলা হয়েছে। জীবিতদের দেশে তারা ভয় ছড়িয়ে দিয়েছিল। তারা সুন্নত-না-করানো অন্যান্য যোদ্ধাদের সংগে শুয়ে থাকবে না। সেই যোদ্ধারা তাদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মৃতস্থানে নেমে গেছে, তাদের তলোয়ার তাদের মাথার নীচে রাখা হয়েছে আর তাদের পাপের শাস্তি তাদের হাড়গোড়ের উপরে রয়েছে। তারাও জীবিতদের দেশে ভয় ছড়িয়ে দিয়েছিল। “হে মিসর, তোমাকেও ভেংগে ফেলা হবে এবং তুমি সেই সুন্নত-না-করানো লোকদের মধ্যে শুয়ে থাকবে যাদের যুদ্ধে মেরে ফেলা হয়েছে। “ইদোম, তার রাজারা ও তার সব শাসনকর্তারা সেখানে আছে; তাদের শক্তি থাকলেও যুদ্ধে নিহত লোকদের সংগে তাদের শোয়ানো হয়েছে। যারা মৃতস্থানে নেমে গেছে সেই সুন্নত-না-করানো লোকদের সংগে তারা শুয়ে আছে। “উত্তর দেশের সব শাসনকর্তারা ও সীদোনীয়েরা সকলেই সেখানে আছে। যদিও তাদের শক্তির দ্বারা তারা ভয় জন্মিয়েছিল তবুও অসম্মানের সংগে তারা যুদ্ধে নিহত লোকদের সাথে নীচে নেমে গেছে এবং তাদের সংগে সুন্নত-না-করানো অবস্থায় শুয়ে আছে। যারা মৃতস্থানে নেমে গেছে তাদের সংগে এই লোকেরা তাদের অসম্মান বহন করছে। “যখন ফরৌণ ও তার সব সৈন্যেরা যুদ্ধে নিহত হবে তখন সে ঐসব লোকদের দেখতে পাবে এবং তার সব লোকদের বিষয়ে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া হবে। যদিও আমি ফরৌণকে দিয়ে জীবিতদের দেশে ভয় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম তবুও তাকে ও তার সব লোকদের সেই সুন্নত-না-করানো, যুদ্ধে নিহত লোকদের সংগে শোয়ানো হবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তোমার জাতির লোকদের বল যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘ধর, আমি কোন দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে আসলাম। তখন দেশের লোকেরা তাদের লোকদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিয়ে তাকে তাদের পাহারাদার নিযুক্ত করল। সে দেশের বিরুদ্ধে সৈন্যদল আসতে দেখে লোকদের সতর্ক করবার জন্য তূরী বাজাল। তখন যদি কেউ তূরীর আওয়াজ শুনেও সতর্ক না হয় আর সৈন্যেরা এসে তাকে মেরে ফেলে তবে তার মৃত্যুর জন্য সে নিজেই দায়ী থাকবে। তূরীর আওয়াজ শুনেও সে সতর্ক হয় নি বলে তাঁর মৃত্যুর জন্য সে নিজেই দায়ী থাকবে। সে যদি সতর্ক হত তবে নিজেকে রক্ষা করতে পারত। কিন্তু ধর, সেই পাহারাদার সৈন্যদলকে আসতে দেখেও লোকদের সতর্ক করবার জন্য তূরী বাজাল না। তারপর সৈন্যেরা এসে কোন একজনকে মেরে ফেলল। তাহলে বুঝতে হবে সেই মানুষ তার নিজের পাপের জন্যই মারা গেল, কিন্তু তার মৃত্যুর জন্য আমি সেই পাহারাদারকে দায়ী করব।’ “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েল জাতির জন্য আমি তোমাকে পাহারাদার নিযুক্ত করেছি; কাজেই আমি যা বলছি তা শোন এবং আমার হয়ে তাদের সতর্ক কর। আমি যখন কোন দুষ্ট লোককে বলি, ‘ওহে দুষ্ট লোক, তুমি নিশ্চয়ই মরবে,’ আর তুমি তাকে তার মন্দ পথ থেকে ফিরবার জন্য সতর্ক না কর, তবে সেই দুষ্ট লোক তার পাপের জন্য মারা যাবে কিন্তু তার মৃত্যুর জন্য আমি তোমাকে দায়ী করব। কিন্তু তুমি যদি সেই দুষ্ট লোককে তার কুপথ থেকে ফিরবার জন্য সতর্ক কর আর যদি সে না ফেরে তবে সে তার পাপের জন্য মরবে, কিন্তু তুমি নিজের প্রাণ রক্ষা করবে। “হে মানুষের সন্তান, তুমি ইস্রায়েল জাতিকে বল, ‘তোমরা বলছ তোমাদের অন্যায় ও পাপের ভার তোমাদের উপর চেপে আছে; তাতেই তোমরা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছ, বাঁচবার আশা নেই।’ তুমি তাদের বল যে, আমি প্রভু সদাপ্রভু, আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি, দুষ্ট লোকের মৃত্যুতে আমি কোন আনন্দ পাই না, বরং তারা যেন কুপথ থেকে ফিরে বাঁচে তাতেই আমি আনন্দ পাই। হে ইস্রায়েল জাতি, তোমরা ফেরো, তোমাদের মন্দ পথ থেকে তোমরা ফেরো। কেন তোমরা মারা যাবে? “সেইজন্য, হে মানুষের সন্তান, তুমি তোমার জাতির লোকদের বল, ‘সৎ লোক যদি সদাপ্রভুর অবাধ্য হয় তবে তার সততা তাকে রক্ষা করতে পারবে না, আর দুষ্ট লোক যদি তার দুষ্টতা থেকে ফেরে তবে সে তার দুষ্টতার শাস্তি পাবে না। সৎ লোক যদি পাপ করে তবে তার আগের সততা তাকে বঁাঁচাতে পারবে না।’ যদি আমি একজন সৎ লোককে বলি যে, সে নিশ্চয়ই বাঁচবে, কিন্তু সে পরে তার সততার উপর নির্ভর করে মন্দ কাজ করে তবে সে আগে যে সব সৎ কাজ করেছে তার কোনটাই মনে করা হবে না; সে যে মন্দ কাজ করেছে তার জন্যই সে মরবে। যদি আমি একজন দুষ্ট লোককে বলি, ‘তুমি নিশ্চয়ই মরবে,’ কিন্তু সে পরে তার পাপ থেকে ফিরে ন্যায় ও ঠিক কাজ করে, অর্থাৎ যদি সে বন্ধক রাখা জিনিস ও চুরির জিনিস ফিরিয়ে দেয় এবং জীবনদায়ী নিয়ম-কানুন পালন করে আর মন্দ কাজ না করে তবে সে মরবে না, নিশ্চয়ই বাঁচবে। সে যে সব পাপ করেছে তার কোনটাই তার বিরুদ্ধে মনে রাখা হবে না। সে ন্যায় ও ঠিক কাজ করেছে বলে সে নিশ্চয়ই বাঁচবে। “তবুও তোমার জাতির লোকেরা বলে থাকে, ‘সদাপ্রভুর পথ ঠিক নয়।’ আসলে তাদেরই পথ ঠিক নয়। একজন সৎ লোক যদি তার সততা থেকে ফিরে মন্দ কাজ করে তবে তার জন্য সে মরবে। একজন দুষ্ট লোক যদি তার দুষ্টতা থেকে ফিরে ন্যায় ও ঠিক কাজ করে তবে তার জন্য সে বাঁচবে। তবুও হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা বলে থাক, ‘সদাপ্রভুর পথ ঠিক নয়।’ তোমরা যেভাবে চলছ সেই অনুসারে আমি তোমাদের প্রত্যেকের বিচার করব।” আমাদের বন্দীদশার বারো বছরের দশ মাসের পাঁচ দিনের দিন একজন লোক যিরূশালেম থেকে পালিয়ে আমার কাছে এসে বলল, “শত্রুরা শহর দখল করেছে।” লোকটি পৌঁছাবার আগে সন্ধ্যাবেলা সদাপ্রভুর হাত আমার উপরে ছিল এবং সকালবেলা লোকটি আমার কাছে আসবার আগে তিনি আমার মুখ খুলে দিলেন। কাজেই আমি কথা বলতে লাগলাম, আর চুপ করে রইলাম না। পরে সদাপ্র্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েল দেশের ধ্বংসস্থানে যারা বাস করছে তারা বলছে, ‘অব্রাহাম মাত্র একজন মানুষ হয়েও দেশের অধিকার পেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা তো অনেকজন; কাজেই দেশটা নিশ্চয়ই আমাদের অধিকারের জন্য দেওয়া হয়েছে।’ সেইজন্য তুমি তাদের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমরা তো রক্ত সুদ্ধ মাংস খাচ্ছ, প্রতিমাপূজা করছ আর রক্তপাত করছ; তাহলে কি তোমরা দেশের অধিকারী হবে? তোমরা তো তোমাদের তলোয়ারের উপর নির্ভর করছ, জঘন্য কাজকর্ম করছ এবং প্রত্যেকে প্রতিবেশীর স্ত্রীকে অশুচি করছ; তাহলে কি তোমরা দেশের অধিকারী হবে?’ “তুমি তাদের বল যে, আমি প্রভু সদাপ্রভু আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি, যারা সেই ধ্বংসস্থানে আছে তারা যুদ্ধে মারা পড়বে, যারা মাঠে আছে তাদের খেয়ে ফেলবার জন্য আমি বুনো জন্তুদের কাছে তাদের দেব এবং যারা দুর্গে ও গুহায় আছে তারা মড়কে মারা যাবে। আমি ইস্রায়েল দেশটাকে একটা জনশূন্য পতিত জায়গা করব; তার শক্তির গর্ব শেষ হয়ে যাবে এবং তার পাহাড়-পর্বত এমনভাবে খালি হয়ে পড়ে থাকবে যে, সেখান দিয়ে কেউ যাওয়া-আসা করবে না। তাদের সব জঘন্য কাজের দরুন আমি যখন দেশটা জনশূন্য পতিত জায়গা করব তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “হে মানুষের সন্তান, তোমার জাতির লোকেরা দেয়ালের পাশে ও ঘরের দরজায় একত্র হয়ে তোমার বিষয়ে বলাবলি করছে এবং একে অন্যকে বলছে, ‘সদাপ্রভুর কাছ থেকে যে সংবাদ এসেছে চল, আমরা গিয়ে তা শুনি।’ আমার লোকেরা অভ্যাস মতই তোমার কাছে আসে এবং তোমার কথা শুনবার জন্য তোমার সামনে বসে, কিন্তু তারা তা কাজে লাগায় না। মুখে তারা ভালবাসার কথা বলে কিন্তু তাদের অন্তরে থাকে লোভ। এই কথা সত্যি যে, তুমি তাদের কাছে কেবল মিষ্টি সুরে সুন্দরভাবে বাজনা বাজিয়ে ভালবাসার গান গাওয়া একজন লোক ছাড়া আর কিছু নও, কারণ তারা তোমার কথা শোনে বটে, কিন্তু তা কাজে লাগায় না। “যখন এই সব সত্যিই ঘটবে, আর তা নিশ্চয়ই ঘটবে, তখন তারা জানবে যে, তাদের মধ্যে একজন নবী ছিল।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েলের পালকদের বিরুদ্ধে তুমি নবী হিসাবে এই কথা বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘ধিক্‌, ইস্রায়েলের সেই পালকদের, যারা কেবল নিজেদেরই দেখাশোনা করে! মেষপালের দেখাশোনা করা কি পালকদের উচিত নয়? তোমরা তো চর্বি খাও, পশম দিয়ে কাপড় বানিয়ে পর এবং বাছাই করা ভেড়া জবাই কর, কিন্তু তোমরা মেষগুলোর যত্ন কর না। তোমরা দুর্বলদের সবল কর নি, অসুস্থদের সুস্থ কর নি, আহতদের ঘা বেঁধে দাও নি। যারা বিপথে গেছে তাদের তোমরা ফিরিয়ে আন নি কিম্বা হারিয়ে যাওয়া লোকদের খোঁজ কর নি, বরং কড়া ও নিষ্ঠুরভাবে তাদের শাসন করেছ। পালক নেই বলে তারা ছড়িয়ে পড়েছে এবং বুনো জন্তুর খাবার হয়েছে। আমার মেষগুলো সমস্ত পাহাড়-পর্বতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে; কেউ তাদের খোঁজ করে নি। “‘কাজেই, ওহে পালকেরা, তোমরা আমার কথা শোন। আমি প্রভু সদাপ্রভু আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি যে, পালকের অভাবে আমার পাল লুটের জিনিস হয়েছে এবং বুনো জন্তুর খাবার হয়েছে। আমার পালকেরা আমার পালের খোঁজ করে নি এবং দেখাশোনাও করে নি; তার বদলে তারা নিজেদের দেখাশোনা করেছে। সেইজন্য, ওহে পালকেরা, আমার কথা শোন। আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, আমি পালকদের বিপক্ষে; আমি তাদের হাত থেকে আমার মেষগুলোকে আদায় করে নেব। আমার পাল চরানোর কাজ থেকে আমি তাদের সরিয়ে দেব যাতে তারা আর নিজেরা লাভবান হতে না পারে। তাদের মুখ থেকে আমি আমার পাল রক্ষা করব এবং মেষগুলো আর তাদের খাবার হবে না। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, আমি নিজেই আমার মেষগুলোর খোঁজ নেব ও তাদের দেখাশোনা করব। রাখাল যেমন করে তার ছড়িয়ে পড়া পালের খোঁজ করে তেমনি করে আমি আমার মেষগুলোর খোঁজ করব। মেঘ ও অন্ধকারের দিনে তারা যে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে আমি সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করব। আমি নানা জাতি ও দেশের মধ্য থেকে তাদের বের করে আনব এবং তাদের নিজের দেশে তাদের জড়ো করব। ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্বতের উপরে, নদীগুলোর ধারে এবং দেশের সব বসতি স্থানগুলোতে আমি তাদের চরাব। চরে বেড়াবার ভাল জায়গায় আমি তাদের চরাব এবং ইস্রায়েলের উঁচু উঁচু পাহাড়ে তাদের চরবার জায়গা হবে। ভাল চরবার জায়গায় তারা থাকবে এবং সেখানে ইস্রায়েলের পাহাড়গুলোর উপরকার ভাল চারণ ভূমিতে খেয়ে বেড়াবে। আমি নিজেই আমার মেষগুলো চরাব এবং বিশ্রামস্থানে নিয়ে যাব। যারা হারিয়ে গেছে আমিই তাদের খুঁজব এবং যারা বিপথে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনব। আমি আহতদের ঘা বেঁধে দেব এবং দুর্বলদের সবল করব, কিন্তু মোটাসোটা ও বলবানদের আমি ধ্বংস করব, কারণ আমি ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে আমার পালের দেখাশোনা করব। “‘হে আমার পাল, শোন। আমি ভাল ও খারাপ মেষদের মধ্যে বিচার করব। সমস্ত মেষ ও ছাগ খারাপ বলে আমি তাদের শাস্তি দেব। তোমাদের পক্ষে ভাল চারণ ভূমিতে খাওয়া কি যথেষ্ট নয়? আবার বাকী ঘাসগুলোও কি পা দিয়ে মাড়াতে হবে? তোমাদের পক্ষে পরিষ্কার জল খাওয়া কি যথেষ্ট নয়? আবার বাকী জলও কি পা দিয়ে ঘোলা করতে হবে? তোমরা পা দিয়ে যা মাড়িয়েছ এবং যে জল ঘোলা করেছ তা-ই কি আমার মেষগুলোকে খেতে হবে? “‘দেখ, আমি প্রভু সদাপ্রভু নিজেই মোটা আর রোগা মেষের মধ্যে বিচার করব। সব দুর্বল মেষগুলোকে তাড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা দেহ ও কাঁধ দিয়ে তাদের ঠেলছ এবং শিং দিয়ে গুঁতাচ্ছ। কাজেই আমি আমার মেষগুলোকে রক্ষা করব এবং তারা আর লুটের জিনিস হবে না। আমি ভাল ও খারাপ মেষদের মধ্যে বিচার করব। আমি তাদের উপরে একজন পালককে, অর্থাৎ আমার দাস দায়ূদকে নিযুক্ত করব; সে নিজেই তাদের দেখাশোনা করবে এবং তাদের পালক হবে। আমি সদাপ্রভু তাদের ঈশ্বর হব এবং আমার দাস দায়ূদ তাদের নেতা হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “‘আমি তাদের জন্য মংগলের একটা ব্যবস্থা স্থাপন করব এবং দেশ থেকে হিংস্র জন্তুদের শেষ করব যাতে তারা নিরাপদে মরু-এলাকায় বাস করতে ও বনে-জংগলে ঘুমাতে পারে। আমি তাদের আশীর্বাদ করব এবং আমার পাহাড়ের চারপাশের জায়গাগুলোকে আশীর্বাদ করব। আমি ঠিক সময়ে বৃষ্টি পাঠাব; তা হবে আশীর্বাদের বৃষ্টি। মাঠের গাছে গাছে ফল ধরবে এবং মাটি তার ফসল দেবে; তারা নিরাপদে নিজের নিজের জমিতে বাস করবে। আমি যখন তাদের জোয়াল ভেংগে ফেলব এবং যারা তাদের দাস বানিয়েছিল তাদের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনব তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। তারা আর জাতিদের লুটের জিনিস হবে না কিম্বা বুনো পশুরাও তাদের খেয়ে ফেলবে না। তারা নিরাপদে বাস করবে এবং কেউ তাদের ভয় দেখাবে না। আমি তাদের উর্বর জমি দেব; দেশের মধ্যে তারা আর দুর্ভিক্ষের হাতে পড়বে না কিম্বা অন্যান্য জাতিদের অসম্মানের পাত্র হবে না। তখন তারা জানবে যে, আমি তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদের সংগে সংগে আছি এবং তারা, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়েরা আমারই লোক। হে আমার মেষপাল, আমার চারণ ভূমির পাল, তোমরা আমারই লোক এবং আমিই তোমাদের ঈশ্বর। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’” পরে সদাপ্র্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, সেয়ীর পাহাড়ের দিকে তোমার মুখ রেখে তার বিরুদ্ধে এই ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে সেয়ীর পাহাড়, আমি তোমার বিপক্ষে; আমি তোমার বিরুদ্ধে আমার হাত বাড়িয়ে তোমাকে একটা জনশূন্য পতিত জমি করে রাখব। তোমার শহরগুলো আমি ধ্বংসস্থান করব এবং তুমি জনশূন্য হবে। তখন তুমি জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘তুমি অনেক দিন ধরে ইস্রায়েলের শত্রু হয়ে আছ এবং তাদের বিপদের সময় যখন তাদের শাস্তি সম্পূর্ণভাবে দেওয়া হয়েছে তখন তুমি তলোয়ারের হাতে তাদের তুলে দিয়েছ। সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি যে, আমি তোমাকে রক্তপাতের হাতে তুলে দেব এবং তা তোমার পিছনে তাড়া করবে। তুমি যখন রক্তপাতকে ঘৃণা কর নি তখন রক্তপাতই তোমার পিছনে তাড়া করবে। আমি সেয়ীর পাহাড়কে জনশূন্য ও ধ্বংসস্থান করব এবং যারা সেখানে যাওয়া-আসা করে তাদের সবাইকে শেষ করে দেব। তোমার পাহাড়-পর্বতগুলো আমি নিহত লোকদের দিয়ে ঢেকে দেব; যুদ্ধে যারা মারা গেছে তারা তোমার পাহাড়ে পাহাড়ে, উপত্যকায় উপত্যকায় ও তোমার সব জলের স্রোতে পড়ে থাকবে। চিরকালের জন্য আমি তোমাকে জনশূন্য করে রাখব; তোমার শহরগুলোতে কেউ বাস করবে না। তখন তুমি জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘আমি সদাপ্রভু যদিও ইস্রায়েল ও যিহূদায় উপস্থিত ছিলাম তবুও তুমি বলেছ যে, এই দুই দেশের লোকেরা ও তাদের দেশ তোমাদের হবে এবং তোমরা তা অধিকার করবে। সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু আমার জীবনের দিব্য দিয়ে বলছি যে, তাদের প্রতি ঘৃণায় তুমি যেমন রাগ ও হিংসা দেখিয়েছ সেই হিসাবেই আমি তোমার সংগে ব্যবহার করব; আমি যখন তোমার বিচার করব তখন তাদের মধ্যে আমি নিজেকে প্রকাশ করব। সেই সময় তুমি জানবে যে, তুমি ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্বতের বিরুদ্ধে যে সব অপমানের কথা বলেছ তা আমি সদাপ্রভু শুনেছি। তুমি বলেছ যে, সেগুলো ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে এবং তা গ্রাস করবার জন্য তোমাকে দেওয়া হয়েছে। তুমি আমার বিরুদ্ধে গর্ব করে অনেক কথা বলেছ। আমি সেই সব শুনেছি। যখন সমস্ত পৃথিবী আনন্দ করবে তখন আমি তোমাকে জনশূন্য করব। ইস্রায়েল জাতি অধিকার হিসাবে যে দেশ পেয়েছে তা জনশূন্য দেখে তুমি যেমন আনন্দ করেছ তেমনি করে আমি তোমার সংগে ব্যবহার করব। হে সেয়ীর পাহাড়, তুমি ও ইদোমের বাকী সমস্ত জায়গা জনশূন্য হবে। তখন লোকে জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’” কাজেই আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, তোমরা যাতে অন্যান্য জাতিগুলোর দখলে আস এবং লোকদের হিংসার ও নিন্দার পাত্র হও সেইজন্য তারা চারদিক থেকে তোমাদের ধ্বংস ও গ্রাস করেছে। তাই হে ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্বত, তোমরা আমার বাক্য শোন। হে বড় বড় ও ছোট ছোট পাহাড়, খাদ ও উপত্যকাগুলো, জনশূন্য সব ধ্বংসস্থান এবং তোমাদের চারপাশের অন্যান্য জাতিরা যেগুলোকে লুট ও হাসির পাত্র করেছে সেই সব ছেড়ে যাওয়া শহরগুলো, আমি প্রভু সদাপ্রভু তোমাদের বলছি, আমার অন্তরের জ্বালায় আমি অন্যান্য জাতিদের ও সমস্ত ইদোমের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, কারণ তাদের মনের আনন্দ ও হিংসার সংগে তারা আমার দেশকে নিজেদের দখলে এনেছে যাতে তা লুট করতে পারে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “তুমি ইস্রায়েল দেশ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী বল। তার বড় বড় ও ছোট ছোট পাহাড়, খাদ ও উপত্যকাগুলোকে বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমার অন্তরের জ্বালাপূর্ণ ক্রোধে আমি কথা বলছি, কারণ তোমরা অন্যান্য জাতির কাছ থেকে অপমান ভোগ করেছ। সেইজন্য আমি শপথ করে বলছি যে, তোমাদের চারপাশের জাতিরাও অপমান ভোগ করবে। “‘কিন্তু হে ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্বত, তোমরা তোমাদের গাছের ডালপালা ছড়িয়ে দিয়ে আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের অনেক ফল দেবে, কারণ তারা শীঘ্রই ফিরে আসবে। আমি তোমাদের পক্ষে আছি এবং তোমাদের দিকে মনোযোগ দেব; তাতে তোমাদের উপর চাষ করা ও বীজ বোনা হবে। আমি তোমাদের উপরে গোটা ইস্রায়েল জাতির লোকসংখ্যা বাড়িয়ে দেব। শহরগুলোতে লোকজন বাস করবে এবং ধ্বংসস্থানগুলো আবার গড়া হবে। আমি তোমাদের উপরে মানুষ ও পশুর সংখ্যা বাড়িয়ে দেব এবং তারা ফলবান ও সংখ্যায় অনেক হবে। আমি তোমাদের উপরে আগের মতই লোকজন বাস করাব এবং আগের চেয়েও তোমাদের বেশী সফলতা দান করব। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আমি তোমাদের উপর দিয়ে লোকজনকে, অর্থাৎ আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের হাঁটা-চলা করাব। তারা তোমাদের অধিকার করবে এবং তোমরা তাদের অধিকারের জায়গা হবে; তোমরা আর কখনও তাদের সন্তানহারা করবে না। “‘হে ইস্রায়েল দেশ, লোকে তোমাকে বলে যে, তুমি মানুষকে গ্রাস কর এবং নিজের জাতিকে সন্তানহারা কর। কিন্তু আমি বলছি, তুমি মানুষকে আর গ্রাস করবে না কিম্বা তোমার জাতিকে সন্তানহারা করবে না। জাতিদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ আর আমি তোমাকে শুনতে দেব না এবং তাদের করা অপমান আর তোমাকে সহ্য করতে হবে না। তোমার দরুন তোমার জাতির লোকেরা আর উছোট খাবে না। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” তারপর সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, ইস্রায়েলীয়েরা নিজেদের দেশে বাস করবার সময়ে তাদের আচার-ব্যবহার ও কাজকর্ম দিয়ে দেশটা অশুচি করেছিল। আমার চোখে তাদের আচার-ব্যবহার ছিল স্ত্রীলোকের মাসিকের অশুচিতার মত। সেইজন্য আমি তাদের উপর আমার ক্রোধ ঢেলে দিয়েছিলাম, কারণ তারা দেশের মধ্যে রক্তপাত করেছিল আর তাদের প্রতিমাগুলো দিয়ে দেশটা অশুচি করেছিল। আমি নানা জাতি ও দেশের মধ্যে তাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছি; তাদের আচার-ব্যবহার ও কাজকর্ম অনুসারে আমি তাদের শাস্তি দিয়েছি। তারা জাতিদের মধ্যে যেখানেই গেছে সেখানেই আমার পবিত্র নাম অপবিত্র করেছে, কারণ লোকে তাদের সম্বন্ধে বলেছে, ‘এরা সদাপ্রভুর লোক, অথচ তাঁর দেশ তাদের ছাড়তে হয়েছে।’ আমার নামের পবিত্রতা রক্ষার দিকে আমার মনোযোগ ছিল, কারণ ইস্রায়েল জাতি যে সব জাতির মধ্যে গেছে সেখানেই আমার নাম অপবিত্র করেছে। “কাজেই তুমি ইস্রায়েলীয়দের বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে ইস্রায়েলীয়েরা, আমি যে তোমাদের দরুন এই সব কাজ করতে যাচ্ছি তা নয়, কিন্তু আমার সেই পবিত্র নামের দরুনই করব। তোমরা যে সব জাতির মধ্যে গিয়েছ সেখানেই এই নাম অপবিত্র করেছ। যে নাম জাতিদের মধ্যে অসম্মানিত করা হয়েছে আমার সেই মহৎ নামের পবিত্রতা আমি দেখাব; তোমরা তাদের মধ্যে সেই নাম অপবিত্র করেছ। যখন আমি তাদের চোখের সামনে তোমাদের মধ্য দিয়ে নিজের পবিত্রতা দেখাব তখন জাতিরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘আমি জাতিদের মধ্য থেকে তোমাদের বের করে আনব; সমস্ত দেশ থেকে আমি তোমাদের জড়ো করে তোমাদের নিজেদের দেশে ফিরিয়ে আনব। আমি তোমাদের উপরে পরিষ্কার জল ছিটিয়ে দেব, আর তাতে তোমরা শুচি হবে; তোমাদের সমস্ত নোংরামি ও প্রতিমা থেকে আমি তোমাদের শুচি করব। আমি তোমাদের ভিতরে নতুন অন্তর ও নতুন মন দেব; আমি তোমাদের কঠিন অন্তর দূর করে নরম অন্তর দেব। তোমাদের ভিতরে আমি আমার আত্মা স্থাপন করব এবং এমন করব যাতে তোমরা আমার সব নিয়ম পালন কর। তাতে তোমরা আমার আইন-কানুন মেনে চলতে মনোযোগী হবে। তোমাদের পূর্বপুরুষদের যে দেশ আমি দিয়েছিলাম সেখানে তোমরা বাস করবে; তোমরা আমারই লোক হবে আর আমি তোমাদের ঈশ্বর হব। তোমাদের সব অশুচিতা থেকে আমি তোমাদের রক্ষা করব। আমি তোমাদের প্রচুর ফসল দেব এবং তোমাদের দেশে আমি আর দুর্ভিক্ষ পাঠাব না। আমি গাছের ফল ও ক্ষেতের ফসল বাড়িয়ে দেব যাতে দুর্ভিক্ষের দরুন তোমরা জাতিদের মধ্যে আর অসম্মান ভোগ না কর। তখন তোমাদের মন্দ আচার-ব্যবহার ও অসৎ কাজকর্মের কথা তোমাদের মনে পড়বে এবং নিজেদের পাপ ও জঘন্য কাজকর্মের জন্য নিজেরাই নিজেদের ঘৃণা করবে। তোমরা জেনে রাখ যে, আমি তোমাদের দরুন এই কাজ করতে যাচ্ছি না। হে ইস্রায়েল জাতি, তোমাদের আচার-ব্যবহারের জন্য তোমরা লজ্জিত ও দুঃখিত হও। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, যেদিন আমি সব পাপ থেকে তোমাদের পরিষ্কার করব সেই দিনই আমি শহরগুলোতে লোকদের বাস করাব এবং ধ্বংসস্থানগুলো আবার তৈরী করা হবে। লোকে যাওয়া-আসা করবার সময় যে দেশটাকে ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকতে দেখত সেই দেশে চাষের কাজ চলবে। তারা বলবে যে, এই দেশটা আগে ধ্বংস হয়ে পড়ে ছিল, কিন্তু এখন সেটা এদন বাগানের মত হয়েছে; তার শহরগুলো ধ্বংস, জনশূন্য ও ভাংগাচোরা হয়ে পড়ে ছিল, কিন্তু এখন সেগুলো দেয়াল-ঘেরা ও বাস করবার জায়গা হয়েছে। তখন তোমাদের চারপাশের বেঁচে থাকা জাতিরা জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই ভাংগা জায়গা আবার গড়েছি এবং পতিত জায়গায় আবার গাছ লাগিয়েছি। আমি সদাপ্রভুই এই কথা বলেছি এবং আমি তা-ই করব।’” তারপর প্রভু সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “আমি আর একবার ইস্রায়েল জাতিকে আমার কাছে অনুরোধ জানাতে দেব এবং তাদের অনুরোধ অনুসারে আমি ভেড়ার পালের মত তাদের লোকদের অসংখ্য করব। যিরূশালেমে নির্দিষ্ট পর্বের সময়ে যেমন উৎসর্গের ভেড়ায় ভরে যায় তেমনি ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলো অসংখ্য মানুষে ভরে যাবে। তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” সদাপ্রভুর হাত আমার উপরে ছিল এবং তিনি তাঁর আত্মার দ্বারা আমাকে নিয়ে গিয়ে একটা উপত্যকার মাঝখানে রাখলেন; জায়গাটা হাড়গোড়ে ভর্তি ছিল। তিনি সেগুলোর চারপাশ দিয়ে আমাকে নিয়ে গেলেন। আমি সেই উপত্যকার মধ্যে অনেক হাড়গোড় দেখলাম; সেগুলো ছিল খুব শুকনা। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে মানুষের সন্তান, এই হাড়গুলো কি বেঁচে উঠতে পারে?” আমি বললাম, “হে প্রভু সদাপ্রভু, তুমিই কেবল তা জান।” তখন তিনি আমাকে সেই হাড়গুলোর কাছে এই ভবিষ্যদ্বাণী বলতে বললেন, “ওহে শুকনা সব হাড়, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শোন। প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে নিঃশ্বাস ঢুকিয়ে দেব আর তোমরা জীবিত হবে। আমি তোমাদের হাড়ের সংগে হাড় বেঁধে দেব, তোমাদের উপরে মাংস জন্মাব এবং চামড়া দিয়ে তা ঢেকে দেব। আমি তোমাদের মধ্যে নিঃশ্বাস দেব আর তোমরা জীবিত হবে। তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’” আমাকে যেমন আদেশ দেওয়া হয়েছিল আমি তখন সেইমতই ভবিষ্যদ্বাণী বললাম। ভবিষ্যদ্বাণী বলবার সময় খট্‌খট্‌ শব্দ হতে লাগল এবং হাড়গুলোর প্রত্যেকটা নিজের নিজের হাড়ের সংগে যুক্ত হল। আমি দেখলাম হাড়ের সংগে হাড়ের বাঁধন হল, তার উপরে মাংস হল এবং চামড়া দিয়ে তা ঢাকা পড়ল, কিন্তু তাদের মধ্যে শ্বাস ছিল না। তখন তিনি আমাকে বললেন, “তুমি বাতাসের উদ্দেশে ভবিষ্যদ্বাণী বল; হে মানুষের সন্তান, তুমি এই ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে বাতাস, তুমি চারদিক থেকে এস এবং এই সব নিহত লোকদের মধ্যে শ্বাস দাও যাতে তারা জীবিত হয়।’” সেইজন্য তাঁর আদেশমতই আমি ভবিষ্যদ্বাণী বললাম আর তখন তাদের মধ্যে শ্বাস ঢুকল; তারা জীবিত হয়ে পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারা ছিল এক বিরাট সৈন্যদল। তারপর তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, এই হাড়গুলো হল গোটা ইস্রায়েল জাতি। তারা বলছে, ‘আমাদের হাড়গুলো শুকিয়ে গেছে আর আমাদের আশাও চলে গেছে; আমরা মরে গেছি।’ কাজেই তুমি তাদের কাছে এই ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে আমার লোকেরা, আমি তোমাদের কবর খুলে সেখান থেকে তোমাদের তুলে আনব। ইস্রায়েল দেশে আমি তোমাদের ফিরিয়ে আনব। আমি যখন তোমাদের কবর খুলে সেখান থেকে তোমাদের বের করে আনব তখন তোমরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। আমার আত্মা আমি তোমাদের মধ্যে দেব এবং তোমরা জীবিত হবে। তোমাদের নিজেদের দেশে আমি তোমাদের বাস করাব। তখন তোমরা জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই এই কথা বলেছি এবং তা করেছি।’” পরে সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “হে মানুষের সন্তান, একটা লাঠি নিয়ে তুমি তার উপর এই কথা লেখ, ‘যিহূদা ও তার সংগের ইস্রায়েলীয়দের জন্য।’ তারপর আর একটা লাঠি নিয়ে তার উপরে লেখ, ‘ইফ্রয়িমের লাঠি, অর্থাৎ যোষেফ ও তার সংগের সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের জন্য।’ পরে সেই দু’টা লাঠি জোড়া দিয়ে একটা লাঠি বানাও যাতে তোমার হাতে সেই দু’টা একটা লাঠিই হয়। “তোমার জাতির লোকেরা যখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘তুমি কি এর মানে আমাদের বলবে না?’ তখন তুমি তাদের বলবে যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘ইফ্রয়িমের হাতে যোষেফ ও তার সংগের ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর যে লাঠিটা আছে আমি সেটা নিয়ে যিহূদার লাঠির সংগে জোড়া দিয়ে একটা লাঠিই বানাব আর সেই দু’টা আমার হাতে একটাই হবে।’ সেখানে ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্বতের উপরে আমি তাদের নিয়ে একটাই রাজ্য করব। তাদের সকলের উপরে একজনই রাজা হবে এবং তারা আর কখনও দুই হবে না কিম্বা দু’টা রাজ্যে ভাগ হবে না। তাদের সব প্রতিমা, মূর্তি কিম্বা তাদের কোন অন্যায় দিয়ে তারা আর নিজেদের অশুচি করবে না। তাদের সব পাপ ও বিপথে যাওয়া থেকে আমি তাদের রক্ষা করব এবং শুচি করব। তারা আমার লোক হবে এবং আমি তাদের ঈশ্বর হব। “‘আমার দাস দায়ুদ তাদের রাজা হবে এবং তাদের সকলের পালক একজনই হবে। তারা আমার আইন-কানুন মতে চলবে এবং আমার সব নিয়ম সতর্ক হয়ে পালন করবে। যে দেশ আমি আমার দাস যাকোবকে দিয়েছি, যে দেশে তাদের পূর্বপুরুষেরা বাস করে গেছে সেখানেই তারা বাস করবে। তারা, তাদের ছেলেমেয়েরা ও নাতিপুতিরা সেখানে চিরকাল বাস করবে এবং আমার দাস দায়ূদ চিরকাল তাদের রাজা হবে। আমি তাদের জন্য একটা মংগলের ব্যবস্থা স্থাপন করব; সেটা হবে একটা চিরস্থায়ী ব্যবস্থা। আমি তাদের শক্তিশালী করব ও তাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেব এবং আমার ঘর আমি চিরকালের জন্য তাদের মধ্যে স্থাপন করব। আমার বাসস্থান হবে তাদের মধ্যে; আমি তাদের ঈশ্বর হব এবং তারা আমার লোক হবে। আমার ঘর যখন চিরকালের জন্য তাদের মধ্যে হবে তখন জাতিরা সব জানবে যে, আমি সদাপ্রভুই ইস্রায়েলকে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করেছি।’” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি মাগোগ দেশের মেশক ও তূবলের প্রধান শাসনকর্তা গোগের দিকে মুখ করে এই ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে মেশক ও তূবলের প্রধান শাসনকর্তা গোগ, আমি তোমার বিপক্ষে। আমি তোমাকে পিছন ঘুরিয়ে তোমার চোয়ালে কড়া লাগাব এবং তোমার গোটা সৈন্যদলের সংগে, অর্থাৎ সব ঘোড়া, সুন্দর পোশাক পরা সব ঘোড়সওয়ার এবং ছোট-বড় ঢাল ও তলোয়ার সুদ্ধ এক বিরাট দলের সংগে তোমাকে বের করে আনব। তাদের সংগে থাকবে পারস্য, কূশ ও পূট দেশের সৈন্যেরা; তারা সবাই ঢালধারী ও মাথা রক্ষার টুপি পরা। গোমর দেশের সব সৈন্যেরা এবং উত্তর দিকের শেষ সীমার বৈৎ-তোগর্ম দেশের সব সৈন্যেরা তোমার সংগে থাকবে। অনেক জাতিই তোমার সংগী হবে। “‘তুমি প্রস্তুত হও; তুমি ও তোমার চারপাশে জড়ো হওয়া সমস্ত দলবল, তোমরা নিজেদের প্রস্তুত কর এবং তুমি তাদের সেনাপতি হও। অনেক বছর পরে তোমাকে যুদ্ধের জন্য ডাকা হবে। তখন তুমি এমন একটা দেশ আক্রমণ করবে যে দেশ যুদ্ধ থেকে রেহাই পেয়েছে, যার লোকেরা অনেক জাতির মধ্য থেকে ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্র্বতে জড়ো হয়েছে। সেই দেশ অনেক দিন ধরে জনশূন্য হয়ে ছিল, কিন্তু তোমার আক্রমণের আগে নানা জাতির মধ্য থেকে তার লোকদের বের করে আনা হবে, আর তখন তারা সবাই নিরাপদে বাস করবে। তুমি ও তোমার সব সৈন্যেরা এবং তোমার সংগের অনেক জাতি সেই দেশ আক্রমণ করতে ঝড়ের মত এগিয়ে যাবে; তোমরা মেঘের মত করে দেশটাকে ঢেকে ফেলবে। “‘সেই দিন তোমার মনে নানা চিন্তা আসবে এবং তুমি একটা খারাপ মতলব আঁটবে। তুমি বলবে যে, তুমি এমন একটা দেশ আক্রমণ করবে যেখানকার গ্রামগুলোতে দেয়াল নেই। তুমি শান্তিতে ও নিশ্চিন্তে থাকা লোকদের আক্রমণ করবে যারা দেয়াল, ফটক ও আগল ছাড়াই বাস করে। তুমি তাদের জিনিসপত্র কেড়ে নেবে ও লুট করবে এবং ধ্বংসস্থান ঠিক করে নেওয়া জায়গাগুলোর বিরুদ্ধে আর জাতিদের মধ্য থেকে জড়ো হওয়া লোকদের বিরুদ্ধে তোমার হাত উঠাবে। সেই সময় সেই লোকেরা পশুপাল ও জিনিসপত্রে ধনী থাকবে এবং দেশটা হবে পৃথিবীর কেন্দ্র। “‘তখন শিবা, দদান এবং তর্শীশ ও তার সব গ্রামগুলোর ব্যবসায়ীরা তোমাকে জিজ্ঞাসা করবে যে, তুমি লুটপাট করতে এসেছ কিনা এবং সোনা-রূপা, পশুপাল ও জিনিসপত্র নিয়ে যাবার জন্য আর অনেক জিনিস কেড়ে নেবার জন্য তোমার দলবল জড়ো করেছ কি না।’ “কাজেই, হে মানুষের সন্তান, তুমি গোগকে এই ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘সেই দিন যখন আমার লোক ইস্রায়েল নিরাপদে বাস করবে তখন তুমি কি তা খেয়াল করবে না? উত্তর দিকের শেষ সীমায় তোমার জায়গা থেকে তুমি ও তোমার সংগের অনেক জাতির লোকেরা ঘোড়ায় চড়ে একটা বিরাট দল, একটা শক্তিশালী সৈন্যদল হয়ে চলে আসবে। দেশটা মেঘের মত করে ঢেকে ফেলবার জন্য তুমি আমার লোক ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসবে। হে গোগ, শেষকালে আমি আমার দেশের বিরুদ্ধে তোমাকে আনব। তখন আমি জাতিদের চোখের সামনে তোমার মধ্য দিয়ে নিজেকে পবিত্র বলে দেখাব যাতে তারা আমাকে জানতে পারে। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি যে, আগেকার কালে আমার দাসদের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের নবীদের মধ্য দিয়ে আমি যার কথা বলেছি সে কি তুমি নও? সেই সময় বছরের পর বছর নবীরা বলেছিল যে, আমি তোমাকে তাদের বিরুদ্ধে আনব। সেই দিন যখন গোগ ইস্রায়েল দেশ আক্রমণ করবে তখন আমার ভীষণ ক্রোধ জ্বলে উঠবে। আমার আগ্রহে ও জ্বলন্ত ক্রোধে আমি ঘোষণা করছি যে, সেই সময়ে ইস্রায়েল দেশে ভীষণ ভূমিকম্প হবে। তখন সাগরের মাছ, আকাশের পাখী, বনের পশু, মাটির উপরকার প্রত্যেকটি বুকে-হাঁটা প্রাণী আর পৃথিবীর সমস্ত লোক আমার সামনে কাঁপতে থাকবে। বড় বড় পাহাড় উল্টে যাবে, খাড়া উঁচু পাহাড় টুকরা টুকরা হয়ে পড়বে এবং সব দেয়াল মাটিতে পড়ে যাবে। আমার দেশের সব পাহাড়-পর্বতের উপরে গোগের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ডেকে আনব। প্রত্যেক মানুষের তলোয়ার থাকবে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। আমি মড়ক ও রক্তপাত দিয়ে গোগকে শাস্তি দেব; আমি ভীষণ বৃষ্টি, শিলা ও জ্বলন্ত গন্ধক তার উপর, তার সৈন্যদের উপর ও তার সংগের সমস্ত জাতির উপর ঢেলে দেব। এইভাবে অনেক জাতির চোখের সামনে আমি নিজেকে প্রকাশ করব; আমি যে মহৎ ও পবিত্র তা দেখাব। তখন তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু।’ “হে মানুষের সন্তান, গোগের বিরুদ্ধে তুমি এই ভবিষ্যদ্বাণী বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে মেশক ও তূবলের প্রধান শাসনকর্তা গোগ, আমি তোমার বিপক্ষে। আমি তোমাকে পিছন ঘুরিয়ে টেনে নিয়ে যাব। আমি তোমাকে উত্তর দিকের শেষ সীমা থেকে নিয়ে এসে ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্বতের বিরুদ্ধে পাঠাব। তারপর আমি আঘাত করে তোমার বাঁ হাত থেকে তোমার ধনুক ও ডান হাত থেকে তোমার তীরগুলো ফেলে দেব। ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্বতের উপরে তুমি, তোমার সব সৈন্যেরা ও তোমার সংগের জাতিরা পড়ে থাকবে। আমি তোমাকে শকুন ও বুনো পশুদের খাবার হিসাবে দেব। তুমি খোলা মাঠে পড়ে থাকবে, কারণ আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলেছি। আমি মাগোগের উপরে এবং যারা দূরের দেশগুলোতে নিরাপদে বাস করছে তাদের উপরে আগুন পাঠাব; তাতে তারা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু। “‘আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে আমি আমার পবিত্রতা প্রকাশ করব। আমার নাম আমি আর অপবিত্র হতে দেব না; তাতে জাতিরা জানবে যে, আমিই সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের মধ্যে সেই পবিত্রজন। এটা আসছে, এটা হবেই হবে। এই দিনের কথাই আমি প্রভু সদাপ্রভু বলেছি। “‘তখন যারা ইস্রায়েলের শহরে বাস করছে তারা বাইরে গিয়ে জ্বালানি কাঠ হিসাবে অস্ত্রশস্ত্র পোড়াবে। তারা ছোট ও বড় ঢাল, তীর ও ধনুক এবং যুদ্ধের গদা ও বর্শা সাত বছর ধরে কাঠের বদলে পোড়াবে। মাঠ থেকে কিম্বা বন-জংগল থেকে তাদের আর জ্বালানি কাঠ জোগাড় করতে হবে না, কারণ কাঠের বদলে তারা অস্ত্রশস্ত্রগুলোই পোড়াবে। তারা তাদের লুটকারীদের জিনিসপত্র লুট করবে; তাদের জিনিসপত্র যারা কেড়ে নিয়েছে তাদের জিনিসপত্র তারা কেড়ে নেবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “‘সেই দিন আমি গোগকে ইস্রায়েলের মধ্যে একটা কবরস্থান দেব। সেটা হবে সাগরের পূর্ব দিকে যাত্রীদের উপত্যকার মধ্যে। যারা যাওয়া-আসা করে তাদের পথ এটা বন্ধ করে দেবে, কারণ গোগ ও তার সব দলবলকে সেখানে কবর দেওয়া হবে। সেইজন্য এটাকে বলা হবে গোগের দলবলের উপত্যকা। ইস্রায়েলীয়েরা সাত মাস ধরে তাদের কবর দিয়ে দেশটা শুচি করবে। দেশের সব লোক তাদের কবর দেবে। এইভাবে আমার মহিমা প্রকাশ করবার দিনে তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। সেই সাত মাসের শেষে দেশটা শুচি করবার জন্য লোকদের নিযুক্ত করা হবে। তারা দেশময় ঘুরে বেড়িয়ে মাটিতে পড়ে থাকা হাড়গোড়ের খোঁজ করবে এবং সেগুলো কবর দেবে। দেশের মধ্যে ঘোরাফেরার সময় তাদের কেউ যদি মানুষের একটা হাড় দেখে তবে যে পর্যন্ত না কবর খুঁড়বার লোকেরা সেটাকে গোগের দলবলের উপত্যকায় কবর দেয় সেই পর্যন্ত তারা সেই হাড় দেখাবার জন্য একটা চিহ্ন খাড়া করে রাখবে। এইভাবে তারা দেশটা শুচি করবে। সেই উপত্যকায় একটা শহরের নাম হবে হামোনা (যার মানে দলবল)।’ “হে মানুষের সন্তান, আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, তুমি সব রকম পাখী ও সব বুনো পশুদের ডাক দিয়ে বল, ‘তোমরা জড়ো হও এবং আমি তোমাদের জন্য ইস্রায়েলের পাহাড়-পর্বতের উপরে যে বিরাট বলির ব্যবস্থা করছি তার জন্য চারদিক থেকে একত্র হও। সেখানে তোমরা মাংস ও রক্ত খাবে। তোমরা শক্তিশালী লোকদের মাংস খাবে এবং পৃথিবীর শাসনকর্তাদের রক্ত খাবে; এই লোকেরা যেন বাশন দেশের মোটাসোটা পুরুষ ভেড়া, বাচ্চা-ভেড়া, পাঁঠা ও ষাঁড়। যে বলির ব্যবস্থা আমি তোমাদের জন্য করব তাতে তোমরা পেট না ভরা পর্যন্ত চর্বি খাবে এবং মাতাল না হওয়া পর্যন্ত রক্ত খাবে। আমার টেবিলে তোমরা পেট ভরে ঘোড়া, রথচালক, শক্তিশালী লোক ও সব রকমের সৈন্যদের মাংস খাবে।’ “আমি জাতিদের মধ্যে আমার মহিমা প্রকাশ করব এবং আমার শক্তিশালী হাত দিয়ে তাদের যে শাস্তি দেব তা সমস্ত জাতিই দেখবে। সেই দিন থেকে ইস্রায়েলীয়েরা জানবে যে, আমিই তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু। আর জাতিরা জানবে যে, ইস্রায়েলীয়েরা তাদের পাপের জন্য বন্দীদশায় গিয়েছিল, কারণ তারা আমার প্র্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছিল। সেইজন্য আমার মুখ আমি তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলাম এবং শত্রুদের হাতে তাদের তুলে দিয়েছিলাম; তারা সবাই যুদ্ধে মারা পড়েছিল। তাদের অশুচিতা ও পাপ অনুসারে আমি তাদের সংগে ব্যবহার করেছিলাম এবং তাদের কাছ থেকে আমার মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলাম।” প্রভু সদাপ্রভু আরও বললেন, “আমি এখন যাকোবকে বন্দীদশা থেকে ফিরিয়ে আনব ও ইস্রায়েলের সব লোকদের মমতা করব এবং আমার নামের পবিত্রতার জন্য আগ্রহী হব। যখন তারা তাদের দেশে নিরাপদে বাস করবে এবং কেউ তাদের ভয় দেখাবে না তখন আমার প্রতি অবিশ্বস্ততার দরুন তাদের লজ্জার কথা তারা ভুলে যাবে। জাতিদের মধ্য থেকে আমি যখন তাদের ফিরিয়ে আনব এবং শত্রুদের দেশ থেকে তাদের জড়ো করব তখন অনেক জাতির চোখের সামনে আমি তাদের মধ্য দিয়ে আমার পবিত্রতা প্রকাশ করব। তখন তারা জানবে যে, আমিই তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, কারণ নানা জাতির মধ্যে তাদের বন্দীদশায় পাঠালেও আমি তাদের নিজেদের দেশে ফিরিয়ে আনব, কাউকে ফেলে রাখব না। তাদের কাছ থেকে আমি আমার মুখ আর ফিরিয়ে রাখব না, কারণ ইস্রায়েলীয়দের উপরে আমি আমার আত্মা ঢেলে দেব। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” আমাদের বন্দীদশার পঁচিশ বছরের শুরুতে, মাসের দশ দিনের দিন, যিরূশালেম শহরের পতনের চৌদ্দ বছর পরে সদাপ্রভুর হাত আমার উপরে ছিল। ঈশ্বরের দেওয়া দর্শনের মধ্যে তিনি আমাকে ইস্রায়েল দেশে নিয়ে গিয়ে একটা খুব উঁচু পাহাড়ের উপরে রাখলেন। সেই পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে কতগুলো দালান ছিল যেগুলো দেখতে শহরের মত। তিনি আমাকে সেখানে নিয়ে গেলেন আর আমি একটা মানুষকে দেখলাম যার দেহ ব্রোঞ্জের মত ঝক্‌মক করছিল। হাতে মসীনার দড়ি ও মাপের কাঠি নিয়ে তিনি ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। লোকটি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি চোখ দিয়ে দেখ ও কান দিয়ে শোন এবং আমি তোমাকে যা দেখাব তার সব কিছুতে মনোযোগ দাও, কারণ সেইজন্যই তোমাকে এখানে আনা হয়েছে। তুমি যা কিছু দেখবে সবই ইস্রায়েলীয়দের বলবে।” আমি দেখলাম একটা দেয়াল দিয়ে উপাসনা-ঘরের চারপাশটা ঘেরা রয়েছে। লোকটির হাতের মাপকাঠিটা লম্বায় ছয় হাত; প্রত্যেক হাত এক হাত চার আংগুল করে লম্বা। তিনি দেয়ালটা মাপলেন; সেটা এক মাপকাঠি মোটা আর এক মাপকাঠি উঁচু। তারপর তিনি পূর্বমুখী ফটকের কাছে গেলেন। তিনি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ফটকে ঢুকবার মুখটা মাপলেন; সেটা লম্বায় ছিল এক মাপকাঠি। ফটকে পাহারাদারদের কামরাগুলো এক মাপকাঠি লম্বা ও এক মাপকাঠি চওড়া এবং এক কামরা থেকে আর এক কামরার মধ্যেকার দেয়াল পাঁচ হাত মোটা ছিল। ফটকের শেষ অংশে উপাসনা-ঘরমুখী কামরায় ঢুকবার মুখটা ছিল এক মাপকাঠি লম্বা। তারপর তিনি সেই কামরাটা মাপলেন; সেটা চওড়ায় ছিল সেই কামরায় ঢুকবার মুখের চওড়ার চেয়ে দু’পাশে এক মাপকাঠি করে বেশী। সেই কামরাটা লম্বায় ছিল আট হাত এবং তা থেকে বের হবার পথের দু’পাশের থাম দু’টা ছিল দুই হাত করে চওড়া। ফটকের শেষে সেই কামরাটার মুখ ছিল উপাসনা-ঘরের দিকে। পূর্ব দিকের ফটকের ভিতরের দু’পাশে তিনটা করে মোট ছয়টা কামরা ছিল; সেগুলোর প্রত্যেকটির মাপ সমান এবং সেগুলোর মধ্যেকার দেয়ালগুলোর প্রত্যেকটির মাপ একই ছিল। তারপর তিনি ফটকের মাপ নিলেন; তার ঢুকবার পথ লম্বায় ছিল তেরো হাত এবং ঢুকবার মুখটা চওড়ায় ছিল দশ হাত। পাহারাদারদের প্রত্যেকটি কামরার সামনে ছিল এক হাত উঁচু ও এক হাত চওড়া দেয়াল এবং কামরাগুলো লম্বা ও চওড়ায় ছিল ছয় হাত। তারপর তিনি ফটকের ছাদের চওড়ার মাপ নিলেন; তিনি একটা কামরার বাইরের দিক থেকে তার সামনের কামরার বাইরের দিক পর্যন্ত মাপলেন- একটা কামরার দেয়ালের খোলা জায়গা থেকে তার সামনের কামরার দেয়ালের খোলা জায়গার দূরত্ব ছিল পঁচিশ হাত। তিনি ফটকের থাম দু’টার উচ্চতা ষাট হাত করে ধরলেন। থাম দু’টা থেকে ফটকের উঠান শুরু হয়েছে। ফটকে ঢুকবার মুখ থেকে ফটকের শেষ সীমার কামরা পর্যন্ত দূরত্ব ছিল পঞ্চাশ হাত। কামরাগুলোর বাইরের দেয়ালে এবং থাম দু’টার পাশের দেয়ালে জালি দেওয়া জানলা ছিল, আর ফটকের শেষে যে কামরা ছিল তার দেয়ালেও তা-ই ছিল; এইভাবে ফটকের দেয়ালগুলোতে ঐ রকম জানলা ছিল। এছাড়া থাম দু’টার গায়ে খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। তারপর তিনি আমাকে বাইরের উঠানে নিয়ে গেলেন। উঠানের সব দিকে আমি মোট ত্রিশটা এক দিক খোলা কামরা দেখলাম; সেগুলোর সামনে বাঁধানো জায়গা ছিল। সেই বাঁধানো জায়গা প্রত্যেকটি ফটকের দু’পাশেও ছিল এবং ফটকের লম্বার সমান ছিল; এটা ছিল নীচের বাঁধানো জায়গা। তারপর তিনি পূর্ব দিকের বাইরের উঠানের ফটকের শেষ সীমা থেকে ভিতরের উঠানের ফটকে ঢুকবার মুখ পর্যন্ত মাপলেন; তার দূরত্ব ছিল একশো হাত। সেইভাবে উত্তর দিকের দূরত্বও ছিল একশো হাত। তারপর তিনি বাইরের উঠানের উত্তরমুখী ফটকের লম্বা ও চওড়া মাপলেন। তার দু’পাশের তিনটা করে কামরার মাপ ও তার থামগুলো এবং তার শেষের কামরার মাপ প্রথম ফটকের সব কিছুর মাপের মতই ছিল। সেটা ছিল পঞ্চাশ হাত লম্বা ও পঁচিশ হাত চওড়া। তার জানলাগুলো, শেষের কামরা ও থামগুলোর খোদাই করা খেজুর গাছ পূর্বমুখী ফটকের মতই ছিল। সেখানে উঠবার সিঁড়ির সাতটা ধাপ ছিল এবং ফটকের শেষ সীমায় তার কামরা ছিল। ভিতরের উঠানের পূর্বমুখী ফটকের মতই তার উত্তরমুখী একটা ফটক ছিল। তিনি বাইরের উঠানের ফটক থেকে ভিতরের উঠানের ফটক পর্যন্ত মাপলেন; তা একশো হাত হল। তারপর তিনি আমাকে দক্ষিণ দিকে নিয়ে গেলেন। আমি বাইরের উঠানের দক্ষিণমুখী একটা ফটক দেখলাম। তিনি সেই ফটকের থামগুলো ও শেষের কামরা মাপলেন। অন্য ফটকগুলোর মত তার একই মাপ হল। অন্যান্য ফটকের মতই এই ফটকেও জানলা ছিল। ফটকটা ছিল পঞ্চাশ হাত লম্বা ও পঁচিশ হাত চওড়া। সেখানে উঠবার সিঁড়ির সাতটা ধাপ ছিল এবং ফটকের শেষ সীমায় তার কামরা ছিল। ফটকের ভিতরের দু’পাশের থামগুলোতে খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। ভিতরের উঠানেরও একটা দক্ষিণমুখী ফটক ছিল। তিনি সেই ফটক থেকে বাইরের উঠানের দক্ষিণমুখী ফটক পর্যন্ত মাপলেন; তা একশো হাত হল। তারপর তিনি ভিতরের উঠানের দক্ষিণমুখী ফটকের মধ্য দিয়ে আমাকে ভিতরের উঠানে নিয়ে গেলেন এবং ফটকটা মাপলেন; সেটা অন্যগুলোর মত একই মাপের হল। সেই ফটকের পাহারাদারদের কামরাগুলো, থাম দু’টা ও শেষের কামরাটা অন্যগুলোর মত একই মাপের ছিল। অন্যান্য ফটকের মতই এই ফটকেও জানলা ছিল। ফটকটা ছিল পঞ্চাশ হাত লম্বা ও পঁচিশ হাত চওড়া। ভিতরের উঠানের বিভিন্ন স্থানে থামের উপরে ছাদ দেওয়া জায়গা ছিল। সেগুলো ছিল পঁচিশ হাত লম্বা ও পাঁচ হাত চওড়া। ভিতরের উঠানের দক্ষিণমুখী ফটকে ঢুকবার কামরার মুখ ছিল বাইরের উঠানের দিকে। ফটকে ঢুকবার পথের দু’পাশের থামগুলোতে খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। সেখানে উঠবার সিঁড়ির আটটা ধাপ ছিল। তারপর তিনি আমাকে ভিতরের উঠানের পূর্ব দিকে নিয়ে আসলেন এবং সেখানকার ফটকটা মাপলেন; সেটার মাপ অন্যগুলোর মতই ছিল। তার পাহারাদারদের কামরাগুলো, থাম দু’টা ও ঢুকবার কামরাটা অন্যগুলোর মত একই মাপের ছিল। অন্যান্য ফটকের মত এই ফটকেও জানলা ছিল। ফটকটা পঞ্চাশ হাত লম্বা ও পঁচিশ হাত চওড়া ছিল। তার ঢুকবার কামরার মুখ ছিল বাইরের উঠানের দিকে। ফটকে ঢুকবার পথের দু’পাশের থামগুলোতে খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। সেখানে উঠবার সিঁড়ির আটটা ধাপ ছিল। তারপর তিনি আমাকে উত্তর-ফটকের কাছে এনে সেটা মাপলেন। সেটা অন্যগুলোর মত একই মাপের ছিল। তার পাহারাদারদের কামরাগুলো, থাম দু’টা ও ঢুকবার কামরাটা অন্যগুলোর মত একই মাপের ছিল। অন্যান্য ফটকের মত এই ফটকেও জানলা ছিল। ফটকটা পঞ্চাশ হাত লম্বা ও পঁচিশ হাত চওড়া ছিল। তার থাম দু’টা ছিল বাইরের উঠানের দিকে; সেগুলোতে খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। সেখানে উঠবার সিঁড়ির আটটা ধাপ ছিল। বাইরের উঠানের মধ্যে ভিতরের ফটকের থামের পাশে এক দিক খোলা একটা কামরা ছিল; সেটা ছিল পোড়ানো-উৎসর্গের পশুর মাংস ধোবার জায়গা। ফটকে ঢুকবার কামরার দু’পাশে দু’টা করে টেবিল ছিল। সেগুলোর উপরে পোড়ানো-উৎসর্গ, পাপ-উৎসর্গ ও দোষ-উৎসর্গের পশুর মাংস টুকরা করা হয়। উত্তরমুখী ফটকে ঢুকবার পথের এক পাশে সিঁড়ির কাছে দু’টা টেবিল এবং সিঁড়ির অন্য পাশে দু’টা টেবিল ছিল। এইভাবে ফটকের একপাশে চারটা ও অন্য পাশে চারটা মোট আটটা টেবিল ছিল যার উপর উৎসর্গের পশুর মাংস টুকরা করা হয়। পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য যে চারটা টেবিল ছিল সেগুলো পাথর কেটে তৈরী করা; প্রত্যেকটা টেবিল ছিল দেড় হাত লম্বা, দেড় হাত চওড়া ও এক হাত উঁচু। সেখানে উৎসর্গের যন্ত্রপাতি রাখা হয়। চার আংগুল লম্বা দু’কাঁটার আঁকড়া দেয়ালের গায়ে লাগানো ছিল। টেবিলগুলোর উপরে উৎসর্গের মাংস রাখা হয়। ভিতরের উঠানের মধ্যে ফটকের পাশে গায়কদের জন্য তিনটা এক দিক খোলা কামরা ছিল; দু’টা উত্তর-ফটকের পাশে দক্ষিণমুখী আর একটা পূর্ব-ফটকের পাশে উত্তরমুখী। তারপর তিনি উঠানটা মাপলেন। সেটা ছিল একশো হাত লম্বা ও একশো হাত চওড়া একটা চারকোণা জায়গা। আর বেদীটা উপাসনা-ঘরের সামনে ছিল। তারপর তিনি আমাকে উপাসনা-ঘরের বারান্দায় আনলেন এবং বারান্দার সামনের থাম দু’টা ও ঢুকবার পথের দু’পাশের বাজু মাপলেন। প্রত্যেকটা বাজু পাঁচ হাত চওড়া ও তিন হাত মোটা ছিল। বারান্দাটা ছিল বিশ হাত লম্বা এবং এগারো হাত চওড়া। সেখানে উঠবার একটা সিঁড়ি ছিল এবং সেই দু’টা বাজুর সামনে ছিল একটা করে থাম। তারপর তিনি আমাকে উপাসনা-ঘরের প্রধান কামরায় এনে দরজার বাজু দু’টা মাপলেন; দু’দিকের বাজু চওড়ায় ছিল ছয় হাত করে; উপাসনা-ঘরের দেয়ালও ছিল ছয় হাত মোটা। দুই বাজুর মাঝখানের জায়গাটা ছিল দশ হাত এবং প্রত্যেকটা বাজু পাঁচ হাত মোটা ছিল। তিনি প্রধান কামরাটাও মাপলেন; সেটা চল্লিশ হাত লম্বা ও বিশ হাত চওড়া ছিল। তারপর তিনি ভিতরের কামরায় গিয়ে সেখানে ঢুকবার দরজার বাজু দু’টা মাপলেন; প্রত্যেকটা বাজু ছিল দু’হাত করে চওড়া। দুই বাজুর মাঝখানের জায়গাটা ছিল ছয় হাত এবং বাজুর সংগে লাগানো দু’পাশের দেয়াল লম্বায় ছিল সাত হাত করে। তারপর তিনি ভিতরের কামরার মাপ নিলেন; সেটা লম্বায় ছিল বিশ হাত আর চওড়ায় ছিল বিশ হাত। তিনি আমাকে বললেন, “এটাই মহাপবিত্র স্থান।” তারপর তিনি উপাসনা-ঘরের দেয়াল মাপলেন; সেটা ছিল ছয় হাত মোটা এবং সেই দেয়ালের বাইরের দিকের তিন পাশের গা ঘেঁষে যে কামরাগুলো ছিল তার প্রত্যেকটা চার হাত চওড়া ছিল। সেই কামরাগুলো একটার উপরে আর একটা করে তিন তলা ছিল; প্রত্যেক তলায় ত্রিশটা করে কামরা ছিল। কামরাগুলোর ভার বইবার জন্য উপাসনা-ঘরের দেয়ালের তিন পাশে থাক্‌ ছিল। কামরাগুলোর বীম সেই থাকের উপর বসানো ছিল, উপাসনা-ঘরের দেয়ালের মধ্যে ঢুকানো ছিল না। সেইজন্য উপাসনা-ঘরের তিন পাশের কামরাগুলো চওড়ায় নীচের তলা থেকে উপরের তলা পর্যন্ত পর পর বেড়ে গেছে। নীচের তলা থেকে দু’তলার মধ্য দিয়ে উপর তলা পর্যন্ত একটা সিঁড়ি উঠে গেছে। আমি দেখলাম, উপাসনা-ঘরটা একটা উঁচু সমান জায়গার উপর রয়েছে এবং সেটাই ছিল উপাসনা-ঘর ও কামরাগুলোর ভিত্তি। সেই ভিত্তি এক মাপকাঠি, অর্থাৎ ছয় হাত উঁচু ছিল এবং কামরাগুলো থেকে পাঁচ হাত বাড়ানো ছিল। উপাসনা-ঘরের পাশের কামরাগুলোতে ঢুকবার জন্য উত্তর দিকে একটা ও দক্ষিণ দিকে আর একটা দরজা ছিল এবং সেই দু’টা দরজা খোলা জায়গার দিকে মুখ করা ছিল। ভিত্তির সেই পাঁচ হাত বাড়ানো অংশটা ছিল দরজা দু’টার কাছে যাবার পথ। উপাসনা-ঘরের পশ্চিম দিকে খোলা জায়গার শেষ সীমায় একটা দালান ছিল। সেটা সত্তর হাত চওড়া এবং নব্বই হাত লম্বা ছিল। তার চারপাশের দেয়ালগুলো ছিল পাঁচ হাত মোটা। তারপর তিনি উপাসনা-ঘরটা মাপলেন; সেটা ছিল লম্বায় একশো হাত এবং উপাসনা-ঘর থেকে খোলা জায়গা ও পিছনের দেয়াল সুদ্ধ দালানটা লম্বায় ছিল একশো হাত। পূর্ব দিকে উপাসনা-ঘরের সামনে যে খোলা জায়গা ছিল তা লম্বায় ছিল একশো হাত। একটা মানুষের মুখ ও অন্যটা সিংহের মুখ; মানুষের মুখ একটা খেজুর গাছের দিকে ও সিংহের মুখ অন্য খেজুর গাছের দিকে। গোটা উপাসনা-ঘরটার দেয়ালের চারদিকে এগুলো খোদাই করা ছিল। প্রত্যেকটি কামরার দেয়ালে মেঝে থেকে শুরু করে ঢুকবার মুখের উপরের জায়গা পর্যন্ত সব জায়গায় করূব ও খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। প্রধান কামরার দরজার ফ্রেমটা চৌকোণা ছিল এবং মহাপবিত্র স্থানের দরজাটাও একই রকম ছিল। প্রধান কামরায় তিন হাত উঁচু, দু’হাত লম্বা ও দু’হাত চওড়া কাঠের একটা বেদী ছিল; এর চার কোণা, ভিত্তি ও চারপাশ ছিল কাঠের তৈরী। তিনি আমাকে বললেন, “এটা হচ্ছে সেই টেবিল যেটা সদাপ্রভুর সামনে রয়েছে।” প্রধান কামরা ও মহাপবিত্র স্থানে একটা করে দুই পাল্লার দরজা ছিল। প্রত্যেকটা পাল্লা দু’টা তক্তা দিয়ে তৈরী; তক্তা দু’টা কব্‌জার উপরে ঘোরে। প্রধান কামরার দরজার পাল্লা দু’টার উপরে দেয়ালের মতই করূব ও খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। বারান্দায় ঢুকবার মুখের ছাদের নীচে একটা বীম ছিল। বারান্দার জালি দেওয়া জানলাগুলোর দু’পাশে ও বাজুগুলোতে খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। এছাড়া উপাসনা-ঘরের বীমগুলোতে ও পাশের কামরাগুলোতেও খেজুর গাছ খোদাই করা ছিল। পরে তিনি আমাকে উপাসনা-ঘরের উত্তর দিকের বাইরের উঠানে এনে একটা দালানে নিয়ে গেলেন। সেই দালানটা উপাসনা-ঘরের উত্তর দিকের খোলা জায়গার পাশে এবং পশ্চিম দিকের দালানটার কাছে ছিল। সেটা ছিল একশো হাত লম্বা ও পঞ্চাশ হাত চওড়া এবং তাতে ঢুকবার পথ ছিল উত্তরমুখী। এই দালানটা ছিল ভিতরের উঠানের বিশ হাতের সেই খোলা জায়গা এবং বাইরের উঠানের বাঁধানো জায়গার মধ্যে। দালানটা তিন তলা ছিল এবং প্রত্যেক তলায় কামরাগুলোর সামনে হাঁটবার পথ ছিল। সেই পথ ছিল দশ হাত চওড়া; সেখান থেকে দালানের ভিতরের খোলা জায়গায় যাবার জন্য এক হাত চওড়া একটা পথ ছিল। দালানের কামরাগুলো উত্তর দিকে খোলা ছিল। উপাসনা-ঘরের দক্ষিণ দিকে ঠিক একই রকম একটা দালান ছিল। সেটা ছিল ভিতরের উঠানের খোলা জায়গার পাশে এবং পশ্চিম দিকের দালানটার কাছে। উত্তর দিকের মতই এই দালানটা বরাবর একটা পথ ছিল। এই দালানটা সব দিক থেকে, অর্থাৎ লম্বা, চওড়া, ঢুকবার পথ এবং ভিতরের পরিকল্পনা উত্তর দিকের দালানের মত ছিল। সেই দালানের ঢুকবার পথ ছিল দক্ষিণ দিকে। দালানটার পূর্ব দিকে আর একটা ঢুকবার পথ ছিল এবং তার সামনেও একটা দেয়াল ছিল। তারপর তিনি আমাকে বললেন, “উপাসনা-ঘরের খোলা জায়গার উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দালান দু’টা পুরোহিতদের। যে পুরোহিতেরা সদাপ্রভুর কাছে যায় তারা এই দালান দু’টাতে উৎসর্গের মহাপবিত্র জিনিসগুলো খাবে। সেখানে তারা শস্য-উৎসর্গ, পাপ-উৎসর্গ ও দোষ-উৎসর্গের মহাপবিত্র জিনিসগুলো রাখবে, কারণ দালান দু’টা পবিত্র। পুরোহিতেরা সেবা-কাজের জন্য উপাসনা-ঘরে যে পোশাকগুলো পরে ঢুকবে সেগুলো এই দালান দু’টাতে খুলে রাখবে এবং তার পরে বাইরের উঠানে যেতে পারবে, কারণ সেগুলো পবিত্র পোশাক। সাধারণ লোকদের জায়গায় যাবার আগে তাদের অন্য কাপড় পরতে হবে।” উপাসনা-ঘরের চারপাশের দেয়ালের ভিতরের সব কিছু মাপা শেষ করলে পর তিনি আমাকে পূর্ব দিকের ফটক দিয়ে বাইরে আনলেন এবং বাইরের চারপাশের এলাকাটা মাপলেন। পবিত্র জায়গা থেকে সাধারণ লোকদের জায়গা আলাদা করবার জন্য চারপাশের প্রত্যেক দিকে পাঁচশো মাপকাঠি লম্বা একটা দেয়াল ছিল। তারপর তিনি আমাকে পূর্বমুখী ফটকের কাছে আনলেন, আর আমি পূর্ব দিক থেকে ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মহিমা আসতে দেখলাম। তাঁর গলার স্বর ছিল জোরে বয়ে যাওয়া জলের গর্জনের মত এবং তাঁর মহিমায় পৃথিবী উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এই দর্শন দেখে আমি উবুড় হয়ে পড়লাম; আমি শহর-ধ্বংসের যে দর্শন কবার নদীর ধারে দেখেছিলাম এই দর্শনটা ছিল তারই মত। সদাপ্রভুর মহিমা পূর্বমুখী ফটকের মধ্য দিয়ে উপাসনা-ঘরে ঢুকল। তখন সদাপ্রভুর আত্মা আমাকে তুলে ভিতরের উঠানে নিয়ে গেলেন, আর সদাপ্রভুর মহিমায় উপাসনা-ঘরটা ভরে গেল। সেই মানুষটি তখন আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর আমি উপাসনা-ঘরের মধ্য থেকে কাউকে আমার সংগে কথা বলতে শুনলাম। তিনি বললেন, “হে মানুষের সন্তান, এটাই আমার সিংহাসনের স্থান ও আমার পা রাখবার জায়গা। আমি এখানেই ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে চিরকাল বাস করব। ইস্রায়েলীয়েরা আর কখনও আমার পবিত্র নাম কলংকিত করবে না। তাদের কিম্বা তাদের রাজাদের প্রতিমাপূজা দ্বারা এবং পূজার উঁচু স্থানে তাদের রাজাদের মৃতদেহ নিয়ে যাবার দ্বারা আমার নাম কলংকিত করবে না। তারা আমার ঘরের পাশেই তাদের ঘর তৈরী করেছিল; তাদের ঘর ও আমার ঘরের মধ্যে কেবল একটা দেয়াল ছিল। তাদের জঘন্য কাজ দ্বারা তারা আমার পবিত্র নাম কলংকিত করেছিল। কাজেই আমি ক্রোধে তাদের ধ্বংস করেছিলাম। এখন তারা আমার কাছ থেকে তাদের প্রতিমাপূজা ও তাদের রাজাদের মৃতদেহ দূর করুক; তাতে আমি চিরকাল তাদের মধ্যে বাস করব। “হে মানুষের সন্তান, তুমি ইস্রায়েলীয়দের কাছে এই উপাসনা-ঘরের বিষয় বল এবং এর নক্‌শাটার বিষয় চিন্তা করে দেখতে বল, যাতে তারা তাদের পাপের জন্য লজ্জিত হয়। তারা যদি তাদের সব কাজের জন্য লজ্জিত হয় তবে উপাসনা-ঘরের নক্‌শাটার খুঁটিনাটি তাদের জানাও; তার কাঠামো, তার বাইরে যাবার ও ভিতরে ঢুকবার পথ, অর্থাৎ তার পুরো নক্‌শা ও তার সব নিয়ম ও আইন-কানুন তাদের কাছে প্রকাশ কর। তার সব কিছু তাদের সামনে লেখ যাতে তারা তার নক্‌শা অনুসারে কাজ করতে পারে এবং তার সব নিয়ম মেনে চলতে পারে। “এই হল উপাসনা-ঘরের আইন- পাহাড়ের উপরকার চারদিকের সব এলাকা হবে মহা পবিত্র। উপাসনা-ঘরের আইন এই রকমই। “উপাসনা-ঘরের বেদীর মাপ হাতের মাপ অনুসারে করা হয়েছিল; প্রত্যেক হাত ছিল এক হাত চার আংগুল করে। এই হল বেদীর মাপ: বেদীর ভিত্তিটা এক হাত উঁচু ও তার চারদিক বেদী থেকে এক হাত করে বাড়ানো এবং ভিত্তির চারদিকের কিনারা আধ হাত উঁচু। বেদীটা এই রকম উঁচু হবে- মাঝখানের অংশটাও চৌকো, চৌদ্দ হাত লম্বা ও চৌদ্দ হাত চওড়া। কাজেই সেই অংশটা তার উপরের অংশ থেকে চারদিকে এক হাত বাড়ানো থাকবে; তার কিনারা আধা হাত উঁচু থাকবে। বেদীর সিঁড়িগুলো পূর্বমুখী।” তারপর তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন যে, বেদীটা তৈরী হলে পর যেদিন সেটি সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করা হবে যাতে তার উপর পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করা ও রক্ত ছিটানো যায় সেই দিন এই নিয়ম পালন করতে হবে: সাদোকের বংশের যে পুরোহিতেরা আমার সেবা করবার জন্য আমার কাছে আসে তুমি পাপ-উৎসর্গের জন্য তাদের একটা যুবা ষাঁড় দেবে। তুমি তার কিছু রক্ত নিয়ে বেদীর চারটা শিংয়ে, মাঝখানের অংশের চার কোণায় ও কিনারার সব দিকে লাগাবে; এইভাবে পাপ ঢাকবার অনুষ্ঠান করে বেদীটা শুচি করবে। তুমি পাপ-উৎসর্গের জন্য জবাই করা ষাঁড়টা নিয়ে উপাসনা-ঘরের এলাকার বাইরে পবিত্র জায়গার নির্দিষ্ট স্থানে সেটা পোড়াবে। “দ্বিতীয় দিনে তুমি একটা খুঁতহীন পাঁঠা নিয়ে আসবে, আর পুরোহিতেরা পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে এবং বেদীটা ষাঁড়ের রক্ত দিয়ে যেমন শুচি করা হয়েছিল তেমনিভাবে শুচি করবে। “সাত দিন ধরে তোমাকে প্রতিদিন পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা করে পাঁঠা দিতে হবে। এছাড়াও একটা যুবা ষাঁড় ও পাল থেকে একটা ভেড়া দিতে হবে; সবগুলোই যেন খুঁতহীন হয়। পুরোহিতেরা সাত দিন ধরে বেদীর পাপ ঢাকবার অনুষ্ঠান করে সেটা শুচি করবে; এইভাবে তারা বেদীটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করবে। এই দিনগুলো শেষ হলে পর আট দিনের দিন থেকে পুরোহিতেরা সেই বেদীর উপর তোমাদের পোড়ানো ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। তখন আমি তোমাদের গ্রহণ করব। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” তারপর সেই মানুষটি আমাকে উপাসনা-ঘরের পূর্বমুখী বাইরের ফটকের কাছে ফিরিয়ে আনলেন; ফটকটা বন্ধ ছিল। সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “এই ফটকটা বন্ধই থাকবে, খোলা হবে না যাতে কেউ এর ভিতর দিয়ে ঢুকতে না পারে। এটা বন্ধ থাকবে, কারণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এর মধ্য দিয়ে ঢুকেছেন। কেবলমাত্র শাসনকর্তাই ফটকের মধ্যে বসে সদাপ্রভুর সামনে খেতে পারবে। সে শেষের কামরা দিয়ে ফটকে ঢুকবে আর একই পথ দিয়ে বের হবে।” তারপর সেই মানুষটি আমাকে উত্তর ফটকের পথ দিয়ে উপাসনা-ঘরের সামনে নিয়ে আসলেন। আমি দেখলাম সদাপ্রভুর ঘরটা তাঁর মহিমায় ভরে গেছে; তখন আমি উবুড় হয়ে পড়লাম। তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি ভাল করে দেখ ও কান দিয়ে শোন এবং আমার ঘর সম্বন্ধে আমি তোমাকে যে সব নিয়ম ও আইন-কানুনের বিষয় বলব তার প্রত্যেকটিতে মনোযোগ দাও। উপাসনা-ঘরে কারা ঢুকতে পারবে এবং কারা ঢুকতে পারবে না সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও। তুমি বিদ্রোহী জাতি ইস্রায়েলকে বল যে, প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমাদের জঘন্য আচার-ব্যবহার যথেষ্ট হয়েছে। তোমাদের অন্যান্য জঘন্য আচার-ব্যবহারের সংগে তোমরা আমার কাছে খাবার, চর্বি ও রক্ত উৎসর্গ করবার সময় অন্তর ও দেহে সুন্নত-না-করানো বিদেশীদের আমার ঘরে এনে আমার ঘর অপবিত্র করেছ এবং তাদের কাজের মধ্য দিয়ে তোমরা আমার ব্যবস্থা বাতিল করেছ। আমার পবিত্র জিনিসগুলোর প্রতি তোমাদের যে কর্তব্য করবার কথা তা না করে আমার ঘরের ভার তোমরা অন্যদের হাতে তুলে দিয়েছ। যে বিদেশীদের অন্তর ও দেহের সুন্নত করানো হয় নি তারা আমার ঘরে ঢুকতে পারবে না; এমন কি, ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে বাস করা বিদেশীরাও পারবে না। “‘ইস্রায়েলীয়েরা যখন বিপথে গিয়েছিল তখন তাদের সংগে যে লেবীয়েরা আমাকে ছেড়ে তাদের প্রতিমাগুলোর পিছনে ঘুরে বেড়িয়ে আমার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল তাদের পাপের ফল তাদের বহন করতেই হবে। তবুও উপাসনা-ঘরের ফটকগুলো রক্ষার ভার পেয়ে ও সেখানে কাজ করে তারা আমার ঘরের সেবা-কাজ করতে পারবে। তারা পোড়ানো-উৎসর্গের পশু জবাই করতে ও লোকদের জন্য উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পারবে এবং লোকদের সেবা করবার জন্য তাদের সামনে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু তারা প্রতিমাগুলোর সামনে লোকদের সেবা করেছে এবং ইস্রায়েল জাতিকে পাপে ফেলেছে, সেইজন্য আমি প্রভু সদাপ্রভু শপথ করেছি যে, তাদের পাপের ফল তাদের বহন করতেই হবে। তারা পুরোহিত হিসাবে আমার সেবা করবার জন্য আমার কাছে আসবে না কিম্বা আমার কোন পবিত্র কিম্বা মহাপবিত্র জিনিসের কাছে আসতে পারবে না; তাদের জঘন্য আচার-ব্যবহারের লজ্জা তাদের বহন করতেই হবে। তবুও উপাসনা-ঘরের প্রতি কর্তব্য ও সেখানকার সমস্ত কাজের ভার আমি তাদের উপর দেব। “‘কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা যখন আমার কাছ থেকে বিপথে গিয়েছিল তখন সাদোকের বংশের যে লেবীয়েরা পুরোহিত হিসাবে আমার ঘরে বিশ্বস্তভাবে তাদের কর্তব্য করেছে তারাই আমার সেবা-কাজ করতে আমার কাছে আসতে পারবে; তারা চর্বি ও রক্ত উৎসর্গ করবার জন্য আমার সামনে দাঁড়াতে পারবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। তারাই কেবল আমার ঘরে ঢুকতে পারবে; কেবল তারাই আমার সেবা-কাজের জন্য আমার টেবিলের কাছে আসতে পারবে এবং তারাই আমার ঘরের সমস্ত কাজ করবে। “‘মসীনার পোশাক পরে তারা ভিতরের উঠানের ফটকগুলো দিয়ে ঢুকবে; ভিতরের উঠানের ফটকগুলোর কাছে কিম্বা উপাসনা-ঘরের মধ্যে সেবা-কাজের সময় তারা কোন পশমের পোশাক পরতে পারবে না। তাদের মাথায় মসীনার পাগড়ী থাকবে এবং তারা মসীনার জাংগিয়া পরবে; যাতে ঘাম হয় এমন কাপড় তারা পরবে না। তারা যখন বাইরের উঠানে থাকা লোকদের কাছে যাবে তখন সেবা-কাজের জন্য তারা যে পোশাক পরেছিল তা খুলে পবিত্র কামরায় রেখে অন্য কাপড়-চোপড় পরবে, যাতে তাদের পোশাকের ছোঁয়ায় লোকেরা আমার উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে না যায়। “‘তাদের মাথার চুল তারা কামিয়ে ফেলবে না কিম্বা চুল লম্বা রাখবে না কিন্তু চুল ছোট করে কাটবে। কোন পুরোহিত আংগুর-রস খেয়ে ভিতরের উঠানে ঢুকবে না। বিধবা কিম্বা স্বামী যাকে ছেড়ে দিয়েছে এমন কোন স্ত্রীলোককে তারা বিয়ে করবে না; তারা কেবল ইস্রায়েল জাতির কুমারী মেয়েদের কিম্বা পুরোহিতের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে। আমার উদ্দেশ্যে যা আলাদা করা হয়েছে ও যা আলাদা করা হয় নি তার মধ্যে পার্থক্য কি তা তারা আমার লোকদের শিক্ষা দেবে এবং কোন্‌টা শুচি ও কোন্‌টা অশুচি তা তাদের দেখিয়ে দেবে। “‘কোন মামলা-মকদ্দমা হলে পুরোহিতেরা বিচারকের কাজ করবে এবং আমার নির্দেশ অনুসারে তার রায় দেবে। আমার নির্দিষ্ট করা সব পর্বগুলোর জন্য তারা আমার আইন-কানুন ও নিয়মগুলো পালন করবে এবং বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করবে। “‘পুরোহিত কোন মৃত লোকের কাছে গিয়ে নিজেকে অশুচি করবে না; কিন্তু মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই কিম্বা অবিবাহিতা বোনের জন্য নিজেকে অশুচি করতে পারবে। শুচি হলে পর তাকে সাত দিন অপেক্ষা করতে হবে। তারপর যেদিন সে সেবা-কাজের জন্য উপাসনা-ঘরের ভিতরের উঠানে যাবে সেই দিন তাকে নিজের জন্য পাপ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে হবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “‘পুরোহিতদের সম্পত্তি বলতে কেবল আমিই থাকব। তোমরা ইস্রায়েলীয়েরা তোমাদের দেশে তাদের কোন সম্পত্তি দেবে না; আমিই হব তাদের সম্পত্তি। তারা শস্য-উৎসর্গ, পাপ-উৎসর্গ ও দোষ-উৎসর্গের জিনিস খাবে; ইস্রায়েল দেশে সদাপ্রভুর উদ্দেশে দেওয়া প্রত্যেকটি জিনিসই তাদের হবে; সেগুলো ছাড়িয়ে আনা যাবে না। প্রথমে কাটা সব রকম ফসলের সবচেয়ে ভাল অংশটা এবং তোমাদের সমস্ত উপহারগুলো পুরোহিতদের হবে। তোমাদের নতুন ময়দার প্রথম অংশ তোমরা তাদের দেবে যাতে তোমাদের পরিবারের উপর আশীর্বাদ থাকে। মরে গেছে কিম্বা বুনো জানোয়ারে ছিঁড়ে ফেলেছে এমন কোন পাখী বা পশু পুরোহিতেরা খাবে না। “‘তোমরা যখন সম্পত্তি হিসাবে দেশের জমি ভাগ করে দেবে তখন পঁচিশ হাজার মাপকাঠি লম্বা ও বিশ হাজার মাপকাঠি চওড়া দেশের এক খণ্ড জমি সদাপ্রভুকে দেবে; সেই পুরো এলাকাটাই হবে পবিত্র। তার মধ্য থেকে পাঁচশো মাপকাঠি লম্বা ও পাঁচশো মাপকাঠি চওড়া একটা অংশ উপাসনা-ঘরের জন্য থাকবে; তার চারপাশে পঞ্চাশ হাত খোলা জায়গা থাকবে। সেই পুরো পবিত্র এলাকার মধ্য থেকে পঁচিশ হাজার মাপকাঠি লম্বা এবং দশ হাজার মাপকাঠি চওড়া একটা অংশ মেপে রাখবে। এই অংশের মধ্যেই উপাসনা-ঘর, অর্থাৎ মহাপবিত্র জায়গা থাকবে। এই অংশটা পুরোহিতদের জন্য; তা পবিত্র। পুরোহিতেরা উপাসনা-ঘরে সেবা-কাজ করে এবং সদাপ্রভুর সেবা করবার জন্য তাঁর সামনে এগিয়ে যায়। সেই জায়গাতেই হবে তাদের ঘর-বাড়ী এবং উপাসনা-ঘরের জন্য পবিত্র জায়গা। বাকী পঁচিশ হাজার মাপকাঠি লম্বা ও দশ হাজার মাপকাঠি চওড়া জায়গা সেই লেবীয়দের অধিকারে থাকবে যারা উপাসনা-ঘরের কাজ করে। সেখানেই তারা বাস করবে। “‘পবিত্র এলাকার পাশে পাঁচ হাজার মাপকাঠি চওড়া ও পঁচিশ হাজার মাপকাঠি লম্বা একটা অংশ শহরের জন্য রাখতে হবে। সেই শহর গোটা ইস্রায়েল জাতির জন্য থাকবে। “‘পবিত্র এলাকা ও শহরের সীমানার পূর্ব ও পশ্চিম পাশের জমি শাসনকর্তার হবে। শাসনকর্তার এই দুই জায়গা দেশের পশ্চিম ও পূর্ব সীমানা পর্যন্ত যাবে। এই জায়গার উত্তর-দক্ষিণের মাপ পবিত্র এলাকা ও শহরের উত্তর-দক্ষিণের মাপের সমান হবে। এই জায়গা ইস্রায়েল দেশের শাসনকর্তার অধিকারে থাকবে। আমার শাসনকর্তারা আমার লোকদের উপর আর অত্যাচার করবে না, বরং ইস্রায়েল জাতিকে তার গোষ্ঠীগুলো অনুসারে জমি ভোগ করতে দেবে। “‘হে ইস্রায়েলের শাসনকর্তারা, আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, যথেষ্ট হয়েছে। এখন জোর-জবরদস্তি ও অত্যাচার করা ছেড়ে দিয়ে তোমরা ন্যায় ও সৎ কাজ কর। আমার লোকদের জায়গা তোমাদের দখলে নেওয়া বন্ধ কর। তোমরা ঠিক দাঁড়িপাল্লা ও অন্যান্য মাপের জিনিস ব্যবহার কর। ঐফা ও বাৎ-এর মাপ সমান হবে; এক বাৎ হোমরের দশ ভাগের একভাগ এবং এক ঐফাও হোমরের দশ ভাগের এক ভাগ; এই দু’টাই মাপা হবে হোমর অনুসারে। এক শেখেলে থাকবে বিশ গেরা। এক মানিতে থাকবে ষাট শেখেল। “‘তোমরা উপহার হিসাবে যা দেবে তা হল: তোমাদের সমস্ত গমের ষাট ভাগের এক ভাগ, সমস্ত যবের ষাট ভাগের এক ভাগ, সমস্ত জলপাই তেলের একশো ভাগের এক ভাগ। তেলের পরিমাণ মাপবার জন্য বাৎ-এর মাপ ব্যবহার করতে হবে। দশ বাৎ-এর সমান এক হোমর আর এক হোমরের সমান এক কোর। ইস্রায়েল দেশের মধ্যে ভাল জমিতে চরে এমন প্রতি দু’শো ছাগল-ভেড়া থেকে একটা বাচ্চা দেবে। লোকদের পাপ ঢাকা দেবার জন্য এগুলো শস্য-উৎসর্গ, পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের জন্য ব্যবহার করা হবে। দেশের সব লোক ইস্রায়েলের শাসনকর্তাকে এই উপহার দেবে। শাসনকর্তার কর্তব্য হবে সব পর্ব, অমাবস্যা ও বিশ্রাম দিনের জন্য, অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতির নির্দিষ্ট সমস্ত পর্বের জন্য পোড়ানো-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের জিনিস যোগান দেওয়া। সে ইস্রায়েল জাতির পাপ ঢাকা দেবার জন্য পাপ-উৎসর্গ, শস্য-উৎসর্গ, পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের জিনিস যোগান দেবে। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু আরও বলছি, তোমরা প্রথম মাসের প্রথম দিনে একটা খুঁতহীন যুবা ষাঁড় নিয়ে উপাসনা-ঘরটা শুচি করবে। পুরোহিত পাপ-উৎসর্গের কিছু রক্ত নিয়ে উপাসনা-ঘরের দুই বাজুতে, বেদীর উপরের অংশের চার কোণায় ও ভিতরের উঠানের ফটকের দুই বাজুতে লাগাবে। যারা ভুল করে কিম্বা না জেনে উপাসনা-ঘরের বিরুদ্ধে কোন পাপ করে ফেলে তোমরা তাদের জন্য মাসের সাত দিনের দিন ঐ একই কাজ করবে। এইভাবে তোমরা পাপ ঢাকা দেবার অনুষ্ঠান করে উপাসনা-ঘরটা শুচি করবে। “‘প্রথম মাসের চৌদ্দ দিনের দিন তোমরা উদ্ধার-পর্ব পালন করবে। এই পর্বটা সাত দিনের; সেই সময়ে তোমাদের খামিহীন রুটি খেতে হবে। সেই দিন শাসনকর্তা তার নিজের ও দেশের সব লোকদের জন্য পাপ-উৎসর্গ হিসাবে একটা ষাঁড় দেবে। পর্বের সাত দিনের প্রত্যেক দিন সে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য খুঁতহীন সাতটা ষাঁড় ও সাতটা ভেড়া দেবে এবং পাপ-উৎসর্গের জন্য একটা পাঁঠা দেবে। শস্য-উৎসর্গ হিসাবে তাকে প্রত্যেক ষাঁড় ও ভেড়ার জন্য আঠারো কেজি ময়দা এবং পৌনে চার লিটার তেল দিতে হবে। “‘সাত মাসের পনেরো দিনের দিন যে সাত দিনের পর্ব আরম্ভ হয় সেই সময় উৎসর্গের জন্য শাসনকর্তা পাপ-উৎসর্গের, পোড়ানো-উৎসর্গের ও শস্য-উৎসর্গের জিনিস এবং তেল দেবে। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু বলছি, ভিতরের উঠানের পূর্বমুখী ফটকটা কাজের ছয় দিন বন্ধ থাকবে, কিন্তু বিশ্রাম দিনে ও অমাবস্যার দিনে সেটা খোলা হবে। তখন শাসনকর্তাকে বাইরে থেকে ফটকে ঢুকবার কামরা দিয়ে ঢুকে ফটকের বাজুর পাশে দাঁড়াতে হবে। পুরোহিতেরা তার পোড়ানো-উৎসর্গ ও যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। ফটকে ঢুকবার মুখে সে উপাসনা করবার পরে বের হয়ে যাবে, কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত ফটক খোলা থাকবে। লোকেরাও বিশ্রামবার ও অমাবস্যাতে সেই ফটকের বাইরে সদাপ্রভুর উপাসনা করবে। বিশ্রাম দিনে শাসনকর্তাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য ছয়টা বাচ্চা-ভেড়া ও একটা পুরুষ ভেড়া আনতে হবে; সবগুলোই যেন নিখুঁত হয়। পুরুষ ভেড়ার সংগে শস্য-উৎসর্গের জন্য আঠারো কেজি ময়দা দিতে হবে আর বাচ্চা-ভেড়াগুলোর সংগে যতটা খুশী ততটা ময়দা দিতে হবে; প্রত্যেক আঠারো কেজি ময়দার জন্য পৌনে চার লিটার করে তেল দিতে হবে। অমাবস্যার দিনে তাকে একটা যুবা ষাঁড় ও ছয়টা বাচ্চা-ভেড়া ও একটা পুরুষ ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে; সবগুলোই যেন খুঁতহীন হয়। ষাঁড়ের সংগে তাকে আঠারো কেজি ময়দা, পুরুষ ভেড়ার সংগে আঠারো কেজি ময়দা আর বাচ্চা-ভেড়ার সংগে যতটা খুশী ততটা ময়দা শস্য-উৎসর্গ হিসাবে দিতে হবে; প্রত্যেক আঠারো কেজি ময়দার জন্য পৌনে চার লিটার করে তেল দিতে হবে। শাসনকর্তাকে ফটকে ঢুকবার কামরা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে হবে এবং একই পথে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। “‘নির্দিষ্ট সব পর্বের সময়ে দেশের লোকেরা যখন উপাসনার জন্য সদাপ্রভুর সামনে আসবে তখন যে কেউ উত্তর ফটক দিয়ে ঢুকবে সে দক্ষিণ ফটক দিয়ে বের হয়ে যাবে আর যে দক্ষিণ ফটক দিয়ে ঢুকবে সে উত্তর ফটক দিয়ে বের হয়ে যাবে। লোকে যে ফটক দিয়ে ঢুকবে সেই ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাবে না, কিন্তু প্রত্যেককে ঢুকবার ফটকের উল্টা দিকের ফটক দিয়ে বের হয়ে যেতে হবে। ভিতরে যাবার সময় শাসনকর্তাকে লোকদের সংগে ভিতরে যেতে হবে এবং বাইরে যাবার সময় লোকদের সংগেই বের হয়ে যেতে হবে। “‘পর্ব ও নির্দিষ্ট ভোজের সময়ে একটা ষাঁড়ের জন্য আঠারো কেজি ময়দা, ভেড়ার জন্য আঠারো কেজি ময়দা এবং বাচ্চা-ভেড়াগুলোর জন্য যতটা খুশী ততটা ময়দা দিতে হবে; প্রত্যেক আঠারো কেজি ময়দার সংগে পৌনে চার লিটার করে তেল দিতে হবে। শাসনকর্তা যখন সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিজের ইচ্ছায় কোন উৎসর্গ করতে চায়- তা সেটা পোড়ানো-উৎসর্গই হোক বা যোগাযোগ-উৎসর্গই হোক- তখন তার জন্য পূর্বমুখী ফটকটা খুলে দিতে হবে। বিশ্রাম দিনের মত করেই সে তার পোড়ানো-উৎসর্গ কিম্বা যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। তারপর সে বাইরে গেলে ফটকটা বন্ধ করা হবে। “‘সদাপ্রভুর উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য তোমাদের প্রতিদিন একটা করে এক বছরের নিখুঁত বাচ্চা-ভেড়া উৎসর্গ করতে হবে; প্রতিদিন সকালে তোমাদের তা করতে হবে। এছাড়া এর সংগে রোজ সকালে তোমাদের শস্য-উৎসর্গের জিনিসও দিতে হবে; এতে থাকবে তিন কেজি ময়দা ও তাতে ময়ান দেবার জন্য সোয়া এক লিটার তেল। সদাপ্রভুর উদ্দেশে এই শস্য-উৎসর্গের অনুষ্ঠান একটা স্থায়ী নির্দেশ। এইভাবে নিয়মিত পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য রোজ সকালে সেই বাচ্চা-ভেড়া এবং শস্য-উৎসর্গের জন্য ময়দা ও তেল যোগান দিতে হবে। “‘আমি প্রভু সদাপ্রভু আরও বলছি, যদি শাসনকর্তা তার সম্পত্তি থেকে তার কোন ছেলেকে কোন জায়গা দান করে তবে তা তার বংশধরদেরও অধিকারে থাকবে। তারা সেই সম্পত্তির অধিকারী হবে। কিন্তু যদি সে তার সম্পত্তি থেকে তার কোন দাসকে কোন জায়গা দান করে তবে সেই দাস তা ফিরে পাওয়ার বছর পর্যন্ত রাখতে পারবে; তারপর সেটা আবার শাসনকর্তার দখলে আসবে। শাসনকর্তার সম্পত্তি কেবল তার ছেলেরাই পাবে; সেটা তাদেরই হবে। লোকদের তাড়িয়ে দিয়ে শাসনকর্তা তাদের কোন সম্পত্তিই দখল করতে পারবে না। সে কেবল তার নিজের সম্পত্তি থেকেই তার ছেলেদের দিতে পারবে যাতে আমার লোকদের মধ্য থেকে কেউই তার সম্পত্তির মালিকানা না হারায়।’” তারপর সেই মানুষটি আমাকে ফটকের পাশের ঢুকবার পথ দিয়ে পুরোহিতদের উত্তরমুখী পবিত্র দালানের সামনে নিয়ে আসলেন। তিনি আমাকে দালানের পশ্চিম দিকের শেষ সীমায় একটা জায়গা দেখালেন। তিনি আমাকে বললেন, “এটা সেই জায়গা যেখানে পুরোহিতেরা দোষ-উৎসর্গ ও পাপ-উৎসর্গের মাংস সিদ্ধ করবে এবং শস্য-উৎসর্গের জিনিস সেঁকে নেবে যাতে সেই পবিত্র জিনিসগুলো বাইরের উঠানে আনতে না হয়, কারণ সাধারণ কোন লোক সেগুলো ছুঁলে সে সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে আলাদা হয়ে যাবে।” তারপর তিনি আমাকে বাইরের উঠানে এনে তার চারটা কোণায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসলেন, আর আমি প্রত্যেকটি কোণায় আর একটা করে ছোট উঠান দেখতে পেলাম। দেয়াল-ঘেরা সেই ছোট উঠানগুলোর মাপ ছিল চল্লিশ হাত লম্বা ও ত্রিশ হাত চওড়া। প্র্রত্যেকটা উঠান একই মাপের ছিল। সেই চারটা উঠানের প্রত্যেকটির ভিতরের চারপাশে দেয়ালের সংগে লাগানো পাথরের তাক ছিল এবং সেই তাকের নীচে চারপাশে চুলা ছিল। তিনি আমাকে বললেন, “এগুলো হল চুলা; যারা উপাসনা-ঘরের সেবা-কাজ করে তারা সেখানে লোকদের উৎসর্গের জিনিস সিদ্ধ করবে।” তারপর তিনি আমাকে উপাসনা-ঘরে ঢুকবার মুখের কাছে ফিরিয়ে আনলেন, আর আমি দেখলাম উপাসনা-ঘরের ঢুকবার মুখের তলা থেকে জল বের হয়ে পূর্ব দিকে বয়ে যাচ্ছে। উপাসনা-ঘরটা পূর্বমুখী ছিল। সেই জল উপাসনা-ঘরের দক্ষিণ পাশের তলা থেকে বেদীর দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল। পরে তিনি উত্তর-ফটকের মধ্য দিয়ে আমাকে বের করে আনলেন এবং বাইরের পথ দিয়ে ঘুরিয়ে পূর্বমুখী বাইরের ফটকের কাছে নিয়ে গেলেন; সেই ফটকের দক্ষিণ পাশ দিয়ে অল্প জল বয়ে যাচ্ছিল। মাপের দড়ি হাতে নিয়ে তিনি মাপতে মাপতে এক হাজার হাত পূর্ব দিকে গেলেন। সেখানে তিনি আমাকে গোড়ালি-ডোবা জলের মধ্য দিয়ে নিয়ে গেলেন। তারপর তিনি আর এক হাজার হাত মেপে আমাকে হাঁটু জলের মধ্য দিয়ে নিয়ে গেলেন। তারপর তিনি আর এক হাজার হাত মেপে কোমর পর্যন্ত জলের মধ্য দিয়ে আমাকে নিয়ে গেলেন। তারপর তিনি আর এক হাজার হাত মাপলেন, কিন্তু জল তখন নদী হয়ে যাওয়াতে আমি পার হতে পারলাম না, কারণ জল বেড়ে গিয়েছিল এবং সাঁতার দেবার মত গভীর হয়েছিল। সেটা এমন নদী হয়েছিল যা কেউ হেঁটে পার হতে পারে না। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, তুমি কি এটা দেখলে?” তারপর তিনি আমাকে নদীর কিনারায় ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। সেখানে পৌঁছে আমি নদীর দু’ধারেই অনেক গাছপালা দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে বললেন, “এই জল পূর্ব দিকে বয়ে যাচ্ছে এবং অরাবার মধ্য দিয়ে মরু-সাগরে গিয়ে পড়ছে। যখন সেটা গিয়ে সাগরে পড়ে তখন সেখানকার জল মিষ্টি হয়ে যায়। যেখান দিয়ে এই নদীটা বয়ে যাবে সেখানে সব রকমের ঝাঁক-বাঁধা জীবন্ত প্রাণী ও প্রচুর মাছ বাস করবে। এই জল যেখান দিয়ে বয়ে যাবে সেখানকার জল মিষ্টি করে তুলবে; কাজেই যেখান দিয়ে নদীটা বয়ে যাবে সেখানকার সব কিছুই বাঁচবে। জেলেরা নদীর কিনারায় দাঁড়াবে; ঐন্‌-গদী থেকে ঐন্‌-ইগ্লয়িম পর্যন্ত জাল মেলে দেবার জায়গা হবে। ভূমধ্য সাগরের মাছের মত সেখানেও নানা রকমের অনেক মাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু জলা জায়গা ও বিলের জল মিষ্টি হবে না; সেগুলো লবণের জন্য থাকবে। নদীর দুই ধারেই সব রকমের ফলের গাছ জন্মাবে। সেগুলোর পাতা শুকিয়ে যাবে না, ফলও শেষ হবে না। প্রতি মাসেই তাতে ফল ধরবে, কারণ উপাসনা-ঘর থেকে সেখানে জল বয়ে আসবে। সেগুলোর ফল খাবার জন্য আর পাতা সুস্থ হবার জন্য ব্যবহার করা হবে।” “দেশের সীমানা হবে এই: উত্তর দিকের সীমানা হবে ভূমধ্য সাগর থেকে লেবো-হমাৎ ছাড়িয়ে হিৎলোনের রাস্তা বরাবর সদাদ পর্যন্ত; সেখান থেকে দামেস্ক ও হমাতের সীমানার মধ্যে থাকা বরোথা ও সিব্রয়িম পর্যন্ত; সেখান থেকে হৌরণের সীমানার পাশের হৎসর-হত্তীকোন পর্যন্ত। এই সীমানা চলে যাবে ভুমধ্য সাগর থেকে দামেস্কের উত্তর সীমার পাশে হৎসোর-ঐনন পর্যন্ত, অর্থাৎ হমাতের সীমানা পর্যন্ত। এটাই হবে উত্তর দিকের সীমানা। পূর্ব দিকের সীমানা হৌরণ ও দামেস্কের মধ্য দিয়ে গিলিয়দ ও ইস্রায়েল দেশের মধ্যেকার যর্দন নদী বরাবর গিয়ে মরু-সাগর পর্যন্ত চলে যাবে। এটাই হবে পূর্ব দিকের সীমানা। দক্ষিণ দিকের সীমানা মরু-সাগরের তামর থেকে কাদেশের মরীবৎ জল পর্যন্ত গিয়ে মিসরের শুকনা নদী বরাবর ভূমধ্য সাগর পর্যন্ত চলে যাবে। এটাই হবে দক্ষিণের সীমানা। পশ্চিম দিকের সীমানা হবে ভূমধ্য সাগর বরাবর লেবো-হমাতের উল্টা দিক পর্যন্ত। এটাই হবে পশ্চিম দিকের সীমানা। “ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলো অনুসারে তোমরা নিজেদের মধ্যে দেশটা ভাগ করে নেবে। তোমাদের মধ্যে যে সব বিদেশী তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করছে তাদের জন্য ও তোমাদের জন্য দেশটা সম্পত্তি হিসাবে ভাগ করে দেবে। তাদের তোমরা দেশে জন্মানো ইস্রায়েলীয় হিসাবে ধরবে। তোমাদের সংগে তারাও ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্পত্তি হিসাবে জমির ভাগ পাবে। যে গোষ্ঠীর মধ্যে সেই বিদেশী বাস করবে সেখানেই তোমরা তাকে জমির অধিকার দেবে। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” তারপর সদাপ্রভু বললেন, “গোষ্ঠী অনুসারে দেশের জমিজমার ভাগ এইভাবে হবে। দেশের উত্তর সীমায় দান একটা অংশ পাবে; সেটা ভূমধ্য সাগর থেকে হিৎলোনের রাস্তা বরাবর লেবো-হমাৎ পর্যন্ত যাবে; সেখান থেকে যাবে পূর্ব দিকে দামেস্কের উত্তর সীমার পাশে হৎসোর-ঐনন পর্যন্ত, অর্থাৎ হমাতের সীমানা পর্যন্ত। আশের একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে দানের সীমানার দক্ষিণে। নপ্তালি একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে আশেরের সীমানার দক্ষিণে। মনঃশি একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে নপ্তালির সীমানার দক্ষিণে। ইফ্রয়িম একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে মনঃশির সীমানার দক্ষিণে। রূবেণ একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ইফ্রয়িমের সীমানার দক্ষিণে। যিহূদা একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে রূবেণের সীমানার দক্ষিণে। “যিহূদার সীমানার দক্ষিণে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত থাকবে সেই জায়গাটা যা তোমরা বিশেষ কাজের জন্য আলাদা করে রাখবে। সেটা চওড়ায় হবে পঁচিশ হাজার মাপকাঠি এবং লম্বায় হবে অন্যান্য গোষ্ঠীর অংশের মত দেশের পূর্ব সীমানা থেকে পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত; সেই জায়গার মাঝখানে থাকবে উপাসনা-ঘর। সেই আলাদা করা জায়গা থেকে তোমরা একটা বিশেষ অংশ সদাপ্রভুকে দেবে; সেটা লম্বায় হবে পঁচিশ হাজার মাপকাঠি আর চওড়ায় দশ হাজার মাপকাঠি। এটা হবে পুরোহিতদের জন্য পবিত্র অংশ। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে এটা হবে পঁচিশ হাজার মাপকাঠি লম্বা এবং পশ্চিম ও পূর্ব দিকে দশ হাজার মাপকাঠি চওড়া। তার মাঝখানে থাকবে সদাপ্রভুর ঘর। এই বিশেষ অংশটা হবে আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করা সাদোকের বংশের পুরোহিতদের জন্য। তারা আমার সেবায় বিশ্বস্ত ছিল এবং ইস্রায়েলীয়দের সংগে বিপথে যাওয়া লেবীয়দের মত তারা বিপথে যায় নি। এটা হবে দেশের পবিত্র অংশ থেকে তাদের জন্য একটা বিশেষ অংশ; এই অংশ থাকবে লেবীয়দের অংশের সীমানার পাশে, আর এটা হবে মহা পবিত্র জায়গা। “পুরোহিতদের সীমানার পাশে লেবীয়েরা পঁচিশ হাজার মাপকাঠি লম্বা ও দশ হাজার মাপকাঠি চওড়া একটা জায়গা পাবে। লেবীয়েরা সেই জমি বিক্রি করতে কিম্বা তার অংশ বদল করতে পারবে না। সেটা সবচেয়ে ভাল জমি এবং তা অন্যদের হাতে দিয়ে দেওয়া চলবে না, কারণ সেটা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র। “বাকী পাঁচ হাজার মাপকাঠি চওড়া ও পঁচিশ হাজার মাপকাঠি লম্বা এলাকাটা শহরের সাধারণ কাজের জন্য, অর্থাৎ বাড়ী-ঘর ও পশু চরাবার জন্য ব্যবহার করা হবে। শহরটা তার মাঝখানে থাকবে; আর সেই শহরের চারদিকের মাপ হবে চার হাজার পাঁচশো মাপকাঠি করে। শহরের চারদিকে পশু চরাবার জায়গা থাকবে দু’শো পঞ্চাশ মাপকাঠি করে। এই শহরের পূর্ব পাশের দশ হাজার মাপকাঠি এবং পশ্চিম পাশের দশ হাজার মাপকাঠি জায়গায় যে ফসল জন্মাবে তা শহরের কর্মচারীদের খাবার হবে। ইস্রায়েলের সমস্ত গোষ্ঠী থেকে যারা এই শহরে কাজ করবে তারা এই জমি চাষ করবে। সেই আলাদা করা পুরো জায়গাটা হবে পঁচিশ হাজার মাপকাঠি করে একটা চৌকো জায়গা। এই জায়গার মধ্যে থাকবে সেই পবিত্র অংশ এবং শহর ও তার আশেপাশের জায়গা। “বাকী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিন্যামীন একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে আলাদা করা জায়গার দক্ষিণে। শিমিয়োন একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিন্যামীনের সীমানার দক্ষিণে। ইষাখর একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে শিমিয়োনের সীমানার দক্ষিণে। সবূলূন একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ইষাখরের সীমানার দক্ষিণে। গাদ একটা অংশ পাবে; সেটা হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে সবূলূনের সীমানার দক্ষিণে। গাদের অংশের দক্ষিণের সীমানা হল দেশের দক্ষিণের সীমানা। তা তামর থেকে কাদেশের মরীবৎ জল পর্যন্ত গিয়ে মিসরের শুকনা নদী বরাবর ভূমধ্য সাগর পর্যন্ত চলে যাবে। এই দেশ ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোকে সম্পত্তি হিসাবে তোমরা ভাগ করে দেবে, আর এগুলোই হবে তাদের অংশ। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। সাড়ে চার হাজার মাপকাঠির পূর্ব দিকের দেয়ালের তিনটা ফটকের নাম হবে যোষেফ-ফটক, বিন্যামীন-ফটক ও দান-ফটক। সাড়ে চার হাজার মাপকাঠির দক্ষিণ দিকের দেয়ালের তিনটা ফটকের নাম হবে শিমিয়োন-ফটক, ইষাখর-ফটক ও সবূলূন-ফটক। সাড়ে চার হাজার মাপকাঠির পশ্চিম দিকের দেয়ালের তিনটা ফটকের নাম হবে গাদ-ফটক, আশের-ফটক ও নপ্তালি-ফটক। শহরের চারপাশের দেয়ালের মাপ হবে আঠারো হাজার মাপকাঠি। সেই সময় থেকে শহরের নাম হবে, ‘সদাপ্রভু এখানে আছেন।’ ” যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের তৃতীয় বছরের সময় বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেমে এসে শহরটা ঘেরাও করলেন। প্রভু তাঁর হাতে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমকে তুলে দিলেন এবং তাঁর সংগে ঈশ্বরের ঘরের কতগুলো পাত্রও তুলে দিলেন। তিনি সেই পাত্রগুলো বাবিলে তাঁর দেবতার মন্দিরে নিয়ে গিয়ে সেখানকার ধনভাণ্ডারে রেখে দিলেন। পরে রাজা তাঁর প্রধান রাজকর্মচারী অসপনস্‌কে আদেশ দিলেন যেন তিনি ইস্রায়েলীয় রাজপরিবার ও সম্মানিত পরিবারগুলোর মধ্য থেকে কয়েকজন যুবককে নিয়ে আসেন। সেই যুবকদের হতে হবে নিখুঁত, সুন্দর, জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান, সমস্ত শিক্ষা গ্রহণে চট্‌পটে এবং রাজদরবারের কাজ করবার যোগ্য। অসপনস্‌কে আদেশ দেওয়া হল যেন তিনি এই যুবকদের বাবিলীয়দের ভাষা ও সাহিত্য সম্বন্ধে শিক্ষা দেন। রাজা তাঁর খাবার থেকে তাদের প্রতিদিনের পরিমাণ মত খাবার ও আংগুর-রস দেবার নির্দেশ দিলেন। এইভাবে তাদের তিন বছর শিক্ষা দেবার পরে তারা রাজার কাজে নিযুক্ত হবে। এদের মধ্যে ছিলেন যিহূদা-গোষ্ঠীর দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়। সেই প্রধান রাজকর্মচারী তাঁদের নতুন নাম রাখলেন; তিনি দানিয়েলকে বেল্টশৎসর, হনানিয়কে শদ্রক, মীশায়েলকে মৈশক ও অসরিয়কে অবেদ্‌-নগো নাম দিলেন। দানিয়েল কিন্তু মনে মনে ঠিক করলেন যে, তিনি রাজার খাবার ও আংগুর-রস দিয়ে নিজেকে অশুচি করবেন না। এইভাবে যাতে নিজেকে অশুচি করতে না হয় সেইজন্য তিনি প্রধান রাজকর্মচারীর কাছে অনুমতি চাইলেন। ঈশ্বর সেই রাজকর্মচারীর মনে দানিয়েলের জন্য দয়া ও মমতা দিলেন। তবে সেই রাজকর্মচারী দানিয়েলকে বললেন, “যিনি তোমাদের খাবার ও আংগুর-রসের ব্যবস্থা করেছেন আমি আমার সেই প্রভু মহারাজকে ভয় করি। তিনি তোমাদের বয়সী অন্য যুবকদের চেয়ে কেন তোমাদের রোগা দেখবেন? এতে রাজা তোমাদের দরুন আমার মাথা কেটে ফেলতে পারেন।” সেই রাজকর্মচারী দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়ের যত্ন নেবার জন্য যে লোককে নিযুক্ত করেছিলেন দানিয়েল তাঁকে বললেন, “আপনি দয়া করে দশ দিন আপনার এই দাসদের পরীক্ষা করে দেখুন; আপনি আমাদের কেবল শাক-সব্‌জি ও জল খেতে দেবেন। তারপর রাজার খাবার খাওয়া সেই যুবকদের সংগে আমাদের চেহারার তুলনা করে দেখবেন এবং আপনি যেমন দেখবেন সেই অনুসারেই আপনার এই দাসদের সংগে ব্যবহার করবেন।” তিনি এতে রাজী হলেন এবং দশ দিন তাঁদের পরীক্ষা করলেন। দশ দিনের শেষে দেখা গেল রাজার খাবার খাওয়া যুবকদের সকলের চেয়ে তাঁরা আরও সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান হয়েছেন। তখন সেই লোকটি রাজার খাবার ও আংগুর-রস সরিয়ে দিয়ে তার বদলে তাঁদের শাক-সব্‌জিই দিতে থাকলেন। এই চারজন যুবককে ঈশ্বর সব রকম সাহিত্য ও বিদ্যায় জ্ঞানলাভ করবার ও বুঝবার ক্ষমতা দিলেন; আর দানিয়েল সব রকম দর্শন ও স্বপ্নের বিষয় বুঝতে পারতেন। রাজার সামনে সেই যুবকদের নিয়ে যাবার জন্য রাজা যে সময় ঠিক করে দিয়েছিলেন সেই সময়ের শেষে সেই প্রধান রাজকর্মচারী তাঁদের নবূখদ্‌নিৎসরের সামনে নিয়ে গেলেন। রাজা তাঁদের সংগে কথা বলে বুঝলেন যে, আর কেউ দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়ের সমান নয়; তাই এই চারজন রাজার কাজে নিযুক্ত হলেন। জ্ঞান ও বুদ্ধির বিষয়ে প্রত্যেকটি ব্যাপারে রাজা তাঁদের জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারলেন যে, তাঁরা তাঁর সারা রাজ্যের মধ্যেকার সমস্ত যাদুকর ও ভূতের ওঝাদের চেয়ে দশগুণ ভাল। রাজা কোরসের রাজত্বের প্রথম বছর পর্যন্ত দানিয়েল রাজার কাজে বহাল রইলেন। নবূখদ্‌নিৎসরের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে তিনি স্বপ্ন দেখলেন; তাতে তাঁর মন অস্থির হল, তিনি ঘুমাতে পারলেন না। তাঁর স্বপ্ন বুঝিয়ে দেবার জন্য তিনি যাদুকর, ভূতের ওঝা, গণক ও জ্যোতিষীদের ডেকে পাঠালেন। তারা এসে রাজার সামনে দাঁড়াল। রাজা তাদের বললেন, “আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি; তার অর্থ বুঝবার জন্য আমার মন অস্থির হয়ে উঠেছে।” তখন জ্যোতিষীরা উত্তরে অরামীয় ভাষায় রাজাকে বলল, “হে মহারাজ, আপনি চিরকাল বেঁচে থাকুন। আপনি স্বপ্নটা আপনার দাসদের বলুন, আমরা তার অর্থ বলে দেব।” উত্তরে রাজা তাদের বললেন, “আমি স্থির করেছি যে, আমার স্বপ্নটা কি এবং তার অর্থ কি তা যদি তোমরা বলতে না পার তবে তোমাদের টুকরা টুকরা করে কেটে ফেলা হবে আর তোমাদের বাড়ী-ঘর আবর্জনার স্তূপ করা হবে। কিন্তু যদি তোমরা আমার স্বপ্ন ও তার অর্থ বলতে পার তবে আমার কাছ থেকে তোমরা উপহার, পুরস্কার ও মহা সম্মান লাভ করবে। কাজেই তোমরা সেই স্বপ্নটা ও তার অর্থ আমাকে বল।” উত্তরে তারা আবার বলল, “মহারাজ যেন তাঁর দাসদের কাছে স্বপ্নটা বলেন, আমরা তার অর্থ বলব।” তখন রাজা বললেন, “আমি নিশ্চয় করে জানি যে, তোমরা দেরি করবার চেষ্টা করছ, কারণ তোমরা বুঝতে পেরেছ যে, এই বিষয়ে আমার মন স্থির আছে। তোমরা যদি স্বপ্নটা আমাকে বলতে না পার তবে মাত্র একটা শাস্তিই তোমাদের জন্য আছে। তোমরা আশা করছ অবস্থার বদল হবে, আর তাই আমাকে মিথ্যা কথা বলে ঠকাবার পরামর্শ করেছ। তোমরা এখন আমাকে স্বপ্নটা বল; তাহলে আমি জানব যে, তোমরা তার অর্থও আমাকে বলতে পারবে।” জ্যোতিষীরা উত্তরে রাজাকে বললেন, “মহারাজ আমাদের কাছে যা জানতে চাইছেন তা জানাতে পারে এমন কোন লোক এই পৃথিবীতে নেই। কোন মহান রাজা কখনও এমন বিষয় কোন যাদুকর বা ভূতের ওঝা বা জ্যোতিষীর কাছে জানতে চান নি। মহারাজ যা চাইছেন তা করা খুবই কঠিন। দেবতারা ছাড়া আর কেউই এটা মহারাজের কাছে প্রকাশ করতে পারবে না, আর তাঁরা তো মানুষের মধ্যে বাস করেন না।” এতে রাজা এত রেগে গেলেন যে, তিনি বাবিলে তাঁর সমস্ত পরামর্শদাতাদের মেরে ফেলবার আদেশ দিলেন। কাজেই রাজার পরামর্শদাতাদের মেরে ফেলবার হুকুম জারি করা হল। তখন দানিয়েল ও তাঁর বন্ধুদের মেরে ফেলবার জন্য তাঁদের খোঁজে লোক পাঠানো হল। রাজার দেহরক্ষীদের সেনাপতি অরিয়োক যখন সেই পরামর্শদাতাদের মেরে ফেলবার জন্য বের হলেন তখন দানিয়েল বুদ্ধি করে সাবধানে তাঁর সংগে কথা বললেন। তিনি সেই সেনাপতিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহারাজ এই ভীষণ আদেশ কেন দিয়েছেন?” তখন অরিয়োক ব্যাপারটা দানিয়েলের কাছে বুঝিয়ে বললেন। তা শুনে দানিয়েল রাজার কাছে গিয়ে সময় চাইলেন যাতে তিনি রাজাকে স্বপ্নটার অর্থ বলে দিতে পারেন। তারপর দানিয়েল ঘরে ফিরে গিয়ে তাঁর বন্ধু হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়কে ব্যাপারটা বললেন। তিনি তাঁদের অনুরোধ করলেন যেন তাঁরা সেই অজানা বিষয় জানবার জন্য স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে দয়া ভিক্ষা করেন, যাতে তিনি ও তাঁর বন্ধুরা বাবিলের অন্যান্য পরামর্শদাতাদের সংগে মারা না পড়েন। রাতের বেলা একটা দর্শনের মধ্যে সেই অজানা বিষয় দানিয়েলের কাছে প্রকাশিত হল। তখন দানিয়েল স্বর্গের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। তিনি বললেন, “ঈশ্বর চিরকাল ধন্য হোন; জ্ঞান ও শক্তি তাঁরই। তিনিই সময় ও ঋতু তাঁর অধীনে রাখেন; তিনি রাজাদের সিংহাসনে বসান ও নামিয়ে দেন। তিনি জ্ঞানীদের জ্ঞান দান করেন আর বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি দান করেন। তিনি গভীর ও লুকানো বিষয় প্রকাশ করেন; তিনি জানেন অন্ধকারের মধ্যে কি আছে; তাঁর সংগে আলো বাস করে। হে আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই, তোমার প্রশংসা করি, কারণ তুমি আমাকে জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়েছ; আমরা তোমার কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম তা তুমি আমাকে জানিয়েছ; রাজার স্বপ্নের বিষয় তুমি আমাদের জানিয়েছ।” পরে দানিয়েল অরিয়োকের কাছে গেলেন। রাজা অরিয়োককেই তাঁর পরামর্শদাতাদের মেরে ফেলবার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। দানিয়েল অরিয়োককে বললেন, “রাজার পরামর্শদাতাদের মেরে ফেলবেন না। আমাকে রাজার কাছে নিয়ে চলুন; আমি রাজার স্বপ্নের অর্থ বলব।” অরিয়োক তখনই দানিয়েলকে রাজার কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, “যিহূদার বন্দীদের মধ্যে আমি এমন একজন লোককে পেয়েছি যে মহারাজের স্বপ্নের অর্থ বলে দিতে পারবে।” দানিয়েল, যাঁকে বেল্টশৎসর নামে ডাকা হত তাঁকে রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি আমার স্বপ্ন ও তার অর্থ আমাকে বলতে পারবে?” উত্তরে দানিয়েল বললেন, “মহারাজ যে অজানা বিষয়ের কথা জিজ্ঞাসা করেছেন তা কোন গুণিন, ভূতের ওঝা, যাদুকর কিম্বা গণক বলতে পারবেন না; কিন্তু স্বর্গে একজন ঈশ্বর আছেন যিনি গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে যা ঘটবে তা তিনি রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে জানিয়েছেন। আপনার স্বপ্ন, অর্থাৎ বিছানায় শুয়ে যে দর্শন আপনি দেখেছেন তা আমি এখন বলব। “হে মহারাজ, আপনি যখন বিছানায় শুয়ে ছিলেন তখন ভবিষ্যতে কি হবে সেই কথা চিন্তা করছিলেন। যিনি গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন তিনি আপনাকে দেখিয়ে দিয়েছেন কি ঘটবে। অন্যান্য লোকদের চেয়ে আমার বেশী জ্ঞান আছে বলে যে আমার কাছে এই অজানা বিষয় প্রকাশিত হয়েছে তা নয়, কিন্তু হে মহারাজ, আমাকে এটা বলা হয়েছে যাতে আপনি এর অর্থ জানতে পারেন এবং আপনার মনের চিন্তা বুঝতে পারেন। “হে মহারাজ, আপনি তাকিয়ে ছিলেন, আর আপনার সামনে একটা বিরাট মূর্তি দাঁড়িয়ে ছিল; মূর্তিটা বিরাট, খুব উজ্জ্বল এবং তার চেহারাটা ভয়ংকর। সেই মূর্তির মাথাটা খাঁটি সোনার, বুক ও হাত রূপার এবং পেট ও ঊরু ব্রোঞ্জের তৈরী; তার পা লোহার এবং পায়ের পাতা কিছুটা লোহা ও কিছুটা মাটি দিয়ে তৈরী ছিল। আপনি যখন তাকিয়ে দেখছিলেন তখন একটা পাথর কেটে নেওয়া হল, কিন্তু সেটা মানুষের হাতে কাটা হয় নি। সেই পাথরটা লোহা ও মাটি মেশানো পায়ে আঘাত করে তা চুরমার করে ফেলল। তখন লোহা, মাটি, ব্রোঞ্জ, রূপা ও সোনা টুকরা টুকরা হয়ে ভেংগে পড়ল এবং গরমকালে খামারের মেঝেতে পড়ে থাকা তূষের মত হয়ে গেল। বাতাস তা এমন করে উড়িয়ে নিয়ে গেল যে, তার আর কোন চিহ্নই রইল না। কিন্তু যে পাথরটা মূর্তিটাকে আঘাত করেছিল সেটা একটা বিরাট পাহাড় হয়ে গিয়ে সমস্ত পৃথিবী দখল করে ফেলল। “এটাই ছিল সেই স্বপ্ন। এখন আমরা তার অর্থ মহারাজের কাছে বলব। হে মহারাজ, আপনি রাজাদের রাজা। স্বর্গের ঈশ্বর আপনাকে রাজ্য, ক্ষমতা, শক্তি ও সম্মান দান করেছেন। আপনার হাতে তিনি মানুষ, পশু আর পাখীদের দিয়েছেন। তারা যেখানেই বাস করুক না কেন তিনি তাদের সকলকে আপনার অধীন করেছেন। আপনিই সেই সোনার মাথা। “আপনার রাজ্যের পরে যে রাজ্য উঠবে সেটা আপনার রাজ্যের মত মহান হবে না। তার পরে তৃতীয় আর একটা রাজ্য উঠবে, সেটা সেই ব্রোঞ্জের পেট ও ঊরু; আর গোটা পৃথিবী সেই রাজ্যের অধীন হবে। শেষে লোহার মত শক্ত চতুর্থ একটা রাজ্য উঠবে। লোহা যেমন সব কিছু ভেংগে চুরমার করে তেমনি সেই রাজ্য অন্য সব রাজ্যকে ভেংগে চুরমার করবে। আপনি স্বপ্নে যে পায়ের পাতা ও পায়ের আংগুলগুলোর কিছু অংশ মাটি ও কিছু অংশ লোহা দিয়ে তৈরী দেখেছিলেন তা হল একটা ভাগ করা রাজ্য। তবে আপনি যেমন মাটির সংগে লোহা মিশানো দেখেছেন তেমনি সেই রাজ্যে লোহার মত কিছু শক্তি থাকবে। পায়ের পাতা ও আংগুলগুলো যেমন এইভাবে মিশানো ছিল তেমনি সেই রাজ্যের কিছু অংশ হবে শক্তিশালী ও কিছু অংশ দুর্বল। লোহার সংগে মাটি মিশানোর অর্থ রাজ্যের লোকেরা হবে মিশানো এবং লোহা যেমন মাটির সংগে মেশে না তেমনি তারাও এক হয়ে থাকবে না। “ঐ সব রাজাদের সময়ে স্বর্গের ঈশ্বর এমন একটা রাজ্য স্থাপন করবেন যেটা কখনও ধ্বংস হবে না কিম্বা অন্য লোকদের হাতে যাবে না। সেই রাজ্য ঐ সব রাজ্যগুলোকে চুরমার করে শেষ করে দেবে কিন্তু সেই রাজ্যটা নিজে চিরকাল থাকবে। এটা হল সেই পাহাড় থেকে কেটে নেওয়া পাথর যেটা মানুষের হাতে কাটা হয় নি। সেই পাথরটা লোহা, ব্রোঞ্জ, মাটি, রূপা ও সোনাকে টুকরা টুকরা করে ভেংগে ফেলেছিল। ভবিষ্যতে যা ঘটবে তা এইভাবে মহান ঈশ্বর মহারাজকে দেখিয়ে দিয়েছেন। স্বপ্নটা সত্যি এবং তার ব্যাখ্যাও বিশ্বাসযোগ্য।” তখন রাজা নবূখদ্‌নিৎসর দানিয়েলের সামনে উবুড় হয়ে পড়ে তাঁকে প্রণাম করলেন এবং তাঁর সামনে শস্য উৎসর্গ করতে ও ধূপ জ্বালাতে হুকুম দিলেন। রাজা দানিয়েলকে বললেন, “আপনাদের ঈশ্বর সত্যিই দেবতাদের ঈশ্বর ও রাজাদের প্রভু। আমি বুঝতে পারলাম তিনি গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন, কারণ আপনি এই গুপ্ত বিষয়টা প্রকাশ করতে পেরেছেন।” তারপর দানিয়েলকে রাজা একটা উঁচু পদ দিলেন এবং অনেক ভাল ভাল উপহার দিলেন। তিনি তাঁকে গোটা বাবিল প্রদেশের প্রধান পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করলেন এবং তাঁর সমস্ত পরামর্শদাতাদের ভার তাঁর উপরে দিলেন। এছাড়া দানিয়েলের অনুরোধে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে রাজা বাবিল প্রদেশের রাজকর্মচারী হিসাবে নিযুক্ত করলেন। দানিয়েল নিজে রাজদরবারে রইলেন। রাজা নবূখদ্‌নিৎসর ষাট হাত উঁচু ও ছয় হাত মোটা একটা সোনার মূর্তি তৈরী করে বাবিল প্রদেশের দূরা সমভূমিতে রাখলেন। তারপর তিনি সেই মূর্তিটার প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে আসবার জন্য প্রদেশগুলোর শাসনকর্তাদের ও প্রধান পরিচালকদের, বিভাগের শাসনকর্তাদের, মন্ত্রীদের, কোষাধ্যক্ষদের, মহা বিচারকদের, অন্যান্য বিচারকদের ও অন্যান্য সব উঁচু পদের কর্মচারীদের ডাকলেন। তখন তাঁরা সবাই রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্থাপন করা মূর্তিটার প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের জন্য এসে জড়ো হলেন এবং সেই মূর্তির সামনে দাঁড়ালেন। তখন ঘোষণাকারী জোরে এই কথা ঘোষণা করল, “হে নানা জাতির, দেশের ও ভাষার লোকেরা, আপনাদের এই আদেশ দেওয়া হচ্ছে যে, আপনারা যখনই শিংগা, বাঁশী, সুরবাহার, ছোট ও বড় বীণা, বড় বাঁশী ও অন্যান্য সব রকম বাজনার শব্দ শুনবেন তখনই মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের স্থাপন করা সোনার মূর্তিকে প্রণাম করবেন। যে কেউ উবুড় হয়ে পড়ে প্রণাম করবে না তাকে তখনই জ্বলন্ত চুল্লীতে ফেলে দেওয়া হবে।” কাজেই যখনই তারা সেই সব বাজনার শব্দ শুনল তখনই সব জাতির, দেশের ও ভাষার লোকেরা মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে নবূখদ্‌নিৎসরের স্থাপন করা সোনার মূর্তিকে প্রণাম করল। এই সময় কয়েকজন জ্যোতিষী এগিয়ে গিয়ে যিহূদীদের দোষী করল। তারা রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে বলল, “হে মহারাজ, আপনি চিরকাল বেঁচে থাকুন। আপনি একটা আদেশ দিয়েছেন যে, লোকেরা যখন শিংগা, বাঁশী, সুরবাহার, ছোট ও বড় বীণা, বড় বাঁশী ও অন্যান্য সব রকম বাজনার শব্দ শুনবে তখন তাদের উবুড় হয়ে পড়ে সোনার মূর্তিকে প্রণাম করতে হবে; কিন্তু যে উবুড় হয়ে পড়ে প্রণাম করবে না তাকে জ্বলন্ত চুল্লীতে ফেলে দেওয়া হবে। হে মহারাজ, এমন কয়েকজন যিহূদী আছে যাদের আপনি বাবিল প্রদেশের রাজ-কাজে নিযুক্ত করেছেন; তারা হল শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো। তারা আপনার আদেশে কান দেয় নি। তারা আপনার দেবতাদের সেবা করে না এবং আপনি যে সোনার মূর্তি স্থাপন করেছেন তাঁকেও প্রণাম করে না।” এই কথা শুনে নবূখদ্‌নিৎসর রাগে আগুন হয়ে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে ডেকে পাঠালেন। তখন রাজার সামনে সেই লোকদের নিয়ে আসা হল। নবূখদ্‌নিৎসর তাঁদের বললেন, “হে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো, এ কি সত্যি যে, তোমরা আমার দেবতাদের সেবা কর না এবং আমি যে সোনার মূর্তি স্থাপন করেছি তাঁকেও প্রণাম কর না? এখন তোমরা যদি শিংগা, বাঁশী, সুরবাহার, ছোট ও বড় বীণা, বড় বাঁশী ও অন্যান্য সব রকম বাজনার শব্দ শুনে উবুড় হয়ে পড়ে আমার তৈরী মূর্তিকে প্রণাম করতে প্রস্তুত থাক তাহলে তো ভাল। কিন্তু যদি প্রণাম না কর তবে জ্বলন্ত চুল্লীতে তখনই তোমাদের ফেলে দেওয়া হবে। তখন কোন্‌ দেবতা আমার হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করতে পারবে?” তখন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো উত্তরে রাজাকে বললেন, “হে মহারাজ নবূখদ্‌নিৎসর, এই ব্যাপারে আপনাকে উত্তর দেবার কোন দরকার আমরা মনে করি না। আমরা যে ঈশ্বরের সেবা করি তিনি যদি চান তবে সেই জ্বলন্ত চুল্লী থেকে ও আপনার হাত থেকে আমাদের উদ্ধার করবেন। কিন্তু হে মহারাজ, তিনি যদি তা না-ও করেন তবুও আমরা আপনার দেবতাদের সেবা করব না কিম্বা আপনার স্থাপন করা সোনার মূর্তিকে প্রণাম করব না।” তখন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোর উপর নবূখদ্‌নিৎসর ভীষণ রেগে গেলেন এবং তাঁর মুখে রাগের ভাব ফুটে উঠল। চুল্লীটা যেমন গরম থাকে তিনি সেটা তার চেয়েও সাতগুণ বেশী গরম করতে বললেন। তিনি তাঁর সৈন্যদলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কয়েকজন সৈন্যকে আদেশ দিলেন যেন তারা শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে বেঁধে জ্বলন্ত চুল্লীতে ফেলে দেয়। তখন ঐ তিনজনকে জামা, পাজামা, পাগড়ী ও অন্যান্য কাপড়-চোপড় পরা অবস্থায় বেঁধে জ্বলন্ত চুল্লীতে ফেলে দেওয়া হল। রাজার কড়া আদেশ জরুরীভাবে পালন করবার দরুন এবং চুল্লীটা বেশী গরম হওয়ার দরুন যে লোকেরা শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে চুল্লীতে ফেলবার জন্য নিয়ে গিয়েছিল তারাই আগুনের শিখায় পুড়ে মরল। আর সেই তিনজন বাঁধা অবস্থায় জ্বলন্ত চুল্লীতে পড়লেন। তখন রাজা নবূখদ্‌নিৎসর আশ্চর্য হয়ে লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর পরামর্শদাতাদের বললেন, “আমরা কি তিনজন লোককে বেঁধে আগুনে ফেলে দিই নি?” তারা উত্তর দিল, “হ্যাঁ, মহারাজ।” তিনি বললেন, “কিন্তু আমি চারজন লোককে আগুনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখছি। তারা বাঁধা অবস্থায় নেই এবং তাদের কোন ক্ষতিও হয় নি, আর চতুর্থ জনকে দেখতে দেবতার মত লাগছে।” তখন নবূখদ্‌নিৎসর জ্বলন্ত চুল্লীর মুখের কাছে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বললেন, “হে মহান ঈশ্বরের দাস শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো, তোমরা বের হয়ে এখানে এস।” এতে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগো আগুন থেকে বের হয়ে আসলেন। তখন প্রদেশগুলোর শাসনকর্তারা ও প্রধান পরিচালকেরা, বিভাগের শাসনকর্তারা এবং অন্যান্য সব উঁচু পদের কর্মচারীরা তাঁদের কাছে এসে ভিড় করলেন। তাঁরা দেখলেন আগুন তাঁদের দেহের কোন ক্ষতি করে নি, তাঁদের মাথার একটা চুলও পোড়ে নি, পোশাকও নষ্ট হয় নি এবং তাঁদের গায়ে আগুনের গন্ধও নেই। তখন নবূখদ্‌নিৎসর বললেন, “শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোর ঈশ্বরের গৌরব হোক, যিনি তাঁর স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে তাঁর দাসদের উদ্ধার করলেন। এরা তাঁর উপরেই বিশ্বাস করে রাজার আদেশ অগ্রাহ্য করেছিল এবং তাদের নিজের ঈশ্বর ছাড়া অন্য কোন দেবতার সেবা ও পূজা করবার বদলে মরতেও রাজী ছিল। সেইজন্য আমি এই আদেশ দিচ্ছি যে, কোন জাতির, দেশের বা ভাষার লোক যদি শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কিছু বলে তবে তাকে টুকরা টুকরা করে কেটে ফেলা হবে এবং তার বাড়ী-ঘর আবর্জনার স্তূপ করা হবে, কারণ আর কোন দেবতা এইভাবে উদ্ধার করতে পারেন না।” রাজা এর পর শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌-নগোকে বাবিল প্রদেশের মধ্যে আরও উঁচু পদ দান করলেন। পরে রাজা নবূখদ্‌নিৎসর জগতের সমস্ত জাতির, দেশের ও ভাষার লোকদের কাছে এই সংবাদ পাঠালেন: তোমাদের প্রচুর মংগল হোক। মহান ঈশ্বর আমার জন্য যে সব চিহ্ন-কাজ ও আশ্চর্য কাজ করেছেন তা আমি খুশী হয়েই তোমাদের জানাচ্ছি। তাঁর চিহ্ন-কাজগুলো কত মহান, তাঁর আশ্চর্য কাজগুলো কত শক্তিশালী! তাঁর রাজ্য অনন্তকালের রাজ্য, আর তাঁর রাজত্ব যুগের পর যুগ স্থায়ী। আমি নবূখদ্‌নিৎসর আরাম ও সফলতায় পূর্ণ হয়ে আমার রাজবাড়ীতে ছিলাম। আমি যখন বিছানায় শুয়ে ছিলাম তখন একটা স্বপ্ন দেখে ভয় পেলাম; সেই স্বপ্নে আমি যা যা দেখলাম তা আমার মনে ভয় ধরিয়ে দিল। সেইজন্য আমার স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করবার জন্য আমি বাবিলের সমস্ত রাজ-পরামর্শদাতাদের আমার সামনে আনবার হুকুম দিলাম। যাদুকর, ভূতের ওঝা, জ্যোতিষী ও গণকেরা আমার কাছে আসলে পর আমি তাদের কাছে স্বপ্নটা বললাম, কিন্তু তারা তার অর্থ বলতে পারল না। শেষে দানিয়েল আমার সামনে আসলে পর আমি তাকে স্বপ্নটা বললাম। আমার দেবতার নাম অনুসারে তাকে বেল্টশৎসর নাম দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে পবিত্র এমন কিছু রয়েছে যা এই পৃথিবীর নয়। আমি বললাম, “হে যাদুকরদের প্রধান বেল্টশৎসর, আমি জানি তোমার মধ্যে পবিত্র এমন কিছু রয়েছে যা এই পৃথিবীর নয় এবং কোন গুপ্ত বিষয় জানা তোমার কাছে খুব কঠিন নয়। আমার এই স্বপ্নটার অর্থ তুমি বলে দাও। বিছানায় শুয়ে আমি এই দর্শন দেখেছিলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম একটা গাছ পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে; সেটা খুবই উঁচু। গাছটা বেড়ে উঠে বিরাট ও শক্তিশালী হল এবং তার মাথাটা গিয়ে আকাশ ছুঁলো; পৃথিবীর শেষ সীমা থেকেও গাছটা দেখা যাচ্ছিল। তার পাতাগুলো ছিল সুন্দর ও ফল ছিল প্রচুর এবং তা থেকে সকলেই খাবার পেত। তার নীচে মাঠের পশুরা আশ্রয় পেত এবং আকাশের পাখীরা তার ডালে বাস করত; সমস্ত প্রাণীই তা থেকে খাবার পেত। “বিছানায় শুয়ে সেই দর্শনের মধ্যে আমি তাকিয়ে দেখলাম যে, একজন পবিত্র পাহারাদার স্বর্গ থেকে নেমে আসলেন। তিনি জোর গলায় বললেন, ‘গাছটা কেটে ফেল ও তার ডালগুলো ছেঁটে ফেলে দাও; তার পাতাগুলো ঝেড়ে ফেল এবং ফলগুলো ছড়িয়ে দাও। তার তলা থেকে পশুরা ও ডালপালা থেকে পাখীরা পালিয়ে যাক, কিন্তু তার গোড়া ও শিকড়গুলো লোহা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বাঁধা অবস্থায় মাটিতে মাঠের ঘাসের মধ্যে থাকুক। আকাশের শিশিরে সে ভিজুক এবং পৃথিবীর গাছপালার মধ্যে পশুদের সংগে সে বাস করুক। তার আর মানুষের স্বভাব না থাকুক এবং সাত বছর পর্যন্ত তাকে পশুর স্বভাব দেওয়া হোক। “ ‘যে রায় দেওয়া হল তা পাহারাদারেরা, অর্থাৎ পবিত্র দূতেরা ঘোষণা করছেন, যাতে জীবিত লোকেরা জানতে পারে যে, মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে মহান ঈশ্বরই কর্তৃত্ব করেন এবং তিনি যাকে খুশী তাকে রাজ্য দান করেন ও মানুষের মধ্যে সবচেয়ে যে নীচু তাকেই তার উপরে বসান।’ “এটা সেই স্বপ্ন যা আমি রাজা নবূখদ্‌নিৎসর দেখেছি। এখন হে বেল্টশৎসর, তুমি বল এর অর্থ কি? আমার রাজ্যের কোন পরামর্শদাতাই এর অর্থ আমাকে বলে দিতে পারে নি; কিন্তু তুমি পারবে, কারণ তোমার মধ্যে পবিত্র এমন কিছু রয়েছে যা এই পৃথিবীর নয়।” তখন দানিয়েল, অর্থাৎ বেল্টশৎসর স্বপ্নের কথা চিন্তা করে ভয় পেল এবং কিছু সময়ের জন্য হতভম্ব হয়ে রইল। এতে রাজা বললেন, “হে বেল্টশৎসর, স্বপ্ন কিম্বা তার অর্থ তোমাকে চিন্তিত না করুক।” বেল্টশৎসর উত্তর দিলেন, “হে আমার প্রভু, এই স্বপ্ন এবং তার অর্থ আপনার শত্রুদের উপর ঘটুক। আপনি যে গাছটা দেখেছিলেন, যেটা বিরাট ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, যার মাথা আকাশ ছুঁয়েছিল ও যেটা পৃথিবীর সবাই দেখতে পেয়েছিল, যাতে সুন্দর পাতা ও প্রচুর ফল ছিল, যা সকলকে খাবার যোগাত, যা মাঠের পশুদের আশ্রয় দিত এবং যার ডালে আকাশের পাখীরা থাকবার জায়গা পেত- আপনি, হে মহারাজ, আপনিই সেই গাছ। আপনি মহান ও বলবান হয়েছেন; আপনার শক্তি বেড়ে গিয়ে আকাশ পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং আপনার রাজ্য পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। “আপনি, হে মহারাজ, একজন পবিত্র পাহারাদারকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘গাছটা কেটে ধ্বংস করে ফেল, কিন্তু তার গোড়া ও শিকড়গুলো লোহা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বেঁধে মাটিতে মাঠের ঘাসের মধ্যে ফেলে রেখে দাও। সে আকাশের শিশিরে ভিজুক; সাত বছর পর্যন্ত সে পশুদের সংগে বাস করুক।’ “হে মহারাজ, আমি এখন যা বলছি তা হল আমার প্রভু মহারাজের স্বপ্নের অর্থ এবং তাঁর বিরুদ্ধে মহান ঈশ্বরের রায়। আপনাকে লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং আপনি পশুদের সংগে বাস করবেন; আপনি ষাঁড়ের মত ঘাস খাবেন এবং আকাশের শিশিরে ভিজবেন। এইভাবে সাত বছর চলে যাবে, যে পর্যন্ত না আপনি মেনে নেবেন যে, মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে মহান ঈশ্বরই কর্তৃত্ব করেন এবং তিনিই সেই সব রাজ্য যাকে ইচ্ছা তাকে দেন। শিকড় সুদ্ধ গাছটার গোড়া রেখে দেওয়ার আদেশের মানে হল, আপনি যখন মেনে নেবেন যে, স্বর্গের ঈশ্বরই কর্তৃত্ব করেন তখন আপনার রাজ্য আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কাজেই হে মহারাজ, আপনি আমার পরামর্শ গ্রহণ করুন। আপনি ন্যায় কাজ করে এবং গরীবদের প্রতি দয়ালু হয়ে আপনার পাপ ও অন্যায় ত্যাগ করুন। তাহলে হয়তো আপনার ভাল অবস্থা স্থির থাকবে।” কথাগুলো তাঁর মুখে থাকতে থাকতেই স্বর্গ থেকে কেউ বললেন, “হে রাজা নবূখদ্‌নিৎসর, তোমাকে বলা হচ্ছে যে, তোমার রাজ্য তোমার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। তোমাকে লোকদের কাছ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং তুমি পশুদের সংগে বাস করবে; ষাঁড়ের মত তুমি ঘাস খাবে। যে পর্যন্ত না তুমি মেনে নেবে যে, মহান ঈশ্বরই মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে কর্তৃত্ব করেন এবং সেই সব রাজ্য যাকে ইচ্ছা তাকে দেন সেই পর্যন্ত সাত বছর চলে যাবে।” নবূখদ্‌নিৎসরের সম্বন্ধে যা বলা হয়েছিল তখনই তা পূর্ণ হল। মানুষের কাছ থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হল এবং তিনি ষাঁড়ের মত ঘাস খেতে লাগলেন। তাঁর দেহ আকাশের শিশিরে ভিজতে লাগল; তাঁর চুলগুলো ঈগল পাখীর পালখের মত হয়ে উঠল আর তাঁর নখগুলো পাখীর পায়ের নখের মত হয়ে গেল। সেই সময় শেষ হয়ে গেলে পর আমি নবূখদ্‌নিৎসর স্বর্গের দিকে চোখ তুললাম এবং আমার মনের সুস্থতা ফিরে আসল। তখন আমি মহান ঈশ্বরের গৌরব করলাম; যিনি চিরকাল জীবিত আছেন আমি তাঁকে সম্মান দেখালাম ও তাঁর প্রশংসা করলাম। আমি বললাম, “ঈশ্বরের রাজ্য অনন্তকালের রাজ্য; তাঁর রাজত্ব যুগের পর যুগ স্থায়ী। পৃথিবীর সমস্ত লোক তাঁর কাছে যেন কিছুই নয়। তিনি স্বর্গদূতদের ও পৃথিবীর লোকদের নিয়ে তাঁর ইচ্ছামত কাজ করেন। এমন কেউ নেই যে, তাঁর হাত থামিয়ে দিতে পারে কিম্বা তাঁকে বলতে পারে, ‘তুমি কি করছ?’ ” যখন আমার মনের সুস্থতা ফিরে আসল তখন আমার রাজ্যের সম্মানের জন্য আমার জাঁকজমক ও গৌরব আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। আমার মন্ত্রীরা ও প্রধান লোকেরা আমাকে খুঁজে বের করল এবং আমাকে আবার সিংহাসনে বসানো হল আর আমি আগের চেয়েও বেশী মহান হলাম। এখন আমি নবূখদ্‌নিৎসর সেই স্বর্গের রাজার প্রশংসা, সম্মান ও গৌরব করি, কারণ তিনি যা কিছু করেন তা ঠিক, আর তাঁর সব পথই ন্যায়ে পূর্ণ। যারা অহংকারের বশে চলে তাদের তিনি নীচু করতে পারেন। এক সময় রাজা বেল্‌শৎসর তাঁর এক হাজার প্রধান লোকদের জন্য একটা বড় ভোজ দিলেন এবং তিনি তাঁদের সংগে আংগুর-রস খাচ্ছিলেন। আংগুর-রস খেতে খেতে বেল্‌শৎসর আদেশ দিলেন, তাঁর মায়ের বাবা নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেমের উপাসনা-ঘর থেকে যে সব সোনা ও রূপার পাত্র এনেছিলেন সেগুলো যেন আনা হয় যাতে রাজা, তাঁর প্রধান লোকেরা, তাঁর স্ত্রীরা ও তাঁর উপস্ত্রীরা সেই সব পাত্রে করে আংগুর-রস খেতে পারেন। তখন ঈশ্বরের ঘর থেকে যে সব সোনার পাত্র নিয়ে আসা হয়েছিল সেগুলো আনা হলে পর রাজা, তাঁর প্রধান লোকেরা, তাঁর স্ত্রীরা ও তাঁর উপস্ত্রীরা তাতে করে আংগুর-রস খেলেন। তাঁরা আংগুর-রস খেতে খেতে সোনা, রূপা, ব্রোঞ্জ, লোহা, কাঠ ও পাথরের তৈরী দেব-দেবতাদের প্রশংসা করতে লাগলেন। তখন হঠাৎ মানুষের একটা হাত এসে রাজবাড়ীর মধ্যে বাতিদানের কাছে দেয়ালের উপর লিখতে লাগল। লিখবার সময় রাজা সেই হাতখানা দেখতে পেলেন। তাঁর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল এবং তিনি এত ভয় পেলেন যে, তাঁর কোমর দুর্বল হয়ে গেল এবং হাঁটু কাঁপতে লাগল। তখন রাজা জোরে ডাক দিয়ে ভূতের ওঝা, জ্যোতিষী ও গণকদের নিয়ে আসতে বললেন। তিনি বাবিলের সেই পরামর্শদাতাদের বললেন, “যে কেউ এই লেখা পড়ে তার মানে আমাকে বলে দিতে পারবে তাকে বেগুনে কাপড় পরানো হবে ও গলায় সোনার হার দেওয়া হবে আর তাকে রাজ্যের তিনজন রাজার মধ্যে একজনের পদ দেওয়া হবে।” রাজার সেই সব পরামর্শদাতারা ভিতরে আসল, কিন্তু তারা সেই লেখা পড়তে কিম্বা রাজাকে তার অর্থ বলতে পারল না। তখন রাজা বেল্‌শৎসর আরও ভয় পেলেন এবং তাঁর মুখ আরও ফ্যাকাশে হল। তাঁর প্রধান লোকেরা হতভম্ব হয়ে গেলেন। রাজা ও তাঁর প্রধান লোকদের কথা শুনে রাজমাতা সেই ভোজের ঘরে এসে বললেন, “হে মহারাজ, আপনি চিরকাল বেঁচে থাকুন। আপনি ভয় পাবেন না, আপনার মুখ এত ফ্যাকাশে হতে দেবেন না। আপনার রাজ্যের মধ্যে একজন লোক আছেন যাঁর ভিতরে পবিত্র এমন কিছু আছে যা এই পৃথিবীর নয়। আপনার দাদু নবূখদ্‌নিৎসরের সময়ে সেই লোকের মধ্যে বুঝবার শক্তি, বুদ্ধি ও দেবতাদের মত জ্ঞান দেখা গিয়েছিল। আপনার দাদু রাজা নবূখদ্‌নিৎসর তাঁকে যাদুকর, ভূতের ওঝা, জ্যোতিষী ও গণকদের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি দানিয়েল নামে এই লোককে বেল্টশৎসর বলে ডাকতেন। তাঁর মধ্যে অসাধারণ গুণ, জ্ঞান, বুদ্ধি, স্বপ্নের অর্থ বলবার শক্তি, গুপ্ত বিষয় ব্যাখ্যার ও কঠিন সমস্যার উত্তর দেবার ক্ষমতা দেখা গিয়েছিল। আপনি দানিয়েলকে ডেকে পাঠান; এই লেখার অর্থ তিনিই আপনাকে বলে দেবেন।” তখন দানিয়েলকে রাজার সামনে আনা হল, আর রাজা তাঁকে বললেন, “তুমি কি সেই দানিয়েল যাকে আমার দাদু যিহূদা দেশ থেকে বন্দী করে এনেছিলেন? আমি শুনেছি তোমার মধ্যে এমন কিছু আছে যা এই পৃথিবীর নয়, আর তোমার ভিতরে বুঝবার শক্তি, বুদ্ধি ও বিশেষ জ্ঞান রয়েছে। এই লেখা পড়ে আমাকে অর্থ বলে দেবার জন্য গুণিন ও অন্যান্য পরামর্শদাতাদের আমার কাছে আনা হয়েছিল, কিন্তু তারা এর অর্থ বলতে পারে নি। এখন আমি শুনলাম যে, তুমি গুপ্ত বিষয়ের অর্থ বলে দিতে ও কঠিন সমস্যার সমাধান দিতে পার। তুমি যদি এই লেখা পড়ে আমাকে তার অর্থ বলে দিতে পার তবে তোমাকে বেগুনে কাপড় পরানো হবে ও গলায় সোনার হার দেওয়া হবে এবং তুমি এই রাজ্যের তিনজন রাজার মধ্যে একজনের পদ পাবে।” তখন দানিয়েল উত্তরে রাজাকে বললেন, “আপনার পুরস্কার আপনারই থাকুক অথবা সেগুলো আপনি অন্য কাউকে দিন। কিন্তু আমি মহারাজের কাছে লেখাটা পড়ব ও তার অর্থ তাঁকে বলব। হে মহারাজ, মহান ঈশ্বর আপনার দাদু নবূখদ্‌নিৎসরকে রাজ্য, শক্তি, গৌরব ও জাঁকজমক দিয়েছিলেন। তাঁকে সেই শক্তি দেওয়াতে সমস্ত জাতির, দেশের ও ভাষার লোকেরা তাঁর সামনে ভয়ে কাঁপত। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে মেরে ফেলতেন, যাকে ইচ্ছা তাকে জীবিত রাখতেন, যাকে ইচ্ছা তাকে উঁচু পদে তুলতেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে নীচে নামিয়ে দিতেন। কিন্তু যখন তাঁর অন্তর গর্বিত ও অহংকারে কঠিন হয়ে উঠল তখন তাঁকে তাঁর রাজসিংহাসন থেকে নামিয়ে দেওয়া হল এবং তাঁর সম্মান নিয়ে নেওয়া হল। তাঁকে মানুষের কাছ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে একটা পশুর স্বভাব দেওয়া হল। যতদিন না তিনি মেনে নিলেন যে, মহান ঈশ্বরই মানুষের রাজ্যগুলোর উপরে কর্তৃত্ব করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে সেই সব রাজ্যের উপরে বসান ততদিন পর্যন্ত তিনি বুনো গাধাদের সংগে বাস করতেন ও ষাঁড়ের মত ঘাস খেতেন এবং আকাশের শিশিরে ভিজতেন। “কিন্তু হে বেল্‌শৎসর, আপনি তাঁরই নাতি; আপনি সব কিছু জেনেও নিজেকে নত করেন নি। তার বদলে আপনি নিজেকে স্বর্গের প্রভুর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর ঘর থেকে নিয়ে আসা পাত্রগুলো আপনি আনিয়েছেন এবং আপনি, আপনার প্রধান লোকেরা, আপনার স্ত্রীরা ও উপস্ত্রীরা তাতে করে আংগুর-রস খেয়েছেন। আপনি রূপা, সোনা, ব্রোঞ্জ, লোহা, কাঠ ও পাথরের তৈরী যে দেবতারা দেখতে, শুনতে ও বুঝতে পারে না তাদের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু আপনি ঈশ্বরের গৌরব করেন নি, যাঁর হাতে রয়েছে আপনার জীবন ও আপনার সমস্ত পথ। সেইজন্য তিনি সেই হাত পাঠিয়ে এই কথা লিখিয়েছেন। “সেই লেখাটা হল এই: ‘মিনে মিনে তকেল উপারসীন।’ ঐ কথাগুলোর অর্থ হল: মিনে, অর্থাৎ গোণা- ঈশ্বর আপনার রাজত্বের দিনগুলো গুণেছেন এবং তা শেষ করেছেন। তকেল, অর্থাৎ ওজন করা- দাঁড়িপাল্লায় আপনাকে ওজন করা হয়েছে এবং আপনি কম পড়েছেন। উপারসীন, অর্থাৎ ভাগ করা- আপনার রাজ্যটা ভাগ করে মাদীয় ও পারসীকদের দেওয়া হয়েছে।” তখন বেল্‌শৎসরের আদেশে দানিয়েলকে বেগুনে কাপড় পরানো হল এবং তাঁর গলায় সোনার হার দেওয়া হল। তাঁকে রাজ্যের তিনজন রাজার মধ্যে একজনের পদ দেবার কথা ঘোষণা করা হল। সেই রাতেই বাবিলীয়দের রাজা বেল্‌শৎসরকে মেরে ফেলা হল, আর মাদীয় দারিয়াবস বাষট্টি বছর বয়সে রাজ্যের ভার গ্রহণ করলেন। দারিয়াবস তাঁর রাজ্যের সমস্ত প্রদেশগুলোর উপরে একশো বিশ জন শাসনকর্তা নিযুক্ত করা উপযুক্ত মনে করলেন। তাঁদের উপরে থাকবেন তিনজন রাজ-পরিচালক। সেই তিনজনের মধ্যে দানিয়েল ছিলেন একজন। এই তিনজনের কাছে সেই শাসনকর্তারা দায়ী থাকবেন যাতে মহারাজের কোন ক্ষতি না হয়। দানিয়েল নিজের অসাধারণ গুণের জন্য অন্যান্য রাজ-পরিচালক ও প্রদেশের শাসনকর্তাদের চেয়ে নিজেকে আরও ভাল বলে প্রমাণ করলেন। তার ফলে মহারাজ তাঁকে গোটা রাজ্যের উপরে নিযুক্ত করবেন বলে ঠিক করলেন। এতে সেই রাজ-পরিচালকেরা ও সেই শাসনকর্তারা সরকারী কাজের ব্যাপারে দানিয়েলের দোষ ধরবার চেষ্টা করতে লাগলেন, কিন্তু পারলেন না। তাঁর মধ্যে তাঁরা কোন দোষ খুঁজে পেলেন না, কারণ তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন, কোন দোষ বা অবহেলা তাঁর মধ্যে ছিল না। শেষে সেই লোকেরা বললেন, “ঐ দানিয়েলকে দোষী করবার জন্য তার বিরুদ্ধে আমরা কখনও কোন দোষ খুঁজে পাব না, কেবল তার ঈশ্বরের আইন-কানুন নিয়ে যদি কিছু পাই।” তখন রাজ-পরিচালকেরা ও প্রদেশের শাসনকর্তারা দল বেঁধে রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “মহারাজ দারিয়াবস, আপনি চিরকাল বেঁচে থাকুন। সমস্ত রাজ-পরিচালক, প্রদেশগুলোর পরিচালক ও শাসনকর্তা, পরামর্শদাতা ও বিভাগের শাসনকর্তারা সবাই এই কথায় রাজী হয়েছেন যে, মহারাজ যেন একটা কড়া হুকুম জারি করেন। সেই হুকুম হল, এর পরের ত্রিশ দিন যদি কেউ, হে মহারাজ, আপনি ছাড়া কোন দেবতা বা মানুষের কাছে প্রার্থনা করে তবে তাকে সিংহের গর্তে ফেলে দেওয়া হবে। এখন হে মহারাজ, আপনি সেই আদেশ লিখিতভাবে দেবেন যাতে এটাও মাদীয় ও পারসীকদের আরও একটা আইন হয় যা বাতিল করা বা বদলানো যায় না।” তখন রাজা দারিয়াবস সেই লিখিত আদেশে স্বাক্ষর করলেন। হুকুমে স্বাক্ষর দেওয়া হয়ে গেছে শুনে দানিয়েল তাঁর বাড়ীর উপর তলার ঘরে গেলেন; সেই ঘরের জানলা যিরূশালেমের দিকে খোলা ছিল। তিনি নিজের অভ্যাস মতই দিনে তিনবার হাঁটু পেতে প্রার্থনা করে তাঁর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। তখন সেই লোকেরা দল বেঁধে সেখানে গিয়ে দানিয়েলকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্র্থনা করতে ও মিনতি জানাতে দেখলেন। এতে তাঁরা রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে তাঁর দেওয়া হুকুমের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, “হে মহারাজ, আপনি কি এই হুকুম জারি করেন নি যে, এর পরের ত্রিশ দিনের মধ্যে যদি কেউ আপনি ছাড়া কোন দেবতা বা মানুষের কাছে প্রার্থনা করে তবে তাকে সিংহের গর্তে ফেলে দেওয়া হবে?” রাজা উত্তর দিলেন, “মাদীয় ও পারসীকদের আইন অনুসারে এই হুকুম স্থির আছে, কারণ সেই আইন বাতিল করা যায় না।” তখন তাঁরা রাজাকে বললেন, “হে মহারাজ, দানিয়েল নামে যিহূদা দেশের বন্দীদের একজন আপনার কথায় কিম্বা যে হুকুমে আপনি স্বাক্ষর করেছেন তাতে কান দেয় না। সে এখনও দিনে তিনবার প্রার্থনা করে।” রাজা এই কথা শুনে খুবই দুঃখিত হলেন; দানিয়েলকে তিনি রক্ষা করবেন বলে মনে মনে স্থির করলেন এবং তাঁকে উদ্ধার করবার জন্য সূর্য না ডোবা পর্যন্ত সব রকমে চেষ্টা করলেন। তখন সেই লোকেরা আবার দল বেঁধে রাজার কাছে গিয়ে বললেন, “হে মহারাজ, আপনি মনে রাখবেন যে, মাদীয় ও পারসীকদের আইন অনুসারে রাজা যে হুকুম জারি করেন তা আর বদলানো যায় না।” শেষে রাজা আদেশ দিলেন আর লোকেরা দানিয়েলকে নিয়ে এসে সিংহের গর্তে ফেলে দিল। তখন রাজা দানিয়েলকে বললেন, “তুমি সব সময় যাঁর সেবা কর সেই ঈশ্বরই যেন তোমাকে রক্ষা করেন।” পরে একটা পাথর এনে সেই গর্তের মুখে চাপা দেওয়া হল। রাজা তাঁর নিজের ও প্রধান লোকদের সীলমোহরের আংটি দিয়ে সেটা সীলমোহর করে দিলেন যাতে দানিয়েলের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা করা না যায়। পরে রাজা রাজবাড়ীতে ফিরে গিয়ে কিছু না খেয়ে রাত কাটালেন এবং তাঁর জন্য কোন আনন্দের ব্যবস্থা করতে দিলেন না। তিনি সারা রাত ঘুমাতে পারলেন না। ভোরের প্রথম আলো দেখা দিতেই রাজা উঠে তাড়াতাড়ি করে সেই সিংহের গর্তের দিকে গেলেন। গর্র্তের কাছে গিয়ে তিনি কাতর স্বরে দানিয়েলকে ডেকে বললেন, “হে জীবন্ত ঈশ্বরের দাস দানিয়েল, তুমি সব সময় যাঁর সেবা কর তোমার সেই ঈশ্বর কি তোমাকে সিংহের মুখ থেকে রক্ষা করতে পেরেছেন?” দানিয়েল উত্তর দিলেন, “হে মহারাজ, আপনি চিরকাল বেঁচে থাকুন। আমার ঈশ্বর তাঁর দূত পাঠিয়ে সিংহদের মুখ বন্ধ করেছিলেন। তারা আমাকে আঘাত করে নি, কারণ ঈশ্বরের চোখে আমি নির্দোষ ছিলাম। হে মহারাজ, আপনার কাছেও আমি কোন দোষ করি নি।” তখন রাজা খুব খুশী হলেন এবং সেই গর্ত থেকে দানিয়েলকে তুলে আনবার হুকুম দিলেন। দানিয়েলকে তোলা হলে পর তাঁর গায়ে কোন আঘাত দেখা গেল না, কারণ তিনি তাঁর ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করেছিলেন। যে লোকেরা হিংসা করে দানিয়েলকে দোষ দিয়েছিল রাজার আদেশে তাদের নিয়ে আসা হল এবং স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে সুদ্ধ তাদের সেই সিংহের গর্তে ফেলে দেওয়া হল। তারা সেই গর্তের মেঝেতে পড়তে না পড়তেই সিংহেরা তাদের আক্রমণ করে তাদের হাড়গোড় পর্যন্ত চুরমার করে দিল। এর পর রাজা দারিয়াবস সমস্ত জাতির, দেশের ও ভাষার লোকদের কাছে এই কথা লিখলেন: “তোমাদের প্রচুর মংগল হোক! আমি আদেশ দিচ্ছি যে, আমার রাজ্যের সমস্ত লোক যেন দানিয়েলের ঈশ্বরকে ভয় ও ভক্তি করে, কারণ তিনিই জীবন্ত ঈশ্বর ও চিরকাল স্থায়ী। তাঁর রাজ্য ধ্বংস হবে না, তাঁর কর্তৃত্ব কখনও শেষ হবে না। তিনি রক্ষা ও উদ্ধার করেন; তিনি আকাশে ও পৃথিবীতে চিহ্ন হিসাবে নানা আশ্চর্য কাজ করেন। তিনি সিংহদের হাত থেকে দানিয়েলকে রক্ষা করেছেন।” এইভাবে দারিয়াবস ও পারসীক রাজা কোরসের রাজত্বের সময়ে দানিয়েল ভাল অবস্থায় ছিলেন। সেই সমুদ্র থেকে চারটা বিরাট জন্তু উঠে আসল; তারা এক একটা এক এক রকমের ছিল। প্রথমটা ছিল সিংহের মত এবং তার ঈগল পাখীর মত ডানা ছিল। দেখতে দেখতে তার ডানা দু’টা ছিঁড়ে ফেলা হল এবং তাকে মাটি থেকে উপরে উঠানো হল। তখন সেটা মানুষের মত দুই পায়ে দাঁড়াল এবং তাকে মানুষের অন্তর দেওয়া হল। “তারপর আমি দ্বিতীয় জন্তুটা দেখতে পেলাম। সেটা দেখতে ছিল ভাল্লুকের মত। তার এক পাশ অন্য পাশের চেয়ে উঁচু ছিল এবং তার মুখের মধ্যে পাঁজরের তিনটা হাড় ছিল। তাকে বলা হল, ‘তুমি গিয়ে পেট ভরে মাংস খাও।’ “তারপর আমি তাকিয়ে আর একটা জন্তু দেখতে পেলাম। সেটা দেখতে চিতাবাঘের মত ছিল। তার পিঠে পাখীর ডানার মত চারটা ডানা ছিল। এই জন্তুটার চারটা মাথা ছিল এবং তাকে কর্তৃত্ব করবার ক্ষমতা দেওয়া হল। “রাতের বেলা আমার সেই স্বপ্নের মধ্যে তাকিয়ে আমি চতুর্থ জন্তুটা দেখতে পেলাম। সে ছিল ভয়ংকর, ভয় জাগানো এবং খুব শক্তিশালী। তার বড় বড় লোহার দাঁত ছিল। তার শিকারকে সে চুরমার করে গিলে ফেলল এবং যা বাকী রইল তা পা দিয়ে মাড়ালো। এটা আগের জন্তুদের চেয়ে আলাদা ছিল এবং তার দশটা শিং ছিল। আমি যখন সেই শিংগুলোকে লক্ষ্য করছিলাম তখন আর একটা ছোট শিং সেগুলোর মাঝখানে উঠল; তার সামনে আগের শিংগুলোর মধ্য থেকে তিনটা শিং উপ্‌ড়ে ফেলা হল। এই শিংটার মানুষের চোখের মত চোখ ছিল আর একটা মুখ ছিল যেটা বড়াই করে কথা বলছিল। “পরে আমি দেখলাম কয়েকটা সিংহাসন রাখা হল এবং খুব বৃদ্ধ একজন তাঁর সিংহাসনে বসলেন। তাঁর কাপড়-চোপড় তুষারের মত সাদা এবং তাঁর মাথার চুল সাদা পশমের মত। তাঁর সিংহাসন ও সিংহাসনের চাকাগুলো যেন আগুনে জ্বলছিল। তাঁর সামনে থেকে একটা আগুনের নদী বের হয়ে বয়ে যাচ্ছিল। হাজার হাজার লোক তাঁর সেবা করছিল; লক্ষ লক্ষ লোক তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। বিচার শুরু হল এবং বইগুলো খোলা হল। “আমি দেখলাম ঐ শিংটা তখনও বড়াই করে কথা বলছে। সেই জন্তুটাকে যে পর্যন্ত না কেটে ফেলা হল সেই পর্যন্ত আমি তাকিয়েই রইলাম। তার দেহটা ধ্বংস করে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দেওয়া হল। অন্য জন্তুদের কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে নেওয়া হল কিন্তু নির্দিষ্ট কালের জন্য তাদের বাঁচতে দেওয়া হল। “রাতের বেলা আমার সেই স্বপ্নের মধ্যে আমি তাকিয়ে মনুষ্যপুত্রের মত একজনকে আকাশের মেঘের মধ্যে আসতে দেখলাম। তিনি সেই বৃদ্ধ জনের কাছে এগিয়ে গেলে পর তাঁকে তাঁর সামনে নিয়ে যাওয়া হল। সেই মনুষ্যপুত্রকে কর্তৃত্ব, সম্মান ও রাজত্ব করবার ক্ষমতা দেওয়া হল যেন সমস্ত জাতির, দেশের ও ভাষার লোকেরা তাঁর সেবা করে। তাঁর রাজত্ব চিরস্থায়ী; তা শেষ হবে না আর তাঁর রাজ্য কখনও ধ্বংস হবে না। “তখন আমি দানিয়েল স্বপ্নের মধ্যে মনে কষ্ট পেতে লাগলাম এবং আমি যা যা দেখছিলাম তা আমাকে অশান্ত করে তুলছিল। যাঁরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমি তাঁদের একজনের কাছে এগিয়ে গিয়ে এই সবের অর্থ জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি আমাকে এই কথা বলে ঐ সবের অর্থ বুঝিয়ে দিলেন, ‘ঐ চারটা বিরাট জন্তু হল পৃথিবীর চারটা রাজ্য। কিন্তু শেষে মহান ঈশ্বরের লোকেরা কর্তৃত্ব পেয়ে চিরকাল, হ্যাঁ, চিরকাল রাজত্ব করবে।’ “তখন আমি সেই চতুর্থ জন্তুটার অর্থ জানতে চাইলাম। এটা সেই জন্তু যে অন্য সবগুলোর চেয়ে ভিন্ন এবং ভয়ংকর ছিল, যার লোহার দাঁত ও ব্রোঞ্জের নখ ছিল, যে জন্তুটা তার শিকার চুরমার করে গিলে ফেলেছিল এবং বাকীটা পায়ে মাড়িয়েছিল। তার মাথার দশটা শিং সম্বন্ধে এবং অন্য যে শিংটা উঠেছিল, যার সামনে তিনটা শিং পড়ে গিয়েছিল, যার চোখ ও বড়াই-করা মুখ ছিল এবং যেটা অন্যগুলোর চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল, সেই শিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলাম। তারপর আমি দেখলাম সেই শিংটা ঈশ্বরের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাঁদের হারিয়ে দিচ্ছিল, যে পর্যন্ত না সেই বৃদ্ধ এসে মহান ঈশ্বরের লোকদের পক্ষে রায় দিলেন। এর পর থেকে ঈশ্বরের লোকেরা রাজত্ব করতে লাগলেন। “তারপর তিনি আমাকে এই রকম ব্যাখ্যা দিলেন, ‘চতুর্থ জন্তুটা হল পৃথিবীর চতুর্থ রাজ্য। সেটা অন্য রাজ্যগুলোর চেয়ে আলাদা হবে এবং গোটা পৃথিবীকে মাড়িয়ে চুরমার করে গ্রাস করবে। সেই দশটা শিং হল দশজন রাজা যারা এই রাজ্যে রাজত্ব করবে। তাদের পরে আর একজন রাজা উঠবে, সে আগের রাজাদের চেয়ে অন্য রকম হবে; সে তিনজন রাজাকে হারিয়ে দেবে। মহান ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সে কথা বলবে এবং তাঁর লোকদের উপর অত্যাচার করবে। সে নির্দিষ্ট করা দিনগুলো ও আইন-কানুন বদলাতে চেষ্টা করবে। ঈশ্বরের সেই লোকদের সাড়ে তিন বছরের জন্য তার হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু পরে তার বিচার করা হবে এবং তার ক্ষমতা তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে, আর তা চিরকালের জন্য সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হবে। তারপর রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যগুলোর শক্তি মহান ঈশ্বরের লোকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাঁদের রাজ্য হবে চিরস্থায়ী এবং সব রাজারা তাঁদের সেবা করবে ও তাঁদের বাধ্য হবে।’ “এখানেই সেই স্বপ্নের ব্যাপারটার শেষ। আমি দানিয়েল আমার এই সব চিন্তার জন্য এত ভয় পেলাম যে, আমার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, কিন্তু স্বপ্নের ব্যাপারটা আমি মনে গেঁথে রাখলাম, কাউকে বললাম না।” রাজা বেল্‌শৎসরের রাজত্বের তৃতীয় বছরে আমি দানিয়েল আর একটা দর্শন পেলাম। সেই দর্শনে আমি নিজেকে এলম প্রদেশের শূশনের দুর্গে দেখতে পেলাম। সেই দর্শনের মধ্যে আমি ঊলয় খালের পারে ছিলাম। আমি তাকিয়ে একটা পুরুষ ভেড়াকে খালের পারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তার দু’টা লম্বা শিং ছিল। একটা শিং অন্যটার চেয়ে লম্বা এবং সেটা পরে উঠেছিল। আমি দেখলাম ভেড়াটা পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে গুঁতা মারল। তার সামনে কোন পশুই টিকতে পারল না এবং তার হাত থেকে উদ্ধার করতে পারে এমন কেউ ছিল না। সে যা খুশী তা-ই করত এবং সে শক্তিশালী হয়ে উঠল। আমি যখন এই বিষয় ভাবছিলাম তখন হঠাৎ পশ্চিম দিক থেকে একটা ছাগল মাটি না ছুঁয়ে সেখানে ছুটে আসল; তার দুই চোখের মাঝখানে চোখে পড়বার মত একটা শিং ছিল। দুই শিংয়ের যে ভেড়াকে আমি খালের ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম ছাগলটা ভয়ংকর বেগে তার দিকে দৌড়ে গেল। আমি দেখলাম ছাগলটা সেই ভেড়াটাকে ভীষণভাবে আঘাত করে তার শিং দু’টা ভেংগে ফেলল। তার সামনে ভেড়াটার দাঁড়াবার কোন ক্ষমতা রইল না; ছাগলটা তাকে মাটিতে ফেলে পায়ে মাড়াতে লাগল। তার হাত থেকে ভেড়াটাকে উদ্ধার করতে পারে এমন কেউ ছিল না। ছাগলটা খুব শক্তিশালী হয়ে উঠল, কিন্তু সে যখন তার শক্তির চূড়ায় উঠল তখন তার বড় শিংটা ভেংগে গেল এবং তার জায়গায় চার দিকে চারটা চোখে পড়বার মত শিং উঠল। সেই শিংগুলোর একটা থেকে আর একটা শিং উঠল; সেটা প্রথমে ছোট ছিল কিন্তু পরে দক্ষিণ, পূর্ব ও সুন্দর দেশের দিকে বড় হতে লাগল। সেটা বড় হতে হতে স্বর্গের তারাগুলো পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাল এবং কতগুলো তারা মাটিতে ফেলে সেগুলোকে পায়ে মাড়াল। সে নিজেকে সেই তারাগুলোর কর্তার সমান বলে দাবি করল। তাঁর উদ্দেশ্যে করা প্রতিদিনের উৎসর্গের অনুষ্ঠান সে বন্ধ করে দিল এবং উপাসনা-ঘরটাও অপবিত্র করা হল। তার পাপের ফলে সেই তারাগুলো ও প্রতিদিনের উৎসর্গের অনুষ্ঠান তার হাতে গিয়ে পড়ল। সে সত্যকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলল এবং যা কিছু করল তাতেই সফল হল। তারপর আমি একজন পবিত্র স্বর্গদূতকে কথা বলতে শুনলাম এবং আর একজন পবিত্র স্বর্গদূত তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই দর্শনে যা দেখানো হল তা কত দিন ধরে চলবে? কত দিন ধরে প্রতিদিনের উৎসর্গের অনুষ্ঠানের বদলে সর্বনাশা পাপের জিনিস থাকবে? কত দিন ধরে উপাসনা-ঘর ও তারাগুলোকে পায়ে মাড়ানো হবে?” তিনি বললেন, “দুই হাজার তিনশো সন্ধ্যা ও সকাল ধরে এই সব চলবে। তারপর উপাসনা-ঘরটা আবার শুচি করা হবে।” আমি দানিয়েল যখন দর্শনটা দেখে বুঝবার চেষ্টা করছিলাম তখন মানুষের মত দেখতে একজন আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি একজন মানুষের স্বর শুনলাম; সেই স্বর ঊলয় খালের মধ্য থেকে ডেকে বলল, “গাব্রিয়েল, এই দর্শনের অর্থ এই লোকটিকে বুঝিয়ে দাও।” আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তিনি সেই জায়গার কাছে আসলে পর আমি ভয় পেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, “হে মানুষের সন্তান, এই দর্শনটা যে শেষকালের বিষয়ে তা তুমি বুঝে নাও।” তিনি যখন আমার সংগে কথা বলছিলেন তখন আমি উবুড় অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলাম। তিনি আমাকে ছুঁয়ে পায়ে ভর দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, “ক্রোধের সময়ের শেষের দিকে যা ঘটবে তা আমি তোমাকে বলছি, কারণ দর্শনটা হল শেষকালের নির্দিষ্ট করা সময়ের বিষয়ে। তুমি দুই শিংয়ের যে ভেড়া দেখেছ তা হল মাদীয় ও পারসীক রাজারা। সেই লোমশ ছাগল হল গ্রীস রাজ্য এবং তার দু’চোখের মাঝখানের বড় শিং হল সেই রাজ্যের প্রথম রাজা। ভেংগে ফেলা শিংয়ের জায়গায় সেই চারটা শিং হল চারটি রাজ্য যা সেই জাতির মধ্য থেকে বের হবে কিন্তু সেই রাজ্যগুলোর রাজাদের প্রথম রাজার মত ক্ষমতা থাকবে না। “তাদের রাজত্বের শেষের দিকে যখন পাপের মাত্রা পূর্ণ হবে তখন একজন ভীষণ নিষ্ঠুর ও চালাক রাজা উঠবে। সে খুব বলবান হবে, কিন্তু নিজের শক্তিতে নয়। সে ভীষণভাবে ধ্বংস করবে এবং সে যা করবে তাতেই সফল হবে। সে শক্তিশালী লোকদের ও ঈশ্বরের লোকদের ধ্বংস করবে। তার চালাকির জন্য সে ছলনা করে সফলতা লাভ করবে এবং নিজেকে সবচেয়ে বড় মনে করবে। লোকে যখন নিজেদের নিরাপদ মনে করবে তখন সে অনেককে ধ্বংস করবে এবং শাসনকর্তাদের কর্তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। শেষে সে ধ্বংস হবে, কিন্তু মানুষের শক্তিতে নয়। “তোমাকে সন্ধ্যা ও সকালের উৎসর্গের বিষয়ে যে দর্শন দেখানো হয়েছে তা সত্যি, কিন্তু এই দর্শনটা সীলমোহর করে রাখ, কারণ সেটা ভবিষ্যতে অনেক পরে হবে।” আমি দানিয়েল ক্লান্ত হয়ে পড়লাম এবং অসুস্থ হয়ে কয়েক দিন শুয়ে রইলাম। তারপর আমি উঠে রাজার কাজ করতে গেলাম। আমি সেই দর্শন দেখে খুব চিন্তিত হয়েছিলাম, কারণ সেই দর্শনের অর্থ আমি বুঝতে পারলাম না। সেইজন্য আমি উপবাস করে, চট পরে এবং ছাই মেখে অনুরোধ ও মিনতির সংগে প্রভু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম। আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে আমি প্রার্থনা করলাম ও পাপ স্বীকার করে বললাম, “হে প্রভু, তুমিই মহান ও ভক্তিপূর্ণ ভয় জাগানো ঈশ্বর। যারা তোমাকে ভালবাসে ও তোমার আদেশ পালন করে তাদের জন্য তুমি তোমার অটল ভালবাসার ব্যবস্থা রক্ষা করে থাক। আমরা পাপ করেছি, অন্যায় করেছি। আমরা মন্দ কাজ করেছি, বিদ্রোহ করেছি। আমরা তোমার আদেশ ও আইন-কানুনের পথ থেকে সরে গেছি। আমাদের রাজাদের, নেতাদের, পূর্বপুরুষদের ও দেশের সব লোকদের কাছে তোমার দাস নবীরা তোমার দেওয়া যে কথা বলেছেন তা আমরা শুনি নি। “হে প্রভু, তুমি ন্যায়বান, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা অপমানে ঢাকা রয়েছি। যিহূদার লোকেরা, যিরূশালেমের বাসিন্দারা এবং যে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের তোমার প্রতি অবিশ্বস্ততার জন্য তুমি নানা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলে তারা সবাই অপমানে ঢেকে আছে। হে সদাপ্রভু, আমাদের রাজারা, নেতারা, পূর্বপুরুষেরা ও আমরা অপমানে ঢাকা আছি, কারণ আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। আমাদের প্রভু ঈশ্বর দয়ালু ও ক্ষমাবান, যদিও আমরা তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি। আমরা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথার বাধ্য হই নি; তোমার দাস নবীদের মধ্য দিয়ে তোমার দেওয়া নির্দেশ আমরা পালন করি নি। ইস্রায়েলীয়েরা সবাই তোমার নির্দেশ অমান্য করে তোমার পথ থেকে সরে গেছে; তারা তোমার কথা শোনে নি। সেইজন্য তোমার দাস মোশির আইন-কানুনে লেখা যে অভিশাপের কথা তুমি শপথ করে বলেছিলে তা আমাদের উপরেই ঢেলে দেওয়া হয়েছে, কারণ আমরা তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। আমাদের ও আমাদের শাসনকর্তাদের বিরুদ্ধে তুমি যে কথা বলেছ তা পূর্ণ করবার জন্য তুমি আমাদের উপর মহা বিপদ এনেছ। যিরূশালেমের প্রতি যা করা হয়েছে গোটা পৃথিবীর আর কোথাও তেমন করা হয় নি। মোশির আইন-কানুনে যেমন লেখা আছে সেইমতই এই সব বিপদ আমাদের উপরে এসেছে, তবুও আমরা আমাদের পাপ থেকে ফিরে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর দয়া পাবার চেষ্টা করি নি; তোমার সত্যের প্রতি আমরা মনোযোগী হই নি। কাজেই হে সদাপ্রভু, তুমি বিপদ প্রস্তুত করে রেখেছ যেন তা এখন আমাদের উপর পাঠিয়ে দিতে পার, কারণ আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু সব কাজেই ন্যায়বান; তবুও আমরা তোমার কথা শুনি নি। “এখন হে আমাদের প্রভু ঈশ্বর, তুমি শক্তিশালী হাত দিয়ে তোমার লোকদের মিসর থেকে বের করে এনে সুনাম লাভ করেছিলে, আর তা আজ পর্যন্তও রয়েছে। আমরা পাপ করেছি, মন্দ কাজ করেছি। হে প্রভু, তোমার ন্যায্যতা অনুসারে তোমার শহর, অর্থাৎ তোমার পবিত্র পাহাড় যিরূশালেম থেকে তোমার ভীষণ অসন্তোষ ও ক্রোধ দূর করে দাও। আমাদের পাপ ও আমাদের পূর্বপুরুষদের অন্যায়ের জন্য আমাদের চারপাশের লোকদের কাছে যিরূশালেম ও তোমার লোকেরা টিট্‌কারির পাত্র হয়েছে। “এখন, হে আমাদের ঈশ্বর, তোমার দাসের প্রার্থনা ও মিনতি শোন। হে প্রভু, তোমার সুনাম রক্ষার জন্য ধ্বংস হয়ে যাওয়া তোমার ঘরের প্রতি তুমি দয়ার চোখে তাকাও। হে আমার ঈশ্বর, তুমি কান দাও, শোন; তোমার চোখ খোল এবং যে শহর তোমার নামে পরিচিত তার ধ্বংস একবার দেখ। আমাদের নিজেদের গুণে নয় বরং তোমার মহা দয়ার জন্যই আমরা তোমার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। হে প্রভু, শোন। হে প্রভু, ক্ষমা কর। হে প্রভু, মনোযোগ দাও, কিছু কর। হে আমার ঈশ্বর, তোমার সুনাম রক্ষার জন্য আর দেরি কোরো না, কারণ তোমার শহর ও তোমার লোকেরা তোমার নামেই পরিচিত।” এইভাবে আমি প্রার্থনা করছিলাম, আমার ও আমার জাতি ইস্রায়েলীয়দের পাপ স্বীকার করছিলাম এবং আমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে তাঁর পবিত্র পাহাড়ের জন্য অনুরোধ করছিলাম। আমি তখনও প্রার্থনা করছিলাম এমন সময় আগের দর্শনে আমি যাঁকে দেখেছিলাম সেই গাব্রিয়েল দূত সন্ধ্যার উৎসর্গের সময়ে বেগে উড়ে আমার কাছে আসলেন। তিনি আমাকে বুঝিয়ে বললেন, “দানিয়েল, আমি এখন তোমাকে বুঝবার ক্ষমতা ও বুদ্ধি দিতে এসেছি। তুমি প্রার্থনা করতে শুরু করতেই ঈশ্বর তার উত্তর দিয়েছেন, আর তা আমি তোমাকে জানাতে এসেছি, কারণ তিনি তোমাকে খুবই ভালবাসেন। কাজেই এই সংবাদের বিষয় তুমি চিন্তা করে দেখ ও দর্শনটা বুঝে নাও। “তোমার লোকদের ও তোমার পবিত্র শহরের জন্য সত্তর গুণ সাত বছর ঠিক করা হয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে মন্দতা বন্ধ করা হবে, অন্যায়ের শেষ হবে, পাপ ঢাকা দেওয়া হবে, চিরস্থায়ী ন্যায্যতা স্থাপন করা হবে, দর্শন ও ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করা হবে এবং মহাপবিত্র স্থানকে অভিষেক করা হবে। “তুমি জেনে ও বুঝে নাও যে, যিরূশালেমকে আবার মেরামত ও তৈরী করবার আদেশ বের হওয়া থেকে শুরু করে সেই মশীহের, অর্থাৎ শাসনকর্তার আসা পর্যন্ত সাত গুণ সাত বছর এবং বাষট্টি গুণ সাত বছর হবে। শহর-চক ও শহর রক্ষার ব্যবস্থা আবার নতুন করে তৈরী করা হবে এবং তা করা হবে কষ্টের সময়ে। বাষট্টি গুণ সাত বছর পরে মশীহকে মেরে ফেলা হবে এবং তাঁর কিছুই থাকবে না। অন্য একজন শাসনকর্তা আসবে এবং তার লোকেরা এসে শহর ও উপাসনা-ঘরটা ধ্বংস করবে। শেষ সময় বন্যার মত আসবে, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে এবং ধ্বংসের পর ধ্বংস ঠিক করে রাখা আছে। সাত বছরের জন্য অনেকের সংগে সেই শাসনকর্তা সন্ধি করবে, কিন্তু সাত বছরের মাঝখানেই সে পশু ও শস্য উৎসর্গ করা বন্ধ করে দেবে। সেই ধ্বংসকারীর উপরে ঠিক করা শাস্তি সম্পূর্ণভাবে ঢেলে না দেওয়া পর্যন্ত উপাসনা-ঘরের মধ্যে সে সর্বনাশা ঘৃণার জিনিস রাখবে।” পারস্যের রাজা কোরসের রাজত্বের তৃতীয় বছরে যাঁকে বেল্টশৎসর নাম দেওয়া হয়েছিল সেই দানিয়েলের কাছে একটা বিষয় প্রকাশিত হল। বিষয়টা সত্যি এবং সেটা এক মহাকষ্ট সম্বন্ধে। একটা দর্শনের মধ্য দিয়ে সেই বিষয়টা তাঁকে বুঝানো হল। সেই সময় আমি দানিয়েল তিন সপ্তা ধরে শোক করছিলাম। সেই তিন সপ্তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন ভাল খাবার আমি খাই নি, মাংস বা আংগুর-রস মুখে দিই নি এবং তেলও মাখি নি। প্রথম মাসের চব্বিশ দিনের দিন আমি মহানদী টাইগ্রীসের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় আমি তাকিয়ে মসীনার কাপড় পরা ও কোমরে খাঁটি সোনার কোমর-বাঁধনি দেওয়া একজন লোককে দেখতে পেলাম। তাঁর দেহ বৈদূর্যমণির মত, মুখ বিদ্যুতের মত, চোখ জ্বলন্ত মশালের মত, হাত-পা পালিশ করা ব্রোঞ্জের উজ্জ্বলতার মত এবং তাঁর স্বর জড়ো হওয়া অনেক লোকের আওয়াজের মত। আমি দানিয়েল একাই সেই দর্শন দেখতে পেলাম; আমার সংগের লোকেরা তা দেখতে পেল না, কিন্তু তারা এত ভয় পেল যে, তারা পালিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রইল। কাজেই আমি একাই সেই মহৎ দর্শন দেখতে লাগলাম। আমার মধ্যে কোন শক্তি রইল না, আমার মুখ মরার মত ফ্যাকাশে হয়ে গেল এবং আমি দুর্বল হয়ে পড়লাম। তারপর আমি সেই লোকের কথা শুনতে পেলাম এবং তাঁর কথা শোনামাত্রই আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লাম। তখন একটা হাত আমাকে ছুঁয়ে আমাকে দুই হাত ও হাঁটুর উপরে ভর করিয়ে দিল। তিনি বললেন, “হে ঈশ্বরের প্রিয় দানিয়েল, আমি তোমাকে যে কথা বলতে যাচ্ছি তাতে ভাল করে মনোযোগ দাও। তুমি উঠে দাঁড়াও, কারণ আমাকে এখন তোমার কাছে পাঠানো হয়েছে।” তিনি আমাকে এই কথা বললে পর আমি কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালাম। তিনি বলতে লাগলেন, “দানিয়েল, ভয় কোরো না। প্রথম যেদিন তুমি দর্শনের বিষয় বুঝবার জন্য এবং তোমার ঈশ্বরের সামনে অন্তর ভেংগেচুরে কষ্ট স্বীকার করবার জন্য মন স্থির করেছিলে সেই দিনই তোমার কথা শোনা হয়েছিল আর সেইজন্যই আমি এসেছি। কিন্তু পারস্য রাজ্যের প্রধান একুশ দিন পর্যন্ত আমাকে বাধা দিয়েছিল। তখন মীখায়েল নামে প্রধান স্বর্গদূতদের একজন আমাকে সাহায্য করতে আসলেন, কারণ আমি পারস্যের রাজাদের মধ্যে একা ছিলাম। ভবিষ্যতে তোমার লোকদের উপর যা ঘটবে তা তোমাকে বুঝাবার জন্য আমি এখন তোমার কাছে এসেছি, কারণ দর্শনের মধ্যে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তা এখনও আসে নি।” তিনি যখন আমাকে এই কথা বলছিলেন তখন আমি মাথা নীচু করে ছিলাম, আমার মুখে কোন কথা ছিল না। তখন মানুষের মত দেখতে সেই স্বর্গদূত, যিনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি আমার ঠোঁট ছুঁলেন, আর আমি মুখ খুলে তাঁকে বললাম, “হে আমার প্রভু, এই দর্শনের জন্য আমি মনে খুব কষ্ট পাচ্ছি এবং আমি দুর্বল হয়ে পড়েছি। হে আমার প্রভু, আমি আপনার দাস, আমি কেমন করে আপনার সংগে কথা বলব? আমার শক্তি নেই এবং আমার মধ্যে শ্বাসও নেই।” তখন মানুষের মত দেখতে সেই স্বর্গদূত আবার আমাকে ছুঁলেন এবং আমাকে শক্তি দিলেন। তিনি বললেন, “হে ঈশ্বরের প্রিয়, তুমি ভয় কোরো না। তোমার শান্তি হোক। তুমি সাহস কর ও শক্তিশালী হও।” তিনি আমার সংগে কথা বলামাত্রই আমি শক্তি পেয়ে বললাম, “হে আমার প্রভু, বলুন, কারণ আপনি আমাকে শক্তি দিয়েছেন।” আমি নিজেও মাদীয় দারিয়াবসের রাজত্বের প্রথম বছরে মীখায়েলকে সাহায্য করবার ও শক্তি দেবার জন্য গিয়েছিলাম। “এখন আমি তোমাকে যা বলব তা সত্যিই ঘটবে। পারস্যে আরও তিনজন রাজা রাজত্ব করবে। তাদের পরে আর একজন রাজা অন্য রাজাদের চেয়ে অনেক বেশী ধনী হবে। তার ধন দিয়ে শক্তিশালী হওয়ার পর সে গ্রীস রাজ্যের বিরুদ্ধে সকলকে ক্ষেপিয়ে তুলবে। তখন একজন শক্তিশালী রাজা উঠবে এবং মহাশক্তিতে রাজত্ব করবে; সে যা খুশী তা-ই করবে। সে উঠবার পরে তার রাজ্য ভেংগে চার দিকে চার ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। তার রাজ্য তার বংশধরদের হাতে যাবে না; সেই রাজ্যটা যাদের হাতে যাবে আগের রাজার মত তাদের শক্তি থাকবে না, কারণ তাদের রাজ্য ধ্বংস হয়ে অন্যদের হাতে যাবে। “দক্ষিণ দিকের রাজা শক্তিশালী হবে, কিন্তু তার একজন সেনাপতি তার চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে আরও বড় রাজ্য শাসন করবে। কয়েক বছর পরে সে উত্তর দিকের রাজার সংগে বন্ধুত্ব করবে। বন্ধুত্বের জন্য দক্ষিণ দিকের রাজার মেয়েকে উত্তর দিকের রাজার সংগে বিয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু সেই মেয়ে সেই বন্ধুত্ব রক্ষা করতে পারবে না এবং সেই রাজা ও তার ক্ষমতাও স্থায়ী হবে না। সেই মেয়েকে, তার রক্ষীদের, তার বাবাকে এবং তার সাহায্যকারীকে মেরে ফেলা হবে। “সেই মেয়ের পরিবারের মধ্য থেকে একজন তার বাবার রাজপদ নেবার জন্য উঠবে। সে উত্তরের রাজার সৈন্যদলকে আক্রমণ করে তার দুর্গে ঢুকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হবে। সে তাদের দেব-দেবতা, ধাতুর তৈরী সব মূর্তি এবং রূপা ও সোনার দামী দামী জিনিস দখল করে মিসরে নিয়ে যাবে। কয়েক বছর সে উত্তরের রাজার প্রতি কিছুই করবে না। তারপর উত্তরের রাজা দক্ষিণের রাজার রাজ্য আক্রমণ করবে, কিন্তু পরে নিজের দেশে ফিরে যাবে। তার ছেলেরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে এক বিরাট সৈন্যদল জড়ো করবে এবং ভীষণ বন্যার মত এগিয়ে গিয়ে যুদ্ধ করতে করতে দক্ষিণের রাজার দুর্গ পর্যন্ত যাবে। “তখন দক্ষিণের রাজা ভীষণ রাগ করে বের হয়ে এসে উত্তরের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। উত্তরের রাজা এক বিরাট সৈন্যদল জোগাড় করলেও তারা হেরে যাবে। দক্ষিণের রাজা সৈন্যদের বন্দী করে নিয়ে যাবার পর অহংকারে পূর্ণ হবে এবং হাজার হাজার লোককে মেরে ফেলবে, তবুও সে শেষ পর্যন্ত জয়ী থাকবে না। পরে উত্তরের রাজা প্রথম সৈন্যদলের চেয়ে আরও বড় একদল সৈন্য জড়ো করবে; কয়েক বছর পরে সে এক বিরাট সৈন্যদল ও প্রচুর মালপত্র নিয়ে এগিয়ে যাবে। “সেই সময়ে অনেকে দক্ষিণের রাজার বিরুদ্ধে উঠবে। এই দর্শন যাতে পূর্ণ হয় সেইজন্য তোমার নিজের জাতির মধ্য থেকে দুর্দান্ত লোকেরা বিদ্রোহ করবে, কিন্তু সফল হবে না। তারপর উত্তরের রাজা এসে একটা দেয়াল-ঘেরা শহর ঘেরাও করে তা অধিকার করবে। দক্ষিণের সৈন্যদলের বাধা দেবার ক্ষমতা থাকবে না; এমন কি, তাদের সবচেয়ে ভাল সৈন্যদলেরও তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার ক্ষমতা থাকবে না। আক্রমণকারী যা খুশী তা-ই করবে; তার বিরুদ্ধে কেউই দাঁড়াতে পারবে না। সুন্দর দেশের মধ্যে সে নিজেকে স্থাপন করবে এবং সেটা ধ্বংস করবার ক্ষমতা তার থাকবে। সে তার গোটা রাজ্যের শক্তি সংগে নিয়ে সেখানে আসবে বলে স্থির করবে এবং দক্ষিণের রাজার সংগে বন্ধুত্ব করবে। সেই রাজ্য ধ্বংস করবার জন্য সে তার এক মেয়েকে দক্ষিণের রাজার সংগে বিয়ে দেবে, কিন্তু তার পরিকল্পনা সফল হবে না কিম্বা তার কোন লাভও হবে না। তারপর উত্তরের রাজা দূরের দেশগুলোর দিকে মনোযোগ দেবে এবং অনেকগুলো দেশ দখল করে নেবে, কিন্তু একজন সেনাপতি তার সেই জয়ের গর্ব শেষ করে দেবে এবং তার টিট্‌কারি তার উপরেই ফিরিয়ে দেবে। এর পর সে তার নিজের দেশের দুর্গগুলোতে ফিরে আসবে, কিন্তু তার পতন হবে; তাকে আর দেখা যাবে না। “তার জায়গায় যে রাজা হবে সে রাজ্যের জাঁকজমক ফিরিয়ে আনবার জন্য খাজনা আদায়কারীদের পাঠাবে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে সে ধ্বংস হয়ে যাবে; এই ধ্বংস কোন রাগ বা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আসবে না। “যাকে রাজা হওয়ার অধিকার দেওয়া হয় নি এমন একজন ঘৃণার যোগ্য লোক তার জায়গায় রাজা হবে। লোকে যখন নিশ্চিন্তে থাকবে তখনই সে ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে রাজ্যটা দখল করবে। যে শক্তিশালী সৈন্যদল তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে তারা পরাজিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সন্ধির কর্তাও ধ্বংস হয়ে যাবে। সন্ধি করবার পরে সেই রাজা ছলনা করবে আর অল্প কয়েকজন লোকের সাহায্যে ক্ষমতা লাভ করবে। ধনী প্রদেশগুলো যখন নিজেদের নিরাপদ মনে করবে তখনই সে তাদের আক্রমণ করবে এবং তার পূর্বপুরুষেরা ও সেই পূর্বপুরুষদের পূর্বপুরুষেরা যা করতে পারে নি সে তা করবে। কেড়ে নেওয়া ও লুট করা জিনিসপত্র এবং ধন সে তার লোকদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। সে দুর্গগুলোর সর্বনাশ করবার জন্য ষড়যন্ত্র করবে, কিন্তু তা অল্প দিনের জন্য। “একটা বিরাট সৈন্যদল নিয়ে সে দক্ষিণের রাজার বিরুদ্ধে তার নিজের শক্তি ও সাহসকে উত্তেজিত করে তুলবে। দক্ষিণের রাজা এক বিরাট শক্তিশালী সৈন্যদল নিয়ে যুদ্ধ করবে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হবে তার জন্য সে দাঁড়াতে পারবে না। যারা রাজার খাবারের ভাগ পায় তারা তাকে ধ্বংস করবে। তার সৈন্যদল বিরাট হলেও অনেকে মারা পড়বে। এই দুই রাজার অন্তর মন্দের দিকে ঝুঁকে থাকাতে তারা একই টেবিলে বসে একে অন্যের কাছে মিথ্যা কথা বলবে, কিন্তু তাতে কোন ফল হবে না, কারণ তাদের সব কিছুর শেষ নির্দিষ্ট সময়েই আসবে। উত্তরের রাজা অনেক ধন-সম্পদ নিয়ে তার নিজের দেশের দিকে যাবে, কিন্তু তার অন্তর পবিত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে থাকবে। সে তার নিজের ইচ্ছামত কাজ করবে এবং তারপর নিজের দেশে ফিরে যাবে। “নির্দিষ্ট সময়ে সে আবার দক্ষিণ দেশ আক্রমণ করবে, কিন্তু এইবার আগের মত না হয়ে অন্য রকম হবে। সাইপ্রাস দ্বীপের জাহাজগুলো তাকে বাধা দেবে এবং তার মন ভেংগে যাবে। তখন সে ফিরে রাগ করে পবিত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজের ইচ্ছামত কাজ করবে। সে ফিরে এসে যারা সেই পবিত্র ব্যবস্থা ত্যাগ করবে তাদের প্রতি মনোযোগ দেবে। তার সৈন্যেরা উপাসনা-ঘর, অর্থাৎ দুর্গ অশুচি করবে এবং প্রতিদিনের উৎসর্গের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেবে। তারপর তারা সর্বনাশা ঘৃণার জিনিস স্থাপন করবে। যারা পবিত্র ব্যবস্থা অমান্য করবে খোশামুদে কথা বলে সে তাদের কুপথে নিয়ে যাবে, কিন্তু যে লোকেরা তাদের ঈশ্বরকে জানে তারা খুব শক্তভাবে তাকে বাধা দেবে। “সেই লোকদের মধ্যে যাদের বুঝবার ক্ষমতা আছে তারা অনেককে শিক্ষা দেবে, তবুও কিছুকাল ধরে তাদের মধ্যে অনেকে যুদ্ধে মারা পড়বে, কিম্বা তাদের পুড়িয়ে মারা হবে, কিম্বা তাদের বন্দী করা বা লুট করা হবে। এই সময়ে তারা অল্পই সাহায্য পাবে এবং অনেকে খোসামুদে কথা বলে তাদের সংগে যোগ দেবে। যাদের বুঝবার ক্ষমতা আছে তাদের মধ্যে কারও কারও পতন হবে। এর ফলে শেষ সময় না আসা পর্যন্ত ঈশ্বরের লোকদের খাঁটি, শুদ্ধ ও নিখুঁত করা হবে; আর সেই শেষ সময় নির্দিষ্ট করা আছে। “উত্তরের রাজা নিজের ইচ্ছামত কাজ করবে। সমস্ত দেবতাদের চেয়ে সে নিজেকে বড় করে দেখাবে এবং যিনি দেবতাদের ঈশ্বর তাঁর বিরুদ্ধেও বড় বড় কথা বলবে। ঈশ্বরের ক্রোধ সম্পূর্ণভাবে ঢেলে না দেওয়া পর্যন্ত সে সফল হবে, কারণ যা স্থির করা হয়েছে তা ঘটবেই। তার পূর্বপুরুষদের দেবতাদের কিম্বা স্ত্রীলোকেরা যা চায় তার প্রতি সে কোন সম্মান দেখাবে না; আসলে কোন দেবতাকেই সে সম্মান করবে না, কিন্তু সকলের উপরে নিজেকে উঁচু করে দেখাবে। তাদের বদলে সে যুদ্ধের দেবতাকে সম্মান করবে; যে দেবতা পূর্বপুরুষদের অজানা তাকেই সে সোনা, রূপা, দামী দামী পাথর ও উপহার দিয়ে সম্মান দেখাবে। সেই অজানা দেবতার সাহায্যে সে সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গগুলো আক্রমণ করবে এবং যারা তাকে মেনে নেবে তাদের সে খুব সম্মানিত করবে। তাদের সে অনেক লোকের উপরে শাসনকর্তা করবে এবং পুরস্কার হিসাবে জমি ভাগ করে দেবে। “শেষ সময় আসলে পর দক্ষিণ দেশের রাজা তাকে আক্রমণ করবে এবং সেই উত্তরের রাজা রথ, ঘোড়সওয়ার সৈন্য এবং অনেক জাহাজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ঝড়ের মত আসবে। সে অনেক দেশ আক্রমণ করবে এবং বন্যার মত করে তাদের ধুয়ে-মুছে ফেলবে। সে সুন্দর দেশটাও আক্রমণ করবে। অনেক দেশেরই পতন হবে, কিন্তু গোটা ইদোম ও মোয়াব এবং অম্মোনের সবচেয়ে ভাল লোকেরা তার হাত থেকে উদ্ধার পাবে। অনেক দেশের উপর সে তার ক্ষমতা বাড়াবে; মিসরও রেহাই পাবে না। সমস্ত সোনা-রূপা ও মিসরের সমস্ত ধন তার অধিকারে আসবে এবং লিবীয়েরা ও কূশীয়েরা তার অধীনে আসবে। কিন্তু পূর্ব ও উত্তরের খবর পেয়ে সে ভয় পাবে এবং ভীষণ রাগে ধ্বংস করবার ও অনেককে মেরে ফেলবার জন্য সে বের হবে। সাগর ও সুন্দর পবিত্র পাহাড়ের মাঝখানে সে তার রাজ-তাম্বু খাটাবে। তবুও তার শেষ উপস্থিত হবে, কেউ তাকে সাহায্য করবে না। “সেই সময় তোমার লোকদের রক্ষাকারী মহান স্বর্গদূত মীখায়েল তোমাদের পক্ষে দাঁড়াবেন। এমন একটা কষ্টের সময় উপস্থিত হবে যা তোমার জাতির আরম্ভ থেকে সেই সময় পর্যন্ত কখনও হয় নি। কিন্তু সেই সময় তোমার লোকদের মধ্যে যাদের নাম বইয়ের মধ্যে লেখা থাকবে তারা উদ্ধার পাবে। পৃথিবীর মাটিতে ঘুমিয়ে থাকা অসংখ্য লোক তখন জেগে উঠবে; কেউ কেউ উঠবে অনন্তকাল বেঁচে থাকবার জন্য, আবার অন্যেরা উঠবে লজ্জার ও চিরস্থায়ী ঘৃণার পাত্র হবার জন্য। যাদের বুঝবার ক্ষমতা আছে, অর্থাৎ যারা অনেককে ন্যায়পথে এনেছে তারা আকাশের আলো ও উজ্জ্বল তারার মত চিরকাল জ্বল্‌ জ্বল্‌ করবে। কিন্তু তুমি, দানিয়েল, শেষ সময় না আসা পর্যন্ত এই ভবিষ্যদ্বাণীর বইটা বন্ধ করে তার কথাগুলো সীলমোহর করে রাখ। সেই সময়ের মধ্যে অনেকে যেখানে-সেখানে যাবে এবং জ্ঞানের বৃদ্ধি হবে।” তখন আমি দানিয়েল তাকিয়ে অন্য দু’জনকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তাঁদের একজন নদীর এপারে এবং অন্যজন নদীর ওপারে ছিলেন। মসীনার কাপড়-পরা যিনি নদীর জলের উপরে ছিলেন তাঁকে সেই দু’জনের মধ্যে একজন বললেন, “এই সব আশ্চর্য আশ্চর্য ব্যাপার শেষ হতে কত কাল লাগবে?” তখন আমি শুনলাম, নদীর জলের উপরে থাকা মসীনার কাপড়-পরা সেই লোক তাঁর দু’হাত স্বর্গের দিকে তুলে যিনি চিরকাল জীবিত তাঁর নামে শপথ করে বললেন, “সাড়ে তিন বছর লাগবে। শেষে ঈশ্বরের লোকদের শক্তি যখন একেবারে ভেংগে পড়বে তখন এই সব কথা পূর্ণ হবে।” আমি শুনলাম বটে কিন্তু কিছু বুঝলাম না। সেইজন্য আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আমার প্রভু, এই সবের শেষ ফল কি হবে?” উত্তরে তিনি বললেন, “দানিয়েল, তুমি এই বিষয় নিয়ে আর চিন্তা কোরো না, কারণ শেষ সময় না আসা পর্যন্ত এই সব কথা বন্ধ করে সীলমোহর করে রাখা হয়েছে। অনেককে শুদ্ধ, নিখুঁত ও খাঁটি করা হবে, কিন্তু দুষ্টেরা অন্যায় করতেই থাকবে। দুষ্টদের কেউই বুঝতে পারবে না, কিন্তু জ্ঞানীরা বুঝবে। যেদিন থেকে নিয়মিত উৎসর্গ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং সর্বনাশা ঘৃণার জিনিস স্থাপন করা হবে সেই দিন থেকে এক হাজার দু’শো নব্বই দিন হবে। সেই লোক ধন্য যে অপেক্ষা করে এবং এক হাজার তিনশো পঁয়ত্রিশ দিনের শেষ পর্যন্ত স্থির থাকে। “কিন্তু তুমি এখন যেমন আছ মৃত্যু পর্যন্ত তেমনই থাক। তারপর তুমি বিশ্রাম পাবে এবং শেষকালে তুমি তোমার পুরস্কার পাবার জন্য বেঁচে উঠবে।” ॥ভব যিহূদার রাজা উষিয়, যোথম, আহস ও হিষ্কিয়ের রাজত্বের সময়ে এবং ইস্রায়েলের রাজা যোয়াশের ছেলে যারবিয়ামের সময়ে বেরির ছেলে হোশেয়ের কাছে সদাপ্রভুর বাক্য প্রকাশিত হল। হোশেয়ের মধ্য দিয়ে প্রথমবার কথা বলবার সময়ে সদাপ্রভু তাঁকে বললেন, “তুমি গিয়ে একজন ব্যভিচারিণী স্ত্রীলোককে বিয়ে কর। তার ব্যভিচারের সন্তানদেরও গ্রহণ করবে, কারণ এই দেশ সদাপ্রভুর কাছ থেকে সরে গিয়ে সবচেয়ে জঘন্য ব্যভিচারের দোষে দোষী হয়েছে।” কাজেই হোশেয় দিব্‌লায়িমের মেয়ে গোমরকে বিয়ে করলেন আর গোমর গর্ভবতী হয়ে হোশেয়ের জন্য একটি ছেলের জন্ম দিল। তখন সদাপ্রভু হোশেয়কে বললেন, “তুমি ওর নাম রাখ যিষ্রিয়েল, কারণ যিষ্রিয়েল শহরে অনেক লোককে যেহূ মেরে ফেলেছে বলে আমি তার বংশকে শীঘ্রই শাস্তি দেব এবং ইস্রায়েল রাজ্যকে শেষ করে দেব। সেই দিন আমি যিষ্রিয়েলের উপত্যকায় ইস্রায়েলের ধনুক ভেংগে ফেলব।” পরে গোমর আবার গর্ভবতী হল এবং তার একটি মেয়ে হল। তখন সদাপ্রভু হোশেয়কে বললেন, “তুমি মেয়েটির নাম রাখ লো-রুহামা (যার মানে ‘দয়ার পাত্র নয়’), কারণ ইস্রায়েলের লোকদের আর আমি দয়া করব না, কোনমতেই তাদের ক্ষমা করব না। কিন্তু যিহূদার লোকদের দয়া করব এবং তাদের উদ্ধার করব। সেই উদ্ধার ধনুক, তলোয়ার কিম্বা যুদ্ধ অথবা ঘোড়া বা ঘোড়সওয়ার দিয়ে হবে না, বরং আমি তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুই তাদের উদ্ধার করব।” লো-রুহামাকে দুধ খাওয়ানো ছাড়িয়ে দেবার পরে গোমরের আর একটি ছেলে হল। তখন সদাপ্রভু বললেন, “তুমি তার নাম রাখ লো-অম্মি (যার মানে ‘আমার লোক নয়’), কারণ তোমরা আমার লোক নও এবং আমিও তোমাদের ঈশ্বর নই। তবুও ইস্রায়েলীয়েরা সাগর-পারের বালুকণার মত হবে, যা মাপা যায় না, গোণাও যায় না। যে জায়গায় তাদের বলা হয়েছিল, ‘তোমরা আমার লোক নও,’ সেখানে তাদের বলা হবে, ‘জীবন্ত ঈশ্বরের সন্তান।’ যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকেরা আবার মিলিত হবে এবং তাদের উপরে একজন নেতাকে নিযুক্ত করবে। তার আগে যে দেশে তারা বন্দী ছিল সেখান থেকে তারা চলে আসবে, কারণ যিষ্রিয়েলের সেই দিনটা হবে মহৎ। “তোমাদের ভাইদের তোমরা বলবে অম্মি (যার মানে ‘আমার লোক’) আর বোনদের বলবে রুহামা (যার মানে ‘দয়ার পাত্র’)। “তোমাদের মাকে বকুনি দাও, বকুনি দাও তাকে, কারণ সে আমার স্ত্রী নয় এবং আমিও তার স্বামী নই। সে তার চোখের চাহনি থেকে বেশ্যাগিরি ও তার বুক থেকে ব্যভিচার দূর করুক। তা না হলে আমি তাকে উলংগ করে দেব এবং সে তার জন্মের দিনে যেমন উলংগ ছিল তেমনি করব। আমি তাকে করব মরু-এলাকার মত, করে দেব শুকনা জমির মত এবং পিপাসা দিয়ে তাকে মেরে ফেলব। আমি তার ছেলেমেয়েদের দয়া করব না, কারণ তারা ব্যভিচারের সন্তান। তাদের মা ব্যভিচার করেছে; যে তাদের গর্ভে ধরেছে সে লজ্জার কাজ করেছে। সে বলত, ‘আমি আমার প্রেমিকদের পিছনে যাব; তারাই আমাকে খাবার, জল, পশম, মসীনা, তেল ও পানীয় দিয়ে থাকে।’ সেইজন্য আমি কাঁটাঝোপ দিয়ে তার পথ বন্ধ করব; আমি তার চারদিকে দেয়াল গাঁথব যাতে সে তার পথ খুঁজে না পায়। সে তার প্রেমিকদের পিছনে দৌড়াবে কিন্তু তাদের ধরতে পারবে না; সে তাদের খুঁজবে কিন্তু পাবে না। তখন সে বলবে, ‘আমি আমার প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাব, কারণ তখন আমি এখনকার চেয়ে ভাল ছিলাম।’ সে স্বীকার করত না যে, আমিই তাকে সেই শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেল দিতাম, তাকে প্রচুর পরিমাণে সোনা ও রূপা দিতাম, যা সে বাল দেবতার জন্য ব্যবহার করেছে। “কাজেই আমার শস্য পাকলে এবং আমার নতুন আংগুর-রস তৈরী হলে আমি তা নিয়ে যাব। তার উলংগতা ঢাকবার জন্য আমার সেই পশম ও মসীনা আমি ফিরিয়ে নেব। আমি এখন তার প্রেমিকদের চোখের সামনে তার লজ্জার কাজ প্রকাশ করব; আমার হাত থেকে কেউ তাকে উদ্ধার করবে না। আমি তার সব আনন্দের অনুষ্ঠান, পর্ব, অমাবস্যা, বিশ্রাম দিন- এক কথায় তার সব নির্দিষ্ট পর্ব বন্ধ করে দেব। যে সব আংগুর লতা ও ডুমুর গাছের বিষয় সে বলেছে যে, তার পাওনা হিসাবে তার প্রেমিকেরা দিয়েছে, সেগুলো আমি নষ্ট করব; সেগুলো আমি জংগলে ভরে দেব আর বুনো পশুরা সেগুলো খেয়ে ফেলবে। যতদিন সে বাল দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালিয়েছে এবং আংটি ও গহনা-গাঁটি দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তার প্রেমিকদের পিছনে গিয়ে আমাকে ভুলে থেকেছে ততদিনের জন্য আমি তাকে শাস্তি দেব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “পরে আমি তাকে মিষ্টি কথা বলে মরু-এলাকায় নিয়ে যাব এবং তার সংগে ভালবাসার কথা বলব। আমি সেখানে তার আংগুর ক্ষেত তাকে ফিরিয়ে দেব এবং আখোর উপত্যকাকে করব আশার দরজা। তার যৌবনকালের মত করে সে সেখানে গান গেয়ে সাড়া দেবে যেমন সে দিয়েছিল মিসর থেকে বের হয়ে আসবার দিনে। “আমি সদাপ্রভু বলছি যে, সেই দিনে সে আমাকে ‘আমার স্বামী’ বলে ডাকবে; ‘আমার প্রভু’ বলে আর ডাকবে না। তার মুখ থেকে আমি বাল দেবতাদের নাম দূর করে দেব; সে আর বাল দেবতাদের ডাকবে না। সেই দিন আমি তার জন্য পশু, পাখী ও বুকে-হাঁটা প্রাণীদের সংগে সন্ধি করব। আমি দেশ থেকে ধনুক, তলোয়ার ও যুদ্ধ দূর করে দেব যাতে সবাই নিরাপদে ঘুমাতে পারে। “হে ইস্রায়েল, আমি তোমার সংগে বিয়ের সম্বন্ধ চিরকালের জন্য পাকা করব; সততা, ন্যায়বিচার, অটল ভালবাসা ও দয়ায় আমি সেই সম্বন্ধ পাকা করব। আমি বিশ্বস্ততায় সেই সম্বন্ধ পাকা করব আর তখন তুমি সদাপ্রভুকে গভীরভাবে জানতে পারবে। “আমি সদাপ্রভু বলছি, সেই দিনে আমি তোমাদের সাড়া দেব। আমি আকাশকে আদেশ দেব; আকাশ পৃথিবীকে বৃষ্টি দেবে; পৃথিবী শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেল দেবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়ে যিষ্রিয়েল, অর্থাৎ ইস্রায়েল আমার সাড়া পাবে। আমার জন্যই আমি তাকে দেশে বীজের মত করে বুনে দেব; আমি যাকে বলেছিলাম, ‘আমার দয়ার পাত্র নয়,’ তাকেই আমি দয়া করব। আমি যাদের বলেছিলাম, ‘আমার লোক নয়,’ তাদের আমি বলব, ‘তোমরা আমারই লোক’; আর তারা বলবে, ‘তুমিই আমাদের ঈশ্বর।’ ” সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “যদিও তোমার স্ত্রী অন্য লোকের সংগে ব্যভিচার করছে তবুও তুমি গিয়ে তাকে আবার ভালবাস। ইস্রায়েলীয়েরা যদিও দেব-দেবতার দিকে ফিরেছে এবং পূজার কিশমিশের পিঠা ভালবাসে তবুও সদাপ্রভু যেমন তাদের ভালবাসেন, ঠিক তেমনি করে তুমি তোমার স্ত্রীকে ভালবাস।” কাজেই আমি তাকে একশো আশি গ্রাম রূপা ও নব্বই কেজি যব দিয়ে কিনে আনলাম। তারপর আমি তাকে বললাম, “আমার সংগে দেহে মিলিত হবার জন্য তোমাকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তুমি ব্যভিচার করবে না কিম্বা কোন লোকের সংগে ভালবাসার সমপর্ক করবে না। আমিও তোমার জন্য অপেক্ষা করব।” ঠিক এইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা অনেক দিন পর্যন্ত রাজা, নেতা, উৎসর্গের অনুষ্ঠান, পূজার পাথর, এফোদ এবং প্রতিমা ছাড়াই থাকবে। তার পরে তারা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ও তাদের রাজা দায়ূদের দিকে ফিরবে। শেষকালে তারা সদাপ্রভুর আশীর্বাদ পাবার জন্য ভয়ে ভয়ে তাঁর কাছে আসবে। হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা সদাপ্রভুর বাক্য শোন, কারণ যারা দেশে বাস করে তাদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর একটা নালিশ আছে। তা হল, দেশে বিশ্বস্ততা ও অটল ভালবাসা নেই এবং ঈশ্বরকে কেউ সত্যিকারভাবে জানে না; আছে কেবল শপথ ভাংগা, মিথ্যা কথা বলা, খুন করা, চুরি করা ও ব্যভিচার করা। তারা আইন অমান্য করে এবং রক্তপাতের উপরে রক্তপাত করে। এইজন্য দেশ শোক করছে এবং যারা তার মধ্যে বাস করে তারা শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং পশু, পাখী ও মাছ মরে যাচ্ছে। সদাপ্রভু বলছেন, “কেউ কারও বিরুদ্ধে নালিশ না করুক, কেউ কাউকে দোষী না করুক, কারণ তোমরা সেই লোকদের মত হয়েছ যারা পুরোহিতদের বিরুদ্ধে নালিশ করে। পুরোহিতেরা, তোমরা দিনে ও রাতে উছোট খাচ্ছ এবং তোমাদের সংগে উছোট খাচ্ছে নবীরা। কাজেই আমি তোমাদের মা ইস্রায়েলকে ধ্বংস করে দেব। ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাবে আমার লোকেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তোমরা সেই জ্ঞানকে অগ্রাহ্য করেছ বলে আমিও আমার পুরোহিত হিসাবে তোমাদের অগ্রাহ্য করলাম। তোমরা তোমাদের ঈশ্বরের আইন-কানুন ভুলে গেছ, তাই আমিও তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভুলে যাব। “পুরোহিতেরা সংখ্যায় যত বাড়ছে ততই তারা আমার বিরুদ্ধে পাপ করছে, সেইজন্য আমি সম্মানের বদলে তাদের অসম্মানিত করব। আমার লোকদের পাপের দরুন তারা লাভবান হয় বলে তারা আমার লোকদের পাপ করতে উৎসাহ দেয়। যেমন লোকদের তেমনি পুরোহিতদেরও শাস্তি দেওয়া হবে; তাদের আচার-ব্যবহারের জন্য তাদের সকলকেই আমি শাস্তি দেব এবং তাদের কাজ অনুসারে ফল দেব। তারা খাবে কিন্তু তৃপ্ত হবে না; তারা ব্যভিচার করবে কিন্তু সংখ্যায় বাড়বে না, কারণ তারা প্রতিমাপূজার জন্য সদাপ্রভুকে ত্যাগ করেছে। “ব্যভিচার এবং নতুন ও পুরানো আংগুর-রস আমার লোকদের বুদ্ধি নষ্ট করছে। তারা কাঠের প্রতিমার কাছে পরামর্শ চায় আর কাঠের লাঠি তাদের নির্দেশ দেয়, কারণ ব্যভিচারের মন তাদের বিপথে নিয়ে গেছে; তারা তাদের ঈশ্বরের কাছে অবিশ্বস্ত হয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় তারা পশু উৎসর্গ করে এবং পাহাড়ের উপরে অলোন, লিব্‌নী ও এলা গাছের নীচে যেখানে ছায়া আরাম দেয় সেখানে তারা ধূপ জ্বালায়। সেইজন্য তোমাদের মেয়েরা বেশ্যা হয় এবং ছেলের বউরা ব্যভিচার করে। তোমাদের মেয়েরা বেশ্যা হলে আর ছেলের বৌউরা ব্যভিচার করলে আমি শাস্তি দেব না, কারণ পুরুষেরা নিজেরাই বেশ্যাদের কাছে যায় এবং মন্দির-বেশ্যাদের সংগে পশু উৎসর্গ করে। এই বুদ্ধিহীন জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। “হে ইস্রায়েল, তুমি যদিও ব্যভিচার করছ তবুও যিহূদা যেন একই দোষে দোষী না হয়। তোমরা গিল্‌গলে যেয়ো না; বৈৎ-আবনে যেয়ো না; ‘জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য’ বলে শপথ কোরো না। ইস্রায়েলীয়েরা একগুঁয়ে গাভীর মত। কাজেই মাঠে ভেড়ার বাচ্চাদের মত সদাপ্রভু কি করে তাদের চরাবেন? ইফ্রয়িম প্রতিমাদের সংগে যোগ দিয়েছে; তাকে তা-ই করতে দাও। যখন তাদের মদ খাওয়া শেষ হয়ে যায় তখন তারা ব্যভিচার চালাতে থাকে; তাদের শাসনকর্তারা লজ্জাপূর্ণ আচার-ব্যবহার খুব ভালবাসে। শাস্তি বাতাসের মত করে যেন তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে; তাদের উৎসর্গের অনুষ্ঠানগুলোর জন্য তারা লজ্জা পাবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে পুরোহিতেরা, তোমরা এই কথা শোন। হে ইস্রায়েলের লোকেরা, মনোযোগ দাও। হে রাজবংশ, কান দাও। এই রায় তোমাদেরই বিরুদ্ধে দেওয়া হচ্ছে, কারণ তোমরা মিসপাতে ফাঁদের মত আর তাবোরে মেলে দেওয়া জালের মত হয়েছিলে। বিদ্রোহীরা ভীষণভাবে অত্যাচার করছে, কিন্তু আমি তাদের সবাইকে শাস্তি দেব। আমি ইফ্রয়িম সম্বন্ধে সব জানি; ইস্রায়েল আমার কাছ থেকে লুকানো নেই। ইফ্রয়িম এখন ব্যভিচার করছে; ইস্রায়েল অশুচি হয়ে গেছে। “তাদের কাজ তাদের ঈশ্বরের দিকে ফিরে যেতে দেয় না। তাদের মধ্যে আছে ব্যভিচারের মন। তারা সদাপ্রভুকে সত্যিকারভাবে জানে না। ইস্রায়েলের অহংকারই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়; ইফ্রয়িম, এমন কি, গোটা ইস্রায়েল তাদের পাপের জন্য উছোট খাচ্ছে আর যিহূদাও তাদের সংগে উছোট খাচ্ছে। তাদের ভেড়া ও গরুর পাল নিয়ে সদাপ্রভুর কাছে গেলে তারা তাঁকে পায় না; তাদের কাছ থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তারা সদাপ্রভুর কাছে অবিশ্বস্ত হয়েছে; তারা জারজ সন্তানদের জন্ম দেয়। কাজেই এখন তাদের অমাবস্যার পর্বগুলো তাদের গ্রাস করবে এবং তাদের ক্ষেতগুলোও তাদের গ্রাস করবে। “তোমরা গিবিয়াতে তূরী বাজাও আর রামাতে বাজাও শিংগা। বৈৎ-আবনে চিৎকার করে বল, ‘হে বিন্যামীন, যুদ্ধে আমাদের পরিচালনা কর।’ শাস্তি দেবার দিনে ইফ্রয়িম জনশূন্য হয়ে পড়ে থাকবে। যা হবেই হবে তা আমি ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঘোষণা করছি। যারা সীমানার পাথর সরায় যিহূদার নেতারা তাদেরই মত। আমার ক্রোধ আমি বন্যার জলের মতই তাদের উপর ঢেলে দেব। ইফ্রয়িম নিজের ইচ্ছায় অসারতার পিছনে গেছে বলে সে অত্যাচারিত হয়েছে এবং বিচারে তাকে পায়ের তলায় মাড়ানো হয়েছে। ইফ্রয়িমের কাছে আমি হয়েছি পোকার মত আর যিহূদার লোকদের কাছে হয়েছি ক্ষয় করা জিনিসের মত। “ইফ্রয়িম যখন তার রোগ দেখতে পেল আর যিহূদা দেখতে পেল তার ঘা তখন ইফ্রয়িম আসিরিয়ার দিকে ফিরে সাহায্যের জন্য সেই মহা রাজার কাছে লোক পাঠাল। কিন্তু সে তো তাকে সুস্থ করতে পারবে না এবং তার ঘা-ও সারাতে পারবে না। আমি ইফ্রয়িমের কাছে ও যিহূদার কাছে সিংহের মত হব। আমি তাদের টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলে চলে যাব; আমি তাদের নিয়ে যাব, তাদের উদ্ধার করবার জন্য কেউ থাকবে না। যে পর্যন্ত না তারা তাদের দোষ স্বীকার করে ও আমার দিকে মনোযোগ দেয় সেই পর্যন্ত আমি আমার নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে সেখানে থাকব। তাদের দুঃখ-কষ্টের সময় তারা আগ্রহের সংগে আমার কাছে ফিরে আসবে।” চল, আমরা সদাপ্রভুর কাছে ফিরে যাই। তিনিই আমাদের টুকরা টুকরা করেছেন, তিনি আমাদের সুস্থও করবেন; তিনিই আমাদের আঘাত করেছেন, তিনি আমাদের ঘা বেঁধেও দেবেন। অল্পদিন পরে তিনিই আবার আমাদের বাঁচিয়ে তুলবেন, এবং আমাদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন যাতে আমরা তাঁর সামনে বাস করতে পারি। চল, আমরা সদাপ্রভুকে স্বীকার করে নিই; তাঁকে জানবার জন্য তাঁর পিছনে দৌড়াই। সূর্য ওঠার মত তিনি নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবেন; বৃষ্টির মত করে, বসন্তকালের মাটি ভেজানো বৃষ্টির মত করে তিনি আসবেন। সদাপ্রভু বলছেন, “হে ইফ্রয়িম, আমি তোমাকে নিয়ে কি করব? হে যিহূদা, তোমাকে নিয়েই বা আমি কি করব? তোমার বিশ্বস্ততা সকালের কুয়াশার মত, তা ভোরের শিশিরের মত যা তাড়াতাড়ি অদৃশ্য হয়ে যায়। সেইজন্য আমার নবীদের দিয়ে আমি তোমাদের টুকরা টুকরা করে কেটেছি, আমার মুখের বাক্য দিয়ে তোমাদের মেরে ফেলেছি; আমার বিচারের রায় তোমাদের উপর বিদ্যুতের মত চম্‌কে উঠেছে। আমি বিশ্বস্ততা চাই, পশু-উৎসর্গ নয়; পোড়ানো-উৎসর্গের চেয়ে আমি চাই যেন মানুষ সত্যিকারভাবে ঈশ্বরকে চেনে। তোমরা আদমের মত আমার স্থাপন করা ব্যবস্থা অমান্য করেছ; তোমরা আমার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছ। গিলিয়দ হল সেই দুষ্ট লোকদের শহর যেখানে রয়েছে তাদের রক্তমাখা পায়ের ছাপ। ডাকাতেরা যেমন মানুষের অপেক্ষায় ওৎ পেতে থাকে, তেমনি করে ওৎ পেতে থাকে পুরোহিতের দল; তারা শিখিমে যাওয়ার রাস্তায় মানুষ খুন করে এবং ভীষণ অন্যায় কাজ করে। ইস্রায়েলের মধ্যে আমি একটা জঘন্য ব্যাপার দেখেছি। সেখানে ইফ্রয়িম ব্যভিচার করেছে এবং ইস্রায়েল অশুচি হয়ে গেছে। “হে যিহূদা, তোমার জন্যও ফসল কাটবার সময় স্থির করা হয়েছে। যখনই আমি আমার লোকদের অবস্থা ফিরাতে চাই, যখনই ইস্রায়েলকে সুস্থ করতে চাই, তখনই ইফ্রয়িমের পাপ দেখা যায় আর শমরিয়ার অন্যায় প্রকাশিত হয়। তারা ছলনা করে, ঘরে চোর ঢোকে আর বাইরে ডাকাতেরা লুটপাট করে; কিন্তু তারা বোঝে না যে, তাদের সব অন্যায় কাজ আমি মনে রাখি। তাদের পাপ সম্পূর্ণভাবে তাদের ঘিরে রেখেছে; সেগুলো সব সময়ই আমার সামনে রয়েছে। “তাদের দুষ্টতা দিয়ে তারা রাজাকে এবং মিথ্যা কথা দিয়ে রাজকর্মচারীদের আনন্দিত করে। তারা সবাই ব্যভিচারী, তারা রুটিকারের জ্বালানো তুন্দুরের মত; ময়দা ঠাসা থেকে শুরু করে তা ফেঁপে ওঠা পর্যন্ত সেই তুন্দুরের আগুন খোঁচাবার দরকার হয় না। রাজার উৎসবের দিনে রাজকর্মচারীরা আংগুর-রস খেয়ে উত্তেজিত হয়েছিল আর রাজা সেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ কারীদের সংগে হাত মিলিয়েছিল। কিন্তু তারা যখন ষড়যন্ত্র করেছিল তখন তাদের অন্তর তুন্দুরের মত জ্বলছিল। তাদের রুটিকার সারারাত ঘুমিয়ে ছিল এবং সকালে সেই ষড়যন্ত্র জ্বলন্ত আগুনের মত জ্বলে উঠেছিল। তারা সবাই তুন্দুরের মত গরম হয়েছিল এবং তাদের শাসনকর্তাদের তারা আগুনের মত গ্রাস করেছিল। তাদের রাজারা সবাই মারা পড়ে; তারা কেউই আমাকে ডাকে না। “ইফ্রয়িম অন্যান্য জাতিদের সংগে মিশে গেছে; ইফ্রয়িম এক দিক পুড়ে যাওয়া পিঠার মত হয়েছে যা উল্টানো হয় নি। বিদেশীরা তার শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে, কিন্তু সে তা বুঝতে পারছে না। তার মাথার চুল এখানে-সেখানে পেকেছে, কিন্তু সে তা লক্ষ্য করছে না। ইস্রায়েলের অহংকার তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে, কিন্তু এই সব হলেও সে তার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরছে না, তাঁর দিকে মনোযোগও দিচ্ছে না। “ইফ্রয়িম যেন একটা অবুঝ কবুতর; সে একেবারে বুদ্ধিহীন। একবার সে মিসরকে ডাকে আর একবার যায় আসিরিয়ার কাছে। তারা যখন যাবে তখন আমি তাদের উপর আমার জাল ফেলব; আকাশের পাখীদের মত করে আমি তাদের টেনে নামাব। ইস্রায়েলীয়দের কাছে যেমন বলা হয়েছে সেইভাবেই আমি তাদের শাস্তি দেব। ধিক্‌ তাদের, কারণ তারা আমার কাছ থেকে বিপথে চলে গেছে। তাদের সর্বনাশ হোক, কারণ তারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আমি তাদের মুক্ত করতে চাই কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে। তাদের বিছানার উপর তারা বিলাপ করে, কিন্তু তারা অন্তর থেকে আমার কাছে কাঁদে না। শস্য ও নতুন আংগুর-রস পাবার জন্য তারা একত্র হয় এবং আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। আমি তাদের যুদ্ধের শিক্ষা দিয়েছি ও শক্তিশালী করেছি, কিন্তু তারা আমারই বিরুদ্ধে মন্দের ষড়যন্ত্র করে। তারা স্বর্গের দিকে ফেরে না; তারা খুঁতযুক্ত একটা ধনুকের মত। তাদের নেতারা তাদের অহংকারপূর্ণ কথাবার্তার জন্য মারা পড়বে, আর সেইজন্য ইস্রায়েলীয়েরা মিসর দেশে হাসি-তামাশার পাত্র হবে। “তুমি শিংগা বাজাও। সদাপ্রভুর লোকদের বিরুদ্ধে শত্রু ঈগল পাখীর মত আসছে, কারণ লোকেরা আমার দেওয়া ব্যবস্থা অমান্য করেছে এবং আমার আইন-কানুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। ইস্রায়েল আমার কাছে কেঁদে কেঁদে বলেছে, ‘হে আমার ঈশ্বর, আমরা তোমাকে স্বীকার করছি।’ কিন্তু যা ভাল ইস্রায়েল তা অগ্রাহ্য করেছে, তাই শত্রু তার পিছনে তাড়া করবে। আমার নির্দেশ ছাড়াই তারা রাজাদের নিযুক্ত করেছে; আমার অনুমতি ছাড়াই তারা নেতাদের বেছে নিয়েছে। তাদের সোনা ও রূপা দিয়ে তারা প্রতিমা তৈরী করে নিজেদের সর্বনাশ করেছে। হে শমরিয়া, আমি তোমার বাছুর-প্রতিমা অগ্রাহ্য করেছি। সেগুলোর বিরুদ্ধে আমার ক্রোধের আগুন জ্বলছে। ভাল হতে তোমার লোকদের আর কত দিন লাগবে? সেই বাছুর ইস্রায়েলের লোকেরাই তৈরী করেছে। একজন কারিগর সেটা গড়েছে; ওটা তো ঈশ্বর নয়। শমরিয়ার ঐ বাছুরটাকে ভেংগে টুকরা টুকরা করা হবে। “তারা তো বাতাস বোনে আর শেষে ঘূর্ণিঝড় কাটে। শস্যের শীষে কোন দানা নেই; তা থেকে ময়দা হবে না। যদি তাতে কিছু হয়ও তবে তা বিদেশীরা গ্রাস করবে। ইস্রায়েলীয়দের গ্রাস করা হয়েছে; বাজে জিনিসের মতই তারা এখন বিভিন্ন জাতির মধ্যে রয়েছে। একা একা ঘুরে বেড়ানো বুনো গাধার মতই তারা আসিরিয়া পর্যন্ত গেছে। ইফ্রয়িম টাকা দিয়ে প্রেমিকদের এনেছে। যদিও তারা বিভিন্ন জাতির সংগে টাকা দিয়ে বন্ধুত্ব করেছে তবুও এখন আমি তাদের একসংগে জড়ো করে শাস্তি দেব। তারা শাসনকর্তাদের রাজার অত্যাচারের তলায় ক্ষয় হয়ে যাবে। “পাপ দূর করবার জন্য ইফ্রয়িম অনেক বেদী তৈরী করেছে, কিন্তু সেগুলো হয়েছে পাপ করবার বেদী। আমার আইন-কানুনের অনেক কথাই আমি তাদের জন্য লিখেছিলাম, কিন্তু তারা সেগুলো বিদেশী কোন কিছু বলে মনে করেছে। তারা আমার উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ করে তার মাংস খায় কিন্তু আমি সদাপ্রভু তাদের উপর সন্তুষ্ট নই। এখন আমি তাদের দুষ্টতার কথা স্মরণ করে তাদের পাপের শাস্তি দেব; তারা মিসরে ফিরে যাবে। ইস্রায়েলের লোকেরা নিজেদের সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে বড় বড় বাড়ী তৈরী করেছে; যিহূদার লোকেরা অনেক শহর দেয়াল দিয়ে ঘিরেছে। কিন্তু আমি তাদের শহরগুলোর উপরে আগুন পাঠাব যা তাদের সব দুর্গ পুড়িয়ে ফেলবে।” হে ইস্রায়েল, অন্যান্য জাতিদের মত তুমি আনন্দের উৎসব কোরো না। তুমি তো তোমার ঈশ্বরকে ত্যাগ করে তাঁর প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছ; প্রত্যেকটি খামারে তুমি বেশ্যার পাওনা পেয়ে খুশী হয়েছ। এর পরে খামার ও আংগুর মাড়াইয়ের জায়গা লোকদের খাবার দেবে না; তারা নতুন আংগুর-রস পাবে না। তারা সদাপ্রভুর দেশে থাকবে না; ইফ্রয়িম মিসরে ফিরে যাবে এবং আসিরিয়ার অশুচি খাবার খাবে। তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে আংগুর-রস দিয়ে ঢালন-উৎসর্গ করবে না এবং তাদের পশু-উৎসর্গগুলোও তাঁকে সন্তুষ্ট করবে না। ঐ রকম উৎসর্গ তাদের কাছে শোক প্রকাশকারীদের খাবারের মতই হবে; যারা তা খাবে তারা সবাই অশুচি হবে। সেই খাবার তাদের নিজেদের খিদে মিটাবার জন্যই হবে, তা সদাপ্রভুর ঘরে আসবে না। তাদের পর্বের দিনে ও সদাপ্রভুর উৎসব-দিনে তারা কি করবে? যখন তারা ধ্বংসের হাত থেকে পালিয়ে যাবে তখন মিসর তাদের জড়ো করবে এবং মোফ শহরে তাদের কবর দেবে। তাদের জমা করা রূপা আর তাদের বাসস্থান আগাছা ও কাঁটাগাছে ঢেকে ফেলবে। ইস্রায়েল যেন জেনে রাখে যে, শাস্তির দিন এসে গেছে, হিসাব-নিকাশের দিন উপস্থিত হয়েছে। তাদের পাপ সংখ্যায় অনেক এবং তারা ঈশ্বরকে এত ঘৃণা করে যে, তারা নবীকে বোকা আর ঈশ্বরের আত্মায় পাওয়া লোককে পাগল ভাবে। নবী আমার ঈশ্বরের সংগে ইফ্রয়িমের পাহারাদার হলেও তার সমস্ত পথেই রয়েছে ফাঁদ আর তার ঈশ্বরের ঘরে রয়েছে তার বিরুদ্ধে শত্রুতা। গিবিয়ার সময়ে যেমন ছিল সেইভাবে ইস্রায়েলীয়েরা অন্যায়ের মধ্যে ডুবে গেছে। ঈশ্বর তাদের দুষ্টতার কথা মনে করবেন এবং তাদের পাপের জন্য শাস্তি দেবেন। সদাপ্রভু বলছেন, “মরু-এলাকায় আংগুর ফল পাবার মত করেই ইস্রায়েলকে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম; প্রথমবার ফল দেওয়া ডুমুর গাছের আগাম ফলের মতই তোমাদের পূর্বপুরুষদের দেখেছিলাম। কিন্তু তারা বাল-পিয়োরের কাছে গিয়ে সেই লজ্জাপূর্ণ প্রতিমার কাছে নিজেদের দিয়ে দিয়েছিল এবং তাদের প্রিয় প্রতিমার মতই তারা জঘন্য হয়ে পড়েছিল। ইফ্রয়িমের গৌরব পাখীর মত উড়ে যাবে; তখন সন্তানের জন্ম হবে না, কেউ গর্ভবতী হবে না এবং কেউ সন্তান গর্ভে ধরবে না। যদি বা কেউ সন্তান লালন-পালন করে তবুও সেই সন্তানদের আমি মেরে ফেলব; তাদের একজনও থাকবে না। ধিক্‌ তাদের, যখন আমি তাদের কাছ থেকে চলে যাব। ইফ্রয়িমকে আমি সোরের মত সুন্দর জায়গায় লাগানো দেখেছি। কিন্তু ইফ্রয়িম তার সন্তানদের বের করে নিয়ে যাবে তার কাছে যে তাদের মেরে ফেলবে।” হে সদাপ্রভু, আমি এই লোকদের জন্য কি চাইব? তুমি তাদের কি দেবে? তুমি তাদের সন্তান নষ্ট হয়ে যাবার গর্ভ ও শুকনা বুক দাও। সদাপ্রভু বলছেন, “গিল্‌গলে তারা তাদের সব দুষ্টতা শুরু করেছিল, আর সেখানে আমি তাদের ঘৃণা করতে লাগলাম। তাদের পাপের জন্য আমার লোকদের মধ্য থেকে আমি তাদের তাড়িয়ে বের করে দেব। আমি তাদের আর ভালবাসব না; তাদের নেতারা সবাই বিদ্রোহী। ইফ্রয়িম ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে, তার শিকড় শুকিয়ে গেছে, তাতে ফল ধরে না। যদি বা তার লোকেরা সন্তানের জন্ম দেয় তবুও আমি তাদের প্রিয় সন্তানদের মেরে ফেলব।” আমার ঈশ্বর তাদের অগ্রাহ্য করবেন, কারণ তারা তাঁর বাধ্য হয় নি; তারা বিভিন্ন জাতির মধ্যে ঘুরে বেড়াবে। ইস্রায়েল ছিল একটা ছড়িয়ে যাওয়া লতা; তাতে প্রচুর ফল ধরেছিল। তার ফল যত বেড়েছে তত বেশী সংখ্যায় সে বেদী তৈরী করেছে; তার দেশের যত উন্নতি হয়েছে ততই সে তার পূজার পাথরগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়েছে। তার লোকদের অন্তর অবিশ্বস্ত; সেইজন্য এখন তাদের দোষের বোঝা বইতে হবে। সদাপ্রভু তাদের বেদীগুলো ভেংগে ফেলবেন এবং তাদের পূজার পাথরগুলো নষ্ট করে দেবেন। তারা তখন নিশ্চয় বলবে, “আমরা সদাপ্রভুকে ভয় করি নি বলে আমাদের কোন রাজা নেই। কিন্তু রাজা থাকলেও তিনি আমাদের জন্য কি করতে পারতেন?” লোকেরা অনেক বাজে কথা বলে এবং চুক্তি করবার সময় মিথ্যা শপথ করে। কাজেই চাষ করা জমিতে বিষাক্ত আগাছার মত মামলা-মোকদ্দমা গজিয়ে ওঠে। শমরিয়ায় বাসকারী লোকেরা বৈৎ-আবনের বাছুর-প্রতিমার জন্য ভয় পেয়েছে। তার লোকেরা শোক করছে ও তার প্রতিমাপূজাকারী পুরোহিতেরা বিলাপ করছে, কারণ সেই প্রতিমার জাঁকজমক তাদের কাছ থেকে দূর করা হয়েছে। সেটা আসিরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং মহারাজার কর্‌ হিসাবে দেওয়া হয়েছে। সেইজন্য ইফ্রয়িম অসম্মানিত হবে, ইস্রায়েল তার নিজের পরিকল্পনার জন্য লজ্জা পাবে। জল যেমন ছোট ডালকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তেমনি শমরিয়া ও তার রাজাকে নিয়ে যাওয়া হবে। বৈৎ-আবনের পূজার উঁচু স্থানগুলো, অর্থাৎ ইস্রায়েলের পাপের জায়গাগুলো ধ্বংস হবে। কাঁটাগাছ গজিয়ে উঠে তাদের বেদীগুলো ঢেকে ফেলবে। তখন তারা বড় বড় পাহাড়কে বলবে, “আমাদের ঢেকে ফেল” আর ছোট ছোট পাহাড়কে বলবে, “আমাদের উপরে পড়।” সদাপ্রভু বলছেন, “হে ইস্রায়েল, গিবিয়ায় যখন তুমি পাপ করেছিলে তখন থেকেই তুমি পাপ করে আসছ, আর পাপের মধ্যেই তুমি রয়ে গেছ। যুদ্ধ কি গিবিয়ায় অন্যায়কারীদের নাগাল পাবে না? আমার যখন খুশী তখন আমি তাদের শাস্তি দেব; তাদের দু’টা পাপের দরুন তাদের বাঁধবার জন্য বিভিন্ন জাতি তাদের বিরুদ্ধে একত্র হবে। ইফ্রয়িম একটা শিক্ষা পাওয়া গাভী যে শস্য মাড়াই করতে ভালবাসে, কিন্তু আমি তার সুন্দর গলার উপরে জোয়াল তুলে দেব। ইফ্রয়িম হবে আমার চাষ করবার গরু এবং যিহূদা আমার লাংগল টানবে, আর যাকোব মাটি ভাংগার কাজ করবে।” তোমরা নিজেদের জন্য ন্যায়ের বীজ বোন, বিশ্বস্ততার ফসল কাট এবং তোমাদের চাষ-না-করা অন্তর ভাংগ, কারণ সদাপ্রভুর দিকে ফিরবার সময় হয়েছে। যখন তোমরা তা করবে তখন তিনি এসে তোমাদের উপরে সততার বৃষ্টি দেবেন। কিন্তু তোমরা তো দুষ্টতা লাগিয়েছ, মন্দের ফসল কেটেছ আর ছলনার ফল খেয়েছ। তোমরা নিজেদের শক্তি ও অনেক যোদ্ধার উপর নির্ভর করেছ; সেইজন্য তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হৈ চৈ উঠবে এবং তোমাদের সব দুর্গগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে, যেমন করে শল্‌মন যুদ্ধের দিনে বৈৎ-অর্বেল ধ্বংস করেছিল। সেই দিন ছেলেমেয়েদের সংগে মায়েদের মাটিতে আছাড় মারা হয়েছিল। হে বৈথেল, তোমার প্রতি তেমনই ঘটবে, কারণ তোমার দুষ্টতা খুব বেশী। ভোর হলে পর ইস্রায়েলের রাজাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলা হবে। সদাপ্রভু বলছেন, “ইস্রায়েলের ছেলেবেলায় আমি তাকে ভালবাসতাম এবং মিসর থেকে আমার ছেলেকে ডেকে এনেছিলাম। কিন্তু আমি ইস্রায়েলকে যত ডাকলাম ততই সে আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেল। তার লোকেরা বাল দেবতার কাছে পশু-উৎসর্গ করতে থাকল এবং মূর্তিগুলোর কাছে ধূপ জ্বালাতে লাগল। আমিই ইফ্রয়িমকে হাঁটতে শিখিয়েছিলাম, আমিই তাকে কোলে নিতাম; কিন্তু তার লোকেরা বুঝল না যে, আমিই তাদের সুস্থ করেছিলাম। আমি স্নেহের দড়ি ও ভালবাসার বাঁধন দিয়ে তাদের চালাতাম; তাদের কাঁধের উপর থেকে জোয়াল তুলে নিতাম ও নীচু হয়ে তাদের খাওয়াতাম। “ইস্রায়েলীয়েরা মন ফিরাতে রাজী হয় নি বলে তারা মিসরে ফিরে যাবে না, বরং আসিরিয়া তাদের উপর রাজত্ব করবে। তাদের শহরে শহরে ভীষণ যুদ্ধ হবে; তাতে তাদের ফটকগুলোর আগল ধ্বংস হবে এবং তাদের পরিকল্পনার দরুন তারা শেষ হয়ে যাবে। আমার লোকেরা আমার কাছ থেকে ফিরে যাওয়া স্থির করেছে। সেইজন্য তারা মহান ঈশ্বরকে, অর্থাৎ আমাকে ডাকলেও আমি তাদের মোটেই সাহায্য করব না। “ইফ্রয়িম, আমি কি করে তোমাকে ত্যাগ করব? ইস্রায়েল, আমি কেমন করে তোমাকে অন্যের হাতে তুলে দেব? কি করে আমি তোমাকে অদ্‌মার ও সবোয়িমের মত ধ্বংস করব? তোমার জন্য আমার অন্তর ব্যাকুল হচ্ছে; আমার সব করুণা জেগে উঠেছে। আমার ভয়ংকর ক্রোধ আমি প্রকাশ করব না, ইফ্রয়িমকে আর ধ্বংস করব না, কারণ আমি ঈশ্বর, মানুষ নই; আমি তোমার মধ্যে থাকা সেই পবিত্রজন। আমি ক্রোধ নিয়ে আসব না। তোমার লোকেরা আমার পিছনে পিছনে যাবে, কারণ আমি সিংহের মত ডাকব। আমি ডাকলে পর আমার সন্তানেরা পশ্চিম দিক থেকে কাঁপতে কাঁপতে আসবে। মিসর থেকে পাখীর মত, আসিরিয়া থেকে ঘুঘুর মত তারা কাঁপতে কাঁপতে আসবে। আমি তাদের বাড়ী-ঘরে তাদের বসিয়ে দেব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু বলছেন, “ইফ্রয়িমের মিথ্যা কথা, ইস্রায়েলের ছলনা আমার চারদিকে রয়েছে। যিহূদা ঈশ্বরের, অর্থাৎ সেই বিশ্বস্ত পবিত্রজনের অবাধ্য হয়েছে। ইফ্রয়িম বাতাস খায়; সে সারাদিন পূবের বাতাসের পিছনে তাড়া করে এবং মিথ্যা কথা ও অত্যাচার বাড়িয়ে তোলে। সে আসিরিয়ার সংগে সন্ধি করেছে এবং মিসরকে জলপাইয়ের তেল পাঠিয়েছে।” যিহূদার বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর একটা নালিশ আছে; যাকোবের আচার-ব্যবহার অনুসারে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন এবং তার কাজ অনুসারে ফল দেবেন। পেটে থাকতে যাকোব তার ভাইয়ের গোড়ালী ধরেছিল; বয়সকালে সে ঈশ্বরের সংগে যুদ্ধ করেছিল। সে স্বর্গদূতের সংগে যুদ্ধ করে তাঁকে হারিয়ে দিয়েছিল; সে দয়া পাবার জন্য কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করেছিল। সে বৈথেলে সদাপ্রভুকে পেয়েছিল এবং সেখানে সদাপ্রভু আমাদের সংগে কথা বলেছিলেন। তিনিই সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু; সদাপ্রভু নামেই লোকে তাঁকে স্মরণ করে। এখন হে যাকোব-বংশের লোকেরা, তোমাদের ঈশ্বরের কাছে তোমরা ফিরে এস; তোমরা বিশ্বস্ততা ও ন্যায়বিচার রক্ষা কর এবং সর্বদা তোমাদের ঈশ্বরের অপেক্ষায় থাক। সদাপ্রভু বলছেন, “ব্যবসায়ী ইফ্রয়িম ঠকামির দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে; সে জোরজুলুম করতে ভালবাসে। সে বলে, ‘আমি খুব ধনী হয়েছি, অনেক ধন-সম্পদ জমা করেছি। আমার সব কাজের মধ্যে লোকে আমার কোন দোষ বা পাপ খুঁজে পাবে না।’ কিন্তু হে ইফ্রয়িম, আমিই তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু; আমি মিসর দেশ থেকে তোমাকে বের করে এনেছি। তোমার নির্দিষ্ট পর্বের সময়ের মত করে আমি আবার তোমাকে তাম্বুতে বাস করাব। আমি নবীদের কাছে কথা বলেছি, তাদের অনেক দর্শন দিয়েছি এবং তাদের মধ্য দিয়ে রূপক অর্থে অনেক কথা বলেছি।” গিলিয়দ অন্যায়ে পূর্ণ; তার লোকেরা অপদার্থ। তারা গিল্‌গলে অনেক বলদ উৎসর্গ করে। তাদের বেদীগুলো চাষ করা জমিতে পাথরের ঢিবির মত অনেক। যাকোব অরাম দেশে পালিয়ে গিয়েছিল; স্ত্রী পাবার জন্য ইস্রায়েল মজুরের কাজ ও ভেড়া চরাবার কাজ করেছিল। মিসর থেকে ইস্রায়েলকে নিয়ে আসবার জন্য সদাপ্রভু একজন নবীকে ব্যবহার করেছিলেন; তাঁকে দিয়ে তিনি তার দেখাশোনা করেছিলেন। কিন্তু ইফ্রয়িম সদাপ্রভুকে ভীষণ অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল; সেইজন্য তার প্রভু তার মন্দ কাজের জন্য তাকেই দায়ী করবেন এবং সে যে অপমান করেছে সেই অপমান তাকেই ফিরিয়ে দেবেন। ইফ্রয়িম কথা বললে লোকে কাঁপত; ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সে মহান হয়েছিল। কিন্তু বাল দেবতার পূজা করবার দোষে দোষী হয়ে সে মরেছিল। এখন তার লোকেরা আরও বেশী করে পাপ করছে; তাদের রূপা দিয়ে তারা নিজেদের জন্য ছাঁচে ঢালা প্রতিমা, অর্থাৎ পাকা হাতে গড়া মূর্তি তৈরী করেছে; সেগুলো সবই কারিগরদের কাজ। এই মূর্তিগুলোর সম্বন্ধে তারা বলে, “যারা উৎসর্গ করে তারা বাছুর-প্রতিমাগুলোকে চুম্বন করুক।” সেইজন্য তারা হবে সকালের কুয়াশার মত, হবে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ভোরের শিশিরের মত, হবে খামার থেকে বাতাসে উড়ে যাওয়া তুষের মত, হবে জানলা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ধূমার মত। সদাপ্রভু বলছেন, “মিসর থেকে তোমাকে বের করে আনবার সময় থেকে আমিই তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু। আমি ছাড়া তোমার আর কোন ঈশ্বর নেই; আমি ছাড়া তোমার আর কোন উদ্ধারকর্তা নেই। মরু-এলাকায়, ভীষণ শুকনা দেশে আমিই তোমাকে দেখাশোনা করেছিলাম। আমি তোমার লোকদের খাওয়ালে পর তারা তৃপ্ত হল; তৃপ্ত হয়ে তারা অহংকারী হল, আর তারপর তারা আমাকে ভুলে গেল। কাজেই আমি সিংহের মত তাদের উপরে আসব, চিতাবাঘের মত পথের ধারে ওৎ পেতে থাকব। বাচ্চা চুরি হয়ে যাওয়া ভাল্লুকের মত আমি তাদের আক্রমণ করে তাদের বুক চিরে ফেলব। সিংহীর মত আমি তাদের গ্রাস করব; বুনো জানোয়ারের মত আমি তাদের টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলব। “হে ইস্রায়েল, তুমি আমার বিপক্ষে, অর্থাৎ তোমার সাহায্যকারীর বিপক্ষে আছ বলে আমি তোমাকে ধ্বংস করব। তোমার রাজা কোথায় যে তোমার সব শহরে তোমাকে রক্ষা করতে পারবে? তোমার শাসনকর্তারা কোথায় যাদের বিষয় তুমি বলতে, ‘আমাকে রাজা ও শাসনকর্তাদের দাও’? তাই আমি ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে তোমাকে একজন রাজা দিয়েছিলাম এবং আমার ক্রোধে তাকে নিয়েও গিয়েছি। ইফ্রয়িমের দোষ, অর্থাৎ তার সমস্ত পাপ লিখে বেঁধে রাখা হয়েছে। স্ত্রীলোকের প্রসব-বেদনার মত ব্যথা তাকে ধরেছে, কিন্তু সে তো বুদ্ধিহীন শিশু; সময় উপস্থিত হলে সে গর্ভের খোলা মুখে আসে না। “মৃতস্থানের শক্তি থেকে আমি মূল্য দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনব। মৃত্যু থেকে আমি তাকে মুক্ত করব। হে মৃত্যু, তোমার মড়ক সব কোথায়? হে মৃতস্থান, কোথায় তোমার ধ্বংস? আমি কোন মমতা করব না। যদিও বা ইফ্রয়িম তার ভাইদের মধ্যে সফলতা লাভ করে তবুও সদাপ্রভুর কাছ থেকে একটা পূবালী বাতাস মরু-এলাকা থেকে বয়ে আসবে; তার ফোয়ারাতে জল থাকবে না ও তার কূয়া শুকিয়ে যাবে। তার ভাণ্ডারের সব দামী জিনিস লুট করা হবে। শমরিয়ার লোকেরা তাদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে বলে দায়ী হবে। তারা যুদ্ধে মারা পড়বে; তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের মাটিতে আছাড় মেরে চুরমার করা হবে এবং তাদের গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের পেট চিরে ফেলা হবে।” হে ইস্রায়েলের লোকেরা, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে তোমরা ফিরে এস। তোমাদের পাপের জন্যই তোমাদের পতন হয়েছিল। তোমরা সদাপ্রভুর কাছে ফিরে এসে তাঁকে বল, “আমাদের সব পাপ ক্ষমা কর এবং আমাদের যা ভাল তা গ্রহণ কর যাতে আমরা ষাঁড় উৎসর্গের মত করে আমাদের মুখ দিয়ে তোমার প্রশংসা করতে পারি। আসিরিয়া আমাদের উদ্ধার করতে পারবে না; আমরা যুদ্ধের ঘোড়ার উপর নির্ভর করব না। আমাদের নিজের হাতে তৈরী প্রতিমাগুলোকে আমরা আর কখনও বলব না, ‘আমাদের দেব-দেবতা,’ কারণ তোমার কাছেই অনাথেরা করুণা পায়।” সদাপ্র্রভু বলছেন, “আমি তাদের বিপথে যাওয়া থেকে ফিরিয়ে আনব এবং কোন শর্ত ছাড়াই তাদের ভালবাসব, কারণ আমার ক্রোধ তাদের উপর থেকে সরে গেছে। আমি ইস্রায়েলের কাছে শিশিরের মত হব; সে লিলি ফুলের মত ফুটবে। লেবাননের এরস গাছের মত সে তার শিকড়গুলো নীচে নামিয়ে দেবে। তার ডালপালা ছড়িয়ে যাবে। সে জলপাই গাছের মত সুন্দর হবে আর তার সুগন্ধ হবে লেবাননের এরস গাছের মত। যারা তার ছায়ায় বাস করবে তারা প্রচুর ফসল জন্মাবে। তারা আংগুর লতার মত ফুলে-ফলে ভরে যাবে আর লেবাননের আংগুর-রসের মত তাদের সুনাম হবে। হে ইফ্রয়িম, প্রতিমাগুলোর সংগে তোমার আর কোন সমপর্ক নেই। আমিই তোমার প্রার্থনার উত্তর দেব ও তোমার যত্ন নেব। আমিই সতেজ বেরস গাছের মত; তোমার ফল আমার কাছ থেকেই আসে।” জ্ঞানী কে? সে এই সব বিষয় বুঝুক। বুদ্ধিমান কে? সে এই সব বিষয় জানুক। সদাপ্রভুর পথ সততার পথ; সৎ লোক সেই পথে হাঁটে, কিন্তু অন্যায়কারীরা উছোট খায়। পথূয়েলের ছেলে যোয়েলের কাছে সদাপ্রভুর বাক্য প্রকাশিত হয়েছিল। হে বৃদ্ধ লোকেরা, তোমরা এই কথা শোন; হে দেশে বাসকারী লোকেরা, তোমরা সবাই শোন। তোমাদের কিম্বা তোমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে কি এই রকম ঘটনা কখনও ঘটেছে? এই ঘটনার কথা তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের কাছে বল আর তারা তাদের ছেলেমেয়েদের কাছে বলুক এবং সেই ছেলেমেয়েরা তাদের বংশধরদের কাছে বলুক। কামড়ানো পংগপালে যা রেখে গেছে তা ঝাঁক বাঁধা পংগপালে খেয়েছে; ঝাঁক বাঁধা পংগপালে যা রেখে গেছে তা ধ্বংসকারী পংগপালে খেয়েছে; ধ্বংসকারী পংগপালে যা রেখে গেছে তা লাফিয়ে চলা পংগপালে খেয়েছে। ওহে মাতালেরা, জেগে ওঠো ও কান্নাকাটি কর। ওহে সমস্ত মদখোর, তোমরা টাটকা আংগুর-রসের মদের জন্য বিলাপ কর, কারণ তা তোমাদের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক জাতি আমার দেশ আক্রমণ করেছে; সে শক্তিশালী ও তার সৈন্যেরা অসংখ্য। তার দাঁত সিংহের দাঁতের মত ও তার ছেদন-দাঁত সিংহীর ছেদন-দাঁতের মত। সে আমার সব আংগুর লতা নষ্ট করেছে আর ডুমুর গাছগুলো ভেংগে ফেলেছে। সেগুলোর ছাল ছাড়িয়ে সে তা ফেলে দিয়েছে; তাতে ডালগুলো সব সাদা হয়ে গেছে। হে আমার লোকেরা, যে কুমারী মেয়ে তার যৌবন কালের ভাবী স্বামীর মৃত্যুর জন্য চট পরে বিলাপ করছে তোমরা তার মতই বিলাপ কর। সদাপ্রভুর ঘর থেকে শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা সদাপ্রভুর সেবা করে সেই পুরোহিতেরা শোক করছে। সমস্ত ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে, মাটি শোক করছে, কারণ শস্য নষ্ট হয়েছে, নতুন আংগুর-রস শুকিয়ে গেছে ও তেল শেষ হয়ে আসছে। ওহে চাষীরা, তোমরা লজ্জিত হও; তোমরা যারা আংগুর গাছের যত্ন কর, তোমরা গম ও যবের জন্য বিলাপ কর; কারণ ক্ষেতের ফসল ধ্বংস হয়েছে। আংগুর লতা শুকিয়ে গেছে ও ডুমুর গাছ মরে যাচ্ছে; ডালিম, খেজুর ও আপেল গাছ, এমন কি, ক্ষেতের সব গাছ শুকিয়ে গেছে। সত্যিই লোকদের মধ্য থেকে আনন্দ ফুরিয়ে গেছে। হে পুরোহিতেরা, তোমরা চট পরে শোক প্রকাশ কর; বেদীতে যারা সেবার কাজ কর তোমরা বিলাপ কর। যারা আমার ঈশ্বরের সেবা কর তোমরা এসে চট পরে রাত কাটাও, কারণ তোমাদের ঈশ্বরের ঘরে শস্য-উৎসর্গ ও ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। তোমরা পবিত্র উপবাসের ব্যবস্থা কর; একটা বিশেষ সভা ডাক। বৃদ্ধ নেতাদের ও দেশে বাসকারী সবাইকে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ঘরে ডেকে আন এবং সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি কর। হায়, কি ভয়ংকর দিন! কারণ সদাপ্রভুর দিন কাছে এসে গেছে; ধ্বংসকারী দিন হিসাবে সেই দিনটা সর্বশক্তিমানের কাছ থেকে আসছে। আমাদের চোখের সামনেই খাবার ও আমাদের ঈশ্বরের ঘর থেকে আনন্দ-উল্লাস কি বন্ধ হয়ে যায় নি? মাটির ঢেলার নীচে বীজগুলো পচে গেছে। শস্যের ভাণ্ডার ধ্বংস হয়েছে, গোলাঘর সব ভেংগে ফেলা হয়েছে, কারণ শস্য ফুরিয়ে গেছে। কিভাবে গরু-ভেড়াগুলো কোঁকাচ্ছে! গরুর পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে, কারণ তাদের চরে খাবার জায়গা নেই; ভেড়ার পালগুলো পর্যন্ত কষ্ট পাচ্ছে। হে সদাপ্রভু, আমি তোমাকেই ডাকছি, কারণ চরে খাবার জায়গাগুলো আগুনে গ্রাস করেছে আর আগুনের শিখা পুড়িয়ে ফেলেছে মাঠের সব গাছপালা। এমন কি, বুনো পশুরাও তোমার কাছে কাঁদছে, কারণ জলের স্রোত শুকিয়ে গেছে আর চরে খাবার জায়গাগুলো আগুনে গ্রাস করেছে। তোমরা সিয়োনে তূরী বাজাও, বাজাও বিপদ-সংকেত আমার পবিত্র পাহাড়ে। দেশে বাসকারী সবাই কাঁপুক, কারণ সদাপ্রভুর দিন আসছে; সেই দিন কাছে এসে গেছে। তা অন্ধকার ও গাঢ় অন্ধকারের দিন, মেঘের ও ঘোর অন্ধকারের দিন। পাহাড়-পর্বতের উপরে যেমন ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ে তেমনি করে একটা বিরাট ও শক্তিশালী পংগপালের সৈন্যদল আসছে। এই রকম সৈন্যদল আগেকার কালে কখনও ছিল না, আর যে সব যুগ আসছে তখনও থাকবে না। তাদের আগে আগে গ্রাস করছে আগুন এবং তাদের পিছনে জ্বলছে আগুনের শিখা। তাদের সামনে দেশটা যেন এদন বাগান, আর তাদের পিছনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মরু-এলাকা; কিছুই তা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তাদের আকার ঘোড়ার মত; ঘোড়ায় চড়া সৈন্যদের মত তারা ছুটে চলে। রথের শব্দের মত, নাড়া পোড়ানো আগুনের শব্দের মত তারা পাহাড়ের উপর দিয়ে লাফিয়ে আসে। তারা যুদ্ধের জন্য সারি বাঁধা একদল শক্তিশালী সৈন্যের মত। তাদের দেখে জাতিদের মনে দারুণ যন্ত্রণা হচ্ছে; সকলের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সেই সৈন্যেরা বীর যোদ্ধাদের মত দৌড়ায়, সৈন্যদের মত দেয়ালে ওঠে। তারা সবাই সারি বেঁধে এগিয়ে যায়, তাদের পথ থেকে তারা সরে যায় না। তারা একে অন্যের উপর চাপাচাপি করে না; প্রত্যেকে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। যে কোন বাধাই আসুক না কেন তারা সারি না ভেংগে এগিয়ে যেতে থাকে। তারা শহরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে, দেয়ালের উপরে দৌড়ায়; তারা বাড়ী-ঘরে ওঠে, তারা চোরের মত জানলা দিয়ে ঢোকে। তাদের সামনে পৃথিবী কাঁপে, আকাশ কাঁপতে থাকে, চাঁদ ও সূর্য অন্ধকার হয়ে যায় এবং তারাগুলো আলো দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সদাপ্রভু তাঁর সৈন্যদলের আগে আগে থেকে জোরে তাঁর গলার স্বর শোনান; তাঁর সৈন্যদলের সংখ্যা গোণা যায় না এবং যারা তাঁর আদেশ পালন করে তারা শক্তিশালী। সদাপ্রভুর দিন মহৎ ও ভয়ংকর; কে তা সহ্য করতে পারে? সদাপ্রভু ঘোষণা করছেন, “কিন্তু এখন তোমরা উপবাস, কান্নাকাটি ও দুঃখ প্রকাশ করে সমস্ত অন্তরের সংগে আমার কাছে ফিরে এস।” তোমাদের পোশাক না ছিঁড়ে অন্তর ছিঁড়ে ফেল। তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে ফিরে এস, কারণ তিনি দয়াময় ও মমতায় পূর্ণ; তিনি সহজে অসন্তুষ্ট হন না, তাঁর অটল ভালবাসার সীমা নেই এবং তিনি মন পরিবর্তন করে আর শাস্তি দেন না। কে জানে, হয়তো তিনি আবার মন পরিবর্তন করবেন এবং আশীর্বাদ রেখে যাবেন, যাতে তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে শস্য ও ঢালন-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করতে পার। তোমরা সিয়োনে তূরী বাজাও, পবিত্র উপবাসের ব্যবস্থা কর, একটা বিশেষ সভা ডাক; লোকদের জড়ো করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তাদের আলাদা কর; বৃদ্ধ নেতাদের এক জায়গায় ডাক, যারা বুকের দুধ খায় তাদের এবং ছেলেমেয়েদের জড়ো কর। বর ও কনে তাদের বাসর ঘর ছেড়ে আসুক। যারা সদাপ্রভুর সামনে সেবা-কাজ করে সেই পুরোহিতেরা উপাসনা-ঘরের বারান্দা ও বেদীর মাঝখানে কাঁদুক। তারা বলুক, “হে সদাপ্রভু, তোমার লোকদের উপর তুমি দয়া কর। তোমার সম্পত্তিকে টিট্‌কারির পাত্র কোরো না, জাতিদের মধ্যে তাদের নামকে টিট্‌কারির কথা হতে দিয়ো না। অন্যান্য জাতির লোকেরা কেন বলবে, ‘তাদের ঈশ্বর কোথায়?’ ” তখন সদাপ্রভু তাঁর দেশের জন্য আগ্রহী হবেন এবং তাঁর লোকদের প্রতি মমতা করবেন। সদাপ্রভু তাদের কথার উত্তর দিয়ে বলবেন, “আমি তোমাদের কাছে শস্য, নতুন আংগুর-রস ও তেল পাঠাচ্ছি, তাতে তোমরা পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত হবে; অন্যান্য জাতির কাছে আর কখনও আমি তোমাদের টিট্‌কারির পাত্র করব না। “আমি উত্তর দিক থেকে আসা সৈন্যদলকে তোমাদের কাছ থেকে দূর করে দেব; শুকনা ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া মরু-এলাকায় তাদের তাড়িয়ে দেব। তাদের সামনের অংশ পূর্ব সমুদ্রে আর পিছনের অংশ পশ্চিম সমুদ্রে তাড়িয়ে দেব। তাদের দুর্গন্ধ উপরে উঠবে এবং তা থেকে পচা গন্ধ বের হবে, কারণ তাদের কাজ ছিল গর্বে ভরা।” হে দেশ, ভয় কোরো না; তুমি খুশী হও, আনন্দ কর, কারণ সদাপ্রভু মহৎ মহৎ কাজ করেছেন। ওহে মাঠের পশুরা, তোমরা ভয় কোরো না, কারণ চরে বেড়াবার মাঠ সবুজ হয়ে উঠেছে। গাছে গাছে ফল ধরেছে; ডুমুর গাছ ও আংগুর লতা প্রচুর ফল দিচ্ছে। হে সিয়োনের লোকেরা, খুশী হও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দ কর, কারণ তাঁর সততার দরুন তিনি তোমাদের শরৎ কালের বৃষ্টি দিয়েছেন। তিনি তোমাদের প্রচুর বৃষ্টি পাঠিয়ে দিচ্ছেন, আগের মতই শরৎ ও বসন্তকালের বৃষ্টি দিচ্ছেন। খামারগুলো শস্যে ভরে যাবে; পাত্র থেকে আংগুর-রস আর তেল উপ্‌চে পড়বে। সদাপ্রভু বলছেন, “আমার বিরাট সৈন্যদল যা আমি তোমাদের মধ্যে পাঠিয়েছিলাম তারা, অর্থাৎ ঝাঁক-বাঁধা পংগপাল, ধ্বংসকারী পংগপাল, লাফিয়ে-চলা পংগপাল ও কামড়ানো পংগপাল যত বছর ধরে তোমাদের ফসল খেয়েছে তা আমি শোধ করে দেব। তোমরা পেট ভরে খেয়ে তৃপ্ত হবে এবং তোমরা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রশংসা করবে যিনি তোমাদের জন্য আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করেছেন; আমার লোকেরা আর কখনও লজ্জিত হবে না। তখন তোমরা জানতে পারবে যে, আমি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে আছি এবং আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, অন্য কেউ নয়; আমার লোকেরা আর কখনও লজ্জিত হবে না। “তার পরে আমি সমস্ত লোকের উপরে আমার আত্মা ঢেলে দেব। তাতে তোমাদের ছেলেরা ও মেয়েরা নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলবে, তোমাদের বুড়ো লোকেরা স্বপ্ন দেখবে ও তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাবে। এমন কি, সেই সময়ে আমার দাস ও দাসীদের উপরে আমি আমার আত্মা ঢেলে দেব। আমি আকাশে ও পৃৃথিবীতে আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা দেখাব, অর্থাৎ রক্ত, আগুন ও প্রচুর ধূমা দেখাব। সদাপ্রভুর সেই মহৎ ও ভয়ংকর দিন আসবার আগে সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে ও চাঁদ রক্তের মত হবে। রক্ষা পাবার জন্য যে কেউ সদাপ্রভুকে ডাকবে সে রক্ষা পাবে, কারণ সদাপ্রভুর কথামত সিয়োন পাহাড়ে ও যিরূশালেমে কতগুলো লোক রক্ষা পাবে। ঈশ্বর যাদের বেছে নিয়েছেন তারা সেই রক্ষা পাওয়া লোকদের মধ্যে থাকবে। “শোন, সেই দিনে ও সেই সময়ে যখন আমি যিহূদা ও যিরূশালেমের অবস্থা ফিরাব, তখন আমি সব জাতিদের জড়ো করব এবং যিহোশাফটের উপত্যকায় তাদের নামিয়ে আনব। সেখানে আমার সম্পত্তি, অর্থাৎ আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের বিষয় নিয়ে আমি তাদের বিরুদ্ধে বিচার করব, কারণ তারা জাতিদের মধ্যে আমার লোকদের ছড়িয়ে দিয়েছিল এবং আমার দেশ ভাগ করেছিল। তারা আমার লোকদের ভাগ করে নেবার জন্য গুলিবাঁট করেছিল এবং বেশ্যা পাবার জন্য তারা ইস্রায়েলীয় ছেলেদের বিক্রি করেছিল; আংগুর-রসের জন্য তারা ইস্রায়েলীয় মেয়েদের বিক্রি করেছিল যাতে তারা আংগুর-রস খেতে পারে। “এখন হে সোর, সীদোন ও পলেষ্টীয়ার সমস্ত এলাকা, আমার সংগে তোমাদের সম্বন্ধ কি? তোমরা কি আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছ? যদি তোমরা আমার উপর প্রতিশোধ নাও তবে তোমরা যা করবে তা-ই আমি সংগে সংগে খুব তাড়াতাড়ি তোমাদের নিজেদের মাথার উপর ফিরিয়ে দেব। এর কারণ হল, তোমরা আমার সোনা ও রূপা নিয়ে নিয়েছ এবং আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র তোমাদের মন্দিরগুলোতে নিয়ে গেছ। তোমরা যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের তাদের দেশ থেকে দূরে সরিয়ে দেবার জন্য গ্রীকদের কাছে বিক্রি করেছ। “শোন, যে সব জায়গায় তোমরা তাদের বিক্রি করেছ সেখান থেকে আমি তাদের ডেকে আনব এবং তোমরা যা করেছ তা-ই তোমাদের নিজেদের মাথার উপর ফিরিয়ে দেব। তোমাদের ছেলেমেয়েদের আমি যিহূদার লোকদের কাছে বিক্রি করে দেব এবং তারা দূরের শিবায়ীয় জাতির কাছে তাদের বিক্রি করবে।” এই কথা সদাপ্রভু বলেছেন। তোমরা জাতিদের মধ্যে এই কথা ঘোষণা কর: “তোমরা পবিত্র যুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত কর, বলবান লোকদের ডেকে আন। সব যোদ্ধারা কাছে গিয়ে আক্রমণ করুক। তোমাদের লাংগলের ফলা পিটিয়ে তলোয়ার আর কাস্তে দিয়ে বড়শা তৈরী কর। দুর্বল লোক বলুক, ‘আমি বলবান।’ হে চারদিকের সমস্ত জাতি, তোমরা তাড়াতাড়ি এসে জড়ো হও।” হে সদাপ্রভু, তোমার বলবান লোকদের তুমি পাঠিয়ে দাও। সদাপ্রভু বলছেন, “জাতিদের ডেকে আনা হোক; তারা যিহোশাফটের উপত্যকায় এগিয়ে যাক, কারণ সেখানে আমি চারদিকের সব জাতিদের বিচার করতে বসব। তাদের দুষ্টতা অনেক, সেইজন্য তোমরা কাস্তে লাগাও, কারণ ফসল পেকেছে। তোমরা এসে আংগুর মাড়াও, কারণ আংগুর মাড়াইয়ের গর্ত পূর্ণ হয়েছে। আংগুর-রসের পাত্র থেকে রস উপ্‌চে পড়ছে।” শাস্তির উপত্যকায় অনেক লোকের ভিড়, অনেক লোকের ভিড়, কারণ শাস্তির উপত্যকায় সদাপ্রভুর দিন কাছে এসে গেছে। সূর্য ও চাঁদ অন্ধকার হবে এবং তারাগুলো আলো দেওয়া বন্ধ করে দেবে। সদাপ্রভু সিয়োন থেকে গর্জন করবেন, যিরূশালেম থেকে জোরে কথা বলবেন; পৃথিবী ও আকাশ কাঁপতে থাকবে। কিন্তু সদাপ্রভুই হবেন তাঁর লোকদের জন্য আশ্রয়স্থান, ইস্রায়েলের লোকদের জন্য একটা দুর্গ। সদাপ্রভু বলছেন, “তখন তোমরা জানবে যে, আমিই তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু; আমি সিয়োনে, আমার পবিত্র পাহাড়ে বাস করি। যিরূশালেম পবিত্র হবে; বিদেশীরা আর কখনও সেখানে যাবে না। “সেই দিন বড় বড় পাহাড়গুলো থেকে প্রচুর নতুন আংগুর-রস পাওয়া যাবে আর ছোট ছোট পাহাড়গুলো থেকে প্রচুর দুধ পাওয়া যাবে। যিহূদার সব জলের খাদগুলো দিয়ে জল বয়ে যাবে। সদাপ্রভুর ঘর থেকে একটা ফোয়ারা উঠে শিটীমের উপত্যকাকে জল দান করবে। কিন্তু মিসর ধ্বংসস্থান হবে আর ইদোম ধ্বংস হয়ে যাওয়া মরু-এলাকা হবে, কারণ যিহূদার লোকদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে আর তাদের দেশে নির্দোষের রক্তপাতও করা হয়েছে। তকোয়ের রাখালদের মধ্যে আমোষ ছিলেন একজন। তখন যিহূদার রাজা ছিলেন উষিয় এবং ইস্রায়েলের রাজা ছিলেন যিহোয়াশের ছেলে যারবিয়াম। ভূমিকমেপর দুই বছর আগে ইস্রায়েল সম্বন্ধে ঈশ্বর আমোষকে যা দেখিয়েছিলেন তা তিনি বলেছিলেন। আমোষ বললেন, “সদাপ্রভু সিয়োন থেকে গর্জন করছেন এবং যিরূশালেম থেকে জোরে কথা বলছেন। তাতে রাখালদের চারণ ভূমি সব শুকিয়ে যাচ্ছে ও কর্মিল পাহাড়ের চূড়ার গাছপালা মরে যাচ্ছে।” সদাপ্রভু বলছেন, “দামেস্কের তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ লোহার কাঁটাযুক্ত মাড়াই-যন্ত্র দিয়ে সে গিলিয়দকে মাড়াই করেছে। সেইজন্য আমি হসায়েলের রাজবাড়ীর উপরে আগুন পাঠাব; তা বিন্‌হদদের দুর্গগুলো পুড়িয়ে ফেলবে। আমি দামেস্কের ফটকের আগল ভেংগে ফেলব; আমি আবনের উপত্যকার লোকদের এবং বৈৎ-এদনে যে লোক রাজদণ্ড ধরে আছে তাকে ধ্বংস করব। অরামের লোকেরা বন্দী হয়ে কীরে যাবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “গাজার তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ সে কতগুলো গ্রামের সমস্ত লোককে বন্দী করে ইদোমের হাতে তুলে দিয়েছে। সেইজন্য আমি গাজার দেয়ালের উপরে আগুন পাঠাব; তা তার দুর্গগুলোকে পুড়িয়ে ফেলবে। আমি অস্‌দোদের লোকদের এবং অস্কিলোনে যে লোক রাজদণ্ড ধরে আছে তাকে ধ্বংস করব। আমি ইক্রোণের বিরুদ্ধে আমার হাত উঠাব, তাতে পলেষ্টীয়দের বেঁচে থাকা লোকেরা মারা পড়বে।” সদাপ্রভু বলছেন, “সোরের তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ ভাইয়ের সংগে ভাইয়ের চুক্তি অগ্রাহ্য করে সে কতগুলো গ্রামের সমস্ত লোককে বন্দী করে ইদোমের হাতে তুলে দিয়েছে। সেইজন্য আমি সোরের দেয়ালের উপরে আগুন পাঠিয়ে দেব; তা তার দুর্গগুলো পুড়িয়ে ফেলবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “ইদোমের তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ সমস্ত মায়া-মমতা ত্যাগ করে সে তলোয়ার নিয়ে তার ভাইকে তাড়া করেছে। এছাড়া তার ভয়ংকর রাগ অনবরতই দেখা দিয়েছে আর সে তা পুষে রেখেছে। কাজেই আমি তৈমনের উপরে আগুন পাঠাব; তা বস্রার দুর্গগুলো পুড়িয়ে ফেলবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “অম্মোনের তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ তার সীমানা বাড়াবার জন্য সে গিলিয়দের গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের পেট চিরে দিয়েছে। সেইজন্য যুদ্ধের দিনে যুদ্ধের হাঁকের মধ্যে, ভয়ংকর ঝড়ের মত যুদ্ধের মধ্যে আমি রব্বার দেয়ালে আগুন ধরিয়ে দেব; তা তার দুর্গগুলো পুড়িয়ে ফেলবে। তার রাজা ও তার শাসনকর্তাদের একসংগে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “মোয়াবের তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ সে ইদোমের রাজার হাড়গুলো পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। কাজেই আমি মোয়াবের উপরে আগুন পাঠিয়ে দেব; তা করিয়োতের দুর্গগুলো পুড়িয়ে ফেলবে। যুদ্ধের হাঁক ও শিংগার আওয়াজের সংগে ভীষণ গোলমালের মধ্যে মোয়াবের পতন হবে। তার রাজাকে আমি ধ্বংস করব এবং তার সংগে তার সব শাসনকর্তাদের মেরে ফেলব।” সদাপ্রভু বলছেন, “যিহূদার তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব, কারণ তার লোকেরা সদাপ্রভুর আইন-কানুন অগ্রাহ্য করেছে, আর তাঁর নিয়মগুলো পালন করে নি। তাদের পূর্বপুরুষেরা যে মিথ্যা দেব-দেবতার পিছনে গিয়েছিল তারাও সেইভাবে বিপথে গিয়েছে। কাজেই যিহূদার উপরে আমি আগুন পাঠিয়ে দেব; তা যিরূশালেমের দুর্গগুলো পুড়িয়ে ফেলবে।” সদাপ্রভু বলছেন, “ইস্রায়েলের তিনটা পাপ, এমন কি, চারটা পাপের দরুন আমি নিশ্চয়ই তাকে শাস্তি দেব। তার লোকেরা টাকা-পয়সার জন্য সৎ লোকদের এবং পায়ের এক জোড়া জুতার জন্য অভাবীদের বিক্রি করে। ধুলা মাড়াবার মত করে তারা গরীবদের মাড়ায় এবং পথ থেকে অভাবীদের ঠেলে সরিয়ে দেয়। বাবা ও ছেলে একই মেয়ের সংগে ব্যভিচার করে এবং এইভাবে আমার পবিত্র নামের অসম্মান করে। তারা প্রত্যেকটি বেদীর কাছে বন্ধক নেওয়া পোশাকের উপরে ঘুমায়। তাদের উপাসনা-ঘরে তারা জরিমানার টাকা দিয়ে কেনা আংগুর-রস খায়। “হে ইস্রায়েলের লোকেরা, ইমোরীয়েরা যদিও এরস গাছের মত লম্বা ও এলোন গাছের মত শক্তিশালী ছিল তবুও তোমাদের সামনে সেই ইমোরীয়দের আমিই ধ্বংস করেছিলাম। আমি তাদের ফল ও তার শিকড় ধ্বংস করেছিলাম। ইমোরীয়দের দেশ তোমাদের দেবার জন্য আমিই মিসর থেকে তোমাদের বের করে এনে মরু-এলাকায় চল্লিশ বছর পরিচালনা করেছিলাম। হে ইস্রায়েলের লোকেরা, এই কথা কি সত্যি নয় যে, আমি তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে নবী ও কয়েকজনকে নাসরীয় হিসাবে বেছে নিয়েছিলাম? কিন্তু তোমরা সেই নাসরীয়দের আংগুর-রস খাইয়েছিলে এবং নবী হিসাবে কথা না বলবার জন্য নবীদের আদেশ দিয়েছিলে। “শস্য বোঝাই গাড়ির নীচে কিছু পড়লে যেমন চুরমার হয়ে যায় তেমনি করে এখন আমি তোমাদের চুরমার করব। যারা তাড়াতাড়ি দৌড়াতে পারে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না, বলবানেরা তাদের শক্তি দেখাতে পারবে না এবং যোদ্ধারা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারবে না। ধনুকধারীরা স্থিরভাবে দাঁড়াতে পারবে না, তাড়াতাড়ি দৌড়ে যাওয়া লোকেরা পালাতে পারবে না; এমন কি, ঘোড়সওয়ারও নিজের প্রাণ রক্ষা করতে পারবে না। যোদ্ধাদের মধ্যে যে সবচেয়ে সাহসী সেও সেই দিন উলংগ হয়ে পালিয়ে যাবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” হে ইস্রায়েলের লোকেরা, তোমাদের বিরুদ্ধে, অর্থাৎ সদাপ্রভু যাদের মিসর থেকে বের করে এনেছেন সেই গোটা জাতির বিরুদ্ধে তিনি যা বলছেন তা শোন: “পৃথিবীর সমস্ত জাতির মধ্য থেকে আমি কেবল তোমাদেরই বেছে নিয়েছি; কাজেই তোমাদের সব পাপের জন্য আমি তোমাদের শাস্তি দেব।” আগে থেকে ঠিক না করলে কি দু’জন একসংগে কোথাও যায়? শিকার করা পশু না থাকলে কি সিংহ ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে গর্জন করে? কিছু ধরতে না পারলে কি যুব সিংহ তার গর্তের মধ্যে গোঁ গোঁ করে? ফাঁদের মধ্যে টোপ না থাকলে কি পাখী ফাঁদের কাছে আসে? ধরবার কিছু না পেলে কি ফাঁদ লাফিয়ে ওঠে? শহরে শিংগার আওয়াজ শুনলে কি লোকেরা কাঁপে না? সদাপ্রভু না ঘটালে কি শহরে বিপদ ঘটে? আসলে প্রভু সদাপ্রভু তাঁর দাস নবীদের কাছে তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ না করে কিছুই করেন না। সিংহ গর্জন করলে কে না ভয় করবে? প্রভু সদাপ্রভু বলতে বললে কে নবী হিসাবে কথা না বলে পারবে? তোমরা অস্‌দোদ ও মিসরের সব দুর্গের লোকদের কাছে বল, “তোমরা শমরিয়ার পাহাড়গুলোর উপরে জড়ো হও; দেখ, তার মধ্যে কত গোলমাল! তার লোকদের মধ্যে কত অত্যাচার!” সদাপ্রভু বলছেন, “রাখাল সিংহের মুখ থেকে যেমন কেবল পায়ের দু’টা হাড় কিম্বা কানের একটা টুকরা উদ্ধার করতে পারে তেমনি ইস্রায়েলের যে লোকেরা শমরিয়ায় বাস করে তারা কেবল তাদের খাটের পায়া এবং চাদরের টুকরা নিয়ে উদ্ধার পাবে।” সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা শোন এবং যাকোবের বংশকে সাবধান কর। আমি পাপের জন্য ইস্রায়েলকে যেদিন শাস্তি দেব সেই দিন বৈথেলের বেদীগুলো ভেংগে ফেলব; তখন বেদীর শিংগুলো ভেংগে মাটিতে পড়বে। আমি শীতকাল কাটাবার ঘর ও গরমকাল কাটাবার ঘর ভেংগে ফেলব; হাতীর দাঁতের কাজ করা ঘরগুলো নষ্ট করা হবে এবং বড় বড় বাড়ীগুলো ধ্বংস করা হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” হে শমরিয়ার পাহাড়ের উপরকার বাশনের গাভীগুলোর মত স্ত্রীলোকেরা, তোমরা শোন। তোমরা গরীবদের অত্যাচার কর এবং অভাবীদের চুরমার কর আর তোমাদের স্বামীদের বল, “আমাদের জন্য মদ এনে দাও।” প্রভু সদাপ্রভু নিজের পবিত্রতায় শপথ করে বলেছেন, “সেই সময় নিশ্চয়ই আসবে যখন কড়া লাগিয়ে তোমাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে; তোমাদের সবাইকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে বড়শী দিয়ে। তোমরা প্রত্যেকে দেয়ালের ভাংগা জায়গা দিয়ে সোজা বের হয়ে যাবে এবং হার্মোনের দিকে তোমাদের ফেলে দেওয়া হবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “তোমরা যখন বৈথেলে গিয়ে পাপ করতে চাইছ তখন যাও, পাপ কর; গিল্‌গলে গিয়ে আরও বেশী করে কর। প্রতিদিন সকালে তোমাদের উৎসর্গের জিনিস এবং প্রতি তিন দিনের দিন তোমাদের দশ ভাগের এক ভাগ জিনিস নিয়ে যাও। তোমরা ধন্যবাদের উৎসর্গ হিসাবে খামি দেওয়া রুটি দাও ও তোমাদের নিজের ইচ্ছায় দেওয়া উৎসর্গের জিনিস নিয়ে বড়াই কর, কারণ হে ইস্রায়েলীয়েরা, তোমরা তো তা করতে ভালবাস। আমি প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “আমি আরও বলছি, প্রত্যেকটি শহরে আমি তোমাদের খালি পেটে রাখলাম এবং প্রত্যেকটি গ্রামে দিলাম রুটির অভাব; তবুও তোমরা আমার কাছে ফিরে আসলে না। ফসল কাটবার তিন মাস বাকী থাকতে আমি তোমাদের উপর বৃষ্টি পড়া বন্ধ করে দিলাম। এক গ্রামে বৃষ্টি পাঠিয়ে আমি অন্য গ্রামে তা বন্ধ করলাম। একটা ক্ষেত বৃষ্টি পেল, অন্যটা বৃষ্টি না পেয়ে শুকিয়ে গেল। জলের জন্য লোকেরা টলতে টলতে গ্রাম থেকে গ্রামে গেল কিন্তু যথেষ্ট জল খেতে পেল না; তবুও তোমরা আমার কাছে ফিরে আসলে না। আমি অনেকবার তোমাদের বাগান ও আংগুর ক্ষেত শুকিয়ে যাওয়া রোগ ও ছাৎলা-পড়া রোগ দিয়ে আঘাত করলাম। পংগপালে তোমাদের ডুমুর ও জলপাই গাছ শেষ করে দিল; তবুও তোমরা আমার কাছে ফিরে আসলে না। মিসরে যেমন পাঠিয়েছিলাম তেমনি করে আমি তোমাদের মধ্যে মড়ক পাঠালাম। আমি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তোমাদের যুবকদের মেরে ফেললাম এবং তোমাদের ঘোড়াগুলো নিয়ে গেলাম। তোমাদের সেনা-ছাউনির দুর্গন্ধ তোমাদের নাকে ভরে দিলাম; তবুও তোমরা আমার কাছে ফিরে আসলে না। আমি তোমাদের ঈশ্বর যেমন করে সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস করেছিলাম তেমনি করে তোমাদের অনেককে ধ্বংস করলাম। তোমরা হয়েছিলে আগুন থেকে তুলে নেওয়া জ্বলন্ত কাঠের মত, তবুও তোমরা আমার কাছে ফিরে আসলে না। কাজেই হে ইস্রায়েল, আমি অবশ্যই তোমার সংগে এই রকম ব্যবহার করব। সেইজন্য হে ইস্রায়েল, তোমার ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াবার জন্য তুমি প্রস্তুত হও।” মনে রেখ, যিনি পাহাড়-পর্বত গড়েন, বাতাস সৃষ্টি করেন এবং মানুষের কাছে নিজের চিন্তা প্রকাশ করেন, যিনি আলোকে অন্ধকার করেন এবং পৃথিবীর পাহাড়-পর্বতের উপর দিয়ে চলেন তাঁর নাম সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু। হে ইস্রায়েলের লোকেরা, তোমাদের বিষয় নিয়ে আমি এই যে বিলাপ করছি তা শোন। “কুমারী ইস্রায়েল পড়ে গেছে, সে আর কখনও উঠবে না; তাকে তার নিজের মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে, তাকে তুলবার কেউ নেই।” প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “ইস্রায়েলের যে শহর থেকে এক হাজার বলবান লোক বের হয়ে যায় তার মাত্র একশো জন বেঁচে থাকবে, আবার যে শহর থেকে একশো জন বলবান লোক বের হয়ে যায় তার মাত্র দশজন বেঁচে থাকবে।” ইস্রায়েলের লোকদের সদাপ্রভু বলছেন, “তোমরা আমার কাছে এস, তাতে বাঁচবে। তোমরা বৈথেলে কিম্বা গিল্‌গলে কিম্বা বের্‌-শেবায় যেয়ো না, কারণ গিল্‌গলের লোকেরা নিশ্চয়ই বন্দী হয়ে অন্য দেশে যাবে এবং বৈথেলের সর্বনাশ হবে।” তোমরা সদাপ্রভুর কাছে যাও তাতে বাঁচবে; তা না হলে তিনি আগুনের মত করে যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে জ্বলে উঠবেন। সেই আগুন গ্রাস করবে এবং বৈথেলের কেউ তা নিভাতে পারবে না। তোমরা তো ন্যায়বিচারকে তেতো করে তুলছ এবং সততাকে মাটিতে ফেলছ। যিনি কৃত্তিকা ও মৃগশীর্ষ নামে তারাগুলো তৈরী করেছেন, যিনি অন্ধকারকে আলো করেন এবং দিনকে রাতের আঁধার করেন, যিনি সাগরের জলকে ডাক দিয়ে ভূমির উপর ঢেলে দেন, তাঁর নাম সদাপ্রভু। তিনি শক্তিশালীদের উপর এবং তাদের দুর্গের উপর হঠাৎ সর্বনাশ এনে ধ্বংস করে দেন। যে লোক শহরের ফটকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তোমরা তো তাকে ঘৃণা কর এবং যে সত্যি কথা বলে তাকে তুচ্ছ কর। তোমরা গরীবকে অত্যাচার কর এবং জোর করে তার কাছ থেকে শস্য আদায় কর। কাজেই তোমরা যদিও পাথরের বড় বড় ঘর তৈরী করে থাক তবুও তোমরা তাতে বাস করতে পারবে না। যদিও তোমরা সুন্দর আংগুর ক্ষেত করে থাক তবুও তোমরা তার আংগুর-রস খেতে পারবে না। আমি জানি তোমাদের অন্যায় কত বেশী এবং তোমাদের পাপ কি ভীষণ! তোমরা তো সৎ লোকদের উপর অত্যাচার কর ও ঘুষ খাও; শহরের ফটকে তোমরা গরীবদের ন্যায়বিচার পেতে দাও না। সেইজন্য এই রকম সময়ে বুদ্ধিমান লোক চুপ করে থাকে, কারণ সময়টা মন্দ। তোমরা যাতে বাঁচতে পার সেইজন্য ভালোর পিছনে যাও, মন্দের পিছনে নয়; তাহলে যেমন তোমরা বলে থাক তেমনি সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু সত্যিসত্যিই তোমাদের সংগে থাকবেন। মন্দকে ঘৃণা কর, ভালোকে ভালবাস; শহরের ফটকে ন্যায়বিচার রক্ষা কর। হয়তো ইস্রায়েলের বেঁচে থাকা লোকদের উপর সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু দয়া করবেন। সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “শহরের প্রত্যেকটি খোলা জায়গায় লোকে বিলাপ করবে এবং প্রত্যেকটি রাস্তায় হায় হায় করবে। এমন কি, শোক প্রকাশকারীদের সংগে বিলাপ করবার জন্য চাষীদেরও ডাকা হবে। সমস্ত আংগুর ক্ষেতগুলোতে বিলাপ হবে, কারণ আমি তোমাদের মধ্য দিয়ে যাব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” ধিক্‌ তোমাদের! তোমরা তো আকুল হয়ে সদাপ্রভুর দিন দেখতে চাইছ! কেন তোমরা সেই দিনের আকাংক্ষা করছ? তোমাদের কাছে সেই দিন আলো নয় কিন্তু অন্ধকার হবে। সেটা হবে যেন কোন মানুষ সিংহের হাত থেকে পালিয়ে ভাল্লুকের সামনে পড়ল, যেন নিজের বাড়ীতে ঢুকে দেয়ালে হাত রেখে সাপের কামড় খেল। সদাপ্রভুর দিন আলো না হয়ে কি অন্ধকার হবে না? উজ্জ্বলতার কণামাত্র না থেকে তা কি গাঢ় অন্ধকার হবে না? সদাপ্রভু বলছেন, “আমি তোমাদের পর্বগুলো ঘৃণা করি, অগ্রাহ্য করি; তোমাদের সভাগুলো আমি সহ্য করতে পারি না। তোমরা আমার উদ্দেশে পোড়ানো-উৎসর্গ ও শস্য-উৎসর্গ করলেও আমি সেগুলো গ্রহণ করব না। যদিও তোমরা মোটাসোটা পশু দিয়ে যোগাযোগ-উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর তবুও সেই দিকে আমি চেয়েও দেখব না। তোমাদের গানের আওয়াজ দূর কর। তোমাদের বীণার বাজনা আমি শুনব না। তার চেয়ে বরং ন্যায়বিচার নদীর মত আর সততা চিরকাল বয়ে যাওয়া স্রোতের মত বয়ে যাক। “হে ইস্রায়েলের লোকেরা, মরু-এলাকায় সেই চল্লিশ বছর তোমরা কি আমার উদ্দেশে কোন পশু বা অন্য জিনিস উৎসর্গ করেছিলে? না, বরং তোমরা তোমাদের নিজেদের তৈরী রাজা-দেবতা সিক্কুতের মূর্তি ও তারা-দেবতা কীয়ূনের মূর্তি বয়ে নিয়ে গিয়েছিলে। কাজেই আমি দামেস্কের ওপাশে বন্দী হিসাবে তোমাদের পাঠিয়ে দেব। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” ধিক্‌ তোমাদের! তোমরা তো সিয়োনে আরামে বাস করছ আর শমরিয়ার পাহাড়ে নিজেদের নিরাপদ মনে করছ। তোমরা সবচেয়ে প্রধান জাতি ইস্রায়েলের নাম-করা লোক আর তোমাদের কাছেই ইস্রায়েলের লোকেরা আসে। তোমরা কল্‌নীতে গিয়ে দেখ; সেখান থেকে বড় হমাতে যাও, তার পরে পলেষ্টীয়দের গাৎ শহরে যাও। ঐ রাজ্যগুলোর চেয়ে কি তোমাদের রাজ্য দু’টা ভাল? তাদের দেশের চেয়ে কি তোমাদের দেশ বড়? তোমরা মনে করছ যে, তোমরা বিপদের দিনকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছ, কিন্তু আসলে তোমরা সন্ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছ। তোমরা হাতীর দাঁতের কাজ করা খাটে শোও আর তোমাদের বিছানায় অলসভাবে গা টান কর। তোমাদের পাল থেকে তোমরা বাছাই করা ভেড়ার বাচ্চা ও বাছুরের মাংস খাও। তোমরা বীণা বাজিয়ে গান গাও এবং দায়ূদের মত নানা রকম বাজনা তৈরী করে থাক। তোমরা বাটি ভরে আংগুর-রস খাও আর সবচেয়ে ভাল সুগন্ধি তেল গায়ে মাখ, কিন্তু তোমরা যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের ধ্বংসের জন্য দুঃখিত হও না। কাজেই যারা বন্দী হয়ে অন্য দেশে যাবে তাদের মধ্যে তোমরাই হবে প্রথম; তখন তোমাদের ভোজ খাওয়া ও গা টান করা শেষ হবে। সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর প্রভু সদাপ্রভু নিজের নামেই শপথ করে বলেছেন, “আমি যাকোবের অহংকার এবং তার দুর্গগুলো ভীষণ ঘৃণা করি; সেইজন্য আমি তোমাদের শহর ও তার মধ্যেকার সব কিছু অন্যের হাতে দিয়ে দেব।” একটা ঘরে দশজন লোক বেঁচে থাকলেও তারা মারা পড়বে। তারপর কোন আত্মীয় মৃতদেহগুলো পোড়াবার জন্য সেগুলো ঘর থেকে বের করে নিতে আসবে। ঘরের ভিতরে আর কেউ আছে কি না তা জানবার জন্য সে জিজ্ঞাসা করবে, “তুমি ছাড়া আর কেউ আছে কি?” তখন সেই ঘরের লোক বলবে, “না, নেই।” এতে সেই আত্মীয় বলবে, “চুপ কর। এমন কি, সদাপ্রভুর নামও নিয়ো না।” যখন সদাপ্রভু আদেশ দেবেন তখন বড় বড় বাড়ী খণ্ড খণ্ড আর ছোট ছোট বাড়ী টুকরা টুকরা করা হবে। খাড়া পাহাড়ে কি ঘোড়ারা দৌড়ায়? কেউ কি সেখানে বলদ দিয়ে চাষ করে? কিন্তু তোমরা ন্যায়বিচারকে করেছ বিষের মত আর তেতোর মত করেছ সততার ফল। তোমরা লো-দবার (যার মানে “কিছুই না”) জয় করেছ বলে আনন্দ করে থাক, আবার বলে থাক, “আমরা কি নিজের শক্তিতে কর্ণয়িম (যার মানে ‘শক্তিশালী শিং’) অধিকার করি নি?” সর্বক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, “হে ইস্রায়েলের লোকেরা, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে একটা জাতিকে পাঠাব। সেই জাতি উত্তর দিকের হমাৎ এলাকা থেকে দক্ষিণ দিকের অরাবা উপত্যকা পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় তোমাদের উপর অত্যাচার করবে।” প্রভু সদাপ্রভু আমাকে এই দর্শন দেখালেন: দ্বিতীয় ফসলের সময় রাজার ভাগের ঘাস কাটবার পরে যখন আবার ঘাস গজিয়ে উঠছিল তখন সদাপ্রভু ঝাঁকে ঝাঁকে পংগপাল ঠিক করলেন। সেগুলো যখন দেশের সবুজ গাছ-গাছড়া খেয়ে পরিষ্কার করে দিল তখন আমি মিনতি করে বললাম, “হে প্রভু সদাপ্রভু, ক্ষমা কর। যাকোব কি করে বেঁচে থাকবে? সে তো খুবই ছোট।” তখন সদাপ্রভু মন ফিরিয়ে বললেন, “ঐ রকম ঘটবে না।” তারপর প্রভু সদাপ্রভু আমাকে আর একটা দর্শন দেখালেন। প্রভু সদাপ্রভু শাস্তি দেবার জন্য আগুনকে ডাকলেন। সেই আগুন মহাসমুদ্রকে শুকিয়ে ফেলল এবং ভূমিকে গ্রাস করতে লাগল। তখন আমি মিনতি করে বললাম, “হে প্রভু সদাপ্রভু, আমি অনুরোধ করছি তুমি থাম। যাকোব কি করে বাঁচবে? সে তো খুবই ছোট।” তখন প্রভু সদাপ্রভু মন ফিরিয়ে বললেন, “ঐ রকমও ঘটবে না।” তারপর সদাপ্রভু আমাকে আর একটা দর্শন দেখালেন। তিনি ওলনদড়ি হাতে নিয়ে ওলনের মাপে তৈরী একটা দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, “আমোষ, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” উত্তরে আমি বললাম, “একটা ওলনদড়ি।” তখন প্রভু বললেন, “আমার লোক ইস্রায়েলের মধ্যে আমি একটা ওলনদড়ি রাখছি; আমি আর তাদের রেহাই দেব না। ইস্‌হাকের বংশের লোকদের পূজার উঁচু স্থানগুলো আর ইস্রায়েলের উপাসনার অন্যান্য জায়গাগুলো ধ্বংস করা হবে। আমি তলোয়ার নিয়ে যারবিয়ামের বংশের বিরুদ্ধে উঠব।” পরে বৈথেলের পুরোহিত অমৎসিয় ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের কাছে এই খবর পাঠালেন, “আমোষ ইস্রায়েলের মধ্যেই আপনার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র করছে। দেশের লোকেরা তার কোন কথা সহ্য করতে পারছে না। আমোষ বলছে, ‘যারবিয়ামকে তলোয়ার দিয়ে মেরে ফেলা হবে আর ইস্রায়েলকে অবশ্যই তার দেশ থেকে বন্দী হয়ে অন্য দেশে যেতে হবে।’ ” তখন অমৎসিয় আমোষকে বললেন, “ওহে দর্শক, দূর হয়ে যাও। তুমি যিহূদা দেশেই চলে যাও। সেখানে নবী হিসাবে কথা বলে তোমার খাবার যোগাড় কর। বৈথেলে আর নবী হিসাবে কথা বোলো না, কারণ এটা রাজার উপাসনার জায়গা ও রাজবাড়ী।” উত্তরে আমোষ অমৎসিয়কে বললেন, “আমি নবীও ছিলাম না, নবীর শিষ্যও ছিলাম না; আসলে আমি ছিলাম একজন রাখাল, আর আমি ডুমুর গাছের দেখাশোনাও করতাম। কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে ভেড়ার পালের দেখাশোনার কাজ থেকে নিয়ে এসে বললেন, ‘তুমি গিয়ে আমার লোক ইস্রায়েলের কাছে নবী হিসাবে কথা বল।’ তাহলে এখন আপনি সদাপ্রভুর বাক্য শুনুুন। আপনি বলছেন, ‘ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে নবী হিসাবে কথা বোলো না এবং ইস্‌হাকের বংশের বিরুদ্ধে প্রচার কোরো না।’ কাজেই সদাপ্রভু বলছেন, ‘তোমার স্ত্রী শহরের মধ্যে বেশ্যা হবে, আর তোমার ছেলেমেয়েরা যুদ্ধে মারা যাবে। তোমার জমি মেপে মেপে অন্যদের ভাগ করে দেওয়া হবে আর তুমি নিজে একটা অশুচি দেশে মারা যাবে। ইস্রায়েলের লোকদের অবশ্যই তাদের দেশ থেকে বন্দী হয়ে অন্য দেশে যেতে হবে।’ ” প্রভু সদাপ্রভু আমাকে আর একটা দর্শন দেখালেন। আমি দেখলাম, এক টুকরি পাকা ফল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আমোষ, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” উত্তরে আমি বললাম, “এক টুকরি পাকা ফল।” তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “আমার লোক ইস্রায়েলের সময় শেষ হয়ে গেছে; আমি আর তাদের রেহাই দেব না। সেই দিন রাজবাড়ীতে গানের বদলে এই বিলাপ হবে, ‘অনেক, অনেক মৃতদেহ; সেগুলো সব জায়গায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। চুপ কর।’ ” তোমরা যারা অভাবীদের পায়ে মাড়াচ্ছ আর গরীবদের শেষ করে দিচ্ছ, তোমরা শোন। তোমরা বলছ, “কখন অমাবস্যা চলে যাবে যাতে আমরা শস্য বিক্রি করতে পারি? কখন বিশ্রাম দিন শেষ হবে যাতে আমরা বাজারে গম বেচতে পারি? আমরা মাপের টুকরি ছোট করব, দাম বাড়াব, ঠকামির দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করব, রূপা দিয়ে গরীবকে এবং এক জোড়া জুতা দিয়ে অভাবীকে কিনে নেব আর ঝাড়ু দিয়ে ফেলে দেওয়া গম তাদের কাছে বিক্রি করব।” সদাপ্রভু, যিনি যাকোবের গৌরব, তিনি শপথ করে বলেছেন, “তারা যা করেছে তা কখনই আমি ভুলে যাব না। এর জন্য কি দেশ কাঁপবে না? তার মধ্যে বাসকারী সবাই কি বিলাপ করবে না? গোটা দেশটাই মিসরের নীল নদীর মত ফুলে উঠে অশান্ত হবে আর তারপর নেমে যাবে।” প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিন দুপুর বেলাতেই আমি সূর্যকে অস্ত যাওয়াব এবং দিনের বেলায় পৃথিবীকে অন্ধকার করে দেব। আমি তোমাদের উৎসবগুলো শোকে ও সমস্ত গান বিলাপে বদলে দেব। আমি তোমাদের সকলকে ছালার চট পরাব ও মাথায় টাক পড়াব। আমি সেই সময়টাকে করব একমাত্র ছেলের মৃত্যুর শোকের সময়ের মত এবং তা শেষ পর্যন্ত চলবে ভীষণ দুঃখে।” প্রভু সদাপ্রভু বলছেন, “এমন সব দিন আসছে যখন আমি দেশের মধ্যে দুর্ভিক্ষ পাঠাব। তা খাবারের দুর্ভিক্ষ কিম্বা জলের পিপাসা নয় কিন্তু সদাপ্রভুর বাক্য শুনবার দুর্ভিক্ষ। লোকে সদাপ্রভুর বাক্যের খোঁজে পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে টলতে টলতে ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু তা পাবে না। সেই দিন সুন্দরী যুবতীরা এবং শক্তিশালী যুবকেরা সেই বাক্যের পিপাসায় জ্ঞান হারাবে। যারা শমরিয়ার প্রতিমার নাম নিয়ে শপথ করে বলে, ‘হে দান, তোমার জীবন্ত দেবতার দিব্য,’ কিম্বা বলে, ‘বের্‌-শেবার জীবন্ত দেবতার দিব্য,’ তারা পড়ে যাবে, আর কখনও উঠবে না।” আমি প্রভুকে বেদীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তিনি বললেন, “থামগুলোর মাথায় আঘাত কর যাতে সেগুলো কেঁপে উঠে সেখানকার সমস্ত লোকদের মাথার উপর ভেংগে পড়ে। যারা বেঁচে থাকবে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমি তাদের মেরে ফেলব। কেউ চলে যেতে কিম্বা পালাতে পারবে না। তারা মৃতস্থানের গভীর পর্যন্ত খুঁড়ে সেখানে গেলেও আমার হাত সেখান থেকে তাদের নিয়ে আসবে। তারা মহাকাশ পর্যন্ত উঠলেও সেখান থেকে আমি তাদের নামিয়ে আনব। তারা কর্মিল পাহাড়ের চূড়ায় নিজেদের লুকালেও সেখান থেকে আমি তাদের খুঁজে বের করে ধরব। তারা আমার কাছ থেকে সমুদ্রের তলায় লুকালেও সেখানে তাদের কামড়াবার জন্য আমি সাপকে আদেশ দেব। শত্রুদের দ্বারা বন্দী হয়ে তারা অন্য দেশে গেলেও সেখানে তাদের মেরে ফেলবার জন্য আমি তলোয়ারকে আদেশ দেব। মংগলের জন্য নয় কিন্তু অমংগলের জন্যই আমি তাদের উপর আমার চোখ স্থির রাখব।” সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু সদাপ্রভু দেশটাকে ছুঁলে তা গলে যায় আর তার মধ্যে বাসকারী সবাই শোক করে। তাঁর ছোঁয়ায় গোটা দেশটা মিসরের নীল নদীর মত ফুলে ওঠে, তারপর নেমে যায়। তিনি আকাশে তাঁর উঁচু ঘর তৈরী করেছেন এবং পৃথিবীর উপরে চাঁদোয়ার মত আকাশকে স্থাপন করেছেন; তিনি সাগরের জলকে ডেকে ভূমির উপরে ঢেলে দেন। যিনি এই সব করেন তাঁর নাম সদাপ্রভু। সদাপ্রভু বলছেন, “হে ইস্রায়েলের লোকেরা, তোমরা কি আমার কাছে কূশীয়দের মত নও? আমি কি মিসর থেকে ইস্রায়েলীয়দের, ক্রীট থেকে পলেষ্টীয়দের এবং কীর থেকে অরামীয়দের নিয়ে আসি নি? আমার চোখ অবশ্যই এই পাপে পূর্ণ রাজ্যের উপর রয়েছে। পৃথিবীর বুক থেকে আমি তা ধ্বংস করে দেব; তবুও আমি যাকোবের বংশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করব না। আমি আদেশ দেব, আর চালুনিতে যেমন শস্য চালে তেমনি করে সমস্ত জাতির মধ্যে আমি ইস্রায়েলের বংশকে চালব, কিন্তু একটা দানাও মাটিতে পড়বে না। আমার সব পাপী লোকদের মধ্যে যারা বলে, ‘অমংগল আমাদের নাগাল পাবে না কিম্বা আমাদের কাছে আসবে না,’ তারা সবাই যুদ্ধে মারা পড়বে।” সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিন আমি দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর আবার উঠাব। আমি তার ভাংগা জায়গাগুলো মেরামত করব, ধ্বংসস্থানগুলো ঠিক করব এবং আগে যেমন ছিল তেমনি করে তা তৈরী করব, যাতে ইস্রায়েলীয়েরা ইদোমের বাকী অংশ এবং আমার অন্য সব জাতিদের দেশ অধিকার করতে পারে।” সদাপ্রভু, যিনি এই সব কাজ করেন, তিনি এই কথা বলছেন। সদাপ্রভু আরও বলছেন, “সেই দিনগুলো আসছে যখন এত শস্য জন্মাবে যে, তা সব কাটবার আগে আবার চাষ করবার সময় আসবে এবং এত আংগুর হবে যে, তা সব মাড়াই করবার আগে আবার ফসল লাগাবার সময় আসবে। বড় বড় পাহাড়গুলো থেকে প্রচুর নতুন আংগুর-রস পাওয়া যাবে এবং তা সমস্ত ছোট ছোট পাহাড়গুলোকে যেন ধুয়ে নিয়ে যাবে। বন্দীদশায় থাকা আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের আমি ফিরিয়ে আনব; তারা ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলো আবার তৈরী করবে এবং সেগুলোতে বাস করবে। তারা আংগুর ক্ষেত করে আংগুর-রস খাবে; তারা বাগান করে তার ফল খাবে। আমি ইস্রায়েলীয়দের তাদের নিজের দেশে গাছের মত লাগিয়ে দেব; যে দেশ আমি তাদের দিয়েছি সেখান থেকে আর তাদের কখনও উপ্‌ড়ে ফেলা হবে না।” এই কথা তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন। ॥ভব ওবদিয়ের দর্শন। ইদোম দেশের বিষয়ে প্রভু সদাপ্রভু এই সব কথা বলেছেন। আমরা সদাপ্রভুর কাছ থেকে একটা সংবাদ পেয়েছি। তিনি জাতিদের কাছে একজন দূতকে পাঠিয়ে এই কথা বলতে বলেছিলেন, “ওঠো, চল আমরা ইদোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাই।” সদাপ্রভু ইদোমকে বলছেন, “দেখ, জাতিদের মধ্যে আমি তোমাকে ছোট করব; তোমাকে একেবারে তুচ্ছ করা হবে। তুমি পাথরের পাহাড়ের ফাটলে বাস কর এবং উঁচু উঁচু জায়গায় থাক আর মনে মনে বল, ‘কে আমাকে মাটিতে নামাতে পারবে?’ কিন্তু তোমার অন্তরের অহংকারই তোমাকে ঠকিয়েছে। যদিও তুমি ঈগল পাখীর মত উঁচুতে বাসা বাঁধ এবং তারাগুলোর মধ্যে ঘর বানাও তবুও আমি সেখান থেকে তোমাকে নামিয়ে আনব। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “ইস্‌, কি বিপদই না তোমার জন্য অপেক্ষা করছে! যদি চোরেরা তোমার কাছে আসে, ডাকাতেরা আসে রাতের বেলায়, তবে তাদের যতটা ইচ্ছা কেবল ততটাই তারা চুরি করবে। আংগুর তুলবার লোকেরা যদি তোমার কাছে আসে তবে তারা তোমার জন্য কিছু আংগুর রেখে যাবে। কিন্তু এষৌকে একেবারে লুট করা হবে, তার গুপ্তধন সম্পূর্ণভাবে লুটপাট করা হবে। তোমার সব বন্ধু-রাজ্যগুলো তোমার পালিয়ে যাওয়া লোকদের তাদের সীমায় ঢুকতে দেবে না। তোমার বন্ধুরা তোমাকে ঠকাবে এবং বশে আনবে; যারা তোমার খাবার খায় তারা তোমার জন্য ফাঁদ পাতবে, কিন্তু তুমি কিছুই বুঝতে পারবে না।” সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিন আমি কি ইদোমের জ্ঞানী লোকদের এবং এষৌর পাহাড়গুলো থেকে বুদ্ধিমান লোকদের ধ্বংস করব না? হে তৈমন, তোমার যোদ্ধারা ভীষণ ভয় পাবে আর এষৌর পাহাড়গুলোর সবাইকে মেরে ফেলা হবে। তোমার ভাই যাকোবের বিরুদ্ধে অত্যাচারের জন্য তুমি লজ্জায় ঢাকা পড়বে; তুমি চিরকালের জন্য ধ্বংস হবে। অন্য দেশের লোকেরা যখন যাকোবের ধন-সম্পদ নিয়ে যাচ্ছিল আর তার ফটকগুলো দিয়ে ঢুকে যিরূশালেমের জন্য গুলিবাঁট করছিল তখন তুমি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলে; তুমি তাদের একজনের মত হয়েছিলে। তোমার ভাইয়ের দুর্দশার দিনে তুমি খুশী হয়েছ, যিহূদার লোকদের ধ্বংসের দিনে তাদের বিষয় নিয়ে আনন্দ করেছ এবং তাদের কষ্টের দিনে গর্ব করেছ। আমার লোকদের বিপদের দিনে তুমি তাদের ফটকগুলো দিয়ে ঢুকেছ, তাদের ধ্বংসের দিনে তাদের বিপদ দেখে তুমি খুশী হয়েছ এবং তাদের ধন-সম্পদ দখল করেছ, তাদের পালিয়ে যাওয়া লোকদের মেরে ফেলবার জন্য তুমি তাদের পালাবার রাস্তায় রাস্তায় অপেক্ষা করেছ, আর তাদের কষ্টের দিনে তাদের রক্ষা পাওয়া লোকদের শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছ। এই সব করা তোমার উচিত ছিল না। “সমস্ত জাতির জন্য সদাপ্রভুর দিন কাছে এসে গেছে। তুমি যেমন করেছ তোমার প্রতি তেমনই করা হবে; তোমার কাজের ফল তোমারই মাথার উপর ফিরে আসবে। আমার পবিত্র পাহাড়ে তুমি যেমন মদ খেয়েছ তেমনি সমস্ত জাতি অনবরত আমার ক্রোধের মদ খাবে; তারা তা খেতেই থাকবে এবং সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সিয়োন পাহাড়ে কতগুলো লোক রক্ষা পাবে; তারা হবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করা লোক। যাকোবের বংশ তাদের পাওনা সম্পত্তি পাবে। যাকোবের বংশ হবে আগুন আর যোষেফের বংশ হবে আগুনের শিখা; এষৌর বংশ হবে নাড়া আর সেই আগুন তা পুড়িয়ে ফেলবে। এষৌর বংশের কেউই বেঁচে থাকবে না। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলেছি।” নেগেভে থাকা ইস্রায়েলীয়েরা এষৌর পাহাড়গুলো দখল করে নেবে এবং নীচু পাহাড়ী এলাকার লোকেরা পলেষ্টীয়দের দেশ অধিকার করবে। তারা ইফ্রয়িম ও শমরিয়ার জায়গাগুলো দখল করবে এবং বিন্যামীন গিলিয়দ এলাকা অধিকার করবে। বন্দীদশায় থাকা ইস্রায়েলীয়দের দল এসে সারিফৎ পর্যন্ত কনানীয়দের দেশটা অধিকার করে নেবে; বন্দীদশায় থাকা যিরূশালেমের যে লোকেরা সফারদে আছে তারা এসে নেগেভের গ্রামগুলো অধিকার করবে। শাসনকর্তারা সিয়োন পাহাড় থেকে এষৌর পাহাড়গুলোর লোকদের শাসন করবে, আর সদাপ্রভুই রাজত্ব করবেন। ॥ভব কিন্তু যোনা সদাপ্রভুর কাছ থেকে তর্শীশে পালিয়ে যাবার জন্য রওনা হলেন। তিনি যাফো বন্দরে গিয়ে তর্শীশে যাবার একটা জাহাজ পেলেন। ভাড়া দেবার পর তিনি সেই জাহাজে উঠলেন এবং সদাপ্রভুর কাছ থেকে পালিয়ে যাবার জন্য তর্শীশের দিকে যাত্রা করলেন। তখন সদাপ্রভু সমুদ্রে একটা জোর বাতাস পাঠিয়ে দিলেন। তাতে এমন ভয়ংকর একটা ঝড় উঠল যে, জাহাজখানা ভেংগে যাবার মত হল। এতে নাবিকেরা সবাই ভয় পেয়ে প্রত্যেকে নিজের নিজের দেবতার কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল। জাহাজের ভার কমাবার জন্য তারা মালপত্র সমুদ্রে ফেলে দিল। কিন্তু এর আগেই যোনা জাহাজের খোলে নেমে গিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁর ঘুম গাঢ় হয়েছিল। তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন যোনার কাছে গিয়ে বললেন, “তুমি কেমন করে ঘুমাচ্ছ? উঠে তোমার দেবতাকে ডাক। তিনি হয়তো আমাদের দিকে মনোযোগ দেবেন আর তাতে আমরা ধ্বংস হব না।” পরে নাবিকেরা একে অন্যকে বলল, “কে এই বিপদের জন্য দায়ী তা দেখবার জন্য এস, আমরা গুলিবাঁট করে দেখি।” তারা গুলিবাঁট করলে পর যোনার নাম উঠল। তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি আমাদের বল, এই যে বিপদ আমাদের উপর এসেছে তার জন্য কে দায়ী? তুমি কি কাজ কর? তুমি কোথা থেকে এসেছ? তুমি কোন্‌ দেশের লোক? তুমি কোন্‌ জাতির লোক?” উত্তরে যোনা বললেন, “আমি একজন ইব্রীয়। আমি স্বর্গের ঈশ্বর সদাপ্রভুর উপাসনা করি। তিনিই সাগর ও ভূমি তৈরী করেছেন।” তিনি যে সদাপ্রভুর কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন তা তারা জানতে পারল, কারণ তিনি সেই কথা তাদের বললেন। এতে তারা ভীষণ ভয় পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি এ কি করেছ?” সাগর অশান্ত থেকে আরও অশান্ত হয়ে উঠছিল বলে তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “সমুদ্র যাতে আমাদের জন্য শান্ত হয় সেইজন্য আমরা তোমাকে নিয়ে কি করব?” উত্তরে যোনা বললেন, “আমাকে তুলে সমুদ্রে ফেলে দিন, তাতে সমুদ্র শান্ত হবে। আমি জানি, আমার দোষেই এই ভীষণ ঝড় আপনাদের উপরে এসেছে।” তবুও সেই নাবিকেরা তা না করে ডাংগার দিকে ফিরে যাবার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে দাঁড় বাইতে লাগল; কিন্তু তারা পারল না, কারণ সমুদ্র আগের চেয়ে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠল। তখন তারা সদাপ্রভুকে ডেকে বলল, “হে সদাপ্রভু, এই লোকের মৃত্যুর জন্য আমাদের যেন মরতে না হয়। একজন নির্দোষ লোকের মৃত্যুর জন্য তুমি আমাদের দায়ী কোরো না, কারণ হে সদাপ্রভু, তুমি তো তোমার ইচ্ছামত কাজ করেছ।” এর পর তারা যোনাকে ধরে সমুদ্রে ফেলে দিল, তাতে তোলপাড় করা সেই সাগর শান্ত হয়ে গেল। এতে সেই লোকেরা সদাপ্রভুকে ভীষণ ভয় করতে লাগল। তারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করল এবং তাঁর কাছে কতগুলো মানত করল। এদিকে যোনাকে গিলে ফেলবার জন্য সদাপ্রভু একটা বড় মাছ ঠিক করে রেখেছিলেন। যোনা সেই মাছের পেটে তিন দিন তিন রাত রইলেন। তুমি আমাকে গভীর জলে, সাগরের তলায় ফেলে দিলে আর আমি স্রোতের মধ্যে তলিয়ে গেলাম; তোমার সমস্ত ঢেউ আমার উপর দিয়ে বয়ে গেল। আমি বললাম, ‘আমাকে তোমার চোখের সামনে থেকে দূর করে দেওয়া হয়েছে; তবুও আমি আবার তোমার সেই পবিত্র ঘরের দিকে চোখ তুলব।’ সাগরের জল আমাকে গ্রাস করে মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্ত নিয়ে গেল; সাগর আমাকে ঘিরে ধরল এবং তার আগাছা আমার মাথায় জড়িয়ে গেল। আমি ডুবে গিয়ে পাহাড়ের গোড়া পর্যন্ত গেলাম; মৃতস্থান চিরকালের জন্য আমাকে আট্‌কে রাখল। কিন্তু হে আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি সেখান থেকে আমাকে উঠিয়ে আনলে। “হে সদাপ্রভু, আমার প্রাণ যখন যায়-যায় হয়ে উঠেছিল তখন আমি তোমাকে মনে করলাম, আর আমার প্রার্থনা তোমার কাছে, তোমার পবিত্র ঘরে উঠে গিয়েছিল। যারা অপদার্থ প্রতিমাগুলোর পূজা করে তারা তোমার যে দয়া পেতে পারত তা অবহেলা করে, কিন্তু আমি ধন্যবাদের গান গেয়ে তোমার উদ্দেশে পশু-উৎসর্গ করব। আমি যে মানত করেছি তা পূর্ণ করব। উদ্ধার করা সদাপ্রভুরই কাজ।” পরে সদাপ্রভু মাছটাকে আদেশ দিলেন আর মাছটা যোনাকে শুকনা জমির উপর বমি করে বের করে দিল। পরে সদাপ্রভুর বাক্য দ্বিতীয়বার যোনার কাছে প্রকাশিত হল। তিনি বললেন, “তুমি এখন সেই বড় শহর নীনবীতে যাও এবং আমি যে খবর তোমাকে দেব তা সেখানে ঘোষণা কর।” সদাপ্রভুর কথামত যোনা নীনবীতে গেলেন। নীনবী ছিল খুব বড় একটা শহর; তার এক পাশ থেকে অন্য পাশে হেঁটে সমস্ত জায়গায় যেতে তিন দিন লাগত। যোনা সেই শহরে ঢুকে এক দিনের পথ গেলেন এবং এই কথা ঘোষণা করলেন, “আর চল্লিশ দিন পরে নীনবী ধ্বংস হয়ে যাবে।” তখন নীনবীর লোকেরা ঈশ্বরের কথায় বিশ্বাস করল। তাই তারা উপবাস ঘোষণা করল এবং বড় থেকে ছোট পর্যন্ত সকলেই ছালার চট পরল। রাজার কাছে সেই খবর পৌঁছালে পর তিনি তাঁর সিংহাসন ছেড়ে উঠে তাঁর রাজপোশাক খুলে ফেললেন এবং ছালার চট পরে ছাইয়ের মধ্যে বসলেন। তারপর তিনি নীনবীতে তাঁর ও তাঁর রাজকর্মচারীদের এই আদেশ ঘোষণা করালেন: “মানুষ বা পশু, গরু বা ভেড়ার পাল কেউ কোন কিছু না খাক; তারা খাবার কিম্বা জল না খাক। মানুষ ও পশু ছালার চট পরুক। প্রত্যেকে সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরকে ডাকুক আর মন্দ পথ ও সন্ত্রাসের কাজ ছেড়ে দিক। কে জানে হয়তো বা ঈশ্বর মন ফিরিয়ে তাঁর জ্বলন্ত ক্রোধ থেকে ফিরবেন যাতে আমরা ধ্বংস হয়ে না যাই।” তারা যা করেছিল এবং কেমন করে তাদের মন্দ পথ থেকে ফিরেছিল তা যখন ঈশ্বর দেখলেন তখন তিনি তাঁর মন ফিরালেন। তিনি যে অমংগল করবেন বলেছিলেন তা করলেন না। কিন্তু যোনা এতে ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে রেগে গেলেন। ধূলা তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্র্থনা করে বললেন, “হে সদাপ্রভু, আমি দেশে থাকতেই জানতাম যে, এই রকম হবে। সেইজন্যই তো আমি প্রথমে তর্শীশে পালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি জানতাম যে, তুমি দয়াময় ও মমতায় পূর্ণ ঈশ্বর, তুমি সহজে অসন্তুষ্ট হও না, তোমার অটল ভালবাসার সীমা নেই এবং শাস্তি দেবার ব্যাপারে মন পরিবর্তন করে থাক। এখন হে সদাপ্রভু, তুমি আমার প্রাণ নাও, কারণ আমার বেঁচে থাকবার চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল।” উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “তোমার রাগ করা কি উচিত হচ্ছে?” তখন যোনা শহরের বাইরে গিয়ে পূর্ব দিকে একটা জায়গায় চালা তৈরী করে তার ছায়ায় বসে রইলেন। শহরের কি দশা হয় তা দেখবার জন্য তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন। তখন ঈশ্বর সদাপ্রভু সেখানে একটা গাছ জন্মালেন। সেই গাছটা বড় হয়ে যোনার কষ্ট কমাবার জন্য তাঁর মাথায় ছায়া দিতে লাগল। এতে যোনা সেই গাছটার জন্য খুব খুশী হলেন। কিন্তু পরের দিন ভোরবেলা ঈশ্বর একটা পোকা পাঠালেন; গাছটা সেই পোকায় কাটলে পর সেটা শুকিয়ে গেল। যখন সূর্য উঠল তখন ঈশ্বর গরম পূবের বাতাস বহালেন; তাতে যোনার মাথায় এমন রোদ লাগল যে, তিনি প্রায় অজ্ঞান হবার মত হলেন। তখন তিনি মরতে চেয়ে বললেন, “আমার বেঁচে থাকবার চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল।” কিন্তু ঈশ্বর যোনাকে বললেন, “ঐ গাছের বিষয়ে রাগ করা কি তোমার উচিত হচ্ছে?” যোনা বললেন, “তার কারণ আছে। আমি মরণ পর্যন্ত রাগ করে থাকব।” কিন্তু সদাপ্রভু বললেন, “তুমি যদিও এই গাছটার জন্য কোন পরিশ্রম কর নি বা এটাকে বাড়িয়ে তোল নি তবুও গাছটার জন্য তোমার মমতা হয়েছে। ওটা তো এক রাতের মধ্যে গজিয়েছিল এবং এক রাতেই মরে গেল। কিন্তু নীনবীতে এক লক্ষ বিশ হাজারেরও বেশী শিশু আছে যারা জানে না কোনটা ডান হাত আর কোনটা বাঁ হাত; এছাড়া অনেক গরু-ভেড়াও আছে। তাহলে আমি কি করব? আমি কি ঐ বড় শহরের জন্য মমতা করব না?” ॥ভব যিহূদার রাজা যোথম, আহস ও হিষ্কিয়ের রাজত্বের সময়ে মোরেষৎ গ্রামের মীখার কাছে শমরিয়া ও যিরূশালেম সম্বন্ধে সদাপ্রভুর বাক্য দর্শনের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। ওহে জাতিরা, তোমরা সবাই কান দাও; হে পৃথিবী ও তার মধ্যেকার সব কিছু, শোন। প্রভু সদাপ্রভু তাঁর পবিত্র ঘর থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন। দেখ, সদাপ্রভু তাঁর বাসস্থান থেকে আসছেন; তিনি নেমে এসে পৃথিবীর উঁচু জায়গাগুলোর উপর দিয়ে যাবেন। মোম যেমন আগুনে গলে যায়, ঢালু জায়গা দিয়ে যেমন জল গড়িয়ে যায় তেমনি করে তাঁর পায়ের তলায় পাহাড়-পর্বত গলে যাবে, উপত্যকাগুলো ফেটে যাবে। যাকোবের পাপের জন্য, অর্থাৎ ইস্রায়েলের বংশের অন্যায়ের জন্যই এই সব হবে। যাকোবের পাপের জন্য দায়ী কে? শমরিয়া কি নয়? যিহূদার পূজার উঁচু স্থানের জন্য দায়ী কে? যিরূশালেম কি নয়? সেইজন্য সদাপ্রভু বলছেন, “শমরিয়াকে আমি খোলা মাঠের ধ্বংসের স্তূপ করব, আর সেটা হবে আংগুর গাছ লাগাবার জায়গা। আমি তার পাথরগুলো উপত্যকায় ফেলে দেব এবং তার ভিত্তি খোলা রাখব। তার সব প্রতিমা টুকরা টুকরা করে ভেংগে ফেলা হবে; তার মন্দির-বেশ্যাদের সমস্ত আয় আগুন দিয়ে পোড়ানো হবে; তার সব মূর্তিগুলো আমি ধ্বংস করে ফেলব। সে তো বেশ্যাগিরির পাওনা হিসাবে এই সব পেয়েছে তাই সেইগুলো আবার বেশ্যাগিরির জন্যই ব্যবহার করা হবে।” এইজন্য আমি কান্নাকাটি ও বিলাপ করব; আমি খালি পায়ে উলংগ হয়ে ঘুরে বেড়াব। আমি শিয়ালের ও পেঁচার ডাকের মত করে বিলাপ করব। এর কারণ শমরিয়ার ক্ষত আর ভাল হবে না; তা যিহূদার কাছে এসে গেছে। তা আমার লোকদের ফটক পর্যন্ত, এমন কি, যিরূশালেম পর্যন্ত পৌঁছেছে। তোমরা গাতে এই কথা জানায়ো না, একটুও কান্নাকাটি কোরো না। তোমরা বৈৎ-লি-অফ্রাতে ধুলায় গড়াগড়ি দাও। হে শাফীরে বাসকারী লোকেরা, তোমরা উলংগ ও লজ্জিত হয়ে চলে যাও। যারা সাননে বাস করে তারা বের হয়ে আসতে পারবে না। বৈৎ-এৎসল বিলাপ করছে; সে আর তোমাদের পক্ষে দাঁড়াবে না। যারা মারোতে বাস করে তারা ব্যাকুল হয়ে রেহাই পাবার জন্য অপেক্ষা করছে, কারণ সদাপ্রভুর কাছ থেকে বিপদ এসে গেছে; এমন কি, তা যিরূশালেমের ফটক পর্যন্ত পৌঁছেছে। হে লাখীশে বাসকারী লোকেরা, তোমরা রথের সংগে ঘোড়াগুলো জুড়ে দাও। ইস্রায়েলের অন্যায় প্রথমে তোমাদের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল বলে সিয়োন-কন্যাকে তোমরাই পাপের পথে নিয়ে গিয়েছিলে। সেইজন্য তোমরা মোরেষৎ-গাত্‌কে বিদায়-উপহার দেবে। ইস্রায়েলের রাজারা অক্‌ষীব শহরের উপর নির্ভর করতে পারবে না। হে মারেশায় বাসকারী লোকেরা, সদাপ্রভু তোমাদের বিরুদ্ধে একজন দখলকারীকে পাঠাবেন। ইস্রায়েলের সমস্ত গৌরব অদুল্লমে চলে যাবে। যে ছেলেমেয়েদের নিয়ে তোমরা আনন্দিত হতে তাদের জন্য শোক করতে গিয়ে তোমাদের মাথা কামিয়ে ফেল; শকুনের মাথার মত তোমরা মাথা টাক করে ফেল, কারণ তারা বন্দী হয়ে তোমাদের কাছ থেকে দূরে যাবে। ধিক্‌ তাদের, যারা অন্যায়ের পরিকল্পনা করে, যারা নিজেদের বিছানায় মন্দের ফন্দি আঁটে। সকাল হলেই তারা সেইমত কাজ করে, কারণ তা করবার ক্ষমতা তাদের হাতে আছে। তারা ক্ষেত-খামার আর ঘর-বাড়ীর প্রতি লোভ করে তা কেড়ে নেয়। তারা মানুষকে ঠকিয়ে তার ঘর-বাড়ী ও তার জায়গা-জমি নিয়ে নেয়। সেইজন্য সদাপ্রভু বলছেন, “তোমাদের বিরুদ্ধে আমি অমংগলের পরিকল্পনা করছি যা থেকে তোমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে না। তোমরা আর গর্ব করে চলবে না, কারণ সময়টা হবে বিপদের। সেই দিন ভীষণ বিলাপ হবে এবং এই দুঃখের গান গাওয়া হবে: আমরা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছি; আমাদের জাতির সম্পত্তি নিয়ে নেওয়া হয়েছে। সদাপ্রভু তা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছেন। আমাদের ক্ষেত-খামার তিনি বিশ্বাসঘাতকদের দিয়ে দিয়েছেন।” কাজেই তোমাদের মধ্যে কেউই সদাপ্রভুর লোকদের সংগে জমির ভাগ পাবে না। তোমাদের নবীরা আমাদের বলে, “এই সব কথা বোলো না, এই সব বিষয়ে কোন কথা বোলো না, কারণ আমাদের উপরে অসম্মান আসবে না।” হে যাকোবের বংশ, তোমাদের এই কথা বলা উচিত নয়, “সদাপ্রভুর আত্মা অধৈর্য হন নি; তিনি এই সব কাজ করেন না।” সদাপ্রভু বলছেন, “যারা ন্যায় পথে চলে কেবল তাদেরই উপর আমার বাক্য মংগল আনে। আজকাল আমার লোকেরা শত্রুর মত হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা লোকদের মত যারা নিশ্চিন্তে পথ চলছে তাদের গা থেকে তোমরা কাপড় খুলে নিচ্ছ। আমার লোকদের স্ত্রীদের তোমরা তাদের প্রিয় বাড়ী-ঘর থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছ। আমার আশীর্বাদ থেকে তাদের ছেলেমেয়েদের তোমরা চিরকালের জন্য বঞ্চিত করছ। তোমরা ওঠো, চলে যাও, এটা তো তোমাদের বিশ্রামের স্থান নয়; কারণ তোমরা দেশটাকে অশুচি করেছ, সেইজন্যই তা ভীষণভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি কোন মিথ্যাবাদী ও ঠগ এসে বলে, ‘আমি বলছি যে, তোমাদের প্রচুর মদ ও আংগুর-রস হবে,’ তবে সে-ই হবে এই জাতির জন্য উপযুক্ত নবী!” সদাপ্রভু বলছেন, “হে যাকোব, আমি নিশ্চয়ই তোমাদের সবাইকে জড়ো করব; আমি অবশ্যই ইস্রায়েলের বেঁচে থাকা লোকদের একত্র করব। বস্রার ভেড়াগুলোর মত করে, খোঁয়াড়ে থাকা ভেড়ার পালের মত করে আমি তাদের একত্র করব; দেশটা আবার লোকে ভরে যাবে।” বন্দীদশা থেকে ফিরে আসবার জন্য যিনি পথ খুলে দেবেন তিনি তাদের আগে আগে যাবেন; তারা ফটক ভেংগে বের হয়ে আসবে। সদাপ্রভু, যিনি তাদের রাজা, তিনি তাদের আগে আগে যাবেন। আমি মীখা বলছি, হে যাকোবের নেতারা, অর্থাৎ ইস্রায়েলের বংশের শাসনকর্তারা, আপনারা শুনুন। আপনাদের কি ন্যায়বিচার সম্বন্ধে জানা উচিত নয়? আপনারা তো ভাল কাজকে ঘৃণা করে মন্দ কাজকে ভালবাসেন; আপনারা আমার লোকদের গা থেকে চামড়া আর হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিচ্ছেন; আপনারা আমার লোকদের মাংস খাচ্ছেন, তাদের চামড়া তুলে ফেলে হাড়গুলো টুকরা টুকরা করে ভাঙ্গছেন; আপনারা হাঁড়ির মধ্যেকার মাংসের মত করে তাদের টুকরা টুকরা করে কাটছেন। সময় আসছে যখন আপনারা সদাপ্রভুর কাছে কান্নাকাটি করবেন, কিন্তু তিনি আপনাদের উত্তর দেবেন না। সেই সময় তিনি আপনাদের দিক থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে রাখবেন, কারণ আপনারা মন্দ কাজ করেছেন। যে সব নবীরা আমার লোকদের বিপথে নিয়ে গেছে তাদের যদি কেউ খেতে দেয় তবে তারা “শান্তি” বলে ঘোষণা করে; কিন্তু যদি খেতে না দেয় তবে তারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য প্রস্তুত হয়। সেইজন্য সদাপ্রভু সেই নবীদের বলছেন, “তোমাদের জন্য রাত আসছে, তোমরা কোন দর্শন পাবে না; তোমাদের জন্য অন্ধকার আসছে, তোমরা গণনা করে কিছু বলতে পারবে না। তোমাদের জন্য সূর্য ডুবে যাবে এবং দিন অন্ধকার হয়ে যাবে।” তাতে সেই দর্শনকারীরা লজ্জিত হবে এবং গণকেরা অসম্মানিত হবে। তারা সবাই মুখ ঢাকবে, কারণ ঈশ্বর কোন উত্তর দেবেন না। কিন্তু আমি যাকোবকে তার অন্যায়, ইস্রায়েলকে তার পাপ সম্বন্ধে জানাবার জন্য সদাপ্রভুর আত্মার দেওয়া শক্তিতে, ন্যায়বিচারে ও সাহসে পূর্ণ হয়েছি। হে যাকোবের বংশের নেতারা, ইস্রায়েলের বংশের শাসনকর্তারা, শুনুন। আপনারা তো ন্যায়বিচার তুচ্ছ করছেন এবং যা সোজা তা সবই বাঁকা করে তুলছেন। আপনারা রক্ত দিয়ে সিয়োনকে, অন্যায় দিয়ে যিরূশালেমকে গড়ে তুলছেন। সেখানকার নেতারা ঘুষ খেয়ে বিচার করে, পুরোহিতেরা বেতন নিয়ে শিক্ষা দেয় এবং নবীরা টাকা নিয়ে ভাগ্য গণনা করে। আর তবুও তারা সদাপ্রভুর সাহায্যের আশা করে বলে, “সদাপ্রভু কি আমাদের মধ্যে নেই? আমাদের উপর কোন বিপদ আসবে না।” কাজেই আপনাদের জন্য সিয়োনকে ক্ষেতের মত করে চাষ করা হবে, যিরূশালেম হবে ধ্বংসের স্তূপ, আর উপাসনা-ঘরের পাহাড়টা ঘন ঝোপ-ঝাড়ে ঢাকা পড়বে। শেষকালে সমস্ত পাহাড়ের মধ্যে সেই পাহাড়টাকেই সবচেয়ে উঁচুতে তোলা হবে ॥য়5 যেখানে সদাপ্রভুর ঘর আছে। ছোট ছোট পাহাড়গুলোর চেয়ে তাকে উঁচুতে তোলা হবে, আর সব জাতি স্রোতের মত তার দিকে যাবে। অনেক জাতির লোক এসে বলবে, “চল, আমরা সদাপ্রভুর পাহাড়ে উঠে যাই, চল, যাকোবের ঈশ্বরের ঘরে যাই। তিনি আমাদের তাঁর পথ সম্বন্ধে শিক্ষা দেবেন আর আমরা তাঁর পথে চলব।” তারা এই কথা বলবে, কারণ সিয়োন থেকে নির্দেশ দেওয়া হবে আর যিরূশালেম থেকে বের হবে সদাপ্রভুর বাক্য। তিনি জাতিদের মধ্যে বিচার করে দেবেন এবং দূরের শক্তিশালী লোকদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করবেন। তারা তাদের তলোয়ার ভেংগে লাংগলের ফাল গড়বে আর বর্শা ভেংগে গড়বে ডাল ছাঁটবার ছুরি। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে আর তলোয়ার উঠাবে না; তারা আর যুদ্ধ করতে শিখবে না। প্রত্যেকে নিজের নিজের আংগুর লতার ও ডুমুর গাছের নীচে বসবে এবং কেউ তাদের ভয় দেখাবে না, কারণ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই সেই কথা বলেছেন। সব জাতিরা তাদের দেব-দেবতার শক্তিতে কাজ করলেও আমরা চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর শক্তিতে কাজ করব। সদাপ্রভু বলছেন, “সেই দিন আমি খোঁড়াদের একত্র করব; যারা বন্দী হয়ে অন্য দেশে আছে, যাদের আমি দুঃখ দিয়েছি তাদের আমি এক জায়গায় জড়ো করব। আমি খোঁড়াদের বাঁচিয়ে রাখব এবং তাড়িয়ে দেওয়া লোকদের করব একটা শক্তিশালী জাতি। আমি সদাপ্রভু সেই দিন থেকে চিরকাল সিয়োন পাহাড়ে তাদের উপরে রাজত্ব করব। হে ভেড়ার রাখালের পাহারা-ঘর, হে সিয়োন-কন্যার দুর্গ, আগের রাজ্য তোমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে; রাজা আবার যিরূশালেমে রাজত্ব করবে।” কেন তুমি এখন জোরে জোরে কাঁদছ? তোমার কি রাজা নেই? তোমার পরামর্শদাতা কি মরে গেছে? সেইজন্য কি প্রসব-ব্যথায় কষ্ট পাওয়া স্ত্রীলোকের মত ব্যথা তোমাকে ধরেছে? হে সিয়োন-কন্যা, প্রসব-ব্যথায় কষ্ট পাওয়া স্ত্রীলোকের মত তুমি ব্যথায় মোচড়াও, কারণ এখন তোমাকে শহর ছেড়ে খোলা মাঠে গিয়ে থাকতে হবে। তুমি বাবিলে যাবে; সেখানে তুমি উদ্ধার পাবে। সদাপ্রভু সেখানেই তোমার শত্রুদের হাত থেকে তোমাকে মুক্ত করবেন। কিন্তু এখন অনেক জাতি তোমার বিরুদ্ধে জড়ো হয়েছে। তারা বলছে, “তাকে অশুচি করা হোক; এস, আমরা সিয়োনের দুর্দশা দেখে আনন্দ করি।” কিন্তু তারা সদাপ্রভুর পরিকল্পনার কথা জানে না; তারা বুঝতে পারে না যে, তিনি শস্যের আঁটির মত খামারে মাড়াই করবার জন্য তাদের জড়ো করেছেন। সদাপ্রভু বলছেন, “হে সিয়োন-কন্যা, তুমি উঠে শস্য মাড়াই কর; আমি তোমাকে লোহার শিং আর ব্রোঞ্জের খুর দেব যাতে তুমি অনেক জাতিকে চুরমার করতে পার। তুমি তাদের অন্যায়ভাবে লাভ করা জিনিসপত্র ও ধন-সম্পদ আমার উদ্দেশে, সমস্ত পৃথিবীর প্রভুর উদ্দেশে ধ্বংসের অভিশাপের অধীন হিসাবে দিয়ে দেবে।” ওহে সৈন্যদলে ঘেরাও হওয়া শহর, তোমার সৈন্যদল সাজাও, কারণ আমাদের বিরুদ্ধে একটা ঘেরাও হচ্ছে। শত্রুরা ইস্রায়েলের শাসনকর্তার গালে লাঠি দিয়ে আঘাত করছে। সদাপ্রভু বলছেন, “কিন্তু, হে বৈৎলেহম-ইফ্রাথা, যদিও তুমি যিহূদার হাজার হাজার গ্রামগুলোর মধ্যে ছোট, তবুও তোমার মধ্য থেকে আমার পক্ষে এমন একজন আসবেন যিনি হবেন ইস্রায়েলের শাসনকর্তা, যাঁর শুরু পুরানো দিন থেকে, অনন্তকাল থেকে।” সেই সময় না আসা পর্যন্ত সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে ত্যাগ করবেন। প্রসব-যন্ত্রণা ভোগকারিনী তার সন্তানের জন্ম দেবার পরে সেই শাসনকর্তার যে ভাইয়েরা বন্দীদশায় আছে তারা ইস্রায়েলীয়দের সংগে যোগ দেবার জন্য ফিরে আসবে। সেই শাসনকর্তা এসে সদাপ্রভুর শক্তিতে, তাঁর ঈশ্বর সদাপ্রভুর মহিমায় রাখালের মত তাঁর লোকদের চালাবেন। তারা নিরাপদে বাস করবে, কারণ তিনি যে মহান সেই কথা তখন জগতের শেষ সীমা পর্যন্ত সবাই স্বীকার করবে; আর তিনিই শান্তি আনবেন। আসিরিয়েরা যখন আমাদের দেশ আক্রমণ করবে এবং আমাদের দুর্গগুলো পায়ে মাড়াবে তখন আমরা তার বিরুদ্ধে সাতজন পালককে, এমন কি, আটজন নেতাকে দাঁড় করাব। তারা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আসিরিয়া দেশ অর্থাৎ, নিম্রোদের দেশ শাসন করবে। আসিরিয়েরা আমাদের দেশ আক্রমণ করলে এবং আমাদের সীমানা পায়ে মাড়ালে তাদের হাত থেকে আমাদের শাসনকর্তাই আমাদের উদ্ধার করবেন। অনেক জাতির মধ্যে যাকোবের বেঁচে থাকা লোকেরা হবে সদাপ্রভুর কাছ থেকে আসা শিশিরের মত, ঘাসের উপরে পড়া বৃষ্টির মত যা মানুষের আদেশে পড়ে না বা তার উপর নির্ভর করে না। অনেক জাতির মধ্যে যাকোবের বেঁচে থাকা লোকেরা হবে বুনো জন্তুদের মধ্যে সিংহের মত, ভেড়ার পালের মধ্যে যুব সিংহের মত; সেই সিংহ যখন ভেড়াগুলোর মধ্য দিয়ে যায় তখন তাদের ধরে টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলে; কেউ তাদের উদ্ধার করতে পারে না। যাকোবের লোকেরা শত্রুদের উপরে জয়লাভ করবে এবং তাদের সব শত্রু ধ্বংস হয়ে যাবে। সদাপ্রভু বলছেন, “হে ইস্রায়েল, সেই সময় আমি তোমার মধ্য থেকে তোমার ঘোড়াগুলো শেষ করে ফেলব এবং তোমার রথগুলো ধ্বংস করে দেব। তোমার দেশের শহরগুলো আমি ধ্বংস করে দেব আর তোমার সব দুর্গগুলো ভেংগে ফেলব। আমি তোমার যাদুবিদ্যা নষ্ট করব; মায়াবিদ্যা ব্যবহারকারীরা আর তোমার মধ্যে থাকবে না। তোমার মধ্য থেকে আমি খোদাই করা মূর্তিগুলো এবং তোমার পূজার সব খুঁটি নষ্ট করে ফেলব; তোমার হাতে গড়া জিনিসকে তুমি আর পূজা করবে না। আমি তোমার মধ্য থেকে সব আশেরা-খুঁটি উপ্‌ড়ে ফেলব এবং তোমার শহরগুলো ভেংগে ফেলব। যে জাতিরা আমার বাধ্য হয় নি আমি ভীষণ ক্রোধে তাদের উপর প্রতিশোধ নেব।” হে ইস্রায়েল, সদাপ্রভুর কথা শোন। তিনি বলছেন, “হে মীখা, তুমি উঠে দাঁড়িয়ে পাহাড়-পর্বতের সামনে তোমার মামলা উপস্থিত কর; তোমার যা বলবার আছে তা পাহাড়গুলো শুনুক।” হে পাহাড়-পর্বত, তোমরা সদাপ্রভুর অভিযোগ শোন; হে পৃথিবীর চিরস্থায়ী ভিত্তিগুলো, তোমরাও শোন। এর কারণ তাঁর লোকদের বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর কিছু বলবার আছে; তিনি ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে একটা মামলা রুজু করেছেন। সদাপ্রভু বলছেন, “হে আমার লোকেরা, আমি তোমাদের কি করেছি? কিভাবে আমি তোমাদের কষ্ট দিয়েছি? আমাকে উত্তর দাও। আমি মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছি, দাসের অবস্থা থেকে তোমাদের মুক্ত করেছি। তোমাদের সাহায্যের জন্য মোশি, হারোণ ও মরিয়মকে পাঠিয়েছি। হে আমার লোকেরা, মোয়াবের রাজা বালাক যে পরিকল্পনা করেছিল এবং বিয়োরের ছেলে বিলিয়ম কি উত্তর দিয়েছিল তা মনে করে দেখ। শিটীম থেকে গিল্‌গল পর্যন্ত তোমাদের যাত্রার কথা মনে কর যাতে তোমরা আমার করা উদ্ধারের কাজগুলো জানতে পার।” আমি কি নিয়ে সদাপ্রভুর সামনে যাব এবং স্বর্গের ঈশ্বরের উপাসনা করব? আমি কি পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য এক বছর বয়সের কতগুলো বাছুর নিয়ে তাঁর সামনে যাব? সদাপ্রভু কি হাজার হাজার ভেড়া কিম্বা দশ হাজার নদী-ভরা জলপাই তেলে খুশী হবেন? আমার অন্যায়ের জন্য কি আমি আমার প্রথম সন্তান, আমার পাপের জন্য আমার শরীরের ফল উৎসর্গ করব? ওহে মানুষ, যা ভাল তা তো তিনি তোমাকে দেখিয়েছেন। ন্যায় কাজ করা, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে ভালবাসা আর তোমার ঈশ্বরের সংগে নম্রভাবে যোগাযোগ-সম্বন্ধ রক্ষা করা ছাড়া সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিছু চান না। জ্ঞানী লোকেরা সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে। ঐ শোন, সদাপ্রভু শহরের লোকদের ডাকছেন। তিনি বলছেন, “তোমরা শাস্তির লাঠির দিকে ও যিনি সেটাকে নিযুক্ত করেছেন তাঁর দিকে মনোযোগ দাও। দুষ্ট লোকদের ঘরে অসৎ উপায়ে পাওয়া ধন-সম্পদ ও ঠকাবার মাপের টুকরি আছে যা আমি ঘৃণা করি। যে লোকের কাছে ঠকাবার দাঁড়িপাল্লা ও ওজনে কম বাট্‌খারা আছে তাকে কি আমি নির্দোষ বলে মনে করব? তোমাদের ধনী লোকেরা অত্যাচারী, তোমরা মিথ্যাবাদী এবং তোমাদের মুখ ছলনার কথা বলে। কাজেই আমি তোমাদের পাপের জন্য ভীষণভাবে শাস্তি দেব ও তোমাদের ধ্বংস করব। তোমরা খেয়ে তৃপ্ত হবে না; তোমাদের পেটে খিদে থেকে যাবে। তোমরা জিনিসপত্র এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবে কিন্তু কিছুই রক্ষা করতে পারবে না, কারণ তোমরা যদি বা কিছু রক্ষা কর তবে তা আমি যুদ্ধ এনে ধ্বংস করব। তোমরা বীজ বুনবে কিন্তু ফসল কাটতে পারবে না; তোমরা জলপাই মাড়াই করবে কিন্তু নিজে তার তেল ব্যবহার করতে পারবে না; তোমরা আংগুর মাড়াই করেও তার রস খেতে পারবে না। তোমরা অম্রির নিয়ম-কানুুন পালন করেছ ও আহাব-বংশের সব অভ্যাসমত চলেছ। তোমরা তাদের পরামর্শ অনুসারে চলেছ। সেইজন্য আমি ধ্বংসের হাতে ও ঠাট্টা-বিদ্রূপের হাতে তোমাদের তুলে দেব; আমার লোক হিসাবে তোমাদের অসম্মান ভোগ করতে হবে।” কি বিপদ আমার! আমি হয়েছি তারই মত যে সমস্ত ফল পেড়ে নেবার পরে আংগুর তুলতে ও অন্যান্য ফল পাড়তে যায়, কিন্তু সেখানে খাবার জন্য কোন আংগুরের থোকা নেই, কোন প্রথমে পাকা ডুমুরও নেই যা আমার প্রাণে চায়। দেশ থেকে ঈশ্বরভক্তদের মুছে ফেলা হয়েছে; সৎ লোক একজনও নেই। রক্তপাত করবার জন্য সবাই ওৎ পেতে আছে; প্রত্যেকে তার নিজের জালে অন্যকে আট্‌কাতে চায়। অন্যায় কাজ করতে তাদের দু’হাতই পাকা। নেতারা উপহার দাবি করে, বিচারকেরা ঘুষ খায়, বড় লোকেরা যা চায় তা জানিয়ে দেয়; তারা সবাই একসংগে ষড়যন্ত্র করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল লোকেরা কাঁটাঝোপের মত, সবচেয়ে সৎ লোকেরা কাঁটা গাছের বেড়ার চেয়েও খারাপ। তোমাদের পাহারাদারদের ঘোষণা করা দিন, তোমাদের শাস্তির দিন এসে পড়েছে। এখনই তোমাদের বুদ্ধিহারা হওয়ার সময়। কোন প্রতিবেশীর উপর ভরসা কোরো না, কোন বন্ধুর উপর বিশ্বাস স্থাপন কোরো না; এমন কি, যে স্ত্রী তোমার বুকের মধ্যে শুয়ে থাকে তার কাছে কথা বলতে সাবধান হোয়ো, কারণ ছেলে বাবাকে তুচ্ছ করবে, মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে ও ছেলের বৌ শ্বাশুড়ীর বিরুদ্ধে উঠবে। একজন মানুষের নিজের পরিবারের লোকেরাই তার শত্রু হবে। কিন্তু আমি সদাপ্রভুর উপর আশা রাখব, আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের জন্য অপেক্ষা করব। আমার ঈশ্বর আমার কথা শুনবেন। হে আমাদের শত্রু, আমাদের দুর্দশা দেখে আনন্দ কোরো না। আমরা পড়ে গেলেও আবার উঠব। অন্ধকারে বসে থাকলেও সদাপ্রভু হবেন আমাদের আলো। এখন আমরা সদাপ্রভুর ক্রোধ বহন করছি, কারণ আমরা তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করেছি, কিন্তু শেষে তিনি আমাদের পক্ষে কথা বলে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি আমাদের আলোতে বের করে আনবেন আর আমরা তাঁর ন্যায়বিচার দেখতে পাব। তখন আমাদের শত্রুরা তা দেখে ভীষণ লজ্জিত হবে। তারা তো আমাদের বলত, “তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু কোথায়?” কিন্তু আমাদের চোখ তাদের পতন দেখবে; এমন কি, রাস্তার কাদার মত তাদের পায়ে মাড়ানো হবে। হে যিরূশালেম, সেই সময় তোমার দেয়াল গেঁথে তোলা হবে, তোমার সীমানা বাড়ানো হবে। সেই সময় আসিরিয়া ও মিসরের শহরগুলো থেকে লোকেরা তোমার কাছে আসবে; এমন কি, মিসর থেকে ইউফ্রেটিস নদী, এক সাগর থেকে আর এক সাগর ও এক পাহাড় থেকে আর এক পাহাড় পর্যন্ত লোকেরা আসবে। পৃথিবীতে বাসকারীদের দুষ্টতার ফলে পৃথিবী জনশূন্য হবে। হে সদাপ্রভু, তুমি মুগুর হাতে তোমার লোকদের রাখালের মত চরাও। তারা তো তোমার নিজের পাল। তাদের চারদিকে উর্বর চারণ ভূমি থাকলেও তারা একা মরু-এলাকায় বাস করছে। অনেক দিন আগে যেমন চরত তেমনি করে তারা যেন বাশন ও গিলিয়দে চরে বেড়াতে পারে। মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার দিনগুলোর মত করে তুমি আমাদের আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ দেখাও। জাতিরা শক্তিশালী হলেও তোমার কাজ দেখে লজ্জিত হোক। তারা মুখে হাত দিক আর কান বন্ধ করে রাখুক। তারা সাপ ও অন্যান্য বুকে-হাঁটা প্রাণীদের মত ধুলা চাটুক। তাদের দুর্গ থেকে তারা কাঁপতে কাঁপতে তোমার কাছে, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বের হয়ে আসুক এবং তোমাকে ভয় করুক। তোমার মত ঈশ্বর আর কেউ নেই যিনি তাঁর বেঁচে থাকা লোকদের পাপ ও অন্যায় ক্ষমা করে দেন। তুমি চিরকাল ক্রোধ পুষে রাখ না বরং তোমার অটল ভালবাসা দেখাতে আনন্দ পাও। তুমি আবার আমাদের উপর মমতা করবে; তুমি আমাদের সব পাপ পায়ের তলায় মাড়াবে এবং আমাদের সব অন্যায় সাগরের গভীর জলে ফেলে দেবে। অনেক অনেক দিন আগে তুমি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে যেমন শপথ করেছিলে তেমনিভাবেই তুমি অব্রাহাম ও যাকোবের বংশের কাছে বিশ্বস্ত থাকবে এবং তোমার অটল ভালবাসা দেখাবে। ॥ভব নীনবী সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য। ইল্‌কোশ গ্রামের নহূম যে দর্শন পেয়েছিলেন তা এখানে লেখা আছে। সদাপ্রভু এমন ঈশ্বর যিনি তাঁর পাওনা ভক্তি চান ও প্রতিফল দেন; সদাপ্রভু প্রতিশোধ নেন ও তিনি ক্রোধে পরিপূর্ণ। সদাপ্রভু তাঁর বিপক্ষদের উপরে প্রতিশোধ নেন এবং তাঁর শত্রুদের জন্য তাঁর ক্রোধ জমা করে রাখেন। সদাপ্রভু সহজে অসন্তুষ্ট হন না এবং তিনি শক্তিতে মহান; দোষীকে তিনি শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেন না। তাঁর পথ ঘূর্ণিবাতাস ও ঝড়ের মধ্যে থাকে, আর মেঘ হল তাঁর পায়ের ধুলা। তিনি সমুদ্রকে ধমক দিয়ে শুকিয়ে ফেলেন; সমস্ত নদীগুলোকে তিনি জলশূন্য করে দেন। বাশন আর কর্মিল শুকিয়ে যায় আর লেবাননের সব ফুল ম্লান হয়ে যায়। বড় বড় পাহাড় তাঁর সামনে কাঁপে আর ছোট ছোট পাহাড়গুলো গলে যায়। তাঁর উপস্থিতিতে পৃথিবী ও তার মধ্যে বাসকারী সকলে কাঁপে। তাঁর অসন্তোষের সামনে কে টিকে থাকতে পারে? কে সহ্য করতে পারে তাঁর ভয়ংকর ক্রোধ? তাঁর ক্রোধ আগুনের মত জ্বলে; তাঁর সামনে বড় বড় পাথর টুকরা টুকরা হয়ে যায়। সদাপ্রভু মংগলময়, কষ্টের সময়ের আশ্রয়স্থান। যারা তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয় তিনি তাদের দেখাশোনা করেন। কিন্তু তিনি ডুবিয়ে দেওয়া বন্যা দিয়ে নীনবী শহর একেবারে মুছে ফেলবেন; তাঁর বিপক্ষদের তিনি অন্ধকারে তাড়া করবেন। হে নীনবীর লোকেরা, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তোমরা যে কোন ষড়যন্ত্র কর না কেন তা তিনি বিফল করে দেবেন; তোমরা কাউকে আর কষ্ট দিতে পারবে না। তোমরা কাঁটার মধ্যে জড়িয়ে যাবে এবং মদ খেয়ে মাতাল হবে; তোমরা নাড়ার মত পুড়ে যাবে। তোমাদের মধ্য থেকে এমন একজন বের হয়ে এসেছে যে সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে কুমতলব করছে ও মন্দের পরামর্শ দিচ্ছে। সদাপ্রভু বলছেন, “হে যিহূদা, যদিও আসিরিয়েরা শক্তিতে পূর্ণ এবং অসংখ্য তবুও তাদের মেরে ফেলা হবে। আমি তোমাকে দুঃখ দিয়েছি সত্যি, কিন্তু আর দুঃখ দেব না। এখন আমি তোমার কাঁধ থেকে তাদের জোয়াল ভেংগে দেব এবং তোমার বাঁধন ছিঁড়ে ফেলব।” হে নীনবী, সদাপ্রভু তোমার বিষয়ে বলছেন, “তোমার নাম রক্ষা করবার জন্য তোমার মধ্যে কোন লোক থাকবে না। তোমার দেব-দেবতার মন্দিরে যে সব প্রতিমা ও মূর্তি রয়েছে সেগুলো আমি ধ্বংস করে ফেলব। তুমি অপদার্থ বলে আমি তোমার কবর প্রস্তুত করব।” যে লোক সুখবর নিয়ে আসে ও শান্তি ঘোষণা করে, ঐ দেখ, পাহাড়-পর্বতের উপরে তার পা। হে যিহূদা, তোমার পর্বগুলো পালন কর এবং মানত সব পূর্ণ কর। দুষ্টেরা আর তোমাকে আক্রমণ করবে না; তাদের একেবারে ধ্বংস করে ফেলা হবে। হে নীনবী, যে লোক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয় সে তোমার বিরুদ্ধে এগিয়ে আসছে। দুর্গের উপরে তোমার সৈন্য সাজাও, রাস্তা পাহারা দাও, কোমর বেঁধে নাও, তোমার সৈন্যদল প্রস্তুত রাখ। যদিও ধ্বংসকারীরা ইস্রায়েলকে জনশূন্য করেছে এবং তার আংগুর ক্ষেতগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে তবুও সদাপ্রভু এখন যাকোবের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের আগের জাঁকজমক ফিরিয়ে দেবেন। শত্রু-সৈন্যদের ঢাল লাল রংয়ের আর যোদ্ধাদের পরনে টক্‌টকে লাল রংয়ের পোশাক। তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে; তাদের রথগুলোর লোহা ঝক্‌মক করছে; তারা বর্শা ঘুরাচ্ছে; তাদের সব রথ রাস্তায় রাস্তায় ঝড়ের মত চলছে আর শহরের খোলা জায়গাগুলোর মধ্য দিয়ে বেপরোয়া ভাবে এদিক ওদিক যাচ্ছে। সেগুলো দেখতে জ্বলন্ত মশালের মত; সেগুলো বিদ্যুতের মত ছুটে যাচ্ছে। রাজা তাঁর সেনাপতিদের ডাকছেন; তারা পথে উছোট খেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। তারা শহরের দেয়ালের কাছে ছুটে যাচ্ছে; তারা দেয়াল ভাংগার যন্ত্র বসাচ্ছে। নদীর বাঁধের দরজাগুলো ভেংগে পড়ছে আর রাজবাড়ী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। রাণীর কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে তাঁকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁর দাসীরা ঘুঘুর ডাকের মত বিলাপ করছে এবং বুক চাপড়াচ্ছে। নীনবী একটা বাঁধ-ভাংগা পুকুরের মত যার জল বের হয়ে যাচ্ছে। সে “থাম, থাম,” বলে চিৎকার করছে কিন্তু তার লোকেরা কেউ পিছন ফিরছে না। তার রূপা লুট কর, সোনা লুট কর। এই সব জিনিস অফুরন্ত; এগুলো তার সব ধনভাণ্ডারের ধন-সম্পদ। তাকে লুট করা হচ্ছে, খালি করা হচ্ছে ও ধ্বংস করা হচ্ছে। তার লোকদের অন্তর গলে গেছে, হাঁটুতে হাঁটুতে ঠোকাঠুকি লাগছে; তাদের কোমরে আর জোর নেই, তাদের প্রত্যেকজনের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সেই সিংহদের গর্ত এখন কোথায়, যেখানে তারা তাদের বাচ্চাদের খাওয়াত, যেখানে সিংহ, সিংহী ও তাদের বাচ্চারা নির্ভয়ে থাকত? সিংহ তার বাচ্চাদের জন্য যথেষ্ট পশু মারত আর তার সিংহীদের জন্য গলা টিপে মারত অনেক পশু; সে তার মেরে ফেলা পশু দিয়ে তার বাসস্থান আর ছিঁড়ে ফেলা পশু দিয়ে তার গর্ত ভরত। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “হে নীনবী, আমি তোমার বিরুদ্ধে; আমি তোমার রথগুলো পুড়িয়ে ফেলব, আর তলোয়ার তোমার যুব সিংহদের গ্রাস করবে। আমি তোমার শিকারের জন্য কোন কিছুই এই পৃথিবীতে ফেলে রাখব না। তোমার সংবাদদাতাদের গলার স্বর আর শোনা যাবে না।” ধিক্‌, সেই রক্তপাতের শহর, যেটা মিথ্যা ও লুটের জিনিষে ভরা, যেখানে সব সময় মানুষ-শিকার চলছে। শোন, চাবুকের শব্দ, চাকার ঘড়ঘড় শব্দ; সেখানে ঘোড়া লাফ দিয়ে দিয়ে চলছে; রথ বেপরোয়া ভাবে চলছে; ঘোড়সওয়ারেরা আক্রমণ করছে, তলোয়ার চম্‌কাচ্ছে, বর্শা চক্‌ চক্‌ করছে। দেখ, অনেক আহত লোক আর মৃতদেহের ঢিবি, অসংখ্য মৃতদেহ, লোকে মৃতদেহের উপরে উছোট খাচ্ছে। এই সবই হচ্ছে সেই বেশ্যার অনেক বেশ্যাগিরির জন্য; সে আকর্ষনীয়া এবং নানারকম যাদুর কর্ত্রী। তার বেশ্যার কাজ দিয়ে সে জাতিদের এবং যাদুবিদ্যা দিয়ে লোকদের বন্দী করে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “হে নীনবী, আমি তোমার বিরুদ্ধে; আমি মুখ পর্যন্ত তোমার কাপড় উঠাব। তোমার উলংগতা আমি জাতিদের দেখাব আর রাজ্যগুলোকে দেখাব তোমার লজ্জা। আমি তোমার উপর আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলব, তোমাকে ঘৃণার চোখে দেখব এবং তোমাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র করব। লোকে তোমাকে দেখে মুখ ফিরাবে এবং বলবে, ‘নীনবী ধ্বংস হয়ে গেছে, কে তার জন্য বিলাপ করবে?’ আমি তোমার জন্য কোথায় সান্ত্বনাকারী খুঁজে পাব?” হে নীনবী, তুমি কি নো-আমোনের চেয়ে ভাল? সে তো নীল নদীর ধারে ছিল আর তার চারপাশ ঘিরে ছিল জল। নদী ছিল তার রক্ষার দেয়াল। কূশ আর মিসর তাকে সীমাহীন শক্তি যোগাত; তার বন্ধুদের মধ্যে ছিল পূট ও লিবিয়া। তবুও তার লোকদের বন্দী করে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকটি রাস্তার মোড়ে তার শিশুদের আছাড় মারা হয়েছিল। তার গণ্যমান্য লোকদের জন্য গুলিবাঁট করে তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হে নীনবী, তুমিও মাতাল হয়ে ঢলে পড়বে; তুমি শত্রুদের কাছ থেকে লুকাবার জন্য আশ্রয় খুঁজবে। তোমার সমস্ত দুর্গগুলো পাকা ফলে ভরা ডুমুর গাছের মত; যে কেউ সেগুলো নাড়াবে ডুমুরগুলো তারই মুখে পড়বে। তোমার সৈন্যেরা তো সবাই স্ত্রীলোকের মত। তোমার দেশের ফটকগুলো তোমার শত্রুদের সামনে একেবারে খোলা রয়েছে; আগুন সেগুলোর আগল পুড়িয়ে ফেলেছে। ঘেরাওয়ের সময়ের জন্য তুমি জল তুলে রাখ, তোমার দুর্গগুলো শক্তিশালী কর। কাদা দলাই-মলাই কর; চুন ও বালি মিশাও ও ইটের ছাঁচ তৈরী কর। সেখানে আগুন তোমাকে গ্রাস করবে; তলোয়ার তোমাকে কেটে ফেলবে এবং ধ্বংসকারী পংগপালের মত ধ্বংস করে ফেলবে। তুমি ধ্বংসকারী ও ঝাঁকবাঁধা পংগপালের মত সংখ্যায় বেড়ে ওঠো। তোমার ব্যবসায়ীদের সংখ্যা তুমি আকাশের তারার চেয়েও বেশী বাড়িয়েছ, কিন্তু তারা ধ্বংসকারী পংগপালের মত খোলস ছেড়ে উড়ে গেছে। তোমার পাহারাদারেরা ও কর্মচারীরা ঝাঁকবাঁধা পংগপালের ঝাঁকের মত, যারা শীতের দিনে দেয়ালের উপরে বসে থাকে কিন্তু সূর্য উঠলে পর উড়ে যায়, কোথায় যায় কেউ জানে না। হে আসিরিয়ার রাজা, তোমার নেতারা ঘুমাচ্ছে; তোমার রাজকর্মচারীরা শুয়ে আছে। তোমার লোকেরা পাহাড়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, তাদের জড়ো করবার কেউ নেই। কোন কিছুই তোমার ঘা ভাল করতে পারছে না; তোমার আঘাত সাংঘাতিক। যারা তোমার খবর শুনছে তারা প্রত্যেকেই তোমার পতনে হাততালি দিচ্ছে, কারণ তোমার অশেষ নিষ্ঠুরতা কে না ভোগ করেছে? ॥ভব নবী হবক্‌কূকের কাছে দর্শনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য প্রকাশিত হয়েছিল। হে সদাপ্রভু, আর কতকাল সাহায্যের জন্য আমি তোমাকে ডাকব আর তুমি শুনবে না? কতকাল “অত্যাচার চলছে” বলে তোমার কাছে কান্নাকাটি করব আর তুমি উদ্ধার করবে না? কেন তুমি আমাকে দুষ্টতা দেখতে বাধ্য করছ? কেন তুমি অন্যায় সহ্য করছ? আমার সামনে ধ্বংস ও অত্যাচার হচ্ছে আর অনবরত ঝগড়া ও মারামারি চলছে। আইন-কানুন শক্তিহীন হয়ে পড়েছে এবং কখনও ন্যায়বিচার হচ্ছে না। সৎ লোকদের চেয়ে দুষ্টদের ক্ষমতা বেশী বলে বিচার উল্টা হচ্ছে। উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “তোমরা জাতিদের দিকে চেয়ে দেখ, তাতে তোমরা একেবারে অবাক হবে, কারণ তোমাদের সময়কালেই আমি এমন একটা কিছু করতে যাচ্ছি যার কথা তোমাদের বললেও তোমরা বিশ্বাস করবে না। আমি বাবিলীয়দের প্রস্তুত করছি; তারা সেই নিষ্ঠুর হঠকারী জাতি, যারা অন্যদের দেশ অধিকার করবার জন্য গোটা পৃথিবীর সব জায়গায় যায়। তাদের দেখে লোকে ভীষণ ভয় পায়। তারা নিজেরাই নিজেদের আইন-কানুন তৈরী করে এবং কারও অধীনতা স্বীকার করে না। তাদের ঘোড়াগুলো চিতাবাঘের চেয়েও তাড়াতাড়ি চলে, সেগুলো সন্ধ্যাবেলার নেকড়ে বাঘের চেয়েও ভয়ংকর। তাদের ঘোড়সওয়ারেরা দূর থেকে খুব বেগে আসে; গ্রাস করবার জন্য তারা শকুনের মত তাড়াতাড়ি আসে। তারা সবাই অত্যাচার করবার জন্যই আসে। তাদের বিরাট দল এগিয়ে আসতে থাকে এবং বালির মত অসংখ্য লোকদের বন্দী করে। তারা রাজাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে আর শাসনকর্তাদের টিট্‌কারি দেয়। দুর্গগুলো দেখে তারা হাসে; তারা দেয়াল পার হবার জন্য পাথরের ঢিবি তৈরী করে সেই দুর্গগুলো দখল করে নেয়। তারপর তারা বাতাসের মত চলে যায়। সেই লোকেরা দোষী, কারণ তাদের কাছে তাদের শক্তিই হল তাদের দেবতা।” হে সদাপ্রভু, আমার ঈশ্বর, আমার পবিত্রজন, তুমি কি চিরস্থায়ী নও? আমরা একেবারে ধ্বংস হব না। হে সদাপ্রভু, আমাদের শাস্তি দেবার জন্যই তুমি বাবিলীয়দের নিযুক্ত করেছ; হে আশ্রয়-পাহাড়, তুমি আমাদের শায়েস্তা করবার জন্যই তাদের নিযুক্ত করেছ। তুমি এত খাঁটি যে, তুমি মন্দের দিকে তাকাতে পার না এবং অন্যায় সহ্য করতে পার না। তাহলে তুমি কেমন করে সেই বিশ্বাসঘাতকদের ভাল চোখে দেখছ? দুষ্টেরা যখন তাদের চেয়ে ভাল লোকদের গ্রাস করে তখন কেন তুমি চুপ করে থাক? কেন তুমি লোকদের সমুদ্রের মাছ ও বুকে-হাঁটা প্রাণীদের মত শাসনকর্তাহীন অবস্থায় রেখেছ? বাবিলীয়েরা বড়শী দিয়ে তাদের সবাইকে টেনে তোলে কিম্বা জাল দিয়ে তাদের ধরে বা টানা-জালে তাদের একত্র করে; আর তাই তারা আনন্দ করে, খুশী হয়। সেইজন্য তারা তাদের জালের উদ্দেশে পশু উৎসর্গ করে এবং টানা-জালের উদ্দেশে ধূপ জ্বালায়, কারণ তাদের জাল দিয়েই তারা অনেক লাভ করে এবং ভাল ভাল খাবার খায়। তারা কি বারে বারে তাদের জাল খালি করে দয়া না দেখিয়ে জাতিদের ধ্বংস করতেই থাকবে? আমি আমার পাহারা-স্থানে দাঁড়াব, দেয়ালের উপরে জায়গা নেব; তিনি আমাকে কি বলবেন আর আমার নালিশের কি উত্তর দেবেন তার জন্য অপেক্ষা করব। তখন উত্তরে সদাপ্রভু বললেন, “এই দর্শনের কথা লেখ এবং পাথরের ফলকের উপরে স্পষ্টভাবে খোদাই কর যাতে তা সহজে পড়া যায়, কারণ এই দর্শনের কথা পূর্ণ হবার সময় এখনও বাকী আছে, কিন্তু তা তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসছে এবং সেই দর্শন মিথ্যা প্রমাণিত হবে না। দেরি হলেও তার জন্য অপেক্ষা কর; তা ঠিক সময়ে নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। তুমি এই কথা লেখ: “অহংকারী বাবিল সৎ নয়, কিন্তু যাকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয় সে তার বিশ্বস্ততার দরুন বেঁচে থাকবে। গর্বে ভরা বাবিলের সংগে আংগুর-রস বিশ্বাসঘাতকতা করছে, তাকে অস্থির করে তুলছে। সে মৃতস্থানের মত লোভী এবং মৃত্যুর মত কখনও তৃপ্ত হয় না; সে সমস্ত জাতিকে নিজের কাছে জড়ো করে এবং তাদের বন্দী করে নিয়ে যায়। “তারা সবাই তাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে আর বলবে, ‘ধিক্‌ তাকে, যে অন্যদের জিনিস নিজের জন্য জমা করে এবং জামিনের জিনিস দিয়ে ধনী হয়। আর কত দিন এই রকম চলবে?’ তোমার পাওনাদারেরা কি একদিন হঠাৎ উঠবে না? তারা জেগে উঠে কি তোমাকে কাঁপিয়ে তুলবে না? তখন তুমি হবে তাদের কাছে লুটের মালের মত। তুমি অনেক জাতির ধন-সম্পদ লুট করেছ বলে সেই সব জাতির বেঁচে থাকা লোকেরা তোমার ধন-সম্পত্তি লুট করবে। এর কারণ হল, তুমি মানুষের রক্তপাত করেছ; তুমি নানা দেশ, শহর ও সেগুলোর মধ্যেকার সমস্ত লোকদের অত্যাচার করেছ। “জাতিরা বলবে, ‘ধিক্‌ তাকে, যে অন্যায় লাভের দ্বারা তার বাসস্থান গড়ে তোলে যাতে সে নিরাপদে থাকতে পারে এবং বিপদের হাত থেকে রক্ষা পায়।’ তুমি অনেক জাতিকে ধ্বংস করে নিজের পরিবারের উপর লজ্জা নিয়ে এসেছ এবং বাঁচবার অধিকার হারিয়ে ফেলেছ। তোমার ঘরের দেয়ালের পাথরগুলো তোমার বিরুদ্ধে নালিশ জানাবে এবং ঘরের বীমগুলো সেই কথায় সায় দেবে। “জাতিরা বলবে, ‘ধিক্‌ তাকে, যে রক্তপাতের দ্বারা শহর গড়ে এবং অন্যায় কাজের দ্বারা গ্রাম স্থাপন করে।’ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু স্থির করেছেন যে, জাতিদের পরিশ্রমের ফল আগুনে পুড়ে যাবে আর তারা মিথ্যাই নিজেদের ক্লান্ত করবে। সমুদ্র যেমন জলে ভরা থাকে তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভুর মহিমার জ্ঞানে পরিপূর্ণ হবে। “জাতিরা বলবে, ‘ধিক্‌ তাকে, যে রাগ করে তার প্রতিবেশীদের কড়া মদ খাওয়ায় এবং মাতাল করে তোলে যাতে সে তাদের উলংগতা দেখতে পায়।’ তুমি সম্মানের বদলে লজ্জায় পরিপূর্ণ হবে। এবার তোমার পালা। তুমি মদ খেয়ে উলংগ হও। সদাপ্রভুর ডান হাতের ক্রোধের পেয়ালা তোমার দিকে আসছে; অসম্মানে তোমার সম্মান ঢাকা পড়বে। লেবাননের উপর তুমি যে অত্যাচার করেছ সেই অত্যাচার সম্পূর্ণভাবে তোমার উপর আসবে এবং সেখানকার পশুদের মেরে ফেলেছ বলে এখন পশুরাই তোমাকে ভয় দেখাবে। তুমি তো মানুষের রক্তপাত করেছ এবং দেশ, শহর ও সেখানকার সমস্ত লোকদের অত্যাচার করেছ। “প্রতিমার কোন মূল্য নেই, কারণ মানুষই তো তাকে খোদাই করে তৈরী করেছে। ছাঁচে ঢালা মূর্তিরও মূল্য নেই, কারণ তা থেকে মানুষ মিথ্যা শিক্ষা পায়। যে তা তৈরী করে সে কেন তার হাতে গড়া জিনিসের উপর নির্ভর করে? সেই প্রতিমা তো কথা বলতে পারে না। জাতিরা বলবে, ‘ধিক্‌ তাকে, যে কাঠকে জীবিত হতে বলে কিম্বা প্রাণহীন পাথরকে জেগে উঠতে বলে।’ সেগুলো কি তাকে শিক্ষা দিতে পারে? সেগুলো তো সোনা আর রূপা দিয়ে মোড়ানো; সেগুলোর মধ্যে শ্বাসবায়ু নেই। কিন্তু সদাপ্রভু তাঁর পবিত্র ঘরে আছেন; সমস্ত পৃথিবী তাঁর সামনে নীরব থাকুক।” নবী হবক্‌কূকের ছন্দে বাঁধা প্রার্থনা। হে সদাপ্রভু, আমি তোমার কাজের কথা শুনে ভয় পেলাম। হে সদাপ্রভু, আমাদের কালে সেগুলো তুমি আবার কর; আমাদের সময়ে তুমি সেগুলো দেখাও। ক্রোধের সময় তুমি মমতা করবার কথা ভুলে যেয়ো না। ঈশ্বর তৈমন থেকে আসছেন, সেই পবিত্রজন পারণ পাহাড় থেকে আসছেন।[সেলা] তাঁর মহিমা আকাশ ছেয়ে যায়; পৃথিবী তাঁর প্রশংসায় পরিপূর্ণ। সূর্যের মতই তাঁর উজ্জ্বলতা; তাঁর হাত থেকে আলো ঠিক্‌রে পড়ে, সেখানে তাঁর শক্তি লুকানো আছে। তাঁর আগে আগে যাচ্ছে মড়ক; তাঁর পিছনে পিছনে চলছে রোগ। তিনি দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে নাড়া দিচ্ছেন; তিনি তাকিয়ে জাতিদের কাঁপিয়ে তুলছেন। পুরানো দিনের পাহাড়-পর্বত টুকরা টুকরা হয়ে যাচ্ছে আর পুরানো যুগের পাহাড়গুলো ভেংগে পড়ছে। অনন্তকাল থেকে তার পথের কোন পরিবর্তন নেই। আমি কূশনের লোকগুলোকে দুর্দশার মধ্যে দেখলাম, আর দেখলাম মিদিয়নের বাসিন্দারা কাঁপছে। হে সদাপ্রভু, নদীগুলোর উপর কি তুমি অসন্তুষ্ট হয়েছ? তোমার ক্রোধ কি নদীগুলোর উপর পড়েছে? তুমি কি সাগরের উপর ভীষণ বিরক্ত হয়েছ? সেজন্যই কি তুমি তোমার ঘোড়াগুলোতে আর তোমার বিজয়ী রথগুলোতে চড়ে বেড়াচ্ছ? তোমার ধনুক তুমি তুলে নিলে আর তোমার বাক্য অনুসারে শাস্তি দেবার জন্য লাঠিগুলো শপথ করেছে।[সেলা] তুমি পৃথিবীকে ভাগ করে দিলে নদনদী দিয়ে। পাহাড়-পর্বত তোমাকে দেখে কেঁপে উঠল। ভীষণ জলস্রোত বয়ে গেল; গভীর জল গর্জন করে উঠল আর তার ঢেউগুলো উপরে তুলল। তোমার উড়ন্ত তীরের ঝল্‌কানিতে আর বিদ্যুতের মত তোমার বর্শার চম্‌কানিতে আকাশে সূর্য ও চাঁদ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ক্রোধে তুমি পৃথিবীর মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেলে আর অসন্তোষে জাতিদের পায়ে মাড়ালে। তোমার লোকদের উদ্ধার করতে, তোমার অভিষিক্ত লোককে রক্ষা করতে তুমি বের হয়ে আসলে। তুমি দুষ্টদের দেশের নেতাকে আঘাত করলে, তার দেশটাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিলে।[সেলা] যখন তার যোদ্ধারা আমাদের ছড়িয়ে দেবার জন্য ভীষণভাবে আক্রমণ করল, তখন তারা তাদের মতই আনন্দ করছিল যারা গোপনে দুঃখীদের গ্রাস করে আনন্দ পায়। কিন্তু তুমি তাদের নেতাকে তারই বর্শা দিয়ে বিঁধলে। তোমার পরিচালনায় ঘোড়াগুলো সাগর মাড়িয়ে গেল আর মহাজলের রাশিকে তোলপাড় করল। সেই শব্দ শুনে আমি কাঁপতে লাগলাম, আমার ঠোঁটও কেঁপে উঠল; আমি দুর্বল হয়ে পড়লাম আর আমার পা কাঁপতে লাগল। তবুও আমি সেদিনের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব যেদিন আমাদের আক্রমণকারীদের উপর বিপদ আসবে। যদিও ডুমুর গাছে কুঁড়ি ধরবে না আর আংগুর লতায় থাকবে না কোন আংগুর, যদিও জলপাই গাছে ফল ধরবে না আর ক্ষেতে জন্মাবে না খাবারের জন্য কোন শস্য, যদিও ভেড়ার খোঁয়াড়ে থাকবে না ভেড়া আর গোয়াল ঘরে থাকবে না গরু, তবুও আমি সদাপ্রভুকে নিয়ে আনন্দ করব, আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরকে নিয়ে খুশী হব। প্রভু সদাপ্রভুই আমার শক্তি; তিনি আমার পা হরিণীর পায়ের মত করেন আর আমাকে উঁচু উঁচু জায়গায় যাবার ক্ষমতা দেন। গান পরিচালকের সংকলনের জন্য। আমার নির্দেশ অনুসারে তারের বাজনাগুলোর সংগে গাইতে হবে। আমোনের ছেলে যিহূদার রাজা যোশিয়ের রাজত্বের সময়ে কূশির ছেলে সফনিয়ের কাছে সদাপ্রভুর বাক্য প্রকাশিত হল। কূশি ছিলেন গদলিয়ের ছেলে, গদলিয় অমরিয়ের ছেলে, অমরিয় হিষ্কিয়ের ছেলে। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি পৃথিবীর বুক থেকে সব কিছুই শেষ করে দেব। মানুষ ও পশু, আকাশের পাখী ও সাগরের মাছ আমি শেষ করে দেব। আমি দুষ্টদের পতন ঘটাব। পৃথিবীর উপর থেকে আমি মানুষকে ধ্বংস করে দেব। “যিহূদার বিরুদ্ধে এবং যিরূশালেমে বাসকারী সকলের বিরুদ্ধে আমি আমার হাত উঠাব। আমি এই দেশ থেকে বাল দেবতার পূজার সমস্ত কিছু এবং প্রতিমা পূজাকারী নানান পদের পুরোহিতদের শেষ করে ফেলব। যারা আকাশের সব তারাগুলোর পূজা করবার জন্য ছাদের উপরে উঠে প্রণাম করে এবং যারা সদাপ্রভুর উদ্দেশে প্রণাম করে শপথ করবার পরে মিল্‌কম দেবতার নামেও শপথ করে তাদের আমি ধ্বংস করে ফেলব। যারা সদাপ্রভুর পিছনে চলা থেকে ফিরে গেছে এবং তাঁর ইচ্ছামত চলে না ও তাঁর ইচ্ছা জানতেও চায় না তাদের আমি শেষ করে দেব।” তোমরা প্রভু সদাপ্রভুর সামনে নীরব হও, কারণ সদাপ্রভুর দিন কাছে এসে গেছে। সদাপ্রভু একটা উৎসর্গের আয়োজন করেছেন; তিনি যাদের নিমন্ত্রণ করেছেন তাদের শুচি করেছেন। সদাপ্রভু বলছেন, “আমার সেই উৎসর্গের দিনে আমি রাজকর্মচারীদের, রাজার ছেলেদের এবং বিদেশী কাপড় পরা সমস্ত লোকদের শাস্তি দেব। যারা লাফ দিয়ে চৌকাঠ পার হয় এবং অত্যাচার ও ছলনা দ্বারা তাদের দেব-দেবতার ঘর পূর্ণ করে সেই দিনে আমি তাদের শাস্তি দেব।” সদাপ্রভু আরও বলছেন, “সেই দিন মাছ-ফটকের কাছ থেকে কান্নার শব্দ, শহরের দ্বিতীয় অংশ থেকে বিলাপের শব্দ এবং পাহাড়গুলোর দিক থেকে ভেংগে পড়বার জোর শব্দ শোনা যাবে। হে মক্তেশের বাসিন্দারা, তোমরা বিলাপ কর, কারণ তোমাদের সব ব্যবসায়ীদের ও টাকা-পয়সা লেনদেনকারীদের মুছে ফেলা হবে। সেই সময়ে আমি বাতি নিয়ে যিরূশালেমের সব জায়গায় খোঁজ করব এবং যারা নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে আর বলে, ‘সদাপ্রভু ভাল-মন্দ কিছুই করবেন না,’ তাদের আমি শাস্তি দেব। তাদের ধন-সম্পদ লুট করা হবে এবং তাদের বাড়ী-ঘর ধ্বংস হবে। তারা ঘর-বাড়ী তৈরী করবে কিন্তু তাতে বাস করতে পারবে না; তারা আংগুর ক্ষেত করবে কিন্তু আংগুর-রস খেতে পারবে না।” সদাপ্রভুর সেই মহা দিন কাছে এসে গেছে এবং তাড়াতাড়ি আসছে। ঐ শোন, সদাপ্রভুর দিনের শব্দ! তখন যোদ্ধারা যন্ত্রণায় চিৎকার করবে। সেই দিনটা হবে ক্রোধের দিন, দারুণ দুর্দশা ও মনের কষ্টের দিন, বিপদ ও ধ্বংসের দিন, গাঢ় অন্ধকারের দিন, মেঘ ও ঘন কালোর দিন। সেটা হবে দেয়াল-ঘেরা সব শহরের বিরুদ্ধে ও কোণের সব উঁচু পাহারা-ঘরের বিরুদ্ধে শিংগার আওয়াজ ও যুদ্ধের হাঁকের দিন। লোকদের উপরে সদাপ্রভু দারুণ কষ্ট আনবেন যার জন্য তারা অন্ধ লোকদের মত হাঁটবে, কারণ সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে তারা পাপ করেছে। তাদের রক্ত ধুলার মত ফেলে দেওয়া হবে ও তাদের দেহ গোবরের মত পড়ে থাকবে। সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে তাদের সোনা-রূপাও তাদের রক্ষা করতে পারবে না। তাঁর অন্তরের জ্বালার আগুনে সমস্ত জগৎ পুড়ে যাবে, কারণ পৃথিবীতে বাসকারী সকলকে তিনি হঠাৎ শেষ করে দেবেন, হ্যাঁ, ভীষণভাবে শেষ করে দেবেন। হে লজ্জাহীন জাতি, তোমরা একত্র হও, একসংগে জড়ো হও। সেই দিন তুষের মত উড়ে আসছে; সেইজন্য নির্দিষ্ট সময় আসবার আগে, সদাপ্রভুর জ্বলন্ত ক্রোধ তোমাদের উপরে আসবার আগে, তাঁর ভীষণ অসন্তোষ তোমাদের উপরে পড়বার আগে তোমরা একসংগে জড়ো হও। হে দেশের সব নম্র লোকেরা, তোমরা যারা সদাপ্রভুর আদেশমত কাজ কর, তোমরা তাঁর ইচ্ছামত ন্যায়ভাবে ও নম্রভাবে চল; তাহলে সদাপ্রভুর ক্রোধের দিনে হয়তো তোমরা আশ্রয় পাবে। গাজা জনশূন্য হবে আর অস্কিলোন ধ্বংসস্থান হয়ে পড়ে থাকবে। দিনের বেলাতেই অস্‌দোদের লোকদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে আর ইক্রোণকে উপ্‌ড়ে ফেলা হবে। হে করেথীয় লোকেরা, তোমরা যারা সমুদ্রের ধারে বাস কর, ধিক্‌ তোমাদের! হে পলেষ্টীয়দের দেশ কনান, তোমার বিরুদ্ধে রয়েছে সদাপ্রভুর এই বাক্য, “আমি তোমাকে এমনভাবে ধ্বংস করব যে, তোমার মধ্যে কেউ থাকবে না।” সাগরের কিনারার এলাকা হবে চারণ ভূমি; সেখানে থাকবে রাখালের গুহা ও ভেড়ার খোঁয়াড়। সেই এলাকা যিহূদার বংশের বেঁচে থাকা লোকদের অধিকারে থাকবে; সেখানে তারা পাল চরাবার জায়গা পাবে। সন্ধ্যাবেলায় তারা অস্কিলোনের বাড়ী-ঘরে শুয়ে থাকবে। তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তাদের দেখাশোনা করবেন; তিনি তাদের অবস্থা ফিরাবেন। তাদের অহংকারের জন্য তারা এই ফল পাবে, কারণ তারা সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর লোকদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে ও তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের বড় করে তুলেছে। সদাপ্রভু তাদের কাছে ভীষণ ভয়ের কারণ হবেন; তিনি পৃথিবীর সমস্ত দেব-দেবতাকে শক্তিহীন করবেন। তখন দূর দেশের সব জাতির লোকেরা নিজের নিজের দেশে থেকে তাঁর উপাসনা করবে। সদাপ্রভু বলছেন, “হে কূশীয়েরা, তোমরাও আমার তলোয়ারের ঘায়ে মারা পড়বে।” সদাপ্রভু উত্তর দিকের বিরুদ্ধে হাত বাড়িয়ে আসিরিয়া ধ্বংস করবেন এবং নীনবীকে একেবারে জনশূন্য ও মরুভুমির মত শুকনা করে দেবেন। সেখানে গরু ও ভেড়ার পাল এবং সব জাতের প্রাণী শুয়ে থাকবে। মরু-পেঁচা ও ভূতুম পেঁচা তার থামগুলোর উপরে ঘুমাবে, আর জানলার মধ্য দিয়ে তাদের ডাক শোনা যাবে। ঘর-বাড়ীগুলো সব ধ্বংস হয়ে যাবে আর সেগুলোর এরস গাছের তক্তা লুট হয়ে যাবে। এটাই সেই নিশ্চিন্তে থাকা শহর যে নিরাপদে আছে। সে মনে মনে বলে, “আমিই আছি, আমি ছাড়া আর কেউ নেই।” সে কেমন ধ্বংস হয়ে গেল, বুনো পশুদের আশ্রয়স্থান হল! যারা তার পাশ দিয়ে যাবে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে এবং তাদের বুড়ো আংগুল দেখাবে। ধিক্‌ সেই অত্যাচারী, বিদ্রোহী ও অশুচি শহরকে! সে কাউকে মানে না, শাসনও গ্রাহ্য করে না। সদাপ্রভুর উপর সে নির্ভর করে না, তার ঈশ্বরের কাছে যায় না। তার রাজকর্মচারীরা যেন গর্জনকারী সিংহ আর শাসনকর্তারা সন্ধ্যাবেলার নেকড়ে বাঘ; তারা সকালের জন্য কিছুই ফেলে রাখে না। তার নবীরা হঠকারী ও বিশ্বাসঘাতক। তার পুরোহিতেরা পবিত্রকে অপবিত্র করে এবং আইন-কানুনের বিরুদ্ধে কাজ করে। তার মধ্যে বাসকারী সদাপ্রভু ন্যায়বান; তিনি কোন অন্যায় করেন না। প্রতিদিন সকালে তিনি ন্যায়বিচার করেন; তা করতে তিনি ভুল করেন না। কিন্তু অন্যায়কারীদের লজ্জা নেই। সদাপ্রভু বলছেন, “আমি জাতিদের শেষ করে দিয়েছি; তাদের উঁচু পাহারা-ঘরগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি তাদের রাস্তাগুলো জনশূন্য করেছি; কেউ সেগুলো দিয়ে আর যায় না। তাদের সব শহর ধ্বংস হয়ে গেছে; সেখানে কেউ নেই, কেউ বাস করে না। আমি যিরূশালেমকে বললাম, ‘এখন তুমি নিশ্চয়ই আমাকে ভয় করবে এবং আমার শাসন মানবে।’ তাহলে তার বাসস্থান নষ্ট করা হবে না, আমার সব শাস্তিও তার উপরে আসবে না। কিন্তু তার লোকেরা আগ্রহের সংগে খারাপ কাজ করতে থাকল। “হে যিরূশালেম, তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কর; যেদিন আমি জাতিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবার জন্য উঠে দাঁড়াব তুমি সেই দিনের জন্য অপেক্ষা কর। আমি ঠিক করেছি যে, জাতিদের আমি জড়ো করব, রাজ্যগুলো একত্র করব এবং তাদের উপর আমার ভীষণ অসন্তোষ, আমার জ্বলন্ত ক্রোধ ঢেলে দেব। আমার অন্তরের জ্বালার আগুনে গোটা জগৎ পুড়ে যাবে। তারপর আমি জাতিদের মুখ শুচি করব যাতে তারা সবাই আমার উপাসনা করতে এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমার সেবা করতে পারে। কূশ দেশের নদীগুলোর ওপার থেকে আমার উপাসনাকারীরা, আমার ছড়িয়ে পড়া লোকেরা আমার উদ্দেশে উৎসর্গের জিনিস নিয়ে আসবে। তুমি আমার প্রতি যে সব অন্যায় করেছ তার জন্য তুমি সেই দিন লজ্জিত হবে না, কারণ এই শহর থেকে আমি সব অহংকারী ও গর্বিত লোকদের বের করে দেব। আমার পবিত্র পাহাড়ের উপরে তুমি আর কখনও গর্ব করবে না। যারা সদাপ্রভুর উপর নির্ভর করে সেই রকম নত ও নম্র লোকদের আমি তোমার মধ্যে বাকী রাখব। ইস্রায়েলের সেই বাকী লোকেরা অন্যায় করবে না; তারা মিথ্যা কথা বলবে না এবং তাদের মুখে ছলনা থাকবে না। তারা খেয়ে নিরাপদে ঘুমাবে, কেউ তাদের ভয় দেখাবে না।” হে সিয়োন-কন্যা, গান কর; হে ইস্রায়েল, জয়ধ্বনি কর; হে যিরূশালেম-কন্যা, তুমি খুশী হও ও তোমার সমস্ত অন্তর দিয়ে আনন্দ কর। সদাপ্রভু তোমার শাস্তি দূর করে দিয়েছেন, তিনি তোমার শত্রুকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। ইস্রায়েলের রাজা সদাপ্রভু তোমার মধ্যে রয়েছেন; তুমি আর কখনও অমংগলের ভয় করবে না। সেই দিন তোমাকে বলা হবে, “হে সিয়োন, তুমি ভয় কোরো না, তুমি নিরাশ হোয়ো না। তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্যে আছেন, তাঁর রক্ষা করবার শক্তি আছে। তিনি তোমার বিষয় নিয়ে খুব আনন্দিত হবেন, আর তাঁর গভীর ভালবাসার তৃপ্তিতে তিনি নীরব হবেন। তিনি তোমার বিষয় নিয়ে আনন্দ-গান করবেন।” সদাপ্রভু বলছেন, “নির্দিষ্ট পর্ব পালন করতে না পেরে তোমার যে লোকেরা দুঃখ করছে তাদের আমি একত্র করব। তারা তো অসম্মানের বোঝা বহন করছে। যারা তোমার উপর অত্যাচার করে তাদের সবাইকে আমি সেই সময় শাস্তি দেব; আমি খোঁড়াদের উদ্ধার করব এবং যারা ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের জড়ো করব। তাদের লজ্জার বদলে আমি তাদের সারা পৃথিবীতে প্রশংসা ও গৌরব দান করব। হে যিরূশালেমের লোকেরা, সেই সময়ে আমি তোমাদের নিয়ে এসে জড়ো করব। আমি যখন তোমাদের অবস্থা ফিরাব তখন পৃথিবীর সমস্ত জাতির মধ্যে আমি তোমাদের সম্মান ও গৌরবের পাত্র করব, আর তোমরা তা দেখতে পাবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বৎসরে শল্টীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল ছিলেন যিহূদার শাসনকর্তা এবং যিহোষাদকের ছেলে যিহোশূয় ছিলেন মহাপুরোহিত। সেই বছরের ষষ্ঠ মাসের প্রথম দিনে সদাপ্রভু নবী হগয়ের মধ্য দিয়ে তাঁদের বললেন, “আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, এই লোকেরা বলে, ‘সদাপ্রভুর ঘর তৈরীর সময় এখনও আসে নি।’ ” তখন নবী হগয়ের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভু আরও বললেন, “এটা কি ঠিক হচ্ছে যে, তোমরা নিজেরা কারুকাজ করা বাড়ীতে থাকছ আর আমার ঘরটা ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়ে আছে? আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, তোমরা কিভাবে চলছ তা ভাল করে চিন্তা করে দেখ। তোমরা অনেক বুনেছ, কিন্তু কাটছ অল্প। তোমরা খেয়ে থাক, কিন্তু কখনও তৃপ্ত হও না। তোমরা আংগুর-রস খেয়ে থাক, কিন্তু যথেষ্ট পাও না। তোমরা কাপড়-চোপড় গায়ে দাও, কিন্তু তাতে গা গরম হয় না। তোমরা বেতন পেয়ে ফুটা থলিতে রাখ। কাজেই তোমরা কিভাবে চলছ তা ভাল করে চিন্তা করে দেখ। এবার তোমরা পাহাড়ে উঠে কাঠ নিয়ে এসে উপাসনা-ঘর তৈরী কর, যাতে আমি খুশী ও সম্মানিত হই। “তোমরা অনেক ফসল পাবার আশা করেছিলে, কিন্তু অল্পই পেয়েছ। তোমরা যা ঘরে নিয়ে এসেছিলে তা আমি উড়িয়ে দিয়েছি। কেন দিয়েছি? আমার ঘরের জন্যই তা করেছি, কারণ সেই ঘর ধ্বংস হয়ে পড়ে আছে আর এদিকে তোমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের ঘর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছ। কাজেই তোমাদের জন্য আকাশ তার শিশির পড়া আর জমি ফসল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষেত-খামার, পাহাড়-পর্বত, শস্য, নতুন আংগুর-রস, তেল ও মাটিতে যা কিছু জন্মায় তার উপরে এবং মানুষ, পশু ও তোমাদের হাতের সব পরিশ্রমের উপরে বৃষ্টি না পড়বার জন্য আমি আদেশ দিয়েছিলাম।” তখন শল্টীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল, যিহোষাদকের ছেলে মহাপুরোহিত যিহোশূয় এবং অন্য সব লোকেরা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর কথামত এবং তাঁর পাঠানো নবী হগয়ের কথামত কাজ করল, কারণ তারা সদাপ্রভুকে ভয় করতে লাগল। তখন সদাপ্রভু তাঁর সংবাদদাতা হগয়ের মধ্য দিয়ে লোকদের বললেন, “আমি সদাপ্রভু তোমাদের সংগে সংগে আছি।” এর পর সদাপ্রভু যিহূদার শাসনকর্তা সরুব্বাবিলের, মহাপুরোহিত যিহোশূয়ের এবং বাকী সব লোকদের অন্তর জাগিয়ে তুললেন। তাতে তারা সবাই এসে তাদের ঈশ্বর সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর ঘরের কাজ করতে শুরু করে দিল। সেই কাজ রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের ষষ্ঠ মাসের চব্বিশ দিনের দিন শুরু হয়েছিল। পরে সপ্তম মাসের একুশ দিনের দিন সদাপ্রভু নবী হগয়কে বললেন, “তুমি শল্টীয়েলের ছেলে যিহূদার শাসনকর্তা সরুব্বাবিলকে, যিহোষাদকের ছেলে মহাপুরোহিত যিহোশূয়কে এবং বাকী সব লোকদের জিজ্ঞাসা কর, ‘আপনাদের মধ্যে এমন কে আছেন যিনি এই ঘরকে তার আগেকার জাঁকজমকের অবস্থায় দেখেছেন? আর এখন সেটি কেমন দেখছেন? আপনাদের কাছে কি মনে হচ্ছে না যে, আগেকার তুলনায় এটি কিছুই নয়?’ তারপর তুমি তাদের বলবে যে, সদাপ্রভু বলছেন, ‘হে সরুব্বাবিল, তুমি সাহস কর; হে মহাপুরোহিত যিহোশূয়, সাহস কর; হে দেশের সমস্ত লোক, তোমরা সাহস কর ও কাজ কর; কারণ আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তোমাদের সংগে সংগে আছি। তোমরা যখন মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছিলে তখন তোমাদের কাছে আমি এই প্রতিজ্ঞাই করেছিলাম, আর আমার আত্মা এখনও তোমাদের মধ্যে আছেন। তোমরা ভয় কোরো না। “‘আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আর অল্পকাল পরে আমি আর একবার আকাশ, পৃথিবী, সাগর ও ভূমিকে নাড়া দেব। আমি সমস্ত জাতিদের নাড়া দেব আর তাতে তারা তাদের ধন-সম্পদ এখানে নিয়ে আসবে। তখন আমি এই ঘর জাঁকজমকে পূর্ণ করব। রূপাও আমার, সোনাও আমার। আগেকার ঘরের জাঁকজমকের চেয়ে এখনকার ঘরের জাঁকজমক আরও বেশী হবে। এই জায়গায় আমি মংগল নিয়ে আসব। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের নবম মাসের চব্বিশ দিনের দিন সদাপ্রভু নবী হগয়কে বললেন, “আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, আইন-কানুন সম্বন্ধে তুমি পুরোহিতদের এই কথা জিজ্ঞাসা কর, ‘কোন লোক যদি তার পোশাকের ভাঁজে পবিত্র মাংস বহন করে আর সেই কাপড়ের ছোঁয়া কোন রুটি, সিদ্ধ করা খাবার, আংগুর-রস, তেল কিম্বা অন্য কোন খাবারে লাগে তবে তা কি পবিত্র হয়ে যায়?’ ” হগয়ের প্রশ্নের উত্তরে পুরোহিতেরা বললেন, “না, হয় না।” তখন হগয় বললেন, “মৃতদেহের ছোঁয়া লেগে অশুচি হয়েছে এমন কোন লোক যদি এর কোন একটা ছোঁয়, তবে সেই জিনিস কি অশুচি হয়ে যাবে?” পুরোহিতেরা উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, সেটা অশুচি হয়ে যাবে।” তখন হগয় বললেন, “সদাপ্রভু বলছেন, ‘ঠিক সেইভাবে আমার চোখে এই লোকেরা ও এই জাতি অশুচি। সেইজন্য তারা যা কিছু করে এবং যা কিছু উৎসর্গ করে তা-ও অশুচি। এখন থেকে তোমরা এই বিষয় নিয়ে ভাল করে চিন্তা কর যে, আমার ঘরে যখন একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর ছিল না তখন কি অবস্থা ছিল। কেউ যখন বিশ মণ শস্যের স্তূপের কাছে আসত তখন সেখানে পেত মাত্র দশ মণ। যখন কেউ পঞ্চাশ লিটার আংগুর-রস নেবার জন্য আংগুর-রস রাখা জালার কাছে যেত তখন সেখানে থাকত মাত্র বিশ লিটার। আমি শস্যের শুকিয়ে যাওয়া ও ছাৎলা পড়া রোগ আর শিলাবৃষ্টি দিয়ে তোমাদের হাতের সমস্ত কাজকে আঘাত করেছিলাম, কিন্তু তবুও তোমরা আমার দিকে ফেরো নি। আজ নবম মাসের চব্বিশ দিনের দিন আমার ঘরের ভিত্তি স্থাপন করা হল। এবার আমি তোমাদের জন্য কি করতে যাচ্ছি তা দেখ। এখন অবশ্য তোমাদের গোলাঘরে কোন বীজ নেই এবং এতদিন আংগুর, ডুমুর, ডালিম ও জলপাই গাছে কম ফল ধরেছে, কিন্তু আজ থেকে আমি তোমাদের আশীর্বাদ করব।’ ” সেই একই দিনে সদাপ্রভু হগয়কে আবার বললেন, “তুমি যিহূদার শাসনকর্তা সরুব্বাবিলকে বল, ‘আমি আকাশ ও পৃথিবীকে নাড়া দেব। আমি বিভিন্ন জাতির রাজাদের সিংহাসন উল্টে ফেলব এবং তাদের ক্ষমতা ধ্বংস করে দেব। আমি রথ ও তার চালকদের উল্টে ফেলে দেব; ঘোড়া ও ঘোড়সওয়ারেরা প্রত্যেকে তার ভাইয়ের তলোয়ারের ঘায়ে মারা পড়বে। হে শল্টীয়েলের ছেলে আমার দাস সরুব্বাবিল, আমি সদাপ্রভু সেই দিন তোমাকে নিয়ে আমার সীলমোহরের আংটির মত করব, কারণ আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি।’ আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের অষ্টম মাসে সদাপ্রভুর বাক্য নবী সখরিয়ের কাছে প্রকাশিত হল। সখরিয় ছিলেন বেরিখিয়ের ছেলে আর বেরিখিয় ইদ্দোর ছেলে। সদাপ্রভু সখরিয়কে বললেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষদের উপর আমি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম। সেইজন্য তুমি লোকদের বল যে, আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, ‘তোমরা আমার দিকে ফেরো, তাতে আমিও তোমাদের দিকে ফিরব। তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের মত হোয়ো না। তাদের কাছে আগেকার নবীরা আমার এই কথা ঘোষণা করেছিল যে, তারা যেন তাদের মন্দ পথ ও মন্দ অভ্যাস থেকে ফেরে। কিন্তু তারা তা শোনে নি এবং আমার কথায় মনোযোগও দেয় নি। তোমাদের সেই পূর্বপুরুষেরা এখন কোথায়? আর নবীরা কি চিরকাল বেঁচে থাকে? কিন্তু আমি আমার দাসদের, অর্থাৎ নবীদের যে সব আদেশ দিয়েছিলাম, আমার সেই সব বাক্য ও নিয়ম অনুসারে কি তোমাদের পূর্বপুরুষেরা শাস্তি পায় নি? তখন তারা মন ফিরিয়ে বলেছিল যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাদের আচার-ব্যবহার ও অভ্যাস অনুসারে তাদের প্রতি যা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন তিনি তা-ই করেছেন।’ ” দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের এগারো মাসের, অর্থাৎ শবাট মাসের চব্বিশ দিনের দিন বেরিখিয়ের ছেলে নবী সখরিয়ের কাছে সদাপ্রভুর বাক্য প্রকাশিত হল। রাতের বেলায় আমি সখরিয় একটা দর্শন পেলাম। আমি দেখলাম, মানুষের মত দেখতে একজন স্বর্গদূত লাল ঘোড়ার উপরে চড়ে আছেন। ঘোড়াটা একটা খাদের ভিতরে গুলমেঁদি গাছগুলোর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটির পিছনে আছে লাল, মেটে ও সাদা রংয়ের কতগুলো ঘোড়া। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আমার প্রভু, এগুলো কি?” আর একজন স্বর্গদূত যিনি আমার সংগে কথা বলছিলেন উত্তরে তিনি বললেন, “ওগুলো কি তা আমি তোমাকে দেখাব।” যিনি গুলমেঁদি গাছগুলোর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি আমাকে বললেন, “সারা পৃথিবীতে ঘুরে দেখবার জন্য সদাপ্রভু এগুলোকে পাঠিয়েছেন।” সদাপ্রভুর যে দূত গুলমেঁদি গাছগুলোর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁকে ঘোড়সওয়ারেরা বলল, “আমরা সারা পৃথিবীতে ঘুরে দেখলাম যে, গোটা জগতটা নির্ভয়ে ও শান্তিতে রয়েছে।” তখন সদাপ্রভুর দূত বললেন, “হে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু, তুমি যিরূশালেম ও যিহূদার অন্যান্য শহরগুলোর উপর এই যে সত্তর বছর অসন্তুষ্ট হয়ে রয়েছ তাদের উপর আর কতকাল তুমি মমতা না করে থাকবে?” তখন যে স্বর্গদূত আমার সংগে কথা বলছিলেন সদাপ্রভু তাঁকে অনেক মংগলের ও সান্ত্বনার কথা বললেন। সেইজন্য সেই স্বর্গদূত আমাকে বললেন, “তুমি এই কথা ঘোষণা কর যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘যিরূশালেমের জন্য, অর্থাৎ সিয়োনের জন্য আমি অন্তরে খুব জ্বালা বোধ করছি। আমি নিশ্চিন্তে থাকা সেই সব জাতির উপরে ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়েছি, কারণ আমি যখন আমার লোকদের উপর কেবল একটুখানি অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম তখন সেই সব জাতি আমার লোকদের দুর্দশার সংগে আরও দুর্দশা যোগ করেছিল। সেইজন্য আমি যিরূশালেমকে মমতা করবার জন্য ফিরে আসব। সেখানে আমার ঘর আবার তৈরী হবে এবং যিরূশালেম শহরকে মেপে আবার গড়ে তোলা হবে। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমার শহরগুলোতে আবার মংগল উপ্‌চে পড়বে আর আমি আবার সিয়োনকে সান্ত্বনা দেব এবং আবার যিরূশালেমকে বেছে নেব।’ ” তারপর আমি চোখ তুলে চারটা শিং দেখতে পেলাম। যে স্বর্গদূত আমার সংগে কথা বলছিলেন আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “এগুলো কি?” উত্তরে তিনি আমাকে বললেন, “এগুলো সেই শিং যা যিহূদা, ইস্রায়েল ও যিরূশালেমের লোকদের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছে।” সদাপ্রভু তারপর আমাকে চারজন মিস্ত্রীকে দেখালেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “এরা কি করতে এসেছে?” উত্তরে তিনি বললেন, “সেই শিংগুলো হল সেই সব জাতির শক্তি যারা যিহূদার লোকদের এমনভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে যে, তারা কেউই মাথা তুলতে পারে নি। সেই সব জাতিকে ভয় দেখাবার জন্য ও তাদের শক্তি ধ্বংস করবার জন্য এই মিস্ত্রীরা এসেছে।” যে স্বর্গদূত আগে আমার সংগে কথা বলেছিলেন তিনি চলে যাচ্ছিলেন, এমন সময় আর একজন স্বর্গদূত তাঁর সংগে দেখা করতে আসলেন। তিনি তাঁকে বললেন, “আপনি দৌড়ে গিয়ে ঐ যুবককে বলুন, ‘যিরূশালেমের মধ্যে মানুষ ও পশু সংখ্যায় বেশী হওয়ার দরুন তাতে কোন দেয়াল থাকবে না। সদাপ্রভু বলছেন যে, তিনি নিজেই তার চারপাশে আগুনের দেয়াল হবেন এবং তিনিই তাঁর মহিমায় সেখানে থাকবেন।’ ” সদাপ্রভু বলছেন, “শোন, শোন। আমি তো চারদিকে তোমাদের ছড়িয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন তোমরা উত্তর দেশ থেকে পালিয়ে এস। ওহে সিয়োনের লোকেরা, তোমরা যারা বাবিলে বাস করছ, তোমরা পালিয়ে এস।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাঁর গৌরব প্রকাশ করবার জন্য আমাকে সেই সব জাতির কাছে পাঠিয়েছেন যারা তোমাদের লুট করেছে। তিনি বলছেন, “যে কেউ তোমাদের ছোঁয় সে আমার চোখের মণি ছোঁয়। আমি তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমার হাত উঠাব, তাতে তাদের দাসেরা তাদের লুট করবে।” এটা যখন ঘটবে তখন তোমরা বুঝতে পারবে যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই আমাকে পাঠিয়েছেন। সদাপ্রভু বলছেন, “হে সিয়োন-কন্যা, আনন্দে গান কর এবং খুশী হও, কারণ আমি আসছি, আর আমি তোমাদের মধ্যে বাস করব। সেই দিন অনেক জাতি আমার সংগে যুক্ত হয়ে আমার লোক হবে। আমি তোমাদের মধ্যে বাস করব।” যখন তা ঘটবে তখন তোমরা জানবে যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। পবিত্র দেশে তাঁর সম্পত্তি হিসাবে সদাপ্রভু যিহূদা দেশ অধিকার করবেন এবং যিরূশালেমকে আবার বেছে নেবেন। হে সমস্ত মানুষ, তোমরা সদাপ্রভুর সামনে নীরব হও, কারণ তিনি বিচার করবার জন্য তাঁর পবিত্র বাসস্থান থেকে বের হয়ে আসছেন। তারপর সেই স্বর্গদূত আমাকে দেখালেন মহাপুরোহিত যিহোশূয় সদাপ্রভুর দূতের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাঁকে দোষ দেবার জন্য শয়তান তাঁর ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছে। সদাপ্রভু শয়তানকে বললেন, “শয়তান, সদাপ্রভু তোমাকে বাধা দিন। যিরূশালেমকে যিনি বেছে নিয়েছেন তিনি তোমাকে বাধা দিন। এই লোকটি কি আগুন থেকে বের করে নেওয়া কাঠ নয়?” তখন যিহোশূয় নোংরা কাপড় পরা অবস্থায় সদাপ্রভুর দূতের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই দূত নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য দূতদের বললেন, “তার নোংরা কাপড়-চোপড় খুলে ফেল।” তারপর তিনি যিহোশূয়কে বললেন, “দেখ, আমি তোমার পাপ দূর করে দিয়েছি এবং আমি তোমাকে সুন্দর পোশাক পরাব।” তখন আমি বললাম, “তাঁর মাথায় একটা পরিষ্কার পাগড়ী দেওয়া হোক।” সেইজন্য সেই দূতেরা তাঁর মাথায় একটা পরিষ্কার পাগড়ী দিলেন এবং তাঁকে পোশাক পরালেন। তখনও সদাপ্রভুর দূত তাঁদের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর সদাপ্রভুর দূত যিহোশূয়কে বললেন, “সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তোমাকে বলছেন, ‘তুমি যদি আমার পথে চল ও আমার সেবা-কাজ কর তাহলে তুমি আমার ঘরের সব কিছু পরিচালনা করবে এবং আমার উঠানের দেখাশোনার ভার পাবে, আর যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে আমি তাদের মতই আমার সামনে আসবার অধিকার তোমাকে দেব। হে মহাপুরোহিত যিহোশূয়, তুমি শোন এবং তোমার সামনে বসে থাকা তোমার সংগী-পুরোহিতেরা শুনুক। আমি যে সেই চারাকে, অর্থাৎ আমার দাসকে নিয়ে আসব এই পুরোহিতেরা হল তার চিহ্ন। হে যিহোশূয়, আমি তোমার সামনে একটা পাথর রেখেছি। সেই পাথরের উপরে সাতটা চোখ রয়েছে, আর তার উপরে আমি একটা কথা খোদাই করব এবং আমি এক দিনেই এই দেশের পাপ দূর করে দেব। সেই দিন তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের আংগুর লতা ও ডুমুর গাছের তলায় বসবার জন্য তোমাদের প্রতিবেশীকে নিমন্ত্রণ করবে। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।’ ” তারপর যে স্বর্গদূত আমার সংগে কথা বলছিলেন তিনি ফিরে আসলেন এবং ঘুম থেকে জাগাবার মত করে আমাকে জাগালেন। তিনি আমাকে বললেন, “তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” উত্তরে আমি বললাম, “আমি একটা সোনার বাতিদান দেখতে পাচ্ছি যার মাথায় রয়েছে একটা তেলের পাত্র। সেই বাতিদানের উপরে সাতটা প্রদীপ ও প্রত্যেকটি প্রদীপে সাতটা সল্‌তে রাখবার জায়গা আছে। সেই বাতিদানের কাছে রয়েছে দু’টা জলপাই গাছ, ডানদিকে একটা ও বাঁদিকে আর একটা।” আমি সেই স্বর্গদূতকে জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আমার প্রভু, এগুলো কি?” উত্তরে তিনি আমাকে বললেন, “এগুলো কি তা কি তুমি জান না?” আমি বললাম, “হে আমার প্রভু, আমি জানি না।” তখন তিনি আমাকে বললেন, “সদাপ্রভু সরুব্বাবিলকে এই সংবাদ দিচ্ছেন, ‘শক্তি বা ক্ষমতার দ্বারা নয়, কিন্তু আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি যে, আমার আত্মা দ্বারা তুমি সফল হবে। হে বিরাট পাহাড়, কে তুমি? সরুব্বাবিলের সামনে তুমি হবে সমভূমি। উপাসনা-ঘরের শেষ পাথরটা লাগাবার সময় লোকেরা চিৎকার করে বলবে যে, ওটা খুব সুন্দর হয়েছে।’ ” তারপর সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার কাছে প্রকাশিত হল, “সরুব্বাবিলের হাত এই উপাসনা-ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং তারই হাত সেটা শেষ করবে। তখন লোকেরা জানতে পারবে যে, আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই তোমাকে তাদের কাছে পাঠিয়েছি। এতদিন যে সামান্য কাজ হয়েছে তা লোকে তুচ্ছ মনে করেছে। কিন্তু সরুব্বাবিলের হাতে ওলনদড়িটা দেখে লোকেরা আনন্দ করবে।” তারপর আমি শুনলাম, “এই সাতটা প্রদীপ হল সদাপ্রভুর চোখ যা সারা পৃথিবী দেখতে পায়।” তখন আমি সেই স্বর্গদূতকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ঐ বাতিদানের ডানে ও বাঁয়ে যে দু’টা জলপাই গাছ আছে সেগুলো কি?” আবার আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ঐ দু’টা জলপাই গাছের ডাল থেকে সোনালী তেল বের হয়ে এসে সোনার বাতিদানের দু’টি সল্‌তে রাখবার জায়গায় পড়েছে। ঐ ডালগুলোর অর্থ কি?” উত্তরে তিনি বললেন, “তুমি কি জান না ঐ দু’টার অর্থ কি?” আমি বললাম, “হে আমার প্রভু, আমি জানি না।” তখন তিনি বললেন, “ঐ দু’টা হল সেই দু’জন যারা সমস্ত জগতের প্রভুর সেবা করবার জন্য অভিষিক্ত হয়েছে।” পরে আমি আবার তাকিয়ে দেখতে পেলাম খোলা অবস্থায় একটা গুটানো বই উড়ছে। তিনি আমাকে বললেন, “তুমি কি দেখতে পাচ্ছ?” উত্তরে আমি বললাম, “আমি বিশ হাত লম্বা ও দশ হাত চওড়া একটা উড়ন্ত বই দেখতে পাচ্ছি।” তিনি আমাকে বললেন, “এটা হল সেই অভিশাপ যা সমস্ত দেশে প্রকাশিত হবে। তার একদিকে লেখা কথা অনুসারে সব চোরদের দূর করে দেওয়া হবে আর অন্য দিকের কথা অনুসারে মিথ্যা শপথকারীদেরও দূর করে দেওয়া হবে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘আমি সেই অভিশাপ পাঠাব আর তা চোরদের ঘরে ও আমার নামে মিথ্যা শপথকারীদের ঘরে গিয়ে ঢুকবে এবং তা তাদের বাড়ীতে থেকে কাঠ ও পাথর সুদ্ধ বাড়ী ধ্বংস করে ফেলবে।’ ” পরে সেই স্বর্গদূত এগিয়ে এসে আমাকে বললেন, “তুমি উপরে তাকিয়ে দেখ কি আসছে।” আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “ওটা কি?” উত্তরে তিনি বললেন, “ওটা একটা মাপের পাত্র।” তিনি আরও বললেন, “ওটা গোটা দেশের অন্যায়কারীদের ছবি।” তারপর সেই পাত্রের সীসার ঢাকনি তোলা হলে পর দেখা গেল একজন স্ত্রীলোক তার মধ্যে বসে আছে। সেই স্বর্গদূত বললেন, “এ হল দুষ্টতা।” এই বলে তিনি সেই স্ত্রীলোকটিকে সেই পাত্রের মধ্যে ঠেলে দিয়ে পাত্রের মুখে সীসার ঢাকনিটা চেপে দিলেন। তারপর আমি চোখ তুলে দু’জন স্ত্রীলোককে বাতাসের সংগে উড়ে আসতে দেখলাম। তাদের ডানা ছিল সারস পাখীর ডানার মত আর তারা সেই পাত্রটাকে আকাশে তুলে নিয়ে উড়ে চলে গেল। তখন আমি সেই স্বর্গদূতকে জিজ্ঞাসা করলাম, “ওরা পাত্রটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?” উত্তরে তিনি বললেন, “তারা ওটা শিনিয়র দেশে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে সেই স্ত্রীলোকটার জন্য একটা ঘর তৈরী করা হবে। ঘর তৈরী হলে পর তাকে তার জায়গায় বসানো হবে।” আমি আবার তাকিয়ে চারটা রথ দেখতে পেলাম। সেগুলো দু’টা পাহাড়ের মাঝখান থেকে বের হয়ে আসছিল। সেই পাহাড় দু’টা ছিল ব্রোঞ্জের। প্রথম রথে ছিল সব লাল রংয়ের ঘোড়া, দ্বিতীয়টাতে ছিল সব কালো রংয়ের ঘোড়া, তৃতীয়টাতে ছিল সব সাদা রংয়ের ঘোড়া এবং চতুর্থটাতে ছিল সব নানা রংয়ের ছাপের ঘোড়া; সব ঘোড়াই ছিল শক্তিশালী। আমি সেই স্বর্গদূতকে জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আমার প্রভু, এগুলো কি?” উত্তরে তিনি আমাকে বললেন, “এগুলো আকাশের চারটি বায়ু; সমস্ত জগতের প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকবার পরে এগুলো বের হয়ে আসছে। কালো ঘোড়ার রথটা উত্তর দেশের দিকে যাচ্ছে, সাদা ঘোড়ার রথটা যাচ্ছে পশ্চিম দিকে এবং নানা রংয়ের ছাপের ঘোড়ার রথটা যাচ্ছে দক্ষিণ দিকে।” শক্তিশালী ঘোড়াগুলো বের হয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে দেখবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল। তখন সেই স্বর্গদূত বললেন, “পৃথিবীর সমস্ত জায়গা ঘুরে দেখ।” কাজেই তারা পৃথিবীর সমস্ত জায়গা ঘুরে দেখতে গেল। তারপর তিনি আমাকে ডেকে বললেন, “দেখ, যারা উত্তর দেশের দিকে যাচ্ছে তারা আমার ক্রোধ শান্ত করেছে।” পরে সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “বাবিলের বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা হিল্‌দয়, টোবিয় ও যিদায়ের কাছ থেকে তুমি সোনা ও রূপা নাও। একই দিনে তুমি সফনিয়ের ছেলে যোশিয়ের বাড়ীতে যাও। তারপর তুমি সেই সোনা ও রূপা দিয়ে একটা মুকুট তৈরী কর এবং সেটা যিহোষাদকের ছেলে মহাপুরোহিত যিহোশূয়ের মাথায় পরিয়ে দাও। তাকে বল যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, ‘এই সেই লোক, যার নাম চারাগাছ; সে নিজের জায়গায় থেকে বেড়ে উঠবে এবং সদাপ্রভুর ঘর তৈরী করবে। হ্যাঁ, সে-ই সদাপ্রভুর ঘর তৈরী করবে। তাকে রাজার সম্মান দেওয়া হবে আর সে তার সিংহাসনে বসে শাসন করবে। সে একজন পুরোহিত হিসাবে সিংহাসনে বসবে এবং তাতে এই দুই পদের মধ্যে কোন অমিল থাকবে না।’ হেলেম, অর্থাৎ হিল্‌দয়, টোবিয়, যিদায় ও সফনিয়ের ছেলে হেনকে, অর্থাৎ যোশিয়কে স্মরণ রাখবার চিহ্ন হিসাবে সেই মুকুট সদাপ্রভুর ঘরের মধ্যে থাকবে। “যারা দূরে আছে তারা এসে সদাপ্রভুর ঘর তৈরীর কাজে সাহায্য করবে। তখন তোমরা জানতে পারবে যে, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুই আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। যদি তোমরা যত্নের সংগে তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর বাক্য পালন কর তবেই এই সব হবে।” রাজা দারিয়াবসের রাজত্বের চতুর্থ বছরের কিষ্‌লেব নামে নবম মাসের চার দিনের দিন সদাপ্রভুর বাক্য সখরিয়ের কাছে প্রকাশিত হল। সেই সময় সদাপ্রভুর আশীর্বাদ চাইবার জন্য বৈথেলের লোকেরা শরেৎসরকে, রেগম্মেলককে ও তাদের লোকদের পাঠিয়ে দিল। তারা সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর ঘরের পুরোহিতদের ও নবীদের এই কথা জিজ্ঞাসা করতে পাঠাল, “আমরা এত বছর যেমন করে এসেছি সেইভাবে কি পঞ্চম মাসে শোক প্রকাশ ও উপবাস করব?” তখন সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “তুমি দেশের সব লোক ও পুরোহিতদের বল, ‘তোমরা গত সত্তর বছর ধরে পঞ্চম ও সপ্তম মাসে যে শোক প্রকাশ ও উপবাস করেছ তা সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে কর নি। আর যখন তোমরা খাওয়া-দাওয়া করেছ তখন তা নিজেদের জন্যই করেছ। যখন যিরূশালেম ও তার আশেপাশের শহরগুলোতে লোকজন বাস করছিল ও সেগুলোর অবস্থার উন্নতি হয়েছিল আর নেগেভ ও পশ্চিমের নীচু পাহাড়ী এলাকায় লোকদের বসতি ছিল তখনও সদাপ্রভু এই সব কথা আগেকার নবীদের মধ্য দিয়ে বলেছিলেন।’ ” তোমরা বিধবা, অনাথ, বিদেশী ও গরীবদের উপর অত্যাচার কোরো না; মনে মনে একে অন্যের বিরুদ্ধে কুমতলব কোরো না।’ “কিন্তু তারা তা শুনতে চায় নি; একগুঁয়েমী করে তারা পিছন ফিরে তাদের কান বন্ধ করে রেখেছিল। তারা তাদের অন্তর পাথরের মত শক্ত করেছিল এবং আইন-কানুন মানে নি। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আমার আত্মা দ্বারা আগেকার নবীদের মধ্য দিয়ে যে বাক্য পাঠিয়েছিলাম তা-ও তারা শোনে নি। কাজেই আমার ভীষণ ক্রোধ জ্বলে উঠেছিল। আমি ডাকলে পর তারা শোনে নি, তাই তারা ডাকলে আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু শুনি নি। আমি অচেনা জাতিদের মধ্যে তাদের ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। এর পরে তাদের দেশ এমন জনশূন্য হয়ে পড়েছিল যে, সেখানে কেউ যাওয়া-আসা করত না। এইভাবে তারা সেই সুন্দর দেশটাকে জনশূন্য করেছিল।” আমি সিয়োনে ফিরে গিয়ে যিরূশালেমে বাস করব। তখন যিরূশালেমকে ‘সত্যের শহর’ এবং সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর পাহাড়কে ‘পবিত্র পাহাড়’ বলা হবে। পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা আবার যিরূশালেমের খোলা জায়গায় বসে সময় কাটাবে আর বেশী বয়সের দরুন তাদের প্রত্যেকের হাতে লাঠি থাকবে। শহরের বিভিন্ন খোলা জায়গায় অনেক ছেলেমেয়ে খেলা করবে। এই সব যে ঘটবে তা এই জাতির বেঁচে থাকা লোকদের কাছে অসম্ভব বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে তা অসম্ভব নয়। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি। আমি আরও বলছি যে, পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে আমি আমার লোকদের উদ্ধার করব। যিরূশালেমে বাস করবার জন্য আমি তাদের ফিরিয়ে আনব। তারা আমারই লোক হবে এবং আমি তাদের ঈশ্বর হব; আমি তাদের প্রতি বিশ্বস্ত ও ন্যায়বান থাকব। “আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, আমার ঘর তৈরীর জন্য ভিত্তি স্থাপন করবার সময় নবীরা সেই সব কথা বলেছিল, আর এখন তোমরা সেই একই কথা শুনতে পাচ্ছ; কাজেই তোমরা শক্তিশালী হও। সেই কাজ আরম্ভ করবার আগে কেউ মানুষের বেতন কিম্বা পশুর ভাড়া দিতে পারত না। শত্রুর দরুন কেউ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারত না, কারণ আমিই প্রত্যেক জনকে তার প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে উস্‌কে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি এই জাতির বেঁচে থাকা লোকদের সংগে আগেকার মত ব্যবহার করব না। এখন বীজ থেকে গাছ ভালভাবে বেড়ে উঠবে, আংগুর লতায় ফল ধরবে, মাটিতে ফসল জন্মাবে এবং আকাশ থেকে শিশির পড়বে। এই জাতির বেঁচে থাকা লোকেরা আমার দেওয়া অধিকার হিসাবে এই সব পাবে। হে যিহূদা ও ইস্রায়েল, সমস্ত জাতির লোকেরা আগে তোমাদের নাম অভিশাপ হিসাবে ব্যবহার করত, কিন্তু এখন আমি তোমাদের উদ্ধার করব আর তারা তোমাদের নাম আশীর্বাদ হিসাবে ব্যবহার করবে। তোমরা ভয় কোরো না, বরং শক্তিশালী হও। “আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি, তোমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন আমাকে অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল তখন আমি তাদের উপর বিপদ আনব বলে ঠিক করেছিলাম এবং তা ঘটিয়েও ছিলাম। কিন্তু এখন আমি আবার যিরূশালেম ও যিহূদার মংগল করব বলে ঠিক করেছি। তোমরা ভয় কোরো না। এই সব আদেশ তোমাদের মানতে হবে- তোমরা একে অন্যের কাছে সত্যি কথা বলবে এবং তোমাদের আদালতে ন্যায়বিচার করবে যাতে লোকদের মধ্যে শান্তি হয়; তোমরা কারও বিরুদ্ধে কুমতলব করবে না এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না। আমি সদাপ্রভু এই সব ঘৃণা করি।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আবার আমাকে বললেন, “চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও দশম মাসের উপবাস যিহূদার জন্য আনন্দের, খুশীর ও মংগলের উৎসব হয়ে উঠবে। কাজেই তোমরা সত্য ও শান্তি ভালবেসো। “এমন সময় আসবে যখন অনেক জাতি ও অনেক শহরের বাসিন্দারা যিরূশালেমে আসবে; এক শহরের বাসিন্দারা অন্য শহরে গিয়ে বলবে, ‘সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর আশীর্বাদ চাইবার জন্য ও তাঁর উপাসনা করবার জন্য চল, আমরা এখনই যাই।’ তখন অনেকেই বলবে, ‘আমিও যাব।’ আমার উপাসনা করবার জন্য ও আমার আশীর্বাদ চাইবার জন্য অনেক লোক ও শক্তিশালী জাতি যিরূশালেমে আসবে। সেই সময়ে নানা ভাষা ও জাতির দশজন লোক একজন যিহূদীর পোশাকের কিনারা ধরে বলবে, ‘চল, আমরা তোমাদের সংগে যাই, কারণ আমরা শুনেছি যে, ঈশ্বর তোমাদেরই সংগে আছেন।’ আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” হদ্রক ও দামেস্কের বিরুদ্ধে সদাপ্রভু যে বাক্য প্রকাশ করেছিলেন তা পূর্ণ হবে। ইস্রায়েলের গোষ্ঠীগুলোর ও অন্য সব মানুষের চোখ সদাপ্রভুর উপর রয়েছে। হমাৎ, যেটা হদ্রকের সীমানার কাছে আছে তারও বিরুদ্ধে সদাপ্রভুর বাক্য পূর্ণ হবে। যদিও সোর ও সীদোনের লোকেরা খুবই জ্ঞানী, তবুও তাদের বিরুদ্ধে তা পূর্ণ হবে। সোর নিজের জন্য একটা দুর্গ তৈরী করেছে এবং ধুলার মত রূপা ও রাস্তার কাদার মত সোনা জড়ো করেছে। কিন্তু প্রভু তার সব কিছু দূর করে দেবেন; তার ধন-সম্পদ তিনি সমুদ্রে ফেলে দেবেন আর আগুন সেই শহরকে পুড়িয়ে ফেলবে। অস্কিলোন তা দেখে ভয় পাবে, গাজা যন্ত্রণায় মোচড় খাবে আর ইক্রোণের দশাও তা-ই হবে, কারণ তার আশা পূর্ণ হবে না। গাজা তার রাজাকে হারাবে আর অস্কিলোনে কেউ বাস করবে না। মিশ্র জাতের বংশধরেরা অস্‌দোদে বাস করবে। সদাপ্রভু বলছেন, “পলেষ্টীয়দের অহংকার আমি শেষ করে দেব। আমি তাদের মুখ থেকে রক্ত সুদ্ধ মাংস ও অন্যান্য নিষেধ করা খাবার বের করব। তাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা হবে আমার লোক; তারা হবে যিহূদার একটা বংশের মত এবং ইক্রোণ হবে যিবূষীয়দের মত। আক্রমণকারী সৈন্যদলের হাত থেকে আমি আমার লোকদের রক্ষা করব। কোন অত্যাচারী আর কখনও আমার লোকদের কাছে আসবে না, কারণ এখন আমি পাহারা দিচ্ছি। “হে সিয়োন-কন্যা, খুব আনন্দ কর। হে যিরূশালেম, তুমি জয়ধ্বনি কর। দেখ, তোমার রাজা তোমার কাছে আসছেন; তিনি ন্যায়বান ও তাঁর কাছে উদ্ধার আছে; তিনি নম্র, তিনি গাধার উপরে, গাধীর বাচ্চার উপরে চড়ে আসছেন। আমি ইফ্রয়িমের রথ ও যিরূশালেমের যুদ্ধের ঘোড়া সব ধ্বংস করব আর যুদ্ধের ধনুক ভেংগে ফেলা হবে। তিনি জাতিদের কাছে শান্তি ঘোষণা করবেন। তাঁর শাসন সাগর থেকে সাগর পর্যন্ত, ইউফ্রেটিস নদী থেকে পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত চলবে। হে যিরূশালেম, তোমার জন্য আমার ব্যবস্থা স্থাপনের রক্তের দরুন আমি তোমার বন্দীদের সেই জলশূন্য গর্ত থেকে মুক্ত করে দেব। হে আশায় পূর্ণ বন্দীরা, তোমরা তোমাদের দুর্গে ফিরে যাও; আজ আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি তোমাদের দুই গুণ আশীর্বাদ করব। আমি যিহূদাকে ধনুকের মত আর ইফ্রয়িমকে তীরের মত ব্যবহার করব। হে সিয়োন, আমি তোমার ছেলেদের গ্রীস দেশের ছেলেদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুলব এবং তোমাকে যোদ্ধার তলোয়ারের মত করব।” তারপর সদাপ্রভু তাঁর লোকদের উপরে প্রকাশিত হবেন; তাঁর তীর বিদ্যুতের মত চম্‌কাবে। প্রভু সদাপ্রভু শিংগা বাজাবেন আর দক্ষিণের ঝোড়ো বাতাসের মত এগিয়ে যাবেন; সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাদের রক্ষা করবেন। এতে তারা শত্রুদের ধ্বংস করবে ও তাদের ফিংগার পাথর পায়ে মাড়াবে। তারা আংগুর-রস খাবে এবং মাতালদের মত চিৎকার করবে; বেদীর কোণাগুলোতে পাত্র থেকে রক্ত ঢালবার মত করে তারা প্রচুর রক্তপাত করবে। সেই দিন তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু ভেড়ার পালের মত করে তাঁর লোকদের উদ্ধার করবেন। তারা তাঁর দেশে মুকুটের মধ্যে মণি-মাণিকের মত ঝক্‌মক্‌ করবে। তাদের চেহারা কত ভাল হবে, কত সুন্দর হবে! শস্য খেয়ে যুবকেরা এবং নতুন আংগুর-রস খেয়ে যুবতীরা সতেজ হয়ে উঠবে। বসন্তকালে বৃষ্টি দেবার জন্য তোমরা সদাপ্রভুকে বল; তিনিই বৃষ্টির মেঘ তৈরী করেন। তিনি লোকদের বৃষ্টি দান করেন আর সকলের ক্ষেতে ফসল জন্মান। প্রতিমাগুলো ছলনার কথা বলে, গণকেরা মিথ্যা দর্শন দেখে; তারা যে স্বপ্নের কথা বলে তা মিথ্যা, আর তারা মিথ্যাই সান্ত্বনা দেয়। সেইজন্য লোকেরা অত্যাচারিত হয়ে ভেড়ার মত ঘুরে বেড়ায়, কারণ তাদের পালক নেই। সদাপ্রভু বলছেন, “পালকদের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ জ্বলে উঠছে, সেইজন্য আমি নেতাদের শাস্তি দেব। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু নিজের পালের, অর্থাৎ যিহূদার লোকদের দেখাশোনা করব এবং যুদ্ধের শক্তিশালী ঘোড়ার মত করে তুলব। যিহূদা থেকে কোণার পাথর, তাম্বুর গোঁজ, যুদ্ধের ধনুক ও সমস্ত শাসনকর্তা আসবে। তখন যিহূদার লোকেরা এমন শক্তিশালী লোকদের মত হবে যারা যুদ্ধে কাদা-ভরা রাস্তায় শত্রুদের পায়ে মাড়ায়। আমি তাদের সংগে থাকব বলে তারা যুদ্ধ করে ঘোড়সওয়ারদের হারিয়ে দেবে। “আমি যিহূদার লোকদের শক্তিশালী করব এবং যোষেফের, অর্থাৎ ইস্রায়েলের লোকদের উদ্ধার করব। আমি তাদের ফিরিয়ে আনব, কারণ তাদের উপর আমার মমতা আছে। তখন তারা এমন হবে যেন আমি তাদের অগ্রাহ্য করি নি, কারণ আমি তাদের ঈশ্বর সদাপ্র্রভু; আমি তাদের ডাকে সাড়া দেব। ইফ্রয়িমীয়েরা শক্তিশালী লোকদের মত হবে, আংগুর-রস খাওয়ার মত তাদের অন্তর খুশী হবে। তা দেখে তাদের সন্তানেরা আনন্দিত হবে; তাদের অন্তর আমাকে নিয়ে আনন্দ করবে। আমি তাদের শিস্‌ দিয়ে ডাকব এবং একসংগে জড়ো করব। আমি তাদের মুক্ত করব বলে তারা আগের মতই সংখ্যায় অনেক হবে। যদিও নানা জাতির মধ্যে আমি তাদের ছড়িয়ে দিয়েছি তবুও দূর দেশে তারা আমাকে মনে করবে। তারা ও তাদের ছেলেমেয়েরা বেঁচে থাকবে এবং তারা ফিরে আসবে। মিসর দেশ থেকে আমি তাদের ফিরিয়ে আনব, আসিরিয়া থেকে তাদের একত্র করব। গিলিয়দ ও লেবাননে আমি তাদের নিয়ে আসব আর এত লোক হবে যে, সেখানে তাদের জায়গা কুলাবে না। আমি কষ্ট-সাগরের মধ্য দিয়ে যাব আর সাগরের ঢেউকে দমন করব এবং তাতে নীল নদীর সব গভীর জায়গাগুলো শুকিয়ে যাবে। আসিরিয়ার অহংকার ভেংগে দেওয়া হবে এবং মিসরের রাজদণ্ড দূর হয়ে যাবে। আমার শক্তি দিয়ে আমি তাদের শক্তিশালী করব এবং আমার ইচ্ছামত তারা চলাফেরা করবে। আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” ওহে লেবানন, তোমার দরজাগুলো খুলে দাও, যাতে আগুন তোমার এরস গাছগুলো গ্রাস করতে পারে। ওহে বেরস গাছ, বিলাপ কর, কারণ এরস গাছ পড়ে গেছে। সেরা গাছগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ওহে বাশনের এলোন গাছ, তোমরা বিলাপ কর, কারণ গভীর বনের সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ভেড়ার রাখালদের বিলাপ শোন; তাদের ভাল ভাল চারণ ভূমি নষ্ট হয়ে গেছে। সিংহদের গর্জন শোন; যর্দনের জংগল ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, “জবাই করবার জন্য যে মেষপাল ঠিক হয়ে আছে তুমি সেই পাল চরাও। যারা তাদের কিনে নেয় তারা তাদের জবাই করে কিন্তু নিজেদের দোষী মনে করে না। যারা তাদের বিক্রি করে তারা বলে, ‘সদাপ্রভুর গৌরব হোক, আমি ধনী হয়েছি।’ তাদের পালকেরা তাদের উপর দয়া করে না। দেশের লোকদের উপর আমি আর দয়া করব না; আমি প্রত্যেকজনকে তার প্রতিবেশী ও রাজার হাতে তুলে দেব। তারা দেশটাকে ধ্বংস করবে এবং তাদের হাত থেকে আমি কাউকে উদ্ধার করব না।” জবাই করবার জন্য যে মেষ পাল ঠিক হয়ে আছে, বিশেষ করে সেই পালের দুঃখীদের আমি চরাতে লাগলাম। তারপর আমি দু’টা লাঠি নিলাম এবং তার একটার নাম দিলাম দয়া ও অন্যটার নাম দিলাম মিলন; আর আমি সেই মেষ পাল চরাতে থাকলাম। এক মাসের মধ্যে আমি তিনজন পালককে দূর করে দিলাম। পরে সেই পাল আমাকে ঘৃণা করতে লাগল আর আমিও তাদের নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। আমি বললাম, “আমি তোমাদের পালক হব না। যার মরবার কথা আছে সে মরুক এবং যার দূর হয়ে যাবার কথা আছে সে দূর হয়ে যাক। বাকীরা একে অন্যের মাংস খাক।” তারপর আমি দয়া নামে সেই লাঠিটা নিয়ে ভেংগে ফেলে সমস্ত জাতির সংগে আমার যে চুক্তি ছিল তা বাতিল করলাম। সেই দিনেই তা বাতিল হল, কাজেই পালের দুঃখীরা যারা আমাকে লক্ষ্য করছিল তারা জানতে পারল যে, এই সবের মধ্য দিয়ে সদাপ্রভুই কথা বলছেন। আমি তাদের বললাম, “আপনারা যদি ভাল মনে করেন তবে আমার বেতন দিন; কিন্তু যদি ভাল মনে না করেন তবে তা রেখে দিন।” তখন তারা আমাকে ত্রিশটা রূপার টুকরা দিল। তখন সদাপ্রভু আমাকে বললেন, “আহা, কি সেই দাম যা তারা আমার মূল্য হিসাবে ঠিক করেছিল! ওটা কুমারের কাছে ফেলে দাও।” তারপর আমি সেই ত্রিশটা রূপার টুকরা নিয়ে সদাপ্রভুর ঘরে কুমারের কাছে ফেলে দিলাম। পরে আমি মিলন নামে সেই দ্বিতীয় লাঠিটা ভেংগে যিহূদা ও ইস্রায়েলের মধ্যে ভাইয়ের যে সম্বন্ধ ছিল তা নষ্ট করলাম। তখন সদাপ্র্রভু আমাকে বললেন, “এবার তুমি আবার একজন বাজে পালকের জিনিসপত্র নাও। দেশের উপরে আমি এমন একজন পালককে তুলব যে বিপদে পড়া লোকদের দেখাশোনা করবে না, যারা ছড়িয়ে পড়েছে তাদের খোঁজ করবে না, যারা আঘাত পেয়েছে তাদের সুস্থ করবে না, স্বাস্থ্যবানদের খাওয়াবে না; কিন্তু সে বাছাই করা মেষগুলোর মাংস খাবে এবং তাদের খুর থেকেও মাংস ছিড়ে খাবে। “ধিক্‌, সেই অপদার্থ পালককে, যে সেই পাল ছেড়ে চলে যায়! তলোয়ার যেন তার হাত ও ডান চোখকে আঘাত করে। তাতে তার হাত একেবারে শুকিয়ে যাবে এবং তার ডান চোখ একেবারে অন্ধ হয়ে যাবে।” এই হল ইস্রায়েল সম্বন্ধে সদাপ্রভুর বাক্য। সদাপ্রভু, যিনি আকাশকে মেলে দিয়েছেন, যিনি পৃথিবীর ভিত্তি স্থাপন করেছেন, যিনি মানুষের ভিতরে আত্মা সৃষ্টি করেছেন, তিনি বলছেন, “আমি যিরূশালেমকে এমন একটা মদের পাত্র বানাব যা থেকে খেয়ে আশেপাশের সব জাতিরা টলবে। যিরূশালেমের সংগে যিহূদার অন্যান্য শহরগুলোকেও ঘেরাও করা হবে। সেই দিন যখন সমস্ত জাতি যিরূশালেমের বিরুদ্ধে জড়ো হবে তখন আমি তাকে সব জাতির জন্য একটা ভারী পাথরের মত করব। যারা সেই পাথরকে উঠাতে চেষ্টা করবে তারা নিজেরাই আঘাত পাবে। সেই দিন আমি প্রত্যেকটা ঘোড়াকে ভয় ধরিয়ে দেব এবং ঘোড়সওয়ারকে করব পাগল। যিহূদার লোকদের প্রতি আমি সতর্ক নজর রাখব, কিন্তু অন্যান্য জাতিদের সব ঘোড়াগুলোকে অন্ধ করে দেব। তখন যিহূদার নেতারা মনে মনে বলবে, ‘যিরূশালেমের লোকেরা আমাদের শক্তি, কারণ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তাদের ঈশ্বর।’ “সেই দিন যিহূদার নেতাদের আমি কাঠের বোঝার মধ্যে জ্বলন্ত কয়লার মত ও শস্যের আঁটির মধ্যে জ্বলন্ত মশালের মত করব। তারা ডানে-বাঁয়ে আশেপাশের সমস্ত জাতিকে গ্রাস করবে, কিন্তু যিরূশালেমের লোকেরা আবার তাদের নিজেদের জায়গায় বাস করবে। “আমি সদাপ্রভু প্রথমে যিহূদার বাসস্থানগুলো উদ্ধার করব যাতে দায়ূদের বংশের ও যিরূশালেমের বাসিন্দাদের সম্মান যিহূদার অন্যান্য লোকদের চেয়ে বেশী না হয়। সেই দিন আমি যিরূশালেমের বাসিন্দাদের রক্ষা করব। তাদের মধ্যেকার সবচেয়ে দুর্বল লোকও দায়ূদের মত হবে এবং দায়ূদের বংশধরেরা ঈশ্বরের মত, অর্থাৎ সদাপ্রভুর দূতের মত তাদের আগে আগে চলবে। সেই দিন যে সমস্ত জাতি যিরূশালেমকে আক্রমণ করতে আসবে আমি তাদের ধ্বংস করব। “আমি দায়ূদের বংশ ও যিরূশালেমের বাসিন্দাদের উপরে আমার আত্মা ঢেলে দেব; তিনি দয়া করেন ও প্রার্থনার মনোভাব দেন। তাতে তারা আমার দিকে, অর্থাৎ যাঁকে তারা বিঁধেছে তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখবে। একমাত্র সন্তানের জন্য বিলাপ করবার মত করে তারা তাঁর জন্য বিলাপ করবে এবং প্রথম সন্তানের জন্য যেমন শোক করে তেমনি ভীষণভাবে শোক করবে। সেই দিন যিরূশালেমে ভীষণ বিলাপ হবে, যেমন মগিদ্দো সমভূমির হদদ্‌-রিম্মোণে হয়েছিল। তবুও যদি কেউ নবী হিসাবে কথা বলে তবে তার নিজের মা-বাবা তাকে বলবে, ‘তোমাকে মরতে হবে, কারণ তুমি সদাপ্রভুর নাম করে মিথ্যা কথা বলেছ।’ সে নবী হিসাবে কথা বললে পর তার নিজের মা-বাবা তাকে তীক্ষ্ন অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলবে। “প্রত্যেক নবী সেই দিন তার দর্শনের বিষয়ে লজ্জিত হবে। ছলনা করবার জন্য সে নবীদের মত লোমের পোশাক পরবে না। সে বলবে, ‘আমি নবী নই, আমি একজন চাষী; ছোটবেলায় আমাকে দাস হিসাবে বিক্রি করা হয়েছিল।’ যদি কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘তোমার দেহে ওগুলো কিসের দাগ?’ সে উত্তর দেবে, ‘আমার বন্ধুদের বাড়ীতে যে সব আঘাত পেয়েছি এ তারই দাগ।’ ” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “হে তলোয়ার, তুমি আমার পালকের বিরুদ্ধে, আমার সংগের লোকের বিরুদ্ধে, জেগে ওঠো। পালককে আঘাত কর, তাতে মেষগুলো ছড়িয়ে পড়বে; আমি মেষের বাচ্চাগুলোর বিরুদ্ধেও আমার হাত উঠাব। গোটা দেশের তিন ভাগের দু’ভাগ লোককে মেরে ফেলা হবে, কিন্তু আমি সদাপ্রভু বলছি, তৃতীয় ভাগ তার মধ্যে বেঁচে থাকবে। এই তৃতীয় ভাগকে আমি আগুনের মধ্যে নিয়ে যাব; রূপা খাঁটি করবার মত করে আমি তাদের খাঁটি করব এবং সোনা যাচাই করবার মত তাদের যাচাই করব। তারা আমাকে ডাকবে আর আমি তাদের উত্তর দেব; আমি বলব, ‘এরা আমার লোক,’ আর তারা বলবে, ‘সদাপ্রভুই আমাদের ঈশ্বর।’ ” সদাপ্রভুর এমন একটা দিন আসছে যেদিন যিরূশালেমের লোকদের জিনিস লুট হয়ে তাদের সামনে ভাগ করে নেওয়া হবে। যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য সদাপ্রভু সমস্ত জাতিকে জড়ো করবেন। শহর দখল করা হবে, ঘর-বাড়ী লুটপাট করা হবে ও স্ত্রীলোকদের সতীত্ব নষ্ট করা হবে। শহরের অর্ধেক লোক বন্দী হয়ে অন্য দেশে যাবে কিন্তু বাকী লোকেরা শহরে থাকবে। তারপর সদাপ্রভু বের হবেন এবং যুুদ্ধের সময় যেমন করেন সেইভাবে তিনি জাতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। সেই দিন তিনি এসে যিরূশালেমের পূর্ব দিকে জৈতুন পাহাড়ের উপরে দাঁড়াবেন; তাতে জৈতুন পাহাড় পূর্ব থেকে পশ্চিমে চিরে যাবে এবং অর্ধেক উত্তরে ও অর্ধেক দক্ষিণে সরে গিয়ে একটা বড় উপত্যকার সৃষ্টি করবে। তোমরা পাহাড়ের সেই উপত্যকা দিয়ে পালিয়ে যাবে, কারণ সেই উপত্যকা আৎসল পর্যন্ত চলে যাবে। যিহূদার রাজা উষিয়ের রাজত্বকালে ভূমিকমেপর সময়ে যেভাবে তোমরা পালিয়ে গিয়েছিলে সেইভাবেই পালিয়ে যাবে। তারপর আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাঁর সব পবিত্রজনদের সংগে নিয়ে আসবেন। সেই দিন কোন আলো থাকবে না, চাঁদ ও সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে। সেই দিনটা অন্য কোন দিনের মত হবে না- দিনও হবে না, রাতও হবে না; দিনটার কথা কেবল সদাপ্রভুই জানেন। সেই দিনের শেষে আলো হবে। সেই সময় গরমকালে ও শীতকালে যিরূশালেম থেকে মিষ্টি জল বের হয়ে অর্ধেকটা পূর্ব সাগরের দিকে আর অর্ধেকটা পশ্চিম সাগরের দিকে বয়ে যাবে। সদাপ্রভুই হবেন গোটা পৃথিবীর রাজা। সেই দিন লোকে সদাপ্রভুকে একমাত্র ঈশ্বর বলে স্বীকার করবে, কেবল তাঁরই নামে উপাসনা করবে। যিরূশালেমের দক্ষিণে গেবা থেকে রিম্মোণ পর্যন্ত অরাবা সমভূমির মত হবে, কিন্তু যিরূশালেম উঁচুই থাকবে। বিন্যামীন-ফটক থেকে প্রথম ফটক ও কোণার ফটক পর্যন্ত এবং হননেলের উঁচু পাহারা-ঘর থেকে রাজার আংগুর মাড়াইয়ের স্থান পর্যন্ত গোটা শহরটা ঠিক থাকবে। সেখানে লোকজন বাস করবে; যিরূশালেম আর কখনও ধ্বংসের অভিশাপের অধীন হবে না। সে নিরাপদে থাকবে। যে সব জাতি যিরূশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সদাপ্রভু মড়ক দিয়ে তাদের আঘাত করবেন। তারা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই তাদের গায়ের মাংস পচে যাবে এবং তাদের চোখের গর্তের মধ্যে চোখ পচে যাবে ও মুখের মধ্যে জিভ্‌ পচে যাবে। সেই দিন সদাপ্রভু ভীষণ ভয় দিয়ে সেই লোকদের আঘাত করবেন। তারা সবাই একে অন্যকে ধরে আক্রমণ করবে। যিহূদাও যিরূশালেমের পক্ষে যুদ্ধ করবে। আশেপাশের জাতিদের ধন-সম্পদ, অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে সোনা, রূপা ও কাপড়-চোপড় জড়ো করা হবে। একই রকম মড়ক ঐ সব সৈন্য-ছাউনির ঘোড়া, খচ্চর, উট, গাধা এবং অন্যান্য সব পশুকে আঘাত করবে। পরে সেই সব জাতির বেঁচে থাকা লোকেরা সেই রাজার, অর্থাৎ সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উপাসনা করবার জন্য এবং কুঁড়ে-ঘরের পর্ব পালন করবার জন্য প্রতি বছর যিরূশালেমে আসবে। যদি পৃথিবীর কোন জাতি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উপাসনা করবার জন্য যিরূশালেমে না যায় তবে তাদের দেশে বৃষ্টি হবে না। যদি মিসরীয়েরা না যায় এবং উপাসনায় অংশ না নেয় তবে তাদের দেশেও বৃষ্টি হবে না। যে সব জাতি কুঁড়ে-ঘরের পর্ব পালন করবার জন্য যাবে না সদাপ্রভু তাদের উপর যে মড়ক আনবেন মিসরীয়দের উপর তিনি সেই একই মড়ক আনবেন। মিসর এবং অন্যান্য যে সব জাতি কুঁড়ে-ঘরের পর্ব পালন করবার জন্য যাবে না তাদের এই শাস্তিই দেওয়া হবে। সেই দিন “সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র” এই কথা ঘোড়ার গলার ঘণ্টার উপরে খোদাই করা থাকবে এবং সদাপ্রভুর ঘরের রান্নার পাত্রগুলো বেদীর সামনের পবিত্র বাটিগুলোর মত পবিত্র হবে। যিরূশালেম ও যিহূদার প্রত্যেকটি রান্নার পাত্র সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র হবে এবং যারা পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠান পালন করতে আসবে তারা সেই সব পাত্রের কয়েকটা নিয়ে সেগুলোতে রান্না করবে। সেই দিন সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর ঘরে কেউ ব্যবসা করবে না। ॥ভব মালাখির মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলের কাছে সদাপ্রভুর বাক্য। ইদোম হয়তো বলবে, “আমাদের চুরমার করা হলেও আমরা ধ্বংসস্থানগুলো আবার গড়ে তুলব।” কিন্তু সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “তারা গড়তে পারে কিন্তু আমি ভেংগে ফেলব। তাদের বলা হবে, ‘দুষ্ট দেশ’ এবং ‘যে জাতি সব সময় সদাপ্রভুর ক্রোধের তলায় রয়েছে।’ তোমরা তা নিজের চোখে দেখবে ও বলবে, ‘ইস্রায়েলের সীমানার বাইরেও সদাপ্রভু মহান।’ ” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “ছেলে তার বাবাকে ও চাকর তার মনিবকে সম্মান করে। যদি আমি বাবা হয়ে থাকি তবে আমার পাওনা সম্মান কোথায়? যদি মনিব হয়ে থাকি তবে আমার পাওনা শ্রদ্ধা কোথায়? ওহে পুরোহিতেরা, তোমরাই আমাকে তুচ্ছ করছ। কিন্তু তোমরা বলছ, ‘আমরা কেমন করে তোমাকে তুচ্ছ করেছি?’ আমার বেদীর উপরে তোমরা অশুচি খাবার রেখে আমাকে তুচ্ছ করেছ। কিন্তু তোমরা বলছ, ‘তাতে কি তুমি অশুচি হয়েছ?’ তোমরা যখন বল, ‘সদাপ্রভুর টেবিল ঘৃণার যোগ্য,’ তখন তো তোমরা আমাকেই অশুচি বলছ। পশু-উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য যখন তোমরা অন্ধ পশু নিয়ে আস তখন তা কি অন্যায় নয়? যখন তোমরা খোঁড়া ও অসুস্থ পশু দিয়ে উৎসর্গের অনুষ্ঠান কর, তখন কি তা অন্যায় নয়? তোমাদের শাসনকর্তার কাছে সেগুলো উৎসর্গ করলে সে কি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হবে? সে কি তোমাদের গ্রাহ্য করবে? আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি।” এখন ঈশ্বরের কাছে দয়া চাইলে কি লাভ? তোমাদের হাত দিয়ে যখন এই রকম উৎসর্গ করা হয়েছে, তখন তিনি কি আমাদের গ্রাহ্য করবেন? শোন, সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু কি বলছেন, “হায়! যদি তোমাদের মধ্যে একজনও উপাসনা-ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করত আর তোমরা আমার বেদীর উপরে অনর্থক আগুন না জ্বালাতে তবে আমি খুশী হতাম। আমি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট নই এবং কোন উৎসর্গের জিনিস আমি তোমাদের হাত থেকে গ্রহণ করব না। পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত জাতির মধ্যে আমার নাম হবে মহৎ। সব জায়গাতেই আমার উদ্দেশে ধূপ জ্বালানো হবে এবং উৎসর্গ করবার জন্য শুচি জিনিস আনা হবে, কারণ সব জাতির মধ্যে আমার নাম মহৎ হবে। কিন্তু তোমরা আমার নাম অসম্মানিত করছ, কারণ তোমরা বলছ, ‘সদাপ্রভুর টেবিল অশুচি এবং তার উপরকার খাবার জঘন্য।’ তোমরা তুচ্ছ করবার মনোভাব নিয়ে এ-ও বলে থাক, ‘এ কি জ্বালা!’ তোমরা তো লুট করা, খোঁড়া কিম্বা অসুস্থ পশু নিয়ে এসে উৎসর্গের অনুষ্ঠানের জন্য দাও, কিন্তু তা কি আমি তোমাদের হাত থেকে নিতে পারি? আমি সদাপ্রভু এই কথা বলছি। যার পশুপালের মধ্যে রয়েছে উপযুক্ত পুরুষ পশু এবং সে সেটা দেবার জন্য মানতও করেছে কিন্তু তারপর একটা খুঁতযুক্ত পশু সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করেছে, সে তো ঠগ। তার উপর অভিশাপ পড়ুক। আমিই মহান রাজা এবং সমস্ত জাতি আমাকেই ভয় করে। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” তোমাদের দরুনই আমি তোমাদের বংশধরদের শাস্তি দেব; তোমাদের পর্বের উৎসর্গের পশুর ময়লা আমি তোমাদের মুখে মাখিয়ে দেব এবং সেই ময়লা সুদ্ধই তোমাদের দূর করে দেওয়া হবে।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আরও বলছেন, “তোমরা জেনো যে, আমি তোমাদের কাছে এই সতর্কবাণী পাঠিয়েছি যাতে লেবির বংশের জন্য স্থাপন করা আমার ব্যবস্থা চালু থাকে। তাদের জন্য আমি যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম তা হল জীবন ও মংগলের ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা আমি তাদের দিয়েছিলাম। এছাড়া এটা ভয়ের ব্যবস্থাও বটে, যেন তারা আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে; সত্যিই তারা আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করত। তাদের মুখে সত্যিকারের শিক্ষা ছিল এবং তাতে কোন মিথ্যা থাকত না। শান্তিতে ও সততায় তারা আমার সংগে চলাফেরা করত এবং অনেককে পাপ থেকে ফিরাত। আসলে ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া পুরোহিতদের উচিত যাতে সেই শিক্ষা হারিয়ে না যায়। এছাড়া ঈশ্বরের বাক্য জানবার জন্য পুরোহিতদের কাছেই লোকদের যাওয়া উচিত, কারণ তারাই সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর সংবাদদাতা। কিন্তু তোমরা ঠিক পথ থেকে সরে গেছ এবং তোমাদের শিক্ষার দ্বারা অনেককে উছোট খাইয়েছ। এইভাবে লেবির বংশের জন্য স্থাপন করা ব্যবস্থা তোমরা বাদ দিয়েছ। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছি। তোমরা আমার পথে চল নি বরং আইন-কানুনের ব্যাপারে লোকদের সংগে তোমরা একচোখামি করেছ। সেইজন্য সমস্ত লোকদের সামনে আমি তোমাদের তুচ্ছের ও অসম্মানের পাত্র করেছি।” আমাদের সকলের পিতা কি একজন নন? একজন ঈশ্বরই কি আমাদের সৃষ্টি করেন নি? তাহলে আমরা কেন একে অন্যের সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য স্থাপন করা ব্যবস্থা অসম্মানিত করি? যিহূদা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ইস্রায়েলে ও যিরূশালেমে জঘন্য কাজ করা হয়েছে। যিহূদার লোকেরা দেবতা পূজাকারী মেয়েদের বিয়ে করে সদাপ্রভু যাদের ভালবাসেন তাদের অশুচি করেছে। যারা এই রকম কাজ করে তারা যদিও বা সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গের জিনিস নিয়ে আসে তবুও সদাপ্রভু যাকোবের বংশের মধ্য থেকে তাদের সবাইকে শেষ করে দেবেন। আর একটা খারাপ কাজ তোমরা করে থাক; সেটা হল, চোখের জলে তোমরা সদাপ্রভুর বেদী ভাসাও। তোমরা কান্নাকাটি ও বিলাপ কর, কারণ তোমরা যা দাও তার প্রতি তিনি আর মনোযোগ দেন না কিম্বা খুশী মনে তোমাদের হাত থেকে তা গ্রহণও করেন না। তোমরা বলছ, “কেন করেন না?” এর কারণ হল, সদাপ্রভু তোমাদের প্রত্যেক লোকের ও তার যৌবনকালের স্ত্রীর বিয়ের সাক্ষী হয়েছিলেন; কিন্তু যদিও সেই স্ত্রী তার সংগী, তার বিয়ের চুক্তি করা স্ত্রী, তবুও সে তার সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সদাপ্রভু কি স্বামী ও স্ত্রীকে এক করেন নি? দেহে ও আত্মায় তারা তাঁরই। তারা কেন এক? কারণ তিনি তাদের মধ্য দিয়ে একটা ঈশ্বরভক্ত বংশ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কাজেই তোমরা তোমাদের অন্তরের বিষয়ে সাবধান হও; যৌবনকালের স্ত্রীর সংগে তোমরা বিশ্বাসঘাতকতা কোরো না। ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু বলছেন, “আমি স্ত্রীকে ত্যাগ করা ঘৃণা করি।” এছাড়া সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “যে লোক কাপড় পরবার মত করে নিজেকে অত্যাচার দিয়ে সাজায় তার সেই কাজ আমি ঘৃণা করি। কাজেই তোমরা তোমাদের অন্তরের বিষয়ে সাবধান হও, বিশ্বাসঘাতকতা কোরো না।” তোমরা নিজেদের কথার দ্বারা সদাপ্রভুকে ক্লান্ত করে তুলেছ। তবুও তোমরা বলছ, “কেমন করে আমরা তাঁকে ক্লান্ত করেছি?” তোমরা এইভাবে করেছ- তোমরা বলেছ, “যারা অন্যায় করে তারা সবাই সদাপ্রভুর চোখে ভাল এবং তিনি তাদের উপর সন্তুষ্ট,” কিম্বা বলেছ, “কোথায় সেই ঈশ্বর যিনি ন্যায়বিচার করেন?” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, আমি আমার সংবাদদাতাকে পাঠাচ্ছি; সে আমার আগে গিয়ে পথ প্রস্তুত করবে। তারপর যে প্রভুর জন্য তোমরা অপেক্ষা করছ তিনি হঠাৎ তাঁর ঘরে আসবেন; ব্যবস্থা কাজে পরিণতকারী সেই দূত, যাঁকে তোমরা চাইছ, তিনি আসছেন।” কিন্তু তাঁর আসবার দিন কেউ সহ্য করতে পারবে না; তিনি উপস্থিত হলে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না; কারণ তিনি হবেন রূপা যাচাই করবার আগুন অথবা ধোপার সাবানের মত। যে লোক রূপা গলিয়ে খাঁটি করে তিনি তার মত হয়ে বসবেন। তিনি লেবীয়দের শুচি করবেন এবং সোনা ও রূপার মত করে তাদের খাঁটি করবেন। তারপর তারা সততার মনোভাব নিয়ে সদাপ্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গের অনুষ্ঠান করবে। তখন আগেকার দিনের মত করে, পুরানো দিনের মত করে যিহূদা ও যিরূশালেমের লোকদের উৎসর্গের জিনিস সদাপ্রভুকে সন্তুষ্ট করবে। সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “তখন আমি বিচার করবার জন্য তোমাদের কাছে আসব; সেই সময় যাদুকর, ব্যভিচারী, মিথ্যা সাক্ষী এবং যারা মজুরদের মজুরিতে ঠকায়, যারা বিধবা ও অনাথদের অত্যাচার করে আর বিদেশীদের ন্যায়বিচার পেতে দেয় না, অর্থাৎ যারা আমাকে ভয় করে না তাদের সকলের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিতে দেরি করব না। “আমি সদাপ্রভু, আমার কোন পরিবর্তন নেই। সেইজন্য হে যাকোবের বংশধরেরা, তোমরা ধ্বংস হচ্ছ না। তোমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকেই তোমরা আমার সব নিয়ম-কানুন থেকে সরে গেছ এবং তা পালন কর নি। আমার কাছে ফিরে এস, আর আমিও তোমাদের কাছে ফিরে আসব। কিন্তু তোমরা বলছ, ‘আমরা কেমন করে ফিরে আসব?’ মানুষ কি ঈশ্বরকে ঠকাবে? কিন্তু তোমরা তো আমাকে ঠকাচ্ছ। তবুও তোমরা বলছ, ‘আমরা তোমাকে কি করে ঠকাচ্ছি?’ দশমাংশ ও দানের ব্যাপারে তোমরা আমাকে ঠকাচ্ছ। তোমরা অভিশাপের তলায় রয়েছ, তবুও তোমাদের গোটা জাতি আমাকে ঠকাচ্ছে। তোমরা তোমাদের সমস্ত দশমাংশ ভাণ্ডার-ঘরে আনবে যাতে আমার ঘরে খাবার থাকে। এই বিষয়ে তোমরা আমাকে পরীক্ষা করে দেখ, আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু আকাশের সব দরজা খুলে তোমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত আশীর্বাদ ঢেলে দিই কি না। আমি গ্রাসকারী পোকাকে বাধা দেব যাতে তারা তোমাদের ফসল খেয়ে না ফেলে; এছাড়া তোমাদের ক্ষেতে আংগুর লতার ফল ঝরে পড়বে না। তখন সমস্ত জাতি তোমাদের ধন্য বলবে, কারণ তোমাদের দেশটা হবে আনন্দদায়ক। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি।” সদাপ্রভু আবার বলছেন, “তোমরা আমার বিরুদ্ধে শক্ত শক্ত কথা বলেছ, কিন্তু তোমরা বলছ, ‘তোমার বিরুদ্ধে আমরা কি বলেছি?’ তোমরা বলেছ, ‘ঈশ্বরের সেবা করা অনর্থক। তাঁর আইন-কানুন অনুসারে কাজ করাতে এবং শোক প্রকাশ করে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভুর সামনে চলাফেরা করাতে আমাদের কি লাভ হল? এখন আমরা গর্বিত লোকদের ধন্য বলছি; হ্যাঁ, অন্যায়কারীরা উন্নতি করছে; তারা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করেও রেহাই পাচ্ছে।’ ” তখন যারা সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করত তারা একে অন্যের সংগে কথাবার্তা বলল এবং সদাপ্রভু তা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। যারা সদাপ্রভুকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করত ও তাঁর বিষয় গভীরভাবে চিন্তা করত তাদের স্মরণ করবার জন্য তাঁর সামনে একটা বই লেখা হল। তাদের বিষয়ে সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “আমার নির্দিষ্ট করা দিনে তারা আমার নিজের বিশেষ সম্পত্তি হবে; তারা আমারই হবে। একজন লোক যেমন তার সেবাকারী ছেলেকে মমতা করে শাস্তি থেকে রেহাই দেয় তেমনি করে আমি তাদের রেহাই দেব। তখন তোমরা সৎ ও দুষ্টের মধ্যে, অর্থাৎ যে আমার সেবা করে আর যে করে না তাদের মধ্যে আমি কিভাবে পার্থক্য করি তা দেখতে পাবে।” সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু বলছেন, “দেখ, সেই দিনটা আসছে, তা চুল্লীর আগুনের মত জ্বলবে। সেই দিন সমস্ত গর্বিত লোক ও অন্যায়কারীরা নাড়ার মত হবে এবং পুড়ে যাবে। একটা শিকড় বা একটা ডালও বাকী থাকবে না। কিন্তু তোমরা যারা আমাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় কর তোমাদের উপরে ন্যায়ের সূর্য উঠবে যার আলোর রশ্মিতে থাকবে সুস্থতা। তোমরা বের হয়ে গোয়াল থেকে ছাড়া পাওয়া বাছুরের মত লাফাবে। তারপর তোমরা দুষ্টদের পায়ে মাড়াবে, কারণ যেদিন আমি এই সব কাজ করব সেই দিন তারা হবে তোমাদের পায়ের তলায় পড়া ছাইয়ের মত। আমি সর্বক্ষমতার অধিকারী সদাপ্রভু এই কথা বলছি। “তোমরা আমার দাস মোশির আইন-কানুনের কথা, অর্থাৎ আমি তাকে হোরেবে সমস্ত ইস্রায়েলের জন্য যে সব নিয়ম ও আদেশ দিয়েছিলাম তা মনে কর। “দেখ, সদাপ্রভুর সেই মহৎ ও ভয়ংকর দিন আসবার আগে আমি সদাপ্রভু তোমাদের কাছে নবী এলিয়কে পাঠিয়ে দেব। সে পিতাদের অন্তর তাদের ছেলেমেয়েদের দিকে এবং ছেলেমেয়েদের অন্তর তাদের পিতাদের দিকে ফিরাবে, যেন আমি এসে অভিশাপ দিয়ে দেশকে ধ্বংস না করি।” ॥ভব যীশু খ্রীষ্ট দায়ূদের বংশের এবং দায়ূদ অব্রাহামের বংশের লোক। যীশু খ্রীষ্টের বংশের তালিকা এই: অব্রাহামের ছেলে ইস্‌হাক; ইস্‌হাকের ছেলে যাকোব; যাকোবের ছেলে যিহূদা ও তাঁর ভাইয়েরা; যিহূদার ছেলে পেরস ও সেরহ-তাঁদের মা ছিলেন তামর; পেরসের ছেলে হিষ্রোণ; হিষ্রোণের ছেলে রাম; রামের ছেলে অম্মীনাদব; অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন; নহশোনের ছেলে সল্‌মোন; সল্‌মোনের ছেলে বোয়স-তাঁর মা ছিলেন রাহব; বোয়সের ছেলে ওবেদ-তাঁর মা ছিলেন রূত; ওবেদের ছেলে যিশয়; যিশয়ের ছেলে রাজা দায়ূদ। দায়ূদের ছেলে শলোমন-তাঁর মা ছিলেন ঊরিয়ের বিধবা স্ত্রী; শলোমনের ছেলে রহবিয়াম; রহবিয়ামের ছেলে অবিয়; অবিয়ের ছেলে আসা; আসার ছেলে যিহোশাফট; যিহোশাফটের ছেলে যোরাম; যোরামের ছেলে ঊষিয়; ঊষিয়ের ছেলে যোথম; যোথমের ছেলে আহস; আহসের ছেলে হিষ্কিয়; হিষ্কিয়ের ছেলে মনঃশি; মনঃশির ছেলে আমোন; আমোনের ছেলে যোশিয়; যোশিয়ের ছেলে যিকনিয় ও তাঁর ভাইয়েরা-ইস্রায়েল জাতিকে বাবিল দেশে বন্দী হিসাবে নিয়ে যাবার সময় এঁরা ছিলেন। যিকনিয়ের ছেলে শল্‌টিয়েল-ইস্রায়েল জাতিকে বাবিলে বন্দী করে নিয়ে যাবার পরে এঁর জন্ম হয়েছিল; শল্‌টিয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল; সরুব্বাবিলের ছেলে অবীহূদ; অবীহূদের ছেলে ইলীয়াকীম; ইলীয়াকীমের ছেলে আসোর; আসোরের ছেলে সাদোক; সাদোকের ছেলে আখীম; আখীমের ছেলে ইলীহূদ; ইলীহূদের ছেলে ইলিয়াসর; ইলিয়াসরের ছেলে মত্তন; মত্তনের ছেলে যাকোব; যাকোবের ছেলে যোষেফ-ইনি মরিয়মের স্বামী। এই মরিয়মের গর্ভে যীশু, যাঁকে খ্রীষ্ট বলা হয়, তাঁর জন্ম হয়েছিল। এইভাবে অব্রাহাম থেকে দায়ূদ পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ; দায়ূদ থেকে বাবিলে বন্দী করে নিয়ে যাবার সময় পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ; বাবিলে বন্দী হবার পর থেকে খ্রীষ্ট পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ। যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এইভাবে হয়েছিল। যোষেফের সংগে যীশুর মা মরিয়মের বিয়ের ঠিক হয়েছিল, কিন্তু তাঁরা একসংগে বাস করবার আগেই পবিত্র আত্মার শক্তিতে মরিয়মের গর্ভ হয়েছিলেন। মরিয়মের স্বামী যোষেফ সৎ লোক ছিলেন, কিন্তু তিনি লোকের সামনে মরিয়মকে লজ্জায় ফেলতে চাইলেন না; এইজন্য তিনি গোপনে তাঁকে ছেড়ে দেবেন বলে ঠিক করলেন। যোষেফ যখন এই সব ভাবছিলেন তখন প্রভুর এক দূত স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাঁকে বললেন, “দায়ূদের বংশধর যোষেফ, মরিয়মকে বিয়ে করতে ভয় কোরো না, কারণ তাঁর গর্ভে যিনি জন্মেছে তিনি পবিত্র আত্মার শক্তিতেই জন্মেছেন। তাঁর একটি ছেলে হবে। তুমি তাঁর নাম যীশু রাখবে, কারণ তিনি তাঁর লোকদের তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন।” এই সব হয়েছিল যেন নবীর মধ্য দিয়ে প্রভু এই যে কথা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়: “একজন কুমারী মেয়ে গর্ভবতী হবে, আর তাঁর একটি ছেলে হবে; তাঁর নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল।” এই নামের মানে হল, আমাদের সংগে ঈশ্বর। প্রভুর দূত যোষেফকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন, ঘুম থেকে উঠে তিনি তেমনই করলেন। তিনি মরিয়মকে বিয়ে করলেন, কিন্তু ছেলের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সংগে মিলিত হলেন না। পরে যোষেফ ছেলেটির নাম যীশু রাখলেন। যিহূদিয়া প্রদেশের বৈৎলেহম গ্রামে যীশুর জন্ম হয়েছিল। তখন রাজা ছিলেন হেরোদ। পূর্বদেশ থেকে কয়েকজন পণ্ডিত যিরূশালেমে এসে বললেন, “যিহূদীদের যে রাজা জন্মেছেন তিনি কোথায়? পূর্ব দিকের আকাশে আমরা তাঁর তারা দেখে তাঁকে প্রণাম করতে এসেছি।” এই কথা শুনে রাজা হেরোদ এবং তাঁর সংগে যিরূশালেমের অন্য সকলে অস্থির হয়ে উঠলেন। হেরোদ সমস্ত প্রধান পুরোহিত ও ধর্ম-শিক্ষকদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন মশীহ কোথায় জন্মগ্রহণ করবেন। তাঁরা তাঁকে বললেন, “যিহূদিয়ার বৈৎলেহম গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন, কারণ নবী এই কথা লিখেছেন: যিহূদা দেশের বৈৎলেহম, যিহূদার মধ্যে তুমি কোনমতেই ছোট নও, কারণ তোমার মধ্য থেকেই এমন একজন শাসনকর্তা আসবেন যিনি আমার ইস্রায়েল জাতিকে পরিচালনা করবেন।” তখন হেরোদ সেই পণ্ডিতদের গোপনে ডাকলেন এবং জেনে নিলেন ঠিক কোন্‌ সময়ে তারাটা দেখা গিয়েছিল। তিনি পণ্ডিতদের এই কথা বলে বৈৎলেহমে পাঠিয়ে দিলেন, “আপনারা গিয়ে ভাল করে সেই শিশুটির খোঁজ করুন। তাঁকে খুঁজে পেলে পর আমাকে জানাবেন যেন আমিও গিয়ে তাঁকে প্রণাম করতে পারি।” রাজার কথা শুনে পণ্ডিতেরা চলে গেলেন। তাঁরা পূর্ব দিকে যে তারাটা দেখেছিলেন সেই তারাটা তাঁদের আগে আগে চলল। শিশুটি যেখানে ছিলেন সেই ঘরের উপরে এসে না থামা পর্যন্ত তারাটা চলতেই থাকল। পরে ঈশ্বর স্বপ্নে তাঁদের সাবধান করে দিলেন যেন তাঁরা হেরোদের কাছে ফিরে না যান। তখন তাঁরা অন্য পথে নিজেদের দেশে ফিরে গেলেন। পণ্ডিতেরা চলে যাবার পর প্রভুর এক দূত স্বপ্নে যোষেফকে দেখা দিয়ে বললেন, “ওঠো, ছেলেটি ও তাঁর মাকে নিয়ে মিসর দেশে পালিয়ে যাও আর আমি যতদিন না বলি ততদিন পর্যন্ত সেখানেই থাক, কারণ ছেলেটিকে মেরে ফেলবার জন্য হেরোদ তাঁর খোঁজ করবে।” পণ্ডিতেরা তাঁকে ঠকিয়েছেন দেখে হেরোদ ভীষণ রেগে গেলেন। সেই পণ্ডিতদের কাছ থেকে যে সময়ের কথা তিনি জেনে নিয়েছিলেন সেই সময়ের হিসাব মত দুই বছর ও তার কম বয়সের যত ছেলে বৈৎলেহম ও তাঁর আশেপাশের জায়গাগুলোতে ছিল সকলকে মেরে ফেলবার আদেশ দিলেন। তাতে নবী যিরমিয়ের মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হল: রামায় ভীষণ কান্নাকাটির শব্দ শোনা যাচ্ছে; রাহেল তার সন্তানদের জন্য কাঁদছে, কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না, কারণ তারা আর নেই। হেরোদ মারা যাবার পর প্রভুর এক দূত মিসর দেশে যোষেফকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন, “ওঠো, ছেলেটি এবং তাঁর মাকে নিয়ে ইস্রায়েল দেশে ফিরে যাও। ছেলেটিকে যারা মেরে ফেলতে চেয়েছিল তারা মারা গেছে।” তখন যোষেফ উঠে সেই ছেলেটি ও তাঁর মাকে নিয়ে ইস্রায়েল দেশে গেলেন। যিহূদিয়া প্রদেশে সেই সময় হেরোদের পরে তাঁর ছেলে আর্খিলায় রাজা হয়েছিলেন। এই কথা শুনে যোষেফ সেখানে যেতে ভয় পেলেন। পরে স্বপ্নে আদেশ পেয়ে তিনি গালীল প্রদেশে চলে গেলেন, আর নাসরত নামে একটা গ্রামে গিয়ে বাস করতে লাগলেন। এটা ঘটল যাতে নবীদের মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়: “তাঁকে নাসরতীয় বলে ডাকা হবে।” পরে বাপ্তিস্মদাতা যোহন যিহূদিয়ার মরু-এলাকায় এসে এই বলে প্রচার করতে লাগলেন, “পাপ থেকে মন ফিরাও, কারণ স্বর্গ-রাজ্য কাছে এসে গেছে।” এই যোহনের বিষয়েই নবী যিশাইয় বলেছিলেন, মরু-এলাকায় একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে, “তোমরা প্রভুর পথ ঠিক কর; তাঁর রাস্তা সোজা কর।” যোহন উটের লোমের কাপড় পরতেন এবং তাঁর কোমরে চামড়ার কোমর-বাঁধনি ছিল। তিনি পংগপাল ও বনমধু খেতেন। যিরূশালেম, সমস্ত যিহূদিয়া এবং যর্দন নদীর চারপাশের লোকেরা সেই সময় তাঁর কাছে আসতে লাগল। এই লোকেরা যখন নিজেদের পাপ স্বীকার করল তখন যোহন যর্দন নদীতে তাদের বাপ্তিস্ম দিলেন। পরে যোহন দেখলেন অনেক ফরীশী ও সদ্দূকী বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার জন্য তাঁর কাছে আসছেন। তিনি তাঁদের বললেন, “সাপের বংশধরেরা! ঈশ্বরের যে শাস্তি নেমে আসছে তা থেকে পালিয়ে যাবার এই বুদ্ধি তোমাদের কে দিল? বেশ, তোমরা যে পাপ থেকে মন ফিরিয়েছ তার উপযুক্ত ফল তোমাদের জীবনে দেখাও। তোমরা অব্রাহামের বংশের লোক, এটা নিজেদের মনে বলতে পারবার কথা চিন্তাও কোরো না। আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বর এই পাথরগুলো থেকে অব্রাহামের বংশধর তৈরী করতে পারেন। গাছের গোড়াতে কুড়াল লাগানোই আছে। যে গাছে ভাল ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হবে। মন ফিরিয়েছ বলে আমি তোমাদের জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি, কিন্তু আমার পরে যিনি আসছেন তিনি আমার চেয়ে শক্তিশালী। আমি তাঁর জুতা বইবারও যোগ্য নই। তিনি পবিত্র আত্মা ও আগুনে তোমাদের বাপ্তিস্ম দেবেন। কুলা তাঁর হাতেই আছে এবং তাঁর ফসল মাড়াবার জায়গা তিনি ভাল করেই পরিষ্কার করবেন। তিনি তাঁর ফসল গোলাতে জমা করবেন, কিন্তু যে আগুন কখনও নেভে না সেই আগুনে তুষ পুড়িয়ে ফেলবেন।” সেই সময় যীশু বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার জন্য গালীল থেকে যর্দন নদীর ধারে যোহনের কাছে আসলেন। যোহন কিন্তু তাঁকে এই কথা বলে বাধা দিতে চেষ্টা করলেন, “আমারই বরং আপনার কাছে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করা দরকার; আর আপনি কিনা আসছেন আমার কাছে!” তখন যীশু তাঁকে বললেন, “কিন্তু এবার এই রকমই হোক, কারণ ঈশ্বরের ইচ্ছা এইভাবেই আমাদের পূর্ণ করা উচিত।” তখন যোহন রাজী হলেন। বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার পর যীশু জল থেকে উঠে আসবার সংগে সংগেই তাঁর সামনে আকাশ খুলে গেল। তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে কবুতরের মত হয়ে তাঁর উপরে নেমে আসতে দেখলেন। তখন স্বর্গ থেকে বলা হল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এঁর উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট।” এর পরে পবিত্র আত্মা যীশুকে মরু-এলাকায় নিয়ে গেলেন যেন শয়তান যীশুকে লোভ দেখিয়ে পাপে ফেলবার চেষ্টা করতে পারে। সেখানে চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত উপবাস করবার পর যীশুর খিদে পেল। তখন শয়তান এসে তাঁকে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে এই পাথরগুলোকে রুটি হয়ে যেতে বল।” যীশু উত্তরে বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখের প্রত্যেকটি কথাতেই বাঁচে।” তখন শয়তান যীশুকে পবিত্র শহর যিরূশালেমে নিয়ে গেল এবং উপাসনা-ঘরের চূড়ার উপর তাঁকে দাঁড় করিয়ে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে লাফ দিয়ে নীচে পড়, কারণ পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ঈশ্বর তাঁর দূতদের তোমার বিষয়ে আদেশ দেবেন; তাঁরা তোমাকে হাত দিয়ে ধরে ফেলবেন যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে।” যীশু শয়তানকে বললেন, “আবার এই কথাও লেখা আছে, তোমার প্রভু ঈশ্বরকে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।” তখন শয়তান আবার তাঁকে খুব উঁচু একটা পাহাড়ে নিয়ে গেল এবং জগতের সমস্ত রাজ্য ও তাঁদের জাঁকজমক দেখিয়ে বলল, “তুমি যদি মাটিতে পড়ে আমাকে প্রণাম করে তোমার প্রভু বলে স্বীকার কর তবে এই সবই আমি তোমাকে দেব।” তখন যীশু তাকে বললেন, “দূর হও, শয়তান। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, তুমি তোমার প্রভু ঈশ্বরকেই ভক্তি করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে।” তখন শয়তান তাঁকে ছেড়ে চলে গেল, আর স্বর্গদূতেরা এসে তাঁর সেবা-যত্ন করতে লাগলেন। এটা হল যাতে নবী যিশাইয়ের মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়: সবূলূন ও নপ্তালি এলাকার, সমুদ্রের দিকের, যর্দনের অন্য পারের এবং অযিহূদীদের গালীলের যে লোকেরা অন্ধকারে বাস করে, তারা মহা আলো দেখতে পাবে। যারা ঘন অন্ধকারের দেশে বাস করে, তাদের কাছে আলো প্রকাশিত হবে। সেই সময় থেকে যীশু এই বলে প্রচার করতে লাগলেন, “পাপ থেকে মন ফিরাও, কারণ স্বর্গ-রাজ্য কাছে এসে গেছে।” যীশু গালীল সাগরের পার দিয়ে যাবার সময় শিমোন, যাঁকে পিতর বলা হয় আর তাঁর ভাই আন্দ্রিয়কে দেখতে পেলেন। তাঁরা সাগরে জাল ফেলছিলেন, কারণ তাঁরা ছিলেন জেলে। যীশু তাঁদের বললেন, “আমার সংগে চল, আমি তোমাদের মানুষ-ধরা জেলে করব।” তখনই তাঁরা জাল ফেলে রেখে যীশুর সংগে গেলেন। সেখান থেকে এগিয়ে গিয়ে তিনি যাকোব ও যোহন নামে অন্য দুই ভাইকে দেখতে পেলেন। তাঁরা ছিলেন সিবদিয়ের ছেলে। তাঁদের বাবা সিবদিয়ের সংগে নৌকায় বসে তাঁরা জাল ঠিক করছিলেন। যীশু সেই দুই ভাইকেও ডাকলেন। তাঁরা তখনই তাঁদের নৌকা ও বাবাকে ছেড়ে যীশুর সংগে গেলেন। গালীল প্রদেশের সমস্ত জায়গায় ঘুরে ঘুরে যিহূদীদের ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-ঘরে যীশু শিক্ষা দিতে লাগলেন। এছাড়া তিনি স্বর্গ-রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে এবং লোকদের সব রকম রোগ ভাল করতে লাগলেন। সমস্ত সিরিয়া দেশে তাঁর কথা ছড়িয়ে পড়ল। যে সব লোকেরা নানা রকম রোগে ও ভীষণ যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিল, যাদের মন্দ আত্মায় ধরেছিল এবং যারা মৃগী ও অবশ-রোগে ভুগছিল, লোকেরা তাদের যীশুর কাছে আনল। তিনি তাদের সবাইকে সুস্থ করলেন। গালীল, দিকাপলি, যিরূশালেম, যিহূদিয়া এবং যর্দনের অন্য পার থেকে অনেক লোক যীশুর পিছনে পিছনে চলল। যীশু অনেক লোক দেখে পাহাড়ের উপর উঠলেন। তিনি বসলে পর তাঁর শিষ্যেরা তাঁর কাছে আসলেন। তখন তিনি শিষ্যদের এই বলে শিক্ষা দিতে লাগলেন: “অন্তরে যারা নিজেদের গরীব মনে করে তারা ধন্য, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাদেরই। যারা দুঃখ করে তারা ধন্য, কারণ তারা সান্ত্বনা পাবে। যাদের স্বভাব নম্র তারা ধন্য, কারণ পৃথিবী তাদেরই হবে। যারা মনে-প্রাণে ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলতে চায় তারা ধন্য, কারণ তাদের সেই ইচ্ছা পূর্ণ হবে। দয়ালু যারা তারা ধন্য, কারণ তারা দয়া পাবে। যাদের অন্তর খাঁটি তারা ধন্য, কারণ তারা ঈশ্বরকে দেখতে পাবে। লোকদের জীবনে শান্তি আনবার জন্য যারা পরিশ্রম করে তারা ধন্য, কারণ ঈশ্বর তাদের নিজের সন্তান বলে ডাকবেন। ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলতে গিয়ে যারা অত্যাচার সহ্য করে তারা ধন্য, কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাদেরই। “তোমরা ধন্য, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদের অপমান করে ও অত্যাচার করে এবং মিথ্যা করে তোমাদের নামে সব রকম মন্দ কথা বলে। তোমরা আনন্দ কোরো ও খুশী হোয়ো, কারণ স্বর্গে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার আছে। তোমাদের আগে যে নবীরা ছিলেন লোকে তাঁদেরও এইভাবে অত্যাচার করত। “তোমরা পৃথিবীর লবণ, কিন্তু যদি লবণের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় তবে কেমন করে তা আবার নোন্‌তা করা যাবে? সেই লবণ আর কোন কাজে লাগে না। তা কেবল বাইরে ফেলে দেবার ও লোকের পায়ে মাড়াবার উপযুক্ত হয়। “তোমরা জগতের আলো। পাহাড়ের উপরের শহর লুকানো থাকতে পারে না। কেউ বাতি জ্বেলে ঝুড়ির নীচে রাখে না কিন্তু বাতিদানের উপরেই রাখে। এতে ঘরের সমস্ত লোকই আলো পায়। সেইভাবে তোমাদের আলো লোকদের সামনে জ্বলুক, যেন তারা তোমাদের ভাল কাজ দেখে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে। “এই কথা মনে কোরো না, আমি মোশির আইন-কানুন আর নবীদের লেখা বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আকাশ ও পৃথিবী শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না আইন-কানুনের সমস্ত কথা সফল হয় ততদিন সেই আইন-কানুনের এক বিন্দু কি এক মাত্রা মুছে যাবে না। তাই আদেশগুলোর মধ্যে ছোট একটা আদেশও যে কেউ অমান্য করে এবং লোককে তা অমান্য করতে শিক্ষা দেয় তাকে স্বর্গ-রাজ্যে সবচেয়ে ছোট বলা হবে। কিন্তু যে কেউ সেই আদেশগুলো পালন করে ও শিক্ষা দেয় তাকে স্বর্গ-রাজ্যে বড় বলা হবে। আমি তোমাদের বলছি, ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীদের ধার্মিকতার চেয়ে তোমাদের যদি বেশী কিছু না থাকে তবে তোমরা কোনমতেই স্বর্গ-রাজ্যে ঢুকতে পারবে না। “তোমরা শুনেছ, আগেকার লোকদের কাছে এই কথা বলা হয়েছে, ‘খুন কোরো না; যে খুন করে সে বিচারের দায়ে পড়বে।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ তার ভাইয়ের উপর রাগ করে সে বিচারের দায়ে পড়বে। যে কেউ তার ভাইকে বলে, ‘তুমি অপদার্থ,’ সে মহাসভার বিচারের দায়ে পড়বে। আর যে তার ভাইকে বলে, ‘তুমি বিবেকহীন,’ সে নরকের আগুনের দায়ে পড়বে। “সেইজন্য ঈশ্বরের উদ্দেশে বেদীর উপরে তোমার দান উৎসর্গ করবার সময় যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কিছু বলবার আছে, তবে তোমার দান সেই বেদীর সামনে রেখে চলে যাও। আগে তোমার ভাইয়ের সংগে আবার মিলিত হও এবং পরে এসে তোমার দান উৎসর্গ কর। “কেউ তোমার বিরুদ্ধে মকদ্দমা করলে আদালতে যাবার আগেই তার সংগে তাড়াতাড়ি মীমাংসা করে ফেল। তা না হলে সে তোমাকে বিচারকের হাতে দেবে, আর বিচারক তোমাকে পুলিশের হাতে দেবে, আর পুলিশ তোমাকে জেলে দেবে। আমি তোমাকে সত্যি বলছি, শেষ পয়সাটা না দেওয়া পর্যন্ত তুমি সেখান থেকে কিছুতেই ছাড়া পাবে না। “তোমরা শুনেছ, এই কথা বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচার কোরো না।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ কোন স্ত্রীলোকের দিকে কামনার চোখে তাকায় সে তখনই মনে মনে তার সংগে ব্যভিচার করল।” “তোমার ডান চোখ যদি তোমাকে পাপের পথে টানে তবে তা উপ্‌ড়ে দূরে ফেলে দাও। তোমার সমস্ত দেহ নরকে পড়বার চেয়ে বরং তার একটা অংশ নষ্ট হওয়া তোমার পক্ষে ভাল। যদি তোমার ডান হাত তোমাকে পাপের পথে টানে তবে তা কেটে ফেলে দাও। তোমার সমস্ত দেহ নরকে যাওয়ার চেয়ে বরং একটা অংশ নষ্ট হওয়া তোমার পক্ষে ভাল। “আবার বলা হয়েছে, ‘যে কেউ তার স্ত্রীকে ছেড়ে দেয় সে তাকে ত্যাগ-পত্র দিক।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ ব্যভিচারের দোষ ছাড়া অন্য কোন কারণে স্ত্রীকে ছেড়ে দেয় সে তাকে ব্যভিচারিণী করে তোলে। আর যাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেই স্ত্রীকে যে বিয়ে করে সেও ব্যভিচার করে। “আবার তোমরা শুনেছ, আগেকার লোকদের কাছে বলা হয়েছে, ‘মিথ্যা শপথ কোরো না, বরং প্রভুর উদ্দেশে তোমার সমস্ত শপথ পালন কোরো।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, একেবারেই শপথ কোরো না। স্বর্গের নামে কোরো না, কারণ তা ঈশ্বরের সিংহাসন। পৃথিবীর নামে কোরো না, কারণ তা তাঁর পা রাখবার জায়গা। যিরূশালেমের নামে কোরো না, কারণ তা মহান রাজার শহর। তোমার মাথার নামে কোরো না, কারণ তার একটা চুল সাদা কি কালো করবার ক্ষমতা তোমার নেই। তোমাদের কথার ‘হ্যাঁ’ যেন ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’ যেন ‘না’ হয়; এর বেশী যা, তা শয়তানের কাছ থেকে আসে। “তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছে, ‘চোখের বদলে চোখ এবং দাঁতের বদলে দাঁত।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই কোরো না; বরং যে কেউ তোমার ডান গালে চড় মারে তাকে অন্য গালেও চড় মারতে দিয়ো। যে কেউ তোমার জামা নেবার জন্য মামলা করতে চায় তাকে তোমার চাদরও নিতে দিয়ো। যে কেউ তোমাকে তার বোঝা নিয়ে এক মাইল যেতে বাধ্য করে তার সংগে দুই মাইল যেয়ো। যে তোমার কাছে কিছু চায় তাকে দিয়ো, আর যে তোমার কাছে ধার চায় তাকে দিতে অস্বীকার কোরো না। “তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিবেশীকে ভালবেসো এবং শত্রুকে ঘৃণা কোরো।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের শত্রুদেরও ভালবেসো। যারা তোমাদের অত্যাচার করে তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো, যেন লোকে দেখতে পায় তোমরা সত্যিই তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান। তিনি তো ভাল-মন্দ সকলের উপরে তাঁর সূর্য উঠান এবং সৎ ও অসৎ লোকদের উপরে বৃষ্টি দেন। যারা তোমাদের ভালবাসে কেবল তাদেরই যদি তোমরা ভালবাস তবে তোমরা কি পুরস্কার পাবে? কর্‌- আদায়কারীরাও কি তা-ই করে না? আর যদি তোমরা কেবল তোমাদের নিজেদের লোকদেরই শুভেচ্ছা জানাও তবে অন্যদের চেয়ে বেশী আর কি করছ? অযিহূদীরাও কি তা-ই করে না? এইজন্য বলি, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা যেমন খাঁটি তোমরাও তেমনি খাঁটি হও। “সাবধান, লোককে দেখাবার জন্য ধর্মকর্ম কোরো না; যদি কর তবে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার কাছ থেকে কোন পুরস্কার পাবে না। “এইজন্য যখন তুমি গরীবদের কিছু দাও তখন ভণ্ডদের মত কোরো না। তারা তো লোকদের প্রশংসা পাবার জন্য সমাজ-ঘরে এবং পথে পথে ঢাক- ঢোল বাজিয়ে ভিক্ষা দেয়। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে। কিন্তু তুমি যখন গরীবদের কিছু দাও তখন তোমার ডান হাত কি করছে তা তোমার বাঁ হাতকে জানতে দিয়ো না, যেন তোমার দান করা গোপনে হয়। তাহলে তোমার পিতা, যিনি গোপনে সব কিছু দেখেন, তিনিই তোমাকে পুরস্কার দেবেন। “তোমরা যখন প্রার্থনা কর তখন ভণ্ডদের মত কোরো না, কারণ তারা লোকদের কাছে নিজেদের দেখাবার জন্য সমাজ-ঘরে ও রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতে ভালবাসে। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে। কিন্তু তুমি যখন প্রার্থনা কর তখন ভিতরের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ কোরো এবং তোমার পিতা, যাঁকে দেখা না গেলেও উপস্থিত আছেন, তাঁর কাছে প্রার্থনা কোরো। তোমার পিতা, যিনি গোপন সব কিছু দেখেন, তিনিই তোমাকে পুরস্কার দেবেন। “যখন তোমরা প্রার্থনা কর তখন অযিহূদীদের মত অর্থহীন কথা বার বার বোলো না। অযিহূদীরা মনে করে, বেশী কথা বললেই ঈশ্বর তাদের প্রার্থনা শুনবেন। তাদের মত কোরো না, কারণ তোমাদের পিতার কাছে চাইবার আগেই তিনি জানেন তোমাদের কি দরকার। এইজন্য তোমরা এইভাবে প্রার্থনা কোরো: হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক। তোমার রাজ্য আসুক। তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক। যে খাবার আমাদের দরকার তা আজ আমাদের দাও। যারা আমাদের উপর অন্যায় করে, আমরা যেমন তাদের ক্ষমা করেছি তেমনি তুমিও আমাদের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা কর। আমাদের তুমি পরীক্ষায় পড়তে দিয়ো না, বরং শয়তানের হাত থেকে রক্ষা কর। তোমরা যদি অন্যদের দোষ ক্ষমা কর তবে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা তোমাদেরও ক্ষমা করবেন। কিন্তু তোমরা যদি অন্যদের ক্ষমা না কর তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও ক্ষমা করবেন না। “তোমরা যখন উপবাস কর তখন ভণ্ডদের মত মুখ কালো করে রেখো না। তারা যে উপবাস করছে তা লোকদের দেখাবার জন্য তারা মাথায় ও মুখে ছাই মেখে বেড়ায়। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে। কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর তখন মাথায় তেল দিয়ো ও মুখ ধুয়ো, যেন অন্যেরা জানতে না পারে যে, তুমি উপবাস করছ। তাহলে তোমার পিতা, যিনি দেখা না গেলেও উপস্থিত আছেন, কেবল তিনিই তা দেখতে পাবেন। তোমার পিতা, যিনি গোপন সব কিছু দেখেন, তিনিই তোমাকে পুরস্কার দেবেন। “এই পৃথিবীতে তোমরা নিজেদের জন্য ধন-সম্পদ জমা কোরো না। এখানে মরচে ধরে ও পোকায় নষ্ট করে এবং চোর সিঁদ কেটে চুরি করে। কিন্তু স্বর্গে মরচেও ধরে না, পোকায় নষ্টও করে না এবং চোর সিঁদ কেটে চুরিও করে না। তাই স্বর্গে নিজেদের জন্য ধন জমা কর, কারণ তোমার ধন যেখানে থাকবে তোমার মনও সেখানে থাকবে। “চোখ দেহের প্রদীপ। সেইজন্য তোমার চোখ যদি ভাল হয় তবে তোমার সমস্ত দেহই আলোতে পূর্ণ হবে। কিন্তু তোমার চোখ যদি মন্দ হয় তবে তোমার সমস্ত দেহ অন্ধকারে পূর্ণ হবে। তোমার মধ্যে যে আলো আছে তা যদি আসলে অন্ধকারই হয় তবে সেই অন্ধকার কি ভীষণ! “কেউই দুই কর্তার সেবা করতে পারে না, কারণ সে একজনকে ঘৃণা করবে ও অন্যজনকে ভালবাসবে। সে একজনের উপরে মনোযোগ দেবে ও অন্যজনকে তুচ্ছ করবে। ঈশ্বর এবং ধন-সম্পত্তি এই দু’য়ের সেবা তোমরা একসংগে করতে পার না। “এইজন্য আমি তোমাদের বলছি, কি খাবে বলে বেঁচে থাকবার বিষয়ে কিম্বা কি পরবে বলে দেহের বিষয়ে চিন্তা কোরো না। প্রাণটা কেবল খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপার নয়, আর দেহটা কেবল কাপড়- চোপড়ের ব্যাপার নয়। “আকাশের পাখীদের দিকে তাকিয়ে দেখ; তারা বীজ বোনে না, কাটে না, গোলাঘরে জমাও করে না, আর তবুও তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা তাদের খাইয়ে থাকেন। তোমরা কি তাদের থেকে আরও মূল্যবান নও? তোমাদের মধ্যে কে চিন্তা-ভাবনা করে নিজের আয়ু এক ঘণ্টা বাড়াতে পারে? “কাপড়-চোপড়ের জন্য কেন চিন্তা কর? মাঠের ফুলগুলোর কথা ভেবে দেখ সেগুলো কেমন করে বেড়ে ওঠে। তারা পরিশ্রম করে না, সুতাও কাটে না। কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, শলোমন রাজা এত জাঁকজমকের মধ্যে থেকেও এগুলোর একটারও মত তিনি নিজেকে সাজাতে পারেন নি। মাঠের যে ঘাস আজ আছে আর কাল চুলায় ফেলে দেওয়া হবে, তা যখন ঈশ্বর এইভাবে সাজান তখন ওহে অল্প বিশ্বাসীরা, তিনি যে তোমাদের নিশ্চয়ই সাজাবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এইজন্য ‘কি খাব’ বা ‘কি পরব’ বলে চিন্তা কোরো না। অযিহূদীরাই এই সব বিষয়ের জন্য ব্যস্ত হয়; তা ছাড়া তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা তো জানেন যে, এই সব জিনিস তোমাদের দরকার আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে ও তাঁর ইচ্ছামত চলবার জন্য ব্যস্ত হও। তাহলে ঐ সব জিনিসও তোমরা পাবে। কালকের বিষয় চিন্তা কোরো না; কালকের চিন্তা কালকের উপর ছেড়ে দাও। দিনের কষ্ট দিনের জন্য যথেষ্ট। “তোমরা অন্যের দোষ ধরে বেড়িয়ো না যেন তোমাদেরও দোষ ধরা না হয়, কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের দোষ ধর সেইভাবে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে, আর যেভাবে তোমরা মেপে দাও সেইভাবে তোমাদের জন্যও মাপা হবে। “তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে কেবল তা-ই দেখছ, অথচ তোমার নিজের চোখের মধ্যে যে কড়িকাঠ আছে তা লক্ষ্য করছ না কেন? যখন তোমার নিজের চোখেই কড়িকাঠ রয়েছে তখন কি করে তোমার ভাইকে এই কথা বলছ, ‘এস, তোমার চোখ থেকে কুটাটা বের করে দিই’? ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠটা বের করে ফেল, তাতে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটাটা বের করবার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে। “যা পবিত্র তা কুকুরকে দিয়ো না। শূকরের সামনে তোমাদের মুক্তা ছড়ায়ো না। হয়তো তারা সেগুলো তাদের পায়ের তলায় মাড়াবে এবং ফিরে তোমাদের টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলবে। “চাও, তোমাদের দেওয়া হবে; খোঁজ কর, পাবে; দরজায় ঘা দাও, তোমাদের জন্য খোলা হবে। যারা চায় তারা প্রত্যেকে পায়; যে খোঁজ করে সে পায়; আর যে দরজায় ঘা দেয় তার জন্য দরজা খোলা হয়। তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে যে, তার ছেলে রুটি চাইলে তাকে পাথর দেবে? কিম্বা মাছ চাইলে সাপ দেবে? তোমরা মন্দ হয়েও যদি নিজেদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে যারা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার কাছে চায় তিনি যে তাদের ভাল ভাল জিনিস দেবেন এটা কত না নিশ্চয়! তোমরা অন্য লোকদের কাছ থেকে যে রকম ব্যবহার পেতে চাও তোমরাও তাদের সংগে সেই রকম ব্যবহার কোরো। এটাই হল মোশির আইন-কানুন ও নবীদের শিক্ষার মূল কথা। “সরু দরজা দিয়ে ঢোকো, কারণ যে পথ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তার দরজাও বড় এবং রাস্তাও চওড়া। অনেকেই তার মধ্য দিয়ে ঢোকে। কিন্তু যে পথ জীবনের দিকে নিয়ে যায় তার দরজাও সরু, পথও সরু। খুব কম লোকই তা খুঁজে পায়। “ভণ্ড নবীদের বিষয়ে সাবধান হও। তারা তোমাদের কাছে ভেড়ার চেহারায় আসে, অথচ ভিতরে তারা রাক্ষুসে নেকড়ে বাঘের মত। তাদের জীবনে যে ফল দেখা যায় তা দিয়েই তোমরা তাদের চিনতে পারবে। কাঁটাঝোপে কি আংগুর ফল কিম্বা শিয়ালকাঁটায় কি ডুমুর ফল ধরে? ঠিক সেইভাবে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফলই ধরে আর খারাপ গাছে খারাপ ফলই ধরে। ভাল গাছে খারাপ ফল এবং খারাপ গাছে ভাল ফল ধরতে পারে না। যে গাছে ভাল ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হয়। এইজন্য বলি, ভণ্ড নবীদের জীবনে যে ফল দেখা যায় তা দিয়েই তোমরা তাদের চিনতে পারবে। “যারা আমাকে ‘প্রভু, প্রভু’ বলে তারা প্রত্যেকে যে স্বর্গ-রাজ্যে ঢুকতে পারবে তা নয়, কিন্তু আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা যে পালন করে সে-ই ঢুকতে পারবে। সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে, ‘প্রভু, প্রভু, তোমার নামে কি আমরা নবী হিসাবে কথা বলি নি? তোমার নামে কি মন্দ আত্মা ছাড়াই নি? তোমার নামে কি অনেক আশ্চর্য কাজ করি নি?’ তখন আমি সোজাসুজিই তাদের বলব, ‘আমি তোমাদের চিনি না। দুষ্টের দল! আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও।’ “সেইজন্য বলি, যে কেউ আমার এই সমস্ত কথা শুনে তা পালন করে সে এমন একজন বুদ্ধিমান লোকের মত, যে পাথরের উপরে তার ঘর তৈরী করল। পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা আসল, ঝড় বইল এবং সেই ঘরের উপরে আঘাত করল; কিন্তু সেই ঘরটা পড়ল না কারণ তা পাথরের উপরে তৈরী করা হয়েছিল। যে কেউ আমার এই সমস্ত কথা শুনে তা পালন না করে সে এমন একজন মূর্খ লোকের মত, যে বালির উপরে তার ঘর তৈরী করল। পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা আসল, ঝড় বইল এবং সেই ঘরের উপরে আঘাত করল; তাতে ঘরটা পড়ে গেল। কি ভীষণ ভাবেই না সেই ঘরটা পড়ে গেল!” যীশু যখন কথা বলা শেষ করলেন তখন লোকেরা তাঁর শিক্ষায় আশ্চর্য হয়ে গেল, কারণ তিনি ধর্ম-শিক্ষকদের মত শিক্ষা দিচ্ছিলেন না, বরং যাঁর অধিকার আছে সেই রকম লোকের মতই শিক্ষা দিচ্ছিলেন। যীশু যখন পাহাড় থেকে নেমে আসলেন তখন অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলল। সেই সময় একজন চর্মরোগী এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু, আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ভাল করতে পারেন।” যীশু হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই, তুমি শুচি হও।” তখনই লোকটির চর্মরোগ ভাল হয়ে গেল। যীশু তাকে বললেন, “দেখ, কাউকে এই কথা বোলো না, বরং পুরোহিতের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও, আর মোশি যা আদেশ করেছেন সেই মত দান উৎসর্গ কর। এতে লোকদের কাছে প্রমাণ হবে তুমি ভাল হয়েছ।” পরে যীশু কফরনাহূম শহরে ঢুকলেন। তখন একজন রোমীয় শত- সেনাপতি তাঁর কাছে এসে অনুরোধ করে বললেন, “প্রভু, আমার দাস ঘরে বিছানায় পড়ে আছে। সে অবশ-রোগে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।” যীশু তাঁকে বললেন, “আমি গিয়ে তাকে ভাল করব।” সেই সেনাপতি যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি যে আমার বাড়ীতে ঢোকেন এমন যোগ্য আমি নই। কেবল মুখে বলুন, তাতেই আমার দাস ভাল হয়ে যাবে। আমি এই কথা জানি কারণ আমাকেও অন্যের কথামত চলতে হয় এবং সৈন্যেরা আমার কথামত চলে। আমি একজনকে ‘যাও’ বললে সে যায়, অন্যজনকে ‘এস’ বললে সে আসে। আমার দাসকে ‘এটা কর’ বললে সে তা করে।” যীশু এই কথা শুনে আশ্চর্য হলেন এবং যারা তাঁর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল তাদের বললেন, “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস কারও মধ্যে আমি দেখি নি। আমি আপনাদের বলছি যে, পূর্ব ও পশ্চিম থেকে অনেকে আসবে এবং অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের সংগে স্বর্গ-রাজ্যে খেতে বসবে। কিন্তু যাদের স্বর্গ-রাজ্যে থাকবার কথা তাদের বাইরের অন্ধকারে ফেলে দেওয়া হবে। সেখানে লোকেরা কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে।” পরে যীশু সেই সেনাপতিকে বললেন, “আপনি যান। আপনি যেমন বিশ্বাস করেছেন তেমনই হোক।” ঠিক তখনই তাঁর দাস ভাল হয়ে গেল। এর পরে যীশু পিতরের বাড়ীতে গিয়ে দেখলেন, পিতরের শাশুড়ীর জ্বর হয়েছে এবং তিনি শুয়ে আছেন। যীশু তাঁর হাত ছুঁলেন আর তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল। তখন তিনি উঠে যীশুর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন। সন্ধ্যা হলে পর লোকেরা মন্দ আত্মায় পাওয়া অনেককে যীশুর কাছে নিয়ে আসল। তিনি মুখের কথাতেই সেই আত্মাদের ছাড়ালেন আর যারা অসুস্থ ছিল তাদের সবাইকে সুস্থ করলেন। এই সব ঘটল যাতে নবী যিশাইয়ের মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়: তিনি আমাদের সমস্ত দুর্বলতা তুলে নিলেন, আর আমাদের রোগ দূর করলেন। যীশু নিজের চারদিকে অনেক লোকের ভিড় দেখে শিষ্যদের সাগরের অন্য পারে যাবার আদেশ দিলেন। একজন ধর্ম-শিক্ষক তখন যীশুর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আপনি যেখানে যাবেন আমিও আপনার সংগে সেখানে যাব।” যীশু তাঁকে বললেন, “শিয়ালের গর্ত আছে এবং পাখীর বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মাথা রাখবার জায়গা কোথাও নেই।” শিষ্যদের মধ্যে আর একজন এসে তাঁকে বললেন, “গুরু, আগে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসতে দিন।” যীশু তাঁকে বললেন, “মৃতেরাই তাদের মৃতদের কবর দিক, কিন্তু তুমি আমার সংগে এস।” পরে যীশু একটা নৌকাতে উঠলেন এবং তাঁর শিষ্যেরা তাঁর সংগে গেলেন। হঠাৎ সাগরে ভীষণ ঝড় উঠল, আর তাতে নৌকার উপর ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল। যীশু কিন্তু ঘুমাচ্ছিলেন। তখন শিষ্যেরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “প্রভু, বাঁচান; আমরা যে মরলাম!” তখন তিনি তাঁদের বললেন, “অল্প-বিশ্বাসীরা, কেন তোমরা ভয় পাচ্ছ?” এর পরে তিনি উঠে বাতাস ও সাগরকে ধমক দিলেন। তখন সব কিছু খুব শান্ত হয়ে গেল। এতে শিষ্যেরা আশ্চর্য হয়ে বললেন, “ইনি কি রকম লোক যে, বাতাস এবং সাগরও তাঁর কথা শোনে!” পরে যীশু সাগরের অন্য পারে গাদারীয়দের এলাকায় গেলেন। তখন মন্দ আত্মায় পাওয়া দু’জন লোক কবরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর কাছে আসল। তারা এমন ভয়ঙ্কর ছিল যে, কেউই সেই পথ দিয়ে যেতে পারত না। তারা চিৎকার করে বলল, “হে ঈশ্বরের পুত্র, আমাদের সংগে আপনার কি দরকার? সময় না হতেই কি আপনি আমাদের যন্ত্রণা দিতে এখানে এসেছেন?” তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু দূরে খুব বড় এক পাল শূকর চরে বেড়াচ্ছিল। মন্দ আত্মারা যীশুকে অনুরোধ করে বলল, “আপনি যদি আমাদের দূর করেই দিতে চান তবে ঐ শূকরের পালের মধ্যেই পাঠিয়ে দিন।” যীশু তাদের বললেন, “তা-ই যাও।” তখন তারা বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে গেল। তাতে সেই শূকরের পাল ঢালু পার দিয়ে জোরে দৌড়ে গেল এবং সাগরের জলে ডুবে মরল। যারা সেই পাল চরাচ্ছিল তারা তখন দৌড়ে গ্রামে গিয়ে সব খবর জানাল। বিশেষ করে সেই মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকদের বিষয়ে তারা সবাইকে বলল। তখন গ্রামের সব লোক বের হয়ে যীশুর সংগে দেখা করতে গেল। যীশুর সংগে দেখা হলে পর তারা তাঁকে অনুরোধ করল যেন তিনি তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে যীশু নৌকায় উঠে সাগর পার হয়ে নিজের শহরে আসলেন। লোকেরা তখন বিছানায় পড়ে থাকা একজন অবশ-রোগীকে তাঁর কাছে আনল। সেই লোকদের বিশ্বাস দেখে যীশু সেই রোগীকে বললেন, “সাহস কর। তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।” এতে কয়েকজন ধর্ম-শিক্ষক মনে মনে বলতে লাগলেন, “এই লোকটা ঈশ্বরকে অপমান করছে।” যীশু তাঁদের মনের চিন্তা জেনে বললেন, “আপনারা মনে মনে মন্দ চিন্তা করছেন কেন? কোন্‌টা বলা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল,’ না ‘তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও’? আপনারা যেন জানতে পারেন এই পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করবার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে”-এই পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশ- রোগীকে বললেন, “ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে বাড়ী যাও।” তখন সে উঠে তার বাড়ীতে চলে গেল। লোকে এই ঘটনা দেখে ভয় পেল, আর ঈশ্বর মানুষকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন বলে ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল। যীশু যখন সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন তখন পথে মথি নামে একজন লোককে কর্‌ আদায় করবার ঘরে বসে থাকতে দেখলেন। যীশু তাঁকে বললেন, “এস, আমার শিষ্য হও।” মথি তখনই উঠে তাঁর সংগে গেলেন। এর পরে যীশু মথির বাড়ীতে খেতে বসলেন। তখন অনেক কর্‌- আদায়কারী ও খারাপ লোক এসে যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সংগে খেতে বসল। তা দেখে ফরীশীরা যীশুর শিষ্যদের বললেন, “তোমাদের গুরু কর্‌-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করেন কেন?” এই কথা শুনে যীশু বললেন, “যারা সুস্থ আছে তাদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই, বরং অসুস্থদের জন্যই দরকার আছে। ‘আমি দয়া দেখতে চাই, পশু-উৎসর্গ নয়’-পবিত্র শাস্ত্রের এই কথার মানে কি, তা গিয়ে খুঁজে বের করুন। যারা ধার্মিক তাদের আমি ডাকতে আসি নি, বরং পাপীদেরই ডাকতে এসেছি।” পরে যোহনের শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে বললেন, “আমরা ও ফরীশীরা এত উপবাস করি, কিন্তু আপনার শিষ্যেরা উপবাস করেন না কেন?” যীশু তাঁদের বললেন, “বর সংগে থাকতে কি বরের সংগের লোকেরা দুঃখ প্রকাশ করতে পারে? কিন্তু সময় আসছে যখন বরকে তাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই সময় তারা উপবাস করবে। “কেউ পুরানো জামায় নতুন কাপড়ের তালি দেয় না, কারণ পরে সেই পুরানো কাপড় থেকে নতুন তালিটা ছিঁড়ে আসে আর তাতে সেই ছেঁড়াটা আরও বড় হয়। পুরানো চামড়ার থলিতে কেউ টাটকা আংগুর-রস রাখে না। রাখলে থলিগুলো ফেটে গিয়ে সেই রস পড়ে যায় আর থলিগুলোও নষ্ট হয়। লোকে নতুন চামড়ার থলিতেই টাটকা আংগুর-রস রাখে; তাতে দু’টাই রক্ষা পায়।” যীশু লোকদের যখন এই সব কথা বলছিলেন তখন একজন যিহূদী নেতা তাঁর কাছে আসলেন এবং তাঁকে প্রণাম করে বললেন, “আমার মেয়েটা এইমাত্র মারা গেছে। কিন্তু আপনি এসে তার উপর হাত রাখুন, তাতে সে বেঁচে উঠবে।” তখন যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা উঠে তাঁর সংগে গেলেন। সেই সময় একজন স্ত্রীলোক পিছন থেকে যীশুর কাছে এসে তাঁর চাদরের কিনারা ছুঁলো। স্ত্রীলোকটি বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। সে মনে মনে ভাবছিল, যদি সে কেবল তাঁর কাপড়টা ছুঁতে পারে তাহলেই ভাল হয়ে যাবে। যীশু ফিরে তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, “সাহস কর। তুমি বিশ্বাস করেছ বলে ভাল হয়েছ।” সেই সময় থেকেই স্ত্রীলোকটি সুস্থ হল। এর পরে যীশু সেই যিহূদী নেতার বাড়ীতে গেলেন। সেখানে তিনি দেখলেন, যারা বাঁশী বাজায় তারা রয়েছে এবং লোকেরা হৈচৈ করছে। এতে যীশু বললেন, “তোমরা বাইরে যাও। মেয়েটি মারা যায় নি, ঘুমাচ্ছে।” এই কথা শুনে তারা হাসাহাসি করতে লাগল। লোকদের বের করে দেওয়া হলে পর তিনি ভিতরে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরলেন। তাতে সে উঠে বসল। এই ঘটনার কথা সেই এলাকার সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। যীশু সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাবার সময় দু’জন অন্ধ লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, “দায়ূদের বংশধর, আমাদের দয়া করুন।” যীশু ঘরে ঢুকলে পর সেই অন্ধ লোকেরা তাঁর কাছে আসল। তখন তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, আমি এই কাজ করতে পারি?” তারা বলল, “হ্যাঁ প্রভু, করি।” তিনি তাদের চোখ ছুঁয়ে বললেন, “তোমরা যেমন বিশ্বাস করেছ তোমাদের প্রতি তেমনই হোক।” আর তখনই তাদের চোখ খুলে গেল। যীশু খুব কঠোরভাবে তাদের বললেন, “দেখো, কেউ যেন জানতে না পারে।” কিন্তু তারা বাইরে গিয়ে সেই এলাকার সমস্ত জায়গায় তাঁর খবর ছড়িয়ে দিল। সেই দু’জন লোক যখন চলে যাচ্ছিল তখন লোকেরা মন্দ আত্মায় পাওয়া একজন বোবা লোককে যীশুর কাছে আনল। যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ছাড়াবার পর লোকটা কথা বলতে লাগল। তাতে সবাই আশ্চর্য হয়ে বলল, “ইস্রায়েল দেশে আর কখনও এই রকম দেখা যায় নি।” তখন ফরীশীরা বললেন, “সে মন্দ আত্মাদের রাজার সাহায্যে মন্দ আত্মা ছাড়ায়।” যীশু শহরে শহরে ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে যিহূদীদের সমাজ- ঘরে শিক্ষা দিতে ও স্বর্গ-রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। এছাড়া তিনি লোকদের সব রকম রোগও ভাল করলেন। লোকদের ভিড় দেখে তাদের জন্য তাঁর মমতা হল, কারণ তারা রাখালহীন ভেড়ার মত ক্লান্ত ও অসহায় ছিল। তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ফসল সত্যিই অনেক কিন্তু কাজ করবার লোক কম। সেইজন্য ফসলের মালিকের কাছে অনুরোধ কর যেন তিনি তাঁর ফসল কাটবার জন্য লোক পাঠিয়ে দেন।” যীশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে ডাকলেন এবং মন্দ আত্মা ছাড়াবার ও সব রকম রোগ ভাল করবার ক্ষমতা দিয়ে তাঁদের পাঠিয়ে দিলেন। সেই বারোজন প্রেরিতের নাম এই: প্রথম, শিমোন যাঁকে পিতর বলা হয়, তারপর তাঁর ভাই আন্দ্রিয়; সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও তাঁর ভাই যোহন; ফিলিপ ও বর্‌থলময়; থোমা ও কর্‌-আদায়কারী মথি; আল্‌ফেয়ের ছেলে যাকোব ও থদ্দেয়; মৌলবাদী শিমোন এবং যীশুকে যে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ। যীশু সেই বারোজনকে এই সব আদেশ দিয়ে পাঠালেন, “তোমরা অযিহূদীদের কাছে বা শমরীয়দের কোন গ্রামে যেয়ো না, বরং ইস্রায়েল জাতির হারানো মেষদের কাছে যেয়ো। তোমরা যেতে যেতে এই কথা প্রচার কোরো যে, স্বর্গ-রাজ্য কাছে এসে গেছে। এছাড়া তোমরা অসুস্থদের সুস্থ কোরো, মৃতদের জীবন দিয়ো, চর্মরোগীদের ভালো কোরো ও মন্দ আত্মাদের ছাড়ায়ো। তোমরা বিনামূল্যে পেয়েছ, বিনামূল্যেই দিয়ো। তোমাদের কোমর-বাঁধনিতে তোমরা সোনা, রূপা কিম্বা তামার পয়সাও নিয়ো না। পথের জন্য কোন রকম থলি, দু’টা জামা, জুতা বা লাঠিও নিয়ো না, কারণ যে কাজ করে সে খাওয়া-পরা পাবার যোগ্য। “তোমরা যে কোন শহরে বা গ্রামে যাবে সেখানে একজন উপযুক্ত লোক খুঁজে নিয়ো এবং অন্য কোথাও চলে না যাওয়া পর্যন্ত তার বাড়ীতে থেকো। সেই বাড়ীর ভিতরে ঢুকবার সময় তাদের শুভেচ্ছা জানায়ো। যদি সেই বাড়ী উপযুক্ত হয় তবে তোমাদের শান্তি সেই বাড়ীর উপরে নেমে আসুক। কিন্তু যদি সেই বাড়ী উপযুক্ত না হয় তবে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছেই ফিরে আসুক। যদি কেউ তোমাদের গ্রহণ না করে বা তোমাদের কথা না শোনে তবে সেই বাড়ী বা গ্রাম থেকে চলে যাবার সময়ে তোমাদের পায়ের ধুলা ঝেড়ে ফেলো। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, বিচারের দিনে সেই গ্রামের চেয়ে বরং সদোম ও ঘমোরা শহরের অবস্থা অনেকখানি সহ্য করবার মত হবে। “দেখ, আমি নেকড়ে বাঘের মধ্যে ভেড়ার মত তোমাদের পাঠাচ্ছি। এইজন্য সাপের মত সতর্ক এবং কবুতরের মত সরল হও। সাবধান থেকো, কারণ মানুষ বিচার-সভার লোকদের হাতে তোমাদের ধরিয়ে দেবে এবং তাদের সমাজ-ঘরে তোমাদের বেত মারবে। আমার জন্যই শাসনকর্তা ও রাজাদের সামনে তোমাদের নিয়ে যাওয়া হবে যেন তাদের কাছে ও অযিহূদীদের কাছে তোমরা সাক্ষ্য দিতে পার। লোকেরা যখন তোমাদের ধরিয়ে দেবে তখন কিভাবে এবং কি বলতে হবে তা ভেবো না। কি বলতে হবে তা তোমাদের সেই সময়েই বলে দেওয়া হবে। তোমরাই যে বলবে তা নয়, বরং তোমাদের পিতা ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্য দিয়ে কথা বলবেন। “ভাই ভাইকে এবং বাবা ছেলেকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দেবে। ছেলেমেয়েরা মা-বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের খুন করাবে। আমার জন্য সবাই তোমাদের ঘৃণা করবে, কিন্তু যে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সে উদ্ধার পাবে। কোন গ্রামের লোকেরা যখন তোমাদের উপর অত্যাচার করবে তখন অন্য গ্রামে পালিয়ে যেয়ো। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, ইস্রায়েল দেশের সমস্ত শহর ও গ্রামে তোমাদের কাজ শেষ হবার আগেই মনুষ্যপুত্র আসবেন। “শিক্ষক থেকে ছাত্র বড় নয় এবং মনিব থেকে দাস বড় নয়। ছাত্রের পক্ষে শিক্ষকের মত হওয়া আর দাসের পক্ষে মনিবের মত হওয়াই যথেষ্ট। ঘরের কর্তাকেই যখন তারা বেল্‌সবূল বলেছে তখন ঘরের অন্য সবাইকে আরও কত বেশী করেই না বেল্‌সবূল বলবে। “তবে তোমরা তাদের ভয় কোরো না, কারণ লুকানো সব কিছুই প্রকাশ পাবে এবং গোপন সব কিছুই জানানো হবে। আমি তোমাদের কাছে যা অন্ধকারে বলছি তা তোমরা আলোতে বোলো। তোমরা যা কানে-কানে শুনছ তা ছাদের উপর থেকে প্রচার কোরো। যারা কেবল দেহটা মেরে ফেলতে পারে কিন্তু আত্মাকে মারতে পারে না তাদের ভয় কোরো না। যিনি দেহ ও আত্মা দু’টাই নরকে ধ্বংস করতে পারেন বরং তাঁকেই ভয় কর। দু’টা চড়াই পাখী কি সামান্য দামে বিক্রি হয় না? তবুও তোমাদের পিতা ঈশ্বরের অনুমতি ছাড়া তাদের একটাও মাটিতে পড়ে না; এমন কি, তোমাদের মাথার চুলগুলোও গোণা আছে। কাজেই তোমরা ভয় পেয়ো না। অনেক অনেক চড়াই পাখীর চেয়েও তোমাদের মূল্য অনেক বেশী। “যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে স্বীকার করে আমিও আমার স্বর্গস্থ পিতার সামনে তাকে স্বীকার করব। কিন্তু যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে অস্বীকার করে আমিও আমার স্বর্গস্থ পিতার সামনে তাকে অস্বীকার করব। “আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে কোরো না। আমি শান্তি দিতে আসি নি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ীর বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি। একজন মানুষের নিজের পরিবারের লোকেরাই তার শত্রু হবে। “যে কেউ আমার চেয়ে মা-বাবাকে বেশী ভালবাসে সে আমার উপযুক্ত নয়। আর যে কেউ ছেলে বা মেয়েকে আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে সে আমার উপযুক্ত নয়। যে নিজের ক্রুশ নিয়ে আমার পথে না চলে সে-ও আমার উপযুক্ত নয়। যে কেউ নিজের জীবন রক্ষা করতে চায় সে তার সত্যিকারের জীবন হারাবে; কিন্তু যে কেউ আমার জন্য তার প্রাণ হারায় সে তার সত্যিকারের জীবন রক্ষা করবে। “যে তোমাদের গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর যে আমাকে গ্রহণ করে আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন সে তাঁকেই গ্রহণ করে। কোন নবীকে যদি কেউ নবী বলে গ্রহণ করে তবে নবী যে পুরস্কার পাবে সে-ও সেই পুরস্কার পাবে। একজন ঈশ্বরভক্ত লোককে যদি কেউ ঈশ্বরভক্ত লোক বলে গ্রহণ করে তবে ঈশ্বরভক্ত লোক যে পুরস্কার পাবে সে-ও সেই পুরস্কার পাবে। যে কেউ এই সামান্য লোকদের মধ্যে একজনকে আমার শিষ্য বলে এক বাটি ঠাণ্ডা জল দেয়, আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, সে কোনমতে তার পুরস্কার হারাবে না।” যীশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে আদেশ দেওয়া শেষ করলেন। তারপর তিনি গ্রামে গ্রামে শিক্ষা দেবার ও প্রচার করবার জন্য সেখান থেকে চলে গেলেন। যোহন জেলখানায় থেকে যখন খ্রীষ্টের কাজের কথা শুনলেন তখন তাঁর শিষ্যদের দিয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করে পাঠালেন, “যাঁর আসবার কথা আছে আপনি কি তিনি, না আমরা আর কারও জন্য অপেক্ষা করব?” উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “তোমরা যা শুনছ এবং দেখছ তা গিয়ে যোহনকে বল। তাঁকে জানাও যে, অন্ধেরা দেখছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, চর্মরোগীরা শুচি হচ্ছে, বয়রা লোকেরা শুনছে, মৃতেরা বেঁচে উঠছে আর গরীব লোকদের কাছে সুখবর প্রচার করা হচ্ছে। আর সে-ই ধন্য যে আমাকে নিয়ে মনে কোন বাধা না পায়।” যোহনের শিষ্যেরা চলে যাচ্ছে, এমন সময় যীশু লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে বলতে আরম্ভ করলেন, “আপনারা মরু-এলাকায় কি দেখতে গিয়েছিলেন? বাতাসে দোলা নল-খাগড়া? তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলেন? সুন্দর কাপড় পরা কোন লোককে দেখতে কি? আসলে যারা সুন্দর কাপড় পরে তারা রাজার বাড়ীতে থাকে। তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলেন? কোন নবীকে কি? হ্যাঁ, আমি আপনাদের বলছি, তিনি নবীর চেয়েও বড়। যোহনই সেই লোক যাঁর বিষয়ে শাস্ত্রে লেখা আছে: দেখ, আমি তোমার আগে আমার সংবাদদাতাকে পাঠাচ্ছি। সে তোমার আগে গিয়ে তোমার পথ প্রস্তুত করবে। আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, মানুষের মধ্যে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের চেয়ে বড় আর কেউ নেই। কিন্তু স্বর্গ-রাজ্যের মধ্যে যে সকলের চেয়ে ছোট সে-ও যোহনের চেয়ে মহান। বাপ্তিস্মদাতা যোহনের সময় থেকে এখন পর্যন্ত স্বর্গ-রাজ্য খুব জোরের সংগে এগিয়ে আসছে, আর যারা শক্তিশালী তারা তা আঁকড়ে ধরছে। যোহনের সময় পর্যন্ত নবীরা সবাই, এমন কি, মোশির আইন-কানুনও ভবিষ্যতের কথা বলেছে। যদি আপনারা এই কথা বিশ্বাস করতে রাজী থাকেন তবে শুনুন-যাঁর আসবার কথা ছিল এই যোহনই সেই এলিয়। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।” “এই কালের লোকদের আমি কাদের সংগে তুলনা করব? এরা এমন ছেলেমেয়েদের মত যারা বাজারে বসে অন্য ছেলেমেয়েদের ডেকে বলে, ‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশী বাজালাম, তোমরা নাচলে না; বিলাপের গান গাইলাম, তোমরা বুক চাপড়ালে না।’ যোহন এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন না বলে লোকে বলছে, ‘তাকে ভূতে পেয়েছে।’ আর মনুষ্যপুত্র এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন বলে লোকে বলছে, ‘ঐ দেখ, একজন পেটুক ও মদখোর, কর্‌-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের বন্ধু।’ কিন্তু জ্ঞান যে খাঁটি তার প্রমাণ তার কাজের মধ্যেই রয়েছে।” যীশু যে সব গ্রামে ও শহরে বেশীর ভাগ আশ্চর্য কাজ করেছিলেন সেই সব জায়গার লোকেরা মন ফিরায় নি। এইজন্য সেই জায়গাগুলোকে তিনি ধিক্কার দিয়ে বলতে লাগলেন, “ধিক্‌ কোরাসীন, ধিক্‌ বৈৎসৈদা! তোমাদের মধ্যে যে সব আশ্চর্য কাজ করা হয়েছে সেগুলো যদি সোর ও সীদোন শহরে করা হত তবে অনেক দিন আগেই তারা চট পরে ছাই মেখে পাপ থেকে মন ফিরাত। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, বিচারের দিনে সোর ও সীদোনের অবস্থা বরং তোমাদের চেয়ে অনেকখানি সহ্য করবার মত হবে। আর তুমি কফরনাহূম! তুমি নাকি স্বর্গ পর্যন্ত উঁচুতে উঠবে? কখনও না, তোমাকে নীচে মৃতস্থানে ফেলে দেওয়া হবে। যে সব আশ্চর্য কাজ তোমার মধ্যে করা হয়েছে তা যদি সদোম শহরে করা হত তবে সদোম আজও টিকে থাকত। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, বিচারের দিনে সদোমের অবস্থা বরং তোমাদের চেয়ে অনেকখানি সহ্য করবার মত হবে।” তারপর যীশু বললেন, “হে পিতা, তুমি স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু। আমি তোমার গৌরব করি, কারণ তুমি এই সব বিষয় জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছ, কিন্তু শিশুর মত লোকদের কাছে প্রকাশ করেছ। হ্যাঁ পিতা, তোমার ইচ্ছামতই এটা হয়েছে। “আমার পিতা সব কিছুই আমার হাতে দিয়েছেন। পিতা ছাড়া পুত্রকে কেউ জানে না এবং পুত্র ছাড়া পিতাকে কেউ জানে না, আর পুত্র যার কাছে পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন সে-ই তাঁকে জানে। “তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব। আমার জোয়াল তোমাদের উপর তুলে নাও ও আমার কাছ থেকে শেখো, কারণ আমার স্বভাব নরম ও নম্র। এতে তোমরা অন্তরে বিশ্রাম পাবে, কারণ আমার জোয়াল বয়ে নেওয়া সহজ ও আমার বোঝা হালকা।” একদিন যীশু একটা শস্যক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই দিনটা বিশ্রামবার ছিল। তাঁর শিষ্যদের খিদে পেয়েছিল বলে তাঁরা শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলেন। তা দেখে ফরীশীরা যীশুকে বললেন, “ধর্মের নিয়ম মতে বিশ্রামবারে যা করা উচিত নয়, দেখুন, আপনার শিষ্যেরা তা-ই করছে।” যীশু তাঁদের বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সংগীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তিনি কি করেছিলেন তা কি আপনারা পড়েন নি? তিনি তো ঈশ্বরের ঘরে ঢুকে সম্মুখ-রুটি খেয়েছিলেন। দায়ূদ ও তাঁর সংগীদের অবশ্য তা খাওয়া উচিত ছিল না, কেবল পুরোহিতেরাই তা খেতে পারতেন। এছাড়া আপনারা কি মোশির আইন-কানুনে পড়েন নি যে, বিশ্রামবারে উপাসনা-ঘরের পুরোহিতেরা বিশ্রামবারের নিয়ম ভাংলেও তাঁদের দোষ হয় না? আমি আপনাদের বলছি, উপাসনা-ঘর থেকেও বড় একজন এখানে আছেন। ‘আমি দয়া দেখতে চাই, পশু-উৎসর্গ নয়’-শাস্ত্রের এই কথার অর্থ যদি আপনারা জানতেন তবে নির্দোষীদের দোষী করতেন না। জেনে রাখুন, মনুষ্যপুত্রই বিশ্রামবারের কর্তা।” পরে সেই জায়গা ছেড়ে যীশু সেই ফরীশীদের সমাজ-ঘরে গেলেন। সেখানে একজন লোক ছিল যার একটা হাত শুকিয়ে গিয়েছিল। যীশুকে দোষী করবার উদ্দেশ্যে ফরীশীরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ধর্মের নিয়ম মতে বিশ্রামবারে কি কাউকে সুস্থ করা উচিত?” যীশু তাঁদের বললেন, “ধরুন, আপনাদের মধ্যে কারও একটা ভেড়া আছে। সেই ভেড়াটা যদি বিশ্রামবারে গর্তে পড়ে যায় তবে কি তিনি তাকে ধরে তুলবেন না? আর ভেড়ার চেয়ে মানুষের দাম তো অনেক বেশী। তাহলে দেখা যায়, বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা উচিত।” তারপর তিনি লোকটিকে বললেন, “তোমার হাত বাড়িয়ে দাও।” সে তার হাতটা বাড়িয়ে দিলে পর সেটা ভাল হয়ে অন্য হাতটার মত হয়ে গেল। তখন ফরীশীরা বাইরে গেলেন এবং যীশুকে মেরে ফেলবার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে পরামর্শ করতে লাগলেন। সেই পরামর্শের বিষয় জানতে পেরে যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন। তখন অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে গেল। তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল তিনি তাদের সবাইকে সুস্থ করলেন এবং সাবধান করে দিলেন যেন তাঁর বিষয়ে তারা বলাবলি না করে। এটা হল যাতে নবী যিশাইয়ের মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়: দেখ, আমার দাস যাঁকে আমি বেছে নিয়েছি। ইনিই আমার প্রিয়জন যাঁর উপর আমি সন্তুষ্ট। আমি তাঁর উপরে আমার আত্মা দেব, আর তিনি অযিহূদীদের কাছে ন্যায়বিচার প্রচার করবেন। তিনি ঝগড়া বা চিৎকার করবেন না; তিনি রাস্তায় রাস্তায় তাঁর গলার স্বর শোনাবেন না। ন্যায়বিচারকে জয়ী না করা পর্যন্ত তিনি থেঁৎলে যাওয়া নল ভাংবেন না আর মিট মিট করে জ্বলতে থাকা সল্‌তে নিভাবেন না। তাঁরই উপর অযিহূদীরা আশা রাখবে। পরে লোকেরা মন্দ আত্মায় পাওয়া একজন লোককে যীশুর কাছে আনল। লোকটি অন্ধ এবং বোবা ছিল। যীশু তাকে ভাল করলেন। তাতে লোকটি কথা বলতে লাগল ও দেখতে পেল। তখন সব লোকেরা আশ্চর্য হয়ে বলল, “ইনি কি দায়ূদের সেই বংশধর?” ফরীশীরা এই কথা শুনে বললেন, “ও তো কেবল মন্দ আত্মাদের রাজা বেল্‌সবূলের সাহায্যে মন্দ আত্মা ছাড়ায়।” ফরীশীদের মনের চিন্তা বুঝতে পেরে যীশু তাঁদের বললেন, “যে রাজ্য নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সেই রাজ্য ধ্বংস হয়। আর যে শহর বা পরিবার নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সেই শহর বা পরিবার টেকে না। শয়তান যদি শয়তানকেই বের করে দেয় তবে সে তো নিজের মধ্যেই ভাগ হয়ে গেল। তাহলে তার রাজ্য কি করে টিকবে? আমি যদি বেল্‌সবূলের সাহায্যেই মন্দ আত্মা ছাড়াই তবে আপনাদের লোকেরা কার সাহায্যে তাদের ছাড়ায়? আপনারা ঠিক কথা বলছেন কি না, আপনাদের লোকেরাই তা বিচার করবে। কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে মন্দ আত্মা ছাড়াই তবে ঈশ্বরের রাজ্য তো আপনাদের কাছে এসে গেছে। “যে লোকের দেহে বল আছে তাঁকে প্রথমে বেঁধে না রাখলে কেউ কি তার ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র লুট করতে পারে? বাঁধলে পরেই সে তা পারবে। “যদি কেউ আমার পক্ষে না থাকে তবে সে আমার বিপক্ষে আছে। যে আমার সংগে কুড়ায় না সে ছড়ায়। এইজন্য আমি আপনাদের বলছি, মানুষের সমস্ত পাপ এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপমানের কথা ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে অপমানের কথা ক্ষমা করা হবে না। মনুষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা বললে তাঁকে ক্ষমা করা হবে না-এই যুগেও না, আগামী যুগেও না। “এই কথা স্বীকার করুন যে, গাছ ভাল হলে তার ফলও ভাল হবে, আবার গাছ খারাপ হলে তার ফলও খারাপ হবে; কারণ ফল দিয়েই গাছ চেনা যায়। সাপের বংশধরেরা! নিজেরা মন্দ হয়ে কেমন করে আপনারা ভাল কথা বলতে পারেন? মানুষের অন্তর যা দিয়ে পূর্ণ থাকে মুখ তো সেই কথাই বলে। ভাল লোক তার অন্তর-ভরা ভাল থেকে ভাল কথা বের করে, আর মন্দ লোক তার অন্তর-ভরা মন্দ থেকে মন্দ কথা বের করে। কিন্তু আমি আপনাদের বলছি, লোকে যে সব বাজে কথা বলে, বিচারের দিনে তার প্রত্যেকটি কথার হিসাব তাদের দিতে হবে। আপনার কথার দ্বারাই আপনাকে নির্দোষ বলা হবে এবং আপনার কথার দ্বারাই আপনাকে দোষী বলা হবে।” এর পরে কয়েকজন ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশী যীশুকে বললেন, “গুরু, আমরা আপনার কাছ থেকে একটা চিহ্ন দেখতে চাই।” যীশু তাঁদের বললেন, “এই কালের দুষ্ট ও অবিশ্বস্ত লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে, কিন্তু নবী যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখানো হবে না। যোনা যেমন সেই মাছের পেটে তিন দিন ও তিন রাত ছিলেন মনুষ্যপুত্রও তেমনি তিন দিন ও তিন রাত মাটির নীচে থাকবেন। বিচারের দিনে নীনবী শহরের লোকেরা উঠে এই কালের লোকদের দোষ দেখিয়ে দেবে, কারণ নীনবীর লোকেরা যোনার প্রচারের ফলে পাপ থেকে মন ফিরিয়েছিল। আর দেখুন, এখানে যোনার চেয়ে আরও মহান একজন আছেন। বিচারের দিনে দক্ষিণ দেশের রাণী উঠে এই কালের লোকদের দোষ দেখিয়ে দেবেন, কারণ শলোমন রাজার জ্ঞানের কথাবার্তা শুনবার জন্য তিনি পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে এসেছিলেন। আর দেখুন, এখানে শলোমনের চেয়ে আরও মহান একজন আছেন। “যখন কোন মন্দ আত্মা কোন মানুষের মধ্য থেকে বের হয়ে যায় তখন সে বিশ্রামের খোঁজে শুকনা জায়গার মধ্য দিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকে। কিন্তু তা না পেয়ে সে বলে, ‘যেখান থেকে বের হয়ে এসেছি আমার সেই ঘরেই আমি ফিরে যাব।’ সে ফিরে এসে সেই ঘর খালি, পরিষ্কার ও সাজানো দেখতে পায়। পরে সেই মন্দ আত্মা গিয়ে নিজের চেয়েও খারাপ আরও সাতটা মন্দ আত্মা সংগে নিয়ে আসে এবং সেখানে ঢুকে বাস করতে থাকে। তাতে সেই লোকটার প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরও খারাপ হয়ে ওঠে। এই কালের দুষ্ট লোকদের অবস্থাও তেমনি হবে।” যীশু যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন তখন তাঁর মা ও ভাইয়েরা তাঁর সংগে কথা বলবার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোন একজন লোক তাঁকে বলল, “দেখুন, আপনার মা ও ভাইয়েরা আপনার সংগে কথা বলবার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।” তখন যীশু তাকে বললেন, “কে আমার মা, আর আমার ভাইয়েরাই বা কারা?” পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের দেখিয়ে বললেন, “এই দেখ, আমার মা ও আমার ভাইয়েরা; কারণ যারা আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে তারা-ই আমার ভাই, বোন আর মা।” সেই দিনই যীশু ঘর থেকে বের হয়ে সাগরের ধারে গিয়ে বসলেন। তাঁর কাছে এত লোক এসে জড়ো হল যে, তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন, আর সমস্ত লোক সাগরের ধারে দাঁড়িয়ে রইল। তখন তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক বিষয় তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তিনি বললেন, “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। বুনবার সময় কতগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল আর পাখীরা এসে তা খেয়ে ফেলল। কতগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল। সেখানে বেশী মাটি ছিল না। মাটি গভীর ছিল না বলে তাড়াতাড়ি চারা গজিয়ে উঠল, কিন্তু সূর্য উঠলে পর তা পুড়ে গেল এবং শিকড় ভাল করে বসে নি বলে শুকিয়ে গেল। আবার কতগুলো বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল। তাতে কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলো চেপে রাখল। আর কতগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ে কোনটাতে একশো গুণ, কোনটাতে ষাট গুণ আর কোনটাতে ত্রিশ গুণ ফসল জন্মাল।” গল্পের শেষে যীশু বললেন, “যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।” পরে শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে বললেন, “আপনি গল্পের মধ্য দিয়ে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছেন কেন?” উত্তরে তিনি শিষ্যদের বললেন, “স্বর্গ-রাজ্যের গুপ্ত সত্যগুলো তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে কিন্তু ওদের জানতে দেওয়া হয় নি, কারণ যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, আর তাতে তার অনেক হবে। কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। সেইজন্য আমি গল্পের মধ্য দিয়ে ওদের শিক্ষা দিই, কারণ ওরা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না এবং বোঝে না। এদের মধ্য দিয়ে নবী যিশাইয়ের এই কথা পূর্ণ হচ্ছে: তোমরা শুনতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই বুঝবে না; দেখতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই জানবে না। এই সব লোকদের অন্তর অসাড় এবং কান বন্ধ হয়ে গেছে, আর তারা তাদের চোখও বন্ধ করে রেখেছে, যেন তারা চোখ দিয়ে না দেখে, কান দিয়ে না শোনে এবং অন্তর দিয়ে না বোঝে, আর ভাল হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না আসে। “কিন্তু তোমরা ধন্য, কারণ তোমাদের চোখ দেখতে পায় এবং তোমাদের কান শুনতে পায়। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা যা দেখছ তা অনেক নবী ও ঈশ্বরভক্ত লোকেরা দেখতে চেয়েও দেখতে পান নি, আর তোমরা যা যা শুনছ তা তাঁরা শুনতে চেয়েও শুনতে পান নি। আর পাথুরে জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা স্বর্গ-রাজ্যের কথা শুনে তখনই আনন্দের সংগে তা গ্রহণ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে শিকড় ভাল করে বসে না বলে তারা অল্প সময়ের জন্য স্থির থাকে। যখন সেই কথার জন্য কষ্ট এবং অত্যাচার আসে তখনই তারা পিছিয়ে যায়। কাঁটার মধ্যে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কথা শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা-ভাবনা এবং ধন-সম্পত্তির মায়া সেই কথাকে চেপে রাখে। সেইজন্য তাতে কোন ফল হয় না। ভাল জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কথা শুনে বোঝে এবং ফল দেয়। কেউ দেয় একশো গুণ, কেউ দেয় ষাট গুণ আর কেউ দেয় ত্রিশ গুণ।” পরে তিনি লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “স্বর্গ-রাজ্য এমন একজন লোকের মত যিনি নিজের জমিতে ভাল বীজ বুনলেন। পরে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ল তখন সেই লোকের শত্রু এসে গমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বুনে চলে গেল। শেষে গমের চারা যখন বেড়ে উঠে ফল ধরল তখন তার মধ্যে শ্যামাঘাসও দেখা গেল। তা দেখে বাড়ীর দাসেরা এসে মনিবকে বলল, ‘আপনি কি জমিতে ভাল বীজ বোনেন নি? তবে শ্যামাঘাস কোথা থেকে আসল?’ “তিনি তাদের বললেন, ‘কোন শত্রু এটা করেছে।’ “দাসেরা তাঁকে বলল, ‘তবে আমরা গিয়ে সেগুলো তুলে ফেলব কি?’ “তিনি বললেন, ‘না, শ্যামাঘাস তুলতে গিয়ে তোমরা হয়তো ঘাসের সংগে গমও তুলে ফেলবে। ফসল কাটবার সময় পর্যন্ত ওগুলো একসংগে বাড়তে দাও। যারা ফসল কাটে, আমি তখন তাদের বলব যেন তারা প্রথমে শ্যামাঘাসগুলো জড়ো করে পোড়াবার জন্য আঁটি আঁটি করে বাঁধে, আর তার পরে গম আমার গোলায় জমা করে।’ ” যীশু তাদের আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “স্বর্গ-রাজ্য এমন একটা সর্ষে-দানার মত যা একজন লোক নিয়ে নিজের জমিতে লাগাল। সমস্ত বীজের মধ্যে ওটা সত্যিই সবচেয়ে ছোট, কিন্তু গাছ হয়ে বেড়ে উঠলে পর তা সমস্ত শাক-সব্‌জীর মধ্যে সবচেয়ে বড় হয়। ওটা এমন একটা বড় গাছ হয়ে ওঠে যে, পাখীরা এসে তার ডালপালায় বাসা বাঁধে।” তিনি তাদের আর একটা গল্প বললেন। গল্পটা এই: “স্বর্গ-রাজ্য খামির মত। একজন স্ত্রীলোক তা নিয়ে আঠারো কেজি ময়দার মধ্যে মিশাল। ফলে সমস্ত ময়দাই ফেঁপে উঠল।” যীশু গল্পের মধ্য দিয়ে লোকদের এই সব শিক্ষা দিলেন। তিনি গল্প ছাড়া কোন শিক্ষাই তাদের দিতেন না। এটা হল যাতে নবীর মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়: শিক্ষা-ভরা উদাহরণের মধ্য দিয়ে আমি মুখ খুলব; জগতের আরম্ভ থেকে যা যা লুকানো ছিল, তা বলব। পরে যীশু লোকদের ছেড়ে ঘরে ঢুকলেন। তখন তাঁর শিষ্যেরা এসে তাঁকে বললেন, “জমির ঐ শ্যামাঘাসের গল্পটা আমাদের বুঝিয়ে দিন।” উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “যিনি ভাল বীজ বোনেন তিনি মনুষ্যপুত্র। জমি এই জগৎ, আর স্বর্গ-রাজ্যের লোকেরা ভাল বীজ। শয়তানের লোকেরা হল সেই শ্যামাঘাস। যে শত্রু তা বুনেছিল সে হল শয়তান, আর ফসল কাটবার সময় হল এই যুগের শেষ সময়। যাঁরা শস্য কাটবেন তাঁরা হলেন স্বর্গদূত। শ্যামাঘাস জড়ো করে যেমন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যুগের শেষের সময়ও ঠিক তেমনি হবে। মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে দেবেন। যারা অন্যদের পাপ করায় এবং যারা নিজেরা পাপ করে তাদের সবাইকে সেই স্বর্গদূতেরা মনুষ্যপুত্রের রাজ্যের মধ্য থেকে একসংগে জড়ো করবেন ও জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন। সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে। সেই সময়ে ঈশ্বরভক্ত লোকেরা তাদের স্বর্গস্থ পিতার রাজ্যে সূর্যের মত উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক। “স্বর্গ-রাজ্য জমির মধ্যে লুকিয়ে রাখা ধনের মত। একজন লোক তা খুঁজে পেয়ে আবার লুকিয়ে রাখল। তারপর সে খুশী মনে চলে গেল এবং তার যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে সেই জমিটা কিনল। “আবার, স্বর্গ-রাজ্য এমন একজন সওদাগরের মত যে ভাল মুক্তা খুঁজছিল। একটা দামী মুক্তার খোঁজ পেয়ে সে গিয়ে তার যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে সেই মুক্তাটা কিনল। “আবার, স্বর্গ-রাজ্য এমন একটা বড় জালের মত যা সাগরে ফেলা হল আর তাতে সব রকম মাছ ধরা পড়ল। জাল পূর্ণ হলে পর লোকেরা সেটা পারে টেনে তুলল। পরে তারা বসে ভাল মাছগুলো বেছে ঝুড়িতে রাখল এবং খারাপগুলো ফেলে দিল। যুগের শেষের সময়ে এই রকমই হবে। স্বর্গদূতেরা এসে ঈশ্বরভক্ত লোকদের মধ্য থেকে দুষ্টদের আলাদা করবেন এবং জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে তাদের ফেলে দেবেন। সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাত ঘষতে থাকবে।” এর পর যীশু তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি এই সব বুঝতে পেরেছ?” তখন যীশু তাদের বললেন, “স্বর্গ-রাজ্যের বিষয়ে যে সব ধর্ম-শিক্ষক শিক্ষা পেয়েছেন তারা সবাই এমন একজন গৃহস্থের মত যিনি তাঁর ভাণ্ডার থেকে নতুন ও পুরানো জিনিস বের করেন।” শিক্ষা দেবার জন্য এই সব গল্প বলা শেষ করে যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন। তারপর নিজের গ্রামে গিয়ে তিনি সমাজ-ঘরে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর কথা শুনে লোকে আশ্চর্য হয়ে বলল, “এই জ্ঞান ও এই সব আশ্চর্য কাজ করবার ক্ষমতা এ কোথা থেকে পেল? এ কি সেই ছুতার মিস্ত্রীর ছেলে নয়? তার মায়ের নাম কি মরিয়ম নয়? আর তার ভাইয়েরা কি যাকোব, যোষেফ, শিমোন ও যিহূদা নয়? তার সব বোনেরা কি আমাদের মধ্যে নেই? তাহলে কোথা থেকে সে এই সব পেল?” এইভাবে যীশুকে নিয়ে লোকদের মনে বাধা আসতে লাগল। তখন যীশু তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম ও নিজের বাড়ী ছাড়া আর সব জায়গাতেই নবীরা সম্মান পান।” লোকদের অবিশ্বাসের জন্য তিনি সেখানে বেশী আশ্চর্য কাজ করলেন না। হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার দরুন যোহনকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে জেলখানায় রেখেছিলেন, কারণ যোহন তাঁকে বলতেন, “হেরোদিয়াকে স্ত্রী হিসাবে রাখা আপনার উচিত নয়।” হেরোদ যোহনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি লোকদের ভয় করতেন কারণ লোকে যোহনকে নবী বলে মানত। হেরোদের জন্মদিনের উৎসবে হেরোদিয়ার মেয়ে উপস্থিত লোকদের সামনে নেচে হেরোদকে সন্তুষ্ট করল। সেইজন্য হেরোদ শপথ করে বললেন সে যা চাইবে তা-ই তিনি তাকে দেবেন। মেয়েটি তার মায়ের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে বলল, “থালায় করে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটা এখানে আমার কাছে এনে দিন।” এতে রাজা হেরোদ দুঃখিত হলেন, কিন্তু যাঁরা তাঁর সংগে খেতে বসেছিলেন তাঁদের সামনে শপথ করেছিলেন বলে তিনি তা দিতে আদেশ করলেন। তিনি লোক পাঠিয়ে জেলখানার মধ্যেই যোহনের মাথা কাটালেন। পরে মাথাটি থালায় করে এনে মেয়েটিকে দেওয়া হলে পর সে তার মায়ের কাছে তা নিয়ে গেল। এর পর যোহনের শিষ্যেরা এসে তাঁর মৃত দেহটা নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন এবং সেই খবর যীশুকে গিয়ে দিলেন। যোহনের মৃত্যুর খবর শুনে যীশু একাই সেখান থেকে নৌকায় করে একটা নির্জন জায়গায় চলে গেলেন। লোকেরা সেই কথা শুনে ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম থেকে হাঁটা-পথে তাঁর পিছন ধরল। তিনি নৌকা থেকে নেমে লোকদের ভিড় দেখতে পেলেন আর মমতায় পূর্ণ হয়ে তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল তাদের সুস্থ করলেন। দিনের শেষে শিষ্যেরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “জায়গাটা নির্জন, বেলাও গেছে। লোকদের বিদায় করে দিন যেন তারা গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার কিনতে পারে।” যীশু তাঁদের বললেন, “ওদের যাবার দরকার নেই, তোমরাই ওদের খেতে দাও।” শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “আমাদের এখানে পাঁচখানা রুটি আর দু’টা মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই।” খাওয়ার পরে যে টুকরাগুলো পড়ে রইল শিষ্যেরা তা তুলে নিলেন, আর তাতে বারোটা টুকরি পূর্ণ হল। যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে স্ত্রীলোক ও ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া কমবেশী পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল। এর পরে যীশু শিষ্যদের তাগাদা দিলেন যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে অন্য পারে যান, আর এদিকে তিনি লোকদের বিদায় করলেন। লোকদের বিদায় করে প্রার্থনা করবার জন্য তিনি একা পাহাড়ে উঠে গেলেন। যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসল তখনও তিনি সেখানে একাই রইলেন। ততক্ষণে শিষ্যদের নৌকাখানা ডাংগা থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে পড়েছিল এবং বাতাস উল্টাদিকে থাকাতে ঢেউয়ে ভীষণভাবে দুলছিল। শেষ রাতে যীশু সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে শিষ্যদের কাছে আসছিলেন। শিষ্যেরা একজনকে সাগরের উপর হাঁটতে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বললেন, “ভূত, ভূত,” আর তার পরেই চিৎকার করে উঠলেন। যীশু তখনই তাঁদের বললেন, “এ তো আমি; ভয় কোরো না, সাহস কর।” পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, যদি আপনিই হন তবে জলের উপর দিয়ে আপনার কাছে যেতে আমাকে আদেশ দিন।” যীশু বললেন, “এস।” তখন পিতর নৌকা থেকে নেমে জলের উপর দিয়ে হেঁটে যীশুর কাছে চললেন। কিন্তু জোর বাতাস দেখে তিনি ভয় পেয়ে ডুবে যেতে লাগলেন এবং চিৎকার করে বললেন, “প্রভু, আমাকে বাঁচান।” যীশু তখনই হাত বাড়িয়ে তাঁকে ধরলেন এবং বললেন, “অল্প বিশ্বাসী, কেন সন্দেহ করলে?” পরে তাঁরা সাগর পার হয়ে গিনেষরৎ এলাকায় এসে নামলেন। সেখানকার লোকেরা যীশুকে চিনতে পেরে এলাকার সব জায়গায় খবর পাঠাল। তাতে লোকেরা অসুস্থদের যীশুর কাছে আনল এবং তাঁকে অনুরোধ করল যেন সেই অসুস্থরা তাঁর চাদরের কিনারাটা কেবল ছুঁতে পারে; আর যত লোক তা ছুঁলো তারা সবাই সুস্থ হল। যিরূশালেম থেকে কয়েকজন ফরীশী ও ধর্ম-শিক্ষক যীশুর কাছে এসে বললেন, “পুরানো দিনের ধর্ম-শিক্ষকদের দেওয়া যে নিয়ম চলে আসছে আপনার শিষ্যেরা তা মেনে চলে না কেন? খাওয়ার আগে তারা হাত ধোয় না।” উত্তরে যীশু বললেন, “যে নিয়ম চলে আসছে তার জন্য আপনারাই বা কেন ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করেন? ঈশ্বর বলেছেন, ‘মা-বাবাকে সম্মান কোরো’ এবং ‘যার কথায় মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে।’ কিন্তু আপনারা বলে থাকেন, যদি কেউ তার মা কিম্বা বাবাকে বলে, ‘আমার যে জিনিসের দ্বারা তোমার সাহায্য হতে পারত, তা ঈশ্বরের কাছে দেওয়া হয়েছে,’ তবে মা-বাবাকে তার আর সম্মান করবার দরকার নেই। আপনাদের এই সব চলতি নিয়মের জন্য আপনারা ঈশ্বরের বাক্য বাতিল করেছেন। ভণ্ডেরা! আপনাদের সম্বন্ধে নবী যিশাইয় ঠিক কথাই বলেছিলেন যে, এই লোকেরা মুখেই আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের অন্তর আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। তারা মিথ্যাই আমার উপাসনা করে; তাদের দেওয়া শিক্ষা মানুষের তৈরী কতগুলো নিয়ম মাত্র। পরে যীশু লোকদের ডেকে বললেন, “আমার কথা শুনুন এবং বুঝুন। মুখের ভিতরে যা যায় তা মানুষকে অশুচি করে না, কিন্তু মুখের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে তা-ই মানুষকে অশুচি করে।” তখন তাঁর শিষ্যেরা এসে তাঁকে বললেন, “ফরীশীরা আপনার এই কথা শুনে যে অপমান বোধ করেছেন, তা কি আপনি জানেন?” উত্তরে তিনি বললেন, “যে চারা আমার স্বর্গস্থ পিতা লাগান নি তার প্রত্যেকটাকে উপ্‌ড়ে ফেলা হবে। তাদের কথা ছেড়ে দাও। অন্ধদের পথ দেখাবার কথা তাঁদেরই, কিন্তু তাঁরা নিজেরাই অন্ধ। অন্ধ অন্ধকে পথ দেখাতে গেলে দু’জনই গর্তে পড়ে।” তখন পিতর যীশুকে বললেন, “আপনি যে দৃষ্টান্ত দিলেন তা আমাদের বুঝিয়ে দিন।” কিন্তু যা মুখের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে তা অন্তর থেকে আসে, আর সেগুলোই মানুষকে অশুচি করে। অন্তর থেকেই মন্দ চিন্তা, খুন, সব রকম ব্যভিচার, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ও নিন্দা বের হয়ে আসে। এই সবই মানুষকে অশুচি করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খেলে মানুষ অশুচি হয় না।” পরে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন এলাকায় চলে গেলেন। সেখানকার একজন কনানীয় স্ত্রীলোক এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে প্রভু, দায়ূদের বংশধর, আমাকে দয়া করুন। মন্দ আত্মায় ধরবার দরুন আমার মেয়েটি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।” যীশু কিন্তু তাকে একটা কথাও বললেন না। তখন তাঁর শিষ্যেরা এসে তাঁকে অনুরোধ করে বললেন, “ওকে বিদায় করে দিন, কারণ ও আমাদের পিছনে পিছনে চিৎকার করছে।” উত্তরে যীশু বললেন, “আমাকে কেবল ইস্রায়েল-বংশের হারানো মেষদের কাছেই পাঠানো হয়েছে।” সেই স্ত্রীলোকটি কিন্তু যীশুর কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু, আমার এই উপকারটা করুন।” যীশু বললেন, “ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরের সামনে ফেলা ভাল নয়।” সে বলল, “ঠিক কথা, প্রভু; তবুও মনিবের টেবিল থেকে খাবারের যে সব টুকরা পড়ে তা কুকুরেই খায়।” তখন যীশু তাকে বললেন, “সত্যিই তোমার বিশ্বাস খুব বেশী। তুমি যেমন চাও তেমনই হোক।” আর তখনই তার মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেল। পরে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে গালীল সাগরের পার দিয়ে চললেন এবং একটা পাহাড়ে উঠে সেখানে বসলেন। তখন লোকেরা খোঁড়া, অন্ধ, নুলা, বোবা এবং আরও অনেককে সংগে নিয়ে তাঁর কাছে আসল। তারা ঐ সব লোকদের তাঁর পায়ের কাছে রাখল আর তিনি তাদের সুস্থ করলেন। লোকেরা যখন দেখল বোবা কথা বলছে, নুলা সুস্থ হচ্ছে, খোঁড়া চলাফেরা করছে এবং অন্ধ দেখতে পাচ্ছে, তখন তারা আশ্চর্য হল এবং ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল। এর পর যীশু তাঁর শিষ্যদের ডেকে বললেন, “এই লোকদের জন্য আমার মমতা হচ্ছে, কারণ আজ তিন দিন হল এরা আমার সংগে সংগে আছে, আর এদের কাছে কোন খাবার নেই। এই অবস্থায় আমি এদের বিদায় দিতে চাই না; হয়তো বা তারা পথে অজ্ঞান হয়ে পড়বে।” শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “এই নির্জন জায়গায় এত লোককে খাওয়াবার মত রুটি আমরা কোথায় পাব?” যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কয়টা রুটি আছে?” শিষ্যেরা বললেন, “সাতটা রুটি আর কয়েকটা ছোট মাছ আছে।” লোকেরা সবাই পেট ভরে খেল, আর যে টুকরাগুলো পড়ে রইল শিষ্যেরা তা তুলে নিয়ে সাতটা টুকরি পূর্ণ করলেন। যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে স্ত্রীলোক ও ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া চার হাজার পুরুষ ছিল। এর পর যীশু লোকদের বিদায় দিয়ে নৌকায় উঠে মগদন এলাকায় গেলেন। পরে কয়েকজন ফরীশী ও সদ্দূকী যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য তাঁর কাছে আসলেন এবং স্বর্গ থেকে কোন চিহ্ন দেখাতে বললেন। যীশু উত্তরে তাঁদের বললেন, “সন্ধ্যা হলে আপনারা বলে থাকেন, ‘দিনটা পরিষ্কার হবে কারণ আকাশ লাল হয়েছে।’ আর সকালবেলা বলেন, ‘আজ ঝড় হবে কারণ আকাশ লাল ও অন্ধকার হয়েছে।’ আকাশের অবস্থা আপনারা ঠিক ভাবেই বিচার করতে জানেন, অথচ সময়ের চিহ্ন বুঝতে পারেন না। এই কালের দুষ্ট ও অবিশ্বস্ত লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখানো হবে না।” এর পরে যীশু তাঁদের ছেড়ে চলে গেলেন। সাগরের অন্য পারে যাবার সময় শিষ্যেরা রুটি নিতে ভুলে গেলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা সতর্ক থাক, ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামি থেকে সাবধান হও।” এতে শিষ্যেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “আমরা রুটি আনি নি বলে উনি এই কথা বলছেন।” এই কথা বুঝতে পেরে যীশু বললেন, “অল্প বিশ্বাসীরা, তোমরা নিজেদের মধ্যে কেন বলাবলি করছ যে, তোমাদের রুটি নেই? তোমরা কি এখনও বোঝ না বা মনেও কি পড়ে না, সেই পাঁচ হাজার লোকের জন্য পাঁচখানা রুটির কথা, আর তার পরে কত টুকরি তোমরা তুলে নিয়েছিলে? কিম্বা সেই চার হাজার লোকের জন্য সাতখানা রুটির কথা, আর কত টুকরি তোমরা তুলে নিয়েছিলে? আমি যে তোমাদের কাছে রুটির কথা বলি নি তা তোমরা কেন বোঝ না? ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামি থেকে তোমরা সাবধান হও।” তখন শিষ্যেরা বুঝতে পারলেন যে, তিনি রুটির খামি থেকে তাঁদের সাবধান হতে বলেন নি, কিন্তু ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা থেকে সাবধান হতে বলেছেন। পরে যীশু যখন কৈসরিয়া-ফিলিপি এলাকায় গেলেন তখন শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “মনুষ্যপুত্র কে, এই বিষয়ে লোকে কি বলে?” তাঁরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন; কেউ কেউ বলে এলিয়; আবার কেউ কেউ বলে যিরমিয় বা নবীদের মধ্যে একজন।” তখন তিনি তাঁদের বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?” শিমোন-পিতর বললেন, “আপনি সেই মশীহ, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র।” উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “শিমোন বার-যোনা, তুমি ধন্য, কারণ কোন মানুষ তোমার কাছে এটা প্রকাশ করে নি; আমার স্বর্গস্থ পিতাই প্রকাশ করেছেন। আমি তোমাকে বলছি, তুমি পিতর, আর এই পাথরের উপরেই আমি আমার মণ্ডলী গড়ে তুলব। নরকের কোন শক্তিই তার উপর জয়লাভ করতে পারবে না। আমি তোমাকে স্বর্গ-রাজ্যের চাবিগুলো দেব, আর তুমি এই পৃথিবীতে যা বাঁধবে তা স্বর্গেও বেঁধে রাখা হবে এবং যা খুলবে তা স্বর্গেও খুলে দেওয়া হবে।” এর পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের সাবধান করে দিলেন যেন তাঁরা কাউকে না বলেন যে, তিনিই মশীহ। সেই সময় থেকে যীশু তাঁর শিষ্যদের জানাতে লাগলেন যে, তাঁকে যিরূশালেমে যেতে হবে এবং বৃদ্ধ নেতাদের, প্রধান পুরোহিতদের ও ধর্ম- শিক্ষকদের হাতে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে। পরে তাঁকে মেরে ফেলা হবে এবং তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে। তখন পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করে বললেন, “প্রভু, এ দূর হোক। আপনার উপর কখনও এমন হবে না।” যীশু ফিরে পিতরকে বললেন, “আমার কাছ থেকে দূর হও, শয়তান। তুমি আমার পথের বাধা। যা ঈশ্বরের তা তুমি ভাবছ না কিন্তু যা মানুষের তা-ই ভাবছ।” এর পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “যদি কেউ আমার পথে আসতে চায় তবে সে নিজের ইচ্ছামত না চলুক; নিজের ক্রুশ বয়ে নিয়ে সে আমার পিছনে আসুক। যে কেউ তার নিজের জন্য বেঁচে থাকতে চায় সে তার সত্যিকারের জীবন হারাবে; কিন্তু যে কেউ আমার জন্য তার প্রাণ হারায় সে তার সত্যিকারের জীবন রক্ষা করবে। যদি কেউ সমস্ত জগৎ লাভ করে তার বিনিময়ে তার সত্যিকারের জীবন হারায় তবে তার কি লাভ হল? সত্যিকারের জীবন ফিরে পাবার জন্য তার দেবার মত কি আছে? মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের সংগে নিয়ে তাঁর পিতার মহিমায় আসছেন। তখন তিনি প্রত্যেক লোককে তার কাজ অনুসারে ফল দেবেন। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে যাদের কাছে মনুষ্যপুত্র রাজা হিসাবে দেখা না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনমতেই মারা যাবে না।” এর ছয় দিন পরে যীশু কেবল পিতর, যাকোব এবং যাকোবের ভাই যোহনকে সংগে নিয়ে একটা উঁচু পাহাড়ে গেলেন। তখন পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, ভালই হয়েছে যে, আমরা এখানে আছি। আপনি যদি চান তবে আমি এখানে তিনটা কুঁড়ে-ঘর তৈরী করব-একটা আপনার, একটা মোশির ও একটা এলিয়ের জন্য।” পিতর যখন কথা বলছিলেন তখন একটা উজ্জ্বল মেঘ তাঁদের ঢেকে ফেলল। সেই মেঘ থেকে এই কথা শোনা গেল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এঁর উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট। তোমরা এঁর কথা শোন।” এই কথা শুনে শিষ্যেরা খুব ভয় পেয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন। তখন যীশু এসে তাঁদের ছুঁয়ে বললেন, “ওঠো, ভয় কোরো না।” তখন তাঁরা উপরের দিকে তাকিয়ে কেবল যীশু ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলেন না। যখন তাঁরা সেই পাহাড় থেকে নেমে আসছিলেন তখন যীশু তাঁদের এই আদেশ দিলেন, “তোমরা যা দেখলে, মনুষ্যপুত্র মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে না ওঠা পর্যন্ত তা কাউকে বোলো না।” শিষ্যেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে ধর্ম-শিক্ষকেরা কেন বলেন যে, প্রথমে এলিয়ের আসা দরকার?” যীশু তাঁদের উত্তর দিলেন, “সত্যিই এলিয় আসবেন এবং সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এলিয় এসেছিলেন আর লোকে তাঁকে চিনতে পারে নি। লোকেরা তাঁর উপর যা ইচ্ছা তা-ই করেছে। এইভাবে মনুষ্যপুত্রকেও লোকদের হাতে কষ্টভোগ করতে হবে।” তখন শিষ্যেরা বুঝতে পারলেন যে, তিনি তাঁদের কাছে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের বিষয় বলছেন। যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা যখন লোকদের কাছে ফিরে আসলেন তখন একজন লোক এসে যীশুর সামনে হাঁটু পেতে বসে বলল, “আপনি আমার ছেলেটির উপর দয়া করুন। সে মৃগী রোগে খুব কষ্ট পাচ্ছে। প্রায়ই সে আগুনে এবং জলে পড়ে যায়। আমি তাকে আপনার শিষ্যদের কাছে এনেছিলাম কিন্তু তাঁরা তাকে ভাল করতে পারলেন না।” উত্তরে যীশু বললেন, “অবিশ্বাসী ও দুষ্ট লোকেরা! আর কতকাল আমি তোমাদের সংগে সংগে থাকব? কতদিন তোমাদের সহ্য করব? ছেলেটিকে এখানে আমার কাছে আন।” যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিলে পর সে ছেলেটির মধ্য থেকে বের হয়ে গেল, আর ছেলেটি তখনই সুস্থ হল। এর পর শিষ্যেরা গোপনে যীশুর কাছে এসে বললেন, “আমরা কেন সেই মন্দ আত্মাকে ছাড়াতে পারলাম না?” যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের অল্প বিশ্বাসের জন্যই পারলে না। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি একটা সর্ষে দানার মত বিশ্বাসও তোমাদের থাকে তবে তোমরা এই পাহাড়কে বলবে, ‘এখান থেকে সরে ওখানে যাও,’ আর তাতে ওটা সরে যাবে। তোমাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব হবে না। প্রার্থনা ও উপবাস ছাড়া এই রকম মন্দ আত্মা আর কিছুতে বের হয় না। পরে গালীল দেশের মধ্য দিয়ে যাবার সময় যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “মনুষ্যপুত্রকে লোকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। লোকেরা তাঁকে মেরে ফেলবে, আর তৃতীয় দিনে তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন।” এতে শিষ্যেরা খুব দুঃখিত হলেন। পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা যখন কফরনাহূমে গেলেন তখন উপাসনা-ঘরের কর্‌-আদায়কারীরা পিতরের কাছে এসে বললেন, “আপনাদের শিক্ষক কি উপাসনা-ঘরের কর্‌ দেন না?” পিতর বললেন “হ্যাঁ, দেন।” এর পর পিতর ঘরে এসে কিছু বলবার আগেই যীশু তাঁকে বললেন, “শিমোন, তোমার কি মনে হয়? এই পৃথিবীর রাজারা কাদের কাছ থেকে কর্‌ বা খাজনা আদায় করে থাকেন? নিজের দেশের লোকদের কাছ থেকে, না বিদেশীদের কাছ থেকে?” পিতর বললেন, “বিদেশীদের কাছ থেকে।” তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তাহলে তো নিজের দেশের লোকেরা রেহাই পেয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের ব্যবহারে কর্‌-আদায়কারীরা যেন অপমান বোধ না করে এইজন্য তুমি সাগরে গিয়ে বড়শী ফেল, আর প্রথমে যে মাছটা উঠবে তার মুখ খুললে একটা রূপার টাকা পাবে। ওটা নিয়ে গিয়ে তোমার আর আমার কর্‌ দিয়ে এস।” সেই সময়ে শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে বললেন, “স্বর্গ-রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় কে?” তখন যীশু একটা শিশুকে ডেকে তাঁদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি তোমরা মন ফিরিয়ে শিশুদের মত না হও তবে কোনমতেই স্বর্গ-রাজ্যে ঢুকতে পারবে না। যে কেউ এই শিশুর মত নিজেকে নম্র করে সে-ই স্বর্গ-রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আর যে কেউ এর মত কোন শিশুকে আমার নামে গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে। “আমার উপর বিশ্বাসী এই ছোটদের মধ্যে কাউকে যদি কেউ পাপের পথে নিয়ে যায় তবে তার গলায় একটা বড় পাথর বেঁধে তাকে সাগরের গভীর জলে ডুবিয়ে দেওয়া বরং তার পক্ষে ভাল। হায় জগৎ! পাপের পথে নিয়ে যাবার জন্য কত উস্‌কানিই না তোমার মধ্যে আছে! অবশ্য সেই সব উস্‌কানি আসবেই; তবুও ধিক্‌ সেই লোককে, যার মধ্য দিয়ে সেই উস্‌কানি আসে! “তোমার হাত কিম্বা পা যদি তোমাকে পাপের পথে টানে তবে তা কেটে ফেলে দাও। দুই হাত ও দুই পা নিয়ে চিরকালের আগুনে পড়বার চেয়ে বরং নুলা বা খোঁড়া হয়ে জীবনে ঢোকা তোমার পক্ষে ভাল। তোমার চোখ যদি তোমাকে পাপের পথে টানে তবে তা উপ্‌ড়ে ফেলে দাও। দুই চোখ নিয়ে নরকের আগুনে পড়বার চেয়ে বরং কানা হয়ে জীবনে ঢোকা তোমার পক্ষে ভাল। “দেখো, তোমরা যেন এই ছোটদের মধ্যে একজনকেও তুচ্ছ না কর। আমি তোমাদের বলছি, স্বর্গে তাদের দূতেরা সব সময় আমার স্বর্গস্থ পিতার মুখ দেখছেন। “যা হারিয়ে গেছে তা উদ্ধার করবার জন্য মনুষ্যপুত্র এসেছেন। তোমরা কি মনে কর? ধর, একজন লোকের একশোটা ভেড়া আছে। সেগুলোর মধ্যে যদি একটা ভুল পথে চলে যায় তবে সে কি নিরানব্বইটা পাহাড়ের ধারে রেখে সেই ভেড়াটা খুঁজতে যায় না? আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি সে সেটা পায় তবে যে নিরানব্বইটা ভুল পথে যায় নি, তাদের চেয়ে যেটা ভুল পথে চলে গিয়েছিল তার জন্য সে আরও বেশী আনন্দ করে। ঠিক সেইভাবে, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা নয় যে, এই ছোটদের মধ্যে একজনও নষ্ট হয়। “তোমার ভাই যদি তোমার বিরুদ্ধে অন্যায় করে তবে তার কাছে গিয়ে যখন আর কেউ থাকবে না তখন তার দোষ দেখিয়ে দিয়ো। যদি সে তোমার কথা শোনে তবে তুমি তো তোমার ভাইকে ফিরে পেলে। কিন্তু যদি সে না শোনে তবে অন্য দু’একজনকে তোমার সংগে নিয়ে যেয়ো, যেন দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথায় এই সব বিষয় সত্য বলে প্রমাণিত হয়। যদি সে তাদের কথা না শোনে তবে মণ্ডলীকে বোলো। সে যদি মণ্ডলীর কথাও না শোনে তবে সে তোমার কাছে অযিহূদী বা কর্‌-আদায়কারীর মত হোক। “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা পৃথিবীতে যা বাঁধবে তা স্বর্গেও বেঁধে রাখা হবে, আর যা খুলবে তা স্বর্গেও খুলে দেওয়া হবে। “আমি তোমাদের আরও বলছি, তোমাদের মধ্যে দু’জন যদি একমত হয়ে কোন বিষয়ে প্রার্থনা করে তবে আমার স্বর্গস্থ পিতা তোমাদের জন্য তা করবেন, কারণ যেখানে দুই বা তিনজন আমার নামে একত্র হয় সেখানে আমি তাদের মধ্যে উপস্থিত থাকি।” তখন পিতর এসে যীশুকে বললেন, “প্রভু, আমার ভাই আমার বিরুদ্ধে অন্যায় করলে আমি কতবার তাকে ক্ষমা করব? সাত বার কি?” যীশু তাঁকে বললেন, “কেবল সাত বার নয়, কিন্তু আমি তোমাকে সত্তর গুণ সাত বার পর্যন্ত ক্ষমা করতে বলি। “দেখ, স্বর্গ-রাজ্য এমন একজন রাজার মত যিনি তাঁর কর্মচারীদের কাছে হিসাব চাইলেন। তিনি যখন হিসাব নিতে আরম্ভ করলেন তখন তাদের মধ্য থেকে এমন একজন কর্মচারীকে আনা হল, রাজার কাছে যার লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ ছিল। তার ঋণ শোধ করবার ক্ষমতা ছিল না। তখন সেই মনিব আদেশ করলেন যেন সেই লোককে এবং তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে আর তার যা কিছু আছে সমস্ত বিক্রি করে পাওনা আদায় করা হয়। তাতে সেই কর্মচারী মাটিতে পড়ে মনিবের পা ধরে বলল, ‘হে প্রভু, আমার উপর ধৈর্য ধরুন, আপনাকে আমি সমস্তই শোধ করে দেব।’ তখন মনিব মমতা করে সেই কর্মচারীকে ছেড়ে দিলেন এবং তার ঋণ ক্ষমা করে দিলেন। “পরে সেই কর্মচারী বাইরে গিয়ে তার একজন সংগী-কর্মচারীকে দেখতে পেল। তার কাছে সেই সংগী-কর্মচারীটির প্রায় একশো টাকা ঋণ ছিল। সেই কর্মচারী তার সংগীর গলা টিপে ধরে বলল, ‘তুই যে টাকা ধার করেছিস্‌ তা শোধ কর্‌।’ “সংগী-কর্মচারীটি তখন তার পায়ে পড়ে তাকে অনুরোধ করে বলল, ‘আমার উপর ধৈর্য ধর, আমি সব শোধ করে দেব।’ কিন্তু সে রাজী হল না বরং ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে জেলখানায় আটক রাখল। “এই সব ঘটনা দেখে তার অন্য সংগী-কর্মচারীরা খুব দুঃখিত হল। তারা গিয়ে তাদের মনিবের কাছে সব কথা জানাল। তখন মনিব সেই কর্মচারীকে ডেকে বললেন, ‘দুষ্ট কর্মচারী! তুমি আমাকে অনুরোধ করেছিলে বলে আমি তোমার সব ঋণ ক্ষমা করেছিলাম। আমি যেমন তোমাকে দয়া করেছিলাম তেমনি তোমার সংগী-কর্মচারীকে দয়া করা কি তোমার উচিত ছিল না?’ পরে তার মনিব রাগ করে তার সমস্ত ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত তাকে কষ্ট দেবার জন্য জেলখানার লোকদের হাতে তুলে দিলেন। “ঠিক সেইভাবে, তোমরা প্রত্যেকে যদি তোমাদের ভাইকে অন্তর দিয়ে ক্ষমা না কর তবে আমার স্বর্গস্থ পিতাও তোমাদের উপর এই রকম করবেন।” এই সব কথা বলা শেষ করে যীশু গালীল প্রদেশ ছেড়ে যর্দন নদীর অন্য পারে যিহূদিয়া প্রদেশে গেলেন। অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে গেল আর তিনি সেখানে তাদের সুস্থ করলেন। তখন কয়েকজন ফরীশী যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য তাঁর কাছে এসে বললেন, “মোশির আইন-কানুন মতে যে কোন কারণে স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া কি কারও পক্ষে উচিত?” উত্তরে যীশু বললেন, “আপনারা কি পড়েন নি, সৃষ্টিকর্তা প্রথমে তাঁদের পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে সৃষ্টি করেছিলেন আর বলেছিলেন, ‘এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে আর তারা দু’জন একদেহ হবে’? এইজন্য তারা আর দুই নয়, কিন্তু একদেহ। তাই ঈশ্বর যা একসংগে যোগ করেছেন মানুষ তা আলাদা না করুক।” তখন ফরীশীরা তাঁকে বললেন, “তাহলে মোশি কেন ত্যাগপত্র দিয়ে স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে আদেশ করেছেন?” যীশু তাদের বললেন, “আপনাদের মন কঠিন বলেই স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে মোশি আপনাদের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম থেকে এই রকম ছিল না। আমি আপনাদের বলছি, যে কেউ ব্যভিচারের দোষ ছাড়া অন্য কোন কারণে স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে অন্যকে বিয়ে করে সে ব্যভিচার করে।” তখন তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধ যদি এই রকমেরই হয় তাহলে তো বিয়ে না করাই ভাল।” যীশু তাঁদের বললেন, “সবাই এই কথা মেনে নিতে পারে না; কেবল যাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তারাই তা মেনে নিতে পারে। কেউ কেউ খোজা হয়ে জন্মগ্রহণ করে, সেইজন্য তারা বিয়ে করে না। আর কাউকে কাউকে মানুষেই খোজা করে, সেইজন্য তারা বিয়ে করে না। আবার এমন কেউ কেউ আছে যারা স্বর্গ-রাজ্যের জন্য বিয়ে করবে না বলে মন স্থির করে। যে এই কথা মেনে নিতে পারে সে মেনে নিক।” পরে লোকেরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যীশুর কাছে নিয়ে আসল যেন তিনি তাদের মাথার উপর হাত রেখে প্রার্থনা করেন। কিন্তু শিষ্যেরা তাদের বকুনি দিতে লাগলেন। তখন যীশু বললেন, “ছেলেমেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিয়ো না; কারণ স্বর্গ-রাজ্য এদের মত লোকদেরই।” ছেলেমেয়েদের মাথার উপর হাত রেখে প্রার্থনা করবার পর যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন। পরে একজন যুবক এসে যীশুকে বলল, “গুরু, অনন্ত জীবন পাবার জন্য আমাকে ভাল কি করতে হবে?” তিনি তাকে বললেন, “ভালোর বিষয়ে কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছ? ভাল মাত্র একজনই আছেন। যদি তুমি অনন্ত জীবন পেতে চাও তবে তাঁর সব আদেশ পালন কর।” সেই যুবকটি বলল, “কোন্‌ কোন্‌ আদেশ?” যীশু বললেন, “খুন কোরো না, ব্যভিচার কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, মা-বাবাকে সম্মান কোরো আর তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবেসো।” সেই যুবকটি যীশুকে বলল, “আমি এগুলো সবই পালন করে আসছি, তবে আমাকে আর কি করতে হবে?” যীশু তাকে বললেন, “যদি তুমি পুরোপুরি খাঁটি হতে চাও তবে গিয়ে তোমার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে গরীবদের দান কর। তাতে তুমি স্বর্গে ধন পাবে। তারপর এসে আমার শিষ্য হও।” এই কথা শুনে যুবকটি খুব দুঃখিত হয়ে চলে গেল, কারণ তার অনেক ধন-সম্পত্তি ছিল। তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, ধনী লোকের পক্ষে স্বর্গ-রাজ্যে ঢোকা কঠিন হবে। আমি আবার তোমাদের বলছি, ধনী লোকের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকবার চেয়ে বরং সূচের ফুটা দিয়ে উটের ঢোকা সহজ।” এই কথা শুনে শিষ্যেরা আশ্চর্য হয়ে বললেন, “তাহলে কে পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারে?” যীশু শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “মানুষের পক্ষে এটা অসম্ভব বটে, কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে সবই সম্ভব।” তখন পিতর তাঁকে বললেন, “দেখুন, আমরা সব কিছু ছেড়ে আপনার শিষ্য হয়েছি; আমরা কি পাব?” যীশু তাঁদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা যারা আমার শিষ্য হয়েছ, নতুন সৃষ্টিতে যখন মনুষ্যপুত্র তাঁর সম্মানের সিংহাসনে বসবেন তখন তোমরাও বারোটা সিংহাসনে বসবে এবং ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে। আর যে কেউ আমার জন্য বাড়ী-ঘর, ভাই-বোন, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে কিম্বা জায়গা-জমি ছেড়ে দিয়েছে, সে তার একশো গুণ বেশী পাবে আর অনন্ত জীবনও পাবে। যারা প্রথম সারিতে আছে তাদের মধ্যে অনেকে শেষে পড়বে, আর যারা শেষের সারিতে আছে তাদের মধ্যে অনেকে প্রথম হবে।” “স্বর্গ-রাজ্য একজন গৃহস্থের মত। তিনি একদিন ভোর বেলায় ক্ষেতের কাজে মজুর লাগাবার জন্য বাইরে গেলেন। তিনি মজুরদের সংগে ঠিক করলেন যে, দিনে এক দীনার করে দেবেন। এর পর তিনি তাদের তাঁর আংগুর ক্ষেতে পাঠিয়ে দিলেন। প্রায় ন’টার সময় আবার তিনি বাইরে গেলেন এবং বাজারে আরও কয়েকজনকে বিনা কাজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরাও আমার আংগুর ক্ষেতে কাজ করতে যাও। আমি তোমাদের উপযুক্ত মজুরি দেব।’ তাতে সেই লোকেরাও কাজ করতে গেল। “সেই গৃহস্থ আবার প্রায় বারোটায় এবং তিনটায় বাইরে গিয়ে ঐ একই রকম করলেন। প্রায় পাঁচটার সময় বাইরে গিয়ে অন্য কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা কাজ না করে সারাদিন এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’ “তারা তাঁকে বলল, ‘কেউ আমাদের কাজে লাগায় নি।’ “তিনি সেই লোকদের বললেন, ‘তোমরাও আমার আংগুর ক্ষেতের কাজে যাও।’ “পরে সন্ধ্যা হলে আংগুর ক্ষেতের মালিক তাঁর কর্মচারীকে বললেন, ‘মজুরদের ডেকে শেষ জন থেকে আরম্ভ করে প্রথম জন পর্যন্ত প্রত্যেককে মজুরি দাও।’ “বিকাল পাঁচটার সময় যে মজুরদের কাজে লাগানো হয়েছিল তারা এসে প্রত্যেকে এক এক দীনার করে নিয়ে গেল। এতে যাদের প্রথমে কাজে লাগানো হয়েছিল তারা বেশী পাবে বলে মনে করল, কিন্তু তারাও প্রত্যেকে এক এক দীনার করেই পেল। তাতে তারা সেই মালিকের বিরুদ্ধে বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে লাগল, ‘আমরা সারা দিন রোদে পুড়ে কাজ করেছি। কিন্তু যাদের শেষে কাজে লাগানো হয়েছিল তারা মাত্র এক ঘণ্টা কাজ করেছে, অথচ তাদের আপনি আমাদের সমান মজুরি দিলেন।’ “তখন মালিক তাদের মধ্যে একজনকে বললেন, ‘বন্ধু, আমি তোমার উপর তো অন্যায় করি নি। তুমি কি এক দিনারে কাজ করতে রাজী হও নি? তোমার পাওনা নিয়ে চলে যাও। তোমাকে যেমন দিয়েছি, এই শেষের জনকেও তেমনই দিতে আমার ইচ্ছা। যা আমার নিজের, তা আমার খুশীমত ব্যবহার করবার অধিকার কি আমার নেই? নাকি আমি দয়ালু বলে তোমার চোখ টাটাচ্ছে?’ ” গল্পের শেষে যীশু বললেন, “এইভাবেই শেষে যারা তারা প্রথম হবে, আর প্রথম যারা তারা শেষে পড়বে।” পরে যীশু যিরূশালেমে যাবার পথে তাঁর বারোজন শিষ্যকে এক পাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, “দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাচ্ছি। সেখানে মনুষ্যপুত্রকে প্রধান পুরোহিতদের ও ধর্ম-শিক্ষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। তাঁরা তাঁর বিচার করে তাঁকে মৃত্যুর উপযুক্ত বলে স্থির করবেন। তাঁরা তাঁকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবার জন্য এবং চাবুক মারবার ও ক্রুশে দেবার জন্য অযিহূদীদের হাতে দেবেন; পরে তৃতীয় দিনে তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন।” পরে সিবদিয়ের দুই ছেলেকে তাঁদের মা সংগে করে নিয়ে যীশুর কাছে আসলেন এবং তাঁর কাছে কিছু চাইবার উদ্দেশ্যে তাঁকে প্রণাম করলেন। যীশু তাঁকে বললেন, “আপনি কি চান?” তিনি বললেন, “আপনি এই আদেশ দিন যেন আপনার রাজ্যে আমার এই দুই ছেলের একজন আপনার ডান পাশে আর একজন বাঁ পাশে বসতে পায়।” উত্তরে যীশু বললেন, “তোমরা কি চাইছ তা জান না। যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খেতে যাচ্ছি তাতে কি তোমরা খেতে পার?” তাঁরা তাঁকে বললেন, “পারি।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “সত্যিই তোমরা আমার পেয়ালায় খাবে, কিন্তু আমার ডানে বা বাঁয়ে বসতে দেবার অধিকার আমার নেই। আমার পিতা যাদের জন্য তা ঠিক করে রেখেছেন তারাই তা পাবে।” এই সব কথা শুনে বাকী দশজন শিষ্য সেই দুই ভাইয়ের উপর বিরক্ত হলেন। তখন যীশু শিষ্যদের ডেকে বললেন, “তোমরা এই কথা জান যে, অযিহূদীদের মধ্যে শাসনকর্তারা তাদের প্রভু হয় এবং নেতারা তাদের উপর হুকুম চালায়। কিন্তু তোমাদের মধ্যে তা হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায় তাকে তোমাদের সেবাকারী হতে হবে, আর যে প্রথম হতে চায় তাকে তোমাদের দাস হতে হবে। মনে রেখো, মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।” যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা যিরীহো শহর ছেড়ে যাবার সময় অনেক লোক যীশুর পিছনে পিছনে চলল। পথের ধারে দু’জন অন্ধ লোক বসে ছিল। যীশু সেই পথ দিয়ে যাচ্ছেন শুনে তারা চিৎকার করে বলল, “প্রভু, দায়ূদের বংশধর, আমাদের দয়া করুন।” তারা যেন চুপ করে সেইজন্য লোকেরা তাদের ধমক দিল। কিন্তু তারা আরও চিৎকার করে বলল, “প্রভু, দায়ূদের বংশধর, আমাদের দয়া করুন।” তখন যীশু দাঁড়ালেন এবং তাদের ডেকে বললেন, “তোমরা কি চাও? আমি তোমাদের জন্য কি করব?” তারা তাঁকে বলল, “প্রভু, আমাদের চোখ খুলে দিন।” তখন যীশু মমতায় পূর্ণ হয়ে তাদের চোখ ছুঁলেন, আর তখনই তারা দেখতে পেল এবং তাঁর পিছনে পিছনে চলল। যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা যিরূশালেমের কাছাকাছি পৌঁছে জৈতুন পাহাড়ের উপরে বৈৎফগী গ্রামের কাছে আসলেন। তখন যীশু দু’জন শিষ্যকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা ঐ সামনের গ্রামে যাও। সেখানে গেলেই দেখতে পাবে একটা গাধা বাঁধা আছে এবং একটা বাচ্চাও তার সংগে আছে। সেই দু’টা খুলে আমার কাছে নিয়ে এস। কেউ যদি কিছু বলে তবে বোলো, ‘প্রভুর দরকার আছে।’ তাতে তখনই সে তাদের ছেড়ে দেবে।” এটা হল যেন নবীর মধ্য দিয়ে এই যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হয়: “তোমরা সিয়োন কন্যাকে বল, তোমার রাজা তোমার কাছে আসছেন। তিনি নম্র। তিনি গাধার উপরে, গাধীর বাচ্চার উপরে চড়ে আসছেন।” যীশু সেই শিষ্যদের যেমন আদেশ দিয়েছিলেন তাঁরা গিয়ে তেমনি করলেন। তাঁরা সেই গাধা ও গাধীর বাচ্চাটা এনে তাদের উপর নিজেদের গায়ের চাদর পেতে দিলে পর যীশু বসলেন। অনেক লোক পথের উপরে তাদের গায়ের চাদর বিছিয়ে দিল। অন্যেরা গাছের ডাল কেটে নিয়ে পথের উপরে ছড়াল। যারা যীশুর সামনে ও পিছনে যাচ্ছিল তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, “হোশান্না, দায়ূদের বংশধর! প্রভুর নামে যিনি আসছেন তাঁর গৌরব হোক। স্বর্গেও হোশান্না!” যীশু যিরূশালেমে ঢুকলে পর শহরের সমস্ত জায়গায় হুলস্থূল পড়ে গেল। সবাই জিজ্ঞাসা করতে লাগল, “ইনি কে?” লোকেরা বলল, “উনি গালীলের নাসরত গ্রামের নবী যীশু।” পরে যীশু উপাসনা-ঘরে ঢুকলেন এবং সেখানে যারা কেনা-বেচা করছিল তাদের সবাইকে তাড়িয়ে দিলেন। তিনি টাকা বদল করে দেবার লোকদের টেবিল এবং যারা কবুতর বিক্রি করছিল তাদের বসবার জায়গা উল্টে দিয়ে বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রে ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার ঘরকে প্রার্থনার ঘর বলা হবে,’ কিন্তু তোমরা এটাকে ডাকাতের আড্ডাখানা করে তুলছ।” এর পরে অন্ধ ও খোঁড়া লোকেরা উপাসনা-ঘরে যীশুর কাছে আসল, আর তিনি তাদের সুস্থ করলেন। তিনি যে সব আশ্চর্য কাজ করছিলেন প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা তা দেখলেন। তাঁরা উপাসনা-ঘরের মধ্যে ছেলেমেয়েদের চিৎকার করে বলতে শুনলেন, “হোশান্না, দায়ূদের বংশধর!” এই সব দেখে-শুনে তারা বিরক্ত হয়ে যীশুকে বললেন, “ওরা যা বলছে তা তুমি শুনতে পাচ্ছ?” যীশু তাঁদের বললেন, “হ্যাঁ, পাচ্ছি। শাস্ত্রে আপনারা কি কখনও পড়েন নি: ছোট ছেলেমেয়ে এবং শিশুদের কথার মধ্যে তুমি নিজের জন্য প্রশংসার ব্যবস্থা করেছ?” এর পরে যীশু তাঁদের ছেড়ে শহরের বাইরে বৈথনিয়া গ্রামে চলে গেলেন এবং সেখানেই রাতটা কাটালেন। পরদিন সকালে শহরে ফিরে আসবার সময় যীশুর খিদে পেল। পথের পাশে একটা ডুমুর গাছ দেখে তিনি গাছটার কাছে গেলেন, কিন্তু তাতে পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না। তখন তিনি গাছটাকে বললেন, “আর কখনও তোমার মধ্যে ফল না ধরুক।” আর তখনই ডুমুর গাছটা শুকিয়ে গেল। শিষ্যেরা তা দেখে আশ্চর্য হয়ে বললেন, “ডুমুর গাছটা এত তাড়াতাড়ি কেমন করে শুকিয়ে গেল?” উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা সন্দেহ না করে যদি বিশ্বাস কর তবে ডুমুর গাছের উপরে আমি যা করেছি তোমরাও তা করতে পারবে। কেবল তা নয়, কিন্তু যদি এই পাহাড়কে বল, ‘উঠে সাগরে গিয়ে পড়,’ তবে তাও হবে। তোমরা যদি বিশ্বাস করে প্রার্থনা কর তবে তোমরা যা চাইবে তা-ই পাবে।” পরে যীশু আবার উপাসনা-ঘরে গেলেন। যখন তিনি সেখানে শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন প্রধান পুরোহিতেরা ও যিহূদীদের বৃদ্ধ নেতারা তাঁর কাছে এসে বললেন, “তুমি কোন্‌ অধিকারে এই সব করছ? এই অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে?” যীশু তাঁদের বললেন, “আমিও আপনাদের একটা কথা জিজ্ঞাসা করব। আপনারা যদি আমাকে তার উত্তর দিতে পারেন তবে আমিও আপনাদের বলব আমি কোন্‌ অধিকারে এই সব করছি। বলুন দেখি, বাপ্তিস্ম দেবার অধিকার যোহন কোথা থেকে পেয়েছিলেন? ঈশ্বরের কাছ থেকে, না মানুষের কাছ থেকে?” তখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে এই আলোচনা করলেন, “আমরা যদি বলি, ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে,’ তাহলে সে আমাদের বলবে, ‘তবে কেন আপনারা যোহনকে বিশ্বাস করেন নি?’ আবার যদি বলি, ‘মানুষের কাছ থেকে,’ তবে লোকদের কাছ থেকে আমাদের ভয় আছে, কারণ যোহনকে সবাই নবী বলে মনে করে।” এইজন্য উত্তরে তাঁরা যীশুকে বললেন, “আমরা জানি না।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তবে আমিও আপনাদের বলব না আমি কোন্‌ অধিকারে এই সব করছি।” তারপর যীশু বললেন, “আচ্ছা, আপনারা কি মনে করেন? ধরুন, একজন লোকের দু’টি ছেলে ছিল। লোকটি তাঁর বড় ছেলের কাছে গিয়ে বলল, ‘আজ তুমি আংগুর ক্ষেতে গিয়ে কাজ কর।’ উত্তরে ছেলেটি বলল, ‘আমি যাব না।’ কিন্তু পরে সে মন ফিরিয়ে কাজে গেল। লোকটি পরে অন্য ছেলেটির কাছে গিয়ে সেই একই কথা বলল। অন্য ছেলেটি উত্তরে বলল, ‘আমি যাচ্ছি,’ কিন্তু গেল না। এই দু’জনের মধ্যে কে বাবার ইচ্ছা পালন করল?” তখন ধর্ম-নেতারা উত্তর দিলেন, “প্রথম জন।” যীশু তাঁদের বললেন, “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, কর্‌- আদায়কারীরা এবং বেশ্যারা আপনাদের আগে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকছে, কারণ যোহন ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলবার পথ দেখাবার জন্য আপনাদের কাছে এসেছিলেন, আর আপনারা তাঁকে বিশ্বাস করেন নি। কিন্তু কর্‌- আদায়কারীরা এবং বেশ্যারা তাঁকে বিশ্বাস করেছিল। এ দেখেও আপনারা মন ফিরিয়ে তাঁকে বিশ্বাস করেন নি। “আর একটা দৃষ্টান্ত দিই, শুনুন। একজন গৃহস্থ একটা আংগুর ক্ষেত করে তার চারদিকে বেড়া দিলেন। পরে সেই ক্ষেতের মধ্যে আংগুর-রস করবার জন্য গর্ত খুঁড়লেন এবং একটা উঁচু পাহারা-ঘর তৈরী করলেন। এর পরে তিনি কয়েকজন চাষীর কাছে সেই আংগুর ক্ষেতটা ইজারা দিয়ে বিদেশে চলে গেলেন। যখন ফল পাকবার সময় হয়ে আসল তখন তিনি সেই ফলের ভাগ নিয়ে আসবার জন্য তাঁর দাসদের সেই চাষীদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। চাষীরা তাঁর দাসদের একজনকে ধরে মারল, একজনকে খুন করল এবং অন্য আর একজনকে পাথর মারল। এর পর তিনি প্রথম বারের চেয়ে আরও বেশী দাস পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু চাষীরা সেই দাসদের সংগে একই রকমের ব্যবহার করল। আংগুর ক্ষেতের মালিক শেষে নিজের ছেলেকেই তাদের কাছে পাঠালেন। তিনি ভাবলেন, তারা অন্ততঃ তাঁর ছেলেকে সম্মান করবে। কিন্তু সেই চাষীরা ছেলেকে দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, ‘এ-ই পরে সম্পত্তির মালিক হবে। চল, আমরা ওকে মেরে ফেলি, তাতে আমরাই সম্পত্তির মালিক হব।’ এই বলে তারা সেই ছেলেকে ধরে আংগুর ক্ষেত থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলল। তাহলে বলুন দেখি, আংগুর ক্ষেতের মালিক যখন নিজে আসবেন তখন তিনি সেই চাষীদের নিয়ে কি করবেন?” সেই ধর্ম-নেতারা যীশুকে বললেন, “তিনি সেই দুষ্ট লোকদের একেবারে ধ্বংস করবেন এবং যে চাষীরা তাঁকে সময়মত ফলের ভাগ দেবে তাদের কাছেই সেই আংগুর ক্ষেতটা ইজারা দেবেন।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা কি পবিত্র শাস্ত্রের মধ্যে কখনও পড়েন নি, ‘রাজমিস্ত্রিরা যে পাথরটা বাতিল করে দিয়েছিল, সেটাই সবচেয়ে দরকারী পাথর হয়ে উঠল; প্রভুই এটা করলেন, আর তা আমাদের চোখে খুব আশ্চর্য লাগে’? এইজন্য আপনাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্য আপনাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে এবং এমন লোকদের দেওয়া হবে যাদের জীবনে সেই রাজ্যের উপযুক্ত ফল দেখা যাবে। যে সেই পাথরের উপরে পড়বে সে ভেংগে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে এবং সেই পাথর যার উপরে পড়বে সে চুরমার হয়ে যাবে।” প্রধান পুরোহিতেরা এবং ফরীশীরা যীশুর শিক্ষা-ভরা গল্পগুলো শুনে বুঝতে পারলেন তিনি তাঁদের কথাই বলছেন। তখন তাঁরা যীশুকে ধরতে চাইলেন, কিন্তু লোকদের ভয়ে তা করলেন না, কারণ লোকে তাঁকে নবী বলে মনে করত। শিক্ষা দেবার জন্য যীশু আবার সেই ধর্ম-নেতাদের কাছে এই গল্পটা বললেন, “স্বর্গ-রাজ্য এমন একজন রাজার মত যিনি তাঁর ছেলের বিয়ের ভোজ প্রস্তুত করলেন। সেই ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের ডাকবার জন্য তিনি তাঁর দাসদের পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু তারা আসতে চাইল না। তখন তিনি আবার অন্য দাসদের দিয়ে নিমন্ত্রিতদের বলে পাঠালেন, ‘দেখুন, আমি আমার বলদ ও মোটাসোটা বাছুরগুলো কেটে ভোজ প্রস্তুত করেছি। এখন সবই প্রস্তুত, আপনারা ভোজে আসুন।’ “নিমন্ত্রিত লোকেরা কিন্তু সেই দাসদের কথা না শুনে একজন তার নিজের ক্ষেতে ও আর একজন তার নিজের কাজে চলে গেল। বাকী সবাই রাজার দাসদের ধরে অপমান করল ও মেরে ফেলল। তখন রাজা খুব রেগে গেলেন এবং সৈন্য পাঠিয়ে তিনি সেই খুনীদের ধ্বংস করলেন আর তাদের শহর পুড়িয়ে দিলেন। পরে তিনি তাঁর দাসদের বললেন, ‘ভোজ প্রস্তুত, কিন্তু যাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল তারা এর যোগ্য নয়। তোমরা বরং রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাও, আর যত জনের দেখা পাও সবাইকে বিয়ের ভোজে ডেকে আন।’ তখন সেই দাসেরা বাইরে রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে ভাল-মন্দ যাদের পেল সবাইকে ডেকে আনল। তাতে বিয়ে-বাড়ী সেই অতিথিতে ভরে গেল। “এর পর রাজা অতিথিদের দেখবার জন্য ভিতরে এসে দেখলেন, একজন লোক বিয়ের কাপড় না পরেই সেখানে এসেছে। রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বন্ধু, বিয়ের কাপড় ছাড়া কেমন করে এখানে ঢুকলে?’ সে এর কোন উত্তর দিতে পারল না। তখন রাজা চাকরদের বললেন, ‘এর হাত-পা বেঁধে বাইরের অন্ধকারে ফেলে দাও। সেই জায়গায় লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে।’ ” গল্পের শেষে যীশু বললেন, “এইজন্য বলি, অনেক লোককে ডাকা হয়েছে কিন্তু অল্প লোককে বেছে নেওয়া হয়েছে।” তখন ফরীশীরা চলে গেলেন এবং কেমন করে যীশুকে তাঁর কথার ফাঁদে ফেলা যায় সেই পরামর্শ করতে লাগলেন। তারা হেরোদের দলের কয়েকজন লোকের সংগে নিজেদের কয়েকজন শিষ্যকে যীশুর কাছে পাঠালেন। তারা যীশুকে বলল, “গুরু, আমরা জানি আপনি একজন সৎ লোক। ঈশ্বরের পথের বিষয়ে আপনি সত্যভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। লোকে কি মনে করবে না করবে তাতে আপনার কিছু যায় আসে না, কারণ আপনি কারও মুখ চেয়ে কিছু করেন না। তাহলে আপনি বলুন, মোশির আইন- কানুন অনুসারে রোম-সম্রাটকে কি কর্‌ দেওয়া উচিত? আপনার কি মনে হয়?” তাদের মন্দ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে যীশু বললেন, “ভণ্ডেরা, কেন আমাকে পরীক্ষা করছ? যে টাকায় কর্‌ দেবে তার একটা আমাকে দেখাও।” তারা একটা দীনার যীশুর কাছে আনল। তখন যীশু তাদের বললেন, “এর উপরে এই ছবি ও নাম কার?” তারা বলল, “রোম-সম্রাটের।” যীশু তাদের বললেন, “তবে যা সম্রাটের তা সম্রাটকে দাও, আর যা ঈশ্বরের তা ঈশ্বরকে দাও।” এই কথা শুনে তারা আশ্চর্য হল এবং তাঁকে ছেড়ে চলে গেল। সেই একই দিনে কয়েকজন সদ্দূকী যীশুর কাছে আসলেন। সদ্দূকীদের মতে মৃতদের জীবিত হয়ে ওঠা বলে কিছু নেই। এইজন্য তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “গুরু, মোশি বলেছেন, যদি কোন লোক সন্তানহীন অবস্থায় মারা যায় তবে তার ভাই তার স্ত্রীকে বিয়ে করে ভাইয়ের হয়ে তার বংশ রক্ষা করবে। আমাদের এখানে সাত ভাই ছিল। প্রথম জন বিয়ে করে মারা গেল এবং সন্তান না থাকাতে সে তার ভাইয়ের জন্য নিজের স্ত্রীকে রেখে গেল। এইভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও সপ্তম ভাই পর্যন্ত সেই স্ত্রীকে বিয়ে করল। শেষে সেই স্ত্রীলোকটিও মারা গেল। তাহলে মৃতেরা যখন জীবিত হয়ে উঠবে তখন ঐ সাত ভাইয়ের মধ্যে এই স্ত্রীলোকটি কার স্ত্রী হবে? তারা সবাই তো তাকে বিয়ে করেছিল।” যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা ভুল করছেন, কারণ আপনারা শাস্ত্রও জানেন না, ঈশ্বরের শক্তির বিষয়েও জানেন না। মৃতেরা জীবিত হয়ে উঠবার পরে বিয়ে করবে না এবং তাদের বিয়ে দেওয়াও হবে না; তারা স্বর্গদূতদের মত হবে। মৃতদের জীবিত হয়ে উঠবার বিষয়ে ঈশ্বর যে কথা আপনাদের বলেছেন সেই কথা কি আপনারা শাস্ত্রে পড়েন নি? তাতে লেখা আছে, ‘আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর।’ কিন্তু ঈশ্বর তো মৃতদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিতদেরই ঈশ্বর।” এই কথা শুনে লোকেরা তাঁর শিক্ষায় আশ্চর্য হল। যীশু সদ্দূকীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন শুনে ফরীশীরা একত্র হলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ধর্ম-শিক্ষক যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য জিজ্ঞাসা করলেন, “গুরু, মোশির আইন-কানুনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আদেশ কোন্‌টা?” তার পরের দরকারী আদেশটা প্রথমটারই মত-‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে।’ মোশির সমস্ত আইন-কানুন এবং নবীদের সমস্ত শিক্ষা এই দু’টি আদেশের উপরেই নির্ভর করে আছে।” ফরীশীরা তখনও একসংগে ছিলেন, এমন সময় যীশু তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা মশীহের বিষয়ে কি মনে করেন? তিনি কার বংশধর?” তাঁরা যীশুকে বললেন, “দায়ূদের বংশধর।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তবে দায়ূদ কেমন করে মশীহকে পবিত্র আত্মার পরিচালনায় প্রভু বলে ডেকেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, ‘সদাপ্রভু আমার প্রভুকে বললেন, যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় রাখি, ততক্ষণ তুমি আমার ডানদিকে বস।’ তাহলে দায়ূদ যখন মশীহকে প্রভু বলে ডেকেছেন তখন মশীহ কেমন করে দায়ূদের বংশধর হতে পারেন?” এর উত্তরে কেউ এক কথাও তাঁকে বলতে পারল না এবং সেই দিন থেকে কেউ তাঁকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করতেও সাহস করল না। পরে যীশু লোকদের কাছে ও তাঁর শিষ্যদের কাছে বললেন, “আইন- কানুন শিক্ষা দেবার ব্যাপারে ধর্ম-শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা মোশির জায়গায় আছেন। এইজন্য তাঁরা যা কিছু করতে বলেন তা কোরো এবং যা পালন করবার আদেশ দেন তা পালন কোরো। কিন্তু তাঁরা যা করেন তোমরা তা কোরো না, কারণ তাঁরা মুখে যা বলেন কাজে তা করেন না। তাঁরা ভারী ভারী বোঝা বেঁধে মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেন, কিন্তু সেগুলো সরাবার জন্য নিজেরা একটা আংগুলও নাড়াতে চান না। লোকদের দেখাবার জন্যই তাঁরা সব কাজ করেন। পবিত্র শাস্ত্রের পদ-লেখা তাবিজ তাঁরা বড় করে তৈরী করেন আর নিজেদের ধার্মিক দেখাবার জন্য চাদরের কোণায় কোণায় লম্বা থোপ্‌না লাগান। ভোজের সময় সম্মানের জায়গায় এবং সমাজ-ঘরে প্রধান প্রধান আসনে তাঁরা বসতে ভালবাসেন। তাঁরা হাটে-বাজারে সম্মান খুঁজে বেড়ান আর চান যেন লোকেরা তাঁদের গুরু বলে ডাকে। “কেউ তোমাদের গুরু বলে ডাকুক তা চেয়ো না, কারণ তোমাদের গুরু বলতে কেবল একজনই আছেন, আর তোমরা সবাই ভাই ভাই। এই পৃথিবীতে কাউকেই পিতা বলে ডেকো না, কারণ তোমাদের একজনই পিতা আর তিনি স্বর্গে আছেন। কেউ তোমাদের নেতা বলে ডাকুক তা চেয়ো না, কারণ তোমাদের নেতা বলতে কেবল একজনই আছেন, তিনি মশীহ। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় সে তোমাদের সেবাকারী হোক। যে কেউ নিজেকে উঁচু করে তাকে নীচু করা হবে এবং যে কেউ নিজেকে নীচু করে তাকে উঁচু করা হবে। “ভণ্ড ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা, ধিক্‌ আপনাদের! আপনারা লোকদের সামনে স্বর্গ-রাজ্যের দরজা বন্ধ করে রাখেন। তাতে নিজেরাও ঢোকেন না আর যারা ঢুকতে চেষ্টা করছে তাদেরও ঢুকতে দেন না। “ভণ্ড ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা, ধিক্‌ আপনাদের! এক দিকে আপনারা লোকদের দেখাবার জন্য লম্বা লম্বা প্রার্থনা করেন, অন্য দিকে বিধবাদের সম্পত্তি দখল করেন। এইজন্য আপনাদের অনেক বেশী শাস্তি হবে। “ভণ্ড ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা, ধিক্‌ আপনাদের! একটি মাত্র লোককে আপনাদের ধর্ম-মতে আনবার জন্য আপনারা দুনিয়ার কোথায় না যান। আর সে যখন আপনাদের ধর্ম-মতে আসে তখন আপনারা নিজেদের চেয়ে তাকে অনেক বেশী করে নরকের উপযুক্ত করে তোলেন। “ধিক্‌ আপনাদের! আপনারা নিজেরা অন্ধ অথচ অন্যদের পথ দেখান। আপনারা বলে থাকেন, উপাসনা-ঘরের নামে কেউ শপথ করলে তাতে কিছু হয় না, কিন্তু যদি কেউ উপাসনা-ঘরের সোনার নামে শপথ করে তবে সে সেই শপথে বাঁধা পড়ে। মূর্খ ও অন্ধের দল, কোন্‌টা বড়? সোনা, না সেই উপাসনা-ঘর যা সেই সোনাকে ঈশ্বরের জন্য আলাদা করে রাখে? আপনারা আবার এই কথাও বলে থাকেন, বেদীর নামে কেউ শপথ করলে কিছুই হয় না, কিন্তু যদি কেউ সেই বেদীর উপরে যে দান আছে তার নামে শপথ করে তবে সে সেই শপথে বাঁধা পড়ে। অন্ধের দল, কোন্‌টা বড়? সেই দান, না সেই বেদী যা সেই দানকে ঈশ্বরের জন্য আলাদা করে রাখে? এইজন্য বেদীর নামে যে শপথ করে সে সেই বেদী এবং তার উপরের সব কিছুর নামেই শপথ করে। আর উপাসনা-ঘরের নামে যে শপথ করে সে উপাসনা-ঘর এবং তার ভিতরে যিনি থাকেন তাঁরই নামে শপথ করে। যে স্বর্গের নামে শপথ করে সে ঈশ্বরের সিংহাসন এবং যিনি তার উপর বসে আছেন তাঁরই নামে শপথ করে। “ভণ্ড ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা, ধিক্‌ আপনাদের! আপনারা পুদিনা, মৌরি আর জিরার দশ ভাগের এক ভাগ ঈশ্বরকে ঠিকমতই দিয়ে থাকেন; কিন্তু ন্যায়, দয়া এবং বিশ্বস্ততা, যা মোশির আইন-কানুনের আরও দরকারী বিষয় তা আপনারা বাদ দিয়েছেন। আগেরগুলো পালন করবার সংগে সংগে পরেরগুলোও পালন করা আপনাদের উচিত। আপনারা নিজেরা অন্ধ অথচ অন্যদের পথ দেখান। একটা ছোট মাছিও আপনারা ছাঁকেন অথচ উট গিলে ফেলেন। “ভণ্ড ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা, ধিক্‌ আপনাদের! আপনারা থালা-বাটির বাইরের দিকটা পরিষ্কার করে থাকেন, কিন্তু সেগুলো জুলুমের জিনিস আর লোভের ফল দিয়ে পূর্ণ। অন্ধ ফরীশীরা, আগে সেগুলোর ভিতরের দিকটা পরিষ্কার করুন, তাতে তার বাইরের দিকটাও পরিষ্কার হবে। “ভণ্ড ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা, ধিক্‌ আপনাদের! আপনারা চুনকাম করা কবরের মত, যার বাইরের দিকটা সুন্দর কিন্তু ভিতরটা মরা মানুষের হাড়- গোড় ও সব রকম ময়লায় ভরা। ঠিক সেইভাবে, বাইরে আপনারা লোকদের চোখে ধার্মিক কিন্তু ভিতরে ভণ্ডামী ও পাপে পূর্ণ। “ভণ্ড ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা, ধিক্‌ আপনাদের! আপনারা নবীদের কবর নুতন করে গাঁথেন এবং ঈশ্বরভক্ত লোকদের কবর সাজান। আপনারা বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় বেঁচে থাকতাম তবে নবীদের খুন করবার জন্য তাঁদের সংগে যোগ দিতাম না।’ এতে আপনারা নিজেদের বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নবীদের যারা খুন করেছে আপনারা তাদেরই বংশধর। তাহলে আপনাদের পূর্বপুরুষেরা যা আরম্ভ করে গেছেন তার বাকী অংশ আপনারা শেষ করুন। “সাপের দল আর সাপের বংশধরেরা! কেমন করে আপনারা নরকের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবেন? এইজন্যই আমি আপনাদের কাছে নবী, জ্ঞানী লোক এবং ধর্ম-শিক্ষকদের পাঠাচ্ছি। আপনারা তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে খুন করবেন ও কয়েকজনকে ক্রুশে দেবেন। কয়েকজনকে আপনাদের সমাজ-ঘরে চাবুক মারবেন এবং এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে তাড়া করে বেড়াবেন। এইজন্য নির্দোষ হেবলের খুন থেকে আরম্ভ করে আপনারা যে বরখিয়ের ছেলে সখরিয়কে পবিত্র স্থান আর বেদীর মাঝখানে খুন করেছিলেন, সেই সখরিয়ের খুন পর্যন্ত পৃথিবীতে যত নির্দোষ লোক খুন হয়েছে আপনারা সেই সমস্ত রক্তের দায়ী হবেন। আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, এই কালের লোকেরাই সেই সমস্ত রক্তের দায়ী হবে। “যিরূশালেম! হায় যিরূশালেম! তুমি নবীদের খুন করে থাক এবং তোমার কাছে যাদের পাঠানো হয় তাদের পাথর মেরে থাক। মুরগী যেমন বাচ্চাদের তার ডানার নীচে জড়ো করে তেমনি আমি তোমার লোকদের কতবার আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি, কিন্তু তারা রাজী হয় নি। হে যিরূশালেমের লোকেরা, তোমাদের বাড়ী তোমাদের সামনে খালি হয়ে পড়ে থাকবে। আমি তোমাদের বলছি, যে পর্যন্ত না তোমরা বলবে, ‘যিনি প্রভুর নামে আসছেন তাঁর গৌরব হোক,’ সেই পর্যন্ত আর তোমরা আমাকে দেখতে পাবে না।” যীশু উপাসনা-ঘর থেকে বের হয়ে চলে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে উপাসনা-ঘরের দালানগুলো দেখাবার জন্য তাঁর কাছে আসলেন। তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা তো এই সব দেখছ, কিন্তু আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর থাকবে না; সমস্তই ভেংগে ফেলা হবে।” পরে যীশু যখন জৈতুন পাহাড়ে বসে ছিলেন তখন শিষ্যেরা গোপনে তাঁর কাছে এসে বললেন, “আমাদের বলুন, কখন এই সব হবে এবং কি রকম চিহ্নের দ্বারা বুঝা যাবে আপনার আসবার সময় ও যুগ শেষ হবার সময় হয়েছে?” উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “দেখো, কেউ যেন তোমাদের না ঠকায়, কারণ অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মশীহ,’ এবং অনেক লোককে ঠকাবে। তোমাদের কানে যুদ্ধের আওয়াজ আসবে আর যুদ্ধের খবরাখবরও তোমরা শুনতে পাবে। কিন্তু সাবধান! এতে ভয় পেয়ো না, কারণ এই সব হবেই; কিন্তু তখনও শেষ নয়। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে। কিন্তু এই সব কেবল যন্ত্রণার আরম্ভ। “সেই সময়ে লোকে তোমাদের কষ্ট দেবার জন্য ধরিয়ে দেবে এবং তোমাদের খুন করবে। আমার জন্য সব লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করবে। সেই সময়ে অনেকেই পিছিয়ে যাবে এবং একে অন্যকে ধরিয়ে দেবে ও ঘৃণা করবে। অনেক ভণ্ড নবী এসে অনেককে ঠকাবে। দুষ্টতা বেড়ে যাবে বলে অনেকের ভালবাসা খুব কমে যাবে। কিন্তু যে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সে উদ্ধার পাবে। সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য দেবার জন্য স্বর্গ- রাজ্যের সুখবর সারা জগতে প্রচার করা হবে এবং তার পরেই শেষ সময় উপস্থিত হবে। “নবী দানিয়েলের মধ্য দিয়ে যে সর্বনাশা ঘৃণার জিনিসের কথা বলা হয়েছিল তা তোমরা পবিত্র জায়গায় রাখা হয়েছে দেখতে পাবে। (যে পড়ে সে বুঝুক।) সেই সময় যারা যিহূদিয়াতে থাকবে তারা পাহাড়ী এলাকায় পালিয়ে যাক। যে ছাদের উপরে থাকবে সে ঘর থেকে জিনিসপত্র নেবার জন্য নীচে না নামুক। ক্ষেতের মধ্যে যে থাকবে সে তার গায়ের চাদর নেবার জন্য না ফিরুক। তখন যারা গর্ভবতী আর যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় তাদের অবস্থা কি ভীষণই না হবে! প্রার্থনা কর যেন শীতকালে বা বিশ্রামবারে তোমাদের পালাতে না হয়। তখন এমন মহাকষ্ট হবে যা জগতের আরম্ভ থেকে এই সময় পর্যন্ত কখনও হয় নি এবং হবেও না। সেই কষ্টের দিনগুলো যদি ঈশ্বর কমিয়ে না দিতেন তবে কেউই বাঁচত না। কিন্তু তাঁর বাছাই করা লোকদের জন্য ঈশ্বর সেই দিনগুলো কমিয়ে দেবেন। “সেই সময়ে যদি কেউ তোমাদের বলে, ‘দেখ, মশীহ এখানে’ কিম্বা ‘দেখ, মশীহ ওখানে,’ তবে তা বিশ্বাস কোরো না; কারণ তখন অনেক ভণ্ড মশীহ ও ভণ্ড নবী আসবে এবং বড় বড় আশ্চর্য ও চিহ্ন-কাজ করবে যাতে সম্ভব হলে ঈশ্বরের বাছাই করা লোকদেরও তারা ঠকাতে পারে। দেখ, আমি আগেই তোমাদের এই সব বলে রাখলাম। “সেইজন্য লোকে যদি তোমাদের বলে, ‘তিনি মরু-এলাকায় আছেন,’ তোমরা বাইরে যেয়ো না। যদি বলে, ‘তিনি ভিতরের ঘরে আছেন,’ বিশ্বাস কোরো না। বিদ্যুৎ যেমন পূর্ব দিকে দেখা দিয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত চম্‌কে যায় মনুষ্যপুত্রের আসা সেইভাবেই হবে। যেখানে মৃতদেহ থাকবে সেখানেই শকুন এসে একসংগে জড়ো হবে। “সেই সময়কার কষ্টের ঠিক পরেই সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আকাশ থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না। এমন সময় আকাশে মনুষ্যপুত্রের চিহ্ন দেখা দেবে। তখন পৃথিবীর সমস্ত লোক দুঃখে বুক চাপড়াবে। তারা মনুষ্যপুত্রকে শক্তি ও মহিমার সংগে মেঘে করে আসতে দেখবে। জোরে জোরে তূরী বেজে উঠবে আর সংগে সংগে মনুষ্যপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে দেবেন। সেই দূতেরা পৃথিবীর এক দিক থেকে অন্য দিক পর্যন্ত চার দিক থেকে তাঁর বাছাই করা লোকদের একসংগে জড়ো করবেন। “ডুমুর গাছ দেখে শিক্ষা লাভ কর। যখন তার ডালপালা নরম হয়ে তাতে পাতা বের হয় তখন তোমরা জানতে পার যে, গরমকাল কাছে এসেছে। সেইভাবে তোমরা এই সব ঘটনা দেখলে পর বুঝতে পারবে যে, মনুষ্যপুত্র কাছে এসে গেছেন, এমন কি, দরজায় উপস্থিত। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যখন এই সব হবে তখনও এই কালের কিছু লোক বেঁচে থাকবে। আকাশ ও পৃথিবীর শেষ হবে, কিন্তু আমার কথা চিরদিন থাকবে। “সেই দিন ও সেই সময়ের কথা কেউই জানে না, স্বর্গের দূতেরাও না, পুত্রও না; কেবল পিতাই জানেন। “নোহের সময়ে যে অবস্থা হয়েছিল মনুষ্যপুত্রের আসবার সময়ে ঠিক সেই অবস্থাই হবে। বন্যার আগের দিনগুলোতে নোহ জাহাজে না ঢোকা পর্যন্ত লোকে খাওয়া-দাওয়া করেছে, বিয়ে করেছে এবং বিয়ে দিয়েছে। যে পর্যন্ত না বন্যা এসে তাদের সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সেই পর্যন্ত তারা কিছুই বুঝতে পারল না। মনুষ্যপুত্রের আসাও ঠিক সেই রকমই হবে। তখন দু’জন লোক মাঠে থাকবে; একজনকে নেওয়া হবে এবং অন্যজনকে ফেলে যাওয়া হবে। দু’জন স্ত্রীলোক জাঁতা ঘুরাবে; একজনকে নেওয়া হবে, অন্যজনকে ফেলে যাওয়া হবে। “তাই বলি, তোমরা সতর্ক থাক, কারণ তোমাদের প্রভু কোন্‌ দিন আসবেন তা তোমরা জান না। তবে তোমরা এই কথা জেনো, ঘরের কর্তা যদি জানতেন কোন্‌ সময় চোর আসবে তাহলে তিনি জেগেই থাকতেন, নিজের ঘরে তিনি চোরকে ঢুকতে দিতেন না। সেইজন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কারণ যে সময়ের কথা তোমরা চিন্তাও করবে না সেই সময়েই মনুষ্যপুত্র আসবেন। “সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস কে, যাকে তার মনিব তাঁর অন্যান্য দাসদের ঠিক সময়ে খাবার দেবার ভার দিয়েছেন? সেই দাস ধন্য, যাকে তার মনিব এসে বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে দেখবেন। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তিনি সেই দাসকেই তাঁর সমস্ত বিষয়-সম্পত্তির ভার দেবেন। কিন্তু ধর, সেই দাস দুষ্ট, আর সে মনে মনে বলল, ‘আমার মনিব আসতে দেরি করছেন।’ সেই সুযোগে সে তার সংগী-দাসদের মারধর করতে লাগল এবং মাতালদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করে মদ খেতে লাগল। কিন্তু যেদিন ও যে সময়ের কথা সেই দাস চিন্তাও করবে না, জানবেও না, সেই দিন ও সেই সময়েই তার মনিব এসে হাজির হবেন। তখন তিনি তাকে কেটে দু’টুকরা করে ভণ্ডদের মধ্যে তার স্থান ঠিক করবেন। সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে। “সেই সময়ে স্বর্গ-রাজ্য এমন দশজন মেয়ের মত হবে যারা বান্ধবীর বরকে এগিয়ে আনবার জন্য বাতি নিয়ে বাইরে গেল। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিল বুদ্ধিমতি। বুদ্ধিহীন মেয়েরা তাদের বাতি নিল বটে কিন্তু সংগে করে তেল নিল না। বুদ্ধিমতি মেয়েরা তাদের বাতির সংগে পাত্রে করে তেলও নিল। বর আসতে দেরি হওয়াতে তারা ঢুলতে ঢুলতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। “পরে মাঝ রাতে চিৎকার শোনা গেল, ‘ঐ দেখ, বর আসছেন! বরকে এগিয়ে আনতে বের হও।’ তখন সেই মেয়েরা উঠে তাদের বাতি ঠিক করল। বুদ্ধিহীনারা বুদ্ধিমতিদের বলল, ‘তোমাদের তেল থেকে আমাদের কিছু দাও, কারণ আমাদের বাতি নিভে যাচ্ছে।’ তখন সেই বুদ্ধিমতি মেয়েরা উত্তরে বলল, ‘না, তেল যা আছে তাতে হয়তো আমাদের ও তোমাদের কুলাবে না। তোমরা বরং দোকানদারদের কাছে গিয়ে নিজেদের জন্য তেল কিনে নাও।’ সেই বুদ্ধিহীন মেয়েরা যখন তেল কিনতে গেল তখনই বর এসে পড়লেন। তখন যে মেয়েরা প্রস্তুত ছিল তারা বরের সংগে বিয়ে বাড়ীতে গেল। তারা সবাই ভিতরে গেলে পর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। “পরে সেই বুদ্ধিহীন মেয়েরা এসে বলল, ‘দেখুন, দরজাটা খুলে দিন।’ উত্তরে বর বললেন, ‘সত্যি বলছি, আমি তোমাদের চিনি না।’ ” গল্পের শেষে যীশু বললেন, “এইজন্য সতর্ক থাক, কারণ সেই দিন বা সেই সময়ের কথা তোমরা জান না। “স্বর্গ-রাজ্য এমন একজন লোকের মত যিনি বিদেশে যাবার আগে তাঁর দাসদের ডেকে তাঁর সমস্ত সম্পত্তির ভার তাদের হাতে দিয়ে গেলেন। সেই দাসদের ক্ষমতা অনুসারে তিনি একজনকে পাঁচ হাজার, একজনকে দু’হাজার ও একজনকে এক হাজার টাকা দিলেন। যে পাঁচ হাজার টাকা পেল সে তা দিয়ে ব্যবসা করে আরও পাঁচ হাজার টাকা লাভ করল। যে দু’হাজার টাকা পেল সে-ও একইভাবে আরও দু’হাজার টাকা লাভ করল। কিন্তু যে এক হাজার টাকা পেল সে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তার মনিবের টাকাগুলো লুকিয়ে রাখল। “অনেক দিন পরে সেই মনিব এসে দাসদের কাছ থেকে হিসাব চাইলেন। যে পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছিল সে আরও পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে এসে বলল, ‘আপনি আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। দেখুন, আমি আরও পাঁচ হাজার টাকা লাভ করেছি।’ তখন তার মনিব তাকে বললেন, ‘বেশ করেছ। তুমি ভাল ও বিশ্বস্ত দাস। তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত বলে আমি তোমাকে অনেক বিষয়ের ভার দেব। এস, আমার আনন্দের ভাগী হও।’ “যে দু’হাজার টাকা পেয়েছিল সে এসে বলল, ‘আপনি আমাকে দু’হাজার টাকা দিয়েছিলেন। দেখুন, আমি আরও দু’হাজার টাকা লাভ করেছি।’ তখন তার মনিব তাকে বললেন, ‘বেশ করেছ। তুমি ভাল ও বিশ্বস্ত দাস। তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত বলে আমি তোমাকে অনেক বিষয়ের ভার দেব। এস, আমার আনন্দের ভাগী হও।’ “কিন্তু যে এক হাজার টাকা পেয়েছিল সে এসে বলল, ‘দেখুন, আমি জানতাম আপনি ভয়ানক কঠিন লোক। আপনি যেখানে বীজ বোনেন নি সেখান থেকে কাটেন এবং যেখানে ছড়ান নি সেখান থেকে কুড়ান। এইজন্য আমি ভয়ে ভয়ে বাইরে গিয়ে মাটিতে আপনার টাকা লুকিয়ে রেখেছিলাম। এই দেখুন, আপনার জিনিস আপনারই আছে।’ উত্তরে তার মনিব তাকে বললেন, ‘দুষ্ট ও অলস দাস! তুমি তো জানতে যেখানে আমি বুনি নি সেখানে কাটি আর যেখানে ছড়াই নি সেখানে কুড়াই। তাহলে মহাজনদের কাছে আমার টাকা জমা রাখ নি কেন? তা করলে তো আমি এসে টাকাটাও পেতাম এবং সংগে কিছু সুদও পেতাম।’ তারপর তিনি অন্যদের বললেন, ‘তোমরা ওর কাছ থেকে টাকাগুলো নিয়ে যার দশ হাজার টাকা আছে তাকে দাও। যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে আর তাতে তার অনেক হবে। কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। ঐ অপদার্থ দাসকে তোমরা বাইরের অন্ধকারে ফেলে দাও; সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে আর যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে।’ “মনুষ্যপুত্র সমস্ত স্বর্গদূতদের সংগে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন তখন তিনি রাজা হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সংগে বসবেন। সেই সময় সমস্ত জাতির লোকদের তাঁর সামনে একসংগে জড়ো করা হবে। রাখাল যেমন ভেড়া আর ছাগল আলাদা করে তেমনি তিনি সব লোকদের দু’ভাগে আলাদা করবেন। তিনি নিজের ডান দিকে ভেড়াদের আর বাঁ দিকে ছাগলদের রাখবেন। “এর পরে রাজা তাঁর ডান দিকের লোকদের বলবেন, ‘তোমরা যারা আমার পিতার আশীর্বাদ পেয়েছ, এস। জগতের আরম্ভে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার অধিকারী হও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দিয়েছিলে; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দিয়েছিলে; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন কাপড় পরিয়েছিলে; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম তখন আমার দেখাশোনা করেছিলে; আর যখন আমি জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।’ “তখন সেই ঈশ্বরভক্ত লোকেরা উত্তরে তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, আপনার খিদে পেয়েছে দেখে কখন আপনাকে খেতে দিয়েছিলাম বা পিপাসা পেয়েছে দেখে জল দিয়েছিলাম? কখনই বা আপনাকে অতিথি হিসাবে আশ্রয় দিয়েছিলাম, কিম্বা খালি গায়ে দেখে কাপড় পরিয়েছিলাম? আর কখনই বা আপনাকে অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে আপনার কাছে গিয়েছিলাম?’ “এর উত্তরে রাজা তখন তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই ভাইদের মধ্যে সামান্য কোন একজনের জন্য যখন তা করেছিলে তখন আমারই জন্য তা করেছিলে।’ “পরে তিনি তাঁর বাঁ দিকের লোকদের বলবেন, ‘ওহে অভিশপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও। শয়তান এবং তার দূতদের জন্য যে চিরকালের আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে যাও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দাও নি; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দাও নি; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দাও নি; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন আমাকে কাপড় পরাও নি; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম এবং জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে যাও নি।’ “তখন তাঁরা তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, কখন আপনার খিদে বা পিপাসা পেয়েছে দেখে, কিম্বা অতিথি হয়েছেন দেখে, কিম্বা খালি গায়ে দেখে, কিম্বা অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে সাহায্য করি নি?’ “উত্তরে তিনি তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা যখন এই সামান্য লোকদের মধ্যে কোন একজনের জন্য তা কর নি তখন তা আমার জন্যই কর নি।’ ” তারপর যীশু বললেন, “এই লোকেরা অনন্ত শাস্তি পেতে যাবে, কিন্তু ঐ ঈশ্বরভক্ত লোকেরা অনন্ত জীবন ভোগ করতে যাবে।” এই সব কথার শেষে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “তোমরা তো জান আর দুই দিন পরেই উদ্ধার-পর্ব, আর মনুষ্যপুত্রকে ক্রুশে দেবার জন্য ধরিয়ে দেওয়া হবে।” তবে তাঁরা বললেন, “পর্বের সময়ে নয়; তাতে লোকদের মধ্যে হয়তো গোলমাল শুরু হবে।” যীশু যখন বৈথনিয়াতে চর্মরোগী শিমোনের বাড়ীতে ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক তাঁর কাছে আসল। সেই স্ত্রীলোকটি একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামী আতর এনেছিল। যীশু যখন খেতে বসলেন তখন সে তাঁর মাথায় সেই আতর ঢেলে দিল। শিষ্যেরা তা দেখে বিরক্ত হয়ে বললেন, “এই দামী জিনিসটা কেন নষ্ট করা হচ্ছে? এটা তো অনেক দামে বিক্রি করে টাকাটা গরীবদের দেওয়া যেত।” যীশু এই কথা বুঝতে পেরে শিষ্যদের বললেন, “তোমরা এই স্ত্রীলোকটিকে দুঃখ দিচ্ছ কেন? সে তো আমার প্রতি ভাল কাজই করেছে। গরীবেরা তো সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না। সে আমার দেহের উপর এই আতর ঢেলে দিয়ে আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করেছে। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, জগতের যে কোন জায়গায় সুখবর প্রচার করা হবে সেখানে এই স্ত্রীলোকটির কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য তার এই কাজের কথাও বলা হবে।” তখন সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ নামে শিষ্যটি প্রধান পুরোহিতদের কাছে গিয়ে বলল, “যীশুকে আপনাদের হাতে ধরিয়ে দিলে আপনারা আমাকে কি দেবেন?” প্রধান পুরোহিতেরা ত্রিশটা রূপার টাকা গুণে তাকে দিলেন। তার পর থেকেই যিহূদা যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল। খামিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিনে শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে বললেন, “আপনার জন্য উদ্ধার-পর্বের ভোজ আমাদের কোথায় প্রস্তুত করতে বলেন?” যীশু বললেন, “শহরের মধ্যে গিয়ে ঐ লোককে বল যে, গুরু বলছেন, ‘আমার সময় কাছে এসে গেছে। আমার শিষ্যদের সংগে আমি তোমার বাড়ীতেই উদ্ধার-পর্ব পালন করব।’ ” যীশু শিষ্যদের যে আদেশ দিয়েছিলেন শিষ্যেরা সেইভাবেই উদ্ধার-পর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন। পরে সন্ধ্যা হলে যীশু সেই বারোজন শিষ্যকে নিয়ে খেতে বসলেন। খাবার সময়ে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে।” এতে শিষ্যেরা খুব দুঃখিত হয়ে একজনের পর একজন যীশুকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, “সে কি আমি, প্রভু?” উত্তরে তিনি তাঁদের বললেন, “যে আমার সংগে পাত্রের মধ্যে হাত দিচ্ছে সে-ই আমাকে ধরিয়ে দেবে। মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে যেভাবে লেখা আছে ঠিক সেইভাবে তিনি মারা যাবেন বটে, কিন্তু হায় সেই লোক, যে মনুষ্যপুত্রকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেয়! সেই মানুষের জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভাল হত।” যে যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল সেই যিহূদা বলল, “গুরু, সে কি আমি?” যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক কথাই বললে।” খাওয়া-দাওয়া চলছে, এমন সময় যীশু রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। পরে তিনি সেই রুটি টুকরা টুকরা করলেন এবং শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “এই নাও, খাও; এ আমার দেহ।” এর পরে তিনি পেয়ালা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন ও সেটা শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “পেয়ালার এই আংগুর-রস তোমরা সবাই খাও, কারণ এ আমার রক্ত যা অনেকের পাপের ক্ষমার জন্য দেওয়া হবে। মানুষের জন্য ঈশ্বরের নতুন ব্যবস্থা আমার এই রক্তের দ্বারাই বহাল করা হবে। আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে যতদিন আমি আমার পিতার রাজ্যে তোমাদের সংগে আংগুর ফলের রস নতুন ভাবে না খাই ততদিন পর্যন্ত আমি আর তা খাব না।” পরে তাঁরা একটা গান গেয়ে বের হয়ে জৈতুন পাহাড়ে গেলেন। পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আজ রাতে আমাকে নিয়ে তোমাদের সকলের মনে বাধা আসবে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমি পালককে মেরে ফেলব, তাতে পালের মেষগুলো ছড়িয়ে পড়বে।’ কিন্তু আমাকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হলে পর আমি তোমাদের আগেই গালীলে যাব।” তখন পিতর তাঁকে বললেন, “আপনাকে নিয়ে সবার মনে বাধা আসলেও আমার মনে কখনও বাধা আসবে না।” যীশু তাঁকে বললেন, “কিন্তু আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ ভোর রাতে মোরগ ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।” পিতর যীশুকে বললেন, “আমাকে যদি আপনার সংগে মরতেও হয় তবুও আমি কখনও বলব না, আমি আপনাকে চিনি না।” অন্য শিষ্যেরা সবাই সেই একই কথা বললেন। পরে যীশু শিষ্যদের সংগে গেৎশিমানী নামে একটা জায়গায় গেলেন এবং শিষ্যদের বললেন, “আমি ওখানে গিয়ে যতক্ষণ প্রার্থনা করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।” এই বলে তিনি পিতর আর সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সংগে নিয়ে গেলেন। তাঁর মন দুঃখে ও কষ্টে ভরে উঠতে লাগল। তিনি তাঁদের বললেন, “দুঃখে যেন আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানেই থাক আর আমার সংগে জেগে থাক।” পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন এবং প্রার্থনা করে বললেন, “আমার পিতা, যদি সম্ভব হয় তবে এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে দূরে যাক। তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, তোমার ইচ্ছামতই হোক।” এর পরে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “এ কি! আমার সংগে এক ঘণ্টাও কি তোমরা জেগে থাকতে পারলে না? জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় না পড়। অন্তরে ইচ্ছা আছে বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।” তিনি ফিরে গিয়ে দ্বিতীয় বার প্রার্থনা করে বললেন, “পিতা আমার, আমি গ্রহণ না করলে যদি এই দুঃখের পেয়ালা দূর না হয় তবে তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।” তিনি ফিরে এসে দেখলেন তাঁরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে গিয়েছিল। তিনি আবার তাঁদের ছেড়ে গিয়ে তৃতীয় বার সেই একই কথা বলে প্রার্থনা করলেন। পরে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে বললেন, “এখনও তোমরা ঘুমাচ্ছ আর বিশ্রাম করছ? দেখ, সময় এসে পড়েছে, মনুষ্যপুত্রকে পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। ওঠো, চল, আমরা যাই। দেখ, যে আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে সে এসে পড়েছে।” যীশু তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যিহূদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান পুরোহিতেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এদের পাঠিয়েছিলেন। যীশুকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদা ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল; সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব সে-ই সেই লোক; তোমরা তাকে ধরবে।” তাই যিহূদা সোজা যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু, মংগল হোক।” এই কথা বলেই সে যীশুকে চুমু দিল। যীশু তাকে বললেন, “বন্ধু, যা করতে এসেছ, কর।” সংগে সংগেই লোকেরা এসে যীশুকে ধরল। যাঁরা যীশুর সংগে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ছোরা বের করলেন এবং তার ঘায়ে মহাপুরোহিতের দাসের একটা কান কেটে ফেললেন। তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার ছোরা খাপে রাখ। ছোরা যারা ধরে তারা ছোরার ঘায়েই মরে। তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতাকে ডাকলে তিনি এখনই আমাকে হাজার হাজার স্বর্গদূত পাঠিয়ে দেবেন না? কিন্তু তাহলে পবিত্র শাস্ত্রের কথা কিভাবে পূর্ণ হবে? শাস্ত্রে তো লেখা আছে এই সব এভাবেই ঘটবে।” পরে যীশু লোকদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছেন? আমি প্রত্যেক দিনই উপাসনা-ঘরে বসে শিক্ষা দিতাম, আর তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। কিন্তু এই সব ঘটল যাতে পবিত্র শাস্ত্রে নবীরা যা লিখেছেন তা পূর্ণ হয়।” শিষ্যেরা সবাই তখন যীশুকে ফেলে পালিয়ে গেলেন। যারা যীশুকে ধরেছিল তারা তাকে মহাপুরোহিত কাইয়াফার কাছে নিয়ে গেল। সেখানে ধর্ম-শিক্ষকেরা ও বৃদ্ধ নেতারা একসংগে জড়ো হয়েছিলেন। পিতর দূরে থেকে যীশুর পিছনে পিছনে মহাপুরোহিতের উঠান পর্যন্ত গেলেন এবং শেষে কি হয় তা দেখবার জন্য ভিতরে ঢুকে রক্ষীদের সংগে বসলেন। যীশুকে মেরে ফেলবার উদ্দেশ্যে প্রধান পুরোহিতেরা এবং মহাসভার সমস্ত লোকেরা মিথ্যা সাক্ষ্যের খোঁজ করছিলেন। অনেক মিথ্যা সাক্ষী উপস্থিতও হয়েছিল, তবুও তাঁরা ঠিকমত কোন সাক্ষ্যই পেলেন না। শেষে দু’জন লোক এগিয়ে এসে বলল, “এই লোকটা বলেছিল, সে ঈশ্বরের ঘরটা ভেংগে ফেলে তিন দিনের মধ্যে আবার তা তৈরী করে দিতে পারে।” তখন মহাপুরোহিত উঠে দাঁড়িয়ে যীশুকে বললেন, “তুমি কি কোন উত্তর দেবে না? এরা তোমার বিরুদ্ধে এই সব কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” যীশু কিন্তু চুপ করেই রইলেন। মহাপুরোহিত আবার তাঁকে বললেন, “তুমি জীবন্ত ঈশ্বরের দিব্য দিয়ে আমাদের বল যে, তুমি সেই মশীহ, অর্থাৎ ঈশ্বরের পুত্র কি না।” তখন যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। তবে আমি আপনাদের এটাও বলছি, এর পরে আপনারা মনুষ্যপুত্রকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান পাশে বসে থাকতে এবং মেঘে করে আসতে দেখবেন।” তখন মহাপুরোহিত তাঁর কাপড় ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “এ ঈশ্বরকে অপমান করল। আমাদের আর সাক্ষীর কি দরকার? এখনই তো আপনারা শুনলেন, সে ঈশ্বরকে অপমান করল। আপনারা কি মনে করেন?” তাঁরা উত্তর দিলেন, “এ মৃত্যুর উপযুক্ত।” তখন লোকেরা যীশুর মুখে থুথু দিল এবং ঘুষি ও চড় মারল। তারা বলল, “এই মশীহ, বল্‌ তো দেখি, কে তোকে মারল?” সেই সময় পিতর বাইরের উঠানে বসে ছিলেন। একজন চাকরাণী তাঁর কাছে এসে বলল, “গালীলের যীশুর সংগে তো আপনিও ছিলেন।” কিন্তু পিতর সকলের সামনে অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ তা আমি জানি না।” এর পরে পিতর বাইরে ফটকের কাছে গেলেন। তাঁকে দেখে আর একজন চাকরাণী সেখানকার লোকদের বলল, “এই লোকটা নাসরতের যীশুর সংগে ছিল।” তখন পিতর শপথ করে আবার অস্বীকার করে বললেন, “আমি ঐ লোকটাকে চিনি না।” যে লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারা কিছুক্ষণ পরে পিতরকে এসে বলল, “নিশ্চয়ই তুমি ওদের একজন; তোমার ভাষাই তোমাকে ধরিয়ে দিচ্ছে।” তখন পিতর নিজেকে অভিশাপ দিলেন এবং শপথ করে বলতে লাগলেন, “আমি ঐ লোকটাকে মোটেই চিনি না।” আর তখনই একটা মোরগ ডেকে উঠল। তখন পিতরের মনে পড়ল যীশু বলেছিলেন, “মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।” আর পিতর বাইরে গিয়ে খুব কাঁদতে লাগলেন। ভোর বেলায় প্রধান পুরোহিতেরা ও বৃদ্ধ নেতারা সবাই যীশুকে মেরে ফেলবার কথাই ঠিক করলেন। তাঁরা যীশুকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের হাতে দিলেন। যীশুকে শত্রুদের হাতে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদা যখন দেখল যীশুকে বিচারে দোষী বলে ঠিক করা হয়েছে তখন তার মনে খুব দুঃখ হল। সে প্রধান পুরোহিতদের ও বৃদ্ধ নেতাদের কাছে সেই ত্রিশটা রূপার টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বলল, “আমি নির্দোষীকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দিয়ে পাপ করেছি।” তাঁরা বললেন, “তাতে আমাদের কি? তুমিই তা বুঝবে।” তখন যিহূদা সেই রূপার টাকাগুলো নিয়ে উপাসনা-ঘরের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল এবং গলায় দড়ি দিয়ে মরল। প্রধান পুরোহিতেরা সেই রূপার টাকাগুলো নিয়ে বললেন, “এই টাকা উপাসনা-ঘরের তহবিলে রাখা ঠিক নয়, কারণ এটা রক্তের দাম।” পরে তাঁরা পরামর্শ করে সেই টাকা দিয়ে বিদেশীদের একটা কবরস্থানের জন্য কুমারের জমি কিনলেন। সেইজন্য সেই জমিকে আজও ‘রক্তের জমি’ বলা হয়। এতে নবী যিরমিয়ের মধ্য দিয়ে যে কথা বলা হয়েছিল তা পূর্ণ হল: “তারা ত্রিশটা রূপার টাকা নিল। এই টাকা তাঁর দাম। ইস্রায়েলীয়েরা তাঁর জন্য এই দাম ঠিক করেছিল। প্রভু যেমন আমাকে আদেশ করেছিলেন সেইমতই তারা কুমারের জমির জন্য এই টাকাগুলো দিল।” এদিকে যীশু তখন প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শাসনকর্তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি যিহূদীদের রাজা?” যীশু উত্তর দিলেন, “আপনি ঠিকই বলছেন।” প্রধান পুরোহিতেরা এবং বৃদ্ধ নেতারা যীশুকে অনেক দোষ দিলেন কিন্তু যীশু কোন উত্তর দিলেন না। তখন পীলাত তাঁকে বললেন, “ওরা তোমাকে কত দোষ দিচ্ছে তা কি তুমি শুনতে পাচ্ছ না?” যীশু কিন্তু একটা কথারও উত্তর দিলেন না। এতে সেই শাসনকর্তা খুব আশ্চর্য হয়ে গেলেন। প্রত্যেক উদ্ধার-পর্বের সময় প্রধান শাসনকর্তা লোকদের পছন্দ করা একজন কয়েদীকে ছেড়ে দিতেন। এটাই ছিল তাঁর নিয়ম। সেই সময় বারাব্বা নামে একজন কুখ্যাত কয়েদী ছিল। লোকেরা একসংগে জড়ো হলে পর পীলাত তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি চাও? তোমাদের কাছে আমি কাকে ছেড়ে দেব, বারাব্বাকে, না যাকে মশীহ বলে সেই যীশুকে?” পীলাত জানতেন, লোকেরা হিংসা করেই যীশুকে ধরিয়ে দিয়েছে। পীলাত যখন বিচারের আসনে বসে ছিলেন তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলে পাঠালেন, “ঐ নির্দোষ লোকটিকে তুমি কিছু কোরো না, কারণ আজ স্বপ্নে আমি তাঁর দরুন অনেক কষ্ট পেয়েছি।” কিন্তু প্রধান পুরোহিতেরা এবং বৃদ্ধ নেতারা লোকদের উস্‌কিয়ে দিলেন যেন তারা বারাব্বাকে চেয়ে নেয় এবং যীশুকে মেরে ফেলবার কথা বলে। পরে প্রধান শাসনকর্তা লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এই দু’জনের মধ্যে আমি তোমাদের কাছে কাকে ছেড়ে দেব?” তারা বলল, “বারাব্বাকে।” তখন পীলাত তাদের বললেন, “তাহলে যাকে মশীহ বলে সেই যীশুকে নিয়ে আমি কি করব?” তারা সবাই বলল, “ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক।” পীলাত বললেন, “কেন, সে কি দোষ করেছে?” এতে তারা আরও বেশী চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দেওয়া হোক।” পীলাত যখন দেখলেন তিনি কিছুই করতে পারছেন না বরং আরও গোলমাল হচ্ছে, তখন তিনি জল নিয়ে লোকদের সামনে হাত ধুয়ে বললেন, “এই লোকের রক্তের জন্য আমি দায়ী নই; তোমরাই তা বুঝবে।” উত্তরে লোকেরা সবাই বলল, “আমরা এবং আমাদের সন্তানেরা ওর রক্তের দায়ী হব।” তখন পীলাত বারাব্বাকে লোকদের কাছে ছেড়ে দিলেন, কিন্তু যীশুকে ভীষণভাবে চাবুক মারবার হুকুম দিয়ে ক্রুশে দেবার জন্য দিলেন। তখন প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের সৈন্যেরা যীশুকে নিয়ে তাঁর বাড়ীর ভিতরে গেল এবং সমস্ত সৈন্যদলকে যীশুর চারদিকে জড়ো করল। তারা যীশুর কাপড়-চোপড় খুলে নিয়ে তাঁকে লাল রংয়ের পোশাক পরাল। পরে তারা কাঁটা-লতা দিয়ে একটা মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিল, আর তাঁর ডান হাতে একটা লাঠি দিল। তার পরে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে তাঁকে তামাশা করে বলল, “যিহূদী-রাজ, জয় হোক!” তখন তাঁর গায়ে তারা থুথু দিল এবং সেই লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় বারবার আঘাত করল। তাঁকে তামাশা করবার পর তারা সেই পোশাক খুলে নিল এবং তাঁর নিজের কাপড়-চোপড় পরিয়ে তাঁকে ক্রুশে দেবার জন্য নিয়ে চলল। সেখান থেকে বের হয়ে যাবার সময় সৈন্যেরা কুরীণী শহরের শিমোন নামে একজন লোকের দেখা পেল। সৈন্যেরা তাকে যীশুর ক্রুশ বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করল। যীশুকে ক্রুশে দেবার পর সৈন্যেরা গুলিবাঁট করে তাঁর কাপড়-চোপড় নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। পরে তারা সেখানে বসে তাঁকে পাহারা দিতে লাগল। তারা ক্রুশে যীশুর মাথার উপরের দিকে এই দোষ-নামা লাগিয়ে দিল, “এ যীশু, যিহূদীদের রাজা।” তারা দু’জন ডাকাতকেও যীশুর সংগে ক্রুশে দিল, একজনকে ডান দিকে আর অন্যজনকে বাঁ দিকে। যে সব লোক সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল তারা মাথা নেড়ে যীশুকে ঠাট্টা করে বলল, “তুমি না উপাসনা-ঘর ভেংগে আবার তিন দিনের মধ্যে তৈরী করতে পার! তাহলে এখন নিজেকে রক্ষা কর। যদি তুমি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে ক্রুশ থেকে নেমে এস।” প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা এবং বৃদ্ধ নেতারাও তাঁকে ঠাট্টা করে বললেন, “ও অন্যদের রক্ষা করত, নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। ও তো ইস্রায়েলের রাজা! এখন ক্রুশ থেকে ও নেমে আসুক। তাহলে আমরা ওর উপর বিশ্বাস করব। ও ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে; এখন ঈশ্বর যদি ওর উপর খুশী থাকেন তবে ওকে তিনি উদ্ধার করুন। ও তো নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলত।” যে ডাকাতদের তাঁর সংগে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তারাও সেই একই কথা বলে তাঁকে টিট্‌কারি দিল। সেই দিন দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকার হয়ে রইল। প্রায় তিনটার সময় যীশু জোরে চিৎকার করে বললেন, “এলী, এলী, লামা শবক্তানী,” অর্থাৎ “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ?” যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন এই কথা শুনে বলল, “ও এলিয়কে ডাকছে।” তাদের মধ্যে একজন তখনই দৌড়ে গিয়ে সির্কায় পূর্ণ একটা সপঞ্জ নিল এবং একটা লাঠির মাথায় সেটা লাগিয়ে যীশুকে খেতে দিল। অন্যেরা বলল, “থাক্‌, দেখি এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না।” যীশু আবার জোরে চিৎকার করবার পরে প্রাণত্যাগ করলেন। তখন উপাসনা-ঘরের পর্দাটা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দু’ভাগ হয়ে গেল; আর ভূমিকম্প হল ও বড় বড় পাথর ফেটে গেল। কতগুলো কবর খুলে গেল এবং ঈশ্বরের যে লোকেরা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের অনেকের দেহ জীবিত হয়ে উঠল। তাঁরা কবর থেকে বের হয়ে আসলেন এবং যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠলে পর পবিত্র শহরের মধ্যে গেলেন। তাঁরা সেখানে অনেককে দেখা দিলেন। সেনাপতি ও তাঁর সংগে যারা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল তারা ভূমিকম্প ও অন্য সব ঘটনা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, “সত্যিই উনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।” অনেক স্ত্রীলোকও সেখানে দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন। যীশুর সেবা করবার জন্য তাঁরা গালীল থেকে তাঁর সংগে সংগে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্‌দলীনী মরিয়ম, যাকোব ও যোষেফের মা মরিয়ম এবং সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও যোহনের মা। সন্ধ্যা হলে পর অরিমাথিয়া গ্রামের যোষেফ নামে একজন ধনী লোক সেখানে আসলেন। ইনি যীশুর শিষ্য হয়েছিলেন। পীলাতের কাছে গিয়ে তিনি যীশুর দেহটা চাইলেন। তখন পীলাত তাঁকে সেই দেহটা দিতে আদেশ দিলেন। যোষেফ যীশুর দেহটা নিয়ে গিয়ে পরিষ্কার কাপড়ে জড়ালেন, আর যে নতুন কবর তিনি নিজের জন্য পাহাড়ের মধ্যে কেটে রেখেছিলেন সেখানে সেই দেহটা রাখলেন। পরে সেই কবরের মুখে বড় একটা পাথর গড়িয়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন। কিন্তু মগ্‌দলীনী মরিয়ম ও সেই অন্য মরিয়ম সেখানে সেই কবরের সামনে বসে রইলেন। পরের দিন, অর্থাৎ আয়োজন-দিনের পরের দিন প্রধান পুরোহিতেরা এবং ফরীশীরা পীলাতের কাছে জড়ো হয়ে বললেন, “হুজুর, আমাদের মনে পড়েছে, সেই ঠগটা বেঁচে থাকতে বলেছিল, ‘আমি তিন দিন পরে বেঁচে উঠব।’ সেইজন্য আদেশ করুন যেন তিন দিন পর্যন্ত কবরটা পাহারা দেওয়া হয়। না হলে তাঁর শিষ্যেরা হয়তো এসে তাঁর দেহটা চুরি করে নিয়ে গিয়ে লোকদের বলবে, ‘তিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন।’ তাহলে প্রথম ছলনার চেয়ে শেষ ছলনাটা আরও খারাপ হবে।” তখন পীলাত তাঁদের বললেন, “পাহারাদারদের নিয়ে গিয়ে আপনারা যেভাবে পারেন সেইভাবে পাহারা দেবার ব্যবস্থা করুন।” তখন তাঁরা গিয়ে পাথরের উপরে সীলমোহর করলেন এবং পাহারাদারদের সেখানে রেখে কবরটা কড়াকড়িভাবে পাহারা দেবার ব্যবস্থা করলেন। বিশ্রামবারের পরে সপ্তার প্রথম দিনের ভোর বেলায় মগ্‌দলীনী মরিয়ম ও সেই অন্য মরিয়ম কবরটা দেখতে গেলেন। তখন হঠাৎ ভীষণ ভূমিকম্প হল, কারণ প্রভুর একজন দূত স্বর্গ থেকে নেমে আসলেন এবং কবরের মুখ থেকে পাথরখানা সরিয়ে দিয়ে তার উপর বসলেন। তাঁর চেহারা বিদ্যুতের মত ছিল আর তাঁর কাপড়-চোপড় ছিল ধব্‌ধবে সাদা। তাঁর ভয়ে পাহারাদারেরা কাঁপতে লাগল এবং মরার মত হয়ে পড়ল। স্বর্গদূত স্ত্রীলোকদের বললেন, “তোমরা ভয় কোরো না, কারণ আমি জানি, যাঁকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তোমরা সেই যীশুকে খুঁজছ। তিনি এখানে নেই। তিনি যেমন বলেছিলেন তেমন ভাবেই জীবিত হয়ে উঠেছেন। এস, তিনি যেখানে শুয়ে ছিলেন সেই জায়গাটা দেখ। তোমরা তাড়াতাড়ি গিয়ে তাঁর শিষ্যদের বল তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন এবং তাদের আগে গালীলে যাচ্ছেন। তারা তাঁকে সেখানেই দেখতে পাবে। দেখ, কথাটা আমি তোমাদের জানিয়ে দিলাম।” সেই স্ত্রীলোকেরা অবশ্য ভয় পেয়েছিলেন, কিন্তু তবুও খুব আনন্দের সংগে তাড়াতাড়ি কবরের কাছ থেকে চলে গেলেন এবং যীশুর শিষ্যদের এই খবর দেবার জন্য দৌড়াতে লাগলেন। এমন সময় যীশু হঠাৎ সেই স্ত্রীলোকদের সামনে এসে বললেন, “তোমাদের মংগল হোক।” তখন সেই স্ত্রীলোকেরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পা ধরে প্রণাম করে তাঁকে ঈশ্বরের সম্মান দিলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “ভয় কোরো না; তোমরা গিয়ে ভাইদের গালীলে যেতে বল। তারা সেখানেই আমাকে দেখতে পাবে।” সেই স্ত্রীলোকেরা যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন সেই পাহারাদারদের কয়েকজন শহরে গেল এবং যা যা ঘটেছিল তা প্রধান পুরোহিতদের জানাল। তখন পুরোহিতেরা ও বৃদ্ধ নেতারা একত্র হয়ে পরামর্শ করলেন এবং সেই সৈন্যদের অনেক টাকা দিয়ে বললেন, “তোমরা বোলো, ‘আমরা রাতে যখন ঘুমাচ্ছিলাম তখন তাঁর শিষ্যেরা এসে তাঁকে চুরি করে নিয়ে গেছে।’ এই কথা যদি প্রধান শাসনকর্তা শুনতে পান তবে আমরা তাঁকে শান্ত করব এবং শাস্তির হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করব।” তখন পাহারাদারেরা সেই টাকা নিল এবং তাদের যেমন বলা হয়েছিল তেমনই বলল। আজও পর্যন্ত সেই কথা যিহূদীদের মধ্যে ছড়িয়ে আছে। যীশু গালীলের যে পাহাড়ে শিষ্যদের যেতে বলেছিলেন সেই এগারোজন শিষ্য তখন সেই পাহাড়ে গেলেন। সেখানে যীশুকে দেখে তাঁরা তাঁকে প্রণাম করে ঈশ্বরের সম্মান দিলেন, কিন্তু কয়েকজন সন্দেহ করলেন। তখন যীশু কাছে এসে তাঁদের এই কথা বললেন, “স্বর্গের ও পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে। এইজন্য তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার শিষ্য কর। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিস্ম দাও। আমি তোমাদের যে সব আদেশ দিয়েছি তা পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও। দেখ, যুগের শেষ পর্যন্ত সব সময় আমি তোমাদের সংগে সংগে আছি।” ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবরের আরম্ভ। নবী যিশাইয়ের বইয়ে ঈশ্বরের বলা এই কথা লেখা আছে: দেখ, তোমার আগে আমি আমার সংবাদদাতাকে পাঠাচ্ছি। সে তোমার পথ প্রস্তুত করবে। মরু-এলাকায় একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে, তোমরা প্রভুর পথ ঠিক কর, তাঁর রাস্তা সোজা কর। সেই কথামতই বাপ্তিস্মদাতা যোহন মরু-এলাকায় গিয়ে লোকদের বাপ্তিস্ম দিচ্ছিলেন এবং প্রচার করছিলেন যেন লোকে পাপের ক্ষমা পাবার জন্য পাপ থেকে মন ফিরায় ও বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে। তাতে যিহূদিয়া প্রদেশ ও যিরূশালেম শহরের সবাই বের হয়ে যোহনের কাছে আসতে লাগল। তারা যখন পাপ স্বীকার করল তখন যোহন যর্দন নদীতে তাদের বাপ্তিস্ম দিলেন। যোহন উটের লোমের কাপড় পরতেন এবং তাঁর কোমরে চামড়ার কোমর-বাঁধনি ছিল। তিনি পংগপাল আর বনমধু খেতেন। তিনি যা প্রচার করতেন তা এই, “আমার পরে একজন আসছেন। তিনি আমার চেয়ে শক্তিশালী। উবুড় হয়ে তাঁর জুতার ফিতা খুলবার যোগ্যও আমি নই। আমি তোমাদের জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি কিন্তু তিনি পবিত্র আত্মাতে তোমাদের বাপ্তিস্ম দেবেন।” সেই সময়ে যীশু গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রাম থেকে আসলেন, আর যোহন তাঁকে যর্দন নদীতে বাপ্তিস্ম দিলেন। জল থেকে উঠে আসবার সংগে সংগেই যীশু দেখলেন, আকাশ চিরে গেছে এবং পবিত্র আত্মা কবুতরের মত হয়ে তাঁর উপর নেমে আসছেন। সেই সময় স্বর্গ থেকে এই কথা শোনা গেল, “তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমার উপর আমি খুব সন্তুষ্ট।” এর পরেই যীশুকে পবিত্র আত্মার পরিচালনায় মরু-এলাকায় যেতে হল। সেই মরু-এলাকায় চল্লিশ দিন ধরে শয়তান যীশুকে লোভ দেখিয়ে পাপে ফেলবার চেষ্টা করতে লাগল। সেখানে অনেক বুনো জন্তু ছিল, আর স্বর্গদূতেরা যীশুর সেবা-যত্ন করতেন। যোহন জেলখানায় বন্দী হবার পরে যীশু গালীল প্রদেশে গেলেন। সেখানে তিনি এই কথা বলে ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করতে লাগলেন, “সময় হয়েছে, ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে। আপনারা পাপ থেকে মন ফিরান এবং এই সুখবরে বিশ্বাস করুন।” একদিন যীশু গালীল সাগরের পার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি শিমোন ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয়কে সাগরে জাল ফেলতে দেখলেন। সেই দু’জন ছিলেন জেলে। যীশু তাঁদের বললেন, “আমার সংগে চল। আমি তোমাদের মানুষ-ধরা জেলে করব।” তখনই তাঁরা জাল ফেলে রেখে যীশুর সংগে গেলেন। সেখান থেকে কিছু দূরে গেলে পর তিনি সিবদিয়ের দুই ছেলে যাকোব ও যোহনকে দেখতে পেলেন। তাঁরা তাঁদের নৌকায় বসে জাল ঠিক করছিলেন। যীশু তাঁদের দেখামাত্র ডাক দিলেন, আর তাঁরা তাঁদের বাবা সিবদিয়কে মজুরদের সংগে নৌকায় রেখে যীশুর সংগে গেলেন। যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা কফরনাহূম শহরে গেলেন। পরে বিশ্রামবারে যীশু সমাজ-ঘরে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। লোকেরা তাঁর শিক্ষায় আশ্চর্য হয়ে গেল, কারণ তিনি ধর্ম-শিক্ষকদের মত শিক্ষা দিচ্ছিলেন না বরং যাঁর অধিকার আছে সেই রকম লোকের মতই শিক্ষা দিচ্ছিলেন। সেই সময় মন্দ আত্মায় পাওয়া একজন লোক সেই সমাজ-ঘরের মধ্যে ছিল। সে চিৎকার করে বলল, “ওহে নাসরতের যীশু, আমাদের সংগে আপনার কি দরকার? আপনি কি আমাদের সর্বনাশ করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে; আপনিই তো ঈশ্বরের সেই পবিত্রজন।” যীশু তখন সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ কর, ওর মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।” সেই মন্দ আত্মা তখন লোকটাকে মুচ্‌ড়ে ধরল এবং জোরে চিৎকার করে তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল। এই ঘটনা দেখে লোকেরা এমন আশ্চর্য হল যে, তারা নিজেদের মধ্যে বলতে লাগল, “এই সব কি ব্যাপার? এই অধিকার-ভরা নতুন শিক্ষাই বা কি? এমন কি, মন্দ আত্মাদেরও তিনি আদেশ দেন আর তারা তাঁর কথা শুনতে বাধ্য হয়।” এতে গালীল প্রদেশের সব জায়গায় যীশুর কথা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ল। পরে তাঁরা সমাজ-ঘর থেকে বের হয়ে শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাড়ীতে গেলেন। যাকোব এবং যোহনও তাঁদের সংগে ছিলেন। শিমোনের শাশুড়ীর জ্বর হয়েছিল বলে তিনি শুয়ে ছিলেন। যীশু আসামাত্রই তাঁর কথা তাঁকে বলা হল। তখন যীশু তাঁর কাছে গিয়ে হাত ধরে তাঁকে তুললেন। তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল এবং তিনি তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন। সেই দিন সূর্য ডুবে গেলে পর সন্ধ্যাবেলা লোকেরা সব রোগীদের ও মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকদের যীশুর কাছে আনল। শহরের সব লোক তখন সেই বাড়ীর দরজার কাছে এসে জড়ো হল। যীশু অনেক রকমের রোগীকে সুস্থ করলেন এবং অনেক মন্দ আত্মা ছাড়ালেন। তিনি মন্দ আত্মাদের কথা বলতে দিলেন না, কারণ সেই মন্দ আত্মারা জানত তিনি কে। পরদিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতেই যীশু উঠলেন এবং ঘর ছেড়ে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন। শিমোন ও তাঁর সংগীরা যীশুকে খুঁজছিলেন। পরে তাঁকে খুজে পেয়ে বললেন, “সবাই আপনাকে খুঁজছে।” পরে একজন চর্মরোগী যীশুর কাছে এসে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে বলল, “আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ভাল করতে পারেন।” লোকটির উপর যীশুর খুব মমতা হল। তিনি হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই, তুমি শুচি হও।” আর তখনই তার চর্মরোগ ভাল হয়ে গেল। যীশু তখনই তাকে বিদায় করলেন, কিন্তু তার আগে তাকে কড়াকড়িভাবে বললেন, “দেখ, এই কথা কাউকে বোলো না। তুমি বরং পুরোহিতের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও আর শুচি হবার জন্য মোশি যে উৎসর্গের আদেশ দিয়েছেন তা উৎসর্গ কর। এতে পুরোহিতদের কাছে প্রমাণ হবে যে, তুমি ভাল হয়েছ।” সেই লোকটি কিন্তু বাইরে গিয়ে সব জায়গায় এই খবর ছড়াতে লাগল। তার ফলে যীশু কোন গ্রামে আর খোলাখুলিভাবে যেতে পারলেন না। তাঁকে নির্জন জায়গায় থাকতে হল; তবুও লোকেরা সব জায়গা থেকে তাঁর কাছে আসতে লাগল। কয়েকদিন পরে যীশু আবার কফরনাহূমে গেলেন। লোকেরা শুনল তিনি ঘরে আছেন। তখন এত লোক সেখানে জড়ো হল যে, ঘর তো দূরের কথা, দরজার বাইরেও আর জায়গা রইল না। যীশু লোকদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করছিলেন। এমন সময় কয়েকজন লোক একজন অবশ-রোগীকে তাঁর কাছে নিয়ে আসল। চারজন লোক তাকে বয়ে আনছিল, কিন্তু ভিড়ের জন্য তারা তাকে যীশুর কাছে নিয়ে যেতে পারল না। এইজন্য যীশু যেখানে ছিলেন ঠিক তার উপরের ছাদের কিছু অংশ তারা সরিয়ে ফেলল। তারপর সেই খোলা জায়গা দিয়ে মাদুর সুদ্ধই সেই অবশ-রোগীকে নীচে নামিয়ে দিল। যীশু তাদের বিশ্বাস দেখে সেই অবশ-রোগীকে বললেন, “তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।” সেখানে কয়েকজন ধর্ম-শিক্ষক বসে ছিলেন। তাঁরা মনে মনে ভাবছিলেন, “লোকটা এই রকম কথা বলছে কেন? সে তো ঈশ্বরকে অপমান করছে। একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে?” তাঁরা যে ঐ সব কথা ভাবছেন তা যীশু নিজের অন্তরে তখনই বুঝতে পারলেন। এইজন্য তিনি তাঁদের বললেন, “আপনারা কেন মনে মনে ঐ সব কথা ভাবছেন? এই অবশ-রোগীকে কোন্‌টা বলা সহজ-‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল,’ না, ‘ওঠো, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও’? কিন্তু আপনারা যেন জানতে পারেন পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করবার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে”-এই পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশ-রোগীকে বললেন, “আমি তোমাকে বলছি, ওঠো, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে বাড়ী চলে যাও।” তখনই সেই লোকটি উঠে তার মাদুর তুলে নিল এবং সকলের সামনেই বাইরে চলে গেল। এতে সবাই আশ্চর্য হয়ে ঈশ্বরের গৌরব করে বলল, “আমরা কখনও এই রকম দেখি নি।” পরে যীশু আবার গালীল সাগরের ধারে গেলেন। তখন অনেক লোক তাঁর কাছে আসল, আর তিনি তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। এর পরে তিনি পথে যেতে যেতে দেখলেন আল্‌ফেয়ের ছেলে লেবি কর্‌ আদায় করবার ঘরে বসে আছেন। যীশু তাঁকে বললেন, “এস, আমার শিষ্য হও।” তখন লেবি উঠে যীশুর সংগে গেলেন। পরে যীশু লেবির বাড়ীতে খেতে বসলেন। তখন অনেক কর্‌- আদায়কারী ও খারাপ লোকেরাও যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সংগে খেতে বসল, কারণ অনেক লোক যীশুর সংগে সংগে যাচ্ছিল। ফরীশী দলের ধর্ম-শিক্ষকেরা যখন দেখলেন যীশু কর্‌-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সংগে খাচ্ছেন তখন তাঁরা তাঁর শিষ্যদের বললেন, “উনি কর্‌-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করেন কেন?” এই কথা শুনে যীশু সেই ধর্ম-শিক্ষকদের বললেন, “সুস্থদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই বরং অসুস্থদের জন্যই দরকার আছে। আমি ধার্মিকদের ডাকতে আসি নি বরং পাপীদেরই ডাকতে এসেছি।” একবার বাপ্তিস্মদাতা যোহনের শিষ্যেরা ও ফরীশীরা উপবাস করছিলেন। তা দেখে কয়েকজন লোক যীশুর কাছে এসে বলল, “যোহনের শিষ্যেরা ও ফরীশীদের শিষ্যেরা উপবাস করেন, কিন্তু আপনার শিষ্যেরা করেন না কেন?” যীশু তাদের বললেন, “বর সংগে থাকতে কি বরের সংগের লোকেরা উপবাস করতে পারে? যতদিন বর সংগে থাকে ততদিন তারা উপবাস করতে পারে না। কিন্তু সময় আসছে যখন তাদের কাছ থেকে বরকে নিয়ে যাওয়া হবে, আর সেই সময় তারা উপবাস করবে। “কেউ পুরানো জামায় নতুন কাপড়ের তালি দেয় না। যদি দেয় তবে সেই পুরানো কাপড় থেকে নতুন তালিটা ছিঁড়ে আসে। তাতে সেই ছেঁড়া আরও বড় হয়। পুরানো চামড়ার থলিতে কেউ টাটকা আংগুর-রস রাখে না। যদি রাখে তবে টাটকা রসের দরুন থলি ফেটে গিয়ে রস ও থলি দু’টাই নষ্ট হয়। টাটকা রস নতুন থলিতেই রাখা হয়।” এক বিশ্রামবারে যীশু শস্যক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যেরা যেতে যেতে শীষ ছিঁড়তে লাগলেন। তাতে ফরীশীরা যীশুকে বললেন, “ধর্মের নিয়ম মতে বিশ্রামবারে যা করা উচিত নয় তা ওরা করছে কেন?” যীশু তাঁদের আরও বললেন, “মানুষের জন্যই বিশ্রামবারের সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু বিশ্রামবারের জন্য মানুষের সৃষ্টি হয় নি। তাই মনুষ্যপুত্র বিশ্রামবারেরও কর্তা।” এর পরে যীশু আবার সমাজ-ঘরে গেলেন। সেখানে একজন লোক ছিল যার একটা হাত শুকিয়ে গিয়েছিল। ফরীশীদের মধ্যে কয়েকজন যীশুকে দোষ দেবার অজুহাত খুঁজছিলেন। বিশ্রামবারে যীশু লোকটাকে সুস্থ করেন কি না তা দেখবার জন্য তাঁরা তাঁর উপর ভাল করে নজর রাখতে লাগলেন। যীশু সেই শুকনা-হাত লোকটিকে বললেন, “সকলের সামনে এসে দাঁড়াও।” তারপর যীশু ফরীশীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা উচিত, না মন্দ কাজ করা উচিত? প্রাণ রক্ষা করা উচিত, না নষ্ট করা উচিত?” ফরীশীরা কিন্তু কোনই উত্তর দিলেন না। তখন যীশু বিরক্ত হয়ে তাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন এবং তাঁদের অন্তরের কঠিনতার জন্য গভীর দুঃখের সংগে সেই লোকটিকে বললেন, “তোমার হাত বাড়িয়ে দাও।” লোকটি হাত বাড়িয়ে দিলে পর তার হাত একেবারে ভাল হয়ে গেল। তখন ফরীশীরা বাইরে গেলেন এবং কিভাবে যীশুকে মেরে ফেলা যায় সেই বিষয়ে রাজা হেরোদের দলের লোকদের সংগে পরামর্শ করতে লাগলেন। যীশু নিজের জন্য একটা ছোট নৌকা তাঁর শিষ্যদের ঠিক করে রাখতে বললেন যেন ভিড়ের দরুন লোকে চাপাচাপি করে তাঁর উপর না পড়ে। তিনি অনেক লোককে সুস্থ করেছিলেন বলে রোগীরা তাঁকে ছোঁবার জন্য ঠেলাঠেলি করছিল। মন্দ আত্মারা যখনই তাঁকে দেখত তখনই তাঁর সামনে মাটিতে পড়ে চিৎকার করে বলত, “আপনিই ঈশ্বরের পুত্র।” কিন্তু তিনি খুব কড়াভাবে তাদের আদেশ দিতেন যেন তারা কাউকে না বলে তিনি কে। যে বারোজনকে তিনি নিযুক্ত করেছিলেন তাঁরা হলেন শিমোন, যাঁর নাম তিনি দিলেন পিতর; সিবদিয়ের দুই ছেলে যাকোব ও যোহন (এঁদের নাম তিনি দিলেন বোয়ানের্গিস, অর্থাৎ বজ্রধ্বনির পুত্রেরা); আন্দ্রিয়, ফিলিপ, বর্‌থলময়, মথি, থোমা, আলফেয়ের ছেলে যাকোব, থদ্দেয়, মৌলবাদী শিমোন, আর যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ, যে যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। যীশু ঘরে আসলে পর আবার এত লোক তাঁর কাছে জড়ো হল যে, তিনি ও তাঁর শিষ্যেরা কিছু খেতেও পারলেন না। যীশুর নিজের লোকেরা এই খবর শুনে তাঁকে বের করে নিতে আসলেন। তাঁরা বললেন, “ও পাগল হয়ে গেছে।” যিরূশালেম থেকে যে ধর্ম-শিক্ষকেরা এসেছিলেন তাঁরা বললেন, “ওকে বেল্‌সবূলে পেয়েছে। মন্দ আত্মাদের রাজার সাহায্যেই ও মন্দ আত্মা ছাড়ায়।” যীশু সেই ধর্ম-শিক্ষকদের ডাকলেন এবং শিক্ষা দেবার জন্য বললেন, “শয়তান কেমন করে শয়তানকে তাড়িয়ে দিতে পারে? কোন রাজ্য নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে গেলে সেই রাজ্য টিকতে পারে না। আবার কোন পরিবার যদি ভাগ হয়ে যায় তবে সেই পরিবারও টিকতে পারে না। সেইভাবে শয়তানও যদি নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁর শক্তিতে ভাংগন ধরায় তবে সেও টিকতে পারে না এবং সেখানেই তার শেষ হয়। এই কথা ঠিক যে, একজন বলবান লোককে প্রথমে বেঁধে না রেখে তার ঘরে ঢুকে তার জিনিসপত্র কেউই নিয়ে যেতে পারে না। তাকে বাঁধলে পরে তবেই সে তার ঘর লুট করতে পারবে। আমি আপনাদের সত্যি বলছি, মানুষের সমস্ত পাপ এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপমানের কথা ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে অপমানের কথা কখনও ক্ষমা করা হবে না। সেই লোকের পাপ চিরকাল থাকবে।” ধর্ম-শিক্ষকেরা যে বলেছিলেন, “ওকে মন্দ আত্মায় পেয়েছে,” তাঁদের সেই কথার জন্যই যীশু এই সব বললেন। এর পরে যীশুর মা ও ভাইয়েরা সেখানে আসলেন এবং বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে যীশুকে ডেকে পাঠালেন। যীশুর চারদিকে তখন অনেক লোক বসে ছিল। তারা যীশুকে বলল, “আপনার মা ও ভাইয়েরা বাইরে আপনার খোঁজ করছেন।” যীশু বললেন, “কে আমার মা, আর কারা আমার ভাই?” যারা তাঁকে ঘিরে বসে ছিল তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই তো আমার মা ও ভাইয়েরা! ঈশ্বরের ইচ্ছা যারা পালন করে তারাই আমার ভাই, বোন ও মা।” যীশু আবার গালীল সাগরের ধারে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর চারদিকে অনেক লোকের ভিড় হল; সেইজন্য তিনি সাগরের মধ্যে একটা নৌকায় উঠে বসলেন আর লোকেরা সাগরের ধারে দাঁড়িয়ে রইল। তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক বিষয় তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তার মধ্যে তিনি বললেন, “শুনুন, একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। বীজ বুনবার সময় কতগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল, আর পাখীরা এসে তা খেয়ে ফেলল। আবার কতগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল। সেখানে বেশী মাটি ছিল না। মাটি গভীর ছিল না বলে তাড়াতাড়ি চারা গজিয়ে উঠল। সূর্য উঠলে পর সেগুলো পুড়ে গেল এবং শিকড় ভাল করে বসে নি বলে শুকিয়ে গেল। আর কতগুলো বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল। কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলো চেপে রাখল, তাই ফল ধরল না। কিন্তু আর কতগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ল এবং গাছ বের হয়ে বেড়ে উঠল ও ফল দিল; কোনটাতে ত্রিশ গুণ, কোনটাতে ষাট গুণ, আবার কোনটাতে একশোগুণ ফসল জন্মাল।” শেষে যীশু বললেন, “যার শুনবার কান আছে, সে শুনুক।” ভিড় কমে গেলে পর যীশুর চারপাশের লোকেরা আর তাঁর বারোজন শিষ্য সেই গল্পের বিষয় তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের গুপ্ত সত্য তোমাদেরই জানতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যদের কাছে গল্পের মধ্য দিয়ে সব কথা বলা হয়, যেন পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, ‘তারা তাকিয়েও দেখতে না পায় এবং শুনেও বুঝতে না পারে। তা না হলে তারা হয়তো ঈশ্বরের দিকে ফিরবে এবং ক্ষমা পাবে।’ ” তারপর যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা কি এই গল্পটার মানে বুঝলে না? তাহলে কেমন করে অন্য গল্পগুলোর মানে বুঝবে? চাষী যে বীজ বুনেছিল তা হল ঈশ্বরের বাক্য। পথের পাশে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শোনে, কিন্তু শয়তান তখনই এসে তাদের অন্তরে যে বাক্য বোনা হয়েছিল তা নিয়ে যায়। পাথুরে জমিতে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শুনে তখনই আনন্দের সংগে তা গ্রহণ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে শিকড় ভাল করে বসে না বলে কেবল অল্প দিনের জন্য তারা স্থির থাকে। পরে বাক্যের জন্য যখন কষ্ট এবং অত্যাচার আসে তখনই তারা পিছিয়ে যায়। আবার কাঁটাবনের মধ্যে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা-ভাবনা, ধন-সম্পত্তির মায়া এবং অন্যান্য জিনিসের লোভ এসে সেই বাক্যকে চেপে রাখে; সেইজন্য তাতে কোন ফল হয় না। আর ভাল জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শুনে তা গ্রহণ করে এবং ফল দেয়। কেউ দেয় ত্রিশগুণ, কেউ দেয় ষাট গুণ আবার কেউ দেয় একশো গুণ।” যীশু আরও বললেন, “কেউ কি বাতি নিয়ে ঝুড়ি বা খাটের নীচে রাখে? সে কি তা বাতিদানের উপর রাখে না? কোন জিনিস যদি লুকানো থাকে তবে তা প্রকাশিত হবার জন্যই লুকানো থাকে; আবার কোন জিনিস যদি ঢাকা থাকে তবে তা খুলবার জন্যই ঢাকা থাকে। যদি কারও শুনবার কান থাকে সে শুনুক।” এর পরে যীশু বললেন, “তোমরা যা শুনছ সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও। তোমরা যেভাবে মেপে দাও তোমাদের জন্য সেইভাবে মাপা হবে; এমন কি, বেশী করেই মাপা হবে। যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।” যীশু আরও বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্য এই রকম: একজন লোক জমিতে বীজ ছড়াল। পরে সে রাতে ঘুমিয়ে ও দিনে জেগে থেকে সময় কাটাল। এর মধ্যে সেই বীজ থেকে চারা গজিয়ে বড় হল, কিন্তু কিভাবে হল তা সে জানল না। জমি নিজে নিজেই ফল জন্মাল-প্রথমে চারা, পরে শীষ এবং শীষের মাথায় পরিপূর্ণ শস্যের দানা। দানা পাকলে পর সে কাস্তে লাগাল, কারণ ফসল কাটবার সময় হয়েছে।” তারপর যীশু বললেন, “কিসের সংগে আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করব? কোন্‌ দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে তা বুঝাব? সেই রাজ্য একটা সর্ষে- দানার মত। জমিতে বুনবার সময় দেখা যায় যে, ওটা সব বীজের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। কিন্তু লাগাবার পর যখন গাছ বেড়ে ওঠে তখন সমস্ত শাক-সব্‌জির মধ্যে ওটা সবচেয়ে বড় হয়, আর এমন বড় বড় ডাল বের হয় যে, পাখীরাও তার আড়ালে বাসা বাঁধে।” এই রকম আরও অনেক গল্পের মধ্য দিয়ে যীশু ঈশ্বরের বাক্য লোকদের কাছে বলতেন। তারা যতটুকু বুঝতে পারত ততটুকুই তিনি তাদের কাছে বলতেন। গল্প ছাড়া তিনি তাদের শিক্ষা দিতেন না, কিন্তু শিষ্যেরা যখন তাঁর সংগে একা থাকতেন তখন তিনি সব কিছু তাঁদের বুঝিয়ে দিতেন। সেই দিন সন্ধ্যাবেলা যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “চল, আমরা সাগরের ওপারে যাই।” তখন শিষ্যেরা লোকদের ছেড়ে যীশু যে নৌকায় ছিলেন সেই নৌকাতে করে তাঁকে নিয়ে চললেন। অবশ্য সেখানে আরও অন্য নৌকাও ছিল। নৌকা যখন চলছিল তখন একটা ভীষণ ঝড় উঠল এবং ঢেউগুলো নৌকার উপর এমনভাবে আছড়ে পড়ল যে, নৌকা জলে ভরে উঠতে লাগল। যীশু কিন্তু নৌকার পিছন দিকে একটা বালিশের উপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন। শিষ্যেরা তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “গুরু, আমরা যে মারা পড়ছি সেদিকে কি আপনার খেয়াল নেই?” যীশু উঠে বাতাসকে ধমক দিলেন এবং সাগরকে বললেন, “থাম, শান্ত হও।” তাতে বাতাস থেমে গেল ও সব কিছু খুব শান্ত হয়ে গেল। তিনি শিষ্যদের বললেন, “তোমরা ভয় পাও কেন? এখনও কি তোমাদের বিশ্বাস হয় নি?” এতে শিষ্যেরা ভীষণ ভয় পেলেন এবং নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি কে যে, বাতাস এবং সাগরও তাঁর কথা শোনে?” তারপর যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা গালীল সাগর পার হয়ে গেরাসেনীদের এলাকায় গেলেন। যীশু নৌকা থেকে নামতেই মন্দ আত্মায় পাওয়া একজন লোক কবরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর সামনে আসল। লোকটা কবরস্থানেই থাকত এবং শিকল দিয়েও কেউ আর তাকে বেঁধে রাখতে পারত না। তার হাত-পা প্রায়ই শিকল দিয়ে বাঁধা হত, কিন্তু সে শিকল ছিঁড়ে ফেলত এবং পায়ের বেড়ী ভেংগে ফেলত। কেউই তাকে সামলাতে পারত না। সে দিনরাত কবরে কবরে ও পাহাড়ে পাহাড়ে চিৎকার করে বেড়াত এবং পাথর দিয়ে নিজেই নিজের গা কাটত। সে এই কথা বলল কারণ যীশু তাকে বলেছিলেন, “মন্দ আত্মা, এই লোকটির মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।” যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি?” সে বলল, “আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকে আছি।” সে যীশুকে বারবার কাকুতি-মিনতি করে বলল যেন তিনি সেই এলাকা থেকে তাদের বের করে না দেন। সেই সময় সেই জায়গার কাছে পাহাড়ের গায়ে খুব বড় এক পাল শূকর চরছিল। মন্দ আত্মারা যীশুকে মিনতি করে বলল, “ঐ শূকরের পালের মধ্যে আমাদের পাঠিয়ে দিন; ওদের মধ্যে আমাদের ঢুকতে দিন।” যীশু অনুমতি দিলে পর সেই মন্দ আত্মারা বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে গেল। তাতে সমস্ত শূকর ঢালু পার দিয়ে জোরে দৌড়ে গেল এবং সাগরের মধ্যে পড়ে ডুবে মরল। সেই পালের মধ্যে প্রায় দু’হাজার শূকর ছিল। যারা শূকর চরাচ্ছিল তারা তখন পালিয়ে গিয়ে গ্রামে এবং তার আশেপাশের সব জায়গায় এই খবর দিল। তখন লোকেরা দেখতে আসল কি হয়েছে। তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, যাকে অনেকগুলো মন্দ আত্মায় পেয়েছিল সেই লোকটা কাপড়-চোপড় পরে সুস্থ মনে বসে আছে। এ দেখে লোকেরা ভয় পেল। এই ঘটনা যারা দেখেছিল তারা সেই মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকটার বিষয় ও সেই শূকরগুলোর বিষয় লোকদের জানাল। এতে লোকেরা যীশুকে অনুরোধ করতে লাগল যেন তিনি তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যান। যীশু যখন নৌকায় উঠছিলেন তখন যাকে মন্দ আত্মায় পেয়েছিল সেই লোকটি তাঁর সংগে যাবার জন্য মিনতি করতে লাগল। কিন্তু যীশু তাঁকে এই বলে বিদায় করলেন, “তুমি তোমার বাড়ীতে ফিরে যাও এবং প্রভু তোমার জন্য কত বড় কাজ করেছেন ও তোমার উপর কত দয়া দেখিয়েছেন তা গিয়ে তোমার বাড়ীর লোকদের বল।” লোকটি তখন চলে গেল এবং যীশু তার জন্য কত বড় কাজ করেছেন তা দিকাপলি এলাকায় বলে বেড়াতে লাগল। তাতে সবাই আশ্চর্য হল। যীশু যখন নৌকায় করে আবার সাগরের অন্য পারে গেলেন তখন তাঁর চারপাশে অনেক লোক এসে ভিড় করল। তিনি তখনও সাগরের পারে ছিলেন। সেই সময় যায়ীর নামে যিহূদী সমাজ-ঘরের একজন নেতা সেখানে আসলেন এবং যীশুকে দেখে তাঁর পায়ের উপর উবুড় হয়ে পড়লেন। তিনি যীশুকে মিনতি করে বললেন, “আমার মেয়েটা মারা যাবার মত হয়েছে। আপনি এসে তার উপর আপনার হাত রাখুন; তাতে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।” তখন যীশু তাঁর সংগে চললেন। অনেক লোক যীশুর সংগে সংগে যাচ্ছিল এবং তাঁর চারপাশে ঠেলাঠেলি করছিল। সেই ভিড়ের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল যে বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। অনেক ডাক্তারের হাতে সে অনেক কষ্ট পেয়েছিল, আর তার যা কিছু ছিল সবই সে খরচ করেছিল, কিন্তু ভাল হবার বদলে দিন দিনই তার অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। যীশুর বিষয় শুনে সে ভিড়ের মধ্যেই যীশুর ঠিক পিছনে এসে তাঁর চাদরটা ছুঁলো, কারণ সে ভেবেছিল যদি কেবল তাঁর কাপড় সে ছুঁতে পারে তাহলেই সে ভাল হয়ে যাবে। যীশুর চাদরটা ছোঁয়ার সংগে সংগেই তার রক্তস্রাব বন্ধ হল এবং সে তার নিজের দেহের মধ্যেই বুঝল তার অসুখ ভাল হয়ে গেছে। যীশু তখনই বুঝলেন তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়েছে। সেইজন্য তিনি ভিড়ের চারদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কে আমার কাপড় ছুঁলো?” তাঁর শিষ্যেরা বললেন, “আপনি তো দেখছেন লোকে আপনার চারপাশে ঠেলাঠেলি করছে, আর তবুও আপনি বলছেন, কে আপনাকে ছুঁলো?” এই কাজ কে করেছে তা দেখবার জন্য তবুও যীশু চারদিকে তাকাতে লাগলেন। সেই স্ত্রীলোকটির যা হয়েছে তা বুঝে সে কাঁপতে কাঁপতে এসে যীশুর পায়ে পড়ল এবং সব বিষয় জানাল। যীশু তাঁকে বললেন, “মা, তুমি বিশ্বাস করেছ বলে সুস্থ হয়েছ। শান্তিতে চলে যাও, তোমার আর এই কষ্ট না হোক।” যীশু তখনও কথা বলছিলেন, এমন সময় সেই সমাজ-ঘরের নেতা যায়ীরের ঘর থেকে কয়েকজন লোক এসে যায়ীরকে বলল, “আপনার মেয়েটা মারা গেছে; গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না।” সেই লোকগুলোর কথা শুনে যীশু যায়ীরকে বললেন, “ভয় করবেন না, কেবল বিশ্বাস করুন।” যীশু কেবল পিতর, যাকোব ও যাকোবের ভাই যোহনকে তাঁর সংগে নিলেন। পরে যায়ীরের বাড়ীতে এসে তিনি দেখলেন খুব গোলমাল হচ্ছে। লোকেরা জোরে জোরে কান্নাকাটি করছে। যীশু ভিতরে গিয়ে লোকদের বললেন, “আপনারা কেন গোলমাল ও কান্নাকাটি করছেন? মেয়েটি মারা যায় নি, ঘুমাচ্ছে।” এই কথা শুনে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগল। তখন যীশু তাদের সবাইকে ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। তারপর তিনি মেয়েটির মা-বাবা এবং তাঁর সংগের শিষ্যদের নিয়ে মেয়েটি যে ঘরে ছিল সেই ঘরে ঢুকলেন। এই ঘটনার কথা কাউকে না জানাবার জন্য যীশু কড়া আদেশ দিলেন এবং মেয়েটিকে কিছু খেতে দিতে বললেন। এর পর যীশু সেই জায়গা ছেড়ে নিজের গ্রামে গেলেন, আর তাঁর শিষ্যেরাও তাঁর সংগে গেলেন। বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-ঘরে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। অনেক লোক তাঁর কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, “এই লোক কোথা থেকে এই সব পেল? এই যে জ্ঞান তাকে দেওয়া হয়েছে, এ-ই বা কি? আবার সে আশ্চর্য আশ্চর্য কাজও করছে। এ কি সেই ছুতার মিস্ত্রি নয়? এ কি মরিয়মের ছেলে নয়? যাকোব, যোষেফ, যিহূদা ও শিমোনের ভাই নয়? তার বোনেরা কি এখানে আমাদের মধ্যে নেই?” এইভাবে যীশুকে নিয়ে লোকদের মনে বাধা আসতে লাগল। তখন যীশু তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম, নিজের আত্মীয়-স্বজন ও নিজের বাড়ী ছাড়া আর সব জায়গাতেই নবীরা সম্মান পান।” তারপর তিনি কয়েকজন অসুস্থ লোকের উপর হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন, কিন্তু সেখানে আর কোন আশ্চর্য কাজ করা সম্ভব হল না। লোকেরা তাঁকে বিশ্বাস করল না দেখে তিনি খুব আশ্চর্য হলেন। এর পরে যীশু গ্রামে গ্রামে গিয়ে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। পরে তিনি তাঁর সেই বারোজন শিষ্যকে নিজের কাছে ডাকলেন এবং প্রচার করবার জন্য দু’জন দু’জন করে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি মন্দ আত্মাদের উপরে তাঁদের ক্ষমতা দিলেন। যাত্রাপথের জন্য একটা লাঠি ছাড়া আর কিছুই তিনি শিষ্যদের নিতে দিলেন না। রুটি, থলি, কোমর-বাঁধনিতে পয়সা পর্যন্ত নিতে তিনি তাঁদের বারণ করলেন। তিনি তাঁদের জুতা পরতে বললেন বটে, কিন্তু একটার বেশী জামা পরতে নিষেধ করলেন। তিনি তাঁদের আরও বললেন, “তোমরা যে বাড়ীতে ঢুকবে সেই গ্রাম ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেই বাড়ীতেই থেকো। কোন জায়গার লোকেরা যদি তোমাদের গ্রহণ না করে কিম্বা তোমাদের কথা না শোনে, তবে সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাবার সময়ে তোমাদের পায়ের ধুলা ঝেড়ে ফেলো যেন সেটাই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হয়।” তখন শিষ্যেরা গিয়ে প্রচার করতে লাগলেন যেন লোকেরা পাপ থেকে মন ফিরায়। তাঁরা অনেক মন্দ আত্মা ছাড়ালেন এবং অনেক অসুস্থ লোকের মাথায় তেল দিয়ে তাদের সুস্থ করলেন। যীশুর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে রাজা হেরোদ যীশুর কথা শুনতে পেয়েছিলেন। কোন কোন লোক বলছিল, “উনিই সেই বাপ্তিস্মদাতা যোহন। তিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন বলে এই সব আশ্চর্য কাজ করছেন।” কেউ কেউ বলছিল, “উনি এলিয়”; আবার কেউ কেউ বলছিল, “অনেক দিন আগেকার নবীদের মত উনিও একজন নবী।” এই সব কথা শুনে হেরোদ বললেন, “উনি যোহন, যাঁর মাথা কেটে ফেলবার আদেশ আমি দিয়েছিলাম। আবার উনি বেঁচে উঠেছেন।” এইজন্য যোহনের উপর হেরোদিয়ার খুব রাগ ছিল। সে যোহনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু হেরোদ যোহনকে ভয় করতেন বলে সে তা করতে পারছিল না। যোহন যে একজন ঈশ্বরভক্ত ও পবিত্র লোক হেরোদ তা জানতেন, তাই তিনি যোহনকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতেন। যোহনের কথা শুনবার সময় মনে খুব অস্বস্তি বোধ করলেও হেরোদ তাঁর কথা শুনতে ভালবাসতেন। শেষে হেরোদিয়া একটা সুযোগ পেল। হেরোদ নিজের জন্মদিনে তাঁর বড় বড় রাজকর্মচারী, সেনাপতি ও গালীল প্রদেশের প্রধান লোকদের জন্য একটা ভোজ দিলেন। হেরোদিয়ার মেয়ে সেই ভোজসভায় নাচ দেখিয়ে হেরোদ ও ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের সন্তুষ্ট করল। তখন রাজা মেয়েটিকে বললেন, “তুমি যা চাও আমি তোমাকে তা-ই দেব।” হেরোদ মেয়েটির কাছে শপথ করে বললেন, “তুমি যা চাও আমি তা-ই তোমাকে দেব। এমন কি, আমার রাজ্যের অর্ধেক পর্যন্তও দেব।” মেয়েটি গিয়ে তার মাকে বলল, “আমি কি চাইব?” তার মা বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথা।” মেয়েটি তখনই গিয়ে রাজাকে বলল, “একটা থালায় করে আমি এখনই বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটা চাই।” এই কথা শুনে রাজা হেরোদ খুব দুঃখিত হলেন, কিন্তু ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের সামনে শপথ করেছিলেন বলে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন না। এই খবর পেয়ে যোহনের শিষ্যেরা এসে তাঁর দেহটা নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন। যীশু যে বারোজন শিষ্যকে পাঠিয়েছিলেন তাঁরা ফিরে আসলেন এবং যা যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন সবই তাঁকে জানালেন। সেই সময় অনেক লোক সেখানে যাওয়া-আসা করছিল বলে শিষ্যেরা কিছু খাওয়ার সুযোগও পেলেন না। সেইজন্য যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা আমার সংগে কোন একটা নির্জন জায়গায় এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম কর।” তাঁরা নৌকায় করে একটা নির্জন জায়গায় গেলেন। তাঁদের যেতে দেখে অনেকেই কিন্তু তাঁদের চিনতে পারল এবং আশেপাশের গ্রাম থেকে দৌড়ে গিয়ে তাঁদের আগেই সেখানে উপস্থিত হল। যীশু নৌকা থেকে নেমে অনেক লোকের ভিড় দেখতে পেলেন। এই লোকদের জন্য যীশুর খুব মমতা হল কারণ এদের দশা রাখালহীন ভেড়ার মত ছিল। যীশু তাদের অনেক বিষয় শিক্ষা দিতে লাগলেন। যখন দিন শেষ হয়ে আসল তখন শিষ্যেরা এসে যীশুকে বললেন, “জায়গাটা নির্জন, বেলাও প্রায় ডুবে গেছে। লোকদের বিদায় করে দিন যেন তারা আশেপাশের পাড়ায় ও গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য কিছু খাবার কিনতে পারে।” যীশু বললেন, “তোমরাই ওদের খেতে দাও।” শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “আমরা গিয়ে দু’শো দীনারের রুটি কিনে এনে কি তাদের খেতে দেব?” যীশু বললেন, “তোমাদের কাছে কয়টা রুটি আছে গিয়ে দেখ।” শিষ্যেরা দেখে এসে বললেন, “পাঁচটা রুটি আর দু’টা মাছ আছে।” তখন যীশু শিষ্যদের আদেশ দিলেন যেন তাঁরা সবুজ ঘাসের উপর লোকদের বসিয়ে দেন। লোকেরা একশো একশো, পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে সারি সারি বসে গেল। যীশু সেই পাঁচটা রুটি আর দু’টা মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, আর লোকদের দেবার জন্য রুটি ভেংগে শিষ্যদের হাতে দিলেন। এইভাবে তিনি সবাইকে মাছও ভাগ করে দিলেন। তারা সকলে পেট ভরে খেল। তার পরে শিষ্যেরা বাকী রুটি ও মাছের টুকরা তুলে নিয়ে বারোটা টুকরি ভরতি করলেন। যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই ছিল পাঁচ হাজার। যীশু এর পরেই তাঁর শিষ্যদের তাগাদা দিলেন যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে সাগরের অন্য পারে বৈৎসৈদা গ্রামে যান, আর এদিকে তিনি লোকদের বিদায় করতে লাগলেন। লোকদের বিদায় দিয়ে তিনি প্রার্থনা করবার জন্য পাহাড়ে উঠে গেলেন। যখন রাত হল তখন শিষ্যদের নৌকাটা সাগরের মাঝখানে ছিল এবং যীশু একা ডাংগায় ছিলেন। যীশু দেখলেন শিষ্যেরা খুব কষ্ট করে দাঁড় বাইছেন, কারণ বাতাস তাঁদের উল্টাদিকে ছিল। প্রায় শেষ রাতের দিকে যীশু সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে শিষ্যদের কাছে আসলেন এবং তাঁদের ফেলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। শিষ্যেরা কিন্তু তাঁকে সাগরের উপর দিয়ে হাঁটতে দেখে ভূত মনে করে চিৎকার করে উঠলেন, কারণ তাঁকে দেখে সবাই ভয় পেয়েছিলেন। যীশু তখনই শিষ্যদের সংগে কথা বললেন। তিনি তাঁদের বললেন, “এ তো আমি; ভয় কোরো না, সাহস কর।” যীশু শিষ্যদের নৌকায় উঠলে পর বাতাস থেমে গেল। এতে শিষ্যেরা খুব অবাক হয়ে গেলেন, কারণ এর আগে রুটি খাওয়াবার ব্যাপারটা তাঁরা বুঝতে পারেন নি; তাঁদের মন কঠিন হয়েই রইল। যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা সাগর পার হয়ে গিনেষরৎ এলাকায় এসে নৌকা বাঁধলেন। শহরে, গ্রামে বা পাড়ায়, যেখানেই তিনি যেতেন সেখানকার লোকেরা রোগীদের এনে বাজারের মধ্যে জড়ো করত। তারা যীশুকে মিনতি করত যেন রোগীরা তাঁর চাদরের কিনারাটা কেবল ছুঁতে পারে, আর যারা তাঁকে ছুঁতো তারা সুস্থ হত। যাঁরা যিরূশালেম থেকে এসেছিলেন এমন কয়েকজন ফরীশী ও ধর্ম-শিক্ষক যীশুর কাছে একত্র হলেন। তাঁরা দেখলেন, যীশুর শিষ্যদের মধ্যে কয়েকজন হাত না ধুয়ে অশুচিভাবে খেতে বসেছেন। ফরীশীরা ও সমস্ত যিহূদীরা পুরানো দিনের ধর্ম-শিক্ষকদের দেওয়া যে নিয়ম চলে আসছে সেই নিয়ম মত হাত না ধুয়ে খান না। বাজার থেকে এসে তাঁরা হাত-পা না ধুয়ে কিছু খান না। এছাড়া তাঁরা আরও অনেক রকম নিয়ম পালন করে থাকেন, যেমন ঘটি, বাটি, থালা ইত্যাদি ধোওয়া। সেইজন্য ফরীশী ও ধর্ম-শিক্ষকেরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “পুরানো দিনের ধর্ম-শিক্ষকদের দেওয়া যে নিয়ম চলে আসছে আপনার শিষ্যেরা তা মেনে চলে না কেন? তারা তো হাত না ধুয়েই খায়।” যীশু উত্তর দিলেন, “আপনারা ভণ্ড! আপনাদের বিষয়ে নবী যিশাইয় ঠিক কথাই বলেছিলেন। তাঁর বইয়ে লেখা আছে: এই লোকেরা মুখেই আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের অন্তর আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। তারা মিথ্যাই আমার উপাসনা করে, তাদের দেওয়া শিক্ষা মানুষের তৈরী কতগুলো নিয়ম মাত্র। আপনারা তো ঈশ্বরের দেওয়া আদেশগুলো বাদ দিয়ে মানুষের দেওয়া চলতি নিয়ম পালন করছেন।” যীশু তাঁদের আরও বললেন, “ঈশ্বরের আদেশ বাদ দিয়ে নিজেদের চলতি নিয়ম পালন করবার জন্য বেশ ভাল উপায়ই আপনাদের জানা আছে। যেমন ধরুন, মোশি বলেছেন, ‘মা-বাবাকে সম্মান কোরো’ এবং ‘যার কথায় মা-বাবার প্রতি অশ্রদ্ধা থাকে তাকে অবশ্যই মেরে ফেলতে হবে।’ কিন্তু আপনারা বলে থাকেন, যদি কেউ তার মা কিম্বা বাবাকে বলে, ‘আমার যে জিনিসের দ্বারা তোমার সাহায্য হতে পারত তা কর্ব্বান,’ অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা হয়েছে, তবে মা-বাবার জন্য তাকে আর কিছু করতে হয় না। এইভাবে আপনারা আপনাদের চলতি নিয়ম শিক্ষা দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য বাতিল করেছেন। এছাড়া আপনারা আরও এই রকম অনেক কাজ করে থাকেন।” এর পরে যীশু লোকদের আবার তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “আপনারা সবাই আমার কথা শুনুন ও বুঝুন। এর পরে যীশু যখন লোকদের ছেড়ে ঘরে ঢুকলেন, তখন শিষ্যেরা সেই কথার মানে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা কি এতই অবুঝ? তোমরা কি বোঝ না যে, বাইরে থেকে যা মানুষের ভিতরে ঢোকে তা তাকে অশুচি করতে পারে না? এর কারণ হল, তা তো তার অন্তরে ঢোকে না কিন্তু পেটে ঢোকে এবং পরে দেহ থেকে বের হয়ে যায়।” এই কথাতেই যীশু বুঝিয়ে দিলেন যে, সব খাবারই শুচি। যীশু আরও বললেন, “মানুষের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে তা- ই মানুষকে অশুচি করে, কারণ মানুষের ভিতর, অর্থাৎ অন্তর থেকেই মন্দ চিন্তা, সমস্ত রকম ব্যভিচার, চুরি, খুন, লোভ, অন্যের ক্ষতি করবার ইচ্ছা, ছলনা, লমপটতা, হিংসা, নিন্দা, অহংকার এবং মূর্খতা বের হয়ে আসে। এই সব মন্দতা মানুষের ভিতর থেকেই বের হয়ে আসে এবং মানুষকে অশুচি করে।” এর পরে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর এলাকায় গেলেন। তিনি একটা ঘরে ঢুকলেন এবং চাইলেন যেন কেউ তা জানতে না পারে, কিন্তু তিনি লুকিয়ে থাকতে পারলেন না। সেখানে এমন একজন স্ত্রীলোক ছিল যার মেয়েকে মন্দ আত্মায় পেয়েছিল। সেই স্ত্রীলোকটি যীশুর বিষয় শুনতে পেয়ে তখনই এসে যীশুর পায়ে পড়ল। স্ত্রীলোকটি ছিল অযিহূদী এবং সুর-ফৈনীকীতে জন্মগ্রহণ করেছিল। সে যীশুর কাছে কাকুতি-মিনতি করতে লাগল যেন তিনি তার মেয়েটির মধ্য থেকে মন্দ আত্মা দূর করে দেন। যীশু তাকে বললেন, “আগে ছেলেমেয়েরা পেট ভরে খাক, কারণ ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরের সামনে ফেলা ভাল নয়।” তাতে সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “প্রভু, আপনি ঠিকই বলেছেন, কিন্তু ছেলেমেয়েদের খাবারের যে সব টুকরা টেবিলের নীচে পড়ে তা তো কুকুরেই খায়।” যীশু তাকে বললেন, “কথাটা তুমি বেশ ভাল বলেছ। এখন যাও; গিয়ে দেখ, মন্দ আত্মা তোমার মেয়েটির মধ্য থেকে বের হয়ে গেছে।” সেই স্ত্রীলোকটি তখন বাড়ীতে ফিরে গিয়ে দেখল, তার মেয়েটি বিছানায় শুয়ে আছে এবং মন্দ আত্মা তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেছে। এর পরে যীশু সোর এলাকা ছেড়ে সীদোন শহরের মধ্য দিয়ে গালীল সাগরের কাছে দিকাপলি এলাকার গ্রামগুলোতে গেলেন। সেখানে কয়েকজন লোক একটা বয়রা ও তোত্‌লা লোককে যীশুর কাছে নিয়ে আসল এবং কাকুতি-মিনতি করতে লাগল যেন তিনি সেই লোকটির উপরে তাঁর হাত রাখেন। যীশু ভিড়ের মধ্য থেকে সেই লোকটিকে একপাশে নিয়ে গিয়ে তার দুই কানের মধ্যে নিজের আংগুল দিলেন। পরে থুথু ফেলে লোকটার জিভ্‌ ছুঁলেন। তারপর তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে লোকটিকে বললেন, “এপ্‌ফাথা,” অর্থাৎ “খুলে যাও।” তাতে লোকটার কানও খুলে গেল, জিভও খুলে গেল এবং সে স্পষ্টভাবে কথা বলতে লাগল। যীশু এই বিষয়ে কাউকে বলতে লোকদের বারণ করলেন। কিন্তু তিনি যতই তাদের বারণ করলেন ততই তারা সেই বিষয়ে আরও বেশী করে বলাবলি করতে লাগল। এই ঘটনায় লোকেরা খুব আশ্চর্য হয়ে বলল, “ইনি সব কাজ কত নিখুঁতভাবে করেন। ইনি বয়রাদের শুনবার শক্তি ও বোবাদের কথা বলবার শক্তি দেন।” পরে আবার একদিন অনেক লোকের ভিড় হল। এই সব লোকদের কাছে কোন খাবার ছিল না বলে যীশু তাঁর শিষ্যদের ডেকে বললেন, “এই লোকদের জন্য আমার মমতা হচ্ছে, কারণ আজ তিন দিন হল এরা আমার সংগে সংগে আছে, আর এদের কাছে কোন খাবার নেই। যদি আমি এই অবস্থায় এদের বাড়ী পাঠিয়ে দিই তবে তারা পথেই অজ্ঞান হয়ে পড়বে, কারণ এদের মধ্যে অনেকেই অনেক দূর থেকে এসেছে।” শিষ্যেরা বললেন, “কিন্তু এই নির্জন জায়গায় এদের খাওয়াবার জন্য কে কোথা থেকে এত রুটি পাবে?” যীশু জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমাদের কাছে কয়টা রুটি আছে?” তাঁরা বললেন, “সাতখানা।” তিনি লোকদের মাটিতে বসতে আদেশ দিলেন। পরে সেই রুটি সাতখানা নিয়ে তিনি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে ভাংলেন এবং লোকদের দেবার জন্য শিষ্যদের হাতে দিলেন আর শিষ্যেরা তা লোকদের হাতে দিলেন। শিষ্যদের কাছে কয়েকটা ছোট মাছও ছিল। যীশু সেই মাছগুলোর জন্যও ধন্যবাদ দিলেন এবং তা লোকদের ভাগ করে দেবার জন্য শিষ্যদের বললেন। লোকেরা পেট ভরে খেল। পরে যে টুকরাগুলো পড়ে রইল শিষ্যেরা তা তুলে নিয়ে সাতটা টুকরি ভরতি করলেন। তারপর তিনি তাঁদের ছেড়ে আবার নৌকায় উঠে সাগরের অন্য পারে গেলেন। শিষ্যেরা সংগে করে রুটি নিতে ভুলে গিয়েছিলেন। নৌকার মধ্যে তাঁদের কাছে মাত্র একখানা রুটি ছিল। এই সময় যীশু বললেন, “তোমরা সতর্ক থাক, ফরীশীদের ও হেরোদের খামি থেকে সাবধান হও।” এতে শিষ্যেরা নিজেদের মধ্যে বলতে লাগলেন, “আমাদের কাছে রুটি নেই বলে উনি এই কথা বলছেন।” শিষ্যেরা কি বিষয়ে বলছেন তা বুঝতে পেরে যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা কেন বলছ যে, তোমাদের রুটি নেই? তোমরা কি এখনও জান না বা বোঝ না? তোমাদের অন্তর কি কঠিন হয়ে গেছে? তোমাদের চোখ থাকতেও কি দেখতে পাও না? কান থাকতেও কি শুনতে পাও না? মনেও কি পড়ে না, যখন আমি পাঁচ হাজার লোকের জন্য পাঁচখানা রুটি ভেংগেছিলাম তখন কত টুকরি রুটির টুকরা তোমরা কুড়িয়ে তুলেছিলে?” শিষ্যেরা উত্তর দিলেন, “বারো টুকরি।” যীশু আবার বললেন, “আমি যখন চার হাজার লোকের জন্য সাতখানা রুটি ভেংগেছিলাম তখন কত টুকরি রুটির টুকরা তোমরা কুড়িয়ে তুলেছিলে?” তাঁরা বললেন, “সাত টুকরি।” তখন তিনি তাঁদের বললেন, “তাহলে তোমরা কি এখনও বোঝ না?” পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা বৈৎসৈদা গ্রামে গেলেন। সেখানকার লোকেরা একজন অন্ধ লোককে যীশুর কাছে নিয়ে আসল এবং লোকটির গায়ে হাত রাখবার জন্য যীশুকে অনুরোধ করতে লাগল। যীশু সেই অন্ধ লোকটিকে হাত ধরে গ্রামের বাইরে নিয়ে গেলেন। তার পরে লোকটির চোখে থুথু দিলেন এবং তার গায়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছ?” লোকটি তাকিয়ে দেখে বলল, “আমি লোক দেখতে পাচ্ছি; তারা দেখতে গাছের মত, আবার হেঁটেও বেড়াচ্ছে।” যীশু আর একবার লোকটির চোখের উপরে হাত দিলেন। এইবার তার চোখ খুলে গেল এবং সে দেখবার শক্তি ফিরে পেল। সে পরিষ্কার ভাবে সব কিছু দেখতে লাগল। যীশু তাকে তার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেবার সময় বললেন, “বৈৎসৈদা গ্রামে যেয়ো না।” তারপর যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা কৈসরিয়া-ফিলিপি শহরের আশেপাশের গ্রামে গেলেন। যাবার পথে তিনি শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে, এই বিষয়ে লোকে কি বলে?” শিষ্যেরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন; কেউ কেউ বলে এলিয়; আবার কেউ কেউ বলে আপনি নবীদের মধ্যে একজন।” তখন যীশু বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?” পিতর উত্তর দিলেন, “আপনি সেই মশীহ।” যীশু তাঁদের সাবধান করে দিলেন যেন তাঁরা তাঁর সম্বন্ধে কাউকে কিছু না বলেন। পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের এই বলে শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, মনুষ্যপুত্রকে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে। বৃদ্ধ নেতারা, প্রধান পুরোহিতেরা এবং ধর্ম-শিক্ষকেরা তাঁকে অগ্রাহ্য করবেন। তাঁকে মেরে ফেলা হবে এবং তিন দিন পরে তাঁকে মৃত্যু থেকে আবার জীবিত হয়ে উঠতে হবে। এই সব কথা তিনি স্পষ্টভাবেই বললেন। তখন পিতর যীশুকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করতে লাগলেন। যীশু মুখ ফিরিয়ে শিষ্যদের দিকে তাকালেন এবং পিতরকে ধমক দিয়ে বললেন, “শয়তান, আমার কাছ থেকে দূর হও। ঈশ্বরের যা, তা তুমি ভাবছ না, কিন্তু মানুষের যা, তা-ই ভাবছ।” এর পরে তিনি শিষ্যদের আর অন্য লোকদের তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “যদি কেউ আমার পথে আসতে চায় তবে সে নিজের ইচ্ছামত না চলুক; নিজের ক্রুশ বয়ে নিয়ে সে আমার পিছনে আসুক। যে কেউ তার নিজের জন্য বেঁচে থাকতে চায় সে তার সত্যিকারের জীবন হারাবে; কিন্তু যে কেউ আমার জন্য এবং ঈশ্বরের দেওয়া সুখবরের জন্য তার প্রাণ হারায়, সে তার সত্যিকারের জীবন রক্ষা করবে। যদি কেউ সমস্ত জগৎ লাভ করে তার বিনিময়ে তার সত্যিকারের জীবন হারায় তবে তার কোন লাভ নেই, কারণ সত্যিকারের জীবন ফিরে পাবার জন্য তার দেবার মত কি আছে? এই কালের অবিশ্বস্ত ও পাপী লোকদের মধ্যে যদি কেউ আমাকে নিয়ে আর আমার কথা নিয়ে লজ্জাবোধ করে, তবে মনুষ্যপুত্র যখন পবিত্র দূতদের সংগে করে তাঁর পিতার মহিমায় আসবেন, তখন তিনিও সেই লোকের সম্বন্ধে লজ্জাবোধ করবেন।” তারপর যীশু শিষ্যদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে যাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য মহাশক্তিতে দেখা না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনমতেই মারা যাবে না।” এর ছয় দিন পরে যীশু কেবল পিতর, যাকোব ও যোহনকে সংগে নিয়ে একটা উঁচু পাহাড়ে গেলেন। এই শিষ্যদের সামনে তাঁর চেহারা বদলে গেল। তাঁর কাপড়-চোপড় এমন চোখ ঝলসানো সাদা হল যে, পৃথিবীর কোন ধোপার পক্ষে তেমন করে কাপড় কাচা সম্ভব নয়। শিষ্যেরা সেখানে এলিয় ও মোশিকে দেখতে পেলেন। তাঁরা যীশুর সংগে কথা বলছিলেন। তখন পিতর যীশুকে বললেন, “গুরু, ভালই হয়েছে যে, আমরা এখানে আছি। আমরা এখানে তিনটা কুঁড়ে-ঘর তৈরী করি-একটা আপনার, একটা মোশির ও একটা এলিয়ের জন্য।” কি যে বলা উচিত তা পিতর বুঝলেন না, কারণ তাঁরা খুব ভয় পেয়েছিলেন। এই সময় একটা মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল, আর সেই মেঘ থেকে এই কথা শোনা গেল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমরা এঁর কথা শোন।” শিষ্যেরা তখনই চারদিকে তাকালেন কিন্তু যীশু ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলেন না। পরে পাহাড় থেকে নেমে আসবার সময় যীশু তাঁদের আদেশ দিলেন, “তোমরা যা দেখলে তা মনুষ্যপুত্র মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে না ওঠা পর্যন্ত কাউকে বোলো না।” শিষ্যেরা যীশুর আদেশ পালন করলেন, কিন্তু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠার অর্থ কি তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলেন। তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ধর্ম-শিক্ষকেরা কেন বলেন প্রথমে এলিয়ের আসা দরকার?” উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “এই কথা সত্যি যে, প্রথমে এলিয় এসে সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। তবে মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে কেমন করেই বা পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে যে, তাঁকে খুব কষ্টভোগ করতে হবে এবং লোকে তাঁকে অগ্রাহ্য করবে? কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এলিয়ের বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে যা লেখা আছে সেইভাবে তিনি এসেছিলেন, আর লোকেরা তাঁর উপর যা ইচ্ছা তা-ই করেছে।” যীশু ও সেই তিনজন শিষ্য অন্য শিষ্যদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন, তাঁদের চারপাশে অনেক লোক জড়ো হয়েছে এবং কয়েকজন ধর্ম-শিক্ষক তাঁদের সংগে তর্ক জুড়ে দিয়েছেন। লোকেরা যীশুকে দেখেই খুব আশ্চর্য হয়ে গেল এবং দৌড়ে গিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাল। যীশু ধর্ম-শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা ওদের সংগে কি বিষয়ে তর্ক করছেন?” ভিড়ের মধ্য থেকে একজন লোক উত্তর দিল, “গুরু, আমার ছেলেকে আপনার কাছে এনেছিলাম। তাকে বোবা আত্মায় পেয়েছে। সেই আত্মা যখনই তাকে ধরে তখনই আছাড় দিয়ে মাটিতে ফেলে। তার মুখ থেকে ফেনা বের হয় আর সে দাঁতে দাঁত ঘষে এবং শক্ত হয়ে যায়। আমি আপনার শিষ্যদের সেই আত্মাকে ছাড়িয়ে দিতে বললাম, কিন্তু তাঁরা পারলেন না।” তখন যীশু বললেন, “অবিশ্বাসী লোকেরা! আর কতদিন আমি তোমাদের সংগে থাকব? কতদিন তোমাদের সহ্য করব? ছেলেটিকে আমার কাছে আন।” লোকেরা তখন ছেলেটিকে যীশুর কাছে আনল। যীশুকে দেখেই সেই মন্দ আত্মা ছেলেটিকে খুব জোরে মুচড়ে ধরল। ছেলেটি মুখ থেকে ফেনা বের করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল। যীশু তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কতদিন হল তার এই রকম হয়েছে?” লোকটি বলল, “ছেলেবেলা থেকে। এই আত্মা তাকে মেরে ফেলবার জন্য প্রায়ই আগুনে আর জলে ফেলে দিয়েছে। তবে আপনি যদি আমাদের কোন উপকার করতে পারেন তবে দয়া করে তা করুন।” যীশু তাকে বললেন, “‘যদি করতে পারেন,’ এই কথার মানে কি? যে বিশ্বাস করে তার জন্য সব কিছুই সম্ভব।” তখনই ছেলেটির বাবা চিৎকার করে বলল, “আমি বিশ্বাস করছি; আমার মধ্যে এখনও যে অবিশ্বাস আছে তা দূর করে দিন।” অনেক লোক দৌড়ে আসছে দেখে যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিয়ে বললেন, “ওহে বয়রা ও বোবা আত্মা, আমি তোমাকে আদেশ দিচ্ছি, এর মধ্য থেকে বের হও; আর কখনও এর মধ্যে ঢুকো না।” তখন সেই মন্দ আত্মা চিৎকার করে ছেলেটাকে জোরে মুচড়ে ধরল এবং তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল। তাতে ছেলেটি মরার মত পড়ে রইল দেখে অনেকে বলল, “ও মারা গেছে।” যীশু কিন্তু তার হাত ধরে তুললে পর সে উঠে দাঁড়াল। এর পরে যীশু ঘরের ভিতরে গেলেন। তখন শিষ্যেরা গোপনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমরা তাকে ছাড়াতে পারলাম না কেন?” যীশু বললেন, “প্রার্থনা ছাড়া আর কোন মতেই এই রকম মন্দ আত্মা ছাড়ানো যায় না।” পরে তাঁরা সেই জায়গা ছেড়ে গালীল প্রদেশের মধ্য দিয়ে চলে গেলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেন কেউ জানতে না পারে যে, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, কারণ তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁদের বলছিলেন, “মনুষ্যপুত্রকে লোকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। তারা তাঁকে মেরে ফেলবে এবং তিন দিনের দিন আবার তিনি জীবিত হয়ে উঠবেন।” শিষ্যেরা কিন্তু যীশুর কথার মানে বুঝতে পারলেন না এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেও তাঁদের ভয় হল। তারপর যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা কফরনাহূমে গেলেন। যীশু ঘরের মধ্যে গিয়ে শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা পথে কি নিয়ে তর্ক করছিলে?” শিষ্যেরা চুপ করে রইলেন, কারণ কে সবচেয়ে বড় তা নিয়ে পথে তাঁরা তর্কাতর্কি করছিলেন। যীশু বসলেন এবং সেই বারোজন শিষ্যকে নিজের কাছে ডেকে বললেন, “কেউ যদি প্রধান হতে চায় তবে তাকে সবার শেষে থাকতে হবে এবং সকলের সেবাকারী হতে হবে।” পরে তিনি একটা শিশুকে নিয়ে শিষ্যদের সামনে দাঁড় করালেন। তাকে কোলে নিয়ে তিনি বললেন, “যে কেউ আমার নামে এর মত কোন শিশুকে গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে, আর যে আমাকে গ্রহণ করে সে কেবল আমাকে গ্রহণ করে না, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকেই গ্রহণ করে।” যোহন যীশুকে বললেন, “গুরু, আমরা একজন লোককে আপনার নামে মন্দ আত্মা ছাড়াতে দেখে তাকে বারণ করলাম, কারণ সে আমাদের দলের লোক নয়।” যীশু বললেন, “তাকে বারণ কোরো না। আমার নামে আশ্চর্য কাজ করবার পরে কেউ ফিরে আমার নিন্দা করতে পারে না, কারণ যে আমাদের বিপক্ষে থাকে না সে তো আমাদের পক্ষেই আছে। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা মশীহের লোক বলে যে কেউ তোমাদের এক বাটি জল খেতে দেয় সে কোনমতে তার পুরস্কার হারাবে না। “আমার উপর বিশ্বাসী এই ছোটদের মধ্যে কাউকে যদি কেউ পাপের পথে নিয়ে যায় তবে তার গলায় একটা বড় পাথর বেঁধে তাকে সাগরে ফেলে দেওয়া বরং তার পক্ষে ভাল। তোমার চোখ যদি তোমাকে পাপের পথে টানে তবে তা তুলে ফেল। দুই চোখ নিয়ে নরকে পড়বার চেয়ে বরং কানা হয়ে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা তোমার পক্ষে ভাল। সেই নরকে মরা মানুষের মাংস খাওয়া পোকারা কখনও মরে না, আর সেখানকার আগুন কখনও নেভে না। “লবণ দেওয়ার মত প্রত্যেকের উপর আগুন দেওয়া হবে। “লবণ ভাল জিনিস, কিন্তু যদি লবণের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় তবে তা কেমন করে আবার নোন্‌তা করা যাবে? তোমাদের অন্তরের মধ্যে লবণ রাখ এবং তোমরা একে অন্যের সংগে শান্তিতে থাক।” পরে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে যিহূদিয়া প্রদেশে এবং যর্দন নদীর অন্য পারে গেলেন। অনেক লোক আবার তাঁর কাছে এসে জড়ো হল। তখন তিনি তাঁর নিয়ম মতই লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। এই সময় কয়েকজন ফরীশী এসে যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য বললেন, “মোশির আইন-কানুন মতে স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া কি কারও পক্ষে উচিত?” যীশু তাঁদের বললেন, “মোশি আপনাদের কি আদেশ দিয়েছেন?” তাঁরা বললেন, “তিনি ত্যাগপত্র লিখে স্ত্রীকে ছেড়ে দেবার অনুমতি দিয়েছেন।” যীশু বললেন, “আপনাদের মন কঠিন বলেই মোশি এই আদেশ লিখেছিলেন। কিন্তু এ-ও লেখা আছে যে, সৃষ্টির আরম্ভে ‘ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে সৃষ্টি করেছিলেন। এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে, আর তারা দু’জন একদেহ হবে।’ সেইজন্য তারা আর দুই নয়, কিন্তু একদেহ। তাহলে ঈশ্বর যা একসংগে যোগ করেছেন মানুষ তা আলাদা না করুক।” এর পরে তাঁরা ঘরে ঢুকলেন আর শিষ্যেরা যীশুকে আবার সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি তাঁদের বললেন, “যে কেউ নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য স্ত্রীলোককে বিয়ে করে সে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচার করে। আর স্ত্রী যদি স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য লোককে বিয়ে করে তবে সেও ব্যভিচার করে।” পরে লোকেরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যীশুর কাছে নিয়ে আসল যেন তিনি তাদের উপর হাত রাখেন। কিন্তু শিষ্যেরা সেই লোকদের বকুনি দিতে লাগলেন। যীশু তা দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে শিষ্যদের বললেন, “ছেলেমেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিয়ো না; কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মত লোকদেরই। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ছোট ছেলেমেয়ের মত করে ঈশ্বরের শাসন মেনে না নিলে কেউ কোনমতেই ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকতে পারবে না।” তারপর যীশু সেই ছেলেমেয়েদের কোলে নিলেন এবং তাদের মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করলেন। যীশু আবার যখন পথে বের হলেন তখন একজন লোক দৌড়ে তাঁর কাছে আসল এবং তাঁর সামনে হাঁটু পেতে বলল, “হে গুরু, আপনি একজন ভাল লোক। আমাকে বলুন, অনন্ত জীবন লাভ করবার জন্য আমি কি করব?” যীশু তাকে বললেন, “আমাকে ভাল বলছ কেন? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউই ভাল নয়। তুমি তো আদেশগুলো জান-‘খুন কোরো না, ব্যভিচার কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, ঠকিয়ো না, মা-বাবাকে সম্মান কোরো।’ ” লোকটি যীশুকে বলল, “গুরু, ছোটবেলা থেকে আমি এই সব পালন করে আসছি।” এতে যীশু তার দিকে চেয়ে দেখলেন এবং ভালবাসায় পূর্ণ হয়ে তাকে বললেন, “একটা জিনিস তোমার বাকী আছে। যাও, তোমার যা কিছু আছে তা বিক্রি করে গরীবদের দান কর। তাতে তুমি স্বর্গে ধন পাবে। তার পরে এসে আমার শিষ্য হও।” এই কথা শুনে লোকটির মুখ ম্লান হয়ে গেল। তার অনেক ধন-সম্পত্তি ছিল বলে সে দুঃখিত হয়ে চলে গেল। তখন যীশু চারদিকে তাকিয়ে তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ধনীদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা কত কঠিন!” শিষ্যেরা যীশুর কথা শুনে আশ্চর্য হলেন। যীশু আবার বললেন, “সন্তানেরা, যারা ধন-সম্পদের উপর নির্ভর করে তাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা কত কঠিন। ধনীর পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকবার চেয়ে বরং সূচের ফুটা দিয়ে উটের যাওয়া সহজ।” এতে শিষ্যেরা আরও আশ্চর্য হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “তাহলে কে পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারে?” যীশু তাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “মানুষের পক্ষে এটা অসম্ভব বটে, কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব নয়; তাঁর পক্ষে সবই সম্ভব।” পিতর তাঁকে বললেন, “দেখুন, আমরা তো সব কিছু ছেড়ে দিয়ে আপনার শিষ্য হয়েছি।” উত্তরে যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যে কেউ আমার জন্য ও ঈশ্বরের দেওয়া সুখবরের জন্য বাড়ী-ঘর, ভাই-বোন, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে ও জায়গা-জমি ছেড়ে দিয়েছে, সে এই যুগেই তার একশো গুণ বেশী বাড়ী-ঘর, ভাই-বোন, মা, ছেলে-মেয়ে ও জায়গা-জমি পাবে এবং সংগে সংগে অত্যাচারও ভোগ করবে; আর আগামী যুগে সে অনন্ত জীবন লাভ করবে। কিন্তু যারা প্রথম সারিতে আছে তাদের মধ্যে অনেকে শেষে পড়বে, আর যারা শেষ সারিতে আছে তাদের মধ্যে অনেকে প্রথম হবে।” এর পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা যিরূশালেমের পথে চললেন। যীশু তাঁদের আগে আগে হাঁটছিলেন; শিষ্যেরা অবাক হয়ে তাঁর সংগে যাচ্ছিলেন এবং যে লোকেরা পিছনে আসছিল তারা ভয়ে ভয়ে হাঁটছিল। যীশু আবার তাঁর বারোজন শিষ্যকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে নিজের উপর কি হতে যাচ্ছে তা তাঁদের বলতে লাগলেন। তিনি বললেন, “দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাচ্ছি। সেখানে মনুষ্যপুত্রকে প্রধান পুরোহিতদের ও ধর্ম-শিক্ষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। তাঁরা তাঁর বিচার করে তাঁকে মৃত্যুর উপযুক্ত বলে স্থির করবেন এবং অযিহূদীদের হাতে দেবেন। অযিহূদীরা তাঁকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করবে, তাঁর গায়ে থুথু দেবে, তাঁকে ভীষণভাবে চাবুক মারবে এবং মেরে ফেলবে। তিন দিনের দিন আবার তিনি জীবিত হয়ে উঠবেন।” পরে সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও যোহন যীশুর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আমাদের ইচ্ছা এই যে, আমরা যা চাইব আমাদের জন্য আপনি তা-ই করবেন।” যীশু বললেন, “তোমাদের জন্য আমি কি করব? তোমরা কি চাও?” তাঁরা বললেন, “আপনি যখন মহিমার সংগে রাজত্ব করবেন তখন যেন আমাদের একজন আপনার ডানপাশে ও অন্যজন বাঁপাশে বসতে পারে।” যীশু বললেন, “তোমরা কি চাইছ তা জান না। যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খেতে যাচ্ছি তাতে কি তোমরা খেতে পার? কিম্বা যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করতে যাচ্ছি তা কি তোমরা গ্রহণ করতে পার?” তাঁরা বললেন, “হ্যাঁ, পারি।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “যে দুঃখের পেয়ালায় আমি খাব তোমরা অবশ্য তাতে খাবে, আর যে বাপ্তিস্ম আমি গ্রহণ করব তা তোমরাও গ্রহণ করবে, কিন্তু আমার ডান বা বাঁপাশে বসতে দেবার অধিকার আমার নেই। ঐ জায়গাগুলো যাদের জন্য ঠিক করা আছে তারাই তা পাবে।” বাকী দশজন শিষ্য এই সব কথা শুনে যাকোব ও যোহনের উপর বিরক্ত হলেন। তখন যীশু সবাইকে একসংগে ডেকে বললেন, “তোমরা জান যে, অযিহূদীদের শাসনকর্তারা অযিহূদীদের প্রভু হয় এবং তাদের নেতারা তাদের উপর হুকুম চালায়। কিন্তু তোমাদের মধ্যে তা হওয়া উচিত নয়, বরং তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায় তাকে তোমাদের সেবাকারী হতে হবে, আর যে প্রথম হতে চায় তাকে সকলের দাস হতে হবে। মনে রেখো, মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।” পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা যিরীহো শহরে গেলেন। যখন তিনি শিষ্যদের ও অনেক লোকের সংগে শহর থেকে চলে যাচ্ছিলেন তখন তীময়ের ছেলে বরতীময় নামে একজন অন্ধ ভিখারী পথের পাশে বসে ছিল। “উনি নাসরত গ্রামের যীশু,” এই কথা শুনে সে চিৎকার করে বলতে লাগল, “দায়ূদের বংশধর যীশু, আমাকে দয়া করুন।” এতে অনেকে তাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও চিৎকার করে বলল, “দায়ূদের বংশধর, আমাকে দয়া করুন।” যীশু থেমে বললেন, “ওকে ডাক।” লোকেরা অন্ধ লোকটিকে ডেকে বলল, “ভয় নেই, ওঠো। উনি তোমাকে ডাকছেন।” তখন সে তার গায়ের চাদরটা ফেলে লাফ দিয়ে উঠল এবং যীশুর কাছে গেল। যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি তোমার জন্য কি করব? তুমি কি চাও?” অন্ধ লোকটি বলল, “গুরু, আমি যেন দেখতে পাই।” যীশু বললেন, “যাও, তুমি বিশ্বাস করেছ বলে ভাল হয়েছ।” তাতে লোকটি তখনই দেখতে পেল এবং পথ দিয়ে যীশুর পিছনে পিছনে চলতে লাগল। তাঁরা যিরূশালেমের কাছাকাছি পৌঁছে জৈতুন পাহাড়ের গায়ে বৈৎফগী ও বৈথনিয়া গ্রামের কাছে আসলেন। সেখানে পৌঁছে যীশু তাঁর দু’জন শিষ্যকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা ঐ সামনের গ্রামে যাও। গ্রামে ঢুকবার সময় দেখতে পাবে একটা গাধার বাচ্চা সেখানে বাঁধা আছে। তার উপরে কেউ কখনও চড়ে নি। তোমরা ওটা খুলে এখানে নিয়ে এস। যদি কেউ তোমাদের জিজ্ঞাসা করে, ‘কেন তোমরা এটা করছ?’ তবে বোলো, ‘প্রভুর দরকার আছে; তিনি ওটাকে তাড়াতাড়ি করে ফিরিয়ে দেবেন।’ ” তখন তাঁরা গিয়ে দেখলেন গাধার বাচ্চাটা রাস্তার উপর ঘরের দরজার কাছে বাঁধা আছে। তাঁরা যখন গাধাটার বাঁধন খুলছিলেন, তখন যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারা বলল, “তোমরা কি করছ? গাধার বাচ্চাটা খুলছ কেন?” যীশু যা বলতে বলেছিলেন শিষ্যেরা লোকদের তা-ই বললেন। তখন লোকেরা গাধাটা নিয়ে যেত দিল। তাঁরা সেই গাধার বাচ্চাটা যীশুর কাছে এনে তার উপর তাঁদের গায়ের চাদর পেতে দিলেন। যীশু তার উপরে বসলেন। অনেক লোক তাদের গায়ের চাদর রাস্তার উপরে বিছিয়ে দিল, আর অন্যেরা মাঠের গাছপালা থেকে পাতা সুদ্ধ ডাল কেটে এনে পথে ছড়িয়ে দিল। যারা যীশুর সামনে ও পিছনে যাচ্ছিল তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, “হোশান্না! প্রভুর নামে যিনি আসছেন তাঁর গৌরব হোক। আমাদের পিতা দায়ূদের যে রাজ্য আসছে তার গৌরব হোক। স্বর্গেও হোশান্না!” যীশু যিরূশালেমে গিয়ে উপাসনা-ঘরে ঢুকলেন এবং চারদিকের সব কিছুই লক্ষ্য করলেন, কিন্তু বেলা গিয়েছিল বলে তাঁর বারোজন শিষ্যকে নিয়ে তিনি বৈথনিয়াতে চলে গেলেন। পরের দিন যখন তাঁরা বৈথনিয়া ছেড়ে যাচ্ছিলেন তখন যীশুর খিদে পেল। তখন ডুমুর ফল পাকবার সময় ছিল না, কিন্তু তবুও তিনি দূর থেকে পাতায় ঢাকা একটা ডুমুর গাছ দেখে তাতে কোন ফল আছে কিনা তা দেখতে গেলেন। কাছে গিয়ে তিনি তাতে পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না। সেইজন্য তিনি সেই গাছটাকে বললেন, “আর কখনও কেউ যেন তোমার ফল না খায়।” শিষ্যেরা যীশুর এই কথা শুনতে পেলেন। যিরূশালেমে পৌঁছে যীশু উপাসনা-ঘরে ঢুকলেন এবং সেখানে যারা বেচা-কেনা করছিল তাদের তাড়িয়ে দিলেন। তিনি টাকা বদল করে দেবার লোকদের টেবিল ও যারা কবুতর বিক্রি করছিল তাদের বসবার জায়গা উল্টে ফেললেন। উপাসনা-ঘরের উঠানের মধ্য দিয়ে তিনি কোন বেচা-কেনার জিনিস নিয়ে যেতে দিলেন না। পরে শিক্ষা দেবার সময় তিনি সেই লোকদের বললেন, “শাস্ত্রে কি এই কথা লেখা নেই যে, ‘আমার ঘরকে সমস্ত জাতির প্রার্থনার ঘর বলা হবে’? কিন্তু তোমরা এটাকে ডাকাতের আড্ডাখানা করে তুলেছ!” প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা এই কথা শুনে যীশুকে মেরে ফেলবার উপায় খুঁজতে লাগলেন। তাঁরা যীশুকে ভয় করতেন, কারণ লোকেরা যীশুর শিক্ষায় আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যা হলে পর শিষ্যদের নিয়ে তিনি শহরের বাইরে চলে গেলেন। সকালবেলা সেই পথ দিয়ে আসবার সময় শিষ্যেরা দেখলেন সেই ডুমুর গাছটা শিকড় সুদ্ধ শুকিয়ে গেছে। যীশুর কথা মনে করে পিতর যীশুকে বললেন, “গুরু, দেখুন, যে ডুমুর গাছটাকে আপনি অভিশাপ দিয়েছিলেন সেটা শুকিয়ে গেছে।” তখন যীশু বললেন, “ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস রাখ। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি কেউ অন্তরে কোন সন্দেহ না রেখে এই পাহাড়টাকে বলে, ‘উঠে সাগরে গিয়ে পড়,’ আর বিশ্বাস করে যে, সে যা বলল তা-ই হবে, তবে তার জন্য তা-ই করা হবে। সেইজন্য আমি তোমাদের বলছি, প্রার্থনার মধ্যে তোমরা যা কিছু চাও, বিশ্বাস কোরো তোমরা তা পেয়েছ, আর তোমাদের জন্য তা-ই হবে। উত্তরে যীশু বললেন, “আমি আপনাদের একটা কথা জিজ্ঞাসা করব। আপনারা যদি আমাকে উত্তর দিতে পারেন তবে আমিও আপনাদের বলব আমি কোন্‌ অধিকারে এই সব করছি। বলুন দেখি, বাপ্তিস্ম দেবার অধিকার যোহন ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছিলেন, না মানুষের কাছ থেকে পেয়েছিলেন?” তখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে এই আলোচনা করলেন, “আমরা যদি বলি, ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে,’ তাহলে সে বলবে, ‘তবে আপনারা তাঁকে বিশ্বাস করেন নি কেন?’ আবার যদি বলি, ‘মানুষের কাছ থেকে,’ তবে?” তাঁরা লোকদের ভয় করতেন, কারণ সবাই যোহনকে সত্যিই একজন নবী বলে মনে করত। সেইজন্য তাঁরা বললেন, “আমরা জানি না।” তখন যীশু বললেন, “তাহলে আমিও আপনাদের বলব না আমি কোন্‌ অধিকারে এই সব করছি।” এর পর যীশু গল্পের মধ্য দিয়ে তাঁদের কাছে শিক্ষা দিতে লাগলেন। তিনি বললেন, “একজন লোক একটা আংগুর ক্ষেত করে তার চারদিকে বেড়া দিলেন। পরে তিনি আংগুর-রস করবার জন্য একটা গর্ত খুঁড়লেন এবং একটা উঁচু পাহারা-ঘর তৈরী করলেন। পরে তিনি কয়েকজন চাষীর কাছে ক্ষেতটা ইজারা দিয়ে বিদেশে চলে গেলেন। ফল পাকবার সময়ে তিনি সেই ফলের ভাগ নিয়ে আসবার জন্য একজন দাসকে সেই চাষীদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু সেই চাষীরা সেই দাসকে ধরে মারল এবং খালি হাতে পাঠিয়ে দিল। তখন মালিক আর একজন দাসকে তাদের কাছে পাঠালেন। চাষীরা তার মাথায় আঘাত করল এবং তার সংগে খুব খারাপ ব্যবহার করল। তিনি তবুও আর একজনকে পাঠালেন। তাকে চাষীরা মেরে ফেলল। পরে তিনি আরও অনেকজনকে পাঠালেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজনকে তারা মারধর করল আর অন্যদের মেরেই ফেলল। “সেখানে পাঠাতে মালিকের মাত্র আর একজন বাকী ছিল। সে ছিল তাঁর প্রিয় পুত্র। তিনি সব শেষে পুত্রটিকে পাঠিয়ে দিলেন; ভাবলেন, ‘তারা অন্ততঃ আমার ছেলেকে সম্মান করবে।’ কিন্তু সেই চাষীরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, ‘এ-ই তো পরে সম্পত্তির মালিক হবে। চল, আমরা ওকে মেরে ফেলি, তাহলে আমরাই সম্পত্তির মালিক হব।’ তারা ছেলেটিকে ধরে মেরে ফেলল এবং আংগুর ক্ষেতের বাইরে ফেলে দিল। “তাহলে বলুন দেখি, আংগুর ক্ষেতের মালিক কি করবেন? তিনি এসে সেই চাষীদের মেরে ফেলবেন এবং আংগুর ক্ষেতটা অন্যদের হাতে দেবেন। আপনারা কি পবিত্র শাস্ত্রে পড়েন নি, ‘রাজমিস্ত্রিরা যে পাথরটা বাতিল করে দিয়েছিল সেটাই সবচেয়ে দরকারী পাথর হয়ে উঠল; প্রভুই এটা করলেন, আর তা আমাদের চোখে খুব আশ্চর্য লাগে?” তখন সেই ধর্ম-নেতারা যীশুকে ধরতে চাইলেন, কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন যে, গল্পটা যীশু তাঁদের বিরুদ্ধে বলেছেন। কিন্তু তাঁরা লোকদের ভয়ে যীশুকে ছেড়ে চলে গেলেন। পরে সেই ধর্ম-নেতারা যীশুকে তাঁর কথার ফাঁদে ধরবার জন্য কয়েকজন ফরীশী ও হেরোদীয়কে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা যীশুর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আমরা জানি আপনি একজন সৎ লোক। লোকে কি মনে করবে না করবে, তাতে আপনার কিছু যায় আসে না, কারণ আপনি কারও মুখ চেয়ে কিছু করেন না। আপনি সত্যভাবে ঈশ্বরের পথের বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এখন আপনি বলুন, মোশির আইন-কানুন অনুসারে রোম-সম্রাটকে কি কর্‌ দেওয়া উচিত? আমরা তাঁকে কর্‌ দেব কি দেব না?” যীশু তাঁদের ভণ্ডামি বুঝতে পেরে বললেন, “আপনারা কেন আমাকে পরীক্ষা করছেন? আমাকে একটা দীনার এনে দেখান।” তাঁরা একটা দীনার আনলে পর যীশু তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এর উপরে এই ছবি ও নাম কার?” তাঁরা বললেন, “রোম-সম্রাটের।” যীশু তাঁদের বললেন, “যা সম্রাটের তা সম্রাটকে দিন, আর যা ঈশ্বরের তা ঈশ্বরকে দিন।” যীশুর এই কথায় তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। কয়েকজন সদ্দূকী যীশুর কাছে আসলেন। সদ্দূকীদের মতে মৃতদের জীবিত হয়ে ওঠা বলে কিছু নেই। এইজন্য তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “গুরু, মোশি আমাদের জন্য এই কথা লিখে গেছেন, ‘যদি কোন লোকের ভাই সন্তানহীন অবস্থায় স্ত্রী রেখে মারা যায় তবে সেই লোক তার ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করবে এবং ভাইয়ের হয়ে তার বংশ রক্ষা করবে।’ বেশ ভাল, তারা সাত ভাই ছিল। প্রথমজন বিয়ে করে সন্তানহীন অবস্থায় মারা গেল। তখন দ্বিতীয়জন ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করল, কিন্তু সেও সন্তানহীন অবস্থায় মারা গেল। তৃতীয়জনের অবস্থাও তা-ই হল। এইভাবে সাতজনের কারও ছেলেমেয়ে হল না। শেষে সেই স্ত্রীলোকটিও মারা গেল। তাহলে মৃতেরা যখন জীবিত হয়ে উঠবে তখন সে কার স্ত্রী হবে? কারণ সাতজনের প্রত্যেকেই তো তাকে বিয়ে করেছিল।” উত্তরে যীশু বললেন, “আপনারা ভুল করছেন, কারণ আপনারা শাস্ত্রও জানেন না এবং ঈশ্বরের শক্তির বিষয়েও জানেন না। মৃতেরা যখন জীবিত হয়ে উঠবে তখন তারা বিয়েও করবে না এবং তাদের বিয়ে দেওয়াও হবে না; তারা তখন স্বর্গদূতদের মত হবে। মৃতদের জীবিত হয়ে উঠবার বিষয়ে মোশির বইয়ে লেখা জ্বলন্ত ঝোপের কথা কি আপনারা পড়েন নি যে, ঈশ্বর মোশিকে বললেন, ‘আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর’? ঈশ্বর তো মৃতদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিতদেরই ঈশ্বর। আপনারা খুব ভুল করছেন।” একজন ধর্ম-শিক্ষক সেখানে এসে তাঁদের তর্কাতর্কি শুনলেন। যীশু যে তাঁদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন তা লক্ষ্য করে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মোশির দেওয়া আদেশের মধ্যে সবচেয়ে দরকারী আদেশ কোন্‌টা?” উত্তরে যীশু বললেন, “সবচেয়ে দরকারী আদেশ হল, ‘ইস্রায়েলীয়েরা, শোন, আমাদের প্রভু ঈশ্বর এক। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে।’ তার পরের দরকারী আদেশ হল এই, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে।’ এই দু’টা আদেশের চেয়ে বড় আদেশ আর কিছুই নেই।” তখন সেই ধর্ম-শিক্ষক বললেন, “গুরু, বেশ ভাল কথা। আপনি সত্যি কথাই বলেছেন যে, ঈশ্বর এক এবং তিনি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই। আর সমস্ত অন্তর, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালবাসা এবং প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসা পশু ও অন্য সব উৎসর্গের চেয়ে অনেক বেশী দরকারী।” যীশু যখন দেখলেন সেই ধর্ম-শিক্ষকটি বেশ বুদ্ধিমানের মত উত্তর দিয়েছেন তখন তিনি তাঁকে বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্য থেকে আপনি বেশী দূরে নন।” সেই সময় থেকে যীশুকে আর কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে কারও সাহস হল না। দায়ূদ নিজেই তো তাঁকে প্রভু বলেছেন, তবে কেমন করে মশীহ তাঁর বংশধর হতে পারেন?” অনেক লোক খুশী মনে যীশুর কথা শুনছিল। শিক্ষা দিতে দিতে যীশু বললেন, “ধর্ম-শিক্ষকদের সম্বন্ধে সাবধান হও। তাঁরা লম্বা লম্বা জামা পরে বেড়াতে এবং হাটে-বাজারে সম্মান পেতে চান। তাঁরা সমাজ-ঘরে প্রধান প্রধান আসনে ও ভোজের সময়ে সম্মানের জায়গায় বসতে চান। এক দিকে তাঁরা লোককে দেখাবার জন্য লম্বা লম্বা প্রার্থনা করেন, অন্য দিকে বিধবাদের সম্পত্তি দখল করেন। এই লোকদের অনেক বেশী শাস্তি হবে।” এর পর যীশু উপাসনা-ঘরের দান-বাক্সের কাছে বসে লোকদের টাকা-পয়সা দান করা লক্ষ্য করছিলেন। অনেক ধনী লোক অনেক টাকা-পয়সা দিল। পরে একজন গরীব বিধবা এসে মাত্র দু’টা পয়সা রাখল। তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের ডেকে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই গরীব বিধবা অন্য সবার চেয়ে অনেক বেশী এই দান-বাক্সে রাখল। সেই লোকেরা তাদের প্রচুর ধন থেকে দান করেছে, কিন্তু এই স্ত্রীলোকটির অভাব থাকলেও বেঁচে থাকবার জন্য তার যা ছিল সমস্তই দিয়ে দিল।” যীশু উপাসনা-ঘর থেকে যখন বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁর একজন শিষ্য তাঁকে বললেন, “গুরু, দেখুন, কত বড় বড় পাথর, আর কি সুন্দর সুন্দর দালান!” যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি তো এই সব বড় বড় দালান দেখছ, কিন্তু এর একটা পাথরও আর একটা পাথরের উপরে থাকবে না; সমস্তই ভেংগে ফেলা হবে।” পরে যীশু যখন উপাসনা-ঘরের উল্টাদিকে জৈতুন পাহাড়ের উপরে বসে ছিলেন তখন পিতর, যাকোব, যোহন ও আন্দ্রিয় তাঁকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি আমাদের বলুন, কখন এই সব হবে? কোন্‌ চিহ্ন দেখে আমরা বুঝতে পারব এই সব পূর্ণ হবার সময় এসেছে?” যীশু তাঁদের বললেন, “দেখো, কেউ যেন তোমাদের না ঠকায়। অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই সেই’ এবং অনেককে ঠকাবে। যখন তোমরা যুদ্ধের আওয়াজ ও যুদ্ধের খবরাখবর শুনবে তখন ভয় পেয়ো না। এই সব হবেই, কিন্তু তখনও শেষ নয়। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে, এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অনেক জায়গায় ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষ হবে। কিন্তু এই সব কেবল যন্ত্রণার আরম্ভ। “তোমরা সতর্ক থেকো। লোকে তোমাদের বিচার-সভার লোকদের হাতে ধরিয়ে দেবে এবং সমাজ-ঘরে বেত মারবে। আমার জন্য দেশের শাসনকর্তা ও রাজাদের সামনে তোমাদের দাঁড়াতে হবে। তাঁদের সামনে আমার বিষয়ে তোমাদের সাক্ষ্য দিতে হবে। সমস্ত জাতির কাছে প্রথমে ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করতে হবে। যখন তোমাদের ধরে বিচারের জন্য নিয়ে যাবে তখন কি বলতে হবে তা আগে থেকে চিন্তা কোরো না। সেই সময়ে যে কথা তোমাদের বলে দেওয়া হবে তোমরা তা-ই বলবে, কারণ তোমরাই যে বলবে তা নয় বরং পবিত্র আত্মাই কথা বলবেন। “ভাই ভাইকে, বাবা ছেলেকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দেবে। ছেলেমেয়েরা মা-বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের খুন করাবে। আমার জন্য সবাই তোমাদের ঘৃণা করবে, কিন্তু যে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সে উদ্ধার পাবে। “সর্বনাশা ঘৃণার জিনিস যেখানে থাকা উচিত নয়, তোমরা যখন তা সেখানে থাকতে দেখবে-যে পড়ে সে বুঝুক-তখন যারা যিহূদিয়াতে থাকবে তারা পাহাড়ী এলাকায় পালিয়ে যাক। যে ছাদের উপরে থাকবে সে কিছু নেবার জন্য নীচে নেমে ঘরে না ঢুকুক। যে ক্ষেতের মধ্যে থাকবে সে গায়ের চাদর নেওয়ার জন্য না ফিরুক। তখন যারা গর্ভবতী আর যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় তাদের অবস্থা কি ভীষণই না হবে! প্রার্থনা কর যেন এই সমস্ত শীতকালে না হয়, কারণ সেই সময় এমন কষ্ট হবে যা জগতের সৃষ্টি থেকে এই পর্যন্ত হয় নি এবং তার পরেও আর হবে না। প্রভু যদি সেই দিনগুলো কমিয়ে না দিতেন তবে কেউই বাঁচত না। কিন্তু তাঁর বাছাই করা লোকদের জন্য সেই দিনগুলো ঈশ্বর কমিয়ে দিয়েছেন। সেই সময় যদি কেউ তোমাদের বলে, ‘দেখ, মশীহ এখানে,’ বা ‘দেখ, মশীহ ওখানে,’ তোমরা বিশ্বাস কোরো না; কারণ ভণ্ড মশীহেরা ও ভণ্ড নবীরা আসবে এবং অনেক আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করবে, যেন ঈশ্বরের বাছাই করা লোকদের সম্ভব হলে ঠকাতে পারে। তোমরা কিন্তু সতর্ক থেকো। আমি তোমাদের আগেই সব কিছু বলে রাখলাম। “সেই সময়ের কষ্টের ঠিক পরেই সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আকাশ থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ- সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না। সেই সময়ে লোকেরা মনুষ্যপুত্রকে মহাশক্তি ও মহিমার সংগে মেঘের মধ্যে পৃথিবীতে আসতে দেখবে। তিনি তাঁর দূতদের পাঠিয়ে পৃথিবীর এক সীমা থেকে অন্য সীমা পর্যন্ত চারদিক থেকে ঈশ্বরের সব বাছাই করা লোক জড়ো করবেন। “ডুমুর গাছ দেখে শিক্ষা লাভ কর। যখন তার ডালপালা নরম হয়ে তাতে পাতা বের হয় তখন তোমরা জানতে পার যে, গরমকাল এসেছে। সেইভাবে যখন তোমরা দেখবে এই সব ঘটছে তখন বুঝতে পারবে যে, মনুষ্যপুত্র কাছে এসে গেছেন, এমন কি, দরজায় উপস্থিত। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যখন এই সব হবে তখনও এই কালের কিছু লোক বেঁচে থাকবে। আকাশ ও পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার কথা চিরদিন থাকবে। “সেই দিন ও সেই সময়ের কথা কেউই জানে না-স্বর্গের দূতেরাও না, পুত্রও না, কেবল পিতাই জানেন। তোমরা সাবধান হও, সতর্ক থাক ও প্রার্থনা কর, কারণ সেই দিন কখন আসবে তা তোমরা জান না। সেই দিনটা আসবে এমন একজন লোকের মত করে যিনি বিদেশে যাচ্ছেন। বাড়ী ছেড়ে যাবার আগে তিনি দাসদের হাতে সব দায়িত্ব দিলেন। তিনি প্রত্যেক দাসকে তার কাজ দিলেন এবং দারোয়ানকে জেগে থাকতে বললেন। “তোমরাও এইভাবে জেগে থাক, কারণ বাড়ীর কর্তা সন্ধ্যায়, কি দুপুর রাতে, কি ভোর রাতে, কি সকালে আসবেন তা তোমরা জান না। হঠাৎ তিনি এসে যেন না দেখেন তোমরা ঘুমিয়ে রয়েছ। তোমাদের যা বলছি তা সবাইকে বলি, জেগে থাক।” উদ্ধার-পর্ব ও খামিহীন রুটির পর্বের তখন মাত্র আর দু’দিন বাকী। প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা গোপনে যীশুকে ধরে মেরে ফেলবার উপায় খুঁজছিলেন। তাঁরা বললেন, “পর্বের সময়ে নয়; লোকদের মধ্যে গোলমাল হতে পারে।” যীশু তখন বৈথনিয়াতে চর্মরোগী শিমোনের বাড়ীতে ছিলেন। তিনি যখন খাচ্ছিলেন তখন একজন স্ত্রীলোক একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামী ও খাঁটি আতর আনল। পাত্রটা ভেংগে সে যীশুর মাথায় সেই আতর ঢেলে দিল। সেখানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বিরক্ত হয়ে একে অন্যকে বলতে লাগলেন, “এইভাবে আতরটা নষ্ট করা হল কেন? এটা বিক্রি করলে তো তিনশো দীনারেরও বেশী হত এবং তা গরীবদের দেওয়া যেত।” এই বলে তাঁরা স্ত্রীলোকটিকে বকাবকি করতে লাগলেন। তখন যীশু বললেন, “থাম, কেন তোমরা ওকে দুঃখ দিচ্ছ? ও তো আমার জন্য ভাল কাজই করেছে। গরীবেরা সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, আর যখন ইচ্ছা তখনই তোমরা তাদের সাহায্য করতে পার, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না। ও যা পেরেছে তা করেছে। আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করতে ও আগেই আমার দেহের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, জগতের যে কোন জায়গায় ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করা হবে, সেখানে এই স্ত্রীলোকটির কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য ওর এই কাজের কথাও বলা হবে।” এর পর যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ নামে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য প্রধান পুরোহিতদের কাছে গেল। পুরোহিতেরা যিহূদার কথা শুনে খুশী হলেন এবং তাকে টাকা দেবেন বলে কথা দিলেন। তখন যিহূদা যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল। খামিহীন রুটির পর্বের প্রথম দিনে উদ্ধার-পর্বের ভোজের জন্য ভেড়ার বাচ্চা কাটা হত। তাই শিষ্যেরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার জন্য উদ্ধার-পর্বের ভোজ কোথায় গিয়ে আমাদের প্রস্তুত করতে বলেন?” তখন যীশু তাঁর দু’জন শিষ্যকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা শহরে যাও। সেখানে এমন একজন পুরুষ লোকের দেখা পাবে, যে একটা কলসীতে করে জল নিয়ে যাচ্ছে। তোমরা তার পিছনে পিছনে যেয়ো। সে যে বাড়ীতে ঢুকবে সেই বাড়ীর কর্তাকে বোলো, ‘গুরু বলছেন, শিষ্যদের সংগে যেখানে আমি উদ্ধার-পর্বের ভোজ খেতে পারি আমার সেই অতিথি-ঘরটা কোথায়?’ এতে সে তোমাদের উপরতলার একটা সাজানো বড় ঘর দেখিয়ে দেবে। সব কিছু সেখানেই প্রস্তুত কোরো।” তখন শিষ্যেরা গিয়ে শহরে ঢুকলেন, আর যীশু যেমন বলেছিলেন সব কিছু তেমনই দেখতে পেলেন এবং উদ্ধার-পর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন। সন্ধ্যা হলে পর যীশু সেই বারোজনকে নিয়ে সেখানে গেলেন। তাঁরা যখন বসে খাচ্ছিলেন তখন যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে ধরিয়ে দেবে, আর সে আমার সংগে খাচ্ছে।” শিষ্যেরা দুঃখিত হলেন এবং একজনের পরে আর একজন বলতে লাগলেন, “সে কি আমি, প্রভু?” যীশু তাঁদের বললেন, “সে এই বারোজনের মধ্যে একজন, যে আমার সংগে পাত্রের মধ্যে রুটি ডুবাচ্ছে। মনুষ্যপুত্রের মৃত্যুর বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে যা লেখা আছে তিনি সেভাবেই মারা যাবেন বটে, কিন্তু হায় সেই লোক, যে তাঁকে ধরিয়ে দেয়! সেই লোকের জন্ম না হলেই বরং তার পক্ষে ভাল হত।” খাওয়া-দাওয়া চলছে, এমন সময় যীশু রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তা টুকরা টুকরা করে শিষ্যদের হাতে দিয়ে বললেন, “এই নাও, এটা আমার দেহ।” তারপর তিনি পেয়ালা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং শিষ্যদের দিলেন। তাঁরা সবাই সেই পেয়ালা থেকে খেলেন। তখন যীশু তাঁদের বললেন, “এ আমার রক্ত যা অনেকের জন্য দেওয়া হবে। মানুষের জন্য ঈশ্বরের নতুন ব্যবস্থা আমার এই রক্তের দ্বারাই বহাল করা হবে। তোমাদের সত্যি বলছি, যতদিন আমি ঈশ্বরের রাজ্যে আংগুর ফলের রস আবার নতুন ভাবে না খাই ততদিন পর্যন্ত আর আমি তা খাব না।” এর পরে তাঁরা একটা গান গেয়ে বের হয়ে জৈতুন পাহাড়ে গেলেন। যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমাকে নিয়ে তোমাদের সকলের মনে বাধা আসবে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমি পালককে মেরে ফেলব, তাতে মেষগুলো ছড়িয়ে পড়বে।’ তবে আমাকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হলে পর আমি তোমাদের আগেই গালীলে যাব।” তখন পিতর বললেন, “সবার মনে বাধা আসলেও আমার মনে বাধা আসবে না।” যীশু তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ ভোর রাতে মোরগ দু’বার ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না।” কিন্তু পিতর আরও জোর দিয়ে বললেন, “যদি আমাকে আপনার সংগে মরতেও হয় তবুও আমি কখনও বলব না যে, আমি আপনাকে চিনি না।” শিষ্যেরা সবাই সেই একই কথা বললেন। এর পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা গেৎশিমানী নামে একটা জায়গায় গেলেন। সেখানে যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি যতক্ষণ প্রার্থনা করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক।” এই বলে তিনি পিতর, যাকোব ও যোহনকে নিজের সংগে নিলেন এবং মনে খুব ব্যথা ও কষ্ট পেতে লাগলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “দুঃখে যেন আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানে জেগে থাক।” তার পরে তিনি কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করলেন যেন সম্ভব হলে এই দুঃখের সময়টা তাঁর কাছ থেকে দূর হয়। তিনি বললেন, “আব্বা, পিতা, তোমার কাছে তো সবই সম্ভব। এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে তুমি নিয়ে যাও। তবুও আমার ইচ্ছামত না হোক, কিন্তু তোমার ইচ্ছামত হোক।” এর পরে তিনি শিষ্যদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “শিমোন, তুমি ঘুমাচ্ছ? এক ঘণ্টাও কি জেগে থাকতে পার নি? জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় না পড়। অন্তরের ইচ্ছা আছে বটে, কিন্তু দেহ দুর্বল।” পরে যীশু আবার গিয়ে সেই একই প্রার্থনা করলেন। ফিরে এসে তিনি দেখলেন আবার তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে গিয়েছিল। শিষ্যেরা যীশুকে কি উত্তর দেবেন বুঝলেন না। তৃতীয় বার ফিরে এসে তিনি তাঁদের বললেন, “এখনও তোমরা ঘুমাচ্ছ আর বিশ্রাম করছ? যথেষ্ট হয়েছে। সময় এসে পড়েছে। দেখ, মনুষ্যপুত্রকে এখন পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওঠো, চল আমরা যাই। যে আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে সে এসে পড়েছে।” যীশু তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যিহূদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান পুরোহিতেরা, ধর্ম-শিক্ষকেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন। যীশুকে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সে ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল। সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব, সে-ই সেই লোক। তোমরা তাকেই ধোরো এবং পাহারা দিয়ে নিয়ে যেয়ো।” তাই যিহূদা সোজা যীশুর কাছে গিয়ে বলল, “গুরু!” এই কথা বলেই সে তাঁকে চুমু দিল। তখন সেই লোকেরা যীশুকে ধরল। যাঁরা যীশুর কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ছোরা বের করলেন এবং মহাপুরোহিতের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন। যীশু সেই লোকদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছেন? আমি তো প্রত্যেক দিনই আপনাদের মধ্যে থেকে উপাসনা-ঘরে শিক্ষা দিতাম, কিন্তু তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। অবশ্য শাস্ত্রের কথা পূর্ণ হতে হবে।” সেই সময় শিষ্যেরা সবাই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। একজন যুবক কেবল একটা চাদর পরে যীশুর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল। লোকেরা যখন তাকে ধরল তখন সে চাদরখানা ছেড়ে দিয়ে উলংগ অবস্থায় পালিয়ে গেল। সেই লোকেরা যীশুকে নিয়ে মহাপুরোহিতের কাছে গেল। সেখানে প্রধান পুরোহিতেরা, বৃদ্ধ নেতারা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা একসংগে জড়ো হলেন। পিতর দূরে দূরে থেকে যীশুর পিছনে যেতে যেতে মহাপুরোহিতের উঠানে গিয়ে ঢুকলেন। সেখানে রক্ষীদের সংগে বসে তিনি আগুন পোহাতে লাগলেন। প্রধান পুরোহিতেরা এবং মহাসভার সমস্ত লোকেরা যীশুকে মেরে ফেলবার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের খোঁজ করছিলেন, কিন্তু কোন সাক্ষ্যই তাঁরা পেলেন না। যীশুর বিরুদ্ধে অনেকেই মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিল কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিলল না। তখন কয়েকজন উঠে তাঁর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা সাক্ষ্য দিল, “আমরা ওকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের তৈরী এই উপাসনা-ঘর আমি ভেংগে ফেলব এবং তিন দিনের মধ্যে এমন একটা উপাসনা-ঘর তৈরী করব যা মানুষের তৈরী নয়।’ ” কিন্তু তবুও তাদের সাক্ষ্য মিলল না। তখন মহাপুরোহিত সকলের সামনে দাঁড়িয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কোন উত্তরই দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এই লোকেরা এই সব কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” যীশু কিন্তু উত্তর না দিয়ে চুপ করেই রইলেন। মহাপুরোহিত আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি পরমধন্য ঈশ্বরের পুত্র মশীহ?” যীশু বললেন, “আমিই সেই। আপনারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান দিকে মনুষ্যপুত্রকে বসে থাকতে দেখবেন এবং আকাশে মেঘের সংগে আসতে দেখবেন।” এতে মহাপুরোহিত তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “আর সাক্ষীর আমাদের কি দরকার? আপনারা তো শুনলেনই যে, ও ঈশ্বরকে অপমান করল। আপনারা কি মনে করেন?” তাঁরা সবাই যীশুকে মৃত্যুর শাস্তি পাবার উপযুক্ত বলে স্থির করলেন। তখন কয়েকজন তাঁর গায়ে থুথু দিলেন এবং তাঁর মুখ ঢেকে তাঁকে ঘুষি মেরে বললেন, “তুই না নবী? কিছু বল্‌ দেখি!” তারপর রক্ষীরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে চড় মারতে লাগল। পিতর যখন নীচে উঠানে ছিলেন তখন মহাপুরোহিতের একজন চাকরাণী সেখানে আসল। সে পিতরকে আগুন পোহাতে দেখল এবং ভাল করে তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখে বলল, “আপনিও তো ঐ নাসরতের যীশুর সংগে ছিলেন।” পিতর কিন্তু অস্বীকার করে বললেন, “তুমি কি বলছ তা আমি জানিও না, বুঝিও না।” এই বলে পিতর বাইরের দরজার কাছে গেলেন, আর তখনই একটা মোরগ ডেকে উঠল। চাকরাণীটা পিতরকে সেখানে দেখে যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের আবার বলল, “এই লোকটি ওদের একজন।” পিতর আবার অস্বীকার করলেন। যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তারাও কিছুক্ষণ পর পিতরকে বলল, “নিশ্চয়ই তুমি ওদের একজন, কারণ তুমি তো গালীলের লোক।” পিতর তখন নিজেকে অভিশাপ দিলেন এবং শপথ করে বললেন, “তোমরা যার সম্বন্ধে বলছ তাকে আমি চিনি না।” আর তখনই দ্বিতীয় বার মোরগ ডেকে উঠল। যীশু যে বলেছিলেন, “মোরগ দু’বার ডাকবার আগেই তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেনো না,” সেই কথা তখন পিতরের মনে পড়ল। তাতে তিনি কান্নায় ভেংগে পড়লেন। প্রধান পুরোহিতেরা খুব ভোরে বৃদ্ধ নেতাদের, ধর্ম-শিক্ষকদের ও মহাসভার সমস্ত লোকদের সংগে একটা পরামর্শ করলেন। তারপর তাঁরা যীশুকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে তাঁকে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের হাতে দিলেন। তখন পীলাত যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি যিহূদীদের রাজা?” যীশু উত্তর দিলেন, “আপনি ঠিক কথাই বলছেন।” প্রধান পুরোহিতেরা যীশুর নামে অনেক দোষ দিলেন। এতে পীলাত আবার যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি উত্তর দেবে না? দেখ, তারা তোমাকে কত দোষ দিচ্ছে।” যীশু কিন্তু আর কোন উত্তরই দিলেন না। এতে পীলাত আশ্চর্য হলেন। উদ্ধার-পর্বের সময়ে লোকেরা যে কয়েদীকে চাইত পীলাত তাকে ছেড়ে দিতেন। সেই সময় বারাব্বা নামে একজন লোক জেলখানায় বন্দী ছিল। বিদ্রোহের সময় সে বিদ্রোহীদের সংগে থেকে খুন করেছিল। লোকেরা পীলাতের কাছে এসে বলল, “আপনি সব সময় যা করে থাকেন এখন তা- ই করুন।” পীলাত তাদের বললেন, “তোমরা কি চাও যে, আমি যিহূদীদের রাজাকে ছেড়ে দিই?” প্রধান পুরোহিতেরা যে হিংসা করেই যীশুকে তাঁর হাতে দিয়েছেন পীলাত তা জানতেন। কিন্তু প্রধান পুরোহিতেরা লোকদের উস্‌কিয়েছিলেন যেন তারা যীশুর বদলে বারাব্বাকে চেয়ে নেয়। পীলাত আবার লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তোমরা যাকে যিহূদীদের রাজা বল তাকে নিয়ে আমি কি করব?” লোকেরা চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দিন।” পীলাত বললেন, “কেন, সে কি দোষ করেছে?” কিন্তু লোকেরা আরও জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দিন।” তখন পীলাত লোকদের সন্তুষ্ট করবার জন্য বারাব্বাকে তাদের কাছে ছেড়ে দিলেন, আর যীশুকে ভীষণভাবে চাবুক মারবার হুকুম দিয়ে ক্রুশে দেবার জন্য দিলেন। তারপর সৈন্যেরা যীশুকে নিয়ে প্রধান শাসনকর্তার বাড়ীর ভিতরে গেল। সেখানে তারা অন্য সব সৈন্যদের একত্র করল। তারা যীশুকে বেগুনে কাপড় পরাল, আর কাঁটা-লতা দিয়ে একটা মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিল। তার পরে তারা যীশুকে বলতে লাগল, “যিহূদী-রাজ, জয় হোক!” তারা একটা লাঠি দিয়ে যীশুর মাথায় বারবার মারতে লাগল এবং তাঁর গায়ে থুথু দিল, আর হাঁটু পেতে তাঁকে সম্মান দেখাবার ভান করল। এইভাবে তাঁকে ঠাট্টা-তামাশা করবার পর তারা সেই বেগুনে কাপড় খুলে নিয়ে তাঁকে তাঁর নিজের কাপড় পরিয়ে দিল এবং ক্রুশে দেবার জন্য নিয়ে চলল। সেই সময় শিমোন নামে কূরীণী শহরের একজন লোক গ্রামের দিক থেকে এসে সেই পথে যাচ্ছিলেন। ইনি ছিলেন আলেকসান্দর ও রূফের বাবা। সৈন্যেরা তাঁকে যীশুর ক্রুশটা বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করল। তারা যীশুকে গল্‌গথা, অর্থাৎ মাথার খুলির স্থান নামে একটা জায়গায় নিয়ে গেল। পরে তারা যীশুকে গন্ধরস মিশানো সির্কা খেতে দিল, কিন্তু তিনি তা খেলেন না। এর পরে তারা যীশুকে ক্রুশে দিল। সৈন্যেরা যীশুর কাপড়-চোপড় ভাগ করবার জন্য গুলিবাঁট করে দেখতে চাইল কার ভাগ্যে কি পড়ে। সকাল ন’টার সময় তারা যীশুকে ক্রুশে দিয়েছিল। যীশুর বিরুদ্ধে দোষ-নামাতে লেখা ছিল, “যিহূদীদের রাজা।” তারা দু’জন ডাকাতকেও যীশুর সংগে ক্রুশে দিল, একজনকে ডান দিকে ও অন্যজনকে বাঁ দিকে। তাতে পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হল: “তাঁকে অন্যায়কারীদের সংগে গোণা হল।” যারা সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল তারা মাথা নেড়ে যীশুকে ঠাট্টা করে বলল, “ওহে, তুমি না উপাসনা-ঘর ভেংগে আবার তিন দিনের মধ্যে তা তৈরী করতে পার! এখন ক্রুশ থেকে নেমে এসে নিজেকে রক্ষা কর!” প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরাও যীশুকে ঠাট্টা করবার উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “ও অন্যদের রক্ষা করত, নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। ঐ যে মশীহ, ইস্রায়েলীয়দের রাজা! ক্রুশ থেকে ও নেমে আসুক যেন আমরা দেখে বিশ্বাস করতে পারি।” যীশুর সংগে যাদের ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তারাও তাঁকে টিট্‌কারি দিল। পরে দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সারা দেশ অন্ধকার হয়ে রইল। বেলা তিনটার সময় যীশু জোরে চিৎকার করে বললেন, “এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী,” অর্থাৎ “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ?” যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের কয়েকজন এই কথা শুনে বলল, “শোন, শোন, ও এলিয়কে ডাকছে।” তখন একজন লোক দৌড়ে গিয়ে একটা সপঞ্জ সির্কায় ভিজাল এবং একটা লাঠির মাথায় লাগিয়ে তা যীশুকে খেতে দিল। সে বলল, “থাক্‌, দেখি এলিয় ওকে নামিয়ে নিতে আসেন কি না।” এর পরে যীশু জোরে চিৎকার করে প্রাণত্যাগ করলেন। তখন উপাসনা-ঘরের পর্দাটা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দু’ভাগ হয়ে গেল। যে সেনাপতি যীশুর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সে যীশুকে এইভাবে মারা যেতে দেখে বলল, “সত্যিই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।” কয়েকজন স্ত্রীলোক দূরে দাঁড়িয়ে এই সব দেখছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্‌দলীনী মরিয়ম, দুই যাকোবের মধ্যে ছোট যাকোব ও যোষেফের মা মরিয়ম আর শালোমী। যীশু যখন গালীলে ছিলেন তখন এই স্ত্রীলোকেরা তাঁর সংগে সব জায়গায় যেতেন এবং তাঁর সেবা করতেন। আরও অনেক স্ত্রীলোক, যাঁরা যীশুর সংগে সংগে যিরূশালেমে এসেছিলেন, তাঁরাও সেখানে ছিলেন। সেই দিনটা ছিল আয়োজনের দিন, অর্থাৎ বিশ্রামবারের আগের দিন। যখন সন্ধ্যা হয়ে আসল তখন অরিমাথিয়া গ্রামের যোষেফ সাহস করে পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর দেহটি চাইলেন। তিনি মহাসভার একজন নাম- করা সভ্য ছিলেন এবং তিনি নিজে ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পীলাত আশ্চর্য হলেন যে, যীশু এত তাড়াতাড়ি মারা গেছেন। সত্যি সত্যি যীশুর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা সেনাপতিকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। যখন সেনাপতির কাছ থেকে তিনি জানতে পারলেন যে, সত্যিই তাঁর মৃত্যু হয়েছে তখন দেহটি যোষেফকে দিলেন। যোষেফ গিয়ে কাপড় কিনে আনলেন এবং যীশুর মৃতদেহটি নামিয়ে সেই কাপড়ে জড়ালেন, আর পাহাড় কেটে তৈরী করা একটা কবরে সেই দেহটি রাখলেন। তারপর তিনি কবরের মুখে একটা পাথর গড়িয়ে দিলেন। যীশুর মৃতদেহটি কোথায় রাখা হল তা মগ্‌দলীনী মরিয়ম ও যোষেফের মা মরিয়ম দেখলেন। বিশ্রামবার পার হয়ে গেলে পর মগ্‌দলীনী মরিয়ম, যাকোবের মা মরিয়ম এবং শালোমী যীশুর দেহে মাখাবার জন্য সুগন্ধি মলম কিনে আনলেন। সপ্তার প্রথম দিনের খুব সকালে, সূর্য উঠবার সংগে সংগেই তাঁরা কবরের কাছে গেলেন। সেই সময় তাঁরা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, “কবরের মুখ থেকে কে ঐ পাথরটা সরিয়ে দেবে?” কিন্তু তাঁরা চেয়ে দেখলেন যে, পাথরখানা সরানো হয়েছে। সেই পাথরটা খুব বড় ছিল। কবরের গুহায় ঢুকে তাঁরা দেখলেন, সাদা কাপড়-পরা একজন যুবক ডান দিকে বসে আছেন। এতে তাঁরা খুব অবাক হলেন। সেই যুবকটি বললেন, “অবাক হয়ো না। নাসরত গ্রামের যীশু, যাঁকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, তাঁকেই তোমরা খুঁজছো তো? তিনি এখানে নেই, তিনি জীবিত হয়ে উঠেছেন। যেখানে তারা তাঁকে রেখেছিল সেই জায়গা দেখ। তারপর তোমরা গিয়ে তাঁর শিষ্যদের ও পিতরকে এই কথা বল যে, তিনি তাদের আগে গালীলে যাচ্ছেন। তিনি যেমন বলেছিলেন তেমনই তারা তাঁকে সেখানে দেখতে পাবে।” সেই স্ত্রীলোকেরা কিছু বুঝতে না পেরে কাঁপতে কাঁপতে কবরের গুহা থেকে বের হয়ে আসলেন এবং সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন। তাঁরা এত ভয় পেয়েছিলেন যে, কাউকে কিছু বললেন না। সপ্তার প্রথম দিনের ভোর বেলায় যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠলেন। পরে তিনি মগ্‌দলীনী মরিয়মকে প্রথমে দেখা দিলেন। এই মরিয়মের ভিতর থেকে তিনি সাতটা মন্দ আত্মা ছাড়িয়েছিলেন। যীশুকে দেখবার পর মরিয়ম গিয়ে যাঁরা যীশুর সংগে থাকতেন তাঁদের কাছে খবর দিলেন। সেই সময় তাঁরা মনের দুঃখে কাঁদছিলেন। যীশু জীবিত হয়েছেন ও মরিয়ম তাঁকে দেখেছেন, এই কথা শুনে তাঁরা বিশ্বাস করলেন না। এর পরে তাঁর দু’জন শিষ্য যখন হেঁটে গ্রামের দিক যাচ্ছিলেন তখন যীশু অন্য রকম চেহারায় তাঁদের দেখা দিলেন। তাঁরা ফিরে গিয়ে বাকী সবাইকে সেই খবর দিলেন, কিন্তু তাঁদের কথাও অন্য শিষ্যেরা বিশ্বাস করলেন না। এর পরে যীশু তাঁর এগারোজন শিষ্যকে দেখা দিলেন। তখন তাঁরা খাচ্ছিলেন। বিশ্বাসের অভাব ও অন্তরের কঠিনতার জন্য তিনি তাঁদের বকলেন, কারণ তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার পরে যাঁরা তাঁকে দেখেছিলেন তাঁদের কথা তাঁরা বিশ্বাস করেন নি। যীশু সেই শিষ্যদের বললেন, “তোমরা পৃথিবীর সব জায়গায় যাও এবং সব লোকদের কাছে ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার কর। যে কেউ বিশ্বাস করে এবং বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে সে-ই পাপ থেকে উদ্ধার পাবে; কিন্তু যে বিশ্বাস করে না ঈশ্বর তাঁকে দোষী বলে স্থির করে শাস্তি দেবেন। যারা বিশ্বাস করে তাদের মধ্যে এই চিহ্নগুলো দেখা যাবে-আমার নামে তারা মন্দ আত্মা ছাড়াবে, তারা নতুন নতুন ভাষায় কথা বলবে, তারা হাতে করে সাপ তুলে ধরবে, যদি তারা ভীষণ বিষাক্ত কিছু খায় তবে তাদের কোন ক্ষতি হবে না, আর তারা রোগীদের গায়ে হাত দিলে রোগীরা ভাল হবে।” শিষ্যদের কাছে এই সব কথা বলবার পরে প্রভু যীশুকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হল। সেখানে তিনি ঈশ্বরের ডান দিকে বসলেন। পরে শিষ্যেরা গিয়ে সব জায়গায় প্রচার করতে লাগলেন। প্রভু তাঁদের মধ্য দিয়ে তাঁদের সংগে কাজ করতে থাকলেন এবং তাঁদের আশ্চর্য কাজ করবার শক্তি দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, তাঁরা যা প্রচার করছেন তা সত্যি। সেই সব বিষয় সম্বন্ধে প্রথম থেকে ভালভাবে খোঁজ-খবর নিয়ে আপনার জন্য তা একটা একটা করে লেখা আমিও ভাল মনে করলাম। এর ফলে আপনি যা জেনেছেন তা সত্যি কি না জানতে পারবেন। হেরোদ যখন যিহূদিয়া প্রদেশের রাজা ছিলেন সেই সময়ে পুরোহিত অবিয়ের দলে সখরিয় নামে যিহূদীদের একজন পুরোহিত ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল ইলীশাবেত। তিনিও ছিলেন পুরোহিত হারোণের একজন বংশধর। তাঁরা দু’জনেই ঈশ্বরের চোখে ধার্মিক ছিলেন। প্রভুর সমস্ত আদেশ ও নিয়ম তাঁরা নিখুঁতভাবে পালন করতেন। তাঁদের কোন ছেলেমেয়ে হয় নি কারণ ইলীশাবেত বন্ধ্যা ছিলেন। এছাড়া তাঁদের বয়সও খুব বেশী হয়ে গিয়েছিল। একবার নিজের দলের পালার সময় সখরিয় পুরোহিত হিসাবে ঈশ্বরের সেবা করছিলেন। পুরোহিতের কাজের চলতি নিয়ম অনুসারে গুলিবাঁট দ্বারা তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল, যেন তিনি প্রভুর উপাসনা-ঘরের পবিত্র স্থানে গিয়ে ধূপ জ্বালাতে পারেন। ধূপ জ্বালাবার সময় বাইরে অনেক লোক প্রার্থনা করছিল। এমন সময় ধূপ-বেদীর ডানদিকে প্রভুর একজন দূত হঠাৎ এসে সখরিয়কে দেখা দিলেন। স্বর্গদূতকে দেখে তাঁর মন অস্থির হয়ে উঠল এবং তিনি ভয় পেলেন। স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “সখরিয়, ভয় কোরো না, কারণ ঈশ্বর তোমার প্রার্থনা শুনেছেন। তোমার স্ত্রী ইলীশাবেতের একটি ছেলে হবে। তুমি তার নাম রেখো যোহন। সে তোমার জীবনে মহা আনন্দের কারণ হবে এবং তার জন্মের দরুন আরও অনেকে আনন্দিত হবে, কারণ প্রভুর চোখে সে মহান হবে। সে কখনও আংগুর-রস বা কোন রকম মদ খাবে না এবং মায়ের গর্ভে থাকতেই সে পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হবে। ইস্রায়েলীয়দের অনেককেই সে তাদের প্রভু ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়ে আনবে। নবী এলিয়ের মত মনোভাব ও শক্তি নিয়ে সে প্রভুর আগে আসবে। সে বাবার মন সন্তানের দিকে ফিরাবে এবং অবাধ্য লোকদের মনের ভাব বদলে ঈশ্বরভক্ত লোকদের মনের ভাবের মত করবে। এইভাবে সে প্রভুর জন্য এক দল লোককে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করবে।” তখন সখরিয় স্বর্গদূতকে বললেন, “কিভাবে আমি তা বুঝব? আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি এবং আমার স্ত্রীর বয়সও অনেক বেশী হয়ে গেছে।” স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “আমার নাম গাব্রিয়েল; আমি ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। তোমার সংগে কথা বলবার জন্য ও তোমাকে এই সুখবর দেবার জন্য ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন। দেখ, আমার কথা সময়মতই পূর্ণ হবে, কিন্তু তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর নি বলে বোবা হয়ে থাকবে। যতদিন না এই সব ঘটে ততদিন তুমি কথা বলতে পারবে না।” এদিকে লোকেরা সখরিয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। উপাসনা-ঘরের পবিত্র স্থানে তাঁর দেরি হচ্ছে দেখে তারা ভাবতে লাগল। পরে সখরিয় যখন বের হয়ে আসলেন তখন লোকদের সংগে কথা বলতে পারলেন না। এতে লোকেরা বুঝতে পারল পবিত্র স্থানে তিনি কোন দর্শন পেয়েছেন। তিনি লোকদের কাছে ইশারায় কথা বলতে থাকলেন এবং বোবা হয়ে রইলেন। পুরোহিতের কাজের পালা শেষ হবার পরে সখরিয় বাড়ী চলে গেলেন। এর পরে তাঁর স্ত্রী ইলীশাবেত গর্ভবতী হলেন এবং পাঁচ মাস পর্যন্ত বাড়ী ছেড়ে বাইরে গেলেন না। তিনি বললেন, “এটা প্রভুরই কাজ। মানুষের কাছে আমার লজ্জা দূর করবার জন্য তিনি এখন আমার দিকে চোখ তুলে চেয়েছেন।” স্বর্গদূত মরিয়মের কাছে এসে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, “প্রভু তোমার সংগে আছেন এবং তোমাকে অনেক আশীর্বাদ করেছেন।” এই কথা শুনে মরিয়মের মন খুব অস্থির হয়ে উঠল। তিনি ভাবতে লাগলেন এই রকম শুভেচ্ছার মানে কি। স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “মরিয়ম, ভয় কোরো না, কারণ ঈশ্বর তোমাকে খুব দয়া করেছেন। শোন, তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তাঁর নাম যীশু রাখবে। তিনি মহান হবেন। তাঁকে মহান ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে। প্রভু ঈশ্বর তাঁর পূর্বপুরুষ রাজা দায়ূদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন। তিনি যাকোবের বংশের লোকদের উপরে চিরকাল ধরে রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্ব কখনও শেষ হবে না।” তখন মরিয়ম স্বর্গদূতকে বললেন, “এ কেমন করে হবে? আমার তো বিয়ে হয় নি।” স্বর্গদূত বললেন, “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন এবং মহান ঈশ্বরের শক্তির ছায়া তোমার উপরে পড়বে। এইজন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হবে। দেখ, এই বুড়ো বয়সে তোমার আত্মীয়া ইলীশাবেতের গর্ভেও ছেলের জন্ম হয়েছে। লোকে বলত তার ছেলেমেয়ে হবে না, কিন্তু এখন তার ছয় মাস চলছে। ঈশ্বরের কাছে অসম্ভব বলে কোন কিছুই নেই।” মরিয়ম বললেন, “আমি প্রভুর দাসী, আপনার কথামতই আমার উপর সব কিছু হোক।” এর পরে স্বর্গদূত মরিয়মের কাছ থেকে চলে গেলেন। তারপর মরিয়ম তাড়াতাড়ি করে যিহূদিয়া প্রদেশের একটা গ্রামে গেলেন। গ্রামটা পাহাড়ী এলাকায় ছিল। মরিয়ম সেখানে সখরিয়ের বাড়ীতে ঢুকে ইলীশাবেতকে শুভেচ্ছা জানালেন। আমার প্রভুর মা আমার কাছে এসেছেন, এ কেমন করে সম্ভব হল? যখনই আমি তোমার কথা শুনলাম তখনই আমার গর্ভের শিশুটি আনন্দে নেচে উঠল। তুমি ধন্যা, কারণ তুমি বিশ্বাস করেছ যে, প্রভু তোমাকে যা বলেছেন তা পূর্ণ হবে।” তখন মরিয়ম বললেন, “আমার হৃদয় প্রভুর প্রশংসা করছে; আমার উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরকে নিয়ে আমার অন্তর আনন্দে ভরে উঠছে, কারণ তাঁর এই সামান্যা দাসীর দিকে তিনি মনোযোগ দিয়েছেন। এখন থেকে সব লোক আমাকে ধন্যা বলবে, কারণ শক্তিমান ঈশ্বর আমার জন্য কত না মহৎ কাজ করেছেন। তিনি পবিত্র। যারা তাঁকে ভক্তি করে তাদের প্রতি তিনি করুণা করেন, বংশের পর বংশ ধরেই করেন। তিনি হাত বাড়িয়ে মহাশক্তির কাজ করেছেন; যাদের মন অহংকারে ভরা তাদের তিনি চারদিকে দূর করে দিয়েছেন। সিংহাসন থেকে রাজাদের তিনি নামিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু সাধারণ লোকদের তুলে ধরেছেন। যাদের অভাব আছে, ভাল ভাল জিনিস দিয়ে তিনি তাদের অভাব পূরণ করেছেন, কিন্তু ধনীদের খালি হাতে বিদায় করেছেন। প্রায় তিন মাস ইলীশাবেতের কাছে থাকবার পর মরিয়ম নিজের বাড়ীতে ফিরে গেলেন। সময় পূর্ণ হলে পর ইলীশাবেতের একটি ছেলে হল। তাঁর উপর প্রভুর প্রচুর করুণার কথা শুনে প্রতিবেশীরা ও আত্মীয়েরা তাঁর সংগে আনন্দ করতে লাগল। যিহূদীদের নিয়ম মত আট দিনের দিন তারা ছেলেটির সুন্নত করাবার কাজে যোগ দিতে আসল। তারা ছেলেটির নাম তার বাবার নামের মত সখরিয় রাখতে চাইল, কিন্তু তার মা বললেন, “না, এর নাম যোহন রাখা হবে।” তারা ইলীশাবেতকে বলল, “আপনার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে তো কারও ঐ নাম নেই।” তারা ইশারা করে ছেলেটির বাবার কাছ থেকে জানতে চাইল তিনি কি নাম দিতে চান। সখরিয় লিখবার জিনিস চেয়ে নিয়ে লিখলেন, “ওর নাম যোহন।” এতে তারা সবাই অবাক হল, আর তখনই সখরিয়ের মুখ ও জিভ্‌ খুলে গেল এবং তিনি কথা বলতে ও ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগলেন। এ দেখে প্রতিবেশীরা সবাই ভয় পেল, আর যিহূদিয়ার সমস্ত পাহাড়ী এলাকার লোকেরা এই সব বিষয়ে বলাবলি করতে লাগল। যারা এই সব কথা শুনল তারা প্রত্যেকেই মনে মনে তা ভাবতে লাগল আর বলল, “বড় হয়ে এই ছেলেটি তবে কি হবে!” তারা এই কথা বলল, কারণ প্রভুর শক্তি এই ছেলেটির উপর দেখা গিয়েছিল। পরে ছেলেটির পিতা সখরিয় পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে নবী হিসাবে এই কথা বলতে লাগলেন, “ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরের প্রশংসা হোক, কারণ তিনি তাঁর নিজের লোকদের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন আর তাদের মুক্ত করেছেন। তিনি আমাদের জন্য তাঁর দাস দায়ূদের বংশ থেকে একজন শক্তিশালী উদ্ধারকর্তা তুলেছেন। এই কথা তাঁর পবিত্র নবীদের মুখ দিয়ে তিনি অনেক দিন আগেই বলেছিলেন। তিনি শত্রুদের হাত থেকে আর যারা ঘৃণা করে তাদের সকলের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন। তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের করুণা করবার জন্য আর তাঁর পবিত্র ব্যবস্থা, অর্থাৎ তাঁর শপথ পূর্ণ করবার জন্য আমাদের রক্ষা করেছেন। সন্তান আমার, তোমাকে মহান ঈশ্বরের নবী বলা হবে, কারণ তুমি তাঁর পথ ঠিক করবার জন্য তাঁর আগে আগে চলবে। যাতে অন্ধকারে ও মৃত্যুর ছায়ায় যারা বসে আছে তাদের আলো দিতে পারেন, আর শান্তির পথে আমাদের চালাতে পারেন।” পরে যোহন বেড়ে উঠতে লাগলেন এবং অন্তরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকলেন। ইস্রায়েলীয়দের সামনে খোলাখুলিভাবে উপস্থিতির আগ পর্যন্ত তিনি মরু-এলাকায় ছিলেন। সেই সময়ে সম্রাট আগস্ত কৈসর তাঁর রাজ্যের সব লোকদের নাম লেখাবার আদেশ দিলেন। সিরিয়ার শাসনকর্তা কুরীণিয়ের সময়ে এই প্রথমবার লোকগণনার জন্য নাম লেখানো হয়। নাম লেখাবার জন্য প্রত্যেকে নিজের নিজের গ্রামে যেতে লাগল। সেখানে তাঁর প্রথম ছেলের জন্ম হল, আর তিনি ছেলেটিকে কাপড়ে জড়িয়ে যাবপাত্রে রাখলেন, কারণ হোটেলে তাঁদের জন্য কোন জায়গা ছিল না। বৈৎলেহমের কাছে মাঠের মধ্যে রাতের বেলা রাখালেরা তাদের ভেড়ার পাল পাহারা দিচ্ছিল। এমন সময় প্রভুর একজন দূত হঠাৎ তাদের সামনে উপস্থিত হলেন। তখন প্রভুর মহিমা তাদের চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল। এতে রাখালেরা খুব ভয় পেল। স্বর্গদূত তাদের বললেন, “ভয় কোরো না, কারণ আমি তোমাদের কাছে খুব আনন্দের খবর এনেছি। এই আনন্দ সব লোকেরই জন্য। আজ দায়ূদের গ্রামে তোমাদের উদ্ধারকর্তা জন্মেছেন। তিনিই মশীহ, তিনিই প্রভু। এই কথা যে সত্যি তোমাদের কাছে তার চিহ্ন হল এই- তোমরা কাপড়ে জড়ানো এবং যাবপাত্রে শোওয়ানো একটি শিশুকে দেখতে পাবে।” এই সময় সেই স্বর্গদূতের সংগে হঠাৎ সেখানে আরও অনেক স্বর্গদূতকে দেখা গেল। তাঁরা ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলতে লাগলেন, “স্বর্গে ঈশ্বরের গৌরব হোক, পৃথিবীতে যাদের উপর তিনি সন্তুষ্ট তাদের শান্তি হোক।” স্বর্গদূতেরা তাদের কাছ থেকে স্বর্গে চলে যাবার পর রাখালেরা একে অন্যকে বলল, “চল, আমরা বৈৎলেহমে যাই এবং যে ঘটনার কথা প্রভু আমাদের জানালেন তা গিয়ে দেখি।” তারা তাড়াতাড়ি গিয়ে মরিয়ম, যোষেফ ও যাবপাত্রে শোওয়ানো সেই শিশুটিকে খুঁজে বের করল। তাদের কাছে ঐ শিশুর বিষয়ে যা জানানো হয়েছিল, শিশুটিকে দেখবার পরে তারা তা বলল। রাখালদের কথা শুনে সবাই আশ্চর্য হল; কিন্তু মরিয়ম সব কিছু মনে গেঁথে রাখলেন, কাউকে বললেন না; তিনি সেই বিষয়ে চিন্তা করতে থাকলেন। স্বর্গদূতেরা রাখালদের কাছে যা বলেছিলেন সব কিছু সেইমত দেখে ও শুনে তারা ঈশ্বরের প্রশংসা ও গৌরব করতে করতে ফিরে গেল। জন্মের আট দিনের দিন যিহূদীদের নিয়ম মত যখন শিশুটির সুন্নত করাবার সময় হল তখন তাঁর নাম রাখা হল যীশু। মায়ের গর্ভে আসবার আগে স্বর্গদূত তাঁর এই নামই দিয়েছিলেন। পরে মোশির আইন-কানুন মতে তাঁদের শুচি হবার সময় হল। তখন যোষেফ ও মরিয়ম যীশুকে প্রভুর সামনে উপস্থিত করবার জন্য তাঁকে যিরূশালেম শহরে নিয়ে গেলেন, কারণ প্রভুর আইন-কানুনে লেখা আছে, “প্রথমে জন্মেছে এমন প্রত্যেকটি পুরুষ সন্তানকে প্রভুর বলে ধরা হবে।” এছাড়াও “এক জোড়া ঘুঘু কিংবা দু’টা কবুতরের বাচ্চা” উৎসর্গ করবার কথা যেমন প্রভুর আইন-কানুনে লেখা আছে সেইভাবে তাঁরা তা উৎসর্গ করতে গেলেন। পবিত্র আত্মার দ্বারা চালিত হয়ে শিমিয়োন সেই দিন যিহূদীদের উপাসনা-ঘরে আসলেন। মোশির আইন-কানুন মতে যা করা দরকার তা করবার জন্য যীশুর মা-বাবা শিশু যীশুকে নিয়ে সেখানে আসলেন। তখন শিমিয়োন তাঁকে কোলে নিলেন এবং ঈশ্বরের গৌরব করে বললেন, “প্রভু, তুমি তোমার কথামত তোমার দাসকে এখন শান্তিতে বিদায় দিচ্ছ, অন্য জাতির কাছে এটা পথ দেখাবার আলো, আর তোমার ইস্রায়েল জাতির কাছে এটা গৌরবের বিষয়।” শিমিয়োন শিশুটির বিষয়ে যা বললেন তাতে শিশুটির মা-বাবা আশ্চর্য হলেন। এর পরে শিমিয়োন তাঁদের আশীর্বাদ করলেন এবং যীশুর মা মরিয়মকে বললেন, “ঈশ্বর এটাই স্থির করেছেন যে, এই শিশুটির জন্য ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে অনেকেরই পতন হবে, আবার অনেকেই উদ্ধার পাবে। ইনি এমন একটা চিহ্ন হবেন যাঁর বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলবে, আর তাতে তাদের মনের চিন্তা প্রকাশ হয়ে পড়বে। এছাড়া ছোরার আঘাতের মত দুঃখ তোমার অন্তরকে বিঁধবে।” তিনিও ঠিক সেই সময় এগিয়ে এসে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন, আর ঈশ্বর যিরূশালেমকে মুক্ত করবেন বলে যারা অপেক্ষা করছিল তাদের কাছে সেই শিশুটির কথা বলতে লাগলেন। প্রভুর আইন-কানুন মতে সব কিছু শেষ করে মরিয়ম ও যোষেফ গালীলে তাঁদের নিজেদের গ্রাম নাসরতে ফিরে গেলেন। শিশু যীশু বয়সে বেড়ে শক্তিমান হয়ে উঠলেন এবং জ্ঞানে পূর্ণ হতে থাকলেন। তাঁর উপরে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছিল। উদ্ধার-পর্বের সময়ে যীশুর মা-বাবা প্রত্যেক বছর যিরূশালেমে যেতেন। যীশুর বয়স যখন বারো বছর তখন নিয়ম মতই তাঁরা সেই পর্বে গেলেন। পর্বের শেষে তাঁরা যখন বাড়ী ফিরছিলেন তখন যীশু যিরূশালেমেই থেকে গেলেন। তাঁর মা-বাবা কিন্তু সেই কথা জানতেন না। তিনি সংগের লোকদের মধ্যে আছেন মনে করে তাঁরা এক দিনের পথ চলে গেলেন। পরে তাঁরা তাঁদের আত্মীয় ও জানাশোনা লোকদের মধ্যে যীশুর খোঁজ করতে লাগলেন। কিন্তু খুঁজে না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা আবার যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। শেষে তিন দিন পরে তাঁরা তাঁকে উপাসনা-ঘরে পেলেন। তিনি শিক্ষকদের মধ্যে বসে তাঁদের কথা শুনছিলেন ও তাঁদের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন। যাঁরা যীশুর কথা শুনছিলেন তাঁরা সবাই তাঁর বুদ্ধি দেখে ও তাঁর উত্তর শুনে অবাক হচ্ছিলেন। তাঁর মা-বাবা তাঁকে দেখে আশ্চর্য হলেন। তাঁর মা তাঁকে বললেন, “বাবা, তুমি আমাদের সংগে কেন এমন করলে? তোমার বাবা ও আমি কত ব্যাকুল হয়ে তোমার খোঁজ করছিলাম।” যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা কেন আমার খোঁজ করছিলে? তোমরা কি জানতে না যে, আমার পিতার ঘরে আমাকে থাকতে হবে?” যীশু যা বললেন তাঁর মা-বাবা তা বুঝলেন না। এর পরে তিনি তাঁদের সংগে নাসরতে ফিরে গেলেন এবং তাঁদের বাধ্য হয়ে রইলেন। তাঁর মা এই সব বিষয় মনে গেঁথে রাখলেন। যীশু জ্ঞানে, বয়সে এবং ঈশ্বর ও মানুষের ভালবাসায় বেড়ে উঠতে লাগলেন। রোম-সম্রাট তিবিরিয় কৈসরের রাজত্বের পনের বছরের সময় যিহূদিয়া প্রদেশের প্রধান শাসনকর্তা ছিলেন পন্তীয় পীলাত। তখন হেরোদ গালীল প্রদেশ ও তাঁর ভাই ফিলিপ যিতূরিয়া প্রদেশ ও ত্রাখোনীতিয়া শাসন করছিলেন। লুষানিয়া ছিলেন অবিলীনীর শাসনকর্তা, আর হানন ও কাইয়াফা ছিলেন যিহূদীদের মহাপুরোহিত। ঠিক এই সময়ে ঈশ্বর মরু- এলাকায় সখরিয়ের পুত্র যোহনের কাছে তাঁর বাক্য প্রকাশ করলেন। তখন যোহন যর্দন নদীর চারদিকের সমস্ত জায়গায় গিয়ে প্রচার করতে লাগলেন যেন লোকে পাপের ক্ষমা পাবার জন্য পাপ থেকে মন ফিরায় এবং তার চিহ্ন হিসাবে বাপ্তিসম গ্রহণ করে। নবী যিশাইয়ের বইয়ে যা লেখা আছে ঠিক সেইভাবে এই সব হল। লেখা আছে, “মরু-এলাকায় একজনের কন্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে, ‘তোমরা প্রভুর পথ ঠিক কর, তাঁর রাস্তা সোজা কর। সমস্ত উপত্যকা ভরা হবে, পাহাড়-পর্বত সমান করা হবে। আঁকাবাঁকা পথ সোজা করা হবে, অসমান রাস্তা সমান করা হবে। মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করবার জন্য ঈশ্বর যা করেছেন, সব লোকেই তা দেখতে পাবে।’ ” তখন বাপ্তিসম গ্রহণ করবার জন্য অনেক লোক যোহনের কাছে আসতে লাগল। যোহন তাদের বললেন, “সাপের বংশধরেরা! ঈশ্বরের যে শাস্তি নেমে আসছে তা থেকে পালিয়ে যাবার এই বুদ্ধি তোমাদের কে দিল? তোমরা যে পাপ থেকে মন ফিরিয়েছ তার উপযুক্ত ফল তোমাদের জীবনে দেখাও। নিজেদের মনে ভেবো না যে, তোমরা অব্রাহামের বংশের লোক। আমি তোমাদের বলছি, এই পাথরগুলো থেকে ঈশ্বর অব্রাহামের বংশধর তৈরী করতে পারেন। গাছের গোড়াতে কুড়াল লাগানোই আছে। যে গাছে ভাল ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হবে।” তখন লোকেরা যোহনকে জিজ্ঞাসা করল, “তা হলে আমরা কি করব?” যোহন তাদের বললেন, “যদি কারও দু’টা জামা থাকে তবে যার জামা নেই সে তাকে একটা দিক। যার খাবার আছে সেও সেই রকম করুক।” কয়েকজন কর্‌-আদায়কারী বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার জন্য এসে যোহনকে বলল, “গুরু, আমরা কি করব?” তিনি তাদের বললেন, “আইনে যা আছে তার বেশী আদায় কোরো না।” কয়েকজন সৈন্যও তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “আর আমরা কি করব?” তিনি সেই সৈন্যদের বললেন, “জুলুম করে বা অন্যায়ভাবে দোষ দেখিয়ে কারও কাছ থেকে কিছু আদায় কোরো না এবং তোমাদের বেতনেই সন্তুষ্ট থেকো।” লোকেরা খুব আশা নিয়ে মনে মনে ভাবছিল হয়ত বা যোহনই মশীহ। এমন সময় যোহন তাদের সবাইকে বললেন, “আমি তোমাদের জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি, কিন্তু যিনি আমার চেয়ে শক্তিশালী তিনি আসছেন। আমি তাঁর জুতার ফিতা খুলবারও যোগ্য নই। তিনি পবিত্র আত্মা ও আগুনে তোমাদের বাপ্তিস্ম দেবেন। কুলা তাঁর হাতেই আছে; তা দিয়ে তিনি তাঁর ফসল মাড়াবার জায়গা পরিষ্কার করে ফসল গোলায় জমা করবেন, কিন্তু যে আগুন কখনও নেভে না তাতে তিনি তুষ পুড়িয়ে ফেলবেন।” যোহন আরও অনেক উপদেশের মধ্য দিয়ে লোকদের মনে উৎসাহ জাগিয়ে ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করলেন। শাসনকর্তা হেরোদের ভাইয়ের স্ত্রী হেরোদিয়ার সংগে হেরোদের সমপর্কের দরুন এবং তাঁর আরও অনেক মন্দ কাজের দরুন যোহন তাঁর দোষ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তাতে তিনি যোহনকে বন্দী করে জেলে দিলেন। এতে তাঁর অন্য সব মন্দ কাজের সংগে এই মন্দ কাজটাও যোগ হল। যে সমস্ত লোক যোহনের কাছে এসেছিল তারা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করবার সময় যীশুও বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন। বাপ্তিস্মের পরে যীশু যখন প্রার্থনা করছিলেন তখন আকাশ খুলে গেল। সেই সময় পবিত্র আত্মা কবুতরের আকার নিয়ে তাঁর উপর নেমে আসলেন, আর স্বর্গ থেকে এই কথা শোনা গেল, “তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমার উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট।” প্রায় তিরিশ বছর বয়সে যীশু তাঁর কাজ শুরু করলেন। লোকে মনে করত তিনি যোষেফের ছেলে। যোষেফ এলির ছেলে; এলি মত্ততের ছেলে, মত্তত লেবির ছেলে, লেবি মল্কির ছেলে, মল্কি যান্নায়ের ছেলে, যান্নায় যোষেফের ছেলে; যোষেফ মত্তথিয়ের ছেলে, মত্তথিয় আমোসের ছেলে, আমোস নহূমের ছেলে, নহূম ইষ্‌লির ছেলে, ইষ্‌লি নগির ছেলে; নগি মাটের ছেলে, মাট মত্তথিয়ের ছেলে, মত্তথিয় শিমিয়ির ছেলে, শিমিয়ি যোষেখের ছেলে, যোষেখ যূদার ছেলে; যূদা যোহানার ছেলে, যোহানা রীষার ছেলে, রীষা সরুব্বাবিলের ছেলে, সরুব্বাবিল শল্টীয়েলের ছেলে, শল্টীয়েল নেরির ছেলে; নেরি মল্কির ছেলে, মল্কি অদ্দীর ছেলে, অদ্দী কোষমের ছেলে, কোষম ইল্‌মাদমের ছেলে, ইল্‌মাদম এরের ছেলে; এর যীশুর ছেলে, যীশু ইলীয়েষরের ছেলে, ইলীয়েষর যোরীমের ছেলে, যোরীম মত্ততের ছেলে, মত্তত লেবির ছেলে; লেবি শিমিয়োনের ছেলে, শিমিয়োন যূদার ছেলে, যূদা যোষেফের ছেলে, যোষেফ যোনমের ছেলে, যোনম ইলিয়াকীমের ছেলে; ইলিয়াকীম মিলেয়ার ছেলে, মিলেয়া মিন্নার ছেলে, মিন্না মত্তথের ছেলে, মত্তথ নাথনের ছেলে, নাথন দায়ূদের ছেলে; দায়ূদ যিশয়ের ছেলে, যিশয় ওবেদের ছেলে, ওবেদ বোয়সের ছেলে, বোয়স সল্‌মোনের ছেলে, সল্‌মোন নহশোনের ছেলে; নহশোন অম্মীনাদবের ছেলে, অম্মীনাদব অদমানের ছেলে, অদমান অর্ণির ছেলে, অর্ণি হিষ্রোণের ছেলে, হিষ্রোণ পেরসের ছেলে, পেরস যিহূদার ছেলে; যিহূদা যাকোবের ছেলে, যাকোব ইস্‌হাকের ছেলে, ইস্‌হাক অব্রাহামের ছেলে, অব্রাহাম তেরহের ছেলে, তেরহ নাহোরের ছেলে; নাহোর সরূগের ছেলে, সরূগ রিয়ুর ছেলে, রিয়ু পেলগের ছেলে, পেলগ এবরের ছেলে, এবর শেলহের ছেলে; শেলহ কৈননের ছেলে, কৈনন অর্ফক্‌ষদের ছেলে, অর্ফক্‌ষদ শেমের ছেলে, শেম নোহের ছেলে, নোহ লেমকের ছেলে; লেমক মথূশেলহের ছেলে, মথূশেলহ হনোকের ছেলে, হনোক যেরদের ছেলে, যেরদ মহললেলের ছেলে, মহললেল কৈননের ছেলে; কৈনন ইনোশের ছেলে, ইনোশ শেথের ছেলে, শেথ আদমের ছেলে, আদম ঈশ্বরের ছেলে। তখন শয়তান যীশুকে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে এই পাথরটাকে রুটি হয়ে যেতে বল।” যীশু শয়তানকে বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না।’ ” এখন তুমি যদি আমাকে প্রণাম করে তোমার প্রভু বলে স্বীকার কর তবে এই সবই তোমার হবে।” যীশু তাকে উত্তর দিলেন, “পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘তুমি তোমার প্রভু ঈশ্বরকেই ভক্তি করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে।’ ” তখন শয়তান যীশুকে যিরূশালেমে নিয়ে গেল আর উপাসনা-ঘরের চূড়ার উপরে তাঁকে দাঁড় করিয়ে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে এখান থেকে লাফ দিয়ে নীচে পড়, কারণ পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, তিনি তাঁর দূতদের তোমার বিষয়ে আদেশ দেবেন যেন তাঁরা তোমাকে রক্ষা করেন। তাঁরা তোমাকে হাত দিয়ে ধরে ফেলবেন যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে।” যীশু তাকে বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রভু ঈশ্বরকে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।’ ” সমস্ত রকম লোভ দেখানো শেষ করে শয়তান অল্প সময়ের জন্য যীশুর কাছ থেকে চলে গেল। পরে যীশু পবিত্র আত্মার শক্তিতে পূর্ণ হয়ে গালীল প্রদেশে ফিরে গেলেন। যীশুর খবর সেই এলাকার সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। সেখানকার ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-ঘরে যীশু শিক্ষা দিতে আরম্ভ করলেন। তখন সবাই তাঁর প্রশংসা করতে লাগল। এর পরে যীশু নাসরতে গেলেন। এখানেই তিনি বড় হয়েছিলেন। তিনি নিজের নিয়ম মত বিশ্রামবারে সমাজ-ঘরে গেলেন, তারপর শাস্ত্র পাঠ করবার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর হাতে নবী যিশাইয়ের লেখা বইখানা দেওয়া হল। গুটিয়ে-রাখা বইখানা খুলেই তিনি সেই জায়গাটা পেলেন যেখানে লেখা আছে, “প্রভুর আত্মা আমার উপরে আছেন, কারণ তিনিই আমাকে নিযুক্ত করেছেন যেন আমি গরীবদের কাছে সুখবর প্রচার করি। তিনি আমাকে বন্দীদের কাছে স্বাধীনতার কথা, অন্ধদের কাছে দেখতে পাবার কথা ঘোষণা করতে পাঠিয়েছেন। যাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, তিনি আমাকে তাদের মুক্ত করতে পাঠিয়েছেন। এছাড়া প্রভু আমাকে ঘোষণা করতে পাঠিয়েছেন যে, এখন তাঁর দয়া দেখাবার সময় হয়েছে।” তারপর তিনি বইখানা আবার গুটিয়ে কর্মচারীর হাতে দিয়ে বসে পড়লেন। সমাজ-ঘরের প্রত্যেকটি লোকের চোখ তাঁর উপরে পড়ল। তখন যীশু লোকদের বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা আজ আপনারা শুনবার সংগে সংগেই তা পূর্ণ হল।” লোকেরা সবাই তাঁর প্রশংসা করল এবং তাঁর মুখে এই সব সুন্দর সুন্দর কথা শুনে আশ্চর্য হল। তারা বলল, “এ কি যোষেফের ছেলে নয়?” যীশু তাদের বললেন, “আপনারা এই চলতি কথাটা নিশ্চয়ই আমাকে বলবেন, ‘ডাক্তার, নিজেকে সুস্থ কর।’ আরও বলবেন, ‘কফরনাহূমে যে সব কাজ করবার কথা আমরা শুনেছি সেই সব এখন নিজের গ্রামেও করে দেখাও।’ ” তিনি আরও বললেন, “আমি আপনাদের সত্যি বলছি, কোন নবীকেই তাঁর নিজের গ্রামের লোক গ্রাহ্য করে না। এই কথা সত্যি যে, এলিয়ের সময়ে যখন সাড়ে তিন বছর বৃষ্টি হয় নি এবং সমস্ত দেশে ভীষণ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তখন ইস্রায়েল দেশে অনেক বিধবা ছিল। কিন্তু তাদের কারও কাছে এলিয়কে পাঠানো হয় নি, কেবল সীদোন এলাকার সারিফত গ্রামের বিধবা স্ত্রীলোকটির কাছে পাঠানো হয়েছিল। নবী ইলীশায়ের সময়ে ইস্রায়েল দেশে অনেক চর্মরোগী ছিল, কিন্তু তাদের কাউকে সুস্থ করা হয় নি, কেবল সিরিয়া দেশের নামানকেই সুস্থ করা হয়েছিল।” এই কথা শুনে সমাজ-ঘরের সমস্ত লোক রেগে আগুন হল। তারা উঠে যীশুকে গ্রামের বাইরে তাড়িয়ে নিয়ে চলল, আর তাঁকে নীচে ফেলে দেবার জন্য তাদের গ্রামটা যে পাহাড়ের গায়ে ছিল সেই পাহাড়ের চূড়ায় তাঁকে নিয়ে গেল। কিন্তু তিনি সেই লোকদের মধ্য দিয়েই চলে গেলেন। পরে যীশু গালীল প্রদেশের কফরনাহূম শহরে গেলেন এবং বিশ্রামবারে লোকদের শিক্ষা দিলেন। তাঁর শিক্ষায় লোকেরা আশ্চর্য হল, কারণ তিনি এমন লোকের মত কথা বলছিলেন যাঁর অধিকার আছে। সেই সমাজ-ঘরে এমন একটি লোক ছিল যাকে মন্দ আত্মায় পেয়েছিল। সে চিৎকার করে বলল, “ওহে নাসরত গ্রামের যীশু, আমাদের সংগে আপনার কি দরকার? আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে; আপনিই তো ঈশ্বরের সেই পবিত্রজন।” যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ কর, ওর মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।” সেই মন্দ আত্মা তখন লোকটিকে সকলের মাঝখানে আছড়ে ফেলল এবং তার কোন ক্ষতি না করে তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল। এতে সবাই আশ্চর্য হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, “এ কেমন কথা! অধিকার ও ক্ষমতা নিয়ে তিনি মন্দ আত্মাদের আদেশ দেন আর তারা বের হয়ে যায়!” সেই এলাকার সব জায়গায় যীশুর কথা ছড়িয়ে পড়ল। এর পরে যীশু সমাজ-ঘর ছেড়ে শিমোনের বাড়ীতে গেলেন। শিমোনের শাশুড়ীর খুব জ্বর হয়েছিল। তাঁকে ভাল করবার জন্য যীশুকে অনুরোধ করা হল। তখন যীশু শিমোনের শাশুড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে জ্বরকে ধমক দিলেন। তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল, আর তিনি তখনই উঠে তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন। বেলা ডুবে যাবার সময়ে লোকেরা সব রোগীদের যীশুর কাছে নিয়ে আসল। তারা নানা রকম রোগে ভুগছিল। যীশু তাদের প্রত্যেকের গায়ে হাত দিয়ে তাদের সুস্থ করলেন। অনেক লোকের মধ্য থেকে মন্দ আত্মাও বের হয়ে গেল। সেই মন্দ আত্মাগুলো চিৎকার করে বলল, “আপনি ঈশ্বরের পুত্র।” তিনি যে মশীহ তা তারা জানত। এইজন্য তিনি ধমক দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দিলেন। ভোরবেলায় যীশু সেই জায়গা ছেড়ে একটা নির্জন জায়গায় চলে গেলেন। লোকেরা তাঁর খোঁজ করতে করতে তাঁর কাছে গেল এবং যাতে তিনি তাদের কাছ থেকে চলে না যান সেইজন্য তাঁকে তাদের কাছে ধরে রাখতে চেষ্টা করল। তখন যীশু তাদের বললেন, “আরও অনেক জায়গায় আমাকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে হবে, কারণ এরই জন্য ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন।” এর পরে তিনি যিহূদীদের দেশের ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-ঘরে প্রচার করতে থাকলেন। এক সময়ে যীশু গিনেষরৎ সাগরের পারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। লোকেরা ঈশ্বরের বাক্য শুনবার জন্য তাঁর চারপাশে ঠেলাঠেলি করছিল। এমন সময় তিনি সাগরের পারে দু’টা নৌকা দেখতে পেলেন। জেলেরা সেই নৌকা দু’টা থেকে নেমে তাদের জাল ধুচ্ছিল। তখন যীশু শিমোনের নৌকায় উঠলেন এবং তাঁকে পার থেকে একটু দূরে নৌকাটা নিয়ে যেতে বললেন। তারপর তিনি নৌকায় বসে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। কথা শেষ হলে পর যীশু শিমোনকে বললেন, “গভীর জলে গিয়ে মাছ ধরবার জন্য তোমাদের জাল ফেল।” শিমোন বললেন, “গুরু, সারা রাত খুব পরিশ্রম করেও কিছুই ধরতে পারি নি; তবুও আপনার কথাতে আমি জাল ফেলব।” জাল ফেললে পর তাতে এত মাছ পড়ল যে, তাঁদের জাল ছিঁড়বার মত হল। তখন তাঁরা সাহায্যের জন্য ইশারা করে অন্য নৌকার সংগীদের ডাকলেন। তাঁরা এসে দু’টা নৌকায় এত মাছ বোঝাই করলেন যে, সেগুলো ডুবে যাবার মত হল। এ দেখে শিমোন-পিতর যীশুর সামনে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, “প্রভু, আমি পাপী; আমার কাছ থেকে চলে যান।” এত মাছ ধরা পড়েছে দেখে শিমোন-পিতর ও তাঁর সংগীরা সবাই আশ্চর্য হলেন। শিমোনের ব্যবসার ভাগীদার যাকোব ও যোহন নামে সিবদিয়ের দুই ছেলেও আশ্চর্য হলেন। তখন যীশু শিমোনকে বললেন, “ভয় কোরো না; এখন থেকে তুমি ঈশ্বরের জন্য মানুষ ধরবে।” তারপর তাঁরা নৌকাগুলো পারে আনলেন এবং সব কিছু ফেলে রেখে যীশুর সংগে চললেন। যীশু একবার একটা গ্রামে গেলেন। সেখানে একজন লোকের সারা গায়ে খারাপ চর্মরোগ ছিল। যীশুকে দেখে সে উবুড় হয়ে পড়ে কাকুতি-মিনতি করে বলল, “প্রভু, আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ভাল করতে পারেন।” যীশু হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই, তুমি শুচি হও।” আর তখনই সে ভাল হয়ে গেল। যীশু তাকে এই আদেশ দিলেন, “এই কথা কাউকে বোলো না বরং পুরোহিতের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও। তার পর শুচি হওয়া সম্বন্ধে মোশি যা উৎসর্গ করবার আদেশ দিয়েছেন তা উৎসর্গ কর। তাতে লোকদের কাছে প্রমাণ হবে তুমি ভাল হয়েছ।” তবুও যীশুর খবর আরও ছড়িয়ে পড়ল। তাঁর কথা শুনবার জন্য ও রোগ থেকে সুস্থ হবার জন্য অনেক লোক তাঁর কাছে আসতে লাগল। যীশু প্রায়ই নির্জন জায়গায় গিয়ে প্রার্থনা করতেন। একদিন যীশু যখন শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন ফরীশীরা এবং ধর্ম-শিক্ষকেরা সেখানে বসে ছিলেন। গালীল প্রদেশের বিভিন্ন গ্রাম এবং যিহূদিয়া প্রদেশ ও যিরূশালেম শহর থেকে এঁরা এসেছিলেন। রোগীদের সুস্থ করবার জন্য প্রভুর শক্তি যীশুর মধ্যে ছিল। তখন কয়েকজন লোক একজন অবশ-রোগীকে খাটে করে বয়ে আনল। তারা তাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে যীশুর সামনে রাখবার চেষ্টা করল, কিন্তু ভিড়ের জন্য ভিতরে যাবার পথ পেল না। তখন তারা ছাদে উঠল এবং ছাদের টালি সরিয়ে বিছানা সুদ্ধ তাকে লোকদের মাঝখানে যীশুর সামনে নামিয়ে দিল। যীশু তাদের বিশ্বাস দেখে বললেন, “বন্ধু, তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।” এতে ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীরা মনে মনে ভাবতে লাগলেন, “এই লোকটা কে, যে ঈশ্বরকে অপমান করছে? ঈশ্বর ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করতে পারে?” তাঁরা মনে মনে কি চিন্তা করছিলেন যীশু তা বুঝতে পেরে বললেন, “আপনারা মনে মনে কেন ঐ কথা ভাবছেন? কোন্‌টা বলা সহজ, ‘তোমার পাপ ক্ষমা করা হল,’ না ‘তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও’? কিন্তু আপনারা যেন জানতে পারেন পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করবার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে”-এই পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশ-রোগীকে বললেন, “আমি তোমাকে বলছি, ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে বাড়ী চলে যাও।” সেই লোকটি তখনই সকলের সামনে উঠে দাঁড়াল এবং যে বিছানার উপরে সে শুয়ে ছিল তা তুলে নিয়ে ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে বাড়ী চলে গেল। তাতে সবাই খুব আশ্চর্য হল এবং ভক্তিপূর্ণ ভয়ে ঈশ্বরের গৌরব করে বলল, “আজ আমরা কি আশ্চর্য ব্যাপার দেখলাম!” এর পরে যীশু বাইরে গেলেন এবং কর্‌ আদায় করবার ঘরে লেবি নামে একজন কর্‌-আদায়কারীকে বসে থাকতে দেখলেন। যীশু লেবিকে বললেন, “এস, আমার শিষ্য হও।” তাতে লেবি উঠলেন এবং তাঁর সব কিছু ফেলে রেখে যীশুর সংগে গেলেন। পরে লেবি যীশুর জন্য তাঁর বাড়ীতে একটা বড় ভোজ দিলেন। তাঁদের সংগে অনেক কর্‌-আদায়কারী ও অন্য লোকেরা খেতে বসল। তখন ফরীশীরা ও তাঁদের দলের ধর্ম-শিক্ষকেরা বিরক্ত হয়ে যীশুর শিষ্যদের বললেন, “তোমরা কর-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সংগে খাওয়া-দাওয়া কর কেন?” যীশু তাঁদের বললেন, “সুস্থদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই বরং অসুস্থদের জন্যই দরকার আছে। পাপ থেকে মন ফিরাবার জন্য আমি ধার্মিকদের ডাকতে আসি নি বরং পাপীদেরই ডাকতে এসেছি।” পরে সেই ধর্ম-নেতারা যীশুকে বললেন, “যোহনের শিষ্যেরা প্রায়ই উপবাস ও প্রার্থনা করে এবং ফরীশীদের শিষ্যেরাও তা করে, কিন্তু আপনার শিষ্যেরা কখনও খাওয়া-দাওয়া বাদ দেয় না।” যীশু তাঁদের বললেন, “বর সংগে থাকতে কি বরের সংগের লোকদের উপবাস করাতে পারা যায়? কিন্তু এমন সময় আসবে যখন তাদের কাছ থেকে বরকে নিয়ে যাওয়া হবে, আর সেই সময়েই তারা উপবাস করবে।” তারপর যীশু শিক্ষা দেবার জন্য তাঁদের কাছে এই উদাহরণ দিলেন: “নতুন জামার টুকরা ছিঁড়ে নিয়ে কেউ পুরানো জামায় তালি দেয় না, কারণ তা করলে সেই নতুন জামাটা তো সে ছিঁড়ে ফেলে; আর সেই নতুন টুকরাটাও পুরানো জামার সংগে মানায় না। টাটকা আংগুর-রস কেউ পুরানো চামড়ার থলিতে রাখে না, রাখলে টাটকা রসে থলিগুলো ফেটে যায়। তাতে রসও পড়ে যায়, থলিগুলোও নষ্ট হয়। টাটকা আংগুর-রস নতুন চামড়ার থলিতেই রাখা উচিত। পুরানো আংগুর-রস খাবার পরে কেউ টাটকা আংগুর-রস খেতে চায় না, কারণ সে বলে, ‘পুরানোটাই ভাল।’” কোন এক বিশ্রামবারে যীশু শস্যক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যেরা শীষ ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন। তখন কয়েকজন ফরীশী বললেন, “ধর্মের নিয়ম মতে বিশ্রামবারে যা করা উচিত নয়, তোমরা তা করছ কেন?” যীশু বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সংগীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তিনি কি করেছিলেন তা কি আপনারা পড়েন নি? তিনি তো ঈশ্বরের ঘরে ঢুকে সম্মুখ-রুটি নিয়ে খেয়েছিলেন এবং তাঁর সংগীদেরও দিয়েছিলেন। কিন্তু কেবল মাত্র পুরোহিতেরা ছাড়া আর কারও তা খাবার নিয়ম ছিল না।” শেষে যীশু সেই ফরীশীদের বললেন, “মনুষ্যপুত্রই বিশ্রামবারের কর্তা।” আর এক বিশ্রামবারে যীশু সমাজ-ঘরে গিয়ে শিক্ষা দিচ্ছিলেন। সেখানে এমন একজন লোক ছিল যার ডান হাত শুকিয়ে গিয়েছিল। ধর্ম-শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা যীশুকে দোষ দেবার একটা অজুহাত খুঁজছিলেন। তাই বিশ্রামবারে তিনি কাউকে সুস্থ করেন কি না তা দেখবার জন্য তাঁরা যীশুর উপর ভালভাবে নজর রাখতে লাগলেন। যীশু কিন্তু তাঁদের মনের চিন্তা জানতেন। সেইজন্য যার হাত শুকিয়ে গিয়েছিল তিনি সেই লোকটিকে বললেন, “উঠে সকলের সামনে এসে দাঁড়াও।” তাতে সে উঠে দাঁড়াল। যীশু ধর্ম-শিক্ষক ও ফরীশীদের বললেন, “আমি আপনাদের একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা উচিত, না মন্দ কাজ করা উচিত? প্রাণ রক্ষা করা উচিত, না নষ্ট করা উচিত?” তারপর যীশু চারপাশের সকলের দিকে তাকিয়ে লোকটিকে বললেন, “তোমার হাত বাড়িয়ে দাও।” সে তা করলে পর তার হাত একেবারে ভাল হয়ে গেল। তখন সেই ধর্ম-নেতারা ভীষণ রাগ করলেন এবং যীশুকে নিয়ে কি করা যায় তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলেন। এর পরে যীশু প্রার্থনা করবার জন্য একটা পাহাড়ে গেলেন এবং সারা রাত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে কাটালেন। সকাল হলে পর তিনি তাঁর শিষ্যদের নিজের কাছে ডাকলেন এবং তাঁদের মধ্য থেকে বারোজনকে বেছে নিয়ে তাঁদের প্রেরিত্‌-পদ দিলেন। তাঁরা হলেন শিমোন, যাকে তিনি পিতর নামও দিলেন; শিমোনের ভাই আন্দ্রিয়; যাকোব ও যোহন; ফিলিপ ও বর্থলময়; মথি ও থোমা; আল্‌ফেয়ের ছেলে যাকোব; শিমোন, যাঁকে মৌলবাদী বলা হয়; যাকোবের ছেলে যিহূদা এবং যিহূদা ইস্করিয়োৎ, যে যীশুকে পরে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। যীশু তাঁর শিষ্যদের সংগে নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে একটা সমান জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। সেখানে তাঁর অনেক শিষ্য জড়ো হয়েছিলেন। এছাড়া যিহূদিয়া, যিরূশালেম এবং সোর ও সীদোন নামে সাগর পারের দু’টা শহরের এলাকা থেকেও অনেক লোক সেখানে ছিল। তারা তাঁর কথা শুনবার জন্য এবং রোগ থেকে সুস্থ হবার জন্য সেখানে এসেছিল। যারা মন্দ আত্মার দ্বারা কষ্ট পাচ্ছিল তারা ভাল হচ্ছিল। তখন সব লোক তাঁকে ছোঁবার চেষ্টা করতে লাগল, কারণ তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বের হয়ে সকলকে সুস্থ করছিল। পরে যীশু শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন, “গরীবেরা, তোমরা ধন্য, কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদেরই। ধন্য তোমরা, যাদের এখন খিদে আছে, কারণ তোমরা তৃপ্ত হবে। যারা এখন কাঁদছ, তোমরা ধন্য, কারণ তোমরা হাসবে। “ধন্য তোমরা, যখন মনুষ্যপুত্রের দরুন লোকে তোমাদের ঘৃণা করে, সমাজ থেকে বের করে দেয় ও নিন্দা করে এবং তোমাদের নাম শুনলে থুথু ফেলে। সেই সময় তোমরা খুশী হয়ো ও আনন্দে নেচে উঠো, কারণ স্বর্গে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার আছে। ঐ সব লোকদের পূর্বপুরুষেরা নবীদের উপরও এই রকম করত। “কিন্তু ধিক্‌ ধনী লোকেরা! তোমরা পরিপূর্ণভাবেই সুখ ভোগ করছ। ধিক্‌ তৃপ্ত লোকেরা! তোমাদের তো খিদে পাবে। ধিক্‌ যারা হাসছ! তোমরা দুঃখ করবে ও কাঁদবে। ধিক্‌ তোমাদের, যখন সব লোকে তোমাদের প্রশংসা করে। এই সব লোকদের পূর্বপুরুষেরা ভণ্ড নবীদেরও প্রশংসা করত। “তোমরা যারা শুনছ তাদের আমি বলছি, তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো। যারা তোমাদের ঘৃণা করে তাদের মংগল কোরো। যারা তোমাদের অমংগল চায় তাদের মংগল চেয়ো। যারা তোমাদের সংগে খারাপ ব্যবহার করে তাদের জন্য প্রার্থনা কোরো। যে তোমার এক গালে চড় মারে তাকে অন্য গালেও মারতে দিয়ো। যে তোমার চাদর নিয়ে যায় তাকে জামাও নিতে দিয়ো। যারা তোমার কাছে চায় তাদের দিয়ো। কেউ তোমার কোন জিনিস নিয়ে গেলে তা আর ফেরৎ চেয়ো না। লোকের কাছ থেকে তোমরা যেমন ব্যবহার পেতে চাও তোমরাও তাদের সংগে তেমনই ব্যবহার কোরো। “যারা তোমাদের ভালবাসে তোমরা যদি তাদেরই কেবল ভালবাস তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? খারাপ লোকেরাও তো এইভাবে ভালবেসে থাকে। যারা তোমাদের মংগল করে তোমরা যদি তাদেরই মংগল করতে থাক তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? খারাপ লোকেরাও তো তা করে থাকে। যাদের কাছ থেকে তোমরা ফিরে পাবার আশা কর, যদি তাদেরই টাকা ধার দাও তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? পাবে বলেই তো খারাপ লোকেরা খারাপ লোকদের ধার দিয়ে থাকে। কিন্তু তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো এবং তাদের মংগল কোরো। কিছুই ফেরৎ পাবার আশা না রেখে ধার দিয়ো। তাহলে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার আছে, আর তোমরা মহান ঈশ্বরের সন্তান হবে, কারণ তিনি অকৃতজ্ঞ এবং দুষ্টদেরও দয়া করেন। তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু তোমরাও তেমনি দয়ালু হও। “অন্যদের দোষ ধরে বেড়িয়ো না, তাতে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে না। অন্যদের শাস্তি পাবার যোগ্য বলে মনে কোরো না, তাতে তোমাদেরও শাস্তি পাবার যোগ্য বলে মনে করা হবে না। অন্যদের ক্ষমা কোরো, তাতে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে। দান কোরো, তাতে তোমাদেরও দেওয়া হবে; অনেক বেশী করে, চেপে চেপে, ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে, উপ্‌চে পড়বার মত করে তোমাদের কোঁচড়ে দেওয়া হবে, কারণ যেভাবে তোমরা মেপে দাও সেইভাবে তোমাদের জন্য মাপা হবে।” পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দেবার জন্য এই উদাহরণ দিলেন: “একজন অন্ধ কি অন্য আর একজন অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? তা হলে কি তারা দু’জনেই গর্তে পড়বে না? ছাত্র তার শিক্ষকের উপরে নয়, কিন্তু পরিপূর্ণ শিক্ষা পেয়ে প্রত্যেকটি ছাত্র তার শিক্ষকের মতই হয়ে ওঠে। “তোমার ভাইয়ের চোখে যে কূটা আছে তা-ই কেবল দেখছ, অথচ তোমার নিজের চোখে যে কড়িকাঠ আছে তা লক্ষ্য করছ না কেন? তোমার নিজের চোখে যে কড়িকাঠ আছে তা যখন লক্ষ্য করছ না তখন কেমন করে তোমার ভাইকে বলতে পার, ‘ভাই, তোমার চোখে যে কূটা আছে, এস, তা বের করে দিই’? ভণ্ড, প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠটা বের করে ফেল, তাহলে তোমার ভাইয়ের চোখে যে কূটাটা আছে তা বের করবার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে। “ভাল গাছে খারাপ ফল ধরে না, আবার খারাপ গাছেও ভাল ফল ধরে না। ফল দিয়েই গাছ চেনা যায়। লোকে কাঁটাঝোপ থেকে ডুমুর এবং কাঁটাগাছ থেকে আংগুর তোলে না। ভাল লোক তার অন্তর-ভরা ভাল থেকে ভাল কথাই বের করে আনে, আর মন্দ লোক তার অন্তর-ভরা মন্দ থেকে মন্দ কথা বের করে আনে। মানুষের অন্তর যা দিয়ে পূর্ণ থাকে মুখ তো সেই কথাই বলে। “তোমরা কেন আমাকে ‘প্রভু, প্রভু’ বলে ডাক, অথচ আমি যা বলি তা কর না? যে কেউ আমার কাছে এসে আমার কথা শোনে এবং সেইমত কাজ করে সে কার মত আমি তা তোমাদের বলি। সে এমন একজন লোকের মত, যে ঘর তৈরী করবার জন্য গভীর করে মাটি কেটে পাথরের উপর ভিত্তি গাঁথল। পরে বন্যা আসল এবং নদীর জলের স্রোত সেই ঘরের উপর এসে পড়ল, কিন্তু ঘরটা নাড়াতে পারল না, কারণ সেটা শক্ত করেই তৈরী করা হয়েছিল। যে আমার কথা শোনে অথচ সেইমত কাজ না করে সে এমন একজন লোকের মত, যে মাটির উপর ভিত্তি ছাড়াই ঘর তৈরী করল। পরে নদীর জলের স্রোত যখন সেই ঘরের উপর এসে পড়ল তখনই সেই ঘরটা পড়ে একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।” যীশু লোকদের কাছে এই সব কথা বলা শেষ করে কফরনাহূম শহরে গেলেন। সেখানে একজন রোমীয় শত-সেনাপতির দাস অসুস্থ হয়ে মরবার মত হয়েছিল। এই দাসকে সেই সেনাপতি খুব ভালবাসতেন। তিনি যীশুর বিষয় শুনে যিহূদীদের কয়েকজন বৃদ্ধনেতাকে যীশুর কাছে অনুরোধ করতে পাঠালেন যেন তিনি এসে তাঁর দাসকে সুস্থ করেন। সেই নেতারা যীশুর কাছে এসে তাঁকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বললেন, “আপনি যাঁর জন্য এই কাজ করবেন তিনি এর উপযুক্ত, কারণ তিনি আমাদের লোকদের ভালবাসেন এবং আমাদের সমাজ-ঘর তিনিই তৈরী করিয়ে দিয়েছেন।” তখন যীশু তাঁদের সংগে চললেন। তিনি সেই বাড়ীর কাছে আসলে পর সেই সেনাপতি তাঁর বন্ধুদের দিয়ে বলে পাঠালেন, “প্রভু, আর কষ্ট করবেন না, কারণ আপনি যে আমার বাড়ীতে ঢোকেন তার যোগ্য আমি নই। সেইজন্য আপনার কাছে যাবার উপযুক্তও আমি নিজেকে মনে করি নি। আপনি কেবল মুখে বলুন, তাতেই আমার দাস ভাল হয়ে যাবে। আমি এই কথা জানি, কারণ আমাকেও অন্যের কথামত চলতে হয় এবং সৈন্যেরাও আমার কথামত চলে। আমি একজনকে ‘যাও’ বললে সে যায়, অন্যজনকে ‘এস’ বললে সে আসে, আর আমার দাসকে ‘এটা কর’ বললে সে তা করে।” এই কথা শুনে যীশু আশ্চর্য হলেন এবং যে সব লোকেরা ভিড় করে তাঁর পিছনে আসছিল তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, “আমি আপনাদের বলছি, ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস আমি কখনও দেখি নি।” সেনাপতি যাদের পাঠিয়েছিলেন তারা তাঁর ঘরে ফিরে গিয়ে সেই দাসকে সুস্থ দেখতে পেল। এর কিছু পরে যীশু নায়িন্‌ নামে একটা গ্রামের দিকে চললেন। তাঁর শিষ্যেরা এবং আরও অনেক লোক তাঁর সংগে সংগে যাচ্ছিলেন। যখন তিনি সেই গ্রামের ফটকের কাছে পৌঁছালেন তখন লোকেরা একজন মৃত লোককে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল। যে লোকটি মারা গিয়েছিল সে ছিল তার মায়ের একমাত্র সন্তান, আর সেই মা-ও ছিল বিধবা। গ্রামের অনেক লোক সেই বিধবার সংগে ছিল। সেই বিধবাকে দেখে প্রভু মমতায় পূর্ণ হয়ে বললেন, “আর কেঁদো না।” তারপর যীশু কাছে গিয়ে খাট ছুঁলেন। এতে যারা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়াল। যীশু বললেন, “যুবক, আমি তোমাকে বলছি, ওঠো।” তাতে যে মারা গিয়েছিল সেই লোকটি উঠে বসল এবং কথা বলতে লাগল। যীশু তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন। এতে সকলের অন্তর ভক্তি ও ভয়ে পূর্ণ হল। তারা ঈশ্বরের গৌরব করে বলতে লাগল, “আমাদের মধ্যে একজন মহান নবী উপস্থিত হয়েছেন। ঈশ্বর দয়া করে তাঁর লোকদের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।” যীশুর বিষয়ে এই কথা যিহূদিয়া প্রদেশ ও তার আশেপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে গেল। সেই লোকেরা যীশুর কাছে এসে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা করতে পাঠিয়েছেন, ‘যাঁর আসবার কথা আছে আপনিই কি তিনি, না আমরা অন্য কারও জন্য অপেক্ষা করব?” তখন যীশু অনেক লোককে রোগ থেকে ও ভীষণ যন্ত্রণা থেকে সুস্থ করলেন এবং মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকদের ভাল করলেন আর অনেক অন্ধ লোককেও দেখবার শক্তি দিলেন। এই সব করবার পরে যীশু যোহনের শিষ্যদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “তোমরা যা দেখলে ও শুনলে তা গিয়ে যোহনকে বল। তাঁকে জানাও যে, অন্ধেরা দেখছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, চর্মরোগীরা শুচি হচ্ছে, বয়রা লোকেরা শুনছে, মৃতেরা বেঁচে উঠছে এবং গরীবদের কাছে সুখবর প্রচার করা হচ্ছে। আর সে-ই ধন্য, যে আমাকে নিয়ে মনে কোন বাধা না পায়।” যোহন যাদের পাঠিয়েছিলেন সেই লোকেরা চলে গেলে পর যীশু লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে বলতে লাগলেন, “আপনারা মরু- এলাকায় কি দেখতে গিয়েছিলেন? বাতাসে দোলা নল-খাগড়া? তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলেন? সুন্দর কাপড় পরা একজন লোককে কি? যারা দামী দামী কাপড় পরে ও জাঁকজমকের সংগে বাস করে তারা তো রাজবাড়ীতে থাকে। তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলেন? কোন নবীকে কি? হ্যাঁ, আমি আপনাদের বলছি, তিনি নবীর চেয়েও বড়। যোহনই সেই লোক যাঁর বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘দেখ, আমি তোমার আগে আমার সংবাদদাতাকে পাঠাচ্ছি। সে তোমার আগে গিয়ে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।’ আমি আপনাদের বলছি, মানুষের মধ্যে কেউই যোহনের চেয়ে বড় নয়; তবুও ঈশ্বরের রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট সেও যোহনের চেয়ে মহান।” (সব সাধারণ লোকেরা ও কর্‌-আদায়কারীরা যোহনের প্রচার শুনেছিল এবং তাঁর কাছে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে ঈশ্বরকে ন্যায়বান বলে স্বীকার করে নিয়েছিল। কিন্তু ফরীশীরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন নি বলে নিজেদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে তাঁরা অগ্রাহ্য করেছিলেন)। যীশু আরও বললেন, “তা হলে এই কালের লোকদের আমি কাদের সংগে তুলনা করব? তারা কি রকম? তারা এমন ছেলেমেয়েদের মত যারা বাজারে বসে একে অন্যকে ডেকে বলে, ‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশী বাজালাম কিন্তু তোমরা নাচলে না; আমরা বিলাপের গান গাইলাম কিন্তু তোমরা কাঁদলে না।’ বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসে রুটি বা আংগুর-রস খেলেন না বলে আপনারা বলছেন, ‘তাকে ভূতে পেয়েছে।’ আর মনুষ্যপুত্র এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন বলে আপনারা বলছেন, ‘দেখ, এই লোকটা পেটুক ও মদখোর, কর্‌-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের বন্ধু।’ কিন্তু জ্ঞানের অধীনে যারা চলে তাদের জীবনই প্রমাণ করে যে, জ্ঞান খাঁটি। একজন ফরীশী যীশুকে তাঁর সংগে খাবার নিমন্ত্রণ করলেন। তখন যীশু তাঁর বাড়ীতে গিয়ে ভোজে যোগ দিলেন। সেই গ্রামে একজন খারাপ স্ত্রীলোক ছিল। সেই ফরীশীর ঘরে যীশু ভোজে যোগ দিয়েছেন জানতে পেরে সে একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে আতর নিয়ে আসল। পরে সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং কেঁদে কেঁদে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল এবং তাঁর পায়ের উপর চুমু দিয়ে সেই আতর ঢেলে দিল। যে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন তিনি এ দেখে মনে মনে বলতে লাগলেন, “যদি এই লোকটা নবী হত তবে জানতে পারত, কে এবং কি রকম স্ত্রীলোক তার পা ছুঁচ্ছে; স্ত্রীলোকটা তো খারাপ।” যীশু সেই ফরীশীকে বললেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলবার আছে।” শিমোন বললেন, “গুরু, বলুন।” যীশু বললেন, “কোন এক মহাজনের কাছে দু’জন লোক টাকা ধারত। একজন ধারত পাঁচ শো দীনার আর অন্যজন পঞ্চাশ দীনার। তাদের কারও ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা ছিল না বলে তিনি দয়া করে দু’জনকেই ক্ষমা করলেন। তা হলে বল দেখি, তাদের দু’জনের মধ্যে কে সেই মহাজনকে বেশী ভালবাসবে?” শিমোন বললেন, “আমার মনে হয়, যার বেশী ঋণ ক্ষমা করা হল সে-ই।” যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।” তারপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে মুখ ফিরিয়ে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে তো দেখছ। আমি তোমার ঘরে আসলে পর তুমি আমার পা ধোবার জল দাও নি, কিন্তু সে চোখের জলে আমার পা ভিজিয়ে তার চুল দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছে। তুমি আমাকে চুমু দাও নি, কিন্তু আমি ঘরে আসবার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিচ্ছে। তুমি আমার মাথায় তেল দাও নি, কিন্তু সে আমার পায়ের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে। তাই আমি তোমাকে বলছি, সে বেশী ভালবাসা দেখিয়েছে বলে বুঝা যাচ্ছে যে, তার পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে। যার অল্প ক্ষমা করা হয় সে অল্পই ভালবাসা দেখায়।” পরে যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তোমার পাপ ক্ষমা করা হয়েছে।” যারা যীশুর সংগে খেতে বসেছিল তারা মনে মনে বলতে লাগল, “এ কে, যে পাপও ক্ষমা করে?” যীশু তখন সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তুমি বিশ্বাস করেছ বলে পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। শান্তিতে চলে যাও।” রাজা হেরোদের কর্মচারী কূষের স্ত্রী যোহানা; শোশন্না এবং আরও অনেক স্ত্রীলোক। যীশু ও তাঁর শিষ্যদের সেবা-যত্নের জন্য এঁরা সবাই নিজের টাকা-পয়সা থেকে খরচ করতেন। সেই সময় ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম থেকে অনেক লোক যীশুর কাছে এসে ভিড় করল। তখন তিনি তাদের শিক্ষা দেবার জন্য এই গল্পটা বললেন: “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। বীজ বুনবার সময় কতগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল। লোকেরা সেগুলো পায়ে মাড়াল এবং পাখীরা এসে খেয়ে ফেলল। কতগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ে গজিয়ে উঠল, কিন্তু রস না পেয়ে শুকিয়ে গেল। আবার কতগুলো বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল। পরে কাঁটাগাছ সেই চারাগুলোর সংগে বেড়ে উঠে সেগুলো চেপে রাখল। আবার কতগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ল এবং বেড়ে উঠে একশো গুণ ফসল দিল।” এই কথা বলবার পরে যীশু জোরে বললেন, “যার শুনবার কান আছে সে শুনুক।” এর পরে তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে সেই গল্পের অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন যীশু বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের গোপন সত্যগুলো তোমাদেরই জানতে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যদের কাছে আমি তা গল্পের মধ্য দিয়ে বলি, যেন তারা দেখেও না দেখে আর শুনেও না বোঝে। “গল্পটার মানে এই: বীজ হল ঈশ্বরের বাক্য। পথের পাশে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শোনে বটে, কিন্তু পরে শয়তান এসে তাদের অন্তর থেকে তা তুলে নিয়ে যায়। তাতে তারা তা বিশ্বাস করতে পারে না বলে পাপ থেকে উদ্ধার পায় না। পাথুরে জমিতে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই বাক্য শুনে আনন্দের সংগে গ্রহণ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে তার শিকড় ভাল করে বসে না। তাই তারা অল্প দিনের জন্য বিশ্বাস করে, কিন্তু যখন পরীক্ষা আসে তখন পিছিয়ে যায়। কাঁটাবনের মধ্যে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা তা শোনে, কিন্তু জীবন-পথে চলতে চলতে সংসারের চিন্তা- ভাবনা, ধন-সম্পত্তি এবং সুখভোগের মধ্যে তারা চাপা পড়ে যায়। তাতে তাদের জীবনে কোন পাকা ফল দেখা দেয় না। ভাল জমিতে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সৎ ও সরল মনে সেই বাক্য শুনে শক্ত করে ধরে রাখে এবং তাতে স্থির থেকে জীবনে পাকা ফল দেখায়। “কেউ বাতি জ্বালিয়ে কোন পাত্র দিয়ে তা ঢেকে রাখে না বা খাটের নীচে রাখে না। সে তা বাতিদানের উপরেই রাখে যেন ভিতরে যারা আসে তারা আলো দেখতে পায়। এমন কিছু লুকানো নেই যা প্রকাশিত হবে না, বা এমন কিছু গোপন নেই যা জানা যাবে না কিম্বা প্রকাশ পাবে না। এইজন্য কিভাবে শুনছ সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও, কারণ যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, কিন্তু যার নেই তার যা আছে বলে সে মনে করে, তাও তার কাছে থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।” পরে যীশুর মা ও ভাইয়েরা তাঁর কাছে আসলেন কিন্তু ভিড়ের জন্য তাঁর সংগে দেখা করতে পারলেন না। তখন একজন লোক তাঁকে বলল, “আপনার মা ও ভাইয়েরা আপনার সংগে দেখা করবার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।” এতে যীশু লোকদের বললেন, “যারা ঈশ্বরের বাক্য শুনে সেইমত কাজ করে তারাই আমার মা ও আমার ভাই।” একদিন যীশু ও তাঁর শিষ্যরা একটা নৌকায় উঠলেন। তিনি শিষ্যদের বললেন, “চল, আমরা সাগরের ওপারে যাই।” শিষ্যেরা নৌকা ছাড়লেন। নৌকা চলতে থাকলে যীশু ঘুমিয়ে পড়লেন। সেই সময় হঠাৎ সাগরে ঝড় উঠল এবং নৌকাটা জলে পূর্ণ হতে লাগল। এতে তাঁরা খুব বিপদে পড়লেন। তাঁরা যীশুর কাছে গিয়ে তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “প্রভু, প্রভু, আমরা যে মরলাম!” তখন যীশু উঠে বাতাস ও জলের ঢেউকে ধমক্‌ দিলেন। তাতে বাতাস আর ঢেউ থামল এবং সব কিছু শান্ত হয়ে গেল। তিনি শিষ্যদের বললেন, “তোমাদের বিশ্বাস কোথায়?” শিষ্যেরা ভক্তিপূর্ণ ভয়ে আশ্চর্য হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি কে, যিনি বাতাস ও জলকে আদেশ দিলে পর তারাও তাঁর কথা শোনে?” এর পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা সাগর পার হয়ে গালীল প্রদেশের উল্টা দিকে গাদারীয়দের এলাকায় গেলেন। তিনি যখন নৌকা থেকে নামলেন তখন সেখানকার গ্রামের একজন লোক তাঁর কাছে আসল। সেই লোকটিকে অনেকগুলো মন্দ আত্মায় পেয়েছিল বলে সে অনেক দিন ধরে কাপড়-চোপড় পরত না এবং বাড়ীতে না থেকে কবরস্থানে থাকত। যীশুকে দেখে সে চিৎকার করে উঠল এবং তাঁর সামনে মাটিতে পড়ে জোরে জোরে বলল, “মহান ঈশ্বরের পুত্র যীশু, আমার সংগে আপনার কি সম্বন্ধ? দয়া করে আপনি আমাকে যন্ত্রণা দেবেন না।” লোকটি এই কথা বলল কারণ যীশু সেই মন্দ আত্মাকে তার মধ্য থেকে বের হয়ে যেতে আদেশ দিয়েছিলেন। সেই মন্দ আত্মা বার বার করে লোকটিকে আঁকড়ে ধরত। যদিও তখন তার হাত-পা শিকল দিয়ে বাঁধা থাকত এবং তাকে পাহারা দেওয়া হত তবুও সে সেই শিকল ছিঁড়ে ফেলত, আর সেই মন্দ আত্মা তাকে নির্জন জায়গায় তাড়িয়ে নিয়ে যেত। যীশু তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি?” সে বলল, “বাহিনী,” কারণ অনেকগুলো মন্দ আত্মা তার ভিতরে ঢুকেছিল। তখন সেই আত্মাগুলো যীশুকে কাকুতি-মিনতি করতে লাগল যেন তিনি তাদের অতল গর্তে না পাঠান। যারা শূকর চরাচ্ছিল তারা এই ঘটনা দেখে দৌড়ে গিয়ে সেই গ্রামে ও তার আশেপাশের সব জায়গায় এই খবর দিল। কি হয়েছে তা দেখবার জন্য তখন লোকেরা বের হয়ে আসল। যীশুর কাছে এসে তারা দেখল, যার মধ্য থেকে মন্দ আত্মাগুলো বের হয়ে গেছে সে কাপড়-চোপড় পরে সুস্থ মনে যীশুর পায়ের কাছে বসে আছে। এ দেখে তারা ভয় পেল। যারা সেই ঘটনা দেখেছিল তারা ঐ লোকদের কাছে বলল কেমন করে লোকটা সুস্থ হয়েছে। তখন গাদারীয়দের এলাকার সমস্ত লোক যীশুকে তাদের কাছ থেকে চলে যেতে অনুরোধ করল, কারণ তারা ভীষণ ভয় পেয়েছিল। তখন যীশু ফিরে যাবার জন্য নৌকায় উঠলেন। যে লোকটির মধ্য থেকে মন্দ আত্মাগুলো বের হয়ে গিয়েছিল সেই লোকটি যীশুকে অনুরোধ করল যেন সে তাঁর সংগে যেতে পারে। যীশু কিন্তু তাকে এই কথা বলে বাড়ী পাঠিয়ে দিলেন, “তুমি বাড়ী ফিরে যাও এবং ঈশ্বর তোমার জন্য কত বড় কাজ করেছেন তা প্রচার কর।” সেই লোকটি তখন গ্রামে গেল এবং যীশু তার জন্য কত বড় কাজ করেছেন তা সমস্ত জায়গায় বলে বেড়াতে লাগল। যীশু অন্য পারে ফিরে যাবার পর সেখানকার লোকেরা তাঁকে খুশী মনে গ্রহণ করল, কারণ তারা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। পরে যায়ীর নামে সমাজ-ঘরের একজন নেতা এসে যীশুর পায়ের উপর পড়লেন। তিনি যীশুকে তাঁর বাড়ীতে আসবার জন্য কাকুতি-মিনতি করতে লাগলেন, কারণ তাঁর বারো বছরের একমাত্র মেয়েটি মরবার মত হয়েছিল। যীশু যখন যাচ্ছিলেন তখন লোকেরা তাঁর চারদিকে ভিড় করে ঠেলাঠেলি করছিল। তাদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। ডাক্তারদের পিছনে সে তার সব কিছুই খরচ করেছিল, কিন্তু কেউই তাকে ভাল করতে পারে নি। সে পিছন দিক থেকে যীশুর কাছে এসে তাঁর চাদরের কিনারা ছুঁলো, আর তখনই তার রক্তস্রাব বন্ধ হল। তখন যীশু বললেন, “কে আমাকে ছুঁলো?” সবাই অস্বীকার করলে পর পিতর ও তাঁর সংগীরা যীশুকে বললেন, “গুরু, লোকেরা আপনার চারপাশে চাপাচাপি করে আপনার উপর পড়ছে।” তবুও যীশু বললেন, “আমি জানি কেউ আমাকে ছুঁয়েছে, কারণ আমি বুঝতে পারলাম আমার মধ্য থেকে শক্তি বের হল।” সেই স্ত্রীলোকটি যখন দেখল সে ধরা পড়েছে তখন কাঁপতে কাঁপতে যীশুর সামনে সে উবুড় হয়ে পড়ল। পরে সকলের সামনেই সে যীশুকে বলল কেন সে তাঁকে ছুঁয়েছিল, আর কেমন করে সে তখনই ভাল হয়েছে। এতে যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “মা, তুমি বিশ্বাস করেছ বলে ভাল হয়েছ। শান্তিতে চলে যাও।” যীশু তখনও কথা বলছেন এমন সময় সেই সমাজ-ঘরের নেতার বাড়ী থেকে একজন এসে বলল, “আপনার মেয়েটি মারা গেছে; গুরুকে আর কষ্ট দেবেন না। এই কথা শুনে যীশু যায়ীরকে বললেন, “ভয় করবেন না; কেবল বিশ্বাস করুন, তাতেই সে বাঁচবে।” যীশু যায়ীরের বাড়ীতে পৌঁছে পিতর, যোহন ও যাকোব এবং মেয়েটির মা-বাবা ছাড়া আর কাউকে ঘরের ভিতরে আসতে দিলেন না। সবাই মেয়েটির জন্য কান্নাকাটি ও বিলাপ করছিল। তখন যীশু বললেন, “আর কেঁদো না। মেয়েটি মারা যায় নি, ঘুমাচ্ছে।” লোকেরা ঠাট্টা করতে লাগল, কারণ তারা জানত মেয়েটি মারা গেছে। পরে যীশু মেয়েটির হাত ধরে ডেকে বললেন, “খুকী, ওঠো।” এতে মেয়েটির প্রাণ ফিরে আসল, আর সে তখনই উঠে দাঁড়াল। তখন যীশু আদেশ করলেন যেন মেয়েটিকে কিছু খেতে দেওয়া হয়। মেয়েটির মা-বাবা খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু যীশু তাঁদের বারণ করে দিলেন যেন এই ঘটনার কথা তাঁরা কাউকে না বলেন। এর পরে যীশু সেই বারোজন শিষ্যকে ডেকে একত্র করলেন এবং সব মন্দ আত্মার উপরে ক্ষমতা ও অধিকার দান করলেন। তিনি তাঁদের রোগ ভাল করবার ক্ষমতাও দিলেন। তারপর তিনি তাঁদের ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতে ও রোগীদের সুস্থ করতে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা পথের জন্য লাঠি, থলি, রুটি বা টাকা কিছুই নিয়ো না, এমন কি, দু’টা করে জামাও না। যে বাড়ীতে তোমরা ঢুকবে সেই গ্রাম না ছাড়া পর্যন্ত সেই বাড়ীতেই থেকো। যদি লোকে তোমাদের গ্রহণ না করে তবে তাদের গ্রাম ছেড়ে যাবার সময় তোমাদের পায়ের ধুলা ঝেড়ে ফেলো, যেন সেটাই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।” তখন শিষ্যেরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে এবং রোগ ভাল করতে লাগলেন। যীশু যা করছিলেন সেই সব কথা শুনে শাসনকর্তা হেরোদ কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। এর কারণ হল, কেউ কেউ বলছিল বাপ্তিস্মদাতা যোহন মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন; কেউ কেউ বলছিল এলিয় দেখা দিয়েছেন; আবার কেউ কেউ বলছিল অনেক দিন আগেকার একজন নবী বেঁচে উঠেছেন। হেরোদ বললেন, “আমি তো যোহনের মাথা কেটে ফেলেছি। তবে যার বিষয়ে আমি এই সব শুনছি, সে কে?” হেরোদ যীশুকে দেখবার চেষ্টা করতে লাগলেন। যীশু যে শিষ্যদের পাঠিয়েছিলেন তাঁরা ফিরে আসলেন এবং কি কি করেছেন সব কিছু তাঁরা যীশুকে বললেন। তখন যীশু তাঁদের নিয়ে বৈৎসৈদা গ্রামের কাছে একটা নির্জন জায়গায় গেলেন। সেই খবর জানতে পেরে অনেক লোক যীশুর পিছনে পিছনে চলল। তিনি সেই লোকদের গ্রহণ করলেন এবং তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের কথা বললেন। এছাড়া যাদের সুস্থ হবার দরকার ছিল তিনি তাদের সুস্থ করলেন। যখন বেলা শেষ হয়ে আসল তখন সেই বারোজন শিষ্য এসে যীশুকে বললেন, “আমরা যেখানে আছি সেটা একটা নির্জন জায়গা। তাই এই লোকদের বিদায় দিন যেন তারা কাছের পাড়ায় এবং গ্রামগুলোতে গিয়ে খাবার এবং থাকবার জায়গা খুঁজে নিতে পারে।” যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরাই ওদের খেতে দাও।” তাঁরা বললেন, “কিন্তু আমাদের কাছে কেবল পাঁচটা রুটি আর দু’টা মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই। কেবল যদি আমরা গিয়ে এই সব লোকদের জন্য খাবার কিনে আনতে পারতাম তবেই তাদের খাওয়ানো যেত।” সেখানে কমবেশি পাঁচ হাজার পুরুষ লোক ছিল। যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “পঞ্চাশজন পঞ্চাশজন করে এক এক দলে লোকদের বসিয়ে দাও।” শিষ্যেরা সেই ভাবেই সব লোকদের বসিয়ে দিলেন। তখন যীশু সেই পাঁচটা রুটি আর দু’টা মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকালেন এবং সেগুলোর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেবার পর টুকরা টুকরা করলেন। তারপর তিনি লোকদের দেবার জন্য সেগুলো শিষ্যদের হাতে দিলেন। লোকেরা সবাই পেট ভরে খেল। পরে যে টুকরাগুলো পড়ে রইল তা বারোটা টুকরিতে তুলে নেওয়া হল। একবার যীশু একটা নির্জন জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন। তাঁর সংগে কেবল তাঁর শিষ্যেরাই ছিলেন। তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে, এই বিষয়ে লোকে কি বলে?” শিষ্যেরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন; কেউ কেউ বলে এলিয়; আবার কেউ কেউ বলে অনেক দিন আগেকার একজন নবী বেঁচে উঠেছেন।” যীশু তাঁদের বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?” পিতর বললেন, “আপনি ঈশ্বরের সেই মশীহ।” তখন যীশু তাঁদের সাবধান করলেন এবং আদেশ দিলেন যেন তাঁরা কাউকে এই কথা না বলেন। তিনি তাঁদের আরও বললেন, মনুষ্যপুত্রকে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে। বৃদ্ধনেতারা, প্রধান পুরোহিতেরা এবং ধর্ম-শিক্ষকেরা তাঁকে অগ্রাহ্য করবেন। তাঁকে মেরে ফেলা হবে এবং তিন দিনের দিন তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে। তারপর তিনি সবাইকে বললেন, “যদি কেউ আমার পথে আসতে চায়, তবে সে নিজের ইচ্ছামত না চলুক; প্রত্যেক দিন নিজের ক্রুশ বয়ে নিয়ে সে আমার পিছনে আসুক। যে কেউ তার নিজের জন্য বেঁচে থাকতে চায় সে তার সত্যিকারের জীবন হারাবে; কিন্তু যে আমার জন্য তার প্রাণ হারায় সে তার সত্যিকারের জীবন রক্ষা করবে। যদি কেউ সমস্ত জগৎ লাভ করে তার বিনিময়ে তার সত্যিকারের জীবন হারায় তবে তার কি লাভ হল? যদি কেউ আমাকে নিয়ে ও আমার কথা নিয়ে লজ্জা বোধ করে, তবে মনুষ্যপুত্র যখন নিজের মহিমা এবং পিতা ও পবিত্র স্বর্গদূতদের মহিমায় আসবেন তখন তিনিও সেই লোকের সম্বন্ধে লজ্জা বোধ করবেন। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে যাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য দেখা না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনমতেই মারা যাবে না।” এই সব কথা বলবার প্রায় এক সপ্তার পরে যীশু প্রার্থনা করবার জন্য পিতর, যোহন ও যাকোবকে নিয়ে একটা পাহাড়ে গেলেন। প্রার্থনা করবার সময় যীশুর মুখের চেহারা বদলে গেল এবং তাঁর কাপড়-চোপড় উজ্জ্বল সাদা হয়ে গেল, আর দু’জন লোককে তাঁর সংগে কথা বলতে দেখা গেল। সেই দু’জন ছিলেন মোশি এবং এলিয়। তাঁরা মহিমার সংগে দেখা দিলেন। যিরূশালেমে যে মৃত্যুর সামনে যীশু উপস্থিত হতে যাচ্ছিলেন তাঁরা সেই বিষয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। পিতর ও তাঁর সংগীরা সেই সময় অঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন। তাঁরা জেগে উঠে যীশুর মহিমা দেখতে পেলেন এবং তাঁর সংগে দাঁড়ানো সেই দু’জন লোককেও দেখলেন। সেই দু’জন যখন যীশুর কাছ থেকে চলে যাচ্ছিলেন তখন পিতর যীশুকে বললেন, “গুরু, ভালই হয়েছে যে, আমরা এখানে আছি। আমরা এখানে তিনটা কুঁড়ে-ঘর তৈরী করি-একটা আপনার, একটা মোশির ও একটা এলিয়ের জন্য।” তিনি যে কি বলছিলেন তা নিজেই বুঝলেন না। পিতর যখন কথা বলছিলেন তখন একটা মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল। তাঁরা সেই মেঘের মধ্যে ঢাকা পড়লে পর শিষ্যেরা ভয় পেলেন। সেই মেঘ থেকে এই কথা শোনা গেল, “ইনিই আমার পুত্র যাঁকে আমি বেছে নিয়েছি; তোমরা এঁর কথা শোন।” যখন কথা থেমে গেল তখন দেখা গেল যীশু একাই আছেন। শিষ্যেরা যা দেখেছিলেন সেই বিষয়ে সেই সময় কাউকে কিছু না বলে তাঁরা চুপ করে রইলেন। পরের দিন যীশু ও সেই তিনজন শিষ্য পাহাড় থেকে নেমে আসলে পর অনেক লোক যীশুর সংগে দেখা করতে আসল। তখন ভিড়ের মধ্য থেকে একজন লোক চিৎকার করে যীশুকে বলল, “গুরু, দয়া করে আমার ছেলেটাকে দেখুন। সে আমার একমাত্র ছেলে। তাকে একটা মন্দ আত্মায় ধরে এবং সে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে। সেই আত্মা যখন তাকে মুচড়ে ধরে তখন তার মুখ থেকে ফেনা বের হয়; তারপর সে তাকে খুব কষ্ট দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে ছেড়ে দেয়। আমি আপনার শিষ্যদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছিলাম যেন তাঁরা সেই আত্মাকে ছাড়িয়ে দেন, কিন্তু তাঁরা পারলেন না।” তখন যীশু বললেন, “অবিশ্বাসী ও দুষ্ট লোকেরা! আর কতদিন আমি তোমাদের সংগে থাকব ও তোমাদের সহ্য করব? তোমার ছেলেকে এখানে আন।” ছেলেটা যখন আসছিল তখন সেই মন্দ আত্মা তাকে আছাড় মেরে মুচড়ে ধরল। এতে যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিলেন এবং ছেলেটিকে সুস্থ করে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। ঈশ্বর যে কত মহান তা দেখে সবাই আশ্চর্য হল। যীশু যা করছিলেন সেই বিষয়ে সবাই যখন আশ্চর্য হয়ে ভাবছিল তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমার এই কথা মন দিয়ে শোন, মনুষ্যপুত্রকে লোকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে।” শিষ্যেরা কিন্তু সেই কথা বুঝলেন না। ঈশ্বর তাঁদের কাছ থেকে তা গোপন রেখেছিলেন যেন তাঁরা বুঝতে না পারেন। এই নিয়ে কোন কথা যীশুকে জিজ্ঞাসা করতেও শিষ্যদের ভয় হল। শিষ্যদের মধ্যে কে সবচেয়ে বড় সেই বিষয়ে তাঁদের মধ্যে তর্ক হচ্ছিল। যীশু তাঁদের মনের চিন্তা বুঝতে পেরে একটা শিশুকে নিয়ে নিজের পাশে দাঁড় করালেন। তারপর তিনি তাঁদের বললেন, “যে কেউ আমার নামে এই শিশুকে গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে। যে আমাকে গ্রহণ করে, আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন সে তাঁকেই গ্রহণ করে। তোমাদের সকলের মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট, সে-ই বড়।” যোহন বললেন, “গুরু, আপনার নামে আমরা একজনকে মন্দ আত্মা ছাড়াতে দেখেছি। সে আমাদের দলের লোক নয় বলে আমরা তাকে বারণ করেছি।” যীশু তাঁকে বললেন, “আর বারণ কোরো না, কারণ যে তোমাদের বিপক্ষে থাকে না সে তো তোমাদের পক্ষেই আছে।” যখন যীশুর স্বর্গে যাবার সময় হয়ে আসল তখন তিনি যিরূশালেমে যাবার জন্য মন স্থির করলেন। তিনি আগেই সেখানে লোকদের পাঠিয়ে দিলেন। তারা যীশুর জন্য সব কিছু ব্যবস্থা করতে শমরীয়দের একটা গ্রামে ঢুকল, কিন্তু যীশু যিরূশালেমে যাচ্ছেন বলে সেই গ্রামের লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করল না। তা দেখে তাঁর শিষ্য যাকোব ও যোহন বললেন, “প্রভু, আপনি কি চান যে, এলিয়ের মত আমরা এদের ধ্বংস করবার জন্য স্বর্গ থেকে আগুন নেমে আসতে বলব?” যীশু তাঁদের দিকে ফিরে তাঁদের ধমক দিলেন। তারপর তাঁরা অন্য গ্রামে গেলেন। তাঁরা পথে যাচ্ছেন এমন সময় একজন লোক যীশুকে বলল, “আপনি যেখানে যাবেন আমিও আপনার সংগে সেখানে যাব।” যীশু তাকে বললেন, “শিয়ালের গর্ত আছে এবং পাখীর বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মাথা রাখবার জায়গা কোথাও নেই।” পরে তিনি অন্য আর একজনকে বললেন, “আমার সংগে চল।” কিন্তু সেই লোক বলল, “গুরু, আগে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসতে দিন।” যীশু তাকে বললেন, “মৃতেরাই তাদের মৃতদের কবর দিক, কিন্তু তুমি এসে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার কর।” আর একজন বলল, “গুরু, আমি আপনার সংগে যাব, কিন্তু আগে আমার বাড়ী থেকে আমাকে বিদায় নিয়ে আসতে দিন।” যীশু তাকে বললেন, “লাংগলে হাত দিয়ে যে পিছন দিকে তাকিয়ে থাকে সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযুক্ত নয়।” এর পরে প্রভু যীশু আরও সত্তরজন শিষ্যকে প্রচারে পাঠাবার জন্য বেছে নিলেন। তিনি নিজে যে যে গ্রামে ও যে যে জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন সেই সব জায়গায় যাবার আগে শিষ্যদের দু’জন দু’জন করে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি শিষ্যদের বললেন, “সত্যিই ফসল অনেক, কিন্তু কাজ করবার লোক কম। এইজন্য ফসলের মালিকের কাছে অনুরোধ কর যেন তিনি তাঁর ফসল কাটবার জন্য লোক পাঠিয়ে দেন। তোমরা যাও; নেকড়ে বাঘের মধ্যে ভেড়ার মতই আমি তোমাদের পাঠাচ্ছি। টাকার থলি, ঝুলি বা জুতা সংগে নিয়ো না এবং রাস্তায় কাউকে শুভেচ্ছা জানায়ো না। তোমরা যে বাড়ীতে যাবে প্রথমে বলবে, ‘এই বাড়ীতে শান্তি হোক।’ শান্তি ভালবাসে এমন কেউ যদি সেখানে থাকে তবে তোমাদের শান্তি তার উপরে থাকবে, কিন্তু যদি সেই রকম কেউ না থাকে তবে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছেই ফিরে আসবে। সেই বাড়ীতেই থেকো এবং তারা যা দেয় তা-ই খেয়ো, কারণ যে কাজ করে সে বেতন পাবার যোগ্য। এক বাড়ী ছেড়ে অন্য বাড়ীতে যেয়ো না। “যদি কোন গ্রামে যাও এবং সেখানকার লোকেরা তোমাদের গ্রহণ করে তবে তোমাদের যা খেতে দেওয়া হয় তা-ই খেয়ো। সেই গ্রামের অসুস্থদের সুস্থ কোরো এবং তাদের বোলো, ‘ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসেছে।’ কিন্তু যদি কোন গ্রামে যাও এবং সেখানকার লোকেরা তোমাদের গ্রহণ না করে তবে সেই গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে এই কথা বোলো, ‘তোমাদের গ্রামের যে ধূলা আমাদের পায়ে লেগেছে তাও আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে ঝেড়ে ফেললাম। তবুও তোমরা জেনে রেখো, ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে।’ আমি তোমাদের বলছি, বিচারের দিনে সেই গ্রামের চেয়ে বরং সদোম শহরের লোকদের অবস্থা অনেকখানি সহ্য করবার মত হবে। “ধিক্‌ কোরাসীন! ধিক্‌ বৈৎসৈদা! যে সব আশ্চর্য কাজ তোমাদের মধ্যে করা হয়েছে তা যদি সোর ও সীদোন শহরে করা হত, তবে তারা অনেক দিন আগেই চট পরে ছাইয়ের মধ্যে বসে পাপ থেকে মন ফিরাত। সত্যিই, বিচারের দিনে সোর ও সীদোনের অবস্থা বরং তোমাদের চেয়ে অনেকখানি সহ্য করবার মত হবে। আর তুমি, কফরনাহূম, তুমি নাকি স্বর্গ পর্যন্ত উঁচুতে উঠবে? কখনও না, তোমাকে নীচে মৃতস্থানে ফেলে দেওয়া হবে।” যীশু আবার তাঁর শিষ্যদের বললেন, “যারা তোমাদের কথা শোনে তারা আমারই কথা শোনে। যারা তোমাদের অগ্রাহ্য করে তারা আমাকেই অগ্রাহ্য করে। যারা আমাকে অগ্রাহ্য করে, আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তারা তাঁকেই অগ্রাহ্য করে।” সেই সত্তরজন শিষ্য আনন্দের সংগে ফিরে এসে বললেন, “প্রভু, আপনার নাম করে বললে মন্দ আত্মারা পর্যন্ত আমাদের কথা শোনে।” যীশু তাঁদের বললেন, “আমি শয়তানকে স্বর্গ থেকে বিদ্যুৎ চম্‌কাবার মত করে পড়ে যেতে দেখেছি। দেখ, আমি তোমাদের সাপ ও বিছার উপর দিয়ে হেঁটে যাবার ক্ষমতা দিয়েছি এবং তোমাদের শত্রু শয়তানের সমস্ত শক্তির উপরেও ক্ষমতা দিয়েছি। কোন কিছুই তোমাদের ক্ষতি করবে না। কিন্তু মন্দ আত্মারা তোমাদের কথা শোনে বলে আনন্দিত হয়ো না বরং স্বর্গে তোমাদের নাম লেখা হয়েছে বলে আনন্দিত হয়ো।” তখন যীশু পবিত্র আত্মার দেওয়া আনন্দে আনন্দিত হয়ে বললেন, “হে পিতা, তুমি স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু। আমি তোমার গৌরব করি, কারণ তুমি এই সব বিষয় জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছ কিন্তু শিশুর মত লোকদের কাছে প্রকাশ করেছ। হ্যাঁ পিতা, তোমার ইচ্ছামতই এটা হয়েছে। “আমার পিতা আমার হাতে সব কিছুই দিয়েছেন। পিতা ছাড়া আর কেউ জানে না পুত্র কে, আবার পুত্র ছাড়া আর কেউ জানে না পিতা কে। এছাড়া পুত্র যার কাছে পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন কেবল সে-ই জানে। পরে তিনি শিষ্যদের দিকে ফিরে তাঁদের গোপনে বললেন, “তোমরা যা যা দেখছ, তা যারা দেখতে পায় তারা ধন্য। আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যা যা দেখছ, অনেক নবী ও রাজা তা দেখতে চেয়েও দেখতে পান নি; আর তোমরা যা যা শুনছ, তা শুনতে চেয়েও শুনতে পান নি।” একবার একজন ধর্ম-শিক্ষক যীশুর কাছে আসলেন। যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য সেই শিক্ষক বললেন, “গুরু, কি করলে আমি অনন্ত জীবন লাভ করতে পারব?” যীশু তাঁকে বললেন, “মোশির আইন-কানুনে কি লেখা আছে? সেখানে কি পড়েছেন?” সেই ধর্ম-শিক্ষক যীশুকে উত্তর দিলেন, “তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত শক্তি ও সমস্ত মন দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে; আর তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে।” যীশু তাঁকে বললেন, “আপনি ঠিক উত্তর দিয়েছেন। যদি আপনি তা করতে থাকেন তবে জীবন পাবেন।” সেই শিক্ষক নিজের সম্মান রক্ষা করবার জন্য যীশুকে বললেন, “আমার প্রতিবেশী কে?” যীশু উত্তর দিলেন, “একজন লোক যিরূশালেম থেকে যিরীহো শহরে যাবার সময় ডাকাতদের হাতে পড়ল। তারা লোকটির কাপড় খুলে ফেলল এবং তাকে মেরে আধমরা করে রেখে গেল। পরে একজন পুরোহিত সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি সেই লোকটিকে দেখে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। ঠিক সেইভাবে একজন লেবীয় সেই জায়গায় আসল এবং তাকে দেখতে পেয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। তারপর শমরিয়া প্রদেশের একজন লোকও সেই পথ দিয়ে যেতে যেতে ঐ লোকটির কাছাকাছি আসল। তাকে দেখে তার মমতা হল। লোকটির কাছে গিয়ে সে তার আঘাতের উপর তেল আর আংগুর-রস ঢেলে দিয়ে বেঁধে দিল। তারপর তার নিজের গাধার উপর তাকে বসিয়ে একটা হোটেলে নিয়ে গিয়ে তার সেবা-যত্ন করল। পরের দিন সেই শমরীয় দু’টা দীনার বের করে হোটেলের মালিককে দিয়ে বলল, ‘এই লোকটিকে যত্ন করবেন। যদি এর চেয়ে বেশী খরচ হয় তবে আমি ফিরে এসে তা শোধ করব।’ ” শেষে যীশু বললেন, “এখন আপনার কি মনে হয়? এই তিনজনের মধ্যে কে সেই ডাকাতদের হাতে পড়া লোকটির প্রতিবেশী?” সেই ধর্ম-শিক্ষক বললেন, “যে তাকে মমতা করল সেই লোক।” তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তা হলে আপনিও গিয়ে সেই রকম করুন।” এর পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা পথ চলতে চলতে কোন একটা গ্রামে ঢুকলেন। সেখানে মার্থা নামে একজন স্ত্রীলোক খুশী হয়ে তাঁর ঘরে যীশুকে গ্রহণ করলেন। মরিয়ম নামে মার্থার একটি বোন ছিলেন। তিনি প্রভুর পায়ের কাছে বসে তাঁর কথা শুনছিলেন। মার্থা কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত ছিলেন। তাই তিনি এসে বললেন, “প্রভু, আপনি কি দেখেন না, আমার বোন সমস্ত কাজ একা আমার উপর ফেলে দিয়েছে? আপনি ওকে বলুন যেন ও আমাকে সাহায্য করে।” তখন যীশু মার্থাকে বললেন, “মার্থা, মার্থা, তুমি অনেক বিষয়ে চিন্তিত ও ব্যস্ত, কিন্তু একটাই মাত্র দরকারী বিষয় আছে। মরিয়ম সেই ভাল বিষয়টাই বেছে নিয়েছে। ওটা তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে না।” এক সময়ে যীশু কোন একটা জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন। প্রার্থনা শেষ হলে পর তাঁর একজন শিষ্য তাঁকে বললেন, “প্রভু, বাপ্তিস্মদাতা যোহন যেমন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন তেমনি আমাদেরও আপনি প্রার্থনা করতে শিখান।” যীশু তাঁদের বললেন, “যখন তোমরা প্রার্থনা কর তখন বোলো, ‘হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক। তোমার রাজ্য আসুক। প্রত্যেক দিনের খাবার তুমি আমাদের প্রত্যেক দিন দাও। আমাদের পাপ ক্ষমা কর, কারণ যারা আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করে আমরা তাদের ক্ষমা করি। আমাদের তুমি পরীক্ষায় পড়তে দিয়ো না।’ ” তারপর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “মনে কর, মাঝ রাতে তোমাদের মধ্যে একজন তার বন্ধুর বাড়ীতে গিয়ে বলল, ‘বন্ধু, আমাকে তিনটা রুটি ধার দাও। আমার এক বন্ধু পথে যেতে যেতে আমার কাছে এসেছে। তাকে খেতে দেবার মত আমার কিছুই নেই।’ তখন ঘরের ভিতর থেকে তার বন্ধু উত্তর দিল, ‘আমাকে কষ্ট দিয়ো না। দরজা এখন বন্ধ আর আমার ছেলেমেয়েরা বিছানায় আমার কাছে শুয়ে আছে। আমি উঠে তোমাকে কিছুই দিতে পারব না।’ আমি তোমাদের বলছি, সে যদি বন্ধু হিসাবে উঠে তাকে কিছু না-ও দেয়, তবু লোকটি বারবার অনুরোধ করছে বলে সে উঠবে এবং তার যা দরকার তা তাকে দেবে। “এইজন্য আমি তোমাদের বলছি, চাও, তোমাদের দেওয়া হবে; খোঁজ কর, পাবে; দরজায় ঘা দেও, তোমাদের জন্য খোলা হবে। যারা চায় তারা প্রত্যেকে পায়; যে খোঁজ করে সে পায়; আর যে দরজায় ঘা দেয় তার জন্য দরজা খোলা হয়। তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কে আছে, যে তার ছেলে রুটি চাইলে তাকে পাথর দেবে, কিম্বা মাছ চাইলে সাপ দেবে, কিম্বা ডিম চাইলে বিছা দেবে? তাহলে তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে যারা স্বর্গস্থ পিতার কাছে চায়, তিনি যে তাদের পবিত্র আত্মাকে দেবেন এটা কত না নিশ্চয়!” অন্য এক সময়ে যীশু একটা বোবা মন্দ আত্মা দূর করছিলেন। মন্দ আত্মা দূর হয়ে গেলে পর বোবা লোকটা কথা বলতে লাগল। এতে লোকেরা আশ্চর্য হল, কিন্তু কয়েকজন বলল, “মন্দ আত্মাদের রাজা বেল্‌সবূলের সাহায্যে সে মন্দ আত্মা ছাড়ায়।” অন্য লোকেরা যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য স্বর্গ থেকে একটা চিহ্ন দেখাতে বলল। তাদের মনের কথা বুুঝতে পেরে যীশু বললেন, “যে রাজ্য নিজের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় সেই রাজ্য ধ্বংস হয়, আর তাতে সেই রাজ্যের পরিবারগুলোও ভাগ হয়ে যায়। শয়তানও যদি নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তবে কেমন করে তার রাজ্য টিকবে? আপনারা বলছেন আমি বেল্‌সবূলের সাহায্যে মন্দ আত্মা ছাড়াই। বেশ ভাল, আমি যদি বেল্‌সবূলের সাহায্যেই তাদের ছাড়াই তবে আপনাদের লোকেরা কার সাহায্যে মন্দ আত্মা ছাড়ায়? আপনারা ঠিক কথা বলছেন কিনা আপনাদের লোকেরাই তা বিচার করবেন। কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের শক্তিতে মন্দ আত্মা ছাড়াই তবে ঈশ্বরের রাজ্য তো আপনাদের কাছে এসে গেছে। “একজন বলবান লোক সব রকম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যখন নিজের ঘর পাহারা দেয় তখন তার জিনিসপত্র নিরাপদে থাকে। কিন্তু তার চেয়ে বলবান কেউ এসে যদি তাকে আক্রমণ করে হারিয়ে দেয় তবে যে অস্ত্রশস্ত্রের উপর সে নির্ভর করেছিল, অন্য লোকটি সেগুলো কেড়ে নেয় আর লুট-করা জিনিসগুলো ভাগ করে নেয়। “যদি কেউ আমার পক্ষে না থাকে তবে তো সে আমার বিপক্ষে আছে। যে আমার সংগে কুড়ায় না সে ছড়ায়। “কোন মন্দ আত্মা যখন একজন লোকের মধ্য থেকে বের হয়ে যায় তখন সে বিশ্রামের খোঁজে শুকনা জায়গার মধ্য দিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পরে তা না পেয়ে সে বলে, ‘আমি যে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি আবার আমি সেই ঘরেই ফিরে যাব।’ ফিরে এসে সেই ঘরটা সে খালি, পরিষ্কার এবং সাজানো দেখতে পায়। তখন সে গিয়ে নিজের চেয়েও খারাপ অন্য আরও সাতটা মন্দ আত্মা সংগে করে নিয়ে আসে এবং সেখানে ঢুকে বাস করতে থাকে। তার ফলে সেই লোকটার প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরও খারাপ হয়।” যীশু যখন কথা বলছিলেন তখন ভিড়ের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে বলল, “ধন্য সেই স্ত্রীলোক, যিনি আপনাকে গর্ভে ধরেছেন এবং বুকের দুধ খাইয়েছেন।” কিন্তু যীশু বললেন, “এর চেয়ে বরং তারা ধন্য যারা ঈশ্বরের বাক্য শোনে এবং সেইমত কাজ করে।” আরও লোক যীশুর চারদিকে জড়ো হতে থাকল। তখন যীশু বললেন, “এই কালের লোকেরা খারাপ। তারা চিহ্নের খোঁজ করে কিন্তু নবী যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন তাদের দেখানো হবে না। নীনবী শহরের লোকদের জন্য যোনা যেমন নিজেই চিহ্ন হয়েছিলেন ঠিক তেমনি করে এই কালের লোকদের জন্য মনুষ্যপুত্র চিহ্ন হবেন। বিচারের দিনে দক্ষিণ দেশের রাণী উঠে এই কালের লোকদের দোষ দেখিয়ে দেবেন, কারণ শলোমন রাজার জ্ঞানের কথাবার্তা শুনবার জন্য তিনি পৃথিবীর শেষ সীমা থেকে এসেছিলেন; আর দেখুন, এখানে শলোমনের চেয়েও আরও মহান একজন আছেন। বিচারের দিনে নীনবী শহরের লোকেরা উঠে এই কালের লোকদের দোষ দেখিয়ে দেবে, কারণ যোনার প্রচারের ফলে নীনবীর লোকেরা পাপ থেকে মন ফিরিয়েছিল; আর দেখুন, এখানে যোনার চেয়েও আরও মহান একজন আছেন। “কেউ বাতি জ্বেলে কোন গোপন জায়গায় বা ঝুড়ির নীচে রাখে না বরং বাতিদানের উপরেই রাখে, যেন ভিতরে যারা ঢোকে তারা আলো দেখতে পায়। আপনার চোখ হল আপনার দেহের প্রদীপ। যদি আপনার চোখ ভাল হয় তবে আপনার সমস্ত দেহ আলোতে পূর্ণ হবে, কিন্তু চোখ মন্দ হলে আপনার দেহও অন্ধকারে পূর্ণ হবে। আপনার মধ্যে যে আলো আছে তা আসলে অন্ধকার কি না সেই বিষয়ে সাবধান হোন। আপনার সারা দেহ যদি আলোতে পূর্ণ হয় এবং একটুও অন্ধকার না থাকে তবে তা সম্পূর্ণ আলোময় হবে, ঠিক যেমন বাতির আলো আপনার উপর পড়লে আপনার দেহ আলোময় হয়।” যীশু কথা বলা শেষ করলে পর একজন ফরীশী যীশুকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করলেন। তখন যীশু ভিতরে গিয়ে খেতে বসলেন। সেই ফরীশী যখন দেখলেন খাওয়ার আগে যীশু ধর্মের নিয়ম মত হাত ধুলেন না তখন তিনি অবাক হলেন। প্রভু তাঁকে বললেন, “তবে শুনুন, আপনারা, অর্থাৎ ফরীশীরা থালা ও বাটির বাইরের দিকটা পরিষ্কার করে থাকেন, কিন্তু আপনাদের ভিতরটা লোভ ও মন্দতায় ভরা। আপনারা মূর্খ! যিনি বাইরের দিক তৈরী করেছেন তিনি কি ভিতরের দিকও তৈরী করেন নি? আপনাদের থালা-বাটির ভিতরে যা আছে তা-ই বরং ভিক্ষার মত দান করুন; দেখবেন, সব কিছুই আপনাদের কাছে শুচি হবে। “ধিক্‌ ফরীশীরা! আপনারা ঈশ্বরকে পুদিনা, তেজপাতা ও সব রকম শাকের দশ ভাগের এক ভাগ দিয়ে থাকেন, কিন্তু ন্যায়বিচার ও ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসার দিকে মনোযোগ দেন না। আগেরগুলো পালন করবার সংগে সংগে পরেরগুলোও পালন করা আপনাদের উচিত। “ধিক্‌ ফরীশীরা! সমাজ-ঘরের প্রধান প্রধান আসনে বসতে এবং হাটে-বাজারে সম্মান পেতে আপনারা ভালবাসেন। ধিক্‌ আপনাদের! আপনারা তো চিহ্ন না দেওয়া কবরের মত। লোকে না জেনে তার উপর দিয়ে হেঁটে যায়।” তখন ধর্ম-শিক্ষকদের মধ্যে একজন যীশুকে বললেন, “গুরু, এই কথা বলে আপনি আমাদেরও অপমান করছেন।” যীশু বললেন, “ধিক্‌ ধর্ম-শিক্ষকেরা! আপনারা লোকদের উপর ভারী বোঝা চাপিয়ে দিয়ে থাকেন, কিন্তু তাদের সাহায্য করবার জন্য নিজেরা একটা আংগুলও নাড়ান না। “ধিক্‌ আপনাদের! নবীদের কবর আপনারা নতুন করে গেঁথে থাকেন, অথচ আপনাদের পূর্বপুরুষেরাই তো তাঁদের খুন করেছিল। সেইজন্য আপনাদের পূর্বপুরুষদের কাজের সাক্ষী আপনারাই এবং তাদের সেই কাজ আপনারা মেনেও নিচ্ছেন। একদিকে তারা নবীদের খুন করেছে, অন্যদিকে আপনারা সেই নবীদের কবর গাঁথছেন। এইজন্য ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য অনুসারে এই কথা বলেছেন, ‘আমি তাদের কাছে নবীদের ও প্রেরিতদের পাঠিয়ে দেব। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে তারা খুন করবে এবং অন্যদের উপর অত্যাচার করবে।’ এর ফল হল, জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে আরম্ভ করে যতজন নবীকে খুন করা হয়েছে, তাঁদের রক্তের দায়ী হবে এই কালের লোকেরা। হ্যাঁ, আমি আপনাদের বলছি, হেবলের খুন থেকে আরম্ভ করে যে সখরিয়কে বেদী এবং পবিত্র স্থানের মধ্যে মেরে ফেলা হয়েছিল সেই সখরিয়ের খুন পর্যন্ত সমস্ত রক্তের দায়ী হবে এই কালের লোকেরা। “ধিক্‌ ধর্ম-শিক্ষকেরা! আপনারা জ্ঞানের চাবি নিয়ে গেছেন। নিজেরাও ভিতরে ঢোকেন নি এবং যারা ভিতরে ঢুকতে চাইছিল তাদের ও ঢুকতে দেন নি।” এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এমনভাবে জড়ো হল যে, তারা ঠেলাঠেলি করে একে অন্যের উপর পড়তে লাগল। তখন যীশু প্রথমে তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ফরীশীদের খামি থেকে সাবধান হও। সেই খামি হল তাঁদের ভণ্ডামি। লুকানো সব কিছুই প্রকাশ পাবে এবং গোপন সব কিছুই জানানো হবে। তোমরা অন্ধকারে যা বলেছ তা লোকে আলোতে শুনবে। ভিতরের ঘরে যা কানে কানে বলেছ তা ছাদের উপর থেকে প্রচার করা হবে। “বন্ধুরা আমার, আমি তোমাদের বলছি, যারা দেহ ধ্বংস করবার পরে আর কিছুই করতে পারে না তাদের ভয় কোরো না। কাকে ভয় করবে আমি তোমাদের তা বলে দিচ্ছি। তোমাদের মেরে ফেলবার পরে নরকে ফেলে দেবার ক্ষমতা যাঁর আছে তাঁকেই ভয় কোরো। হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তাঁকেই ভয় কোরো। “পাঁচটা চড়াই পাখী কি সামান্য দামে বিক্রি হয় না? তবুও ঈশ্বর সেগুলোর একটাকেও ভুলে যান না। এমন কি, তোমাদের মাথার চুলগুলোও তাঁর গোণা আছে। ভয় কোরো না, অনেক অনেক চড়াই পাখীর চেয়েও তোমাদের মূল্য অনেক বেশী। “আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ লোকদের সামনে আমাকে স্বীকার করে মনুষ্যপুত্রও তাকে ঈশ্বরের দূতদের সামনে স্বীকার করবেন। কিন্তু যে কেউ আমাকে লোকদের সামনে অস্বীকার করে তাকে ঈশ্বরের দূতদের সামনে অস্বীকার করা হবে। মনুষ্যপুত্রের বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বললে তাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু যদি কেউ পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলে তাকে ক্ষমা করা হবে না। লোকে তোমাদের যখন সমাজ-ঘরে এবং শাসনকর্তা ও ক্ষমতাশালী লোকদের সামনে নিয়ে যাবে, তখন কিভাবে নিজের পক্ষে কথা বলবে বা কি উত্তর দেবে সেই বিষয়ে চিন্তিত হোয়ো না। কি বলতে হবে পবিত্র আত্মাই সেই মুহূর্তে তা তোমাদের শিখিয়ে দেবেন।” ভিড়ের মধ্য থেকে একজন লোক যীশুকে বলল, “গুরু, আমাদের বাবা যে সম্পত্তি আমাদের জন্য রেখে গেছেন, আমার ভাইকে তা আমার সংগে ভাগ করে নিতে বলুন।” যীশু তাকে বললেন, “বিচার করবার বা আপনাদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দেবার অধিকার আমাকে কে দিয়েছে?” তারপর যীশু লোকদের বললেন, “সাবধান! সব রকম লোভের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করুন, কারণ অনেক বিষয়-সম্পত্তি থাকাই মানুষের জীবনের সবচেয়ে দরকারী বিষয় নয়।” এর পরে যীশু লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য এই উদাহরণ দিলেন: “কোন একজন ধনী লোকের জমিতে অনেক ফসল হয়েছিল। এইজন্য সে মনে মনে বলতে লাগল, ‘এত ফসল রাখবার জায়গা তো আমার নেই; আমি এখন কি করি? আচ্ছা, আমি একটা কাজ করব। আমার গোলাঘরগুলো ভেংগে ফেলে বড় বড় গোলাঘর তৈরী করব এবং আমার সমস্ত ফসল ও ধন সেখানে রাখব। পরে আমি নিজেকে বলব, অনেক বছরের জন্য অনেক ভাল ভাল জিনিস জমা করা আছে। আরাম কর, খাওয়া-দাওয়া কর, আমোদ-আহ্‌লাদে দিন কাটাও।’ ঈশ্বর কিন্তু তাকে বললেন, ‘ওহে বোকা, আজ রাতেই তোমাকে মরতে হবে। তাহলে যে সব জিনিস তুমি জমা করেছ সেগুলো কে ভোগ করবে?’ ” শেষে যীশু বললেন, “যে লোক নিজের জন্য ধন-সম্পত্তি জমা করে অথচ ঈশ্বরের চোখে ধনী নয়, তার অবস্থা ঐ রকমই হয়।” এর পর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এইজন্যই আমি তোমাদের বলছি, কি খাবে বলে বেঁচে থাকবার বিষয়ে কিম্বা কি পরবে বলে দেহের বিষয়ে চিন্তিত হোয়ো না। প্রাণটা কেবল খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপার নয়, আর দেহটা কেবল কাপড়-চোপড়ের ব্যাপার নয়। কাকগুলোর দিকে চেয়ে দেখ, তারা বীজও বোনে না ফসলও কাটে না। তাদের গুদাম-ঘর বা গোলাঘরও নেই, তবুও ঈশ্বর তাদের খাইয়ে থাকেন। তোমরা এই পাখীদের চেয়ে আরও বেশী মূল্যবান। তোমাদের মধ্যে কে চিন্তা-ভাবনা করে নিজের আয়ু এক ঘণ্টা বাড়াতে পারে? তা হলে এই সামান্য কাজটাও যদি তোমরা করতে না পার তবে অন্যান্য বিষয়ের জন্য কেন চিন্তা কর? “ভেবে দেখ, ফুল কেমন করে বেড়ে ওঠে। তারা পরিশ্রমও করে না সুতাও কাটে না। কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, শলোমন রাজা এত জাঁকজমকের মধ্যে থেকেও এগুলোর একটারও মত নিজেকে সাজাতে পারেন নি। মাঠে যে ঘাস আজ আছে আর কাল চুলায় ফেলে দেওয়া হবে, ঈশ্বর তা যখন এইভাবে সাজান তখন ওহে অল্প-বিশ্বাসীরা, তিনি যে তোমাদের সাজাবেন তা কত না নিশ্চয়! কি খাওয়া-দাওয়া করবে ভেবে ব্যস্ত হয়ো না বা অস্থির হয়ো না। এই জগতের অন্যান্য জাতিরা ঐ সব বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়; এছাড়া তোমাদের পিতা তো জানেন যে, তোমাদের এগুলোর দরকার আছে। তার চেয়ে বরং ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে ব্যস্ত হও, তা হলে এগুলোও তোমরা পাবে। “হে আমার মেষের ছোট দল, ভয় কোরো না, কারণ তোমাদের পিতার ইচ্ছা এই যে, তাঁর রাজ্য তিনি তোমাদের দেবেন। তোমাদের বিষয়- সম্পত্তি বিক্রি করে ভিক্ষা হিসাবে দান কর। যে টাকার থলি কখনও পুরানো হয় না তা-ই নিজেদের জন্য তৈরী কর, অর্থাৎ যে ধন চিরদিন টিকে থাকে তা-ই স্বর্গে জমা কর। সেখানে চোরও আসে না এবং পোকায়ও নষ্ট করে না। তোমাদের ধন যেখানে থাকবে তোমাদের মনও সেখানে থাকবে। “কোমরে কাপড় জড়িয়ে এবং তোমাদের বাতি জ্বালিয়ে নিয়ে প্রস্তুত থাক। তোমরা এমন লোকদের মত হও যারা তাদের মনিবের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, যেন তিনি বিয়ের ভোজ থেকে ফিরে এসে দরজায় ঘা দিলেই তারা দরজা খুলে দিতে পারে। মনিব যে দাসদের জেগে থাকতে দেখবেন, তারাই ধন্য। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সেই মনিব কোমরে কাপড় জড়িয়ে নিয়ে তাদের বসাবেন এবং এসে নিজেই তাদের খাওয়াবেন। ধন্য সেই সব দাস, যাদের তিনি এসে জেগে থাকতে দেখবেন, তা মাঝ রাতে হোক বা শেষ রাতে হোক। এই কথা তোমরা জেনো, চোর কোন্‌ সময় আসবে তা যদি বাড়ীর কর্তা জানতেন তা হলে জেগে থাকতেন আর সেই চোরকে তাঁর ঘরে ঢুকতে দিতেন না। সেইভাবে তোমরাও প্রস্তুত থাক, কারণ যে সময়ের কথা তোমরা চিন্তাও করবে না সেই সময়েই মনুষ্যপুত্র আসবেন।” তখন পিতর বললেন, “প্রভু, আপনি এই শিক্ষা কি আমাদের দিচ্ছেন, না সকলকে দিচ্ছেন?” উত্তরে প্রভু বললেন, “সেই বিশ্বস্ত ও জ্ঞানী কর্মচারী কে, যাকে তার মনিব তাঁর দাসদের ঠিক সময়ে খাবার ভাগ করে দেবার ভার দেবেন? সেই দাস ধন্য, যাকে তাঁর মনিব এসে বিশ্বস্তভাবে কাজ করতে দেখবেন। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, সেই মনিব তাঁকে তাঁর সমস্ত বিষয়- সম্পত্তির ভার দেবেন। কিন্তু ধর, সেই দাস মনে মনে বলল, ‘আমার মনিব আসতে দেরি করছেন।’ সেই সুযোগে সে দাস-দাসীদের মারধর করতে শুরু করল এবং খাওয়া-দাওয়া করবার পরে মদ খেয়ে মাতাল হল। তাহলে যেদিন ও যে সময়ের কথা সে চিন্তাও করবে না, সেই দিন ও সেই সময়েই তার মনিব এসে হাজির হবেন। তিনি তাঁকে কেটে দু’টুকরা করে অবিশ্বাসীদের মধ্যে তার স্থান ঠিক করবেন। “যে দাস তার মনিবের ইচ্ছা জেনেও প্রস্তুত থাকে নি কিম্বা মনিব যা চান তা করে নি তাকে ভীষণভাবে মার খেতে হবে। কিন্তু না জেনে যে শাস্তি পাবার কাজ করেছে তার অল্পই শাস্তি হবে। যাকে বেশী দেওয়া হয় তার কাছে থেকে বেশী দাবি করা হবে; আর লোকে যার কাছে বেশী রেখেছে তার কাছে তারা বেশীই চাইবে। “আমি পৃথিবীতে আগুন জ্বালাতে এসেছি; যদি তা আগেই জ্বলে উঠত তবে কত না ভাল হত! আমাকে একটা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে হবে, আর যতদিন পর্যন্ত তা না হয় ততদিন পর্যন্ত আমার দুঃখের শেষ নেই। তোমাদের কি মনে হয় যে, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি? না, তা নয়। আমি শান্তি দিতে আসি নি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি। এখন থেকে এক বাড়ীর পাঁচজন ভাগ হয়ে যাবে, তিনজন দু’জনের বিরুদ্ধে আর দু’জন তিনজনের বিরুদ্ধে। তারা এইভাবে ভাগ হয়ে যাবে-বাবা ছেলের বিরুদ্ধে ও ছেলে বাবার বিরুদ্ধে, মা মেয়ের বিরুদ্ধে ও মেয়ে মায়ের বিরুদ্ধে, শাশুড়ী বউয়ের বিরুদ্ধে ও বউ শাশুড়ীর বিরুদ্ধে।” তারপর যীশু লোকদের বললেন, “আপনারা পশ্চিম দিকে মেঘ করতে দেখলেই বলেন, ‘ঝড় আসছে,’ আর তা-ই হয়। আবার দখিনা বাতাস বইতে দেখলে বলেন, ‘গরম পড়বে,’ আর তা-ই হয়। আপনারা ভণ্ড! আপনারা পৃথিবী ও আকাশের চেহারার অর্থ বুঝতে পারেন, অথচ এ কেমন যে, আপনারা এখনকার সময়ে অর্থ বোঝেন না? “যা ঠিক তা আপনারা নিজেরা ভেবে স্থির করেন না কেন? আপনারা বিপক্ষের সংগে বিচারকের কাছে যাবার সময়ে পথেই তার সংগে একটা মীমাংসার চেষ্টা করবেন। তা না হলে সে আপনাকে বিচারকের কাছে টেনে নিয়ে যাবে। তখন বিচারক আপনাকে পুলিশের হাতে দেবে এবং পুলিশ আপনাকে জেলে দেবে। আমি আপনাকে বলছি, শেষ পয়সাটা না দেওয়া পর্যন্ত আপনি কিছুতেই জেল থেকে ছাড়া পাবেন না।” সেই সময় সেখানে উপস্থিত কয়েকজন লোক যীশুকে গালীল প্রদেশের কয়েকজন লোকের বিষয়ে বলল। তারা বলল যে, রোমীয় শাসনকর্তা পীলাত এই গালীলীয়দের কেটে তাদের উৎসর্গ-করা পশুর রক্তের সংগে তাদের রক্তও মিশিয়েছিলেন। এই কথা শুনে যীশু বললেন, “আপনাদের কি মনে হয় যে, সেই গালীলীয়েরা ঐভাবে যন্ত্রণা ভোগ করেছে বলে তারা অন্য সব গালীলীয়দের চেয়ে বেশী পাপী ছিল? আমি আপনাদের বলছি, তা নয়, তবে পাপ থেকে মন না ফিরালে আপনারাও সবাই বিনষ্ট হবেন। শীলোহের উঁচু ঘরটা পড়ে যাওয়ার দরুন যে আঠারোজনের মৃত্যু হয়েছিল, আপনাদের কি মনে হয় যে, যিরূশালেমের বাকী লোকদের চেয়ে তাদের বেশী দোষ ছিল? আমি আপনাদের বলছি, তা নয়, কিন্তু পাপ থেকে মন না ফিরালে আপনারাও সবাই বিনষ্ট হবেন।” তারপর শিক্ষা দেবার জন্য যীশু এই কথা বললেন: “কোন একজন লোকের ফলের বাগানে একটা ডুমুর গাছ লাগানো হয়েছিল। একবার তিনি এসে ফলের খোঁজ করলেন কিন্তু পেলেন না। তখন তিনি মালীকে বললেন, ‘দেখ, তিন বছর ধরে এই ডুমুর গাছে আমি ফলের খোঁজ করছি কিন্তু কিছুই পাচ্ছি না। এইজন্য তুমি গাছটা কেটে ফেল। কেন এটা শুধু শুধু জমি নষ্ট করবে?’ মালী উত্তর দিল, ‘হুজুর, এই বছরও ওটা থাকতে দিন। আমি ওটার চারপাশে খুঁড়ে সার দেব। তারপর যদি ফল ধরে তো ভাল তা না হলে আপনি ওটা কেটে ফেলবেন।’ ” কোন এক বিশ্রামবারে যীশু একটা সমাজ-ঘরে শিক্ষা দিচ্ছিলেন। সেখানে এমন একজন স্ত্রীলোক ছিল যাকে একটা মন্দ আত্মা আঠারো বছর ধরে অসুখে ভোগাচ্ছিল। সে কুঁজা ছিল এবং একেবারেই সোজা হতে পারত না। যীশু তাকে দেখলেন এবং তাকে কাছে ডেকে বললেন, “মা, তোমার অসুখ থেকে তুমি মুক্ত হলে।” এই কথা বলে যীশু তার উপর হাত রাখলেন, আর তখনই সে সোজা হয়ে দাঁড়াল এবং ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল। যীশু বিশ্রামবারে সুস্থ করেছেন বলে সমাজ-ঘরের নেতা বিরক্ত হয়ে লোকদের বললেন, “কাজ করবার জন্য ছয় দিন তো আছেই। সেইজন্য বিশ্রামবারে না এসে ঐ ছয় দিনের মধ্যে এসে সুস্থ হয়ো।” তখন প্রভু সেই নেতাকে বললেন, “আপনারা ভণ্ড! বিশ্রামবারে আপনারা সবাই কি আপনাদের বলদ বা গাধাকে গোয়াল ঘর থেকে খুলে জল খাওয়াতে নিয়ে যান না? তবে অব্রাহামের বংশের এই যে স্ত্রীলোকটিকে আঠারো বছর ধরে শয়তান বেঁধে রেখেছিল, সেই বাঁধন থেকে বিশ্রামবারে কি তাকে মুক্ত করা উচিত নয়?” তিনি এই কথা বললে পর যারা তাঁর বিরুদ্ধে ছিল তারা সবাই লজ্জা পেল। কিন্তু অন্য লোকেরা তাঁর এই সমস্ত মহান কাজ দেখে আনন্দিত হল। এর পরে যীশু বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্য কিসের মত? কিসের সংগে আমি এর তুলনা করব? ঈশ্বরের রাজ্য এমন একটা সর্ষে-দানার মত যা একজন লোক নিয়ে তার বাগানে লাগাল। পরে চারা বেড়ে উঠে একটা গাছ হয়ে উঠল। তখন পাখীরা এসে তার ডালপালায় বাসা বাঁধল।” যীশু আবার বললেন, “কিসের সংগে আমি ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করব? ঈশ্বরের রাজ্য খামির মত। একজন স্ত্রীলোক তা নিয়ে আঠারো কেজি ময়দার সংগে মিশাল, ফলে সব ময়দাই ফেঁপে উঠল।” গ্রামে গ্রামে ও শহরে শহরে শিক্ষা দিতে দিতে যীশু যিরূশালেমের দিকে এগিয়ে চললেন। একজন লোক তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “গুরু, পাপ থেকে উদ্ধার কি কেবল অল্প লোকেই পাবে?” তখন যীশু লোকদের বললেন, “সরু দরজা দিয়ে ঢুকতে প্রাণপণে চেষ্টা করুন। আমি আপনাদের বলছি, অনেকেই ঢুকতে চেষ্টা করবে কিন্তু পারবে না। ঘরের কর্তা যখন উঠে দরজা বন্ধ করবেন তখন আপনারা বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় ঘা দিতে দিতে বলবেন, ‘প্রভু, আমাদের জন্য দরজা খুলে দিন।’ কিন্তু তিনি আপনাদের এই উত্তর দেবেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এসেছ আমি জানি না।’ তখন আপনারা বলবেন, ‘আমরা আপনার সংগে খাওয়া-দাওয়া করেছি, আর আপনি তো আমাদের রাস্তায় রাস্তায় শিক্ষা দিতেন।’ তখন তিনি বলবেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এসেছ আমি জানি না। দুষ্ট লোকেরা, তোমরা সবাই আমার কাছ থেকে দূর হও।’ “যখন আপনারা দেখবেন, অব্রাহাম, ইস্‌হাক, যাকোব ও নবীরা সবাই ঈশ্বরের রাজ্যের মধ্যে আছেন এবং আপনাদের বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে, তখন আপনারা কান্নাকাটি করবেন ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবেন। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ থেকে লোকেরা এসে ঈশ্বরের রাজ্যে খেতে বসবে। যারা এখন শেষে আছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রথম হবে, আর যারা এখন প্রথমে আছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ শেষে পড়বে।” সেই সময় কয়েকজন ফরীশী যীশুর কাছে এসে বললেন, “আপনি এখান থেকে চলে যান, কারণ হেরোদ আপনাকে মেরে ফেলতে চাইছেন।” যীশু তাদের বললেন, “আপনারা গিয়ে সেই শিয়ালকে বলুন, ‘আর কয়েকদিন আমি মন্দ আত্মা ছাড়াব এবং রোগীদের সুস্থ করব আর তারপর আমার কাজ শেষ করব।’ যাহোক, আর কয়েকদিন পরে আমাকে চলে যেতে হবে, কারণ এক যিরূশালেম ছাড়া আর কোথাও কোন নবীর মৃত্যু হতে পারে কি? “যিরূশালেম, হায় যিরূশালেম! নবীদের তুমি খুন করে থাক এবং তোমার কাছে যাঁদের পাঠানো হয় তাঁদের পাথর মেরে থাক। মুরগী যেমন নিজের বাচ্চাদের তার ডানার নীচে জড়ো করে ঠিক তেমনি আমি কতবার তোমার লোকদের আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি, কিন্তু তোমরা রাজী হও নি। দেখ, তোমাদের বাড়ী তোমাদের সামনে খালি হয়ে পড়ে থাকবে। আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না তোমরা বলবে, ‘যিনি প্রভুর নামে আসছেন তাঁর গৌরব হোক,’ ততদিন তোমরা আর আমাকে দেখতে পাবে না।” এক বিশ্রামবারে যীশু একজন ফরীশী নেতার বাড়ীতে খেতে গেলেন। ফরীশীরা খুব ভাল করেই যীশুকে লক্ষ্য করছিলেন। যীশুর সামনে একজন রোগী ছিল যার সমস্ত শরীরটা শোথ রোগে ফুলে গিয়েছিল। যীশু ধর্ম- শিক্ষক ও ফরীশীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “মোশির আইন-কানুন মতে বিশ্রামবারে কি কাউকে সুস্থ করা উচিত?” ধর্ম-নেতারা চুপ করে রইলেন। তখন যীশু লোকটির গায়ে হাত দিয়ে তাকে ধরে সুস্থ করে বিদায় দিলেন। তারপর তিনি সেই ধর্ম-নেতাদের বললেন, “বিশ্রামবারে যদি আপনাদের কারও ছেলে বা বলদ কূয়ায় পড়ে যায় তবে আপনারা কি তাকে তখনই তোলেন না?” কিন্তু সেই ধর্ম-নেতারা এর উত্তর দিতে পারলেন না। নিমন্ত্রিত লোকেরা কিভাবে সম্মানের জায়গাগুলো বেছে নিচ্ছে তা দেখে যীশু তাদের শিক্ষা দেবার জন্য এই কথা বললেন, “যখন কেউ আপনাকে বিয়ের ভোজে নিমন্ত্রণ করে তখন আপনি সম্মানের জায়গায় গিয়ে বসবেন না, কারণ আপনার চেয়ে হয়তো আরও সম্মানিত কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। তাহলে যিনি আপনাকে ও তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছেন তিনি এসে আপনাকে বলবেন, ‘এই জায়গাটা ওনাকে ছেড়ে দিন।’ তখন তো আপনি লজ্জা পেয়ে সবচেয়ে নীচু জায়গায় বসতে যাবেন। আপনি যখন নিমন্ত্রিত হবেন তখন বরং সবচেয়ে নীচু জায়গায় গিয়ে বসবেন। তাহলে নিমন্ত্রণ কর্তা এসে আপনাকে বলবেন, ‘বন্ধু, আরও ভাল জায়গায় গিয়ে বসুন।’ তখন অন্য সব অতিথিদের সামনে আপনি সম্মান পাবেন। যে নিজেকে উঁচু করে তাকে নীচু করা হবে, আর যে নিজেকে নীচু করে তাকে উঁচু করা হবে।” যিনি তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন পরে যীশু তাঁকে বললেন, “যখন আপনি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করবেন বা ভোজ দেবেন তখন আপনার বন্ধুদের বা ভাইদের কিম্বা আত্মীয়-স্বজনদের বা ধনী প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করবেন না। তা করলে হয়ত তাঁরাও এর বদলে আপনাকে নিমন্ত্রণ করবেন আর এইভাবে আপনার নিমন্ত্রণ শোধ হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যখন ভোজ দেবেন তখন গরীব, নুলা, খোঁড়া এবং অন্ধদের ডাকবেন। তাতে আপনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাবেন, কারণ তারা আপনার সেই নিমন্ত্রণের শোধ দিতে পারবে না। যখন মৃত্যু থেকে নির্দোষ লোকদের জীবিত করা হবে তখন আপনি এর শোধ পাবেন।” যারা খেতে বসছিল তাদের মধ্যে একজন এই কথা শুনে যীশুকে বলল, “যিনি ঈশ্বরের রাজ্যে খেতে বসবেন তিনি ধন্য।” যীশু বললেন, “কোন একজন লোক একটা বড় ভোজ দিলেন এবং অনেককে নিমন্ত্রণ করলেন। ভোজের সময় হলে পর তিনি তাঁর দাসকে দিয়ে নিমন্ত্রিত লোকদের বলে পাঠালেন, ‘আসুন, এখন সবই প্রস্তুত হয়েছে।’ কিন্তু তারা সবাই একজনের পর একজন অজুহাত দেখাতে লাগল। প্রথম জন সেই দাসকে বলল, ‘আমি কিছু জমি কিনেছি, আমাকে গিয়ে তা দেখতে হবে। দয়া করে আমাকে ক্ষমা কর।’ আর একজন বলল, ‘আমি পাঁচ জোড়া বলদ কিনেছি, সেগুলো পরীক্ষা করতে যাচ্ছি। দয়া করে আমাকে ক্ষমা কর।’ অন্য আর একজন বলল, ‘আমি বিয়ে করেছি, এইজন্য যেতে পারছি না।’ “সেই দাস ফিরে গিয়ে তার মনিবকে এই সব কথা জানাল। তাতে বাড়ীর কর্তা রাগ করে তাঁর দাসকে বললেন, ‘তুমি তাড়াতাড়ি শহরের রাস্তায় রাস্তায় ও গলিতে গলিতে যাও এবং গরীব, নুলা, অন্ধ ও খোঁড়াদের এখানে নিয়ে এস।’ এই সব করবার পরে সেই দাস বলল, ‘হুজুর, আপনার আদেশ মতই সব করা হয়েছে, কিন্তু এখনও জায়গা আছে।’ এতে কর্তা দাসকে বললেন, ‘শহরের বাইরে রাস্তায় রাস্তায় ও পথে পথে যাও এবং এখানে আসবার জন্য লোকদের জোর কর, যেন আমার বাড়ী ভরে যায়। আমি তোমাদের বলছি, যাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল তাদের কেউই আমার এই ভোজ খেতে পাবে না।’ ” যীশুর সংগে সংগে অনেক লোক যাচ্ছিল। যীশু সেই লোকদের দিকে ফিরে বললেন, “যে আমার কাছে আসবে সে যেন নিজের বাপ-মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে, ভাই-বোন, এমন কি, নিজেকে পর্যন্ত আমার চেয়ে কম প্রিয় মনে করে। তা না হলে সে আমার শিষ্য হতে পারে না। যে লোক নিজের ক্রুশ বয়ে নিয়ে আমার পিছনে না আসে সে আমার শিষ্য হতে পারে না। “আপনাদের মধ্যে যদি কেউ একটা উঁচু ঘর তৈরী করতে চায় তবে সে আগে বসে খরচের হিসাব করে। সে দেখতে চায়, ওটা শেষ করবার জন্য তার যথেষ্ট টাকা আছে কি না। তা না হলে সে ভিত্তি গাঁথবার পরে যদি সেই উঁচু ঘরটা শেষ করতে না পারে, তবে যারা সেটা দেখবে তারা সবাই তাকে ঠাট্টা করবে। তারা বলবে, ‘লোকটা গাঁথতে আরম্ভ করেছিল কিন্তু শেষ করতে পারল না।’ “যদি একজন রাজা অন্য আর একজন রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যান তবে তিনি প্রথমে বসে চিন্তা করবেন, ‘বিশ হাজার সৈন্য নিয়ে যিনি আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসছেন, মাত্র দশ হাজার সৈন্য নিয়ে আমি তাঁকে বাধা দিতে পারব কি?’ যদি তিনি তা না পারেন তবে সেই অন্য রাজা দূরে থাকতেই লোক পাঠিয়ে তিনি তাঁর সংগে সন্ধির কথা আলাপ করবেন।” শেষে যীশু বললেন, “সেইভাবে আপনাদের মধ্যে যদি কেউ ভেবে-চিন্তে তার সব কিছু ছেড়ে না আসে তবে সে আমার শিষ্য হতে পারে না। “লবণ ভাল জিনিস, কিন্তু যদি তার স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় তবে তা আবার কি করে নোন্‌তা করা যাবে? তখন তা জমির জন্যও উপযুক্ত হয় না, সারের গাদার জন্যও উপযুক্ত হয় না; লোকে তা ফেলে দেয়। যার শুনবার কান আছে, সে শুনুক।” তখন অনেক কর্‌-আদায়কারী ও খারাপ লোকেরা যীশুর কথা শুনবার জন্য তাঁর কাছে আসল। এতে ফরীশীরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা এই বলে বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগলেন, “এই লোকটা খারাপ লোকদের সংগে মেলামেশা ও খাওয়া-দাওয়া করে।” তখন যীশু তাঁদের শিক্ষা দেবার জন্য এই কথা বললেন: “মনে করুন, আপনাদের মধ্যে কোন একজনের একশোটা ভেড়া আছে। যদি সেই ভেড়াগুলোর মধ্যে একটা হারিয়ে যায়, তবে কি সে নিরানব্বইটা মাঠে ছেড়ে দিয়ে সেই একটাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তার খোঁজ করে না? সেটা খুঁজে পেলে পর সে খুশী হয়ে তাকে কাঁধে তুলে নেয়। পরে বাড়ী গিয়ে তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীকে ডেকে বলে, ‘আমার সংগে আনন্দ কর, কারণ আমার হারানো ভেড়াটা আমি খুঁজে পেয়েছি।’ আমি আপনাদের বলছি, ঠিক সেইভাবে যারা পাপ থেকে মন ফিরাবার দরকার মনে করে না তেমন নিরানব্বইজন ধার্মিক লোকের চেয়ে বরং একজন পাপী পাপ থেকে মন ফিরালে স্বর্গে আরও বেশী আনন্দ হয়। “আবার ধরুন, একজন স্ত্রীলোকের দশটা রূপার টাকা আছে। যদি সে তার মধ্য থেকে একটা হারিয়ে ফেলে, তবে বাতি জ্বেলে ঘর ঝাড় দিয়ে তা না পাওয়া পর্যন্ত কি ভাল করে খোঁজ করতে থাকে না? যখন সে তা খুঁজে পায় তখন তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, ‘আমার সংগে আনন্দ কর, কারণ যে টাকাটা হারিয়ে গিয়েছিল তা পেয়েছি।’ আমি আপনাদের বলছি, ঠিক সেইভাবে একজন পাপী পাপ থেকে মন ফিরালে ঈশ্বরের দূতদের মধ্যে আনন্দ হয়।” তারপর যীশু বললেন, “একজন লোকের দু’টি ছেলে ছিল। ছোট ছেলেটি তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, আমার ভাগের সম্পত্তি আমাকে দিন।’ তাতে সেই লোক তাঁর দুই ছেলের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন। কিছু দিন পরে ছোট ছেলেটি তার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা-পয়সা নিয়ে দূর দেশে চলে গেল। সেখানে সে খারাপ ভাবে জীবন কাটিয়ে তার সব টাকা-পয়সা উড়িয়ে দিল। যখন সে তার সব টাকা খরচ করে ফেলল তখন সেই দেশের সমস্ত জায়গায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তাতে সে অভাবে পড়ল। তখন সে গিয়ে সেই দেশের একজন লোকের কাছে চাকরি চাইল। লোকটি তাকে তার শূকর চরাতে মাঠে পাঠিয়ে দিল। শূকরে যে শুঁটি খেত সে তা খেয়ে পেট ভরাতে চাইত, কিন্তু কেউ তাকে তাও দিত না। “পরে একদিন তার চেতনা হল। তখন সে বলল, ‘আমার বাবার কত মজুর কত বেশী খাবার পাচ্ছে, অথচ আমি এখানে খিদেতে মরছি। আমি উঠে আমার বাবার কাছে গিয়ে বলব, বাবা, ঈশ্বর ও তোমার বিরুদ্ধে আমি পাপ করেছি। কেউ যে আর আমাকে তোমার ছেলে বলে ডাকে তার যোগ্য আমি নই। তোমার মজুরদের একজনের মত করে আমাকে রাখ।’ “এই বলে সে উঠে তার বাবার কাছে গেল। সে দূরে থাকতেই তাকে দেখে তার বাবার খুব মমতা হল। তিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলেন। তখন ছেলেটি বলল, ‘বাবা, আমি ঈশ্বর ও তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। কেউ যে আর আমাকে তোমার ছেলে বলে ডাকে তার যোগ্য আমি নই।’ “কিন্তু তার বাবা তার দাসদের বললেন, ‘তাড়াতাড়ি করে সবচেয়ে ভাল জামাটা এনে ওকে পরিয়ে দাও। ওর হাতে আংটি ও পায়ে জুতা দাও, আর মোটাসোটা বাছুরটা এনে কাট। এস, আমরা খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ করি, কারণ আমার এই ছেলেটা মরে গিয়েছিল কিন্তু আবার বেঁচে উঠেছে; হারিয়ে গিয়েছিল পাওয়া গিয়েছে।’ তারপর তারা আমোদ-প্রমোদ করতে লাগল। “সেই সময় তাঁর বড় ছেলেটি মাঠে ছিল। বাড়ীর কাছে এসে সে নাচ ও গান-বাজনার শব্দ শুনতে পেল। তখন সে একজন চাকরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এসব কি হচ্ছে?’ “চাকরটি তাকে উত্তর দিল, ‘আপনার ভাই এসেছে। আপনার বাবা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছেন বলে মোটাসোটা বাছুরটা কেটেছেন।’ “তখন বড় ছেলেটি রাগ করে ভিতরে যেতে চাইল না। এতে তার বাবা বের হয়ে এসে তাকে ভিতরে যাবার জন্য সাধাসাধি করতে লাগলেন। সে তার বাবাকে বলল, ‘দেখ, এত বছর ধরে আমি তোমার সেবা-যত্ন করে আসছি; একবারও আমি তোমার অবাধ্য হই নি। তবুও আমার বন্ধুদের সংগে আমোদ-প্রমোদ করবার জন্য তুমি কখনও আমাকে ছাগলের একটা বাচ্চা পর্যন্ত দাও নি। কিন্তু তোমার এই ছেলে, যে বেশ্যাদের পিছনে তোমার টাকা-পয়সা উড়িয়ে দিয়েছে, সে যখন আসল তুমি তার জন্য মোটাসোটা বাছুরটা কাটলে।’ “তার বাবা তাকে বললেন, ‘বাবা, তুমি তো সব সময় আমার সংগে সংগে আছ। আমার যা কিছু আছে সবই তো তোমার। খুশী হয়ে আমাদের আমোদ-প্রমোদ করা উচিত, কারণ তোমার এই ভাই মরে গিয়েছিল আবার বেঁচে উঠেছে; হারিয়ে গিয়েছিল আবার তাকে পাওয়া গেছে।’ ” যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “কোন এক ধনী লোকের প্রধান কর্মচারীকে এই বলে দোষ দেওয়া হল যে, সে তার মনিবের ধন-সম্পত্তি নষ্ট করছে। তখন ধনী লোকটি তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার সম্বন্ধে আমি এ কি শুনছি? তোমার কাজের হিসাব দাও, কারণ তুমি আর প্রধান কর্মচারী থাকতে পারবে না।’ “তখন সেই কর্মচারী মনে মনে বলল, ‘আমি এখন কি করি? আমার মনিব তো আমাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিচ্ছেন। মাটি কাটবার শক্তি আমার নেই, আবার ভিক্ষা করতেও লজ্জা লাগে। যা হোক, চাকরি থেকে বরখাস্ত হলে পর লোকে যাতে আমাকে তাদের বাড়ীতে থাকতে দেয় সেইজন্য আমি কি করব তা আমি জানি।’ “এই বলে যারা তার মনিবের কাছে ধার করেছিল তাদের প্রত্যেককে সে ডাকল। তারপর সে প্রথম জনকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আমার মনিবের কাছে তোমার ধার কত?’ সে বলল, ‘দু’হাজার চারশো লিটার তেল।’ সেই কর্মচারী তাকে বলল, ‘যে কাগজে তোমার ধারের কথা লেখা আছে সেটা নাও এবং শীঘ্র বসে এক হাজার দু’শো লেখ।’ সেই কর্মচারী তারপর আর একজনকে বলল, ‘তোমার ধার কত?’ সে বলল, ‘আঠারো টন গম।’ কর্মচারীটি বলল, ‘তোমার কাগজে সাড়ে চৌদ্দ টন লেখ।’ সেই কর্মচারী অসৎ হলেও বুদ্ধি করে কাজ করল বলে মনিব তার প্রশংসা করলেন। এতে বুঝা যায় যে, এই জগতের লোকেরা নিজেদের মত লোকদের সংগে আচার-ব্যবহারে আলোর রাজ্যের লোকদের চেয়ে বেশী বুদ্ধিমান। আমি তোমাদের বলছি, এই মন্দ জগতের ধন দ্বারা লোকদের সংগে বন্ধুত্ব কর, যেন সেই ধন ফুরিয়ে গেলে পর চিরকালের থাকবার জায়গায় তোমাদের গ্রহণ করা হয়। সামান্য ব্যাপারে যে বিশ্বাসযোগ্য সে বড় ব্যাপারেও বিশ্বাসযোগ্য হয়। সামান্য ব্যাপারে যাকে বিশ্বাস করা যায় না তাকে বড় ব্যাপারেও বিশ্বাস করা যায় না। এই জগতের ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায় তবে কে তোমাদের বিশ্বাস করে আসল ধন দেবে? অন্যের অধিকারে যা আছে তা ব্যবহার করবার ব্যাপারে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায়, তবে তোমাদের নিজেদের অধিকারের জন্য কেউ কি তোমাদের কিছু দেবে? “কোন দাস দু’জন কর্তার সেবা করতে পারে না, কারণ সে একজনকে ঘৃণা করবে ও অন্যজনকে ভালবাসবে, কিম্বা সে একজনের প্রতি মনোযোগ দেবে ও অন্যজনকে তুচ্ছ করবে। ঈশ্বর ও ধন-সম্পত্তি এই দু’য়েরই সেবা তোমরা একসংগে করতে পার না।” এই সব কথা শুনে ফরীশীরা যীশুকে ঠাট্টা করতে লাগলেন, কারণ তারা টাকা-পয়সা বেশী ভালবাসতেন। তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা লোকদের সামনে নিজেদের ধার্মিক দেখিয়ে থাকেন, কিন্তু ঈশ্বর আপনাদের মনের অবস্থা জানেন। মানুষ যা সম্মানিত মনে করে ঈশ্বরের চোখে তা ঘৃণার যোগ্য। “বাপ্তিস্মদাতা যোহনের সময় পর্যন্ত মোশির আইন-কানুন এবং নবীদের লেখা চলত। তারপর থেকে ঈশ্বরের রাজ্যের সুখবর প্রচার করা হচ্ছে এবং সবাই আগ্রহী হয়ে জোরের সংগে সেই রাজ্যে ঢুকছে। তবে আইন-কানুনের একটা বিন্দু বাদ পড়বার চেয়ে বরং আকাশ ও পৃথিবী শেষ হওয়া সহজ। “যে কেউ নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে আর একজনকে বিয়ে করে সে ব্যভিচার করে। স্বামী যাকে ছেড়ে দিয়েছে সেই রকম স্ত্রীকে যে বিয়ে করে সেও ব্যভিচার করে। “একজন ধনী লোক ছিল। সে বেগুনে কাপড় ও অন্যান্য দামী দামী কাপড়-চোপড় পরত। প্রত্যেক দিন খুব জাঁকজমকের সংগে সে আমোদ- প্রমোদ করত। সেই ধনী লোকের দরজার কাছে লাসার নামে একজন ভিখারীকে প্রায়ই এনে রাখা হত। লাসারের সারা গায়ে ঘা ছিল। সেই ধনী লোকের টেবিল থেকে যে খাবার পড়ত তা-ই খেয়ে সে পেট ভরাতে চাইত, আর কুকুরেরা তার ঘা চেটে দিত। “একদিন সেই ভিখারীটি মারা গেল। তখন স্বর্গদূতেরা এসে তাকে অব্রাহামের কাছে নিয়ে গেলেন। তারপর একদিন সেই ধনী লোকটিও মারা গেল এবং তাকে কবর দেওয়া হল। মৃতস্থানে খুব যন্ত্রণার মধ্যে থেকে সে উপরের দিকে তাকাল এবং দূর থেকে অব্রাহাম ও তাঁর পাশে লাসারকে দেখতে পেল। তখন সে চিৎকার করে বলল, ‘পিতা অব্রাহাম, আমাকে দয়া করুন। লাসারকে পাঠিয়ে দিন যেন সে তার আংগুলের আগাটা জলে ডুবিয়ে আমার জিভ্‌ ঠাণ্ডা করে। এই আগুনের মধ্যে আমি বড়ই কষ্ট পাচ্ছি।’ “কিন্তু অব্রাহাম বললেন, ‘মনে করে দেখ, তুমি যখন বেঁচে ছিলে তখন কত সুখ ভোগ করেছ আর লাসার কত কষ্ট ভোগ করেছে। কিন্তু এখন সে এখানে সান্ত্বনা পাচ্ছে আর তুমি কষ্ট পাচ্ছ। এছাড়া তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এমন একটা বিরাট ফাঁক রয়েছে যাতে ইচ্ছা করলেও কেউ এখান থেকে পার হয়ে তোমাদের কাছে যেতে না পারে এবং ওখান থেকে পার হয়ে আমাদের কাছে আসতে না পারে।’ “তখন সেই ধনী লোকটি বলল, ‘তাহলে পিতা, দয়া করে লাসারকে আমার বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিন, যেন সে আমার পাঁচটি ভাইকে সাবধান করতে পারে; তা না হলে তারাও তো এই যন্ত্রণার জায়গায় আসবে।’ “কিন্তু অব্রাহাম বললেন, ‘মোশি ও নবীদের লেখা বই তো তাদের কাছে আছে। ওরা তাঁদের কথায় মনোযোগ দিক।’ “সেই ধনী লোকটি বলল, ‘না, না, পিতা অব্রাহাম, মৃতদের মধ্য থেকে কেউ তাদের কাছে গেলে তারা পাপ থেকে মন ফিরাবে।’ “তখন অব্রাহাম বললেন, ‘মোশি ও নবীদের কথা যদি তারা না শোনে তবে মৃতদের মধ্য থেকে কেউ উঠলেও তারা বিশ্বাস করবে না।” যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “পাপের পথে নিয়ে যাবার জন্য উসকানি আসবেই আসবে, কিন্তু ধিক্‌ সেই লোককে, যার মধ্য দিয়ে সেই উসকানি আসে! এই ছোটদের মধ্যে একজনকে যদি কেউ পাপের পথে নিয়ে যায়, তবে তার গলায় বড় পাথর বেঁধে তাকে সাগরে ফেলে দেওয়া বরং তার পক্ষে ভাল। “তোমরা সাবধান হও। যদি তোমার ভাই তোমার বিরুদ্ধে অন্যায় করে তাকে বকুনি দাও। যদি সে সেই অন্যায় থেকে মন ফিরায় তবে তাকে ক্ষমা কর। যদি দিনের মধ্যে সাতবার তোমার বিরুদ্ধে সে অন্যায় করে এবং সাতবারই এসে বলে, ‘আমি এই অন্যায় থেকে মন ফিরিয়েছি,’ তাহলে তাকে ক্ষমা করতে হবে।” সেই বারোজন প্রেরিত্‌ প্রভুকে বললেন, “আমাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে দিন।” প্রভু বললেন, “একটা সর্ষে-দানার মতও যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে তবে তোমরা এই তুঁত গাছটাকে বলতে পারবে, ‘শিকড় সুদ্ধ উঠে গিয়ে নিজেকে সাগরে পুঁতে রাখ’; তাতে সেই গাছটি তোমাদের কথা শুনবে। “মনে কর, তোমাদের একজনের দাস হাল বাইছে বা ভেড়া চরাচ্ছে। যখন সেই দাস মাঠ থেকে আসবে তখন কি তার মনিব তাকে বলবেন, ‘তাড়াতাড়ি গিয়ে খেতে বস’? না, তা বলবেন না, বরং বলবেন, ‘আমার খাওয়ার আয়োজন কর, আর আমি যতক্ষণ খাওয়া-দাওয়া করি ততক্ষণ কোমরে কাপড় জড়িয়ে আমার সেবা-যত্ন কর। তারপর তুমি খাওয়া-দাওয়া করবে।’ সেই দাস তাঁর আদেশ মত কাজ করেছে বলে কি তিনি তাকে ধন্যবাদ দেবেন? সেইভাবে ঈশ্বরের আদেশ মত সমস্ত কাজ করবার পরে তোমরা বোলো, ‘আমরা অপদার্থ দাস; যা করা উচিত আমরা কেবল তা-ই করেছি।’ ” যিরূশালেমে যাবার পথে যীশু শমরিয়া ও গালীলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই রোগীদের দেখে যীশু বললেন, “পুরোহিতদের কাছে গিয়ে নিজেদের দেখাও।” তারা পথে যেতে যেতেই সুস্থ হয়ে গেল। তখন যীশু বললেন, “দশজনকে কি সুস্থ করা হয় নি? তবে বাকী ন’জন কোথায়? ঈশ্বরের গৌরব করবার জন্য এই বিদেশী লোকটি ছাড়া আর কেউ কি ফিরে আসল না?” তারপর যীশু লোকটিকে বললেন, “উঠে চলে যাও। বিশ্বাস করেছ বলে তুমি ভাল হয়েছ।” কয়েকজন ফরীশী যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন কবে ঈশ্বরের রাজ্য আসবে। উত্তরে যীশু বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্য আসবার সময় কোন চিহ্ন দেখা যায় না। কেউই বলবে না, “দেখ, ‘ঈশ্বরের রাজ্য এখানে,’ বা ‘দেখ, ঈশ্বরের রাজ্য ওখানে,’ কারণ আপনাদের মধ্যেই তো ঈশ্বরের রাজ্য আছে।” এর পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এমন দিন আসছে যখন তোমরা চাইবে যেন মনুষ্যপুত্রের সময়কার একটা দিন তোমরা দেখতে পাও, কিন্তু তা দেখতে পাবে না। লোকে তোমাদের বলবে, ‘ওখানে দেখ,’ বা ‘এখানে দেখ।’ বাইরে যেয়ো না বা তাদের পিছনে দৌড়িও না। বিদ্যুৎ চমকালে যেমন আকাশের একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত আলো হয়ে যায়, মনুষ্যপুত্রের আসা সেইভাবে হবে। কিন্তু প্রথমে তাঁকে অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হবে। তা ছাড়া এই কালের লোকেরা তাঁকে অগ্রাহ্য করবে। “নোহের সময়ে যেমন হয়েছিল মনুষ্যপুত্রের সময়েও তেমনি হবে। যে পর্যন্ত না নোহ জাহাজে উঠলেন এবং বন্যা এসে লোকদের সবাইকে ধ্বংস করল সেই পর্যন্ত লোকেরা খাওয়া-দাওয়া করছিল, বিয়ে করছিল ও বিয়ে দিচ্ছিল। আবার লোটের সময়ে যেমন হয়েছিল তেমনি হবে। সেই সময়ে লোকে খাওয়া-দাওয়া, বেচা-কেনা, চাষ-বাস এবং ঘর-বাড়ী তৈরী করছিল। কিন্তু যেদিন লোট সদোম ছেড়ে আসলেন সেই দিন স্বর্গ থেকে আগুন ও গন্ধকের বৃষ্টি পড়ে লোকদের সবাইকে ধ্বংস করল। যেদিন মনুষ্যপুত্র প্রকাশিত হবেন সেই দিন এই রকমই হবে। “সেই দিন ছাদের উপরে যে থাকবে সে ঘর থেকে জিনিসপত্র নেবার জন্য নীচে না নামুক। তেমনি করে ক্ষেতের মধ্যে যে থাকবে সে ফিরে না আসুক। লোটের স্ত্রীর কথা মনে করে দেখ। যে কেউ তার জীবন রক্ষা করতে চেষ্টা করে সে তার সত্যিকারের জীবন হারাবে, আর যে কেউ তার প্রাণ হারায় সে তার সত্যিকারের জীবন রক্ষা করবে। আমি তোমাদের বলছি, সেই রাতে এক বিছানায় দু’জন থাকবে; একজনকে নেওয়া হবে আর অন্যজনকে ফেলে যাওয়া হবে। শিষ্যেরা বললেন, “প্রভু, কোথায়?” উত্তরে যীশু বললেন, “মৃতদেহ যেখানে থাকে সেখানেই তো শকুন এসে জড়ো হয়।” সেই শহরে একজন বিধবা ছিল। সে বারবার এসে তাঁকে বলত, ‘ন্যায়বিচার করে আমার বিপক্ষের বিরুদ্ধে রায় দিন।’ সেই বিচারক কিছু দিন পর্যন্ত কিছুই করলেন না। কিন্তু শেষে তিনি মনে মনে বললেন, ‘যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না এবং মানুষকেও গ্রাহ্য করি না, তবুও এই বিধবা আমাকে বিরক্ত করছে বলে আমি তার পক্ষে ন্যায়বিচার করব। তা না হলে সে বারবার আসবে আর তাতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ব।’ ” এর পর প্রভু আরও বললেন, “ন্যায় বিচারক না হলেও তিনি কি বললেন তা ভেবে দেখ। তাহলে যারা ঈশ্বরকে দিন রাত ডাকে, ঈশ্বর কি তাঁর সেই বাছাই-করা লোকদের পক্ষে ন্যায়বিচার করবেন না? তিনি কি তা করতে দেরি করবেন? আমি তোমাদের বলছি, তিনি তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার করতে দেরি করবেন না। কিন্তু মনুষ্যপুত্র যখন আসবেন তখন কি তিনি পৃথিবীতে বিশ্বাস দেখতে পাবেন?” যারা নিজেদের ধার্মিক মনে করে অন্যদের তুচ্ছ করত তাদের শিক্ষা দেবার জন্য যীশু এই কথা বললেন: “দু’জন লোক প্রার্থনা করবার জন্য উপাসনা-ঘরে গেলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ফরীশী ও অন্যজন কর্‌-আদায়কারী। সেই ফরীশী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে এই প্রার্থনা করলেন, ‘হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই যে, আমি অন্য লোকদের মত ঠগ, অসৎ ও ব্যভিচারী নই, এমন কি, ঐ কর্‌-আদায়কারীর মতও নই। আমি সপ্তায় দু’বার উপবাস করি এবং আমার সমস্ত আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ তোমাকে দিই।’ সেই সময় সেই কর্‌-আদায়কারী কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশের দিকে তাকাবারও তার সাহস হল না; সে বুক চাপ্‌ড়ে বলল, ‘হে ঈশ্বর! আমি পাপী; আমার প্রতি করুণা কর।’ “আমি তোমাদের বলছি, সেই কর্‌-আদায়কারীকে ঈশ্বর নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন আর সে বাড়ী ফিরে গেল। কিন্তু সেই ফরীশীকে তিনি নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন না। যে কেউ নিজেকে উঁচু করে তাকে নীচু করা হবে এবং যে নিজেকে নীচু করে তাকে উঁচু করা হবে।” লোকেরা ছোট ছেলেমেয়েদের যীশুর কাছে নিয়ে আসল যেন তিনি তাদের উপর হাত রাখেন। শিষ্যেরা এ দেখে সেই লোকদের বকুনি দিতে লাগলেন। কিন্তু যীশু সেই ছেলেমেয়েদের নিজের কাছে ডেকে নিলেন। তারপর তিনি শিষ্যদের বললেন, “ছেলেমেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিও না; কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মত লোকদেরই। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ছোট ছেলেমেয়ের মত ঈশ্বরের শাসন মেনে না নিলে কেউ কোনমতেই ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকতে পারবে না।” সমাজের একজন নেতা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে গুরু, আপনি একজন ভাল লোক। আমাকে বলুন, কি করলে আমি অনন্ত জীবন লাভ করতে পারব?” যীশু তাঁকে বললেন, “আমাকে ভাল বলছেন কেন? একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কেউই ভাল নয়। আপনি তো আদেশগুলো জানেন, ‘ব্যভিচার কোরো না, খুন কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, তোমার মা-বাবাকে সম্মান কোরো।’ ” সেই নেতা বললেন, “ছোটবেলা থেকে আমি এই সব পালন করে আসছি।” এই কথা শুনে যীশু তাঁকে বললেন, “এখনও একটা কাজ আপনার বাকী আছে। আপনার যা কিছু আছে বিক্রি করে গরীবদের বিলিয়ে দিন, তাহলে আপনি স্বর্গে ধন পাবেন। তারপর এসে আমার শিষ্য হন।” এই কথা শুনে সেই নেতা খুব দুঃখিত হলেন, কারণ তিনি খুব ধনী ছিলেন। সেই নেতার দিকে তাকিয়ে যীশু বললেন, “ধনীদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢোকা কত কঠিন! ধনীর পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকবার চেয়ে বরং সুচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওয়া সহজ।” যীশুর এই কথা যারা শুনল তারা বলল, “তাহলে কে পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারে?” যীশু বললেন, “মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব ঈশ্বরের পক্ষে তা সম্ভব।” তখন পিতর বললেন, “আমরা তো সব কিছু ছেড়ে দিয়ে আপনার শিষ্য হয়েছি।” যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য বাড়ী-ঘর, স্ত্রী, ভাই-বোন, মা-বাবা বা ছেলেমেয়ে ছেড়ে এসেছে, তারা প্রত্যেকে এই যুগেই অনেক বেশী পাবে এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন লাভ করবে।” যীশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে একপাশে ডেকে নিয়ে বললেন, “দেখ, আমরা যিরূশালেমে যাচ্ছি। মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে নবীরা যা যা লিখে গেছেন তা সবই পূর্ণ হবে। তাঁকে অযিহূদীদের হাতে দেওয়া হবে। লোকে তাঁকে ঠাট্টা ও অপমান করবে এবং তাঁর গায়ে থুথু দেবে। ভীষণভাবে চাবুক মারবার পরে তারা তাঁকে মেরে ফেলবে, আর তৃতীয় দিনে তিনি জীবিত হয়ে উঠবেন।” শিষ্যেরা কিন্তু এই সব বিষয় কিছুই বুঝলেন না। সেই কথার অর্থ তাঁদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল বলে যীশু যে কি বলছিলেন তা তাঁরা বুঝলেন না। যীশু যখন যিরীহো শহরের কাছে আসলেন তখন একজন অন্ধ লোক পথের ধারে বসে ভিক্ষা করছিল। অনেক লোকের গলার আওয়াজ শুনে সে ব্যাপার কি তা জিজ্ঞাসা করল। লোকেরা তাকে জানাল যে, নাসরতের যীশু ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছেন। তখন সে চিৎকার করে বলল, “দায়ূদের বংশধর যীশু, আমাকে দয়া করুন!” যে লোকেরা ভিড়ের সামনে ছিল তারা তাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলল। কিন্তু সে আরও চিৎকার করে বলল, “দায়ূদের বংশধর, আমাকে দয়া করুন।” যীশু থামলেন এবং সেই অন্ধকে তাঁর কাছে আনতে বললেন। সে কাছে আসলে পর তিনি বললেন, “তুমি কি চাও? তোমার জন্য আমি কি করব?” সে বলল, “প্রভু, আমি যেন দেখতে পাই।” যীশু তাকে বললেন, “আচ্ছা, তা-ই হোক। তুমি বিশ্বাস করেছ বলে ভাল হয়েছ।” লোকটি তখনই দেখতে পেল এবং ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে যীশুর পিছনে পিছনে চলল। এ দেখে সমস্ত লোক ঈশ্বরের প্রশংসা করল। যীশু যিরীহো শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানে সক্কেয় নামে একজন লোক ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রধান কর্‌-আদায়কারী এবং একজন ধনী লোক। যীশু কে, তা তিনি দেখতে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু বেঁটে ছিলেন বলে ভিড়ের জন্য তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। তাই তিনি যীশুকে দেখবার জন্য সামনে দৌড়ে গিয়ে একটা ডুমুর গাছে উঠলেন, কারণ যীশু সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন। যীশু সেই ডুমুর গাছের কাছে এসে উপরের দিকে তাকালেন এবং সক্কেয়কে বললেন, “সক্কেয়, তাড়াতাড়ি নেমে এস, কারণ আজ তোমার বাড়ীতে আমাকে থাকতে হবে।” সক্কেয় তাড়াতাড়ি নেমে আসলেন এবং আনন্দের সংগে যীশুকে গ্রহণ করলেন। এ দেখে সবাই বক্‌বক করে বলল, “উনি একজন পাপী লোকের অতিথি হতে গেলেন।” সক্কেয় সেখানে দাঁড়িয়ে প্রভুকে বললেন, “প্রভু, আমি আমার ধন-সম্পত্তির অর্ধেক গরীবদের দিয়ে দিচ্ছি এবং যদি কাউকে ঠকিয়ে থাকি তবে তার চারগুণ ফিরিয়ে দিচ্ছি।” তখন যীশু বললেন, “এই বাড়ীতে আজ পাপ থেকে উদ্ধার আসল, কারণ এও তো অব্রাহামের বংশের একজন। যারা হারিয়ে গেছে তাদের খোঁজ করতে ও পাপ থেকে উদ্ধার করতেই মনুষ্যপুত্র এসেছেন।” যীশু তখন যেখানে ছিলেন সেখান থেকে যিরূশালেম বেশী দূরে ছিল না, আর যারা তাঁর কথা শুনছিল তারা ভাবছিল ঈশ্বরের রাজ্য শ্রীঘ্রই প্রকাশ পাবে। তাই যীশু তাদের শিক্ষা দেবার জন্য এই কথা বললেন: “একজন উঁচু বংশের লোক রাজ-পদ নিয়ে ফিরে আসবেন বলে দূর দেশে গেলেন। যাবার আগে তিনি তাঁর দশজন দাসকে ডাকলেন এবং প্রত্যেক জনকে একশো দীনার করে দিয়ে বললেন, ‘আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এ দিয়ে ব্যবসা কর।’ “তাঁর দেশের লোকেরা কিন্তু তাঁকে ঘৃণা করত। এইজন্য তারা তাঁর পিছনে লোক পাঠিয়ে খবর দিল, ‘আমরা চাই না এই লোকটা আমাদের উপর রাজত্ব করুক।’ “তবুও তিনি রাজা নিযুক্ত হয়ে ফিরে আসলেন এবং যে দশজন দাসকে টাকা দিয়েছিলেন তাদের ডেকে আনতে আদেশ দিলেন। তিনি জানতে চাইলেন ব্যবসা করে তারা কে কত লাভ করেছে। প্রথম জন এসে বলল, ‘প্রভু, আপনার টাকা দিয়ে আমি দশগুণ লাভ করেছি।’ “রাজা তাকে বললেন, ‘বেশ করেছ। তুমি ভাল দাস। তুমি সামান্য বিষয়ে বিশ্বস্ত হয়েছ বলে আমি তোমাকে দশটা গ্রামের ভার দিলাম।’ “দ্বিতীয় দাসটি এসে বলল, ‘প্রভু, আপনার টাকা দিয়ে আমি পাঁচগুণ লাভ করেছি।’ “তিনি সেই দাসকে বললেন, ‘তুমি পাঁচটা গ্রামের ভার পাবে।’ “তার পরে অন্য আর একজন দাস এসে বলল, ‘প্রভু, আমি আপনার টাকা রুমালে বেঁধে রেখে দিয়েছিলাম। আপনার সম্বন্ধে আমার ভয় ছিল কারণ আপনি খুব কড়া লোক; আপনি যা জমা করেন নি তা নিয়ে থাকেন এবং যা বোনেন নি তা কাটেন।’ “তখন রাজা বললেন, ‘ওরে দুষ্ট দাস! তোর মুখের কথা দিয়েই আমি তোর বিচার করব। তুই তো জানতিস্‌ যে, আমি কড়া লোক; যা জমা করি নি তা নিয়ে থাকি এবং যা বুনি নি তা কাটি। তবে আমার টাকা তুই মহাজনের কাছে রাখলি না কেন? তাহলে তো আমি এসে টাকাটাও পেতাম এবং সংগে কিছু সুদও পেতাম।’ “যারা রাজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল রাজা তাদের বললেন, ‘ওর কাছ থেকে ঐ একশো দীনার নিয়ে নাও এবং যার এক হাজার দীনার আছে তাকে দাও।’ “তখন সেই লোকেরা রাজাকে বলল, ‘প্রভু, ওর তো এক হাজার দীনার আছে।’ “রাজা বললেন, ‘আমি তোমাদের বলছি, যার আছে তাকে আরও দেওয়া হবে, কিন্তু যার নেই তার যা আছে তা-ও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আমার শত্রুরা যারা চায় নি আমি রাজা হই, তাদের এখানে নিয়ে এস এবং আমার সামনে মেরে ফেল।’ ” এই সব কথা বলবার পরে যীশু তাঁদের আগে আগে যিরূশালেমের দিকে চললেন। যখন তিনি জৈতুন পাহাড়ের গায়ে বৈৎফগী ও বৈথনিয়া গ্রামের কাছে আসলেন তখন তাঁর দু’জন শিষ্যকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা সামনের ঐ গ্রামে যাও। সেখানে ঢুকবার সময় দেখতে পাবে একটা গাধার বাচ্চা বাঁধা আছে। ওর উপরে কেউ কখনও চড়ে নি। ওটা খুলে এখানে নিয়ে এস। যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে, ‘কেন ওটা খুলছ?’ তবে বোলো, ‘প্রভুর দরকার আছে।’” যে শিষ্যদের পাঠানো হয়েছিল তাঁরা গিয়ে যীশুর কথামতই সব কিছু দেখতে পেলেন। তাঁরা যখন সেই বাচ্চাটা খুলছিলেন তখন মালিকেরা তাঁদের জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা বাচ্চাটা খুলছ কেন?” তাঁরা বললেন, “প্রভুর দরকার আছে।” তারপর শিষ্যেরা সেই গাধার বাচ্চাটা যীশুর কাছে আনলেন এবং তার উপরে তাঁদের গায়ের চাদর পেতে দিয়ে যীশুকে বসালেন। তিনি যখন যাচ্ছিলেন তখন লোকেরা নিজেদের গায়ের চাদর পথে বিছিয়ে দিতে লাগল। এইভাবে যীশু যিরূশালেমের কাছে এসে যে রাস্তাটা জৈতুন পাহাড় থেকে নেমে গেছে সেই রাস্তায় আসলেন। যীশুর সংগে তাঁর অনেক শিষ্য ছিলেন। সেই শিষ্যেরা তাঁর যে সব আশ্চর্য কাজ দেখেছিলেন সেগুলোর জন্য আনন্দে চিৎকার করে ঈশ্বরের গৌরব করে বলতে লাগলেন, “প্রভুর নামে যে রাজা আসছেন তাঁর গৌরব হোক! স্বর্গেই শান্তি, আর সেখানে ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশিত।” ভিড়ের মধ্য থেকে কয়েকজন ফরীশী যীশুকে বললেন, “গুরু, আপনার শিষ্যদের চুপ করতে বলুন।” যীশু তাঁদের বললেন, “আমি আপনাদের বলছি, এরা যদি চুপ করে থাকে তবে পাথরগুলো চেঁচিয়ে উঠবে।” তাঁরা যখন যিরূশালেমের কাছে আসলেন তখন যীশু শহরটা দেখে কাঁদলেন। তিনি বললেন, “হায়, শান্তি পাবার জন্য যা দরকার, তুমি, হ্যাঁ তুমি যদি আজ তা বুঝতে পারতে! কিন্তু এখন তা তোমার চোখের আড়ালে রয়েছে। এমন সময় তোমার আসবে যখন শত্রুরা তোমার বিরুদ্ধে বাধার দেয়াল তুলবে এবং তোমাকে ঘিরে রাখবে ও সমস্ত দিক থেকে তোমাকে চেপে ধরবে। তারা তোমাকে ও তোমার ভিতরের সমস্ত লোকদের ধরে মাটিতে আছাড় মারবে এবং একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর রাখবে না, কারণ ঈশ্বর যে সময়ে তোমার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন সেই সময়টা তুমি চিনে নাও নি।” এর পরে যীশু উপাসনা-ঘরে ঢুকে ব্যবসায়ীদের তাড়িয়ে দিলেন। তিনি সেই ব্যবসায়ীদের বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমার ঘর প্রার্থনার ঘর হবে,’ কিন্তু তোমরা তা ডাকাতের আড্ডাখানা করে তুলেছ।” যীশু প্রত্যেক দিনই উপাসনা-ঘরে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। প্রধান পুরোহিতেরা, ধর্ম-শিক্ষকেরা এবং লোকদের নেতারা তাঁকে মেরে ফেলতে চাইলেন, কিন্তু কিভাবে তা করবেন তার কোন উপায় তাঁরা খুঁজে পেলেন না, কারণ লোকেরা মন দিয়ে তাঁর প্রত্যেকটি কথা শুনত। উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “আমিও আপনাদের একটা কথা জিজ্ঞাসা করব। বলুন দেখি, বাপ্তিস্ম দেবার অধিকার যোহন ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছিলেন, না মানুষের কাছ থেকে পেয়েছিলেন?” তখন তাঁরা নিজেদের মধ্যে এই আলোচনা করতে লাগলেন, “যদি আমরা বলি, ‘ঈশ্বরের কাছ থেকে,’ তবে সে বলবে, ‘তা হলে তাঁকে বিশ্বাস করেন নি কেন?’ কিন্তু যদি বলি, ‘মানুষের কাছ থেকে,’ তাহলে লোকেরা আমাদের পাথর মারবে, কারণ তারা যোহনকে নবী বলে বিশ্বাস করে।” এইজন্য তাঁরা বললেন, “সেই অধিকার কোথা থেকে এসেছিল তা আমরা জানি না।” যীশু তাঁদের বললেন, “তবে আমিও বলব না কোন্‌ অধিকারে আমি এই সব করছি।” এর পরে যীশু লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য এই কথা বললেন: “একজন লোক একটা আংগুর-ক্ষেত করলেন এবং চাষীদের কাছে সেটা ইজারা দিয়ে অনেক দিনের জন্য বিদেশে চলে গেলেন। পরে তিনি সেই ক্ষেতের আংগুর ফলের ভাগ পাবার জন্য সময়মতই একজন দাসকে চাষীদের কাছে পাঠালেন। কিন্তু চাষীরা তাকে মারধর করে খালি হাতেই ফেরৎ পাঠিয়ে দিল। তখন তিনি আর একজন দাসকে পাঠালেন, কিন্তু চাষীরা তাকেও মারল ও অপমান করল এবং খালি হাতে পাঠিয়ে দিল। পরে তিনি তৃতীয় দাসকে পাঠালেন, কিন্তু চাষীরা তাকেও ভীষণ মারধর করে তাড়িয়ে দিল। “তখন আংগুর-ক্ষেতের মালিক বললেন, ‘কি করি? আচ্ছা, আমি আমার প্রিয় পুত্রকে পাঠাব। হয়তো তারা তাকে সম্মান করবে।’ “কিন্তু চাষীরা তাঁকে দেখে একে অন্যকে বলল, ‘এ-ই তো পরে সম্পত্তির মালিক হবে। সম্পত্তিটা যেন আমাদেরই হয় সেইজন্য এস, আমরা ওকে মেরে ফেলি।’ এই বলে তারা তাঁকে ধরে ক্ষেতের বাইরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলল। “এখন আংগুর-ক্ষেতের মালিক সেই চাষীদের কি করবেন? তিনি এসে তাদের মেরে ফেলবেন এবং ক্ষেতটা অন্যদের ইজারা দেবেন।” লোকেরা যীশুর কথা শুনে বলল, “এমন না হোক।” তখন যীশু তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তবে এই যে কথা পবিত্র শাস্ত্রের মধ্যে লেখা আছে, ‘রাজমিস্ত্রিরা যে পাথরটা বাতিল করে দিয়েছিল, সেটাই সবচেয়ে দরকারী পাথর হয়ে উঠল’-এর অর্থ কি? যে কেউ সেই পাথরের উপরে পড়বে সে ভেংগে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে এবং যার উপর সেই পাথর পড়বে সে চুরমার হয়ে যাবে।” এই সময়ে ধর্ম-শিক্ষকেরা ও প্রধান পুরোহিতেরা যীশুকে ধরতে চাইলেন, কারণ তাঁরা বুঝেছিলেন যে, ঐ কথা যীশু তাঁদের বিরুদ্ধেই বলেছেন; কিন্তু তাঁরা লোকদের ভয় পেলেন। ধর্ম-শিক্ষক ও প্রধান পুরোহিতেরা যীশুকে চোখে চোখে রাখলেন এবং গুপ্তচর পাঠিয়ে দিলেন। যীশুকে তাঁর নিজের কথার ফাঁদে ফেলবার জন্য সেই গুপ্তচরেরা ভাল মানুষের ভাণ করতে লাগল, যেন তারা তাঁকে প্রধান শাসনকর্তার বিচার-ক্ষমতার অধীনে ফেলতে পারে। সেইজন্য তারা তাঁকে বলল, “গুরু, আমরা জানি যে, আপনি যা বলেন ও শিক্ষা দেন তা ঠিক। আপনি সবাইকে সমান চোখে দেখেন এবং সত্য ভাবেই ঈশ্বরের পথের বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। আচ্ছা, মোশির আইন-কানুন অনুসারে রোম-সম্রাটকে কি কর্‌ দেওয়া উচিত?” যীশু তাদের চালাকি বুঝতে পেরে বললেন, “আমাকে একটা দীনার দেখাও। এর উপরে কার ছবি ও কার নাম আছে?” তারা বলল, “রোম-সম্রাটের।” যীশু তাদের বললেন, “তা হলে যা সম্রাটের তা সম্রাটকে দাও এবং যা ঈশ্বরের তা ঈশ্বরকে দাও।” লোকদের সামনে যীশু যা বলেছিলেন তাতে সেই গুপ্তচরেরা তাঁকে তাঁর কথার ফাঁদে ফেলতে পারল না। তাঁর উত্তরে আশ্চর্য হয়ে তারা চুপ হয়ে গেল। সদ্দূকীদের মধ্যে কয়েকজন যীশুর কাছে আসলেন। সদ্দূকীদের মতে মৃতদের জীবিত হয়ে উঠা বলে কিছু নেই। তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “গুরু, মোশি আমাদের জন্য এই কথা লিখে গেছেন, সন্তানহীন অবস্থায় যদি কোন লোক তার স্ত্রীকে রেখে মারা যায়, তবে তার ভাই তার স্ত্রীকে বিয়ে করে ভাইয়ের হয়ে তার বংশ রক্ষা করবে। বেশ ভাল, ধরুন, সাতজন ভাই ছিল। প্রথম জন বিয়ে করে সন্তানহীন অবস্থায় মারা গেল। শেষে সেই স্ত্রীলোকটিও মারা গেল। তাহলে যেদিন মৃতেরা জীবিত হয়ে উঠবে সেই দিন সে কার স্ত্রী হবে? সাতজনের প্রত্যেকেই তো তাকে বিয়ে করেছিল।” যীশু তাঁদের বললেন, “এই কালের লোকেরা বিয়ে করে এবং তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে আগামী যুগে পার হয়ে যাবার যোগ্য বলে যাদের ধরা হবে, তারা বিয়ে করবে না এবং তাদের বিয়ে দেওয়াও হবে না। তারা আর মরতে পারে না, কারণ তারা স্বর্গদূতদের মত। তারা ঈশ্বরের সন্তান কারণ মৃত্যু থেকে তাদের জীবিত করা হয়েছে। জ্বলন্ত ঝোপের বিষয়ে যেখানে লেখা আছে সেখানে মোশি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, মৃতেরা সত্যিই জীবিত হয়ে ওঠে। সেখানে মোশি প্রভুকে ‘অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর’ বলে ডেকেছেন। কিন্তু ঈশ্বর তো মৃতদের ঈশ্বর নন, তিনি জীবিতদেরই ঈশ্বর। তাঁরই উদ্দেশ্যে সব লোক বেঁচে থাকে।” তখন কয়েকজন ধর্ম-শিক্ষক বললেন, “গুরু, আপনি ভালই বলেছেন।” তাঁরা আর কোন কিছু যীশুকে জিজ্ঞাসা করতে সাহস পেলেন না। যীশু সেই ধর্ম-শিক্ষকদের বললেন, “লোকে কি করে বলে যে, মশীহ দায়ূদের বংশধর? দায়ূদ তো মশীহকে প্রভু বলে ডেকেছিলেন; তাহলে মশীহ কেমন করে দায়ূদের বংশধর হতে পারেন?” লোকেরা যখন যীশুর কথা শুনছিল তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “ধর্ম-শিক্ষকদের বিষয়ে সাবধান হও। তাঁরা লম্বা লম্বা জামা পরে ঘুরে বেড়াতে চান এবং হাটে-বাজারে সম্মান পেতে ভালবাসেন। তাঁরা সমাজ-ঘরে প্রধান প্রধান আসনে ও ভোজের সময়ে সম্মানের জায়গায় বসতে ভালবাসেন। এক দিকে তাঁরা লোককে দেখাবার জন্য লম্বা লম্বা প্রার্থনা করেন, অন্য দিকে বিধবাদের সম্পত্তি দখল করেন। এই লোকদের অনেক বেশী শাস্তি হবে।” এর পরে যীশু চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা উপাসনা-ঘরের দানের বাক্সে তাদের দান রাখছে। তিনি দেখলেন, একজন গরীব বিধবা এসে দু’টা পয়সা রাখল। তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই গরীব বিধবা অন্য সকলের চেয়ে অনেক বেশী রাখল, কারণ অন্যেরা সবাই তাদের প্রচুর ধন থেকে দান করেছে, কিন্তু এই স্ত্রীলোকটির অভাব থাকলেও বেঁচে থাকবার জন্য তার যা ছিল সমস্তই দিয়ে দিল।” শিষ্যদের মধ্যে কয়েকজন উপাসনা-ঘরের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, সুন্দর সুন্দর পাথর ও দানের জিনিস দিয়ে দালানটা কেমন সাজানো হয়েছে। তখন যীশু বললেন, “তোমরা তো এই সব দেখছ, কিন্তু এমন দিন আসবে যখন এর একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর থাকবে না; সমস্তই ভেংগে ফেলা হবে।” শিষ্যেরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “গুরু, কখন এই সব হবে এবং কোন্‌ চিহ্ন দেখে আমরা বুঝতে পারব যে, এই সব ঘটবার সময় এসেছে?” উত্তরে যীশু বললেন, “দেখো, কেউ যেন তোমাদের না ঠকায়, কারণ অনেকে আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মশীহ’ এবং ‘সময় কাছে এসেছে।’ তাদের পিছনে যেয়ো না। তোমরা যখন যুদ্ধের ও বিদ্রোহের খবর শুনবে তখন ভয় পেয়ো না, কারণ প্রথমে এই সব হবেই; কিন্তু তখনই যে শেষ সময় আসবে তা নয়।” তারপর যীশু তাঁদের বললেন, “এক জাতি আর এক জাতির বিরুদ্ধে এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। ভীষণ ভূমিকম্প হবে এবং ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও মড়ক হবে। এছাড়া আকাশে এমন সব ঘটনা ঘটবে ও চিহ্ন দেখা যাবে যা ভীষণ ও ভয়ংকর। “এই সব হবার আগে লোকেরা তোমাদের ধরবে এবং তোমাদের উপর অত্যাচার করবে। বিচারের জন্য তারা তোমাদের সমাজ-ঘরে নিয়ে যাবে এবং জেলে দেবে। আমার জন্য রাজাদের ও শাসনকর্তাদের সামনে তোমাদের নেওয়া হবে, আর তাতে আমার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবার জন্য তোমাদের সুযোগ হবে। তোমরা এখনই মনে মনে ঠিক করে ফেল, তখন নিজের পক্ষে কথা বলবার জন্য তোমরা আগে থেকে তৈরী হবে না, কারণ আমি তোমাদের এমন কথা ও এমন জ্ঞান যুগিয়ে দেব যার উত্তরে তোমাদের শত্রুরা কিছু বলতেও পারবে না এবং তা অস্বীকারও করতে পারবে না। তোমাদের মা-বাবা, ভাই-বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনেরা তোমাদের ধরিয়ে দেবে। তারা তোমাদের কাউকে কাউকে মেরেও ফেলবে। আমার জন্য সবাই তোমাদের ঘৃণা করবে, কিন্তু কোনমতেই তোমাদের একটা চুলও ধ্বংস হবে না। তোমরা স্থির থাকলে তোমাদের সত্যিকারের জীবন পূর্ণতা লাভ করবে। “যখন তোমরা দেখবে যিরূশালেমকে সৈন্যেরা ঘেরাও করেছে তখন বুঝবে যে, যিরূশালেমের ধ্বংস হবার সময় কাছে এসেছে। সেই সময় যারা যিহূদিয়াতে থাকবে তারা পাহাড়ী এলাকায় পালিয়ে যাক। যারা শহরের মধ্যে থাকবে তারা শহরের বাইরে চলে যাক। যারা গ্রামের দিকে থাকবে তারা কোনমতেই শহরে না আসুক, কারণ এই দিনগুলো হবে শাস্তির দিন, আর এতে পবিত্র শাস্ত্রে যা লেখা আছে তা পূর্ণ হবে। তখন যারা গর্ভবতী আর যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় তাদের অবস্থা কি ভীষণই না হবে! দেশে ভীষণ কষ্ট উপস্থিত হবে এবং যিহূদী লোকদের উপরে ঈশ্বরের শাস্তি নেমে আসবে। তলোয়ার দিয়ে তাদের মেরে ফেলা হবে এবং সমস্ত জাতির মধ্যে তারা বন্দী হিসাবে ছড়িয়ে থাকবে। যতদিন না অযিহূদীদের সময় পূর্ণ হয় ততদিন পর্যন্ত অযিহূদীরা যিরূশালেমকে তাদের পায়ের নীচে মাড়াতে থাকবে। “তখন সূর্য, চাঁদ ও তারাগুলোর মধ্যে অনেক চিহ্ন দেখা যাবে। পৃথিবীতে সমস্ত জাতি কষ্ট পাবে এবং সমুদ্রের গর্জন ও ঢেউয়ের জন্য তারা ভীষণ অস্থির হয়ে উঠবে। জগতে কি আসছে ভেবে ভয়ে লোকে অজ্ঞান হয়ে পড়বে, কারণ চাঁদ-সূর্য-তারা ইত্যাদি আর স্থির থাকবে না। সেই সময় মহাশক্তি ও মহিমার সংগে মনুষ্যপুত্রকে তারা মেঘের মধ্যে আসতে দেখবে। এই সব ঘটনা ঘটতে আরম্ভ করলে পর তোমরা উঠে দাঁড়ায়ো এবং মুখ তুলো, কারণ তোমাদের মুক্তির সময় কাছে এসেছে।” এর পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দেবার জন্য এই কথা বললেন, “ডুমুর গাছ ও অন্যান্য গাছগুলোকে লক্ষ্য কর। পাতা বের হতে দেখলে পর তোমরা বুঝতে পার যে, গরমকাল কাছে এসেছে। সেইভাবে যখন তোমরা এই সব ঘটতে দেখবে তখন বুঝতে পারবে যে, ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যখন এই সব হবে তখনও এই কালের কিছু লোক বেঁচে থাকবে। আকাশ ও পৃথিবীর শেষ হবে, কিন্তু আমার কথা চিরদিন থাকবে। সজাগ থেকো এবং সব সময় প্রার্থনা কোরো যেন যা কিছু ঘটবে তা পার হয়ে যেতে এবং মনুষ্যপুত্রের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে তোমরা শক্তি পাও।” সেই সময় যীশু প্রত্যেক দিনই উপাসনা-ঘরে শিক্ষা দিতেন, কিন্তু রাতের বেলা বাইরে গিয়ে জৈতুন পাহাড়ে থাকতেন। সমস্ত লোক তাঁর কথা শুনবার জন্য খুব সকালেই উপাসনা-ঘরে উপস্থিত হত। সেই সময় যিহূদীদের খামিহীন রুটির পর্ব কাছে এসে গিয়েছিল। এটাকে উদ্ধার-পর্বও বলা হয়। প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-শিক্ষকেরা যীশুকে গোপনে মেরে ফেলবার উপায় খুঁজছিলেন, কারণ তাঁরা লোকদের ভয় করতেন। এই সময় যিহূদা, যাকে ইষ্কারিয়োৎ বলা হত, তার ভিতরে শয়তান ঢুকল। এই যিহূদা ছিল যীশুর বারোজন শিষ্যর মধ্যে একজন। কেমন করে যীশুকে প্রধান পুরোহিতদের ও উপাসনা-ঘরের কর্মচারীদের হাতে ধরিয়ে দেবে এই বিষয়ে সে গিয়ে তাঁদের সংগে পরামর্শ করল। এতে তাঁরা খুব খুশী হয়ে যিহূদাকে টাকা দিতে স্বীকার করলেন। তখন যিহূদা রাজী হয়ে উপযুক্ত সুযোগ খুঁজতে লাগল যাতে লোকদের অনুপস্থিতিতে যীশুকে ধরিয়ে দিতে পারে। তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কোথায় এই ভোজ আমাদের প্রস্তুত করতে বলেন?” তখন সে তোমাদের উপরতলার একটা সাজানো বড় ঘর দেখিয়ে দেবে; সেখানেই সব কিছু প্রস্তুত কোরো।” যীশু তাঁদের যেমন বলেছিলেন, তাঁরা গিয়ে সব কিছু সেই রকমই দেখতে পেলেন এবং উদ্ধার-পর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন। তারপর সময় মত যীশু প্রেরিত্‌দের সংগে খেতে বসলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “আমি কষ্টভোগ করবার আগে তোমাদের সংগে উদ্ধার-পর্বের এই ভোজ খাবার আমার খুবই ইচ্ছা ছিল। আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্যে এর উদ্দেশ্য পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমি আর কখনও এই ভোজ খাব না।” এর পর যীশু পেয়ালা নিলেন এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, “তোমাদের মধ্যে এটা ভাগ করে নাও, কারণ আমি তোমাদের বলছি, এখন থেকে ঈশ্বরের রাজ্য না আসা পর্যন্ত আমি আর কখনও আংগুর ফলের রস খাব না।” তারপর তিনি রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। পরে সেই রুটি টুকরা টুকরা করে শিষ্যদের দিয়ে বললেন, “এটা আমার দেহ যা তোমাদের জন্য দেওয়া হবে। আমাকে মনে করবার জন্য এই রকম কোরো।” খাওয়ার পরে সেইভাবে তিনি পেয়ালাটা তাঁদের দিয়ে বললেন, “আমার রক্তের দ্বারা ঈশ্বরের যে নতুন ব্যবস্থা বহাল করা হবে সেই ব্যবস্থার চিহ্ন হল এই পেয়ালা। আমার এই রক্ত তোমাদের জন্য দেওয়া হবে। দেখ, যে আমাকে ধরিয়ে দেবে তার হাত আমার হাতের সংগে এই টেবিলের উপরেই আছে। ঈশ্বর যা ঠিক করে রেখেছেন সেই ভাবেই মনুষ্যপুত্র মারা যাবেন বটে; কিন্তু হায় সেই লোক, যে তাঁকে ধরিয়ে দেয়!” শিষ্যেরা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন যে, তাঁদের মধ্যে কে এমন কাজ করবেন। কাকে সবচেয়ে বড় বলা হবে এ নিয়ে শিষ্যদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হল। যীশু তাঁদের বললেন, “অযিহূদীদের মধ্যেই রাজারা প্রভুত্ব করেন আর তাদের শাসনকর্তাদের উপকারী নেতা বলা হয়, কিন্তু তোমাদের মধ্যে এই রকম হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বড়, সে বরং সবচেয়ে যে ছোট তারই মত হোক, আর যে নেতা, সে সেবাকারীর মত হোক। কে বড়, যে খেতে বসে, না যে চাকর পরিবেশন করে? যে খেতে বসে, সে নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে সেবাকারীর মত হয়েছি। “আমার সব দুঃখ-কষ্টের সময়ে তোমরা আমাকে ছেড়ে যাও নি। আমার পিতা যেমন আমাকে শাসন-ক্ষমতা দান করেছেন তেমনি আমিও তোমাদের ক্ষমতা দান করছি। এতে আমার রাজ্যে তোমরা আমার সংগে খাওয়া-দাওয়া করবে এবং সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারোটি গোষ্ঠীর বিচার করবে। “শিমোন, শিমোন, দেখ, শয়তান তোমাদের গমের মত করে চালুনি দিয়ে চেলে দেখবার অনুমতি চেয়েছে। কিন্তু আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করেছি যেন তোমার বিশ্বাসে ভাংগন না ধরে। তুমি যখন আমার কাছে ফিরে আসবে তখন তোমার এই ভাইদের শক্তিশালী করে তুলো।” পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনার সংগে আমি জেলে যেতে এবং মরতেও প্রস্তুত আছি।” উত্তরে যীশু বললেন, “পিতর, আমি তোমাকে বলছি, আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার আমাকে অস্বীকার করে বলবে যে, তুমি আমাকে চেন না।” তারপর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি যখন তোমাদের টাকার থলি, ঝুলি ও জুতা ছাড়া পাঠিয়েছিলাম তখন কি তোমাদের কোন অভাব হয়েছিল?” শিষ্যেরা বললেন, “না, হয় নি।” যীশু বললেন, “কিন্তু এখন আমি বলছি, যার টাকার থলি বা ঝুলি আছে সে তা নিয়ে যাক। যার ছোরা নেই সে তার চাদর বিক্রি করে একটা ছোরা কিনুক। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘তাঁকে পাপীদের সংগে গোণা হল।’ আমি তোমাদের বলছি, এই কথা আমার মধ্যেই পূর্ণ হতে হবে, কারণ আমার বিষয়ে যা লেখা আছে তা পূর্ণ হতে যাচ্ছে।” তখন শিষ্যেরা বললেন, “প্রভু, দেখুন, এখানে দু’টা ছোরা আছে।” যীশু উত্তর দিলেন, “থাক্‌, আর নয়।” যীশু সেই জায়গা ছেড়ে নিজের নিয়ম মত জৈতুন পাহাড়ে গেলেন। তাঁর শিষ্যেরা তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। ঠিক জায়গায় পৌঁছাবার পর যীশু তাঁদের বললেন, “প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় না পড়।” তারপর যীশু শিষ্যদের কাছ থেকে কিছু দূরে গিয়ে হাঁটু পেতে প্রার্থনা করতে লাগলেন, “পিতা, যদি তুমি চাও তবে এই দুঃখের পেয়ালা আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও। তবুও আমার ইচ্ছামত নয়, তোমার ইচ্ছামতই হোক।” তখন স্বর্গ থেকে একজন দূত এসে যীশুকে শক্তি দান করলেন। মনের কষ্টে যীশু আরও আকুলভাবে প্রার্থনা করলেন। তাঁর গায়ের ঘাম রক্তের ফোঁটার মত হয়ে মাটিতে পড়তে লাগল। যীশু তখনও কথা বলছেন এমন সময় অনেক লোক সেখানে আসল। যিহূদা নামে তাঁর বারোজন শিষ্যের মধ্যে একজন সেই লোকদের আগে আগে আসছিল। যিহূদা যীশুকে চুমু দেবার জন্য তাঁর কাছে আসল। তখন যীশু তাকে বললেন, “যিহূদা, চুমু দিয়ে কি মনুষ্যপুত্রকে ধরিয়ে দিচ্ছ?” যাঁরা যীশুর চারপাশে ছিলেন তাঁরা বুঝলেন কি হতে যাচ্ছে। এইজন্য তাঁরা যীশুকে বললেন, “প্রভু, আমরা কি ছোরা দিয়ে আঘাত করব?” শিষ্যদের মধ্যে একজন ছোরার আঘাতে মহাপুরোহিতের দাসের ডান কানটা কেটে ফেললেন। যীশু বললেন, “থাক্‌, আর নয়।” এই বলে তিনি লোকটির কান ছুঁয়ে তাকে ভাল করলেন। যে সব প্রধান পুরোহিতেরা, উপাসনা-ঘরের কর্মচারীরা এবং বৃদ্ধ নেতারা যীশুকে ধরতে এসেছিলেন যীশু তাঁদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে এসেছেন? উপাসনা-ঘরে দিনের পর দিন আমি আপনাদের সামনে ছিলাম, কিন্তু তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। তবে এখন অবশ্য আপনাদেরই সময়; অন্ধকারের ক্ষমতা এখন দেখা যাচ্ছে।” তখন তাঁরা যীশুকে ধরে মহাপুরোহিতের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। পিতর দূরে থেকে পিছনে পিছনে যাচ্ছিলেন। উঠানের মাঝখানে যারা আগুন জ্বেলে বসে ছিল পিতর এসে তাদের মধ্যে বসলেন। একজন চাকরাণী সেই আগুনের আলোতে পিতরকে দেখতে পেল এবং ভাল করে তাকিয়ে দেখে বলল, “এই লোকটাও ওর সংগে ছিল।” পিতর অস্বীকার করে বললেন, “আমি ওকে চিনি না।” কিছুক্ষণ পরে আর একজন লোক তাঁকে দেখে বলল, “তুমিও তো ওদের একজন।” পিতর বললেন, “না, আমি নই।” এক ঘণ্টা পরে আর একজন জোর দিয়ে বলল, “এই লোকটি নিশ্চয়ই ওর সংগে ছিল, কারণ এ তো গালীল প্রদেশের লোক।” পিতর বললেন, “দেখ, তুমি কি বলছ আমি বুঝতে পারছি না।” পিতরের কথা শেষ হতে না হতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল। তখন প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে দেখলেন। এতে যে কথা প্রভু তাঁকে বলেছিলেন সেই কথা পিতরের মনে পড়ল, “আজ মোরগ ডাকবার আগে তুমি তিন বার বলবে যে, তুমি আমাকে চেন না।” তখন পিতর বাইরে গিয়ে খুব কাঁদতে লাগলেন। যারা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল তারা তাঁকে ঠাট্টা করতে ও মারতে লাগল। তারা যীশুর চোখ বেঁধে দিয়ে বলল, “বল্‌ তো দেখি, কে তোকে মারল?” এইভাবে তারা আরও অনেক কথা বলে তাঁকে অপমান করল। সকাল হলে পর যিহূদীদের বৃদ্ধনেতারা, প্রধান পুরোহিতেরা এবং ধর্ম-শিক্ষকেরা একসংগে মিলিত হলেন এবং যীশুকে তাঁদের মহাসভার সামনে এনে বললেন, কিন্তু মনুষ্যপুত্র এখন থেকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানপাশে বসে থাকবেন।” তখন সকলে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তুমি কি ঈশ্বরের পুত্র?” তিনি তাঁদের বললেন, “আপনারা ঠিকই বলছেন যে, আমি সে-ই।” তখন নেতারা বললেন, “আমাদের আর সাক্ষ্যের কি দরকার? আমরা নিজেরাই তো ওর মুখে শুনলাম।” তখন সেই সভার সকলে উঠে যীশুকে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। তাঁরা এই বলে যীশুর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে লাগলেন, “আমরা দেখেছি, এই লোকটা সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লোকদের নিয়ে যাচ্ছে। সে সম্রাটকে কর্‌ দিতে বারণ করে এবং বলে সে নিজেই মশীহ, একজন রাজা।” পীলাত যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি যিহূদীদের রাজা?” যীশু বললেন, “আপনি ঠিক কথাই বলছেন।” তখন পীলাত প্রধান পুরোহিতদের ও সমস্ত লোকদের বললেন, “আমি তো এই লোকটির কোন দোষই দেখতে পাচ্ছি না।” কিন্তু তাঁরা জিদ করে বলতে লাগলেন, “যিহূদিয়া প্রদেশের সব জায়গায় শিক্ষা দিয়ে এ লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে। গালীল প্রদেশ থেকে সে শুরু করেছে, আর এখন এখানে এসেছে।” এই কথা শুনে পীলাত জিজ্ঞাসা করলেন যীশু গালীল প্রদেশের লোক কি না। শাসনকর্তা হেরোদের শাসনের অধীনে যে প্রদেশ আছে, যীশু সেই জায়গার লোক জানতে পেরে পীলাত তাঁকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই সময় হেরোদও যিরূশালেমে ছিলেন। যীশুকে দেখে হেরোদ খুব খুশী হলেন। তিনি যীশুর সম্বন্ধে অনেক কথা শুনেছিলেন, তাই তিনি অনেক দিন ধরে তাঁকে দেখতে চাইছিলেন। হেরোদ আশা করেছিলেন যীশু তাঁকে কোন আশ্চর্য কাজ করে দেখাবেন। তিনি যীশুকে অনেক প্রশ্ন করলেন, কিন্তু যীশু কোন কথারই উত্তর দিলেন না। প্রধান পুরোহিতেরা এবং ধর্ম-শিক্ষকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে যীশুকে দোষ দিতে লাগলেন। তখন হেরোদ যীশুকে অপমান ও ঠাট্টা করলেন, আর তাঁর সৈন্যেরাও তা-ই করল। তার পরে যীশুকে জমকালো একটা পোশাক পরিয়ে তিনি তাঁকে পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এর আগে হেরোদ ও পীলাতের মধ্যে শত্রুতা ছিল, কিন্তু সেই দিন থেকে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হল। পীলাত তখন প্রধান পুরোহিতদের, নেতাদের এবং সাধারণ লোকদের ডেকে একত্র করে বললেন, “আপনারা এই লোকটিকে এই দোষ দিয়ে আমার কাছে এনেছেন যে, লোকদের সে সরকারের বিরুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে আমি আপনাদের সামনেই জেরা করেছি। আপনারা তার বিরুদ্ধে যে সব দোষ দিচ্ছেন তার একটাতেও সে দোষী বলে আমি প্রমাণ পাই নি। হেরোদও নিশ্চয় তার কোন দোষ পান নি, কারণ তিনি তাকে আমাদের কাছে ফেরৎ পাঠিয়েছেন। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, মেরে ফেলবার মত এমন কোন অন্যায় কাজও সে করে নি। তাই আমি তাকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব।” তিনি এই কথা বললেন কারণ উদ্ধার-পর্বের সময়ে প্রত্যেক বারই তাঁকে একজন কয়েদীকে ছেড়ে দিতে হত। কিন্তু লোকেরা একসংগে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওকে দূর করুন, বারাব্বাকে আমাদের কাছে ছেড়ে দিন।” এই বারাব্বাকে শহরের মধ্যে বিদ্রোহ ও খুনাখুনির জন্য জেলে দেওয়া হয়েছিল। পীলাত কিন্তু যীশুকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, সেইজন্য তিনি লোকদের আবার সেই একই কথা বললেন। কিন্তু লোকেরা এই বলে চেঁচাতেই থাকল, “ওকে ক্রুশে দিন, ক্রুশে দিন।” পীলাত তৃতীয়বার লোকদের বললেন, “কেন, এই লোকটি কি দোষ করেছে? আমি তো তার কোন দোষই দেখতে পাচ্ছি না যাতে তাকে মৃত্যুর শাস্তি দেওয়া যায়। সেইজন্য তাকে আমি অন্য শাস্তি দেবার পর ছেড়ে দেব।” কিন্তু লোকেরা যীশুকে ক্রুশে দেবার জন্য চিৎকার করতে থাকল এবং শেষে তারা চেঁচিয়েই জয়ী হল। পীলাত লোকদের কথা মেনে নেওয়া ঠিক করলেন। সৈন্যেরা যখন যীশুকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন শিমোন নামে কুরীণী শহরের একজন লোক গ্রামের দিক থেকে আসছিল। সৈন্যেরা তাকে জোর করে ধরে ক্রুশটা তার কাঁধে তুলে দিল যেন সে যীশুর পিছনে তা বয়ে নিয়ে যেতে পারে। অনেক লোক যীশুর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে অনেক স্ত্রীলোকও ছিল। তারা বুক চাপ্‌ড়ে কাঁদছিল। যীশু তাদের দিকে ফিরে বললেন, “যিরূশালেমের মেয়েরা, আমার জন্য কেঁদো না। তোমাদের নিজেদের জন্য এবং তোমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কাঁদ, কারণ এমন দিন আসছে যখন লোকে বলবে, ‘যাদের কখনও ছেলেমেয়ে হয় নি এবং যারা কখনও বুকের দুধ শিশুদের খাওয়ায় নি সেই বন্ধ্যা স্ত্রীলোকেরা ধন্যা।’ সেই সময়ে লোকে বড় বড় পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের উপর পড়,’ আর ছোট ছোট পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের ঢেকে রাখ।’ গাছ সবুজ থাকতে যদি লোকে এই রকম করে তবে গাছ শুকনা হলে পর কিনা হবে!” সৈন্যেরা দু’জন দোষী লোককেও মেরে ফেলবার জন্য যীশুর সংগে নিয়ে চলল। যে জায়গাটাকে মাথার খুলি বলা হত সেখানে পৌঁছে তারা যীশুকে ও সেই দু’জন দোষীকে ক্রুশে দিল-একজনকে যীশুর ডান দিকে ও অন্যজনকে বাঁদিকে। তখন যীশু বললেন, “পিতা, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা কি করছে তা জানে না।” তারা গুলিবাঁট করে যীশুর কাপড়-চোপড় নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। লোকেরা দাঁড়িয়ে দেখছিল। ধর্ম-নেতারা যীশুকে ঠাট্টা করে বললেন, “সে তো অন্যদের রক্ষা করত। যদি সে ঈশ্বরের মশীহ, তাঁর বাছাই-করা লোক হয় তবে নিজেকে রক্ষা করুক!” সৈন্যেরাও তাঁকে ঠাট্টা করতে লাগল। তারা যীশুকে খেতে দেবার জন্য তাঁর কাছে সির্কা নিয়ে গিয়ে বলল, “তুমি যদি যিহূদীদের রাজা হও তবে নিজেকে রক্ষা কর।” ক্রুশে তাঁর মাথার উপরের দিকে একটা ফলকে এই কথা লেখা ছিল, “এই লোকটি যিহূদীদের রাজা।” যে দু’জন দোষী লোককে সেখানে ক্রুশে টাংগানো হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন যীশুকে টিট্‌কারি দিয়ে বলল, “তুমি নাকি মশীহ? তাহলে নিজেকে ও আমাদের রক্ষা কর।” তখন অন্য লোকটি তাকে বকুনি দিয়ে বলল, “তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না? তুমি তো একই রকম শাস্তি পাচ্ছ। আমরা উচিত শাস্তি পাচ্ছি। আমাদের যা পাওনা আমরা তা-ই পাচ্ছি, কিন্তু এই লোকটি তো কোন দোষ করে নি।” তারপর সে বলল, “যীশু, আপনি যখন রাজত্ব করতে ফিরে আসবেন তখন আমার কথা মনে করবেন।” উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সংগে পরমদেশে উপস্থিত হবে।” যীশু চিৎকার করে বললেন, “পিতা, আমি তোমার হাতে আমার আত্মা তুলে দিলাম।” এই কথা বলে তিনি প্রাণত্যাগ করলেন। এই সব দেখে রোমীয় শত-সেনাপতি ঈশ্বরের গৌরব করে বললেন, “সত্যিই লোকটি নির্দোষ ছিল।” যে লোকেরা সেখানে জড়ো হয়েছিল তারা এই সমস্ত ঘটনা দেখে বুক চাপ্‌ড়াতে চাপ্‌ড়াতে সেখান থেকে ফিরে গেল। যাঁরা যীশুকে চিনতেন এবং যে স্ত্রীলোকেরা গালীল থেকে তাঁর সংগে সংগে এসেছিলেন তাঁরা সবাই দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিলেন। যোষেফ নামে একজন সৎ ও ধার্মিক লোক মহাসভার সভ্য ছিলেন। তিনি অরিমাথিয়া নামে যিহূদীদের একটা গ্রামের লোক। যীশুর বিষয়ে সভার লোকদের সংগে তিনি একমত হতে পারেন নি। তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পীলাতের কাছে গিয়ে তিনি যীশুর মৃতদেহটি চেয়ে নিলেন। পরে দেহটি ক্রুশ থেকে নামিয়ে কাপড় দিয়ে জড়ালেন এবং পাথর কেটে তৈরী করা একটা কবরের মধ্যে রাখলেন। সেই কবরে আর কখনও কাউকে রাখা হয় নি। সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবারের আয়োজনের দিন। বিশ্রামবার প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল। যে স্ত্রীলোকেরা যীশুর সংগে গালীল থেকে এসেছিলেন তাঁরা যোষেফের পিছনে পিছনে গিয়ে কবরটি দেখলেন এবং যীশুর দেহ কিভাবে রাখা হল তাও দেখলেন। তারপর তাঁরা ফিরে গিয়ে তাঁর দেহের জন্য সুগন্ধি মশলা এবং মলম তৈরী করলেন। এর পরে তাঁরা মোশির আদেশ মত বিশ্রামবারে বিশ্রাম করলেন। সপ্তার প্রথম দিনের খুব সকালবেলা সেই স্ত্রীলোকেরা সেই সুগন্ধি মশলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। তাঁরা দেখলেন কবরের মুখ থেকে পাথরখানা সরিয়ে রাখা হয়েছে, কিন্তু কবরের ভিতরে গিয়ে তাঁরা প্রভু যীশুর দেহ দেখতে পেলেন না। যখন তাঁরা অবাক হয়ে সেই বিষয়ে ভাবছিলেন তখন বিদ্যুতের মত ঝক্‌ঝকে কাপড় পরা দু’জন লোক তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। এতে স্ত্রীলোকেরা ভয় পেয়ে মাথা নীচু করলেন। লোক দু’টি তাঁদের বললেন, “যিনি জীবিত তাঁকে মৃতদের মধ্যে খোঁজ করছ কেন? তিনি এখানে নেই; তিনি জীবিত হয়ে উঠেছেন। তিনি যখন গালীলে ছিলেন তখন তিনি তোমাদের কাছে যা বলেছিলেন তা মনে করে দেখ। তিনি বলেছিলেন, মনুষ্যপুত্রকে পাপী লোকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। তার পরে তাঁকে ক্রুশে দেওয়া হবে এবং তৃতীয় দিনে তাঁকে আবার জীবিত হয়ে উঠতে হবে।” তখন তাঁদের সেই কথা মনে পড়ল। তাঁরা কবর থেকে ফিরে গিয়ে সেই এগারোজন শিষ্য এবং অন্য সকলকে এই সব কথা জানালেন। সেই স্ত্রীলোকদের মধ্যে ছিলেন মগ্‌দলীনী মরিয়ম, যোহানা ও যাকোবের মা মরিয়ম। তাঁদের সংগে আর অন্য যে স্ত্রীলোকেরা ছিলেন তাঁরাও এই সমস্ত কথা প্রেরিতদের কাছে বললেন। কিন্তু সেই সব কথা তাঁদের কাছে বাজে কথার মতই মনে হল। সেইজন্য সেই স্ত্রীলোকদের কথা তাঁরা বিশ্বাস করলেন না। পিতর কিন্তু উঠে দৌড়ে কবরের কাছে গেলেন এবং নীচু হয়ে কেবল কাপড়গুলোই দেখতে পেলেন। যা ঘটেছে তাতে আশ্চর্য হয়ে তিনি ফিরে আসলেন। সেই দিনেই দু’জন শিষ্য ইম্মায়ূ নামে একটা গ্রামে যাচ্ছিলেন। গ্রামটা যিরূশালেম থেকে প্রায় সাত মাইল দূরে ছিল। যা ঘটেছে তা নিয়ে তাঁরা আলাপ-আলোচনা করছিলেন। সেই সময় যীশু নিজেই সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের সংগে হাঁটতে আরম্ভ করলেন। তাঁদের চোখ যেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাই তাঁরা যীশুকে চিনতে পারলেন না। তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা কি কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন?” সেই দু’জন শিষ্য ম্লান মুখে দাঁড়িয়ে রইলেন। তখন ক্লিয়পা নামে তাঁদের মধ্যে একজন যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনিই কি যিরূশালেমের একমাত্র লোক যিনি জানেন না এই কয়দিনে সেখানে কি কি ঘটছে?” যীশু তাঁদের বললেন, “কি কি ঘটেছে?” তাঁরা বললেন, “নাসরত গ্রামের যীশুকে নিয়ে যা যা ঘটেছে। তিনি নবী ছিলেন। তিনি কাজে ও কথায় ঈশ্বর ও সমস্ত লোকের চোখে শক্তিশালী ছিলেন। আমাদের প্রধান পুরোহিতেরা ও ধর্ম-নেতারা তাঁকে রোমীয়দের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন যাতে তারা তাঁর বিচার করে তাকে মৃত্যুর শাস্তি দেয়। পরে সেই যিহূদী নেতারা তাঁকে ক্রুশে দিয়েছিলেন। আমরা আশা করেছিলাম তিনিই ইস্রায়েল জাতিকে মুক্ত করবেন। কেবল তা-ই নয়, আজ তিন দিন হল এই সব ঘটনা ঘটেছে। আবার আমাদের দলের কয়েকজন স্ত্রীলোক আমাদের অবাক করেছেন। তাঁরা খুব সকালে যীশুর কবরে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তাঁর দেহ দেখতে পান নি। তাঁরা ফিরে এসে বললেন, তাঁরা স্বর্গদূতদের দেখা পেয়েছেন আর সেই স্বর্গদূতেরা তাঁদের বলেছেন যে, যীশু বেঁচে আছেন। তখন আমাদের সংগে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন কবরে গিয়ে স্ত্রীলোকেরা যেমন বলেছিলেন ঠিক তেমনি দেখতে পেলেন, কিন্তু যীশুকে দেখতে পেলেন না।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা কিছুই বোঝেন না। আপনাদের মন এমন অসাড় যে, নবীরা যা বলেছেন তা আপনারা বিশ্বাস করেন না। এই সমস্ত কষ্ট ভোগ করে কি মশীহের মহিমা লাভ করবার কথা ছিল না?” এর পরে তিনি মোশির এবং সমস্ত নবীদের লেখা থেকে আরম্ভ করে গোটা পবিত্র শাস্ত্রের মধ্যে তাঁর নিজের বিষয়ে যা যা লেখা আছে তা সবই তাঁদের বুঝিয়ে বললেন। তাঁরা যে গ্রামে যাচ্ছিলেন সেই গ্রামের কাছাকাছি আসলে পর যীশু আরও দূরে যাবার ভাব দেখালেন। তখন তাঁরা খুব সাধাসাধি করে তাঁকে বললেন, “এখন বেলা গেছে, সন্ধ্যা হয়েছে। আপনি আমাদের সংগে থাকুন।” এতে তিনি তাঁদের সংগে থাকবার জন্য ঘরে ঢুকলেন। যখন তিনি তাঁদের সংগে খেতে বসলেন তখন রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তা টুকরা করে তাঁদের দিলেন। তখন তাঁদের চোখ খুলে গেল; তাঁরা যীশুকে চিনতে পারলেন, কিন্তু তার সংগে সংগেই তাঁকে আর দেখা গেল না। তখন তাঁরা একে অন্যকে বললেন, “রাস্তায় যখন তিনি আমাদের সংগে কথা বলছিলেন এবং পবিত্র শাস্ত্র বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তখন আমাদের অন্তর কি জ্বলে জ্বলে উঠছিল না?” তখনই সেই দু’জন উঠে যিরূশালেমে গেলেন এবং সেই এগারোজন শিষ্য ও তাঁদের সংগে অন্যদেরও এক জায়গায় দেখতে পেলেন। প্রভু যে সত্যিই জীবিত হয়ে উঠেছেন এবং শিমোনকে দেখা দিয়েছেন তা নিয়ে তখন তাঁরা আলোচনা করছিলেন। সেই দু’জন শিষ্য রাস্তায় যা হয়েছিল তা তাঁদের জানালেন। তাঁরা আরও জানালেন, তিনি যখন রুটি টুকরা টুকরা করছিলেন তখন কেমন করে তাঁরা তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন। সেই শিষ্যেরা যখন এই কথা বলছিলেন তখন যীশু নিজে তাঁদের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে তাঁদের সবাইকে বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক।” তাঁরা ভূত দেখছেন ভেবে খুব ভয় পেলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “কেন তোমরা অস্থির হচ্ছ আর কেনই বা তোমাদের মনে সন্দেহ জাগছে? আমার হাত ও পা দেখ। দেখ, এ আমি। আমাকে ছুঁয়ে দেখ, কারণ ভূতের তো আমার মত হাড়-মাংস নেই।” এই কথা বলে যীশু তাঁর হাত ও পা তাঁদের দেখালেন। কিন্তু তাঁরা এত আশ্চর্য ও আনন্দিত হয়েছিলেন যে, বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের এখানে কি কোন খাবার আছে?” তাঁরা তাঁকে এক টুকরা ভাজা মাছ দিলেন। তিনি তা নিয়ে তাঁদের সামনেই খেলেন। তারপর তিনি তাঁদের বললেন, “আমি যখন তোমাদের সংগে ছিলাম তখন বলেছিলাম, মোশির আইন-কানুনে, নবীদের লেখায় ও গীতসংহিতার মধ্যে আমার বিষয়ে যে যে কথা লেখা আছে তার সব পূর্ণ হতেই হবে।” আরও লেখা আছে, যিরূশালেম থেকে আরম্ভ করে সমস্ত জাতির কাছে মশীহের নামে এই খবর প্রচার করা হবে যে, পাপ থেকে মন ফিরালে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায়। তোমরাই এই সমস্ত বিষয়ের সাক্ষী। দেখ, আমার পিতা যা দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন তা আমি তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। স্বর্গ থেকে শক্তি না পাওয়া পর্যন্ত তোমরা এই শহরেই থেকো।” পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে বৈথনিয়া পর্যন্ত গেলেন। সেখানে তিনি হাত তুলে তাঁদের আশীর্বাদ করলেন। আশীর্বাদ করতে করতেই তিনি তাঁদের ছেড়ে গেলেন এবং তাঁকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হল। তখন তাঁরা উবুড় হয়ে প্রণাম করে তাঁকে ঈশ্বরের সম্মান দিলেন এবং খুব আনন্দের সংগে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। তাঁরা সব সময় উপাসনা-ঘরে উপস্থিত থেকে ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগলেন। প্রথমেই বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সংগে ছিলেন এবং বাক্য নিজেই ঈশ্বর ছিলেন। আর প্রথমেই তিনি ঈশ্বরের সংগে ছিলেন। সব কিছুই সেই বাক্যের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল, আর যা কিছু সৃষ্ট হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কোন কিছুই তাঁকে ছাড়া সৃষ্ট হয় নি। তাঁর মধ্যে জীবন ছিল এবং সেই জীবনই ছিল মানুষের আলো। সেই আলো অন্ধকারের মধ্যে জ্বলছে কিন্তু অন্ধকার আলোকে জয় করতে পারে নি। ঈশ্বর যোহন নামে একজন লোককে পাঠিয়েছিলেন। তিনি আলোর বিষয়ে সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন যেন সকলে তাঁর সাক্ষ্য শুনে বিশ্বাস করতে পারে। যোহন নিজে সেই আলো ছিলেন না কিন্তু সেই আলোর বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। সেই আসল আলো, যিনি প্রত্যেক মানুষকে আলো দান করেন, তিনি জগতে আসছিলেন। তিনি জগতেই ছিলেন এবং জগৎ তাঁর দ্বারাই সৃষ্ট হয়েছিল, তবু জগতের মানুষ তাঁকে চিনল না। তিনি নিজের দেশে আসলেন, কিন্তু তাঁর নিজের লোকেরাই তাঁকে গ্রহণ করল না। তবে যতজন তাঁর উপর বিশ্বাস করে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি ঈশ্বরের সন্তান হবার অধিকার দিলেন। এই লোকদের জন্ম রক্ত থেকে হয় নি, শারীরিক কামনা বা পুরুষের বাসনা থেকেও হয় নি, কিন্তু ঈশ্বর থেকেই হয়েছে। সেই বাক্যই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন। পিতা ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হিসাবে তাঁর যে মহিমা সেই মহিমা আমরা দেখেছি। তিনি দয়া ও সত্যে পূর্ণ। যোহন তাঁর বিষয়ে জোর গলায় সাক্ষ্য দিয়ে বললেন, “উনিই সেই লোক যাঁর বিষয়ে আমি বলেছিলাম, যিনি আমার পরে আসছেন তিনি আমার চেয়ে মহান, কারণ তিনি আমার অনেক আগে থেকেই আছেন।” আমরা সকলে তাঁর সেই পূর্ণতা থেকে দয়ার উপরে আরও দয়া পেয়েছি। মোশির মধ্য দিয়ে আইন-কানুন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে দয়া ও সত্য এসেছে। ঈশ্বরকে কেউ কখনও দেখে নি। তাঁর সংগে থাকা সেই একমাত্র পুত্র, যিনি নিজেই ঈশ্বর, তিনিই তাঁকে প্রকাশ করেছেন। যখন যিহূদী নেতারা যিরূশালেম শহর থেকে কয়েকজন পুরোহিত ও লেবীয়কে যোহনের কাছে পাঠালেন তখন যোহন তাঁদের কাছে সাক্ষ্য দিলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কে?” উত্তরে যোহন অস্বীকার করলেন না বরং স্বীকার করে বললেন, “আমি মশীহ নই।” তখন তাঁরা যোহনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তবে কে? আপনি কি এলিয়?” তিনি বললেন, “না, আমি এলিয় নই।” তাঁরা বললেন, “তাহলে আপনি কি সেই নবী?” উত্তরে তিনি বললেন, “না।” তখন তাঁরা তাঁকে বললেন, “তাহলে আপনি কে? যাঁরা আমাদের পাঠিয়েছেন ফিরে গিয়ে তাঁদের তো আমাদের উত্তর দিতে হবে। আপনার নিজের সম্বন্ধে আপনি নিজে কি বলেন?” যোহন বললেন, “আমিই সেই কণ্ঠস্বর, যার বিষয়ে নবী যিশাইয় বলেছেন, মরু-এলাকায় একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে, তোমরা প্রভুর পথ সোজা কর।” যোহনের কাছে যাঁদের পাঠানো হয়েছিল তাঁরা ছিলেন ফরীশী। তাঁরা যোহনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আপনি মশীহও নন, এলিয়ও নন কিম্বা সেই নবীও নন, তবে কেন আপনি বাপ্তিস্ম দিচ্ছেন?” যোহন উত্তরে সেই ফরীশীদের বললেন, “আমি জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি বটে, কিন্তু আপনাদের মধ্যে এমন একজন আছেন যাঁকে আপনারা চেনেন না। উনিই সেই লোক যাঁর আমার পরে আসবার কথা ছিল। আমি তাঁর জুতার ফিতাটা পর্যন্ত খুলে দেবার যোগ্য নই।” যর্দন নদীর অন্য পারে বৈথনিয়া গ্রামে যেখানে যোহন বাপ্তিস্ম দিচ্ছিলেন সেখানে এই সব ঘটেছিল। পরের দিন যোহন যীশুকে তাঁর নিজের দিকে আসতে দেখে বললেন, “ঐ দেখ ঈশ্বরের মেষ-শিশু, যিনি মানুষের সমস্ত পাপ দূর করেন। ইনিই সেই লোক যাঁর বিষয়ে আমি বলেছিলাম, আমার পরে একজন আসছেন যিনি আমার চেয়ে মহান, কারণ তিনি আমার অনেক আগে থেকেই আছেন। আমি তাঁকে চিনতাম না, কিন্তু তিনি যেন ইস্রায়েলীয়দের কাছে প্রকাশিত হন সেইজন্য আমি এসে জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি।” তারপর যোহন এই সাক্ষ্য দিলেন, “আমি পবিত্র আত্মাকে কবুতরের মত হয়ে স্বর্গ থেকে নেমে এসে তাঁর উপরে থাকতে দেখেছি। আমি তাঁকে চিনতাম না, কিন্তু যিনি আমাকে জলে বাপ্তিস্ম দিতে পাঠিয়েছেন তিনিই আমাকে বলে দিয়েছেন, ‘যাঁর উপরে পবিত্র আত্মাকে নেমে এসে থাকতে দেখবে, তিনিই সেই জন যিনি পবিত্র আত্মাতে বাপ্তিস্ম দেবেন।’ আমি তা দেখেছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্র।” পরের দিন যোহন ও তাঁর দু’জন শিষ্য আবার সেখানে ছিলেন। এমন সময় যীশুকে হেঁটে যেতে দেখে যোহন বললেন, “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষ-শিশু।” যোহনকে এই কথা বলতে শুনে সেই দু’জন শিষ্য যীশুর পিছনে পিছনে যেতে লাগলেন। যীশু পিছন ফিরে তাঁদের আসতে দেখে বললেন, “তোমরা কিসের খোঁজ করছ?” যোহনের শিষ্যেরা জিজ্ঞাসা করলেন, “রব্বি (অর্থাৎ গুরু), আপনি কোথায় থাকেন?” যীশু তাঁদের বললেন, “এসে দেখ।” তখন তাঁরা গিয়ে যীশু যেখানে থাকতেন সেই জায়গাটা দেখলেন এবং সেই দিন তাঁর সংগেই রইলেন। তখন প্রায় বিকাল চারটা। যোহনের কথা শুনে যে দু’জন যীশুর পিছনে পিছনে গিয়েছিলেন তাঁদের একজনের নাম ছিল আন্দ্রিয়। ইনি ছিলেন শিমোন- পিতরের ভাই। আন্দ্রিয় প্রথমে তাঁর ভাই শিমোনকে খুঁজে বের করলেন এবং বললেন, “আমরা মশীহের (অর্থাৎ খ্রীষ্টের) দেখা পেয়েছি।” আন্দ্রিয় শিমোনকে যীশুর কাছে আনলেন। যীশু শিমোনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি যোহনের ছেলে শিমোন, কিন্তু তোমাকে কৈফা বলে ডাকা হবে।” এই নামের অর্থ পিতর, অর্থাৎ পাথর। পরের দিন যীশু ঠিক করলেন তিনি গালীল প্রদেশে যাবেন। সেই সময় যীশু ফিলিপের খোঁজ পেয়ে তাঁকে বললেন, “এস, আমার শিষ্য হও।” ফিলিপ ছিলেন বৈৎসৈদা গ্রামের লোক। আন্দ্রিয় আর পিতরও ঐ একই গ্রামের লোক ছিলেন। ফিলিপ নথনেলকে খুঁজে বের করে বললেন, “মোশি যাঁর কথা আইন-কানুনে লিখে গেছেন এবং যাঁর বিষয়ে নবীরাও লিখেছেন আমরা তাঁর দেখা পেয়েছি। তিনি যোষেফের পুত্র যীশু, নাসরত গ্রামের লোক।” নথনেল ফিলিপকে বললেন, “নাসরত থেকে কি ভাল কোন কিছু আসতে পারে?” ফিলিপ তাঁকে বললেন, “এসে দেখ।” যীশু নথনেলকে নিজের দিকে আসতে দেখে তাঁর বিষয়ে বললেন, “ঐ দেখ, একজন সত্যিকারের ইস্রায়েলীয়। তার মনে কোন ছলনা নেই।” নথনেল যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কেমন করে আমাকে চিনলেন?” যীশু উত্তরে তাঁকে বললেন, “ফিলিপ তোমাকে ডাকবার আগে যখন তুমি সেই ডুমুর গাছের তলায় ছিলে, আমি তখনই তোমাকে দেখেছিলাম।” এতে নথনেল যীশুকে বললেন, “গুরু, আপনিই ঈশ্বরের পুত্র, আপনিই ইস্রায়েলীয়দের রাজা।” যীশু তাঁকে বললেন, “তোমাকে সেই ডুমুর গাছের তলায় দেখেছি, এই কথা বলবার জন্যই কি বিশ্বাস করলে? এর চেয়ে আরও অনেক মহৎ ব্যাপার তুমি দেখতে পাবে।” পরে যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা স্বর্গ খোলা দেখবে, আর দেখবে ঈশ্বরের দূতেরা মনুষ্যপুত্রের কাছ থেকে উঠছেন এবং তাঁর কাছে নামছেন।” এর দু’দিন পরে গালীলের কান্না গ্রামে একটা বিয়ে হয়েছিল। যীশুর মা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেই বিয়েতে যীশু এবং তাঁর শিষ্যেরাও নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। পরে যখন সমস্ত আংগুর-রস ফুরিয়ে গেল তখন যীশুর মা যীশুকে বললেন, “এদের আংগুর-রস নেই।” যীশু তাঁর মাকে বললেন, “এই ব্যাপারে তোমার সংগে আমার কি সম্বন্ধ? আমার সময় এখনও হয় নি।” তাঁর মা তখন চাকরদের বললেন, “ইনি তোমাদের যা করতে বলেন তা-ই কর।” যিহূদী ধর্মের নিয়ম মত শুচি হবার জন্য সেই জায়গায় পাথরের ছয়টা জালা বসানো ছিল। সেগুলোর প্রত্যেকটাতে কমবেশ পঁয়তাল্লিশ লিটার করে জল ধরত। যীশু সেই চাকরদের বললেন, “এই জালাগুলোতে জল ভরে দাও। চাকরেরা তখন জালাগুলো কানায় কানায় জল ভরে দিল। তারপর যীশু তাদের বললেন, “এবার ওখান থেকে অল্প তুলে ভোজের কর্তার কাছে নিয়ে যাও।” চাকরেরা তা-ই করল। সেই আংগুর-রস, যা জল থেকে হয়েছিল, ভোজের কর্তা তা খেয়ে দেখলেন। কিন্তু সেই রস কোথা থেকে আসল তা তিনি জানতেন না; তবে যে চাকরেরা জল তুলেছিল তারা জানত। তাই ভোজের কর্তা বরকে ডেকে বললেন, “প্রথমে সকলে ভাল আংগুর-রস খেতে দেয়। তারপর যখন লোকের ইচ্ছামত খাওয়া শেষ হয় তখন যে রস দেয় তা আগের চেয়ে কিছু মন্দ। কিন্তু তুমি ভাল আংগুর-রস এখনও পর্যন্ত রেখেছ।” যীশু গালীল প্রদেশের কান্না গ্রামে চিহ্ন হিসাবে এই প্রথম আশ্চর্য কাজ করে নিজের মহিমা প্রকাশ করলেন। এতে তাঁর শিষ্যেরা তাঁর উপর বিশ্বাস করলেন। তারপর যীশু, তাঁর মা, তাঁর ভাইয়েরা ও তাঁর শিষ্যেরা কফরনাহূম শহরে গেলেন, কিন্তু বেশী দিন তাঁরা সেখানে থাকলেন না। যিহূদীদের উদ্ধার-পর্বের সময় কাছে আসলে পর যীশু যিরূশালেমে গেলেন। তিনি সেখানে দেখলেন, লোকেরা উপাসনা-ঘরের মধ্যে গরু, ভেড়া আর কবুতর বিক্রি করছে এবং টাকা বদল করে দেবার লোকেরাও বসে আছে। এই সব দেখে তিনি দড়ি দিয়ে একটা চাবুক তৈরী করলেন, আর তা দিয়ে সমস্ত গরু, ভেড়া এবং লোকদেরও সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন। টাকা বদল করে দেবার লোকদের টাকা-পয়সা ছড়িয়ে দিয়ে তিনি তাদের টেবিলগুলো উল্টে ফেললেন। যারা কবুতর বিক্রি করছিল যীশু তাদের বললেন, “এই জায়গা থেকে এই সব নিয়ে যাও। আমার পিতার ঘরকে ব্যবসার ঘর কোরো না।” এতে পবিত্র শাস্ত্রে লেখা এই কথাটা তাঁর শিষ্যদের মনে পড়ল: তোমার ঘরের জন্য আমার যে গভীর ভালবাসা, সেই ভালবাসাই আমার অন্তরকে জ্বালিয়ে তুলবে। তখন যিহূদী নেতারা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু এই সব করবার অধিকার যে তোমার সত্যিই আছে তার প্রমাণ হিসাবে তুমি কি আশ্চর্য কাজ আমাদের দেখাতে পার?” উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “ঈশ্বরের ঘর আপনারা ভেংগে ফেলুন, তিন দিনের মধ্যে আবার আমি তা উঠাব।” এই কথা শুনে যিহূদী নেতারা তাঁকে বললেন, “এই উপাসনা-ঘরটা তৈরী করতে ছেচল্লিশ বছর লেগেছিল, আর তুমি কি তিন দিনের মধ্যে এটা উঠাবে?” যীশু কিন্তু ঈশ্বরের ঘর বলতে নিজের দেহের কথাই বলছিলেন। তাই যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠলে পর তাঁর শিষ্যদের মনে পড়ল যে, তিনি ঐ কথাই বলেছিলেন। তখন শিষ্যেরা পবিত্র শাস্ত্রের কথায় এবং যীশু যে কথা বলেছিলেন তাতে বিশ্বাস করলেন। উদ্ধার-পর্বের সময় যীশু যিরূশালেমে থেকে যে সব আশ্চর্য কাজ করছিলেন তা দেখে অনেকেই তাঁর উপর বিশ্বাস করল। যীশু কিন্তু তাদের কাছে নিজেকে ধরা দিলেন না, কারণ তিনি সব মানুষকে জানতেন। মানুষের বিষয়ে কারও সাক্ষ্যের দরকারও তাঁর ছিল না, কারণ মানুষের মনে যা আছে তা তাঁর জানা ছিল। ফরীশীদের মধ্যে নীকদীম নামে যিহূদীদের একজন নেতা ছিলেন। একদিন রাতে তিনি যীশুর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আমরা জানি আপনি একজন শিক্ষক হিসাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন, কারণ আপনি যে সব আশ্চর্য কাজ করছেন, ঈশ্বর সংগে না থাকলে কেউ তা করতে পারে না।” যীশু নীকদীমকে বললেন, “আমি আপনাকে সত্যিই বলছি, নতুন করে জন্ম না হলে কেউ ঈশ্বরের রাজ্য দেখতে পায় না।” তখন নীকদীম তাঁকে বললেন, “মানুষ বুড়ো হয়ে গেলে কেমন করে তার আবার জন্ম হতে পারে? দ্বিতীয় বার মায়ের গর্ভে ফিরে গিয়ে সে কি আবার জন্মগ্রহণ করতে পারে?” উত্তরে যীশু বললেন, “আমি আপনাকে সত্যিই বলছি, জল এবং পবিত্র আত্মা থেকে জন্ম না হলে কেউই ঈশ্বরের রাজ্যে ঢুকতে পারে না। মানুষ থেকে যা জন্মে তা মানুষ, আর যা পবিত্র আত্মা থেকে জন্মে তা আত্মা। আমি যে আপনাকে বললাম, আপনাদের নতুন করে জন্ম হওয়া দরকার, এতে আশ্চর্য হবেন না। বাতাস যেদিকে ইচ্ছা সেই দিকে বয় আর আপনি তাঁর শব্দ শুনতে পান, কিন্তু কোথা থেকে আসে এবং কোথায়ই বা যায় তা আপনি জানেন না। পবিত্র আত্মা থেকে যাদের জন্ম হয়েছে তাদেরও ঠিক সেই রকম হয়।” নীকদীম যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এ কেমন করে হতে পারে?” তখন যীশু তাঁকে বললেন, “আপনি ইস্রায়েলীয়দের শিক্ষক হয়েও কি এই সব বোঝেন না? আপনাকে সত্যিই বলছি, আমরা যা জানি তা-ই বলি এবং যা দেখেছি সেই সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিই, কিন্তু আপনারা আমাদের সাক্ষ্য অগ্রাহ্য করেন। আমি আপনাদের কাছে জাগতিক বিষয়ে কথা বললে যখন বিশ্বাস করেন না তখন স্বর্গীয় বিষয়ে কথা বললে কেমন করে বিশ্বাস করবেন? “যিনি স্বর্গে থাকেন এবং স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন সেই মনুষ্যপুত্র ছাড়া আর কেউ স্বর্গে ওঠে নি। মোশি যেমন মরু-এলাকায় সেই সাপকে উঁচুতে তুলেছিলেন তেমনি মনুষ্যপুত্রকেও উঁচুতে তুলতে হবে, যেন যে কেউ তাঁর উপরে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পায়। “ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। ঈশ্বর মানুষকে দোষী প্রমাণ করবার জন্য তাঁর পুত্রকে জগতে পাঠান নি, বরং মানুষ যেন পুত্রের দ্বারা পাপ থেকে উদ্ধার পায় সেইজন্য তিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন। যে সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে তার কোন বিচার হয় না, কিন্তু যে বিশ্বাস করে না তাকে দোষী বলে আগেই স্থির করা হয়ে গেছে, কারণ সে ঈশ্বরের একমাত্র পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে নি। তাকে দোষী বলে স্থির করা হয়েছে কারণ জগতে আলো এসেছে, কিন্তু মানুষের কাজ মন্দ বলে মানুষ আলোর চেয়ে অন্ধকারকে বেশী ভালবেসেছে। যে কেউ অন্যায় কাজ করতে থাকে সে আলো ঘৃণা করে। তার অন্যায় কাজগুলো প্রকাশ হয়ে পড়বে বলে সে আলোর কাছে আসে না। কিন্তু যে সত্যের পথে চলে সে আলোর কাছে আসে যেন তার কাজগুলো যে ঈশ্বরের ইচ্ছামত করা হয়েছে তা প্রকাশ পায়।” এর পরে যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা যিহূদিয়া প্রদেশে গেলেন। সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের সংগে কিছু দিন থাকলেন এবং লোকদের বাপ্তিস্ম দিতে লাগলেন। শালীম নামে একটা গ্রামের কাছে ঐনোন বলে একটা জায়গায় তখন যোহনও বাপ্তিস্ম দিচ্ছিলেন, কারণ সেই জায়গায় অনেক জল ছিল আর লোকেরাও এসে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করছিল। তখনও যোহনকে জেলখানায় বন্দী করা হয় নি। সেই সময় ধর্মের নিয়ম মত শুচি হওয়ার বিষয় নিয়ে যোহনের শিষ্যেরা একজন যিহূদীর সংগে তর্ক আরম্ভ করেছিলেন। পরে তাঁরা যোহনের কাছে এসে বললেন, “গুরু, যিনি যর্দনের অন্য পারে আপনার সংগে ছিলেন এবং যাঁর বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, দেখুন, তিনি বাপ্তিস্ম দিচ্ছেন আর সবাই তাঁর কাছে যাচ্ছে।” এর উত্তরে যোহন বললেন, “স্বর্গ থেকে দেওয়া না হলে কারও পক্ষে কোন কিছুই পাওয়া সম্ভব নয়। তোমরাই আমাকে বলতে শুনেছ যে, আমি মশীহ নই, কিন্তু আমাকে তাঁর আগে পাঠানো হয়েছে। যার হাতে কন্যাকে দেওয়া হয়েছে, সে-ই বর। বরের বন্ধু দাঁড়িয়ে বরের কথা শোনে এবং তাঁর গলার আওয়াজ শুনে খুব খুশী হয়। ঠিক সেইভাবে আমার আনন্দও আজ পূর্ণ হল। তাঁকে বেড়ে উঠতে হবে আর আমাকে সরে যেতে হবে।” যিনি উপর থেকে আসেন তিনি সকলের উপরে। যে পৃথিবী থেকে আসে সে পৃথিবীর, আর সে পৃথিবীর কথাই বলে। কিন্তু যিনি স্বর্গ থেকে আসেন তিনিই সকলের উপরে। তিনি যা দেখেছেন আর শুনেছেন তারই সাক্ষ্য দেন, কিন্তু কেউ তাঁর সাক্ষ্য গ্রাহ্য করে না। যে তাঁর সাক্ষ্য গ্রাহ্য করেছে সে তার দ্বারাই প্রমাণ করেছে যে, ঈশ্বর যা বলেন তা সত্যি। ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন তিনি ঈশ্বরেরই কথা বলেন, কারণ ঈশ্বর তাঁকে পবিত্র আত্মা মেপে দেন না। পিতা পুত্রকে ভালবাসেন এবং তাঁর হাতে সমস্তই দিয়েছেন। যে কেউ পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে তখনই অনন্ত জীবন পায়, কিন্তু যে পুত্রকে অমান্য করে সে সেই জীবন কখনও পাবে না, বরং ঈশ্বরের ক্রোধ তার উপরে থাকবে। যীশু যে যোহনের চেয়ে অনেক বেশী শিষ্য করছেন এবং বাপ্তিস্ম দিচ্ছেন তা ফরীশীরা শুনেছিলেন। (অবশ্য যীশু নিজে বাপ্তিস্ম দিচ্ছিলেন না, তাঁর শিষ্যেরাই দিচ্ছিলেন।) যীশু তা জানতে পেরে যিহূদিয়া প্রদেশ ছেড়ে আবার গালীলে চলে গেলেন। গালীলে যাবার সময় তাঁকে শমরিয়া প্রদেশের মধ্য দিয়ে যেতে হল। তিনি শুখর নামে শমরিয়ার একটা গ্রামে আসলেন। যাকোব তাঁর ছেলে যোষেফকে যে জমি দান করেছিলেন এই গ্রামটা ছিল তারই কাছে। সেই জায়গায় যাকোবের কূয়া ছিল। পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে যীশু সেই কূয়ার পাশে বসলেন। তখন বেলা প্রায় দুপুর। সেই শমরীয় স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “আমি তো শমরীয় স্ত্রীলোক। আপনি যিহূদী হয়ে কেমন করে আমার কাছে জল চাইছেন?” স্ত্রীলোকটি এই কথা বলল কারণ যিহূদী এবং শমরীয়দের মধ্যে ধরা-ছোঁয়ার বাছ-বিচার ছিল। যীশু সেই স্ত্রীলোকটিকে উত্তর দিলেন, “তুমি যদি জানতে ঈশ্বরের দান কি আর কে তোমার কাছে জল চাইছেন তবে তুমিই তাঁর কাছে জল চাইতে আর তিনি তোমাকে জীবন্ত জল দিতেন।” স্ত্রীলোকটি বলল, “কিন্তু আপনার কাছে জল তুলবার কিছুই নেই আর কূয়াটাও গভীর। তবে সেই জীবন্ত জল কোথা থেকে পেলেন? আপনি আমাদের পূর্বপুরুষ যাকোবের চেয়ে তো বড় নন। এই কূয়া তিনিই আমাদের দিয়েছেন। তিনি নিজে ও তাঁর ছেলেরা এই কূয়ার জলই খেতেন আর তাঁর পশুপালও খেত।” তখন যীশু বললেন, “যে কেউ এই জল খায় তার আবার পিপাসা পাবে। কিন্তু আমি যে জল দেব, যে তা খাবে তার আর কখনও পিপাসা পাবে না। সেই জল তার অন্তরের মধ্যে উথলে-ওঠা ফোয়ারার মত হয়ে অনন্ত জীবন দান করবে।” এতে স্ত্রীলোকটি যীশুকে বলল, “আমাকে তবে সেই জল দিন যেন আমার পিপাসা না পায় আর জল তুলতে এখানে আসতে না হয়।” যীশু তাকে বললেন, “তবে যাও, তোমার স্বামীকে এখানে ডেকে আন।” স্ত্রীলোকটি বলল, “কিন্তু আমার স্বামী নেই।” যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিকই বলেছ তোমার স্বামী নেই, কারণ এর মধ্যেই তোমার পাঁচজন স্বামী হয়ে গেছে, আর এখন যে তোমার সংগে আছে সে তোমার স্বামী নয়। তুমি সত্যি কথাই বলেছ।” তখন স্ত্রীলোকটি যীশুকে বলল, “আমি এখন বুঝতে পারলাম আপনি একজন নবী। আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই পাহাড়ে উপাসনা করতেন, কিন্তু আপনারা বলে থাকেন যিরূশালেমেই লোকদের উপাসনা করা উচিত।” যীশু তাঁকে বললেন, “শোন, আমার কথায় বিশ্বাস কর, এমন সময় আসছে যখন পিতা ঈশ্বরের উপাসনা তোমরা এই পাহাড়েও করবে না, যিরূশালেমেও করবে না। তোমরা যা জান না তার উপাসনা করে থাক, কিন্তু আমরা যা জানি তারই উপাসনা করি, কারণ পাপ থেকে উদ্ধার পাবার উপায় যিহূদীদের মধ্য দিয়েই এসেছে। কিন্তু এমন সময় আসছে, এমন কি, এখনই সেই সময় এসে গেছে যখন আসল উপাসনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার উপাসনা করবে। পিতাও এই রকম উপাসনাকারীদেরই খোঁজেন। ঈশ্বর আত্মা; যারা তাঁর উপাসনা করে, আত্মায় ও সত্যে তাদের সেই উপাসনা করতে হবে।” তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “আমি জানি, মশীহ, যাঁকে খ্রীষ্ট বলা হয়, তিনি আসছেন। তিনি যখন আসবেন তখন সবই আমাদের জানাবেন।” যীশু তাকে বললেন, “আমিই তিনি, যিনি তোমার সংগে কথা বলছেন।” এমন সময় যীশুর শিষ্যেরা এসে একজন স্ত্রীলোকের সংগে যীশুকে কথা বলতে দেখে আশ্চর্য হলেন। কিন্তু তবুও তাঁরা কেউই বললেন না, “আপনি কি চাইছেন?” বা “কেন আপনি ওর সংগে কথা বলছেন?” সেই স্ত্রীলোকটি তখন তার কলসী ফেলে রেখে গ্রামে গেল আর লোকদের বলল, “তোমরা একজন লোককে এসে দেখ। আমি জীবনে যা করেছি সবই তিনি আমাকে বলে দিয়েছেন। তাহলে উনিই কি সেই মশীহ?” এতে লোকেরা গ্রাম থেকে বের হয়ে যীশুর কাছে আসতে লাগল। এর মধ্যে তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে অনুরোধ করে বললেন, “গুরু, কিছু খান।” যীশু তাঁদের বললেন, “আমার কাছে এমন খাবার আছে যার কথা তোমরা জান না।” তাতে শিষ্যেরা বলাবলি করতে লাগলেন, “তাহলে কি কেউ তাঁকে কোন খাবার এনে দিয়েছে?” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর ইচ্ছা পালন করা এবং তাঁর কাজ শেষ করাই হল আমার খাবার। তোমরা কি বল না, ‘আর চার মাস বাকী আছে, তার পরেই ফসল কাটবার সময় হবে’? কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, চোখ তুলে একবার ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে দেখ, ফসল কাটবার মত হয়েছে। যে ফসল কাটে সে এখনই বেতন পাচ্ছে এবং অনন্ত জীবনের জন্য ফসল জড়ো করে রাখছে। তার ফলে যে বীজ বোনে আর যে ফসল কাটে, দু’জনই সমানভাবে খুশী হয়। এতে এই কথা প্রমাণ হয় যে, ‘একজন বোনে আর অন্য একজন কাটে।’ আমি তোমাদের এমন ফসল কাটতে পাঠালাম যার জন্য তোমরা পরিশ্রম কর নি। অন্যেরা পরিশ্রম করেছে আর তোমরা সেই পরিশ্রমের ফসল কেটেছ।” যে স্ত্রীলোকটি এই বলে সাক্ষ্য দিচ্ছিল যে, সে যা করেছে সবই তিনি তাকে বলে দিয়েছেন, তার কথা শুনে সেই গ্রামের অনেক শমরীয় যীশুর উপর বিশ্বাস করল। তারা যীশুর কাছে গিয়ে তাঁকে তাদের সংগে থাকতে অনুরোধ করল। সেইজন্য যীশু সেখানে দু’দিন থাকলেন। তখন তাঁর কথা শুনে আরও অনেক লোক বিশ্বাস করল। সেই স্ত্রীলোকটিকে তারা বলল, “এখন যে আমরা বিশ্বাস করছি তা তোমার কথাতে নয়, কিন্তু আমরা নিজেরাই তাঁর কথা শুনে বুঝতে পেরেছি যে, উনি সত্যিই মানুষের উদ্ধারকর্তা।” পর্বের সময় যীশু যিরূশালেমে যা কিছু করেছিলেন, গালীলের লোকেরা সেই পর্বে গিয়েছিল বলে সব দেখতে পেয়েছিল। এইজন্য যীশু যখন গালীলে গেলেন তখন সেখানকার লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করল। পরে যীশু আবার গালীলের সেই কান্না গ্রামে গেলেন। এখানেই তিনি জলকে আংগুর-রস করেছিলেন। গালীলের কফরনাহূম শহরে একজন রাজকর্মচারীর ছেলে অসুখে ভুগছিল। যীশু যিহূদিয়া থেকে গালীলে এসেছেন শুনে সেই রাজকর্মচারী তাঁর কাছে গেলেন এবং অনুরোধ করলেন যেন তিনি কফরনাহূমে গিয়ে তাঁর ছেলেকে সুস্থ করেন। তাঁর ছেলেটা তখন মরবার মত হয়েছিল। যীশু সেই রাজকর্মচারীকে বললেন, “কোন চিহ্ন বা কোন আশ্চর্য কাজ না দেখলে আপনারা কোনমতেই বিশ্বাস করবেন না।” তখন সেই রাজকর্মচারী বললেন, “দয়া করে আমার ছেলেটি মারা যাবার আগেই আসুন।” যীশু তাঁকে বললেন, “আপনি যান, আপনার ছেলেটি বাঁচল।” এতে তিনি যীশুর কথাতে বিশ্বাস করে চলে গেলেন। সেই কর্মচারী যখন বাড়ী ফিরে যাচ্ছিলেন তখন পথেই তাঁর দাসেরা তাঁর কাছে গিয়ে বলল, “আপনার ছেলেটি ভাল হয়ে গেছে।” তিনি সেই দাসদের জিজ্ঞাসা করলেন, “সে কখন ভাল হয়েছে?” তারা বলল, “গতকাল দুপুর একটার সময় তার জ্বর ছেড়েছে।” এতে ছেলেটির বাবা বুঝতে পারলেন, ঠিক সেই সময়েই যীশু তাঁকে বলেছিলেন, “আপনার ছেলেটি বাঁচল।” তখন সেই রাজকর্মচারী ও তাঁর পরিবারের সবাই যীশুর উপর বিশ্বাস করলেন। যিহূদিয়া থেকে গালীলে আসবার পর যীশু এই দ্বিতীয় আশ্চর্য কাজ করলেন। এই সব ঘটনার পরে যীশু যিরূশালেমে গেলেন, কারণ সেই সময় যিহূদীদের একটা পর্ব ছিল। যিরূশালেমে মেষ-ফটকের কাছে একটা পুকুর আছে; সেখানে পাঁচটা ছাদ-দেওয়া জায়গা আছে। ইব্রীয় ভাষায় পুকুরটার নাম বৈথেস্‌দা। সেই সব জায়গায় অনেক রোগী পড়ে থাকত। অন্ধ, খোঁড়া, এমন কি শরীর যাদের একেবারে শুকিয়ে গেছে তেমন লোকও তাদের মধ্যে ছিল। একজন স্বর্গদূত সময়ে সময়ে ঐ পুকুরে নেমে এসে জল কাঁপাতেন, আর তার পরেই যে প্রথমে জলের মধ্যে নামত তার যে কোন রোগ ভাল হয়ে যেত। ঐ সব রোগীরা জল কাঁপবার অপেক্ষায় সেখানে পড়ে থাকত। আটত্রিশ বছর ধরে রোগে ভুগছে তেমন একজন লোকও সেখানে ছিল। অনেক দিন ধরে সে এইভাবে পড়ে আছে জেনে যীশু তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার কি ভাল হবার ইচ্ছা আছে?” রোগীটি উত্তর দিল, “আমার এমন কেউ নেই যে, জল কেঁপে উঠবার সংগে সংগে আমাকে পুকুরে নামিয়ে দেয়। আমি যেতে না যেতেই আর একজন আমার আগে নেমে পড়ে।” যীশু তাকে বললেন, “ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও।” তখনই সেই লোকটি ভাল হয়ে গেল ও তার বিছানা তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগল। সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবার। এইজন্য যে লোকটিকে ভাল করা হয়েছিল তাকে যিহূদী নেতারা বললেন, “আজ বিশ্রামবার; ধর্মের নিয়ম মতে বিছানা তুলে নেওয়া তোমার উচিত নয়।” তখন সে সেই নেতাদের বলল, “কিন্তু যিনি আমাকে ভাল করেছেন তিনিই আমাকে বলেছেন, ‘তোমার বিছানা তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও।’ ” তাঁরা সেই লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কে সেই লোক, যে তোমাকে বলেছে, ‘তোমার বিছানা তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও?’ ” কিন্তু যে লোকটি ভাল হয়েছিল সে জানত না তিনি কে, কারণ সেই জায়গায় অনেক লোক ভিড় করেছিল বলে যীশু চলে গিয়েছিলেন। এর পরে যীশু সেই লোকটিকে উপাসনা-ঘরে দেখতে পেয়ে বললেন, “দেখ, তুমি ভাল হয়েছ। পাপে জীবন আর কাটায়ো না, যেন তোমার আরও ক্ষতি না হয়।” তখন সেই লোকটি গিয়ে যিহূদী নেতাদের বলল যে, তাকে যিনি ভাল করেছেন তিনি যীশু। বিশ্রামবারে যীশু এই সব কাজ করছিলেন বলে যিহূদী নেতারা তাঁকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করলেন। তখন তিনি সেই নেতাদের বললেন, “আমার পিতা সব সময় কাজ করছেন এবং আমিও করছি।” যীশুর এই কথার জন্য যিহূদী নেতারা তাঁকে মেরে ফেলবার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন, কারণ তিনি যে কেবল বিশ্রামবারের নিয়ম ভাংছিলেন তা নয়, ঈশ্বরকে নিজের পিতা বলে ডেকে নিজেকে ঈশ্বরের সমানও করছিলেন। এতে যীশু সেই নেতাদের বললেন, “আমি সত্যিই আপনাদের বলছি, পুত্র নিজ থেকে কিছুই করতে পারেন না। পিতাকে যা করতে দেখেন কেবল তা-ই করতে পারেন, কারণ পিতা যা করেন পুত্রও তা-ই করেন। পিতা পুত্রকে ভালবাসেন এবং তিনি নিজে যা কিছু করেন সমস্তই পুত্রকে দেখান। তিনি এগুলোর চেয়ে আরও মহৎ মহৎ কাজ পুত্রকে দেখাবেন, যেন পুত্রকে সেই সব কাজ করতে দেখে আপনারা আশ্চর্য হন। পিতা যেমন মৃতদের জীবন দিয়ে উঠান ঠিক তেমনি পুত্রও যাকে ইচ্ছা করেন তাকে জীবন দেন। পিতা কারও বিচার করেন না, কিন্তু সমস্ত বিচারের ভার পুত্রকে দিয়েছেন, যেন পিতাকে যেমন সবাই সম্মান করে তেমনি পুত্রকেও সম্মান করে। পুত্রকে যে সম্মান করে না, যিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাকেও সে সম্মান করে না। “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, আমার কথা যে শোনে এবং আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁকে বিশ্বাস করে তার অনন্ত জীবন আছে। তাকে দোষী বলে স্থির করা হবে না; সে তো মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে। আমি আপনাদের সত্যি বলছি, এমন সময় আসছে, বরং এখনই এসেছে, যখন মৃতেরা ঈশ্বরের পুত্রের গলার স্বর শুনবে এবং যারা শুনবে তারা জীবিত হবে। এর কারণ হল, পিতা নিজে যেমন জীবনের অধিকারী তেমনি তিনি পুত্রকেও জীবনের অধিকারী হতে দিয়েছেন। পিতা পুত্রকে মানুষের বিচার করবার অধিকার দিয়েছেন, কারণ তিনি মনুষ্যপুত্র। এই কথা শুনে আশ্চর্য হবেন না, কারণ এমন সময় আসছে, যারা কবরে আছে তারা সবাই মনুষ্যপুত্রের গলার স্বর শুনে বের হয়ে আসবে। যারা ভাল কাজ করেছে তারা জীবন পাবার জন্য উঠবে, আর যারা অন্যায় কাজ করে সময় কাটিয়েছে তারা শাস্তি পাবার জন্য উঠবে। আমি নিজ থেকে কিছুই করতে পারি না; যেমন শুনি তেমনই বিচার করি। আমি ন্যায়ভাবে বিচার করি, কারণ আমি আমার ইচ্ছামত কাজ করতে চাই না কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছামত কাজ করতে চাই। “আমিই যদি আমার নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দিই তবে আমার সেই সাক্ষ্য সত্যি নয়। অন্য একজন আছেন যিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন, আর আমি জানি আমার বিষয়ে তিনি যে সাক্ষ্য দেন তা সত্যি। আপনারা যোহনের কাছে জিজ্ঞাসা করে পাঠিয়েছিলেন, আর তিনি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অবশ্য আমি মানুষের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করি না, কিন্তু যেন আপনারা পাপ থেকে উদ্ধার পান সেইজন্য এই সব কথা বলছি। যোহনই ছিলেন সেই জ্বলন্ত বাতি যা আলো দিচ্ছিল; আপনারা কিছু সময়ের জন্য তাঁর সেই আলোতে আনন্দ করতে রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু যোহনের সাক্ষ্যের চেয়ে আরও বড় সাক্ষ্য আমার আছে, কারণ পিতা আমাকে যে কাজগুলো করতে দিয়েছেন সেগুলোই আমি করছি। আর সেগুলো আমার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দেয় যে, পিতাই আমাকে পাঠিয়েছেন। সেই পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনি নিজেই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আপনারা কখনও তাঁর স্বরও শোনেন নি, চেহারাও দেখেন নি। তা ছাড়া তাঁর বাক্য আপনাদের অন্তরে থাকে না, কারণ তিনি যাঁকে পাঠিয়েছেন তাঁর উপর আপনারা বিশ্বাস করেন না। আপনারা পবিত্র শাস্ত্র খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েন, কারণ আপনারা মনে করেন তার দ্বারা অনন্ত জীবন পাবেন। কিন্তু সেই শাস্ত্র তো আমারই বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়; তবুও আপনারা জীবন পাবার জন্য আমার কাছে আসতে চান না। “আমি মানুষের প্রশংসা পাবার চেষ্টা করি না, কিন্তু আমি আপনাদের জানি। আমি জানি আপনাদের অন্তরে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা নেই। আমি আমার পিতার নামে এসেছি আর আপনারা আমাকে গ্রহণ করছেন না; কিন্তু অন্য কেউ যদি তার নিজের নামে আসে তাকে আপনারা গ্রহণ করবেন। আপনারা একজন অন্যজনের কাছ থেকে প্রশংসা পাবার আশা করেন, কিন্তু যে প্রশংসা একমাত্র ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া যায় তার চেষ্টাও করেন না। এর পরে আপনারা কেমন করে বিশ্বাস করতে পারেন? মনে করবেন না যে, পিতার কাছে আমি আপনাদের দোষী করব; কিন্তু যে মোশির উপরে আপনারা আশা করে আছেন সেই মোশিই আপনাদের দোষী করছেন। যদি আপনারা মোশিকে বিশ্বাস করতেন তবে আমাকেও বিশ্বাস করতেন, কারণ মোশি তো আমারই বিষয়ে লিখেছেন। কিন্তু যখন তাঁর লেখায়ই আপনারা বিশ্বাস করেন না তখন কেমন করে আমার কথায় বিশ্বাস করবেন?” এর পরে যীশু গালীল সাগরের অন্য পারে চলে গেলেন। এই সাগরকে তিবিরিয়া সাগরও বলা হয়। অনেক লোক যীশুর পিছনে পিছনে যেতে লাগল, কারণ রোগীদের উপর তিনি চিহ্ন হিসাবে যে সব আশ্চর্য কাজ করছিলেন তারা তা দেখেছিল। যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে একটা পাহাড়ের উপরে উঠে বসলেন। সেই সময় যিহূদীদের উদ্ধার-পর্ব কাছে এসেছিল। যীশু চেয়ে দেখলেন অনেক লোক তাঁর কাছে আসছে। তিনি ফিলিপকে বললেন, “এই লোকদের খাওয়াবার জন্য আমরা কোথা থেকে রুটি কিনব?” ফিলিপকে পরীক্ষা করবার জন্য তিনি ঐ কথা বললেন, কারণ কি করবেন তা তিনি জানতেন। ফিলিপ যীশুকে বললেন, “ওরা যদি প্রত্যেকে অল্প করেও পায় তবু দু’শো দীনারের রুটিতেও কুলাবে না।” যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজনের নাম ছিল আন্দ্রিয়। ইনি ছিলেন শিমোন-পিতরের ভাই। আন্দ্রিয় যীশুকে বললেন, “এখানে একটা ছোট ছেলের কাছে পাঁচটা যবের রুটি আর দু’টা মাছ আছে, কিন্তু এত লোকের মধ্যে ওতে কি হবে?” যীশু বললেন, “লোকদের বসিয়ে দাও।” সেই জায়গায় অনেক ঘাস ছিল। লোকেরা তারই উপর বসে গেল। সেখানে পুরুষের সংখ্যাই ছিল কমবেশি পাঁচ হাজার। এর পরে যীশু সেই রুটি কয়খানা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং যারা বসে ছিল তাদের ভাগ করে দিলেন। সেইভাবে তিনি মাছও দিলেন। যে যত চাইল তত পেল। লোকেরা পেট ভরে খেলে পর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “যে টুকরাগুলো বাকী আছে সেগুলো একসংগে জড়ো কর যেন কিছুই নষ্ট না হয়।” লোকেরা খাবার পরে সেই পাঁচখানা রুটির যা বাকী ছিল শিষ্যেরা তা জড়ো করে বারোটা টুকরি ভর্তি করলেন। যীশুর এই আশ্চর্য কাজ দেখে লোকেরা বলতে লাগল, “জগতে যে নবীর আসবার কথা আছে ইনি সত্যিই সেই নবী।” এতে যীশু বুঝলেন, লোকেরা তাঁকে জোর করে তাদের রাজা করবার জন্য ধরতে আসছে। সেইজন্য তিনি একাই আবার সেই পাহাড়ে চলে গেলেন। সন্ধ্যা হলে পর যীশুর শিষ্যেরা সাগরের ধারে গেলেন, আর নৌকায় উঠে কফরনাহূম শহরে যাবার জন্য সাগর পার হতে লাগলেন। সেই সময় অন্ধকার হয়েছিল, আর তখনও যীশু তাঁদের কাছে আসেন নি। খুব জোরে বাতাস বইছিল বলে সাগরেও বড় বড় ঢেউ উঠছিল। পাঁচ-ছয় কিলোমিটার নৌকা বেয়ে যাবার পর তাঁরা দেখলেন, যীশু সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের নৌকার কাছে আসছেন। এ দেখে শিষ্যেরা খুব ভয় পেলেন। তখন যীশু তাঁদের বললেন, “ভয় কোরো না; এ আমি।” শিষ্যেরা তাঁকে নৌকায় তুলে নিতে চাইলেন, আর তাঁরা যেখানে যাচ্ছিলেন নৌকাটা তখনই সেখানে পৌঁছে গেল। সাগরের অন্য পারে যে লোকেরা দাঁড়িয়ে ছিল, পরদিন তারা বুঝতে পারল যে, আগের দিন সেখানে একটা নৌকা ছাড়া আর অন্য কোন নৌকা ছিল না। তারা আরও বুঝতে পারল যে, যীশু তাঁর শিষ্যদের সংগে সেই নৌকায় ওঠেন নি বরং শিষ্যেরা একাই চলে গিয়েছিলেন। তবে যেখানে প্রভু ধন্যবাদ দেবার পর লোকেরা রুটি খেয়েছিল সেই জায়গার কাছে তখন তিবিরিয়া শহর থেকে কয়েকটা নৌকা আসল। এইজন্য লোকেরা যখন দেখল যে, যীশু বা তাঁর শিষ্যেরা কেউই সেখানে নেই তখন তারা সেই নৌকাগুলোতে উঠে যীশুকে খুঁজবার জন্য কফরনাহূমে গেল। সেখানে পৌঁছে তারা যীশুকে খুঁজে পেয়ে বলল, “গুরু, আপনি কখন এখানে এসেছেন?” যীশু উত্তর দিলেন, “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, আপনারা আশ্চর্য কাজ দেখেছেন বলেই যে আমার খোঁজ করছেন তা নয়, বরং পেট ভরে রুটি খেতে পেয়েছেন বলেই খোঁজ করছেন। কিন্তু যে খাবার নষ্ট হয়ে যায় সেই খাবারের জন্য ব্যস্ত হয়ে লাভ কি? যে খাবার নষ্ট হয় না বরং অনন্ত জীবন দান করে তারই জন্য ব্যস্ত হন। সেই খাবারই মনুষ্যপুত্র আপনাদের দেবেন, কারণ পিতা ঈশ্বর প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, এই কাজ করবার অধিকার কেবল তাঁরই আছে। এতে লোকেরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করল, “তাহলে ঈশ্বরের কাজ করবার জন্য আমাদের কি করতে হবে?” যীশু তাদের বললেন, “ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন তাঁর উপরে বিশ্বাস করাই হল ঈশ্বরের কাজ।” তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “তাহলে কি এমন আশ্চর্য কাজ আপনি করবেন যা দেখে আমরা আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি? আপনি কি কাজ করবেন? আমাদের পূর্বপুরুষেরা তো মরু-এলাকায় মান্না খেয়েছিলেন। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘ঈশ্বর স্বর্গ থেকে তাদের রুটি খেতে দিলেন।’ ” যীশু তাদের বললেন, “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, স্বর্গ থেকে যে রুটি আপনারা পেয়েছিলেন তা মোশি আপনাদের দেন নি, কিন্তু আমার পিতা সত্যিকারের রুটি স্বর্গ থেকে আপনাদের দিচ্ছেন। স্বর্গ থেকে নেমে এসে যিনি মানুষকে জীবন দেন তিনিই ঈশ্বরের দেওয়া রুটি।” লোকেরা তাঁকে বলল, “গুরু, তাহলে সেই রুটিই সব সময় আমাদের দিন।” যীশু তাদের বললেন, “আমিই সেই জীবন-রুটি। যে আমার কাছে আসে তার কখনও খিদে পাবে না। যে আমার উপর বিশ্বাস করে তার আর কখনও পিপাসাও পাবে না। আমি তো আপনাদের বলেছি যে, আপনারা আমাকে দেখেছেন কিন্তু তবুও বিশ্বাস করেন না। পিতা আমাকে যাদের দেন তারা সবাই আমার কাছে আসবে। যে আমার কাছে আসে আমি তাকে কোনমতেই বাইরে ফেলে দেব না, কারণ আমি আমার ইচ্ছামত কাজ করতে আসি নি, বরং যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছামত কাজ করতে স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি। যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর ইচ্ছা এই যে, যাদের তিনি আমাকে দিয়েছেন তাদের একজনকেও যেন আমি না হারাই বরং শেষ দিনে জীবিত করে তুলি। আমার পিতার ইচ্ছা এই-আপনাদের মধ্যে যাঁরা পুত্রকে দেখে তাঁর উপর বিশ্বাস করেন তাঁরা যেন অনন্ত জীবন পান। আর আমিই তাঁদের শেষ দিনে জীবিত করে তুলব।” তখন যিহূদী নেতারা যীশুর বিরুদ্ধে বকবক করতে লাগলেন, কারণ যীশু বলেছিলেন, “স্বর্গ থেকে যে রুটি নেমে এসেছে আমিই সেই রুটি।” সেই নেতারা বলতে লাগলেন, “এ কি যোষেফের ছেলে যীশু নয়? এর মা-বাবাকে তো আমরা চিনি। তবে এ কেমন করে বলে, ‘আমি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি’?” যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা নিজেদের মধ্যে বকবক করবেন না। আমার পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি টেনে না আনলে কেউই আমার কাছে আসতে পারে না। আর আমিই তাকে শেষ দিনে জীবিত করে তুলব। নবীদের বইয়ে লেখা আছে, ‘তারা সবাই ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাবে।’ যে কেউ পিতার কাছ থেকে শুনে শিক্ষা পেয়েছে সে-ই আমার কাছে আসে। পিতাকে কেউ দেখে নি, কেবল যিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন তিনিই তাঁকে দেখেছেন। আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, যে কেউ আমার উপর বিশ্বাস করে সে তখনই অনন্ত জীবন পায়।” “আমিই জীবন-রুটি। আপনাদের পূর্বপুরুষেরা মরু-এলাকায় মান্না খেয়েছিলেন, আর তবুও তাঁরা মারা গেছেন। কিন্তু এ সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে, যাতে মানুষ তা খেয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পায়। আমিই সেই জীবন্ত রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। এই রুটি যে খাবে সে চিরকালের জন্য জীবন পাবে। আমার দেহই সেই রুটি। মানুষ যেন জীবন পায় সেইজন্য আমি আমার এই দেহ দেব।” এই কথা শুনে যিহূদী নেতাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হল। তাঁরা বলতে লাগলেন, “কেমন করে এই লোকটা তার দেহ আমাদের খেতে দিতে পারে?” যীশু তাঁদের বললেন, “আমি সত্যিই আপনাদের বলছি, মনুষ্যপুত্রের মাংস ও রক্ত যদি আপনারা না খান তবে আপনাদের মধ্যে জীবন নেই। যদি কেউ আমার মাংস ও রক্ত খায় সে অনন্ত জীবন পায়, আর আমি শেষ দিনে তাকে জীবিত করে তুলব। আমার মাংসই হল আসল খাবার আর আমার রক্তই আসল পানীয়। যে আমার মাংস ও রক্ত খায় সে আমারই মধ্যে থাকে আর আমিও তার মধ্যে থাকি। জীবন্ত পিতা আমাকে পাঠিয়েছেন আর তাঁরই দরুন আমি জীবিত আছি। ঠিক সেইভাবে যে আমাকে খায় সেও আমার দরুন জীবিত থাকবে। এ সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। আপনাদের পূর্বপুরুষেরা যে রুটি খেয়েও মারা গেছেন এ সেই রকম রুটি নয়। এই রুটি যে খাবে সে চিরকালের জন্য জীবন পাবে।” কফরনাহূমের সমাজ-ঘরে শিক্ষা দেবার সময় যীশু এই কথা বলেছিলেন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অনেকে এই কথা শুনে বলল, “এ বড় কঠিন শিক্ষা। কে এটা গ্রহণ করতে পারে?” যীশু নিজের মনে বুঝতে পারলেন যে, তাঁর শিষ্যেরা এই বিষয় নিয়ে বকবক করছে। সেইজন্য তিনি তাঁদের বললেন, “এতে কি তোমরা মনে বাধা পাচ্ছ? তবে মনুষ্যপুত্র আগে যেখানে ছিলেন তাঁকে সেখানে উঠে যেতে দেখলে তোমরা কি বলবে? মানুষের দেহ কোন কাজের নয়; পবিত্র আত্মাই জীবন দেন। আমি তোমাদের যে কথাগুলো বলেছি তা আত্মিক জীবন দান করে, কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছে যারা আমাকে বিশ্বাস করে না।” কে কে যীশুকে বিশ্বাস করে না আর কে-ই বা তাঁকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে, যীশু প্রথম থেকেই তা জানতেন। সেইজন্য তিনি বললেন, “তাই আমি তোমাদের বলেছি যে, পিতা শক্তি না দিলে কেউই আমার কাছে আসতে পারে না।” যীশুর এই কথার জন্য শিষ্যদের মধ্যে অনেকে ফিরে গেল এবং তাঁর সংগে চলাফেরা বন্ধ করে দিল। এইজন্য যীশু সেই বারোজন শিষ্যকে বললেন, “তোমরাও কি চলে যেতে চাও?” শিমোন-পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, আমরা কার কাছে যাব? অনন্ত জীবনের বাণী তো আপনারই কাছে আছে। আমরা বিশ্বাস করেছি আর জানতেও পেরেছি যে, আপনিই ঈশ্বরের সেই পবিত্রজন।” তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আমি তোমাদের বারোজনকে কি বেছে নিই নি? অথচ তোমাদেরই মধ্যে একজন শত্রু আছে।” এখানে যীশু শিমোন ইষ্কারিয়োতের ছেলে যিহূদার কথা বলছিলেন, কারণ সে-ই পরে যীশুকে ধরিয়ে দেবে। সে ছিল সেই বারোজনের মধ্যে একজন। এর পরে যীশু গালীল প্রদেশের মধ্যেই চলাফেরা করতে লাগলেন। যিহূদী নেতারা তাঁকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন বলে তিনি যিহূদিয়া প্রদেশে চলাফেরা বন্ধ করে দিলেন। তখন যিহূদীদের কুঁড়ে-ঘরের পর্বের সময় প্রায় হয়ে এসেছিল। এইজন্য যীশুর ভাইয়েরা তাঁকে বললেন, “এই জায়গা ছেড়ে যিহূদিয়াতে চলে যাও, যেন তুমি যে সব কাজ করছ তোমার শিষ্যেরা তা দেখতে পায়। যদি কেউ চায় লোকে তাকে জানুক তবে সে গোপনে কিছু করে না। তুমি যখন এই সব কাজ করছ তখন লোকদের সামনে নিজেকে দেখাও।” আসলে যীশুর ভাইয়েরাও যীশুর উপর বিশ্বাস করতেন না। এতে যীশু তাঁদের বললেন, “আমার সময় এখনও হয় নি, কিন্তু তোমাদের তো অসময় বলে কিছু নেই। জগতের লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করতে পারে না কিন্তু আমাকেই ঘৃণা করে, কারণ আমি তাদের বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিই যে, তাদের সব কাজই মন্দ। তোমরাই পর্বে যাও। আমার সময় এখনও পূর্ণ হয় নি বলে আমি এখন যাব না।” এই সব কথা বলে যীশু গালীলেই থেকে গেলেন। কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা পর্বে চলে যাবার পর তিনিও সেখানে গেলেন, তবে খোলাখুলিভাবে গেলেন না, গোপনে গেলেন। পর্বের সময়ে যিহূদী নেতারা যীশুর খোঁজ করতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, “সেই লোকটা কোথায়?” ভিড়ের মধ্যে লোকেরা যীশুর বিষয়ে বিড়বিড় করে নিজেদের মধ্যে অনেক কথা বলতে লাগল। কেউ কেউ বলল, “তিনি ভাল লোক।” আবার কেউ কেউ বলল, “না, সে লোকদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে।” কিন্তু যিহূদী নেতাদের ভয়ে খোলাখুলিভাবে কেউই তাঁর বিষয়ে কিছু বলল না। সেই পর্বের মাঝামাঝি সময়ে যীশু উপাসনা-ঘরে গিয়ে শিক্ষা দিতে আরম্ভ করলেন। এতে যিহূদী নেতারা আশ্চর্য হয়ে বললেন, “এই লোকটি কোন শিক্ষা লাভ না করে কিভাবে এই সব সম্বন্ধে জানে?” উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “আমি যে শিক্ষা দিই তা আমার নিজের নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁরই। যদি কেউ তাঁর ইচ্ছা পালন করতে চায় তবে সে বুঝতে পারবে যে, এই শিক্ষা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, না আমি নিজ থেকে বলছি। যে নিজ থেকে কথা বলে সে তার নিজের প্রশংসারই চেষ্টা করে, কিন্তু যিনি পাঠিয়েছেন, কেউ যদি তাঁরই প্রশংসার চেষ্টা করে তবে সে সত্যবাদী এবং তার মনে কোন ছলনা নেই। মোশি কি আপনাদের আইন-কানুন দেন নি? কিন্তু আপনাদের মধ্যে কেউ সেই আইন-কানুন পালন করেন না। তবে কেন আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করছেন?” লোকেরা উত্তর দিল, “তোমাকে ভূতে পেয়েছে; কে তোমাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করছে?” যীশু তাদের বললেন, “আমি একটা কাজ করেছি বলে আপনারা সবাই অবাক হচ্ছেন। মোশি আপনাদের সুন্নত করাবার নিয়ম দিয়েছেন, আর সেই সুন্নত আপনারা বিশ্রামবারেও করিয়ে থাকেন। অবশ্য এই নিয়ম মোশির কাছ থেকে আসে নি, পূর্বপুরুষদের কাছ থেকেই এসেছে। বেশ ভাল, মোশির নিয়ম না ভাংবার জন্য যদি বিশ্রামবারেও ছেলেদের সুন্নত করানো যায়, তবে আমি বিশ্রামবারে একটি মানুষকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করেছি বলে আপনারা আমার উপর রাগ করছেন কেন? বাইরের চেহারা দেখে বিচার না করে বরং ন্যায়ভাবে বিচার করুন।” তখন যিরূশালেমের কয়েকজন লোক বলল, “যাকে নেতারা মেরে ফেলতে চান, এ কি সেই লোক নয়? কিন্তু সে তো খোলাখুলিভাবে কথা বলছে অথচ নেতারা কেউ তাকে কিছুই বলছেন না। তাহলে সত্যিই কি তাঁরা জানতে পেরেছেন যে, এই লোকটিই মশীহ? তবে আমরা তো জানি এ কোথা থেকে এসেছে। কিন্তু মশীহ যখন আসবেন তখন কেউ জানবে না তিনি কোথা থেকে এসেছেন।” তারপর যীশু উপাসনা-ঘরে শিক্ষা দেবার সময় জোরে জোরেই বললেন, “আপনারা আমাকেও জানেন, আর আমি কোথা থেকে এসেছি তা-ও জানেন। তবে আমি নিজে থেকে আসি নি, কিন্তু সত্য ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন। তাঁকে আপনারা জানেন না কিন্তু আমি জানি, কারণ আমি তাঁরই কাছ থেকে এসেছি আর তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন।” এতে সেই লোকেরা যীশুকে ধরতে চাইল, কিন্তু তখনও তাঁর সময় হয় নি বলে কেউ তাঁর গায়ে হাত দিল না। তবে লোকদের মধ্যে অনেকে যীশুর উপর বিশ্বাস করে বলল, “ইনি তো অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন। মশীহ এসে কি এর চেয়েও বেশী আশ্চর্য কাজ করবেন?” লোকেরা যে যীশুর সম্বন্ধে এই সব কথা বলাবলি করছে তা ফরীশীরা শুনতে পেলেন। তখন প্রধান পুরোহিতেরা ও ফরীশীরা যীশুকে ধরবার জন্য কয়েকজন কর্মচারী পাঠিয়ে দিলেন। যীশু বললেন, “আমি আর বেশী দিন আপনাদের মধ্যে নেই। তারপর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন আমি তাঁর কাছে চলে যাব। আপনারা আমাকে খুঁজবেন কিন্তু পাবেন না, আর আমি যেখানে থাকব আপনারা সেখানে আসতেও পারবেন না।” যীশুর এই কথাতে যিহূদী নেতারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “এই লোকটা কোথায় যাবে যে, আমরা তাকে খুঁজে পাব না? অযিহূদীদের মধ্যে যে যিহূদীরা ছড়িয়ে রয়েছে, সে কি সেখানে গিয়ে অযিহূদীদের শিক্ষা দেবে? সে যে বলল, ‘আপনারা আমাকে খুঁজবেন কিন্তু পাবেন না, আর আমি যেখানে থাকব আপনারা সেখানে আসতেও পারবেন না,’ এই কথার মানে কি?” পর্বের শেষের দিনটাই ছিল প্রধান দিন। সেই দিন যীশু দাঁড়িয়ে জোরে জোরে বললেন, “কারও যদি পিপাসা পায় তবে সে আমার কাছে এসে জল খেয়ে যাক। যে আমার উপর বিশ্বাস করে, পবিত্র শাস্ত্রের কথামত তার অন্তর থেকে জীবন্ত জলের নদী বইতে থাকবে।” যীশুর উপর বিশ্বাস করে যারা পবিত্র আত্মাকে পাবে সেই পবিত্র আত্মার বিষয়ে যীশু এই কথা বললেন। পবিত্র আত্মাকে তখনও দেওয়া হয় নি কারণ তখনও যীশু তাঁর মহিমা ফিরে পান নি। এই সব কথা শুনে লোকদের মধ্যে কয়েকজন বলল, “সত্যি ইনিই সেই নবী।” অন্যেরা বলল, “ইনিই মশীহ।” কিন্তু কেউ কেউ বলল, “মশীহ কি গালীল প্রদেশ থেকে আসবেন? পবিত্র শাস্ত্র কি বলে নি, দায়ূদ যে গ্রামে থাকতেন সেই বৈৎলেহমে এবং তাঁরই বংশে মশীহ জন্মগ্রহণ করবেন?” এইভাবে যীশুকে নিয়ে লোকদের মধ্যে একটা মতের অমিল দেখা দিল। কয়েকজন যীশুকে ধরতে চাইল কিন্তু কেউই তাঁর গায়ে হাত দিল না। যে কর্মচারীদের পাঠানো হয়েছিল তারা প্রধান পুরোহিতদের ও ফরীশীদের কাছে ফিরে আসল। তখন তাঁরা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তাকে আন নি কেন?” সেই কর্মচারীরা বলল, “লোকটা যেভাবে কথা বলে সেইভাবে আর কেউ কখনও বলে নি।” এতে ফরীশীরা সেই কর্মচারীদের বললেন, “তোমরাও কি ঠকে গেলে? নেতাদের মধ্যে বা ফরীশীদের মধ্যে কেউ তো তার উপর বিশ্বাস করে নি। কিন্তু এই যে সাধারণ লোকেরা, এরা তো মোশির আইন-কানুন জানে না; এদের উপর অভিশাপ রয়েছে।” নীকদীম, যিনি আগে যীশুর কাছে গিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন এই সব ফরীশীদের মধ্যে একজন। তিনি বললেন, “কারও মুখের কথা না শুনে এবং সে কি করেছে তা না জেনে কাউকে শাস্তি দেবার ব্যবস্থা কি আমাদের আইন-কানুনে রয়েছে?” এর পরে লোকেরা প্রত্যেকে যে যার বাড়ীতে চলে গেল, কিন্তু যীশু জৈতুন পাহাড়ে গেলেন। পরের দিন খুব সকালে যীশু আবার উপাসনা-ঘরে গেলে পর সমস্ত লোক তাঁর কাছে আসল। তখন যীশু বসে তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। আইন-কানুনে মোশি এই রকম স্ত্রীলোকদের পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে আমাদের আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু আপনি কি বলেন?” তাঁরা যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্যই এই কথা বললেন, যাতে তাঁকে দোষ দেবার একটা কারণ তাঁরা খুঁজে পান। তখন যীশু নীচু হয়ে আংগুল দিয়ে মাটিতে লিখতে লাগলেন। কিন্তু তাঁরা যখন কথাটা বারবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন তখন তিনি উঠে তাঁদের বললেন, “আপনাদের মধ্যে যিনি কোন পাপ করেন নি তিনিই প্রথমে ওকে পাথর মারুন।” এর পরে তিনি নীচু হয়ে আবার মাটিতে লিখতে লাগলেন। এই কথা শুনে সেই নেতাদের মধ্যে বুড়ো লোক থেকে আরম্ভ করে একে একে সবাই চলে গেলেন। যীশু কেবল একা রইলেন আর সেই স্ত্রীলোকটি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। যীশু উঠে সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তাঁরা কোথায়? কেউ কি তোমাকে শাস্তির উপযুক্ত মনে করেন নি?” স্ত্রীলোকটি উত্তর দিল, “না হুজুর, কেউই করেন নি।” তখন যীশু বললেন, “আমিও করি না। আচ্ছা যাও; পাপে জীবন আর কাটায়ো না।” পরে যীশু আবার লোকদের বললেন, “আমিই জগতের আলো। যে আমার পথে চলে সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের আলো পাবে।” এতে ফরীশীরা যীশুকে বললেন, “তোমার সাক্ষ্য সত্যি নয়, কারণ তুমি নিজের পক্ষে নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছ।” যীশু তাঁদের উত্তর দিলেন, “যদিও আমি নিজের পক্ষে নিজে সাক্ষ্য দিই তবুও আমার সাক্ষ্য সত্যি, কারণ আমি কোথা থেকে এসেছি আর কোথায় যাচ্ছি তা আমি জানি। কিন্তু আমি কোথা থেকে এসেছি আর কোথায় যাচ্ছি তা আপনারা জানেন না। মানুষ যেভাবে বিচার করে আপনারা সেইভাবে বিচার করে থাকেন, কিন্তু আমি কারও বিচার করি না। কিন্তু যদি আমি কখনও বিচার করি তবে আমার সেই বিচার সত্যি, কারণ আমি একা নই। আমি তো আছিই আর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাও আমার সংগে আছেন। আপনাদের আইন-কানুনে লেখা আছে, দু’জন যদি একই সাক্ষ্য দেয় তবে তা সত্যি। আমিই আমার নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দিই, আর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাও আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেন।” ফরীশীরা তাঁকে বললেন, “তোমার পিতা কোথায়?” যীশু উত্তর দিলেন, “আপনারা আমাকেও জানেন না আর আমার পিতাকেও জানেন না। যদি আমাকে জানতেন তবে আমার পিতাকেও জানতেন।” উপাসনা-ঘরে শিক্ষা দেবার সময়ে দান দেবার জায়গায় যীশু এই সব কথা বললেন। কিন্তু তখনও তাঁর সময় হয় নি বলে কেউই তাঁকে ধরল না। যীশু আবার ফরীশীদের বললেন, “আমি চলে যাচ্ছি। আপনারা আমাকে খুঁজবেন, কিন্তু আপনারা আপনাদের পাপের মধ্যে মরবেন। আমি যেখানে যাচ্ছি আপনারা সেখানে আসতে পারবেন না।” তখন যিহূদী নেতারা বললেন, “সে আত্মহত্যা করবে নাকি? কারণ সে বলছে, ‘আমি যেখানে যাচ্ছি আপনারা সেখানে আসতে পারবেন না।’ ” যীশু তাঁদের বললেন, “আমি উপর থেকে এসেছি আর আপনারা নীচ থেকে এসেছেন। আপনারা এই জগতের, কিন্তু আমি এই জগতের নই। তাই আমি আপনাদের বলেছি, আপনারা আপনাদের পাপের মধ্যে মরবেন। যদি আপনারা বিশ্বাস না করেন যে, আমিই সেই, তবে আপনাদের পাপের মধ্যেই আপনারা মরবেন।” এতে নেতারা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কে?” যীশু তাঁদের বললেন, “প্রথম থেকে আমি আপনাদের যা বলছি আমি তা-ই। আপনাদের সম্বন্ধে বলবার আর বিচার করে দেখবার আমার অনেক কিছুই আছে। কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর মধ্যে মিথ্যা নেই; আমি তাঁর কাছে যা শুনেছি তা-ই মানুষকে বলি।” তাঁরা বুঝলেন না যীশু পিতার বিষয়েই তাঁদের কাছে বলছিলেন। এইজন্য যীশু বললেন, “যখন আপনারা মনুষ্যপুত্রকে উঁচুতে তুলবেন তখন বুঝতে পারবেন যে, আমিই সেই। আর এও বুঝতে পারবেন যে, আমি নিজে থেকে কোন কিছুই করি না, বরং পিতা আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন আমি সেই সব কথাই বলি। যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনিই আমার সংগে আছেন। তিনি আমাকে একা ছেড়ে দেন নি, কারণ যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন আমি সব সময় সেই কাজই করি।” যীশু যখন এই সব কথা বলছিলেন তখন অনেকেই তাঁর উপর বিশ্বাস করল। যে যিহূদীরা তাঁকে বিশ্বাস করেছিল যীশু তাদের বললেন, “আমার কথামত যদি আপনারা চলেন তবে সত্যিই আপনারা আমার শিষ্য। তা ছাড়া আপনারা সত্যকে জানতে পারবেন, আর সেই সত্যই আপনাদের মুক্ত করবে।” যিহূদী নেতারা তখন যীশুকে বললেন, “আমরা অব্রাহামের বংশের লোক; আমরা কখনও কারও দাস হই নি। তুমি কি করে বলছ যে, আমাদের মুক্ত করা হবে?” যীশু তাঁদের এই উত্তর দিলেন, “আমি সত্যিই আপনাদের বলছি, যারা পাপে পড়ে থাকে তারা সবাই পাপের দাস। দাস চিরদিন বাড়ীতে থাকে না কিন্তু পুত্র চিরকাল থাকে। তাই ঈশ্বরের পুত্র যদি আপনাদের মুক্ত করেন তবে সত্যিই আপনারা মুক্ত হবেন। আমি জানি আপনারা অব্রাহামের বংশের লোক, কিন্তু তবুও আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন, কারণ আমার কথা আপনাদের অন্তরে কোন স্থান পায় না। আমি আমার পিতার কাছে যা দেখেছি সেই বিষয়েই বলি, আর আপনারা আপনাদের পিতার কাছ থেকে যা শুনেছেন তা-ই করে থাকেন।” এতে সেই যিহূদী নেতারা যীশুকে বললেন, “অব্রাহামই আমাদের পিতা।” যীশু তাঁদের বললেন, “যদি আপনারা অব্রাহামের সন্তান হতেন তবে অব্রাহামের মতই কাজ করতেন। ঈশ্বরের কাছ থেকে যে সত্য আমি জেনেছি তা-ই আপনাদের বলেছি, আর তবুও আপনারা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন; কিন্তু অব্রাহাম এই রকম করেন নি। আপনাদের পিতা যা করে আপনারা তা-ই করছেন।” তাঁরা যীশুকে বললেন, “আমরা তো জারজ নই। আমাদের একজনই পিতা আছেন, সেই পিতা হলেন ঈশ্বর।” যীশু তাঁদের বললেন, “সত্যিই যদি ঈশ্বর আপনাদের পিতা হতেন তবে আপনারা আমাকে ভালবাসতেন, কারণ আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছি আর এখন আপনাদের মধ্যে আছি। আমি নিজ থেকে আসি নি, কিন্তু তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন। কেন আপনারা আমার কথা বোঝেন না? তার কারণ এই যে, আপনারা আমার কথা সহ্য করতে পারেন না। শয়তানই আপনাদের পিতা আর আপনারা তারই সন্তান; সেইজন্য আপনারা তার ইচ্ছা পূর্ণ করতে চান। শয়তান প্রথম থেকেই খুনী। সে কখনও সত্যে বাস করে নি, কারণ তার মধ্যে সত্য নেই। সে যখন মিথ্যা কথা বলে তখন সে তা নিজে থেকেই বলে, কারণ সে মিথ্যাবাদী আর সমস্ত মিথ্যার জন্ম তার মধ্য থেকেই হয়েছে। কিন্তু আমি সত্যি কথা বলি, আর তাই আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন না। আপনাদের মধ্যে কে আমাকে পাপী বলে প্রমাণ করতে পারেন? যদি আমি সত্যি কথাই বলি তবে কেন আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন না? যে লোক ঈশ্বরের, সে ঈশ্বরের কথা শোনে। আপনারা ঈশ্বরের নন বলে ঈশ্বরের কথা শোনেন না।” তখন যিহূদী নেতারা যীশুকে বললেন, “আমরা কি ঠিক বলি নি যে, তুমি একজন শমরীয় আর তোমাকে ভূতে পেয়েছে?” উত্তরে যীশু বললেন, “আমাকে ভূতে পায় নি। আমি আমার পিতাকে সম্মান করি, কিন্তু আপনারা আমাকে অসম্মান করেন। আমি আমার নিজের প্রশংসার চেষ্টা করি না, কিন্তু একজন আছেন যিনি আমাকে সম্মান দান করেন, আর তিনিই বিচারকর্তা। আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, যদি কেউ আমার কথার বাধ্য হয়ে চলে তবে সে কখনও মরবে না।” যিহূদী নেতারা তাঁকে বললেন, “এবার আমরা সত্যি বুঝলাম যে, তোমাকে ভূতেই পেয়েছে। অব্রাহাম ও নবীরা মারা গেছেন, আর তুমি বলছ, ‘যদি কেউ আমার কথার বাধ্য হয়ে চলে সে কখনও মরবে না।’ তুমি কি পিতা অব্রাহাম থেকেও বড়? তিনি তো মারা গেছেন এবং নবীরাও মারা গেছেন। তুমি নিজেকে কি মনে কর?” উত্তরে যীশু বললেন, “যদি আমি নিজের প্রশংসা নিজেই করি তবে তার কোন দাম নেই। আমার পিতা, যাঁকে আপনারা আপনাদের ঈশ্বর বলে দাবি করেন তিনিই আমাকে সম্মান দান করেন। আপনারা কখনও তাঁকে জানেন নি, কিন্তু আমি তাঁকে জানি। যদি আমি বলি আমি তাঁকে জানি না তবে আপনাদেরই মত আমি মিথ্যাবাদী হব। কিন্তু আমি তাঁকে জানি এবং তাঁর কথার বাধ্য হয়ে চলি। আপনাদের পিতা অব্রাহাম আমারই দিন দেখবার আশায় আনন্দ করেছিলেন। তিনি তা দেখেছিলেন আর খুশীও হয়েছিলেন।” যিহূদী নেতারা যীশুকে বললেন, “তোমার বয়স এখনও পঞ্চাশ বছর হয় নি, আর তুমি কি অব্রাহামকে দেখেছ?” পথ দিয়ে যাবার সময় যীশু একজন অন্ধ লোককে দেখতে পেলেন। সে জন্ম থেকেই অন্ধ ছিল। তখন শিষ্যেরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “গুরু, কার পাপে এই লোকটি অন্ধ হয়ে জন্মেছে? তার নিজের, না তার মা-বাবার?” যীশু উত্তর দিলেন, “পাপ সে নিজেও করে নি, তার মা-বাবাও করে নি। এটা হয়েছে যেন ঈশ্বরের কাজ তার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, বেলা থাকতে থাকতে তাঁর কাজ করা আমাদের দরকার। রাত আসছে, তখন কেউই কাজ করতে পারবে না। যতদিন আমি জগতে আছি আমি জগতের আলো।” এই কথা বলবার পরে তিনি মাটিতে থুথু ফেলে কাদা করলেন। তারপর সেই কাদা তিনি লোকটির চোখে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, “যাও, শীলোহের পুকুরে গিয়ে ধুয়ে ফেল।” শীলোহ মানে পাঠানো হল। লোকটি গিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলল এবং চোখে দেখতে পেয়ে ফিরে আসল। এ দেখে তার প্রতিবেশীরা আর যারা তাকে আগে ভিক্ষা করতে দেখেছিল তারা সবাই বলতে লাগল, “এ কি সেই লোকটি নয়, যে বসে বসে ভিক্ষা করত?” কেউ কেউ বলল, “হ্যাঁ, এ-ই সেই লোক।” আবার কেউ কেউ বলল, “যদিও দেখতে তারই মত তবুও সে নয়।” কিন্তু লোকটি নিজে বলল, “হ্যাঁ, আমিই সেই লোক।” তারা তাকে বলল, “কিন্তু কেমন করে তোমার চোখ খুলে গেল?” সে উত্তর দিল, “যীশু নামে সেই লোকটি কাদা করে আমার চোখে লাগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘শীলোহের পুকুরে গিয়ে ধুয়ে ফেল।’ আমি গিয়ে ধুয়ে ফেললাম আর দেখতে পেলাম।” তারা তাকে বলল, “সেই লোকটি কোথায়?” সে বলল, “আমি জানি না।” যে লোকটি অন্ধ ছিল লোকেরা তাকে ফরীশীদের কাছে নিয়ে গেল। যেদিন যীশু কাদা করে তার চোখ খুলে দিয়েছিলেন সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবার। এইজন্য তাকে ফরীশীরাও আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কেমন করে দেখতে পেলে?” সে ফরীশীদের বলল, “তিনি আমার চোখের উপরে কাদা লাগিয়ে দিলেন, আর আমি তা ধুয়ে ফেলতেই দেখতে পেলাম।” এতে ফরীশীদের মধ্যে কয়েকজন বললেন, “ঐ লোকটি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে নি, কারণ সে বিশ্রামবার পালন করে না।” অন্য ফরীশীরা বললেন, “যে লোক পাপী সে কেমন করে এই রকম আশ্চর্য কাজ করতে পারে?” এইভাবে তাঁদের মধ্যে মতের অমিল দেখা দিল। তখন তাঁরা সেই লোকটিকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি তার সম্বন্ধে কি বল? কারণ সে তো তোমারই চোখ খুলে দিয়েছে।” লোকটি বলল, “তিনি একজন নবী।” যিহূদী নেতারা কিন্তু লোকটির মা-বাবাকে ডেকে জিজ্ঞাসা না করা পর্যন্ত বিশ্বাস করলেন না যে, সেই লোকটি আগে অন্ধ ছিল আর এখন দেখতে পাচ্ছে। তাঁরা লোকটির মা-বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এ-ই কি তোমাদের সেই ছেলে যার সম্বন্ধে তোমরা বল যে, সে অন্ধ হয়ে জন্মেছিল? এখন তবে সে কেমন করে দেখতে পাচ্ছে?” তার মা-বাবা উত্তর দিল, “আমরা জানি এ আমাদেরই ছেলে, আর এ অন্ধ হয়েই জন্মেছিল। কিন্তু কেমন করে সে এখন দেখতে পাচ্ছে তা আমরা জানি না; আর কে যে তার চোখ খুলে দিয়েছে তাও জানি না। ওর বয়স হয়েছে, ওকেই জিজ্ঞাসা করুন। ও নিজের বিষয় নিজেই বলুক।” তার মা-বাবা যিহূদী নেতাদের ভয়ে এই সব কথা বলল, কারণ যিহূদী নেতারা আগেই ঠিক করেছিলেন যে, কেউ যদি যীশুকে মশীহ বলে স্বীকার করে তবে তাকে সমাজ থেকে বের করে দেওয়া হবে। সেইজন্যই তার মা-বাবা বলেছিল, “ওর বয়স হয়েছে, ওকেই জিজ্ঞাসা করুন।” যে লোকটি আগে অন্ধ ছিল নেতারা তাকে দ্বিতীয় বার ডেকে বললেন, “তুমি সত্যি কথা বলে ঈশ্বরের গৌরব কর। আমরা তো জানি ঐ লোকটা পাপী।” সে উত্তর দিল, “তিনি পাপী কি না তা আমি জানি না; তবে একটা বিষয় জানি যে, আগে আমি অন্ধ ছিলাম আর এখন দেখতে পাচ্ছি।” নেতারা বললেন, “সে তোমাকে কি করেছে? কেমন করে সে তোমার চোখ খুলে দিয়েছে?” উত্তরে লোকটি তাঁদের বলল, “আমি তো আগেই আপনাদের বলেছি, কিন্তু আপনারা শোনেন নি। কেন তবে আপনারা আবার শুনতে চান? আপনারাও কি তাঁর শিষ্য হতে চান?” এতে নেতারা লোকটিকে খুব গালাগালি দিয়ে বললেন, “তুই সেই লোকের শিষ্য, কিন্তু আমরা মোশির শিষ্য। আমরা জানি ঈশ্বর মোশির সংগে কথা বলেছিলেন, কিন্তু ঐ লোকটা কোথা থেকে এসেছে তা আমরা জানি না।” তখন সেই লোকটি তাঁদের উত্তর দিল, “কি আশ্চর্য! আপনারা জানেন না তিনি কোথা থেকে এসেছেন অথচ তিনিই আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আমরা জানি ঈশ্বর পাপীদের কথা শোনেন না। কিন্তু যদি কোন লোক ঈশ্বরভক্ত হয় ও তাঁর ইচ্ছামত কাজ করে তবে ঈশ্বর তাঁর কথা শোনেন। জগৎ সৃষ্টির পর থেকে কখনও শোনা যায় নি, জন্ম থেকে অন্ধ এমন কোন লোকের চোখ কেউ খুলে দিয়েছে। যদি উনি ঈশ্বরের কাছ থেকে না আসতেন তবে কিছুই করতে পারতেন না।” উত্তরে নেতারা বললেন, “তোর জন্ম হয়েছে একেবারে পাপের মধ্যে, আর তুই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছিস?” এই বলে তাঁরা তাকে সমাজ থেকে বের করে দিলেন। যীশু শুনলেন যে, নেতারা লোকটিকে বের করে দিয়েছেন। পরে তিনি সেই লোকটিকে খুঁজে পেয়ে বললেন, “তুমি কি মনুষ্যপুত্রের উপর বিশ্বাস কর?” সে উত্তর দিল, “প্রভু, তিনি কে, আমাকে বলুন যাতে আমি তাঁর উপরে বিশ্বাস করতে পারি।” যীশু তাকে বললেন, “তুমি তাঁকে দেখেছ, আর তিনিই তোমার সংগে কথা বলছেন।” তখন লোকটি বলল, “প্রভু, আমি বিশ্বাস করি।” এই বলে সে যীশুকে প্রণাম করে ঈশ্বরের সম্মান দিল। যীশু বললেন, “আমি এই জগতে বিচার করবার জন্য এসেছি, যেন যারা দেখতে পায় না তারা দেখতে পায় এবং যারা দেখতে পায় তারা অন্ধ হয়।” কয়েকজন ফরীশীও যীশুর সংগে ছিলেন। তাঁরা এই কথা শুনে যীশুকে বললেন, “তবে আপনি কি বলতে চান যে, আমরা অন্ধ?” যীশু তাঁদের বললেন, “আপনারা যদি অন্ধ হতেন তাহলে আপনাদের কোন দোষ থাকত না। কিন্তু আপনারা বলেন যে, আপনারা দেখতে পান, সেইজন্যই আপনাদের দোষ রয়েছে। “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, যে কেউ মেষের খোঁয়াড়ের দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য দিক দিয়ে ঢোকে সে চোর ও ডাকাত। কিন্তু যে কেউ দরজা দিয়ে ভিতরে যায় সে-ই মেষদের পালক। মেষের খোঁয়াড় যে পাহারা দেয় সে সেই পালককেই দরজা খুলে দেয়। মেষগুলো তার ডাক শোনে, আর সেই পালক তার নিজের মেষগুলোর নাম ধরে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। তার নিজের সব মেষগুলো বের করবার পরে সে তাদের আগে আগে চলে, আর মেষগুলো তার পিছনে পিছনে যায় কারণ তারা তার ডাক চেনে। তারা কখনও অচেনা লোকের পিছনে যাবে না বরং তার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে, কারণ তারা অচেনা লোকের গলার স্বর চেনে না।” সেই ফরীশীদের শিক্ষা দেবার জন্য যীশু এই কথা বললেন কিন্তু তিনি যে কি বলছিলেন তা তাঁরা বুঝলেন না। সেইজন্য যীশু আবার বললেন, “আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, মেষগুলোর জন্য আমিই দরজা। আমার আগে যারা এসেছিল তারা সবাই চোর আর ডাকাত, কিন্তু মেষগুলো তাদের কথা শোনে নি। আমিই দরজা। যদি কেউ আমার মধ্য দিয়ে ভিতরে ঢোকে তবে সে উদ্ধার পাবে। সে ভিতরে আসবে ও বাইরে যাবে আর চরে খাবার জায়গা পাবে। চোর কেবল চুরি, খুন ও নষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়েই আসে। আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয়। “আমিই উত্তম মেষপালক। উত্তম মেষপালক তার মেষদের জন্য নিজের জীবন দেয়। আরও মেষ আমার কাছে আছে যেগুলো এই খোঁয়াড়ের নয়; তাদেরও আমাকে আনতে হবে। তারা আমার ডাক শুনবে, আর তাতে একটা মেষপাল ও একজন পালক হবে। পিতা আমাকে এইজন্য ভালবাসেন, কারণ আমি আমার প্রাণ দেব যেন তা আবার ফিরিয়ে নিতে পারি। কেউই আমার প্রাণ আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে না, কিন্তু আমি নিজেই তা দেব। প্রাণ দেবারও ক্ষমতা আমার আছে, আবার প্রাণ ফিরিয়ে নেবারও ক্ষমতা আমার আছে। এই দায়িত্ব আমি আমার পিতার কাছ থেকে পেয়েছি।” যীশুর এই কথার জন্য যিহূদীদের মধ্যে আবার মতের অমিল দেখা দিল। তাদের মধ্যে অনেকে বলল, “তাকে ভূতে পেয়েছে, সে পাগল; তোমরা তার কথা কেন শুনছ?” অন্যেরা বলল, “কিন্তু এ তো ভূতে পাওয়া লোকের মত কথা নয়। ভূত কি অন্ধের চোখ খুলে দিতে পারে?” এর পরে যিরূশালেমে উপাসনা-ঘর প্রতিষ্ঠার পর্ব উপস্থিত হল। তখন শীতকাল। যীশু উপাসনা-ঘরের মধ্যে শলোমনের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সেই সময় যিহূদী নেতারা যীশুর চারপাশে জড়ো হয়ে বললেন, “আর কত দিন তুমি আমাদের সন্দেহের মধ্যে রাখবে? তুমি যদি মশীহ হও তবে স্পষ্ট করে আমাদের বল।” যীশু উত্তরে বললেন, “আমি তো আপনাদের বলেছি, কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করেন না। আমার পিতার নামে আমি যে সব কাজ করি সেগুলোও আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করেন না, কারণ আপনারা আমার মেষ নন। আমার মেষগুলো আমার ডাক শোনে। আমি তাদের জানি আর তারা আমার পিছনে পিছনে চলে। আমি তাদের অনন্ত জীবন দিই। তারা কখনও বিনষ্ট হবে না এবং কেউই আমার হাত থেকে তাদের কেড়ে নেবে না। আমার পিতা, যিনি তাদের আমাকে দিয়েছেন, তিনি সকলের চেয়ে মহান। কেউই পিতার হাত থেকে কিছু কেড়ে নিতে পারে না। আমি আর পিতা এক।” তখন যিহূদী নেতারা তাঁকে মারবার জন্য আবার পাথর কুড়িয়ে নিলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “পিতার আদেশ মত অনেক ভাল ভাল কাজ আমি আপনাদের দেখিয়েছি। সেগুলোর মধ্যে কোন্‌ কাজের জন্য আপনারা আমাকে পাথর মারতে চান?” নেতারা উত্তরে বললেন, “ভাল কাজের জন্য আমরা তোমাকে পাথর মারি না, কিন্তু তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলছ বলেই মারি। মানুষ হয়েও তুমি নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করছ।” যীশু বললেন, “আপনাদের আইন-কানুনে কি লেখা নেই যে, ‘আমি বললাম, তোমরা যেন ঈশ্বর’? ঈশ্বরের বাক্য যাদের কাছে এসেছিল তাদের তো তিনি ঈশ্বরের মত বলেছিলেন। পবিত্র শাস্ত্রের কথা কি বাদ দেওয়া যেতে পারে? পারে না। তাহলে পিতা নিজের উদ্দেশ্যে যাঁকে আলাদা করলেন এবং জগতে পাঠিয়ে দিলেন সেই আমি যখন বললাম, ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র,’ তখন আপনারা কেমন করে বলছেন, ‘তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলছ?’ আমার পিতার কাজ যদি আমি না করি তবে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু যদি করি তবে আমাকে বিশ্বাস না করলেও আমার কাজগুলো অন্ততঃ বিশ্বাস করুন। তাতে আপনারা জানতে ও বুঝতে পারবেন যে, পিতা আমার মধ্যে আছেন আর আমি পিতার মধ্যে আছি।” তখন যিহূদী নেতারা আবার যীশুকে ধরবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তিনি তাঁদের হাত এড়িয়ে চলে গেলেন। এর পরে তিনি আবার যর্দন নদীর ওপারে গিয়ে থাকতে লাগলেন। সেখানেই যোহন প্রথমে বাপ্তিস্ম দিতেন। অনেক লোক যীশুর কাছে গেল এবং বলাবলি করতে লাগল, “যোহন কোন আশ্চর্য কাজ করেন নি বটে, কিন্তু তবুও তিনি এই লোকটির বিষয়ে যা যা বলেছিলেন তা সবই সত্যি।” আর সেখানে অনেক লোক যীশুর উপরে বিশ্বাস করল। লাসার নামে বৈথনিয়া গ্রামের একজন লোকের অসুখ হয়েছিল। মরিয়ম ও তাঁর বোন মার্থা সেই গ্রামে থাকতেন। ইনি সেই মরিয়ম যিনি প্রভুর পায়ে সুগন্ধি আতর ঢেলে দিয়ে নিজের চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিয়েছিলেন। যে লাসারের অসুখ হয়েছিল তিনি ছিলেন এই মরিয়মের ভাই। এইজন্য তাঁর বোনেরা যীশুকে এই কথা বলে পাঠালেন, “প্রভু, আপনি যাকে ভালবাসেন তার অসুখ হয়েছে।” এই কথা শুনে যীশু বললেন, “এই অসুখ তার মৃত্যুর জন্য হয় নি বরং ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশের জন্যই হয়েছে, যেন এর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের পুত্রের মহিমা প্রকাশ পায়।” মার্থা, তাঁর বোন ও লাসারকে যীশু ভালবাসতেন। যখন যীশু লাসারের অসুখের কথা শুনলেন তখন তিনি যেখানে ছিলেন সেখানেই আরও দু’দিন রয়ে গেলেন। তারপর তিনি শিষ্যদের বললেন, “চল, আমরা আবার যিহূদিয়াতে যাই।” শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “গুরু, এই কিছুদিন আগে নেতারা আপনাকে পাথর মারতে চেয়েছিলেন, আর আপনি আবার সেখানে যাচ্ছেন?” যীশু উত্তর দিলেন, “দিনে কি বারো ঘণ্টা নেই? কেউ যদি দিনে চলাফেরা করে সে উছোট খায় না, কারণ সে এই পৃথিবীর আলো দেখে। কিন্তু যদি কেউ রাতে চলাফেরা করে সে উছোট খায়, কারণ তার মধ্যে আলো নেই।” এই সব কথা বলবার পরে যীশু শিষ্যদের বললেন, “আমাদের বন্ধু লাসার ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু আমি তাকে জাগাতে যাচ্ছি।” এতে শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “প্রভু, যদি সে ঘুমিয়েই থাকে তবে সে ভাল হবে।” যীশু লাসারের মৃত্যুর কথা বলছিলেন, কিন্তু তাঁর শিষ্যেরা ভাবলেন তিনি স্বাভাবিক ঘুমের কথাই বলছেন। যীশু তখন স্পষ্ট করেই বললেন, “লাসার মারা গেছে, কিন্তু আমি তোমাদের কথা ভেবে খুশী হয়েছি যে, আমি সেখানে ছিলাম না যাতে তোমরা বিশ্বাস করতে পার। চল, আমরা লাসারের কাছে যাই।” তখন থোমা, যাঁকে যমজ বলা হয়, তাঁর সংগী-শিষ্যদের বললেন, “চল, আমরাও যাই, যেন তাঁর সংগে মরতে পারি।” যীশু সেখানে পৌঁছে জানতে পারলেন যে, চার দিন আগেই লাসারকে কবর দেওয়া হয়েছে। যিরূশালেম থেকে বৈথনিয়া প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ছিল। যিহূদীদের মধ্যে অনেকেই মার্থা ও মরিয়মকে তাঁদের ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য সান্ত্বনা দিতে এসেছিল। যীশু আসছেন শুনে মার্থা তাঁর সংগে দেখা করতে গেলেন, কিন্তু মরিয়ম ঘরে বসে রইলেন। মার্থা যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন তবে আমার ভাই মারা যেত না। কিন্তু আমি জানি, আপনি এখনও ঈশ্বরের কাছে যা চাইবেন ঈশ্বর তা আপনাকে দেবেন।” যীশু তাঁকে বললেন, “তোমার ভাই আবার জীবিত হয়ে উঠবে।” তখন মার্থা তাঁকে বললেন, “আমি জানি, শেষ দিনে মৃত লোকেরা যখন জীবিত হয়ে উঠবে তখন সেও উঠবে।” যীশু মার্থাকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর বিশ্বাস করে সে মরলেও জীবিত হবে। আর যে জীবিত আছে এবং আমার উপর বিশ্বাস করে সে কখনও মরবে না। তুমি কি এই কথা বিশ্বাস কর?” মার্থা তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, প্রভু, আমি বিশ্বাস করি যে, জগতে যাঁর আসবার কথা আছে আপনিই সেই মশীহ, ঈশ্বরের পুত্র।” এই কথা বলে মার্থা গিয়ে তাঁর বোন মরিয়মকে গোপনে ডেকে বললেন, “গুরু এখানে আছেন ও তোমাকে ডাকছেন।” মরিয়ম এই কথা শুনে তাড়াতাড়ি উঠে যীশুর কাছে গেলেন। যীশু তখনও গ্রামে এসে পৌঁছান নি; মার্থা যেখানে তাঁর সংগে দেখা করেছিলেন সেখানেই ছিলেন। যে যিহূদীরা মরিয়মের সংগে ঘরে থেকে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল তারা মরিয়মকে তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে যেতে দেখে তাঁর পিছনে পিছনে গেল। তারা ভাবল, মরিয়ম কবরের কাছে কাঁদতে যাচ্ছেন। যীশু যেখানে ছিলেন মরিয়ম সেখানে গেলেন আর তাঁকে দেখতে পেয়ে তাঁর পায়ের উপর পড়ে বললেন, “প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন তবে আমার ভাই মারা যেত না।” যীশু মরিয়মকে এবং তাঁর সংগে যে যিহূদীরা এসেছিল তাদের কাঁদতে দেখে অন্তরে খুব অস্থির হলেন। তিনি তাদের বললেন, “লাসারকে কোথায় রেখেছ?” তারা বলল, “প্রভু, এসে দেখুন।” তখন যীশু কাঁদলেন। তাতে যিহূদীরা বলল, “দেখ, উনি লাসারকে কত ভালবাসতেন।” কিন্তু যিহূদীদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “অন্ধের চোখ যিনি খুলে দিয়েছেন তিনি কি এমন কিছু করতে পারতেন না যাতে লোকটি মারা না যেত?” এতে যীশু অন্তরে আবার অস্থির হলেন এবং কবরের কাছে গেলেন। কবরটা ছিল একটা গুহা। সেই গুহার মুখে একটা পাথর বসানো ছিল। যীশু বললেন, “পাথরখানা সরাও।” যিনি মারা গেছেন তাঁর বোন মার্থা যীশুকে বললেন, “প্রভু, এখন দুর্গন্ধ হয়েছে, কারণ চার দিন হল সে মারা গেছে।” যীশু মার্থাকে বললেন, “আমি কি তোমাকে বলি নি, যদি তুমি বিশ্বাস কর তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পাবে?” তখন লোকেরা পাথরখানা সরিয়ে দিল। যীশু উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “পিতা, তুমি আমার কথা শুনেছ বলে আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই। অবশ্য আমি জানি সব সময়ই তুমি আমার কথা শুনে থাক। কিন্তু যে সব লোক চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে তারা যেন বিশ্বাস করতে পারে যে, তুমি আমাকে পাঠিয়েছ, সেইজন্যই এই কথা বললাম।” এই কথা বলবার পরে যীশু জোরে ডাক দিয়ে বললেন, “লাসার, বের হয়ে এস।” যিনি মারা গিয়েছিলেন তিনি তখন কবর থেকে বের হয়ে আসলেন। তাঁর হাত-পা কবরের কাপড়ে জড়ানো ছিল এবং তাঁর মুখ রুমালে বাঁধা ছিল। যীশু লোকদের বললেন, “ওর বাঁধন খুলে দাও আর ওকে যেতে দাও। মরিয়মের কাছে যে সব যিহূদীরা এসেছিল তাদের মধ্যে অনেকেই যীশুর এই কাজ দেখে তাঁর উপর বিশ্বাস করল। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফরীশীদের কাছে গিয়ে যীশু যা করেছিলেন তা বলল। তখন প্রধান পুরোহিতেরা ও ফরীশীরা মহাসভার লোকদের একত্র করে বললেন, “আমরা এখন কি করি? এই লোকটা তো অনেক আশ্চর্য কাজ করছে। আমরা যদি তাকে এইভাবে চলতে দিই তবে সবাই তার উপরে বিশ্বাস করবে, আর রোমীয়েরা এসে আমাদের উপাসনা-ঘর এবং আমাদের জাতিকে ধ্বংস করে ফেলবে।” তাঁদের মধ্যে কাইয়াফা নামে একজন সেই বছরের মহাপুরোহিত ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা কিছুই জান না, আর ভেবেও দেখ না যে, গোটা জাতিটা নষ্ট হওয়ার চেয়ে বরং সমস্ত লোকের বদলে একজন মানুষের মৃত্যু অনেক ভাল।” কাইয়াফা যে নিজে থেকে এই কথা বলেছিলেন তা নয় কিন্তু তিনি ছিলেন সেই বছরের মহাপুরোহিত। সেইজন্য তিনি ভবিষ্যতের কথা বলেছিলেন যে, যিহূদী জাতির জন্য যীশুই মরবেন। কেবল যিহূদী জাতির জন্যই নয়, কিন্তু ঈশ্বরের যে সন্তানেরা চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে তাদের জড়ো করে এক করবার জন্যও তিনি মরবেন। সেই দিন থেকে যিহূদী নেতারা যীশুকে মেরে ফেলবার ষড়যন্ত্র করতে লাগলেন। সেইজন্য যীশু খোলাখুলিভাবে যিহূদীদের মধ্যে চলাফেরা বন্ধ করে দিলেন, আর সেই জায়গা ছেড়ে মরু-এলাকার কাছে ইফ্রয়িম নামে একটা গ্রামে চলে গেলেন। সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের নিয়ে থাকতে লাগলেন। তখন যিহূদীদের উদ্ধার-পর্ব কাছে এসেছিল। পর্বের আগে নিজেদের শুচি করবার জন্য অনেক লোক গ্রাম থেকে যিরূশালেমে গিয়েছিল। এই লোকেরা যীশুর খোঁজ করতে লাগল। তারা উপাসনা-ঘরে দাঁড়িয়ে একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, “তিনি কি এই পর্বে একেবারেই আসবেন না? তোমাদের কি মনে হয়?” প্রধান পুরোহিতেরা ও ফরীশীরা আদেশ দিয়েছিলেন যে, যীশু কোথায় আছে তা যদি কেউ জানে তবে সে যেন খবরটা তাঁদের জানায় যাতে তাঁরা যীশুকে ধরতে পারেন। উদ্ধার-পর্বের ছয় দিন আগে যীশু বৈথনিয়াতে গেলেন। যাঁকে তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন সেই লাসার বৈথনিয়াতে বাস করতেন। সেখানে তাঁরা যীশুর জন্য খাওয়ার আয়োজন করলেন। মার্থা পরিবেশন করছিলেন। যারা যীশুর সংগে খেতে বসেছিলেন তাঁদের মধ্যে লাসারও ছিলেন। এমন সময় মরিয়ম কমবেশ তিনশো গ্রাম খুব দামী, খাঁটি সুগন্ধি আতর নিয়ে আসলেন এবং যীশুর পায়ে তা ঢেলে দিয়ে নিজের চুল দিয়ে তাঁর পা মুছে দিলেন। সেই আতরের সুগন্ধে সারা ঘর ভরে গেল। যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন, যে তাঁকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে, সেই যিহূদা ইষ্কারিয়োৎ বলল, “এই আতর তিনশো দীনারে বিক্রি করে গরীব- দুঃখীদের দেওয়া যেত। কেন তা করা হল না?” যিহূদা যে গরীবদের বিষয়ে চিন্তা করে এই কথা বলেছিল তা নয়। আসলে সে ছিল চোর। টাকার বাক্স তার কাছে থাকত বলে যা কিছু জমা রাখা হত তা থেকে সে চুরি করত। যীশু বললেন, “তোমরা ওর মনে কষ্ট দিয়ো না। আমাকে কবর দেবার সময়ে সাজাবার জন্যই ও এটা রেখেছিল। গরীবেরা তো সব সময় তোমাদের মধ্যে আছে, কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না।” যীশু বৈথনিয়াতে আছেন জানতে পেরে যিহূদীদের মধ্য থেকে অনেক লোক সেখানে আসল। তারা যে কেবল যীশুর জন্য সেখানে এসেছিল তা নয়, কিন্তু যাঁকে যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন সেই লাসারকেও দেখতে আসল। তখন প্রধান পুরোহিতেরা লাসারকেও মেরে ফেলবেন বলে ঠিক করলেন, কারণ লাসারের জন্য যিহূদীদের মধ্যে অনেকেই নেতাদের ছেড়ে যীশুর উপর বিশ্বাস করছিল। যে সব লোক পর্বে গিয়েছিল তারা পরদিন শুনতে পেল যীশু যিরূশালেমে আসছেন। তখন তারা খেজুর পাতা নিয়ে তাঁকে এগিয়ে আনতে গেল আর চিৎকার করে বলতে লাগল, “হোশান্না, যিনি প্রভুর নামে আসছেন তাঁর গৌরব হোক। তিনিই ইস্রায়েলের রাজা।” পবিত্র শাস্ত্রের কথামত যীশু একটা গাধা দেখতে পেয়ে তার উপরে বসলেন। শাস্ত্রে লেখা আছে, “হে সিয়োন-কন্যা, ভয় কোরো না। চেয়ে দেখ, তোমার রাজা গাধার বাচ্চার উপরে চড়ে আসছেন।” যীশুর শিষ্যেরা প্রথমে এই সব বুঝতে পারলেন না। পরে যীশুর মহিমা যখন প্রকাশিত হল তখন তাঁদের মনে পড়ল পবিত্র শাস্ত্রের ঐ কথা যীশুর বিষয়েই লেখা হয়েছিল। তাঁদের আরও মনে পড়ল লোকেরা যীশুর জন্যই ঐ সব করেছিল। লাসারকে কবর থেকে ডেকে জীবিত করে তুলবার সময় যে সব লোক যীশুর কাছে ছিল তারাই লাসারের জীবিত হয়ে উঠবার বিষয় সাক্ষ্য দিতে লাগল। সেইজন্যই লোকেরা যীশুকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিল, কারণ তারা শুনেছিল যীশুই সেই আশ্চর্য কাজটা করেছেন। এ দেখে ফরীশীরা একে অন্যকে বললেন, “আমাদের কোন লাভই হচ্ছে না। দেখ, সারা দুনিয়া তার দলে চলে গেছে।” সেই পর্বে যারা উপাসনা করতে এসেছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন গ্রীকও ছিল। তারা ফিলিপের কাছে এসে তাঁকে অনুরোধ করে বলল, “এই যে শুনুন, আমরা যীশুকে দেখতে চাই।” ফিলিপ ছিলেন গালীল প্রদেশের বৈৎসৈদা গ্রামের লোক। ফিলিপ গিয়ে কথাটা আন্দ্রিয়কে বললেন। পরে আন্দ্রিয় আর ফিলিপ গিয়ে যীশুকে বললেন। যীশু তখন আন্দ্রিয় ও ফিলিপকে বললেন, “মনুষ্যপুত্রের মহিমা প্রকাশিত হবার সময় এসেছে। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, গমের বীজ মাটিতে পড়ে যদি না মরে তবে একটাই বীজ থাকে, কিন্তু যদি মরে তবে প্রচুর ফসল জন্মায়। যে নিজের প্রাণকে বেশী ভালবাসে সে তার সত্যিকারের জীবন হারায়, কিন্তু যে এই জগতে তা করে না সে তার সত্যিকারের জীবন অনন্ত জীবনের জন্য রক্ষা করবে। কেউ যদি আমার সেবা করতে চায় তবে সে আমার পথে চলুক। আমি যেখানে আছি আমার সেবাকারীও সেখানে থাকবে। কেউ যদি আমার সেবা করে তবে পিতা তাকে সম্মান দান করবেন। “আমার মন এখন অস্থির হয়ে উঠেছে। আমি কি এই কথাই বলব, ‘পিতা, যে সময় এসেছে সেই সময়ের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর?’ কিন্তু এরই জন্য তো আমি এই সময় পর্যন্ত এসেছি। পিতা, তোমার মহিমা প্রকাশ কর।” স্বর্গ থেকে তখন এই কথা শোনা গেল, “আমি আমার মহিমা প্রকাশ করেছি এবং আবার তা প্রকাশ করব।” যে লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারা তা শুনে বলল, “ওটা মেঘের ডাক।” কেউ কেউ আবার বলল, “কোন স্বর্গদূত উনার সংগে কথা বললেন।” এতে যীশু বললেন, “এই কথা আমার জন্য বলা হয় নি, কিন্তু আপনাদের জন্যই বলা হয়েছে। এই জগতের লোকদের বিচারের সময় এবার এসেছে, আর জগতের কর্তার হাত থেকে এখন প্রভুত্ব কেড়ে নেওয়া হবে। আমাকে যখন মাটি থেকে উঁচুতে তোলা হবে তখন আমি সবাইকে আমার কাছে টেনে আনব।” তাঁর কি রকমের মৃত্যু হবে তা বুঝাবার জন্য তিনি এই কথা বললেন। তখন লোকেরা যীশুকে বলল, “আমরা পবিত্র শাস্ত্র থেকে শুনেছি মশীহ চিরকাল থাকবেন। তবে আপনি কি করে বলছেন যে, মনুষ্যপুত্রকে উঁচুতে তুলতে হবে? তাহলে এই মনুষ্যপুত্র কে?” যীশু তাদের বললেন, “আর অল্প সময়ের জন্য আলো আপনাদের সংগে সংগে আছে। আলো আপনাদের কাছে থাকতে থাকতেই চলতে থাকুন যেন অন্ধকার আপনাদের জয় করতে না পারে। যে অন্ধকারে চলে সে কোথায় যাচ্ছে তা জানে না। আলো আপনাদের কাছে থাকতে থাকতেই আলোর উপর বিশ্বাস করুন যেন আপনারা সেই আলোর লোক হতে পারেন।” এই সব কথা বলবার পর যীশু লোকদের কাছ থেকে চলে গিয়ে নিজেকে গোপন করলেন। যদিও তিনি তাদের সামনে চিহ্ন হিসাবে এতগুলো আশ্চর্য কাজ করেছিলেন তবুও লোকেরা তাঁর উপরে বিশ্বাস করে নি। এটা হয়েছিল যেন নবী যিশাইয়ের বলা এই কথা পূর্ণ হয়: প্রভু, আমাদের দেওয়া খবরে কে বিশ্বাস করেছে? কার কাছেই বা প্রভুর শক্তিশালী হাত প্রকাশিত হয়েছেন? সেই লোকেরা এইজন্যই বিশ্বাস করতে পারে নি, কারণ যিশাইয় যেমন বলেছেন সেই অনুসারে “ঈশ্বর তাদের চোখ বন্ধ করেছেন আর অন্তর অসাড় করেছেন, যাতে তারা চোখ দিয়ে না দেখে ও অন্তর দিয়ে না বোঝে, আর সুস্থ হবার জন্য তাঁর কাছে ফিরে না আসে।” যিশাইয় যীশুর মহিমা দেখেছিলেন বলে তাঁর বিষয়ে এই কথা বলেছিলেন। তবুও নেতাদের মধ্যে অনেকে তাঁর উপরে বিশ্বাস করলেন, কিন্তু ফরীশীরা সমাজ থেকে তাঁদের বের করে দেবেন সেই ভয়ে তাঁরা তা স্বীকার করলেন না। তাঁরা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার চেয়ে মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে বেশী ভালবাসতেন। পরে যীশু জোরে জোরে বললেন, “যে আমার উপরে বিশ্বাস করে সে যে কেবল আমার উপরে বিশ্বাস করে তা নয়, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর উপরেও বিশ্বাস করে। যে আমাকে দেখে, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সে তাঁকেই দেখে। আমি এই জগতে আলো হিসাবে এসেছি যেন আমার উপরে যে বিশ্বাস করে সে অন্ধকারে না থাকে। যদি কেউ আমার কথা শুনে সেইমত না চলে তবে আমি নিজে তার বিচার করি না, কারণ আমি মানুষকে দোষী প্রমাণ করতে আসি নি বরং মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে এসেছি। যে আমাকে অগ্রাহ্য করে এবং আমার কথা না শোনে তার জন্য বিচারকর্তা আছে। যে কথা আমি বলেছি সেই কথাই শেষ দিনে তাকে দোষী বলে প্রমাণ করবে; কারণ আমি তো নিজে থেকে কিছু বলি নি, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতা নিজেই আমাকে আদেশ করেছেন কি কি বলতে হবে। আমি জানি তাঁর আদেশই অনন্ত জীবন। এইজন্য আমি যে সব কথা বলি তা আমার পিতার আদেশ মতই বলি।” উদ্ধার-পর্বের কিছু আগের ঘটনা। যীশু বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর এই জগৎ ছেড়ে পিতার কাছে যাবার সময় উপস্থিত হয়েছে। এই জগতে যাঁরা তাঁর নিজের লোক ছিলেন তাঁদের তিনি ভালবাসতেন এবং শেষ পর্যন্তই ভালবেসেছিলেন। তখন খাবার সময়। এর আগেই শয়তান শিমোনের ছেলে যিহূদা ইষ্কারিয়োতের মনে যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবার ইচ্ছা জাগিয়ে দিয়েছিল। যীশু জানতেন, পিতা ঈশ্বর তাঁর হাতে সব কিছুই দিয়েছেন। তিনি আরও জানতেন যে, তিনি তাঁরই কাছ থেকে এসেছেন এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাচ্ছেন। এইজন্য তিনি খাওয়া ছেড়ে উঠলেন আর উপরের কাপড় খুলে ফেলে একটা গামছা নিয়ে কোমরে জড়ালেন। তারপর তিনি গামলায় জল ঢেলে শিষ্যদের পা ধোওয়াতে লাগলেন এবং কোমরে জড়ানো গামছা দিয়ে তা মুছে দিতে লাগলেন। এইভাবে যীশু যখন শিমোন-পিতরের কাছে আসলেন তখন পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, আপনি কি আমার পা ধুইয়ে দেবেন?” যীশু উত্তর দিলেন, “আমি যা করছি তা এখন তুমি বুঝতে পারছ না কিন্তু পরে বুঝতে পারবে।” পিতর তাঁকে বললেন, “আপনি কখনও আমার পা ধুইয়ে দেবেন না।” যীশু পিতরকে বললেন, “যদি আমি তোমাকে ধুইয়ে না দিই তবে আমার সংগে তোমার কোন সম্বন্ধ নেই।” তখন শিমোন-পিতর বললেন, “প্রভু, তাহলে কেবল আমার পা নয়, আমার হাত আর মাথাও ধুইয়ে দিন।” যীশু তাঁকে বললেন, “যে স্নান করেছে তার পা ছাড়া আর কিছুই ধোওয়ার দরকার নেই, কারণ তার আর সব কিছু পরিষ্কার আছে। তোমরা অবশ্য পরিষ্কার আছ, কিন্তু সকলে নও।” কে তাঁকে ধরিয়ে দেবে তা তিনি জানতেন। সেইজন্যই তিনি বললেন, “তোমরা সকলে পরিষ্কার নও।” শিষ্যদের সকলের পা ধোওয়াবার পরে যীশু তাঁর উপরের কাপড় পরে আবার বসলেন এবং তাঁদের বললেন, “আমি কি করলাম তা কি তোমরা বুঝতে পারলে? তোমরা আমাকে গুরু ও প্রভু বলে ডাক, আর তা ঠিকই বল কারণ আমি তা-ই। কিন্তু আমি প্রভু আর গুরু হয়েও যখন তোমাদের পা ধুইয়ে দিলাম তখন তোমাদেরও একে অন্যের পা ধোওয়ানো উচিত। আমি তোমাদের কাছে এটা করে দেখিয়েছি, যেন তোমাদের প্রতি আমি যা করলাম তোমরাও তা কর। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, দাস তার মনিব থেকে বড় নয়। যাকে পাঠানো হয়েছে সে তাঁর চেয়ে বড় নয় যিনি তাকে পাঠিয়েছেন। এই সব জেনে যদি তা পালন কর তবে তোমরা ধন্য। “আমি তোমাদের সকলের কথা বলছি না। আমি যাদের বেছে নিয়েছি তাদের তো আমি জানি। কিন্তু পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হতেই হবে, ‘যে আমার সংগেই খাওয়া-দাওয়া করে, সে-ও আমার বিরুদ্ধে পা উঠিয়েছে।’ এটা ঘটবার আগেই আমি তোমাদের বলছি, যেন ঘটলে পর তোমরা বিশ্বাস করতে পার যে, আমিই সেই। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমি যাকে পাঠাই, যে তাকে গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে, আর যে আমাকে গ্রহণ করে, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সে তাঁকেই গ্রহণ করে।” এই সব কথা বলবার পরে যীশু অন্তরে অস্থির হলেন। তিনি খোলাখুলিভাবে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদেরই মধ্যে একজন আমাকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে।” যীশু কার কথা বলছেন তা বুঝতে না পেরে শিষ্যেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে যাঁকে যীশু ভালবাসতেন তিনি যীশুর বুকের কাছেই ছিলেন। শিমোন-পিতর তাঁকে ইশারা করে বললেন, “উনি কার কথা বলছেন জিজ্ঞাসা কর।” সেই শিষ্য তখন যীশুর দিকে ঝুঁকে বললেন, “প্রভু, সে কে?” যীশু উত্তর দিলেন, “এই রুটির টুকরাটা বাটিতে ডুবিয়ে যাকে দেব সে-ই সেই লোক।” আর তিনি রুটির টুকরাটা বাটিতে ডুবিয়ে শিমোন ইষ্কারিয়োতের ছেলে যিহূদাকে দিলেন। রুটির টুকরাটা নেবার পরেই শয়তান যিহূদার মধ্যে ঢুকল। যীশু তাকে বললেন, “যা করবে তাড়াতাড়ি কর।” যাঁরা যীশুর সংগে খাচ্ছিলেন তাঁরা কেউই বুঝলেন না কেন যীশু যিহূদাকে এই কথা বললেন। কেউ কেউ ভাবলেন, পর্বের জন্য যা দরকার যীশু যিহূদাকে তা কিনে আনতে বললেন কিম্বা গরীবদের কিছু দিতে বললেন, কারণ তাঁদের টাকার বাক্স যিহূদার কাছেই থাকত। রুটির টুকরাটা নেওয়ার সংগে সংগে যিহূদা বাইরে চলে গেল। তখন রাত হয়েছে। যিহূদা বাইরে চলে যাওয়ার পর যীশু বললেন, “মনুষ্যপুত্রের মহিমা প্রকাশিত হবার সময় এসেছে এবং তাঁর মধ্যে ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশ পাবে। ঈশ্বরের মহিমা যখন তাঁর মধ্যে প্রকাশিত হবে তখন ঈশ্বরও মনুষ্যপুত্রের মহিমা নিজের মধ্যে প্রকাশ করবেন এবং তা তিনি শীঘ্রই করবেন। “সন্তানেরা, আর অল্প সময় আমি তোমাদের সংগে সংগে আছি। তোমরা আমাকে খুঁজবে, কিন্তু আমি যিহূদী নেতাদের যেমন বলেছিলাম, ‘আমি যেখানে যাচ্ছি আপনারা সেখানে আসতে পারেন না,’ তেমনি তোমাদেরও এখন তা-ই বলছি। একটা নতুন আদেশ আমি তোমাদের দিচ্ছি-তোমরা একে অন্যকে ভালবেসো। আমি যেমন তোমাদের ভালবেসেছি তেমনি তোমরাও একে অন্যকে ভালবেসো। যদি তোমরা একে অন্যকে ভালবাস তবে সবাই বুঝতে পারবে তোমরা আমার শিষ্য।” শিমোন-পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” যীশু উত্তর দিলেন, “আমি যেখানে যাচ্ছি তোমরা এখন আমার সংগে সেখানে আসতে পার না, কিন্তু পরে তোমরা আসবে।” পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, কেন এখন আপনার সংগে যেতে পারি না? আপনার জন্য আমি আমার প্রাণও দেব।” তখন যীশু বললেন, “সত্যিই কি আমার জন্য তুমি তোমার প্রাণ দেবে? আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, মোরগ ডাকবার আগেই তুমি তিনবার বলবে যে, তুমি আমাকে চেন না। “তোমাদের মন যেন আর অস্থির না হয়। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস কর, আমার উপরেও বিশ্বাস কর। আমার পিতার বাড়ীতে থাকবার অনেক জায়গা আছে। তা না থাকলে আমি তোমাদের বলতাম, কারণ আমি তোমাদের জন্য জায়গা ঠিক করতে যাচ্ছি। আমি গিয়ে তোমাদের জন্য জায়গা ঠিক করে আবার আসব আর আমার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব, যেন আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেখানে থাকতে পার। আমি কোথায় যাচ্ছি তার পথ তো তোমরা জান।” থোমা যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি কোথায় যাচ্ছেন তা-ই আমরা জানি না, তবে পথ কি করে জানব?” যীশু থোমাকে বললেন, “আমিই পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না। তোমরা যদি আমাকে জানতে তবে আমার পিতাকেও জানতে। এখন তোমরা তাঁকে জেনেছ আর তাঁকে দেখতেও পেয়েছ।” ফিলিপ যীশুকে বললেন, “প্রভু, পিতাকে আমাদের দেখান, তাতেই আমরা সন্তুষ্ট হব।” যীশু তাঁকে বললেন, “ফিলিপ, এতদিন আমি তোমাদের সংগে সংগে আছি, তবুও কি তুমি আমাকে জানতে পার নি? যে আমাকে দেখেছে সে পিতাকেও দেখেছে। তুমি কেমন করে বলছ, ‘পিতাকে আমাদের দেখান’? তুমি কি বিশ্বাস কর না যে, আমি পিতার মধ্যে আছি আর পিতা আমার মধ্যে আছেন? যে সব কথা আমি তোমাদের বলি তা আমি নিজে থেকে বলি না, কিন্তু পিতা, যিনি আমার মধ্যে আছেন, তিনিই তাঁর কাজ করছেন। আমার কথায় বিশ্বাস কর যে, আমি পিতার মধ্যে আছি আর পিতা আমার মধ্যে আছেন। তা না হলে অন্ততঃ আমার এই সব কাজের জন্য আমাকে বিশ্বাস কর। “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি কেউ আমার উপরে বিশ্বাস করে তবে আমি যে সব কাজ করি সেও তা করবে। আর আমি পিতার কাছে যাচ্ছি বলে সে এই সবের চেয়েও আরও বড় বড় কাজ করবে। তোমরা আমার নামে যা কিছু চাইবে তা আমি করব, যেন পিতার মহিমা পুত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। আমার নামে যদি আমার কাছে কিছু চাও তবে আমি তা করব। “তোমরা যদি আমাকে ভালবাস তবে আমার সমস্ত আদেশ পালন করবে। আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবার জন্য আর একজন সাহায্যকারীকে পাঠিয়ে দেবেন। সেই সাহায্যকারীই সত্যের আত্মা। জগতের লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করতে পারে না, কারণ তারা তাঁকে দেখতে পায় না এবং তাঁকে জানেও না। তোমরা কিন্তু তাঁকে জান, কারণ তিনি তোমাদের সংগে সংগে থাকেন আর তোমাদের অন্তরে বাস করবেন। “আমি তোমাদের অনাথ অবস্থায় রেখে যাব না; আমি তোমাদের কাছে আসব। অল্প সময় পরে জগতের লোকেরা আর আমাকে দেখতে পাবে না, কিন্তু তোমরা দেখতে পাবে। আমি জীবিত আছি বলে তোমরাও জীবিত থাকবে। সেই দিন তোমরা জানতে পারবে যে, আমি পিতার সংগে যুক্ত আছি আর তোমরা আমার সংগে যুক্ত আছ এবং আমি তোমাদের সংগে যুক্ত আছি। যে আমার সব আদেশ জানে ও পালন করে সে-ই আমাকে ভালবাসে। যে আমাকে ভালবাসে আমার পিতা তাকে ভালবাসবেন। আমিও তাকে ভালবাসব আর তার কাছে নিজেকে প্রকাশ করব।” তখন যিহূদা (ইষ্কারিয়োৎ নয়) তাঁকে বললেন, “প্রভু, কেন আপনি কেবল আমাদেরই কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন, জগতের লোকদের কাছে করবেন না?” যীশু তাঁকে উত্তর দিলেন, “যদি কেউ আমাকে ভালবাসে তবে সে আমার কথার বাধ্য হয়ে চলবে। আমার পিতা তাকে ভালবাসবেন এবং আমরা তার কাছে আসব আর তার সংগে বাস করব। যে আমাকে ভালবাসে না সে আমার কথার বাধ্য হয়ে চলে না। যে কথা তোমরা শুনছ তা আমার কথা নয় কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতারই কথা। তোমাদের সংগে থাকতে থাকতেই এই সব কথা আমি তোমাদের বলেছি। সেই সাহায্যকারী, অর্থাৎ পবিত্র আত্মা যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, তিনিই সব বিষয়ে তোমাদের শিক্ষা দেবেন, আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি সেই সব তোমাদের মনে করিয়ে দেবেন। “আমি তোমাদের জন্য শান্তি রেখে যাচ্ছি, আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি; জগৎ যেভাবে দেয় আমি সেইভাবে দিই না। তোমাদের মন যেন অস্থির না হয় এবং মনে ভয়ও না থাকে। তোমরা শুনেছ আমি তোমাদের বলেছি, ‘আমি চলে যাচ্ছি এবং আবার তোমাদের কাছে আসব।’ তোমরা যদি আমাকে ভালবাসতে তবে আমি আমার পিতার কাছে যাচ্ছি বলে খুশী হতে, কারণ পিতা আমার চেয়েও মহান। এই সব ঘটবার আগেই আমি তোমাদের বলে রাখলাম যেন ঘটলে পর তোমরা বিশ্বাস করতে পার। আমি তোমাদের সংগে আর বেশীক্ষণ কথা বলব না, কারণ জগতের কর্তা আসছে। আমার উপরে তার কোন অধিকার নেই। কিন্তু এ ঘটছে যেন লোকেরা জানতে পারে যে, আমি পিতাকে ভালবাসি এবং পিতা আমাকে যেমন আদেশ দিয়েছেন আমি সব কিছু তেমনই করে থাকি। এবার ওঠো, আমরা এখান থেকে যাই। “আমিই আসল আংগুর গাছ আর আমার পিতা মালী। আমার যে সব ডালে ফল ধরে না সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন, আর যে সব ডালে ফল ধরে সেগুলো তিনি ছেঁটে পরিষ্কার করেন যেন আরও অনেক ফল ধরতে পারে। আমি যে কথা তোমাদের বলেছি তার জন্য তোমরা আগেই পরিষ্কার হয়েছ। আমার মধ্যে থাক আর আমিও তোমাদের অন্তরে থাকব। আংগুর গাছে যুক্ত না থাকলে যেমন ডাল নিজে নিজে ফল ধরাতে পারে না তেমনি আমার মধ্যে না থাকলে তোমরাও নিজে নিজে ফল ধরাতে পার না। “আমিই আংগুর গাছ, আর তোমরা তার ডালপালা। যদি কেউ আমার মধ্যে থাকে এবং আমি তার মধ্যে থাকি তবে তার জীবনে অনেক ফল ধরে, কারণ আমাকে ছাড়া তোমরা কিছুই করতে পার না। যদি কেউ আমার মধ্যে না থাকে তবে কাটা ডালের মতই তাকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয় আর তা শুকিয়ে যায়। তখন সেই ডালগুলো কুড়িয়ে আগুনে ফেলে দেওয়া হয় এবং সেগুলো পুড়ে যায়। যদি তোমরা আমার মধ্যে থাক আর আমার কথাগুলো তোমাদের অন্তরে থাকে তবে তোমাদের যা ইচ্ছা তা-ই চেয়ো; তোমাদের জন্য তা করা হবে। যদি তোমাদের জীবনে প্রচুর ফল ধরে এবং এইভাবে তোমরা নিজেদের আমার শিষ্য বলে প্রমাণ কর তবে আমার পিতার গৌরব হবে। পিতা যেমন আমাকে ভালবেসেছেন আমিও তেমনি তোমাদের ভালবেসেছি। আমার ভালবাসার মধ্যে থাক। আমি আমার পিতার সমস্ত আদেশ পালন করে যেমন তাঁর ভালবাসার মধ্যে রয়েছি, তেমনি তোমরাও যদি আমার আদেশ পালন কর তবে তোমরাও আমার ভালবাসার মধ্যে থাকবে। “এই সব কথা আমি তোমাদের বললাম যেন আমার আনন্দ তোমাদের অন্তরে থাকে ও তোমাদের আনন্দ পূর্ণ হয়। আমার আদেশ এই, আমি যেমন তোমাদের ভালবেসেছি তেমনি তোমরাও একে অন্যকে ভালবেসো। কেউ যদি তার বন্ধুদের জন্য নিজের প্রাণ দেয় তবে তার চেয়ে বেশী ভালবাসা আর কারও নেই। যে সব আদেশ আমি তোমাদের দিই তা যদি তোমরা পালন কর তবেই তোমরা আমার বন্ধু। আমি তোমাদের আর দাস বলি না, কারণ মনিব কি করেন দাস তা জানে না; বরং আমি তোমাদের বন্ধু বলেছি, কারণ আমি পিতার কাছ থেকে যা কিছু শুনেছি তা তোমাদের জানিয়েছি। তোমরা আমাকে বেছে নাও নি, কিন্তু আমিই তোমাদের বেছে নিয়ে কাজে লাগিয়েছি যাতে তোমাদের জীবনে ফল ধরে আর তোমাদের সেই ফল যেন টিকে থাকে। তাহলে আমার নামে পিতার কাছে যা কিছু চাইবে তা তিনি তোমাদের দেবেন। এই আদেশ আমি তোমাদের দিচ্ছি যে, তোমরা একে অন্যকে ভালবেসো। “জগতের লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করে, কিন্তু মনে রেখো, তার আগে তারা আমাকেই ঘৃণা করেছে। যদি তোমরা এই জগতের হতে তবে লোকেরা তাদের নিজেদের বলে তোমাদের ভালবাসত। কিন্তু তোমরা এই জগতের নও, বরং আমি তোমাদের জগতের মধ্য থেকে বেছে নিয়েছি বলে জগতের লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করে। আমার এই কথাটা তোমরা ভুলে যেয়ো না যে, দাস তার মনিবের চেয়ে বড় নয়। সেইজন্য লোকেরা যদি আমাকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করে থাকে তবে তোমাদেরও তা-ই করবে; যদি তারা আমার কথা শুনে থাকে তবে তোমাদের কথাও শুনবে। তারা আমার জন্য তোমাদের প্রতি এই সব করবে, কারণ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তারা তাঁকে জানে না। “আমি যদি না আসতাম ও তাদের কাছে কথা না বলতাম তবে তাদের দোষ হত না; কিন্তু এখন পাপের জন্য তাদের কোন অজুহাত নেই। যে আমাকে ঘৃণা করে সে আমার পিতাকেও ঘৃণা করে। যে সব কাজ আর কেউ কখনও করে নি সেই কাজ যদি আমি তাদের মধ্যে না করতাম তবে তাদের দোষ হত না। কিন্তু এখন তারা আমাকে আর আমার পিতাকে দেখেছে এবং ঘৃণাও করেছে। এটা হয়েছে যাতে তাদের আইন-কানুনে লেখা এই কথা পূর্ণ হয়, ‘তারা অকারণে আমাকে ঘৃণা করেছে।’ “যে সাহায্যকারীকে আমি পিতার কাছ থেকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব, তিনি যখন আসবেন তখন তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। ইনি হলেন সত্যের আত্মা যিনি পিতার কাছ থেকে আসবেন। আর তোমরাও আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে, কারণ প্রথম থেকেই তোমরা আমার সংগে সংগে আছ। “আমি তোমাদের এই সব কথা বললাম যেন তোমরা মনে বাধা না পাও। লোকেরা সমাজ-ঘর থেকে তোমাদের বের করে দেবে; এমন কি, সময় আসছে যখন তোমাদের যারা মেরে ফেলবে তারা মনে করবে যে, তারা ঈশ্বরের সেবাই করছে। তারা এই সব করবে কারণ তারা পিতাকেও জানে নি, আমাকেও জানে নি। আমি তোমাদের এই সব বললাম যেন সেই সময় আসলে পর তোমাদের মনে পড়ে যে, আমি তোমাদের এই কথা বলেছিলাম। “আমি প্রথম থেকে এই সব কথা তোমাদের বলি নি, কারণ আমি তোমাদের সংগে সংগেই ছিলাম। যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন আমি এখন তাঁর কাছে যাচ্ছি, আর তোমাদের মধ্যে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসাও করছে না, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ আমি তোমাদের এই সব বলেছি বলে বরং তোমাদের মন দুঃখে পূর্ণ হয়েছে। তবুও আমি তোমাদের সত্যি কথা বলছি যে, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে সেই সাহায্যকারী তোমাদের কাছে আসবেন না। কিন্তু আমি যদি যাই তবে তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। তিনি এসে পাপ সম্বন্ধে, ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলা সম্বন্ধে এবং ঈশ্বরের বিচার সম্বন্ধে লোকদের চেতনা দেবেন। তিনি পাপ সম্বন্ধে চেতনা দেবেন, কারণ লোকেরা আমার উপরে বিশ্বাস করে না; ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলা সম্বন্ধে চেতনা দেবেন, কারণ আমি পিতার কাছে যাচ্ছি ও তোমরা আমাকে আর দেখতে পাবে না; বিচার সম্বন্ধে চেতনা দেবেন, কারণ জগতের কর্তার বিচার হয়ে গেছে। “তোমাদের কাছে আরও অনেক কথা আমার বলবার আছে, কিন্তু এখন তোমরা সেগুলো সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণ সত্যে নিয়ে যাবেন। তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না, কিন্তু যা কিছু শোনেন তা-ই বলবেন, আর যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন। “কিছু কাল পরে আর তোমরা আমাকে দেখতে পাবে না, আবার কিছু কাল পরে তোমরা আমাকে দেখতে পাবে।” এই কথা শুনে যীশুর শিষ্যদের মধ্যে কয়েকজন বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি আমাদের এ কি বলছেন, ‘কিছু কাল পরে তোমরা আর আমাকে দেখতে পাবে না, আবার কিছু কাল পরে তোমরা আমাকে দেখতে পাবে’? আবার তিনি বলছেন, ‘আমি পিতার কাছে যাচ্ছি।’ যে কিছু কালের কথা ইনি বলছেন, তা কি? আমরা বুঝতে পারছি না তিনি কি বলছেন।” শিষ্যেরা যে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাইছেন, তা বুঝতে পেরে যীশু তাঁদের বললেন, “আমি যে বলেছি, ‘কিছু কাল পরে তোমরা আমাকে আর দেখতে পাবে না, আবার কিছু কাল পরে তোমরা আমাকে দেখতে পাবে,’ এই বিষয়েই কি তোমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছ? আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা কাঁদবে আর দুঃখে ভেংগে পড়বে কিন্তু জগতের লোকেরা আনন্দ করবে। তোমরা দুঃখ পাবে, কিন্তু পরে তোমাদের সেই দুঃখ আর থাকবে না; তার বদলে তোমরা আনন্দিত হবে। সন্তান হওয়ার সময় স্ত্রীলোক কষ্ট পায়, কারণ তার সময় এসে পড়েছে। কিন্তু সন্তান হওয়ার পরে জগতে একটি নতুন মানুষ আসবার আনন্দে তার আর সেই কষ্টের কথা মনে থাকে না। সেইভাবে তোমরাও এখন দুঃখ-কষ্ট পাচ্ছ; কিন্তু আবার তোমাদের সংগে আমার দেখা হবে, আর তখন তোমাদের মন আনন্দে ভরে উঠবে এবং সেই আনন্দ কেউ তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেবে না। সেই দিনে তোমরা আমাকে কোন কথাই জিজ্ঞাসা করবে না। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা আমার নামে পিতার কাছে যা কিছু চাইবে তা তিনি তোমাদের দেবেন। এখনও পর্যন্ত তোমরা আমার নামে কিছুই চাও নি। চাও, তোমরা পাবে যেন তোমাদের আনন্দ পূর্ণ হয়। “এই সব শিক্ষার কথা আমি তোমাদের কাছে উদাহরণের মধ্য দিয়েই বললাম। তবে এমন সময় আসছে যখন আমি আর উদাহরণের মধ্য দিয়ে তোমাদের কাছে কথা বলব না, কিন্তু খোলাখুলিভাবেই পিতার বিষয়ে বলব। সেই দিনে তোমরা নিজেরাই আমার নামে চাইবে, আর আমি বলছি না যে, আমিই তোমাদের পক্ষ হয়ে পিতার কাছে অনুরোধ করব। পিতা নিজেই তো তোমাদের ভালবাসেন, কারণ তোমরা আমাকে ভালবেসেছ ও বিশ্বাস করেছ যে, আমি পিতা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছি। সত্যিই আমি পিতার কাছ থেকে এই জগতে এসেছি, আবার আমি এই জগৎ ছেড়ে পিতার কাছেই যাচ্ছি।” তখন তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “দেখুন, এখন তো আপনি খোলাখুলিভাবেই কথা বলছেন, উদাহরণের মধ্য দিয়ে বলছেন না। এখন আমরা বুঝতে পারছি যে, আপনার অজানা কিছুই নেই, আর কেউ যে আপনাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করে তার দরকারও আপনার নেই। এইজন্যই আমরা বিশ্বাস করি যে, আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।” যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এখন কি তাহলে বিশ্বাস হচ্ছে? দেখ, সেই সময় আসছে, এমন কি এসেই গেছে, যখন তোমরা দলছাড়া হয়ে আমাকে একলা ফেলে যে যার জায়গায় চলে যাবে। তবুও আমি একা নই, কারণ পিতা আমার সংগে সংগে আছেন। আমি তোমাদের এই সব বললাম যেন তোমরা আমার সংগে যুক্ত আছ বলে মনে শান্তি পাও। এই জগতে তোমরা কষ্ট ও চাপের মুখে আছ, কিন্তু সাহস হারায়ো না; আমিই জগৎকে জয় করেছি।” এই সব কথা বলবার পরে যীশু স্বর্গের দিকে তাকিয়ে বললেন, “পিতা, সময় এসেছে। তোমার পুত্রের মহিমা প্রকাশ কর যেন পুত্রও তোমার মহিমা প্রকাশ করতে পারেন। তুমি তাঁকে সমস্ত মানুষের উপরে অধিকার দিয়েছ, যেন যাদের তুমি তাঁর হাতে দিয়েছ তাদের সবাইকে তিনি অনন্ত জীবন দিতে পারেন। তোমাকে, অর্থাৎ একমাত্র সত্য ঈশ্বরকে আর তুমি যাঁকে পাঠিয়েছ সেই যীশু খ্রীষ্টকে জানতে পারাই অনন্ত জীবন। তুমি যে কাজ আমাকে করতে দিয়েছ তা শেষ করে এই জগতে আমি তোমার মহিমা প্রকাশ করেছি। পিতা, জগৎ সৃষ্ট হবার আগে তোমার সংগে আমার যে মহিমা ছিল সেই মহিমা তুমি আবার আমাকে দাও। “জগতের মধ্য থেকে যাদের তুমি আমাকে দিয়েছ আমি তাদের কাছে তোমাকে প্রকাশ করেছি। তারা তোমারই ছিল, আর তুমি তাদের আমাকে দিয়েছ। তারা তোমার কথার বাধ্য হয়ে চলেছে। তারা এখন বুঝতে পেরেছে, যা কিছু তুমি আমাকে দিয়েছ তা তোমারই কাছ থেকে এসেছে। এর কারণ এই, তুমি যা যা আমাকে বলতে বলেছ তা আমি তাদের বলেছি। তারা তা গ্রহণ করে সত্যিই জানতে পেরেছে যে, আমি তোমার কাছ থেকে এসেছি, আর বিশ্বাসও করেছে যে, তুমিই আমাকে পাঠিয়েছ। “আমি সকলের জন্য অনুরোধ করছি না, কিন্তু যাদের তুমি আমার হাতে দিয়েছ তাদের জন্যই অনুরোধ করছি, কারণ তারা তো তোমারই। যা কিছু আমার তা সবই তোমার আর যা কিছু তোমার তা সবই আমার। তাদের মধ্য দিয়ে আমার মহিমা প্রকাশিত হয়েছে। আমি আর এই জগতে নেই, কিন্তু তারা তো এই জগতে আছে; আর আমি তোমার কাছে আসছি। পবিত্র পিতা, তুমি আমাকে তোমার যে নাম দিয়েছ সেই নামের গুণে এদের রক্ষা কর, যেন আমরা যেমন এক, এরাও তেমনি এক হতে পারে। আমি যতদিন তাদের সংগে ছিলাম ততদিন তোমার যে নাম তুমি আমাকে দিয়েছ সেই নামের গুণে আমি তাদের রক্ষা করে এসেছি। আমি তাদের পাহারা দিয়েছি, তাদের মধ্যে কেউই বিনষ্ট হয় নি। কেবল যার বিনষ্ট হবার কথা ছিল সে-ই বিনষ্ট হয়েছে, যেন পবিত্র শাস্ত্রের কথা পূর্ণ হয়। “এখন আমি তোমার কাছে আসছি, আর আমার আনন্দে যেন তাদের অন্তর পূর্ণ হয় সেইজন্য জগতে থাকতেই এই সব কথা বলছি। তুমি যা বলেছ আমি তাদের তা-ই জানিয়েছি। জগতের লোকেরা তাদের ঘৃণা করেছে, কারণ আমি যেমন এই জগতের নই তারাও তেমনি এই জগতের নয়। আমি তোমাকে অনুরোধ করছি না তুমি এই জগত থেকে তাদের নিয়ে যাও, বরং অনুরোধ করছি যে, শয়তানের হাত থেকে তাদের রক্ষা কর। আমি যেমন এই জগতের নই তারাও তেমনি এই জগতের নয়। “সত্যের দ্বারা তোমারই উদ্দেশ্যে তুমি তাদের আলাদা করে রাখ। তোমার বাক্যই সেই সত্য। তুমি যেমন আমাকে জগতে পাঠিয়েছিলে তেমনি আমিও তাদের জগতে পাঠিয়েছি। তাদের জন্য তোমার উদ্দেশ্যে আমি নিজেকে আলাদা করছি যেন সত্যের দ্বারা তাদেরও আলাদা করা হয়। “আমি যে কেবল এদের জন্য অনুরোধ করছি তা নয়, কিন্তু যারা এদের কথার মধ্য দিয়ে আমার উপর বিশ্বাস করবে তাদের জন্যও অনুরোধ করছি, যেন তারা সকলে এক হয়। পিতা, তুমি যেমন আমার সংগে যুক্ত আছ আর আমি তোমার সংগে যুক্ত আছি তেমনি তারাও যেন আমাদের সংগে যুক্ত থাকতে পারে। তাতে জগতের লোকেরা বিশ্বাস করতে পারবে যে, তুমিই আমাকে পাঠিয়েছ। যে মহিমা তুমি আমাকে দিয়েছ তা আমি তাদের দিয়েছি যেন আমরা যেমন এক তারাও তেমনি এক হতে পারে, অর্থাৎ আমি তাদের সংগে যুক্ত ও তুমি আমার সংগে যুক্ত, আর এইভাবে যেন তারা পূর্ণ হয়ে এক হতে পারে। তাতে জগতের লোকেরা জানতে পারবে যে, তুমিই আমাকে পাঠিয়েছ, আর আমাকে যেমন তুমি ভালবাস তেমনি তাদেরও ভালবাস। “পিতা, আমি চাই যাদের তুমি আমাকে দিয়েছ, আমার মহিমা দেখবার জন্য তারা যেন আমি যেখানে আছি সেখানে আমার সংগে থাকতে পারে। সেই মহিমা তুমিই আমাকে দিয়েছ, কারণ জগৎ সৃষ্ট হবার আগে থেকেই তুমি আমাকে ভালবেসেছ। ন্যায়বান পিতা, জগতের লোকেরা তোমাকে জানে না কিন্তু আমি তোমাকে জানি। আর তুমিই যে আমাকে পাঠিয়েছ এরা তা বুঝতে পেরেছে। আমি তাদের কাছে তোমাকে প্রকাশ করেছি এবং আরও প্রকাশ করব, যেন তুমি আমাকে যেভাবে ভালবাস সেই রকম ভালবাসা তাদের অন্তরে থাকে, আর আমি যেন তাদের সংগে যুক্ত থাকি।” এই সব কথা বলবার পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের সংগে কিদ্রোণ নামে একটা উপত্যকার ওপাশে গেলেন। সেখানে একটা বাগান ছিল। যীশু আর তাঁর শিষ্যেরা সেই বাগানে গেলেন। যীশুকে শত্রুদের হাতে যে পরে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদাও এই জায়গাটা চিনত, কারণ যীশু প্রায়ই তাঁর শিষ্যদের সংগে সেখানে এক সংগে মিলিত হতেন। প্রধান পুরোহিতেরা ও ফরীশীরা যিহূদাকে এক দল সৈন্য এবং কয়েকজন কর্মচারী দিলেন। তখন যিহূদা তাদের সংগে বাতি, মশাল আর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেখানে উপস্থিত হল। তাঁর নিজের উপর যা ঘটবে যীশু তা সবই জানতেন। এইজন্য তিনি বের হয়ে এসে সেই লোকদের বললেন, “আপনারা কাকে খুঁজছেন?” তারা বলল, “নাসরতের যীশুকে।” যীশু তাদের বললেন, “আমিই সেই।” যীশুকে যে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল সেই যিহূদাও তাদের সংগে দাঁড়িয়ে ছিল। যীশু যখন তাদের বললেন, “আমিই সেই,” তখন তারা পিছিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। যীশু আবার তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা কাকে খুঁজছেন?” তারা বলল, “নাসরতের যীশুকে।” তখন যীশু বললেন, “আমি তো আপনাদের বলেছি যে, আমিই সেই। যদি আপনারা আমারই খোঁজে এসে থাকেন তবে এদের চলে যেতে দিন।” এটা ঘটল যাতে যীশুর বলা এই কথাটা পূর্ণ হয়, “যাদের তুমি আমাকে দিয়েছ তাদের একজনকেও আমি হারাই নি।” শিমোন-পিতরের কাছে একটা ছোরা ছিল। পিতর সেই ছোরাটা বের করে তার আঘাতে মহাপুরোহিতের দাসের ডান কানটা কেটে ফেললেন। সেই দাসের নাম ছিল মল্ক। এতে যীশু পিতরকে বললেন, “তোমার ছোরা খাপে রাখ। পিতা আমাকে যে দুঃখের পেয়ালা দিয়েছেন তা কি আমি গ্রহণ করব না?” তখন সেই সৈন্যেরা আর তাদের সেনাপতি ও যিহূদী নেতাদের কর্মচারীরা যীশুকে ধরে বাঁধল। প্রথমে তারা যীশুকে হাননের কাছে নিয়ে গেল, কারণ যে কাইয়াফা সেই বছরের মহাপুরোহিত ছিলেন হানন ছিলেন তাঁর শ্বশুর। এই কাইয়াফাই যিহূদী নেতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, গোটা জাতির বদলে বরং একজনের মৃত্যু হওয়াই ভাল। শিমোন-পিতর এবং আর একজন শিষ্য যীশুর পিছনে পিছনে গেলেন। সেই অন্য শিষ্যকে মহাপুরোহিত চিনতেন। সেই শিষ্য যীশুর সংগে সংগে মহাপুরোহিতের উঠানে ঢুকলেন, কিন্তু পিতর বাইরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন। তখন মহাপুরোহিতের চেনা সেই শিষ্য বাইরে গিয়ে দরজার পাহারাদার মেয়েটিকে বলে পিতরকে ভিতরে আনলেন। সেই মেয়েটি পিতরকে বলল, “তুমিও কি এই লোকটির শিষ্যদের মধ্যে একজন?” পিতর বললেন, “না, আমি নই।” তখন বেশ শীত পড়েছিল। এইজন্য দাসেরা এবং কর্মচারীরা কাঠকয়লার আগুন জ্বেলে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছিল। পিতরও তাদের সংগে দাঁড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন। মহাপুরোহিত তখন যীশুকে তাঁর শিষ্যদের বিষয়ে আর তাঁর শিক্ষার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। যীশু উত্তরে বললেন, “আমি লোকদের কাছে খোলাখুলিভাবেই কথা বলেছি। যেখানে যিহূদীরা সবাই এক সংগে মিলিত হয় সেই সব সমাজ-ঘরে ও উপাসনা-ঘরে আমি সব সময় শিক্ষা দিয়েছি। আমি তো গোপনে কিছু বলি নি; তবে কেন আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন? আমার কথা যারা শুনেছে তাদেরই জিজ্ঞাসা করুন আমি তাদের কি বলেছি। আমি যা বলেছি তা তাদের অজানা নেই। যীশু যখন এই কথা বললেন তখন যে কর্মচারীরা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের মধ্যে একজন তাঁকে চড় মেরে বলল, “তুমি মহাপুরোহিতকে এইভাবে উত্তর দিচ্ছ?” যীশু তাকে বললেন, “আমি যদি মন্দ কিছু বলে থাকি তবে তা দেখিয়ে দিন। কিন্তু যদি ভাল বলে থাকি তবে কেন আমাকে মারছেন?” তখন হানন যীশুকে বাঁধা অবস্থায়ই মহাপুরোহিত কাইয়াফার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। যখন শিমোন-পিতর দাঁড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন তখন লোকেরা তাঁকে বলল, “তুমিও কি ওর শিষ্যদের মধ্যে একজন?” পিতর অস্বীকার করে বললেন, “না, আমি নই।” পিতর যার কান কেটে ফেলেছিলেন তার এক আত্মীয় মহাপুরোহিতের দাস ছিল। সে বলল, “আমি কি তোমাকে বাগানে তার সংগে দেখি নি?” পিতর আবার অস্বীকার করলেন, আর তখনই একটা মোরগ ডেকে উঠল। যিহূদী নেতারা ভোর বেলায় যীশুকে কাইয়াফার কাছ থেকে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। তাঁরা কিন্তু সেই বাড়ীর ভিতরে ঢুকলেন না যেন শুচি থেকে উদ্ধার-পর্বের ভোজ খেতে পারেন। তখন পীলাত বাইরে তাঁদের কাছে এসে বললেন, “এই লোকটিকে তোমরা কি দোষে দোষী করছ?” যিহূদী নেতারা বললেন, “এ যদি মন্দ কাজ না করত তবে আমরা তাকে আপনার কাছে আনতাম না।” পীলাত তাঁদের বললেন, “একে তোমরা নিয়ে গিয়ে তোমাদের আইন- কানুন মতে বিচার কর।” এতে যিহূদী নেতারা পীলাতকে বললেন, “কিন্তু কাউকে মৃত্যুর শাস্তি দেবার ক্ষমতা তো আমাদের হাতে নেই।” কিভাবে নিজের মৃত্যু হবে যীশু আগেই তা বলেছিলেন। এটা ঘটল যাতে তাঁর সেই কথা পূর্ণ হয়। তখন পীলাত আবার বাড়ীর মধ্যে ঢুকলেন এবং যীশুকে ডেকে বললেন, “তুমিই কি যিহূদীদের রাজা?” যীশু বললেন, “আপনি কি নিজে থেকেই এই কথা বলছেন, না অন্যেরা আমার বিষয়ে আপনাকে বলেছে?” পীলাত উত্তর দিলেন, “আমি কি যিহূদী? তোমার জাতির লোকেরা আর প্রধান পুরোহিতেরা তোমাকে আমার হাতে দিয়েছে। তুমি কি করেছ?” যীশু বললেন, “আমার রাজ্য এই জগতের নয়। যদি আমার রাজ্য এই জগতের হত তবে আমি যাতে যিহূদী নেতাদের হাতে না পড়ি সেইজন্য আমার লোকেরা যুদ্ধ করত; কিন্তু আমার রাজ্য তো এখানকার নয়।” পীলাত যীশুকে বললেন, “তাহলে তুমি কি রাজা?” যীশু বললেন, “আপনি ঠিকই বলেছেন যে, আমি রাজা। সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেবার জন্য আমি জন্মেছি আর সেইজন্যই আমি জগতে এসেছি। যে কেউ সত্যের সে আমার কথা শোনে।” পীলাত তাঁকে বললেন, “সত্য কি?” এই কথা বলে তিনি আবার বাইরে যিহূদী নেতাদের কাছে গিয়ে বললেন, “আমি এর কোনই দোষ দেখতে পাচ্ছি না। তবে তোমাদের একটা নিয়ম আছে, উদ্ধার-পর্বের সময়ে আমি তোমাদের একজন কয়েদীকে ছেড়ে দিই। তোমরা কি চাও যে, আমি যিহূদীদের রাজাকে ছেড়ে দিই?” এতে সকলে চেঁচিয়ে বলল, “ওকে নয়, বারাব্বাকে।” সেই বারাব্বা একজন ডাকাত ছিল। তখন পীলাত যীশুকে নিয়ে গিয়ে ভীষণ ভাবে চাবুক মারবার আদেশ দিলেন। সৈন্যেরা কাঁটা-লতা দিয়ে একটা মুকুট গেঁথে যীশুর মাথায় পরিয়ে দিল। পরে তাঁকে বেগুনে কাপড় পরাল এবং তাঁর কাছে গিয়ে বলল, “ওহে যিহূদী-রাজ, জয় হোক!” এই বলে সৈন্যেরা তাঁকে চড় মারতে লাগল। পীলাত আবার বাইরে এসে লোকদের বললেন, “দেখ, আমি ওকে তোমাদের কাছে বের করে আনছি যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আমি ওর কোন দোষই পাচ্ছি না।” যীশু সেই কাঁটার মুকুট আর বেগুনে কাপড় পরা অবস্থায় বাইরে আসলেন। তখন পীলাত লোকদের বললেন, “এই দেখ, সেই লোক।” যীশুকে দেখে প্রধান পুরোহিতেরা আর কর্মচারীরা চেঁচিয়ে বললেন, “ক্রুশে দিন, ওকে ক্রুশে দিন।” পীলাত লোকদের বললেন, “তোমরাই ওকে নিয়ে গিয়ে ক্রুশে দাও, কারণ আমি ওর কোন দোষই দেখতে পাচ্ছি না।” যিহূদী নেতারা পীলাতকে বললেন, “আমাদের একটা আইন আছে, সেই আইন মতে তার মৃত্যু হওয়া উচিত, কারণ সে নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলেছে।” পীলাত যখন এই কথা শুনলেন তখন তিনি আরও ভয় পেলেন। তিনি আবার বাড়ীর মধ্যে গিয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোথা থেকে এসেছ?” যীশু কিন্তু পীলাতকে কোন উত্তর দিলেন না। এইজন্য পীলাত যীশুকে বললেন, “তুমি কি আমার সংগে কথা বলবে না? তুমি কি জান যে, তোমাকে ছেড়ে দেবার বা ক্রুশে দেবার ক্ষমতা আমার আছে?” যীশু উত্তর দিলেন, “উপর থেকে আপনাকে ক্ষমতা দেওয়া না হলে আমার উপরে আপনার কোন ক্ষমতাই থাকত না। সেইজন্য যে আমাকে আপনার হাতে দিয়েছে তারই পাপ বেশী।” এই কথা শুনে পীলাত যীশুকে ছেড়ে দেবার চেষ্টা করতে লাগলেন, কিন্তু যিহূদী নেতারা চেঁচিয়ে বললেন, “আপনি যদি এই লোকটাকে ছেড়ে দেন তবে আপনি সম্রাট কৈসরের বন্ধু নন। যে কেউ নিজেকে রাজা বলে দাবি করে সে তো সম্রাট কৈসরের শত্রু।” এই কথা শুনে পীলাত যীশুকে বাইরে আনলেন এবং পাথরে বাঁধানো নামে একটা জায়গায় বিচারের আসনে বসলেন। ইব্রীয় ভাষায় সেই জায়গাটাকে গাব্বাথা বলা হত। সেই দিনটা ছিল উদ্ধার-পর্বের আয়োজনের দিন। তখন বেলা প্রায় দুপুর। পীলাত যিহূদী নেতাদের বললেন, “এই দেখ, তোমাদের রাজা।” এতে তাঁরা চিৎকার করে বললেন, “দূর করুন, দূর করুন! ওকে ক্রুশে দিন!” পীলাত তাঁদের বললেন, “তোমাদের রাজাকে কি আমি ক্রুশে দেব?” প্রধান পুরোহিতেরা উত্তর দিলেন, “সম্রাট কৈসর ছাড়া আমাদের আর কোন রাজা নেই।” তখন পীলাত যীশুকে ক্রুশে দেবার জন্য তাঁদের হাতে দিয়ে দিলেন। তখন সৈন্যেরা যীশুকে নিয়ে গেল। যীশু নিজের ক্রুশ নিজে বয়ে নিয়ে মাথার খুলির স্থান নামে একটা জায়গায় গেলেন। সেই জায়গার ইব্রীয় নাম ছিল গল্‌গথা। সেখানে তারা যীশুকে ক্রুশে দিল-যীশুকে মাঝখানে আর তাঁর দু’পাশে অন্য দু’জনকে দিল। পীলাত একটা দোষনামা লিখে যীশুর ক্রুশের উপরে লাগিয়ে দিলেন। তাতে লেখা ছিল, “নাসরতের যীশু, যিহূদীদের রাজা।” যেখানে যীশুকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল সেই জায়গাটা শহরের কাছে ছিল বলে যিহূদীদের অনেকেই সেই দোষনামা পড়ল। সেটা ইব্রীয়, রোমীয় আর গ্রীক ভাষায় লেখা ছিল। তখন যিহূদীদের প্রধান পুরোহিতেরা পীলাতকে বললেন, “ ‘যিহূদীদের রাজা,’ এই কথা লিখবেন না, বরং লিখুন, ‘এ বলত, আমি যিহূদীদের রাজা।’ ” পীলাত বললেন, “আমি যা লিখেছি তা লিখেছি।” যীশুকে ক্রুশে দেবার পর সৈন্যেরা তাঁর কাপড়-চোপড় নিয়ে নিজেদের মধ্যে চার ভাগে ভাগ করল। পরে তারা যীশুর জামাটাও নিল। সেই জামায় কোন সেলাই ছিল না, উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সবটাই বোনা ছিল। তা দেখে সৈন্যেরা একে অন্যকে বলল, “এটা না ছিঁড়ে বরং গুলিবাঁট করে দেখি এটা কার হবে।” এটা ঘটেছিল যাতে পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হয়, তারা নিজেদের মধ্যে আমার কাপড়-চোপড় ভাগ করছে, আর আমার কাপড়ের জন্য তারা গুলিবাঁট করছে। আর সত্যিই সৈন্যেরা এই সব করেছিল। যীশুর মা, তাঁর মায়ের বোন, ক্লোপার স্ত্রী মরিয়ম আর মগ্‌দলীনী মরিয়ম যীশুর ক্রুশের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যীশু তাঁর মাকে এবং যে শিষ্যকে ভালবাসতেন তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। প্রথমে তিনি মাকে বললেন, “ঐ দেখ, তোমার ছেলে।” তার পরে সেই শিষ্যকে বললেন, “ঐ দেখ, তোমার মা।” তখন থেকেই সেই শিষ্য যীশুর মাকে তাঁর নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন। এর পরে সব কিছু শেষ হয়েছে জেনে পবিত্র শাস্ত্রের কথা যাতে পূর্ণ হয় সেইজন্য যীশু বললেন, “আমার পিপাসা পেয়েছে।” সেই জায়গায় সির্কায় পূর্ণ একটা পাত্র ছিল। তখন তারা একটা সপঞ্জ সেই সির্কায় ভিজাল এবং এসোব গাছের ডালের মাথায় তা লাগিয়ে যীশুর মুখের কাছে ধরল। যীশু সেই সির্কা খাওয়ার পরে বললেন, “শেষ হয়েছে।” তারপর তিনি মাথা নীচু করে তাঁর আত্মা সমর্পণ করলেন। সেই দিনটা ছিল পর্বের আয়োজনের দিন। পরের দিন ছিল বিশ্রামবার, আর সেই বিশ্রামবারটা একটা বিশেষ দিন ছিল বলে যিহূদী নেতারা চেয়েছিলেন যেন সেই দিনে দেহগুলো ক্রুশের উপরে না থাকে। এইজন্য তাঁরা পীলাতের কাছে অনুরোধ করলেন যেন ক্রুশে যারা আছে তাদের পা ভেংগে ক্রুশ থেকে তাদের সরিয়ে ফেলা হয়। তখন সৈন্যেরা এসে যীশুর সংগে যাদের ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তাদের দু’জনের পা ভেংগে দিল। পরে যীশুর কাছে এসে সৈন্যেরা তাঁকে মৃত দেখে তাঁর পা ভাংল না। কিন্তু একজন সৈন্য তাঁর পাঁজরে বর্শা দিয়ে খোঁচা মারল, আর তখনই সেখান থেকে রক্ত আর জল বের হয়ে আসল। যিনি নিজের চোখে এটা দেখেছিলেন তিনিই সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, আর তাঁর সাক্ষ্য সত্যি। তিনি জানেন যে, তিনি যা বলছেন তা সত্যি, যেন তোমরাও বিশ্বাস করতে পার। এই সব ঘটেছিল যাতে পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হয়, “তাঁর একখানা হাড়ও ভাংগা হবে না।” আবার শাস্ত্রের আর একটা কথা এই-“যাঁকে তারা বিঁধেছে তাঁর দিকে তারা তাকিয়ে দেখবে।” এই সমস্ত ঘটনার পরে অরিমাথিয়া গ্রামের যোষেফ যীশুর দেহটা নিয়ে যাবার জন্য পীলাতের কাছে অনুমতি চাইলেন। যোষেফ ছিলেন যীশুর গুপ্ত শিষ্য, কারণ তিনি যিহূদী নেতাদের ভয় করতেন। পীলাত অনুমতি দিলে পর তিনি এসে যীশুর দেহ নিয়ে গেলেন। আগে যিনি রাতের বেলায় যীশুর কাছে এসেছিলেন সেই নীকদীমও প্রায় তেত্রিশ কেজি গন্ধরস ও অগুরু মিশিয়ে নিয়ে আসলেন। পরে তাঁরা যীশুর দেহটি নিয়ে যিহূদীদের কবর দেবার নিয়ম মত সেই সমস্ত সুগন্ধি জিনিসের সংগে দেহটি কাপড় দিয়ে জড়ালেন। যীশুকে যেখানে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল সেই জায়গায় একটা বাগান ছিল আর সেখানে একটা নতুন কবর ছিল। সেই কবরের মধ্যে কাউকে কখনও রাখা হয় নি। সেই দিনটা ছিল যিহূদীদের পর্বের আয়োজনের দিন, আর কবরটাও কাছে ছিল বলে তাঁরা যীশুকে সেই কবরেই রাখলেন। সপ্তার প্রথম দিনের ভোর বেলায়, অন্ধকার থাকতেই মগ্‌দলীনী মরিয়ম সেই কবরের কাছে গেলেন। তিনি দেখলেন, কবরের মুখ থেকে পাথরখানা সরানো হয়েছে। সেইজন্য তিনি শিমোন-পিতর আর যে শিষ্যকে যীশু ভালবাসতেন সেই শিষ্যের কাছে দৌড়ে গিয়ে বললেন, “লোকেরা প্রভুকে কবর থেকে নিয়ে গেছে। তাঁকে কোথায় রেখেছে আমরা তা জানি না।” পিতর আর সেই অন্য শিষ্যটি তখন বের হয়ে কবরের দিকে যেতে লাগলেন। দু’জন একসংগে দৌড়াচ্ছিলেন। অন্য শিষ্যটি পিতরের আগে আগে আরও তাড়াতাড়ি দৌড়ে প্রথমে কবরের কাছে আসলেন, কিন্তু তিনি কবরের ভিতরে গেলেন না। তিনি নীচু হয়ে দেখলেন, যীশুর দেহে যে কাপড়গুলো জড়ানো হয়েছিল সেগুলো পড়ে আছে। শিমোন-পিতরও তাঁর পিছনে পিছনে এসে কবরের ভিতরে ঢুকলেন এবং কাপড়গুলো পড়ে থাকতে দেখলেন। তিনি আরও দেখলেন, তাঁর মাথায় যে রুমালখানা জড়ানো ছিল তা অন্য কাপড়ের সংগে নেই, কিন্তু আলাদা করে এক জায়গায় গুটিয়ে রাখা হয়েছে। যে শিষ্য প্রথমে কবরের কাছে পৌঁছেছিলেন তিনিও তখন ভিতরে ঢুকলেন এবং দেখে বিশ্বাস করলেন। মৃত্যু থেকে যীশুর জীবিত হয়ে উঠবার যে দরকার আছে, পবিত্র শাস্ত্রের সেই কথা তাঁরা আগে বুঝতে পারেন নি। এর পরে শিষ্যেরা ঘরে ফিরে গেলেন, কিন্তু মরিয়ম কবরের বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে নীচু হয়ে কবরের ভিতরে চেয়ে দেখলেন, যীশুর দেহ যেখানে শোওয়ানো ছিল সেখানে সাদা কাপড় পরা দু’জন স্বর্গদূত বসে আছেন-একজন মাথার দিকে আর অন্যজন পায়ের দিকে। তাঁরা মরিয়মকে বললেন, “কাঁদছ কেন?” মরিয়ম তাঁদের বললেন, “লোকেরা আমার প্রভুকে নিয়ে গেছে এবং তাঁকে কোথায় রেখেছে জানি না।” এই কথা বলে মরিয়ম পিছনে ফিরে দেখলেন যীশু দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু তিনি যে যীশু তা বুঝতে পারলেন না। যীশু তাঁকে বললেন, “কাঁদছ কেন? কাকে খুঁজছ?” যীশুকে বাগানের মালী ভেবে মরিয়ম বললেন, “দেখুন, আপনি যদি তাঁকে নিয়ে গিয়ে থাকেন তবে বলুন কোথায় রেখেছেন। আমিই তাঁকে নিয়ে যাব।” যীশু তাঁকে বললেন, “মরিয়ম।” তাতে মরিয়ম ফিরে দাঁড়িয়ে অরামীয় ভাষায় যীশুকে বললেন, “রব্বুনি।” রব্বুনি মানে গুরু। যীশু মরিয়মকে বললেন, “আমাকে ধরে রেখো না, কারণ আমি এখনও উপরে পিতার কাছে যাই নি। তুমি বরং ভাইদের কাছে গিয়ে বল, যিনি আমার ও তোমাদের পিতা, যিনি আমার ও তোমাদের ঈশ্বর, আমি উপরে তাঁর কাছে যাচ্ছি।” তখন মগ্‌দলীনী মরিয়ম শিষ্যদের কাছে গিয়ে সংবাদ দিলেন, তিনি প্রভুকে দেখেছেন আর প্রভুই তাঁকে এই সব কথা বলেছেন। সেই একই দিনে, সপ্তার প্রথম দিনের সন্ধ্যাবেলায় শিষ্যেরা যিহূদী নেতাদের ভয়ে ঘরের সমস্ত দরজা বন্ধ করে এক জায়গায় মিলিত হয়েছিলেন। তখন যীশু এসে তাঁদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক।” এই কথা বলে তিনি তাঁর দুই হাত ও পাঁজরের দিকটা তাঁর শিষ্যদের দেখালেন। প্রভুকে দেখতে পেয়ে শিষ্যেরা খুব আনন্দিত হলেন। পরে যীশু আবার তাঁদের বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক। পিতা যেমন আমাকে পাঠিয়েছেন আমিও তেমনি তোমাদের পাঠাচ্ছি।” এই কথা বলে তিনি শিষ্যদের উপর ফুঁ দিয়ে বললেন, “পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ কর। তোমরা যদি কারও পাপ ক্ষমা কর তবে তার পাপ ক্ষমা করা হবে, আর যদি কারও পাপ ক্ষমা না কর তবে তার পাপ ক্ষমা করা হবে না।” যীশু যখন এসেছিলেন তখন থোমা নামে সেই বারোজন শিষ্যদের মধ্যে একজন তাঁদের সংগে ছিলেন না। এই থোমাকে যমজ বলা হত। অন্য শিষ্যেরা পরে থোমাকে বললেন, “আমরা প্রভুকে দেখেছি।” থোমা তাঁদের বললেন, “আমি তাঁর দুই হাতে যদি পেরেকের চিহ্ন না দেখি, সেই চিহ্নের মধ্যে আংগুল না দিই এবং তাঁর পাঁজরে হাত না দিই, তবে কোনমতেই আমি বিশ্বাস করব না।” এর এক সপ্তাহ পরে শিষ্যেরা আবার ঘরের মধ্যে মিলিত হলেন, আর থোমাও তাঁদের সংগে ছিলেন। যদিও সমস্ত দরজা বন্ধ ছিল তবুও যীশু এসে তাঁদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক।” পরে তিনি থোমাকে বললেন, “তোমার আংগুল এখানে দিয়ে আমার হাত দু’খানা দেখ এবং তোমার হাত বাড়িয়ে আমার পাঁজরে রাখ। অবিশ্বাস কোরো না বরং বিশ্বাস কর।” তখন থোমা বললেন, “প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার।” যীশু তাঁকে বললেন, “থোমা, তুমি কি আমাকে দেখেছ বলে বিশ্বাস করছ? যারা না দেখে বিশ্বাস করে তারা ধন্য।” যীশু শিষ্যদের সামনে চিহ্ন হিসাবে আরও অনেক আশ্চর্য কাজ করেছিলেন; সেগুলো এই বইয়ে লেখা হয় নি। কিন্তু এই সব লেখা হল যাতে তোমরা বিশ্বাস কর যে, যীশুই মশীহ, ঈশ্বরের পুত্র, আর বিশ্বাস করে যেন তাঁর মধ্য দিয়ে জীবন পাও। এর পরে তিবিরিয়া সাগরের পারে শিষ্যদের কাছে আবার যীশু দেখা দিলেন। ঘটনাটা এইভাবে ঘটেছিল: শিমোন-পিতর, থোমা (যাঁকে যমজ বলে) গালীল প্রদেশের কান্না গ্রামের নথনেল, সিবদিয়ের ছেলেরা এবং যীশুর অন্য দু’জন শিষ্য একসংগে ছিলেন। শিমোন-পিতর তাঁদের বললেন, “আমি মাছ ধরতে যাচ্ছি।” তাঁরা বললেন, “আমরাও তোমার সংগে যাব।” তখন তাঁরা বের হয়ে নৌকায় উঠলেন, কিন্তু সেই রাতে কিছুই ধরতে পারলেন না। সকাল হয়ে আসছে এমন সময় যীশু সাগরের পারে এসে দাঁড়ালেন। শিষ্যেরা কিন্তু চিনতে পারলেন না যে, তিনি যীশু। তিনি শিষ্যদের বললেন, “সন্তানেরা, কিছুই কি পাও নি?” তাঁরা বললেন, “না, পাই নি।” যীশু তাঁদের বললেন, “নৌকার ডানদিকে জাল ফেল, পাবে।” তখন তাঁরা জাল ফেললেন, আর এত বেশী মাছ উঠল যে, তাঁরা তা টেনে তুলতে পারলেন না। যীশু যে শিষ্যকে ভালবাসতেন সেই শিষ্য পিতরকে বললেন, “উনি প্রভু।” সেই সময় শিমোন-পিতরের গায়ে কোন কাপড় ছিল না। তাই যখন তিনি শুনলেন, “উনি প্রভু,” তখন গায়ে কাপড় জড়িয়ে সাগরে ঝাঁপ দিলেন। তাঁরা পার থেকে বেশী দূরে ছিলেন না, কমবেশ দু’শো হাত দূরে ছিলেন। এইজন্য অন্য শিষ্যেরা মাছে ভরা জালটা টানতে টানতে নৌকায় করে পারে আসলেন। পারে নেমে এসে তাঁরা কাঠকয়লার আগুন এবং আগুনের উপরে মাছ দেখতে পেলেন; সেখানে রুটিও ছিল। তখন যীশু তাঁদের বললেন, “এখন যে মাছ ধরলে তা থেকে কয়েকটা আন।” শিমোন-পিতর নৌকায় গিয়ে জালটা পারে টেনে আনলেন। একশো তিপ্পান্নটা বড় মাছে জালটা ভরা ছিল। যদিও এত মাছ ছিল তবুও জালটা ছিঁড়ল না। যীশু তাঁদের বললেন, “এস, খাও।” শিষ্যদের মধ্যে কারও সাহস হল না যে, জিজ্ঞাসা করে, “আপনি কে?” কারণ তাঁরা জানতেন, তিনি প্রভু। পরে যীশু এসে রুটি নিয়ে তাঁদের দিলেন, আর সেইভাবে মাছও দিলেন। মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার পর যীশু এই তৃতীয় বার শিষ্যদের দেখা দিলেন। তাঁদের খাওয়া শেষ হলে পর যীশু শিমোন-পিতরকে বললেন, “যোহনের ছেলে শিমোন, ওদের ভালবাসার চেয়ে কি তুমি আমাকে বেশী ভালবাস?” শিমোন-পিতর তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, প্রভু, আপনি জানেন আপনি আমার কত প্রিয়।” যীশু তাঁকে বললেন, “আমার শিশু-মেষগুলো চরাও।” যীশু দ্বিতীয় বার তাঁকে বললেন, “যোহনের ছেলে শিমোন, তুমি কি আমাকে ভালবাস?” শিমোন-পিতর তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, প্রভু, আপনি তো জানেন আপনি আমার কত প্রিয়।” যীশু তাঁকে বললেন, “আমার মেষগুলো লালন-পালন কর।” পরে তিনি তৃতীয়বার শিমোন-পিতরকে বললেন, “যোহনের ছেলে শিমোন, সত্যিই কি আমি তোমার প্রিয়?” পিতর এবার দুঃখিত হলেন, কারণ যীশু এই তৃতীয় বার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি সত্যিই তোমার প্রিয়?” এইজন্য পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি সব কিছুই জানেন; আপনি তো জানেন যে, আপনি আমার খুবই প্রিয়।” যীশু তাঁকে বললেন, “আমার মেষগুলো চরাও। আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, যখন তুমি যুবক ছিলে তখন তুমি নিজেই তোমার কোমর বাঁধতে আর যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে। কিন্তু যখন তুমি বুড়ো হবে তখন তুমি তোমার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং অন্য একজন তোমাকে বাঁধবে আর তুমি যেখানে যেতে চাও না সেখানেই নিয়ে যাবে।” ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশ করবার জন্য পিতর কিভাবে মরবেন তা বুঝাতে গিয়ে যীশু এই কথা বললেন। এই কথা বলবার পর যীশু পিতরকে বললেন, “আমার সংগে এস।” পিতর পিছন ফিরে দেখলেন, যীশু যাঁকে ভালবাসতেন সেই শিষ্য পিছনে পিছনে আসছেন। ইনি সেই শিষ্য, যিনি খাবার সময়ে যীশুর দিকে ঝুঁকে বলেছিলেন, “প্রভু, আপনাকে যে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেবে, সে কে?” পিতর তাঁকে দেখে যীশুকে বললেন, “প্রভু, এর কি হবে?” যীশু পিতরকে বললেন, “আমি যদি চাই এ আমার ফিরে না আসা পর্যন্ত থাকে, তাতে তোমার কি? তুমি আমার সংগে এস।” এইজন্য ভাইদের মধ্যে এই কথা ছড়িয়ে গেল যে, সেই শিষ্য মরবেন না। যীশু কিন্তু পিতরকে বলেন নি সেই শিষ্য মরবেন না। তিনি বরং বলেছিলেন, “আমি যদি চাই সে আমার ফিরে না আসা পর্যন্ত থাকে, তাতে তোমার কি?” সেই শিষ্যই এই সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন আর এই সব লিখেছেন। আমরা জানি তাঁর সাক্ষ্য সত্যি। যীশু আরও অনেক কিছু করেছিলেন। যদি সেগুলো এক এক করে লেখা হত তবে এত বই হত যে, আমার মনে হয় সেগুলো এই জগতে ধরত না। তাঁর দুঃখভোগের পরে এই লোকদের কাছে তিনি দেখা দিয়েছিলেন এবং তিনি যে জীবিত আছেন তার অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়েছিলেন। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তিনি শিষ্যদের দেখা দিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় বলেছিলেন। সেই সময় একদিন যীশু যখন শিষ্যদের সংগে ছিলেন তখন তাঁদের এই আদেশ দিয়েছিলেন, “তোমরা যিরূশালেম ছেড়ে যেয়ো না, বরং আমার পিতার প্রতিজ্ঞা করা যে দানের কথা তোমরা আমার কাছে শুনেছ তার জন্য অপেক্ষা কর। যোহন জলে বাপ্তিস্ম দিতেন, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে পিতার সেই প্রতিজ্ঞা অনুসারে পবিত্র আত্মায় তোমাদের বাপ্তিস্ম হবে।” পরে শিষ্যেরা একসংগে মিলিত হয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রভু, এই সময় কি আপনি ইস্রায়েলীয়দের হাতে রাজ্য ফিরিয়ে দেবেন?” যীশু তাঁদের বললেন, “যে দিন বা সময় পিতা নিজের অধিকারের মধ্যে রেখেছেন তা তোমাদের জানতে দেওয়া হয় নি। তবে পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসলে পর তোমরা শক্তি পাবে, আর যিরূশালেম, সারা যিহূদিয়া ও শমরিয়া প্রদেশে এবং পৃথিবীর শেষ সীমা পর্যন্ত তোমরা আমার সাক্ষী হবে।” এই কথা বলবার পরে শিষ্যদের চোখের সামনেই যীশুকে তুলে নেওয়া হল এবং তিনি একটা মেঘের আড়ালে চলে গেলেন। যীশু যখন উপরে উঠে যাচ্ছিলেন তখন শিষ্যেরা একদৃষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এমন সময় সাদা কাপড় পরা দু’জন লোক শিষ্যদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, “গালীলের লোকেরা, এখানে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছ কেন? যাঁকে তোমাদের কাছ থেকে তুলে নেওয়া হল সেই যীশুকে যেভাবে তোমরা স্বর্গে যেতে দেখলে সেইভাবেই তিনি ফিরে আসবেন।” তখন শিষ্যেরা জৈতুন পাহাড় থেকে যিরূশালেমে ফিরে আসলেন। যিরূশালেম শহর থেকে এই পাহাড়টা এক কিলোমিটার দূরে ছিল। শহরে পৌঁছে তাঁরা উপরের তলার যে ঘরে তখন থাকতেন সেখানে গেলেন। এই শিষ্যদের নাম ছিল পিতর, যোহন, যাকোব ও আন্দ্রিয়, ফিলিপ ও থোমা, বর্‌থলময় ও মথি, আলফেয়ের ছেলে যাকোব ও মৌলবাদী শিমোন এবং যাকোবের ছেলে যিহূদা। তাঁরা সবাই বিশ্বাসী স্ত্রীলোকদের সংগে এবং যীশুর মা মরিয়ম ও তাঁর ভাইদের সংগে সব সময় একমন হয়ে প্রার্থনা করতেন। সেই সময় পিতর একদিন খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসী প্রায় একশো কুড়িজন লোকের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, “ভাইয়েরা, পবিত্র আত্মা অনেক দিন আগে রাজা দায়ূদের মুখ দিয়ে যিহূদার বিষয়ে যা বলেছিলেন পবিত্র শাস্ত্রের সেই কথা পূর্ণ হবার দরকার ছিল। যারা যীশুকে ধরেছিল, এই যিহূদাই তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সে আমাদেরই একজন ছিল এবং আমাদের সংগে কাজ করবার জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।” মন্দ কাজের দ্বারা যিহূদা যে টাকা পেয়েছিল তা দিয়ে সে এক খণ্ড জমি কিনল, আর সেখানে পড়ে তার পেট ফেটে গেল এবং নাড়িভূঁড়ি বের হয়ে পড়ল। যিরূশালেমের সবাই সেই কথা শুনেছিল। এইজন্য তাদের ভাষায় এই জমিকে তারা আকেল্‌দামা বা রক্তের ক্ষেত বলে। পরে পিতর বললেন, “পবিত্র শাস্ত্রের গীতসংহিতা নামে বইটিতে লেখা আছে, তার বাড়ী খালি থাকুক; সেখানে কেউ বাস না করুক। আরও লেখা আছে, তার উঁচু পদ অন্য লোক নিয়ে যাক। তখন শিষ্যেরা যোষেফ, যাঁকে বর্‌শাব্বা ও যুষ্ট বলা হত, তাঁর এবং মত্তথিয়ের, এই দু’জনের নাম বললেন। তাঁরা গুলিবাঁট করলে পর মত্তথিয়ের নাম উঠল। এইজন্য মত্তথিয় সেই এগারোজন প্রেরিত্‌দের সংগে যোগ দিলেন। এর কিছু দিন পরে পঞ্চাশত্তমী-পর্বের দিনে শিষ্যেরা এক জায়গায় মিলিত হলেন। তখন হঠাৎ আকাশ থেকে জোর বাতাসের শব্দের মত একটা শব্দ আসল এবং যে ঘরে তাঁরা ছিলেন সেই শব্দে সেই ঘরটা পূর্ণ হয়ে গেল। শিষ্যেরা দেখলেন আগুনের জিভের মত কি যেন ছড়িয়ে গেল এবং সেগুলো তাঁদের প্রত্যেকের উপর এসে বসল। তাতে তাঁরা সবাই পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হলেন এবং সেই আত্মা যাকে যেমন কথা বলবার শক্তি দিলেন সেই অনুসারে তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে লাগলেন। সেই সময় জগতের নানা দেশ থেকে ঈশ্বরভক্ত যিহূদী লোকেরা এসে যিরূশালেমে বাস করছিল। তারা সেই শব্দ শুনল এবং অনেকেই সেখানে জড়ো হল। নিজের নিজের ভাষায় শিষ্যদের কথা বলতে শুনে সেই লোকেরা যেন বুদ্ধিহারা হয়ে গেল। তারা খুব আশ্চর্য হয়ে বলল, “এই যে লোকেরা কথা বলছে, এরা কি সবাই গালীলের লোক নয়? যদি তা-ই হয় তাহলে আমরা প্রত্যেকে কি করে নিজের নিজের মাতৃভাষা ওদের মুখে শুনছি? পার্থীয়, মাদীয়, এলমীয় লোক এবং মেসোপতেমিয়ায় বাসকারী লোকেরা, যিহূদিয়া ও কাপ্পাদকিয়া, পন্ত ও এশিয়া প্রদেশ, ফরুগিয়া ও পাম্‌ফুলিয়া, মিসর ও কুরীণীর কাছাকাছি লিবিয়ার কয়েকটা জায়গার লোকেরা, রোম শহর থেকে যে যিহূদীরা ও যিহূদী ধর্মে বিশ্বাসী অযিহূদীরা এসেছে তারা, ক্রীট দ্বীপের লোকেরা ও আরবীয়েরা-আমরা সকলেই তো আমাদের নিজের নিজের ভাষায় ঈশ্বরের মহৎ কাজের কথা ওদের বলতে শুনছি।” তাঁরা আশ্চর্য ও বুদ্ধিহারা হয়ে একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, “এর মানে কি?” আবার অন্যেরা শিষ্যদের ঠাট্টা করে বললেন, “ওরা মদ খেয়ে মাতাল হয়েছে।” তখন পিতর সেই এগারোজন শিষ্যের সংগে দাঁড়িয়ে জোরে সেই সব লোকদের বললেন, “যিহূদী লোকেরা আর যাঁরা আপনারা যিরূশালেমে বাস করছেন, আপনারা জেনে রাখুন এবং মন দিয়ে আমার কথা শুনুন। আপনারা মনে করেছেন এরা মাতাল হয়েছে, কিন্তু তা নয়; কারণ এখন তো মাত্র সকাল ন’টা। এটা সেই ঘটনার মত যার কথা নবী যোয়েল বলেছিলেন যে, ঈশ্বর বলছেন, ‘শেষকালে সব লোকের উপরে আমি আমার আত্মা ঢেলে দেব; তাতে তোমাদের ছেলেরা ও মেয়েরা নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলবে, তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাবে, তোমাদের বুড়ো লোকেরা স্বপ্ন দেখবে। এমন কি, সেই সময়ে আমার দাস ও দাসীদের উপরে আমি আমার আত্মা ঢেলে দেব, আর তারা নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলবে। আমি উপরে আকাশে আশ্চর্য আশ্চর্য ঘটনা দেখাব, আর নীচে পৃথিবীতে নানা রকম চিহ্ন দেখাব, অর্থাৎ রক্ত, আগুন ও প্রচুর ধূমা দেখাব। প্রভুর সেই মহৎ ও মহিমাপূর্ণ দিন আসবার আগে সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে ও চাঁদ রক্তের মত হবে। রক্ষা পাবার জন্য যে কেউ প্রভুকে ডাকবে সে রক্ষা পাবে।’ “ইস্রায়েলীয়েরা, এই কথা শুনুন। নাসরতের যীশুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আপনাদের মধ্যে মহৎ ও আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করে আপনাদের কাছে প্রমাণ করেছিলেন যে, তিনি যীশুকে পাঠিয়েছিলেন; আর এই কথা তো আপনারা জানেন। ঈশ্বর, যিনি আগেই সব জানেন, তিনি আগেই ঠিক করেছিলেন যে, যীশুকে আপনাদের হাতে দেওয়া হবে। আর আপনারাও দুষ্ট লোকদের দ্বারা তাঁকে ক্রুশে দিয়ে মেরে ফেলেছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে তাঁকে জীবিত করে তুলেছেন, কারণ তাঁকে ধরে রাখবার সাধ্য মৃত্যুর ছিল না। দায়ূদ তাঁর বিষয়ে বলেছেন, ‘আমার চোখ সব সময় প্রভুর দিকে আছে; তিনি আমার ডান পাশে আছেন বলে আমি স্থির থাকব। এইজন্য আমার মন খুশীতে ভরা, আমার জিভ্‌ আনন্দের কথা বলে, আমার দেহও আশা নিয়ে বাঁচবে; কারণ তুমি আমাকে মৃতস্থানে ফেলে রাখবে না, তোমার ভক্তের দেহকে তুমি নষ্ট হতে দেবে না। জীবনের পথ তুমি আমাকে জানিয়েছ; তোমার কাছে থাকায় আছে পরিপূর্ণ আনন্দ।’ “ভাইয়েরা, এই কথা আমি নিশ্চয় করে বলতে পারি যে, রাজবংশের পিতা দায়ূদ মারা গেছেন, তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে আর তাঁর কবর আজও এখানে রয়েছে। তিনি একজন নবী ছিলেন এবং তিনি জানতেন ঈশ্বর শপথ করে এই প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তাঁর সিংহাসনে তাঁরই একজন বংশধরকে তিনি বসাবেন। পরে কি হবে তা দায়ূদ দেখতে পেয়েছিলেন বলে মৃত্যু থেকে মশীহের আবার জীবিত হয়ে ওঠা সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, মৃতস্থানে মশীহকে ফেলে রাখা হয় নি এবং তাঁর দেহও নষ্ট হয় নি। ঈশ্বর সেই যীশুকেই জীবিত করে তুলেছেন, আর আমরা সবাই তার সাক্ষী। ঈশ্বরের ডান দিকে বসবার গৌরব তাঁকেই দান করা হয়েছে এবং প্রতিজ্ঞা করা পবিত্র আত্মাকে তিনিই পিতা ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছেন; আর এখন আপনারা যা দেখছেন ও শুনতে পাচ্ছেন তা যীশুই দিয়েছেন। “এইজন্য সমস্ত ইস্রায়েল জাতি এই কথা নিশ্চিত ভাবে জানুন যে, যাঁকে আপনারা ক্রুশে দিয়েছিলেন ঈশ্বর সেই যীশুকেই প্রভু এবং মশীহ-এই দুই পদেই নিযুক্ত করেছেন।” এই কথা শুনে লোকেরা মনে আঘাত পেল। তারা পিতর ও অন্য প্রেরিত্‌দের জিজ্ঞাসা করল, “ভাইয়েরা, আমরা কি করব?” উত্তরে পিতর বললেন, “আপনারা প্রত্যেকে পাপের ক্ষমা পাবার জন্য পাপ থেকে মন ফিরান এবং যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করুন। আপনারা দান হিসাবে পবিত্র আত্মাকে পাবেন। আপনাদের জন্য, আপনাদের ছেলেমেয়েদের জন্য এবং যারা দূরে আছে, এক কথায় আমাদের প্রভু-ঈশ্বর তাঁর নিজের লোক হবার জন্য যাদের ডাকবেন, তাদের সকলের জন্য এই প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে।” এছাড়া আরও অনেক কথা বলে পিতর সাক্ষ্য দিতে লাগলেন। তিনি তাদের এই বলে বুঝাতে চেষ্টা করলেন, “এই যুগের বিবেকহীন লোকদের থেকে নিজেদের রক্ষা করুন।” যারা তাঁর কথা বিশ্বাস করল তারা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করল এবং শিষ্যদের দলের সংগে সেই দিন ঈশ্বর কমবেশ তিন হাজার লোককে যুক্ত করলেন। সেই লোকেরা প্রেরিত্‌দের শিক্ষা শুনত, তাঁদের সংগে এক হয়ে প্রভুর ভোজ গ্রহণ করত এবং প্রার্থনা করে সময় কাটাত। সবাই ভক্তিপূর্ণ ভয়ে পূর্ণ হল, আর প্রেরিতেরা অনেক আশ্চর্য কাজ ও চিহ্ন-কাজ করতে লাগলেন। সব বিশ্বাসীই একসংগে থাকত ও সব কিছু যার যার দরকার মত ব্যবহার করত। তারা নিজেদের বিষয়-সম্পত্তি বিক্রি করে যার যেমন দরকার সেইভাবে তাকে দিত। তারা প্রত্যেক দিন উপাসনা-ঘরে একসংগে মিলিত হত, আর ভিন্ন ভিন্ন বাড়ীতে আনন্দের সংগে ও সরল মনে একসংগে খাওয়া-দাওয়া করত। তারা সব সময় ঈশ্বরের প্রশংসা করত এবং সব লোক তাদের সম্মান করত। যারা পাপ থেকে উদ্ধার পাচ্ছিল প্রভু বিশ্বাসী দলের সংগে প্রত্যেক দিনই তাদের যোগ করতে লাগলেন। একদিন বেলা তিনটায় প্রার্থনার সময়ে পিতর ও যোহন উপাসনা-ঘরে যাচ্ছিলেন। লোকেরা প্রত্যেক দিন একজন লোককে বয়ে এনে উপাসনা-ঘরের সুন্দর নামে দরজার কাছে রাখত। সে জন্ম থেকেই খোঁড়া ছিল। যারা উপাসনা-ঘরে যেত তাদের কাছে ভিক্ষা চাইবার জন্য তাকে সেখানে রাখা হত। পিতর ও যোহনকে উপাসনা-ঘরে ঢুকতে দেখে সে তাঁদের কাছে ভিক্ষা চাইল। পিতর ও যোহন সোজা তার দিকে তাকালেন। তার পরে পিতর বললেন, “আমাদের দিকে তাকাও।” তখন সেই লোকটি তাঁদের কাছ থেকে কিছু পাবার আশায় তাঁদের দিকে তাকাল। তখন পিতর বললেন, “আমার কাছে সোনা-রূপা কিছু নেই, কিন্তু যা আছে তা-ই তোমাকে দিচ্ছি। নাসরতের যীশু খ্রীষ্টের নামে উঠে দাঁড়াও ও হাঁট।” পরে তিনি লোকটির ডান হাত ধরে তাকে তুললেন আর তখনই তার পা ও গোড়ালি শক্ত হল। সে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল এবং হাঁটতে লাগল। পরে সে হাঁটতে হাঁটতে, লাফাতে লাফাতে এবং ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে তাঁদের সংগে উপাসনা-ঘরে গেল। ভিখারীটি কিন্তু পিতর ও যোহনের পিছু ছাড়ল না। লোকেরা পিতরের সেই কাজে আশ্চর্য হয়ে তাঁদের কাছে দৌড়ে আসল। শলোমনের নামে যে বারান্দা ছিল তাঁরা তখন সেখানে ছিলেন। এই ব্যাপার দেখে পিতর লোকদের বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা, এতে আপনারা আশ্চর্য হচ্ছেন কেন? আমাদের নিজেদের শক্তিতে বা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির গুণে একে চলবার শক্তি দিয়েছি মনে করে কেনই বা আপনারা আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন? অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের ঈশ্বর, অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর এই কাজের দ্বারা নিজের দাস যীশুর মহিমা প্রকাশ করেছেন। আপনারা তো যীশুকে মেরে ফেলবার জন্য ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পীলাত তাঁকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আপনারা পীলাতের সামনে তাঁকে অস্বীকার করেছিলেন। আপনারা সেই পবিত্র ও ন্যায়বান লোকটিকে অস্বীকার করে একজন খুনীকে আপনাদের কাছে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। যিনি জীবনদাতা তাঁকেই আপনারা মেরে ফেলেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর মৃত্যু থেকে তাঁকে জীবিত করে তুলেছেন; আর আমরা তার সাক্ষী। এই যে লোকটিকে আপনারা দেখছেন এবং যাকে আপনারা চেনেন, যীশুর উপর বিশ্বাসের ফলে, যীশুর নামের গুণে সে শক্তি লাভ করেছে। যীশুর মধ্য দিয়ে যে বিশ্বাস আসে সেই বিশ্বাসই আপনাদের সকলের সামনে তাকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তুলেছে। “এখন ভাইয়েরা, আমি জানি আপনাদের নেতাদের মত আপনারাও না বুঝেই যীশুকে ক্রুশে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর অনেক দিন আগে সমস্ত নবীদের মধ্য দিয়ে বলেছিলেন তাঁর মশীহকে কষ্টভোগ করতে হবে; আর সেই কথা ঈশ্বর এইভাবেই পূর্ণ করলেন। এইজন্য আপনারা পাপ থেকে মন ফিরিয়ে ঈশ্বরের দিকে ফিরুন যেন আপনাদের পাপ মুছে ফেলা হয়; আর এতে যেন ঈশ্বর সেই মশীহকে, অর্থাৎ যীশুকে পাঠিয়ে দিয়ে আপনাদের সজীব করে তুলতে পারেন। আপনাদের জন্য তাঁকেই নিযুক্ত করা হয়েছে। ঈশ্বর সব কিছু যে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন তা অনেক দিন আগেই পবিত্র নবীদের মধ্য দিয়ে বলেছিলেন। তিনি যতদিন না তাঁর সেই কথা পূর্ণ করেন ততদিন পর্যন্ত যীশুকে স্বর্গে থাকতে হবে। মোশি বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রভু-ঈশ্বর তোমাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য আমার মত একজন নবী দাঁড় করাবেন। তাঁর কথামত তোমাদের চলতে হবে। যে তাঁর কথা শুনবে না তাকে তার লোকদের মধ্য থেকে একেবারে ধ্বংস করা হবে।’ “এছাড়া শমূয়েল থেকে আরম্ভ করে যে সব নবীরা কোন কিছু বলে গেছেন তাঁরাও এই সময়ের কথা আগেই বলে গেছেন, আর আপনারা তো সেই নবীদেরই বংশধর। আপনাদের পূর্বপুরুষদের জন্য ঈশ্বর যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন, আপনারা তো তারই ভাগীদার। ঈশ্বর অব্রাহামকে এই কথা বলে সেই ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন, ‘তোমার বংশের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সমস্ত জাতিই আশীর্বাদ পাবে।’ আপনাদের প্রত্যেককে মন্দ পথ থেকে ফিরিয়ে আশীর্বাদ করবার জন্যই ঈশ্বর তাঁর দাস যীশুকে ঠিক করে প্রথমে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন।” পিতর ও যোহন যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন সেই সময় পুরোহিতেরা, উপাসনা-ঘরের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দূকীরা তাঁদের কাছে আসলেন। এঁরা খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন, কারণ পিতর ও যোহন লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং যীশুর মধ্য দিয়ে মৃতদের আবার জীবিত হয়ে উঠবার বিষয় প্রচার করছিলেন। তাঁরা পিতর ও যোহনকে ধরলেন এবং সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল বলে পরের দিন পর্যন্ত হাজতে রাখলেন। কিন্তু যারা পিতরের কথা শুনেছিল তাদের মধ্যে অনেকে বিশ্বাস করল; তাতে বিশ্বাসীদের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে কমবেশ পাঁচ হাজারে দাঁড়াল। পরের দিন যিহূদীদের প্রধান পুরোহিতেরা, বৃদ্ধ নেতারা এবং ধর্ম-শিক্ষকেরা এক সংগে যিরূশালেমে মিলিত হলেন। সেখানে মহাপুরোহিত হানন উপস্থিত ছিলেন। তা ছাড়া কাইয়াফা, যোহন, আলেক্‌সান্দর আর মহাপুরোহিতের পরিবারের অন্যান্য লোকেরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা পিতর আর যোহনকে তাঁদের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কিসের শক্তিতে বা কার নামে এই কাজ করেছ?” তখন পিতর পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে তাঁদের বললেন, “প্রধান পুরোহিতেরা ও বৃদ্ধ নেতারা, একজন খোঁড়া লোকের উপকার করবার জন্য আজ আপনারা এই নিয়ে আমাদের জেরা করছেন যে, লোকটি কেমন করে ভাল হল। তাহলে আপনারা এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয়েরা এই কথা জেনে রাখুন যে, নাসরতের সেই যীশু খ্রীষ্ট, যাঁকে আপনারা ক্রুশে দিয়েছিলেন এবং যাঁকে ঈশ্বর মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন, তাঁরই শক্তিতে এই লোকটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পবিত্র শাস্ত্রের কথামত যীশু খ্রীষ্টই ‘সেই পাথর, যাঁকে রাজমিস্ত্রিরা, অর্থাৎ আপনারা বাদ দিয়েছিলেন; আর সেটাই সবচেয়ে দরকারী পাথর হয়ে উঠল।’ পাপ থেকে উদ্ধার আর কারও কাছে পাওয়া যায় না, কারণ সারা জগতে আর এমন কেউ নেই যার নামে আমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারি।” পিতর আর যোহনের সাহস দেখে এবং তাঁরা যে অশিক্ষিত ও সাধারণ লোক তা জানতে পেরে সেই নেতারা আশ্চর্য হয়ে গেলেন, আর তাঁরা যে যীশুর সংগী ছিলেন তাও বুঝতে পারলেন। যে লোকটি সুস্থ হয়েছিল তাকে পিতর ও যোহনের সংগে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁদের বিরুদ্ধে বলবার আর কিছুই রইল না। এইজন্য তাঁরা মহাসভা থেকে তাঁদের বাইরে যেতে আদেশ দিলেন। তারপর তাঁরা একসংগে মিলে পরামর্শ করতে লাগলেন। তাঁরা বললেন, “এই লোকদের নিয়ে আমরা কি করব? যারা যিরূশালেমে বাস করে তারা সবাই জানে যে, এরা একটা বিশেষ আশ্চর্য কাজ করেছে, আর আমরা তা অস্বীকারও করতে পারি না। কিন্তু লোকদের মধ্যে যেন কথাটা আরও ছড়িয়ে না পড়ে সেইজন্য এই লোকদের ভয় দেখাতে হবে, যাতে তারা কাউকেই যীশুর বিষয়ে আর কোন কথা না বলে।” এর পরে তাঁরা পিতর ও যোহনকে আবার ভিতরে ডেকে আনলেন এবং আদেশ দিলেন যেন তাঁরা যীশুর বিষয়ে আর কোন কথা না বলেন বা শিক্ষা না দেন। উত্তরে পিতর ও যোহন বললেন, “আপনাদের আদেশ পালন করব, না ঈশ্বরের আদেশ পালন করব? ঈশ্বরের চোখে কোন্‌টা ঠিক, আপনারাই তা বিচার করে দেখুন। আমরা যা দেখেছি আর শুনেছি তা না বলে তো থাকতে পারি না।” তখন তাঁরা পিতর আর যোহনকে আরও ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিলেন। লোকদের ভয়ে তাঁরা ঠিক করতে পারছিলেন না কিভাবে তাঁদের শাস্তি দেওয়া যায়, কারণ যা ঘটেছিল তাতে সব লোক ঈশ্বরের গৌরব করছিল। যে লোকটি আশ্চর্য ভাবে ভাল হয়েছিল তার বয়স ছিল চল্লিশ বছরেরও বেশী। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে পিতর ও যোহন তাঁদের নিজেদের লোকদের কাছে গেলেন এবং প্রধান পুরোহিতেরা ও বৃদ্ধ নেতারা তাঁদের যা যা বলেছিলেন সমস্তই তাদের জানালেন। এই কথা শুনে তারা সবাই মিলে এক প্রাণে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে বলল, “হে প্রভু, তুমি আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং ঐগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সবই সৃষ্টি করেছ। তুমি পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে তোমার দাস আমাদের পূর্বপুরুষ দায়ূদের মুখ দিয়ে বলেছ, ‘কেন অস্থির হয়ে চেঁচামেচি করছে সমস্ত জাতির লোক? কেন লোকেরা মিছামিছি ষড়যন্ত্র করছে? প্রভু ও তাঁর মশীহের বিরুদ্ধে পৃথিবীর রাজারা একসংগে দাঁড়াচ্ছে, আর শাসনকর্তারা করছে গোপন বৈঠক।’ “তোমার পবিত্র দাস যীশু, যাঁকে তুমি মশীহ হিসাবে নিযুক্ত করেছিলে, রাজা হেরোদ ও পন্তীয় পীলাত এই শহরেই তাঁর বিরুদ্ধে অযিহূদীদের সংগে এবং ইস্রায়েলীয়দের সংগে সত্যিই হাত মিলিয়েছিলেন। তোমার শক্তি ও ইচ্ছাতে যা ঘটবে বলে তুমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলে তাঁরা তা-ই করেছিলেন। আর এখন, হে প্রভু, এঁরা আমাদের কিভাবে ভয় দেখাচ্ছেন তা তুমি লক্ষ্য কর। তোমার দাসদের এমন শক্তি দাও যাতে খুব সাহসের সংগে তারা তোমার বাক্য বলতে পারে। তোমার হাত বাড়িয়ে দাও যেন তোমার পবিত্র দাস যীশুর নামে তারা লোকদের সুস্থ করতে পারে এবং আশ্চর্য কাজ ও চিহ্ন-কাজ করতে পারে।” যে জায়গায় তাঁরা মিলিত হয়েছিলেন, প্রার্থনা করবার পর সেই জায়গাটা কেঁপে উঠল। আর তাঁরা সবাই পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে সাহসের সংগে ঈশ্বরের বাক্য বলতে লাগলেন। খ্রীষ্টে বিশ্বাসীরা সবাই মনেপ্রাণে এক ছিল। কোন কিছুই তারা নিজের বলে দাবি করত না বরং সব কিছুই যার যার দরকার মত ব্যবহার করত। প্রেরিতেরা মহাশক্তিতে সাক্ষ্য দিতে থাকলেন যে, প্রভু যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, আর তাদের সকলের উপর ঈশ্বরের অশেষ দয়া ছিল। যোষেফ নামে লেবির বংশের একজন লোক ছিলেন। সাইপ্রাস দ্বীপে তাঁর বাড়ী ছিল। তাঁকে প্রেরিতেরা বার্ণবা, অর্থাৎ উৎসাহদাতা বলে ডাকতেন। তাঁর এক খণ্ড জমি ছিল; তিনি সেটা বিক্রি করে টাকা এনে প্রেরিত্‌দের পায়ের কাছে রাখলেন। তখন অননিয় নামে একজন লোক ও তার স্ত্রী সাফীরা একটা সম্পত্তি বিক্রি করল। তার স্ত্রীর জানামতেই বিক্রির টাকার কিছু অংশ সে নিজের জন্য রেখে বাকী টাকা প্রেরিত্‌দের দিল। তখন পিতর বললেন, “অননিয়, কি করে শয়তান তোমার মন এমনভাবে অধিকার করল যে, তুমি পবিত্র আত্মার কাছে মিথ্যা কথা বললে এবং জমি বিক্রির টাকা থেকে কিছু টাকা নিজের জন্য রেখে দিলে? বিক্রির আগে জমিটা কি তোমারই ছিল না? আর বিক্রির পরেও কি টাকাগুলো তোমার হাতেই ছিল না? তবে তুমি কেন এমন কাজ করবে বলে ঠিক করলে? তুমি মানুষের কাছে মিথ্যা বল নি, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে মিথ্যা কথা বলেছ।” এই কথা শোনামাত্র অননিয় মাটিতে পড়ে মারা গেল। এই ঘটনার কথা যারা শুনল তারা সবাই ভীষণ ভয় পেল। পরে যুবকেরা উঠে তার গায়ে কাপড় জড়াল এবং বাইরে নিয়ে গিয়ে তাকে কবর দিল। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পরে অননিয়ের স্ত্রী সেখানে আসল, কিন্তু কি ঘটেছে তা সে জানত না। তখন পিতর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “বল দেখি, তুমি আর অননিয় সেই জমিটা কি এত টাকাতে বিক্রি করেছিলে?” সে বলল, “হ্যাঁ, এত টাকাতেই।” তখন পিতর তাকে বললেন, “প্রভুর আত্মাকে পরীক্ষা করবার জন্য কেন তোমরা একমত হলে? দেখ, যে লোকেরা তোমার স্বামীকে কবর দিয়েছে তারা দরজার কাছে এসে পৌঁছেছে, আর তারা তোমাকেও বাইরে নিয়ে যাবে।” সাফীরা তখনই পিতরের পায়ের কাছে পড়ে মারা গেল। আর ঐ যুবকেরা ভিতরে এসে তাকে মৃত অবস্থায় দেখল এবং তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে তার স্বামীর পাশে কবর দিল। তখন মণ্ডলীর সব লোক এবং অন্য যারা সেই কথা শুনল সবাই ভীষণ ভয় পেল। প্রেরিতেরা লোকদের মধ্যে অনেক আশ্চর্য কাজ ও চিহ্ন-কাজ করতেন; আর বিশ্বাসীরা সবাই উপাসনা-ঘরের শলোমনের বারান্দায় একসংগে মিলিত হত। যদিও লোকেরা তাদের খুব সম্মান করত তবুও আর কেউ তাদের সংগে যোগ দিতে সাহস করল না। তাহলেও অনেক পুরুষ ও স্ত্রীলোক প্রভুর উপর বিশ্বাস করল এবং বিশ্বাসী দলের সংগে যুক্ত হল। প্রেরিতেরা যা করছিলেন তা দেখে লোকেরা খাটের উপরে ও মাদুরের উপরে করে রোগীদের এনে রাস্তায় রাস্তায় রাখতে লাগল, যেন রাস্তা দিয়ে যাবার সময় পিতরের ছায়াটুকু অন্ততঃ তাদের কারও কারও উপরে পড়ে। যিরূশালেমের আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে অনেক লোক তাদের রোগীদের এবং মন্দ আত্মার হাতে কষ্ট-পাওয়া লোকদের এনে ভিড় করতে লাগল, আর তারা সবাই সুস্থ হল। তখন মহাপুরোহিত ও তাঁর সংগের সদ্দূকী দলের লোকেরা হিংসায় জ্বলে উঠলেন। তাঁরা প্রেরিত্‌দের ধরে সরকারী জেলে দিলেন। কিন্তু রাতের বেলায় প্রভুর একজন দূত জেলের দরজাগুলো খুলে তাঁদের বাইরে এনে বললেন, “যাও, উপাসনা-ঘরে দাঁড়িয়ে লোকদের কাছে অনন্ত জীবন সম্বন্ধে সমস্ত কথা বল।” তাঁরা সেই কথামত খুব সকালবেলা উপাসনা-ঘরে ঢুকে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। এদিকে মহাপুরোহিত ও তাঁর সংগের সদ্দূকীরা মহাসভা ডাকলেন, অর্থাৎ ইস্রায়েলীয় বৃদ্ধ নেতাদের গোটা দলটিকে ডাকলেন। তারপর তাঁরা প্রেরিত্‌দের নিয়ে আসবার জন্য কয়েকজন কর্মচারী পাঠালেন, কিন্তু সেই কর্মচারীরা জেলখানায় গিয়ে সেখানে তাঁদের পেল না। তখন তারা ফিরে গিয়ে এই খবর দিল, “আমরা দেখলাম জেলের দরজায় শক্ত করেই তালা দেওয়া আছে এবং দরজায় দরজায় পাহারাদার দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু দরজা খুলে কাউকেই ভিতরে দেখতে পেলাম না।” এই কথা শুনে উপাসনা-ঘরের প্রধান কর্মচারী ও প্রধান পুরোহিতেরা বুদ্ধিহারা হয়ে ভাবতে লাগলেন এর ফল কি হবে। তখন একজন লোক এসে বলল, “দেখুন, যে লোকদের আপনারা জেলে দিয়েছিলেন তারা উপাসনা-ঘরে দাঁড়িয়ে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছে।” তখন প্রধান কর্মচারী তাঁর অধীন কর্মচারীদের নিয়ে গিয়ে প্রেরিত্‌দের ধরে আনলেন। কিন্তু লোকেরা সেই কর্মচারীদের পাথর মারতে পারে সেই ভয়ে তারা প্রেরিত্‌দের উপর কোন জবরদস্তি করে নি। প্রেরিত্‌দের এনে তারা মহাসভার সামনে দাঁড় করাল। তখন মহাপুরোহিত প্রেরিত্‌দের বললেন, “ঐ লোকের বিষয় শিক্ষা না দেবার জন্য আমরা তোমাদের কড়া আদেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা তোমাদের শিক্ষায় যিরূশালেম পূর্ণ করেছ এবং সেই লোকের মৃত্যুর জন্য আমাদের দায়ী করতে চাইছ।” তখন পিতর এবং অন্য প্রেরিতেরা উত্তর দিলেন, “মানুষের আদেশ পালন করবার চেয়ে বরং ঈশ্বরের আদেশই আমাদের পালন করা উচিত। যাঁকে আপনারা ক্রুশে টাংগিয়ে মেরে ফেলেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর সেই যীশুকেই মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন। ঈশ্বর তাঁকেই রাজা ও উদ্ধারকর্তা হিসাবে নিজের ডান পাশে বসবার গৌরব দান করেছেন, যাতে তিনি পাপ থেকে ইস্রায়েলীয়দের মন ফিরাবার সুযোগ দিয়ে পাপের ক্ষমা দান করতে পারেন। আমরা এই সবের সাক্ষী এবং যারা ঈশ্বরের বাধ্য হয়, ঈশ্বর তাদের যে পবিত্র আত্মা দিয়েছেন সেই পবিত্র আত্মাও তার সাক্ষী।” এই কথা শুনে সেই নেতারা রেগে আগুন হয়ে গেলেন এবং প্রেরিত্‌দের মেরে ফেলতে চাইলেন, কিন্তু গমলীয়েল নামে ফরীশী দলের একজন লোক মহাসভার মধ্যে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি একজন ধর্ম-শিক্ষক ছিলেন এবং সবাই তাঁকে সম্মান করত। তিনি প্রেরিত্‌দের কিছুক্ষণের জন্য বাইরে রাখতে আদেশ দিলেন। তার পরে তিনি মহাসভার লোকদের বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা, এই লোকদের উপরে তোমরা যা করতে যাচ্ছ সেই বিষয়ে সাবধান হও। এই তো কিছু দিন আগে থুদা নামে একজন লোক এসে নিজেকে বিশেষ একজন বলে দাবি করেছিল, আর কমবেশ চারশো লোক তার সংগে যোগ দিয়েছিল। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং তার সব সংগীরা ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তার সব কিছুই বিফল হয়েছে। তারপর লোকগণনার সময়ে গালীলের যিহূদা এসে এক দল লোককে বিদ্রোহী করে তুলেছিল। সেও মারা গেছে, আর তার সংগীরাও সবাই ছড়িয়ে পড়েছে। সেইজন্য এই অবস্থায় আমি তোমাদের বলছি, তোমরা এই লোকদের উপর কিছু কোরো না। এদের ছেড়ে দাও, কারণ এদের উদ্দেশ্য ও কাজকর্ম যদি মানুষ থেকে হয়ে থাকে তবে তা ধ্বংস হবে। কিন্তু যদি ঈশ্বর থেকে হয়ে থাকে তবে তোমরা এদের থামাতে পারবে না। হয়তো দেখবে তোমরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছ।” তখন গমলীয়েলের কথায় নেতারা একমত হলেন। তাঁরা প্রেরিত্‌দের ভিতরে ডেকে এনে বেত মারতে আদেশ দিলেন। তার পরে তাঁরা তাঁদের ছেড়ে দিলেন এবং আদেশ দিলেন যেন তাঁরা যীশুর বিষয়ে কোন কথা না বলেন। এতে যীশুর নামের জন্য প্রেরিতেরা যে অপমান ভোগ করবার যোগ্য হয়েছেন সেইজন্য আনন্দ করতে করতে তাঁরা মহাসভা ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁরা প্রত্যেক দিন উপাসনা-ঘরে এবং বাড়ী বাড়ী গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন এবং যীশুই যে মশীহ এই সুখবর প্রচার করতে থাকলেন। সেই সময়ে শিষ্যদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল। তখন শিষ্যদের মধ্যে যে যিহূদীরা গ্রীক ভাষায় কথা বলত তারা ইব্রীয় ভাষায় কথা বলা যিহূদীদের এই বলে দোষ দিতে লাগল যে, রোজই খাবার দেবার সময়ে তাদের বিধবা স্ত্রীলোকেরা কিছুই পায় না। এতে সেই বারোজন প্রেরিত্‌ সব শিষ্যদের এক জায়গায় ডেকে বললেন, “ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করা ছেড়ে খাবার দেওয়ার ব্যাপারে ব্যস্ত থাকা আমাদের পক্ষে ঠিক নয়। দলের সকলেরই এই কথা ভাল লাগল। বিশ্বাসে ও পবিত্র আত্মায় পূর্ণ স্তিফানকে তারা বেছে নিল। এছাড়া তারা ফিলিপ, প্রখর, নীকানর, তীমোন, পার্মিনা ও আন্তিয়খিয়া শহরের নিকলায়কেও বেছে নিল। এই নিকলায় অযিহূদী হয়েও যিহূদী ধর্ম পালন করতেন। পরে তারা এই লোকদের প্রেরিত্‌দের কাছে নিয়ে গেল। তখন প্রেরিতেরা প্রার্থনা করলেন এবং কাজে নিযুক্ত করবার জন্য তাঁদের উপর হাত রাখলেন। এইভাবে ঈশ্বরের বাক্য ছড়িয়ে পড়তে লাগল, আর যিরূশালেমে শিষ্যদের সংখ্যা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যেতে লাগল এবং পুরোহিতদের মধ্যে অনেকে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসকে মেনে নিলেন। স্তিফান ঈশ্বরের দয়া ও শক্তিতে পূর্ণ হয়ে লোকদের মধ্যে অনেক আশ্চর্র্য কাজ ও চিহ্ন-কাজ করতে লাগলেন। যে সমাজ-ঘরকে মুক্ত-করা লোকদের সমাজ-ঘর বলা হত সেই সমাজ-ঘরের কয়েকজন লোক স্তিফানের পিছনে লাগল। তারা ছিল কুরীণী ও আলেক্‌জান্দ্রিয়া শহরের এবং কিলিকিয়া ও এশিয়া প্রদেশের কয়েকজন যিহূদী। তারা স্তিফানের সংগে তর্ক জুড়ে দিল, কিন্তু স্তিফান পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে খুব জ্ঞানের সংগে কথা বলছিলেন। সেইজন্য তারা তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছিল না। তখন সেই যিহূদীরা গোপনে কয়েকজন লোককে এই কথা বলতে উস্‌কিয়ে দিল, “আমরা স্তিফানকে মোশি ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলতে শুনেছি।” এইভাবে তারা লোকদের, বৃদ্ধ নেতাদের ও ধর্ম-শিক্ষকদের ক্ষেপিয়ে তুলল আর স্তিফানকে ধরে মহাসভার সামনে আনল। তারা কয়েকজন মিথ্যা সাক্ষী দাঁড় করাল। এই মিথ্যা সাক্ষীরা বলল, “এই লোকটা সব সময় উপাসনা-ঘরের বিরুদ্ধে ও মোশির আইন-কানুনের বিরুদ্ধে কথা বলে। আমরা তাকে এই কথা বলতে শুনেছি যে, সেই নাসরৎ গ্রামের যীশু এই উপাসনা-ঘর ভেংগে ফেলবে এবং মোশি যে চলতি নিয়মগুলো আমাদের দিয়ে গিয়েছেন সেগুলোও বদ্‌লে ফেলবে।” যাঁরা সেই মহাসভায় বসে ছিলেন তাঁরা সবাই তখন স্তিফানের দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তাঁর মুখ একজন স্বর্গদূতের মুখের মত হয়ে গেছে। তখন মহাপুরোহিত স্তিফানকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই সব কথা কি সত্যি?” উত্তরে স্তিফান বললেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও পিতারা, আমার কথা শুনুন। আমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম হারণ শহরে বাস করবার আগে যখন মেসোপতেমিয়া দেশে ছিলেন তখন গৌরবময় ঈশ্বর তাঁকে দেখা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার দেশ ও আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে আমি যে দেশ তোমাকে দেখাব সেই দেশে যাও।’ “সেইজন্য তিনি কল্‌দীয়দের দেশ ছেড়ে হারণ শহরে গিয়ে বাস করলেন। যে দেশে এখন আপনারা বাস করছেন ঈশ্বর অব্রাহামকে তাঁর পিতার মৃত্যুর পরে সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। নিজের অধিকারের জন্য ঈশ্বর অব্রাহামকে সেখানে কিছুই দিলেন না, একটা পা রাখবার মত জমি পর্যন্তও না। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তাঁকে ও তাঁর পরে তাঁর বংশধরদের অধিকার হিসাবে তিনি সেই দেশ দেবেন। অবশ্য সেই সময় অব্রাহামের কোন ছেলেমেয়ে ছিল না। ঈশ্বর তাঁকে বললেন, ‘তোমার বংশধরেরা বিদেশে বাস করবে। লোকে তাদের দাস করে রাখবে এবং চারশো বছর ধরে তাদের উপর অত্যাচার করবে।’ ঈশ্বর আরও বললেন, ‘যে জাতি তাদের দাস করবে সেই জাতিকে আমি শাস্তি দেব। পরে তারা সেই দেশ থেকে বের হয়ে এসে এই জায়গায় আমার উপাসনা করবে।’ তারপর ঈশ্বর তাঁর ব্যবস্থার চিহ্ন হিসাবে সুন্নত করাবার নিয়ম দিলেন। এর পরে অব্রাহামের ছেলে ইস্‌হাকের জন্ম হল এবং জন্মের আট দিনের দিন তিনি তাঁর সুন্নত করালেন। পরে ইস্‌হাক যাকোবের সুন্নত করালেন এবং যাকোব সেই বারোজন গোষ্ঠী-পিতাদের সুন্নত করালেন। “তার পরে সারা মিসর ও কনান দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তাতে যখন খুব কষ্ট উপস্থিত হল তখন আমাদের পূর্বপুরুষেরা খাবার পেলেন না। কিন্তু মিসরে খাবার আছে শুনে যাকোব আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রথমে একবার সেখানে পাঠিয়ে দিলেন। দ্বিতীয় বারে যোষেফ ভাইদের জানালেন তিনি কে। সেই সময় ফরৌণ যোষেফের পরিবারের বিষয় জানতে পারলেন। এর পরে যোষেফ তাঁর বাবা যাকোব ও পরিবারের অন্য সবাইকে ডেকে পাঠালেন। তাঁরা সংখ্যায় মোট পঁচাত্তরজন ছিলেন। যাকোব মিসরে গেলেন, আর সেখানে তিনি ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা মারা গেলেন। তাঁদের দেহ শিখিমে এনে কবর দেওয়া হল। এই কবরস্থান অব্রাহাম শিখিম শহরের হমোরের ছেলেদের কাছ থেকে রূপা দিয়ে কিনেছিলেন। “অব্রাহামের কাছে ঈশ্বর যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা পূর্ণ হবার সময় যখন কাছে আসল তখন দেখা গেল মিসরে আমাদের লোকসংখ্যা খুব বেড়ে গেছে। এর পরে মিসরে আর একজন রাজা হলেন। তিনি যোষেফের বিষয় কিছুই জানতেন না। সেই রাজা আমাদের লোকদের ঠকাতেন এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের উপর খুব অত্যাচার করতেন। এমন কি, তাঁদের যে সব শিশু জন্মগ্রহণ করত তারা যাতে মারা যায় সেইজন্য সেই শিশুদের বাইরে ফেলে রাখতে তাঁদের বাধ্য করতেন। “সেই সময়ে মোশির জন্ম হল। তিনি দেখতে খুবই সুন্দর ছিলেন। তিন মাস পর্যন্ত তিনি তাঁর বাবার বাড়ীতেই লালিত-পালিত হলেন। পরে যখন তাঁকে বাইরে ফেলে রাখা হল তখন ফরৌণের মেয়ে তাঁকে নিয়ে গিয়ে নিজের ছেলের মতই মানুষ করে তুললেন। মোশি মিসরীয়দের সমস্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হলেন, আর তিনি কথায় ও কাজে শক্তিশালী ছিলেন। “মোশির বয়স যখন চল্লিশ বছর তখন তিনি তাঁর ইস্রায়েলীয় ভাইদের সংগে দেখা করতে চাইলেন। একজন মিসরীয়কে একজন ইস্রায়েলীয়ের প্রতি খারাপ ব্যবহার করতে দেখে তিনি সেই ইস্রায়েলীয়কে সাহায্য করতে গেলেন এবং সেই মিসরীয়কে মেরে ফেলে তার শোধ নিলেন। মোশি মনে করেছিলেন, তাঁর নিজের লোকেরা বুঝতে পারবে ঈশ্বর তাঁর দ্বারাই তাদের উদ্ধার করবেন, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারল না। পরের দিন মোশি দু’জন ইস্রায়েলীয়কে মারামারি করতে দেখলেন। তখন তিনি তাদের মিলন করাবার জন্য বললেন, ‘ওহে, তোমরা তো ভাই ভাই; তবে একে অন্যের সংগে কেন এমন খারাপ ব্যবহার করছ?’ “কিন্তু যে লোকটি খারাপ ব্যবহার করছিল সে মোশিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাদের উপরে কে তোমাকে শাসনকর্তা ও বিচারকর্তা করেছে? গতকাল যেভাবে সেই মিসরীয়কে মেরে ফেলেছ, আমাকেও কি সেইভাবে মেরে ফেলতে চাও?’ এই কথা শুনে মোশি পালিয়ে গিয়ে মিদিয়ন দেশে বাস করতে লাগলেন। সেখানেই তাঁর দু’টি ছেলের জন্ম হল। “তারপর চল্লিশ বছর পার হয়ে গেল। সিনাই পাহাড়ের কাছে যে মরু-এলাকা আছে সেখানে একটা জ্বলন্ত ঝোপের আগুনের মধ্যে একজন স্বর্গদূত মোশিকে দেখা দিলেন। এ দেখে মোশি আশ্চর্য হয়ে গেলেন। ভাল করে দেখবার জন্য কাছে গেলে পর তিনি প্রভুর এই কথা শুনতে পেলেন, ‘আমি তোমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর-অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবের ঈশ্বর।’ তখন মোশি ভয়ে কাঁপতে লাগলেন; তাকিয়ে দেখবার সাহস পর্যন্ত তাঁর হল না। “তখন প্রভু তাঁকে বললেন, ‘তোমার পায়ের জুতা খুলে ফেল, কারণ যে জায়গায় তুমি দাঁড়িয়ে আছ তা পবিত্র। মিসর দেশে আমার লোকদের উপরে যে অত্যাচার হচ্ছে তা আমি দেখেছি। আমি তাদের কাতর স্বর শুনেছি এবং তাদের উদ্ধার করবার জন্য নেমে এসেছি। এখন আমি তোমাকে মিসর দেশে ফিরে পাঠাব।’ “ইনি সেই একই মোশি যাঁকে ইস্রায়েলীয়েরা এই বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল, ‘কে তোমাকে শাসনকর্তা ও বিচারকর্তা করেছে?’ যে স্বর্গদূত সেই ঝোপের মধ্যে মোশিকে দেখা দিয়েছিলেন সেই স্বর্গদূতের দ্বারা ঈশ্বর নিজে এই মোশিকেই ইস্রায়েলীয়দের শাসনকর্তা ও উদ্ধারকর্তা হিসাবে মিসরে পাঠিয়েছিলেন। এই মোশিই মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে এনেছিলেন এবং মিসর দেশে, লোহিত সাগরে ও চল্লিশ বছর ধরে মরু-এলাকায় অনেক আশ্চর্য কাজ ও চিহ্ন-কাজ করেছিলেন। ইনিই সেই মোশি যিনি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন, ‘তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের ইস্রায়েলীয় ভাইদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য আমার মত একজন নবী দাঁড় করাবেন।’ এই মোশিই মরু-এলাকায় ইস্রায়েলীয়দের সেই দলের মধ্যে আমাদের পূর্বপুরুষদের সংগে ছিলেন। যে স্বর্গদূত সিনাই পাহাড়ে কথা বলেছিলেন এই মোশিই সেই স্বর্গদূতের সংগে সেখানে ছিলেন। আমাদের দেবার জন্য জীবন্ত বাণী এই মোশিই সেখানে পেয়েছিলেন। এই সময়েই তাঁরা বাছুরের মত করে একটা প্রতিমা তৈরী করেছিলেন। তাঁরা সেই প্রতিমার কাছে পশু উৎসর্গ করেছিলেন এবং নিজেদের হাতে যা তৈরী করেছিলেন তা নিয়ে তাঁরা একটা আনন্দ-উৎসব করেছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর মুখ ফিরালেন এবং আকাশের চাঁদ-সূর্য-তারার পূজাতেই তাঁদের ফেলে রাখলেন। এই একই কথা নবীদের বইয়ে লেখা আছে: হে ইস্রায়েলের লোকেরা, মরু-এলাকায় সেই চল্লিশ বছর তোমরা কি আমার উদ্দেশে কোন পশু বা অন্য জিনিস উৎসর্গ করেছিলে? না, বরং পূজা করবার জন্য যে প্রতিমা তোমরা তৈরী করেছিলে সেই মোলক দেবের মূর্তি আর তোমাদের রিফণ দেবতার তারা তোমরা বয়ে নিয়ে গিয়েছিলে। কাজেই আমি বাবিল দেশের ওপাশে বন্দী হিসাবে তোমাদের পাঠিয়ে দেব। “সাক্ষ্য-তাম্বুটি মরু-এলাকায় আমাদের পূর্বপুরুষদের সংগে ছিল। ঈশ্বর মোশিকে যেভাবে আদেশ করেছিলেন এবং মোশি যে নমুনা দেখেছিলেন সেইভাবেই এই তাম্বু তৈরী করা হয়েছিল। আমাদের পূর্বপুরুষেরা সেই তাম্বু পেয়ে তাঁদের নেতা যিহোশূয়ের অধীনে তা নিজেদের সংগে আমাদের এই দেশে এনেছিলেন। ঈশ্বর সেই সময় তাঁদের সামনে থেকে অন্য জাতিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁরা এই দেশ অধিকার করেছিলেন। দায়ূদের সময় পর্যন্ত সেই তাম্বু এই দেশেই ছিল। দায়ূদ ঈশ্বরের দয়া পেয়ে যাকোবের ঈশ্বরের থাকবার ঘর তৈরী করবার জন্য অনুমতি চেয়েছিলেন; কিন্তু শলোমনই তাঁর জন্য ঘর তৈরী করেছিলেন। “কিন্তু মহান ঈশ্বর মানুষের তৈরী ঘর-বাড়ীতে থাকেন না। নবী বলেছেন যে, প্রভু বলেন, ‘স্বর্গ আমার সিংহাসন, পৃথিবী আমার পা রাখবার জায়গা; আমার জন্য কি রকম ঘর তুমি তৈরী করবে? আমার বিশ্রামের স্থান কোথায় হবে? এই সব জিনিস কি আমি নিজের হাতে তৈরী করি নি?’ “হে একগুঁয়ে জাতি! অযিহূদীদের মতই আপনাদের কান ও অন্তর, আর আপনারাও ঠিক আপনাদের পূর্বপুরুষদের মত। আপনারা সব সময় পবিত্র আত্মাকে বাধা দিয়ে থাকেন। এমন কোন নবী আছেন কি, যাঁকে আপনাদের পূর্বপুরুষেরা অত্যাচার করেন নি? এমন কি, যাঁরা সেই ন্যায়বান লোকের, অর্থাৎ খ্রীষ্টের আসবার কথা আগেই বলেছেন তাঁদেরও তাঁরা মেরে ফেলেছেন। আর এখন আপনারা যীশুকেই শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাঁকে খুন করিয়েছেন। স্বর্গদূতদের মধ্য দিয়ে আপনাদের কাছেই তো আইন-কানুন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আপনারা তা পালন করেন নি।” এই সব কথা শুনে সেই নেতারা রেগে আগুন হয়ে গেলেন এবং স্তিফানের বিরুদ্ধে দাঁতে দাঁত ঘষতে লাগলেন। কিন্তু স্তিফান পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পেলেন। তিনি যীশুকে ঈশ্বরের ডান দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, “দেখুন, আমি দেখছি স্বর্গ খোলা আছে এবং ঈশ্বরের ডান দিকে মনুষ্যপুত্র দাঁড়িয়ে রয়েছেন।” এতে তাঁরা কানে আংগুল দিলেন এবং খুব জোরে চিৎকার করে একসংগে স্তিফানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। পরে তাঁরা তাঁকে পাথর মারবার জন্য টেনে শহরের বাইরে নিয়ে গেলেন, আর সাক্ষীরা তাদের উপরের কাপড় খুলে শৌল নামে একজন যুবকের পায়ের কাছে রাখল। যখন সাক্ষীরা স্তিফানকে পাথর মারছিল তখন তিনি প্রার্থনা করে বললেন, “প্রভু যীশু, আমার আত্মাকে গ্রহণ কর।” পরে তিনি হাঁটু পেতে চেঁচিয়ে বললেন, “প্রভু, এদের এই পাপ ধোরো না।” এই কথা বলে তিনি মারা গেলেন। শৌল সেখানে স্তিফানের খুনের পক্ষে সায় দিচ্ছিলেন। সেই দিন যিরূশালেমের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর লোকদের উপর ভীষণ অত্যাচার আরম্ভ হল। তাতে প্রেরিতেরা ছাড়া বাকী সব বিশ্বাসীরা যিহূদিয়া ও শমরিয়া প্রদেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। কয়েকজন ঈশ্বরভক্ত লোক স্তিফানকে কবর দিলেন এবং তাঁর জন্য খুব বিলাপ করলেন। কিন্তু শৌল সেই মণ্ডলীকে ধ্বংস করবার চেষ্টায় ঘরে ঘরে গিয়ে সেই মণ্ডলীর পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের টেনে এনে জেলে দিতে লাগলেন। যে বিশ্বাসীরা ছড়িয়ে পড়েছিল তারা চারদিকে গিয়ে খ্রীষ্টের সুখবরের কথা প্রচার করতে লাগল। সেই সময় ফিলিপ শমরিয়া প্রদেশের একটা শহরে গিয়ে মশীহের বিষয় প্রচার করলেন। লোকেরা তাঁর কথা শুনে এবং তিনি যে সব আশ্চর্য কাজ করছিলেন তা দেখে তাঁর কথা মন দিয়ে শুনল। অনেকের মধ্য থেকে মন্দ আত্মা চিৎকার করে বের হয়ে গেল এবং অনেক অবশ রোগী ও খোঁড়া সুস্থ হল। তাতে সেই শহরের লোকেরা খুব আনন্দিত হল। সেই শহরে শিমোন নামে একজন লোক অনেক দিন থেকেই যাদু দেখাচ্ছিল। তাতে শমরিয়ার সব লোক আশ্চর্য হয়েছিল। সে নিজেকে একজন বিশেষ লোক বলে দাবি করত, আর ধনী-গরীব সবাই তার কথায় কান দিত। লোকে বলত, “ঈশ্বরের যে শক্তিকে মহৎ শক্তি বলা হয় এই লোকটিই সেই শক্তি।” লোকে তার কথামত চলত, কারণ অনেক দিন ধরেই সে তার যাদু দেখিয়ে তাদের আশ্চর্য করেছিল। কিন্তু ফিলিপ যখন ঈশ্বরের রাজ্য ও যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করলেন তখন লোকেরা তাঁর কথায় বিশ্বাস করল এবং পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে লাগল। সেই শিমোনও বিশ্বাস করে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করল, আর সে ফিলিপের পিছনে পিছনে সব জায়গায় গেল এবং চিহ্ন-কাজ ও বড় বড় আশ্চর্য কাজ দেখে অবাক হল। যিরূশালেমের প্রেরিতেরা যখন শুনলেন যে, শমরিয়ার লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করেছে তখন তাঁরা পিতর ও যোহনকে সেই লোকদের কাছে পাঠালেন। পিতর ও যোহন এসে তাদের জন্য প্রার্থনা করলেন যেন তারা পবিত্র আত্মা পায়, কারণ তখনও তাদের উপর পবিত্র আত্মা আসেন নি; কেবল প্রভু যীশুর নামে তাদের বাপ্তিস্ম হয়েছিল। তখন পিতর ও যোহন তাদের উপর হাত রাখলেন, আর তারা পবিত্র আত্মা পেল। যখন শিমোন দেখল যে, প্রেরিত্‌দের হাত রাখবার মধ্য দিয়ে পবিত্র আত্মাকে দেওয়া হল তখন সে তাঁদের কাছে টাকা এনে বলল, “আমাকেও এই শক্তি দিন যেন আমি কারও উপরে হাত রাখলে সে পবিত্র আত্মা পায়।” তখন পিতর তাকে বললেন, “তোমার টাকা তোমার সংগেই ধ্বংস হোক, কারণ তুমি মনে করেছ ঈশ্বরের দান টাকা দিয়ে কেনা যায়। আমাদের এই কাজে তোমার কোন ভাগ বা অধিকার নেই, কারণ ঈশ্বরের চোখে তোমার অন্তর ঠিক নয়। এই মন্দতা থেকে তুমি তোমার মন ফিরাও ও প্রভুর কাছে প্রার্থনা কর; তাহলে তোমার মনের এই মন্দ চিন্তা হয়তো তিনি ক্ষমাও করতে পারেন। আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমার মন লোভে ভরা এবং তুমি পাপের কাছে বন্দী হয়ে আছ।” তখন শিমোন বলল, “আপনারাই প্রভুর কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করুন যেন আপনারা যা বললেন তা আমার উপর না ঘটে।” এর পরে পিতর ও যোহন প্রভুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে ও তাঁর বাক্য প্রচার করে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। যাবার পথে তাঁরা শমরীয়দের অনেক গ্রামে সুখবর প্রচার করলেন। একদিন প্রভুর একজন দূত ফিলিপকে বললেন, “ওঠো, দক্ষিণ দিকের যে পথ যিরূশালেম থেকে গাজা শহরের দিকে গেছে সেই পথে যাও।” পথটা ছিল মরুভূমির মধ্যে। তখন ফিলিপ সেই দিকে গেলেন। পথে ইথিয়পিয়া দেশের একজন বিশেষ রাজকর্মচারীর সংগে তাঁর দেখা হল। সেই কর্মচারী ছিলেন খোজা। ইথিয়পিয়ার কান্দাকী রাণীর ধনরত্নের দেখাশোনা করবার ভার ছিল এই লোকটির উপর। ঈশ্বরের উপাসনা করবার জন্য সেই কর্মচারী যিরূশালেমে গিয়েছিলেন। বাড়ী ফিরবার পথে তিনি রথে বসে নবী যিশাইয়ের বইখানা পড়ছিলেন। তখন পবিত্র আত্মা ফিলিপকে বললেন, “ঐ রথের কাছে যাও এবং তার সংগে সংগে চল।” এতে ফিলিপ দৌড়ে সেই রথের কাছে গেলেন এবং শুনতে পেলেন লোকটি নবী যিশাইয়ের বইখানা পড়ছেন। ফিলিপ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি যা পড়ছেন তা বুঝতে পারছেন কি?” সেই কর্মচারী বললেন, “কেউ বুঝিয়ে না দিলে কেমন করে বুঝতে পারব?” তিনি ফিলিপকে রথে উঠে তাঁর কাছে বসতে অনুরোধ করলেন। সেই কর্মচারী পবিত্র শাস্ত্রের যে অংশটুকু পড়ছিলেন তা এই: জবাই করবার জন্য যেমন ভেড়া নেওয়া হয়, তেমনি তাঁকে নেওয়া হল। লোম ছাঁটাইকারীর সামনে ভেড়ার বাচ্চা যেমন চুপ করে থাকে, তেমনি তিনি মুখ খুললেন না। তিনি অপমানিত হলেন, তাঁর উপর ন্যায়বিচার করা হয় নি। তাঁর বংশের কথা বলা সম্ভব নয়, কারণ তাঁর জীবন এই পৃথিবী থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেই কর্মচারী ফিলিপকে বললেন, “বলুন না, নবী কার বিষয়ে এই কথা বলেছেন? নিজের বিষয়ে, না অন্য কারও বিষয়ে?” তখন ফিলিপ পবিত্র শাস্ত্রের সেই অংশ থেকে আরম্ভ করে তাঁর কাছে যীশুর বিষয়ে সুখবর প্রচার করলেন। তিনি রথ থামাতে বললেন। তার পরে ফিলিপ এবং সেই কর্মচারী জলের মধ্যে নামলেন ও ফিলিপ তাঁকে বাপ্তিস্ম দিলেন। যখন তাঁরা জল থেকে উঠে আসলেন তখন প্রভুর আত্মা হঠাৎ ফিলিপকে নিয়ে গেলেন। সেই কর্মচারী আর তাঁকে দেখতে পেলেন না। তখন তিনি আনন্দ করতে করতে বাড়ীর পথে চললেন। ফিলিপকে কিন্তু অস্‌দোদ শহরে দেখতে পাওয়া গেল। তিনি গ্রামে গ্রামে সুখবর প্রচার করতে করতে শেষে কৈসরিয়াতে গেলেন। পথে যেতে যেতে যখন তিনি দামেস্কের কাছে আসলেন তখন স্বর্গ থেকে হঠাৎ তাঁর চারদিকে আলো পড়ল। তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এবং শুনলেন কে যেন তাঁকে বলছেন, “শৌল, শৌল, কেন তুমি আমার উপর অত্যাচার করছ?” শৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রভু, আপনি কে?” তিনি বললেন, “আমি যীশু, যাঁর উপর তুমি অত্যাচার করছ। এখন তুমি উঠে শহরে যাও। কি করতে হবে তা তোমাকে বলা হবে।” যে লোকেরা শৌলের সংগে যাচ্ছিল তারা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারা কথা শুনেছিল কিন্তু কাউকে দেখতে পায় নি। পরে শৌল মাটি থেকে উঠলেন, কিন্তু চোখ খুললে পর কিছুই দেখতে পেলেন না। তখন তাঁর সংগীরা হাত ধরে তাঁকে দামেস্কে নিয়ে গেল। তিন দিন পর্যন্ত শৌল চোখে দেখতে পেলেন না এবং কিছুই খেলেন না। দামেস্ক শহরে অননিয় নামে একজন শিষ্য ছিলেন। প্রভু তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন, “অননিয়।” উত্তরে তিনি বললেন, “প্রভু, এই যে আমি।” অননিয় বললেন, “প্রভু, আমি অনেকের মুখে এই লোকের বিষয় শুনেছি যে, যিরূশালেমে তোমার লোকদের উপর সে কত অত্যাচার করেছে। এছাড়া যারা তোমার নামে প্রার্থনা করে তাদের ধরবার জন্য প্রধান পুরোহিতদের কাছ থেকে অধিকার নিয়ে সে এখানে এসেছে।” কিন্তু প্রভু অননিয়কে বললেন, “তুমি যাও, কারণ অযিহূদীদের ও তাদের রাজাদের এবং ইস্রায়েলীয়দের কাছে আমার সম্বন্ধে প্রচার করবার জন্য আমি এই লোককেই বেছে নিয়েছি। আমার জন্য কত কষ্ট যে তাকে পেতে হবে তা আমি তাকে দেখাব।” তখন অননিয় গিয়ে সেই বাড়ীর মধ্যে ঢুকলেন আর শৌলের গায়ে হাত দিয়ে বললেন, “ভাই শৌল, এখানে আসবার পথে যিনি তোমাকে দেখা দিয়েছিলেন তিনি প্রভু যীশু। তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন যেন তুমি তোমার দেখবার শক্তি ফিরে পাও এবং পবিত্র আত্মায় পুর্ণ হও।” তার পরে সময় নষ্ট না করে তিনি ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-ঘরে এই কথা প্রচার করতে লাগলেন যে, যীশুই ঈশ্বরের পুত্র। যারা তাঁর কথা শুনত তারা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করত, “যিরূশালেমে যারা যীশুর নামে প্রার্থনা করে তাদের যে অত্যাচার করত এ কি সেই লোক নয়? এখানেও যারা তা করে তাঁদের বেঁধে প্রধান পুরোহিতদের কাছে নিয়ে যাবার জন্যই কি সে এখানে আসে নি?” শৌল কিন্তু আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে লাগলেন এবং যীশুই যে মশীহ তা প্রমাণ করলেন। এতে দামেস্কের যিহূদীরা বুদ্ধিহারা হয়ে গেল। এর অনেক দিন পরে যিহূদীরা তাঁকে মেরে ফেলবার ষড়যন্ত্র করতে লাগল, কিন্তু শৌল তাদের ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলেন। তাঁকে মেরে ফেলবার জন্য যিহূদীরা শহরের ফটকগুলো দিনরাত পাহারা দিতে লাগল। কিন্তু একদিন রাতের বেলা শৌলের শিষ্যেরা একটা ঝুড়িতে করে দেয়ালের একটা জানলার মধ্য দিয়ে তাঁকে নীচে নামিয়ে দিল। শৌল যিরূশালেমে এসে শিষ্যদের সংগে যোগ দিতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তারা সবাই তাঁকে ভয় করতে লাগল। তারা বিশ্বাস করতে পারল না যে, শৌল সত্যিই একজন শিষ্য হয়েছেন। কিন্তু বার্ণবা তাঁকে সংগে করে প্রেরিত্‌দের কাছে নিয়ে গিয়ে তাঁদের জানালেন, দামেস্কের পথে শৌল কিভাবে প্রভু যীশুকে দেখতে পেয়েছিলেন এবং প্রভু তাঁর সংগে কিভাবে কথা বলেছিলেন, আর দামেস্কে যীশুর সম্বন্ধে তিনি কিভাবে সাহসের সংগে প্রচার করেছিলেন। এর পরে শৌল যিরূশালেমে শিষ্যদের সংগে রইলেন এবং তাঁদের সংগে চলাফেরা করতেন ও প্রভুর বিষয়ে সাহসের সংগে প্রচার করে বেড়াতেন। যে যিহূদীরা গ্রীক ভাষা বলত তাদের সংগে তিনি কথা বলতেন ও তর্ক করতেন, কিন্তু এই যিহূদীরা তাঁকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করতে লাগল। বিশ্বাসী ভাইয়েরা এই কথা শুনে তাঁকে কৈসরিয়া শহরে নিয়ে গেলেন এবং পরে তাঁকে তার্ষ শহরে পাঠিয়ে দিলেন। সেই সময় যিহূদিয়া, গালীল ও শমরিয়া প্রদেশের মণ্ডলীগুলোতে শান্তি ছিল, আর সেই মণ্ডলীগুলো গড়ে উঠছিল। ফলে প্রভুর প্রতি ভক্তিতে ও পবিত্র আত্মার উৎসাহে তাদের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছিল। পিতর সব জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে লুদ্দা গ্রামে ঈশ্বরের যে লোকেরা ছিলেন তাঁদের কাছে আসলেন। সেই গ্রামে ঐনিয় বলে একজন লোক ছিল। সে অবশ রোগে আট বছর ধরে বিছানায় পড়ে ছিল। পিতর তাকে দেখে বললেন, “ঐনিয়, যীশু খ্রীষ্ট তোমাকে ভাল করলেন। ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নাও।” আর তখনই ঐনিয় উঠে দাঁড়াল। তখন লুদ্দা ও শারোণ গ্রামের সমস্ত লোক ঐনিয়কে দেখে প্রভুর দিকে ফিরল। যাফো শহরে টাবিথা নামে একজন শিষ্যা ছিলেন। গ্রীক ভাষায় এই নামের অর্থ দর্কা। তিনি সব সময় অন্যদের উপকার করতেন ও গরীবদের সাহায্য করতেন। তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন, আর লোকেরা তাঁকে স্নান করিয়ে উপরের কামরায় রেখেছিল। যাফো ছিল লুদ্দার কাছে; এইজন্য শিষ্যেরা যখন শুনল যে, পিতর লুদ্দাতে আছেন তখন তারা দু’জন লোক তাঁর কাছে পাঠিয়ে তাঁকে এই অনুরোধ জানাল, “আপনি তাড়াতাড়ি করে আমাদের কাছে আসুন।” তখন পিতর তাদের সংগে গেলেন। তিনি সেখানে পৌঁছালে পর সেই উপরের কামরায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল। সমস্ত বিধবারা তখন পিতরের চারদিকে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগল এবং দর্কা বেঁচে থাকতে যে সব জামা ও অন্যান্য কাপড়-চোপড় তৈরী করেছিলেন তা পিতরকে দেখাতে লাগল। তখন পিতর তাদের সবাইকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে হাঁটু পেতে প্রার্থনা করলেন। তারপর সেই মৃত স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে বললেন, “টাবিথা, ওঠো।” তাতে দর্কা চোখ খুললেন এবং পিতরকে দেখে উঠে বসলেন। পিতর তখন তাঁর হাত ধরে তাঁকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলেন। পরে তিনি ঈশ্বরের লোকদের ও বিধবাদের ডেকে তাদের দেখালেন যে, দর্কা বেঁচে উঠেছেন। এই কথা যাফো শহরের সবাই জানতে পারল এবং অনেকেই প্রভুর উপর বিশ্বাস করল। পিতর যাফোতে শিমোন নামে একজন লোকের বাড়ীতে বেশ কিছু দিন কাটালেন। এই শিমোন চামড়ার কাজ করত। কৈসরিয়া শহরে কর্ণীলিয় নামে একজন লোক ইটালীয় সৈন্যদলের শতপতি ছিলেন। যিহূদী না হলেও তিনি ঈশ্বরভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। তিনি গরীবদের অনেক টাকা-পয়সা দান করতেন এবং ঈশ্বরের কাছে প্রায়ই প্রার্থনা করতেন। একদিন বেলা তিনটার সময় তিনি একটা দর্শন পেলেন। তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন ঈশ্বরের একজন দূত এসে তাঁকে ডাকছেন, “কর্ণীলিয়।” কর্ণীলিয় ভয় পেয়ে সেই স্বর্গদূতের দিকে তাকিয়ে বললেন, “বলুন, প্রভু।” স্বর্গদূত বললেন, “তোমার প্রার্থনা ও গরীবদের তোমার দানের কথা স্বর্গে পৌঁছেছে এবং ঈশ্বর তা মনে রেখেছেন। এখন তুমি যাফো শহরে লোক পাঠাও, আর শিমোন, যার আর এক নাম পিতর, তাকে ডেকে আন। সমুদ্রের ধারে আর একজন শিমোন থাকে। সে চামড়ার কাজ করে। পিতর সেই শিমোনের বাড়ীতে আছে।” যে স্বর্গদূত কর্ণীলিয়ের সংগে কথা বলছিলেন তিনি চলে গেলে পর কর্ণীলিয় দু’জন চাকর ও একজন সাহায্যকারী সৈন্যকে ডাকলেন। এই সৈন্যটি ঈশ্বরভক্ত ছিল। সমস্ত কথা বুঝিয়ে বলবার পরে কর্ণীলিয় তাদের যাফোতে পাঠিয়ে দিলেন। পরের দিন যখন সেই লোকেরা যাফো শহরের দিকে আসছিল তখন বেলা প্রায় দুপুর। পিতর প্রার্থনা করবার জন্য সেই সময় ছাদে উঠলেন। তখন পিতরের খুব খিদে পেয়েছিল এবং তিনি কিছু খেতে চাইছিলেন। যখন খাবার তৈরী হচ্ছিল তখন পিতর তন্দ্রার মত অবস্থায় ছিলেন। সেই অবস্থায় তিনি দেখলেন, আকাশ খুলে গেছে এবং বড় চাদরের মত কোন একটা জিনিসকে চার কোণা ধরে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই চাদরের মধ্যে আছে সব রকম পশু, বুকে-হাঁটা প্রাণী এবং পাখী। তার পরে তিনি শুনলেন কে যেন তাঁকে বলছেন, “পিতর, ওঠো, মেরে খাও।” পিতর বললেন, “না, না, প্রভু, কিছুতেই না। অপবিত্র বা অশুচি কোন কিছু আমি কখনও খাই নি।” তখন তিনি আবার শুনলেন, “ঈশ্বর যা শুচি করেছেন তাকে তুমি অপবিত্র বোলো না।” এই রকম তিন বার হবার পরে সেই চাদরটা আকাশে তুলে নেওয়া হল। যে দর্শন পিতর পেয়েছিলেন তার অর্থ কি হতে পারে তা তিনি তখনও ভাবছিলেন; এমন সময় কর্ণীলিয়ের পাঠানো লোকেরা শিমোনের বাড়ী খুঁজে পেয়ে ফটকের সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর তারা ডেকে জিজ্ঞাসা করল, “শিমোন, যাঁকে পিতরও বলা হয়, তিনি কি এখানে থাকেন?” পিতর তখনও দর্শনের কথা ভাবছিলেন, এমন সময় পবিত্র আত্মা তাঁকে বললেন, “দেখ, তিনজন লোক তোমার খোঁজ করছে। উঠে নীচে যাও। কোন সন্দেহ না করে তাদের সংগে যাও, কারণ আমিই তাদের পাঠিয়েছি।” তখন পিতর নেমে এসে সেই লোকদের বললেন, “আপনারা যার খোঁজ করছেন আমিই সেই লোক। আপনারা কেন এসেছেন?” সেই লোকেরা বলল, “শতপতি কর্ণীলিয় আমাদের পাঠিয়েছেন। তিনি একজন ধার্মিক লোক এবং তিনি ঈশ্বরকে ভক্তি করেন। সমস্ত যিহূদীরা তাঁর সুনাম করে। ঈশ্বরের একজন দূত তাঁকে আদেশ দিয়েছেন যেন তিনি আপনাকে তাঁর বাড়ীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে আপনার কথা শোনেন।” তখন পিতর বাড়ীর মধ্যে সেই লোকদের ডেকে আনলেন এবং তাদের থাকবার ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। পরের দিন পিতর সেই লোকদের সংগে রওনা হলেন। যাফো শহরের কয়েকজন বিশ্বাসী ভাইও তাঁর সংগে গেলেন। পরদিন তাঁরা কৈসরিয়াতে পৌঁছালেন। সেই সময় কর্ণীলিয় তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও বিশেষ বন্ধু-বান্ধবদের একত্র করে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পিতর যখন ঘরে ঢুকলেন তখন কর্ণীলিয় তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ের উপর উবুড় হয়ে ঈশ্বরের সম্মান দিয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন। কিন্তু পিতর তাঁকে উঠিয়ে বললেন, “উঠুন, আমি নিজেও তো কেবল একজন মানুষ।” কর্ণীলিয়ের সংগে কথা বলতে বলতে পিতর ভিতরে গিয়ে দেখলেন সেখানে অনেক লোক জড়ো হয়েছে। তখন তিনি তাদের বললেন, “আপনারা তো জানেন যে, একজন যিহূদীর পক্ষে একজন অযিহূদীর সংগে মেলামেশা করা বা তার সংগে দেখা করা আমাদের ধর্মের আইন-কানুনের বিরুদ্ধে। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন, কাউকে অপবিত্র বা অশুচি বলা আমার উচিত নয়। সেইজন্য যখন আপনারা আমাকে ডেকে পাঠালেন তখন আমি কোন আপত্তি না করেই এসেছি। এখন আমি জিজ্ঞাসা করছি, আপনারা কেন আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন?” তখন কর্ণীলিয় বললেন, “চার দিন আগে ঠিক এই সময়ে বেলা তিনটায় আমি আমার ঘরে প্রার্থনা করছিলাম। এমন সময় হঠাৎ উজ্জ্বল কাপড় পরা একজন লোক আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘কর্ণীলিয়, ঈশ্বর তোমার প্রার্থনা শুনেছেন এবং গরীবদের তোমার দানের কথা তিনি মনে রেখেছেন। এখন তুমি যাফোতে লোক পাঠাও, আর শিমোন, যাকে পিতরও বলা হয়, তাকে ডেকে আন। সমুদ্রের ধারে যে শিমোন থাকে এবং চামড়ার কাজ করে পিতর তারই বাড়ীতে অতিথি হয়ে আছে।’ সেইজন্য আমি তখনই আপনাকে ডেকে আনবার জন্য লোক পাঠিয়ে দিলাম, আর আপনি এসে ভালই করেছেন। এখানে আমরা সবাই এখন ঈশ্বরের সামনে আছি। প্রভু আপনাকে আমাদের কাছে যা বলতে আদেশ দিয়েছেন আমরা তা সবই শুনব।” তখন পিতর বলতে আরম্ভ করলেন, “আমি এখন সত্যিই বুঝতে পারলাম ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান। প্রত্যেক জাতির মধ্য থেকে যারা তাঁকে ভক্তি করে এবং তাঁর চোখে যা ঠিক তা-ই করে তিনি তাদের গ্রহণ করেন। ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের কাছে এই সুখবর পাঠিয়েছিলেন যে, যীশু খ্রীষ্ট, যিনি সকলের প্রভু, তাঁরই মধ্য দিয়ে শান্তি পাওয়া যায়। লোকদের যে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করা উচিত যোহন সেই কথা প্রচার করবার পরে গালীল থেকে আরম্ভ করে সমস্ত যিহূদিয়াতে যা ঘটেছিল তা আপনারা নিজেরাই জানেন। আপনারা এও জানেন যে, ঈশ্বর নাসরতের যীশুকে পবিত্র আত্মা ও শক্তি দিয়ে অভিষেক করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর সংগে ছিলেন বলে তিনি ভাল কাজ করে বেড়াতেন এবং শয়তানের হাতে যারা কষ্ট পেত তাদের সবাইকে সুস্থ করতেন। “যিহূদীদের দেশে এবং যিরূশালেমে তিনি যা কিছু করেছিলেন আমরা তার সাক্ষী। লোকেরা তাঁকে ক্রুশে টাংগিয়ে মেরে ফেলেছিল। কিন্তু ঈশ্বর তৃতীয় দিনে তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুললেন এবং এমন করলেন যাতে লোকেরা তাঁকে দেখতে পায়। তবে সকলে তাঁকে দেখতে পায় নি, কিন্তু ঈশ্বর যে সাক্ষীদের আগেই বেছে রেখেছিলেন তারাই তাঁকে দেখতে পেয়েছিল, অর্থাৎ তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার পরে আমরা যারা তাঁর সংগে খাওয়া-দাওয়া করেছি আমরাই তাঁকে দেখতে পেয়েছি। তিনি আমাদের আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা যিহূদীদের কাছে প্রচার করি এবং সাক্ষ্য দিই যে, ঈশ্বর তাঁকেই জীবিত ও মৃতদের বিচারকর্তা হিসাবে নিযুক্ত করেছেন। সব নবীরাই তাঁর বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তাঁর উপরে যারা বিশ্বাস করে তারা প্রত্যেকে তাঁর গুণে পাপের ক্ষমা পায়।” পিতর তখনও কথা বলছেন, এমন সময় যারা সেই কথা শুনছিল তাদের সকলের উপরে পবিত্র আত্মা আসলেন। যে যিহূদী বিশ্বাসীরা পিতরের সংগে এসেছিল তারা অযিহূদীদের উপরেও পবিত্র আত্মাকে দান হিসাবে ঢেলে দেওয়া হল দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা তা বুঝতে পারল কারণ এই অযিহূদীদের তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে ও ঈশ্বরের গৌরব করতে শুনল। তখন পিতর বললেন, “জলে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে কি এই লোকদের কেউ বাধা দিতে পারে? তারা তো আমাদেরই মত পবিত্র আত্মাকে পেয়েছে।” তখন তিনি সেই লোকদের যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তিস্ম দেবার আদেশ দিলেন। পরে তারা পিতরকে তাঁদের কাছে কয়েক দিন থাকতে অনুরোধ করল। অযিহূদীরাও যে ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করেছে সেই কথা প্রেরিতেরা এবং সমস্ত যিহূদিয়ার বিশ্বাসী ভাইয়েরা শুনলেন। এইজন্য পিতর যখন যিরূশালেমে আসলেন তখন সেই বিশ্বাসীদের মধ্যে যারা সুন্নত করানো ছিল তারা তাঁকে দোষ দিয়ে বলল, “আপনি সুন্নত-না-করানো লোকদের ঘরে গিয়ে তাদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করেছেন।” তখন পিতর প্রথম থেকে আরম্ভ করে যা যা ঘটেছিল তা এক এক করে বুঝিয়ে বললেন, “আমি যাফো শহরে প্রার্থনা করছিলাম, এমন সময় তন্দ্রার মত অবস্থায় পড়ে একটা দর্শন পেলাম। আমি দেখলাম বড় চাদরের মত কি একটা জিনিস চার কোণা ধরে আকাশ থেকে আমার কাছে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম তার মধ্যে নানা রকম পশু, বুনো জানোয়ার, বুকে-হাঁটা প্রাণী এবং পাখী আছে। পরে আমি শুনলাম কেউ যেন বলছেন, ‘পিতর, ওঠো, মেরে খাও।’ “আমি বললাম, ‘না, না, প্রভু, কিছুতেই না। অপবিত্র বা অশুচি কোন কিছু কখনও আমি মুখে দিই নি।’ “এর পরে স্বর্গ থেকে দ্বিতীয় বার বলা হল, ‘ঈশ্বর যা শুচি করেছেন তাকে তুমি অপবিত্র বোলো না।’ এই রকম তিনবার হল, তার পরে সব কিছু আবার আকাশে তুলে নেওয়া হল। “এর প্রায় সংগে সংগে আমি যে বাড়ীতে ছিলাম সেই বাড়ীতে তিনজন লোক এসে দাঁড়াল। কৈসরিয়া থেকে তাদের পাঠানো হয়েছিল। তখন পবিত্র আত্মা আমাকে কোন সন্দেহ না করে তাদের সংগে যেতে বললেন। এই ছয়জন ভাইও আমার সংগে গিয়েছিলেন। পরে আমরা সেই লোকের বাড়ীতে ঢুকলাম যিনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি একজন স্বর্গদূতকে কেমন ভাবে তাঁর বাড়ীতে দেখেছিলেন তা আমাদের বললেন। সেই স্বর্গদূত তাঁকে বলেছিলেন, ‘শিমোন, যাকে পিতরও বলা হয়, তাকে ডেকে আনতে তুমি যাফো শহরে লোক পাঠাও। সে তোমার কাছে যে কথা বলবে সেই কথার দ্বারা তুমি ও তোমার পরিবারের সমস্ত লোক পাপ থেকে উদ্ধার পাবে।’ “পবিত্র আত্মা যেভাবে প্রথমে আমাদের উপরে এসেছিলেন আমি কথা বলতে আরম্ভ করলে পর ঠিক সেইভাবে তাদেরও উপরে আসলেন। তখন প্রভু যা বলেছিলেন সেই কথা আমার মনে পড়ল, ‘যোহন জলে বাপ্তিস্ম দিতেন, কিন্তু তোমাদের বাপ্তিস্ম হবে পবিত্র আত্মাতে।’ তাহলে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করলে পর ঈশ্বর আমাদের যে দান দিয়েছিলেন সেই একই দান যখন তিনি তাদেরও দিলেন তখন আমি কে যে, ঈশ্বরকে বাধা দিতে পারি?” এই কথা শুনে যিহূদিয়ার বিশ্বাসীরা আর আপত্তি না করে ঈশ্বরের গৌরব করে বলল, “তাহলে ঈশ্বর অযিহূদীদেরও জীবন পাবার জন্য পাপ থেকে মন ফিরাতে সুযোগ দিলেন।” স্তিফানকে কেন্দ্র করে বিশ্বাসীদের উপর অত্যাচারের দরুন যারা ছড়িয়ে পড়েছিল তারা ফৈনীকিয়া, সাইপ্রাস ও সিরিয়া দেশের আন্তিয়খিয়া পর্যন্ত গিয়ে কেবল যিহূদীদের কাছেই ঈশ্বরের বাক্য বলল। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন আন্তিয়খিয়াতে গিয়ে গ্রীক ভাষায় কথা বলা লোকদের কাছেও প্রভু যীশুর বিষয়ে সুখবর প্রচার করতে লাগল। এরা ছিল সাইপ্রাস দ্বীপ ও কুরীণী শহরের লোক। ঈশ্বরের শক্তি তাদের উপর ছিল বলে অনেক লোক প্রভুর উপর বিশ্বাস করে তাঁর দিকে ফিরল। এই খবর যিরূশালেমের মণ্ডলীর লোকদের কানে গেলে পর তারা বার্ণবাকে আন্তিয়খিয়াতে পাঠিয়ে দিল। ঈশ্বর যে কিভাবে আন্তিয়খিয়ার লোকদের দয়া করেছেন বার্ণবা এসে তা দেখে খুব আনন্দিত হলেন। তারা যেন সমস্ত অন্তর দিয়ে প্রভুর কাছে বিশ্বস্ত থাকে সেইজন্য তিনি তাদের সকলকে উৎসাহ দিতে লাগলেন। বার্ণবা একজন ভাল লোক ছিলেন এবং তিনি পবিত্র আত্মাতে ও বিশ্বাসে পূর্ণ ছিলেন। তখন প্রভু অনেককেই তাঁর নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। এর পরে বার্ণবা শৌলের খোঁজে তার্ষ শহরে গেলেন, আর তাঁকে খুঁজে পেয়ে আন্তিয়খিয়াতে আনলেন। বার্ণবা আর শৌল এক বছর পর্যন্ত মণ্ডলীর লোকদের সংগে মিলিত হয়ে অনেক লোককে শিক্ষা দিলেন। আন্তিয়খিয়াতেই খ্রীষ্টের শিষ্যদের খ্রীষ্টিয়ান নামে প্রথম ডাকা হল। এর মধ্যে কয়েকজন নবী যিরূশালেম থেকে আন্তিয়খিয়াতে আসলেন। তাঁদের মধ্যে আগাব নামে একজন উঠে দাঁড়িয়ে পবিত্র আত্মার পরিচালনায় বললেন যে, সারা রোম সাম্রাজ্যে এক ভীষণ দুর্ভিক্ষ হবে। (সম্রাট ক্লৌদিয়ের রাজত্বের সময়ে সেই কথা পূর্ণ হয়েছিল।) তখন শিষ্যেরা ঠিক করল, যিহূদিয়া প্রদেশের বিশ্বাসী ভাইদের সাহায্যের জন্য তারা প্রত্যেকে নিজের নিজের সাধ্য অনুসারে টাকা পাঠাবে। তারা তা করেছিল। তারা বার্ণবা ও শৌলের হাতে যিহূদিয়ার মণ্ডলীগুলোর বৃদ্ধ নেতাদের কাছে সেই সাহায্য পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেই সময় রাজা হেরোদ অত্যাচার করবার জন্য খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর কয়েকজন লোককে ধরে এনেছিলেন। তিনি যোহনের ভাই যাকোবকে ছোরা দিয়ে খুন করিয়েছিলেন। যখন তিনি দেখলেন যিহূদীরা তাতে খুশী হয়েছে তখন তিনি পিতরকেও ধরতে গেলেন। এই ঘটনা খামিহীন রুটির পর্বের সময়ে হয়েছিল। তিনি পিতরকে ধরে জেলে দিলেন। চারজন চারজন করে চার দল সৈন্যের উপর পিতরকে পাহারা দেবার ভার দেওয়া হল। হেরোদ ঠিক করলেন, উদ্ধার-পর্বের পরে বিচার করবার জন্য পিতরকে লোকদের কাছে বের করে আনবেন। এইজন্যই পিতরকে জেলখানায় আটক রাখা হল। মণ্ডলীর লোকেরা কিন্তু ঈশ্বরের কাছে পিতরের জন্য আকুলভাবে প্রার্থনা করছিল। যেদিন হেরোদ বিচারের জন্য পিতরকে বের করে আনবেন তার আগের রাতে দু’জন সৈন্যের মাঝখানে পিতর ঘুমাচ্ছিলেন। তাঁকে দু’টা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং পাহারাদারেরা দরজায় পাহারা দিচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ প্রভুর একজন দূত সেখানে এসে দাঁড়ালেন। তাতে জেলখানার সেই ঘরটা আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। স্বর্গদূত পিতরের গায়ে জোরে ঠেলা দিয়ে তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “তাড়াতাড়ি ওঠো।” এতে পিতরের দু’হাত থেকে শিকল খুলে পড়ে গেল। তখন স্বর্গদূত পিতরকে বললেন, “তোমার কোমরে কোমর-বাঁধনি লাগাও, পায়ে জুতা দাও।” পিতর তা-ই করলেন। স্বর্গদূত তাঁকে বললেন, “তোমার চাদরখানা গায়ে জড়িয়ে আমার পিছনে পিছনে এস।” পিতর তাঁর পিছনে পিছনে জেলখানা থেকে বাইরে আসলেন, কিন্তু স্বর্গদূত যা করছিলেন তা যে সত্যিসত্যিই ঘটছে তার কিছুই তিনি বুঝতে পারলেন না। তিনি মনে করলেন দর্শন দেখছেন। তাঁরা প্রথম ও দ্বিতীয় পাহারাদারদের দল পার হয়ে শহরে ঢুকবার লোহার ফটকের কাছে আসলেন। ফটকটা তাঁদের জন্য নিজে নিজেই খুলে গেল এবং তাঁরা তার মধ্য দিয়ে বের হয়ে গেলেন। তাঁরা একটা রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছেন এমন সময় স্বর্গদূত হঠাৎ পিতরকে ছেড়ে চলে গেলেন। তখন পিতর যেন চেতনা ফিরে পেলেন আর বললেন, “এখন আমি সত্যি বুঝতে পারলাম যে, প্রভু তাঁর দূতকে পাঠিয়ে হেরোদের হাত থেকে এবং যিহূদীরা যা করবার জন্য ষড়যন্ত্র করছিল তা থেকে আমাকে রক্ষা করলেন।” এই কথা বুঝতে পেরে তিনি যোহনের মা মরিয়মের বাড়ীতে গেলেন। এই যোহনকে মার্ক বলেও ডাকা হত। সেই বাড়ীতে অনেকে একসংগে মিলিত হয়ে প্রার্থনা করছিল। পিতর বাইরের দরজায় ঘা দিলে পর রোদা নামে একজন চাকরাণী মেয়ে দরজা খুলতে আসল। পিতরের গলার স্বর চিনতে পেরে সে এত আনন্দিত হল যে, দরজা না খুলেই দৌড়ে ভিতরের ঘরে গিয়ে সংবাদ দিল, “পিতর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন।” তখন শিষ্যেরা সেই মেয়েটিকে বলল, “তোমার মাথা খারাপ হয়েছে।” কিন্তু সে বার বার জোর দিয়ে বলাতে তারা বলল, “তবে এ পিতরের রক্ষাকারী-দূত।” এদিকে পিতর দরজায় ঘা দিতেই থাকলেন। তখন শিষ্যেরা দরজা খুলে পিতরকে দেখে অবাক হয়ে গেল। পিতর তাদের চুপ করাবার জন্য হাত দিয়ে ইশারা করলেন এবং জেলখানা থেকে প্রভু তাঁকে কিভাবে বের করে এনেছেন তা জানালেন। শেষে তিনি বললেন, “এই খবর যাকোব ও অন্য ভাইদেরও দিয়ো।” এই কথা বলে তিনি বের হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন। সকাল হলে পর পিতর কোথায় গেল তা নিয়ে সৈন্যদের মধ্যে হুলস্থূল পড়ে গেল। হেরোদ খুব ভাল করেই তাঁর খোঁজ করলেন, কিন্তু তাঁকে না পেয়ে পাহারাদারদের জেরা করলেন এবং পরে সেই পাহারাদারদের মেরে ফেলবার হুকুম দিলেন। এর পরে হেরোদ যিহূদিয়া থেকে কৈসরিয়াতে গেলেন ও সেখানে কিছু দিন থাকলেন। সেই সময় হেরোদ সোর ও সীদোন শহরের লোকদের উপর রেগে আগুন হলেন। তখন সেখানকার লোকেরা একসংগে মিলে হেরোদের সংগে দেখা করতে গেল। ব্লাস্ত নামে রাজার শোবার ঘরের বিশ্বস্ত কর্মচারীকে নিজেদের পক্ষে এনে তারা রাজার সংগে একটা মীমাংসা করতে চাইল, কারণ রাজা হেরোদের দেশ থেকেই তাদের দেশে খাবার আসত। তখন হেরোদ একটা দিন ঠিক করলেন। তিনি সেই দিন রাজপোশাক পরে সিংহাসনে বসে সেই লোকদের কাছে কথা বলতে লাগলেন। তাঁর কথা শুনে তারা চিৎকার করে বলল, “এ দেবতার কথা, মানুষের কথা নয়।” হেরোদ ঈশ্বরের গৌরব করেন নি বলে তখনই প্রভুর একজন দূত তাঁকে আঘাত করলেন, আর ক্রিমির উৎপাতে তিনি মারা গেলেন। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য ছড়িয়ে পড়তে থাকল এবং অনেক লোক তাতে বিশ্বাস করতে লাগল। এদিকে বার্ণবা ও শৌলের কাজ শেষ হওয়াতে তাঁরা যোহনকে সংগে নিয়ে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। এই যোহনকে মার্ক নামেও ডাকা হত। আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলীতে কয়েকজন নবী ও শিক্ষক ছিলেন। তাঁদের নাম বার্ণবা, নীগের নামে পরিচিত শিমোন, কুরীণী শহরের লুকিয়, শাসনকর্তা হেরোদের সংগে লালিত-পালিত মনহেম এবং শৌল। তাঁরা যখন উপবাস করে প্রভুর উপাসনা করছিলেন তখন পবিত্র আত্মা তাঁদের বললেন, “বার্ণবা আর শৌলকে আমি যে কাজের জন্য ডেকেছি আমার সেই কাজের জন্য এখন তাদের আলাদা কর।” তখন তাঁরা উপবাস ও প্রার্থনা করে সেই দু’জনের উপর হাত রাখলেন এবং তাঁদের পাঠিয়ে দিলেন। পবিত্র আত্মা এইভাবে বার্ণবা ও শৌলকে পাঠালে পর সেই দু’জন সিলূকিয়াতে গেলেন। পরে সেখান থেকে তাঁরা জাহাজে করে সাইপ্রাস দ্বীপে গেলেন। সালামীতে পৌঁছে তাঁরা যিহূদীদের সমাজ-ঘরে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করলেন। তখন সাহায্যকারী হিসাবে যোহন তাঁদের সংগে ছিলেন। সমস্ত দ্বীপটা ঘুরে শেষে তাঁরা পাফোতে আসলেন এবং সেখানে বর-যীশু নামে একজন যিহূদী যাদুকর ও ভণ্ড নবীর দেখা পেলেন। তখন পবিত্র আত্মাতে পূর্ণ হয়ে শৌল, যাঁকে পৌল বলেও ডাকা হত, ইলুমার দিকে সোজা তাকিয়ে বললেন, “তুমি শয়তানের সন্তান ও যা কিছু ভাল তার শত্রু। তোমার মধ্যে সব রকম ছলনা ও ঠকামি রয়েছে। প্রভুর সোজা পথকে বাঁকা করবার কাজ কি তুমি কখনও থামাবে না? দেখ, প্রভুর হাত তোমার বিরুদ্ধে উঠেছে। তুমি অন্ধ হয়ে যাবে এবং কিছু দিন পর্যন্ত সূর্র্যের আলো দেখতে পাবে না।” তখনই কুয়াশা আর অন্ধকার তাকে ঢেকে ফেলল এবং কেউ যেন তাকে হাত ধরে নিয়ে যেতে পারে এইজন্য তখন সে হাত্‌ড়ে বেড়াতে লাগল। এই সব দেখে সেই শাসনকর্তা প্রভুর উপর বিশ্বাস করলেন, কারণ প্রভুর বিষয়ে যে শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন তাতে তিনি আশ্চর্য হয়েছিলেন। এর পরে পৌল ও তাঁর সংগীরা পাফো ছেড়ে জাহাজে করে পাম্‌ফুলিয়া প্রদেশের পর্গা শহরে গেলেন। যোহন তখন তাঁদের ছেড়ে যিরূশালেমে ফিরে গেলেন। পরে তাঁরা পর্গা থেকে পিষিদিয়া প্রদেশের আন্তিয়খিয়া শহরে গেলেন এবং বিশ্রামবারে সমাজ-ঘরে গিয়ে বসলেন। পবিত্র শাস্ত্রের আইন-কানুন ও নবীদের বই থেকে পড়া শেষ হলে পর সমাজ-ঘরের নেতারা তাঁদের বলে পাঠালেন, “ভাইয়েরা, লোকদের উৎসাহ দেবার জন্য যদি কোন কথা থাকে তবে বলুন।” তখন পৌল উঠে দাঁড়ালেন এবং হাত তুলে বললেন, “ইস্রায়েলীয়েরা ও ঈশ্বরভক্ত অযিহূদীরা, আপনারা শুনুন। তার পরে তিনি কনান দেশের সাতটা জাতিকে ধ্বংস করে তাঁর নিজের লোকদের সেই দেশের উপরে অধিকার দিয়েছিলেন। এই সমস্ত ঘটনা ঘটতে প্রায় চারশো পঞ্চাশ বছর লেগেছিল। “এর পরে নবী শমূয়েলের সময় পর্যন্ত ঈশ্বর কয়েকজন শাসনকর্তা দিয়েছিলেন। তার পরে লোকেরা রাজা চাইল। তখন তিনি তাদের বিন্যামীন বংশের কীশের পুত্র শৌলকে দিয়েছিলেন। শৌল চল্লিশ বছর রাজত্ব করেছিলেন। তারপর ঈশ্বর শৌলকে সরিয়ে দিয়ে দায়ূদকে রাজা করেছিলেন। তিনি দায়ূদের বিষয়ে বলেছিলেন, ‘আমি যিশয়ের পুত্র দায়ূদের মধ্যে আমার মনের মত লোকের খোঁজ পেয়েছি। আমি যা চাই সে তা-ই করবে।’ ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে এই লোকের বংশধরদের মধ্য থেকে উদ্ধারকর্তা যীশুকে ইস্রায়েলীয়দের কাছে উপস্থিত করেছিলেন। যীশু আসবার আগে সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে যোহন এই কথা প্রচার করেছিলেন যে, পাপ থেকে মন ফিরিয়ে লোকদের বাপ্তিস্ম গ্রহণ করা উচিত। কাজ শেষ করবার সময়ে যোহন বলেছিলেন, ‘আমি কে, তোমরা কি মনে কর? আমি সেই মশীহ নই। তিনি আমার পরে আসবেন, আর আমি তাঁর জুতা খুলবারও যোগ্য নই।’ “ভাইয়েরা, অব্রাহামের বংশধরেরা ও ঈশ্বরভক্ত অযিহূদীরা, পাপ থেকে উদ্ধারের এই যে খবর তা আমাদের কাছেই পাঠানো হয়েছে। যিরূশালেমের লোকেরা ও তাদের নেতারা যীশুকে চেনে নি। এছাড়া নবীদের যে কথা প্রত্যেক বিশ্রামবারে পড়া হয় সেই কথা তারা বুঝতে পারে নি; সেইজন্য তারা যীশুকে দোষী করে সেই কথা পূর্ণ করেছে। যদিও যীশুকে মৃত্যুর শাস্তি দেবার কোন কারণ তারা পায় নি তবুও পীলাতকে বলেছে যেন তাঁকে মেরে ফেলা হয়। তাঁর বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে যা কিছু লেখা ছিল তার সমস্তই পূর্ণ করবার পরে তারা তাঁকে ক্রুশ থেকে নামিয়ে কবর দিয়েছিল। কিন্তু ঈশ্বর মৃত্যু থেকে তাঁকে জীবিত করে তুলেছেন। গালীল থেকে যাঁরা তাঁর সংগে যিরূশালেমে এসেছিলেন তাঁরা অনেক দিন পর্যন্ত তাঁকে দেখতে পেয়েছিলেন। আমাদের লোকদের কাছে তাঁরাই এখন তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। “আমরা আপনাদের কাছে এই সুখবর দিচ্ছি যে, আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে ঈশ্বর যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা তিনি তাঁদের বংশধরদের জন্য, অর্থাৎ আমাদের জন্য যীশুকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে পূর্ণ করেছেন। এই বিষয়ে গীতসংহিতার দ্বিতীয় গীতে এই কথা লেখা আছে: তুমি আমার পুত্র, আজই আমি তোমার পিতা হলাম। ঈশ্বর যে তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছেন এবং তাঁর দেহ যে আর কখনও নষ্ট হবে না তা এই কথাগুলোতে ঈশ্বর বলেছেন, ‘পবিত্র ও নিশ্চিত আশীর্বাদের যে প্রতিজ্ঞা আমি দায়ূদের কাছে করেছি তা আমি তোমাকে দেব।’ সেই বিষয়ে আর এক জায়গায় লেখা আছে: তোমার ভক্তের দেহকে তুমি নষ্ট হতে দেবে না। “দায়ূদ তখনকার লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূর্ণ করবার পরে মারা গেলেন। তাঁর পূর্বপুরুষদের সংগে তাঁকে কবর দেওয়া হলে পর তাঁর দেহ নষ্ট হয়ে গেল। কিন্তু ঈশ্বর যাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন তাঁর দেহ নষ্ট হয় নি। এইজন্য আমার ভাইয়েরা, আপনাদের জানা দরকার যে, যীশুর মধ্য দিয়েই আপনাদের কাছে পাপের ক্ষমা পাবার বিষয়ে প্রচার করা হচ্ছে। আপনারা মোশির আইন-কানুন দ্বারা পাপের শাস্তি থেকে রেহাই পেতে পারেন নি, কিন্তু যে কেউ যীশুর উপর বিশ্বাস করে সে পাপের শাস্তি থেকে রেহাই পায়। এইজন্য আপনারা সাবধান হন, যেন নবীদের বলা এই সব আপনাদের উপর না ঘটে: তোমরা যারা ঈশ্বরকে নিয়ে তামাশা করে থাক, তোমরা শোন- তোমরা হতভম্ব হও ও ধ্বংস হও; কারণ তোমাদের সময়কালেই আমি এমন একটা কিছু করতে যাচ্ছি যার কথা তোমরা কোনমতেই বিশ্বাস করবে না, কেউ বললেও করবে না।” পৌল আর বার্ণবা সমাজ-ঘর ছেড়ে যাবার সময়ে লোকেরা তাঁদের অনুরোধ করল যেন তাঁরা পরের বিশ্রামবারে এই বিষয়ে আরও কিছু বলেন। লোকেরা সমাজ-ঘর থেকে চলে যাবার পরে অনেক যিহূদী ও যিহূদী ধর্মে বিশ্বাসী ঈশ্বরভক্ত অযিহূদী পৌল আর বার্ণবার সংগে সংগে গেল। তখন সেই লোকদের সংগে পৌল ও বার্ণবা কথা বললেন এবং তাদের উৎসাহ দিলেন যেন তারা ঈশ্বরের দয়ার মধ্যে স্থির থাকে। পরের বিশ্রামবারে শহরের প্রায় সব লোক ঈশ্বরের বাক্য শুনবার জন্য একসংগে মিলিত হল। এত লোকের ভিড় দেখে যিহূদীরা হিংসায় পূর্ণ হল এবং পৌল যা বলছিলেন তার বিরুদ্ধে নানা কথা বলে তাঁর নিন্দা করতে লাগল। তখন পৌল ও বার্ণবা সাহসের সংগে তাদের এই উত্তর দিলেন, “ঈশ্বরের বাক্য প্রথমে আপনাদের কাছে বলা আমাদের দরকার ছিল, কিন্তু আপনারা যখন তা অগ্রাহ্য করছেন এবং অনন্ত জীবন পাবার যোগ্য বলে নিজেদের মনে করেন না তখন অযিহূদীদের দিকে আমরা ফিরছি। এর কারণ হল, প্রভু আমাদের এই কথা বলেছেন, ‘আমি অন্য জাতিদের কাছে তোমাকে আলোর মত করেছি, যেন তোমার মধ্য দিয়ে সারা জগতের লোক পাপ থেকে উদ্ধার পায়।’ ” অযিহূদীরা এই কথা শুনে খুশী হল এবং প্রভুর বাক্যের গৌরব করল; আর অনন্ত জীবন পাবার জন্য ঈশ্বর যাদের ঠিক করে রেখেছিলেন তারা বিশ্বাস করল। প্রভুর বাক্য সেই এলাকার সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু যিহূদীরা ঈশ্বরের উপাসনাকারী ভদ্র মহিলাদের এবং শহরের প্রধান প্রধান লোকদের উস্‌কিয়ে দিল। এইভাবে তারা পৌল ও বার্ণবার উপর অত্যাচার করিয়ে সেই এলাকা থেকে তাঁদের বের করে দিল। তখন পৌল ও বার্ণবা সেই লোকদের বিরুদ্ধে তাঁদের পায়ের ধুলা ঝেড়ে ফেলে ইকনিয় শহরে চলে গেলেন। কিন্তু সেখানকার শিষ্যেরা আনন্দে ও পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হল। ইকনিয় শহরে পৌল ও বার্ণবা তাঁদের নিয়ম মতই যিহূদীদের সমাজ- ঘরে গেলেন। সেখানে তাঁরা এমনভাবে কথা বললেন যে, যিহূদী ও ঈশ্বরভক্ত অযিহূদী অনেকেই বিশ্বাস করল। কিন্তু যে যিহূদীরা বিশ্বাস করে নি তারা অযিহূদীদের উস্‌কিয়ে দিয়ে তাদের মন বিশ্বাসী ভাইদের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলল। পৌল ও বার্ণবা সেই শহরে বেশ কিছুদিন রইলেন এবং সাহসের সংগে প্রভুর কথা বলতে থাকলেন। প্রভুর দয়া সম্বন্ধে তাঁরা যা প্রচার করছিলেন সেই কথা যে বিশ্বাসযোগ্য প্রভু তা প্রমাণ করবার জন্য পৌল ও বার্ণবাকে আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করবার শক্তি দিলেন। এতে শহরের লোকেরা ভাগ হয়ে গেল; কেউ কেউ যিহূদীদের পক্ষে, আবার কেউ কেউ প্রেরিত্‌দের পক্ষে গেল। তখন অযিহূদী ও যিহূদী এই দু’দলই তাদের নেতাদের সংগে মিলে পৌল ও বার্ণবাকে অত্যাচার করবার ও পাথর মারবার জন্য ষড়যন্ত্র করল। কিন্তু পৌল ও বার্ণবা তা টের পেয়ে লুকায়নিয়া প্রদেশের মধ্যে লুস্ত্রা ও দর্বী শহরে এবং তার আশেপাশের জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। সেই সব জায়গায় তাঁরা খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। লুস্ত্রা শহরে একজন খোঁড়া লোক বসে থাকত। সে জন্ম থেকেই খোঁড়া ছিল এবং কখনও হাঁটে নি। পৌল যা করলেন তা দেখে লোকেরা লুকায়নীয় ভাষায় চিৎকার করে বলল, “দেবতারা মানুষ হয়ে আমাদের কাছে নেমে এসেছেন।” সেইজন্য লোকেরা বার্ণবার নাম দিল জেউস এবং পৌল কথা বলছিলেন বলে তাঁর নাম দিল হের্মেস। জেউস দেবতার মন্দিরটা ছিল শহরের বাইরে। শহরের ফটকের কাছে জেউস দেবতার পুরোহিত ষাঁড় ও মালা নিয়ে আসল, কারণ সেই পুরোহিত ও সমস্ত লোকেরা পৌল ও বার্ণবার কাছে পশু উৎসর্গ করতে চাইল। বার্ণবা আর পৌল সেই কথা শুনে নিজেদের কাপড় ছিঁড়ে দৌড়ে লোকদের মধ্যে গেলেন এবং চিৎকার করে বললেন, “বন্ধুরা, আপনারা কেন এই সব করছেন? আমরা তো কেবল মানুষ, আপনাদেরই মত আমাদের স্বভাব। আমরা আপনাদের কাছে সুখবর প্রচার করছি যেন আপনারা এই সব বাজে জিনিস ছেড়ে জীবন্ত ঈশ্বরের দিকে ফেরেন। তিনিই আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং সেগুলোর মধ্যে যা আছে সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন। আগেকার দিনে সব জাতিকেই তিনি তাদের ইচ্ছামত চলতে দিয়েছেন, কিন্তু তবুও তিনি সব সময় নিজের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি দিয়ে এবং সময়মত ফসল দান করে তাঁর দয়া আপনাদের দেখিয়েছেন। তিনি প্রচুর খাবার দান করে আপনাদের মনকে আনন্দে পূর্ণ করেছেন।” এই সব কথা বলেও তাঁদের কাছে পশু উৎসর্গ করা থেকে লোকদের থামাতে তাঁদের অনেক কষ্ট হল। পরে আন্তিয়খিয়া ও ইকনিয় থেকে কয়েকজন যিহূদী এসে পৌল ও বার্ণবার বিরুদ্ধে লোকদের উস্‌কিয়ে দিল। তখন লোকেরা পৌলকে পাথর মারল এবং তিনি মরে গেছেন মনে করে শহরের বাইরে তাঁকে টেনে নিয়ে গেল। কিন্তু পরে খ্রীষ্টে বিশ্বাসীরা তাঁর চারদিকে জড়ো হলে পর তিনি উঠে শহরে ফিরে গেলেন। পরদিন তিনি ও বার্ণবা দর্বী শহরে চলে গেলেন। তাঁরা প্রত্যেক মণ্ডলীতে প্রধান নেতাদের কাজে বহাল করলেন এবং যে প্রভুর উপর তারা বিশ্বাস করেছিল, প্রার্থনা ও উপবাস করে সেই প্রভুর হাতেই মণ্ডলীর লোকদের তুলে দিলেন। পরে পৌল ও বার্ণবা পিষিদিয়া প্রদেশের মধ্য দিয়ে পাম্‌ফুলিয়া প্রদেশে পৌঁছালেন। তাঁরা পর্গা শহরে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করে অত্তালিয়া বন্দরে গেলেন। পরে অত্তালিয়া থেকে জাহাজে করে সিরিয়া দেশের আন্তিয়খিয়াতে ফিরে আসলেন। যে কাজ তাঁরা এখন শেষ করলেন সেই কাজের জন্য এই আন্তিয়খিয়াতেই ঈশ্বরের দয়ার হাতে তাঁদের তুলে দেওয়া হয়েছিল। আন্তিয়খিয়াতে পৌঁছে মণ্ডলীর সবাইকে তাঁরা এক জায়গায় জড়ো করলেন এবং ঈশ্বর তাঁদের মধ্য দিয়ে যা করেছেন তা সবই বললেন। ঈশ্বর কিভাবে অযিহূদীদের সুযোগ করে দিয়েছিলেন যাতে তারা খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করতে পারে তাও বললেন। তার পরে পৌল ও বার্ণবা শিষ্যদের সংগে সেখানে অনেক দিন রইলেন। যিহূদিয়া প্রদেশ থেকে কয়েকজন লোক সিরিয়া দেশের আন্তিয়খিয়াতে আসলেন এবং বিশ্বাসী ভাইদের এই বলে শিক্ষা দিতে লাগলেন, “মোশির আইন-কানুন মতে তোমাদের সুন্নত করানো না হলে তোমরা কোনমতেই পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পার না।” তাতে পৌল ও বার্ণবার সংগে এই লোকদের ভীষণ কথা কাটাকাটি হল। পরে ঠিক হল যে, পৌল ও বার্ণবা আন্তিয়খিয়ার কয়েকজন বিশ্বাসীকে সংগে নিয়ে যিরূশালেমে যাবেন এবং প্রেরিত্‌দের ও মণ্ডলীর নেতাদের সংগে এই বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন। আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলী তাঁদের যাবার ব্যবস্থা করে দিলেন। ফৈনিকিয়া আর শমরিয়া প্রদেশের মধ্য দিয়ে যাবার সময়ে পৌল ও বার্ণবা লোকদের জানালেন, অযিহূদীরা কিভাবে ঈশ্বরের দিকে ফিরেছে। এই খবর শুনে বিশ্বাসী ভাইয়েরা সকলেই খুব খুশী হলেন। যখন পৌল ও বার্ণবা যিরূশালেমে আসলেন তখন মণ্ডলীর লোকেরা, নেতারা এবং প্রেরিতেরা আগ্রহের সংগে তাঁদের গ্রহণ করলেন। তাঁদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর যা করেছিলেন তা সবই তাঁরা সবাইকে বললেন। ফরীশী দলের কয়েকজন লোক বিশ্বাসী হয়েছিলেন। সেই বিশ্বাসীরা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “অযিহূদীদের সুন্নত করানো দরকার এবং তারা যেন মোশির আইন-কানুন পালন করে সেইজন্য তাদের আদেশ দেওয়া দরকার।” তখন প্রেরিতেরা ও মণ্ডলীর নেতারা এই বিষয় চিন্তা করবার জন্য এক জায়গায় মিলিত হলেন। অনেক আলোচনার পর পিতর উঠে তাঁদের বললেন, “ভাইয়েরা, আপনারা তো জানেন যে, অনেক দিন আগে আপনাদের মধ্য থেকে ঈশ্বর আমাকে বেছে নিয়েছিলেন যাতে অযিহূদীরা আমার মুখ থেকে সুখবরের কথা শুনে বিশ্বাস করে। ঈশ্বর সকলের অন্তর জানেন। তিনি আমাদের যেমন পবিত্র আত্মা দান করেছিলেন, অযিহূদীদেরও সেইভাবে পবিত্র আত্মা দান করে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, তারাও পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছে। তিনি আমাদের ও তাদের মধ্যে আলাদা বলে কিছুই রাখেন নি, কারণ তারা বিশ্বাস করেছে বলে তিনি তাদেরও অন্তর পরিষ্কার করেছেন। তাহলে আমাদের পূর্বপুরুষেরা বা আমরা যে বোঝা বইতে পারি নি সেই বোঝা অযিহূদী বিশ্বাসীদের কাঁধে তুলে দিয়ে কেন আপনারা ঈশ্বরকে পরীক্ষা করবার চেষ্টা করছেন? আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রভু যীশুর দয়ায় অযিহূদী বিশ্বাসীরা যেমন পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছে তেমনি আমরাও উদ্ধার পেয়েছি।” তখন সভার সবাই চুপ হয়ে গেলেন এবং পৌল ও বার্ণবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর অযিহূদীদের মধ্যে যে সব আশ্চর্য কাজ করেছিলেন তা তাঁদেরই মুখে শুনতে লাগলেন। তাঁদের কথা বলা শেষ হলে পর যাকোব বললেন, “ভাইয়েরা, শুনুন। ঈশ্বর তাঁর নিজের লোক হবার জন্য অযিহূদীদের মধ্য থেকে কিছু লোককে বেছে নিয়ে দেখিয়েছেন যে, অযিহূদীদের জন্যও তাঁর চিন্তা আছে। এই কথাই শিমোন-পিতর আমাদের বলেছেন। এই কথার সংগে নবীদের কথারও মিল আছে, কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে: ‘এর পরে আমি এসে দায়ূদের পড়ে যাওয়া ঘর আবার তৈরী করব। যা ধ্বংস হয়ে গেছে তা আবার গাঁথব, আবার তা ঠিক করব; যেন অন্য সব লোকেরা, অর্থাৎ যে সব অযিহূদীদের আমার বলে ডাকা হয়েছে তাঁরা আমার খোঁজ করতে পারে।’ প্রভু, যিনি এই সব কাজ করেন তিনি এই কথা বলছেন। অনেক দিন আগে থেকে এ তাঁর মনের মধ্যে ছিল।” যাকোব আরও বললেন, “এইজন্য আমার মতে যে অযিহূদীরা ঈশ্বরের দিকে ফিরছে তাদের কষ্ট দেওয়া আমাদের উচিত নয়। তার চেয়ে বরং আমরা তাদের কাছে এই কথা লিখি যে, তারা যেন প্রতিমার সংগে যুক্ত সব কিছু থেকে এবং সমস্ত রকম ব্যভিচার থেকে দূরে থাকে, আর গলা টিপে মারা পশুর মাংস এবং রক্ত যেন তারা না খায়। এই আদেশগুলো তাদের দেওয়া ভাল, কারণ মোশি যা বলেছেন তা প্রত্যেক শহরে অনেক অনেক দিন আগে থেকে প্রচার করা হচ্ছে এবং তিনি যা লিখে গেছেন তা প্রত্যেক বিশ্রাববারে সমাজ-ঘরগুলোতে পড়া হচ্ছে।” তখন প্রেরিতেরা, মণ্ডলীর নেতারা এবং মণ্ডলীর অন্য সব লোকেরা ঠিক করলেন যে, তাঁরা নিজেদের কয়েকজন লোককে বেছে নিয়ে পৌল ও বার্ণবার সংগে আন্তিয়খিয়াতে পাঠিয়ে দেবেন। তাঁরা যিহূদা ও সীলকে বেছে নিলেন। এই যিহূদাকে বর্‌শাব্বা বলে ডাকা হত। বিশ্বাসী ভাইদের মধ্যে এই দু’জন ছিলেন নেতা। তাঁদের সংগে এই চিঠি পাঠানো হল: আন্তিয়খিয়া, সিরিয়া ও কিলিকিয়ার অযিহূদী বিশ্বাসী ভাইদের কাছে আমরা প্রেরিতেরা ও মণ্ডলীর নেতারা, অর্থাৎ আপনাদের ভাইয়েরা এই চিঠি লিখছি। আপনাদের মংগল হোক। “আমরা শুনতে পেলাম যে, আমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন গিয়ে অনেক কথা বলে আপনাদের মন অস্থির করে তুলে কষ্ট দিয়েছে, কিন্তু আমরা তাদের এই রকম কাজ করতে বলি নি। এইজন্য আমরা সবাই একমত হয়ে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে আমাদের প্রিয় বন্ধু বার্ণবা ও পৌলের সংগে আপনাদের কাছে তাঁদের পাঠালাম। বার্ণবা ও পৌল আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। আমরা যিহূদা ও সীলকে পাঠালাম যেন আমরা যা লিখছি তা তাঁরা আপনাদের কাছে মুখেও বলেন। পবিত্র আত্মা আর আমরা এটাই ভাল মনে করলাম যে, এই দরকারী বিষয়গুলো ছাড়া আর কোন কিছুর দ্বারা আপনাদের উপর যেন বোঝা চাপানো না হয়। সেই দরকারী বিষয়গুলো হল-আপনারা প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার খাবেন না, রক্ত খাবেন না, গলা টিপে মারা পশুর মাংস খাবেন না এবং কোন রকম ব্যভিচার করবেন না। এই সব করা থেকে দূরে থাকলে আপনারা ভাল করবেন। বিদায়।” পৌল, বার্ণবা ও সেই লোকদের পাঠানো হলে পর তাঁরা আন্তিয়খিয়াতে গেলেন। সেখানে তাঁরা মণ্ডলীর লোকদের একত্র করে সেই চিঠিখানা তাদের দিলেন। লোকেরা চিঠিটা পড়ল এবং তার মধ্যে যে সান্ত্বনার কথা ছিল তাতে খুশী হল। যিহূদা আর সীল নিজেরাও ছিলেন নবী; সেইজন্য তাঁরা অনেক কথা বলে সেখানকার ভাইদের উৎসাহ দিলেন এবং তাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে তাদের শক্তিশালী করে তুললেন। কিন্তু পৌল আর বার্ণবা আন্তিয়খিয়াতেই রইলেন। সেখানে তাঁরা আরও অনেকের সংগে প্রভুর বাক্য শিক্ষা দিতে ও প্রচার করতে থাকলেন। কিছু দিন পরে পৌল বার্ণবাকে বললেন, “যে সব জায়গায় আমরা প্রভুর বাক্য প্রচার করেছি, চল, এখনই সেই সব জায়গায় ফিরে গিয়ে বিশ্বাসী ভাইদের সংগে দেখা করি এবং তারা কেমন ভাবে চলছে তা দেখি।” তখন বার্ণবা যোহনকে সংগে নিতে চাইলেন। এই যোহনকে মার্ক বলেও ডাকা হত। পৌল কিন্তু তাঁকে সংগে নেওয়া ভাল মনে করলেন না, কারণ মার্ক পাম্‌ফুলিয়াতে তাঁদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের সংগে আর কাজ করেন নি। তখন পৌল ও বার্ণবার মধ্যে এমন মতের অমিল হল যে, তাঁরা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। বার্ণবা মার্ককে নিয়ে জাহাজে করে সাইপ্রাস দ্বীপে গেলেন, আর পৌল সীলকে বেছে নিলেন। তখন আন্তিয়খিয়ার ভাইয়েরা পৌল ও সীলকে প্রভুর দয়ার হাতে তুলে দিলে পর তাঁরা রওনা হলেন। পৌল সিরিয়া ও কিলিকিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে সমস্ত মণ্ডলীগুলোর বিশ্বাস বাড়িয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করে তুললেন। পরে পৌল দর্বী ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে তীমথিয় নামে একজন শিষ্য থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসী একজন যিহূদী মহিলা, কিন্তু তাঁর বাবা জাতিতে গ্রীক ছিলেন। লুস্ত্রা ও ইকনিয় শহরের বিশ্বাসী ভাইয়েরা তীমথিয়ের খুব প্রশংসা করত। পৌল তীমথিয়কে সংগে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বলে তাঁর সুন্নত করালেন, কারণ ঐ সব জায়গায় যে যিহূদীরা থাকত তারা জানত তীমথিয়ের বাবা একজন গ্রীক। পরে তাঁরা সেই সব শহরগুলোর মধ্য দিয়ে গেলেন এবং যিরূশালেমের প্রেরিতেরা ও মণ্ডলীর নেতারা যে কয়েকটা নিয়ম ঠিক করেছিলেন তা লোকদের জানালেন আর সেই সব নিয়ম পালন করতে বললেন। এইভাবে মণ্ডলীগুলোর লোকেরা খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসে সবল হয়ে উঠতে লাগল এবং তাদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যেতে লাগল। পবিত্র আত্মা পৌল আর তাঁর সংগীদের এশিয়া প্রদেশে প্রচার করতে দিলেন না। তখন তাঁরা ফরুগিয়া ও গালাতিয়া প্রদেশের সমস্ত জায়গায় গেলেন। পরে মুশিয়ার সীমানায় এসে তাঁরা বিথুনিয়া প্রদেশে যেতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু যীশুর আত্মা তাঁদের যেতে দিলেন না। এইজন্য তাঁরা মুশিয়ার মধ্য দিয়ে ত্রোয়া শহরে চলে গেলেন। রাতের বেলা পৌল একটা দর্শনে দেখলেন, ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশের একজন লোক দাঁড়িয়ে তাঁকে মিনতি করে বলছে, “ম্যাসিডোনিয়াতে এসে আমাদের সাহায্য করুন।” পৌল এই দর্শন দেখবার পর আমরা ম্যাসিডোনিয়াতে যাবার জন্য তখনই প্রস্তুত হলাম, কারণ আমরা বুঝতে পারলাম ম্যাসিডোনিয়ার লোকদের কাছে খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করবার জন্যই ঈশ্বর আমাদের ডেকেছেন। পরে আমরা ত্রোয়া ছেড়ে জাহাজে করে সোজা সামথ্রাকী দ্বীপে গেলাম এবং পরের দিন নিয়াপলি শহরে আসলাম। সেখান থেকে আমরা ফিলিপী শহরে গেলাম। এই ফিলিপীই ম্যাসিডোনিয়ার সেই এলাকার প্রধান শহর। সেখানকার লোকেরা রোম রাজ্যের প্রজা ছিল। আমরা কিছু দিন সেই শহরে রইলাম। বিশ্রামবারে আমরা শহরের ফটকের বাইরে নদীর কাছে গেলাম; মনে করলাম সেখানে যিহূদীদের প্রার্থনা করবার জায়গা আছে। সেখানে যে স্ত্রীলোকেরা মিলিত হয়েছিলেন আমরা তাঁদের কাছে বসে কথা বলতে লাগলাম। যাঁরা শুনছিলেন তাঁদের মধ্যে থুয়াতীরা শহরের লুদিয়া নামে একজন স্ত্রীলোক ছিলেন। তিনি বেগুনী রংয়ের কাপড়ের ব্যবসা করতেন। যিহূদী না হলেও তিনি ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। প্রভু লুদিয়ার অন্তর এমনভাবে খুলে দিলেন যাতে তিনি পৌলের কথা মন দিয়ে শুনে বিশ্বাস করেন। এতে তিনি ও তাঁর বাড়ীর সকলে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন। এর পরে তিনি এই বলে আমাদের নিমন্ত্রণ করলেন, “যদি আমাকে আপনারা প্রভুর উপর বিশ্বাসী বলে মনে করেন তবে আমার বাড়ীতে এসে থাকুন।” এই কথা বলে তিনি আমাদের সাধাসাধি করে তাঁর বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। একদিন যখন আমরা সেই প্রার্থনার জায়গায় যাচ্ছিলাম তখন একজন দাসীর সংগে আমাদের দেখা হল। তাকে একটা মন্দ আত্মায় পেয়েছিল যার ফলে সে ভবিষ্যতের কথা বলতে পারত। তাতে তার মনিবদের লাভ হত। সেই মেয়েটি পৌল এবং আমাদের পিছনে যেতে যেতে চিৎকার করে বলত, “এই লোকেরা মহান ঈশ্বরের দাস। কি করে পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় এঁরা তা- ই আপনাদের কাছে বলছেন।” সে অনেক দিন পর্যন্ত এই রকম করল। শেষে পৌল এত বিরক্ত হলেন যে, তিনি পিছন ফিরে সেই মন্দ আত্মাকে বললেন, “যীশু খ্রীষ্টের নামে আমি তোমাকে আদেশ দিচ্ছি, এই মেয়েটির মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।” আর তখনই সেই আত্মা বের হয়ে গেল। লাভের আশা চলে গেল দেখে মেয়েটির মনিবেরা পৌল আর সীলকে ধরে শহর-চকে নেতাদের কাছে টেনে নিয়ে গেল। তার পরে তারা শাসনকর্তাদের কাছে তাঁদের নিয়ে গিয়ে বলল, “এই লোকেরা আমাদের শহরে গোলমাল বাধিয়েছে। এরা যিহূদী। এরা এমন সব আচার-ব্যবহারের বিষয় শিক্ষা দিচ্ছে যা রোমীয় হিসাবে আমাদের পক্ষে গ্রহণ করা বা পালন করা আইন-বিরুদ্ধ কাজ।” অন্যান্য লোকেরাও পৌল ও সীলের বিরুদ্ধে তাদের সংগে যোগ দিল। তখন শাসনকর্তারা আদেশ দিলেন যেন তাঁদের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে বেত মারা হয়। ভীষণভাবে বেত মারবার পরে তাঁদের জেলখানায় রাখা হল, আর ভাল করে পাহারা দেবার জন্য জেল-রক্ষককে আদেশ দেওয়া হল। জেল-রক্ষক সেই আদেশ পেয়ে পৌল ও সীলকে জেলের ভিতরের ঘরে নিয়ে গেলেন এবং হাড়িকাঠ দিয়ে তাঁদের পা আটকে রাখলেন। তখন প্রায় রাত দুপুর। পৌল ও সীল প্রার্থনা করছিলেন এবং ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসা-গান করছিলেন। অন্য কয়েদীরা তা শুনছিল। এমন সময় হঠাৎ এক ভীষণ ভূমিকম্প হল এবং তাতে জেলখানার ভিত্তি পর্যন্ত কেঁপে উঠল। তখনই জেলের সমস্ত দরজা ও কয়েদীদের শিকল খুলে গেল। জেল-রক্ষক জেগে উঠলেন এবং জেলের দরজাগুলো খোলা দেখতে পেয়ে ছোরা বের করে আত্মহত্যা করতে চাইলেন। তিনি মনে করলেন সমস্ত কয়েদীই পালিয়ে গেছে। তখন পৌল চিৎকার করে বললেন, “থামুন, নিজের ক্ষতি করবেন না; আমরা সবাই এখানে আছি।” তখন সেই জেল-রক্ষক একজনকে বাতি আনতে বলে নিজে ছুটে ভিতরে গেলেন এবং ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পৌল ও সীলের পায়ে পড়লেন। তার পরে তিনি পৌল ও সীলকে বাইরে এনে জিজ্ঞাসা করলেন, “বলুন, পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য আমাকে কি করতে হবে?” তাঁরা বললেন, “আপনি ও আপনার পরিবার প্রভু যীশুর উপর বিশ্বাস করুন, তাহলে পাপ থেকে উদ্ধার পাবেন।” পৌল আর সীল তখন জেল-রক্ষক ও তাঁর বাড়ীর সকলের কাছে প্রভুর বাক্য বললেন। জেল-রক্ষক সেই রাতেই পৌল আর সীলকে নিয়ে গিয়ে তাঁদের দেহের কাটা জায়গাগুলো ধুয়ে দিলেন, আর তিনি ও তাঁর পরিবারের অন্য সবাই তখনই বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন। তার পরে তিনি পৌল ও সীলকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে খেতে দিলেন। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে তাঁর পরিবারের সবাই খুব আনন্দিত হলেন। পরের দিন সকালবেলা শাসনকর্তারা তাঁদের কর্মচারীদের দিয়ে বলে পাঠালেন, “ঐ লোকদের ছেড়ে দাও।” তখন জেল-রক্ষক পৌলকে বললেন, “আপনাকে ও সীলকে ছেড়ে দেবার জন্য শাসনকর্তারা বলে পাঠিয়েছেন। আপনারা এখন বের হয়ে আসুন এবং শান্তিতে চলে যান।” তখন পৌল সেই কর্মচারীদের বললেন, “আমরা রোমীয়, আমাদের বিচার না করেই সকলের সামনে বেত মারা হয়েছে এবং জেলে দেওয়া হয়েছে। এখন কি শাসনকর্তারা আমাদের গোপনে ছেড়ে দিতে চান? তা হবে না; তাঁরা নিজেরা এসে আমাদের বাইরে নিয়ে যান।” সেই কর্মচারীরা তখন এই কথা শাসনকর্তাদের জানাল। শাসনকর্তারা যখন শুনলেন পৌল আর সীল রোমীয় তখন তাঁরা ভয় পেলেন। তাঁরা পৌল আর সীলের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলেন এবং তাঁদের জেলের বাইরে এনে শহর ছেড়ে যেতে অনুরোধ করলেন। পৌল আর সীল জেলখানা থেকে বাইরে এসে লুদিয়ার বাড়ীতে গেলেন। সেখানে বিশ্বাসী ভাইদের সংগে তাঁদের দেখা হল। ভাইদের উৎসাহ দেবার পর তাঁরা সেখান থেকে চলে গেলেন। পৌল ও সীল আম্‌ফিপলি ও আপল্লোনিয়া শহরের মধ্য দিয়ে থিষলনীকী শহরে গেলেন। সেখানে যিহূদীদের একটা সমাজ-ঘর ছিল। পৌল তাঁর নিয়ম মতই সেই সমাজ-ঘরে গেলেন এবং পর পর তিন বিশ্রামবারে লোকদের সংগে পবিত্র শাস্ত্র থেকে আলোচনা করলেন। তিনি লোকদের বুঝালেন এবং প্রমাণ করলেন যে, মশীহের কষ্টভোগ করবার এবং মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার দরকার ছিল। তিনি বললেন, “যে যীশুর কথা আমি আপনাদের কাছে প্রচার করছি সেই যীশুই হলেন মশীহ।” এই কথা শুনে কয়েকজন যিহূদী বিশ্বাস করে পৌল ও সীলের সংগে যোগ দিল। এছাড়া ঈশ্বরভক্ত অনেক গ্রীক এবং অনেক বিশেষ বিশেষ মহিলাও তাঁদের সংগে যোগ দিলেন। যিহূদীরা কিন্তু হিংসা করে বাজার থেকে কিছু দুষ্ট লোক যোগাড় করে এনে ভিড় জমাল এবং শহরের মধ্যে গোলমাল বাধিয়ে দিল। তারপর পৌল ও সীলের খোঁজ করে বাইরে লোকদের কাছে তাঁদের আনবার জন্য তারা যাসোনের বাড়ীর উপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল, কিন্তু সেখানে তারা তাঁদের পেল না। তখন তারা যাসোন ও কয়েকজন বিশ্বাসী ভাইকে টেনে নিয়ে শহর-প্রশাসকদের কাছে গেল এবং চিৎকার করে বলল, “যে লোকেরা সারা দুনিয়া তোলপাড় করে তুলেছে তারা এখন এখানেও উপস্থিত হয়েছে; আর যাসোন তার নিজের বাড়ীতে ওদের জায়গা দিয়েছে। ওরা সবাই সম্রাট কৈসরের আদেশ অমান্য করে বলছে যে, তিনি ছাড়া যীশু নামে আরও একজন রাজা আছেন।” এই সব কথা বলে সেই যিহূদীরা প্রশাসকদের ও লোকদের অস্থির করে তুলল। কিন্তু যাসোন ও অন্যেরা জামিনের টাকা দিলে পর তারা তাঁদের ছেড়ে দিল। রাত হলে পর বিশ্বাসী ভাইয়েরা পৌল ও সীলকে বিরয়াতে পাঠিয়ে দিল। সেখানে পৌঁছে তাঁরা যিহূদীদের সমাজ-ঘরে গেলেন। থিষলনীকীর যিহূদীদের চেয়ে বিরয়া শহরের যিহূদীদের মন অনেক বেশী খোলা ছিল। তারা খুব আগ্রহের সংগে ঈশ্বরের বাক্য শুনে তা গ্রহণ করল। পৌল যা বলেছেন তা সত্যি কিনা দেখবার জন্য প্রত্যেক দিন তারা শাস্ত্রের মধ্যে খোঁজ করত। অনেক যিহূদী যীশুর উপর বিশ্বাস করল; এছাড়া অনেক বিশেষ গ্রীক মহিলা ও পুরুষও বিশ্বাস করলেন। থিষলনীকীর যিহূদীরা যখন শুনতে পেল পৌল বিরয়াতে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করছেন তখন তারা সেখানেও গেল এবং লোকদের উত্তেজিত করে গোলমাল বাধিয়ে দিল। বিশ্বাসী ভাইয়েরা তখনই পৌলকে সাগরের ধারে পাঠিয়ে দিল, কিন্তু সীল আর তীমথিয় বিরয়াতেই রইলেন। যে লোকেরা পৌলকে সংগে করে নিয়ে যাচ্ছিল তারা তাঁকে এথেন্স শহরে আনল। তারপর সেই লোকেরা সীল ও তীমথিয়ের জন্য এই আদেশ নিয়ে বিরয়াতে ফিরে গেল যে, সীল আর তীমথিয় যত শীঘ্র সম্ভব গিয়ে যেন পৌলের সংগে যোগ দেন। পৌল এথেন্স শহরে সীল ও তীমথিয়ের জন্য অপেক্ষা করবার সময় সেই শহর প্রতিমাতে পূর্ণ দেখলেন। তাতে তাঁর মন খুব ব্যাকুল হয়ে উঠল। তিনি সমাজ-ঘরের মধ্যে যিহূদীদের ও ঈশ্বরভক্ত গ্রীকদের সংগে আলোচনা করতে লাগলেন। এছাড়া যারা বাজারে আসত তাদের সংগেও তিনি দিনের পর দিন আলোচনা করতে থাকলেন। তখন ইপীকুরীয় ও স্তোয়িকীয় দলের কয়েকজন শিক্ষক পৌলের সংগে তর্ক জুড়ে দিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বললেন, “এই বাচালটা কি বলতে চাইছে?” আবার অন্যেরা বললেন, “বোধহয় সে বিদেশী দেব-দেবীর কথা প্রচার করছে।” তাঁরা এই কথা বললেন কারণ পৌল যীশুর বিষয় এবং মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার বিষয় প্রচার করছিলেন। তখন সেই শিক্ষকেরা পৌলকে আরেয়পাগের সভার সামনে উপস্থিত করলেন। সেখানে তাঁরা পৌলকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যে নতুন শিক্ষা আপনি দিচ্ছেন সেটা কি, তা কি আমরা জানতে পারি? কারণ আপনি এমন কতগুলো কথা বলছেন যা আমাদের কানে অদ্ভুত শোনাচ্ছে। সেইজন্য এই সব কথার মানে কি তা আমরা জানতে চাই।” তাঁরা এই কথা বললেন কারণ এথেন্সের সব লোকেরা এবং সেই শহরে যে বিদেশীরা থাকত তারা কেবল নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলে এবং শুনে সময় কাটাত। তখন পৌল আরেয়পাগের সভার মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “এথেন্স শহরের লোকেরা, শুনুন। আমি দেখতে পাচ্ছি যে, আপনারা সব দিক থেকেই খুব ধর্মভীরু, কারণ আমি ঘুরে বেড়াবার সময় আপনাদের উপাসনার জিনিসগুলো যখন দেখছিলাম তখন এমন একটা বেদী দেখতে পেলাম যার উপরে লেখা আছে, ‘অজানা দেবতার উদ্দেশে।’ আপনারা না জেনে যাঁর উপাসনা করছেন তাঁর সম্বন্ধে আমি আপনাদের কাছে প্রচার করছি। “ঈশ্বর, যিনি এই পৃথিবী ও তার মধ্যে যা আছে সব কিছু তৈরী করেছেন, তিনিই স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু। তিনি হাতে তৈরী কোন মন্দিরে বাস করেন না। তাঁর কোন অভাব নেই, সেইজন্য মানুষের হাত থেকে পূজা গ্রহণ করবারও তাঁর দরকার নেই, কারণ তিনিই সব মানুষকে জীবন, প্রাণবায়ু আর অন্যন্য সব কিছু দান করেন। তিনি একজন মানুষ থেকে সমস্ত জাতির লোক সৃষ্টি করেছেন যেন তারা সারা পৃথিবীতে বাস করে। তারা কখন কোথায় বাস করবে তাও তিনি ঠিক করে দিয়েছেন। ঈশ্বর এই কাজ করেছেন যেন মানুষ হাতড়াতে হাতড়াতে তাঁকে পেয়ে যাবার আশায় তাঁর খোঁজ করে। কিন্তু আসলে তিনি আমাদের কারও কাছ থেকে দূরে নন, কারণ তাঁর শক্তিতেই আমরা জীবন কাটাই ও চলাফেরা করি এবং বেঁচেও আছি। আপনাদের কয়েকজন কবিও বলেছেন, ‘আমরাও তাঁর সন্তান।’ “তাহলে আমরা যখন ঈশ্বরের সন্তান তখন ঈশ্বরকে মানুষের হাত ও চিন্তাশক্তি দিয়ে তৈরী সোনা, রূপা বা পাথরের মূর্তি মনে করা আমাদের উচিত নয়। আগেকার দিনে মানুষ জানত না বলে ঈশ্বর এই সব দেখেও দেখেন নি। কিন্তু এখন তিনি সব জায়গায় সব লোককে পাপ থেকে মন ফিরাতে আদেশ দিচ্ছেন, কারণ তিনি এমন একটা দিন ঠিক করেছেন যে দিনে তাঁর নিযুক্ত লোকের দ্বারা তিনি ন্যায়ভাবে মানুষের বিচার করবেন। তিনি সেই লোককে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলে সব মানুষের কাছে এর প্রমাণ দিয়েছেন।” মৃতদের আবার জীবিত হয়ে উঠবার কথা শুনে লোকদের মধ্যে কয়েকজন মুখ বাঁকাল, কিন্তু অন্যেরা বলল, “এই বিষয়ে আপনার কথা আমরা আবার শুনব।” তখন পৌল সেই সভা ছেড়ে চলে গেলেন। কয়েকজন লোক পৌলের সংগে যোগ দিল এবং বিশ্বাস করল। সেই বিশ্বাসীদের মধ্যে দিয়নুষিয় নামে আরেয়পাগের সভার একজন সভ্য, দামারিস্‌ নামে একজন স্ত্রীলোক এবং তাঁদের সংগে আরও কয়েকজন ছিলেন। এর পরে পৌল এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকিলা নামে একজন যিহূদীর সংগে তাঁর দেখা হল। পন্ত প্রদেশে আকিলার জন্ম হয়েছিল। সম্রাট ক্লৌদিয় সমস্ত যিহূদীদের রোম ছেড়ে যেতে আদেশ দিয়েছিলেন। সেইজন্য কিছু দিন আগে আকিলা তাঁর স্ত্রী প্রিষ্কিল্লাকে নিয়ে ইটালী থেকে করিন্থে এসেছিলেন। পৌল তাঁদের কাছে গেলেন। তাঁদের মত তিনিও তাম্বু তৈরীর কাজ করতেন বলে তাঁদের সংগে থেকে কাজ করতে লাগলেন। প্রত্যেক বিশ্রামবারে পৌল সমাজ-ঘরে গিয়ে যীশুর বিষয় আলোচনা করতেন এবং গ্রীক ও যিহূদীদের যীশুর পথে আনতে চেষ্টা করতেন। সীল ও তীমথিয় ম্যাসিডোনিয়া থেকে আসলে পর পৌল কেবল ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করে তাঁর সমস্ত সময় কাটাতে লাগলেন। তিনি যিহূদীদের কাছে সাক্ষ্য দিতেন যে, যীশুই মশীহ। কিন্তু যিহূদীরা যখন পৌলের বিরুদ্ধে কথা বলে তাঁকে অপমান করতে লাগল তখন পৌল তাদের বিরুদ্ধে তাঁর কাপড়-চোপড় ঝেড়ে ফেললেন এবং বললেন, “আপনাদের রক্তের দায় আপনাদের নিজেদের মাথার উপরেই থাকুক। এই বিষয়ে আমার কোন দোষ নেই। এখন থেকে আমি অযিহূদীদের কাছে যাব।” এর পরে পৌল সমাজ-ঘর ছেড়ে তিতিয়-যুষ্ট নামে একজন লোকের ঘরে গেলেন। এই লোকের বাড়ী সমাজ-ঘরের পাশেই ছিল এবং ইনি অযিহূদী হয়েও ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। সমাজ-ঘরের কর্তা ক্রীষ্প ও তাঁর বাড়ীর সবাই প্রভুর উপর বিশ্বাস করলেন। এছাড়া করিন্থীয়দের মধ্যে অনেকেই পৌলের কথা শুনে বিশ্বাস করল এবং বাপ্তিস্ম গ্রহণ করল। একদিন রাতের বেলা প্রভু একটা দর্শনের মধ্য দিয়ে পৌলকে এই কথা বললেন, “ভয় কোরো না, কথা বলতে থাক, চুপ করে থেকো না; কারণ আমি তোমার সংগে সংগে আছি। তোমাকে আক্রমণ করে কেউ তোমার ক্ষতি করবে না, কারণ এই শহরে আমার অনেক লোক আছে।” এতে পৌল দেড় বছর সেই শহরে থেকে লোকদের ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দিলেন। গাল্লিয়ো যখন আখায়া প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন তখন যিহূদীরা সবাই মিলে পৌলকে ধরে বিচারের জন্য আদালতে আনল। তারা বলল, “এই লোকটা এমনভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করতে উস্‌কে দিচ্ছে যা আইন-কানুনের বিরুদ্ধে।” পৌল কথা বলতে যাবেন এমন সময় গাল্লিয়ো যিহূদীদের বললেন, “যিহূদীরা, এটা যদি কোন অন্যায় বা ভীষণ কোন দোষের ব্যাপার হত তবে তোমাদের কথা শোনা আমার পক্ষে ঠিক কাজ হত। কিন্তু এটা যখন বিশেষ কোন কথার ব্যাপার, কারও নামের ব্যাপার ও তোমাদের আইন-কানুনের ব্যাপার, তখন তোমরাই এর মীমাংসা কর। আমি ঐ সব ব্যাপারের বিচার করব না।” এই কথা বলে তিনি আদালত থেকে তাদের বের করে দেবার আদেশ দিলেন। তখন সেই যিহূদীরা সবাই মিলে সমাজ-ঘরের কর্তা সোস্থিনীকে ধরে আদালতের সামনে মারধর করল; গাল্লিয়ো কিন্তু তা চেয়েও দেখলেন না। বেশ কিছু দিন করিন্থে কাটাবার পরে পৌল বিশ্বাসী ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন এবং আকিলা ও পিষ্কিল্লার সংগে জলপথে সিরিয়া দেশে আসলেন। পৌল একটা মানত করেছিলেন বলে যাত্রা করবার আগে কিংক্রিয়া বন্দরে তাঁর মাথার চুল কেটে ফেলেছিলেন। ইফিষ শহরে পৌঁছে তিনি প্রিষ্কিল্লা ও আকিলার সংগ ছাড়লেন। পরে তিনি নিজেই সমাজ-ঘরে গিয়ে যিহূদীদের সংগে যীশুর বিষয় আলোচনা করতে লাগলেন। যিহূদীরা তাঁকে তাদের সংগে কিছু দিন থাকতে বলল, কিন্তু তিনি রাজী হলেন না। তবে সেখান থেকে চলে যাবার সময় তিনি বললেন, “ঈশ্বরের ইচ্ছা হলে আমি আবার ফিরে আসব।” তারপর তিনি ইফিষ থেকে জাহাজে করে রওনা হলেন। তিনি কৈসরিয়া শহরে পৌঁছে জাহাজ থেকে নেমে যিরূশালেমে গেলেন। সেখানে মণ্ডলীর লোকদের শুভেচ্ছা জানাবার পরে তিনি আন্তিয়খিয়াতে গেলেন। আন্তিয়খিয়াতে কিছু দিন কাটাবার পর তিনি সেখান থেকে যাত্রা করলেন এবং গালাতিয়া ও ফরুগিয়া প্রদেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে ঘুরে শিষ্যদের বিশ্বাস বাড়িয়ে তাদের শক্তিশালী করে তুললেন। এর মধ্যে আপল্লো নামে একজন যিহূদী ইফিষে আসলেন। আলেক্‌জান্দ্রিয়া শহরে তাঁর বাড়ী ছিল। তিনি একজন ভাল বক্তা ছিলেন এবং পবিত্র শাস্ত্র খুব ভাল করে জানতেন। প্রভুর পথের বিষয় তিনি শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি খুব আগ্রহের সংগে কথা বলতেন এবং যীশুর বিষয় ঠিকভাবে শিক্ষা দিতেন, কিন্তু যোহনের বাপ্তিস্ম ছাড়া আর কোন বাপ্তিস্মের কথা তিনি জানতেন না। তিনি খুব সাহসের সংগে সমাজ- ঘরে কথা বলতে আরম্ভ করলেন। তখন প্রিষ্কিল্লা ও আকিলা আপল্লোর কথা শুনে তাঁকে তাঁদের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করলেন এবং ঈশ্বরের পথের বিষয় আরও ভাল করে তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন। পরে আপল্লো যখন আখায়াতে যেতে চাইলেন তখন ইফিষের বিশ্বাসী ভাইয়েরা তাঁকে উৎসাহ দিল। আখায়ার শিষ্যেরা যেন আপল্লোকে গ্রহণ করে এইজন্য ইফিষীয় ভাইয়েরা আখায়াতে চিঠি লিখল। ঈশ্বরের দয়ায় আখায়াতে যারা বিশ্বাসী হয়েছিল আপল্লো সেখানে পৌঁছে তাদের খুব সাহায্য করলেন। যীশুই যে মশীহ তা তিনি পবিত্র শাস্ত্রের মধ্য থেকে প্রমাণ করলেন এবং সকলের সামনেই খুব জোরালো যুক্তি দিয়ে তর্কে যিহূদীদের হারিয়ে দিলেন। তখন পৌল বললেন, “তবে আপনারা কোন্‌ বাপ্তিস্ম পেয়েছিলেন?” তারা বলল, “যোহনের বাপ্তিস্ম।” পৌল বললেন, “পাপ থেকে মন ফিরিয়ে যে বাপ্তিস্ম গ্রহণ, সেটাই ছিল যোহনের বাপ্তিস্ম। যোহন লোকদের বলেছিলেন, তাঁর পরে যিনি আসছেন তাঁর উপরে, অর্থাৎ যীশুর উপরে বিশ্বাস করতে হবে।” এই কথা শুনে সেই শিষ্যেরা প্রভু যীশুর নামে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করল। তখন পৌল তাদের উপর হাত রাখলে পর তাদের উপর পবিত্র আত্মা আসলেন, আর তারা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে ও নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলতে লাগল। সেই শিষ্যেরা সংখ্যায় কমবেশ বারোজন ছিল। এর পরে পৌল সমাজ-ঘরে গেলেন এবং তিন মাস পর্যন্ত খুব সাহসের সংগে কথা বললেন। ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে তিনি যুক্তি-তর্কের মধ্য দিয়ে লোকদের বিশ্বাস জন্মাবার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজনের মন কঠিন হয়ে গিয়েছিল বলে তারা বিশ্বাস করতে চাইল না এবং সকলের সামনে যীশুর পথের বিষয়ে অনেক নিন্দা করতে লাগল। তখন পৌল তাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি শিষ্যদের সংগে নিয়ে তুরান্ন নামে একজন শিক্ষকের বক্তৃতা দেবার ঘরে গিয়ে প্রত্যেক দিন যুক্তি-তর্কের সংগে আলোচনা করতে লাগলেন। দু’বছর এইভাবেই চলল। তাতে যে যিহূদী ও গ্রীকেরা এশিয়া প্রদেশে থাকত তারা সবাই প্রভুর বাক্য শুনতে পেল। ঈশ্বর পৌলের মধ্য দিয়ে খুব আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করতে লাগলেন। তাঁর ব্যবহার করা গামছা ও গায়ের কাপড় রোগীদের কাছে নিয়ে গেলে পর তাদের অসুখ ভাল হয়ে যেত এবং মন্দ আত্মারাও ছেড়ে যেত। কয়েকজন যিহূদী মন্দ আত্মা ছাড়িয়ে বেড়াত। প্রভু যীশুর নাম ব্যবহার করে তারা মন্দ আত্মায় পাওয়া লোকদের সুস্থ করবার চেষ্টা করতে লাগল। তারা বলত, “পৌল যাঁর বিষয় প্রচার করেন সেই যীশুর নামে আমি তোমাদের বের হয়ে যাবার আদেশ দিচ্ছি।” তাদের মধ্যে স্কিবা নামে একজন যিহূদী প্রধান পুরোহিতের সাতটি ছেলে ঐ রকম করত। একবার যখন তারা ঐ রকম করছিল তখন মন্দ আত্মা তাদের বলল, “আমি যীশুকেও চিনি, পৌলকেও চিনি, কিন্তু তোমরা কারা?” যে লোকটিকে মন্দ আত্মায় পেয়েছিল সে তখন সেই সাতজনের উপর লাফিয়ে পড়ল আর তাদের সবাইকে এমনভাবে আঘাত করল যে, তারা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে উলংগ অবস্থায় সেই বাড়ী থেকে পালিয়ে গেল। এই খবর যখন ইফিষে বাসকারী যিহূদী ও গ্রীকেরা জানতে পারল তখন তারা সবাই খুব ভয় পেল, আর প্রভু যীশুর নামের খুব গৌরব হল। যারা প্রভু যীশুর উপর বিশ্বাস করেছিল এমন অনেক লোক তখন এসে খোলাখুলিভাবেই তাদের মন্দ কাজের বিষয় স্বীকার করল। যারা যাদুর খেলা দেখাত তাদের মধ্যে অনেকে তাদের বই-পুঁথি একসংগে জড়ো করে সবার সামনেই সেগুলো পুড়িয়ে দিল। বইগুলোর দাম হিসাব করলে দেখা গেল পঞ্চাশ হাজার দীনার। প্রভুর বাক্য এইভাবে ছড়িয়ে পড়ল এবং তার শক্তি লোকদের মনে আরও বেশী করে কাজ করতে লাগল। এই সব ঘটবার পর পৌল ঠিক করলেন তিনি ম্যাসিডোনিয়া ও আখায়া হয়ে যিরূশালেমে যাবেন। তিনি বললেন, “যিরূশালেমে যাবার পরে আমাকে রোম শহরেও যেতে হবে।” পরে তিনি তীমথিয় ও ইরাস্ত নামে তাঁর দু’জন সাহায্যকারীকে ম্যাসিডোনিয়াতে পাঠিয়ে দিলেন, আর এদিকে তিনি আরও কিছু দিন এশিয়া প্রদেশে রইলেন। সেই সময়ে যীশুর পথের বিষয় নিয়ে খুব গোলমাল শুরু হল। দীমীত্রিয় নামে একজন স্বর্ণকার দেবী আর্তেমিসের মন্দিরের মত ছোট ছোট রূপার মন্দির তৈরী করত। এতে মিস্ত্রিদের খুব লাভ হত। দীমীত্রিয় সেই মিস্ত্রিদের ও তাদের মত অন্যান্য কারিগরদের এক জায়গায় ডেকে বলল, “ভাইয়েরা, তোমরা তো জান যে, এই ব্যবসা দিয়ে আমাদের আয় বেশ ভালই হয়। কিন্তু তোমরা দেখতে ও শুনতে পাচ্ছ যে, পৌল নামে ঐ লোকটা আমাদের এই ইফিষে এবং বলতে গেলে প্রায় সমস্ত এশিয়া প্রদেশের অনেক লোকদের বিশ্বাস জন্মিয়ে তাদের ভুল পথে নিয়ে গেছে। সে বলে যে, হাতে তৈরী দেব-দেবীরা কিছুই নয়। এতে কেবল যে আমাদের ব্যবসার সুনাম যাবে তা নয়, কিন্তু মহান দেবী আর্তেমিসের মন্দিরও মিথ্যা হয়ে যাবে। আর এশিয়া প্রদেশের সব লোকেরা, এমন কি, জগতের সবাই যে দেবীর উপাসনা করে তিনি নিজেও মহান থাকবেন না।” এই কথা শুনে সেই লোকেরা রেগে আগুন হয়ে গেল এবং চিৎকার করে বলতে লাগল, “ইফিষীয়দের আর্তেমিস দেবীই মহান।” আর দেখতে না দেখতে সমস্ত শহরটা হট্টগোলে পূর্ণ হয়ে গেল। গাইয় ও আরিষ্টার্খ নামে ম্যাসিডোনিয়ার যে দু’জন লোক তখন পৌলের সংগে যাচ্ছিলেন লোকেরা তাদের ধরল এবং সবাই একসংগে সভা বসবার স্থানে ছুটে গেল। পৌল ভিড়ের সামনে যেতে চাইলেন কিন্তু শিষ্যেরা তাঁকে যেতে দিল না। সেই প্রদেশের কয়েকজন রাজকর্মচারী পৌলের বন্ধু ছিলেন। তাঁরাও পৌলকে খবর পাঠিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন যেন তিনি বিপদের ঝুঁকি নিয়ে সেই সভার স্থানে না যান। এর মধ্যে সভাতে গোলমাল হতেই থাকল। কিছু লোক এক কথা বলে চিৎকার করছিল, আবার কিছু লোক অন্য কথা বলে চিৎকার করছিল। বেশীর ভাগ লোক জানতই না কেন তারা সেই সভাতে উপস্থিত হয়েছে। যিহূদীরা আলেক্‌সান্দরকে সামনে ঠেলে দিলে পর কয়েকজন লোক তাকে বলে দিল কি বলতে হবে। তখন আলেক্‌সান্দর লোকদের সামনে নিজের পক্ষে কথা বলবার জন্য হাতের ইশারায় লোকদের চুপ করাতে চেষ্টা করল। কিন্তু লোকেরা যখন জানতে পারল যে, আলেক্‌সান্দর যিহূদী তখন সবাই একসংগে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে এই বলে চিৎকার করল, “ইফিষীয়দের আর্তেমিস দেবীই মহান।” শেষে শহরের একজন বিশেষ সরকারী কর্মচারী লোকদের চুপ করিয়ে বললেন, “ইফিষীয় লোকেরা, এই কথা সবাই জানে যে, মহান আর্তেমিস দেবীর মন্দিরের এবং আকাশ থেকে তাঁর যে মূর্তি পড়েছে তার রক্ষাকারী হল ইফিষ শহর। এই সত্যি কথা যখন অস্বীকার করা যায় না তখন বোকার মত কাজ না করে তোমাদের চুপ করে থাকাই উচিত। যদিও এই লোকেরা আমাদের মন্দিরগুলো থেকে চুরিও করে নি এবং আমাদের দেবীর নিন্দাও করে নি, তবুও এই লোকদের তোমরা এখানে এনেছ। যদি দীমীত্রিয় ও তার সংগী-মিস্ত্রিরা কারও বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে চায় তবে আদালত তো খোলাই আছে আর শাসনকর্তারাও সেখানে আছেন। তারা সেখানে মকদ্দমা করতে পারে। কিন্তু তোমরা যদি আরও বেশী কিছু বলতে চাও তবে সাধারণ সভার মধ্যে তার মীমাংসা করতে হবে। আজকের ঘটনায় দাংগা-হাংগামা বাধাবার জন্য আমাদেরই উপর দোষ পড়বার ভয় আছে। যদি তা-ই হয় তবে আমরা এই গোলমালের কোন কারণ দেখাতে পারব না, কারণ এই গোলমালের কোন কারণই নেই।” এই বলে তিনি সভা ভেংগে দিলেন। গোলমাল থামলে পর পৌল শিষ্যদের ডেকে পাঠালেন। তাদের উৎসাহ দেবার পরে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি ম্যাসিডোনিয়ার দিকে যাত্রা করলেন। বিরয়া থেকে পুর্হের ছেলে সোপাত্র, থিষলনীকী থেকে আরিষ্টার্খ ও সিকুন্দ, দর্বী থেকে গাইয়, তীমথিয় এবং এশিয়া থেকে তুখিক ও ত্রফিম পৌলের সংগে গেলেন। এই লোকেরা আগে গিয়ে ত্রোয়া শহরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করলেন। খামিহীন রুটির পর্বের পরে আমরা জলপথে ফিলিপী থেকে যাত্রা করলাম এবং পাঁচ দিন পরে ত্রোয়াতে তাঁদের সংগে যোগ দিলাম। ত্রোয়াতে আমরা সাত দিন ছিলাম। সপ্তার প্রথম দিনে প্রভুর ভোজ গ্রহণ করবার জন্য আমরা একসংগে মিলিত হলাম। তখন পৌল লোকদের কাছে প্রচার করতে লাগলেন। পরের দিন তাঁর চলে যাবার কথা ছিল বলে তিনি মাঝরাত পর্যন্ত কথা বলতেই থাকলেন। আমরা উপরতলার যে ঘরে মিলিত হয়েছিলাম সেখানে অনেকগুলো বাতি ছিল। উতুখ্‌ নামে একজন যুবক সেই ঘরের জানলার উপর বসে ছিল। পৌল অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছিলেন বলে সে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম গাঢ় হলে পর সে তিনতলা থেকে নীচে পড়ে গেল এবং তাকে মৃত অবস্থায় তুলে নেওয়া হল। তখন পৌল নীচে নেমে গেলেন এবং সেই যুবকের উপর ঝুঁকে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তোমরা ভয় কোরো না, সে বেঁচে আছে।” এর পরে পৌল আবার উপরতলায় গিয়ে প্রভুর ভোজ গ্রহণ করলেন এবং অনেকক্ষণ ধরে ভোর পর্যন্ত কথা বলবার পর তিনি চলে গেলেন। লোকেরা সেই যুবককে জীবিত অবস্থায় বাড়ী নিয়ে গেল এবং খুব সান্ত্বনা পেল। আমরা আগে গিয়ে জাহাজে উঠে আঃস বন্দরের দিকে যাত্রা করলাম। সেখান থেকে পৌলকে তুলে নেবার কথা ছিল। তাঁকে তুলে নেবার কথা তিনি আমাদের বলেছিলেন কারণ তিনি হাঁটা-পথে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন। আঃসে আমাদের সংগে তাঁর দেখা হলে পর আমরা তাঁকে জাহাজে তুলে নিলাম ও মিতুলীনীতে আসলাম। পরের দিন আমরা সেখান থেকে যাত্রা করে খীয় দ্বীপের কাছে পৌঁছালাম। তার পরের দিন আমরা সাগর পার হয়ে সামঃ দ্বীপে গেলাম। এর পরের দিন আমরা মিলীত্‌ বন্দরে গিয়ে পৌঁছালাম। এশিয়া প্রদেশে পৌলকে যাতে দেরি করতে না হয় সেইজন্য তিনি ঠিক করেছিলেন যে, তিনি ইফিষে না থেমে তার কাছ দিয়ে চলে যাবেন। যিরূশালেমে পৌঁছাবার জন্য তিনি তাড়াহুড়া করছিলেন যেন সম্ভব হলে পঞ্চাশত্তমীর দিনে সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন। পৌল মিলীত্‌ থেকে ইফিষে লোক পাঠিয়ে সেখানকার মণ্ডলীর নেতাদের ডেকে পাঠালেন। তাঁরা সেখানে পৌঁছালে পর পৌল তাঁদের বললেন, “এশিয়া প্রদেশে আসবার পরে প্রথম দিন থেকে সব সময় আপনাদের সংগে আমি কিভাবে কাটিয়েছি তা তো আপনারা জানেন। যিহূদীদের নানা ষড়যন্ত্রের দরুন আমাকে ভীষণ পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয়েছিল, কিন্তু আমি খুব নম্রভাবে চোখের জলের সংগে প্রভুর দাস হয়ে তাঁর সেবা করেছি। আপনাদের যাতে সাহায্য হয় এমন কোন কিছুই আমি আপনাদের কাছে না বলে চুপ করে থাকি নি, বরং বাইরে খোলাখুলিভাবে এবং আপনাদের ঘরে ঘরে শিক্ষা দিয়েছি ও প্রচার করেছি। যিহূদী ও গ্রীকদের কাছে আমি বিশেষ জোর দিয়ে জানিয়েছি যে, পাপ থেকে মন ফিরিয়ে ঈশ্বরের দিকে তাদের ফিরতে হবে এবং আমাদের প্রভু যীশুর উপর বিশ্বাস করতে হবে। “এখন আমি পবিত্র আত্মার বাধ্য হয়ে যিরূশালেমে যাচ্ছি। সেখানে আমার উপর কি ঘটবে তা আমি জানি না। আমি কেবল এই কথা জানি, পবিত্র আত্মা প্রত্যেক শহরে আমাকে এই কথা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, আমাকে জেল খাটতে ও কষ্ট পেতে হবে। কিন্তু আমার কাছে আমার প্রাণের কোন দাম নেই। আমার একমাত্র ইচ্ছা এই, যেন আমি শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে পারি, অর্থাৎ প্রভু যীশু যে কাজের ভার আমাকে দিয়েছেন তা শেষ করতে পারি। সেই কাজ হল ঈশ্বরের দয়ার সুখবরের বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া। “এখন আমি এই কথা জানি যে, আপনাদের যাঁদের কাছে আমি গিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করেছি তাঁদের কেউই আমাকে আর দেখতে পাবেন না। সেইজন্য আজ আমি আপনাদের পরিষ্কার ভাবে বলছি, কারও রক্তের দায়ী আমি নই, কারণ ঈশ্বর কি চান তা আপনাদের জানাতে আমি কখনও পিছপা হই নি। আপনারা নিজেদের সম্বন্ধে সতর্ক থাকুন, আর পবিত্র আত্মা যে বিশ্বাসী দলের ভার পরিচালক হিসাবে আপনাদের উপর দিয়েছেন তাদের সম্বন্ধেও সতর্ক থাকুন। রাখাল যেমন তার ভেড়ার পালের দেখাশোনা করে ঠিক তেমনি করে আপনারাও পালক হিসাবে ঈশ্বরের মণ্ডলীর দেখাশোনা করুন। ঈশ্বর সেই মণ্ডলীকে নিজের রক্ত দিয়ে কিনেছেন। আমি জানি যে, আমি চলে যাবার পর লোকেরা হিংস্র নেকড়ে বাঘের মত করে আপনাদের মধ্যে আসবে এবং ভেড়ার পালের ক্ষতি করবে। এমন কি, আপনাদের নিজেদের মধ্য থেকে লোকেরা উঠে ঈশ্বরের সত্যকে মিথ্যা বানাবার চেষ্টা করবে যেন বিশ্বাসীদের নিজেদের দলে টানতে পারে। এইজন্য আপনারা সাবধান থাকুন। মনে রাখবেন, তিন বছর ধরে দিনরাত চোখের জলের সংগে আমি আপনাদের প্রত্যেককে সাবধান করেছিলাম, কখনও চুপ করে থাকি নি। “ঈশ্বর ও তাঁর বাক্যের হাতে এখন আমি আপনাদের তুলে দিচ্ছি। ঈশ্বরের বাক্য তাঁর দয়ার বিষয় বলে, আর আপনাদের গড়ে তুলবার ক্ষমতা সেই বাক্যের আছে। এছাড়া ঈশ্বর তাঁর নিজের লোকদের জন্য যা কিছু রেখেছেন সেই বাক্য আপনাদের তাও দিতে পারবে। কারও সোনা, রূপা বা কাপড়-চোপড়ের উপরে আমি লোভ করি নি। আপনারা নিজেরাই তো জানেন যে, আমার এই দুই হাত আমার ও আমার সংগীদের সমস্ত অভাব মিটিয়েছে। আমি যা করেছি তা সব কিছুতেই আপনাদের দেখিয়েছি যে, এই রকম কঠিন পরিশ্রমের দ্বারা দুর্বলদের সাহায্য করা উচিত এবং প্রভু যীশুর এই কথা আমাদের মনে রাখা উচিত যে, ‘পাওয়ার চেয়ে দেওয়াতে আরও বেশী আশীর্বাদ রয়েছে।’ ” এই কথা বলবার পর পৌল সবার সংগে হাঁটু পেতে প্রার্থনা করলেন। পরে মণ্ডলীর নেতারা সবাই পৌলকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। পৌলের মুখ আর তাঁরা দেখতে পাবেন না, বিশেষ করে এই কথার জন্য তাঁরা খুব বেশী দুঃখ পেলেন। এর পরে তাঁরা তাঁর সংগে সংগে জাহাজ পর্যন্ত গেলেন। ইফিষের মণ্ডলীর নেতাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা জাহাজে করে সোজা কো দ্বীপে গেলাম। পরের দিন আমরা রোদঃ দ্বীপে আসলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা শহরে গেলাম। সেখানে আমরা ফৈনীকিয়া যাবার একটা জাহাজ পেলাম। তখন আমরা সেই জাহাজে উঠে রওনা হলাম। পরে সাইপ্রাস দ্বীপ দেখতে পেয়ে তার দক্ষিণ দিক দিয়ে ঘুরে আমরা সিরিয়া দেশের সোর শহরে গিয়ে জাহাজ থেকে নামলাম। সেখানে আমাদের জাহাজের মালপত্র নামাবার কথা ছিল। সেখানকার শিষ্যদের খুঁজে পেয়ে আমরা তাদের সংগে সাত দিন রইলাম। সেই শিষ্যেরা পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে পৌলকে অনুরোধ করল যেন তিনি যিরূশালেমে না যান। কিন্তু সেই দিনগুলো কেটে গেলে পর আমরা তাদের ছেড়ে আমাদের পথে রওনা হলাম। সব শিষ্যেরা এবং তাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা আমাদের সংগে সংগে শহরের বাইরে আসল। পরে সাগরের কিনারে আমরা হাঁটু পেতে প্রার্থনা করলাম। তারপর একে অন্যের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা জাহাজে উঠলাম এবং তারা বাড়ী ফিরে গেল। সোর থেকে যাত্রা করে আমরা তলিমায়িতে পৌঁছালাম। সেখানে বিশ্বাসী ভাইদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের সংগে এক দিন রইলাম। পরদিন আমরা যাত্রা করে কৈসরিয়াতে পৌঁছালাম এবং সুখবর প্রচারক ফিলিপের বাড়ীতে রইলাম। ইনি ছিলেন যিরূশালেম মণ্ডলীর সেই সাতজন সেবাকারীর মধ্যে একজন। তাঁর চারজন অবিবাহিতা মেয়ে ছিল। তাঁরা লোকদের কাছে নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলতেন। আমরা সেখানে বেশ কয়েকদিন থাকবার পর যিহূদিয়া থেকে আগাব নামে একজন নবী আসলেন। তিনি আমাদের কাছে এসে পৌলের কোমর-বাঁধনি খুলে নিলেন এবং তা দিয়ে নিজের হাত-পা বেঁধে বললেন, “পবিত্র আত্মা বলছেন, ‘যিরূশালেমের যিহূদীরা এই কোমর- বাঁধনির মালিককে এইভাবে বাঁধবে এবং অযিহূদীদের হাতে দেবে।’ ” এই কথা শুনে সেখানকার লোকেরা এবং আমরা পৌলকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করলাম যেন তিনি যিরূশালেমে না যান। তখন পৌল বললেন, “তোমরা কেঁদে আমার মনে দুঃখ দিচ্ছ কেন? প্রভু যীশুর জন্য আমি যিরূশালেমে কেবল বন্দী হতে নয়, মরতেও প্রস্তুত আছি।” তাঁকে থামাতে না পেরে আমরা চুপ করলাম এবং পরে বললাম, “প্রভুর ইচ্ছামত হোক।” এর পরে আমরা জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে যিরূশালেমে গেলাম। কৈসরিয়ার কয়েকজন শিষ্য আমাদের সংগে চলল এবং ম্নাসোন নামে সাইপ্রাস দ্বীপের একজন লোকের বাড়ীতে নিয়ে গেল। এঁরই বাড়ীতে আমাদের থাকবার কথা ছিল। ইনি ছিলেন প্রথম শিষ্যদের মধ্যে একজন। যিরূশালেমে পৌঁছালে পর বিশ্বাসী ভাইয়েরা খুশী হয়ে আমাদের গ্রহণ করল। পরদিন পৌল আমাদের সংগে যাকোবকে দেখতে গেলেন। সেখানে মণ্ডলীর সব নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পৌল তাঁদের শুভেচ্ছা জানালেন এবং তাঁর প্রচারের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর কিভাবে অযিহূদীদের মধ্যে কাজ করেছেন তা এক এক করে বললেন। এই কথা শুনে সেই নেতারা ঈশ্বরের গৌরব করলেন এবং পৌলকে বললেন, “ভাই, তুমি তো দেখছ, কত হাজার হাজার যিহূদী যীশুর উপর বিশ্বাস করেছে, আর তারা সবাই মোশির আইন-কানুন পালন করবার জন্য খুবই আগ্রহী। তারা খবর পেয়েছে, অযিহূদীদের মধ্যে যে সব যিহূদীরা থাকে তাদের তুমি মোশির আইন-কানুন বাদ দিয়ে চলতে শিক্ষা দিয়ে থাক, অর্থাৎ তুমি তাদের ছেলেদের সুন্নত করাতে এবং যিহূদীদের চলতি নিয়ম পালন করতে বারণ করে থাক। এখন আমরা কি করি? তারা তো নিশ্চয়ই শুনবে যে, তুমি এসেছ। আমরা এখন তোমাকে যা বলি তুমি তা-ই কর। আমাদের মধ্যে এমন চারজন লোক আছে যারা একটা মানত করেছে। এই লোকদের তুমি তোমার সংগে নিয়ে যাও এবং তাদের সংগে তুমি নিজেও শুচি হও আর তাদের মাথার চুল কামাবার পয়সা দাও। তখন সবাই জানবে যে, তোমার সম্বন্ধে তারা যে খবর পেয়েছে তা মিথ্যা এবং তুমি আইন- কানুন পালন করছ। কিন্তু যে অযিহূদীরা বিশ্বাসী হয়েছে তাদের জন্য আমরা যা ঠিক করেছি সেই সম্বন্ধে তাদের কাছে এই কথা লিখে জানিয়েছি যে, প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার তারা খাবে না, রক্ত খাবে না, গলা টিপে মারা কোন পশুর মাংস খাবে না আর কোন রকম ব্যভিচার করবে না।” তখন পৌল সেই লোকদের নিয়ে গিয়ে তাদের সংগে নিজেকেও শুচি করলেন। পরের দিন তিনি উপাসনা-ঘরে গেলেন, আর তাদের শুচি হবার কাজ কবে শেষ হবে এবং প্রত্যেকের জন্য কবে পশু উৎসর্গ করা হবে তা জানিয়ে দিলেন। শুচি হবার সেই সাত দিন প্রায় শেষ হয়ে আসলে পর এশিয়া প্রদেশের কয়েকজন যিহূদী পৌলকে উপাসনা-ঘরে দেখল। তারা সেখানকার সব লোকদের উস্‌কিয়ে দিল এবং পৌলকে ধরল। পরে তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, “ইস্রায়েলীয়েরা, এগিয়ে এস। সব জায়গার মানুষের কাছে আমাদের জাতি এবং আমাদের আইন-কানুন ও উপাসনা-ঘরের বিরুদ্ধে যে লোক শিক্ষা দিয়ে বেড়ায়, এ-ই সেই লোক। তা ছাড়া সে উপাসনা-ঘরে গ্রীকদের এনে এই পবিত্র জায়গা অপবিত্র করেছে।” তারা এই কথা বলল কারণ তারা আগে ইফিষীয় ত্রফিমকে পৌলের সংগে শহরের মধ্যে দেখেছিল। সেইজন্য তারা ভেবেছিল, পৌল ত্রফিমকে উপাসনা-ঘরেও এনেছেন। তখন সারা শহর উত্তেজিত হয়ে উঠল। লোকেরা একসংগে দৌড়ে এসে পৌলকে ধরে উপাসনা-ঘর থেকে টেনে বের করে আনল এবং সংগে সংগেই উপাসনা-ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করে দিল। লোকেরা পৌলকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করছিল, এমন সময় রোমীয় সৈন্যদের প্রধান সেনাপতির কাছে খবর গেল যে, সারা যিরূশালেম শহরে একটা হুলস্থূল পড়ে গেছে। সেই প্রধান সেনাপতি তখনই কয়েকজন শতপতি ও সৈন্যদের নিয়ে দৌড়ে ভিড়ের কাছে গেলেন। লোকেরা প্রধান সেনাপতি ও সৈন্যদের দেখে পৌলকে মারা বন্ধ করল। তখন প্রধান সেনাপতি এসে পৌলকে বন্দী করলেন এবং দু’টা শিকল দিয়ে তাঁকে বাঁধবার হুকুম দিলেন। তার পরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “লোকটি কে? সে কি করেছে?” তখন লোকদের মধ্য থেকে কয়েকজন চিৎকার করে এক রকম কথা বলল, আবার কয়েকজন অন্য রকম কথা বলল। তাতে প্রধান সেনাপতি গোলমালের জন্য আসল ব্যাপার জানতে না পেরে পৌলকে সেনানিবাসে নিয়ে যাবার হুকুম দিলেন। পৌল সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছালে পর লোকদের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সৈন্যদের তাঁকে বয়ে নিয়ে যেতে হল। লোকেরা তাঁর পিছনে পিছনে চিৎকার করে বলতে লাগল, “ওকে মেরে ফেল।” সৈন্যেরা পৌলকে নিয়ে সেনানিবাসে ঢুকতে যাবে এমন সময় পৌল প্রধান সেনাপতিকে বললেন, “আপনাকে কি কিছু বলতে পারি?” প্রধান সেনাপতি বললেন, “তুমি দেখছি গ্রীক ভাষা জান! মিসর দেশের যে লোকটা কিছু দিন আগে বিদ্রোহ শুরু করে চার হাজার খুনী বিদ্রোহীদের মরুভূমিতে নিয়ে গিয়েছিল, তুমি কি তবে সেই লোক নও?” তখন পৌল উত্তর দিলেন, “আমি যিহূদী, কিলিকিয়া প্রদেশের তার্ষ শহরের লোক। আমি যে-সে শহরের লোক নই। দয়া করে আমাকে লোকদের কাছে কথা বলতে দিন।” প্রধান সেনাপতির অনুমতি পেয়ে পৌল সিঁড়ির উপরে দাঁড়ালেন এবং হাত তুলে লোকদের চুপ করবার জন্য ইশারা করলেন। লোকেরা চুপ করলে পর পৌল ইব্রীয় ভাষায় তাদের বললেন, “ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন আমি আমার নিজের পক্ষে কথা বলি, শুনুন।” লোকেরা তাঁকে ইব্রীয় ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেল। তখন পৌল বললেন, “আমি একজন যিহূদী। কিলিকিয়ার তার্ষ শহরে আমার জন্ম, তবে আমি এই শহরেই বড় হয়েছি। গমলীয়েলের পায়ের কাছে বসে আমি আমাদের পূর্বপুরুষদের আইন-কানুন সম্পূর্ণভাবে শিক্ষালাভ করেছি। ঈশ্বর সম্বন্ধে আজ আপনারা যেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন আমি নিজেও তেমনি আগ্রহী ছিলাম। যীশুর পথে যারা চলত আমি তাদের অত্যাচার করে অনেককে মেরে ফেলতাম আর পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের ধরে জেলে দিতাম। এই কথা যে সত্যি, তার সাক্ষী মহাপুরোহিত ও মহাসভার সবাই। এমন কি, আমি তাঁদের কাছ থেকে দামেস্ক শহরের ধর্ম-নেতাদের দেবার জন্য চিঠি নিয়েছিলাম এবং ঐ ধরনের লোকদের বন্দী হিসাবে যিরূশালেমে এনে শাস্তি দেবার জন্য সেখানে যাচ্ছিলাম। “তখন বেলা প্রায় দুপুর। আমি দামেস্কের কাছাকাছি আসলে পর হঠাৎ আমার চারদিকে স্বর্গ থেকে একটা উজ্জ্বল আলো পড়ল। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম এবং শুনলাম কেউ যেন আমাকে বলছেন, ‘শৌল, শৌল, কেন তুমি আমার উপর অত্যাচার করছ?’ “আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘প্রভু, আপনি কে?’ “তিনি বললেন, ‘আমি নাসরতের যীশু, যাঁর উপর তুমি অত্যাচার করছ।’ যারা আমার সংগে ছিল তারা সেই আলো দেখল, কিন্তু যিনি আমার সংগে কথা বলছিলেন তাঁর কথা তারা বুঝল না। “তখন আমি বললাম, ‘প্রভু, আমি কি করব?’ “প্রভু বললেন, ‘ওঠো, দামেস্কে যাও। তোমার জন্য যা ঠিক করে রাখা হয়েছে তা সেখানেই তোমাকে বলা হবে।’ আমার সংগীরা হাত ধরে আমাকে দামেস্কে নিয়ে চলল, কারণ সেই উজ্জ্বল আলোতে আমি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। “পরে অননিয় নামে একজন লোক আমার কাছে আসলেন। তিনি মোশির আইন-কানুন ভক্তির সংগে পালন করতেন, আর সেখানকার সব যিহূদীরা তাঁকে খুব সম্মান করত। তিনি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ভাই শৌল, তোমার দেখবার শক্তি ফিরে আসুক।’ আর তখনই আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। “তখন অননিয় বললেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর তোমাকে বেছে নিয়েছেন যেন তুমি তাঁর ইচ্ছা জানতে পার, আর সেই ন্যায়বান লোককে, অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টকে দেখতে পাও এবং তাঁর মুখের কথা শুনতে পাও। তুমি তাঁরই সাক্ষী হবে এবং যা দেখেছ আর শুনেছ সব মানুষের কাছে তা বলবে। এখন তুমি কেন দেরি করছ? উঠে বাপ্তিস্ম গ্রহণ কর এবং পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য যীশুকে ডেকে তোমার সব পাপ ধুয়ে ফেল।’ “পরে আমি যিরূশালেমে ফিরে এসে যখন একদিন উপাসনা-ঘরে প্রার্থনা করছিলাম তখন আমি তন্দ্রার মত অবস্থায় পড়লাম। সেই অবস্থায় আমি দেখলাম প্রভু আমার সংগে কথা বলছেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি কর, এখনই যিরূশালেম ছেড়ে চলে যাও, কারণ আমার বিষয়ে তোমার সাক্ষ্য লোকে গ্রহণ করবে না।’ “আমি বললাম, ‘প্রভু, এই লোকেরা জানে, যারা তোমার উপর বিশ্বাস করত তাদের মারধর করে জেলে দেবার জন্য আমি এক সমাজ-ঘর থেকে অন্য সমাজ-ঘরে যেতাম। যখন তোমার সাক্ষী স্তিফানকে খুন করা হচ্ছিল তখন আমি সেখানে দাঁড়িয়ে সায় দিচ্ছিলাম, আর যারা তাঁকে খুন করছিল তাদের কাপড়-চোপড় পাহারা দিচ্ছিলাম।’ “তখন প্রভু আমাকে বললেন, ‘তুমি যাও, আমি তোমাকে দূরে অযিহূদীদের কাছে পাঠাব।’ ” লোকেরা এতক্ষণ পর্যন্ত পৌলের কথা শুনছিল, কিন্তু যখন তিনি অযিহূদীদের কথা বললেন তখন লোকেরা জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল, “ওকে পৃথিবী থেকে দূর করে দাও; ও বেঁচে থাকবার উপযুক্ত নয়।” লোকেরা যখন চিৎকার করছিল এবং কাপড়-চোপড় ছুঁড়ে আকাশে ধুলা ছড়াচ্ছিল, তখন প্রধান সেনাপতি পৌলকে সেনানিবাসে নিয়ে যাবার হুকুম দিলেন। কেন লোকেরা পৌলের বিরুদ্ধে এইভাবে চিৎকার করছে তা জানবার জন্য তিনি তাঁকে চাবুক মেরে জেরা করতে আদেশ দিলেন। পৌলকে যখন চাবুক মারবার জন্য বাঁধা হল, তখন যে শতপতি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন পৌল তাঁকে বললেন, “যাকে দোষী বলে এখনও ঠিক করা হয় নি এমন একজন রোমীয়কে চাবুক মারা কি আপনাদের পক্ষে আইন মত কাজ হচ্ছে?” এই কথা শুনে সেই শতপতি প্রধান সেনাপতির কাছে সেই খবর দিয়ে বললেন, “আপনি কি করতে যাচ্ছেন? এই লোকটি তো রোমীয়।” তখন প্রধান সেনাপতি পৌলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাকে বল দেখি, তুমি কি রোমীয়?” পৌল বললেন, “হ্যাঁ।” প্রধান সেনাপতি বললেন, “অনেক টাকা-পয়সা দিয়ে রোমীয় হবার অধিকার আমি কিনেছি।” পৌল বললেন, “কিন্তু আমি রোমীয় হয়ে জন্মেছি।” এই কথা শুনে যারা তাঁকে জেরা করতে যাচ্ছিল তারা তখনই চলে গেল। যখন প্রধান সেনাপতি বুঝতে পারলেন যে, তিনি একজন রোমীয়কে বেঁধেছিলেন তখন তিনি ভয় পেলেন। যিহূদীরা কেন পৌলকে দোষ দিচ্ছে তা ঠিকভাবে জানবার জন্য পরের দিন প্রধান সেনাপতি পৌলের বাঁধন খুলে দিলেন এবং প্রধান পুরোহিতদের ও মহাসভার লোকদের একসংগে মিলিত হবার আদেশ দিলেন। তারপর তিনি পৌলকে নিয়ে এসে তাঁদের সামনে দাঁড় করালেন। পৌল সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আমি আজ পর্যন্ত পরিষ্কার বিবেকে ঈশ্বরের প্রতি আমার কর্তব্য পালন করছি।” এই কথা শুনে মহাপুরোহিত অননিয় পৌলের কাছে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তাদের তাঁর মুখের উপর আঘাত করতে আদেশ করলেন। তখন পৌল অননিয়কে বললেন, “ভণ্ড, ঈশ্বর আপনাকেও আঘাত করবেন। আইন মত আমার বিচার করবার জন্য আপনি ওখানে বসেছেন, কিন্তু আমাকে মারতে আদেশ দিয়ে তো আপনি নিজেই আইন ভাংছেন।” যারা পৌলের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তারা তাঁকে বলল, “তুমি ঈশ্বরের মহাপুরোহিতকে অপমান করছ!” তখন পৌল বললেন, “ভাইয়েরা, আমি জানতাম না যে, উনি মহাপুরোহিত। যদি জানতাম তাহলে ঐ কথা বলতাম না, কারণ পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘তোমার জাতির নেতাকে অসম্মান কোরো না।’ ” সেই মহাসভার এক দল যে সদ্দূকী ও অন্য দল ফরীশী, এই কথা জেনে পৌল মহাসভার মধ্যে জোরে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আমি একজন ফরীশী ও ফরীশীর সন্তান। আমার বিচার হচ্ছে কারণ আমি বিশ্বাস করি যে, মৃতেরা আবার জীবিত হয়ে উঠবে।” তাঁর এই কথাতে ফরীশী ও সদ্দূকীদের মধ্যে ঝগড়া আরম্ভ হল। এতে মহাসভার লোকেরা ভাগ হয়ে গেলেন, কারণ সদ্দূকীরা বলে, “মৃতেরা আর জীবিত হয়ে উঠবে না।” এছাড়া তারা আরও বলে যে, স্বর্গদূতও নেই, কোন আত্মাও নেই; কিন্তু ফরীশীরা এ সবই বিশ্বাস করে। তখন ভীষণ গোলমাল শুরু হল এবং ফরীশী দলের কয়েকজন ধর্ম-শিক্ষক উঠে খুব জোর তর্কাতর্কি শুরু করে দিলেন। তাঁরা বললেন, “আমরা এই লোকটির কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো কোন আত্মা বা কোন স্বর্গদূত এর সংগে কথা বলেছেন।” সেই ঝগড়া এমন ভীষণ হয়ে উঠল যে, প্রধান সেনাপতির ভয় হল তাঁরা পৌলকে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলবেন। তিনি সৈন্যদের আদেশ দিলেন যেন তারা গিয়ে লোকদের হাত থেকে পৌলকে ছাড়িয়ে এনে সেনানিবাসে নিয়ে যায়। পরদিন রাতে প্রভু পৌলের কাছে দাঁড়িয়ে বললেন, “সাহসী হও, যিরূশালেমে যেমন তুমি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছ সেইভাবে রোমেও তোমাকে সাক্ষ্য দিতে হবে।” পরদিন সকালবেলা যিহূদীরা একটা ষড়যন্ত্র করল এবং পৌলকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত কিছুই খাবে না বলে শপথ করল। চল্লিশজনেরও বেশী লোক এই ষড়যন্ত্র করল। তারা প্রধান পুরোহিতদের ও যিহূদী বৃদ্ধ নেতাদের কাছে গিয়ে বলল, “পৌলকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত কিছুই খাব না বলে আমরা কঠিন শপথ করেছি। এখন আপনারা ও মহাসভার লোকেরা এই ব্যাপারে আরও ভাল করে তদন্ত করবার অজুহাতে পৌলকে আপনাদের সামনে আনবার জন্য প্রধান সেনাপতির কাছে খবর পাঠান। সে এখানে পৌঁছাবার আগেই আমরা তাঁকে শেষ করে ফেলবার জন্য প্রস্তুত হয়ে রইলাম।” কিন্তু পৌলের বোনের ছেলে এই ষড়যন্ত্রের কথা শুনতে পেয়ে সেনানিবাসে গেল এবং পৌলকে সেই খবর জানাল। তখন পৌল একজন শতপতিকে ডেকে বললেন, “এই যুবককে প্রধান সেনাপতির কাছে নিয়ে যান। তাঁর কাছে এর কিছু বলবার আছে।” তখন সেই শতপতি সেই যুবককে নিয়ে প্রধান সেনাপতির কাছে গিয়ে বললেন, “বন্দী পৌল আমাকে ডেকে পাঠিয়ে এই যুবককে আপনার কাছে নিয়ে আসতে বলল, কারণ আপনার কাছে তার নাকি কিছু বলবার আছে।” প্রধান সেনাপতি তখন সেই যুবকের হাত ধরে একপাশে নিয়ে গিয়ে বললেন, “আমাকে তুমি কি বলতে চাও?” সেই যুবক বলল, “যিহূদীরা ঠিক করেছে, পৌলের বিষয় আরও ভাল করে খবর নেবার অজুহাতে তাঁকে আগামী কাল মহাসভার সামনে নিয়ে যাবার জন্য আপনাকে অনুরোধ করবে। আপনি তাদের কথায় রাজী হবেন না, কারণ চল্লিশজনেরও বেশী লোক লুকিয়ে থেকে পৌলের জন্য অপেক্ষা করে আছে। পৌলকে খুন না করা পর্যন্ত এই লোকেরা কিছু খাবে না বলে শপথ করেছে। তারা প্রস্তুত হয়ে এখন কেবল আপনার রাজী হবার অপেক্ষায় আছে।” প্রধান সেনাপতি সেই যুবককে বিদায় করবার সময় এই আদেশ দিলেন, “এই কথা যে তুমি আমাকে জানিয়েছ তা কাউকে বোলো না।” পরে প্রধান সেনাপতি তাঁর দু’জন শতপতিকে ডেকে বললেন, “দু’শো সাধারণ সৈন্য, সত্তরজন ঘোড়সওয়ার সৈন্য এবং দু’শো বর্শাধারী সৈন্যকে আজ রাত ন’টার সময় কৈসরিয়াতে যাবার জন্য প্রস্তুত রাখ। আর পৌলের জন্যও ঘোড়ার ব্যবস্থা কোরো যাতে তাকে নিরাপদে প্রধান শাসনকর্তা ফীলিক্সের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়।” প্রধান সেনাপতি এই চিঠি লিখলেন: “আমি, ক্লৌদিয় লুসিয়, মহান শাসনকর্তা ফীলিক্সের কাছে এই চিঠি লিখছি। আমার শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। “যিহূদীরা এই লোকটিকে ধরে প্রায় খুন করে ফেলেছিল, কিন্তু আমি আমার সৈন্যদের নিয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এনেছি, কারণ আমি জানতে পারলাম সে একজন রোমীয়। পরে আমি জানতে চাইলাম কেন লোকেরা তাকে দোষী করছে। সেইজন্য তাদের মহাসভার কাছে আমি তাকে নিয়ে গেলাম। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাদের ধর্মের আইন-কানুনের বিষয় নিয়ে তারা তাকে দোষী করছে, কিন্তু মরবার বা জেলে যাবার মত এমন কোন দোষ তার নেই। যখন আমি জানতে পারলাম লোকেরা এই লোকটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তখনই আমি তাকে আপনার কাছে পাঠালাম। যারা তাকে দোষী করছে তাদেরও আমি আদেশ দিলাম যেন তারা এর দোষের বিষয়ে আপনার কাছে বলে।” তখন সৈন্যেরা প্রধান সেনাপতির আদেশ মত পৌলকে রাতের বেলা তাদের সংগে করে আন্তিপাত্রি শহর পর্যন্ত নিয়ে গেল। পরের দিন তারা ঘোড়সওয়ার সৈন্যদের সংগে পৌলকে পাঠিয়ে দিয়ে সেনানিবাসে ফিরে গেল। ঘোড়সওয়ার সৈন্যেরা কৈসরিয়াতে পৌঁছে চিঠিখানা ও পৌলকে প্রধান শাসনকর্তার হাতে দিল। প্রধান শাসনকর্তা চিঠিখানা পড়ে পৌল কোন্‌ জায়গার লোক তা জিজ্ঞাসা করলেন। পৌল যে কিলিকিয়া প্রদেশের লোক সেই কথা জানতে পেরে তিনি বললেন, “তোমাকে যারা দোষী করছে তারা এখানে পৌঁছালে পর আমি তোমার কথা শুনব।” পরে তিনি রাজা হেরোদের বাড়ীর হাজতে পৌলকে পাহারা দিয়ে রাখতে বললেন। পাঁচ দিন পরে মহাপুরোহিত অননিয় কয়েকজন যিহূদী বৃদ্ধ নেতা ও তর্তুল্ল নামে একজন উকিলকে নিয়ে কৈসরিয়াতে গেলেন এবং পৌলের বিরুদ্ধে প্রধান শাসনকর্তার কাছে নালিশ জানালেন। কিন্তু আপনার সময় যেন আর নষ্ট না হয় এইজন্য আমি এই অনুরোধ করি, আপনি দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। আমরা অল্প কথায় সব বলব। “আমরা দেখেছি এই লোকটা একটা আপদ; সব সময় সে গোলমালের সৃষ্টি করে থাকে। সারা জগতের যিহূদীদের মধ্যে সে গোলমাল বাধিয়ে বেড়ায়। সে নাসরতীয় নামে একটা ধর্ম-বিরুদ্ধ দলের নেতা। আমরা তাকে যে সব দোষ দিচ্ছি, আপনি নিজে তাকে জেরা করলে সব কিছুই জানতে পারবেন।” এই সব কথা যে সত্যি তাতে যিহূদীরাও সায় দিল। তখন প্রধান শাসনকর্তা পৌলকে ইশারা করলে পর পৌল বলতে লাগলেন, “আমি জানি, বেশ কয়েক বছর ধরে আপনি এই যিহূদী জাতির বিচার করে আসছেন; সেইজন্য আমি খুব খুশী হয়েই নিজের পক্ষে কথা বলছি। আজ বারো দিনের বেশী হয় নি আমি উপাসনা করবার জন্য যিরূশালেমে গিয়েছিলাম। আপনি খোঁজ নিলে তা সহজেই জানতে পারবেন। আমাকে যাঁরা দোষ দিচ্ছেন তাঁরা উপাসনা-ঘরে আমাকে কারও সংগে তর্কাতর্কি করতে দেখেন নি বা সমাজ-ঘরে কিম্বা শহরের অন্য কোথাও লোকদের উস্‌কানি দিতে দেখেন নি। আমার বিরুদ্ধে এখন তাঁরা যে দোষ দেখাচ্ছেন তার প্রমাণ তাঁরা আপনার কাছে দিতে পারবেন না। যাহোক, এই কথা আমি আপনার কাছে স্বীকার করছি যে, যীশু খ্রীষ্টের পথ, যাকে তাঁরা ধর্ম-বিরুদ্ধ পথ বলেন, আমি সেই পথেই আমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের উপাসনা করে থাকি। মোশির আইন-কানুনের সংগে যা কিছুর মিল আছে তাতে এবং নবীদের লেখায় আমি বিশ্বাস করি। তাঁরা যেমন আশা করেন তেমনি আমারও ঈশ্বরের উপর এই আশা আছে যে, সৎ কিম্বা অসৎ সবাইকে আবার জীবিত করা হবে। সেইজন্য আমি ঈশ্বর ও মানুষের কাছে সব সময় আমার বিবেককে পরিষ্কার রাখবার চেষ্টা করি। “অনেক বছর পরে আমি যিরূশালেমে গিয়েছিলাম যেন আমার জাতির গরীব লোকদের কিছু টাকা-পয়সা দিতে পারি এবং পশু উৎসর্গ করতে পারি। নিজেকে শুচি করবার পর যখন আমি সেই কাজ করছিলাম তখনই তাঁরা আমাকে উপাসনা-ঘরে দেখতে পেয়েছিলেন। আমার কাছে লোকজনের ভিড়ও হয় নি বা আমাকে নিয়ে কোন গোলমালও হয় নি। কিন্তু এশিয়া প্রদেশের কয়েকজন যিহূদী সেখানে ছিল। আপনার কাছে সেই যিহূদীদেরই আসা উচিত ছিল এবং আমাকে দোষ দেবার যদি কিছু থাকে তবে তাদেরই তা দেওয়া উচিত ছিল। কিম্বা এখানে যাঁরা উপস্থিত আছেন তাঁরাই বলুন, আমি যখন মহাসভার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন তাঁরা আমার কি দোষ পেয়েছিলেন। কেবল এই একটি বিষয়ে তাঁরা আমার দোষ দিতে পারেন যে, আমি তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলেছিলাম, ‘মৃতদের আবার জীবিত হয়ে উঠবার বিষয় নিয়ে আজ আপনাদের সামনে আমার বিচার হচ্ছে।’ ” যীশুর পথের বিষয়ে ফীলিক্স খুব ভাল করেই জানতেন। তিনি বিচার করা বন্ধ করে বললেন, “প্রধান সেনাপতি লুসিয় আসলে পর আমি তোমাদের বিচার শেষ করব।” তিনি পৌলকে পাহারা দেবার জন্য শতপতিকে আদেশ দিলেন, কিন্তু তাঁকে কিছুটা স্বাধীনভাবে রাখতে বললেন। তিনি অনুমতি দিলেন যেন পৌলের বন্ধুরা এসে দরকার মত তাঁর দেখাশোনা করতে পারে। কয়েক দিন পরে ফীলিক্স তাঁর যিহূদী স্ত্রী দ্রুষিল্লাকে সংগে করে আসলেন। তিনি পৌলকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর কাছে খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসের কথা শুনলেন। পৌল যখন সৎভাবে চলা, নিজেকে দমনে রাখা এবং আগামী বিচারের বিষয়ে বললেন, তখন ফীলিক্স ভয় পেয়ে বললেন, “তুমি এখন যাও; সময়-সুযোগ মত আমি তোমাকে ডেকে পাঠাব।” তিনি আশা করেছিলেন পৌল তাঁকে ঘুষ দেবেন। সেইজন্য বারবার পৌলকে ডাকিয়ে এনে তিনি তাঁর সংগে কথা বলতেন। দু’বছর পার হয়ে গেলে পর ফীলিক্সের জায়গায় পর্কীয় ফীষ্ট আসলেন। ফীলিক্স যিহূদীদের খুশী করবার জন্য পৌলকে জেলখানাতেই রেখে গেলেন। সেই প্রদেশে আসবার তিন দিন পরে ফীষ্ট কৈসরিয়া থেকে যিরূশালেমে গেলেন। তখন প্রধান পুরোহিতেরা ও যিহূদী নেতারা তাঁর কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে নালিশ জানালেন। তাঁরা ফীষ্টকে বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন যেন তিনি তাঁদের উপর দয়া করে পৌলকে যিরূশালেমে ডেকে পাঠান। এর কারণ এই যে, তাঁরা পথের মধ্যে লুকিয়ে থেকে পৌলকে খুন করবার ষড়যন্ত্র করছিলেন। তখন ফীষ্ট বললেন, “পৌলকে কৈসরিয়াতে আটক রাখা হয়েছে এবং আমি নিজেই শিগ্‌গির সেখানে যাচ্ছি। তোমাদের কয়েকজন ক্ষমতাশালী লোক আমার সংগে যাক এবং যদি সেই লোক কোন দোষ করে থাকে তবে তা দেখিয়ে দিক।” ফীষ্ট তাঁদের মধ্যে আট-দশ দিন কাটিয়ে কৈসরিয়াতে ফিরে গেলেন। পরের দিন তিনি বিচার-সভায় বসে পৌলকে তাঁর সামনে আনবার হুকুম দিলেন। যে যিহূদীরা যিরূশালেম থেকে এসেছিলেন পৌল সেখানে আসলে পর তাঁরা তাঁর চারদিকে দাঁড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক ভীষণ রকমের দোষ দিলেন, কিন্তু সেগুলোর কোন প্রমাণ দিতে পারলেন না। তখন পৌল নিজের পক্ষে এই কথা বললেন, “আমি যিহূদীদের আইন- কানুন বা উপাসনা-ঘর কিম্বা রোম-সম্রাটের বিরুদ্ধে কোন অন্যায় করি নি।” ফীষ্ট যিহূদীদের খুশী করবার জন্য পৌলকে বললেন, “এই সব দোষের বিচার আমি যেন যিরূশালেমে করতে পারি সেইজন্য তুমি কি সেখানে যেতে রাজী আছ?” তখন পৌল বললেন, “আমি এখন রোমীয় বিচার-সভায় দাঁড়িয়ে আছি এবং রোমীয় সরকারের কাছেই আমার বিচার হওয়া উচিত। আপনি নিজে তো ভাল করেই জানেন যে, আমি যিহূদীদের উপর কোন অন্যায় করি নি। যাহোক, যদি আমি মৃত্যুর উপযুক্ত কোন দোষ করে থাকি তবে মরতে আমি রাজী আছি। কিন্তু এই যিহূদীরা আমার বিরুদ্ধে যে দোষ দিচ্ছেন তা যদি সত্যি না হয় তবে এঁদের হাতে আমাকে ছেড়ে দেবার অধিকার কারও নেই। আমি সম্রাটের কাছে আপীল করছি।” ফীষ্ট তাঁর পরামর্শদাতাদের সংগে পরামর্শ করে বললেন, “তুমি সম্রাটের কাছে যখন আপীল করেছ তখন সম্রাটের কাছেই যাবে।” এর কিছু দিন পরে যিহূদীদের রাজা আগ্রিপ্প ও তাঁর স্ত্রী বর্ণীকী ফীষ্টকে শুভেচ্ছা জানাবার জন্য কৈসরিয়াতে আসলেন। তাঁরা অনেক দিন সেখানে ছিলেন বলে ফীষ্ট পৌলের বিষয় রাজাকে জানালেন। তিনি বললেন, “ফীলিক্স একজন লোককে এখানে বন্দী হিসাবে রেখে গেছেন। আমি যখন যিরূশালেমে গিয়েছিলাম তখন প্রধান পুরোহিতেরা ও যিহূদী বৃদ্ধ নেতারা এই লোকের বিরুদ্ধে অনেক নালিশ জানিয়েছিল এবং দোষী হিসাবে একে শাস্তি দিতে বলেছিল। “আমি তাদের বললাম, ‘কোন লোকের বিরুদ্ধে যদি কোন নালিশ করা হয় তবে যারা নালিশ করেছে তাদের সামনে নিজেকে নির্দোষ বলে প্রমাণ করবার সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে শাস্তি দেবার কথা রোমীয়দের চলতি নিয়মে নেই।’ “সেই যিহূদীরা আমার সংগে আসলে পর আমি দেরি না করে পরদিনই বিচার করতে বসলাম এবং সেই লোককে আনতে আদেশ করলাম। যে লোকেরা তাকে দোষ দিচ্ছিল তারা যখন কথা বলবার জন্য উঠে দাঁড়াল তখন আমি যেমন ভেবেছিলাম সেই রকম কোন নালিশ তারা করল না, বরং তাদের ধর্ম-মত এবং যীশু বলে একজন মৃত লোক সম্বন্ধে তাকে দোষী করল। পৌল নামে সেই লোকটা দাবি করে যে, সেই যীশু বেঁচে আছে। এই সব ব্যাপারের খোঁজ কি করে নেব তা বুঝতে না পেরে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই সব দোষের যেন বিচার করা যায় সেইজন্য সেই লোক যিরূশালেমে যেতে রাজী আছে কিনা। কিন্তু সে যখন সম্রাটের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে আমার কাছে আপীল করল তখন সম্রাটের কাছে না পাঠানো পর্যন্ত তাকে পাহারা দিয়ে রাখতে আমি আদেশ দিয়েছি।” তখন আগ্রিপ্প ফীষ্টকে বললেন, “আমি নিজে এই লোকের কথা শুনতে ইচ্ছা করি।” ফীষ্ট বললেন, “কালকে শুনতে পাবেন।” পরদিন রাজা আগ্রিপ্প ও বর্ণীকী প্রধান সেনাপতিদের ও শহরের প্রধান প্রধান লোকদের নিয়ে মহা জাঁকজমকের সংগে সভা-ঘরের মধ্যে ঢুকলেন। ফীষ্টের আদেশে পৌলকে সেখানে আনা হল। তখন ফীষ্ট বললেন, “রাজা আগ্রিপ্প এবং আর যাঁরা এখানে উপস্থিত আছেন, আপনারা এই লোকটাকে দেখছেন। সমস্ত যিহূদীরা যিরূশালেমে ও কৈসরিয়াতে আমার কাছে আপীল করেছে এবং চিৎকার করে বলেছে যে, এই লোকটার আর বেঁচে থাকা উচিত নয়। কিন্তু আমি দেখলাম, মৃত্যুর শাস্তি দেবার মত কোন দোষ সে করে নি। তবে সে নিজেই যখন সম্রাটের কাছে আপীল করেছে তখন আমি তাকে সম্রাটের কাছে পাঠানোই ঠিক করলাম, কিন্তু মহান সম্রাটের কাছে লিখবার মত এমন সঠিক কিছুই পেলাম না। সেইজন্য আমি আপনাদের সকলের সামনে, বিশেষ করে রাজা আগ্রিপ্প আপনার সামনে তাকে এনেছি যাতে তাকে জেরা করে কিছু অন্ততঃ আমি লিখতে পারি; কারণ আমার মতে, কোন বন্দীকে চালান দেবার সময় তার দোষগুলোও জানানো উচিত।” তখন আগ্রিপ্প পৌলকে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলবার জন্য তোমাকে অনুমতি দেওয়া গেল।” তখন পৌল হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজের পক্ষে এই কথা বললেন, “হে রাজা আগ্রিপ্প, যিহূদীরা আমাকে যে সব দোষ দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আপনার সামনে আজ আমার নিজের পক্ষে কথা বলবার সুযোগ পেয়েছি বলে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি, বিশেষ করে যখন যিহূদীদের চলতি নিয়ম এবং তর্কের বিষয়গুলো সম্বন্ধে আপনার ভাল করেই জানা আছে। এইজন্য ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনতে আমি আপনাকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি। “ছেলেবেলা থেকে, অর্থাৎ আমার জীবনের আরম্ভ থেকে আমার নিজের দেশের এবং পরে যিরূশালেমের লোকদের মধ্যে আমি কিভাবে জীবন কাটিয়েছি যিহূদীরা সবাই তা জানে। তারা অনেক দিন ধরেই আমাকে চেনে এবং ইচ্ছা করলে এই সাক্ষ্য দিতে পারে যে, আমাদের ধর্মের ফরীশী নামে যে গোঁড়া দল আছে আমি সেই ফরীশীর জীবনই কাটিয়েছি। ঈশ্বর আমার পূর্বপুরুষদের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তাতে আমি আশা রাখি বলে এখন আমার বিচার করা হচ্ছে। আমাদের বারো গোষ্ঠীর লোকেরা দিনরাত মন-প্রাণ দিয়ে ঈশ্বরের সেবা করে সেই প্রতিজ্ঞার পূর্ণতা দেখবার আশায় আছে। মহারাজ, সেই আশার জন্যই যিহূদীরা আমাকে দোষ দিচ্ছে। ঈশ্বর যে মৃতদের জীবিত করেন এই কথা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে আপনারা কেন মনে করছেন? “আমি নিজেই বিশ্বাস করতাম, নাসরতের যীশুর বিরুদ্ধে যা করা যায় তার সবই আমার করা উচিত, আর ঠিক তা-ই আমি যিরূশালেমে করছিলাম। প্রধান পুরোহিতদের কাছ থেকে ক্ষমতা পেয়ে আমি খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসী অনেককে জেলে দিতাম এবং তাদের মেরে ফেলবার সময় তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিতাম। তাদের শাস্তি দেবার জন্য আমি প্রায়ই এক সমাজ- ঘর থেকে অন্য সমাজ-ঘরে যেতাম এবং যীশুর বিরুদ্ধে কথা বলবার জন্য আমি তাদের উপর জোর খাটাতাম। তাদের উপর আমার এত রাগ ছিল যে, তাদের উপর অত্যাচার করবার জন্য আমি বিদেশের শহরগুলোতে পর্যন্ত যেতাম। “এইভাবে একবার প্রধান পুরোহিতদের কাছ থেকে ক্ষমতা ও আদেশ নিয়ে আমি দামেস্কে যাচ্ছিলাম। মহারাজ, তখন বেলা প্রায় দুপুর। পথের মধ্যে সুর্য থেকেও উজ্জ্বল একটা আলো স্বর্গ থেকে আমার ও আমার সংগীদের চারদিকে জ্বলতে লাগল। আমরা সবাই মাটিতে পড়ে গেলাম এবং আমি শুনলাম ইব্রীয় ভাষায় কে যেন আমাকে বলছেন, ‘শৌল, শৌল, কেন তুমি আমার উপর অত্যাচার করছ? কাঁটা বসানো লাঠির মুখে লাথি মেরে কি তুমি নিজের ক্ষতি করছ না?’ “তখন আমি বললাম, ‘প্রভু, আপনি কে?’ “প্রভু বললেন, ‘আমি যীশু, যাঁর উপর তুমি অত্যাচার করছ। এখন ওঠো, তোমার পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াও। সেবাকারী ও সাক্ষী হিসাবে তোমাকে নিযুক্ত করবার জন্য আমি তোমাকে দেখা দিলাম। তুমি আমাকে যেভাবে দেখলে এবং আমি তোমাকে যা দেখাব তা তুমি অন্যদের কাছে বলবে। “রাজা আগ্রিপ্প, এইজন্য স্বর্গ থেকে এই দর্শনের মধ্য দিয়ে আমাকে যা বলা হয়েছে তার অবাধ্য আমি হই নি। যারা দামেস্কে আছে প্রথমে তাদের কাছে, তার পরে যারা যিরূশালেমে এবং সমস্ত যিহূদিয়া প্রদেশে আছে তাদের কাছে এবং অযিহূদীদের কাছেও আমি প্রচার করেছি যে, পাপ থেকে মন ফিরিয়ে ঈশ্বরের দিকে তাদের ফেরা উচিত, আর এমন কাজ করা উচিত যার দ্বারা প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তারা মন ফিরিয়েছে। এইজন্যই যিহূদীরা আমাকে উপাসনা-ঘরে ধরে মেরে ফেলবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ঈশ্বর আজ পর্যন্ত আমাকে সাহায্য করে আসছেন এবং সেইজন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়ে ছোট-বড় সবার কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছি। নবীরা এবং মোশি যা ঘটবার কথা বলে গেছেন তার বাইরে আমি কিছুই বলছি না। সেই কথা হল এই যে, মশীহকে কষ্টভোগ করতে হবে এবং তাঁকেই মৃত্যু থেকে প্রথমে জীবিত হয়ে উঠে তাঁর নিজের জাতির লোকদের ও অযিহূদীদের কাছে আলোর রাজ্যের বিষয়ে ঘোষণা করতে হবে।” পৌল এইভাবে যখন নিজের পক্ষে কথা বলছিলেন তখন ফীষ্ট তাঁকে বাধা দিয়ে চিৎকার করে বললেন, “পৌল, তুমি পাগল হয়ে গেছ। তুমি অনেক পড়াশোনা করেছ আর সেই পড়াশুনাই তোমাকে পাগল করে তুলেছে।” তখন পৌল বললেন, “মাননীয় ফীষ্ট, আমি পাগল নই। আমি যা বলছি তা সত্যি এবং যুক্তিপূর্ণ। রাজা তো এই সব বিষয় জানেন এবং আমি তাঁর সংগে খোলাখুলিই সব কথা বলতে পারি। আর এই কথা আমি নিশ্চয় জানি যে, এর কিছুই তাঁর চোখ এড়ায় নি, কারণ এই সব ঘটনা তো গোপনে ঘটে নি। রাজা আগ্রিপ্প, আপনি কি নবীদের কথা বিশ্বাস করেন? আমি জানি আপনি করেন।” তখন আগ্রিপ্প পৌলকে বললেন, “তুমি কি এত অল্প সময়ের মধ্যেই আমাকে খ্রিষ্িটয়ান করবার চেষ্টা করছ?” পৌল বললেন, “সময় অল্প হোক বা বেশী হোক, আমি ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করি যে, কেবল আপনি নন, কিন্তু যাঁরা আজ আমার কথা শুনছেন তাঁরা সবাই যেন আমার মত হন-কেবল এই শিকল ছাড়া।” তখন রাজা উঠলেন এবং তাঁর সাথে সাথে প্রধান শাসনকর্তা ফীষ্ট ও বর্ণীকী এবং যাঁরা তাঁদের সংগে বসে ছিলেন সবাই উঠে দাঁড়ালেন। তারপর তাঁরা সেই ঘর ছেড়ে চলে গেলেন এবং একে অন্যকে বলতে লাগলেন, “এই লোকটি মৃত্যুর শাস্তি পাবার বা জেল খাটবার মত কিছুই করে নি।” আগ্রিপ্প ফীষ্টকে বললেন, “এই লোকটি যদি সম্রাটের কাছে আপীল না করত তবে তাকে ছেড়ে দেওয়া যেত।” জাহাজে করে আমাদের ইটালীতে নিয়ে যাওয়া স্থির হলে পর পৌল এবং আরও কয়েকজন বন্দীকে যুলিয় নামে একজন শতপতির হাতে দেওয়া হল। যুলিয় ছিলেন সম্রাটের নিজের সৈন্যদলের একজন শতপতি। আমরা আদ্রামুত্তীয় বন্দরের একটা জাহাজে উঠে যাত্রা শুরু করলাম। এশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন বন্দরে যাবার জন্য জাহাজখানা প্রস্তুত হয়েই ছিল। ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশের থিষলনীকী শহরের আরিষ্টার্খ আমাদের সংগে ছিলেন। আমাদের জাহাজ পরের দিন সীদোনে থামল। যুলিয় পৌলের সংগে বেশ ভাল ব্যবহার করলেন এবং তাঁকে তাঁর বন্ধুদের কাছে যাবার অনুমতি দিলেন যেন তাঁর বন্ধুরা তাঁকে দরকারী জিনিসপত্র দিতে পারে। পরে সেখান থেকে আবার আমাদের জাহাজ ছাড়ল। বাতাস আমাদের উল্টাদিকে থাকাতে সাইপ্রাস দ্বীপের যে দিকটাতে বাতাস ছিল না আমরা সেই দিক ধরে চললাম। পরে আমরা কিলিকিয়া ও পাম্‌ফুলিয়ার সামনে যে সাগর ছিল সেই সাগর পার হয়ে লুকিয়া প্রদেশের মুরা শহরে উপস্থিত হলাম। শতপতি সেখানে আলেক্‌জান্দ্রিয়ার একটা জাহাজ পেলেন। সেই জাহাজটা ইটালী দেশে যাচ্ছিল বলে তিনি আমাদের নিয়ে সেই জাহাজে উঠলেন। আমাদের জাহাজখানা অনেক দিন ধরে খুব আস্তে আস্তে চলে খুব কষ্টে ক্লীদোন শহরের কাছাকাছি উপস্থিত হল, কিন্তু বাতাস আমাদের আর এগিয়ে যেতে দিল না। তখন আমরা ক্রীট দ্বীপের যে দিকে বাতাস ছিল না সেই দিক ধরে সল্‌মোনীর পাশ দিয়ে চললাম। সাগরের কিনার ধরে কষ্ট করে চলে আমরা সুন্দর পোতাশ্রয় বলে একটা জায়গায় আসলাম। তার কাছেই ছিল লাসেয়া শহর। এইভাবে অনেক দিন কেটে গেল। তখন উপবাস-পর্ব শেষ হয়ে শীতকাল প্রায় এসে গেছে। কাজেই জাহাজে করে যাওয়া তখন একটা বিপদের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল। এইজন্য পৌল জাহাজের লোকদের সাবধান করবার জন্য বললেন, “দেখুন, আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের এই যাত্রায় খুব ক্ষতি হবে। সেই ক্ষতি যে কেবল জাহাজ আর মালপত্রের হবে তা নয়, আমাদের জীবনেরও ক্ষতি হবে।” শতপতি কিন্তু পৌলের কথা না শুনে জাহাজের কাপ্তেন ও জাহাজের মালিকের কথা শুনলেন। বন্দরটা শীতকাল কাটাবার উপযুক্ত জায়গা নয় বলে বেশীর ভাগ লোক ঠিক করল যে, সেখান থেকে যাত্রা করে সম্ভব হলে ফৈণীকে গিয়ে শীতকাল কাটানো হবে। ফৈণীক ছিল ক্রীট দ্বীপের জাহাজ থামাবার জায়গা। এই জায়গাটার দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক খোলা ছিল। পরে যখন আস্তে আস্তে দখিনা বাতাস বইতে লাগল তখন তারা মনে করল তারা যা চেয়েছিল তা-ই হয়েছে। এইজন্য তারা জাহাজের নোংগর তুলে ক্রীট দ্বীপের কিনার ধরে চলল। কিন্তু একটু পরেই সেই দ্বীপ থেকে উরাকুলো বলে এক ভীষণ তুফান শুরু হল, আর জাহাজখানা সেই তুফানে পড়ল। আমরা বাতাসের মুখে এগিয়ে যেতে পারলাম না; সেইজন্য এগিয়ে যাবার চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে জাহাজখানা বাতাসে ভেসে যেতে দিলাম। পরে কৌদা নামে একটা ছোট দ্বীপের যে দিকে বাতাস ছিল না আমরা সেই দিক ধরে চললাম এবং জাহাজে যে নৌকা থাকে সেই নৌকাখানা খুব কষ্ট করে ধ্বংসের হাত থেকে আমরা বাঁচালাম। লোকেরা নৌকাখানা জাহাজে টেনে তুলল এবং তার পরে দড়ি দিয়ে জাহাজের খোলটা বাঁধল যেন তার তক্তাগুলো আলাদা হয়ে না পড়ে। সুর্তী নামে সাগরের চরে জাহাজ আট্‌কাবার ভয়ে পালগুলো নামিয়ে ফেলে জাহাজখানা বাতাসে চলতে দেওয়া হল। ঝড়ের ভীষণ আঘাতে আমাদের জাহাজখানা এমনভাবে দুলতে লাগল যে, পরের দিন লোকেরা জাহাজের মালপত্র জলে ফেলে দিতে লাগল। তৃতীয় দিনে তারা নিজের হাতে জাহাজের সাজ-সরঞ্জামও ফেলে দিল। অনেক দিন ধরে সূর্য বা তারা কিছুই দেখা গেল না এবং ভীষণ ঝড় বইতেই থাকল। শেষে আমরা রক্ষা পাবার সব আশাই ছেড়ে দিলাম। লোকেরা অনেক দিন ধরে কিছু খায় নি বলে পৌল তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “দেখুন, আমার কথা শুনে ক্রীট দ্বীপ থেকে জাহাজ না ছাড়া আপনাদের উচিত ছিল। তাহলে এই বিপদ ও ক্ষতির হাত থেকে আপনারা রক্ষা পেতেন। কিন্তু এখন আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা মনে সাহস রাখুন, কারণ আপনাদের কেউই মরবেন না; কেবল এই জাহাজখানাই নষ্ট হবে। আমি যাঁর লোক এবং যাঁর সেবা আমি করি সেই ঈশ্বরের একজন দূত গত রাতে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘পৌল, ভয় কোরো না। তোমাকে সম্রাট কৈসরের সামনে দাঁড়াতে হবে। এই জাহাজে যারা তোমার সংগে যাচ্ছে তাদের সকলের জীবন ঈশ্বর দয়া করে তোমাকে দান করেছেন।’ এইজন্য আপনারা মনে সাহস রাখুন। ঈশ্বরের উপর আমার এই বিশ্বাস আছে যে, তিনি আমাকে যা বলেছেন তা-ই হবে। তবে আমরা কোন দ্বীপের উপর গিয়ে পড়ব।” আমরা আদ্রিয়া সাগরের উপর দিয়ে এইভাবে চলতে থাকলাম। ঝড়ের চৌদ্দ দিনের দিন মাঝরাতে নাবিকদের মনে হল তারা ডাংগার কাছে এসেছে। তারা মেপে দেখল সেখানকার জল আশি হাত গভীর। এর কিছুক্ষণ পরে তারা আবার মেপে দেখল যে, সেখানে জল ষাট হাত। পাথরের গায়ে ধাক্কা লাগবার ভয়ে জাহাজের পিছন দিক থেকে তারা চারটা নোংগর ফেলে দিল এবং দিনের আলোর জন্য প্রার্থনা করতে লাগল। পরে জাহাজের নাবিকেরা পালিয়ে যাবার চেষ্টায় জাহাজের সামনের দিক থেকে নোংগর ফেলবার ভান করে জাহাজের নৌকাখানা সাগরে নামিয়ে দিল। তখন পৌল শতপতি ও সৈন্যদের বললেন, “এই নাবিকেরা জাহাজে না থাকলে আপনারা রক্ষা পাবেন না।” তখন সৈন্যেরা নৌকার দড়ি কেটে দিল যাতে নৌকাটা জলে পড়ে যায়। সকাল হবার আগে পৌল সকলকে কিছু খাওয়ার অনুরোধ করে বললেন, “আজ চৌদ্দ দিন হল, কি হবে না হবে সেই চিন্তা করে আপনারা না খেয়ে আছেন-কোন খাবারই খান নি। এখন আমি আপনাদের কিছু খেয়ে নেবার জন্য অনুরোধ করছি। বেঁচে থাকবার জন্য আপনাদের তো কিছু খাওয়া দরকার। দেখবেন, আপনাদের মাথার একটা চুল পর্যন্ত নষ্ট হবে না।” এই কথা বলে পৌল রুটি নিয়ে তাদের সকলের সামনেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তা ভেংগে খেতে লাগলেন। তখন তারা সবাই সাহস পেয়ে খেতে লাগল। আমরা জাহাজে মোট দু’শো ছিয়াত্তরজন ছিলাম। সবাই পেট ভরে খেলে পর জাহাজের ভার কমাবার জন্য সমস্ত গম সাগরে ফেলে দেওয়া হল। সকালবেলা তারা জায়গাটা চিনতে পারল না, কিন্তু এমন একটা ছোট উপসাগর দেখতে পেল যার কিনার বালিতে ভরা ছিল। তখন তারা ঠিক করল, সম্ভব হলে জাহাজখানা সেই কিনারে তুলে দেবে। এইজন্য তারা জাহাজের নোংগরগুলো কেটে সাগরেই ফেলে দিল এবং হালের বাঁধনের দড়িগুলো খুলে দিল। এর পরে তারা বাতাসের মুখে সামনের পাল খাটিয়ে দিল এবং কিনারের দিকে এগিয়ে গিয়ে চরে আটকে গেল। সামনের অংশটা তাড়াতাড়ি বসে যাওয়াতে জাহাজটা অচল হল আর ঢেউয়ের আঘাতে পিছন দিকটা টুকরা টুকরা হয়ে ভেংগে যেতে লাগল। তখন সৈন্যেরা বন্দীদের মেরে ফেলবে বলে ঠিক করল, যেন তাদের মধ্যে কেউ সাঁতার দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু শতপতি পৌলের প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিলেন বলে সৈন্যদের ইচ্ছামত কাজ করতে দিলেন না। তিনি আদেশ দিলেন, যারা সাঁতার জানে তারা প্রথমে জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়ে পারে গিয়ে উঠুক, আর বাকি সবাই জাহাজের তক্তা বা অন্য কোন টুকরা ধরে সেখানে যাক। এইভাবে সবাই নিরাপদে ডাংগায় পৌঁছাল। আমরা নিরাপদে পারে পৌঁছে জানতে পারলাম দ্বীপটার নাম মাল্টা। সেই দ্বীপের লোকেরা আমাদের সংগে খুব ভাল ব্যবহার করল। তখন বৃষ্টি পড়ছিল এবং ঠাণ্ডা ছিল বলে তারা আগুন জ্বেলে আমাদের সবাইকে ডাকল। পৌল এক বোঝা শুকনা কাঠ জড়ো করে আগুনে দেবার সময় একটা বিষাক্ত সাপ আগুনের তাপে সেই বোঝা থেকে বের হয়ে পৌলের হাত কামড়ে ধরল। সাপটাকে পৌলের হাতে ঝুলতে দেখে সেই দ্বীপের লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, “এই লোকটা নিশ্চয়ই খুনী, কারণ সাগরের হাত থেকে রক্ষা পেলেও ন্যায়দেবতা তাকে বাঁচতে দিলেন না।” কিন্তু পৌল যখন হাত ঝাড়া দিয়ে সাপটা আগুনে ফেলে দিলেন তখন তাঁর কোনই ক্ষতি হল না। লোকেরা ভাবছিল তাঁর দেহ ফুলে উঠবে বা হঠাৎ তিনি মারা যাবেন। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তাঁর কিছু হল না দেখে তারা মত বদলে বলতে লাগল, “উনি দেবতা।” সেই জায়গার কাছেই পুব্লিয় নামে সেই দ্বীপের প্রধান লোকের একটা জমিদারি ছিল। পুব্লিয় তাঁর বাড়ীতে আমাদের ডাকলেন এবং তিন দিন ধরে খুব আদরের সংগে আমাদের সেবা-যত্ন করলেন। সেই সময় পুব্লিয়ের বাবা জ্বর ও আমাশা রোগে বিছানায় পড়ে ভুগছিলেন। পৌল ভিতরে তাঁর কাছে গিয়ে প্রার্থনা করলেন এবং তাঁর গায়ে হাত দিয়ে তাঁকে সুস্থ করলেন। এই ঘটনার পরে সেই দ্বীপের বাকি সব রোগীরা এসে সুস্থ হল। তারা নানা ভাবেই আমাদের সম্মান দেখাল এবং পরে জাহাজ ছাড়বার সময় আমাদের দরকারী সমস্ত জিনিসপত্র জাহাজে বোঝাই করে দিল। এর তিন মাস পরে আমরা একটা জাহাজে করে যাত্রা করলাম। জাহাজটা সেই দ্বীপেই শীতকাল কাটিয়েছিল। সেটা ছিল আলেক্‌জান্দ্রিয়া শহরের জাহাজ এবং তার মাথায় যমজ দেবের মূর্তি খোদাই করা ছিল। আমরা সুরাকুষে জাহাজ বেঁধে সেখানে তিন দিন রইলাম। সেখান থেকে যাত্রা করে আমরা রীগিয়তে পৌঁছালাম। পরের দিন দখিনা বাতাস উঠল এবং তার পরের দিন আমরা পূতিয়লীতে পৌঁছালাম। সেখানে আমরা কয়েকজন বিশ্বাসী ভাইয়ের দেখা পেলাম। তাদের সংগে সপ্তাখানেক কাটাবার জন্য তারা আমাদের অনুরোধ করল। এইভাবে আমরা রোমে আসলাম। সেখানকার বিশ্বাসী ভাইয়েরা আমাদের আসবার খবর শুনেছিল। পথে আমাদের সংগী হওয়ার জন্য তাদের কেউ কেউ আপ্পিয়েরহাট, কেউ কেউ তিন- সরাই গ্রাম পর্যন্ত এসেছিল। এই লোকদের দেখে পৌল ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তিনি নিজে উৎসাহ পেলেন। আমরা রোমে পৌঁছালে পর পৌল আলাদা ঘরে থাকবার অনুমতি পেলেন। একজন সৈন্য তাঁকে পাহারা দিত। তিন দিন পরে পৌল সেখানকার যিহূদী নেতাদের ডেকে একসংগে মিলিত করলেন। তাঁরা মিলিত হলে পর পৌল তাঁদের বললেন, “আমার ভাইয়েরা, যদিও আমি আমাদের জাতির বিরুদ্ধে বা পূর্বপুরুষদের চলতি নিয়মের বিরুদ্ধে কিছুই করি নি, তবুও যিরূশালেমে আমাকে ধরা হয়েছে এবং রোমীয়দের হাতে দেওয়া হয়েছে। রোমীয়েরা আমাকে জেরা করে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল, কারণ মৃত্যুর উপযুক্ত কোন দোষ আমি করি নি। কিন্তু যিহূদীরা এতে বাধা দেওয়াতে বাধ্য হয়ে আমি সম্রাটের কাছে আপীল করেছি। অবশ্য আমি আমার নিজের লোকদের কোন দোষ দিতে আসি নি। এইজন্যই আমি আপনাদের সংগে দেখা করতে ও কথা বলতে চেয়েছি। ইস্রায়েল জাতির যে আশা আছে সেই আশার জন্যই আমাকে এই শিকল দিয়ে বাঁধা হয়েছে।” তখন যিহূদী নেতারা বললেন, “আপনার সম্বন্ধে যিহূদিয়া থেকে আমরা কোন চিঠি পাই নি। যে ভাইয়েরা সেখান থেকে এসেছেন তাঁরাও কেউ আপনার সম্বন্ধে কিছুই জানান নি বা কোন মন্দ কথা বলেন নি। তবে আমরা আপনার মতামত শুনতে চাই, কারণ আমরা জানি সব জায়গাতেই লোকেরা সেই দলের বিরুদ্ধে কথা বলে।” পৌলের সংগে মিলিত হবার জন্য তাঁরা একটা দিন ঠিক করলেন। পৌল যেখানে থাকতেন সেখানে তাঁরা ছাড়া আরও অনেকে আসলেন। তখন পৌল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে তাঁদের জানালেন ও বুঝালেন। মোশির আইন-কানুন ও নবীদের বইয়ের মধ্য থেকে যীশুর বিষয় দেখিয়ে তাঁর সম্বন্ধে তাঁদের বিশ্বাস জন্মাতে চেষ্টা করলেন। তিনি যা বলেছিলেন তাতে কেউ কেউ বিশ্বাস করলেন, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করলেন না। পৌলের কথায় তাঁদের মধ্যে মতের অমিল হল আর তাঁরা সেখান থেকে চলে গেলেন। তাঁরা চলে যাবার আগে পৌল বললেন, “পবিত্র আত্মা নবী যিশাইয়ের মধ্য দিয়ে আপনাদের পূর্বপুরুষদের কাছে সত্যি কথাই বলেছিলেন যে, এই লোকদের কাছে গিয়ে বল, ‘তোমরা শুনতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই বুঝবে না; দেখতে থাকবে কিন্তু কোনমতেই জানবে না। এই সব লোকদের অন্তর অসাড় এবং কান বন্ধ হয়ে গেছে, আর তারা তাদের চোখও বন্ধ করে রেখেছে, যেন তারা চোখ দিয়ে না দেখে, কান দিয়ে না শোনে এবং অন্তর দিয়ে না বোঝে, আর ভাল হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না আসে।’ পুরো দু’বছর ধরে পৌল তাঁর নিজের ভাড়াটে বাড়ীতে ছিলেন এবং যারা তাঁর সংগে দেখা করতে আসত তিনি তাদের সবাইকে গ্রহণ করতেন। তিনি সাহসের সংগে বিনা বাধায় ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতেন এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। আমি খ্রীষ্ট যীশুর দাস পৌল রোম শহরের বিশ্বাসীদের কাছে এই চিঠি লিখছি। তাঁর প্রেরিত্‌ হবার জন্য ঈশ্বর আমাকে ডেকেছেন এবং তাঁর দেওয়া সুখবর প্রচার করবার জন্য বেছে নিয়েছেন। ঈশ্বর তাঁর নবীদের মধ্য দিয়ে পবিত্র শাস্ত্রের মধ্যে আগেই এই সুখবরের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তাঁরই মধ্য দিয়ে তাঁরই নামের জন্য আমরা দয়া ও প্রেরিত্‌-পদ পেয়েছি, যেন সব জাতির মধ্য থেকে লোকে বিশ্বাস করে ঈশ্বরের বাধ্য হতে পারে। সেই লোকদের মধ্যে তোমরাও আছ। যীশু খ্রীষ্টের লোক হবার জন্য ঈশ্বরই তোমাদের ডেকেছেন। রোম শহরে যে লোকদের ঈশ্বর ভালবাসেন এবং তাঁর নিজের লোক হবার জন্য ডেকেছেন তাদের সকলের কাছে, অর্থাৎ তোমাদেরই কাছে আমি এই চিঠি লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। প্রথমেই আমি যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তোমাদের সকলের জন্য আমার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কারণ তোমাদের বিশ্বাসের কথা সারা জগতে ছড়িয়ে পড়ছে। ঈশ্বরের পুত্রের বিষয়ে সুখবর প্রচার করে আমার সমস্ত অন্তর দিয়ে আমি ঈশ্বরের সেবা করছি। আমি যতবার প্রার্থনা করি ততবারই যে তোমাদের কথা মনে করে থাকি, তিনিই তার সাক্ষী। আমার প্রার্থনা এই যে, ঈশ্বরের ইচ্ছাতে আমি যেন এইবার কোন রকমে তোমাদের কাছে যেতে পারি। তোমাদের শক্তিশালী করে তুলবার জন্য কোন আত্মিক দান যেন তোমরা আমার মধ্য দিয়ে পেতে পার সেইজন্যই আমি তোমাদের সংগে দেখা করতে চাই। তার মানে, আমরা সবাই যেন একে অন্যের বিশ্বাস থেকে উৎসাহ পাই। ভাইয়েরা, এই কথা জেনো যে, অনেক বারই আমি তোমাদের কাছে যাবার ইচ্ছা করেও এই পর্যন্ত বাধা পেয়ে আসছি। অন্যান্য জায়গায় অযিহূদীদের মধ্যে প্রচার করে যেমন ফল লাভ করেছি, ঠিক সেইভাবে তোমাদের মধ্যেও কিছু ফল দেখবার আশায় আমি তোমাদের কাছে যেতে চেয়েছি। সভ্য-অসভ্য, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সবার কাছেই আমি ঋণী। সেইজন্য তোমরা যারা রোমে আছ তোমাদের কাছেও যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করতে আমি আগ্রহী। যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে এই যে সুখবর তাতে আমার কোন লজ্জা নেই, কারণ এই সুখবরই হল ঈশ্বরের শক্তি যার দ্বারা তিনি সব বিশ্বাসীদের পাপ থেকে উদ্ধার করেন-প্রথমে যিহূদীদের, তারপর অযিহূদীদের। ঈশ্বর কেমন করে মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন সেই কথা এই সুখবরের মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কেবল বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “যাকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয় সে বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই জীবন পাবে।” মানুষ ঈশ্বরের সত্যকে অন্যায় দিয়ে চেপে রাখে, আর তাই তাঁর প্রতি ভক্তির অভাব ও সমস্ত অন্যায় কাজের জন্য স্বর্গ থেকে মানুষের উপর ঈশ্বরের ক্রোধ প্রকাশ পেয়ে থাকে। ঈশ্বর সম্বন্ধে যা জানা যেতে পারে তা মানুষের কাছে স্পষ্ট, কারণ ঈশ্বর নিজেই তাদের কাছে তা প্রকাশ করেছেন। ঈশ্বরের যে সব গুণ চোখে দেখতে পাওয়া যায় না, অর্থাৎ তাঁর চিরস্থায়ী ক্ষমতা ও তাঁর ঈশ্বরীয় স্বভাব সৃষ্টির আরম্ভ থেকেই পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। তাঁর সৃষ্টি থেকেই মানুষ তা বেশ বুঝতে পারে। এর পরে মানুষের আর কোন অজুহাত নেই। মানুষ তাঁর সম্বন্ধে জানবার পরেও ঈশ্বর হিসাবে তাঁর গৌরবও করে নি, তাঁকে কৃতজ্ঞতাও জানায় নি। তাদের চিন্তাশক্তি অসার হয়ে গেছে এবং তাদের বুদ্ধিহীন অন্তর অন্ধকারে পূর্ণ হয়েছে। যদিও তারা নিজেদের জ্ঞানী বলে দাবি করেছে তবুও আসলে তারা মুর্খই হয়েছে। চিরস্থায়ী, মহিমাপূর্ণ ঈশ্বরের উপাসনা ছেড়ে দিয়ে তারা অস্থায়ী মানুষ, পাখী, পশু ও বুকে-হাঁটা প্রাণীর মূর্তির পূজা করেছে। এইজন্য ঈশ্বর মানুষকে তার অন্তরের কামনা-বাসনা অনুসারে জঘন্য কাজ করতে ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে তারা একে অন্যের সংগে জঘন্য কাজ করে নিজেদের দেহের অসম্মান করেছে। ঈশ্বরের সত্যকে ফেলে তারা মিথ্যাকে গ্রহণ করেছে। সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দিয়ে তারা তাঁর সৃষ্ট জিনিসের পূজা করেছে, কিন্তু সমস্ত গৌরব চিরকাল সেই সৃষ্টিকর্তারই। আমেন। মানুষ এই সব করেছে বলে ঈশ্বর লজ্জাপূর্ণ কামনার হাতে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। স্ত্রীলোকেরা পর্যন্ত পুরুষদের সংগে তাদের স্বাভাবিক ব্যবহারের বদলে অন্য স্ত্রীলোকদের সংগে অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ কাজ করেছে। পুরুষেরাও ঠিক তেমনি করে স্ত্রীলোকদের সংগে তাদের স্বাভাবিক ব্যবহার ছেড়ে দিয়ে পুরুষদের সংগে কামনায় জ্বলে উঠেছে; পুরুষ পুরুষের সংগে লজ্জাপূর্ণ খারাপ কাজ করেছে। ফলে তারা প্রত্যেকেই তার অন্যায় কাজের পাওনা শাস্তি নিজের মধ্যেই পেয়েছে। এইভাবে মানুষ ঈশ্বরকে মানতে চায় নি বলে ঈশ্বরও পাপপূর্ণ মনের হাতে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন, আর সেইজন্যই মানুষ অনুচিত কাজ করতে থাকে। সব রকম অন্যায়, মন্দতা, লোভ, নীচতা, হিংসা, খুন, মারামারি, ছলনা ও অন্যের ক্ষতি করবার ইচ্ছায় তারা পরিপূর্ণ। তারা অন্যের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, অন্যের নিন্দা করে এবং ঈশ্বরকে ঘৃণা করে। তারা বদ্‌মেজাজী, অহংকারী ও গর্বিত। অন্যায় কাজ করবার জন্য তারা নতুন নতুন উপায় বের করে। তারা মা-বাবার অবাধ্য, ভাল-মন্দের জ্ঞান তাদের নেই, আর তারা অবিশ্বস্ত। পরিবারের প্রতি তাদের ভালবাসা নেই এবং তাদের অন্তরে দয়া-মায়া নেই। ঈশ্বরের এই বিচারের কথা তারা ভাল করেই জানে যে, এই রকম কাজ যারা করে তারা মৃত্যুর শাস্তির উপযুক্ত। এই কথা জেনেও তারা যে কেবল এই সব কাজ করতে থাকে তা নয়, কিন্তু অন্য যারা তা করে তাদের সায়ও দেয়। কেউ যদি এতে অন্যদের দোষ দেয় তাহলে আমি তাকে বলব, তোমার নিজের অজুহাতটা কোথায়? যখন তুমি অন্যদের দোষ দাও তখন কি তুমি নিজেকেই দোষী বলে প্রমাণ কর না? তুমি অন্যদের দোষ দাও অথচ তুমি সেই একই কাজ করে থাক। আমরা জানি যারা এই রকম কাজ করে ঈশ্বর তাদের ন্যায্য বিচারই করেন। যে কাজের জন্য তুমি অন্যদের দোষ দিচ্ছ সেই একই কাজ যখন তুমি নিজেও কর তখন কি ঈশ্বরের শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবে বলে মনে কর? তুমি তো ঈশ্বরের অশেষ দয়া, সহ্যগুণ ও ধৈর্যকে তুচ্ছ করছ। তুমি ভুলে গেছ ঈশ্বরের এই দয়ার উদ্দেশ্য হল তোমাকে পাপ থেকে মন ফিরাবার পথে নিয়ে আসা। কিন্তু তোমার মন কঠিন; তুমি তো পাপ থেকে মন ফিরাতে চাও না। সেইজন্য যেদিন ঈশ্বরের ক্রোধ প্রকাশ পাবে সেই দিনের জন্য তুমি তোমার পাওনা শাস্তি জমা করে রাখছ। সেই সময়েই ঈশ্বরের ন্যায়বিচার প্রকাশ পাবে। তিনি প্রত্যেকজনকে তার কাজ হিসাবে ফল দেবেন। যারা ধৈর্যের সংগে ভাল কাজ করে ঈশ্বরের কাছ থেকে গৌরব, সম্মান এবং ধ্বংসহীন জীবন পেতে চায়, ঈশ্বর তাদেরই অনন্ত জীবন দেবেন। কিন্তু যারা নিজেদের ইচ্ছামত চলে আর সত্যকে না মেনে অন্যায়কে মেনে চলে ঈশ্বর তাদের ভীষণ শাস্তি দেবেন। যারা পাপ করে বেড়ায় তাদের প্রত্যেকের দুঃখ-কষ্ট ও দুর্দশা হবে-প্রথমে যিহূদীদের, তার পরে অযিহূদীদের। কিন্তু যারা ভাল কাজ করে তারা গৌরব, সম্মান ও শান্তি লাভ করবে-প্রথমে যিহূদীরা, তারপর অযিহূদীরা। এতে দেখা যায়, ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান। মোশির আইন-কানুনের বাইরে থাকা অবস্থায় যারা পাপ করে তারা আইন-কানুন ছাড়াই ধ্বংস হবে। কিন্তু যারা আইন-কানুনের ভিতরে থাকা অবস্থায় পাপ করে তাদের বিচার আইন-কানুনের দ্বারাই হবে। যারা কেবল আইন-কানুনের কথা শোনে তারা ঈশ্বরের চোখে নির্দোষ নয়, কিন্তু যারা আইন-কানুন পালন করে ঈশ্বর তাদেরই নির্দোষ বলে গ্রহণ করবেন। অযিহূদীরা মোশির আইন-কানুন পায় নি, কিন্তু তবুও তারা যখন নিজে থেকেই আইন-কানুন মত কাজ করে তখন আইন-কানুন না পেয়েও তারা নিজেরাই নিজেদের আইন-কানুন হয়ে ওঠে। এতে দেখা যায় যে, আইন-কানুন মতে যা করা উচিত তা তাদের অন্তরেই লেখা আছে। তাদের বিবেকও সেই একই সাক্ষ্য দেয়। তাদের চিন্তা কোন কোন সময় তাদের দোষী করে, আবার কোন কোন সময় তাদের পক্ষেও থাকে। ঈশ্বর যেদিন যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে মানুষের গোপন সব কিছুর বিচার করবেন সেই দিনই তা প্রকাশ পাবে। আমি যে সুখবর প্রচার করি সেই অনুসারেই এই বিচার হবে। তুমি নিজেকে যিহূদী বলে থাক, তাই না? তুমি মোশির আইন- কানুনের উপর নির্ভর কর এবং নিজে ঈশ্বরের লোক বলে গর্ববোধ কর। ঈশ্বর কি চান তা তুমি জান এবং যা ভাল তা মেনে নাও, কারণ আইন-কানুন থেকে তুমি সেই শিক্ষাই লাভ করেছ। তুমি মনে কর তুমি অন্ধদের পথ দেখাচ্ছ। তুমি ভাব, যারা অন্ধকারে আছে তাদের কাছে তুমি আলোর মত। তোমার ধারণা, যারা বিবেচনাহীন তাদের তুমি সংশোধন করে থাক ও যারা আইন-কানুনের বিষয়ে শিক্ষা পায় নি তাদের তুমি শিক্ষা দিয়ে থাক। আইন-কানুনের মধ্যে জ্ঞান ও সত্য আছে বলেই তোমার এই সব ধারণা আছে। বেশ, তুমি যখন অন্যদের শিক্ষা দিয়ে থাক তখন নিজেকেও শিক্ষা দাও না কেন? তুমি প্রচার করছ, “চুরি কোরো না,” কিন্তু তুমি নিজেই কি চুরি করছ না? তুমি বলে থাক, “ব্যভিচার কোরো না,” কিন্তু তুমি নিজেই কি ব্যভিচার করছ না? তুমি তো প্রতিমা ঘৃণা কর, কিন্তু তুমি কি নিজেই প্রতিমার মন্দিরে গিয়ে চুরি করছ না? আইন-কানুন নিয়ে তুমি গর্ববোধ কর, কিন্তু তুমি নিজেই কি আইন-কানুন অমান্য করে ঈশ্বরকে অসম্মান করছ না? পবিত্র শাস্ত্রে এই কথা লেখা আছে, “তোমাদেরই জন্য অযিহূদীরা ঈশ্বরের নামের নিন্দা করে।” তুমি যদি আইন-কানুন মেনে চল তবে সুন্নত করাবার মূল্য আছে, কিন্তু যদি আইন-কানুন অমান্য কর তবে সুন্নত করানো হলেও ঈশ্বরের কাছে তুমি সুন্নত-না-করানো লোকেরই মত। এইজন্য কোন সুন্নত-না-করানো লোক যদি আইন-কানুনের দাবি-দাওয়া মেনে চলে তবে ঈশ্বর কি তাকে সুন্নত করানো হয়েছে বলেই ধরবেন না? তোমার কাছে তো লেখা আইন-কানুন আছে এবং তোমার সুন্নত করানোও হয়েছে। কিন্তু তুমি যদি আইন-কানুন অমান্য কর তবে যার সুন্নত করানো হয় নি অথচ আইন- কানুন পালন করছে, সে কি আইন অমান্য করবার জন্য তোমাকে দোষী করবে না? কেবল বাইরের দিক থেকে যে যিহূদী সে আসল যিহূদী নয়। দেহের বাইরে সুন্নত করানো হলেই যে আসল সুন্নত করানো হল তাও নয়। কিন্তু অন্তরে যে যিহূদী সে-ই আসল যিহূদী। আসল সুন্নত করানোর কাজ অন্তরের মধ্যেই হয়। ওটা আত্মিক ব্যাপার, লিখিত আইন মানার ব্যাপার নয়। এই রকম লোক মানুষের প্রশংসা পায় না বটে, কিন্তু ঈশ্বরের প্রশংসা পায়। তা-ই যদি হয় তবে যিহূদীদের বিশেষ কি লাভ হয়েছে? সুন্নত করাবারই বা মূল্য কি? সব দিকেই যথেষ্ট লাভ হয়েছে। প্রথমতঃ ঈশ্বর তাঁর বাক্য যিহূদীদেরই দিয়েছিলেন। অবশ্য তাদের মধ্যে কিছু লোক অবিশ্বস্ত হয়েছে, কিন্তু তাতে কি? তারা অবিশ্বস্ত হয়েছে বলে কি ঈশ্বরও অবিশ্বস্ত হবেন? নিশ্চয় না। সব মানুষ মিথ্যাবাদী হলেও ঈশ্বর সব সময় সত্যবাদী। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “কাজেই তোমার রায় ঠিক, তোমার বিচার নিখুঁত।” কিন্তু আমাদের অন্যায় কাজ থেকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, ঈশ্বর সব সময় ন্যায় কাজ করেন। তাহলে আমরা কি বলব যে, তিনি যখন আমাদের শাস্তি দেন তখন অন্যায় করেন? অবশ্য কথাটা আমি মানুষ হিসাবে বলছি, আসলে তিনি কখনও অন্যায় করেন না। ঈশ্বর যদি অন্যায় করেন তবে তিনি কেমন করে মানুষের বিচার করবেন? কেউ হয়তো বলবে, “আমার মিথ্যা কথা বলবার দরুন আরও ভালভাবে প্রকাশ পায় যে, ঈশ্বর সত্যবাদী। এতে যখন ঈশ্বর গৌরব লাভ করেন তখন পাপী বলে আমাকে দোষী করা হয় কেন?” বেশ, তাহলে কি আমরা এই কথাই বলব, “চল, আমরা মন্দ কাজ করতে থাকি যাতে সেই মন্দের মধ্য দিয়ে ভাল আসতে পারে”? কোন কোন লোক আমাদের নিন্দা করে বলে যে, আমরা এই রকম কথাই বলে থাকি। তাদের পাওনা শাস্তি তারা পাবে। এখন আমরা কি বলব? যিহূদী হিসাবে আমাদের অবস্থা কি অযিহূদীদের চেয়ে ভাল? মোটেই না। আমরা তো আগেই বলেছি, যিহূদী-অযিহূদী সবাই পাপের অধীন। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে: নির্দোষ কেউ নেই, একজনও নেই; কেউ সত্যিকারের জ্ঞান নিয়ে চলে না, কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছামত কাজ করে না। সবাই ঠিক পথ থেকে সরে গেছে, সবাই একসংগে খারাপ হয়ে গেছে। ভাল কাজ করে এমন কেউ নেই, একজনও নেই। তাদের মুখ যেন খোলা কবর, জিভ্‌ দিয়ে তারা খোশামোদের কথা বলে। তাদের ঠোঁটের নীচে যেন সাপের বিষ আছে। তাদের মুুখ অভিশাপ ও তেতো কথায় ভরা। খুন করবার জন্য তাদের পা তাড়াতাড়ি দৌড়ে, তাদের পথে ধ্বংস ও সর্বনাশ থাকে। শান্তির পথ তারা জানে না, তারা ঈশ্বরকে ভয়ও করে না। আমরা জানি মোশির আইন-কানুন তাদেরই জন্য যারা সেই আইন- কানুনের অধীন। ফলে যিহূদী-অযিহূদী কারও কিছু বলবার নেই, সব মানুষই ঈশ্বরের কাছে দোষী হয়ে আছে। আইন-কানুন পালন করলেই যে ঈশ্বর মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করবেন তা নয়, কিন্তু আইন- কানুনের মধ্য দিয়েই মানুষ নিজের পাপের বিষয়ে চেতনা লাভ করে। ঈশ্বর মানুষকে এখন আইন-কানুন ছাড়াই কেমন করে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন তা প্রকাশিত হয়েছে। মোশির আইন-কানুন ও নবীরা সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। যারা যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করে তাদের সেই বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই ঈশ্বর তাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন। যিহূদী ও অযিহূদী সবাই সমান, কারণ সবাই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের প্রশংসা পাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু খ্রীষ্ট যীশু মানুষকে পাপের হাত থেকে মুক্ত করবার ব্যবস্থা করেছেন এবং সেই মুক্তির মধ্য দিয়েই দয়ার দান হিসাবে বিশ্বাসীদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়। ঈশ্বর প্রকাশ করেছিলেন যে, যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য যীশু খ্রীষ্ট তাঁর রক্তের দ্বারা, অর্থাৎ তাঁর জীবন-উৎসর্গের দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট করেছেন। এইভাবেই ঈশ্বর দেখিয়েছেন, যদিও তিনি তাঁর সহ্যগুণের জন্য মানুষের আগেকার পাপের শাস্তি দেন নি তবুও তিনি নির্দোষ। তিনি যে নির্দোষ তা তিনি এখন দেখিয়েছেন যেন প্রমাণ হয় যে, তিনি নিজে নির্দোষ এবং যে কেউ যীশুর উপর বিশ্বাস করে তাকেও তিনি নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন। এর পর মানুষের গর্ব করবার আর কি আছে? কিছুই নেই। কিন্তু কেন নেই? মানুষ আইন-কানুন পালন করে বলে কি তার গর্ব করবার কিছু নেই? তা নয়। আসল কথা হল, বিশ্বাসের মধ্যে গর্বের জায়গা নেই, কারণ আমরা জানি, ঈশ্বর মানুষকে তার বিশ্বাসের জন্য নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন, আইন-কানুন পালন করবার জন্য নয়। ঈশ্বর কি তবে কেবল যিহূদীদেরই, অযিহূদীদের নয়? হ্যাঁ, নিশ্চয় তিনি অযিহূদীদেরও ঈশ্বর, কারণ ঈশ্বর তো মাত্র একজন। তিনি যিহূদীদের যেমন বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে নির্দোষ বলে গ্রহণ করবেন তেমনি অযিহূদীদেরও করবেন। এই বিশ্বাসের জন্য কি আমরা তাহলে আইন-কানুন বাতিল করে দিচ্ছি? কখনও না, বরং আইন-কানুনের কথা যে সত্যি তা-ই আমরা প্রমাণ করছি। তাহলে আমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামের বিষয়ে আমরা কি বলব? এই ব্যাপারে তিনি কি দেখেছিলেন? কাজের জন্যই যদি অব্রাহামকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়ে থাকে তবে তো তাঁর গর্ব করবার কিছু আছেই। কিন্তু ঈশ্বরের সামনে তাঁর গর্ব করবার কিছুই নেই। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “অব্রাহাম ঈশ্বরের কথা বিশ্বাস করলেন আর সেইজন্য ঈশ্বর তাঁকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন।” কাজ করে যে বেতন পাওয়া যায় তা দান নয়, পাওনা। কিন্তু যে নিজের চেষ্টার উপর নির্ভর না করে কেবল ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে ঈশ্বর তার সেই বিশ্বাসের জন্য তাকে নির্দোষ বলে ধরেন, কারণ তিনিই পাপীকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করতে পারেন। দায়ূদও সেই লোককে ধন্য বলেছেন যাকে ঈশ্বর কোন কাজ ছাড়াই নির্দোষ বলে ধরেছেন। দায়ূদ বলেছেন, ধন্য সেই লোকেরা, যাদের ঈশ্বরের প্রতি বিদ্রোহ ক্ষমা করা হয়েছে, যাদের পাপ ঢাকা দেওয়া হয়েছে। ধন্য সেই লোক, যার অন্যায় সদাপ্রভু ক্ষমা করেছেন। এখানে কি কেবল তাদেরই ধন্য বলা হয়েছে যাদের সুন্নত করানো হয়েছে? সুন্নত-না-করানো লোকদেরও কি বলা হয় নি? হ্যাঁ, তাদেরও ধন্য বলা হয়েছে, কারণ আমরা বলছি, “অব্রাহামের বিশ্বাসের জন্য তাঁকে নির্দোষ বলে ধরা হয়েছিল।” কোন্‌ অবস্থায় ধরা হয়েছিল? সুন্নত করাবার আগে, না পরে? সুন্নত করাবার আগেই ধরা হয়েছিল, পরে নয়। সুন্নত-না-করানো অবস্থায় বিশ্বাসের জন্যই যে ঈশ্বর তাঁকে নির্দোষ বলে ধরেছিলেন তাঁর সুন্নত করানোটা ছিল তারই প্রমাণ এবং চিহ্ন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, সুন্নত করানো না হলেও কেবল বিশ্বাসের জন্যই যাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়, অব্রাহাম তাদের সকলের পিতা। এছাড়া, সুন্নত করাবার আগে অব্রাহাম যেভাবে বিশ্বাসের পথে চলতেন, যে সব সুন্নত করানো লোক সেইভাবে চলে অব্রাহাম তাদেরও পিতা। অব্রাহাম ও তাঁর বংশধরদের কাছে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, এই জগৎ অব্রাহামেরই হবে। আইন-কানুন পালন করবার ফলে এই প্রতিজ্ঞা তাঁর কাছে করা হয় নি, কিন্তু তাঁর বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই তাঁকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছিল আর সেইজন্যই সেই প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল। আইন-কানুন পালন করেই যদি কেউ জগতের অধিকার পেয়ে যায় তবে তো বিশ্বাস অকেজো হয়ে পড়ে আর ঈশ্বরের সেই প্রতিজ্ঞারও কোন মূল্য থাকে না, কারণ আইন-কানুন ঈশ্বরের শাস্তিকে ডেকে আনে। আর সত্যি বলতে কি, যেখানে আইন-কানুন নেই সেখানে আইন-কানুন অমান্য করবার প্রশ্নও নেই। সেইজন্য মানুষের বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা হয়, যেন এটা ঈশ্বরের দয়ার দান হতে পারে। আর তাই অব্রাহামের বংশধরদের সকলের জন্যই এই প্রতিজ্ঞা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে। আইন-কানুনের অধীন লোকদের জন্যই যে কেবল এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে তা নয়, যে সব লোক অব্রাহামের মত একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী তাদের জন্যও নিশ্চয়ই এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে। পবিত্র শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে, “আমি তোমাকে অনেকগুলো জাতির আদিপিতা করে রেখেছি,” সেই অনুসারে ঈশ্বরের চোখে অব্রাহাম আমাদের সকলেরই পিতা। যিনি মৃতকে জীবন দেন এবং যা নেই তা আছে বলে ঘোষণা করেন সেই ঈশ্বরকে অব্রাহাম বিশ্বাস করেছিলেন। যখন পিতা হবার কোন আশাই ছিল না তখনও অব্রাহাম ঈশ্বরের উপর আশা রেখে বিশ্বাস করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁকে বলেছিলেন, “তোমার বংশধরেরা আকাশের তারার মত অসংখ্য হবে।” আর সেই কথামতই অব্রাহাম অনেক জাতির পিতা হয়েছিলেন। যদিও প্রায় একশো বছরের বুড়ো অব্রাহাম বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর দেহ অকেজো হয়ে গেছে আর সারারও সন্তান হবার বয়স আর নেই, তবুও অব্রাহামের বিশ্বাস দুর্বল ছিল না। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে তাঁর মনে কখনও কোন সন্দেহ আসে নি, বরং তিনি বিশ্বাসে আরও বলবান হয়ে উঠে ঈশ্বরের গৌরব করতেন। অব্রাহাম সম্পূর্ণভাবে এই বিশ্বাস করতেন যে, ঈশ্বর যা প্রতিজ্ঞা করেছেন তা করবার ক্ষমতাও তাঁর আছে। এইজন্যই অব্রাহামের বিশ্বাসের দরুন তাঁকে নির্দোষ বলে ধরা হয়েছিল। “নির্দোষ বলে ধরা হয়েছিল,” এই কথাটা কেবল অব্রাহামকেই লক্ষ্য করে লেখা হয় নি, আমাদেরও লক্ষ্য করে লেখা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাসের জন্য ঈশ্বর আমাদেরও নির্দোষ বলে ধরবেন, কারণ যিনি আমাদের প্রভু যীশুকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন আমরা তাঁরই উপর বিশ্বাস করি। আমাদের পাপের জন্য যীশুকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এবং আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করবার জন্য তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছিল। বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছে আর তার ফলেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর ও আমাদের মধ্যে শান্তি হয়েছে। ঈশ্বরের এই যে দয়ার পথে এখন আমরা চলছি সেখানে আমরা খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে বিশ্বাসের দ্বারাই পৌঁছেছি। ঈশ্বরের মহিমা পাবার আশায় আমরা আনন্দ বোধ করছি। কেবল তা-ই নয়, দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও আমরা আনন্দ বোধ করছি, কারণ আমরা জানি দুঃখ-কষ্টের ফল ধৈর্য, ধৈর্যের ফল খাঁটি স্বভাব এবং খাঁটি স্বভাবের ফল আশা। এই আশা আমাদের লজ্জায় ফেলে না, কারণ ঈশ্বর তাঁর দেওয়া পবিত্র আত্মার দ্বারা আমাদের অন্তর তাঁরই ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করেছেন। যখন আমাদের কোন শক্তিই ছিল না তখন ঠিক সময়েই খ্রীষ্ট ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন মানুষের জন্য, অর্থাৎ আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন। কোন সৎ লোকের জন্য কেউ প্রাণ দেয় না বললেই চলে। যিনি অন্যের উপকার করেন সেই রকম লোকের জন্য হয়তো বা কেউ সাহস করে প্রাণ দিলেও দিতে পারে। কিন্তু ঈশ্বর যে আমাদের ভালবাসেন তার প্রমাণ এই যে, আমরা পাপী থাকতেই খ্রীষ্ট আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। তাহলে খ্রীষ্টের রক্তের দ্বারা যখন আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছে তখন আমরা খ্রীষ্টের মধ্য দিয়েই ঈশ্বরের শাস্তি থেকে নিশ্চয়ই রেহাই পাব। আমরা যখন ঈশ্বরের শত্রু ছিলাম তখন তাঁরই পুত্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর সংগে আমাদের মিলন হয়েছে। এইভাবে মিলন হয়েছে বলে খ্রীষ্টের জীবন দ্বারা আমরা নিশ্চয়ই পাপ থেকে উদ্ধার পাব। কেবল তা-ই নয়, যাঁর দ্বারা ঈশ্বরের সংগে আমাদের মিলন হয়েছে সেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে নিয়ে আমরা আনন্দও বোধ করছি। একটি মানুষের মধ্য দিয়ে পাপ জগতে এসেছিল ও সেই পাপের মধ্য দিয়ে মৃত্যুও এসেছিল। সব মানুষ পাপ করেছে বলে এইভাবে সকলের কাছেই মৃত্যু উপস্থিত হয়েছে। মোশির আইন-কানুন দেবার আগেই জগতে পাপ ছিল, কিন্তু আইন-কানুন না থাকলে তো পাপকে পাপ বলে ধরা হয় না। তবুও আদমের সময় থেকে আরম্ভ করে মোশির সময় পর্যন্ত সকলের উপরেই মৃত্যু রাজত্ব করছিল। এমন কি, ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে যারা আদমের মত পাপ করে নি তাদের উপরেও মৃত্যু রাজত্ব করছিল। যাঁর আসবার কথা ছিল আদম ছিলেন একদিক থেকে সেই যীশু খ্রীষ্টেরই ছবি। কিন্তু আদমের পাপ যে রকম, ঈশ্বরের বিনামূল্যের দান সেই রকম নয়। যখন একজন লোকের পাপের ফলে অনেকে মরল তখন ঈশ্বরের দয়ার এবং আর একজন মানুষের দয়ার মধ্য দিয়ে যে দান আসল, তা সেই অনেকের জন্য আরও কত না বেশী করে উপ্‌চে পড়ল! সেই আর একজন মানুষ হলেন যীশু খ্রীষ্ট। ঈশ্বরের দান আদমের পাপের ফলের মত নয়, কারণ একটা পাপের বিচারের ফলে সব মানুষকেই শাস্তির যোগ্য বলে ধরা হয়েছে, কিন্তু নির্দোষ বলে ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হওয়ার এই যে দয়ার দান, তা অনেক পাপের ফলে এসেছে। একজন মানুষের পাপের দরুন মৃত্যু সেই একজনের মধ্য দিয়েই রাজত্ব করতে আরম্ভ করেছিল। কিন্তু যারা প্রচুর পরিমাণে ঈশ্বরের দয়া ও নির্দোষ বলে তাঁর গ্রহণযোগ্য হওয়ার দান পায়, তারা সেই একজন মানুষের, অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে জীবনের পরিপূর্ণতা নিয়ে নিশ্চয়ই রাজত্ব করবে। তাহলে একটা পাপের মধ্য দিয়ে যেমন সব মানুষকেই শাস্তির যোগ্য বলে ধরা হয়েছে, তেমনি একটা ন্যায় কাজের মধ্য দিয়ে সব মানুষকেই নির্দোষ বলে গ্রহণ করবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে এবং তার ফল হল অনন্ত জীবন। যেমন একজন মানুষের অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে অনেককেই পাপী বলে ধরা হয়েছিল, তেমনি একজন মানুষের বাধ্যতার মধ্য দিয়ে অনেককেই নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হবে। আইন-কানুন দেওয়া হল যাতে অন্যায় বেড়ে যায়, কিন্তু যেখানে অন্যায় বাড়ল সেখানে ঈশ্বরের দয়াও আরও অনেক পরিমাণে বাড়ল। সেই দয়া এইজন্য বাড়ল যাতে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেমন পাপ রাজত্ব করেছিল, তেমনি মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করবার মধ্য দিয়ে এখন তাঁর দয়া রাজত্ব করতে পারে; আর তারই ফল হল আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবন লাভ। তাহলে কি আমরা এই বলব যে, ঈশ্বরের দয়া যেন বাড়ে সেইজন্য আমরা পাপ করতে থাকব? নিশ্চয়ই না। পাপের দাবি-দাওয়ার কাছে তো আমরা মরে গেছি; তবে কেমন করে আমরা আর পাপের পথে চলব? এই কথা কি জান না যে, আমরা যারা খ্রীষ্ট যীশুর মধ্যে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছি, আমরা তাঁর মৃত্যুর মধ্যে অংশ গ্রহণ করেই তা করেছি? আর সেইজন্য সেই বাপ্তিস্মের দ্বারা খ্রীষ্টের সংগে মরে আমাদের কবরও হয়েছে, যেন পিতা ঈশ্বর তাঁর মহাশক্তি দ্বারা যেমন খ্রীষ্টকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন তেমনি আমরাও যেন নতুন জীবনের পথে চলতে পারি। খ্রীষ্টের সংগে মরে যখন তাঁর সংগে আমরা যুক্ত হয়েছি তখন তিনি যেমন মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, ঠিক তেমনি করে আমরা তাঁর সংগে জীবিতও হব। আমরা জানি যে, আমাদের পাপ-স্বভাবকে অকেজো করবার জন্যই আমাদের পুরানো ‘আমি’কে খ্রীষ্টের সংগে ক্রুশে দেওয়া হয়েছে যেন পাপের দাস হয়ে আর আমাদের থাকতে না হয়; কারণ যে মরেছে সে পাপের হাত থেকে ছাড়া পেয়েছে। আমরা যখন খ্রীষ্টের সংগে মরেছি তখন বিশ্বাস করি যে, তাঁর সংগে জীবিতও থাকব। আমরা জানি খ্রীষ্টকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছিল বলে তিনি আর কখনও মরবেন না, অর্থাৎ তাঁর উপরে মৃৃত্যুর আর কোন হাত নেই। তিনি যখন মরলেন তখন পাপের দাবি-দাওয়ার কাছেও মরলেন; তাঁর উপর পাপের আর কোন দাবি-দাওয়া রইল না। আর এখন তিনি জীবিত হয়ে ঈশ্বরের জন্য বেঁচে আছেন। ঠিক সেইভাবে এই কথার উপর নির্ভর কোরো যে, খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছ বলে পাপের দাবি-দাওয়ার কাছে তোমরাও মরেছ, আর এখন ঈশ্বরের জন্য তোমরাও বেঁচে আছ। এইজন্য তোমাদের এই মৃত্যুর অধীন দেহের উপর পাপকে আর রাজত্ব করতে দিয়ো না। যদি দাও তবে তোমাদের দেহের মন্দ ইচ্ছার অধীনেই তোমরা চলতে থাকবে। দেহের কোন অংশকে অন্যায় কাজ করবার হাতিয়ার হিসাবে পাপের হাতে তুলে দিয়ো না। মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠা লোক হিসাবে তোমরা বরং ঈশ্বরের হাতে নিজেদের তুলে দাও এবং ন্যায় কাজ করবার হাতিয়ার হিসাবে তোমাদের সম্পূর্ণ দেহকেই ঈশ্বরকে দিয়ে দাও। তোমরা তো পাপের দাস নও, কারণ তোমরা ঈশ্বরের দয়ার অধীন, আইন- কানুনের অধীন নও। কিন্তু আইন-কানুনের অধীনে না থেকে দয়ার অধীন হয়েছি বলে কি আমরা পাপ করব? নিশ্চয় না। তোমরা কি জান না যে, দাসের মত যখন তোমরা কারও হাতে নিজেদের তুলে দাও এবং তার আদেশ পালন করতে থাক তখন তোমরা আসলে তার দাসই হয়ে পড়? সেইভাবে হয় তোমরা পাপের দাস হয়ে মরবে, নয় ঈশ্বরের দাস হয়ে ন্যায় কাজ করবে। কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হোক, কারণ যদিও তোমরা পাপের দাস ছিলে তবুও যে শিক্ষা তোমাদের দেওয়া হয়েছে সমস্ত অন্তর দিয়ে তোমরা তার বাধ্য হয়েছ। পাপের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে তোমরা তো ন্যায়ের দাস হয়েছ। মানুষের দুর্বলতার জন্য আমি কথাগুলো মানুষ যেভাবে বুঝবে সেইভাবে বলছি। আগে তোমরা যেমন আরও বেশী করে অন্যায় কাজ করবার জন্য নিজেদের দেহকে অপবিত্রতার ও অন্যায়ের দাস করে তুলেছিলে, ঠিক সেইভাবে এখন পবিত্রতায় বেড়ে উঠবার জন্য তোমাদের দেহকে ন্যায় কাজের দাস করে তোলো। যখন তোমরা পাপের দাস ছিলে তখন ন্যায়ের দাস ছিলে না। আগেকার যে সব কাজের কথা ভেবে এখন তোমরা লজ্জা পাও সেই সব কাজ থেকে তোমাদের কি লাভ হত? তার শেষ ফল হল মৃত্যু। কিন্তু এখন তোমরা পাপের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ঈশ্বরের দাস হয়েছ। তাতে লাভ হল এই যে, তোমরা পবিত্রতায় বেড়ে উঠছ, আর তার শেষ ফল হল অনন্ত জীবন। পাপ যে বেতন দেয় তা মৃত্যু, কিন্তু ঈশ্বর যা দান করেন তা আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবন। ভাইয়েরা, তোমরা তো আইন-কানুন জান। তোমরা কি জান না যে, যতদিন মানুষ জীবিত থাকে ততদিনই আইন-কানুনের দাবি তার উপরে থাকে? যতদিন স্বামী বেঁচে থাকে ততদিনই স্ত্রী আইন দ্বারা তার সংগে বাঁধা থাকে। কিন্তু স্বামী মারা যাবার পর সেই আইনের বাঁধন থেকে স্ত্রী মুক্ত হয়। সেইজন্য স্বামী বেঁচে থাকতে সেই স্ত্রী যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তবে তাকে ব্যভিচারিণী বলা হয়। কিন্তু যদি তার স্বামী মারা যায় তবে সে সেই আইনের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়। আর তখন যদি সে অন্য কাউকে বিয়ে করে তবে সে ব্যভিচারিণী হয় না। ঠিক সেইভাবে আমার ভাইয়েরা, খ্রীষ্টের দেহের মধ্য দিয়ে মোশির আইন-কানুনের দাবি-দাওয়ার কাছে তোমরাও মরেছ। তার ফলে যাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছে তোমরা সেই যীশু খ্রীষ্টেরই হয়েছ, যেন ঈশ্বরের জন্য তোমাদের জীবন ফলবান হয়ে ওঠে। আমরা যখন পাপ-স্বভাবের অধীন ছিলাম তখন আইন-কানুন আমাদের মধ্যে পাপের কামনা- বাসনা জাগিয়ে তুলত এবং সেই কামনা-বাসনা আমাদের দেহের মধ্যে কাজ করত; তাই আমাদের জীবন মৃত্যুর জন্য ফলবান হত। তখন আমাদের যা বেঁধে রাখত তার দাবি-দাওয়ার কাছে আমরা মরেছি। সেইজন্য আইন-কানুন থেকে এখন আমরা মুক্ত। তার ফলে আমরা এখন লেখা আইন-কানুনের সেই পুরানো জীবন-পথের দাস নই, কিন্তু পবিত্র আত্মার দেওয়া নতুন জীবন-পথের দাস হয়েছি। তবে কি আমরা বলব যে, আইন-কানুন মন্দ? নিশ্চয়ই না; বরং এই কথা ঠিক যে, আইন-কানুন না থাকলে পাপ কি তা আমি জানতে পারতাম না। “লোভ কোরো না,” আইন-কানুন যদি এই কথা না বলত তবে লোভ কি তা আমি জানতাম না। কিন্তু পাপ সেই আদেশের সুযোগ নিয়ে আমার মধ্যে সব রকম লোভ জাগিয়েছে, কারণ আইন-কানুন না থাকলে পাপ যেন মরার মত পড়ে থাকে। আমার জীবনে আইন-কানুন আসবার আগে আমি বেঁচেই ছিলাম, কিন্তু সেই আদেশ আসবার সংগে সংগে পাপও বেঁচে উঠল, আর আমারও মৃত্যু ঘটল। যে আদেশের ফলে জীবন পাবার কথা তা আমার জন্য মৃত্যু নিয়ে আসল, কারণ সেই আদেশের সুযোগ নিয়ে পাপ আমাকে ঠকাল, আর সেই আদেশের দ্বারাই পাপ আমাকে মেরে ফেলল। তবে এই কথা ঠিক যে, আইন-কানুন পবিত্র এবং তার আদেশও পবিত্র, ন্যায্য ও উপকারী। তাহলে যা উপকারী তার দ্বারাই কি আমার মৃত্যু হল? কখনও না, বরং যা উপকারী তার দ্বারাই পাপ আমার মৃত্যু ঘটাল, যেন পাপ যে সত্যিই পাপ তা বুঝা যায়। পাপ যে কত জঘন্য তা আদেশের দ্বারাই ধরা পড়ে। আমরা জানি আইন-কানুন আত্মিক, কিন্তু আমি পাপ-স্বভাবের অধীন বলে পাপের দাস হয়েছি। আমি যে কি করি তা আমি নিজেই বুঝি না, কারণ আমি যা করতে চাই তা করি না বরং যা ঘৃণা করি তা-ই করি। যা চাই না তা-ই যখন আমি করি তখন আমি এটাই স্বীকার করি যে, আইন- কানুন ভাল। তাহলে দেখা যায়, আমি নিজেই এই সব করছি না, কিন্তু আমার মধ্যে যে পাপ বাস করে, সে-ই আমাকে দিয়ে তা করাচ্ছে। আমি জানি আমার মধ্যে, অর্থাৎ আমার পাপ-স্বভাবের মধ্যে ভাল বলে কিছু নেই। যা সত্যিই ভাল তা করবার আমার ইচ্ছা আছে কিন্তু শক্তি নেই। যে সব ভাল কাজ আমি করতে চাই তা করি না, বরং তার বদলে যা চাই না সেই সব মন্দ কাজই আমি করতে থাকি। যা করতে চাই না তা-ই যখন আমি করি তখন আসলে আমি নিজে তা করি না, বরং আমার মধ্যে যে পাপ বাস করে সে-ই আমাকে দিয়ে তা করাচ্ছে। তাহলে আমি নিজের মধ্যে একটা নিয়মকে কাজ করতে দেখতে পাচ্ছি। সেই নিয়মটা হল এই-যা ভাল তা যখন আমি করতে চাই তখন মন্দ সব সময় আমার মধ্যে উপস্থিত থাকে। আমার অন্তর ঈশ্বরের আইন-কানুনে আনন্দিত হয়; তবুও আমি দেখতে পাচ্ছি যে, একটা অন্য রকমের নিয়ম আমার দেহের মধ্যে কাজ করছে। যা ভাল আমার মন তা ভাল বলেই গ্রহণ করে, কিন্তু এই অন্য নিয়মটি আমার মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং আমাকে বন্দী করে রাখছে। আমার মধ্যে যে পাপ আছে এই নিয়মটা তারই। কি হতভাগা মানুষ আমি! আমার মধ্যে এই যে পাপ-স্বভাব যা মৃত্যু আনে, তার হাত থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই যে, তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন। তাহলে দেখা যায় যে, মনের দিক থেকে আমি ঈশ্বরের আইন-কানুনের দাস, কিন্তু পাপ- স্বভাবের দিক থেকে আমি পাপের নিয়মের দাস। যারা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বর তাদের আর শাস্তির যোগ্য বলে মনে করবেন না। জীবনদাতা পবিত্র আত্মার নিয়মই খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে আমাকে পাপ ও মৃত্যুর নিয়ম থেকে মুক্ত করেছে। মানুষের পাপ-স্বভাবের দরুন আইন-কানুন শক্তিহীন হয়ে পড়েছিল, আর সেইজন্য আইন-কানুন যা করতে পারে নি ঈশ্বর নিজে তা করেছেন। তিনি পাপ দূর করবার জন্য নিজের নিষ্পাপ পুত্রকে মানুষের স্বভাব দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন এবং তাঁর পুত্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পাপের বিচার করে তার শক্তিকে বাতিল করে দিলেন। তিনি তা করলেন যেন পাপ-স্বভাবের অধীনে না চলে পবিত্র আত্মার অধীনে চলবার দরুন আমাদের মধ্যে আইন-কানুনের দাবি-দাওয়া পূর্ণ হয়। যারা পাপ-স্বভাবের অধীন তাদের মন পাপ-স্বভাব যা চায় তাতে আগ্রহী; আর যারা পবিত্র আত্মার অধীন তাদের মন পবিত্র আত্মা যা চান তাতে আগ্রহী। পাপ-স্বভাব যা চায় তাতে আগ্রহী হবার ফল হল মৃত্যু, আর পবিত্র আত্মা যা চান তাতে আগ্রহী হবার ফল হল জীবন ও শান্তি। যে মন পাপ-স্বভাব যা চায় তাতে আগ্রহী, সেই মন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে, কারণ তা ঈশ্বরের আইন-কানুন মানতে চায় না, মানতে পারেও না। কাজেই যারা পাপ-স্বভাবের অধীন তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। কিন্তু ঈশ্বরের আত্মা যদি তোমাদের অন্তরে বাস করেন তবে তোমরা তো পাপ-স্বভাবের অধীন নও বরং পবিত্র আত্মার অধীন। যার অন্তরে খ্রীষ্টের আত্মা নেই সে খ্রীষ্টের নয়। কিন্তু খ্রীষ্ট যদি তোমাদের অন্তরে থাকেন তবে পাপের দরুন তোমাদের দেহের উপর মৃত্যু কাজ করতে থাকলেও তোমাদের আত্মা জীবিত, কারণ ঈশ্বর তোমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করেছেন। যিনি যীশুকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছেন সেই ঈশ্বরের আত্মা যদি তোমাদের অন্তরে বাস করেন, তবে ঈশ্বর তাঁর সেই আত্মার দ্বারা তোমাদের মৃত্যুর অধীন দেহকেও জীবন দান করবেন। সেইজন্য ভাইয়েরা, আমরা ঋণী, কিন্তু সেই ঋণ পাপ-স্বভাবের কাছে নয়। পাপ-স্বভাবের অধীন হয়ে আর আমাদের চলবার দরকার নেই। যদি তোমরা পাপ-স্বভাবের অধীনে চল তবে তোমরা চিরকালের জন্য মরবে। কিন্তু যদি পবিত্র আত্মার দ্বারা দেহের সব অন্যায় কাজ ধ্বংস করে ফেল তবে চিরকাল জীবিত থাকবে, কারণ যারা ঈশ্বরের আত্মার পরিচালনায় চলে তারাই ঈশ্বরের সন্তান। তোমরা তো দাসের মনোভাব পাও নি যার জন্য ভয় করবে; তোমরা ঈশ্বরের আত্মাকে পেয়েছ যিনি তোমাদের সন্তানের অধিকার দিয়েছেন। সেইজন্যই আমরা ঈশ্বরকে আব্বা, অর্থাৎ পিতা বলে ডাকি। পবিত্র আত্মাও নিজে আমাদের অন্তরে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আমরা যদি সন্তানই হয়ে থাকি তবে ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের যা দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন আমরা তা পাব। খ্রীষ্টই ঈশ্বরের কাছ থেকে তা পাবেন আর আমরাও তাঁর সংগে তা পাব, কারণ আমরা যদি খ্রীষ্টের সংগে কষ্টভোগ করি তবে তাঁর সংগে মহিমারও ভাগী হব। আমি জানি, আমরা যে মহিমা পরে পাব তার তুলনায় আমাদের এই জীবনের কষ্টভোগ কিছুই নয়। ঈশ্বরের সন্তানেরা কখন সেই মহিমায় প্রকাশিত হবেন তার জন্য সমস্ত সৃষ্টি আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করে আছে, কারণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যটাই বিফল হয়ে গেছে। অবশ্য নিজের ইচ্ছায় তা হয় নি, ঈশ্বরই তাঁকে বিফলতার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তার সংগে সংগে এই আশ্বাসও দিয়েছেন যে, ধ্বংসের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে এই সৃষ্টি একদিন ঈশ্বরের সন্তানদের গৌরবময় স্বাধীনতার ভাগী হতে পারবে। আমরা জানি যে, গোটা সৃষ্টিটাই যেন এক ভীষণ প্রসব-বেদনায় এখনও কাতরাচ্ছে। কেবল তা-ই নয়, কিন্তু যে মহিমা আমরা পরে পাব তার প্রথম ফল হিসাবে পবিত্র আত্মাকে পেয়ে আমরা নিজেরাও অন্তরে কাতরাচ্ছি। আর সেই সংগে সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে আছি যখন ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে আমাদের প্রকাশ করা হবে, অর্থাৎ ধ্বংসের হাত থেকে আমাদের দেহকে মুক্ত করা হবে। পাপ থেকে উদ্ধার পেয়ে আমরা এই আশাই পেয়েছি। আমরা যার জন্য আশা করে আছি যদি তা পাওয়া হয়ে যায় তবে তো সেই আশা আর আশাই রইল না। যা পাওয়া হয়ে গেছে, তার জন্য কে আশা করে থাকে? কিন্তু যা পাওয়া হয় নি তার জন্য যদি আমাদের আশা থাকে তবে তার জন্য আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষাও করি। এছাড়া আমাদের দুর্বলতায় পবিত্র আত্মা আমাদের সাহায্য করেন। কি বলে প্রার্থনা করা উচিত তা আমরা জানি না, কিন্তু যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না সেই রকম আকুলতার সংগে পবিত্র আত্মা নিজেই আমাদের হয়ে অনুরোধ করেন। যিনি মানুষের অন্তর খুঁজে দেখেন তিনি পবিত্র আত্মার মনের কথাও জানেন, কারণ পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের ইচ্ছামতই ঈশ্বরের লোকদের জন্য অনুরোধ করেন। আমরা জানি যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে, অর্থাৎ ঈশ্বর নিজের উদ্দেশ্যমত যাদের ডেকেছেন তাদের মংগলের জন্য সব কিছুই একসংগে কাজ করে যাচ্ছে। ঈশ্বর যাদের আগেই বাছাই করেছিলেন তাদের তিনি তাঁর পুত্রের মত হবার জন্য আগেই ঠিক করেও রেখেছিলেন, যেন সেই পুত্র অনেক ভাইদের মধ্যে প্রধান হন। যাদের তিনি আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন তাদের তিনি ডাকও দিলেন; যাদের ডাক দিলেন তাদের তিনি নির্দোষ বলে গ্রহণও করলেন; যাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন তাদের তিনি নিজের মহিমাও দান করলেন। তাহলে এই সব ব্যাপারে আমরা কি বলব? ঈশ্বর যখন আমাদের পক্ষে আছেন তখন আমাদের ক্ষতি করবার কে আছে? ঈশ্বর নিজের পুত্রকে পর্যন্ত রেহাই দিলেন না বরং আমাদের সকলের জন্য তাঁকে মৃত্যুর হাতে তুলে দিলেন। তাহলে তিনি কি পুত্রের সংগে আর সব কিছুও আমাদের দান করবেন না? ঈশ্বর যাদের বেছে নিয়েছেন কে তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে? ঈশ্বর নিজেই তো তাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করেছেন। কে তাদের দোষী বলে স্থির করবে? যিনি মরেছিলেন এবং যাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করাও হয়েছে সেই খ্রীষ্ট যীশু এখন ঈশ্বরের ডান পাশে আছেন এবং আমাদের জন্য অনুরোধ করছেন। কাজেই এমন কি আছে যা খ্রীষ্টের ভালবাসা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দেবে? যন্ত্রণা? মনের কষ্ট? অত্যাচার? খিদে? কাপড়-চোপড়ের অভাব? বিপদ? মৃত্যু? পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, তোমার জন্য সব সময় আমাদের কাউকে না কাউকে মেরে ফেলা হচ্ছে; জবাই করার ভেড়ার মতই লোকে আমাদের মনে করে। কিন্তু যিনি তোমাদের ভালবাসেন তাঁর মধ্য দিয়ে এই সবের মধ্যেও আমরা সম্পূর্ণভাবে জয়লাভ করছি। আমি এই কথা ভাল করেই জানি, মৃত্যু বা জীবন, স্বর্গদূত বা শয়তানের দূত, বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোন কিছু কিম্বা অন্য কোন রকম শক্তি, অথবা আকাশের উপরের বা পৃথিবীর নীচের কোন কিছু, এমন কি, সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে কোন ব্যাপারই ঈশ্বরের ভালবাসা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দিতে পারবে না। ঈশ্বরের এই ভালবাসা আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর মধ্যে রয়েছে। আমার ভাইদের বদলে, অর্থাৎ যারা আমার জাতির লোক তাদের বদলে যদি সম্ভব হত তবে আমি নিজেই খ্রীষ্টের কাছ থেকে দূর হয়ে যাবার অভিশাপ গ্রহণ করতাম। তারা তো ইস্রায়েল জাতির লোক। ঈশ্বর তাদের পুত্রের অধিকার দিয়েছেন, নিজের মহিমা দেখিয়েছেন, তাদের জন্য ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন, আইন-কানুন দিয়েছেন, তাঁর সেবা ও উপাসনার উপায় করেছেন এবং অনেক প্রতিজ্ঞাও করেছেন। ঈশ্বরের মহান ভক্তেরা ছিলেন তাদেরই পূর্বপুরুষ এবং মানুষ হিসাবে মশীহ তাদেরই বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনিই ঈশ্বর, যিনি সব কিছুরই উপরে; সমস্ত গৌরব চিরকাল তাঁরই। আমেন। ঈশ্বরের বাক্য যে মিথ্যা হয়ে গেছে তা নয়, কারণ যারা ইস্রায়েল জাতির মধ্যে জন্মেছে তারা সবাই সত্যিকারের ইস্রায়েল নয়। অব্রাহামের বংশের বলেই যে তারা তাঁর সত্যিকারের সন্তান তা নয়, বরং পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, “ইস্‌হাকের বংশকেই তোমার বংশ বলে ধরা হবে।” এর অর্থ হল, ইস্রায়েল জাতির মধ্যে জন্ম হয়েছে বলেই কেউ যে ঈশ্বরের সন্তান তা নয়, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা মত যাদের জন্ম হয়েছে তাদেরই অব্রাহামের বংশের বলে ধরা হবে। সেই প্রতিজ্ঞা এই-“ঠিক সময়ে আমি ফিরে আসব এবং সারার একটি ছেলে হবে।” কেবল তা-ই নয়, রিবিকার যমজ ছেলেরা একই পুরুষের সন্তান ছিল। আর তাই পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “যাকোবকে আমি ভালবেসেছি, কিন্তু এষৌকে অগ্রাহ্য করেছি।” তাহলে আমরা কি বলব ঈশ্বর অন্যায় করেন? মোটেই না। তিনি মোশিকে বলেছিলেন, “আমার যাকে ইচ্ছা তাকে দয়া করব, যাকে ইচ্ছা তাকে করুণা করব।” এটা তাহলে কারও চেষ্টা বা ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না, ঈশ্বরের দয়ার উপরেই নির্ভর করে। পবিত্র শাস্ত্রে ঈশ্বর ফরৌণকে এই কথা বলেছিলেন, “আমি তোমাকে রাজা করেছি যেন তোমার প্রতি আমার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমার শক্তি দেখাতে পারি এবং সমস্ত পৃথিবীতে যেন আমার নাম প্রচারিত হয়।” তাহলে দেখা যায়, ঈশ্বর নিজের ইচ্ছামত কাউকে দয়া করেন এবং কারও অন্তর কঠিন করেন। হয়তো তোমাদের মধ্যে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করবে, “তবে ঈশ্বর মানুষের দোষ ধরেন কেন? কেউ কি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে বাধা দিতে পারে?” তার উত্তরে আমি বলব যে, তুমি মানুষ; ঈশ্বরের কথার উপর কথা বলবার তুমি কে? কোন লোক যদি একটা জিনিস তৈরী করে তবে সেই তৈরী করা জিনিসটা কি তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে, “কেন আমাকে এই রকম তৈরী করলে?” একই মাটি থেকে কি কুমারের ভিন্ন ভিন্ন রকমের পাত্র তৈরী করবার অধিকার নেই-কোনটা সম্মানের কাজের জন্য বা কোনটা নীচু কাজের জন্য? ঠিক সেইভাবে ঈশ্বর তাঁর ক্রোধ ও শক্তি দেখাতে চেয়েছিলেন; তবুও যে লোকদের উপরে তাঁর ক্রোধ প্রকাশ করবেন, খুব ধৈর্যের সংগে তিনি তাদের সহ্য করলেন। এই লোকদের একমাত্র পাওনা ছিল ধ্বংস। আবার তিনি তাঁর অশেষ মহিমার কথাও জানাতে চেয়েছিলেন। যারা তাঁর দয়ার পাত্র তাদের তিনি তাঁর মহিমা পাবার জন্য আগেই তৈরী করে রেখেছিলেন। আমরাই সেই দয়ার পাত্র। তিনি আমাদের কেবল যিহূদীদের মধ্য থেকে ডাকেন নি, অযিহূদীদের মধ্য থেকেও ডেকেছেন। নবী হোশেয়ের বইয়ে ঈশ্বর বলেছেন, “যারা আমার নয় তাদের আমি আমার লোক বলে ডাকব, আর যাকে আমি ভালবাসি নি তাকে আমি আমার প্রিয়া বলে ডাকব। যে জায়গায় তাদের বলা হয়েছিল, ‘তোমরা আমার লোক নও,’ সেখানে তাদের জীবন্ত ঈশ্বরের সন্তান বলে ডাকা হবে।” নবী যিশাইয় ইস্রায়েল জাতির বিষয়ে বলেছিলেন, “ইস্রায়েলীয়েরা যদিও সংখ্যায় সমুদ্র-পারের বালির মত তবুও কেবল তার বিশেষ একটা অংশই উদ্ধার পাবে। প্রভু শীঘ্রই পৃথিবীকে তার পাওনা শাস্তি পুরোপুরিভাবেই দেবেন।” যিশাইয় আরও বলেছিলেন, “সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভু যদি কিছু বংশধর আমাদের জন্য রেখে না যেতেন তবে আমাদের অবস্থা সদোম ও ঘমোরা শহরের মত হত।” তাহলে আমরা এই কথাই বলব যে, অযিহূদীরা যদিও ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হবার চেষ্টাও করে নি তবুও তাদের বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই তারা ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হয়েছে। কিন্তু ইস্রায়েলীয়েরা আইন-কানুন পালনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা তা হতে পারে নি। কেন পারে নি? কারণ তারা বিশ্বাসের উপর নির্ভর না করে কাজের উপর নির্ভর করেছিল। যে পাথরে লোকে উছোট খায় তাতেই তারা উছোট খেয়েছিল। এই বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, দেখ, আমি সিয়োনে এমন একটা পাথর রাখছি যাতে লোকে উছোট খাবে এবং যা লোকের উছোট খাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু যে তাঁর উপরে বিশ্বাস করে সে নিরাশ হবে না। ভাইয়েরা, ইস্রায়েলীয়দের জন্য আমার অন্তরের গভীর ইচ্ছা ও ঈশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনা এই যে, তারা যেন পাপ থেকে উদ্ধার পায়। তাদের সম্বন্ধে আমি এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ঈশ্বরের প্রতি তাদের গভীর আগ্রহ আছে, কিন্তু কি করে ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হওয়া যায় তা তারা জানে না। ঈশ্বর মানুষকে কেমন করে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন সেই কথায় মনোযোগ না দিয়ে নিজেদের চেষ্টায় তারা তাঁর গ্রহণযোগ্য হতে চাইছিল। সেইজন্যই ঈশ্বর যে উপায়ে মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন তা তারা মেনে নেয় নি। খ্রীষ্টই আইন-কানুন পূর্ণ করে তার শক্তি বাতিল করেছেন, যেন তাঁর উপর যারা বিশ্বাস করে তারা ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হয়। আইন-কানুন পালন করে ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্বন্ধে মোশি লিখেছেন, “যে লোক আইন-কানুন মতে চলে সে তার মধ্য দিয়েই জীবন পাবে।” কিন্তু বিশ্বাসের দ্বারা কিভাবে মানুষ ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হয় সেই বিষয়ে পবিত্র শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “মনে মনে এই কথা বোলো না, ‘কে স্বর্গে যাবে?’ ” এর অর্থ হল, স্বর্গ থেকে খ্রীষ্টকে নামিয়ে আনবার জন্য কে স্বর্গে যাবে? “কিম্বা বোলো না, ‘কে নীচে মৃতদের জায়গায় যাবে?’ ” অর্থাৎ মৃত্যু থেকে খ্রীষ্টকে উঠিয়ে আনবার জন্য কে মৃতদের জায়গায় যাবে? ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হবার বিষয়ে শাস্ত্র আরও বলে, “ঈশ্বর যা বলেছেন তা তোমার সংগেই রয়েছে, অর্থাৎ তোমার মুখে ও তোমার অন্তরে রয়েছে।” যে বিশ্বাসের কথা আমরা প্রচার করছি তা হল ঈশ্বরের সেই কথা। সেই কথা হল, যদি তুমি যীশুকে প্রভু বলে মুখে স্বীকার কর এবং অন্তরে বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন তবেই তুমি পাপ থেকে উদ্ধার পাবে; কারণ অন্তরে বিশ্বাস করবার ফলে ঈশ্বর মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন আর মুখে স্বীকার করবার ফলে পাপ থেকে উদ্ধার করেন। পবিত্র শাস্ত্র বলে, “যে কেউ তাঁর উপরে বিশ্বাস করে সে নিরাশ হবে না।” যিহূদী ও অযিহূদীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, কারণ সকলের একই প্রভু। যারা তাঁকে ডাকে তিনি তাদের উপর প্রচুর আশীর্বাদ ঢেলে দেন। পবিত্র শাস্ত্রে আছে, “উদ্ধার পাবার জন্য যে কেউ প্রভুকে ডাকে সে উদ্ধার পাবে।” কিন্তু যাঁর উপরে তারা বিশ্বাস করে নি তাঁকে কেমন করে ডাকবে? যাঁর বিষয় তারা শোনে নি তাঁর উপরে কেমন করে বিশ্বাস করবে? প্রচারক না থাকলে তারা কেমন করেই বা শুনবে? তা ছাড়া কেউ না পাঠালে কেমন করে প্রচারকেরা প্রচার করবে? পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “ধন্য তাদের পা যারা মংগলের সুখবর প্রচার করতে আসে।” কিন্তু সবাই সেই সুখবরে সাড়া দেয় নি। নবী যিশাইয় বলেছেন, “প্রভু, আমাদের দেওয়া সুখবরে কে বিশ্বাস করেছে?” তাহলে দেখা যায়, ঈশ্বরের বাক্য শুনবার ফলেই বিশ্বাস আসে, আর খ্রীষ্টের বিষয় প্রচারের মধ্য দিয়ে সেই বাক্য শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু আমি বলি, ইস্রায়েলীয়েরা কি সেই বাক্য শুনতে পায় নি? নিশ্চয় শুনেছে। পবিত্র শাস্ত্র বলে, তাদের ডাক সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, ছড়িয়ে পড়েছে তাদের কথা জগতের শেষ সীমা পর্যন্ত। আমি আবার বলি, ইস্রায়েলীয়েরা কি সেই বাক্য বুঝতে পারে নি? প্রথমে মোশির মধ্য দিয়ে ঈশ্বর বলেছেন, “যে জাতি কোন জাতিই নয়, সেই জাতিকে দিয়েই আমি তোমার আগ্রহ জাগিয়ে তুলব; একটা অবুঝ জাতিকে দিয়ে তোমাকে রাগিয়ে তুলব।” তারপর যিশাইয়ের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আরও জোর দিয়ে বলেছেন, “আমি তাদের কাছেই ছিলাম, কিন্তু তারা কোন সাহায্যের জন্য আমার কাছে আসে নি। আমি এই লোকদের আমার কাছে অনুরোধ জানাবার সুযোগ দিয়েছি, কিন্তু তারা আমার কাছে কোন অনুরোধ জানায় নি।” কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের বিষয়ে তিনি বলেছেন, “অবাধ্য ও একগুঁয়ে লোকদের দিকে আমি সারা দিন আমার হাত বাড়িয়েই রয়েছি।” আমি তবে জিজ্ঞাসা করি, ঈশ্বর কি তাঁর লোকদের অগ্রাহ্য করেছেন? কখনও না। আমি নিজেই একজন ইস্রায়েলীয়, অব্রাহামের বংশের এবং বিন্যামীন-গোষ্ঠীর লোক। ঈশ্বর তাঁর যে সব লোকদের আগেই বাছাই করেছিলেন তাদের অগ্রাহ্য করেন নি। নবী এলিয়ের বিষয় পবিত্র শাস্ত্র কি বলে তা কি তোমরা জান না? তিনি ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের কাছে বলেছিলেন, “প্রভু, এরা তোমার নবীদের মেরে ফেলেছে ও তোমার বেদীগুলো ভেংগে ফেলেছে। কেবল আমিই বাকী আছি, আর আমাকেও তারা মেরে ফেলবার চেষ্টা করেছে।” কিন্তু ঈশ্বর এলিয়কে কি উত্তর দিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন, “সাত হাজার লোককে আমি আমার জন্য রেখে দিয়েছি যারা বাল দেবতার কাছে হাঁটু পাতে নি।” ঈশ্বর সেই একইভাবে এখনও দয়া করে ইস্রায়েলীয়দের বিশেষ একটা অংশকে বেছে রেখেছেন। ঈশ্বর যদি দয়া করেই বেছে রেখেছেন তবে তো তা কোন কাজের ফল নয়। যদি তা-ই হত তবে দয়া আর দয়া থাকত না। তাহলে বুঝা যায়, ইস্রায়েলীয়েরা যা পাবার চেষ্টা করছিল তা তারা পায় নি, কিন্তু ঈশ্বর যাদের বেছে রেখেছিলেন তারাই তা পেয়েছে, আর অন্য সকলের মন পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “ঈশ্বর তাদের মন এমন অসাড় করলেন যে, তারা আজও পর্যন্ত তাদের চোখ দিয়ে দেখেও দেখে না এবং কান দিয়ে শুনেও শোনে না।” রাজা দায়ূদও বলেছিলেন, তাদের ভোজের উৎসবগুলো ফাঁদ ও জালের মত হোক; সেগুলো যেন তাদের উছোট খাওয়ার কারণ হয়, আর তাদের যা পাওনা তারা যেন তা-ই পায়। তাদের চোখ অন্ধ হোক যেন তারা দেখতে না পায়, আর সব সময় তাদের কোমরে খিঁচুনি ধরে যাক। তাহলে যিহূদীরা উছোট খেয়ে কি চিরকালের জন্য পড়ে গেল? মোটেই না, বরং তাদের পাপের দরুনই অযিহূদীরা উদ্ধার পাবার সুযোগ পেল যেন যিহূদীরা আগ্রহে জেগে ওঠে। তাহলে দেখা যায়, যিহূদীদের পাপের দরুন জগতের লোকদের অনেক লাভ হল, হ্যাঁ, তাদের ক্ষতির দরুন অযিহূদীদের অনেক লাভ হল। সেইজন্য যিহূদীদের উপর ঈশ্বরের পূর্ণ আশীর্বাদ যখন নেমে আসবে তখন তার সংগে অযিহূদীদের জন্য আরও কত না বেশী আশীর্বাদ আসবে! অযিহূদীরা, আমি তোমাদের বলছি, অযিহূদীদের কাছে প্রেরিত্‌ হিসাবে আমি আমার কাজকে খুব সম্মানের চোখে দেখছি। এতে যেন আমি আমার নিজের জাতির লোকদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলে তাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে উদ্ধার করতে পারি। ঈশ্বর যিহূদীদের অগ্রাহ্য করেছেন বলে যদি ঈশ্বরের সংগে জগতের অন্য লোকদের মিলন হল তবে তিনি যখন যিহূদীদের গ্রহণ করবেন তখন অবস্থাটা কি হবে? সে কি মৃতের জীবন পাওয়ার মত অবস্থা হবে না? রুটির ময়দার তাল থেকে তৈরী প্রথম রুটিটা যদি পবিত্র হয় তবে তো গোটা তালটাই পবিত্র। জলপাই গাছের মূলটাই যদি পবিত্র হয় তবে তার ডালপালাগুলোও তো পবিত্র। যদি সেই জলপাই গাছের কতগুলো ডালপালা ভেংগে ফেলে সেই জায়গায় তোমার মত বুনো জলপাই গাছের ডাল জুড়ে দেওয়া হয় এবং তুমি আসল জলপাই গাছের মূল থেকে রস টেনে নাও, তবে ভেংগে ফেলা ডালপালাগুলোর চেয়ে নিজেকে বড় মনে কোরো না। যদি কর তবে মনে রেখো, তুমি মূলকে ধরে রাখছ না বরং মূলই তোমাকে ধরে রাখছে। তুমি হয়তো বলবে, “আমাকে জুড়ে দেবার জন্যই ডালপালাগুলো ভেংগে ফেলা হয়েছিল।” বেশ, ভাল। কিন্তু তাদের ভেংগে ফেলা হয়েছে তাদের অবিশ্বাসের জন্য আর তুমি সেখানে যুক্ত হয়ে আছ তোমার বিশ্বাসের জন্য। এতে অহংকার কোরো না বরং ভক্তিপূর্ণ ভয় কর, কারণ ঈশ্বর যখন আসল ডালগুলোকে রেহাই দেন নি তখন তোমাকেও রেহাই দেবেন না। সেইজন্য ঈশ্বর যে কত দয়ালু আর কঠিন তা একবার ভেবে দেখ। যারা পড়ে গেছে তাদের প্রতি তিনি কঠিন, কিন্তু তোমার প্রতি তিনি দয়ালু-অবশ্য যদি তুমি তার দয়ার মধ্যে থাক। তা না হলে তোমাকেও কেটে ফেলা হবে। আর যদি তারা অবিশ্বাস থেকে ফেরে তবে তাদের নিজের গাছের সংগে আবার জুড়ে দেওয়া হবে, কারণ এই জুড়ে দেওয়ার কাজ ঈশ্বরই করতে পারেন। আসলে তুমি একটা বুনো জলপাই গাছের ডাল ছিলে, আর সেই গাছ থেকে তোমাকে কেটে নিয়ে বাগানের জলপাই গাছে অস্বাভাবিক ভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলে যারা সেই গাছের আসল ডালপালা ছিল, কত সহজেই না তাদের নিজের গাছের মধ্যে আবার জুড়ে দেওয়া হবে! ভাইয়েরা, তোমরা যেন নিজেদের জ্ঞানী মনে না কর সেইজন্য আমি একটা গুপ্ত সত্য তোমাদের জানিয়ে রাখতে চাই। সেই সত্য এই-অযিহূদীদের সংখ্যা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বেশীর ভাগ ইস্রায়েলীয়দের অন্তর কঠিন হয়েই থাকবে। আর এইভাবেই গোটা ইস্রায়েল জাতি উদ্ধার পাবে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, সিয়োন থেকে উদ্ধারকর্তা আসবেন; তিনি যাকোবের বংশের লোকদের মধ্য থেকে আমার প্রতি ভক্তিহীনতা দূর করবেন। আমি যখন তাদের পাপ দূর করব তখন এটাই হবে তাদের জন্য আমার আশীর্বাদযুক্ত ব্যবস্থা। সুখবরের দিক থেকে তোমাদের মংগলের জন্যই তারা এখন ঈশ্বরের শত্রু। কিন্তু ঈশ্বরের বেছে নেবার দিক থেকে পূর্বপুরুষদের জন্য তারা ঈশ্বরের ভালবাসার পাত্র। ঈশ্বর যা দান করেন এবং যাকে ডাকেন সেই বিষয়ে তাঁর মন তিনি বদলান না। যেমন তোমরা এক সময় ঈশ্বরের অবাধ্য ছিলে কিন্তু যিহূদীদের অবাধ্যতার জন্য এখন ঈশ্বরের দয়া পেয়েছ, ঠিক তেমনি করে তোমরা দয়া পেয়েছ বলে তারাও এখন অবাধ্য হয়েছে যেন তারাও এখন দয়া পেতে পারে। ঈশ্বর যেন সকলকে দয়া দেখাতে পারেন সেইজন্য তিনি সবাইকে অবাধ্যতার মধ্যে বন্দী করে রেখেছেন। ঈশ্বরের ধন অসীম। তাঁর জ্ঞান ও বুদ্ধি কত গভীর! তাঁর বিচার ও তাঁর সমস্ত কাজ বুঝা অসম্ভব। কে প্রভুর মন বুঝতে পেরেছে? আর কে-ই বা তাঁর পরামর্শদাতা হয়েছে? ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কার দাবি আছে যে, তার দাবি তাঁকে মানতে হবে? সব কিছু তো তাঁরই কাছ থেকে ও তাঁরই মধ্য দিয়ে আসে এবং সব কিছু তাঁরই উদ্দেশে। চিরকাল তাঁরই গৌরব হোক। আমেন। তাহলে ভাইয়েরা, ঈশ্বরের এই সব দয়ার জন্যই আমি তোমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, তোমরা তোমাদের দেহকে জীবিত, পবিত্র ও ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য উৎসর্গ হিসাবে ঈশ্বরের হাতে তুলে দাও। সেটাই হবে তোমাদের উপযুক্ত সেবা। এখানকার মন্দ জগতের চালচলনের মধ্যে তোমরা নিজেদের ডুবিয়ে দিয়ো না, বরং ঈশ্বরকে তোমাদের মনকে নতুন করে গড়ে তুলতে দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন হয়ে ওঠো, যেন তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা জানতে পার। ঈশ্বরের ইচ্ছা ভাল, সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং তাতে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে যে বিশেষ দয়া পেয়েছি তার মধ্য দিয়ে আমি তোমাদের প্রত্যেককে বলছি, নিজেকে যতটুকু বড় মনে করা উচিত তার চেয়ে বেশী বড় তোমরা নিজেকে মনে কোরো না, বরং যতটুকু উপযুক্ত ততটুকুই মনে কোরো। ঈশ্বর যাকে যতটা বিশ্বাসের শক্তি দিয়েছেন তার বেশী কেউ যেন নিজেকে মনে না করে। আমাদের প্রত্যেকের দেহের অনেকগুলো অংশ আছে, কিন্তু সব অংশগুলো একই কাজ করে না; ঠিক সেইভাবে আমরা সংখ্যায় অনেক হলেও খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে একটা দেহই হয়েছি। আমাদের সকলের একে অন্যের সংগে যোগ আছে। ঈশ্বরের দয়া অনুসারে আমরা ভিন্ন ভিন্ন দান পেয়েছি। সেই দান যদি নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলবার ক্ষমতা হয় তবে বিশ্বাস অনুসারে সে ঈশ্বরের বাক্য বলুক। যদি তা সেবা করবার ক্ষমতা হয় তবে সে সেবা করুক। যে শিক্ষা দেবার ক্ষমতা পেয়েছে সে শিক্ষা দিক; যে উৎসাহিত করবার ক্ষমতা পেয়েছে সে উৎসাহিত করুক; যে অন্যকে দান করবার ক্ষমতা পেয়েছে সে সরল মনে দিক; যে নেতা হবার ক্ষমতা পেয়েছে সে আগ্রহের সংগে পরিচালনা করুক; যে অন্যদের সাহায্য করবার ক্ষমতা পেয়েছে সে খুশী মনে তা করুক। ভালবাসার মধ্যে ভণ্ডামি না থাকুক। যা মন্দ তা ঘৃণা কর; যা ভাল তা শক্তভাবে ধরে রাখ। একে অন্যকে ভাইয়ের মত গভীরভাবে ভালবাস। নিজের চেয়ে অন্যকে বেশী সম্মান কর। ঈশ্বরের প্রতি সব সময় তোমাদের আগ্রহ থাকুক। তোমাদের অন্তর ভক্তিতে ভরা থাকুক। তোমরা প্রভুর কাজে লেগে থাক। তোমাদের সামনে যে আশা রয়েছে তার জন্য আনন্দ কর। দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধর। অনবরত প্রার্থনা কর। ঈশ্বরের লোকদের অভাবের সময় সাহায্য কর। অতিথিদের সেবা করতে আগ্রহী হও। যারা তোমাদের অত্যাচার করে তাদের অমংগল চেয়ো না বরং মংগল চেয়ো। যারা আনন্দ করে তাদের সংগে আনন্দিত হও; যারা কাঁদে তাদের সংগে কাঁদ। তোমাদের একের প্রতি অন্যের মনোভাব যেন একই রকম হয়। বড়লোকের ভাব না দেখিয়ে বরং যারা বড়লোক নয় তাদের সংগে মেলামেশা কর। নিজেকে জ্ঞানী মনে কোরো না। মন্দের বদলে কারও মন্দ কোরো না। সমস্ত লোকের চোখে যা ভাল সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও। তোমাদের দিক থেকে যতদূর সম্ভব সমস্ত লোকের সংগে শান্তিতে বাস কর। প্রিয় ভাইয়েরা, তোমরা নিজেরা প্রতিশোধ নিয়ো না, বরং ঈশ্বরকেই শাস্তি দিতে দাও। পবিত্র শাস্ত্রে প্রভু বলেন, “অন্যায়ের শাস্তি দেবার অধিকার কেবল আমারই আছে; যার যা পাওনা আমি তাকে তা-ই দেব।” শাস্ত্রের কথামত বরং “তোমার শত্রুর যদি খিদে পায় তাকে খেতে দাও; যদি তার পিপাসা পায় তাকে জল দাও। এই রকম করলে তুমি তার মাথায় জ্বলন্ত কয়লা গাদা করে রাখবে।” মন্দের কাছে হেরে যেয়ো না, বরং ভাল দিয়ে মন্দকে জয় কর। প্রত্যেকেই দেশের শাসনকর্তাদের মেনে চলুক, কারণ ঈশ্বর যাঁকে শাসনকর্তা করেন তিনি ছাড়া আর কেউই শাসনকর্তা হতে পারেন না। ঈশ্বরই শাসনকর্তাদের নিযুক্ত করেছেন; এইজন্য শাসনকর্তার বিরুদ্ধে যে দাঁড়ায় সে ঈশ্বরের শাসন-ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই দাঁড়ায়। যারা এই রকম করে তারা নিজেদের উপরে শাস্তি ডেকে আনে। যারা ভাল কাজ করে শাসনকর্তাদের ভয় করবার কোন কারণ তাদের থাকে না, কিন্তু যারা অন্যায় করে তারাই ভয় করে। শাসনকর্তাকে ভয় না করে কি তোমরা চলতে চাও? তাহলে যা ভাল তা-ই করতে থাক। তাতে তোমরা তাঁর কাছ থেকে প্রশংসা পাবে। তোমাদের মংগলের জন্যই তিনি ঈশ্বরের সেবাকারী হিসাবে কাজ করেন। তোমরা যদি অন্যায় কর তাহলে ভয় কর, কারণ অন্যায়কারীদের শাস্তি দেবার অধিকার তাঁর আছে। তিনি তো ঈশ্বরের সেবাকারী; যারা অন্যায় কাজ করে তাদের তিনি ঈশ্বরের হয়ে শাস্তি দেন। এইজন্য তোমরা শাসনকর্তাদের অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য। ঈশ্বরের শাস্তির ভয়েই যে কেবল তাঁদের অধীনতা স্বীকার করবে তা নয়, তোমাদের বিবেক পরিষ্কার রাখবার জন্যও তা করবে। আর সেইজন্যই তো তোমরা কর্‌ দিয়ে থাক, কারণ কর্‌-আদায়কারীরা তাঁদের কাজের দ্বারা ঈশ্বরের সেবা করছেন। যাঁর যা পাওনা তাঁকে তা দাও। যিনি কর্‌ আদায় করেন তাঁকে কর্‌ দাও; যিনি শুল্ক আদায় করেন তাঁকে শুল্ক দাও; যাঁকে শ্রদ্ধা করা উচিত তাঁকে শ্রদ্ধা কর; যাঁকে সম্মান করা উচিত তাঁকে সম্মান কর। অন্যের কাছে এক ভালবাসার ঋণ ছাড়া আর অন্য কোন ঋণ যেন তোমাদের না থাকে। যারা অন্যকে ভালবাসে তারা মোশির আইন-কানুন মেনে চলেছে। আদেশ আছে, “ব্যভিচার কোরো না, খুন কোরো না, চুরি কোরো না, লোভ কোরো না।” এই সব এবং এই রকম আরও অন্যান্য আদেশ মিলিয়ে এক কথায় বলা হয়েছে, “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবেসো।” ভালবাসলে কেউ কারও ক্ষতি করে না। তাহলে দেখা যায়, ভালবাসার মধ্য দিয়েই সমস্ত আইন-কানুন পালন করা হয়। এতক্ষণ যা বললাম, এখনকার সময় বুঝে সেইভাবেই চল। ঘুম থেকে জাগবার সময় হয়েছে, কারণ যখন আমরা বিশ্বাস করেছিলাম তখনকার চেয়ে বরং এখনই উদ্ধার পাবার সময় কাছে এসে গেছে। রাত প্রায় শেষ, ভোর হয়ে আসছে; এইজন্য এস, আমরা অন্ধকারের কাজ ছেড়ে দিয়ে আলোর অস্ত্রশস্ত্র তুলে নিই। হৈ-হল্লা করে মদ খাওয়া এবং মাতলামিতে নয়, ব্যভিচার ও বিশৃঙ্খল জীবনে নয়, ঝগড়াঝাটি ও হিংসাতে নয়, কিন্তু যারা দিনের আলোয় চলাফেরা করে, এস, আমরা তাদের মত উপযুক্ত ভাবে জীবন কাটাই। তোমরা কাপড়ের মত করে প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে দিয়ে নিজেদের ঢেকে ফেল; পাপ-স্বভাবের ইচ্ছা পূর্ণ করবার দিকে মন দিয়ো না। বিশ্বাসে যে দুর্বল তাকে আপন করে নাও; তার মতামত নিয়ে তার সংগে তর্কাতর্কি কোরো না। কেউ মনে করে সে সব কিছুই খেতে পারে, কিন্তু যে বিশ্বাসে দুর্বল সে কেবল শাক-সবজীই খায়। আমিষভোজী যেন নিরামিষভোজীকে তুচ্ছ না করে এবং নিরামিষভোজী যেন আমিষভোজীর দোষ না ধরে, কারণ ঈশ্বর তো সেই দু’জনকেই আপন করে নিয়েছেন। তুমি কে, যে অন্যের চাকরের বিচার কর? সে দাঁড়িয়ে আছে, না পড়ে গেছে, তা তার মনিবই বুঝবেন। কিন্তু সে দাঁড়িয়েই থাকবে, কারণ প্রভুই তাকে দাঁড় করিয়ে রাখতে পারেন। কারও কাছে কোন একটা দিন অন্য একটা দিনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আবার কেউ সব দিনকেই সমান মনে করে। এই ব্যাপারে কে কি করবে না করবে, তাতে যেন তার মন পুরোপুরিভাবে সায় দেয়। বিশেষ কোন একটা দিন যে পালন করে সে তো প্রভুকে খুশী করবার জন্যই তা করে। যে সব কিছু খায় সে প্রভুকে খুশী করবার জন্যই খায়, কারণ সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয়। যে সব কিছু খায় না সে প্রভুকে খুশী করবার জন্যই খায় না, আর সেও ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয়। আমাদের মধ্যে কেউই নিজের জন্য বেঁচে থাকে না এবং কেউই নিজের জন্য মরে না। আমরা যদি বাঁচি তবে প্রভুর জন্যই বেঁচে থাকি, আর যদি মরি তবে প্রভুর জন্যই মরি। তাহলে আমরা বাঁচি বা মরি আমরা প্রভুরই। খ্রীষ্ট মরেছিলেন এবং আবার জীবিতও হয়েছিলেন যেন তিনি জীবিত ও মৃত এই দু’য়েরই প্রভু হতে পারেন। তাহলে কেন তুমি তোমার ভাইয়ের দোষ ধরছ? আর কেনই বা তোমার ভাইকে তুচ্ছ করছ? বিচারের জন্য আমরা সবাই তো ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াব। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “প্রভু বলেন, ‘আমি আমার নাম করে বলছি, আমার সামনে প্রত্যেকেই হাঁটু পাতবে এবং আমাকে ঈশ্বর বলে স্বীকার করবে।’ ” তাহলে দেখা যায়, আমাদের প্রত্যেককেই নিজের বিষয়ে ঈশ্বরের কাছে হিসাব দিতে হবে। এইজন্য আমরা যেন আর একে অন্যের দোষ না ধরি, বরং এমন কোন কাজ করব না বলে ঠিক করি, যা দেখে কোন ভাই মনে বাধা পেতে পারে বা পাপে পড়তে পারে। প্রভু যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছি বলে আমি ভাল করেই জানি যে, আসলে কোন খাবারই অশুচি নয়, কিন্তু কেউ যদি কোন খাবারকে অশুচি মনে করে তবে তা তারই কাছে অশুচি। কোন খাবারের জন্য যদি তুমি তোমার ভাইয়ের মনে দুঃখ দাও তবে তো তুমি আর ভালবাসার মনোভাব নিয়ে চলছ না। যে ভাইয়ের জন্য খ্রীষ্ট মরেছিলেন, খাবারের জন্য তার সর্বনাশ কোরো না। তোমাদের কাছে যা ভাল, কেউ যেন তার নিন্দা করতে না পারে। ঈশ্বরের রাজ্যে খাওয়া-দাওয়া বড় কথা নয়; বড় কথা হল, পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে সৎ পথে চলা আর শান্তি ও আনন্দ। যে এইভাবে খ্রীষ্টের সেবা করে ঈশ্বর তার উপর সন্তুষ্ট হন এবং লোকেও তাকে ভাল মনে করে। এইজন্য যা করলে শান্তি হয় এবং যার দ্বারা আমরা একে অন্যকে গড়ে তুলতে পারি, এস, আমরা তারই চেষ্টা করি। কোন খাবারের জন্য ঈশ্বরের কাজ নষ্ট কোরো না। সব খাবারই শুচি, কিন্তু কেউ কিছু খেয়ে যদি অন্যের মনে বাধার সৃষ্টি করে তবে তা খাওয়া তার পক্ষে অন্যায়। মাংস খাওয়া, আংগুর-রস খাওয়া বা এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে তোমার কোন ভাই মনে বাধা পায়। এই বিষয়ে তুমি যা ভাল বলে বিশ্বাস কর তা ঈশ্বর ও তোমার মধ্যেই রাখ। ভাল মনে করে কিছু করবার সময় যদি কারও বিবেক তাকে দোষী না করে তবে সে ধন্য। কিন্তু যদি কেউ সন্দেহ করে কোন কিছু খায় তবে সে দোষী, কারণ সে তার বিশ্বাস মত কাজ করছে না। বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোন কিছু করাই পাপ। আমরা যারা বিশ্বাসে সবল, আমরা যেন নিজেদের সন্তুষ্ট করবার দিকে লক্ষ্য না রেখে দুর্বল বিশ্বাসীদের দুর্বলতা সহ্য করি। বিশ্বাসী ভাইকে গড়ে তুলবার উদ্দেশ্যে আমরা প্রত্যেকেই যেন তার মংগলের জন্য তাকে সন্তুষ্ট করি। খ্রীষ্টও নিজেকে সন্তুষ্ট করেন নি। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “যারা তোমাকে অপমান করে তাদের করা সব অপমান আমার উপরেই পড়েছে।” পবিত্র শাস্ত্রে যা কিছু আগে লেখা হয়েছিল তা আমাদের শিক্ষার জন্যই লেখা হয়েছিল, যাতে সেই শাস্ত্র থেকে আমরা ধৈর্য ও উৎসাহ লাভ করি এবং তার ফলে আশ্বাস পাই। খ্রীষ্ট যীশুর সংগে চলবার পথে ধৈর্য ও উৎসাহদাতা ঈশ্বর তোমাদের সকলের মন এক করুন। তাহলে তোমরা মনে ও মুখে এক হয়ে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতার গৌরব করতে পারবে। ঈশ্বরের গৌরব যাতে প্রকাশিত হয়, সেইজন্য খ্রীষ্ট যেমন তোমাদের আপন করে নিয়েছেন তেমনি তোমরাও একে অন্যকে আপন করে নাও। আবার বলা হয়েছে, হে সমস্ত জাতির লোকেরা, তোমরা ঈশ্বরের লোকদের সংগে তাঁর প্রশংসা কর। আবার আছে, হে সমস্ত জাতি, প্রভুর গৌরব কর; সমস্ত লোক তাঁর প্রশংসা করুক। আবার যিশাইয় বলেছেন, যিনি যিশয়ের মূল তিনি আসবেন, সব জাতিকে শাসন করবার জন্য তিনি দাঁড়াবেন। তাঁর উপরেই সব জাতির লোকেরা আশা রাখবে। যিনি আশা দান করেন সেই ঈশ্বর তোমাদের বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে অসীম আনন্দ ও শান্তিতে তোমাদের পরিপূর্ণ করুন। তাহলে পবিত্র আত্মার শক্তিতে তোমাদের অন্তরে আশা উপ্‌চে পড়বে। আমার ভাইয়েরা, আমি তোমাদের সম্বন্ধে এই কথা বিশ্বাস করি যে, তোমাদের অন্তর মংগল-ইচ্ছায় পূর্ণ, তোমাদের সব রকম জ্ঞান আছে, আর তোমরা একে অন্যকে উপদেশ দিতে পার। আমি ঈশ্বরের জন্য যে কাজ করছি তাতে খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে আমার গৌরব করবার অধিকার আছে। যেখানে খ্রীষ্টের নাম কখনও বলা হয় নি সেখানে সুখবর প্রচার করাই আমার জীবনের লক্ষ্য, যেন অন্যের গাঁথা ভিত্তির উপরে আমাকে গড়ে তুলতে না হয়। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “যাদের কাছে তাঁর বিষয় বলা হয় নি তারা তা দেখতে পাবে, আর যারা কখনও শোনে নি তারা বুঝতে পারবে।” এইজন্যই আমি তোমাদের কাছে অনেক বার যেতে চেয়েও বাধা পেয়েছি। কিন্তু এখন এই সব এলাকায় আমার কাজ করবার আর জায়গা নেই। অনেক বছর ধরেই তোমাদের কাছে আমার যাবার ইচ্ছা, তাই এখন সেপন দেশে যাবার পথে আমি তোমাদের কাছে যেতে চাইছি। আমি আশা করি যে, ঐ পথ দিয়ে যাবার সময়ে তোমাদের কাছে যেতে পারব এবং তোমাদের সংগে কিছু সময় আনন্দে কাটাবার পর তোমরাই আমাকে সেপন দেশে যাবার ব্যবস্থা করে দেবে। কিন্তু এখন আমি ঈশ্বরের লোকদের সাহায্য করবার জন্য যিরূশালেমে যাচ্ছি, কারণ যিরূশালেমে ঈশ্বরের লোকদের মধ্যে যে সব গরীব লোক আছেন তাঁদের জন্য ম্যাসিডোনিয়া ও আখায়ার মণ্ডলীগুলোর লোকেরা কিছু চাঁদা তুলেছেন। এই চাঁদা তাঁরা খুশী হয়েই তুলেছেন। এছাড়া এই মণ্ডলীগুলো যিরূশালেমের ঈশ্বরের লোকদের কাছে ঋণী, কারণ যিহূদীরা যখন তাদের আত্মিক আশীর্বাদের ভাগ অযিহূদীদের দিয়েছে তখন অযিহূদীদেরও উচিত সাংসারিক বিষয়ে যিহূদীদের সাহায্য করা। আমার এই কাজ শেষ হলে পর আমি যখন জানব যে, সেই চাঁদা ঠিকমত পৌঁছেছে তখন তোমাদের কাছ হয়ে আমি সেপনে যাব। আমি জানি যখন আমি তোমাদের কাছে যাব তখন খ্রীষ্টের পরিপূর্ণ আশীর্বাদ নিয়েই যাব। ভাইয়েরা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে এবং পবিত্র আত্মার দেওয়া ভালবাসার মধ্য দিয়ে আমি তোমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, তোমরা ঈশ্বরের কাছে আমার জন্য আমার সংগে প্রার্থনার যুদ্ধ চালাতে থাক। তোমরা প্রার্থনা কর, যিহূদিয়াতে যারা ঈশ্বরকে অমান্য করে তাদের হাত থেকে যেন আমি রক্ষা পাই, আর যিরূশালেমের ঈশ্বরের লোকেরা যেন আমার এই সাহায্য গ্রহণ করেন। তখন ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমি খুশী মনেই তোমাদের কাছে যেতে পারব এবং তোমাদের সংগে থেকে প্রাণ জুড়াব। শান্তিদাতা ঈশ্বর তোমাদের সকলের সংগে সংগে থাকুন। আমেন। এবার আমি আমাদের বোন ফৈবীর বিষয় তোমাদের কাছে সুপারিশ করছি। তিনি কিংক্রিয়া শহরের মণ্ডলীর পরিচারিকা। ঈশ্বরের লোকদের যেভাবে আপন করে নেওয়া উচিত তাঁকে তোমরা প্রভুর নামে সেইভাবেই আপন করে নিয়ো। কোন ব্যাপারে যদি তিনি তোমাদের সাহায্য চান তবে তাঁকে সাহায্য কোরো, কারণ তিনি অনেক লোককে, এমন কি, আমাকেও সাহায্য করেছেন। প্রিষ্কিল্লা ও আকিলাকে আমার শুভেচ্ছা জানায়ো। তাঁরা খ্রীষ্ট যীশুর কাজে আমার সংগে পরিশ্রম করেছেন। আমার প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে তাঁরা নিজেদের মৃত্যুর মুখে ফেলেছিলেন। কেবল আমি নই, কিন্তু সমস্ত অযিহূদী মণ্ডলীগুলোও তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁদের বাড়ীতে যারা মণ্ডলী হিসাবে একসংগে মিলিত হয় তাদেরও শুভেচ্ছা জানায়ো। এশিয়া প্রদেশে প্রথম যিনি খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেছিলেন আমার সেই প্রিয় বন্ধু ইপেনিতকে শুভেচ্ছা জানায়ো। মরিয়ম, যিনি তোমাদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন, তাঁকে শুভেচ্ছা জানায়ো। আন্দ্রনীক্‌ ও যূনিয়কে শুভেচ্ছা জানায়ো। তাঁরা আমারই মত যিহূদী এবং আমার সংগে তাঁরাও জেলে বন্দী ছিলেন। প্রেরিত্‌দের মধ্যে তাঁরা খুব সম্মানিত লোক। তাঁরা আমার আগেই খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করেছিলেন। প্রভুর সংগে যুক্ত আমার প্রিয় বন্ধু আম্‌প্লিয়াতকে শুভেচ্ছা জানায়ো। উর্বাণ, যিনি আমাদের সংগে খ্রীষ্টের জন্য কাজ করেন, তাঁকে আর আমার প্রিয় বন্ধু স্তাখিস্‌কে শুভেচ্ছা জানায়ো। আপিল্লিস্‌কে শুভেচ্ছা জানায়ো। খ্রীষ্টের লোক হিসাবে তাঁকে যাচাই করে দেখা হয়েছে। আরিষ্টবুলের বাড়ীর লোকদের শুভেচ্ছা জানায়ো। হেরোদিয়োন, যিনি আমার মতই যিহূদী, তাঁকে শুভেচ্ছা জানায়ো। নার্কিসের বাড়ীর মধ্যে যাঁরা প্রভুর লোক তাঁদের শুভেচ্ছা জানায়ো। ত্রুফেণা ও ত্রুফোষাকে শুভেচ্ছা জানায়ো। এই স্ত্রীলোকেরা প্রভুর জন্য পরিশ্রম করেন। স্নেহের পর্ষিসকেও শুভেচ্ছা জানায়ো। এই স্ত্রীলোকটিও প্রভুর জন্য অনেক কাজ করেছেন। খ্রীষ্টের উপর ভাল বিশ্বাসী বলে যাঁর সুনাম আছে সেই রূফকে ও তাঁর মাকে শুভেচ্ছা জানায়ো। তাঁর মা আমার কাছে আমার মায়ের মতই। অসুংক্রিত, ফ্লিগোন, হের্মেস, পাত্রোবাস, হের্মাস্‌ এবং তাঁদের সংগে খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসী অন্যান্য ভাইদেরও শুভেচ্ছা জানায়ো। ফিললগ ও যুলিয়া, নিরীয় ও তাঁর বোন, ওলুমপ ও তাঁদের সংগে ঈশ্বরের যে সব লোক আছেন তাঁদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানায়ো। ভালবাসার মনোভাব নিয়ে তোমরা একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানায়ো। খ্রীষ্টের সমস্ত মণ্ডলীগুলো তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ভাইয়েরা, তোমরা যে শিক্ষা পেয়েছ তার বিরুদ্ধে শিক্ষা দিয়ে যারা দলাদলি ও বাধার সৃষ্টি করে, তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতে আমি তোমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থেকো, কারণ এই সব লোকেরা আমাদের প্রভু খ্রীষ্টের সেবা না করে বরং নিজেদের পেটের সেবাই করছে। মিষ্টি ও খোশামোদের কথা বলে তারা সরলমনা লোকদের ঠকাচ্ছে। তোমাদের বাধ্যতার কথা সবাই শুনেছে, আর সেইজন্য আমি তোমাদের উপর খুশী হয়েছি। আমি চাই যেন তোমরা ভালকে চিনে গ্রহণ কর এবং মন্দ থেকে দূরে থাক। শান্তিদাতা ঈশ্বর শীঘ্রই শয়তানকে তোমাদের পায়ের নীচে ফেলে গুঁড়িয়ে দেবেন। আমাদের প্রভু যীশুর দয়া তোমাদের উপরে থাকুক। আমার সংগে যিনি কাজ করেন সেই তীমথিয় তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন; লুকিয়, যাসোন ও সোষিপাত্রও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তাঁরাও আমার মত যিহূদী জাতির লোক। আমি, তর্তিয়, পৌলের এই চিঠিখানা লিখছি। প্রভুর লোক হিসাবে আমিও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে যে সুখবর আমি প্রচার করি সেই সুখবরের মধ্য দিয়ে তোমাদের স্থির রাখবার ক্ষমতা ঈশ্বরের আছে। অনেক যুগ ধরে ঈশ্বর তাঁর গুপ্ত উদ্দেশ্যের বিষয় কাউকে বলেন নি, কিন্তু এখন সুখবরের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশিত হয়েছে এবং সেইমত আমি প্রচার করছি। অনন্ত ঈশ্বরের আদেশ মত নবীদের লেখার মধ্য দিয়ে সব জাতির লোকদের কাছে তা জানানো হয়েছে, যেন তারা খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করে ঈশ্বরের বাধ্য হতে পারে। একমাত্র তিনিই ঈশ্বর, তিনিই জ্ঞানী। যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে চিরকাল তাঁরই গৌরব হোক। আমেন। আমাদের পিতা ঈশ্বর আর প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। আমি সব সময় তোমাদের জন্য আমার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে থাকি, কারণ খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে তোমরা ঈশ্বরের দয়া পেয়েছ। সেই দয়া এই যে, তোমরা খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে সব দিক থেকে, অর্থাৎ সব কিছু বলবার ক্ষমতায় ও জ্ঞানে বেড়ে উঠেছ, কারণ খ্রীষ্টের সম্বন্ধে আমাদের সাক্ষ্য তোমাদের অন্তরে গাঁথা হয়ে আছে। সেইজন্যই যখন তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত হবার জন্য আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করে আছ তখন ঈশ্বরের দেওয়া কোন দানের অভাব তোমাদের হচ্ছে না। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টই শেষ পর্যন্ত তোমাদের স্থির রাখবেন, যার ফলে তাঁর আসবার দিনে তোমরা সব রকম নিন্দার বাইরে থাকবে। ঈশ্বর বিশ্বাসযোগ্য; তিনিই তোমাদের ডেকেছেন যেন তাঁর পুত্র আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ও তোমাদের মধ্যে যোগাযোগ-সম্বন্ধ থাকে। ভাইয়েরা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের হয়ে আমি তোমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি যে, তোমরা সকলে এক হও। তোমাদের মধ্যে কোন দলাদলি না থাকুক, বরং তোমরা একমন ও একমত হও। আমার ভাইয়েরা, তোমাদের সম্বন্ধে ক্লোয়ীর বাড়ীর লোকদের কাছে এই খবর পেলাম যে, তোমাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ রয়েছে। আমি এই কথা বলতে চাইছি যে, তোমাদের মধ্যে কেউ বলে, “আমি পৌলের দলের”; কেউ বলে, “আমি আপল্লোর দলের”; কেউ বলে, “আমি পিতরের দলের”; আবার কেউ বলে, “আমি খ্রীষ্টের দলের।” কিন্তু খ্রীষ্টকে কি ভাগ করা হয়েছে? পৌলকে কি তোমাদের জন্য ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল? তোমরা কি পৌলের নামে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছ? আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ যে, ক্রীষ্প আর গাইয় ছাড়া তোমাদের আর কাউকেই আমি বাপ্তিস্ম দিই নি, যাতে কেউ বলতে না পারে যে, তোমরা আমার নামে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছ। অবশ্য স্তিফানের পরিবারের লোকদেরও আমি বাপ্তিস্ম দিয়েছি, কিন্তু তা ছাড়া আর কাউকে বাপ্তিস্ম দিয়েছি বলে আমার মনে পড়ে না। খ্রীষ্ট আমাকে বাপ্তিস্ম দিতে পাঠান নি বরং সুখবর প্রচার করবার জন্যই পাঠিয়েছেন। সেই সুখবর তিনি আমাকে জ্ঞানীদের ভাষায় প্রচার করতে পাঠান নি, যেন খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু শক্তিহীন হয়ে না পড়ে। যারা ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে খ্রীষ্টের সেই ক্রুশীয় মৃত্যুর কথা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়; কিন্তু আমরা যারা পাপ থেকে উদ্ধারের পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমাদের কাছে তা ঈশ্বরের শক্তি। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “আমি জ্ঞানীদের জ্ঞান নষ্ট করব, বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি বিফল করব।” কিন্তু জ্ঞানী লোক কোথায়? পণ্ডিত লোকই বা কোথায়? আর যার তর্ক করবার ক্ষমতা আছে এই যুগের সেই রকম লোকই বা কোথায়? এই জগতের জ্ঞান যে কেবল মূর্খতা তা কি ঈশ্বর দেখান নি? ঈশ্বর তাঁর নিজের জ্ঞানে স্থির করেছেন বলেই জগৎ তার নিজের জ্ঞান দিয়ে ঈশ্বরকে জানতে পারে নি। এইজন্য সুখবরের মূর্খতা দিয়ে পাপ থেকে বিশ্বাসীদের উদ্ধার করা ঈশ্বর ভাল মনে করলেন। যিহূদীরা চিহ্ন হিসাবে আশ্চর্য কাজ দেখতে চায়, গ্রীকেরা জ্ঞানের খোঁজ করে, কিন্তু আমরা ক্রুশে দেওয়া খ্রীষ্টের কথা প্রচার করি। সেই কথা যিহূদীদের কাছে একটা বাধা আর অযিহূদীদের কাছে মূর্খতা, কিন্তু যিহূদী হোক আর গ্রীকই হোক, ঈশ্বর যাদের ডেকেছেন তাদের কাছে সেই খ্রীষ্টই ঈশ্বরের শক্তি আর ঈশ্বরের জ্ঞান। ঈশ্বরের মধ্যে যা মূর্খতা বলে মনে হয় তা মানুষের জ্ঞানের চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞানপূর্ণ, আর যা দুর্বলতা বলে মনে হয় তা মানুষের শক্তির চেয়ে অনেক বেশী শক্তিপূর্ণ। ভাইয়েরা, তোমাদের যখন ডাকা হয়েছিল তখন তোমরা কি রকমের লোক ছিলে সেই কথা ভেবে দেখ। মানুষের বিচারে তোমাদের মধ্যে অনেকেই যে জ্ঞানী বা ক্ষমতাশালী বা উঁচু বংশের তা নয়। কিন্তু জগৎ যা মূর্খতা বলে মনে করে ঈশ্বর তা-ই বেছে নিয়েছেন যেন জ্ঞানীরা লজ্জা পায়। জগৎ যা দুর্বল বলে মনে করে ঈশ্বর তা-ই বেছে নিয়েছেন যেন যা শক্তিশালী তা শক্তিহীন হয়। জগৎ যা নীচ ও তুচ্ছ বলে মনে করে, এমন কি, জগতের চোখে যা কিছুই নয় ঈশ্বর তা-ই বেছে নিয়েছেন যেন জগতের চোখে যা মূল্যবান তা মূল্যহীন হতে পারে। তিনি ঐ সব বেছে নিয়েছেন যেন তাঁর সামনে কোন মানুষ গর্ব করতে না পারে। খ্রীষ্ট যীশুর সংগে তোমরা যে যুক্ত আছ তা ঈশ্বর থেকেই হয়েছে। যীশু খ্রীষ্টই আমাদের কাছে ঈশ্বরের দেওয়া জ্ঞান; তিনিই আমাদের নির্দোষিতা, পবিত্রতা ও মুক্তি। এইজন্য পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, “যে গর্ব করে সে প্রভুকে নিয়েই গর্ব করুক।” ভাইয়েরা, তোমাদের কাছে গিয়ে ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর প্রচার করবার সময় আমি সুন্দর ভাষা ব্যবহার করি নি বা খুব জ্ঞানী লোকের মত কথা বলি নি। আমি ঠিক করেছিলাম, তোমাদের কাছে থাকবার সময়ে আমি যীশু খ্রীষ্টকে, অর্থাৎ ক্রুশে দেওয়া যীশু খ্রীষ্টকে জানা ছাড়া আর কিছুই জানব না। যখন তোমাদের কাছে ছিলাম তখন আমি নিজেকে দুর্বল মনে করতাম এবং ভয়ে খুবই কাঁপতাম। আমার প্রচার ও আমার দেওয়া সংবাদের মধ্যে লোকদের ভাসিয়ে নেবার মত কোন জ্ঞানপূর্ণ যুক্তি-তর্ক ছিল না বরং পবিত্র আত্মার শক্তিই তাতে দেখা গিয়েছিল, যাতে তোমাদের বিশ্বাস মানুষের জ্ঞানের উপর নির্ভর না করে ঈশ্বরের শক্তির উপর নির্ভর করে। যারা খ্রীষ্টীয় জীবনে পরিপক্ক তাদের কাছে অবশ্য আমরা জ্ঞানের কথা বলি; কিন্তু সেই জ্ঞান এই জগতের নয়, কিম্বা এই জগতের নেতাদেরও নয় যারা ক্ষমতাশূন্য হয়ে পড়ছে। আসলে আমরা ঈশ্বরের জ্ঞানপূর্ণ গুপ্ত উদ্দেশ্যের কথাই বলি। সেই উদ্দেশ্য লুকানো ছিল এবং জগৎ সৃষ্টির আগেই ঈশ্বর তা স্থির করে রেখেছিলেন যেন আমরা তাঁর মহিমার ভাগী হতে পারি। এই যুগের নেতাদের মধ্যে কেউই তা বোঝে নি; যদি তা বুঝত তাহলে সেই মহিমাপূর্ণ প্রভুকে ক্রুশে দিত না। কিন্তু পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, “ঈশ্বরকে যারা ভালবাসে তাদের জন্য তিনি যা যা ঠিক করে রেখেছেন, সেগুলো কেউ চোখেও দেখে নি, কানেও শোনে নি এবং মনেও ভাবে নি।” কিন্তু ঈশ্বর তাঁর আত্মার মধ্য দিয়ে সেগুলো আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন, কারণ পবিত্র আত্মার অজানা কিছুই নেই; এমন কি, তিনি ঈশ্বরের গভীর বিষয়ও জানেন। মানুষের মধ্যে এমন কে আছে, যে অন্য মানুষের মনের কথা জানতে পারে? মানুষের মধ্যে যে আত্মা আছে সে-ই কেবল তার নিজের মনের কথা জানে। সেই রকম, ঈশ্বরের আত্মা ছাড়া ঈশ্বরের মনের কথা অন্য কেউ জানতে পারে না। আমরা জগতের আত্মাকে পাই নি, বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে তাঁর আত্মাকে পেয়েছি, যেন ঈশ্বর আমাদের যে সব দান দিয়েছেন তা বুঝতে পারি; আর সেই দানগুলোর কথাই আমরা বলি। তা বলবার জন্য আমরা যে সব কথা ব্যবহার করি তা মানুষের জ্ঞান থেকে শিক্ষা পেয়ে বলি না, কিন্তু পবিত্র আত্মার দ্বারা শিক্ষা পেয়েই বলি। আত্মিক সত্য ব্যাখ্যা করবার জন্য আমরা আত্মিক কথাই ব্যবহার করি। যে লোক আত্মিক নয় সে ঈশ্বরের আত্মার কাছ থেকে যা আসে তা গ্রহণ করে না, কারণ সেগুলো তার কাছে মুর্খতা। সেগুলো সে বুঝতে পারে না, কারণ পবিত্র আত্মা শিক্ষা না দিলে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায় না। যে লোক আত্মিক সে সব কিছুই পরীক্ষা করে দেখে, কিন্তু কেউ তাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারে না। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, কে প্রভুর মন বুঝতে পেরেছে যে, সে তাঁকে উপদেশ দিতে পারে? কিন্তু খ্রীষ্টের মন আমাদের অন্তরে রয়েছে। ভাইয়েরা, যারা আত্মিক সেই রকম লোকদের কাছে যেভাবে কথা বলা উচিত, আমি তোমাদের কাছে সেইভাবে কথা বলতে পারি নি, বরং যারা পাপ-স্বভাবের অধীনে আছে তাদের কাছে যেভাবে কথা বলা উচিত, সেইভাবেই তোমাদের কাছে কথা বলেছিলাম। খ্রীষ্টিয় জীবনে তোমরা তো একেবারে শিশুর মত, তাই তোমাদের কাছে সেইভাবেই কথা বলেছিলাম। শক্ত খাবার না দিয়ে আমি তোমাদের দুধ খেতে দিয়েছিলাম, কারণ তখন তোমরা সেই শক্ত খাবার গ্রহণ করবার অবস্থায় ছিলে না। আর এখনও তোমরা সেই অবস্থায় নেই, কারণ তোমরা এখনও পাপ-স্বভাবের অধীনে আছ। তোমাদের মধ্যে যখন হিংসা আর ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে তখন কি তোমরা পাপ-স্বভাবের অধীন নও? আর তোমাদের চালচলন কি একেবারে সাধারণ লোকদের মতই নয়? তোমাদের মধ্যে যখন একজন বলে সে পৌলের দলের এবং আর একজন বলে সে আপল্লোর দলের তখন তোমরা কি একেবারে সাধারণ লোকদের মত নও? আপল্লো কে? আর পৌলই বা কে? আমরা তো সেবাকারী মাত্র যাদের মধ্য দিয়ে তোমরা বিশ্বাসের পথে এসেছ। প্রভুই আমাদের প্রত্যেককে যার যার কাজ দিয়েছেন। আমি বীজ লাগিয়েছিলাম, আপল্লো তাতে জল দিয়েছিলেন, কিন্তু ঈশ্বরই তা বাড়িয়ে তুলেছিলেন। সেইজন্য যে বীজ লাগায় বা যে তাতে জল দেয় সে কিছুই নয়; কিন্তু ঈশ্বর, যিনি বাড়িয়ে তোলেন, তিনিই সব। যে বীজ লাগায় আর যে জল দেয় তাদের উদ্দেশ্য একই, কিন্তু প্রত্যেকে যার যার পরিশ্রম হিসাবে পুরস্কার পাবে, কারণ আমরা দু’জনই ঈশ্বরের সংগে কাজ করছি। তোমরা ঈশ্বরেরই ক্ষেত, ঈশ্বরেরই তৈরী দালান। ঈশ্বরের কাছ থেকে যে বিশেষ দয়া আমি পেয়েছি তার দ্বারাই ওস্তাদ রাজমিস্ত্রির মত আমি ভিত্তি গেঁথেছি, আর তার উপরে অন্যেরা দালান তৈরী করছে। কিন্তু কে কিভাবে তৈরী করছে সেই বিষয়ে সে সাবধান হোক। যে ভিত্তি আগেই গাঁথা হয়ে গেছে সেটা ছাড়া আর কোন ভিত্তি কেউ গাঁথতে পারে না। যীশু খ্রীষ্টই হলেন সেই ভিত্তি। সেই ভিত্তির উপরে সোনা, রূপা, দামী পাথর, কাঠ, খড় বা বিচালি দিয়ে যদি লোকে গড়ে তোলে, তবে কে কি রকম কাজ করেছে তা ভাল করে দেখা যাবে। বিচারের দিনেই তা প্রকাশিত হবে, কারণ সেই দিনের প্রকাশ আগুনের মধ্য দিয়েই হবে। কার কাজ কি রকম তা আগুনই যাচাই করবে। যে যা গড়ে তুলেছে তা যদি টিকে থাকে তবে সে পুরস্কার পাবে; আর যদি তা পুড়ে যায় তবে তার ক্ষতি হবে। অবশ্য সে নিজে উদ্ধার পাবে, কিন্তু তার অবস্থা এমন লোকের মত হবে যে আগুনের মধ্য দিয়ে পার হয়ে এসেছে। তোমরা কি জান না যে, তোমরা ঈশ্বরের থাকবার ঘর আর ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করেন? যদি কেউ ঈশ্বরের থাকবার ঘর নষ্ট করে তবে ঈশ্বরও তাকে নষ্ট করবেন, কারণ তাঁর থাকবার ঘর পবিত্র, আর তোমরাই সেই ঘর। তোমরা কেউ নিজেকে ফাঁকি দিয়ো না। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এই যুগের চিন্তাধারা অনুসারে নিজেকে জ্ঞানী মনে করে তবে সে মূর্খ হোক যেন সে সত্যিকারের জ্ঞানী হতে পারে, কারণ ঈশ্বরের চোখে এই জগতের জ্ঞান কেবল মূর্খতা। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “ঈশ্বর জ্ঞানীদের তাদের ছল-চাতুরীতে ধরেন।” আবার লেখা আছে, “জ্ঞানীদের সমস্ত চিন্তাই যে নিষ্ফল তা প্রভু জানেন।” সেইজন্য তোমরা কেউ কোন মানুষকে নিয়ে গর্ব কোরো না, কারণ সবই তো তোমাদের। পৌল, আপল্লো, পিতর, এই জগৎ, জীবন, মৃত্যু, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সব কিছু, সবই তোমাদের; তোমরা খ্রীষ্টের আর খ্রীষ্ট ঈশ্বরের। লোকে আমাদের মনে করুক যে, আমরা খ্রীষ্টের সেবাকারী এবং আমাদের উপর ঈশ্বরের গোপন সত্য জানাবার ভার দেওয়া হয়েছে। যাদের উপর ভার দেওয়া হয়েছে তাদের দেখাতে হবে যে, তারা বিশ্বাসযোগ্য। আমার বিচার তোমরাই কর বা আদালত করুক, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না; এমন কি, আমিও আমার নিজের বিচার করি না। আমার বিবেক পরিষ্কার, কিন্তু তাতে এটা প্রমাণ হচ্ছে না যে, আমি নির্দোষ। প্রভুই আমার বিচার করেন। সেইজন্য প্রভুর আসবার আগে, অর্থাৎ সেই ঠিক করা সময়ের আগে তোমরা কোন কিছুরই দোষ ধরতে যেয়ো না। অন্ধকারে যা লুকানো আছে তিনিই তখন তা আলোতে আনবেন এবং মানুষের অন্তরের গোপন উদ্দেশ্যগুলোও প্রকাশ করবেন। সেই সময়ে ঈশ্বরের কাছ থেকেই যে যার পাওনা প্রশংসা পাবে। ভাইয়েরা, তোমাদের উপকারের জন্য আমি আমার নিজের আর আপল্লোর উদাহরণ দিয়ে এই সব কথা বললাম, যেন তোমরা আমাদের কাছ থেকে শিখতে পার যে, পবিত্র শাস্ত্রে যা লেখা আছে তার বাইরে যেতে নেই। তাহলে তোমরা একজনকে ফেলে আর একজনকে নিয়ে অহংকারে ফুলে উঠবে না। তুমি যে অন্যদের চেয়ে বিশেষ কিছু তা তো কেউ মনে করে না। তোমার এমন কি আছে যা তুমি দান হিসাবে পাও নি? আর যদি তুমি তা পেয়েই থাক তবে পাও নি বলে কেন গর্ব করছ? তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে তোমরা আগেই সব কিছু পেয়ে গেছ, আগেই ধনী হয়েছ, আর আমাদের বাদ দিয়েই রাজা হয়ে বসে আছ। অবশ্য তোমরা রাজা হলে ভালই হত, তাহলে আমরাও তোমাদের সংগে রাজা হতে পারতাম। মেরে ফেলা হবে বলে যাদের মিছিলের শেষে রাখা হয়, আমার মনে হয় ঈশ্বর আমাদের, অর্থাৎ প্রেরিত্‌দের ঠিক তেমনি সকলের শেষে রেখেছেন। আমরা সারা জগতের কাছে, অর্থাৎ স্বর্গদূত আর লোকদের কাছে যেন ঠাট্টার পাত্র হয়েছি। আমরা খ্রীষ্টের জন্য মূর্খ হয়েছি, আর তোমরা খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে বুদ্ধিমান হয়েছ। আমরা দুর্বল কিন্তু তোমরা বলবান। তোমরা অনেক সম্মান পেয়েছ আর আমরা অসম্মান পেয়েছি। এই মুহূর্ত পর্যন্তও আমরা খিদে আর পিপাসায় কষ্ট পাচ্ছি। আমাদের কাপড়ের অভাব আছে, আমাদের সংগে নিষ্ঠুর ব্যবহার করা হচ্ছে, আমাদের ঘর- বাড়ী নেই। আমরা নিজের হাতে কঠিন পরিশ্রম করছি। যখন লোকে আমাদের গালাগালি দেয় তখন আমরা তাদের মংগল কামনা করি; যখন তারা আমাদের কষ্ট দেয় তখন আমরা তা সহ্য করি; যখন তারা আমাদের নিন্দা করে তখন নম্রভাবে আমরা তাদের উত্তর দিই। এখনও পর্যন্ত আমরা জগতের আবর্জনার মত, দুনিয়ার জঞ্জাল হয়েই রয়েছি। আমি তোমাদের লজ্জা দেবার জন্য এই সব লিখছি না, বরং আমার প্রিয় সন্তান হিসাবে সাবধান করবার জন্যই লিখছি। খ্রীষ্টের বিষয়ে শিক্ষা দেবার লোক হয়তো তোমাদের হাজার হাজার থাকতে পারে, কিন্তু পিতা তোমাদের অনেক নেই; আমিই সুখবরের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টিয় জীবনে তোমাদের পিতা হয়েছি। সেইজন্যই আমি বিশেষভাবে তোমাদের অনুরোধ করছি, আমি যা করি তোমরাও তা-ই কর; আর এইজন্যই আমি তীমথিয়কে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি। বিশ্বাসী হিসাবে তিনি আমার প্রিয় আর বিশ্বস্ত সন্তান। যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে আমার শিক্ষা ও কাজ কি রকম, তিনি তা তোমাদের মনে করিয়ে দেবেন। প্রত্যেক জায়গার প্রত্যেক মণ্ডলীতে আমি সেই সব বিষয়ে একই রকম শিক্ষা দিয়ে থাকি। আমি তোমাদের কাছে আসব না মনে করে তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অহঙ্কারে ফুলে উঠেছে। কিন্তু প্রভুর ইচ্ছা হলে আমি শীঘ্রই তোমাদের কাছে আসব। যারা অহঙ্কারে ফুলে উঠেছে তাদের কথাবার্তা শুনতে আসব না, কিন্তু তাদের শক্তি কতখানি তা দেখতে আসব। ঈশ্বরের রাজ্য তো কথার ব্যাপার নয়, তা শক্তির ব্যাপার। তোমাদের ইচ্ছা কি? আমি তোমাদের কাছে কি নিয়ে আসব-বেত, না ভালবাসা আর নরম মনোভাব? শোনা যাচ্ছে, তোমাদের মধ্যে ব্যভিচারের পাপ আছে, আর সেই ব্যভিচার এমন জঘন্য রকমের যে, অযিহূদীরা পর্যন্ত তা করে না। এমন কি, একজন তার সৎমাকে নিজের স্ত্রীর মত করে রেখেছে। আর এর পরেও তোমরা অহঙ্কার করছ! এর চেয়ে তোমাদের কি দুঃখ করা এবং যে এই কাজ করেছে তাকে তোমাদের মধ্য থেকে বের করে দেওয়া উচিত ছিল না? আমি দেহে উপস্থিত না থাকলেও আত্মায় তোমাদের সংগে আছি। যে এই রকম কাজ করেছে, উপস্থিত থাকা লোকের মতই আমি তার বিচার আগেই করে রেখেছি। আমার বিচার এই যে, আমাদের প্রভু যীশুর নামে যখন তোমরা এক জায়গায় মিলিত হবে আর আমিও আত্মায় তোমাদের সংগে থাকব এবং প্রভু যীশুর শক্তি আমাদের উপর থাকবে, তখন সেই লোককে শয়তানের হাতে দিয়ে দিতে হবে, যেন তার দেহ ধ্বংস হয় কিন্তু আত্মা প্রভু যীশুর আসবার দিনে উদ্ধার পায়। গর্ব করা তোমাদের পক্ষে ভাল নয়। তোমরা কি জান না যে, একটুখানি খামি একটা গোটা ময়দার তালকে ফাঁপিয়ে তোলে? তোমাদের মধ্য থেকে সেই পুরানো খামি ফেলে দাও, যেন তোমরা একটা নতুন খামিহীন ময়দার তাল হতে পার; আর আসলেও তোমরা তা-ই। আমাদের উদ্ধার-পর্বের মেষ-শিশু খ্রীষ্টকে উৎসর্গ করা হয়েছে। সেইজন্য পুরানো খামি, অর্থাৎ হিংসা ও মন্দ দিয়ে নয়, বরং এস, আমরা খামিহীন রুটি, অর্থাৎ সরলতা ও সত্য দিয়ে পর্বটা পালন করি। আমার চিঠিতে আমি তোমাদের কাছে লিখেছিলাম, তোমরা যেন খারাপ চরিত্রের লোকদের সংগে মেলামেশা না কর। এই জগতের খারাপ চরিত্রের লোক, লোভী, জোচ্চোর বা যারা প্রতিমা পূজা করে তাদের কথা অবশ্য আমি বলি নি, কারণ তাহলে তোমাদের তো এই জগতের বাইরে চলে যেতে হয়। আসলে আমি যা লিখেছিলাম তার অর্থ এই-যদি কেউ নিজেকে বিশ্বাসী ভাই বলে অথচ সে খারাপ চরিত্রের লোক বা লোভী হয়, প্রতিমা পূজা করে, অন্যের নিন্দা করে, মাতাল বা জোচ্চোর হয়, তবে তার সংগে মেলামেশা কোরো না। এমন কি, তার সংগে খাওয়া-দাওয়াও কোরো না। মণ্ডলীর বাইরের লোকদের বিচার করবার জন্য আমার কি দায় পড়েছে? কিন্তু মণ্ডলীর ভিতরের লোকদের বিচার করা কি তোমাদেরই উচিত নয়? যারা বাইরের তাদের বিচার ঈশ্বরই করবেন। পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, “তোমাদের মধ্য থেকে সেই মন্দ লোককে বের করে দাও।” তোমাদের মধ্যে কারও যদি কোন বিশ্বাসী ভাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ করবার কোন কারণ থাকে, তবে সে কোন্‌ সাহসে ঈশ্বরের লোকদের কাছে না গিয়ে যারা ঈশ্বরের নয় তাদের কাছে গিয়ে বিচার চায়? তোমরা কি জান না যে, ঈশ্বরের লোকেরাই জগতের বিচার করবে? যখন তোমরা জগতের বিচার করবে তখন তোমরা কি সামান্য বিষয়ের বিচার করতে পার না? তোমরা কি জান না আমরা স্বর্গদূতদেরও বিচার করব? তা-ই যদি হয় তবে এই জগতের বিষয় তো সামান্য কথা! যদি তোমাদের এই রকম কোন নালিশ থাকে তবে যারা মণ্ডলীর লোক নয় তাদেরই কি তোমরা বিচারক হবার জন্য ঠিক করে থাক? তোমাদের লজ্জা দেবার জন্য আমি এই কথা বলছি। তোমাদের মধ্যে সত্যিই কি এমন কোন জ্ঞানী লোক নেই, যে ভাইদের মধ্যে গোলমালের মীমাংসা করে দিতে পারে? তার বদলে ভাই কিনা ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে যায়, আর তাও আবার অবিশ্বাসীদের সামনে! আসলে তোমরা যে একে অন্যের বিরুদ্ধে মামলা-মকদ্দমা করছ তাতে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে, তোমরা হেরে গেছ। তার চেয়ে বরং অন্যায় সহ্য কর না কেন? ঠকে যাও না কেন? তার বদলে তোমরাই অন্যায় করছ, তোমরাই ঠকাচ্ছ, আর তা তোমাদের ভাইদের প্রতিই করছ! যারা অন্যায় করে তারা যে ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হবে না, তা কি তোমরা জান না? তোমরা ভুল কোরো না। যাদের চরিত্র খারাপ, যারা প্রতিমা পূজা করে, যারা ব্যভিচার করে, যারা পুরুষ-বেশ্যা, যে পুরুষেরা সমকামী, যারা চোর, লোভী, মাতাল, যারা পরের নিন্দা করে এবং যারা জোচ্চোর তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই রকমই ছিলে, কিন্তু প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আর আমাদের ঈশ্বরের আত্মার মধ্য দিয়ে তোমাদের ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করা হয়েছে এবং নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলে, “কোন কিছু করা আমার পক্ষে অনুচিত নয়।” তা ঠিক, তবে সব কিছুই যে মানুষের উপকার করে, তা নয়। কোন কিছু করা আমার পক্ষে অনুচিত নয় বটে, কিন্তু আমি কোন কিছুরই দাস হব না। আবার কেউ কেউ এই কথাও বলে, “খাবার পেটের জন্য আর পেট খাবারের জন্য।” বেশ ভাল কথা, কিন্তু এই দু’টাই একদিন ঈশ্বর বাতিল করে দেবেন। দেহ ব্যভিচার করবার জন্য নয় বরং তা প্রভুরই জন্য, আর প্রভু দেহের জন্য। ঈশ্বর তাঁর শক্তির দ্বারা প্রভুকে মুত্যু থেকে জীবিত করেছেন এবং তিনি আমাদেরও জীবিত করবেন। তোমরা কি জান না যে, তোমাদের দেহ খ্রীষ্টের দেহের অংশ? তাহলে আমি কি খ্রীষ্টের দেহের অংশ নিয়ে বেশ্যার দেহের সংগে যুক্ত করব? কখনও না। তোমরা কি জান না, বেশ্যার সংগে যে যুক্ত হয় সে তার সংগে একদেহ হয়? কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে, “তারা দু’জন একদেহ হবে।” কিন্তু যে কেউ প্রভুর সংগে যুক্ত হয় সে তাঁর সংগে আত্মাতে এক হয়। সমস্ত রকম ব্যভিচার থেকে পালিয়ে যাও। মানুষ অন্য যে সব পাপ করে তা তার দেহের বাইরে করে, কিন্তু যে ব্যভিচার করে সে নিজের দেহের বিরুদ্ধেই পাপ করে। তোমরা কি জান না, তোমাদের অন্তরে যিনি বাস করেন এবং যাঁকে তোমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছ, সেই পবিত্র আত্মার থাকবার ঘরই হল তোমাদের দেহ? তোমরা তোমাদের নিজেদের নও; অনেক দাম দিয়ে তোমাদের কেনা হয়েছে। তাই ঈশ্বরের গৌরবের জন্য তোমাদের দেহ ব্যবহার কর। তোমরা আমাকে যে সব বিষয় সম্বন্ধে লিখেছ এবার তার উত্তর দিচ্ছি। যদি কেউ বিয়ে না করে তবে সে ভালই করে; কিন্তু চারদিকে অনেক ব্যভিচার হচ্ছে, সেইজন্য প্রত্যেক পুরুষের নিজের স্ত্রী থাকুক আর প্রত্যেক স্ত্রীর নিজের স্বামী থাকুক। দেহের দিক থেকে স্ত্রীর যা পাওনা, তার স্বামী তাকে তা দিক; সেইভাবে স্ত্রীও স্বামীকে দিক। স্ত্রীর দেহ তার নিজের নয়, তার স্বামীর। একইভাবে স্বামীর দেহ তার নিজের নয়, তার স্ত্রীর। একে অন্যের সংগে দেহে মিলিত হতে অস্বীকার কোরো না; তবে কেবল প্রার্থনা করতে সুযোগ পাবার জন্য একমত হয়ে কিছুকাল আলাদা থাকতে পার। তার পরে আবার একসংগে মিলিত হয়ো, যেন নিজেদের দমনের অভাবে শয়তান তোমাদের পাপের দিকে টানতে না পারে। এই কথা আমি তোমাদের আদেশ দিয়ে বলছি না বরং অনুমতি দিয়েই বলছি। যদি সবাই আমার মত হত! কিন্তু ঈশ্বরের কাছ থেকে এক একজন এক একটা দান পেয়েছে। একজনের দান এক রকম, আবার অন্যজনের দান আর এক রকম। অবিবাহিত আর বিধবাদের আমি বলছি, তারা যদি আমার মত থাকতে পারে তবে তাদের পক্ষে তা ভাল। কিন্তু যদি তারা নিজেদের দমন করতে না পারে তবে বিয়ে করুক, কারণ দেহের কামনায় জ্বলে-পুড়ে মরবার চেয়ে বরং বিয়ে করা অনেক ভাল। যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের আমি এই আদেশ দিচ্ছি-অবশ্য আমি দিচ্ছি না, প্রভুই দিচ্ছেন-স্ত্রী যেন স্বামীর কাছ থেকে চলে না যায়। কিন্তু যদি সে চলেই যায় তবে আর বিয়ে না করুক কিম্বা স্বামীর সংগে আবার মিলিত হোক। স্বামীও তার স্ত্রীকে ত্যাগ না করুক। অন্য সবাইকে অবশ্য প্রভু বলছেন না কিন্তু আমি বলছি, যদি কোন ভাইয়ের খ্রীষ্টে অবিশ্বাসী স্ত্রী থাকে আর সেই স্ত্রী তার সংগে থাকতে রাজী থাকে, তবে সেই স্বামী যেন তাকে ত্যাগ না করে। আবার যদি কোন স্ত্রীলোকের খ্রীষ্টে অবিশ্বাসী স্বামী থাকে আর সেই স্বামী তার সংগে থাকতে রাজী থাকে, তবে সেই স্বামীকে যেন সে ত্যাগ না করে; কারণ স্ত্রীর মধ্য দিয়ে সেই অবিশ্বাসী স্বামীকে আর স্বামীর মধ্য দিয়ে সেই অবিশ্বাসী স্ত্রীকে ঈশ্বর বিশেষ চোখে দেখেন। তা না হলে তোমাদের ছেলেমেয়েরা তো অশুচি হত; কিন্তু আসলে ঈশ্বর তাদের বিশেষ চোখে দেখেন। কিন্তু যদি সেই অবিশ্বাসী স্বামী বা স্ত্রী চলে যেতে চায় তবে সে চলে যাক। এই রকম অবস্থায় সেই বিশ্বাসী ভাই বা বোন কোন বাঁধাবাঁধির মধ্যে থাকে না। ঈশ্বর তো আমাদের শান্তিতে থাকবার জন্যই ডেকেছেন। স্ত্রী, তুমি কি করে জান যে, তোমার স্বামীকে তুমি উদ্ধার করতে পারবে না? স্বামী, তুমি কি করে জান যে, তোমার স্ত্রীকে তুমি উদ্ধার করতে পারবে না? কাজেই, প্রভু যাকে যে অবস্থায় রেখেছেন এবং ঈশ্বর যাকে যে জন্য ডেকেছেন, সেই অনুসারেই সে চলুক। এই আদেশ আমি সমস্ত মণ্ডলীতে দিয়ে থাকি। কোন সুন্নত-করানো লোককে কি ডাকা হয়েছে? তবে সে সুন্নতের চিহ্ন মুছে না ফেলুক। কোন সুন্নত-না-করানো লোককে কি ডাকা হয়েছে? তবে তার সুন্নত করানো না হোক। সুন্নত করালেই বা কি আর না করালেই বা কি, ঈশ্বরের আদেশ পালন করাই হল আসল কথা। ঈশ্বর যাকে যে অবস্থায় ডেকেছেন সে সেই অবস্থাতেই থাকুক। তোমাকে যখন ডাকা হয়েছিল তখন কি তুমি দাস ছিলে? সেইজন্য দুঃখ কোরো না; অবশ্য যদি স্বাধীন হবার সুযোগ পাও তবে তা গ্রহণ কোরো। দাস থাকা অবস্থায় প্রভু যাকে ডেকেছেন সে প্রভুর দ্বারা স্বাধীন হয়েছে। সেইভাবে যাকে স্বাধীন অবস্থায় ডাকা হয়েছে সে খ্রীষ্টের দাস হয়েছে। অনেক দাম দিয়ে তোমাদের কেনা হয়েছে; মানুষের দাস হয়ো না। ভাইয়েরা, ঈশ্বর যাকে যে অবস্থায় ডেকেছেন সে ঈশ্বরের সামনে সেই অবস্থাতেই থাকুক। কুমারী মেয়েদের জন্য প্রভুর কাছ থেকে কোন আদেশ আমি পাই নি। তবে ঈশ্বরের দয়া পেয়ে আমি বিশ্বাসযোগ্য হয়েছি বলে আমার মত জানাচ্ছি। যে ভীষণ দুঃখ-কষ্টের সময় আসছে তার জন্য আমার মনে হয় তোমরা যে যেমন আছ তেমন থাকাই ভাল। তোমার কি স্ত্রী আছে? তবে স্ত্রীকে ত্যাগ করতে চেষ্টা কোরো না। তোমার কি স্ত্রী নেই? তবে বিয়ে করবার চেষ্টা কোরো না। কিন্তু বিয়ে যদি তুমি করই তাতে তোমার কোন পাপ হয় না। কোন কুমারী মেয়ে যদি বিয়ে করে তাহলে তারও পাপ হয় না। কিন্তু যারা বিয়ে করে তারা এই সংসারে কষ্ট পাবে, আর আমি এই সব থেকে তোমাদের রেহাই দিতে চাইছি। ভাইয়েরা, যে কথা আমি তোমাদের বলতে চাইছি তা এই-সময় খুবই কম। সেইজন্য এখন থেকে এমনভাবে চলবার দরকার যে, যাদের স্ত্রী আছে তাদের যেন স্ত্রী নেই; যারা দুঃখ করছে তারা যেন দুঃখ করছে না; যারা আনন্দ করছে তারা যেন আনন্দ করছে না; যারা কেনা-কাটা করছে তাদের যেন সেই সব জিনিসের উপর অধিকার নেই; যারা জগতের বিষয়ে জড়িত তারা যেন সম্পূর্ণভাবে জড়িত নয়; কারণ জগতের রূপ বদলে যাচ্ছে। আমি চাই যেন তোমরা ভাবনা-চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে পার। অবিবাহিত লোক প্রভুর বিষয়ে ভাবে; সে চিন্তা করে কিভাবে সে প্রভুকে সন্তুষ্ট করবে। বিবাহিত লোক সংসারের বিষয়ে ভাবে; সে চিন্তা করে কিভাবে সে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করবে। এইভাবে দুই দিকই তাকে টানতে থাকে। যে মেয়ের স্বামী নেই সে এবং কুমারী মেয়ে প্রভুর বিষয়ে চিন্তা করে যাতে সে দেহে আর অন্তরে প্রভুর হতে পারে। কিন্তু বিবাহিতা স্ত্রীলোক সংসারের বিষয়ে ভাবে; সে চিন্তা করে কেমন করে সে স্বামীকে সন্তুষ্ট করবে। এই কথা আমি তোমাদের মংগলের জন্যই বলছি। আমি তোমাদের ধরাবাঁধার মধ্যে রাখবার জন্য তা বলছি না, বরং যা করা উচিত ও ভাল তা করবার জন্য তোমাদের উৎসাহ দিচ্ছি, যেন তোমরা সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে প্রভুর সেবা করতে পার। যদি কেউ মনে করে সে তার অবিবাহিতা মেয়ের প্রতি ন্যায্য ব্যবহার করছে না, যদি মেয়েটির বিয়ের বয়স পার হয়ে যাবার মত হয় আর যদি সে তাকে বিয়ে দেবার দরকার মনে করে, তবে সে নিজের ইচ্ছামতই কাজ করুক। মেয়েটির বিয়ে হোক, তাতে কোন পাপ হয় না। কিন্তু যে লোকের মন স্থির, যার উপর কোন চাপ নেই বলে সে নিজের ইচ্ছামতই কাজ করতে পারে, সে যদি তার মেয়েকে অবিবাহিতা রাখবে বলেই ঠিক করে থাকে তবে সে ভালই করে। তাহলে দেখা যায়, যে তার মেয়েকে বিয়ে দেয় সে ভাল করে, আর যে তাকে বিয়ে না দেয় সে আরও ভাল করে। স্বামী যতদিন বেঁচে থাকে ততদিনই স্ত্রী তার কাছে বাঁধা থাকে। কিন্তু যদি স্বামী মারা যায় তবে সে যাকে ইচ্ছা তাকে বিয়ে করতে পারে, অবশ্য সেই লোক যেন প্রভুর হয়। কিন্তু আমার মতে সে যেমন আছে যদি তেমনই থাকে তবে সে আরও সুখী হয়। আমার মনে হয় যে, আমি ঈশ্বরের আত্মার মধ্য দিয়েই এই কথা বলছি। এবার আমি প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবারের বিষয়ে বলছি। আমরা জানি, আমাদের সকলের জ্ঞান আছে। জ্ঞান মানুষকে অহংকারী করে, কিন্তু ভালবাসা মানুষকে গড়ে তোলে। যে কিছু জানে বলে মনে করে, সে যেভাবে জানা উচিত সেইভাবে এখনও জানে না। কিন্তু যে ঈশ্বরকে ভালবাসে ঈশ্বর তাকে জানেন। এবার প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার খাওয়ার বিষয়ে বলছি। আমরা জানি, জগতে প্রতিমা আসলে কিছুই নয় আর ঈশ্বরও মাত্র একজন ছাড়া আর নেই। স্বর্গে হোক বা পৃথিবীতে হোক, দেব-দেবী বলে যদি কিছু থেকেই থাকে-অবশ্য দেবতাও অনেক, প্রভুও অনেক- তবুও আমাদের জন্য ঈশ্বর মাত্র একজনই আছেন। তিনিই পিতা; তাঁরই কাছ থেকে সব কিছু এসেছে আর তাঁরই জন্য আমরা বেঁচে আছি। আর প্রভুও আমাদের মাত্র একজন, তিনি যীশু খ্রীষ্ট। তাঁরই মধ্য দিয়ে সব কিছু এসেছে এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে আমরা বেঁচে আছি। এই সব জ্ঞান কিন্তু সকলের নেই। প্রতিমা পূজার অভ্যাস ছিল বলে প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার এখনও পর্যন্ত কেউ কেউ সেই হিসাবেই খেয়ে থাকে। তাতে তাদের বিবেক দুর্বল বলে অশুচি হয়। কিন্তু খাবারের দ্বারা আমরা ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হই না। আমরা যদি না খাই তবে আমাদের কোন ক্ষতিও হয় না, আর যদি খাই তবে আমাদের কোন লাভও হয় না। তবে সাবধান! যাদের বিশ্বাস দুর্বল, তোমাদের এই স্বাধীনতা তাদের কাছে যেন পাপের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। তোমার তো জ্ঞান আছে, কিন্তু যার বিবেক দুর্বল সে যদি তোমাকে দেবতার মন্দিরে বসে খেতে দেখে তবে সেও কি প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার খেতে উৎসাহ পাবে না? সেই দুর্বল লোক, সেই ভাই, যার জন্য খ্রীষ্ট মরেছিলেন, তোমার জ্ঞানের দ্বারাই তার মহা ক্ষতি হয়। এইভাবে তোমরা তোমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে পাপ করে যখন তাদের দুর্বল বিবেকে আঘাত দাও তখন তোমরা আসলে খ্রীষ্টের বিরুদ্ধেই পাপ কর। তাই খাবারের জন্য যদি আমার ভাই পাপে পড়ে তবে আমার ভাই যাতে পাপে না পড়ে সেইজন্য আমি মাংস খাওয়াই ছেড়ে দেব। আমি কি স্বাধীন নই? আমি কি প্রেরিত্‌ নই? আমাদের প্রভু যীশুকে কি আমি দেখি নি? প্রভুর জন্য আমি যে কাজ করেছি তোমরা কি তারই ফল নও? অন্যেরা যদি আমাকে প্রেরিত্‌ বলে স্বীকার না-ও করে তবু তোমরা অন্ততঃ তা স্বীকার করবে। তোমরা যে প্রভুর লোক হয়েছ সেটাই আমার প্রেরিত্‌-পদের প্রমাণ। যারা আমার প্রেরিত্‌ হওয়া সম্বন্ধে প্রশ্ন তোলে তাদের কাছে আমার উত্তর এই- আমাদের খাওয়া-দাওয়া করবার অধিকার কি নেই? অন্য সব প্রেরিতেরা, প্রভুর ভাইয়েরা আর পিতর যেমন নিজের নিজের স্ত্রীকে নিয়ে প্রচারে বের হন, সেইভাবে খ্রীষ্টে বিশ্বাসী নিজের স্ত্রীকে নিয়ে প্রচারে বের হবার অধিকার কি আমাদের নেই? বার্ণবা আর আমাকেই কি কেবল কাজ করে খেতে হবে? নিজের পয়সা খরচ করে কে সৈনিকের কাজ করে? আংগুর ক্ষেত যে করে সে কি তার ফল খায় না? পশুর পাল যে চরায় সে কি তার দুধ খায় না? আমি কি কেবল সাধারণ বুদ্ধিতে এই কথা বলছি? মোশির আইন-কানুনও কি সেই একই কথা বলে না? তাতে লেখা আছে, “শস্য মাড়াই করবার সময়ে বলদের মুখে জাল্‌তি বেঁধো না।” ঈশ্বর কি কেবল বলদের কথা চিন্তা করেন? আসলে তিনি তো আমাদেরই জন্য এই কথা বলছেন, নয় কি? হ্যাঁ, এই কথা আমাদের জন্যই লেখা হয়েছিল, কারণ যে চাষ করে এবং যে শস্য মাড়াই করে, ফসলের ভাগ পাবার আশা নিয়েই তাদের তা করা উচিত। আমরা যখন তোমাদের মধ্যে আত্মিক বীজ বুনেছি তখন তোমাদের কাছ থেকে যদি জাগতিক খাওয়া-পরা জোগাড় করি তবে সেটা কি খুব বেশী কিছু? এই ব্যাপারে তোমাদের উপর যদি অন্যদের দাবি থাকে তবে আমাদের কি তা আরও বেশী করে থাকবে না? আমরা কিন্তু সেই দাবি কাজে লাগাই নি বরং সব কিছু সহ্য করছি, যেন খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচারের পথে আমরা কোন বাধা হয়ে না পড়ি। তোমরা কি জান না, যারা উপাসনা-ঘরের কাজকর্ম করে তারা উপাসনা-ঘর থেকেই খাবার পায়, আর যারা বেদীর কাজকর্ম করে তারা বেদীতে যা উৎসর্গ করা হয় তার ভাগ পায়? ঠিক সেইভাবে প্রভু আদেশ দিয়েছেন, যারা সুখবর প্রচার করে তারা যেন তা থেকেই খাওয়া-পরা পায়। আমি কিন্তু এর কিছুই ভোগ করি নি। তোমরা যাতে আমার জন্য এই রকম ব্যবস্থা কর সেইজন্য আমি এই কথা লিখছি না। আসলে আমার এই গর্ব যদি কেউ মিথ্যা করে দেয় তবে তার চেয়ে আমার মৃত্যু অনেক ভাল। আমি সুখবর প্রচার করছি বটে, কিন্তু তাতে আমার গৌরব করবার কিছুই নেই, কারণ আমাকে তা করতেই হবে। দুর্ভাগ্য আমার, যদি আমি সেই সুখবর প্রচার না করি! যদি আমি নিজের ইচ্ছায় প্রচার করি তবে তো আমার পুরস্কার আছেই, আর যদি নিজের ইচ্ছায় না-ও করি তবুও আমার উপর সেই ভার রয়েছে বলেই আমি তা করি। তাহলে আমার পুরস্কার কি? সেই পুরস্কার এই যে, আমি যখন সুখবর প্রচার করি তখন তার বদলে আমার যা পাওনা আছে তা ভোগ না করে বিনা পয়সায় আমি সেই কাজ করতে পারি। যদিও আমি কারও দাস নই তবুও আমি নিজেকে সকলের দাস করেছি, যেন অনেককে খ্রীষ্টের জন্য জয় করতে পারি। যিহূদীদের জয় করবার জন্য আমি যিহূদীদের কাছে যিহূদীদের মত হয়েছি। যদিও আমি মোশির আইন-কানুনের অধীনে নই তবুও যারা আইন-কানুনের অধীনে আছে তাদের জয় করবার জন্য আমি তাদের মত হয়েছি। আবার আইন- কানুনের বাইরে যারা আছে তাদের জয় করবার জন্য আমি আইন-কানুনের বাইরে থাকা লোকের মত হয়েছি। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, আমি ঈশ্বরের দেওয়া আইন-কানুনের বাইরে আছি; আমি তো খ্রীষ্টের আইনের অধীনেই আছি। বিশ্বাসে যারা দুর্বল তাদের কাছে আমি সেই রকম লোকের মতই হয়েছি, যেন খ্রীষ্টের জন্য তাদের সম্পূর্ণভাবে জয় করতে পারি। মোট কথা, আমি সকলের কাছে সব কিছুই হয়েছি যেন যে কোন উপায়ে কিছু লোককে উদ্ধার করতে পারি। এই সব আমি সুখবরের জন্যই করছি যেন এর আশীর্বাদের ভাগী হতে পারি। তোমরা কি জান না দৌড়ের খেলায় সবাই দৌড়ায়, কিন্তু একজনই কেবল পুরস্কার পায়? তোমরা এমনভাবে দৌড়াও যেন পুরস্কার পেতে পার। যারা দৌড়ে যোগ দেয় তারা প্রত্যেকে আগে থেকেই কঠিন নিয়মের অধীনে চলে। যে জয়ের মালা নষ্ট হয়ে যায় সেই মালা পাবার জন্যই তারা তা করে, কিন্তু আমরা তা করি সেই পুরস্কারের জন্য যা কখনও নষ্ট হবে না। তাই উদ্দেশ্য ছাড়া আমি দৌড়াচ্ছি না। যারা শূন্যে আঘাত করে মুষ্টিযুদ্ধ করে আমি তাদের মত নই। আমি বরং দেহকে কষ্ট দিয়ে নিজের অধীনে রাখছি, যেন অন্যদের কাছে সুখবর প্রচার করবার পর আমি নিজে পুরস্কার পাবার অযোগ্য হয়ে না পড়ি। ভাইয়েরা, আমি চাই যেন তোমরা জানতে পার, আমাদের পূর্বপুরুষেরা সবাই সেই মেঘের ছায়ায় ছিলেন এবং সবাই লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন। মোশির সংগে এক হবার জন্য মেঘ এবং সমুদ্রের মধ্যে তাদের সকলের বাপ্তিস্ম হয়েছিল। তবুও ঈশ্বর সেই লোকদের মধ্যে বেশীর ভাগ লোকের উপরে সন্তুষ্ট ছিলেন না। সেইজন্য তাঁদের মৃতদেহ মরু-এলাকায় পড়ে রইল। আমরা যাতে দেখে শিখতে পারি সেইজন্যই এই সব ঘটেছিল, যেন তাঁরা যেমন মন্দ বিষয়ে লোভ করেছিলেন আমরা সেই রকম না করি। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন প্রতিমা পূজা করেছিলেন তোমরা তেমন কোরো না। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, লোকেরা খাওয়া-দাওয়া করতে বসল, পরে হৈ-হল্লা করে আমোদ-প্রমোদ করবার জন্য উঠে দাঁড়াল। তাঁদের মধ্যে অনেকে ব্যভিচার করবার ফলে একই দিনে তেইশ হাজার লোক মারা গিয়েছিলেন। আমরা যেন সেইভাবে ব্যভিচার না করি। তাঁদের মধ্যে অনেকে প্রভুকে পরীক্ষা করে যেমন সাপের কামড়ে মারা গিয়েছিলেন সেইভাবে আমরা যেন প্রভুর পরীক্ষা না করি। তাঁদের মধ্যে অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করে যেমন ধ্বংসকারী দূতের দ্বারা ধ্বংস হয়েছিলেন সেইভাবে তোমরা বিরক্তি প্রকাশ কোরো না। অন্য লোকেরা যাতে দেখে শিখতে পারে সেইজন্যই তাঁদের উপর এই সব ঘটেছিল। আর আমরা যারা সমস্ত যুগের শেষ সময়ে এসে পড়েছি, সেই আমাদের সাবধান করবার জন্যই এই সব লেখা হয়েছে। এইজন্য যদি কেউ মনে করে সে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে তবে সে সাবধান হোক যেন পড়ে না যায়। মানুষের জীবনে যে সব পরীক্ষা হয়ে থাকে তা ছাড়া আর অন্য কোন পরীক্ষা তো তোমাদের উপর হয় নি। ঈশ্বর বিশ্বাসযোগ্য; সহ্যের অতিরিক্ত পরীক্ষা তিনি তোমাদের উপর হতে দেবেন না, বরং পরীক্ষার সংগে সংগে তা থেকে বের হয়ে আসবার একটা পথও তিনি করে দেবেন যেন তোমরা তা সহ্য করতে পার। এইজন্য আমার প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা প্রতিমাপূজা থেকে পালিয়ে যাও। তোমাদের বুদ্ধিমান জেনেই আমি এই সব কথা বলছি। আমি যা বলি তা তোমরা নিজেরা বিচার করে দেখ। প্রভুর ভোজের সময়ে ধন্যবাদ দিয়ে যে আশীর্বাদের পেয়ালা থেকে আমরা খাই, সেটা কি খ্রীষ্টের রক্তের অংশ গ্রহণ করবার মত নয়? আর যে রুটি আমরা টুকরা করে খাই তাও কি খ্রীষ্টের দেহের অংশ গ্রহণ করবার মত নয়? আমরা অনেকে হলেও একই দেহ, কারণ মাত্র একটাই রুটি আছে, আর আমরা সবাই সেই একটা রুটিরই অংশ গ্রহণ করি। ইস্রায়েল জাতির কথা চিন্তা কর। তাদের মধ্যে যারা উৎসর্গের জিনিস খেয়ে থাকে তারা কি সেই বেদীর সব কিছুতে অংশ গ্রহণ করে না? আমার এই কথাতে কি এটাই বুঝা যায় যে, প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার বিশেষ কিছু বা প্রতিমা বিশেষ কিছু? তা নয়, বরং আমি বলছি, অযিহূদীরা যা উৎসর্গ করে তা ঈশ্বরের কাছে করে না, মন্দ আত্মাদের কাছেই করে। আমি চাই না যে, মন্দ আত্মাদের সংগে তোমাদের কোন যোগাযোগ-সম্বন্ধ থাকে। প্রভুর পেয়ালা আর মন্দ আত্মাদের পেয়ালা, এই দুই পেয়ালা থেকেই তোমরা খেতে পার না। প্রভুর টেবিলের উপরে আর মন্দ আত্মাদের টেবিলের উপরে যা আছে, এই দু’য়েরই অংশ তোমরা গ্রহণ করতে পার না। এটা করে কি আমরা সত্যিই প্রভুর অন্তরের জ্বালা জাগিয়ে তুলতে চাইছি? আমরা কি তাঁর চেয়ে বলবান? কেউ কেউ বলে, “কোন কিছু করা অনুচিত নয়।” তা ঠিক, কিন্তু সব কিছুই যে মানুষের উপকার করে তা নয়। কোন কিছু করা অনুচিত নয় বটে, কিন্তু সব কিছুই যে মানুষকে গড়ে তোলে তা নয়। কেউ তার নিজের মংগলের চেষ্টা না করুক বরং প্রত্যেকে অন্যের মংগলের চেষ্টা করুক। বাজারে যে কোন মাংস বিক্রি হয় তা খেয়ো; বিবেককে শান্ত রাখবার জন্য কোন কিছু জিজ্ঞাসা কোরো না, কারণ পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, “পৃথিবী ও তার মধ্যেকার সব কিছু প্রভুরই।” যদি কোন অবিশ্বাসী তোমাদের নিমন্ত্রণ করে আর তোমরা যেতেও চাও, তবে বিবেককে শান্ত রাখবার জন্য কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে তোমাদের সামনে যা দেওয়া হয় তা খেয়ো। কিন্তু যদি কেউ তোমাদের বলে, “এটা প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা হয়েছে,” তবে যে তা বলেছে তার জন্য আর বিবেকের জন্য তা খেয়ো না। আমি তোমাদের বিবেকের কথা বলছি না, অন্য লোকটির বিবেকের কথা বলছি। কিন্তু অন্য একজন লোকের বিবেকের জন্য কেন আমার স্বাধীনতায় হাত দেওয়া হবে? আমি যদি ধন্যবাদ দিয়ে খাই তবে যে খাবারের জন্য আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি তার জন্য কেন আমার নিন্দা করা হবে? সেইজন্য তোমরা খাওয়া-দাওয়া কর আর যা-ই কর, সব কিছু ঈশ্বরের গৌরবের জন্য কোরো। আমি যেমন খ্রীষ্টের মত চলছি তোমরাও তেমনি আমার মত চল। আমি তোমাদের প্রশংসা করছি, কারণ তোমরা সব ব্যাপারেই আমার কথা মনে করে থাক, আর আমি তোমাদের যে শিক্ষা দিয়েছি তা ধরে রাখছ। আমি চাই যেন তোমরা বুঝতে পার যে, খ্রীষ্টই প্রত্যেক পুরুষের মাথার মত, স্বামী তার স্ত্রীর মাথার মত, আর ঈশ্বর খ্রীষ্টের মাথার মত। যে পুরুষ মাথা ঢেকে প্রার্থনা করে বা নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলে সে তার মাথার অসম্মান করে। যে স্ত্রীলোক মাথা না ঢেকে প্রার্থনা করে বা নবী হিসাবে কথা বলে সে তার মাথার অসম্মান করে, কারণ তাতে সে মাথা কামানো স্ত্রীলোকের মতই হয়ে পড়ে। যদি কোন স্ত্রীলোক মাথা না ঢাকে তবে সে তার চুলও কেটে ফেলুক। কিন্তু স্ত্রীলোকের পক্ষে চুল কেটে ফেলা বা মাথা কামিয়ে ফেলা লজ্জার বিষয় বলে সে তার মাথা ঢেকে রাখুক। মাথা ঢেকে রাখা পুরুষের উচিত নয়, কারণ ঈশ্বর পুরুষকে নিজের মত করে সৃষ্টি করেছিলেন আর পুরুষের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের গৌরব প্রকাশ পায়; কিন্তু স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে পুরুষের গৌরব প্রকাশ পায়। পুরুষ স্ত্রীলোক থেকে আসে নি কিন্তু স্ত্রীলোক পুরুষ থেকে এসেছে। স্ত্রীলোকের জন্য পুরুষের সৃষ্টি হয় নি কিন্তু পুরুষের জন্য স্ত্রীলোকের সৃষ্টি হয়েছে। সেইজন্য এবং স্বর্গদূতদের জন্য অধীনতার চিহ্ন হিসাবে মাথা ঢাকা স্ত্রীলোকের উচিত। অবশ্য প্রভুর সংগে যুক্ত হয়ে স্ত্রী তার স্বামীর উপর নির্ভর করে, আবার স্বামীও তার স্ত্রীর উপর নির্ভর করে; কারণ যেমন পুরুষ থেকে স্ত্রীলোক এসেছিল তেমনি আবার স্ত্রীলোকের মধ্য দিয়ে পুরুষের জন্ম হয়। কিন্তু সমস্তই ঈশ্বর থেকে হয়। তোমরা নিজেরাই বিচার করে দেখ। মাথায় কাপড় না দিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা কি স্ত্রীলোকের মানায়? স্বাভাবিক বুদ্ধি দিয়ে কি এটা বুঝা যায় না যে, পুরুষ যদি লম্বা চুল রাখে তবে তাতে তার অসম্মান হয়, কিন্তু স্ত্রীলোক যদি লম্বা চুল রাখে তবে তাতে তার গৌরব হয়? নিজেকে ঢাকবার জন্যই তো স্ত্রীলোককে লম্বা চুল দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ এই নিয়ে তর্ক করতে চায় তবে আমি এই বলব যে, অন্য কোন নিয়ম আমাদের মধ্যেও নেই বা ঈশ্বরের মণ্ডলীগুলোর মধ্যেও নেই। এবার আমি যে বিষয় নিয়ে আদেশ দিতে যাচ্ছি সেই বিষয়ে আমি তোমাদের প্রশংসা করি না, কারণ তোমরা যেভাবে মণ্ডলীতে মিলিত হও তাতে তোমাদের উপকার না হয়ে ক্ষতিই হয়। প্রথমতঃ আমি শুনতে পাচ্ছি, তোমরা যখন মণ্ডলী হিসাবে একসংগে মিলিত হও তখন তোমাদের মধ্যে দলাদলি থাকে, আর আমি তা কতকটা বিশ্বাসও করি। অবশ্য তোমাদের মধ্যে মতের অমিল হবেই যেন ঈশ্বরের চোখে তোমাদের মধ্যে যোগ্য লোক কে, তা ধরা পড়ে। মণ্ডলী হিসাবে এক জায়গায় মিলিত হয়ে যা খাও তা আসলে প্রভুর ভোজ নয়, কারণ তোমরা কেউ কারও জন্য অপেক্ষা না করেই খেয়ে ফেল। আর তাতে একজনের খিদে থেকে যায়, আর অন্যজন মাতাল হয়। খাওয়া-দাওয়া করবার জন্য তোমাদের কি ঘর-বাড়ী নেই? নাকি তোমরা ঈশ্বরের মণ্ডলীকে তুচ্ছ করছ এবং যাদের কিছু নেই তাদের লজ্জা দিচ্ছ? আমি তোমাদের কি বলব? আমি কি এতে তোমাদের প্রশংসা করব? নিশ্চয়ই না। আমি তোমাদের যে শিক্ষা দিয়েছি তা আমি প্রভুর কাছ থেকে পেয়েছি। যে রাতে প্রভু যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই রাতে তিনি রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন এবং তা টুকরা টুকরা করে বলেছিলেন, “এটা আমার দেহ যা তোমাদেরই জন্য দেওয়া হবে; আমাকে মনে করবার জন্য এই রকম কোরো।” খাওয়া হলে পর সেইভাবে তিনি পেয়ালা নিয়ে বলেছিলেন, “আমার রক্তের দ্বারা ঈশ্বরের যে নতুন ব্যবস্থা বহাল করা হবে সেই ব্যবস্থার চিহ্ন হল এই পেয়ালা। তোমরা যতবার এর থেকে খাবে আমাকে মনে করবার জন্য এই রকম কোরো।” সেইজন্য তিনি না আসা পর্যন্ত যতবার তোমরা এই রুটি খাবে আর এই পেয়ালা থেকে খাবে ততবারই প্রভুর মৃত্যুর কথা প্রচার করবে। সেইজন্য যে কেউ অযোগ্য ভাবে এই রুটি আর প্রভুর পেয়ালা থেকে খায় সে প্রভুর দেহের আর রক্তের বিরুদ্ধে পাপ করেছে বলে দোষী হয়। সেই রুটি আর সেই পেয়ালা থেকে খাবার আগে মানুষ নিজেকে পরীক্ষা করে দেখুক, কারণ খাবার সময় সে যদি প্রভুর দেহের বিষয়ে না বোঝে তবে সেই খাওয়াতে সে তার নিজের উপরেই শাস্তি ডেকে আনে। সেইজন্যই তোমাদের মধ্যে অনেকে দুর্বল আর অসুস্থ হয়েছে, আবার অনেকে মারাও গেছে। যদি আমরা নিজেদের বিচার করে দেখি তবে আমরা প্রভুর বিচারের হাত থেকে রেহাই পাই। কিন্তু আমাদের বিচার যখন প্রভু করেন তখন তিনি আমাদের শাসন করেন, যাতে জগতের সকলের সংগে আমাদের দোষী বলে স্থির করা না হয়। সেইজন্য আমার ভাইয়েরা, যখন খাওয়ার জন্য তোমরা মণ্ডলী হিসাবে এক জায়গায় মিলিত হও তখন একজন আর একজনের জন্য অপেক্ষা কোরো। যদি কারও খিদে পায় তবে সে বাড়ী থেকে খেয়ে আসুক, যেন মণ্ডলী হিসাবে এক জায়গায় মিলিত হবার ফলে শাস্তি পেতে না হয়। অন্য সব ব্যাপারে আমি যখন আসব তখন উপদেশ দেব। ভাইয়েরা, আমি চাই না যে, পবিত্র আত্মার দেওয়া দান সম্বন্ধে তোমাদের অজানা থাকে। তোমরা জান, যখন তোমরা ঈশ্বরের উপাসনা করতে না তখন এমন সব প্রতিমার দিকে তোমাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হত যারা কথা বলতে পারে না। আমি তোমাদের জানাচ্ছি, ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা কথা বললে কেউ বলে না, “যীশুর উপর অভিশাপ পড়ুক।” আবার পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে না হলে কেউ বলতে পারে না, “যীশুই প্রভু।” একই পবিত্র আত্মার দেওয়া বিশেষ দান ভিন্ন ভিন্ন রকমের। আমরা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে একই প্রভুর সেবা করি। আমাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন কাজ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু একই ঈশ্বর ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে কাজ করে থাকেন। সকলের মংগলের জন্যই এক এক মানুষের মধ্যে এক এক রকম করে পবিত্র আত্মা প্রকাশিত হন। কাউকে কাউকে সেই পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে জ্ঞানের কথা বা বুদ্ধির কথা বলতে দেওয়া হয়। এই সমস্ত কাজ সেই একই পবিত্র আত্মা করে থাকেন। তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেইভাবেই এই সব দান প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে দেন। একটি দেহের যেমন অনেকগুলো অংশ থাকে আর সেই অংশগুলো অনেক হলেও যেমন সব মিলে একটিমাত্র দেহ হয়, খ্রীষ্টও ঠিক সেই রকম। আমরা যিহূদী কি অযিহূদী, দাস কি স্বাধীন, সকলেরই একই পবিত্র আত্মার দ্বারা একই দেহের মধ্যে বাপ্তিস্ম হয়েছে। আমরা সকলেই সেই একই পবিত্র আত্মাকে পেয়েছি। দেহ কেবল একটিমাত্র অংশ দিয়ে গড়া নয়, তা অনেক অংশ দিয়েই গড়া। পা যদি বলে, “আমি হাত নই, তাই দেহের অংশও নই,” তাহলে সেটা যে দেহের অংশ নয় এমন নয়। কান যদি বলে, “আমি চোখ নই বলে দেহের অংশও নই,” তাহলে সেটা যে দেহের অংশ নয় এমন নয়। যদি সমস্ত দেহটাই চোখ হত তবে শুনবার শক্তি কোথায় থাকত? আর যদি সমস্ত দেহটাই কান হত তবে শুঁকবার শক্তি কোথায় থাকত? ঈশ্বর যেমন ভাবে চেয়েছেন ঠিক তেমন ভাবেই দেহের অংশগুলোকে তিনি এক এক করে দেহের মধ্যে বসিয়েছেন। যদি সব অংশগুলো একই রকম হত তবে দেহ কোথায় থাকত? অংশ অনেক বটে কিন্তু দেহ একটিই। চোখ হাতকে বলতে পারে না, “তোমাকে আমার দরকার নেই,” আবার মাথা পা দু’টিকে বলতে পারে না, “তোমাদের আমার দরকার নেই।” আসলে দেহের যে অংশগুলোকে দুর্বল বলে মনে হয় সেগুলোই বেশী দরকারী। দেহের যে অংশগুলোকে আমরা কম সম্মানের যোগ্য বলে মনে করি সেই অংশগুলোকে বেশী সম্মান দেখাই। যে অংশগুলোকে বাইরে দেখানো যায় না সেগুলোকে আমরা যত্নের সংগে ঢেকে রাখি, কিন্তু যে অংশগুলো বাইরে দেখানো যায় সেগুলো আর ঢাকবার দরকার হয় না। দেহের যে অংশগুলোর কোন সম্মান নেই ঈশ্বর সেগুলোকে অনেক বেশী সম্মান দান করেছেন এবং সমস্ত অংশগুলোকে একসংগে যুক্ত করেছেন, যেন দেহ ভাগ হয়ে না যায় বরং অংশগুলো যেন একে অন্যের জন্য সমান ভাবে চিন্তা করে। যদি একটা অংশের কষ্ট হয় তবে তার সংগে সমস্ত অংশই কষ্ট পায়। যদি একটা অংশ সম্মান পায় তবে সমস্ত অংশই তার সংগে আনন্দিত হয়। তোমরাই খ্রীষ্টের দেহ আর এক একজন সেই দেহের এক একটি অংশ। ঈশ্বর মণ্ডলীতে প্রথমতঃ প্রেরিত্‌, দ্বিতীয়তঃ নবী, তৃতীয়তঃ শিক্ষক নিযুক্ত করেছেন। তারপর এই সব লোকদের নিযুক্ত করেছেন-যারা আশ্চর্য কাজ করবার ক্ষমতা পেয়েছে, যারা রোগ ভাল করবার ক্ষমতা পেয়েছে, যারা সাহায্য করবার ক্ষমতা পেয়েছে, যারা পরিচালনা করবার ক্ষমতা পেয়েছে, আর যারা বিভিন্ন ভাষা বলবার ক্ষমতা পেয়েছে। সকলেই কি প্রেরিত্‌? সকলেই কি নবী? সকলেই কি শিক্ষক? সকলেরই কি আশ্চর্য কাজ করবার ক্ষমতা আছে? সকলেরই কি রোগ ভাল করবার ক্ষমতা আছে? সকলেই কি বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে? সকলেই কি তার মানে বুঝিয়ে দেয়? নিশ্চয়ই না! আমি বরং বলি, তোমরা সবচেয়ে দরকারী দানগুলো পাবার জন্য আগ্রহী হও। আমি তোমাদের এবার আরও ভাল একটা পথ দেখিয়ে দিচ্ছি: আমি যদি মানুষের এবং স্বর্গদূতদের ভাষায় কথা বলি কিন্তু আমার মধ্যে ভালবাসা না থাকে, তবে আমি জোরে বাজানো ঘণ্টা বা ঝনঝন করা করতাল হয়ে পড়েছি। যদি নবী হিসাবে কথা বলবার ক্ষমতা আমার থাকে, যদি আমি সমস্ত গুপ্ত সত্যের বিষয় বুঝতে পারি, আর যদি আমার সব রকম জ্ঞান থাকে, এমন কি, পাহাড়কে পর্যন্ত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেবার মত পূর্ণ বিশ্বাস থাকে, কিন্তু আমার মধ্যে ভালবাসা না থাকে, তবে আমার কোনই মূল্য নেই। আমার যা কিছু আছে তা যদি আমি গরীবদের খাওয়াবার জন্য দান করি, এমন কি, দেহটাও পোড়াবার জন্য দিয়ে দিই, কিন্তু আমার মধ্যে যদি ভালবাসা না থাকে, তবে আমার কোনই লাভ নেই। ভালবাসা সব সময় ধৈর্য ধরে, দয়া করে, হিংসা করে না, গর্ব করে না, অহংকার করে না, খারাপ ব্যবহার করে না, নিজের সুবিধার চেষ্টা করে না, রাগ করে না, কারও মন্দ ব্যবহারের কথা মনে রাখে না, মন্দ কিছু নিয়ে আনন্দ করে না বরং যা সত্য তাতে আনন্দ করে। ভালবাসা সব কিছুই সহ্য করে, সকলকেই বিশ্বাস করতে আগ্রহী, সব কিছুতে আশা রাখে আর সব অবস্থায় স্থির থাকে। এই ভালবাসা কখনও শেষ হয় না। নবী হিসাবে কথা বলবার যে ক্ষমতা আছে তা শেষ হয়ে যাবে; বিভিন্ন ভাষায় কথা বলবার যে ক্ষমতা আছে তা চলে যাবে; জ্ঞান আছে, তাও শেষ হয়ে যাবে; কারণ আমরা সব বিষয় পুরোপুরি ভাবে জানি না, নবী হিসাবেও পুরোপুরি ভাবে কথা বলতে পারি না। কিন্তু যা পূর্ণ তা যখন আসবে তখন যা পূর্ণ নয় তা শেষ হয়ে যাবে। আমি যখন শিশু ছিলাম তখন শিশুর মত কথা বলতাম, শিশুর মত চিন্তা করতাম আর শিশুর মত বিচারও করতাম। এখন আমার বয়স হয়েছে, তাই শিশুর আচার-ব্যবহারগুলো বাদ দিয়েছি। আমরা এখন যেন আয়নায় অস্পষ্ট দেখছি, কিন্তু তখন সামনাসামনি দেখতে পাব। আমি এখন যা জানি তা অসম্পূর্ণ, কিন্তু ঈশ্বর আমাকে যেমন সম্পূর্ণভাবে জানেন তখন আমি তেমনি সম্পূর্ণভাবে জানতে পারব। তাহলে দেখা যাচ্ছে বিশ্বাস, আশা আর ভালবাসা-এই তিনটিই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে; কিন্তু এগুলোর মধ্যে ভালবাসাই সবচেয়ে বড়। এই ভালবাসার জন্য তোমরা বিশেষভাবে চেষ্টা কর, আর পবিত্র আত্মার দেওয়া দান, বিশেষভাবে নবী হিসাবে কথা বলবার ক্ষমতা পাবার জন্য তোমাদের আগ্রহ থাকুক। অন্য কোন ভাষায় যে লোক কথা বলে সে মানুষের কাছে কথা বলে না কিন্তু ঈশ্বরের কাছে কথা বলে, কারণ কেউ তা বুঝতে পারে না। সে আত্মা দিয়ে গুপ্ত সত্যের কথা বলে। কিন্তু নবী হিসাবে যে কথা বলে সে মানুষের কাছে এমন কথা বলে যা তাদের গড়ে তোলে এবং উৎসাহ ও সান্ত্বনা দেয়। অন্য কোন ভাষায় যে লোক কথা বলে সে নিজেকেই গড়ে তোলে, কিন্তু নবী হিসাবে যে কথা বলে সে মণ্ডলীর লোকদের গড়ে তোলে। আমি চাই যেন তোমরা সকলেই বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পার, কিন্তু আরও বেশী করে চাই যেন তোমরা নবী হিসাবে কথা বলতে পার। অন্য কোন ভাষায় যে লোক কথা বলে, মণ্ডলীর লোকদের গড়ে তুলবার জন্য যদি সে তার কথার মানে বুঝিয়ে না দেয়, তবে তার চেয়ে নবী হিসাবে যে কথা বলে সে-ই বরং বড়। সেইজন্য ভাইয়েরা, আমি যদি তোমাদের কাছে এসে কেবল অন্য ভাষায় কথা বলি, কিন্তু তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সত্য প্রকাশের কথা বা জ্ঞানের কথা বা নবী হিসাবে ঈশ্বরের দেওয়া কথা বা শিক্ষার কথা না বলি, তবে আমি তোমাদের কি উপকার করতে পারব? এমন কি, বাঁশী বা বীণার মত প্রাণহীন বাজনা যদি পরিষ্কার আলাদা আলাদা সুরে না বাজে, তবে বাঁশী বা বীণাতে কি সুর বাজছে তা কেমন করে জানা যাবে? যুদ্ধের তূরী যদি পরিষ্কার ভাবে না বাজে তবে কে যুদ্ধে যাবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবে? ঠিক সেইভাবে যে ভাষা লোকেরা বোঝে না তোমরা যদি সেই ভাষায় কথা বল তবে তোমরা যা বল তা কেমন করে বুঝা যাবে? কারণ তখন যে কথা তোমরা বল তা তো বাতাসের কাছেই বল। এই জগতে অনেক রকমের ভাষা আছে; সেগুলোর মধ্যে কোনটাই অর্থহীন নয়। এইজন্য আমি যদি কোন ভাষার মানে না বুঝি তবে যে লোক কথা বলছে তার কাছে তো আমি অজানা বিদেশীর মত হব, আর সেও আমার কাছে তা-ই হবে। তোমাদের বেলায়ও এই কথা খাটে। তোমরা যখন পবিত্র আত্মার দেওয়া দান পাবার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী হচ্ছ তখন যে যে দানের দ্বারা মণ্ডলীকে গড়ে তোলা যায় সেগুলোই বেশী করে পাবার চেষ্টা কর। এইজন্য অন্য কোন ভাষায় যে লোক কথা বলে সে প্রার্থনা করুক যেন তার মানে সে বুঝিয়ে দিতে পারে। আমি যদি অন্য কোন ভাষায় প্রার্থনা করি তবে আমার আত্মাই প্রার্থনা করে কিন্তু আমার মন কোন কাজ করে না। তাহলে আমার কি করা উচিত? আমি আত্মা দিয়ে প্রার্থনা করব, বুদ্ধি দিয়েও প্রার্থনা করব; আমি আত্মা দিয়ে প্রশংসা-গান করব, বুদ্ধি দিয়েও প্রশংসা-গান করব। তা না হলে যদি তুমি আত্মাতে ধন্যবাদ দাও তবে সেই ভাষা বুঝতে পারে না এমন কোন লোক যদি সেখানে উপস্থিত থাকে, তবে সে কেমন করে তোমার ধন্যবাদে আমেন বলে সায় দেবে? সে তো জানে না তুমি কি বলছ। তুমি হয়তো ঠিকভাবেই ধন্যবাদ দিচ্ছ, কিন্তু তাতে সেই অন্য লোকটিকে তো গড়ে তোলা হচ্ছে না। আমি তোমাদের সকলের চেয়ে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে বেশী পারি বলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই। তবে মণ্ডলীর মধ্যে বিভিন্ন ভাষায় হাজার হাজার কথা বলবার বদলে অন্যদের শিক্ষা দেবার জন্য আমি বুদ্ধি দিয়ে বরং মাত্র পাঁচটা কথা বলব। ভাইয়েরা, ছেলে মানুষের মত আর চিন্তা কোরো না। মন্দ বিষয়ে তোমাদের মন শিশুর মত সরল হোক, কিন্তু চিন্তাতে তোমরা বয়স্ক লোকের মত হও। মোশির আইন-কানুনে প্রভু বলেন, “অন্য ভাষার লোকদের দিয়ে ও অন্যদের মুখ দিয়ে আমি এই জাতির কাছে কথা বলব, কিন্তু তবুও তারা আমার কথা শুনবে না।” তাহলে দেখা যায়, বিশ্বাসীদের জন্য বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা কোন চিহ্ন নয়, বরং অবিশ্বাসীদের জন্য ওটা একটা চিহ্ন; কিন্তু অবিশ্বাসীদের জন্য নবী হিসাবে কথা বলা কোন চিহ্ন নয়, বরং বিশ্বাসীদের জন্য ওটা একটা চিহ্ন। মণ্ডলীর সমস্ত লোক এক জায়গায় মিলিত হলে পর যদি সবাই বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে থাকে আর তখন সেই মণ্ডলীর বাইরের লোকেরা এবং অবিশ্বাসীরা ভিতরে আসে, তবে কি তারা তোমাদের পাগল বলবে না? কিন্তু যদি সবাই নবী হিসাবে কথা বলে আর তখন কোন অবিশ্বাসী বা মণ্ডলীর বাইরের লোক ভিতরে আসে, তবে সেই লোক সকলের কথার মধ্য দিয়ে নিজের পাপ সম্বন্ধে চেতনা পাবে এবং সেই সব কথার দ্বারাই তার অন্তরের বিচার হবে। তাতে তার অন্তরের গুপ্ত বিষয়গুলো বের হয়ে পড়বে, আর সে তখন মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে ঈশ্বরের গৌরব করে বলবে, “সত্যিই, ঈশ্বর আপনাদের মধ্যে আছেন।” ভাইয়েরা, তবে কি বলব? তোমরা যখন মণ্ডলীতে এক জায়গায় মিলিত হও তখন তোমাদের মধ্যে কেউ প্রশংসা-গান করে, কেউ শিক্ষা দেয়, কেউ ঈশ্বরের সত্য প্রকাশ করে, কেউ অন্য ভাষায় কথা বলে, আবার কেউ তার মানে বুঝিয়ে দেয়। যে যা-ই করুক না কেন সমস্তই যেন মণ্ডলীকে গড়ে তুলবার জন্য করা হয়। যদি কেউ অন্য ভাষায় কথা বলে তবে দু’জন বা বেশী হলে তিনজন এক একজন করে কথা বলুক, আর অন্য একজন তার মানে বুঝিয়ে দিক। যদি মানে বুঝাবার কেউ না থাকে তবে তারা মণ্ডলীতে কথা না বলুক; তারা একা একা নিজের সংগে আর ঈশ্বরের সংগে কথা বলুক। যারা নবী হিসাবে কথা বলে তারা দুইজন বা তিনজন কথা বলুক আর অন্যেরা তার বিচার করে দেখুক। যে বসে আছে তার কাছে যদি ঈশ্বরের সত্য প্রকাশিত হয় তবে যে কথা বলছে সে কথা বলা বন্ধ করুক, কারণ তোমরা সবাই এক এক করে নবী হিসাবে কথা বলতে পার যেন সবাই শিক্ষা এবং উৎসাহ পায়। নবীদের আত্মা তাদের নিজেদের অধীনে থাকে। ঈশ্বর বিশৃঙ্খলার ঈশ্বর নন, তিনি শান্তির ঈশ্বর। ঈশ্বরের লোকদের সব মণ্ডলীতে যেমন হয়ে থাকে, সেইভাবে স্ত্রীলোকেরা মণ্ডলীতে চুপ করে থাকুক, কারণ কথা বলবার অনুমতি তাদের দেওয়া হয় নি। মোশির আইন-কানুন যেমন বলে তেমনি তারা বরং বাধ্য হয়ে থাকুক। যদি তারা কিছু জানতে চায় তবে বাড়ীতে তাদের স্বামীকে জিজ্ঞাসা করুক, কারণ মণ্ডলীতে কথা বলা একজন স্ত্রীলোকের পক্ষে লজ্জার বিষয়। ঈশ্বরের বাক্য কি তোমাদের মধ্য থেকেই বের হয়েছিল কিম্বা তা কি কেবল তোমাদেরই কাছে এসেছে? যদি কেউ নিজেকে নবী বলে বা আত্মিক লোক বলে মনে করে তবে সে স্বীকার করুক যে, আমি তোমাদের কাছে যা কিছু লিখলাম তা সবই প্রভুর আদেশ। যদি কেউ তা অগ্রাহ্য করে তবে তাকেও অগ্রাহ্য করা হবে। সেইজন্যই আমার ভাইয়েরা, নবী হিসাবে কথা বলবার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী হও এবং বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে বাধা দিয়ো না। সব কিছুই যেন উপযুক্তভাবে আর শৃঙ্খলার সংগে করা হয়। ভাইয়েরা, যে সুখবর আমি তোমাদের কাছে প্রচার করেছিলাম, সেই সুখবরের কথা তোমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি। তোমরা তা গ্রহণ করেছ আর তাতে স্থিরও আছ। যে বাক্য আমি তোমাদের কাছে প্রচার করেছিলাম তা যদি তোমরা শক্তভাবে ধরে রেখে থাক তবেই তোমরা সেই সুখবরের মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পাচ্ছ-অবশ্য যদি তোমাদের বিশ্বাস কেবল বাইরের না হয়। আমি নিজে যা পেয়েছি তা সব চেয়ে দরকারী বিষয় হিসাবে তোমাদেরও দিয়েছি। সেই বিষয় হল এই-পবিত্র শাস্ত্রের কথামত খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরেছিলেন, তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল, শাস্ত্রের কথামত তিন দিনের দিন তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছে, আর তিনি পিতরকে ও পরে তাঁর প্রেরিত্‌দের দেখা দিয়েছিলেন। এর পরে তিনি একই সময়ে পাঁচশোরও বেশী ভাইদের দেখা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেলেও বেশীর ভাগ লোক এখনও বেঁচে আছেন। তার পরে তিনি যাকোবকে ও পরে সব প্রেরিত্‌দের দেখা দিয়েছিলেন। অসময়ে জন্মেছি যে আমি, সেই আমাকেও তিনি সবার শেষে দেখা দিয়েছিলেন। প্রেরিত্‌দের মধ্যে আমিই সবচেয়ে নীচু, এমন কি, প্রেরিত্‌ বলে কেউ যে আমাকে ডাকে তার যোগ্যও আমি নই, কারণ ঈশ্বরের মণ্ডলীকে আমি অত্যাচার করতাম। কিন্তু এখন আমি যা হয়েছি তা ঈশ্বরের দয়াতেই হয়েছি। আমার উপর তাঁর সেই দয়া নিষ্ফল হয় নি। আমি অন্য প্রেরিত্‌দের সকলের চেয়ে বেশী পরিশ্রম করেছি; তবে পরিশ্রম যে আমিই করেছি তা নয়, বরং আমার উপর ঈশ্বরের যে দয়া আছে সেই দয়াই তা করেছে। সেইজন্য আমিই প্রচার করি বা অন্য প্রেরিতেরাই করেন, আমরা এই বিষয়েই প্রচার করি আর তোমরা তা-ই বিশ্বাস করেছ। কিন্তু যদি প্রচার করা হয় যে, খ্রীষ্টকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছে তবে তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ কেমন করে বলছে যে, মৃতদের জীবিত হয়ে ওঠা বলে কিছু নেই? মৃতেরা যদি জীবিত হয়ে না-ই ওঠে তাহলে তো খ্রীষ্টকেও জীবিত করা হয় নি; আর খ্রীষ্টকে যদি জীবিত করা না হয়ে থাকে তবে আমাদের প্রচারও মিথ্যা আর তোমাদের বিশ্বাসও মিথ্যা। এছাড়া তাতে এই কথাই প্রমাণ হচ্ছে যে, ঈশ্বরের বিষয়ে আমরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছি, কারণ আমাদের সাক্ষ্য এই যে, ঈশ্বর খ্রীষ্টকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন। কিন্তু যদি মৃতদের জীবিত করে তোলা না-ই হয় তবে তিনি খ্রীষ্টকেও জীবিত করে তোলেন নি, কারণ মৃতদের যদি জীবিত করা না হয় তবে খ্রীষ্টকেও জীবিত করা হয় নি। যদি খ্রীষ্টকেই জীবিত করা না হয়ে থাকে তবে তোমাদের বিশ্বাস নিষ্ফল আর এখনও তোমরা পাপের মধ্যেই পড়ে রয়েছ। তাহলে খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে যারা মারা গেছে তারা তো বিনষ্ট হয়েছে। খ্রীষ্টের উপর আমাদের যে আশা তা যদি কেবল এই জীবনের জন্যই হয় তবে সমস্ত মানুষের মধ্যে আমাদেরই বেশী দুর্ভাগ্য। খ্র্রীষ্টকে কিন্তু সত্যিসত্যিই মৃত্যু থেকে জীবিত করে তোলা হয়েছে। তিনি প্রথম ফল, অর্থাৎ মৃত্যু থেকে যাদের জীবিত করা হবে তাদের মধ্যে তিনিই প্রথমে জীবিত হয়েছেন। একজন মানুষের মধ্য দিয়ে মৃত্যু এসেছে বলে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠাও একজন মানুষেরই মধ্য দিয়ে এসেছে। আদমের সংগে যুক্ত আছে বলে যেমন সমস্ত মানুষই মারা যায়, তেমনি খ্রীষ্টের সংগে যারা যুক্ত আছে তাদের সবাইকে জীবিত করা হবে; তবে তার মধ্যে পালা রয়েছে-প্রথম ফলের মত প্রথমে খ্রীষ্ট, তারপর যারা খ্রীষ্টের নিজের। খ্রীষ্টের আসবার সময়ে তাদের জীবিত করা হবে। এর পরে খ্রীষ্ট যখন সমস্ত শাসন-ব্যবস্থা, অধিকার আর ক্ষমতা ধ্বংস করে পিতা ঈশ্বরের হাতে রাজ্য দিয়ে দেবেন তখনই শেষ সময় আসবে। ঈশ্বর যে পর্যন্ত না খ্রীষ্টের সমস্ত শত্রুকে তাঁর পায়ের তলায় রাখেন সেই পর্যন্ত খ্রীষ্টকে রাজত্ব করতে হবে। শেষ শত্রু যে মৃত্যু, তাকেও ধ্বংস করা হবে। শাস্ত্রের কথামত, “তিনি সব কিছুই তাঁর পায়ের তলায় রেখেছেন।” সব জিনিসই অধীনে রাখা হয়েছে বললে স্পষ্টই বুঝা যায়, যিনি সব জিনিস খ্রীষ্টের অধীনে রেখেছেন সেই ঈশ্বর নিজেকে বাদ দিয়েই তা করেছেন। যখন সব কিছুই খ্রীষ্টের অধীনে রাখা হয়ে যাবে, তখন যিনি সব কিছু খ্রীষ্টের অধীনে রেখেছিলেন সেই ঈশ্বরই যাতে একমাত্র কর্তা হতে পারেন সেইজন্য পুত্রও নিজে ঈশ্বরের অধীন হবেন। কিন্তু মৃতদের জন্য যারা বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে তাদের কি হবে? মৃতদের যদি জীবিত করে তোলা না-ই হয় তবে কেন তারা মৃতদের জন্য বাপ্তিস্ম গ্রহণ করে? আর কেনই বা আমরা সব সময় বিপদের মুখে পড়ছি? ভাইয়েরা, আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর কাজে তোমাদের নিয়ে আমার যে গর্ব, সেই গর্বে আমি নিশ্চয় করে বলছি যে, প্রত্যেক দিনই আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছি। ইফিষে বুনো জানোয়ারদের সংগে আমাকে যে লড়াই করতে হয়েছিল, তা যদি কেবল জাগতিক উদ্দেশ্য নিয়েই করে থাকি তবে তাতে আমার কি লাভ হয়েছে? মৃতদের যদি না-ই জীবিত করে তোলা হয় তবে চলতি কথা মতে, “এস, আমরা খাওয়া-দাওয়া করি, কারণ কালকে আমরা মরে যাব।” তোমরা ভুল কোরো না। কথায় বলে, “খারাপ সংগী ভাল লোককেও খারাপ করে দেয়।” কাজেই তোমরা তোমাদের মনকে জাগিয়ে তোল এবং আর পাপ কোরো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরকে চেনেই না; আমি তোমাদের লজ্জা দেবার জন্য এই কথা বলছি। কেউ হয়তো বলবে, “মৃতদের কেমন করে জীবিত করে তোলা হবে? কেমন দেহ নিয়েই বা তারা উঠবে?” তুমি তো মুর্খ! তুমি নিজে যে বীজ লাগাও তা না মরলে তো চারা গজিয়ে ওঠে না। তোমার লাগানো বীজ থেকে যে চারা হয় তা তুমি লাগাও না বরং একটা মাত্র বীজই লাগাও-সেই বীজ গমের হোক বা অন্য কোন শস্যের হোক। কিন্তু ঈশ্বর নিজের ইচ্ছামতই সেই বীজকে দেহ দিয়ে থাকেন। তিনি প্রত্যেক বীজকেই তার উপযুক্ত দেহ দান করে থাকেন। সব মাংসই এক রকম নয়। মানুষের মাংস এক রকম, পশুর এক রকম, পাখীর এক রকম এবং মাছের এক রকম। মহাকাশে অনেক দেহ আছে, জগতেও অনেক দেহ আছে, কিন্তু মহাকাশের দেহগুলোর উজ্জ্বলতা এক রকম এবং জগতের দেহগুলোর উজ্জ্বলতা আর এক রকম। সূর্যের উজ্জ্বলতা এক রকম, চাঁদের এক রকম এবং তারাগুলোর আর এক রকম। এমন কি, উজ্জ্বলতার দিক থেকে একটা তারা অন্য আর একটার চেয়ে আলাদা। মৃতদের জীবিত হয়ে ওঠাও ঠিক সেই রকম। দেহ কবর দিলে পর তা নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু সেই দেহ এমন অবস্থায় জীবিত করে তোলা হবে যা আর কখনও নষ্ট হবে না। তা অসম্মানের সংগে মাটিতে দেওয়া হয়, কিন্তু সম্মানের সংগে উঠানো হবে; দুর্বল অবস্থায় মাটিতে দেওয়া হয়, কিন্তু শক্তিতে উঠানো হবে; সাধারণ দেহ মাটিতে দেওয়া হয়, কিন্তু অসাধারণ দেহ উঠানো হবে। যখন সাধারণ দেহ আছে তখন অসাধারণ দেহও আছে। শাস্ত্রে এইভাবে লেখা আছে, “প্রথম মানুষ আদম জীবন্ত প্রাণী হলেন।” আর শেষ আদম জীবনদানকারী আত্মা হলেন। কিন্তু যা অসাধারণ তা প্রথম নয়, বরং যা সাধারণ তা-ই প্রথম, তার পরে অসাধারণ। প্রথম মানুষ মাটি থেকে এসেছিলেন-তিনি মাটিরই তৈরী; কিন্তু দ্বিতীয় মানুষ স্বর্গ থেকে এসেছিলেন। পৃথিবীর মানুষেরা সেই মাটির তৈরী মানুষের মত, আর যারা স্বর্গে যাবে তারা সেই স্বর্গের মানুষের মত। আমরা যেমন সেই মাটির মানুষের মত হয়েছি ঠিক তেমনি সেই স্বর্গের মানুষের মতও হব। ভাইয়েরা, আমি যা বলছি তা এই-মানুষ তার রক্তমাংসের দেহ নিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হতে পারে না। যা নষ্ট হয়ে যাবে তা এমন কিছুর অধিকারী হতে পারে না যা নষ্ট হবে না। আমি তোমাদের একটা গুপ্ত সত্যের কথা বলছি, শোন। আমরা সবাই যে মারা যাব তা নয়, কিন্তু বদলে যাব। এক মুহূর্র্তের মধ্যে, চোখের পলকে, শেষ সময়ের তূরীর আওয়াজের সংগে সংগে আমরা সবাই বদলে যাব। সেই তূরী যখন বাজবে তখন মৃতেরা এমন অবস্থায় জীবিত হয়ে উঠবে যে, তারা আর কখনও নষ্ট হবে না; আর আমরাও বদলে যাব। যা নষ্ট হয় তাকে কাপড়ের মত করে এমন কিছু পরতে হবে যা কখনও নষ্ট হয় না। আর যা মরে যায় তাকে এমন কিছু পরতে হবে যা কখনও মরে না। যা নষ্ট হয় আর যা মরে যায়, সেগুলো যখন ঐভাবে বদলে যাবে তখন পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হবে যে, মৃত্যু ধ্বংস হয়ে জয় এসেছে। “মৃত্যু, তোমার জয় কোথায়? মৃত্যু, তোমার হুল কোথায়?” মৃত্যুর হূল পাপ, আর পাপের শক্তিই মোশির আইন-কানুন। কিন্তু ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের জয় দান করেন। সেইজন্যই, আমার প্রিয় ভাইয়েরা, শক্ত হয়ে দাঁড়াও; কোন কিছুই যেন তোমাদের নড়াতে না পারে। সব সময় প্রভুর কাজের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দিয়ে দাও, কারণ তোমরা জান, তাঁর কাজে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়। এবার আমি ঈশ্বরের লোকদের সাহায্যের জন্য চাঁদা তুলবার বিষয়ে বলছি। গালাতিয়া প্রদেশের মণ্ডলীগুলোর লোকদের আমি যে নির্দেশ দিয়েছি তোমরাও সেই রকম কর। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের আয় অনুসারে সপ্তার প্রথম দিনে কিছু তুলে রেখে জমা কোরো, যেন আমি আসলে পর চাঁদা তুলতে না হয়। আমি যখন তোমাদের কাছে আসব তখন তোমাদের সেই দান যিরূশালেমে নিয়ে যাবার জন্য তোমরা যাদের যোগ্য মনে করবে, আমি চিঠি দিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেব। যদি আমারও যাওয়া দরকার মনে কর তবে তারা আমার সংগে যেতে পারবে। ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশ হয়ে আমি তোমাদের কাছে আসব, কারণ আমি ম্যাসিডোনিয়ার মধ্য দিয়েই যাব। হয়তো তোমাদের কাছে কিছু দিন থাকব, কিম্বা শীতকালটা তোমাদের সংগেই কাটাব, যেন আমি যেখানেই যাই না কেন তোমরা আমার যাবার ব্যবস্থা করে দিতে পার। যাবার পথে এখন আমি তোমাদের সংগে দেখা করতে চাই না, কারণ আমি আশা করি, প্রভুর অনুমতি হলে আমি তোমাদের সংগে বেশ কিছু দিন থাকব। পঞ্চাশত্তমী-পর্ব পর্যন্ত আমি ইফিষেই থাকব, কারণ যে কাজে প্রচুর ফল পাওয়া যায় সেই রকম কাজের জন্য একটা মস্ত বড় সুযোগ আমার সামনে এসেছে; অবশ্য অনেকে এতে বাধাও দিচ্ছে। তীমথিয় যদি আসেন তবে দেখো যেন তিনি তোমাদের মধ্যে নির্ভয়ে থাকতে পারেন, কারণ আমি যেমন প্রভুর কাজ করছি তিনিও তেমনি করছেন। এইজন্য কেউ যেন তাঁকে তুচ্ছ না করে। তোমরা তাঁকে শান্তিতে পাঠিয়ে দিয়ো, যেন তিনি আমার কাছে আসতে পারেন। তিনি ভাইদের সংগে আসবেন বলে আমি অপেক্ষা করে আছি। আমি এবার ভাই আপোল্লোর সম্বন্ধে বলছি। আমি তাঁকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম যেন তিনি ভাইদের সংগে তোমাদের কাছে যান, কিন্তু এখন তিনি কোনমতেই যেতে চাইলেন না। পরে সুযোগ পেলেই তিনি যাবেন। তোমরা সতর্ক থাক, বিশ্বাসে স্থির থাক, সাহসী ও বলবান হও। তোমরা যা কিছু কর না কেন ভালবাসার মনোভাব নিয়েই কোরো। ভাইয়েরা, তোমরা তো জান, স্তিফানের পরিবারের লোকেরাই আখায়া প্রদেশের প্রথম বিশ্বাসী। ঈশ্বরের লোকদের সেবা করবার জন্য তাঁরা নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। সেইজন্য এই রকম লোকদের অধীনতা স্বীকার করতে আমি তোমাদের অনুরোধ করছি। আর অন্য যাঁরা এই কাজে যোগ দিয়ে কঠিন পরিশ্রম করেন তাঁদেরও অধীনতা স্বীকার কর। স্তিফান, ফর্তুনাত আর আখায়িক এসেছেন বলে আমি খুব খুশী হয়েছি, কারণ তোমরা না থাকবার অভাব তাঁরাই পূরণ করেছেন। তাঁরা আমার আর তোমাদের অন্তরে উৎসাহ এনেছেন। তোমরা এই রকম লোকদের সম্মান কোরো। এশিয়া প্রদেশের মণ্ডলীগুলোর লোকেরা তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আকিলা, প্রিষ্কিল্লা আর তাঁদের ঘরের মণ্ডলীর লোকেরা প্রভুর ভালবাসার সংগে তোমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সমস্ত ভাইয়েরাও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ভালবাসার মনোভাব নিয়ে তোমরা একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানায়ো। আমি পৌল আমার নিজের হাতে এই শুভেচ্ছার কথা লিখলাম। যদি কেউ প্রভুকে ভাল না বাসে তবে তার উপর অভিশাপ পড়ুক। আমাদের প্রভু আসুন। প্রভু যীশুর আশীর্বাদ তোমাদের সংগে থাকুক। তোমাদের সকলের জন্যই আমার খ্রীষ্টীয় ভালবাসা রইল। আমি পৌল ঈশ্বরের ইচ্ছায় খ্রীষ্ট যীশুর একজন প্রেরিত্‌ হয়েছি। আমি এবং আমাদের বিশ্বাসী ভাই তীমথিয় করিন্থ শহরের ঈশ্বরের মণ্ডলী এবং আখায়া প্রদেশের ঈশ্বরের সব লোকদের কাছে এই চিঠি লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতার গৌরব হোক। তিনিই করুণাময় পিতা; তিনিই সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর। আমাদের সব দুঃখ- কষ্টে তিনি সান্ত্বনা দান করেন, যেন তাঁর কাছ থেকে পাওয়া সান্ত্বনা আমরা অন্যদের দুঃখ-কষ্টের সময়েও দিতে পারি। খ্রীষ্টের মত করে আমরা যেমন অনেক কষ্ট সহ্য করছি তেমনি তাঁর মধ্য দিয়ে অনেক সান্ত্বনাও পাচ্ছি। আমরা যে কষ্ট ভোগ করি তা তোমাদের সান্ত্বনা ও উদ্ধারের উদ্দেশ্যেই করি। আমরা যে সান্ত্বনা পাই তা তোমাদের সান্ত্বনার উদ্দেশ্যেই পাই। যখন তোমরা আমাদের মত করে একই কষ্ট ভোগ করবে তখন এ সান্ত্বনা সেই কষ্ট ধৈর্যের সংগে সহ্য করতে সাহায্য করবে। তোমাদের সম্বন্ধে আমাদের স্থির বিশ্বাস আছে, কারণ তোমরা যেমন আমাদের কষ্টের ভাগী তেমনি আমাদের সান্ত্বনারও ভাগী। এশিয়া প্রদেশে আমরা যে কষ্টে পড়েছিলাম, আমরা চাই তা যেন তোমরা জানতে পার। সেখানে সহ্যের অতিরিক্ত এমন চাপ আমাদের উপর পড়েছিল যে, বাঁচবার আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আমরা ভেবেছিলাম যে, এবার আমরা নিশ্চয়ই মারা যাব। কিন্তু এই অবস্থা আমাদের এইজন্য হয়েছিল যেন আমরা নিজেদের উপর নির্ভর না করে ঈশ্বর, যিনি মৃতদের জীবিত করে তোলেন, তাঁর উপর নির্ভর করি। এক ভীষণ মৃত্যুর হাত থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করেছিলেন এবং এখনও করছেন। আমরা তাঁর উপর এই আশা রাখি যে, তিনি সব সময়ই আমাদের রক্ষা করতে থাকবেন। আর তোমরাও আমাদের জন্য প্রার্থনা করে আমাদের সাহায্য কোরো। তাহলে অনেকের প্রার্থনার ফলে আমরা যে আশীর্বাদ পাব তার দরুন আমাদের জন্য অনেকেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেবে। আমরা যে জন্য গর্ব বোধ করি তা এই-আমাদের বিবেক এই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, ঈশ্বরের দেওয়া পবিত্রতায় এবং সরলতায় আমরা সব মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে জীবন কাটিয়েছি। সেই জীবন আমরা জাগতিক জ্ঞানের পরিচালনায় কাটাই নি বরং ঈশ্বরের দয়ার পরিচালনায় কাটিয়েছি। এই কথা যে সত্যি তা জেনে আমি আগেই তোমাদের কাছে যাব বলে ঠিক করেছিলাম, যেন তোমরা দু’বার আশীর্বাদ পেতে পার। আমি ঠিক করেছিলাম যে, ম্যাসিডোনিয়া যাবার পথে তোমাদের সংগে দেখা করে যাব এবং ম্যাসিডোনিয়া থেকে আবার তোমাদের কাছেই ফিরে আসব, যেন তোমরা আমাকে যিহূদিয়াতে পাঠাবার ব্যবস্থা করতে পার। তোমরা কি মনে কর আমি কোন তামাশার মনোভাব নিয়ে এটা ঠিক করেছিলাম? সাধারণ মানুষ যেমন একই সময়ে “হ্যাঁ” আবার “না” বলে, আমি কি তেমনি করে কোন কিছু ঠিক করি? ঈশ্বর বিশ্বাসযোগ্য, এই কথা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে, তোমাদের কাছে আমাদের কথা একই সময়ে “হ্যাঁ” এবং “না” হয় না। যাঁর কথা সীলবান, তীমথিয় এবং আমি তোমাদের কাছে প্রচার করেছি সেই যীশু খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র, একই সময়ে “হ্যাঁ” এবং “না” নন; তিনি সব সময় “হ্যাঁ”। ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে “হ্যাঁ” হয়ে ওঠে। তাই ঈশ্বরের গৌরবের জন্য খ্রীষ্টেরই মধ্য দিয়ে আমরা “আমেন” বলি। যিনি খ্রীষ্টের সংগে আমাদের ও তোমাদের যুক্ত করে শক্তভাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন তিনি হলেন ঈশ্বর। তিনিই আমাদের অভিষেক করেছেন, অর্থাৎ তাঁর নিজের সম্পত্তি হিসাবে তিনি আমাদের সীলমোহর করে রেখেছেন; আর যা কিছু আমাদের দেবেন তার প্রথম অংশ হিসাবে তিনি আমাদের অন্তরে পবিত্র আত্মাকে দিয়েছেন। আমার জীবনের দিব্য দিয়ে আমি ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে বলছি, শাস্তি থেকে তোমাদের রেহাই দেবার জন্যই আমি করিন্থে ফিরে যাই নি। মনিবের মত করে আমরা যে তোমাদের বিশ্বাসের উপর হাত দিচ্ছি তা নয়, বরং তোমরা যেন আনন্দ পাও সেইজন্যই তোমাদের সংগে কাজ করছি, কারণ বিশ্বাসে তোমরা শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছ। তাই আমি মনে মনে ঠিক করলাম, আবার তোমাদের দুঃখ দেবার জন্য তোমাদের কাছে যাব না, কারণ তোমাদেরই যদি আমি দুঃখ দিই তবে আমাকে আনন্দ দেবে কে? যাদের আমি দুঃখ দেব সেই তোমরা ছাড়া আমাকে আনন্দ দেবার যে আর কেউ নেই। যখন আমি যাব তখন যাদের কাছ থেকে আমার আনন্দ পাবার কথা তাদের কাছ থেকে আমি যেন দুঃখ না পাই, সেইজন্যই আমি এই কথা লিখেছিলাম। তোমাদের উপর আমার এই বিশ্বাস আছে যে, আমি যাতে আনন্দ পাই তোমরাও তাতে আনন্দ পাও। অনেক দুঃখ ও মনের ব্যথায় চোখের জলের ভিতর দিয়ে আমি তোমাদের কাছে লিখেছিলাম। তোমাদের দুঃখ দেবার জন্য আমি লিখি নি, বরং তোমাদের প্রতি আমার ভালবাসা যে কত গভীর তা জানাবার জন্যই লিখেছিলাম। কেউ যদি আমাকে দুঃখ দিয়ে থাকে তবে কথাটা কড়া করে না বলে শুধু এটুকুই বলি যে, সে কেবল আমাকে দুঃখ দেয় নি, কিন্তু কিছু পরিমাণে তোমাদের সবাইকে দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের বেশীর ভাগ লোক মিলে তাকে যে শাস্তি দিয়েছে তা-ই তার পক্ষে যথেষ্ট। তোমরা বরং এখন তাকে ক্ষমা কর এবং সান্ত্বনা দাও, যেন অতিরিক্ত দুঃখে সে হতাশ হয়ে না পড়ে। তাই আমি বিশেষভাবে তোমাদের অনুরোধ করছি, তাকে যে তোমরা ভালবাস তা প্রমাণ করে দেখাও। আমি যাচাই করে দেখতে চেয়েছিলাম তোমরা সব বিষয়ে বাধ্য আছ কিনা, আর এইজন্যই আমি তোমাদের কাছে লিখেছিলাম। কোন ব্যাপারে যদি কাউকে তোমরা ক্ষমা কর তবে আমিও তাকে ক্ষমা করি। আর সত্যিই যদি আমি কোন কিছু ক্ষমা করে থাকি তবে খ্রীষ্টের সামনে তোমাদের জন্যই তা করেছি, যেন শয়তান আমাদের উপরে কোন সুযোগ-সুবিধা না পায়। তার মতলবের কথা তো আমাদের অজানা নেই। আমি ত্রোয়া শহরে খ্রীষ্টের বিষয় সুখবর প্রচার করতে গিয়ে দেখলাম যে, সেখানে কাজ করবার জন্য প্রভু আমাকে একটা সুযোগ করে দিয়েছেন। কিন্তু তবুও আমি মনে শান্তি পাই নি, কারণ আমার বিশ্বাসী ভাই তীত সেখানে ছিলেন না। সেইজন্য ত্রোয়ার লোকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি ম্যাসিডোনিয়ায় চলে গেলাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, আমরা খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়েছি বলে ঈশ্বর তাঁর জয়-যাত্রায় সব সময় আমাদের চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। খ্রীষ্টকে জানা একটা সুগন্ধের মত। ঈশ্বর তাঁর জয়-যাত্রায় সেই সুগন্ধ আমাদের মধ্য দিয়ে সব জায়গায় ছড়িয়ে দেন। যারা উদ্ধার পাচ্ছে এবং যারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে ঈশ্বরের পক্ষে আমরা সত্যিসত্যিই খ্রীষ্টের সুগন্ধ। কিন্তু যারা ধ্বংস হচ্ছে তাদের কাছে আমাদের সুগন্ধ হল মৃত্যুর গন্ধ, যার ফল হল অনন্ত মৃত্যু; আর যারা উদ্ধার পাচ্ছে তাদের কাছে আমরা জীবনের সুগন্ধ, যার ফল হল অনন্ত জীবন। এই কাজের যোগ্য কে? নিজেদের লাভের জন্য যারা ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ব্যবসা করে আমরা সেই সব লোকদের মত নই; বরং খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে ঈশ্বরের সামনে ঈশ্বরের পাঠানো লোক হিসাবে আমরা খাঁটি অন্তর থেকে কথা বলি। আমরা এই সব কথা বলে কি আবার নিজেদের প্রশংসা করতে শুরু করছি? কোন কোন লোকের যেমন দরকার হয়ে থাকে, আমাদেরও কি সেই রকম তোমাদের কাছে বা তোমাদের কাছ থেকে প্রশংসার চিঠির দরকার হয়ে পড়েছে? কখনও না। আমাদের অন্তরের মধ্যে লেখা তোমরাই তো আমাদের চিঠি। সেই চিঠির কথা সবাই জানে এবং সবাই তা পড়েছে। তোমরাই যে খ্রীষ্টের লেখা চিঠি আর আমাদের কাজের ফল তা পরিষ্কার দেখা যায়। এই চিঠি কালি দিয়ে লেখা হয় নি বরং জীবন্ত ঈশ্বরের আত্মা দিয়েই লেখা হয়েছে। এটা কোন পাথরের ফলকের উপরে লেখা হয় নি, মানুষের অন্তরের উপরেই তা লেখা হয়েছে। খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের উপর এই রকমের নিশ্চিত বিশ্বাসই আমাদের হয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমাদের নিজেদের কোন কিছু করবার শক্তি আছে বলে আমরা দাবি করতে পারি, বরং আমাদের সেই যোগ্যতা ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে। একটা নতুন ব্যবস্থার কথা জানাবার জন্য তিনিই আমাদের যোগ্য করে তুলেছেন। এই ব্যবস্থা অক্ষরে অক্ষরে আইন-কানুন পালনের ব্যাপার নয়, কিন্তু পবিত্র আত্মার পরিচালনায় অন্তরের বাধ্যতার ব্যাপার; কারণ আইন-কানুন মৃত্যু আনে, কিন্তু পবিত্র আত্মা জীবন দান করেন। পাথরে লেখা যে ব্যবস্থার ফলে মৃত্যু আসে সেই ব্যবস্থা দেবার সময় ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে মোশির মুখও ঈশ্বরের মহিমায় উজ্জ্বল হয়েছিল। সেই উজ্জ্বলতা যদিও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছিল তবুও ইস্রায়েলীয়েরা মোশির মুখের দিকে তাকাতে পারে নি। যদি এই ব্যবস্থার ফল এত মহিমাপুর্ণ হতে পারে, তবে পবিত্র আত্মার কাজের ফল কি আরও মহিমাপূর্ণ হবে না? যে ব্যবস্থার দ্বারা মানুষকে দোষী বলে স্থির করা হয় তার কাজ যদি এত মহিমাপূর্ণ, তবে যে ব্যবস্থার দ্বারা মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয় তার কাজ আরও কত না বেশী মহিমাপূর্ণ! আর সত্যিই, যা আগে মহিমাপূর্ণ ছিল, আসলে এখন তার কোন মহিমা নেই বললেই হয়, কারণ তার তুলনায় এখনকার ব্যবস্থার মহিমা আরও অনেক বেশী। যা শেষ হয়ে যাচ্ছিল তা যখন এত মহিমাপূর্ণ ছিল তখন যা চিরকাল থাকে তা আরও কত না বেশী মহিমাপূর্ণ! আমাদের এই রকম আশা আছে বলেই আমরা খোলাখুলিভাবে কথা বলি। আমরা মোশির মত নই, কারণ মোশি তাঁর মুখের উপর ঢাকা দিয়েছিলেন যেন তাঁর মুখের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া ইস্রায়েলীয়েরা দেখতে না পায়। কিন্তু সেই লোকদের মন কঠিন হয়েছিল। সেইজন্য আজও যখন সেই পুরানো ব্যবস্থার কথা পড়া হয় তখন তাদের অন্তরের উপর সেই একই রকমের পর্দা থেকেই যায়, কারণ কেবল খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হলেই সেই পর্দা সরে যায়। কিন্তু আজও মোশির আইন-কানুনের বইগুলো পড়বার সময় ইস্রায়েলীয়দের অন্তর সেই পর্দায় ঢাকা থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ যখন প্রভুর দিকে ফেরে তখন সেই পর্দা সরে যায়। এই প্রভুই হলেন পবিত্র আত্মা; আর যেখানেই প্রভুর আত্মা সেখানেই স্বাধীনতা। এইজন্য আমরা যারা খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়েছি, আমরা সবাই খোলা মুখে আয়নায় দেখা ছবির মত করে প্রভুর মহিমা দেখতে দেখতে নিজেরাও মহিমায় বেড়ে উঠে বদলে গিয়ে তাঁরই মত হয়ে যাচ্ছি। প্রভুর, অর্থাৎ পবিত্র আত্মার শক্তিতেই এটা হয়। এই ব্যবস্থার কথা জানাবার ভার ঈশ্বর দয়া করে আমাদের দিয়েছেন বলে আমরা নিরাশ হই না। লোকে গোপনে যে সব লজ্জাপূর্ণ কাজ করে তা আমরা একেবারেই করি না। আমরা কোন কাজে ছলনা করি না, ঈশ্বরের বাক্যে কোন ভুলের ভেজাল দিই না। আমরা বরং ঈশ্বরের সত্য প্রকাশ করে তাঁরই সামনে সব মানুষের বিবেকের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্য বলে তুলে ধরি। আমাদের সুখবর যদি ঢাকা থাকে তবে যারা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের কাছেই ঢাকা থাকে। অবিশ্বাসী লোকদের মন এই যুগের দেবতা অন্ধ করে দিয়েছে যেন তারা সুখবরের আলো দেখতে না পায়। এই সুখবরে খ্রীষ্টের মহিমা ফুটে উঠেছে, আর এই খ্রীষ্টই হলেন ঈশ্বরের হুবহু প্রকাশ। আমরা তো নিজেদের বিষয় প্রচার করছি না, বরং প্রচার করছি যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু এবং যীশুর জন্যই আমরা তোমাদের দাস হয়েছি। আমরা এই কথা প্রচার করছি, কারণ যিনি বলেছিলেন, “অন্ধকার থেকে আলো হোক,” সেই ঈশ্বরই আমাদের অন্তরে জ্বলেছিলেন, যাতে তাঁর মহিমা বুঝবার আলো প্রকাশ পায়। এই মহিমাই খ্রীষ্টের মুখমণ্ডলে রয়েছে। কিন্তু এই ধন মাটির পাত্রে রাখা হয়েছে, আর আমরাই সেই মাটির পাত্র। মাটির পাত্রে তা রাখা হয়েছে যেন লোকে বুঝতে পারে যে, এই অসাধারণ মহাশক্তি আমাদের নিজেদের কাছ থেকে আসে নি বরং ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছে। সব দিক থেকেই আমাদের উপর চাপ পড়ছে, তবু আমরা ভেংগে পড়ছি না। বুদ্ধিহারা হলেও আমরা সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ছি না; অত্যাচারিত হলেও ঈশ্বর আমাদের ত্যাগ করছেন না; মাটিতে আছড়ে ফেললেও আমরা ধ্বংস হচ্ছি না। আমরা সব সময় প্রভু যীশুর মৃত্যু আমাদের দেহে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি, যেন আমাদের দেহের মধ্যে যীশুর জীবনও প্রকাশিত হয়। আমরা যারা বেঁচে আছি আমাদের সব সময়ই যীশুর জন্য মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, যেন আমাদের মৃত্যুর অধীন দেহে যীশুর জীবনও প্রকাশিত হয়। সেইজন্য আমাদের মধ্যে মৃত্যু কাজ করছে কিন্তু তোমাদের মধ্যে জীবন কাজ করছে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “আমি বিশ্বাস করেছি বলেই কথা বলেছি।” এই একই রকম বিশ্বাসের মনোভাব নিয়ে আমরাও বিশ্বাস করি বলে কথা বলছি, কারণ আমরা জানি, যিনি প্রভু যীশুকে জীবিত করেছিলেন তিনি তাঁর সংগে আমাদেরও জীবিত করবেন এবং তোমাদের সংগে আমাদেরও নিজের সামনে উপস্থিত করবেন। সব কিছু তোমাদের উপকারের জন্যই হয়েছে, যেন ঈশ্বরের যে দয়া অনেক লোকের উপর ঢেলে দেওয়া হয়েছে সেই দয়ার জন্য অনেকেই ঈশ্বরকে আরও বেশী করে ধন্যবাদ দেয় এবং এইভাবে ঈশ্বরের গৌরব হয়। এইজন্য আমরা হতাশ হই না। যদিও আমাদের বাইরের দেহ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে তবুও আমাদের ভিতরের মানুষ দিনে দিনে নতুন হয়ে উঠছে। এখন আমরা অল্পকালের জন্য যে সামান্য কষ্টভোগ করছি তার ফলে আমরা চিরকালের মহিমা লাভ করব। এই মহিমা এত বেশী যে, তা মাপা যায় না। যা দেখা যায় আমরা তার দিকে দেখছি না, বরং যা দেখা যায় না তার দিকেই দেখছি। যা দেখা যায় তা মাত্র অল্প দিনের, কিন্তু যা দেখা যায় না তা চিরদিনের। আমরা এই কথা জানি যে, এই পৃথিবীতে যে তাম্বুতে আমরা বাস করি, অর্থাৎ যে দুর্বল দেহে আমরা আছি তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তবুও ঈশ্বরের দেওয়া একটা ঘর আমাদের আছে। এই ঘর মানুষের হাতের তৈরী নয়, তা স্বর্গে চিরকাল ধরেই আছে। এই দেহে থাকা অবস্থায় আমরা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছি এবং সমস্ত অন্তর দিয়ে চাইছি যেন স্বর্গের সেই নতুন দেহ দিয়ে আমাদের ঢাকা হয়; কারণ এই কথা সত্যি যে, সেই দেহ পেলে পর দেখা যাবে যে, আমরা উলংগ নই। সত্যিই এই দুর্বল দেহে থাকা অবস্থায় আমরা বোঝার ভারে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছি। আমরা যে দেহহীন হতে চাই তা নয়, বরং সেই নতুন দেহ দিয়ে ঢাকা হতে চাই, যেন আমাদের মৃত্যুর অধীন দেহ চিরকাল জীবিত থাকা দেহে বদলে যায়। এরই জন্য ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তারই প্রথম অংশ হিসাবে তিনি পবিত্র আত্মাকে আমাদের দিয়েছেন। এইজন্য কখনও আমাদের সাহসের অভাব হয় না, আর আমরা বুঝতে পারছি যে, যতদিন আমরা এই দেহের ঘরে বাস করব ততদিন প্রভুর কাছ থেকে দূরে থাকব। যা দেখা যায় আমরা তো তার দ্বারা চলি না, বরং বিশ্বাসের দ্বারা চলাফেলা করি। আমাদের সাহস আছে আর আমরা দেহের ঘর থেকে দূর হয়ে প্রভুর সংগে বাস করাই ভাল মনে করি। সেইজন্য আমরা দেহের ঘরে বাস করি বা না করি, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রভুকে খুশী করা। এর কারণ হল, খ্রীষ্টের বিচার-আসনের সামনে আমাদের সকলের সব কিছু প্রকাশ করা হবে, যেন আমরা প্রত্যেকে এই দেহে থাকতে যা কিছু করেছি, তা ভাল হোক বা মন্দ হোক, সেই হিসাবে তার পাওনা পাই। প্রভুকে ভয় করি বলে আমরা নিজেদের সম্বন্ধে মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মাবার চেষ্টা করি। আমরা যা, তা তো ঈশ্বরের কাছে স্পষ্ট এবং আমি আশা করি তোমাদের বিবেকের কাছেও তা স্পষ্ট। এতে অবশ্য আমরা তোমাদের কাছে আবার নিজেদের প্রশংসা করছি না বরং আমাদের নিয়ে তোমাদের গর্ববোধ করবার কারণ দেখাচ্ছি, যেন অন্তর না দেখে যারা বাইরের চেহারা দেখে গর্ববোধ করে তাদের তোমরা একটা জবাব দিতে পার। যদি আমরা পাগল হয়ে গিয়ে থাকি তবে তা ঈশ্বরের জন্যই হয়েছি, আর যদি সুস্থ মনে থাকি তবে তা তোমাদের জন্যই রয়েছি। খ্রীষ্টের ভালবাসাই আমাদের বশে রেখে চালাচ্ছে, কারণ আমরা নিশ্চয় করে বুঝেছি যে, সকলের হয়ে একজন মরলেন, আর সেইজন্য সকলেই মরল। তিনি সবার হয়ে মরেছিলেন যেন যারা জীবিত আছে তারা আর নিজেদের জন্য বেঁচে না থাকে, বরং যিনি তাদের জন্য মরেছিলেন ও জীবিত হয়েছেন তাঁরই জন্য বেঁচে থাকে। সেইজন্য এখন থেকে মানুষকে আমরা আর তার বাইরের অবস্থা দেখে বিচার করি না। অবশ্য খ্রীষ্টকে আমরা আগে সেইভাবেই বিচার করেছিলাম, কিন্তু এখন আর তা করি না। যদি কেউ খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল। তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে সব নতুন হয়ে উঠেছে। এই সব ঈশ্বর থেকেই হয়। তিনি খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে আমাদের মিলিত করেছেন, আর তাঁর সংগে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। এর অর্থ হল, ঈশ্বর মানুষের পাপ না ধরে খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে নিজের সংগে মানুষকে মিলিত করছিলেন, আর সেই মিলনের খবর জানাবার ভার তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন। সেইজন্যই আমরা খ্রীষ্টের দূত হিসাবে তাঁর হয়ে কথা বলছি। আসলে ঈশ্বর যেন নিজেই আমাদের মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে অনুরোধ করছেন। তাই খ্রীষ্টের হয়ে আমরা এই মিনতি করছি, “তোমরা ঈশ্বরের সংগে মিলিত হও।” যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে কোন পাপ ছিল না; কিন্তু ঈশ্বর আমাদের পাপ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই পাপের জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত থাকবার দরুন ঈশ্বরের পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়। ঈশ্বরের সহকর্মী হিসাবে আমরা তোমাদের এই অনুরোধ করছি, তোমরা যখন ঈশ্বরের দয়া পেয়েছ তখন তা নিষ্ফল হতে দিয়ো না। ঈশ্বর পবিত্র শাস্ত্রে বলেছেন, “উপযুক্ত সময়ে আমি তোমার কথা শুনেছি এবং পাপ থেকে উদ্ধার পাবার দিনে আমি তোমাকে সাহায্য করেছি।” দেখ, এখনই উপযুক্ত সময়, আজই উদ্ধার পাবার দিন। খ্রীষ্টের জন্য আমরা যে কাজ করি তার যেন নিন্দা না হয় সেইজন্য আমরা এমন কিছু করি না যার দ্বারা কেউ কোন রকমে মনে বাধা পায়। তার চেয়ে বরং সব ব্যাপারেই ঈশ্বরের সেবাকারী বলে আমরা নিজেদের প্রমাণ করি। অত্যাচার, বিপদ ও কষ্টের মধ্যে অনেক ধৈর্য ধরে আমরা এই প্রমাণই দিচ্ছি। কতবার আমাদের মারধর করা হয়েছে, কতবার জেলে দেওয়া হয়েছে, কত দাংগা- হাংগামা আমাদের উপর দিয়ে গেছে, কত পরিশ্রম করেছি, কত রাত আমরা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি এবং কতবার না খেয়ে থেকেছি। এছাড়া আমাদের খাঁটি জীবন দ্বারা, আমাদের জ্ঞান, সহ্যগুণ ও দয়া দ্বারা, পবিত্র আত্মা দ্বারা, আমাদের খাঁটি ভালবাসা দ্বারা, সত্যের প্রচার দ্বারা এবং ঈশ্বরের শক্তি দ্বারা আমরা প্রমাণ দিচ্ছি যে, আমরা ঈশ্বরের সেবাকারী। আবার দুই হাতে ন্যায়ের অস্ত্রশস্ত্র তুলে নিয়ে আমরা প্রমাণ করছি যে, আমরা ঈশ্বরের সেবাকারী। লোকে আমাদের সম্মান করুক বা অসম্মান করুক, আমাদের বিষয়ে ভাল বলুক বা মন্দ বলুক, আমরা প্রমাণ করছি যে, আমরা ঈশ্বরের সেবাকারী। লোকে আমাদের ঠগ বলে, কিন্তু আসলে আমরা সত্যের পথে চলি। লোকে আমাদের চিনতে চায় না, কিন্তু সবাই আমাদের চেনে। আমরা মরবার মত হচ্ছি, তবুও বেঁচে আছি। আমাদের মারধর করা হচ্ছে, তবুও মেরে ফেলা হচ্ছে না। আমরা অনেক দুঃখ পাচ্ছি. তবুও আমাদের অন্তর সব সময় আনন্দে ভরা। আমরা নিজেরা গরীব, তবুও আমরা অনেককে ধনী করছি। আমাদের কিছুই নেই, তবুও আমরা সব কিছুর অধিকারী। এইভাবেই আমরা প্রমাণ করছি যে, আমরা ঈশ্বরের সেবাকারী। করিন্থীয় বিশ্বাসীরা, আমরা তোমাদের কাছে খোলাখুলিভাবেই কথা বলেছি এবং তোমাদের কাছে আমাদের অন্তর সম্পূর্ণভাবে মেলে ধরেছি। আমরা আমাদের অন্তর তোমাদের জন্য খুলে রেখেছি, কিন্তু তোমরা তোমাদের অন্তর আমাদের বিরুদ্ধে বন্ধ করে রেখেছ। আমার সন্তান হিসাবে আমি তোমাদের বলছি, আমরা যেমন তোমাদের জন্য আমাদের অন্তর খুলে রেখেছি তোমরাও তেমনি তোমাদের অন্তর আমাদের জন্য খুলে দাও। তোমরা অবিশ্বাসীদের সংগে একই জোয়ালে কাঁধ দিয়ো না। ন্যায়ের সংগে অন্যায়ের যোগ কোথায়? আলো ও অন্ধকারের মধ্যে কি যোগাযোগ আছে? খ্রীষ্টের সংগে বলীয়ালের, অর্থাৎ শয়তানের মিলই বা কোথায়? ঈশ্বরের লোক হিসাবে বিশ্বাসীর যে অধিকার তাতে অবিশ্বাসীর অংশ কি? আর ঈশ্বরের থাকবার ঘরে প্রতিমার স্থান কোথায়? আমরা তো জীবন্ত ঈশ্বরের থাকবার ঘর। পবিত্র শাস্ত্রে ঈশ্বর বলেছেন, “আমি আমার লোকদের মধ্যে বাস করব, আর তাদেরই সংগে চলাফেরা করব। আমি তাদের ঈশ্বর হব, আর তারা আমার নিজের লোক হবে।” ঈশ্বর আরও বলেছেন, “এইজন্য তোমরা অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে বের হয়ে এস ও আলাদা হও। কোন অশুচি জিনিস ছুঁয়ো না, তাহলে আমি তোমাদের গ্রহণ করব।” এছাড়া “সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন, ‘আমি তোমাদের পিতা হব আর তোমরা আমার ছেলেমেয়ে হবে।’ ” প্রিয় বন্ধুরা, আমাদের জন্য এই সব প্রতিজ্ঞা করা আছে বলে এস, আমরা দেহ ও অন্তরের সমস্ত অশুচিতা থেকে নিজেদের শুচি করি এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ ভয়ে পরিপূর্ণ পবিত্রতার পথে এগিয়ে চলি। তোমাদের অন্তরে আমাদের জন্য জায়গা কর। আমরা তো কারও প্রতি অন্যায় করি নি, কারও ক্ষতি করি নি এবং কাউকে ঠকাই নি। অবশ্য এই কথা আমি তোমাদের দোষী করবার জন্য বলছি না। আমি তো আগেই বলেছি, তোমরা আমাদের কাছে এত প্রিয় যে, আমরা তোমাদের সংগে মরতেও রাজী, বাঁচতেও রাজী। তোমাদের উপর আমার খুব বিশ্বাস আছে এবং তোমাদের জন্য আমি খুব গর্ববোধ করছি। আমাদের সব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে আমার আনন্দ উপ্‌চে পড়ছে এবং আমি খুব সান্ত্বনা পেয়েছি। ম্যাসিডোনিয়ায় পৌঁছেও আমাদের দেহ বিশ্রাম পায় নি; সব দিক থেকেই আমরা কষ্ট পেয়েছি-চারদিকে ছিল গণ্ডগোল আর অন্তরে ছিল ভয়। তবে ঈশ্বর, যিনি দুঃখিতদের সান্ত্বনা দান করেন, তিনি তীতের আসবার মধ্য দিয়ে আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। কেবল তা-ই নয়, তীত নিজে তোমাদের দ্বারা সান্ত্বনা পেয়েছেন বলে আমরাও সান্ত্বনা পেয়েছি। তোমাদের আগ্রহ ও দুঃখের কথা তিনি আমাদের বলেছেন এবং জানিয়েছেন যে, তোমরা আমার জন্য খুব চিন্তা-ভাবনা করছ, আর তাতে আমি আরও আনন্দ পেয়েছি। যদিও আমি আমার আগের চিঠির দ্বারা তোমাদের দুঃখ দিয়েছিলাম তবুও আমি দুঃখিত নই। যখন আমি দেখলাম যে, ঐ চিঠি কিছুকালের জন্য হলেও তোমাদের দুঃখ দিয়েছে তখন অবশ্য আমি কিছুটা দুঃখিত হয়েছিলাম, কিন্তু এখন আমি আনন্দিত। তোমরা দুঃখ পেয়েছিলে বলে আমি আনন্দিত নই, বরং তোমরা দুঃখিত হয়ে পাপ থেকে মন ফিরিয়েছ বলে আনন্দিত হয়েছি। ঈশ্বরের ইচ্ছামতই তোমরা এই দুঃখ পেয়েছিলে, আর সেইজন্য আমাদের দ্বারা তোমাদের কোন ক্ষতি হয় নি। ঈশ্বর যে দুঃখ দেন তাতে পাপ থেকে মন ফেরে এবং তার ফলে পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়, আর তাতে দুঃখ করবার কিছু থাকে না। কিন্তু জগতের দেওয়া দুঃখ মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে। ভেবে দেখ, ঈশ্বর যখন তোমাদের দুঃখ দিয়েছিলেন তখন তোমরা পিছিয়ে পড় নি, তখন নির্দোষ বলে নিজেদের প্রমাণ করবার জন্য তোমাদের কত ইচ্ছা হয়েছিল, পাপের প্রতি কত ঘৃণা জেগেছিল, মনে কত ভয় হয়েছিল, কত আগ্রহ জেগেছিল, কত চিন্তা-ভাবনা হয়েছিল এবং পাপের শাস্তি দেবার জন্য কত ইচ্ছা হয়েছিল। এইভাবে সব দিক থেকেই তোমরা প্রমাণ করেছিলে যে, সেই ব্যাপারে তোমরা নির্দোষ। আমি সেই চিঠি লিখেছিলাম বটে, কিন্তু যে অন্যায় করেছে বা যার উপর অন্যায় করা হয়েছে তার জন্য লিখি নি, বরং লিখেছিলাম যেন ঈশ্বরের সামনে তোমাদের কাছে প্রকাশিত হয় যে, তোমরা সত্যিই আমাদের ভালবাস। এর মধ্য দিয়ে আমরা সান্ত্বনা পেয়েছি। সেই সান্ত্বনার সংগে তীতের আনন্দ দেখে আমরাও আনন্দিত হয়েছি, কারণ তোমাদের সকলের কাছ থেকে তিনি মনে খুব শান্তি পেয়েছেন। আমি খুশী হয়েছি, কারণ তোমাদের নিয়ে আমি তাঁর কাছে গর্ব করেছিলাম, আর তাতে আমাকে লজ্জা পেতে হয় নি। তার বদলে তোমাদের কাছে বলা আমাদের সব কথা যেমন সত্যি ছিল, তেমনি তীতের কাছে তোমাদের নিয়ে আমাদের গর্বও সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। তোমরা সবাই যেভাবে ভয় ও সম্মানের সংগে তাঁকে গ্রহণ করে বাধ্যতা দেখিয়েছিলে, তা মনে করে তোমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা আরও বেড়ে গেছে। আমি খুশী হয়েছি, কারণ সব ব্যাপারেই আমি তোমাদের উপর নির্ভর করতে পারি। ভাইয়েরা, ম্যাসিডোনিয়ার মণ্ডলীগুলো ঈশ্বরের কাছ থেকে যে বিশেষ দয়া পেয়েছে সেই বিষয়ে আমরা তোমাদের জানাচ্ছি। অনেক কষ্টভোগ করবার মধ্য দিয়ে যদিও তাদের খুব পরীক্ষা চলছিল এবং যদিও তারা খুব গরীব ছিল, তবুও তাদের মনে এত আনন্দ ছিল যে, তারা খোলা হাতে দান করেছিল। আমি তাদের পক্ষে এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তারা ইচ্ছা করেই নিজেদের সাধ্যমত, এমন কি, সাধ্যের অতিরিক্তও দান করেছিল। তারা খুব আগ্রহের সংগে আমাদের কাছে অনুরোধ করেছিল যেন ঈশ্বরের যে লোকেরা অভাবের মধ্যে আছে তাদের অভাব মিটাবার কাজে তারা অংশগ্রহণ করবার সুযোগ পায়। আমাদের আশার অতিরিক্ত তারা দান করেছিল-তারা নিজেদেরই প্রথমে প্রভুর কাছে ও পরে ঈশ্বরের ইচ্ছামত আমাদের কাছে দিয়ে দিয়েছিল। এ দেখে আমরা তীতকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলাম, দান করবার যে কাজ তিনি তোমাদের মধ্যে আরম্ভ করেছিলেন তা যেন তিনি শেষ করেন। সব কিছু, অর্থাৎ বিশ্বাস, ঈশ্বরের বিষয়ে বলবার ক্ষমতা, জ্ঞান, আগ্রহ এবং আমাদের প্রতি ভালবাসা যেমন তোমাদের প্রচুর পরিমাণে আছে ঠিক তেমনি দান করবার গুণও যেন তোমাদের উপ্‌চে পড়ে। এই কথা যে আমি আদেশ হিসাবে বলছি তা নয়, কিন্তু অন্যদের আগ্রহের কথা তোমাদের জানিয়ে আমি পরীক্ষা করে দেখতে চাই তোমাদের ভালবাসা কতখানি খাঁটি। তোমরা তো আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়ার দানের কথা জান যে, তিনি নিজে ধনী হয়েও তোমাদের জন্য গরীব হলেন, যেন তাঁর গরীব হওয়ার মধ্য দিয়ে তোমরা ধনী হতে পার। তোমাদের পক্ষে যা ভাল সেই সম্বন্ধে আমি আমার মতামত জানাচ্ছি। তোমরাই গত বছর এই চাঁদা তুলতে শুরু করেছিলে এবং সেই কাজে খুব আগ্রহ দেখিয়েছিলে। এখন সেই কাজ শেষ কর। তোমরা যে আগ্রহ নিয়ে সেই কাজ করতে ইচ্ছা করেছিলে সেই একই আগ্রহ নিয়ে তোমাদের সাধ্যমত তা শেষ কর। যদি কারও দেবার ইচ্ছা থাকে তবে তার যা আছে সেই হিসাবেই তার দান ঈশ্বর গ্রহণ করেন, তার যা নেই সেই হিসাবে নয়। আমি চাই না যে, অন্যেরা সুখে থাকে আর তোমরা কষ্টে থাক, বরং আমি চাই যেন তোমাদের সকলের অবস্থা সমান থাকে। এখন তোমাদের যা বেশী আছে তার দ্বারা তাদের অভাব মিটবে, আবার যখন তাদের বেশী হবে তখন তারা তোমাদের অভাব মিটাবে। এইভাবে সকলের অবস্থা সমান হবে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “যারা অনেক কুড়ালো তাদের বেশী হল না আর যারা অল্প কুড়ালো তাদের কম পড়ল না।” তোমাদের জন্য আমার অন্তরে যে আগ্রহ আছে, ঠিক সেই আগ্রহ ঈশ্বর তীতের অন্তরেও দিয়েছেন বলে আমি তাঁকে ধন্যবাদ দিই। তীত আমাদের অনুরোধ মেনে নিয়েছেন, কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা এই যে, তিনি নিজের ইচ্ছায় খুব আগ্রহের সংগে তোমাদের কাছে যাচ্ছেন। তীতের সংগে আমরা আর এক ভাইকেও পাঠাচ্ছি। যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচারের কাজে সব মণ্ডলীই এই ভাইয়ের প্রশংসা করে থাকে। এই মণ্ডলীগুলো কেবল যে তাঁর প্রশংসা করেছে তা নয়, আমাদের সংগে এই দান নিয়ে যাবার জন্য মণ্ডলীগুলো তাঁকে বেছেও নিয়েছে। প্রভুর গৌরবের জন্য এবং অন্যদের সাহায্য করবার কাজে আগ্রহ দেখাবার জন্য আমরা এই দান নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করছি। এই বিরাট দান বিলি করবার ব্যাপারে কেউ যেন আমাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে না পারে সেইজন্য আমরা এই ভাইকেও পাঠাচ্ছি। আমরা কেবল প্রভুর সামনে নয়, কিন্তু মানুষের সামনেও সৎভাবে চলবার দিকে মনোযোগ দিই। তা ছাড়া তাঁদের সংগে আমরা আমাদের অন্য আর এক ভাইকেও পাঠাচ্ছি। তিনি যে আগ্রহী তা তিনি অনেক ব্যাপারে অনেক বার আমাদের কাছে প্রমাণ করেছেন। এখন তোমাদের উপর তাঁর খুব বেশী বিশ্বাস হয়েছে বলে তিনি আরও আগ্রহী হয়েছেন। তীতের সম্বন্ধে আমার যা বলবার আছে তা এই-তিনি আমার সংগী এবং আমার সংগে তিনি তোমাদের জন্য কাজ করেন। আর অন্য ভাইদের সম্বন্ধে আমার যা বলবার আছে তা এই-মণ্ডলীগুলো তাঁদের বেছে নিয়ে পাঠাচ্ছে। এই ভাইদের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের গৌরব হয়। তাই বলি, তাঁদের কাছে খোলাখুলিভাবেই তোমাদের ভালবাসার প্রমাণ দিয়ো এবং তাঁদের দেখায়ো কেন তোমাদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি, যাতে মণ্ডলীগুলো তা দেখতে পায়। ঈশ্বরের লোকদের জন্য দান দেবার যে কাজ চলছে সেই সম্বন্ধে তোমাদের কাছে লেখবার অবশ্য কোন দরকার নেই, কারণ এই কাজে তোমাদের আগ্রহের কথা আমার জানা আছে। আমি তোমাদের নিয়ে ম্যাসিডোনিয়ার লোকদের কাছে এই বলে গর্ব করি যে, গত বছর থেকে আখায়ার লোকেরা, অর্থাৎ তোমরা এই দানের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছ। তোমাদের এই আগ্রহ তাদের বেশীর ভাগ লোককে জাগিয়ে তুলেছে। আমি এই ভাইদের পাঠাচ্ছি যেন এই ব্যাপারে তোমাদের নিয়ে আমাদের যে গর্ব তা তাঁদের কাছে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়, আর আমি যেভাবে বলেছি সেইভাবে যেন সত্যিই তোমরা প্রস্তুত থাকতে পার। তা না হলে ম্যাসিডোনিয়ার লোকেরা যদি আমার সংগে গিয়ে দেখে যে, তোমরা প্রস্তুত নও তবে তোমাদের উপর আমাদের এত বিশ্বাসের জন্য আমরা লজ্জা পাব; অবশ্য তোমরাও লজ্জা পাবে। তাই আমি এই ভাইদের আগে তোমাদের কাছে যাবার জন্য অনুরোধ করা দরকার মনে করলাম, যেন তোমরা যে বিরাট দান দিতে প্রতিজ্ঞা করেছিলে তার ব্যবস্থা তাঁরা আগেই করে রাখতে পারেন। এতে তোমাদের কাছ থেকে জোর করে আমাদের কিছু আদায় করতে হবে না, বরং তোমরা যা দেবে তা দান হিসাবে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে। মনে রেখ, যে অল্প বীজ বোনে সে অল্প ফসলই কাটবে আর যে বেশী বীজ বোনে সে বেশী ফসল কাটবে। প্রত্যেকে মনে মনে যা ঠিক করে রেখেছে সে যেন তা-ই দেয়। কেউ যেন মনে দুঃখ নিয়ে না দেয় বা দিতে হবে বলে না দেয়, কারণ যে খুশী মনে দেয় ঈশ্বর তাকে ভালবাসেন। তোমাদের সব রকম ভাবে দয়া করবার ক্ষমতা ঈশ্বরের আছে, যাতে তোমাদের যা কিছু দরকার তার সবই সব সময় তোমাদের থাকে; আর তার ফলে যেন তোমরা সব রকম ভাল কাজের জন্য খোলা হাতে দান করতে পার। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, সে খোলা হাতে গরীবদের দান করেছে; তার সততা চিরকাল স্থায়ী। যিনি চাষীর জন্য বীজ ও খাবারের জন্য রুটি যোগান তিনি তোমাদের বুনবার জন্য বীজও যোগাবেন এবং তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন। আর তিনি তোমাদের সৎ কাজের ফল প্রচুুর পরিমাণে দেবেন। তোমরা সব দিক থেকেই ধনী হবে যাতে তোমরা খোলা হাতে দান করতে পার, আর তাতেই আমাদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়া হবে। তোমাদের এই কাজের ফলে যে কেবল ঈশ্বরের লোকদের অভাব পূরণ হবে তা নয়; ঈশ্বরের প্রতি অনেক লোকের কৃতজ্ঞতাও উপ্‌চে পড়বে। তোমরা যে বিশ্বস্ত, তোমাদের এই দান করা তা প্রমাণ করবে, আর তা দেখে তারা ঈশ্বরের গৌরব করবে, কারণ তোমরা খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর বিশ্বাস করে তার বাধ্য হয়েছ এবং তোমরা খোলা হাতে তাদের ও অন্য সবাইকে দান করেছ। ঈশ্বরের কাছ থেকে তোমরা যে অশেষ দয়া পেয়েছ তার জন্য তারা সমস্ত অন্তর দিয়ে তোমাদের জন্য প্রার্থনা করবে। যে দানের কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না ঈশ্বরের সেই দানের জন্য তাঁর ধন্যবাদ হোক। খ্রীষ্টের নম্র ও দয়ালু অন্তরের কথা মনে রেখে আমি পৌল নিজেই তোমাদের অনুরোধ করছি। লোকে বলে, আমি যখন তোমাদের কাছে থাকি তখন নাকি ভয়ে ভয়ে কাটাই, কিন্তু যখন থাকি না তখন সাহসী হই। যারা মনে করে আমরা সাধারণ মানুষের মত জীবন কাটাচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে যতখানি সাহস দেখানো আমি দরকার বলে মনে করি, আমি চাই যেন আমি আসলে পর ততখানি সাহস আমাকে দেখাতে না হয়। যদিও আমরা রক্ত-মাংসের মানুষ তবুও আমরা যে যুদ্ধ করছি তা রক্ত-মাংসের যুদ্ধ নয়। সাধারণ মানুষ যে সব অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে আমরা তা দিয়ে যুদ্ধ করছি না, কিন্তু ঈশ্বরের শক্তিতে আমাদের অস্ত্রশস্ত্র দুর্গ পর্যন্ত ভেংগে ফেলতে পারে। আমরা মানুষের মিথ্যা যুক্তি নষ্ট করি এবং ঈশ্বরকে জানবার পথে বাধা হিসাবে যে সব চিন্তা অহংকারে মাথা তুলে দাঁড়ায় তা ধ্বংস করি; আর মনের প্রত্যেকটি চিন্তাকে বন্দী করে খ্রীষ্টের বাধ্য করি। যখন তোমরা পূর্ণ বাধ্যতায় আসবে তখনও যারা অবাধ্য থাকবে তাদের আমরা শাস্তি দিতে প্রস্তুত হব। তোমরা তো বাইরের চেহারা দেখছ। কেউ যদি নিজেকে খ্রীষ্টের বলে বিশ্বাস করে তবে এটাও তার চিন্তা করা উচিত যে, সে যেমন খ্রীষ্টের তেমনি আমরাও খ্রীষ্টের লোক। প্রভু আমাদের যে অধিকার দিয়েছেন সেই অধিকারের উদ্দেশ্য হল তোমাদের গড়ে তোলা, তোমাদের ক্ষতি করা নয়। যদিও আমি এই অধিকার নিয়ে কিছুটা গর্ব করে থাকি তবুও তার জন্য আমি লজ্জা পাব না। আমার এই কথার জন্য মনে কোরো না যে, আমি চিঠির মধ্য দিয়ে তোমাদের ভয় দেখাচ্ছি। কোন কোন লোক বলে, “তার চিঠিগুলো মনে দাগ কাটে এবং তা শক্তিশালীও বটে, কিন্তু সে কাছে থাকলে দেখা যায়, সে দুর্বল এবং তার কথা শোনবার মত এমন কিছু নয়।” এই রকম লোক বুঝুক যে, আমরা অনুপস্থিত থেকে আমাদের চিঠির মধ্য দিয়ে যে কথা বলছি, উপস্থিত হলে পর ঠিক তা-ই করব। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রশংসা করে থাকে। আমরা তাদের দলে নিজেদের ফেলতে বা তাদের সংগে নিজেদের তুলনা করতে সাহস করি না। কি মুর্খ তারা! কারণ তারা নিজেরা যা ভাল মনে করে তার সংগেই নিজেদের তুলনা করে ও তা দিয়েই নিজেদের বিচার করে। কিন্তু যতটুকু গর্ব করা উচিত তার বাইরে আমরা গর্ব করব না, বরং ঈশ্বর আমাদের কাজের যে সীমানা ঠিক করে দিয়েছেন তার মধ্য থেকেই গর্ব করব; আর সেই সীমানার মধ্যে তোমরাও আছ। সেইজন্য তোমাদের কথা বলে যখন আমরা গর্ব করি তখন সীমার বাইরে কিছু বলি না। যদি আমরা তোমাদের কাছে না যেতাম তবে আমাদের এই রকম গর্ব করা সীমার বাইরে হত। কিন্তু আমরা খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করতে করতে তোমাদের কাছেও গিয়েছিলাম। তা ছাড়া অন্যদের কাজ নিয়েও আমরা গর্ব করছি না-যদি করতাম তবে তা সীমার বাইরে হত। আমরা এই আশা করি যে, তোমাদের বিশ্বাস বাড়বার সংগে সংগে আমরা তোমাদের মধ্যে আরও অনেক কাজ করতে পারব। তাতে তোমাদের কাছ থেকে গিয়ে আরও দূরের জায়গাগুলোতেও সুখবর প্রচার করতে পারব। এর ফলে কেউ বলতে পারবে না যে, অন্য লোকে যেখানে কাজ করেছে তাদের সেখানকার কাজের জন্য আমরা গর্ব করছি। কিন্তু শাস্ত্রের কথামত, “যে গর্ব করে সে প্রভুকে নিয়েই গর্ব করুক”; কারণ নিজের প্রশংসা করবার দরুন কেউ ভাল বলে প্রমাণিত হয় না, বরং প্রভু যার প্রশংসা করেন সে-ই ভাল বলে প্রমাণিত হয়। আমি চাই তোমরা আমার একটুখানি বোকামি সহ্য কর। অবশ্য তোমরা তো সহ্য করছই। আমি তোমাদের জন্য আমার অন্তরে ঈশ্বরের দেওয়া এক গভীর জ্বালায় জ্বলছি, কারণ আমি মাত্র একজন বরের সংগে, অর্থাৎ খ্রীষ্টের সংগে তোমাদের বিয়ের সম্বন্ধ পাকা করে রেখেছি, যেন সতী কনে হিসাবে তাঁর কাছেই তোমাদের তুলে দিতে পারি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে যে, সেই সাপ তার দুষ্ট বুদ্ধি খাটিয়ে যেমন হবাকে ভুলিয়েছিল সেইভাবে খ্রীষ্টের প্রতি খাঁটি ও আন্তরিক ভক্তি থেকে কেউ হয়তো তোমাদেরও ভুলিয়ে নিয়ে যাবে। যে যীশুর কথা আমরা প্রচার করেছি কেউ যখন তাঁকে ছাড়া অন্য কোন যীশুর কথা তোমাদের কাছে প্রচার করে, কিম্বা যে পবিত্র আত্মাকে তোমরা পেয়েছ তাঁকে ছাড়া আলাদা কোন রকম আত্মা যখন তোমরা পাও, কিম্বা যে সুখবর তোমরা গ্রহণ করেছ তা থেকে আলাদা কোন রকম সুখবর যখন তোমরা পাও, তখন তো দেখছি খুশী হয়েই সেই সব মেনে নাও। কিন্তু আমার তো মনে হয় না যে, আমি কোন দিক দিয়ে ঐ সব “বিশেষ” প্রেরিত্‌দের চেয়ে পিছনে পড়ে আছি। যদিও আমি খুব ভাল করে কথা বলতে পারি না তবুও আমার যথেষ্ট জ্ঞান আছে এবং তা সব রকম ভাবে সব কিছুতেই তোমাদের কাছে প্রকাশ করেছি। ঈশ্বরের দেওয়া সুখবরের কথা আমি বিনামূল্যে তোমাদের কাছে প্রচার করে নিজেকে নীচু করেছি যেন তোমাদের বড় করে দেখাতে পারি। এতে কি আমি পাপ করেছি? তোমাদের সেবা করবার জন্য আমি অন্যান্য মণ্ডলীর কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছি, বলতে গেলে তাদের লুটই করেছি। তোমাদের কাছে থাকবার সময়ে যখন আমার অভাব হয়েছিল তখনও আমি কারও বোঝা হই নি, কারণ যে ভাইয়েরা ম্যাসিডোনিয়া থেকে এসেছিল তারাই আমার অভাব পূরণ করেছিল। কোন ব্যাপারেই আমি তোমাদের বোঝা হই নি এবং হবও না। আমার মধ্যে খ্রীষ্টের যে সত্য আছে সেই অনুসারে আমি বলি যে, আখায়া প্রদেশের কোন জায়গাতেই আমার এই গর্ব করা কেউ বন্ধ করতে পারবে না। কেন আমি এই কথা বলছি? তোমাদের ভালবাসি না বলেই কি? ঈশ্বর জানেন যে, আমি তোমাদের ভালবাসি। যারা তাদের গর্বের বিষয় নিয়ে নিজেদের আমাদের সমান বলে দেখাতে চায় তারা যেন সেই সুযোগ না পায় সেইজন্যই আমি যা করছি তা করতেই থাকব। আসলে ঐ রকম লোকেরা তো ভণ্ড প্রেরিত্‌ এবং ঠগ কর্মচারী। নিজেদের খ্রীষ্টের প্রেরিত্‌ বলে দেখাবার উদ্দেশ্যে তারা নিজেদের বদলে ফেলে। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই, কারণ শয়তানও নিজেকে আলোতে পূর্ণ স্বর্গদূত বলে দেখাবার উদ্দেশ্যে নিজেকে বদলে ফেলে। তাহলে যারা শয়তানের সেবা করে তারা যদি নিজেদের বদলে ফেলে দেখায় যে, তারা ন্যায়ের সেবা করছে তবে তাতে আশ্চর্য হবার কি আছে? তাদের কাজের যা পাওনা শেষে তারা তা-ই পাবে। আমি আবার বলি, কেউ যেন আমাকে বোকা মনে না করে। অবশ্য যদি তোমরা তা-ই মনে করে থাক তবে বোকা হিসাবেই আমাকে গ্রহণ কর, যেন আমি একটুখানি গর্ব করতে পারি। আমি এখন যা বলছি তা প্রভুর আদেশ মত বলছি না, কিন্তু নিজের সম্বন্ধে গর্ব করতে গিয়ে বোকার মতই বলছি। মানুষ যা নিয়ে গর্ব করে, অনেকেই যখন তা নিয়ে গর্ব করছে তখন আমিও করব না কেন? তোমরা জ্ঞানী বলে খুশী হয়ে বোকাদের সহ্য কর। শুধু তা-ই নয়, যদি কেউ তোমাদের দাস বানায়, তোমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, তোমাদের ফাঁদে ফেলে, তোমাদের মনিব হয়ে দাঁড়ায় কিম্বা তোমাদের গালে চড় মারে, তোমরা সেই সবও সহ্য কর। আমি লজ্জার সংগে স্বীকার করছি যে, এই সব ব্যাপারে আমরা তোমাদের প্রতি দুর্বল ছিলাম। যা নিয়ে অন্যেরা গর্ব করতে সাহস করে আমিও তা নিয়ে গর্ব করতে সাহস করি; এই কথা আমি বোকার মতই বলছি। যারা গর্ব করে তারা কি ইব্রীয়? আমিও তা-ই। তারা কি ইস্রায়েলীয়? আমিও তা-ই। তারা কি অব্রাহামের বংশধর? আমিও তা-ই। তারা কি খ্রীষ্টের সেবাকারী? আমি আরও বেশী করে তা-ই। মনে রেখো, আমি মাথা-খারাপ লোকের মত কথা বলছি। খ্রীষ্টের সেবা করতে গিয়ে আমি তাদের চেয়ে অনেক বেশী পরিশ্রম করেছি, আরও অনেক বার জেল খেটেছি, আরও অনেক বার মার খেয়েছি, অনেক বার মৃত্যুর মুখে পড়েছি। যিহূদীদের হাতে পাঁচ বার আমি ঊনচল্লিশ ঘা চাবুক খেয়েছি, বেত দিয়ে তিন বার আমাকে মারা হয়েছে। এক বার আমাকে পাথর মারা হয়েছিল। তিন বার আমার জাহাজ-ডুবি হয়েছিল। একদিন ও একরাত আমি সমুদ্রের জলের মধ্যে ছিলাম। আমি অনেক দেশ ঘুরেছি। বন্যা, ডাকাত, নিজের জাতির লোক এবং অযিহূদীদের দরুন আমি বিপদে পড়েছি। তা ছাড়া শহরে, মরু- এলাকায়, সমুদ্রে এবং ভণ্ড ভাইদের মধ্যেও আমি বিপদে পড়েছি। খ্রীষ্টের সেবা করতে গিয়ে আমি কষ্টের মধ্যেও কঠিন পরিশ্রম করেছি। আমি অনেক রাত জেগেছি, খিদে ও পিপাসায় কষ্ট পেয়েছি, না খেয়ে থেকেছি, ঠাণ্ডায় ও কাপড়-চোপড়ের অভাবে কষ্ট পেয়েছি। বাইরের এই সব ব্যাপার ছাড়াও সব মণ্ডলীগুলোর জন্য রোজই আমার উপর চিন্তার চাপ পড়ছে। কেউ দুর্বল হলে আমি কি তার দুর্বলতার ভাগী হই না? কারও দরুন কেউ পাপে পড়লে আমি কি অন্তরে জ্বালা বোধ করি না? যদি আমাকে গর্ব করতেই হয় তবে আমি আমার দুর্বলতা নিয়েই গর্ব করব। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা, যিনি চিরকাল গৌরব পাবার যোগ্য, তিনি জানেন আমি মিথ্যা কথা বলছি না। দামেস্কে রাজা আরিতার নিযুক্ত শাসনকর্তা আমাকে ধরবার জন্য দামেস্কীয়দের শহর পাহারা দেবার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু দেয়ালের মধ্যে যে জানলা ছিল তার মধ্য দিয়ে আমাকে ঝুড়িতে করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আর এইভাবেই আমি তাঁর হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে আরও একটু গর্ব করতে হচ্ছে। যদিও তাতে কোন লাভ নেই তবুও প্রভু যে সব দর্শন আমাকে দেখিয়েছেন এবং যা কিছু আমার কাছে প্রকাশ করেছেন সেই বিষয়ে আমি এখন বলব। খ্রীষ্টে বিশ্বাসী একজন লোককে আমি চিনি। চৌদ্দ বছর আগে স্বর্গ পর্যন্ত তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। তখন সে তার দেহের মধ্যে ছিল কি ছিল না তা আমি জানি না, ঈশ্বর জানেন। এই লোকের সম্বন্ধে আমি গর্ব করব, কিন্তু আমার নিজের সম্বন্ধে গর্ব করব না, কেবল আমার দুর্বলতার বিষয়ে করব। অবশ্য যদি আমি গর্ব করতে চাই তবে বোকামি করব না, কারণ আমি সত্যি কথাই বলব। তবুও আমি গর্ব করব না, কারণ আমার কাজ দেখে বা আমার কথা শুনে লোকে আমাকে যা মনে করে তার চেয়ে বেশী যেন কেউ আমাকে মনে না করে। অনেক কিছু আমার কাছে প্রকাশিত হয়েছে বলে আমি যেন অহংকারী না হই, সেই উদ্দেশ্যে আমাকে কষ্ট দেবার জন্য আমার দেহে একটা কাঁটা, অর্থাৎ শয়তানের দূত দেওয়া হয়েছিল। প্রভুকে আমি তিন বার অনুরোধ করেছিলাম যেন তিনি আমার কাছ থেকে তা দূর করেন। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, “আমার দয়াই তোমার পক্ষে যথেষ্ট, কারণ দুর্বলতার মধ্য দিয়েই আমার শক্তি সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়।” সেইজন্য আমার দুর্বলতা সম্বন্ধে আমি খুব খুশী হয়েই গর্ব করব, যেন খ্রীষ্টের শক্তি আমার উপর থাকে। তাই খ্রীষ্টের জন্য দুর্বলতায়, অপমানে, যন্ত্রণায়, অত্যাচারে এবং অসুবিধা-ভোগে আমি সন্তুষ্ট, কারণ যখন আমি দুর্বল তখনই আমি শক্তিশালী। আমি বোকা হয়েছি বটে, কিন্তু তোমরাই আমাকে তা হতে বাধ্য করেছ, কারণ তোমাদেরই উচিত ছিল আমার প্রশংসা করা। যদিও আমি কিছুই নই তবুও তোমাদের ঐ “বিশেষ” প্রেরিত্‌দের চেয়ে কোনমতেই ছোট নই। অনেক ধৈর্যের সংগে তোমাদের মধ্যে নানা রকম মহৎ ও আশ্চর্য কাজ করে আমি নিজেকে একজন প্রেরিত্‌ বলে প্রমাণ করেছি। অন্যান্য মণ্ডলীর চেয়ে তোমরা কোন দিক দিয়েই ছোট নও; কেবল একটা বিষয়ে তোমরা ছোট, আর তা হল এই যে, আমি তোমাদের বোঝা হই নি। এই ভুলের জন্য আমাকে ক্ষমা কর। আমি এখন এই তৃতীয় বার তোমাদের কাছে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আমি তোমাদের বোঝা হব না, কারণ আমি তোমাদের কোন কিছু পেতে চাই না, তোমাদের পেতে চাই। ছেলেমেয়েরা যে তাদের বাপ-মায়ের জন্য টাকা-পয়সা জমাবে তা নয় বরং ছেলেমেয়েদের জন্য টাকা-পয়সা জমানো বাপ- মায়েরই উচিত। আমি খুব খুশী হয়েই তোমাদের জন্য আমার সব কিছু খরচ করব এবং নিজেকেও দিয়ে দেব। যদি আমি তোমাদের বেশী ভালবাসি তবে কি তোমরা আমাকে কম ভালবাসবে? যাহোক, আমি তোমাদের বোঝা হই নি, কিন্তু হয়তো কেউ তাতে বলবে যে, আমি চালাক বলে ছলনা করে তোমাদের ভুলিয়েছি। আমি যাদের তোমাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদের কারও দ্বারা কি তোমাদের ঠকিয়েছি? আমি তীতকে যাবার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, আর তাঁর সংগে সেই ভাইকেও পাঠিয়েছিলাম। তীত কি তোমাদের ঠকিয়েছেন? কখনও না। আমি আর তীত কি একই মনোভাব নিয়ে একইভাবে কাজ করি নি? তোমাদের কি মনে হয় যে, এই চিঠির মধ্য দিয়ে আমরা তোমাদের কাছে নিজেদের পক্ষে কথা বলছি? খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে আমরা ঈশ্বরের সামনে কথা বলছি। প্রিয় বন্ধুরা, তোমাদের গড়ে তুলবার জন্যই আমরা এই সব বলছি। আমার ভয় হচ্ছে, আমি যখন তোমাদের কাছে আসব তখন আমি তোমাদের যে রকম দেখতে চাই হয়তো সেই রকম দেখতে পাব না, আর তোমরাও আমাকে যে রকম দেখতে চাও সেই রকম দেখতে পাবে না। আমার ভয় হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে ঝগড়া, হিংসা, মেজাজ দেখানো, দলাদলি, নিন্দা, পরের কথা নিয়ে আলোচনা, অহংকার এবং গোলমাল থাকবে। আমার ভয় হচ্ছে যে, আমি যখন আবার তোমাদের কাছে যাব তখন আমার ঈশ্বর তোমাদের সামনে আমাকে লজ্জা দেবেন, আর যারা আগে পাপ করেছিল অথচ তাদের অশুচিতা, ব্যভিচার ও লমপটতা থেকে মন ফিরায় নি, তাদের অনেকের জন্য আমি দুঃখ পাব। আমি এই তৃতীয় বার তোমাদের কাছে আসছি। শাস্ত্রে লেখা আছে, “দুই বা তিনজন সাক্ষীর কথায় এই সব বিষয় সত্যি বলে প্রমাণিত হয়।” দ্বিতীয় বার আমি যখন তোমাদের কাছে ছিলাম তখন যারা আগে পাপ করেছিল তাদের এবং অন্যান্য সবাইকে আমি সাবধান করেছিলাম। এখন আমি উপস্থিত না থেকেও আবার তোমাদের সাবধান করে বলছি যে, আমি যখন আবার আসব তখন কাউকেই রেহাই দেব না, কারণ খ্রীষ্ট যে আমার মধ্য দিয়ে কথা বলছেন তার প্রমাণ তোমরা চাইছ। তিনি তোমাদের ব্যাপারে দুর্বল নন, বরং তাঁর শক্তি তিনি তোমাদের মধ্যে দেখান। তাঁকে দুর্বল অবস্থায় ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল বটে, কিন্তু ঈশ্বরের শক্তিতে তিনি জীবিত আছেন। আমরা তাঁর সংগে যুক্ত হয়ে দুর্বল হয়েছি, কিন্তু তোমাদের জন্য ঈশ্বরের শক্তিতে তাঁর সংগে আমরা জীবিত থাকব। তোমরা নিজেদের পরীক্ষা করে দেখ তোমরা সত্যি করে খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করেছ কি না। তোমরা নিজেদের যাচাই করে দেখ। তোমরা কি বোঝ না যে, খ্রীষ্ট যীশু তোমাদের অন্তরে আছেন? অবশ্য যাচাই করবার ফলে তোমরা যদি অখাঁটি বলে ধরা না পড়। কিন্তু আমি আশা করি তোমরা বুঝতে পারবে যে, আমরা খাঁটি বলে প্রমাণিত হয়েছি। আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন তোমরা কোন মন্দ কাজ না কর। অন্যেরা যাতে আমাদের খাঁটি বলে মনে করে সেইজন্যই যে আমরা এটা চাইছি তা নয়। আমরা চাই, তারা আমাদের খাঁটি বলে মনে না করলেও তোমরা যেন যা ভাল তা-ই কর। সত্যের বিরুদ্ধে আমাদের কোন ক্ষমতা নেই কিন্তু সত্যের পক্ষে আছে। যখন আমরা দুর্বল হই আর তোমরা বলবান হও তখন আমরা আনন্দিত হই। আর আমরা প্রার্থনা করি যেন তোমরা সব কিছু শুধ্‌রে নিয়ে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাও। এইজন্য আমার অনুপস্থিত থাকবার সময়েই আমি তোমাদের কাছে এই সব লিখছি, যেন উপস্থিত হলে পর প্রভু আমাকে যে অধিকার দিয়েছেন তা কঠিনভাবে ব্যবহার করতে না হয়। সেই অধিকারের উদ্দেশ্য হল তোমাদের গড়ে তোলা, তোমাদের ক্ষতি করা নয়। ভাইয়েরা, এবার বিদায়। তোমরা তোমাদের সব কিছু শুধ্‌রে নিয়ে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাও। আমার কথায় মনোযোগ দাও, তোমাদের একই মনোভাব হোক, আর তোমরা শান্তিতে থাক। তাহলে ভালবাসা ও শান্তির ঈশ্বর তোমাদের সংগে থাকবেন। ভালবাসার মনোভাব নিয়ে তোমরা একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানায়ো। ঈশ্বরের সব লোকেরা তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়া, ঈশ্বরের ভালবাসা এবং পবিত্র আত্মার যোগাযোগ-সম্বন্ধ তোমাদের সকলের অন্তরে থাকুক। আমি পৌল খ্রীষ্টের একজন প্রেরিত্‌। এই প্রেরিত্‌-পদ কোন মানুষের কাছ থেকে বা কোন মানুষের মধ্য দিয়ে আমি পাই নি, বরং যীশু খ্রীষ্ট এবং পিতা ঈশ্বর, যিনি খ্রীষ্টকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন, তাঁদের মধ্য দিয়েই আমি তা পেয়েছি। আমি এবং আমার সংগে যে সব বিশ্বাসী ভাইয়েরা আছেন, আমরা সবাই গালাতিয়া মণ্ডলীগুলোর কাছে লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। আমাদের ঈশ্বর ও পিতার ইচ্ছামত খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন, যেন তিনি এখনকার এই মন্দ জগতের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারেন। চিরকাল ঈশ্বরের গৌরব হোক। আমেন। খ্রীষ্টের দয়াতে যিনি তাঁর নিজের লোক হবার জন্য তোমাদের ডেকেছিলেন, তোমরা এত তাড়াতাড়ি তাঁকে ছেড়ে দিয়ে অন্য রকম সুখবরের দিকে ঝুঁকে পড়েছ দেখে আমি আশ্চর্য হচ্ছি। আসলে ওটা তো কোন সুখবরই নয়। তবুও কিছু লোক আছে যারা তোমাদের স্থির থাকতে দিচ্ছে না, আর খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর বদলাতে চাইছে। কিন্তু যে সুখবর আমরা তোমাদের কাছে প্রচার করেছি তা থেকে আলাদা কোন সুখবর যদি তোমাদের কাছে প্রচার করা হয়, তা আমরা নিজেরাই করি বা কোন স্বর্গদূতই করেন, তবে তার উপর অভিশাপ পড়ুক। আমি যেমন আগেও বলেছি তেমনি এখন আবার বলছি, যে সুখবর তোমরা গ্রহণ করেছ তা থেকে আলাদা কোন সুখবর যদি কেউ প্রচার করে তবে তার উপর অভিশাপ পড়ুক। আমি এতে কার প্রশংসা পাবার চেষ্টা করছি, মানুষের না ঈশ্বরের? না কি মানুষকে সন্তুষ্ট করবার চেষ্টা করছি? আমি যদি এখনও মানুষকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করি তবে তো আমি খ্রীষ্টের দাস নই। ভাইয়েরা, আমি তোমাদের জানাচ্ছি, আমি যে সুখবর প্রচার করেছি তা কোন মানুষের বানানো কথা নয়। আমি কোন লোকের কাছ থেকে তা পাই নি বা কেউ আমাকে তা শেখায় নি, বরং যীশু খ্রীষ্ট নিজেই আমার কাছে তা প্রকাশ করেছিলেন। যিহূদী ধর্ম পালন করবার সময় কিভাবে আমি জীবন কাটাতাম তা তো তোমরা শুনেছ। আর তোমরা এও শুনেছ যে, কি ভীষণ ভাবে আমি ঈশ্বরের মণ্ডলীর উপরে অত্যাচার করতাম ও তা ধ্বংস করবার চেষ্টা করতাম। আমার বয়সের অনেক যিহূদীর চেয়েও আমি সেই ধর্মে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছিলাম। এছাড়া আমার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে যে সব নিয়ম চলে আসছে সেই বিষয়েও আমি খুবই উৎসাহী ছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর আমার জন্মের সময় থেকেই আমাকে নিযুক্ত করে রেখেছিলেন এবং তাঁরই দয়ায় প্রেরিত্‌ হবার জন্য তিনি আমাকে ডেকেছিলেন। আমি যেন অযিহূদীদের কাছে খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করি, এইজন্য ঈশ্বর যখন তাঁর ইচ্ছা অনুসারে তাঁর পুুত্রকে আমার কাছে প্রকাশ করলেন তখন আমি কোন লোকের সংগে পরামর্শ করি নি। এমন কি, যাঁরা আমার আগে প্রেরিত্‌ হয়েছিলেন আমি যিরূশালেমে তাঁদের কাছেও যাই নি। আমি তখন আরব দেশে চলে গিয়েছিলাম এবং পরে আবার দামেস্ক শহরে ফিরে এসেছিলাম। এর তিন বছর পরে আমি প্রথম বার পিতরের সংগে দেখা করবার জন্য যিরূশালেমে গিয়েছিলাম, আর সেখানে তাঁর সংগে পনেরো দিন ছিলাম। তখন প্রভুর ভাই যাকোব ছাড়া অন্য কোন প্রেরিতের সংগে আমার দেখা হয় নি। ঈশ্বর সাক্ষী যে, আমি তোমাদের কাছে যা লিখছি তার কিছুই মিথ্যা নয়। তারপর আমি সিরিয়া ও কিলিকিয়ার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলাম। যিহূদিয়ার খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীগুলো আমাকে চিনত না। তারা কেবল এই কথা শুনেছিল, “যে লোক আমাদের উপর অত্যাচার করত সে এখন খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের কথা প্রচার করছে, অথচ তা সে আগে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।” আর তারা আমার দরুন ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল। চৌদ্দ বছর পরে আমি বার্ণবার সংগে আবার যিরূশালেমে গেলাম, আর তীতকেও সংগে নিলাম। ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রকাশিত হবার পরে আমি সেখানে গেলাম। যে সুখবর আমি অযিহূদীদের কাছে প্রচার করে থাকি তা বললাম। মণ্ডলীর গণ্যমান্য লোকদের কাছে সেই সব গোপনেই বললাম, কারণ আমার ভয় হচ্ছিল যে, হয়তো আমি অনর্থক পরিশ্রম করছি বা করেছি। কিন্তু অযিহূদী হলেও আমার সংগী তীতকে সুন্নত করাবার জন্য বাধ্য করা হয় নি। কয়েকজন ভণ্ড ভাই গোপনে ঢুকে পড়বার দরুন কথাটা উঠেছিল। খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসী হিসাবে আমাদের যে স্বাধীনতা আছে সেই স্বাধীনতার দোষ ধরবার জন্যই এরা গোপনে ঢুকেছিল যেন আমাদের দাস বানাতে পারে। কিন্তু সুখবরের সত্য যেন তোমাদের জন্য রক্ষা করতে পারি তাই এক মুহুর্তের জন্যও আমরা তাদের কথা মেনে নিই নি। মণ্ডলীর গণ্যমান্য লোকেরা সুখবরের বিষয়ে নতুন কোন কিছুই আমাকে জানান নি। আসলে তাঁরা যা-ই হন না কেন তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। ঈশ্বর বাইরের চেহারা দেখে বিচার করেন না। যাহোক, তাঁরা দেখলেন, যিহূদীদের কাছে সুখবর প্রচার করবার ভার যেমন পিতরের উপর দেওয়া হয়েছিল, তেমনি অযিহূদীদের কাছে সুখবর প্রচার করবার ভার ঈশ্বর আমার উপর দিয়েছেন। তাঁরা এটা দেখতে পেলেন, কারণ যিহূদীদের কাছে পিতরের প্রেরিত্‌-কাজের পিছনে যিনি ছিলেন সেই ঈশ্বর অযিহূদীদের কাছে আমার প্রেরিত্‌-কাজের পিছনেও ছিলেন। সেই গণ্যমান্য লোকেরা, অর্থাৎ যাকোব, পিতর ও যোহন এই সব দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে বিশেষ দয়া পেয়েছি। তাঁদের ও আমাদের মধ্যে যে যোগাযোগ-সম্বন্ধ আছে তা দেখাবার জন্য তাঁরা আমার ও বার্ণবার সংগে ডান হাত মিলালেন। তাঁরা রাজী হলেন যে, আমরা অযিহূদীদের কাছে যাব এবং তাঁরা নিজেরা যিহূদীদের কাছে যাবেন। তাঁদের একটা মাত্র অনুরোধ ছিল যে, আমরা যেন গরীবদের কথা মনে রাখি; অবশ্য আমারও সেই আগ্রহ ছিল। পিতর যখন সিরিয়া দেশের আন্তিয়খিয়াতে আসলেন তখন তাঁর মুখের উপরেই আমি আপত্তি জানালাম, কারণ তিনি অন্যায় করেছিলেন। বিশ্বাসী যিহূদীদের যে দলটি অযিহূদীদের সুন্নত করাবার উপর জোর দেয়, তাদের কয়েকজন যাকোবের কাছ থেকে আসবার আগে পিতর অযিহূদীদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করতেন। কিন্তু যখন সেই দলের লোকেরা আসল তখন তিনি তাদের ভয়ে অযিহূদীদের সংগ ছেড়ে দিয়ে নিজেকে আলাদা করে নিলেন। আন্তিয়খিয়ার অন্যান্য বিশ্বাসী যিহূদীরাও পিতরের সংগে এই ভণ্ডামিতে যোগ দিয়েছিল। এমন কি, বার্ণবাও তাদের ভণ্ডামির দরুন ভুল পথে পা বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু আমি যখন দেখলাম যে, সুখবরের সত্যের সংগে তাদের কাজের কোন মিল নেই তখন আমি সবার সামনে পিতরকে বললাম, “আপনি যিহূদী হয়েও যখন যিহূদীদের মত না চলে অযিহূদীদের মত চলেছেন তখন কেমন করে অযিহূদীদের যিহূদীদের মত চলতে বাধ্য করছেন? “আমরা যিহূদী, পাপী অযিহূদী হয়ে জন্মগ্রহণ করি নি। কিন্তু তবুও আমরা এই কথা জানি যে, আইন-কানুন পালনের জন্য ঈশ্বর মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন না, বরং যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের জন্যই তা করেন। সেইজন্য আমরাও খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাস করেছি, যেন আইন-কানুন পালনের জন্য নয় বরং খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের জন্যই আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়; কারণ আইন-কানুন পালন করবার ফলে কাউকেই নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হবে না। “খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে নির্দোষ বলে ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হবার চেষ্টায় যদি দেখা যায়, অযিহূদীদের মত আমরাও পাপী, তাহলে তার মানে কি এই যে, খ্রীষ্ট পাপের সেবা করেন? কখনও না। যে জিনিস আমি ভেংগে ফেলেছি তা যদি আমি আবার তৈরী করি তবে তো আমি নিজেই নিজেকে দোষী বলে প্রমাণ করি। আইন-কানুনের দাবি-দাওয়ার কাছে আইন- কানুন দ্বারাই আমার মৃত্যু হয়েছে যেন আমি ঈশ্বরের জন্য বেঁচে থাকতে পারি। আমাকে খ্রীষ্টের সংগে ক্রুশে দেওয়া হয়েছে। তাই আমি আর জীবিত নই, খ্রীষ্টই আমার মধ্যে জীবিত আছেন। এখন এই দেহে আমি যে জীবন কাটাচ্ছি তা ঈশ্বরের পুত্রের উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই কাটাচ্ছি। তিনি আমাকে ভালবেসে আমার জন্য নিজেকে দান করেছিলেন। ঈশ্বরের এই দয়াকে আমি বাতিল করব না, কারণ মানুষ যদি আইন-কানুন পালনের মধ্য দিয়েই ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হতে পারে তবে খ্রীষ্ট মিথ্যাই মরেছিলেন।” ওহে অবুঝ গালাতীয়েরা! কে তোমাদের যাদু করেছে? তোমাদের কাছে তো স্পষ্টভাবেই প্রচার করা হয়েছে যে, যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল। আমি কেবল তোমাদের কাছ থেকে জানতে চাই, তোমরা আইন- কানুন পালন করে কি পবিত্র আত্মাকে পেয়েছিলে, না সুখবর শুনে বিশ্বাস করে পেয়েছিলে? তোমরা কি এতই অবুঝ? পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে নতুন জীবন আরম্ভ করে কি এখন নিজের চেষ্টায় পূর্ণতা লাভ করতে যাচ্ছ? তোমরা কি মিথ্যাই এত দুঃখভোগ করেছ? আমি আশা করি তোমাদের সেই দুঃখভোগ অনর্থক হয় নি। ঈশ্বর কেন তোমাদের পবিত্র আত্মা দিয়েছেন এবং তোমাদের মধ্যে এত আশ্চর্য কাজ করছেন তা ভেবে দেখ। তোমরা আইন-কানুন পালন করছ বলেই কি তিনি এই সব করছেন, নাকি সুখবর শুনে বিশ্বাস করেছ বলে করছেন? অব্রাহামের কথা ভেবে দেখ। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “অব্রাহাম ঈশ্বরের কথা বিশ্বাস করলেন আর ঈশ্বর সেইজন্য তাঁকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন।” এইজন্য তোমরা এই কথা জেনো, যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে কেবল তারাই অব্রাহামের বংশধর। পবিত্র শাস্ত্রে আগেই লেখা হয়েছিল, বিশ্বাসের জন্যই ঈশ্বর অযিহূদীদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করবেন। অব্রাহামের কাছে এই কথা বলে আগেই সুখবর জানানো হয়েছিল, “তোমার মধ্য দিয়েই সব জাতি আশীর্বাদ পাবে।” তাহলে দেখা যায়, ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে অব্রাহাম যেমন আশীর্বাদ পেয়েছিলেন ঠিক তেমনি তাঁর পর থেকে যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করছে তারাও সেই আশীর্বাদ পাচ্ছে। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “সেই লোক অভিশপ্ত, যে আইন-কানুনে লেখা প্রত্যেকটি কথা পালন করে না।” তাহলে দেখা যায়, যারা আইন-কানুন পালন করবার উপর নির্ভর করে তাদের সকলের উপরে এই অভিশাপ রয়েছে। তা ছাড়া এটাও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, আইন-কানুন পালন করবার জন্য ঈশ্বর কাউকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন না, কারণ পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, “যাকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয় সে বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই জীবন পাবে।” বিশ্বাসের সংগে আইন-কানুনের কোন সম্বন্ধ নেই। আইন-কানুন বরং বলে, “যে লোক আইন-কানুন মতে চলে সে তার মধ্য দিয়েই জীবন পাবে।” আইন-কানুন অমান্য করবার দরুন যে অভিশাপ আমাদের উপর ছিল, খ্রীষ্ট সেই অভিশাপ নিজের উপর নিয়ে আমাদের মুক্ত করেছেন। পবিত্র শাস্ত্রে এই কথা লেখা আছে, “যাকে গাছে টাংগানো হয় সে অভিশপ্ত।” ঈশ্বর অব্রাহামকে যে আশীর্বাদ করেছিলেন সেই আশীর্বাদ খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে যেন অযিহূদীরাও পেতে পারে, আর যেন আমরা বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে প্রতিজ্ঞা-করা পবিত্র আত্মাকে পেতে পারি, সেইজন্যই খ্রীষ্ট সেই অভিশাপ নিজের উপর নিয়েছিলেন। ভাইয়েরা, আমি একটা সাধারণ কথা দিয়ে বিষয়টা বুঝাচ্ছি। একবার যখন মানুষের মধ্যে কোন চুক্তি পাকা করে ফেলা হয় তখন সেই চুক্তি কেউ বাতিল করতে পারে না বা তার সংগে কিছু যোগও দিতে পারে না। অব্রাহাম ও তাঁর বংশের কাছে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। পবিত্র শাস্ত্র বলে নি, “বংশগুলোর কাছে,” অর্থাৎ অনেক বংশের কাছে, বরং বলেছে, “তোমার বংশের কাছে,” অর্থাৎ একটি বংশের কাছে, আর সেই বংশের বংশধর হলেন খ্রীষ্ট। আমার কথার মানে হল, ঈশ্বর অব্রাহামের সময়ে একটা প্রতিজ্ঞাপুর্ণ ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন। তার চারশো ত্রিশ বছর পরে আইন-কানুন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতে আগের সেই ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেল না; কাজেই তার প্রতিজ্ঞা টিকেই রইল। ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া যদি আইন-কানুন পালনের উপর নির্ভর করে তাহলে তো আর প্রতিজ্ঞার উপর তা নির্ভর করছে না। কিন্তু ঈশ্বর দয়া করে একটা প্রতিজ্ঞার মধ্য দিয়ে অব্রাহামকে আশীর্বাদ করেছিলেন। তাহলে আইন-কানুন কেন দেওয়া হয়েছিল? মানুষ পাপ করতে থাকবার দরুন ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার সংগে আইন-কানুন যুক্ত করা হয়েছিল। যাঁর বিষয় ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন অব্রাহামের সেই বংশধর না আসা পর্যন্ত বহাল থাকবার জন্যই আইন-কানুন দেওয়া হয়েছিল। স্বর্গদূতদের মধ্য দিয়ে একজন মধ্যস্থের দ্বারা এই আইন-কানুন বহাল করা হয়েছিল। কিন্তু কেবল একজন থাকলে মধ্যস্থের দরকার হয় না; আর ঈশ্বর মাত্র একজনই। তাহলে আইন-কানুন কি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর বিরুদ্ধে? নিশ্চয়ই না। ঈশ্বর যদি এমন আইন-কানুন দিতেন যা জীবন দিতে পারে তবে তা পালনের দ্বারা নিশ্চয় মানুষ ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হত। কিন্তু পবিত্র শাস্ত্র সব মানুষকেই পাপের জন্য দোষী বলে স্থির করেছে, যেন যীশু খ্রীষ্টের উপর যারা বিশ্বাস করে তারা তাদের সেই বিশ্বাসের ফলে প্রতিজ্ঞা- করা আশীর্বাদ পেতে পারে। বিশ্বাস আসবার আগে আইন-কানুন আমাদের পাহারা দিয়ে রেখেছিল এবং যতদিন না বিশ্বাস প্রকাশিত হল ততদিন পর্যন্ত আমাদের বন্দী করে রেখেছিল। তাহলে দেখা যায়, খ্রীষ্টের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য এই আইন-কানুনই আমাদের পরিচালনাকারী, যেন বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এখন বিশ্বাস এসেছে বলে আমরা আর আইন-কানুনের পরিচালনার অধীন নই। খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান হয়েছ, কারণ তোমাদের যাদের খ্রীষ্টের মধ্যে বাপ্তিস্ম হয়েছে, তোমরা কাপড়ের মত করে খ্রীষ্টকে দিয়ে নিজেদের ঢেকে ফেলেছ। যিহূদী ও অযিহূদীর মধ্যে, দাস ও স্বাধীন লোকের মধ্যে, স্ত্রীলোক ও পুরুষের মধ্যে কোন তফাৎ নেই, কারণ খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে তোমরা সবাই এক হয়েছ। তোমরা যখন খ্রীষ্টের হয়েছ তখন অব্রাহামের বংশধরও হয়েছ। আর ঈশ্বর যা দেবার প্রতিজ্ঞা অব্রাহামের কাছে করেছিলেন তোমরাও সেই সবের অধিকারী হয়েছ। আমার কথার অর্থ এই-বাবার সব কিছুর উপর সন্তানের অধিকার থাকলেও যতদিন সে নাবালক থাকে ততদিন তার এবং দাসের মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। তার বাবা যে সময় ঠিক করে দেন সেই সময় পর্যন্ত তাকে অভিভাবক ও ভারপ্রাপ্ত লোকদের অধীনে থাকতে হয়। সেই একইভাবে আমরাও যখন ছোট ছিলাম তখন জগতের নানা রীতিনীতির দাস ছিলাম। কিন্তু সময় পূর্ণ হলে পর ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠিয়ে দিলেন। সেই পুত্র স্ত্রীলোকের গর্ভে জন্মগ্রহণ করলেন এবং আইন-কানুনের অধীনে জীবন কাটালেন, যেন আইন-কানুনের অধীনে থাকা লোকদের তিনি মুক্ত করতে পারেন, আর ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে আমাদের গ্রহণ করতে পারেন। তোমরা সন্তান বলেই ঈশ্বর তাঁর পুত্রের আত্মাকে তোমাদের অন্তরে থাকবার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেই আত্মা ঈশ্বরকে আব্বা, অর্থাৎ পিতা বলে ডাকেন। ফলে তোমরা আর দাস নও বরং সন্তান। যদি তোমরা সন্তানই হয়ে থাক তবে ঈশ্বর যা দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তোমরা তার অধিকারী। আগে যখন তোমরা ঈশ্বরকে চিনতে না তখন তোমরা যাদের সেবা করতে তারা আসলে কোন দেবতাই নয়। কিন্তু এখন তোমরা ঈশ্বরকে চিনেছ; তার চেয়ে বরং এই কথা বললে ঠিক হবে যে, ঈশ্বরই তোমাদের চিনেছেন। তাহলে কেমন করে তোমরা আবার জগতের সেই নানা দুর্বল ও নিষ্ফল রীতিনীতির দিকে ফিরছ? তোমরা কি আবার সেই সবের দাস হতে চাইছ? তোমরা বিশেষ বিশেষ দিন, মাস, ঋতু ও বছর পালন করছ। তোমাদের জন্য আমার এই ভয় হচ্ছে যে, তোমাদের মধ্যে হয়তো আমি মিথ্যাই পরিশ্রম করেছি। ভাইয়েরা, আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, তোমরা আমার মত হও, কারণ আমিও তোমাদের মত হয়েছি। তোমরা আমার উপর কোন অন্যায় কর নি। তোমরা জান যে, আমার শরীর অসুস্থ ছিল বলে আমি প্রথম বার তোমাদের কাছে সুখবর প্রচার করবার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার অসুস্থতা যদিও তোমাদের কষ্ট দিয়েছিল তবুও তোমরা আমাকে তুচ্ছ বা ঘৃণা কর নি, বরং ঈশ্বরের দূতকে কিম্বা খ্রীষ্ট যীশুকে যেভাবে গ্রহণ করতে সেইভাবেই তোমরা আমাকে গ্রহণ করেছিলে। কিন্তু এখন নিজেদের সেই ধন্য মনে করবার ভাব তোমাদের কোথায় গেল? আমি তোমাদের সম্বন্ধে এই সাক্ষ্য দিতে পারি যে, সম্ভব হলে তখন তোমরা তোমাদের চোখ তুলে নিয়ে আমাকে দিতে। এখন সত্যি কথা বলবার জন্য কি আমি তোমাদের শত্রু হয়ে গেছি? সেই অন্য লোকেরা তোমাদের জন্য আগ্রহী হয়েছে, কিন্তু সেটা কোন ভাল উদ্দেশ্যের জন্য নয়। তারা আমার দিক থেকে তোমাদের ফিরাতে চায়, যেন তোমরা তাদের প্রতি আগ্রহী হও। অবশ্য সৎ উদ্দেশ্যের জন্য আগ্রহ থাকা ভাল। আমি যখন তোমাদের মধ্যে উপস্থিত থাকি কেবল তখন নয়, কিন্তু সব সময়েই আগ্রহ থাকা ভাল। আমার সন্তানেরা, যতদিন না তোমরা খ্রীষ্টের মত হও ততদিন পর্যন্ত আমি আবার তোমাদের জন্য প্রসব-বেদনার মত কষ্ট ভোগ করছি। আমার এমন ইচ্ছা হচ্ছে যে, এই চিঠি লেখার বদলে আমি এখনই তোমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়ে তোমাদের সংগে কথা বলি, কারণ তোমাদের সম্বন্ধে আমি কি করব তা বুঝতে পারছি না। তোমরা যারা আইন-কানুনের অধীনে থাকতে চাইছ, তোমরা আমাকে বল দেখি, আইন-কানুন যা বলে তা কি তোমরা শুনতে পাও না? শাস্ত্রে লেখা আছে অব্রাহামের দু’টি ছেলে ছিল, তাদের একজনের মা ছিল এক দাসী ও আর একজনের মা ছিলেন অব্রাহামের আসল স্বাধীন স্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই সেই দাসীর সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল, কিন্তু যিনি স্বাধীন ছিলেন তাঁর সন্তানটি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ফলে জন্মগ্রহণ করেছিল। আমি রূপক অর্থে এই সব কথা বলছি। এই দু’জন স্ত্রীলোক দু’টি ব্যবস্থাকে বুঝায়। একটা ব্যবস্থা সিনাই পাহাড় থেকে এসেছে এবং তা তার অধীন মানুষকে দাস হবার পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ হল সেই দাসী হাগার। হাগার আরব দেশের সিনাই পাহাড়কে বুঝায়। হাগার এখনকার যিরূশালেমের একটা ছবিও বটে, কারণ যিরূশালেম তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে দাসী হয়েছে। কিন্তু যে যিরূশালেম স্বর্গের, সে স্বাধীন; সে-ই আমাদের মা। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “হে বন্ধ্যা স্ত্রীলোক, যার কখনও সন্তান হয় নি, তুমি আনন্দে গান কর; তুমি, যার কখনও প্রসব-বেদনা হয় নি, তুমি গানে ফেটে পড়, আনন্দে চিৎকার কর; কারণ যার স্বামী আছে তার চেয়ে যার কেউ নেই তার সন্তান অনেক বেশী হবে।” ভাইয়েরা, তোমরা ইস্‌হাকের মতই ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার ফলে জন্মেছ। কিন্তু সেই সময় যার স্বাভাবিক ভাবে জন্ম হয়েছিল সে অত্যাচার করত তার উপর যার পবিত্র আত্মার শক্তিতে জন্ম হয়েছিল। আর এখনও তা-ই হচ্ছে। কিন্তু পবিত্র শাস্ত্র কি বলে? পবিত্র শাস্ত্র বলে যে, দাসী ও তার ছেলেকে যেন বের করে দেওয়া হয়, কারণ দাসীর ছেলে কোনমতেই স্বাধীন স্ত্রীর ছেলের সংগে বিষয়-সম্পত্তির ভাগ পেতে পারে না। ভাইয়েরা, তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমরা দাসীর সন্তান নই, বরং আমরা স্বাধীন স্ত্রীর সন্তান। খ্রীষ্ট আমাদের স্বাধীন করেছেন যেন আমরা স্বাধীন থাকতে পারি। সেইজন্য তোমরা স্থির থাক, যেন কেউ আবার তোমাদের দাস বানাতে না পারে। আমি পৌল তোমাদের বলছি, শোন-যদি তোমাদের সুন্নত করানোই হয় তবে তোমাদের কাছে খ্রীষ্টের কোন মূল্য নেই। আমি সকলের কাছে আবার এই সাক্ষ্য দিচ্ছি, যাকে সুন্নত করানো হয় সে সমস্ত আইন-কানুন পালন করতে বাধ্য। তোমরা যারা আইন-কানুন পালন করে ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য হতে চাইছ তোমরা তো খ্রীষ্টের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছ, ঈশ্বরের দয়া থেকে সরে গেছ। কিন্তু আমাদের যে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হবে, সেই নিশ্চয়তায় বিশ্বাসের দ্বারা পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে আমরা অপেক্ষা করে আছি; কারণ যারা খ্রীষ্ট যীশুর, তাদের কাছে সুন্নত করানো বা না করানোর কোন দাম নেই, বরং যে বিশ্বাস ভালবাসার মধ্য দিয়ে কাজ করে সেই বিশ্বাসই আসল জিনিস। তোমরা তো বেশ ভালভাবেই চলছিলে; তবে সত্যের বাধ্য হতে কে তোমাদের বাধা দিল? যে মতামত তোমরা মেনে নিয়েছ, যিনি তোমাদের ডেকেছেন সেই ঈশ্বরের কাছ থেকে তা আসে নি। একটুখানি খামি একটা গোটা ময়দার তালকে ফাঁপিয়ে তোলে। তোমাদের সম্বন্ধে প্রভুর উপর আমার এই বিশ্বাস আছে যে, তোমরা আর অন্য কোন মতামত গ্রহণ করবে না। কিন্তু যে তোমাদের স্থির থাকতে দিচ্ছে না, সে যে-ই হোক না কেন, সে তার পাওনা শাস্তি ভোগ করবে। ভাইয়েরা, যদি আমি এখনও প্রচার করি যে, লোকদের সুন্নত করানো উচিত তবে কেন আমাকে এখনও অত্যাচার করা হচ্ছে? ক্রুশের উপর খ্রীষ্টের মৃত্যুর বাধা তো তাহলে দূর হয়ে গেছে। যারা তোমাদের গোলমালে ফেলছে, আমি চাই তারা যেন নিজেদের একেবারে খোজা-ই করে ফেলে। ভাইয়েরা, স্বাধীন হবার জন্যই তো ঈশ্বর তোমাদের ডেকেছেন। কিন্তু তোমাদের পাপ-স্বভাবের ইচ্ছাগুলো পূর্ণ করবার জন্য এই স্বাধীনতা ব্যবহার কোরো না। তার চেয়ে বরং ভালবাসার মনোভাব নিয়ে একে অন্যের সেবা কর, কারণ সমস্ত আইন-কানুন মিলিয়ে এক কথায় বলা হয়েছে, “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে।” কিন্তু যদি তোমরা একে অন্যের সংগে ঝগড়াঝাঁটি ও হিংসাহিংসি কর তবে সাবধান! এই রকম করলে তোমরা তো একে অন্যকে ধ্বংস করে ফেলবে। আমি যা বলছি তা এই-তোমরা পবিত্র আত্মার অধীনে চলাফেরা কর। তা করলে তোমরা পাপ-স্বভাবের ইচ্ছা পূর্ণ করবে না। পাপ-স্বভাব যা চায় তা পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে এবং পবিত্র আত্মা যা চান তা পাপ-স্বভাবের বিরুদ্ধে। পাপ-স্বভাব ও পবিত্র আত্মা একে অন্যের বিরুদ্ধে বলে তোমরা যা করতে চাও তা কর না। তোমরা যদি পবিত্র আত্মার দ্বারাই পরিচালিত হও তবে তোমরা আইন-কানুনের অধীনে নও। পাপ-স্বভাবের কাজগুলো স্পষ্টই দেখা যায়। সেগুলো হল-ব্যভিচার, অশুচিতা, লমপটতা, প্রতিমা-পূজা, যাদুবিদ্যা, শত্রুতা, ঝগড়া, লোভ, রাগ, স্বার্থপরতা, অমিল, দলাদলি, হিংসা, মাতলামি, হৈ- হল্লা করে মদ খাওয়া, আর এই রকম আরও অনেক কিছু। আমি যেমন এর আগে তোমাদের সতর্ক করেছিলাম এখনও তা-ই করে বলছি, যারা এই রকম কাজ করে ঈশ্বরের রাজ্যে তাদের জায়গা হবে না। কিন্তু পবিত্র আত্মার ফল হল-ভালবাসা, আনন্দ, শান্তি, সহ্যগুণ, দয়ার স্বভাব, ভাল স্বভাব, বিশ্বস্ততা, নম্রতা ও নিজেকে দমন। এই সবের বিরুদ্ধে কোন আইন নেই। যারা খ্রীষ্ট যীশুর, তারা তাদের পাপ-স্বভাবকে তার সমস্ত কামনা-বাসনা সুদ্ধ ক্রুশে দিয়ে শেষ করে ফেলেছে। যদি আমরা পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে জীবন পেয়ে থাকি তবে এস, আমরা পবিত্র আত্মার অধীনেই চলাফেরা করি। আমরা যেন মিথ্যা বড়াই না করি এবং একে অন্যকে বিরক্ত ও হিংসা না করি। ভাইয়েরা, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি হঠাৎ কোন পাপে পড়ে যায়, তবে তোমরা যারা পবিত্র আত্মার অধীনে চলাফেরা করছ তোমরা তাকে তুলে এনো। তবে খুব নরম মনোভাব নিয়ে তোমরা এই কাজ কোরো এবং নিজের বিষয় সতর্ক থেকো, যাতে তোমরাও পাপে না পড়। তোমরা একে অন্যের ভার বয়ে নিয়ো। এইভাবেই তোমরা খ্রীষ্টের আইন পালন করতে পারবে। কিছু না হয়েও যদি কেউ নিজেকে বিশেষ কিছু বলে মনে করে তবে তো সে নিজেকে ঠকায়। প্রত্যেকে নিজের কাজ পরীক্ষা করে দেখুক। তাহলে অন্যের সংগে নিজের তুলনা না করে তার নিজের কাজের জন্য সে গর্ববোধ করতে পারবে, কারণ প্রত্যেকেরই উচিত নিজের দায়িত্ব বয়ে নেওয়া। যাকে ঈশ্বরের বাক্য শিক্ষা দেওয়া হয় সে যেন তার শিক্ষককে তার সব ভাল জিনিসের ভাগ দেয়। তোমরা ভুল কোরো না, ঈশ্বরের সংগে তামাশা চলে না; কারণ যে যা বুনবে সে তা-ই কাটবে। পাপ-স্বভাবকে খুশী করবার বীজ বুনলে তা থেকে ধ্বংসের ফসল আসবে। কিন্তু পবিত্র আত্মাকে খুশী করবার বীজ বুনলে তা থেকে অনন্ত জীবনের ফসল আসবে। আমরা যেন সৎকাজ করতে করতে ভেংগে না পড়ি, কারণ তা ছেড়ে না দিয়ে করতে থাকলে আমরা ঠিক সময়ে তার ফসল পাব। সুযোগ পেলেই আমরা যেন সকলের, বিশেষভাবে ঈশ্বরের পরিবারের লোকদের উপকার করি। দেখ, কত বড় বড় অক্ষরে আমি নিজের হাতে তোমাদের কাছে লিখছি। যারা বাইরে নিজেদের ভাল দেখাতে চায় তারাই সুন্নত করাবার জন্য তোমাদের বাধ্য করতে চেষ্টা করছে। খ্রীষ্টের ক্রুশের জন্য যেন তাদের উপর অত্যাচার না আসে সেইজন্যই তারা এই রকম করছে। যাদের সুন্নত করানো হয়েছে তারাও তো আইন-কানুন পালন করে না। তবুও তারা তোমাদের সুন্নত করাতে চায় যেন এই বলে গর্ব করতে পারে যে, তোমরাও তাদের দলে এসেছ। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশ ছাড়া আমি যেন আর কিছুতে গর্ববোধ না করি। এই ক্রুশের মধ্য দিয়েই জগৎ আমার কাছে মরে গেছে এবং আমিও জগতের কাছে মরে গেছি। সুন্নত করানো বা না করানোর কোন দামই নেই, খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে নতুন সৃষ্টি হয়ে ওঠাই হল বড় কথা। যারা এই নিয়মে চলে তাদের, অর্থাৎ ঈশ্বরের আসল ইস্রায়েলীয়দের তিনি শান্তি ও করুণা দান করুন। শেষে বলি, কেউ আমাকে কষ্ট না দিক, কারণ যীশুর আঘাতের চিহ্ন আমি আমার দেহে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। ভাইয়েরা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়া তোমাদের অন্তরে থাকুক। আমেন। আমি পৌল ঈশ্বরের ইচ্ছায় খ্রীষ্ট যীশুর একজন প্রেরিত্‌। ইফিষ শহরে যারা ঈশ্বরের লোক ও খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসী তাদের কাছে আমি এই চিঠি লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পিতা ও ঈশ্বরের গৌরব হোক। আমরা খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়েছি বলে স্বর্গের প্রত্যেকটি আত্মিক আশীর্বাদ ঈশ্বর আমাদের দান করেছেন। তিনি এটা করেছিলেন যেন তিনি তাঁর প্রিয় পুত্রের মধ্য দিয়ে বিনামূল্যে যে মহিমাপূর্ণ দয়া আমাদের করেছেন তাঁর প্রশংসা হয়। ঈশ্বরের অশেষ দয়া অনুসারে খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে তাঁর রক্তের দ্বারা আমরা মুক্ত হয়েছি, অর্থাৎ পাপের ক্ষমা পেয়েছি। এই দয়া ঈশ্বর তাঁর মহা জ্ঞান ও বুদ্ধির সংগে খোলা হাতে আমাদের দান করেছেন। ঠিক যেমন তিনি চেয়েছিলেন এবং খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আগেই স্থির করে রেখেছিলেন, সেই অনুসারেই তিনি তাঁর গুপ্ত উদ্দেশ্য আমাদের জানিয়েছিলেন। তিনি স্থির করে রেখেছিলেন যে, সময় পূর্ণ হলে পর সেই উদ্দেশ্য কার্যকর করবার জন্য তিনি স্বর্গের ও পৃথিবীর সব কিছু মিলিত করে খ্রীষ্টের শাসনের অধীনে আনবেন। ঈশ্বর তাঁর বিচারবুদ্ধি অনুসারে নিজের ইচ্ছামতই সব কাজ করেন। তাঁর উদ্দেশ্য অনুসারে তিনি আগেই যা ঠিক করে রেখেছিলেন সেইমতই খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের লোক হবার জন্য তিনি আমাদের বেছে নিয়েছেন। আমরা যারা আগেই খ্রীষ্টের উপর আশা রেখেছি, সেই আমাদেরই মধ্য দিয়ে যেন ঈশ্বরের মহিমার প্রশংসা হয় সেইজন্যই তিনি আমাদের বেছে নিয়েছেন। আর তোমরাও সত্যের বাক্য, অর্থাৎ পাপ থেকে উদ্ধার পাবার সুখবর শুনে খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করেছ। খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়েছ বলে ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা করা পবিত্র আত্মা দিয়ে তোমাদের সীলমোহর করে রেখেছেন। যারা ঈশ্বরের নিজের সম্পত্তি তাদের তিনি একটা অধিকার দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন। তাদের যতদিন না সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা হয় ততদিন পর্যন্ত সেই অধিকারের প্রথম অংশ হিসাবে পবিত্র আত্মাকে তাদের দেওয়া হয়েছে। আর এই সবের দ্বারাই ঈশ্বরের মহিমার প্রশংসা হবে। এইজন্য যখন আমি প্রভু যীশুর উপর তোমাদের বিশ্বাস এবং ঈশ্বরের সমস্ত লোকদের প্রতি তোমাদের ভালবাসার কথা শুনলাম, তখন থেকে তোমাদের জন্য ধন্যবাদ দেওয়া আমি কখনও বন্ধ করি নি। প্রার্থনা করবার সময় আমি তোমাদের কথা ভুলে যাই না। আমি প্রার্থনা করি যেন আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর, অর্থাৎ সেই গৌরবময় পিতা তোমাদের আত্মিক জ্ঞান ও বুঝবার ক্ষমতা দান করেন, যাতে তোমরা তাঁকে আরও ভাল করে জানতে পার। যার দ্বারা তিনি মৃত্যু থেকে খ্রীষ্টকে জীবিত করে তুলেছেন এবং স্বর্গে তাঁর ডান দিকে বসিয়েছেন। মহাকাশে যাদের হাতে সমস্ত শাসন, ক্ষমতা, শক্তি এবং কর্তৃত্ব রয়েছে তাদের তিনি খ্রীষ্টের অধীন করেছেন। আর যাকে যে নামই দেওয়া হোক না কেন, তা সে এই যুগেই হোক কিম্বা আগামী যুগেই হোক, সব নামের উপরে খ্রীষ্টের নাম। ঈশ্বর সব কিছু খ্রীষ্টের পায়ের তলায় রেখেছেন এবং তাঁকে সব কিছুর অধিকার দিয়েছেন, আর তাঁকেই মণ্ডলীর মাথা হিসাবে নিযুক্ত করেছেন। এই মণ্ডলী আসলে খ্রীষ্টেরই দেহ। যিনি সব দিক থেকে সব কিছু পূর্ণ করেন সেই খ্রীষ্টের পূর্ণতা হল এই মণ্ডলী। অবাধ্যতা আর পাপের দরুন তোমরা মৃত ছিলে। জগতের চিন্তাধারা অনুসারে তোমরাও এক সময় সেই অবাধ্যতা আর পাপের মধ্যে চলাফেরা করতে। যে আত্মা আকাশের ক্ষমতাশালীদের রাজা সেই দুষ্ট আত্মা ঈশ্বরের অবাধ্য লোকদের মধ্যে কাজ করছে, আর তোমরা সেই আত্মার পিছনে পিছনে চলতে। আমরা সবাই আমাদের পাপ-স্বভাবের কামনা পূর্ণ করে সেই লোকদের মধ্যে এক সময় জীবন কাটাতাম। পাপ-স্বভাব থেকে যে সব ইচ্ছা এবং চিন্তা জাগে আমরা সেই অনুসারে কাজ করতাম। এই স্বভাবের জন্য আমরাও অন্য সকলের মত ঈশ্বরের কাছ থেকে শাস্তি পাবার যোগ্য ছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর করুণায় পূর্ণ; তিনি আমাদের খুব ভালবাসেন। এইজন্য অবাধ্যতার দরুন যখন আমরা মৃত অবস্থায় ছিলাম তখন খ্রীষ্টের সংগে তিনি আমাদের জীবিত করলেন। ঈশ্বরের দয়ায় তোমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। আমরা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছি বলে ঈশ্বর আমাদের খ্রীষ্টের সংগে জীবিত করে খ্রীষ্টের সংগেই স্বর্গে বসিয়েছেন। তিনি এই কাজ করেছেন যেন তিনি তাঁর তুলনাহীন অশেষ দয়া আগামী যুগ যুগ ধরে দেখাতে পারেন। তিনি খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে আমাদের উপর দয়া করে যা করেছেন তাতেই তাঁর এই দয়া প্রকাশ পেয়েছে। ঈশ্বরের দয়ায় বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। এটা তোমাদের নিজেদের দ্বারা হয় নি, তা ঈশ্বরেরই দান। এটা কাজের ফল হিসাবে দেওয়া হয় নি, যেন কেউ গর্ব করতে না পারে। আমরা ঈশ্বরের হাতের তৈরী। ঈশ্বর খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত করে আমাদের নতুন করে সৃষ্টি করেছেন যাতে আমরা সৎ কাজ করি। এই সৎ কাজ তিনি আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন, যেন আমরা তা করে জীবন কাটাই। জন্মের দিক থেকে তোমরা তো অযিহূদী। হাত দিয়ে দেহের মধ্যে যাদের সুন্নত করানো হয়েছে, অর্থাৎ যারা নিজেদের সুন্নত-করানো লোক বলে থাকে তারা তোমাদের সুন্নত-না-করানো লোক বলে। মনে রেখো, আগে তোমরা খ্রীষ্টের কাছ থেকে আলাদা ছিলে; জাতি হিসাবে ইস্রায়েলীয়দের যে অধিকার তোমরা সেই অধিকারের বাইরে ছিলে; ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতির জন্য যে কয়টি প্রতিজ্ঞাযুক্ত ব্যবস্থা করেছিলেন তার সংগে তোমাদের কোন সম্বন্ধ ছিল না; তোমাদের কোন আশা ছিল না; আর এই জগতে তোমরা ঈশ্বর ছাড়াই ছিলে। তোমরা এক কালে দূরে ছিলে, কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়েছ বলে তোমাদের এখন তাঁর রক্তের দ্বারা কাছে আনা হয়েছে। এটাও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল যে, তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেই দু’টিকে তিনি এক দেহে ঈশ্বরের সংগে আবার মিলিত করেন, কারণ এই দু’য়ের মধ্যে যে শত্রুতার ভাব ছিল তা তিনি তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর দ্বারা ধ্বংস করেছেন। তোমরা যারা দূরে ছিলে এবং তারা যারা কাছে ছিল, সকলের কাছেই তিনি এসে শান্তির সুখবর প্রচার করেছিলেন। তাঁরই মধ্য দিয়ে একই পবিত্র আত্মার দ্বারা পিতার কাছে যাবার অধিকার আমাদের সকলের আছে। এইজন্য তোমরা আর অচেনাও নও, বিদেশীও নও; কিন্তু ঈশ্বরের লোকদের সংগে তোমরাও তাঁর রাজ্যের ও তাঁর পরিবারের লোক হয়েছ। প্রেরিত্‌ আর নবীরা হলেন ভিত্তি, আর সেই ভিত্তির প্রধান পাথর খ্রীষ্ট যীশু নিজে। সেই ভিত্তির উপরেই তোমাদের গাঁথা হয়েছে। খ্রীষ্টের সংগে যোগ থাকবার দরুন দালানের সমস্ত অংশ একসংগে যুক্ত হয়ে প্রভুর থাকবার জন্য একটা পবিত্র ঘর গড়ে উঠছে। তোমরা তাঁরই সংগে যুক্ত হয়েছ এবং সেইজন্য তোমাদেরও একসংগে গেঁথে তোলা হচ্ছে, যেন পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে তোমরা ঈশ্বরের থাকবার জায়গা হতে পার। এইজন্য আমি পৌল ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি। তোমরা যারা অযিহূদী তোমাদের জন্যই আমি খ্রীষ্ট যীশুর বন্দী হয়েছি। তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছ যে, ঈশ্বর তাঁর দয়ার ব্যবস্থা তোমাদের জানাবার ভার আমার উপর দিয়েছেন। তাঁর গুপ্ত উদ্দেশ্য তিনি বিশেষ প্রকাশ দ্বারা আমাকে জানিয়েছেন, আর এই বিষয় আমি তোমাদের কাছে অল্প কথায় লিখলাম। তোমরা তা পড়লে বুঝতে পারবে যে, খ্রীষ্টের বিষয়ে সেই গুপ্ত উদ্দেশ্য আমার বুঝবার ক্ষমতা রয়েছে। সেই গুপ্ত উদ্দেশ্য পবিত্র আত্মার দ্বারা এখন যেভাবে তাঁর পবিত্র প্রেরিত্‌ ও নবীদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে, আগের সব যুগের লোকদের কাছে সেইভাবে প্রকাশিত হয় নি। সেই গুপ্ত উদ্দেশ্য হল এই-সুখবরের মধ্য দিয়ে অযিহূদীরা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে যিহূদীদের সংগে একই সুযোগের অধিকারী হবে, একই দেহের অংশ হবে, আর একই প্রতিজ্ঞা করা আশীর্বাদের ভাগী হবে। ঈশ্বর তাঁর মহা শক্তি অনুসারে আমাকে যে দয়া করেছেন সেই দয়ার দান হিসাবে তিনি আমাকে সুখবর প্রচার করবার কাজ দিয়েছেন। ঈশ্বরের সমস্ত লোকদের মধ্যে আমার চেয়ে নীচু আর কেউ নেই, তবুও খ্রীষ্টের যে সম্পদের কথা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারা যায় না, অযিহূদীদের কাছে সেই সম্পদের সুখবর জানাবার কাজ ঈশ্বর দয়া করে আমাকেই দিয়েছেন। এছাড়া তাঁর গুপ্ত উদ্দেশ্য যে কিভাবে কাজে লাগানো হবে তা প্রকাশ করবার ভারও তিনি আমার উপর দিয়েছেন। সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর এত কাল ধরে তাঁর সেই উদ্দেশ্য গুপ্ত রেখেছিলেন। তিনি তা করেছিলেন যেন খ্রীষ্টের মণ্ডলীর মধ্য দিয়ে স্বর্গের সমস্ত শাসনকর্তা ও ক্ষমতার অধিকারীদের কাছে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত ঈশ্বরের জ্ঞান এখন প্রকাশ পায়। এটাই ছিল তাঁর চিরকালের ইচ্ছা, আর সেই ইচ্ছা তিনি আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে পূরণ করেছেন। খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে তাঁর উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের সামনে সাহসের সংগে উপস্থিত হবার অধিকার পেয়েছি। তাই আমি অনুরোধ করছি, তোমাদের জন্য আমি দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছি বলে তোমরা সাহস হারায়ো না, কারণ সেই সব তোমাদের গৌরবের জন্যই হচ্ছে। আমি প্রার্থনা করি যেন ঈশ্বরের অশেষ মহিমা অনুসারে তিনি তোমাদের এমন শক্তি দেন যাতে পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে তোমাদের অন্তর শক্তিশালী হয়, আর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট তোমাদের অন্তর পরিপূর্ণভাবে অধিকার করেন। আমি আরও প্রার্থনা করি যেন খ্রীষ্টের ভালবাসার মধ্যে তোমরা গভীরভাবে ডুবে গিয়ে স্থির হও, আর ঈশ্বরের সব লোকদের সংগে তোমরাও বুঝতে পার যে, খ্রীষ্টের সেই ভালবাসার কোন কূল-কিনারা নেই, কোন দিক-সীমানা নেই। খ্রীষ্টের সেই ভালবাসা বুদ্ধি দিয়ে জানা যায় না; তবুও আমি প্রার্থনা করি যেন তোমরা সেই ভালবাসা বুঝতে পার, যাতে ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতায় তোমরা পরিপূর্ণ হও। আমাদের অন্তরে ঈশ্বরের যে শক্তি কাজ করে সেই শক্তি অনুসারে তিনি আমাদের চাওয়া ও চিন্তার চেয়েও অনেক বেশী করতে পারেন। খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে এবং মণ্ডলীর মধ্য দিয়ে পুরুষের পর পুরুষ ধরে চিরদিন ঈশ্বরের গৌরব হোক। আমেন। তাই প্রভুর জন্য বন্দী অবস্থায় আমি তোমাদের কাছে এই অনুরোধ করছি, ঈশ্বর যে জন্য তোমাদের ডেকেছেন তার উপযুক্ত হয়ে চল। তোমাদের স্বভাব যেন সম্পূর্ণভাবে নম্র ও নরম হয়। ধৈর্য ধর এবং ভালবাসার মনোভাব নিয়ে একে অন্যকে সহ্য কর। যে শান্তি আমাদের একসংগে যুক্ত করেছে সেই শান্তির মধ্য দিয়ে পবিত্র আত্মার দেওয়া একতা রক্ষা করতে বিশেষভাবে চেষ্টা কর। ঈশ্বর তোমাদের ডেকেছেন বলে তোমাদের মধ্যে কেবল একটাই আশা আছে, মাত্র একটিই দেহ আছে, একজনই পবিত্র আত্মা আছেন, একজনই প্রভু আছেন, একই বিশ্বাস আছে, একই বাপ্তিস্ম আছে, আর সকলের ঈশ্বর ও পিতা মাত্র একজনই আছেন। তিনিই সকলের উপরে; তিনিই সকলের মধ্যে ও সকলের অন্তরে আছেন। কিন্তু খ্রীষ্ট যেভাবে ঠিক করে রেখেছেন সেই পরিমাণ অনুসারে আমরা প্রত্যেকেই বিশেষ দয়া পেয়েছি। পবিত্র শাস্ত্রে এইজন্য লেখা আছে, তিনি যখন স্বর্গে উঠলেন, তখন বন্দীদের চালিয়ে নিয়ে গেলেন, আর তিনি লোকদের অনেক দানও দিলেন। “তিনি উঠলেন,” এই কথা থেকে কি এটাই বুঝা যায় না যে, খ্রীষ্ট পৃথিবীর গভীরে নেমেছিলেন? যিনি নেমেছিলেন তিনিই সব কিছু পূর্ণ করবার জন্য আবার আকাশ থেকেও অনেক উপরে উঠেছেন। তিনিই কিছু লোককে প্রেরিত্‌, কিছু লোককে নবী, কিছু লোককে সুখবর প্রচারক এবং কিছু লোককে পালক ও শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করেছেন। তিনি এঁদের নিযুক্ত করেছেন যেন ঈশ্বরের সব লোকেরা তাঁরই সেবা করবার জন্য প্রস্তুত হয় এবং এইভাবে খ্রীষ্টের দেহ গড়ে ওঠে। এর উদ্দেশ্য হল, আমরা যেন সবাই ঈশ্বরের পুত্রের উপর বিশ্বাস করে এবং তাঁকে ভাল করে জানতে পেরে এক হই; আর খ্রীষ্ট যেমন সমস্ত গুণে পূর্ণ, আমরাও যেন তেমনি সমস্ত গুণে পূর্ণ হয়ে পরিপূর্ণ হই। তখন আমরা আর শিশুর মত থাকব না। লোকে দুষ্ট বুদ্ধি খাটিয়ে অন্যদের ভুল পথে নিয়ে যাবার জন্য যে ভুল শিক্ষা দেয়, সেই ভুল শিক্ষার মধ্যে আমরা বাতাসে দুলে ওঠা ঢেউয়ের মত এদিকে সেদিকে দুলতে থাকব না। আমরা বরং ভালবাসার মনোভাব নিয়ে খ্রীষ্টের বিষয়ে সত্য কথা বলব এবং সব কিছুতে বেড়ে উঠে খ্রীষ্টের মত হব। তিনিই তো দেহের মাথা। গোটা দেহটা এমন ভাবে বাঁধা আছে যে, প্রত্যেকটি অংশ যার যার জায়গায় থেকে দেহের সংগে যুক্ত থাকে। প্রত্যেকটি অংশ যখন ঠিকভাবে কাজ করে তখন গোটা দেহটাই মাথার পরিচালনায় বেড়ে ওঠে এবং ভালবাসার মধ্য দিয়ে নিজেকে গড়ে তোলে। এইজন্য আমি বলছি, আর প্রভুর হয়ে বিশেষ জোর দিয়েই বলছি-অযিহূদীরা যেভাবে বাজে চিন্তার মধ্যে তাদের জীবন কাটায় তোমরা আর সেইভাবে জীবন কাটায়ো না। তাদের মন অন্ধকারে পড়ে আছে। অন্তর কঠিন বলে তারা ঈশ্বর সম্বন্ধে কিছু জানে না, আর সেইজন্য ঈশ্বরের দেওয়া জীবন থেকে তারা অনেক দূরে আছে। তাদের বিবেক অসাড় হয়ে গেছে, তাই তৃপ্তিহীন আগ্রহ নিয়ে সব রকম অশুচি কাজ করবার জন্য তারা লাগামছাড়া কামনার হাতে নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তোমরা তো খ্রীষ্টের বিষয়ে এইরকম শিক্ষা পাও নি। তোমরা তাঁর বিষয় শুনেছিলে, আর তাঁর সংগে যুক্ত হয়ে তাঁর মধ্যে যে সত্য আছে সেই অনুসারে শিক্ষা পেয়েছিলে। তোমরা এই শিক্ষা পেয়েছিলে যে, তোমাদের পুরানো জীবনের পুরানো “আমি”কে পুরানো কাপড়ের মতই বাদ দিতে হবে, কারণ ছলনার কামনা দ্বারা সেই পুরানো “আমি” নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তার বদলে ঈশ্বরকে তোমাদের মনকে নতুন করে গড়ে তুলতে দাও, আর ঈশ্বরের দেওয়া নতুন “আমি”কে নতুন কাপড়ের মতই পর। সত্যের নির্দোষিতা ও পবিত্রতা দিয়ে এই নতুন “আমি”কে ঈশ্বরের মত করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এইজন্য তোমরা মিথ্যা ছেড়ে দাও এবং একে অন্যের কাছে সত্যি কথা বল, কারণ আমরা সবাই একে অন্যের সংগে যুক্ত। যদি রাগ কর তবে সেই রাগের দরুন পাপ কোরো না; সূর্য ডুববার আগেই তোমাদের রাগ ছেড়ে দিয়ো, আর শয়তানকে কোন সুযোগ দিয়ো না। যে চুরি করে সে আর চুরি না করুক, বরং নিজের হাতে সৎভাবে পরিশ্রম করুক যেন অভাবী লোকদের দেবার জন্য তার কিছু থাকে। তোমাদের মুখ থেকে কোন বাজে কথা বের না হোক, বরং দরকার মত অন্যকে গড়ে তুলবার জন্য যা ভাল তেমন কথাই বের হোক, যেন যারা তা শোনে তাতে তাদের উপকার হয়। তোমরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে দুঃখ দিয়ো না, যাঁকে দিয়ে ঈশ্বর মুক্তি পাবার দিন পর্যন্ত তোমাদের সীলমোহর করে রেখেছেন। সব রকম বিরক্তি প্রকাশ, মেজাজ দেখানো, রাগ, চিৎকার করে ঝগড়াঝাঁটি, গালাগালি, আর সব রকম হিংসা তোমাদের কাছ থেকে দূর কর। তোমরা একে অন্যের প্রতি দয়ালু হও, অন্যের দুঃখে দুঃখী হও, আর ঈশ্বর যেমন খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তোমাদের ক্ষমা করেছেন তেমনি তোমরাও একে অন্যকে ক্ষমা কর। ঈশ্বরের প্রিয় সন্তান হিসাবে তোমরা ঈশ্বরের মত করে চল। খ্রীষ্ট যেমন আমাদের ভালবেসেছিলেন এবং আমাদের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশে সুগন্ধযুক্ত উৎসর্গ হিসাবে নিজেকে দিয়েছিলেন, ঠিক সেইভাবে তোমরাও ভালবাসার পথে চল। কোন রকম ব্যভিচার, অশুচিতা আর লোভের কথা পর্যন্ত যেন তোমাদের মধ্যে শোনা না যায়, কারণ এই সব কথা ঈশ্বরের লোকদের মানায় না। কোন রকম লজ্জাপূর্ণ আচার-ব্যবহার এবং বাজে ও নোংরা ঠাট্টা- তামাশার কথাবার্তা যেন তোমাদের মধ্যে না হয়, কারণ এগুলোও মানায় না। তার চেয়ে বরং তোমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দাও। তোমরা নিশ্চয়ই জান, যারা ব্যভিচার করে, যারা অশুচি এবং যারা লোভী, অর্থাৎ যাদের এক রকমের প্রতিমাপূজাকারী বলা যায় খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের রাজ্যে তাদের কোন অধিকার নেই। অসত্য কথাবার্তার দ্বারা যেন কেউ তোমাদের ভুল পথে নিয়ে না যায়, কারণ যারা অবাধ্য হয়ে ঐ সব কাজ করে ঈশ্বরের শাস্তি তাদের উপরে নেমে আসে। এই রকম লোকদের সংগে যোগ দিয়ো না, কারণ তোমরা আগে অন্ধকারে থাকলেও এখন প্রভুর সংগে যুক্ত হয়ে আলোতে এসেছ। আলোতে পুর্ণ লোকের যেভাবে চলা উচিত তোমরা সেইভাবে চল, কারণ যা ভাল, নির্দোষ ও সত্য তা-ই হল আলোর ফল। তাতে তোমরা যাচাই করে দেখতে পারবে কোন্‌ কোন্‌ কাজে প্রভু খুশী হন। অন্ধকারের নিষ্ফল কাজের সংগে তোমাদের যোগ না থাকুক; তোমরা বরং সেগুলোর দোষ দেখিয়ে দাও, কারণ মানুষের গোপনে করা এই সব কাজের কথা বলাও লজ্জার বিষয়। আলোর দ্বারা কোন কাজের দোষ দেখিয়ে দিলে পর তা প্রকাশিত হয়ে পড়ে, কারণ আলোই সব কিছু প্রকাশ করে। এইজন্য পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “হে ঘুমন্ত লোক, জাগো, মুত্যু থেকে জীবিত হও; তাতে তোমার উপরে খ্রীষ্ট আলো দেবেন।” তোমরা কিভাবে চলছ সেই বিষয়ে ভাল করে ভেবে দেখ। বুদ্ধিহীন লোকদের মত না চলে জ্ঞানীদের মত চল। তোমাদের হাতে সৎ কাজ করবার যে সুযোগ আছে তা পুরোপুরিভাবে কাজে লাগাও, কারণ এই কাল মন্দ। তাই বলি, তোমরা বুদ্ধিহীন হয়ো না, বরং প্রভুর ইচ্ছা কি তা বুঝে নাও। মাতাল হয়ো না, তাতে উচ্ছঙ্খল হয়ে পড়বে। তার চেয়ে বরং সম্পূর্ণভাবে পবিত্র আত্মার অধীনে থাক, আর গীতসংহিতার গান, প্রশংসা ও আত্মিক গানের মধ্য দিয়ে তোমরা একে অন্যের সংগে কথা বল; তোমাদের অন্তরে প্রভুর উদ্দেশে গান কর। সব সময় সব কিছুর জন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে পিতা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দাও। খ্রীষ্টের প্রতি ভক্তির দরুন তোমরা একে অন্যকে মেনে নেওয়ার মনোভাব নিয়ে চল। তোমরা যারা স্ত্রী, প্রভুর প্রতি বাধ্যতার চিহ্ন হিসাবে তোমরা নিজের নিজের স্বামীর অধীনতা মেনে নাও, কারণ খ্রীষ্ট যেমন মণ্ডলীর, অর্থাৎ তাঁর দেহের মাথা, স্বামীও তেমনি স্ত্রীর মাথা। তা ছাড়া খ্রীষ্টই এই দেহের উদ্ধারকর্তা। আর মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের অধীনে আছে তেমনি স্ত্রীরও সব বিষয়ে স্বামীর অধীনে থাকা উচিত। তোমরা যারা স্বামী, খ্রীষ্ট যেমন মণ্ডলীকে ভালবেসেছিলেন এবং তার জন্য নিজেকে দান করেছিলেন ঠিক তেমনি তোমরাও প্রত্যেকে স্ত্রীকে ভালবেসো। স্বামী যেমন নিজের দেহকে ভালবাসে ঠিক সেইভাবে নিজের স্ত্রীকেও তার ভালবাসা উচিত। যে নিজের স্ত্রীকে ভালবাসে সে নিজেকেই ভালবাসে। কেউ তো কখনও নিজের দেহকে ঘৃণা করে না, বরং সে তার দেহের ভরণ-পোষণ ও যত্ন করে। ঠিক সেইভাবে খ্রীষ্টও তাঁর মণ্ডলীর যত্ন করেন, কারণ আমরা তাঁর দেহের অংশ। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “এইজন্যই মানুষ মা-বাবাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে আর তারা দু’জন একদেহ হবে।” এটা একটা মহান গুপ্ত সত্য-কিন্তু আসলে আমি খ্রীষ্ট এবং তাঁর মণ্ডলীর কথা বলছি। কিন্তু যাক সেই সব কথা। তোমরা প্রত্যেকে নিজের স্ত্রীকে নিজের মত ভালবেসো, আর স্ত্রীরও উচিত যেন সে নিজের স্বামীকে সম্মান করে। ছেলেমেয়েরা, প্রভু যেভাবে চান সেইভাবেই তোমরা মা-বাবার বাধ্য হয়ে চল, কারণ সেটাই হওয়া উচিত। পবিত্র শাস্ত্রে প্রথম যে আদেশের সংগে প্রতিজ্ঞা রয়েছে তা এই-“তোমার মা-বাবাকে সম্মান কর, যেন তোমার মংগল হয় এবং তুমি অনেক দিন পর্যন্ত এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পার।” তোমরা যারা বাবা, তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের বিরক্ত করে তুলো না, বরং প্রভুর শাসন ও শিক্ষায় তাদের মানুষ করে তোল। তোমরা যারা দাস, তোমরা যেমন খ্রীষ্টের বাধ্য তেমনি ভয় ও সম্মানের সংগে অন্তর থেকে তোমাদের এই জগতের মনিবদের বাধ্য হয়ো। মানুষকে খুশী করবার মনোভাব নিয়ে তোমাদের মনিবদের চোখের সামনেই কেবল তাদের বাধ্য হয়ো না; তার চেয়ে বরং খ্রীষ্টের দাস হিসাবে ঈশ্বরের ইচ্ছা মনে-প্রাণে পালন করে তোমরা মনিবদের বাধ্য হয়ো। তোমরা যেন মানুষের সেবা করছ না কিন্তু প্রভুর সেবা করছ সেইভাবে সন্তুষ্ট মনে তোমাদের মনিবদের সেবা কোরো, কারণ তোমরা জান যে, প্রত্যেকেই তার সব ভাল কাজের জন্য প্রভুর কাছ থেকে পুরস্কার পাবে-তা সে দাসই হোক, আর স্বাধীনই হোক। তোমরা যারা মনিব, তোমরাও তোমাদের দাসদের প্রতি ঠিক সেই রকম ব্যবহার কর। তাদের ভয় দেখানো ছেড়ে দাও, কারণ তোমরা তো জান যে, তাদের ও তোমাদের একই প্রভু এবং তিনি স্বর্গে আছেন; তাঁর চোখে সবাই সমান। শেষে বলি, প্রভুর সংগে যুক্ত হয়ে তাঁরই দেওয়া মহা শক্তিতে শক্তিমান হও। যুদ্ধের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া সমস্ত সাজ-পোশাক পরে নাও, যেন তোমরা শয়তানের সব চালাকির বিরুদ্ধে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পার। আমাদের এই যুদ্ধ তো কোন মানুষের বিরুদ্ধে নয়, বরং তা অন্ধকার রাজ্যের সব শাসনকর্তা ও ক্ষমতার অধিকারীদের বিরুদ্ধে, অন্ধকার জগতের শক্তিশালী আত্মাদের বিরুদ্ধে, আর আকাশের সমস্ত মন্দ আত্মাদের বিরুদ্ধে। তাই তোমরা যুদ্ধের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া সমস্ত সাজ-পোশাক পরে নাও, যেন শয়তান যেদিন আক্রমণ করবে সেই দিন তোমরা তাকে রুখে দাঁড়াতে পার এবং সব কিছু শেষ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পার। এইজন্য সত্য দিয়ে কোমর বেঁধে, বুক রক্ষার জন্য সৎ জীবন দিয়ে বুক ঢেকে, আর শান্তির সুখবর প্রচারের জন্য পা প্রস্তুত রেখে দাঁড়িয়ে থাক। এছাড়া বিশ্বাসের ঢালও তুলে নাও; সেই ঢাল দিয়ে তোমরা শয়তানের সব জ্বলন্ত তীর নিভিয়ে ফেলতে পারবে। মাথা রক্ষার জন্য ঈশ্বরের দেওয়া উদ্ধার মাথায় দিয়ে পবিত্র আত্মার ছোরা, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ কর। পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়ে মনে-প্রাণে সব সময় প্রার্থনা কর। এইজন্য সজাগ থেকে ঈশ্বরের সমস্ত লোকদের জন্য সব সময় প্রার্থনা করতে থাক। আমার জন্যও প্রার্থনা কর যেন আমি যখন কথা বলি তখন ঈশ্বর আমাকে এমন ভাষা যুগিয়ে দেন যাতে আমি সাহসের সংগে তাঁর দেওয়া সুখবরের গুপ্ত সত্য প্রচার করতে পারি। এই সুখবর প্রচারের জন্য আমি শিকলে বাঁধা পড়েও খ্রীষ্টের দূতের কাজ করছি। প্রার্থনা কর যেন জেলের মধ্যে থেকে যেভাবে সেই সুখবর আমার প্রচার করা উচিত সেইভাবে সাহসের সংগে তা করতে পারি। আমি কেমন আছি এবং আমার দিন কিভাবে কাটছে তা প্রিয় ভাই ও প্রভুর বিশ্বস্ত সেবাকারী তুখিকের কাছ থেকে জানতে পারবে। আমাদের সম্বন্ধে যেন তোমরা জানতে পার আর তিনি যেন তোমাদের উৎসাহ দিতে পারেন সেইজন্যই আমি তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠালাম। পিতা ঈশ্বর আর প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ভাইদের শান্তি, বিশ্বাস ও ভালবাসা দান করুন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রতি যাদের স্থির ভালবাসা আছে তাদের সকলের উপর ঈশ্বরের দয়া থাকুক। তীমথিয় আর আমি পৌল-আমরা খ্রীষ্ট যীশুর দাস। খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত ঈশ্বরের যে সব লোক ফিলিপী শহরে আছে আমরা তাদের কাছে এবং তাদের পরিচালকদের ও পরিচারকদের কাছে লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। আমি যতবার তোমাদের কথা মনে করি ততবারই আমার ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই। তোমাদের জন্য প্রার্থনার সময়ে আমি সব সময় আনন্দের সংগে প্রার্থনা করে থাকি, কারণ যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচারের কাজে তোমরা প্রথম দিন থেকে এই পর্যন্ত আমাকে সাহায্য করে আসছ। আমার এই বিশ্বাস আছে, তোমাদের অন্তরে যিনি ভাল কাজ করতে আরম্ভ করেছেন তিনি খ্রীষ্ট যীশুর আসবার দিন পর্যন্ত তা চালিয়ে নিয়ে শেষ করবেন। তোমাদের সকলের সম্বন্ধে আমার মনের ভাব এই রকম হওয়াই উচিত, কারণ তোমরা আমার প্রিয়। আমি জেলে থাকি বা সুখবরের পক্ষে দাঁড়িয়ে তার সত্যতা প্রমাণ করি, তাতে তোমরা সবাই আমার সংগে ঈশ্বরের দয়ার ভাগী। খ্রীষ্ট যীশুর ভালবাসা অন্তরে রেখে আমি যে তোমাদের কত ভালবাসি তার সাক্ষী ঈশ্বর। আমি প্রার্থনা করি তোমাদের ভালবাসা যেন জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধির সংগে মিলিত হয়ে বেড়েই চলে। ভাইয়েরা, আমি চাই যেন তোমরা জানতে পার যে, আমার উপর যা ঘটেছে তার ফলে সুখবর প্রচারের কাজ আরও এগিয়ে গেছে। আর তাতে এখানকার রাজবাড়ীর সৈন্যদল ও অন্য সকলে জানতে পেরেছে যে, খ্রীষ্টের জন্যই আমি বন্দী অবস্থায় আছি। এছাড়া আমার এই বন্দী অবস্থায় থাকবার দরুন বেশীর ভাগ ভাইয়েরা প্রভুর উপর আরও বেশী করে নির্ভর করতে শিখেছে এবং সেইজন্যই তারা নির্ভয়ে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে আরও সাহসী হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য হিংসা ও দলাদলির মনোভাব নিয়ে খ্রীষ্টের বিষয় প্রচার করে, আবার অন্যেরা ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই তা করে। এই লোকদের মনে ভালবাসা আছে বলেই তারা খ্রীষ্টের বিষয় প্রচার করে, কারণ এরা জানে যে, সুখবরের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলবার জন্যই আমি নিযুক্ত। কিন্তু ঐ প্রথম দলের লোকেরা নিজেদের স্বার্থের জন্য খ্রীষ্টের বিষয় প্রচার করে থাকে, কোন ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে তা করে না। ওরা মনে করে, এতে আমার বন্দী অবস্থায় ওরা আমাকে কষ্ট দিতে পারবে। কিন্তু তাতে কি এসে যায়? আসল কথা হল, এতে যেভাবেই হোক খ্রীষ্টের বিষয় প্রচারিত হচ্ছে-তা ছলনার উদ্দেশ্যেই হোক আর সৎ উদ্দেশ্যেই হোক; আর তাতেই আমার আনন্দ। আমার এই আনন্দ কখনও শেষ হবে না, কারণ আমি জানি, আমার উপর যা ঘটেছে তার শেষ ফল হবে আমার মুক্তি; আর তা তোমাদের প্রার্থনার দ্বারা ও যীশু খ্রীষ্টের আত্মার সাহায্যেই হবে। আমার স্থির বিশ্বাস আছে যে, আমি কোন কিছুতেই লজ্জা পাব না বরং আমার যথেষ্ট সাহস থাকবে, যাতে আগে যেমন আমার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের গৌরব প্রকাশ হত তেমনি এখনও হবে-তা আমি বাঁচি বা মরি; কারণ আমার পক্ষে জীবন হল খ্রীষ্ট এবং মরণ হল লাভ। কিন্তু যদি আমি বেঁচেই থাকি তবে সেটা আমাকে এমন একটা কাজের সুযোগ দেবে যাতে যথেষ্ট ফল হয়। কোন্‌টা আমি বেছে নেব তা জানি না। দু’দিকই আমাকে টানছে। আমি মরে গিয়ে খ্রীষ্টের সংগে থাকতে চাই, কারণ সেটা অনেক ভাল। তবুও তোমাদের জন্য আমার বেঁচে থাকবার দরকার আরও বেশী। আমি নিশ্চয় করে জানি আমি বেঁচে থাকব এবং তোমাদের সকলের সংগেই থাকব, যেন তোমাদের বিশ্বাস বেড়ে যায় এবং তাতে তোমরা আনন্দিত হও। ফলে তোমাদের মধ্যে আমার আবার আসবার দরুন তোমরা খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে আমাকে নিয়ে আনন্দে উপ্‌চে পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা হল, তোমরা এমনভাবে তোমাদের জীবন কাটাও যা খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবরের উপযুক্ত। তাহলে আমি নিজে এসে তোমাদের দেখি বা দূর থেকে তোমাদের কথা শুনি, আমি জানব যে, তোমরা মনে-প্রাণে এক হয়ে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছ এবং যে বিশ্বাস সুখবরের মধ্য দিয়ে আসে তার জন্য একসংগে পরিশ্রম করছ। যারা তোমাদের বিরুদ্ধে আছে তাদের দিক থেকে কোন কিছুতে তোমরা ভয় পেয়ো না। এতেই প্রমাণ হবে যে, তারা ধ্বংস হতে যাচ্ছে আর তোমরা উদ্ধার পেতে যাচ্ছ; আর এই উদ্ধার ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে। তোমাদের দয়া করা হয়েছে যেন তোমরা যে কেবল খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করতে পার এমন নয়, তাঁর জন্য কষ্টভোগও করতে পার। তোমরা আগে আমাকে যেভাবে কষ্ট স্বীকার করতে দেখেছ এবং এখনও সেই সম্বন্ধে যা শুনছ, তোমরাও সেই একই রকম কষ্টের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছ। তাহলে খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হবার ফলে যখন উৎসাহ পাওয়া যায়, খ্রীষ্টের ভালবাসার ফলে যখন সান্ত্বনা পাওয়া যায়, পবিত্র আত্মা ও তোমাদের মধ্যে যখন যোগাযোগ-সম্বন্ধ আছে, তোমাদের অন্তরে যখন স্নেহ ও দয়ামায়া আছে, তখন তোমরা এইভাবে আমার আনন্দ পূর্ণ কর-তোমাদের সকলের মন এক হোক, তোমরা একে অন্যকে ভালবাস এবং মনে-প্রাণে এক হও। নিজের লাভের আশায় বা অহংকারের বশে কিছু কোরো না, বরং নম্রভাবে অন্যকে নিজের চেয়ে বড় স্থান দাও। কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকো না, বরং একে অন্যের জন্য চিন্তা কর। খ্রীষ্ট যীশুর যে মনোভাব ছিল তা যেন তোমাদের অন্তরেও থাকে। আসলে তিনি ঈশ্বরই রইলেন, কিন্তু ঈশ্বরের সমান থাকা তিনি আঁকড়ে ধরে রাখবার মত এমন কিছু মনে করেন নি। তিনি বরং দাস হয়ে এবং মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করে নিজেকে সীমিত করে রাখলেন। এছাড়া চেহারায় মানুষ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত, এমন কি, ক্রুশের উপরে মৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য থেকে তিনি নিজেকে নীচু করলেন। ঈশ্বর এইজন্যই তাঁকে সবচেয়ে উঁচুতে উঠালেন এবং এমন একটা নাম দিলেন যা সব নামের চেয়ে মহৎ, যেন স্বর্গে, পৃথিবীতে এবং পৃৃথিবীর গভীরে যারা আছে তারা প্রত্যেকেই যীশুর সামনে হাঁটু পাতে, আর পিতা ঈশ্বরের গৌরবের জন্য স্বীকার করে যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু। আমার প্রিয় ভাইয়েরা, তোমরা তো সব সময় বাধ্য হয়েই আছ। তেমনি করে কেবল আমার উপস্থিতির সময়ে নয়, কিন্তু বিশেষ করে এখন আমার অনুপস্থিতির সময়েও তোমরা ভক্তি ও ভয়ের সংগে তোমাদের কাজের মধ্য দিয়ে দেখাও যে, তোমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। ঈশ্বর তোমাদের অন্তরে এমনভাবে কাজ করছেন যার ফলে তিনি যে কাজে সন্তুষ্ট হন সেই রকম কাজ করবার ইচ্ছা ও ক্ষমতা তোমাদের হয়। যে বিশ্বাসের উৎসর্গ দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের সেবা করছ তার উপর যদি আমার রক্ত উৎসর্গ হিসাবে ঢেলে দেওয়া হয় তাহলেও আমি সুখী এবং তোমাদের সংগে আনন্দিত। তোমাদেরও ঠিক সেইভাবে আমার সংগে সুখী এবং আনন্দিত হওয়া উচিত। আমি আশা করি, প্রভু যীশুর ইচ্ছা হলে আমি তীমথিয়কে শীঘ্রই তোমাদের কাছে পাঠাব, যেন তোমাদের খবর পেয়ে আমিও উৎসাহ পাই। আমার সংগে এমন আর কেউ নেই, যে তীমথিয়ের মত করে সত্যিই তোমাদের জন্য চিন্তা করে। অন্য সকলে যীশু খ্রীষ্টের ব্যাপারে ব্যস্ত না থেকে নিজেদের ব্যাপারেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তোমরা জান যে, তীমথিয় তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন, কারণ যেভাবে ছেলে বাবার সংগে কাজ করে সেইভাবেই তিনি আমার সংগে যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচারের কাজে পরিশ্রম করেছেন। সেইজন্য আমার অবস্থা কি হবে তা জানবার সংগে সংগেই আমি তাঁকে পাঠিয়ে দেব বলে আশা করি। তবে আমি প্রভুর উপর এই বিশ্বাস রাখি যে, শীঘ্রই আমিও আসতে পারব। আমি ইপাফ্রদীতকে তোমাদের কাছে পাঠানো দরকার মনে করলাম। তিনি আমার বিশ্বাসী ভাই। আমরা একসংগেই কাজ করি ও খ্রীষ্টের জন্য যুদ্ধ করি। সেবাকারী হিসাবে আমার প্রয়োজন মিটাবার জন্য তাঁকেই তোমরা আমার কাছে পাঠিয়েছিলে। তিনি তোমাদের সবাইকে দেখতে চান বলে আমি তাঁকে ফিরে পাঠাচ্ছি। তা ছাড়া তোমরা তাঁর অসুস্থতার কথা শুনেছ বলে তিনি খুব চিন্তিত। আর সত্যিই তাঁর এমন অসুখ হয়েছিল যে, তিনি প্রায় মারা যাবার মত হয়েছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর তাঁর উপর দয়া করেছেন-কেবল যে তাঁর উপর দয়া করেছেন তা নয়, আমার উপরও দয়া করেছেন যেন আমি দুঃখের উপর দুঃখ না পাই। সেইজন্য খুব আগ্রহের সংগেই আমি তাঁকে পাঠাচ্ছি যেন তাঁকে দেখে তোমরা আনন্দিত হও এবং আমারও ভাবনা কমে। এইজন্য প্রভুর লোক হিসাবে পরিপূর্ণ আনন্দের সংগে তোমরা তাঁকে গ্রহণ কোরো, আর এই রকম লোকদের তোমরা সম্মান কোরো। খ্রীষ্টের কাজের জন্য তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। তোমরা অনুপস্থিত থাকবার দরুন আমার জন্য যা করতে পার নি তা করবার জন্য তিনি তাঁর প্রাণ দিতেও রাজী ছিলেন। শেষে বলি, আমার ভাইয়েরা, তোমরা প্রভুর সংগে যুক্ত আছ বলে আনন্দ কর। তোমাদের কাছে আবার একই কথা লিখতে আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না, আর তোমাদের সতর্ক করবার জন্য তা করা ভাল। ঐ কুকুরগুলো থেকে, অর্থাৎ যারা মন্দ কাজ করে এবং দেহের কাটা-ছেঁড়া করাবার উপর জোর দেয় তাদের থেকে সাবধান! আমরাই সত্যিকারের সুন্নত-করানো লোক, কারণ আমরা ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে তাঁর উপাসনা করি এবং খ্রীষ্ট যীশুকে নিয়ে গর্ব বোধ করি আর বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের উপর নির্ভর করি না। আমি অবশ্য তা করতে পারতাম। যদি কেউ মনে করে যে, আচার-অনুষ্ঠানের উপর নির্ভর করবার তার কারণ আছে তবে সে জানুক যে, আমার তার চেয়ে আরও বেশী কারণ আছে। আট দিনের দিন আমাকে সুন্নত করানো হয়েছিল; ইস্রায়েল জাতির মধ্যে বিন্যামীনের বংশে আমার জন্ম; আমি একজন খাঁটি ইব্রীয়; মোশির আইন-কানুন পালনের ব্যাপারে আমি একজন ফরীশী; ধর্মের ব্যাপারে আমি এমন গোঁড়া ছিলাম যে, খ্রীষ্টের মণ্ডলীর উপর আমি অত্যাচার করতাম; আর ঈশ্বরের গ্রহণযোগা্য হবার আশায় মোশির আইন-কানুন পালনের ব্যাপারে কেউ আমার নিন্দা করতে পারত না। কিন্তু তাতে আমার যে সব লাভ হয়েছিল খ্রীষ্টের জন্য আমি এখন সেগুলোকে ক্ষতি বলেই মনে করি। আমি খ্রীষ্টকে জানতে চাই এবং যে শক্তির দ্বারা তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করা হয়েছিল সেই শক্তিকে জানতে চাই। আমি তাঁর দুঃখ-কষ্টের ভাগী হতে চাই। মোট কথা, যে মনোভাব নিয়ে তিনি মরেছিলেন আমিও সেই রকম মনোভাব পেতে চাই। সেইজন্য যা-ই হোক না কেন আমি নিশ্চয়ই মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠব। আমি যে জন্য চেষ্টা করছি তা এখনই যে পেয়ে গেছি কিম্বা পূর্ণতা লাভ করে ফেলেছি এমন নয়। কিন্তু যে জন্য খ্রীষ্ট যীশু আমাকে ধরেছিলেন সেটাই ধরবার জন্য আমি ছুটে চলেছি। এইজন্য আমরা যারা পূর্ণতার দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছি আমাদের সেই একই রকম মনোভাব থাকা উচিত। আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের অন্য রকম মনোভাব থাকে তবে ঈশ্বর তোমাদের তাও দেখিয়ে দেবেন। যাহোক, আমরা পূর্ণতার দিকে যতদূর এগিয়ে গেছি সেই অনুসারেই আমাদের চলা উচিত। ভাইয়েরা, তোমরা সবাই আমার মত করে চল, আর যারা এইভাবে চলাফেরা করে তাদের চিনে রাখ। কিভাবে চলতে হয় তা আমরা তোমাদের দেখিয়েছি। আমি তোমাদের বারবারই বলেছি আর এখন চোখের জলের সংগে আবার বলছি যে, এমন অনেকে আছে যারা খ্রীষ্টের ক্রুশের শত্রুর মত চলাফেরা করছে। তাদের ভাগ্যে আছে ধ্বংস; পেটই তাঁদের ঈশ্বর; যা লজ্জার বিষয় তা-ই নিয়ে তারা গর্ব করে; আর কেবল জাগতিক ব্যাপারেই তাদের মন পড়ে আছে। কিন্তু আমাদের আসল বাসস্থান তো স্বর্গ; সেখান থেকে আমাদের উদ্ধারকর্তা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আসবার জন্য আমরা আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করছি। তিনি আমাদের দুর্বলতায় ভরা দেহ বদলিয়ে তাঁর মহিমাপূর্ণ দেহের মত করবেন। যে শক্তির দ্বারা তিনি সব কিছু নিজের অধীনে আনেন সেই শক্তির দ্বারাই তিনি এই কাজ করবেন। আমার ভাইয়েরা, আমি তোমাদের ভালবাসি আর তোমাদের দেখতে চাই। তোমরাই আমার আনন্দ, আমার জয়ের মালা। তোমরা প্রভুর সংগে যুক্ত হয়ে স্থির থাক। উবদিয়া ও সুন্তখী, আমি তোমাদের বিশেষভাবে এই অনুরোধ করছি-প্রভুর সংগে যুক্ত হয়েছ বলে তোমাদের মন যেন এক হয়। আর আমার আসল সহকর্মী, আমি তোমাকেও অনুরোধ করছি-তুমি এই স্ত্রীলোকদের সাহায্য কর। তাঁরা খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবরের জন্য আমার সংগে এবং ক্লীমেন্ত ও আমার অন্যান্য সহকর্মীদের সংগে কষ্ট স্বীকার করেছিলেন। এঁদের নাম জীবন-বইয়ে লেখা আছে। প্রভুর সংগে যুক্ত হয়েছ বলে তোমরা সব সময় আনন্দিত থাক। আমি আবার বলি, তোমরা আনন্দিত থাক। তোমাদের নরম স্বভাব যেন সকলে দেখতে পায়। প্রভু শীঘ্রই আসছেন। কোন বিষয় নিয়ে উতলা হোয়ো না, বরং তোমাদের সমস্ত চাওয়ার বিষয় ধন্যবাদের সংগে প্রার্থনার দ্বারা ঈশ্বরকে জানাও। তার ফলে, ঈশ্বরের দেওয়া যে শান্তির কথা মানুষ চিন্তা করেও বুঝতে পারে না, খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে সেই শান্তি তোমাদের অন্তর ও মনকে রক্ষা করবে। শেষে বলি, ভাইয়েরা, যা সত্যি, যা উপযুক্ত, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য, সেই দিকে তোমরা মন দাও। তোমরা আমার কাছে যা শিখেছ ও ভাল বলে গ্রহণ করেছ এবং আমার মধ্যে যা দেখেছ ও আমার মুখে যা শুনেছ, তা-ই নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখ। তাতে শান্তিদাতা ঈশ্বর তোমাদের সংগে সংগে থাকবেন। প্রভু আমাকে খুব আনন্দ দান করেছেন, কারণ অনেক দিন পরে তোমরা আবার আমার জন্য চিন্তা করছ। অবশ্য আমার জন্য সব সময়ই তোমাদের চিন্তা ছিল, কিন্তু তা তোমরা দেখাবার সুযোগ পাও নি। আমার কোন অভাবের জন্য যে আমি এই কথা বলছি তা নয়, কারণ যে কোন অবস্থায় আমি সন্তুষ্ট থাকতে শিখেছি। অভাবের মধ্যে এবং প্রচুর থাকবার মধ্যে আমি সন্তুষ্ট থাকতে জানি। ভরা পেটে হোক বা খালি পেটে হোক, প্রচুর থাকবার মধ্যে হোক বা অভাবের মধ্যে হোক-সব অবস্থাতেই কিভাবে সন্তুষ্ট থাকা যায় আমি তা শিখেছি। যিনি আমাকে শক্তি দান করেন তাঁর মধ্য দিয়েই আমি সব কিছু করতে পারি। তবুও তোমরা আমার কষ্টের ভাগী হয়ে ভালই করেছ। ফিলিপীয় মণ্ডলীর লোকেরা, তোমরা তো নিজেরাই জান যে, তোমরা প্রথমে সুখবর শুনবার পরে যখন আমি ম্যাসিডোনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম, তখন তোমরা ছাড়া আর কোন মণ্ডলীই আমার সংগে দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারে যোগ দেয় নি। যখন আমি থিষলনীকীতে ছিলাম তখনও তোমরা কয়েক বার সাহায্য পাঠিয়ে আমার অভাব পূরণ করেছিলে। কোন উপহার যে আমি চাইছি তা নয়, কিন্তু আমি এমন ফলের আশা করছি যা তোমাদের নামে জমা হতে থাকবে। আমার সব পাওনাই আমি পেয়েছি। আসলে আমার যা দরকার তার চেয়েও বেশী আমার আছে। ইপাফ্রদীতের হাতে তোমাদের পাঠানো উপহার পেয়ে এখন আমার যথেষ্ট হয়েছে। এই উপহারগুলো সুগন্ধযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য উৎসর্গ, আর এতে ঈশ্বর খুশী হন। আমার ঈশ্বর তাঁর গৌরবময় অশেষ ধন অনুসারে খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে তোমাদের সব অভাব পূরণ করবেন। যুগ যুগ ধরে চিরকাল আমাদের পিতা ঈশ্বরের গৌরব হোক। আমেন। খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত ঈশ্বরের প্রত্যেক লোককে আমার শুভেচ্ছা জানায়ো। আমার সংগে যে ভাইয়েরা আছেন তাঁরা তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ঈশ্বরের সব লোকেরা যাঁরা এখানে আছেন, বিশেষভাবে সম্রাট কৈসরের বাড়ীর লোকেরা তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়া তোমাদের অন্তরে থাকুক। স্বর্গে তোমাদের জন্য যা জমা করা আছে তা পাবার আশা থেকেই তোমাদের মধ্যে এই বিশ্বাস ও ভালবাসা জন্মেছে। যে সুখবর, অর্থাৎ সত্যের বাক্য তোমাদের কাছে পৌঁছেছে তার মধ্যেই তোমরা এই আশার কথা শুনেছ্‌। এই সুখবর সারা জগতে ছড়িয়ে পড়ে ফল জন্মাচ্ছে এবং দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। যেদিন তোমরা এই সুখবর শুনেছ এবং ঈশ্বরের দয়ার কথা সত্যি করে জেনেছ সেই দিন থেকে তা তোমাদের মধ্যেও ঠিক তেমনিভাবে কাজ করছে। সেই সুখবরের কথা তোমরা আমাদের প্রিয় সহদাস ইপাফ্রার কাছে শুনেছ। তিনি তোমাদের পক্ষ থেকে খ্রীষ্টের একজন বিশ্বস্ত সেবাকারী। পবিত্র আত্মা তোমাদের যে ভালবাসার মনোভাব দান করেছেন তার সম্বন্ধে ইপাফ্রা আমাদের জানিয়েছেন। এইজন্য তোমাদের সম্বন্ধে শুনবার পর থেকেই আমরা সব সময় তোমাদের জন্য প্রার্থনা করছি। আত্মিক জ্ঞান ও বুদ্ধির দ্বারা যেন তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পার আমরা তা-ই ঈশ্বরের কাছে চাইছি। এতে যেন তোমরা সৎ কাজ করে ফলবান হও এবং ঈশ্বরকে আরও ভাল করে জানতে পার; আর এইভাবে যেন সব কিছুতে প্রভুকে সন্তুষ্ট করবার জন্য তাঁর যোগ্য হয়ে চলতে পার। কারণ তিনি অন্ধকারের রাজ্য থেকে আমাদের উদ্ধার করে তাঁর প্রিয় পুত্রের রাজ্যে এনেছেন। এই পুত্রের সংগে যুক্ত হয়ে আমরা মুক্ত হয়েছি, অর্থাৎ আমরা পাপের ক্ষমা পেয়েছি। এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য ঈশ্বরের হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান, কারণ আকাশে ও পৃথিবীতে, যা দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, সব কিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। মহাকাশে যাদের হাতে রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতা রয়েছে তাদের সবাইকে তাঁকে দিয়ে তাঁরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনিই সব কিছুর আগে ছিলেন এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে সব কিছু টিকে আছে। এছাড়া তিনিই তাঁর দেহের, অর্থাৎ মণ্ডলীর মাথা। তিনিই প্রথম আর তিনিই মৃত্যু থেকে প্রথম জীবিত হয়েছিলেন, যেন সব কিছুতে তিনিই প্রধান হতে পারেন। ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন তাঁর সব পূর্ণতা খ্রীষ্টের মধ্যেই থাকে। তা ছাড়া পৃথিবীতে হোক বা স্বর্গে হোক, খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে সব কিছুর মিলনও তিনি চেয়েছিলেন। খ্রীষ্ট ক্রুশের উপর তাঁর রক্ত দান করে শান্তি এনেছিলেন বলেই এই মিলন হতে পেরেছে। এক সময় তোমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে ছিলে এবং তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের মনে শত্রুভাব ছিল। তোমাদের মন্দ কাজের মধ্যে তা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু খ্রীষ্টের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর দেহের দ্বারা ঈশ্বর নিজের সংগে এখন তোমাদের মিলিত করেছেন, যেন তিনি তোমাদের পবিত্র, নিখুঁত ও নির্দোষ অবস্থায় নিজের সামনে উপস্থিত করতে পারেন। অবশ্য এর জন্য খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর থেকে যে নিশ্চিত আশা তোমরা পেয়েছ তা থেকে দূরে সরে না গিয়ে তোমাদের বিশ্বাসে স্থির থাকতে হবে। সেই সুখবর সারা জগতে প্রচার করা হয়েছে এবং তোমরা তা শুনেছ। আমি পৌল এই সুখবরের প্রচারক হয়েছি। তোমাদের জন্য আমি যে কষ্ট ভোগ করছি তাতে আমি আনন্দই পাচ্ছি। খ্রীষ্টের দেহের, অর্থাৎ মণ্ডলীর জন্য তাঁর যে দুঃখভোগ এখনও বাকী আছে তা আমি আমার দেহেই পূর্ণ করছি। ঈশ্বর তাঁর বাক্য তোমাদের কাছে সম্পূর্ণভাবে প্রচার করবার ভার আমার উপর দিয়েছেন বলেই আমি মণ্ডলীর একজন সেবাকারী হয়েছি। ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে যে গুপ্ত সত্য আগেকার লোকদের কাছে যুগ যুগ ধরে লুকানো ছিল, এখন তাঁর লোকদের কাছে তা প্রকাশিত হয়েছে। ঈশ্বর চাইলেন, অযিহূদীদের মধ্যেও তাঁর এই গুপ্ত সত্যের মহা গৌরব যে কি, তা যেন তাঁর সব লোকেরা জানতে পারে। সেই সত্য এই-খ্রীষ্ট তোমাদের অন্তরে আছেন বলে তোমরা মহিমা পাবার আশ্বাস পেয়েছ। আর সেই খ্রীষ্টের বিষয় আমরা প্রচার করি, অর্থাৎ ঈশ্বরের দেওয়া অসীম জ্ঞানের সংগে আমরা প্রত্যেক লোককে সতর্ক করি ও শিক্ষা দিই, যেন প্রত্যেককেই আমরা খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে পূর্ণ করে তুলতে পারি। এই উদ্দেশ্যেই ঈশ্বরের যে মহা শক্তি আমার মধ্যে কাজ করছে সেই শক্তি অনুসারে আমি প্রাণপণ পরিশ্রম করছি। আমি তোমাদের জানাতে চাই যে, তোমাদের জন্য এবং লায়দিকেয়া শহরের মণ্ডলীর লোকদের জন্য, আর যারা আমাকে দেখে নি তাদের সকলের জন্য আমি প্রাণপণ পরিশ্রম করছি। আমি চাই যেন তারা অন্তরে উৎসাহ পায় এবং ভালবাসায় এক হয়, আর খ্রীষ্টের বিষয় বুঝবার ফলে যে নিশ্চয়তা পাওয়া যায় সেই পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রচুর পরিমাণে লাভ করে। তার ফলে ঈশ্বরের গুপ্ত সত্যকে, অর্থাৎ খ্রীষ্টকে তারা জানতে পারবে। খ্রীষ্টের মধ্যে সব জ্ঞান ও বুদ্ধি লুকানো আছে। আমি তোমাদের এই কথা বলছি যাতে কেউ মন ভুলানো যুক্তিতর্ক দিয়ে তোমাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে না পারে। আমি দেহে তোমাদের মধ্যে উপস্থিত না থাকলেও আত্মায় উপস্থিত আছি এবং তোমাদের ভাল চালচলন ও খ্রীষ্টের উপর তোমাদের স্থির বিশ্বাস দেখে আনন্দ পাচ্ছি। তোমরা যেভাবে খ্রীষ্ট যীশুকে প্রভু হিসাবে গ্রহণ করেছ ঠিক সেইভাবে তাঁর সংগে যুক্ত হয়ে তোমাদের জীবন কাটাও। খ্রীষ্টের মধ্যে গভীরভাবে ডুবে গিয়ে তাঁরই মধ্যে তোমরা গড়ে উঠতে থাক। তোমরা শিক্ষা পেয়ে যা বিশ্বাস করেছ তাতে স্থির থাক এবং ঈশ্বরকে সব সময় ধন্যবাদ দিতে থাক। তোমরা সাবধান হও, যেন কেউ মানুষের ফাঁপা ছলনাপূর্ণ দর্শনের শিক্ষা দ্বারা তোমাদের বন্দী হিসাবে টেনে নিতে না পারে। খ্রীষ্টের সংগে সেই শিক্ষার কোন সম্বন্ধ নেই; মানুষের গড়া চলতি নিয়ম এবং জগতের নানা রীতিনীতির উপরেই তা নির্ভর করে। ঈশ্বরের সমস্ত পূর্ণতা খ্রীষ্টের মধ্যে দেহ নিয়ে বাস করছে, আর খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে তোমরাও সেই পূর্ণতা পেয়েছ। তিনি মহাকাশের সমস্ত শাসনকর্তা ও ক্ষমতার অধিকারীদের উপরে। এছাড়া তোমরা খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়েছ বলে তোমাদের সুন্নতও করানো হয়েছে। এই সুন্নত কোন মানুষের হাতে করানো হয় নি, খ্রীষ্ট নিজেই তা করেছেন; অর্থাৎ দেহের উপর পাপ-স্বভাবের যে শক্তি ছিল সেই শক্তি থেকে তিনি তোমাদের মুক্ত করেছেন। বাপ্তিস্মের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের সংগে তোমাদের কবর হয়েছে; শুধু তা-ই নয়, যিনি মৃত্যু থেকে খ্রীষ্টকে জীবিত করে তুলেছেন সেই ঈশ্বরের শক্তির উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমাদের খ্রীষ্টের সংগে জীবিত করে তোলাও হয়েছে। তোমরা তো পাপের দরুন এবং সুন্নত-না-করানোর দরুন মৃত ছিলে, কিন্তু ঈশ্বর তোমাদের খ্রীষ্টের সংগে জীবিত করেছেন। তিনি আমাদের সব পাপ ক্ষমা করেছেন, আর আমাদের বিরুদ্ধে যে দলিল ছিল তার সমস্ত দাবি- দাওয়া সুদ্ধ তা বাতিল করে দিয়েছেন। সেই দলিল তিনি ক্রুশে পেরেক দিয়ে গেঁথে নাকচ করে ফেলেছেন। তিনি মহাকাশের সমস্ত মন্দ শাসনকর্তা ও ক্ষমতার অধিকারীদের ক্ষমতা নষ্ট করেছেন। আর এইভাবে তিনি খ্রীষ্টের ক্রুশের মধ্য দিয়ে তাদের উপর জয়লাভ করেছেন এবং সকলের সামনে তাদের অসম্মানিত করেছেন। সেইজন্য খাওয়া-দাওয়া বা ধর্মীয় কোন পর্ব কিম্বা অমাবস্যা বা বিশ্রামবার নিয়ে তোমাদের দোষ দেবার অধিকার কারও নেই। এগুলো তো ছিল ভবিষ্যতে যা হবে তার ছায়া, কিন্তু যা আসল তা খ্রীষ্টের মধ্যেই আছে। নিজেদের দেহকে কষ্ট দেওয়া ও স্বর্গদূতদের উপাসনা করা যারা দরকারী বলে মনে করে তারা যেন তোমাদের পুরস্কার পাবার পথে বাধা না জন্মায়। এই রকমের লোক যা দেখেছে বলে ভান করে সেই বিষয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে এবং বিনা কারণেই অহংকারে ফুলে ওঠে, কারণ তাদের মন পাপ-স্বভাবের অধীন। তারা শক্তভাবে মাথাকে, অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টকে ধরে রাখে না, অথচ সেই মাথার পরিচালনায়ই গোটা দেহটা হাড়- মাংসের বাঁধনে যুক্ত হয়ে ও স্থির থেকে ঈশ্বরের ইচ্ছামত বেড়ে ওঠে। খ্রীষ্টের সংগে মরে তোমরা যখন জগতের নানা রীতিনীতির কাছ থেকে দূরে সরে এসেছ তখন জগতের লোকদের মতই তোমরা কেন আবার জগতের নিয়মের অধীন হচ্ছ? এই সব নিয়মগুলো দেখতে মনে হয় বেশ জ্ঞানে পূর্ণ, কারণ কি করে উপাসনা করা যায়, কিভাবে নিজেদের নীচু করা যায়, কিভাবে নিজের দেহকে কষ্ট দেওয়া যায়, তা এই নিয়মগুলো লোকদের জানায়, কিন্তু পাপ- স্বভাবকে বশ করবার ব্যাপারে এগুলোর কোন মূল্যই নেই। তাহলে তোমরা যখন খ্রীষ্টের সংগে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছ তখন খ্রীষ্ট স্বর্গে যেখানে ঈশ্বরের ডান দিকে বসে আছেন সেই স্বর্গীয় বিষয়গুলোর জন্য আগ্রহী হও। জাগতিক বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে বরং স্বর্গীয় বিষয়ে মনোযোগ দাও। তোমরা তো মরে গেছ এবং তোমাদের জীবন খ্রীষ্টের সংগে ঈশ্বরের মধ্যে লুকানো আছে। যিনি তোমাদের জীবন সেই খ্রীষ্ট যখন প্রকাশিত হবেন তখন তোমরাও তাঁর সংগে তাঁর মহিমার ভাগী হয়ে প্রকাশিত হবে। সেইজন্য তোমাদের পাপ-স্বভাবের মধ্যে যা কিছু আছে তা ধ্বংস করে ফেল। তাতে আছে সব রকম ব্যভিচার, অশুচিতা, কুবাসনা, মন্দ ইচ্ছা এবং লোভ যাকে এক রকম প্রতিমাপূজা বলা যায়। যারা ঈশ্বরের অবাধ্য তাদের উপর এই সব কারণেই ঈশ্বরের শাস্তি নেমে আসছে। তোমরাও আগে ঐ রকম ভাবেই চলতে, কিন্তু এখন রাগ, মেজাজ দেখানো, হিংসা, গালাগালি এবং খারাপ কথাবার্তা তোমাদের কাছ থেকে দূর কর। এই অবস্থায় অযিহূদী বা যিহূদীর মধ্যে, সুন্নত-করানো বা সুন্নত-না-করানো লোকের মধ্যে, অশিক্ষিত, নীচজাতি, দাস বা স্বাধীন লোকের মধ্যে কোন তফাৎ নেই; সেখানে খ্রীষ্টই প্রধান এবং তিনি প্রত্যেকের মধ্যেই আছেন। এইজন্য ঈশ্বর যাদের বেছে নিয়ে নিজের জন্য আলাদা করে রেখেছেন তাঁর সেই প্রিয় লোক হিসাবে তোমরা আন্তরিক মায়া-মমতা, দয়া, নম্রতা, নরম স্বভাব ও ধৈর্য দিয়ে নিজেদের সাজাও। একে অন্যকে সহ্য কর এবং যদি কারও বিরুদ্ধে তোমাদের কোন দোষ দেবার কারণ থাকে তবে তাকে ক্ষমা কর। প্রভু যেমন তোমাদের ক্ষমা করেছেন তেমনি তোমাদেরও একজন অন্যজনকে ক্ষমা করা উচিত। আর এই সবের উপরে ভালবাসা দিয়ে নিজেদের সাজাও। ভালবাসাই ঐ সব গুণগুলোকে একসংগে বেঁধে পূর্ণতা দান করে। খ্রীষ্ট যে শান্তি দেন সেই শান্তি তোমাদের অন্তরে থেকে তোমাদের পরিচালনা করুক। শান্তিতে থাকবার জন্যই তো তোমাদের সবাইকে একদেহ হিসাবে ডাকা হয়েছে। তোমরা কৃতজ্ঞ থাক। খ্রীষ্টের বাক্যকে তোমাদের অন্তরে পরিপূর্ণভাবে বাস করতে দাও। ঈশ্বরের দেওয়া জ্ঞানে একে অন্যকে শিক্ষা ও পরামর্শ দাও এবং অন্তরে কৃতজ্ঞতার সংগে ঈশ্বরের উদ্দেশে গীতসংহিতার গান এবং আত্মিক ও প্রশংসার গান কর। তোমরা যা কিছু বল বা কর না কেন তা প্রভু যীশুর নামে কোরো এবং তাঁর মধ্যে দিয়েই পিতা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ো। তোমরা যারা স্ত্রী, তোমরা প্রত্যেকে স্বামীর অধীনতা মেনে নাও, কারণ প্রভুর লোক হিসাবে এটাই উপযুক্ত। তোমরা যারা স্বামী, তোমরা প্রত্যেকে স্ত্রীকে ভালবেসো এবং তার সংগে কঠোর ব্যবহার কোরো না। ছেলেমেয়েরা, তোমরা সব বিষয়ে মা-বাবার বাধ্য থেকো, কারণ এতে প্রভু খুশী হন। তোমরা যারা পিতা, তোমাদের ছেলেমেয়েদের মন তেতো করে তুলো না, যেন তারা উৎসাহহীন হয়ে না পড়ে। তোমরা যারা দাস, তোমরা সব বিষয়ে তোমাদের এই জগতের মনিবদের বাধ্য থেকো। যখন তাঁরা তোমাদের লক্ষ্য করেন কেবল তখনই যে তাঁদের খুশী রাখবার জন্য তাঁদের বাধ্য থাকবে তা নয়, বরং খাঁটি অন্তরে প্রভুর উপর ভক্তি রেখে তাঁদের বাধ্য থেকো। তোমরা যা-ই কর না কেন, তা মানুষের জন্য নয় বরং প্রভুর জন্য করছ বলে মন-প্রাণ দিয়ে কোরো, কারণ তোমরা তো জান, প্রভু তাঁর লোকদের জন্য যা রেখেছেন তা তোমরা পুরস্কার হিসাবে তাঁরই কাছ থেকে পাবে। তোমরা যাঁর সেবা করছ তিনি প্রভু খ্রীষ্ট। যে অন্যায় করে সে তার ফল পাবে। প্রভুর চোখে সবাই সমান। মনিবেরা, স্বর্গে তোমাদেরও একজন মনিব আছেন জেনে তোমরা তোমাদের দাসদের সংগে সৎ এবং ন্যায় ব্যবহার কোরো। তোমরা কৃতজ্ঞ ও সতর্ক হয়ে প্রার্থনায় নিজেদের ব্যস্ত রেখো; আর সেই সংগে আমাদের জন্যও প্রার্থনা কোরো যেন খ্রীষ্ট সম্বন্ধে গুপ্ত সত্যের কথা প্রচার করবার জন্য ঈশ্বর আমাদের সুযোগ করে দেন। সেই গুপ্ত সত্যের জন্যই তো আমাকে বন্দী করা হয়েছে। যে রকম স্পষ্টভাবে আমার এই বিষয় বুঝিয়ে বলা উচিত, প্রার্থনা কোরো আমি যেন সেইভাবে বলতে পারি। যারা ঈশ্বরের লোক নয় তাদের সংগে বুদ্ধি ব্যবহার করে চোলো এবং খ্রীষ্টের বিষয়ে সাক্ষ্য দেবার প্রত্যেকটা সুযোগ কাজে লাগায়ো। তোমাদের কথাবার্তা সব সময় মধুর এবং নুন দেওয়া খাবারের মত গ্রহণযোগ্য হোক, যেন কাকে কিভাবে উত্তর দেবে তা তোমরা বুঝতে পার। আমাদের প্রিয় ভাই ও বিশ্বস্ত সেবাকারী এবং প্রভুর কাজে আমাদের সহদাস তুখিক আমার সমস্ত সংবাদ তোমাদের দেবেন। তোমরা যেন আমাদের সম্বন্ধে জানতে পার আর তিনি যেন তোমাদের উৎসাহ দিতে পারেন সেইজন্য আমি তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠালাম। তুখিকের সংগে আমি আমাদের বিশ্বস্ত ও প্রিয় ভাই ওনীষিমকেও পাঠালাম। তিনি তোমাদেরই একজন। তাঁরা এখানকার সব কিছুই তোমাদের জানাবেন। আমার সংগে বন্দী ভাই আরিষ্টার্খ আর বার্ণবার আত্মীয় মার্কও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। মার্কের বিষয় তোমরা তো আগেই আদেশ পেয়েছ যে, তিনি যদি তোমাদের কাছে আসেন তবে তাঁকে আদরের সংগে গ্রহণ কোরো। যাঁকে যুষ্ট বলে ডাকা হয় সেই যীশুও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। যিহূদীদের মধ্য থেকে কেবল এই তিনজনই ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য আমার সংগে কাজ করেন। তাঁরা আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। ইপাফ্রাও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তিনি তোমাদের নিজেদের লোকদের মধ্যে একজন এবং তিনি খ্রীষ্ট যীশুর দাস। তিনি সব সময় তোমাদের জন্য প্রার্থনার যুদ্ধ চালাচ্ছেন যেন তোমরা পূর্ণতা লাভ করে এবং সব কিছুতে ঈশ্বরের ইচ্ছা নিশ্চয় করে জেনে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পার। ইপাফ্রার সম্বন্ধে আমি এই বলতে পারি যে, তোমাদের জন্য এবং যারা লায়দিকেয়া ও হিয়রাপলি শহরে আছে তাদের জন্য তিনি খুব পরিশ্রম করেন। প্রিয় ডাক্তার লূক এবং দীমা তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। লায়দিকেয়ার বিশ্বাসী ভাইদের এবং নুম্ফা ও তাঁর বাড়ীতে যে লোকেরা মণ্ডলী হিসাবে জড়ো হয়, তাঁদেরও শুভেচ্ছা জানায়ো। তোমাদের মধ্যে এই চিঠি পড়া শেষ হলে পর লায়দিকেয়ার মণ্ডলীকেও এই চিঠি পড়তে দিয়ো, আর লায়দিকেয়া মণ্ডলীকে যে চিঠি পাঠানো হবে সেটাও তোমরা পোড়ো। আর্খিপ্পকে এই কথা বল, “প্রভুর সেবার জন্য তোমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে তা শেষ করবার দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দাও।” আমি পৌল নিজের হাতে এই শুভেচ্ছার কথা লিখছি। মনে রেখো, আমি বন্দী আছি। ঈশ্বর তোমাদের দয়া করুন। পিতা ঈশ্বর আর প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত থিষলনীকীয় মণ্ডলীর কাছে সীলবান, তীমথিয় আর আমি পৌল এই চিঠি লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বর আর প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন আর শান্তি দান করুন। আমরা সব সময় প্রার্থনায় তোমাদের সকলের কথা মনে করে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে থাকি। বিশ্বাসের দরুন তোমরা যে কাজ করছ, ভালবাসার দরুন যে পরিশ্রম করছ এবং আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপর আশার দরুন যে ধৈর্য ধরছ, সেই কথা আমরা সব সময়ই আমাদের পিতা ও ঈশ্বরের সামনে প্রার্থনায় মনে করে থাকি। ঈশ্বরের প্রিয় আমার ভাইয়েরা, আমরা জানি তিনিই তোমাদের বেছে নিয়েছেন, কারণ আমাদের প্রচারিত সুখবর কেবলমাত্র কথার মধ্য দিয়ে তোমাদের কাছে আসে নি, কিন্তু তা শক্তি, পবিত্র আত্মা ও পূর্ণ নিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এসেছিল। তোমাদের সংগে থাকবার সময়ে তোমাদের মংগলের জন্য আমরা কিভাবে চলাফেরা করেছি তা তোমরা জান। অনেক অত্যাচারের মধ্যেও পবিত্র আত্মার দেওয়া আনন্দের সংগে সেই সুখবর গ্রহণ করে তোমরা আমাদের আর প্রভুর মত করে চলছ। এতে ম্যাসিডোনিয়া আর আখায়া প্রদেশের সব বিশ্বাসীদের কাছে তোমরা একটা আদর্শ হয়েছ। কেবলমাত্র ম্যাসিডোনিয়া আর আখায়া প্রদেশেই যে তোমাদের কাছ থেকে প্রভুর বাক্য ছড়িয়ে পড়েছে এমন নয়, কিন্তু ঈশ্বরের উপর তোমাদের বিশ্বাসের কথাও সব জায়গাতেই গিয়ে পৌঁছেছে। এই ব্যাপারে আমাদের কিছুই বলবার দরকার নেই, কারণ তোমরা কিভাবে আমাদের গ্রহণ করেছিলে লোকেরা তা আমাদের জানাচ্ছে। তারা আরও জানাচ্ছে যে, তোমরা কিভাবে দেবদেবীদের কাছ থেকে ফিরে জীবন্ত ও সত্য ঈশ্বরের কাছে এসেছ যেন তাঁর সেবা করতে পার, আর স্বর্গ থেকে তাঁর পুত্রের আসবার জন্য অপেক্ষা করতে পার। সেই পুত্রই হলেন যীশু, যাঁকে তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ঈশ্বরের যে শাস্তি নেমে আসছে সেই শাস্তি থেকে এই যীশুই আমাদের রক্ষা করবেন। ভাইয়েরা, তোমরা নিজেরাই জান যে, তোমাদের কাছে আমাদের যাওয়া নিষ্ফল হয় নি। তোমরা এই কথাও জান যে, এর আগে ফিলিপী শহরে আমরা অত্যাচার ভোগ করেছিলাম এবং অসম্মানিতও হয়েছিলাম। কিন্তু এই সব বাধা-বিপত্তি থাকলেও আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহস পেয়ে তাঁর সুখবরের কথা আমরা খোলাখুলিভাবেই তোমাদের কাছে বলেছিলাম। আমাদের উপদেশ ভুল শিক্ষা থেকে নয়, অসৎ উদ্দেশ্য থেকেও নয়, কিম্বা আমরা ছলনা করেও কোন কথা বলছি না; বরং যোগ্য মনে করে সুখবর জানাবার ভার ঈশ্বর আমাদের উপর দিয়েছেন বলেই আমরা সেই হিসাবে কথা বলছি। মানুষকে সন্তুষ্ট করবার জন্য আমরা এই কথা বলছি না, কিন্তু যিনি আমাদের অন্তর যাচাই করে দেখেন সেই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করবার জন্যই বলছি। তোমরা জান আমরা কখনও তোষামোদ করে কথা বলি নি, আর লোভকে ঢেকে রেখেও যে ছলনা করে কোন কথা আমরা বলি নি, ঈশ্বরই তার সাক্ষী। মানুষের কাছ থেকে, অর্থাৎ তোমাদের বা অন্য কারও কাছ থেকে আমরা প্রশংসা পাবার চেষ্টা করি নি। খ্রীষ্টের প্রেরিত্‌ হিসাবে আমাদের অধিকার অবশ্য আমরা তোমাদের উপর খাটাতে পারতাম, কিন্তু তার বদলে মা যেমন তাঁর নিজের সন্তানদের আদর-যত্ন করেন, তোমাদের মধ্যে থাকবার সময়ে আমরাও তোমাদের সংগে সেই রকমই নরম ব্যবহার করেছিলাম। তোমাদের উপর গভীর মায়া-মমতা থাকাতে তোমাদের কেবল ঈশ্বরের সুখবর দিতে নয়, তোমাদের জন্য নিজেদের প্রাণ দিতেও আমরা রাজী ছিলাম, কারণ আমাদের কাছে তোমরা খুবই প্রিয়। ভাইয়েরা, আমাদের পরিশ্রম আর কষ্টের কথা নিশ্চয়ই তোমাদের মনে আছে। তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুখবর প্রচার করবার সময় আমরা দিনরাত পরিশ্রম করেছি, যাতে আমরা তোমাদের কারও উপরে বোঝা হয়ে না পড়ি। তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, তোমাদের সংগে আমাদের ব্যবহার যে পবিত্র, সৎ ও নিখুঁত ছিল, তার সাক্ষী তোমরাও আছ আর ঈশ্বরও আছেন। আমরা সব সময় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিচ্ছি, কারণ ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কাছ থেকে শুনে যখন তোমরা বিশ্বাস করেছিলে তখন তোমরা তা মানুষের বলে নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলেই গ্রহণ করেছিলে। আর সত্যিই তা ঈশ্বরেরই বাক্য। তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, তোমাদের অন্তরে সেই বাক্যই কাজ করছে। ভাইয়েরা, যিহূদিয়া প্রদেশে খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত ঈশ্বরের যে মণ্ডলীগুলো আছে, তোমাদের অবস্থা তাদের মতই। যিহূদীদের হাতে তারা যে সব দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছে, তোমরাও নিজের দেশের লোকদের হাতে সেই একই রকম দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছ। ঐ যিহূদীরাই প্রভু যীশুকে ও নবীদের মেরে ফেলেছিল, আর আমাদের উপরও তারা অত্যাচার করেছে। তারা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে, আর সমস্ত মানুষের উপর তাদের শত্রুভাব আছে। তারা আমাদের বাধা দেয় যেন অযিহূদীদের পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য তাদের কাছে আমরা কোন কথা বলতে না পারি। এইভাবেই ঐ যিহূদীরা সব সময় পাপের উপর পাপ বোঝাই করছে, আর ঈশ্বরের ক্রোধ সম্পূর্ণভাবে তাদের উপর এসে পড়েছে। ভাইয়েরা, মনের দিক থেকে না হলেও দেহের দিক থেকে আমরা অল্প সময়ের জন্য তোমাদের কাছ-ছাড়া হয়েছি। তাই আমরা খুব আগ্রহের সংগে চেষ্টা করেছিলাম যাতে আবার তোমাদের সংগে আমাদের দেখা হয়। সেইজন্য আমরা, বিশেষ করে আমি পৌল অনেক বারই তোমাদের কাছে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শয়তান আমাদের বাধা দিয়েছিল। আমাদের প্রভু যীশু যখন আসবেন তখন তাঁর সামনে তোমরাই কি আমাদের আশা, আনন্দ ও গৌরবের জয়ের মালা হবে না? সত্যি, তোমরাই আমাদের গৌরব, তোমরাই আমাদের আনন্দ। যাতে এই সব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে তোমরা কেউ পিছিয়ে না যাও। তোমরা নিজেরাই জান যে, দুঃখ-কষ্ট আমাদের জন্য ঠিক করাই আছে। দুঃখ-কষ্ট যে আমাদের উপর আসবেই সেই কথা তোমাদের সংগে থাকবার সময়ে আমরা বারবারই বলেছিলাম, আর তোমরা জান যে, ঠিক তা-ই ঘটেছে। সেইজন্য আমি যখন আর সহ্য করতে পারলাম না তখন বিশ্বাসের দিক থেকে তোমরা কি অবস্থায় আছ তা জানবার জন্যই তীমথিয়কে পাঠিয়েছিলাম। আমার ভয় হচ্ছিল, হয়তো শয়তান তোমাদের লোভ দেখিয়েছে আর আমাদের পরিশ্রম সব নিষ্ফল হয়ে গেছে। এখন তীমথিয় তোমাদের কাছ থেকে আমাদের কাছে ফিরে এসে তোমাদের ভালবাসা ও বিশ্বাস সম্বন্ধে ভাল খবরই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভালবাসার মনোভাব নিয়ে তোমরা সব সময় আমাদের মনে করে থাক, আর আমরা যেমন তোমাদের দেখতে চাইছি তেমনি তোমরাও আমাদের দেখতে চাইছ। এইজন্য ভাইয়েরা, তীমথিয়ের মুখে তোমাদের বিশ্বাসের কথা শুনে আমাদের সব যন্ত্রণা ও কষ্টের মধ্যেও আমরা সান্ত্বনা পেয়েছি। প্রভুর উপর তোমাদের বিশ্বাস স্থির থাকলেই আমাদের জীবন ধন্য। তোমাদের দরুন ঈশ্বরের সামনে আমাদের যে আনন্দ, তার বদলে কেমন করে যে তাঁকে তোমাদের জন্য ধন্যবাদ দেব তা আমরা জানি না। আমরা দিনরাত ঈশ্বরের কাছে অন্তর থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন আমরা তোমাদের দেখতে পাই এবং তোমাদের বিশ্বাসের মধ্যে যে অভাব আছে তা পূরণ করতে পারি। আমাদের পিতা ও ঈশ্বর নিজে এবং আমাদের প্রভু যীশু যেন তোমাদের কাছে যাবার পথ ঠিক করে দেন। প্রভু করুন, আমরা যেমন তোমাদের ভালবাসি ঠিক তেমনি করে তোমাদেরও একের প্রতি অন্যের, এমন কি, সকলের প্রতি ভালবাসা যেন বেড়ে উঠে উপ্‌চে পড়ে। তাহলে তিনি তোমাদের অন্তর স্থির করবেন, যাতে আমাদের প্রভু যীশু যখন তাঁর নিজের সমস্ত লোকদের সংগে নিয়ে আসবেন তখন আমাদের পিতা ও ঈশ্বরের সামনে তোমরা নিখুঁত এবং পবিত্র হও। আরও বলি ভাইয়েরা, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করবার জন্য কিভাবে চলা উচিত সেই শিক্ষা তো তোমরা আমাদের কাছে পেয়েছ, আর সত্যিই তোমরা সেইভাবেই চলছ। তবুও প্রভু যীশুর হয়ে আমরা তোমাদের অনুরোধ করছি ও উপদেশ দিচ্ছি যেন তোমরা আরও বেশী করে সেইভাবে চল। প্রভু যীশুর কাছ থেকে অধিকার পেয়ে আমরা তোমাদের কি কি আদেশ দিয়েছি তা তোমাদের জানা আছে। ঈশ্বরের ইচ্ছা এই-তোমরা পবিত্র হও, অর্থাৎ সব রকম ব্যভিচার থেকে দূরে থাক, এই ব্যাপারে অন্যায় করে কেউ যেন কোন ভাইকে না ঠকায়। আমরা আগেই তোমাদের বলেছি এবং সাবধান করে দিয়েছি যে, এই সব অন্যায়ের জন্য প্রভুই শাস্তি দেবেন, কারণ ঈশ্বর অশুচি ভাবে চলবার জন্য আমাদের ডাকেন নি, পবিত্রভাবে চলবার জন্যই ডেকেছেন। সেইজন্য এই শিক্ষা যে অগ্রাহ্য করে সে মানুষকে অগ্রাহ্য করে না, বরং যিনি তাঁর পবিত্র আত্মাকে তোমাদের দান করেছেন সেই ঈশ্বরকেই অগ্রাহ্য করে। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালবাসা সম্বন্ধে তোমাদের কাছে কিছু লিখবার দরকার নেই, কারণ ঈশ্বরই তোমাদের একে অন্যকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন। আর সত্যিই তোমরা ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশের সব ভাইদের ভালবাস। কিন্তু ভাইয়েরা, তোমাদের কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ হল তোমাদের এই ভালবাসা যেন আরও বেড়ে যায়। আমরা তোমাদের যে আদেশ দিয়েছি সেইমত শান্ত জীবন কাটাতে, নিজের কাজে ব্যস্ত থাকতে এবং নিজের হাতে পরিশ্রম করতে বিশেষভাবে আগ্রহী হও, যেন বাইরের লোকদের চোখে তোমাদের চলাফেরা উপযুক্ত হয় এবং অন্যের উপর নির্ভর করতে না হয়। ভাইয়েরা, আমরা চাই না যারা মারা গেছে তাদের কি হবে সেই সম্বন্ধে তোমাদের অজানা থাকে, যেন যাদের মনে কোন আশা নেই তাদের মত করে তোমরা দুঃখে ভেংগে না পড়। আমরা যখন বিশ্বাস করি যীশু মরেছিলেন এবং আবার জীবিত হয়ে উঠেছেন তখন আমরা এও বিশ্বাস করি, যারা যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে মারা গেছে ঈশ্বর তাদেরও যীশুর সংগে নিয়ে যাবেন। প্রভুর শিক্ষামতই আমরা তোমাদের বলছি, আমরা যারা জীবিত আছি এবং প্রভুর ফিরে আসা পর্যন্ত জীবিত থাকব, আমরা কোনমতেই সেই মৃতদের আগে যাব না। জোর গলায় আদেশের সংগে এবং প্রধান দূতের ডাক ও ঈশ্বরের তূরীর ডাকের সংগে প্রভু নিজেই স্বর্গ থেকে নেমে আসবেন। খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে যারা মারা গেছে তখন তারাই প্রথমে জীবিত হয়ে উঠবে। তার পরে আমরা যারা জীবিত ও বাকী থাকব, আমাদেরও আকাশে প্রভুর সংগে মিলিত হবার জন্য তাদের সংগে মেঘের মধ্যে তুলে নেওয়া হবে। আর এইভাবে আমরা চিরকাল প্রভুর সংগে থাকব। সেইজন্য তোমরা এই সব কথা বলে একে অন্যকে সান্ত্বনা দাও। যখন লোকে বলবে, “শান্তি হয়েছে, ভয়ের কিছু নেই,” তখন গর্ভবতী স্ত্রীলোকের হঠাৎ প্রসব-বেদনা উঠবার মত করে ঐ লোকদের সর্বনাশ হবে। তারা কিছুতেই রক্ষা পাবে না। সেইজন্য অন্যদের মত যেন আমরা না ঘুমাই, বরং জেগে থাকি এবং নিজেদের দমনে রাখি। যারা ঘুমায় তারা রাতেই ঘুমায়, আর যারা মাতাল হয় তারা রাতেই মাতাল হয়। আমরা কিন্তু দিনের লোক; কাজেই বুক রক্ষার জন্য বিশ্বাস ও ভালবাসা দিয়ে বুক ঢেকে এবং মাথা রক্ষার জন্য উদ্ধারের নিশ্চয়তা মাথায় দিয়ে এস, আমরা নিজেদের দমনে রাখি। শাস্তি পাবার জন্য নয় বরং আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে উদ্ধার পাবার জন্যই ঈশ্বর আমাদের ঠিক করে রেখেছেন। খ্রীষ্ট আমাদের জন্য মরেছিলেন, যাতে আমরা বাঁচি বা মরি, আমরা যেন তাঁরই সংগে জীবিত থাকতে পারি। এইজন্য তোমরা এখন যেমন করছ তেমনি করে একে অন্যকে উৎসাহ দান করতে ও একে অন্যকে গড়ে তুলতে থাক। ভাইয়েরা, আমরা তোমাদের অনুরোধ করছি, যাঁরা তোমাদের মধ্যে পরিশ্রম করেন, প্রভুর হয়ে তোমাদের পরিচালনা করেন এবং তোমাদের উপদেশ দিয়ে থাকেন, তাঁদের সম্মান কোরো। তাঁরা যা করছেন তার জন্য ভালবাসার মনোভাব নিয়ে তাঁদের তোমরা বিশেষভাবে শ্রদ্ধা কোরো। তোমরা নিজেদের মধ্যে শান্তিতে থেকো। ভাইয়েরা, আমরা তোমাদের এই উপদেশ দিচ্ছি-যারা অলস তাদের সাবধান কোরো; যাদের সাহস নেই তাদের সাহস দিয়ো; যারা দুর্বল তাদের সাহায্য কোরো এবং সকলকে ধৈর্যের সংগে সহ্য কোরো। দেখো, অন্যায়ের বদলে কেউ যেন অন্যায় না করে। তোমরা সব সময় একে অন্যের, এমন কি, অন্য সকলের মংগল করবার চেষ্টা কোরো। সব সময় আনন্দিত থেকো, সব সময় প্রার্থনা কোরো, আর সব অবস্থার মধ্যে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ো; কারণ খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে তোমাদের জন্য তা-ই ঈশ্বরের ইচ্ছা। পবিত্র আত্মাকে নিভিয়ে ফেলো না। যাঁরা নবী হিসাবে ঈশ্বরের বাক্য বলেন তাঁদের কথা তুচ্ছ কোরো না, বরং সব কিছু যাচাই করে দেখো। যা ভাল তা ধরে রেখো, আর সব রকম মন্দ থেকে দূরে থেকো। শান্তিদাতা ঈশ্বর নিজেই তোমাদের সম্পূর্ণভাবে পবিত্র করুন, আর আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আসবার সময়ে তোমাদের সম্পূর্ণ দেহ-আত্মা- মন নির্দোষ রাখুন। মনে রেখো, যিনি তোমাদের ডেকেছেন তিনি নির্ভরযোগ্য; তিনি নিশ্চয়ই তা করবেন। ভাইয়েরা, আমাদের জন্য প্রার্থনা কোরো। ভালবাসার মনোভাব নিয়ে সকলকে শুভেচ্ছা জানায়ো। আমি প্রভুর নামে তোমাদের এই আদেশ দিচ্ছি যে, এই চিঠি যেন সব ভাইদের কাছে পড়ে শুনানো হয়। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়া তোমাদের সংগে থাকুক। পিতা ঈশ্বর আর প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত থিষলনীকীয় মণ্ডলীর কাছে সীলবান, তীমথিয় আর আমি পৌল এই চিঠি লিখছি। পিতা ঈশ্বর আর প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। ভাইয়েরা, তোমাদের জন্য সব সময়ই ঈশ্বরকে আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। তোমাদের বিশ্বাস খুব বাড়ছে এবং তোমাদের একের প্রতি অন্যের ভালবাসা উপ্‌চে পড়ছে বলেই আমাদের পক্ষে সেই ধন্যবাদ দেওয়া উপযুক্ত। আর এইজন্যই ঈশ্বরের মণ্ডলীগুলোর সামনে তোমাদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করছি, কারণ যে সব অত্যাচার ও দুঃখ-কষ্ট তোমরা সহ্য করছ তার মধ্যেও তোমাদের ধৈর্য আর বিশ্বাস টিকে আছে। এই সবই ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের প্রমাণ। আর এর উদ্দেশ্য হল, তোমাদের যেন ঈশ্বরের রাজ্যের উপযুক্ত বলে ধরা হয়। এর জন্যই তো তোমরা এত কষ্টভোগ করছ। ঈশ্বরের ন্যায়বিচার এই-যারা তোমাদের কষ্ট দেয় তিনি তাদের কষ্ট দেবেন; তাই আমরা সব সময় তোমাদের জন্য প্রার্থনা করে থাকি যেন আমাদের ঈশ্বর তোমাদের তাঁর ডাকের যোগ্য বলে মনে করেন, আর যেন তাঁর শক্তির দ্বারা তোমাদের ভাল কাজ করবার সমস্ত ইচ্ছা তিনি পূর্ণ করেন এবং বিশ্বাসের ফলে তোমরা যে কাজ করছ তিনি যেন তাতে পূর্ণতা দান করেন। তাহলে আমাদের ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়ার দরুন আমাদের প্রভু যীশুর গৌরব তোমাদের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হবে, আর তোমরাও তাঁর মধ্য দিয়ে গৌরব পাবে। ভাইয়েরা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আসবেন এবং আমাদের একসংগে মিলিত করে তাঁর নিজের কাছে নিয়ে যাবেন। এই বিষয়ে আমরা তোমাদের এই অনুরোধ করছি- “প্রভুর দিন এসে পড়েছে,” এই অর্থে নবী হিসাবে বলা কারও কথা বা অন্য কারও কথা কিম্বা আমাদের লেখা মনে করে কোন চিঠির দরুন তোমরা সহজে চঞ্চল হয়ো না বা ভয় পেয়ো না। কেউ যেন কোন ভাবেই তোমাদের ভুল পথে নিয়ে না যায়, কারণ সেই দিন আসবার আগে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ভীষণ বিদ্রোহ হবে, আর সেই অবাধ্যতার পুরুষ, যার ধ্বংস হবার কথা আছে, সে প্রকাশিত হবে। ঈশ্বর বলে যা কিছু আছে সেই সমস্তের বিরুদ্ধে আর উপাসনা করবার মত সব কিছুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সে নিজেকে বড় করে দেখাবে; এমন কি, সে ঈশ্বরের উপাসনা-ঘরে বসে নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করবে। আমি যখন তোমাদের কাছে ছিলাম তখন এই সব কথা যে তোমাদের বলতাম, তা কি তোমাদের মনে পড়ে না? সেই অবাধ্যতার পুরুষ যাতে ঠিক সময়ের আগে প্রকাশিত হতে না পারে সেইজন্য যা এখন তাকে বাধা দিয়ে রাখছে তা তো তোমরা জান। তোমরা এও জানতে পেরেছ যে, অবাধ্যতার পুরুষের গুপ্ত কার্যকলাপ এখনও চলছে, কিন্তু যিনি তাকে বাধা দিয়ে রাখছেন তিনি সরে না যাওয়া পর্যন্ত বাধা দিতেই থাকবেন। তারপরে সেই অবাধ্যতার পুরুষ প্রকাশিত হবে। প্রভু যীশু তাঁর মুখের নিঃশ্বাসে তাকে ধ্বংস করবেন এবং তাঁর মহিমাপূর্ণ উপস্থিতির দ্বারা তার শক্তি শেষ করে দেবেন। সেই অবাধ্যতার পুরুষ যখন আসবে তখন তার সংগে থাকবে শয়তানের শক্তি। সেই শক্তি প্রকাশ পাবে সব রকম মিথ্যা চিহ্ন এবং আশ্চর্য ও শক্তির কাজের মধ্যে, আর ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাওয়া লোকদের ঠকাবার সব রকম দুষ্ট ছলনার মধ্যে। এই লোকেরা ধ্বংস হবে, কারণ পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য তারা সত্যকে ভালবাসে নি এবং তা গ্রহণও করে নি। এইজন্য ঈশ্বর তাদের কাছে এমন এক শক্তি পাঠাবেন যা তাদের ভুল পথে নিয়ে যাবে, যেন তারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে। ফলে যারা সত্যে বিশ্বাস না করে অন্যায় কাজে আনন্দ পেয়েছে তাদের সকলকে বিচারে দোষী বলে ধরা হবে। প্রভুর প্রিয় আমার ভাইয়েরা, তোমাদের জন্য সব সময়ই ঈশ্বরকে আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত, কারণ পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য ঈশ্বর প্রথম থেকেই তোমাদের বেছে রেখেছেন। পবিত্র আত্মার দ্বারা ঈশ্বরের জন্য তোমাদের আলাদা করে রাখবার মধ্য দিয়ে এবং সুখবরের সত্যে তোমাদের বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। আমরা যে সুখবর প্রচার করছি তার মধ্য দিয়েই সেই উদ্ধার পাবার জন্য তিনি তোমাদের ডেকেছেন, যাতে তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মহিমার ভাগী হও। সেইজন্য ভাইয়েরা, স্থির থাক, আর চিঠির দ্বারা বা কথার দ্বারা যে শিক্ষা আমরা তোমাদের দিয়েছি তা ধরে রাখ। শেষে বলি ভাইয়েরা, আমাদের জন্য প্রার্থনা কোরো যেন প্রভুর বাক্য তোমাদের মধ্যে যেমন তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়েছিল সেইভাবেই তা ছড়িয়ে পড়তে ও গৌরব পেতে থাকে। আরও প্রার্থনা কোরো যেন আমরা বিবেকহীন ও দুষ্ট লোকদের হাত থেকে রক্ষা পাই, কারণ সব লোকেরই যে বিশ্বাস আছে তা নয়। কিন্তু প্রভু বিশ্বাসযোগ্য; তিনিই তোমাদের স্থির রাখবেন এবং শয়তানের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করবেন। প্রভুর সংগে যুক্ত বলে তোমাদের সম্বন্ধে আমাদের এই বিশ্বাস আছে যে, আমরা তোমাদের যে সব আদেশ দিয়েছি সেইমতই তোমরা কাজ করছ এবং করতেও থাকবে। প্রভু যেন তোমাদের অন্তর ঈশ্বরের ভালবাসার পথে আর খ্রীষ্টের ধৈর্যের পথে চালিয়ে নিয়ে যান। ভাইয়েরা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে আমরা তোমাদের এই আদেশ দিচ্ছি-যদি কোন ভাই অলস ভাবে চলে এবং আমাদের কাছ থেকে তোমরা যে শিক্ষা পেয়েছ তা পালন না করে, তবে তোমরা তার সংগে মেলামেশা কোরো না। কিভাবে আমাদের মত হয়ে চলা উচিত তা তোমরা নিজেরাই জান। তোমাদের মধ্যে থাকবার সময়ে আমরা অলস ভাবে চলি নি, কিম্বা দাম না দিয়ে কারও খাবার খাই নি। আমরা দিনরাত পরিশ্রম আর কষ্ট করেছি যাতে আমরা তোমাদের কারও বোঝা হয়ে না পড়ি। তোমাদের কাছ থেকে সাহায্য নেবার অধিকার যে আমাদের নেই তা নয়, কিন্তু তোমরা যেন আমাদের মত হয়ে চল সেইজন্যই আমরা এইভাবে কাজ করে তোমাদের দেখিয়েছিলাম। তোমাদের কাছে থাকবার সময়েই আমরা তোমাদের আদেশ দিয়ে বলেছিলাম যে, কেউ যদি কাজ করতে না চায় তবে সে যেন না খায়। আমরা শুনতে পাচ্ছি, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অলস ভাবে চলছে আর একেবারেই কাজকর্ম করছে না, বরং অন্যের ব্যাপার নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের হয়ে আমরা এই রকম লোকদের আদেশ ও উপদেশ দিচ্ছি, তারা যেন শান্ত ভাবে কাজকর্ম করে নিজেদের খাবার নিজেরা যোগাড় করে। ভাইয়েরা, ভাল কাজে ক্লান্ত হয়ো না। এই চিঠির মধ্যে লেখা আমাদের কথা যদি কেউ না মানে তাহলে সেই লোককে চিনে রাখ। তার সংগে মেলামেশা কোরো না যাতে সে লজ্জা পায়। কিন্তু তাকে শত্রু বলেও মনে কোরো না, বরং ভাই হিসাবে তাকে সাবধান কর। শান্তিদাতা প্রভু নিজে সব সময় সব রকমে তোমাদের শান্তি দান করুন। প্রভু তোমাদের সকলের সংগে থাকুন। এই শুভেচ্ছার কথা আমি পৌল নিজের হাতে লিখছি। এটাই আমার প্রত্যেক চিঠির চিহ্ন; আমি এইভাবেই লিখে থাকি। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়া তোমাদের সকলের সংগে থাকুক। আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বর ও খ্রীষ্ট যীশুর আদেশে আমি পৌল যীশু খ্রীষ্টের একজন প্রেরিত্‌ হয়েছি। খ্রীষ্ট যীশুর উপরেই আমাদের সব আশা। বিশ্বাসী হিসাবে আমার সত্যিকারের সন্তান তীমথিয়ের কাছে আমি এই চিঠি লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশু তোমাকে দয়া, করুণা ও শান্তি দান করুন। ম্যাসিডোনিয়াতে যাবার সময় আমি তোমাকে যা বলেছি এখনও তা-ই বলছি-তুমি ইফিষ শহরেই থাক, যাতে কতগুলো লোককে নির্দেশ দিতে পার যেন তারা আর ভুল শিক্ষা না দেয়। তাদের এই নির্দেশও দিয়ো যেন তারা গল্প-কথায় ও বড় বড় বংশ-তালিকার দিকে মনোযোগ না দেয়। এগুলো ঈশ্বরের কাজ বাদ দিয়ে নানা তর্কাতর্কির সৃষ্টি করে কিন্তু ঈশ্বর কিভাবে তাঁর কাজ পরিচালনা করেন তা বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে জানা যায়। এই নির্দেশের উদ্দেশ্য হল ভালবাসা জাগিয়ে তোলা। এই ভালবাসা খাঁটি অন্তর, পরিষ্কার বিবেক ও সত্যিকারের বিশ্বাসের মধ্য থেকে আসে। কিছু লোক এই সব থেকে সরে গিয়ে বাজে কথাবার্তার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তারা যদিও নিজেদের কথা নিজেরাই বোঝে না এবং যে বিষয়ে জোর দিয়ে বলছে সেই বিষয় সম্বন্ধেও জানে না তবুও তারা মোশির আইন- কানুনের শিক্ষক হতে চায়। আমরা জানি আইন-কানুন ভাল, অবশ্য তা যদি ঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়। আমরা এও জানি, কোন সৎ লোকের জন্য এই আইন-কানুন দেওয়া হয় নি; তা দেওয়া হয়েছিল তাদেরই জন্য যারা আইন অমান্য করে ও অবাধ্য হয়, যারা ভক্তিহীন ও পাপী, যারা অপবিত্র ও অধার্মিক, যারা বাপ- মাকে মেরে ফেলে, যারা খুন করে, যারা ব্যভিচার করে, যারা সমকামী, যারা দাস-ব্যবসা করে, যারা মিথ্যা কথা বলে ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, আর যারা সত্য শিক্ষার বিরুদ্ধে অন্য কোন কাজ করে। গৌরবময় ঈশ্বরের মহান সুখবর অনুসারে যে শিক্ষা, সেই শিক্ষাই হল সত্য শিক্ষা। এই সুখবর প্রচারের ভার তিনি আমার উপরে দিয়েছেন। আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশু, যিনি আমাকে শক্তি দান করেছেন, তাঁকে আমি ধন্যবাদ দিই, কারণ তিনি আমাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁর সেবা-কাজে নিযুক্ত করেছেন। যদিও আমি আগে খ্রীষ্টের নিন্দা করতাম আর অত্যাচারী ও বদ্‌রাগী ছিলাম তবুও আমাকেই তিনি এই কাজে নিযুক্ত করেছেন। আমাকে তিনি দয়া করেছেন, কারণ আমার অবিশ্বাসের জন্য আমি না জেনেই সেই সব করতাম। আমাদের প্রভু আমাকে অশেষ দয়া করেছেন এবং খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হবার ফলে যে বিশ্বাস ও ভালবাসা আসে তা দান করেছেন। এই কথা বিশ্বাসযোগ্য এবং সম্পূর্ণ ভাবে গ্রহণেরও যোগ্য যে, পাপ থেকে পাপীদের উদ্ধার করবার জন্যই খ্রীষ্ট যীশু জগতে এসেছিলেন। সেই পাপীদের মধ্যে আমিই প্রধান। আর সেইজন্যই ঈশ্বর আমাকে করুণা করেছেন, যেন প্রধান পাপী যে আমি, আমার মধ্য দিয়েই খ্রীষ্ট যীশু তাঁর অসীম ধৈর্য দেখাতে পারেন। তাঁর উপর বিশ্বাসের ফলে যারা অনন্ত জীবন পাবে তারা যেন আমাকে দেখে শিখতে পারে সেইজন্যই তিনি আমার প্রতি এই রকম করেছেন। যিনি সমস্ত যুগের রাজা, যাঁর কোন ক্ষয় নেই এবং যাঁকে দেখা যায় না, চিরকাল সেই একমাত্র ঈশ্বরের সম্মান ও গৌরব হোক। আমেন। স্নেহের সন্তান তীমথিয়, তোমার সম্বন্ধে অন্যেরা নবী হিসাবে যে কথা বলেছিলেন সেই কথা অনুসারে আমি তোমাকে এই নির্দেশ দিচ্ছি। সেই কথা মনে রেখে তুমি খ্রীষ্টের পক্ষে প্রাণপণে যুদ্ধ করে যাও, আর সেই সংগে বিশ্বাস ও পরিষ্কার বিবেক রক্ষা কর। কিছু লোক বিবেকের কথা না শুনে তাদের বিশ্বাসে ভাংগন ধরিয়েছে। সেই লোকদের মধ্যে আছে হুমিনায় আর আলেক্‌সান্দর। তাই আমি শয়তানের হাতে তাদের ছেড়ে দিয়েছি, যেন তারা এই শিক্ষা পায় যে, ঈশ্বরের অপমান করতে নেই। প্রথমেই আমি বলছি, সকলের জন্য ঈশ্বরের কাছে যেন মিনতি, প্রার্থনা, অনুরোধ ও ধন্যবাদ জানানো হয়। এইভাবে রাজাদের জন্য আর যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তাদের সকলের জন্য প্রার্থনা করতে হবে, যাতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখিয়ে এবং সৎ ভাবে চলে আমরা স্থির ও শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারি। আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের চোখে তা ভাল এবং এতেই তিনি খুশী হন। তিনি চান যেন সবাই পাপ থেকে উদ্ধার পায় এবং খ্রীষ্টের বিষয়ে সত্যকে গভীরভাবে বুঝতে পারে। ঈশ্বর মাত্র একজনই আছেন এবং ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থও মাত্র একজন আছেন। সেই মধ্যস্থ হলেন মানুষ খ্রীষ্ট যীশু। তিনি সব মানুষের মুক্তির মূল্য হিসাবে নিজের জীবন দিয়েছিলেন। ঈশ্বরের ঠিক করা সময়ে সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, আর এই সাক্ষ্য দেবার জন্য ঈশ্বর আমাকে প্রচারক, প্রেরিত্‌ ও অযিহূদীদের কাছে বিশ্বাস এবং সত্যের শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করেছেন। আমি সত্যি কথা বলছি, মিথ্যা বলছি না। আমি চাই যেন সব জায়গায় পুরুষেরা রাগ বা ঝগড়ার মনোভাব না রেখে খাঁটি অন্তরে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে। আমি এটাও চাই যেন স্ত্রীলোকেরা ভদ্রভাবে ও ভাল বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে উপযুক্ত কাপড়-চোপড় পরে। তারা যেন নানা রকমে চুলের বেনী বেঁধে, সোনা ও মুক্তার গয়না পরে আর দামী দামী কাপড়-চোপড় দিয়ে নিজেদের না সাজায়। তার বদলে যেন তারা ভাল ভাল কাজ দিয়ে নিজেদের সাজায়। যে স্ত্রীলোকেরা নিজেদের ঈশ্বরভক্ত বলে থাকে সেই স্ত্রীলোকদের পক্ষে সেটাই হবে উপযুক্ত কাজ। কথা না বলে এবং সম্পূর্ণভাবে বাধ্য থেকে স্ত্রীলোকেরা শিক্ষালাভ করুক। শিক্ষা দেবার ও পুরুষের উপর কর্তা হবার অনুমতি আমি কোন স্ত্রীলোককে দিই না। তার বরং চুপ করে থাকাই উচিত, কারণ প্রথমে আদমকে ও পরে হবাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তা ছাড়া আদম ছলনায় ভোলেন নি, কিন্তু স্ত্রীলোক সম্পূর্ণভাবে ভুলেছিলেন এবং ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করেছিলেন। তবে তিনি সন্তান জন্ম দেবার মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পাবেন; অবশ্য স্ত্রীলোকদের ভাল বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে বিশ্বাস, ভালবাসা ও পবিত্রতায় চলতে হবে। এই কথা বিশ্বাসযোগ্য যে, যদি কেউ মণ্ডলীর পরিচালক হতে চায় তবে সে একটা ভাল কাজ করবার ইচ্ছাই করে। পরিচালককে সেইজন্য এমন হতে হবে যেন কেউ তাঁকে দোষ দিতে না পারে। তাঁর মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে। তিনি নিজেকে দমনে রাখবেন এবং তাঁর ভাল বিচারবুদ্ধি থাকবে। তিনি ভদ্র হবেন ও অতিথি সেবা করতে ভালবাসবেন। অন্যদের শিক্ষাদান করবার ক্ষমতা তাঁর থাকবে। তিনি যেন মাতাল ও বদ্‌মেজাজী না হন, বরং তাঁর স্বভাব যেন নম্র হয় এবং তিনি যেন ঝগড়াটে বা টাকার লোভী না হন। তিনি যেন উপযুক্তভাবে তাঁর নিজের বাড়ীর সব কিছু পরিচালনা করেন এবং তাঁর ছেলেমেয়েরা যেন বাধ্য ও ভদ্র হয়। যিনি তাঁর নিজের বাড়ীর ব্যাপার পরিচালনা করতে জানেন না তিনি কি করে ঈশ্বরের মণ্ডলীর দেখাশোনা করবেন? মণ্ডলীর পরিচালক যেন নতুন বিশ্বাসী না হন, কারণ নতুন বিশ্বাসী হলে তিনি হয়তো অহংকারে ফুলে উঠবেন এবং শয়তানকে দেওয়া শাস্তির যোগ্য হবেন। বাইরের লোকদের কাছে তাঁর সুনাম থাকা দরকার, যেন তিনি দুর্নামের ভাগী না হন এবং শয়তানের ফাঁদে না পড়েন। তেমনি করে পরিচারকেরাও যেন সম্মান পাবার যোগ্য এবং এক কথার লোক হন। তাঁরা যেন মাতাল না হন, আর অন্যায় লাভের দিকে যেন তাঁদের ঝোঁক না থাকে। তাঁরা যেন পরিষ্কার বিবেকে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসের গুপ্ত সত্য ধরে রাখেন। তাঁদের আগে যাচাই করে দেখতে হবে, তারপর যদি তাঁরা নির্দোষ বলে প্রমাণিত হন তবে পরিচারক হতে পারবেন। ঠিক সেইভাবে তাঁদের স্ত্রীরাও যেন সম্মানের যোগ্যা হন। তাঁরা যেন অন্যের দুর্নাম করে না বেড়ান এবং নিজেদের দমনে রাখেন। সব বিষয়ে যেন তাঁদের বিশ্বাস করা যায়। পরিচারকেরও মাত্র একজন স্ত্রী থাকবে। তিনি যেন ভাল ভাবে তাঁর ছেলেমেয়েদের ও সংসার পরিচালনা করেন। যে পরিচারক ভাল ভাবে কাজ করেন তিনি সম্মান লাভ করেন এবং খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসের দরুন তাঁর অন্তর সাহসে পূর্ণ হয়। খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসের গুপ্ত সত্য যে মহান তা অস্বীকার করা যায় না। সেই সত্য এই- তিনি মানুষ হিসাবে প্রকাশিত হলেন; তিনি যে নির্দোষ পবিত্র আত্মা তা প্রমাণ করলেন; স্বর্গদূতেরা তাঁকে দেখেছিলেন; সমস্ত জাতির কাছে তাঁর বিষয় প্রচার করা হয়েছিল; জগতে তাঁর উপর লোকেরা বিশ্বাস করেছিল; স্বর্গে তাঁকে মহিমার সংগে তুলে নেওয়া হয়েছিল। পবিত্র আত্মা পরিষ্কার ভাবে বলেছেন, ভবিষ্যতে কিছু লোক খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যাবে এবং ছলনাকারী আত্মা ও মন্দ আত্মাদের শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়বে। বিবেক অসাড় হয়ে গেছে এমন সব মিথ্যাবাদী লোকদের ভণ্ডামির জন্য এই রকম হবে। এরা মানুষকে বিয়ে না করবার আদেশ দেয় এবং কোন কোন খাবার খেতে মানা করে। কিন্তু বিশ্বাসীরা, যারা ঈশ্বরের সত্যকে জেনেছে, তারা যেন ধন্যবাদ দিয়ে খায় সেইজন্যই তো ঈশ্বর এই সব খাবার সৃষ্টি করেছেন। ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিস ভাল, তাই কোন জিনিস খারাপ মনে করে বাদ দেওয়া উচিত নয়; কিন্তু তা যেন ধন্যবাদ দিয়ে গ্রহণ করা হয়, কারণ ঈশ্বরের বাক্য ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তা শুচি হয়। যদি তুমি এই সব বিষয় ভাইদের বুঝিয়ে দাও তবে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসের যে সত্য ও নির্ভুল শিক্ষা তুমি মেনে চলেছ, তাতে পাকা হয়ে খ্রীষ্ট যীশুর একজন উপযুক্ত সেবাকারী হবে। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন গল্প-কথা থেকে দূরে থাক; ওগুলো তো বুড়ীদের বানানো গল্পের মত। তার চেয়ে বরং ঈশ্বরভক্তির অভ্যাস কর। শারীরিক ব্যায়ামে কিছু লাভ হয় বটে, কিন্তু ঈশ্বরভক্তিতে সব দিক থেকে লাভ হয়; তাতে এই জীবন এবং পরজীবনের জন্য আশ্বাস রয়েছে। এই কথা বিশ্বাসযোগ্য এবং সম্পূর্ণভাবে গ্রহণেরও যোগ্য। এইজন্যই আমরা প্রাণপণে পরিশ্রম করছি এবং আগ্রহের সংগে কাজ করছি, কারণ জীবন্ত ঈশ্বরের উপরে আমরা আশা রেখেছি। তিনিই সব মানুষের উদ্ধারকর্তা, বিশেষভাবে তাদের যারা তাঁকে বিশ্বাস করে। তুমি এই সব বিষয়ে আদেশ ও শিক্ষা দাও। তুমি যুবক বলে কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে। কথায়, চালচলনে, ভালবাসায়, বিশ্বাসে এবং পবিত্রতায় তুমি বিশ্বাসীদের কাছে আদর্শ হও। আমি না আসা পর্যন্ত তুমি বিশ্বাসীদের পবিত্র শাস্ত্র পড়ে শোনানো, প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখ। মণ্ডলীর নেতারা যখন তোমার উপরে তাঁদের হাত রেখেছিলেন তখন নবী হিসাবে কথা বলবার মধ্য দিয়ে যে বিশেষ দান তোমাকে দেওয়া হয়েছিল সেই দান তুমি অবহেলা কোরো না। এই সব বিষয়ে মনোযোগী হও; নিজেকে সম্পূর্ণভাবে তার মধ্যে ডুবিয়ে রাখ, যেন সবাই দেখতে পায় যে, তুমি এগিয়ে যাচ্ছ। তোমার নিজের বিষয়ে এবং তোমার শিক্ষার বিষয়ে সতর্ক থাক। এই সব করতে থাক, কারণ তাতে তুমি নিজেকে রক্ষা করতে পারবে এবং যারা তোমার কথা শুনবে তাদেরও রক্ষা করতে পারবে। যাঁরা বৃদ্ধ, তাঁদের দোষ দেখাতে গিয়ে কড়া ভাষা ব্যবহার কোরো না; বাবার মত মনে করে তাঁদের সংশোধন কোরো। যুবকদের ভাইয়ের মত মনে করে তাদের সংশোধন কোরো। বয়স্কা স্ত্রীলোকদের মায়ের মত মনে করে সংশোধন কোরো এবং যুবতীদের বোনের মত মনে করে পবিত্রভাব বজায় রেখে সংশোধন কোরো। যে সব বিধবাদের কেউ নেই তাদের যত্নের সংগে দেখাশোনা কোরো। কিন্তু কোন বিধবার যদি ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাত্‌নী থাকে তবে সেই ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাত্‌নীরাই যেন প্রথমে নিজের নিজের পরিবারের প্রতি কর্তব্য করে ঈশ্বরভক্তি দেখাতে শেখে। এইভাবে তারা তাদের বাপ-দাদাদের স্নেহের ঋণ শোধ করতে পারবে, আর এতেই ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন। যে বিধবার কেউ নেই সে ঈশ্বরের উপরেই তার আশা রেখে দিনরাত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা ও অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তু যে বিধবা যেভাবে খুশী জীবন কাটায় সে জীবিত অবস্থায়ও মরার মত। এই সব বিষয়ে নির্দেশ দাও যাতে কেউ তাদের দোষ দিতে না পারে। যে নিজের আত্মীয়দের, বিশেষ করে নিজের পরিবারের দেখাশোনা করে না সে তার দ্বারা তার বিশ্বাসকে অস্বীকার করেছে; সে অবিশ্বাসীর চেয়েও খারাপ। বিধবাদের নামের তালিকায় কোন বিধবার নাম যোগ করবার আগে দেখতে হবে যে, তার বয়স ষাট বছরের কম নয় এবং সে স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। এছাড়া ভাল কাজের জন্য তার সুনাম থাকতে হবে। এই সব ভাল কাজের মধ্যে রয়েছে-ছেলেমেয়ে মানুষ করা, অতিথি সেবা করা, ঈশ্বরের লোকদের পা ধোওয়ানো, যারা কষ্টে পড়েছে তাদের সাহায্য করা, আর অন্যান্য সৎ কাজে যোগ দেওয়া। যুবতী বিধবাদের নাম বিধবার তালিকায় লিখো না, কারণ যখন তাদের দেহের কামনা-বাসনা চঞ্চল হয়ে ওঠে এবং খ্রীষ্টের প্রতি তাদের ভক্তি কমে আসে তখন তারা বিয়ে করতে চায়। এতে তারা তাদের আগের প্রতিজ্ঞা ভাংগে বলে নিজেদের উপর শাস্তি ডেকে আনে। এছাড়া তারা বাড়ী বাড়ী ঘুরে অলস হতে শেখে। তারা যে কেবল অলস হয় তা নয়, কিন্তু বাজে কথা বলতে ও পরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শেখে এবং যা তাদের বলা উচিত নয় সেই সব কথা বলে। সেইজন্য আমি এই উপদেশ দিই যে, যুবতী বিধবারা বিয়ে করুক, সন্তানের মা হোক, নিজের নিজের সংসারের দেখাশোনা করুক এবং নিন্দা করবার জন্য শত্রুদের কোন সুযোগ না দিক। এর মধ্যেই তো কয়েকজন বিধবা ফিরে গিয়ে শয়তানের পথে চলছে। খ্রীষ্টে বিশ্বাসী কোন স্ত্রীলোকের ঘরে কয়েকজন বিধবা থাকলে সেই স্ত্রীলোকই তাদের দেখাশোনা করুক। এই সব বিধবার ভার মণ্ডলীর উপর চাপানো উচিত নয়, যাতে যে সব বিধবার কেউ নেই মণ্ডলী তাদের দেখাশোনা করতে পারে। মণ্ডলীর যে সব প্রধান নেতারা ভালভাবে মণ্ডলীর পরিচালনা করেন, বিশেষ করে যাঁরা ঈশ্বরের বাক্য প্রচার ও শিক্ষা দান করবার জন্য পরিশ্রম করেন, তাঁদের পাওনা দ্বিগুণ হওয়া উচিত। পবিত্র শাস্ত্রে আছে, “শস্য মাড়াই করবার সময়ে বলদের মুখে জাল্‌তি বেঁধো না।” আরও লেখা আছে, “যে কাজ করে সে বেতন পাবার যোগ্য।” দুই বা তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্য ছাড়া মণ্ডলীর কোন প্রধান নেতার বিরুদ্ধে কোন দোষের কথায় কান দিয়ো না। যে সব প্রধান নেতারা পাপ করতেই থাকেন মণ্ডলীর সমস্ত লোকদের সামনে তাঁদের দোষ দেখিয়ে দিয়ো যাতে অন্যান্য নেতারাও ভয় পান। ঈশ্বর ও খ্রীষ্ট যীশু এবং বাছাই করা স্বর্গদূতদের সামনে আমি তোমাকে এই আদেশ দিচ্ছি-কারও পক্ষ না নিয়ে এই সব কোরো এবং একচোখা হয়ে কোন কাজ কোরো না। তাড়াতাড়ি করে কারও উপর হাত রেখে কাউকে কোন পদে নিযুক্ত কোরো না। অন্যেরা যখন পাপ করে তখন তাদের সংগে যোগ দিয়ো না। নিজেকে খাঁটি রেখো। তোমার প্রায়ই অসুখ হয় বলে হজমের জন্য অল্প অল্প করে আংগুর-রস খেয়ো; কেবল জল খেয়ো না। কোন কোন লোকের পাপ এত স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে, তার বিচার আগেই হয়ে যায়। আবার কোন কোন লোকের পাপ পরে দেখা যায়। তেমনি করে সৎ কাজ স্পষ্টভাবে দেখা যায়, আর যেগুলো স্পষ্ট নয় সেগুলোও লুকানো থাকে না। যে সব দাসদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তারা সবাই তাদের মনিবদের সমস্ত সম্মান পাবার যোগ্য বলে মনে করুক, যেন কেউ ঈশ্বরের নামের এবং আমাদের শিক্ষার নিন্দা করতে না পারে। যে দাস খ্রীষ্টে বিশ্বাসী মনিবের অধীন সে যেন বিশ্বাসী ভাই বলেই সেই মনিবকে তুচ্ছ না করে বরং আরও ভালভাবে তাঁর সেবা করে, কারণ তার সেবায় যিনি উপকার পাচ্ছেন তিনি তো বিশ্বাসী এবং তার প্রিয়। এই সব বিষয় শিক্ষা দাও এবং উপদেশ দাও। কেউ যদি অন্য রকম শিক্ষা দেয় এবং সত্য উপদেশ, অর্থাৎ আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শিক্ষা ও ঈশ্বরভক্তির শিক্ষা মেনে না নেয় তবে সে অহংকারী। সে কিছুই বোঝে না; ঝগড়া এবং তর্কাতর্কি করা যেন তার একটা রোগে দাঁড়িয়ে যায়। এই সবের ফল হল-হিংসা, ঝগড়া, নিন্দা, কুসন্দেহ, আর নীচমনা লোকদের মধ্যে অনবরত গোলমাল। এই লোকদের মধ্যে ঈশ্বরের সত্য নেই; তারা খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসকে একটা জাগতিক লাভের উপায় বলে মনে করে। কিন্তু আসলে সন্তুষ্ট মনে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাস অনুসারে চললে মহা লাভ হয়। জগতে আমরা তো কিছুই সংগে নিয়ে আসি নি আর জগৎ থেকে কিছুই সংগে নিয়ে যেতে পারব না। তবে খাবার ও কাপড় থাকলেই আমরা সন্তুষ্ট থাকব। কিন্তু যারা ধনী হতে চায় তারা নানা পরীক্ষায় এবং ফাঁদে পড়ে, আর এমন সব বাজে ও অনিষ্টকর ইচ্ছা তাদের মনে জাগে যা লোককে ধ্বংস ও সর্বনাশের তলায় ডুবিয়ে দেয়। সব রকম মন্দের গোড়াতে রয়েছে টাকা-পয়সার প্রতি ভালবাসা। অনেকে টাকা-পয়সার লোভে খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাস থেকে সরে গিয়ে নিজেদের উপর অনেক দুঃখ ডেকে এনেছে। কিন্তু তুমি তো ঈশ্বরের লোক; এই সব থেকে তুমি পালাও। সৎ জীবন, ভক্তি, বিশ্বাস, ভালবাসা, ধৈর্য ও নরম স্বভাবের জন্য আগ্রহী হও। খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের জন্য তাঁর পক্ষে প্রাণপণে যুদ্ধ চালিয়ে যাও। যে অনন্ত জীবনের জন্য ঈশ্বর তোমাকে ডেকেছিলেন সেই অনন্ত জীবন ধরে রাখ। তুমি অনেক লোকের সামনেই তোমার বিশ্বাসের সাক্ষ্য দিয়েছিলে। ঈশ্বর, যিনি সব কিছুকে জীবন দান করেন আর খ্রীষ্ট যীশু, যিনি পন্তীয় পীলাতের সামনে সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, সেই ঈশ্বর ও খ্রীষ্ট যীশুর সামনে আমি তোমাকে এই আদেশ দিচ্ছি- আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত নিখুঁত ভাবে আমার আদেশ পালন করে যাও, যেন কেউ তোমার নিন্দা করতে না পারে। সেই পরম ধন্য ঈশ্বর, যিনি একমাত্র শাসনকর্তা, যিনি রাজাদের রাজা ও প্রভুদের প্রভু, তিনিই তাঁর উপযুক্ত সময়ে খ্রীষ্টকে প্রকাশ করবেন। একমাত্র ঈশ্বরই মৃত্যুর অধীন নন। তিনি এমন আলোতে বাস করেন যেখানে কোন মানুষ যেতে পারে না। কোন মানুষ কোন দিন তাঁকে দেখেও নি, দেখতে পায়ও না। সম্মান এবং ক্ষমতা চিরকাল তাঁরই। আমেন। যারা এই জগতে ধনী তাদের এই নির্দেশ দাও যেন তারা অহংকার না করে ও অস্থায়ী ধনের উপর নির্ভর না করে ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে। তিনিই ভোগের জন্য সব জিনিস খোলা হাতে আমাদের দান করেন। ধনীদের নির্দেশ দাও যেন তারা অন্যের উপকার করে, সৎ কাজে ব্যস্ত থাকে, খোলা হাতে দান করে এবং তাদের ধন-সম্পত্তির ভাগ অন্যদেরও দেয়। এতে তারা নিজেদের জন্য এমন ধন জমা করবে যা ভবিষ্যতে তাদের পক্ষে একটা শক্ত ভিত্তির মত হবে, যেন সত্যিকারের যে জীবন তা তারা শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। হে তীমথিয়, যা রক্ষা করবার জন্য তোমাকে দেওয়া হয়েছে তা ভাল করে রক্ষা কর। মিথ্যা জ্ঞানের ভক্তিহীন বাজে কথা ও স্ববিরোধী শিক্ষা থেকে দূরে থাক। কোন কোন লোক এই রকম জ্ঞানের দাবি করে খ্রীষ্টীয় ধর্ম- বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে। ঈশ্বর তোমাদের দয়া করুন। খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে অনন্ত জীবনের প্রতিজ্ঞা অনুসারে ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমি পৌল খ্রীষ্ট যীশুর একজন প্রেরিত্‌ হয়েছি। এই চিঠি আমি আমার প্রিয় সন্তান তীমথিয়ের কাছে লিখছি। পিতা ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশু তোমাকে দয়া, করুণা ও শান্তি দান করুন। আমার পূর্বপুরুষেরা যেমন ঈশ্বরের সেবা করতেন তেমনি আমিও পরিষ্কার বিবেকে ঈশ্বরের সেবা করে থাকি; আর তোমার জন্য দিনরাত অনবরত প্রার্থনা করবার সময় আমি তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে থাকি। তুমি যে কাঁদছিলে সেই কথা মনে করে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে, যেন আমার মন আনন্দে ভরে ওঠে। তোমার অন্তরে যে সত্যিকারের বিশ্বাস আছে সেই কথাও আমার মনে আছে। এই বিশ্বাস আগে তোমার দিদিমা লোয়ীর ও তোমার মা উনীকীর অন্তরে ছিল, আর আমি নিশ্চয় জানি, এই বিশ্বাস তোমার অন্তরেও আছে। এইজন্য আমি তোমাকে আবার এই কথা বলতে চাই-তোমার উপর আমার হাত রাখবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তোমাকে যে বিশেষ দান দিয়েছেন তা আবার জাগিয়ে তোলো। ঈশ্বর আমাদের ভয়ের মনোভাব দেন নি; তিনি আমাদের এমন মনোভাব দিয়েছেন যার মধ্যে শক্তি, ভালবাসা ও নিজেকে দমনে রাখবার ক্ষমতা রয়েছে। সেইজন্য আমাদের প্রভুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে লজ্জা বোধ কোরো না, আর তাঁর জন্য বন্দী যে আমি, আমাকে নিয়েও লজ্জা বোধ কোরো না। তার বদলে ঈশ্বর তোমাকে যে শক্তি দিয়েছেন সেই শক্তি অনুসারে তাঁর সুখবর প্রচারের জন্য আমার সংগে কষ্টভোগ কর। ঈশ্বরই আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন এবং পবিত্রভাবে জীবন কাটাবার জন্য ডেকেছেন। আমাদের কোন কাজের জন্য তিনি তা করেন নি, বরং তাঁর উদ্দেশ্য এবং দয়ার জন্যই করেছেন। জগৎ সৃষ্ট হবার আগে খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর দয়া আমাদের দান করেছিলেন, কিন্তু এখন আমাদের উদ্ধারকর্তা খ্রীষ্ট যীশুর এই জগতে আসবার মধ্য দিয়ে তিনি সেই দয়া প্রকাশ করেছেন। খ্রীষ্ট মৃত্যুকে ধ্বংস করেছেন এবং সুখবরের মধ্য দিয়ে ধ্বংসহীন জীবনের কথা প্রকাশ করেছেন। আর এই সুখবর জানাবার জন্যই আমাকে প্রচারক, প্রেরিত্‌ ও শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এইজন্যই আমি এই সব কষ্ট ভোগ করছি; তবুও আমি লজ্জিত নই, কারণ আমি জানি আমি কার উপর নির্ভর করেছি। আমি নিশ্চয় করে জানি যে, আমি তাঁর কাছে যা রেখেছি খ্রীষ্টের আসবার দিনের জন্য তা রক্ষা করবার ক্ষমতা তাঁর আছে। তুমি আমার কাছ থেকে যা শুনেছ সেই সত্য শিক্ষা তোমার আদর্শ হিসাবে ধরে রাখ; আর খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হবার ফলে আমাদের অন্তরে যে ভালবাসা ও বিশ্বাস জেগেছে তাও ধরে রাখ। ঈশ্বর তোমাকে যা রক্ষা করবার জন্য দিয়েছেন তা পবিত্র আত্মার দ্বারা রক্ষা কর, যিনি আমাদের অন্তরে থাকেন। তুমি জান এশিয়া প্রদেশের সবাই আমার কাছ থেকে সরে পড়েছে। তাদের মধ্যে আছে ফুগিল্ল ও হর্মগিনি। অনীষিফরের পরিবারের উপর প্রভু করুণা করুন; তিনি অনেক বার আমাকে সতেজ করে তুলেছেন, আর আমি কয়েদী হয়েছি বলে তিনি লজ্জিত হন নি। তিনি যখন রোমে ছিলেন তখন আমার অনেক খোঁজ করে আমাকে পেয়েছিলেন। ইফিষে কিভাবে তিনি আমার সেবা করেছেন তা তোমার ভাল করে জানা আছে। প্রভু করুন, যেন খ্রীষ্টের আসবার দিনে তিনি প্রভুর কাছ থেকে করুণা লাভ করেন। সন্তান আমার, খ্রীষ্ট যীশুর দয়ায় তুমি শক্তিশালী হও। অনেক সাক্ষীর সামনে আমার মুখে যে সব শিক্ষার কথা তুমি শুনেছ সেই শিক্ষা ধরে রাখবার জন্য তুমি তা এমন সব বিশ্বস্ত লোকদের দাও যাদের অন্যদের শিক্ষা দেবার যোগ্যতা আছে। খ্রীষ্ট যীশুর একজন উপযুক্ত সৈনিকের মত তুমি আমাদের সংগে কষ্ট সহ্য কর। যুদ্ধ করতে গিয়ে কেউ সংসারের মধ্যে নিজেকে জড়ায় না, যেন সৈন্য হিসাবে যিনি তাকে ভর্তি করেছেন তাঁকে সে সন্তুষ্ট করতে পারে। তেমনি করে প্রতিযোগিতার খেলায় যোগ দিয়ে কেউ যদি নিয়ম মত না খেলে তবে সে জয়ের মালা পায় না। যে চাষী পরিশ্রম করে তারই প্রথমে ফসলের ভাগ পাওয়া উচিত। আমি যা বলছি তা তুমি চিন্তা করে দেখো, কারণ প্রভুই তোমাকে সব বিষয় বুঝবার ক্ষমতা দান করবেন। যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে এই কথা মনে রেখো যে, তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তোলা হয়েছিল এবং তিনি দায়ূদের বংশের লোক ছিলেন। যে সুখবর আমি প্রচার করি তার মধ্যে এই কথা আছে, আর এই সুখবর প্রচারের জন্যই আমি কষ্ট ভোগ করছি; এমন কি, অপরাধীর মত আমাকে বাঁধাও হয়েছে। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যকে তো বাঁধা হয় নি। তাই ঈশ্বর যাদের বেছে নিয়েছেন তাদের জন্য আমি সব কিছু সহ্য করছি, যেন তারাও খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পায় এবং চিরকালের মহিমা লাভ করে। এই কথা বিশ্বাসযোগ্য যে, খ্রীষ্টের সংগে যদি আমরা মরে থাকি, তবে তাঁরই সংগে আমরা জীবিতও থাকব। আমরা যদি ধৈর্য ধরে সহ্য করি, তবে তাঁর সংগে রাজত্বও করব। যদি তাঁকে আমরা অস্বীকার করি, তবে তিনিও আমাদের অস্বীকার করবেন। আমরা অবিশ্বস্ত হলেও তিনি বিশ্বস্ত থাকেন, কারণ তিনি নিজেকে অস্বীকার করতে পারেন না। এই সব কথা লোকদের মনে করিয়ে দিতে থাক। ঈশ্বরের সামনে তাদের সাবধান করে দাও যেন তারা বাজে কথা নিয়ে তর্কাতর্কি না করে। এর কোন দামই নেই, বরং যারা তা শোনে তাদের তা সর্বনাশ করে। যার উপর ঈশ্বর সন্তুষ্ট, অর্থাৎ যার লজ্জা পাবার কোন কারণ নেই সেই রকম কাজের লোক হিসাবে এবং যে নির্ভুল ভাবে সত্যের বাক্য শিক্ষা দেয় সেই রকম লোক হিসাবে নিজেকে ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত করবার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী হও। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন ও বাজে কথাবার্তা থেকে দূরে থাক, কারণ এই রকম কথাবার্তার জন্য লোকদের মনে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির ভাব কমে যেতে থাকবে। যারা এই রকম কথাবার্তা বলে তাদের শিক্ষা পচা ঘায়ের মত করে ছড়িয়ে পড়বে। এই রকম লোকদের মধ্যে আছে হুমিনায় ও ফিলীত। এরা ঈশ্বরের সত্য থেকে দূরে সরে গেছে। এরা বলে, বিশ্বাসীদের মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠা আগেই হয়ে গেছে। এরা কারও কারও বিশ্বাসকে নষ্ট করে ফেলেছে। তবু ঈশ্বরের গাঁথা শক্ত ভিত্তি দাঁড়িয়েই আছে, আর তার উপর সীলমোহরের মত করে এই কথাগুলো লেখা আছে, “প্রভু জানেন, কারা তাঁর,” আর “যে কেউ খ্রীষ্টকে প্রভু বলে ডাকে সে সমস্ত পাপ থেকে দূরে যাক।” বড় বাড়ীতে কেবল যে সোনা-রূপার বাসন থাকে তা নয়, কিন্তু কাঠের ও মাটির বাসনও থাকে। তার মধ্যে কতগুলো বাসন সম্মানের কাজে আর কতগুলো বাসন নীচু কাজে ব্যবহার করা হয়। যারা এই সব নীচু কাজের বাসনের মত, তাদের থেকে সরে এসে যদি কেউ নিজেকে শুচি করে তবে সে এমন বাসনের মত হবে যা সম্মানের কাজে ব্যবহার করা হয়। পবিত্র উদ্দেশ্যে তাকে আলাদা করে রাখা হবে, সে প্রভুর কাজে লাগবে এবং সব রকম ভাল কাজ করবার জন্য সে প্রস্তুত থাকবে। যৌবনের মন্দ কামনা-বাসনা থেকে তুমি পালাও এবং যাঁরা খাঁটি অন্তরে প্রভুকে ডাকে তাদের সংগে সৎ জীবন, বিশ্বাস, ভালবাসা ও শান্তির জন্য আগ্রহী হও। বাজে, মূর্খ তর্কাতর্কিতে যোগ দিয়ো না, কারণ তুমি তো জান সেগুলো শেষ পর্যন্ত ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি করে। যিনি প্রভুর দাস, তাঁর ঝগড়া করা উচিত নয়, বরং তাঁকে সকলের প্রতি দয়ালু হতে হবে। তাঁর অন্যদের শিক্ষাদানের ক্ষমতা এবং সহ্যগুণ থাকতে হবে। যারা তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাদের তাঁকে নম্রভাবে শিক্ষা দিতে হবে। সেই শিক্ষা যেন তিনি এই আশায় দেন যে, ঈশ্বর তাদের মন ফিরাবার সুযোগ দেবেন যাতে ঈশ্বরের সত্যকে তারা গভীর ভাবে বুঝতে পারে। তার ফলে তারা শয়তানের ফাঁদ থেকে পালিয়ে আসবে, কারণ শয়তান তার ইচ্ছা পালন করবার জন্য তাদের ধরেছিল। এই কথা মনে রেখো যে, শেষ কালে ভীষণ সময় উপস্থিত হবে। মানুষ কেবল নিজেকেই ভালবাসবে, টাকার লোভী হবে, গর্ব করবে, সবাইকে তুচ্ছ করবে, সকলের দুর্নাম করবে, আর মা-বাবার অবাধ্য হবে। তারা অকৃতজ্ঞ ও ভক্তিহীন হবে, তাদের মধ্যে স্নেহ-ভালবাসা থাকবে না, আর তারা ঝগড়া করে আপোস করবে না। তারা পরের নিন্দা করবে, নিজেকে দমন করতে পারবে না, নিষ্ঠুর হবে, আর যা ভাল তা ঘৃণা করবে। তারা বিশ্বাসঘাতক, হঠকারী ও অহংকারে পূর্ণ হবে। ঈশ্বরকে ভাল না বেসে তারা জাগতিক সুখকে ভালবাসবে। বাইরের চেহারা দেখলে মনে হবে যেন ঈশ্বরকে তারা কত না ভক্তি করে, কিন্তু আসলে ঈশ্বরভক্তির শক্তিকেই তারা অস্বীকার করে। এই রকম লোকদের কাছ থেকে দূরে থেকো। এই রকম লোকদের মধ্যে কেউ কেউ ঘরে ঘরে ঢুকে দুর্বল-মনা স্ত্রীলোকদের বিপথে নিয়ে যায়। এই স্ত্রীলোকদের উপর পাপ বোঝাই করা আছে; তারা নানা কামনা-বাসনার দ্বারা পরিচালিত। তারা সব সময় শিক্ষার কথা শুনছে, কিন্তু কখনও ঈশ্বরের সত্যকে গভীরভাবে বুঝতে পারছে না। যেভাবে যান্নি ও যাম্ব্রি মোশির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল ঠিক সেইভাবে এই লোকেরাও সেই সত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। এদের মন জঘন্য এবং খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসের কোন প্রমাণ তাঁদের মধ্যে পাওয়া যায় নি। কিন্তু তারা আর এগিয়ে যেতে পারবে না, কারণ যান্নি ও যাম্ব্রির মূর্খতা যেমন সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ঠিক তেমনি তাদের মূর্খতাও সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তুমি আমার শিক্ষা, চালচলন, উদ্দেশ্য, বিশ্বাস, সহ্যগুণ, ভালবাসা ও ধৈর্য ভাল করেই লক্ষ্য করেছ। এছাড়া আন্তিয়খিয়ায়, ইকনিয়ে ও লুস্ত্রাতে আমি যে সব অত্যাচার ও কষ্টভোগ করেছি সেই সব অত্যাচারের কথাও তুমি জান, কিন্তু প্রভু সেই সব থেকে আমাকে রক্ষা করেছিলেন। আসলে যারা খ্রীষ্ট যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে চায় তারা অত্যাচারিত হবেই। কিন্তু দুষ্ট লোকেরা ও ভণ্ডেরা দিন দিন আরও খারাপ হবে। তারা অন্যদের ভুল পথে নিয়ে যাবে আর নিজেরাও ভুল পথে চালিত হবে। কিন্তু তুমি যা শিখেছ এবং নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করেছ তাতে স্থির থাক, কারণ কাদের কাছ থেকে তুমি সেগুলো শিখেছ তা তো তুমি জান। ছেলেবেলা থেকে তুমি পবিত্র শাস্ত্র থেকে শিক্ষালাভ করেছ। আর এই পবিত্র শাস্ত্রই তোমাকে খ্রীষ্ট যীশুর উপর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার পাবার জ্ঞান দিতে পারে। পবিত্র শাস্ত্রের প্রত্যেকটি কথা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারী, যাতে ঈশ্বরের লোক সম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত হয়ে ভাল কাজ করবার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। খ্রীষ্টের ফিরে আসা ও তাঁর রাজ্যের বিষয় মনে রেখে ঈশ্বরের সামনে এবং যিনি জীবিত ও মৃতদের বিচার করবেন সেই খ্রীষ্ট যীশুর সামনে আমি তোমাকে এই আদেশ দিচ্ছি- ঈশ্বরের বাক্য প্রচার কর; সময়ে হোক বা অসময়ে হোক, সব সময়েই প্রচারের জন্য প্রস্তুত থাক; খুব ধৈর্যের সংগে শিক্ষা দিয়ে লোকদের দোষ দেখিয়ে দাও, তাদের সাবধান কর ও উপদেশ দাও। এমন সময় আসবে যখন সত্য শিক্ষা লোকের সহ্য হবে না, বরং নিজেদের ইচ্ছা পূর্ণ করবার জন্য তারা এমন অনেক শিক্ষক যোগাড় করবে যারা তাদের খুশী করবার মত শিক্ষা দেবে। তারা ঈশ্বরের সত্যের বিষয় না শুনে গল্প-কথা শুনতে চাইবে। কিন্তু তুমি সব কিছুতে নিজেকে দমনে রাখ, কষ্ট সহ্য কর এবং খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করতে থাক, আর ঈশ্বর তোমাকে যে কাজ করতে দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ কর। আমাকে এখন উৎসর্গ হিসাবে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে; আমার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়েছে। খ্রীষ্টের পক্ষে আমি প্রাণপণে যুদ্ধ করেছি, আমার জন্য ঠিক করা পথের শেষ পর্যন্ত দৌড়েছি এবং খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসকে ধরে রেখেছি। তাই আমার জন্য সৎ জীবনের পুরস্কার তোলা রয়েছে। বিচার-দিনে ন্যায়বিচারক প্রভু আমাকে সেই পুরস্কার হিসাবে জয়ের মালা দান করবেন। তবে যে তিনি কেবল আমাকেই দান করবেন তা নয়, যারা তাঁর ফিরে আসবার জন্য আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করেছে তাদের সবাইকে দান করবেন। তুমি খুব চেষ্টা কর যাতে আমার কাছে শীঘ্র আসতে পার, কারণ দীমা এখনকার জগতকে ভালবেসে আমাকে ছেড়ে থিষলনীকীতে চলে গেছে। এছাড়া ক্রীষ্কেন্ত গালাতিয়াতে এবং তীত দালমাতিয়াতে গেছেন; কেবল লূক আমার কাছে আছেন। তুমি মার্ককে সংগে করে নিয়ে এস, কারণ আমার কাজে তাঁকে খুব দরকার। আমি তুখিককে ইফিষে পাঠিয়েছি। ত্রোয়াতে কার্পের কাছে আমি যে গায়ের কাপড়টা ফেলে এসেছি, আসবার সময় তুমি সেটা নিয়ে এস। তা ছাড়া গুটিয়ে-রাখা বইগুলো, বিশেষ করে যেগুলো চামড়ার উপর লেখা, সেগুলো সংগে করে নিয়ে এস। যে আলেক্‌সান্দর তামার কাজ করে সে আমার অনেক ক্ষতি করেছে। সে যা করেছে তার শোধ প্রভুই নেবেন। তুমিও তার বিষয়ে সাবধান থেকো, কারণ সে আমাদের প্রচারের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে লেগেছিল। প্রথম বার যখন আমার বিচার হয়েছিল তখন কেউ আমাকে সাহায্য করে নি, বরং সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল; তবে এটা যেন তাদের বিরুদ্ধে ধরা না হয়। কিন্তু প্রভু আমার সংগে ছিলেন এবং আমাকে শক্তি দান করেছিলেন। তার ফলে আমি সম্পূর্ণভাবে সুখবর প্রচার করতে পেরেছিলাম আর অযিহূদীরা সবাই তা শুনেছিল। ঈশ্বর আমাকে সিংহের মুখ থেকে রক্ষা করেছিলেন। প্রভু আমাকে সমস্ত মন্দ কাজ থেকে রক্ষা করবেন এবং নিরাপদে তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যে নিয়ে যাবেন। যুগে যুগে চিরদিন তাঁর গৌরব হোক। আমেন। প্রিষ্কিল্লা ও আকিলা এবং অনীষিফরের পরিবারকে আমার শুভেচ্ছা জানায়ো। ইরাস্ত করিন্থে রয়ে গেছেন এবং ত্রফিমকে আমি অসুস্থ অবস্থায় মিলীতে রেখে এসেছি। তুমি খুব চেষ্টা কর যাতে শীত পড়বার আগে এখানে আসতে পার। উবুল, পুদেন্ত, লীন, ক্লৌদিয়া এবং সব ভাইয়েরা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। প্রভু তোমার সংগে সংগে থাকুন। ঈশ্বরের দয়া তোমাদের অন্তরে থাকুক। আমি পৌল ঈশ্বরের দাস ও যীশু খ্রীষ্টের একজন প্রেরিত্‌ হয়েছি, যেন আমি ঈশ্বরের বাছাই করা লোকদের বিশ্বাসের পথে নিয়ে আসতে পারি, আর ঈশ্বরভক্তির সংগে যে সত্যের যোগ আছে সেই সত্যকে জানতে তাদের সাহায্য করতে পারি। অনন্ত জীবন পাবার আশা নিয়ে আমি খ্রীষ্টের সেবা করে যাচ্ছি। জগৎ সৃষ্ট হবার আগেই ঈশ্বর, যিনি মিথ্যা বলেন না, তিনি এই জীবন দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের আদেশ মত আমি যা প্রচার করি তার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাঁর বাক্য ঠিক সময়েই প্রকাশ করেছেন। খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসে যে আমার সংগে এক হয়ে গেছে, আমার সেই সত্যিকারের সন্তান তীতের কাছে আমি এই চিঠি লিখছি। পিতা ঈশ্বর ও আমাদের উদ্ধারকর্তা খ্রীষ্ট যীশু তোমাকে দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। ক্রীট দ্বীপে যে কাজ এখনও অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে তা ঠিক করবার জন্যই আমি তোমাকে ক্রীট দ্বীপে রেখে এসেছি। আমি তোমাকে যে আদেশ দিয়েছিলাম সেই অনুসারে প্রত্যেক শহরের মণ্ডলীতে প্রধান নেতাদের কাজে বহাল কোরো। মণ্ডলীর প্রধান নেতাকে এমন হতে হবে যেন কেউ তাঁকে দোষ দিতে না পারে। তাঁর মাত্র একজনই স্ত্রী থাকবে। তাঁর ছেলেমেয়েরা যেন খ্রীষ্টে বিশ্বাসী হয়, যেন তারা নিজেদের খুশীমত না চলে এবং অবাধ্য না হয়। ঈশ্বরের কাছ থেকে দায়িত্বভার পাওয়া লোক হিসাবে সেই পরিচালককে এমন হতে হবে যাতে কেউ তাঁর নিন্দা করতে না পারে। তিনি যেন একগুঁয়ে, রাগী, মাতাল বা বদ্‌মেজাজী না হন। অন্যায় লাভের দিকে যেন তাঁর ঝোঁক না থাকে; তার বদলে অতিথি সেবা ও দয়ার কাজ করতে তিনি যেন ভালবাসেন। তাঁর ভাল বিচারবুদ্ধি থাকবে, তিনি সৎ ও ঈশ্বরের বাধ্য হবেন এবং নিজেকে দমনে রাখবেন। ঈশ্বরের বিশ্বাসযোগ্য বাক্য, যা আমি শিক্ষা দিয়েছি, তাঁকে তা শক্ত করে ধরে রাখতে হবে, যেন সত্য শিক্ষার বিষয় তিনি প্রচার করতে পারেন এবং যারা বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাদের ভুল দেখিয়ে দিতে পারেন। এমন অনেক লোক আছে যারা অবাধ্য, যারা বাজে কথা বলে ও যারা ছলনা করে বেড়ায়। যারা সুন্নত করানোর উপর জোর দেয়, বিশেষ করে আমি তাদের কথাই বলছি। এই লোকদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া দরকার, কারণ অন্যায় লাভের জন্য তারা এমন শিক্ষা দেয় যা তাদের দেওয়া উচিত নয়; আর এইভাবে তারা কতগুলো পরিবারকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাদের নিজেদেরই একজন নবী এই কথা বলেছেন, “ক্রীট দ্বীপের লোকেরা বরাবরই মিথ্যাবাদী, বুনো পশুর মত এবং অলস ও পেটুক।” কথাটা সত্যি। এইজন্য খুব কড়াকড়ি ভাবে তাদের দোষ দেখিয়ে দাও যেন তারা খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাসকে ঠিকভাবে ধরে রাখে, আর যিহূদীদের গল্প-কথায় ও যারা ঈশ্বরের সত্যের কাছ থেকে ফিরে গেছে তাদের আদেশে কান না দেয়। যাদের অন্তর শুচি তাদের কাছে সব কিছুই শুচি, কিন্তু যাদের অন্তর নোংরা ও যারা অবিশ্বাসী তাদের কাছে কিছুই শুচি নয়; এমন কি, তাদের মন ও বিবেক পর্যন্ত নোংরা। মুখে তারা বলে তারা ঈশ্বরকে জানে, কিন্তু তাদের কাজ দ্বারা তারা তাঁকে অস্বীকার করে। তারা ঘৃণার যোগ্য ও অবাধ্য; তারা কোন ভাল কাজেরই উপযুক্ত নয়। তুমি এমনভাবে শিক্ষা দেবে যাতে তোমার কথার সংগে সত্য শিক্ষার মিল থাকে। যাঁরা বৃদ্ধ, তাঁদের বলবে যেন তাঁরা সব ব্যাপারে নিজেদের দমনে রাখেন; তাঁরা যেন সম্মান পাবার যোগ্য হন; তাঁদের যেন ভাল বিচারবুদ্ধি, সত্য বিশ্বাস, ভালবাসা ও ধৈর্যগুণ থাকে। তেমনি করে বয়স্কা স্ত্রীলোকদের বলবে, তাঁদের চালচলনে যেন ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি থাকে এবং তাঁরা যেন ভাল শিক্ষা দেন। পরের নিন্দা করা বা মাতাল হওয়া তাঁদের উচিত নয়। তাহলে তাঁরা যুবতী মেয়েদের শিখাতে পারবেন যেন তারা স্বামী ও ছেলেমেয়েদের ভালবাসে, নিজেদের দমনে রাখে, সতী থাকে, সংসারের দিকে খেয়াল করে, দয়ালু হয় এবং স্বামীর অধীনে থাকে, যাতে কেউ ঈশ্বরের বাক্যের অসম্মান করতে না পারে। তেমনি করে যুবকদের উপদেশ দাও যেন তারা নিজেদের দমনে রাখে। সব কিছুতেই তুমি তাদের কাছে ভাল কাজের একটা আদর্শ হও। তোমার শিক্ষার মধ্যে যেন সৎ উদ্দেশ্য থাকে, তাতে যেন হালকা মনোভাব না থাকে। কেউ যাতে তোমার দোষ ধরতে না পারে সেই রকম সত্য শিক্ষা দাও, যেন তোমাদের বিপক্ষের লোকেরা লজ্জা পায়, কারণ আমাদের বিষয়ে মন্দ বলবার তো তাদের কিছুই থাকবে না। যারা দাস, তাদের বলবে যেন সব ব্যাপারে তারা মনিবদের অধীনে থাকে, তাদের খুশী করতে চেষ্টা করে, কথার উপর কথা না বলে, আর মনিবদের জিনিস চুরি না করে, বরং তারা যে সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য তা প্রমাণ করে, যেন তারা আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের সম্বন্ধে যে শিক্ষা আছে তা সব দিক থেকে সুন্দর করে তুলতে পারে। ঈশ্বরের যে দয়ার দ্বারা পাপ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় তা সব মানুষের কাছেই প্রকাশিত হয়েছে। এই দয়াই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যেন আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীনতা ও জগতের কামনা-বাসনাকে অগ্রাহ্য করে এই জগতেই নিজেদের দমনে রেখে ঈশ্বরভক্তির সংগে সৎ জীবন কাটাই, আর আমাদের মহান ঈশ্বর এবং উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের মহিমাপূর্ণ প্রকাশের আনন্দ-ভরা আশা পুর্ণ হবার জন্যই আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করি। যীশু খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন, যেন সমস্ত পাপ থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারেন এবং তাতে এমন একদল লোককে শুচি করতে পারেন যারা কেবল তাঁরই হবে এবং যারা অন্যদের উপকার করতে আগ্রহী হবে। সেইজন্য পূর্ণ অধিকার নিয়ে তুমি এই সব বিষয়ে শিক্ষা দাও, উপদেশ দাও ও দোষ দেখিয়ে দাও। কেউ যেন তোমাকে তুচ্ছ না করে। ঈশ্বরের লোকদের মনে করিয়ে দাও যেন তারা শাসনকর্তা ও যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তাদের অধীনে থাকে, বাধ্য হয় ও লোকদের সব রকম উপকার করবার জন্য প্রস্তুত থাকে। তারা যেন কারও নিন্দা না করে বা ঝগড়াঝাঁটি না করে, বরং তারা যেন শান্ত স্বভাবের হয় এবং সকলের সংগে খুব নম্র ব্যবহার করে। আমরাও আগে বুদ্ধিহীন ও অবাধ্য ছিলাম, ভুল পথে চলতাম, আর সুখভোগ ও নানা রকম কামনা-বাসনার দাস ছিলাম। আমরা অন্যের প্রতি হিংসা করতাম এবং অনিষ্ট করবার চিন্তায় জীবন কাটাতাম। নিজেরা ঘৃণার যোগ্য হলেও আমরা একে অন্যকে ঘৃণা করতাম। কিন্তু যখন আমাদের উদ্ধারকর্তা ঈশ্বরের দয়া ও ভালবাসা প্রকাশিত হল তখন তিনি পাপ থেকে আমাদের উদ্ধার করলেন। কোন সৎ কাজের জন্য তিনি আমাদের উদ্ধার করেন নি, তাঁর করুণার জন্যই তা করলেন। পবিত্র আত্মার দ্বারা নতুন জন্ম দান করে ও নতুন ভাবে সৃষ্টি করে তিনি আমাদের অন্তর ধূয়ে পরিষ্কার করলেন, আর এইভাবেই তিনি আমাদের উদ্ধার করলেন। আমাদের উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তিনি খোলা হাতে পবিত্র আত্মাকে আমাদের দিলেন, যেন আমরা অনন্ত জীবনের আশ্বাস পেয়ে ঈশ্বরের সব কিছুর অধিকারী হই। এটা সম্ভব হয়েছে, কারণ ঈশ্বরের দয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছে। এই কথা বিশ্বাসযোগ্য। আমি চাই, তুমি এই সব বিষয়ের উপর জোর দাও, যাতে ঈশ্বরের উপরে যারা বিশ্বাস করেছে তারা অন্যদের উপকার করবার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখবার দিকে মন দেয়। মানুষের পক্ষে এই সব ভাল এবং উপকারী। মূর্খের মত তর্কাতর্কি, বংশ-তালিকা, ঝগড়া-বিবাদ ও আইন-কানুন নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে তুমি দূরে থাক, কারণ এগুলো করে কোন লাভ নেই; এ সবই অর্থহীন। যে লোক ভুল শিক্ষা দিয়ে দলাদলির সৃষ্টি করে তাকে প্রথমে একবার, পরে আর একবার সাবধান কোরো। এতে কাজ না হলে তার সংগে মেলামেশা একেবারেই বন্ধ করে দাও। তুমি তো জান যে, এই রকম লোকের মনের চিন্তা খারাপ। সে পাপী; সে নিজেকে নিজেই দোষী বলে প্রমাণ করে। আমি আর্তিমা কিম্বা তুখিককে তোমার কাছে পাঠালেই তুমি নীকপলিতে আমার কাছে আসবার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা কোরো, কারণ আমি নীকপলিতেই শীতকাল কাটাব বলে ঠিক করেছি। উকিল সীনা ও আপল্লোর যাত্রাপথের জন্য যতটা সম্ভব সাহায্য কোরো, যেন তাঁদের কোন কিছুর অভাব না হয়। অন্যদের উপকার করবার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে আমাদের লোকদের শিখতে হবে, যেন তারা অন্যদের অভাব মিটাতে পারে। এই রকম করলে তাদের জীবন ফলবান হয়ে উঠবে। আমার সংগে যাঁরা আছেন তাঁরা সবাই তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের জন্য যাঁরা আমাদের ভালবাসেন তাঁদের শুভেচ্ছা জানায়ো। তোমাদের সকলের উপর ঈশ্বরের দয়া থাকুক। আমি পৌল খ্রীষ্ট যীশুর বন্দী হয়েছি। আমি ও আমাদের বিশ্বাসী ভাই তীমথিয় আমাদের প্রিয় বন্ধু ও সহকর্মী ফিলীমনের কাছে, আমাদের বোন আপ্পিয়ার কাছে, আমাদের সহযোদ্ধা আর্খিপ্পের কাছে এবং তোমার বাড়ীতে যারা মণ্ডলী হিসাবে মিলিত হয় তাদের কাছে এই চিঠি লিখছি। আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের দয়া করুন ও শান্তি দান করুন। আমি সব সময় প্রার্থনায় তোমার কথা মনে করে তোমার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে থাকি, কারণ প্রভু যীশুর উপর তোমার বিশ্বাস ও ঈশ্বরের সব লোকদের প্রতি তোমার ভালবাসার কথা আমি শুনতে পাচ্ছি। আমি এই প্রার্থনা করি যে, তোমার বিশ্বাসের দরুন তোমার দান করবার মধ্য দিয়ে যেন খ্রীষ্ট গৌরব পান। এছাড়া খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত হয়ে আমরা যে সব আশীর্বাদ পেয়েছি তা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পেরে তোমার দান করবার কাজ যেন আরও বেড়ে যায়। ভাই, তোমার ভালবাসা দেখে আমি খুব আনন্দ ও উৎসাহ পেয়েছি, কারণ তুমি ঈশ্বরের লোকদের অন্তরে নতুন উৎসাহ জাগিয়ে তুলেছ। এইজন্য যদিও আমি খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে তোমাকে তোমার কর্তব্যের সম্বন্ধে খুব সাহসের সংগে আদেশ দিতে পারতাম, এক সময় ছিল যখন তোমার কাছে তার কোন মূল্য ছিল না, কিন্তু এখন সে তোমার ও আমার দু’জনের কাছেই মুল্যবান। যা হোক, আমি তাকে তোমার কাছে ফিরে পাঠাচ্ছি; সে আমার প্রাণের মতই প্রিয়। আমি তাকে আমার নিজের কাছেই রাখতে চেয়েছিলাম, যেন সুখবর প্রচার করবার দরুন আমার এই বন্দী অবস্থায় সে তোমার হয়ে আমার সেবা করতে পারে। কিন্তু তোমার অনুমতি ছাড়া আমি কিছুই করতে চাই নি, যেন জোর করে তোমার দয়া আদায় করতে না হয়, বরং তুমি যেন নিজে থেকেই দয়া কর। তুমি যাতে চিরকালের জন্য তাকে ফিরে পেতে পার, হয়তো সেইজন্যই সে অল্প কালের জন্য তোমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তুমি তাকে আর দাস হিসাবে পাবে না বরং দাসের চেয়ে বেশী, অর্থাৎ প্রিয় ভাই হিসাবে পাবে। সে আমার কাছে খুবই প্রিয়, কিন্তু মানুষ ও বিশ্বাসী ভাই হিসাবে তোমার কাছে আরও প্রিয়। সেইজন্য যদি তুমি আমাকে একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী বলে মনে কর তবে আমাকে যেভাবে গ্রহণ করতে ওনীষিমকেও ঠিক সেইভাবে গ্রহণ কর। যদি সে তোমার কোন ক্ষতি করে থাকে বা তোমার কাছে কোন বিষয়ে ঋণী থাকে তবে তা আমার ঋণ বলেই ধোরো। আমি পৌল নিজের হাতেই লিখছি যে, আমি সেই ঋণ শোধ করে দেব। অবশ্য এই কথা আমার বলবার দরকার নেই যে, খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাসের ব্যাপারে তুমি নিজেই আমার কাছে ঋণী আছ। ভাই, আমরা প্রভুর হয়েছি বলে আমি চাই যে, তুমি আমার একটা উপকার কর। বিশ্বাসী ভাই হিসাবে তুমি আমার অন্তরে নতুন উৎসাহ জাগিয়ে তোলো। তুমি আমার কথা মেনে নেবে জেনেই আমি তোমার কাছে এই চিঠি লিখছি। অবশ্য আমি জানি, আমি যা বলছি তুমি তার চেয়েও বেশী করবে। আর একটা কথা বলছি-অতিথিদের ঘরখানা আমার জন্য প্রস্তুত রেখো, কারণ আমি আশা রাখি যে, তোমাদের প্রার্থনার ফলে আমাকে তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ইপাফ্রা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন; তিনি খ্রীষ্ট যীশুর জন্য আমার সংগে বন্দী আছেন। এছাড়া মার্ক, আরিষ্টার্খ, দীমা ও লূক-আমার এই সহকর্মীরাও তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়া তোমাদের অন্তরে থাকুক। অনেক দিন আগে নবীদের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে নানা ভাবে অনেক বার অল্প অল্প করে কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই দিনগুলোর শেষে তিনি তাঁর পুত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে কথা বলেছেন। ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে সব কিছুর অধিকারী হওয়ার জন্য নিযুক্ত করলেন। পুত্রের মধ্য দিয়েই তিনি সব কিছু সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বরের সব গুণ সেই পুত্রের মধ্যেই রয়েছে; পুত্রই ঈশ্বরের পূর্ণ ছবি। পুত্র তাঁর শক্তিশালী বাক্যের দ্বারা সব কিছু ধরে রেখে পরিচালনা করেন। মানুষের পাপ দূর করবার পরে পুত্র স্বর্গে মহান ঈশ্বরের ডান পাশে বসলেন। তাঁর পিতার কাছ থেকে তিনি যে নাম পেয়েছেন তা যেমন স্বর্গদূতদের নামের চেয়ে মহান, তেমনি তিনি নিজেও স্বর্গদূতদের চেয়ে অনেক মহান হয়েছেন। ঈশ্বর কখনও কি কোন স্বর্গদূতকে এই কথা বলেছেন, “তুমি আমার পুত্র, আজই আমি তোমার পিতা হলাম”? আবার তিনি কি বলেছেন, “আমি হব তার পিতা আর সে হবে আমার পুত্র”? না, তিনি তা বলেন নি। ঈশ্বর তাঁর প্রধান সন্তানকে এই জগতে পাঠাবার সময় বলছেন, “ঈশ্বরের সব দূতেরা তাঁকে ঈশ্বরের সম্মান দিয়ে প্রণাম করুক।” স্বর্গদূতদের বিষয়ে ঈশ্বর বলছেন, “তিনি বাতাসকে তাঁর দূত করেছেন; জ্বলন্ত আগুনকে করেছেন তাঁর দাস।” কিন্তু পুত্রের বিষয়ে ঈশ্বর বলছেন, “হে ঈশ্বর, তোমার সিংহাসন চিরস্থায়ী; তোমার শাসন ন্যায়ের শাসন। তুমি ন্যায় ভালবাস আর অন্যায়কে ঘৃণা কর; সেইজন্য ঈশ্বর, তোমার ঈশ্বর, তোমার সংগীদের চেয়ে অনেক বেশী আনন্দ তেলের মত করে তোমার উপর ঢেলে দিয়েছেন।” ঈশ্বর আরও বলেছেন, “প্রভু, তুমি অনেক কাল আগেই পৃথিবীর ভিত্তি গেঁথেছিলে; মহাকাশও তোমার হাতে গড়া। সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু তুমি চিরকাল থাকবে। কাপড়ের মতই সেগুলো পুরানো হয়ে যাবে। সেগুলোকে তুমি কাপড়ের মতই গুটিয়ে রাখবে, আর কাপড়ের মত সেগুলোকে বদল করা হবে। কিন্তু তুমি একই রকম থাকবে, আর তোমার জীবনকাল কখনও শেষ হবে না।” ঈশ্বর কখনও কি কোন স্বর্গদূতকে এই কথা বলেছেন, “যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় রাখি, ততক্ষণ তুমি আমার ডানদিকে বস”? স্বর্গদূতেরা কি সকলেই সেবাকারী আত্মা নন? যারা পাপ থেকে উদ্ধার পাবে তাদের সেবা করবার জন্যই তো তাঁদের পাঠানো হয়। এইজন্য আমরা যা শুনেছি তা পালন করবার দিকে আমাদের আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত, যেন তা থেকে আমরা দূরে সরে না যাই। স্বর্গদূতদের দ্বারা যে বাক্য বলা হয়েছিল তার তো কোন নড়চড় হয় নি; তা ছাড়া যে কেউ ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করেছে এবং তাঁর কথা শুনতে চায় নি সে তার উচিত শাস্তি পেয়েছে। তাহলে পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য ঈশ্বর এই যে মহান ব্যবস্থা করেছেন তা যদি আমরা অবহেলা করি তবে কি করে আমরা রেহাই পাব? পাপ থেকে উদ্ধার পাবার কথা প্রথমে প্রভু যীশুই বলেছিলেন এবং যাঁরা তা শুনেছিলেন তাঁরা আমাদের কাছে সেই উদ্ধারের সত্যতা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। সেই সংগে ঈশ্বরও অনেক চিহ্ন এবং আশ্চর্য ও শক্তির কাজ দ্বারা আর নিজের ইচ্ছা অনুসারে পবিত্র আত্মার দেওয়া দান দ্বারা সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ভবিষ্যতের যে জগতের কথা আমরা বলছি, ঈশ্বর তা স্বর্গদূতদের অধীনে রাখেন নি। পবিত্র শাস্ত্রের মধ্যে এক জায়গায় কোন একজন এই কথা বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন: মানুষ এমন কি যে, তুমি তার বিষয় চিন্তা কর? মানুষের সন্তানই বা কি যে, তুমি তার দিকে মনোযোগ দাও? তুমি মানুষকে স্বর্গদূতদের চেয়ে সামান্য নীচু করেছ। রাজমুকুট হিসাবে তুমি তাকে দান করেছ গৌরব ও সম্মান, আর তার পায়ের তলায় রেখেছ সব কিছু। যখন ঈশ্বর সব কিছুই মানুষের অধীন করলেন তখন তিনি কোন কিছুই তা থেকে বাদ দিলেন না। অবশ্য সব কিছুই যে আমরা এখন মানুষের অধীনে দেখতে পাচ্ছি তা নয়, কিন্তু যীশুকে তো আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাঁকে স্বর্গদূতদের চেয়ে সামান্য নীচু করা হয়েছিল, যেন ঈশ্বরের দয়ায় প্রত্যেকটি মানুষের হয়ে তিনি নিজেই মরতে পারেন। তিনি কষ্টভোগ করে মরেছিলেন বলে জয়ের মালা হিসাবে গৌরব ও সম্মান তাঁকে দান করা হয়েছে। সব কিছু ঈশ্বরের জন্যই এবং সব কিছু তাঁরই দ্বারা হয়েছে। সেইজন্য অনেক সন্তানকে তাঁর মহিমার ভাগী করবার উদ্দেশ্যে উদ্ধারের ভিত্তি যীশুকে কষ্টভোগের মধ্য দিয়ে পূর্ণ করে তোলা ঈশ্বরের পক্ষে ঠিক কাজই হয়েছে। যিনি লোকদের পবিত্র করেন সেই যীশু নিজে এবং যাদের তিনি পবিত্র করেন সেই লোকেরা সকলেই ঈশ্বরের পরিবারের লোক। এইজন্য যীশু সেই লোকদের ভাই বলে ডাকতে লজ্জা পান না। পবিত্র শাস্ত্রে তিনি ঈশ্বরকে বলছেন, “ভাইদের কাছে আমি তোমার বিষয় প্রচার করব আর সমাজের মধ্যে তোমার গুণগান করব।” যীশু আবার বলছেন, “আমি ঈশ্বরের উপরে নির্ভর করব।” আর এক জায়গায় তিনি বলছেন, “এই দেখ, আমি এবং সেই সন্তানেরা যাদের ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন।” সেই সন্তানেরা হল রক্তমাংসের মানুষ। সেইজন্য যীশু নিজেও রক্তমাংসের মানুষ হলেন, যাতে মৃত্যুর ক্ষমতা যার হাতে আছে সেই শয়তানকে তিনি নিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শক্তিহীন করেন, আর মৃত্যুর ভয়ে যারা সারা জীবন দাসের মত কাটিয়েছে তাদের মুক্ত করেন। যীশু স্বর্গদূতদের সাহায্য করেন না, বরং অব্রাহামের বংশধরদেরই তিনি সাহায্য করেন। সেইজন্য যীশুকে সব দিকে থেকে তাঁর ভাইদের মত হতে হল, যেন তিনি একজন দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাপুরোহিত হিসাবে ঈশ্বরের সেবা করতে পারেন। এর উদ্দেশ্য হল, তিনি যেন নিজের মৃত্যুর দ্বারা মানুষের পাপ দূর করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করেন। তিনি নিজেই পরীক্ষা সহ্য করে কষ্টভোগ করেছিলেন বলে যারা পরীক্ষার সামনে দাঁড়ায় তাদের তিনি সাহায্য করতে পারেন। সেইজন্য পবিত্র ভাইয়েরা, তোমরা যারা স্বর্গের অধিকারী হবার জন্য তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছ, তোমরা যীশুর বিষয়ে মনোযোগী হও। যাঁর উপর আমরা বিশ্বাস করেছি তিনিই ঈশ্বরের সেই পাঠানো লোক এবং সেই মহাপুরোহিত। ঈশ্বরের পরিবারের লোকদের দেখাশোনার কাজে মোশি যেমন বিশ্বস্ত ছিলেন তেমনি যীশুকে যিনি নিযুক্ত করেছিলেন সেই ঈশ্বরের কাছে তিনিও বিশ্বস্ত ছিলেন। যে লোক ঘর তৈরী করে সে যেমন সেই ঘরের চেয়ে বেশী সম্মান লাভ করে, সেই অনুসারে ঈশ্বর যীশুকে মোশির চেয়ে আরও বেশী গৌরব পাবার অধিকারী বলে মনে করলেন। প্রত্যেকটা ঘর কেউ না কেউ তৈরী করে থাকে, কিন্তু ঈশ্বরই সব কিছু তৈরী করেছেন। সত্যিই মোশি ঈশ্বরের পরিবারে সেবাকারী হিসাবে বিশ্বস্ত ছিলেন, যেন ভবিষ্যতে যা বলা হবে তার সম্বন্ধে তিনি সাক্ষ্য দিতে পারেন। কিন্তু খ্রীষ্ট সেই পরিবারের ভার-পাওয়া পুত্র হিসাবে বিশ্বস্ত ছিলেন। আমাদের নিশ্চিত আশার ফলে মনে যে সাহস ও আনন্দ আসে, তাতে যদি আমরা শেষ পর্যন্ত স্থির থাকি তবে দেখা যাবে যে, আমরাই ঈশ্বরের পরিবারের লোক। সেইজন্য পবিত্র আত্মা বলেছিলেন, “আহা, আজ যদি তোমরা তাঁর কথায় কান দাও! তিনি বলছেন, তোমাদের পূর্বপুরুষদের মত তোমাদের অন্তর তোমরা কঠিন কোরো না। তারা মরু-এলাকার মধ্যে বিদ্রোহী হয়ে আমার পরীক্ষা করেছিল। তোমাদের পূর্বপুরুষেরা সেখানে আমাকে যাচাই করেছিল, আর চল্লিশ বছর ধরে সেই সময়কার লোকেরা আমার কাজ দেখেছিল। আমি তাদের উপর খুব বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, ‘এই লোকদের অন্তর বিপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে; তারা আমার পথ জানল না।’ সেইজন্য আমি ক্রোধে শপথ করে বলেছিলাম, ‘আমার দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় তারা যেতে পারবে না।’ ” ভাইয়েরা, সাবধান! তোমাদের মধ্যে কারও মন যেন মন্দ ও অবিশ্বাসী না হয়। এই রকম মন জীবন্ত ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। এর চেয়ে যতদিন পবিত্র শাস্ত্রের “আজ” কথাটা বলা যায়, তার প্রত্যেক দিনই তোমরা একে অন্যকে উৎসাহ দাও, যাতে তোমাদের কারও মন পাপের ছলনায় পড়ে কঠিন না হয়; কারণ প্রথমে যে নিশ্চয়তা আমাদের ছিল, যদি আমরা তাতে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকি তবে দেখা যাবে যে, আমরা খ্রীষ্টের সংগে অংশীদার হয়েছি। একটু আগে বলা হয়েছে, আহা, আজ যদি তোমরা তাঁর কথায় কান দাও! তিনি বলেছেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষদের মত তোমাদের অন্তর তোমরা কঠিন কোরো না।” কারা ঈশ্বরের কথা শুনেও তাঁকে বিরক্ত করেছিল? তারা কি সেই সব লোক নয় যাদের মোশি মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছিলেন? আর চল্লিশ বছর ধরে ঈশ্বর কাদের উপর বিরক্ত ছিলেন? তারা কি সেই সব লোক নয় যারা পাপ করেছিল এবং যাদের মৃতদেহ মরু-এলাকায় পড়ে ছিল? আর কাদের কাছেই বা ঈশ্বর শপথ করে বলেছিলেন যে, তারা তাঁর দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় যেতে পারবে না? তারা কি সেই সব লোক নয় যারা তাঁকে অবিশ্বাস করে অমান্য করেছিল? এতে দেখা যায় যে, তাদের অবিশ্বাসের জন্যই তারা ঈশ্বরের দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় যেতে পারে নি। ঈশ্বরের দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় যাবার যে প্রতিজ্ঞা ছিল সেই প্রতিজ্ঞা আমাদের জন্যও খাটে। সেইজন্য আমাদের সাবধান হতে হবে, যেন কাউকে সেই প্রতিজ্ঞা করা আশীর্বাদের অযোগ্য বলে দেখা না যায়। ইস্রায়েলীয়দের কাছে যেমন সুখবর প্রচার করা হয়েছিল তেমনি আমাদের কাছেও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সুখবরে ইস্রায়েলীয়দের কোনই লাভ হয় নি, কারণ তারা তা শুনে বিশ্বাস করে নি। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করেছি এবং তাঁর সেই প্রতিজ্ঞা করা বিশ্রামের জায়গায় এসেছি। এই বিশ্রাম সম্বন্ধে ঈশ্বর বলেছিলেন, “সেইজন্য আমি ক্রোধে শপথ করে বলেছিলাম, ‘আমার দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় তারা যেতে পারবে না।’ ” কিন্তু এতে কোন ভুল নেই যে, জগৎ সৃষ্টির পরে ঈশ্বরের কাজ শেষ হয়ে বিশ্রাম শুরু হয়েছিল। পবিত্র শাস্ত্রের এক জায়গায় সপ্তম দিন সম্বন্ধে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর সপ্তম দিনে কোন সৃষ্টির কাজ করেন নি।” তিনি আবার বলেছেন, “আমার দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় তারা যেতে পারবে না।” এখন এই কথা ঠিক যে, কিছু লোক তাঁর দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় যেতে পারবে; কিন্তু যে ইস্রায়েলীয়দের কাছে আগে সুখবর প্রচার করা হয়েছিল তাদের অবাধ্যতার জন্যই তারা ঈশ্বরের দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় যেতে পারে নি। এইজন্য ঈশ্বর যেমন আগে ইস্রায়েলীয়দের কাছে বলেছিলেন ঠিক তেমনি অনেক দিন পরে রাজা দায়ূদের মধ্য দিয়ে আবার বলেছেন, আহা, আজ যদি তোমরা তাঁর কথায় কান দাও! তিনি বলেছেন, “তোমাদের অন্তর তোমরা কঠিন কোরো না।” এই কথা বলে তাঁর দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় যাবার জন্য ঈশ্বর আর একটা সময় ঠিক করেছিলেন এবং তিনি তাঁর নাম দিয়েছিলেন আজ। যদি যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের সেই বিশ্রামের জায়গায় নিয়ে যেতেন তবে ঈশ্বর পরে আর একটা সময়ের কথা বলতেন না। তাহলে দেখা যায়, ঈশ্বরের লোকদের জন্য বিশ্রামের সুযোগ আছে, কারণ ঈশ্বর যেমন তাঁর সৃষ্টির কাজ শেষ করে বিশ্রাম নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি যে লোক ঈশ্বরের দেওয়া বিশ্রামের জায়গায় যায়, সেও তার কাজ থেকে বিশ্রাম পায়। এইজন্য এস, আমরা সেই বিশ্রাম পাবার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী হই। কেউ যেন সেই অবাধ্য ইস্রায়েলীয়দের মত ঈশ্বরকে অমান্য করে তাঁর দেওয়া বিশ্রাম থেকে বাদ না পড়ে। ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্যকর এবং দু’দিকেই ধার আছে এমন ছোরার চেয়েও ধারালো। এই বাক্য মানুষের অন্তর-আত্মা ও অস্থি-মজ্জার গভীরে কেটে বসে এবং মানুষের অন্তরের সমস্ত ইচ্ছা ও চিন্তা পরীক্ষা করে দেখে। সৃষ্টির কিছুই ঈশ্বরের কাছে লুকানো নেই। যাঁর কাছে আমাদের হিসাব দিতে হবে তাঁর চোখের সামনে সব কিছুই খোলা এবং প্রকাশিত। এইজন্য এস, আমরা খোলাখুলিভাবে ঈশ্বরের পুত্র যীশুর উপর আমাদের বিশ্বাসকে স্বীকার করে যাই, কারণ তিনিই আমাদের মহান মহাপুরোহিত যিনি স্বর্গে গিয়ে এখন ঈশ্বরের সামনে আছেন। আমাদের মহাপুরোহিত এমন কেউ নন যিনি আমাদের দুর্বলতার জন্য আমাদের সংগে ব্যথা পান না, কারণ আমাদের মত করে তিনিও সব দিক থেকেই পাপের পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন অথচ পাপ করেন নি। সেইজন্য এস, আমরা সাহস করে ঈশ্বরের দয়ার সিংহাসনের সামনে এগিয়ে যাই, যেন দরকারের সময় সেখান থেকে আমরা তাঁর করুণা ও দয়া পেতে পারি। লোকদের পক্ষ হয়ে ঈশ্বরের সেবা করবার জন্য প্রত্যেক মহাপুরোহিতকে মানুষের মধ্য থেকে বেছে নিয়ে নিযুক্ত করা হয়, যেন তিনি মানুষের পাপের জন্য পশু উৎসর্গ করেন এবং অন্যান্য জিনিসও উৎসর্গ করেন। যারা না জেনে পাপ করে এবং বিপথে যায় তাদের সংগে তিনি নরম ব্যবহার করতে পারেন, কারণ তাঁর মধ্যেও দুর্বলতা আছে। তিনি যেমন অন্য লোকদের পাপের জন্য পশু উৎসর্গ করেন তেমনি নিজে দুর্বল বলে নিজের পাপের জন্যও তাঁকে সেই উৎসর্গ করতে হয়। মহাপুরোহিত হবার সম্মান কেউ নিজে নিতে পারে না, কিন্তু ঈশ্বর যাঁকে ডাকেন তিনিই সেই সম্মান পান, যেমন মহাপুরোহিত হবার জন্য ঈশ্বর হারোণকে ডেকেছিলেন। কথাটা খ্রীষ্টের বেলায়ও খাটে। খ্রীষ্ট নিজের ইচ্ছায় মহাপুরোহিত হবার জন্য নিজেকে বড় করে তোলেন নি; ঈশ্বরই এই বলে তাঁকে সেই সম্মান দান করেছিলেন, তুমি আমার পুত্র, আজই আমি তোমার পিতা হলাম। তেমনি করে ঈশ্বর আর এক জায়গায় বলেছিলেন, তুমি চিরকালের জন্য মল্কীষেদকের মত পুরোহিত। যিনি তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারতেন সেই ঈশ্বরের কাছে যীশু এই জগতে থাকবার সময় জোরে চিৎকার করে কেঁদে অনুরোধ করেছিলেন এবং ভিক্ষা চেয়েছিলেন। তাঁর ভক্তির সংগে বাধ্যতা ছিল বলে ঈশ্বর তাঁর প্রার্থনা শুনেছিলেন। কিন্তু ঈশ্বরের পুত্র হয়েও তিনি দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে বাধ্যতা শিখেছিলেন। এইভাবে যখন তিনি পূর্ণতা পেলেন তখন তাঁর বাধ্য সকলের জন্য তিনি অনন্ত উদ্ধারের পথ হলেন। ঈশ্বর তাঁকে মল্কীষেদকের মত মহাপুরোহিত বলে ঘোষণা করলেন। এই বিষয়ে অনেক কথা আমাদের বলবার আছে কিন্তু তা বুঝিয়ে বলা শক্ত, কারণ আত্মিক সত্য তোমরা সহজে বুঝতে পার না। এত দিনে তোমাদের শিক্ষক হয়ে ওঠা উচিত ছিল, কিন্তু তার বদলে ঈশ্বরের বাক্যের গোড়ার কথাগুলোই আবার তোমাদের শিক্ষা দেবার জন্য শিক্ষকের দরকার হয়ে পড়েছ্‌ে। শক্ত খাবারের বদলে ছোট ছেলেমেয়েদের মত আবার তোমাদের দুধ খাওয়া দরকার হয়ে পড়েছে। যে দুধ খেয়ে বাঁচে সে তো এখনও শিশু, আর সৎ জীবন সম্বন্ধে যে শিক্ষা আছে তাতে সে কাঁচা। যাদের বয়স হয়েছে কেবল তারাই শক্ত খাবার খেতে পারে, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যের কঠিন শিক্ষাগুলো বুঝতে পারে। অনেক অভ্যাসের ফলে তারা ভাল-মন্দ বিচার করতে শিখেছে। এইজন্য খ্রীষ্টের বিষয়ে প্রথমে যে শিক্ষা পেয়েছি, এস, তা ছাড়িয়ে আমরা পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাই। নিষ্ফল কাজকর্ম থেকে মন ফিরানো, ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস, বিভিন্ন বাপ্তিস্মের বিষয়ে শিক্ষা, হাত-রাখা, মৃতদের জীবিত হয়ে ওঠা ও চিরকালের শাস্তি-এই সব গোড়ার কথা নিয়ে আমরা যেন আবার নতুন করে ভিত্তি না গাঁথি। অবশ্য ঈশ্বরের অনুমতি হলে আমরা পরিপূর্ণ হয়ে উঠব; কারণ যারা একবার আলো দেখেছে, স্বর্গীয় দানের স্বাদ ও পবিত্র আত্মার ছোঁয়া পেয়েছে, ঈশ্বরের সুন্দর বাক্যের স্বাদ পেয়েছে এবং যে যুগ আসছে তার শক্তির বিষয়ে জেনেছে, আর তার পরে খ্রীষ্টের কাছ থেকে ফিরে গেছে, তাদের আবার নতুন করে মন ফিরাবার পথে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। এটা সম্ভব নয়, কারণ তারা নিজেরাই ঈশ্বরের পুত্রকে আবার ক্রুশে দিচ্ছে এবং সকলের সামনে তাঁকে অসস্মান করছে। যে মাটি বার বার বৃষ্টির জল চুষে নিয়ে চাষীদের দরকারী শাক-সব্‌জী জন্মায় সেই মাটি ঈশ্বরের আশীর্বাদ পায়। কিন্তু যে মাটি কাঁটাঝোপ আর শিয়ালকাঁটা জন্মায় সেই মাটি অকেজো হয়ে যায় এবং তাতে অভিশাপ পড়বার ভয় থাকে। শেষে লোকে তা পুড়িয়ে ফেলে। প্রিয় বন্ধুরা, যদিও আমরা এই সব কথা বলছি তবুও আমরা বিশ্বাস করি যে, তোমাদের অবস্থা ঐ রকম নয়; পাপ থেকে উদ্ধারের ফল তোমাদের জীবনে দেখা যাচ্ছে। ঈশ্বর ন্যায়বিচারক; তাই তোমাদের কাজ আর তাঁর লোকদের সেবা-যত্ন করে তোমরা তাঁকে যে ভালবাসা দেখিয়েছ এবং দেখাচ্ছ, তা তিনি ভুলে যাবেন না। আমরা চাই, তোমরা প্রত্যেকে যেন শেষ পর্যন্ত একই রকম আগ্রহ দেখাও। তাতে তোমরা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হবে যে, তোমাদের আশা পূর্ণ হবে। আমরা চাই না তোমরা অলস হও; আমরা চাই, যারা বিশ্বাস ও অটল ধৈর্যের দ্বারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা করা আশীর্বাদের অধিকারী হয় তোমরা তাদের মত হও। ঈশ্বর যখন অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তখন তিনি নিজের নামেই শপথ করেছিলেন, কারণ তাঁর চেয়ে বড় এমন আর কেউ নেই যার নামে তিনি শপথ করতে পারেন। তিনি এই বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “আমি নিশ্চয়ই তোমাকে আশীর্বাদ করব এবং তোমার বংশ বাড়াব।” এইজন্য অব্রাহাম যখন অটলভাবে ধৈর্য ধরলেন তখন ঈশ্বর যা দিতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা তিনি পেলেন। নিজের চেয়ে যিনি মহান তাঁর নামেই মানুষ শপথ করে। তাতে সেই শপথ এই নিশ্চয়তা দান করে যে, যা বলা হয়েছে তা সত্যি, আর এতে সব গোলমাল থেমে যায়। ঈশ্বর যা দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যারা তা পাবে তাদের তিনি এই শপথের মধ্য দিয়ে খুব স্পষ্ট করে দেখাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি যা ঠিক করেছেন তার আর বদল হয় না। এইজন্য তিনি শপথের দ্বারা প্রমাণ করলেন যে, তিনি যা ঠিক করেছেন তা হবেই হবে। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা ও শপথ কখনও বদলায় না। ঈশ্বর, যাঁর পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভব নয়, তিনিই এই প্রতিজ্ঞা ও শপথ করেছেন, যেন আমাদের সামনে যে আশা আছে তা আঁকড়ে ধরবার জন্য দৌড়াতে গিয়ে আমরা প্রচুর উৎসাহ পাই। এই আশা আমাদের জীবনে নোংগরের মত নিশ্চিত ও স্থির, আর তা মহাপবিত্র স্থানের পর্দার পিছনে, অর্থাৎ ঈশ্বরের সামনে গিয়ে পৌঁছায়। যীশুই আমাদের হয়ে আমাদের আগে সেই জায়গায় গেছেন। তিনি চিরকালের জন্য মল্কীষেদকের মত মহাপুরোহিত হয়েছেন। এই মল্কীষেদক শালেমের রাজা ও মহান ঈশ্বরের পুরোহিত ছিলেন। অব্রাহাম যখন রাজাদের হারিয়ে দিয়ে ফিরে আসছিলেন তখন তাঁর সংগে এই মল্কীষেদকের দেখা হয়েছিল। মল্কীষেদক অব্রাহামকে আশীর্বাদ করেছিলেন, আর অব্রাহাম সব জিনিসের দশ ভাগের এক ভাগ তাঁকে দিয়েছিলেন। মল্কীষেদক শব্দটার অর্থ হল ন্যায়ের রাজা। মল্কীষেদক আবার শালেমেরও রাজা ছিলেন, আর তার অর্থ হল শান্তির রাজা। মল্কীষেদকের মা-বাবা বা কোন বংশ-তালিকা ছিল না। ঈশ্বরের পুত্রের মত তাঁর জীবনের আরম্ভও ছিল না, শেষও ছিল না; তিনি চিরকালের পুরোহিত। দেখ, মল্কীষেদক কত মহান! আমাদের মহান পূর্বপুরুষ অব্রাহামও তাঁকে সব কিছুর দশ ভাগের এক ভাগ দিয়েছিলেন। লেবির বংশের মধ্যে যাঁরা পুরোহিত হন, ইস্রায়েলীয়দের কাছ থেকে, অর্থাৎ তাঁদের ভাইদের কাছ থেকে আইন মত দশ ভাগের এক ভাগ তাঁদের আদায় করতে হয়। এই ভাইয়েরা অব্রাহামের বংশধর হলেও তা করতে হয়। কিন্তু এই মল্কীষেদক লেবির বংশধর না হয়েও অব্রাহামের কাছ থেকে দশ ভাগের এক ভাগ আদায় করেছিলেন এবং যাঁর কাছে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই অব্রাহামকে আশীর্বাদও করেছিলেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আশীর্বাদ যে পায় তার চেয়ে যিনি আশীর্বাদ করেন তিনিই মহান। একদিকে দেখা যাচ্ছে, মৃত্যুর অধীন লেবীয়েরাই দশ ভাগের এক ভাগ আদায় করে; কিন্তু অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি জীবিত আছেন বলে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে তিনি, অর্থাৎ মল্কীষেদকই দশ ভাগের এক ভাগ আদায় করছেন। যাঁরা পুরোহিতের কাজ করতেন সেই লেবির বংশধরদের কাজের উপর ভিত্তি করে ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের তাঁর আইন-কানুন দিয়েছিলেন। লেবির বংশের পুরোহিতদের কাজের মধ্য দিয়ে যদি পূর্ণতা লাভ করা যেত, তবে প্রথম লেবীয় পুরোহিত হারোণের বদলে মল্কীষেদকের মত অন্য আর একজন পুরোহিতের আসবার কি দরকার ছিল? যখন পুরোহিতের পদ বদলানো হয় তখন আইন-কানুনও বদলাবার দরকার হয়। যাঁর বিষয়ে আমি এই সব কথা বলছি সেই যীশু লেবির বংশ থেকে আসেন নি বরং অন্য এক বংশ থেকে এসেছিলেন। সেই বংশের কেউ কখনও পুরোহিত হিসাবে বেদীর উপর পশু উৎসর্গ করেন নি। এটা স্পষ্ট যে, আমাদের প্রভু যিহূদার বংশ থেকে এসেছিলেন। এই বংশ থেকে কোন লোক যে পুরোহিত হবে সেই কথা মোশি কখনও বলেন নি। তাহলে যখন মল্কীষেদকের মত আর একজন পুরোহিত উপস্থিত হয়েছেন তখন আমরা যা বলেছি তা আরও পরিষ্কার ভাবে বুঝা যাচ্ছে। তাঁর এই পুরোহিত হবার ব্যাপার বংশ সম্বন্ধে কোন নিয়মের উপর নির্ভর করে না, তা তাঁর ধ্বংসহীন জীবনের শক্তির উপর নির্ভর করে। পবিত্র শাস্ত্র এই সাক্ষ্য দেয়, তুমি চিরকালের জন্য মল্কীষেদকের মত পুরোহিত। যীশুর পুরোহিত-পদ ঈশ্বর শপথ করে ঠিক করেছিলেন। লেবির বংশধরেরা পুরোহিত হবার সময় ঈশ্বর কোন শপথ করেন নি, কিন্তু তিনি যীশুকে মহাপুরোহিত করবার সময় শপথ করেছিলেন। পবিত্র শাস্ত্রে এই সম্বন্ধে লেখা আছে, প্রভু শপথ করেছেন, “তুমি চিরকালের জন্য পুরোহিত।” এই বিষয়ে তিনি তাঁর মন বদলাবেন না। এর থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, যীশু আরও মহান একটা ব্যবস্থার জামিন হয়েছেন। লেবীয়দের মধ্যে অনেকেই পুরোহিত হয়েছিলেন, কারণ মৃত্যুর দ্বারা বাধা পেয়ে তাঁরা কেউ চিরকাল পুরোহিতের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন নি। কিন্তু যীশু চিরকাল জীবিত আছেন বলে তাঁর পুরোহিত- পদ কখনও বদলাবে না। এইজন্য যারা তাঁর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের কাছে আসে তাদের তিনি সম্পূর্ণ ভাবে উদ্ধার করতে পারেন, কারণ তাদের পক্ষে অনুরোধ করবার জন্য তিনি সব সময় জীবিত আছেন। এই রকম একজন পবিত্র, দোষশুন্য ও খাঁটি মহাপুরোহিতেরই আমাদের দরকার ছিল। তিনি পাপী মানুষের চেয়ে আলাদা এবং ঈশ্বর তাঁকে আকাশের চেয়েও উপরে তুলেছেন। অন্যান্য মহাপুরোহিতেরা যেমন প্রথমে নিজের ও পরে অন্যদের পাপের জন্য পশু উৎসর্গ করতেন, সেইভাবে এই পুরোহিতের তা করবার দরকার ছিল না, কারণ তিনি চিরকালের মত একবারই নিজের জীবন উৎসর্গ করে সেই কাজ শেষ করেছেন। আইন-কানুন দুর্বল-মনা লোকদেরই মহাপুরোহিতের পদে নিযুক্ত করে; কিন্তু আইন- কানুনের পরে যে শপথ করা হয়েছিল সেই শপথ চিরকালের জন্য পূর্ণতা পাওয়া ঈশ্বরের পুত্রকে মহাপুরোহিতের পদে নিযুক্ত করেছে। আমরা যা বলছি তার আসল কথা হল এই যে, আমাদের এমন একজন মহাপুরোহিত আছেন যিনি স্বর্গে মহান ঈশ্বরের সিংহাসনের ডান দিকে বসেছেন। তিনি মহাপবিত্র স্থানে, অর্থাৎ আসল উপাসনা-তাম্বুতে ঈশ্বরের সেবা করছেন। সেই উপাসনা-তাম্বু মানুষে খাটায় নি, তা প্রভুই খাটিয়েছেন। প্রত্যেক মহাপুরোহিত পশু-উৎসর্গ ও অন্যান্য জিনিস উৎসর্গ করবার জন্য নিযুক্ত হন, তাই এই মহাপুরোহিতেরও কোন কিছু উৎসর্গ করবার দরকার। কিন্তু তিনি যদি এখন এই জগতে থাকতেন তবে পুরোহিত হতে পারতেন না, কারণ এখানে আইন-কানুন মতে উৎসর্গ করবার জন্য পুরোহিত তো আছেনই। পুরোহিত হিসাবে তাঁদের এই কাজ স্বর্গের কাজের মাত্র একটা নমুনা ও ছায়া। সেইজন্য মোশি যখন সেই উপাসনা-তাম্বুটা তৈরী করতে যাচ্ছিলেন তখন ঈশ্বর এই বলে মোশিকে সতর্ক করেছিলেন, “সিনাই পাহাড়ের উপরে তোমাকে যে নমুনা দেখানো হল ঠিক সেইমতই যেন সব কিছু তৈরী করা হয় তা দেখো।” কিন্তু এখন আমরা দেখছি, যীশু যে পুরোহিতের কাজ পেয়েছেন তা ঐ পুরোহিতদের কাজের চেয়েও অনেক উপরে, যেমন করে যে ব্যবস্থার মধ্যস্থ তিনি হয়েছেন সেই ব্যবস্থা আগের ব্যবস্থার চেয়েও অনেক উপরে; কারণ এই ব্যবস্থা আরও ভাল ভাল প্রতিজ্ঞার উপর নির্ভর করছে। প্রথম ব্যবস্থাটা যদি নিখুঁত হত তবে তো দ্বিতীয় ব্যবস্থার কোন দরকার হত না। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর লোকদের দোষ দেখাবার জন্য পবিত্র শাস্ত্রে বলেছেন: প্রভু বলেন, “সময় আসছে যখন আমি ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকদের জন্য একটা নতুন ব্যবস্থা স্থাপন করব। মিসর দেশ থেকে তাদের পূর্বপুরুষদের আমি হাত ধরে বের করে আনবার সময় তাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলাম এই নতুন ব্যবস্থা সেই ব্যবস্থার মত হবে না। তারা আমার সেই ব্যবস্থা মত চলে নি বলে আমি তাদের দিকে মনোযোগ দিই নি।” প্রভু এই কথা বলেন। প্রভু আরও বলেন, “পরে আমি ইস্রায়েলীয়দের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করব। তা হল, আমার আইন-কানুন আমি তাদের মনের মধ্যে রাখব এবং তাদের অন্তরেও তা লিখে রাখব। আমি তাদের ঈশ্বর হব আর তারা আমারই লোক হবে। নিজের প্রতিবেশীকে এবং নিজের ভাইকে কেউ এই বলে আর কখনও শিক্ষা দেবে না, ‘প্রভুকে চিনতে শেখ,’ কারণ সবাই আমাকে চিনবে। সেইজন্য আমি তাদের অন্যায় ক্ষমা করব, তাদের পাপ আর কখনও মনে রাখব না।” ঈশ্বর এই ব্যবস্থাকে নতুন ঘোষণা করে আগের ব্যবস্থাকে পুরানো বলে অচল করে দিলেন। যা পুরানো এবং অনেক দিনের বলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা শীঘ্রই অদৃশ্য হয়ে যাবে। ঈশ্বরের সেবা ও উপাসনার জন্য প্রথম ব্যবস্থাটিতে কতগুলো নিয়ম দেওয়া হয়েছিল এবং এই জগতে উপাসনার জন্য বিশেষ একটা জায়গার কথাও তাতে ছিল। আর সেই অনুসারে একটা তাম্বু তৈরী করা হয়েছিল। সেই তাম্বুর প্রথম অংশে থাকত বাতিদান, টেবিল এবং সম্মুখ-রুটি। এই প্রথম অংশটির নাম ছিল পবিত্র স্থান। দ্বিতীয় পর্দার পিছনে তাম্বুটির আর একটা অংশ ছিল; তার নাম ছিল মহাপবিত্র স্থান। এই অংশে ধূপ জ্বালাবার জন্য সোনার বেদী ও সাক্ষ্য-সিন্দুক ছিল। তার চারদিক সোনা দিয়ে মুড়ানো ছিল। তার মধ্যে ছিল সোনার পাত্রে রাখা মান্না, হারোণের যে লাঠিতে ফুল ফুটেছিল সেই লাঠিটা, আর ব্যবস্থা-লেখা দু’টা পাথরের ফলক। সেই সিন্দুকের উপরে ঈশ্বরের মহিমায় পূর্ণ দু’টি সোনার করূব ছিল। তাদের ডানাগুলো সেই সিন্দুকের ঢাকনার উপরে মেলে দেওয়া ছিল। এই ঢাকনার উপর পাপ ঢাকা দেওয়া হত। অবশ্য এই সবের খুঁটিনাটির কথা বলা এখন সম্ভব নয়। এইভাবে সব কিছু তৈরী হবার পর পুরোহিতেরা প্রায়ই তাম্বুর প্রথম অংশটিতে ঢুকে ঈশ্বরের সেবা করতেন; কিন্তু দ্বিতীয় অংশটিতে, অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানে কেবলমাত্র মহাপুরোহিতই ঢুকতেন। বছরে মাত্র একবারই তিনি উৎসর্গ করা পশুর রক্ত নিয়ে সেখানে ঢুকতেন। তাঁর নিজের পাপের জন্য এবং লোকেরা না জেনে যে সব পাপ করেছে তার জন্য তিনি এই রক্ত উৎসর্গ করতেন। এতে পবিত্র আত্মা দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, যতদিন এই উপাসনা-তাম্বুটা থাকবে ততদিন সেই মহাপবিত্র স্থানে ঢুকবার পথ খোলা থাকবে না। বর্তমান কালের জন্য এটা একটা চিহ্ন যা আমাদের বলে দিচ্ছে যে, উৎসর্গ করা পশু এবং অন্যান্য জিনিস উপাসনাকারীর বিবেককে পরিষ্কার করতে পারে না। সেগুলো কেবল দেহের ব্যাপার, অর্থাৎ খাওয়া- দাওয়া ও ধর্মের নিয়ম মত শুচি হবার ব্যাপার মাত্র। কেবল সব কিছু সংশোধনের সময় পর্যন্ত সেগুলো কাজে লেগেছিল। কিন্তু খ্রীষ্ট এসেছিলেন ভবিষ্যতের সব মংগলের বিষয়ের মহাপুরোহিত হয়ে। আরও মহৎ ও আরও ভাল উপাসনা-তাম্বুতে ঈশ্বরের সেবা করবার জন্য তিনি এসেছিলেন। এই তাম্বু মানুষের হাতে তৈরী নয়, অর্থাৎ তা জগতের কোন জিনিস নয়। ছাগল ও বাছুরের রক্ত নিয়ে খ্রীষ্ট সেই মহাপবিত্র স্থানে ঢোকেন নি। তিনি নিজের রক্ত নিয়ে একবারই সেখানে ঢুকেছিলেন। এইভাবে তিনি চিরকালের জন্য পাপ থেকে মুক্তির উপায় করলেন। যারা অশুচি হত তাদের উপর ছাগল ও ষাঁড়ের রক্ত বা বাছুর- পোড়ানো ছাই ছিটানো হত; তাতে তাদের বাইরের দেহটাই কেবল শুচি হয়ে পরিষ্কার হত। কিন্তু যিনি অনন্ত পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের কাছে নিজেকে নিখুঁত উৎসর্গ হিসাবে দান করলেন সেই যীশুর রক্ত আমাদের বিবেককে নিষ্ফল কাজকর্ম থেকে আরও কত না বেশী করে শুচি করবে, যাতে আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের সেবা করতে পারি! ঈশ্বর যাদের ডেকে চিরকালের অধিকার দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তারা যেন তা পায় সেইজন্যই খ্রীষ্ট একটা নতুন ব্যবস্থার মধ্যস্থ হয়েছেন। এই অধিকার পাওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়েছে, কারণ প্রথম ব্যবস্থা বহাল থাকবার সময়ে মানুষ যে সব পাপ করেছিল সেই সব পাপের হাত থেকে মানুষকে মুক্ত করবার মূল্য হিসাবে খ্রীষ্ট প্রাণ দিয়েছিলেন। উইল কাজে লাগাতে হলে উইল যে করেছে তার মৃত্যুর প্রমাণের দরকার, কারণ মানুষ মরলে পরেই উইল কাজে লাগানো যায়। যে উইল করেছে সে বেঁচে থাকতে সেই উইল কাজে লাগানো যায় না। ঠিক সেইভাবে প্রথম ব্যবস্থাটিও রক্ত ছাড়া কাজে লাগানো হয় নি। সব লোকদের কাছে আইন-কানুনের প্রত্যেকটি আদেশ ঘোষণা করবার পর মোশি বাছুর ও ছাগলের রক্ত নিলেন এবং তার সংগে জল মিশিয়ে লাল রংগে রাংগানো ভেড়ার লোম আর এসোব গাছের ডাল দিয়ে তা আইন- কানুনের বইয়ের উপরে ও লোকদের উপরে ছিটিয়ে দিলেন। তা করবার সময়ে তিনি বলেছিলেন, “এই সেই ব্যবস্থার রক্ত, যে ব্যবস্থা অনুসারে কাজ করতে ঈশ্বর তোমাদের আদেশ দিয়েছেন।” উপাসনা-তাম্বু এবং উপাসনার কাজে ব্যবহার করবার সব জিনিসের উপরেও মোশি ঐ একইভাবে রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। মোশির আইন-কানুন মতে প্রায় প্রত্যেক জিনিসই রক্তের দ্বারা শুচি করা হয় এবং রক্তপাত না হলে পাপের ক্ষমা হয় না। যা স্বর্গীয় জিনিসের নকলমাত্র সেগুলো পশু উৎসর্গের দ্বারা শুচি করবার দরকার ছিল কিন্তু যা আসলেই স্বর্গীয় জিনিস সেগুলো শুচি করবার জন্য আরও মহান উৎসর্গের দরকার। আসল পবিত্র স্থানের নকল হিসাবে মানুষের হাতে তৈরী কোন পবিত্র স্থানে খ্রীষ্ট ঢোকেন নি, বরং তার বদলে তিনি স্বর্গে ঢুকেছেন যেন তিনি আমাদের হয়ে ঈশ্বরের সামনে এখন উপস্থিত হতে পারেন। মহাপুরোহিত পশুর রক্ত নিয়ে যেমন প্রত্যেক বছর মহাপবিত্র স্থানে ঢোকেন, খ্রীষ্ট নিজেকে বারবার উৎসর্গ করবার জন্য সেইভাবে স্বর্গে ঢোকেন নি। তা-ই যদি করতে হত তবে জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে আরম্ভ করে তাঁকে অনেকবারই কষ্টভোগ করে মরতে হত; কিন্তু এখন সমস্ত যুগের শেষে তিনি একবারই প্রকাশিত হয়েছেন যেন নিজেকে উৎসর্গ করে তিনি পাপ দূর করতে পারেন। ঈশ্বর ঠিক করে রেখেছেন যে, প্রত্যেক মানুষ একবার মরবে এবং তার পরে তার বিচার হবে। ঠিক সেইভাবে অনেক লোকের পাপের বোঝা বইবার জন্য খ্রীষ্টকেও একবারই উৎসর্গ করা হয়েছে। তিনি দ্বিতীয় বার আসবেন, কিন্তু তখন পাপের জন্য মরতে আসবেন না, বরং যারা তাঁর জন্য আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করে আছে তাদের সম্পূর্ণ ভাবে উদ্ধার করবার জন্য আসবেন। আইন-কানুনের মধ্যে যা আছে তা ভবিষ্যতের সব মংগলের বিষয়ের ছায়ামাত্র; তাতে সত্যিকারের মহান বিষয়গুলো নেই। সেইজন্য যারা ঈশ্বরের উপাসনা করতে আসে আইন-কানুন কখনও বছরের পর বছর এই একই রকম ভাবে পশু-উৎসর্গের দ্বারা তাদের পূর্ণতা দান করতে পারে না। আইন- কানুন যদি তাদের পূর্ণতা দান করতেই পারত তবে তো পশু-উৎসর্গ বন্ধ হয়ে যেত, কারণ উপাসনাকারীরা যদি একবারেই শুচি হতে পারত তাহলে পাপের জন্য আর নিজেদের দোষী মনে করত না। কিন্তু এই পশু-উৎসর্গগুলো প্রত্যেক বছরই নিজেদের পাপের কথা তাদের মনে করিয়ে দেয়, কারণ ষাঁড় ও ছাগলের রক্ত কখনই পাপ দূর করতে পারে না। সেইজন্য খ্রীষ্ট এই জগতে আসবার সময় ঈশ্বরকে বলেছিলেন, “পশু ও অন্যান্য উৎসর্গ তুমি চাও না, কিন্তু আমার জন্য একটা দেহ তুমি তৈরী করেছ। পোড়ানো উৎসর্গে এবং পাপের জন্য উৎসর্গে তুমি সন্তুষ্ট হও নি। পরে আমি বলেছিলাম, ‘এই যে, আমি এসেছি; শাস্ত্রে আমার আসার বিষয় লেখা আছে। হে ঈশ্বর, তোমার ইচ্ছা পালন করতে আমি এসেছি।’ ” উপরের কথাগুলোর মধ্যে প্রথমে খ্রীষ্ট বলেছেন, “পশু ও অন্যান্য উৎসর্গ, পোড়ানো-উৎসর্গ ও পাপের জন্য উৎসর্গ তুমি চাও নি এবং তাতে সন্তুষ্টও হও নি।” যদিও এই উৎসর্গগুলো আইন-কানুনের আদেশ মতই করা হত তবুও তিনি এই কথা বলেছিলেন। তারপর খ্রীষ্ট বলেছেন, “দেখ, আমি তোমার ইচ্ছা পালন করতে এসেছি।” দ্বিতীয় ব্যবস্থাটা বহাল করবার জন্য তিনি আগের ব্যবস্থাটা বাতিল করে দিলেন। ঈশ্বরের সেই ইচ্ছামতই যীশু খ্রীষ্টের দেহ একবারই উৎসর্গ করবার দ্বারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আমাদের আলাদা করা হয়েছে। প্রত্যেক পুরোহিত প্রত্যেক দিন দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের সেবা করেন ও বারবার একইভাবে উৎসর্গ করেন, কিন্তু এই রকম উৎসর্গ কখনও পাপ দূর করতে পারে না। যীশু কিন্তু পাপের জন্য চিরকালের মত একটি মাত্র উৎসর্গ করে ঈশ্বরের ডান দিকে বসলেন। আর তখন থেকে যতদিন না তাঁর শত্রুদের তাঁর পায়ের তলায় রাখা হয় ততদিন পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করছেন, কারণ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে যাদের আলাদা করা হয়েছে ঐ একটি উৎসর্গের দ্বারা তিনি চিরকালের জন্য তাদের পূর্ণতা দান করেছেন। পবিত্র আত্মাও এই বিষয়ে আমাদের কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। প্রথমে তিনি বলেছেন, প্রভু বলেন, “পরে আমি তাদের জন্য যে ব্যবস্থা স্থাপন করব তা হল, আমার আইন-কানুন আমি তাদের অন্তরে রাখব এবং তাদের মনের মধ্যে তা লিখে রাখব।” এর পরে পবিত্র আত্মা বলেছেন, “আমি তাদের পাপ ও অন্যায় আর কখনও মনে রাখব না।” তাই ঈশ্বর যখন পাপ ও অন্যায় ক্ষমা করেন তখন পাপের জন্য উৎসর্গ বলে আর কিছু নেই। ভাইয়েরা, যীশু খ্রীষ্টের রক্তের গুণে সেই মহাপবিত্র স্থানে ঢুকবার সাহস আমাদের আছে। খ্রীষ্ট আমাদের জন্য একটা নতুন ও জীবন্ত পথ খুলে দিয়েছেন, যেন আমরা পর্দার মধ্য দিয়ে, অর্থাৎ তাঁর দেহের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হতে পারি। এছাড়া আমাদের একজন মহান পুরোহিতও আছেন, যাঁর উপরে ঈশ্বরের পরিবারের লোকদের ভার দেওয়া হয়েছে। সেইজন্য বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে যে নিশ্চয়তা আসে, এস, আমরা সেই পরিপূর্ণ নিশ্চয়তায় খাঁটি অন্তরে ঈশ্বরের সামনে যাই; কারণ দোষী বিবেকের হাত থেকে আমাদের অন্তরকে রক্ত ছিটিয়ে শুচি করা হয়েছে এবং পরিষ্কার জল দিয়ে আমাদের দেহকে ধোওয়া হয়েছে। বিশ্বাসী হিসাবে আমাদের যে আশা আছে, এস, আমরা স্থির হয়ে তার কথা স্বীকার করতে থাকি, কারণ যিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি বিশ্বাসযোগ্য। এস, আমরা একে অন্যের সম্বন্ধে চিন্তা করি যেন আমরা ভালবাসতে ও ভাল কাজ করতে একে অন্যকে উৎসাহ দিতে পারি। কোন কোন লোকের যেমন অভ্যাস আছে তাদের মত আমরা যেন সভায় একসংগে মিলিত হওয়া বাদ না দিই, বরং খ্রীষ্টের আসবার দিন যতই কাছে আসবে ততই যেন আমরা একে অন্যকে আরও উৎসাহ দিতে থাকি। ঈশ্বরের সত্যকে জানবার পরে যদি আমরা ইচ্ছা করে পাপ করতে থাকি তবে পাপের জন্য আমাদের আর কোন উৎসর্গ নেই; আছে কেবল বিচারের জন্য ভীষণ ভয়ে অপেক্ষা করে থাকা এবং ঈশ্বরের শত্রুদের ছাই করে ফেলবার মত জ্বলন্ত ক্রোধ। কেউ মোশির আইন-কানুন অস্বীকার করলে কোন মমতা না পেয়েই দুই বা তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ফলে তাকে মরতে হয়। তাহলে ঈশ্বরের পুত্রকে যে ঘৃণা করেছে, যে রক্তে সে শুচি হয়েছে ঈশ্বরের সেই ব্যবস্থার রক্তকে যে অপবিত্র মনে করেছে এবং যিনি দয়া করেন সেই পবিত্র আত্মাকে যে অপমান করেছে, ভেবে দেখ, সে আরও কত বেশী শাস্তির যোগ্য! আমরা তাঁকে জানি যিনি বলেছেন, “অন্যায়ের শাস্তি দেবার অধিকার কেবল আমারই আছে; যার যা পাওনা আমি তাকে তা-ই দেব।” তিনি আর এক জায়গায় বলেছেন, “প্রভুই তাঁর লোকদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন।” জীবন্ত ঈশ্বরের হাতে পড়া কি ভয়ংকর ব্যাপার! আগের দিনগুলোর কথা মনে করে দেখ। তখন আলো পেয়ে দুঃখভোগের ভীষণ কষ্টের মধ্যেও তোমরা স্থির ছিলে। কোন কোন সময় সকলের সামনে অপমান ও অত্যাচার সহ্য করে তোমরা ঠাট্টার পাত্র হয়ে দুঃখভোগ করেছিলে; যাদের উপর ঐ রকম ব্যবহার করা হয়েছিল তাদের সংগে দুঃখভোগ করেছিলে; আর যারা জেলে গিয়েছিল তাদের দুঃখে দুঃখী হয়েছিলে। তোমাদের জিনিসপত্র লুট হয়ে যাওয়া তোমরা আনন্দের সংগেই মেনে নিয়েছিলে, কারণ তোমরা জানতে যে, আরও ভাল ও স্থায়ী ধন তোমাদের জন্য রয়েছে। সেইজন্য তোমরা সাহস হারায়ো না, কারণ এর পুরস্কার খুব মহৎ। তোমাদের স্থির থাকা দরকার, যাতে ঈশ্বরের ইচ্ছামত কাজ করবার পরে ঈশ্বর যা দিতে প্রতিজ্ঞা করেছেন তা তোমরা পাও; কারণ ঈশ্বরের কথামত, “যাঁর আসবার কথা আছে তিনি খুব অল্প দিনের মধ্যেই আসবেন, দেরি করবেন না। আর যে লোককে আমি নির্দোষ বলে গ্রহণ করেছি সে বিশ্বাসের দ্বারা জীবন পাবে; কিন্তু কেউ যদি ফিরে যায় তবে তার উপর আমি সন্তুষ্ট হব না।” যারা ফিরে গিয়ে ধ্বংস হয় আমরা তো সেই দলের নই; যারা বিশ্বাস করে উদ্ধার পায় আমরা সেই দলেরই। আমরা যা পাব বলে আশা করে আছি তা যে আমরা পাবই এই নিশ্চয়তাই হল বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসের দ্বারা আমরা নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পারি যে, আমরা যা দেখতে পাচ্ছি না তা আসলে আছে। বিশ্বাসের জন্যই আমাদের পূর্বপুরুষেরা ঈশ্বরের প্রশংসা পেয়েছিলেন। বিশ্বাসের দ্বারাই আমরা বুঝতে পারি যে, ঈশ্বরের মুখের কথাতে এই জগৎ সৃষ্ট হয়েছিল। তাতে বুঝা যায়, যা আমরা দেখতে পাই তা কোন দেখা জিনিস থেকে সৃষ্ট হয় নি। বিশ্বাসের জন্য কয়িনের চেয়ে হেবলের উৎসর্গ ঈশ্বরের চোখে আরও ভাল ছিল। তাঁর বিশ্বাসের জন্যই ঈশ্বর তাঁর উৎসর্গ গ্রহণ করে তাঁর বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, তিনি নির্দোষ। যদিও হেবল মারা গেছেন তবুও তাঁর বিশ্বাসের মধ্য দিয়েই তিনি এখনও কথা বলছেন। বিশ্বাসের জন্যই হনোক মারা যান নি; তাঁকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বর তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। হনোককে নিয়ে যাবার আগে ঈশ্বর এই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, হনোক তাঁকে সন্তুষ্ট করেছেন। বিশ্বাস ছাড়া ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা অসম্ভব, কারণ ঈশ্বরের কাছে যে যায়, তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, ঈশ্বর আছেন এবং যারা তাঁর ইচ্ছামত চলে তারা তাঁর হাত থেকে তাদের পাওনা পায়। যা তখনও দেখা যায় নি সেই বিষয়ে ঈশ্বর নোহকে সাবধান করেছিলেন। নোহ ঈশ্বরভক্ত ছিলেন বলে ঈশ্বরের কথা বিশ্বাস করে একটা জাহাজ তৈরী করেছিলেন, যেন তাঁর পরিবার রক্ষা পায়। নোহ তাঁর বিশ্বাসের দ্বারাই জগৎকে দোষী বলে প্রমাণ করেছিলেন এবং ঈশ্বরের কাছে নির্দোষ বলে গ্রহণযোগ্য হবার অধিকার পেয়েছিলেন, যা কেবল বিশ্বাসের ফলেই পাওয়া যায়। ঈশ্বর যখন অব্রাহামকে ডেকেছিলেন তখন বিশ্বাসের জন্যই তিনি ঈশ্বরের কথার বাধ্য হয়েছিলেন এবং সম্পত্তি হিসাবে যে জায়গাটা তাঁর পাবার কথা ছিল সেই জায়গায় তিনি গিয়েছিলেন। যদিও তখন বুঝতে পারেন নি তিনি কোথায় যাচ্ছেন তবুও তিনি রওনা হয়েছিলেন। ঈশ্বর যে দেশ অব্রাহামকে দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি বিশ্বাসের জন্যই বিদেশী হিসাবে সেখানে বাস করেছিলেন। তাঁর সংগে যাঁরা সেই একই প্রতিজ্ঞার আশীর্বাদের ভাগী ছিলেন সেই ইস্‌হাক ও যাকোবের মত করে তিনিও তাম্বুতে তাম্বুতে বাস করতেন; কারণ যে শহর চিরস্থায়ী তিনি সেই শহরের অপেক্ষায় ছিলেন। সেই শহরের নক্‌শা তৈরী ও গেঁথে তুলবার কাজ ঈশ্বরই করেছেন। যদিও সারার সন্তান হবার বয়স পার হয়ে গিয়েছিল তবুও বিশ্বাসের জন্যই তিনি অব্রাহামের সন্তান গর্ভে ধরবার শক্তি পেয়েছিলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, যিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি বিশ্বাসযোগ্য। এইজন্য বয়সের দরুন অকেজো দেহ নিয়েও অব্রাহাম আকাশের তারার মত এবং সাগর পারের বালুকণার মত অসংখ্য সন্তানের পিতা হয়েছিলেন। এই সব লোকেরা বিশ্বাসের মধ্যে জীবন কাটিয়ে মারা গেছেন। ঈশ্বর তাঁদের যা দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা তাঁরা পান নি, কিন্তু দূর থেকে তা দেখেছিলেন এবং খুশীও হয়েছিলেন। এই পৃথিবীতে যে তাঁরা বিদেশী এবং পরদেশে বাসকারী তা তাঁরা স্বীকারও করেছিলেন। যাঁরা তা স্বীকার করেন তাঁরা পরিষ্কার ভাবে বুঝান যে, তাঁরা নিজেদের জন্য একটা দেশের খোঁজ করছেন। যে দেশ থেকে তাঁরা বের হয়ে এসেছিলেন যদি সেই দেশের কথা তাঁরা চিন্তা করতেন তবে তো সেই দেশে ফিরে যাবার সব সুযোগই তাঁরা পেতেন। কিন্তু তাঁরা আরও ভাল একটা দেশের, অর্থাৎ স্বর্গের খোঁজ করছিলেন। সেইজন্যই ঈশ্বর নিজেকে তাঁদের ঈশ্বর বলতে লজ্জা বোধ করেন না, কারণ তিনি তাঁদেরই জন্য একটা শহর তৈরী করেছিলেন। অব্রাহামকে পরীক্ষা করবার সময় তিনি ঈশ্বরের উপর বিশ্বাসের জন্যই ইস্‌হাককে উৎসর্গ করেছিলেন। যাঁর কাছে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনিই তাঁর অদ্বিতীয় ছেলেকে উৎসর্গ করতে যাচ্ছিলেন। এ সেই ছেলে যাঁর বিষয়ে ঈশ্বর বলেছিলেন, “ইস্‌হাকের বংশকেই তোমার বংশ বলে ধরা হবে।” অব্রাহাম তাঁকে উৎসর্গ করতে রাজী হলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন ঈশ্বর মৃতকে জীবিত করতে পারেন। আর বলতে কি, অব্রাহাম তো মৃত্যুর দুয়ার থেকেই ইস্‌হাককে ফিরে পেয়েছিলেন। বিশ্বাস করেই ইস্‌হাক ভবিষ্যতের জন্য যাকোব ও এষৌকে আশীর্বাদ করেছিলেন। বিশ্বাস করেই যাকোব মারা যাবার সময় যোষেফের দুই ছেলেকে আশীর্বাদ করেছিলেন আর লাঠির উপর ভর করে ঈশ্বরের উপাসনা করেছিলেন। বিশ্বাস করেই যোষেফ মারা যাবার সময়ে মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের চলে যাবার কথা বলেছিলেন এবং তাঁর মৃতদেহ কি করতে হবে তা-ও বলেছিলেন। মোশির জন্মের পর তাঁর মা-বাবা বিশ্বাস করেই তিন মাস তাঁকে লুকিয়ে রেখেছিলেন, কারণ তাঁরা দেখেছিলেন ছেলেটি সুন্দর আর তাঁরা রাজার হুকুমের ভয় করলেন না। বিশ্বাসের জন্যই মোশি বড় হবার পর চাইলেন না, কেউ তাঁকে ফরৌণের মেয়ের ছেলে বলে ডাকে। তিনি পাপের অস্থায়ী আনন্দ বাদ দিয়ে ঈশ্বরের লোকদের সংগে অত্যাচার ভোগ করাই বেছে নিলেন। তিনি মিসরের ধন-সম্পত্তির চেয়ে খ্রীষ্টের জন্য অপমানিত হওয়ার মূল্য অনেক বেশী মনে করলেন, কারণ তাঁর চোখ ছিল পুরস্কারের দিকে। ঈশ্বরের উপর তাঁর বিশ্বাসের জন্যই তিনি রাজার রাগের ভয় না করে মিসর দেশ ছেড়েছিলেন, কারণ যাঁকে দেখা যায় না তাঁকে যেন দেখতে পাচ্ছেন সেইভাবে তিনি ধৈর্য ধরেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেই উদ্ধার-পর্ব এবং রক্ত ছিটাবার নিয়ম পালন করেছিলেন, যাতে যে ধ্বংসকারী স্বর্গদূত প্রথম সন্তানদের মেরে ফেলবেন তিনি ইস্রায়েলীয়দের না ধরেন। বিশ্বাস করেই ইস্রায়েলীয়েরা শুকনা মাটির উপর দিয়ে হেঁটে যাবার মত করে লোহিত সাগর পার হয়েছিল কিন্তু মিসরীয়েরা তা করতে গিয়ে ডুবে মরল। বিশ্বাস করেই ইস্রায়েলীয়েরা সাত দিন ধরে যিরীহো শহরের দেয়ালের চারদিকে ঘুরলে পর তা পড়ে গেল। বিশ্বাসের জন্যই রাহব বেশ্যা যিরীহো শহরে বাসকারী অবাধ্য লোকদের সংগে ধ্বংস হন নি, কারণ তিনি সেই গুপ্তচরদের বন্ধুর মত গ্রহণ করেছিলেন। এর বেশী আমি আর কি বলব? গিদিয়োন, বারক, শিম্‌শোন, যিপ্তহ, দায়ূদ, শমূয়েল আর নবীদের কথা বলবার সময় আমার নেই। বিশ্বাসের দ্বারাই তাঁরা রাজ্য জয় করেছিলেন, ন্যায়বিচার করেছিলেন, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পূর্ণতা লাভ করেছিলেন, সিংহদের মুখ বন্ধ করেছিলেন, ভীষণ আগুনের তেজ কমিয়ে দিয়েছিলেন, ছোরার আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, দুর্বল হয়েও শক্তিশালী হয়েছিলেন, যুদ্ধে শক্তি দেখিয়েছিলেন এবং বিদেশী সৈন্যদলগুলোকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। স্ত্রীলোকেরা তাঁদের মৃত লোকদের আবার জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়েছিলেন। অন্যেরা নিজের ইচ্ছায় জেল থেকে খালাস না নিয়ে নির্যাতন ভোগ করেছিলেন, যেন তাঁরা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে আরও ভাল জীবনের অধিকারী হন। আবার অন্যেরা ঠাট্টা-তামাশা ও ভীষণ মারধর, এমন কি, হাতকড়া ও জেল খাটা পর্যন্ত সহ্য করেছিলেন। লোকে তাঁদের পাথর মেরেছিল, করাত দিয়ে দু’টুকরা করে কেটেছিল এবং ছোরা দিয়ে খুন করেছিল। তাঁরা অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার পেয়েছিলেন, আর অভাবে পড়ে ভেড়া ও ছাগলের চামড়া পরে ঘুরে বেড়াতেন। তাঁরা মরুভূমিতে মরুভূমিতে, পাহাড়ে পাহাড়ে, গুহায় গুহায় এবং গর্তে গর্তে পালিয়ে বেড়াতেন। এই লোকদের স্থান দেবার যোগ্যতা জগতের ছিল না। বিশ্বাসের জন্যই তাঁরা সবাই প্রশংসা পেয়েছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর যা দেবার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা তাঁরা পান নি; কারণ ঈশ্বর আমাদের জন্য আরও ভাল কিছু ঠিক করে রেখেছিলেন। তিনি ঠিক করেছিলেন যে, আমাদের বাদ দিয়ে তাঁদের পূর্ণতা দান করা হবে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততার সাক্ষী হিসাবে অনেক লোক আমাদের চারদিকে ভিড় করে আছে। এইজন্য এস, আমরা প্রত্যেকটি বাধা ও যে পাপ সহজে আমাদের জড়িয়ে ধরে তা দূরে ঠেলে দিয়ে সামনের প্রতিযোগিতার দৌড়ে ধৈর্যের সংগে দৌড়াই। আর এস, আমাদের চোখ যীশুর উপর স্থির রাখি যিনি বিশ্বাসের ভিত্তি ও পূর্ণতা। তাঁর সামনে যে আনন্দ রাখা হয়েছিল তারই জন্য তিনি অসম্মানের দিকে না তাকিয়ে ক্রুশীয় মৃত্যু সহ্য করলেন এবং এখন ঈশ্বরের সিংহাসনের ডান দিকে বসে আছেন। যিনি পাপীদের এত বড় শত্রুতা সহ্য করলেন তোমরা তাঁর বিষয়ে চিন্তা কর, যেন তোমাদের মন দুর্বল ও নিরাশ হয়ে না পড়ে। পাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে তোমাদের তো এখনও রক্তপাত হবার মত অবস্থা হয় নি। ঈশ্বর তাঁর সন্তান হিসাবে তোমাদের উৎসাহ দিয়ে যে কথা বলেছেন তা তোমরা ভুলে গেছ। তিনি বলেছেন, ছেলে আমার, প্রভুর শাসনকে তুচ্ছ কোরো না, আর তিনি যখন বকুনি দেন তখন নিরাশ হোয়ো না; কারণ প্রভু যাকে ভালবাসেন তাকেই শাসন করেন, আর সন্তান হিসাবে যাদের গ্রহণ করেন, তাদের প্রত্যেককে তিনি শাস্তি দেন। তোমরা এই সব কষ্ট শাসন হিসাবে ভোগ করছ। ঈশ্বর তোমাদের প্রতি পিতার মতই ব্যবহার করছেন। এমন ছেলে কি কেউ আছে যাকে তার বাবা শাসন করেন না? প্রত্যেক ছেলেকেই শাসন করা হয়। তোমরা যদি শাসন না পেয়ে থাক তবে তো তোমরা জারজ, সত্যিকারের সন্তান নও। এছাড়া আমরা দেখেছি, আমাদের জাগতিক পিতারা আমাদের শাসন করতেন এবং আমরা তাঁদের সম্মান করতাম। তাহলে যিনি সমস্ত আত্মাদের পিতা তাঁর অধীন থাকা কি আমাদের আরও উচিত নয়, যাতে আমরা জীবন পাই? আমাদের জাগতিক পিতারা যা ভাল মনে করতেন সেই অনুসারে আমাদের শাসন করেছেন, আর তা অল্প দিনের জন্য; কিন্তু আমাদের মংগলের জন্যই ঈশ্বর আমাদের শাসন করেন যেন আমরা তাঁর পবিত্রতা লাভ করি। শাসনকে আমরা আনন্দের ব্যাপার বলে মনে করি না, বরং দুঃখের ব্যাপার বলেই মনে করি; কিন্তু ঈশ্বরের শাসন মেনে নেবার ফল হল শান্তিপূর্ণ সৎ জীবন। সেইজন্য তোমাদের অবশ হাত ও দুর্বল হাঁটু সবল কর। তোমাদের চলার পথ সোজা কর, যেন খোঁড়া লোকের অবস্থা আরও খারাপ না হয়, বরং সে সুস্থ হয়ে ওঠে। সব লোকের সংগে শান্তিতে থাকতে এবং পবিত্র হতে আগ্রহী হও। পবিত্র না হলে কেউ প্রভুকে দেখতে পাবে না। দেখো, কেউ যেন ঈশ্বরের দয়া থেকে বাদ না পড়ে। দেখো, বিষাক্ত তেতো গাছের শিকড়ের মত গজিয়ে উঠে কেউ যেন কষ্টের সৃষ্টি করে অনেককে অশুচি না করে। দেখো, কেউ যেন এষৌর মত নীতিহীন বা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন না হয়। এষৌ এক বেলার খাবারের জন্য বড় ছেলের অধিকার বিক্রি করে দিয়েছিল। তোমরা জান, পরে যদিও সে কেঁদে কেঁদে আশীর্বাদ ভিক্ষা করেছিল তবুও তাঁকে অগ্রাহ্য করা হয়েছিল, কারণ মন ফিরাবার সুযোগ তখন আর তার ছিল না। কারণ তারা এই নির্দেশ সহ্য করতে পারে নি-“কোন পশুও যদি সেই পাহাড় ছোঁয় তবে তাকে পাথর মারা হবে।” যা দেখা গিয়েছিল তা এমন ভয়ংকর ছিল যে, মোশি বলেছিলেন, “আমি ভয়ে কাঁপছি।” তোমরা তো সিয়োন পাহাড় ও জীবন্ত ঈশ্বরের শহরের কাছে এসেছ। সেই শহর হল স্বর্গের যিরূশালেম। তোমরা হাজার হাজার স্বর্গদূতদের আনন্দ উৎসবের কাছে এসেছ; প্রথম সন্তানের অধিকার পাওয়া লোক হিসাবে যাঁদের নাম স্বর্গে লেখা আছে তাঁদের দ্বারা গড়া মণ্ডলীর কাছে এসেছ; যিনি সব লোকদের বিচারক সেই ঈশ্বরের কাছে এসেছ; যে সব লোকেরা পূর্ণতা লাভ করেছে সেই সব নির্দোষ লোকদের আত্মার কাছে এসেছ; যিনি একটি নতুন ব্যবস্থার মধ্যস্থ সেই যীশুর কাছে এসেছ; আর হেবলের রক্তের চেয়ে যে রক্ত আরও মহৎ কথা বলে, তোমরা সেই ছিটানো রক্তের কাছে এসেছ। সাবধান! যিনি কথা বলছেন তাঁর কথা অগ্রাহ্য কোরো না। মোশি ঈশ্বরের সাবধানবাণী পৃথিবীতে জানাবার পর লোকেরা তাঁর কথা অগ্রাহ্য করেছিল বলে যখন রেহাই পায় নি, তখন যিনি স্বর্গ থেকে আমাদের সাবধান করছেন তাঁর কথা অগ্রাহ্য করলে আমরা যে কিছুতেই রেহাই পাব না তাতে কোন সন্দেহ নেই। সেই সময় ঈশ্বরের মুখের কথাই জগতকে নাড়া দিয়েছিল, কিন্তু এখন তিনি এই প্রতিজ্ঞা করেছেন, “আমি যে কেবল আর একবার পৃথিবীকে নাড়াব তা নয়, কিন্তু আকাশকেও নাড়াব।” “আর একবার,” এই শব্দ দু’টি থেকে বুঝা যাচ্ছে, যে জিনিসগুলো নাড়ানো যায়, অর্থাৎ যা সৃষ্টি করা হয়েছে তা বাদ দেওয়া হবে, যেন যে জিনিসগুলো নাড়ানো যায় না সেগুলো স্থির থাকে। সেইজন্য যে রাজ্যকে নাড়ানো যায় না আমরা যখন সেই রাজ্য পেতে যাচ্ছি তখন এস, আমরা ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ হই। তাহলে ঈশ্বর যেভাবে খুশী হন সেইভাবে আমরা ভক্তি ও ভয়ের সংগে তাঁর সেবা করতে পারব। আমাদের ঈশ্বর ধ্বংসকারী আগুনের মত। তোমরা একে অন্যকে ভাইয়ের মতো ভালবেসো। অতিথিদের আদর-যত্ন করতে ভুলো না; কেউ কেউ না জেনেই এইভাবে স্বর্গদূতদের আদর-যত্ন করেছেন। যারা জেলে আছে তাদের সংগে যেন তোমরাও কয়েদী হয়েছ, আর যারা অত্যাচারিত হচ্ছে তাদের সংগে যেন তোমরাও অত্যাচারিত হচ্ছ, এইভাবে তাদের কথা মনে কোরো। প্রত্যেকে যেন বিয়ের ব্যাপারটাকে সম্মানের চোখে দেখে। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের সম্বন্ধ পবিত্র রাখা উচিত, কারণ যে কোন রকম ব্যভিচার হোক না কেন, যারা সেই দোষে দোষী ঈশ্বর তাদের শাস্তি দেবেন। টাকা-পয়সার লোভ থেকে নিজেদের দূরে রেখো। তোমাদের যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থেকো। ঈশ্বর বলেছেন, “আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে যাব না বা কখনও তোমাকে ত্যাগ করব না।” এইজন্য আমরা সাহস করে বলতে পারি, প্রভু আমার সাহায্যকারী, আমি ভয় করব না; মানুষ আমার কি করতে পারে? যাঁরা তোমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য বলতেন তোমাদের সেই নেতাদের কথা মনে রেখো। তাঁদের জীবনের শেষ ফলের কথা ভাল করে চিন্তা কোরো এবং তাঁদের মত করে তোমরাও বিশ্বাস কোরো। যীশু খ্রীষ্ট কালকে যেমন ছিলেন, আজকেও তেমনি আছেন এবং চিরকাল তেমনি থাকবেন। নানা রকম নতুন নতুন শিক্ষা যেন তোমাদের ভুল পথে নিয়ে না যায়। আমাদের মন উৎসর্গের খাবারের উপর না থেকে যেন ঈশ্বরের দয়ার উপর স্থির হয়ে বসে। যারা সেই খাবারের উপর নির্ভর করে চলত, সেই খাবার থেকে তাদের কোন লাভ হয় নি। আমাদের একটা বেদী আছে এবং যাঁরা ইস্রায়েলীয়দের সেই উপাসনা-তাম্বুতে কাজ করেন, আমাদের সেই বেদীর উপরে উৎসর্গ করা কোন কিছু খাওয়ার অধিকার তাঁদের নেই। পাপের জন্য উৎসর্গ করা পশুর রক্ত নিয়ে ইস্রায়েলীয় মহাপুরোহিত মহাপবিত্র স্থানে যান, কিন্তু সেই পশুগুলোর দেহ ইস্রায়েলীয়দের থাকবার এলাকার বাইরে নিয়ে পোড়ানো হয়। সেইভাবে যীশুও যিরূশালেম শহরের বাইরে কষ্টভোগ করে মরেছিলেন, যেন তাঁর নিজের রক্তের দ্বারা মানুষকে পাপ থেকে শুচি করতে পারেন। সেইজন্য এস, তাঁর অসম্মান নিজেরা গ্রহণ করে আমরা শহরের বাইরে তাঁর কাছে যাই, কারণ এখানে আমাদের কোন স্থায়ী শহর নেই; কিন্তু যে শহর আসবে তার জন্য আমরা অপেক্ষা করে আছি। এইজন্য খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে এস, আমরা ঈশ্বরের কাছে অনবরত প্রশংসা-উৎসর্গ করি, অর্থাৎ ঈশ্বরের লোক বলে যারা নিজেদের স্বীকার করে তারা তাদের মুখ দিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করুক। সৎ কাজ করতে ও অন্যদের অভাবের সময় সাহায্য করতে ভুলো না, কারণ ঈশ্বর এই রকম উৎসর্গে সন্তুষ্ট হন। তোমাদের নেতাদের কথা মেনে চোলো এবং তাঁদের বাধ্য হয়ো, কারণ যাঁরা ঈশ্বরের কাছে হিসাব দেবেন সেই রকম লোক হিসাবেই তো তাঁরা তোমাদের দেখাশোনা করেন। তাঁদের বাধ্য হয়ো যাতে তাঁরা তাঁদের কাজ আনন্দের সংগে করতে পারেন, দুঃখের সংগে নয়। যদি দুঃখের সংগেই তা করতে হয় তবে তাতে তোমাদের কোন লাভ হবে না। আমাদের জন্য প্রার্থনা কোরো। সব বিষয়ে আমরা সৎ ভাবে চলতে চাই বলে আমরা জানি যে, আমাদের বিবেক পরিষ্কার। কিন্তু আমি তোমাদের বিশেষভাবে প্রার্থনা করতে অনুরোধ করি, যেন আমি আরও শীঘ্র তোমাদের সংগে মিলিত হতে পারি। যে রক্তে শান্তিদাতা ঈশ্বরের চিরস্থায়ী ব্যবস্থা বহাল হয়েছে তার দ্বারা ঈশ্বর আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে, অর্থাৎ মেষদের সেই মহান পালককে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন। যা কিছু ভাল তা দিয়ে তিনি তাঁর ইচ্ছামত চলবার জন্য তোমাদের সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করে তুলুন। তাঁর চোখে যা ভাল যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে আমাদের অন্তরের মধ্যে তিনি তা-ই করুন। চিরকাল ঈশ্বরের গৌরব হোক। আমেন। ভাইয়েরা, তোমাদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ এই যে, আমার এই উপদেশের কথা তোমরা মেনে নাও। আমি তো তোমাদের কাছে বেশী কথা লিখলাম না। আমি তোমাদের জানাতে চাই যে, আমাদের ভাই তীমথিয় খালাস পেয়েছেন। তিনি যদি শীঘ্র আসেন তবে তাঁকে সংগে করে তোমাদের দেখতে আসব। তোমাদের সব নেতাদের ও ঈশ্বরের লোকদের আমাদের শুভেচ্ছা জানায়ো। ইটালী দেশের ঈশ্বরের লোকেরা তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তোমাদের সকলের উপরে ঈশ্বরের দয়া থাকুক। আমি ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দাস যাকোব পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়া যিহূদী জাতির বারোটি গোষ্ঠীর লোকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমার ভাইয়েরা, তোমরা যখন নানা রকম পরীক্ষার মধ্যে পড় তখন তা খুব আনন্দের বিষয় বলেই মনে কোরো, কারণ তোমরা জান তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা তোমাদের ধৈর্যগুণ বাড়িয়ে দেয়। সেই ধৈর্যগুণকে তোমাদের জীবনে পুরোপুরিভাবে কাজ করতে দাও, যাতে তোমরা পাকা ও নিখুঁত হয়ে উঠতে পার, অর্থাৎ তোমাদের স্বভাবের মধ্যে যেন কোন রকম অভাব না থাকে। তোমাদের মধ্যে যদি কারও জ্ঞানের অভাব থাকে তবে সে যেন ঈশ্বরের কাছে চায়, আর ঈশ্বর তাকে তা দেবেন, কারণ তিনি বিরক্ত না হয়ে প্রত্যেককে প্রচুর পরিমাণে দান করেন। তবে কোন সন্দেহ না করে তাকে বিশ্বাস করেই চাইতে হবে, কারণ যে সন্দেহ করে সে বাতাসে দুলে ওঠা সমুদ্রের ঢেউয়ের মত; বাতাসই তাকে ঠেলে নিয়ে যায়। এই রকম লোক যে প্রভুর কাছ থেকে কিছু পাবে তা যেন সে আশা না করে। সে দু’মনা লোক এবং তার সব কাজেই সে অস্থির। যে বিশ্বাসী ভাই গরীব, ঈশ্বর তাঁকে উঁচু করেছেন বলে সে নিজেকে ধন্য মনে করুক। আর যে ধনী, ঈশ্বর তাকে নম্র করেছেন বলে সেও নিজেকে ধন্য মনে করুক, কারণ সে ঘাসের ফুলের মতই ঝরে পড়ে যাবে। সূর্য যখন জ্বলন্ত তাপ নিয়ে ওঠে তখন সেই ঘাস শুকিয়ে যায়, ফুল ঝরে যায় ও তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। ধনী লোকও ঠিক তেমনি করে তার জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। পরীক্ষার সময়ে যে ধৈর্য ধরে সে ধন্য, কারণ যোগ্য প্রমাণিত হলে পর জয়ের মালা হিসাবে সে জীবন পাবে। ঈশ্বরকে যারা ভালবাসে তাদের তিনি এই জীবন দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন। অন্তরে পাপের টান বোধ করলে কেউ যেন না বলে, “ঈশ্বর আমাকে পাপের দিকে টানছেন।” কোন মন্দই ঈশ্বরকে পাপের দিকে টানতে পারে না, আর ঈশ্বরও কাউকে পাপের দিকে টানেন না। মানুষের অন্তরের কামনাই মানুষকে পাপের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং ফাঁদে ফেলে। তারপর কামনা পরিপূর্ণ হলে পর পাপের জন্ম হয়, আর পাপ পরিপূর্ণ হলে পর মৃত্যুর জন্ম হয়। আমার প্রিয় ভাইয়েরা, ভুল কোরো না। জীবনের প্রত্যেকটি সুন্দর ও নিখুঁত দান স্বর্গ থেকে নেমে আসে, আর তা আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে, যিনি সমস্ত আলোর পিতা। চঞ্চল ছায়ার মত করে তিনি বদলে যান না। তাঁর নিজের ইচ্ছায় সত্যের বাক্যের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের তাঁর সন্তান করেছেন, যেন তাঁর সৃষ্ট জিনিসের মধ্যে আমরা এক রকম প্রথম ফলের মত হই। আমার প্রিয় ভাইয়েরা, আমার এই কথাটা লক্ষ্য কর-তোমরা প্রত্যেকে শুনবার জন্য আগ্রহী হও, কিন্তু তাড়াতাড়ি করে কথা বলতে যেয়ো না বা রাগ কোরো না; কারণ ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে যে সৎ জীবন আশা করেন তা রাগের মধ্য দিয়ে আসে না। এইজন্য সব রকম অপবিত্রতা এবং যে সব মন্দতা এখনও তোমাদের জীবনে রয়েছে তা দূর কর। ঈশ্বরের বাক্যের বীজ যা তোমাদের অন্তরের মধ্যে বোনা হয়েছে তা নম্রভাবে গ্রহণ কর। পাপ থেকে তোমাদের উদ্ধার করবার ক্ষমতা এই বাক্যেরই আছে। কেবল ঈশ্বরের বাক্য শুনলেই চলবে না, সেইমত কাজও করতে হবে। যদি তোমরা কেবল ঈশ্বরের বাক্য শোন কিন্তু সেইমত কাজ না কর তবে তোমরা নিজেদের ঠকাচ্ছ। কিন্তু যে পরিপূর্ণ আইন মানুষকে স্বাধীনতা দান করে তার দিকে যে ভাল করে চেয়ে দেখে এবং মনোযোগ দেয়, সে সেই আইনের কথা শুনেই ভুলে যায় না বরং সেইমত কাজও করে। ফলে সে তার সব কাজে আশীর্বাদ পায়। কেউ যদি নিজেকে ধার্মিক মনে করে অথচ নিজের জিভ্‌কে না সামলায় সে নিজেকে ঠকায়। তার ধর্মকর্ম মিথ্যা। বিধবা ও অনাথদের দুঃখ-কষ্টের সময়ে তাদের দেখাশোনা করা আর জগতের সব নোংরামি থেকে নিজেকে পরিষ্কার রাখাই হল পিতা ঈশ্বরের চোখে খাঁটি ও সত্য ধর্ম। আমার ভাইয়েরা, তোমরা যখন আমাদের মহিমাপূর্ণ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস কর তখন প্রত্যেককে সমান চোখে দেখ। মনে কর, একজন লোক সুন্দর কাপড়-চোপড় পরে ও হাতে সোনার আংটি দিয়ে তোমাদের সমাজ-ঘরে আসল; আবার একজন গরীব লোকও আসল ময়লা কাপড়-চোপড় পরে। তোমরা যদি সেই সুন্দর কাপড় পরা লোকটিকে বেশী সম্মান দেখিয়ে বল, “আপনি এই ভাল জায়গাটায় বসুন,” আর সেই গরীব লোকটিকে বল, “তুমি ঐখানে দাঁড়াও” বা “এখানে আমার পায়ের কাছে বস,” তাহলে তোমরা নিজেদের মধ্যে কি ছোট-বড় ভাবের সৃষ্টি করছ না এবং মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে বিচার করছ না? আমার প্রিয় ভাইয়েরা, শোন। এই জগতের চোখে যারা গরীব, বিশ্বাসে ধনী হবার জন্য ঈশ্বর কি তাদের বেছে নেন নি? যারা ঈশ্বরকে ভালবাসে তাদের তিনি যে রাজ্য দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন সেই রাজ্যের অধিকারী হবার জন্য এই গরীব লোকদের কি তিনি বেছে নেন নি? অথচ সেই গরীর লোকদেরই তোমরা অপমান করেছ। কিন্তু ধনী লোকেরাই কি তোমাদের কষ্ট দেয় না এবং আদালতে টেনে নিয়ে যায় না? যাঁর নাম অনুসারে তোমাদের ডাকা হয় ধনীরা কি সেই সম্মানিত নামের নিন্দা করে না? পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, “তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে।” তোমরা যদি সত্যিই খ্রীষ্টের রাজ্যের এই আইন মেনে চল তবে ভালই করছ। কিন্তু তোমরা যদি সবাইকে সমান চোখে না দেখ তবে তোমরা পাপ করছ। এই আইনই তখন তোমাদের আইন-অমান্যকারী বলে দোষী করে। যে লোক সমস্ত আইন-কানুন পালন করেও মাত্র একটা বিষয়ে পাপ করে সে সমস্ত আইন-কানুন অমান্য করেছে বলতে হবে। যিনি বলেছেন, “ব্যভিচার কোরো না,” তিনিই আবার বলেছেন, “খুন কোরো না।” তাহলে যদি তোমরা ব্যভিচার না করে খুন কর তবে কি তোমরা আইন-অমান্যকারী হলে না? যে আইন মানুষকে স্বাধীনতা দান করে সেই আইন দ্বারা যাদের বিচার করা হবে, তাদের মতই কথা বল ও চলাফেরা কর; কারণ যে দয়া করে নি, বিচারের সময়ে সেও দয়া পাবে না। বিচারের উপর দয়া জয়লাভ করে। আমার ভাইয়েরা, যদি কেউ বলে তার বিশ্বাস আছে কিন্তু কাজে তা না দেখায় তবে তাতে কি লাভ? সেই বিশ্বাস কি তাকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে পারে? ধরে নাও, তোমাদের কোন ভাই কিম্বা বোনের ঘরে খাবারও নেই, পরবার কাপড়ও নেই। এই অবস্থায় যদি তোমাদের কেউ তাকে বলে, “তোমার মংগল হোক, খেয়ে-পরে ভাল থাক,” অথচ তার অভাব মিটাবার কোন ব্যবস্থাই না করে তবে তাতে তার কি উপকার হবে? ঠিক সেইভাবে, যে বিশ্বাসের সংগে কাজ যুক্ত নেই সেই বিশ্বাস মৃত। কেউ হয়তো বলতে পারে, “তোমার বিশ্বাস আছে আর আমার আছে সৎ কাজ।” বেশ, ভাল কথা। কাজ ছাড়া তোমার বিশ্বাস আমাকে দেখাও আর আমি কাজের মধ্য দিয়ে আমার বিশ্বাস তোমাকে দেখাব। তুমি এক ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, তাই না? বেশ ভাল! কিন্তু মন্দ আত্মারাও তো তা বিশ্বাস করে এবং ভয়ে কাঁপে। হায় মূর্খ! কাজ ছাড়া বিশ্বাস যে নিষ্ফল তার প্রমাণ কি তুমি চাও? আমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম যখন তাঁর ছেলে ইস্‌হাককে বেদীর উপর উৎসর্গ করেছিলেন তখন কি সেই কাজের জন্য তাঁকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয় নি? তুমি তো দেখতেই পাচ্ছ যে, তাঁর বিশ্বাস ও কাজ সেই সময় একসংগে কাজ করছিল এবং তাঁর কাজই তাঁর বিশ্বাসকে পূর্ণতা দান করেছিল। এইভাবে পবিত্র শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হয়েছিল, “অব্রাহাম ঈশ্বরের কথা বিশ্বাস করলেন আর সেইজন্য ঈশ্বর তাকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করলেন।” সেইজন্য তাঁকে ঈশ্বরের বন্ধু বলে ডাকা হয়েছিল। তাহলে তোমরা দেখতে পাচ্ছ, কেবল মাত্র বিশ্বাসের জন্যই যে ঈশ্বর মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন তা নয়, কিন্তু বিশ্বাস এবং কাজ এই দু’য়ের জন্যই ঈশ্বর মানুষকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করেন। আর বেশ্যা রাহবকে কিভাবে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছিল? তিনি যিহূদী গুপ্তচরদের লুকিয়ে রেখে পরে অন্য পথ দিয়ে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, আর এই কাজের জন্য তাঁকে নির্দোষ বলে গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রাণ ছাড়া দেহ যেমন মৃত ঠিক তেমনি কাজ ছাড়া বিশ্বাসও মৃত। আমার ভাইয়েরা, তোমাদের মধ্যে সকলেই শিক্ষক হতে যেয়ো না, কারণ তোমরা তো জান, আমরা শিক্ষক বলে অন্যদের চেয়ে আমাদের আরও কঠিন ভাবে বিচার করা হবে। আমরা সবাই নানা ভাবে অন্যায় করে থাকি। যদি কেউ কথা দ্বারা অন্যায় না করে তবে সে নির্দোষ; তার সারা দেহকে সে সামলাতে পারে। ঘোড়াকে বশে রাখবার জন্য আমরা তার মুখে লাগাম দিই, আর তখন তাকে যেখানে ইচ্ছা সেখানে চালিয়ে নিতে পারি। আবার দেখ, জাহাজ যদিও অনেক বড় আর জোর বাতাস সেটা ঠেলে নিয়ে যায় তবুও মাত্র ছোট একটা হাল দিয়ে নাবিক সেটাকে যেদিকে খুশী সেই দিকে নিয়ে যেতে পারে। জিভ্‌ও তেমনি; দেহের একটা ছোট অংশ হলেও তা অনেক বড় বড় কথা বলে। আবার অল্প একটুখানি আগুন কিভাবে একটা বড় জংগলকে জ্বালিয়ে ফেলতে পারে! তেমনি জিভ্‌ও ঠিক আগুনের মত। আমাদের দেহে যতগুলো অংশ আছে তাদের মধ্যে জিভ্‌ যেন একটা মন্দতার দুনিয়া। নরকের আগুনে জ্বলে উঠে সে গোটা দেহকেই নষ্ট করে এবং জীবন-পথে আগুন ধরিয়ে দেয়। মানুষ সব রকম পশু, পাখী, বুকে-হাঁটা প্রাণী ও সাগরের প্রাণীকে দমন করে রাখতে পারে এবং রেখেছে, কিন্তু কোন মানুষ জিভ্‌কে দমন করে রাখতে পারে না। ওটা অস্থির ও মন্দ এবং ভয়ংকর বিষে ভরা। এই জিভ্‌ দিয়ে আমরা আমাদের প্রভুর, অর্থাৎ পিতা ঈশ্বরের গৌরব করি, আবার এই জিভ্‌ দিয়ে তাঁর মত করে গড়া মানুষকে অভিশাপ দিই। আমাদের একই মুখ দিয়ে গৌরব আর অভিশাপ বের হয়ে আসে। আমার ভাইয়েরা, এই রকম হওয়া উচিত নয়। একই জায়গা থেকে বের হয়ে আসা স্রোতের মধ্যে কি একই সময়ে মিষ্টি আর তেতো জল থাকে? আমার ভাইয়েরা, ডুমুর গাছে কি জলপাই ধরে? কিম্বা আংগুর লতায় কি ডুমুর ধরে? তেমনি করে নোনা জলের মধ্যে মিষ্টি জল পাওয়া যায় না। তোমাদের মধ্যে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান কে? সে তার সৎ জীবন দিয়ে জ্ঞান থেকে বের হয়ে আসা নম্রতা-ভরা কাজ দেখাক। কিন্তু তোমাদের অন্তর যদি হিংসায় তেতো হয়ে ওঠে এবং স্বার্থপরতায় ভরা থাকে তবে জ্ঞানের গর্ব কোরো না, সত্যকে মিথ্যা বানায়ো না। এই রকম জ্ঞান স্বর্গ থেকে নেমে আসে না, বরং পৃথিবীর, মন্দ ইচ্ছার এবং মন্দ আত্মাদের সংগেই তার সম্বন্ধ; কারণ যেখানে হিংসা ও স্বার্থপরতা থাকে সেখানেই গোলমাল ও সব রকমের অন্যায় থাকে। কিন্তু যে জ্ঞান স্বর্গ থেকে আসে তা প্রথমতঃ খাঁটি, তারপর শান্তিপূর্ণ; তাতে থাকে সহ্যগুণ ও নম্রতা; তা করুণা ও সৎ কাজে পূর্ণ, স্থির ও ভণ্ডামিশূন্য। যারা শান্তির চেষ্টা করে তারা শান্তিতে বীজ বোনে এবং তার ফল হল সৎ জীবন। তোমাদের মধ্যে ঝগড়া ও মারামারি কোথা থেকে আসে? যে সব কামনা- বাসনা তোমাদের দেহের মধ্যে যুদ্ধ করে তার মধ্য থেকেই কি সেগুলো বের হয়ে আসে না? তোমরা কামনা কর, কিন্তু পাও না। তোমরা খুন কর এবং লোভ কর, কিন্তু যা চাও তা পাও না। তোমরা ঝগড়া ও মারামারি কর, তবুও তোমাদের কিছুই থাকে না, কারণ তোমরা ঈশ্বরের কাছে চাও না। তোমরা চেয়েও পাও না, কারণ তোমরা মন্দ উদ্দেশ্যে চেয়ে থাক, যেন তোমাদের কামনা-বাসনা তৃপ্ত হয়। অবিশ্বস্ত লোকেরা! তোমরা কি জান না, জগতের বন্ধু হওয়া মানে ঈশ্বরের শত্রু হওয়া? সেইজন্য যে কেউ জগতের বন্ধু হতে ইচ্ছা করে সে নিজেকে ঈশ্বরের শত্রু করে তোলে। তোমরা কি মনে কর যে, পবিত্র শাস্ত্র মিথ্যাই এই কথা বলে যে, পবিত্র আত্মা, যাঁকে ঈশ্বর আমাদের অন্তরে দিয়েছেন, তিনি আমাদের ভক্তি পাওয়ার জন্য আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করে আছেন? কিন্তু ঈশ্বরের দয়া আরও বেশী। সেইজন্য শাস্ত্রে লেখা আছে, “ঈশ্বর অহংকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, কিন্তু নম্রদের দয়া করেন।” এইজন্য ঈশ্বরের অধীনে থাক। শয়তানকে রুখে দাঁড়াও, তাহলে সে তোমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে। ঈশ্বরের কাছে এগিয়ে যাও, তাহলে তিনিও তোমাদের কাছে এগিয়ে আসবেন। পাপীরা, তোমরা নিজেদের শুচি কর। দু’মনা লোকেরা, তোমাদের অন্তর খাঁটি কর। দুঃখে ভেংগে পড় এবং শোক কর ও কাঁদ। তোমাদের হাসির বদলে শোক প্রকাশ কর এবং আনন্দের বদলে দুঃখ কর। প্রভুর সামনে নিজেদের নীচু কর, তাহলে তিনিই তোমাদের তুলে ধরবেন। ভাইয়েরা, তোমরা একে অন্যের নিন্দা কোরো না। যে কেউ ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলে বা ভাইয়ের দোষ খুঁজে বেড়ায় সে আইন-কানুনের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং আইন-কানুনের দোষ খুঁজে বেড়ায়। যদি তুমি আইন-কানুনের দোষ খুঁজে বেড়াও তবে তো তুমি তা পালন করছ না বরং তার বিচার করছ। মাত্র একজনই আছেন যিনি আইন-কানুন দেন ও বিচার করেন। তিনিই রক্ষা করতে পারেন এবং ধ্বংস করতে পারেন। তুমি কে যে তোমার প্রতিবেশীর দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছ? তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বলে থাকে, “আজ বা কাল আমরা অমুক শহরে গিয়ে এক বছর কাটাব এবং সেখানে ব্যবসা করে লাভ করব।” কিন্তু কালকে কি হবে তা তোমরা জান না। তোমাদের জীবনই বা কি? তোমরা তো বাষ্প মাত্র, যা কিছুক্ষণের জন্য থাকে আর তারপর মিলিয়ে যায়। তার চেয়ে বরং তোমাদের এই কথা বলা উচিত, “প্রভু যদি ইচ্ছা করেন তবে আমরা বেঁচে থাকব এবং এটা বা ওটা করব।” তার বদলে দেখা যাচ্ছে, তোমরা খুব অহংকারী ও গর্বে পূর্ণ। এই রকম সব গর্বই খারাপ। তাহলে দেখা যায়, সৎ কাজ করতে জেনেও যে তা না করে সে পাপ করে। ধনীরা, তোমরা শোন। তোমাদের উপর যে কষ্ট আসছে তার জন্য কাঁদ ও হাহাকার কর। তোমাদের ধন নষ্ট হয়ে গেছে এবং তোমাদের কাপড়-চোপড় পোকায় কেটেছে। তোমাদের সোনা ও রূপাতে মরচে ধরেছে, আর সেই মরচে তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এবং আগুনের মত করে তোমাদের মাংস খেয়ে ফেলবে। এই শেষ দিনগুলোতে তোমরা ধন-সম্পত্তি জমা করেছ। তোমাদের ক্ষেতে যে মজুরেরা ফসল কেটেছে তোমরা তাদের মজুরি দাও নি; আর দেখ, সেই মজুরি এখন চিৎকার করে তোমাদের দোষী করছে। সর্বক্ষমতার অধিকারী প্রভুর কানে সেই মজুরদের চিৎকার গিয়ে পৌঁছেছে। এই পৃথিবীতে তোমরা খুব আরামের মধ্যে দিন কাটিয়েছ এবং উচ্ছৃঙ্খলতার হাতে নিজেদের ছেড়ে দিয়েছ। জবাই করবার দিনের জন্য তোমরা নিজেদের কেবল তাজাই করেছ। তোমরা নির্দোষীদের দোষী করেছ এবং মেরে ফেলেছ, আর তারা তোমাদের বাধা দেয় নি। এইজন্য ভাইয়েরা, যে পর্যন্ত না প্রভু আসেন সেই পর্যন্ত ধৈর্য ধরে সব সহ্য কর। ক্ষেতের দামী ফসলের জন্য চাষী কেমন ভাবে অপেক্ষা করে এবং প্রথম ও শেষ বর্ষার জন্য ধৈর্য ধরে, তা দেখেছ? তোমরাও তেমনি করে ধৈর্য ধর আর অন্তর স্থির রাখ, কারণ প্রভু শীঘ্রই আসছেন। ভাইয়েরা, ঈশ্বর যেন তোমাদের দোষ না ধরেন এইজন্য তোমরা একে অন্যকে দোষ দিয়ো না। দেখ, বিচারকর্তা দরজার কাছাকাছি এসে পড়েছেন। ভাইয়েরা, যে নবীরা প্রভুর পক্ষ হয়ে কথা বলেছেন, কষ্টের সময়ে কিভাবে তাঁরা ধৈর্য ধরতেন সেই কথা চিন্তা করে দেখ। যাঁরা ধৈর্য ধরে সহ্য করেছেন তাঁদের আমরা ধন্য বলি। তোমরা ইয়োবের ধৈর্যের কথা শুনেছ এবং প্রভুর কাজের শেষ ফল যে ভাল তা-ও দেখেছ। প্রভুর করুণা ও মমতার শেষ নেই। আমার ভাইয়েরা, আমি বিশেষভাবে এই কথা বলি, তোমরা স্বর্গ, পৃথিবী বা অন্য কোন জিনিসের নামে শপথ কোরো না। তার চেয়ে বরং তোমাদের “হ্যাঁ,” “হ্যাঁ”-ই হোক এবং “না,” “না”-ই হোক, যেন তোমরা বিচারের দায়ে না পড়। তোমাদের মধ্যে কেউ কি কষ্টভোগ করছে? সে প্রার্থনা করুক। কেউ কি সুখী? সে প্রশংসা-গান করুক। কেউ কি অসুস্থ? সে মণ্ডলীর প্রধান নেতাদের ডাকুক। তাঁরা প্রভুর নামে তাঁর মাথায় তেল দিয়ে তার জন্য প্রার্থনা করুন। বিশ্বাসপূর্ণ প্রার্থনা সেই অসুস্থ লোককে সুস্থ করবে; প্রভুই তাকে ভাল করবেন। সে যদি পাপ করে থাকে তবে ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করবেন। এইজন্য তোমরা একে অন্যের কাছে পাপ স্বীকার কর এবং একে অন্যের জন্য প্রার্থনা কর, যেন তোমরা সুস্থ হতে পার। ঈশ্বরের ইচ্ছামত যে চলে তার প্রার্থনার জোর আছে বলে তা ফল দেয়। এলিয় আমাদের মতই একজন মানুষ ছিলেন। তিনি আকুল ভাবে প্রার্থনা করলেন যেন বৃষ্টি না হয়, আর সাড়ে তিন বছর দেশে বৃষ্টি হয় নি। পরে তিনি আবার প্রার্থনা করলেন; তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ল আর মাটিতে ফসল হল। আমার ভাইয়েরা, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ সত্য থেকে দূরে সরে যায় আর তোমরা কেউ তাকে ফিরিয়ে আন, তবে এই কথা জেনে রেখো-যদি কেউ একজন পাপীকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনে তবে সে তাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করে এবং অনেক পাপ ঢেকে রাখে। ঈশ্বরের যে সব বাছাই করা লোক পন্ত, গালাতিয়া, কাপ্পাদকিয়া, এশিয়া ও বিথুনিয়া প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে বিদেশী হিসাবে বাস করছে, তাদের কাছে আমি যীশু খ্রীষ্টের প্রেরিত্‌ পিতর এই চিঠি লিখছি। পিতা ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে তোমাদের বেছে নিয়েছেন, আর তাঁরই উদ্দেশ্যে পবিত্র আত্মা তোমাদের আলাদা করে রেখেছেন। এর উদ্দেশ্য হল, যাতে তোমরা যীশু খ্রীষ্টের বাধ্য হও আর তাঁর রক্ত ছিটানোর দ্বারা তোমাদের শুচি করা হয়। ঈশ্বর তোমাদের অনেক দয়া ও শান্তি দান করুন। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর এবং পিতার গৌরব হোক। যীশু খ্রীষ্টকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলে ঈশ্বর তাঁর প্রচুর করুণায় আমাদের নতুন জন্ম দান করেছেন। তার ফলে আমরা একটা জীবন্ত আশ্বাস পেয়েছি, অর্থাৎ ভবিষ্যতে এমন একটা সম্পত্তি পাবার আশ্বাস আমরা পেয়েছি যা কখনও ধ্বংস হবে না, যাতে মন্দ কিছু থাকবে না এবং যা চিরকাল নতুন থাকবে। এই সম্পত্তি তোমাদের জন্য স্বর্গে জমা করা আছে। তোমরা সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার না পাওয়া পর্যন্ত ঈশ্বরের শক্তিতে বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমাদের নিরাপদে রাখা হচ্ছে। শেষ সময়ে প্রকাশিত হবার জন্য সেই উদ্ধারের আয়োজন করে রাখা হয়েছে। অবশ্য যদিও কিছুকালের জন্য নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে হয়তো এখন তোমাদের দুঃখ পেতে হচ্ছে, তবুও উদ্ধার পাবার আশায় তোমাদের মন আনন্দে ভরে উঠছে। এই সব পরীক্ষা আসে যেন তোমাদের বিশ্বাস খাঁটি বলে প্রমাণিত হয়, আর তার ফলে যীশু খ্রীষ্ট প্রকাশিত হবার সময়ে তোমরা প্রশংসা, গৌরব ও সম্মান পাও। যে সোনা ক্ষয় হয়ে যাবে তাকেও আগুনে খাঁটি করে নেওয়া হয়; কিন্তু তোমাদের বিশ্বাসের দাম তো সেই সোনার চেয়ে আরও বেশী। যদিও তোমরা খ্রীষ্টকে দেখ নি তবুও তোমরা তাঁকে ভালবাস; যদিও এখন তোমরা তাঁকে দেখতে পাচ্ছ না তবুও তোমরা তাঁর উপর বিশ্বাস করছ, আর যে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না ও যা স্বর্গীয় মহিমায় পরিপূর্ণ, সেই আনন্দে তোমরা আনন্দিত হচ্ছ; কারণ তোমাদের বিশ্বাসের শেষ ফল তোমরা পেতে যাচ্ছ, আর তা হল তোমাদের সম্পূর্ণ উদ্ধার। যে আশীর্বাদ তোমাদের পাবার কথা তার বিষয়ে যে সব নবীরা অনেক আগে বলে গেছেন, তাঁরা এই উদ্ধারের বিষয় জানবার জন্য অনেক খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। তাঁদের অন্তরে খ্রীষ্টের আত্মা আগেই সাক্ষ্য দিয়ে বলেছিলেন যে, খ্রীষ্টকে কষ্টভোগ করতে হবে ও তারপর তিনি মহিমা লাভ করবেন। নবীরা জানতে চেয়েছিলেন খ্রীষ্টের সেই আত্মা কোন্‌ সময় এবং কোন্‌ অবস্থার কথা তাঁদের জানাচ্ছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর তাঁদের দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাঁরা যে সব কথা বলছিলেন তার দ্বারা তারা নিজেদের সেবা না করে তোমাদের সেবাই করছিলেন। স্বর্গ থেকে পাঠানো পবিত্র আত্মার পরিচালনায় যাঁরা তোমাদের কাছে খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করেছেন তাঁরা নবীদের সেই সব কথাই তোমাদের জানিয়েছেন। এমন কি, স্বর্গদূতেরা পর্যন্ত এই সব বিষয়ে জানতে আগ্রহী। এইজন্য তোমাদের মনকে জাগিয়ে তোল ও নিজেদের দমনে রাখ। যীশু খ্রীষ্ট যখন প্রকাশিত হবেন তখন তোমরা যে আশীর্বাদ পাবে সেই আশীর্বাদ পাওয়ার পূর্ণ আশা নিয়ে অপেক্ষা কর। ঈশ্বরের বাধ্য সন্তান হিসাবে তোমরা তোমাদের আগেকার মন্দ ইচ্ছা অনুসারে জীবন কাটায়ো না; তখন তো তোমরা ঈশ্বরকে চিনতে না। তার চেয়ে বরং যিনি তোমাদের ডেকেছেন তিনি যেমন পবিত্র, তোমরাও তোমাদের সমস্ত চালচলনে ঠিক তেমনি পবিত্র হও। পবিত্র শাস্ত্রে ঈশ্বর বলেছেন, “আমি পবিত্র বলে তোমাদেরও পবিত্র হতে হবে।” পিতা ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষের কাজ অনুসারে তার বিচার করেন, কারও মুখের দিকে চেয়ে তা করেন না। এইজন্য তাঁকে যদি তোমরা পিতা বলে ডাক তবে এই পৃথিবীতে যতদিন বিদেশী হিসাবে আছ ততদিন তাঁর প্রতি ভক্তিপুর্ণ ভয়ে তোমাদের জীবন কাটাও। তোমরা জান, জীবন পথে চলবার জন্য তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া বাজে আদর্শ থেকে সোনা বা রূপার মত ক্ষয় হয়ে যাওয়া কোন জিনিস দিয়ে তোমাদের মুক্ত করা হয় নি; তোমাদের মুক্ত করা হয়েছে নির্দোষ ও নিখুঁত মেষ-শিশু যীশু খ্রীষ্টের অমূল্য রক্ত দিয়ে। জগৎ সৃষ্টির আগেই ঈশ্বর এর জন্য তাঁকে ঠিক করে রেখেছিলেন, কিন্তু এই শেষ সময়ে তোমাদের জন্যই তিনি প্রকাশিত হয়েছেন। ঈশ্বর তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলে মহিমা দান করেছেন এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে তোমরা ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস করেছ; আর সেইজন্যই তোমাদের বিশ্বাস ও আশা ঈশ্বরের উপরেই আছে। এখন সত্যকে মেনে নিয়ে তোমরা তোমাদের অন্তরকে শুচি করেছ, আর সেইজন্য বিশ্বাসী ভাইয়েরা তোমাদের কাছে এত প্রিয়। তাই বলি, তোমরা একে অন্যকে অন্তর দিয়ে গভীর ভাবে ভালবেসো। যে বীজ ধ্বংস হয়ে যায় এমন কোন বীজ থেকে তোমাদের নতুন জন্ম হয় নি, বরং যে বীজ কখনও ধ্বংস হয় না তা থেকেই তোমাদের জন্ম হয়েছে। সেই বীজ হল ঈশ্বরের জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, সব মানুষ ঘাসের মত, আর ঘাসের ফুলের মতই তাদের সব সৌন্দর্য; ঘাস শুকিয়ে যায়, আর ফুলও ঝরে যায়, কিন্তু প্রভুর বাক্য চিরকাল থাকে। আর এই বাক্যই সেই সুখবর, যা তোমাদের কাছে প্রচার করা হয়েছে। এইজন্য অন্যদের ক্ষতি করবার সব রকম ইচ্ছা, সব রকম ছলনা, ভণ্ডামি, হিংসা এবং সব রকম নিন্দার কথাবার্তা তোমাদের অন্তর থেকে দূর করে দাও। এইমাত্র জন্মেছে এমন শিশুর মত তোমাদের আত্মিক বৃদ্ধির জন্য খাঁটি দুধ পেতে তোমরা খুব আগ্রহী হও, যেন তার দ্বারা বেড়ে উঠতে উঠতে তোমরা উদ্ধারের পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পার। প্রভুর দয়ার স্বাদ তো তোমরা পেয়েছ। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, দেখ, একটা খুব দামী পাথর আমি বেছে নিয়েছি; আর সেটা সিয়োনের কোণের ভিত্তির পাথর হিসাবে স্থাপন করেছি। যে তাঁর উপরে বিশ্বাস করে সে কোনমতেই নিরাশ হবে না। এইজন্য তোমরা বিশ্বাস করেছ বলে তোমাদের কাছে সেই পাথর খুব মূল্যবান; কিন্তু যারা বিশ্বাস করে নি তাদের পক্ষে শাস্ত্রের এই কথাটা খাটে, রাজমিস্ত্রিরা যে পাথরটা বাতিল করে দিয়েছিল, সেটাই সবচেয়ে দরকারী পাথর হয়ে উঠল। আবার শাস্ত্রের এই কথাও খাটে, সেটা এমন পাথর যাতে লোকে উছোট খাবে, আর যা লোকের উছোট খাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। লোকে ঈশ্বরের বাক্য অমান্য করে বলেই উছোট খায়, আর এরই জন্য তারা ঠিক হয়ে আছে। কিন্তু তোমরা তো “বাছাই করা বংশ হয়েছ; তোমাদের দিয়ে গড়া হয়েছে পুরোহিতদের রাজ্য; তোমরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আলাদা করা জাতি ও তাঁর নিজের লোক হয়েছ;” যেন অন্ধকার থেকে যিনি তোমাদের তাঁর আশ্চর্য আলোর মধ্যে ডেকে এনেছেন তোমরা তাঁরই গুণগান কর। এক সময় তোমরা ঈশ্বরের লোক ছিলে না, কিন্তু এখন হয়েছ; এক সময় তোমরা করুণা পাও নি, কিন্তু এখন পেয়েছ। প্রিয় বন্ধুরা, এই পৃথিবীতে তোমরা বিদেশী এবং পরদেশে অল্পকাল বাসকারী বলে আমি তোমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করছি যে, তোমরা পাপ-স্বভাবের কামনা-বাসনা থেকে দূরে থাক, কারণ সেগুলো তোমাদের আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ঈশ্বরকে যারা জানে না তাদের মধ্যে তোমরা সৎ ভাবে চল যাতে অন্যায়কারী বলে তারা তোমাদের নিন্দা করলেও তোমাদের ভাল কাজগুলো লক্ষ্য করে এবং বিচারের দিনে তোমাদের সেই কাজগুলোর জন্য ঈশ্বরের গৌরব করে। তোমরা প্রভুর প্রতি বাধ্য হয়ে মানুষের নিযুক্ত শাসনকর্তাদের অধীনতা স্বীকার কর। সম্রাট সকলের প্রধান বলে তাঁর অধীনে থাক; অন্যায়কারীদের শাস্তি দেবার জন্য এবং যারা ভাল কাজ করে তাদের প্রশংসা করবার জন্য সম্রাট যে শাসনকর্তাদের পাঠান তাঁদেরও অধীনে থাক। ঈশ্বরের ইচ্ছা এই যে, তোমরা যেন ভাল কাজ করে মুর্খ লোকদের বুদ্ধিহীন কথাবার্তা বন্ধ করে দাও। স্বাধীন লোক হিসাবে জীবন কাটাও, কিন্তু দুষ্টতা ঢাকবার জন্য সেই স্বাধীনতা ব্যবহার কোরো না। তার বদলে ঈশ্বরের দাস হিসাবে জীবন কাটাও। সব লোককে সম্মান কর, তোমাদের বিশ্বাসী ভাইদের ভালবাস, ঈশ্বরকে ভক্তি কর, সম্রাটকে সম্মান কর। বাড়ীর চাকর-বাকরেরা, তোমরা তোমাদের মনিবদের সম্মান করে তাঁদের অধীনে থাক। যে মনিবেরা ভাল ও দয়ালু কেবল যে তাঁদের অধীনতা স্বীকার করবে তা নয়, কিন্তু যাঁরা কর্কশ ব্যবহার করেন তাঁদেরও অধীনতা স্বীকার কর। যদি কেউ অন্যায় ভাবে কষ্ট ভোগ করে এবং ঈশ্বরকে মনে রেখে তা সহ্য করে তবে সে ঈশ্বরের চোখে প্রশংসার যোগ্য। অন্যায় কাজের জন্য মার খেয়ে যদি তোমরা তা সহ্য কর তবে তাতে গৌরব করবার কি আছে? কিন্তু ভাল কাজ করেও যদি তোমরা তার জন্য কষ্ট পেয়ে তা সহ্য কর, তবে সেটাই ঈশ্বরের চোখে প্রশংসার যোগ্য। এরই জন্য ঈশ্বর তোমাদের ডেকেছেন, কারণ খ্রীষ্ট তোমাদের জন্য কষ্ট ভোগ করে তোমাদের কাছে আদর্শ রেখে গেছেন, যেন তোমরাও তাঁরই মত চল, যিনি কোন পাপ করেন নি কিম্বা যাঁর মুখে কোন ছলনার কথা ছিল না। লোকে তাঁকে যখন অপমান করেছে তখন তিনি তাদের ফিরে অপমান করেন নি, আর কষ্টভোগের সময় প্রতিশোধ নেবার ভয়ও দেখান নি, বরং যিনি ন্যায়বিচার করেন তাঁর হাতে তিনি নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি ক্রুশের উপরে নিজের দেহে আমাদের পাপের বোঝা বইলেন, যেন আমরা পাপের দাবি-দাওয়ার কাছে মরে ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলবার জন্য বেঁচে থাকি। তাঁর দেহের ক্ষত তোমাদের সুস্থ করেছে। ভুল পথে যাওয়া ভেড়ার মত তোমরাও ভুল পথে যাচ্ছিলে, কিন্তু যে পালক তোমাদের অন্তরের দেখাশোনা করেন তোমরা তাঁর কাছে ফিরে এসেছ। সেইভাবে তোমরা যারা স্ত্রী, তোমরা প্রত্যেকে স্বামীর অধীনতা মেনে নাও, যেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস না করলেও তোমাদের চালচলন খ্রীষ্টের দিকে তাদের টানে। এতে তোমাদের একটি কথাও বলতে হবে না, কারণ তারা নিজেরাই তোমাদের পবিত্র জীবন আর ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখতে পাবে। নানা রকম চুলের বেণী, গয়নাগাটি বা সুন্দর সুন্দর কাপড়-এই সব বাইরের সাজ-পোশাক দিয়ে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ো না, বরং যার সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে যাবে না সেই নরম ও শান্ত স্বভাব দিয়ে তোমাদের অন্তরকে সাজাও। ঈশ্বরের চোখে সেটাই বেশী দামী। আগেকার যে ঈশ্বরভক্ত স্ত্রীলোকেরা ঈশ্বরের উপরে আশা রাখতেন তাঁরা নিজের নিজের স্বামীর অধীনে থেকে এভাবেই নিজেদের সাজাতেন; যেমন সারা অব্রাহামের বাধ্য ছিলেন এবং তাঁকে প্রভু বলে ডাকতেন। তোমরা যদি কোন রকম ভয়কে নিজের উপর কাজ করতে না দিয়ে যা ভাল তা-ই কর তবে এটাই প্রমাণ হবে যে, তোমরা সারার যোগ্য সন্তান। ঠিক সেইভাবে তোমরা যারা স্বামী, তোমরা বুদ্ধি-বিবেচনা করে স্ত্রীর সংগে বাস কর। তারা তোমাদের দুর্বল সাথী, আর তারাও তোমাদের সংগে ঈশ্বরের দয়ার দান হিসাবে জীবন পাবে। সেইজন্য তাদের সম্মান কোরো যেন তোমাদের প্রার্থনা বাধা না পায়। শেষে বলি, তোমাদের সকলের মন যেন একই রকম হয়। তোমরা একে অন্যের দুঃখে দুঃখ বোধ কর, ভাইয়ের মত ভালবাসার ভাব রাখ এবং দয়ালু ও নম্র হও। অন্যায়ের বদলে কারও উপর অন্যায় কোরো না বা কেউ গালাগালি দিলে তাকে ফিরে গালাগালি দিয়ো না, বরং তাদের জন্য আশীর্বাদ চেয়ো; কারণ আশীর্বাদ পাবার জন্যই ঈশ্বর তোমাদের ডেকেছেন। পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, যে সুখী জীবন কাটাতে চায় আর সুদিন দেখবার আশা করে, মন্দ কথা থেকে তার জিভ্‌কে, ছলনার কথা থেকে তাঁর ঠোঁটকে সে সামলাক। মন্দ কাজ থেকে সে দূরে থাকুক, আর ভাল কাজ করুক; শান্তির জন্য আগ্রহী হয়ে সে তার পিছু না ছাড়ুক। যারা ন্যায়ের পথে চলে তাদের উপর প্রভুর চোখ আছে, তাদের প্রার্থনা শুনবার জন্য তাঁর কান খোলাই রয়েছে; কিন্তু যারা মন্দ কাজ করে, প্রভু তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। ভাল কাজ করতে যদি তোমাদের আগ্রহ থাকে তবে কে তোমাদের ক্ষতি করবে? ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলতে গিয়ে যদি তোমাদের কষ্টভোগও করতে হয় তবে তোমরা ধন্য। যারা তোমাদের দুঃখ-কষ্ট দেয় তাদের তোমরা ভয় কোরো না বা দুঃখ-কষ্টের সময়ে অস্থির হয়ো না, বরং খ্রীষ্টকে তোমাদের অন্তরে প্রভু হিসাবে স্থান দাও। তোমাদের আশা-ভরসা সম্বন্ধে যদি কেউ প্রশ্ন করে তবে তাকে উত্তর দেবার জন্য সব সময় প্রস্তুত থেকো, কিন্তু এই উত্তর নম্রতা ও ভক্তির সংগে দিয়ো। তোমাদের বিবেক পরিষ্কার রেখো, যেন খ্রীষ্টের লোক হিসাবে তোমাদের ভাল চালচলনের যারা নিন্দা করে তারা তোমাদের নিন্দা করেছে বলে লজ্জা পায়। মন্দ কাজ করে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বরং ঈশ্বরের ইচ্ছায় ভাল কাজ করে কষ্ট পাওয়া অনেক ভাল। অনেক দিন আগে নোহের সেই জাহাজ তৈরীর সময়ে ঈশ্বর যখন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন তখন যারা অবাধ্য হয়েছিল এই আত্মাগুলো তাদেরই। সেই জাহাজে উঠে মাত্র অল্প কয়েকজন, অর্থাৎ মাত্র আটজন সেই জলের মধ্য থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। এটা হল বাপ্তিস্মের একটা ছবি যা এখন তোমাদের উদ্ধার করে। বাপ্তিস্ম যে তোমাদের দেহ থেকে ময়লা দূর করে তা নয়; ঈশ্বরের কাছে এটা একটা পরিষ্কার বিবেকের সাড়া। যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার মধ্য দিয়ে তোমাদের উদ্ধার করা হয়। যীশু স্বর্গে গেছেন এবং এখন ঈশ্বরের ডান দিকে আছেন, আর মহাকাশের দূতেরা, ক্ষমতার অধিকারীরা ও শাসনকর্তারা তাঁর অধীনে আছেন। সেইজন্য খ্রীষ্ট দেহে কষ্ট সহ্য করেছিলেন বলে তোমরাও নিজেদের অন্তরে সেই একই মনোভাব গড়ে তোল, কারণ দেহে যে কষ্ট ভোগ করেছে সে পাপের অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে। তার ফলে এই জগতের বাকী জীবনটা সে আর জগতের কামনা-বাসনা তৃপ্ত করে কাটায় না, বরং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেই কাটায়। যারা ঈশ্বরকে জানে না তাদের মত তোমরাও আগে লমপটতা করে, খারাপ কামনা-বাসনার মধ্যে থেকে, মাতলামি করে, হৈ-হল্লা করে মদ খেয়ে ও খাওয়া-দাওয়া করে এবং জঘন্য প্রতিমাপূজা করে অনেক সময় কাটাতে। কিন্তু এখন সেই লোকেরাই দেখে আশ্চর্য হয় যে, তোমরা তাদের সেই ভীষণ উচ্ছঙ্খলতায় আর যোগ দিচ্ছ না, আর সেইজন্য তারা তোমাদের বিরুদ্ধে নিন্দার কথা বলে। কিন্তু যিনি জীবিত ও মৃত সকলের বিচার করবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন তাঁর কাছে তাদের হিসাব দিতে হবে। মৃতদের কাছেও তো সেইজন্য খ্রীষ্টের বিষয়ে সুখবর প্রচার করা হয়েছিল, যেন দেহের দিক থেকে মানুষের মতই তাদের বিচার হলেও আত্মায় তারা ঈশ্বরের মত জীবিত থাকতে পারে। এখন সব কিছুর শেষ সময় কাছে এসে গেছে। সেইজন্য তোমাদের মন স্থির কর এবং নিজেদের দমনে রাখ যেন র্প্রাথনা করতে পার। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, তোমরা একে অন্যকে গভীর ভাবে ভালবেসো, কারণ ভালবাসা অনেক পাপকে ঢেকে রাখে। কোন রকম বিরক্তি প্রকাশ না করে তোমরা একে অন্যকে অতিথি হিসাবে গ্রহণ কর। বিভিন্ন ভাবে প্রকাশিত ঈশ্বরের দয়া পেয়ে যে লোক বিশ্বস্ত ভাবে তা কাজে লাগিয়েছে, সেই রকম লোক হিসাবে তোমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে যে যেরকম দান পেয়েছ তা একে অন্যের সেবা করবার জন্য ব্যবহার কর। যদি কেউ প্রচার করে তবে সে এইভাবে প্রচার করুক যেন সে ঈশ্বরের নিজের মুখের কথা বলছে। যদি কেউ সেবা করে তবে ঈশ্বরের দেওয়া শক্তিতে সে সেবা করুক, যেন যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে সব কিছুতে ঈশ্বরই গৌরব পান। গৌরব ও শক্তি চিরকাল তাঁরই। আমেন। প্রিয় বন্ধুরা, তোমাদের যে এখন অগ্নি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাতে আশ্চর্য হয়ে মনে কোরো না যে, তোমাদের উপর অদ্ভুত কিছু একটা হচ্ছে। তার চেয়ে বরং তোমরা যে খ্রীষ্টের দুঃখভোগের ভাগ নিচ্ছ তাতে আনন্দিত হও, যেন তাঁর মহিমা যখন প্রকাশিত হবে তখন তোমরা আনন্দে পূর্ণ হও। খ্রীষ্টের জন্য যদি তোমরা অপমানিত হও তবে তোমরা ধন্য, কারণ ঈশ্বরের মহিমাপূর্ণ আত্মা তোমাদের উপর আছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ খুনী, চোর, অন্যায়কারী হয়ে বা অন্যায়ভাবে অন্যের ব্যাপারে হাত দিয়ে কষ্ট ভোগ না করুক। কিন্তু খ্রীষ্টান হিসাবে যদি কেউ কষ্ট ভোগ করে তবে সে লজ্জা না পাক, বরং তার সেই নাম আছে বলে সে ঈশ্বরের গৌরব করুক। বিচার আরম্ভ হবার সময় হয়েছে এবং তা ঈশ্বরের পরিবারের লোকদের থেকেই শুরু করা হবে। আর যদি সেই বিচার আমাদের থেকেই শুরু করা হয় তবে যারা ঈশ্বরের দেওয়া সুখবর মেনে নেয় নি তাদের অবস্থা কি হবে? শাস্ত্রে আছে, ঈশ্বরভক্ত লোকের উদ্ধার পাওয়া যদি এত শক্ত হয়, তবে যারা পাপী আর ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন, তাদের অবস্থা কি হবে? তাহলে ঈশ্বরের ইচ্ছাতে যারা কষ্টভোগ করছে, তারা তাদের বিশ্বস্ত সৃষ্টিকর্তার হাতে নিজেদের তুলে দিক এবং ভাল কাজ করতে থাকুক। আমি খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সাক্ষী এবং খ্রীষ্টের যে মহিমা প্রকাশিত হবে তার ভাগী। সেইজন্য তোমাদের মধ্যে যারা মণ্ডলীর প্রধান নেতা তাদের আমি আর একজন প্রধান নেতা হিসাবে এই উপদেশ দিচ্ছি- তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে মেষের দল আছে তোমরা তার রাখাল হও। দেখাশোনা করতে হবে বলে যে তাদের দেখাশোনা করবে তা নয়, বরং নিজের ইচ্ছাতেই তা কর, কারণ ঈশ্বর তোমাদের কাছে তা-ই চান। লাভের আশায় এই কাজ কোরো না, কিন্তু আগ্রহের সংগে কর; তোমাদের অধীনে যারা আছে তাদের উপর প্রভু হয়ো না, বরং এমন হও যাতে তোমাদের দেখে তারা শিখতে পারে। তাহলে যখন প্রধান রাখাল দেখা দেবেন তখন তোমরা জয়ের মালা হিসাবে তাঁর মহিমার ভাগী হবে, আর তা কখনও ্নান হবে না। সেইভাবে যুবকেরা, তোমরা প্রধান নেতাদের অধীনে থাক। তোমরা সবাই নম্র হয়ে একে অন্যের সেবা কর, কারণ পবিত্র শাস্ত্রের কথামত, “ঈশ্বর অহংকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, কিন্তু নম্রদের দয়া করেন।” সেইজন্য ঈশ্বরের ক্ষমতার সামনে নিজেদের নীচু কর, যেন ঠিক সময়ে তিনি তোমাদের উঁচু করেন। তোমাদের সব চিন্তা-ভাবনার ভার তাঁর উপর ফেলে দাও, কারণ তিনি তোমাদের বিষয়ে চিন্তা করেন। নিজেদের দমনে রাখ ও সতর্ক থাক, কারণ তোমাদের শত্রু শয়তান গর্জনকারী সিংহের মত করে কাকে খেয়ে ফেলবে তার খোঁজ করে বেড়াচ্ছে। বিশ্বাসে স্থির থেকে শয়তানকে রুখে দাঁড়াও, কারণ তোমরা তো জান যে, সারা জগতের মধ্যে তোমাদের বিশ্বাসী ভাইয়েরা একই রকম দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছে। যিনি সব রকম ভাবে দয়া করবার ঈশ্বর তিনি তাঁর চিরস্থায়ী মহিমার ভাগী হবার জন্য তোমাদের ডেকেছেন, কারণ খ্রীষ্টের সংগে তোমরা যুক্ত হয়েছ। তোমরা কিছুদিন কষ্টভোগ করবার পরে ঈশ্বর নিজেই তোমাদের পূর্ণ করবেন ও স্থির রাখবেন, শক্তি দেবেন এবং শক্ত ভিত্তির উপর তোমাদের দাঁড় করাবেন। তাঁর ক্ষমতা চিরকাল থাকুক। আমেন। সীলবান, যাঁকে আমি আমার বিশ্বস্ত ভাই মনে করি, তাঁকে দিয়ে এই চিঠি আমি অল্প কথায় তোমাদের কাছে লিখলাম, যেন আমি তোমাদের উৎসাহ দিতে পারি এবং ঈশ্বরের সত্যিকারের দয়ার সাক্ষ্য দিতে পারি। তোমরা ঈশ্বরের এই দয়ার মধ্যে স্থির হয়ে বাস কর। ঈশ্বর তোমাদের সংগে যাদের বেছে নিয়েছেন বাবিলের সেই মণ্ডলীর লোকেরা তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, আর আমার সন্তান মার্কও তোমাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ভালবাসার মনোভাব নিয়ে তোমরা একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানায়ো। তোমরা যারা খ্রীষ্টের নিজের হয়েছ, তোমাদের শান্তি হোক। আমি শিমোন-পিতর যীশু খ্রীষ্টের একজন দাস ও প্রেরিত্‌। আমাদের ঈশ্বর ও উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্ট ন্যায়বান, আর সেইজন্য তোমরাও আমাদেরই মত একই অমূল্য বিশ্বাস লাভ করেছ। এইজন্য আমি তোমাদের কাছে এই চিঠি লিখছি। ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু যীশুকে গভীর ভাবে জানবার মধ্য দিয়ে তোমাদের উপর প্রচুর দয়া ও শান্তি থাকুক। যিনি তাঁর মহিমা ও তাঁর গুণের দ্বারা আমাদের ডেকেছেন, তাঁকে গভীর ভাবে জানবার মধ্য দিয়েই তাঁর ঈশ্বরীয় শক্তি আমাদের এমন সব দান দিয়েছে যার দ্বারা আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে পারি। তিনি নিজের মহিমায় ও গুণে আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান ও মহান প্রতিজ্ঞা করেছেন। এর উদ্দেশ্য হল, মানুষের মন্দ ইচ্ছার দরুন জগতে যে সব নোংরামি জমা হয়েছে তা থেকে তোমরা রক্ষা পেয়ে যেন ঈশ্বরের স্বভাবের ভাগী হও। এইজন্য খুব আগ্রহী হয়ে তোমাদের বিশ্বাসের সংগে ভাল স্বভাব, ভাল স্বভাবের সংগে জ্ঞান, জ্ঞানের সংগে নিজেকে দমন এবং নিজেকে দমনের সংগে ধৈর্য, ধৈর্যের সংগে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, ভক্তির সংগে ভাইদের প্রতি ভালবাসা এবং সেই ভালবাসার সংগে আরও গভীর ভালবাসার মনোভাব যোগ কর। যদি তোমাদের এই সব গুণ থাকে এবং তা উপ্‌চে পড়তে থাকে, তাহলে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে গভীর ভাবে জানবার কাজে তোমরা বিফল ও নিষ্ফল হবে না। যে লোকের ভিতরে এই গুণগুলো নেই সে বেশী দূর দেখতে পায় না, সে অন্ধ। তাকে যে তার আগেকার পাপ থেকে শুচি করা হয়েছে তা সে ভুলে গেছে। এইজন্য ভাইয়েরা, ঈশ্বর যে সত্যিই তোমাদের ডেকেছেন এবং বেছে নিয়েছেন তা নিশ্চিত করে তুলবার জন্য আরও বেশী আগ্রহী হও। এই সব করলে তোমরা কখনও উছোট খাবে না। এতে আমাদের প্রভু এবং উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের চিরস্থায়ী রাজ্যে আগ্রহের সংগে তোমাদের গ্রহণ করা হবে। এইজন্যই আমি সব সময় এই বিষয়গুলো তোমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি। অবশ্য তোমরা তো এই সব জানই এবং যে সত্য তোমাদের অন্তরে আছে তাতে স্থিরও আছ। কিন্তু আমি মনে করি, যতদিন আমি এই তাম্বুর মত অস্থায়ী দেহে বেঁচে থাকব ততদিন এই বিষয়গুলো মনে করিয়ে দিয়ে তোমাদের জাগিয়ে রাখা আমার উচিত; কারণ আমি যে আর বেশী দিন এই দেহ-তাম্বুতে থাকব না তা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আমাকে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আমার মৃত্যুর পরেও যাতে তোমরা এই সব বিষয় সব সময় মনে রাখ, আমি তার ব্যবস্থা করতে খুব চেষ্টা করব। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শক্তি ও তাঁর আসবার বিষয় তোমাদের কাছে জানাতে গিয়ে আমরা কোন বানানো গল্প বলি নি; আমরা তাঁর মহিমা নিজেদের চোখেই দেখেছি। “ইনি আমার প্রিয় পুত্র, এঁর উপরে আমি খুব সন্তুষ্ট,” স্বর্গ থেকে বলা এই কথার মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট পিতা ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্মান ও গৌরব লাভ করেছিলেন। আমরা যখন তাঁর সংগে সেই পবিত্র পাহাড়ে ছিলাম তখন স্বর্গ থেকে বলা এই কথাগুলো শুনেছিলাম। শাস্ত্রের মধ্যে নবীরা যা বলেছেন তা আমাদের কাছে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্ধকারে যেমন তোমাদের চোখ বাতির দিকে থাকে ঠিক তেমনি করে, যতক্ষণ সকাল না হয় এবং তোমাদের অন্তরে শুকতারা না ওঠে, ততক্ষণ পর্যন্ত নবীদের কথায় মনোযোগ দিলে তোমরা ভাল করবে। তবে সব কিছুর উপরে এই কথা মনে রেখো যে, শাস্ত্রের মধ্যেকার কোন কথা নবীদের মনগড়া নয়, কারণ নবীরা তাঁদের ইচ্ছামত কোন কথা বলেন নি; পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েই তাঁরা ঈশ্বরের দেওয়া কথা বলেছেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যেমন ভণ্ড নবী ছিল তেমনি তোমাদের মধ্যেও ভণ্ড শিক্ষক থাকবে। তারা চুপি চুপি এমন সব ভুল শিক্ষা নিয়ে আসবে যা মানুষকে ধ্বংস করে দেবে; এমন কি, যিনি তাদের কিনেছেন সেই প্রভুকে পর্যন্ত তারা অস্বীকার করবে। এইভাবে তারা শীঘ্রই নিজেদের উপরে ধ্বংস ডেকে আনবে। অনেকেই তাদের দেখাদেখি লমপট হয়ে উঠবে। তাদের জন্যই লোকেরা সত্যের পথের নিন্দা করবে। লোভের বশে ছলনার কথা বলে তারা নিজেদের লাভের জন্য তোমাদের কাজে লাগাবে। তাদের শাস্তি অনেক দিন ধরে তাদের উপরে ঝুলছে, আর তাদের ধ্বংস চুপচাপ বসে নেই। স্বর্গদূতেরা যখন পাপ করেছিল তখন ঈশ্বর তাদের ছেড়ে দেন নি বরং নরকের অন্ধকার গর্তে ফেলে দিয়ে বিচারের জন্য রেখে দিয়েছেন। আর তিনি সেই পুরানো জগতকেও ছেড়ে দেন নি, বরং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন লোকদের উপর বন্যা এনেছিলেন; কিন্তু নোহ এবং অন্য সাতজনকে তিনি রক্ষা করেছিলেন। এই নোহ ঈশ্বরভক্তি সম্বন্ধে প্রচার করতেন। সদোম এবং ঘমোরা শহর আগুন দিয়ে ধ্বংস করে ঈশ্বর সেই শহরের লোকদের শাস্তি দিয়েছিলেন এবং এইভাবে তিনি দেখিয়েছিলেন, যারা ঈশ্বরকে ভক্তি করে না তাদের অবস্থা কি হবে; কিন্তু লোটকে তিনি রক্ষা করেছিলেন। লোট ঈশ্বরভক্ত লোক ছিলেন। সেখানকার আইন-অমান্যকারী লোকদের লমপটতায় তিনি কষ্ট পেতেন। সেই ঈশ্বরভক্ত লোকটি তাদের মধ্যে বাস করে দিনের পর দিন তাদের কাজ দেখতেন ও তাদের কথা শুনতেন, আর আইন-কানুনের বিরুদ্ধে তাদের কাজ করতে দেখে তাঁর ঈশ্বরভক্ত অন্তরে খুব বেদনা পেতেন। অথচ স্বর্গদুতেরা শক্তি ও ক্ষমতায় মহান হলেও প্রভুর কাছে তাঁদের সম্বন্ধে এমন কোন নালিশ করেন না যাতে নিন্দার কথা আছে। কিন্তু যে বুদ্ধিহীন জীব-জানোয়ারেরা তাদের স্বাভাবিক ইচ্ছার অধীন এবং ধরে মেরে ফেলবার জন্যই যাদের জন্ম, এই ভণ্ড শিক্ষকেরা তাদেরই মত। তারা যা বোঝে না তার সম্বন্ধে খারাপ কথা বলে। নিজেদের নোংরামির মধ্যেই তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের খারাপ কাজের পাওনা হিসাবে তারা কষ্ট ভোগ করবে। এই লোকেরা দিনের বেলায় ভোজ সভায় হৈ-হল্লা করে মদ খেতে আনন্দ পায়। যখন তারা তোমাদের সংগে খেতে বসে তখন হৈ-হল্লা করে মদ খেতে খেতে তাদের কামনায় তারা সেই খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে লজ্জা ও অসম্মান আনে। তাদের চোখ ব্যভিচারে ভরা এবং তারা পাপ কাজ করা কখনও বন্ধ করে না। যারা অস্থিরমনা তাদের তারা লোভ দেখিয়ে ভুল পথে নিয়ে যায়। তাদের অন্তর কেবল লোভ করতেই শিখেছে। তাদের উপর অভিশাপ রয়েছে। তারা সোজা পথ ছেড়ে ভুল পথে গেছে। তারা বিয়োরের ছেলে বিলিয়মের পথ ধরেছে। বিলিয়ম মন্দ কাজের পুরস্কার পেতে চেয়েছিল, কিন্তু তার মন্দ কাজের জন্য সে একটা বোবা গাধার কাছ থেকে ধমক্‌ খেয়েছিল। সেই গাধা মানুষের মত কথা বলে তার পাগলামিতে বাধা দিয়েছিল। এই লোকেরা শুকিয়ে যাওয়া ফোয়ারার মত এবং ঝোড়ো হাওয়ায় বয়ে নিয়ে যাওয়া কুয়াশার মত। ভীষণ অন্ধকার তাদের জন্য জমা করে রাখা হয়েছে। তারা অসার ও বড় বড় কথা বলে এবং মানুষের পাপ-স্বভাবের কামনাপূর্ণ ইচ্ছা জাগিয়ে তুলে তারা এমন লোকদের ভুল পথে নিয়ে যায় যারা অন্যায়ের মধ্যে বাসকারী লোকদের মধ্য থেকে বের হয়ে আসবার পথে ছিল। সেই ভণ্ড শিক্ষকেরা সেই লোকদের স্বাধীনতা দেবার প্রতিজ্ঞা করে বটে, কিন্তু নিজেরা জঘন্য কাজের দাস হয়ে থাকে; কারণ কেউ যদি কোন কিছুর কাছে হার মানে তবে সে তার দাস হয়। আমাদের প্রভু ও উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টকে গভীর ভাবে জানবার ফলে জগতের মন্দতা থেকে পালিয়ে গিয়েও যখন তারা আবার সেই একই মন্দের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে তার কাছে হার মেনেছে, তখন তাদের প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরও খারাপ হয়েছে। যদিও তারা সৎ জীবনের পথ জানত তবুও যে পবিত্র আদেশ তাদের দেওয়া হয়েছিল তা তারা অগ্রাহ্য করেছিল। এই অবস্থায় তাদের পক্ষে বরং ঠিক পথ না জানাই ভাল ছিল। তাদের সম্বন্ধে এই চলতি কথা সত্যি হয়ে উঠেছে, “কুকুর নিজের বমির দিকে ফেরে,” আর “শূকরকে ধোওয়ানো হলেও সে কাদায় গড়াগড়ি দেয়।” প্রিয় ভাইয়েরা, তোমাদের কাছে এটাই আমার দ্বিতীয় চিঠি। দু’টা চিঠিতেই আমি তোমাদের কতগুলো বিষয় মনে করিয়ে দিয়ে তোমাদের খাঁটি মনকে নাড়া দেবার চেষ্টা করেছি। পবিত্র নবীরা যে সব কথা আগে বলে গেছেন সেগুলো এবং তোমাদের প্রেরিত্‌দের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রভু ও উদ্ধারকর্তা যে আদেশ দিয়ে গেছেন, আমি চাই যেন তোমরা তা মনে রাখ। প্রথমে এই কথা মনে রেখো যে, ভাল বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাই যাদের স্বভাব তারা শেষকালে এসে ঠাট্টা-বিদ্রূপ ই করবে। তারা নিজেদের কামনা-বাসনা অনুসারেই চলবে, আর বলবে, “তাঁর আসবার যে প্রতিজ্ঞা ছিল তার কি হল? জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে যেমন চলছিল ঠিক তেমনি আমাদের পূর্বপুরুষদের মৃত্যুর পর থেকে সব কিছু তো সেই একইভাবে চলছে।” এই লোকেরা ইচ্ছা করেই ভুলে যায় যে, অনেক দিন আগে ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা মহাকাশ সৃষ্ট হয়েছিল এবং জল দিয়ে ও জলের মধ্য থেকে পৃথিবীরও সৃষ্টি হয়েছিল। তখনকার সেই জগৎ বন্যার জলে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আর ঈশ্বরের সেই একই বাক্যের দ্বারা এখনকার মহাকাশ ও পৃথিবী আগুনে পুড়িয়ে দেবার জন্য রাখা হয়েছে; ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিহীন লোকদের বিচার ও ধ্বংসের দিন পর্যন্ত তা রক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রিয় ভাইয়েরা, এই কথাটা ভুলে যেয়ো না যে, প্রভুর কাছে এক দিন এক হাজার বছরের সমান এবং এক হাজার বছর এক দিনের সমান। কোন কোন লোক মনে করে প্রভু তাঁর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে দেরি করছেন, কিন্তু তা নয়। আসলে তিনি তোমাদের প্রতি ধৈর্য ধরছেন, কারণ কেউ যে ধ্বংস হয়ে যায় এটা তিনি চান না, বরং সবাই যেন পাপ থেকে মন ফিরায় এটাই তিনি চান। কিন্তু প্রভুর দিন চোরের মত করে আসবে।সেই দিন মহাকাশ হু হু শব্দ করে শেষ হয়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা সবই পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবী এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তা সবই পুড়ে যাবে। কিন্তু আমরা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা অনুসারে নতুন আকাশ ও নতুন পৃথিবীর জন্য অপেক্ষা করছি। সেখানে সব কিছু ঈশ্বরের ইচ্ছামত হবে। প্রিয় ভাইয়েরা, তোমরা এখন এই সবের জন্য অপেক্ষা করছ বলে প্রাণপণ চেষ্টা কর যাতে তিনি এসে তোমাদের নিখুঁত হয়ে নির্দোষ অবস্থায় শান্তিতে বাস করতে দেখতে পান। মনে রেখো, মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার পাবার সুযোগ দেবার জন্য আমাদের প্রভু ধৈর্য ধরে আছেন। এই একই কথা আমাদের প্রিয় ভাই পৌলও ঈশ্বরের দেওয়া জ্ঞানে তোমাদের কাছে লিখেছেন। তাঁর সব চিঠিতেই তিনি এই সব বিষয় সম্বন্ধে এই একই কথা লিখে থাকেন। সেগুলোর মধ্যে অবশ্য কতগুলো বিষয় আছে যা বুঝা কঠিন। সেইজন্য যারা শিষ্য হবার শিক্ষা পায় নি ও যাদের মন অস্থির তারা অন্যান্য শাস্ত্রের মত এগুলোর মানেও ঘুরিয়ে বলে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে। প্রিয় ভাইয়েরা, তোমরা এই কথা আগেই জানতে পেরেছ বলে সাবধান হও, যেন এই সব উচ্ছঙ্খল লোকদের ভুল তোমাদের ভুল পথে নিয়ে না যায়, আর তোমাদের মনের স্থিরতা থেকে তোমরা সরে না পড়। তোমরা আমাদের প্রভু ও উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের দয়ায় ও তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞানে বেড়ে উঠতে থাক। এখন এবং অনন্ত কাল পর্যন্ত তাঁরই গৌরব হোক। আমেন। সেই প্রথম থেকেই যিনি ছিলেন, যাঁর মুখের কথা আমরা শুনেছি, যাঁকে নিজেদের চোখে দেখেছি, যাঁকে ভাল করে লক্ষ্য করেছি, যাঁকে নিজেদের হাতে ছুঁয়েছি, এখানে সেই জীবন-বাক্যের কথাই লিখছি। সেই জীবন প্রকাশিত হয়েছিলেন। আমরা তাঁকে দেখেছি এবং তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি। যিনি পিতার কাছে ছিলেন আর আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছিলেন সেই অনন্ত জীবনের কথাই তোমাদের জানাচ্ছি। যাঁকে আমরা দেখেছি এবং যাঁর মুখের কথা আমরা শুনেছি তাঁর বিষয়েই তোমাদের জানাচ্ছি। আমরা তা জানাচ্ছি যেন তোমাদের ও আমাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ-সম্বন্ধ গড়ে ওঠে। এই যোগাযোগ হল পিতা ও তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্ট এবং আমাদের মধ্যে। আমাদের আনন্দ যাতে পরিপূর্ণ হয় সেইজন্যই আমরা এই সমস্ত লিখছি। যে কথা আমরা যীশু খ্রীষ্টের কাছ থেকে শুনে তোমাদের জানাচ্ছি তা এই-ঈশ্বর আলো; তাঁর মধ্যে অন্ধকার বলে কিছুই নেই। যদি আমরা বলি যে, ঈশ্বর ও আমাদের মধ্যে যোগাযোগ-সম্বন্ধ আছে অথচ অন্ধকারে চলি তবে আমরা মিথ্যা কথা বলছি, সত্যের পথে চলছি না। কিন্তু ঈশ্বর যেমন আলোতে আছেন আমরাও যদি তেমনি আলোতে চলি তবে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ-সম্বন্ধ থাকে আর তাঁর পুত্র যীশুর রক্ত সমস্ত পাপ থেকে আমাদের শুচি করে। যদি আমরা বলি আমাদের মধ্যে পাপ নেই তবে আমরা নিজেদের ফাঁকি দিই। তাতে এটাই বুঝা যায় যে, আমাদের অন্তরে ঈশ্বরের সত্য নেই। যদি আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করি তবে তিনি তখনই আমাদের পাপ ক্ষমা করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে আমাদের শুচি করেন, কারণ তিনি নির্ভরযোগ্য এবং কখনও অন্যায় করেন না। যদি বলি আমরা পাপ করি নি তবে আমরা তাঁকে মিথ্যাবাদী বানাই, আর তাঁর বাক্য আমাদের অন্তরে নেই। আমার প্রিয় সন্তানেরা, তোমরা যাতে পাপ না কর সেইজন্যই আমি তোমাদের কাছে এই সব কথা লিখছি। তবে যদি কেউ পাপ করেই ফেলে তাহলে পিতার কাছে আমাদের পক্ষ হয়ে কথা বলবার জন্য একজন আছেন; তিনি যীশু খ্রীষ্ট, যিনি নির্দোষ। আমাদের পাপ দূর করবার জন্য খ্রীষ্ট তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গ করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করেছেন। কেবল আমাদের পাপ নয়, কিন্তু সমস্ত মানুষের পাপ দূর করবার জন্য তিনি তা করেছেন। যদি আমরা তাঁর সব আদেশ পালন করে চলি তবে আমরা নিশ্চয় করে বুঝি যে, আমরা তাঁকে জানতে পেরেছি। যে বলে “আমি তাঁকে জানি,” অথচ তাঁর আদেশ পালন করে না সে মিথ্যাবাদী; তার মধ্যে সত্য নেই। প্রিয় সন্তানেরা, আমি তোমাদের কাছে কোন নতুন আদেশের কথা লিখছি না, বরং প্রথম থেকেই যে আদেশ ছিল সেই পুরানো আদেশের কথাই লিখছি। তোমরা যে কথা আগে শুনেছ সেটাই সেই পুরানো আদেশ। তবে এই যে আদেশের কথা এখন আমি তোমাদের কাছে লিখছি তা পুরানো হলেও নতুন। এই আদেশের সত্যতা যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে ও তোমাদের জীবনে দেখা গেছে, কারণ অন্ধকার কেটে যাচ্ছে এবং সেই আসল আলো এখন জ্বলছে। যে লোক বলে সে আলোতে আছে অথচ তার ভাইকে ঘৃণা করে সে এখনও অন্ধকারেই রয়েছে। যে তার ভাইকে ভালবাসে সে আলোতে থাকে এবং তার মধ্যে উছোট খাওয়ার কোন কারণ নেই। কিন্তু যে তার ভাইকে ঘৃণা করে সে অন্ধকারে আছে এবং অন্ধকারেই চলাফেরা করছে। সে জানে না সে কোথায় যাচ্ছে, কারণ অন্ধকার তার চোখ অন্ধ করে দিয়েছে। ছেলেমেয়েরা, খ্রীষ্টের জন্য তোমাদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে বলেই আমি তোমাদের কাছে লিখছি। পিতারা, সেই প্রথম থেকেই যিনি আছেন তোমরা তাঁকে জেনেছ বলেই তোমাদের কাছে লিখছি। যুবকেরা, শয়তানের উপর তোমরা জয়লাভ করেছ বলেই তোমাদের কাছে লিখছি। ছেলেমেয়েরা, আমি তোমাদের কাছে লিখলাম, কারণ তোমরা পিতা ঈশ্বরকে জান। পিতারা, আমি তোমাদের কাছে লিখলাম, কারণ সেই প্রথম থেকেই যিনি আছেন তোমরা তাঁকে জেনেছ। যুবকেরা, আমি তোমাদের কাছে লিখলাম, কারণ তোমরা বলবান এবং ঈশ্বরের বাক্য তোমাদের অন্তরে রয়েছে, আর তোমরা শয়তানের উপর জয়লাভ করেছ। তোমরা জগৎ এবং জগতের কোন কিছু ভালবেসো না। যদি কেউ জগৎকে ভালবাসে তবে সে পিতাকে ভালবাসে না, কারণ জগতের মধ্যে যা কিছু আছে-দেহের কামনা, চোখের লোভ এবং সাংসারিক বিষয়ে অহংকার-এর কোনটাই পিতার কাছ থেকে আসে না, জগৎ থেকেই আসে। জগৎ ও জগতের কামনা-বাসনা শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছা যে পালন করে সে চিরকাল থাকবে। সন্তানেরা, এ-ই শেষ সময়। তোমরা তো শুনেছ যে, খ্রীষ্ট-শত্রু আসছে, কিন্তু তাঁর আরও অনেক শত্রু এরই মধ্যে এসে গেছে। তাই আমরা বুঝতে পারছি যে, এ-ই শেষ সময়। খ্রীষ্টের এই শত্রুরা আমাদের মধ্য থেকে বের হয়ে গেছে। তারা কিন্তু আমাদের লোক ছিল না। যদি তারা আমাদেরই হত তবে আমাদের সংগেই থাকত, কিন্তু তারা বের হয়ে গেছে বলে বুঝা যাচ্ছে, তারা কেউই আমাদের নয়। তোমরা কিন্তু সেই পবিত্রজনের কাছ থেকে অভিষেক পেয়েছ, অর্থাৎ পবিত্র আত্মাকে পেয়েছ এবং তোমরা সকলে সত্যকে জানতে পেরেছ। সত্যকে জান না বলে যে আমি তোমাদের কাছে লিখলাম তা নয়, কিন্তু তোমরা সত্যকে জান এবং এ-ও জান যে, সত্য থেকে মিথ্যা আসে না; আর সেইজন্যই আমি তোমাদের কাছে লিখলাম। যে বলে, যীশু মশীহ নন, সে মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কি? পিতা ও পুত্রকে যে অস্বীকার করে সে-ই তো খ্রীষ্টের শত্রু। পুত্রকে যে অস্বীকার করে তার সংগে পিতার কোন সম্বন্ধ নেই, কিন্তু পুত্রকে যে স্বীকার করে তার সংগে পিতারও সম্বন্ধ আছে। প্রথম থেকে যা তোমরা শুনে আসছ তা যেন তোমাদের অন্তরে থাকে। প্রথম থেকে যা তোমরা শুনে আসছ তা যদি তোমাদের অন্তরে থাকে তবে তোমরা পুত্র ও পিতার সংগে যুক্ত থাকবে। এটাই হল অনন্ত জীবন, যা খ্রীষ্ট আমাদের দেবার প্রতিজ্ঞা করেছেন। যারা তোমাদের বিপথে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে তাদের সম্বন্ধে আমি তোমাদের কাছে এই সব লিখলাম। কিন্তু তোমরা খ্রীষ্টের কাছ থেকে অভিষেক পেয়েছ, অর্থাৎ পবিত্র আত্মাকে পেয়েছ। তিনি তোমাদের অন্তরে থাকেন। এইজন্য অন্য কারও শিক্ষার তোমাদের দরকার নেই। সমস্ত বিষয়ে পবিত্র আত্মাই তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন। তিনি সত্য, মিথ্যা নন। সেইজন্যই যেভাবে তিনি তোমাদের খ্রীষ্টের মধ্যে থাকতে শিক্ষা দেন সেইভাবেই খ্রীষ্টের মধ্যে থাক। সন্তানেরা, তাই বলছি, তোমরা খ্রীষ্টের মধ্যেই থাক যাতে তিনি যখন প্রকাশিত হবেন তখন আমাদের সাহস থাকে এবং তিনি যখন আসবেন তখন তাঁর সামনে আমাদের লজ্জা পেতে না হয়। যদি তোমরা জান যে, তিনি কখনও অন্যায় করেন না তবে এও জেনে রেখো-যারা ন্যায় কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখে, ঈশ্বর থেকেই তাদের জন্ম হয়েছে। দেখ, পিতা ঈশ্বর আমাদের কত ভালবাসেন! তিনি আমাদের তাঁর সন্তান বলে ডাকেন, আর আসলে আমরা তা-ই। এইজন্য জগৎ আমাদের জানে না, কারণ জগৎ ঈশ্বরকেও জানে নি। প্রিয় সন্তানেরা, এখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান, কিন্তু পরে কি হব তা এখনও প্রকাশিত হয় নি। তবে আমরা জানি, খ্রীষ্ট যখন প্রকাশিত হবেন তখন আমরা তাঁরই মত হব, কারণ তিনি আসলে যা, সেই চেহারাতেই আমরা তাঁকে দেখতে পাব। যে কেউ খ্রীষ্টের উপর এই আশা রাখে সে নিজেকে খাঁটি করতে থাকে যেমন খ্রীষ্ট খাঁটি। যারা পাপ করে তারা ঈশ্বরের কথা অমান্য করে। পাপ হল ঈশ্বরের কথা অমান্য করা। তোমরা তো জান যে, আমাদের পাপ দূর করবার জন্যই খ্রীষ্ট প্রকাশিত হয়েছিলেন। খ্রীষ্টের মধ্যে কোন পাপ নেই। যারা খ্রীষ্টের মধ্যে থাকে তারা পাপে পড়ে থাকে না। যারা পাপে পড়ে থাকে তারা খ্রীষ্টকে দেখেও নি এবং জানেও নি। সন্তানেরা, কেউ যেন তোমাদের বিপথে নিয়ে না যায়। খ্রীষ্ট অন্যায় করেন না, আর যে কেউ ন্যায় কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে সেও অন্যায় করে না। যে পাপ করতেই থাকে সে শয়তানের, কারণ শয়তান প্রথম থেকেই পাপ করে চলেছে। শয়তানের কাজকে ধ্বংস করবার জন্যই ঈশ্বরের পুত্র প্রকাশিত হয়েছিলেন। ঈশ্বর থেকে যার জন্ম হয়েছে সে পাপে পড়ে থাকে না, কারণ ঈশ্বরের স্বভাব তার মধ্যে থাকে। ঈশ্বর থেকে জন্ম হয়েছে বলে সে পাপে পড়ে থাকতে পারে না। যারা ন্যায় কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখে না এবং ভাইকে ভালবাসে না, তারা ঈশ্বরের নয়। এতেই প্রকাশ পায়, কারা ঈশ্বরের সন্তান আর কারাই বা শয়তানের সন্তান। যে কথা তোমরা প্রথম থেকে শুনে আসছ তা এই-আমাদের একে অন্যকে ভালবাসা উচিত। সেইজন্য আমি বলছি, আমরা যেন কয়িনের মত না হই। কয়িন শয়তানের লোক ছিল এবং তার ভাইকে সে খুন করেছিল। কেন সে তাকে খুন করেছিল? কারণ সে মন্দ কাজ করত, আর তার ভাই ন্যায় কাজ করত। ভাইয়েরা, জগতের লোকেরা যদি তোমাদের ঘৃণা করে তাতে আশ্চর্য হয়ো না। আমরা ভাইদের ভালবাসি বলেই বুঝতে পারছি, আমরা মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে এসেছি। যারা ভালবাসে না তারা মৃত্যুর মধ্যে থাকে। ভাইকে যে ঘৃণা করে সে খুনী। কোন খুনীর মধ্যে যে অনন্ত জীবন থাকে না, তা তোমাদের অজানা নেই। খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন, তাই ভালবাসা কি তা আমরা জানতে পেরেছি। তাহলে ভাইদের জন্য নিজের প্রাণ দেওয়া আমাদেরও উচিত। এই জগতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকবার মত অবস্থা যার আছে, সে তার ভাইদের অভাব দেখেও যদি চোখ বন্ধ করে রাখে তবে কেমন করে তার অন্তরে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা থাকতে পারে? সন্তানেরা, আমরা যেন শুধু মুখের ভালবাসা না দেখিয়ে কাজের মধ্য দিয়ে সত্যিকারের ভালবাসা দেখাই। প্রিয় সন্তানেরা, আমাদের অন্তর যদি আমাদের দোষী না করে তবে ঈশ্বরের সামনে আমাদের সাহস থাকবে। তার ফলে আমরা যা কিছু চাইব তা তাঁর কাছ থেকে পাব, কারণ তিনি যে সব আদেশ দিয়েছেন সেগুলো আমরা পালন করি এবং তিনি যে সব কাজে সন্তুষ্ট হন আমরা তা-ই করি। তাঁর আদেশ এই-আমরা যেন তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস করি এবং একে অন্যকে ভালবাসি। এই আদেশই তিনি আমাদের দিয়েছেন। তাঁর আদেশ যে পালন করে সে তাঁর মধ্যে থাকে এবং তিনিও তার মধ্যে থাকেন। যে পবিত্র আত্মা তিনি আমাদের দিয়েছেন সেই পবিত্র আত্মার মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি যে, তিনি আমাদের অন্তরে থাকেন। প্রিয় সন্তানেরা, তোমরা সব আত্মাকে বিশ্বাস কোরো না, বরং যাচাই করে দেখ তারা ঈশ্বর থেকে এসেছে কি না, কারণ জগতে অনেক ভণ্ড নবী বের হয়েছে। ঈশ্বরের আত্মাকে তোমরা এই উপায়ে চিনতে পারবে-যে আত্মা স্বীকার করে যীশু খ্রীষ্ট মানুষ হয়ে এসেছিলেন সেই আত্মাই ঈশ্বর থেকে এসেছেন; কিন্তু যে আত্মা এই যীশুকে অস্বীকার করে সেই আত্মা ঈশ্বর থেকে আসে নি। এ সেই খ্রীষ্ট-শত্রুর আত্মা। সেই আত্মা যে আসছে তা তো তোমরা শুনেছ, আর আসলে সেই আত্মা এখনই জগতে আছে। কিন্তু সন্তানেরা, তোমরা ঈশ্বরের। তোমরা সেই ভণ্ডদের উপর জয়ী হয়েছ, কারণ এই জগতে যে আছে, তার চেয়ে যিনি তোমাদের অন্তরে আছেন তিনি মহান। সেই ভণ্ডেরা এই জগতের; সেইজন্য তারা এই জগতের কথা বলে এবং জগৎ তাদের কথা শোনে। আমরা ঈশ্বরের; যে ঈশ্বরকে জানে সে আমাদের কথা শোনে, কিন্তু যে ঈশ্বরের নয় সে আমাদের কথা শোনে না। এর দ্বারাই আমরা সত্যের আত্মা ও ছলনার আত্মাকে চিনতে পারি। প্রিয় সন্তানেরা, আমরা যেন একে অন্যকে ভালবাসি, কারণ ভালবাসা ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে। যাদের অন্তরে ভালবাসা আছে, ঈশ্বর থেকেই তাদের জন্ম হয়েছে এবং তারা ঈশ্বরকে জানে। যাদের অন্তরে ভালবাসা নেই তারা ঈশ্বরকে জানে না, কারণ ঈশ্বর নিজেই ভালবাসা। আমাদের প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসা এইভাবে প্রকাশিত হয়েছে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে এই জগতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যেন আমরা তাঁর মধ্য দিয়ে জীবন পাই। আমরা যে ঈশ্বরকে ভালবেসেছিলাম তা নয়, কিন্তু তিনি আমাদের ভালবেসে তাঁর পুত্রকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, যেন পুত্র তাঁর নিজের জীবন-উৎসর্গের দ্বারা আমাদের পাপ দূর করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করেন। এটাই হল ভালবাসা। প্রিয় সন্তানেরা, ঈশ্বর যখন এইভাবে আমাদের ভালবেসেছেন তখন আমাদেরও একে অন্যকে ভালবাসা উচিত। কেউ কখনও ঈশ্বরকে দেখে নি। যদি আমরা একে অন্যকে ভালবাসি তাহলে বুঝা যাবে যে, ঈশ্বর আমাদের অন্তরে আছেন এবং তাঁর ভালবাসা আমাদের অন্তরে পুরোপুরি ভাবে কাজ করছে। তাঁর আত্মা তিনি আমাদের দান করেছেন, আর এতেই আমরা জানতে পারি যে, আমরা তাঁর মধ্যে আছি আর তিনিও আমাদের অন্তরে আছেন। আমরা দেখেছি ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, পিতা পুত্রকে মানুষের উদ্ধারকর্তা হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। যে কেউ স্বীকার করে যীশু ঈশ্বরের পুত্র, ঈশ্বর তার মধ্যে থাকেন এবং সেও ঈশ্বরের মধ্যে থাকে। আমরা জানি ঈশ্বর আমাদের ভালবাসেন, আর তাঁর ভালবাসার উপর আমাদের বিশ্বাস আছে। ঈশ্বর নিজেই ভালবাসা। ভালবাসার মধ্যে যে থাকে সে ঈশ্বরের মধ্যেই থাকে এবং ঈশ্বর তার মধ্যে থাকেন। এইভাবেই ভালবাসা আমাদের অন্তরে পূর্ণতা লাভ করে, যেন বিচারের দিনে আমরা সাহস পাই, কারণ এই জগতে আমাদের জীবন তাঁরই জীবনের মত। এই ভালবাসার মধ্যে ভয় নেই, বরং পরিপূর্ণ ভালবাসা ভয়কে দূর করে দেয়, কারণ ভয়ের সংগে শাস্তির চিন্তা জড়ানো থাকে। যে ভয় করে সে ভালবাসায় পূর্ণতা লাভ করে নি। তিনি আমাদের প্রথমে ভালবেসেছিলেন বলেই আমরা ভালবাসি। যে বলে সে ঈশ্বরকে ভালবাসে অথচ তার ভাইকে ঘৃণা করে সে মিথ্যাবাদী; কারণ চোখে দেখা ভাইকে যে ভালবাসে না সে অদেখা ঈশ্বরকে কেমন করে ভালবাসতে পারে? আমরা তাঁর কাছ থেকে এই আদেশ পেয়েছি যে, ঈশ্বরকে যারা ভালবাসে তারা যেন ভাইকেও ভালবাসে। যারা বিশ্বাস করে যীশুই সেই মশীহ, ঈশ্বর থেকেই তাদের জন্ম হয়েছে। যারা পিতাকে ভালবাসে তারা তাঁর সন্তানকেও ভালবাসে। যখন আমরা ঈশ্বরকে ভালবাসি এবং তাঁর আদেশ পালন করি তখন জানি যে, ঈশ্বরের সন্তানদেরও আমরা ভালবাসি। ঈশ্বরের আদেশ পালন করাই হল ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা। তাঁর আদেশ ভারী বোঝার মত নয়, কারণ ঈশ্বরের প্রত্যেকটি সন্তান জগতের উপর জয়লাভ করে থাকে। জগতের উপর যা জয়লাভ করেছে তা হল আমাদের বিশ্বাস। যারা বিশ্বাস করে যীশু ঈশ্বরের পুত্র, একমাত্র তারাই জগতের উপর জয়লাভ করে। ইনিই যীশু খ্রীষ্ট, যিনি জল ও রক্তের মধ্য দিয়ে এসেছিলেন। কেবল জলের মধ্য দিয়ে নয়, কিন্তু জল ও রক্তের মধ্য দিয়ে এসেছিলেন। পবিত্র আত্মা এই বিষয়ে সাক্ষ্য দেন, কারণ তিনি নিজেই সত্য। আমরা মানুষের সাক্ষ্য গ্রহণ করে থাকি, কিন্তু ঈশ্বরের সাক্ষ্য তার চেয়েও বড়; আর তিনি তাঁর পুত্রের বিষয়ে সেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঈশ্বরের পুত্রের উপরে যে বিশ্বাস করে তার অন্তরে সেই সাক্ষ্য আছে। যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে না তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বানিয়েছে, কারণ ঈশ্বর তাঁর পুত্রের বিষয়ে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা তারা বিশ্বাস করেনি। সেই সাক্ষ্য এই যে, ঈশ্বর আমাদের অনন্ত জীবন দিয়েছেন এবং সেই জীবন তাঁর পুত্রের মধ্যে আছে। ঈশ্বরের পুত্রকে যে পেয়েছে সে সেই জীবনও পেয়েছে; কিন্তু ঈশ্বরের পুত্রকে যে পায় নি সে সেই জীবনও পায়নি। তোমরা যারা ঈশ্বরের পুত্রের উপরে বিশ্বাস কর, তোমাদের কাছে আমি এই সমস্ত লিখলাম যাতে তোমরা জানতে পার যে, তোমরা অনন্ত জীবন পেয়েছ। ঈশ্বরের উপর আমাদের এই নিশ্চয়তা আছে যে, তাঁর ইচ্ছামত যদি আমরা কিছু চাই তবে তিনি আমাদের কথা শোনেন। যদি আমরা জানি, আমরা যা কিছু চাই তা তিনি শোনেন তবে এও জানি যে, আমরা তাঁর কাছ থেকে যা চেয়েছি তা আমাদের পাওয়া হয়ে গেছে। যদি কেউ তার ভাইকে এমনভাবে পাপ করতে দেখে যা মৃত্যুমুখী নয়, তবে সে ঈশ্বরের কাছে চাইবে আর তাতে তিনি তাকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আমি এখানে তাদের কথাই বলছি যারা পাপ করছে অথচ তাদের পাপ মৃত্যুমুখী নয়। কিন্তু মৃত্যুমুখী পাপও আছে। সেই বিষয়ে অনুরোধ করবার কথা আমি তোমাদের বলছি না। সব রকমের অন্যায়ই পাপ, তবে সব পাপ মৃত্যুমুখী নয়। আমরা জানি, ঈশ্বর থেকে যার জন্ম হয়েছে সে পাপে পড়ে থাকে না। যিনি ঈশ্বর থেকে জন্মেছিলেন তিনিই তাকে রক্ষা করেন, আর শয়তান তাকে ছুঁতে পারে না। আমরা জানি আমরা ঈশ্বরের, আর সমস্ত জগৎ শয়তানের ক্ষমতার নীচে পড়ে আছে। আমরা আরও জানি যে, ঈশ্বরের পুত্র এসে আমাদের বুঝবার শক্তি দিয়েছেন যেন সত্য ঈশ্বরকে আমরা জানতে পারি। যিনি সত্য ঈশ্বর আমরা তাঁর সংগে যুক্ত, অর্থাৎ তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টের সংগে যুক্ত। তিনিই সত্য ঈশ্বর এবং তিনিই অনন্ত জীবন। সন্তানেরা, প্রতিমার সংগে তোমাদের কোন সম্বন্ধ না থাকুক। ঈশ্বর যাকে বেছে নিয়েছেন সেই মহিলা ও তার সন্তানদের কাছে সেই বুড়ো নেতা আমি এই চিঠি লিখছি। ঈশ্বরের সত্যের দরুন আমি তোমাদের সবাইকে ভালবাসি। কেবল যে আমি তোমাদের ভালবাসি তা নয়, কিন্তু যারা ঈশ্বরের সত্য জানতে পেরেছে তারা সবাই তোমাদের ভালবাসে। যে সত্য আমাদের অন্তরে আছে এবং চিরকাল ধরে আমাদের সংগে থাকবে সেই সত্যের জন্যই আমরা তোমাদের ভালবাসি। পিতা ঈশ্বর এবং সেই পিতার পুত্র যীশু খ্রীষ্টের কাছ থেকে সত্য ও ভালবাসার মধ্য দিয়ে দয়া, করুণা আর শান্তি আমাদের সংগে থাকবে। পিতা আমাদের যে আদেশ দিয়েছেন সেই অনুসারেই তোমার কয়েকটি ছেলেমেয়ে ঈশ্বরের সত্যের পথে চলছে দেখে আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। আমরা যেন একে অন্যকে ভালবাসি, এটাই হল তোমার কাছে আমার অনুরোধ। প্রিয় বোন, আমি যা লিখছি তা কোন নতুন আদেশ নয়, বরং এই আদেশ আমরা প্রথম থেকেই পেয়েছিলাম। ভালবাসা হল ঈশ্বরের আদেশ মত চলা। তোমরা প্রথম থেকেই যে আদেশের কথা শুনে এসেছ সেইমতই তোমরা ভালবাসার পথে চল। জগতে এমন অনেক লোক বের হয়েছে যারা ছলনা করে বেড়ায়। যীশু খ্রীষ্ট যে মানুষ হয়ে এসেছিলেন তারা তা স্বীকার করে না। এই রকম লোকেরাই ছলনাকারী ও খ্রীষ্টের শত্রু। তোমরা সতর্ক থাক, যাতে তোমাদের পরিশ্রমের ফল না হারিয়ে তোমরা পুরস্কারের সবটাই লাভ করতে পার। যারা খ্রীষ্টের দেওয়া শিক্ষার সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং সেই শিক্ষায় স্থির থাকে না তাদের অন্তরে ঈশ্বর নেই। কিন্তু যে সেই শিক্ষায় স্থির থাকে তার অন্তরে পিতা এবং পুত্র দু’জনেই আছেন। যদি কেউ তোমাদের কাছে এসে সেই শিক্ষা না দেয় তবে তোমাদের বাড়ীতে তাকে গ্রহণ কোরো না এবং শুভেচ্ছাও জানায়ো না। যে তাকে শুভেচ্ছা জানায় সে তার মন্দ কাজেরও ভাগ নেয়। যদিও তোমাদের কাছে আমার অনেক কথা লিখবার ছিল তবুও কাগজ ও কালিতে তা লিখতে চাই না। তার চেয়ে আমি তোমাদের কাছে গিয়ে মুখোমুখি কথা বলবার আশা করি, যেন আমাদের আনন্দ পূর্ণ হয়। ঈশ্বরের বাছাই করা তোমার বোনের ছেলেমেয়েরা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ঈশ্বরের সত্যের দরুন আমি যাকে ভালবাসি আমার সেই প্রিয় বন্ধু গাইয়ের কাছে সেই বুড়ো নেতা আমি এই চিঠি লিখছি। প্রিয় বন্ধু, আমি প্রার্থনা করি যেন তোমার সব কিছুই ভালভাবে চলে এবং আত্মার দিক থেকে তুমি যেমন ভালভাবে চলছ ঠিক তোমার শরীরও যেন ভাল চলে। আমি খুবই আনন্দিত হলাম যখন কয়েকজন বিশ্বাসী ভাই এসে তোমার বিষয় এই সাক্ষ্য দিল যে, ঈশ্বরের সত্যের প্রতি তুমি বিশ্বস্ত আছ এবং তার মধ্যেই চলছ। আমার সন্তানেরা যে ঈশ্বরের সত্যের মধ্যে চলাফেরা করছে, এই কথা শোনার চেয়ে বড় আনন্দ আমার আর নেই। প্রিয় বন্ধু, না চিনেও বিশ্বাসী ভাইদের জন্য তুমি যা করছ তা বিশ্বস্ত ভাবেই করছ। মণ্ডলীর সকলের সামনে তারা তোমার ভালবাসার কথা বলেছে। ঈশ্বর যাতে সন্তুষ্ট হন সেইভাবে তুমি তাদের যাত্রার ব্যবস্থা করে দিলে ভাল করবে। তারা খ্রীষ্টের জন্যই বের হয়েছে এবং অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে কিছুই গ্রহণ করে নি। সেইজন্য এই রকম লোকদের সাহায্য করা আমাদের উচিত, যেন ঈশ্বরের সত্যের জন্য আমরাও তাদের কাজের সংগী হই। আমি মণ্ডলীর কাছে একটা চিঠি লিখেছিলাম, কিন্তু দিয়ত্রিফেস্‌ মণ্ডলীর মধ্যে প্রধান হতে চায় বলে আমাদের কথা মানে না। সেইজন্য সে যা করছে আমি আসলে পর তা সবাইকে জানাব। সে আমাদের বিরুদ্ধে হিংসা করে অনেক মিথ্যা কথা বলেছে। তাতেও সুখী না হয়ে সে নিজেও ভাইদের গ্রহণ করছে না এবং যারা তাদের গ্রহণ করতে চাইছে তাদেরও বাধা দিচ্ছে এবং মণ্ডলী থেকে বের করে দিচ্ছে। প্রিয় বন্ধু, মন্দের পিছনে না গিয়ে বরং ভালোর পিছনে চল। যে ভাল কাজ করে সে ঈশ্বরের লোক, আর যে মন্দ কাজ করে সে ঈশ্বরকে দেখে নি। সবাই দীমীত্রিয়ের প্রশংসা করছে, এমন কি, ঈশ্বরের সত্যও তা করছে। আমরাও তাঁর প্রশংসা করছি। তুমি তো জান আমরা যা বলি তা সত্যি। আমার অনেক কথাই তোমাকে লিখবার ছিল, কিন্তু কালি-কলমে আমি তা লিখতে চাই না। আশা করি শীঘ্রই তোমাকে দেখতে পাব, আর তখন মুখোমুখি হয়ে আমরা কথা বলতে পারব। তোমার শান্তি হোক। তোমার বন্ধুরা তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ওখানকার বন্ধুদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে আমাদের শুভেচ্ছা জানায়ো। আমি যীশু খ্রীষ্টের দাস ও যাকোবের ভাই যিহূদা। পিতা ঈশ্বর যাদের ডেকেছেন ও ভালবেসেছেন এবং যীশু খ্রীষ্ট যাদের রক্ষা করেছেন তাদের কাছে আমি এই চিঠি লিখছি। ঈশ্বর তোমাদের অনেক দয়া, শান্তি এবং ভালবাসা দান করুন। প্রিয় বন্ধুরা, পাপ থেকে যে উদ্ধার আমরা সবাই পেয়েছি সেই উদ্ধার সম্বন্ধে আমি তোমাদের কাছে লিখবার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু তবুও খ্রীষ্টীয় ধর্ম-বিশ্বাস, যা ঈশ্বর তাঁর লোকদের চিরকালের জন্য দিয়েছেন, তার পক্ষে যেন তোমরা প্রাণপণে যুদ্ধ কর সেই উৎসাহ দেবার জন্য আমি তোমাদের কাছে লেখা দরকার মনে করলাম। এর দরকার আছে, কারণ যে লোকদের শাস্তি সম্বন্ধে আগেই শাস্ত্রে লেখা হয়েছিল তারা তোমাদের মধ্যে চুপি চুপি ঢুকে পড়েছে। ঈশ্বরের প্রতি এই লোকদের ভক্তি নেই; আমাদের ঈশ্বরের দয়াকে তারা লমপটতার একটা অজুহাত মনে করে এবং যিনি আমাদের একমাত্র মালিক ও প্রভু সেই যীশু খ্রীষ্টকে তারা অস্বীকার করে। তোমরা অবশ্য এই সব বিষয় ভাল করেই জান; তবুও আমি তোমাদের এই কথা মনে করিয়ে দিতে চাই যে, মিসর দেশ থেকে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার করে আনবার পরে যারা বিশ্বাস করে নি প্রভু তাদের ধ্বংস করেছিলেন। এছাড়া যে স্বর্গদূতেরা নিজেদের অধিকার রক্ষা না করে নিজেদের জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছিল তাদের কথা মনে কর। সেই মহা দিনের বিচারের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর তাদের চিরকালের জন্য অন্ধকারে বেঁধে রেখেছেন। সদোম, ঘমোরা এবং তাদের আশেপাশের সব শহরের লোকেরাও ঠিক তাদের মতই ব্যভিচার, এমন কি, অস্বাভাবিক ব্যভিচার করেছিল। যারা চিরকালের আগুনে পুড়বার শাস্তি পাবে এরা তাদেরই নমুনা হয়ে আছে। তবুও এই ভণ্ড শিক্ষকেরা তেমনি করে মন্দ স্বপ্নের বশে নিজেদের দেহ অশুচি করছে, স্বর্গদূতদের শাসন অগ্রাহ্য করছে এবং সেই গৌরবের পাত্রদের বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলছে। প্রধান স্বর্গদূত মীখায়েল যখন মোশির দেহ নিয়ে শয়তানের সংগে তর্ক করছিলেন তখন তিনি তার বিরুদ্ধে কোন অপমানের কথা বলে তাকে দোষী করতে সাহস করেন নি। তিনি বরং বলেছিলেন, “প্রভু যেন তোমাকে বাধা দেন।” কিন্তু এই ভণ্ড শিক্ষকেরা যা বোঝে না সেই সম্বন্ধে খারাপ কথা বলে এবং বুদ্ধিহীন পশুদের মত নিজে থেকেই যা বোঝে তাতেই ধ্বংস হয়। ধিক্‌ সেই লোকদের! তারা কয়িনের পথে গেছে, লাভের জন্য বিলিয়মের ভুলের হাতে নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে আর কোরহের মত বিদ্রোহ করে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই লোকেরা যখন দুঃসাহস নিয়ে তোমাদের প্রীতি-ভোজে যোগ দেয় তখন তোমাদের সেই ভোজের মধ্যে তারা ময়লার মত হয়। এরা কেবল নিজেদের বিষয়েই চিন্তা করে। এরা বাতাসে বয়ে নিয়ে যাওয়া জলহীন মেঘের মত। ফল পাড়বার সময়ে ফলহীন বলে শিকড় সুদ্ধ উপ্‌ড়ে ফেলা গাছের মত এরা দু’দিক থেকেই মৃত। এরা ঝড়ের মধ্যে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত; সমুদ্রের ফেনার মতই এদের লজ্জার কাজগুলো ভেসে ওঠে। এরা ঘুরে বেড়ানো তারার মতই; চিরকালের জন্য ভীষণ অন্ধকার এদের জন্য জমা করে রাখা হয়েছে। এই সব লোকেরা সব সময় অসন্তুষ্টির ভাব দেখায়, নিজেদের ভাগ্যের দোষ দেয় এবং অন্তরের মন্দ কামনা-বাসনা অনুসারে চলাফেরা করে। তারা নিজেদের নিয়ে গর্ব করে এবং লাভের জন্য লোকদের খোশামোদ করে। কিন্তু প্রিয় বন্ধুরা, যে সব কথা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রেরিতেরা আগে বলেছিলেন তা তোমরা মনে করে দেখ। তাঁরা তোমাদের এই কথা বলতেন, “ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাই যাদের স্বভাব তারা শেষ সময়ে আসবে এবং তাদের ভক্তিহীন কামনা-বাসনা অনুসারে চলবে।” এই লোকেরা দলাদলির সৃষ্টি করে এবং তারা নিজেদের ইচ্ছামত চলে। তাদের অন্তরে পবিত্র আত্মা নেই। কিন্তু প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা তোমাদের পরম পবিত্র বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নিজেদের গড়ে তোল এবং পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রার্থনা কর। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়া যেন তোমাদের অনন্ত জীবনে নিয়ে যায় তারই অপেক্ষায় তোমরা ঈশ্বরের ভালবাসার মধ্যে থাক। তোমাদের মধ্যে যাদের বিশ্বাস স্থির নয় তাদের দয়া কর। আগুন থেকে তুলে এনে অন্যদের রক্ষা কর। পাপ-স্বভাবের দ্বারা যাদের জীবন নোংরা হয়েছে তাদের অশুচি কাপড় পর্যন্ত ঘৃণা কর এবং নিজেদের সাবধানে রেখে তাদের দয়া কর। এই বইয়ের মধ্যে যা লেখা হয়েছে তা যীশু খ্রীষ্টই প্রকাশ করেছেন। এই সব বিষয় ঈশ্বর খ্রীষ্টের কাছে প্রকাশ করেছিলেন, যেন যে সব ঘটনা কিছুকালের মধ্যেই অবশ্যই ঘটতে যাচ্ছে তা তিনি তাঁর দাসদের জানান। খ্রীষ্ট তাঁর দূত পাঠিয়ে তাঁর দাস যোহনকে এই সব বিষয় জানিয়েছিলেন। ঈশ্বরের বাক্য ও যীশু খ্রীষ্টের সাক্ষ্য সম্বন্ধে যোহন যা দেখেছিলেন, সেই সব বিষয়েই তিনি এখানে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঈশ্বরের বাক্য যা এখানে লেখা হয়েছে, যে তা পড়ে সে ধন্য এবং যারা তা শোনে ও পালন করে তারাও ধন্য, কারণ সময় কাছে এসে গেছে। তিনি আমাদের নিয়ে একটা রাজ্য গড়ে তুলেছেন এবং তাঁর পিতা ও ঈশ্বরের সেবার জন্য পুরোহিত করেছেন। চিরকাল ধরে যীশু খ্রীষ্টের গৌরব হোক এবং চিরকাল ধরে তাঁর শক্তি থাকুক। আমেন। দেখ, তিনি মেঘের সংগে আসছেন। প্রত্যেকটি চোখ তাঁকে দেখবে; যারা তাঁকে বিঁধেছিল তারাও দেখবে এবং পৃথিবীর সমস্ত জাতি তাঁর জন্য জোরে জোরে কাঁদবে। তা-ই হোক, আমেন। প্রভু ঈশ্বর বলছেন, “আমিই সেই আল্‌ফা এবং ওমিগা যিনি আছেন, যিনি ছিলেন ও যিনি আসছেন। আমিই সর্বশক্তিমান।” আমি তোমাদের ভাই যোহন; যীশুর সংগে যুক্ত হয়ে আমি তোমাদের সংগে একই কষ্ট, একই রাজ্য এবং একই ধৈর্যের ভাগী হয়েছি। ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর সাক্ষ্য প্রচার করেছিলাম বলে আমাকে পাট্‌ম দ্বীপে নিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রভুর দিন এক রবিবারে আমি বিশেষভাবে পবিত্র আত্মার বশে ছিলাম। এমন সময়ে আমার পিছনে তূরীর শব্দের মত একজনের জোর গলার আওয়াজ শুনলাম। তিনি আমাকে বললেন, “যা দেখবে তা একটা বইয়ে লেখ, আর তা ইফিষ, স্মুর্ণা, পর্গাম, থুয়াতীরা, সার্দ্দি, ফিলাদিল্‌ফিয়া ও লায়দিকেয়া-এই সাতটা শহরের সাতটা মণ্ডলীর কাছে পাঠিয়ে দাও।” যিনি কথা বলছিলেন তাঁকে দেখবার জন্য আমি ঘুরে দাঁড়ালাম এবং সোনার সাতটা বাতিদান দেখলাম। সেই বাতিদানগুলোর মাঝখানে মনুষ্যপুত্রের মত কেউ একজন ছিলেন। তাঁর পরনে পা পর্যন্ত লম্বা পোশাক ছিল এবং তাঁর বুকে সোনার পটি বাঁধা ছিল। তাঁর মাথার চুল ভেড়ার লোমের ও বরফের মত সাদা ছিল এবং তাঁর চোখ আগুনের শিখার মত ছিল। তাঁর পা ছিল আগুনে পুড়িয়ে পরিষ্কার করা খুব চক্‌চকে পিতলের মত, আর তাঁর গলার স্বর ছিল জোরে বয়ে যাওয়া স্রোতের শব্দের মত। তিনি তাঁর ডান হাতে সাতটা তারা ধরে রেখেছিলেন এবং তাঁর মুখ থেকে একটা ধারালো ছোরা বের হয়ে আসছিল যার দু’দিকেই ধার ছিল। পূর্ণ তেজে জ্বলন্ত সূর্যের মতই তাঁর মুখের চেহারা ছিল। তাঁকে দেখে আমি মরার মত তাঁর পায়ের কাছে পড়ে গেলাম। তখন তিনি তাঁর ডান হাত আমার উপরে রেখে বললেন, “ভয় কোরো না। আমিই প্রথম ও শেষ, আমিই চিরজীবন্ত। আমি মরেছিলাম, আর দেখ, এখন আমি যুগ যুগ ধরে চিরকাল জীবিত আছি। আমার কাছে মৃত্যু ও মৃতস্থানের চাবি আছে। এইজন্য তুমি যা দেখলে, যা এখন ঘটছে এবং এই সবের পরে যা ঘটবে সেই সব লিখে রাখ। যে সাতটা সোনার বাতিদান ও আমার ডান হাতে যে সাতটা তারা তুমি দেখলে তার গুপ্ত অর্থ এই-সেই সাতটা তারা হল সেই সাতটা মণ্ডলীর সাতজন দূত এবং সাতটা বাতিদান হল সেই সাতটা মণ্ডলী। “ইফিষ শহরের মণ্ডলীর দূতের কাছে এই কথা লেখ- যিনি তাঁর ডান হাতে সাতটা তারা ধরে সোনার সাতটা বাতিদানের মাঝখানে ঘুরে বেড়ান তিনি এই কথা বলছেন: আমি তোমার কাজ, পরিশ্রম ও ধৈর্যের কথা জানি। আমি জানি তুমি মন্দ লোকদের সহ্য করতে পার না, আর যারা প্রেরিত্‌ না হয়েও নিজেদের প্রেরিত্‌ বলে দাবি করে তাদের পরীক্ষা করে দেখেছ এবং তারা যে মিথ্যাবাদী তার প্রমাণও পেয়েছ। তোমার ধৈর্য আছে এবং তুমি আমার জন্য অনেক কষ্ট স্বীকার করেছ, ক্লান্ত হয়ে পড় নি। তবুও তোমার বিরুদ্ধে আমার এই কথা বলবার আছে যে, আমার প্রতি প্রথমে তোমার যে রকম ভালবাসা ছিল তা তুমি হারিয়ে ফেলেছ। ভেবে দেখ, তুমি কত উঁচু থেকে কত নীচে নেমে গেছ। এই অবস্থা থেকে তুমি মন ফিরাও এবং প্রথমে যে সব কাজ করতে তাতে ফিরে যাও। যদি তুমি মন না ফিরাও তাহলে আমি তোমার কাছে এসে তোমার বাতিদানটা তার জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলব। তবে এই একটা গুণ তোমার আছে যে, নীকলায়তীয়েরা যা করে তা তুমি ঘৃণা কর, আর আমিও তা ঘৃণা করি। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা মণ্ডলীগুলোকে কি বলছেন। যে জয়ী হবে তাকে আমি ঈশ্বরের পরমদেশের জীবন-গাছের ফল খেতে দেব। “স্মূর্ণা শহরের মণ্ডলীর দূতের কাছে এই কথা লেখ- যিনি প্রথম ও শেষ, যিনি মরেছিলেন ও জীবিত হয়েছেন, তিনি এই কথা বলছেন: তোমার কষ্ট ও অভাবের কথা আমি জানি, কিন্তু তবুও তুমি ধনী। নিজেদের যিহূদী বললেও যারা যিহূদী নয় বরং শয়তানের দলের লোক, তারা তোমার বিরুদ্ধে যা বলে তা আমি জানি। তুমি যে সব কষ্ট ভোগ করতে যাচ্ছ তাতে মোটেই ভয় পেয়ো না। শোন, শয়তান তোমাদের মধ্যে কয়েকজনকে পরীক্ষা করবার জন্য জেলে দেবে, আর দশ দিন ধরে তোমরা কষ্ট ভোগ করবে। তুমি মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থেকো, তাহলে জয়ের মালা হিসাবে আমি তোমাকে জীবন দেব। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা মণ্ডলীগুলোকে কি বলছেন। যে জয়ী হবে দ্বিতীয় মৃত্যু কোনমতেই তার ক্ষতি করবে না। “পর্গাম শহরের মণ্ডলীর দূতের কাছে এই কথা লেখ- যে ধারালো ছোরার দু’দিকেই ধার আছে তার অধিকারী এই কথা বলছেন: তুমি কোথায় বাস করছ তা আমি জানি; সেখানে শয়তানের সিংহাসন আছে। তবুও তুমি আমার প্রতি বিশ্বস্ত আছ এবং আমার উপর তোমার বিশ্বাসকে অস্বীকার কর নি। এমন কি, যেখানে শয়তান বাস করে সেখানে যখন আমার বিশ্বস্ত সাক্ষী আন্তিপাস্‌ তোমাদের সামনে খুন হয়েছিল তখনও তুমি তোমার বিশ্বাসকে অস্বীকার কর নি। কিন্তু তবুও তোমার বিরুদ্ধে আমার কিছু বলবার আছে। তোমার ওখানে এমন লোকেরা আছে যারা বিলিয়মের শিক্ষা অনুসারে চলে। বালাক রাজাকে বিলিয়ম শিক্ষা দিয়েছিল যেন সে প্রতিমার সামনে উৎসর্গ করা খাবার খাওয়া ও ব্যভিচার করবার মধ্য দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের পাপের দিকে নিয়ে যায়। তা ছাড়া নীকলায়তীয়দের শিক্ষা অনুসারে যারা চলে এমন কয়েকজনও তোমার ওখানে আছে। কাজেই এই অবস্থা থেকে মন ফিরাও। যদি মন না ফিরাও তবে আমি শীঘ্রই তোমার কাছে আসব এবং আমার মুখের ছোরা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা মণ্ডলীগুলোকে কি বলছেন। যে জয়ী হবে তাকে আমি লুকানো মান্না থেকে কিছু মান্না এবং একটা সাদা পাথর দেব। সেই পাথরের উপরে এমন একটা নতুন নাম লেখা থাকবে যা কেউ জানে না; কেবল যে সেটা পাবে সে-ই তা জানবে। “থুয়াতীরা শহরের মণ্ডলীর দূতের কাছে এই কথা লেখ- ঈশ্বরের পুত্র, যাঁর চোখ আগুনের শিখার মত এবং পা খুব চক্‌চকে পিতলের মত তিনি এই কথা বলছেন: আমি তোমার কাজ, তোমার ভালবাসা, তোমার বিশ্বাস, তোমার সেবা এবং তোমার ধৈর্যের কথা জানি। আর তুমি প্রথমে যে সব কাজ করেছিলে তার চেয়ে এখন যে আরও বেশী কাজ করছ সেই কথাও আমি জানি। তবুও তোমার বিরুদ্ধে আমার এই কথা বলবার আছে যে, তুমি ঈষেবল নামে সেই স্ত্রীলোকের অন্যায় সহ্য করছ। এই ঈষেবল নিজেকে নবী বলে। তার শিক্ষার দ্বারা সে আমার দাসদের ভুলায় যেন তারা ব্যভিচার করে এবং প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাবার খায়। ব্যভিচার থেকে মন ফিরাবার জন্য আমি তাকে সময় দিয়েছিলাম কিন্তু সে মন ফিরাতে রাজী হয় নি। সেইজন্য আমি তাকে বিছানায় ফেলে রাখব, আর যারা তার সংগে ব্যভিচার করে তারা যদি ব্যভিচার থেকে মন না ফিরায় তবে তাদের ভীষণ কষ্টের মধ্যে ফেলব। তার ছেলেমেয়েদেরও আমি মেরে ফেলব। তাতে সব মণ্ডলীগুলো জানতে পারবে যে, আমিই মানুষের অন্তর ও মন খুঁজে দেখি। আমি কাজ অনুসারে তোমাদের প্রত্যেককে ফল দেব। হে থুয়াতীরার বাকী লোকেরা, তোমরা যারা সেই শিক্ষামত চল না এবং যাকে শয়তানের সেই গভীর শিক্ষা বলা হয় তা জান না, তোমাদের আমি বলছি: তোমাদের উপর আমি অন্য কোন ভার দেব না। কেবল যা তোমাদের আছে, আমি না আসা পর্যন্ত তা শক্ত করে ধরে রাখ। যে জয়ী হবে তাকে আমি ভোরের তারাও দেব। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা মণ্ডলীগুলোকে কি বলছেন। “সার্দি শহরের মণ্ডলীর দূতের কাছে এই কথা লেখ- ঈশ্বরের সাতটি আত্মা এবং সাতটি তারা যিনি ধরে আছেন তিনি এই কথা বলছেন: আমি তোমার কাজের কথা জানি। জীবিত আছ বলে তোমার বেশ সুনাম আছে, কিন্তু আসলে তুমি মৃত। তুমি জেগে ওঠো এবং বাদবাকী যা মরবার মত হয়েছে তা শক্তিশালী করে তোল, কারণ আমার ঈশ্বরের সামনে তোমার কোন কাজই আমি শেষ হতে দেখি নি। এইজন্য যা তুমি পেয়েছ এবং শুনেছ তা মনে কর ও পালন কর, আর এই অবস্থা থেকে মন ফিরাও। যদি তুমি জেগে না ওঠো তবে আমি চোরের মত আসব, আর আমি কোন্‌ সময় তোমার কাছে আসব তা তুমি জানতেও পারবে না। কিন্তু সার্দিতে তোমার এমন কয়েকজন লোক আছে যারা তাদের কাপড়-চোপড়, অর্থাৎ চালচলন নোংরা করে নি। তারা যোগ্য লোক বলেই সাদা পোশাক পরে আমার সংগে চলাফেরা করবে। যে জয়ী হবে সে এই রকম সাদা পোশাক পরবে। জীবন-বই থেকে তার নাম আমি কখনও মুছে ফেলব না, বরং আমার পিতা ও তাঁর দূতদের সামনে আমি তাকে স্বীকার করে নেব। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা মণ্ডলীগুলোকে কি বলছেন। “ফিলাদিল্‌ফিয়া শহরের মণ্ডলীর দূতের কাছে এই কথা লেখ- যিনি পবিত্র ও সত্য, যাঁর কাছে দায়ূদের চাবি আছে, যিনি খুললে কেউ বন্ধ করতে পারে না এবং বন্ধ করলে কেউ খুলতে পারে না, তিনি এই কথা বলছেন: আমি তোমার কাজের কথা জানি। দেখ, আমি তোমার সামনে একটা খোলা দরজা রাখলাম যা বন্ধ করবার ক্ষমতা কারও নেই। আমি জানি তোমার শক্তি খুবই কম, কিন্তু তবুও তুমি আমার বাক্য পালন করেছ এবং আমাকে অস্বীকার কর নি। যারা নিজেদের যিহূদী বলে অথচ যিহূদী নয়, শয়তানের দলের সেই মিথ্যাবাদী লোকদের আমি তোমার কাছে আনাব এবং তোমার পায়ে প্রণাম করাব, আর তাদের জানিয়ে দেব যে, আমি তোমাকে ভালবাসি। ধৈর্য ধরবার যে আদেশ আমি দিয়েছিলাম তা তুমি পালন করেছ; সেইজন্য এই পৃথিবীর উপরে যে কষ্টের সময় আসছে সেই সময় থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করব। যারা এই পৃথিবীর তাদের পরীক্ষা করবার জন্য এই কষ্টের সময় আসবে। আমি শীঘ্রই আসছি। তোমার যা আছে তা শক্ত করে ধরে রাখ, যেন কেউ তোমার জয়ের পুরস্কার কেড়ে না নেয়। যে জয়ী হবে তাকে আমি আমার ঈশ্বরের ঘরের একটা থাম করব; সে আর কখনও বাইরে যাবে না। আমি তার উপরে আমার ঈশ্বরের নাম এবং আমার ঈশ্বরের শহরের নাম লিখব। নতুন যিরূশালেমই সেই শহর। স্বর্গের মধ্য থেকে আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে এই শহর নেমে আসবে। যে জয়ী হবে আমি তার উপর আমার নতুন নামও লিখব। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা মণ্ডলীগুলোকে কি বলছেন। “লায়দিকেয়া শহরের মণ্ডলীর দূতের কাছে এই কথা লেখ- যিনি আমেন, যিনি বিশ্বস্ত ও সত্য সাক্ষী, যিনি ঈশ্বরের সৃষ্টির মূল, তিনি এই কথা বলছেন: আমি তোমার কাজের কথা জানি। তুমি ঠাণ্ডাও না, গরমও না। তুমি হয় ঠাণ্ডা না হয় গরম হলে ভাল হত। কিন্তু তুমি না ঠাণ্ডা না গরম, সেইজন্য আমি তোমাকে আমার মুখ থেকে থুথুর মত করে ফেলে দেব। তুমি বলছ, ‘আমি ধনী; আমি বড় লোক হয়েছি, তাই আমার কোন কিছুর অভাব নেই।’ বেশ ভাল, কিন্তু তুমি তো জান না যে, তুমি দুঃখী, দয়ার পাত্র, গরীব, অন্ধ ও উলংগ। তাই আমি তোমাকে এই উপদেশ দিচ্ছি-তুমি আমার কাছ থেকে আগুনে পুড়িয়ে খাঁটি করা সোনা কিনে নাও যেন তুমি ধনী হতে পার। আমার কাছ থেকে সাদা পোশাক কিনে পর যেন তোমার উলংগতার লজ্জা দেখা না যায়। আমার কাছ থেকে চোখে দেবার মলম কিনে নাও যেন তুমি দেখতে পাও। আমি যাদের ভালবাসি তাদেরই দোষ দেখিয়ে দিই ও শাসন করি। সেইজন্য এই অবস্থা থেকে মন ফিরাতে আগ্রহী হও। দেখ, আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ঘা দিচ্ছি। কেউ যদি আমার গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেয় তবে আমি ভিতরে তার কাছে যাব এবং তার সংগে খাওয়া-দাওয়া করব, আর সে-ও আমার সংগে খাওয়া-দাওয়া করবে। “আমি জয়ী হয়ে যেমন আমার পিতার সংগে তাঁর সিংহাসনে বসেছি, ঠিক তেমনি যে জয়ী হবে তাকে আমি আমার সংগে আমার সিংহাসনে বসবার অধিকার দেব। যার শুনবার কান আছে সে শুনুক, পবিত্র আত্মা মণ্ডলীগুলোকে কি বলছেন।” এর পরে আমি স্বর্গের একটা দরজা খোলা দেখতে পেলাম। তূরীর শব্দের মত যাঁর গলার আওয়াজ আগে আমি শুনেছিলাম তিনি আমাকে বললেন, “তুমি এখানে উঠে এস। এই সবের পরে যা কিছু অবশ্যই ঘটতে যাচ্ছে তা আমি তোমাকে দেখাব।” আর তখনই আমি পবিত্র আত্মার বশে স্বর্গে একটা সিংহাসন দেখতে পেলাম। আমি দেখলাম, সেই সিংহাসনে একজন বসে আছেন। তাঁর চেহারা ঠিক হীরা ও সার্দীয় মণির মত। সিংহাসনটার চারদিকে একটা মেঘধনুক ছিল; সেটা দেখতে ঠিক একটা পান্নার মত। সেই সিংহাসনের চারদিকে আরও চব্বিশটা সিংহাসন ছিল, আর সেই সিংহাসনগুলোতে চব্বিশজন নেতা বসে ছিলেন। তাঁদের পোশাক ছিল সাদা এবং তাঁদের মাথায় সোনার মুকুট ছিল। সেই সিংহাসনটা থেকে বিদ্যুৎ, ভয়ংকর শব্দ ও বাজের শব্দ বের হচ্ছিল। সিংহাসনের সামনে সাতটা বাতি জ্বলছিল। সেই বাতিগুলো ঈশ্বরের সাতটি আত্মা। সেই সিংহাসনের সামনে যেন স্ফটিকের মত পরিষ্কার একটা কাচের সমুদ্র ছিল। সেই সিংহাসনগুলোর মাঝখানের সিংহাসনটার চারপাশে চারজন জীবন্ত প্রাণী ছিলেন। তাঁদের সামনের ও পিছনের দিক চোখে ভরা ছিল। প্রথম জীবন্ত প্রাণীটির চেহারা সিংহের মত, দ্বিতীয়টির বাছুরের মত, তৃতীয়টির মানুষের মত এবং চতুর্থটির উড়ন্ত ঈগল পাখীর মত। এই চারজন জীবন্ত প্রাণীর প্রত্যেকের ছয়টা করে ডানা ছিল এবং সব জায়গা চোখে ভরা ছিল। সেই প্রাণীরা দিনরাত এই কথাই বলছিলেন, “সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর, যিনি ছিলেন, যিনি আছেন ও যিনি আসছেন, তিনি পবিত্র, পবিত্র, পবিত্র।” চিরজীবন্ত প্রভু ঈশ্বর, যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, এই জীবন্ত প্রাণীরা যখনই তাঁকে গৌরব, সম্মান ও ধন্যবাদ জানান, তখন সেই চব্বিশজন নেতা সিংহাসনের অধিকারী, অর্থাৎ যিনি চিরকাল ধরে জীবিত আছেন তাঁকে উবুড় হয়ে প্রণাম করেন। এই নেতারা তখন সেই সিংহাসনের সামনে তাঁদের মুকুট খুলে রেখে বলেন, “আমাদের প্রভু ও ঈশ্বর, তুমি গৌরব, সম্মান ও ক্ষমতা পাবার যোগ্য, কারণ তুমিই সব কিছু সৃষ্টি করেছ; আর তোমারই ইচ্ছাতে সেই সব সৃষ্ট হয়েছে এবং টিকে আছে।” যিনি সেই সিংহাসনের উপর বসে ছিলেন তাঁর ডান হাতে আমি একটা বই দেখলাম। বইটার ভিতরে ও বাইরে লেখা ছিল এবং সাতটা মোহর দিয়ে সীলমোহর করা ছিল। পরে আমি একজন শক্তিশালী স্বর্গদূতকে জোর গলায় এই কথা বলতে শুনলাম, “কে এই সীলমোহরগুলো ভেংগে বইটা খুলবার যোগ্য?” কিন্তু স্বর্গে বা পৃথিবীতে কিম্বা পৃথিবীর গভীরে কেউই সেই বইটা খুলতে পারল না, ভিতরে দেখতেও পারল না। তখন আমি খুব কাঁদতে লাগলাম, কারণ এমন কাউকে পাওয়া গেল না যে ঐ বইটা খুলবার বা দেখবার যোগ্য। পরে নেতাদের মধ্যে একজন আমাকে বললেন, “কেঁদো না। যিহূদা বংশের সিংহ, যিনি দায়ূদের বংশধর, তিনি জয়ী হয়েছেন। তিনিই ঐ সাতটা সীলমোহর ভেংগে বইটা খুলতে পারেন।” চারজন জীবন্ত প্রাণী এবং নেতাদের মাঝখানে যে সিংহাসনটি ছিল তার উপর একটি মেষ-শিশুকে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমার মনে হচ্ছিল যেন সেই মেষ-শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছিল। ঐ মেষ-শিশুর সাতটা শিং ও সাতটা চোখ ছিল। ঈশ্বরের যে সাতটি আত্মাকে জগতের সব জায়গায় পাঠানো হয় এই চোখগুলো ছিল সেই সাতটি আত্মা। পরে সেই মেষ-শিশু এসে যিনি সিংহাসনে বসে ছিলেন তাঁর ডান হাত থেকে বইটা নিলেন। বইটা নেবার পর সেই চারজন জীবন্ত প্রাণী ও চব্বিশজন নেতা মেষ-শিশুর সামনে উবুড় হলেন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে বীণা ও একটা করে ধূপে পূর্ণ সোনার বাটি ছিল। সেই ধূপে পূর্ণ বাটিগুলো হল ঈশ্বরের লোকদের প্রার্থনা। তাঁরা এই নতুন গানটা গাইছিলেন: “তুমিই ঐ বইটা নিয়ে তার সীলমোহরগুলো খুলবার যোগ্য, কারণ তোমাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। তুমিই তোমার রক্ত দিয়ে প্রত্যেক বংশ, ভাষা, দেশ ও জাতির মধ্য থেকে ঈশ্বরের জন্য লোকদের কিনেছ। তুমি তাদের নিয়ে একটা রাজ্য গড়ে তুলেছ এবং আমাদের ঈশ্বরের সেবা করবার জন্য পুরোহিত করেছ। পৃথিবীতে তারাই রাজত্ব করবে।” পরে আমি চেয়ে দেখলাম; আর আমি সেই সিংহাসন, জীবন্ত প্রাণী ও নেতাদের চারদিকে অনেক স্বর্গদূতের কণ্ঠস্বর শুনলাম। সেই স্বর্গদূতেরা ছিলেন সংখ্যায় হাজার হাজার, কোটি কোটি। তাঁরা জোরে জোরে এই কথা বলছিলেন: “যে মেষ-শিশুকে মেরে ফেলা হয়েছিল, তিনিই ক্ষমতা, ধন, জ্ঞান, শক্তি, সম্মান, গৌরব ও প্রশংসা পাবার যোগ্য।” তারপর স্বর্গে, পৃথিবীতে, পৃথিবীর গভীরে ও সমুদ্রে যত প্রাণী আছে, এমন কি, সেগুলোর মধ্যে আর যা কিছু আছে সকলকে আমি এই কথা বলতে শুনলাম: “সিংহাসনের উপরে যিনি বসে আছেন তাঁর এবং সেই মেষ-শিশুর প্রশংসা, সম্মান, গৌরব ও ক্ষমতা চিরকাল থাকুক।” সেই চারজন জীবন্ত প্রাণী বললেন, “আমেন।” তারপর সেই নেতারা উবুড় হয়ে প্রণাম করলেন। মেষ-শিশু যখন ঐ সাতটা সীলমোহরের প্রথমটা ভাংছিলেন তখন আমি চেয়ে দেখলাম; আর আমি সেই চারজন জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে একজনকে বাজ পড়বার মত আওয়াজে বলতে শুনলাম, “এস।” তখন আমি একটা সাদা ঘোড়া দেখতে পেলাম। যিনি তার উপরে বসে ছিলেন তাঁর হাতে একটা ধনুক ছিল। তাঁকে একটা মুকুট দেওয়া হল আর তিনি জয়ীর মত বের হয়ে জয় করতে করতে চললেন। মেষ-শিশু যখন দ্বিতীয় সীলমোহর ভাংলেন তখন আমি দ্বিতীয় জীবন্ত প্রাণীকে বলতে শুনলাম, “এস।” তখন আগুনের মত লাল অন্য একটা ঘোড়া বের হয়ে আসল। যিনি সেই ঘোড়ার উপর বসে ছিলেন তাঁকে পৃথিবী থেকে শান্তি তুলে নেবার ক্ষমতা দেওয়া হল, যাতে লোকে একে অন্যকে মেরে ফেলে। তাঁকে একটা বড় তলোয়ারও দেওয়া হল। মেষ-শিশু যখন তৃতীয় সীলমোহর ভাংলেন তখন আমি তৃতীয় জীবন্ত প্রাণীকে বলতে শুনলাম, “এস।” তারপর আমি একটা কালো ঘোড়া দেখতে পেলাম। যিনি সেই ঘোড়াটার উপরে বসে ছিলেন তাঁর হাতে একটা দাঁড়িপাল্লা ছিল। আর আমি সেই চারজন জীবন্ত প্রাণীদের মাঝখানে কাউকে বলতে শুনলাম, “একজন দিনমজুরের এক দিনের আয়ে মাত্র এক সের গম বা তিন সের যব পাওয়া যায়। তেল আর আংগুর-রস তুমি নষ্ট কোরো না।” মেষ-শিশু যখন চতুর্থ সীলমোহর ভাংলেন তখন আমি চতুর্থ জীবন্ত প্রাণীকে বলতে শুনলাম, “এস।” তখন আমি একটা ফ্যাকাশে রংয়ের ঘোড়া দেখতে পেলাম। যিনি সেই ঘোড়ার উপরে বসে ছিলেন তাঁর নাম মৃত্যু; আর মৃতস্থানটি ঠিক তাঁর পিছনে পিছনে চলছিল। পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগের উপরে তাঁদের ক্ষমতা দেওয়া হল, যেন তাঁরা ছোরা, দুর্ভিক্ষ, মৃত্যু ও পৃথিবীর বুনো জন্তু দিয়ে লোকদের মেরে ফেলেন। যখন তিনি পঞ্চম সীলমোহর ভাংলেন তখন আমি একটা বেদীর নীচে এমন সব লোকের আত্মা দেখতে পেলাম যাদের ঈশ্বরের বাক্যের জন্য এবং সাক্ষ্য দেবার জন্য মেরে ফেলা হয়েছিল। তারা জোরে চিৎকার করে বলল, “হে পবিত্র ও সত্যময় প্রভু, যারা এই পৃথিবীর, তাদের বিচার করতে ও তাদের উপর আমাদের রক্তের শোধ নিতে তুমি আর কত দেরি করবে?” তখন তাদের প্রত্যেককে একটা করে সাদা পোশাক দেওয়া হল আর বলা হল, তাদের সহদাস ও ভাইদের, যাদের তাদেরই মত করে মেরে ফেলা হবে তাদের সংখ্যা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন আরও কিছুকাল অপেক্ষা করে। তারপর আমি দেখলাম, তিনি যখন ষষ্ঠ সীলমোহর ভাংলেন তখন ভীষণ ভূমিকম্প হল। সূর্য একেবারে কালো হয়ে গেল আর গোটা চাঁদটাই রক্তের মত লাল হয়ে উঠল। জোর বাতাস বইলে যেমন ডুমুর গাছ থেকে ডুমুর অসময়ে পড়ে যায় ঠিক তেমনি করে আকাশের তারাগুলো পৃথিবীর উপর খসে পড়ল। গুটিয়ে রাখা কাগজের মতই আকাশ গুটিয়ে গেল; আর প্রত্যেকটা পাহাড় ও দ্বীপ নিজের নিজের জায়গা থেকে সরে গেল। পৃথিবীর সমস্ত রাজা ও প্রধান লোক, সেনাপতি, ধনী ও শক্তিশালী লোক এবং প্রত্যেক দাস ও স্বাধীন লোক পাহাড়ের গুহায় গুহায় এবং পাথরের আড়ালে আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে ফেলল। তারা পাহাড় ও পাথরগুলোকে বলল, “আমাদের উপরে পড় এবং যিনি সেই সিংহাসনে বসে আছেন তাঁর মুখের সামনে থেকে এবং মেষ-শিশুর ক্রোধ থেকে আমাদের লুকিয়ে রাখ, কারণ তাঁদের ক্রোধ প্রকাশের সেই মহান দিন এসে পড়েছে, আর কে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে?” এর পর আমি চারজন স্বর্গদূতকে পৃথিবীর চার কোণায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তাঁরা পৃথিবীর চার কোণের বাতাস আট্‌কে রাখছিলেন, যেন পৃথিবী, সমুদ্র কিম্বা কোন গাছের উপরে বাতাস না বয়। পরে আমি আর একজন স্বর্গদূতকে পূর্ব দিক থেকে উঠে আসতে দেখলাম। তাঁর কাছে জীবন্ত ঈশ্বরের সীলমোহর ছিল। যে চারজন স্বর্গদূতকে পৃথিবী ও সমুদ্রের ক্ষতি করবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সেই চারজন স্বর্গদূতকে তিনি খুব জোরে চিৎকার করে বললেন, “আমাদের ঈশ্বরের দাসদের কপালে সীলমোহর না দেওয়া পর্যন্ত পৃথিবী, সমুদ্র বা গাছপালার ক্ষতি কোরো না।” তারপর আমি সেই সীলমোহর করা লোকদের সংখ্যা শুনলাম। ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত বংশের মধ্য থেকে মোট একশো চুয়াল্লিশ হাজার লোককে সীলমোহর করা হয়েছিল: যিহূদার বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। রূবেণের বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। গাদের বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। আশেরের বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। নপ্তালির বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। মনঃশির বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। শিমিয়োনের বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। লেবির বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। ইষাখরের বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। সবূলূনের বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। যোষেফের বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। বিন্যামীনের বংশের মধ্য থেকে বারো হাজার। এর পরে আমি প্রত্যেক জাতি, বংশ, দেশ ও ভাষার মধ্য থেকে এত লোকের ভিড় দেখলাম যে, তাদের সংখ্যা কেউ গুণতে পারল না। সাদা পোশাক পরে তারা সেই সিংহাসন ও মেষ-শিশুর সামনে খেজুর পাতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা জোরে চিৎকার করে বলছিল: “যিনি সিংহাসনে বসে আছেন, আমাদের সেই ঈশ্বর এবং মেষ-শিশুর হাতেই পাপ থেকে উদ্ধার রয়েছে।” তারপর স্বর্গদূতেরা সকলেই সেই সিংহাসনের, নেতাদের ও চারজন জীবন্ত প্রাণীর চারপাশে দাঁড়ালেন। তাঁরা সিংহাসনের সামনে উবুড় হয়ে ঈশ্বরকে প্রণাম করে বললেন, “আমেন। প্রশংসা, গৌরব, জ্ঞান, ধন্যবাদ, সম্মান, ক্ষমতা ও শক্তি চিরকাল ধরে আমাদের ঈশ্বরেরই হোক। আমেন।” তখন একজন নেতা আমাকে বললেন, “সাদা পোশাক পরা এই সব লোক কারা? আর কোথা থেকেই বা তারা এসেছে?” আমি তাঁকে বললাম, “দেখুন, তা আপনিই জানেন।” তিনি আমাকে বললেন, “সেই মহাকষ্টের মধ্য থেকে যারা এসেছে এরা তারাই। এরা এদের পোশাক মেষ-শিশুর রক্তে ধুয়ে সাদা করেছে। সেইজন্য এরা ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে আছে আর স্বর্গের উপাসনা-ঘরে এরা দিনরাত তাঁর সেবা করছে। যিনি সিংহাসনের উপরে বসে আছেন তিনিই এদের উপরে তাঁর তাম্বু খাটাবেন। এদের আর খিদে পাবে না, পিপাসাও পাবে না; সূর্যের তেজ এদের গায়ে আর লাগবে না, ভীষণ গরমও লাগবে না, কারণ সেই মেষ-শিশু যিনি সিংহাসনের উপরে আছেন তিনিই এদের রাখাল হবেন। জীবন্ত জলের ফোয়ারার কাছে তিনি এদের নিয়ে যাবেন, আর ঈশ্বর এদের চোখের জল মুছে দেবেন।” তারপর মেষ-শিশু যখন সপ্তম সীলমোহর ভাংলেন তখন স্বর্গে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কোন রকম শব্দ শোনা গেল না। যে সাতজন স্বর্গদূত ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন আমি তাঁদের দেখতে পেলাম। তাঁদের হাতে সাতটা তূরী দেওয়া হল। এর পর আর একজন স্বর্গদূত এসে বেদীর সামনে দাঁড়ালেন। তাঁর হাতে একটা সোনার ধূপদানী ছিল। তাঁকে প্রচুর পরিমাণে ধূপ দেওয়া হল যাতে তিনি সিংহাসনের সামনের সোনার বেদীর উপরে ঈশ্বরের সব লোকদের প্রার্থনার সংগে সেই ধূপ উৎসর্গ করেন। সেই স্বর্গদূতের হাত থেকে ধূপের ধূমা ঈশ্বরের লোকদের প্রার্থনার সংগে উপরে ঈশ্বরের সামনে উঠে গেল। তখন সেই স্বর্গদূত বেদী থেকে আগুন নিয়ে সেই ধূপদানীটা ভরলেন এবং পৃথিবীতে ফেলে দিলেন। তাতে বাজ পড়বার শব্দ ও অন্যান্য ভয়ংকর শব্দ হল, আর বিদ্যুৎ চম্‌কাল ও ভূমিকম্প হল। যে সাতজন স্বর্গদূতের হাতে সাতটা তূরী ছিল, এর পরে তাঁরা সেগুলো বাজাবার জন্য প্রস্তুত হলেন। প্রথম স্বর্গদূত তাঁর তূরী বাজালে পর রক্ত মিশানো শিল ও আগুন পৃথিবীতে ফেলা হল। তাতে তিন ভাগের এক ভাগ পৃথিবী, তিন ভাগের এক ভাগ গাছপালা এবং সমস্ত সবুজ ঘাস পুড়ে গেল। এর পর দ্বিতীয় স্বর্গদূত তাঁর তুরী বাজালেন। তখন বিরাট জ্বলন্ত পাহাড়ের মত একটা জিনিস সমুদ্রে ফেলা হল। তাতে সমুদ্রের তিন ভাগের এক ভাগ জল রক্ত হয়ে গেল, সমুদ্রের তিন ভাগের এক ভাগ জীবন্ত প্রাণী মরে গেল, আর তিন ভাগের এক ভাগ জাহাজ ধ্বংস হয়ে গেল। পরে তৃতীয় স্বর্গদূত তাঁর তুরী বাজালেন। তখন একটা বড় তারা বাতির মত জ্বলতে জ্বলতে আকাশ থেকে পড়ল। সেই তারার নাম ছিল সোমরাজ। তিন ভাগের এক ভাগ নদী এবং ফোয়ারার উপরে তারাটা পড়ল। তাতে তিন ভাগের এক ভাগ জল তেতো হয়ে গেল এবং সেই তেতো জলের জন্য অনেক লোক মারা গেল। এর পরে চতুর্থ স্বর্গদূত তাঁর তুরী বাজালেন। তাতে সূর্যের তিন ভাগের এক ভাগ, চাঁদের তিন ভাগের এক ভাগ এবং তারাগুলোর তিন ভাগের এক ভাগ অন্ধকার হয়ে গেল। দিনের তিন ভাগের এক ভাগে এবং রাতের তিন ভাগের এক ভাগে কোন আলো রইল না। পরে আমি একটা ঈগল পাখীকে আকাশে অনেক উঁচুতে উড়তে দেখলাম, আর সেই ঈগলটাকে জোরে বলতে শুনলাম, “অন্য যে তিনজন স্বর্গদূত তূরী বাজাতে যাচ্ছেন, তাঁদের তূরীর শব্দ হলে যারা এই পৃথিবীর তাদের বিপদ, বিপদ, বিপদ হবে।” তারপর পঞ্চম স্বর্গদূত তূরী বাজালেন, আর আমি একটা তারা দেখতে পেলাম। তারাটা আকাশ থেকে পৃথিবীতে পড়েছিল। সেই তারাটাকে অতল গর্তের চাবি দেওয়া হল। তারাটা সেই অতল গর্তটা খুলল; তখন বিরাট চুলা থেকে যেমন ধূমা বের হয়, ঠিক সেইভাবে সেই গর্তটা থেকে ধূমা বের হতে লাগল। সেই গর্তের ধূূমায় সূর্য আর আকাশ অন্ধকার হয়ে গেল, আর সেই ধূমার মধ্য থেকে অনেক পংগপাল পৃথিবীতে বের হয়ে আসল। সেই পংগপালগুলোকে পৃথিবীর কাঁকড়া বিছার মত ক্ষমতা দেওয়া হল। তাদের বলা হল যেন তারা পৃথিবীর কোন ঘাস বা সবুজ কোন কিছু অথবা কোন গাছের ক্ষতি না করে; কেবল যে লোকদের কপালে ঈশ্বরের সীলমোহর নেই তাদেরই ক্ষতি করে। এই সব লোকদের মেরে ফেলবার কোন ক্ষমতা তাদের দেওয়া হল না বটে, তবে পাঁচ মাস পর্যন্ত যন্ত্রণা দেবার ক্ষমতা তাদের দেওয়া হল। কাঁকড়া বিছা যখন কোন মানুষকে হুল ফুটায় তখন যেমন যন্ত্রণা হয় এই পংগপালদের দেওয়া যন্ত্রণা ঠিক সেই রকমই। সেই সময় লোকে মৃত্যুর খোঁজ করবে কিন্তু কোনমতেই তা পাবে না; তারা মরতে চাইবে কিন্তু মৃত্যু তাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবে। সেই পংগপালগুলো দেখতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা ঘোড়ার মত। তাদের মাথায় সোনার মুকুটের মত এক রকম জিনিস ছিল, আর তাদের মুখের চেহারা ছিল মানুষের মত। তাদের চুল মেয়েদের চুলের মত আর তাদের দাঁত সিংহের দাঁতের মত। তাদের বুকে লোহার বুক রক্ষার পোশাকের মত পোশাক ছিল। অনেকগুলো ঘোড়া একসংগে যুদ্ধের রথ টেনে নিয়ে ছুটে গেলে যেমন শব্দ হয়, তাদের ডানার শব্দ ঠিক সেই রকমই ছিল। তাদের লেজ ও হুল কাঁকড়া বিছার লেজ ও হুলের মত ছিল। পাঁচ মাস পর্যন্ত লোকদের ক্ষতি করবার শক্তি তাদের লেজে ছিল। অতল গর্তের দূতই ছিল এই পংগপালদের রাজা। ইব্রীয় ভাষায় সেই দূতের নাম ছিল আবদ্দোন আর গ্রীক ভাষায় আপল্লুয়োন, অর্থাৎ ধ্বংসকারী। প্রথম বিপদ শেষ হল। দেখ, এর পরে আরও দু’টা বিপদ আসছে। তারপর ষষ্ঠ স্বর্গদূত তাঁর তূরী বাজালেন। ঈশ্বরের সামনে যে সোনার বেদী আছে সেই বেদীর চারটা শিংয়ের কাছ থেকে আমি একজনকে কথা বলতে শুনলাম। যাঁর কাছে তূরী ছিল সেই ষষ্ঠ স্বর্গদূতকে তিনি বললেন, “যে চারজন দূত মহানদী ইউফ্রেটিসের মধ্যে বাঁধা রয়েছে তাদের ছেড়ে দাও।” তখন সেই চারজন দূতকে ছেড়ে দেওয়া হল। এই বছরের এই মাস, এই দিন ও এই ঘণ্টার জন্য সেই দূতদের প্রস্তুত রাখা হয়েছিল যেন তারা তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে মেরে ফেলে। পরে আমি শুনতে পেলাম, ঘোড়ায় চড়া সৈন্যের সংখ্যা ছিল বিশ কোটি। দর্শনে যে ঘোড়াগুলো এবং সেগুলোর উপর যাদের আমি দেখলাম তাদের চেহারা এই রকম ছিল-তাদের বুক রক্ষার পোশাক ছিল আগুনের মত লাল, নীল ও গন্ধকের মত হলুদ রংয়ের। ঘোড়াগুলোর মাথা ছিল সিংহের মাথার মত আর সেগুলোর মুখ থেকে আগুন, ধূমা আর গন্ধক বের হচ্ছিল। আগুন, ধূমা ও গন্ধক-এই তিনটি আঘাতের দ্বারা তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে মেরে ফেলা হল। সেই ঘোড়াগুলোর মুখ ও লেজের মধ্যেই তাদের শক্তি ছিল, কারণ তাদের লেজগুলো ছিল সাপের মত। সেই লেজগুলোর মাথা দিয়ে তারা মানুষের ক্ষতি করছিল। কিন্তু এই সব আঘাতের পরেও যে সব মানুষ বেঁচে রইল তারা নিজেদের হাতে তৈরী প্রতিমাগুলো থেকে মন ফিরাল না। তারা মন্দ আত্মাদের এবং যারা দেখতে, শুনতে বা হাঁটতে পারে না এমন সব সোনা, রূপা, পিতল, পাথর ও কাঠ দিয়ে তৈরী প্রতিমার পূজা করতেই থাকল। এছাড়া খুন, যাদুবিদ্যা, ব্যভিচার ও চুরি-এই সমস্ত থেকেও তারা মন ফিরাল না। তার পরে আমি আর একজন শক্তিশালী স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তাঁর পোশাক ছিল মেঘ, আর তাঁর মাথার উপরে ছিল মেঘধনুক। তাঁর মুখ সূর্যের মত আর তাঁর পা ছিল আগুনের থামের মত। যখন সাতটা বাজ পড়বার শব্দ হল তখন আমি লিখবার জন্য প্রস্তুত হলাম। কিন্তু স্বর্গ থেকে আমাকে এই কথা বলা হল, “সাতটা বাজ যে কথা বলল তা গোপন রাখ, লিখো না।” যে স্বর্গদূতকে আমি সমুদ্র ও ভূমির উপরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম তিনি তাঁর ডান হাত স্বর্গের দিকে তুললেন। যিনি চিরকাল ধরে জীবিত আছেন এবং আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র ও সেগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে তা সৃষ্টি করেছেন, তাঁর নামে শপথ করে সেই স্বর্গদূত বললেন, “আর দেরি হবে না। কিন্তু সপ্তম স্বর্গদূত তাঁর তূরী বাজাবার দিনে ঈশ্বরের গুপ্ত উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবে। ঈশ্বর তাঁর নিজের দাসদের কাছে, অর্থাৎ নবীদের কাছে যা জানিয়েছিলেন ঠিক সেই মতই এটা হবে।” যাঁকে আমি স্বর্গ থেকে কথা বলতে শুনেছিলাম তিনি আবার আমাকে বললেন, “যে স্বর্গদূত সমুদ্র ও ভূমির উপরে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর হাত থেকে খোলা বইটা নাও।” তখন আমি সেই স্বর্গদূতের কাছে গিয়ে সেই বইটা আমাকে দিতে বললাম। তিনি আমাকে বললেন, “এটা নিয়ে খেয়ে ফেল। তোমার পেটকে এটা তেতো করে তুলবে, কিন্তু মুখে মধুর মত মিষ্টি লাগবে।” তখন স্বর্গদূতের হাত থেকে আমি সেই ছোট বইটা নিয়ে খেয়ে ফেললাম। আমার মুখে তা মধুর মত মিষ্টি লাগল, কিন্তু খেয়ে ফেললে পর আমার পেট তেতো হয়ে গেল। তারপর আমাকে এই কথা বলা হল, “তোমাকে আবার অনেক দেশ, জাতি, ভাষা ও রাজার বিষয়ে ভবিষ্যতের কথা বলতে হবে।” তারপর মাপকাঠির মত একটা নলের লাঠি আমাকে দেওয়া হল এবং বলা হল, “উপাসনা-ঘর ও বেদী মাপ এবং যারা সেখানে ঈশ্বরের উপাসনা করে তাদের সংখ্যা গোণ। কিন্তু উপাসনা-ঘরের বাইরে যে উঠান আছে ওটা বাদ দিয়ো, মেপো না, কারণ ওটা অযিহূদীদের দেওয়া হয়েছে। তারা বিয়াল্লিশ মাস ধরে পবিত্র শহরটা পায়ে মাড়াবে। কিন্তু আমি আমার দু’জন সাক্ষীকে এমন ক্ষমতা দেব যার ফলে তারা চট পরে এক হাজার দু’শো ষাট দিন ধরে নবী হিসাবে কথা বলবে।” সেই দু’জন সাক্ষী হলেন দু’টি জলপাই গাছ ও দু’টি বাতিদান, যাঁরা পৃথিবীর প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ যদি তাঁদের ক্ষতি করতে চায় তবে তাঁদের মুখ থেকে আগুন বের হয়ে সেই শত্রুদের পুড়িয়ে ফেলবে। যে কেউ তাঁদের ক্ষতি করতে চাইবে তাকে এইভাবে মরতে হবে। এই লোকেরা যতদিন নবী হিসাবে কথা বলবেন ততদিন যেন বৃষ্টি না হয় সেইজন্য আকাশ বন্ধ করে দেবার ক্ষমতা তাঁদের থাকবে। জলকে রক্ত করবার এবং যতবার ইচ্ছা ততবার যে কোন আঘাত দিয়ে পৃথিবীর ক্ষতি করবার ক্ষমতাও তাঁদের থাকবে। তাঁদের সাক্ষ্য দেওয়া শেষ হলে পর সেই অতল গর্ত থেকে একটা জন্তু উঠে এসে তাঁদের সংগে যুদ্ধ করবে এবং তাঁদের পরাজিত করে মেরে ফেলবে। তাঁদের প্রভুকে যে শহরে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল সেই মহা শহরের রাস্তায় তাঁদের দেহ পড়ে থাকবে। সেই শহরের নাম আসলে সদোম ও মিসর নয়, তবুও একই রকম বলে সেই শহরকে সদোম ও মিসর বলা হয়। তখন সব দেশ, বংশ, ভাষা ও জাতির মধ্য থেকে লোকেরা সাড়ে তিন দিন ধরে ঐ মৃত দেহগুলো দেখবে। তারা তাঁদের দেহগুলো কবর দিতে দেবে না। তাঁরা মারা গেছেন বলে যারা এই পৃথিবীর তারা খুশী হবে এবং আনন্দ করবে। লোকেরা একে অন্যের কাছে উপহার পাঠাবে, কারণ যারা এই পৃথিবীর তারা এই দু’জন নবীর দরুন কষ্ট পেয়েছিল। কিন্তু এই সাড়ে তিন দিন পরে ঈশ্বরের দেওয়া প্রাণবায়ু তাঁদের মধ্যে ঢুকল। তাতে তাঁরা পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। তখন যারা তাঁদের দেখল তারা খুব ভয় পেল। পরে সেই দু’জন সাক্ষী স্বর্গ থেকে জোরে বলা এই কথা শুনলেন, “এখানে উঠে এস।” তখন তাঁরা তাঁদের শত্রুদের চোখের সামনেই একটা মেঘে করে স্বর্গে উঠে গেলেন। সেই সময় ভীষণ ভূমিকম্প হল এবং সেই শহরের দশ ভাগের এক ভাগ ভেংগে পড়ে গেল। সেই ভূমিকমেপ সাত হাজার লোক মারা গেল। তাতে বাকী সকলে ভয় পেয়ে স্বর্গের ঈশ্বরের গৌরব করতে লাগল। এইভাবে দ্বিতীয় বিপদ শেষ হল। দেখ, শীঘ্রই তৃতীয় বিপদ আসছে। পরে সপ্তম স্বর্গদূত তাঁর তূরী বাজালেন। তখন স্বর্গে জোরে জোরে বলা হল, “জগতের রাজ্য এখন আমাদের প্রভু ও তাঁর মশীহের হয়েছে। তিনি চিরকাল ধরে রাজত্ব করবেন।” যে চব্বিশজন নেতা ঈশ্বরের সামনে তাঁদের সিংহাসনের উপর বসে ছিলেন তাঁরা উবুড় হয়ে ঈশ্বরকে প্রণাম করে বললেন, “সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর, তুমি আছ এবং তুমি ছিলে। আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দিই, কারণ তুমি তোমার মহা ক্ষমতা হাতে নিয়ে রাজত্ব করতে শুরু করেছ। সব জাতি রাগ করেছে, আর তোমার ক্রোধ প্রকাশের সময় হয়েছে। মৃতদের বিচার করবার সময় এসেছে, আর তোমার দাসদের, অর্থাৎ নবীদের ও তোমার লোকদের এবং ছোট-বড় সবাই যারা তোমাকে ভক্তি করে তাদের পুরস্কার দেবার সময় এসেছে। এছাড়া যারা পৃথিবীর ক্ষতি করছে, তাদের ধ্বংস করবার সময়ও এসেছে।” তারপর স্বর্গের উপাসনা-ঘরটি খোলা হল এবং সেখানে ঈশ্বরের ব্যবস্থা-সিন্দুকটি দেখা গেল। তখন বিদ্যুৎ চম্‌কাতে ও ভয়ংকর শব্দ হতে আর বাজ পড়তে এবং ভূমিকম্প ও ভীষণ শিলাবৃষ্টি হতে লাগল। পরে স্বর্গে একটা মহান চিহ্ন দেখা গেল-একজন স্ত্রীলোক, যার পরনে ছিল সূর্য আর পায়ের নীচে ছিল চাঁদ। বারোটা তারা দিয়ে গাঁথা একটা মুকুট তার মাথায় ছিল। সে গর্ভবতী ছিল এবং প্রসব-বেদনায় চিৎকার করছিল। তারপর স্বর্গে আর একটা চিহ্ন দেখা গেল-আগুনের মত লাল একটা বিরাট দানব। তার সাতটা মাথা ও দশটা শিং, আর মাথাগুলোতে সাতটা মুকুট ছিল। তার লেজ দিয়ে সে আকাশের তিন ভাগের এক ভাগ তারা টেনে এনে পৃথিবীতে ছুঁড়ে ফেলে দিল। যে স্ত্রীলোকটির সন্তান হতে যাচ্ছিল দানবটা তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল যেন সন্তানের জন্ম হলেই সে খেয়ে ফেলতে পারে। স্ত্রীলোকটির একটি ছেলে হল। সেই ছেলেই লোহার দণ্ড দিয়ে সমস্ত জাতিকে শাসন করবেন। সেই সন্তানকে ঈশ্বর ও তাঁর সিংহাসনের কাছে তুলে নেওয়া হল, আর সেই স্ত্রীলোকটি মরুভূমিতে পালিয়ে গেল। ঈশ্বর সেই মরুভূমিতে তার জন্য একটা জায়গা ঠিক করে রেখেছিলেন যেন এক হাজার দু’শো ষাট দিন সে সেখানে যত্ন পায়। তারপর স্বর্গে যুদ্ধ হল। মীখায়েল ও তাঁর অধীন দূতেরা সেই দানব ও তাঁর দূতদের সংগে যুদ্ধ করলেন। সেই দানব জয়ী হতে পারল না এবং স্বর্গে তাদের আর থাকতেও দেওয়া হল না। তখন সেই বিরাট দানবকে ও তাঁর সংগে তার দূতদের পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হল। এই দানব হল সেই পুরানো সাপ যাকে দিয়াবল বা শয়তান বলা হয়। সে পৃথিবীর সমস্ত লোককে ভুল পথে নিয়ে যায়। তারপর আমি স্বর্গ থেকে জোরে জোরে একজনকে বলতে শুনলাম, “এখন উদ্ধার, শক্তি ও আমাদের ঈশ্বরের রাজ্য আর তাঁর মশীহের ক্ষমতা উপস্থিত হয়েছে, কারণ যে আমাদের ভাইদের দোষ দিত তাকে স্বর্গ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ঈশ্বরের সামনে সে দিনরাত তাদের দোষ দেখাত। মেষ-শিশুর রক্ত ও নিজেদের সাক্ষ্য দ্বারা তারা তাকে হারিয়ে দিয়েছে। তারা নিজেদের অতিরিক্ত ভালবাসে নি বলেই তাদের জীবন দিতে তারা রাজী ছিল। “সেইজন্য হে স্বর্গ, আনন্দিত হও; তোমরা যারা সেখানে বাস কর, আনন্দিত হও। কিন্তু পৃথিবী ও সমুদ্র, ধিক্‌ তোমাদের! কারণ শয়তান তোমাদের উপর নেমে এসেছে। শয়তান রাগে ফুলে উঠেছে, কারণ সে জানে তার সময় আর বেশী নেই।” সেই দানব যখন দেখল যে, তাকে পৃথিবীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে তখন যে স্ত্রীলোকটির সন্তান হয়েছিল দানবটা তার পিছনে লাগল। তখন সেই স্ত্রীলোকটিকে একটা মস্ত বড় ঈগলের দু’টা ডানা দেওয়া হল যেন সে মরুভূমিতে তার জায়গায় উড়ে যেতে পারে। সেখানে সেই সাপের চোখের আড়ালে সাড়ে তিন বছর তার যত্ন নেওয়া হবে। তখন সেই সাপটা সেই স্ত্রীলোকটির পিছন থেকে তাকে স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তার মুখ থেকে জল বের করে একটা নদীর সৃষ্টি করে ফেলল, কিন্তু পৃথিবী সেই স্ত্রীলোকটিকে সাহায্য করল। সেই দানব তার মুখ থেকে যে জল বের করল পৃথিবী তার মুখ খুলে তা খেয়ে ফেলল। এর পরে আমি একটা জন্তুকে সমুদ্রের মধ্য থেকে উঠে আসতে দেখলাম। সেই জন্তুটার দশটা শিং আর সাতটা মাথা ছিল। সেই শিংগুলোর উপরে দশটা মুকুট ছিল আর মাথাগুলোর উপরে ঈশ্বরকে অপমান করবার জন্য বিভিন্ন নাম লেখা ছিল। সেই জন্তুটা দেখতে ছিল চিতাবাঘের মত, আর তার পাগুলো ছিল ভাল্লুকের পায়ের মত এবং মুখটা ছিল সিংহের মুখের মত। সেই দানবটা তার শক্তি, সিংহাসন ও মহা ক্ষমতা সেই জন্তুটাকে দিল। জন্তুটার একটা মাথায় এমন একটা আঘাত ছিল যার ফলে সে মরবার মত হয়েছিল, কিন্তু সেই আঘাতটা ভাল হয়ে গিয়েছিল। তাতে জগতের সব লোক আশ্চর্য হয়ে সেই জন্তুটার পিছনে পিছনে চলল। দানবটা সেই জন্তুটাকে ক্ষমতা দিয়েছিল বলে লোকেরা সেই দানবকে ঈশ্বরের সম্মান দিয়ে প্রণাম করল, আর জন্তুটাকেও সেই একইভাবে প্রণাম করে বলল, “এই জন্তুর মত কে আছে? আর কে-ই বা তার সংগে যুদ্ধ করতে পারে?” গর্ব করবার ও ঈশ্বরকে অপমান করবার জন্য সেই জন্তুটাকে কথা বলবার শক্তি দেওয়া হল। সেই জন্তুটা যেন বিয়াল্লিশ মাস ধরে তার অধিকার খাটাতে পারে সেইজন্য তাকে অনুমতি দেওয়া হল। তখন সেই জন্তুটা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে, তাঁর নামের ও তাঁর বাসস্থানের বিরুদ্ধে এবং স্বর্গে যাঁরা থাকেন তাঁদের বিরুদ্ধে খুব অপমানের কথা বলতে লাগল। ঈশ্বরের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের জয় করে নেবার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হল এবং প্রত্যেক বংশ, দেশ, ভাষা ও জাতির লোকদের উপরে তাকে অধিকার দেওয়া হল। যারা এই পৃথিবীর, অর্থাৎ যাদের নাম মেষ-শিশুর জীবন-বইয়ে লেখা নেই তারা সবাই সেই জন্তুটাকে ঈশ্বরের সম্মান দিয়ে প্রণাম করবে। এই মেষ-শিশুকে জগৎ সৃষ্টির আগেই মেরে ফেলবার জন্য ঠিক করা হয়েছিল। যার শুনবার কান আছে, সে পবিত্র শাস্ত্রের এই কথাগুলো শুনুক: যার বন্দী হবার কথা আছে সে বন্দী হবে। যার ছোরার আঘাতে খুন হবার কথা আছে সে খুন হবে। এইজন্য ঈশ্বরের লোকদের ধৈর্য ও বিশ্বাসের দরকার। এর পরে আমি ভূমি থেকে আর একটা জন্তুকে উঠে আসতে দেখলাম। ভেড়ার মত তার দু’টা শিং ছিল, কিন্তু সেই দানবের মত সে কথা বলত। এই জন্তুটা প্রথম জন্তুটার হয়ে তার সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করতে লাগল; আর যারা এই পৃথিবীর তাদের দিয়ে সে সেই প্রথম জন্তু, অর্থাৎ যার ভীষণ আঘাত ভাল হয়ে গিয়েছিল তাকে ঈশ্বর বলে প্রণাম করাল। সে বড় বড় আশ্চর্য কাজ করতে লাগল, এমন কি, লোকদের চোখের সামনে আকাশ থেকে পৃথিবীতে আগুন নামিয়ে আনল। সেই প্রথম জন্তুর হয়ে যে সব আশ্চর্য কাজ করবার জন্য তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল সে সেগুলো করে লোকদের ভুল পথে নিয়ে যেতে লাগল। প্রথম যে জন্তুটা ছোরার আঘাত পেয়েও বেঁচে ছিল, দ্বিতীয় জন্তুটা লোকদের বলল যেন তারা তার একটা মূর্তি তৈরী করে। সেই মূর্তিকে প্রাণ দেবার শক্তিও তাকে দেওয়া হল, যাতে সেই মূর্তিটা কথা বলতে পারে এবং যারা সেই মূর্তিকে ঈশ্বরের সম্মান দিয়ে প্রণাম করবে না তাদের মেরে ফেলতে পারে। সে ছোট-বড়, ধনী- গরীব, স্বাধীন ও দাস, সকলকেই ডান হাতে বা কপালের উপর একটা চিহ্ন গ্রহণ করতে বাধ্য করল। ফলে সেই চিহ্ন ছাড়া কেউ কিছু কিনতে বা বিক্রি করতে পারল না। সেই চিহ্ন হল সেই জন্তুটার নাম বা তার নামের সংখ্যা। এই সব বুঝতে বুদ্ধির দরকার। যার বুদ্ধি আছে সে সেই জন্তুটার সংখ্যা গুণে দেখুক, কারণ ওটা একটা মানুষের নামের সংখ্যা। আর সেই সংখ্যা হল ছ’শো ছেষট্টি। তারপর আমি চেয়ে দেখলাম, সেই মেষ-শিশু সিয়োন পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর সংগে আছে একশো চুয়াল্লিশ হাজার লোক। তাদের কপালে মেষ-শিশু ও তাঁর পিতার নাম লেখা রয়েছে। তারপর আমি স্বর্গ থেকে জোরে বয়ে যাওয়া স্রোতের শব্দের মত ও জোরে বাজ পড়বার শব্দের মত একটা শব্দ শুনলাম। যে শব্দ আমি শুনলাম তা ছিল বীণা বাদকদের বীণার শব্দের মত। সেই সিংহাসন ও সেই চারজন জীবন্ত প্রাণী এবং সেই নেতাদের সামনে তারা একটা নতুন গান করছিল। কেউ সেই গান শিখতে পারল না; কেবল সেই একশো চুয়াল্লিশ হাজার লোক, যাদের পৃথিবীর লোকদের মধ্য থেকে কিনে নেওয়া হয়েছিল তারাই শিখতে পারল। এরা সেই লোকেরা, যারা স্ত্রীলোকদের সংগে ব্যভিচার করে নিজেদের অশুচি করে নি। যেখানে মেষ-শিশু যান তারা তাঁর পিছনে পিছনে যায়। ঈশ্বর এবং মেষ-শিশুর কাছে প্রথম ফল হিসাবে উৎসর্গ করবার জন্য লোকদের মধ্য থেকে তাদের কিনে নেওয়া হয়েছিল। তারা কখনও মিথ্যা কথা বলে নি, আর তাদের মধ্যে কোন দোষ পাওয়া যায় নি। তারপর আমি আর একজন স্বর্গদূতকে আকাশে অনেক উঁচুতে উড়তে দেখলাম। পৃথিবীতে বাসকারী লোকদের কাছে, অর্থাৎ প্রত্যেক জাতি, বংশ, ভাষা ও দেশের লোকদের কাছে প্রচার করবার জন্য তাঁর কাছে চিরকালের সুখবর ছিল। তিনি জোরে জোরে এই কথা বলছিলেন, “ঈশ্বরকে ভয় কর এবং তাঁর গৌরব কর, কারণ বিচার করবার সময় এসে গেছে। যিনি আকাশ, পৃথিবী, সমুদ্র ও ফোয়ারা সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপাসনা কর।” পরে দ্বিতীয় আর একজন স্বর্গদূত তাঁর পিছনে পিছনে এসে বললেন, “সেই নাম-করা বাবিল শহর ধ্বংস হয়ে গেছে। যে শহর তার ব্যভিচারের ভয়ংকর মদ সব জাতিকেই খাইয়েছে সেই শহরটা ধ্বংস হয়ে গেছে।” এর পরে তৃতীয় আর একজন স্বর্গদূত তাঁদের পিছনে পিছনে এসে জোরে বললেন, “কেউ যদি সেই জন্তু এবং তাঁর মূর্তির পূজা করে এবং তাঁর চিহ্ন কপালে বা হাতে গ্রহণ করে, তবে তাকে ঈশ্বরের ক্রোধের মদ খেতে হবে। এই মদের সংগে জল না মিশিয়ে ঈশ্বরের ক্রোধের পেয়ালায় ঢেলে দেওয়া হয়েছে। পবিত্র স্বর্গদূতদের এবং মেষ-শিশুর সামনে আগুন ও গন্ধকের দ্বারা সেই লোককে যন্ত্রণা দেওয়া হবে। যে আগুন এই লোকদের যন্ত্রণা দেবে সেই আগুনের ধূমা চিরকাল ধরে উঠতে থাকবে। যে লোক সেই জন্তু ও তার মূর্তির পূজা করবে এবং তার নামের চিহ্ন গ্রহণ করবে সে দিনে বা রাতে কখনও বিশ্রাম পাবে না।” যারা ঈশ্বরের আদেশ পালন করে এবং যীশুর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে ঈশ্বরের সেই লোকদের এই অবস্থার মধ্যে ধৈর্যের দরকার। তারপর আমি একজনকে স্বর্গ থেকে বলতে শুনলাম, “এই কথা লেখ-এখন থেকে যারা প্রভুর সংগে যুক্ত হয়ে মারা যাবে তারা ধন্য।” পবিত্র আত্মা এই কথা বলছেন, “হ্যাঁ, তারা ধন্য। তাদের পরিশ্রম থেকে তারা বিশ্রাম পাবে, কারণ তাদের কাজের ফল তাদের সংগে থাকবে।” পরে আমি তাকিয়ে একটা সাদা মেঘ দেখলাম, আর সেই মেঘের উপরে মনুষ্যপুত্রের মত কেউ একজন বসে ছিলেন। তাঁর মাথায় জয়ের সোনার মুকুট ছিল আর হাতে ছিল ধারালো কাস্তে। তারপর আর একজন স্বর্গদূত উপাসনা-ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন এবং যিনি সেই মেঘের উপরে বসে ছিলেন তাঁকে জোরে চিৎকার করে বললেন, “আপনার কাস্তে লাগান, ফসল কাটুন, কারণ ফসল কাটবার সময় হয়েছে; পৃথিবীর ফসল পুরোপুরি পেকে গেছে।” তখন যিনি সেই মেঘের উপরে বসে ছিলেন তিনি পৃথিবীতে তাঁর কাস্তে লাগালেন, আর পৃথিবীর ফসল কাটা হল। পরে স্বর্গের উপাসনা-ঘর থেকে আর একজন স্বর্গদূত বের হয়ে আসলেন। তাঁর কাছেও একটা ধারালো কাস্তে ছিল। তারপর বেদীর কাছ থেকে আর একজন স্বর্গদূত বের হয়ে আসলেন। আগুনের উপরে তাঁর ক্ষমতা ছিল। যে স্বর্গদূতের কাছে ধারালো কাস্তে ছিল তাঁকে এই স্বর্গদূত জোরে ডেকে বললেন, “তোমার ধারালো কাস্তে লাগাও আর পৃথিবীর আংগুর গাছ থেকে আংগুরের থোকাগুলো কেটে জড়ো কর, কারণ আংগুর পেকে গেছে।” তখন সেই স্বর্গদূত পৃথিবীতে তাঁর কাস্তে লাগালেন এবং পৃথিবীর আংগুর গাছ থেকে সব আংগুর কেটে জড়ো করলেন। পরে সেগুলো আংগুর মাড়াই করবার গর্তের মধ্যে ফেলে দিলেন। এই আংগুর মাড়াই করবার গর্ত হল ঈশ্বরের ভয়ংকর ক্রোধ। শহরের বাইরে আংগুর মাড়াই করবার গর্তে সেই আংগুরগুলো মাড়াই করা হলে পর তা থেকে রক্ত বের হয়ে আসল ও ঘোড়াগুলোর লাগাম পর্যন্ত উঠল। তাতে প্রায় তিনশো কিলোমিটার পর্যন্ত সব জায়গা রক্তে ডুবে গেল। পরে আমি স্বর্গে আর একটা মহান ও আশ্চর্য চিহ্ন দেখলাম। দেখলাম, সাতজন স্বর্গদূত আর তাদের হাতে শেষ সাতটা আঘাত। এগুলোকে শেষ আঘাত বলা হচ্ছে, কারণ এগুলো দিয়ে ঈশ্বরের ক্রোধেরও শেষ হবে। তারপর আমি আগুন মেশানো কাচের একটা সমুদ্রের মত দেখলাম, আর যারা সেই জন্তু ও তার মূর্তি এবং তার নামের সংখ্যার উপরে জয়লাভ করেছে তাদেরও দেখলাম। ঈশ্বরের দেওয়া বীণা হাতে করে তারা সেই কাচের সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা ঈশ্বরের দাস মোশির এবং সেই মেষ-শিশুর এই গানটি গাইছিল: “সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর, কত মহান ও আশ্চর্য তোমার কাজ! হে সমস্ত জাতির রাজা, কত ন্যায় ও সত্য তোমার পথ! প্রভু, কে না তোমাকে ভয় করবে? কে না তোমার নামের গৌরব করবে? কেবল তুমিই তো পবিত্র। সমস্ত জাতি তোমার কাছে আসবে, সবাই তোমার উপাসনা করবে; কারণ তোমার ন্যায়বিচার প্রকাশিত হয়েছে।” এর পরে আমি দেখলাম, স্বর্গে সেই উপাসনা-ঘরটা, অর্থাৎ সাক্ষ্য-তাম্বুটা খোলা হল। তখন সেই সাতজন স্বর্গদূত সাতটা আঘাত নিয়ে উপাসনা-ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন। তাঁদের পরনে ছিল পরিষ্কার ঝক্‌ঝকে কাপড় আর বুকে বাঁধা ছিল সোনার পটি। সেই চারজন জীবন্ত প্রাণীর একজন সেই সাতজন স্বর্গদূতকে সাতটা সোনার বাটি দিলেন। ঈশ্বর, যিনি যুগ যুগ ধরে চিরকাল জীবিত আছেন, সেই বাটিগুলো তাঁর ক্রোধে পূর্ণ ছিল। ঈশ্বরের মহিমা ও শক্তি থেকে যে ধূমা বের হচ্ছিল সেই ধূমায় উপাসনা-ঘরটা পূর্ণ হল। সেই সাতজন স্বর্গদূতের সাতটা আঘাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ সেই উপাসনা-ঘরে ঢুকতে পারল না। পরে আমি শুনলাম, সেই উপাসনা-ঘর থেকে সেই সাতজন স্বর্গদূতকে একজন জোরে জোরে বলছেন, “তোমরা গিয়ে ঈশ্বরের ক্রোধে ভরা সাতটা বাটি পৃথিবীর উপর উবুড় করে ঢেলে দাও।” তখন প্রথম স্বর্গদূত গিয়ে তাঁর বাটিটা পৃথিবীর উপর উবুড় করলেন। তার ফলে যাদের উপর সেই জন্তুটার চিহ্ন ছিল এবং যারা তার মূর্তির পূজা করত তাদের গায়ে খুব খারাপ ও বিষাক্ত এক রকমের ঘা দেখা দিল। দ্বিতীয় স্বর্গদূত তাঁর বাটিটা সমুদ্রের উপরে উবুড় করলেন। তখন সমুদ্রের জল মরা মানুষের রক্তের মত হল, আর সমুদ্রের সব প্রাণী মরে গেল। পরে তৃতীয় স্বর্গদূত নদী আর ফোয়ারার উপরে তাঁর বাটিটা উবুড় করলেন। তাতে সেগুলো রক্তের নদী ও ফোয়ারা হয়ে গেল। জলের উপরে যে স্বর্গদূতের ক্ষমতা ছিল আমি তাঁকে এই কথা বলতে শুনলাম: “হে পবিত্র, তুমি আছ এবং তুমি ছিলে। তুমি ন্যায়বান, কারণ তুমি এই সব শাস্তি দিয়েছ। এই লোকেরা ঈশ্বরের লোকদের ও নবীদের খুন করেছে। তাই তুমি তাদের এই রক্ত খেতে দিয়েছ আর এটাই তাদের পক্ষে উপযুক্ত হয়েছে।” আমি বেদী থেকে একজনকে এই কথা বলতে শুনলাম: “সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর, তোমার সব বিচার সত্য ও ন্যায়ে পূর্ণ।” চতুর্থ স্বর্গদূত সূর্যের উপরে তাঁর বাটিটা উবুড় করলেন। তাতে লোকদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবার জন্য সূর্যকে ক্ষমতা দেওয়া হল। তখন ভীষণ তাপে লোকদের গা পুড়ে গেল, আর এই সমস্ত আঘাতের উপর যাঁর ক্ষমতা আছে তারা সেই ঈশ্বরের নিন্দা করতে লাগল। কিন্তু তবুও তারা মন ফিরাল না এবং ঈশ্বরের গৌরব করল না। তারপর ষষ্ঠ স্বর্গদূত মহানদী ইউফ্রেটিসের উপরে তাঁর বাটিটা উবুড় করলেন। তাতে পূর্ব দেশের রাজাদের যাবার পথ তৈরী হবার জন্য সেই নদীর জল শুকিয়ে গেল। তখন আমি ব্যাঙের মত তিনটা মন্দ আত্মা দেখতে পেলাম। সেগুলো সেই দানব, সেই জন্তু এবং সেই ভণ্ড নবীর মুখ থেকে বের হয়ে আসছিল। সেই মন্দ আত্মাগুলো আশ্চর্য আশ্চর্য কাজ করছিল। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সেই মহান দিনে যুদ্ধ করবার জন্য তারা সারা জগতের রাজাদের একসংগে জড়ো করল। যীশু বলছেন, “দেখ, আমি চোরের মত আসব। ধন্য সেই লোক, যে জেগে থাকে এবং নিজের পোশাক পরে থাকে, যেন তাকে উলংগ হয়ে ঘুরতে না হয় আর লোকে তার লজ্জা দেখতে না পায়।” ইব্রীয় ভাষায় যে জায়গার নাম হরমাগিদোন, মন্দ আত্মারা সেই রাজাদের সেখানে জড়ো করল। পরে সপ্তম দূত তাঁর বাটিটা বাতাসে উবুড় করলেন। তখন উপাসনা-ঘরের সিংহাসন থেকে জোরে এই কথাগুলো বলা হল, “যা হবার তা হয়ে গেছে।” তখন বিদ্যুৎ চম্‌কাতে লাগল, ভয়ংকর শব্দ হতে ও বাজ পড়তে লাগল এবং এমন ভীষণ ভূমিকম্প হল যা পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির পর থেকে আর কখনও দেখা যায় নি। সেই ভূমিকম্প খুবই সাংঘাতিক ছিল। সেই নাম-করা শহরটা তিন ভাগে ভাগ হয়ে গেল এবং বিভিন্ন জাতির শহরগুলো ভেংগে পড়ে গেল। পরে সেই নাম-করা বাবিলের কথা ঈশ্বরের মনে পড়ল, আর তিনি তাঁর ক্রোধের ভয়ংকর মদে পেয়ালা পূর্ণ করে বাবিলকে খেতে দিলেন। তখন প্রত্যেকটা দ্বীপ পালিয়ে গেল এবং পাহাড়গুলো আর দেখা গেল না। আকাশ থেকে মানুষের উপর বড় বড় পাথরের মত শিল পড়তে লাগল। তার প্রত্যেকটার ওজন ছিল ছত্রিশ কেজি। এতে লোকে শিলের আঘাতের জন্য ঈশ্বরের নিন্দা করতে লাগল, কারণ সেই শিলের আঘাত ছিল ভয়ংকর। যে সাতজন স্বর্গদূতের হাতে সাতটা বাটি ছিল তাঁদের মধ্যে একজন এসে আমাকে বললেন, “অনেক জলের উপরে যে মহাবেশ্যা বসে আছে, এস, আমি তার শাস্তি তোমাকে দেখাই। পৃথিবীর রাজারা তার সংগে ব্যভিচার করেছিল, আর যারা এই পৃথিবীর তারা তার ব্যভিচারের আংগুর-রসে মাতাল হয়েছিল।” তারপর সেই স্বর্গদূত আমাকে মরুভূমিতে নিয়ে গেলেন। তখন আমি পবিত্র আত্মার বশে ছিলাম। সেখনে আমি একজন স্ত্রীলোককে একটা লাল রংয়ের জন্তুর উপরে বসে থাকতে দেখলাম। ঈশ্বরকে অপমান করবার জন্য অনেকগুলো নাম সেই জন্তুটার উপর লেখা ছিল। তার সাতটা মাথা আর দশটা শিং। সেই স্ত্রীলোকটা বেগুনী ও লাল রংয়ের পোশাক পরে ছিল এবং তার গায়ে সোনা, দামী দামী পাথর ও মুক্তার গহনা ছিল। জঘন্য জিনিষে ও তার ব্যভিচারের ময়লায় ভরা একটা সোনার বাটি তার হাতে ছিল। তার কপালে এমন নাম লেখা ছিল যার বিষয়ে একটা গুপ্ত সত্য আছে। সেই নামটা হল, “নাম করা বাবিল, বেশ্যাদের এবং পৃথিবীর সব জঘন্য জিনিসের মা।” আমি দেখলাম, সেই স্ত্রীলোকটা ঈশ্বরের লোকদের রক্ত এবং যারা যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে তাদের রক্ত খেয়ে মাতাল হয়ে আছে। আমি তাকে দেখে খুব আশ্চর্য হলাম। তখন সেই স্বর্গদূত আমাকে বললেন, “তুমি আশ্চর্য হচ্ছ কেন? স্ত্রীলোকটার এবং যে জন্তুটা তাকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে সেই জন্তুটার গুপ্ত অর্থ তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। এ সেই জন্তু যার সাতটা মাথা আর দশটা শিং ছিল। যে জন্তুটাকে তুমি দেখেছিলে সে আগে ছিল কিন্তু এখন নেই। পরে সে সেই অতল গর্ত থেকে উঠে এসে অনন্তকাল ধরে শাস্তি ভোগ করবে। তখন যারা এই পৃথিবীর, অর্থাৎ জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে যাদের নাম জীবন-বইতে লেখা নেই তারা সেই জন্তুটাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে যাবে; কারণ জন্তুটা আগে ছিল, এখন নেই, অথচ আবার দেখা দেবে। “এখন যা বলা হবে তা বুঝবার জন্য বুদ্ধির দরকার। সেই সাতটা মাথা হল সাতটা পাহাড় যার উপর স্ত্রীলোকটা বসে আছে। সেই সাতটা মাথা আবার সাতজন রাজাও বটে। সেই রাজাদের মধ্যে পাঁচজন আগেই শেষ হয়ে গেছে, একজন এখনও আছে আর অন্যজন এখনও আসে নি। সেই রাজা আসবার পর তাকে কিছুকাল থাকতেই হবে। যে জন্তুটা আগে ছিল কিন্তু এখন নেই সে ঐ সাতজনের মধ্যে একজন হলেও সে অষ্টম রাজা; সে অনন্তকাল ধরে শাস্তি ভোগ করবে। “যে দশটা শিং তুমি দেখেছ ওগুলো হল দশজন রাজা। তারা এখনও রাজত্ব করতে আরম্ভ করে নি, কিন্তু তারা সেই জন্তুর সংগে অল্প সময়ের জন্য রাজা হিসাবে রাজত্ব করবার ক্ষমতা পাবে। এই রাজাদের উদ্দেশ্য একই, আর তারা সবাই তাদের ক্ষমতা ও অধিকার সেই জন্তুটাকে দেবে। এরা মেষ-শিশুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে আর মেষ-শিশু তাদের হারিয়ে দেবেন, কারণ তিনি প্রভুদের প্রভু ও রাজাদের রাজা। যাদের ডাকা হয়েছে আর বেছে নেওয়া হয়েছে এবং যারা বিশ্বস্ত তারাই তাঁর সংগে থাকবে।” তারপর সেই স্বর্গদূত আমাকে বললেন, “তুমি যে জল দেখেছ, যার উপর সেই বেশ্যা বসে আছে, তা হল অনেক দেশ, অনেক লোক, অনেক জাতি ও অনেক ভাষা। তুমি যে দশটা শিং দেখেছ সেগুলো আর সেই জন্তুটা সেই বেশ্যাকে ঘৃণা করবে। তারা তাকে ধ্বংস ও উলংগ করবে এবং তার মাংস খাবে; তারপর তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। এর কারণ হল, ঈশ্বর তাদের অন্তরে এমন ইচ্ছা দিয়েছেন যাতে তাঁর বাক্য সফল হয়। তার ফলে তারা একমন হয়ে সেই জন্তুটার কাছে তাদের সমস্ত ক্ষমতা দান করবে, যাতে ঈশ্বরের বাক্য পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সে রাজত্ব করতে পারে। যে স্ত্রীলোকটাকে তুমি দেখেছিলে সে হল সেই নাম-করা শহর, যে জগতের সমস্ত রাজাদের উপরে রাজত্ব করছে।” এর পরে আমি আর একজন স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তাঁর মহা ক্ষমতা ছিল এবং পৃথিবী তাঁর মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে গেল। তিনি জোরে চিৎকার করে বললেন, “ধ্বংস হয়েছে, সেই নাম-করা বাবিল ধ্বংস হয়েছে! ওটা এখন মন্দ আত্মাদের থাকবার জায়গা হয়েছে আর প্রত্যেকটি মন্দ আত্মার আড্ডাখানা আর অশুচি ও জঘন্য পাখীর বাসা হয়েছে, কারণ সে তার ব্যভিচারের ভয়ংকর মদ সব জাতিকেই খেতে দিয়েছে। পৃথিবীর রাজারা তার সংগে ব্যভিচার করেছে, আর পৃথিবীর ব্যবসায়ীরা তার লাগাম-ছাড়া কামনার দ্বারা ধনী হয়েছে।” তারপর আমি স্বর্গ থেকে আর একজনকে বলতে শুনলাম, “আমার লোকেরা, তোমরা বাবিল থেকে বের হয়ে এস যেন তার পাপের ভাগী তোমরা না হও, আর যে সব আঘাত তার উপরে পড়বে তার কোনটাই যেন তোমাদের ভোগ করতে না হয়। তার পাপ আকাশ পর্যন্ত উঁচু হয়েছে আর তার মন্দ কাজের কথা ঈশ্বর মনে করেছেন। সে অন্যদের সংগে যেমন ব্যবহার করেছে তার সংগেও তেমনি ব্যবহার কর; তার কাজের পুরোপুরি ফল তাকে দাও। যে পেয়ালার মধ্যে সে অন্যদের জন্য মন্দ মিশাত, তাতে তার পুরোপুরি শাস্তি মিশিয়ে তাকে খেতে দাও। সে নিজের বিষয়ে যত বেশী গর্ব করেছে, যত বেশী উচ্ছঙ্খল ভাবে বাস করেছে, ঠিক ততটা যন্ত্রণা ও দুঃখ তাকে দাও; কারণ তার অন্তরে সে ভাবে, ‘আমি তো রাণী হয়ে বসে আছি, আমি বিধবা নই; কোনমতেই আমি দুঃখ বোধ করব না।’ তাই এক দিনেই সব আঘাত তার উপরে পড়বে; সেগুলো হল মৃত্যু, দুঃখ আর দুর্ভিক্ষ। আগুন দিয়ে তাকে পুড়িয়ে ফেলা হবে, কারণ যিনি তার বিচার করবেন সেই প্রভু ঈশ্বর শক্তিমান।” পৃথিবীর যে সব রাজারা তার সংগে ব্যভিচার করেছে এবং উচ্ছৃঙ্খল ভাবে তার সংগে বাস করেছে তারা তাকে পুড়িয়ে ফেলবার সময় ধূমা দেখে কাঁদবে এবং তার জন্য দুঃখ করবে। তারা তার যন্ত্রণা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বলবে, “হায় বাবিল, হায়! সেই নাম-করা শহর, ক্ষমতায় পূর্ণ সেই শহর! এত অল্প সময়ের মধ্যেই তোমার শাস্তি এসে গেছে!” পৃথিবীর ব্যবসায়ীরাও তার জন্য কাঁদবে আর দুঃখ করবে, কারণ তাদের জিনিসপত্র আর কেউ কিনবে না। তাদের সেই সব জিনিসপত্রের মধ্যে আছে-সোনা, রূপা, দামী পাথর ও মুক্তা; মিহি মসীনার কাপড়, বেগুনী রংয়ের কাপড়, রেশমী ও লাল কাপড়; অনেক রকম সুগন্ধি কাঠ ও হাতীর দাঁতের তৈরী নানা জিনিস; খুব দামী কাঠ দিয়ে তৈরী এবং পিতল, লোহা ও মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী নানা জিনিস; দারচিনি, এলাচ, ধূপ, আতর ও গন্ধরস; আংগুর-রস, জলপাইয়ের তেল, ময়দা আর গম; গরু ও ভেড়া, ঘোড়া ও গাড়ী আর ক্রীতদাস। সেই ব্যবসায়ীরা বলবে, “যে ফল তুমি লাভ করতে চেয়েছিলে তা তোমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে; তোমার সব ধন ও জাঁকজমক ধ্বংস হয়ে গেছে। লোকে আর কখনও সেই সব পাবে না।” যারা এই সব জিনিসের ব্যবসা করে বড়লোক হয়েছিল সেই ব্যবসায়ীরা তার যন্ত্রণা দেখে ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা কেঁদে কেঁদে দুঃখ করে বলবে, “হায়, হায়! মিহি মসীনার কাপড় আর বেগুনে ও লাল কাপড় পরা এবং সোনা, দামী পাথর ও মুক্তা দিয়ে সাজ-গোজ করা সেই নাম-করা শহর! এত অল্প সময়ের মধ্যেই তোমার এমন মহা ধন-সম্পদ সব নষ্ট হয়ে গেছে!” জাহাজের প্রধান কর্মচারীরা, জলপথের যাত্রীরা, নাবিকেরা এবং সমুদ্রে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তারা সবাই দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। তাকে পোড়াবার সময় ধূমা দেখে তারা চিৎকার করে বলল, “আর কোন্‌ শহর এই নাম-করা শহরের মত?” তারা তাদের মাথায় ধুলা দিয়ে চিৎকার করতে থাকবে এবং কেঁদে কেঁদে দঃখ করে বলবে, “হায়, সেই নাম-করা শহর, হায়! সমুদ্রে যাদের জাহাজ আছে তারা তার ধনের দ্বারাই বড়লোক হয়েছিল; আর দেখ, অল্প সময়েই সে ধ্বংস হয়ে গেল!” তখন সেই স্বর্গদূত বললেন, “হে স্বর্গ, ঐ শহরের ধ্বংসের জন্য আনন্দিত হও। ঈশ্বরের লোকেরা, প্রেরিতেরা আর নবীরা, আনন্দিত হও। তোমাদের বিরুদ্ধে সে যা করেছিল তার জন্য ঈশ্বর তার বিচার করেছেন।” পরে একজন শক্তিশালী স্বর্গদূত বড় জাঁতার মত একটা পাথর নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে বললেন, “এমনি করেই সেই নাম-করা বাবিল শহরটাকে ফেলে দেওয়া হবে। তাকে আর কখনও পাওয়া যাবে না। যারা বীণা বাজায়, গান গায় এবং বাঁশী বা তূরী বাজায় তাদের শব্দ আর কখনও তোমার মধ্যে শোনা যাবে না। আর কখনও তোমার মধ্যে কোন রকম দক্ষ মিস্ত্রি পাওয়া যাবে না। কোন জাঁতার শব্দ আর কখনও তোমার মধ্যে শোনা যাবে না। বাতির আলো আর কখনও তোমার মধ্যে জ্বলবে না। বর-কনের গলার আওয়াজও আর তোমার মধ্যে কখনও শোনা যাবে না। তোমার ব্যবসায়ীরা পৃথিবীতে বিখ্যাত ছিল, আর সব জাতিই তোমার যাদুর ছলনায় ভুলত। নবীদের, ঈশ্বরের লোকদের আর যে সব লোকদের এই পৃথিবীতে মেরে ফেলা হয়েছে তাদের রক্ত এই বাবিলেই পাওয়া গেছে।” এর পরে আমি স্বর্গে অনেক লোকের ভিড়ের শব্দ শুনলাম। তাঁরা বলছিলেন, “হাল্লেলূয়া! উদ্ধার, গৌরব এবং ক্ষমতা, সবই আমাদের ঈশ্বরের, কারণ তাঁর বিচার সত্য ও ন্যায্য। যে তার ব্যভিচার দিয়ে সারা পৃথিবীকে অশুচি করেছিল সেই মহাবেশ্যাকে ঈশ্বর শাস্তি দিয়েছেন এবং তাঁর দাসদের রক্তের প্রতিশোধ তিনি তার উপর নিয়েছেন।” তাঁরা দ্বিতীয় বার বললেন, “হাল্লেলূয়া! তার মধ্য থেকে চিরকাল ধরে ধূমা উঠতে থাকবে।” ঈশ্বর, যিনি সিংহাসনে বসে আছেন তাঁকে সেই চব্বিশজন নেতা ও সেই চারজন জীবন্ত প্রাণী উবুড় হয়ে প্রণাম করে বললেন, “আমেন। হাল্লেলূয়া!” তখন সিংহাসন থেকে একজন বললেন, “ঈশ্বরের দাসেরা এবং তোমরা যারা ঈশ্বরকে ভক্তিপূর্ণ ভয় কর, তোমরা ছোট-বড় সবাই আমাদের ঈশ্বরের গৌরব কর।” তারপর আমি অনেক লোকের ভিড়ের শব্দ, জোরে বয়ে যাওয়া স্রোতের শব্দ ও জোরে বাজ পড়বার শব্দের মত করে বলা এই কথা শুনলাম, “হাল্লেলূয়া! আমাদের সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর রাজত্ব করতে শুরু করেছেন। এস, আমরা মনের খুশীতে খুব আনন্দ করি আর তাঁর গৌরব করি, কারণ মেষ-শিশুর বিয়ের সময় হয়েছে এবং তাঁর কনে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। উজ্জ্বল, পরিষ্কার ও মিহি মসীনার কাপড় তাকে পরতে দেওয়া হয়েছে। সেই কাপড় হল ঈশ্বরের লোকদের বাধ্যতা।” তারপর সেই স্বর্গদূত আমাকে বললেন, “এই কথা লেখ, ‘মেষ-শিশুর বিয়ের ভোজে যাদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে তারা ধন্য।’ ” তিনি এই কথাও বললেন, “এগুলো ঈশ্বরেরই কথা এবং তা সত্য।” তখন আমি সেই স্বর্গদূতের পায়ের কাছে উবুড় হয়ে তাঁকে ঈশ্বরের সম্মান দিয়ে প্রণাম করলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, “এ কি করছ? আমি তোমার সহদাস। ঈশ্বরকেই প্রণাম কর। তোমার বিশ্বাসী ভাইয়েরা, যারা যীশুর শিক্ষা ধরে রাখে, আমি তাদেরই একজন। যীশুর শিক্ষাই ছিল নবীদের শিক্ষার মূল কথা।” পরে আমি দেখলাম স্বর্গ খোলাই আছে, আর সেখানে একটা সাদা ঘোড়া রয়েছে। যিনি সেই ঘোড়ার উপরে বসে ছিলেন তাঁর নাম হল বিশ্বস্ত ও সত্য। তিনি ন্যায়ভাবে বিচার ও যুদ্ধ করেন। তাঁর চোখ জ্বলন্ত আগুনের মত আর তাঁর মাথায় অনেক মুকুট ছিল। তাঁর গায়ে এমন একটা নাম লেখা ছিল, যে নাম তিনি নিজে ছাড়া আর কেউ জানে না। তাঁর পরনে ছিল রক্তে ডুবানো কাপড়, আর তাঁর নাম হল ঈশ্বরের বাক্য। স্বর্গের সৈন্যদল সাদা পরিষ্কার মসীনার কাপড় পরে সাদা ঘোড়ায় চড়ে তাঁর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল। তিনি যেন সমস্ত জাতিকে আঘাত করতে পারেন সেইজন্য তাঁর মুখ থেকে একটা ধারালো ছোরা বের হয়ে আসছিল। তিনি লোহার দণ্ড দিয়ে সব জাতিকে শাসন করবেন এবং আংগুর মাড়াই করবার গর্তে তিনি আংগুর পায়ে মাড়াবেন। এই আংগুর মাড়াই করবার গর্ত হল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ভয়ংকর ক্রোধ। তাঁর পোশাকে ও ঊরুতে এই নাম লেখা আছে, “রাজাদের রাজা, প্রভুদের প্রভু।” পরে আমি একজন স্বর্গদূতকে সূর্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। যেসব পাখী আকাশে উড়ছিল তিনি তাদের সবাইকে জোরে চিৎকার করে বললেন, “এস, ঈশ্বরের মহা ভোজ খাবার জন্য একসংগে জড়ো হও, যেন তোমরা রাজা, সেনাপতি, শক্তিশালী লোক, ঘোড়া ও সেই ঘোড়ায় চড়া লোকদের, স্বাধীন ও দাসদের এবং ছোট-বড় সব মানুষের মাংস খেতে পার।” তারপর আমি দেখলাম, যিনি সেই ঘোড়ার উপর বসে ছিলেন তাঁর ও তাঁর সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য সেই জন্তুটা আর পৃথিবীর রাজারা তাদের সৈন্যসামন্ত নিয়ে একসংগে জড়ো হয়েছে। সেই জন্তুটাকে ধরা হল এবং যে ভণ্ড নবী তার হয়ে আশ্চর্য কাজ করত তাকেও ধরা হল। যারা সেই জন্তুর চিহ্ন গ্রহণ করেছিল এবং তাঁর মূর্তির পূজা করত সেই ভণ্ড নবী সেই সব আশ্চর্য কাজ দিয়ে তাদের ভুলিয়ে রেখেছিল। জ্বলন্ত গন্ধকের আগুনের হ্রদে জ্যান্ত অবস্থায় এই দু’জনকে ফেলে দেওয়া হল। যিনি সেই সাদা ঘোড়ার উপরে বসে ছিলেন তাঁর মুখ থেকে যে ছোরা বের হয়ে এসেছিল তা দিয়ে তাদের অন্য সব সংগীদের মেরে ফেলা হল। তার ফলে পাখীরা পেট ভরে তাদের মাংস খেল। এর পরে আমি একজন স্বর্গদূতকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। তাঁর হাতে ছিল সেই অতল গর্তের চাবি আর একটা মস্ত শিকল। তারপর আমি কতগুলো সিংহাসন দেখলাম, আর যাঁরা সেগুলোর উপরে বসে ছিলেন তাঁদের হাতে বিচার করবার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বরের বাক্য ও যীশুর শিক্ষা অনুসারে চলবার দরুন যাদের মাথা কেটে ফেলা হয়েছিল, আমি তাঁদের আত্মাগুলোকে দেখতে পেলাম। তারা সেই জন্তুটাকে বা তার মূর্তির পূজা করে নি এবং কপালে বা হাতে তার চিহ্নও গ্রহণ করে নি। তারা জীবিত হয়ে উঠল এবং এক হাজার বছর ধরে খ্রীষ্টের সংগে রাজত্ব করল। সেই হাজার বছর শেষ হয়ে গেলে পর শয়তানকে তার জেলখানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সে তখন গিয়ে সারা পৃথিবীর জাতিদের, অর্থাৎ গোগ-মাগোগকে ভুল পথে নিয়ে যাবে এবং যুদ্ধের জন্য তাদের একসংগে জড়ো করবে। এদের সংখ্যা হবে সমুদ্রের বালুকণার মত অসংখ্য। তখন আমি দেখলাম, তারা এগিয়ে গিয়ে ঈশ্বরের লোকদের থাকবার এলাকা এবং তাঁর সেই প্রিয় শহরটা ঘেরাও করল। কিন্তু স্বর্গ থেকে আগুন নেমে এসে তাদের পুড়িয়ে ফেলল। যে তাদের ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিল সেই শয়তানকে জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে ফেলে দেওয়া হল। সেই জন্তু আর ভণ্ড নবীকে আগেই সেখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে তারা চিরকাল ধরে দিনরাত যন্ত্রণা ভোগ করবে। তারপর আমি একটা বড় সাদা সিংহাসন এবং তার উপরে একজনকে বসে থাকতে দেখলাম। তাঁর সামনে থেকে পৃথিবী ও মহাকাশ পালিয়ে গেল, তাদের জায়গা আর কোথাও রইল না। তারপর আমি দেখলাম, ছোট-বড় সব মৃত লোকেরা সেই সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এর পর কতগুলো বই খোলা হল। তার পরে আর একটা বই খোলা হল। ওটা ছিল জীবন-বই। এই মৃত লোকদের কাজ সম্বন্ধে সেই বইগুলোতে যেমন লেখা হয়েছিল সেই অনুসারেই তাদের বিচার হল। যে সব মৃত লোকেরা সমুদ্রের মধ্যে ছিল, সমুদ্র তাদের তুলে দিল। এছাড়া মৃত্যু ও মৃতস্থানের মধ্যে যে সব মৃত লোকেরা ছিল, মৃত্যু ও মৃতস্থান তাদেরও ফিরিয়ে দিল। প্রত্যেককে তার কাজ অনুসারে বিচার করা হল। তারপর আমি একটা নতুন মহাকাশ ও একটা নতুন পৃথিবী দেখলাম। প্রথম মহাকাশ ও প্রথম পৃথিবী শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং সমুদ্রও আর ছিল না। পরে আমি সেই পবিত্র শহরকে, অর্থাৎ নতুন যিরূশালেমকে স্বর্গের মধ্য থেকে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে নেমে আসতে দেখলাম। কনেকে যেমন তার বরের জন্য সাজানো হয়, এই শহরকেও ঠিক সেইভাবে সাজানো হয়েছিল। তারপর আমি একজনকে সেই সিংহাসন থেকে জোরে এই কথা বলতে শুনলাম, “এখন মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের থাকবার জায়গা হয়েছে। তিনি মানুষের সংগেই থাকবেন এবং তারা তাঁরই লোক হবে। তিনি নিজেই মানুষের সংগে থাকবেন এবং তাদের ঈশ্বর হবেন। তিনি তাদের চোখের জল মুছে দেবেন। মৃত্যু আর হবে না; দুঃখ, কান্না ও ব্যথা আর থাকবে না, কারণ আগেকার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।” যিনি সেই সিংহাসনে বসে ছিলেন তিনি বললেন, “দেখ, আমি সব কিছুই নতুন করে তৈরী করছি।” পরে তিনি আবার বললেন, “এই কথা লেখ, কারণ এই কথাগুলো বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য।” তিনি আমাকে আরও বললেন, “শেষ হয়েছে। আমি আল্‌ফা এবং ওমিগা-আরম্ভ ও শেষ। যার পিপাসা পেয়েছে তাকে আমি জীবন-জলের ফোয়ারা থেকে বিনামূল্যে জল খেতে দেব। যে জয়ী হবে সে এই সবের অধিকারী হবে। আমি তার ঈশ্বর হব এবং সে আমার পুত্র হবে। কিন্তু জ্বলন্ত আগুন ও গন্ধকের হ্রদের মধ্যে থাকাই হবে ভীতু, অবিশ্বাসী, ঘৃণার যোগ্য, খুনী, ব্যভিচারী, যাদুকর, প্রতিমা-পূজাকারী এবং সব মিথ্যাবাদীদের শেষ দশা। এটাই হল দ্বিতীয় মৃত্যু।” যে সাতজন স্বর্গদূতের হাতে শেষ সাতটা আঘাত-ভরা সাতটা বাটি ছিল তাঁদের মধ্যে একজন আমার কাছে এসে বললেন, “এস, আমি তোমাকে কনে, অর্থাৎ মেষ-শিশুর স্ত্রীকে দেখাই।” পরে সেই স্বর্গদূত আমাকে একটা বড় ও উঁচু পাহাড়ে নিয়ে গেলেন। তখন আমি পবিত্র আত্মার বশে ছিলাম। ঈশ্বরের মহিমাতে উজ্জ্বল যে পবিত্র শহর যিরূশালেম স্বর্গের মধ্য থেকে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে নেমে আসছিল তিনি আমাকে তা দেখালেন। সেই শহরের উজ্জ্বলতা খুব দামী পাথরের উজ্জ্বলতার মত, স্ফটিকের মত পরিষ্কার হীরার মত। সেই শহরের একটা বড় উঁচু দেয়াল ছিল ও তাতে বারোটা ফটক ছিল, আর সেই ফটকগুলোতে বারোজন স্বর্গদূত ছিলেন। ইস্রায়েল জাতির বারো বংশের নাম ঐ ফটকগুলোর উপরে লেখা ছিল। ফটকগুলোর মধ্যে তিনটা পূর্ব দিকে, তিনটা উত্তর দিকে, তিনটা দক্ষিণ দিকে এবং তিনটা পশ্চিম দিকে ছিল। সেই শহরের দেয়ালের বারোটা ভিত্তি ছিল এবং সেগুলোর উপর মেষ-শিশুর বারোজন প্রেরিতের বারোটা নাম লেখা ছিল। যিনি আমার সংগে কথা বলছিলেন তাঁর হাতে একটা সোনার মাপকাঠি ছিল, যেন তিনি সেই শহরটা, তার ফটকগুলো ও তার দেয়ালটা মাপতে পারেন। শহরটা চৌকো-লম্বা ও চওড়ায় সমান। পরে তিনি সেই মাপকাঠি দিয়ে শহরটা মাপলে পর দেখা গেল সেটা লম্বা, চওড়া ও উচ্চতায় দু’হাজার চারশো কিলোমিটার। পরে তিনি দেয়ালটা মাপলে পর সেটার উচ্চতা একশো চুয়াল্লিশ হাত হল। মানুষ যেভাবে মাপে সেই স্বর্গদূত সেইভাবেই মেপেছিলেন। হীরা দিয়ে দেয়ালটা তৈরী ছিল আর শহরটা ছিল পরিষ্কার কাচের মত খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরী। সেই শহরের দেয়ালের ভিত্তিগুলোতে সব রকম দামী পাথর বসানো ছিল। প্রথম ভিত্তিটা হীরার, দ্বিতীয়টা নীলকান্তমণির, তৃতীয়টা তাম্রমণির, চতুর্থ পান্নার, পঞ্চম সূর্যকান্তমণির, ষষ্ঠ সার্দীয়মণির, সপ্তম পোখরাজের, অষ্টম বৈদুর্যমণির, নবম পীতমণির, দশম উপলের, একাদশ ফিরোজামণির এবং দ্বাদশ পদ্মরাগের। বারোটা ফটক ছিল বারোটা মুক্তা। প্রত্যেক ফটক এক একটা মুক্তা দিয়ে তৈরী ছিল। শহরের রাস্তাটা পরিষ্কার কাচের মত খাঁটি সোনায় তৈরী ছিল। আমি সেই শহরে কোন উপাসনা-ঘর দেখলাম না, কারণ সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর এবং মেষ-শিশুই ছিলেন সেই শহরের উপাসনা-ঘর। সেই শহরে আলো দেবার জন্য সূর্য বা চাঁদের কোন দরকার নেই, কারণ ঈশ্বরের মহিমাই সেখানে আলো দেয় এবং মেষ-শিশুই সেখানকার বাতি; আর সব জাতি সেই আলোতে চলাফেরা করবে। পৃথিবীর রাজারা তাঁদের জাঁকজমক নিয়ে সেই শহরে আসবেন। দিনের বেলা শহরের ফটকগুলো কখনও বন্ধ থাকবে না আর সেখানে রাতও হবে না। সমস্ত জাতির গৌরব ও সম্মান সেখানে আনা হবে। অশুচি কোন কিছু কিম্বা জঘন্য কাজ করে বা মিথ্যা কথা বলে এমন কোন লোক সেখানে কখনও ঢুকতে পারবে না; যাদের নাম মেষ-শিশুর জীবন-বইতে লেখা আছে তারাই কেবল সেখানে ঢুকতে পারবে। ঈশ্বরের ও মেষ-শিশুর সিংহাসন সেই শহরে থাকবে এবং তাঁর দাসেরা তাঁর সেবা করবে। তারা তাঁর মুখ দেখতে পাবে এবং তাঁর নাম তাদের কপালে লেখা থাকবে। রাত আর থাকবে না এবং তাদের আর বাতির আলো বা সূর্যের আলোর দরকার হবে না, কারণ প্রভু ঈশ্বর নিজেই তাদের আলো হবেন। তারা চিরকাল ধরে রাজত্ব করবে। পরে সেই স্বর্গদূত আমাকে বললেন, “এই সব কথা বিশ্বাসযোগ্য ও সত্য। প্রভু ঈশ্বর, যিনি নবীদের মধ্য দিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি তাঁর দূতকে পাঠিয়ে দিয়েছেন, যেন কিছুকালের মধ্যে যা অবশ্যই ঘটতে যাচ্ছে তা সেই স্বর্গদূত তাঁর দাসদের দেখাতে পারেন।” যীশু বলছেন, “দেখ, আমি শীঘ্রই আসছি। এই বইয়ের সমস্ত কথা, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য যে পালন করে সে ধন্য।” আমি যোহন এই সব শুনেছি ও দেখেছি। সব শুনবার ও দেখবার পরে, যে স্বর্গদূত আমাকে এই সব দেখালেন আমি তাঁকে প্রণাম করবার জন্য তাঁর পায়ের উপর উবুড় হলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, “থাম, আমি তোমার ও তোমার বিশ্বাসী ভাইদের, অর্থাৎ নবীদের এবং যারা এই বইয়ের সব কথা পালন করে তাদের সহদাস। ঈশ্বরকেই প্রণাম কর।” তারপর তিনি আমাকে বললেন, “এই বইয়ের সমস্ত কথা, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য তুমি গোপন রেখো না, কারণ সময় কাছে এসে গেছে। যে অন্যায়কারী, সে এর পরেও অন্যায় করুক; যে জঘন্য, সে এর পরেও জঘন্য থাকুক। সৎ লোক এর পরেও সৎ কাজ করতে থাকুক এবং যে লোক পবিত্র, সে এর পরেও পবিত্র থাকুক।” যীশু বলছেন, “দেখ, আমি শীঘ্রই আসছি এবং প্রত্যেককে তার কাজ অনুসারে দেবার পুরস্কার আমার সংগেই আছে। আমি আল্‌ফা এবং ওমিগা, প্রথম ও শেষ, আরম্ভ ও শেষ। “ধন্য তারা, যারা তাদের পোশাক ধুয়ে ফেলে যেন তারা জীবন-গাছের ফল খাবার অধিকারী হয় এবং ফটকের মধ্য দিয়ে শহরে ঢুকতে পারে। কুুকুরের মত জঘন্য লোক, যাদুকর, ব্যভিচারী, খুনী, প্রতিমা- পূজাকারী, আর যারা মিথ্যা ভালবাসে ও মিথ্যার মধ্যে চলে, তারা সবাই বাইরে পড়ে আছে। “আমি যীশু আমার দূতকে পাঠিয়েছি যেন সে তোমাদের কাছে মণ্ডলীগুলোর জন্য এই সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে। আমি দায়ূদের মূল এবং বংশধর, ভোরের উজ্জ্বল তারা।” পবিত্র আত্মা এবং কনে বলছেন, “এস।” আর যে এই কথা শুনছে সেও বলুক, “এস।” যার পিপাসা পেয়েছ সে আসুক এবং যে জল খেতে চায় সে বিনামূল্যে জীবন-জল খেয়ে যাক। যে লোক এই বইয়ের সমস্ত কথা, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য শোনে আমি তার কাছে এই সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, কেউ যদি এর সংগে কিছু যোগ করে তবে ঈশ্বরও এই বইয়ে লেখা সমস্ত আঘাত তার জীবনে যোগ করবেন। আর এই বইয়ের সমস্ত কথা, অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য থেকে যদি কেউ কিছু বাদ দেয় তবে ঈশ্বরও এই বইয়ে লেখা জীবন-গাছ ও পবিত্র শহরের অধিকার তার জীবন থেকে বাদ দেবেন। যিনি এই সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন তিনি বলছেন, “সত্যিই আমি শীঘ্র আসছি।” আমেন। প্রভু যীশু, এস। প্রভু যীশুর আশীর্বাদ ঈশ্বরের সব লোকদের সংগে থাকুক। আমেন।